Wednesday, July 16, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1048



তোমার ছায়া পর্ব-০৫

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ৫)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

বিষণ্ন মনে বেলকনিতে বসে আছে ফারহা। তখনই পাশে এসে বসে ফারদিন। ফারহার দিকে রাগি দৃষ্টিতে চেয়ে বললো,
– তুই নাকি দুই দিন ধরে কোচিং-এ যাচ্ছিস না? সমস্যা কি?
ফারদিনের কথায় একটু বিষণ্ন মন নিয়ে বললো,
– কিছু না, এমনি ভালো লাগছিলো না তাই যাচ্ছি না। কালকে থেকে যাবো।
– হুম তা তো যাবিই, আর এমনিতেই আবরার বলেছে কাল থেকে দশ মিনিট আগে কলেজ ও কোচিং-এ না পৌছালে, ক্লাসের বাইরে দাড় করিয়ে রাখবে।
– আচ্ছা।

ফারদিন চলে গেলেও বিষণ্ন মনে বসে রইলো ফারহা। ফোনটা বের করে আয়রিনকে কল দেয়। একবার কল হতেই রিসিভ করে আয়রিন বললো,
– হুম ফারু বল।
ফারহা একটু অভিমানি কন্ঠে বললো,
– বল মানে, শশুর বাড়ি যাওয়ার পর একবার ফোন দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করলিনা তুই? আগে তো ঠিকই বলতি আমাদের বন্ধুত্ব চিরকাল থাকবে। আর এখন শশুর বাড়ি পা রাখতেই ভাব বেরে গেছে তোর।
আয়রিন শান্ত গলায় বললো,
– না রে, একটু ব্যস্ত চিলাম তো তাই ফোন দিতে পারিনি।
আয়রিনের কন্ঠ একটু গম্ভির দেখে ফারহা বললো,
– কি হয়েছে তোর, এভাবে কথা বলছিস কেন?
– না কিছুনা, মন টা ভালো ছিলো না তাই।
– মন কারাপ কেন, হাসবেন্ড বকেছে নাকি? হিহিহি,,,
– আরে না, ও তো খুব ভালো। ওর মতো মানুষ হয় না। আমি মনে কষ্ট পাবো বলে একটা ধমকও দেয় না থাকতো বকবে।
বলেই একটা শ্বাস নিলো আয়রিন। ফারহা বলে,
– আচ্ছা, কালকে থেকে কলেজে যাবি?
– না রে আরো দুই একদিন যাওয়া হবে না। তুই একাই যাস।
– হুম, কোচিং এ ও যাওয়া হয় না। কাল থেকে না গেলেও তোর বজ্জাত ভাই নাকি ক্লাসের বাইরে দাড় করিয়ে রাখবে।
আয়রিন একটু হাসার চেষ্টা করে বলে,
– বিয়ের আগেই, এতো অত্যাচার শুরু করেছে আমার ভাবিটার উপর?
– চুপ একধম বাজে বকবি না। তোর ভাই আমারও ভাই। তাই ভাই ইজ ভাই, অন্য কিছু নাই।
– থাক ঢং করা বাদ দে। যানি না আমি?
– চুপ কর তো, ফোন রাখ।

ফোন রাখার পর রুম থেকে মায়ের ডাক কানে ভেষে আসলো।
– ফারু খেতে আয়।
,
,
পরদিন সকালের নাস্তা সেরে কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে ফারহা। কাধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পরলো সে। রাস্তার পাশ ধরে হাটছে একটা খালি রিক্সাও চোখে পরছে না।
হটাৎ পেছন থেকে ফারহা ফারহা বলে কারো ডাক শুনতেই থমকে পেছন ফিরে তাকায় সে। দেখে সোহেল ভাই দৌড়ে তার সামনে এসে হাপাতে লাগলো।
তারপর সোজা হয়ে দাড়িয়ে বললো,
– কেমন আছো?
যদিও তার সাথে ফারহা কথা বলতে ইচ্ছুক নয়, তবুও ভদ্রতার খাতিরে বললো,
– জ্বি ভালো, আপনি কেমন আছেন?
– হুম মোটামুটি। তোমাকে কতোক্ষন ধরে ডাকছিলাম, শুনতে পাও নি?
– খেয়াল করিনি।
– ওহ্,,,
– আচ্ছা ভাইয়া আমি যাই, ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে।
– শুনলাম আয়রিনের নাকি বিয়ে হয়ে গেছে?
– জ্বি, ঠিক শুনেছেন।
– তুমি কি বিরক্ত হচ্ছো?
– আসলে ভাইয়া, বিষয়টা এমন না, ক্লাসের দেড়ি হয়ে যাবে তো তাই।
– আরে একদিন দেড়ি হলে কিচ্ছু হয় না।
– আপনার কিছু হবে না, তবে আমার জন্য এটাও অনেক কিছু।
– আচ্ছা, আমার তো জব হয়েছে শুনেছো?
– না শুনিনি, এখন শুনলাম। কনগ্রেচুলেশন। এবার আমি যাই?
– আমার জব হয়েছে শুনে খুশি হওনি তুমি?
– সরি, আপনার আনন্দে আমি কেন আনন্দিত হবো? আর হ্যা আসি, সময় নেই আমার।

এমনিতেও আজ রাস্তায় খালি রিক্সাও পাচ্ছে না। তার উপর ওর সাথে বক বক করে অনেকটা সময় নষ্ট হলো। হাত ঘরির দিতে তাকিয়ে দেখে ৮ টা ৫৫ বাজে। আর ঐ দিকে নয়টায় ক্লাস। আর আজ মঙ্গল বার। প্রথম ক্লাস ওই খাটাস টার। লেট হলেই ক্লাসের মঙ্গল উদ্ধার করে ছাড়বে।

কলেজ গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই দেখে ৯ টা ৩ বাজে। ক্লাস শুরু হয়ে গেছে অলরেডি। সব স্টুডেন্ট ক্লাস রুমে চলে গেছে। ভয়ে দোয়া দুরুদ পড়তে পড়তে ক্লাস রুমের দিকে চলে গেলো সে। যেতে যেতে সব মিলিয়ে অলরেডি ক্লাসের পাঁচ মিনিট লেট।
দরজার সামনে দাড়িয়েই ফারহা বললো,
– ম্যা আই কাম ইন স্যার?
ভেতর থেকে কড়া জবাব,
– নো, স্ট্যান্ড আউট সাইড দ্যা ডোর।
– সরি স্যার আর এমনটা হবে না। আসলে গাড়ি পেতে লেট হয়ে গেছে।
– নো এক্সকিউজ।

এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ক্লাসের বাইরে দাড়িয়ে আছে ফারহা। সোহেলকে মনে মনে ইচ্ছা মতো গালি দিচ্ছে সে। ওর কারণেই একটা গাড়ি মিস করেছিলো তখন। অবশেষে পাক্কা দশ মিনিট পর ক্লাসে প্রবেশ করার অনুমতি পেলো সে।
,
,
– কি ভাবি জি, শুনলাম আজ নাকি ক্লাসের বাইরে দাড় করিয়ে রেখেছিলো তোমাকে? আমার ভাইটা পারেও বটে।
আয়রিনের কথায় মাথাটা এবার আরো গরম হলো তার। রাগ নিয়ে বলে,
– তোর ভাই যেমন খাটাস, ঠিক তুইও তেমন খাটাস। একজনে নাচায় আরেকজনে তালি বাজায়।
– হা হা, আচ্ছা, শুন, কাল থেকে আমিও যাবো কলেজে।
– সত্যি?
– হুম, এখানে সারা দিন বসে থাকতে ভালো লাগে না।
– আচ্ছা চলে আয়, মজা হবে অনেক।
– হুম।

পর দিন একটু আগে আগেই ভার্সিটিতে চলে গেলো তারা। ক্লাস রুমে ব্যাগ রেখে বাইরে আড্ডা দিচ্ছিলো বান্ধবিরা মিলে। কিছুক্ষন পর ক্লাসের সময় হওয়ায় সবাই ক্লাস কক্ষের দিকে হাটা ধরলো।
টেবিলে এসে বসে ব্যাগ সরাতেই একটা ঝাটকা খেলো ফারহা। দেখে ব্যাগ এর নিচে একটা গোলাপ ফুল আর একটা চিরেকুট। চিরেকুট না, এটাকে চিঠি বলা যায়। কারণ চিরেকুট হলে লেখা অল্প হতো। আর এখানে লেখা অনেক। আর শেষে চোট্ট করে লেখা,, ইতি আবরার।

ভয়ে হাত পায়ে হালকা কাঁপুনি তৈরি হলো তার। আবরার হুট করে চিঠি আর ফুল দিলো কেন? সে তো এমনটা করবে বলে কল্পনাও করতে পারেনি ফারহা।
তবুও সকলের আড়ালে চিঠি আর ফুল টা ব্যাগের ভেতর ঢুকিয়ে নিলো ফারহা।
নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলেও ক্লাসে মন বসছে না কিছুতেই।

প্রথম ক্লাস টা শেষ হতেই ব্যাগ থেকে হালকা বের করলো চিঠি টা। একটু একটু পড়তে শুরু করলো।

প্রিয় চোরাবালি,,,
প্রথমেই অবাক হচ্ছো সম্বোধন টা দেখে। ভাবছো চোরাবালি আবার কেমন সম্বোধন? তবে এটারও যথেষ্ট কারণ আছে। তোমায় যেদিন প্রথম দেখেছি, সেদিন থেকেই ধিরে ধিরে কখন তোমার প্রেমে পরে গেলাম, তা নিজেও বুঝতে পারিনি। তোমার মাঝে সেভাবেই হারিয়ে যেতে শুরু করলাম, যেভাবে কোনো মানুষ চোরাবালিতে পরলে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। আমিও ঠিক সেভাবেই তোমার মাঝে হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে। আহত হয়েছি, তোমার মায়াবি চোখের দৃষ্টিতে। আমি আহত, ভিষন আহত।

ইতি আবরার,,,,,

চিঠিটা পরে হাত পা আরো কাঁপতে শুরু করলো ফারহার। এগুলো কি সব লিখেছে আবরার স্যার? তাহলে কি সত্যি আবরার স্যার তাকে ভালোবাসে? তারতো আজ বিশ্বাসই হচ্ছে না।
চিঠিটা বেগে ঢুকিয়ে, ব্যাগের উপর মাথা রেখে মুখ লুকিয়ে বসে আছে ফারহা। হয়তো এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সে।

To be continue…..

তোমার ছায়া পর্ব-০৪

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ৪)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– আবরার স্যার কিন্তু সেই হ্যান্ডসাম তাই না দোস্ত?
দাত কেলিয়ে কথাটা বললো সাথি। আয়রিন পাশ থেকে বললো,
– আমার ভাইটাকে কি তোরা চোখ দিয়ে গিলে খাবি নাকি?
সাথি মুখ দিয়ে ‘চ’ সুচক একটা শব্দ ছেড়ে বললো,
– সুন্দরকে সুন্দর বলবো না তো কি বলবো?
মুখ ফসকে পাশ থেকে ফারহা বললো,
– আমারও স্যার কে খুব ভালো লাগে।

ফারহার কথায় কেও কিছু বলছে না। ফারহা পেছনে তাকিয়ে দেখে মাত্রই আবরার তাদের পাশ দিয়ে হেটে গেলো।
মুহুর্তেই জ্বিভে ছোট্ট একটা কামড় দিলো ফারহা। ইশ রে স্যার কিছু শুনে ফেলেনি তো?

কিন্তু তা নিয়ে আলোচনা বন্ধ হয়নি ফ্রেন্ড মহলের মাঝে। ক্লাসেও চলছিলো লুকিয়ে আলোচনা। যেটার সূত্র ধরে আবরার স্যার সারা ক্লাস কান ধরে দাড় করিয়ে রেখেছিলো।
শেষে যাওয়ার সময় আস্তে করে বললো,
– এখন তোমার পড়াশুনা করার বয়স এসব করার বয়স না।

সেদিনের পর থেকেই আয়রিন তাকে ভাবি বলে সম্বোধন করে। মাঝে মাঝে আয়রিন বলতো, আবরারও ফারহাকে পছন্দ করে সেটা আয়রিন বুঝে। বাট তা আবরার প্রকাশ করতে চায় না৷ এসব নিয়ে ফারহা কে কতো দিন ক্ষেপিয়েছে তার হিসেব নেই।

বাট আজ ফারদিনের মুখে কিছু কথা শুনে সকল চিন্তা ভাবনা হাওয়ায় উরিয়ে গেলো তার। আয়রিনের ছবি হাতে নিয়ে ফারদিনকে এবাবে কাঁদতে দেখে ফারহা বললো,
– এতোই যখন ভালোবাসতে তাহলে কাউকে বলো নি কেন এতো দিন? কেন চুপ করে ছিলে ভাইয়া? কাউকে না বললেও অন্তত আমায় বলতে তুমি। যা হওয়ার তা পরে দেখা যেতো। কেন চুপ থেকে এখন আফসোসের পাহাড় বইছো?
ফারদিন চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
– আমি চাইনি আয়রিনের বিষয় টা নিয়ে আমাদের মাঝে বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যাক। আর আবরার এটা কখনোই মেনে নিতো না। তুই তো জানতি আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ডের তালিকায় তিনজন ছিলাম।
ফারহা একটু ভেবে বললো,
– হুম, তুমি আবরার ভাই আর সোহেল ভাই৷ কিন্তু সোহেল ভাইর সাথে তোমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। আবরার ভাইয়া নাকি চ/র ও মে/রেছিলো তাকে।
ফারদিন বললো,
– হুম, কিন্তু আবরার সেদিন কেন এমন করেছিলো জানিস?
ফারহা দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বললো। ফারদিন একটু মুচকি হেসে বললো,
– সোহেল তোকে পছন্দ করতো। আর সেটা আমাকে সরাসরি বলতে পারেনি দেখে আবরার কে বলে আমায় রাজি করাতে চেয়েছিলো। কিন্তু আবরার সেদিন সোহেলের সাথে খুব খারাপ ব্যাবহার করেছিলো। দুশ্চরিত্র বলে তাড়িয়ে দিয়েছিলো। আর বলেছিলো, বন্ধুর বোন মানে তোরও বোন। বোনের দিকে কিভাবে বাজে নজর দিস কোন সাহসে? দুশ্চরিত্রের সাথে আরো যা তা বলেছিলো।

ফারদিনের কথায় চোখ বড় বড় করে তাকায় ফারহা। এই সামান্য বিষয়টা নিয়ে এতো বছরের ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট হয়ে গেলো তাদের?

ফারদিন আবারও বলতে লাগলো,
– সেদিনই আয়রিনের বিষয়টা মনের ভেতর মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছিলাম আমি। মাঝে মাঝে আফসোস হতো, কেন আবরারের বন্ধু হতে গেলাম। আবার এটা ভেবেও নিজেকে শান্তনা দিতাম, তার মতো বন্ধু পাওয়াও তো ভাগ্যের ব্যাপার। মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা বন্ধু না, যেন দুই ভাই।

হালকা ভয়েই যেমন ফারহা’র বুকের ভেতর টিপ টিপ শব্দ তৈরি করে, তেমন আজও বুকের ভেতর টায় টিপ টিপ করতে শুরু করলো। এতো কাহিনি আগে জানলে কখনো আবরারের প্রতি তার এতো ফিলিংস কাজ করতো না। তাহলে তারও কি এখন উচিৎ আবরারের জন্য তৈরি হওয়া বিন্দু বিন্দু ফিলিংস গুলো একটা একটা একটা করে চাপা দেওয়া শুরু করা?

এর মাঝে ফারদিনের কথায় ধ্যান ভাঙে ফারহার। ফারদিন খুব করুন গলায় বললো,
– কথা গুলো কাউকে বলবি না প্লিজ। কারণ এসব কথা জানাজানি হয়ে গেলে আয়রিনের সংসারে অশান্তি তৈরি হতে পারে। আমি চাইনা আমার কারনে তার শান্তি নষ্ট হয়ে যাক। সে সারা জীবন সুখে থাকুক এটাই আমার চাওয়া।
,
,
রাত ধীরে ধীরে গভির হতে লাগলো। আর এদিকে সেই অনেক্ষন ধরে মাহিনের জন্য অপেক্ষা করছে আয়রিন। চার পাশের কাঁচা ফুলের সুভাষ ভেষে উঠছে। আর এদিকে ভয়ে বুকটা ধুক ধুক করছে আয়রিনের। এর পর কি হবে ভাবতে ভানতে মাথায় ভর করে আছে নানান দুঃশ্চিন্তা।

ভাবতে ভাবতে দরজায় আওয়াজ পেতেই নড়ে চড়ে বসে সে। মাহিন এসেছে রুমে। শুদর্শন দেখতে পারফেক্ট একটা মানুষ তার চোখে। তাই তো ছবি দেখেই বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছিলো।

যদিও মেয়েকে এখন বিয়ে দিতে চায় নি আয়রিনের বাবা মা। তবে ছেলে ও ছেলের কোয়ালিফিকেশন আর চেলের কয়ারিয়ার দেখে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় নি তারা।
চাকরির সুবাদে ছয় মাসের জন্য আমেরিকা পারি দেবে সে। এই তো দশ বারো দিন পরই প্লাইট।
তাই তারাহুরো করে মাহিনকে বিয়েটা করিয়ে দিলো তার ফ্যামেলি।

রুমে এসে খাটের পাশে এসে দাড়ায় সে। আয়রিন মাথা নিচু করে বসে আছে। মাহিন হাত ঘড়ি খুলতে খুলতে বললো,
– কয়েকটা কথা বলবো, মন দিয়ে শুনেন। বিয়ের আগে আপনি আমি খুব বেশি পরিচিত ছিলাম, বিষয়টা কিন্তু এমনও নয়। আমার ফ্যামিলি থেকে হুটহাট এই সিদ্ধান্ত আর আপনার ফ্যামিলিও রাজি হয়ে যায়। এর মাঝে আমি আপনাকে কিছু বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আপনিও নাকি আমার ছবি দেখে বিয়েতে মত দিয়ে দিলেন। আমার ফ্যামিলিও হয়তো ভেবেছিলো আপনি দেখতে সুন্দরি বলে আমিও সব মানিয়ে নিবো। এর পর আমার চলে যাওয়ার সুবাদে বিয়েটাও খুব তারাহুরো করে হয়ে গেলো। বাট এখন আপনি এটা ভাববেন না যে, আপনাকে আমার পছন্দ হয়নি বা বিয়েতে আমার মত ছিলোনা দেখে আপনাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবো। এমনটাও করবো না আমি। আপনি এই বাড়িতে আপনার মতো করেই থাকতে পারেন আমার কোনো প্রব্লেম নেই। তবে আমার স্ত্রী হওয়ার অধিকার টা চাইবেন না। কথা গুলো আমি আপনাকে বিয়ের আগেই বলতে চেয়েছিলাম। বাট বলতে পারিনি দেখে এখন বলছি। এখন আমি চাইলে আপনাকে ডিবোর্স দিতে পারবো। বাট বাবা মা এটা কখনোই মেনে নিবে না৷ তাই বাকি সিদ্ধান্তটা আপনার। শুধু বৌ নামে এই বাড়িতে থাকবেন, নাকি এখান থেকে চলে যাবেন। আর এখানে থাকলেও রানীর বেশে থাকতে পারবেন, ওটা নিয়ে ভাববেন না।

বলেই একটা ট্রাউজার আর টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো মাহিন। এতোক্ষনের এই মুহুর্তটা যেন পুরোটাই মাথার উপর দিয়ে গেলো আয়রিনের। কথা বলার ভাষা খুজে পাচ্ছে না, মাথাটা ভন ভন করতে শুরু করলো তার।
প্রথম দেখায় কাউকে ভালোবেসে ফেলে তার মুখে এমন কিছু শোনার জন্য অপেক্ষায় ছিলো না সে।
কতো কিছুই তো ভেবে রেখেছিলো সে। বিয়েটা হবে, এর পর মাহিনের সাথে পরিচয় টা হবে এই দশ-বারো দিনেই। তারপর মাহিন চলে গেলে ফোনে কথা হবে তাদের। গভির রাত পর্যন্ত লুকিয়ে লুকিয়ে ফোনে প্রেম করবে দুজন। কেউ দেখবে না তাদের এই লুকোচুরি প্রেম। ধীরে ধীরে তেরি হবে মাহিন ফিরে আসার অপেক্ষা টা।
হুট করে একদিন এক আকাশ সমান আনন্দ নিয়ে ফিরে আসবে মাহিন। যেই আনন্দে মনাকাশের তাঁরা গুলো মিট মিট করে জ্বলতে থাকবে তার।
বাট আজ সব স্বপ্নই যেনো দির্ঘশ্বাসে পরিনত হয়ে গেলো।
,
,
আজ আর ঘুম আসছে না ফারহা’র। ফারদিনের কথা গুলো এক পাশে রাখলো আর অন্য পাশে রাখলো আবরারকে। দুটুই মিলানোর চেষ্টা করছে সে। ফারদিনের ভালোবাসা হারানোর কষ্ট টা সে একটু হলেও অনুভব করতে পারছে।
কিন্তু এসবের মাঝে তার ভাবনায় বার বার নতুন করে আবরারকে কেন জড়িয়ে পেলছে তা সে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না। আজ এই বুকের বা’পাশ টায় টিপ টিপ শব্দ করছে কেন? কিসের এতো ভয়?

To be continue…..

তোমার ছায়া পর্ব-০৩

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

ফারহা ভালোই বুঝতে পারছে কিছু একটা গন্ডোগল আছে। কারণ ফারদিন এতো সহজে কাঁন্না করার মানুষ না। তবুও এই মুহুর্তে ফারদিনকে কিছু বলাটা ঠিক মনে করছে না সে।

তখনই আবরার তাদের পাশে গিয়ে দাড়ায়। বাকিরা আয়রিনকে বিদায় দিয়ে সবাই বাড়ির দিকে হাটা ধরলো। আবার কেও গেটের কাছে দাড়িয়ে এখনো তাকিয়ে আছে।
আবরারের সামনে ফারদিন সম্পূর্ণই স্বাভাবিক। যেন কিছুই হয়নি তার। আবরারের কাধে হাত রেখে বললো,
– আচ্ছা দোস্ত, ফারহাকে নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি বাড়ির দিকে। বুঝিসই তো বাবা মা তাকে নিয়ে কেমন টেনশন করবে।
আবরারের মনটা আজ খুবই বিষণ্ন। এক মাত্র বোনটাকেও বিদায় দিয়ে দিয়েছে আজ। বাসাটা ও কেমন ফাকা ফাকা লাগবে আজ থেকে। এসব চিন্তা ভাবনা তার মনকে আরো বিষণ্ন করে তুলছে। আবরারের দিকে চেয়ে বললো,
– এখনই চলে যাবি? আজকে থেকে যা, মনটা খুবই বিষণ্ন আমার। তোর সাথে থাকলেও মনটা কিছুটা ভালো হবে আমার। তাচারা ফারহাও তো আয়রিনের মতো আমার বোনই। তোরা থাকলে মনকে কিছুটা হলেও শান্তনা দিতে পারবো।

আবরার আর ফারদিন সেই ছোট বেলার বন্ধু। কখনো কারো কথা কেউ ফেলে দিতে পারে না। কিন্তু আজ এখানে একটুও মন টিকছে না ফারদিনের। অস্থির লাগছে খুব তাকে। একটা শ্বাস নিয়ে আবরারকে বললো,
– নারে দোস্ত, বাবা মা খুব টেনশন করবে। আর গতকালকেও ফারহাকে এখানে রেখে যাওয়ার জন্য খুব কষ্ট করে বুঝাতে হয়েছে তাদের। যানিসই তো, আমার একটাই বোন। বাবা মা কখনো তাদের একমাত্র মেয়েকে চোখের আড়াল করতে চায় না। কলেজে গেলেও তারা অস্তির হয়ে থাকে মেয়ের জন্য। চোখের আড়াল হলেই যেন ফারহাকে খুজতে থাকে তারা। বুঝিসই তো বাবা মায়ের মন।

আবরার একটু হাসির রেখা টানার চেষ্টা করে বললো,
– আচ্ছা তাহলে ফারহাকে পৌছে দিয়ে তুই আবার এখানে আসিস।
– হুম, আমি সন্ধার আগেই তোর কাছে আসছি।
আবরার একটু হেসে বললো,
– আচ্ছা।

ফারহা কে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো ফারদিন। ফারহা এতো কথা বললেও ফারদিন নিশ্চুপ।
বাসায় এসে জামা চেঞ্জ করে খাটে লম্বা হয়ে শুয়ে রইলো ফারহা। হিসেব মেলানোর চেষ্টা করছে। প্রথমতো সাদাফের সাথে প্রায় এক বছর পর দেখা। তাও কি বিশ্রি ভাবে। ভাবতেই ‘ছি’ সূচক শব্দ মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসে।
দ্বিতিয়ত ফারদিন ভাইয়া কখনো এমন আচরণ করে না। আর ফারদিনকে ছোট থেকে তেমন একটা কাঁদতে দেখেনি ফারহা। কিছু কারণ তো নিশ্চই আছে। যা ভাইয়া বার বার আড়াল করতে চাইছে।
আর শেষে হবো কালকে আবরারের সাথে ঘটে যাওয়া মুহুর্ত গুলো। রুমে ঢুকায় আবরারের করা বকাবকির মাঝেও একটা মায়াময়ি দৃষ্টি দেখেছে সে। কিছুক্ষন পর আবার সব রাগ হাওয়া হয়ে গেলো। তাকে মেহেদী লাগিয়ে দেওয়া মুহুর্ত টা। সকালে ছাদে দুজন একা কথা বলা। সময় গুলো বার বার চোখের সামনে ভেষে উঠছে তার।

সন্ধার সময় মায়ের ডাকে উঠে রুম থেকে বের হয় ফারহা। মায়ের কাছে যেতেই মা বললো, চার কাপ চা বানাতে। প্রতিবেশি চাচি এসেছে।
ফারহা চুপচাপ রান্নাঘরে গিয়ে চা বসালো।
ওদিকে তাদের মাঝে জমিয়ে আলোচনা চলছে। ফারহা বার বার বিয়ের কিছু টপিক শুনতে পারছে আলোচনার মাঝখানে।
বাড়িতে কোনো বিয়ের টপিক উঠলেই বুকটা ধুক ধুক করতে তাকে তার। না জানি কোন দিন তার বিয়ে নিয়ে পরে সবাই। আজও একটু একটু ভয়ে বুকটা টিপ টিপ করছে তার।

চা হাতে তাদের সামনে এগিয়ে গেলো ফারহা। চা রেখে মায়ের এক পাশে গিয়ে দাড়ায় সে।
চাচি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
– আজ কালকার মেয়ে গুলো বড় হওয়ার পর তাদের বিয়ে না দিলে এমন কান্ড করে বসে। মেয়ে উপযুক্ত হয়েছে, তাহলে তাদের বাসায় রাখবে কেন? পরে বাবা মাকে নিজে থেকে কিছু বলতে পারে না, কোনো ছেলের হাত ধরে ভেগে গিয়ে বংশের মুখে চুন কালি মাখে।
এর মাঝে মা বললো,
– তো পরে মেয়েটাকে পেয়েছে কোথায়?
চাচি আমারও চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
– আরে খুজতে খুজতে পরে ঐ ছেলেটার সাথে একটা হোটেলে হাতেনাতে ধরেছে।
চাচির কথা থামিয়ে ফারহার মা তাকে বলে,
– তুই চলে যা ফারহা। বড়দের কথার মাঝে থাকতে নেই।
মায়ের কথায় চুপচাপ সেখান থেকে চলে যাচ্ছে ফারহা। প্রতিবেশি নামক এই মহিলাটাকে দেখলেই মেজাজ খারাপ হয় তার। এই মহিলার কাজই হলো, এর কথা গিয়ে তাকে বলা ওর কথা এসে অন্যকে বলা। এখানেও এসেছে নিশ্চই তানিয়া নামক মেয়েটার কথা সবাইকে বলতে।

এর মাঝে ফারহা কে নিয়ে টপিক উঠলেই থমকে যায় সে। তবুও চুপচাপ দরজার আড়ালে গিয়ে শুনতে চেষ্টা করে ওই মহিলা বাবা মাকে কি কান পরা দিচ্ছে।

– বিষয় টা বুঝবেন ভাবি, ফারহা এখন বড় হয়েছে বিয়েরও সময় ঘনিয়ে এসেছে তার। এই বয়সে মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। বিয়ে না দিলে পরে দেখবেন সেও অন্য কারো সাথে চলে যাচ্ছে।
এর মাঝে বাবা তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
– এতোক্ষন অন্যের গিবত গািছেন, কিছু বলিনি। কিন্তু শেষে আমার মেয়েকে নিয়ে যে বাড়তি দুই তিন লাইন এড করলেন, এগুলো আর কখনো বলার চেষ্টা করবেন না। বিশেষ করে আমার সামনে কখনো বলবেন না।
চাচি নির্লজ্জের মতো আবার বললো,
– আরে ভাইজান তানিয়ার মা ও এই কাথাই বলেছিলো, এখন ঠিকই তো মেয়ে এমন কান্ড করেই বসেছে।
বাবা আবার বললো,
– আমাদের মেয়ের প্রতি আমাদের পুরো বিশ্বাস আছে। আমাদের মেয়ে কখনো আমাদের কথার বাইরে যায় নি, আর কখনো যাবেও না।
এর মাঝে মা পোড়ন কেঁটে বলে,
– আর ফারহা কখনো এমন কাজ করলে তাকে মেয়ে হিসেবে স্বীকারই করবো না আমরা। তেজ্জ মেয়ে করে দিবো তবুও কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবো না।

একটা কথায় যেন ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠে ফারহা’র। মায়ের কথায় বুকটা ধুক ধুক করলেও বাবার কথা শুনে ভালো লাগছে যে, তার প্রতি তাদের কতো বিশ্বাস।
,
,
সারা বাড়িতে কোলাহ পূর্ণ পরিবেশ। আসার সময় সারা রাস্তা কেঁদেছিলো আয়রিন। আয়রিন অনেকের কাছেই শুনেছে, বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি যাওয়ার সময় মেয়েটা কাঁন্না করলে তাদের হাসবেন্ট অনেক ভাবে বুঝানোর ট্রাই করে তাদের। কতো বাবে কথা বলে তাদের স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। কিন্তু আয়রিনের হাসবেন্ট মাহিন তার দিকে একবারের জন্য ফিরেও তাকায় নি। পুরোটা সময় আয়রিনের থেকে দুরে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলো।

এখন রাত হয়েছে অনেক। সারা ঘর জু্রে কোলাহল, বাট এখানে আসার পর মাহিনকে এক মুহুর্তের জন্যও চোখে পরছে না তার।একানে প্রায় সবাই অচেনা। মাহিনকে একটু চিনে তাও বিয়ে হয়েছে নিজের স্বামী এটা ভেবে। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর তেমন কথা বলার সুজুগ পায়নি তার সাথে। ফ্যামিলি গত ভাবে ঠিক হয়ে হুটহাট হয়ে গেছে সব। আয়রিন প্রথমে কাঁন্না করলেও মাহিনের ছবি দেখার পর সেও রাজি হয়ে যায়।

আয়রিনকে একটা সাজানো ঘরে বসিয়ে দিয়ে চলে গেলো সবাই। একা একা বসে আছে সে। বার বার মাথা তুলে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখছে মাহিন আসছে কি না। কিন্তু প্রায় ঘন্টা খানেক হতে চললো, একনো মাহিনের খবর নেই। ভয়ে বুক ধুকধুক করছে আয়রিনের। তার সামনে কি বলবে সে? কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। তবুও অপেক্ষা করে যাচ্ছে চুপচাপ।
,
,
ওদিকে বেলকনিতে ফ্লোরে বসে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে চুপচাপ আকাশের দিকে চেয়ে আছে ফারদিন। হাতে আয়রিনের একটা ছবি। চক্ষু যুগল রক্তিম আভা ধারণ করে আছে তার।

গত কাল রাতের ও দিনের বেলায় ভাইয়ার অদ্বুত আচরণ টা নিয়ে টেনশন কমছে না ফারহা’র। তাই বিসয়টা জানতে ভাইয়ের রুমের দিকে আগাতে তাকে সে।
রুমে এসে ফারদিনকে না দেখে বেলকনিতে আসে সে। দেখে ফারদিন হাতে কাগজ আকৃতির কিছু নিয়ে ফ্লোরে বসে আছে। ফারহা এগিয়ে গিয়ে তার কাছে বসলো। ছবিটা হাতে নিতেই চমকে উঠলো সে। ফারদিনের দিকে অদ্ভুত চাহুনি দিয়ে বলে,
– কারণ টা তাহলে এটা ছিলো ভাইয়া? তাহলে কেন আগে কাউকে কিছু বলেনি।
ফারদিন এবার কেঁদে উঠে বলে,
– আজ ওর বাসর,, বিয়ে হয়ে গেছে ওর। বন্ধুর বোন দেখে মান সম্মানের দিকে তাকিয়ে, চাইলেও কিছু করতে পারিনি আমি।

To be continue,,,,,

তোমার ছায়া পর্ব-০২

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ২)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

ফারহা কে একটু আগে করা অপমান যেনো মুহুর্তেই ভুলে গেলো আবরার। মেহেদী পরানোর জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো ফারহার দিকে। কিন্তু ফারহা ভুলেনি কিছুই। মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো।
আয়রিন ফারহার কাধে আলতো ধাক্কা দিয়ে বললো,
– কিরে, কোন ধ্যানে আছিস? সেম আমার ডিজাইনটা ভাইয়াকেও এঁকে দিবি।
নিরুপায় হয়ে মনে মনে আয়রিনের গোষ্টি উদ্ধার করতে করতে এক হাতে আবরারের হাতটা ধরে অন্য হাতে মেহেদী আঁকা শুরু করলো ফারহা।

আঁকার সময় আয়রিন তাদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,
– খুব মানাবে দুজনকে।
ফারহা মাথা তুলে আয়রিনের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়। মান ইজ্জত যেই টুকু আছে ওটাও খাবে নাকি এই মেয়ে?
ফারহার এমন লুক দেখে আয়রিন হেসে বললো,
– আরে আমি তো ভাইয়ার আর আমার দুজনের মেহেদীর ডিজাইনের কথা বলছি। খুব মানাবে ভাইয়ার আর আমার মেহেদী ডিজাইন।

ফারহা নিজের বোকামিতে একটু লজ্জা পেলেও তা প্রকাশ করলো না। চুপচাপ বললো,
– ওহ্।
,
,
ফারহার ভাই ফারদিন। ফারহার আর সে একসাথেই এসেছিলো। ফারদিনকে সন্ধা থেকে দেখা গেলেও এখন রাতে হলুদ লাগানোর মুহুর্তে কোথাও সে নেই। ফারহা এদিক সেদিক খুজে ফারদিনকে না পেয়ে ফোন দিলো।
দুইবার রিং হতেই ফোন রিসিভ করে ফারদিন। ফারহা বলে উঠে,
– সবাই এখানে তোমাকে খুজছে আর তুমি কোথায় গেলে ভাইয়া? আর আবরার ভাইয়া ফোন দিচ্ছে তুমি ফোন ধরছো না কেন?
ওপাশ থেকে শান্ত গলায় উত্তর এলো,
– ভালো লাগছে নারে ফারু, তাই বাসায় চলে এসেছি।
– মানে কি, তুমি বাড়ি চলে গেলে?
– হুম ভালো লাগছিলো না তাই কাউকে বলে আসারও ধৈর্য পাই নি। তোরা ইনজয় কর, আনার ভালো লাগছে না, ঘুমাবো বায়।

ফারদিনের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না ফারহা। ফোন রেখে আয়রিনের কাছে এসে দেখে সবাই আয়রিনকে হলুদ লাগাচ্ছে। ফারহা গিয়ে লাগাতেই আয়রিনও তাকে লাগিয়ে দিলো। ফারহা একটু অবাক হয়ে বললো,
– আমাকে লাগাচ্ছিস কেন?
পাশ থেকে সাথি বললো,
– হলুদ লাগিয়ে দিলে তারাতারি বিয়ে হয়। আয়রিন তো আবরার স্যারকেও হলুদ লাগিয়ে দিয়েছে।
ফারহা একটু অবাক হয়ে বললো,
– এসব কি আয়রিন?
আয়রিন একটু হেসে বললো,
– তেমন কিছু না, তোর আর ভাইয়ার বিয়েটা যেন তারাতারি হয়ে যায় তাই। হিহিহি।
ফারহা লাফ দেওয়া কথার মতো বলে উঠলো,
– জীবনেও না, তোর ভাইয়ের মতো ঘার ত্যারাকে আমি তো দুরে থাক, জীবনেও কোনো মেয়ে বিয়ে করবে না।

তখনই সাথির ইশারায় ফারহা পেছন ফিরে আবরার কে দেখে একটা শুকলো ঢোক নিলো।
,
,
সারা মুখে হলুদ মাখায় নাজেহাল অবস্থা। ভেতরে গিয়ে ওয়াশ রুমে মুখ ধুয়ে নিলো ফারহা। বের হতেই ওয়াশ রুমের সামনে সাদাফকে দেখে থমকে যায় সে।
পাশ কাটিয়ে চলে আসতে চাইলে সাদাফ দেওয়ালে এক হাত দিয়ে পথ আটকে দাড়ায়। ফারহা একটু রাগি লুক নিয়ে বলে,
– পথ ছারুন আমার।
সাদাফ বললো,
– হুম ছারবো, ধরে রাখতে আসিনি। অনেক দিন পর দেখছি তোমায়। কেমন আছো?
ফারহার অস্বস্থি লাগছে খুব। বিরক্তি নিয়ে বললো,
– হুম ভালো,, পথ ছারুন আমার।
সাদাফ আরো ভালো করে আটকিয়ে বললো,
– সেদিন কিভাবে পারলে দুই বছরের সম্পর্ক শেষ করে দিতে।
রাগে ফারহার শরির কাঁপছে। তবুও নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললো,
– আমি চাইনি, আপনিই বাধ্য করেছেন আমায়।
– এই তোমার ভালোবাসা?
– আপনার ভালোবাসাও কতোটা শুদ্ধ ছিলো তা তো তখনই প্রমান করে দিয়েছেন। আর এই বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে ইচ্ছুক নই,,,,

বলেই সাদাফের হাত ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে সেখান থেকে হাটা ধরে ফারহা। সাদাফ সোজা হয়ে দাড়িয়ে তাকিয়ে থাকে ফারহার চলে যাওয়ার দিকে। হলুদ শাড়িতে খুব মানিয়েছে মেয়েটাকে। তার সুন্দর্যের সাথে শাড়িটা পুরোপুটি মিশে গেলো। আচ্ছা ব্রেকআপের পর প্রাক্তনকে এতো সুন্দর লাগে কেন?

অনুষ্ঠান শেষ হতে প্রায় রাত ২ টা বেজে গেলো। শেষ রাতে এসেও বান্ধবিদের জ্বালায় ঘুমাতে পারছে না ফারহা। চারজন একসাথে আছে মানেই তাদের আলোচনা বিশ্বের বড় বড় গবেষনাগারকেও হার মানাবে। উপায় না পেয়ে ফারহা একটা বালিশ নিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলো। এবার একটু ঘুমাতে পারলেই হয়।
,
,
সকালে ঘুম কাতুর চোখে হাত দিয়ে চোখ কঁচলাচ্ছে ফারহা। ভোরের আলো ফুটে উঠেছে। রুমের বাইরে কয়েকজন চা নাস্তা নিয়ো দৌড়াদৌড়ি করছে। বাকিরা হয়তো এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। আয়রিন, সাথি, সুমাইয়া সবাই এখনো ঘুমাচ্ছে। তিনজন মিলে সারা রাত রুমটা একবার উল্টো করেছে আরেকবার পাল্টা করেছে। এমন অবস্থা করেছিলো তিনজন মিলে।
শেষ রাতে ঘুমিয়ে এখন মরার মতো পরে আছে।
ফারহা আরো কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে রইলো। না, ঘুম আসছে না আর। রুম থেকে বেড়িয়ে বাইরে এলো। ফারহাকে দেখে লতা রহমান এগিয়ে এসে বলে,
– ফ্রেশ হয়েছো?
ফারহা দুই দিকে মাথা নাড়ায়। লতা রহমান আবার বলে,
– ওয়াশ রুমে গেলে এক পাশে টুথ পাউডার পাবে। ফ্রেশ হয়ে নাও, আমি নাস্তা তৈরি করছি। আর বাকিদেরও ডেকে দিও।
ফারহা লক্ষি মেয়ের মতো ঘুমু ঘুমু চোখে এক পাশে মাথা কাত করে হ্যা সূচক সম্মতি জানালো।

শাক/চুন্নি গুলো যেই মরার মতো ঘুমাচ্ছে, মনে হয়না ডাকলে উঠবে এখন। তাই ফারহা হাটতে হাটতে ছাদে চলে গেলো। দেখে আবরার আগে থেকেই ছাদে হাটাহাটি করছে।
আবরারকে দেখে নেমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ডাক দেয় আবরার। ফারহা দাড়িয়ে পেছন ফিরে তাকালো। আবরার তার কাছে এসে শান্ত ভাবে বললো,
– সরি।
ফারহা একটু ভ্রু-কুচকে বললো,
– সরি কেন?
আবরার শান্ত ভাবে বললো,
– কালকের ব্যবহারের জন্য।
– ইটস ওকে। আমি কিছু মনে করিনি। আমি জানতাম না, আপনার রুমে বাইরের কেউ প্রবেশ করা টা আপনি পছন্দ করেন না।

আবরার আর কিছু না বলে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। ফারহা আবার বললো,
– আচ্ছা ওই ছেলেটা আপনার কি হয়?
আবরার বললো,
– কোন ছেলেটা?
– ওই যে, একটু ফর্সা করে লম্বা, ব্লু শার্ট পরেছিলো কালকে দেখলাম।
– ওহ্ সাদাফের কথা বলছো? আমার বাবার বন্ধুর ছেলে। কেন, কি করেছে সে?
– না কিছু না এমনি।

বলেই নিচে চলে আসলো ফারহা। রুমে এসে বাকি বান্ধবিদের টেনে তুললো। ৯ টা বাজে, এখনো পরে পরে ঘুমাচ্ছে।
,
,
আবরারের অনেক ফোনের কারণে দুপুরে বর পক্ষ আসার একটু আগে আসলো ফারদিন। ফারহা এগিয়ে গিয়ে বললো,
– এতোক্ষনে এলে কেন ভাইয়া? কোনো সমস্যা? আর কালকে এভাবে ফোন কেটে দিলে কেন?
প্রশ্ন গুলোয় একটু বিরক্তি নিয়ে ফারদিন বললো,
– এতো কথা বলিস না তো, ভালো লাগছে না।

বলেই সামনের দিকে চলে গেলো। হা হয়ে তাকিয়ে আছে ফারহা। ভাইয়া তো তার সাথে এভাবে কথা বলে না। কাল থেকে ভাইয়ার কি হলো হটাৎ।
,
,
সামাজিক ভাবেই বিয়েটা শেষ হলো। আয়রিন কে বিদায় দিচ্ছে সবাই। গত কাল থেকে হাসিখুশি মেয়েটাও এখন কাঁদছে সবাইকে ধরে। আমারও খুব খারাপ লাগছিলো। আমাকেও হয়তো একদিন এমন একটা যায়গায় এসে দাড়াতে হবে।

সাদাফকে গত কাল রাতে দেখেছিলো সে। আর বিয়ের আগে দুপুর বেলায় এসেছে। ফারহার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো বার বার। বাট সুজুগ পায়নি দেখে হয়তো হয় নি।

আয়রিনকে বিদায় দিয়ে ফারদিনকে খুজতে লাগলো ফারহা। ভাইয়ের মতিগতি ভালো লাগছে না তার কাছে।
দেখে সবার বিপরিত পাশে একা দাড়িয়ে আছে সে। ফারহা গিয়ে পেছন থেকে কাধে হাত রাখতেই চমকে উঠে চোখের পানি মুছে নের ফারদিন। ফারহার দিকে চেয়ে একটু হাসলো। ফারহা বললো,
– কাঁদছো কেন ভাইয়া?
– কই না তো।
– আমার কাছে লুকানোর চেষ্টা করেও লাভ হবে না ভাইয়া। কাঁদছো কিনা ওটা জিজ্ঞেস করিনি, কেন কাঁদছো তা জিজ্ঞেস করেছি।
ফারদিন একটু হেসে ফারহার গালে হাত রেখে বললো,
– একদিন আমার বোনটাকেও এভাবে বিদায় দিয়ে দিতে হবে তাই না রে?

To be continue……

তোমার ছায়া পর্ব-০১

0

#তোমার ছায়া (পর্ব ১)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– পর-পুরুষের রুমে এসে শাড়ি চেঞ্জ করতে তোমার একটুও বিবেকে বাধলো না? নাকি সব নিজে থেকেই প্লেন করে করছো?

হটাৎ রুমে কারো আগমন ঘটায় আর তারপর এমন কথায় থতমত খেয়ে যায় ফারহা। মাথা তুলে সামনে তাকাতেই দেখে সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটা তার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। ভয়ে ও লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে ফারহা।

আজ প্রথম শাড়ি পরে বান্ধবির বিয়েতে এসেছে ফারহা। আজ গায়ে হলুদ, বাকি সব বান্ধবিরাও হলুদ রঙের শাড়ি পরে এসেছে। তাই বাধ্য ফাহাকেও পরতে হয়েছে শাড়ি।
কিন্তু এখানে আসার পর দৌড়ে আসা একটা ছেলের সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে যায় সে। ছেলেটা পেছনে না তাকিয়ে সোজা চলে গেলো। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে উঠে দারালো ফারহা। দেখে সুন্দর করে পরে আসা শাড়িটি ও এলোমেলো হয়ে গেছে।
ছেলেটাকে মনে মনে গালি দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো সে। দেখে বাকি বান্ধবি গুলো আয়রিনকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে। তার দিকে তাকানোরও সময় নেই তাদের।
তখনই আয়রিনের মা লতা রহমান। তার কাছে এগিয়ে এসে সমস্যার কথা জানতে চাইলে ফারহা খুলে বলে সব। এক হাতে শাড়িটা ধরে আন্টির সাথে হাটা দরলো সে। যাই হোক আগে শাড়িটা গুছিয়ে নিতে হবে।

বিয়ে বাড়ি, প্রায় সারা বাড়ি জুড়েই মানুষের ছড়াছরি। তার মাঝে একটা রুম ফাকা। আর তা হলো আবরার ভাইয়ের। আয়রিনের বড় ভাই।তার রুমে কাউকে ঢুকতে দেয়না সে। নিজেই রুম পরিপাটি করে রাখে। এরপর কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ। সেই সুবাদে আজও রুম ফাকা পরে আছে।

তাই লতা রহমান তাকে আবরারের রুমে ঢুকিয়ে বললো,
– আবরার এখন বাইরে আছে, ও আসার আগেই চেন্জ করে নাও। ওর রুমে কেউ এসেছে তা দেখলে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে বসবে সে।

নিরুপায় দৃষ্টিতে সাত-পাঁচ না ভেবে রুমে ঢুকে শাড়ি ঠিক করতে লাগলো ফারহা। যেহেতু এই রুমে কারো আসা নিষেধ তাহলে একেবারে নিশ্চিন্তে থাকতে পারে সে।

সব শেষে একটু ঝুকে শাড়ির কুচি গুলো ঠিক করছিলো তখনই আবরার রুমে আসে। আর এসব কান্ড দেখে এতো কথা শুনিয়ে নিলো ফারহাকে।

চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে ফারহা। আবরারের ভয়ে হাত কাচুমাচু করছে বার বার। মানুষটাকে ভয় পাওয়ার কিছু কারণ আছে। তার চোখে সবচেয়ে রাগি মানুষের নাম হলো আবরার আহমেদ।
তাছারা তার আরেকটা পরিচয় হলো, ফারহা দের কলেজে নতুন জয়েন করেছে। জন্মের পর মনে হয় তাকে মধুর বদলে লবন খাওয়ানো হয়েছে। তাই তার আচরণও নোনতা টাইপের।

কলেজে যখন প্রথম প্রথম জয়েন করে তখন কথায় কথায় একদিন ফারহা তার বান্ধবিদের বলে ফেলেছিলো তার আবরার স্যারকে ভালো লাগে। সেটাকে বাকি বান্ধবিরা টানাটানি করতে করতে আবরারের কান অব্দি চলে গেলো। সেদিন কলেজ ছুটির পর কোচিংএ সারা ক্লাস কান ধরে দাড় করিয়ে রেখেছিলো তাকে।

এই মুহুর্তে ফারহা’র দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে আবরার। ফারহা’র নিরবতা দেখে সে আবারও রাগি গলায় বললো,
– এখন মুখে তালা পরে গেছে নাকি? এমন ভাব ধরলে মনে হচ্ছে কিছুই জানো না। মানে আমাকে আকৃষ্ট করতে আর কতো নিচে নামবে তুমি?
ফারহা এবার নিচের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় বললোয়,
– আমি এসব কখনোই ভাবিনি। আমি যাস্ট বিপদে পরে আপনার রুমে এসেছি। আপনি যেমনটা ভাবছেন, মোটেও আমার এমন কোনো উদ্দেশ্য নেই। বিশ্বাস না হলে আপনি আন্টিকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।

ফারহার কথায় আবরার আরেকটু রাগি স্বরে বললো,
– স্টপ, নাটক বন্ধ করো তোমার।
তখনই রুমে আসে লতা রহমান। আবরারের দিকে চেয়ে বললো,
– কি হয়েছে, তুই শুধু শুধু মেয়েটাকে এতো ধমকাচ্ছিস কেন?
– ও কি করেছে তুমি যানো? কতো বড় সাহস এই মেয়ের। আমার রুমে এসে,,,,,
ছেলেকে থামিয়ে দিয়ে লতা রহমান বললো,
– জানি আমি, সে এমনি এমনি তোর রুমে আসেনি। বাইরে কার সাথে যেন ধাক্কা লেগে পরে গিয়ে সব এলোমেলো করে ফেলেছিলো। তারপর আমাকে বললে আমি এখানে নিয়ে আসি। সারা বাড়িতে এখন মেহমান। এক মাত্র তোর রুমটাই ফাকা ছিলো। তাই তাকে বললাম তারাতারি ঠিক করে বেরিয়ে আসতে। তো এখানে দোষের কি আছে? মেয়েটা বিপদে পরেছে তাই বাধ্য হয়ে এই রুমে নিয়ে আসলাম আমি।

আবরার আর কিছু না বলে ফারহার দিকে মাথা তুলে তাকালো। কিছু না বলে চুপচাপ নিচের দিকে চেয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো ফারহা। কি ভাবে সে নিজেকে?
মুখ গোমড়া করে চুপচাপ আয়রিনের কাছে গিয়ে বসে বলে,
– থাকবো না আমি তোর বিয়েতে। এক্ষুনি চলে যাচ্ছি। বান্ধবির বিয়েতে এসেছি, কারো অপমান সহ্য করতে আসিনি আমি।
আয়রিন তার দিকে চেয়ে বললো,
– তোর আবার কি হলো, কে অপমান করেছে তোকে?

ফারহা একবার বান্ধবিদের দিকে চোখ বুলিয়ে নিলো। কারণ আবরার স্যারের কথা বললে, নির্ঘাত তাকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু করবে সবাই। তবুও হাত কাচুমাচু করে বললো,
– কে আর, তোর সেই গুনধর ভাই। একটু বিপদে পরে তার রুমে ঢুকেছি, এতে কি এমন মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে গেলো?

ফারহার কথায় মুখ চেপে হেসে উঠে আয়রিন। যেন এক মোহা জোক্স শুনেছে সে। তারপর হাসি থামিয়ে বললো,
– তুই ঘুরে ফিরে ভাইয়ার উঠানে কেন আছাড় খাস? আর তুই জানিস না, ভাইয়ার রুমে আমরা ব্যাতিত ঘরের বাইরের কোনো প্রবেশ নিষেধ?
ফারহা একটু রেগে বললো,
– আমি কি জানতাম নাকি, বাড়িতেও তোর ভাই এতো রুল্স নিয়ে চলে?
আয়রিন আবারও হেসে বললো,
– ভাইয়ার অনেক রুল্স আছে। ওগুলো না জানলে কি হবে, ভাবি জি? নাহলে তো পরে দেখা যাবে সারা জীবন ভাইয়ার হাতে মার খেতে হবে।

আয়রিনের কথায় হো হো করে হেসে উঠে সবাই। যাতে রাগটা আরো বেড়ে গেলো ফারহার। আয়রিনের দিকে চেয়ে বললো,
– কানের তিন ইঞ্চি নিচ বরারব একট কষিয়ে খেলে তখন মজা নেওয়া বের হয়ে যাবে তোর। আর ভাবি ডাকস কাকে? আমি কি তোর ভাইকে বিয়ে করার জন্য বসে আছি নাকি?
ফারহার কথায় আবারও হেসে উঠে সবাই।

—————-

ফোন হতে এক পাশে চলে গেলো ফারহা। বাসা থেকে মা ফোন করেছে। আজ বাসায় ফিরবে কিনা তা জিজ্ঞেস করতে। যেহেতু আজ গায়ে হলুদ, কাল বিয়ে। তাই বান্ধবিরা সবাই এক সাথেই থাকবে। তাই আজ আর যাওয়া হবে না।
তবে ভাইয়া হয়তো যেতে পারে।

ফোন রেখে আসার সময় হটাৎ চোখে পরলো একটা ছেলে আর একটা মেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে গভির ভাবে চুম্বন করছে। যখন খেয়াল করলো ছেলেটা আর কেও না, তারই ভালোবাসার মানুষ সাদাফ। মুহুর্তেই বুকটা কেঁপে উঠে তার। জেগে উঠে এক তীব্র কষ্ট।

সাদাফের সাথে দুই বছরের সম্পর্ক থাকার পর যখন বছর খানেক আগে ব্রেকআপ হয়েছিলো তখন খুবই আবেগ প্রবন ছিলো ফারহা। কতো রাত জেগে কেঁদেছিলো তার কোনো হিসেব নেই।
ওই দিনের কথা মনে পরতেই বুকটা এখনো শুন্য মনে হয় তার।
সবই ঠিকটাক ছিলো। বাট একদিন সাদাফ তাকে বললো, তার সাথে রুম ডেট এ যেতে হবে। কিন্তু তা সরাসরি না বলে দেয় ফারহা। সে বিয়ের আগে এই ধরনের কোনো সম্পর্কে জরাবে না। আর ওই দিনই সাদাফ একটা কথা বললো, হয়তো তার কথা মেয়ে নিবে, নয়তো ব্রেকআপ।

ফারকা কয়েকদিন কান্নাকাটি করে সাদাফকে অনেক ভাবে বুঝানোর ট্রাই করছিলো। কিন্তু সাদাফের একটাই কথা, হয়তো রুম ডেট, নয়তো ব্রেকআপ।
পরে অনেক কষ্টে নিজেকে শক্ত করলো ফারহা। সাদাফের দেওয়া দুইটা অপশন থেকে ব্রেকআপ টাই বেছে নিলো সে। সরে গেলো সাদাফের জীবন থেকে।
কিন্তু আজ এক বছর পর হটাৎ সাদাফকে দেখে তাও আবার এই অবস্থায়। সে নিজেও জানেনা প্রাক্তনের জন্য তার কেন এতো কষ্ট হচ্ছে। সে তো একটা ফ্রট, তার জন্য কষ্ট হবে কেন?

চোখে জল অনুভব করতেই ওয়াশ রুমে গিয়ে পানি ছিটিয়ে নেয় ফারহা। মুখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে বেরিয়ে আসে।
তখনই সাথি এসে তাকে ডেকে নিয়ে গেলো আয়রিনকে মেহেদী পরাতে হবে। কারণ ফারহা খুব ভালো মেহেদী পরাতে পারে।

আয়রিনের হাতে খুব যত্ন করে মেহেদী পরিয়ে দিলো সে। তখনই পাশে এসে দাড়ায় আবরার। আয়রিনের মেহেদী পরা হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো। আয়রিন একটু হেসে বললো,
– দাড়িয়ে আছো কেন ভাইয়া? আমার পাশে বসো।
আয়রিনের পাশে বসে আবরার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
– খুব সুন্দর লাগছে আমার পুচকি বোনটাকে।

আয়রিনের হাতে মেহেদী পরানো শেষ হলে, ফারহার দিকে চেয়ে আয়রিন বলে,
– নে এবার ভাইয়াকেও আমার মতো করে সেম ডিজাইনে মেহেদী এঁকে দে।
আবরার একটু ভ্রু-কুচকে বললো,
– আমি কেন মেহেদী লাগাতে যাবো? বিয়ে টা তোর, আমার না।
আয়রিন একটু ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
– ছোট বেলা থেকে যা করেছি দুজন একসাথে করেছি না? তুমি যা করতে আমিও তাই করতাম, তুমি যা খেতে আমিও তাই খেতাম। এখন আমি মেহেদী লাগিয়েছি তোমাকেও লাগাতে হবে।
আবরার আরেকটু ভ্রু-কুচকে বললো,
– সবই যদি ভাগ করিস, তাহলে বিয়েটা একা করে নিচ্ছিস কেন?

আশে পাশের বান্ধবি গুলো হেসে উঠে আবরারের কথায়। আবরার একটু লজ্জা পেলো। বোনের সাথে দুষ্টুমি করতে গিয়ে নিজের বিয়ের কথাও মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেলো। আশে পাশের হাস্যকর পরিবেশ দেখে রাগি দৃষ্টিতে তাকায় আবরার। মেয়েগুলো চুপ হয়ে যায়। কথা ঘুরাতে আবরার বললো,
– আচ্ছা ঠিক আছে বোনের ইচ্ছে পুরনে আমিও মেহেদী লাগাতে রাজি।

বলেই হাতটা একটু সামনে বাড়িয়ে দেয় আবরার।
মনে মনে আয়রিনের গুষ্টি উদ্ধার করে ফেলছে ফারহা। একটু আগে এতো কথা শুনে এই লোকটার হাতে মেহেদী পরানোর বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই তার। আর এমনিতেই লোকটাকে দেখলে ভয়ে বুকটা ধুকধুক করে। আর ওই আয়রিন শাক*চুন্নি কতো সুন্দর বুঝিয়ে বসিয়ে দিলো মেহেদী পরাতে। এতো ঠেকা পরছে নাকি আমার?

To be continue……

আমি তুমিতেই আসক্ত পর্ব-৩৪ এবং শেষ পর্ব

3

#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_৩৪ (অন্তিম পর্ব)
#সুমাইয়া মনি।

চার বছর পর….

-“নিথান এখানে এসো বাবা শার্টটা পড়িয়ে দেই।” নবনী হাঁকিয়ে ওর ছেলে নিথানকে ডাকছে।

হাতে ফোন নিয়ে দুই বছরের নিথান থপথপ পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে তার মায়ের দিকে। তখনই আদি রুমে এসে খপ করে নিথানকে কোলে তুলে নিয়ে গালে চুমুতে ভরিয়ে দেয় । নবনী কিছুটা রাগ নিয়ে আদিকে বলে,
-“তোমাকে কতবার বললাম অফিস থেকে এসে ফ্রেশ না হয়ে নিথানকে ধরবে না। কথাই শুনছো না তুমি।”

-“নিথান বাবা বলো তো মাম্মামকে, তাতে তোমার কি?” আঙুল দিয়ে নবনীকে দেখিয়ে বলতে বলে নিথানকে।

নিথান মৃদুস্বরে আওড়ায়,
-“তাথে তোমাত কি?”

নবনী কোমড়ে দু হাত রেখে রাগী ভঙ্গিতে দাঁড়ায়। আদি, নিথান হাসছে একে অপরকে দিকে তাকিয়ে। নবনী মেকি রাগ নিয়ে বলে,
-“একটু পরেই তিশা কল দিয়ে জিজ্ঞেস করবে বাড়ি থেকে বের হয়েছি কি-না। দেখেছো কয়টা বাজে।”

-“নিথান বাবা তুমি শার্টটি নিয়ে দাদুর কাছে যাও।” নবনীর কাছ থেকে শার্টটি নিয়ে নিথানের হাতে দিয়ে রুম থেকে বের করে দেয়। নবনী, ‘নিথান তুমি যাবে না.. ‘ বলে এগিয়ে যেতে নিলে আদি থামিয়ে দেয়। নিথান হাসতে হাসতে চলে যায়।
আদি বাঁকা হেসে নবনীর দিকে তাকায়। এ বাঁকা হাসির কারণ নবনী ভালো করেই বুঝতে পারে। সরু চোখে তাকায় আদির দিকে।

-“তো? হয়ে যাক…” এক ভ্রু উঁচু করে শার্টের বোতাম খুলে এগিয়ে গিয়ে বলে আদি।

-“কি হবে?” দু কদম পিছিয়ে বলে নবনী।

-“রোমাঞ্চ!” বলেই নবনীকে জড়িয়ে ধরে দরজায় লাথি দিয়ে চাপিয়ে দেয়।

ভালোবাসার খুনসুটি আরম্ভ হয় তাদের। আজ নিভ্র ও তিশার বিবাহ বার্ষিক। বড়ো করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রাতে অনুষ্ঠান। সেখানে যাওয়ার জন্য আদি অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছে।

সেদিন রাতে নিভ্রর জীনের মোড় ঘুরে যায়।
পরেরদিন ভোর পাঁচটার দিকে আপন ও আদির পরিবাবের সবাইকে রওয়ানা হতে হয় ঢাকার উদ্দেশ্যে। মূলত হঠাৎ নিভ্রর বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে তাদের ঢাকাতে আসা। নিভ্র কাল রাতেই তিশার বাবাকে বিয়ের ব্যাপারে বলে। তারা আগে থেকেই রাজি ছিল তাই অমত করেনি। কিন্তু কাল জিনানের সঙ্গে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত শুনে প্রথমে রাজি ছিল না। পরক্ষণে নিভ্র ফোস করাতে রাজি হতে হয় তাদের। ফোনে তিশার বাবা আজিম উদ্দীন, আজমল উদ্দীনের সঙ্গে কথা বলেছে। তারাও বিয়েতে রাজি হয় ঠিকিই, তবে হঠাৎ নিভ্রর বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে তারা অবাক হয়।
আদি, নবনী বিষয়টি জানার পর কিছু বলেবি। বরং তারা আরো খুশি হয়েছে। নিভ্র অতীত ভুলে নতুন জীবনের সূচনা করবে ভেবে। জিনান, মায়ার পর, নিভ্র, তিশার গায়ে হলুদ দেওয়া হয়। বুকে শত কষ্ট চাপিয়ে রেখে হলুদ দিতে স্ট্রেজে বসছিল নিভ্র। পরেরদিন বিয়ে সম্পূর্ণ হয়। তিশাও জানতো নিজেদের সম্পর্ক এত সহজে স্বাভাবিক হবে না। আর কেনই বা ওঁকে বিয়ে করা হয়েছে। শুধু মাত্র আদি, নবনীর জীবন থেকে সরে যাওয়ার এটাই ভালো সুযোগ ছিল। এছাড়া আর কোনো উপায় নিভ্রর কাছে ছিল না। বিয়ের পর নিভ্রর পোস্টিং আবার কুমিল্লাতেই হয়। আলাদা বাড়ি কিনে তিশাকে নিয়ে থাকতে আরম্ভ করে। প্রথমে তাদের মধ্যকার সম্পর্কটা দূরত্ব খাপছাড়া হলেও আস্তেধীরে নিজেদের মধ্যে ভালো বন্ডিং তৈরি হয়। বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসার রূপ নেয়। হ্যাঁ! নিভ্র দ্বিতীয় বার প্রেমে পড়েছে তিশার। ভালোবেসে আপন করে নিয়েছিল তিশাকে। সেদিনের সেই ক্লেশ এখন আর তার মনে নেই। তিশা নিজের ভালোবাসা দিয়ে নিভ্রর অতীত ভুলিয়ে দিয়েছে। ভুলিয়ে দিয়েছে নবনীর প্রতি সুপ্ত ভালোবাসাটুকু। এক বছর অতিবাহিত হতেই আপন পুনোরায় তনুজাকে বিয়ে করে। আপন তার কথা রেখেছে।
এবং এবার বিয়ে আপনের মর্জিতেই হয়। কেননা সে নিভ্রর মতোই দ্বিতীয় বারের মতো তনুজাকে ভালোবেসে ফেলেছে।
তিন জোড়া শালিকের জীবন ভালোবাসায় আবদ্ধ এখন।
দু বছরের মাথায় নবনীর কোল জুড়ে নিথানের আগমন হয়। তিন বছর পর তিশার মেয়ে হয়। তনুজা সবে তিন মাসের প্রেগন্যান্ট। তিন দম্পতির জীবন এখন অনেকটা সুন্দর ভাবেই অতিবাহিত হচ্ছে।

আদি, নবনী ও বাকি সবাই রেডি হয়ে ড্রইংরুমে বসে আপন আর তনুজার জন্য অপেক্ষা করছে। ওরাও কিছুক্ষণ বাদে ড্রইংরুমে এসে উপস্থিত হয়। এক সঙ্গে সবাই রওয়ানা হয় নিভ্রদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। পুরো বাড়িতে মেহমানে গিজগিজ করছে। উপস্থিত হতেই নিভ্র সবাইকে ভেতরে নিয়ে আসে। অনেক আগেই জিনান, মায়া এসেছে। মায়ারও এক ছেলে। নিথানকে কোলে নিয়ে মেহমানদের আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত নিভ্র। আদি নিভ্রর মেয়ে ও জিনানের ছেলে কোলে নিয়ে খেলছে।
নবনী তনুজাকে নিয়ে তিশার বেড রুমে আসে। তিশা তখন শাড়ির কুঁচি ঠিক করছিল। নবনী ও তনুজাকে দেখে তিশা খুশিতে আত্মহারা। নবনী মায়াকে পেয়ে খুশি আরো খুশি হয়। অনেকদিন পর দু বান্ধবী এক হয়েছে। চার জা বান্ধবীদের মতো একদম ফ্রি। এক সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত তারা। নিচে যে অনুষ্ঠান হচ্ছে, সেই বিষয় একেবারে ভুলেই গেছে। শেষে আপন ওদের ডাকতে আসে । এগারোটার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়। নিভ্র, তিশা তাদের মেয়ে ফুলকে সঙ্গে নিয়ে কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দেয়। খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ হয়। নাচগান আরম্ভ হয়। রংবেরঙের লাইটের সমারোহ। একের পর এক লাইট জ্বলছে আর নিভছে। চার জোড়া কাঁপল এক সঙ্গে নাচছে। কিছুক্ষণ পর পাটনার পাল্টিয়ে ডান্স পুনোরায় শুরু হয়। আপাতত নিভ্র নবনীর পাটনার, আদি তনুজার, জিনান তিশার ও আপন মায়ার। আদি বেশ সাবধানে তনুজাকে নিয়ে ডান্স করছে। যাতে তনুজার ধাক্কা, ঝাঁকি না লাগে। আদি মুচকি হেসে তনুজাকে বলে,
-“সেদিন যদি তুমি আমাকে বিয়ে করতে, তাহলে আজ চার, পাঁচ বাচ্চার মা হতে।”

-“হ আইছে..” মুখ বাকিয়ে বলে তনুজা।

-“তাহলে কি! তুমি তো একটাই পেন্ডিংয়ে ঝুলিয়ে রেখেছো।”

-“আর নিজে যে এক ছেলের বাবা হয়ে বসে আছো সেটা বলছো না। ওনি নাকি আবার চার-পাঁচ বাচ্চার বাবা হবে।” ভেংচি কেটে বলে তনুজা।

-“আহা! নবনী তো ছোট বাচ্চা। এত কষ্ট দেওয়া কি ঠিক হবে বলো।”

-“আর আমি কি বুড়ি?” মেকি রাগ নিয়ে বলে তনুজা।

-“এইতো স্বীকার করলে তুমি বুড়ি। এটাই তো শুনতে চেয়েছিলাম এতক্ষণ।” হেসে ফেলে বলে আদি।

তনুজা রেগে চিমটি কাঁটে আদির বাহুতে। বাড়িতে বসে তনুজার সঙ্গে অনেক দুষ্টুমি করে। ভাবি, দেবর বলে কথা।
তার মধ্যে তনুজাকে বুড়ি বলে সারাক্ষণ রাগায়। আদির সেই পুরোনো অভ্যাস আর গেল না। এখনো মানুষকে বিরক্ত করার টেকনিক চালু রেখেছে আদি।

-“ইশশ! বরকে কেউ এভাবে মারে নাকি।” আদি বাহুতে হাত বুলিয়ে বলে তনুজার উদ্দেশ্যে।

-“আইছে রে আমার বালের বর।”

-“বরই তো। আমি হলাম তোমার দ্বিতীয় বর।”

-“কেমনে?” কোমড়ে এক হাত রেখে বলে।

-“দেবর, এটাকে ভাঙ্গলে দে+বর=দ্বিতীয় বর হয়। হিসার বুঝো নাই, না বুঝলে আমার ছেলের ফিটার একটু টেস্ট কইরো।”

-“সর শয়তান।” বলেই কান টেনে ধরে আদির।

-“আহহ! লাগতেছে ছাড়ো তনুজা ভাবি।”

তনুজা আরো কষে কান মলে দেয় আদির।
এদিকে ওরা বেশ সুন্দর ভাবেই ডান্স করছে। দূর থেকে আদি ও তনুজার দুষ্টুমিও দেখেছে সবাই। ডান্স করার এক পর্যায়ে নিভ্র নবনীকে প্রশ্ন করে,
-“আমার ভাইকে কষ্ট দিচ্ছো না নবনীতা? ”

-“কি মনে হয় নিভ্র ভাইয়া।” নাচের স্টেপ মিলিয়ে বলে নবনী।

-“মনে হয় তো কষ্ট দিচ্ছো।”

-“মনে হয় বলেই প্রশ্নটা করেছেন, রাইট?”

-“রাইট!”

নবনী কয়েক মুহূর্ত চুপ থাকে। তারপর ফের বলে,
-“চার বছর আগে আপনার ভাই আমাতে আসক্ত বলেছিল। সেই আসক্তি কাঁটতে দেইনি। এখনো আদি আমাতেই আসক্ত। শুধু আদি নয়, আমিও আদিতে আসক্ত নিভ্র স্যার।” লাস্টের কথাটা নিভ্রর কানের কাছে এসে বলেই ঘুরে দাঁড়ায় নবনী। অনেকদিন পর নবনীর মুখে স্যার ডাকটি শুনেছে। তবে এখন আর নিভ্রর খারাপ লাগে না। কেননা সে এখন নবনীতে নয় বরঞ্চ তিসাতে আসক্ত। নিভ্র মুচকি হাসে। নবনী ঘুরে নিভ্রর দিকে তাকায়। ডিজে লাইটের আলোয় নবনী নিভ্রর ঠোঁটের হাসি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। নিজেও হেসে দেয়।

ভালোবাসার আসক্ততায় পরিপূর্ণ তাদের জীবন। নেই দুঃখ, নেই ভালোবাসার কোনো অভাব। ওদের দেখে শেখা উচিত, দ্বিতীয় বারের মতো কাউকে ভালোবাসা যায়, প্রেমে পড়া যায়। আশা, আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করা যায়। যদি সেই মানুষটি সঠিক, সৎ চরিত্রবান হয়। তবেই তার ভালোবাসার মুগ্ধতায়, আসক্ততায় কাঁটিয়ে দেওয়া যায় পুরো জীবন।

সমাপ্ত।

আপাতত গল্পের সমাপ্তি নিয়ে আমি কিছুই বলব না। যা বলার আপনারাই বলবেন। পুরো গল্পটির বিষয়ে ছোট, বড়ো মন্তব্য করে যাবেন। ধন্যবাদ!

আমি তুমিতেই আসক্ত পর্ব-৩৩

0

#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_৩৩
#সুমাইয়া_মনি।

রাতে নবনীর সঙ্গে কথা বলার পরপরই আদি একটি প্রজেক্টের কাজ শুরু করে। সাতটার দিকে কাজ সম্পূর্ণ হয়। একজন কলিংয়ের কাজে ডেলিভারি করে দেয় এবং রওয়ানা হয় ঢাকার উদ্দেশ্য। নতুন জব দেখে ছুটি নিতে অসুবিধা হলেও পরে আদির বাবার বন্ধু ইলিয়াস রহমানকে মানিয়ে নেয় সে। প্রজেক্ট রেডি করে তবেই ঢাকা যাবে চাচ্চুকে জানায়। তিনি আর অমত করে না। তিনদিনের ছুটি মনজুর করে আদিকে। আদি খুশি মুডে নিজের গাড়ি করে রওয়ানা হয় ঢাকার উদ্দেশ্যে। আসার আগে বাড়ির সবাইকে বলে আসে তার ঢাকায় যাওয়ার বিষয়টি যেন নবনীর কাছে গোপন রাখে।এবংকি নিভ্রর কাছ থেকেও। এইজন্য তারা কেউ কল ধরেনি। আদি চেয়েছিল নবনীকে সারপ্রাইজ দিতে । অথচ সে নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেছে। একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। নয়তো এই সত্য চিরদিনের মতো চাপা পড়ে যেতো। বাড়ির ডুবলিকেট চাবি আদির কাছে আগে থেকেই ছিল। তাই নিভ্রকে না বলে রেডি হয়ে সরাসরি সেন্টারে চলে আসে। সরু রাস্তা দিয়ে হেঁটে সেন্টারের ভেতরে যাওয়ার সময় বাগানের দিকে নজর পড়ে। সেখানে উপস্থিত দু’জনকে দেখে আদি হেসে এগিয়ে আসে। উল্টো দিকে ফিরে ছিল নবনী। নিভ্র ডান দিকে মুখ করে দাঁড়ানোর ফলে আদিকে হেঁটে আসতে দেখেনি। নিভ্রর বলা প্রথম শাস্তির কথাটি শুনে আদি থেমে যায়। ফুল গাছের আড়াল হয়ে দাঁড়ায়। আগ্রহ নিয়ে শুনে তাদের কথপোকথন।
নবনী মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে। নিভ্র তো বলেছিল আদি মিটিং থেকে মাত্র ফিরেছে। কল দেবার কথাও বলেছে। তাহলে আদি এখানে কিভাবে এলো। নিভ্র কি তবে মিথ্যে কথা বলেছে? এক প্রশ্ন নিভ্রর মনে। রুবিনা বানু কি তাকে মিথ্যে কথা বলেছে? আদির কাছ থেকে নজর সরিয়ে নিয়েছে নিভ্র। এই মুহূর্তে নিজেকে বড্ড অপরাধী বলে মনে হচ্ছে । আদি এগিয়ে আসে তাদের দিকে। একবার ভাইয়ের দিকে, আরেকবার নিজের অর্ধাঙ্গিনীর পানে তাকায়৷ মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে নিজের ভাইয়ের প্রেয়সী আজ তার বউ! যাকে সে এখন ভয়ংকর ভাবে ভালোবাসে। মৌন হয়ে রয় আদি। কোথা থেকে শুরু করবে বুঝতে পারছে না। মুহূর্তেই আদি লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,
-“আমি অতীত সম্পর্কে কিছুই জানতে চাই না, না ভবিষ্যতে চাইবো। যে টুকু আড়াল থেকে শুনেছি যথেষ্ট ছিল। আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলে, ভাগ্যক্রমে….।”

নিভ্র আদির কাছে এক কদম এগিয়ে এসে কিছু বলতে নিলে আদি দৃষ্টি সরিয়ে থামিয়ে দেয়। বলল,
-“কিচ্ছু বলার দরকার নেই ভাইয়া। না তোমাকে ভুল বুঝবো, না নবনীকে। তোমরা দু’জনই আমার কাছে প্রিয়। তিল পরিমাণ শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ক্ষয় হয়নি। তবে..” এতটুকু বলে নবনীর দিকে তাকায়। তারপর নজর সরিয়ে নিয়ে নিভ্রর চোখের দিকে তাকিয়ে দ্বিধাবোধ ফেলে অকপটে বলে ফেলে,
-“আমি নবনীতে আসক্ত! প্রিয়তম আসক্তি নামক অসুখ ও,
এতোদিন যে ভালোবাসা মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলাম, ওটাকে দপ করে নিভিয়ে দিও না ভাইয়া। ওঁকে ছাড়তে, ছেড়ে থাকতে পারব না আমি। প্লিজ! ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।” কথাটা বলতে বলতে আদির গলা ধরে আসে। চট করে মাথা নিচের দিকে নামিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।

নবনী থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁট কাঁমড়ে হাতের মুঠোয় ওড়না খামচে ধরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। দোটানায় পড়ে ক্লান্ত সে। নিভ্র আদির দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকায়।
ছোট ভাইয়ের ভালোবাসা আর নিজের ভালোবাসা এক সঙ্গে জড়ানো। কাকে ফেলে, কাকে স্বকীয় করবে বুঝতে পারছে না। ছোট থেকে আদির কোনো আবদান অসম্পূর্ণ রাখেনি। তবে আজ আদি কঠিন আবদারটি করেছে। এবারও সে মুখ ফিরিয়ে নিবে না। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া পানিটুকু হাতের উল্টোপিঠে মুছে নেয়। নিজেকে স্বাভাবিক করে হাসার চেষ্টা করে বলে,
-“নিরদ্বিধায় বলতে পারব নবনীতা তোকে ভালোবাসে। সূচনা আমাকে দিয়ে হলেও, উপসংহার তোকে দিয়েই ঘটবে। নবনী তোর আছে, তোরই থাকবে।” লাস্টেরটুকু বলে নিভ্র আদির কাঁধে হাত রাখে। আদি খুশির আবেগে নিভ্রকে জড়িয়ে ধরে। নিভ্র শেষ বারের মতো নবনীকে দেখে। তার দৃষ্টি নিচের দিকে নিবদ্ধ। পরপরই নজর সরিয়ে নেয়। আদিকে ছেড়ে নিভ্র সেন্টারের দিকে এগিয়ে যায়। আরো একজন আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে। চোখে তারও পানি বিদ্যমান। তিশা! সেদিন রাতে জিনান, নিভ্রর কথা বাহিরে দাঁড়িয়ে শুনেছিল। কিন্তু মুখ ফুটে জিনানকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। আজ নিভ্রকে সেন্টার প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে যেতে দেখে তিশাও বের হয় এবং বাগানে এসে থেমে যায়। সেখানে আগে থেকেই নবনী উপস্থিত ছিল। আড়ালে লুকিয়ে তাদের কথা শুনে। কিছুক্ষণ পর আদিও সেখানে উপস্থিত হয়। আদিকে ও লক্ষ্য করেনি।
অজান্তেই কেঁদে ফেলে তিশা। তবে সে খুশি হয় নিভ্রর মহৎকর্ম দেখে। সেও চলে যায় সেখান থেকে।

আদি নবনীর সামনাসামনি এসে দাঁড়ায়। নবনীর দু গালে হাত রেখে উঁচু করে। নবনীর দৃষ্টি অন্যদিকে। আদি শান্ত কন্ঠে বলে,
-“তাকাও আমার দিকে।”

নবনী তাকায় না। আদি ফেন একই কথা বলে। নবনীর কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। সে কিছুটা ধমকের গলায় বলে,
-“তাকাও বলছি।”

নবনী ভয়ার্ত চোখে আদির দিকে তাকায়। আদি কৃত্রিম হেসে বলে,
-“ভয় পাচ্ছো কেন, আমি তোমাকে কিছু বলব না। ”

নবনী আলতো হাতে আদির হাত সরিয়ে দেয় গাল থেকে। দৃষ্টি সরিয়ে বলে,
-“মাফ করবেন…”

-“হুশশ! এই টপিকে কোনো কথা শুনব না।” নিজের ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে বলে আদি।

নবনী চুপ থেকে যায়। আদি নবনীর আগাগোড়া পর্যবেক্ষণ করে বলে,
-“ব্লু রঙের লেহেঙ্গাটি পড়ো নি কেন?”

নবনী যেন আকাশ থেকে পড়লো আদির প্রশ্ন শুনে। ভ্রুকুটি কিঞ্চিত বাঁকিয়ে বলে,
-“মানে আপনি লেহেঙ্গাটি দিয়েছিলেন?”

-“ইয়েস! পাগলিনী।” মুচকি হেসে দু হাত পিছিয়ে নিয়ে নবনীর দিকে একটু ঝুঁকে বলে আদি। নবনী একটু সরে দাঁড়িয়ে বলে,
-“কিভাবে?”

-“সেদিন মলে আমার বন্ধু রোহানও গিয়েছিল। তোমাকে দেখে পিছন থেকে ছবি তুলে নেয় যখন তুমি লেহেঙ্গাটি ছুঁযে দেখতে ব্যস্ত ছিলে। কথা বলতে যাবে তখন তুমি চলে যাও ভেতরে। সেখানে দাঁড়িয়ে রোহান হোয়াটসঅ্যাপে ছবি সেন্ড করে। ছবি গুলো দেখে জিজ্ঞেস করতেই তোমার কথা বলে। তখন নজরে আসে লেহেঙ্গাটির কথা। কেন জানি মনে হচ্ছিল তুমি লেহেঙ্গাটি পছন্দ করেছো। ব্যস! রোহানের মাধ্যমে কিনে আগন্তুক হয়ে তোমাকে পাঠিয়ে দেই।”

অবশেষে মাথা থেকে লেহেঙ্গার টেনশন নেমে গেল। সে আদির দিকে কৃতজ্ঞতা দৃষ্টিতে তাকায়। আসলেই তার লেহেঙ্গাটি অনেক পছন্দ হয়েছিল। আর সেটি ও বুঝতে পেরেছে।

-“কিন্তু তুমি অনেক চাপা স্বভাবের। ভাবলাম হয়তো এই ঘটনাটি নিজ থেকেই বলবে আর আমি শুনে মজা নিবো। সেটা আর হলো না। প্লানে পানি ঢেলে দিলে। আদির অবুঝ পাগলিনী যত্তসব!” লাস্টের টুকু বিড়বিড় করে বলে আদি।

তবে নবনী ঠিক শুনেছে। মুখে হাত রেখে হেসে ফেলে। বলে,
-“ভালোই হয়েছে বলিনি।”

ভেংচি দেয় আদি নবনীকে টেনে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়।এখন অনেক শান্তি অনুভব হচ্ছে। এক সুমিষ্টঘ্রাণ নবনীকে শিহরণ করছে। ঘ্রানটা আদির শরীর থেকে পাচ্ছে নবনী। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে নবনী। আদি চোখজোড়া বন্ধ করে নিয়ে কাতর কন্ঠে বলে,
-“এভাবে আঁকড়ে ধরতে চাই সারাজীবন। হারাতে দিবো না, হারিয়ে যেতে দিবো না। প্রিয়তম অসুখ, আসক্তি তুমি। ভালোবেসে ভালোবাসায় বেঁধে রাখবো তোমায়। আমি তুমিতেই আসক্ত নবনী, ভয়ংকর নেশার মতো আসক্ত। সেই আসক্ততা কেটে যাওয়ার কোনো উপায় নেই! ”

নবনীর মনের ভেতরে আদির কথাগুলো অনেকখানি জায়গা নিয়ে বিশাল এক অনুভূতির তৈরি করেছে। ভালোলাগা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে ঠিক আদির মতো। একদিকে যেমন ভালোলাগা শুরু হয়েছে অন্যদিকে লজ্জায় লালনীল আকার ধারণ করেছে মুখমন্ডল। আদি আলিঙ্গন থেকে ছাড়িয়ে নেয়। মুগ্ধতার মোহজালে তাকিয়ে আলতোভাবে নবনীর কপাল ছুঁয়ে দেয়। লজ্জায় লাল হয়ে যায় নবনীর গাল। মসৃণ ঠোঁট জোড়া কেঁপে ওঠে। শুধু মাথা নুইয়ে রাখে সে। সেটি দেখে মুচকি মুচকি হাসে আদি।
__________
জিনান অনেকক্ষণ যাবত নিভ্রকে খোঁজ করছে। শুধু নিভ্র নয় তিশা ও নবনীকেও খুঁজছে। কল দিয়েছিল নিভ্রকে। নিভ্র ফোন সাইলেন্ট করে রাখে জিনানে কল দেখে।
নিভ্র সেন্টারের একটি ফাঁকা কামরায় এসে সোফায় বসেছে।বুকের ভেতরে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। অগ্নির শিখার মতো দাউদাউ করে জ্বলছে, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। না আছে দেখার মতো, না আছে কেউ বোঝার মতো। নীরবে চোখের পানি ফেলছে।
কিছুক্ষণ পর তিশাও সেই কামরায় আসে। নিভ্র তিশাকে দেখে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করে। তিশা নিভ্রর পাশে এসে বসে। নিভ্র ফোন বের করে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে বলে,
-“এখানে কেন?”

-“আপনি কেন?” পাল্টা প্রশ্ন করে তিশা।

নিভ্র তিশার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে,
-“আরে আমি তো হাবিলদারের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলাম।”

তিশা সরল চোখে তাকায় নিভ্রর চোখের দিকে। এই চোখে কিছু একটা আছে। কোমল স্বরে বলে,
-“কত সুন্দর করে মিথ্যে হাসি দিয়ে, মিথ্যে কথা বলতে পারেন। অনেক বড়ো অভিনেতা আপনি!”

দৃষ্টি সরিয়ে নেয় নিভ্র। তিশার চোখ এড়াতে পারেনি সে, ধরা পড়ে গিয়েছে। তিশা কণ্ঠ খাদে ফেলে বলে,
-“জানি আমি। সব শুনেছি, দেখেছি আড়াল থেকে। তার জন্য দুঃখিত!”

নিভ্র বুড়ো আঙুল দিয়ে চোখের পানি মুছে নেয়। নাক টেনে বলে,
-“একটা উপকার করবে তিশা?”

-“কি করতে হবে বলুন।”

-“কাল আমায় বিয়ে করবে?”

তিশা অবাক হয়না। দৃষ্টি নত রেখে ফের তাকায় নিভ্রর দিকে। মুচকি হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বলে,
-“বিয়েটা নিশ্চয় নিজের ভাইয়ের জন্য করছেন?”

নিরুত্তর রয়ে যায় নিভ্র। পরক্ষণেই বলে,
-“আমি তোমাকে সত্যিই বিয়ে করতে চাই। থাকনা হাজারটা কারণ।”
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

আমি তুমিতেই আসক্ত পর্ব-৩২

0

#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_৩২
#সুমাইয়া মনি।

সকাল নয়’টার দিকে পড়ার টেবিল ত্যাগ করে আহার সেরে নেয় নবনী। আজকেও ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠেছে।
খাবার খেয়ে ফোন হাতে নিতেই মায়ার বিশটা ফোনকল দেখতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে মায়াকে কল দেয় নবনী। ফোন সাইলেন্ট করার ফলস্বরূপ মায়ার ঝাড়ি খেতে হয়।
তারপর ওদের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে ফোন রেখে দেয় মায়া। নবনী যাওয়ার চিন্তাভাবনা করে। আলমারি থেকে ব্যাগ ফের করে হলুদ রঙের লেহেঙ্গা বের করার সময় সেই ব্লু রঙের লেহেঙ্গাটি নজরে পড়ে। যেটির কথা নবনী প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। ভাবতে বসে যায়। কে দিতে পারে?
একই ভাবনা ভাবতে ভাবতে আদিকে কল দেয়। কিন্তু আদি ফোন পীক করে না। আরো একবার কল দেয়। এবরাও আদি ফোন রিসিভ করে না। ব্যস্ত আছে ভেবে ফোন রেখে দেয় নবনী। লেহেঙ্গাটি সেভাবেই রেখে হলুদ রঙের লেহেঙ্গারিটি ব্যাগে ভরে নেয়। রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে মায়াদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। মাঝ রাস্তায়, ঠিক একই জায়গায় দেখা হয়ে যায় নিভ্রর সঙ্গে। গাড়ির সঙ্গে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিল নিভ্র। নবনীকে খেয়াল করেনি সে। প্রথমে নবনী ধীরে গতিতে হাঁটতে আরম্ভ করলেও, পরমুহূর্তে জোরে জোরে পা চালায়। তবে আজ কেন জানি নিভ্রকে দেখে ওর খারাপ লাগছে না। ক্লেশ গুলো উঁকি দিচ্ছে না। তবে কি অতীত থেকে সে বের হতে পেরেছে?

স্লোন গতিতে এগিয়ে আসতে আসতে সেই দিনের স্মৃতিতে নজর বুলিয়ে আসে। এখন শুধু সেগুলো স্মৃতিই। হোক সেটি খারাপ বা ভালো৷ সেখান থেকে একটি খালি রিকশাকে যেতে দেখে নবনী হাত তুলে ডাক দেয়। রিকশাওয়ালা নবনীর ডাক অনুসরণ করে এগিয়ে আসে। ততক্ষণে নিভ্রও নবনীর আওয়াজ শুনতে পেয়ে ফিরে তাকায়। ফোন কেঁটে দিয়ে এগোতেই নবনী রিকশায় চড়ে বসে। থেমে যায় সে। একবারও না তাকিয়ে রিকশাওয়ালাকে চালাতে বলে নবনী।
নিভ্র কিছুটা হার্ট হয়। এক সময় নজর বন্দী করে রাখতো তাকে, আজ সে নজর এড়িয়ে চলে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাটির দিকে নজর তাক করে নিভ্র।

নবনী মায়াদের বাড়িতে পৌঁছে যায়। ঘরভর্তি মেহমান। সোরগোল পরিবেশে নবনী বিব্রতবোধ করছে। মায়াকে তখন হাতে মেহেদী পরানো হচ্ছিল। নবনীকেও জোর করে মেহেদী পরিয়ে দেয়। খুশি আসে বারোটার দিকে। তিন বান্ধবীর হাতে মেহেদী। মায়ার কাজিনরা নাচছে মায়াকে নিয়ে। ওরা বসে দেখতে। এসব কিছুর উর্ধ্বে নবনী ভাবছে শুধু আদির কথা। এতক্ষণে তো কল দেওয়ার কথা। কিন্তু না কোনো ফোনকল এসেছে, না মেসেজ। টেনশনে দলা পাকিয়ে আছে মন। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে আসে। মায়াকে সাজানো অর্ধেক বাকি। নবনী ও খুশি নিজেরাই সাজছে। মনটা এখনো খুঁতখুঁত করছে আদির জন্য। দুপুরেও কয়েকবার কল দিয়েছিল আদির ফোনে। ফোন রিসিভ করেনি। আজ সারাদিনেও কথা হয়নি। এমন কি কাজ করছে যে একবার কল দেওয়ার সময় হয়নি। ভেবেই অভিমান হয় তার। একটু পর পর ফোন চেক করছে। অপেক্ষার অবসান যেন ঘটছে না কিছুতেই।

-“এই নবনী, আরে আমার পিনটা লাগিয়ে দে..।” খুশি হাঁকিয়ে বলল।

নবনীর ভাবনায় ছেদ পড়ে। খুশির দিকে এগিয়ে পিন লাগিয়ে দেয়। সবার তৈরি হতে প্রায় নয়টা বেজে যায়। আপন গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে অনেক আগেই। বাড়ি থেকে সোজা সেন্টারে আসবে। মায়া, নবনী, খুশি এক গাড়িতে চলে আগেভাগে সেন্টারে চলে আসে। বাকি মেহমান অন্য গাড়িতে করে আসবে। গাড়িতে বসে খুশি মায়া দুষ্টুটি করছে। নবনী চুপ করে আছে। শক্ত করে ফোন চেপে ধরেছে হাতের মুঠোয়। তার মাথায় চলছে আদির কথা। এখানে আসার আগেও কয়েক বার কল দিয়েছে। রুবিনা বানু ও রানী খাতুনকেও কল দিয়েছিল। তারাও ফোন ধরেনি। এতে করে নবনীর মনে ভয়ের আশংকা তীব্র গতিতে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এখন কল দেওয়ার বাকি আছে আজমল উদ্দীন আর আজিম উদ্দীন’কে। সেন্টারে গিয়ে তাদেরও কল দিবে। মিনিট কয়েক পর পৌঁছে যায় সেন্টারে। মায়ার চোখেমুখে খুশির ঝিলিক ফুঠে ওঠে। কমিউনিটি সেন্টারি বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। লাইটিং, ফুলে ভরপুর। এক সঙ্গে তিনজন নেমে পড়ে। ভিডিও ম্যান ও জিনান এসে উপস্থিত হয়। মায়ার সামনে হাত বাড়িতে দেয় জিনান। লজ্জা ভঙ্গিতে হাতে হাত রাখে মায়া। এগিয়ে যায় তারা৷ এমন চমৎকার দৃশ্যটি ক্যামেরায় বন্দী করে সেখানে উপস্থিত বেশ কয়েকজন।

নবনী সবার শেষে ভেতরে যায়। তার চোখ এখন নিভ্রকে খুঁজছে। শ্বশুরকে কল দেওয়ার আগে নিভ্রর সঙ্গে কথা বলা জরুরী বলে মনে করে। হলুদের অনুষ্ঠান কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয়ে যায়। প্রথমে জিনান এবং মায়ার বাবা-মায়েরা হলুদ দেওয়ার পর একে একে সবাই হলুদ দেয় ওদের। নবনী, খুশি এক সঙ্গে দেয়। ট্রেজ থেকে নেমে নবনী তখনো নিভ্রকে খুঁজে যাচ্ছে। হৈ চৈ চেঁচামেচি দেখে কোলাহল বিহীন বাহিরের বাগানের দিকটায় আসে। সেখানে এসে দ্বিধাবোধ ফেলে নিভ্রকে কল দেয়। সবে মাত্র সেন্টার প্রবেশ করেছে নিভ্র। এতক্ষণ ডেকোরেশনের লোকদের সঙ্গেই ছিল। কালকের বাসর ঘর সাজানোর ফুলের বিষয়ে আলাপ করছিল। নবনীর কল পেয়ে রীতিমতো চমকে উঠেছে। থেমে গিয়ে বাহিরে এসে ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলার সঙ্গে সঙ্গে নবনীর উৎকন্ঠিত স্বর শুনতে পায়।
-“একটু বাগানে আসুন। কথা আছে আপনার সঙ্গে।” বলেই নিভ্রকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দেয় নবনী।

নিভ্র নবনীর এমন আচরণে আরো চমকে যায়। হঠাৎ করে নবনীর কল দিয়ে ডাকবার বিষয়টি সে বুঝতে পারছে না।
হাজারটা চিন্তাভাবনা করতে করতে বাগানে এসে পৌঁছায়।
বাগানে এসে সে নবনীকে চিন্তিত হয়ে পায়চারী করতে দেখে আরো ঘাবড়ে যায়। দ্রুত জিজ্ঞেস করে,
-“কি হয়েছে নবনীতা। কোনো সমস্যা?”

নিভ্রকে দেখে নবনী ব্যস্ত হয়ে বলে,
-“আদির সঙ্গে কী আপনার কথা হয়েছে আজকে? সেই সকাল থেকে ফোন দিচ্ছি, ফোন ধরছে না। মা, কাকিমাও ফোন ধরছে না। আপনি কী কোনো খবর জানেন ?”

এবার সবটা খোলাসা হয়। কেন নবনী এত চিন্তিত ছিল। আজ ওর মায়ের সঙ্গে কথা হয়নি। তাই সে জানে না এই বিষয়ে। কিছু না বলে সেখানে দাঁড়িয়ে কল দেয় ওর আম্মুকে। নিভ্রর ফোন রিসিভ করে। নবনীর কল ও আদির কথা বলাতে তিনি ওঁকে কিছু বললেন। সেটা শুনে নিভ্র রাখছি বলে কেঁটে দেয় ফোন। নবনী অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“কি বলল মা? আদি কোথায় আছে? ঠিক আছে তো? মা ফোন কেন ধরেনি আমার।”

নিভ্র কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে নবনীর দিকে তাকিয়ে রয়। আদির প্রতি ভালোবাসা নবনীর চোখেমুখে বিস্ময়ই বলে দিচ্ছি। নজর সরিয়ে নিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
-“আদি মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিল, তাই ফোন ধরেনি। মাত্র বাসায় এসেছে। একটু পরে কল দিবে তোমায়।”

বুকের উপর থেকে ভারী পাথরটি যেন সরে যায় নবনী। চোখ বন্ধ করে নীরবে দীর্ঘশ্বাস নেয়। পরপরই ফের জিজ্ঞেস করে,
-“আম্মু, কাকি কেন ফোন ধরেনি আমার?”

-“ভুল করে ফোন রেখে সারা আন্টিদের বাড়িতে গিয়েছিল। মাত্রই ফিরেছে।”

-“ওহ!” পুরো ডাইট ক্লিয়ার হয় নবনীর। সেকেন্ড কয়েক চুপ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রাখে। নিভ্র ততক্ষণে নবনীকে মন ভরে দেখে নেয়। কতোকাল না দেখার অতৃপ্ত ইচ্ছেকে আজ পূরণ করছে। কিন্তু বেশিক্ষণ দেখার সুযোগ হয়না তার। নবনী চোখ তুলে তাকিয়ে বলে ,
-“গেলাম।” বলে দু কদম এগিয়ে যাওয়ার পরপরই নিভ্রর ডাক পড়ে।

-“শোনো নবনীতা।”

থেমে যায় নবনী। ঘুরে নিভ্রর আদলের পানে তাকায়। সপ্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে বলে,
-“বলুন।”

নিভ্র মাথা নত করে ফেলে। নবনী নিভ্রকে একবার পর্যবেক্ষণ করে নেয়। কিছুটা ইতস্তত বোধ করে সে। নিভ্র বুক ভরে নিশ্বাস টেনে নবনীর চোখে চোখ রেখে বলে,
-“অনেক শাস্তি দিয়েছো। এবার মাফ করে দেও আমায়। আমি যে এখন তুমি ছাড়া অসহায়।”

নবনী মুখ খুলে বলে,
-“আপনি শাস্তির কথা কেন বলছেন? আমি তো আপনাকে সেদিন মুখ ফুটে কিছু বলিনি। যা বলার আপনিই বলেছিলেন। আর শাস্তি যদি আপনি পেয়েও থাকেন, তাতে আমার কোনো হাত নেই।”

সরল চোখে নবনীর চোখের দিকে তাকায় নিভ্র। নবনী এতটুকু বলে দৃষ্টি সরিয়ে দিয়েছে। নিভ্র মাথানত রেখেই কণ্ঠ খাদে ফেলে কোমল স্বরে বলে,
-“আমাকে একটি বার সুযোগ দেওয়া যায় নবনীতা?”

নিভ্রর কথায় নবনী যেন ভটকে গেল। চোখেমুখে বিস্ময়। এমন কথা সে নিভ্রর কাছ থেকে আশা করে নি। তাহলে সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে? কিন্তু সময় যে ফুরিয়ে গেছে। মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রয় নবনী। নিভ্র উৎসুক দৃষ্টিতে নবনীর দিকে চেয়ে রয়। পরপরই মৃদু হেসে বলে,
-“আমিও কি বোকা! কি বলে ফেললাম।”

নবনী নিভ্রর চোখে চোখ রেখে বলে,
-“কিভাবে? কিভাবে বললেন আপনি? সেদিন আমার ভালোবাসার কথাটি জেনেও অপমান করে প্রত্যাখ্যান করলেন। অস্বীকার করেছেন তাতে কষ্ট পাইনি, যতোটা কষ্ট পেয়েছি আমার ভালোবাসাকে অপমান করেছেন। আপনি বুঝতে পেয়েছিলেন আমার ভালোবাসা সেদিন কতোটা অপমান হয়েছিল? বুঝতে পেয়েছিলেন, সেদিন আমার কষ্টটা। আজ আল্লাহ আপনাকে ঠিক একই স্থানে এনে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে আমি সেদিন ছিলাম। কিন্তু আমি কক্ষণোই এমনটা চায় নি, আপনি শাস্তি পান।”

নিভ্র তাচ্ছিল্য হাসে। এই হাসিতে লুকিয়ে আসে বিষাদ, যন্ত্রণা! ঠোঁটে হাসি রেখেই বলে,
-“আমাকে কী তবে এখন আর তুমি ভালোবাসো না?”

-“প্রশ্নটা করা বেমানান! আপনি আমার অতীত, আদি আমার বর্তমান, ভবিষ্যৎ। কোনকালে হয়তো পুণ্য করেছিলাম। যার বিনিময় আল্লাহ আদিকে আমার জীবনে পাঠিয়েছে। তার ভালোবাসাকে উপেক্ষা করতে পারিনি। প্রতিনিয়তে আমার ভেতরে ভালোবাসার অনুভূতি জাগিয়ে তুলেছে সে। অতীত আঁকড়ে ধরে বাঁচা বোকামি। অতীত থেকে আমি চরম শিক্ষা নিয়েছি। তবে আমি জানি না, আপনার জন্য মনের কোণে সুপ্ত ভালোবাসা বিদ্যমান আছে কি-না!”

নিভ্র এদিকে সেদিক তাকায়। নবনীর কাছ থেকে চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করছে সে। আজ তার চোখে পানি টলমল করছে। ভালোবাসার মানুষটিকে হারানোর যন্ত্রণা সে বুঝতে পারছে। বহু কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে,
-“আমি বাড়িতে প্রবেশ করে ফুল গাছের দিকে তাকাতে পারি না। যেই ফুল গাছ গুলো তুমি যত্ন করে পানি দিয়েছিলে, সেগুলো শুঁকিয়ে মরে গেছে। টমি এখন আর অচেনা মানুষদের দেখে চেঁচামেচি করে না। একদম শান্ত হয়ে গেছে ক্যাথিকে হারিয়ে। এখন আর কেউ রোজ সকালে বাড়ির সামনে ফুল রেখে আসে না। কেননা সে এখন আমার জীবন থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। এই পাথর বুকে কবে, কখন যে ভালোবাসার ফুল ফুটেছে তোমার অনুপস্থিতিতে জানি না। বিশ্বাস করো নবনীতা, আমি তোমাকে সত্যিই এখন ভালোবাসি।”

-“নিজেকে গুটিয়ে নিন। মেরে ফেলুন! ভালোবাসার শিকড় পোক্ত হবার আগে উগ্রে ফেলুন মন থেকে। আমার প্রতি ভালোবাসা মনে যতো পুষে রাখবেন, তত বেশি কষ্ট পাবেন আপনি।”

নিভ্র মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে চোখের কোণায় জমে থাকা পানিটুকু বুড়ো আঙুল দ্বারা মুছে নেয়। ঠোঁটে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলে,
-“মাফ করে দিও আমায়। অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাকে।”

নবনী ফের নজর সরিয়ে নেয়। মৃদুস্বরে বলে,
-“অতীত সম্পর্কে আপনার ভাইকে কিছু বলবেন না। আমি চাই না এসব জেনে আপনার প্রতি তার সম্মানটা ক্ষয় হোক।”

-“সত্য কখনো চাপা থাকে না নবনী।” আদির গম্ভীর কণ্ঠের স্বর ভেসে আসে পিছন থেকে। ঘুরে তাকায় নিভ্র ও নবনী। উদাস চোখমুখে আদিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তারা। দু’জনে হতবিহ্বল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার দিকে। তাহলে কী, না চাইতেও অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আদি সব শুনে ফেলেছে? ঘাবড়ে যায় তারা।
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

আমি তুমিতেই আসক্ত পর্ব-৩০+৩১

0

#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_৩০
#সুমাইয়া মনি।

তনুজার জন্য পুনোরায় ছেলে ঠিক করেছে নিলাজ হোসাইন। কিছুক্ষণ আগেই ছেলে বাড়ি থেকে লোকজন এসেছে। বাবা, মা ও ছেলে। গেস্ট রুমে বসে চা নাস্তা খাচ্ছে তারা।
তনুজা বিয়ের জন্য মোটেও প্রস্তুত নয়। সে এক প্রকার ঘাপটি মেরে রুমে বসে রয়েছে। রেডি হয়েছে কি-না সেটা দেখার জন্য আমেনা বেগম তনুজার রুমে এলেন। চুপটি করে জানালার কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে তনুজা। মেয়েকে এমন নীরব দেখে এগিয়ে এসে মাথায় হাত বুলায়। মৃদুস্বরে বলে,
-“তোর আব্বু রেগে যাবে। রেডি হয়ে নে তনুজা।”

তনুজা আগের ন্যায় সেভানেই দাঁড়িয়ে শান্ত কন্ঠে বলে,
-“আম্মু, আব্বুকে বলে দেও বিয়ে আমি করব না।”

-“বিয়ে না করার কারণ নিশ্চয় আপন?” কপাট কন্ঠে বলে এগিয়ে আসেন নিলাজ হোসাইন।

আমেনা বেগম স্বামীর পানে তাকালেও, তনুজা সেভাবেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়। কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই তার আব্বুর কথায়।
নিলাজ হোসাইন মেয়ের নীরবতা দেখে আরো রেগে গেলেন। বললেন,
-“জবাব কি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রশ্নের জবাব দেও।”

-“বুঝতেই যখন পারছো, জিজ্ঞেস না করলে ভালো হয় আব্বু।” তনুজা নমর ভঙ্গিতে উত্তর দিলেও নিলাজ হোসাইন ক্ষেপে যান। পুনরায় বলে,
-“আপনের সঙ্গে কক্ষনোই তোমার বিয়ে হবে না।”

-“যাকে একবার মনে স্থান দিয়েছি, দ্বিতীয় বার কাউকে দেয়া সম্ভব নয়। এতে আপন আমাকে বিয়ে করুক বা না করুক।”

নিলাজ হোসাইন মেয়ের এমন কথা শুনে কিছু বলার আগ্রহ দেখায় না। ফোঁস করে রাগী নিঃশ্বাস ফেলে রুম ত্যাগ করেন।
আমেনা বেগম স্বামীর রাগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পিছু পিছু বেরিয়ে যায়। তনুজার কোনো কিছুতেই আক্ষেপ নেই। না সে পরোয়া করে। একবার ঘাড় ঘুরিয়ে খাটের উপর নজর তাক করে। সেখানে শাড়ি, চুড়ি রাখা ছিল। নজর সরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এ নিশ্বাস বলে দিচ্ছে তার কষ্টের পাল্লা কতটা ভারী।
____________________
নিজের কক্ষে পায়চারী করে করে হাঁপিয়ে উঠেছে নবনী। ভেবে পাচ্ছে না কে সেই আগন্তুক ব্যক্তি। যে তাকে লেহেঙ্গা উপহার দিয়েছে। প্রথমে ভাবে আদির কথা। কিন্তু আদি কুমিল্লা। সে কিভাবে জানল সে এই লেহেঙ্গাটি পছন্দ করেছে! এটা হতেই পারে না। পরপরই মত ঘুরিয়ে নিয়ে ভাবে নিভ্রর কথা। নিভ্র তাকে লেহেঙ্গা দিবে, প্রশ্নই আসে না! এই মতও পাল্টে দেয়। মাথায় যেন তার ঘুরতে আরম্ভ করেছে। স্থির হয়ে দপ করে বিছানার উপর বসে। আর ভাবতে পারছে না। এসব সাইড করে উঠে দাঁড়িয়ে অগ্রসর হয় টেবিলের দিকে। বই পড়ার জন্য। কিন্তু তখনই ফোনের রিংটোন বাজতে আরম্ভ করে। তাকে আবার ফিরে আসতে হয় খাটের কাছে। ফোন হাতে নিতেই নবনীর হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। এই অজানা অনুভূতি তাকে ক্ষণে ক্ষণে দূর্বল করে দিচ্ছে আদির প্রতি। ফোন রিসিভ করার পর আদি ঘুম জড়িত আদুরে কন্ঠ ভেসে আসে,
-“সুইটহার্ট, গুড মর্নিং কিস চাই।”

কথাটা শুনেই নবনী চট করে ফোন কান থেকে সরিয়ে নেয়। স্পন্দন যেন আরো বেড়ে যায় নবনীর। দশটা বাজতে চলল এখনো ঘুমিয়ে আছে আদি। অবশ্য আজ শুক্রবার বিধায় তারও অফিস ছুটি। কিন্তু সকাল সকাল আদির এমন উদ্ভট বায়না শুনে নবনী বিস্মিত! নিবর থাকতে দেখে আদি আবার বলে,
-“কই দিলে না যে।”

নবনী চোখ দু বার পিটপিটিয়ে বলে,
-“আমাকে বলছেন?”

আদি মেকি রাগ নিয়ে বলে,
-“নাহ! আমার জি,এফ’কে বলতে গিয়ে তোমাকে বলে ফেলেছি।”

-“সত্যি?”

-“সত্যি তোমার মোটা মাথা। কল তোমাকে দিয়েছি। বলব কি আরেক জনকে!” রাগ ঝেড়ে বলে আদি।

নবনী বোকা হয়ে যায়। কিন্তু আপাতত বুঝতে পারে আদি রেগে গেছে। তাই চুপ করে আছে, কথা বলছে না।
মিনিট কয়েক পর নবনী আমতা আমতা করে বলে,
-“আপনি এখনো ঘুমাচ্ছেন?”

-“উঁহু! নাচতেছি।” গম্ভীর কণ্ঠে।

-“নাচ দেখবো, ভিডিও কল দেই।” নবনী দুষ্টুমি করে বলে।

-“দেও।”

-“না থাক।”

-“থাকবে কেন, দেও দেও।”

-“আমি তো মজা করেছি।”

-“এটাও তোমার দ্বারা সম্ভব!”

-“কেন?”

-“সারাক্ষণ তো বোবা ভূতের মতো বোবা হয়ে থাকো।”

-“আপনার বুঝি তাতে সমস্যা হয়?”

-“চরম লেভেলের সমস্যা হয়।”

-“তো, আমি কি করব।”

-“নাচো।”

-“বয়ে গেছে।”

-“বইবে সময় হলেই। নাচবো, এবং নাচাবো।”

-“দেখা যাক।”

-“দেখবে তুমি, করে দেখাবো আমি।”

-“আচ্ছা।”

-“ইয়েস! পাগলীনি।”

কথা হয় আরো কিছুক্ষণ। তারপর ফোন রেখে নবনী পড়তে বসে। পড়ার মাঝেও আদির কথা গুলো প্রতিধ্বনি হতে থাকে কানে। হেসে ফেলে সে। লেহেঙ্গার কথাটি আপাতত মাথা থেকে সরে যায় তার।
.
.
আপন নতুনে এইটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছে। কাল থেকে জয়েন্ট। নতুন কিছু শার্ট,প্যান্ট কিনার জন্য বিকেলের দিকে মার্কেটে আসে। শার্ট চয়েজ করার এক পর্যায়ে আপনের ফোন বেজে ওঠে। পকেট হাতিয়ে ফোন বের করে অচেনা নাম্বার দেখে ফোন কেটে দেয়। ফের সেই নাম্বার থেকে কল আসে। বিরক্ত হয়ে সে ফোন রিসিভ করে। হ্যালো বলে চুপ করে থাকে। অপর পাশের কথা শুনে আপন ‘আসছি’ বলে ফোন রেখে দেয়।

আধাঘন্টা পর…

আপন এবং আমেনা বেগম একটি ক্যাফেটেরিয়ায় বসে আছে। আশেপাশে মানুষজনের আনাগোনা তেমন একটা নেই। কেউ নিজেদের মধ্যে আলাপে ব্যস্ত। আবার কেউ আড্ডা দিতে। নিরবতা পালন করছে শুধু তারা দু’জন। আপনের দৃষ্টি নত। সে জানে না তিনি কেন ওর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছে। আমেনা বেগম সব কিছুকে উপেক্ষা করে আপনের পানে চেয়ে নমর স্বরে বলে,
-“তনুজার বিয়ের সম্মন্ধ আসে। আজও এসেছিল। তারা তনুজাকে আংটি পড়িয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তনুজা বিয়েতে রাজি না হওয়ায় না বলে দেওয়া হয়। ওর আব্বু ভীষণ রেখে আছে, আবার দুঃখও লাগছে মেয়ের জন্য।” এতটুকু বলে তিনি থামেন। আপন আগের ন্যায় বসে রয়েছে।
সে আবার বলে,
-“তনুজা তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না বলে মন স্থির করে রেখেছে। বাবা, তুমি কি অতীত ভুলে আমার মেয়েটিকে বিয়ে করতে পারবে?” আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন তিনি। চোখ তার পানি ছলছল করছে।

আপন চোখ জোড়া হালকা বন্ধ করে নিয়ে মেলে নেয়। ভুলটা তরাই ছিল। তনুশ্রীর কথাটা যদি সে আগে সবাইকে জানাত,তাহলে আজ হয়তো তনুজার জীবনে নতুন মোড় ঘুরতো। এভাবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হতো না। আমেনা বেগম সপ্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আপনের উত্তর শোনার জন্য সে ব্যাকুল। সরু নিশ্বাস ফেলে আপন চোখ তুলে তাকায়। বলে,
-“আমাকে একটু সময় দিন আন্টি। কথা দিচ্ছি, তনুজাকে আমি বিয়ে করব।”

খুশির ঝলক দেখা মিলে আমেনা বেগমের চেহারাতে। আপনের কথায় সে আশ্বাস পায়। এতেই সে খুশি।
.
.
.
#চলবে?

#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_৩১
#সুমাইয়া মনি।

বিয়ের এক সপ্তাহ পর ওদের পরিক্ষা। বিয়ে উপলক্ষে মায়া আগেভাগে পড়ে রাখছে। বিয়ের ক’দিন ঝামেলার জন্য পড়ার সময় হবে না তাই। নবনীও ঠিক একই কাজ করছে। তিনদিন অতিবাহিত হয়। পরেরদিন মায়ার গায়ে হলুদ। সেন্টারে উভয়ের গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। আলাদা ভাবে গায়ে হলুদ হবে না। নবনী সন্ধ্যার দিকে পড়তে বসে। সঙ্গে নিয়ানকে পড়াচ্ছে। অনেকক্ষণ পড়ার পর নয়টার দিকে আদি ফোন দেয়। নিয়ানকে পড়তে বলে নবনী ফোন নিয়ে বারান্দায় আসে।

-“বলুন।”

-“কি করছো?”

-“পড়ছিলাম, নিয়ানকে পড়াচ্ছিলাম। আপনি?”

-“বাসায় যাচ্ছি ড্রাইভ করে।”

-“জানেন না ড্রাইভ করার সময় কথা বলা নিষেধ।”

আদি মৃদু হাসে। বলে,
-“এক্সিডেন্ট হবে তাই?”

-“বুঝেন যখন, তখন বলছেন কেন। ফোন রাখুন। বাসায় গিয়ে কল দিয়েন।”

-“উঁহু! ব্লুটুথ কানে সমস্যা নেই।”

-“যাই হোক না কেন এখন কথা বলব না।”

-“আরে বাপরে! পাগলিনী দেখি রেগে গেছে।”

-“ফোন রাখতে বলেছি না।”

-“এই ধরো এক্সিডেন্ট হলো, তখন….”

বাকিটা বলার আগেই ফোন কেঁটে দেয় নবনী। আদি জোরে হেসে ফেলে। নবনী যে রেগে গেছে সেটা তার বুঝতে অসুবিধা হয় না। আদি এখন বুঝতে পারে নবনীর মনেও ওর প্রতি ফিলিংস আছে। হতেই হবে। স্বামী, স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্কে আবদ্ধ তারা। না চাইতেও ভালোবাসা পয়দা হবে আল্লাহর রহমতে।
বাসায় ফিরে আগের দিনের মতো আদি আপনের কক্ষে এসে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে। আপন তখন টেবিলে বসে ল্যাপটপে একটি প্রজেক্ট তৈরি করছিল। আদিকে দেখে ল্যাপটপ হালকা বন্ধ করে নেয়। বলে,
-“কথা ছিল।”

-“বল।” এক হাতে ভর রেখে আপনের পানে তাকায় আদি।

আপন কিছুক্ষণ চুপ করে রয়। পরমুহূর্তে তনুজার মায়ের সঙ্গে কথোপকথন গুলো বলে। আদি চট করে উঠে বসে। সে কিছুটা অবাক হয় এটা শুনে তনুজাকে বিয়ে করার কথা জেনে। আপন আদির দিকে তাকান অবস্থায় এগিয়ে আসে। দৃষ্টি নিচু আপনের। কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“এবার অন্তত আগের মতো ভুল করিস না। কথা দিয়ে কথা খেলাফ করা বড্ড অপরাধ।”

আপন আদির দিকে চোখ তুলে তাকায়। আদির হাতের ওপর হাত রেখে বলে,
-“রাখবো ইনশাআল্লাহ!”

স্মিত হাসে আদি রুম ত্যাগ করে। আপনের বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে।
—————–
আলস্য ভঙ্গিতে সোফায় আধশোয়া অবস্থায় শুয়ে আছে নিভ্র। ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে তাকে। সে তিশার কথা ভাবছে। এই মেয়েটা দিন দিন ওর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছে। যে ভাবেই হোক ওঁকে সরাতে হবে নিজের নিকট থেকে। বলতে হবে তার মনে অন্য একজনের বসবাস। তাকে ফেলে ওঁকে মনে জায়গা করে দেওয়ার কোনো চান্স নেই। ভাবতে ভাবতেই তিশার ফোন আসে। বিরক্তিতে নাকমুখ কুঁচকে আসে নিভ্র। এখন যদি ফোন না তুলে তাহলে হাজারটা প্রশ্ন করবে। তাই আলস্য ভঙ্গিতেই ফোন রিসিভ করে কানে তুলে,
-“হুম।”

-“কি করছেন?”

-“আধোঘুমে আছি।”

-“উঠুন, মেইন দরজাটা খুলে দিন।”

-“কেন?”

-“আহা! খুলে দিন না।”

এই মেয়ের জ্বালাতনের শেষ নেই। নড়েচড়ে বিরক্ত নিয়ে ফোন রেখে উঠে দাঁড়িয়ে অগ্রসর হয় দরজার দিকে। দরজা খুলে দিতেই তিশা হুড়মুড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করে ‘ভউ’ বলে ভয় দেখায় নিভ্রকে। শান্ত নরম ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে নিভ্র। না সে তিশাকে দেখে অবাক হয়েছে, না ভয় দেখাতে ভয় পেয়েছে। তিশা কোমড়ে হাত রেখে সরু চোখে তাকিয়ে বলে,
-“আচ্ছা আপনি এমন কেন? আনরোমান্টিক কলা গাছ কোথাকার।”

-“এখানে কেন?”

-“ভাইয়ার সঙ্গে এসেছি।”

বলতে বলতে জিনান গাড়ি পার্ক করে এগিয়ে আসে। জিনানের দিকে তাকায়। এক সঙ্গে ড্রইংরুমে বসে ওরা।
-“কোনো কাজ ছিল?” নিভ্র প্রশ্ন করে।

-“তেমন বড়ো কোনো কাজ নেই। আবার ছোটও না।” জিনান আলস্যজনক ভঙ্গিতে বলে।

-“সরাসরি বল, না পেঁচিয়ে।”

-“তিশা তুই গাড়িতে গিয়ে বোস। আমি আসছি।”

টেরা চোখে একবার তাকিয়ে তিশা চলে যায়। জিনান মৃদু স্বরে বলে,
-“চাচ্চু, চাচিমা তোকে পছন্দ করেছে। তিশার সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারে আলাপ করতে চাইছে তারা।”

-“এটাতো ফোনেও বলতে পারতি। এখানে এসে বলার কি বেশি প্রয়োজন ছিল?” ভাবলেশহীন ভাবে বলে নিভ্র।

-“তিশা জেদ করছিল এখানে আসার। তাই আসতে হলো। তোর কোনো মতামত?”

-“সব জানিস। তবুও আমার মতামত চাইছিস।”

-“অতীতের কথা ভুলে যা। কেননা তুই তো আর ভালোবাসতি না ওঁকে। তাই এখন ওসব মনে রেখে লাভ নেই।”

-“না চাইছেও মনে পড়ে যায়। দিন শেষে ওর বিরহ গুলো আমায় তাড়া করে বেড়ায়। ভুলতে পারি না। ওর সেই অশ্রুসিক্ত চোখ, মলিনত্ব মুখ। খুব যন্ত্রণা দেয় আমায়। খুব!” আহত কন্ঠে জিনানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে নিভ্র।

জিনান কথা বলার বাক্য যেন হারিয়ে ফেলেছে। নবনীর বিরহে নিভ্র অজান্তেই ওঁকে ভালোবেসে ফেলেছে সেটা বুঝতে পারে সে। কিন্তু এখন বুঝে কোনো লাভ নেই। এখান থেকে বের হওয়ায় উত্তম। জিনান ফোস করে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,
-“মূল্যহীন জিনিসের যেমন দাম নেই, তেমন এই বিরহেরও কোনে মূল্য নেই। ভুলে যা।”

নিভ্র তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
-“চাইলেই কিছু বিরহ ভুলে যাওয়া যায় না জিনান।”

-“চেষ্টা করতে হবে।”

-“চাইছি না।”

-“তুই তোর বিরহকে রেখে দেয়। কিন্তু আমি তিশাকে তোর সঙ্গে বিয়ে দেবোই।”

-“বোনের জীবন নষ্ট করিস না।”

-“আমি তোর জীবনও নষ্ট হতে দেখতে পারব না।”

নিভ্রু জিনানের দিকে অসহায়ত্ব চোখে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নত করে রাখে। জিনান দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিভ্রর নিকট এসে কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“তোর ওপর রাগ হলেও, রেগে বসে থাকতে পারি না। কেননা তুই আমার প্রিয় বন্ধু। তোর কষ্ট গুলো উপলব্ধি করতে পারি আমি। এতটুকু সেন্স আছে আমার। তিশা ভীষণ ভালো মেয়ে। তোকে পছন্দ করে। ওর সঙ্গে বিয়ে হলে তুই সুখি হবি নিভ্র।”

মৌন হয়ে রয়ে যায় নিভ্র। জিনানের কথার প্রতিত্তোরে কিছু বলে না। সবাই ওঁকে নিয়ে ভাবে। সুখি হতে বলে। কিন্তু একবারও সুখে থাকার বস্তুটি এনে দেওয়ার কথা বলে না। বলবেই বা কি করে, প্রতিবন্ধকতা বলে যে একটি বাক্য দেয়াল হয়ে মাঝখানে রয়েছে। নিভ্রকে নিরুত্তর দেখে জিনান অবার বলে,
-“একটু ভেবে দেখিস। চললাম।” স্থান ত্যাগ করে জিনান।
নিভ্র সেই একই ভাবে বসে রয়। কিছুক্ষণ বাদে টমি দরজা খোলা দেখে ভেতরে প্রবেশ করে ওর কাছে আসে। নিভ্র সম্বিৎ ফিরে পেল। টমিই আপাতত তার একনিষ্ঠ বন্ধ। আলতোভাবে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
___________________
ফোনালাপ চলছে আদি ও নবনীর মধ্যে। খেয়েদেয়ে তারপর কথা বলতে শুরু করেছে। নবনী কথার এক পর্যায়ে জিজ্ঞেস করে,
-“জিনান ভাইয়ার বিয়েতে আসবেন?”

-“নাহ! নতুন চাকরি ছুটি দিবে না।”

শুনে মন কিছুটা খারাপ হয়ে যায় নববীর। ছোট করে বলে “ওহ!”

-“আসলে খুশি হতে?”

-“তেমন কিছু না।” মিনমিন করে বলে।

-“ভাবলাম হয়তো বলবে।”

-“বেশি ভেবে নিয়েছেন।”

-“বেশি ভাবা কি অন্যায়?”

-“সেটা তো বলি নি।”

নিরুত্তর থেকে যায় আদি। নবনীও চুপ করে রয়। দু’জনার মাঝে নীরবতা ভর করছে। নবনী এপাশ ফিরে মৃদুস্বরে বলে,
-“কিছু বলছেন না যে?”

নীরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদি বলে,
-“কতোকিছুই তো বলতে মনে চায়। একটা কথার সামনে কতো যে দ্বিধার দেয়াল! অতো বাঁধা টপকে কথাগুলো আর আওয়াজ পায় না, বুকের গহীন থেকে আরো গহীনে জমা হতে থাকে।”

-“জমা রাখলে কেউ দেখবে ও শুনবে না। বললে ভালো লাগবে, মনও হালকা হবে। আপনার জীবনে কি কেউ ছিল?”

-“নাহ! অনেক চান্স পেয়েছিলাম প্রেম করার। কিন্তু এসবের প্রতি আমার আগ্রহ ছিল না।”

-“ওহ! রাখছি, ঘুম পেয়েছে।”

-“এত তাড়াতাড়ি!”

-“সকালে ওঠে পড়তে হবে। কাল মায়ার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। বিকেলে আর পড়া হবে না।”

-“বুঝলাম। ঘুমাও। গুড নাইট।”

-“গুড নাইট।”
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

আমি তুমিতেই আসক্ত পর্ব-২৮+২৯

0

#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_২৮
#সুমাইয়া মনি।

ভোর পাঁচটার দিকে নবনী পড়তে বসে। পরিক্ষা অতি নিকটে। হেলামি দিলে চলবে না। শত কষ্ট, বেদনাকে দূরে ঠেলে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে চায় সে। অতীন নয়, ভবিষ্যত নিয়ে এখন ভাবছে। কাল সন্ধ্যার আগে মায়াদের বাড়িতে যাওয়ার দরুণ বই পড়া হয় না। তাই ভোরে ঘুম কামাই দিয়ে পড়তে বসেছে। নবনীর পড়ার শব্দ নিলুফা বেগম শুনতে পায়। মেয়ের কাছে এলেন তিনি। পাশে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে কন্ঠে বললেন,
-“মাথার চুল গুলো বেঁধে নিতে পারতি।”

-“সমস্যা হচ্ছে না আম্মু।” বইয়ের দিকে নজর রেখেই বলে নবনী।

হাত সরিয়ে নিলেন তিনি। নবনীর দিকে মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে পুনরায় শুধালো,
-“আদিকে মেনে নিতে পেরেছিস কী?”

নবনীর পড়া থেমে যায়। হঠাৎ মায়ের এমন প্রশ্ন শুনে কিছুটা থমকাল। চোখ তুলে না তাকিয়ে নরম স্বরে জবাব দেয়,
-“এখনো না আম্মু। তবে চেষ্টা করছি।”

বড়ো নিশ্বাস ফেলে সে। আবার বলে,
-“অতীতকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার আশা করা বৃথা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভাবাই উত্তম।”

নবনী সরল চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে হাতটি ধরে কৃত্রিম হেসে বলে,
-“আম্মু, আমি প্রতিনিয়তে অতীতকে দূরে ঠেলে ভবিষ্যতের কথা ভাবছি। অতীত আমার পূর্বে ছিল, এখন নেই। কিন্তু অতীত মাঝেমধ্যে না চাইতেও যখন সামনাসামনি হাজির হয় না। তখন নিজেকে সংযত করতে প্রচণ্ড কষ্ট হয়। তবুও ধৈর্য হারাই না। নিজেকে শান্ত শক্ত রাখতে শিখে গেছি। যে কোনো পরিস্থিতিতেই ভেঙে পড়ার সুযোগ নেই আর।”

-“অনেক বড় হয়ে গেছিস তুই নবনী।”

-“বড় তো অনেক আগেই হয়েছিলাম আম্মু। শুধু বিবেক বুদ্ধি, ম্যাচুরিটির অভাব ছিল।”

ফের ভারী নিঃশ্বাস ছাড়েন তিনি। মেয়ের মাথায় পুনোরায় হাত বুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যান। নবনী সাতটার দিকে পড়া শেষ করে উঠে খেয়েদেয়ে কাঁধে ব্যাক চেপে কলেজের জন্য রওয়ানা হয়। সব ক’টি ক্লাস শেষ করে তিন বান্ধবী মিলে আগের দিনের মতো ক্যান্টিনে এসে বসে। মায়ার এনগেজমেন্ট হয়েগেছে। এই সপ্তাহেই বিয়ে। বিয়ের আয়োজন বড় করে করা হবে। বিয়ের জন্য ভীষণ নার্ভাস মায়া। মাথা নত রেখে এনগেজমেন্টের আংটি খুঁটছে নখ দ্বারা। নার্ভাসের চোটে কথা বলার বাক্য হারিয়ে ফেলেছে। খুশি মায়ার এমন নার্ভাসূলভ আচরণ দেখে এক প্রকার বিরক্ত হয়ে বলল,
-“এত নার্ভাস হবার কি আছে বুঝতেছি না। বিয়ে হবে তো হতে দে। নবনী তুই কিছু বল ওঁকে।”

-“মেয়েদের জীবনের বড়ো পরিক্ষার দাপ বিয়ে! স্বামীর হাত ধরে যখন মেয়েটি নতুন বাড়ি, নতুন সংসারে যায়। প্রতিনিয়তে ভাবে, শ্বশুর বাড়িতে সবাইকে মানিয়ে নিতে পারবে কি? মন জয় করতে সক্ষম হবে।”

-“এ সব ক’জন ভাবে বল নবনী। সবাই ভাবে বিয়ে হলেই মেয়েটি মুক্ত!” অসহায় কন্ঠে বলে মায়া।

-“শ্বশুর বাড়িতে গেলে সবাই শুধু দেখে মেয়ে তার বাবার বাড়ি থেকে কি নিয়ে এসেছে। অথচ একবারও ভাবে না মেয়েটি তার বাবার বাড়িতে কী ফেলে এসেছে। একটি মেয়েকে কত ত্যাগ স্বীকার করতে হয় বোঝার ক্ষমতা রাখে না তারা।” কথা গুলো এক নিঃশ্বাসে বলে বড়ো নিশ্বাস টানে নবনী।

-“সত্যি! আমি, তুই হয়তো ভালো শ্বশুর বাড়ি পেয়েছি বিধায় এসব অনুভব করি না। আর যে মেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে আছে, কিভাবে ফেইস করছে সে?” করুণ স্বরে বলে খুশি।

-“মেয়েদের জীবনই এমন। তাই তো হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক’। -সহিহ মুসলিম।
ইসলাম ধর্মে নারীকে যথার্থ অধিকার এবং মর্যাদা প্রদান করেছে। স্ত্রী হিসেবে একজন নারীর জন্য ইসলাম মানবিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। পুরুষের জন্য অপরিহার্য করা হয়েছে স্ত্রীর মোহরানা আদায়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, তোমরা স্ত্রীদের তার পারিবারিক জীবনে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে। -সূরা আন নিসা: ৪।”

নবনীর বলা হাদিস মায়া, খুশি মন দিয়ে শুনে। নারীদের দিয়ে আরো বিভিন্ন কথা বলে ওদের, যেগুলো ওদের অজানা ছিল।
কথার এক পর্যায়ে আদির কল আসে। নবনী ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে মাঠের পাশে বেঞ্চে এসে বসে ফোন রিসিভ করে আগের দিনের মতো সালাম দেয়। আদি সালামের উত্তর দিয়ে বলে,
-“ইন্টারভিউ সাকসেসফুল। মেনেজার পোস্টে চাকরি হয়েছে আমার। অবশ্য বাবার বন্ধুর কোম্পানি বলে সুবিধা হয় নি। এখন অফিসে আছি।”

-“অভিনন্দন!”

-“ধন্যবাদ। তো কেমন আছো?”

-“আলহামদুলিল্লাহ! আপনি?”

-“শূন্যতায় ভুগছি।”

-“পূর্ণতা পাবেন কিভাবে?”

-“তোমাকে পেলে।” অকপটে বলে ফেলে আদি।

অজানা অনুভূতিতে বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে উঠে নবনীর। হাতের মাঝে ওড়না খাঁমচে ধরে। ইদানীং আদির কথা গুলো তার হৃদয়ে বেশ লাগে। নবনীকে নীরব থাকতে দেখে মুচকি হেসে নিজে থেকে বলে,
-“তো? দিনকাল কেমন যাচ্ছে?”

-“ভালো। আপনার?” ছোট্ট উত্তরে বলে।

আদি সরু নিশ্বাস টেনে বলে,
-“আছি একলা, মন চায় দুকলা, কবে যে হবো তেকলা।”

নবনী নিঃশব্দে হাসে। আদি বুঝতে পারে। নিজেও নবনীর মতো নিঃশব্দে মুচকি হাসে। আদি ফের জিজ্ঞেস করে,
-“কি করছিলে?”

-“ক্যান্টিনে আড্ডা দিচ্ছিলাম। ”

-“কার সঙ্গে?”

-“বান্ধবী দের সঙ্গে।”

-“নাম?”

-“মায়া, খুশি?”

-“সিঙ্গেল?”

-“জেনে কি করবেন?”

-“যদি লাইন-টাইন করা যায়। তুমি তো সায় দিচ্ছো না।”

-“মেয়ের অভাব নেই। আমার বান্ধবীরা মিঙ্গেল।”

-“তার মানে তুমি বলতে চাইছো অন্য মেয়েদের সঙ্গে প্রেম করি। মানে পারমিশন?”

-“চালাকি করে কেউ যদি পারমিশন নিয়ে নেয়। আমি কি বলব বলুন।”

-“হাইরে পাগলিনী! ধরে ফেললে।” মুচকি হেসে বলে।

-“জি!”

-“জানো, মানুষ যদি একজনে আসক্ত হয়। দুনিয়ার সব চেয়ে সুন্দরী মেয়েকে এনে দিলেও তার প্রতি সে আসক্ত হতে পারবে না।”

-“জানতাম না।”

-“বোকা পাগলিনী।”

নবনী মৃদু হাসে। আদি মুখে পাগলিনী নামটি ভালো লেগেছে। -“গেলাম।”

-“সবে তো কথা শুরু করলাম।”

-“আমি ক্যান্টিনে। বাসায় গিয়ে কথা বলব।”

-“কি আর করার, অপেক্ষা করা ছাড়া।”

-“রাখছি।” বলে ফোন রেখে দেয় নবনী।

আদি কান থেকে ফোন সরিয়ে নজর বন্দি রাখে স্ক্রিনের দিকে। স্মিত হেসে ফোন টেবিলের ওপর রেখে দেয়। আজ প্রথম দিন দেখে কাজ তেমন একটা নেই। সবার সঙ্গে পরিচিত হয়ে কিছুক্ষণ আগেই কেবিনে এসে বসেছে। তারপর নবনীকে কল দেয়। সে জানে এই সময় নবনী ক্যান্টিনে, নয়তো বাসায় থাকবে।
_________________
বিয়ের অর্ধেক দায়িত্ব নিভ্রর ঘাড়ে সঁপে দেয় জিনান। নিভ্র দায়ভার নিতে আপত্তি জানালেও জিনান কোনো কথা শুনতে প্রস্তুত নয়। শপিং থেকে শুরু করে ডেকোরেশনের দায়িত্ব তার। আপাতত জিনান নিভ্রকে সঙ্গে নিয়ে শপিংমলে এসেছে।
একটি শেরওয়ানি নিয়ে চেঞ্জির রুমের দিকে এগিয়ে যায় জিনান। নিভ্র বিরক্ত মুখে উঠে করিডোরের দিকে হাঁটা ধরে। এখান থেকে পালানোর রাস্তা খুঁজছে সে। দ্রুত হাঁটার কারণে হঠাৎ বেখেয়ালিতে একটি মেয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে যায়। নিভ্র চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে মেয়েটিকে একটা দেখেনিল। সাদা রঙ্গের সেলোয়ার-কামিজ পরিধান পরীর চেয়ে কম দেখাচ্ছে না তাকে। নিভ্র অতি বিনয়ী স্বরে বলল,
-“স্যরি, খেয়াল করি নি।”

-“ইট’স ওকে।”

কৃত্রিম হেসে চলে যাওয়া ধরলে মেয়েটি তার নাম ধরে ডেকে উঠে,
-“আপনি নিশ্চয় নিভ্র আহমেদ?”

উৎসুক দৃষ্টিতে নিভ্র ঘুরে তাকায় মেয়েটির দিকে। তার মস্তিষ্ক জুড়ে বিচরণ করছে প্রশ্ন। কিভাবে মেয়েটি তার নাম জানলো? হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হয় জিনান। মেয়েটিকে দেখে খুশিতে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“হেই তিশা, কেমন আছিস তুই?”

-“ভালো ভাইয়া, তুমি?” জিনানকে ছেড়ে দিয়ে বলে।

-“আমিও আলহামদুলিল্লাহ।”

-“ভালো তো থাকারই কথা। বিয়ে যো হচ্ছে তোমার।”

-“হপ! নিভ্র, তিশা আমার চাচাত বোন। আজই এসেছে চট্টগ্রাম থেকে।” নিভ্রর উদ্দেশ্যে বলে জিনান।

-“সে আমার নাম জানলো কি করে?” নিভ্র পাল্টা প্রশ্ন করে।

জিনান কিছুটা অবাক হয়ে তিশার দিকে তাকায়। তিশা মৃদু হেসে বলে,
-“ভেরি সিম্পল! জিনান ভাইয়ার ফেসবুক আইডিতে আপনার ভাইয়ার এক সঙ্গে ছবি দেখেছি। সেখানে আপনার আইডি মেনশন করা ছিল। সেভাবেই জানলাম।”

ডাউট ক্লিয়ার হয় নিভ্র ও জিনানের। জিনান বলে,
-“আমি এখানে কিভাবে জানলি?”

-“কাকি বলেছে। আমার ভাগ্য ভালো যে বেশি ঘুরতে হয়নি তোমাদের খুঁজতে। তার আগেই পেয়েগেছি।”

-“যাক ভালো হয়েছে। এবার এসে তোর হবু ভাবির লেহেঙ্গা চয়েস করে দে।”

-“চলো।”

-“আয় নিভ্র।” বলেই জিনান হাঁটা ধরলে নিভ্র বলে।

-“আমি এখন যাচ্ছি। তিশাকে নিয়ে বাকি শপিং করে নে। রাতে বাসায় আসব।”

-“যাবি? যাহ তাহলে।”

নিভ্র কথা না বলে দ্রুত এগিয়ে যায়। যেন সে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে। নিভ্র যাওয়াতে তিশার কিছুটা মন খারাপ হয়। তবে রাতে বাসায় আসবে ভেবে খুশি লাগে। জিনানকে বলে,
-“ভাইয়া একটা সিক্রেট কথা বলি?”

-“বল?” ঘাড় ঘুরিয়ে তিশার দিকে তাকায়।

-“তোমার বন্ধু নিভ্র আমার ক্রাশ।”

-“সিরিয়াসলি?”

-“হ্যাঁ! যেদিন ফাস্ট তার ছবি তোমার সঙ্গে দেখেছিলাম। সেদিন থেকেই ক্রাশ খেয়ে বসে আছি। প্রতিদিন তার আইডিতে এক বার দু বার করে ঘুরে আসি নতুন কোনো ছবি আপলোড দিয়েছে কি-না। কখনো কথা হয়নি। কিন্তু ইদানীং সে ফেসবুকেই আসে না। কেন বলো তো?”

অনলাইনে না আসার মূল কারণ নবনীর কথা মনে পড়ে যায় তার। টপিক পাল্টিয়ে বলে,
-“ব্যস্ত আছে তাই। এখন চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

-“চলো।”

তিশা অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছে। শ্যামল গায়ের রং। দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী। সবার সঙ্গে বিনয়ী সুন্দর করে কথা বলে। জিনানের মতো তিশাও একা। ওর কোনো ভাইবোন নেই। জিনানের বিয়ে উপলক্ষে তার এখানে আসা। বিয়ের অর্ধেক শপিং সেরে তারা বাড়িতে ফিরে যায়। বাকি শপিং করার জন্য পরশু আবার আসবে।
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

#আমি_তুমিতেই_আসক্ত।
#পর্ব_২৯
#সুমাইয়া মনি।

সন্ধ্যার দিকে নিভ্রর বাধ্য হয়ে জিনানদের বাড়িতে যেতে হয়। কেননা বার বার জিনান ফোন দিয়ে বাড়িতে আসার তাগাদা দিচ্ছে। উপায় না পেয়ে নিভ্র চলে আসে এ বাড়িতে। ড্রইংরুমে বসে তখন জিনান এবং বাবা-মা, তিশা বিয়ের কার্ডের ওপর আত্মীয় দের নাম লিখতে ব্যস্ত ছিল। তিশা নিভ্রকে দেখে আনন্দিত। সর্বপ্রথম বিয়ের কার্ড জিনান নিভ্র এবং ওর পরিবারকে দেওয়া হয়। নিভ্র কার্ড হাতে নেয়। সবাই মিলে চা-কপি খায়। খানিকক্ষণ পর নিভ্রর ফোন বেজে উঠার দরুণ ড্রইংরুমের এডজাস্ট বারান্দায় এসে কথা বলতে থাকে। রুবিনা বানু ফোন দিয়েছে। দশ মিনিট কথা বলার পর ফোন রেখে দেয়। নিভ্র মৌন হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে। আজও তার বিয়ের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন তিনি। এতে নিভ্র বিরক্ত হয়েই এক প্রকার ফোন রেখে দেয়।

-“কিছু ভাবছেন কী?”

গেটের সামনে থেকে এগিয়ে আসতে আসতে কথাটি বলে তিশা। নিভ্র তিশার দিকে একবার তাকিয়ে নজর সরিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
-“তেমন কিছু না।”

তিশা পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,
-“আপনি সব সময় এমন চুপচাপ থাকেন কেন?”

-“নীরবতা আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু।”

-“এমনও হয় নাকি!”

-“হবে না কেন।”

-“আপনি সবার থেকে আলাদা একজন মানুষ।”

নিভ্র প্রতিত্তোরে মৃদু হাসি প্রদান করে। তিশা আবার বলে,
-“আপনার সম্পর্কে আমি অনেক কিছুই জানি।”

-“যেমন?” প্রশ্ন করে সে।

-“এই যেমন, আপনি চুপচাপ থাকতে পছন্দ করেন, আপনার প্রিয় রং কালো, কুকুর পছন্দ করেন, লাভ হেট করেন। আচ্ছা আপনি ভালোবাসাকে ঘৃণা করেন কেন? ” পাল্টা প্রশ্ন করে তিশা।

-“আগে করতাম, এখন করি না।”

-“এমনটা কেন?”

-” অজানাই থাক।”

-“এমনটা করবেন না। রাতে আমার ঘুম হবে না। প্লিজ বলুন।” মিনতি স্বরে বলে তিসা।

-“উঁহু!”

-“যান, আর ফোস করব না।” মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলে।

তিশার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,
-“ধন্যবাদ।”

-“আপনি পঁচা।” অভিমানি স্বরে বলে।

-“মেনে নিলাম।”

-“গুড!”

আরো অনেকক্ষণ যাবত তাদের মধ্যে কথাবার্তা হয়। তিশা অনেক মিশুক মেয়ে। সেটা ওর সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারে নিভ্র।রাত দশটা নাগাদ বাড়ি ফিরে আসে সে।
___________________
পরেরদিন নবনী কলেজ থেকে বাড়িতে ফিরার পর জিনান ও নিভ্রকে দেখতে পায় ওদের বাড়িতে। ড্রইংরুমে বসে তারা নিলুফা বেগমের সঙ্গে কথা বলছিল। মূলত জিনান তার বিয়ের কার্ড দিতে এসেছে নবনীদের বাড়িতে। সঙ্গে নিভ্রকে নিয়ে এসেছে। নিভ্রকে দেখে নবনীর মন কালো মেঘে ছেঁয়ে যায়। জিনান মিষ্টি হাসি প্রদান করে নবনীর উদ্দেশ্যে বলে,
-“বিয়ের দাওয়াত রইলো নবনী। গায়ে হলুদ থেকে বৌ-ভাতের পরেরদিন পর্যন্ত।”

-“ওকে।” স্বাভাবিক ভাবে বলে নবনী। তারপর ফিরে আসে নিজের রুমে। নিভ্র নবনীর দিকে তাকাতে চেয়েছিল না। কিন্তু নবনীকে এক নজর দেখার জন্য এ বাড়িতে সে এসেছে। তাই লোভ সামলাতে পারেনি। ওঁকে এত শক্ত স্বাভাবিক থেকে নিভ্রর কেন জানি ভালো লাগে। বুঝতে পারে অতীত থেকে সে বের হতে সক্ষম হয়েছে। কিছুক্ষণ পর চলে যায় তারা। নবনী বিছানায় জড়ো হয়ে হাঁটর ওপর মাথা রেখে বসে রয়েছে। মনে ঝড় বইছে। আদির সঙ্গে এখন সে ভালোই আছে। সারাক্ষণ কাটে বই পড়ে এবং আদির সঙ্গে কথা বলে।
কিন্তু মাঝেমধ্যে নিভ্র নামক ঝড় এসে তাকে এলোমেলো করে দিয়ে যায়। জানা নেই তার কবে এই ঝড় থেকে মুক্তি মিলবে। ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। এই সময় আদি ছাড়া আর কেউ তাকে কল দেওয়ার মতো নেই। স্ক্রিনের দিকে নজর পড়তেই আদির নাম থেকে তার ধারণা সঠিক হয়। ফোন রিসিভ করে চুপ করে রয়। আগের দিনের মতো সালাম না দেওয়ায় আদি নিজেই সালাম দেয়। নবনী জবাব দিয়ে এবারও নিশ্চুপ থাকে। আদি কিছুটা আন্দাজ করতে পারে নবনীর মন খারাপ। মনে হচ্ছে এখনই অশ্রু বর্ষিত হবে। সরাসরি জিজ্ঞেস করে,
-“মন খারাপ নাকি?”

-“হুম।”

-“হঠাৎ?”

নিরুত্তর থেকে যায় নবনী। আদির মনটাও যেন নিমিষেই বিষণ্ণতায় ঘিরে দাঁড়ায়। এমনই বুঝি হয়! প্রিয় মানুষটির মন খারাপ থাকলে অপর ব্যক্তির মন মলিনতায় জড়িয়ে যায়।
হায় ভালোবাসা!

আদি বিমর্ষ কণ্ঠে বলে,
-“কেঁদোনা, মন খারাপ কোরো না। মনে রেখো, তোমার একটুখানি মন খারাপেও শত মাইল দূরে বসত করা একজনের চোখমুখ কালো হয়ে যায়। বুকের ভেতর ঝড় ওঠে। তুমি কি চাও তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হোক?”

আদির কথাটি তীরের মতো বিঁধে যায় নবনীর বুকে। সে কিছুতেই চাইবে না তার জন্য অন্যের হৃদয় দমে যাক। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
-“নাহ!”

-“নিজের ওপর আশ্বাস রাখো। মন খারাপের কারণ গুলোকে এড়িয়ে চলো। কিছুতেই নিজেকে অসহায় মনে কোরো না। একটি কথা মাথায় রাখবে, তুমি একা নও, তোমার জীবনে একজনের আগমন হয়েছে। সম্পর্কে তুমি তার অর্ধাঙ্গিনী!”

বুকটা যেন ভরে উঠলো আদির বলা বাক্যগুলো শুনে। আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। আজ তাকে সামলানোর, আশা-আকাঙ্ক্ষা জোগানোর মানুষ পেয়েছে। যে তাকে সব সময় আগলে রেখে সাহস জুটাতে সাহায্য করবে।
নবনীর উত্তের অপেক্ষা না করে আদি নিজ থেকে বলে,
-“এবার কি তোমার পতিকে বলবে, কেন মন খারাপ?”

নবনী চোখ মেলে বিরসমুখে বলে,
-“একদিন বলব নিশ্চয়!”

-“আজকাল দেখছি মন খারাপের বাক্য গুলো অন্য দিনের জন্য তুলে রাখছো?”

-“কিছু সময়ের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য।”

-“সেই সময়ের অপেক্ষা করলাম।”

-“শুকরিয়া।”

-“তা এখন কি করা হচ্ছে? নিশ্চয় মন খারাপের সঙ্গে নীরবতা পালন করছো?”

-“হুম।”

-“ঠিক ধরেছি।” হেসে বলে আদি।

নবনী দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। অপর পাশ থেকে আদি সেটি শুনতে পায়। আদি চেয়ারের সঙ্গে পিঠ এলিয়ে বলে,
-“রহস্যময় নারী তুমি। তোমার এই রহস্যময়তা-ই তোমাকে স্পেশাল করে তুলে।”

-“কেন মনে হলো আমি রহস্যময় নারী?”

-“নিজ থেকে বুঝে নেও।”

-“বলবেন না?”

-“উমম! নাহ।”

নবনী মৌন হয়ে রয়। আরো আধা ঘণ্টার মতো ফোনালাপ চলে তাদের। একজন স্টাফ আদির কেবিনে আসার দরুন না চাইতেও ফোন রেখে দিয়ে হয় তাকে। নবনীর মন অনেকটা ভালো হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে আদিকে তার মন খারাপের ঔষধ হিসাবে গন্য করে নেয়।
___________
মায়া নবনীকে সঙ্গে নিয়ে জিনানের জন্য ঘড়ি এবং সঙ্গে আরো কিছু জুয়েলারি কিনার জন্য শপিংমলে আসে।
ঘড়ি কিনে জুয়েলারি দোকানের সামনে থেকে আসার সময় নবনী দাঁড়িয়ে যায়।খেয়াল না করায় পিছনে ফেলে মায়া এগিয়ে যায়। সেখানে একটা মেয়ে পুতুলের পরনের লেহেঙ্গাটি তার পছন্দ হয়। গর্জিয়াছ কাজ বিহীন ব্লু রঙের লেহেঙ্গাটি তার মনে ধরে। একবার স্পর্শ করে। তখনই জুয়েলারি দোকানের ভেতর থেকে মায়ার ডাক শুনতে পায়। নবনী দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে। লেহেঙ্গাটির কথা সে প্রায় ভুলে যায়। কেনাকাটা শেষ করে তিনটার দিকে বাড়িতে ফিরে তারা।
.
.
সকালে নবনী ঘুম থেকে একটু লেট করে উঠে। অবশ্য কাল বৃহস্পতিবার ছিল বিধায় রাতে জেগে বই পড়ার ফলে ঘুমাতে দেরি হয়। যার দরুন ন’টায় ঘুম থেকে জাগ্রত হয়। খাবার নিয়ে টিভি ছেড়ে সোফায় বসে পড়ে সে। অনেক পুরোনো দিনের অভ্যেস আজ পুনোরায় আওড়াচ্ছে। রুটি ছিঁড়ে ভাজি মেখে মুখে তুলতেই হঠাৎ কলিং বেল বেজে ওঠে। নবনী উঠার আগেই নিলুফা বেগম রুম থেকে বেরিয়ে দরজা খুলে দেয়। একটি ডেলিভারি বয়কে দেখতে পায়। সে নবনীর নামে পার্সেল এসেছে খবরটি তাকে বলে। নিলুফা বেগম ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েকে জিজ্ঞেস করে,
-“হ্যারে..তুই কিছু অর্ডার দিয়েছিলি নবনী?

নবনী মনে করার ভঙ্গিতে বলে,
-“কই নাতো।”

-“তাহলে পার্সেল এসেছে যে তোর নামে।”

-“কই দেখি।” বলতে বলতে উঠে দরজার কাছে আসে। ছেলেটির হাত থেকে প্যাকেটটি নেয়। তাদের বাড়ির ঠিকানা ব্যতীত আর কিছু লিখা নেই। নবনী উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-“কে দিয়েছে?”

-“আই ডোন্ট নো ম্যাম। আমার কাজ শুধু পার্সেল ডেলিভারি করা।” ছেলেটি বিনয়ী কণ্ঠে বলে।

নবনী পার্সেলটি হাতে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। দু’জনার তীক্ষ্ণ নজর এখন পার্সেলটির উপর। কোনো আইডিয়া নেই তার। সোফায় বসে খুলতে আরম্ভ করে প্যাকেটটি
পুরো খুলে ফেলার পর নবনী প্রায় বিস্মিত। এটি সেই লেহেঙ্গা যেটা কাল শপিংমলে দেখেছিল । কিন্তু অদ্ভুত বিষয় লেহেঙ্গাটি কে দিলো? আর জালনই বা কি করে তার পছন্দের ব্যাপারে। ভাবতেই নবনীর মস্তিষ্ক অচল অনুভব করে।
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

error: ©<b>গল্পপোকা ডট কম</b>