Friday, July 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1042



ভালোবাসার বন্ধন পর্ব-০৪

0

#ভালোবাসার বন্ধন
#পর্ব_০৪
#অধির_রায়

পরেরদিন মিহু আর ভূর্জয় খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে। সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে৷

সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরের মন্টিকালো ফাইভ স্টার হোটেলে উঠেছে৷ ছবির মতো সুন্দর মধ্যপ্রাচীয় শহর বার্ন সুইজারল্যান্ডের রাজধানী। ১২ শতকের পুরানো ইতিহাস লুকিয়ে আছে এই শহরটির মাঝে৷ ১৬ শতের আগে এরা সুইসের সাথে যুক্ত হয়নি৷ এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো প্রাচীন ক্লক টাওয়ার। যাতে জলন্ত আশ্চর্যজনক পুতুল আছে, একে “Zytglogge” বলে।

মিহু প্রথমবার সুইজারল্যান্ডে আসে৷ মন্টিকালো ফাইভ স্টার হোটেল সুইজারল্যান্ডে নামকরা হোটেল। এই হোটেলের প্রতিটি আসবাবপত্র দেখে মনে হচ্ছে এটি রাজকীয় কোন রাজবাড়ী। সবকিছু খুব সুন্দর করে সাজানো৷ মুগ্ধ হয়ে মিহু সবগুলো দৃশ্য দেখছে। দুই তলায় সিঁড়ির সাথে যে দেয়াল বিদ্যমান সে দেয়ালটি এমনভাবে গাছপালার প্রেইন্টিং করা দেখে মনে হচ্ছে বাস্তব দৃশ্য। মিহু এমন দৃশ্য মিস করতে চাইনি, তাই সে নিজের ফোনে কিছু ছবি তুলে নেয়৷

— মিহুর এমন কান্ড দেখে তূর্জয় বলে উঠে, “কি করছো টাকি? ”

— “দেখতে পাচ্ছেন না সেলফি তুলছি৷ বিরক্ত করবেন না৷ ” সেলফি তুলায় মন দিয়ে৷

— “আরে বুদ্ধু এখানে যদি তোমাকে এই অবস্থায় দেখে ফেলে মানুষ কি ভাববে?” চাপা গলায় বলে উঠে।

— আপনি ওমন করেন কেন? আমি কি করেছি? সামান্য একটু সেলফি তুলেছি৷

— এটাই তো বাঙালিদের সমস্যা। দোষ করবে কিন্তু স্বীকার করবে না৷

— আমি কোন দোষ করিনি৷ আপনিও আসেন না একটা সেলফি তুলি৷

তূর্জয় চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখতে পায় তেমন কোন মানুষ নেই৷ অনিচ্ছা সত্ত্বেও মিহুর সাথে দুইটা সেলফি তুলে নেয়৷

সেলফি তোলার সাথে সাথে তূর্জয় মিহুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে রুমে নিয়ে যায়৷ রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়৷ দরজা বন্ধ করাতে মিহু ভয় পেয়ে যায়৷

— ভয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠে, “আপনি দরজা বন্ধ করলেন কেন? আমি কোন দোষ করিনি।”

— তো দরজা খোলে পোশাক চেঞ্জ করবো৷ আচ্ছা আমি দরজা খোলে দিচ্ছি। তুমি পোশাক চেঞ্জ করতে পারো।সবাইকে দেখাও তুমি কতটা সুন্দর, কতটা হ*ট।

মিহু কি বলবে বুঝতে পারছে না? মাথায় কোন বুদ্ধি নেই। কোন সময় কি বলে ফেলে জানা নেই? মিহু বোকার মতোন করে দাঁড়িয়ে আছে৷ যা দেখে তূর্জয়ের খুব হাসি পাচ্ছে৷ নিজের হাসি আটকিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ মিহু সেই একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে৷ সে ভাবছে, আমি কেন একটু সিরিয়াস হতে পারি না? সব সময় নিজেকে নিয়ে কেন এত ভুলভাল ভাবি? কথা দিচ্ছি আজ থেকে আর ভুল চিন্তা মাথায় আসতে দিবো না৷

তূর্জয় ওয়াসরুম থেকে এসে দেখে মিহু মুখে বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে দাড়িয়ে আছে৷ ছোট বাচ্চাদের মতো আকাশ পাতাল ভেবে যাচ্ছে৷ মিহুকে এই অবস্থায় খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। মিহুর এই স্মৃতিটা যুগলবন্দী করে রাখার জন্য কয়েকটা পিক তুলে নিল।

— এই যে কি ভাবছেন? ফ্রেশ হয়ে আসেন। খাবার খেতে হবে তো৷

তূর্জয়ের কথায় মিহু বাস্তবে ফিরে আসে৷ তূর্জয়ের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠে, ” এ কি আপনি পোশাক চেঞ্জ কখন করলেন?”

— তুমি যখন আকাশ পাতাল ভেবে যাচ্ছিলে তখন৷ আর হ্যাঁ ফ্রেশ হয়ে আসো খাবার খেতে যাবো৷

মিহু কোন কথা না বলে ফ্রেশ হয়ে আসে৷ এসে দেখে তূর্জয় বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। কেন হাসছে জানা নেই মিহুর? মিহু ধীর পায়ে তূর্জয়ের পিছনে চলে যায়৷ এসে দেখে তূর্জয় মিহুর ছবি দেখে হাসছে। যা মিহুকে খুব রাগিয়ে দেয়।

— “আপনি একটা খবিশ,” ক্ষেপে বলে উঠে। লুকিয়ে লুকিয়ে আমার পিক তুলেছেন কেন?

খবিশ কথাটা শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখে মিহু দাঁড়িয়ে আছে৷ এই মাত্র স্নান করে এসেছে৷ ভেজা চুল থেকে টুপ টুপ করে জল পড়ছে৷ মিহুর মুখটা খুব মায়াবি দেখাচ্ছে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিহুর দিকে।

— কি হলো! আমার পিক রিমুভ করেন আপনার ফোন থেকে।

— না রিমুভ করবো না৷ এসব পিক রেখে দিলাম যখন মন খারাপ লাগবে তখন দেখবো। তোমার পিক দেখে হেঁসে হেঁসে মন ভালো করবো৷

— কি!

— হ্যাঁ ম্যাম।

মিহু ফোনটা নেওয়ার জন্য হাত বাড়ায়৷ কিন্তু তার আগেই তূর্জয় ফোন সরিয়ে নেয়৷ মিহুর চিন্তা হলো সে ফোন নিলেই ছাড়বে৷ তূর্জয় ফোন দিবে না৷ দুই জন ফোন নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করে দেয়৷ হুট করেই মিহু তূর্জয়ের বুকের উপর পড়ে যায়৷ মিহুর ভেজা চুলগুলো তূর্জয়ের মুখের উপর ছড়িয়ে পড়ে৷ এমন ঘটনা ঘটতে পারে তূর্জয়ের জানা ছিল না৷ তূর্জয় মিহুর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ মিহু তূর্জয়ের কাছ থেকে চলে আসতে নিলেই মিহুর হাত টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷ মিহু তূর্জয়ের এমন কাজে অবাক৷

— নেশা জনিত কন্ঠে বলে উঠে ” তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে মায়াপরী। তোমার অপলক দৃষ্টি আমায় কাছে টানে৷

পরক্ষণেই মনে পড়ে যায় এটা মিহু। তূর্জয় নিজেকে সামলিয়ে বলে উঠে” সরি আসলে খেয়াল ছিল না৷” আমি একটা ঘোরের মাঝে চলে গিয়েছিলাম।

মিহু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে৷ তূর্জয় বেলকনিতে চলে যায়৷ বেলকনি থেকে সুইজারল্যান্ডের দৃশ্যগুলো খুব সুন্দর দেখায়৷ বার্ন শহরটি সমুদ্রের তীরবর্তী হওয়ায় আরও সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে৷ এখানে কোন প্রাকৃতিক দৃশ্য নেই বললেই চলে ; যতদূর চোখ যায় শুরু মানুষের তৈরি দৃশ্যগুলো দেখা যায়৷

মিহুর নিজেকে আজ নিজের কাছে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে৷ আজ তূর্জয় তার প্রশংসা করেছে৷ তূর্জয় বিয়েটা মেনে না নিলেও মিহু তো এই বিয়েটা মেনে নিয়েছে৷ মিহু হালকা মেকআপ করে বেলকনির দিকে পা বাড়াতেই কলিং বেল বেজে ওঠে। তূর্জয় বেলকনি থেকে এসে দরজা খোলে দেয়৷ ওয়েটারের কাছ থেকে খাবার নিয়ে আবার দরজা বন্ধ করে দেয়৷

— আপনি বললেন যে, “বাহিরে খেতে যাবেন৷ রুমে খাবার আসলো কিভাবে?”

— আমি ফোন করে খাবার রুমে দিতে যেতে বলেছি৷ খাবার খেয়ে নাও৷

মিহু জানে কথা বাড়িয়ে কোন লাভ নেই৷ তাই সে তূর্জয়ের কথামতো খাবার খেয়ে নেয়৷

— মিহু এখন একটু ঘুমিয়ে নাও। রাতে ঘুরতে যাবো৷

— ওঁকে,,, তূর্জয় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে৷ মিহুর চোখে ঘুম নেই৷ তার মাথায় হাজারটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে৷ এতো বড় হোটেলে সে বসে থাকবে না৷ সে ঘুরে ঘুরে দেখবে৷ তূর্জয় ঘুমিয়ে পড়েছে কিনা যাচাই করার জন্য তূর্জয়ের আঁখিতে ফুঁ দেয়৷ তূর্জয় আঁখি মেলে তাকায় না৷ মিহু বুঝতে পারে ঘুমিয়ে পড়েছে। ধীর পায়ে রুমের বাহিরে চলে আসে৷

মিহু হোটেলের বাহিরে চলে আসে৷ হোটেলের বাহিরে তেমন জায়গা নেই৷ যতটুকু জায়গা রেখে সেখানে সুইমিং পুল দিয়ে রাখছে৷ হোটেলের ডান পাশে সুইমিং পুল৷

মিহু একজন সুইজারল্যান্ড অধিবাসীকে বাংলায় বলে উঠে” আপনারা সত্যিই খুব গাধা৷ সুইমিং পুল হোটেলের বাম পাশে থাকে৷ মাথায় শুধু গবর৷”

লোকটি মিহুর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে৷ মিহু কি বলছে বুঝতে পারছে না?

— আপনার মুখে মশা ঢুকবে৷ মুখ বন্ধ করেন৷ ও হ্যালো, আপনি বোবা কথা বলেন না কেন?

লোকটি একইভাবে মিহুর দিকে তাকিয়ে আছে৷ মিহু ক্ষেপে বলে উঠে, ” কুত্তা কোনদিন সুন্দরী মেয়ে দেখিস নি৷ এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? তোদের ঘরে মা বোন নেই৷” সালা এনাকন্ডা

মিহু লোকটাকে বকে চলে গেলে৷ চারিদিক বাহারি রকমের ফুলগাছ দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে। সুইমিং পুলে অনেক ছেলে মেয়ে স্নান করছে৷ সেজন্য মিহু সেই দিকে যায়নি। ঘুরতে ঘুরতে কখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে জানা নেই৷ তারাতাড়ি হোটেলে ফিরে আসে৷

তূর্জয় ঘুম থেকে উঠে দেখে মিহু কোথাও নেই৷ মিহু মিহু বলে চিৎকার করতে থাকে৷ কিন্তু কোন জায়গা থেকে মিহুর ধ্বনি আসে না৷ মিহু রুমে কোথায় নেই৷ সারা রুমের মাঝে মিহুকে খোঁজে না পেয়ে নিচে আসতে নিলেই মিহুর সাথে তূর্জয়ের সিঁড়িতে দেখা হয়৷ তূর্জয়কে দেখে মিহুর আত্মা শুকিয়ে যায়৷ তূর্জয় মিহুকে সবার সামনে কিছু না বলে হাত চেপে ধরে রুমে নিয়ে আসে৷

— আমার হাত ছাড়েন৷ এভাবে চেপে ধরার কি আছে? আমি কি বাচ্চা পোলাপান? কোথাও হারিয়ে যাবো?

— চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, “স্টপ” কোথায় ছিলে তুমি?

— কই আমি তো এখানেই ছিলাম। আমি কোথাও যায়নি তো৷

— আমার প্রশ্নের সোজা উত্তর দাও৷ তুমি কি ঘুমিয়েছিলে?

মিহু কি বলবে বুঝতে পারছে না? শুধু তূর্জয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে৷ তূর্জয় মিহুর দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রয়েছে। মিথ্যা কথা পেটের মাঝে জমে আছে৷ কিন্তু মুখে আসছে না৷

— কি হলো? কথা বলছো না কেন? কোথায় ছিলে?

— আসলে আমার ঘুম আসছিলো না৷ সেজন্য একটু নিচে হাঁটতে বের হয়েছিলাম।

— কেন? তুমি আমাকে ডাক দিতে পারলে না৷ তুমি কি জানো এখানে সব জায়গায় বিপদ রোদ পেতে থাকে? যদি তোমার কিছু হয়ে যেত৷

মিহু তূর্জয়ের চোখে রাগের সাথে সাথে ভয়েরও একটা কাজ করছে৷ মিহু বুঝতে পারে সে ভুল করেছে৷

— আসলে আমি বুঝতে পারিনি আপনি এতো রেগে যাবেন৷ জানলে কখনো বাহিরে বের হতাম না৷ প্লিজ! আমাকে ক্ষমা করে দেন৷ আপনার কথা আর অমান্য করবো না৷

— হাত ছেড়ে দিয়ে ” এই মেয়ে এরপর কোথাও না বলে চলে গেলে পা ভেঙে দিবো৷ না হলে এখানে মেরে পুতে রেখে চলে যাবো৷”

— ওই ওই খবিশ তূর্জয়। আমি আপনাকে ভয় পাই না৷ শুধু শুধু আমায় ভয় দেখান কেন? আমি এক অবলা শিশু৷ অবলা শিশুদের ভয় দেখাতে নেই।

তূর্জয় কিছু বলতে নিবে মিহু কান্না শুরু করে দেয়৷ তূর্জয় বোকা বনে চলে যায়৷ মিহুর চোখের জল মুছে দিয়ে নরম স্বরে বলে উঠে, ” এভাবে না বলে কোথাও যাবে না৷ এখন ফ্রেশ হয়ে আসো ঘুরতে যাব নদীর তীরে।”

— আপনি কি এখানকার সবকিছু চিনেন?

— চিনি না তেমন। এর আগেও আমরা একবার এখানে এসেছি৷ তখন কিছুটা চিনে নিয়েছি৷

— অ আচ্ছা। আমাকে দুই মিনিট সময় দেন। আমি তৈরি হয়ে আসছি৷

মিহু পোশাক চেঞ্জ করে সাদা রঙের একটা গ্রাউন্ড পড়ে আসে৷ মিহুকে ঠিক পরীর মতো লাগছে৷ তূর্জয় মিহুর সাথে মেচিং করে সাদা প্যান্ট, সাদা শার্ট পড়ে৷ দুই জনকেই খুব সুন্দর মানিয়েছে৷

রাতের আকাশে তারার মেলা। সব তারকাদের হার মানিয়ে উঠেছে পূর্নিমার চাঁদ। চাঁদের আলোই সুইজারল্যান্ডের বিচের সাগর সৈকতে আয়েশ করে বসে আসে আইসক্রিম খাচ্ছে তারা। আইসক্রিম শেষ করে হাত ধরে বিচের বালির উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে৷ এখানকার সব থেকে বড় সুন্দর হলো সাগরের জল। ঢেউয়ের সাথে অনেকে খেলা করছে৷ যখন ঢেউ আসে তখন জল হালকা নীল রঙের দেখায়। যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে৷

— “আমিও স্নান করবো ওখানে?” মিহু বাইনা ধরে সেও সাগর তীরে স্নান করবে।

— না একদমই না৷ এখন স্নান করলে তোমার জ্বর আসবে।

— “কিছু হবে না৷ প্লিজ চলেন না৷” প্যাঁচার মতো মুখ করো

— আমি পারবো না৷

— কেন? প্লিজ! আমি আর কিছু করবো না৷ একদম ভালো মেয়ের মতো থাকবো৷

— অসময়ে স্নান করলে জ্বর আসবে৷

— কিছু হবে না আমি আছি তো৷ জ্বর হলে আপনার সব জ্বর আমি নিয়ে নিবো৷

মিহু তূর্জয়ের কোন কথা না শুনে তূর্জয়কে টেনে নিয়ে যায় স্নান করতে৷ তূর্জয় নিজের জিনিসপত্র একটা আইসক্রিম ওয়ালার কাছে রেখে সাগরে নামে৷ অল্প জলে বালির সাথে খেলা করছে মিহু৷ মিহু প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গেছে৷ মিহু তূর্জয়কে জলে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে। এক সময় তূর্জয় মিহুর পাগলামি সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে মিহুকে কোলে তুলে নেয়৷ কোন কথা না শুনে হোটেলে চলে আসে।

চলবে….

ভালোবাসার বন্ধন পর্ব-০৩

0

#ভালোবাসার বন্ধন
#পর্ব_০৩
#অধির_রায়

মিহু তূর্জয়কে বুঝানোর চেষ্টা করছে ;সে এখানে ইচ্ছা করে থাকেনি৷ কিন্তু তূর্জয় বুঝার চেষ্টা করছে না৷ তূর্জয় রেগে মিহুকে বিছানা থেকে নামায়। নামিয়ে মিহুর গায়ে হাত তুলতে নিলেই মিহু তূর্জয়ের হাত ধরে ফেলে৷

— “আর কোনদিন ভুলেও আমার গায়ে হাত তুলার চেষ্ঠা করবেন না৷” ক্ষেপে বলে উঠে মিহু।

— তূর্জয় জবাবে বলে উঠে, “তোমার এত বড় সাহস! তুমি আমার হাত ধরলে!” রাগে চোখ দু’টো লাল হয়ে গেছে।

— আপনি আমাকে কি ভাবেন? মেয়েরা কি শুধু ভোগের পাত্রী? আমাদের কোনো ক্ষেত্রে কোনো যোগ্যতা নেই? পরে পরে মার খাবো৷ সেই কলি যুগ থেকে মেয়েরা বড় বড় বিপদের সাথে মোকাবেলা করে আসছে৷ আমাকে অবলা নারী ভাববেন না৷ আমি এই দুই দিন আপনাকে সুযোগ দিয়েছিলাম। সেজন্য কিছু বলিনি৷ এখন বলবো না তার কোনো কথা নয়৷

তূর্জয় মিহুর রাগ দেখে আবাক! যে মেয়ে কথা বলতে পারতো না; আজ সেই মেয়ে আমাকে হুমকি দিচ্ছে৷

তূর্জয় মিহুর হাত পিছনে চেপে ধরে ” এই মেয়ে আমার সামনে কখনো উঁচু স্বরে কথা বলবে না৷ আমি চাইনা তোমার সাথে ভুল কিছু করে ফেলি৷ কারণ আমি ততটাও খারাপ নয় যতটা তুমি ভাবো৷ আমি চাই তুমি তোমার জীবনে এগিয়ে যাও৷ সেজন্য তোমাকে আমার জীবন থেকে মুক্তি দিতে চাই৷ কিন্তু তুমি বারবার আমার কাছে আসার চেষ্টা করছো কেন?”

— “আউচ” আমার হাতে লাগছে৷ প্লিজ আমার হাত ছেড়ে দেন! আর হ্যাঁ আমি আপনার কাছে আসিনি৷ এ সামান্য কথাটা বুঝতে পারছেন না৷

–তূর্জয় মিহুর হাত ছেড়ে দিয়ে, ” তুমি বিছানায় কিভাবে আসলে?”

— আপনি রাতে আঁধা শুয়া অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন৷ আপনাকে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে চলে যেতে নিলেই আপনি ঘুমের মাঝে আমার হাত টান দেন। আমাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেন৷ আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু প্রতিবার ব্যর্থ হয়েছি। আপনার ঘুম নষ্ট হবে বলে ডাকা হয়নি৷ সেজন্য ক্ষমা করে দিবেন।

— এই সামান্য কথাটা প্রথমে ভালোভাবে জানাতে পারলে না৷ কোন সমস্যা হতো না৷

— আপনি তো বলার সুযোগই দেননি৷ আর হ্যাঁ আমিও চাই না আপমার মতো খবিশের সাথে থাকতে৷

— কি আমি খবিশ!

— হ্যাঁ আপনি খবিশ। আপনি চাইলে আমিই আমাকে মুক্তি দিয়ে দিব৷

— এই মেয়ে তোমার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই৷ আমিও তোমার সাথে থাকতে চাই না৷ শুধু পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে, তোমার মতো উগান্ডাকে নিজের লাইফে জড়িয়ে ফেলেছি৷

— এই যে সাদা বানর। আমারও ঠ্যাঁকা পড়েনি, আপনার মতো সাদা বিলাইকে বিয়ে করতে৷ আর হ্যাঁ আমি কখনো আপনার কাছে নিজে থেকে আসবো না৷ আপনাকে আমার একদম পছন্দ নয়৷

— “এই মেয়ে কি বললে তুমি?” উঁচু স্বরে বলে উঠে।

মিহু তূর্জয়ের কথার কোন জবাব না দিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ তূর্জয় রাগে ফুসফুস করতে করতে ফোন নিয়ে রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়ে যায়৷ হঠাৎ করেই ফোনের এলার্ম বেজে উঠে। এলার্ম বন্ধ করার জন্য ফোন বের করে প্যান্টের পকেট থেকে। ফোনের ওয়ালপেপার দেখে চোখ থেকে দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।

ফোনে ওয়ালপেপারে এখনো ছোঁয়ার হাসিমাখা মুখটা রয়েছে। ছোঁয়ার পিক টা দেখে মনে মনে বলতে থাকে, “কি দোষ ছিল আমার ? তুমি কেন আমার কাছ থেকে বার বার দূরে সরে যাও? তুমি কি একটু জানতে চাইলে না আমার মনের অবস্থা কেমন হতে পারে। আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি৷ আমি তোমার ভালোবাসার বন্ধনে আটকে পড়েছি।” কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে।

চোখের জল মুছে পার্কের বেঞ্জে বস পড়ে। ফোন হাতে নিয়ে অল পিক রিমুভ করে দেয়৷ কিন্তু এখনো ওয়ালপেপারে ছোঁয়ার পিক আছে৷ সব পিক রিমুভ করার পরও ওয়ালপেপারে পিক থাকে৷ যদি ওয়ালপেপারে পিক চেঞ্জ না করা হয়৷

— ওয়ালপেপার পিকের দিকে তাকিয়ে আবারও মনে মনে বলতে থাকে, ” তোমার জন্য আমাদের দুইটা জীবন নষ্টের দিকে৷ আমার কথা বাদই দিলাম৷ তুমি একবারও তোমার বোনের কথা ভাবলে না৷ তুমি জানতে না, বিয়ে থেকে পালিয়ে যাওয়া মানে সব কিছু থেকে মুক্তি পাওয়া না৷ তুমি তোমার বাবা মায়ের কথা টুকুও ভাবলে না৷ তারা কিভাবে সমাজে মুখ দেখাবে? এখন তো তোমাকে আমার ঘৃণা করতে ইচ্ছা করছে৷ কিন্তু কখনোই তোমাকে ঘৃণা করতে পারবো না৷ আমি যে তোমায় খুব ভালোবাসি।”

অন্য কিছু আর না ভেবে ছোঁয়ার ছবি ওয়ালপেপার থেকে মুছে ফেলে। চোখের নুনা জল খরচ না করে চোখের জল মুছে বাসায় চলে আসে৷ বাসায় এসে দেখে প্রায় সব গেস্ট চলে গেছে৷ হাতে গুনা কয়েকজন আছে৷ তারাও আজ চলে যাবে।

— কি রে তূর্জয় ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? (পিসিমনি)

— পিসি আমি বাহির থেকে একটু হেঁটে আসলাম৷ তোমরা গল্প করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি৷

— আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছি৷ তুমি তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসো৷ এক সাথে খাবো৷ (তিহান চৌধুরী)

— ওঁকে বাবা।

তূর্জয় ফ্রেশ হয়ে যথা সময়ে খাবার টেবিলে চলে আসে৷ কিন্তু আজ খাবার টেবিলে আরও দুইজন লোক বসে আছে। তারা হলেন মিহুর মা বাবা। তূর্জয়কে দেখে মিহুর মা মাথা নিচু করে ফেলেন৷

— “কি করছেন টা কি? এখানে সবাই নিজের লোক। কোন সংকোচ নেই, ” তিহান চৌধুরী বলে উঠে। তূর্জয়কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠেন, ” তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন? মিহুকে নিয়ে বসে পড়ে৷”

মিহু তার নাম তার শ্বশুর মশাইয়ের মুখে শুনে অনেকটা খুশি হলো৷ তারা সবাই মিহুকে আপন করে নিয়েছে শুধু খবিশ তূর্জয় ছাড়া৷ তূর্জয় মিহুর দিকে মিহি চোখ তুলে তাকায়। তূর্জয়ের চাহনি দেখে মিহু মাথা নিচু করে ফেলে৷ কোন সাড়া না পেয়ে মিহু মাথা তুলতেই তূর্জয়কে তার সামনে দেখতে পাই৷

— আআআআপনি এখানে.. আপনি খেতে বসেন। আমি সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছি৷

তূর্জয় মিহুর কোন কথা না শুনে মিহুর হাত ধরে মিহুকে খাবারের টেবিলে নিয়ে চলে আসে৷ ভরা লোকের সামনে মিহুও কিছু বলতে পারছে না৷ মিহুর হাত ধরে নিজের পাশের চেয়ারে বসে পড়ে৷

— আপনারা খাওয়া শুরু করে। আমি পরে খেয়ে নিবো৷ (মিহু)

— এই মেয়ে তুমি আমাদের সাথে খাবে। আর তুমি পরে খেয়ে নিবে কেন? তুমি আজ থেকে আমাদের সাথেই খাবে। (তিহান চৌধুরী)

— না মানে…

— কোন কথা নয়। (তিহান চৌধুরী)

মিহু কিছু বলতে নিবে তূর্জয় চোখ দিয়ে ইশারা করে কথা বলতে মানা করে। মিহু তূর্জয়ের ইশারা বুঝতে পেয়ে থেমে যায়৷

সকলের খাওয়ার পর মিহুর বাবা তিহান চৌধুরীর হাতে দুইটা টিকেট তুলে দেয়৷

— দেখেন এটা একটা এক্সিডেন। তাই আমি চাই তারা দুইজন নিজেদের কিছু সময় দেখ৷ নিজেদের মাঝে সকল সংশয় দূর করে নিতে পারবে। (মিহুর বাবা)

— হুম আপনি ঠিক বলেছেন। তাদেরকে নিজেদের মতো ছেড়ে দেওয়া উচিত।

তূর্জয় সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যেতে নিলেই তিহান চৌধুরী ডাক দেয় তূর্জয়কে৷ তূর্জয় নিজের বাবার ডাক শুনে তার বাবার কাছে যায়৷ সাথে মিহুকে ডেকে আনে৷

— জ্বি বাবা। কিছু বলবে কি?

— হুম। তোমাদের সাথে আমার কিছু কথা আছে?

— কি কথা? (তূর্জয়)

— আগে বলো, আমি যা বলবো তা মেনে নিবে৷

— আজ পর্যন্ত তোমার কোন কথায় আমি কোনদিন অবাধ্য হয়নি। ভবিষ্যতেও কোনদিন হবোও না৷

— তাহলে শুনো। আমরা চাই, তুমি আর মিহু কিছুদিন সুইজারল্যান্ডে কাটিয়ে আসো৷ তোমরা একে অপরকে কিছু সময় দাও৷ একে অপরকে ভালো ভাবে চিনে নাউ৷

— কিন্তু বাবা অফিসে অনেক কাজ পড়ে আছে৷ সব কাজ শেষ করতে হবে৷ তোমার এই কথায় আমি সায় দিতে পারলাম না৷ কাল থেকে আমাকে অফিসে জয়েন্ট করতে হবে৷

— অফিসের সব কাজ আমি দেখে নিবো৷ তুমি মিহুকে নিয়ে আগামী কাল সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছো।

— কি বাবা! আগামী কাল। ( অবাক হয়ে বলে উঠে)

— অবাক হওয়ার কি হলো? আমি চাই তোমরা তারাতাড়ি ঘুরে আসো। আর তোমাদের বিয়ে হয় একটা এক্সিডেনে। তোমাদের নিয়ে অনেকে অনেক বাজে কথা বলা শুরু করে দিয়েছে৷

— “ওকে বাবা। তুমি যা চাইবে তাই হবে৷” তূর্জয় প্যাঁচার মতো মুখ করে বলে উঠে।

তূর্জয় তাদের কথার মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হতে চাচ্ছে না৷ তাই সে নিজের রুমে চলে আসে। পায়েচারী করছে সারারুম৷ কিভাবে এখান থেকে মুক্তি পাবে৷

— মিহু তোমাকে আর নতুন করে কিছু বলতে চাই না৷ আমি যা সিদ্ধান্ত নিছি এতে তোমার কোন দ্বিমত আছে৷ থাকলে বলতে পারো৷ (তিহান চৌধুরী)

— না বাবা। আমি কোন দ্বিমত পোষণ করবো না৷ আপনি যা বলবেন তাই হবে৷ আপনি কোনদিন আমাদের খারাপ চাইতে পারেন না৷

— “এই তো লক্ষী মেয়ের মতো কথা”, পিছন থেকে তূর্জয়ের মা বলে উঠেন।



রাতের বেলা তূর্জয় রুমে বসে বসে অনলাইনে লুডু খেলছে বন্ধুদের সাথে৷ তূর্জয় খুব রেগে আছে গেমস নিয়ে৷ সরকার আর কিছু পাইনি। প্রিয় দুইটি গেমস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ছেলেরা এখন কি করবে? ছেলেদের প্রিয় খেলা ফ্রী ফায়ার আর পাবজি তুলে দিচ্ছে৷

মিহুকে রুমে আসতে দেখে বলে উঠে “এত লেট হলো কেন?”

— আসলে মার সাথে গল্প করতে করতে ভুলেই গিয়েছিলাম কখন এত রাত হয়ে গেছে।

— হয়েছে আর সাফাই না গেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো৷ মনে আছে তো, আগামীকাল সকাল দশটায় আমাদের ফ্লাইট।

— হুম মনে আছে আগামীকাল দশটায় আমাদের ফ্লাইট। একটা কথা বলবো?

— হ্যাঁ বলে ফেলো? কথা তো বলেই যাচ্ছো! থামার কোন নাম গন্ধ নেই৷

— মিহু তূর্জয়ের কথা গায়ে না মেখে বলে উঠে “আপনি সরাসরি না করে দিতে পারলেন না। বলতে পারতেন আমরা বাড়িতেই একে অপরকে সময় দিতে পারবো৷”

— এত কিছু তোমাকে ভাবতে হবে না৷ এখন ঘুমিয়ে পড়ো৷

মিহু আর কোন কথা না বলে সোফায় শুয়ে পড়ে৷ তূর্জয় মিহুর দিকে তাকিয়ে শুয়ে পড়ে৷ কারো চোখে ঘুম নেই৷ একবার মিহু তূর্জয়কে দেখে যাচ্ছে৷ আবার তূর্জয় মিহুকে দেখে যাচ্ছে৷ এমন করতে করতে এক সময় তারা ঘুমিয়ে পড়ে।

চলবে….

ভালোবাসার বন্ধন পর্ব-০২

0

#ভালোবাসার বন্ধন
#পর্ব_০২
#অধির_রায়

তূর্জয় মিহুকে এতটাই জোরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে মিহু নড়তেও পারে না৷ মিহু সহ্য করতে না পেরে কান্না করে দেয়৷ মিহুর চোখের জল দেখে তূর্জয় মিহুকে ছেড়ে দেয়৷

— সামান্য আঘাত সহ্য করতে পারো না। সামনে অনেক বড় বড় আঘাতের সাথে মোকাবেলা কিভাবে করবে?

মিহু মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে৷ তূর্জয়ের প্রশ্নের কোন জবাব দিচ্ছে না৷ যা তূর্জয়কে আরও ক্ষেপিয়ে তুলছে৷ তূর্জয় মিহুকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷

— “এই মেয়ে আমাকে ইগনোর করার সাহস কি করে হয়? আমার কথার জবাব কই? কোন প্রশ্ন করলে তার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবে।” চোখ পাকিয়ে বলে উঠে।

— মিহু কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে, ” আসলে আমি আপনার কথা বুঝতে পারিনি!”

— এখন কথা না বলে রেডি হয়ে তারাতাড়ি নিচে নেমে আসো৷ সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে৷

মিহু কিছু বলতে নিবেই তার আগেই রুম থেকে তূর্জয় হন হন করে বেরিয়ে যায় ৷ মিহুর কথা শুনার তার কাছে একটুও সময় নেই৷

মিহু নিজের মতো করে হালকা মেকআপ করে। হলুদ রঙের একটা লেহেঙ্গা পড়ে নিচে চলে আসে৷ রাতে রুম পরিষ্কার করার সময় কিছু তাজা ফুল মিহু লুকিয়ে রাখে। সেই ফুলগুলো দিয়ে কোনো রকম কেশগুলো বেঁধে রেখেছে৷ মিহু বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে আসতে ভয় পাচ্ছে৷ সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে৷ মিহু জানতো না, এখনও বাড়ি ভর্তি লোক থাকবে৷

তূর্জয়ের মা খেয়াল করে মিহু সিঁড়িতে আপসেট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তূর্জয়ের মায়ের বুঝতে বাকি রইল না মিহু ভয় পাচ্ছে। তিনি এগিয়ে এসে মিহুর কাঁধে হাত রাখে।

— এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো? নিচে চলো?

— ছোট ছোট করে ” আসলে মা আমি..

— বলতে হবে না। আমি সব বুঝি৷ চলো আমার সাথে৷

তূর্জয়ের মা মিহুকে নিচে নিয়ে এসে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়৷ মিহু তো ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছে৷ গতকাল থেকে কিছু খায়নি৷

— “ভাত কাপড়ের অনুষ্ঠানটা হয়ে যাক৷” পিসি মনি পিছন থেকে বলে উঠেন।

— হ্যাঁ ঠিক বলছো। ভাত-কাপড়ের অনুষ্ঠানটা হয়ে যায়৷ (তূর্জয়ের মা)

তূর্জয়ের মা মিহুকে ডাইনিং রুমে নিয়ে আসে৷ মিহু তো আবাক! এত বড় করে ভাত কাপড়ের আয়োজন করবে ভাবতেও পারেনি৷ তার থেকে বেশি অবাক তূর্জয়কে দেখে৷ তিনি তার বন্ধুদের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে৷ দেখে মনে হচ্ছে তূর্জয় এই বিয়েতে তিনি সব থেকে বেশি খুশি৷

ভালোই ভালোই ভাত কাপড়ের অনুষ্ঠান মিটে যায়৷ মিহু তো ভেবে নিয়েছিল তূর্জয় তার ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিবে না৷ কিন্তু তার ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিল তূর্জয়।

রাতের বেলা রিসিপশন পার্টিতে মিহু আর তূর্জয়কে পাশাপাশি বসানো হয়েছে৷ সবাই তাদের অনেক প্রশংসা করছে৷ হুট করেই তূর্জয়ের একটা ফোন আসে, তূর্জয় চলে যায় সেখান থেকে৷ তূর্জয়ের কিছু খারাপ ফ্রেন্ড মিহুকে ঘিরে ধরে,,

মিহুর কোমরে হাত দিয়ে পিছন থেকে নির্ঝর জড়িয়ে ধরে৷ মিহুর কানে কানে বলে উঠে ” মিহু পাখি তুমি কি করে পারলে তূর্জয়কে বিয়ে করতে?” আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।

— “ছাড়েন আমাকে? কে আপনি?” ক্ষেপে বলে উঠে মিহু।

— মিহু পাখি তুমি রাগ করলে তোমাকে খুব সুন্দর লাগে৷ তোমার গালগুলো স্ট বেরির মতোন হয়ে যায়।

মিহু আশে পাশে তূর্জয়কে দেখতেও পাচ্ছে না৷ সকলে মিহুকে চারিদিক থেকে ঘিরে রেখেছে৷ ভিতরে কি হচ্ছে কিছু দেখা যাচ্ছে না? মিহু কোন উপায় না পেয়ে নির্ঝরের পায়ে উঁচু হিল দিয়ে এক লাথি৷ লাথি সহ্য করতে না পেরে নির্ঝর মিহুকে ছেড়ে দেয়৷

— তোকে আমি ভালোই ভালোই বলেছিলাম আমাকে ছেড়ে দে। কিন্তু তুই আমার কথা শুনলি না৷ এইজন্য তোর এমন অবস্থা।

সবাই মিহুর দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই তূর্জয় এসে যায়৷

— কি হচ্ছে এখানে? (তূর্জয়)

তূর্জয়ের কন্ঠ পেয়ে সকলে একটু দূরে সরে দাঁড়ায়৷ তূর্ণ বলে উঠে ” বউদির সাথে কথা বলতে এসেছিলাম৷ কিন্তু বউদি আমাদের দেখে ভয় পেয়ে যায়৷ আমাদের সাথে কথা বলতেই চাইনা৷

— তূর্জয় মিহুকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ” দেখতে পাচ্ছিস মিহু কথা বলবে না। তাহলে কেন তাকে বিরক্ত করছিস?”

— একি মামা বউ পেয়ে আমাদের ভুলে গেলি৷ (তূর্ণ)

— দূর সা** তোদের কি ভুলা যায়? তোরা খেয়ে যাবি।

দূরে দাঁড়িয়ে নির্ঝর নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। কিছুতেই নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না নির্ঝর৷ তূর্ণ নির্ঝরের বিষয় বুঝতে পেরে নির্ঝরকে নিয়ে চলে যায়৷

তূর্জয় সেখানে মিহুকে কিছু না বলে মিহুকে নিয়ে রুমে নিয়ে আসে৷ রুমে এসে মিহুকে বিছানায় ফেলে দেয়৷

— ক্ষেপে বলে উঠে ” এত মানুষ থাকলে তাদের সামনে তোমাকে কে যেতে বলেছে?”

— আসলে আমার খুব জল পিপাসা লাগছিল। সেজন্য এক গ্লাস জলের জন্য ওয়েটারের কাছে যেতেই তারা আমাকে ঘিরে ধরে৷

— সে জায়গায় বসে কারো কাছে জল চাইলে নিশ্চয় কেউ না করত না৷

— আসলে আমি বুঝতে পারিনি তারা আমাকে এভাবে ঘিরে ধরবে।

— কেন? তুমি কি এখনও কচি খুঁকি? কিছু বুঝতে পারো না৷

— আমি কি জানতাম তারা আমার পথ আটকাবে?

তূর্জয় মিহুর কথা শুনে কিছুটা রেগে যায়। রেগে মিহুর হাত টান দিয়ে বিছানা থেকে তুলে। হঠাৎ পা স্লিপ করে মিহুর উপর পড়ে যায়৷ তূর্জয়ের ঠোঁট মিহুর ঠোঁটের সাথে লেগে যায়। দুই জনেই অবাক হয়ে যায়! তূর্জয় নিজেকে সংযত করে মিহুর উপর থেকে উঠে যায়৷

— সরি! আসলে এটা একটা এক্সিডেন!

মিহু তূর্জয়কে কিছু না বলে মুচকি হেঁসে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ তূর্জয় মিহুর মুচকি হাসির রহস্য উৎঘাটন করতে চাই৷ কিন্তু কিছুই উৎঘাটন করতে পারে না৷ চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে যায় তূর্জয়।

মিহু ওয়াসরুম থেকে এসে দেখতে পাই তূর্জয় বিছানায় আঁধা শুয়া অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে৷ মিহু তূর্জয়কে বিছানায় ভালো করে শুইয়ে দেয়৷ শুইয়ে রেখে চলে আসতে নিলেই তূর্জয় ঘুমের মাঝে মিহুর হাত টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়৷ মিহু নিজেকে ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়৷

মিহুর ভালো লাগা কাজ করে। সেজন্য মিহু নিজেকে আর ছাড়ানোর চেষ্টা করে না। এক দৃষ্টিতে তূর্জয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে ঘুমিয়ে যায়৷



সকালে পাখির কিচির মিচির শব্দে তূর্জয়ের ঘুম ভাঙে। ঘুম থেকে উঠে নিজের বুকের উপর মিহুকে আবিষ্কার করে। মুহুর্তের মাঝেই তূর্জয় রাগ উঠে যায়। তূর্জয় মিহুর চুলের মুড়ি ধরে মিহুর ঘুম ভাঙায়।

— “তোমাকে ভালোই ভালোই বলেছিলাম; তুমি আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না৷ কিন্তু তুমি লিমিট ক্রস করে ফেলেছো।” ক্ষেপে বলে উঠে

— ঘুম ঘুম ভাবে কিছু বুঝতে না পেরে, “কি হয়েছে? আপনি আমার চুল ধরে টানছেন কেন? কি দোষ করেছি আমি?”

— তোমার দোষ হলো তুমি আমার বিছানায় কি করছো? তোমাকে বলেছিলাম, তোমার সাথে আমি বেড শেয়ার করতে পারবো না৷

— “আসলে গতকাল রাতে আপনিই তো?” চোখ পাকানো দেখে থেমে যায়।

— “আমি কি?” চোখ পাকিয়ে বলে উঠে।

— চোখ বন্ধ করে মিহু বলে উঠে ” আমি আপনার কাছে আসতে চাইনি৷ আপনি নিজ থেকে আমাকে কাছে টেনে নিয়েছেন৷ আমার কোন ইচ্ছাই নেই আপনার কাছে আসার৷ আমার একটা সম্মান আছে৷ আমি কেন আপনার মতো বাজে লোকের কাছে আসার জন্য বাজে উপায় অবলম্বন করবো৷”

এমন ঘটনা ঘটতে পারে মিহু কল্পনাও করতে পারেনি।

চলবে….

ভালোবাসার বন্ধন পর্ব-০১

0

#ভালোবাসার বন্ধন
#পর্ব_০১
#অধির_রায়

“পরিবারের সম্মানের কথা বিবেচনা করে আমি তোমাকে বিয়ে করেছি৷ তোমাকে আমি কোনদিন স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবো না৷” তূর্জয় নরম স্বরে মিহুকে বলে উঠে।

— মিহু কান্না জড়িত কণ্ঠে বলে উঠে, ” আপনি কেন ছাঁদনা তলায় বিয়ে ভেঙে দিলেন না?”
“আপনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়নি৷ আপনার বিয়ে ঠিক হয়েছিল আমার দিদির সাথে৷ তখন এই কথা মনে ছিল না৷ ”

— আমি এক কথা দুই বার বলতে পছন্দ করি না৷ বিয়ের আসর থেকে চলে আসলে তোমার বিয়ের লগ্ন পেরিয়ে যেতো ৷ তুমি লগ্নভষ্টা হতে৷ তখন কিভাবে লোক সমাজে তুমি মুখ দেখাতে?


তূর্জয়ের বিয়ে ঠিক হয় মিহুর বোন ছোঁয়ার সাথে। ছোঁয়া পরিবারের চাপে বিয়েতে রাজি হয়৷ কিন্তু ছোঁয়া তূর্জয়কে ভালোবাসে না৷ ছোঁয়া ভালোবাসে অন্য কাউকে৷ বিয়ের আসর ছেড়ে ছোঁয়া পালিয়ে যায় একটা চিঠি লিখে৷ দুই পরিবারের সম্মান বাঁচাতে মিহুর স্বপ্নকে কবর দিতে হয়৷ মিহুকে তার দিদির পরিবর্তে বিয়ের আসরে নিয়ে আসা হয়৷

তূর্জয় বিয়েটা খুব খুশি। তূর্জয় সেই কলেজ লাইফ থেকে ছোঁয়াকে ভালোবাসে। কিন্তু কোনদিন বলার সাহস হয়নি৷ তূর্জয় অবশেষে নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাবে। এর থেকে বড় পাওয়া আর কিছু নেই৷ কিন্তু শুভদৃষ্টির সময় বিয়ের কনে বদল দেখে তূর্জয় খুব রেগে যায়৷

— বিয়ের মালা ফেলে দিয়ে, “ছোঁয়া কোথায়?” আমি এই বিয়ে করতে পারবো না৷ আমি ছোঁয়াকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো না৷

উপস্থিতি সবাই ছোঁয়ার নামে অনেক বাজে কথা বলতে শুরু করেন৷ বিয়ের আসর থেকে মেয়ে পালিয়ে গেছে সেই নিয়ে অনেকে ছোঁয়ার মা বাবাকে অপমান করতে থাকে৷ মিহুকেও কম অপমান সহ্য করতে হয়নি৷ অনেকে এটাও বলতে শুরু করে দেয় “মিহুর জন্য তার বোন ছোঁয়া পালিয়ে যেতে বাদ্য হয়েছে৷”

বড় বড় বিজনেস ম্যানরা চৌধুরীদেরও অপমান করতে থাকে৷ তারা বলতে থাকে ” মি. তিহান চৌধুরী আমরা এমনটা আশা করিনি। আপনি আমাদের বিয়েতে ইনভাইট করে এভাবে অপমান করবেন৷ আপনি আমাদের মূল্যবান সময়টুকু নষ্ট না করলেও পারতেন। এভাবে লোক হাসানোর কোন দরকার ছিল না ৷” (তিহান চৌধুরী হলো তূর্জয়ের বাবা)

— প্লিজ আপনারা একটু শান্ত হোন৷ কে বলেছে বিয়ে হবে না? এই বিয়ে হবে৷ তূর্জয় মিহুকে বিয়ে করবে। এটা আমার শেষ এন্ড ফাইনাল কথা৷

তূর্জয় তার বাবার কথা শুনে করুন চোখে তার বাবার দিকে তাকায়৷ তূর্জয় কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না? তিহান চৌধুরী নিজের সন্তানের এমন অবস্থা দেখে বুঝতে বাকি রইল না তূর্জয় কি বলতে চায়ছে?

— তিহান চৌধুরী এগিয়ে এসে তূর্জয়ের কাঁধে হাত রেখে বলে উঠেন, ” প্লিজ তূর্জয় তুমি আমাদের মান সম্মানের কথা একটু ভেবে দেখো৷ আজ তুমি এই বিয়ে না করলে আমার মান সম্মান কিছু থাকবে না সমাজে। আমরা সমাজ ছাড়া চলতে পারি না৷ সমাজের নিয়ম নীতি আমাদের মেনে চলতে হয়৷”

তূর্জয় তার বাবার অসহায়ত্ব দেখে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়৷

— বাবা আমি কিছুতেই তোমার মাথা নিচু হতে দিবো না৷ কোন ছেলেই চাই না তার বাবা মাথা নিচু করে সমাজে বেঁচে থাকুক৷ তুমি সব সময় মাথা উঁচু করে চলবে৷

তিহান চৌধুরী ছেলের এমন উদারতা দেখে মুগ্ধ হয়ে যান৷ তিহান চৌধুরীর অনুমতিতে বিয়ের আসর আবার পুনরায় নতুন করে শুরু করে৷ এবার কোন হাসি নেই তূর্জয়ের মুখে৷ মুখটা বাংলার পাঁচ করে রেখেছে৷ দেখে কেউ বলতে পারবে না তূর্জয়ের আজ বিয়ে৷ তূর্জয়কে দেখে মনে হচ্ছে এটা কোন শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান চলছে।

ভালোই ভালোই বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়৷ বাকি সকল নিয়মগুলো ধুমধামের সাথে আর পালন হলো না৷

বর্তমানে,,

— আপনি তো প্রথম বিয়ে করতে রাজি হননি। বিয়ে করতে কেন রাজি হলেন?

— তাহলে তুমিই বলো, তুমি কেন বিয়ের আসরে আসলে? তোমরা তো বলতে পারতে ছোঁয়া অন্য ছেলের হাত ধরে চলে গেছে৷ তাহলে তো কোন সমস্যা হতো না!

— ছোঁয়া চলে যাওয়াতে আমার মা বাবা ভেঙে পড়েন৷ যদি তারা এই কথা বিয়ের আসরে বলতেন, তাহলে সবাই তাদের অপমান করতো৷ এমনিতেও অনেক অপমান সহ্য করতে হয়েছে মা বাবাকে। তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি এই বিয়েতে রাজি হয়েছি৷

— যদি আজ তোমার বিয়ে না হতো, তাহলে তোমার সকল স্বপ্ন ধুলোয় মিশে যেত৷

— আমি তখন আমার কথা চিন্তা করিনি৷ আমার কাছে আমার পরিবার সবার আগে৷ আমি কিছুতেই নিজের পরিবারকে কারো কাছে মাথা নিচু করতে দিতে পারি না। তাদের মাথা সব সময় উঁচুতে রাখতে চাই৷

— তোমার ভাষণ বন্ধ হলে বাসর ঘর থেকে চলে যাও৷ তোমার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই৷ আর হ্যাঁ তুমি কোথায় যাবে? আমার কাছে কোন ম্যাটার করে না৷

— মানে কি বলতে চান? আমি আপনার অর্ধাঙ্গিনী। আপনার সব কিছুতে আমার অধিকার আছে৷

— “আমি এক কথা দুই বার বলতে পছন্দ করি না৷” ক্ষেপে বলে উঠে তূর্জয়।
.
মিহু তূর্জয়ের দিকে দৃষ্টি মেলে কিছু বলতে যাবে কিন্তু তূর্জয়ের চোখ পাকানো দেখে থেমে যায়৷ তূর্জয় মিহুর হাত ধরে বিছানা থেকে নামায়৷ একটা বালিশ মিহুর দিকে ছুঁড়ে বলে উঠে ” আজ থেকে তোমার জায়গা মাটিতে৷ ভুলেও আমার কাছে আসতে চেষ্টা করবে না৷”

মিহু তূর্জয়ের কথা শুনে কেঁদে ফেলে৷ মিহু জানতো তূর্জয় খুব ভালো ছেলে৷ কিন্তু তূর্জয় মিহুর সাথে এমন অন্যায় করবে মিহুর ভাবতে পারেনি৷ মিহু বালিশ নিয়ে ধপাস করে সোফায় বসে পড়ে৷

তূর্জয় রাগে গরগর করতে করতে বাসর ঘরের সকল ফুল ছিঁড়ে ফেলে৷ আর ফুলগুলো ছিঁড়ে মিহুর দিকে ছুঁড়ে মারে। যা মিহুকে আরও কষ্ট দেয়৷ নিজের কষ্ট নিজের মনের মাঝে লুকিয়ে রাখে৷ তূর্জয়কে আর কোন প্রশ্ন করে না৷

তূর্জয় ফুলগুলো ছিঁড়ে মিহুর উদ্দেশ্যে বলে উঠে ” আমি তোমাকে দুই মিনিট সময় দিলাম, রুমটা পরিষ্কার করতে৷ রুমে যেন একটা ফুলের পাপড়িও না থাকে৷

মিহু কিছু বলতে নিবে তার আগেই তূর্জয় হন হন করে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ মিহু আর কোন উপায় না পেয়ে কান্না করতে করতে রুম পরিষ্কারের কাজ শুরু করে৷

মেয়েরা বাসর ঘর নিয়ে কতই না স্বপ্ন দেখে৷ মিহুও অন্যদের মতো বাসর ঘর নিয়ে অনেক স্বপ্ন বুনেছে৷ কিন্তু তার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। তার জীবনে সেই স্বপ্নের কোন দাম নেই৷

মিহু অনেক কষ্টে সমস্ত রুম পরিষ্কার করে৷ তূর্জয় ওয়াসরুম থেকে এসে সোফায় বসে মনের সুখে ফোনে পাবজি খেলে যাচ্ছে৷ মিহুর কষ্ট তার চোখে একটুও পড়লো না৷

— মিহুর রুম পরিষ্কার করার পর বলে উঠে ” এখন কোন ফুল নেই৷ সম্পুর্ণ রুম পরিষ্কার করা হয়েছে৷”

— গুড জব৷

তূর্জয় আর কিছু না বলে ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়ে৷

মিহু বেলকনিতে বসে বসে কান্না করতে থাকে৷ মিহুর কি এমন দোষ ছিল? যার জন্য আজ তার এমন অবস্থা। মিহুর কান্নায় আজ পূর্নিমার চাঁদও কেঁদে উঠে মনে হয়৷ বার বার মেঘের মাঝে লুকিয়ে পড়ে।

মিহু কান্না করতে করতে বেলকনিতে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকাল বেলা তূর্জয় ঘুম থেকে উঠে দেখে মিহু রুমে কোথাও নেই৷ তূর্জয় ভাবে মিহু ঘুম থেকে উঠে নিচে চলে গেছে৷ তূর্জয় ফ্রেশ হয়ে দ্বার খোলতে নিলে দেখে দ্বার বন্ধ। তার মানে মিহু রুম থেকে বের হয়নি৷ তূর্জয় মিহুকে খোঁজার জন্য বেলকনিতে যায়৷ বেলকনিতে এসে দেখে মিহু ছোট বাচ্চার মতো মুখে বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। যা তূর্জয়ের সহ্য হলো না৷ তূর্জয় এক বালতি জল এনে মিহুর উপর ছুঁড়ে মারে৷

— “মা মা আমাদের বাসার ছাঁদ ফুটো হয়ে গেছে৷” চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে বলে উঠে মিহু৷

— বাসার ছাঁদ ঠিক আছে৷ কিন্তু ঘুমের সময় ঠিক নেই৷

মিহু চোখ মেলে দেখে, তূর্জয় চোখ পাকিয়ে মিহুর দিকে তাকিয়ে আছে৷ হাতে বালতি। মিহুর বুঝতে আর বাকি রইল না তূর্জয় মিহুর উপর জল ছিঁটে মেরেছে৷

মিহু ঘুম পাগলী৷ মিহু ঘুমাতে খুব ভালোবাসে৷ ঘুমালে তার কোন বিষয়ে খেয়াল থাকে না৷ ঘুমের মাঝে মিহু তার মাকেও ছেড়ে কথা বলে না৷

— আপনি আমার ভালো ঘুমটা ভাঙলেন কেন? জানেন আমি কত সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলাম!

— স্বপ্ন মাই ফুট৷ এখন কয়টা বাজে৷ সময় সম্পর্কে কোন ধারণা আছে৷ আর ভুলে যেও না এটা তোমার বাবার বাড়ি নয়। সকাল ১০ টা অব্ধি ঘুমাবে।

মিহু বুঝতে পারে তূর্জয়ের কথা৷ এখন তো তার বিয়ে হয়ে গেছে। আর শ্বশুর বাড়িতে বেলা অব্ধি ঘুমানো যায় না৷ শ্বশুর বাড়িতে বেলা অব্ধি ঘুমালে অনেকে অনেক বাজে কথা বলে৷

মিহু তূর্জয়কে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ শাওয়ার নিয়ে রুমে এসে দেখে তূর্জয় খুব রেগে তাকিয়ে আছে মিহুর উপর৷

— মিহু ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে ” এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

— তখন কি বললে?

— কখন?

— জল নিয়ে?

— কই কিছু নয়।

— আমি তোমার স্বপ্ন ভেঙেছি৷

— হুম আপনিই আমার স্বপ্ন ভেঙেছেন৷ আপনার জন্যই আজ আমার এমন অবস্থা।

— মিহুকে দেয়ালে চেপে ধরে ” কি বললে? ”

এত জোরে চেপে ধরে মিহু সহ্য করতে না পেরে কান্না করে দেয়৷

চলবে….

অবহেলার সংসার পর্ব-১২(শেষ পর্ব)

0

#অবহেলার সংসার
#Imran_khan
#পর্ব_শেষ

আপনি বিছানার মধ‍্যে উঠতেছেন কেনো।

বিছানার মধ‍্যে না উঠলে ঘুমাবো কেমন করে!বাহির থেকে মনির সাথে ফোনে কথা বলে রুমে এসে দেখি জান্নাতুন পুরো বিছানা দকল করে শুয়ে আছে।আমি যেমনি বিছানায় শুয়ার জন‍্য বিছানায় উঠবো তাতে বলতেছে)

এখনি আপনি বিছানা থেকে নামুন বলতেছি,

আরে তুমি এমন করতেছো কেনো এমনিতে অনেক রাত হয়েছে সকালে আবার অফিসে যেথে হবে।

এমন করতেছি কারন আপনি বিছানায় ঘুমাতে পারবেন না ,আমার সাথে!

তাহলে আমি কই ঘুমাবো?

কই মানে , ওই যে সোফা দেখতেছেন না আপনি ওখানে গিয়ে ঘুমান।

আরে তুমি তো ভালো করে জানোই আমি সোফাই ঘুমাতে পাড়ি না, তাবুও কেনো সোফায় ঘুমাতে বলতেছো।

জানি দেখে তো বলতেছি।তাই ভালোই ভালো সোফাই গিয়ে সুয়ে পড়ুন।আপনি তিন মাস আমার সাথে এক বিছানায় শুতে পারবেন না।

জান্নাতুন এটা কিন্তু শর্ত মধ‍্যে ছিলো না যে,আমি বিছানার মধ‍্যে তোমার সাথে শুতে পারবো না।

আগে ছিলো না, এখন মনে পড়ছে দেখে বললাম।এখন ভালো লক্ষী ছেলের মতো এই বালিস-কম্বল নিয়ে সোফাই গিয়ে সুয়ে পড়ুন।

এটা কিন্তু আমার উপরে বেবিচার হচ্ছে ।

আপনার জন‍্যই এটাই সুবিচার।

ঠিক আছে।কি আর করার বউ এর কথা শুনতেই তো হবে?আমি বালিস আর কম্বল নিয়ে সোফাই গিয়ে বসলাম।এখন বালিস আর কম্বলেই আমার জীবন সঙ্গী।

ও আর একটা কথা,

আবার কি হলো,বলো কি কথা?

আজকে রাত থেকে দিন গুনা শুরু।ঠিক তিন মাস দেখবো যদি ভালো হন তাহলে স্বামী হিসাবে মেনে নিবো আর না হলে বুঝতেই পারতেছেন।আর যেগুলো শর্ত দিয়েছি সব গুলো মনে আছে তো।

হুম, অক্ষরে অক্ষরে মনে আছে।

হুম মনে থাকলেই ভালো।গুট নাই ,আল্লাহ্ হাফেজ!

গুট নাইট।তারপর আমিও সোফায় সুয়ে পড়লাম।কম্বটা পা থেকে কোমর থেকে ঢেকে দিলাম যেনো মোশা ডিস্টাব করতে না পারে।ফোনটাতে আবার এলার্ম দিয়ে রাখতে হবে না হলে ফজরে নামাজ পড়তে পারবো না।আর প্রথম শর্ত ছিলো পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়া তাই এটা কখনো মিচ করা যাবে না।তাই আমি ফোনে ভোর 4:০০ টার এলার্ম দিয়ে দিলাম।তারপর ফোনটা পাশে রেখে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি কখন যে ঘুমাই গেছি বুঝতে পারি নিই।হঠাৎ করে এলার্ম এর শব্দ শুনে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা হাতে নিয়ে এলার্মটা বন্ধ করে দিলাম।এলার্ম বন্ধ করে দিয়ে আবার চোখ দুটো বন্ধ করে সুয়ে আছি।হঠাৎ করে মনে হলো আমাকে মসজিদে যেথে হবে নামাজ পড়তে তাই ধরফর করে সোফা থেকে উঠে ফোনটা হতে নিয়ে দেখি ৪:২০ বাজতেছে।আর দেড়ি না করে সোজা ওজু করতে বাথরুমে চলে গেলাম।ওজু করে এসে পান্জাবিটা পড়ে টুপি মাথায় দিয়ে মসজিদে যাওয়ার জন‍্য হাটা শুরু করলাম।কতো দিন পরে পান্জাবি -টুপি পড়ে নামাজ পড়তে যাচ্ছি মসজিদে নিজেই জানি না ।

ঘুম থেকে উঠে প্রথমে সোফায় চোখ দুটো গেলো আমার কিন্তু সোফার মধ‍্যে কেউ নেই কালকে রাতে তোও নি ঘুমিয়েছিলেন তাহলে ওনি কই গেলেন? রাগ করে কোথাও চলে গেলো না তো রাতে।ধূর আমি কেনো এতো টেনশন করতেছি ওনি কই যায় যাগ আমার কি বাসা ছেড়ে কই যাবে পালালেও আবার এই বাসাতেই ফিরে আসতে হবেই?যাই ফজরের নামাজটা পড়তে যাই।ওজু করে এসে নামাজ পড়ে নিলাম।তারপর রুম থেকে বাহির হয়ে দেখি চারিদিকে ফটফটা হচ্ছে।অন্ধকার থেকে আলোই পরিনত হচ্ছে।ফজরের নামাজ পড়ার পরে আল্লাহ্ বান্দার জন‍্য এতো সুন্দর একটা আবহাওয়া দিয়েছে শুধু তারাই উপভোগ করতে পারে যারা ফজরের নামাজ পড়ে।শান্তীময় আবহাওয়া মন প্রান জুরে যায়।সকালের পরিবেশটাও আমার অনেক সুন্দর লাগে তাই আমি প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ে বেলকোণিতে এসে সুন্দর সকালটা উপভোগ করি।দেখতে দেখতে চারিদিকে আলো ময় হয়ে গেলো।তাই বেলকোণিতে না থেকে নিচে আসতেছি নাস্তা তৈরি করতে।নিচে এসে দেখি আমার শাশুড়ি মা আমার আগে রান্না ঘরে এসেছে।তাই আমিও রান্না ঘরে গেলাম,

বউ মা তুমি এসেছো।

হুম মা।

তাহলে আমার কাজে একটু সাহায্য করো।

ওকে মা।তারপর আমি আমার শাশুড়ি মাকে রান্নার কাজে সাহায্য করতেছি।একে একে সব রান্নার কাজ শেষ হলো।

বউমা আমার ছেলে কই , এখনো নিচে আসতেছে না কেনো আর হলে তো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নাস্তা চাইতো কিন্তু এখনো আসতেছে না কেনো ও কি অসুস্হ নাকি?

এই এখন মাকে কি বলি সত‍্যটা বলবো নাকি বলবো না আবার ভয় ও করতেছে?না পরে যা হবে দেখা যাবে সত‍্যটা বলি তাহলে,
অসুস্হ হবে কেনো মা ওনি তো সুস্হ কিন্তু,

কিন্তু কি বউ মা?

কালকে রাতে আমরা দুইজনে এক সাথে ঘুমিয়েছিলাম কিন্তু ফজরে নামাজ পড়তে উঠে দেখি আপনার ছেলে রুমের ভিতরে নাই।

কি বলো বউ মা আমার ছেলে কই গেলো তাহলে?তোমরা রাতে ঝগড়া করছো নাকি,

কে কার সাথে ঝগড়া করছে মা,

আমি আর মা এই কথা শুনে দরজার সামনে দেখে অবাক কারন ঈমান পান্জাবি আর টুপি পরে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।আমি এই অবস্হায় ওনাকে দেখে একবারে বিদ‍্যুৎ এর শক খাওয়ার মতো অবস্হা।

বউ মা আমি যা দেখতেছি তুমিও কি তাই দেখতেছো?

হুম মা আপনিও যা দেখছেন তাই আমিও দেখতেছি।

আচ্ছা তোমরা আমাকে এমন ভাবে দেখতেছো কেনো।আর মা তুমি কি নিজের ছেলেকে দেখেও চিনতে পারতেছো না?

আচ্ছা আমি কি দিনের বেলা স্বপ্ন দেখতেছি নাকি বউ মা আমাকে একটু চিমটি কাটো তো যে ছেলে আমার শুক্রবারের মসজিদে যায় না সে আবার সকালে উঠের পান্জাবি আর পুটি পড়ে সকালে উঠে বাহিরে গিয়েছে।

হয়েছে মা আর নাটক করতে হবে না খুদা লাগছে খেতে দাও।সব সময় মানুষ এক থাকে না।

আচ্ছা বাবা তুই আগে আমাকে বল তুই এগুলো পড়ে কই গিয়েছিলি।

কই যাবো আবার মসজিদে গিয়েছিলাম নামাজ পড়তে।

আলহামদুলিল্লাহ্ তুই যে ভালোর পথে পা বাড়িয়েছিস এটাই অনেক।

ভাইয়া তুই এতো চেন্জ হলি কেমন করে।যেখানে মা -বাবা তোকে নামাজ পড়তে হাজার বার বলেছে তাও মসজিদে নামাজ পড়তে যাস নাই কিন্ত আজকে ঠিক নামাজ পড়তে গেছিস।

সবেই তো ভাবি জন‍্য।আজকে থেকে আর কোন অন‍্যায় কাজ করবো না সব সময় ভালো কাজ করার চেষ্ট করবো।সব সময় মানুষ কি খারাপ থাকে নাকি,আমিও অনেক পাপ করেছি তাই এখন আল্লাহ্ কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

তুই যে ভালো হয়েছিস এটাই আমাদের জন‍্য অনেক আর ভাবি তোমাকে অসংখ্যা ধন‍্যবাদ তোমার স্বামী কে ভালো পথে আনার জন‍্য।

হয়েছে এখন ধন‍্যবাদ দিতে হবে না, এখন সবাই খেতে বসো।

ঠিক বলেছো ভাবি আমারো খুদা লেগেছে।

তাহলে বসে পড়ো সবাই।

তারপর সবাই এক সাথে নাস্তা করলাম।নাস্তা করে যে যার কাজে চলে গেলেন।শুধু বাসায় পড়ে রইলাম আমি আর আমার শাশুড়িমা ।

দেখতে দেখতে তিন মাস পূরন হলো আজকে।তাই অফিস থেকে বাসায় যাচ্ছি।অবস‍্য প্রতিদিন যে টাইমে অফিস থেকে যাই সেই টাইমে যাচ্ছি বাসায়।আমাকে যা যা শর্ত দিয়েছিলো তা সব শর্ত পালন করেছি।সবচেয়ে কষ্ট কর শর্ত ছিলো জান্নাতুন এর সাথে কথা বলতে না পারায়।আমি আর আগে ঈমান নাই,আমাকে ভালো পথ দেখিয়েছে আমার বউ।আমি দোয়া করি আল্লাহ্ যেনো প্রত‍্যেক ঘরে ঘরে এমন বউ দেয় যেনো স্বামীকে খারাপ পথ থেকে ফিরিয়ে এনে ভালো পথে আনে, স্বামী খারাপ শুনে ছেড়ে না দিয়ে।বাসায় চলে আসলাম।বাসার ভিতরে ঢুকে চারদিকে জান্নাতুনকে খুজতেছি কোথাও পাচ্ছি না হঠাৎ করে ভয় হতে শুরু করলো তাহলে কি আমাকে ছেড়ে চলে গেলো?না ও আমাকে কখনো ছেড়ে যেথে পারে না আমি দৌড়িয়ে রুমে ভিতরে ঢুকে অবাক কারন রুমের ভিতরে ঢুকে দেখি আমার বউ সেই তিনমাস আগে দেওয়া নীল শাড়ি পড়ে নতুন বউ এর মতো বিছানার উপরে বড় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।
আমি কাছে গিয়ে বলতেছি,

আমি কি আজকে কথা বলতে পারি তোমার সাথে আজকে তো তিন মান পূর্ণ হলো আর আমাকে ক্ষমা করেছো তো?

এক সাথে এতো প্রশ্ন করলে কোনটা ছেড়ে কোনটার উত্তর দিবো।

ঠিক আছে আগে বলো আমাকে ক্ষমা করছো।

হুম করতে পারি এক শর্তে,

আবার শর্ত আচ্ছা বলো দোষ যখন করেছি তখন তো মানতেই হবে,

শর্ত হচ্ছে আমাকে মন প্রান দিয়ে ভালোবাসতে হবে আর কখনো আমাকে কষ্ট দিবেন না বা কখনো ছেড়ে যাবেন না।তাহলে আপনাকে ক্ষমা করতে পারি।

ওকে কথা দিলাম আর কখনো তোমাকে কষ্ট পেতে দিবো না।আমার মনের ভিতরে তোমাকে পুতুলের মতো যত্ন করে রাখবো।আচ্ছা একটা কথা বলি,

হুম বলো,

আমি কি তোমার ঘোমটাটা তুলতে পাড়ি?

আপনার বউ আপনি কি করবেন সেটা আপনি যানেন?

ঠিক আছে আমার যখন বউ তখন আমার ইচ্ছা।তারপর আমি ঘোমটাটা তুলে চাঁদের মতো সুন্দর মুখ খানা দেখে বউ এর উপরে ক্রাস খাইলাম।মাস্আল্লাহ্ আমার বউ তো চাঁদের চেয়ে অনেক সুন্দর।

এমন করে বলিয়েন না আমার বুঝি শরম লাগে না।

বউ শুনো না চলো আমরা আবার নতুন করে সংসার শুরু করি আগে কথা ভূলে গিয়ে।

আমি তো এটাই চাই।

তাহলে হয়ে যাগ নতুন করে বাসর করা।নতুন করে যখন সংসার শুরু করতেছি ।

আপনার মুখে কোন কিছু আটকায় না।পাঠকরা শুনতেছে যে আমার লজ্জা করতেছে ।

এই যে পাঠক বন্ধুরা আপনারা একটু চোখ কান বন্ধ রাখুন আমাকে আগে শুভ কাজটা একটু করতে দিন আপনাদের জন‍্য আমার বউ লজ্জা পাচ্ছে।তারপর সবেই ইতিহাস।

সমাপ্ত,,

আবারো আসতেছি আপনাদের মাঝে এই গল্পের সিজন টু নিয়ে তাই আবার সবাই পাশে থাকবেন।

অবহেলার সংসার পর্ব-১১

0

#অবহেলার সংসার
#Imran_khan
#পর্ব_১১

ভাইয়া তোর হাতে কি ওগুলো আমাকে দেখা দেখি?

আরে এগুলো কিছু না এমনি।(বাসার ভিতরে ঢুকতেই এশা আমাকে জিগ‍্যেসা করতেছে )

কি এমন দেখা বলতেছি না হলে বাবাকে বলে দিবো?

এশা তুই শুধু শুধু বাবার ভয় দেখাস কেনো রে।

তোকে বাবার ভয় দেখাবো না তো কার ভয় দেখাবো বাবাকে ছাড়া কি তুই আর কাউকে ভয় পাস?আচ্ছা যাই হোক বাবাকে কিছু বলবো না,এখন তুই আমাকে ওই ব‍্যাগের ভিতরে কি আছে দেখা?

না দেখলে হয় না বোন।তোকে একশো টাকা দিচ্ছি তাও দেখতে চাস না ।

এই আমি কি ফকির নাকি যে আমাকে একশো টাকা দিবি?দেখা বলতেছি না হলে,বাবাকে এখনে ডাকতেছি।

হয়েছে আর বাবাকে ডাকতে হবে না, দেখাচ্ছি ব‍্যাগের মধ‍্যে কি আছে?তারপর ব‍্যাগ টা ওর হাতে দিয়ে পাশে দাড়িয়ে আছি।এশা ব‍্যাগটা হাতে নিয়ে নীল শাড়িটা আর ফুলগুলো বাহির করলো।বাহির করে বলতেছে,

সত‍্যি করে বলতো ভাইয়া এগুলো কারজন‍্য কিনেছেন।আমার জন‍্য নাকি ভাবির জন‍্য।

আমার ওতো শক নাই তোকে শাড়ি আর ফুল দেওয়ার।তোর জামাই তোকে ওগুলো দিবে।শাড়ি আর ফুলগুলো তোর ভাবির জন‍্য কিনেছি।কয়েক দিন থেকে বলতেছে ব‍্যস্হতার জন‍্য কিনে দিতে পাড়ি নি।আজকে তোর ভাবি খুবেই ক্ষেপে গেছে তাই না কিনে উপাই পাইলাম না?

তাই বলে তুই শুধু তোর বউ এর জন‍্য মার্কেট করে আনবি তোর নিজের বোনটাকে রেখে।

আচ্ছা যা তোকে একদিন মার্কেট করতে নিয়ে যাবো এখন এগুলো আমাকে দে আর তোর ভাবির আগে রাগ ভাঙ্গাতে হবে।

ঠিক আছে তোমার জিনিস তুমি নেও।

দে তার পর আমি এশার হাত থেকে ফুলগুলো আর শাড়ির ব‍্যাগটা নিলাম ।
এশা তোর ভাবি কই আছে রে এখন।

কই আবার থাকবে রুমের আছে মনে হয়।

ওকে।তারপর আমি সোজা আমার রুমে চলে আসলাম।রুমে এসে দেখে জান্নাতুন বিছানায় সুয়ে আছে।আমি ধীরে ধীরে বিছানার দিকে যাচ্ছি।তারপর বলতেছি,

ওগো বউ তুমি কি করো?

দেখতেই তো পারতেছেন আমি কি করতেছি তাও বলেন কেনো আর আপনাকে না তখন বললাম আমাকে বউ বলে ডাকবেন না?

বউকে বউ বলে ডাকবো না তো কি বলে ডাকবো?

আমার নাম ধরে ডাকুন তাও বলবেন না আমাকে।আপনার কোন অধিকার নাই আমাকে বউ বলার।

বউ বলার অধিকার আছে না আছে সেটা তুমি আমি ভালো করে জানি ওকে।তবে শুনো না বউ তোমার জন‍্য একটা গিফ্টআছে।

আমার কোন গিফ্টের প্রয়োজন নাই আপনার জিনিস আপনার কাছে রাখুন।

তুমি শুধু শুধু রাগ হচ্ছো আমি কি রাগার মতো কিছু বলেছি?

আপনার কথা শুনলেই আমার বিরক্ত লাগে।তাই আমার সাথে কথা না বললেই ভালো।

এটা তুমি কি বললা,দশটা না, পাঁচটা না একটাই বউ আমার সেই বউ বলে কি না তার সাথে কথা না বললেই ভালো?আমি তো কথা না বললে মরেই যাবো।

আপনার এই ন‍্যাকামো কথাগুলো শুনলে তো আরো আমার শরীর জ্বলে যাই।

কি জ্বলে জ্বলুক আমি পানি দিয়ে ঠান্ডা করে দিবো?

ধূর আপনার সাথে কথা বলা মানে বেকার।আপনি রুমে থাকুন আমি গেলাম।

এই তুমি কোথায় যাও শুনো তোমার সাথে খুবেই জরুরি কথা আছে।(পিছন থেকে হাত ধরে বলতেছি )

আপনি আমার হাতটা ছারুন।

হাত ছারবো না,তুমি আগে আমার কথা শুনো।হাত ছেড়ে দিলে তুমি পালায় যাবে আর আমার জরুরি কথা বলা হবে না।

আমি আপনার কোন কথা শুনতেই চাই না তাই ভালোই ভালোই আমার হাতটা ছেড়ে দিন না হলে ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।

কিসের ভালো হবে না শুনি,নিজের বউ এর হাত ধরতে ভালো হওয়া আর না হওয়ার কি আছে?

এখন বউ বলে দাবি করতেছে আগে কই গেছিলো এই দাবি যখন না বলার সত‍্যে হাজার কষ্ট দিয়েছিলেন।এতোই যখন বউ দাবি করেন তাহলে আমার কথা না শুনে কেনো নষ্ট করে দিলেন পৃথিবীতে আসার আগে।আপনার তো কোন কষ্ট নাই থাকবে কেনো,আপনার তো কোন কিছু হারায় নাই,হারিয়েছি তো আমি আমার সন্তানকে যাকে তার বাবা নিজ হাতে হত‍্যা করেছে।

সত‍্য তো বলেছে জান্নাতুন এর কথাগুলো শুনে কষ্ট লাগতেছে আগে যে কেনো এমন লাগে নাই যদি আগে এমন কষ্টতা বুঝতে পারতাম তাহলে এইদিনটা দেখতে হতো না।

এখন কেনো চূপ করে আছেন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।আমি জানি আপনি আর কিছু বলতে পারবেন না তাই বলতেছি হাতটা আমার ছেড়ে দেন আমি রুমের বাহিরে চলে যাবো।

জান্নাতুন প্লিজ আমার কথাটা একটু শুনো,

আপনার কথা আজকে কেনো শুনবো,সেদিন তো আপনি আমার কথা শুনেন নাই আমিও তো আপনার চেয়ে হাজার বার ভিক্ষা চেয়েছিলাম আমার সন্তানের কই আমার তো কথা আপনি শুনেন নাই শেষে কি করলেন আমাকে মেরে হাসপাতালে ভর্তি করে আমার abortion করালেন।আমার বাচ্চাটাকে পৃথিবীতে আসার আগে মেরে ফেললেন।তাই আমিও আজকে আপনার কোন কথা শুনতে চাই না।

আমি মানতেছি অনেক বড় অপরাধ করেছি কিন্তু বিশ্বাস করো এখন আমি ভালো হয়ে গেছি।আমি এখন চাই তোমার সাথে সুখ-দুঃখের সংসার করতে যেখানে থাকবে তোমার আর আমার একটা কন‍্যা সন্তান।আমাদের হবে সুখের সংসার।

আমাকে হাসালেন আপনি,একদিনে কেউ ভালো হয়ে যায় আজকে প্রথম শুনলাম।আপনার মতো মানুষ কখনো ভালো হতে পারে আমার বিশ্বাস হয় না।আপনার কপালে সুখের সংসার লেখা নাই।

প্লিজ তুমি এভাবে বলো না।আমি যেগুলো অপরাধ করছি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।তোমাকে কথা দিচ্ছি আর কোন দিন আর অন‍্যায় কাজ করবো না।প্লিজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দেও তোমার পা দুটো ধরি।

আরে আপনি এটা কি করতেছেন স্বামী হয়ে স্ত্রীর পা ধরতেছে এটা কখনো ভালো দেখায় না তাই প্লিজ আপনি আমার পা ছেড়ে দিন?

আমি তোমার পা ছাড়বো না যতোক্ষন না তুমি আমাকে ক্ষমা করতেছো।

আচ্ছা আমি আপনাকে ক্ষমা করবো আগে তো আপনি আমার পা ছাড়ুন।

সত‍্যি আমাকে ক্ষমা করে দিবে তো,

সত‍্যি তো বলতেছি এখন আমার পা ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ান।

হুম এই যে সোজা হয়ে দাড়ালাম এখন বলো আমাকে ক্ষমা করছো কি না?

একটু দাড়ান ভেবে দেখি,

ঠিক আছে যতো খুশি ভাবো কিন্তু আমাকে ক্ষমা করেই দিতে হবে।

আমি ভেবে দেখলাম যে,আপনাকে ক্ষমা করতে পারি কিছু শর্ত‍ে যদি আপনি মানেন,

কিসের শর্ত,

যদি মানেন তাহলে আপনাকে ক্ষমা করতে পারি,

ঠিক আছে কিন্তু আগে শর্ত‍ের কথাগুলো তো বলো ,

হুম বলতেছি,প্রথম শর্ত হচ্ছে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্তা নামাজ মসজিদের গিয়ে জামায়াতের সাথে পড়তে হবে,দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে আপনার রাগ একটু বেশি তাই রাগকে চেক দিতে হবে এবং বড়দের শ্রদ্ধা এবং সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে হুট হাট করে রাগা যাবে না।তৃতীয় শর্ত হচ্ছে আমি না বলা পর্যন্ত আমাকে স্পর্শ করতে পারবেন না, চার নাম্বার শর্ত তিন মাস এভাবে চলতে হবে কোন কথা বলা যাবে না আমার সাথে।যদি এই চারটা শর্ত তিন মাস মেনে চলতে পারেন তাহলে আপনাকে ক্ষমা করতে পারি।

এক থেকে তিন নাম্বার শর্ত গুলো মানতে আমার কোন অসুবিধা নেই কিন্তু তুমি চার নাম্বার শর্তটা তুলে নেও তোমার সাথে তিনমাস কথা না বলে থাকতে পারবো না।

তাহলে আপনাকে আর ক্ষমা করতে ও পারবো না।

আচ্ছা ঠিক আছে তোমার সব শর্ত মানতে রাজি আছি।কিন্তু আজকে আমার একটা কথা রাখবে প্লিজ,

আচ্ছা বলেন যদি রাখার মতো হয় তাহলে রাখবো, না হলে নাই।

প্লিজ এমন ভাবে বলো না,

আচ্ছা বলেন কি কথা আছে আপনার?

এই ব‍্যাগটা রাখো তোমার কাছে,

ব‍্যাগের মধ‍্যে কি আছে?

একটা নীল শাড়ি আর কিছু ফুল আছে।এই শাড়িটা আজকে শুধু রাতে পড়ে আমার সামনে একটু আসবে।আমি দেখতে চাই আমার বউকে নীল শাড়িতে কেমন লাগে।

ঠিক আছে পড়বো কিন্তু আমার শাড়ি পড়া দেখে যেনো আপনার মাথা নষ্ট না হয়ে উল্টা পালটা কাজ না করে বসেন।

সেই রকম কিছুই করবো না,শুধু একটা নজর শাড়ি পড়া অবস্হায় দেখতে চাই তোমাকে।

ওকে।

দেখেন তো আমাকে কেমন লাগতেছে।

মাস্আল্লাহ্ আমার বউটাকে তো অনেক সুন্দর লাগতেছে নীল শাড়ি পড়ে।

ধন‍্যবাদ,এবার তাহলে আমি যাই এগুলো খুলে এসে শুয়ে পড়ি।

আরে এগুলো খুলতে হবে না,তুমি এগুলো পড়েই শুয়ে পড়ো সমস‍্যা নেই।তোমাকে যে,কতো সুন্দর লাগতেছে বলে বুঝাতে পারবো না।ইচ্ছা করতেছে তোমাকে এখনি,

হয়েছে থামেন থামেন আপনার ইচ্ছা আপনার কাছে রাখুন।আমি শাড়ি পড়ে ঘুমাবো আর আপনি মাঝ রাতে উঠে আমার নগ্ন শরীরটা দেখে আমার উপরে ঝাপিয়ে পড়বেন আমি মনে হয় কিছুই বুঝি না।

আমি সত‍্যি ভালো হয়ে গেছি জান্নাতুন বিশ্বাস করো আমাকে।

আমি জানি একটা মেয়ে সুন্দর করে সাজলেই আর যদি কোন ছেলে দেখে তখন তো আর লোভ সামলাতে পারে না।তেমনি আপনার কথায় আপনার দেওয়া শাড়ি আর ফুল গুলো পড়ে এসে আপনাকে দেখাচ্ছি, এখন আপনার লোভ সামলাতে পারতেছে না,আমাকে দেখে।যদি আপনার লোভ সামলাতে নাই পারবেন তাহলে আমাকে এগুলো পড়তে বললেন কেনো।আপনি কখনো ভালো হতে পারবেন না,শুধু শুধু ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করতেছে।আপনার ভিতরে একটা জানোয়ার আছে,আর যার ভিতরে জানোয়ার থাকে সে কখনো ভালো হতে পারে না।

জান্নাতুন তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে।

আপনি এটারে প্রাপ্প ছিলেন।আর একটা কথা যদি এই তিন মাসে দেখি আপনি ভালো না হন তাহলে আপনাকে রেখে চলে যাবো তখন পুরো পৃথিবী ধরে খুজলেও আমাকে খুজে পাবেন না।

আচ্ছা যাও তোমার ইচ্ছা শাড়ি পড়ে থাকবে না কি খুলে রাখবে?আর তুমি আবার কই যাবে?

কই যাবো সেটা আপনাকে কেনো বলবো হ‍্যা আমার দুচোখ যেদিকে যাই সেদিকে চলে যাবো তাও এই অবহেলার সংসারে আর পড়ে থাকবো না,যেখানে পাইনা কোন নিজের সম্মান,অধিকার সেখানে থেকে কি করবো আর এমন একটা স্বামী পেয়েছি যে কিনা শুধু আমার শরীরকে ভালোবাসে?চাহিদা পূরন হলে আমাকে আর চিনেই না।

তুমি আমাকে তিন মাস টাইম দিয়েছো না,আমি এই তিনমাসে ভালো হয়ে দেখাবো তোমাকে আর তোমাকেও আর কোথাও যেথে দিবো না।তোমার সম্মান,অধিকার সব ফিরিয়ে দিবো আর একজন ভালো স্বামী হয়ে দেখাবো কথা দিলাম।
জান্নাতুন কই যাচ্ছো এতো রাতে?

শাড়ি চেন্জ করতে আপনার সামনে তো আর চেন্জ করতে পারবো না।আপনার সামনে চেন্জ করলে আবার কখন আমাকে দেখে আপনার মাথা ঠিক না থাকতে পারেন পুরুষ মানুষ বলে কথা।

ঠিক আছে তুমি রুমে ভিতরে চেন্জ করো আমি বাহিরে যাচ্ছি তোমাকে বাহিরে যেথে হবে না।

আরে আপনি থাকেন আপনার ঘর আর আপনি বাহিরে যাবেন কেমন দেখায় না।

তুমি কিন্তু আমাকে কথা কথা অপমান করতেছো আমি তো ভালোর জন‍্য বলতেছি আর তুমি আমাকে অপমান করতেছো।এটা কি শুধু আমার রুম তোমারো তো এই রুম?এক কথায় যাকে বলে আমাদের দুইজনের রুম এটা তাই তুমি রুমেই চেন্জ করো আমি বাহিরে যাচ্ছি।

ঠিক আছে আপনি তাহলে বাহিরে যান।(আর বেশি কথা বললাম না কারন যতো কথা বলবো ততোই বাড়বে কথা।)
কি হলো এখনো বসে আছেন কেনো বাহিরে যান?

হুম যাচ্ছি যাচ্ছি এতো তাড়া কিসের?

যান তো ফালতু ছেলে কোথাকার।

ওই আমি ফালতু ছেলে না, আমি তোমার স্বামী হই এভাবে বলতেছো কেনো।

স্বামী মাই ফ্রুট।

আমি আর কথা না বলে সোজা রুমের বাহিরে চলে আসলাম।যে কথা বলেছে ওখানে কথা বলার ভাষায় হারিয়ে ফেলেছি।আমি কি এতোটাই একটা খারাপ ছেলে?নিজের স্ত্রী এখন স্বামী হিসাবে মানতেছে না।একটা সম্পর্কে ফাটল ধরাতে হলে অবহেলা,অত‍্যাচার করলেই হবে।কিন্তু আল্লাহ্ আমার সংসারটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।কতোই না অবহেলা,অত‍্যাচার করেছি জান্নাতুনকে তাও আমাকে ছেড়ে যাই নাই।তখন আমি জান্নাতুন কে বুঝি নিই আর এখন জান্নাতুন আমাকে বুঝতেছে না।
হঠাৎ করে ফোনটা বেজে উঠলো তাই ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি মনি ফোন দিয়েছে তাই ফোনটা রিচিস করতেই বলতেছে,

কিরে ফালতু ছেলে তোর বউ এর কি খবর তোকে মেনে নিয়েছে কি?

মনি তুইও আমাকে ফালতু ছেলে বলতেছিস।

কেনো রে আমি বাদে অন‍্য কেউ কি এই কথা বলেছে নাকি?

হুম আমার বউ বলেছে এই কথা রে।

ঠিকে তো বলেছে ।আচ্ছা এগুলো বাদ দে আগে বল তোর বউ তোকে মেনে নিয়েছে কি?

না নেই নাই।

কেনো রে আর আমার মনে হয় তোর কপালে আর বউ নাই। তোকে তোর বউ মেনেও নিবে না কোনদিন ,আর বউ কপালে জুটবেও না,সুযোগ একবারে আসে কপালে সেটা তুই কাজে লাগাতে পারিস নাই এখন বসে বসে কান্না কর।হিরার ঢুকরা একটা বউ পেয়েছিস কিন্তু তুই তার অপব‍্যবহার করেছিস।কথা আছে যে,
কিছু কিছু পাপের শাস্তি দুনিয়াতে ভোগ করতে হয় সেই রকম তোর পাপের শাস্তি পাচ্ছিস।

আরে আমার কথা শেষ না হতেই তুই সেই থেকে বক বক করে যাচ্ছিস।

এ আমি কই বক বক করলাম আমি তো ভালো কথায় বললাম।আচ্ছা বল এবার তোর কথায় শুনি,

তাহলে শুন আমাকে তিন মাস সময় দিয়েছে এই তিনমাসের ভিতরে ভালো না হলে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।

তাই তাহলে তো ভালো,

হুম ভালোই তো কিন্তু আবার তিনটা শর্ত দিয়েছে,

কিসের শর্ত রে,

তারপর আমি সব শর্তের কথাগুলো বললাম,

আমার মনে হয় না তুই এগুলো করতে পারবি না।

কেনো পারবো না,না পারলেও আমাকে পারতেই হবে।

তাহলে এখন চেষ্টা করতে থাক ধীরে ধীরে হয়ে যাবে।

হুম আমার জন‍্য দোয়া করিস রে ওকে আমি যদি আল্লাহ্ পথে চলতে পারি এবং সৎ পথে চলতে পারি।

আমি তো তোর জন‍্য সব সময় দোয়া করবোই।একজন প্রকৃতি বন্ধু তার অপর বন্ধুর সবসময় ভালো চাইবে।আমিও চাই তুই সুখে শান্তিতে সংসার কর।

ধন‍্যবাদ রে তোর মতো একটা বন্ধু পেয়েছি।

হয়েছে আমাকে ধন‍্যবাদ দিতে হবে না।তো আগে বল ভাবিকে কবে দেখাবি আমাকে।

শুন এক কাজ কর তুই না হয় কালকে আমাদের বাসায় আয় এর ফাকে আমার বাবা-মার সাথে কথা বলতেও পারবি আবার আমার বউকেও দেখতে পারবি।

দাওয়াত যখন দিয়েছিস তাহলে তো যাইতেই হবে।তুই তো জানিস আমাকে কেউ দাওয়াত দিলে মানা করতে পারি না।

ওকে তাহলে আসিস কালকে।

ওকে।আচ্ছা শুন অনেক রাত হয়েছে তাই ঘুম ধরতেছে খুবেই তাই বলি কি কালকে তো তোর বাসায় যাইতেছি তাই কালকে কথা হবে ওকে?

ঠিক আছে ঘুমা তাহলে।

আমি তো ঘুমাবো,তুইও ঘুমা।

ওকে।

কালকে গল্পটা শেষ করে দিবো।

#চলবে,,,,কী?

অবহেলার সংসার পর্ব-১০

0

#অবহেলার সংসার
#Imran_khan
#পর্ব_১০

ঠিক আছে আমি তাই করবো তার কাছে ক্ষমা চাবো।যতদিন না ক্ষমা করে আমাকে, ততোদিন চেষ্ট করেই যাবো।

হুম এটাই করা ঠিক হবে।

কফি তো ঠান্ডা হয়ে গেলো রে কথা বলতে বলতে।

ঠান্ডা হয়েছে তো কি হয়েছে ঠান্ডা কফি খেতে আমার ভালো লাগে।

তাই আগে তো তোর এই অভ‍্যাস ছিলো না।তা এই ঠান্ডা কফি খাওয়া কবে থেকে ভালো লাগা শুরু করলো রে।

এই তো,দেশের বাহিরে যাওয়ার পরে।

তুই তো দেখতেছি অনেক চেন্জ হয়ে গেছেস তিন বছর দেশের বাহিরে থেকে।

হয়েছে তোকে আর বানায় বানায় বলতে হবে না আমি আগে যেমন ছিলাম তেমনে আছি বুঝলি।আমি বাদে তুই চেন্জ হয়ে গেছিস এটা কখনো লক্ষ‍্য করেছিস রে।

আমি আবার কিভাবে চেন্জ হলাম রে?

এই তো তুই বাড়িতে তাড়াতাড়ি যেথে চাচ্ছিস।আগে আমি যখন তোর সাথে কোথাও যেতাম তখন একবারো বাসার যাওয়ার নাম মুখ থেকে বাহির করতি না এখন সন্ধ্যা না লাগতে বাসায় যেথে চাচ্ছিস।

আরে তুই তো দেখতেছি পাগলী হয়ে গেছিস রে হ‍্যা। আমি কি আর আগের ঈমান আছি?আগে বউ ছিলো না আগে,এখন বউ আছে আবার সংসার সামলাতে হচ্ছে।

এই জন‍্য তো বলতেছি তোকে যে, তুই আর আগের ঈমান নাই।আমার সামনে এখন যে ঈমান আছে আগের ঈমানের সাথে কোন মিল নাই বুঝলী।

মনি রে যেকোন মেয়ে-ছেলে বিয়ের পরে চেন্জ হয়ে যায়।চেন্জ হওয়ার প্রথম কারন হচ্ছে তাদের বিয়ের পরে দায়িত্ব বেড়ে যায়,তাই বাস্তবতায় চেন্জ করে দেয় তাদের।তেমনী আমিও ব‍্যতিক্রম নয় বুঝলী।তুইও বিয়ে কর তাহলে তুইও চেন্জ হয়ে যাবি।

আমি কখনো বিয়ের পরে চেন্জ হবো না বুঝলী। আচ্ছা সবেই তো বুঝলাম এখন কি করবি বল কফি তো খেয়ে ফেললাম আরো কী এখানে আড্ডা দিবি, নাকি বাসায় বউ এর কাছে চলে যাবি?

মনি তুই বারবার বাসায় যাওয়ার কথা বলে আমাকে লজ্জা আর দেশ না তো,আমার বুঝি লজ্জা লাগে না ।

তাই তোর লজ্জাও আছে নাকি আমি তো জানতাম শুধু মেয়েদের লজ্জা আছে।মেয়েদের লজ্জা আছে দেখে তো মেয়েদের বলা হয়েছে ” লজ্জা নারীর ভূষণ ”

কেনো রে ছেলেদের লজ্জা বুঝি থাকে না।

আমি এটা জানি না ছেলের লজ্জা থাকে কি না?

তাহলে অজাথা ঝগড়া না করে চল নিজ নিজ বাসায় চলে যাই এটাই ভালো হবে।এমনিতে খুব টেনশনে আছি তুই বুঝতেছিস তাও মজা করতেছিস।

আচ্ছা চল আর মজা করবো না নিজ নিজ বাসায় চলে যাবো।

হুম চল।তারপর আমি কফির বিলটা দিয়ে দুইজনে রেস্টুরেন্টের বাহিরে এসে সোজা গাড়ির সামনে চলে আসলাম।তারপর দুইজনে গাড়ির ভিতরে ঢুকলাম।গাড়ির ভিতরে ঢুকে আমি গাড়িটা স্টাট দিয়ে গাড়িটা চালাতে শুরু করলাম,

মনি তুই কি ওই আগের বাসায় থাকিস নাকি বাসা চেন্জ করেছিস?

না রে, ওই বাসায় আছি!বাসাটার মায়া ছাড়তেই পাড়ি না,তাই বাসাটা চেন্জ করা হয় নিই।শুনেছিলাম বাসাটা নাকি আমার দাদা তৈরি করেছিলো।

ও তাই।

হুম।আচ্ছা শুন তোকে একটা সুন্দর আইডিয়া দেই।

কি আইডিয়া রে মনি?

শুন তাহলে,যেকোন মেয়ে ফুলকে অনেক ভালোবাসে আবার অনেক মেয়ে শপিং করতে ভালোবাসে তাই আমি বলি কি তুই প্রতিদিন অফিস থেকে আসার সময় ফুল কিনে নিয়ে গিয়ে তোর বউকে দিবো আবার মাঝে মাঝে শপিং করা নিয়ে যাবি তাহলে দেখবি এগুলো করার কারনে তোর জন‍্য আবার ভাবির মনে ভালোবাসা সৃষ্টি হতে পারে।

তাহলে তোর আইডিয়াটা কাজে লাগাতে হবে।কিন্তু কি ফুল দিবো প্রতিদিন?

আচ্ছা এটা আগে বল তোর বউ এর পছন্দের ফুল কোনটা?

এটা তো কখনো জানায় হয় নাই।

গাঁধা একটা তুই রে।বউ এর পছন্দ অপছন্দের বিষয় গুলো কিছুই জানিস না।তোকে যে কেনো আংকেল-আন্টি বিয়ে দিয়েছে আমি বুঝতেই পারতেছি না।

মনি এভাবে বলিস না রে কষ্ট হয় বুঝলী।

চূপ গাঁধা কিছুই জানে না, আবার কষ্ট হয় বলে।ভালো আইডিয়া দিলাম যা তোকে আর কোন আইডিয়া দিবোই না।

এমন করিস না রে,আমি মরে যাবো।তুই শুধু এটা বল যে কি কি ফুল নিয়ে গিয়ে দিবো?

আচ্ছা শুধু একটাই বলবো আর কোন কিছুই বলবো না তোর সাথে বেশি কথা বললে আমি পাগলী হয়ে যাবো।

তুই আমাকে ফুলগুলোর নাম বলেই পাগলী হয়ে যা, তখন আমার আর কোন সমস‍্যা হবে না কিন্তু না বলে ভূলেও পাগলী হবি না তুই ওকে।

তুই তো দেখতেছিস আমাকে পাগলী করে ছাড়বি।আচ্ছা তুই এক কাজ কর একটা মার্কেটে গাড়িটা দাড় করা।

এতো রাতে মার্কেটে কি করবো রে?

তোকে যেটা বলতেছি ওটাই কর এতো প্রশ্ন করিস কেনো রে।

ওকে আর কোন প্রশ্ন করবো না।আমি মনির কথায় একটা মার্কেটের সামনে গাড়ি দাড় করলাম।তারপর ও গাড়ি থেকে বাহির হয়ে হন হন করে হেটে কোথায় জেনো যাচ্ছে।

এই মনি তুই আমাকে একা রেখে কই যাচ্ছি।

প্রশ্ন না করে সোজা আমার পিছনে পিছনে আয় আমি যেখানে যাচ্ছি।

আমি ওর কথা শুনে গাড়ি থেকে নেমে ওর পিছনে পিছনে যাচ্ছি।হেটে যেথে যেথে ও একটা শাড়ির দোকানে গিয়ে বসলো।

এই মনি এখানে আসলি কেনো রে (কানে কানে বলতেছি )

প্রশ্ন করতে তোকে মানা করছি না।

ওকে যা আর কোন প্রশ্ন করবো না,এই তো আমি চূপ হলাম।

ম‍‍্যাডাম কি লাগবে বলেন?

আপনি ভালো শাড়ি দেখান তো,

ওকে ম‍্যাডাম,

তারপর দোকানদার শাড়ি দেখাচ্ছে আর মনি ওগুলো দেখতেছে।আমি তার পাশে চূপ করে বসে আছি।

আপনি এই নীল শাড়িটা প‍‍্যাক করে দিন।

ওকে ম‍্যাড়াম।

তারপর দোকানদার শাড়িটা প‍্যাক করে দিলো আর মনি
শাড়ির ব‍্যাগটা হাতে নিয়ে বলতেছে।শাড়িটার দাম কতো,

ম‍্যাডাম শাড়িটার দাম 1000 হাজার টাকা।

ওকে এই নিন টাকা।

তারপর মনি দোকানদারকে টাকা দিয়ে শাড়ির ব‍্যাগটা নিয়ে আবার হাটা ধরলো আমি তো এই মেয়ের হাবভাব কিছুই বুঝতেছি না।

এই মনি আবার কই যাচ্ছি আমাকে বাসায় যেথে হবে আর তুই এগুলো কি শুরু করে দিয়েছিস?

তোর ভালোর জন‍্য করতেছি কথা বেশি না বলে আমার পিছনে পিছনে আয়।

ধূর বাল কিছুই বুঝতেছি না।মনি পিছনে পিছনে আবার মার্কেটের বাহিরে আসলাম।তারপর আবার দেখতেছি একটা ফুলের দোকানে যাচ্ছে।আমিও ওর পিছনে পিছনে গেলাম।গিয়ে দেখে ও ফুল নিতেছে।ফুল নিয়ে আবার গাড়ির দিকে যাচ্ছে।ও এমন ভাব করতেছে মনে হয় আমাকে চিনেয় না।

এখানে দাড়িয়ে থেকে আমায় দেখবি নাকি গাড়ির ভিতরে ঢুকে গাড়ি চালাবি।

ছরি ছরি রে আমি চালাচ্ছি।

হয়েছে আর ছরি বলতে হবে না তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাতে শুরু কর।

ওকে।তারপর আমি গাড়ি চালাতে শুরু করলাম।কিন্তু তখন থেকে ভেবে পাচ্ছি না শাড়িটা আর ফুলগুলো কার জন‍্য কিনলো?
প্রায় পাঁচ মিনিট পরে মনি বাসার সামনে চলে আসলাম।আগে থেকে ওর বাসা চিনি তো তাই।

মনি তোর বাসার সামনে চলে আসছি তো এবার নাম।আমাকেও তো বাসা যেথে হবে এমনিতে তাড়াতাড়ি বাসায় যেথে চাইলাম তোর জন‍্য যেথেই পারলাম না।

ঠিক আছে আমার জন‍্য আর তোর দেড়ি হবে না,আমি এখন যা বলবো ভালোভাবে শুন,

আচ্ছা বল,

এই নীল শাড়িটা আর ফুলগুলো তোর বউকে দিবো আর বলবি আমি ভূল করেছি আমাকে ক্ষমা করে দাও।আর বলবি আগের কথাগুলো ভূলে গিয়ে চলো নতুন করে সংসার শুরু করি।আর যদি বাচ্চা নষ্ট করার কথা বলে তখন বলবি,আমি বাচ্চাটা নষ্ট করে ভূল করেছি তাই চাইলে আমরা আবার সন্তান নিতে পাড়ি।মেয়ে মানুষের মন গলে যেথেও পারে এই কথাগুলোতে তুই চেষ্টা করে দেখতে পারিস।

ওকে রে।(মনি আমাকে শাড়িটা আর ফুলগুলো হাতে দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে সোজা ওর বাসার ভিতরে ঢুকে গেলো।তারপর আমি গাড়িটা স্টাট দিয়ে চালাতে শুরু করলাম )

চলবে ,,,,

অবহেলার সংসার পর্ব-০৯

0

#অবহেলার সংসার
#Imran_khan
#পর্ব_০৯

আপনার ভাবছেন আসলে মেয়েটা কে আর কাকে দেখে অবাক হয়েছি?মেয়ে আসলে হচ্ছে আমার কলেজ লাইফের বান্ধবী।সেই তিন বছর আগে দেশের বাহিরে চলে গিয়েছিলো।দেশের বাহিরে যাওয়ার পরে কোন যোগাযোগ হই নি।এতো দিন পরে তাকে আবার আমার অফিসে দেখতে পারবো সেটা কখনো ভাবতে পারি নি।

আরে ঈমান তুই এখানে!

হুম আমি এখানে থাকবো না তো কই থাকবো এটা তো আমার অফিস।

তাহলে তোর সাথে মিটিং করতে আসছি।তুই আগে আমাকে বলবি না তোর সাথে ডিলটা হতে চলেছে।তাহলে তো এখানে আসতেই হতো না।

আমি কি জানি তুই এখানে আসতেছিস?আচ্ছা বাদ দে তাহলে তুই দেশে কবে আসছিস রে।আর দেশে আসছিস যখন আমাকে জানালি না।

দেশে এসেছি দুইদিন হচ্ছে আর এতো ব‍্যস্হতার মধ‍্যেছিলাম তাই তোকে জানাতেই ভূলে গেছিলাম।

ও তাই।আমারা দুইজনে কথা বলতেছি এটা দেখে বাকি চারজনা হা করে আমাদের দেখতেছে।

আচ্ছা মনি তুই কি এই মিস্টার ঈমানকে চিনিস?

হুম চাচ্চু ও আমার কলেজ লাইফের বেস্ট বন্ধু ছিলো।

ও তাহলে তো ওনার ডিলটা পেতে কোন সমস‍্যাই নাই।

হুম চাচ্চু ডিলটা তাহলে ওকে দেন।ও অনেক ভালো একটা ছেলে ও ডিলটা কমপ্লিট করতে পারবে।

ওকে তুই যখন দিতে বলতেছি তাহলে আমাদের কোন সমস‍্যাই নাই ডিলটা দিতে।

ঠিক আছে চাচ্চু।

আজকে এতো বড় একটা ডিল পাবো কখনো ভাবতেই পারি নি।এটা শুধু মনি র জন‍্য পেয়েছি।ও না থাকলে ডিলটা পেতাম মনে হয় না,যদিও পেতাম তাহলে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হতো।একমাত্র ওর জন‍্য আজকে এতো বড় ডিলটা খুব সহজে পেলাম।ও আপনাদের তো বলাই হয় নি,মেয়েটার নাম কি?মেয়েটার নাম হচ্ছে মনি চৌধুরী।ও হচ্ছে বড় ফ‍্যামেলীর মেয়ে।ওর বাবার টাকার অভাব নেই।ওর বাবা-মা দেশের বাহিরে থাকে আর ও এখানে ওর চাচ্চুর কাছে থাকে।মনির বাবার দেশের বাহিরেও অনেক গুলো কম্পানি আছে,তাদের কাছে আমরা কিছুই না।তবুও কিভাবে যে ও আমার বেস্ট বান্ধবী হয়েছিলো আমি নিজেই জানি না।

মিস্টার ঈমান আপনি যদি এই ডিলটা ভালোভাবে কম্পলিট করতে পারেন Next এ আরো ডিল আপনাকে দেওয়া হবে।তাই আশা করি আপনি এই প্রথম কাজটা গুরুত্ব দিয়ে করবেন।

স‍্যার আপনি কোন চিন্তা করবেন না,আমি ঠিক গুরুত্ব দিয়ে কাজটা করবো।

ঠিক আছে তাহলে আমরা আসি।মনি চলো তাহলে,

চাচ্চু তুমি যাও আমি একটু পরে যাবো।ঈমানের সাথে একটু কথা বলে,

ওকে কিন্তু মনি মা রাস্তা দেখে শুনে আসিস ওকে।এমনিতে আমাদের শত্রুর অভাব নাই।

ওকে চাচ্চু।

স‍্যার আমি না হয় মনিকে পৌছিয়ে দিবো কোন সমস‍্যা হবে না।

ওকে।

তারপর মনির চাচ্চু আর বাকি তিন জন চলে গেলেন। মনি রয়ে গেলো আমার কেবিনে।

ধন‍্যবাদ রে মনি।

ধন‍্যবাদ কেনো?

এই যে তুই না থাকলে এতো বড় একটা কাজ পেতাম না।তাই তোকে ধন‍্যবাদ দিচ্ছি।

ঠিক আছে তোকে ধন‍্যবাদ দিতে হবে না।ওটা তুই পাওয়ার যোগ‍্য ছিলি তাই পেয়েছিস,এগুলো কথা বাদ দে তো আগে চল কোথাও গিয়ে দুইজনে বসে কফি খাই।

আইডিয়াটা খারাপ না চল তাহলে রেস্টুরেন্টে গিয়ে কফি খেয়ে আসি।

ওকে চল তাহলে।

তারপর মনিকে নিয়ে আবার ও রেস্টুরেন্টে আসলাম কফি খেতে। রেস্টুরেন্টে এর আসতেই আবার ওই মিম না ডিম এর কথা মনে পড়ে গেলো।গাড়িটা একসাইটে দাড় করিয়ে দুইজনে গাড়ি থেকে বাহির হলাম।আমি গাড়ি থেকে বাহির হয়ে রেস্টুরেন্টের চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখতেছি যদি আমাকে দেখে আবার ঝামেলা করতে পারে।এমনিতে তখন বেঁচে গেছি।

কিরে ঈমান এমন ভাবে ঘুরে ঘুরে কি করতেছি?

আর বলিস না রে মনি সে অনেক কাহিনী তুই বুঝবি না।এখন চল ভিতরে যাই প্রায় সন্ধ্যা হতে চললো তো বাসায় যেথে হবে তাড়াতাড়ি।

সন্ধ্যা হয়েছে তো কি হয়েছে অনেক দিন পরে দেখা আজকে তুই দশটার আগে বাসায় যেথে পারবি না।

আমার দারায় সম্ভব নয় রে বেশি দেড়িতে বাসা যাওয়া যাবে না।

কেনো রে বাসায় কি বউ বেধে রেখে আসছিস নাকি?

বউ বেধে রাখি নাই কিন্তু বউ বাসায় আছে দেড়িতে গেলে পিটাবে।(মিথ‍্যা বললাম কারন আমাকে আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় যেথে হবে।বাসায় গিয়ে প্রথমে জান্নাতুন এর থেকে ক্ষমা চাইতে হবে এই জন‍্য।ক্ষমা না চাওয়া পযর্ন্ত মনে শান্তি পাবো না।)

কি তুই বিয়েও করে ভেলেছিস?

হুম আমার বিয়ে করা প্রায় দুই বছর হচ্ছে।

ও।

ও নয় হুম।কিন্তু তুই আমার বিয়ের কথা শুনে মন খারাপ করতেছিস কেনো রে।

আরে এগুলো বাদ দে তো।আচ্ছা তুই কি এখানে দাড়িয়ে থাকার জন‍্য আমাকে এখানে এনেছিস।

আমি বুঝতে পারতেছি ও কিছু আমার থেকে লুকাচ্ছে।আমি যখন বললাম তখন ও কথাটা পাল্টে দিয়ে দাড়িয়ে থাকার কথা বলতেছে।

ওকে চল তাহলে আর দাড়িয়ে থেকে কি করবি?

হুম চল।

তারপর আমরা দুইজনে রেস্টুরেন্টে এর ভিতরে ঢুকলাম।ভিতরে ঢুকে একটা টেবিলে দুইজনে বসলাম।তারপর আমি দুইটা কফি অডার দিলাম।কফি আসতে নাকি একটু টাইম লাগবে তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

ঈমান আংকেল-আন্টি আর এশা কেমন আছে রে।

আলহামদুলিল্লাহ্ সবাই ভালো আছে কিন্তু আমার বউ একটু অসুস্হ রে।

তোর বউ আবার কেমন করে অসুস্হ হয়েছে।

আমার বউ আজকে অসুস্হ সেটা আমার জন‍্য রে।আমার ভূলের জন‍্য আজকে বউ আমাকে অবহেলা করতেছে।

তোকে কেনো অবহেলা করবে রে তোর বউ,আমি ঠিক বুঝতে পারতেছি না আমাকে একটু বুঝায় বল তো।

আসলে, তারপর আমি সব কাহিনী মনিকে বললাম।

তুই এতো খারাপ আগে বুঝতে পারি নাই তো।এতোগুলো বছর একসাথে পড়ালেখা করেছি।এখন তো দেখতেছি তো চরিত্র খারাপ।যে নিজের সন্তানকে পৃথিবীতে আসার আগে মেরে ফেলেছে।তোকে সাধে তোর বউ অবহেলা করতেছে।আমি তোর বউ এর জায়গায় হলে তো তোকে কবেই ছেড়ে চলে জেতাম আর ও তো এখনো পড়ে আছে তোর সংসারে।আমি এটা ভেবে পাচ্ছি না তুই কিভাবে এতো পাষাণ হয়ে নিজের সন্তানকে মেরে ফেললি।

আমি মানতেছি অনেক অন‍্যায় করেছি কিন্তু এখন আমি ভালো হতে চাই,আমি আমার বউকে ভালো বাসতে চাই,আমি চাই একটা আদর্শ স্বামী হতে যাকে নিয়ে ও আমাকে গর্ব করবে।

এগুলো তোর কপালে জুটবে না আমি শিউর।তুইযে অন‍্যায় করেছিস সেটা কখনো ক্ষমার যোগ‍্য নয়।

প্লিজ তুই অন্তত এমন করে বলিস না।তুই কিছু একটা কর এর যেনো আমি ভালো হতে পারি।আমাকে বল কি করলে আমার বউ আমাকে ক্ষমা করে দিবে ?

শুন ঈমান তোকে একটা কথা বলি আমিও একটা মেয়ে সে ক্ষেত্রে,একটা মেয়ে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা খুব সহজ কাজ কিন্তু একবার বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে কখনো সেই মেয়ের মাঝে বিশ্বাস অর্জন করাতে পারবি না,যদি তুই তোর বুক চিরে দেখাস যে আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু কখনো তোর কথা আর বিশ্বাস করবে না।এটাই মেয়েদের কেরেক্টার বুঝলী।

তাহলে কি আমি কখনো আমার বউ এর থেকে ক্ষমা পাবো না,কখনো আর স্বামী হিসাবে মেনে নিবে না?

আমি এটা বলতে পারবো না যে তোর বউ কখনো মেনে নিবে না,মেনে নিতেও পারে,আবার নাও নিতে পারে, এটা কখনো কেউ গ‍্যেরান্টি দিতে পারবে না।আমার মনে হয় তোর প্রথম কাজ আগে গিয়ে ক্ষমা চাইবি তোর বউ এর থেকে।

একবার না পারিলে,
দেখো শত বার!
এই প্রবাদ টা কিন্তু ছোটবেলায় অনেক বার বই এ পড়েছি।চেষ্ট করে দেখ ক্ষমা পেতে পারিস।

স‍্যার আপনাদের কফি।

ও এখানে রেখে যান।(আমাদের দুইজনার কথার মাঝে ওয়েটার কফির কথা বলতেছে)

ঠিক আছে আমি তাই করবো তার কাছে ক্ষমা চাবো।যতদিন না ক্ষমা করে আমাকে ততোদিন চেষ্ট করেই যাবো।

#চলবে,,,,কী?

অবহেলার সংসার পর্ব-০৮

0

#অবহেলার সংসার
#Imran_khan
#পর্ব_০৮

প্লিজ আমাকে আপনি বউ ডাকবেন না।বউ কথাটা আপনার মুখে মানায় না।আপনার মনে হয় শরীর -মাথা দুটোই খারাপ হয়ে গেছে ।আপনি এক কাজ করেন অফিস থেকে আসার সময় ডাক্তার দেখায় আসেন ওকে।

আমাকে ডাক্তার দেখাতে হবে না, আমার সমস‍্যার ঔষধ হচ্ছো তুমি তাই তুমি হলেই হবে।

আপনি সত‍্যি পাগল হয়ে গেছেন কি আজব আচরণ করতেছেন?

হ‍্যা, আমি পাগল হয়ে গেছে তোমার জন‍্য।

আমি কি বলছি আমার জন‍্য আপনি পাগল হন?যাই হোক এখন বাজে কথা বাদ দিয়ে ফোনটা কেটে দেন আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করতেছে না আর আপনার মতো সারাদিন আমি বসে থাকি না কাজ করি তাই এখন কাজ করতেছি যদি কিছু বলার থাকে বলুন না হলে ফোনটা কেটে দিন।

তুমি তো দেখতেছি একটু রোমান্টিক না,কথা কথা ঝগড়া করো।আমি তোমার স্বামী হই একটু রোমান্টিক ভাবে কথা বলবে তা না শুধু রাগ দেখাও।

আচ্ছা এই মানুষটার হলো কি আজকে সকাল থেকে দেখতেছি কেমন আচরণ করতেছে?আসলেই কি ভালো হতে চলেছে নাকি ভালো হওয়ার নাটক করতেছে আমার কাছে।আপনি যতোই ভালো সাজুন না কেনো,আমি আপনাকে সহজে মেনে নিবো না আর।আমাকে যেমন কষ্ট দিয়েছেন সব হিসাব আপনার থেকে তুলে নিবো কষ্ট দিয়ে।আমি আপনাকে দেখে দিবো গ্রামের মেয়েরাও সবকিছু করতে পারে।

কথা বলো না,কেনো বউ।

এই আপনাকে না বললাম আমাকে বউ বলে ডাকবেন না।(রাগি ভাবে বলতেছি আবার যখন বউ বলে ডাকতেছে তখন মনে ভালোলাগা কাজও করতেছে কিন্তু এতো সহজে মেনে নেওয়া তো যাবে না।তাকে বুঝায় দিবো কতো ধানে কতো চাল হয় )

তাহলে কি বলে ডাকবো ?

বউ বাদে অন‍্য কিছু বলে ডাকেন।

কিন্তু অন‍্য নাম মুখে আসতেছে না তাই বউ বলেই ডাকি কি বলো?

ধূর যতো সব ফালতু লোক। এত কিছু করার পরে এখন আসছে বউ বলে ডাকতে।নাটক দেখলে বাঁচা যায় না।এখন তো নাটক করবেন ভালো সাজার কারন আপনাকে যে আমার পাশে ঘেসতে দেই না,রাতের চাহিদা মিটাতে দেই না সেই জন‍্য।এটা কখনো আশা করবেন না আমাকে পাশে পাওয়ার,এটার জন‍্য যদি আমাকে বাসা থেকে বাহির হতে হয় তাও যাবো কিন্তু আপনাকে ভূলেও আমার পাশে ঘেসতে দিবো না।

তুমি এগুলো বলতে পারলে।

যা বলছি ভালো বলছি আপনাকে।এখন ফোনটা রাখলে ভালো হতো কারন আমি কাজ করতেছি তাই ব‍্যস্থ আছি।

আর একটু কথা বলো না।কাজটা না হয় পরে করিও।তোমার সাথে কথা বলে ভালো লাগতেছে এতোক্ষন হতাশায় ভূগতেছিলাম।

বাই,কথা বলার ইচ্ছা নাই আর আমার।(এই বলে ফোনটা কেটে দেই ওনার সাথে কথা বলা ভালো লাগতেছিলো না।)

এই ফোনটা কেটে দিলো ধূর।আচ্ছা আবার দেখি ফোন দিয়ে, এই ভেবে আবার ফোনটা দিলাম কিন্তু এখন ফোন ঢুকেই না,বার বার বলে আপনার কাংখিত নাম্বারটা ব‍্যস্হ আছে।অনেক কয়বার ফোনটা দিলাম ওই একই কথা বলে তাহলে কি ও আমার নাম্বারটা ব্লাকলিস্টে ঢুকে দিয়েছে।কি করি এখন?অফিসে থাকতেও ভালো লাগতেছে না,শুধু মনে হচ্ছে বাসায় কখন যাই আর কখন জান্নাতুন এর থেকে ক্ষমা চাই।কিন্তু যেথে পারতেছি না কারন অফিসে একটা মিটিং আছে দুপুর তিনটার দিকে তাই বাসায় যেথে পারতেছি না।এখন তো বাজে প্রায় একটা আরো দুই ঘন্টা ওয়েট করতে হবে।না এর ফাঁকে লান্চটা খেয়ে আসি।তারপর আমি অফিস থেকে বাহির হয়ে গাড়িটা নিয়ে লান্চ করতে রেস্টুরেন্টে এর যাচ্ছি। রেস্টুরেন্টটা আবার অফিস থেকে বেশি দূরে না প্রায় প্রতিদিন এখানে লান্চ করি।প্রায় পাচঁ থেকে ছয় মিনিট লাগে আমার অফিস থেকে রেস্টুরেন্টে যেথে।পাঁচ মিনিট পরে রেস্টুরেন্টে চলে আসলাম।গাড়িটা একসাইটে পার্ক করে রেস্টুরেন্টের ভিতরে গেলাম।তারপর রেস্টুরেন্টের এক সাইটে গিয়ে বসলাম।বসার পরে একটা ওয়েটার এসে বললো কি খাবেন স‍্যার তারপর আমি যা যা খাওয়া তাই আনতে বললাম?একটু পরে খাবারগুলো ওয়েটার দিয়ে গেলো তারপর আমি এক এক করে সব খেয়ে ফেললাম এতো তাড়াতাড়ি খাওয়ার কারন হচ্ছে খুবেই খুদা লেগেছিলো।খাওয়ার পরে একটু বসে থেকে চেয়ার থেকে উঠে এসে বিলটা মিটিয়ে দিয়ে আবার গাড়ির কাছে চলে আসলাম। রেস্টুরেন্টে পাশে দেখতেছি একটা চায়ের দোকান তাই আজকে একটা সিগারেট খাবো তাই ভেবে দেড়ি না করে 10 টাকা দিয়ে একটা সিগারেট নিলাম তারপর সিগারেট টা ধরাই নিয়ে চলে আসলাম আবার গাড়ির পাশে।গাড়ির পাশে দাড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়া গুলো আকাশের দিকে ছেড়ে দিচ্ছি।আর আগের কথাগুলো ভাবতেছি।কিছুক্ষন পরে দেখতেছি ধোঁয়াগুলো মিশে যাচ্ছে।

এই যে,মিস্টার এখানে আপনি ধূমপান করতেছেন কেনো।আপনি যানেন না, ধূমপান স্বাস্হ‍্যের জন‍্য ক্ষতিকর।

আমি আমার টাকায় খাচ্ছি তাহলে আপনার কই লাগতেছে শুনি হ‍্যা।আমি জানি সিগারেট স্বাস্হের জন‍্য ক্ষতিকর এটা কতো জন মানে শুনি।আর আমার ক্ষতি হবে তো আপনার কি?(হঠাৎ করে একটা মেয়ে এসে বলতেছে )

আমার কি মানে,আপনি সিগারেট খেতে পারবেন না এখানে ?

কেনো পারবো না আমার টাকায় আমি খাচ্ছি আপনার কোথায় লাগতেছে।কোথায় থেকে যে এই পাগল ছাগল গুলো আসে।

আচ্ছা আপনি সিগারেট খাচ্ছেন খান কিন্তু এই পাবলিক প্লেচে খাচ্ছেন কেনো।আপনি খাচ্ছেন আপনার ক্ষতি হচ্ছে আবার ভালো মানুষগুলোও ক্ষতি করতেছেন।আবার বেশি কথা বলেন।

আমি কই খাবো না খাবো সেটা আমার বেপার আপনি আপনার কাজে যান তো ফালতু মেয়ে কোথাকার।

আমাকে ফালতু বলেন, এই মিম চৌধুরীকে,দেখে নিবো আপনাকে।

কি দেখবেন দেখেন পারলে একটা ছবি তুলে নেন আপনার ফোনে যখন ইচ্ছা দেখে নিয়েন।

আরে মিম এগুলো কি শুরু করেছিস তোকে একায় রাস্তায় ছেড়ে দিলে খালি ঝামেলা বেধে বেড়াস।ছরি ভাইয়া আপনি ওর কথায় রাগ করিয়েন না ও একটু এমনে।

কি বললি আমি ঝামেলা বেধে বেড়া,?ওনি কেনো এই পাবলিক প্লেচে সিগারেট খাবে।আর তুই আমার বান্ধবী হয়ে ওই বেয়াদব ছেলেটার পক্ষ নিচ্ছিস।

আরে ওনি কই সিগারেট খাবে না খাবে সেটা ওনার বেপার তুই বাধা দেওয়ার কে রে?আর মিম এখন কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে রে।

কি বেশি হয়ে যাচ্ছে,

আচ্ছা আপনারা দাড়ান আপনাদের মাঝে ঝগড়া করতে হবে না আমি চলে যাচ্ছি আপনি আপনার মিম না ডিম কি নাম ওনাকে এখান থেকে নিয়ে গিয়ে ভালো ডাক্তার দেখান তাহলে ভালো হয়ে যাবে।(ওনার পাশের মেয়েটাকে বলতেছি )

আমার নাম মিম ওকে ডিম না।আর একবার যদি ডিম বলেন তাহলে আপনার মাথা ফেটে দিবো।

কি সাঙ্গাতিক মেয়েরে বাবা এই যে, আপু আপনি ওনাকে এখনে এখান থেকে নিয়ে যান না হলে একটা দূর্ঘটনা ঘটে যাবে।

এই মিম চল এখান থেকে।

আমাকে তুই চেড়ে দে এই বেয়াদব ছেলেটার আজকেই মাথা ফেটে দিবো।

মিম চল তো তুই।

দেখে নিবো এর প্রতিশোধ নিয়ে ছারবো আমি ।

ঠিক আছে কি করতে পারেন সেটাই দেখতে চাই আমি।
তারপর মিম নামের মেয়েটাকে জোড় করে ওনার বান্ধুবী নিয়ে যায় আমার সামনে থেকে।এই মেয়ের কারনে আমার দশ টাকার সিগারেট বাতাসে পুরে উরে চলে গেলো।একটু শান্তিতে সিগারেট টা খেতেই পারলাম না।মেয়ের সাহস দেখলে বাঁচি না,আমার নাকি মাথা ফেটে দিবে।হঠাৎ করে দেখি ফোনটা পেন্টের পকেটে বাজতে শুরু করলো।আমি ফোনটা পকেট থেকে বাহির করে দেখি ম‍্যানেজার ফোন দিয়েছে।আমি ফোনটা রিচিপ করলাম,

হেলো স‍্যার আপনি কই?অফিসে চলে আসুন তাড়াতাড়ি মিটিং এর টাইম হয়ে যাচ্ছে তো।প্রায় তিনটা বাজতে চলেছে।

ওকে আমি যাচ্ছি আপনি একটু ওদিকে সামলান।

ওকে স‍্যার।

ফোনটা পকেটে রেখে গাড়িতে উঠলাম কারন এখানে আর দাড়িয়ে থাকা যাবে না।সালা মেয়েটাই সব গড় মিল করে দিয়েছে।এবার চার মিনিটে অফিসের সামনে চলে এসেছি গাড়িটা একটু জোড়ে চালিয়েছি তো তাই এক মিনিট আগে চলে এসেছি।গাড়িটা পার্ক করে সোজা অফিসের ভিতরে চলে গেলাম।ভিতরে গিয়ে দেখি সবাই আমার জন‍্য ওয়েট করতেছে।

স‍্যার আপনি এসেছে।

হুম চলেন কিন্তু ওনারা কই?

স‍্যার ওনারা আপনার কেবিনে আছে ওখানে আপনার জন‍্য অপেক্ষা করতেছে।

ওকে আমি তাহলে কেবিনে যাচ্ছি।

ওকে স‍্যার।

তারপর আমি আমার কেবিনে ঢুকে সালাম দিলাম।
আসসালামু-আলাইকুম,আপনারা কেমন আছেন সবাই?

ওলাইকুমসালাম, আলহামদুলিল্লাহ্ আমরা সবাই ভালো,আপনি?

আমিও ভালো।তারপর আমি আমার চেয়ারে গিয়ে বসলাম।বসে দেখি আমার সামনে পাঁচ জন ব‍্যক্তি বসে আছে।পাঁচ জনার মধ‍্যে এক জন মেয়েও ছিলো।মেয়েটার মুখে মাক্চ পড়া ছিলো।কিন্তু যখন মুখ থেকে মাক্চটা খুলো আমি অবাক হয়ে গেছি মেয়েটাকে দেখে।
এই মেয়েটা এখানে কিভাবে?

#চলবে,,,,কী?

অবহেলার সংসার পর্ব-০৭

0

#অবহেলার সংসার
#Imran_khan
#পর্ব_০৭

অনেক দেখছি রে দোচ বিয়ার পরেও বাচ্চা নষ্ট করে।আরে বাচ্চা দেওয়ার মালিক হচ্ছে আল্লাহ্ তাহলে এরা নষ্ট কেনো যে করে।বাচ্চা নিবে না,দেশে অনেক পদ্ধতি আছে বাচ্চা না নেওয়ার।কিন্তু না,তারা এটা না করে আল্লাহ্ যাদের মাধ‍্যমে জন্ম নেওয়ার জন‍্য পৃথিবীতে পাঠায় তারায় আবার বাচ্চাটাকে পৃথিবীতে জন্ম দেওয়ার আগে মেরে ফেলে। কতো মানুষ আছে বিয়ার পরে বাচ্চা হয় না।তাদের কতো স্বপ্ন দেখে একটি বাচ্চার জন‍্য।আর এদিকে বাচ্চা পেটে আসার পরেও নষ্ট করে দেয়।আসলেই এরা কখনো প্রকৃত মুসলিম হতে পারে না।আচ্ছা শুন দোচ অনেক কিছু বললাম,রাগ করিস না। আমাকে আর একটি সামনে নেমে দেশ আমি হেটে যাবো বাসস্টান পর্যন্ত।

ওকে দিচ্ছি।আর তোর কথায় কেনো রাগ করবো আমি।

আচ্ছা শুন তোর যদি বিয়ের পড়ে প্রথম বাচ্চা ভাবির পেটে আসে সেটা কখনো নষ্ট করিস না ওকে।বাচ্চা নষ্ট করা মহা পাপ যা আল্লাহ্ কখনো ক্ষমা করে না।আর আল্লাহ্ যদি বান্দার উপরে একবার নারাজ হয় তাহলে সেই বান্দার উপরে কখনো আল্লাহ্ রহমত আসে না।

আমি তো বিয়ে করেছি রে সাজু।আর আমার বিয়ে করা দুইটি বছর হয়েছে।

কি বলিস তাহলে বিয়ে করে ফেলেছি?তবে বিয়ে করে ভালো করেছিস।ফরজ জিনিস আগে করাই ভালো।তবে আগের মতো আছিস নাকি চেন্জ হয়েছিস বউ পেয়ে।

আরে কই চেন্জ হতে পারলাম,

কি বলিস,এখনো কি তোর খারাপ অবভ‍‍্যস গুলো আছে?তাহলে তোর বউ কেমনে তোর সংসারে আছে রে ঈমান।কলেজ লাইফে কতো খারাপ ছিলি তুই তোকে কতো মানা করতাম যে মেয়েগুলো জীবন নষ্ট করিস না তাও বলতি একটু মজা করি।তাহলে কি এখনো ওগুলো করিস নাকি বউ বাসায় থাকার পরেও?

আরে না আগের মতো তেমন মেয়েদের জীবন নীয়ে খেলা করি না, তাও লোভ সমলাতে পারি নারে দোচ।অনেক চেষ্টা করেছি মেয়েদের শরীরের লোভ সমলাতে কিন্তু পারি না ছাড়তে।তবে অন‍্যমেয়ের কাছে আর যাই না নিজের বউ এর সাথেই করি,যা ইচ্ছা হয়।

তাহলে তোর কথা শুনে বুঝতে পারতেছি ভাবিকে অনেক অত‍্যাচার করিস।তাহলে তোর সংসারে এতো অত‍্যাচার সয‍‍্য করে ভাবি এখনো পড়ে আছে তোর কাছে।কোন মেয়ে কখনো এতো কষ্ট সয‍্য করে সংসার করবে না যদি তার স্বামীকে ভালো না বাসে।আমার মনে হয় ভাবি তোকে অনেক ভালোবাসে তাই তোর দেওয়া কষ্ট গুলো সয‍্য করে এখনো পড়ে আছে।ঈমান তোকে একটা কথা বলি সময় আছে এখনো নিজেকে শু‍ধ‍রায় নে তাহলে তোর জন‍্য ভালো।যদি এখনো নিজেকে চেন্জ করতে না পারিস তাহলে একদিন তোকে পস্তাতে হবে।সেদিন কান্না কাটি করেও লাভ হবে না।তাই বলি কি ভাবিকে অত‍্যাচার না করে একটু ভালোবেসে দেখ মনে শান্তি পাবি। শারীরিক সম্পর্ক আর মনের সম্পর্ক আসমান জমীন তফাত তাই বউ এর মনকে ভালোবাসতে শিখ তাহলে প্রকৃত ভালোবাসা পাবি বউ এর থেকে।বউ থাকতে বউ এর মর্ম বুঝেক যখন থাকবে না তখন বুঝবি বউ কি জিনিস?আমি বুঝতেছি সংসার একটা মেয়ে না থাকলে কেমন কষ্ট হয়।

গাড়িটা দাড় করা আমি এখানেই নামবো।

বাস স্টান তো আর একটু সামনে এখানে দাড় করাতে বলতেছিস কেনো রে সাজু।

তোকে যেটা বলতেছি সেটাই কর।আর বাসস্টানটা এখান থেকে বেশি দূরে না তাই একটু হাটলে সমস‍্যা নাই রে।

আমিই তো পুরো রাস্তাটা তোকে আর তোর মেয়েকে আনলাম আর এখন অর্ধেক এসে গাড়ি থেকে নামতে চাচ্ছিস রে।

অর্ধেক কই আর একটু সামনে গেলেই বাসস্টান তাই আমি চাচ্ছি অল্প রাস্তাটা একটু হেটেই যাই।

ঠিক আছে এতো করে যখন বলতেছিস তাহলে এখানে তোকে নেমে দেই।

ঠিক আছে গাড়িটা রাস্তার সাইটে দাড় করা।

ওকে।তারপর আমি গাড়িটা রাস্তার এক সাইটে দাড় করলাম।

তাহলে আমি গেলাম ঈমান ভালো থাকিস আর মাঝে মাঝে ফোন দেশ আমাকে একদমে ভূলে যাস না।

বন্ধুকে কেউ ভূলে যায় নাকি।আচ্ছা তুইও ভালো থাকি আর রাস্তা দেখে শুনে যাস।

আমি রাস্তা কি দেখবো গাড়ির ড্রাইভারে তো রাস্তা দেখে গাড়ি চালাবে।নতুন করে রাস্তা দেখতে হবে না আমাকে।

ঠিক আছে তাও দেখে শুনে যাস।

ওকে।আর শুন তোকে যেগুলো বললাম তোর ভালোর জন‍্য বললাম ভাই।তোকে আমি একটা ভাই হিসাবে মানি তাই তোকে বলতেছি সময় আছে ভালো হয়ে যা।আর আল্লাহ্ কাছে ক্ষমা চা আগের কর্মের তাহলে ঠিক একদিন আল্লাহ্ তোকে ক্ষমা করবে।আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বি।

ঠিক আছে সাজু তোর কথাটা মাথায় রাখবো।

হুম রাখলেই ভালো।দিন দিন জীবন খয় হচ্ছে হঠাৎ কোনদিন পুরো শরীর চলা বন্ধ হয়ে যাবে বুঝতেই পারবি না।

আচ্ছা তুই তাহলে যা আমি অফিসে যাবো এমনিতে লেট হয়ে গেছে।

ওকে।

তারপর আমি সাজুকে ওখানে রেখে সোজা অফিসের দিকে যাচ্ছি গাড়ি স্টাট দিয়ে।কিন্তু সাজুর কথাগুলো আমার কলিজায় গেথে গেলো।ও তো সত‍্যি বলেছে আমি কতো জঘন‍্য পাপ করেছি আল্লাহ্ কি আমাকে ক্ষমা করবে?প্রতিদিন কতো অত‍্যাচার করেছি জান্নাতুনকে তবুও আমার কাছে পরে আছে।তাকে বউ হিসাবে না মানা থেকে শুরু করে কতো শারীরিক অত‍্যাচার করেছি।আমি এতো খারাপ হলাম কেমন করে,নিজের প্রথম সন্তান কেউ মেরে ফেলেছি পৃথিবীতে আসার আগে।এতো খারাপ কাজ করেছি এখন তো নিজেকে দেখলেই ঘৃণা হচ্ছে।আসলেই আমি একটা জঘন‍্য ব‍্যক্তি।
আচ্ছা জান্নাতুন কি আমাকে ক্ষমা করবে আমার এতো গুলো অপরাধ কে?ক্ষমা না করলেও পা ধরবো তবুও ক্ষমা চাবো।স্বামী হয়ে অনেক অন‍্যায় করেছি ওর উপরে।

এগুলো ভাবতে ভাবতে অফিসে চলে আসলাম।তারপর
গাড়িটা পার্ক করে অফিসের ভিতরে ঢুকতেছি।ভিতরে ঢুকতেই,

গুট মর্নিং স‍্যার।

গুট মর্নিং।এভাবে অফিসের অনেক মানুষ আমাকে গুট মর্নিং বললো।তারপর আমি গিয়ে আমার রুমে ঢুকে পড়লাম।রুমের ভিতরে ঢুকে সোজা চিয়ারে গিয়ে বসলাম।চিয়ারে বসে চোখ দুটো বন্ধ করে হেলান দিয়ে ভাবতেই অবাক লাগতেছে আমি এগুলো কি করেছি?ভাবতেই বুকের ভীতর ভয়ে কেপে উঠতেছে।মনটাকে শান্ত করতেই পারতেছি না।

মে আই কামইন স‍্যার।

ইয়েস কামইন।(চোখ দুটো খুলে দেখি অফিসের ম‍্যানেজার এসেছে )

মাহাবুব সাহেব কোন সমস‍্যা?(ম‍্যানেজার এর নাম মাহাবুব)

না স‍্যার তবে কিছু ফাইলে আপনার সাইন লাগতো।

ওকে ফাইলগুলো রেখে যান আমি একটু পরে সাইন করে দিচ্ছি।

ওকে স‍্যার।

তারপর ম‍্যানেজার সাহেব ফাইলগুলো রেখে চলে যান আমার রুম থেকে।কিছুই ভালো লাগতেছে না, মনে আমার কাল বৈশাখী ঝড় শুরু হয়েছে মনে হচ্ছে।মনকে স্থির করতে পারতেছি না কিছুতে।না জান্নাতুন এর সাথে একটু কথা বলতে হবে দেখি কি করতেছে ও?
তারপর আমার ফোনটা বাহির করে জান্নাতুনকে ফোন দিচ্ছি কিন্তু ফোনটা ধরতেছেই না।দুইবার দিলাম ধরলো না কিন্তু তিনবার ফোন দেওয়ার পরে ফোনটা রিচিপ করলো।ফোনটা রিচিপ হওয়ার সাথে সাথে আমি বলতেছি,

কি করো জান্নাতুন তুমি?

আচ্ছা আপনার কি শরীর খারাপ হয়ে নাকি?

শরীর খারাপ হবে কেনো।

না মানে আপনি কখনো তো আমাকে ফোন দেন না তাই ভাবলাম আপনার শরীর খারাপ হয়েছে মনে হয়।

কেনো আমার বউকে আমি কি ফোন দিতে পারি না?

প্লিজ বউ বলবেন না।বউ কথাটা আপনার মুখে মানায় না।আপনার মনে হয় শরীর -মাথা দুটোই খারাপ হয়ে গেছে ।আপনি এক কাজ করেন অফিস থেকে আসার সময় ডাক্তার দেখায় আসেন ওকে।

ডাক্তার দেখাতে হবে না আমার সমস‍্যার ঔষধ হচ্ছো তুমি তাই তুমি হলেই হবে।

#চলবে,,,,কী?