Wednesday, July 16, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1047



তোমার ছায়া পর্ব-১৫

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ১৫)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

ফারদিন আজ আয়রিনের সামনে এমন স্বাভাবিক আচরণ করছে, দেখে মনে হচ্ছে তার মনে কষ্টের পরিমান টা বালি কণার চেয়েও ক্ষুদ্র।
ওদের দুজনের কথার মাঝে ফারহা বললো,
– ভাইয়া তুমি না ইন্টারভিউ দিয়ে আসলে? নিশ্চই শরির ক্লান্ত তাই না? বাসায় গিয়ে রেষ্ট নাও। আমি কোচিং শেষেই চলে আসবো।
ফারদিন আর কিছু না বলে চুপচাপ ‘হ্যা’ সুচক সম্মতি জানিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

আয়রিন ফারহা সাথি সবাই রওনা দিবো আবরার স্যারের কোচিং সেন্টারে। আইসিটি ক্লাস নেয় আবরার। দুটি ব্যাচ, একটা ফাস্ট ইয়ার, আরেকটা সেকেন্ড ইয়ার।
দুইটা থেকে সেকেন্ড ইয়ারের ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়, আর তিনটা থেকে ফাস্ট ইয়ারের।
তারা দ্রুত কোচিং সেন্টারে গিয়ে তাদের তিন জনের একটা নির্দিষ্ট টেবিল আছে ওখানে বসে পরলো। ক্লাস শুরু হতে আর ৫ মিনিট বাকি।
আজ পাঁচ দিন পর কোচিং-এ এসে সবচেয়ে অবাক হয় ক্লাসে ফাস্ট ইয়ারের ছেলে দেখে। তাও আবার সেই জুনিয়র আবরার। হয়তো নতুন ভর্তি হয়েছে সেকেন্ড ইয়ারের ব্যাচ এ।

বেঞ্চে বসে সেই জুনিয়র আবরারের দিকে তাকিয়ে আছে ফারহা। এই ছেলের মতলব টা কি? এখানে তো ফাষ্ট ইয়ারের ছেলে থাকার কথা না। কারণ, প্রতি ইয়ারের সিলেবাস অনুযায়ি ক্লাস হয়।
ফারহাকে দেখেই ছেলেটা আঙুলের ইশারায় ‘হায়’ জানায়। চোখ বড় বড় করে তাকায় ফারহা। এই ছেলে কি এবার এখানেও মান ইজ্জত খাবে নাকি? এখানে তো অন্য কলেজের স্টুডেন্টও আছে।
ছেলেটা হাতের ইশারায় বুঝালো আমি আসছি, ওয়েট।
আর এক মুহুর্ত দেড়ি না করে ফারহার কাছে এসে পাশের একটা বেঞ্চিতে বসে পরে সে। ফারহা একটু ভ্রু কুচকে বলে,
– এই ছেলে, তুমি সেকেন্ড ইয়ারের ব্যাচে কি করছো?
ছেলেটা একটু ভাব নিয়ে বলে,
– সে অনেক কাহিনি। স্যারকে কতো রিকুয়েষ্ট করে বুঝালাম, যে সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস করলে সামনের পড়া গুলোর সম্পর্কেও ভালো আইডিয়া থাকবে। প্রথমে রাজি হচ্ছিলো না। পরে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি। আমার পড়ার আগ্রহ দেখে পরে স্যারও আর না করেনি।
ফারহা একটু তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললে,
– পড়ার প্রতি এতো আগ্রহ বেড়ে গেলো কবে থেকে।
ছেলেটা সোজাসুজি ভাবে বললো,
– তোমাকে দেখার পর থেকে। তোমাকে কাছ থেকে দেখার জন্য বাড়তি ক্লাস কেন? সারাদিন ক্লাসে বসে থাকলেও একটু বিরক্ত হবো না।
ফারহা একটু রেগে গিয়ে বললো,
– দাড়াও আমি স্যারকে বলে দিবো তোমার আসল উদ্দেশ্য কি?
ছেলেটা একটু ভাব নিয়ে বলে,
– আমিও সবাইকে বলে দিবো। তোমার সিক্রেট বিষয় টা।
ফারহা এবার একটু থৎমৎ খেয়ে বলে।
– সি,, সিক্রেট বিষয় মানে?
– হিহিহি আমি সব জানি।

কথার মাঝেই আবরার স্যার ক্লাসে চলে আসলো। ফারহাকে আর জুনিয়র আবরারকে একসাথে দেখে বললো,
– যে যার যার টেবিলে গিয়ে বসো।
মুহুর্তেই পুরো ক্লাসের স্টুডেন্ট সব নিরব হয়ে গেলো। এদিকে ফারহার মাথায় ঢুকলো ভিন্ন চিন্তা৷ জুনিয়র ছেলেটা বিষয় টা জানলো কিভাবে?

ক্লাস শুরু হলেই আবরার স্যার ফারহাকে দাড় করালো। কারণ তার ক্লাসে দুই দিনের বেশি কেউই অনুপস্থিত থাকা তার রুল্সের বাইরে। সেই জায়গায় ফারহা পাঁচ দিন। তাই শাস্তি স্বরুপ ক্লাসের বাইরে গিয়ে দাড়িয়ে থাকা।
শাস্তি স্বরুপ চুপচাপ দরজার বাইরে গিয়ে দাড়িয়ে রইলো ফারহা। আবরার ক্লাস নিতে শুরু করলো।
তখনই ক্লাসের মাঝখানে জুনিয়র আবরার দাড়িয়ে গেলো হাতের ছোট কনে আঙুল টা দেখিয়ে। যার অর্থ সে পশ্রাব করতে চায়।
স্যারের অনুমতি পেয়েই বাইরে চলে গেলো। ফিরে এসে ক্লাসে না ঢুকে ফারহার পাশে দাড়ালো। ফারহার পাশে দাড়িয়ে বললো,
– ডেরি মিল্ক পছন্দ করো?
ভেতর থেকে আবরার স্যারের কন্ঠ শোনা গেলো।
– তুমি ভেতরে না এসে বাইরে কি করছো?
একটু গরম লাগছে এমন ভাব নিয়ে ছেলেটা বললো,
– স্যার হুট করে মনে হলো দমটা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই একটু বাইরে স্বস্থির নিশ্বাস নিচ্ছি।
তারপর ছেলেটা আবার ফারহার দিকে চেয়ে বললো,
– দেখো তুমি চকলেট না নিলে আমি সবাইকে বলে দিবো।
বাধ্য হয়ে ফারহা চকলেট নিয়ে বললো,
– হুম খুব পছন্দের এটা।
ছেলেটা একটু গাল টেনে হেসে বললো,
– আমারও এটা খুব পছন্দের। দোখছো, আমাদের মনেরও কতো মিল।

ওদের এমন কান্ড দেখে ক্লাস করানোয় মন বাদ দিয়ে ভেতরে ভেতরে অস্থিরতা শুরু হলো আবরারের। একটা বিরক্তিকর নিশ্বাস নিয়ে ফারহাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– ফারহা যাও, নিজের সিটে গিয়ে বসো।
ফারহা খুশি মনে চুপচাপ ক্লাসে ঢুকে গেলো। পেছন থেকে জুনিয়ার আবরার বললো,
– স্যার, আমিও আসবো?
– না, তোমার আসার দরকার নেই। তুমি বাইরের প্রাকৃতিক হাওয়া খাও।
,
,
রাতের বেলায় খেতে বসলো সবাই। সেই দুপুরে বাসায় ফিরে শাওয়ার নিয়ে খেয়ে দেয়ে শুয়ে থাকলো ফারদিন। তাই বাসায় কোনো কিছু জিজ্ঞেস করেনি কেউ।
খাওয়ার সময় বাবা ইন্টারভিউ’র ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে ফারদিন বলে,
– আমি মানা করে দিয়েছি, ওদের জব করবো না আমি।
পাশ তেকে মা বললো,
– মানে কি? তোর বাবা তো আগেই তোর কথা বলে দিয়েছে। ওরা বললো, ইন্টারভিউ তে টিকলেই চাকরি কনফার্ম।
ফারদিন খেতে খেতে বলে,
– হুম বলেছিলো। আর আমি টিকেছিও। স্যালারিও বলেছে ৬০ হাজার দিবে।
– তাহলে না করলি কেন?
– কারণ ওরা ১০ লাখ ঘুষ চায়। ভেবে দেখো ১০ লাখ ঘুষ দিয়ে চাকরিটা নিলে, এক হিসেবে প্রায় দেড় বছর আমাকে বিনা বেতনেই খাটতে হবে ওখানে।
বাবা খেতে খেতে বললো,
– তোকে কি টাকার কথা ভাবতে বলেছি?
– তবুও বাবা, আমি কেন ঘুষ দিয়ে চাকরি নিবো? আমি ভাইবায় ও ভালো করেছি। আমাকে তারা জোগ্য মনে করে সিলেক্ট করেছে। তবুও কেন ঘুষ দিতে হবে আমায় বাবা? হোয়াই? এতো কষ্ট করে লেখাপড়া করলাম কি ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়ার জন্য?
বাবা আর কিছু না বলে চুপচাপ খেতে লাগলো। মা প্লেটে তরকারি দিতে দিতে বললো,
– একটা চাকরি ছারা তোর কাছে কোন বাবা তার মেয়েকে তুলে দিবে? সারা জীব দেবদাসের মতোই কাটা।
ফারদিন কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে শান্ত ভাবে বললো,
– দেবদাসের মতোই মনে হয় মা নিজেকে। বিয়ে করার ইচ্ছে টা তো অনেক আগেই ম’রে গেছে।
বলেই খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে গেলো ফারদিন। বাবা মা দুজনই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
,
,
ঘুমানোর আগ মুহুর্তে ফোন টা বেজে উঠে আয়রিনের। ফোন টা রিসিভ করে খাটের উপর বসলো সে। ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেষে উঠে,
– আয়রিন বলছেন?
– জ্বি বলছি, আপনার পরিচয়?
– আমার পরিচয় জেনে আপনার লাভ নেই। আমার বয়ফ্রেন্ডকে ছারছেন না কেন?
– মানে?
– এখন কিছুই বুঝছেন না তাই না? মাহিন আপনাকে বলেনি আমার কথা?
আয়রিনের মাথা যেন মুহুর্তেই ভন ভন করতে লাগলো। কি সব বলছে এই মেয়ে।
হতবম্ভ হয়ে মেয়েটাকে বলে,
– আপনি তার কি হোন বললেন?
– গার্লফ্রেন্ড। আমাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখিয়ে আপনাকে করে ফেললো। ছারছেন না কেন আমার বয়ফ্রেন্ডকে?
আর কিছু না বলেই ফোন কে’টে দিলো আয়রিন। দুই হাতে চুল গুলো পেছনের দিকে চেপে ধরে বসে আছে। সারা শরির জুড়ে অস্থিরতার ভাব ফুটে উঠেছে। কান জুড়ে একটা শব্দই ভাসছে। ‘আমার বয়ফ্রেন্ড কে ছাড়ছেন না কেন?’

To be continue…….

তোমার ছায়া পর্ব-১৪

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ১৪)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– বিয়ের কি রেজিট্রি হয়েছিলো?
পুরো কাহিনি শুনে চেয়ারে লম্বা লম্বি ভাবে বসে কথাটা বললো, উকিল।
আবরার মাথাটা হালকা দুই দিকে নাড়িয়ে বললো,
– আজ্ঞে না। ধর্মিয় ভাবে হয়েছিলো।
– মানে কোনো ডোকোমেন্সই নেই, তাই তো?
– জ্বি। আর থাকলেও তা ওখানকার ওদের কাছে।
– তাহলে তো ঝামেলা। তোমরা আগে রেজিট্রি করে ফেলো খুব দ্রুত। এরপর রেজিট্রির ছয় মাস পর তোমাদের যদি মনে হয়, তোমরা একসাথে থাকতে চাও না। তখন ডিবোর্স করে নিও।
– মানে আরো ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে?
– হ্যা।
– কিন্তু আঙ্কেল ওর ফ্যামিলি তো ওর বিয়ের কথাবার্তা বলছে। যদি কোনো ভাবে ছয় মাসের আগে বিয়েটা ঠিক হয়ে যায়। তাহলে স্বামী থাকা অবস্থায় একটা মেয়ে দ্বিতীয় বিয়ে কিভাবে করবে?
উকিল আঙ্কেল এবার সোজাসুজি ভাবে বসে বললো,
– আচ্ছা সত্যি করে বলো তো, তুমি কি চাও?
আবরার কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে বললো,
– আমি চাইলেই কি সব হবে আঙ্কেল? আচ্ছা একবার ভাবুন তো। একজন শিক্ষক আর একজন ছাত্রী লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে, তাও আবার এমন ভাবে। বিষয়টা মানুষ কোন চোখে নিবে? আর অন্যান্য স্টুডেন্টদের সামনেই বা দাড়াবো কি করে?আর তাছারা সে আমার বন্ধুর বোন। বন্ধুর বোন মানে তো নিজেরও বোন, তাই নয় কি? বন্ধুর সামনেই বা কোন চোখে দাড়াবো?
– দেখো আবরার, আমি বুঝতে পারছি বিষয় টা। তবে বিয়ে জিনিস টা মানুষের লাইফে খুব গুরুত্ব পূর্ণ একটা পয়েন্ট। যা মানুষের জীবনের গতিশীলতা একটু হলেও পাল্টে ফেলে। ধরো তোমাদের ডিবোর্স হয়ে গেলো। তার পর কি তোমরা দুজন খুব সুখে থাকতে পারবে? আর লোকে কি বলছে তা ভেবে তুমি কেন নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত টা নিবে? যারা তোমাদের নিয়ে কথা বলবে তারা কি তোমার বাকি জীবন চলার জন্য দু পয়সা দিয়ে সাহায্য করবে? নাকি বাকি জীবনটা তোমার পাশে থাকবে? তাই লোকে কি বলবে তা না ভেবে, এটা ভাবো যে, তোমার মন কি চায়? কারণ দিন শেষে আশে পাশের মানুষ গুলো খোজ নিতে আসবে না, তুমি ভালো আছো কি নেই।

আবরার কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে বললো,
– আচ্ছা আঙ্কেল আমি উঠি।
– হুম, আবার দেখা হবে। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গুলো মাথা ঠান্ডা রেখে ভেবে চিন্তে নিবে।
,
,
অনেক দিন পর আবার আয়রিনের শশুর-শাশুড়ি তাদের বাড়িতে পা রাখলো। গত কাল তার শাশুড়ি ফোন দিয়ে বললো এই বাড়িতে আসবে তারা।
তাই পরদিনই চলে আসে। ছেলে বিয়ে করিয়েছে কিন্তু পূত্র বধু পরে আছে বাবার বাড়ি। তাদের একটু অমত থাকলেও আয়রিনের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিয়েছিলো তারা। বিয়ের আগে তো মাহিনের বাবা বলেছিলো তারা ছেলের বৌ চায় না। চায় শুধু একটা মেয়ে। যেখানে নিজের মেয়ে আর পূত্র বধুর মাঝে কোনো পার্থক্য থাকবে না।

মাহিন যখন মায়ের সাথে ফোনে কথা বলছিলো তখন আয়রিন পাশেই ছিলো। মাহিন চলে যাওয়ার পর তেমন একটা কথা বলেনি তার সাথে।
মাহিনের সাথে কথা বলার মহুর্তে আয়রিন ও তাদের নানান বিষয় প্রশংসা করতে ব্যাস্ত সে। আয়রিন কিছুটা লজ্জা ভঙ্গিতে বসে ছিলো এক পাশে।
ইচ্ছে হচ্ছিলো শাশুড়ি মাকে বলে ফোনটা নিয়ে অন্য রুমে চলে গিয়ে লুকিয়ে কথা বলতে দুজন।
হয়তো তার ধারণ মাহিন তাকে প্রথমে পছন্দ না করলেও, আস্তে আস্তে মানিয়ে নিতে শিখবে। কারণ হুট করে তো আর ভালোবাসা হয় না।
ফোনালাপে অল্প অল্প করে শুরু হবে সব কিছু। বিয়ের পরও ফোনালাপে প্রেম শুরু, বিষয় টা খুবই ইন্টারেস্টিং।
এতোদিন নিজে অনেকবার মাহিনকে ফোন দিয়েছিলো। কিন্তু সামান্য একটু হাই হ্যালো করে ব্যাস্ততা দেখিয়ে রেখে দিতো সে। আয়রিনও নিজেকে শান্তনা দেয়। অফিস থেকে বাইরে দেশে গেলো, ব্যাস্ততা তো একটু থাকতেই পারে।

কিন্তু আজ মায়ের সাথে অনেক্ষন কথা বলছে মানে আজ হয়তো ফ্রি আছে সে। আয়রিনের এমন পাশে বসে থাকার কারণটা হয়তো কিছুটা বুঝতে পারে তার শাশুড়ি। তাই মাহিনকে বলে,
– নে আয়রিনের সাথে কথা বল। অনেক্ষন ধরে দেখছি, তোর সাথে কথা বলার জন্য পাশে বসে আছে।
শাশুরির ডিরেক্ট এমন কথায় একটু লজ্জা পায় আয়রিন। কিন্তু মুহুর্তেই সব লজ্জা বিষণ্নতায় মিলিয়ে যায়। যখন মাহিন ব্যাস্ততা দেখিয়ে বলে,
– ওর সাথে পরে কথা বলবো মা। এখন ডিউটিতে যেতে হবে। ডিউটি শেষে কথা বলবো ওর সাথে।
বলেই ফোন রেখে দেয় মাহিন। আয়রিন বিষণ্ন মনে শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করে।
– ও কি সব সময় এমন ব্যাস্ত থাকে? আপনাদের সাথে তেমন কথা বলে না তাই না?
তার শাশুড়ি একটু হেসে বলে,
– ব্যাস্ততা তো থাকবেই। আর কথা বলবে না কেন? ফোন দিলে তো সবার সাথে কথা বলেই ফোন রাখে। কেন, আজ কথা হয়নি তাই তো? ডিউটি শেষে কথা বলবে বলেছে। মন খারাপ করার কিছু নেই।
জোর পূর্বক একটা হাসি দিয়ে সেখান থেকে উঠে হাটা ধরলো আয়রিন। সে মাহিনকে যতই মানিয়ে নিতে চায়, ততোই দুরে দুরে থাকে সে।
,
,
সকাল হতেই মায়ের ডাকাডাকি তে ঘুম ভাঙে ফারহার। তাও কি ডাক, মনে হচ্ছে হিংস্র বাঘিনি হুংকার ছারছে। টুর থেকে ফিরে আসার চার-পাঁচ দিন হয়ে গেলো। ফারহা কলেজের ও কোচিং-এর কিনারেও যায় নি এই কয়দিন। তার মা জানতে চাইলে বলে ভালো লাগছে না। তাই আজ সকাল সকাল ডেকে বলে, কলেজে না গেলে, আর যাওয়ারও দরকার নেই, পড়ালেখা করারও দরকার নেই। বিয়ে করে সংসার শুরু করার ব্যাবস্থা করবে।
প্রাইভেট কলেজ, রেগুলার ক্লাস করতে হয়। এদিকে মায়ের এমন ঘ্যান ঘ্যান। সব মিলিয়ে উঠে, খেয়ে দেয়ে কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।

কলেজে যাওয়ার জন্য বের হলে রাস্তায় গাড়ির জন্য দাড়িয়ে ছিলো ফারহা। তখনই একটা গাড়ি এসে দাড়ায় ওখানে। প্রথমে বিষয়টা এতো গুরুত্ব না দিলেও সাদাফ কে দেখে অবাক হয় সে।
সাদাফ তার কাছে এগিয়ে এসে বললো,
– গাড়িতে উঠো, কথা আছে তোমার সাথে।
ফারহা কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে বলে,
– কেন এসেছেন আপনি? আর গাড়িতে উঠবো মানে কি? আপনি আমার কে যে আপনার গাড়িতে আমার উঠতে হবে?
– এখন কেউ না হলেও, এক সময়তো ছিলাম তাই না?
– ওটা অতিত, আর আপনি ভুলে গেলেও আমি ভুলে যাইনি অতিতে আপনি কি করেছিলেন আমার সাথে?
সাদাফ একটা শ্বাস নিয়ে চার পাশে চোখ বুলিয়ে বললো,
– দেখো ফারহা সব কিছুর জন্য আ’ম রিয়েলি সরি। আমি আসলে এমনটা করা উচিৎ হয়নি।
– আমি সরি বলতে বলেছি আপনাকে? আর কোন মুখে সরি বলছেন আপনি? ওই দিন আয়রিনের বিয়েতে যে মেয়েটার পাশে ছিলেন, ওটা কোথায় এখন? ছেরে দিয়েছেন তাকে, তাইনা? আপনার থেকে এর চেয়ে বেশিই কি বা আশা করা যায়?
– আমি তোমাকে সব বলবো। কিন্তু এখানে রাস্তায় না। চলো কোথাও গিয়ে বসি আমরা।
– জ্বি না, পর পুরুষের সাথে এখানে দাড়িয়েও কথা বলার ইচ্ছে নেই।
– এখন পর পুরুষ হয়ে গেছি তাই না?
– হ্যা, কারণ আই এম ম্যা……
এতটুকু বলেই থমকে গেলো ফারহা। সাদাফ একটু ভ্রু-কুচকে বললো,
– কিছু বলছিলে?
– না কিছু না, আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।
ফারহা কথা ঘুরিয়ে পাশ দিয়ে যাওয়া একটা রিক্সা ডেকে উঠে কলেজের উদ্দেশ্যে ছুটলো।
,
,
ক্লাস শেষে কলেজ থেকে ফিরার সময় হটাৎ ভাইয়ার সাথে দেখা হয় ফারহার। একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে ফিরছিলো ফারদিন। হাতে এটা ফাইলে কিছু কাগজ পত্র। ফারহাকে বললো,
– ক্লাস শেষ?
– হুম, এখন কোচিং-এ যাবো।
তখনই আয়রিন পাশে এসে ফারহাকে বললো,
– চলে এখন, দেড়ি হলে আবার ভাইয়ার বকা খেতে হবে।
হটাৎ আয়রিনকে দেখে হাসি মুখটা মলিন হয়ে যায় ফারদিনের। আর এদিকে ফারদিনকে দেখে আয়রিন হাসি মুখে বললো,
– কেমন আছেন ভাইয়া?
ফারদিন একটু মুচকি হেসে বললো,
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি কেমন আছো?
– জ্বি ভালো? কাগজ পত্র নিয়ে কোথায় গিয়েছিলেন?
ফারদিন খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
– ইন্টারভিউ ছিলো একটা।
– এখন আমাদের বাসায় যান না কেন? আগে তো প্রায়ই ভাইয়ার সাথে যেতেন। সবাই মিলে গল্প করতাম।

ফারহা স্তব্দ হয়ে তাকিয়ে দুজনকে দেখছে। ভাইয়াকে বাইরে থেকে যতটা স্বাভাবিক দেখাচ্ছে, ভিতর ভিতর মোটেও এতোটা স্বাভাবিক নয় সে। রাত ভর কেঁদেছিলো নিজের ভালোবাসা হারিয়ে। আর আজ কতো স্বাভাবিক সাজার চেষ্টায় আছে সে। হয়তো এখনো একজনের মন পুড়ছে খুব, আর অন্য জন কিছুই জানে না।

To be continue…..

তোমার ছায়া পর্ব-১৩

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ১৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– তুমি কি চাও?
সমুদ্রের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো আবরার। এর পর ডাবের পানি খেতে লাগলো। হয়তো উত্তরের অপেক্ষায় আছে।
বাতাসে কানের পাশে উড়তে থাকা অবাধ্য চুল চুল গুলো কানের পেছনে গুজে দিয়ে ফারহা শান্ত ভাবে বললো,
– আপনি যেটা চাইবেন।
আর কিছু না বলে চুপচাপ উঠে হাটা ধরলো আবরার। ফারহা বসে থেকে অবস্থায় চেয়ে রইলো আবরারের চলে যাওয়ার দিকে। চুল গুলো আবারও উড়ে মুখের উপর এসে পরছে।

ভাগ্য টা এতো নিষ্ঠুর কেন? কেন এভাবে সব এলোমেলো করে দিলো? এমন করে তো কিছুই চাইনি। যদি এটা একটা দুঃস্বপ্ন হতো?
ভাবতে ভাবতে আয়রিন এসে হাত ধরে টেনে তোলে তাকে। সবাই ওদিকে আনন্দ করছে আর ফারহা আলাদা বসে আছে এটা হয়তো ভালো দেখাচ্ছিলো না মোটেও।
আয়রিন মুচকি হেসে বললো,
– ব্যাপার কি? আমার কাছে কি কিছু লুকাচ্ছিস তোরা?
ফারহা হাটতে হাটতে বললো,
– কোন ব্যাপারে?
– এখন কিছুই বুঝতে পারছো না তাই না? ঘুরতে আসার পর ছিন’তাই হওয়া। তাও আবার দুজন একই সাথে কোথাও হারিয়ে যাওয়া। আবার এতোক্ষন ডাব হাতে দুজন সমুদ্র পাড়ে বসে আড্ডা দেওয়া। আসলে ভাইয়া তো এতো কাহিনি করার মানুষ না, তাই ব্যাপার টা একটু সন্দেহ হচ্ছে আমার। এমন নয় তো, যে তোরা ডুবে ডুবে জল খাচ্ছির আর আমরা উপর দিয়ে নৌকা চালিয়ে চলে গেলাম, কিছু খেয়ালই করিনি৷
ফারহা কিছু না বলে কিছুক্ষন চুপ থেকে বিরক্তি নিয়ে বললো,
– তোর মাথায় কি এসব চিন্তা ছারা আর কিছুই আসে না?
– হা হা, আমার মাথা সব সময় সিক্রেট ও গভির চিন্তা ভাবনা গুলোই আসে। সো, আই এম ফ্রাউড অফ মাই মাথা।
– মাথা না, হ্যাড হবে।
– হা হা তুই আসলেই বোকা, ফানের মাঝে সিরিয়াস হয়ে যাস। আচ্ছা চল, সবার সাথে মিশে যাই। দেখবি বিষণ্ন মন মুহুর্তেই ভালো হয়ে যাবে।

কেউ সমুদ্রের বালি চরে ফুটবল খেলছে, আবার বিশাল এক দিন পানিতে লাফালাফি করছে। আর কেউ ছবি তুলতে ব্যাস্ত। আর কয়েকজন গোল হয়ে বসেছে মাঝখানে রাজিব গিটার হাতে গানের সুর ধরলো,,,,

‘আমার মন বসেনা শহরে, ইট পাথরের নগরে,,
তাইতো আইলাম সাগরে, তাইতো আইলাম সাগরে।

এই সাগর পাড়ে আইসা আমার মাতাল মাতাল লাগে,
এই রুপ দেখিয়া মন পিঞ্জরায় সুখের পঙ্খি ডাকে।

ফারহা একটা বিরক্ত নিয়ে বির বির করে বললো,
‘কচুর সুখের পঙ্খি। গত কাল থেকে শুধু দুখের পঙ্খিরাই মনাকাশ জুড়ে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে। হয়তো ছোট্ট রাজ্যটা ভালো ভাবেই দখল করেছে তারা। এবার আবরার নামক পরাজিত রাজা টা পালিয়ে না গেলেই হয়। রাজ্য জয় করে সুখ নিয়ে ফিরে এলে কি খুব ক্ষতি হবে?
,
,
দুই দিনের টুর শেষ হলে রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সবাই। শেষ রাত তাই সবাই হইচই উল্লাসে কারোরই ঘুম হয়নি বাসে।
সকালে ঢাকা এসে নামলে ব্যাগ নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সবাই।

বাড়িতে এসে কলিং বেল চেপে কাধে ব্যাগ নিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করে ফারহা। এর পর ফারদিন ঘুম কাতুর চোখে এসে দরজা খুলে দেয়। ফারহাকে দেখেই হাত ধরে এক পাশে নিয়ে গিয়ে বললো,
– সাবধানে রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে বসে থাক। আমি তোর জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি। মা খুব রেগে আছে তোর উপর। ওদেরকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়ে তোকে সবার সাথে পাঠালাম। আর তুই গিয়েই ওখানে একটা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেললি। আজ সামনে পেলে কি করে আল্লায় জানে। তুই রুমে গিয়ে বসে থাক। নাস্তা করে চুপচাপ ঘুমাবি। দরজা খুলবি না। বিষয়টা সামলে নিবো আমি। আজ কোথাও যাবো না।
ফারহা চোখ বড় বড় করে বললো,
– এতোটা রেগে আছে?
– তো রাগবে না, তোর যদি কিছু হয়ে যেত? এটা নিয়ে কতো টেনশনে ছিলো তারা। এখন ওদের সামনে পরলেই গালের মধ্যে কয়েকটা পরবে।
তাই আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ রুমে চলে গেলো ফারহা।
,
,
কিন্তু আজ সারা দিন এমন কোনো বিষয় চোখে পরেনি ফারহার। উকি দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে দেখে সবই স্বাভাবিক। মা তাকে দেখেও খুব স্বাভাবিক আচরণ করছে। দেখে মনেই হচ্ছে না যে তারা রেগে আছে।
ফারহাও সব স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে চুপচাপ রুমে গিয়ে বসে রইলো। গত দুই দিন ধরে ঘটে যাওয়া কাহিনি টা বার বার চোখের সামনে ভেষে আসছে। যতই ভাবছে ততোই বুকের ভেতর টায় ধুক ধুক শব্দ বেড়েই চলছে।
সে এখন ম্যারিড, নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছে না আজ। মনে হচ্ছে দুঃস্বপ্নে ঘটে যাওয়া একটা কাহিনি এটা। যা ঘুম ফুরালেই হারিয়ে যাবে।

সন্ধার পর মা একটা রুমে এলো হাতে একটা গোলাপি রঙের শাড়ি। বললো, দ্রত এটা পরে নিতে। ফারহা একটু অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
– এই অসময়ে শাড়ি পরবো কেন মা?
তার মা কড়া ভাবে বললো,
– পরতে বলেছি পরবি। আর বেশি সাজবি না। কারণ ছেলে পক্ষ বলেছে, মেকআপ হীন নেচারেল সাজে তোকে দেখবে।
ফারহা এবার উঠে দাড়িয়ে বললো,
– ছেলে পক্ষ মানে?
– ছেলে পক্ষ মানে কি তাও এখন তোকে বুঝিয়ে বলতে হবে? কয়দিন আগে সম্মন্ধ এসেছিলো যে ওই ছেলের বাবা মা তোকে দেখতে আসবে।
ফারহার বুকের ভেতর ধুপধুপ শব্দটা বেড়েই চলছে। কাঁপা গলায় মাকে বললো,
– কিন্তু মা, আমি এসবের জন্য মোটেও প্রস্তুত না। আর তুমি এমন করছো কেন? ওই দিন না বললা, আমি যেমনটা চাই তেমটাই হবে?
– হ্যা বলেছি, আর এখনও বলছি, তুই যখন চাইবি তখনই বিয়ে হবে। কিন্তু আজ তো তারা আসবে শুধু তোকে দেখতে। তারাতারি শাড়ি পরে রেডি হয়ে নে। ওরা এক্ষুনি চলে আসবে। আর তোকে দেখেই চলে যাবে। বেশিক্ষন থাকবে না।
বলেই শাড়িটা রেখে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো মা। ফারহা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। টুর থেকে আসার পর, সারা দিন তাহলে এই কারণে কিছু বলেনি।
সে আদৌও বুঝে উঠতে পারছে না তার সাথে ঘটতে চলেছে। একটা মেয়ের স্বামী থাকা অবস্থায় আরেকটা বিয়ে নিয়ে উঠে পরে লাগলো সবাই। অথচ চুপচাপ দেখে যাওয়া ছারা কিছুই করতে পারছে না সে।
এই নিয়ে কিছু বলতে পারতো, যদি আবরার ঠিক থাকতো। কিন্তু সে নিজেই তো ফারহাকে চায় না। তাহলে বলেই বা কি লাভ। আগে আবরারের বিষয় টা ক্লিয়ার করতে হবে।
,
,
দুই দিন পার হয়ে গেলো। কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে দিলো ফাহার মা। দেখে বাইরে ফারদিনের সাথে আবরার দাড়িয়ে আছে। ফারদিন বেতরে এসে একটু হেসে দিয়ে বললো,
– আবরারকে দেখলাম আজ নিজে থেকে আমাদের এলাকায় এসে ঘুর ঘুর করছে। দেখা করার জন্য সব সময় আমাকেই তার এলাকায় যেতে হয়। ওকে ডেকেও এখানে আনা যায়না তেমন। আজ দেখছি নিজে থেকেই এসেছে। তাই আর ছাড়াছারি নেই সোজা বাসায় নিয়ে এলাম।
– খুব ভালো করেছিস। আসো বাবা, ভেতরে আসো।
আবরার একটু হেসে সালাম দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। মা তাদের দুজনকে সোফায় বসিয়ে ফারহার রুমে গিয়ে বললো,
– তোর স্যার এসেছে। ছেলেটা তেমন আসেও না এই বাড়িতে। তারাতারি নাস্তা বানাতে হেল্প কর আমায়।
ফারহা বসা থেকে বললো,
– কোন স্যার?
– ফারদিনের বন্ধু, আবরার।
মুহুর্তেই বসা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসলো ফারহা। আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,
– উনি কেন এসেছে মা? কিছু বলেছে তোমাকে?
ফারহার চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট। তার মা প্রতি উত্তরে বললো,
– বন্ধুর বাসায় বন্ধু আসতে পারেনা? আবরার নাকি এদিকটায় এসেছিলো। তাই ফারদিন বাসায় নিয়ে এলো। কিন্তু তোকে হুট করে এমন নার্ভাস দেখাচ্ছে কেন?
ফারহা নিজেকে একটু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে একটু হেসে বললো,
– কই না তো। ওনি তো আমাদের বাসায় আসে না, তাই আরকি।
– আচ্ছা, এখন কিচেনে আয়।

আবরারের সাথে কথা বলছিলো ফারদিনে মা। হটাৎ বাসায় এলে যেমনটা কথা হয় তেমনই স্বাভাবিক। তবুও ফারহার মনের ভয়টা দুর হচ্ছে না। নাস্তা তৈরি করতে করতে অন্য চিন্তায় ডুবে আছে সে। নাস্তা তৈরি শেষে তা নামাতেই বেখেয়ালি ভাবে হাতে তেলের একটু ছিটকা পরতেই ‘আ’ করে শব্দ করে উঠে সে। মা এখান থেকে বলে,
– কিরে পারো কি হয়েছে।
– না মা কিছু হয়নি।
ফারদিন মায়ের দিকে চেয়ে বললো,
– কয়দিন পর সে অন্য বাড়ির বৌ হয়ে চলে যাবে। আর এখন তুমি তাকে এতো খাটাচ্ছো মা?
– আরে তাই তো ভালো করে কাজ কর্ম শিখাচ্ছি, যাতে অন্যের বাড়ি গিয়ে কথা শুনতে না হয়।
আবরার একটু অবাক হয়ে বললো,
– কয়দিন পর অন্যের বাড়ি মানে, ফারহার বিয়ের কথা বলছেন আন্টি?
সে একটু হেসে বললো,
– হ্যা বাবা, মোটামুটি সব ঠিকঠাক আছে। পরিক্ষার পর কথা বার্তা আগাবে আরকি। গত পরশু দেখতে এসে ওরা পছন্দ করে আংটি পড়িয়ে দিয়ে গেছে।
তখনই নাস্তা নিয়ে ওদের সামনে এসে তা রাখলো ফারহা। আবরার নিশ্চুপ হয়ে ফারহার বাম হাতের দিকে তাকিয়ে থাকলো সে। এর পর ফারহার মুখের দিকে তাকাতেই ফারহা হাতটা লুকিয়ে মাথা নিচু করে চুপচাপ চলে গেলো সেখান থেকে।
পাশ থেকে আন্টি বললো,
– নাও বাবা, শুরু করো।
আবরার ভদ্রতার খাতিরে দুই একটা মুখে নিয়ে কিছুক্ষন নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো। এর পর ফারদিনকে ফিস ফিস করে বললো,
– প্রচুর মাথা ব্যাথা করছে দোস্ত। আর কিছুক্ষন এখানে থাকলে মনে হয় আমি এখানেই মাথা ঘুরে পরে যাবো।
ফারদিন তাকে ধরে বললো,
– হুট করে আবার মাথা ব্যাথা শুরু হলো কেন? আর খুব বেশি ব্যাথা করছে?
– হুম, আমার এখনই বাসায় যেতে হবে।
– পাগল নাকি তুই যে, তোকে এই অবস্থায় যেতে দিবো? প্রয়োজনে আজ এখানেই থাকবি তুই।
পাশ থেকে মা ও বললো,
– ফারদিন ঠিকই বলেছে বাবা, আজ এখানেই থেকে যাও তুমি।
– মন খারাপ করবেন না আন্টি। বাসায় টেনশন করবে খুব। ওদেরকে বলে আসিনি। আরেক দিন আসলে তখন থাকবো।

মাথা ব্যাথার কারণটা নিয়ে আর জোড় করেনি কেউ। বিদায় নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায় সে। একটা গাড়ি ডেকে ফাদিনকে বললো,
– আচ্ছা, তুই বাসায় চলে যা। আমি একাই যেতে পারবো। প্রব্লেম হবে না।
– তোকে বাসা অব্দি এগিয়ে দিয়ে আসি?
– না দোস্ত থ্যাংক্স। যেতে পারবো আমি। আঙ্কেল টান দেন।

প্রায় বাসার কাঠাকাছি আসার পর রাস্তায় নেমে গেলো আবরার। দোকান থেকে একটা ঠান্ডা স্প্রিড নিয়ে বড় ব্রিজটার পাশে গিয়ে দাড়ায় একা। স্প্রিড বের করছে আর ফোনটা বের করলো সে। ওই দিন চট্টগ্রাম থেকে ফিরে আসার পর পরিচিত এক উকিলের নাম্বার নিয়েছিলো সে। যত বারই তাদের এই বিচ্ছেদের ব্যাপারে কথা বলার জন্য ফোন দিতে যাবে ততোবারই দেয় নি। অজানা এক কারণে ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে, আবার রেখে দিতো ফোন টা। কিন্তু আজ আর পারছে না। ফারহার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে অলরেডি।

নিজেকে সামলে নিয়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ওই নাম্বারে কল দেয় আবরার।
– আসসালামু আলাইকুম, আঙ্কেল।
– জ্বি ওয়ালাইকুম সালাম, কে বলছেন?
– আঙ্কেল আমি আবরার।
– ওহ্ আচ্ছা, নাম্বার চেন্জ করেছো নাকি?
– জ্বি আঙ্কেল, আগের ফোন টা চুরি হয়ে গেছে। আপনার সাথে কুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে কথা বলতে চাইছিলাম। আপনার কি সময় হবে?
– হ্যা, আমার অপিশে চলে আসো।
– আচ্ছা, আর আঙ্কেল, বিষয়টা খুব সিক্রেট তাই কেউ যেন না থাকে, তাই সময় চাইলাম। আমি চাইনা এসব বিষয় আমি আর আপনি ছারা কেউ জানুক আমি এসেই আপনাকে সব বলছি।
– আচ্ছা আসো। তারপর শুনবো।
– ঠিক আছে আঙ্কেল ধন্যবাদ৷

To be continue….

তোমার ছায়া পর্ব-১২

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ১২)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

ফারহা সকালে ঘুম থেকে উঠে রুমের কোথাও খুজে পেলো না আবরারকে। রুমের বাইরে এসে খুজে দেখেও পাচ্ছে না। ওই বাড়ির দুই একজন কে জিজ্ঞেস করলেও, কেউ কথা বলছেনা ফারহার সাথে।
পুনরায় রুমে ফিরে আসলে ঐ বাড়ির একটা ছোট মেয়ে চা আর বিস্কিট রেখে গেলো। মেয়েটাকে পেছন থেকে ডেকে আবরারের কথা জিজ্ঞেস করলে সে বলে, দেখেনি।

ফ্লোরে বসে দুই হাতে নিজের চুল খা’মচে ধরে কেঁদে উঠে ফারহা।
‘এই অচেনা একটা শহরে আবরার আমায় একা ফেলে চলে গেছে। কোথায় চলে গেলেন আবরার? প্লিজ আমার এখান থেকে নিয়ে যান।

কাঁদতে কাঁদতে বার বার আবরারের নাম জ্বপছে ফারহা। তখনই পেছন থেকে পুরুষ কন্ঠ ভেষে আসলো।
– কাঁদছো কেন?
আবরারের গলার স্বর শুনে পেছন ফিরে উঠে দাড়ায় ফারহা। কাঁদু গলায় বললো,
– কোথায় চলে গিয়েছিলেন আপনি আমাকে রেখে?
আবরার তার দিকে এগিয়ে এসে বললো,
– আর ইউ ম্যাড? আমি তোমাকে ফেলে চলে গিয়েছি তাও আবার অচেনা একটা জায়গায়?
– আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কোথায় ছিলেন এতোক্ষন?
আবরার তার পাশে বিছানায় বসে বললো,
– রাতে তো কিছুই খেয়াল করিনি। তাই রাস্তা খুজতে গিয়েছিলাম। চলো বের হবে।
ফারহা চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,
– এখন? মানে এতো সকালে?
আবরার একটু রেগে বললো,
– এখানে বেড়াতে আসিনি আমরা। যে আস্তে ধিরে সবাইকে বলে এখান থেকে বিদায় নিবো। আর এখন এই শহরটা কেই আমার সবচেয়ে বিরক্তিকর মনে হচ্ছে। কতোটা নিচু এদের মন মানসিকতা।
ফারহা বলার মতো কিছু খুজে না পেয়ে চুপচাপ নিচের দিকে চেয়ে আছে। আবরার উঠে দাড়িয়ে বললো,
– চলো, এখানে আর থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না। নিজেদের পথ নিজেরাই খুজে নিতে হবে।

ফারহা কিছু না বলে চুপচাপ বের হয়ে গেলো আবরারের সাথে। ভুল ঠিক কিছুই যেন বুঝতে পারছে না তারা।

সকালের সূর্য উঠতেই, ঐ বাড়িতে আশে পাশের বাড়ির মহিলাদের আগমন ধটলো। কেউ খুব আগ্রহ নিয়ে বলতে লাগলো,
– গত কাল যে ধরা খেয়ে বিয়ে করেছে ঐ ছেলে মেয়ে দুটু রাতে নাকি এখানে ছিলো? কই তারা? এই শিউলি ওদেরকে গিয়ে বলবি যে, আপনাদের কে অনেক মানুষ অভি’নন্দন জানাতে এসেছে। বাইরে আসতে।
মুহুর্তেই উপস্থিত সবাই হেসে উঠলো।

বাড়ির শিউলি নামের ঐ মেয়েটা রুমে এসে তাদের না দেখে দৌড়ে গিয়ে বললো,
– ওরা চলে গেলো, চা ও খায় নি। টেবিলে পরে আছে।
কেউ বলে উঠলো,
– কি অসভ্য রে তারা, যারা মায়া করে আশ্রয় দিয়েছে তাদের থেকেও বিদায় নিয়ে যায় নি। আর বলেই কি লাভ, ভদ্র ঘরের ছেলে মেয়ে হলে কি আর এভাবে ধরা খেয়ে বিয়ে করে?

এর পর একে একে বাড়ির উঠান খালি হয়ে গেলো। দেখে যেন মনে হচ্ছিলো, আজব কোনো প্রা’নি কে দেখার জন্য লোকজন ভিড় জমিয়েছিলো।
(বিঃদ্রঃ আমি চিটাগং এর ভাষা জানিনা। তাই কথা গুলো নরমাল ভাষায় বললাম)

সকাল সকাল সোনালি আলোয় দুজন পা ফেলে হাটছে রাস্তার পাশ ধরে। দুজনের পকেট’ই খালি। আর কিছুটা দুরে গেলে হয়তো বাজারের দেখা মিলবে। যদিও এখনো সামনে কিছু চখে পরছে না।
পাশ থেকে ফারহা আড় চোখে আবরারের দিকে চেয়ে দেখে মুখে দুই তিন টা জায়গায় কালো হয়ে আছে। আর গালের এক পাশে ছোট্ট একটা কা’টার চিহ্ন। গত কাল রাতে লোকজনের মা’রের কারণে এমনটা হয়েছে।
ফারহা’র খারাপ লাগলেও কিছু না বলে নিজের মতো করে হাটতে থাকলো। কারণ এই মুহুর্তে আবরারকে এসব বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করা মানে কা’টা গায়ে নু’নের ছি’টা দেওয়া।

বেশ কিছুক্ষন হাটার পর সামনে একটা বাজার চোখে পরলো তাদের। দোকান খোলায় সাটারের শব্দ কানে আসছে। কেউ কেউ এখন এসে দোকান খুলছে মাত্র। আর বাকি গুলো এখনো বন্ধ।
বাজারে ঢুকে একটা দোকানের সামনে এসে দাড়ালো দুজন। ফারহা’দিকে চেয়ে আবরার বললো,
– কিছু খাবে?
ফারহা চুপচাপ দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বুঝালো। যদিও আবরার বুঝতে পারছে ফারহা’র ঠিকই ক্ষুদা লেগেছে। কারন গত কাল রাতেও কিছু খায়নি। হয়তো এখন টাকা নেই দেখে কিছু বলছে না।
আবরার একটু সামনে গিয়ে একটা মুদি দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলো,
– ভাই, সামনে এই বিকাশ দোকান টা কখন খুলবে বলতে পারেন?
লোকটা বললো,
– লাগবে হয়তো কিছু সময়। সে একটু দেড়ি করে আসে।
– আচ্ছা ধন্যবাদ।

প্রায় ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করার পর ওই দোকান টা খুললো। আবরার ফারহাকে নিয়ে ওই দোকানের সামনে এগিয়ে গেলো।
– ভাই একটা কল করা যাবে? খুব জরুরি।
লোকটা একটু উপর নিচ চেয়ে বললো,
– প্রতি মিনিট পাঁচ টাকা।
– আচ্ছা দশ টাকা করে দিবো, দেন।

বাসায় ফোন করে কোনো বিপদের কথা বলে ঝামেলা বাড়াতে চায় না আবরার। তাই ফারহাকে বললো,
– ফারদিনের নাম্বার টা জানো?
ফারহা মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যা’ সূচক জবাব দিয়ে বললো,
– প্লিজ বাসায় কিছু বলবেন না। আমাকে বাড়িতেই ঢুকতে দেবে না তাহলে।
আবরার একটু বিরক্তি নিয়ে বললো,
– ঝামেলা বাড়ানোর ইচ্ছা আমারও নেই। অন্য দরকারে নাম্বার চেয়েছি।

এর পর নাম্বার টা নিয়ে কয়েকবার কল দিলে অবশেষে রিসিভ করলো ফারদিন। ওপাশ থেকে বিরক্তিকর গলা ভেসে উঠলো,
– আরে ভাই, দেখছেন যে ফোন রিসিভ করছি না। তাও কেন বার বার ফোন দিয়ে বিরক্ত করছেন। দুই বারের উপরে কেউ ফোন রিসিভ না করলে জানেন না যে, সে হতো বিজি আছে, নয়তো ফোন তার কাছে নেই।
আবরার বললো,
– আরে শুন, আমি আবরার। বিপদে পরেছি খুব।
ফারদিন হুট করে শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে বললো,
– আবরার, কি বিপদ? কিছু হয়েছে তোর?
– ভাই এখানে একা একটু বের হয়েছিলাম, তখনই ছিন’তাই কারির কবলে পরে সব হারালাম। দুটু হাত আর পা ছারা এখন কিছুই নেই। দ্রুত এই নাম্বারে কিছু টাকা পাঠা তো। আমি ঢাকায় এসেই ব্যাক করে দিবো।
– হায় হায় বলিস কি? তোর কোনো ক্ষতি হয় নি তো? ফারহা আয়রিন এরা ঠিক আছে তো? গত কাল রাত থেকে ফারহা আর তোর ফোন বন্ধ।
– ফারহারও ফোন টাকা সব নিয়ে গেছে। এখন আমার পাশেই আছে সে।
– কিভাবে হলো এসব? আর বাকিরা কোথায় ছিলো?
– ভাই তোকে পরে সব বলবো।
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি এক্ষুনি পাঠাচ্ছি টাকা। তোরা সেভ আছিস তো?
– হুম,,,

আবরার এর পর আয়রিন কে ফোন দিয়ে এখন কোথায় আছে জেনে নিলো। আয়রিন অনেক উত্তেজিত হলেও আবরার ঠান্ডা মাথায় বললো,
– স্যারকে গিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে বলবি। আর বলবি যে ভাইয়া একটা ছোট্ট ঝামেলায় পরেছে।

কিছুক্ষন বসে থাকার পর আবরার দোকানদারটাকে বললো,
– ভাই টাকা এসেছে?
– হ্যা, এই নিন।
– ধন্যবাদ।
বলেই ফারহাকে নিয়ে হাটা ধরলো আবরার। দেখে ভালো কোনো রেস্টুরেন্টও নেই। যেই কয়টা আছে, সেগুলো এখনো বন্ধ৷ রাস্তার পাশে কিছু চায়ের দোকান চোখে পরলো। ফারহাকে সাথে নিয়ে ওখানে গিয়ে বললো,
– ভাই কি পাওয়া যাবে এখানে?
লোকটা বললো,
– পরোটা, ডিম, আর চা।
– আর ভালো কিছু নেই?
– না ভাই। এখনো এগুলো ছারা কিছু তৈরি হয় নি এখনো।
– আচ্ছা তাহলে এগুলোই দিন। একটু তারাতারি করুন। আমাদের তাড়া আছে।

সব শেষে একটা সি’এন’জি নিয়ে বাকিদের কাছে পৌছাতে প্রায় ঘন্টা খানেক লেগে গেলো। তখন প্রায় ৯ টা।
ভোর ছয়টায় সকলের রওনা দেওয়ার কথা ছিলো। সবার কাছে যেতেই সবাই তাদের ঘিরে ধরলো। মুখে আঘাতের দাগ গুলো দেখে বাকি স্যার রা ব্যাস্ত হয়ে বিষয়টা জানতে।আবরার ছিনতাই কারির বিষয়টা বুঝিয়ে বললে সবাই অবাক হয়ে মুখে হাত দেয়। প্রন্সিপাল স্যার বললো,
– সকালে তোমাদের ফোন না পেলে তো এতোক্ষনে পুলিশে ইনফর্ম করতাম। যাই হোক তোমরা ভালো আছো, এটাই অনেক।

বিষয়টা নিয়ে এই মুহুর্তে আর কথা বারালো না কেউ।
রওয়া দিতে দেড়ি করায়, কক্সবাজার পৌছাতে প্রায় দুপুর হয়ে গেলো। সবাই রেডি হয়ে চলে গেলো সমুদ্রের তীরে। এক পাশে চুপচাপ বসে আছে ফারহা। আয়রিন এসে বললো,
– এখনো মন খারাপ করে আছিস? দেখ যা গেলো মালের উপর দিয়ে গেছে। জা’নের উপর দিয়ে যায় নি এর জন্য ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বল।আর এখন এসব চিন্তা বাদ দে। চল বাকিদের সাথে ইনজয় করি।
– ভালো লাগছে না, তুই যা আমি একটু পর আসবো।
যদিও ফারহার ইচ্ছে শক্তি সব ফুরিয়ে গেছে। তবুও আয়রিনকে পাঠাতে কথাটা বললো সে। এর পর আবারও বিষণ্ন মনে বসে আছে চুপচাপ। ভাবতে লাগলো, সব কি করে সামলাবে সে? আর হুট করে হয়ে যাওয়া এই সম্পর্ক টার শেষ টা কোথায় গিয়ে দাড়াবে?

একটু পর দুইটা ডাব হাতে ফারহার পাশে এসে দাড়ালো আবরার। ফারহার প্রতি তার একটু রাগ আছে এটাই স্বাভাবিক। তবুও মেয়েটাও ডিপ্রেশনে আছে প্রচুর। নিজেদের মাঝে আগে বিষয় টা সমাধান না হলে, ঝামেলা টা আরো বড় হয়ে যাবে।
হুট করে ফারহা কেঁদে দিয়ে বললো,
– কেন হলো এমন টা? আমি তো এভাবে কিছু চাইনি। আমার ফ্যামিলি আমায় নিয়ে কতটা গর্বিত ছিলো। কতো বিশ্বাস করতো আমাকে আর শেষে আমি কিনা,,,,
পাশ থেকে আবরার বললো,
– এটা মাত্রই একটা এক্সিডেন্ট ছিলো। আর প্রত্যেক সমস্যারই একটা সমাধান আছে। আর আমাদের দুজনেরই কোনো ঝামেলা হোক, অথবা আমাদের ফ্যামিলির কোনো দুর্ণাম হোক। আর বিশেষ করে ফারদিনের সাথে আমার সম্পর্ক টা নষ্ট হোক তা আমি চাইনা। বিষয় টা আমাদের মাঝেই সমাধান করাটা ঠিক হবে।
ফারহা আবরারের দিকে চেয়ে বললো,
– কিভাবে?
আবরার একটা দির্ঘশ্বাস ছেরে বললো,
– বিষয় টা জানাজানি না করে, আমরা নিজেরাই আলাদা হয়ে গেলে তো আর কোনো ঝামেলা তৈরি হবে না তাই না?
এই কথাটায় যেন আবরারের গলাটা খুব ভারি শোনালো। ফারহা এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তার দিকে। বার বার বলতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। যে, আমরা আলাদা হবো না। আমি তো আপনাকেই চাইতাম। হয়তো ভাগ্য তা অন্যভাবে করে দিয়েছে। প্রয়োজনে ফ্রেন্ডলি আমার পাশে থাকবেন। তবুও আলাদা হবেন না প্লিজ। ভালোবাসা হারানোর কষ্টের ঢেউ টা অনেক আগে আমাকে ভিজিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো। আমি চাইনা আবার সেই কষ্ট আমাকে এসে ছুয়ে দিয়ে যাক। আমি নিঃশেষ হয়ে যাবো এবার। প্রয়োজনে ‘ছায়া’ হয়ে পাশে থাকবেন আমার। তবুও ছেরে যাবেন না প্লিজ।

কিন্তু চাইলেও কথা গুলো বলতে পারছে না ফারহা। বার বার গলার মাঝে দলা পাকিয়ে কি যেন আটকে যাচ্ছে। ফ্যামিলির কথা ভেবে হলেও আবরারের কথার ছোট্ট করে একটা জবাব দিলো,
– আচ্ছা।

To be continue…..

তোমার ছায়া পর্ব-১১

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ১১)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

ফারহাকে এক হাতে ধরে জঙ্গলের পথ ধরে এগুতে থাকে আবরার। এতো বড় জঙ্গলে ফারহাকে নিয়ে কোন দিকে যাবে সেটাও নিশ্চিত করতে পারছে না সে। পত ধরে এগিয়ে যেতে যেতে হটাৎ থমকে দাড়ায় আবরার। পারহার দিয়ে চেয়ে দেখে, ফারহার দুটি ভয় মাখা চোখ তার দিকে ঝাপসা অন্ধকারে তাকিয়ে আছে।
আবরারের দিকে চেয়ে কাঁপা গলায় বললো,
– হটাৎ থেমে গেলেন কেন?
আবরার বললো,
– এই পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। যদি ওরা আবার ফিরে আসে তাহলে ধরা পরে যাবো। তাছারা ওরা এতো সহজে আমাদের ছেরে দিয়েছে এটা বিশ্বাস যোগ্য না। বিপদ এখনো পুরোপুরি কাটেনি। তুমি পাশে না থাকলে হয়তো এতোটা টেনশন থাকতো না। এখন এই গভির জঙ্গলে তোমাকে নিয়েই যত টেনশন। তাই সোজা পথে না হেটে আমাদের জঙ্গলের মাঝ দিয়ে পথ খুজে নিতে হবে।

ফারহা আর কিছু বলছে না। ভয় মাখা চেহারা নিয়ে আবরারের দিকে তাকিয়ে আছে। আবরার ফারহার হাত ধরে এবার পথ ছেরে জঙ্গলের মাঝে ঢুকে গেলো।
অনেকটা পথ আসার পর ফারহা পা ধরে বললো,
– আমি আর হাটতে পারছি না। পা টা ব্যাথা করছে খুব। কা’টার আ’ঘাতে হয়তো কিছুটা ছিলেও গেছে।
আবরার আবছা অন্ধকারে চার পাশে তাকিয়ে একটা ভাঙা গাছের উপর ফারহাকে বসালো। পাশে নিজেও বসলো।
ফারহা কাঁদু কাঁদু ভাব নিয়ে বললো,
– আমরা কি এখান থেকে বের হতে পারবো না? আমার খুব ভয় হচ্ছে।
আবরার ফারহাকে আশ্বাস দিতে বললো,
– ভয় পেও না, আমি আছি। একটা না একটা ব্যবস্থা নিশ্চই হয়ে যাবে।
– কিভাবে বের হবো? আমরা তো এখানের কিছুই চিনিনা। তাছারা ফোনও নেই যে, কাউকে কল দিবো বা লোকেশন দেখে বের হবো।

ফারহার কথা গুলো আর কানে আসছেনা আবরারের। কিছুটা দুরে কিছুর উপস্থিতি টের পেয়ে, তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে ওদিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন।
দেখে কয়েকটা লোক, টর্চ হাতে কিছু খুজে বেড়াচ্ছে। কেউ একজন কড়া গলায় বললো,
– কোথায় হাড়িয়ে গেলো চোখের পলকে? মেয়েটাকে আমার চাই চাই। সারা জঙ্গল খুজে দেখ।
মুহুর্তেই বুকটা ধুক করে উঠলো আবরারের। পাশে থাকা ফারহার হাত ধরে চার পাশে তাকিয়ে দেখে কিছু কিছু বড় গাছের গোড়ায় অনেক ঝোপ। লুকানোর জন্য আপাতত এর চেয়ে ভালো জায়গা এই মুহুর্তে চোখে পরছে না। যদিও এসব যায়গায় সা’সাপের ভয় অনেকটা বেশি। তবুও যেভাবেই হোক, ফারহাকে ওদের চোখের আড়াল করতে হবে।
ফারহার দিকে তাকিয়ে মুখে আঙুলের ইশারা দিয়ে বললো,
– একধম সাউন্ড করবে না। ওরা আবার আমাদের খুজতে এখানে চলে এসেছে। আমার সাথে এসো চুপচাপ। আর ভয় পেলে চোখ বন্ধ করে থাকবে।

বলেই ফারহাকে নিয়ে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পরলো সে। দেখে ফারহা মুখে কিছু না বললেও চোখ বন্ধ করে ভয়ে থর থর করে কাঁপছে।
হটাৎই আবরার ফারহাকে টেনে বুকের সাথে চেপে ধরে আরো আড়াল করার চেষ্টা করছে। মাথাটা এক হাতে বুকের সাথে চেপে ধরে আছে, যেন ফারহা চাইলেও কিছু দেখতে না পায়।
আবরারের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে ফারহা। যেন এই বুকটাই এই মুহুর্তে তার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান।
আবরার ঝোপের আড়ালো লোক গুলোর উপস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছে।

লোক গুলো কিছুক্ষন টর্চ নিয়ে এদিক ওদিক খোজাখুজি করে অন্য দিকে চলে গেলো। একটা স্বস্থির নিশ্বাস নিয়ে ফারহার দিকে স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো সে। কোথায় এসে কিসের মাঝে ফেঁসে গেলো দুজন।

ধিরে ধিরে ঘন অন্ধকার নেমে এলো। আবরার ফারহার গালে হাত রেখে বললো,
– তুমি খুব সাহসি মেয়ে। মোটেও ভিতু নও। বুকে সাহস নিয়ে শুধু আমাকে ফলো করবে। আমি যা করবো তাই করবে। এই নাও একটা লা’ঠি। আমি একটা নিলাম। কোনো বিপদ আসলেই আক্র’মণ করে বসবে। মনে রেখো এই অচেনা শহরের মানুষ রুপি প’শু গুলোর জীবনের চেয়ে নিজের ইজ্জত ও জীবন দুটুই খুব গুরুত্বপূর্ণ।

দুইটা লা’ঠি হাতে দুজন এক পা, এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষন হেটে ফারহা মাটিতে বসে বললো,
– পানি খাবো। খুব তৃষ্ণা পেয়েছে।
আবরার চার পাশে তাকিয়ে বললো,
– এখন এই জায়গায় পানি কোথায় পাবে তুমি? দেখো ফারহা, খাওয়ার চিন্তা পরে করা যাবে। আপাততঃ এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুজতে হবে। কষ্ট করে আর কিছুটা চলো, হয়তো কিছু পেলেও পেতে পারি।

ফারহা চুপচাপ মাথা নাড়িয়ে আবার উঠে দাড়ালো। আবরার তাকে ধরে আবার সামনের দিকে পা চালালো। বেশ কিছুটা পথ আসার পর খুটখুটে অন্ধকারের মাঝে কিছু আলো চোখে পরলো। সামনেই হয়তো কোনো রাস্তা বা কারো বাড়ি-ঘর অথবা বাজার এমন কিছু।
দুজনের মুখেই হাসি ফুটে উঠলো। ফারহা খুব ভয়ে ছিলো। নতুন জীবন পাওয়ার মতো আনন্দে আবরারকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সে।
আবরা হেসে বললো,
– এখনই এতো খুশি হওয়ার দরকার নেই। আগে এইসব থেকে একেবারে মুক্ত হই।
বলেই ফারহাকে ধরে আবার সামনের দিকে এগিয়ে গেলো সে।

খুটখুটে অন্ধকারে কিচুটা পথ এগিয়ে গেলে দেখে। কয়েক টা লোক টর্চ হাতে তাদের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
– এই কারা তোমরা? আর এতো রাতে জঙ্গলে কি করতে গিয়েছিলে, দুজন?
পাশ থেকে একটা লোক বললো,
– কি আর করতে যাবে? বুঝতেছেন না, ওরা কি করে বের হচ্ছে?
ওদের কথা শুনে আবরার বললো,
– দেখুব আপনারা যেমনটা ভাবছেন, বিষয়টা মোটেও এমন নয়। আমরা খুব বিপদে পরে এখানে চলে এসেছি।
আবরারের কথায় লোকটা স্ব-শব্দে হেসে বললো,
– হাতে নাতে ধরা পরলে সকলে এমনই কাহিনি শুনায়। আর যদি সত্য হয়, তাহলে বলো তোমাদের পরিচয় কি? কি হও একে অপরের?

একটগ আগেও ভাই বোন পরিচয় দিয়েছে, সেই থেকে ফারহা ভয়ে ভয়ে বললো,
– আমার ভাইয়া হয়,,
আর অপর দিকে আবরার বলে ফেলে,
– আমার ওয়াইফ হয়।
এর পর দুজনই একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
লোকগুলো আবরারের কলার চেপে ধরে বললো,
– এর পরেও আবার কি কাহিনি সাজাবি দুজন?
ফারহা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আবরারে পেছনে ঘেসে দাড়ালো।
আবরার লোকটার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বললো,
– কি করছেন আপনারা? আর আমরা যেই হই, আর যাই করি এতে আপনাদের প্রব্লেম কোথায়?
পাশ থেকে আরেকটা লোক বললো,
– এতো দেখি চোরের মায়ের বড় গলা।

কিছুক্ষনের মাঝে ওখানে চেচামেচি শুনে অনেক মানুষ এসে জড়ো হয়। কেও কেও জিজ্ঞেস করছে, ভাই কি হয়েছে? কারা এরা?
পত্যেক বারই উত্তর আসে,
– আরে ভাই, আর বলবেন না, দুজন জঙ্গলে ঢুকে ফষ্টিনষ্টি করছিলো, আর এখন হাতে নাতে ধরা খেয়ে বড় বড় কথা বলছে।
একটার পর একটা ঝামেলার জন্য আবরারের মাথা এমনিতেই খারাপ ছিলো। তাই চিৎকার করে বলে উঠে,
– মুখ সামলে কথা বলুন। এখানে কেউই আমার পরিচিত নন। তাই বেয়া’দবি করতে দ্বিতীয় বার ভাববো না৷ ভালোয় ভালোয় বলছি আমাদের যেতে দিন।
মুহুর্তেই কয়েকটা ছেলে এসে আবরারকে লা’থি ঘু’সি মে’রে দেয়। তখনই একটা গাড়ি এসে তাদের সামনে দাড়ায়। আর একটা লোক নেমে বললো,
– কি হয়েছে, এতো ভির কেন এখানে?
একটা লোক তাকে চেয়ারম্যান বলে সম্বোধন করে, তাদের বানানো কাহিনিটা খুলে বললো।
চেয়ারম্যান বললো,
– কয়দিন আগে একটা ঘটনা ঘটেছিলো না এই জঙ্গলে? ওই যে মজিদ ভাইয়ের মেয়েটা কোন ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়েছিলো। তারপর পর দুই দিন পর সকালে জঙ্গলে ওই মেয়েটার লা’শ পাওয়া যায়।

লোকজনের নানার কিচির মিচিরের মাঝে চেয়ারম্যান বললো,
– আজ রাতের মাঝে দুজনের বিয়ে পরিয়ে দেওয়া হবে।
আবরার এবার করুন গলায় বললো,
– প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন, আমরা বিপদে পরে এখানে এসেছি।
তখনই আবরারকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
– হয়তো তুমি মেয়েটাকে আজ বিয়ে করে কালকে সকালেই এই এলাকা ছারবে, আর নয়তো দুজনকেই পু’লিশে দেওয়া হবে, জঙ্গলে ফষ্টিনষ্টি করার কারণে। এর পর দুজনের ফ্যামিলি এসে ছারিয়ে নিয়ে যাবে। আর আজকাল কার ছেলে মেয়েরা আকাম করার সময় ভাবে না৷ আর ধরা খেলে সব মিথ্যা সাজাতে থাকে।

অপর দিকে দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে আছে ফারহা। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরছে জল। জীবনে কখনো কল্পনাও করেনি তার নামের পাশে এমন একটা কলঙ্ক যোগ হবে।
এটা খুব দ্রুতেই সারা এলাকায় ছড়াতে থাকে, দুইটা ছেলে মেয়ে জঙ্গলে আকাম করতে গিয়ে এলাকা বাসির হাতে ধরা পরেছে। তাই রাতের মাঝে দুজনকে বিয়ে করিয়ে পরদিন এলাকা ছারা করবে।

এখানে সবাই অপরিচিত। আর এমন একটা জঘন্য কলঙ্ক নিয়ে ফ্যামিলির সামনে দাড়াতে চায়না তারা কেউই। তাদের দুজনের ফ্যামিলি এসব শুনলে কখনোই নিতে পারবে না। আর ফারদিন তো তার বেষ্ট ফ্রেন্ড। আর সে নিজে একজন ভার্সিটির টিচার। এমন একটা মিথ্যা কলঙ্ক নিয়ে কিভাবে সবার সামনে দাড়াবে দুজন?

রাত তখন ১২ টা। দুজনকেই একটা বাড়িতে নিয়ে বিয়ে পরিয়ে দিলো সবাই। তারপর রাতে এখানে থাকতে দিলো আর বললো, ভোর হতেই এলাকা ছারবে দুজন।

আবরারের চোখ দুটু রক্তিম লাল হয়ে আছে। মাথাটা দুই হাতে চেপে ধরে শক্ত হয়ে বসে আছে সে। একটু পর পর বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত নিজের ছাত্রী ও বন্ধুর বোনের সাথে এমন একটা কলঙ্কে জড়িয়ে তাকেই বিয়ে করতে হলো? ফারদিনের সামনেই বা কিভাবে দাড়াবে সে?

আর অন্য পাশে বিছানার এক কোনে বসে বসে কাঁন্না করছে ফারহা। তার ফ্যামিলি তাকে কত বিশ্বাস করতো। বাবা তো সব সময় বলতো, আমার ফারু কখনো আমার কথার বাইরে কিছু করবে না।
আর মা তো বলেই দিলো তাদের সম্মান নষ্ট হবে এমন কিছু করলে, আর তাদের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করলে ডিরেক্ট তে’জ্য মেয়ে করে দিবে।
বাবা ও ভাইয়ের বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে পারেনি সে। তাই বিছানার এক কোনে বসে ডুকরে কেঁদে উঠে ফারহা।

To be continue……

তোমার ছায়া পর্ব-১০

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ১০)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

চট্টগ্রাম পৌছাতে সকাল হয়ে গেলো তাদের। কারো ডাকে চোখ মেলে তাকায় ফারহা। বাইরে তাকিয়ে দেখে নতুন একটা শহরে এসে পৌছালো। সবে সকাল হয়েছে, ভোরের আলোয় চার পাশটা এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার হয় নি।

সব কিছু আগে থেকেই রেডি ছিলো। যার যার ব্যাগ নিয়ে একটা হোটেলে গিয়ে উঠলো সবাই। আজ সারা দিন পাহারি অঞ্চল ঘুরে এর পর দিন কক্সবাজার। এর পর ডিরেক্ট ঢাকা ব্যাক করবে।

ব্যাগ কাধে নিয়ে ফারহা আয়রিন ও সাথি একটা রুমে গিয়ে বসলো।
সকালের নাস্তা শেষে চার পাশ টা ঘুরে ফিরে দেখছে সবাই। সাথি চার পাশটা দেখে বললো,
– জায়গা টা দারুন। সেই সাথে পরিবেশ ও আতিথেয়তা ও খারাপ না। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না, হাজার টাকা দিয়ে এতোকিছু করা যায়। আবার এর পর নাকি কক্সবাজার। হাজার টাকায় এতো কিছু কেমনে করছে কে জানে।
পাশ থেকে আয়রিন একটু হেসে বললো,
– তোর কি মনে হয়, তোদের সেই হাজার টাকায় এতো কিছু হয়ে যাবে? আরে টাকা গুলো তো নিয়েছে আমাদের টুকটাক খরচের জন্য। বাকি সব তো কলেজের প্রতিষ্টাতা মুমিন আহমেদ চৌধুরিই দিচ্ছে। নাহলে এতো স্টুডেন্ট নিয়ে দুই দিনের টুরে আসা কোনো সহজ কাজ নয়। আমরাই প্রথম যে কলেজ থেকে এত দুর ও দুই দিনের টুরে এসেছি।
পাশ থেকে ফারহা বললো,
– আমার একটুও ভালো লাগছে না। লং যার্নি করলে আমার মথা ঘুরতে থাকে। মনে হয় যেন চার পাশ টা আমার সাথে সাথে ঘুরছে।
আয়রিন একটা হাসি দিয়ে বললো,
– আচ্ছা ফারহা এখন বলতো পশ্চিম কোন দিকে?
ফারহা একটু ভাব নিয়ে উত্তর দিকে দেখিয়ে বললো,
– এই দিকে।
আয়রিন হাসতে হাসতে বলে,
– তাহলে দক্ষিন দিকে কি সূর্য উঠে? তুই পূর্ব দিকের সূর্য দেখেই তো বলতে পারতি পশ্চিম কোন দিকে।
পাশ থেকে সাথি বললো,
– তাকে নিয়ে তুই এতো মজা নিচ্ছিস কেন আয়রিন? সে তো বললোই তার মাথা টা ঘুরছে।
আয়রিন একটু রাগি ভাব নিয়ে বললো,
– আমার ভাবিকে নিয়ে আমি মজা নিবো না তো, কে নিবে? যান ভাবি, আপনি রুমে গিয়ে বিশ্রাম নিন।
ফারহা একটু রেগে বললো,
– উল্টা পাল্টা কথা বললে চ’র খাবি একটা।
,
,
সারা দিন ঘুরে ফিরে সন্ধার আগে হোটেলে ফিরে আসলো সবাই। রাত টা এখানে কাটিয়ে, পরদিন সকালে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। তারপর সন্ধায় ডিরেক্ট ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে।

পাশেই একটা বড় লিচু বাগান আছে। ওখানেই সময় কাটাচ্ছে অনেকে। তাদের থেকে ঠিক কিছুটা দুরে একটা বেঞ্চিতে বিষণ্ন মনে বসে আছে আবরার।
কলেজে স্যার হলেও এখানে স্যার নয়, কথা বলাই যায়। তাই এক পা এক পা করে আবরারের পাশে গিয়ে দাড়ালো ফারহা। চার পাশের সবাইকে দেখে আবরারকে বললো,
– সবাই কতো আনন্দ করছে, আর আপনি বিষণ্ন মনে বসে আছেন কেন স্যার? মন খারাপ?
আবরার ফারহার দিকে চেয়ে বললো,
– তোমার যেনে কি লাভ?
ফারহা একটু বিরক্তি নিয়ে বললো,
– সব সময় এতো তেঁতো কথা বলেন কেন? আপনি কি কখনো মিষ্টি খান নি?
– খাই তো কেন?
– তাহলে মিষ্টি আর তেতো কড়লার মাঝে পার্থক্যটা নিশ্চই বোঝেন। আচ্ছা আপনাকে যদি একটা পাত্রে তেতো কড়লা আরেকটা পাত্রে মিষ্টি রাখা হয়, তাহলে আপনি কোনটা বেছে নিবেন?
– অবশ্যই মিষ্টি।
– ঠিক তেমনই তেতো কথা কারো পছন্দ না। একটু মিষ্টি করে কথা বলাটাই সকলে পছন্দ করে।
আবরার এক হাতে ইশারা করে থামিয়ে বললো,
– ওয়েট ওয়েট, তুমি কি আমাকে ইনডিরেক্টলি তেতো কড়লার সাথে তুলনা করলে?
ফারকা ছোট্ট করে জ্বিভে কামর কেটে বললো,
– এই না না স্যার, আমি মোটেও এমনটা বলিনি। একটু মিষ্টি করে কথা বলতে বলেছি যাস্ট।
আবরার একটু হেসে বললো,
– চলো আজ তোমাকে ডিরেক্ট মিষ্টি কিছুই খাওয়াবো।
ফারহা একটু অবাক হয়ে বললো,
– কিভাবে?
আবরার রাস্তার দিকে দেখিয়ে দিয়ে বললো,
– ওই যে দেখছো একটা লোক রাস্তায় দাড়িয়ে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করছে।
ফারহা তাকিয়ে বললো,
– হাওয়াই মিঠাই আমার খুব প্রিয়।
– তাই? তাহলে আসো।

আবরার রাস্তায় দাড়িয়ে তিনটা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে বললো,
– একটা আয়রিন আরেকটা সাথি কে দিবে। অন্যটা তোমার।

তখনই একটা গাড়ি এসে তাদের সামনে দাড়িয়ে দুজনকেই মুখ চেপে ধরে গাড়ির মাঝে উঠিয়ে নেয়। তারপর কিছু বুঝে উঠার আগেই এক টানে অনেকটা দুর চলে আসে। গাড়িতে বসে ফারহা হেল্প হেল্প বলে চিৎকার করতেই দুইটা ছেলে দুইটা ছু’রি নিয়ে ফারহা ও আবরারের গলায় ধরে বললো,
– আর একবার আওয়াজ করলে ডিরেক্ট গ’লা নামিয়ে দিবো।
ভয়ে ফারহার সারা শরির থর থর করে কাঁপছে। ইতি মধ্যে কপাল জুড়ে চিকন ঘাম দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো কেউই বুঝতে পারছে না। চিৎকার করতে পারছে না, বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে শুধু।
,
,
বেশ কিছুক্ষন পর একটা জঙ্গলে এসে গাড়ি থামালো তারা। ফারহা ও আবরারের গলায় ছু’রি ধরে দুইজনকে দুইটা গাছের সাথে বেধে নিলো। তারপর একজন তাদের সামনে এসে বললো,
– দুজনের ফ্যামিলি কেই ফোন কর। আর বল আজকের মধ্যে বিশ লাখ টাকা রেডি করতে নয়তো দুজনকে এই জঙ্গলেই পু’তে রেখে দিব।

ফারহা এখনো থর থর করে কাঁপছে। আবরার পাশ থেকে বললো,
– ফ্যামিলি কোথায় পাবো ভাইয়া? আমরা দুই ভাইবোন এতিম খানায় মানুষ হয়েছি। এর পর কলেজে ভর্তি হয়ে কোনো রকম টিউশনি করে পড়াশুনা ও নিজেরা চলি। এই বিশাল পৃথিবীতে আমার শুধু সে আছে আর তার শুধু আমি আছি। বিশ্বাস করুন, আমাদের আপন বলতে আর কেও নেই। আর আপনারা খুজে ফিরে আমাদের দুইজন এতিম ভাই বোনকেই কেন তুলে এনেছেন বলুন।
ছিনতাইকারীর দলের লোকটা বললো,
– একধম মিথ্যা বলতে যাবি না। তোদের দজনকেই দেখে মনে হচ্ছে ভালো ফ্যামিলির ছেলে মেয়ে। কিসব মিথ্যা নাটক করছিস?
আবরার আবারও কাঁন্নার ভান করে বললো,
– মৃ’ত্যুর মুখে দাড়িয়ে মিথ্যা বলবো কেন ভাইয়া? সত্যিই আমরা এতিম।
লোকটা এবার পাশের একটা ছেলেকে থা’প্পর মেরে বললো,
– কিসব ফকির ধরে আনলি? কোনো কাজ ঠিক ভাবে করতে পারিস না। বললাম বড় ফ্যামিলির কোনো ছেলে মেয়ে থাকলে তুলে আনবি। আকাইম্মার দল সব আমার ঘাড়ে এসে চাপে।
এর পর আবরারের দিকে চেয়ে বললো,
– এই চুপচাপ যা আছে তাই বের কর। এই মিলন, যা কি কি আছে সব নিয়ে নে।

মুহুর্তেই কয়েকটা ছেলে এসে তাদের থেকে সব নিয়ে নিতে লাগলো। আবরারের দুইটা ফোন ও ফারহার একটা ফোন। সাথে আবরারের মানিব্যাগ এ পনেরো হাজারের মতো টাকা ছিলো আর ফারহার পার্সে ছিলো দুই হাজারের মতো।
সব নিয়ে তাদের জঙ্গলে ছেরে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো তারা।
আবরার ও ফারহার কাছে এই মুহুর্তে জামা কাপর ব্যাতিত আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

চার দিকে খুটখুটে অন্ধকার নেমে এলো। জঙ্গল জুড়ে ভৌতিক পরিবেশ। ফারহা ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে এসে আবরারকে জড়িয়ে ধরলো। আবরার একটু অবাক হলেও বিষয়টা মাথায় নিলো না। বুঝতেই পারছে ভয়ে ফারহা থর থর করে কাঁপছে। আপাতত এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুজতে হবে। তাই ফারহাকে ওভাবেই এক হাতে চেপে ধরে জঙ্গলের পথ ধরে হাটা ধরলো সে। বের হতে কতোক্ষন লাগবে কে জানে। কিছুই চিনেনা এখানকার। কাউকে ফোন দিবে, সেই উপায়ও নেই।

কিছুদুর যাওয়ার পর হটাৎ গাড়ি ব্রেক করে দাড়ায় লোক গুলো। একটা ছেলে বললো,
– বস, এতিম ছেলে, টেনে টুনে সব কিছু চালায়। বিষয়টা এমন হলে তারা একসাথে দুইটা ফোন চালানোর কথা না৷ তাছারা দুজনের কাছেই এতো জিনিস আর এতো টাকা, একসাথে পাওয়া যেতো না। আর আরেকটা বিষয় কিন্তু আমরা মিস করে ফেলে যাচ্ছি।
টিমের বস বললো,
– কি জিনিস?
– মেয়েটাকে দেখেছেন আপনি? চিকন চাকন একটা মেয়ে, যেমন চেহারা তেমন তার ফিগার। আর এতো বড় জঙ্গলে তার সাথে শুধু একটা ছেলে। এমন সুজুগ খুব কমই আসে। প্রয়োজনে ছেলেটাকে মে’রে দিয়ে মেয়েটাকে তু’লে নিয়ে সারা রাত পার্টি হলেও তো মন্দ হয় না।
পাশ থেকে আরেকটা ছেলে বললো,
– গুড আইডিয়া।
এর মাঝে টিমের বস বললো,
– গাড়ি ঘুরা, আর সারা জঙ্গলে ছড়িয়ে খুজে বের করবি দুজনকে। মেয়েটাকে আমার চাই।

To be continue…..

তোমার ছায়া পর্ব-০৯

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ৯)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

বোঁচা মিঞা হাতে একটা সু-দর্শন ছেলের ছবি হাতে নিয়ে অন্য হাতে চায়ের কাপে চুমুক দিলো। পাশেই বসে আছে ফারদিন ও তার বাবা।
বোঁচা মিঞা এক টানে চা টা শেষ করে ছবির দিকে তাকিয়ে ফারদিনের বাবাকে বললো,
– এমন ছেলে হাতে পাওয়াটাও ভাগ্যের ব্যাপার। তাকিয়ে দেখেন, একেবারে হিরের টুকরো। তাছারা পূর্ব থেকেই বংশেরও নাম ডাক অনেক। ফারহা মাকে একেবারে রাণীর মতো রাখবে তারা। ফারহা কলেজ থেকে আসার সময় নাকি ছেলে তাকে দেখেছিলো। তাই আপনার কাছে বার বার পাঠাচ্ছে আমাকে। ওদের একটাই কথা, ওরা শুধু ফারহা মাকেই চায় আর কিছু না। তাছারা এমন সম্মন্ধ ও আর পাবেন না।
এর মাঝেই ফারদিন বললো,
– আর পাবো না মানে কি? আমাদের ফারু দেখতে খারাপ নাকি আমাদের ফ্যামিলি খুব দুর্বল? যে এতোই ছোট মনে করছেন আমাকে।

বোঁচা মিঞা দাত কেলিয়ে বললো,
– আরে আরে রেগে যাচ্ছে কেন বাবা? আমি এভাবে বলিনি। বলেছি ছেলে দেখতে শুনতে ভালো, ফ্যামিলি ভালো, জবও ভালো। তাহলে প্রব্লেমটা কি? একটা মেয়েকে সুখে রাখতে হলে আর কি লাগে বলো।
ফারহার বাবা এবার থামিয়ে বললো,
– আচ্ছা আমি বুঝেছি আপনার কথাটা। ছেলে ও তার ফ্যামিলি সম্পর্কে খোজ খবর নিয়েছি আমি। আর মেইন কথাটা হচ্ছে ফারহা এখনো পড়াশুনা করছে।
কথা শেষ হওয়ার আগেই বোঁচা মিঞা বললো,
– আরো ওসব নিয়ে ভাববেন না। বিয়ের পর ওখান থেকেই পড়াশুনা করাবে তারা।
– হ্যা তা ঠিক আছে, তবে আপাতত ইন্টার টা শেষ হোক। এই সময় টা একটু অপেক্ষা করতে বলুন।
– আচ্ছা তাহলে তাই হোক,,,,,
– আচ্ছা আপনি বসুন, আসছি আমি। একটা ফোন এসেছে।
বলেই ফোনটা রিসিভ করে এক পাশে চলে গেলো ফারদিনের বাবা। ফারদিন বোঁচা মিঞার পেশে গিয়ে বললো,
– আচ্ছা আপনার নামটা কে রেখেছে বলুন তো। বোঁচা আবার কারো নাম হয় নাকি?
লোকটা হো হো করে হেসে বললো,
– অনেক কাহিনি আছে বাবা। আমার জন্মের আগে নাকি আমার চার টা ভাই/বোন মা/রা গেছে। যার কারণে আমি জন্ম নেওয়ার পর আমার নাম রাখা হয় বোঁচা। যেন আমার কিছু না হয়। এর পর আমার ছোট ভাইয়ের নাম রাখা হয় পঁচা।
– তো এসব নাম রাখলে কি হয়?
– জানিনা আমি, ছোট বেলায় দাদির কাছে শুনেছিলাম।
– ওহ্ আচ্ছা।

কলেজ ও কোচিং শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গেলো ফারহার। এসে একটা লোক ও বাবা আর ভাইকে দেখে কিছুক্ষন থমকে দাড়ালো। এর পর সালাম দিয়ে ভেতরে চলে গেল সে।

সন্ধার পর ফারদিনের কাছে গিয়ে ফারহা বললো,
– লোকটা কে ভাইয়া?
– কোন লোকটা?
– ওই যে বিকেলে এসেছিলো?
– ওহ্ ঘটক, তোর জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলো। কেন মা কিছু বলেনি তোকে?
– কই না তো? আমাকে না জানিয়েই তোমরা আমার বিয়ের কথা বার্তা বলছো?
– আরে না, কে বললো তোকে?
– তা তো দেখতেই পারছি। মেয়ে বলে কি আমার নিজের মন মতো মত দেওয়ার কোনো অধিকার নেই?
– আছে তো, আর আমরাতো বলিনি তোর অমতে কিছু হবে। কয়দিন দরে এক জায়গা তেকে বার বার প্রস্তাব পাঠাচ্ছে তাই বাসায় ডেকে বিস্তারিত জানলো বাবা। ছেলে নাকি আর্মি অফিসার। বাবারও হয়তো পছন্দ হয়েছে ছেলে। তবে এখন কিছু বলেনি। আগে তোর এক্সাম শেষ হোক এর পর সব কিছু বিবেচনা করে কথা এগিয়ে নিবে।
– বাহ্, সময় ও ঠিক করে ফেলেছে সবাই? আর আমাকে একটি বার জানালেও না তোমরা?
ফারহা ুত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে দেখে ফারদিন বললো,
– আরে পাগলি বোন আমার, তুই বিষয়টা যেমন ভাবছিস, বিষয়টা আসলে তেমন না। আমরা বলতাম তোকে। এখন যাস্ট প্রস্তাব এসেছে, বেশি কিছু না। তাই এতোটা সিরিয়াসলি নিই নি।
– এক্সামের পর কথা বার্তা আগাবে বলছে, আর তুমি বলছো সিরিয়াস না?
– আরে আবারও ভুল বুঝছিস তুই।

আর কিছু না বলে মায়ের রুমের দিকে গেলো ফারহা।
– তোমরা আমাকে না জানিয়ে আমার বিয়ের কথা বলছো কেন মা?
মেয়েকে পাশে বসিয়ে হাসি মুখে বললো,
– কই বিয়ের কথা বলছি? যাস্ট প্রস্তাব এসেছে।
– আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা মা।
– আরে ধুর পাগলি। প্রস্তাব আসলেই বিয়ে হয়ে যায় নাকি?
– আমি এতো কিছু যানি না। আমি বিয়ে করবো না মানে না।
– আচ্ছা তুই চিরকুমারি থাকিস। এবার শান্ত হ।আর বাড়ির সামনে বড়ই গাছ থাকলে লোকে ঢিল মারবে এটাই স্বাভাবিক।
,
,
ফাইনালি টুরে যাওয়ার সেই কাঙ্খিত সময়টা চলে এলো। এই একটা টুর যে ফারহার জীবনটা এমন এলোমেলো করে দিবে তা হয়তো তার চিন্তারও বাইরে ছিলো। নাহলে কি মানুষ বিপদ যেনেও ওই রাস্তায় এগিয়ে যায়? সে নিজেও যেত না। বাট আমরা তো আর ভবিষ্যতে কি হবে তা তো কেউ বলতে পারি না।
সেই টুরে যাওয়ার পর একটা এক্সিডেন্টই তার জীবনকে এলো মেলো করে দিয়েছে।
সন্ধার পর বাসে রওনা দিবে সবাই। পাঁচটা বাস ঠিক করা হয়েছে। সারা রাত গাড়িতে থেকে পর দিন চট্টগ্রাম পৌছাবে তারা। তারপর দুই দিন ব্যাপি এই টুরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াবে।

সন্ধায় বেগে কিছু কাপর চোপর ও প্রয়োজনিয় টাকা পয়সা নিয়ে কলেজ মাঠের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলো। ফারহা ও ব্যাগে জামা ও নিজের প্রয়োজনিয় জিনিস পত্র নিয়ে নিলো।
তার পর মা বাবার থেকে বিদায় নিয়ে ভাইয়ার সাথে বেড়িয়ে পরলো কলেজ মাঠের উদ্দেশ্যে।

ওখানে গিয়ে দেখে প্রায় সবাই চলে এসেছে। আর আধা ঘন্টা পর রওনা দিবে। আবরারের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে ফারহার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো ফারদিন।
ফারহা একটু হেসে বান্ধবিদের কাছে চলে গেলো।
– হেই কখন এলি তোরা?
– অনেক্ষন আগেই এসেছি তোর মতো অলস নই আমরা। আর আধা ঘন্টা লেট করলে আর যাওয়াই হতো না তোর।
– আমি অলস হতে যাবো কেন? আমি সময় মতোই এসেছি। তোদের মতো আগে এসে আজাইরা সময় নষ্ট করি না।

কিছুক্ষন পর স্যার ও টিম লিডার রা এক এক করে সবাইকে গারিতে উঠতে বললো। জিনিসপত্র নিয়ে এক এক করে যার যার সিটে গিয়ে বসলো সবাই। বাসের সামনের দুই তিন সিট পরে বসলো ফারহা ও আয়রিন। আর বাসের সামনের সিটে বসলো আবরার। উঠার পর আয়রিনকে বলে গেলো, কোনো সমস্যা হলে বলবি, আমি এইতো সামনেই আছি।

রাতে আধা ঘন্টা ব্রেক নিয়ে ডিনার করে নিলো সবাই। এর পর আবার গন্তব্যের দিকে ছুটলো সবাই।
ফেনী এসে মহিপাল বাস থামলো তখন রাত প্রায় ১ টা। মহিপাল নামলে দেখে চার দিকে রোড। ফারহা চার পাশে তাকাচ্ছে। আয়রিন বললো,
– এটা হলো, সোনাগাজির রোড, এটা চট্টগ্রামের রোড। এটা ঢাকার রোড যেখান দিয়ে আমরা এসেছি।
এক এক করে সব দিন দেখাচ্ছে।
ফারহা হাই তুলতে তুলতে বললো,
– তুই আগে ফেনী এসেছিলি?
– হুম, সোনাগাজিতে আমার এক রিলেটিভ আছে।
ফারহা চার দিকে তাকিয়ে বললো,
– আচ্ছা আয়রিন, এখানে পশ্চিম কোন দিকে?
পাশে আবরার এসে দাড়াতেই হো হো করে হেসে ফেললো,
– এতটুকু আসতেই উত্তর দক্ষিন হারাই ফেললে?
ফারহা কিছু না বলে লজ্জা মাখা চেহারা নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। কি বা বলবে সে? নতুন কোথাও গেলে যে সে সত্যিই উত্তর দক্ষিন সঠিক ভাবে খুজে পায় না।

নিজেদের প্রয়োজন শেষ হলে চট্টগ্রামের রোডে ছুটলো গাড়ি।
রাত তখন গভির এতোক্ষন হইহুল্লা করে এখন প্রায় সবাই নিশ্চুপ। বাস চলছে নিরিবিলি। হয়তো সবাই ঘুমিয়ে আছে, অথবা কেউ ঘুমানোর ট্রাই করছে। আবরারের ঘুম আসছে না। নিরিবিলি জায়গা ছারা কখনো ঘুম আসে না তার। পেছন ফিরতেই দেখে ফারহা ঘুমাচ্ছে বেঘোর হয়ে। ঘুমন্ত ফারহা আজ যেন অদ্ভুত মায়ার অধিকারি হয়েছে।
কিছুক্ষন এক দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে পুনরায় সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে আবরার। নিজেকে মনে মনে সাষাতে থাকে।
– কার দিকে তাকিয়েছিলি বোকা মন, সেও তো বোন লাগে বোন।

To be continue…..

তোমার ছায়া পর্ব-০৮

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ৮)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

আয়রিন ও সাথি দুজনই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ফারহার দিকে। কথা বার্তা একটু অদ্ভুত হলে অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। হয়তো এই অদ্ভুত কথার কারণ টা জানতে ফারহার দিকে তাকিয়ে আছে দুজন।
ওদের এমন আগ্রহ দেখেও আর কথা বাড়ালো না ফারহা। চুপচাপ সামনের দিকে পা বাড়ায় সে।

বাসায় এসে শাওয়ার নিয়ে খেয়ে বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পরলো ফারহা। চোখ লেগে এসেছে তাই বিকেল টা শুয়েই কাটিয়ে দিলো। সন্ধা হতেই মা এসে ডেকে দেয়।
কড়া গলায় বলে,
– উঠে নামাজ পড়ে, তারপর পড়তে বস। নামাজ নাই কিছু নাই, বিয়ের জন্য আসলে পাত্র পক্ষ যখন জিজ্ঞেস করবে মেয়ে নামাজ কালামপড়ে কি না, তখন কি উত্তর দিবো?
ফারহা দুই হাত মেয়ে হাই তুলতে তুলতে বললো,
– মেয়ে নামাজি এই কথাটা পাত্র পক্ষকে বলার জন্য নামাজ পড়লে কি তা কবুল হবে মা?

তার মা আর কিছু বললো না, হয়তো নিজের কথার বোকামি বুঝতে পেরেছে। যাওয়ার সময় বললো,
– যা বলছি তাই কর, নামাজ শেষ কর কর। আমি নাস্তা বানিয়ে দিলে খেয়ে পড়তে বসবি। আমি চলে যাওয়ার পর আবার বিছানার সাথে লেগে থাকিস না।

সন্ধার পর থেকে ফারহা পড়ার ফাকে বার বার উকি দিয়ে দেখছে ফারদিন বাসায় ফিরেছে কি না। কারণ বাবা মাকে টুরের কথা বললে তারা হয়তো রাজি হবে না। তাই ভাইয়াকে দিয়ে কোনো ভাবে একটু ম্যানেজ করার বুদ্ধিটাই বেছে নিলো সে।

কিছুক্ষন পর ফারদিন বাসায় আসলো। ফারহা ভাবে নিচ্ছে ফারদিনের কাছে গিয়ে কিভাবে কথা গুলো শুরু করবে। যাই হোক আগে ভাইয়াকে রাজি করাতে পারলেই সে বাবা মাকে রাজি করিয়ে নিবে।

কিছুক্ষন পর ফারহা উঠতে যাবে তখনই ফারদিন একটা প্লেটে কিছু সিপ্স ভাজা নিয়ে তার পাশে এসে একটা চেয়ার টেনে বসলো। মাষ্টারের মতো ফারহার বইটা টেনে নিয়ে বললো,
– আজ দেখি তোর পড়ালেখার দৌড় কতটুকু? ক্লাস আর কোচিংয়ের পড়া কতটুকু থাকে আর তুই কতটুকু কমপ্লিট করিস। ক্লাসের সব পড়া কমপ্লিট করে আমার কাছে পড়া দিয়ে তারপর ঘুমাতে যাবি আজকে।
ফারহা প্লেট থেকে সিপ্স নিয়ে খেতে খেতে বললো,
– ভাইয়া, একটা কথা ছিলো।
ফারদিন বই উল্টে দেখতে দেখতে বললো,
– হুম বল।
– তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে কে, জানো?
– হুম জানি, মা।
ফারহা নাক কুচকে বললো,
– আরে ধুর। মায়ের চেয়েও বেশি আমি ভালোবাসি। অতএব তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে তোমার বোন।
ফারদিন ভ্রু-কুচকে আড় চোখে তাকিয়ে বলে,
– এতো ভঙিতা না করে, মতলব টা কি তা বলে ফেল।
– তার মানে তুমি বলতে চাইছো, আমি শুধু মতলব খুজে তোমাকে এসব বলি? ওহ্ আচ্ছা, তুমি বলতে চাইছো, আমি তোমাকে ভালোবাসি না?
ফারদিন তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
– হয়েছে থাম, আমি কি তা বলেছি নাকি? আমি বলছি, তুই হয়তো কিছু একটা বলতে চাস, ওটা বলে দে।
এবার ফারহা একটু হেসে বললো,
– কলেজ থেকে টুরে যাবে চট্টগ্রাম। বাকি ফ্রেন্ডরাও যাবে।
ফারদিন শান্ত ভাবে বললো,
– হুম জানি, তারপর?
ফারহা সোজা হয়ে বসে বললো,
– আমিও যাবো, প্লিজ তুমি মা বাবাকে ম্যানেজ করে দাও।
ফারদিন আবারও বললো,
– হুম এটাও জানতাম, তারপর?
ফারহা একটু রাগি চোখে তাকিয়ে বললো,
– কি তারপর তারপর করছো। তুমি কি আমার কথা শুনতে পারছো?
ফারদিন বইয়ের পৃষ্টা আরেকটা উল্টে বললো,
– হুম শুনছি, তারপর,,,,
– ধুর।
,
,
খাওয়ার সময় ফারদিন গিয়ে টেবিল টেনে বসলো। চার দিকে তাকিয়ে ফারহাকেও ডাক দিলো খাওয়ার জন্য।
ফারহা হোমওয়ার্ক কমপ্লিট করতে করতে বললো,
– তোমরা শুরু করো, আমি আসছি, আর একটু।

ফারদিন খাবার বেরে নেয়। তথন পাশ তেকে তার মা তার বাবাকে বলে,
– হুম, কি যেন বলছিলে, ছেলে কি করে?
বাবা খেতে খেতে বলে,
– ছেলে আর্মি অফিসার। দুই ভাই দুটুই একেবারে ফ্রিন্সের মতো। ছোট টা ইংল্যান্ড গেলো পড়াশোনার জন্য। ফ্যামিলিরও অনেক নাম ডাক আছে। তারা কিছু চায় না, শুধু ফারহাকে চায়। আরো বললো, আমাদের কিছুই করতে হবে না। আমাদের এখানেও কোনো খরচা করতে হবে না। যা যা প্রয়োজন হবে, ওগুলোও সব তারাই দিবে।
ফারহার মা ডেব ডেব করে তাকিয়ে বললো,
– তুমি কি বললে?
ফারহার বাবা খেতে খেতে বললো,
– এখনো কিছু বলিনি। শুধু বলেছি, তোমাদের ও ফারহার মতামত নিয়ে তারপর জানাবো।
ফারহার মা বললো,
– আমাদের মতামত নেওয়ার কি আছে? সম্মন্ধ যেহেতু খারাপ না, তাহলে তুমি কথা বলেই সব এগিয়ে রাখো।
এর মাঝে ফারদিন বললো,
– এটা কি বলছো মা? বিয়েটা ফারহা করবে, আমরা না। তাই তার মতামত নেওয়াটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। আর বাবা তো ঠিক কাজটাই করেছে। পরে জানাবে বলেছে।

তখনই ফারহাও এসে চেয়ার টেনে বসে বললো,
– কি আলোচনা করছো ভাইয়া?
ফারদিন বোনের দিকে চেয়ে বললো,
– তোর কথাই বলছি। কি যেন টুরের কথা বলেছিলি তখন? ওটাই বলছিলাম।

মাকে বিষয়টা খাওয়ার আগেই বলেছিলো ফারদিন, তাই মা বললো,
– মেয়ে মানুষ ফ্যামিলি ছারা বন্ধুদের সাথে এতদুর যাওয়ার কোনো দরকার নেই। তুই সাথে গেলেও একটা কথা ছিলো। একা একা কোথাও যাওয়ার দরকার নেই ফারু’র।
ফারদিন বললো,
– একা যাচ্ছে না মা। আর সাথে তো আবরার ও থাকছে। আমি আবরারকে সব বুঝিয়ে বলবো ফারহাকে চোখে চোখে রাখতে।
,
,
কলেজ গেট পেরিয়ে ভেতরে আসতেই দুর থেকে একটা ছেলে আপু আপু বলে দৌড়ে আসলো। ফারহা পেছন ফিরে দেখে ওই দিনের ওই আবরার নামের ছেলেটা।
দৌড়ে এসে বললো,
– কেমন আছেন আপু? ওই দিনের পর দুই তিন দিন আপনাকে কলেজে দেখলাম না। কালকে নাকি এসেছিলেন, তাও কখন চলে গেলেন দেখিনি। আসলে আপু সরি, আমি জানতাম না এমন একটা ঘটনা ঘটে যাবে।

কেউ নিজের ভুল স্বীকার করলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়াটাই উত্তম। তাই ফারহাও বললো,
– আচ্ছা ঠিক আছে, আর কারো সাথে এমনটা করবে না।
ছেলেটা বললো,
– তবে আপু আমি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসি। গত দুই তিন দিন আপনাকে না দেখে সত্যিই আমি ঘুমাতে পারিনি রাতে। খুব ব্যাথা করেছিলো বুকের বা’পাশ টায়। ফার্মেসিতে গেলাম, তারা বললো এই ব্যাথার ঔষধ তাদের কাছে নেই। বিশ্বাস করেন আপু, এখন আপনাকে দেখে ব্যাথাটা একেবারে চলে গেছে।

ফারহা কোমরে দুই হাত রেখে রাগি দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। হিজাব পড়ায় হয়তো রাগটা প্রকাশ পাচ্ছে না। তবুও রেগে আছে তা চোখ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। মায়াবি চোখ দুটু রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। বলে কি এই ছেলে?

টুরের জন্য জন প্রতি ১ হাজার করে। তাই ফারহা ফারদিনের থেকে টাকা নিয়েই কলেজে এসেছে জমা দেওয়ার জন্য। মেয়েদের টিম লিডার সর্মির কাছে টাকা জমা দিতে গেলে সে বলে, আয়রিন আর ফারহা’র টাকা অলরেডি আবরার স্যার দিয়ে দিয়েছে।

——

– আপনি নাহয় আয়রিনের টাকা দিয়েছেন বোন হিসেবে। তাই বলে আমার টা দিতে গেলেন কেন?
আবরারের সামনে দাড়িয়ে কথাটা বললো ফারহা। আবরার সোজাসুজি ভাবে বললো,
– কারণ তুমিও তো আয়রিনের মতো আমার আরেকটা বোন তাই।
ফারহা আবারও বললো,
– দরকার নাই আমার এতো ভাইয়ের। ভাইয়ের বন্ধু হলেই কি ভাই হয় নাকি? ভাই হলে ওই দিন কিভাবে চিঠি গুলো প্রেন্সিপাল স্যারের কাছে দিয়েছিলেন? আমি না হয় একটু আবেগি হয়ে গিয়েছিলাম, তাই কিছু না ভেবে সোজা আপনার কাছে গিয়ে না বুঝে এসব বলে ফেলেছিলাম। ব্যাপার টা আপনি আমাকে বুঝিয়ে বললেই পারতেন। অফিস রুমে নিয়ে এভাবে অপমান করার প্রয়োজন ছিলো না। আর এখন আসছেন ভাই সাজতে। লাগবেনা আমার এতো ভাই। আপনি আমার কেউ না। স্যার মানে শুধুই স্যার।

এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে, কয়েকটা শ্বাস নিলো ফারহা।
আবরার এক দৃষ্টিতে ফারহার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা আজ এতো কথা বলছে কেন? অল্পতেই এতো অভিমান কেন তার? চুপচাপ দাড়িয়ে ফারহা কে বোঝার চেষ্টা করছে সে।

পাশ থেকে আয়রিন ফারহা’র হাত ধেরে টেনে একপাশে নিয়ে গিয়ে বললো,
– কি করছিস এগুলো। একটানা তো বলেই গেলি, কার সামনে বলেছিস তা মাথায় আছে তো? বিয়ের আগে যদি এতো কথা শুনাতে থাকিস, তাহলে তো বিয়েই করবে না তোকে।
ফারহা বললো,
– আমার এতো খারাপ দিন আসে নাই, তোর ভাইয়ের মতো একটা খ’চ্চরকে বিয়ে করবো।

আয়রিন নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থেকে, হটাৎ করেই হেসে দিলো। যেন এতোক্ষন হাসি গুলো পেটের ভেতর আটকে ছিলো তার।

To be continue,,,,,,,,

তোমার ছায়া পর্ব-০৭

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ৭)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

সন্ধায় সোফায় বসে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে টিভি দেখায় ব্যাস্ত ফারহা। অনেক কষ্টে আজ কলেজের সিচুয়েশন টা ম্যানেজ করেছে। একেবারে হাতে পায়ে ধরার মতো যা তা অবস্থা হলো আজ। আগামি দুইদিন কলেজ আর কোচিং-এর কাছে দিয়েও যাবেনা বলে প্রতিজ্ঞা করে বসে আছে সে। অল্পের জন্য মান ইজ্জত টা বেচে গেলো আজ।
নাহলে জুনিয়র ছেলের সাথে এসব কেলেঙ্কারি, মান ইজ্জত যেইটুকু আছে ওটাও হারাতে হতো আজ সবার সামনে।

মা একটু আগে নাস্তা দিয়ে বলে গেলো,
– তারাতারি খেয়ে পড়তে যা।
মায়েদের কথা গুলো খুব কোঠোর ভাবে বললেও, সন্তানের কাছে তা খুবই মিষ্টি শাসন। তাই হয়তো মায়ের বকাঝকা গুলো সন্তানরা এক কান দিয়ে নিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়।
ফারহাও তার ব্যাতিক্রম নয়। মায়ের কড়া করে বলে যাওয়া কথাটা কানে না নিয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে সে।

একটু পর ঘরে ফারদিন আসে। সন্ধার পর ফারহাকে টিভির সামনে দেখে কোমরে দুই হাত দিয়ে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকে সেখানে। এর পর মা সামনে আসতেই বলে,
– তোমার মেয়ের তো দেখি দিন দিন খুব উন্নতি হচ্ছে মা।
মা চায়ের কাপ ও নাস্তার প্লেট টা নিতে নিতে বলে,
– সে তো অনেক আগে থেকেই। এই বাড়িতে কি এখন আমার কথার কোনো মুল্য আছে? কিছু বললে তা তো কথা বলেই মনে হয় না কারো।
ফারদিন বললো,
– আমি বাড়ির কথা বলছি না, কলেজের কথা বলছি। খুব ভালো সুনাম’ই শুনছি তোমার মেয়েকে নিয়ে। ইন’শা আল্লাহ্ আমাদের ফারহা খুব শিগ্রই’ই সফলতার উচ্চ শিকড়ে পৌছে যাবে।

ফারদিনের মুখে এটা শুনেই জ্বিবে ছোট্ট করে কামড় কাটে ফারহা। আবরার স্যার এসব কথা ভাইয়াকে বলতে গেলো কেন? কতো রিকুয়েষ্ট করে বেচে এসেছে যেন বাড়িতে কেউ এসব না শুনে। কিন্তু স্যার এটা করলো কি? ভাইয়াকে বলেই দিলো? তাহলে এতো রিকুয়েষ্ট সবই বৃথা গেলো?
তখনই ফারদিন আবার বলে,
– আজ আবরারের সাথে দেখা হওয়ার পর বললো, দিন দিন ফারহার লেখা-পড়ার অবনতি ঘটছে। পড়া শুনায় কোনো মন নেই। কোচিং-এর পড়া তো দিতে পারেই না, হোম ওয়ার্ক পর্যন্ত কমপ্লিট করে না।
ফারদিনের কথায় এবার একটু স্বস্থির নিশ্বাস ফেলে সে। যাক, তাহলে কিছু বলেনি।

ফারদিন টিভি অফ করে দিয়ে বললো,
– যা সোজা গিয়ে পড়তে বস। নাহলে এক্সামের পর ডিম গুলো বিক্রি করার জন্যও একটা দোকান খুলে বসতে হবে।
ফারহা হেসে বললো,
– গুড আইডিয়া, তবে দোকান খেলার কি দরকার? ওগুলো আমরা পাইকারি দরে বেচে দিবো।
ফারদিন নিরাশ হওয়ার ভঙ্গিতে আবারও কোমরে দুই হাত রেখে ফারহার দিকে তাকায়।
,
,
আজ সন্ধার পর চলে যাচ্ছে মাহিন। সকালে আয়রিনদের বাসায় খবর এসেছে সন্ধায় মাহিন বেড়িয়ে যাবে। আয়রিনকে নিয়ে ওই বাড়ি যেতে। ফোন দিয়ে মাহিনের মা এ কথাটা বললো। আর মাহিনের বাবা নাকি ব্যাস্ত তাই আগে বলতে পারেনি। আর মাহিনকে বলেছিলো আয়রিনকে নিয়ে যেতে বাট মাহিন আসেনি।

সোফায় বিষণ্ন মনে বসে আছি আয়রিন। এমন সময় আবরার তার পাশে এসে বসে। আয়রিনের দিকে চেয়ে বলে, তোর ফোন টা দে তো।
আয়রিন একটু অবাক হলো। তবুও প্রশ্ন না করে ফোন টা বাড়িয়ে দেয়। আবরার ফোনটা কিছুক্ষন দেখে আয়রিনকে বললো,
– তোর আর মাহিনের মাঝে কি কোনো ঝামেলা হয়েছে?
আবরার যেন কিছু বুঝতে না পারে, তাই আয়রিন একটু অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বললো,
– কই না তো। সব ঠিকঠাকই তো আছে।
আবরার ফোনটা দিয়ে বললো,
– তোর কল লিষ্টে মাহিনের নম্বারের কল টা ছিলো আজ থেকে ৬ দিন আগের। তাও শুধু একটা কল।
আয়রিন একটু থতমত খেয়ে মিথ্যা সাজানোর চেষ্টা করে বললো,
– আরে কথা হয়তো প্রতিদিন। ও খুব ভালো। আমি নাম্বার গুলো এমনি ডিলিট করে দিই। তাই কল লিষ্টে নেই। আর তুমি হটাৎ এসব বলছো কেন ভাইয়া? ওহ্ হ্যা বুঝছি, সে আমাকে এখানে রেখে গেছে আর শেষ দিনও নিয়ে যেতে আসেনি তাইতো? তাহলে শুনো কাহিনি, তোমাদের জন্য খুব খারাপ লাগছিলো তামার। তাই তাকে বললাম, তোমাদের কাছে চলে আসবো। সে তো আমাকে আসতেই দিচ্ছিলো না। কিন্তু তোমাদের জন্য আমার কান্না পাচ্ছিলো দেখে পরে রাজি হলো। আর প্রতিদিনই আমাকে নিতে আসবে বলেতো, কিন্তু আমিই আরেক দিন আরেক দিন বলে তাকে মানা করছিলাম। তাই গত কাল বললাম, আজকে তোমাদের সাথেই যাবো।

এক নাগারে কথা গুলো বলে গেলো আয়রিন। যেন আবরার কোনো পাল্টা প্রশ্ন করতে না পারে। হয়তো খুব বুদ্ধি খাটিয়েই মিথ্যেটা সাজিয়েছে সে।
আবরার আর কিছু না বলে কিছুক্ষ তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে সেখান থেকে চুপচাপ চলে গেলো। তারপর চোখ বন্ধ করে একটা দির্ঘশ্বাস নিলো আয়রিন।

দুপুরের আগেই ওই বাড়িতে পৌছে যায় তারা। দুপুরে খাওয়া শেষে আয়রিনের বাবা আর অন্যান্য আত্মিয়রা সোফায় বসে কথা বলছে। আর আয়রিন আছে মহিলাদের কাছে। বাড়িতে কয়েকজন অতিথি আসায় বিয়ে বাড়ির মতো মনে হচ্ছে আজও।

বিকেলের পর আয়রিন ও মাহিনকে একসাথে আলাদা করে দিলো একটা রুমে। নিজেদের মাঝে কিছু কথা বলার জন্য।
আয়রিন চুপচাপ মাহিনের পেছন গিয়ে দাড়িয়ে মাথা নিচু করে বললো,
– আজও কথা বলবেন না আমার সাথে?
– কি বলবেন বলুন। (মাহিনের কন্ঠে বিরক্তিকর ছাপ)
আয়রিন আবারও নির্লজ্জের মতো বললো,
– আমাদের এখানে কেন আলাদা করে দিয়েছে সবাই?
মাহিন আবারও সোজাসুজি ভাবে বললো,
– সে টা আপনিই জানেন, ওরা বললো আর কেন আপনি ঢুকে পরেছেন?
আয়রিনের এমটু মন খারাপ হলেও চুপচাপ রইলো। কারণ সে চায় না যাওয়ার মুহুর্তে কারো মুড নষ্ট করতে। তবুও মাথায় একটা প্রশ্ন সব সময় তাকে খুব ভাবায়। যেটার উত্তর মাহিন চলে গেলে আর জানা হবে না। তাই বলেই দিলো,
– সত্যি করে বলেন তো আপনি আসলে কি চান?
মাহিন আবারও বললো,
– আামর চাওয়া’টা না ভেবে এটা ভাবেন যে আপনার মন কি চায়? আর আমি কি চাই তা সময় হলেই বুঝতে পারবেন।

সন্ধার পর সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো মাহিন। আয়রিনের সাথে আর কথা বলেনি।
রাতে আয়রিন তার বাবাকে গিয়ে বললো,
– আমি এখানে থাকবো না বাবা। আমার ভালো লাগছে না। আমি তোমাদের কাছেই থাকবো। প্রয়োজনে সে ফিরে এলে তখন এই বাড়িতে চলে আসবো।

অবশেষে মাহিনির ফ্যামিলিও মেনে নিলো এটা। আয়রিনের বাবা যখন তাদের বললো,
– ছোট মেয়ে, সংসার কি তাও জানেনা ঠিক ভাবে৷ তার উপর হাসবেন্ট চলে গেছে ছয় মাসের জন্য বাইরে। নতুন নতুন এখানে এবাবে থাকতে ভালো লাগবে না তার। আর আয়রিনের পরিক্ষাটাও শেষ হোক, আর মাহিনও দেশে ফিরে আসুক, তখনই না হয় একেবারে চলে আসবে। এই সময় টা আপাতত বাবা মায়ের সাথেই থাকুক।
,
,
কেটে গেলো কয়েকদিন। প্রতি বছরই কলেজ থেকে ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্টদের নিয়ে এক দুই দিনের জন্য টুরে যাওয়া হয়। ঠিক এবারও যাবে সবাইকে নিয়ে। এতে এক্সামের আগে মাইন্ড ফ্রেশ হবে একটু হলেও। আর ঘুরাঘিরা করলে মন এমনিতেই ভালো থাকে।

ফাইনাল ইয়ারের টোটাল স্টুডেন্ড আছে ৫৪৩ জন। এর মাঝে হয়তো অনেকে যাবে আবার অনেকে যাবে না। তাই কয়েকদিন আগে থেকেই লিষ্ট করা শুরু হয়েছে।

আজ ক্লাসে আবরার স্যার টুরের কথা বলে গেলো। আর লিষ্ট করার দায়িত্ব দিলো ফাহাদ কে। ছেলেটা পলিটিক্স করে। নানান জায়গায় মিছিল মিটিংএ সে ই পোলাপানদের একসাথে করে। তাি আবরার স্যার টিম মেনেজমেন্ট এর দায়িত্মটা তাকেই দিলো। কারণ ছেলেটার মোটামুটি হলেও টিম ম্যানেজ করার অভিজ্ঞতা আছে। আর মেয়েদের মাঝে দিলো একজন কে। আবরার স্যার ছেলে মেয়েদের মাঝে ভাগ ভাগ করে টিম লিডার বানিয়ে দিয়ে গিয়েছি। আর সকল স্টুডেন্টের দায়িত্ব আবরার নিজেই নিয়েছে। কারণ সে নিজেও স্টুডেন্ট থাকা কালিন ও বন্ধুদের নিয়ে টুরে যাওয়ার সমন নিজেই সব ম্যানেজ করতো।

ছুটির পর কোচিং শেষ করে বাসার দিকে রওনা দিলো ফারহা, আয়রিন ও সাথি। বাকি দুজন ফারহাকে বুঝাতে ব্যাস্ত। কারণ ফারহার ধারণা তার ফ্যামিলি কখনোই তাকে কোথাও একা যেতে দিবে না। তাই পাশ থেকে আয়রিন বললো,
– প্রয়োজনে আমিই ফারদিন ভাইয়া আর আঙ্কেল কে বুঝিয়ে বলবো। দেখবি তারা না করবে না।
হুট করে ফারহা বললো,
– না, তুই ভাইয়ার সামনে একধম যাবি না। কক্ষনো যাবি না। কোনো দিন যাবি না।

ফারহার কথায় অবাক হয়ে গেলো আয়রিন ও সাথি দুজনই। আয়রিন অবাক ভঙ্গিতে বললো,
– কেন যাবো না।
ফারহা আর কিছু না বলে শান্ত ভাবে বললো,
– নাহ্, কিছু না।

To be continue….

তোমার ছায়া পর্ব-০৬

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ৬)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

আবরার স্যার আমার প্রেম পত্র দিয়েছে। এটাও কি সম্ভব? নিজেরি বিশ্বাস হচ্ছে না আজ। তার মতো একটা মানুষের সাথে প্রেম পত্র শব্দটা কিছুতেই মিলছে না৷ তাহলে কি স্যারও আমার সত্যিই পছন্দ করে?
টেবিলে শোয়ার মতো করে বেগে মাথা রেখে মুখ লুকিয়ে এসব ভাবছে ফারহা। চিঠি আর ফুল দুটুই বেগের মাঝে খুব যত্ন করে লুকিয়ে রেখেছে।
তার এখন কি করা উচিৎ? চিঠির উত্তর দিবে নাকি চুপচাপ বসে থাকাই ভালো হবে। না, উত্তর না দিলে যদি স্যার রাগ করে? এর চেয়ে ভালো উত্তর দেওয়াটাই ঠিক হবে। যা হওয়ার তা পরে দেখা যাবে।

ক্লাসের ফাকে লুকিয়ে খাতার মাঝে একটা লেখা লিখলো সে।

‘অন্যের চোখের দৃষ্টিতে নিজে আহত হয়েছেন ভালো কথা, তাই বলে এভাবে হুটহাট চিঠি লিখে আরেক জনের হৃদপিণ্ডে আঘাত করাটা কিন্তু অন্যায়, ভিষন অন্যায়। ‘

এর পর আর ক্লাসে মোটেও মন বসেনি তার। ছুটির পর একে একে সব চলে যেতে লাগলো সবাই। ক্লাস খালি হতেই লিখা টা ওই টেবিলে রেখে চলে গেলো সে। সোজা হেটে গেটের বাইরে, পেছন ফিরেও তাকালো না।

বাসায় আসার পর থেকেই অস্থিরতা ভাবটা ধিরে ধিরে বাড়তে লাগলো তার।

পর দিন কলেজে আসলে, সেই একই ভাবে আরেকটা চিঠি পায় সে।
‘ সত্যিই তো, এই মারাত্মক অন্যায়ের কি শাস্তি হওয়া উচিৎ বলো তো। আচ্ছা যাই হোক, তুমি সেই শাস্তিটা নিজ হাতে দিও।’

একটু হাসলো ফারহা। এই লোকটার চলাফেরার সাথে চিঠির ভাষা গুলো একধমই বেমানান।
আজ আর কিছু লিখলো না ফারহা। বাড়িতে আসার পর থেকে রুমে বসে আছে চুপচাপ। আবরারের কথা ভাবতেই বার বার হাসি পায় তার। এমন লাগছে কেন তার? অদ্ভুত। কাল শুক্রবার, কলেজ বন্ধ। একদিন আর দেখা হবে না তাদের। সেটা ভেবেও মনটা খারাপ হয়ে উঠে।
,
,
বাসায় সবাই স্বাভাবিক ভালো চললেও মাহিন প্রয়োজন ছারা তেমন একটা কথা বলে না আয়রিনের সাথে। তার সব কিছুতেই যেন একটা বিরক্তির ছাপ লক্ষ করে আয়রিন।

আর দুই দিন পরই মাহিনের ফ্লাইট। রুমে বসে লেপটপে কাজ করছিলো সে। আয়রিন তার কাছে এসে বললো,
– আপনাকে কিছু বলার ছিলো।
মাহিন কাজ করতে করতে বললো,
– হুম বলো,
– আমি আমার বাবার বাসায় থাকতে চাই। এখানে ভালো লাগছে না আমার।
মাহিন এখনও কাজ করতে করতে বললো,
– আচ্ছা কাপর চোপর গুছিয়ে রাখবেন। কাল সকালে যাবেন।
আয়রিন কিছু বলতে যাবে, তার আগেই মাহিন তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
– বলছি তো আপনার যেমনটা ইচ্ছা সেভাবেই চলতে পারো, বাবা মাকে আমিই ম্যানেজ করে নিবো।
আয়রিন আর কিছু না বলে চুপচাপ চলে গেলো সেখান থেকে।
সে ভালোই বুঝতে পারছে যে মাহিন তাকে দু’পয়সার ও মুল্য দিচ্ছে না৷

মেয়েদের নাকি দুইটা জীবন। একটা বাবার বাড়ি আরেকটা নাকি স্বামীর বাড়ি। বাট এখন তার মাখে মনে হচ্ছে তার বাবার আশ্রয়ই তার কাছে সবচেয়ে শান্তির ও নিরাপদ আশ্রয়। বাকি সব মিথ্যা।
,
,
আজ শনিবার। কলেজে আগে আগেই এসেছে ফারহা। চুপচাপ এক পাশে বসে আছে আর গেটের দিকে তাকাচ্ছে, কখন আবরার কলেজে আসবে। আজ এই বেটাকে সামনে থেকেই ধরবো। দেখি তার রি-একশান কেমন হয়?

বেশ কিছুক্ষন পর অপেক্ষার পর কলেজ গেট দিয়ে প্রবেশ করলো আবরার। ফারহা হাস্যজ্জল মুখে চার দিকে তাকিয়ে আবরারের সামনে গিয়ে দাড়ালো। আবরারের দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
– লুকিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই, সরাসরিই দিন।
আবরার একটু অবাক ভঙ্গিতে বললো,
– মানে?
ফারহা সোজাসুজি ভাবেই বললো,
– ঢং করা লাগবে না, আমি সব জানি। যাই হোক, আসল কথা হলো, লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতে আমার ভালো লাগে না। তাই যা দেওয়ার সরাসরিই দিবেন৷
আবরার এবার রেগে বললো,
– সাজ সকালে ফাজলামি করছো আমার সাথে?
ফারহাও এবার একটি রেগে চিঠি গুলো বের করে বললো,
– এ্যাক্টিন ভালো লাগলেও ওভার এ্যাক্টিন কখনোই ভালো লাগে না। তাহলে এই চিঠি গুলো কেন দিয়েছেন, হুম?

আবরার এবার একটু স্বাভাবিক হয়ে চিঠি গুলো হাতে নিয়ে চোখ বুলাতে লাগলো। এর পর আর কিছু না বলে চুপচাপ চিঠি গুলো নিয়েই চলে গেলো সেখান থেকে।
ফারহা এখনো বেকুবের মতো দাড়িয়ে আছে হা করে। কি হচ্ছে সব যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার। আবরারের এমন নিরবতায়ও যেন বিপদের পূর্বাভাস। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতে লাগলো,
– একটু বেশিই করে ফেলেছিস নাকি ফারহা। তোকে দিয়ে কখনোই ঠিক কাজ টা হয় না। যেখানে যাস, সেখানেই একটা গন্ডোগোল পাকিয়ে ফেলিস।

ক্লাস শুরু হওয়ার পরও বিষয়টা নিয়ে ভাবতে লাগলো। পাশ থেকে সাথি ধাক্কা দিয়ে বললো,
– কি রে এমন ভাব নিয়ে বসে আছিস কেন? কারো সাথে কোনো কথাই বলছিস না?
ফারহা সাত পাঁচ না ভেবে চুপু চুপি সব কিছু বলেই দিলো তাদের। সব শুনেই অবাক ভঙ্গিতে মুখে হাত দিলো সাথি ও আয়রিন দুজনই। সাথি বললো,
– বলিস কি? আবরার স্যার তোকে প্রেম পত্র দিয়েছে?
ফারহা চুপ করতে বলে চার পাশে তাকালো, কেউ শুনে ফেলেছে নাকি দেখতে। এবার সাথি চুপিচুপি বললো,
– সত্যি?
ফারহা মাথা নিচু করে বললো,
– হুম,,,
আয়রিন পাশ থেকে বললো,
– তাই তো তোকে আমি আগে থেকেই ভাবি ডাকি।
সাথি আবার বললো,
– তার মানে তুইও সব জানতি?
– না তবে কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছি ওদের চক্কর।
তখনই ক্লাস টিচার লেকচার বন্ধ করে বললো,
– হেই, এটা কথা বলার জায়গা নয়।

তখনই ক্লাসে প্রবেশ করে শাকিল ভাইয়া। হাতে একটা নোটিস নিয়ে স্যারের হাতে দিলো। স্যার তা পড়ে ফারহার দিকে তাকিয়ে বললো,
– স্ট্যান্ড আপ।
ফারহা দাড়ালো। স্যার আবার বললো,
– তোমাকে প্রেন্সিপাল স্যার অফিস কক্ষে ডাকছে ।
ভয়ে এবার যেন বুকটা শুকিয়ে আসলো ফারহার। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। সব তো ঠিকঠাকই আছে, তাহলে আবার অফিসে ডাকার কি দরকার ছিলো।

ভাবতে ভাবতেই অফিস কক্ষে গিয়ে দেখে ফাস্ট ইয়ারের একটা জুনিয়র ছেলেও দাড়িয়ে আছে ওখানে। ফারহা স্যারের অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে বললো,
– ডেকেছিলেন স্যার?
প্রেন্সিপাল স্যার কোনো উত্তর না দিয়ে ছেলেটার দিকে চেয়ে বললো,
– তোমার নাম আবরার হাসান তাই তো?
ছেলেটা মাথা নিচু করে বললো,
– জ্বি স্যার।
– তোমার সিনিয়র আপু কে প্রেম পত্র দিয়েছো কেন তুমি?
ছেলেটা আবারও বললো,
– আপুকে আমার খুব ভালো লাগে স্যার। তাই দিয়েছিলাম।
স্যার বললো,
– ভালো লাগাটাই স্বাভাবিক, কিন্তু চিঠি দেওয়ার আগে এটা ভাবা উচিৎ ছিলো যে, সে তোমার কলেজের সিনিয়র আপু।
ছেলেটা এবার একটু মুচকি হেসে বললো,
– সিনিয়র আপু দেখেই তো বেশি ভালো লাগে স্যার। আর সেও তো আমাকে ভালোবাসে।

ফারহা বেকুবের মতো একবার জুনিয়র আবরারের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার পাশে বসে থাকা আবরার স্যারের দিকে তাকাচ্ছে। পরিস্থিতি এবার একটু হলেও বুঝতে পেরে চট করে বললো,
– মিথ্যে কথা, ওর মতো পিচ্চি ছেলেকে আমি ভালোবাসতে যাবো কোন দুঃখে? ও তো আমার ছোট ভাইয়ের মতোই।
ছেলেটাও চট করে বললো,
– স্যার ও ভয়ে এখন মিথ্যা বলছে। সে ও যে আমায় ভালোবাসে তার প্রমান আছে আমার কাছে।
স্যার ভ্রু-কুচকে বললো,
– কি প্রমান?
– স্যার সে ও আমায় চিঠি দিতো। সেগুলো আমার কাছেও আছে। স্যার ও খুব ভয় পাচ্ছে, ওকে কিছু বলবেন না প্লিজ। মা/রলে ওর মা/র গুলোও আমাকে দিবেন স্যার। নাহলে সে খুব ব্যাথা পাবে।
পাশ থেকে আবরার স্যার বললো,
– হায়রে কি ট্রুরু লাভ। প্রেমিকার মা/রও প্রেমিক ভাগ করে নিতে চাইছে। আহা, তোমাদের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ।
ছেলেটা বুকের বা’পাশে একটা হাত রেখে একটু ঝুকে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,
– থ্যাংক ইউ স্যার,,,,

ফারহার মাথায় যেন আগুন জ্বলতে শুরু করলো। স্যারদের সামনেই জুনিয়র ছেলেটাকে বললো,
– একটা চ/র খাবি তুই। আমি কোন দুঃখে তোকে ভালোবাসতে যাবো রে? আর প্রেম করার বয়স হয়েছে তোর? চিঠি গুলো দেখে আমি ভেবেছিলাম অন্য আবরার দিয়েছিলো। আমি কি জানতাম নাকি যে এটা তুই আবরার? আর তোর নাম যে আবরার সেটাও তো জানতাম না আমি।
তখনই প্রেন্সিপাল স্যার বললো,
– অন্য কোন আবরার?
এবার ফারহা পরে গেলো আরেক মসিবতে। আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,
– না মানে কেউ না। কেউ না স্যার এমনি।
তখনই জুনিয়র ছেলেটা বললো,
– দেখলেন তো স্যার। বলছি না সে ভয়ে এমন করছে। সত্যি বলতে সে আমাকেই ভালোবাসে স্যার। আমরা দুজন দুজনকেই ভালোবাসি। ভালোবাসা কি অপরাধ স্যার? আর তা যদি অপরাধ হয় তাহলে যেই শাস্তি দিবেন তাই মাথা পেতে মেনে নিবো স্যার।

আবরার স্যার এবার বসা থেকে উঠে প্রেন্সিপাল স্যারকে বললো,
– স্যার এদেরকে এভাবে হবে না। ওদের দুজনের অভিবাবক কে ইনফর্ম করুন। আর ইমেডিয়েট লি কলেজে আসতে বলুন।
প্রেন্সিপাল স্যারও তার সাথে বললো,
– ওকে এখন ক্লাসে যাও। দুজনের অভিবাবক আসলে, আবার ডাকা হবে।

ফারহা এবার কাঁদু কাঁদু ভাব হয়ে বললো,
– প্লিজ স্যার আমার বাবাকে আর ভাইয়াকে ডাকবেন না প্লিজ। ওরা এসব শুনলে আমাকে মেরেই ফেলবে। আমি তো ইচ্ছে করে জেনে শুনে করিনি এসব। প্লিজ স্যার।

পাশের জুনিয়র ছেলেটা বললো,
– এতো ভয় পাচ্ছো কেন তুমি? স্যার তো আমাদের উপকারই করতে চাইছে তাই না? আমাদের ভালোবাসার খবরটা তো একদিন না একদিন ফ্যামিলিকে জানাতেই হবে তাই না? এখন আগে থেকেই তারা জেনে রাখলে আমাদের জন্যই তো ভালো।
ফারহা রাগে ছেলেটার দিকে চেয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
– শুধু এখান থেকে বাচি, তারপর তোর একদিন কি আর আমার যেই কয়দিন লাগে।

To be continue…..