Friday, July 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1043



অবহেলার সংসার পর্ব-০৬

0

#অবহেলার সংসার
#Imran_khan
#পর্ব_০৬

জান্নাতুন তুই এগুলো কি বলতেছিস আমরা তোর বাবা-মা আর আমাদের চিনিস না বলতেছিস।(আমার নিজের বাবা বলতেছে )

হ‍্যা চিনি না তোমাদের আমি।আমার এই কথা শুনে বাবা-মা আর একটুও আমার শশুর বাড়িতে থাকেন নাই।সাথে সাথে চলে যেথে শুরু করেছে।

আরে বিয়ান সাব আপনারা উঠতেছেন কেনো মেয়ের কথা শুনে কি চলে যাচ্ছেন নাকি?

এখানে থেকে কি করবো বলেন আমাদের যে চিনে না তার সামনে কেমন করে থাকি।তাই এখানে বেশিক্ষন না থাকাই ভালো।চলো জান্নাতুন এর মা নিজের মেয়েই আমাদের চিনে না তাহলে এখানে থাকাটাই খুবেই অন‍্যই হবে।

ওকে চলো তুমি।আর জান্নাতুন শুন মা একটু দেখে শুনে থাকি আর এই হতভাগা মাকে একটু সরণ করিস যদি একবার মনে পড়লে।

আমি চূপ করে বসে আছি কি বলবো ভেবেই পাচ্ছি না?আমি ও তো মানুষ,মন বলে কিছু আছে।মা-বাবা দুইটি বছরে একবারো আমাকে দেখতে না আসায় তাহলে কেমন কষ্ট হয়েছিলো আমার।আমারো মনে অভিমান জমতে পারে তো সেই রকম অভিমান জমেছিলো মা-বাবার জন‍্য।আমার কষ্টটা কেউ বুঝলো না।এই মনে কতো কষ্ট জমা হয়ে আছে।

জান্নাতুন তোমার মা-বাবা তো চলে যাচ্ছে তুমি আটকাউ।(আমার শাশুড়ি বলতেছে)

না,মা ওনাদের আটকানোর দরকার নাই ওরা যাচ্ছে যাগ।

ভাবি আঙ্কেল-আন্টি তো কষ্ট পেয়ে চলে গেলো।(এশা )

চূপ করেই আছি।আসলেই আমার ব‍্যবহারে আজকে অনেক কষ্ট পেয়েছে।এটা করা আমার ঠিক হয়নি।কিন্তু এখন ভেবে কোন লাভ নাই,মা-বাবা তো চলেই গেছে।কথায় আছে না,
ভাবিয়া করিও কাজে,
করিয়া ভাবিও না!
সেই দশা হয়েছে।আগে ভাবি নি পরিস্থিতি এমন খারাপের পথে যাবে এখন অনুশুচনাই ভুগতেছি।

ভাবি শুনো যা হবার হয়েছে এখন মন খারাপ করে কোন লাভ নাই এখন চলো আমি তোমাকে তোমার রুমে রেখে আসি।

ওকে চলো তাহলে তুমি আমাকে রুমের ভিতরে রেখে আসো।

তারপর এশা আমাকে আমার রুমের ভিতরে রেখে চলে আসলো।আমি সোজা বিছানায় গিয়ে সুয়ে পড়লাম।ওনাকে রুমের আশে পাশে কোথাও দেখতেছি গেলো কই।কই গেছে যাগ আমার কি?
এভাবে তিনটাদিন চলে গেলো।এখন আমি অনেকটা সুস্হ।এতো তাড়াতাড়ি সুস্হ হওয়ার একমাত্র কারন হচ্ছে এশা ওর যত্নের কারনে আজকে তাড়াতাড়ি সুস্হ হয়েছি।আমার স্বামী আমাকে সুস্হ দেখে কাছে ঘেষার চেষ্ট করেছে কিন্তু কাছে ঘেষতে দেই না।এখন শুধু অবহেলা করি।বুঝতে পেরেছি এনার থেকে ভালোবাসা পেতে হলে আগে অবহেলা করতে হবে তাহলে তার আসল ঠিকানাটা বুঝতে পারবে ওনি কি করতেছেন?শয়তান এর পাল্লায় পড়লে যা হয়।দুইটা বছরের সংসারে কখনো ওনাকে পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়তে দেখি নি তাহলে ওনার মনটা পুরো শয়তান দকল করে নিয়েছে।তাই ন‍্যায়-অন‍্যায় কিছু বুঝতেছে না।প্রথমতো ওনাকে ভালো পথে আনতে হলে, আগে আল্লাহ্ পথে আনতে হবে।আজকের সকালের কাহিনী,

জান্নাতুন তুমি আমার থেকে শুধু শুধু পালিয়ে বেড়চ্ছো কেনো।আবার আগের মতো আর ঠিকভাবে কথা বলো না অবহেলা করতেছো।তোমার কাছে যেথে চাচ্ছি কিন্তু কাছে ঘেষতে দিচ্ছো না।

আমি আপনাকে অবহেলা করবো কেনো আমিতো আপনার কেউ না।যাকে স্ত্রী হিসাবে মানেন না তার সাথে কথা না বলায় ভালো ।

এগুলো তুমি কি বলতেছো আমার কিন্তু এইসব ব‍্যবহার ভালো লাগতেছে না?এর ফল ভালো হবে না কিন্তু।

কি করবেন মারবেন মানেন, আমাকে মারা ছাড়া কি আপনি কিছুই করতে পারবেন?আপনার মতো অনেক কাপুরুষ আছে যারা শুধু স্ত্রীকে মারতে জানে তাছাড়া কিছুই করতে পারে না কারন তাড়া পুরুষ নামে কাপুরুষ।যারা কথা কথা স্ত্রীকে মারার হুমকি দেয় সে কখনো সুপুরুষ হতে পারে না।এটা মনে রাখবেন স্ত্রীকে মেরে নিজেকে পুরুষ মানুষ ভাববেন না,স্ত্রীকে না মেরে ভালোবাসা দেখাতে শিখুন।

আমি কি করবো না করবো সেটা আমার বেপার?আমাকে জ্ঞান দিতে আসবে না তো।

ধেত আপনার সাথে কথা বলা মানে একটা গরুর সাথে কথা বলা।নিজের ইগোটাই ওনার কাছে বেশি কে কি বলে বলুক।আপনার সাথে কথা বলতেই ঘৃণা হয় আমার।(এগুলো কথা বলে রুম থেকে চলে আসি )

এই ঈমান হককে ঘৃণা করা এটার ফল ভালোহবে না।আজকে তোমার খবর করে ছাড়বো শুধু আজকে অফিস থেকে আসি।

আমি রুম থেকে এসে সোজা আমার শাশুড়ি মার কাছে আসলাম।

আরে বউমা তুমি এতো সকালে ঘুম থেকে উঠেছো কেনো এখনো ঠিকভাবে সুস্হ হও নাই তুমি।

মা আমি এখন অনেকটা সুস্হ তাই আপনাকে সাহায‍্য করার জন‍্য এখানে আসলাম।

বউমা আমাকে সাহায্য করতে হবে না, তুমি না হয় রুমে গিয়ে রেস্ট করো।

এখনে ঘুম থেকে উঠে আসলাম আবার রেস্ট করবো।মা আমার দাড়ায় আর রেস্ট করা হবে না।আর আমি তো এখন সুস্হ তাই তোমাকে একটু হেল্প করি না।কয়েক দিন ঘর বন্ধী হয়ে থাকতে থাকতে আর ভালোই লাগতেছে না।

আচ্ছা ঠিক আছে এতো করে যখন বলতেছো তখন থাকো কিন্তু কোন কাজে হাত দেওয়া যাবে না শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখো।

ঠিক আছে।আচ্ছা মা এশা ঘুম থেকে উঠে নাই।

এশা এখনো ঘুম থেকে উঠে নাই বউমা।

ও।

মা আমাকে নাস্তা দেও আমার অফিসে যেথে হবে এমনিতে দেড়ি হয়ে গেছে।

মা আর আমি রান্না ঘরে গল্প করতেছি তাতে আমার স্বামী এভাবে মাকে বলতেছে।

বউ মা তুমি গিয়ে নাস্তাটা দিয়ে আসো ঈমানকে।

আমিমিমিই,

হুম অবাক হচ্ছো কেনো,তুমি ছাড়া কে যাবে,দেখতে পারতিছো না আমি কাজ করতেছী ?

ওকে মা তাহলে আমাকে নাস্তার প্লেট টা দেন আমি নাস্তাগুলো ওনাকে গিয়ে দেই।তারপর আমি নাস্তার প্লেটটা ওনার সামনে নিয়ে গিয়ে বলতেছি,

এই নেন আপনার নাস্তা আর তাড়াতাড়ি খেয়ে আমাকে উদ্ধার করেন তো যতোসব।

তুমি এমন ভাবে বলতেছো কেনো আর সকাল থেকে দেখতেছি আমার সাথে তুমি খারাপ ব‍্যবহার করতেছো কেনো সমস‍্যা কি তোমার?

আমার কোন সমস‍্যা নাই আপনার থাকলে থাকতে পারে।আপনার সাথে বেশি প‍্যাচাল পাড়তে পারবো না আমি তাই বেশি কথা না তাড়াতাড়ি খ‍েয়ে নিজের কাজে চলে যান তো।

ঠিক আছে যাচ্ছি তবে কাজটা ঠিক করতেছো না তুমি।এর বিচার আমি ঠিকে করবো রাতে তখন কিন্তু পস্তাবে।

কে পস্তাবে সেটা পরে দেখা যাবে।

ঠিক আছে।তারপর আমি আর জান্নাতুনের সাথে কথা না বলে নাস্তা খেতে শুরু করলাম।নাস্তা করতেছি আর একটু পর পর ওকে দেখতেছি।ও তো দিব্বি সোফার উপরে পার উপরে পা দিয়ে বসে আছে।এর যে আজকে কি হলো বুঝতেছি না?আগে তো এমন করতো না তাহলে এখন এমন করতেছে কেনো।আগে যেটা বলতাম সেটাই করতো কথার উপরে কথা বলতো না, এখন বিন্দু মাত্র ভয় না করে আমার কথার উপরে কথা বলেই চলেছে। এগুলো ভাবতে ভাবতে নাস্তা খাওয়া শেষ আমার।তাই আর দেড়ি করা যাবে না এমনিতে দেড়ি হয়ে গেছে।
মা আমি অফিস গেলাম।

নাস্তা করেছিস বাবা।

হুম মা,আমি গেলাম এমনি দেড়ি হয়ে গেছে কথা বলার টাইম নাই ।

ওকে বাবা যা আর রাস্তা দেখে শুনে যাস।

ওকে।আমি যে চলে যাচ্ছি ও একবারো আমার দিকে তাকালো না।একটি বারো আমাকে বায় বললো না।ওনি ওনার মতো সোফায় বসেই আছে।কি মেয়েরে ভাই মাইরি?ও ছরি মেয়ে নয় বউ।তারপর আমি বাসার বাহিরে এসে গাড়িতে উঠে অফিসে যাওয়ার জন‍্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।তারপর গাড়িটা এস্টাট দিয়ে চালাতে শুরু করলাম।গাড়িটা একটু জোড়েই চালাচ্ছি কারন তাড়াতাড়ি অফিসে গিয়ে পৌছাতে হবে।হঠাৎ করে রাস্তার সাইটে এক বন্ধুকে দেখতে পেলাম।তাকে দেখে গাড়িটা ব্রেক করলাম।তারপর গাড়ি থেকে নেমে সোজা ওর কাছে চলে গেলাম কারন প্রায় আজ পাঁচবছর পরে দেখা ওর সাথে ,

কিরে সাজু কেমন আছিস আর তোর কোলে মেয়েটা কার।

আরে ঈমান তুই,বহুদিন পরে দেখা তোর তো কোন খবরেই নাই।আমি তো ভালো আছি তুই?

আলহামদুলিল্লাহ্ আমিও ভালো।তুই তো ওই যে চলে গেলি গ্রামে আর শহরে আসলি না।

এমনি আসা হয় নি আর।

ও তাহলে তুই কই যাবি এখন।

আমি তো এখন ঢাকামোড় এর দিকে যাবো তারপর ওখান থেকে গাড়িতে করে গ্রামে চলে যাবো।

তাহলে চল আমার সাথে আমিও ওদিকে যাবো।

তাই তাহলে তো ভালোই হলো।

হুম।

তারপর সাজুকে আর ওর কোলে একটা মেয়েকে নিয়ে আমার গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছি ঢাকামোড় এর দিকে।
তো সাজু মেয়েটা কে তোর কোলে?

ও এটা আমার মেয়ে,নাম নূরে।বয়স পাঁচ বছর।

অনেক সুন্দর তো তোর মেয়েটা দেখতে।তবে তুই বিয়ে করলি কবে।আমি কোন খবর পেলাম না।

আমার বিয়ে করা প্রায় সাত বছর হচ্ছে।আর বিয়েটা হঠাৎ করে হয়ে যায় তাই তোকে জানাই নি রে।

ও।তবে তোর মেয়েটা দেখতে কিন্ত অনেক কিউট।

হুম সবাই এই কথায় বলে।মেয়েটা আমার ওর মার মতো দেখতে হয়েছে।মেয়েটাকে জন্ম দিতে গিয়ে আমার বউটা মারা যায়।মেয়েটা হয়েছে আমাদের বিয়ের পাঁচটা বছর পরে।এই পাঁচ বছর ধরে কতো কান্না কাটি করেছি আল্লাহ্ কাছে একটা সন্তানের জন‍্য শেষে আল্লাহ্ পাঁচ পছর পরে আমাদের কোল জুড়ে একটা মেয়ে দেয়।একটা ছেলে বা মেয়ের বিয়ের পরে যখন বাচ্চা হয় না, তাদের কতোটা সমাজের মানুষের কাছে কটু কথা শুনতে হয় সেটা আমি বুঝতে পেরেছি যখন বিয়ের পাঁচ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও কোন সন্তান জন্ম হয় নাই।

#চলবে,,,,কী?

অবহেলার সংসার পর্ব-০৫

0

#অবহেলার সংসার
#Imran_khan
#পর্ব_০5

একটা মেয়ের বিয়ের পরে নিজের জন্ম দাতা মা-বাবাও পর হয়ে যায়।আজকে বাবা মাকে দুইটি বছর পরে দেখতে পেলাম আমার শশুর বাড়িতে।কখনো তো এরা আমার শশুর বাড়িতে আসে না।তাহলে এরা খবর পেলো কেমন করে আমি অসুস্হ ।অনেকবার আসতে বলেছিলাম আমার শশুর বাড়িতে বাবা-মাকে একটা নজর দেখার জন‍্য কিন্তু তারা বলতো,,

জান্নাতুন শুন মা তোর বিয়ে দিয়েছি বড় ঘরে।ওরা আমাদের চেয়ে উঁচু পরিবার তাহলে আমরা গ্রামের অশিক্ষিত মানুষ হয়ে ওখানে গিয়ে কি করবো বল?তাই বলি কি জামাইকে নিয়ে গ্রামে এসে ঘুড়ে যা?

এটা যদি জানতে যে, ওরা উচুঁ পরিবারে মানুষ তাহলে আমাকে এমন উঁচু পরিবারে বিয়ে দিলে কেনো।যেখানে তোমরা বেড়াতে বা নিজেই মেয়েকে দেখতে আসতে পারবে না।মা শুনো না তোমাদের অনেক দেখতে ইচ্ছা করতেছে একটু এসে দেখে যাও না মা।আর তোমাদের জামাই গ্রামে বেড়াতে যাবে না আমাকে বলে দিয়েছে সেইজন‍্য তোমাদের এখানে আসতে বলতেছি।

তুই না হয় একায় এসে এক দুইদিন থেকে যা জামাই যদি না আসতে চায়।তবে আমরা কেউ তোর শশুর বাড়িতে যেথে পারবো না।

তাহলে কি বাবা আমাকে বিয়ে দিয়ে,আমি তোমাদের কাছে পর হয়ে গেলাম?আমি কি তোমাদের মেয়ে না,আমাকে দেখার ইচ্ছা করে না?তোমাদের দুইটি বছর ধরে দেখি না।

আচ্ছা আগে বল তুই ওখানে খুশি আছিস তো।

হ‍্যা অনেক খুশি আছি।(যেখানে নিজের স্বামী স্ত্রী হিসাবে মানে না ওখানে কেমন সুখি আছি সেটা একমাত্র আল্লাহ্ আর আমি জানি )

তুই যখন খুশি আছিস তখন ওখানেই থাক আর এখানে তোকে আসতে হবে না,আমাদের অভাবের সংসারে।ওখানেই থাক ভালো থাকবি।

তাহলে তোমরা আসবে না এখানে,

না রে মা।

ঠিক আছে আজকে থেকে মনে করবো আমার মা-বাবা মারা গেছে।যে বাবা-মা নিজের মেয়েকে বিয়ে দেওয়া পরে একটা নজর দেখতে আসে না কেমন আছে মেয়েটা নতুন জায়গায়,নতুন পরিবেশে সেই রকম বাবা-মা আমি চাই না।বাবা আজকে বুঝলাম বিয়ে পরে মেয়েরা বাবা-মা কাছে পর হয়ে যায় কথা সত‍্যি হয়ে গেলো।এই বলে ফোনটা কেটে দেই।কথা বলার আর ইচ্ছায় করতেছে না।

ভাবি তুমি কি দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকবে নাকি বাসার ভিতরে ঢুকবে তখন থেকে কি ভেবে চলতেছো?

এশার কথা শুনে অতীতের ভাবনা থেকে বর্তমানে চলে আসলাম।ওর ছরি চলো এশা ভিতরে যাই তাহলে।

হুম ভাবি চলো।

এশা তোর ভাবিকে ভালো করে ধরে আস্তে আস্তে বাসার ভিতরে ঢুকা।

ওকে ভাইয়া।

তারপর এশা আমাকে ভালো করে ধরে ধীরে ধীরে হেটে বাসার ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে।বাসার ভিতরে গিয়ে দেখি আমার মা-বাবা আর ছোট ভাইটা আমার শশুরের সাথে সোফায় বসে আছে।আমার শশুর আমাকে দেখে বলতেছে,

এই তো আমার লক্ষী বউ মা চলে এসেছে।

আমাকে দেখে আমার ছোট ভাই টা আমাকে কাছে এসে বলতেছে
দিদি তোর কি হয়েছে?

আমার কিছু হয় নাই ভাইয়া।

তাহলে তুই ঠিকভাবে হাটতে পারতেছিস না কেনো আর ওই আন্টিটা তোমাকে ধরে আছে কেনো।(এশাকে ও কোনদিন দেখে নাই দেখে চিনতে পারতেছে না )আমি তোমার কোলে যাবো।

তোমার দিদির এখন অসুস্হ তাই দিদির কোলে চড়া যাবে না তাই তুমি গিয়ে তোমার মার কোলে গিয়ে উঠো।তোমার দিদি পরে তোমাকে কোলে তুলে নিবে।

ওকে আন্টি।এই কথা বলে আমার ছোট ভাইয়টা সোজা মার কোলে গিয়ে উঠলো।আমার ছোট ভাই এর বয়স প্রায় ছয় হবে।আর ওর নাম হচ্ছে নয়ন।ছোট বেলা থেকেই খুবেই শান্তশিষ্ট একটা ছেলে।বড়দের সব কথা শুনে।

আর আমার শশুর হচ্ছেন অত‍্যন্ত একটা ভালো মানুষ। এই পরিবারে সব মানুষের থেকে আমার শশুর আমাকে অনেক ভালোবাসে এবং নিজেই মেয়ের মতো দেখেন।পরিবারে সব মানুষ ভালোবাসলেও দিন শেষে স্বামীর ভালোবাসা পাই না,পেয়েছি শুধু অত‍্যাচার ।যার জন‍্য বেঁচে থাকার অবলোপন সেই ভালোবাসে না আমাকে।

জান্নাতুন তোমার এই অবস্হা হলো কেমন করে।(আমার শশুর বলতেছেন আমাকে)

আমার শশুর এই কথা আমাকে জিগ্যেসা করার পর থেকে দেখতেছি আমার স্বামী ঈমান আমাকে কিছুক্ষন পর পর আমাকে দেখতেছেন।ওনার মুখে একটু একটু ভয়ের ছাপ দেখতে পারতেছি।কারন ওনি ওনার বাবাকে খুবেই ভয় পায়।আমি যদি সত‍্যটা এখন বলে দেই তাহলে আমরা শশুর ওনাকে বাসা থেকে বাহির করে দিতে একটুও টাইম নিবেন না।আমি চাই ওনি এই বাসায় থেকে নিজের অপকর্মের শাস্তি পাক।তাই আমি সত‍্যটা বলতে চাই না।শুধু আমার শাশুড়ি মা জানেন সত‍্যটা ।এতোদিন আমার শশুর বাসায় ছিলো না ওনি দেশের বাহিরে অফিসের কাজে একমাসের জন‍্য গিয়েছিলো।

বাবা আমি বলতেছি ভাবির এই অবস্হা কেমন করে হলো।ভাবি তুমি তোমার মার কাছে সোফায় বসো আমি বাবাকে সব বলতেছি তোমাকে বলতে হবে না।

তারপর আমার জন্ম দাতা বাবা-মার পাশে এশা আমাকে বসে দিলো।ওনাদের সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছা নেই আমার।যে বাবা-মা মেয়েকে বিয়ের পরে দেখতে আসে না একটি বার।তারা আবার কেমন বাবা -মা।নিজের রক্তের মানুষ যদি অবহেলা করে তাহলে অন‍্য মানুষ কি করবে?

বাবা ভাবি নাকি কোন একটা বিষয় নিয়ে টেনশন করে আর ঠিক মতো খাওয়া করে না সেই জন‍্য ভাবি অসুস্হ ডাক্তার বলেছে।কয়েকদিন ভালোভাবে যত্ন করলে ভাবি ঠিক হয়ে যাবে।ভাবিকে আমি তাড়াতাড়ি সুস্হ করে তুলবো বাবা তুমি চিন্তা করো না তো।

ঠিক আছে,চিন্তা হয় না করলাম কিন্তু বউ মা কি বিষয় নিয়ে টেনশন করে সেটা তো বুঝতে পারতেছি না?

বাবা ভাবি এখন অসুস্হ তাই ভাবিকে এখন প্রশ্ন না করায় ভালো,ভাবি আগে সুস্হ হোক তারপর মেলা প্রশ্ন করিও সমস‍্যা নাই।

ওকে।আর বউমা তুমি অবাক হচ্ছো তোমার মা-বাবা দেখে ওনারা খবর পেলো কেমন করে তুমি অসুস্হ।আমি ফোন দিয়েছিলাম তোমার মা-বাবাকে তুমি অসুস্হ এই বিষয়টা জানানোর জন‍্য।

আমি এনাদের চিনি না,ওনারা আমার বাবা-মা নয়।যে বাবা মা নিজের মেয়েকে দেখতে আসে না তারা কেমন বাবা মা আমার।যেদিন আমাকে বলেছিলো আমাকে দেখতে আসতে পারবে এখানে সেদিনে ভূলে গিয়েছি আমার বাবা মা আছেন।

বউমা তুমি এগুলো কি বলতেছো ওনারা তোমার জনমদাতা মা-বাবা তাদেরকে বলতেছো তুমি চিনো না?এটা কেমন অসভ‍‍্যতা।

আমি অসভ্যতা করতেছি না মা।ওনাদের আমি চিনি না।

জান্নাতুন তুই এগুলো কি বলতেছিস আমরা তোর বাবা-মা আর আমাদের চিনিস না বলতেছিস।(আমার নিজের বাবা বলতেছে )

হ‍্যা চিনি না তোমাদের আমি।

#চলবে,,,,কী?

অবহেলার সংসার পর্ব-০৪

0

#অবহেলার সংসার
#Imran_khan
#পর্ব_০4

তোমার abortion করেছি শুধু তোমার জন‍্য , কারন আমার বাচ্চাটা প্রয়োজন নেই,প্রয়োজন তোমার সেই রক্তে মাংসের শরীরটা।

আপনার এতো শরীররে নেশা।আপনাকে একদিন পস্তাতে হবে সেদিন কোনো কূলে ঠাই পাবেন না।

সেদিন কখনো আসবে না।

আল্লাহ্ উপরে আছেন তিনি সব দেখতেছেন।এতো নিষ্টুরতা কখনো সয‍্য করবে না তিনি।ঠিক একদিন বুঝবেন।এটা সব সময় ভাববেন যে আল্লাহ্ মার ধীরে ধীরে।

অনেক বক্তব‍্য দিয়েছো আমাকে।এখন দোয়া করি যদি তাড়াতাড়ি সুস্হ হও আবারো আগে অবস্হায় ফিরে পাই তোমাকে ।

কাকে সুস্হ হওয়ার কথা বলতেছো, ভাইয়া!

এই তো , তোর ভাবিকে সুস্হ হতে বলতেছি তাড়াতাড়ি।

ও আর তোমাদের কথা হলে , ভাইয়া চলো ভাবিকে নিয়ে বাসায় যাবো আমি আর মা ডাক্তারের থেকে জেনে আসলাম ,যে ভাবিকে আজকেই বাসায় নিয়ে যেথে পারবো।ডাক্তার বললো ভাবিকে ভালো ভাবে কিছুদিন যত্ন করতে তাহলে তাড়াতাড়ি সুস্হ হয়ে যাবে।

আল্লাহ্ কাছে দোয়া করি যেনো আমার লক্ষী বউটা তাড়াতাড়ি সুস্হ হয়।

ওনার মিথ‍্যে নাটকগুলো দেখে আমার পূরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে এখুনী খুন করে ফেলি।কিন্তু অসুস্হতার কারনে না পারতেছি কিছু করতে,না পারতেছি কিছু শইতে।নিজেকে খুবেই অসহায় মনে হচ্ছে আজকে।

এশা,মা কই রে?

মা আসতেছে। বাবা মাকে ফোন করেছিলো বাবাও নাকি হাসপাতালে আসতেছে।

বাবাকে তুই ফোন করে আসতে মানা কর, কারন জান্নাতুন কে তো কিছুক্ষন পরে বাসায় নিয়ে যাবো অজাথা বাবা এখানে এসে কি করবে?বাবাকে বাসায় থাকতে বল আমরা তো বাসায় যাবো।

ঠিক আছে ভাইয়া আমি এক্ষুনি বাবাকে ফোন করে আসতে মানা করতেছি এখানে।

ওকে।

তারপর এশা কেবিন থেকে বাহিহয়ে চলে গেলো বাবাকে ফোন করার জন‍্য মনে হয় ।এশা একটু পরে এসে বলতেছে,

ভাইয়া বাবাকে হাসপাতালে আসতে মানা করে দিয়েছি অফিস থেকে বাবা সোজা বাসায় যাচ্ছে।এখানে আর আসবে না।

ঠিক আছে ।কিন্তু মাকে তো কোথাও দেখতেছি না, এশা।

মা তো আমাকে সামনে আগাতে বলে কই গেলো আবার!

কোথাও যাই নি, আমি এসেছি এখন চলো জান্নাতুন মাকে নিয়ে সোজা বাসাই যাই।(আমার শাশুড়ি মা হঠাৎ করে কেবিনে ঢুকে এমন করে বলতেছে।আমি সুয়ে সুয়ে দর্শক এর মতো ওনাদের কথা শুনতেছি )

তোমার অপেক্ষায় ছিলাম মা , এখন এসেছো যখন আর দেড়ি কেনো ভাবিকে নিয়ে বাসায় যাই।

এশা তোর ভাবিকে ধরে ব‍েট থেকে নিচে নামা।

ওকে মা।

তারপর এশা আমাকে আস্তে আস্তে ব‍েট থেকে নিচে নামালো।আমি ঠিক ভাবে দাড়িয়ে থাকতে পারতেছি না কারন ব‍্যথার কারনে।

ভাবি তুমি হেটে যেথে পারবে তো,না হলে ভাইয়া তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাবে।

দরকার নাই আমি হেটেই যেথে পারবো আমাকে কাউকে কোলে করে নিয়ে যেথে হবে না।আল্লাহ্ আমার দুইটি পা দিয়েছে হাটার জন‍্য।(যাকে ঘৃণা করি তার কোলে কখনো উঠবো না, মরে গেলেও )

কিন্তু ভাবি তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে তুমি হাটতেই পারবে না।তাই বললাম ভাইয়াকে কোলে নেওয়ার কথা।যদি তোমার সমস‍্যা না হয়, তাহলে কারো কোলে চড়তে হবে না।তাহলে এখন আমার হাতটা শক্ত করে ধরে হাটতে শুরু করো।

তারপর আমি এশার হাতটা ধরে ধীরে ধীরে হাটতেছি।পা দুটো ব‍্যথার কারনে ঠিকভাবে হাটতে পারতেছি না।

বউ মা তোমার হাটতে তো কষ্ট হচ্ছে।ঈমান তুই বউ মাকে কোলে করে নিয়ে চল।

না মা ,আমার কষ্ট হচ্ছে না!আমি এভাবেই যেথে পারবো সমস‍্যা নাই।

ভাবি দেখছো মাও আমার মতো বলতেছে ভাইয়ার কোলে উঠতে ।

মা আমি একবার বলেছি যখন কারো কোলে উঠবো না তখন বার বার জোড় করতেছেন কেনো।আমার শত কষ্ট হলেও চড়বো না,কারো কোলে।

এশা -মা তোমরা দুইজনে জান্নাতুন এর সাথে কি শুরু করে দিয়েছো ও যখন আমার কোলে উঠতে চাচ্ছে না তাহলে অজাথা জোড় করতেছো কেনো?

ঠিক আছে (আমার শাশুড়ি মা আর এশা দুই জনে একসাথে বললো )

আমার শাশুড়ি আর এশা বলার পরেও আমার স্বামী ঈমানের কোলে চড়ি নাই ওনার স্পর্শগুলো এখন ঘৃণায় পড়িনত হয়েছে।অনেক কষ্টে হেটে হেটে হাসপাতালের বাহিরে আসলাম।হাসপাতালের বাহিরে এসে দেখি আমাদের গাড়িটা দাড় করানো।

ভাইয়া তুমি তো গাড়ি চালাবে তাই না।

আমি ছাড়া কি তুই গাড়ি চালাবি?

আমি চালাতে পারলে তোকে কি চালাতে বলতাম, ভাইয়া?

তুই যখন জানিস আমি গাড়ি চালাবো তখন প্রশ্ন করতেছিস কেনো চূপচাপ গাড়িতে উঠো সবাই।

হুম উঠতেছি তুই রাগ দেখাচ্ছিস কেনো।আর ভাবি তুমি সামনের সিটে ভাইয়ার সাথে বসো,আমি আর মা আমি পিছনের সিটে বসতেছি।

আমার সামনের সিটে বসলে সমস‍্যা হয় তাই বলি কি এশা তুমি না হয় তোমার ভাইয়ার সাথে গাড়িতে সামনে সিটে বসো।আমি না হয় মার সঙ্গে পিছনের সিটে বসতেছি।

তোমাদের কাউকে গাড়িতে উঠতে হবে না,আমি গাড়ি একাই নিয়ে যাচ্ছি তোমরা পরে যেও।

আমরা পরে যাবো মানে।পরে কেমন করে যাবো।আমি সামনে বসতেছি আর ভাবি তুমি আর মা পিছনে বসো।

তারপর আমি আর মা পিছনের সিটে বসলাম আর আমার স্বামী ড্রাইভিং সিটে তার পাশে এশা বসেছে।তারপর আমার স্বামী ঈমান গাড়ি স্টাট দিয়ে চালাতে শুরু করলো।প্রায় এক ঘন্টা পরে বাসায় পৌছিলাম।

বাসায় চলে এসে,,

#চলবে,,,, কী ?

অবহেলার সংসার পর্ব-০৩

0

#অবহেলার সংসার
#Imran_Khan
#পর্ব_০৩

মা প্রতিটি মেয়ে দুইটা জিনিস সবচেয়ে বেশি চেয়ে থাকে একটা হচ্ছে তার সম্মান, অন‍্যটি হচ্ছে মনের মতো একটা জীবন সঙ্গী।কিন্তু মা , আমার দুইবছরের সংসারে দুইটোর মধ‍্যে একটাও পাই নি আমি ! আমার স্বামী না দিয়েছে স্ত্রীর অধিকার , না দিয়েছে সস্মান। ভেবছিলাম আল্লাহ্ আমার মনের মতো জীবন সঙ্গী দিয়েছে কিন্তু মা আমি ভূলেই গেছিলাম উপরের সাদা চামড়া দেখে ভালো মন্দ যাচায় করা যায় না কখনো।ব‍্যবহারে বুঝা যায় মানুষটা ভালো কি মন্দ?তবুও স্বামী’র অবহেলার সংসারে পড়ে আছি শত অবহেলা আর অত‍্যাচারে এই আশায় যে,ঠিক একদিন আমার স্বামী এসে বলবে জান্নাতুন শুনো আগে যা হয়েছে সব ভূল করেছি আমি, চলো আবার নতুন করে সংসার তৈরি করি।কিন্তু না মা , ওনার দিন দিন পশুর চেয়েও খারাপ ব‍্যবহার হচ্ছে।যার মনে একটুও দয়া,মায়া নেই নিজের সন্তানের জন‍্য সে কখনো একজন আদর্শ স্বামী হতে পারে না ।

বউ মা তুমি এতো তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দিও না।এমন ভাবে বলতেছো কেনো এমন মাঝ পথে আমার ছেলেটাকে ছেড়ে গেলো ও আরো পাষাণ হয়ে যাবে।আমি জানি আমার ছেলেটা একটু বেশি রাগি।রাগলে ও পশুর মতো ব‍্যবহার করে কিন্তু মা একটা মেয়েই পারে তার স্বামীকে সঠিক পথে ফিরে আনতে।যতো স্বামী তার খারাপ পথে থাকুক,স্ত্রীর ভালোবাসার কারনে ঠিক একদিন ভালোর পথে পা দিবে।আমি ওর চোখে দেখেছি তোর জন‍্য ভালোবাসা।তাই বলি কি মা ছেড়ে যেতে তুই সংসারে আসিস নাই তুই নিজের অধিকার-সম্মান নিজেই তৈরি করে নে আমি আছি তোর পাশে সব সময়।

আপনি দেখেছেন ওনার চোখে আমার জন‍্য ভালোবাসা, মা আপনি আমাকে হাসালেন ওটা ভালোবাসা না,ওটা হচ্ছে আমাকে ভোগ করার আশা।যে স্বামী তার নতুন স্ত্রীকে বাসর রাতে বলে,আমি গ্রামের মেয়েকে স্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে পারবো না।বাসর রাতে স্বামীর মুখে যেকোন মেয়ে এই কথা শুনলে তার মনে কেমন কষ্ট আর ঝড় বইবে সেটা একমাত্র সেই বুঝবে।আচ্ছা মা বলেন তো গ্রামের মেয়েরা কি ভালো না,আমরাও তো আপনাদের মতো রক্তে মাংসে তৈরি।নাকি গ্রামের মেয়েদের বাবার টাকা পয়সা কম দেখে আপনাদের কোর্ট টাই পড়া মানুষগুলো মেনে নিতে অসুবিধা হয়।আমরাও তো মানুষ আমাদের তো আশা- স্বপ্ন থাকতে পারে না, স্বামী সংসার করতে,এটাই কি চাওয়া আমার দোষ? আর বললেন কি মা, আমি ওনাকে ভালোর পথে আনতে চেষ্ট করি নি,অনেক চেষ্ট করেছি কিন্তু এর ফল ভালো আসে না।মা আপনাদের ছেড়ে যেতে চাইলে সেই কবেই চলে যেতাম অবহেলার সংসার থেকে কিন্তু যেথে পারি না ওনাকে ভালোবাসি দেখে।

বউমা তুমি এতো কষ্ট সর্য‍্য করেছো।এতো কিছু করেছে আমার ছেলে আগে বলবে না আমাকে।আর একবার চেষ্টা করে দেখো বউ মা।সন্তান হারানো কষ্ট আমি বুঝতে পারি কারন আমিও তো একজন মা।যা হবার হয়েছে এখন আল্লাহ্ কাছে দোয়া করো আবার যেনো বউমা তোমার পেটে বাচ্চা আসে।

মা কিছু কিছু কষ্ট আছে সবার মাঝে প্রকাশ করতে নেই।আর আল্লাহ্ মেয়েদের এমন একটা শক্তি দিয়েছে যে শত কষ্ট বুকে চাপা রেখে হাসি মুখে সবার মাঝে বেঁচে থাকে।এটাই হচ্ছে মেয়েদের জীবন।

বউমা তোমাকে একটা কথা বলি কথায় আছে না,
একবার না পাড়িলে,
দেখো শতবার!
তেমনি বউমা তুমি বারবার চেষ্টা করো ঠিক একদিন তোমার স্বামী তোমার মনের মতো হবে।দেখবে সেদিন স্বামীর থেকে পাবে তোমার সম্মান আর একজন পার্ফেক্ট জীবন সঙ্গী।

মা দিনের বেলা স্বপ্ন দেখা শোভা পায় না, সেটা রাতের বেলায় দেখলে শোভা পায়।আর মা মিথ‍্যে আশা দিয়েন না তো আপনি!

এটা মিথ‍্যাে আশা না রে মা।একজন মা হয়ে,তার মেয়ের জন‍্য দোয়া করতেছি।

ভাবি এখন কেমন আছো তুমি।আর তোমার এমন অবস্হা কেমন করে হয়েছে।

এই কথা শুনে পিছনে ঘুরে দেখি আমার ননোনী এশা এসেছে।ও খবর পেলো কেমন করে ওতো এখানে আশার কথা না।আমার দেখা দেখে আমার শাশুড়ি মাও অবাক হয়েছে।

তোমরা দুইজনে এমন ভাবে দেখতেছো কেনো আমাকে।কখনো কি আমাকে দেখো নাই?

তেমন না কিন্তু এশা তুই এখানে কিভাবে আসলি।তুই তো মেসে ছিলি আর তোকে খবর কে দিলো?

আমি মেসে থাকি দেখে কি পরিবারের খবর পাবো না?আজকে সকালে ভাইয়া ফোন করে বলেছে ভাবি তুমি নাকি অসুস্হ তাই দেখতে চলে আসলাম।ভাবি আমি এখন এসেছি তাই তোমার কোন সমস‍্যা নাই অল্প দিনে তোমাকে সুস্হ করে তুলবো ওকে।

তাই,

হুম ভাবি।ও আপনাদের পরিচয় দেওয়া হয় নাই এতোক্ষন যার সাথে কথা বললাম তার নাম এশা নামটা বলেছি তাও বললাম।সে হচ্ছে আমার স্বামী একটি মাত্র বোন।দেখতে মাসআল্লাহ্ অনেক সুন্দর।আর ও মেসে থেকে পড়াশুনা করতেছে।এতোটুকু থাক পরে আরো পরিচয় পাবেন গল্পের মাঝে।

ভাবি তুমি অসুস্হ হলে কেমন করে।

এমন প্রশ্ন শুনে অবাক হলাম কারন যে, এমন আমার ক্ষতি করেছে সেই তার বোনকে খবর দিয়ে এখানে এনেছে কিন্তু এটা বলে নাই আমি কেমন করে অসুস্হ হলাম।

কি হলো ভাবি বলো,কেমন করে অসুস্হ হলে?

আসলে,

তোর ভাবি ঠিক মতো খাওয়া করে না আর কি যেনো চিন্তা করে সব সময় আমি নিজেই জানি না সেই জন‍্য আজকে তোর ভাবি অসুস্থ।

আরো অবাক হলাম আমার স্বামী এতো সুন্দর ভাবে মিথ‍্যাও বলতে পারে।দোষ করলো কে শেষে দোষি হলাম আমি।সত‍্যিটা বললে কি সমস‍্যা ছিলো?ওনাকে দেখে আমার ঘৃণা হচ্ছে।ওনার জন‍্য আর বিন্দুমাত্র ভালোবাসা আমার মনে নেই আছে শুধু ঘৃণা।

ভাবি তুমি কিন্তু এটা ঠিক করো নাই।তুমি এতো কিসের টেনশন করো আর ঠিক ভাবে খাওয়া করো না কেনো।

আচ্ছা তোমরা আমার অসুস্হ মেয়েটাকে এতো প্রশ্ন করতেছিস কেনো।ওকে কি আরো,শান্তনা দিবি তা না করে শুধু প্রশ্ন করতেছিস দুইজনাই ।

আচ্ছা মা আমার ভূল হয়েছে।ভাবি তোমার থেকেও ক্ষমা চাই।আর ভাইয়া তোর বউএর জন‍্য টেনশন করতে হবে না আমি যখন এসেছি তখন দুইদিনের ভিতরে ভাবিকে সুস্হ করে তুলবো।

আমার বোনটা দেখতেছি অনেক বড় হয়েছে। বড়ভাইয়ের দুঃখ বুঝতে শিখেছে আর তোর ভাবিকে সুস্হ করার জন‍্যই তো তোকে ফোন করে এখানে এনেছি।

হুম আমি তো বড় হয়েছি আরো ছোট আছি নাকি।

তাহলে তো আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে হয় যখন মেয়েই নিজেই বলে ও বড় হয়েছে।

মা তুমি কি যে বলো না?আমার লজ্জা করে না বুঝি।

এশার এমন কথা শুনে শত কষ্টের মাঝে হাসিটা চেপে রাখতে পারলাম না,শেষে হেসেই ফেললাম।আমার হাসা দেখে আমার শাশুড়ি মা আর আমার স্বামী দুইজনে হাসতে শুরু করলো ।লজ্জা নারীর ভুষণ।একটা ভালো মানুষ মধ‍্যে প্রথমতো তার লজ্জা থাকতে হবে।

ওরে আমার লজ্জা বতি মেয়ে।

আচ্ছা মা অনেক কথা বলেছো এখন একটু ভাইয়া আর ভাবিকে একা ছেড়ে দেও তাড়া একটু মনে কথা বলুক।

কিন্তু,

কোন কিন্তু নয় মা চলো,

শেষে এশা আমার শাশুড়ি মাকে জোড় করে কেবিন থেকে বাহিরে নিয়ে গেলো।এশা আর মা চলে যাওয়ার পরে আমি আমার চোখ দুটো বন্ধ করে চূপ করে সুয়ে আছি।ওনার সাথে কথা বলতে ঘৃণা লাগতেছে।

জান্নাতুন এখন কেমন লাগতেছে তোমার।

আমার এমন অবস্হা করে এখন বলতেছেন কেমন লাগতেছে।আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না,আপনাকে দেখলে এখন ঘৃণা হয় আমার। আপনি একটা পাষাণ মনের মানুষ যে কিনা মনে একটুও দয়া মায়া নাই।বাবা হয়ে নিজের সন্তানকে হত‍্যা করেছেন।আচ্ছা এতো করে বললাম আমাদের বাচ্চাটাকে নষ্ট করিয়েন না তবুও আমার কথা শুনলেন না।এই দুই বছরে আপনি না হয় আমাকে স্ত্রী হিসাবে মানেন নাই।আমি শুনেছিলাম যে একজন মানুষ তার সত্রুর সাথে একসাথে বাস করলে নাকি একসময় সত্রু থেকে বন্ধু হয়ে যায়।তাহলে আপনার সাথে তো দুইটা বছর এক ঘরে থেকেও কি একটু মায়া হলো না আপনার আমার জন‍্য? আজকে আপনাকে বললাম একদিন আসবে সেদিন শতো কষ্টে আপনি বাবা হতে পারবেন না।সেদিন শুধু বাবা ডাক শুনার জন‍্য ছটপট করবেন কিন্তু কখনো বাবা ডাক শুনতে পারবেন না।

আমি পাষাণ হাসালে তুমি।আমাকে শাষাণ বললে আমি পাষাণ ওকে।বাচ্চাটা নষ্ট করেছি শুধু তোমার জন‍্য কারন বাচ্চাটা প্রয়োজন না আমার,প্রয়োজন তোমার সেই রক্তে মাংসের শরীলটা।

আপনার এতো শরীলের নেশা।আপনাকে একদিন পস্তাতে হবে সেদিন কোন কূলে ঠাই পাবেন না।

সেদিন কখনো আসবে না।

#চলবে,,,, কী ?

অবহেলার সংসার পর্ব-০২

0

#অবহেলার সংসার
#Imran_khan
#পর্ব_০২

জান্নাতুন তুমি বাচ্চাটা abortion করো।গতরাতে যখন বললে তুমি মা হতে চলেছো আর আমি বাবা হবো তখন খুশি মনে হয়েছিলো কিন্তু পরে সারারাত ভেবে দেখলাম বাচ্চাটা এখন আমাদের দরকার নেই।বাচ্চাটা এখন না নেওয়ার প্রথম কারন হচ্ছে তোমার বয়স কম আর বাচ্চাটা এখন নিলে তোমার ক্ষতি হবে তাই এখন বাচ্চাটা না নেওয়াই ভালো।

এগুলো আপনি কি বলতেছেন আপনার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে নাকি ঘুম থেকে উঠে হ‍্যা?আমাদের এটা প্রথম সন্তান সেটা আপনি নষ্ট করতে বলতেছেন।সন্তান দেওয়ার মালিক হচ্ছেন আল্লাহ্ যখন দিয়েছে তখন আপনি নষ্ট করতে বলতেছেন কেনো।

আমার মাথা নষ্ট হয় নাই।আমি অনেক ভেবে ডিসিশন নিয়েছি এখন বাচ্চাটা না নেওয়ায় ভালো আমাদের জন‍্য।তাই আমি আজকে অফিসে যাবো না, সোজা তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো বাচ্চাটা abortion করার জন‍্য।

আপনি এতো পাষাণ হবেন কখনো ভাবতে পারি নাই।আপনি কি মানুষ,পিতা হওয়া সবার ভাগ‍্যে জুটে না? পৃথিবীতে কতো ছেলে -মেয়ে আছে বিয়ের পরে কখনো সন্তান জন্ম দিতে পারে না,বাবা-মা ডাক শুনতে পায় না। তারা কতো কান্দা কাটি করে আল্লাহ্ কাছে বাচ্চা চায় কিন্তু কখনো বাচ্চা জন্ম হয় না।আর আপনি বাবা হওয়ার কথা শুনেও বাচ্চাটা নষ্ট করতে বলতেছেন।আপনি তো বাবা নামে কলঙ্ক।

আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে বাচ্চা তুমি এখন নিতে পারবে না।আর এখন বাবা ডাক শুনার ইচ্ছা নাই আমার, যেমন আছি তেমনে ভালো আছি।

আপনার পা দুটো ধরি প্লিজ আপনি আমার বাচ্চাটাকে নষ্ট করবেন না।আল্লাহ্ এতো বড় পাপ কখনো সর্য‍্য করবে না।আল্লাহ্ যখন দিয়েছে তখন বাচ্চাটা পৃথিবীতে আনতে দিন।(আমার স্বামীর পা জরিয়ে ধরে বলতেছি )

আমি একবার বলেছি না,বাচ্চা এখন নিতে পারবে না তো পারবে না।এখন আমার পা ছাড়ো আমি ফ্রেস হতে বাথরুমে যাবো আর হ‍্যা তুমি দশটার দিকে রেডি থাকিও তোমাকে নিয়ে হাসপাতালে যেথে হবে।

আপনি আমাকে বলুন কেনো বাচ্চা নিবেন না। আপনার বাচ্চাটাই যদি সমস‍্যা করে তাহলে আমি এই বাড়ি আর আপনার থেকে অনেক দূরে চলে যাবো তাও আমি আমার বাচ্চা নষ্ট করতে দিবো না আপনাকে।

আমাকে ছেড়ে কই যাবি আমি তোকে ছেড়ে দেওয়ার জন‍্য বিয়ে করেছি কি? আমিও দেখবো কেমন করে তুই বাচ্চাটা জন্ম দেশ?

আহ্ আমাকে ছেড়ে দিন আমার লাগতেছি তো।(আমার চূলগুলো ওনার হাত দিয়ে টেনে ধরেছে )

এ তোকে কে অধিকার দিয়েছে আমার কথার উপরে কথা বলার?এতোক্ষন ভালো ব‍্যবহার দেখালাম সেটা বুঝলি না,তাহলে এখন দেখবি আমি রাগলে কি করতে পারি?

প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন আমি আর আপনার কথার উপরে কথা বলবো না।তাও আমাকে ছেড়ে দিন।

তোকে তো আর ছেড়ে দিবো না,আজকে দেখাবো এই ঈমান রাগলে কি করতে পারে?

এই কথা বলে দেখতেছি আমার স্বামী ওনার কোমর থেকে ব‍্যাল্ট খুলতেছে।ওনার কোমর থেকে ব‍্যাল্ট খুলা দেখে আমার জীবন প্রায় যায় যায় অবস্হা আজকে কেউ বাঁচাতে পারবে না আমাকে।বাসায় আমার শাশুড়ি,ননদী,শশুর আছে তাড়া কখনো ঈমানকে আটকাতে আসবে না,কারন সবাই আমার স্বামীকে ভয় পায়।

এবার দেখ কি অবস্থা করি তোর?

এই বলে শুরু হলো মারার অত‍্যাচার।এতো করে বললাম যে,আমাকে ক্ষমা করে দিন কিন্তু আমার কথা না শুনে শুধু মেরে চলতেছে আমাকে।এক সময় আমি মার সয‍‍্য করতে না পেরে জ্ঞান হারাই তারপর কিছু মনে নেই আমার।
আমার যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে আবিষ্কার করি একটা ব‍‍েডের উপরে।সারা শরীল ব‍্যথায় ভরে গেছে মনে হয়।আমি এখন কই এটা ভেবে পাচ্ছি না।সোয়া থেকে চোখ দুটো খুলে দেখি আমার শাশুড়ি আমার পাশে বসে আছে।

জান্নাতুন মা তোর জ্ঞান ফিরেছে আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ্ তোর জ্ঞান ফিরে দিয়েছে এটাই শুকরিয়া।তো মা এখন কেমন লাগতেছে তোর।

এখন ভালো লাগতে মা।আচ্ছা মা আমি এখন কই?

তুই এখন হাসপাতালে আছিস।কেনো মা?

হাসপাতালের কথা শুনে চোখ দিয়ে পানি ঝর ঝর করে পড়তেছে কারন এটা ভেবে যে আমি মা হয়ে আমার সন্তানকে বাঁচাতে পারলাম না।আল্লাহ্ আমাকে কখনো ক্ষমা করবে না।

জান্নাতুন মা তুই কান্না করতেছিস কেনো।তোর কি খারাপ লাগতেছে আমি কি ডাক্তার ডাকবো?ঈমান বাহিরে আছে,

আমি কথা বলার ভাষায় হারিয়ে ফেলেছি।তাও অনেক কষ্টে আমার শাশুড়ি মাকে বললাম,মা আমি ভালো আছি ডাক্তার ডাকার দরকার নাই।

তাহলে মা তুই কান্না করতেছিস কেনো?

মা,আমি আমার সন্তানকে বাঁচাতে পাড়ি নি।আমার সন্তান পৃথিবীতে আসার আগে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।

তোর সন্তান মানে, তুই এগুলো কি বলতেছি?

তারপর প্রথম থেকে সব খুলে বললাম আমার শাশুড়ি মাকে।

এতো কিছু হয়ে গেছে তুই আগে আমাকে বলবি না।আমি এই বিষয়ে ঈমানের সাথে পরে কথা বলবো।দিন দিন ছেলেটা আমার খারাপ হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু তুই শিউর হলি কেমন করে যে তোর বাচ্চা নষ্ট করা হয়েছে।

মা আপনার ছেলে আমাকে বাচ্চা নষ্ট করার জন‍্য হাসপাতালে নিয়ে আসতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি বাচ্চা নষ্ট করবো না দেখে আজকে আমার এই হাল।

জান্নাতুন মা তুই আগে আমাকে বলবি না তুই প্রেগন‍্যান্ট তাহলে আজকে তোর প্রথম সন্তানকে নষ্ট করতে পারতো না।আমার ছেলেটা এতো পাষাণ হবে কখনো ভাবতেই পাড়ি নাই।আমাকে ক্ষমা করে দেশ মা।

মা আমাকে আপনার ছেলে বলতে নিষেধ করেছিলো।

আচ্ছা মা শুন আমার কেমন সন্দেহ হচ্ছে তোর বাচ্চা নষ্ট করে নাই।আবার এটাও শিউর হওয়া যাবে না যে তোর বাচ্চা নষ্ট করতেও পাড়ে।কারন ঈমান যা বলে তাই করে।শুন আমি ডাক্তার এর থেকে শুনে আসতেছি আসলেই কি তোর বাচ্চা নষ্ট করেছে নাকি এখনো আছে।

ঠিক আছে মা আপনি প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি আসবেন।

ওকে মা।

তারপর আমার শাশুড়ি মা আমার কেবিন থেকে চলে গেলেন।আমার তো চোখের পানি আজকে কোন বাধা মানতেছেই না।চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়তেছে।আল্লাহ্ র কাছে প্রার্থনা করতেছি আল্লাহ্ আমার বাচ্চা যদি নষ্ট না করে।

একটু পরে আমার সন্দেহ টাই ঠিক হলো।প্রায় বিশ মিনিট পরে আমার শাশুড়ি মা মুখ কালো করে আমার কেবিনে ঢুকতেছে।শাশুড়ি মার মুখ কালো করে আসা দেখে আমার বুঝতে বাকি রইলো না আর তাও মাকে জিগ্যেসা করতেছি,

মা আপনি মুখ কালো করে আছেন কেনো।

এখন তোকে যা বলবো মা তা শুনে কষ্ট পাস না ওকে।

কেনো মা,

কারন তোর সন্তানকে নষ্ট করে দিয়েছে আমার পাষাণ ছেলে।ওর মনে একটুও কষ্ট হলো না বাচ্চাটা নষ্ট করতেছে।এমন দিন দেখতে হবে এমন এক ছেলেকে জন্ম দিয়ে।আমি দশমাস দশদিন পেটে রেখে এই জঘন‍্য নোংরা মনের ছেলেকে জন্মদিয়েছে ভাবতেই ঘ্রিণা হচ্ছে।জান্নাতুন মা আমাকে তুই ক্ষমা করে।

মা এখানে আপনার কোন দোষ নাই সব দোষ আমার।কপালে লেখাছিলো তাই হয়েছে।পোড়া কপালী হলে যা হয় মা।না পেয়েছি স্বামী সুখ, না পেরেছি সন্তানকে বাঁচাতে।সব দোষ আমার।

(☆পৃথিবীতে অনেক মেয়ে আছে বিয়ের পরে তাদের পরিবারের চাপে বা নিজের ইচ্ছা বিরুদ্ধে জোড় করে বাচ্চা নষ্ট করে দেওয়া হয়।প্রতিটা মেয়েই সন্তান জন্ম দেওয়ার সাত্বগ্রহণ করতে চায় ☆ )

#চলবে,,,, কী ?

অবহেলা সংসার পর্ব-০১

0

#অবহেলা সংসার
#Imran_khan
#সুচনা

জান্নাতুন যে , প্রেগন‍্যান্টে সেটা তার স্বামী জানে না!তবে ওনি জানবে কেমন করে, আজকে সকাল থেকে বমি বমি ভাব হচ্ছে,আবার কোন খাবার মুখে নিতে পারতেছি না,খাবার মুখে দিতেই বমি চলে আসতেছে। ।এগুলো তো একজন মেয়ে গর্ভধারণ হওয়ার লক্ষ‍্যন।আমার বুঝতে বাকি রইলো না,আমার কি হতে চলেছে ।তাবে শিউর হওয়ার জন‍্য বাজার থেকে প্রেগন‍্যান্সির কীট কিনে এনে বাথরুমে গিয়ে চেক করে দেখি আমার ধারনা ঠিক।আমি যে মা হতে চলেছি এটা সত‍্য।আমি প্রেগন‍্যান্ট হওয়ার পরেও খুশি হতে পারতেছি না।কারন আমি যেখানে স্ত্রীর অধিকার পাইনা,স্বামী স্ত্রী হিসাবে মানে না,যদি আমার স্বামী আমার প্রেগন‍্যান্সির বেপারে জানতে পারে তাহলে কখনো আমার বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনতে দিবে না। কারন আমি প্রেগন‍্যান্ট হলে ওনার প্রতিরাতের চাহিদা মেটাবে কে?আমি প্রেগন‍্যান্ট হলে আমাকে তো আর ভোগ করতে পারবে না।আমার বিয়ে হওয়া প্রায় দুইটি বছর পার হয়ে গেছে।গরিব ঘরের মেয়ে আমি।বাবা আমার সুখের জন‍্য এক বড়লোক পরিবারে ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছে।ভেবেছিলো বড়লোক ঘরে বিয়ে হয়ে একটু সুখ পাবো কিন্তু আমার স্বামী বাসর রাতে জানিয়ে দিয়েছে আমার মতো গরিব ঘরের মেয়েকে বউ হিসাবে মেনে নিতে পারবে না। বলেছে ওনি আমাকে কখনো স্বামীর অধিকার দিবে না।কিন্তু বাসর রাতে স্ত্রী হিসাবে না মানলেও পরের দিন থেকে শুরু হয় ওনার শারীরিক অত‍্যাচার।প্রতিরাতে আমার শরীল টা কুকুরের মতো ছিরে ছিরে খায়।কখনো আমাকে জিগ্যেসা করে না, আমার কষ্ট হয় কি না?আমার কষ্ট হলেও ওনার কি সমস‍্যা তো ওনার নাই , আছে শুধু ভোগ করা ইচ্ছা?

আমার নাম নূরে জান্নাতুন।আমি একজন গরীব ঘরের সন্তান।আমার বর্তমান বয়স 19।সাধানত গ্রামের মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে থাকে।তেমনি আমার বাবা আমার 17 বছর বয়সে বিয়ে দেয়।অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার কারনে আমার স্বামী চাহিদা মেটাতে গিয়ে অনেক যন্ত্রণা সহ‍্য করতে হয় আমার।এখন প্রায় রাত 9:00 টা বাজতে চলেছে।আমার স্বামী আসার সময় হয়েছে।প্রতিদিন এই টাইমে অফিস থেকে বাসায় ফিরে।তাই আমি রুমে না থেকে নিচে এসেছে দেখি এসেছে।ওনাকে দেখে সোজা ওনার সামনে এসে অফিসের বেগটা ওনার থেকে আমি আমার কাছে নিলাম।
ও আপনাদের তো আমার স্বামীর পরিচয় দেওয়া হয় নাই আমার স্বামীর নাম হচ্ছে ঈমান হক।বাবা-মার একমাত্র ছেলে।দেখতে একদশ হিন্দি সিনেমার নায়কদের মতো।মুখটা উজ্জ্বল ফর্সা,মুখে চাপ দাড়ি হাইড 5.8 ফুট হবে,ওজন প্রায় 60,62 হবে।আর ওনার বয়স প্রায় 24,25 হবে।আপাততো এতটুকুই জেনে নেন পরে না হয় আরো পরিচয় পাবেন গল্পে।

আমি রুমে থেকে ফ্রেস হয়ে আসতেছি,তুমি খাবার রেড়ি রাখো।ফ্রেস হয়ে এসে যদি খাবার পাই!

ওকে আপনি ফ্রেস হয়ে আসুন আমি খাবার বাড়তেছি।

ওকে।

ওনি ফ্রেস হতে রুমে চলে গেলেন।আমি অফিসের ব‍েগটা সোফার একসাইটে রেখে খাবার টেবিলে সাজাতে যাচ্ছি।যদি ওনি এসে দেখে খাবার টেবিলে রেডি নেই তাহলে আমাকে আস্ত রাখবে না।এই কথা বললাম কারন ওনি কখনো আমাকে ভালোবাসার নজরে দেখে নাই।একটু ভূল করলেই রাগ দেখাবে।আমি শুধু ভয়ে ভয়ে থাকি কখন ভূল করি আর কখন ঝাড়ি দেয়।সারাদিনে একবারো আমার খবর নিবে না ওনি।শুধু সকালে অফিসে যাওয়ার সময় দুই একটা কথা বলবে আর অফিস থেকে রাতে যখন বাসায় আসবে।সারাদিন খেয়েছি কি না?ওনি এগুলো জিগ্যাসা করবে কেনো কখনো তো স্ত্রী হিসাবে মানেই না।মাঝে মাঝে মনে হয় এই সব ফেলে চলে যাই দুই চোখ যেখানে যায় কিন্তু পরে ভেবে উদাস হই কারন কই যাবো।বাবা বাসায় যাবো ওরার তো ঠিকভাবে তিনবেলা পেটে খাবার দিতে পারে না, আবার আমি নতুন করে আপদ খাড়া হবো।সমাজের লোকেরাও বলবে স্বামী বাড়ি রেখে মুখ পুড়ি বাবার বাড়িতে এসেছে।মা আমাকে বিয়ের সময় বলেছে যে বাঙ্গালী মেয়েদের জীবনে একবারে বিয়ে হয়।স্বামী যতোই খারাপ হোক না কেনো কখনো সংসার ছেড়ে যাবি না।এই ভেবে আজও পড়ে আছি স্বামীর শত অবহেলার সংসারে।

জান্নাতুন খাবার রেডি হয়েছে।

হুম আপনি আসুন খাবার রেডি।(ওনি সিরি দিয়ে নামতে নামতে বলতেছে।)
তারপর ওনি এসে একটা চেয়ারে এসে বসলেন।আর আমি খাবারের প্লেটে খাবার বেড়ে দিচ্ছি আর ওনি খাচ্ছে।একসময় ওনার খাওয়া শেষ হলো।আমাকে একবারো বললো না যে জান্নাতুন তুমি খাবার খেয়েছো কি?

জান্নাতুন তুমি,

হুম বলেন (এবার মনে হয় আমাকে খাবার কথা জিগ‍্যাসা করবে কিন্তু না এবারো বললো না )

তাড়াতাড়ি রুমে আসো।

এবার আর বুঝতে বাকি রইলো না কেনো আমাকে রুমে ডাকতেছে।প্রতিদিনের রুটিন আমাকে রুমে ডাকবেই।আমিও এক হতভাগা নারী কোন প্রতিবাদ করতে পাড়ি না।

কি হলো তাড়াতাড়ি আসো রুমে?

হুম যাচ্ছি আপনি রুমে যান আমি প্লেট গুলো গুছায় রেখে যাচ্ছি।

ওকে একটু তাড়াতাড়ি এসো।

তারপর ওনি চলে গেলেন সোজা ওনার রুমে।আমার এখন তো ভয়ে শেষ কারন রুমে গেলে আমারে ক্ষতি।আবার রুমে না গেলেও কপালে দুঃখ।যদি রুমে যাই প্রথমে বলবে সুয়ে পড়ো তারপর শুরু হবে ওনার শারীরিক অত‍্যাচার।কিন্তু একটা মেয়ে প্রেগন‍‍্যান্ট হওয়ার পরে শারীরিক সম্পর্ক করতে পারবে না কারন মা -সন্তান দুইজনের সমস‍্যা হবে।তাহলে এখন আমি কি বলে ওনাকে মেনেজ করবো?আজকে না হয় মেনেজ করতে পারবো কিন্তু তারপরের দিন কি হবে,সেদিন তো আর আমাকে ছেড়ে দিবে না?আজকে সত‍্যটা জানাতেই হবে ওনাকে কি কপালে আছে সেটা আল্লাহ্ ভালো জানে?
এগুলো ভাবতেই প্লেটগুলো গুছানো প্রায় শেষ।তাই এখন রুমে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি যতো হাটতেছি ততো ভয় বৃদ্ধি হচ্ছে ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।আজকে মনে হয় আমার সন্তানকে বাচাতে পারবো না।পেটে হাত দিয়ে বলতেছি।শেষে রুমের সামনে আসলাম রুমের দরজা আগে থেকে খোলা ছিলো তাই ধীরে ধীরে রুমের ভিতরে যাচ্ছি মাথা নিচ করে।

তোমার আসতে এতো দেড়ি হলো কেনো।তোমাকে না বললাম তাড়াতাড়ি আসতে।

আসলে হয়েছে কি প্লেটগুলো গোছাতে একটু দেড়ি হয়ে গেলো?

ওকে তাড়াতাড়ি বিছানায় এসে সুয়ে পড়ো।

এতোক্ষন ধরে যেটা ভয় পেয়েছিলাম তাই হতে চলতেছে।এখন আমার পেটের সন্তানকে বাঁচাবো কেমন করে।

কি হলো ওখানে দাড়িয়ে আছো কেনো তোমাকে না বললাম সুয়ে পড়তে?

আসলে হয়েছে কি আমি না ?

আজকে কি পিরিয়ড হয়েছে এটাই তো কোন সমস‍্যা নাই আগেও হয়েছে এমন আজকে কোন ব‍্যতিক্রম নয়।তুমি তাড়াতাড়ি এসো তো,

আসলে ইনি কি মানুষ নাকি পশু?এটা সত‍্য যে আমার পিরিয়ডের দিন গুলোও ছেড়ে দেয় নাই আমাকে।ওদিনো আমাকে দিয়ে তার চাহিদা মিটিয়েছে।আমাদের নবীজি (সা:) বলেছে যে,স্ত্রীর পিরিয়ডের সময় স্ত্রীর সাথে মিলন করা হারাম এটা থেকে স্বামীকে বিরত থাকতে বলেছে কিন্তু আমার স্বামী সেটাও মানে না।কতোদিন বাধা দিয়েছি কিন্তু কোন কাজ হয় না শেষে নিজেকে হার মেনে নিয়ে সপে দিতে হয় নিজের শরীলটা।কিন্তু আজকে পিরিয়ড না আমি মা হতে চলেছি,আমি প্রেগন‍্যান্ট এই অবস্হায় ওগুলো কখনো করা যাবে না।আজকে যে করে হোক বাধা দিতে হবে কিন্তু কিভাবে?

বিছানায় কি আসবে নাকি আমি উঠবো?

এখানে আর দাড়িয়ে থাকা যাবে না বেশি রেগে গেলে এর বিপরীত হতেও পারে।তাই ভয়ে ভয়ে বিছানায় গিয়ে বসলাম আর মনে মনে আল্লাহ্ কে ডাকতেছি।বিছানায় বসতেই শুরু হয়ে গেলো ওনার নোংরা ভালোবাসা।নোংরা ভালোবাসা বললেও ভূল হবে কারন ওনার স্ত্রী আমি।বিয়ের পরে স্ত্রী হচ্ছে তার হালাল জিনিস।কিন্তু সব সময় যে করবে ওটা না লিমিটেড থাকতে হবে।বিছানায় বসে প্রথমে ওনি আমার গলায় কিচ করতে শুরু করলো তারপর কিছুক্ষন পরে আমার ঠোঁট দুইটো দকল করে নিলো।পরে দেখতেছি ওনি গতি বৃদ্ধি হচ্ছে ওনার লক্ষ‍্য দেখতেছি অন‍্যদিকে যাচ্ছে শেষে বাধা দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় পাচ্ছি না।
প্লিজ এগুলো আর আমার দাড়ায় হবে না,আমি প্রেগন‍্যান্ট আমি আর ওগুলো করতে পারবো না।(বিছানা থেকে সোজা নেমে দাড়িয়ে এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে দিয়েছি )

তুমি প্রেগন‍্যান্ট মানে কবে থেকে আগে কেনো আমাকে বলো নাই।

আমি আজকেই বুঝতে পেরেছি আমি মা হতে চলেছি।

এটা আমাকে আগে বলবে না আমি কি করতে চলেছিলাম?আমাদের বাচ্চার ক্ষতি হতো না।আমাকে আগে বলবে না যে আমি বাবা হতে চলেছি।

আপনি সত‍্যি খুশি হয়েছেন।

হুম খুশি হবো না আমি বাবা ডাক শুনতে পারবো আর তুমি মা হবে।

এই কথা শুনে আমিও খুশি হলাম।যে তাহলে আমার সন্তানকে পৃথিবীতে জন্ম দিতে পারবো।পেটে হাতদিয়ে ভাবতেছি যে দেখ বাবা তুই পেটে আসাতেই তোর বাবা আমাকে মেনে নিয়েছে, তুই আসাতে তোর খচা বাবা অনেক খুশি হয়েছে।আমি খুশির ঠেলায় সোজা গিয়ে ওনাকে জরিয়ে ধরি।আজকে অনেক খুশি লাগতেছে।আসলেই কি আমার কপালে সুখ জিনিসটা লেখা আছে নাকি এটা ক্ষনিকের সুখ হঠাৎ মনকে প্রশ্ন করলাম।

এদিকে জান্নাতুন এর স্বামী ও কি খুশি হয়েছে জান্নাতুন প্রেগন‍্যান্ট হওয়াতে নাকি খুশি হওয়ার নাটক করতেছে।মুখে এক কথা বলতেছে নাকি মনের ভিতরে লুকিয়ে রেখেছে কিছু কথা। কি হয় পরের পর্বে দেখা যাবে?

#চলবে,,,,??

তোমাকে বলার ছিল পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0

তোমাকে বলার ছিল ……..
শেষ পর্ব
তৃণার মাথা ঝিমঝিম করছে I পা টলছে I ওর বিশ্বাস হচ্ছে না সত্যি সত্যি সুজন সামনে দাঁড়িয়ে আছে I সুজন খুব স্বাভাবিক কন্ঠে বলল

– কেমন আছো তৃণা ?
তৃণার গলা দিয়ে স্বর বেরোচ্ছে না I চোখে জল এসে যাচ্ছে I সুজন কে এ অবস্থায় দেখবে কোনদিন কল্পনাও করেনি ও I সেই পরিপাটি কিশোর সুলভ ছেলেটা আর নেই I চোখ বসে গেছে , উস্কোখুস্কো চুল , মুখ ভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি I কেমন তামাটে হয়ে গেছে গায়ের রং I যেন তিন মাসে বয়স বেড়ে গেছে অনেকটা I তৃণা কোনমতে বলল

– এ কি অবস্থা হয়েছে তোমার ?

– কেন ? বেঁচে তো আছি এখনো

তৃণা নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলো না I দুইহাতে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়ল I কি অদ্ভুত এতদিন তো এই অবস্থা হয়নি I কেন ওর সামনে আসলে এই অবস্থা হয় I তৃণা কিছুতেই নিজেকে আড়াল করতে পারেনা I সুজন এগিয়ে এসে তৃণাকে কাছে টেনে নিল তারপর বলল I

– এত কষ্ট পাচ্ছিলে তাহলে আমাকে ছেড়ে গেলে কেন ?
– তোমাকে এইভাবে দেখব বলে আমি চলে গিয়েছিলাম ?
– একবার আমার সঙ্গে কথা বলতে পারতে না ? এটুকু ভরসা করতে পারোনি আমার উপর ?
– তাই বলে তুমি আমাকে এইভাবে শাস্তি দেবে ? আমি তো …….

তৃণা কথা শেষ করতে পারলো না ওর কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে এল I সুজন দুই হাতে ওর মুখটা তুলে ধরে বললো
– কি বলেছিলাম মনে আছে ?
– কি ?
– তুমি কাঁদলে গভীর সুখে
এক নিমেষে সবটুকু জল শুষে নেব

তারপর সত্যি সত্যি ওর গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে সবটা জল শুষে নিল I তৃণা কিছুক্ষণ হতবিহবল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল তারপর সুজনের বুকের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে বলল
– আমি আর কোনদিন ও তোমাকে ছেড়ে দূরে যাব না I কোনদিনও না I

ওয়াও !! হাউ রোমান্টিক !!

তৃণা এবং সুজন দুজনেই চমকে দরজার দিকে তাকালো I

– তুই এখানে কি করছিস হিয়া ?
– কি আবার করব I একটু দেখতে হবেনা বিয়ের পর কি করে I আমারও তো সামনে বিয়ে I
সুজন বিরক্ত গলায় বলল

– তোমার কোন প্রাইভেসি সেন্স নেই হিয়া
– আরে রাখো তোমার প্রাইভেসি সেন্স I নিজের বউকে তো সামলে রাখতে পারো না I শুধু অন্য লোকের সঙ্গে যত হম্বিতম্বি I বলেছিলাম ছাগলা দাড়ি কাটতে তো আমার সঙ্গে কি চোটপাট I এখন এই দাড়ি-মোচ নিয়ে বউকে চুমু খাবে কি করে ?
– ডিসকাস্টিং I শুধু প্রাইভেসি না তোমার কোন ল্যাংগুয়েজ সেন্স ও নেই
বলতে বলতে সুজন দরজার দিকে এগিয়ে গেল I
– আরে যাও যাও I এখন বউকে পেয়েছো এখন আর ছাদে আসবে কেন ?,এখনতো চিপার মধ্যে ঢোকার জন্য ব্যস্ত হয়ে যাবে I
– রেডিকুলাস I কোন লিমিট নেই কথার I এখানে আর থাকাই যাবেনা I বলতে বলতে সুজন সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল I

তৃণা দৌড়ে এসে হিয়াকে জড়িয়ে ধরল I তারপর বলল
– থ্যাঙ্ক ইউ I আমি জানি ওকে তুই ডেকেছিস
– হ্যাঁ আমি ডেকেছি I তুই আমাকে বকা দে , মার যা ইচ্ছা তাই কর I কিন্তু তোদেরকে এভাবে আমি দেখতে পারবোনা I
তৃণা চোখ মুছে বলল
– তুই এই ভাবে না ডাকলে হয়তো ওর সঙ্গে আমার কোনদিনও দেখা হতো না I
– নিচে আমার ঘরটা তোদের জন্য রেডি করে রেখেছি I তোর ছাগলা দাড়ি কে নিয়ে আজকে ওখানেই থাকবি I খবরদার ছাদে আসবিনা I একটু পরে রাতিন আসছে I আমরা সারারাত ছাদে বসে গল্প করব I

তৃণা দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল I সুজন রাগে গজ গজ করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে শেষ ধাপে হোঁচট খেলো I দরজায় কোনায় কপাল লেগে কেটে গেল অনেকটা I তৃণা দৌড়ে এসে বলল
-কি হয়েছে দেখি
– কিছু হয়নি
– কেটে গেছে তো দাঁড়াও আমি দেখছি
ওরা নিজেদের মধ্যে এতটাই ব্যস্ত ছিল যে ঘরের মধ্যে থেকে যে কয়েক জোড়া চোখ অপলক তাকিয়ে আছে সেদিকে লক্ষ্যই করেনি I তৃণা হঠাৎই লক্ষ্য করে লজ্জা পেয়ে সরে গেল
সোনিয়া রহমান এগিয়ে এলেন তারপর তৃণার চিবুক ধরে বললেন
– আমি সুজনের মা I শুধু সুজনের না এখন থেকে তোমার ও মা I মায়ের উপর এই ভাবে রাগ করে চলে যেতে হয় I আমার ভুলটা ভেঙে দেয়া যেত না ?
তৃণার চোখে জল এসে গেল I কিছু বলতে পারলো নাI I মাথা নিচু করে রইল I সোনিয়া ওকে বুকের মধ্যে টেনে নিলেন I তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন
– বাবা মা কখনো ছেলে মেয়েদের খারাপ চায় ? আমরা তো শুধু চেয়েছি তোমরা ভালো থাকো I দেখতো কি অবস্থা হয়েছে ওর তোমাকে ছাড়া I তৃণা মাথা নিচু করেই বললো
– আর এরকম হবে না I
সুলতানা চায়ের ট্রে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হতে হতে বললেন
– সব ওই মামুন বদমাইশটার দোষ I শয়তানটাকে আমি হাতের কাছে পেলে জুতিয়ে লম্বা করে দিতাম I
রাতিন আর ওর মা তানিয়া পাশের সোফায় বসে ছিল I রাতিন চায়ের কাপ নিতে নিতে বলল
– এটা করলে অবশ্য আন্টি , মামুন খুশিই হত I ওর যা হাইট তাতে ভালোই হতো , কি বলেন ?
সবাই হেসে ফেললো I হঠাৎ করেই পরিবেশটা কেমন হালকা হয়ে গেল I সুলতানা চা সমুচা মিষ্টি টেবিলে রাখতে রাখতে বললেন
– কি হলো রাতিন তুমি কিছু নিচ্ছোনা কেন ?
– আন্টি আমি ছাদে যাচ্ছি I হিয়া আমার জন্য অপেক্ষা করছে I
তানিয়া কিছু বলতে গেলে রাতিন ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল
– মা ড্রাইভার তো আছে তুমি বাড়ি যেতে চাইলে চলে যাও I আমরা আজকে সারারাত গল্প করবো I
রাতিন আর দাঁড়ালো না ছাদের দিকে চলে গেল I তানিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুলতানা কে বললেন
– ছেলেমেয়েরা যা শুরু করেছে ভাবি তিন মাস অপেক্ষা করা যাবে না I আপনি ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন আমি ও ওর বাবার সঙ্গে কথা বলব I সামনের সপ্তাহে বিয়েটা পরিয়ে ফেলি I পরে না হয় অনুষ্ঠান করা যাবে I
সুলতানা বললেন আপনি যেটা ভাল বুঝেন I আমাদের কোনো আপত্তি নেই I
সোনিয়া হাসতে হাসতে বললেন
– আমার তো মনে হয় ওরা এটাই চাচ্ছে I তাই এরকম শুরু করেছে I
-আমারও তাই মনে হচ্ছে I দাঁড়ান ভাবি আজ ওদেরকে একটু মজা দেখাই I সুলতানা আরো কিছু বলতে গিয়ে হঠাৎ থেমে গিয়ে বললেন
– তোমরা দুজন ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছো I খাবার নিয়ে নাও I তৃণা সুজন দুপুরে খায়নি I ওকে খাবার বেড়ে দে I রান্নাঘরে সব রাখা আছে I
– আচ্ছা
সোনিয়া রহমান মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন I তৃণা সুজনকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে I শসা কেটে দিচ্ছে I চিংড়ি মাছের বাটি সরিয়ে রাখছে I প্লেটে কাবাব তুলে দিচ্ছে I কাবাব সুজনের খুব প্রিয় Iএত যত্ন করে তো মনে হয় তিনি নিজেও বহু বছর ছেলেকে খাওয়াননি I সোনিয়ার চোখে পানি এসে গেল I
***************
হিয়া আর রাতিন গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল ছাদের রেলিং ধরে I হঠাৎ শব্দ শুনে পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখল সোনিয়া, সুলতানা আর তানিয়া ছাদে উঠে এসেছেন I হাতে চায়ের ফ্লাস্ক বক্সে খাবার I হিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
– তোমরা এখানে কি করছো ?
– কি আবার করব ? আমাদের ছাদে আসতে ইচ্ছা করে না ? আমরা ও আজ সারারাত এখানে বসে গল্প করব I
সুলতানা বললেন
– তোরা তোদের মতন ওখানে থাক I আমরা বিরক্ত করবো না I চা সিঙ্গারা মিষ্টি সবই আছে খেতে মন চাইলে নিয়ে নিস
হিয়া মহাবিরক্ত হয়ে রাতিনের কানে কানে বলল
– ধুর I এদেরকে শিক্ষা দিতে গিয়ে তো এখন সারারাত বসে মশার কামড় খেতে হবে I
– চিন্তা করোনা I কাজ হয়ে গেছে I আমি ছাদে ওঠার আগে শুনেছি I ওরা নেক্সট উইকে বিয়ের ডেট ফিক্স করছে
– ইয়াহু
তিন ভদ্রমহিলা চমকে তাকালেন I

*************
হিয়া দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বালির উপর ধপ করে বসে পড়ল সুজনের পাশে I সুজন আর তৃণা পাশাপাশি বসে ছিল I কাল রাতেই ওরা সেন্টমার্টিনে এসে পৌঁছেছে I রাতিন আর হিয়ার বিয়ে উপলক্ষে এই হলিডে প্যাকেজ টা ওদের চারজন কে উপহার দিয়েছেন সোনিয়া রহমান I
সুজন হাসতে হাসতে বলল
– কি হয়েছে এরকম দৌড়াচ্ছ কেন ? মনে হচ্ছে পাগলা কুকুর তাড়া করেছে তোমাকে
হিয়া গলা নামিয়ে বলল
– তোমাকে একটা কথা বলব বলে এলাম I এখন তো আমাকে চুমু খেতে সমস্যা নেই তাই না I এখন তো আমি সম্পর্কে তোমার শালিকা I
সুজন ভয় পেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে অন্য পাশে গিয়ে তৃণার পাশে বসতে বসতে বলল
– এই মেয়ে অত্যন্ত ডেঞ্জারাস I এর কথার কোনো লাইসেন্স নেই
তৃণা হাসতে হাসতে বলল
– তুমি ওকে এত ভয় পাও কেন ?
ততক্ষনে রাতিন ডাব নিয়ে চলে এসেছে I হিয়ার পাশে বসতে বসতে বলল
– কে কাকে ভয় পায় ?
– তোমার বউ অত্যন্ত ডেঞ্জারাস মহিলা
– সে আমি জানি I তাই তো ওকে এত ভালবাসি I তবে আমি সহজে ভয় পাওয়ার লোক নই
হিয়া ওদের দুজনকে থামিয়ে দিয়ে বলল
– আচ্ছা দুটো নিউজ আছে I একটা ভালো একটা খারাপ কোনটা আগে শুনবে বলো I
রাতিন বলল
– গুড নাইট
হিয়া মিষ্টি করে হেসে বলল
– গুডনিউজ হলো আমি প্রেগনেন্ট
রাতিনের চোয়াল ঝুলে পড়লো I ও ভয় পাওয়া গলায় বলল
– বেবি , কিন্তু আমরা তো…….. I মানে বলছিলাম যে … I আর ইউ শিওর ?
তৃণা হাসতে হাসতে বলল
– এবার ব্যাড নিউজটা বল
হিয়া হতাশ ভঙ্গিতে বলল
– আমার কপালে সব ভীতুর ডিম গুলোই জোটে I দেখ একটু আগে বলছিলো ভয় পায় না I কেমন ভয় দেখালাম I
সুজন অবাক হয়ে বলল
– তুমি মিথ্যা কথা বলছিলে ?
– তো তোমার কি ধারনা ছাগলা দাড়ি বিয়ের তিন দিনের মাথায় আমি প্রেগনেন্ট হয়ে গেছি ?
– এই তুমি আমাকে এই নামে ডাকবে না
– একশো বার ডাকবো I
সুজন উঠে দাঁড়িয়ে বলল
– তোমার সঙ্গে কথাই বলা উচিত না I তৃণা চলোতো আমরা ওদিকটায় যাই
– যাও যাও I বউ নিয়ে কেন ঝোপের আড়ালে ঢুকতে চাইছ মনে হয় আমি বুঝিনা I এখানে কিছু করলেও আমরা কিছু মনে করবোনা
– রেডিকুলাস I তুমি মুখটা একটু বন্ধ রাখতে পারো না
– না পারি না
তৃণা ওদের থামিয়ে দিয়ে বলল
– আচ্ছা তুমি ওর কথায় এত রেগে যাও কেন ? ও তোমাকে রাগিয়ে মজা পায় বোঝনা ? চলো আমরা ওদিকটায় যাই I
তৃণা সুজনের হাত ধরে হাটতে হাটতে বলল
একটা কবিতা শুনবে ?
আমি তোমাকে ঠিক এটাই বলতে চাইছিলাম
হাঁটতে হাঁটতে ওরা তখন অনেকটা দূরে চলে এসেছে I এদিকটা বেশ নির্জন I একপাশে স্বচ্ছ জলরাশি আর অন্যপাশে ঝাউবন I তৃণা শুরু করলো

ধরো কাল তোমার পরীক্ষা
রাত জেগে পড়ার টেবিলে বসে আছো
ঘুম আসছে না তোমার
হঠাৎ করে ভয়ার্ত কন্ঠে উঠে আমি বললাম,
ভালোবাসো?
তুমি কি রাগ করবে?
নাকি উঠে এসে জড়িয়ে ধরে বলবে
ভালোবাসি ভালোবাসি

ধরো ক্লান্ত তুমি, অফিস থেকে সবে ফিরেছ
ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত, পিরীত
খাবার টেবিলে কিছু তৈরী নেই
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ঘর্মাক্ত আমি
তোমার হাত ধরে যদি বলি, ভালোবাসো?
তুমি কি বিরক্ত হবে?
নাকি আমার হাতে আরেকটু চাপ দিয়ে বলবে
ভালোবাসি ভালোবাসি

ধরো দু’জনে শুয়ে আছি পাশাপাশি
সবেমাত্র ঘুমিয়েছ তুমি
দুঃস্বপ্ন দেখে আমি জেগে উঠলাম
শশব্যস্ত হয়ে তোমাকে ডাক দিয়ে যদি বলি,
ভালোবাসো?
তুমি কি পাশ ফিরে শুয়ে থাকবে?
নাকি হেসে উঠে বলবে
ভালোবাসি ভালোবাসি

ধরো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি দু’জনে
মাথার ওপর তপ্ত রোদ, বাহন পাওয়া যাচ্ছে না
এমন সময় হঠাৎ দাঁড়িয়ে পথরোধ করে যদি বলি, ভালোবাসো?
তুমি কি হাত সরিয়ে দেবে?
নাকি রাস্তার সবার দিকে তাকিয়ে
আমার কাঁধে হাত দিয়ে বলবে
ভালোবাসি ভালোবাসি

ধরো দূরে কোথাও যাচ্ছ তুমি
দেরি হয়ে যাচ্ছে, বেরোতে যাবে
হঠাৎ বাধা দিয়ে বললাম, ভালোবাসো?
কটাক্ষ করবে?
নাকি স্যুটকেস ফেলে, চুলে হাত বুলোতে বুলোতে
বলবে, ভালোবাসি ভালোবাসি

ধরো প্রচন্ড ঝড়
উড়ে গেছে ঘরবাড়ি
আশ্রয় নেই বিধাতার দান এই পৃথিবীতে
বাস করছি দুজনে, চিন্তিত তুমি
এমন সময় তোমার বুকে মাথা রেখে
যদি বলি, ভালোবাসো?
তুমি কি সরিয়ে দেবে?
নাকি মাথায় হাত দিয়ে বলবে
ভালোবাসি ভালোবাসি

সুজন হঠাৎ করেই তৃণাকে থামিয়ে দিয়ে দুই হাতে ওকে কাছে টেনে নিয়ে বলল
ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি
সমাপ্ত
তোমাকে বলার ছিল ……..
শেষ পর্ব
লেখনীতে
অনিমা হাসান
আজকের পর্বে যে কবিতাটা দেয়া হয়েছে তার নাম ভালোবাসি ভালোবাসি লিখেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় I

তোমাকে বলার ছিল পর্ব-১৯

0

তোমাকে বলার ছিল….
উনবিংশ পর্ব

তৃণার টাকা-পয়সার খুব টানাটানি চলছে I মাসের 5 তারিখ হয়ে গেছে অথচ আন্টি এখনো টিউশনির টাকাটা বিকাশ করেন নি I মোটামুটি এই টাকা দিয়েই চলতে হয় ওকে I দুদিন হয়ে গেছে ফ্লেক্সিলোড করিয়েছে ক্যান্টিন থেকে অথচ এখনও সেই টাকাটা শোধ করা হয়নি I বলেছিল পরদিনই দিয়ে দেবে I ভীষণ লজ্জা করছে এখন I তপতীর কাছ থেকে 200 টাকা ধার নিয়ে তৃণা ডিপার্টমেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা হলো I
– আরে তৃণা I ডিপার্টমেন্টে যাচ্ছ নাকি ? রিক্সায় উঠে এসো I
সকাল সকাল ইরাজ কে দেখে তৃণার মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল I ও বলল
– না আমি হেঁটে যাবো I আপনি চলে যান I
রিকশাভাড়া মিটিয়ে দিয়ে ইরাজ তৃণার পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো I তৃণা পাশ ফিরে তাকিয়ে বলল
– সমস্যা কি আপনার ?
– সমস্যা আমার না সমস্যা তোমার I তোমার উপকার করতে গেলে তুমি অযথা ভাব দেখাও
– আমি আপনাকে বলেছি আমার উপকার করতে ?
-ইরাজ এমনি মানুষের উপকার করে কাউকে বলা লাগে না I
তৃণা জবাব দিল না I লম্বা লম্বা পা ফেলে হাঁটতে লাগলো I ইরাজ কাছাকাছি এসে বলল
– দৌড়াচ্ছ কেন ? যাই হোক ঢাকা থেকে তোমার এক্স এসেছিল I তোমার খোঁজ করছিল
– কে এসেছিল ?!!!
– তোমার এক্স-বয়ফ্রেন্ড I আমার কাছে তোমার ফোন নাম্বার চাইছিল I আমি বলেছি যে তুমি আর হলে থাকো না I তোমার কেমন উপকার করলাম বল I এজন্য অন্তত একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য আমার I

তৃণার মাথা কাজ করছে না I এই ছেলে কি বলছে এসব উল্টাপাল্টা I কে এসেছিল ? সুজন ? তারমানে ও জেনে গেছে তৃণা এখনো আছে I
– কি হতো ভাবছো ?
– কে এসেছিল বললেন ?
– তোমার এক্স-বয়ফ্রেন্ড I দাড়িটাড়ি রেখে তো একেবারে দেবদাস হয়ে গেছে
– ও আমার এক্স-বয়ফ্রেন্ড না
– তাহলে কি ?
– ও……
তৃণা হঠাৎ করে থেমে গেল I ওর মনে হলো এই ছেলেটা ইচ্ছা করে এসব বলে ওর কাছ থেকে কথা বার করতে চাইছে I
– আপনি ওকে বলছেন আমি আর হলে থাকি না ? আপনাকে মাতব্বরি করে এসব বলতে কে বলেছে ? নিজের কাজে কাজ রাখতে পারেন না আপনি ? শুধু অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামানো ? যত্তসব I
– আরে ! তোমার উপকার করলাম আর তুমি …
– অসংখ্য ধন্যবাদ I দয়া করে আর আমার উপকার করার চেষ্টা করবেন না I
তৃণা রাগে গজগজ করতে করতে এগিয়ে গেল I একবার ও পিছন ফিরে তাকালো না I

ক্যান্টিনে ঢুকে তৃণা একটু অস্বস্তি নিয়ে কাউন্টারে গিয়ে বলল
– মামা আপনার টাকাটা I সরি একটু দেরি হয়ে গেল
– আপনার টাকা তো দেওয়া হয়ে গেছে
– কে দিয়েছে ? তৃণা অবাক হয়ে জানতে চাইল
– ঢাকা থেকে আপনার একজন আত্মীয় এসেছিল I উনি নিয়ে গেছে I বাকি টাকা ফেরত ও নেয় নি I এই নেন বাকি 300 টাকা I
তৃণা টাকা হাতে বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইল I সুজন এখান পর্যন্ত এসেছিল I অথচ ওর সঙ্গে দেখা হলো না ওই ফালতু ছেলের জন্য I না জানি আর ও কি উল্টাপাল্টা বলেছে I ইচ্ছা করছে থাপ্পর মেরে ছেলেটার সবগুলো দাঁত ফেলে দিতে I তৃণা ডিপার্টমেন্টে না গিয়ে পুকুর পাড়ে চলে গেল I ক্লাস করতে ইচ্ছা করছে না I প্রচন্ড মন খারাপ লাগছে I এত কাছে এল অথচ একবার দেখা হলো না I খুব ইচ্ছা করছিল একবার ওকে দেখতে I হিয়া বলছিল ওর অবস্থা ভালো না I অনেক শুকিয়ে গেছে I এমনিতে আগেই খেতে ভুলে যেত আর এখন জানি কি করছে I বাসা ও নাকি ছেড়ে দিয়েছে I কিচ্ছু ভালো লাগছেনা I ইচ্ছা করছে খুব দূরে কোথাও চলে যেতে I কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছে I বিয়ের দিন সুজন বলেছিল
– চল আমরা কোথাও থেকে বেরিয়ে আসি I তোমার কি পছন্দ সমুদ্র না পাহাড় ?
– পাহাড়
– আশ্চর্য আমি ভেবেছিলাম তোমার সমুদ্র পছন্দ
– তোমার কি পছন্দ ? তৃণা জানতে চেয়েছিল
– আমার দুটোই ভালো লাগে I তুমি বলো কোথায় কোথায় যেতে চাও
– কোথাও না আমার এখানেই ভালো লাগছে
কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগে এখন সেই দিনটা I মনে হয় না সত্যি সত্যি এমন কিছু হয়েছিল I

সুজনের সঙ্গে একবার কথা বলা দরকার I ও যখন একবার এসেছে তখন আবারো আসতে পারে I সবচেয়ে বড় কথা ও এখান থেকে তৃণার ফোন নাম্বার নিয়ে গেছে I আশ্চর্য ফোন নাম্বার নিয়ে গেছে অথচ একবারও ফোন করলো না I

সারাদিন পুকুর ঘাটে বসে রইল তৃণা I বিকেল গড়িয়ে গেলে হাঁটতে-হাঁটতে হলে ফিরল I ততক্ষনে ডাইনিং বন্ধ হয়ে গেছে I খেতে ইচ্ছে ও করছিল না I তৃণা দীর্ঘ সময় নিয়ে গোসল করলো I অনেকক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল I রাত হয়ে গেছে I কয়টা বাজে দেখার জন্য ফোনটা বের করতেই তৃণা হতভম্ব হয়ে গেল I সুজন আজ ইমেইল করেনি ফোনে মেসেজ পাঠিয়েছে I এমনিতেই মনটা খারাপ ছিল সুজনের কবিতাটা পড়ে মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো I ও লিখেছে

বহুদিন ভালোবাসাহীন,
বহুদিন উথালপাথাল
বহুদিন কারো হাত পড়েনি কপালে
বহুদিন দুচোখের অশ্রু কেউ মোছায়নি আর;
বহুদিন দূর দ্বীপে বহুদিন একা নির্বাসনে
বহুদিন ভালোবাসাহীন, বহুদিন এলোমেলো।
বহুদিন বুকের ভেতরে এই খাঁ খাঁ গ্রীষ্মকাল
দীর্ঘ গুমোট
একবিন্দু জল কেউ দেয়নি সস্নেহে
বহুদিন কোনো হাত এই হাতে স্পর্শ করেনি,
বহুদিন শুষ্ক পড়ে আছে এই বুক।
বহুদিন ভালোবাসাহীন,
বহুদিন উথালপাথাল

তৃণা অনেকক্ষণ মন খারাপ করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল I তারপর ফোনটা বের করে সুজনকে ফোন দিল I সুজন ফোন রিসিভ করে খুব স্বাভাবিক গলায় বলল
– কেমন আছো তৃণা ?
তৃণা একটু কেঁপে উঠলো I শীতে না অনেকদিন পর ওর কণ্ঠস্বর শুনলো সেজন্য ঠিক বুঝলো না ও I হঠাৎ করে খুব কান্না পেল I সুজনকে ছেড়ে আসার পর থেকে এতদিনে একবারের জন্য কাদেনি ও I কিন্তু আজ আর পারল না
– তুমি কাঁদছো তৃণা ?
তৃণা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো
– না
– তাইতো I আমার মত অপদার্থ লোকের জন্য কেন কাঁদবে তুমি ?
– চুপ করো I তুমি এখানে এসেছিল ?
– হ্যাঁ I তুমি কি সত্যি হল ছেড়ে দিয়েছো ?
– এখনো দেইনি I তবে তুমি যদি এভাবে এখানে আসো তাহলে ছেড়ে দিতে হবে
– হল ছেড়ে কোথায় উঠবে ?
– জানিনা I হয়তো ঢাকায় চলে যেতে হবে
– ঢাকায় থাকলে ক্লাস করবে কি করে ?
– এত কিছু ভাবি নি I করব যেভাবে সবাই করে
– না তুমি ওখানেই থাকো আমি আর আসব না I এখান থেকে বাসে যাতায়াত করো অনেক রিস্কি I এক্সিডেন্ট হতে পারে I
– তোমাকে কয়েকটা কথা বলব I রাখবে ?
– বল
– তুমি তোমার বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাও I এভাবে নিজের জীবনটা নষ্ট করো না I আমি জানি তুমি ভালো নেই I
– আমার সঙ্গে একবার দেখা করবে তৃণা ?
– কেন ?
– একবার তোমাকে দেখতে চাই
– না
– প্লিজ I শুধু একবার দেখতে চাই , একবার বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরতে চাই
– একবার ধরলে ছাড়তে পারবে ?
– না পারবো না
– আমিও পারবো না I তাই দেখা না করাই ভালো I
********
সোনিয়া রহমান দেশে ফিরেছেন I তার শরীর এবং মন দুটোই খারাপ I দুমাসের উপর হয়ে গেছে ছেলেটা একদিনের জন্যও তার সাথে কথা বলেনি I ফোন করলে ধরে না I মেসেজের আনসার ও দেয় না I অগত্যা দেশে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন I দেশে ফিরে সুজনের বাড়িতেই উঠেছেন তিনি I উত্তরার বাড়িটা ভাড়া দেয়া I সুজনের ফ্ল্যাটটা খালি পড়ে আছে I সোনিয়া তিনতলাটা ভালো করে ঘুরে দেখলেন I মজিদ বেশ কাজের লোক I সব খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রেখেছে I খুব কৌতুহল নিয়ে সোনিয়া ছাদটা দেখল I এত সুন্দর করে রেনোভেশন করিয়েছে তার ছেলে I ওই মেয়েটার জন্য I মেয়েটার এলেম আছে বলতে হবে I ঐরকম সাদাসিধে একটা ছেলেকে এমন পটিয়ে ফেলল I সোনিয়া ঠিক করলেন এবার একটা হেস্তনেস্ত করেন ফিরবেন I এভাবে ছেলেটার জীবন নষ্ট করা যাবে না I দেখে শুনে একটা ভালো বিয়ে দিয়ে দিতে হবে I ওই মেয়ে যখন চলে গেছে তখন আর সম্পর্ক রেখে কি লাভ I

সোনিয়া একা এসেছেন I সুজনের বাবা আসতে পারেনি I নিচে নেমে এসে কফি বানাতে গিয়ে দেখলেন চিনি ফুরিয়ে গেছে I কাবার্ড খুলে দেখলেন আরো অনেক টুকিটাকি জিনিস লাগবে I সুজনের গাড়িটা এখানেই আছে I ফোন করে ড্রাইভারকে আসতে বলেছিলেন I কিছু টুকটাক কেনাকাটা কর দরকার I সবকিছু একসঙ্গে পাওয়া যাবে ভেবে নিউমার্কেটে চলে গেলেন I অনেক বছর পর এখানে এসে খুব ভালো লাগছে I পুরনো দিনের কথা মনে পড়ছে I কলেজে পড়ার সময় প্রতিদিন আসতেন এখানে I আজিমপুরে কলেজ ছিল তার I কেনাকাটা করতে করতে হঠাৎ পুরনো বান্ধবী তানিয়ার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল I তানিয়ার এসেছে ছেলের বিয়ের শপিং করতে I বহু বছর পর দেখা হওয়ায় দুজন একটা কফিশপে বসলেন I তানিয়ার এক ছেলে I ছেলের বিয়ের গল্প শুনতে শুনতে হঠাৎই মনটা খারাপ হয়ে গেল সোনিয়ার I এক কথা দুকথায় কি করে যেন নিজের ছেলের কথাটা বলে ফেললেন I তানিয়া অবাক হয়ে বললেন
– তোর ছেলে সুজন I সুজন মানে যার তৃণার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে ?
– তুই ওই মেয়েকে চিনিস ?
– চিনবো না কেন ? ও তো আমার ছেলের বউ হিয়ার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী I আমার ছেলে রাতিন আর হিয়া ওদের বিয়ের সাক্ষী ছিল I
– কি বলছিস ? ঐরকম একটা মেয়ে তোর ছেলের বৌয়ের বান্ধবী ?
– কারো ব্যাপারে না জেনে কথা বলা ঠিক না সোনিয়া I আমি মেয়েটার ব্যাপারে যতদূর শুনেছি মেয়েটা অসম্ভব ভালো I তুই চাইলে সুলতানার সঙ্গে কথা বলতে পারিস
– সুলতানা কে ?
– হিয়ার মা I তুই চাইলে আমি এখনি ফোন দিতে পারি

সোনিয়ার একটু কৌতূহল হল I তাই দেখা করতে উনি রাজি হয়ে গেলেন I ফোন করে জানা গেল সুলতানা কাছাকাছি আছেন I সুজনের মা আছে শুনে সুলতানা আর দেরি করলেন না I সব কাজ ফেলে চলে এলেন I

সুলতানা ভেবেছিলেন সুজনের মা কে এক চোট ধুয়ে দেবেন I কিন্তু ভদ্রমহিলার সঙ্গে কথা বলে খুব ভালো লেগে গেল তার I বোঝা গেল ইচ্ছে করেই তাদেরকে ভুল বোঝানো হয়েছে I তানিয়া এবং সুলতানা দুজনই অসম্ভব মিশুক এবং পরিষ্কার মনের I সুলতানের সঙ্গে কথা বলে সোনিয়ার মনে হলো সত্যিইতো এভাবে তো আগে ভেবে দেখা হয়নি কেন তাদেরকে ফোন করা হলো I কারাই বা ফোন করলো I সুলতানের কাছ থেকেই জানতে পারলেন I তৃণার বাবা-মায়ের বিয়েটা বেশিদিন টেকেনি I তৃণার জন্মের আগেই তার বাবা বাইরে চলে গেছেন I ওখানে বিয়ে করেছেন বলে হয়তো দেশের বিয়ের কথাটা চেপে গেছেন I সবচাইতে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে তৃণা বড় হয়েছে তার দাদী এবং চাচার কাছে I তার মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে I তার মানে ওর বাবার পরিচয় নেই কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা I যার সঙ্গে বিয়ে ভেঙেছে তারাই ইচ্ছা করে এই কাজটা করেছে I হঠাৎ ভীষণ অপরাধী মনে হলো নিজেকে সোনিয়ার I মেয়েটা ছোটবেলা থেকে এত কষ্ট করেছে তারপর উনারাও ওকে ভুল বুঝল I কী জানি কোথায় আছে I সোনিয়ার চোখে পানি এসে গেল I সুলতানা ওর হাত ধরে বলল
– যা হবার হয়ে গেছে চলেন এখন দুজনকে মিলিয়ে দেই
– কিন্তু ওকে কোথায় খুজে পাব I আর আমার ছেলেও তো আমার সঙ্গে কথা বলে না
– অত চিন্তা করবেন না একটা ব্যবস্থা ঠিক হয়ে যাবে

হিয়া আর রাতিনের বিয়েটা পিছিয়ে গেছে I ওর বাবা-মা এই মাসেই ফিরে যাবেন বলে 11 তারিখে বিয়ের ডেট ফিক্স হয়েছিল I শপিং ও চলছিল পুরোদমে I শপিং শেষে ফেরার সময় রাতিনের বাবা-মায়ের গাড়ির এক্সিডেন্ট হয় I ওর মা অক্ষত থাকলেও ওর বাবা পা ভেঙ্গে বসে আছেন I খুব গুরুতর কিছু না কিন্তু সারতে সময় লাগবে কয়েক মাস I বিয়ে তাই তিন মাস পিছিয়ে দেয়া হয়েছে I রাতিনের সেমিস্টার শুরু হতে যেহেতু আরো চার মাস বাকি তাই কথা ছিল বিয়ের পর বাবা-মা ফিরে যাবে আর তিন মাস পর সেমিস্টার শুরুর আগে রাতিন যাবে I

হিয়া এবং রাতিন দুজনেই খুব মন খারাপ করেছে I বিয়ের পর কোথায় কোথায় যাবে সেসব নিয়ে অনেক প্ল্যান ছিলো দুজনেরই I এভাবে বিয়েটা পিছিয়ে যাবে কেউ ভাবেনি I বিকেলের দিকে মন খারাপ করেই তৃণাকে ফোন দিল হিয়া I খবর শুনে তৃণা ও খুব মন খারাপ করলো I হিয়া বলল
– সামনে তো ছুটি তুই কদিন এখানে এসে থেকে যা না
তৃণা একটু দ্বিধা করছিল বলে ওকে আশ্বস্ত করে বলল
– আমিতো কথা রেখেছি কাউকে তোর কথা জানাইনি I মাকে ও বলিনি I মা জানলে তোর হলে গিয়ে হাজির হতো
– আচ্ছা ঠিক আছে সামনের সপ্তাহ থেকে তো ছুটি শুরু হচ্ছে সোমবার চলে আসবো
– ইয়াহু
হিয়ার উল্লাস দেখে তৃণা হেসে ফেললো I বলল

– তুই আর বদলালিনা
– একেবারেই না I আমি আর রাতিন এমন প্ল্যান করেছি যে বিয়ে পিছিয়ে ওরা যাবে কোথায় ?

সোমবার দুপুরের আগেই তৃণা পৌঁছে গেল হিয়াদের বাসায় I সুলতানা অসম্ভব খুশি হলেন ওকে দেখে I নিজ হাতে নানান পদ রান্না করে সামনে বসিয়ে খাওয়ালেন I সন্ধ্যার পর সুলতানা একটু কাজে বেরিয়ে গেলে হিয়া বলল
– চলো ছাদে যাই I আজ সারারাত গল্প করবো

হিয়াদের ছাদটা বেশ বড় তবে একটু অন্ধকার I তৃণাকে বসতে বলে হিয়া নিচে গেল চা আনতে I তৃণা রেলিং ধরে দাঁড়াল I রাতের ঢাকা শহর অনেকদিন পর দেখল এভাবে I হঠাৎই মনে হল কেউ পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে I তৃণা চমকে পেছনে ফিরে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেল I কোনমতে বলল

– এ কি অবস্থা হয়েছে তোমার ?

তোমাকে বলার ছিল….
উনবিংশ পর্ব
লেখনীতে
অনিমা হাসান

তোমাকে বলার ছিল পর্ব-১৮

0

তোমাকে বলার ছিল ……
অষ্টাদশ পর্ব

-তোমার নাম কি তৃণা ?
তৃণা ভ্রু কুচকে তাকালো I এখানে এ নামে ওকে কেউ চেনে না I এখানে ও আফসানা নামে পরিচিত I কারো সঙ্গেই তেমন কথা বলে না ও এই জায়গায় I সবাই ওকে শান্ত চুপচাপ বলেই জানে I অনেকে অবশ্য ভাবে ও ভীষণ অহংকারী I ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে এসেছে তাই দেমাকে মাটিতে পা পড়ে না I

তৃণা জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছে I নিজেকে একেবারেই গুটিয়ে ফেলেছে I এখানে থাকায় কিছু সুবিধা হয়েছে I খরচ কমেছে অনেকটাই যেহেতু হলে থাকতে হচ্ছে I কিন্তু সমস্যা ও হয়েছে অনেক I এখানে চলে আসাতে টিউশনি গুলি সব চলে গেছে I তৃণা আগে তিনটা টিউশনি করাতো I এরমধ্যে দুটোই ছেড়ে দিতে হয়েছে I শুধু একজনকে অনেক বছর ধরে পড়ায় বলে আন্টি অনলাইনে পড়াতে রাজি হয়েছেন I টাকাটা বিকাশ করে দেন I ওই দিয়েই মোটামুটি চলতে হচ্ছে i ডিপার্মনেন্ট আর হলের বাইরে খুব একটা বেশি কোথাও যায় না তৃণা I কারো সঙ্গে কথা ও বলে না তেমনI শুধু তপতী বলে বাংলা ডিপার্টমেন্টের একজন আছে ওর পাশের রুমে থাকে I তার সঙ্গে একটু কথা হয় I একটু বললে ভুল হবে I তৃণা ওকে নিজের সব কথাই বলেছে I মেয়েটা ভালো I ভীষণ নরম মন I তৃণার গল্প শুনে অনেক কান্নাকাটি করেছিল I তৃণা নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিল ওর কান্না দেখে I এতটা তো বোধহয় ও নিজেও কাদেনি I কি করে যেন অসম্ভব শক্ত পাথরের মত হয়ে গেছে আজকাল I
তৃণা আবারো তাকালো I যে ছেলেটা প্রশ্নটা করেছে তার নাম ইরাজ I ডিপার্টমেন্টে রাজ নামে খ্যাত I ওদের ব্যাচমেট I পড়াশোনা ছাড়া আর সব কিছুতেই ভীষণ রকমের পটু I আবৃত্তি করে নাটক করে I ডিপার্টমেন্টের জুনিয়ার মেয়েরা রাজ ভাইয়া বলতে অজ্ঞান I বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় ওকে ভিন্ন ভিন্ন মেয়েদের সঙ্গে দেখা যায় I তৃণা বেশ বিরক্ত হল I পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল ইরাজ এগিয়ে এসে পথরোধ করে দাঁড়ালো I বলল
– জবাব না দিয়ে চলে যাচ্ছে যে
– কি জানতে চান ?
– তোমার নাম তৃণা ?
– হ্যাঁ তবে আমি আফসানা নামেই পরিচিত হতে পছন্দ করি
– তুমিতো আবৃত্তি করো তাই না ? নেক্সট ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে আমরা একটা কথোপকথন করব I আমার একজন ফিমেল লিড দরকার I শনিবারে ক্লাস শেষে একটু আমার সঙ্গে দেখা করো
– আমি আবৃত্তি করি না
– মিথ্যে কথা কেন বলছ ?
– মানে ?
ইরাজ হেসে ফেললো I বেশ বিজয়ের হাসি I তারপর বলল I তুমিতো চারুদির সঙ্গে গ্রুপে ছিলে তাই না ? চারুদি আমার কাজিনের ফ্রেন্ড I ওরা কাছে তোমার নাম শুনেছি I শুনেছি কি নাকি ঝামেলার কারণে তুমি ভার্সিটি চেঞ্জ করেছ I
তৃণা জবাব না দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল I ইরাজ এগিয়ে এসে বলল
– তুমি আবার মাইন্ড করলে নাকি ?
তৃণা এবার একটু হাসল I পরমুহূর্তেই গম্ভীর হয়ে বলল
– মাইন্ড করিনি I তবে প্রশ্নের যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছিনা I
ইরাজ একটু থমকালো I ও ভেবেছিল মেয়েটা একটু শান্তশিষ্ট, জড়োসড়ো, চুপচাপ I কারো সঙ্গে তেমন কথা বলে না I এভাবে একটু কথা বললে হয়তো কান্নাকাটি শুরু করবে তখন ওর জন্য সহজ হবে I কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটা এত সহজ জিনিস নয় I বাঁকা হেসে বলল
-তোমাকে সব সময় যৌক্তিক প্রশ্ন করতে হবে নাকি ?
– একেবারেই না I কোন ধরনের প্রশ্ন না করলেই সবচাইতে ভালো হয় I আবৃত্তির ব্যাপারটা যদি জানতে চান তাহলে আমি এখন আর আবৃত্তি করি না I
এবার ইরাজ স্ট্র্যাটেজি চেঞ্জ করল I এভাবে হবেনা I অন্যভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে I এইরকম বহুৎ অহংকারী মেয়ে একসময় ওর পায়ের কাছে এসে লুকিয়ে পড়েছে I এ আর এমনকি I অমায়িক হাসি হেসে বলল
– আরে তুমি তো রেগে যাচ্ছ I আমি আসলে বন্ধু ভেবে কথাটা বলেছিলাম I আমরাতো সহপাঠী তাইনা I আর সহপাঠীরা তো বন্ধুই I
-সহপাঠী হলেই বন্ধু হতে হবে তার কোন মানে নেই I আমি এখন আর আবৃত্তি করি না I আশাকরি আপনি অন্য কাউকে খুঁজে পেয়ে যাবেন I
তৃণা আর দাঁড়ালো না I ইরাজ ওর যাত্রা পথের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল এত দেমাগ দেখব এই দেমাগ কে ভাঙ্গে I

তৃণা হলে ফিরে দেখল ডাইনিংয়ের খাবার শেষ হয়ে গেছে I রিক্সা ভাড়া খরচ হয় বলে ও হেঁটে আসে ডিপার্টমেন্ট থেকে I অনেকটা পথ I মাঝে মাঝে খুব কষ্ট হয় I তবুও উপায় নেই I তৃণার অসম্ভব খিদে পেয়েছে I সাধারণত ও রান্নাবান্নার ঝামেলায় যায়না I খরচ আরো বেশি হয় তাতে I চা খাওয়াও অনেক কমিয়ে দিয়েছে I অসম্ভব মাথা ধরেছে I একটু চা খেতে পারলে ভালো লাগতো I তবে তার আগে কিছু খাওয়া দরকার I সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে গোসল করে নিল I মাথায় তোয়ালে জড়িয়ে যখন বাথরুম থেকে বের হয়ে এলো তৃণা আশ্চর্য হয়ে দেখল ওর টেবিলের উপর গরম খিচুড়ি ডিম ভাজা I পাশে একটা ছোট্ট চিরকুটে লেখা ‘ খেয়ে নিস তপতী I খিদের যন্ত্রণায় আর কিছু ভাববার কথা মনে ছিল না I ঝটপট খেতে বসে গেল Iখাওয়া যখন প্রায় শেষের দিকে তখন হঠাৎ মনে পড়ল একদিন এরকমই খিচুড়ি খেয়েছিল ওরা সুজনের বাড়ির ছাদে বসে I কি সুন্দর ছিল সেই দিনটা I

তৃণা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে গেল I সাড়ে চারটে বেজে গেছে I পাঁচটার সময় অনলাইনে পড়াতে হবে I একটা ল্যাপটপ থাকলে ভাল হত I মোবাইলটা ফেলে আসাতে নতুন মোবাইল কিনতে হয়েছে I হাতের সব টাকা শেষ হয়ে গেছে তাতে I ভাগ্যিস সুলতানা আন্টি ব্যাগটা গুছিয়ে দিয়েছিলেন তাই আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হয়নি I তবুও টুকটাক প্রতিমাসেই কিছুনা কিছু কেনার থাকে I পাঁচটার দিকে ফোন টা চেক করে দেখলো আজকে ছাত্রী পড়বে না মেসেজ পাঠিয়েছে I হঠাৎ করেই তৃণা টের পেল ওর শরীর জুড়ে ক্লান্তি I অসম্ভব ঘুম পাচ্ছে I বিছানায় যেতেই ঘুমিয়ে পরল I এলোমেলো স্বপ্ন দেখলো I দেখল রাতিনের সঙ্গে হিয়ার বিয়েটা ভেঙে গেছে I তবু হিয়া বউ সেজে বসে আছে I বিয়েটা হচ্ছে সুজনের সঙ্গে I তৃণা হুড়মুড় করে উঠে বসলো I ওর সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে I কেমন ভয় ভয় লাগছে I এতদিন ধরে একবার ও হিয়ার সঙ্গে কথা হয়নি I ইমেইলের ব্যাপারটা বোধ হয় ওর মাথায় আসেনি I সুজন কি ওকে একবারও বলেনি I ও তো প্রতিদিনই কবিতা পাঠাচ্ছি ইমেইলে I ঠিক রাত সাড়ে এগারোটার সময় I যদিও কোনো জবাব দেয়নি আজ পর্যন্ত তৃণা I প্রায় দু মাস হয়ে গেছে I একদিনের জন্যও একটু এদিক-ওদিক হয়নি I তৃণা ফোনটা বের করে হিয়াকে ফোন করল I কেমন ভারী শোনাচ্ছে হিয়ার কণ্ঠস্বর I অনেকক্ষণ পর্যন্ত কোনো কথা বলতে পারলো না তৃণা I কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করার পর হিয়া চুপ করে গেল I তারপর বলল
– তৃণা ?
– কেমন আছিস ?
হিয়া চিৎকার করে উঠলো
– কোথায় তুই ? তুই জানিস আমি তোকে কত জায়গায় খুঁজেছি ? বলতে বলতে কেঁদে ফেলল হিয়া
– এখনো তো বললিনা কেমন আছিস I
– কেমন থাকবো ? সামনের সপ্তাহে বিয়ে আমার আর তুই নেই I তুই আসবি না আমার বিয়েতে ? তুই জানিস সুজন এর কি অবস্থা ? তুই কি করে এরকম করতে পারলি I হিয়া ডুকরে কেঁদে উঠল I

কোনভাবেই হিয়া কে বোঝানো গেল না I ও কাউকে বলবেনা এই শর্ত দিয়ে ওর বিয়েতে যাবে এই অঙ্গীকার করল তৃণা I কিন্তু সুজনের কথা শুনে ও হতবাক হয়ে গেল I যে কারনে ও এত কষ্ট করেছে নিজের ইউনিভার্সিটি ছেড়ে এসেছে সুজনকে ছেড়ে এসেছিল যেন ও বাবা-মায়ের সঙ্গে ভালোভাবে থাকতে পারে আর সেটাই হল না I সুজন বাড়ি ছেড়ে দিয়েছে বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে I ভাড়া বাড়িতে কেমন করে আছে ও ? কি খেয়ে থাকে ? হিয়া বলছিল কেমন রোগা হয়ে গেছে আজকাল I সবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে I হিয়া ওকে একবার বোঝাতে গেলে ওর সঙ্গে রাগারাগি করছে I শুধু সুলতানকে সঙ্গে একটু ভালোভাবে কথা বলে I আন্টি মাঝেমাঝে রান্না করে পাঠিয়ে দেয় I

তৃণা ঠিক করল ও সুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করবে I ওর এত কষ্টের কি ফল হল যদি সুজন এভাবে বেঁচে থাকে I তৃণা কাগজ-কলম নিয়ে লিখতে বসলে Iকোন কিছু মাথায় আসছে না I মাথাভর্তি কবিতা গিজগিজ করছে I কতদিন আবৃত্তি করে না ও I তৃণা নিচু স্বরে থেমে থেমে আবৃত্তি করল

অনেকদিন পর কাগজ-কলম নিয়ে বসে
প্রথম একটা চাঁদের ছবি আঁকি, সঙ্গে কিছু মেঘ।
তারপর যথেষ্ট হয়নি ভেবে গোটা তিনেক পাখি,
ক্রমশ একটা দেবদারু ও কয়েকটা কলাগাছ,
অবশেষে অনেকগুলি ছানাসহ একটা বেড়াল,
এইসব এঁকে এঁকে তবুও
কাগজের নীচে চার আঙুল জায়গা বাকি থাকে :
সেখানে প্রথমে লিখি, শ্রীচরণেষু
তার নীচে সবিনয় নিবেদন।
এবং কিছুক্ষণ পরে
সবিনয় নিবেদন কেটে লিখি প্রিয়তমাসু।
এবং একটু পরেই বুঝতে পারি
জীবনে এই প্রথম, প্রথমবার প্রিয়তমাসু লিখলাম।
প্রিয়তমাসু,
তুমি তো জানো না
জীবনে তোমাকে কোনদিন ঠিকমতো সম্বোধন করা হলো না।
প্রিয়তমাসু,
তুমি তো জানো না
জীবনে তোমাকে কোনোদিন ঠিকমতো ভালোবাসা হলো না।

না, এসব সুজনকে লেখা যাবে না I তৃণা ই মেইল ওপেন করলো I গত দুই মাসে সুজনের পাঠানো কবিতাগুলো পড়লে আবারও I তারপর লিখল

তুমি কেমন আছো ?

কেন যেন আর কিছুই লিখতে ইচ্ছা করল না I অন্যকিছু মাথায় এলো না I ততক্ষনে রাত গভীর হয়েছে I তৃণা ভেবেছিল সুজন হয়তো অনেক প্রশ্ন করবে অনেক কিছু লিখবে পাল্টা I কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে সুজন আজকেও শুধু একটা কবিতাই পাঠালো I ও লিখেছে

ভালো আছি বলি কিন্তু ভালো নেই
চেয়ে দেখো আমার ভিতরে কোথায় নেমেছে ধস,
কোথায় নেমেছে ঘোর কালো!
দেখো আমার ভেতরে এখন প্রবল গ্রীষ্মকাল
খরা আর খাদ্যের অভাব; ভালো করে চেয়ে দেখো
আমার ভিতরে সমস্ত কেমন তন্দ্রাচ্ছন্ন, ভগ্ন ও ব্যথিত
ঠিক যে আঁধার তাও নয় মনে হয় মধ্যাহ্নে অকালসন্ধ্যা
অস্তমিত সকল আলোর উৎস;
ভালো আছি বলি কিন্তু ভিতরে যে লেগেছে হতাশা
লেগেছে কোথাও জং আর এই মরচে-পড়া লোহার নিঃশ্বাস
গোলাপ ফুটতে গিয়ে তাই দেখো হয়েছে ক্রন্দন,
হয়েছে কুয়াশা!

*******
সুজন বাস থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকালো I এখানে আগেও এসেছে ও I কিন্তু প্রতিবারই গাড়ি নিয়ে এসেছে কখনো এভাবে বাসে আসেনি I সুজন আজকাল বাসে রিকশায় করেই যাতায়াত করে I কষ্ট হয় ভীষণ, অভ্যাস নেই বলে I চাইলেই গাড়ি কিনতে পারে কিন্তু ইচ্ছা করে না I বারবার শুধু মনে হয় তৃণা নিশ্চয়ই খুব কষ্ট করে বেঁচে আছে I এখান থেকে চলে গেছে তারমানে টিউশনি গুলিও নেই I কি জানি কি ভাবে ম্যানেজ করছে I
কফি খাওয়া ছেড়ে চা খাওয়া ধরেছে সুজন I চা খেতে গেলেও তৃণার কথা খুব মনে পড়ে I একটু পর পর চা খেত তৃণা I এখন নিশ্চয়ই আর খেতে পারে না I সব ধরনের বিলাসিতা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে সুজন I আজকে ওর কারণেই তৃণা এত কষ্টে আছে I ও চলে গেছে বলে ভীষণ কষ্ট হয় সুজনের I কিন্তু কোথাও না কোথাও ওরে চলে যাওয়াটাকে মনে মনে শ্রদ্ধা করে ও I

সুজন একটা রিক্সা নিয়ে ডিপার্টমেন্ট এর দিকে চলে গেল I ডিপার্টমেন্ট এর কাছে বেশ কিছু ছেলেমেয়ে জটলা করে গল্প করছে I সুজন এগিয়ে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করল
– আফসানা আক্তার কে কি একটু ডেকে দেয়া যাবে
ছেলেটা একটু অবাক চোখে তাকালো I তারপর বলল
– আপনি ?
– আমি ওর রিলেটিভ I ঢাকা থেকে এসেছি
-ও তাই নাকি I তা ও তো হল ছেড়ে দিয়েছে
সুজন ভুরু কুঁচকে তাকালো I তারপর বলল
– আপনি শিওর ?
– হ্যাঁ আমার সঙ্গে কথা হয়েছে কাল I তা আপনার সঙ্গে সম্পর্কটা ঠিক ……..
সুজন এই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলল
– আপনার কাছে কি ওর ফোন নাম্বার আছে ?
ইরাজ বাঁকা হেসে বলল
– আপনার আত্মীয় অথচ ফোন নাম্বার চাচ্ছেন আমার কাছে ?
সুজন কোন জবাব দিল না সামনে এগিয়ে গেল I ছেলেটা পেছন থেকে বলল
– এইযে ব্রাদার ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন ? ওখানেও কেউ ওর ঠিকানা দিতে পারবে না
– ক্যান্টিনে যাচ্ছি এক কাপ চা খাব I কোন অসুবিধা ?
– না না অসুবিধা কেন হবে ? তা আপনি ওর কে হন জানতে পারি কি ?
সুজন বিরক্ত হয়ে তাকালো I এই ছেলেটাকে মনে হয় কেউ জীবনে সহবত শেখায় নি I সুজন ওর দিকে ফিরে বলল
– জি না I জানতে পারেন না I এবার কি আমি চা খেতে যেতে পারি ?
– অবশ্যই I চায়ের সঙ্গে আমাদের সিংগারা টা ও ট্রাই করে দেখবেন I আমাদের সিঙ্গারা বেশ ফেমাস
– আপনার মূল্যবান তথ্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ I

সুজন এগিয়ে গেল I পেছন থেকে ইরাজ বিড় বিড় করে বললো
– যেমন মেয়ে তার তেমন আত্মীয় I সোনায় সোহাগা I একেবারে তলোয়ারের দুই ধার I

চলবে…
তোমাকে বলার ছিল ……
অষ্টাদশ পর্ব
লেখনীতে
অনিমা হাসান

তোমাকে বলার ছিল পর্ব-১৭

0

তোমাকে বলার ছিল…
সপ্তদশ পর্ব

-একটু কাছে আসবে তৃণা
তৃণা তখন সুজনের বুকের উপর মাথা রেখে শুয়েছিল I ডাক শুনে মুখ তুলে তাকালো I সুজন পরম যত্নে ওর কপালের উপর থেকে দুই হাতে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে খুব আলতো করে কপালে একটা চুমু খেলো I তৃণা কিছু বলল না শুধু হাসলোএকটু তারপর একটু এগিয়ে এসে সুজনের ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালো I বিস্ময়ের ঘোর কাটতে কয়েক মুহূর্ত লেগে গেল সুজনের I এরপর আর কেউই থেমে থাকেনি I সুজন শুধু একবার জিজ্ঞেস করেছিল
তুমি আমাকে আগে বলনি কেন ?
কি ? কি বলিনি?
যে তুমি আমার আদর চাও
আমাকে চেয়ে চেয়ে নিতে হবে ?
কোন জবাব দিতে পারেনি সুজন এ প্রশ্নের I তবে ওকে চেয়ে নিতে হয় নি I সেরাতে এক আকাশ ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছিল সুজন তৃণাকে I এই ভালোবাসা উপেক্ষা করে তৃণা কি করে চলে গেল আজও ভেবে পায় না সুজন I তবে প্রতি রাতে ও এই একই স্বপ্ন দেখে ও I শুধু তৃণা যখন খুব কাছে আসে তখনই ঘুমটা ভেঙে যায় I

সুজন ধর্ মর করে উঠে বসলো I অচেনা ঘর , অচেনা জানালার পর্দা , এত দিন হয়ে গেছে তবু সুজন এখনো মানিয়ে নিতে পারেনি I সেদিন তৃণা চলে যাওয়ার পর কিছুক্ষণ পর্যন্ত মাথা কাজ করছে না ওর I যখন সম্বিত ফিরে পেল দৌড়ে নিচে নেমে পাগলের মত খুঁজলো চারিদিকে i কিন্তু তৃনাকে কোথাও দেখা গেল না i দৌড়াতে দৌড়াতে বড় রাস্তা পর্যন্ত চলে গিয়েছিল তবুও খুঁজে পায়নি ওকে i ফোন করতে গিয়ে খেয়াল হল তৃণা ফোনটা ফেলে গেছে i হয়তো ইচ্ছে করে ফেলে গেছে , যেন ওকে আর কেউ খুঁজতে না পারে I

সুজন ওর ফোনটা চেক করলো i 37 সেকেন্ড কথা হয়েছে মায়ের সঙ্গে i এই 37 সেকেন্ডে এমনকি বলতে পারে মা যে তৃণা এইভাবে চলে যাবে I ভাবতে ভাবতেই আরেকবার ফোন এলো মায়ের I
– তুই এভাবে ফোন রেখে দিলি কেন ?
– তুমি ওকে কি বলেছ মা?
– কাকে?
– তৃণাকে
-ওই মেয়েকে আমি কিছু কেন বলব ?
– তোমরা কি বুঝতে পারছ তোমরা কারা ব্যাপারে কথা বলছ ?
– কার ব্যাপারে ?
বেশ ব্যঙ্গ ভোরেই বললেন সোনিয়া
– মা তুমি কি বাবাকে ফোনটা দেবে ?
জামান সাহেব ফোনটা হাতে নিয়ে বললেন
– কি হয়েছে সুজন?
– তৃণা চলে গেছে বাবা I আমি বুঝতে পারছি না , মা এমন কি বলেছে যেটা শুনে ও এইভাবে চলে যেতে পারে I তুমি কি আমাকে একটু বলবে কি হয়েছে I
জামান সাহেব আমতা আমতা করে বললেন
– আমার মনে হয় তোর মা ঠিকই বলেছে I আমি তো তখন জানতাম না I পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম যে মেয়েটার কোন বাবার পরিচয় নেই I এরকম একটা মেয়ের সাথে তোর বিয়ে হোক এটা আমরা চাই না I
– বিয়েটা হয়ে গেছে বাবা I তোমার সঙ্গে কথা বলার পরেই হয়েছে I আর এখন তোমরা ওর সম্বন্ধে এভাবে কথা বলো এটা আমার ভালো লাগছে না I
– আমরা কি এমন বলেছি যেটা সত্যি সেটাই তো বলেছি I পাশ থেকে সোনিয়া বলে উঠলেন

হঠাৎ করেই প্রচন্ড জোরে কিছু একটা ভাঙ্গার শব্দ হলো I ভীষণ রকমের জোরে শব্দ করে ফোনটা কেটে গেল I জামান সাহেব এবং সোনিয়া হতভম্ব হয়ে গেলেন I সোনিয়া নিজের ছেলেকে চেনেন I এমনিতে ও চুপচাপ শান্ত ধরনের কিন্তু যখন রেগে যায় কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না I মনে আছে একবার ছোটবেলায় ও ঘরের সমস্ত জিনিস ভেঙ্গে ফেলেছিলো I জামান সাহেব এবং সোনিয়া দুজনেই বেশ ভয় পেলেন I ছেলেটা যদি কিছু করে বসে I তাড়াতাড়ি মজিদকে ফোন করে উপরে যেতে বললেন I

মজিদ ছাদে উঠে হতভম্ব হয়ে গেল I সমস্ত ছাদ লন্ডভন্ড হয়ে আছে I ভাঙ্গা ফুলের টব আর মাটি চারিদিকে ছড়ানো I মাঝখানে দুইহাতে মুখ ঢেকে সুজন বসে আছে I মজিদ সুজনকে জড়িয়ে ধরল I এই ছেলেটাকে একেবারে ছোট বেলা থেকে ও কোলে পিঠে করে বড় করেছে I প্রতি বছর মেলায় নিয়ে যেত ঘাড়ে বসিয়ে I তখন কত বয়স হবে সুজনের বড়জোর 4 I মজিদের মনে আছে কদিন আগে যখন বাসার রেনোভেশন এর কাজ হচ্ছিল I ও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল –
– এসব কার জন্য করছো আব্বা ?
সুজন বলেছিল যার জন্য তাকে একদিন নিয়ে আসব তোমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিব I দেখবে তোমারও ওকে খুব ভালো লাগবে I
তাকে আর দেখা হয়নি মজিদের I গতকাল রাতে বাড়ী ফিরে ও শুনেছে যে সুজন বউ নিয়ে এসেছে I রাত হয়ে গেছে বলে ও আর বিরক্ত করেনি I সকালে উঠে এমন একটা ব্যাপার হবে ভাবতেও পারিনি I মজিদ পরম স্নেহে দুজনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলI সুজন কাঁদতে কাঁদতে বলল
– চাচা ও চলে গেছে I আমাকে ছেড়ে চলে গেছে I
মজিদ বলল আমরা ওকে খুঁজে নিয়ে আসবো যেখান থেকে পারব খুঁজে নিয়ে আসবো I তুমি শান্ত হও আব্বা শান্ত হও I
মজিদের ফোন বাজছে I মজিদ ফোনটা ধরে বললো
– জি ভাইজান সব ঠিক আছে I তারপর ফোনটা সুজনের দিকে এগিয়ে দিল
সুজন কোনমতে ফোনটা ধরে বলল
– বাবা কালকে তোমার সঙ্গে কথা বলেই আমি বিয়ে করলাম I তাহলে এখন তোমরা এমন কেন করলে ?
– শান্ত হও সুজন I তোমার মা বুঝতে পারেনি যে ফোনটা ও ধরেছে I
– আমি ওকে ফোনটা ধরতে বলেছিলাম I আমি এক্সপেক্ট করিনি যে তোমরা এই ধরনের কথা বলতে পারো I ও আমাকে বলেছিল যে আমার ফ্যামিলি কখনোই মেনে নেবে না I আমার সঙ্গে কোনো সম্পর্কে না গিয়ে ও অন্য জায়গায় বিয়ে করতে যাচ্ছিল I আমি ওকে দায়িত্ব নিয়ে নিয়ে এসেছি I এখন আমি ওর ফ্যামিলির কাছে কি জবাব দেব I
মিজান সাহেব বলার মত কিছু খুঁজে পেলেন না I সুজন হঠাৎ করে অসম্ভব শান্ত হয়ে গেল I তারপর থমথমে গলায় বলল
– আমি আর এখানে থাকবো না বাবা I যতদিন তৃণাকে খুঁজে না পাচ্ছি আমি তোমাদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ করব না I

সুজন কোন দিন বাড়ির বাইরে একা থাকেনি I ওর তেমন কোনো বন্ধু নেই I এই মুহূর্তে বাসা থেকে বের হয়ে কোথায় যাবে ও জানে না I হোটেলে ওঠা যায় I খরচ টা কোন সমস্যা না I এ বাড়ির চারটা ফ্ল্যাট এর ভাড়া প্রতিমাসে ওর একাউন্টে জমা হয় I গত 18 বছর ধরে জমা হয়ে আসছে I প্রথমে ওর একাউন্ট জয়েন ছিল বাবার সঙ্গে I 5 বছর ধরে ওর পার্সোনাল একাউন্টে টাকা জমা হচ্ছে I সেই টাকার অংকটা নেহাত কম নয় I কিন্তু হোটেলে উঠতে ইচ্ছা করছে না I সুজন ওর সহপাঠী রিপন কে ফোন দিয়ে বলল
– আমি কি কয়েকদিন তোর সঙ্গে হলে থাকতে পারি ?
রিপন ওর কণ্ঠস্বর শুনে কি বুঝলো কে জানে শুধু বলল
– তুই এখন কোথায় সুজন ?
– বাসায়
– ঠিক আছে আমি আসছি তোকে নিতে

রিপন ছেলেটার সঙ্গে ওর খুব একটা বন্ধুত্ব কখনোই ছিল না I রিপন গ্রামের ছেলে I টাকা পয়সার খুব টানাটানি I চার-পাঁচটা টিউশনি করে I সুজনের কাছ থেকে প্রায়ই নোট নিয়ে যায় I সারারাত বসে কপি করে I তারপর পরের দিন ফিরিয়ে দেয় I ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সুজন নিজেই একটা কপি করে ওকে দিয়ে দিত আর বলতো ফেরত দেয়ার দরকার নেই I মাঝে মাঝে পরীক্ষার আগে সুজনের কাছে আসতো এটা সেটা বুঝতে I সুজন কখনো কার্পন্য করেনি I কখনো বিরক্ত হয়নি I বিপদের সময় বন্ধুত্বের আসল পরিচয় বোঝা যায় I রিপন কোন প্রশ্ন না করে ওকে হলে নিয়ে গিয়েছিল I ফাইনাল ইয়ার বলে ওর নিজের রুম I সুজনের ব্যাগ রেখে বলেছিল
– তোর হয়তো একটু কষ্ট হবে I আমাকে বলিস আমি যদি আর কিছু করতে পারি I তোকে দেখে মনে হচ্ছে তুই সারারাত ঘুমাস নাই I এটা খেয়ে নে I
– কি এটা?
– মিডাজোলাম I শর্ট অ্যাক্টিং I তুই তো ভালো জানিস I চার-পাঁচ ঘণ্টা ভালো ঘুম হবে I
সুজন কিছু না বলে ওষুধটা খেয়ে নিল I যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন গভীর রাত I বালিশের নিচে থেকে হাতরে মোবাইলটা বের করল I সাড়ে এগারোটা বাজে I তাকিয়ে দেখল রিপন মাটিতে বিছানা করে ঘুমিয়ে আছে I হঠাৎ সুজনের মনে পড়লো আজ তৃনাকে কবিতা পাঠানো হয়নি I কিন্তু ওর কাছে তো মোবাইল নেই I কদিন আগে কয়েকটা প্রশ্ন পত্র ইমেইল করেছিল ওকে I ইমেইল এড্রেস টা নিশ্চয়ই আছে I কবিতাটা পাঠিয়ে সুজন অন্ধকারে চোখ বুজে পড়ে রইল I এটা কি সত্যি সত্যি তৃণা পাবে ? যদি পায় তাহলে কি ফিরে আসবে ? মনে মনে কবিতাটা আবার আওড়ালো সুজন

কোনও একদিন ফিরে এসো, যে কোনও একদিন, যেদিন খুশি
আমি কোনও দিন দিচ্ছি না, কোনও সময় বলে দিচ্ছি না, যে কোনও সময়।
তুমি ফিরে না এলে এই যে কী করে কাটাচ্ছি দিন
কী সব কাণ্ড করছি,
কোথায় গেলাম, কী দেখলাম
কী ভালো লেগেছে, কী না লেগেছে — কাকে বলবো!
যে কোনও একদিন ফিরে এসো, ভর দুপুরে হোক, মধ্যরাত্তিরে হোক —
তোমার ফিরে আসার চেয়ে সুন্দর এই পৃথিবীতে আর কিছু নেই।
বিশ্ব ব্রম্মাণ্ডের সমস্ত সুন্দর জড়ো করলেও
তোমার এক ফিরে আসার সুন্দরের সমান হবে না।
ফিরে এসো,
যখন খুশি।
নাও যদি ইচ্ছে করে ফিরে আসতে,
তবু একদিন এসো, আমার জন্যই না হয় এসো,
আমি চাইছি বলে এসো,
আমি খুব বেশি চাইছি বলে।
আমি কিছু চাইলে কখনও তো তুমি না দিয়ে থাকোনি !

রিপন একবারও জানতে চাইনি যে ওর কি হয়েছে I পরে অবশ্য সুজন নিজেই ওকে বলেছিল I এটাও বলেছিলো কাউকে না বলতে I নিজের জন্য নয় I হয়তো তৃণাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠবে তাই কাউকে জানাতে চায় নি I কিন্তু ভালো খবর এর চেয়ে খারাপ খবর যেমন দ্রুত আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে ঠিক তেমনভাবেই ওদের বিয়ের কথাটা এবং তৃণার চলে যাওয়ার ব্যাপারটা খুব দ্রুত ছড়িয়ে গেল ডিপার্টমেন্টে I সামনাসামনি এসে কেউ কিছু জিজ্ঞেস না করলেও আড়ালে-আবডালে সকলেই ফিসফিস করতে লাগলো I

সুজন নিজেকে অনেক গুটিয়ে ফেলল I ঠিক করল হল ছেড়ে একটা ভাড়া বাসায় উঠে যাবে রিপন দ্রুতই ওর জন্য একটা বাসার ব্যবস্থা করে দিল I বলল
– হয়তো একটু কষ্ট হবে কিন্তু বাসাটা ভালো আমার স্টুডেন্টের বাসা I চিলেকোঠার একটা ঘর সামনে পুরোটাই ছাদ I তোর জন্য ভালো হবে প্রাইভেসি বেশ ভালো I বাসাটা দেখে সুজনের অসম্ভব মন খারাপ হয়ে গেল I ঠিক এরকম একটা বাসাই তৃণা চেয়েছিল I রিপন সুজনের মনের কথা বুঝতে পেরে বলল
– এত চিন্তা করিস না I আমরা ওকে খুজে বের করব তারপর এখানে নিয়ে আসব I

সুজন সারারাত ঘুমাতে পারেনি I শেষ রাতের দিকে একটু চোখ বন্ধ হয়ে এসেছিল I ভোরের আলো ফুটতেই স্বপ্নটা আবার এলো I সুজন ধর মর করে উঠে বসলো I খেয়াল হল আজকে মিটিং আছে MAC স্যারের সঙ্গে I স্যার এত ব্যস্ত থাকেন এর মধ্যেও সময় বের করেছেন ওর সঙ্গে কথা বলার জন্য I স্যার ওর জীবনের রোল মডেল I এখনো মনে আছে এসএসসি পরীক্ষার পর ওর কাজিন এর বন্ধুর সঙ্গে ডিপার্টমেন্ট এ এসেছিলো ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে I স্যারের স্পিচ শুনে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল সুজন I সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পরবর্তীতে ও এই ডিপার্টমেন্টেই পড়বে এবং ঠিক স্যারের মত একজন টিচার হবে I এতটাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল সুজন যে বাবা-মায়ের সঙ্গে ইউএস যেতেও রাজি হয়নি I

তৃণা চলে গেছে এক মাস হয়েছে I এই এক মাসে সুজন এমন কোন জায়গা নেই যেখানে ওকে খুঁজে নি I কোথাও ওর কোন চিহ্ন নেই I এরমধ্যে তৃতীয় বর্ষের রেজাল্ট হয়েছে I চতুর্থ বর্ষের ক্লাস শুরু হয়ে গেছে I তৃণা ক্লাসে জয়েন করেনি I যদিও এবছর ওর রেজাল্ট অন্যান্য বছরের চাইতে অনেক ভাল হয়েছে I আর সুজন যথারীতি প্রথম হয়েছে I ক্লাস শুরু হওয়ার পরেও সুজন কিছুতেই মন বসাতে পারছিল না I জীবনে প্রথমবার ক্লাস টেস্ট এত খারাপ হয়েছে I স্যার খুব অবাক হলেও কিছু বলেননি I শুধু বলেছেন শনিবার সকালে দেখা করতে I

সুজন উঠে তৈরি হয়ে নিল I গত একমাস ধরে ও চুল কাটেনি শেভ করে নি I ওর চেহারার সেই পরিপাটি ভাবটা আর নেই I বরং এখন কেমন রুক্ষ উস্কোখুস্কো দেখায় I সুজন গোসল করে নিজেকে একটু ঠিকঠাক করে নিল I তারপর রওনা দিল I

স্যারের পার্সোনাল অফিস ল্যাবের ঠিক পাশেই I ল্যাবটা কার্জন হলের একেবারে শেষমাথায় I গেটের বাইরে স্যারের নেমপ্লেট দেয়া I বড় বড় হরফে লেখা মুনীর আহমেদ চৌধুরী I একবার নামটা ছুঁয়ে দেখল সুজনI ওর খুব শখ ছিল একসময় এরকম একটা ল্যাব ওর হবে I অফিসের বাইরে লেখা থাকবে হাবিবুল বাশার I সুজন হাসলো এখন আর এসব ইচ্ছা করে না I

– স্যার আসবো?
– হ্যাঁ এস সুজন I বস
– স্যার আপনি কি আমার লাস্ট ক্লাস টেস্টের মার্কস নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছেন ?
– না I তুমি যদি কিছু মনে না করো তাহলে তোমাকে কয়েকটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করব
– জি স্যার বলেন
– তোমার ব্যাপারটা আমি শুনেছি I বুঝতে পারছি তুমি খুব আপ্সেট I তবে একটা ব্যাপার বুঝতে পারছিনলাম না যে তোমার মতো বুদ্ধিমান একটা ছেলে এখনো পর্যন্ত কি করে তুমি ওকে খুঁজে বের করতে পারোনি I তোমার ক্লাস টেস্টের মার্কস দেখে বুঝলাম I তুমি আসলে অতিরিক্ত ইমোশনাল হয়ে আছো I
– ঠিক বুঝলাম না স্যার
– আমাকে একটা কথা বল একটা মেয়ে যে যথেষ্ট ভালো ছাত্রী এবং পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস I যে তার থার্ড ইয়ার শেষ করেছে কিন্তু এখনো ফাইনাল ইয়ার শেষ করেনি তাকে তুমি কোথায় খুঁজতে পারো I সবচাইতে বড় বিষয় হচ্ছে ওর ট্রান্সক্রিপ্ট , সার্টিফিকেট সব কিন্তু এখনো এখানে I
সুজন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল I তারপর বলল স্যার আপনাকে একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি ?
– হ্যাঁ করো I আমি অবশ্য জানতাম তুমি এই প্রশ্নটা করবে
– আপনি কি সত্যিই ম্যাডামের জন্য 13 বছর অপেক্ষা করেছেন ?
– আমার আসলে অপেক্ষা করার মতো সিচুয়েশনে ছিলনা I তোমার অবস্থা কিন্তু সেই তুলনায় অনেক বেশি ভালো I ও তোমাকে ছেড়ে গেছে কিন্তু সম্পর্কটা ভেঙে যায় নি I
– স্যার আপনি এত কিছু কি করে জানেন ?
মুনিরএকটু হাসলো I তারপর বলল I আমার বড় মেয়ে প্রায় তোমাদের সমবয়সী I আমার কাছে আমার স্টুডেন্টরা আমার সন্তানের মতো I ছেলেমেয়েদের খবর আমাকে রাখতে হয় I

সুজন তাকিয়ে আছে I সবাই ঠিকই বলে I HE HAS A KILLER SMILE . এখনো প্রতিদিন কত মেয়ে যে স্যারের প্রেমে পড়ে I সুজন বলল

– থ্যাঙ্ক ইউ স্যার I
-ইওর ওয়েলকাম I ভালো করে পড়াশোনা করো I আর নিজের যত্ন নাও I কাউকে খুঁজে বের করা যথেষ্ট পরিশ্রমের কাজ I

সুজন কার্জন হল থেকে বেরিয়ে রেজিস্টার বিল্ডিং এর রিক্সা নিল I ওখানে গিয়ে জানতে পারল তৃণা গতকাল ওর মার্কশিট গুলো তুলেছে I সুজন মনে মনে বলল
– এবার তুমি আমার কাছ থেকে পালাতে পারবে না তৃণা I

চলবে….
লেখনীতে
অনিমা হাসান
তোমাকে বলার ছিল ….
সপ্তদশ পর্ব