ভালোবাসার বন্ধন পর্ব-০৬

0
1061

#ভালোবাসার বন্ধন
#পর্ব_০৬ (বিদায় সুইজারল্যান্ড)
#অধির_রায়
সকাল বেলা তূর্জয় নিজের গায়ে কোন জামা না দেখে “মিহু” বলে চিৎকার করে উঠে৷

মিহু এক প্রকার দৌড়ে তূর্জয়ের কাছে আসে৷ কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” কি হয়েছে? আপনি কি কোন বাজে স্বপ্ন দেখেছেন?”

— তূর্জয় চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করে। স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠে, “আমার গায়ের জামা কোথায়?”

— আপনি কি রাতের কথা ভুলে গেলেন। আপনার তো রাতে,,

— কি আমি রাতে,,, রাতে মানে টা’কি? হেয়ালি না করে সব খোলে বলো৷

— কেন রাতের কথা কিছু মনে নেই আপনার ? আপনার কি একটুও জ্ঞান ছিল না৷ সব কিছু ভুলে গেছেন৷

— এই মেয়ে বাজে কথা বন্ধ করো৷ রাতে কি হয়েছিল? আমি শুধু সেই রাতের কথা শুনতে চেয়েছি৷ তোমার কোন বাজে কথা শুনতে চাইনি৷

— রাতে আপনার গায়ে ভীষণ জ্বর উঠেছিল৷ আপনি নিজের জ্ঞানে ছিলেন না৷ আবোল তাবোল প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন আমার দিকে? আপনার গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছিল।

— জ্বর এসেছিল কিন্তু আমিই জানলাম না৷ আর আমার জামা কোথায়? জ্বরের সাথে জামার কি সম্পর্ক?

— আপনাকে জলপটি দিয়েছি অনেক৷ কিন্তু কিছুতেই জ্বর হালকা হচ্ছিল না ৷ তার পর মাকে ফোন করে জানতে পারি আপনার জ্বর হলে আপনার গা মুছে দেওয়া হয়৷ সেজন্য আমি আপনার গা থেকে পোশাক খুলে ফেলেছি।

— “হোয়াট!” চিৎকার করে। “তুমি আমার গায়ে থেকে জামা খুলেছো৷ এত বড় অধিকার আমি তোমাকে
এখনও দেয়নি।”

— আমি এটি অধিকার থেকে করিনি৷ আমি এটি নিজের কর্তব্য থেকে করেছি। আমার কাছে এই সময় এটি ব্যতিত আর কোন উপায় ছিল না৷ রাতে রাস্তায় বের হয়েছিলাম। কোন মেডিসিনের দোকান খোলা ছিল না।
হোটেলের মেনেজার কিছু জ্বরের ওষুধ আমাকে দেন৷ সেটার জন্যই আপনি এখন সুস্থ আছেন৷

— তোমাকে রাতে রাস্তায় যেতে কে বলেছে? তোমার কি কোন জ্ঞান নেই? এখানে রাতে প্রতিটি জায়গায় বিপদ৷ বিপদের কথাটা আমি প্রথম দিনই তোমাকে বলে দিয়েছি৷ এটা ইন্ডিয়া নয়৷

— তখন আমার কাছে দ্বিতীয় পথ ছিল না৷ আমি নিজের কর্তব্য থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইনি। দুপুর একটা বাজে, খাবার খেয়ে নেন৷

–“কি দুপুর একটা বাজে! তুমি আমাকে ডাক দাওনি কেন?” অবাক হয়ে বলে উঠে!

— আপনার ঘুম নষ্ট হবে সেজন্য ডাক দেয়নি৷ আপনি সারারাত ঘুম আসেননি৷

মিহু আর কিছু না বলে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ ওয়াসরুমে এসে কেঁদে কেঁদে মনে মনে বলতে থাকে, আমাকে কেন এত শাস্তি দিচ্ছো? আমি কি দোষ করেছি? আমার স্বামী সব সময় আমাকে কেন ভুল বুঝে? এক্সিডেনে বিয়ে হলেও তো তিনি আমার স্বামী।আমি তাকেই স্বামী হিসেবে মানি৷

ওয়াসরুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে তূর্জয় বলে উঠে, ” মিহু ওয়াসরুম থেকে তারাতাড়ি বের হও৷ তোমার সাথে কিছু কথা আছে। ”

মিহু তূর্জয়ের কন্ঠ পেয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে বের হয়৷ যেন তূর্জয় কিছু বুঝতে না পারে মিহু কান্না করেছে৷ মিহু ওয়াসরুম থেকে বের হতেই তূর্জয় মিহুকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে৷ মিহু সাইড কেটে চলে যেতে নিলেই দেয়ালে দুই হাত দিয়ে মিহুকে আটকিয়ে ফেলে৷

— “কি হলো আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? ” থেমে থেমে বলে উঠে।

— আটকে আটকে কথা বলছো কেন? আর হ্যাঁ আমার যত্ন নিতে তোমাকে কে বলেছে?

— কেউ না৷ আমি আপনাকে ভা,,, থেমে যায় আর কিছু বলে না৷

— আমাকে কি? কি হলো, বলছো না কেন?

— আমি আপনার খারাপ চাই না। সব সময় আপনার ভালো চাই৷ আমাকে মাত্র ছয় মাস সহ্য করেন৷ কথা দিয়েছিলাম আমি আপনার লাইফে আসবো না৷ সে কথা আমি রাখবো৷ ছয় মাস পর আপনাকে মুক্ত করে দিবো। এই বিয়ে নামক সম্পর্ক আমাদের মাঝে দেয়াল হয়ে থাকবে না।

মিহুর কথা শুনে তূর্জয়ের বুকের বা পাশটা কেঁপে উঠে। যেন সে আবার কাউকে হারাতে বসেছে৷ কেন কেঁপে উঠেছে জানা নেই৷

— তূর্জয় মিহুর কানের কাছে এসে বলে উঠে, ” তোমার কোন মুক্তি নেই৷” তোমাকে তোমার শাস্তি পেতে হবে৷

কানের কাছে ফিসফিস করে কথা বলাতে মিহু কেঁপে উঠে৷ খিঁচে আঁখি বন্ধ করে ফেলে৷ মিহু এমন অবস্থায় দেখে তূর্জয় মুচকি হেঁসে সেখান থেকে চলে আসে৷ মিহু এ’কি ভাবে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে৷

— কি হলো মিহু? ওখানে ওই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকার মানে কি? আমি জানি তুমিও কিছু খাওনি৷ চল একসাথে খাবো৷

তূর্জয়ের কথা শুনে মিহু চোখ মেলে দেখে তূর্জয় খাবার নিয়ে বসে আছে৷ চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বুঝার চেষ্টা করে একটু আগের ঘটনা৷ কিন্তু সে কিছুই বুঝতে পারে না৷

— কি হলো? ওই ভাবে তাকিয়ে কাকে দেখছো? চলো খাবার খেতে হবে তো?

— হুম। আসছি আমি৷
মিহু ধীর পায়ে তূর্জয়ের কাছে আসে। এসে মিহু তূর্জয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে খাচ্ছে। খাচ্ছে বলতে ভুল হবে তাকিয়ে আছে।

— আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে খাবার খাও৷

— আমি আপনার দিকে তাকায় নি। একটা কথা বলার ছিল। সেজন্য আপনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম৷

— কি কথা? আর কথা বলার জন্য তুমি আমার কাছ থেকে পারমিশন নিচ্ছো কবে থেকে।

তূর্জয়ের কথা গায়ে না মেখে নিজের মনে কথা বলতে চেয়েও বলল না৷ পরক্ষণে জবাবে বলে উঠে, ” কাল তো আমরা ইন্ডিয়ায় ফিরে যাবো৷ আমরা আর কোনো দর্শনীয় স্থান দেখতে পারবো না৷ ” এখানে তো আরও অনেক জায়গা আছে৷

— কেন পারবো না? আজ টাউন হলের পার্কে যাবো৷ পার্কটাও অনেক সুন্দরভাবে সাজানো৷ ছোট থেকে শুরু করে বড়দেরও বিভিন্ন খেলার আয়োজন আছে টাউন হল পার্কে। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় সবার জন্য কিছু সামগ্রী কিনে আনবো৷ সবাই তো চেয়ে আছে আমরা কি নিয়ে যায় তাদের জন্য।

— সেটাই ভালো ভালো হবে৷ কিন্তু আমরা যাবো কখন? সন্ধার পরে কি যাবো আমরা?

— না সন্ধ্যার পরে যাবো না৷ আমরা এখনই যাবো৷

— এখনই যাবো মানে কি?

— হ্যাঁ আমরা এখনই যাবো৷ খাওয়ার পর তৈরি হয়ে নাও৷

— কিন্তু আপনার তো জ্বর।

— আরে আমার কথা চিন্তা করতে হবে না৷ আমার কিছু হবে না৷ তারাতাড়ি তৈরি হয়ে নিবে৷ আর এটা মন্টিকালো ফাইভ স্টার হোটেলের কাছেই৷ আমরা হেঁটে চলে যাবো৷ যেতে তেমন টাইম লাগবে না।

খাবার শেষে মিহু পোশাক নিয়ে সোফায় বসে আছে৷ কোনটা পড়ে যাবে ঠিক করতে পারছে না৷ কোনটা পড়ে গেলে তাকে ভালো লাগবে তাও বুঝতে পারছে না৷ তূর্জয় মিহুর এমন কান্ড দেখে বুঝতে পারে মিহু ঠিকভাবে ডিসিশন নিতে পারছে না৷ ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, “মিষ্টির মাঝে গোল্ডেন কালারের গাউন পড়লে কাউকে সুন্দর লাগতে পারে৷ ”

— দূরে থেকে না বলে কাছে এসে বললেই পারতেন৷ যখন বুঝতে পারছেন আমি কোনটা পড়বো ভেবে পাচ্ছি না তো হাতে নিয়ে বলতে পারতেন।

— আমি তোমার কথা বলিনি৷ আমি ফোনে এই কার্টুনকে বললাম৷ তোমার ভালো লাগলে তুমি পড়তে পারো৷ তবে বলবো পড়লে ভালো লাগবে।

মিহু তূর্জয় দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠে, সা* খবিশ তূর্জয়। তুই আমাকে ভালোভাবে বললেও পারতি৷ তোর মাঝে কোন রোমান্টিকতা নেই৷ তোকে তো আমি রোমান্টিক বানিয়েই ছাড়বো৷ সা* নিরামিষ।
,
— ও ম্যাম আমাকে গালি দেওয়া শেষ হলে তৈরি হয়ে নেন৷ অনেক সময় লাগবে।

মিহু তূর্জয়কে উপেক্ষা করে চলে যায় ওয়াসরুমে। তূর্জয় বেলকনিতে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, হ্যাঁ ভগবান তুমি এই মেয়ে জাতিকে কি দিয়ে সৃষ্টি করেছো? কিছুই বুঝতে পারি না তাদের কর্মকাণ্ড।”

মিহু হালকা মেকআপ করে ঠোঁটে গাঢ় করে লিপস্টিক দেয়৷ মিহুকে হালকা সাজেই খুব ভালো দেখাচ্ছে৷ তার পর তারা একে অপরের হাত ধরে চলে আসে টাউন হলের বিখ্যাত পার্কে। মিহুকে নিয়ে তূর্জয় বিভিন্ন রাইটসে উঠে৷ সব রাইটসে মিহু ভয় পেয়ে তূর্জয়কে চেপে ধরে। তূর্জয় জানে মিহু ভয়ে তূর্জয়কে চেপে ধরে রেখেছে৷

তারা পার্ক থেকে বেরিয়ে শপিং মলে চলে যায়৷ মিহু সবার জন্য অনেক কিছু কিনে৷ কিন্তু নিজের জন্য কিছু কিনেনি। তূর্জয় ঠিকই খেয়াল করেছে৷ চলে আসার সময় তূর্জয় মিহুর হাত ধরে ফেলে।

— তুমি কিছু কিনলে না কেন? তোমার কিছু চাই না।

— আমার কিছু লাগবে না। সবার খুশিতে আমার প্রাপ্তি। কে বলেছে আমি কিছু নিব না! সবার জন্য নেওয়া মানে আমার জন্য নেওয়া৷

তূর্জয় মিহুর কথা শুনে খুব খুশী হয়৷ মিহু অল্পতেই খুব খুশি সে জানতো৷ তবে কখনো বিশ্বাস করতো না৷ আজ তার পুরোপুরি বিশ্বাস হলো৷ তূর্জয় মিহুর কোন কথা না শুনে মিহুর হাত ধরে শপিংমলে নিয়ে যায়৷ নিজে পছন্দ করে মিহুর জন্য অনেক কিছু কিনে।
শপিং শেষে খাবার খেয়ে তারা মন্টিকালো ফাইভ স্টার হোটেলে ফিরে এসে৷ সারাদিন অনেক দখল গেছে তাদের উপর৷ এসে ঘুমিয়ে পড়ে৷

পরের দিন সকালের ফ্লাইটে তারা নিজের মাতৃভূমি কলকাতায় ফিরে আসে৷ এয়ারপোর্টে সবায় তাদের রিসিভ করতে আসে৷ তাদের একসাথে দেখে দু’টো পরিবারের লোক খুব খুশি৷ তূর্জয় আর মিহু নিজের রুমে পা দিতেই,,,

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে