#মন গহীনে তুমি
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ৪
সবাই যেভাবে শপিং করে যাচ্ছে তাতে আমি হৃদয়ে ব্যাথা অনুভব করতে পারছি। তারা তো আর জানেনা বিয়েটা হবেনা। শুধু শুধু আমি এত খরচ করছি।
আমি আপুকে বললাম, একদিনেই সব কিনে ফেলবা নাকি। কিছুদিন পর আপডেট কিছু নিয়ে আসবে তারা তখন আবার কিনতে পারবা৷ এখন মোটামুটি যা হইছে ওইগুলাই রাখো৷
আপু বললো, তুই চুপ করতো। বিয়ের তো আর বেশিদিন নাই৷ কত কাজ পরে আছে। রোজ রোজ শপিং করতে আসবো নাকি৷ আজকে একদিনেই শপিং শেষ করতে হবে৷
আপুর কথা শুনে আসবো না কাঁদবো কিছুই বুঝতে পারছিনা৷ যেখানে আমি বিয়েটাই করতে চাইনা সেখানে তারা বলে বিয়ের আর বেশিদিন নাই৷ আজকে বাসায় গিয়েই সব সত্যিটা বলতে হবে। যত দেঁড়ি করবো আমার খরচ তত বাড়বে৷ ওই মেয়েটাকে এত কিছু গিফট দেওয়ার কোন ইচ্ছাই আমার নাই৷
আপু আমাকে বললো, তুই এখানে কি করছিস? কায়রা কোথায়? তোদের শপিং করা শেষ?
” মেয়েটার নাম তাহলে কায়রা ” আপু না বললে জানতামই না৷ মেয়ে দেখতে গিয়ে যে সিচুয়েশনে পরলাম তাতে মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করার আর ইচ্ছে হয়নি।
আপুকে বললাম, শুরু ই তো করতে পারলাম না এখনও। সে ফোনে কথা বলতে গেছে।
হঠাৎ কায়রার বাবা আমাকে বললো, জামাই বাবাজি একটু এদিকে আসো তো। দেখো তো এটা তোমার পছন্দ হয় কিনা।
” আমি আগে মূল্যটা দেখে নিলাম৷ অনেক বেশিই আছে। তারপরও মেয়েকে যা দিবো তার সামনে কিছুই না৷ আমি দোকানদারকে বললাম, আচ্ছা এই সেইম ডিজাইনের অন্য কালারের ৭/৮ টা হবে।
কায়রার বাবা আমাকে বললো, তা দিয়ে কি করবা জামাই বাবাজি?
– আসলে আমার বন্ধুদের দিতে হবে। আগে থেকেই ওরা প্লান করে রেখেছে। আপনি আমার জন্য কিনেন আমি ওদের জন্য কিনবো৷
– সে কি করে হয় জামাই বাবাজি। তোমার কিছু কিনতে হবেনা৷ আমি তোমার বন্ধুদের জন্য কিনে দিচ্ছি।
– না থাক আংকেল। এত গুলো কিনার দরকার নেই৷ তাছাড়া আরও তো কত কি আছে৷ আমি যা কিনবো সেইম ডিজাইনের অন্য কালারের গুলা ওদের জন্য ও কিনে দিতে হবে৷ তাই যেই দোকানে সব পাওয়া যাবে ওই দোকান থেকেই কিনতে হবে৷ আপনি আমার জন্য কিনবেন আর আমি ওদের জন্য।
– আরে কি বলো জামাই বাবাজি তুমি কেন কিনবে৷ আমিই সব কিনে দিবো।
এর ভিতরে কায়রা চলে আসলো। কায়রা আমার দিকে রাগীভাবে তাকিয়ে আছে। কায়রার বাবা ওকে বললো, কায়রা তুই একটু জামাই বাবাজিকে বুঝা তো।
কায়রা আমাকে বললো, বাবা যখন এত করে বলছে তখন আপনার শুনা উচিত। বড়দের কথার অবাধ্য তো হওয়া উচিত না।
– আচ্ছা আপনারা যখন এত করে বলছেন তাহলে কি আর করার৷ আপনাদের কথামতই সব হউক।
” আমি মনে মনে বললাম, এটাই তো চেয়েছিলাম৷ আমি এতগুলো টাকা খরচ করবো তার উসুল তো করতে হবে।
আপু বললো, তুই এখনও দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কায়রা তো এসেছে ওকে নিয়ে যা তোদের পছন্দ মত তোরা কিনে নে
———-
শুধু হাঁটছি কিন্তু কোনো দোকানে যাচ্ছি না। আমরা তো জানি বিয়েটা হবেনা তাহলে এসব কেনাকাটা কেন করবো৷ কায়রা আমার দিকে রাগীভাবে ভাবে তাকিয়ে আছে৷ আমি মনে মনে হাসতেছি৷ নিজের বাবার টাকা কেও খরচ করতে চায় না৷ অন্যজনের হলে ঠিক আছে। বাবার সামনে কত ভালো সাজলো৷ আর মাঝখান থেকে আমি সবার সামনে খারাপ হয়ে যাবো৷
কায়রা আমাকে বললো, আপনি ইচ্ছে করে আমার বাবার থেকে শুধু এসব নিচ্ছেন কেন? আমি তো আর ইচ্ছে করে বা চেয়ে নিচ্ছি না৷ আপনার পরিবার আমাকে দিচ্ছে।
– টাকাটা তো আমার পকেট থেকেই যাচ্ছে। তাই তার উসুল করার বিন্দুমাত্র প্রয়াস৷ চিন্তা করবেন না আমরা আপনাকে যা দিবো তা যদি ঠিকঠাক ফেরত পাই তাহলে আপনারা যা দিবেন তাও ঠিকঠাক ফেরত পাবেন৷
– আপনার মত ছোট মনের মানুষ আমি আজ পর্যন্ত দেখিনি৷
– ফ্রিতে না দেওয়াতে ছোট মনের মানুষ হয়ে গেলাম৷ কপাল আমার। আপনারা তো বড় মনের মানুষ তাহলে আপনারা যা দিবেন তা ফেরত না নিলেই পারেন৷ আমি তো ছোট মনের মানুষ তাই আমি সব ফেরত নিবো৷
– যদি আমার কাছে টাকা থাকতো তাহলে আপনার সব টাকা এখনই দিয়ে দিতাম।
– আপনার কাছে টাকা নাই তো কি হইছে একটা ব্যাংক তো আছে চাইলে সেখান থেকে নিয়ে দিতে পারেন৷
– মানে? কিসের ব্যাংকের কথা বলছেন?
– আপনার বয়ফ্রেন্ড সে টাকার ব্যাংক৷ তাকে বলুন আমার যা খরচ হবে তা দিয়ে দিতে৷ সে তো আপনাকে ভালোবাসে কিন্তু আপনার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর সে কিছুই করছে না৷ এটা কেন জানি আমার হজম হচ্ছে না৷ ভালোবাসার মানুষের অন্য কারও সাথে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর সে চুপ করে আছে৷ এটা কেমন ধরনের ভালোবাসা তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
– আচ্ছা খারাপ মানুষ তো আপনি৷ এখন কি আপনি আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝামেলা বাঁধাতে চান৷ যদি সেরকম কিছু চিন্তা – ভাবনা করে থাকেন তাহলে ভুলে যান৷ কারন আমি আমার বয়ফ্রেন্ডকে অনেক ভালোবাসি সেই সাথে বিশ্বাসও আছে ওর প্রতি৷
– তাহলে সে চুপ করে আছে কেন? আপনার বাবার সাথে কথা বলুক৷ মানুষ ভালোবাসার জন্য কত রিস্ক নেয় আর আপনার বয়ফ্রেন্ড সামান্য এটা করতে পারবেনা। আপনার বয়ফ্রেন্ড চাইলেই তো বিয়েটা ভেঙে দিতে পারে৷ বিয়েটা ঠিক হওয়ার আগে কেন আপনার বাবার সাথে কথা বললো না ?
– বলেনি কারন আছে৷ আপনার আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা৷ আপনি এখন নিজেকে নিয়ে ভাবেন৷ আর যত দ্রুত সম্ভব বিয়েটা ভাঙেন।
– সবকিছু আমি একা কেন করবো? বিয়েটা তো আর আমার একার হচ্ছেনা৷ যা করবো দুজনে সমান সমান। তাই আপনি আপনার পরিবারকে বলবেন আমি আমার পরিবারকে৷
– যদি তা বলতে পারতাম। তাহলে আপনার মত অভদ্র মানুষের সাথে জিবনে আমার হয়তো কখনও কথাও হত না৷
– আচ্ছা মানলাম আমি অভদ্র। তা আপনি আর আপনার বয়ফ্রেন্ড তো খুবি ভদ্র। তাহলে আপনারা দুজনে মিলে বিয়েটা ভাঙুন।
– যা করার আপনি করবেন৷ তা না হলে আপনার পরিবারকে বলবো আপনি আমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছেন৷
– কি মেয়েরে বাবা৷ এত বড় মিথ্যা কথা বলবেন৷ আপনি না ভদ্র মানুষ।
– মিথ্যা কেন বলতে যাবো৷ সত্যিই তো আপনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন৷ পুলিশের কাছে বলিনি আপনার কপাল ভালো৷
” হঠাৎ আপু আসলো৷ আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম৷ কোন কিছু না জেনে মাঝখান থেকে এটা শুনে নিলে তো ঝামেলা হয়ে যাবে”।
#মন গহীনে তুমি
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ২+৩
আদ্রিশ মেয়েটার কথামত পার্কে আসলো। অনেকখন হয়ে গেলো কিন্তু মেয়েটা আসলো না৷ আদ্রিশের রাগ হলো অনেক। ওকে আসতে বলে এভাবে অপেক্ষা করানোর কোন মানেই হয়না৷ মেয়েটা বলেছিলো গুরুত্বপূর্ণ কিছু তাই আদ্রিশ এসেছে৷
এখন দেখলো এসে ভুলই করেছে। মেয়েটা হয়তো ওকে এভাবে অপেক্ষা করানোর জন্যই ডেকেছে। আদ্রিশ ভাবলো, এখানে আর অপেক্ষা করা ঠিক হবেনা। আদ্রিশ যখনই চলে যেতে যাবে তখনই মেয়েটা সামনে এসে বললো, এত তাড়া কিসের শুনি?
– আপনি তাহলে অনেক আগেই এসেছেন। আমাকে শুধু শুধু এখানে অপেক্ষা করালেন কেন?
– আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই
– আপনার ইচ্ছেমত তো আর সবকিছু হবেনা। আপনি আমাকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলবেন তাই আমি এসেছি৷ নতুবা আসতাম না। আমাকে আসতে বলে আপনি ইচ্ছে করে এভাবে আমাকে অপেক্ষা করাবেন এটা কোন ভদ্রতা না।
– আমাকে আপনার ভদ্রতা শেখাতে হবেনা। আপনার মত অভদ্র আমি না এটা খুব ভালোভাবেই জানি। মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটাও জানেন না। আপনার কথা শুনে এত রাগ হয়েছিলো যে মন চাচ্ছিলো থা*প্প*র মারি। বাসায় ছিলাম বলে অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করেছি৷
– তো এখন কি আপনি প্রতিশোধ নিতে এসেছেন? দেখুন আমি কোন কিছু নিয়ে কনফিউশান পছন্দ করিনা৷ যার সাথে আমার বিয়ে হবে, সারাজীবন একসাথে থাকতে হবে তার ব্যাপারে সবকিছু ক্লিয়ারলি জানার অধিকার নিশ্চয়ই আমার আছে৷ আর আমি আপনার সাথে কিন্তু শান্তভাবেই কথা বলেছিলাম। আপনিই উচ্চস্বরে কথা বলেছিলাম।
– আপনি যা বলেছিলেন তাতে আরও অনেক কিছু বলার কথা ছিলো। আমি ভদ্রতা জানি বলেই নিজেকে শান্ত রেখেছি। কিন্তু আপনার মধ্যে ভদ্রতার ছিঁটেফোঁটাও নেই তা বুঝতে পারছি।
– আমি শুধু আপনার ব্যাপারে ক্লিয়ারলি জানতে চেয়েছি। আমি কোন কিছু কিনতে গেলেও তার গুনাগুন ভালোভাবে যাচাই করে নেই৷ সেখানে আমি যাকে বিয়ে করবো তার ব্যাপারে সবকিছু জানার অধিকার আমার আছে৷
– তাই বলে আপনি কোন মেয়েকে,” আপনি কি ভা*র্জি*ন* “? এটা বলতে পারবেন না৷ এমন প্রশ্ন করা অভদ্রতা আর অপরাধও। মেয়েদের অসম্মান করা হয় এমন কোন শব্দ আপনি ব্যবহার করতে পারবেন না৷ আমার সম্পর্কে জানার জন্য আপনি অন্য ভাবেও প্রশ্ন করতে পারতেন৷
– আপনি অযথাই এটা নেগেটিভ ভাবে নিচ্ছেন। আজকালকার ভালোবাসাটাই এমন। রিলেশন মানেই গভীর সম্পর্ক। সেই ধারনা থেকেই আমি প্রশ্নটা করেছি। যদি জিজ্ঞেস করতাম, আপনি কি রিলেশন করেন বা করছেন কখনও? তাহলে হয়তো আপনি হ্যা বা না বলতেন। কিন্তু তাতে আমার কনফিউশান দূর হত না৷ বিয়ের পর আমাকে এটা আরও চিন্তিত করতো৷ আমি ডিপ্রেশনে থাকতাম। তাই আমি আগে থেকেই এটা নিয়ে নিশ্চিত হতে চেয়েছি৷ যাতে বিয়ের পর এটা নিয়ে কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয়।
আমি প্রশ্নটা স্বাভাবিক আর পজেটিভ মাইন্ডেই করেছি৷ কিন্তু আপনি এটা নেগেটিভ নিয়েছেন৷
– নিজে অভদ্রের মত কথা বলবেন আর রিয়্যাক্ট করলে বলবেন নেগেটিভ নিয়েছি৷ আপনারা ছেলেরা এমনই। আপনি নিজের কনফিউশান দূর করার জন্য তো একটা মেয়ের সাথে অভদ্র আচরন করতে পারবেন না৷ তাকে অসম্মানজনক কথা বলার অধিকার আপনার নেই। আমি চাইলে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবো আমাকে এরকম কথা বলার জন্য কিন্তু আমি তা করবো না৷ এটা এখানেই শেষ হবে৷
– আপনি আমাকে যা খুশি ভাবতে পারেন। আমি শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কোন কিছু করিনা৷ আমার পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে আমি সঠিক।
কায়রার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে কিন্তু পাবলিক প্লেসে তাই কিছু বলতে পারছেনা৷ রাগ কন্ট্রোল করে বললো, আপনার জন্য আমি যে ঝামেলায় পড়েছি আপনাকেই তা থেকে উদ্ধার করতে হবে। আপনি আমাকে রিজেক্ট করে দিলেই আর এই ঝামেলা হত না৷
– এমন ভাবে বলছেন যেনো আমি আপনাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে আছি৷ আমাকে কিছু বলার সুযোগই তো তারা দিলোনা৷ আমরা রুম থেকে বের হওয়ার পরই তো তারা বিয়ের তারিখ ঠিক করা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো৷
– আপনাকে হাসতে কে বলছিলো? না হেসে যদি তাদের বলে দিতেন, ” আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি “। তাহলেই তো হত।
– সেটা তো আপনিও করতে পারতেন৷ আপনার কেন হাসি দিতে হবে? আমি না হয় সামাজিকতা রক্ষার জন্য একটু হাসার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আপনার কেন হাসতে হবে৷ আপনি না হাসলে তো তারা বিয়ের তারিখ ঠিক করতো না। আমাকে ধন্যবাদ দিন কারন আমিই কিন্তু বিয়ের তারিখ ঠিক করা থেকে বিরত রেখেছি সবাইকে৷
– ধন্যবাদ কখনই দিবোনা৷ আপনি আমার সাথে যে অভদ্র আচরন করেছেন তারজন্য সরি বলবেন আগে৷ আপনার মত অভদ্র মানুষ আমি আর কখনও দেখিনি হয়তো দেখবোও না।
– দেখুন কথায় কথায় আমাকে অভদ্র বলবেন না৷ যেকোন মানুষের কোন কিছু নিয়ে কনফিউশান থাকেই। আমার ভয় হয় বিয়ের পর আমার স্ত্রী তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে যাবে৷ আর আজকাল রিলেশন মানেই গভীর সম্পর্ক তাই তারা একে অপরের প্রতি আরও বেশি আকৃষ্ট হয়। এর জন্য আপনাকে জিজ্ঞেস করেছি আপনি ভা*র্জি*ন কিনা। আমি কখনও রিলেশনে যাইনি৷ প্রেম- ভালোবাসা এসব থেকে দূরে থেকেছি সবসময়। আমার সব ভালোবাসা আমার ভবিষ্যত স্ত্রীকে নিয়ে৷ তাকে নিয়ে আমি খুবিই সিরিয়াস। আমি কোনভাবে ধোঁকা খেতে চাইনা। আমি যেমন কোন রিলেশনে জড়াইনি তাই আমার স্ত্রী যে হবে তারও তেমন হতে হবে। যদি বিয়ের পর কোনভাবে জানতে পারি আমার স্ত্রী ভা*র্জি*ন ছিলোনা। এটা আমাকে ডিপ্রেশনে ফেলতো৷ আমি লাইফে অনেক বড় একটা ধাক্কা খেতাম। সবার থেকে একা হয়ে যেতাম। জবে মন দিতে পারতাম না। আমি ভবিষ্যতের সমস্যা গুলোর কথা ভেবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার দিক থেকে আমি সঠিক৷ এখন এর জন্য যদি সবাই আমাকে খারাপ ভাবে তারপরও কিছু যায় আসবেনা কারন ভবিষ্যতে এটা নিয়ে কোন অশান্তি হবেনা৷ আমাকে কখনও চিন্তা করতে হবেনা৷ আমি আমার স্ত্রীকে নিঃসার্থ ভাবে ভালোবাসতে পারবো।
কায়রা আদ্রিশের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সেই সাথে রাগও হচ্ছে অনেক৷ কায়রা ভাবতেছে, পাগল নাকি মানুষ বর্তমানে কি করবে সেটা নিয়ে ভাবে আর সে ভবিষ্যতে কি হতে পারে, হবে কিনা তার ঠিক নেই সেটা নিয়ে পরে আছে৷ অদ্ভুত এক মানুষ।
কায়রা বললো, এরকম চিন্তাভাবনা থাকলে বিয়ে না করলেই পারেন৷ তাহলে আর এরকম ভয় থাকবেনা৷ আর ডিপ্রেশনে পরারও ভয় থাকবেনা৷ আপনি না শিক্ষিত, ভালো একটা জব করেন তাহলে এরকম চিন্তাভাবনা কেন?
– আমি সবসময় ভবিষ্যত নিয়ে ভাবি। বর্তমানে কোন সমস্যা হলে সেটা নিয়ে আমরা ভাবতে পারি৷ সমস্যার মোকাবিলা করতে পারি কিন্তু ভবিষ্যতে এরকম সমস্যা আসলে তখন আর ভাবার সময় থাকেনা৷
– রিলেশন থাকলেই যে সে গভীর সম্পর্কে থাকবে এটা আপনাকে কে বললো? প্রকৃত ভালোবাসা মানে শা*রি*রীক সস্পর্ক না। একে অপরের প্রতি বিশ্বাস।
আমি লাকি যে এরকম একজন আমার পাশে আছে। আর সবসময় থাকবে৷
#মন_গহীনে_তুমি
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ৩
বাবাকে বলিনি তার পিছনে অবশ্যই কোন কারন আছে কিন্তু তা আপনাকে বলতে আমি বাধ্য নই৷
আদ্রিশ বললো, তাহলে আপনি নিজেই আপনার বাবাকে বলতে পারতেন যে, আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন। শুধু শুধু আমাকে এত প্যাড়া দিচ্ছেন কেন? বাবার কাছে ভালো থাকবেন কিন্তু আমাকে খারাপ বানাবেন৷
– আপনাকে খারাপ বানানোর কিছু নেই আপনি অলরেডি খারাপ আছেন৷
– তাহলে আপনি নিজেই আপনার বাবাকে গিয়ে বলেন৷ আমি তো খারাপ আপনার বাবার কাছে আর খারাপ হতে পারবো না।
– আপনি বলবেন৷ আমি নিজে থেকে কিছু বলতে পারবো না৷ আর আমি আপনাকে এসব বলতে বলেছি তাও বাবাকে বলবেন না।
– আচ্ছা যদি আমি আপনাকে পছন্দ করতাম। বিয়ের তারিখ ঠিক করা হত তখন কি করতেন?
– তখন আপনাকে বলে দিতাম, আমার আপনাকে পছন্দ না৷ আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। এসব শোনার পর নিশ্চয়ই আপনি বিয়েটা করতেন না।
– ঝামেলায় শুধু আপনি একা নন আমিও আছি। কিভাবে বিয়েটা ভাঙবো সেটাই ভাবতেছি। আমার একা দুই পরিবারের বিরুদ্ধে যেতে হবে৷
– দরকার হলে যাবেন৷ আপনার জন্য এসব কোন ব্যাপারই না৷ অভদ্রের মত আচরন তো করতে পারেন। যা করার তাড়াতাড়ি করবেন৷
– আপনি কথায় কথায় আমাকে অভদ্র বলা বন্ধ করুন৷
– যা সত্যি সেটাই বলছি৷
– আপনার সাথে কথা বলাই বেকার৷ আপনার গুরুত্বপূর্ণ কথা শেষ হলে আমি কি যেতে পারি এখন?
– হুম যান৷
———–
আদ্রিশ ভাবতেছে, এই মেয়ের থেকে দূরে থাকতে হবে৷ তার জন্য আগে বিয়েটা ভাঙতে হবে। পরিবারের সবাই যেভাবে বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে, কেনাকাটাও শুরু করে দিয়েছে। এখন কিভাবে তাদের বলবো সেটাই ভাবতেছি৷ বিয়েটা ভাঙতে হলে আমাকে অনেকগুলো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে৷ মেয়েটার তো কোন চিন্তা নেই সে নিজে থেকে কিছু বলবেনা। আমারই সবাইকে বলতে হবে। কি এক ঝামেলায় পরলাম৷ মেয়েটাকে পছন্দ না এটা বলার জন্য ও আমাকে ভাবতে হচ্ছে।
আদ্রিশ বাসায় আসার পর দেখলো, সবাই কেনাকাটা করতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। যেখানে বিয়েটাই হবেনা সেখানে এরা কেনাকাটা করতে ব্যস্ত। এদেরকে এখন কিভাবে বুঝাবো৷
আদ্রিশ বললো, বিয়ের তারিখ এখনও ঠিক হয়নি আর তোমরা শপিং নিয়ে আছো৷ আগে বিয়ের তারিখ ঠিক হউক তারপর শপিং নিয়ে ভাবা যাবে।
– তারিখ তো ঠিক হয়েই আছে
আদ্রিশ ভয় পেয়ে গেলো। ওর অজান্তে এরা বিয়ের তারিখ ঠিক করে রেখেছে। আদ্রিশ বললো, তারিখ ঠিক হয়েছে মানে?
” একপ্রকার তো ঠিক হয়েই আছে। তোর অফিসের কাজ শেষ হলেই তারিখ ঠিক করাটা শুধু বাকি। এমন সময় তোর অফিসের কাজ পরে গেলো। তোর স্যারকে বলে দ্রুত কাজ শেষ কর৷
আদ্রিশ ভাবতেছে, এদেরকে কিভাবে বলবে বিয়েটা ও করতে চায়না৷ কেন যে তখন হাসতে গেলাম। সামান্য হাসি এখন আমার গলায় কাঁটার মত আটকে গেছে৷
মেয়েটা তো সবকিছু আমার উপরে ছেড়ে দিয়ে নিজে ঠিকই শান্তিতে আছে৷ সে তার বাবার কাছে, আমার পরিবারের কাছে সবার কাছে ভালো থাকবে৷ মাঝখান থেকে আমি তাদের চোখে খারাপ হয়ে যাবো। ইচ্ছে করতেছে মেয়েটার সব কুকীর্তি সবাইকে বলে দেই৷
তখন তো মেয়েটার পরিবার ভাববে, আমি মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাইনা তাই এসব ছড়াচ্ছি। কি একটা ঝামেলায় পরলাম। সত্যি বললেও সমস্যা আর মিথ্যা বললেও। এখন এদেরকে শপিং করা থেকে কিভাবে আটকাবো সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।
সবাই আমাকে বলতেছে,
” তুই রেডি হসনি কেন এখনও? তাড়াতাড়ি যা সময় নেই একদমই। মেয়ে পক্ষ কিন্তু আমাদের আগে চলে আসবে।
– কথাটা শুনে মনে হলো যেনো কারেন্টের শ*ক খেয়েছি একটা৷ আমি বললাম, মেয়ে পক্ষ আসবে মানে? কোথায় আসবে?
” আসলেই তুই একটা গা*ধা। দুই পরিবার সবার পছন্দমত একসাথে শপিং করবো। তারা এসে পরবে তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে৷ তারা আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে কেমন দেখায় বল।
” ভাইয়া ভাবিও আসবে৷ ভালো করে রেডি হয়ে নাও। বিয়ের আগেই ভাবি তোমাকে যা কেয়ার করে বিয়ের পর কি হবে কে জানে। তবে যাই বলো ভাবি কিন্তু মাশাআল্লাহ। সবার মন মত।
– কি বলবো বুঝতে পারছিনা৷ আমরা চাচ্ছি বিয়েটা ভাঙতে আর তারা সবাই শপিং নিয়ে আছে। এককিছুর পর তো বিয়েটা ভাঙা মুশকিল হয়ে যাবে। তখন তো সবাই বলবে আগে কেন বলিনি। তাদেরকে যে বলবো বলার মত সিচুয়েশন পাচ্ছিনা। আমার রিলেটিভরা সবাই আছে। যখনই বাসায় আসি তখনই দেখি তারা বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত। কিছু বলার সুযোগ পাচ্ছি না৷ আমার পরিবারকে আগে বলতে হবে তারপর মেয়েটার পরিবারকে৷
———-
আমরা শপিং মলে যাওয়ার সাথে সাথে মেয়েটা আর ওর পরিবারও এসে পরেছে। মেয়েটা আমার দিকে রাগীভাবে তাকিয়ে আছে।
সবাই আমাদের বললো, আমাদের পছন্দের সাথে তো তোমাদের পছন্দ মিলবেনা৷ তাই আমরা আমাদের মত শপিং করি তোমরা তোমাদের মত পছন্দ করো যাও।
ইচ্ছে না থাকা সত্যেও মেয়েটার সাথে যেতে হলো৷ মেয়েটা বলে দিলেই পারতো দরকার নেই। কিন্তু সে তো তার বাবার ভালো মেয়ে হয়ে থাকতে চায়।
” মেয়েটা আমাকে রাগী কন্ঠে বলতেছে, আপনাকে বলেছিলাম বিয়েটা ভাঙতে আর আপনি তাদেরকে নিয়ে শপিং করতে চলে আসলেন। আপনাকে যে কি করতে ইচ্ছে করতেছে।
– দেখুন ক্ষতি কিন্তু আমারই হচ্ছে। শপিং কিন্তু ছেলে পক্ষ ই করবে। যখন শুনলেন কেও শপিং করাবে ওমনি নাচতে নাচতে চলে আসলেন৷ বিয়েটা হউক বা না হউক আপনার তো শপিং করা লাগবে। আপনাদের জন্য যা খরচ হবে তার সবটা আমাকে দিতে হবে বলে দিলাম।
– আর আমার বাবা বুঝি কিছু দিবেনা। আপনারাও দিবেন আমরাও দিবো সমান।
– দিবে তো শুধু একটা শেরওয়ানি, পান্জাবি,জুতা আর আমাদের তো কত কিছু দিতে হবে আপনার সাজ-সরঞ্জামেই তো এর থেকে বেশি খরচ যাবে। তারপর কত দামের শাড়ি দিতে হবে মনে হলেই আমার মাথা ঘুরে। আমরা যা দিবো সবকিছু আলাদা করে রাখবেন। একটারও প্যাকেট খুলবেন না। সবকিছু আমি ফেরত নিবো৷
– সত্যিই আপনি একটা অভদ্র সেই সাথে অনেক ছোট মনের মানুষও
– আমি কি যাকাত দিচ্ছি নাকি যে আমাকে বড় মনের হতে হবে। যাকাত যাদের দেওয়া উচিত তাদের দিবো৷ আপনাদের না৷
কায়রার মন চাচ্ছে ঘু*ষি মেরে তার নাকটা ফা*টি*য়ে দিতে৷ নিজেকে শান্ত রেখে বললো, আপনি তাদেরকে শপিং করাতে কেন নিয়ে আসলেন?
কায়রার মোবাইলে কল আসলো। আদ্রিশ বললো যান যান বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে আসুন৷
বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গিয়ে আদ্রিশ বললো, ” আপনি ভা*র্জি*ন কিনা আমি এটা পরিক্ষা করাতে চাই। তারপরই কেবল বিয়েটা হবে “।
” এমন কিছু শুনার জন্য কায়রা একদমই প্রস্তুত ছিলোনা। বর্তমান সময়েও কোন শিক্ষিত ছেলে এমন কথা বলতে পারে তা কায়রার জানা ছিলোনা। অবশ্য আজকাল বাহ্যিক দিক থেকে কাউকে ভদ্র মনে হলেও তার ভিতরে এরকম মন- মানসিকতা থাকে।
রাগে কায়রার চোখ লাল হয়ে গেছে৷ প্রচন্ড রেখে থাকলে কায়রার এমন হয়। ছেলের সাথে কায়রাকে আলাদা রুমে কথা বলতে পাঠানো হয়েছে৷ কায়রা যতটা সম্ভব চুপ থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কায়রা বাসায় কোন ঝামেলা চাচ্ছেনা৷
কায়রা অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত রেখে রাগী গলায় বললো, ” আপনার পরিক্ষা করানোর দরকার নেই৷ আমি ভা*র্জি*ন না। আর কিছু জানতে চান আপনি?
” মেয়েটার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো আদ্রিশ। কি বলে মেয়েটা? ভা*র্জি*ন না কত সহজ ভাবে বলে দিলো। মনে হয় এটা তার কাছে কোন ব্যাপারই না।
আদ্রিশের পরিবার ওকে বলেছিলো মেয়েটা একটু আধুনিক হলেও খুবই ভালো৷ পরিবারের জন্য আর আদ্রিশের জন্য একদম পারফেক্ট।
আদ্রিশও পরিবারের কথায় মেয়ে দেখতে চলে আসলো৷ আদ্রিশ কোন কিছু নিয়ে কনফিউশন পছন্দ করেনা৷ তাই আগে থেকেই সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে নেয়। তাইতো ভা*র্জি*ন কিনা এটা পরিক্ষা করাতে চেয়েছিলো। যাতে এটা নিয়ে বিয়ের পর কোন ঝামেলা না হয়।
এখন মেয়েটার কথা শুনে ও আরও কনফিউজড হয়ে গেলো। আদ্রিশ ঠিক করে নিয়েছে বিয়েটা ও করবেনা। ১/২ দিন পরিবারের কথা শোনার থেকে সারাজীবন খুশি থাকাই ওর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কায়রা বললো ” আপনার আর কিছু জিজ্ঞেস করার নেই?
– আপনি এরকম উচ্চস্বরে কেন কথা বলেন? মেয়েদের নরম কন্ঠে কথা বলতে হয়৷
– আমার ইচ্ছে আমি যেভাবে কথা বলবো তাতে আপনার কি? আমার বাক – স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার আপনি কে?
” আদ্রিশ বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারলো এই মেয়েকে বিয়ে করলে ওর জিবন তেজপাতা হয়ে যাবে৷ ওর বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত আরও জোরালো হলো।
কায়রা বললো, ” আপনার যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন৷ আমার শাড়ি পরে থাকার অভ্যাস নেই। গরম লাগছে অনেক।
– আর কিছু বলার নেই
আদ্রিশ আর কায়রার দিকে দুই পরিবারের সবাই উচ্ছাস হয়ে তাকিয়ে আছে। দুই পরিবার এই বিয়েতে রাজি এখন শুধু ছেলে আর মেয়ে একে- অপরকে পছন্দ করলেই তারা বিয়ের তারিখ ঠিক করবে৷
আদ্রিশ আর কায়রা দুজনেই সামাজিকতা রক্ষার জন্য একটু হাসার চেষ্টা করলো৷ ওদেরকে হাসতে দেখে দুই পরিবার ভেবেছে ওদের হয়তো একে-অপরকে পছন্দ হয়েছে। তারা বিয়ের তারিখ ঠিক করতে লাগলো৷
এটা দেখে আদ্রিশ, কায়রা দুজনেই অবাক হয়ে গেছে। ওরা সবার সামনে সরাসরি কিছু বলতেও পারছেনা।
আদ্রিশ ওর আপুকে ডাক দিয়ে বললো, ” আপু স্যার কল দিয়েছিলো। খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। অফিসে যেতে হবে। আমার ছুটিও ক্যান্সেল করে দিয়েছে। আমি অফিসে যাই তারপর দেখি স্যার কবে ছুটি দেয় তারপর না হয় বিয়ের তারিখ ঠিক করবো।
কায়রার পরিবারও এতে অমত করলো না৷ সমস্যা থাকতেই পারে৷ আদ্রিশের গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ হলেই বিয়ের তারিখ ঠিক করা হবে৷
কায়রা কিছুটা স্বস্তি পেলো৷ কিন্তু গলা থেকে কাঁটাতে এখনও পুরোপুরি দূর হয়নি৷ বিয়েটা কিভাবে আটকাবে সেটাই ভেবে পাচ্ছেনা৷ ও নিজে থেকে ওর পরিবারকে কিছু বলতেও পারবেনা৷
শুধুমাত্র ছেলেটা ওকে রিজেক্ট করলে তবেই হবে৷ তাহলে ওর অমতে আর ওর বাবা- মা বিয়ে ঠিক করতে পারবেনা৷ ওর ইচ্ছে মত হবে। এমনটাই চুক্তি হয়েছে ওর বাবার সাথে।
কিন্তু সামান্য একটু হাসি সবকিছু শেষ করে দিলো। আমি না হয় ভদ্রতার জন্য একটু হাসার চেষ্টা করেছি কিন্তু এই বর্বর ছেলেটাকে কেন হাসতে হবে৷ কথা তো ঠিকভাবে বলতে পারেনা৷ এখন দেখছি কখন, কোথায় হাসতে হবে তাও জানেনা। তবে ছেলেটার উপস্থিত বুদ্ধি আছে তা মানতে হবে। এটার জন্যই একটু স্বস্তি পেলাম।
” দুই পরিবারের সবাই খুব খুশি৷ তাদের উভয়েরই ছেলে, মেয়েকে পছন্দ হয়েছে। তারা সবকিছুই ঠিক করে রাখছে শুধু বিয়ের তারিখটা বাদ দিয়ে৷ আদ্রিশ আর কায়রা এসব দেখে হতাশ হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে “।
কায়রা রাগীভাবে আদ্রিশের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আর মনে মনে বলতেছে, বর্বর, উজবুক একটা৷ বলে দিলেই তো পারে বিয়েটা করবেনা৷ তা না ঢং করে আবার হাসতে গিয়েছে৷ মন চাচ্ছে ঘুষি মেরে নাকটা ফাঁ*টি*য়ে দেই৷
আদ্রিশ ওর আপুকে বললো, আপু এখন তাহলে যাওয়া যাক। আমারও অফিসে যেতে হবে।
কায়রার বাবা- মা বললো, আপনাদের আর বসিয়ে না রাখি৷ আদ্রিশ বাবাজির তো আবার কাজ পরে গেছে৷ খেয়ে তারপর যাবেন আপনারা৷
কায়রা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর বাবার দিকে৷ ” আদ্রিশ বাবাজি ” বিয়ে হবেনা আর এমন টাইটেল৷ বাবা যখন জানতে পারবে বিয়েটা হবেনা তখন কি হবে সেটা ভেবেই আমার হাসি পাচ্ছে। চুক্তিটা আমি জিতে যাবো৷
আর এই অভদ্র ছেলেটা এখনও যাচ্ছেনা কেন। এখন আবার খাবে৷ বলে দিলেই তো পারে যে খাওয়ার ইচ্ছে নেই।
আদ্রিশ বললো, ” আমার তো কাজ পরে গেছে আমাকে যেতে হবে “।
কায়রার বাবা- মা বললো, ” অল্প খেয়ে যাও। আর তোমার স্যার তো জানেই তুমি এখানে। একটু লেইট হলেও সমস্যা হবেনা”।
আদ্রিশের অনিচ্ছা সত্যেও খাওয়ার জন্য বসতে হলো। কায়রার বাবা- মা কায়রাকে বললো, আদ্রিশকে খাবার দিতে। কায়রা বাধ্য হয়ে আদ্রিশকে খাবার দিতে গেলো।
কায়রা সবকিছু বেশি বেশি দিচ্ছে। আদ্রিশ না করছে তারপরও দিচ্ছে। তখন সবাই বললো, বিয়ের আগেই হাসবেন্ডের এত কেয়ার৷ বিয়ের পর তো আমাদের সবাইকে ভুলে যাবে।
কায়রা হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। ও যা করছে সবকিছুই এরা পজিটিভ ভাবে নিচ্ছে। নেগেটিভ ভাবে নিলেই কিন্তু সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়৷
সবার কথা শুনে আদ্রিশের গলায় খাবার আটকে গেলো। কায়রা পানি এগিয়ে দিলো। দেওয়ার পর সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো তারা ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে৷ কায়রা সেখান থেকে চলে গেলো৷ সবাই ভাবলো লজ্জা পেয়েছে তাই চলে গেছে।
আদ্রিশ কারও দিকে তাকাতে পারছে না লজ্জায়। চুপচাপ খাওয়া শেষ করলো৷
কায়রার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। সবাই শুধু উল্টো ভাবছে। সব হয়েছে ওই অভদ্র ছেলেটার জন্য।
সবাই চলে গেলে কায়রার বাবা- মা ওকে বললো, আমি তোকে বলেছিলাম না ছেলেটাকে তোরও অনেক পছন্দ হবে। এখন আমার কথা হলো তো।
কায়রা ওর বাবাকে কিছু বলতেও পারছেনা। এখন যা করার তা ওই অভদ্র ছেলেটাকে করতে হবে৷
কায়রার বাবা- মা ওকে ছেলেটার নাম্বার দিয়ে গেলো৷ আর বললো কথা বলতে।
কায়রা অনেকখন ভাবার পর কল দিলো। অপর পাশ থেকে সালাম দিয়ে বললো, কে আপনি?
কায়রা চুপ করে আছে। একটু পর বললো, আজকে যার বাসা থেকে খেয়ে আসছেন সেখান থেকে কল দিয়েছি৷ এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন?
– তো এখন কি আপনি খাওয়ার টাকা নিতে কল দিয়েছেন?
কায়রা রাগ কন্ট্রোল করে বললো, আপনার সাথে দেখা করতে চাই। কাল বিকালে বেলস পার্ক চলে আসবেন। গুরুত্বপূর্ন কিছু বলবো৷
চলবে—
তূর্ণ বলে উঠে, তূর্জয় তোর দিন শেষ৷ তূণ চৌধুরী এসে পড়েছে। আজ থেকে তোকে আর আস্ত রাখবো না৷ তিলে তিলে তোকে মা*রব৷ তুই জানিস না আমি কে?
মিহু তূর্ণের জন্য খাবার নিয়ে রুমে যাচ্ছে৷ তূর্ণের কথা শুনে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে পড়ে৷ ফোন নিয়ে তূর্ণের কথা রেকর্ড করতে থাকে। কারণ মুখের কথায় বন্ধুকে অবিশ্বাস করবে না৷
তূর্ণ নিজের পকেট থেকে গার্ন বের করে গার্নের ঠোঁটে চুমু দেয়৷ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করে বলে উঠে, “তূর্জয় তোর জন্য আজ আমার খুব মায়া হচ্ছে৷ তোকে আজ আমি মেরে ফেলবো৷ আমার কষ্ট লাগছে এটা ভেবে তুই আমার এক সময় বন্ধু ছিলি৷ বিজ্ঞরা এমনি বলেন নি “বন্ধুই শত্রু হয়৷”
তূর্ণ থেমে আবার বলে উঠে, ” তোকে মেরে ফেলার জন্যই আমি নিজেই নিজেকে আঘাত করেছি৷ হাহা আর তোরা ভেবে নিলি আমি অসুস্থ। বাহ বাহ খুব ভালো। তোদের সালাম দেওয়া দরকার।” ‘চিন্তা করিস না তূর্জয় তোকে মেরে ফেলার পর তোর আদরের বউ মিহুকে আমি আমার নিজের করে নিবো৷”
মিহু তূর্ণের মুখে নিজের নাম শুনে অবাক হয়ে যায়৷ তূর্ণ তাকে পাওয়ার জন্য এসব খারাপ কাজ করছে৷ মিহু তো তূর্ণকে তেমন চিনে না৷ কোনদিন দেখা হয়েছে বলে মনেও পড়ছে না৷
তূর্ণ সোফায় বসতে বসতে বলে উঠে, “মিহু পাখি তোমাকে আমার খাঁচায় বন্ধি করে রাখবো। আমার মনের খাঁচায় তোমাকে সারাজীবন বন্ধি করে রাখবো। তোমাকে কোথাও যেতে দিবো না৷ মিহু পাখি তোমাকে পাওয়ার জন্য তোমার দিদি ছোঁয়াকে মেরে ফেলেছি৷ সো সেড৷ অবশ্য ছোঁয়াকে আমি ভালোবাসতাম। কিন্তু ছোঁয়া তোমার থেকে মোটা+কম সুন্দর ছিল। তুমি অনেক হট৷
মিহু আর নিজের কানে এসব কথা শুনতে পারছে না৷ মিহু রেকর্ডগুলো সেভ করে নেয়৷ সেভ করে দরজায় টুকা দেয়৷ বাহিরের আওয়াজ পেয়ে তূর্ণ তারাতাড়ি করে নিজের গার্ন লুকিয়ে ফেলে। দরজার দিকে তাকিয়ে মিহি কন্ঠে বলে উঠে, ” দরজার বাহিরে কে?”
— আমি মিহু। আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি৷ দরজা খোলেন।
— দরজা খেলায় আছে৷ আসতে পারো।
মিহু দরজা খোলে ধীর পায়ে খাবার নিয়ে রুমে যায়৷ খাবার ট্রি টেবিলে রেখে বলে উঠে, “আপনার শরীরের অবস্থা কেমন? এখন ঠিক আছেন তো?”
তূর্ণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মিহুর কোন কথা তূর্ণের কান অব্ধি যাচ্ছে না৷ মিহু তূর্ণের সামনে তুরি বাজিয়ে বলে উঠে, ‘” কি হলো, কথা বলছেন না কেন!”
— তূর্ণ বাস্তবে ফিরে আসে, ” সরি মিহু। আসলে ভাবছি, কে আমার এত বড় ক্ষতি করতে পারে? আমাকে মেরে তার কি লাভ? আমি কোনদিন কারোর কোন ক্ষতি করিনি৷ সব সময় মানুষের ভালো চেয়ে এসেছি৷ আজ তারাই আমার ভালোবাসা কেঁড়ে নিয়েছে। আমাকেই মা*রতে চাই৷
— মিহু মনে মনে বলে উঠে, ” সা* তোকে আমি একটু পর শ্বশুর বাড়ি পাঠাবো৷ তোর দিন এখন কাটবে পোড়া রুটি খেয়ে৷ তুই আমার দিদিকে মেরে ফেলেছিস৷ আমি ছোট বোন হয়ে তার জন্য কিছু করবো না৷ ”
— “আরে না না আপনি কি কারো ক্ষতি করতে পারেন? আপনার এই গুণটায় আমার খুব পছন্দ। আপনি দেখতেও অনেক স্মার্ট এন্ড হ্যান্ডসাম৷ খাবার খেয়ে নেন। আমি আসছি। যদি কোন কিছুর দরকার পড়লে ডাক দিবেন৷” কথাগুলো আটকে আসছে৷ তবুও মনে পাথর চেপে বলে উঠে।
তর্ণকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে আসে৷ মিহু এসে তার মা বাবাকে পুলিশ নিয়ে চৌধুরী বাড়িতে আসতে বলে৷
মিহু রুমে এসে দেখে তূর্জয় এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। মিহু তূর্জয়ের কানের কাছে ছোট একটা কামড় দিয়ে তূর্জয়ের আরামের ঘুম হারাম করে দেয়৷
— “মিহু তুমিও না৷ আমার এত সুন্দর ঘুমটা ভাঙলে কেন? কতোদিন থেকে ঘুমাতে পারি না৷ আজ একটু ঘুমিয়েছি৷ তাও তুমি আমাকে জাগিয়ে দিলে৷ ” ঘুম ঘুম চোখে বলে উঠে।
— আর ঘুমাতে হবে না৷ উঠেন বলছি৷
মিহু চলে আসতে নিলে তূর্জয় মিহুর হাত টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়৷
— কি করছেন টা কি? আমার অনেক কাজ আছে৷
— হুম দেখতেই পাচ্ছি মহারানীর অনেক কাজ৷ আমার দিকেও একটু নজর দিয়েন মহারানী।
— বাজে কথা না বলে নিচে আসেন৷ আমার খুব ক্ষুধা লাগছে৷
— আমারও খুব ক্ষুধা লাগছে৷ কিন্তু এখন আমার মিষ্টি খেতে মন চাইছে৷
— মিষ্টি খেতে না করেছে কে? ফ্রিজে রাখা আছে। খেয়ে নেন৷ যত ইচ্ছা তত খান৷
— আরে আমি ফ্রিজের মিষ্টি খাবো না৷
— তাহলে..
তূর্জয় নিজের ঠোঁট বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠে, ” আমি এই মিষ্টির কথা বলছি।”
— মিহু তূর্জয়ের কথা শুনে খুব লজ্জা পাই৷ আজ তূর্জয় মিহুকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে৷ ধীরে ধীরে তূর্জয় মিহুকে ঠিক মেনে নিবে৷ মিহু মুচকি হেঁসে বলে উঠে, ” মা আপনি রুমে। ”
“মা” শব্দটা শুনে তূর্জয় মিহুকে ছেড়ে দেয়৷ মিহু এই সুযোগে তূর্জয়ের কাছ থেকে দূরে সরে যায়৷
— মিহু প্রাণ খোলে হাসতে হাসতে বলে , ” বোকা বানালাম৷ আর হ্যাঁ আজ একটা সারপ্রাইজ আছে৷ তাই তারাতাড়ি নিচে আসেন আর খাবার খেয়ে নেন৷”
— মিহু কাজটা কিন্তু একদম ঠিক করো নি৷ এজন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে৷
তূর্জয় মিহুর কথামতো তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসে৷ সকলের সাথে ব্রেক ফাস্ট করে নেয়৷ তূর্জয়ের চোখ শুধু মিহুর দিকে৷ মিহুর কাজ দেখে তূর্জয় কিছু বুঝতে পারছে না৷ সবাইকে ঢেকে এনেছে ডাইনিং রুমে। সবাই আড্ডা দিচ্ছে ডাইনিং রুমে।
— মিহু এসবের মানে কি? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
— ছোট বাচ্চাদের মতো প্রশ্ন না করে দেখে যান৷ সময় হলে সবই জানতে পারবেন৷
— কি জানতে পারব?
— আরে সারপ্রাইজ কি বলে দিলে হয়?
— প্লিজ একটু বল না!
কলিং বেলের শব্দ আসতেই মিহু এক প্রকার দৌড়ে দরজা খোলে দেয়৷ নিজের মা বাবার কাছ থেকে আশীর্বাদ নিয়ে ভিতরে নিয়ে আসে।
— মিহু তার বাবাকে আলাদা করে নিয়ে বলে উঠে, “বাবা পুলিশ এনেছো তো?”
— হুম মা৷ তোমার কথামতো আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি৷ আর চারজন ছদ্মবেশ ধারণ করে এসেছে৷
— তাদের ভিতরে নিয়ে আসো৷
— কি হবে এসব করে?
— বাবা তোমাকে অনেক শক্ত হতে হবে। আমাকে কথা দাও তুমি ভেঙে পড়বে না৷
মিহু এই কথাটা বলতেই মিহুর চোখে জল এসে পড়ে। কোন রকম নিজের জলকে লুকিয়ে আবার বলে উঠে, ” তুমি মাকে একটু সামলিয়ে নিও। ”
— কি হয়েছে মা। তুই কান্না করছিস কেন?
— কিছু না বাবা। তোমরা বসো।
আড়াল থেকে তূর্জয় সব শুনে ফেলে৷ বলতে গেলে তূর্জয় মিহুর উপর নজর রাখছে৷ মিহু তার বাবাকে ডাইনিং রুমে রেখে তূর্ণের কাছে আসে৷ তূর্ণ শুয়ে শুয়ে তার পরিকল্পনা সম্পন্ন করে যাচ্ছে।
— হ্যালো (মিহু হাসি মুখে বলে উঠে)
— “হ্যালো” বসতে বসতে বলে উঠে তূর্ণ।
— “একটা কথা বলবো?” তূর্ণের হাত ধরে।
আড়াল থেকে তূর্জয় এই দৃশ্য দেখে ছুঁটে আসতে নিলেও নিজেকে আটকিয়ে রাখে। আজ বাড়ি ভরতি লোক। তাদের সামনে চৌধুরী বাড়ির পরিবার মান সম্মান নিচে ফেলতে চাই না৷
— “একটা কেন? তোমার যা ইচ্ছা তাই বলো।” নেশা জনিত চোখে তাকিয়ে বলে উঠে।
— আমি ভাবছি আমার পরিবারের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিবো৷ আসলে আপনাকে খুব ভালো লেগেছে৷ আমি চাই ভূর্জয়ের সাথে ডিভোর্সের পর আপনাকে বিয়ে করতে৷ সেজন্য মা বাবাকে ঢেকে এনেছি৷
তূর্জয় আর নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারল না৷ তূর্জয় রুমে ঢুকে তূর্ণের কাছ থেকে মিহুর হাত ছাড়িয়ে মিহুর গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷
— ক্ষেপে বলে উঠে, “তোমার এতো বড় সাহস কি করে হয়? তুমি আমাকে ডিভোর্স দিতে চাও৷”
— থাপ্পড়টা হজম করে বলে উঠে, ” মনে নেই সেই প্রথম দিনের কথা৷ আমাকে তো আপনি কোনদিন বউ হিসেবে মানেন না৷ আজ কেন এসেছেন স্বামীর দাবি নিয়ে৷ লজ্জা করে না৷ আপনার মতো লোজারকে আমি কখনোই স্বামী হিসেবে মানি না৷
— মিহু হাতের মুষ্ঠি শক্ত করে৷
মিহু চোখের জল মুছে কিছু না বলে তূর্ণের হাত ধরে ডাইনিং রুমে চলে আসে৷ তূর্জয় দেয়ালে একটা ঘুশি মেরে সেও ডাইনিং রুমে আসে৷ তূর্জয় মনে মনে বলে উঠে, ” মিহু এটাই তোমার সারপ্রাইজ ছিল৷ আমার সারপ্রাইজ বাকি আছে৷ একটু পর দেখতে পাবে আমি কি করি? ”
মিহু তূর্ণকে ডাইনিং রুমে নিয়ে এসে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তূর্ণ মিহুর বেস্ট ফ্রেন্ড। তারপর ছদ্মবেশে আসা চারজন পুলিশের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়৷ পুলিশদের চোখের ইশারা দিয়ে বলে উঠে, “তূর্ণকে যেন তারা পালাতে না দেয়৷ ”
পুলিশ চোখের ইশারা বুঝতে পেরে তূর্ণকে সেখানে দাঁড় করিয়ে তূর্ণের সাথে পরিচিত হচ্ছে৷
— মিহু সবার সামনে বলে উঠে, ” আমি আপনাদের একটা রেকর্ড শুনাতে চাই৷ প্লিজ সবাই ধৈর্য সহকারে শুনবেন৷ ”
মিহু তার ফোন বের করে তূর্ণের কু কর্মের কথা সবাইকে জানিয়ে দেয়৷ শুধু রেকর্ড করেনি৷ তূর্ণের প্রতিটি বলা কথা ভিডিও করে রেখেছে৷ তূর্ণ এসব কথা শুনে পালাতে চাইলে পুলিশ তাকে ধরে ফেলে৷ মিহুর মা কান্নায় ভেঙে পড়ে৷
— পুলিশ অফিসার এই শয়তানকে নিয়ে যান৷ তার যেন কঠিন শাস্তি হয়। সে ব্যবস্থা আমি করবো।
মিহু তার মা বাবাকে শান্তনা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়৷ রাতে একা একা বসে কান্না করছে মিহু৷ তূর্জয় রুমে প্রবেশ করতেই মিহু তূর্জয়কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়৷
— আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। আমি তখন সব নাটক করেছি৷ প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেন৷ আমি ভুল করেছি৷ আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি৷
— তূর্জয় মিহুকে জড়িয়ে ধরে, ” আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি। প্লিজ আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না৷ আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আমি বাঁচতে পারবো না৷ আমি ভেবে নিয়েছিলাম তুমি সত্যি সত্যিই আমাকে ডিভোর্স দিবে। আমিও ভুল করেছি৷”
— না আপনি কোন ভুল করেননি৷ এমন সারপ্রাইজ হলে আমিও এমন করতাম৷ আমাদের মাঝে আর কোন ভুল বুঝাবুঝি হবে না৷
— তোমাকে আজ আমি ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে ফেলবো৷ আর তোমাকে ভালোবাসার বন্ধন থেকে বের হতে দিবো না৷
তাদের দুই জনের মাঝে আজ কোন দ্বিধা নেই। তারা একে অপরকে আজ আপন করে পায়৷ তাদের ভালোবাসা দেখে আজ প্রকৃতিও হিংসা করছে৷
রাত একটার দিকে তূণ চৌধুরী বাড়িতে আসে রক্তাক্ত অবস্থায়। রক্তাক্ত এসে তূর্জয় আর মিহুর সামনে লুটে পড়ে যায়। সাথে সাথেই তাদের সামনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। দেখে বুঝা যাচ্ছে কেউ তাকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে৷ মে*রে ফেলার সবটুকু চেষ্টা করেছে। কোন রকম জীবন বাজি রেখে পালিয়ে এসেছো৷
ছোঁয়াকে খুন করে ঝিলের জলে ভাসিয়ে দেয়। ছোঁয়ার দেহ গভীর জলে ঢুবে যাওয়ার পর তূর্ণ বাড়িতে ফিরে আসে৷ বাড়িতে এসে সে কিছুতেই নিজকে শান্ত রাখতে পারছে না৷ শুধু ছোঁয়ার মায়াভরা মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। আজ তূর্ণ উপলব্ধি করতে পারছে ছোঁয়ার ভালোবাসা।
ছোঁয়া একদিন তার সমস্ত কিছু ত্যাগ করে ভালোবাসার মানুষ তূর্ণের কাছে চলে এসেছিল৷ আজ সেই তূর্ণ ছোঁয়ার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করলো। নিজ হাতে মেরে ফেলেছে। কি করে করতে পারল? মানুষ কতোটা পাষাণ হলে এমন বাজে কাজ করতে পারে৷ একবারও ভেবে দেখলো না৷ মানুষের রুপটা বড় নয়৷ মানুষের ভালোবাসাটা বড়৷ আজ যদি তূর্ণ ছোঁয়াকে না ফিরিয়ে দিতো তাহলে তাকে আজ এই দিন দেখতে হতো না৷
তূর্ণ দেয়াল থেকে “ছোঁয়া” নামক মেয়েটার পিক নিয়ে কাঁদতে থাকে। তূর্ণ ছোঁয়ার পিক নিয়ে বলে উঠে, “ছোঁয়া আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। প্লিজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও! আমি তোমার প্রতিশোধ পূর্ণ করেই ছাড়বো। মিহু তূর্জয়কে কিছুতেই এক হতে দিবো না৷”
তূর্ণ ছবিটা যত্ন সহকারে এক জায়গায় লুকিয়ে ফেলে৷ ছবিটা লুকিয়ে ঝিলের ধারে যায়৷ এক ধ্যানে ঝিলের জলে তাকিয়ে আছে৷ বুকের মাঝে পাথর চেপে রেখে ছোঁয়ার ভালোবাসার কথা মনে করছে। ছোঁয়া যখম জীবিত ছিল তখন তূর্ণ ছোঁয়ার ভালোবাসা বুঝতে পারলো না৷ বেল্ট দিয়ে নিজেই নিকের গায়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকে৷ সমস্ত দেহ থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। তবুও থামার কোন নাম গন্ধ নেই। এক পর্যায় ক্লান্ত হয়ে থেমে যায়৷ মুচকি হেঁসে আকাশ প্রাণে তাকিয়ে বলে উঠে, ” তূর্জয় আমি আসছি৷ তোদের জীবনটা শেষ করতে আমি আসছি। তোদের কিছুতেই আমি এক হতে দিবো না৷”
তোদের জীবন নগরে পরিণত করবো৷ ম*রতে চাইনি কিন্তু ম*রতে পারবি না৷
।
।
রাতে ডিনারের শেষে সকলে বসে ডাইনিং রুমে বসে বসে গল্প করছে৷ কখন যে রাত ১ টা বেজে গেছে তাদের খেয়াল নেই৷ তূর্জয়ের মা বাবা তূর্জয়কে ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসার অনেক উপদেশ দেন। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তূর্জয়ের মা বাবা নিজের রুমে চলে যান৷ মিহু আর তূর্জয় সিঁড়িতে পা দিবে ঠিক তখন কলিং বেল বেজে উঠে।
— “এত রাতে কে আসতে পারে?” (মিহু অবাক চোখে তূর্জয়ের দিকে তাকিয়ে।
— এখন ছোঁয়া আসলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না৷ আমি কোন কিছু করার আগে চলে যেতে বল। তাকে দেখলে আমার মাথা গরম হয়ে যায়৷
মিহু তূর্জয়ের কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলে। মিহু কি বলবে? সে তো জানে তূর্জয়ের মনের অবস্থা। তূর্জয় তেড়ে দ্বার খোলে৷ মিহুও তূর্জয়ের পিছু পিছু আসে৷ ভুল বশত খারাপ কিছু না করে বসে। দ্বার খোলতেই তূর্ণ তাদের সামনে আসে। তূ্ণ তাদের দু’জনকে একসাথে দেখে মুচকি হাসে। দ্বার বন্ধ করে ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।
— “তূর্ণ তুই। তোর এই অবস্থা কি করে হলো?” অবাক হয়ে তূর্জয় বলে উঠে।
— তূর্ণ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে, ” তারা আমাকে বাঁচতে দিবে না৷ প্লিজ আমাকে বাঁচা। আমি এখনই মরতে চাই না৷ আমি বাঁচতে চাই। ”
— কে তোর এমন অবস্থা করেছে। (তূর্জয়)
তূর্ণ আর কিছু বলতে পারল না তূর্জয় আর মিহুর সামনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। মাটিতে লুটে পড়ে।
— তূর্ণকে এখনই হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে৷ তার গা থেকে রক্ত ঝরে যাচ্ছে। অতিরিক্ত রক্ত ঝরলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত পারে।
— আপনি কি বুঝতে পারছেন না? তূর্ণ এখানে পালিয়ে এসেছে৷ তাকে এই অবস্থায় হসপিটালে নিয়ে যাওয়া যাবে না৷ বরং আপনি তাকে রুমে নিয়ে যান। আমি উনাকে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি।
তূর্জয় একা পারছে না৷ তা দেখে মিহু তূর্জয়কে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়৷ তূর্ণ নিজের গায়ে এতই আঘাত করেছে যে, দেখে কেউ আতংকে চিৎকার করে উঠবে৷
তূর্জয় তূর্ণের শার্ট খোলে দেয়। তূর্জয় আর মিহু মিলে তূর্ণের আঘাত কৃত স্থানে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে৷ কে এমন কাজ করতে পারে? দু’জনকেই ভাবিয়ে তুলছে৷
— আপনি বরং আজ তূর্ণের সাথে এখানে থাকেন।(মিহু)
— অসম্ভব। আমি এখানে থাকতে পারবো না৷ আর তূর্ণ এখান ঘুমিয়ে আছে৷ আশা করি আজ রাতে তার আর কোন সমস্যা হবে না৷
— আপনি এখানে থাকলে সমস্যা কি?
— আমি এখানে থাকতে পারবো না৷ চল আমার ঘুম পাচ্ছে। এখানে আর এক মিনিটও আমি লেট করতে চাই না৷
— দেখেন তূর্ণ অসুস্থ। তার কাছে একজন থাকা দরকার৷ আর এতো রাতে নিশ্চয় কোন নার্স আসবে না৷ আপনিই বরং থেকে যান৷ কখন কি দরকার পড়ে?
— যদি তুমি এভাবে জোরে জোরে কথা বলতে থাকো তাহলে সে আর ঘুমিয়ে থাকতে পারবে না৷ সে এখনই ঘুম থেকে উঠে যাবে। প্লিজ কথা বন্ধ করে! দয়া করে এখান থেকে রুমে চল।
— আপনি এমন মানুষ কেন? তূর্ণ তো আপনার বন্ধু৷ তাকে এভাবে রেখে যাওয়া ঠিক হবে আমাদের।
— তার কিছু হবে না৷ আমি তাকে চিনি। সে রাতে ঘুমালে আর জেগে উঠে না৷ তার ঘুম অনেক গভীর৷ সেজন্য বলছি কথা না বলে আমরা বরং চলে যায়।
— কিন্তু!
তূর্জয় মিহুকে আর কিছু বলতে না দিয়ে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। নিজের কাছে নিয়ে এসেই মিহুকে কোলে তুলে নেয়৷ ঘটনা এতো জলদি ঘটে যে, “মিহু কিছুই বুঝতে পারেনি তার সাথে কি ঘটেছে !”
— কি করছেন টাকি? আমাকে এভাবে কোলে তুলে নিলেন কেন?
তূর্জয় কোন কথা না বলে হেঁটে যাচ্ছে।
— আরে খবিশ। আপনি আমাকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটছেন কেন? আমি কি হেঁটে যেতে পারবো না৷ প্লিজ আমাকে নামান৷
— কোন কথা না বলে চুপচাপ থাকো৷ কথা বললে তোমাকে ফেলে দিবো৷ অবশ্য ভালোই হবে তোমাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরতে পারবো৷
মিহু ভয় পেয়ে তূর্জয়কে জড়িয়ে ধরে। তূর্জয় মিহুকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়৷ মিহু কিছু বলতে নিবে তার আগেই মিহুর ঠোঁটে হাত দিয়ে বলে উঠে, ” কোন কথা নয়৷ একদম চুপ করে বসে থাকো৷ ”
তূর্জয় মিহুকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ে৷
ভোর পাঁচটায় তূর্ণের ঘুম ভেঙে যায়৷ তূর্ণ ঘুম থেকে উঠে একটা মুচকি হাসি দেয়। তার পর ল্যান্ড ফোন থেকে একটা বন্ধুকে ফোন করে কিছু জিনিস পাঠিয়ে দিতে বলে৷
তূর্ণ বলে উঠে, তূর্জয় তোর দিন শেষ৷ তূণ চৌধুরী এসে পড়েছে। আজ থেকে তোকে আর আস্ত রাখবো না৷ তিলে তিলে তোকে মারবো৷ তোর জীবনের সমস্ত সুখ কেঁড়ে নিবো৷ তুই জানিস না আমি কে?
অচেনা নাম্বার থেকে ছোঁয়ার কাছে ফোন আসে। ফোনে কথা বলে ছোঁয়া গান ছেড়ে নাচতে শুরু করে ৷
ছোঁয়া রুমে এসে কিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না। শুধু তার চোখের সামনে তূর্জয় মিহুর ভালোবাসার চিত্র ফুটে উঠছে৷ কিছুতেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না৷ রুমের ভিতরে পায়েচারী করে যাচ্ছে৷ টেবিলের উপরে রাখা একুরিয়াম ভাঙার জন্য হাত বাড়াবে ঠিক তখনই নিজের ফোন বেজে উঠে।
বিরক্তি নিয়ে নিজের ফোনের ওয়ালপেপারের দিকে তাকায়৷ দেখতে পায় অচেনা নাম্বার৷ অচেনা নাম্বার দেখে ছোঁয়ার রাগ আর বেড়ে যায়৷ ফোন রিসিভ করতেই যা, না তাই বলে যাচ্ছে৷ ফোন রেখে দিবে ঠিক তখনই অপর পাশ থেকে কোমল গলায় আওয়াজ আসে৷
— ফোন রাখলে তোমারই লস৷ ফোন রাখা মানে মিহুর কাছে জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া৷
মিহুর কথা শুনে ছোঁয়ার কন্ঠ চেঞ্জ হয়ে যায়৷ ছোঁয়া নিজেকে শান্ত করে বলে উঠে, “কে আপনি? আপনি কি বলতে চান?”
— আমার পরিচয় না জানলেও হবে। আমার আর তোমার উদ্দেশ্য এক। তুমি ভূর্জয়কে নিজের করে পেতে চাও। আর আমি মিহুকে নিজের করে পেতে চাই৷ মিহুকে আমি খুব ভালোবেসে ফেলেছি৷ আমার একার পক্ষে সম্ভব নয় মিহুকে নিজের করে নেওয়ার। সেজন্য তোমার সাহায্য লাগবে৷ এতে তুমিও তোমার ভালোবাসার মানুষ তূর্জয়কে পেয়ে যাবে৷
— তার মানে আপনি মিহুকে ভালোবাসেন৷ মিহু কি জানে, আপনি তাকে ভালোবাসেন?
— আমি মিহুকে ভালোবাসি৷ মিহু আমাকে ভালোবাসে কিনা সেটা আমার দেখার বিষয় নয়৷ মিহুকে আমি না পেলে কাউকে পেতে দিবো না৷ যদি মিহুকে না পায় তাহলে তোমার ভালোবাসা তূর্জয় শেষ৷
— প্লিজ তূর্জয়ের কোন ক্ষতি করবেন না! তূর্জয়ের সাথে আপনার কোন শত্রু নেই৷ আর কে আপনি? কারণ আপনার পরিচয় জানা থাকলে কাজটা খুব সহজ হয়৷
— আমি তূর্ণ। তূর্জয়ের বন্ধু। আমি জানি মিহু আর তূর্জয় এখনও কাছাকাছি আসেনি৷ তাই আমাদের যা করার তারাতাড়ি করতে হবে৷
— ওকে যা করার আমি তারাতাড়িই করবো৷ বলেন আমাকে কি করতে হবে?
— আজ সন্ধ্যায় ঝিলের ধারে আমার সাথে দেখা করো৷
— ওকে।
ছোঁয়া ফোন রেখে দিল ওয়ালী গানে নাচতে শুরু করে৷
।
।
।
মিহু নিজ হাতে আজ তূর্জয়ের সকল পছন্দের খাবার রান্না করে৷ সে আজ খুব ভালোবেসে তূর্জয়ের জন্য রান্না করেছে৷ মিহু খুব খুশি যে আজ সে তূর্জয়কে নিজ হাতে খাওয়াবে৷
তূর্জয় স্নান শেষ করে বেলকনিতে বসে আছে। না চাওয়া সত্ত্বেও অতীতের কথাগুলো বার বার নাড়া দিয়ে যাছে। চোখ বন্ধ করে সব কিছু ভুলার চেষ্টা করছে৷ কি করবে এখন, তার মন তো কাঁচের ঘরের মতো ভেঙে গেছে। তূর্জয় নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতে চাই৷ সেজন্য অফিসের ফাইল নিয়ে বসে।
মিহু রান্না শেষ করে নিজ হাতে সবগুলো খাবার টেবিলে সাজিয়ে রাখে৷ কোথাও কোন ঘাটতি রাখেনি৷ মিহু তূর্জয়ের কাছে এসে দেখে তূর্জয় মন দিয়ে অফিসের কাজ দেখছে। এটা দেখে মিহু খুব খুশি হয়৷ কারণ এতে করে তূর্জয় ছোঁয়াকে ভুলে যাবে। মিহু তূর্জয়ের পাশে বসে।
— মিহুর দিকে ছোট করে তাকিয়ে, ” কিছু বলতে চাও নাকি?” কি বলবে? কোন সংকোচ না করে বলে ফেলো৷
— আমি কোন সংকোচ করি না, কথার বলার মাঝে। আমার মুখে যা আসে আমি তাই বলে দেয়।
— তাহলে বলো, কি করতে হবে আমায়? তোমাকে দেখে আমি এই কয়েক দিন ভালোই ভালোই চিনে নিয়েছি৷
— তাহলে ভালো। এখন আর কাজ করতে হবে না৷
— “কি বলছো? অনেকগুলো কাজ জমা পড়ে রয়েছে৷ এসব কাজ এখন না করলে কখন করবো?” প্রশ্নসূচকভাবে মিহুর দিকে তাকিয়ে।
— আগে নিজের খেয়াল রাখতে হবে৷ আপনি একটুও নিজের খেয়াল রাখেন না৷ আপনি কি জানেন না, এখন খাবারের সময়?
— আমার খেতে ইচ্ছা করছে না৷ তুমি খেয়ে নাও৷
— খেতে ইচ্ছে করছে না মানে কি?
— আমার খেতে ইচ্ছা করছে না৷ আমার পেট এখনও ভরপুর রয়েছে।
— হু আপনার পেট এখনো ভরপুর। আপনি যে পেটুক মশাই সেটা আমি হারে হারে জানি৷
— “এভাবে মন খারাপ করে না খেয়ে থাকলে কি আমার ভালো লাগে? ওকে আপনাকে খেতে হবে না৷ আমিও না খেয়েই থাকবো। আমি না খেয়ে থাকলে তাতে আপনার কি? আমি তো আপনার কেউ না৷” মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ রেখে এক টানা বলে যায় মিহু৷
মিহু চোখ মেলে দেখে তূর্জয় তার দিকে বোকার মতোন তাকিয়ে আছে৷ মিহু কি বলেছে সে নিজেই জানে না৷ মিহু কিছু বুঝতে পারছে না, কেন এভাবে তাকিয়ে আছে? মিহু চলে যেতে নিলেই তূর্জয় মিহুকে টান দিয়ে নিজের হাঁটুর উপর বসায়।
এতে মিহু খুব ভয় পেয়ে যায়৷ মিহু তূর্জয়ের শার্ট খামচে ধরে রেখেছে৷ তূর্জয় মিহুর গলায় মুখ লুকিয়ে, “আজ বুঝি তুমি রান্না করেছো। কে বলেছে আমি খাবো না? সত্যি বলছি আমারও খুব ক্ষুধা পেয়েছে৷
মিহুর গলার কাছে কথা বলায় মিহু কোন কথা বলতে পারছে না৷ যতবার তূর্জয় কথা বলেছে ততবারই তূর্জয়ের ঠোঁট মিহুর গলায় লাগছে৷ এতে মিহু কেঁপে উঠে৷ এখনও মিহু চোখ বন্ধ করে রেখেছে৷
–মিহু চোখ মেলে মিহি কন্ঠে বলে উঠে, ” আপনি কিন্তু খুব পঁচা। আমার কেমন জানি লাগতেছে৷
তূর্জয় মিহুর কাঁপা কাঁপা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে নিজেকে আর সামলিয়ে রাখতে পারছে না৷ মিহুর ঠোঁট যেন তূর্জয়কে কাছে টেনে নিয়ে যাচ্ছে৷ মিহুর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যাবে পরক্ষণেই ফিরে আসে৷
— মিহুকে দাঁড়া করিয়ে বলে উঠে, “সরি৷ আসলে আমি বুঝতে পারিনি৷ ” তুমি খাবার সার্ভ করো আমি আসছি৷
মিহু মুচকি হেঁসে চলে যায়৷ তূর্জয় চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকে। মিহু তার কাছে আসলে কেন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না? কেন মিহুর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে? কেন মিহুকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে না? কেনই বা কাছে টেনে নিতে পারছে না? তূর্জয় ভাবতে পারছে না৷ আর কিছু না ভেবে নিচে চলে যায় খাবার খেতে৷
নিচে নেমে দেখে মিহু তার জন্য খুব সুন্দর করে খাবার তৈরি করে রেখেছে। সাথে মা বাবাও বসে আছেন খাওয়ার জন্য৷ তূর্জয় চেয়ার টেনে বসে পড়ে। ক্ষুধা বেশি লাগার কারণে খেয়াল নেই যে মিহু খেয়েছে কিনা৷ এক লোকমা খাবার মুখে দিয়ে দেখে মিহু দাঁড়িয়ে আছে৷
— মিহু তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন? এখানে বসো।(তূর্জয়)
— তুমি কি তাকে খাবার খেতে বলেছো ? তুমি তো নিজের খাবার খেয়ে যাচ্ছো। চারিদিকে একটু তাকাতে হয়৷ (তিহান চৌধুরী)
— সরি বাবা! সত্যি বলছি আমার খেয়াল ছিল না৷ এর পর থেকে আর ভুল হবে৷ মিহু দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসছো না কেন?
— না সমস্যা নেই। আপনি খান আমি পরে খেয়ে নিবো৷
তূর্জয় কোন কথা না শুনে মিহুর হাত টেনে নিজের পাশের চেয়ারে বসাই৷ মিহু তূর্জয়ের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে নিবে তার আগেই তূর্জয় বলে উঠে, ” কোন কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নাও।”
মিহু আর কোন কথা না বলে ভালো মেয়ের মতো খাবার খেয়ে নেয়৷ খাবার শেষে তূর্জয় মিহুর হাত ধরে রুমে নিয়ে যায়৷ মিহু অভিমান করে বসে বসে৷ কারণ খাবারের সময় তূর্জয় মিহুর পায়ে শুরশুরি দিয়েছে। অভিমান করে বিছানায় বসে আছে৷
তূর্জয় অফিসের কাজ করছে আর মিহুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মিহুর বাচ্চা মেয়ের মতো গাল ফুলিয়ে বসে আছে৷ তূর্জয়কে সাথে হাজারটা গালি ফ্রী দিয়ে যাচ্ছে। তূর্জয় কাজ শেষ করে মিহুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। মিহুর ঘাড়ে ছোট করে একটা কামড় বসিয়ে দেয়৷
— “আপনি সত্যিই একটা খবিশ৷” তূর্জয়ের দিকে ঘুরে বলে উঠে।
— হ্যাঁ আমি সেটা জানি৷ আমি তোমার চোখে সেই প্রথম দিন থেকেই খবিশ৷
— ছাড়েন আমাকে। আমি নিচে যাবো৷
— না। তোমাকে এখন ছাড়বো না৷ আমি এখন ঘুমাবো। তুমিও আমার সাথে ঘুমাবে৷
— আমি এই ভর দুপুর বেলা ঘুমাতে পারবো না৷ আপনি ঘুমান৷ আমি চলে যাচ্ছি৷
মিহুকে বুকের সাথে আরও মিশিয়ে নেয়৷ মিহুর গলায় মুখ লুকিয়ে নেশা জনিত কন্ঠে বলে উঠে, ” একটুও নড়াচড়া করার চেষ্টা করবে না৷ আমি এখন ঘুমাবো৷ সাথে তুমিও ঘুমাবে। ”
মিহুও তূর্জয়কে জড়িয়ে ধরে। মিহু জানে সে এখান থেকে আর এক পাও নড়তে পারবে না৷ তাই তূর্জয় যা বলছে তাই মেনে নেয়৷ মিহুর তো আর খারাপ লাগেনি৷ বরং মিহুর অনেক ভালো লাগছে।
_______________
ছোঁয়া সন্ধ্যার দিকে তূর্ণের দেওয়া ঠিকানায় চলে যায়৷ তূণ ছোঁয়াকে জঙ্গলের পাশের ঝিলের ধারে দেখা করতে বলে৷ এই রাস্তা দিয়ে সচরাচর তেমন কেউ আসে না৷ ছোঁয়া ভয়ে ভয়ে ব্রিজের উপর বসে আসে। পাঁচ ছয় মিনিট পর তূ্ণ গাড়ি করে ছোঁয়ার সামনে নামে৷ কিন্তু তূর্ণের মুখ মুখোশের আড়ালে৷ তূর্ণকে দেখা যাচ্ছে না। তবুও ছোঁয়া একটু দেখার চেষ্টা করে।
— কি করতে হবে আমায়? (ছোঁয়া)
— তূর্জয়কে পাওয়ার জন্য কি কি করতে পারবে?
— আমি সব করতে পারি। আমি যে করেই হোক তূর্জয়কে নিজের করে নিবো৷
— সেজন্য তোমাকে তোমার পরিবারের বিরুদ্ধে যেতে হবে৷ পারবে কি তোমার পরিবারের বিরুদ্ধে যেতে?
— হুম। আমি পারবো আমার পরিবারের বিরুদ্ধে যেতে৷ যে পরিবার আমার দিকে আঙ্গুল তুলে প্রশ্ন করে সেই পরিবারে আমি থাকতে চাই না৷
— কেন তোমার পরিবারের লোকজন তো অনেক ভালো? তোমায় অনেক ভালোবাসে।
— সে নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না৷ আজ আমার পরিবার ভুলবশত আমার জন্যই এমন হয়েছে। আমি ঠকেছি অনেক।
— ওকে যা করতে হবে আমি তোমাকে ফোনে জানিয়ে দিবো৷
তূর্ণ পিছনে ফিরে চলে যেতে নিলেই কারের সাথে ধাক্কা খায়। আর নিজের মুখে পড়ে থাকা মুখোশ নিচে পড়ে যায়। ছোঁয়ার তূর্ণের মুখ দেখে তূর্ণের শার্টের কলার ধরে।
— স্বার্থ তুই আমার জীবন নষ্ট করেছিস৷ তোর জন্য আজ আমার এই অবস্থা৷ ( তূর্ণই স্বার্থ,,, যার সাথে ছোঁয়া পালিয়ে যায় বিয়ের রাতে)
— ও তুই তাহলে আমার পরিচয় জেনে ফেলেছিস তাহলে তোকে আর এখানে রাখা যাবে না৷
— তুই এখন আর কিছুই করতে পারবি না৷ আমিই তোকে মেরে ফেলবো। (ছোঁয়া)
ছোঁয়া নিজের ব্যাগ থেকে ছুরি বের করার আগেই তূণ ছোঁয়াকে গুলি করে দেয়৷ পর পর তিনটা গুলি করে। ছোঁয়াকে ঝিলের জলে ফেলে দেয়। ছোঁয়ার চিৎকার কারোর কর্ণধার হলো না৷
।
।
রাত একটায় তূণ চৌধুরী বাড়িতে আসে রক্তাক্ত অবস্থায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তূর্জয় আর মিহুর সামনে লুটিয়ে পড়ে ৷
চলবে…
মিহু তূর্জয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়৷ মিহু ভাবতেও পারেনি তূর্জয় তাকে এতো আপন করে নিবে।
মাটি থেকে উঠে ছোঁয়া বলে উঠে, ” আমি কিছুতেই মিহুকে তোর হতে দিবো না৷ আমি বেঁচে থাকতে মিহু কোনদিন তোর হবে না৷ তুই আমার ছিলি আর আমারই থাকবি সারাজীবন৷ তোর জীবনে শুধু আমার জায়গা তূর্জয় চৌধুরী।
— ব্যাস তোমার কথা শেষ হলে এখান থেকে চলে যাও৷ তোমার বাজে মুখটি আমাদের দেখতে হবে জানা ছিল না৷ আমাদের এই দিনটাও দেখলে হলো তোমার জন্য। (তিহান চৌধুরী)
— তূর্জয়ের মা এগিয়ে এসে ছোঁয়ার গালে চর বসিয়ে, তোমার লজ্জা থাকা দরকার৷ তুমি তোমার নিজের বোনের সংসার নষ্ট করতে এসেছো৷ যে বোন তোমার অবর্তমানে তোমার মা বাবার সম্মান বাঁচিয়েছে।
— ছোঁয়া রেগের মাথায় তূর্জয়ের মাকে ধাক্কা মেরে, “এই বুড়ি! তুই আমাকে জ্ঞান দিতে এসেছিস৷ তোরা যদি কেউ আমার পথে কাটা হয়ে আছিস তাহলে আমি তোদের মেরে ফেলতে দুইবার ভাববো না৷
তূর্জয় আর মিহু দৌড়ে এসে তূর্জয়ের মাকে মাটি থেকে তুলে৷ তূর্জয় তার মাকে তিহান চৌধুরীর কাছে দিয়ে এসে মিহুর হাত ধরে৷ এতে ছোঁয়া আরও রেগে যায়৷ ছোঁয়া রেগে মিহুর দিকে এগিয়ে আসে। তূর্জয় সামনে দাঁড়ায় মিহুকে রক্ষা করার জন্য।
— “তুই সামনে থেকে সরে দাঁড়া তূর্জয়! আমি এই মিহুকে মেরেই ফেলবো।” ছোঁয়া ক্ষেপে বলে উঠে।
— তূর্জয় নম্রতা সহকারে বলে উঠে, “দেখো ছোঁয়া। তুমি এখন থেকে চলে যাও৷ তোমার মাথা ঠিক নেই৷ তোমার মাথায় কোন সমস্যা আছে৷ আমি ভালোই ভালোই বলছি, তুমি এখান থেকে চলে যাও৷”
— ছোঁয়া তূর্জয়ের শার্টের কলার ধরে, ” তুই আগে বল, তুই মিহুকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করবি৷ যদি তুই মিহুকে ডিভোর্স না দেস তাহলে আমি তোর মিহু পাখিকে মেরে ফেলবো৷ সাথে তোর পরিবারের কাউকে শান্তিতে বাঁচতে দিবো না৷
তূর্জয় এবার আর শান্ত থাকতে পারলো না৷ তূর্জয় নিজের মাঝে জমে থাকা সকল রাগ অভিমানকে বের করে ফেলে। কোন কিছু না ভেবে ছোঁয়ার হাত ধরে বাড়ির পাশের ড্রেনের মাঝে ফেলে দেয়৷ ছোঁয়ার উপর থুথু ফেলে। ঘৃণার সাথে বলে উঠে, “তোকে ভালোভেবে কথাগুলো বলেছিলাম। কিন্তু তুই ভালোর মর্যাদা রাখতে পারলি না৷ তোর মতো লোক আমি কখনো দেখিনি৷ আমার আজ লজ্জা লাগছে তোর মতো লোককে আমি ভালোবাসেছি৷” মিহুকে উদ্দেশ্য করে, “আমি এখন মিহুকে ভালোবাসি৷”
কথাগুলো বলে ভূর্জয় একটু ধম নিয়ে মিহুকে কাছে টেনে নিয়ে আসে। মিহুর হাত বুকে জড়িয়ে বলে উঠে, “আমি যদি প্রথম থেকে মিহুকে ভালোবাসতাম তাহলে আমাক এই দিন দেখতে হতো না৷ তোর মতো বাজে মেয়ের হাত থেকে ভগবান আমাকে বাঁচিয়েছেন।
— প্লিজ! তূর্জয় আমাকে তোল৷ আমি এখান থেকে উঠতে পারছি না৷ প্লিজ তূর্জয়!
— তোকে টার্চ করে আমি আমার হাতকে নোংরা করতে চাই না৷ তোর মতো লোকের জন্য এই জায়গাটাই পারফেক্ট।
তূর্জয় ছোঁয়ার কোন কথা না শুনে মিহুকে কোলে তুলে নেয়৷ মিহু তূর্জয়ের গলা জড়িয়ে ধরে। তূর্জয় মিহুর দিকে একবার তাকিয়ে মিহুকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে আসে৷ তূর্জয়ের বাবা তিহান চৌধুরী মিহুর মা বাবাকে ফোন করে দেয়৷ মিহুর মা বাবা এসে ছোঁয়াকে ময়লার ড্রেন থেকে তুলে নিয়ে যায়৷
।
।
তূর্জয় মিহুকে রুমে নিয়ে এসে মিহুকে নামিয়ে দেয়৷ মিহুর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে। মাথা নিচু করে হাত জোর করে মিহুর কাছে ক্ষমা চায়। মিহু তূর্জয়ের এমন কাজে খুব অবাক হয়। মিহু ভাবতে পারছে না কেন তূর্জয় এমন করছে? কেনই বা তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে? বুঝতে পারছে না ভূর্জয়ের উদ্দেশ্য।
— আপনি আমার কাছে কেন ক্ষমা চাচ্ছেন? আপনি তো কোন দোষ করেননি!
— আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি৷ তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি৷ সত্যি বলছি আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে চাইনি৷ তখন আমার মন মানসিকতা ঠিক ছিল না৷ যখন কোন ভালোবাসার মানুষ কাউকে ছেড়ে চলে যায়৷ তখন তার মনের অবস্থা কেমন হতে পারে তা তুমি জানবে না কোনদিন। তুমি কোনদিন তো কাউকে ভালোবাসো নি৷
— আমি আপনার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছি৷ প্লিজ এভাবে আমার কাছে ক্ষমা চাইবেন না৷ আমি আপনাকে ক্ষমা করতে পারি যদি আপনি উঠে বসেন৷
তূর্জয় বসা থেকে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছে বিছানায় ধপাস করে বসে পড়ে৷ মিহু তূর্জয়ের কাঁধে হাত রাখতেই মিহুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে দেয়৷ ছোট বাচ্চাদের মতো তূর্জয় কেঁদে যাচ্ছে৷ মিহু তূর্জয়ের কান্না থামাচ্ছ না৷ মিহু জানে কান্না করলে কষ্টটা হালকা হয়ে যায়৷ দশ মিনিটের মতো মিহুকে জড়িয়ে ধরে তূর্জয় কান্না করে।
— এভাবে কান্না করলে সব সমস্যার সমাধান হবে না৷ আপনি সময়ের সাথে কাছে সব কিছু ছেড়ে দেন৷ দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। কোন চিন্তা করবেন না৷
— “তুমি আমার একটা কথা রাখবে!” একদম বাচ্চাদের মতো করে বলে উঠে।
— কি কথা? আমি আপনার কথা রাখার চেষ্টা করবো৷
— আগে কথা দাও৷
— ওঁকে কথা দিলাম। যতই কষ্ট হোক আমি আপনার কথা প্রাণ দিয়ে রাখার চেষ্টা করবো৷
—- কোনদিন আমাকে ছেড়ে যাবে না৷ আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আমি আর বাঁচতে পারবো না ৷ আমি আর কাউকে হারাতে পারবো না৷
— মিহু তূর্জয়ের হাত ধরে বলে উঠে, ” আমি আপনাকে কোনদিন ছেড়ে চলে যাবো না৷ আমি সব সময় আপনার পাশে থাকবো৷ আপনিই আমার জীবনে প্রথম ভালোবাসা। আপনাকে ছেড়ে আমি কোনদিন যাবো না৷
— তাহলে আমাকে কিছু দিন সময় দাও৷ আমি তোমাকে এখনই আপন করে নিতে পারবো না৷ প্লিজ তোমার কাছে আমি হাত জোর করে ক্ষমা চাচ্ছি এর জন্য।
— মিহু বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলে উঠে, ” আপনি যেদিন নিজ থেকে আমাকে কাছে টেনে নিবেন, সেদিনই আমি আপনার কাছে আসবো৷” কিন্তু!
— কিন্তু কি?
— কিন্তু আমাকে আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবতে হবে। আমাকে চিনতে হবে আপনাকে। আমিও আপনাকে কাছ থেকে চিনে নিব৷
–ওঁকে,,
— তাহলে আমার কথামতো এখন স্নান করে আসেন৷ এভাবে থাকলে আপনাকে ভালো লাগে না। কেমন জানি মরা মরা লাগছে আপনাকে? চুলগুলো উশকো খুশকো হয়ে রয়েছে।
তূর্জয় মিহুর কথামতো ওয়াসরুমে চলে যায়৷ মিহুও মুচকি হেঁসে নিচে চলে আসে৷ মিহু জানে এখন আর ভূর্জয় ডিপ্রেশনে পড়বে না৷ মিহু নিচে এসে তূর্জয়ের জন্য নিজ হাতে খাবার বানায়৷
।
।
।
ছোঁয়া বাড়িতে এসে বাড়ির সব কিছু ভাঙতে থাকে৷ রেগে বাড়ির সকলের সাথে খারাপ ব্যবহার করছে৷ বাড়িতে যেন ভুমিকম্প চলছে৷ যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই মারছে। ছোঁয়ার এমন অবস্থার কথা শুনে ছোঁয়ার বাবা অফিস থেকে চলে আসে৷ এসে দেখে তার মেয়ে এমন ব্যবহার করতেছে৷ কিছু না ভেবে ছোঁয়ার গালে ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷
— ক্ষেপে বলে উঠে, ” নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখো৷ তোমাকে আমি এই শিক্ষা দেয় নি৷ সব সময় তোমার চাওয়াকে পূর্ণ করতে গিয়ে আজ আমাদের এমন অবস্থা।
ছোঁয়া তার বাবাকে ভীষণ ভয় পায়৷ বাবাকে দেখে ছোঁয়া রুমে চলে যায়৷ রুমে এসে সারারুম পায়েচারী করছে৷ ভাবছে সে কিছুতেই মিহু আর তূর্জয়কে এক হতে দিবে না৷ তাদের যে করেই হোক না কেন তাদের আলাদা করবে?
রেগে মিহুর সমস্ত জামা কাপড়ে আগুন লাগিয়ে দেয় ছোঁয়া। মিহুর কোন অংশ রাখে না মহেশ্বরী পরিবারে৷ ছোঁয়া নিজের মাকেও পরোয়া করে না৷
অচেনা নাম্বার থেকে ছোঁয়ার কাছে ফোন আসে। ফোনে কথা বলে ছোঁয়া গান ছেড়ে নাচতে শুরু করে দেয়৷
তূর্জয় আর মিহু রুমে প্রবেশ করতেই দেখতে পায় অঘটন। ছোঁয়া হাত কেটে রুমে জ্ঞান হারিয়ে আছে৷ মিহু ছোঁয়াকে দেখে দৌড়ে ছোঁয়ার কাছে যায়৷
— ছোঁয়ার মাথা নিজের কোলে নিয়ে ডাকতে শুরু করে, “দিদি তোমার কি হয়েছে? প্লিজ চোখ মেলে তাকাও!” কান্না করতে করতে বলে উঠে।
তূর্জয় এক দৃষ্টিতে মিহু আর ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে৷ তূর্জয় ছোঁয়াকে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না?
— মিহু বলে উঠে, “দাঁড়িয়ে আছেন কেন? জল নিয়ে আসেন৷ জ্ঞান না ফিরলে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।”
হিহুর কথা শুনে তূর্জয় বাস্তবে ফিরে আসে। তূর্জয় জল নিয়ে এসে ছোঁয়ার চোখে মুখে ছিটিয়ে দেয়৷ জলের ছিঁটা পেয়ে ছোঁয়া ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়৷
— আমাকে ক্ষমা করে দাও তূর্জয়। আমি বড় ভুল করে ফেলেছি৷ (ছোঁয়া)
মিহু কি বলবে, বুঝে উঠতে পারছে না? মিহু চোখের জল মুছে রুম থেকে চলে যায়। তাদের আলাদা করে কথা বলার সুযোগ করে দেয়৷ কান্না করতে করতে মিহু নিচে নেমে আসে৷ মিহুকে কান্না করতে দেখে তূর্জয়ের মা মিহুর দিকে এগিয়ে আসে৷
— চোখের জল মুছে দিয়ে, ” কি হয়েছে মা? এভাবে কান্না করছো কেন?
— মিহু নিজেকে শক্ত করে বলে উঠে, ” মা দিদি ফিরে এসেছে। আর দিদি এখন রুমে আছে। দিদি তার ভুল বুঝতে পরেছে।”
মিহু কথা শুনে তূর্জয়ের মায়ের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায় যেন৷ তিনি এক কদম পিছিয়ে বলে উঠেন, “সে এখানে কেন এসেছে?”
— দিদি খুব অসুস্থ। দিদির হাত কেটে গেছে। দিদি রুমে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে ছিল৷ আমরা রুমে ঢুকে দিদিকে এই অবস্থায় দেখতে পায়৷ প্লিজ তাদের কিছু একটু সময় দেন৷ অনেক রাগ জমে আছে তাদের মাঝে।
তূর্জয়ের মা কি করবে, বুঝে উঠতে পারছেন না? তিনি এই দিকেও যেতে পারছেন না ওইদিকেও যেতে পারছেন না৷ তিনি মিহুকে শান্তনা দেওয়ার জন্য নিজের রুমে নিয়ে যান৷
।
।
।
মিহু চলে যেতেই ছোঁয়া তূর্জয়কে জড়িয়ে ধরে৷ আজ তূর্জয় নিজ থেকে ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরেনি। আজ কেন জানি, ছোঁয়াকে অসহ্য লাগছে তূর্জয়ের কাছে?
— তূর্জয় ছোঁয়াকে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে কোমলভাবে বলে উঠে, ” আমি এখন একজন বিবাহিত পুরুষ। এমনভাবে কাছে আসার চেষ্টা করবে না৷ ”
— ছোঁয়া মনে মনে বলে উঠে, “আমি তো তোমাকে নিজের করেই নিবো৷ “আমি তোমাকে কিছুতেই মিহুর হতে দিবো না৷ আমাকে তূর্ণ মেনে নেয়নি৷ তূর্ণ আমাকে ঠকিয়েছেন। তূর্ণ আমাকে ভালোবাসে না৷ আমি কি করে এখন তোমাকে ছেড়ে দেয়৷”
— কি হলো? তুমি এখানে কেন ফিরে এসেছো? তুমি তোমার বাড়িতে ফিরে যাও।
— “না আমি আমার বাড়িতে ফিরে যাবো না৷ আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি তূর্জয়। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না৷ প্লিজ তূর্জয় আমাকে ফিরিয়ে দিও না৷ আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি৷ তোমার ভালোবাসার বন্ধনে আমি আটকা পড়তে চাই।” ন্যাকা কান্না করতে করতে বলে উঠে।
— আমাকে ভালোবাসলে আমাকে ফেলে চলে যেতে পারতে না৷ একবারও ভাবলে না আমার কি হবে৷ বিয়ে বাড়িতে কেমন অবস্থা হয়েছিল! কিভাবে আমি এই ধাক্কা নিতে পারবো?
— তূর্জয়ের পা ধরে বলে উঠে, ” আমি তখন বুঝতে পারিনি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। নিজের ভালোবাসা নিজের কাছে টেনে নাও৷ আমি তোমাকে সত্যি খুব ভালোবাসি। আমাদের ভালোবাসা এত ভঙ্গুর নয় যে শুকনো ঝড়ে ভেঙে যাবে৷”
— এক সময় আমি তূর্জয় তোমার ভালোবাসায় পাগল ছিলাম৷ তোমাকে ছাড়া আমার অবুঝ মন কিছু বুঝতো না৷ আজ সে মন তোমাকে ভালোবাসে না৷
— কাকে তুমি ভালোবাসো? তুমি তো বলেছিলে আমার জায়গা কাউকে দিবে না৷ আমিই তোমার মনে সব সময় থাকবো৷
— হ্যাঁ। তুমি আমার মনে সব সময় থাকবে৷ কিন্তু আমার জীবনে থাকতে পারবে না৷ আমার জীবন এখন অন্যের সাথে বাঁধা পড়েছে৷ আমি কিছুতেই মিগুকে দূরে সরিয়ে দিতে চাই না৷
— আমি মিহুর সাথে কথা বলবো৷ আমি যা বলবো মিহু তাই করবে৷ আমার কথার অমান্য করবে না মিহু৷ মিহু আমাকে খুব ভালোবেসে। আমার ভালোবাসার জন্য মিহু সব কিছু করতে পারে।
— হ্যাঁ, মিহু সব কিছুই করতে পারে৷ মিহু তোমার মতো স্বার্থপর নয়৷ তুমি তোমার মা বাবার সম্মান মাটি করতে পারো। কিন্তু মিহু নয়৷ মিহু সেই মাটিকে চাষযোগ্য করে ফসল ফলিয়েছে৷ মাটিতে হাসি ফিরিয়ে এনেছে৷ মিহু তোমার মা বাবার সম্মান বজায় রেখেছে সেই দিন৷ মিহুর জন্য আজ তোমার মা বাবা সমাজে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পেরেছে৷
— জানি আমি অনেক বড় ভুল করেছি৷ আমার ভুলের কোন ক্ষমা হয় না৷ তবু্ও আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি৷ আমি আবার এই চৌধুরী বাড়ির সম্মান ফিরিয়ে নিয়ে আসবো । তার বিনিময়ে তুমি কি পারবে না মিহুকে ডিভোর্স দিতে?
ডিভোর্সের কথা শুনে তূর্জয়ের বুকটা কষ্টে মোচড় দিয়ে উঠে৷ অল্প দিনে মিহু তার মনে এতটা জায়গা করে নিবে তূর্জয় বুঝতে পারেনি৷ তূর্জয় মিহুকে ভালোবাসে ফেলে৷ তূর্জয়ের বুকে এখন শুধু মিহুর বসবাস। ডিভোর্সের কথাটা হজম করতে না পেরে তূর্জয় ছোঁয়ার গালে পর পর দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷
— লজ্জা করে না, নিজের বোনের জীবন নষ্ট করতে৷ তুমিই বলছো তোমার বোন তোমার জন্য সব কিছু করতে পারে৷ আর তুমি তারই ঘর ভাঙতে এসেছো। তোমাকে এই বাড়িতে আসতে কে বলেছে? তোমার থেকে মিহু খুব ভালো৷ তুমি তো তোমার স্বার্থ বুঝ। আর মিহু নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে পরিবারের স্বার্থের কথা ভাবে৷ এইজন্য মিহু আমার মনে জায়গা করে নিয়েছে।
— প্লিজ তূর্জয় আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করো৷ আমি এমনটা বলতে চাইনি৷ মিহুর ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আমি এমনটা করেছি৷
— “স্টপ” আমি তোমার কোন কথা শুনতে চাই না৷ বের হও আমার রুম থেকে।
— না আমি কোথাও যাবো না৷ আমি এখানেই থাকবো৷
— ওঁকে তোমার যেতে হবে না৷ আমিই তোমাকে তোমার জায়গা বুঝিয়ে দিচ্ছি৷
ছোঁয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ছোঁয়ার হাত ধরে টানতে টানতে ডাইনিং রুমে নিয়ে আসে৷ ছোঁয়ার চিৎকারে সবাই ডাইনিং রুমে চলে আসে। তূর্জয় ছোঁয়াকে ডাইনিং রুমে নিয়ে এসে ফ্লোরে ফেলে দেয়৷
মিহু এগিয়ে আসতে নিলে তূর্জয়ের মা মিহুর হাত ধরে ফেলেন৷ তিনি মিহুকে চোখের ইশারায় এখানে আসতে মানা করেন৷
— কি হয়েছে তূর্জয়? (তিহান চৌধুরী)
— বাবা এই মেয়ে আমাদের বাড়িতে আসলো কিভাবে? এই মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দাও। আমি এই মেয়েকে একদম সহ্য করতে পারছি না৷
— ছোঁয়া কি করেছে? সে অনেকদিন পর ফিরে এসেছে৷ দেখা যাচ্ছে তার হাত কাটা। হাত থেকে রক্ত ঝড়ে শুকিয়ে গেছে। (বাবা)
— বাবা তুমিও মিহুর মতো বোকা হলে, সে নিজে ইচ্ছা করে হাত থেকে চামড়া তুলে ফেলেছে। আর আমাদের রুমে জ্ঞান হারানোর নাটক করছিল। সে আমাদের ক্ষতি করার জন্য এখানে এসেছে৷ তাকে আমি দেখতে চাই না৷
— ছোঁয়া তিহান চৌধুরীর পা ধরে বলে উঠে, ” আঙ্কেল প্লিজ আমাকে এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিবেন না৷ আমি আপনার মেয়ের মতোন৷ আমি না হয় দূর থেকে তূর্জয়কে ভালোবেসে যাবো৷
তিহান চৌধুরী কিছু বলতে নিবে তার আগেই তূর্জয় ছোঁয়ার হাত ধরে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে যায়৷ তূর্জয় কারো কোন কথা শুনে না৷ টানতে টানতে গেটের বাহিরে নিয়ে আসে। তূর্জয়ের পিছু পিছু সবাই চলে এসেছে৷ তূর্জয়কে এমন কঠোর না হতে সবাই বলছে। কিন্তু তূর্জয় কারো কোন কথা কানে তুলছে না৷
— তূর্জয় ক্ষেপে বলে উঠে, ” তোকে যেন আমাদের বাড়ির আশেপাশে না দেখি৷ ” আমার মিহুর কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না৷ ”
— ছোঁয়া মাটি থেকে উঠে বলে উঠে, ” আমি ছোঁয়া মহেশ্বরী। আমি কথা দিচ্ছি, আমি এই বাড়িতে বউ হয়ে প্রবেশ করবো৷ এই বাড়িতে কোন মিহুর ছায়া থাকবে না৷
।
।
মিহু তূর্জয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়৷ মিহু ভাবতেও পারেনি তূর্জয় তাকে এত আপন করে নিবে।
#ভালোবাসার বন্ধন
#পর্ব_০৬ (বিদায় সুইজারল্যান্ড)
#অধির_রায়
সকাল বেলা তূর্জয় নিজের গায়ে কোন জামা না দেখে “মিহু” বলে চিৎকার করে উঠে৷
মিহু এক প্রকার দৌড়ে তূর্জয়ের কাছে আসে৷ কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” কি হয়েছে? আপনি কি কোন বাজে স্বপ্ন দেখেছেন?”
— তূর্জয় চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করে। স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠে, “আমার গায়ের জামা কোথায়?”
— আপনি কি রাতের কথা ভুলে গেলেন। আপনার তো রাতে,,
— কি আমি রাতে,,, রাতে মানে টা’কি? হেয়ালি না করে সব খোলে বলো৷
— কেন রাতের কথা কিছু মনে নেই আপনার ? আপনার কি একটুও জ্ঞান ছিল না৷ সব কিছু ভুলে গেছেন৷
— এই মেয়ে বাজে কথা বন্ধ করো৷ রাতে কি হয়েছিল? আমি শুধু সেই রাতের কথা শুনতে চেয়েছি৷ তোমার কোন বাজে কথা শুনতে চাইনি৷
— রাতে আপনার গায়ে ভীষণ জ্বর উঠেছিল৷ আপনি নিজের জ্ঞানে ছিলেন না৷ আবোল তাবোল প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন আমার দিকে? আপনার গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছিল।
— জ্বর এসেছিল কিন্তু আমিই জানলাম না৷ আর আমার জামা কোথায়? জ্বরের সাথে জামার কি সম্পর্ক?
— আপনাকে জলপটি দিয়েছি অনেক৷ কিন্তু কিছুতেই জ্বর হালকা হচ্ছিল না ৷ তার পর মাকে ফোন করে জানতে পারি আপনার জ্বর হলে আপনার গা মুছে দেওয়া হয়৷ সেজন্য আমি আপনার গা থেকে পোশাক খুলে ফেলেছি।
— “হোয়াট!” চিৎকার করে। “তুমি আমার গায়ে থেকে জামা খুলেছো৷ এত বড় অধিকার আমি তোমাকে
এখনও দেয়নি।”
— আমি এটি অধিকার থেকে করিনি৷ আমি এটি নিজের কর্তব্য থেকে করেছি। আমার কাছে এই সময় এটি ব্যতিত আর কোন উপায় ছিল না৷ রাতে রাস্তায় বের হয়েছিলাম। কোন মেডিসিনের দোকান খোলা ছিল না।
হোটেলের মেনেজার কিছু জ্বরের ওষুধ আমাকে দেন৷ সেটার জন্যই আপনি এখন সুস্থ আছেন৷
— তোমাকে রাতে রাস্তায় যেতে কে বলেছে? তোমার কি কোন জ্ঞান নেই? এখানে রাতে প্রতিটি জায়গায় বিপদ৷ বিপদের কথাটা আমি প্রথম দিনই তোমাকে বলে দিয়েছি৷ এটা ইন্ডিয়া নয়৷
— তখন আমার কাছে দ্বিতীয় পথ ছিল না৷ আমি নিজের কর্তব্য থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইনি। দুপুর একটা বাজে, খাবার খেয়ে নেন৷
–“কি দুপুর একটা বাজে! তুমি আমাকে ডাক দাওনি কেন?” অবাক হয়ে বলে উঠে!
মিহু আর কিছু না বলে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ ওয়াসরুমে এসে কেঁদে কেঁদে মনে মনে বলতে থাকে, আমাকে কেন এত শাস্তি দিচ্ছো? আমি কি দোষ করেছি? আমার স্বামী সব সময় আমাকে কেন ভুল বুঝে? এক্সিডেনে বিয়ে হলেও তো তিনি আমার স্বামী।আমি তাকেই স্বামী হিসেবে মানি৷
ওয়াসরুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে তূর্জয় বলে উঠে, ” মিহু ওয়াসরুম থেকে তারাতাড়ি বের হও৷ তোমার সাথে কিছু কথা আছে। ”
মিহু তূর্জয়ের কন্ঠ পেয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে বের হয়৷ যেন তূর্জয় কিছু বুঝতে না পারে মিহু কান্না করেছে৷ মিহু ওয়াসরুম থেকে বের হতেই তূর্জয় মিহুকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে৷ মিহু সাইড কেটে চলে যেতে নিলেই দেয়ালে দুই হাত দিয়ে মিহুকে আটকিয়ে ফেলে৷
— “কি হলো আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? ” থেমে থেমে বলে উঠে।
— আটকে আটকে কথা বলছো কেন? আর হ্যাঁ আমার যত্ন নিতে তোমাকে কে বলেছে?
— কেউ না৷ আমি আপনাকে ভা,,, থেমে যায় আর কিছু বলে না৷
— আমাকে কি? কি হলো, বলছো না কেন?
— আমি আপনার খারাপ চাই না। সব সময় আপনার ভালো চাই৷ আমাকে মাত্র ছয় মাস সহ্য করেন৷ কথা দিয়েছিলাম আমি আপনার লাইফে আসবো না৷ সে কথা আমি রাখবো৷ ছয় মাস পর আপনাকে মুক্ত করে দিবো। এই বিয়ে নামক সম্পর্ক আমাদের মাঝে দেয়াল হয়ে থাকবে না।
মিহুর কথা শুনে তূর্জয়ের বুকের বা পাশটা কেঁপে উঠে। যেন সে আবার কাউকে হারাতে বসেছে৷ কেন কেঁপে উঠেছে জানা নেই৷
— তূর্জয় মিহুর কানের কাছে এসে বলে উঠে, ” তোমার কোন মুক্তি নেই৷” তোমাকে তোমার শাস্তি পেতে হবে৷
কানের কাছে ফিসফিস করে কথা বলাতে মিহু কেঁপে উঠে৷ খিঁচে আঁখি বন্ধ করে ফেলে৷ মিহু এমন অবস্থায় দেখে তূর্জয় মুচকি হেঁসে সেখান থেকে চলে আসে৷ মিহু এ’কি ভাবে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে৷
— কি হলো মিহু? ওখানে ওই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকার মানে কি? আমি জানি তুমিও কিছু খাওনি৷ চল একসাথে খাবো৷
তূর্জয়ের কথা শুনে মিহু চোখ মেলে দেখে তূর্জয় খাবার নিয়ে বসে আছে৷ চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বুঝার চেষ্টা করে একটু আগের ঘটনা৷ কিন্তু সে কিছুই বুঝতে পারে না৷
— কি হলো? ওই ভাবে তাকিয়ে কাকে দেখছো? চলো খাবার খেতে হবে তো?
— হুম। আসছি আমি৷
মিহু ধীর পায়ে তূর্জয়ের কাছে আসে। এসে মিহু তূর্জয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে খাচ্ছে। খাচ্ছে বলতে ভুল হবে তাকিয়ে আছে।
— আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে খাবার খাও৷
— আমি আপনার দিকে তাকায় নি। একটা কথা বলার ছিল। সেজন্য আপনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম৷
— কি কথা? আর কথা বলার জন্য তুমি আমার কাছ থেকে পারমিশন নিচ্ছো কবে থেকে।
তূর্জয়ের কথা গায়ে না মেখে নিজের মনে কথা বলতে চেয়েও বলল না৷ পরক্ষণে জবাবে বলে উঠে, ” কাল তো আমরা ইন্ডিয়ায় ফিরে যাবো৷ আমরা আর কোনো দর্শনীয় স্থান দেখতে পারবো না৷ ” এখানে তো আরও অনেক জায়গা আছে৷
— কেন পারবো না? আজ টাউন হলের পার্কে যাবো৷ পার্কটাও অনেক সুন্দরভাবে সাজানো৷ ছোট থেকে শুরু করে বড়দেরও বিভিন্ন খেলার আয়োজন আছে টাউন হল পার্কে। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় সবার জন্য কিছু সামগ্রী কিনে আনবো৷ সবাই তো চেয়ে আছে আমরা কি নিয়ে যায় তাদের জন্য।
— সেটাই ভালো ভালো হবে৷ কিন্তু আমরা যাবো কখন? সন্ধার পরে কি যাবো আমরা?
— না সন্ধ্যার পরে যাবো না৷ আমরা এখনই যাবো৷
— এখনই যাবো মানে কি?
— হ্যাঁ আমরা এখনই যাবো৷ খাওয়ার পর তৈরি হয়ে নাও৷
— কিন্তু আপনার তো জ্বর।
— আরে আমার কথা চিন্তা করতে হবে না৷ আমার কিছু হবে না৷ তারাতাড়ি তৈরি হয়ে নিবে৷ আর এটা মন্টিকালো ফাইভ স্টার হোটেলের কাছেই৷ আমরা হেঁটে চলে যাবো৷ যেতে তেমন টাইম লাগবে না।
খাবার শেষে মিহু পোশাক নিয়ে সোফায় বসে আছে৷ কোনটা পড়ে যাবে ঠিক করতে পারছে না৷ কোনটা পড়ে গেলে তাকে ভালো লাগবে তাও বুঝতে পারছে না৷ তূর্জয় মিহুর এমন কান্ড দেখে বুঝতে পারে মিহু ঠিকভাবে ডিসিশন নিতে পারছে না৷ ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, “মিষ্টির মাঝে গোল্ডেন কালারের গাউন পড়লে কাউকে সুন্দর লাগতে পারে৷ ”
— দূরে থেকে না বলে কাছে এসে বললেই পারতেন৷ যখন বুঝতে পারছেন আমি কোনটা পড়বো ভেবে পাচ্ছি না তো হাতে নিয়ে বলতে পারতেন।
— আমি তোমার কথা বলিনি৷ আমি ফোনে এই কার্টুনকে বললাম৷ তোমার ভালো লাগলে তুমি পড়তে পারো৷ তবে বলবো পড়লে ভালো লাগবে।
মিহু তূর্জয় দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠে, সা* খবিশ তূর্জয়। তুই আমাকে ভালোভাবে বললেও পারতি৷ তোর মাঝে কোন রোমান্টিকতা নেই৷ তোকে তো আমি রোমান্টিক বানিয়েই ছাড়বো৷ সা* নিরামিষ।
,
— ও ম্যাম আমাকে গালি দেওয়া শেষ হলে তৈরি হয়ে নেন৷ অনেক সময় লাগবে।
মিহু তূর্জয়কে উপেক্ষা করে চলে যায় ওয়াসরুমে। তূর্জয় বেলকনিতে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, হ্যাঁ ভগবান তুমি এই মেয়ে জাতিকে কি দিয়ে সৃষ্টি করেছো? কিছুই বুঝতে পারি না তাদের কর্মকাণ্ড।”
মিহু হালকা মেকআপ করে ঠোঁটে গাঢ় করে লিপস্টিক দেয়৷ মিহুকে হালকা সাজেই খুব ভালো দেখাচ্ছে৷ তার পর তারা একে অপরের হাত ধরে চলে আসে টাউন হলের বিখ্যাত পার্কে। মিহুকে নিয়ে তূর্জয় বিভিন্ন রাইটসে উঠে৷ সব রাইটসে মিহু ভয় পেয়ে তূর্জয়কে চেপে ধরে। তূর্জয় জানে মিহু ভয়ে তূর্জয়কে চেপে ধরে রেখেছে৷
তারা পার্ক থেকে বেরিয়ে শপিং মলে চলে যায়৷ মিহু সবার জন্য অনেক কিছু কিনে৷ কিন্তু নিজের জন্য কিছু কিনেনি। তূর্জয় ঠিকই খেয়াল করেছে৷ চলে আসার সময় তূর্জয় মিহুর হাত ধরে ফেলে।
— তুমি কিছু কিনলে না কেন? তোমার কিছু চাই না।
— আমার কিছু লাগবে না। সবার খুশিতে আমার প্রাপ্তি। কে বলেছে আমি কিছু নিব না! সবার জন্য নেওয়া মানে আমার জন্য নেওয়া৷
তূর্জয় মিহুর কথা শুনে খুব খুশী হয়৷ মিহু অল্পতেই খুব খুশি সে জানতো৷ তবে কখনো বিশ্বাস করতো না৷ আজ তার পুরোপুরি বিশ্বাস হলো৷ তূর্জয় মিহুর কোন কথা না শুনে মিহুর হাত ধরে শপিংমলে নিয়ে যায়৷ নিজে পছন্দ করে মিহুর জন্য অনেক কিছু কিনে।
শপিং শেষে খাবার খেয়ে তারা মন্টিকালো ফাইভ স্টার হোটেলে ফিরে এসে৷ সারাদিন অনেক দখল গেছে তাদের উপর৷ এসে ঘুমিয়ে পড়ে৷
পরের দিন সকালের ফ্লাইটে তারা নিজের মাতৃভূমি কলকাতায় ফিরে আসে৷ এয়ারপোর্টে সবায় তাদের রিসিভ করতে আসে৷ তাদের একসাথে দেখে দু’টো পরিবারের লোক খুব খুশি৷ তূর্জয় আর মিহু নিজের রুমে পা দিতেই,,,
অনেকক্ষণ ধরে স্নান করছে। কিছুতেই বালি গা থেকে উঠছে না৷ তূর্জয় খুব রেগে আছে। কিছুতেই মিহু ওয়াসরুম থেকে বের হচ্ছে না৷
— মিহু। ওপেন দ্যা ডোর।
— কি বললেন? বুঝতে পারিনি। বাংলায় বলেন!
— “মিহু ভালোভাবে বলছি দরজা খোল। না হলে দরজা ভেঙে ফেলবো।” রেগে বলে উঠে তূর্জয়।
মিহু উপায় না পেয়ে ওয়াসরুমের দরজা খোলে দেয়৷ তূর্জয় ওয়াসরুমে প্রবেশ করে বলে উঠে, ” স্নান করতে কতোক্ষণ লাগে।”
— আমি কি করবো? গা থেকে কিছুতেই বালি উঠছে না?
— আরে বুদ্ধু এসব বালি একা তুলতে পারবে না৷ মানুষের গায়ের স্পর্শে এসব বালি উঠে যায়৷ কোনদিন হিন্দি মুভি দেখোনি৷ মানলাম তুমি সুইজারল্যান্ডে এর আগে আসো নি।
— মুখ বাংলার পাঁচের মতো করে, ” আমি জানলে এমন কখননোই করতাম না৷ সাবান দিয়ে অনেক চেষ্টা করলাম। ” কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।
— সাবান দিয়ে এসব বালি উঠবে না৷ আমি তোমার বালি তুলে দিচ্ছি। তুমি আমার বালি তুলে দাও৷
একে অপরকে সাহায্যের মাধ্যমে দেহ থেকে অনেক কষ্টে বালি দূরে করে।
মিহু কাভার্ড থেকে কম্বল নিয়ে ফ্লোরে শুতে যেতেই তূর্জয় বলে উঠে, ” ফ্লোরে ঘুমাতে হবে না৷ বিছানায় আসো৷”
— কিন্তু আপনি তো…?
— কোন কথা না বলে বিছানায় আসো৷ এখানকার ফ্লোরে অনেক জীবাণু থাকতে পারে৷ তুমি যদি অসুস্থ হও আমাকেই বিপদে পড়তে হবে৷
— আমার এত খেয়াল রাখতে হবে না৷ আমি এখানেই ঠিক আছি৷
মিহু ফ্লোরে শুয়ে পড়ে৷ মিহুর এমন ব্যবহার দেখে তূর্জয়ের খুব রাগ উঠে যায়৷ তূর্জয় মনে মনে বলতে থাকে, ” মন বলছে এই মেয়েটাকে থাপ্পড়িয়ে এখানে নিয়ে আসি৷ ” মেয়ে মানুষ মানেই ন্যাকা সাজে।
মিহু মনে মনে তূর্জয়কে বকে যাচ্ছে, ” এখন আসছে ভালোবাসা দেখাতে। দেখাতে হবে না এমন ভালোবাসা। আমি ভালো আছি৷”
হঠাৎ করেই মিহু শূন্যে ভাসতে শুরু করে৷ চোখ মেলে দেখে তূর্জয় মিহুকে কোলে তুলে বিছানা নিয়ে আসছে।।
— এই এই আমাকে কোলে নিচ্ছেন কেন? নামান আমাকে?
— এই মেয়ে কোন কথা বললে, এখনই ফেল তোমার কোমর ভেঙে দিবো৷ এত ন্যাকা সাজার দরকার নেই৷
ভূর্জয় মিহুকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। বিছানা থেকে মিহু নেমে আসতে নিলেই তূর্জয় মিহুকে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়৷ মিহু তূর্জয়ের এমন কাজে অবাক৷ তূর্জয় তো মিহুকে সহ্য করতেই পারে না৷ তিনিই নিজ থেকে বুকে টেনে নিচ্ছে৷ মিহু ভাবতে ঘুমিয়ে যায়৷ মিহুর ঘুম আসার পর তূর্জয় মিহুকে বিছানার এক পাশে রেখে সেও নিজেও ঘুমিয়ে যায়।
সকাল বেলা তূর্জয় স্বান শেষ করে খালি গায়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে৷ মিহু তূর্জয়ের গায়ে চাঁদর দিয়ে বলে উঠে, ” আপনি খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”
— মানে কি? আমি খালি গায়ে দাঁড়িয়ে থাকলে তোমার সমস্যা কি?”
— আমার তো কোন কাজ নেই আপনার উপর ক্রাশ খাবো। আপনি খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছেন বলে অনেক মেয়ে আপনার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আপনি কি সেটা খেয়াল করছেন?
— ভাব নিয়ে, “তো কি হয়েছে?”
— আমি খালি গায়ে থাকবেন না ব্যাস। আমি যেমন আপনার কথা শুনে চলি। এখন থেকে আপনিও আমার কথা শুনে চলবেন।
— আমি কেন তোমার কথা শুনে চলবো৷
মিহু নিজেকে তূর্জয়ের স্ত্রী দাবি করতে নিয়েও থেমে যায়৷ পরক্ষণে বলে উঠে, ” আপনি তো আমাকে কোনদিন নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিবেন না৷ তাই আমি আপনার একজন ভালো বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে বলছি৷ বেস্ট ফ্রেন্ডের কথা রাখতে হয়৷
— ওঁকে,,
সকালের খাবার শেষ করে তারা জলন্ত পুতুল মানে ক্লক টাওয়ারে চলে আসে৷ নিয়তির চোখ শুধু ক্লক টাওয়ারের জলন্ত পুতুল খুঁজছে। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না৷ এই নিয়ে তার অনেক চিন্তা হচ্ছে। কেউ কি জলন্ত পুতুলটি চুরি করে নিয়ে চলে গেছে নাকি৷
— এই যে শুনেন!
— কথা না বলে এখানকার সব দৃশ্য দেখে যাও৷ কতো সুন্দর ভাবে সাজানো।লাইটিং গুলো কতো সুন্দর। দেখলে মন ভরে যায়।
— আরে আমি বইয়ে পড়েছিলাম এখানে জলন্ত পুতুল রয়েছে। যার জন্য এই ক্লক টাওয়ার আরও বেশি বিখ্যাত পৃথিবীর বুকে৷
তূর্জয় মিহুর হাত ধরে ক্লক টাওয়ারের নিচের দিকে নিয়ে যায়৷ উপরে থেকে ক্লক টাওয়ার নিচের দিকে আরও সুন্দর করে লাইটিং করা।
— এই মোমের পুতুলটির নামই জলন্ত পুতুল। চারিপাশে আগুনে শিখা দিয়ে ঘেরা৷ যার জন্য একে জলন্ত পুতুল বলে।
মোমের তৈরি জলন্ত পুতুল দেখে মিহু হেঁসে বলে উঠে, “আমাকে আপনার পাগল মনে হয় ? এটি যদি মোম হতো তাহলে গলে পড়ে যেত৷ ”
— এটি গলে না তাই এর নাম জলন্ত পুতুল। এটি ১৬ শতকে তৈরি করা হয়৷ এটি গলে না বিদায় এর নাম রাখা হয়েছে জলন্ত পুতুল।
— এখন কিছুটা বুঝতে পারলাম৷
তারা দুইজনে কিছু পিক তুলে নেয়। মিহু আবার বলে উঠে, ” আমি আর একটা কথা বলতে চাই।”
— তূর্জয় বিরক্তের সাথে বলে উঠে, ” কি কথা! ”
— আমাদের দেশে টাওয়ার বানানো হয় শুধু ফোনের নেটওয়ার্কের জন্য৷ কিন্তু সুইজারল্যান্ডের টাওয়ারে হোটেল, শপিং মল সব কিছু কেন?
— কারণ সুইজারল্যান্ড অনেক উন্নত দেশ৷ এখানে সব কিছু সম্ভব। তারা অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছে৷ আর হ্যাঁ আমাদের দেশেও এমন এমন বড় বড় ক্লক টাওয়ার হতে পারে।
— তাহলে আমাদের দেশে এমন টাওয়ার বানাই না কেন?
— কারণ আমাদের দেশ দূর্নীতিতে ভরপুর। সেজন্য এমন বড় বড় টাওয়ার সম্ভব নয়৷ আচ্ছা বাদ দাও। চল আমরা জেনেভায় যায়৷ জেনেভায় যাওয়ার পর দুপুরের খাবার খাবো৷ এখন খেতে গেলে লেট হয়ে যাবে৷
— জেনেভায় কেন যাব?
— সেখানে গেলেই বুঝতে পারবে৷
সুইজারল্যান্ডের একটা গাড়ি হায়ার করে তারা দুই জনেই জেনেভার বুটানিক্যাল গার্ডেনে চলে আসে৷ নিয়তি এমন সবুজের সমাহার দেখে খুব খুশি৷ মনে হচ্ছে সবুজের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে৷ যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ। মন ভয়ে যায়৷ পৃথিবীর প্রায় ১৪,০০০ হাজারও বেশি প্রজাতির গাছ এখানে রয়েছে৷ বিজ্ঞানীরা এসব গাছ থেকে অনেক মহা ওষুধ উৎপন্ন করে৷
— ওয়াও খুব সুন্দর জায়গা৷
— হুম সুন্দর। আর প্রতিটি গাছের পিক তুলে নাও৷ সাথে বৈজ্ঞানিক নামও দেওয়া আছে৷ শিক্ষার্থী এখানে এসে যেন শিক্ষা গ্রহন করতে পারে।
— আরে রাখেন আপনার শিক্ষা। শিক্ষার মাঝে সব দেশের সরকার লগ ডাউন দিয়েছে। তা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না৷
ঘুরাঘুরি শেষ করে তারা দুপুরের খাবার সন্ধায় খায়৷ মিহু হোটেলে বসে পড়েছে৷ সে আর কোথাও যাবে না৷
— এখন যেখানে নিয়ে যাব সেখান থেকে তুমি আসতে চাইবে না৷
— এখন আবার কোথায় নিয়ে যাবেন৷
— জেনেভা শহরটি জেনেভা লেকের জন্য বিখ্যাত। জেনেভার বুকের উপর দিয়ে বয়ে গেছে জেনেভা লেক৷ এখানে এসেছি আর জেনেভা লোক দেখবো না সেটা কখনো কি হতে পারে৷ চল জেনেভায় লেকে৷
মিহু না চাওয়া সত্ত্বেও তূর্জয় মিহুকে জোর করে জেনেভার লোকে নিয়ে যায়৷ মিহু এখানে এসেই তার চোখ আকাশ পানে৷ জেনেভা লোক বৃহত্তর দ্বিতীয় পর্যটন কেন্দ্র। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে এখানে দর্শনের জন্য উপযুক্ত সময়৷ তাছাড়া সারা বছর এখানে আসা যাওয়া চলে।
জেনেভার লেকের ঘাটে বাঁধা আছে ছোট ছোট অনেক ডিঙ্গি নৌকা। যা দিয়ে দুই জন প্রেমিক প্রেমিকা রাতের শহরে ঘুরতে পারে। লেকের দুই পাশ দিয়ে রয়েছে অনেক শপিং মল।
— মিহু বলে উঠে, “আমি নৌকায় উঠবো৷”
— অবশ্যই আমরা নৌকায় উঠবো৷ নৌকায় না উঠলে চলে কি? এখানে নৌকা দিয়ে ঘুরে ঘুরে সব কিছু দেখা যায়৷ জলের সাথে বন্ধুত্ব করা যায়৷
— অ আচ্ছা৷ তাহলে তারাতাড়ি চলেন৷
মিহুকে নিয়ে তূর্জয় একটা নৌকা দুই ঘন্টার জন্য হায়ার করে নদীর মাঝে ঘুরতে চলে যায়৷ রাতের আকাশের তারা নদীর জলে ঝলমল করছে৷ দেখে মনটা খুব ভয়ে যায়। মিহু তূর্জয়কে মাঝে মাঝে জল দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে৷ তূর্জয়ও মিহুকে মাঝে মাঝে জল দিচ্ছে। এরই মাঝে মনে পড়ে যায় ছোঁয়ার কথা৷ আজ যদি মিহুর জায়গায় ছোঁয়া থাকতো৷ তাহলে আমাদের হানিমুনটা এর থেকে আরও সুন্দর হতো৷ মন খারাপ করে তূর্জয় নৌকা ঘুরাতে বলে উঠে।
— মিহু তূর্জয়কে বলে উঠে, “এখনো তো দুই ঘন্টা হয়নি। চলে যাবেন কেন?”
— এমনি চলে যাবো। আমার শরীরটা তেমন ভালো লাগছে না৷
অতীত পিছন ছাড়ে না৷ ভালোবাসার মুহুর্তে অতীতের কথা মনে এসে নাড়া দেয়৷ না পারছে ছোঁয়াকে ভুলতে না পারছে মিহুকে আপন করে নিতে৷ দুই টানায় ভুগছে তূর্জয়।
মিহুর কথার কোন জবাব না দিয়ে তারা রাত বারোটার দিকে হোটেলে ফিরে আসে। তূর্জয় মন খারাপ করে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকাল বেলা তূর্জয় ঘুম থেকে উঠে দেখে নিজের গায়ে কোন জামা না দেখে চিৎকার করে মিহুকে ডাক দেয়৷