Saturday, July 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1038



বক্ষ পিঞ্জর পর্ব-১৬+১৭

0

#বক্ষ পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#পর্বঃ১৬+১৭

“এক নব্য দিনের সূচনা হলো এক অপূর্ব সকাল দিয়ে। রাত্রি ঘুম থেকে উঠে লিভিং রুমে গিয়ে দেখলো আবির বসে আছে সাথে আভা রাত রায়াফ ও বসে আছে। সবাই হাসা হাসি করছে। তাদের হাসির শব্দ শুনেই রাত্রি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ না হয়েই বেরিয়ে চলে গেলো লিভিং এ। রাত্রিকে ওইভাবে আসতে দেখে সবাই ওর দিকে তাকালো। বেচারি রাত্রি যখন বুঝতে পারলো ও এলোমেলো হয়ে আছে এক ছোটে রুমে চলে গেলো। আর সবাই ফিক করে হেসে দিলো। ”

“কি লজ্জা কি লজ্জা এইভাবে বেরিয়ে গেলাম ইশ খেয়াল ছিলোনা একদম। তারপর রাত্রি একদম শাওয়ার নিয়ে বের হলো পরিপাটি হয়ে৷ বেলা ১১ টা বাজে। আর রাত্রি এখন সকালের নাস্তা করবে আর কি। নাস্তা করে লজ্জায় আর ওদের সামনে যায়নি আবার নিজের রুমে চলে এসেছে৷ ”

“ভাইয়া যাও যাও তোমার রাণী তো লজ্জা পেয়ে চলে গেলো যাও গিয়ে দেখে এসো। মজা নিতে বলল আভা। ”

“আবির মুচকি হেসে রাত এর দিকে তাকালো। রাত ইশারায় মাথা ঝাকিয়ে আবিরকে উৎসাহ দিলো।”

“রায়াফ বলল, এই এই ব্যাপার টা কি তোমরা কি শুধু তোমাদের নিয়েই পড়ে থাকবে নাকি। আমার জন্য একটা বউ খুঁজে দাও আমিও তোমাদের মতো আমার বউ এর সাথে গল্প করবো। ”

“তবে রে দাড়া খুজে দিচ্ছি তোর বউ কে। দাঁত আজকে একটাও যায়গায় রাখবোনা। রাত হাসতে হাসতে বলল।”

“এহ তুমি মারলেই হবে নাকি। তোমরা তো ঠিকি লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করো আর আমি কিছু বললেই দোষ তাই না! ওইযে তোমার বিয়ের আগেও তো তোমার রুমে আ। আর কিছু বলতে পারলোনা রায়াফ আভা মুখ চেপে ধরে বলল, রায়াফ তুমি না গুড বয় এসো আমার সাথে রুমে একটা জিনিস দিবো চলো। তারপর আভা রায়াফ কে নিয়ে তাদের রুমে গেলো।”

“এইদিকে রাত তো বেচারা ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। কি’রে আবির কি ভাবছিস যা রাত্রি কি করে দেখে আয়। ”

“আবির তখনই উঠে রাত্রির রুমে গেলো। আসবো।”

“হ্যাঁ কে? আসুন।”

“আবির রুমে ঢুকে দেখলো রাত্রি একটা উপন্যাস এর বই পড়ছে। আবির দাঁড়িয়ে রইলো।”

“কেমন আছেন? ”

“আলহামদুলিল্লাহ তুমি কেমন আছো কুইন।”

“আলহামদুলিল্লাহ। দাঁড়িয়ে আছেন কেনো বসুন। ”

“ঠিক আছি আমি। তুমি টেবিল থেকে উঠে এসো।”

“কে কেনো।”

“আবার কেনো কেনো করছো। দিবো এক চ’র।”

“কি আপনি আমায় মারবেন। ”

“না মারবোনা আদর করবো হয়েছে এবার এসো। ”

“তারপর রাত্রি উঠে আবিরের কাছে গিয়ে দাড়ালো। ”

“আচমকাই আবির রাত্রির কোমর পেচিয়ে ধরলো। রাত্রি হকচকিয়ে গেলো আর বলল, কি কি করছেন দরজা খুলা তো কেও চলে আসবে। রায়াফ এর তো ঠিক ঠিকানা নেই কখন চলে আসে।”

“ওহ আচ্ছা তাই না তাহলে দরজা টা আটকে দেই। ”

“দুষ্টু হয়ে গেছেন দেখছি। আপনি তো এমন ছিলেন না। হটাৎ কি হলো।”

“এমন ছিলাম না এমন হয়েছি তাতে তোমার কোনো সমস্যা আছে। ব্রু কুচকে ঝুকে বলল আবির।”

“না আমার আবার সমস্যা হবে কেনো। এমনি বলছিলাম আর কি।”

“তাহলে এতো ভয় পেয়ে কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছো কেনো। আমি যদি এখন ছেড়ে দেই তাহলেই তো চিত পটাৎ হয়ে যাবে।”

“তারপর রাত্রি একটু সোজা হয়ে আবিরের ব্লেজার এর কলার চেপে ধরলো আর আবিরের চোখে চোখ রেখে বলল , আজকে অফিস নেই। ”

“না আজকে অফিস নেই আজ অফ ডে। ”

“ওহ আচ্ছা। ”

“হুম আভা ফোন করে বলল, ভাইয়া আসো আজকে বাসায় তোমায় দেখতে ইচ্ছে করছে। তাই চলে এসেছি। কিন্তু তুমি তো ঘুমিয়ে ছিলে তোমায় দেখিনি। এতো ঘুমাও কিভাবে হুম।”

“রাত্রি চোখ বন্ধ করে কবি সাহিত্যিক দের মতো বলতে লাগলো, আই লাভ ঘুম। আমি ঘুমের প্রেমিকা ঘুম আমার প্রেমিক। ওকে ছাড়া আমি বাচবোনা। ঘুমালে আমার মনে হয় আমি সুখের রাজ্যে আছি। এই সুখের রাজ্য ছেড়ে কোথাও যেতে ইচ্ছে করেনা। ”

“আবির মুচকি হেসে ওর দিকে তাকিয়েই রইলো৷ তারপর রাত্রি কে বলল, তাই না! ঘুম এতো আপন তোমার কাছে। দাঁড়াও একবার নিয়ে যাই আমার কাছে তখন তোমার ঘুম কোথায় যায় তুমিও নিজেও টের পাবেনা। ঘুম তোমার প্রেমিক তাই না! তোমার প্রেমিক এর যদি ১২ টা না বাজিয়েছি আমিও আবির খান নয়। ”

“আচ্ছা আচ্ছা তাই বুঝি। রাত্রি ঘন ঘন চোখের পলক ফেলতে ফেলতে ঠোঁট ভেঙিয়ে বলতে লাগলো।”

“হুম তাই। এতো ঘুমালে তুমি মেডিকেল বলো আর ভার্সিটি বলো কোনোটাতেই চান্স পাবেনা। তখন তোমার যে কি হাল করবো তুমি ভাবতেও পারছোনা।”

“কি আর করবেন কিছু না। তার চেয়ে বরং বিয়ের পর আর পড়ালেখা করবোনা আপনার বেবিদের সামলাবো হয়ে যাবে একদম ভার্সিটি পাশ।”

“আবির ঠোঁট চওড়া করে বলল, ভেবে বলছো তো কি বলছো।”

“এইরে সেরেছে। কি বলে ফেললাম। এখন তো ওনি আমায় আরও লজ্জা দিবেন জানা হয়ে গেছে আমার। তার চেয়ে বরং পালাই এখান থেকে। দৌড় দেয়ার চেষ্টা করলেও বৃথা হলো আবিরের বাধন থেকে ছুটতে পারলোনা।”

“পালাচ্ছো কোথায়। কথা টা বলার আগে মনে ছিলোনা কি বলছো।”

“না মানে আ আসলে মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে সরি সরি।”

“আবির বেডে বসে রাত্রি কে ওর কুলে বসালো আর দুই হাত দিয়ে ওকে চেপে পেচিয়ে ধরে রাখলো। আর বলল, খুব শখ তাই না বেবি পালনের। অবশ্যই হবে কেনো হবেনা। আমিতো আমার কুইন এর কোনো শখ অপূর্ণ রাখবোনা৷ শুধু সময়ের অপেক্ষা। বুঝলে পাগলি আমার।”

“হুম বুঝেছি।”

“তো এখন কি করবে। ”

“কিছু করবোনা পড়বো আর কি। ”

“হুম গুড গার্ল মন দিয়ে পড়ো। যদি মেডিকেলে চান্স পেয়ে যাও তাহলে তো অনেক ভালো। যদি না পাও তাহলে ভার্সিটি তে এক্সাম দিতে হবে চান্স এর জন্য। যদি সেখানেও চান্স না পেয়েছো তো তোমাকে একটা না পর পর একটা ফুটবল টিম এর মাম্মা বানিয়ে দিবো।”

“এ্যাঁ! ”

“হ্যাঁ। তুমি তো শুধু ঘুমাও তোমার দ্বারা বেবি পালনই ঠিক হবে। ওদের যন্ত্রনায় ঘুমাতে পারবেনা তখন মনে মনে বলবে যে ইশ আমার পড়াশুনায় ভালো ছিলো।”

“এইভাবে বলতে পারলেন আপনি। মন খারাপ করে বলল রাত্রি।”

“তোমার ভালোর জন্যই বলছি পাগলি। তারপর আবির রাত্রির ঘাড়ে এক হাত রেখে আর এক হাত কোমরে রেখে রাত্রিকে আর একটু কাছে নিয়ে এলো। রাত্রি কিছুটা ঝুকে আসলো। আবির ওর কপালে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে বলল, ভালোবাসি পাগলি একটু মন দিয়ে পড়ো। ”

“রাত্রি চোখ বন্ধ রেখেই বলল, আমিও ভালোবাসি আপনাকে। বলেই রাত্রি আবিরকে জড়িয়ে ধরলো ওর কুলে বসে থাকা অবস্থায়।”

“আচ্ছা পাগলি পড়তে বসো আমি চলে যাবো এখন।”

“এখনই চলে যাবেন!”

“হুম এতক্ষন থাকা টা কেমন দেখায় ভাবো তো আমি তো তোমায় এখনো বিয়ে করিনি।”

“তাতে কি হয়েছে বিয়েতো হবেই।”

“না পিচ্চি সেটা তো হবেই। কিন্তু বেশিক্ষন তোমার কাছে থাকাটা এখন শ্রেয় হবেনা। সমস্যা হতে পারে অনেক।”

“কি সমস্যা। ”

“আবির জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তুমি একটা এডাল্ট মেয়ে রাত্রি অবশ্যই এটুকু জানার কথা। আমি তোমার কাছে এতোক্ষন ক্লোজলি বসে থাকলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবোনা তখন খুব খারাপ পরিস্থিতি হয়ে যাবে এটা ভালো দেখাবে ভাবো তো।”

“রাত্রি মাথা টা নিচু করে বলল, হুম ঠিকি তো বলেছেন। কিন্তু আবার কবে আসবেন বাসায়। আর কবে আমায় আপনার কাছে নিয়ে যাবেন একবারের জন্য।”

“খুব শিঘ্রই নিয়ে যাবো আমার কাছে। একটু ধৈর্য ধরো। সবে মাত্র আভা আর রাতের বিয়ে হলো ৪-৫ মাস যেতে যাও তখন না হয় সবার সাথে কথা বলব। আমিতো চেয়েছিলাম তোমার এইচ এস সি এর পরে বিয়েটা হবে। কিন্তু তুমি তো আমার কুইন তো দেখছি খুব দিওয়ানা আমার জন্য তাই আগেই নিয়ে যাবো কেমন।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। এখন বলুন কবে আবার দেখা হবে।”

“প্রায় সময়ই তো দেখা হয়। আচ্ছা অফিসের ফাকে সময় পেলে না হয় কোথাও যাবো তোমায় নিবে হ্যাপি।”

“হুম হ্যাপি।”

“আচ্ছা পড়তে বসো তাহলে আমি উঠি।”

“চলুন আপনাকে দিয়ে আসি। ”

“আচ্ছা চলো তাহলে। ”

“তারপর দুজনেই একসাথে বের হলো। আবির রাত্রির আম্মু আব্বুর থেকে বিদায় নিলো। অবশেষে আভা আর রাত কে বলে বেড়িয়ে গেলো। আবিরের যাওয়ার সময় আভা রাত্রি রায়াফ তিনজনেরই মন খারাপ হলো। অবশ্যই তিন জনের মন খারাপের কারন ভিন্ন ভিন্ন। ”

“দেখতে দেখতে ১৫ দিন চলে গেলো এর মাঝে রাত্রির সাথে আবিরের একদিন দেখা হয়েছিলো।রাত্রি ভীষণ অভিমান করে আছে আবিরের উপর। আভাও তার বাসায় গেছে বেড়াতে। ওর ইচ্ছে মতোই ওর পড়ালেখা বন্ধ করেছে রাত। ”

“আজ ফয়সালের এক্সাম শুরু হয়েছে এইচ এস সি। এক্সাম শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো ক্যাম্পাস এ। এমন সময় একটা মেয়ে দৌড়ে এসে ফয়সাল কে বলল ভাইয়া কেমন আছেন। আর আপনার পরিক্ষা কেমন হয়েছে। ”

“আলহামদুলিল্লাহ দুইটাই ভালো। বলেই উপরে তাকালো ফয়সাল চমকে উঠে বলল, তুমি এখানে!”

“হুম আমাদের স্কুল এন্ড কলেজ অবশ্যই আমি থাকবো তা নইতো কি আপনি থাকবেন।”

“ওহ আচ্ছা। চলো ওইদিকে যাই। বলেই ফয়সাল মেয়েটার সাথে হাঁটতে হাঁটতে পুকুর পাড় টার দিকে গেলো।”

“হ্যাঁ মেয়েটা আর কেও নয় ইভা। ফয়সালের এক্সাম যে সেন্টারে পড়েছে ওই সেন্টার এর স্টূডেন্ট ইভা। ”

“দুজনে পুকুর পাড়ের সিড়িতে গিয়ে বসে কথা বলতে লাগলো। ”

“আচ্ছা ভাইয়া আপনার বাসার সবাই কেমন আছে।”

“আলহামদুলিল্লাহ তোমার।”

“হুম আলহামদুলিল্লাহ। তো ভাইয়া বললেন না তো আপনার জি এফ আছে।”

“উহুম নেই। কাওকে ভালোবেসেছিলাম কিন্তু সে অন্য কাওকে ভালোবাসে। তাই তাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ”

“কে সে জানতে পারি।”

“উহুম। আমি বলতে চাইছিনা সরি।”

“ওহ আচ্ছা।”

“আচ্ছা ইভা তুমি যে এখানে আমার সাথে বসে আছো কেও দেখলে মাইন্ড করবেনা। আর তোমার ভয় করছে না।”

“উহুম ভয় করবে কেনো। আর কেও কিছু বলবেনা কারন সবাই জানে আমি কেমন তাই আমাকে সন্দেহ করার প্রশ্নই আসেনা। যদিও কেও কিছু বলে তাহলে বলবো আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড তাতে কার কি সমস্যা। ”

“ফয়সালের কাশি উঠে গেলো। বলে কি মেয়ে। ”

“আরে আরে আপনার কি হলো পানি খাবেন।”

“না না ঠিক আছি। কিন্তু তুমি এসব কি বলো। আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে যাবো কেনো। ”

“কথার কথা বললাম আর কি। ”

“হুম বুঝেছি।”

“আচ্ছা ভাইয়া উঠুন আমার ছুটি হয়েছে সেই কখন বাসায় যেতে হবে হবে আম্মু চিন্তা করছে মনে হয়। শুধু আপনার জন্য বসে ছিলাম। কখন বের হবেন হল থেকে আর কখন কথা বলবো আপনার সাথে সেই জন্যই অপেক্ষা করে ছিলাম।”

“তুমি জানলে কি করে এই খানে আমি পরিক্ষা দিতে এসেছি।”

“গেইট দিয়ে যখন ঢুকছিলেন তখন আমি উপর থেকে দেখেছি। ”

“ওহ আচ্ছা চলো তাহলে।”

“তারপর দুজন উঠে হাঁটা দিলো। মাঝ পথে ঝালমুড়ি খাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে গেলো ইভা। তারপর ঝালমুড়ি কিনে নিলো। ফয়সাল কে জিজ্ঞাসা করলে সে বললো এসব পছন্দ করেনা। ছেলেরা বরাবরই এসব পছন্দ করেনা মনে হয়।”

“ঝালমুড়ির বিল ইভা কে দিতে দেয়নি ফয়সাল নিজেই দিয়েছে। ইভা যখন ঝালে হু হা করছিলো তখন ফয়সাল মিনারেল ওয়াটার বোতল কিনে দিলো। আর বলল, একদম এসব বাজে খাবার খাবেনা পেটে অসুখ করবে তাড়াতাড়ি বাসায় যাও আমি এখান থেকে উলটো দিকে যাবো। তুমি কোন দিকে যাবে।”

“ভাইয়া আমি এই রাস্তায় যাবো। আচ্ছা আপনি চলে যান আমি রিক্সা করে এই দিকে যাচ্ছি। মানে দুইজনই বীপরিত দিকে। একটা রিক্সা ডেকে ফয়সাল ভাড়া মিটিয়ে ইভাকে বসিয়ে দিলো। ইভা বলল, আবার দেখা হবে ভাইয়া আল্লাহ হাফেজ। বলেই রিক্সাওয়ালা মামা কে যেতে বলল।”

“খুব মিশুক মেয়েটা। ফ্রেশ মাইন্ড গার্ল। তারপর ফয়সাল মুচকি হাসলো আর সেও রিক্সা করে চলে গেলো। ফয়সাল দের গাড়ি থাকা সত্যেও সে গাড়ি করে আসেনা। এটা তার ভালো লাগেনা। রাত্রির সাথে ঝামেলা হওয়ার পর ফয়সাল আজ প্রথম হাসলো তাও ইভার জন্য। রাত্রির জন্য ছেলেটা ভেঙে পড়েছিলো একদম এই ১৫-২০ দিন যেনো অন্ধকার জগৎ ছিলো ফয়সালের জন্য। পরিক্ষার প্রিপারেশন খুব একটা ভালো হয়নি।”

“দুইদিন পর আবার এক্সাম শুরু হলো ফয়সাল এর বন্ধুরা ওকে নিয়ে হাসা হাসি করতে করতে বলল, কি মামা নতুন জি এফ বুঝি। ”

“শাট আপ ননসেন্স পোলাপান। ও আমার ছোট বোন হয়। কোনো জি এফ নয় ঠিক আছে।”

“তুই বলবি আর আমরা বিশ্বাস করে নিবো।”

“সেটা তোদের ব্যাপার। আমার বলার আমি বলেছি। চল এখন টাইম নেই। ”

“এক্সাম শেষে আজও ইভা ফয়সাল একসাথে করে কথা বলতে বলতে বাসায় গেলো। মানে দুই পথের কাছে গিয়ে দুইজন আলাদা হলো আর কি সেদিনকার মতোই।”

“রাত্রির খুব মন খারাপ কিছুতেই আজ তার মন বসছেনা পড়ায়। আবিরের নাম্বার ও নেই যে কথা বলবে। চাইলেও দেয়নি আবির। বলেছে তাহলে নাকি সারাদিন কথা বলবে পড়ায় মন দিবেনা। একবার আমার সামনে আসেন জিরাফ বেটা। কথায় বলবোনা আপনার সাথে। ভালোই বাসেন না আপনি আমায়। নিজ নিজে কথা গুলো বলছে আর মন খারাপ করে খাতায় আকিঁবুকি করছে।”

“কি করছো আমার ডেয়ার আপু। রায়াফ উঁকি মেরে বলল।”

“কিছুনা, উঁকি দিচ্ছিস কেনো আয় ভেতরে।”

“মন খারাপ তোমার। ”

“কই না তো।”

“বললেই হলো আমার আপুর মন খারাপ থাকলে আমি বুঝি। তুমি যতই না না করোনা কেনো হুহ।”

“হুম ভালো তো। কি জন্য এসেছিস পড়তে বসিস নি কেনো।”

“এতো পড়া পড়া ভালো লাগেনা। আমি আড্ডা দিতে আসছি তোমার সাথে। একটু খেলো আমার সাথে। আমার ভালো লাগছেনা। ভাবিও বাসায় নেই যে খেলবে।”

“রাত বাজে ৮ টা এখনো পড়তে না বসে খেলতে এসেছিস ভাইয়া এসে দেখলে আমাদেরকে বুড়িগঙ্গা নদীতে ডুবিয়ে মা’রবে।”

“ভাইয়া কলিং বেল দিলে চলে যাবো সত্যি। এসো এসো ১২ সার্কেল বক্স টা নিয়ে আসি ওইটা খেলবো।”

“আচ্ছা যা নিয়ে আয়।”

“দৌড়ে গিয়ে আবার ফিরে আসলো বক্স টা নিয়ে। দুই ভাই বোন চিপস খাচ্ছে আর খেলছে। রায়াফ
এর ওয়ান পয়েন্ট হলো। আর বলল, আপু মন দিয়ে খেলছোনা কেনো। কী ভাবছো! নিশ্চয় হবু জিজুর কথা ভাবছো তাই না। আমি গিয়ে ফোন করে বলি আবির ভাইয়া কে আসতে।”

“এই না না একদম না। আমি মোটেও ওনার কথা ভাবছিনা। ভালো লাগছে না তাই খেলায় মন বসছেনা।”

“ওহ আচ্ছা, ঠিক আছে শুয়ে থাকো তুমি আমি তোমার মাথায় ম্যাসায়েজ করে দেই।”

“না লাগবেনা তুই দরজা টা আটকে চলে যা। আম্মু খেতে ডাকলে বলবি ঘুমিয়ে পড়েছে। খাবোনা আমি আমি খিদে নেই।”

“আচ্ছা। বলেই রায়াফ দরজা আটকে চলে গেলো।”

“১১ টার সময় রাত্রিকে খেতে ডাকলে রায়াফ বলল, খাবেনা আপু ঘুমিয়ে পড়েছে। আমাকে বলে দিয়েছিলো না ডাকতে আর তোমাদের বলতে তাই বলেছি। ”

“রাত উদ্বিগ্ন হয়ে বললো, কি হয়েছে ওর যে খাবেনা।”

“রাত্রির আম্মু বলল, মেয়েটার আবার শরীর খারাপ করেনি তো। তার বাবাও চিন্তিত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। ”

“খাবার রেখেই সবাই রাত্রির রুমের দিকে গেলো, রাত হালকা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো। ভিতরে ঢুকে দেখলো লাইট জ্বালানো। রাত্রি বেঘোরে পড়ে আছে বেডে। দেখে মনে হচ্ছেনা ও স্বাভাবিক আছে। চোখ মুখ প্রচন্ড লাল হয়ে আছে। রাত্রির আম্মু মেয়ের পাশে বসে গায়ে হাত দিতেই বুঝলেন মেয়ের প্রচুর জ্বর গায়ে। ওনি কান্না করে বললেন, মেয়েটা পড়তে পড়তে এমন হয়ে গেছে তুই বেশি প্রেশার দিয়ে যাচ্ছিস মেয়েটাকে। এতো প্রেশার দেয় কেও পড়ার জন্য। রাত কে উদ্দেশ্য করে বলল।”

“আহ, থামো তো তুমি। দেখছো তো মেয়েটার এই অবস্থা এতো কথা না বলে ওকে ডেকে উঠাও কিছু খাইয়ে ঔষধ খাওয়াও। রাত এর আব্বু বলল।”

“আম্মু ডাক্তার ডাকবো। রাত বলল।”

“দেখি আগে শরীরে অবস্থা কি।”

“রাত্রি কে ডেকে তুললো তার আম্মু। রাত্রি জ্বরে কাতর তাই কথা বলতে পারছেনা। বিছানায় বসতেও পারছেনা উঠে।”

“রাত ডাক্তার কে কল করলো। কিছুক্ষন পর ডাক্তার এসে সেলাইন দিয়ে বলল, বেশি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে ওর ব্রেইন এ। আর অতিরিক্ত চিন্তা করার জন্য প্রেশার বেড়ে গেছে। এই জন্য জ্বর আসছে। আপাতত সেলাইন না দিলে সেন্সলেস হয়ে যেতো তাই সেলাইন দিলাম। আর কিছু ঔষধ দিচ্ছি আনিয়ে নিবেন। বলেই ডাক্তার চলে গেলো। রাত এগিয়ে দিয়ে আসলো।”

“রায়াফ এর মন টা খুব খারাপ রাত্রির পাশে বসে আছে হেলান দিয়ে বিছানায়। রাত্রির আম্মু ও বসে আছে। রাত আর তার আব্বু দুজনে রুমে গেছে। কারোর চোখেই ঘুম নেই রাত বাজে ১ টা। আভা ফোন করেছে রাত কে কিন্তু ওরা টেনশন করবে বলে রাত কিছু জানায়নি। সকালেই জানাবে ভাবলো আর কল কেটে দিলো।”

“ভোরের দিকে রাত্রির চোখ খুললো আর বলল, আম্মু পানি দাও বড্ড পিপাসা লেগেছে।”

“রায়াফ স্বজাগ দিলো ওর আম্মু ঘুমিয়ে পড়েছে ভোরের দিকে। বোনের শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি করে ডাইনিং রুম থেকে ঠান্ডা পানি মিশিয়ে গ্লাস নিয়ে আসলো আর রাত্রি কে বসিয়ে পানি খাইয়ে দিলো।আর বলল, আপু তুমি ঠিক আছো তো। তোমার কিছু হয়নি তো।”

“না ভাই আমার কিছু হয়নি কিন্তু তুই এখানে কি করছিস আর আম্মু ও এখানে। আর হাতে সেলাইন লাগানো কেনো। ”

“রায়াফ সব কিছু বলল। তারপর রাত্রি রায়াফ দুজনই দুজনকে জড়িয়ে ধরলো রায়াফ কান্না করে দিলো।”

“পাগল ভাই আমার আমি ঠিক আছি তো কিচ্ছু হয়নি আমার। ”

“রাত্রির আম্মু চোখ খুলে উঠে বসলো মেয়ের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে রুমা কে নাস্তা বানাতে বলতে চলে গেলো।”

“রাত ৮ টার দিকে উঠলো। উঠে ফ্রেশ হয়ে আগে বোনকে দেখে গেলো। তারপর নাস্তা করে নিলো। রাত্রিকেও নাস্তা করিয়ে দিলো তার আম্মু। সাথে রায়াফ কে ও।”

“রাত রুমে এসে ৯ টার সময় আভা কে কল দিলো কিন্তু ফোন বন্ধ। এতো সকালে ও বাসায় উঠেনা। তারপর আবার ১০ঃ৩০ এ কল দিলো রাত্রির কথা বললে আভা টেনশনে পড়ে গেলো। দৌড়ে বের হলো রুম থেকে তার আম্মু আব্বুকে জানালো। তারপর আবিরকে জাগিয়ে তুললো আর রাত্রির কথা বলল।
আবির ভয় পেয়ে গেলো রাত্রির জ্বরের কথা শুনে। মেয়েটার সাথে অনেকদিন হয়ে গেলো আবিরের দেখা হয়না কথা হয়না। তারপর আভা আবির দুই ভাই বোন কেওই নাস্তা করেনি রেডি হয়ে গেলো রাত্রি কে দেখতে যাবে। আবিরের মা বাবা ও রেডি হলো। তারপর গাড়ি করে রওনা দিলো রাত্রিদের বাসার উদ্দেশ্যে। ”

#চলবে

বক্ষ পিঞ্জর পর্ব-১৫

0

#বক্ষ পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#পর্বঃ১৫

“চারিদিকে পাখির কলরব শুরু হয়ে গেছে। কোকিল ডাকছে মধুর সুরে। শহরের আনাগোনাও বেড়েছে। যানবাহন চলাচল শুরু করেছে। কৃষ্ণচূড়ার আবডালের ফুল গুলো ছড়িয়ে পড়ছে ফুটপাতে। পাখিদের গুঞ্জন যেনো মধু মাখাময় হয়ে উঠেছে। অনেক বেলা হয়ে গেছে কিন্তু শহরের মানুষগুলো এখনো ঘুমের দেশে পড়ে আছে। প্রকৃতি যেনো বড্ড বেশামাল হয়ে পড়েছে এই শহরাঞ্চলের মানুষ গুলোর প্রতি। গভীর রাতে ঘুমাতে যাওয়ায় সবাই এখন ঘুমিয়ে আছে। রায়াফ চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে ও কোথায় আছে। আপু তুমি কোথায় আমি এখানে কেনো। পাশে তাকিয়ে দেখলো আবির শুয়ে আছে। পরক্ষনে রায়াফ বুঝতে পারলো কাল ও আবিরদের বাসায় এসেছে৷ তাই রায়াফ উঠে আবিরের বেলকনিতে চলে গেলো আর দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে। এভাবে বেশ খানিক্ষন বসে থেকে রায়াফ বলল, আপু কোথায় শুয়েছে। দেখে আসি তো। যেই ভাবা সেই কাজ রুমে এসে দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়ে এদিক ওদিক ঘুড়তে লাগলো। এতগুলো রুম থাকায় রায়াফ ঠিক খুঁজে পেলোনা রাত্রি কোথায় শুয়েছে। তারপর আবার আবিরের কাছে এসে আবির কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো। আবির ও শক্ত করে রায়াফ কে জড়িয়ে ধরলো। রায়াফ ডোর লক না করেই এসে ঘুমিয়ে পড়েছে।”

“বেলা তখন ১১ঃ০০ টা বাজে আস্তে আস্তে সবাই ঘুম থেকে উঠছে। রাত্রি শরীর মোচরে উঠে পড়লো। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে ইভা কে ডেকে তুলল। দুজনেই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে৷ ইভা তুই এখানে বস আমি দেখে আসি রায়াফ উঠলো কিনা। তারপর ইভা কে সোফায় বসিয়ে দিয়ে রাত্রি উপরে চলে গেলো আবিরের রুমে। গিয়ে দেখলো দরজা খোলা আছে বেশ অবাক হলো। ধীরে ধীরে রুমে প্রবেশ করলো। গিয়ে দেখলো দুজনেই বেশামাল অবস্থায় শুয়ে আছে একটার ও শুয়ে থাকার সেন্স নেই। রাত্রি রায়াফ কে ডাক দিলো, এই ভাই উঠ বেলা হয়ে গেছে অনেক তো৷ তাড়াতাড়ি উঠে পর৷ ”

“কিন্তু রায়াফ যে আবার সেকেন্ড টাইম ঘুমিয়েছে তাই ওর তেমন হুশ নেই ঘুমের ঘোরে আছে। কিন্তু আবির জেগে গেলো৷ রাত্রি কে দেখে মুহুর্তের মধ্যেই আবিরের ঘুম উধাও হয়ে গেলো। চট জলদি উঠে বসলো। হাই তুলে বলল গুড মর্নিং মাই কুইন।”

“গু গুড মর্নিং। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল রাত্রি। ওর ধারনা ছিলোনা যে আবির উঠে যাবে। তারপর বলল, আপনার রুমের দরজা খুলা ছিলো কেনো।”

“আবিরের ব্রু যুগল কুচকে গেলো। বলল, কি বললে। কিভাবে? আমিতো ডোর লক করেই ঘুমিয়ে ছিলাম আমার স্পষ্ট মনে আছে তাহলে কে খুলবে ডোর। ”

“তাহলে মনে হয় ভূ’ত খুলেছে তাই না।”

“না তা কেনো হবে। তাহলে কি রায়াফ ঘুম থেকে উঠেছিলো। আবার এসে ঘুমিয়েছে হইতো। ”

“ওহ সেটা হতে পারে। হইতো ভাই উঠেছিলো কাওকে জাগ্রত না দেখে আবার এসে শুয়ে ঘুমিয়ে গেছে। ”

“হুম। তো তুমি কি এখানে আমায় এই সকালে ভালোবাসতে এসেছো। ঠোঁট বাঁকা করে বলল আবির। ”

“আপনিও না কি যে বলেন। ফ্রেশ হতে যান আমি যাচ্ছি। বলেই রাত্রি এক দৌড়ে রুমের বাইরে৷ এই লোকটা কি তাকে লজ্জা দিবার জন্যই এই সমস্ত কথা বলে। আমাকে দেখলেই কি ওনার এসব মনে পড়ে নাকি। বিরবির করে নিচে নেমে এলো। এসে দেখে আবিরের সব কাজিনরা উঠে পড়েছে সবাই লিভিং রুমে ইভার সাথে আড্ডা জমিয়েছে। রাত্রিও যোগ দিলো। বেশ কিছুক্ষন পর রাত্রির মনে হলো এখানে তো ফয়সাল ভাইয়া নেই তাহলে ওনি কোথায় চলে গেলো৷ ওনি কি উঠে নি। রাতের ওই ঘটনার পর তো আর ওনাকে দেখা হয়নি। মনে মনে বলল রাত্রি। না পেরে জিজ্ঞাসা করে বসলো ফারিয়া আপুকে, আপু ফয়সাল ভাইয়া কোথায় আমরা তো সবাই এখানে আছি। আবির ভাইয়া ও নেই। আবিরের কথা ইচ্ছে করেই বলেছে যাতে ফারিয়া মাইন্ড না করে৷ না হলে বলবে যে ফয়সাল কে কেনো খুঁজছো। ”

“মনে হয় ফয়সাল ঘুমাচ্ছে। সবাই তো অনেক রাতে ঘুমিয়েছি তাই হইতো ও উঠেনি এখনো। বসে থাকো তো ও সময় হলে উঠে যাবে। বলেই ফারিয়া আড্ডায় মন দিলো।”

“রাত্রির মন টা যেনো খচ খচ করছে। ছেলেটা খুব কষ্ট পেয়েছে মনে হয়৷ কিন্তু আমি তো কিছু করিনি। আমার তো এখানে কোনো দোষ আছে বলে আমি দেখছিনা৷ আমাকে কি ভুল বুঝো ফয়সাল ভাইয়া। না না আমাকে ক্ষমা চাইতে হবে ওনার কাছে। মনে মনে কথা গুলো বলল রাত্রি।”

“সার্ভেন্টরা আবিরের মায়ের কথা মতো ওদের চা দিলো। কিন্তু রাত্রি চা খাইনা এটা আবিরের আম্মু জানে তাই তিনি রাত্রির জন্য কফি পাঠালেন। তারপর আবির রায়াফ কে সাথে নিয়ে নিচে নেমে এলো। তারপর ডাইনিং এ বসে গেলো৷ একে একে সবাই ডাইনিং এ বসলো। সার্ভেন্ট ওদের নাস্তা দিলো৷ নাস্তা করার সময় সবাই জিজ্ঞাসা করলো ফয়সাল কই৷ ওকে রেখে সবাই খাচ্ছি যে। প্রতিত্তোরে কেও কিছু বলতে পারলোনা৷ তাদের খাবারের মাঝ খানেই ফয়সাল বেশ পরিপাটি হয়ে নিচে নেমে এলো। আর ফারিয়া কে বলল, আপু খেয়ে রেডি হয়ে নাও বাসায় যাবো তাড়া আছে। ”

“সে কি কথা ফয়সাল আজই চলে যাবি কেনো। আবিরের মা বলল।”

“ফয়সাল জোরপূর্বক হেসে বলল, খালামনি আমার একটু কাজ আছে ইম্পর্ট্যান্ট তাই যেতে হবে অন্য এক সময় না আসবো। ”

“তোর এখন আবার কিসের কাজ পড়লো। যার জন্য আজই চলে যেতে হবে তোকে। বিজনেস ম্যান হয়ে গেছিস নাকি। আবির বলল।”

“ফয়সাল কিছু বলল না। কিন্তু রাত্রির মনে হচ্ছে রাতের ঘটনার জন্যই ফয়সাল চলে যাবে।”

“আচ্ছা তাহলে খেয়ে নে আগে তারপর না হয় যাস। আবিরের আম্মু বলল।”

“খিদে নেই খালামনি খাবোনা।”

“পাগল নাকি তুই সেই কবে কাল রাতে খেয়েছিলি আর তুই বলছিস খিদে নেই। মুখ টা চুপসে আছে। ”

“ও কিছুনা খালামনি। বলেই ফয়সাল মাথা উচু করল।”

“আবিরের মা দৌড়ে ফয়সাল এর কাছে গিয়ে বলল, বাবা তোর চোখ মুখ এমন ফুলে আছে কেনো৷ দেখে মনে হচ্ছে কেও তোকে মেরেছে। তুই কান্না করেছিস! চোখ যে এভাবে ফুলে আছে।”

“ধুর খালা মনি তুমি কি যে বলোনা। রাতে ঘুম হয়নি তো তাই এমন হচ্ছে। ”

“তারপর ফারিয়া আর ফয়সাল কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে গেলো। যাবার সময় একবার করুন চোখে রাত্রির দিকে তাকালো। রাত্রি বেশ বুঝতে পারলো যে ফয়সাল খুব কান্না করেছে আর কষ্ট পেয়েছে অনেক। কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ টা অব্দি পেলোনা । ”

“কিছুক্ষন পর আভা রাত উঠে এলো নাস্তা সেরে আবার সবাই আড্ডা দিলো। আবিরের আব্বু নাস্তা করে তার রুমে গিয়ে পেপার পড়ছেন।”

“আবির সবাইকে রাতের ঘটনা সবাইকে বললেন। শুধুমাত্র ফয়সালের ঘটনা টা কাওকে বললো না। এতে ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে তাই৷ রাত্রি বেশ লজ্জা পেলো সবার সামনে এভাবে বলায়।”

“আভা বলল, আবির ভাইয়া রাত চলোনা আমরা ঘুরে আসি৷ ”

“ইভা বলল, হ্যাঁ আমিও যাবো। রায়াফ ও লাফিয়ে উঠলো। ”

“আবিরের বাকি কাজিনরা বলল, তাদের কাল ক্লাস আছে ফুপি ফোন করে বলেছে তাই ওরাও চলে যাবে। ওরাও চলে গেলো বিদায় বাসায় এখন কেও নেই। তাই আবির রাত্রি রায়াফ ইভা রাত আভা মিলে ঘুড়তে চলে গেলো গাড়ি নিয়ে৷ তবে আজ ড্রাইভার সহ ফেমিলি গাড়ি নিয়ে বেড়িয়েছে। প্রাইভেট কার নেইনি। সামনে রায়াফ বসেছে আর গানের সাথে সাথে সিটে বসেই নাচছে৷ রাত্রি ইভা আবির মাঝ খানের সারিতে৷ আভা রাত পেছনের সারিতে৷ তারা একটা পার্কে গেলো আবিরিয়া ড্রিম হলি পার্ক। সারাদিন ঘুরে ফিরে বাসায় ফিরলো সবাই।”

“রাতের খাবার শেষে সবাই যে যার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। কিন্তু আবিরের ঘুম আসছেনা তার তো এখন রাত্রিকে লাগবে৷ খুব যে ইচ্ছে করছে ওকে জড়িয়ে ধরতে। ”

“পাঠকমহল তো এখন ভাববে যে এতোদিন কেনো ইচ্ছে করেনি। হ্যাঁ এতোদিন করেনি কারন এতোদিন তো লুকুচুরি ছিলো কিন্তু আজ তো সব কিছু খোলাসা। তাই আর একা থাকা হয়ে উঠছেনা ”

“আবির রায়াফ কে ঘুম পাড়িয়ে রাত্রির রুমের দিকে গেলো। ডোর লক করা দেখলো। তাই আর বিরক্ত করেনি। কাল ও ঘুমাতে পারেনি বেচারি আজকে ঘুমাচ্ছে ঘুমাক বিরক্ত করা ঠিক হবেনা। কুল আবির তোকে এতো উত্তেজিত হলে চলবেনা৷ সামনে অনেক সময় আছে। এগুলো নিজেই নিজেকে বলে আবির রুমে গিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।”

“পরদিন আভা রাত রায়াফ ইভা রাত্রি তাদের বাসায় ফিরে এলো। ইভা আরও একদিন থেকে তার বাসায় চলে গেলো। ”

“তিনদিন পর রাত্রি কলেজে গেলো আগের মতোই রায়াফ আর রাত্রিকে রাত দিয়ে এসেছে৷ বিয়ে করে ফেলেছে বলে কোনো দিকেই তার দুই ভাই বোনের রুলস অমান্য করবেনা। রাত্রি রায়াফ যে রাতের শরীরের দুইটা অংশ। কলিজার টুকরা ভাই বোন ওরা। তাই তো ওদের এতো খেয়াল রাখে।”

“রেজাল্ট দিয়েছে রাত্রি সেকেন্ড ইয়ারে প্রমোশন পেয়েছে। আর ফয়সাল টেস্ট এ এলাও হয়েছে। কিন্তু ফয়সালের মুখে হাসি ছিলোনা। বিষন্নতার ছাপ ছিলো। রাত্রি একবার এগিয়ে গেলো ফয়সালের দিকে কিন্তু ফয়সাল রাত্রিকে এড়িয়ে চলে গেলো।”

“ক্যাম্পাসের সেই কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বসে রাত্রি ওইদিনের সব ঘটনা ইতিকে বলল। ”

“দেখেছিস আমার কথায় সত্যি হলো। আবির ভাইয়া তোকে পছন্দ করে আগেই বলেছিলাম কিন্তু তুই শুনিস নি। যাই হোক ফয়সাল ভাইয়ার কি করা যায়। ওই তো বেচারা খুবই কষ্ট পেয়েছে মনে হয় এখন কি করবি দুস্ত।”

“ইতু আমি কিছু বুঝতে পারছিনা কি করবো। কিন্তু আবির ভাইয়া যে এতোটা রাগি মানুষ ভাবতে পারিনি। কি মা’র ই না দিলো ভাই টাকে। তাও আমার জন্য। নিজেকে তো এখন অপরাধী মনে হচ্ছে রে। ”

“তোর তো দোষ নেই তাহলে এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো। যা হবে ভালো হবে। আশা করি সমস্যা হবেনা কোনো রকম আবির ভাইয়া মানে হবু জিজু ঠিক সামাল দিয়ে দিবে। ”

“দাড়া তোর মজা করা বের করছি। বলেই রাত্রি আর ইতি ক্যাম্পাসে দৌড়াতে লাগলো।”

“উপর থেকে ফয়সাল এগুলো দেখছে আর আনমনে একটু হেসে বলছে, সরি স্বপ্নপরি তুমি না হয় আমার স্বপ্নের ভ্রম হয়েই থেকে গেলে। স্বপ্নেতেই না হয় তোমাকে ভালোবেসে যাবো। দেয়াল হয়ে দাড়াবোনা তোমার আর ভাইয়ার মাঝে। আমি যে সত্যি তোমাকে ভালোবাসি পারবোনা যে তোমাকে কষ্ট দিতে। তোমার চোখে যে আমি ভাইয়ার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা দেখেছি সেটা তো মিথ্যে হতে পারেনা। অনেক দূরে চলে যাবো তোমাদের থেকে। আমাকে যে এখন অনেক লড়াই করতে হবে জীবনের সাথে। ভালো থেকো সব সময় তুমি দোয়া করি। এই অধম কে মনে রেখো এই টুকুই আশা করি। তারপর নিজের চোখের জল টা মুছে নিল বৃদ্ধাঙুল দিয়ে। তারপর ফয়সাল বাসায় না গিয়ে নদীর পারে চলে গেলো। এই সেই তিতাশ নদীর পার। যেখানে ফয়সাল সব সময় আসে। বসে বসে ভাবছে, একটা সময় স্বপ্ন বুনেছিলাম তোমাকে নিয়ে এই খানে আসবো সারাদিন তোমার কুলে মাথা রেখে শুয়ে থাকবো এই পাথর বিছানো ঘাসের উপর। কিন্তু আমার সব কিছু যে সাদা কালো হয়ে গেলো রাত্রি। আমার জীবন টা কি আদো রঙিন হবে। আমি খুঁজে পাবো তোমারই ন্যায় সত্তা। পাবো কি সেগুলো যে গুলো তোমার মাঝে পেয়েছি। আমি যে নিতে পারছিনা আর রাত্রি খুব কষ্ট হচ্ছে আমার খুব। ছেলেদের নাকি কান্না করা নিষেধ কিন্তু আমি তো পারছিনা আমার অশ্রুকণা গুলো সামলে রাখতে। এগুলো ভেবেই আরো কান্না করছে ফয়সাল।”

#চলবে

বক্ষ পিঞ্জর পর্ব-১৩+১৪

0

#বক্ষ পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#পর্বঃ১৩+১৪

“ফয়সাল ভাইয়া খুব সুন্দর একটা গান শুরু করলো।”

*তোর মন পাড়ায় থাকতে দে আমায়
আমি চুপটি করে দেখবো আর ডাকবো ইশারায়।

তুই চাইলে বল আমার সঙ্গে চল
ঐ উদাস পুরের বৃষ্টি তে আজ ভিজবো দুজনায়।

অভিমানি মন আমার চাই তোকে বারেবার
অভিমানি মন আমার চাই তোকে বারেবার।

তাই বলি আইরে ছুটে আয়।

তোর মন পাড়ায় থাকতে দে আমায়
আমি চুপটি করে দেখবো আর ডাকবো ইশারায়।

তুই চাইলে বল আমার সঙ্গে চল
আজ উদাস পুরের বৃষ্টি তে আজ ভিজবো দুজনায়।*

“বাকী গানটা নিজ দায়িত্বে গেয়ে নিবেন। ”

“গান শেষে সবাই আবারও হাতে তালি দিলো।”

“রাত ১ টা বেজে গেছে সমাবেশ শেষ করার পালা। রায়াফ আমার কুলেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আবির ভাইয়া বলল, সবাই এখন ঘুমাতে যা। অনেক রাত হয়ে গেছে। ”

“সবাই ধীরে ধীরে নিচে চলে যেতে লাগলো। কিন্তু রায়াফ কে কিভাবে নিবো ভেবে পাচ্ছিনা। তাই আমি চুপ করে বসে আছি। একে একে সবাই চলে গেলেও ইভা রয়ে গেছে ছাদে৷ আবির ভাইয়া ছাদের এক কর্ণারে দাঁড়িয়ে ছিলো। ”

“ইভা আবির ভাইয়ার পাশে গিয়ে দাড়ালো আর বলল, ভাইয়া একটা কথা বলার ছিলো আপনাকে।”

“হুম বলো।”

“আ আসলে ভাইয়া আমি আপনাকে অনেক পছন্দ করি। মানে আমি আপনাকে ভালোবাসি ভাইয়া। বলেই ইভা তার হাত দিয়ে চোখ দুটো ঢেকে নিলো।”

“হুয়াট! কি বলছো। এই টুকু একটা মেয়ে তুমি কিনা ভালোবাসা নিয়ে আবদার করতে এসেছো। ”

“আমি সত্যি বলছি ভাইয়া। ”

“আচ্ছা বেশ। আমাকে বলো তো ভালোবাসা কাকে বলে? ভালোবাসা কি? কয় প্রকার ভালোবাসা? তুমি যদি এগুলো এক্সপ্লেইন করতে পারো আমি বিশ্বাস করবো যে তুমি আমাকে ভালোবাসো।”

“ইভা মাথা নিচু করে বলল আমি জানিনা এতোকিছু। শুধু ভালোবাসি আপনাকে এই টুকুই জানি।”

“আবির ভাইয়া আড়চোখে রাত্রির দিকে তাকালো। আর মনে মনে বলল, ইশ আমার পিচ্চি পাগলি টার মুখটা একবার দেখো। কি রকম রেগে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। পাগলি তুমি যে জেলাস ফিল করছো সেটা আমি খুব ভালো বুঝতে পারছি। মনে মনে হাসলো ও। তারপর ইভা কে বলল, দেখো তুমি এখনো অনেক ছোট বুঝলে। এসব আজে বাজে চিন্তা ভাবনা এখন একদম মাথায় আনবেনা। যখন বড় হবে আস্তে আস্তে বুঝতে শিখবে তখন দেখবে আমার থেকেও সুন্দর আর স্মার্ট ছেলে কে তুমি হাজবেন্ড হিসেবে পাবে। তখন চুটিয়ে প্রেম ভালোবাসা করো তার সাথে কেমন। ”

“সত্যি! আমি আপনার থেকেও সুন্দর ছেলে পাবো।”

“হুম আমার চেয়ে দ্বিগুন সুন্দর ছেলে পাবে। সে তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসবে। বুঝেছো।”

“হুম ভাইয়া বুঝেছি। আচ্ছা তাহলে আমি সরি বলছি কেমন। যখন বড় হবো তখন কিন্তু আপনি আমাকে আপনার থেকেও সুন্দর ছেলে খুঁজে দিবেন কেমন।”

“হুম ইনশাআল্লাহ দিবো। কিন্তু তার আগে তোমাকে অনেক ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে। ভালো রেজাল্ট করতে হবে পারবে।”

“হুম পারবো একদম।”

“ওকে এখন তাহলে ঘুমিয়ে পড়ো গিয়ে যাও।”

“আচ্ছা ভাইয়া গুড নাইট।”

“গুড নাইট স্মলি।”

“তারপর ইভা চলে গেলো রুমে। আবির ভাইয়া বলল, কি হয়েছে মন খারাপ নাকি।”

“ক কই না তো।”

“আচ্ছা তুমি বসো এখানে আমি রায়াফ কে রুমে দিয়ে আসছি।”

“বসবো কেনো আমিও রুমে যাবো ঘুমাবো তো অনেক রাত হয়েছে।”

“একদিন মানা করেছি কেনো কেনো করবেনা। এখন ছাদেই আছো একদম ছুঁড়ে ফেলে দিবো চুপচাপ বসে থাকো আমি যাবো আর আসবো।তারপর রায়াফ কে কুলে নিয়ে চলে গেলো আবির ভাইয়ার রুমে। ”

“ভয়ে চুপ করে গেলাম। বিশ্বাস নেই যদি ছাদ থেকে ফেলে দেই। আবার এই কিছুক্ষন একা ছাদে ভয় ও তো লাগছে। এরই মধ্যে ফয়সাল ভাইয়া ছাদে এলো। আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরলাম। আর বললাম, ভাইয়া আপনি ঘুমাতে যান নি। ”

“কোনো কথা না বলে ফয়সাল ভাইয়া ঝরের গতিতে এসে আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো হাত দুটো চেপে রাখলো দেয়ালে। আর আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে রইলো। ”

“কি হয়েছে ফয়সাল ভাইয়া আপনি এমন করছেন কেনো। আমি কি করেছি ছাড়ুন আমাকে।”

“আমি তোমার ভাইয়া নয় একদম ভাইয়া বলবেনা আর। আবির ভাইয়ার সাথে তোমার রিলেশন কইদিনের। কিছুটা রেগে বলল। ”

“ম মানে কি বলছেন এসব। আমার কেনো আবির ভাইয়ার সাথে রিলেশন থাকবে। এসব বাজে কথা আপনি কেনো বলছেন।”

“তাহলে আবির ভাইয়া তোমাকে এতো প্রটেক্ট করে কেনো? এতো দায়িত্বশীলতা দেখায় কেনো তোমার প্রতি? আজকেও আসরে দুজন দুজনের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে ছিলে। কি ভেবেছো আমি কিছু দেখিনি।”

“চুপ করুন আপনি। আপনি যা ভাবছেন তা নিতান্তই আপনার ভুল ধারনা। ভাইয়া এতো রেস্পন্সিবিলিটি কেনো দেখায় জানেন না। আমার রাত ভাইয়ার অবর্তমানে তিনি আমাকে বোনের চোখেই দেখেন প্রটেক্ট প্রদান করেন। আর সেটাকে আপনি এতো দূর অবদি নিয়ে যাচ্ছেন। এতো নিচু মন মানসিকতা কেনো আপনার ছিঃ। আর যদিও রিলেশন থাকে তাহলে আপনার সমস্যা কোথায়। আপনার এতো জলে কেনো।”

“স্টপ দিস । তুমি জানোনা কেনো জলে। আমি তোমাকে ভালোবাসি রাত্রি। ভালোবাসি তোমাকে। চিল্লিয়ে বলল। আমার সহ্য হয়না কারও পাশে তোমাকে দেখলে। নিজের ভাই বলে কিছু বলতে পারিনা। প্লীজ বিশ্বাস করো রাত্রি আই লাভ ইউ আই রিয়েলি লাভ ইউ রাত্রি। সেদিনও তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছো অন্তত আজ ফিরিয়ে দিয়োনা প্লীজ। তারপর ফয়সাল ভাইয়া আমার কপালে কপাল ঠেকালো ঝুঁকে। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।”

“ফয়সাল! পেছন থেকে আবির ভাইয়া বেশ জোরে চিৎকার করে ডাক দিলো। ফয়সাল ভাইয়া কে টেনে নিয়ে বেশ জোরে একটা থা’প্পর মারলো।”

“ভাইয়া! তুমি আমায় মেরেছো কেনো?”

“তুই নিজেকে এই প্রশ্ন টা কর কেনো মেরেছি। একটু আগে কি সব বলছিলি ভালো বাসিস তাই না! তাও রাত্রিকে! তোর সাহস কি করে হলো ওকে টাচ করার তোকে কি রাত্রি সেই অধিকার দিয়েছে। বল! ”

“আমি ওকে ভালোবাসি ভাইয়া। আজ থেকে ৪ বছর আগে থেকে ওকে আমি ভালো বাসি। কিন্তু ও আমাকে রিজেক্ট করেছে৷ কেনো সমস্যা কি। আর তুমিই বা কেনো সিনক্রিয়েট করছো। কি হয় ও তোমার। এতো সিম্প্যাথি কেনো দেখাও ওর প্রতি। তোমার কিসের এতো অধিকার যে সব সময় তুমি ওকে প্রায়োরিটি দাও। ”

“আবারও একটা থা’প্পর দিলো ফয়সাল ভাইয়া কে। আর বলল, তর্ক করছিস আমার সাথে। শুনতে চাস কি হয় ও আমার? কেনো ওর প্রতি আমার এতো প্রায়োরিটি বেশি থাকে? তাহলে শুন, শি ইজ মাই ফিয়ন্সি। আর সেটা এখনকার নয় যখন রাত্রি ছোট ছিলো ঠিক সেই সময় থেকে। ওকে আমি ভালোবাসি। তাই ওর প্রতি প্রতিটা পদক্ষেপে আমি সিরিয়াস থাকি। এই জন্যই ওর প্রতি আমার এতো দায়িত্ব শীলতা। আরও কিছু শুনা বাকী আছে। ধমক দিয়ে বলল ফয়সাল কে।”

“আমি আর ফয়সাল ভাইয়া দুজনেই যেনো আকাশ থেকে পড়লাম। কি বললো ওনি আমার মাথা তো এখন চুড়কির মতো ঘুড়ছে।”

“ফয়সাল ভাইয়া বলল, তুমি এসব কি বলছো ভাইয়া। আর ছোট বেলায় কি না কি হয়েছে এসব তুমি এখনো মাথায় রেখেছো। ”

“হুম রেখেছি। কারন আমার ইচ্ছেতেই ওকে আম্মু আমার বউ হিসেবে সেই ছোট বেলা থেকেই ঠিক করেছে। একমাত্র রাত্রি বাদে সেটা সবার জানা। আমিই নিষেধ করেছি সবাইকে ওকে সব কিছু বলতে। কারন আমি চেয়েছিলাম যেনো রাত্রি নিজের বুঝ টুকু বুঝে উঠুক। লেখাপড়া শেষ করুক। আমার প্রতি রাত্রির অনুভূতি জন্ম নেওয়ার জন্য আমি ওকে এতোদিন সময় দিয়ে এসেছি। দীর্ঘ ১৮ বছর অপেক্ষা করে আছি৷ আর তুই আজকে সব মাটি করে দিলি।আমার ভাই ভাবতেও অবাক হচ্ছি তোকে। আর তুই ৪ বছরের ভালোবাসা দেখাতে এসেছিস। এই নিয়ে যেনো নেক্সট এ আর কোনো কিছু না শুনি আমি। আজ ছাদে যা হয়েছে সেটা যেনো কারও কান অব্দি না পৌঁছাতে পারে। যদি শুনেছি আমি তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেও হবেনা। নাও গো। যা গিয়ে ঘুমা। ফয়সাল ভাইয়া দাঁত চেপে সব কথা হজম করে চলে গেলো।”

“আমি নিঃশব্দে কান্না করছি। অবাক যেমন হয়েছি ভয় ও পাচ্ছি। আবির ভাইয়ার এমন রাগ আমি কোনোদিন দেখিনি। ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক নয় কি। আর আজকে ক্লিয়ার হয়ে আমার জট পাকানো প্রশ্ন গুলো৷ কেনো আবির ভাইয়া আমাকে এতো দেখা শুনা কর‍তো কেয়ার করতো। কেনো রাত ভাইয়া বাকিরা কিছু বলতোনা। সব কিছু পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো। ”

“আবির ভাইয়া আমার সামনে এসে দাঁড়ালো আর বলল, উপরে তাকাও।”

“আমি নিশ্চুপ।”

“রাত্রি উপরে তাকাতে বলেছি ফাস্ট উপরে তাকাও। হালকা ধমক দিয়ে বলল।”

“কেঁপে উঠলাম আমি সাথে সাথে উপরে তাকালাম। আবির ভাইয়ার ওই নেশাক্ত চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে থমকে গেলাম। আবির ভাইয়া ও আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর ওনি হুট করেই আমাকে শক্ত করে তার বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলেন। আমিও বিড়ালের বাচ্চার মতো গুটি শুটি হয়ে আবির ভাইয়ার বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে আছি।”

“বড় বড় নিশ্বাস ফেলছেন ওনি। ওনার হৃদপিন্ডের ধুকপুকানির শব্দ আমি গভীরভাবে মস্তিষ্কে শ্রবণ করছি। ভয় টা যেনো মুহুর্তের মধ্যেই হারিয়ে গেলো। যেনো একটা প্রশান্তির যায়গায় শুয়ে আছি। মানুষটা আমাকে ভালোবাসে ভাবতেই শরীরে শীহরন বয়ে যাচ্ছে। বার বার কানে প্রতিধ্বনি হচ্ছে রাত্রিকে আমি ভালোবাসি। শি ইজ মাই ফিয়ন্সি। ভাবতেই লজ্জা লাগছে খুব। একটু আগে যে এতো গুলো কাহিনি হয়ে গেলো সেটা যেনো আমি ভুলেই গেলাম।”

“আবির ভাইয়া বেশ খানিক্ষন পর আমাকে বলল, সরি মাই কুইন। ভয় পেয়েছো অনেক তাই না! আমি সত্যি সরি চেয়ে নিচ্ছি। ফয়সাল এর কথা শুনে আর ওকে তোমার সাথে এতো ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে মাথা ঠিক ছিলোনা। তাই রেগে গিয়েছিলাম। আর যা যা শুনেছো তার কোনো টাই মিথ্যে নয় সব সত্যি। এতোদিন সবাই লুকিয়েছি তোমার থেকে কথা গুলো৷ প্লীজ ক্ষমা করে দিয়ো। আর কিছু লুকাবোনা মাই পিচ্চি কুইন। খুব ভালোবাসি তোমায়। সেই ছোট বেলা থেকে তোমায় আমি নিজের বউ হিসেবে মেনে এসেছি। যখন তোমার জন্ম হয়েছিলো আমি আম্মু আভা তোমাকে দেখতে গিয়েছিলাম। সেদিনই আমি আম্মু কে বলেছিলাম যে বড় হলে আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। কিন্তু সেদিন ওরা হেসে কথা টা ফেলে দিয়েছিলো। আস্তে আস্তে যখন তোমার ৫ বছর হয় তখনও আমি প্রতিদিন আম্মুকে বলতাম এই লিটল কুইন কে আমি বিয়ে করবো। আমার এই কুইন টা কে সব সময় চাই। হ্যাঁ সেদিনই সবাই বসে কথা বলেছিলো। আর কথা দিয়েছিলো সবাই আমাকে যে, আমার বউ হবে তুমি। আমার খুশির শেষ ছিলোনা সে দিন। সে সময় বিয়ে কি বউ কি যদিও বুঝতাম না তাও আমার বায়না ছিলো যে আমার তোমাকেই লাগবে৷ ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলাম তোমার প্রতি ভালোলাগা ভালোবাসা টুকু বাড়তে লাগলো বুঝে গেলাম যে ভালোবাসা কি। আমার যে তোমায় ছাড়া চলেনা। তোমার পড়াশুনার ক্ষতি হবে ভেবে কিছু এই পর্যন্ত বলা হয়নি। কিছুক্ষন থেমে বলল, চুপ করে আছো কেনো আর কেঁদোনা। কথা বলো, তুমি কি এই পাগল টাকে ভালোবাসবে পাগলি। সারা জীবন থাকবে আমার পাশে। খুব ভালোবেসে আমার পিঞ্জরে আগলে রাখবো। কি বলো থাকবে আমার পাশে।”

“হুহ আসছে বলতে তুমি কি আমায় ভালোবাসবে। ভেঙিয়ে মনে মনে বলতে লাগলাম। দাঁড়ান আমার থেকে এতোকিছু আড়াল করেছেন। আর আমি যে ভিতরে ভিতরে আপনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি আমার কি কষ্ট হয়নি। সুযোগ পেয়েছি। এবার আপনাকে জ্বালাবো কষ্ট দিবো। চট করে মাথা উচু করে বললাম, সরি আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারবোনা। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি অনেক আগে থেকেই। আমি তাকেই বিয়ে করবো। ছোট বেলায় কি হয়েছে সেটা ভুলে যান। আমার তো ইচ্ছে অনিচ্ছে আছে নাকি। আমাকে ক্ষমা করবেন।”

“আবির ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে থমকে দাঁড়ালো আর বলল, র রাত্রি ত তুমি এসব কি বলছো। তুমি এমন টা বলতে পারোনা। আর কাকে ভালোবাসো তুমি ফয়সাল কে? নাকি অন্য কাউকে। ”

“আপনাকে কেনো বলবো। কে আপনি।”

“পেঁচার মতো মুখটা মলিন করে মাথা টা নিচু করে আছে। আবির ভাইয়ার চোখ দুটো টলমল করছে। যেনো এক্ষুনি স্রোতদ্বারা গুলো বর্ষন করবে। তার এই চোখের জল যেনো আমার সহ্য হলোনা। আমি ঝাপটে ধরলাম আবির ভাইয়া কে। পেছন এ হাত দুটো নিয়ে টি-শার্ট টা আকড়ে ধরে বললাম, ভালোবাসি তো আপনাকে। আমিও খুব ভালোবাসি৷ যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই আপনাকে ভালো লাগতো ভাইয়ার বন্ধু বলে বলার সাহস হয়ে উঠেনি। ইভা যখন কথা বলত আপনাকে নিয়ে হিংসে হতো সত্যি। কিছুক্ষন আগেও হিংসে হয়েছে। সত্যি আমি জেলাস ফিল করতাম। কিন্তু এখন বুঝতে পারলাম যে আমি আপনাকে ভালোবাসি ভাইয়া। খুব ভালোবাসি। আপনি চোখের পানি ফেলবেন না প্লীজ। ছেলেরা কাদে নাকি। হুতুম পেচার মতো লাগছে তো আপনাকে।”

“অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেলো আবির ভাইয়া। আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, এই পাগলি কেনো খানিক সময়ের জন্য আমাকে ভয় পাইয়ে দিলে বলো। জানো এই এক মুহুর্ত আমার কাছে মনে হয়েছে আমি অন্ধকার জগতে চলে গিয়েছি। আর এমন করবেনা বলো। প্রমিস করো কোত্থাও যাবেনা আমাকে ছেড়ে।”

“প্রমিস করছি কোথাও যাবোনা। আপনার কুইন আপনার কাছেই থাকবে। কুইন কি কিং কে ছাড়া থাকতে পারবে নাকি হুম।”

“না একদম পারবেনা সত্যিই তো। তারপর আমার ললাটে তার অধর ছোয়ালো৷ আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। তারপর আবারও জড়িয়ে ধরে বলল, খুব শিঘ্রই তোমাকে বউ করে নিয়ে আসবো পাগলি। আমি চাইছি তোমার এইচ এস সি পরিক্ষা টা শেষ হওয়ার জন্য। নইলে যে তুমি তোমার লক্ষ্য থেকে সরে যাবে।”

“না পারবোনা এতোদিন অপেক্ষা করতে। আমি বিয়ের পরেই না হয় পরিক্ষা দিবো। মন খারাপ করে বললাম।”

“এতো বছর অপেক্ষা করতে পেরেছি আর ১ টা বছর পারবেনা তুমি। ”

“না পারবোনা। বলেই শক্ত করলাম হাতের বাধন।”

“উম উম ভালোবাসা, আদর পাওয়ার প্রবণতা বেশি বেরে গেছে বুঝি। তাহলে চলো এখনই একটু আদর করে দেই। ”

“ছিঃএসব কি কথা বলছেন। মুখে লাগাম দিন। নইতো টেপ লাগিয়ে দিবো।”

“শব্দহীন হেসে বলল, পাগলি। চলো রাত হয়ে গেছে অনেক ২ঃ৪৫ বেজে গেছে ঘুমাবে চলো। রায়াফ রুমে এতোক্ষন একা রয়েছে যদি ভয় পায়।”

“রায়াফ এর কথা শুনে সটান হয়ে গেলাম। সত্যিই তো ভাইটা আমার অন্য বাড়িতে একা এতো বড় রুমে ঘুমাচ্ছে ভয় পাবে তো। আচ্ছা চলুন চলুন ভাইয়া। আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন নইতো সত্যি সত্যি ও ভয় পাবে।”

“এক মিনিট ভাইয়া বললে কেনো। হবু স্বামীকে কেউ কি ভাইয়া বলে।”

“আচ্ছা সরি চলুন আর ঢং করতে হবেনা। ”

“তাহলে একটু আদর করে যাও। নইতো যাবোনা।”

“জমিয়ে রাখি বিয়ের পর দিয়ে দিবো। চলুন তো।”

“তারপর আমি গিয়ে ইভার পাশে শুয়ে পড়লাম। আবির ভাইয়া মুচকি হাসতে হাসতে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লক করে রায়াফ এর পাশে শুয়ে পড়লো। রায়াফ কে জড়িয়ে ধরে ঘুমালো।”

“ওইদিকে ফয়সাল অন্য রুমে বসে আছে। তার চোখে ঘুম নেই। চোখের পাতা গুলো যেনো আজ বড্ড অস্থির হয়ে আছে৷ হইতো ওর ভালোবাসা টাও সত্যি ছিলো। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস। আমরা যে চাইলেই সব কিছু পেতে পারিনা। বাচ্চাদের মতো আজ ফয়সাল কান্না করছে আর বলছে। ভালোবাসি রাত্রি আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি। প্লীজ ফিরে এসো আমার কাছে। একবার বলো আমাকে ভালোবাসো। আমি সব বাধা ভেঙ্গে দিবো। প্লীজ কাম ব্যাক। কথা গুলো বলছে আর চোখের পানি ফেলছে। নেশাক্ত কিছু থাকলে হইতো এখন সেটাও খেতো ফয়সাল। কিন্তু সে টা কাছে নেই। ভালোবাসা যদি সত্যি হয় ভালোবাসার মানুষ টার প্রতি। তাকে হারানো যে কতোটা বেদনা দায়ক সেটা একমাত্র সেই জানে যে হারিয়েছে। ”

#চলবে

বক্ষ পিঞ্জর পর্ব-১১+১২

0

#বক্ষ পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#পর্বঃ১১+১২

“স্টেজের কাছে গিয়ে রাত ভাইয়া আভা আপুর সাথে ছবি তুলে নিলাম। তারপর এখানেই বসে আছি। কিছুক্ষন পর আমার খালাতো বোন ইভা এসে বলল, আপু একটু ওইদিকে চলো না কথা আছে তোমার সাথে।”

“কেন কি কথা! কি বলবি এমন যে ওইদিকে যেতে হবে। ব্রু কুচকে বললাম। ”

“আরে আপু প্লীজ চলোনা।”

“আচ্ছা চল। তারপর ওর সাথে সেন্টার এরকটা বেলকনি আছে ওইদিকে গেলাম। ও আমার ছোট, ক্লাস নাইনে পড়ে। ”

“বল এখন কি বলবি।”

“আসলে আপু আমি বলছিলাম কি আবির ভাইয়া আছেনা ওনাকে আমার অনেক ভালো লাগে। বলেই লজ্জা রাঙা মুখ টা নিচু করে ফেললো ইভা। ”

“কীহ! কি বললি তুই। তোর কি মাথা ঠিক আছে রে।খালামনি তোকে কি খাইয়ে বড় করেছে রে। পিচ্চি একটা মেয়ে কিসব বলছিস।”

“আ আপু প্লীজ সেটিং করিয়ে দাওনা। আমি ওনার সাথে প্রেম করতে চাই”

“ওর এই কথা শুনে আমি তাজ্জব বনে গেলাম। পাশা পাশি হিংসেও হচ্ছে। মুখ টা মলিন হয়ে গেলো তাও রেগে ইভা কে বললাম, আর একবার ওই আবির টাবির কে নিয়া কথা বলবি তোর খবর আছে। বলেই হন হন করে সেখান থেকে চলে আসলাম।”

“হেই রাত্রি কোথায় যাচ্ছো। পেছন থেকে ফয়সাল বলল।”

“শুশুর বাড়ি যাচ্ছি যাবেন। চলেন বউ সাজিয়ে নিয়ে চলি আমার সাথে। দাঁতে দাঁত চেপে বললাম।”

“ফয়সাল এর কাশি উঠে গেলো। আর বলল, এই মেয়ে কী বলছো এসব। আর তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি রেগে আছো। কি হয়েছে জানতে পারি। আর কি বললে বউ সাজিয়ে আমাকে নিয়ে যাবে। তা তো হচ্ছেনা আমি জামাই সাজবো আর তুমি বউ তারপর আমার বাড়ি নিয়ে যাবো তোমাকে কি বলো। এমনিতেও আজকে তোমাকে বউ এর চেয়ে কোনো অংশে কম লাগছেনা। আমার তাতেই হবে তুমি কি বলো।”

“ঘোড়ার ডিম করবেন আপনি সরেন এখান থেকে।একদম পিছু পিছু আসবেন না। নাক ফা’টিয়ে দিবো একদম। বলেই চলে আসলাম একটা কর্ণারে। এসে চুপ করে বসে গেলাম।”

“যাক বাবা চলে গেলো এই মেয়ের এতো রাগ কেনো। ব্রু কুচকে ফেললো ফয়সাল তারপর ও অন্যদিকে চলে গেলো।”

“কিছুক্ষন বসে থাকার পর আবির ভাইয়া এলো সেখানে। আর বলল, কি ব্যাপার একা এভাবে এখানে বসে আছো কেনো। ”

“নিশ্চুপ রাত্রি।”

“কি হয়েছে মুখটা ভার করে রেখেছো কেনো। বলো কি হয়েছে।”

“কিছু হয়নি। এই এই আপনাকে কে বলেছে এতো সুন্দর হতে হ্যাঁ। খুব ভালো লাগে তাই না জামাইর মতো সং সেজে থাকতে। মেয়েদের কে নিজের স্মার্টনেস টা দেখাতে খুব ভালো লাগে তাই না। এক নাগারে কথা গুলো বলে ফেললাম।”

“কি বললে। ব্রু কুচকে বলল আবির ভাইয়া। ”

“যখন বুঝতে পারলাম আমি কি বলে ফেলেছি রেগে তখন যেনো লজ্জায় ম’রে যেতে ইচ্ছে করছে৷ আমতা আমতা করে বললাম ক কই কি বলেছি কিছু বলিনি তো। ”

“আর ইউ সিউর কিছু বলোনি। ”

“হুম হুম কিছু বলিনি। আমি যাচ্ছি আমি থাকুন। বলেই উঠে দাঁড়ালাম। অমনি আবির ভাইয়া হাতে টান দিয়ে ধরলো।”

“আর বলল, কি হয়েছে চলে যাচ্ছো কেনো। আমি কিছু জিজ্ঞাসা করেছি উত্তর দিয়ে যাও। রেগে আছো কেনো? কি হয়েছে, কেও কি কিছু বলেছে? আর আমাকে ওই কথা গুলো বললে কেনো।”

“না কেও কিছু বলিনি। আমি রেগে নেই। আর আমি আবার আপনাকে কি বললাম। হইতো এমনি কিছু বলে ফেলেছি। খেয়াল করিনি কি বলেছি। সরি! ”

“স্টপ লায়ার। আজকাল মিথ্যে বলাও শিখে গেছো দেখছি।”

“কই কি মিথ্যে বলেছি।”

“তাহলে বলছোনা কেনো কি হয়েছে। ”

“কিছু হয়নি বললাম তো।”

“আবার!”

“ভয় পেলাম কিছুটা তারপর ক্ষীন সুরে ইভার বলা কথা গুলো বললাম। এসব শুনে আবির ভাইয়া যেনো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। কিন্তু তাও সেটা নিঃশব্দে হাসি। ”

“কি ব্যাপার এতে হাসির কি হলো এভাবে ঠোঁট চেপে হাসছেন কেনো।”

“এই জন্য তুমি রেগে আছো? ”

“না আমি রেগে নেই। আমি রাগবো কেনো।”

“তারপর আবির ভাইয়া আমাকে হাতে টান দিয়ে আর একটু কাছে নিয়ে গেলো তার। আর বলল, জেলাস ফিল করছো বুঝি?”

“এভাবে কাছে টেনে নেওয়ায় কিছুটা নার্ভাস হয়ে গেলাম আমি। আর বললাম, জেলাস ফিল হবে কেনো। আমি কি আপনার প্রেমিকা নাকি যে আমার জেলাস ফিল হবে।”

“হতেও পারো সমস্যা কি।”

“মানে!”

“মানে কিছুনা। ইভা ছোট মানুষ কি বলতে কি বলে ফেলেছে তাই নিয়ে তুমি এতো ভেবে মুড স্লাং করো কেনো।”

“আমি মোটের মুড স্লাং করিনি। দেখি ছাড়ুন হাত। মানা করেছি না এভাবে হুটহাট করে হাতে ধরবেন না।”

“তাতে কার কি সমস্যা আমি কি কাওকে ভয় পাই নাকি যে তার ভয়ে গুটিয়ে থাকবো। আর হ্যাঁ আমার আর রাতের বন্ধু বান্দব আছে এখানে। তাদের সাথে বেশি কথা বলার প্রয়োজন নেই। দূরে থাকবে তাদের থেকে। চুপ চাপ গিয়ে বোনদের সাথে বসে থাকো একটু পরে খেতে চলে যেও আমি আছি এখানেই।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। আমি জানি তো ভাইয়া যে আপনাকে এসব বলে দিয়েছে। তাইতো সিসি ক্যামেরার মতো চোখ দুটো আমার দিকে দিয়ে রাখছেন।”

“মোটেও রাত কিছু বলে দেয়নি। আমার প্রোপার্টি কিভাবে আগলে রাখতে হয় সেটা আমি খুব ভালো করে জানি। এর জন্য কারও রুলস নেওয়ার প্রয়োজন হয়না আমার।”

“আপনার প্রোপার্টি মানে কি বলতেছেন কিছু বুঝলাম না।”

“তোমাকে বুঝতে হবেনা যাও। ”

“একটা কথা বলবো ভাইয়া।”

“কি বলো৷ শুনার অনেকটা আগ্রহ নিয়ে তাকালো।”

“ওইদিন ট্যুর এ যাওয়ার সময় যখন আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন সেদিন ভাইয়া আপনাকে কিছু বলেনি কেনো?”

“কি বলবে। আমি কি খারাপ কিছু করেছি নাকি যে আমায় কিছু বলবে। আর জড়িয়ে ধরেছি সেটা তো তোমার শরীরের কন্ডিশন দেখেই ধরেছি। এখানে রাতের কি বলার থাকতে পারে।”

“ওনার কথার আগা গুড়া কিছু বুঝিনা আমি তাও বললাম ওহ আচ্ছা আসি তাহলে। বলেই অন্য দিকে চলে এলাম।”

“পাগলি মেয়ে আর একটা বছর অপেক্ষা করো সব কিছু জানতে পারবে৷ বলেই আবির চলে গেলো অন্য দিকে। ”

“কিছুক্ষন পর খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবারও স্টেজে চলে আসলাম এখন বিয়ে পড়ানোর পালা। ফয়সাল ভাইয়া আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল, বিয়েটা আমরাও সেরে ফেলি কি বলো।”

“রেগে তাকালাম তার দিকে। ফয়সাল ভাইয়া বলল, সরি। এভাবে তাকাও কেনো ভয় পাই তো।”

“বিয়ে করবেন না চলেন বিয়ে করিয়ে দেই একিটা ভিক্ষুক ডেকে এনে।”

“হুয়াট! আমি ভিক্ষুক কে বিয়ে করবো।”

“জি করবেন। কেনো কোনো সমস্যা।”

“অপমান করছো কিন্তু।”

“হ্যাঁ করছি তো কি করবেন।”

“কি আর করবো তোমাকে বিয়ে করবো।”

“আবারও এক কথা এবার কিন্তু খুব খারাপ হবে। ”

“তারপর আর কথা বলেনি ফয়সাল ভাইয়া। বিয়ে পড়ানো শেষে আমরা ভাইয়া আর ভাবিকে নিয়ে মানে আভা আপুকে নিয়ে আমাদের বাসায় চলে এলাম। এখন থেকে তো আমার ভাবি তাইনা। আর আপু ডাকা যাবেনা। গাড়িতে আমি রায়াফ আভা আপু আর ভাইয়া পেছন সিটে বসেছি। ইচ্ছে না থাকা সত্বেও আভা আপু জোর করে পেছনে বসালো। পুরো রাস্তা রায়াফ আভা আপুর সাথে হাসা হাসি করতে করতে এলো। ”

“রাতে আমি আমার কাজিন গুলোকে নিয়ে ভাইয়ার বাসর ঘর সাজাতে গেলাম। সাজানো শেষে আভা আপুকে রুমে বসিয়ে বাইরে আমরা এসে দাঁড়িয়ে রইলাম। ভিতরে রায়াফ ও আভা আপুর সাথে বসে আছে।”

“কিছুক্ষন পর বড় খালার বড় ছেলের বউ মানে আমার আরেক ভাইয়ার বউ এসে ভাইয়া কে দরজায় দাঁড় করালো। সব কাজিনরা চেচামেচি শুরু করলো টাকা না দিলে দরজা খুলে দিবেনা। রাত ভাইয়া ধমক দিলো, তোরা সরবি নাকি মা’ইর খাবি কোনটা।”

“তাও কেও ভয় পেলোনা। কিন্তু আমি সরে এলাম সেখান থেকে। ভাইয়া না পেরে আমাকে ডাক দিলো আর আমার হাতে আর ইভার হাতে ১৫,০০০ টাকা দিয়ে বলল নে সবাই মিলে নিয়ে নিবি। সবাই খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। দরজা খুলে দিলে ভাইয়া ভিতরে চলে গেলো। ”

“ভিতরে গিয়ে ভাইয়া বলল, কিরে তুই এখানে। ”

“রায়াফ বলল, ভাইয়া বলেছিলাম না আভা আপুকে না মানে থুক্কু সরি ভাবি কে আমাদের বাসায় একবারে নিয়ে আসবো আমার সাথে খেলার জন্য। তাই আমি এখানে আমি খেলবো ভাবির সাথে আর তুমি অন্য রুমে গিয়ে ঘুমাও যাও তো। ”

“দাঁড়া তোর হচ্ছে আজ। বলেই রায়াফ কে মারতে গেলো রাত ভাইয়া। ”

“রায়াফ ভয়ে ভাবির পেছনে লুকিয়ে গেলো আর বলল, দেখেছো ভাবি তোমার সামনে আমাকে মারতে আসছে।”

“আভা আপু মানে ভাবি রাত ভাইয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা দিলো। তারপর ভাইয়া আর কিছু বলেনি। তারপর সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। ”

“আমি আমার রুমে আসতেই সেই নাম্বার টা থেকে মেসেজ আসলো, এখনো জেগে আছো জানি। কিন্তু জেগে থাকা যাবেনা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো।”

“মাথা টা গরম হয়ে গেলো এই মেসেজ দেখে। তাই রিপ্লাই দিলাম, তোর কি আমি জেগে থাকলে বা’… মার্কা কথা বলতে আসছে। চিনিনা জানিনা যত্তসব। মেসেজ টা লিখেই ঘুমিয়ে পড়লাম।”

“এভাবে ২ দিন কেটে গেলো। মেহমান রা চলে গেছে অনেকেই। শুধু ইভা আর তার আম্মু মানে আমার ছোট খালা মনি আছে বাকি সবাই হাওয়া হয়ে গেছে। দুইদিন পর রাত ভাইয়া আভা ভাবি তাদের বাসায় যাবে তাই ওদের বাসা থেকে লোকজন এসেছে। আব্বু বলেছিলো এই অনুষ্ঠান টাও সেন্টার এ করবে। কিন্তু দুলাল আংকেল মানা করেছেন। মানে আবির ভাইয়ার আব্বু মানা করে দিয়েছেন। তাই বাসায় অনুষ্ঠান টা হচ্ছে। ”

“বিকাল বেলা তারা যাওয়ার জন্য তৈরি হলো, সাথে আমি ইভা রায়াফ ও রেডি হয়েছি। রাত ভাইয়া বলেছে নিয়ে যাবে তাই রেডি হইলাম। ”

“রাতে আবির ভাইয়া দের বাসার ছাদে মজলিস করা হলো। সারা রাত নাকি এখানে সবাই আড্ডা দিবে। রাত ভাইয়া বলল, একদম এসব করা যাবেনা সব কয়টা গিয়ে ঘুমাবি যা।”

“রাত থাক না সব সময় তো ওরা পড়াশুনা করে । আজ না হয় আড্ডা দিক। আবির ভাইয়া রাত ভাইয়া কে বলল। ”

“রাত ১১ টা আভা ভাবি আর রাত ভাইয়া ঘুমাতে চলে গেলো আভা ভাবির রুমে। আমি ফয়সাল ভাইয়া আবির ভাইয়া রায়াফ ইভা ফারিয়া আপু আর আছে আবির ভাইয়ার ফুপাতো ভাইবোন রা। সবাই মিলে ছাদের একটা কোণে বসে পড়েছি। ভাবছেন কোথায় বসেছি। হ্যাঁ এখানে একটা বসার যায়গা করা আছে উপরে টিনের ছাদের মতো দেওয়া আর পাশে কিছু নেই নিচে সোফার মতো করে সিমেন্ট দিয়ে বানানো। সবাই এখানে বসে আছি। রায়াফ আমার কুলে মাথা রেখে শুয়ে পড়েছে। ”

“আচ্ছা আপু আমার মাথা টা একটু ম্যাসেজ করে দাওনা। রায়াফ এর কথায় এখানের সবাই হেসে দিলো। ”

“আমি রায়াফ এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলাম।”

“ফয়সাল ভাইয়া বলল, আমরা এখন খেলবো। বেশি বড় খেলা না ছোট খেলাই হবে। সবাই হাসতে হাসতে লাগলো।”

“হাসি থামাও সবাই গেইম হলো এক এক করে দবাই গান গাইবে। কেও নাচতে চাইলে বলবা আমি স্পিকার এনে গান বাজিয়ে দিবো।”

“আমি আমি নাচবো। রায়াফ বলল।”

“একদম মা’ইর দিবো চুপ করে বস এখানে। আমি রায়াফ কে বললাম। রায়াফ দমে গেলো।”

“আবির ভাইয়া তার গিটার টা নিয়ে এসে ফয়সাল ভায়া কে দিলো। এক এক করে সবাই গান গাইতে শুরু করলো। ৫ম টাইম আবির ভাইয়ার পালা এলো গান গাওয়ার। ওনি গান শুরু করলেন। ”

*তুমি না ডাকলে আসবোনা
কাছে না এসে ভালোবাসবোনা।

দূরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়
নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়।

দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরনো।

ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।

ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।

এটা কি ছেলে খেলা
আমার এই সপ্ন নিয়ে,
চাইলে ভেঙ্গে দেবে গুড়ে দেবে ইচ্ছে হলে।

আমি গোপনে ভালোবেসেছি
বাড়ি ফেরা পিছিয়েছি
তোমায় নিয়ে যাবো বলে।

এক বার এসে দেখো
এসে বুকে মাথা রেখো
ভুলে দেবো ছুয়ে রেখে হাত।

দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরনো।

ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।

ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।

পূরন ও হতে হতে তোমাকেই দেখার আশায়
শেষ ছবিটা দেখে বারে বারে আর দেখি।

আমি গোপনে ভালোবেসেছি
বাড়ি ফেরা পিছিয়েছি
তোমায় নিয়ে যাবো বলে।

একবার এসে দেখো
এসে বুকে মাথা রেখো
ভুলে দেবো ছুয়ে রেখে হাত।

দূরের আকাশ নীক থেকে লাল
গল্পটা পুরনো।

ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।

ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।

ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।

ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।

“সবাই একসাথে হাত তালি দিয়ে উঠলো। কিন্তু আমি যে এখানে আছি সেটাই যেনো আমি ভুলে গেলাম। গান গাওয়ার পুরোটা সময় আমি আবির ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আবির ভাইয়াও এক মিনিট এর জন্য আমার থেকে চোখ সরায় নাই। এটা আর কেও খেয়াল করলো কিনা জানিনা তবে ফরসাল ভাইয়া ঠিকি দেখেছে। ”

“আপু চুপ করে আছো কেনো। রায়াফ এর কথায় হুশে ফিরলাম। হুম হুম বল কি হয়েছে। ”

“ভাইয়া এতো সুন্দর একটা গান গাইলো আর তুমি চুপ করে আছো।হাত তালি দাও।”

“রায়াফ কে এক হাতে আকড়ে ধরে বললাম। ভাই শুন শুধু যে হাত তালি দিয়ে কারও প্রশংসা করতে হয় সেটা বড় কথা নয়। তার গানের প্রশংসা নিশ্চুপ থেকেও করা যায় সেটা তুই বুঝবিনা। এভাবে প্রশংসা করার চেয়ে তার গানের অর্থ গুলো ভাষাগুলো উপলব্দি করতে পারা টায় হলো বেস্ট আমি মনে করি। সবার কথা আমি জানিনা। আর যদি বলতেই হয় তাহলে বলছি খুব সুন্দর হয়েছে। ”

“আবির ভাইয়া যেনো ঠোঁট চওড়া করে শব্দ ছাড়া হাসলো। তার হাসিটা দেখে মনে হচ্ছে সে যেনো খুব বড় কিছু শুনে ফেলেছে খুবই আনন্দময় সেই হাসি।”

“এবার রাত্রি গান গাইবে ফয়সাল বলল।”

“সরি ভাইয়া আমি গান জানিনা। মাফ করবেন প্লীজ।”

“মুহূর্তের মধ্যেই যায়গা টা নিরব হয়ে গেলো। রায়াফ বলল, আচ্ছা আপু আসলেই গান পারেনা। ডিসকোয়ালিফাই আপু। ”

“আবির ভাইয়া বলল, আচ্ছা ফয়সাল থাক না বাদ দে। তুই শুরু কর। ”

“ফয়সাল ভাইয়া গান শুরু করলো।…

#চলবে

বক্ষ পিঞ্জর পর্ব-০৯+১০

0

#বক্ষ পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#পর্বঃ৯+১০

“খাওয়া দাওয়া শেষে আবির ভাইয়া চলে গেলো অফিসে।”

“রাত ১১ টাই আব্বু আর রাত ভাইয়া বাসায় ফিরলো। ভাইয়া এসেই আমাকে জিজ্ঞাসা করা শুরু করলো এক্সাম কেমন হলো? ঠিক ভাবে বাসায় এসেছি কিনা। খেয়েছি কিনা। আমার একটাই উত্তর হ্যাঁ। ”

“৪ দিন পর এক্সাম শেষ তাই কলেজ বন্ধ দিয়েছে ৬ দিনের। তাই আমি আজ সোমবার দিনেও বাসায় রয়ে গেলাম। আব্বু ভাইয়া অফিস এ যাইনি আজ।কিন্তু কেনো যাইনি সেটা আমি জানিনা। তো ওইদিন ১১ টার দিকে রায়াফ টিভিতে কার্টুন এর পরে গান ছেড়ে দিলো। মে বি ভুলে চ্যানেল চলে এসেছে ও গান বাজানোর ছেলে না। তাই আমি গানের তালে তালে নাচতে নাচতে রুম থেকে বের হলাম। নাচতেই আছি আমি, আমার চারদিকে কি হচ্ছে না হচ্ছে। তার খেয়াল নেই। আমি আমার মতো হেলেদুলে গুনগুন করছি আর নাচছি। যখন লিভিং রুমে দাঁড়িয়ে নাচছিলাম হটাৎ চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে সোফায় বসে থাকা অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটিকে কে দেখে আমি রীতি মতো অবাক হয়ে গেলাম। হ্যাঁ সে আর কেও নয় আমাদের আবির ভাইয়া। আমি আর এক মুহূর্ত ও সেখানে দাঁড়ালাম না। এক দৌড়ে রুমে এসে হাঁপাতে থাকলাম দরজা লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে বিছানায় ধপাশ করে শুয়ে পরলাম। ”

“১০ মিনিট পর আম্মু ডাক দিলো। কিরে রাত্রি এদিকে আই তোর ভাইয়া ডাকছে।”

“আসছি আম্মু। বলেই তাড়াতাড়ি লিভিং রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি আভা আপু আবির ভাইয়া রাত ভাইয়া বসে আছে। হুম ভাইয়া ডাকছিলে তুমি আমায়।”

“হ্যাঁ দ্রুত রেডি হয়ে নে। আমার দিকে তাকিয়ে খুব তাড়া দিয়ে বলল রাত ভাইয়া।”

“কিন্তু কেনো কোথায় যাবো এই সময়ে। ব্রু কুচকে ঝুকে বললাম।”

“শপিং এ যাবি। আভা আর রাত এর বিয়ের শপিং হবে আজ। তাই তোরা যাবি। রায়াফ ও যাবে। আম্মু বলল।”

“আমি গিয়ে কি করবো আম্মু থাক না। ”

“তোকে এতো কথা বলতে বলেছে কে হুম! যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। গো ফাস্ট। ধমক দিয়ে বলল রাত ভাইয়া। এটা কি মানা যায়। সবার সামনে ধমক দিলো যে ! আমার কি একটু সম্মান বোধ আছেনা নাকি! ”

“আর কথা না বাড়িয়ে রুমে এসে চট করে ফ্রেশ হয়ে একটা রেড কালার গাউন পড়ে নিলাম। চুল গুলো ছেড়ে দিলাম। ব্যস! হয়ে গেলো আমার সাজগুজ। স্নো পাউডার লিপস্টিক কাজল এসব আমার ভালো লাগেনা একদম। তারপর উড়না টা মাথায় দিয়ে গায়ে দিলাম। লিভিং রুমে এসে দাঁড়িয়ে গেলাম তারপর আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলাম শপিং এর উদ্দেশ্যে। ”

“একটা দোকানে গিয়ে সবাই বসলাম। আভা আপু দোকানী কে বলল, লেহেঙ্গা দেখাতে + শাড়ি। তারপর লোকটা অনেক ক্যাটালক দেখালো সেখান থেকে ৫ টা লেহেঙ্গা আর ৩ টা শাড়ি বের করা হলো। এই রাত্রি দেখো তোমার কাছে কোনটা ভালো লাগে। আভা আপ্য বলল।”

“আপু তোমার চয়েজ বেস্ট। তাই তুমিই পছন্দ করো। যেহেতু এটা তোমার তাই তোমার পছন্দ টাই শ্রেয়। আর রাত ভাইয়া আছে আবির ভাইয়া আছে তাদের জিজ্ঞাসা করে নিতে পারো। ”

“তারপর আভা আপুর পছন্দ অনুযায়ী হ’ট মেরুন কালার লেহেঙ্গা নিলো বিয়ের জন্য আর রিসেপশন এর জন্য শাড়ি নিলো। ”

“রাত্রি এবার তোমার পালা চয়েজ করো কি নিবে। আভা আপু বলল।”

“হুম পছন্দ হলে এখান থেকেই নিয়ে নে। না হলে বল অন্য কোথাও যাই। রাত ভাইয়া বলল।”

“ভ ভাইয়া আমার কিছু লাগবেনা। আমার তো সব কিছুই আছে বাসায়। এতো কেনাকাটা করে আমি কি করবো।”

“আরে আপু নিয়ে নাও তো। দেরি করবেনা একদম তোমাদের মেয়েদের নিয়ে শপিং এ আসলেই ড্রামা কুইন এর মতো নাটক শুরু করো। রায়াফ বলল।”

“রেগে রায়াফ এর দিকে তাকিয়ে বললাম নিবোনা কিছু আমি। বাসায় যাবো এক্ষুনি নিয়ে যাও বাসায় নইলে আমি চলে যাই৷ হটাৎ রাগ কেনো হলো আমার জানা নেই। ”

“রাত্রি রায়াফ একদম সিনক্রিয়েট করবিনা এটা শপিংমল। তোদের বাসা নয় ঠিক আছে। রাত ভাইয়া গম্ভীর মুখে বলল।”

“তারপর আমি একটা হ’ট পিংক কালার এর স্টোন ওয়ার্ক এর পার্টি লেহেঙ্গা নিলাম। আর হলুদ প্রোগ্রাম এর জন্য একটা শাড়ি নিয়েছি। ২ টা গাউন নিয়েছি সিম্পল। ”

“তারপর রাত ভাইয়া আবির ভাইয়া আর রায়াফ এর কেনাকাটাও হলো। দেন আমরা জুয়েলারি শপ এ গেলাম। গোল্ড এর কিছু নেওয়া হবেনা কারন আম্মু তার বউমার জন্য আগেই কিনে নিয়েছে। তারপর আমরা ব্রাইডাল কিছু জুয়েলারি কিনে নিলাম৷ অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলো। আবির ভাইয়া বলল, রাত আমি একটু আসছি তুই ওদের নিয়ে লাস্ট ফ্লোর এ রেস্টুরেন্টে যা। বলেই আবির ভাইয়া কোথায় একটা গেলো। ”

“বিকাল ৪ঃ২৫ মিনিট বেজে গেছে। একেই বলে মেয়ে জাতি আর কি। শপিং এ গেলে কয়েক ঘন্টা তো লাগাবেই। দুপুরের সময় পেরিয়ে গেছে খুব খুদাও লেগেছে তাই আমরা আবির ভাইয়ার কথা মতো লাস্ট ফ্লোর এ রেস্টুরেন্টে গিয়ে ৬ নাম্বার টেবিল এর বসলাম। বেশ খানিক্ষন পর আবির ভাইয়া এলো। তারপর রাত ভাইয়া ওয়েটার কে ডেকে বিরিয়ানি অর্ডার দিলো। খাবার শেষে বাসায় পৌঁছে গেলাম সবাই। তারপর কিছুক্ষন রেস্ট নিলো সবাই। আভা আপুরা চলে যাবে বলছে। আবির ভাইয়া যাওয়ার আগে আমার রুমে আসলো তারপর আমার হাতে ৩ টা শপিং ব্যাগ দিয়ে বলল, সরি! নাও এগুলো তোমার জন্য। জানিনা তোমার পছন্দ হবে কিনা। ইচ্ছে হলে পড়বে নইতো রেখে দিয়ো বা ফেলে দিও তোমার ইচ্ছা। ”

“আমিতো হা করে তাকিয়ে আছি। বলে কি। আমার জন্য গিফট তাও আবির ভাইয়া দিচ্ছে৷ এটা তো মেঘ না চাইতেও বৃষ্টি এমন অবস্থা। ভেবেই মনে মনে হাসলাম। তাই ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে বললাম, ধন্যবাদ! আর হ্যাঁ বড় ভাইয়া হিসেবে ছোট বোন কে নিজ পছন্দ করে দিয়েছেন যদিও এটা খা’রাপ বা বা’জে কিছু হয় তাও এটা সুন্দর এবং ভালো আমার জন্য। কিন্তু একটা জিনিস বুঝলাম না।”

“কি?”

“আপনি যে আমায় গিফট গুলো দিলেন সেটা কি আপনার জি এফ জানে? না মানে ওনি তো জানলে রাগ করবেন তাই না। ”

“সেটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা। তারপর ক্ষীন সুরে বললেন স্টুপিড গার্ল।”

“ভাইয়া কিছু বললেন।”

“না কিছু বলিনি আসছি। ভালো থেকো আবার দেখা হবে। বলেই ভাইয়া প্রস্থান করলেন।”

“আমি আর কিছু বলার সময় পেলাম না তার আগেই হাওয়া হয়ে গেলো।”

“দেখতে দেখতে চলে এলো ভাইয়ার হলুদ সন্ধ্যা। আস্তে আস্তে বাসায় মেহমান আসা শুরু করে দিয়েছে। আমার কাজিনরা সবাই এসেছে। সবার সাথে আড্ডায় মেতে উঠেছি। ”

“দুই পরিবার এর সিদ্ধান্ত হয়েছে একই কমিউনিটি সেন্টার এ অনুষ্ঠান হবে দুজনের। তাই আমার সব কাজিনরা মিলে পার্লারে চলে গেছে। কিন্তু আমি যাইনি কারন আমি নিজেই সাজবো। পার্লার এর এতো ঘি মাখন আমি মুখে দিতে পারবোনা। তাই নিজেই সাজতে বসে গেলাম। এখন বাসায় শুধু আমি আম্মু আর খালামনি আছি। বাকিরা সবাই হইতো সেন্টারে চলে গেছে। শাড়ি পড়তে পারিনা তাই খালামনি পড়িয়ে দিয়েছে। তারপর একদম সিম্পল সাজে সজ্জিত হলাম। স্নো পাউডার আর লিপস্টিক। হাতে হলুদ শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে ব্রাইডাল চুরি পড়েছি। গলায় কানে স্টোন ওয়ার্ক জুয়েলারি সিম্পল । চুল গুলো ছেড়ে দিলাম। সাজ কমপ্লিট। তারপর লিভিং রুমে আসলাম। খালামনি আম্মু আমাকে দেখে চুমু দিলো দুইজন এ। তারপর আমরা গাড়িতে করে রওনা দিলাম সেন্টার এর উদ্দেশ্যে। ২০ মিনিট এর পথ।”

“ওইদিকে আবির, এই মেয়ে এতো কিসের সাজ গুজ করছে। দেখায় পাচ্ছিনা, ভাবা যায় কতোটা সাজতেছে। এতোক্ষন লাগে আসতে। একাধারে কথা গুলো বলেই চলেছে আবির ভাইয়া। ”

“এরই মাঝে পার্লার থেকে আগমন ঘটলো রাত্রির কাজিন এর সাথে রাত্রি বেস্টু ইতি ও আছে।আভা আপুর কাজিনরাও চলে এসেছে ইতিমধ্যে। সবাই হাসি খুশি হয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে তাদেরই বিয়ে। ”

“ওইদিকে ফয়সাল, এই রাত্রি টা আবার কই গেলো। সবাই এলো ও এখনো এলোনা যে৷ না জানি কত খানি আটা ময়দা মাখিয়ে আসছে। ”

“এরই মাঝে রাত্রি সেন্টারে প্রবেশ করলো। হুট করে রাত্রিকে কেও অন্যদিকে নিয়ে গেলো। রাত্রি চিৎকার করার আগেই বলে উঠলো, চুপ করো চিৎকার করবেনা। আমি ভূ’ত বা গু’ন্ডা মাস্তান নয় যে তোমাকে নিয়ে যাবো স্টুপিড মেয়ে। ”

“আবির ভাইয়া আপনি এভাবে এখানে নিয়ে এসেছেন কেনো আমাকে। কেও দেখলে কি ভাববে৷ কতো লোকজন এখানে দেখেছেনই তো ছাড়ুন প্লীজ।আমাকে যেতে দিন। ”

“যেতে তো দিবোই। তার আগে বলো এতো লেইট করলে কেনো। কতক্ষন যাবৎ অপেক্ষা করছিলাম খেয়াল আছে তোমার।”

“আশ্চর্য! আপনি অপেক্ষা করতে যাবেন কেনো। আচ্ছা আপনার জি এফ আসে নাই। তাকে ইনভাইট করেন নাই।”

“স্টপ ননসেন্স! সব সময় এতো জি এফ জি এফ কেনো করো হুম! ”

“রেগে যান কেনো ভুল কিছু বলেছি?”

“না তুমি একদম ভুল করতেই পারোনা। আচ্ছা সরি ফর ইউ। নাও গো টু সেন্টার স্টেজ রুম। বাই দ্যা ওয়ে। খুব সুন্দর লাগছে তোমায়। ”

“এতোক্ষনে রাত্রি আবিরকে খুব ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। হলুদ পাঞ্জাবি পরিহিত। হাতা ফোল্ড করা। হাতে ঘড়ি। চুল গুলো স্পাইক করা। বেশ হ্যান্ডসাল লাগছে আজ আবিরকে। রাত্রি নিম্ন সুরে বলল, ভাইয়া আপনাকেও খুব সুন্দর লাগছে। আপনার জি এফ আজ আপনাকে দেখলে সত্যি সত্যি হার্ট অ্যাটাক করবে। বলেই ঠোঁট চওড়া করে হাসলাম৷ তারপর সেখান থেকে চলে এলাম।”

“হুহ! আসছে বলতে জি এফ হার্ট অ্যাটাক করবে। ও যে নিজেই সেটা করেছে সেটা আমি জানিনা। যতই লুকানোর চেষ্টা করো পাখি আমার থেকে লুকাতে পারবেনা। আমি যে তোমার মনের ভাষা গুলো পড়তে পারি। আর তোমার চোখে আমার প্রতি মায়া ভরা আকর্ষণ টা যে আমি দেখতে পাই। কথা গুলো বলেই আবির ভাইয়া স্টেজ এর কাছে চলে গেলো।”

“আভা আপু আর রাত ভাইয়া কে একসাথে স্টেজে বসানো হয়েছে। খুব সুন্দর লাগছে দুজনকে। তাদের দুজনের ঠোঁটেই লেগে আছে মিষ্টি হাসি। হ্যাঁ এটা পরিপূর্ণতার হাসি। তাদের ভালোবাসা সারা জীবনের জন্য পরিপূর্ণতা পাবে কাল। তাদের তো খুশি থাকারই কথা তাই না। ”

“রায়াফ কে দেখছিনা অনেক্ষন যাবৎ। খুঁজতে খুঁজতে এসে দেখি রায়াফ আবির ভাইয়া এক কাজিন এর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। মেয়েটা ছোটই বেশি বড় না। ৭-৮ বছর হবে মনে হয়। এই ভাই তুই এখানে কি করছিস। চল আমার সাথে। ”

“আরে আপু তুমি কখন এলে। যাও আমি আসছি এক্ষুনি। দেখছোনা ভাইয়ার মতো সেটিং করার চেষ্টা করছি। দাঁত বের করে হাসলো রায়াফ।”

“ভাইয়ার থাপ্পর খাওয়ার শখ হয়েছে তাই না। তার আগে আমার টা খেয়ে নে দাঁড়া। বলেই দৌড়াতে লাগলাম রায়াফ ও ছুটতে লাগলো।”

“একটা সময় হাপিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম।”

❝হেই রাত্রি হাউ আর ইউ? ”

“পেছন ঘুরে দেখি ফয়সাল ভাইয়া। জ্বি ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ আপনি কেমন আছেন?”

“হুম ভালো তো কোথায় ছিলে এতোক্ষন। ”

“বাসা থেকে আসছি।”

“রাত্রি এইদিকে কি করছিস চল না ওইদিকে। ইতি এসে বলল।”

“হ্যাঁ হ্যাঁ চল। বলেই ইতির হাত ধরে রাত্রি চলে গেলো।”

“হাড্ডি আর আসার সময় পেলিনা। ফয়সাল বলল। ”

“ইতি হটাৎ করেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে দেখে হা করে রইলো। যেনো এই মুহূর্তে একে আশা করেনি।”

“কিরে ইতি কি হয়েছে। ”

“ইতি বলল, ইরফান তুমি এখানে। ব্রু কুচকে বলল।”

“হুম বন্ধুর বোনের হলুদ সন্ধ্যা আর আমি আসবোনা তাই কখনো হয় নাকি। কিন্তু তুমি এখানে।”

“সেইম টু ইউর এন্সার।”

“ওহ রিয়েলি। কই আগে জানাওনি কেনো। ”

“এমনি। ”

“কিরে ইতি ওনি কে। ”

“এটাই ইরফান আমার বি এফ।”

“তারপর রাত্রি ইরফান এর সাথে কথা বলল কিছুক্ষন। এরই মাঝে সেখানে আবির এলো। কি হয়েছে তুই এখানে কি করছিস ইরফান। আর তোমরা কি করছো। এনি প্রবলেম।”

“না ভাইয়া আসলে ওনি আমার বেস্টুর বি এফ এই মাত্র পরিচিত হইলাম তাই কথা বলছি আর কি। রাত্রি বলল।”

“অবাক হয়ে আবির কিছুক্ষন তাকিয়ে ব্যাপার টা বুঝার চেষ্টা করলো। তারপর বলল, ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার। আচ্ছা দেট’স ফাইন চলো।”

“তারপর স্টেজে এর সামনে চলে এলাম। স্পিকারে ডি যে গান বাজছে কয়েকটা ছেলে মেয়ে নাচ করছে বিভিন্ন গানে। রায়াফ ও নাচছে। আমি যখনই নাচতে যাবো কেও একজন আমার হাত ধরে হেচকা টান দিলো। কিছুটা ব্যথা অনুভব করে বলে উঠলাম আহ। কে রে এইভাবে টানে।”

“হেই স্টপ দিজ স্টুপিড গার্ল! কোথায় যাচ্ছিলে।”

“আবির ভাইয়া আবারও আপনি! মুখ টা চুপসে বললাম। আমিতো নাচতে যাচ্ছিলাম। দেখি ছাড়ুন আমি নাচবো এভাবে হুট করে আমাকে ধরবেন না তো আমি ভয় পাই। আর এখানে কেও দেখে ফেলবে তো ছাড়ুন।”

“এখানে বিভিন্ন রঙে রঙ্গিন লাইটিং ডিজে লাইটিং চলছে এখানে যে যার মতো চলাফেরা করছে তাই কেও আমাদের দেখায় ব্যস্ত নয়। আর হ্যাঁ কি বললে তুমি নাচবে! হবেনা! তুমি নাচতে পারবেনা। ”

“কিন্তু কেনো। মুখটা কাঁদো কাঁদো করে বললাম।”

“আবির ভাইয়া আমার দিকে ঝুঁকে বলল, নাচবেনা বলেছি নাচবেনা। ইট’স মাই অর্ডার। নেক্সট আবার জিজ্ঞাসা কেনো কেনো করলে ছুঁড়ে ফেলে দিবো নিচ ফ্লোর এ।”

“ভাইয়া! আপনি এমন করতে পারেন না। অভি’শাপ দিলাম আপনার বউ আন রোমান্টিক হবে। বেশ জোরেই বললাম।”

“আবির ভাইয়া ঘাড় বাকিয়ে তাকালো আমার দিকে আর বলল, কী বললে।”

“যা শুনেছেন তাই বলেছি। দামি কথা দুইবার বলা যায়না। ”

“আমার কথা আমাকেই শুনাচ্ছো বাহ বেশ উন্নতি হয়েছে দেখছি। একদম চুপ চাপ এখানে দাঁড়িয়ে সব কিছু উপভোগ করো। ”

“আমি আর কি করবো। কারও কথার অবাধ্য একটু কমই হয় তাই চুপ চাপ আবির ভাইয়ার পাশেই দাঁড়িয়ে রইলাম। আর সবার নাচ দেখতে দেখতে মনটা খারাপ করতে লাগলাম।”

“পাগলি মেয়ে দেখো মুখটা কি রকম করে রেখেছে। এতো শখ কেনো সবাইকে নেচে দেখানোর। আগে বিয়ে করে নেই তারপর আমাকে দেখিয়ে নেচো। দেখবো কত নাচতে পারো। মনে মনে কথা গুলো বলল আবির রাত্রির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে।”

“খাবার সময় হয়ে গেছে সবাই খাবার খেতে চলে যাচ্ছে এক গুচ্ছ করে। অনুষ্ঠান প্রায় শেষের পর্যায়ে চলে এসেছে তাও আমার আর আভা আপুর কাজিনদের নাচা নাচি শেষ হচ্ছেনা। ”

“অনেক রাতে আমরা বাসায় ফিরেছি। ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে চলে গেলাম।”

“সকাল বেলা আবারও তোড়জোড় শুরু হয়ে গেলো বিয়ের। চারিদিকে হই হুল্লোর পড়ে গেছে। ছোট ছেলে মেয়ে গুলো খেলছে। রায়াফ ও তাদের সাথে খেলছে। আমাকে ভুলেই গেছে আমার ভাই টা। ”

“আমি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। নাস্তা করে নিলাম। তারপর কাজিনদের সাথে লিভিং রুমে বসে কিছুক্ষন আড্ডা দিলাম। তারপর শাওয়ার নিয়ে এলাম। এতোক্ষনে ১২ টা বেজে গেছে। সেন্টার এ আমাদের চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। তাই মেয়েরা এক এক করে রেডি হয়ে গাড়ি করে সেন্টারে চলে যাচ্ছে। আমিও রেডি হয়ে নিবো আলমিরা খুলে দেখছি কি পড়বো। তখনই আবির ভাইয়ার দেওয়া গিফট গুলোর কথা মনে হলো ওনি কি দিয়েছেন সেটাই তো আমার দেখা হয়নি। আগে দেখে নেই এগুলো কি। যেই ভাবা সেই কাজ ব্যাগ গুলো খুলে বেডে রাখলাম। তারপর ব্যাগ থেকে জিনিস গুলো খুলে খুব খুশি হলাম। অনেক সুন্দর একটা শাড়ি বেবি পিংক কালার জামদানী শাড়ি। আরেকটা ব্যাগ এ পার্টি শাড়ি অরগাঞ্জা। আরেকটা তে কিছু অর্নামেন্টস। বেশ ভালো লাগলো এগুলো দেখে। ঠোঁট আনমনেই হাসি খেলে গেলো আমার। তাই আর বেশি দেরি না করে খালামনিকে ডেকে জামদানী শাড়িটা পড়ে নিলাম। তারপর মেচিং সেজে গুজে অর্নামেন্টস গুলো পড়ে নিলাম। চুল গুলো খোপা করে নিলাম। আবির ভাইয়ার পছন্দ আছে বলতে হবে। কিন্তু এই পছন্দ করা জিনিস গুলো যদি সব সময় পাওয়ার অধিকার থাকতো কতোই না ভালো হতো। কিন্তু এগুলো তো এখন অন্য কেও পাবে। ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এরই মাঝে আম্মু ডাকলো কিরে রাত্রি তোর হলো।”

“হ্যাঁ আম্মু আসছি। একটু দাঁড়াও। বলেই তাড়াতাড়ি চলে গেলাম। তারপর একটু দেরি হলো গাড়ি আসতে। অবশেষে সেন্টারে পৌঁছাতে পারলাম। চোখ দুটো আজ বড্ড অস্থির আর বেহায়া হয়ে যাচ্ছে, কাওকে দেখার জন্য, কিন্তু তাকেই তো খুঁজে পাচ্ছিনা কোথায় আছে। ভাবছেন কাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। হ্যাঁ অন্য কেও নয় আবির ভাইয়া কে খুঁজে বেড়াচ্ছি। তখনই পেছন থেকে কেও বলে উঠলো, কি এদিক ওদিক কি দেখছো কাওকে খুঁজছিলে নাকি।”

“চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকালাম। আ আবির ভাইয়া আপনি! ক কই কাওকে খুঁজছিনা তো। এমনিতেই হাঁটছি আর কি।”

“ওহ আচ্ছা তাই বলো। খুব সুন্দর লাগছে। এতোটা না সাজলেও পারতে। অন্য দিকে তাকিয়ে বলল আবির ভাইয়া।”

“ম মানে। কই আমি সেজেছি এতো টুকু তেই বলছেন বেশি সেজে ফেলেছি আর বাকীদের মতো সাজলে কি বলতেন।”

“যেটা বলার সেটাই বলতাম। সাদা বিড়াল আর কি। এমনিতেই তুমি সাদা বিড়াল তার উপর যদি আটা ময়দা মাখাও আরও বেশি লাগবে আর কি।”

“এইভাবে অপমান করা ঠিক হচ্ছেনা কিন্তু।”

“আচ্ছা বাবা সরি। শুনো এখানেই দাঁড়িয়ে থাকো আমি যাবো আর আসবো। জাস্ট ৫ মিনিট দাঁড়াও।তারপর আবির ভাইয়া কোথায় যেনো একটা চলে গেলো। ”

“আজকেও আবির ভাইয়া কে সুন্দর লাগছে আমার থেকেও বেশি। গোল্ডেন কালার পাঞ্জাবী তে বেশ মানিয়েছে। আমার যে লু’চ্চা কাজিনরা আছে ওরা তো আবির ভাইয়া কে নিয়ে অলরেডি মাতাল হয়ে পড়েছে কালই। এটা ওটা অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করেছে। কিন্তু আমি না শুনার ভান করে এড়িয়ে গেছি। ”

“দীর্ঘ ১০ মিনিট পর ফিরে আসলো। সরি সরি একটু লেইট হয়ে গেলো। দেখি ওদিক ফিরো। ”

“কেনো।”

“এতো কেনো কেনো করো কে সব কিছুতে। ফিরো ওদিকে স্টুপিড মেয়ে। ”

“সব সময় খালি স্টুপিড বলেন। আপনার বউ স্টুপিড আপনি স্টুপিড আপনার দাদা দাদী স্টুপিড। ”

“আচ্ছা বাবা সব কিছু আমার এবার তো ফিরো।”

“তারপর আমি ওদিকে ফিরে দাঁড়ালাম। আবির ভাইয়া আমার খোপায় একটা বেলী ফুলের গাজরা পড়িয়ে দিলো। আমার চুল থেকে একটা ক্লিপ খুলে সেটা আটকে দিলো। ”

“ব্যস এবার আমার দিকে তাকাও।”

“ওনার দিকে ফিরে তাকালাম ওনি বললেন, হুম এখন পার্ফেক্ট লাগছে। যাও এবার কোথায় যাচ্ছিলে। আর হ্যাঁ এদিক ওদিক বেশি হাঁটা হাঁটি করবেনা। এক যায়গায় বসে থাকবে। নইলে পা ভেঙ্গে দিবো।”

“আমি আর কথা বাড়ায়নি। জানি এসব রাত ভাইয়া শিখিয়ে দিয়েছে। যদি না শুনি আমাকে আবার ধোলাই করবে।”

#চলবে

বক্ষ পিঞ্জর পর্ব-০৭+০৮

0

#বক্ষ পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#পর্বঃ৭+৮

“বাইরে চলে এসেছি তাতে আপনার কি হয়েছে পঁচা ডিম ভাই। ”

“হুয়াট! কাকে কি বলছো তুমি রাত্রি। পঁচা ডিম ভাই আবার কে।”

“কে আবার আপনি।”

“খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।”

“ধুর মিয়া যান তো। খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে। ঢং করতে আসছে ন্যাকা। ভেঙিয়ে বললাম।”

“আচ্ছা আমি পঁচা ডিম মেনে নিলাম। কিন্তু তাও প্রপোজাল টা এক্সেপ্ট করে নাও। ফয়সাল ভাইয়া আমার কানে কানে বলল রায়াফ যেনো না শুনে।”

“এই এই একদম আমার আপুর কাছে আসবেন না। কি বলছেন ফিস ফিস করে হুম। আমি কিন্তু রাত ভাইয়া কে নিয়ে এসে বিচার দিবো।”

“ওফ সালা বাবু এতো জেদি কেনো তুমি। দেখছোনা তোমার আপুর সাথে গল্প করছি। এর মধ্যে বড় ভাই দের টানছো কেনো। ”

“এই এই কি বললেন আমার ভাই আপনার সালা হলো কবে থেকে হুম। দুই হাত কোমরে রেখে রাগ দেখিয়ে বললাম। ”

“য’বে থেকে তোমাকে দেখেছি তবে থেকেই ও আমার সালা। আর কি জানো তো ভাগ্য করে দুইটা ভাই পাইছো মাইরি। দুইটাই মাঝ খানে দেয়াল হয়ে থাকে। ”

“একদম আমার ভাই দের নিয়ে কথা বলবেন না কিন্তু মে’রে নাক ফাটিয়ে দিবো। নাক ফুলিয়ে বললাম।”

“অনেক্ষন ঝগড়া করলাম। তারপর রায়াফ কে নিয়ে বাসার ভেতর চলে গেলাম। দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় হয়ে গেছে। সবাই ডাইনিং টেবিল এ বসলো। আবির ভাইয়া দের ডাইনিং টেবিল টা বেশ বড় তাই একসাথে সবার বসা হয়ে গেছে। ”

“রাত্রি মামনী তুমি মাছ নিচ্ছোনা কেনো? মমতাজ বেগম বলল। আবির ভাইয়ার আম্মু।”

“আসলে আন্টি আমি কাটা ছাড়াতে পারিনা তো ভয় লাগে যদি গলায় বিধে যায়। তাই নিচ্ছিনা। ”

“আগে বলবে তো। দাঁড়াও আমি দিচ্ছি কাটা ছাড়িয়ে৷ এদিকে দাও প্লেট টা। তারপর আন্টি কাতলা মাছের বড় বড় দুইটা পিছ এর কাটা ছাড়িয়ে দিলো। আমি তাও ভয়ে ভয়ে খেতে লাগলাম। যদি কাটা থেকে যায়। ”

“মাথা একটু উঁচু করতেই দেখি আবির ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে চোখ পড়তেই আমি নজর সড়িয়ে ফেললাম। কিছুক্ষন আগের দৃশ্য টা স্মরণে আসতেই লজ্জায় এখান থেকে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। ইশ কি বাজে রকম ভাবে ফেসে গেছি বাবা। এখন তো আবির ভাইয়ার দিকে তাকাতেই পারছিনা। আমি কি আদোও এমন ছিলাম। কই আমিতো কখনো এমন লজ্জা পাইনি কাওকে। আহ! কি যে করি। ধ্যাত ভালো লাগেনা কিছু। এসব ভাবতে ভাবতে ধ্যানে চলে গেলাম। আস্তে আস্তে সবার খাওয়া প্রায় শেষ। টেবিলে মাত্র আমিই বসে আছি। আমার খাবার খেতে অনেক লেইট হয়। ভাত হলে তো সময়ের শেষই নেই। আবির ভাইয়া পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল, কি হলো খাচ্ছোনা কেনো। ”

“আবির ভাইয়ার কন্ঠ শুনে মাথা টা আরও নিচু করে ফেললাম। আর বললাম, ক কই খাচ্ছি তো। ”

“মমতাজ বেগম এসে বললেন, কিরে তুই কি করছিস এখানে হুম। ”

“আমিতো তোমাদের এই কন্যা কে দেখছিলাম খেয়েছে কিনা সে তো খেতেই পারছেনা৷ তাইতো এতো মোটা বুঝোনা। ”

“হয়েছে তোকে আর দরদ দেখাতে হবেনা কটাক্ষ করে৷ যা রাত এর কাছে যা তুই। ”

“আবির ভাইয়া এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে চলে গেলো।”

“মামনী খাওয়া হয়েছে। ”

“জ্বি আন্টি মাত্রই হলো। ”

“তারপর লিভিং রুমে সবাই বসে পড়লো আড্ডা দিতে। তখন আব্বু বলল, খান সাহেব এবার আমি চাই আমার মেয়েকে নিজের বাসায় নিয়ে যেতে। যদি আপনি তার অনুমতি দেন। ”

“তাতো অবশ্যই। সেই এতো বছর আগের প্রতিশ্রুতি কি আর ভুলতে পারি। অবশ্যই আপনাদের মেয়েকে আপনারা নিয়ে যাবেন। তার আগে তাদের৷ মতামত টুকু জেনে নেই স্ব-ম্মুখে কি বলেন। দুলাল খান বলল আব্বুকে। ”

“হুম তা ঠিক। রাত আব্বু তোমার অনুমতি ব্যতীতই আমরা তোমার আর আভার বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলাম। এখন তুমি কি চাও বলো। তুমি আর আভা যদি রাজি থাকো তাহলে আমরা অতি শিঘ্রই ফরজ কাজ আদায় করতে চাই।”

“সবার মাথায় যেনো আকাশ থেকে পড়লো এই কথায়। আসলে আমার আব্বু আর আভা আপুর আব্বু ছাড়া বিষয় টা কেও হইতো জানতোনা। কিন্তু আমি মনে মনে বললাম, যাক ভালোই হয়েছে। এইভাবে তাদের প্রেমলীলা চললে হবেনা বিয়েটা হয়ে গেলেই ভালো অন্তত যেখানে সেখানে চুরি করে রোমান্স করতে হবেনা। আর মানুষকে বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হবেনা।”

“মমতাজ বেগম বললেন, ভাই জান তাহলে আমাদের ওই ব্যাপার টার কথা কি ভুলে গেলেন।”

“না না তা আমি ভুলিনি রাত এর বিয়েটা হয়ে যাক তারপর না হয় ওই বিষয় টা নিয়ে কথা বলবো। তার আগে যদি বলি অনেক দিকে সমস্যা হতে পারে। আশা করি দ্বিমত পোষণ করবেন না। আমার আব্বু বলল। কিন্তু কিসের ব্যাপারের কথা বলল, আমি কিছু বুঝলাম না। যাই হোক আমার এতো বুঝে লাভ নেই। আমি আমার মতো বিন্দাস সামনে ভাইয়ার বিয়ে জাস্ট ইঞ্জয় করবো। এনাফ।”

“এই আপু ব্যাপার টা কি হলো বলো তো। এইভাবে সব ভেস্তে গেলো নাকি। কত্ত করে ভেবেছিলাম রাত ভাইয়াকে বাগে পেয়েছি। ইচ্ছা মতো জ্বালাবো। কিন্তু আব্বু তো বিয়েই দিয়ে দিচ্ছে। এখন তো কিছু কর‍তে পারবোনা। বলেই রায়াফ মন খারাপ করলো।”

“তুই কিসের কথা বলছিস ভাই। ওহ তুই তো আবার সব জানিস তাই না আভা আপুর আর ভাইয়ার রিলেশনের কথা। কিন্তু আমাকে বলিস নি। আমিও আর তোকে কিছু বলবোনা দেখে নিস হুহ।”

“এই না না সরি আসলে আমাকে না আভা আপু প্রমিজ করিয়ে ছিলো যেনো না বলি কাওকে কিছু। তাইতো বলিনি। আর তুমি না বলেছো কারও প্রমিজ ভাঙতে নেই। কিন্তু আপু তুমি জানলে কি করে ভাইয়ার রিলেশনের কথা। ব্রু কুচকে বলল রায়াফ।”

“আমার তখনকার কথা মনে পড়ে গেলো। আ আমি জেনেছি কোনোভাবে। তোকে বলতে হবে কেনো সব কিছু। তুই তো আমাকে বলিস নি আমিও বলবো না।”

“আচ্ছা তাই না! যাও না বললে নাই এখন আমরা দুজনেই জানি কাটিং কাটিং সব।”

“অনেক্ষন যাবৎ আমি আর রায়াফ সবার অগোচরে ফিস ফিস করে কথা বলেই যাচ্ছি। ”

“রাত্রি মামনী চুপ করে আছো কেনো। রায়াফ বাবা কি ব্যাপার এতো চুপচাপ কেনো দুজনে। দুলাল খান বললেন। ”

“না আংকেল এমনিতেই। আমি বললাম।”

“আবির ভাইয়ার খালা বলল, ছোট বেলায় ও যেমন মিষ্টি মেয়ে ছিলো এখন ও তেমনই আছে রাত্রি। তবে ছোট বেলায় জেদ টা একটু বেশি ছিলো। এখন হইতো কমে আছে। বলেই সবাই হু হা করে হেসে দিলো। আমিও মুচকি হাসলাম।”

“তারপর গুরুজন রা সবাই কথা বলছিলো। মমতাজ বেগম বললেন, আভা মা তুই রাত বাবা কে নিয়ে তোর রুমে যা। কিছুক্ষন কথা বলে নে। তোদের ও তো একটু মানিয়ে নেওয়ার দরকার আছে।”

“আম্মু তোমাদের বলার সময় লাগেনি। আমি নিজেই আগে মানিয়ে নিয়েছি। শুধু জানতাম না যে তোমরা বিয়ে ঠিক করে রেখেছো। মনে মনে বলল আভা আপু। তারপর মাথা নাড়িয়ে রাত ভাইয়া কে নিয়ে চলে গেলো।”

“আপু চলো এখানে ভালো লাগছেনা। ”

“কোথায় যাবো ভাই। আর কারও বাসায় এসে এভাবে ঘুরাঘুরি ঠিক না চুপচাপ বসে থাক। আমি রায়াফ কে বললাম।”

“উফ তুমিও না। এই আবির ভাইয়া। ”

“হুম রায়াফ বলো। ”

“এটা কি আমার বাসা নাকি তোমার বাসা। নাকি আমাদের বাসা নাকি তোমাদের বাসা। কোনটা। কোমরে হাত রেখে বলল রায়াফ।”

“অবশ্যই এটা তোমার বাসা আমার আমাদের তোমাদের কারও না। অনলি ওয়ান চ্যাম্পিয়ন বয় রায়াফ এর বাসা এটা। ”

“তাহলে রাত্রি আপু আমাকে বলে কেনো যে এটা অন্য কারও বাসা। আমি নাকি এই বাসায় এসে ঘুরাঘুরি করতে পারবোনা। গাল দুইটা আপেল এর মতো ফুলিয়ে বলল।”

“ওহ তোমার রাত্রি আপু বোকা তাই এমন বলেছে।”

“দেখেছো তো এটা আমার বাসা। তাই আমি যা খুশি করবো ইচ্ছে হলে আমার সাথে এসো নইলে বুড়িগঙ্গায় যাও। এই আবির ভাইয়া চলো। আমাকে তোমার রুমে নিয়ে চলো। আমি আর তুমি এখন খেলবো। বলেই ভাব নিলো রায়াফ শার্ট এর কলার টেনে। ওর কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে সবাই অটঠাসিতে ফেটে পড়লো।”

“হুম চলো।”

“রাত্রি তুমিও যাও তুমি বসে থেকে কি করবে যাও আবিরের রুমে তোমার খুব ভালো লাগবে। মমতাজ বেগম বললেন।”

“এই রে সেরেছে! এখন কি হবে ওনাদের তো আর বুঝতে দেওয়া যাবেনা যে কাহিনী হয়ে গেছে। মনে মনে বললাম। তারপর বললাম, না আ আন্টি আমি এখানেই ঠিক আছি। ”

“আরে যাও তো সবাই যাচ্ছে ওই তো ফয়সাল ফারিয়া ও যাচ্ছে যাও।”

“না পেরে উঠে গেলাম। তারপর আমরা সবাই মিলে আবির ভাইয়ার রুমে আড্ডা দিচ্ছিলাম। ফারিয়া আপু বলল, আমার ঘুম পাচ্ছে ভাইয়া আমি যাই একটু ঘুমিয়ে নেই। বলেই চলে গেলো।”

“ফয়সাল ভাইয়ার কল আসলো ওনিও চলে গেলো।”

“এইরে এখন কি হবে না বাবা আমিও চলে যাই। রায়াফ ভাই তুই থাক আমি আসছি। উঠতে নিলেই আবির ভাইয়া বলল, কি হয়েছে। যাচ্ছো কোথায়।”

“ওনার দিকে তাকানোর মতো দৃষ্টি এখন আমার নেই। তাই মাথা নিচু করে বললাম নি নিচে যাচ্ছি।”

“আরে আপু বসো না। কি হয়েছে তোমার এতো যায়গায় যেতে হবেনা তোমাকে বসে থাকো এখানে। আর সবাই বিজি আছে তুমি তাদের কাছে গিয়ে কি করবে হুম। কাবাব মে হাড্ডি না হওয়ায় ভালো। শেষের কথাটা রায়াফ আমার কানে ফিস ফিস করে বলল।”

“হুম কোথায় যাবে। যাওয়ার দরকার নেই। বসে থাকো এখানে। আর ঘুম পেলে ঘুমিয়ে পড়ো এখানে আমি রায়াফ কে নিয়ে অন্য রুমে চলে যাচ্ছি।”

“না না ঠিক আছি আমি ঘুম পাইনি। তারপর আর কি করার বসে রইলাম। ”

“আবির ভাইয়া রায়াফ এর সাথে এটা ওটা নিয়ে কথা বলছে। ল্যাপটপ এ কি যেনো দেখাচ্ছে। আমি মাথা নিচু করে বসে নোখ দিয়ে নোখ এ ঠোকা দিচ্ছি।”

“বেচারি ভীষণ লজ্জা পেয়েছে। তাকাচ্ছেই না একবারের জন্য। এতো লজ্জা পেলে হবে নাকি। দাঁড়াও একবার নিজের করে নেই তারপর দেখে নিবো তোমার এই লজ্জা কোথায় থাকে। মনে মনে কথাগুলো বলেই আবির ভাইয়া রাত্রির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। ”

“রায়াফ আবির ভাইয়ার ফোন স্ক্রল করতে করতে একটা সময় ঘুমিয়ে পড়লো। আমি পড়লাম এখন মহা বিপদে। তাড়াতাড়ি করে উঠে গেলাম বেড থেকে। দরজার কাছে আসতেই হাতে টান অনুভব করলাম। ভেবেই নিলাম এটা আবির ভাইয়া তাই আর পেছন ফিরে না তাকিয়েই চুপ করে রইলাম।”

“কোথায় যাচ্ছ? ”

“নি নিচে যাচ্ছি। ছা ছাড়ুন দরজা খুলা আছে কেও চলে আসবে।”

“উহুম কেও আসবেনা। আমার অনুমতি ছাড়া আমার বোন ও রুম এ আসেনা। সেখানে অন্য কেও ভাবা তো বৃথা। এদিকে ফিরো কোথাও যাবেনা এখন। ”

“আমি ফিরতে না চাইলে আবির ভাইয়া এক টান দিয়ে আমাকে তার দিকে ফিরিয়ে নিলো। তাল সামলাতে না পেরে আবির ভাইয়ার বুকের সাথে লেপ্টে পড়ে রইলাম চোখ খিচে। আবির ভাইয়ার ট শার্ট এ খামছে ধরে রাখলাম।”

“আবির ভাইয়া মুচকি হেসে বলল, লুক এট মি। ”

“নিশ্চুপ। ”

“লুক এট মি রাত্রি। কিছুটা জোরেই বলল।”

“আমি চোখ দুটো আস্তে আস্তে পিটপিট করে খুললাম। ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। পরক্ষনে লজ্জায় আবারও মাথা নিচু করে বললাম, ভা ভাইয়া ছাড়ুন আমাকে। আপনি আমার সাথে এমন করছেন কেনো। এখানে রায়াফ আছে জেগে যাবে ৷ প্লীজ ছাড়ুন বলছি।”

“প্রথমত ছাড়বোনা, দ্বিতীয়ত রায়াফ উঠবেনা। তৃতীয়ত কেনো এমন করছি সেটা বলবোনা। আপাতত এটাই জানো যে তুমি এখন আমার কাছে আমার রুমেই বসে থাকবে বের হবেনা যতক্ষন না বাসায় যাওয়া হচ্ছে। ”

“কে কেনো! আপনি কি আমার প্রেমিক নাকি হাব্বি লাগেন যে আমি এখন আপনার বেড রুমে বসে থাকবো। যদিও ভয়ে ছিলাম তাও সাহস করে কথাটা বলে ফেলেছি।”

“উম কোনোটাই না। তবে হলে তো দোষের কিছু নয় তাই না!”

“ম মানে! কি বলছেন এসব।”

“তোমাকে এতো মানে বুঝতে হবেনা। এখনো বাচ্চা মেয়ে আছো তাই এতোকিছু তোমার না জানাই ভালো৷ বলেই আমার কপালে একটা ঠোকা দিলো। তাও আমাকে ছাড়লোনা।”

“চলো বেলকনিতে যাই যাবে? রুদ্রের তাপ ও কম চলো।”

“না আমি কোথাও যাবোনা। আমি আম্মুর কাছে যাবো। ছাড়ুন আমাকে।”

“আর একবার যদি বলেছো তাহলে তোমাকে বেললকনি থেকে নিচে ছুড়ে ফেলে দিবো।”

“এইরে কি বলে। যদি সত্যি সত্যি ফেলে দেই। না বাবা আমি এতো তাড়াতাড়ি ম’রতে চাইনা। মনে মনে বললাম। তারপর আর কিছু বলিনি। আবির ভাইয়া হাত ধরেই আমাকে বেলকনিতে নিয়ে গেলেন। ”

“আচ্ছা ভাইয়া আপনি তো এমন ছিলেন না। হটাৎ কি হলো যে আপনি আমার সাথে এমন করছেন। শুকনো ঢুক গিলে কথাটা বললাম।”

“একমনে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, বলেছি না তোমাকে সব কিছু বলতে বাধ্য নয়। তাই এসব জানার ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখো। বড় হও নিজেই জেনে যাবে।”

“আমিও আর কথা বাড়ালাম না। অনেক্ষন এটা ওটা নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করেছে। বেশ কিছুক্ষন পর প্রশ্ন করলাম আমি, আচ্ছা একটা কথা বলবো যদি কিছু মনে না করেন।”

“হুম বলো..

“হুম বলো।”

“আচ্ছা আপনার তো জি এফ আছে তাই না! তো আমার সাথে এমন করলেন যে এখন এসব যদি ওনি জানেন তখন কি হবে। ”

“ও তোমাকে ভাবতে হবেনা। ”

“আচ্ছা তাই। ঠিক আছে নেক্সট প্রশ্ন? আপনি প্রায় সময় আমাদের বাসার নিচে রাতের বেলা দাঁড়িয়ে থাকেন কেনো।”

“বলতে চাইছিনা আপাতত।”

“চোখ পাকিয়ে চাইলাম আবির ভাইয়ার দিকে। ঠিক আছে বলতে হবেনা। যাচ্ছি আমি বসে থাকেন এখানে। রাগ হলো খুব। কোনোকিছুই বলতে চাইনা। এতোই পর মনে করে আমাকে। মনে মনে কথা গুলো বলেই বেলকনি থেকে রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা দিলাম। আবারও পেছন থেকে টান পরলো হাতে।”

“এই টুকু মেয়ের এতো রাগ অভিমান থাকে কোথায় হুম।”

“পেছন ঘুরে বললাম, আমার একটা পকেট আছে সেখানে থাকে। ছাড়ুন হাত ছাড়ুন বলছি। যে ব্যক্তি আমাকে এতোটা পর মনে করে তার সাথে এক মুহূর্ত আমি থাকতে চাইনা। আমিও আর কিছু জানতে চাইবো না আপনার কাছে। আমাদের বাসার নিচে গেলে উপর থেকে পানি ছুঁড়ে মারবো। ঠোঁট ভেংচি কে’টে বললাম।”

“হালকা সুরে হাসলো আবির ভাইয়া। আর বলল, পাগলি মেয়ে বললাম না বুঝার বয়স হলে তুমি নিজেই সব কিছু বুঝে যাবে। তাই এখন কোনোকিছু বুঝে নিজের ফোকাস গুলো দূরে সরিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করছিনা। আর তাই তোমার প্রশ্নের উত্তর গুলো আমি এখন দিতে চাইছিনা।”

“ছাতার মাথা এতো কঠিন কথা আমি বুঝিনা তাও আমাকে এসব বলেন বিরক্তিকর। ব্রু কুচকে ফেললাম বলে।”

“এদিকে এসো। বলেই আবির ভাইয়া আমাকে হালকা টানে নিজের কাছে নিয়ে বলল, এতো জেদ করোনা। পরে কিন্তু এই জেদ থাকবেনা। আর এখনকার অজানা কথা গুলো যখন পরে জানতে পারবে তখন তুমিই সব চেয়ে বেশি খুশি হবে। এখন জেনে গেলে আর পরে সেই খুশিটা অনুভব করতে পারবেনা। পাগলি! ”

“আবির ভাইয়ার ফিস ফিস করে বলা কথা গুলো শুনে আমার শরীরের লোম গুলো কা’টার মতো দাঁড়িয়ে গেলো। অস্ফুট সুরে বললাম, মানে কি বলতে চাইছেন।”

“কিছুনা। এরকম নুইয়ে যাচ্ছো কেনো? আমি কি তোমাকে আদর করছি নাকি যে এভাবে লজ্জা রাঙা বউ এর মতো নুইয়ে যাচ্ছো।”

“আবির ভাইয়ার এমন তরফা কথা আমি চমকে উঠলাম। লজ্জাও পেলাম ভীষন। আর এক মুহূর্ত ও সেখানে রইলাম না ছুঁটে চলে এলাম।”

“ইশ! ভালোই তো লাগছিলো কেনো বলতে গেলাম এই কথা গুলো। মেয়েটা তো এখন আর আমার সামনেই আসবেনা এখন তো খুব বেশি লজ্জা দিয়ে ফেলেছি আমার পিচ্চি পাগলি টা কে। মাথা চুলকে বলল আবির ভাইয়া। না না আবির তোকে কন্ট্রোল এ থাকতে হবে। নইতো এই পাগলির ফোকাস টা নষ্ট হয়ে যাবে। তাহলে সেটা আবার আমাকেই ঘাড়ে চেপে নিতে হবে। পরক্ষনে মুচকি হেসে রায়াফ এর পাশে এসে শুয়ে পড়লো। ”

“আচ্ছা রাত তুমি কি জানতে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে। আভা বলল।”

“মোটেও না! জানলে তো তোমাকে বলতামই। আর তারা কখন এসব ঠিক করলো আমার তো কিছুই বোধগম্য হচ্ছেনা। ”

“হয়েছে বাদ দাও। এখন তো আমরা তাহলে পার্মানেন্টলি এক হয়ে যাবো তাইনা। আভা রাতের শার্ট এর কলার ধরে বলল।”

“রাত আভা কে এক ঝটকায় বুকের সাথে মিশিয়ে বলল, হুম। ”

“বিকাল ৫ টা বেজে গেলো আবির ভাইয়া দের বাসায় আব্বু বলল, এবার আমরা আসি খান সাহেব। কোনো একদিন সুযোগ করে না হয় ওদের বিয়ের ডেট টা ফাইনাল করে ফেলবো কি বলেন।”

“জ্বি জ্বি নিশ্চয়।”

“তারপর আমরা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ির কাছে এলাম। ”

“চলে যাচ্ছো। পাশ থেকে ফয়সাল বলল।”

“হুম।”

“ঠিক আছে কলেজে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। মুচকি হাসলো।”

“তারপর আমরা গাড়ি করে বাসায় চলে এলাম। ৩০ মিনিট এর পথ। ওই সময়ের পর আর আবির ভাইয়ার সম্মুখে যায়নি। কি পেয়েছে টা কি যখন যা খুশি বলবে। আর আমাকে লজ্জা দিবে। এটার কোনো মানে হয়। আর যাবোনা কোনোদিন ওনার সামনে। বাসায় আসলেও না। কথাও বলবোনা হুহ।নির্ঘাত ভাইয়ার বন্ধু বলে কথা নইলে একবারে আচ্ছা করে মুখ ধুলাই করে দিতাম। রুমে বসে কথা গুলো বলছি রাত ১১ টার সময়। ঠিক তখনই একটা মেসেজ আসলো ফোন এ। ‘ এইযে আমার #বক্ষ_পিঞ্জর এর পাখি করছো৷ রাত জেগোনা ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়ো সামনে এক্সাম আছে।’ মেসেজ টা পড়ে সাথে সাথে কল দিলাম নাম্বার টায়। আপনি যেই নাম্বারে কল করেছেন সেটি এই মুহুর্তে বন্ধ আচ্ছে৷ যাক বাবা এবারও বন্ধ। কে এই হতচ্ছাড়া। দাঁত কিরমির করে বললাম। তারপর মোবাইল টা ছুঁড়ে ফেললাম খাটে৷ ”

“৩ দিন পর কলেজে গিয়ে ইতিকে সব কিছু বললাম আবির ভাইয়া আর ফয়সাল এর কথা। ইতি বলল, দেখ রাত্রি আমিতো আগেই বলেছি তোকে আবির ভাইয়া তোকে পছন্দ করে নাহলে এমন করতোনা।”

“ধুর তুই যে কি বলিস না ইতু। ভাইয়ার জি এফ আছে আমাকে বলেছে। আমাকে কেনো পছন্দ করতে যাবে। তাহলে তো আমাকে সামনেই বলতো।”

“তুই হাতে পায়ে বড় হয়েছিস কিন্তু রায়াফ ঠিকি বলে তোর মাথায় গো’বর পোড়া আছে। ”

“ইতু! ধমক দিয়ে বললাম। চুপ করবি নাকি। এখন কি তুই আমাকে সব কিছু শিখাতে আসবি।”

“আরে রাগিস কেনো দুস্ত যা বলেছি ঠিকি বলেছি তো। সত্যি কথা বলছি দেখ এমনই হবে। আর ভাইয়ার জি এফ আছে যদিও বলে থাকে সেটা মিথ্যে কথা।”

“যাক গে বাবা বাদ দে আমার এসব বোধগম্য হচ্ছেনা। চল খুদা পেয়েছে ক্যান্টিনে যাই। তারপর দুজনে গিয়ে ক্যান্টিন এ বসলাম। তারপর কিছু খেয়ে ক্লাস এ চলে এলাম।”

“এভাবে অনেক দিন কেটে গেলো। এর ভিতর আমি আবির ভাইয়ার কথা ভুলেই গেছি। ওইদিন পর আর আবির সাথে দেখা হয়নি। কথা তী দূরে থাক। ”

“১৫ দিন পর কোনো এক সকালে ধরনীর বুকে সূর্য মামা উঁকি দিচ্ছে। জানান দিচ্ছে ভোরের আলোর সন্ধান। পাখিরা কিচিরমিচির করছে নিজ মহিমায়। কৃষ্ণচূড়ার রাঙা পথে লাল রঙা কৃষ্ণচূড়া গুলো সারি হীন ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। শহরের অলিগলিতে লোকজন হাক ডাক দিচ্ছে। যানবাহন চলাচল শুরু করেছে। এলার্ম এর শব্দে ঘুম ভাঙলো রাত্রির। উফ এই এলার্ম টা আর বাজার সময় পেলোনা। এক হ্রাস বিরক্তি নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে এসে দেখি লিভিং রুমে আম্মু বসে আছে। আম্মু রুমা আপু কোথায় বলো নাস্তা দিতে। পরে আবার কলেজে যাওয়া লেট হয়ে যাবে। আর রায়াফ কোথায় ও নাস্তা করবেনা। ভাইয়া আব্বু উঠেনি ঘুম থেকে এখনো? ”

“তোর আব্বু রাত রায়াফ বাজারে গেছে নাস্তা করে। আর আজকে তোর কলেজ যেতে হবেনা। আজকে আবিরদের বাসার সবাই আসবে আমাদের বাসায় আমরা রাত আর আভার বিয়ের তারিখ টা আমাদের বাসায় ঠিক করবো বলেছি। তাই ওদের রাতে আসতে বলেছি।”

“ও ওহ। তাহলে তো আবির ভাইয়া ও আসবে। না না আমি কিছুতেই আর ওনার মুখোমুখি হবোনা কিছুইতেই না। আমি কলেজে চলে যাবো। মনে মনে বললাম। তারপর গলা ঝেরে বললাম আম্মু তাহলে আমি থেকে কি করবো বাসায় আমি কলেজে চলে যাই প্লীজ। আমার আজকে ক্লাস আছে ইম্পর্ট্যান্ট। প্লীজ আম্মু মানা করোনা।”

“শুনো মেয়ের কথা। এই তুই কি সমাজ চুর নাকি হুম। মেহমান আসবে বাসায় আর তুই পালানোর চেষ্টা করছিস। কই ভাববি যে তাদের কিভাবে আপ্যায়ন করা যায়৷ তা না করে ওনি আসছে কলেজ যাবেন৷ উদ্ধার করেছে আমাকে লেখা পড়া করে। রাত আসলে বলিস যে কলেজ যাবি। আম্মু রাগ দেখিয়ে কথা গুলো বলে চলে গেলো।”

“যাক! কি মহা বিপদে পড়লাম গো আল্লাহ বাঁচাও । তারপর রুমা আপু পরোটা আর ডিম ভাজি দিয়ে গেলো টেবিল এ আমি নাস্তা ফিনিশ করে সোফায় বসে টিভি ছেড়ে দিলাম। মোটু পাতলু দেখা শুরু করলাম।পেছন থেকে আম্মু বলে উঠলো দুইদিন পরে বিয়ে দিলে বুড়ি হয়ে যাবে আসছে এখনো কার্টুন দেখতে। বলছি কি পা দুটো কে’টে বেটে করেই দেই রায়াফ এর চেয়েই ছোট হয়ে যাবি।”

“উফ আম্মু চুপ করবে তুমি। সামান্য কলেজ যাবো বলেছি তাই বলে এতো কথা শুনাবে আমায়। যাও যাবোনা কলেজে৷ রুম থেকেও বের হবোনা আজ। যদি আমাকে কেও ডেকেছো তাহলে খবর আছে বলে দিলা। কথা গুলো বলেই রিমোট টা ঢিল ম’রে ডিভানে ফেলে দিয়ে রুমে এসে স্বজোরে শব্দ করে দরজা টা লক করে দিলাম।”

“সময় গড়িয়ে চলছে তার গতীতে বেলা ১২ টা বেজে গেছে। ২ ঘন্টা ঘুমিয়ে হাত পা আরও অবশ করে ফেলেছি। তখন রাগ করে এসে কিছুক্ষন পড়ালেখা করে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কেও ডেকেছে কিনা তাও জানিনা। উঠে গিয়ে একদম শাওয়ার নিয়ে বের হলাম। চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলে রুমের বাইরে বের হলাম। লিভিং রুমে যেতেই আবির ভাইয়ার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো। চোখ সরিয়ে আংকেল আন্টি আর আভা আপুর সাথে কথা বললাম সালাম দিয়ে। কিন্তু আবির ভাইয়ার সাথে বলিনি। তারপর আবার নিজের রুমে চলে এলাম। এ মা রে আমার তো মনেই ছিলোনা ওনারা যে আমাদের বাসায় আসবেন আজকে। ধ্যাত! ঘোড়ার ডিম মন আমার।”

“আভা আপু আমার রুমে আসলো সাথে আবির ভাইয়া রায়াফ আর রাত ভাইয়াও আসলো। এদের একসাথে আসার কারন বুঝলাম না। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। দরজা লক করতে ভুলে গেছিলাম তাইতো রায়াফ আগে ভাগেই রুমে ঢুকে পড়েছে।”

“কিরে সকাল থেকে নাকি রাগ করে রুমে বসে আছিস। ডেকে গেলাম যে শুনিস নি। রাত ভাইয়া বলল।”

“মাথা নিচু করেই বললাম , আসলে ভাইয়া পড়া শেষ করে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই ডাক শুনতে পাইনি। আর কে বললো রাগ করেছি। রাগ করিনি। ”

“তো সবার সাথে কথা বলেছিস ওখানে গিয়ে।”

“হুম বলেছি তো।”

“আচ্ছা তাহলে তোরা আড্ডা দে আমি আসছি। তারপর রাত ভাইয়া চলে গেলো।”

“আভা আপু রাত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো এক ধ্যানে তারপর বলল, আ আমি আসছি একটু কেমন তুমি ভাইয়ার সাথে কথা বলো। কানে কানে কথা টা বলেই আভা আপু চলে গেলো৷ একটা জিনিস এখন খেয়াল করলাম আভা আপুকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে৷ ক্রিম কালার থ্রি পিছ টা দারুন মানিয়েছে আপুকে। এইসব ভেবে ভুলেই গেছিলাম রুমে যে আরও দুজন ব্যক্তি আছে। যখন মনে হলো তখন আমি মাথা নিচু করে নোখ খুড়াতে লাগলাম আঙুলের।”

“আপু চুপ করে আছো কেনো আবির ভাইয়া আসছে কথা বলো। আমি চলে যাচ্ছি আমার কার্টুন দেখার সময় হয়ে গেছে।”

“দাঁড়া আমিও যাবো কার্টুন দেখবি একা একা সেটা হতে দিবোনা আমি। তুই আগে আগে নতুন পর্ব দেখে মজা নিবি কেন।”

“আমাদের দুই ভাই বোনের কথা শুনে আবির ভাইয়া হাসলো। খুবই স্মিত হাসি। যার কোনো বাক নেই। আর বলল, তোমার কি এখন কার্টুন দেখার বয়স আছে।”

“আমি নিশ্চুপ মুখ ভেঙছি দিয়ে ট্যারা চোখে আবির ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে আসলাম রুম থেকে।”

“এই পাগলির এতো টা অভিমান হয়েছে। বাহ খুব ভালো! রাগ অভিমান এখন করে শেষ করে নাও পরে না হয় আমি ভাঙিয়ে নিবো সব। খুব শীঘ্রই নিজের করে নিবো তোমায় প্রমিজ ইউ মাই কুইন।” বলেই আবির ভাইয়া আমার বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো।”

“দুপুরের খাবার শেষে রাত ভাইয়া আর আভা আপুর বিয়ের তারিখ ঠিক করা হলো। দুইদিন পর আমার ফার্স্ট ইয়ারের ফাইনাল এক্সাম শুরু হবে তাই তারা আগামী ২০ জুন এ ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করেছে। মূলত আমার জন্যই পিছানো হয়েছে। ”

“দুইদিন পর আমার এক্সাম শুরু হলো। পড়াশুনার চাপ এ আধমরা অবস্থা হয়ে গেছে। দিন দুনিয়ার খবর ভুলে গেছি। লাস্ট এক্সাম এর দিন এক্সাম শেষে গেইটে দাঁড়িয়ে আছি। রায়াফ দের ক্লাস নেই তাই ও প্রতিটা পরিক্ষায় আমার সাথে ছিলোনা। গেইটে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থা দেখলাম আবির ভাইয়ার গাড়ি। গাড়ি থামিয়ে ওনি নেমে এলেন। ওনার মুখ পানে তাকিয়ে দেখলাম মুখ টা লাল হয়ে আছে ফর্সা হওয়ায় সেটা বেশি বোঝা যাচ্ছে। কপালে ঘামের রেশে চুল গুলো লেপ্টে গেছে কপালে। অতিরিক্ত গরমে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। পারপল কালার শার্ট টা লেপ্টে আছে গায়ে। ওনি বললেন, কি হয়েছে এমন ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? ”

“ওনার কথা হুশে ফিরে থতমত খেয়ে গেলাম। ক কই তাকিয়ে আছি। আপনি এখানে কেনো এসেছেন সেটা আগে বলুন।”

“তোমাকে নিতে এসেছি।”

“নিতে এসেছেন মানে! ভাইয়া কোথায়?”

“রাত একটা ডিল ফাইনাল করতে গেছেন। বর্তমানে কুমিল্লা সেক্টরের মিটিং এ আছে। ওই ডিল টা ওর আন্ডারে হবে তাই ওকে যেতে হয়েছে। আব্বু রাত কে নিয়ে আরও ২ ঘন্টা আগেই চলে গেছেন। তাদের আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। রাত যাবার সময় বলে গেলো যেনো টাইম মতো তোমাকে নিয়ে বাসায় পৌঁছে দেই। তাই আমি এসেছি। নাও এবার গাড়িতে উঠো। এক নাগারে কথা গুলো বলে থামলেন। আর লম্বা একটা নিশ্বাস ফেলে চুল গুলো হাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দিলেন।”

“ওহ আচ্ছা। চলুন তাহলে। তারপর আবির ভাইয়া সামনের সিটের দরজা টা খুলে দিলো। আমি গিয়ে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসে পরলাম।আর আবির ভাইয়া ঘুরে এসে গাড়ির ভিতর থেকে ওয়াটার বটল টা নিয়ে মুখে পানির ছিটা দিলো। তারপর গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো। ”

“আমি এক ধ্যানে লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। খুব ক্লান্তির রেশ এর দেখা মিলছে তার চোখে মুখে।হইতো অফিসের কাজের খুব চাপ তার উপর এতো গরম। ২ টা বাজে দুপুর প্রখর রোদ তখন মাথার উপর গরম লাগাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি বললাম, ভাইয়া আপনি দুপুরে খেয়েছেন? ”

“নিঃসংকোচে উত্তর দিলো, নাহ খাওয়া হয়নি। কাজের চাপ খুব বেশি খাবার সময় হয়ে উঠে নি। ভাবলাম আগে তোমাকে নিতে আসি তারপর না হয় খাওয়া যাবে। ”

“ওহ! আগে খেয়ে নিতেন তারপর না হয় আসতেন।”

“তা হয় নাকি। আগে ডিউটি তারপর খাওয়া।”

“মানে কী!”

“কিছুনা তোমাকে বুঝতে হবেনা। ”

“তারপর আমরা বাসায় পৌঁছে গেলাম। আম্মু আবির ভাইয়া কে জোর করে বাসার ভিতর নিয়ে গেলো খাবার খাওয়ানোর জন্য । আবির ভাইয়া এক প্রকার অনিচ্ছাকৃতই আম্মুর আবদার রাখলো। তারপর আবির ভাইয়া কে ফ্রেশ হতে বলল। এরই মধ্যে আমি ফ্রেশ হয়ে চলে আসলাম। আমি আবির ভাইয়া রায়াফ আম্মু একসাথে খেতে বসেছি। তবে রায়াফ খেতে নয় আবির ভাইয়ার সাথে ফটফট করতে বসেছে। রায়াফ যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পাই আবির ভাইয়া কে কাছে পেলে।”

#চলবে

বক্ষ পিঞ্জর পর্ব-০৬

0

#বক্ষ পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#পর্বঃ৬

“হটাৎ আমার পা গিয়ে লাগলো আবির ভাইয়ার পায়ে। আবির ভাইয়া বিষম খেলো। বিস্ময় কাতর চোখে আমার দিকে তাকালো। আম্মু আবির ভাইয়া কে পানি দিলো। আমার ভিতর একটা জড়তা অনুভব করলাম আমি। যে টা কখনোই আমি অনুভব করিনা। ”

“বিকাল ৪ টা বাজে আবির ভাইয়া আর আভা আপু চলে গেলো তাদের বাসায়। ”

“পর পর ৪ দিন চলে গেলো। কোনো এক সন্ধায় কলিং বেল বাজলো৷ রায়াফ দরজা খুলে দিয়ে দেখলো আব্বু এসেছে। খুশিতে আব্বুকে জড়িয়ে ধরলো। আমিও রায়াফ এর হাসি শুনে লিভিং রুমে এসে আব্বুকে জড়িয়ে ধরি। বেশ কিছুক্ষন গল্প করি আব্বুর সাথে। আব্বু আমাকে একটা ফোন বক্স হাতে দিয়ে বললো এটা তোমার জন্য মাই প্রিন্সেস।”

“সত্যি!”

“হুম। সত্যি।”

“রাত ভাইয়া বলল, আব্বু ওর এখন পড়ার সময়। ওকে ফোন দিলে সারাদিন স্ক্রল করবে পড়বেনা। শেষে দেখা যাবে পরিক্ষায় লাট্টু মেরেছে। ”

“ভাইয়া তুমি একটু বেশি ভাবো। আমি মোটেও এমন নয়। মুখ ভেঙছি কে’টে বললাম। আমি পড়বো মন দিয়ে। আমার তো ভালো একটা রেজাল্ট করতেই হবে। ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পেতেই হবে। সেটা চিন্তা করেই পড়ছি ভাইয়া। আর ফোন আমি ইউস করবোনা বেশি সত্যি। দেখে নিও।”

“হুম তুই বলবি আর আমি শুনবো তাই না! ”

“আহ! রাত বাদ দে না বাবা। ওর সব ফ্রেন্ডদের ই তো ফোন আছে। ওর থাক সমস্যা কি। আমিই তো দিয়েছি ইচ্ছেতে তাই না! তুই ওকে কিছু বলিস না। মামনী এটা তোমারই থাকবে ওকে।”

“আব্বু এটা কি ঠিক করলে। আপুকে ফোন দিলে ঘড়ি দিলে। গোল্ড রিং ও দিলে। আমাকে একটা ফোন দিলে কি হতো।”

“কিহ! তুই কি বুড়ো হয়ে গেছিস যে তোকে আব্বু ফোন দিবে। কানের নিচে একটা দিবো বেশি পাকামো করলে৷ দিন দিন বড্ড ফাজিল হয়ে যাচ্ছিস রায়াফ৷ বলেই রাত ভাইয়া রায়াফ এর দিকে রাগী লুক দিলো।”

“ভাইয়া তুমি কিন্তু ভুলে গেছো আমি কিন্তু ভুলিনি। মনে আছে তো কি বলেছিলে হুম হুম। নাকি আমি সব ব্লাস্ট করে দিবো৷ রাত ভাইয়ার কানে কানে রায়াফ বললো। ”

“রাত ভাইয়া অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। তৎক্ষনাৎ রাতাফ কে বললো, শুন তুই যদি রেজাল্ট ভালো করিস তাহলে নেক্সট ইয়ার তোকে ফোন কিনে দিবো। ঠিক আছে। এখন গিয়ে চুপ চাপ পড়তে বস৷ আমি এসে পড়া নিবো৷ নাও গো ফাস্ট। রায়াফ ছুটে চলে গেলো।”

“বেকুব হয়ে গেলাম। রায়াফ কি এমন বললো ভাইয়া কে যে ভাইয়া ওকে ফোন কিনে দিতে রাজি হয়ে গেলো। বুঝলাম না কাহিনী । ”

“আব্বু এসেছে আজ ১৫ দিন। আভা আপুর কথা মতো আমরা কাল সকালে সিলেট সাদা পাথর রওনা হবো ট্যুর যাত্রার উদ্দেশ্য। ”

“আমি রায়াফ রাতে বসে আলোচনা করলাম আমরা কি কি করবো। কোথায় যাবো। ”

“ভোর ৫ টায় আবির ভাইয়া আভা আপু আমাদের বাসায় চলে এলো। কিছুক্ষন পর রাত ভাইয়া গাড়ি রেডি হয়ে এলো। আমরা আমাদের গাড়ি করেই যাবো। আবির ভাইয়া বলেছিলো তার গাড়ি আনবে। কিন্তু রাত ভাইয়া নিষেধ করেছে। গাড়িতে উঠার সময় রায়াফ সামনের সিট এ বসবে ভেবে দরজা খুললো। আবার কি একটা ভেবে বললো, আজকে আমি সামনে কিছুতেই বসবোনা৷ ”

“রাত ভাইয়া ব্রু কুচকে রায়াফ এর দিকে তাকিয়ে বললো, তোর আবার কি হলো। সব সময় তো সামনেই বসিস।”

“সবাই বেশ কৌতুহল নিয়ে একই প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রায়াফ এর দিকে ”

“ভাইয়া এই দুই মেয়ে যদি আজ একসাথে পেছনে বসে তাহলে মনে করো আমাদের তিন ভাই এর আজকে কান টা ঝা’লাপালা করে দিবে । তাই আমি প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এই দুই নারীকে আজ কিছুতেই আমি এক সাথে পেছনে বসতে দিবোনা। তাই আভা আপু সামনে বসবে। আমি রাত্রি আপু আবির ভাইয়া পেছনে বসবো।”

“ওহ আচ্ছা তাই না! তুই আর যুক্তি পেলিনা। একদম কান মলা দিয়ে দিবো। ক্ষেপে বললো রাত ভাইয়া।”

“ভাইয়া তোমাকে সেটিং করিয়ে দিচ্ছি বুঝোনা কেনো। উলটে আমাকে কথা শুনাও। ব্লাস্ট করে দিবো কিন্তু হুহ। রায়াফ রাত ভাইয়ার কানে কানে ফিস ফিস করে বলল।”

“আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে বস যেখানে ইচ্ছে। রাত ভাইয়া বলল।”

“ইদানীং ভাইয়ার এসব কথা বলার ভঙ্গিমা আমি কিছুই বুঝতে পারিনা। রায়াফ এর সব কথায় কেনো ভাইয়া সম্মতি দেই। কই আগেতো এমন ছিলোনা। যাই হোক আমি গিয়ে পেছনে বসলাম। সেখানেও রায়াফ এর ঝামেলা যে ও জানালার পাশে বসবে। ”

“দেখি চাপো। আমি সাইডে বসবো। আমার মাঝ খানে গরম লাগে। ”

“কি আর করার মাঝ খানে আমি। ডান পাশে আবির ভাইয়া বাম পাশে রায়াফ। গাড়ি ছুটলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। আবির ভাইয়ার পারফিউম এর স্মেল টা দারুন লাগছে। আজকে আবির ভাইয়ার পাশে বসে কেমন যেনো একটা অনুভূতির সৃষ্টি হচ্ছে। সেটা মি আদও আমার জানা নেই। আমি কি এই মানুষটার প্রতি কোনোভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়ছি। না না এসব কি ভাবছি আমি। এটা কোনো ভাবেই নয়। কন্ট্রোল রাত্রি, নিজেকে ধাতস্থ রাখ। ওনি তোর বড় ভাইয়ার সমতুল্য এসব আকৃষ্টতা তোকে মানায় না। মনে মনে কথা গুলো বলতে লাগলাম। যাই হোক নিজকে ধাতস্থ করে চুপ করে বসে রইলাম। আভা আপু মিউজিক ছেড়ে দিলো। ”

“তুমি দূরে দূরে আর থেকোনা
এ চোখে চেয়ে দেখোনা।
তুমি ভালোবেসে আমাকে
ঐ হৃদয়ে ঢেকে রাখোনা। আ আ আ

“আমার আবার বমি করার স্বভাব আছে লং জার্নি তে মাঝ পথে বমি করেই দিলাম। ভাজ্ঞিস কারও গায়ে পড়েনি। আমার অবস্থা কিছুটা খারাপ হয়ে গেলো। আবির ভাইয়া আমাকে এক হাত দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আর এক হাত আমার কপালে ঠেকিয়ে ধরলো আর বলল, রা রাত্রি আর ইউ ওকে। ”

“আবির ভাইয়া যেনো খুব বিচলিত হয়ে পড়লো। আমি অস্ফুট সুরে বললাম, হুম। পরক্ষনেই আমি মাথার ভার রাখতে না পেরে হেলে পড়ে যেতে নিলে আবির ভাইয়া শক্ত করে আমাকে তার বুকে চেপে ধরলো। আমার অনুভূত হলো যেনো আমি খুব শান্তির একটা যায়গায় নিমজ্জিত হয়ে আছি। ইচ্ছে করছে সব সময় এইখান টাই নিজেকে উৎস্বর্গ করে রাখতে। কিন্তু এটা কি কোনোকালে সম্ভব হবে! হইতো হবেনা। এইসব ভাবনায় আনা মানে বৃথা। কিন্তু আমি যে প্রতিনিয়ত তার নে’শায় আসক্ত হয়ে পড়ছি।”

“রায়াফ ও আমাকে এক পাশে জড়িয়ে ধরলো। আর কিছুক্ষন পর পর বলতে লাগলো, আপু তুমি ঠিক আছো তো, মাথায় পানি দিবে। সবাই যেনো খুব অস্থির হয়ে পড়লো।”

“রাত গাড়ি থামা আগে রাত্রি কে একটু ফ্রেশ করিয়ে নেয় । রানিং জার্নি করাটা হইতো ঠিক হবেনা। কিছুক্ষন পর আমরা আবার যাত্রা শুরু করবো।আবির ভাইয়া বলল।”

“রাত ভাইয়া গাড়ি থামালো। আমাকে গাড়ি থেকে বের করে মুখে পানি দেওয়া হলো। তারপর আবার আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিলো। আভা আপু আমার পাশে এসে জড়িয়ে ধরে বসলো। প্রায় ১০-১৫ মিনিট পর আমি কিছুটা স্বাভাবিক ফিল করছি। তাই বললাম, ভাইয়া চলো আমি ঠিক আছি। ”

“আচ্ছা আভা তুমি পেছনেই রাত্রির সাথে বসো আবির সামনে বসে পড়ুক। রাত ভাইয়া বলল।”

“না ভাইয়া আমি বসতে পারবো তো ঠিক আছি আমি। আভা আপু তুমি সামনেই বসো যাও। ”

“একদম কথা বলবিনা চুপ। ধমক দিলো রাত ভাইয়া।”

“উফ ভাইয়া তুমি আপুকে বকছো কেনো। আমরা আগের মতোই যাবো। দুই নারী কিছুতেই একসাথে বসতে পারবেনা। আবার এখন দুজন যে চিপকে বসে আছে। আমার তো হিংসে হচ্ছে। এই আভা আপু তুমি সামনে যাও তো যাও। রায়াফ বলল।”

“রাত ভাইয়া আর কথা বাড়ালোনা। আগের মতোই বসে পড়লো সবাই। রায়াফ ইচ্ছে মতো রাত ভাইয়ার ফোন দিয়ে ছবি তুলছে। আমার ফোন দিয়েও তুলছে।”

“আবির ভাইয়া আমাকে বলল, ঠিক আছো তো এখন। কমফোর্ট ফিল করছো?”

“মাথা ঝাকিয়ে হুম বললাম।”

“অবশেষে আমরা গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। সাদা পথর যায়গাটা খুবই সুন্দর। সমতল একটা ভূমিতে বেশ বড় ছোট পাথরের সমাহার। নদীও রয়েছে হাঁটু অব্দি পানি।”

“পাথরের উঁচু টিলা ও রয়েছে। পাথর গুলো বড় হওয়ায় অনেকটা পিরামিড এর মতোই লাগে। আমরা হাঁটতে হাঁটতে নিচে নেমে এলাম। পাথরের উঁচু নিচু আনাগোনা হওয়ায় হাঁটতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম আবির ভাইয়া হাত ধরে ফেললো। আর বলল, সাবধানে হাঁটো পড়ে যাবে তো।আমি মুচকি হেসে মাথা ঝাকালাম।”

“পানিতে নামলো সবাই। যে যার মতো ছবি তুলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আমার আবার এতো ছবি তুলতে ভালো লাগেনা। তাই পানিতে নেমে শুধু হাঁটছি। এখানে এসে একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম রাত ভাইয়া আর আভা আপু একটু বেশি মেলা মেশা করছে। আবির ভাইয়া হইতো সেটা লক্ষ্য করছেনা। রায়াফ তাদের আরও ছবি তুলে দিচ্ছে।”

“কিরে তোর মতলব টা কি বল তো। ইদানীং ভাইয়ার সাথে বেশ ভাব জমিয়েছিস। রায়াফ কে বললাম।”

“তোমাকে এতোকিছু জানতে হবেনা যাও তো। ডোন্ট ডিস্টার্ব মি। বলেই ভাব দেখিয়ে রায়াফ চলে গেলো আভা আপুর কাছে। রায়াফ আমার আর আভা আপুর বেশ কয়েকটা ছবি তুলে দিলো আমার ফোন এ। ”

“আমি আর রায়াফ পানি ছিঁটানো শুরু করলাম একে অপরকে৷। রাত ভাইয়া ধমক দিয়ে বলল, এই রাত্রি তুই ও কি ওর মতো ছোট নাকি হুম।”

“মুখ টা পেঁচার মতো করে মাথা নিচু করে ফেললাম।”

“দুপুরে খাওয়ার সময় আমারা একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম। সেখানে খাওয়ার সময় আমি বিষম খেলাম।আবির ভাইয়া পানি খাইয়ে দিলো নিজ হাতে। বেশ ভালোই লাগলো আজকে তার কেয়ার গুলো।কিন্তু এতোটা কেয়ার হুট করে! তাল মা’তাল কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা। ”

“অনেক আনন্দ করে রাত ৯ টায় আমরা আমাদের বাসায় ফিরলাম। আভা আপু আবির ভাইয়া তাদের বাসায় চলে গেলো। ”

“দুইদিন পর কলেজে গেলাম। ইতি বলল, কিরে দুস্ত কেমন লাগলো ট্যুরে।”

“হুম ভালো। এই ইতু জানিস আমার না আবির ভাইয়া কে দেখলে কেমন কেমন যেনো একটা ফিলিংস আসে। তারপর সব কিছু ইতিকে বললাম। ”

“তাই নাকি! আমার কি মনে হয় জানিস আবির ভাইয়া তোকে পছন্দ করে। আর নইতো এমন টা হতোনা। আর তুই ও পছন্দ করিস। তাইতো তোর এমন অদ্ভুত ফিলিংস হয়। বুঝলি।”

“আরে না তুই যে কি বলিস না। এমন কিছুই নয়, ওনি আমার ভাইয়ার সমতুল্য আমি এমন টা ভাবতেই পারিনা। কিন্তু একটা কথা সত্য যে আমি ওনার প্রতি কিছুটা দূর্বল হয়ে পড়ছি। কিন্তু সেটা কেনো? এটা কি পছন্দ করা কিংবা অন্যকিছু হতে পারে! ”

“হুম হতেই পারে। এখন এটা ক্লিয়ার যে তুই ওনাকে ভালোবেসে ফেলেছিস। ”

“ধূর কি বলিস এসব।”

“হুম যা সত্যি তাই তো বলি। মিলিয়ে নিস আমার কথা গুলো।”

“আমি চুপ চাপ রইলাম। তারপর ক্লাস শেষে বাসায় ফিরলাম। রাত তখন ৮ টা কফি হাতে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। নিচে চোখ পড়তেই দেখি কেও একজন তাকিয়ে আছে আমারই বেলকনির দিকে। লক্ষ্য করতেই বুঝলাম এটা আবির ভাইয়া। আমিও কিছুক্ষন তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। হুয়াইট জিন্স লেমন কালার শার্ট এ ভীষণ ভালো লাগছে তাকে। নির্লজ্জর মতো আমার চোখ দুটো আজ তাকে দেখছে। কই এতোদিন এমন নজরে তাকায়নি তাহলে আজ কেনো এভাবে তাকিয়ে আছি। কি হয়েছে আমার। ওইদিন ট্যূর এ আবির ভাইয়া আমার এতো গুলো কেয়ার নিলো। আমাকে জড়িয়ে পর্যন্ত ধরলো কিন্তু রাত ভাইয়া কিছু বললোনা।বেপার গুলো আমার ঠিক হজম হচ্ছেমা। মনে মনে বললাম।ভাবনায় ছেদ পড়লো ফোন এর মেসেজ টোন এ তাকিয়ে দেখি অফিসের মেসেজ। ”

“আবির ভাইয়া অনেক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলো। তারপর মোবাইল স্ক্রল করে গাড়িতে উঠে চলে গেলো।”

“রাত ১২ টা আমার ঘুম আসছেনা কিছুতেই। তাই ফোন টা হাতে নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলাম। তখন দেখি মেসেজ এসেছে একটা আননোন নাম্বার থেকে ,
★ওহে পিচ্চি বালিকা আমি বার বার কেনো তোমাতে হারিয়ে যাই। তুমি কি আমায় বুঝোনা। নাকি বুঝেও না বুঝার ভান ধরে থাকো। তুমি কখনোই আমাতে বিলীন হবেনা। আমি যে আমার বক্ষে তোমার পিঞ্জর গড়ে রেখেছি সেটা কি তুমি বুঝোনা। এই #বক্ষ_পিঞ্জর যে শুধু তোমার আশায় বসে আছে। অতি শিঘ্রই আমি তোমাকে আমার পিঞ্জরে বসত করার সুযোগ করে দিবো। ভালোবাসি আমার পিঞ্জিরার পিচ্চি বালিকা কে। শুভ রাত্রি।★

” মেসেজ টা পড়ে দোলনায় বসে পরলাম। কে দিলো এই মেসেজ। আর এতো নিঁখুত কথা লেখা। আমাকে ভালোবাসে অথচ আমিই জানিনা না। কে সে? কেনো আমাকে সম্মুখে বলেনা। সাত পাঁচ ভেবে নাম্বার টায় কল দিলাম। যাক বাবা সুইচ অফ করে রেখেছে। ”

“পরদিন কলেজে, ইতিকে কলেজে গিয়ে মেসেজ টা দেখালাম। ”

“বুঝলাম না কে এই মহা মানব! যে আমার বেস্টুকে ভালোবাসে অথচ সামনে বলার সাহস পাইনা। আচ্ছা রাত্রি তোর কি পরিচিত কেও মনে হচ্ছে। ব্রু কুচকে বললে ইতি।”

“না তো! পরিচিত কে হবে। আর তা ছাড়া সিম টা আম্মুর আগের সিম হতেও পারে আম্মুর পরিচিত কেও। কিন্ত এসব মেসেজ কেনো লিখবে। আর সে জানেই বা কি করে যে, সিম টা আমার ফোন এ? আমি ইউস করছি সিম টা সেটা তো বাসার কেও ছাড়া আর কেও জানেনা। তাহলে কি অতি পরিচিত কেও হতে পারে! ”

“আচ্ছা রাত্রি এটা আবির ভাইয়া নই তো! ”

“হুহ বলেছে তোকে। আজাইরা কথা কম বলবি ঠিক আছে। আবির ভাইয়া কে কি ওই রকম মনে হয় নাকি। আর ওনি হলে তো আমার সামনেই বলতে পারতো। আর ওনি জানবে কি করে যে আমার কাছে এই সিম টা আছে। এটা নিশ্চিত যে মেসেজ সেন্ট করা ব্যক্তি আম্মুর অতি পরিচিত ব্যক্তি। ”

“হুম হতেও পারে। যাই হোক পরে দেখা যাবে চল ক্লাসে যাই। ক্লাস করে বাসায় ফিরলাম। সন্ধ্যায় রাত ভাইয়া বলল, আবির ভাইয়া দের বাসায় আমাদের সবাইকে দাওয়াত করেছে। কাল সকালে নাকি সবাই যাবে। ”

“রায়াফ খুশিতে গদগদ। রাত ভাইয়ার ঠোঁট এ একটু হাসির ঝিলিক দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু সেটা কিসের জন্য বুঝিনাই।”

“পরদিন ১১ টার সময় আমরা আবির ভাইয়া দের বাসায় গেলাম। সেখানে সবাই সবার সাথে কৌশল বিনিময় করছে। তাদের বাসায় আরও অনেক মেহমান রয়েছে। আবির ভাইয়ার বড় খালামনি নাকি আসছে। আমি রায়াফ কে নিয়ে আবির ভাইয়াদের বাড়িটা ঘুরে দেখছি। আবির ভাইয়া দের বাসাটা মিডিয়াম ডুপ্লেক্স। বাহির টা যেমন সুন্দর ভিতর টাও ঠিক তেমনই সুন্দর। একটা সময় হাঁটতে হাঁটতে বাসার বাইরে বাগান এ চলে এলাম। কিছুটা দূরে যেতেই কারও সাথে ধাক্কা লাগলো। উফ! এই কে রে হত’চ্ছারা দেখে হাঁটতে পারিস না, কানার মেনা। আমার নাক টা ফাটিয়ে দিলো গো আম্মু। বলেই উপরে তাকিয়ে যাকে দেখলাম। তখন তো আমি পুরাই হা হয়ে গেছি।”

#বক্ষ_পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#বোনাস_পর্ব_(রোমান্টিক_পর্ব)

“উপরে তাকিয়ে দেখি কলেজের সেই সিনিয়র ভাইয়া টা। যে আমাকে প্রপোজ করেছিলো। আমিতো মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছি। আমার মুখ থেকে কথা বের হচ্ছেনা।”

“রাত্রি তুমি এখানে!”

“হুম আমি এখানে। কিন্তু আপনি এখানে কি করছেন হুম।”

“কি করছি মানে এটা আমার খালার বাসা আমি এসেছি। তো তুমি এখানে কেনো এসেছো। নিশ্চয় আমাকে ফলো করে চলে এসেছো তাই না। আমার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করার জন্য। আমার দিকে আঙুল তাক করে বলল।”

“ইশ শখ কতো। ঢং দেখে বাঁচিনা। বয়েই গেছে আমার আপনার পিছু করতে। এটা আমার ভাইয়ার বন্ধুর বাসা। আই মিন বেস্ট ফ্রেন্ড এর বাসা। তার উপর আমার আব্বু আর আবির ভাইয়ার আব্বু বিজনেস পার্টনার। আমাদের ইনভাইট করেছে। তাই আমরা এখানে এসেছি।”

“এই এই আপনি আমার আপুর সাথে এই ভাবে বলছেন কেনো হুম। মে’রে বালি চাপা দিয়ে দিবো কিন্তু। রায়াফ বলল সিনিয়র ভাইয়া টা কে।”

“ওহ, পিচ্চি রায়াফ তুমি এতো কিউট কেনো মেরি ভাই। দেখলেই মন চাই কুলে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেই। বির বির করে কথাটি বলল সিনিয়র ভাইয়া টা।”

“ভাইয়া ও ভাইয়া! রাত ভাইয়া! আভা আপু! ভাইয়া তোমরা কোথায় এদিকে এসো তো দেখো এই ছেলেটা আপুর সাথে ঝগড়া করছে। রায়াফ চিল্লাতে থাকলো।”

“কি হয়েছে রায়াফ চিৎকার করছো কেনো। আবির ভাইয়া এসে বলল।”

“তারপর রায়াফ সব কিছু বলল।”

“আবির ভাইয়া রায়াফ এর চুলে ঝাড়া দিয়ে বলল, পা’গল ছেলে এটা তোমার বড় ভাইয়া হয়। আর আমার খালাতো ভাই। ওর নাম ফয়সাল বুঝলে।”

“রায়াফ ফয়সাল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙছি কাটলো। তারপর ও সেখান থেকে চলে গেলো।”

“কিরে ফয়সাল তুই কি রাত্রি কে আগে থেকে চিনিস? মানে কিভাবে চিনিস।”

“আমরা একই কলেজে পড়ি ভাইয়া। ওই রকম ভাবেই চিনি আর কি। প্রপোজ করার ব্যপার টা এড়িয়ে গেলো ফয়সাল।”

“আচ্ছা যা ভিতরে যা। এই রোদে বাইরে কি করছিস।”

“ওকে যাচ্ছি।”

“তারপর আবির ভাইয়া আমাকে বলল, রাত্রি ও তোমাকে বিরক্ত করে।”

“ক কই না তো ভাইয়া বিরক্ত করবে কেনো। ওই আর কি আজই কথা বললাম। নাম টাও আমি জানতাম না আজকে আপনার মুখে শুনলাম। মুচকি হাসি দিলাম।”

“ওহ আচ্ছা চলো ভেতরে। আবির ভাইয়া ও মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো।”

“আমি একটা গোলাপ ছিঁড়তে গিয়েও ছিঁড়লাম না। ভেতরে চলে গেলাম।”

“এতো বড় বাসা এতো এতো রুম আমার কাছে এটা জঙ্গল মনে হচ্ছে। যাই হোক আবির ভাইয়ার খালাতো বোন ফারিয়া আপুর সাথে কিছুক্ষন কথা বললাম। তারা দুই ভাই বোনই। ফারিয়া আপুর অনার্স কমপ্লিট। ওনাকে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে সবাই। কিন্তু ওনি করতে চাইছেন না।”

“আমি একটা সময় হাঁটতে হাঁটতে আভা আপুর রুমের কাছে আসলাম। রুমে ঢুকতে যাবো এমন সময় ভিতরে মোমেন্ট টা দেখে আমার চোখ ছানা বড়া হয়ে গেলো। রাত ভাইয়া আর আভা আপু খুবই ক্লোজলি দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যকার দূরত্ব খুবই কম। লজ্জায় মাথা নিচু করে এক প্রকার দৌড়ে চলে এলাম সেখান থেকে। আবারও ধাক্কা খেলাম কারও সাথে। আহ কে! উপরে তাকিয়ে দেখি আবির ভাইয়া। লজ্জায় ইচ্ছে করছে উড়ে পালিয়ে যাই। আমি কি ধাক্কা খাওয়ার জন্য পি-এইজডি অর্জন করবো নাকি। উফ আর পারিনা। ”

“কি ব্যাপার রাত্রি। কি হয়েছে দৌঁড়াচ্ছো কেনো? ব্রু কুচকে বলল।”

“আ ব না মা মানে ওই আর কি। মা মানে আমি ওইদিক টাই গিয়ে ছিলাম সেখানে তে তেলাপোকা দেখে দৌঁড় দিলাম আর কি। জোরপূর্বক হেসে বললাম।”

“এতো ব্রেব গার্ল তুমি তেলাপোকা ভয় পাও হাসালে পাগলি। এসো আমার সাথে তোমাকে তোমার মতো পরিবেশে নিয়ে যাই চলো। ”

“হুম হুম চলুন। যেতে যেতে ভাবতে লাগলাম, তার মানে কি আভা আপু আর ভাইয়া রিলেশনে আছে? আচ্ছা তাইতো বলি রায়াফ এর কথা ভাইয়া কেনো এতো শুনে। হইতো রায়াফ ও জানে। দাঁড়া বেটা রায়াফ তুই আমাকে বলিস নি। তোর মারবেল সব আমি ড্রেনে ফেলে দিবো। এটা তোর শাস্তি।”

“এই যে মিস নাইট কোথায় হারিয়ে গেলে।”

“ক কই কোথাও না তো চলুন আমি আসছি তো।”

“আমরা এসে গেছি চোখ দুটো বুলিয়ে দেখো তো চারদিক টা। ”

“আবির ভাইয়ার কথায় চোখ বুলিয়ে চারপাশ টা থেকে সত্যি অবাক হয়ে গেলাম। এটা একটা বেলকনি। বেশ বড় বেলকনিটা। এখানে আমার পছন্দের সব ফুলের গাছ লাগানো আছে। একটা দোলনাও আছে এটা আমার দোলনার চেয়ে তৃতীয়াংশ বড় হবে। মানে একদম শুয়ে পড়া যাবে। খুব খুশি হয়ে গেলাম এতো সুন্দর একটা প্লেস দেখে। খুশিতে লাফিয়ে উঠে আবির ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরে বললাম থ্যাংক ইউ ভাইয়া অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ”

“আবির ভাইয়া যেনো ভরকে গেলো৷ তার দুই হাত উপর দিকে ছড়িয়ে দিলো। আমি যখন বুঝতে পারলাম কি করেছি তখন ছিঁটকে সরে এলাম। স সরি ভাইয়া আ আমার আসলে খেয়াল ছিলোনা। আমতা আমতা করে বললাম।”

“মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ঠিক আছে সমস্যা নেই। কিন্তু আশে পাশে আগে দেখে নিয়ো কেও থাকে কিনা। না হলে ফেসে যেতে পারো। ”

“আমি যেনো বেশ লজ্জা পেলাম। আবার তার হাসি টার দিকেও তাকিয়ে রইলাম। কত্ত সুন্দর করে হাসেন ওনি। ভাইয়া আপনার বউ টা লাকী হবে। আনমনে বলে ফেললাম।”

“মানে! হটাৎ এই কথা বললে কেনো?”

“না মা মানে কিছুনা এমনি। এমনি বলেছি। তো বললেন না তো এটা কার বেলকনি। ”

“এটা আমার বেড রুমের বেলকনি। তুমি তোমার ভাবনা জগতে এতোটাই বিভোর ছিলে যে আসার সময় আমার রুম দিয়ে এসেছো সেটাই খেয়াল করোনি।”

“ওহ আচ্ছা। যাই হোক প্রশংসা করতেই হয়। খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন। আমার অনেক ভালো লেগেছে যায়গাটা।”

“বিপরিতে আবারও ভাইয়া মুচকি হাসলো।আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে। ”

“কি হলো এভাবে কি দেখছো। আমাকে নজর দিচ্ছো বুঝি। নজর দিতে হবেনা নিজের জিনিসে নজর দিতে নেই। ”

“তার কথায় হুশে ফিরলাম। চোখ মুখ খিচে মনে মনে বললাম, রাত্রি কন্ট্রোল! নিজেকে কন্ট্রোল রাখতে পারিস না কেনো বোকা। তুই আসলেই একটা ব’লদ। নইতো কেও এভাবে একটা ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকে নির্লজ্জের মতো ছিঃছিঃ। চোখ খুলে বললাম এক মিনিট এক মিনিট নিজের জিনিস মানে। আপনি আবার আমার জিনিস কবে হলেন। মানুষ কখনো জিনিস হয় নাকি।”

“আবির ভাইয়া আমার কিছুটা কাছে এসে বলল, সব কিছু এতো জানার আগ্রহ কেনো। আমি দামি কথা দুইবার বলিনা। তাই এটাও বলতে চাইছিনা। তুমি সৌন্দর্য টা উপভোগ করো। সময় মতো আমি এসে নিয়ে যাবো। এখানে ভালো না লাগলে লিভিং রুমে এসো। নইতো আভার কাছে যেয়ো। আমি শাওয়ার নিতে যাবো এখন। বলেই আবির ভাইয়া চলে গেলো।”

“এতোক্ষনে ভুলেই গেছিলাম রাত ভাইয়া আভা আপুর কথা। ইশ কি একটা লজ্জায় পরে যেতাম যদি ভাইয়ার সামনা সামনি হতাম। ভাবতেই ভীষণ লজ্জা লাগছে। আমি আবার ভাবনা বাদ দিয়ে ফুল গুলো ছুঁয়ে দেখতে লাগলাম। বেশ কিছুক্ষন পর সেখান থেকে উঠে আবির ভাইয়ার রুমে আসলাম। চোখ বুলিয়ে পুরো রুমটা দেখতে লাগলাম। অনেক সুন্দর করে গুছানো। বেশ বড় সর রুমটা। দেয়ালে আবির ভাইয়ার ছবি ঝুলিয়ে রাখা আছে কয়েকটা ফ্রেমে। আমি একটা ছবির দিকে অগ্রসর হয়ে ছবিটায় হাত লাগিয়ে বললাম। এই যে বড় ভাইয়া আপনি এতো কিউট কেনো হুম। জানেন খুব ভালো লাগে আপনাকে৷ আমি আপনার ওই নেশালো চোখ দুটোর মাঝে মত্ব থাকি সব সময়। আপনি আমার ভাইয়ার বন্ধু হতে গেলেন কোন দু:খে। নইলে তো আমি এতোদিনে আপনার সাথে প্রেম করা শুরু করে দিতাম। যাই হোক হইতো আপনি অন্য কারও প্রোপার্টি আমি নজর দিতে চাইছিনা আর৷ আমার ভালো লাগাটা না হয় আমার ভেতরেই থাক।বলেই ছবিটায় আবির ভাইয়ার নাকে একটা গুতো দিলাম। পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি আবির ভাইয়া টাওয়াল পড়নে দাঁড়িয়ে আছে। আ আ আ আ চিৎকার করে চোখ বন্ধ করে নিলাম। ”

“আবির ভাইয়া আমার মুখ চেপে ধরে বলল, হুসসস চিৎকার করছো কেনো। কি হয়েছে কি।”

“আমার মুখ চেপে ধরায় আমি চট করে চোখ খুলে ফেললাম। উম উম করতেই লাগলাম। আবির ভাইয়া হাত সরালো মুখ থেকে। ছাঁড়ুন! আ আপনি এভাবে বেড়িয়েছেন কেনো? আর আমাকে এভাবে ধরেছেন কেনো। ”

“তো কি হয়েছে এটা তো আমারই বেড রুম একদম টাওয়াল ছাড়া বের হলেও সমস্যা নেই। তাই বলে এভাবে চিৎকার করবে নাকি। বাসা ভর্তি লোকজন সবাই শুনলে কি ভাববে।”

“আমি ধাক্কা দিয়ে আবির ভাইয়া কে সরিয়ে দিতে চাইলেও পারলাম উলটে স্লিপ খেয়ে আবির ভাইয়ার বেডে পড়ে গেলাম। আমাকে ধরে ছিলো বিদায় আবির ভাইয়াও আমার উপর পড়ে গেলো। আর তার অধর যুগল আমার ললাট স্পর্শ করলো। আমি চোখ মুখ খিচে নিস্তব্ধ হয়ে আছি। নিশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে আসছে। ”

“বেবি হেয়ার গুলো কপাল থেকে সরিয়ে কানে গুজে দিয়ে বলল, এতো ছট ফট কেনো করো হুম। থাক সমস্যা নেই একটা সময় ঠিকি শান্ত হয়ে যাবে৷ বলেই মুচকি হাসলো আবির ভাইয়া। তারপর চুপ করে রইলো৷ ”

“আমি শান্ত পরিবেশ ভেবে চোখ খুললাম, দেখি আবির ভাইয়া ঘোরলাগা চাহনী দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আ ব আবির ভাইয়া কি কি করছেন। উঠুন। ”

“আবির ভাইয়া থতমত খেয়ে গেলো। তারপর উঠতে গিয়েও উঠলোনা আমাকে চেপে ধরে হাত গুলো খাটে। তারপর আমার গলায় মুখ গুজে রাখে কিছুক্ষন। আমি আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে রাখলাম। চাইলেও যেনো পারছিনা সরিয়ে দিতে। অবশ হয়ে আসছে হাত পা গুলো। দেহটা যেনো নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। ”

“নিচ থেকে ডাক পড়লো আবির বলে। ”

“ভা ভাইয়া উঠুন আপনাকে ডাকছে। ”

“আবির ভাইয়া কানে ফিস ফিস করে বলল শান্ত থাকলে সত্যি তোমাকে মানায় না। তোমার বেবিদের মতো আচরন গুলো, ছটফটানি গুলোই বেশ ভালো লাগে। যাও নিচে যাও আমি আসছি। আর হ্যাঁ সরি। বলেই আবির ভাইয়া আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে উঠে চলে গেলো ড্রেসিং টেবিল এর সামনে।”

“আমি তাড়াতাড়ি উঠে দিলাম এক দৌড়। ”

” বেচারি খুব লজ্জা পেয়েছে। ভালোই লাগে লজ্জা পেতে দেখলে। পাগলি মেয়ে! খুব ভালোবাসি তোমায়। আজ আমিও জেনে গেলাম যে তুমি আমাকে পছন্দ করো। কিন্তু ভালোবাসো কিনা জানিনা। বাট আই ডোন্ট কেয়ার। ভালোবাসা আদায় করে নিতে জানি আমি। তবে তার জন্য তোমাকে সময় দিতে চাই আমি। এখন কোনোকিছু শুনা তোমার জন্য বেটার হবেনা। স্টাডি থেকে ফোকাস কমিয়ে দিবে। যে টা আমি চাইছিনা। দিন শেষে আমি আমি তোমাকে পেলেই চলবে। জাস্ট ওয়াচ এন্ড সি। মাই কুইন। মনে মনে কথা গুলো বলল আবির আর অস্ফুট সুরে হাসলো।”

“সিঁড়ি দিয়ে হাঁটছি আর হাপাচ্ছি। ওরে বাপ আর একটু হলে তো আমার দমই বন্ধ হয়ে যেতো। কি উঁচবুক রে বাবা। ”

“কি ব্যাপার রাত্রি কি বলছো। আর হাঁপাচ্ছো কেনো?পেছন থেকে ফয়সাল ভাইয়া বলল।”

“না না ম মানে কিছুনা। ওই আর কি রায়াফ কে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। ”

“তাই বলে এভাবে দৌড়ে। রায়াফ তো ছাদে ছিলো আমার সাথে ওইতো আসছে। ”

“কিরে আপু কি হয়েছে। রায়াফ বলল।”

“কিছুনা তোকে খুঁজছিলাম আর কি। একা একা ভালো লাগছেনা। চল আমার সাথে। বলেই রায়াফ কে টেনে নিয়ে বাসার বাইরে বাগানে চলে গেলাম। আবির ভাইয়া দের কৃষ্ণচূড়া গাছ টার নিচে। ওখানে বসার যায়গা রয়েছে। ফয়সাল ভাইয়া ও আসলো আমাদের পিছু পিছু। ”

“কি ব্যাপার একবারে বাইরে চলে এলে যে কোনো সমস্যা। ফয়সাল ভাইয়া বলল।”

#চলবে

বক্ষ পিঞ্জর পর্ব-০৪+০৫

0

#বক্ষ পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#পর্বঃ৪+৫

“তুমি বুঝবা কি করে। তোমার মাথায় তো গো’বর পোড়া। সবার বকোনি খেতে খেতে তোমার মাথা টা চলে গেছে। একটু তো আমার মতো লিজেন্ট হও আপু। বলেই রায়াফ গাড়ির বাইরে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হাসছে।”

“এই ভাই বল না কি ভাবছিস?”

“আরে আপু আমার মনে হয় কি ভাইয়া আর আভা আপু দুজন দুজনকে পছন্দ করে। এই কথা বলেই রায়াফ দাঁত বের করে শব্দ ছাড়া হাসতে লাগলো। ”

“সে কি কথা ভাই সত্যি নাকি! আচ্ছা তুই কি করে বুঝলি? আর এটা তো সত্যি না ও হতে পারে। আবির ভাইয়া আর রাত ভাইয়া বেস্ট ফ্রেন্ড। সেহেতু আভা আপু আবির ভাইয়ার বোন। সেই হিসেবে সম্মাননা করে একজন আরেকজনের সাথে কথা বলতেই পারে। এতে করে তুই এমন কথা কিভাবে বলতে পারিস।”

“চুপ করো তো আপু। তুমি এসব বুঝবেনা। এরই মধ্যে ভাইয়া চলে এলো। রায়াফ চুপ করে বাইরের পরিবেশ দেখা শুরু করলো। আমিও চুপ করে বসে রইলাম। তারপর আমরা বাসায় পৌঁছে গেলাম কিছুক্ষনের মধ্যে। বাসায় এসে প্রতি দিনকার মতো শাওয়ার নিয়ে বের হলাম। আজকে বৃষ্টির দিন ছিলো বিদাই বিকেলের পরিবেশ টা শীতল আবহাওয়ার কারনে অনেকটা সুন্দর আর স্নিগ্ধ লাগছে। তাই আমি চট করে আম্মুকে গিয়ে বললাম, আম্মু আমাকে কফি দাও তো এক মগ। তারপর কিচেন থেকে রুমা আপু বলে উঠলো, খালাম্মা রে কেন কই’তাছেন আমারে কই’লেই তো হয় তো হয়। ”

“আচ্ছা ঠিক আছে দিয়ে যাও। রুমা আপু হচ্ছে আমাদের বাসার সার্ভেন্ট। খুব ভালো মেয়েটা। আমার ১ বছরের বড়। যাই হোক তারপর আমি লিভিং রুমে গিয়ে সোফা তে বসে পড়লাম। পায়ের উপর পা তুলে ঝু’লাতে লাগলাম। ”

“এই ল’ন আপনের কফি। রুমা আপু আমাকে কফিটা হাতে দিয়ে বলল। তারপর আমি কফির মগটা হাতে নিয়ে আমার রুমে গিয়ে বেলকনিতে দোলনায় বসে পড়লাম৷ কফিতে একের পর এক চুমুক দিচ্ছি আর ঠান্ডা বাতাশ টা অনুভব করছি। কফিটা শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম। তারপর রুমে চলে এসে একটা উপন্যাস বই পড়তে বসে গেলাম। বইটা অর্ধেক পড়া শেষ করতেই মাগরিব এর আযান দিয়ে দিলো। তারপর উঠে কিছুক্ষন হাঁটা হাঁটি করলাম। সন্ধ্যায় লিভিং রুমে আমি আম্মু রাত ভাইয়া আর রায়াফ বসে আছি। রুমা আপু আমাদের চা বিস্কিট দিয়ে গেছেন। আমি চা পছন্দ করিনা সেটা রুমা আপু জানে তাও আমাকে চা দিলো। আমি সেটা রুমা আপুকে দিয়ে বললাম, তুমি খাও ভালো লাগবে। জানোই তো আমি চা পছন্দ করিনা৷ মুচকি হেসে চায়ের কাপটা ধরিয়ে দিলাম রুমা আপুর হাতে৷ রুমা আপু কাপটা নিয়ে আমাদের সাথেই বসে পড়লো। ”

“রায়াফ আম্মুকে বললো, আম্মু আমার না বিয়ে খেতে খুব ইচ্ছে করছে। তুমি ভাইয়া কে একটা বিয়ে করিয়ে দাও নইলে আপুকে বিয়ে দিয়ে দাও। ”

“আম্মু বলল, বা’দর ছেলে এতো কথা বলিস কেনো।”

“ভাইয়া কে বলছিস বল না! আমাকে নিয়ে পড়েছিস কেনো। হুহ! আমার কি বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি? ভাইয়া কে দেখ। ভাইয়া তো এত্তো বড় হয়ে গেছে কইদিন পর বুড়ো হয়ে যাবে। ভাইয়াই এখনো বিয়ে করেনি৷”

“এই তোরা আমার বিয়ে করা নিয়ে পড়েছিস কেনো। হুম! আর রাত্রি তুই বলছিস আমি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। কোন দিক থেকে আমাকে বুড়ো মনে হয় হ্যাঁ সবে মাত্র ২৬ বছর চলছে। কিছুটা ভাব দেখিয়েই ভাইয়া কথা টা বললো।”

“ভাইয়া ২৬ বছর কি কম নাকি। ২ দিন পরই তো আরও বয়স হয়ে যাবে। তখন তোমাকে কেও বিয়ে করবেনা৷ মেয়েরা তোমাকে দেখলে বলবে বুড়ো জামাইকে বিয়ে করবোনা। তারপর দেখা যাবে আমরা আমাদের কিউট ভাইয়ার জন্য আর বউ খুঁজে পাচ্ছিনা। তখন তো আমাদেরই কষ্ট হবে তাই না। কি রে আপু বল না আমি সত্যি বলিনি? ”

“হ্যাঁ হ্যাঁ রায়াফ তো ঠিকি বলেছে। আম্মু তুমি বরং একটা মিষ্টি মেয়ে দেখে আমাদের ভাইয়ার বউ করে নিয়ে এসো। তখন আমরাও আর একটা সঙ্গী পেয়ে যাবো। তাই না। ”

“আম্মু বলল, আচ্ছা তাই নাকি। ঠিক আছে তাহলে তোদের আব্বু আসুক এই বছরেই তোদের ভাইয়ার জন্য একটা বউ নিয়ে আসবো কি বলিস। ”

“আম্মুর কথা যেনো বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তাই আমি রায়াফ জুড়ে বলে উঠলাম সত্যিই! ”

“হ্যাঁ সত্যি।”

“ভাইয়া বলল, আম্মু তুমিও ওদের সাথে তাল মিলিয়ে বলা শুরু করেছো। আমি এখন বিয়ে সাদি করতে পারবোনা। আরও বছর দেড় এক চলে যাক না। তারপর না হয় কিছু ভাবা যাবে। ”

“আম্মু বলল, উহুম একদম না। আমার ও তো একটা বউ মা লাগবে৷ তোরা চলে গেলে বাসায় একা থাকি কতো ভালো লাগে একা থাকা। তাই তো তোর বউ আনার ব্যবস্থা করবো। যাতে আমাকে বাসায় একা থাকতে না হয়৷ ”

“তোমাদের সাথে আর পারিনা আমি৷ আব্বু আসুক তারপর যা খুশি করো ঠিক আছে৷ বলেই ভাইয়া নিজের রুমে চলে গেলো। ”

“আমি আম্মু রায়াফ একসাথে তাল মিলিয়ে হাসতে লাগলাম। রুমা আপু ও হাসলো৷ তারপর যে যার রুমে চলে গেলো। আমি রুমে এসে পড়তে বসলাম। পড়তে পড়তে ঘড়ির কাটা ১০ঃ৪৫ ছোয়ালো। তারপর আমি উঠে গেলাম টেবিল ছেড়ে। ঘুম ঘুম লাগছিলো চোখে তাই বেসিন থেকে মুখ টা ধুয়ে এসে বেলকনিতে গেলাম। আজকে চাঁদ তারা কিছুই নেই আকাশে। মেঘ গুলো তার আবরন দ্বারা পরিবেষ্টিত করে রেখেছে পুরো আকাশ৷ আকাশ টা কে একদম বিষন্ন দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেনো একটু পর কান্না করে দিবে। তারপর হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে লাগলো । তাই আমি রুমে এসে বেলকনির দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে একেবারে খাবার টেবিলে গিয়ে বসে পড়লাম। দেখলাম রুমা আপু টেবিলে খাবার পরিবেশন করছে৷ হইতো কিছুক্ষনের মধ্যেই আমাদের ডাকা হতো। যাক ভালোই করেছি আগে আগে এসে। একে একে সবাই চলে এলো। তারপর খাওয়া শেষ করে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চলে গেলাম। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে লাগলাম। কারন ঘুম যখন এসেছিলো তখন ঘুমাতে পারিনি। তাই এখন ঘুম উধাও হয়ে গেছে। এটা আমার খুব বা’জে হেবিট’স গুলোর মধ্যে একটা। রাত প্রায় ২ টা বেজে গেলো তাও আমার ঘুম আসছেনা। কাল যেহেতু শুক্রবার তাই বেশি প্যারা ও নিচ্ছিনা। খুব কষ্টে ঘুমিয়েছি রাত টা পার করেছি কোনোভাবে । সকাল তখন কইটা বাজে জানা নেই এলার্ম দেয়নি। কারন ঘুম থেকে এতো তাড়াতাড়ি উঠার দরকার নেই। আড়মোড়া ভেঙে উঠতেই দেখলাম ১০ টা বেজে গেছে। এই রে আম্মু এখনো আমাকে ডাকেনি। আল্লাহই জানে কি পি’টানি দেয় আমাকে৷ ভাইয়া ও বাসায় আজ তাহলে তো ভাইয়া ও বকা দিবে। ভয় পেয়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম তাড়াতাড়ি উড়না টা গায়ে জড়িয়ে এক প্রকার দৌড়ে লিভিং রুমে চলে গেলাম। আমাদের লিভিং রুম ডাইনিং রুম একই সাথে শুধু মাঝ খানে খানিকটা পাশ দেয়াল আর স্টোন এর মারবেল সেট করা দুই পাশে। এই দৌড়ে আসার কারনে মারবেল গুলোতে হাত লেগে শব্দ হতে শুরু করলো৷ আমি বেশ বিরক্ত হলাম এটার শব্দে যদিও বা এটা আমার দ্বারাই হয়েছে৷ তখনই দেখি সোফায় বসে থাকা একজন ব্যক্তি আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমি খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। যদিও বা কাওকে দেখে কখনো এমন হয়না। বা লজ্জা বোধ ও করিনা ওই সব ন্যাকা শ’ষ্টি লজ্জা আমার দ্বারা হয়না৷ সোফায় বসে থাকা ব্যক্তিটি আর কেও না আবির ভাইয়া। সোফায় ভাইয়া আম্মু রায়াফ আর আবির ভাইয়া হইতো বসে গল্প করছে। আমার কিছুটা খারাপ লাগলো এই ভেবে যে, তারা আমাকে না ডেকে একা একা গল্প করছে। ধীরে ধীরে আম্মুর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। আসসালামু আলাইকুম আবির ভাইয়া। কেমন আছেন।”

“হুম আলহামদুলিল্লাহ তুমি কেমন আছো। ”

“জ্বি আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। তো আপনি কি একাই এসেছেন নাকি?”

“হুম রাত সকাল সকাল ফোন করলো চলে আসতে আর আন্টিও খুব করে বললো, তাই আমি এসেছি৷ যেহেতু আজ শুক্রবার তাই আমাদের অফিসে তেমন কাজ নেই। ভাবলাম যে কিছুক্ষন সময় কাটাবো দুই বন্ধু। ”

“ওহ আচ্ছা খুব ভালো করেছেন। আভা আপু আন্টি আংকেল কে নিয়ে আসলে আরও ভালো হতো। ”

“আভা এসেছে তো! আবির ভাইয়া বলল।”

“কোথায় দেখছিনা যে! ”

“ও কোথাও একটা গেছে হইতো। ”

“ওহ আচ্ছা আমি দেখছি। বলেই আভা আপুকে খুঁজতে লাগলাম কোথায় গেলো৷ হাঁটতে হাঁটতে ভাইয়ার রুমে চলে আসলাম। এসে দেখি আভা আপু ভাইয়ার ড্রেসিং টেবিল এ রাখা ফ্রেমের ছবিটা হাতে নিয়ে খুব চাহনী দিয়ে দেখছে। আমি পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম আভা আপুকে। ”

“ক কে কে? ভয় পেয়ে বললো আভা আপু।তাড়াতাড়ি করে ফ্রেম টা যায়গায় রেখে দিলো।”

“সামনে যেয়ে বললাম আপু কেমন আছো৷ কখন এসেছো আমাকে ডাকোনি পর্যন্ত। খুব অভিমান করেছি আমি৷ ”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। এইতো খানিক্ষন আগেই এসেছি। তুমিতো ঘুমাচ্ছিলে। আমি একবার ডাকতে গিয়েছিলাম তখন আবির ভাইয়া বলল না ডাকতে। তাই আর যায়নি। তো কখন উঠলে তুমি।”

“এইতো মাত্রই উঠেছি৷ ”

“চলো আগে নাস্তা করে এসো তারপর জমিয়ে আড্ডা দিবো। ঘুড়তে বের হবো। ”

“সত্যি! খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম”

“হুম সত্যি। ”

“কিন্তু রাত ভাইয়া তো মনে হয় আমাকে নিবেনা। ব’কা দিবে। মন খারাপ করে বললাম। কারন ভাইয়া আমাদের কখনো ঘুড়তে নিয়ে যায়না। অন্য কারও সাথে যেতেও দেয়না। ”

“কে বলেছে নিবেনা । আলবাত নিবে। তোমার ভাইয়া নিবে ওর ঘা’ড় নিবে। চলো আগে নাস্তা করো।”

“তারপর আমি আভা আপুকে নিয়ে আবার লিভিং রুমে চলে আসলাম। আভা আপু রায়াফ এর পাশে গিয়ে বসেছে। আমি এই ফাকে টেবিলে এসে বসে পড়লাম। রুমা আপুকে ডেকে খাবার দিতে বললাম। রুমা আপু স্যান্ডউইচ বানিয়ে দিলো তাড়াতাড়ি করে। আমি টেবিল এ বসে আরামছে খাচ্ছি। আবির ভাইয়া যে আমার মুখোমুখি বসা আমার সেদিকে খেয়ালই নেই। গালে চেপে খাবার খেয়েই যাচ্ছি। হটাৎ সামনে চোখ পড়তেই দেখলাম রায়াফ আর আবির ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। এটা দেখে আমি বোকা বনে গেলাম। কি বেপার ওরা হাসছে কেনো৷ ভেবেই ব্রু কুচকে তাকালাম ওদের দিকে। তখন আবির ভাইয়া আমাকে ইশারা দিলো যে আমার ঠোঁট এ খাবারের অংশ লেগে আছে। তারপর আমি টিসু নিয়ে মুখ টা মুছে আবার খাওয়ায় মন দিলাম।খাবার শেষ করে সোফায় তাদের সাথে গিয়ে বসলাম। আম্মু সেখান থেকে উঠে চলে গেলো রুমে৷ আব্বু ফোন করেছে মনে হয় রিং বাজছে ফোন এ। তাই আম্মু উঠে চলে গেলো। আভা আপু আবির ভাইয়া আর রায়াফ হাসছে কি কথা নিয়ে যেনো। আমি নিরব দর্শক হয়ে তা দেখছি। হটাৎ আবির ভাইয়ার সাথে আমার চোখাচোখি হয়ে গেলো। আমি চোখ সরিয়ে আগের মতো তাদের কথা শুনছি। তারপর সেখানে আম্মু এলো ফোন নিয়ে আর বললো, নে তোর আব্বু কথা বলবে তোর সাথে। আমি ফোন টা নিয়ে ডিভানে বসলাম তাদের থেকে একটু দূরে। তারপর…

“আমি আব্বুর সাথে ভিডিও কলে কথা বলতেছি। আব্বুকে বললাম, আব্বু তুমি কবে আসবে দেশে? তুমি নেই আমার একটু ও ভালো লাগেনা। ভাইয়া আম্মু রায়াফ সবাই আমাকে ব’কা দেই। প্লীজ তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো। মন খারাপ করে রইলাম কথা গুলো বলে।”

“মামনী মন খারাপ করেনা। আব্বু আর দুইদিন পরই বেক করবো বাংলাদেশে। তখন আমি সবাইকে ব’কে দিবো কেমন। একদম মনম’রা হয়ে থাকবেনা। আমার মেয়েকে হাসি খুশিই বেশি সুন্দর লাগে কেমন।”

“সত্যি তুমি দুইদিন পর চলে আসবে। ”

“হ্যাঁ। ”

“এহ আমাকে ফেলে তোমরা কথা বলছো। আমি কি নদীর ঢেউ এ ভেসে আসছি নাকি। রায়াফ দৌড়ে এসে কথাটা বললো।”

“তুই স’র এখান থেকে এটা তোর আব্বু না আমার আব্বু। যা ভা’গ! বলেই রায়াফ কে সরিয়ে দিলাম।”

“তুমি বললেই হলো। আব্বু দেখেছো আপু আমাকে অপমান করছে কিন্তু।তুমি কিছু বলবেনা।”

“আরে তোমরা সবাই তো আমার রাজকন্যা আর রাজপুত্র। তাই বলে ঝ’গড়া করবে নাকি। এটা কিন্তু মোটেও ভালো না কেমন।”

“ওকে আব্বু তুমি কিন্তু আপুর জন্য ওখান থেকে কিছু নিয়ে আসবেনা। সব কিছু আমার জন্য আনবে।”

“হুহ আনবে তোর জন্য তাই না! ভেঙছি কে’টে বললাম রায়াফ কে।রায়াফ ও আমাকে ভেঙছি দিয়ে আবার আভা আপুর পাশে গিয়ে বসলো। আমি ওইদিক তাকাতেই দেখলাম আবির ভাইয়া খুব মনযোগ দিয়ে আমাদের দেখছিলো হইতো। আমার তাকানো দেখে তিনি চোখ সরিয়ে নিলেন। আমিও আরও কিছুক্ষন কথা বলে আব্বুর সাথে তারপর ফোন টা আম্মুকে দিয়ে দিলাম।”

“আমি সেখান থেকে আমার রুমে চলে এলাম। আভা আপুকে বলে এসেছি আমার রুমে আসতে।আমি রুমে এসে বেলকনিতে বসে আছি আর আমার গোলাপ ফুলের গাছ গুলো কে হাত দিয়ে না’ড়াচ্ছি।কিছুক্ষন পরেই রায়াফ আমার রুমে ঢুকেই বললো, আপু আসবো। ”

“তুই তো এসেই পড়েছিস তাহলে আবার পারমিশন নি’চ্ছিস কেনো। বে’য়াদব ছেলে, রুমে এসে বলে কিনা আপু আসবো। ভেঙিয়ে বললাম কথাটা।”

“আপু তুমি ওখান ত্থেকে চলে এলে কেনো। আমরা তো মজা করছি অনেক আসো তুমি।”

“নাহ ওখানে বড়রা সবাই কথা বলছে আমি যাবো কেনো।”

“তাতে কি চলো।”

“নাহ তুই যা আমি যাবোনা।”

“আমি গেলাম না। এরই মাঝে আভা আপু আমাকে জুড়ে ডাক দিলো। রাত্রি এদিকে এসো তো কথা আছে। ”

“তারপর সেখানে গেলাম। সোফায় টেনে বসালো আভা আপু। তারপর বললো, রাত ভাইয়া আমরা ঘুড়তে যাবো ভেবেছিলাম কিন্তু এই বৃষ্টিতে তো ঘুড়তে যাওয়া যাবেনা। তাই আমি ভাবছিলাম যে আমাদের আব্বু আর আংকেল দেশে আসলে তারপর আমরা ট্যুরে যাবো। কি বলো সবাই।”

“রায়াফ খুশিতে নেচে উঠলো। আমিও সম্মতি দিলাম। আবির ভাইয়া ও বললো ঠিক আছে। রাত ভাইয়া কিছুক্ষন মুখটা গম্ভীর রেখে ব্রু কুচকে আভা আপুর দিকে তাকিয়ে আছে। এইভাবে তাকালো কেনো বুঝলাম না। আমাদের নিয়ে যাবে ভেবে কি আভা আপুর দিকে এভাবে তাকালো। নাকি অন্য কোনো কারন। তারপর ভাইয়া বললো, আচ্ছা সময় হোক দেখা যাবে। এই বলেও কিছুটা নাক ফু’লিয়ে আভা আপুর দিকে তাকালো। রায়াফ কে ইশারা করলাম দেখনা একবার ভাইয়ার মুখটা।”

“রায়াফ তাকিয়ে কি যেনো একটা ভাবলো তারপর ফিক করে হেসে দিলো। সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রায়াফ এর হাসির শব্দ শুনে রাত ভাইয়া হুর’মোর করে রায়াফ এর দিকে তাকালো। মনে হয় ভাইয়া ধ্যা’নে ছিলো।”

“কিরে তুই হু’দায় হাসছিস কেনো? আমি বললাম।”

“এমনি ও তুমি বুঝবেনা। বলেছিলাম না কালকে গাড়িতে। আমার কানে কানে ফিস ফিস করে বললো রায়াফ।আমি কিছুই বুঝলাম না। তারপর রাত ভাইয়া উঠে তার রুমে চলে যেতে নিলে আভা বললো, ভাইয়া চলে যাচ্ছো কেনো।রাত ভাইয়া আবার রেগে তাকালো।তারপর চলে গেলো। আমি শুধু চেয়ে দেখতে লাগলাম ওদের কাহিনী। কিন্তু হিসাব টা মেলাতে পারলাম না । ”

“আভা আপু বললো কি হলো চলে গেলো কেনো? ”

“আবির ভাইয়া বললো, হইতো কাজ করতে গেছে রুমে চলে আসবে। আচ্ছা রায়াফ চলো আমি তোমার সাথে আড্ডা দিবো এসো তোমার রুমে যাই।বলেই আবির ভাইয়া রায়াফ কে নিয়ে চলে গেলো।”

“আভা আপু বললো আমরা কি করবো যে যার মতো চলে গেলো। আচ্ছা তুমি একটু বসো আমি দেখে আসি রাত ভাইয়া কি করছে।”

“আচ্ছা যাও। আর আমি সিঙ্গেল ব্যক্তি একা বসে রইলাম।”

“আসবো রাত ভাইয়া। আভা আপু ভাইয়ার রুমে গিয়ে বললো।”

“রাত ভাইয়া আভা আপুকে টেনে নিয়ে দেয়ালে চেপে ধরে বললো, আমি তোমার কোন জন্মের ভাইয়া হুম।সেই তখন থেকে ভাইয়া ভাইয়া করে চি’ল্লাচ্ছো যে।”

“আভা আপু ভাইয়ার শার্ট এর কলার দুইহাতে ধরে আস্তে আস্তে বললো, সবার সামনে কি তোমাকে অন্য কিছু বলা যাবে নাকি। তাইতো ভাইয়া বলেছি। এতো রাগ করো কেনো। ”

“তাই না! তাহলে শা’স্তি পেতে হবে।বলো যা শা’স্তি দিবো তাই মাথা পেতে নিবে।”

“ঠিক আছে বলো।”

“এক্ষুনি আমাকে কি’স করবে তাও লি’প এ। বলো রাজি। ”

“ওহ এই শাস্তি। এ আর তেমন কি। ”

“তাহলে করে ফেলো।”

“এইরে সেরেছে কি বলে ফেললাম। এখন কি করবো। মনে মনে আভা আপু বললো। তারপর আস্তে আস্তে মুখ টা ভাইয়ার মুখের কাছে নিলো। ভাইয়া আভা আপুর দিকে ঝু’কে রইলো।”

“রায়াফ তোর ভাইয়া কে বল তো আম্মু ডাকছি।”

“আচ্ছা আম্মু যাচ্ছি। এই বলে রায়াফ ভাইয়ার রুমের দিকে গেলো। দরজায় দাঁড়িয়ে হা করে তাকিয়ে রইলো রায়াফ। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো, ভাইয়া তোমাকে আম্মু ডাকছে তাড়াতাড়ি যাও। ”

“রাত ভাইয়া আর আভা আপু ছিটকে সরে গেলো। তাদের আর রোমান্স করা হলোনা রায়াফ ১২ টা বাজিয়ে দিলো। রাত ভাইয়া রায়াফ কে হাত চেপে ধরলো তারপর রুমে নিয়ে বললো, কিরে যাচ্ছিস কোথায় এদিকে আয়। ”

“আ আ ভাইয়া আমি কিছু দেখিনি সত্যি কথা। আমি কিচ্ছু দেখিনি। ছেড়ে দাও আমাকে। ”

“মিথ্যে বলবিনা একদম। ”

“রায়াফ তুমি তো আমার গুড বিগ ব্রাদার তাই না। আশা করি তুমি আমার ভালোবাসা উপেক্ষা করোনা ।তাই বলছি কি যেটাই দেখেছো ওইটা যেনো আমাদের মধ্যে থাকে হুম। এটা অন্য কেও জানলে তো লজ্জার বিষয় তাইনা। তাই আমরা এটাকে সিক্রেট রাখবো। প্রমিস করো। আভা আপু বললো।”

“তাহলে ভাইয়া কে বলে দাও আমাকে যেনো আর না বকে। সব সময় যেনো চকোলেট আইস্ক্রিম এসব কিনে দেই।”

“আচ্ছা রে ভাই আমার ঠিক আছে। এখন বল কেনো এসেছিস।”

“আম্মু ডাকে তোমাকে। তাই ডাকতে এসেছিলাম। চলো। তারপর ভাইয়া রায়াফ কে নিয়ে আম্মুর রুমে চলে গেলো। আভা আপু ভাইয়ার রুমে বসেই কাগজ পত্র দেখছিলো।”

“আমি সোফা থেকে উঠে নিচের দিকে তাকিয়ে আমার রুমে যেতে লাগলাম। হটাৎ কারও সাথে ধাক্কা খেয়ে গেলাম। আহ, কে দেখে হাঁটতে পারোনা।বলেই উপরে তাকালাম। আ আবির ভাইয়া আপনি। স সরি আমি আসলে বুঝতে পারিনি। ”

“ইট’স ওকে। তো মুখটা এমন করে রেখেছো কেনো। তোমাকে তো হাসলে অনেক বেশি সুন্দর লাগে। ”

“না মানে আসলে কিছুনা এমনি। ”

“ওহ আচ্ছা এমনি তাই না! আচ্ছা ঠিক আছে। তো এভাবে ছুটে যাচ্ছিলে কোথায়।”

“রুমে যাচ্ছিলাম আর কি।”

“এরই মাঝে রায়াফ এসে বললো, তোমরা এখানে কি করছো। ”

“আমরা তোমার আপুর সাথে কথা বলছি। মুচকি হেসে আবির ভাইয়া বললো।”

“এই আবির ভাইয়া চলো আপুর রুমে যাই ওর বেলকনিতে অনেক ভালো লাগে চলো নিয়ে যাই তোমাকে। ”

“আবির ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমিও তাকিয়ে রইলাম। ভাইয়ার চোখ দুটো খুব সুন্দর। তার চোখের দিকে তাকালে কেমন যেনো একটা নে’শাক্ত ভাব অনুভব হয়। আমার ভাইয়ার বন্ধু না হলে আমি নিশ্চিত তার সাথে প্রেম করা শুরু করে দিতাম। বলেই মনে মনে হাসলাম। তারপর বললাম ভাইয়া চলুন।”

“আমার বেলকনিতে গিয়ে রায়াফ আবির ভাইয়া কে আমার দোলনা টায় বসিয়ে দিলো। আর রায়াফ নিজেও আবির ভাইয়ার কুলে বসে পড়লো। ”

“এই রায়াফ এদিকে আয়। রাত ভাইয়া রায়াফ কে ডাক দিলো। রায়াফ উঠে চলে গেলো। ”

“আমি গিয়ে আবির ভাইয়ার পাশে দাঁড়ালাম। আবির ভাইয়া উঠে দাঁড়ালো আর বলল,

এই বৃষ্টির নেশাতে মন চায় হাড়াতে।
সব সীমা ছাড়িয়ে মন চাই শুধু তোমাকে।

” বলেই আবির ভাইয়া আমার দিকে আবার তাকালো। সেই নে’শাতুর চোখ দুটো দিয়ে। ”

“আমিও তার দিকে তাকিয়ে বললাম, ভাইয়া আপনি তো খুব সুন্দর করে ছন্দ সাজাতে পারেন। আপনাকে কবি বললেও কোনো দিকে ভুল বলা হবেনা।”

“তা জানিনা। তবে আমার এগুলো ছন্দ নয়। ”

“তবে কি? ”

“যদি বলি এগুলো আমার মনের কথা। যে টা আমি চাইলেই সেই মানুষ টাকে স্ব-চোক্ষে সম্মুখে বলতে পারিনা। বলেই ভাইয়া বৃষ্টির পানে তাকিয়ে রইলো। ”

“বাহ এতো গুছিয়ে কিভাবে কথা বলতে পারেন। আচ্ছা ভাইয়া সেই মানুষ টা কে আমি কি শুনতে পারি। ”

“আছে কেও একজন সময় হলে তুমিই বুঝে যাবে। আমাকে বলতে হবেনা। মনে করো যে তোমারই ব্যক্তিত্বের অধিকারী সে।”

“এতো কঠিন কথা আমি বুঝিনা ভাইয়া। যাই হোক আপনার সমস্যা হলে বলার দরকার নেই।”

“ভাইয়া মুচকি হেসে আবারও আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।”

“আচ্ছা ভাইয়া আপনার চোখে কি এলকোহল মেশানো আছে? ”

“আবির ভাইয়া ব্রু কুচকে তাকালো আমার দিকে।বলল, মানেহ।”

“না মানে কিছুনা এমনি বলেছি। বলেই আমি বৃষ্টির পানে হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলাম বৃষ্টির সেই ফোঁটা পানি গুলোকে। আর মনে মনে বললাম, স্বাদে কি আর বলেছি মি. আমিতো আপনার চোখ দুটোর নে’শায় মা’তাল হয়ে পড়েছি৷ ”

“এভাবে অনেকটা সময় আমরা গল্প করেছি। ”

“লাঞ্চ এর টাইম হয়ে গেলে আম্মু আমাদের সবাই কে ডেকে পাঠালো খাবার খাওয়ার জন্য।”

“রাত ভাইয়া আবির ভাইয়া রায়াফ এক পাশে বসেছে টেবিলে। আমি আভা আপু আম্মু এক পাশে। আভা আপুর সামনে রাত ভাইয়া বসা। আমার সামনে আবির ভাইয়া। খাবার খাওয়ার সময় আমি আবার আমার পা গুলো ঠিক যায়গায় রাখতে রাখতে পারিনা। তাই নড়া চড়া করতে গিয়ে হটাৎ…

#চলবে

বক্ষ পিঞ্জর পর্ব-০২+০৩

0

#বক্ষ পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#পর্বঃ২+৩

“আম্মু বেড়িয়ে গেলে আমি ক্যান্ডেল টা স্টাডি টেবিল এ একটা ছোট্ট হোড এর উপর রেখে দিলাম। বেলকনির দরজা দিয়ে বাইরের হালকা বাতাশ আসছে। তাই আমি দরজা টা লাগিয়ে দিতে গেলাম। ওখানে দরজার কাছে যেতেই দেখতে পেলাম রাস্তার পাশে ফুটপাতে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু অন্ধকার এ ঠিক চিনতে পারলাম না। ল্যাম্পপোস্ট এর আলো না থাকায় খুব বেশি দেখা গেলোনা তাই চেনা দায় হয়ে গেলো। তাই বেশি মাথা না ঘামিয়ে দরজা টা লাগিয়ে রুমে চলে এলাম। রুমে এসে খাটে বসে হেলান দিতে যাবো ওমনি কারেন্ট চলে এলো। তাই দেরি না করে চট জলদি ক্যান্ডেল টা এক ফূঁ দিয়ে নিভিয়ে গিয়ে পড়তে বসলাম। বাংলা বইটা খুলে যা দেখলাম তা দেখে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। এটা দেখে আমার আর বুঝতে বাকী রইলো না এটা কার কাজ। তাই রেগে বইটা হাতে নিয়ে দরজা খুলে চলে গেলাম রায়াফ এর রুমে। গিয়ে ওকে বললাম, কিরে তুই আমার বই এ এসব আঁকি বুকি করেছিস কেনো? আর এসব বে’য়াদব মার্কা লেখা লিখি কেনো করেছিস? ও হ্যা’বলার মতো তাকিয়ে আছে আমার দিকে। মনে হচ্ছে দুনিয়ার ভালো মানুষ। কিছু বুঝেনা, মাত্র কালকে পৃথিবীতে উদীত হয়েছেন ওনি। ওর কোনো ভাবাবেগ না দেখে আমি ওর মাথা ২-৩ টা গা’ট্টা মারলাম। তাও কোনো শব্দ করলোনা। উলটে মাথা নিচু করে পড়ায় মন দিলো। চে’চামেচি শুনে আম্মু ভাইয়া দুজনেই এলো। ভাইয়া বলল, কিরে কি হয়েছে। এতো চি’ল্লানি কিসের জন্য? ভাইয়া কিছুটা রেগেই বললেন।”

“ভাইয়া দেখো রায়াফ আমার বই এ এসব কি করেছে। বলেই বইটা ভাইয়ার হাতে দিয়ে দিলাম। ভাইয়া নিয়ে আঁকিবুঁকি গুলো দেখতে দেখতে লেখা গুলো পড়তে লাগলো। ”

“১-২-৩-৪ রাত্রি আপু মূলার আচার।
৫-৬-৭-৮ রাত্রি আপু গাছের কাঠ।
৯-১০-১১-১২ রাত্রি আপুরে সবাই মারো।
১৩-১৪-১৫-১৬ রাত্রি আপু চুরি করলো।
ভাইয়া এইটা পড়ছে আর আম্মু রায়াফ মিট মিটিয়ে হাসছে।”

“আমাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে তাই না দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা তোকে বলেই রায়াফ কে আরেকটা থা’প্পর দিলাম পিঠ এ। ও হাসি বন্ধ করে পড়ায় মন দিলো। ”

“রাত্রি! থামবি নাকি আমি তোকে এখন মাইর দিবো। আমাকে বলতে দে। রায়াফ তুই এসব কেনো লিখেছিস?ভাইয়া রায়াফ এর দিকে রাগী লুক দিয়ে বলল।”

“এটা আমি অনেক দিন আগে লিখেছিলাম। যেদিন আমার বলটা আপু ড্রেন এ ফেলে দিয়েছিলো না ওইদিন।”

“আর এসব কখনো লিখবি? ”

“না ভাইয়া আর লিখবোনা। বলেই রায়াফ আবার বই এর দিকে নজর দিলো। ”

“ভাইয়া আরও কিছু কথা বলে আমাকে বলল, রুমে যা গিয়ে পড়তে বস। আর হ্যাঁ যদি আবারও দুইটাকে ঝগড়া করতে দেখেছি তাহলে দুইটাকে হোস্টেল এ পাঠিয়ে দিবো। মনে থাকে যেনো কথা টা। বলেই ভাইয়া চলে গেলো। আম্মু আরও আগেই চলে গেলো। কারন ভাইয়া আমাদের কিছু বললে আম্মু সেখানে কিছু বলেনা। ”

” কিন্তু আজ আমি রায়াফ এর এমন নিশ্চুপ থাকার কারন টা কিছুতেই বুঝতে পারছিনা। তাই ওর পাশে চেয়ার টেনে বসে বললাম। ভাই একটা বলবো তোকে। ”

“কি বলো। ও আমার দিকে না তাকিয়েই বলল।”

“আজকে তুই এমন বিহেভ কেনো করছিস। অন্য দিন চি’ল্লা ফা’ল্লা করে মাথায় চড়িস আজ হটাৎ তুই এমন চুপ করে গেলি কেনো? ”

“তোমাকে এতো কিছু জানতে হবেনা যাও।”

“প্লীজ ভাই বলনা। তুই এমন চুপ থাকলে আমার যে ভালো লাগেনা। ”

“আচ্ছা তাহলে শুনো। তুমি আজকে যখন ক্যান্টিন এ ছিলা তখন কি কেও তোমাকে ডিস্টার্ব করেছিলো? ”

“কই না তো। ”

“মিথ্যে বলবানা একদম। নইলে ভাইয়ার কাছে বিচার দিবো কিন্তু।”

“আরে না মিথ্যে বলছিনা। ”

“তাহলে ওই ছেলেটা কে যে তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছিলো ক্যাম্পাস এ? ”

❝ওহ এই বেপার। ভাই আমি না এই ছেলেটা কে কখনো দেখিনি চিনি না ভালো করে। তবে যতটুকু জানি সিনিয়র ভাই। এই ছেলেটা ক্যান্টিন এ তাকিয়ে ছিলো। আবার ক্যাম্পাশ এ ও তাকিয়ে ছিলো। আবার হাসছিলো। যখন ছুটি দিলো তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম তখনই ছেলেটা আমার দিকে আসতে লাগলো। আমি উঠে দাঁড়িয়ে যেতেই দেখি তুই চলে এসেছিস। আর কিছু নই। ভাই তুই কিভাবে দেখলি ওই ছেলেটা কে। ”

“আমাকে আমার ফ্রেবড তামীম বলেছে। তারপর যখন হাসছিলো তখন তামীম ডেকে নিয়ে ছেলেটা কে দেখিয়েছে। ভেবেছিলাম ভাইয়া কে বলে দিবো। পরে ভাবলাম যে আহে তোমার থেকে জেনে নিবো। তারপর ভাইয়া কে বলবো। কিন্তু যা শুনলাম ছেলেটা কিছু বলেনি। যদি কিছু বলে তবে ওই ছেলেটা ছাড় পাবেনা। ভাইয়া কে বলার আগে আমি মে’রে ফেলবো।”

“ওহ এই কাহিনী তাই আপনি আমার সাথে এমন করছিলেন। ”

“হুম তাই।”

“আচ্ছা বাদ দে ওইসব পোলাপান কে পাত্তা দেই নাকি আমি। আমার দুই ভাই থাকতে আমার কি কোনো চিন্তা আছে! কোনো ভয় আছে! আমি একদম চিন্তা বিহীন। আচ্ছা তাহলে পড়। বলেই আমি রুমে চলে আসলাম।”

“এই সবাই খেতে আয়৷ ১১ টা বাজে, আর কতো পড়বি। পড়তে পড়তে তো মহা ভারত শুদ্ধ করে ফেলেছিস তোরা। আম্মু কথা গুলো বলছে আর ডাকছে। ”

“সবাই গিয়ে টেবিল এ বসে খাবার খাওয়া শুরু করলাম ওমনি ভাইয়ার ফোন এলো। ভাইয়া
ফোন টা রিসিভ করে কি সব বিজনেস এর কথা বলতে লাগলো। তাতে ভাবলাম অফিসের লোক। আচ্ছা আম্মু আব্বু কবে আসবে?খুব মিস করছি আব্বুকে।”

“দুপুর এ কল করেছিলো বলেছে আরও ১০-১২ দিন লাগবে। ”

“ওহ অনেক দেরি আছে। এতো দেরি যে আমার আর সহ্য হচ্ছেনা। ”

“আপু তুমি কেনো সহ্য করতে পারছোনা জানো? লম্বা সুরে বলল। কারন তোমাকে তো আব্বু কুড়িয়ে এনেছে। তাইতো শুধু আব্বু তোমাকে একটু খানি ভালোবাসে। আর ভাইয়া আম্মু আব্বু তিনজনেই আমাকে ভালোবাসে। তাইতো তুমি শুধু আব্বুর খুঁজ করো। বলেই খিল খিল করে হাসতে লাগলো। ”

“আম্মু রেগে বললো, চুপ করবি নাকি মাইর দিতে হবে দুই টা কে।”

“না না মারতে হবেনা খাচ্ছি তো ভাত দেখতে পাচ্ছোনা। ভাত খাওয়ার সময় যদি কারও মা তার সন্তান কে মাইর দেই তাহলে ভাত তাকে দেখতে পারেনা তুমি যানো না আম্মু। আর আমরা কি চাই নাকি আমাদের আম্মু কে কেও বাকা নজরে দেখুক। একদম না তাই তুমিও ভাত খাও আমরাও খাই। মা’রা-মা’রির দরকার নেই একদম। বলেই রায়াফ ঠোঁট টিপে হাসতে লাগলো ভাত মুখে পুরে।”

“রায়াফ এর কথা শুনে আমি না পেরে বেশ জুড়েই হেসে দিলাম। ভাইয়া ফোন আলাপ করছিলো। এত জুড়ে হেসে ফেলায় ভাইয়া বেশ বিরক্ত হলো। তাই ভাইয়া রাগি চোখে তাকালো আমার দিকে। ভয়ে তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করে রুমে চলে আসলাম।”

“ওইদিকে সবাই খাবার শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো। আমি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে মুখে বেবি স্নো লাগিয়ে শুয়ে পড়লাম। একটা ফোন ও নেই যে স্ক্রল করবো। আব্বু বলছিলো ফোন দিবে। কিন্তু ভাইয়া নিতে দিলো না। এমন ভিলেন মার্কা ভাই কই জনের আছে আল্লাহ মালুম। লাইট অফ করে কোলবালিশ টা জড়িয়ে ধরে বাম কাত হয়ে চোখ বন্ধ করলাম৷ আমার আবার কোলবালিশ ছাড়া ঘুম আসেনা। কেও নে’গেটিভ মাইন্ড এ নিয়েন না হি হি। ঘুমিয়ে গেলাম গুড নাইট।”

“যেহেতু বৃষ্টি বাদলের দিন তাই সকাল এ ঝুম ধরে বৃষ্টি পড়ছে। কিন্তু ঘুম এ এতোটাই গা’ধা যে টেরও পাইনি। তার উপর দেওয়াল থাকায় বৃষ্টির শব্দ রুমে আসেনা। এলার্ম এর শব্দে ঘুম থেকে উঠে জানালা দিয়ে বৃষ্টি পড়া দেখে খুবই খুশি লাগলো। মনে মনে ভাবলাম আজ হইতো কলেজ যাওয়া হবেনা। তাই বেলকনিতে গিয়ে রেলিং এ শরীর ভর দিয়ে সামনের দিকে ঝুকে দু হাত মেলে দিলাম। আইরন রেইলড না থাকায় সামনের দিকটাই বেশ খানিকটা ঝুকে থাকা গেলো। হাত দিয়ে বৃষ্টি ধরছি খুব ভালো লাগছে কিন্তু ভিজতে পারিনা ভয়ে। বাসার কেও আমাকে বৃষ্টি তে ভিজতে দেইনা। কারন আমার এলার্জি সমস্যা আছে যার দরুন জ্বর ঠান্ডা কাশি লেগে যায়। আমিও আর ভয়ে ভিজিনা। জ্বর উঠলে আমাকে অন্ধকার জগৎ ঘুড়িয়ে আনে আমার মন। ভাবনার মাঝেই আম্মুর ডাক পড়লো।”

“এই রাত্রি ঘুম থেকে উঠিস নি নাকি। কলেজ যেতে হবে তো তোর ভাইয়া ডাকছে। নাস্তা করে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। ”

“আসছি আম্মু। বলেই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। বে’টা বজ্জাত ভাই বৃষ্টির দিনেও কলেজ যেতে বলছো তোমার কপালে একটা আন রোমান্টিক একটা বউ জুটবে দেখে নিয়ো। তুমি রুম্যান্স করতে চাইবা আর তোমার বউ তোমাকে এটা ওটা বাহানা দিবে মিলিয়ে নিও আমার কথা। বিরবির করেই ফ্রেশ হয়ে একবারে রেডি হয়ে বের হলাম। নাস্তা করে রায়াফ আমি দুজনেই একসাথে দাঁড়িয়ে আছি ভাইয়া রেডি হচ্ছে।”

“আপু দেখলি এতো সুন্দর একটা ওয়েদার এ ও ভাইয়া আমাদের স্কুল কলেজে পাঠাচ্ছে। ভাইয়া কতোট আনরোমান্টিক ভাবতেই আমার রাগ হচ্ছে।”

“আর বলিস না ভাই দেখে নিস ভাইয়া খুব বে রসিক একটা বউ যাবে।”

“হ্যাঁ একদম রাইট কথা আপু। একদম ঠিক বলেছো। আমি তোমাকে এই কথার জন্য একটা লাইক একটা কমেন্ট আর একটা এই নাও মিল্ক ক্যান্ডি দিলাম।শেয়ার করলাম না কারন এইটা আমাদের পার্সোনাল বেপার। যদি বাইরের লোক জানে তাহলে আমাদের মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে। বলেই আমার হাতে একটা ১ টাকা দামের চকোলেট ধরিয়ে দিলো।”

“আমি ওকে দিলাম পিঠে এক ঘা’। তারপর দুজনেই হাসতে লাগলাম। ভাইয়া রেডি হয়ে আসতে আসতে বৃষ্টি মামা প্লালিয়ে গেলো। বুঝলাম যে বৃষ্টি মামা ও আমাদের সাথে বেইমানি করলো। ভাইয়া কে ভয় পেয়ে। তারপর আমরা গাড়িতে গিয়ে উঠলাম আমি পেছনে ভাইয়া রায়াফ সামনে। প্রতিদিনকার মতোই বসা আর কি। যাই হোক কলেজ যাত্রা শুরু হলো।কলেজ গেইটে নেমে আমি রায়াফ এক প্রকার দৌঁড়েই গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়ালাম। হাঁপাচ্ছি দুজনে, ওমনি ইতি কে দেখতে পেলাম ছাতা নিয়ে গেইট দিয়ে আসছে। আমাদের ছাতা আনতে হয়নি কারন আসা যাওয়া গাড়িতেই হয়। বের হয়না কোথাও তাই প্রয়োজন হয়না।”

“রায়াফ ক্লাস এ চলে গেলো। আমি ইতির সাথে কৌশল বিনিময় করে ক্লাস এ ঢুকলাম। ঢুকতেই দেখি সবাই আমার দিকে কেমন ভাবে যেনো তাকিয়ে আছে। ঠিক বুঝতে পারলাম না কেনো তাকিয়ে আছে। কিরে ইতু হয়েছে টা কি। আমরা কি এলিয়েন নাকি এভাবে ওরা তাকিয়ে আছে কেনো? ”

“আমিও তো বুঝতেছিনা কিন্তু কিছু তো একটা গন্ডগোল আছেই। যাই হোক চাপ নিস না আই বসি গিয়ে। যা হবার পরে দেখা যাবে। বলেই ইতি আমাকে নিয়ে প্রথম বেঞ্চে বসে পড়লো। আজকে বৃষ্টি থাকায় স্টুডেন্ট কম এসেছে। তাই বেশ মনোরঞ্জন একটা নিরিবিলি পরিবেশ মনে হচ্ছে। কারন অন্য সময় কা’কের মতো কা কা – পক পক শব্দ শুনা যায় শুধু ছেলে মেয়ে সব গুলার। ”

“কিছুক্ষন বসে রইলাম চুপ চাপ ক্লাসে স্যার আসলো। এখন বাংলা ক্লাস করাবে বই বের করে পড়াই মন দিলাম। স্যার লেকচার দিয়েই চলেছে। আজ সামনের বেঞ্চে বসায় ইতি ফোন স্ক্রল করতে পারছেনা। বেচারির মুখ টা পান’সে হয়ে আছে। ৩ টা ক্লাস শেষ করে টিফিন এর বেল পড়লে ক্যান্টিন এ যেতে নিলাম। এমন সময় একটা জুনিয়র মেয়ে এসে বললো, আপু তোমাকে সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাসে যেতে বলেছে একটা ভাইয়া। ”

“ভাইয়া! কোন ভাইয়া? কে ভাইয়া? বলেই ব্রু কুচকে তাকালাম জুনিয়র মেয়েটির দিকে। ”

“ইতি বলল, দুস্ত চল তো কে ডাকে গিয়ে দেখি। ”

“না দুস্ত আমি যাবোনা আ আমার না ভয় ভয় করছে। কোনো অঘটন হবেনা তো আবার। বলেই ভীতু চাহনি দিলাম ইতির দিকে।”

“রিল্যাক্স ‘ চল আমার সাথে। বলেই ইতি আমাকে এক প্রকার টানতে টানতে নিয়ে গেলো ৫ম ফ্লোর এ।ক্লাসে ঢুকতেই যা দেখলাম তাতে আমার কিছুটা ভয় হলো। আবার বেশ অবাক হলাম।”

“ক্লাস টা খুব সুন্দর করে সাজানো। চারদিকে বেলুন দিয়ে সাজানো, ঝালর দুলানো, আলপনা আঁকা। মনে হয় মেয়ে গুলা এসব করেছে। হইতো আজকে তাদের কোনো অনুষ্ঠান ছিলো। তাই এতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আমি যেনো এক স্বপ্ন পুরিতে চলে গেছি এসব ভাবতে ভাবতে।”

“ইতি ধাক্কা দিয়ে বলল, কিরে কোথায় হারিয়ে গেছিস। আমি যা দেখছি তুই ও কি তাই দেখছিস।”

“আ ব ব হ্যাঁ হ্যাঁ তাইতো দেখছি। তুতলে বললাম। আরে এসব দেখার জন্য এখানে এসেছি নাকি ইতু। হালকা মেজাজ দেখিয়ে বললাম। ”

“আরে এতো অধৈর্য হয়ে পড়ছিস কেনো চল ভিতরে যাই। বলেই আমাকে হাত ধরেই নিয়ে গেলো ক্লাসে ইতি।”

“ইতি একটু জুড়ে বলে উঠলো, এক্সকিউজমি সিনিয়র ভাইয়া আপুরা। রাত্রি কে ডেকে পাঠিয়েছে কে? ”

“তখনই পেছন ফিরে তাকালো ক্লাসে সিনিয়র সব আপু ভাইয়া রা। তাদের মাঝ খানে কালকের ওই তাকিয়ে থাকা ভাইয়া টা ও ছিলো। ”

“ভাইয়া টা বললো, আমি ডেকে পাঠিয়েছি৷ ”

“আমি ইতি কিছুটা অবাক হলাম। ইতি বললো, কেনো? ওকে কি প্রয়োজন। কেনো ডেকে পাঠালেন।”

“হুম ডেকে যখন পাঠিয়েছি তাহলে নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে। কেও তো কাওকে অহেতুক ডেকে পাঠাই না। তাই না! বলেই ভাইয়া টা ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো নিঃশব্দে।”

“আমি শুকনো ঢুক গিললাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম। কি এমন দরকার আমাকে। আমি কি কোনো অপরাধ করেছি? আমাকে কি কোনো প্রকার দায়িত্ব দিবেন। সামনে তো কলেজে তাদের বিদায় অনুষ্ঠান আছে হইতো দিতে পারে দায়িত্ব। কিন্তু দায়িত্ব দিলে তো টিচার রা দিবেন। ওনি কেনো দিবেন।”

” ভাবনার মাঝেই ভাইয়া টা বলে উঠলো, এটেনশন প্লীজ গায়েজ। আজকে আমি এই পার্টি টা দিয়েছি বিশেষ দুইটা কারনে। প্রথমত আমার জন্মদিন উপলক্ষে। আর দ্বিতীয়ত কি সেটা কিছুক্ষনের মধ্যেই সবাই বুঝতে পেরে যাবে। ইতি মধ্যে অনেকেই জানে। তাই আমি আগে দ্বিতীয় কাজটা সম্পন্ন করতে চাই তারপর কেক কাটতে চাই। বলেই ভাইয়া টি থামলো।”

“আমি এতোক্ষন ভাইয়া টা কে শুধু দেখছিলাম চোখ দিয়ে। ভীষণ হ্যান্ডসাম, অনেক ফর্সা। গালের খুচা খুচা দাঁড়ি। কলেজ ইউনিফর্ম পড়া ইন করা শার্ট টা।শার্ট এর হাতা গুলো কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা। হাতে ব্রান্ডেড ওয়াচ৷ সব মিলিয়ে সুন্দরই লাগছে৷ আমি কখনো কলেজে তেমন কারোর দিকে এভাবে তাকায়নি। এই ভাইয়া টা কে অনেকবার দেখেছি কিন্তু এতোটা নিখুঁত ভাবে লক্ষ করিনি। তার নাম পরিচয় তেমন কিছুই আমি জানিনা। ”

“ইতি ধাক্কা দিলো। কিরে চুপ করে আছিস যে। কিছু কি বুঝতে পেরেছিস। ”

“আ আমি আবার কি বুঝবো। চল তো এখান থেকে ভালো লাগছেনা এসব। রায়াফ জানতে পারলে ভাইয়া কে বিচার দিবে। তারপর ভাইয়া আমাকে তোকে আমের শরবত বানিয়ে খাবে। ”

“পেছন ফিরতেই দেখলাম আমাকে আর ইতিকে ঘেরাও করে দাঁড়িয়ে আছে ক্লাসের ছেলে মেয়েরা। আমি ভয় পেলাম। তখনই ভাইয়া টা আমার সামনে এসে হাঁটু গেরে বসে পড়লো তার দুইটা হাত পেছনে। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম এক কদম পিছিয়ে গেলাম। ইতির হাত শক্ত করে ধরে রাখলাম। ”

“ভাইয়া টা পেছন থেকে একটা গোলাপ ফুলের তোড়া বের করে আমার সামনে ধরলো। তোড়া টাই প্রায় ১০০+ গোলাপ আছে এমন হবে। তোড়া টা আমার দিকে ধরে, আমার চোখে চোখ রেখে বলতে লাগলো, তুমি যখন এই প্রতিষ্ঠান এ প্রথম নবম শ্রেণিতে এডমিশন নিয়েছিলে সেদিন আমি তোমাকে দেখেছিলাম। ওইদিন তোমার দিকে শুধু তাকিয়ে ছিলাম। অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করছিলো তখন। কিন্তু বুঝতে পারিনি সেটা আসলে কি ছিলো। ধীরে ধীরে যখন সময় যেতে লাগলো আমি বুঝতে পারলাম যে আমি তোমাকে পছন্দ করি। আর আমি প্রতি সময় তোমার উপর দৃষ্টি নিবন্ধ করে রাখতাম। কিন্তু তুমি কখনো টের পেতে না। যখন ইন্টার ১ম বর্ষে উঠলাম তখন পুরোপুরি বুঝতে পারলাম যে আমি তোমাকে ভালোবাসি৷ হ্যাঁ অনেকটা গভীর ভাবে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। যদিও সবাই বলবে এটা ক্ষনিকের আবেগ কিন্তু আমি বলবো না। আমি বলবো সব সময় এটা আমার ভালোবাসা মন থেকে উদ্বীত ভালোবাসা। এটা কোনো আবেগ নয়। কলেজের সবাইকেই খেয়াল করেছি কেও তোমার আশে পাশে যাওয়ার চিন্তা করলে সবাই তোমার বড় ভাইয়ার৷ আই মিন রাত ভাইয়া রাইট। তার কথা বলে। হইতো এটাই যে তাকে সবাই ভয় পাই । একটা সময় আমিও পেতাম। কিন্তু যখন ২য় বর্ষে উঠেছি আস্তে আস্তে পরিক্ষার সময় হয়ে গেলো। আমি পরিক্ষা দিয়ে এখান থেকে চলে যাবো। তাই ভাবলাম যদি আমার এই না বলা ভালোবাসা মনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে চলে যাই তাহলে হইতো সব সময় আমাকে আপচোশ করে ধুকে যেতে হবে। যার জন্য আজকের এই এরেঞ্জমেন্ট৷ আমার জন্মদিন আজ তাই আমি আমার এই স্পেশাল দিনেই তোমাকে আমার অনুভূতি গুলো জানানোর জন্য এখানে তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছি। আশা করি তুমি আমার ভালোবাসা কে ফিরিয়ে দিবেনা। হইতো আমি সবার মতো করে তোমাকে বলতে পারবোনা। কিন্তু নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যতটুকু বলতে পারবো তোমার জন্য ততটুকুই যথেষ্ট ভালোবাসি। ”

“আমি তার বলা বচন বাক্য গুলো মস্তিষ্কের মাঝে ঘুড়াতে লাগলাম৷ ভাবতে লাগলাম, ফ্লার্ট করার জন্যই কি আমাকে এখানে এনেছে। আর ইতিও যেনো পাথর হয়ে গেছে। এমন কিছু হবে আমাদের ধারনা ছিলোনা। আমি মুখ ফুটে কাঁপা কাঁপা গলায় বলেই ফেললাম, ভা ভাইয়া আপনি এসব কি বলছেন৷ আপনি সুস্থ আছেন তো? আর এসবের মানে কি আপনি যেহেতু জানেন আমার ভাইয়া কেমন তাহলে এসব করার মানে কি। যত্তসব! বলেই ইতিকে নিয়ে বিরবির করতে করতে সেখান থেকে চলে এলাম ক্যান্টিন এ৷ এতোক্ষনে বুঝতে পারলাম যে কলেজে আসার পর মেয়ে গুলা কেনো ওইভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। হইতো এমন টা হবে তারা আগে থেকেই জানতো। ”

“ইতি বললো, দুস্ত কি প্রপোজ রে এক্সেপ্ট করলিনা কেনো। আমি হলে তো রাজিই হয়ে যেতাম। ”

“তো মানা করেছে কে যা না তুই এক্সেপ্ট করে নে। ইতিকে রাগ দেখিয়ে বললাম কথা টা। ”

“কি যে বলিস না আমার তো অনলি ওয়ান পিস একজন আছেই। ”

“হুহ একদিন ও তো তাকে দেখালিনা যাকে এতো ভালোবাসিস৷ আমি কিনা তোর বেস্টু ভাবতেই অবাক লাগে৷ ১ মাস ধরে প্রেম করছিস অথচ আমাকে তার ছবিই দেখালিনা । ”

“আরে দুস্ত রাগ করছিস কেনো। একদিন দেখা করিয়ে দিবো কেমন সারপ্রাইজ হিসেবে।”

“লাগবেনা তোর সারপ্রাইজ তোর পকেটে রাখ৷ মেকি রাগ দেখিয়ে ইতিকে বললাম। তারপর লাঞ্চ করে ক্লাসে চলে গেলাম। ক্লাসে বসে ভাবতে লাগলাম পা’গল ছা’গল নাকি তামাশা করার আর যাইগা পাই না। আমাকে ডেকে নিয়ে গেছে প্রপোজ করবে বলে। হুহ শখ কতো। তারপর বাকী ২ টা ক্লাস এর পর ছুটি হলো। আজকে ক্যাম্পাসে বসে থাকিনি সোজা অফিসের দরজার কাছে ইতিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ইতিমধ্যেই রায়াফ এসে পড়লো। ওকে দেখতে বেশ হাসি খুশি লাগছে। আমি মনে মনে বললাম, ভা’জ্ঞিস আজকে কিছু টের পাইনি নইলে যে আমার কি অবস্থা করতো দুই ভাই মিলে আল্লাহ মালুম। সস্থির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলাম। তারপর ইতিকে বিদায় জানিয়ে রায়াফ কে নিয়ে চলে এলাম মেইন গেইট এর কাছে। দেখি ভাইয়া দাঁড়িয়ে কথা বলছে কার সাথে যেনো। একটু কাছে গিয়ে দেখতে পেলাম আভা আপু। তাকে সালাম দিলাম। তিনি উত্তর দিলেন । তারপর আপু আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, কেমন আছো? পড়াশুনা কেমন চলছে?”

“জ্বি আপু আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। পড়াশুনা আপনাদের দোয়ায় ভালোই চলছে। মুচকি হেসে আপুর সাথে কথা গুলো বললাম। ”

“তো রায়াফ তোমার কি অবস্থা। মাই ডেয়ার লিটল ব্রাদার। আভা আপু বলল।”

“প্রথমত আমি লিটল নয় এখন অনেক বড় হয়ে গেছি । দেখতেই পাচ্ছেন ঠিক কতোটা বড় হয়েছি। তাই আমাকে বড় ভাইয়া বলে ডাকবেন। আর হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তবে আপনি যদি আমাদের বাসাই একেবারে চলে আসতেন তাহলে আর একটু ভালো থাকতাম। গল্প করতে পারতাম। মজা করতে পারতাম। বলেই রায়াফ চোখ গোল গোল করে ঘুড়াতে লাগলো আর মুখ টা পেঁচার মতো করে ফেললো। ওর হাব ভাব দেখে মনে হচ্ছে বেচারা খুবই দুঃখিত। ”

“ওহ আচ্ছা তাই! তাহলে বড় ভাইয়া আপনি আমাকে আপনাদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেন। এতোই যখন আমাকে নিজেদের কাছে রাখার শখ তাহলে তো আর এমনি এমনি আমাকে আম্মু আব্বু আপনাদের বাসায় যেতে দিবেনা তাই না। তাই কিছু একটা ব্যবস্থা করুন। আভা আপু রায়াফ কে বললো। ঢং করে করে। ”

“রায়াফ গালে আঙুল এর ঠোকা দিতে দিতে বললো, আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে অতি শিঘ্রই আমি আপনাকে আমার বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাপনা করিবো। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। বেহেন সাহেবা। ”

“রায়াফ এর কথা শুনে আমি আভা আপু রাত ভাইয়া একসাথে হেসে দিলাম। পরক্ষনে ভাইয়া বললো রায়াফ তুই এতো দুষ্টু হয়েছিস না! তোকে মা’ইর দিতে হবে। পাকা ছেলে কোথাকার। এতো পাকামো করতে কে বলে তোকে।”

“রায়াফ বললো, ভাইয়া তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো। মন খারাপ হয়েছে এমন করে মাথা নিচু করে বললো। ”

“একদম চুপ বেয়াদব, যা গাড়িতে উঠে বস। আমি আসছি কথা বলে। ”

“তারপর আমি আভা আপুকে বললাম আপু আমাদের বাসায় বেড়াতে যায়েন। আসি ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ৷ বলেই আমি রায়াফ কে নিয়ে গাড়িতে বসে পড়লাম। রায়াফ সামনের সিটে আমি পেছনে। ড্রাইভিং সিটে ভাইয়া বসবে।তারপর রায়াফ কে বললাম, ভাই তুই কি কিছু বুঝতে পারছিস? ”

“রায়াফ আমার দিকে না তাকিয়েই বললো, ডাল মে কুচ কালা হে বেহেন জি। কুচ তো গারবার হে। আচ্ছা আপু আমি যা ভাবছি তুমিও কি তাই ভাবছো। বলেই রায়াফ আমার দিকে পেছন ফিরে তাকালো।”

“তুই কি ভাবছিস আমি কিভাবে জানবো না বললে।”

#চলবে

বক্ষ পিঞ্জর পর্ব-০১

0

#বক্ষ পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#পর্বঃ১

“বেলকনিতে কফি হাতে দাঁড়িয়ে আছি আমি হটাৎ চোখ নিচে পড়তেই দেখলাম ব্লেক জিন্স আর হোয়াইট কালার ইন করা শার্ট পরিহিত এক যুবক তার প্রাইভেট কার এর পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একমনে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠোঁটের কোণে লেগে আছে মুচকি হাসি। এই হাসি দেখে যে কোনো মেয়ে পাগল যায়। তাকে চিনতে আমার বেশি মাথা ঘামাতে হলোনা। কারন তাকে আমি আগে থেকেই চিনি। কিন্তু একটা জিনিস ভেবে অবাক হচ্ছি যে ওনি এতো রাতে আমার বাসার নিচে কি করছেন? এখানে কেনোই বা এসেছেন? অনেক গুলো প্রশ্ন মাথায় ঘুড়পাক খাচ্ছে। এতোকিছু না ভেবে বেলকনি ছেড়ে রুমে চলে আসলাম। সাত পাঁচ না ভেবে কফি টা শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। ”

★চলুন ঘুমের মধ্যে আমার পরিচয় টা দিয়ে দেয়। আমি হলাম রাত্রি এহমাত। শাহীন এহমাত এবং তাছমিন বেগম এর একমাত্র মেয়ে। আমার বড় ভাইয়া আছেন যার নাম রাত এহমাত। ছোট ভাই আছে নাম রায়াফ এহমাত। বড় ভাইয়া বিজনেস করে আব্বুর সাথে। আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার এ পড়ি সাইন্স এর স্টুডেন্ট। ছোট ভাই ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। আমরা তিন ভাই বোনের মধ্যে সবাই বদ*মেজাজী। আমি একটু বেশি জেদি আর রগ বাকা। ছোট ভাই ও আমার মতোই। বড় ভাইয়া এতোটা নয় তবে রাগি। আমরা যতই নিজেকে সাহসী ভাবিনা কেনো ভাইয়া কে প্রচুর ভয় পাই দুই ভাই বোন। চলুন এবার জেনে নেই কে বেলকনির দিকে তাকিয়ে ছিলো? ওনি হলেন আমার বড় ভাইয়ার বন্ধু আবির খান। দুলাল খান আর মমতাজ বেগম এর বড় ছেলে। তাদের ছোট মেয়ের নাম হলো আভা খান। আপুটা এবার অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী। আর বাকী সব কিছু না হয় গল্পে জেনে নিবেন আস্তে আস্তে। গুড নাইট★

“সকাল এ ঘুম থেকে উঠায় লেট হয়ে গেলো যদিও এলার্ম দিয়েছিলাম! কিন্তু ওটার বিরক্তি তে নিজেই সকালে বন্ধ করে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ডাইনিং এ গিয়ে দেখি সবার খাওয়া শেষ আমিই বাকী। ”

“আম্মু বলে উঠলো, নবাবের বেটি এতক্ষন এ আসছে খাবার খেতে। পরের বাড়ি যখন যাবি না তখন কেও এভাবে খেতে দিবেনা খু*ন্তি হাতে গরম ছে*কা দিবে। বলছি কি একটু নবাবী টা কমিয়ে কিছু তো অন্তত শিখে নে যাতে করে পরের বাড়িতে গিয়ে আমাকে কথা না শুনতে হয়। বড্ড তেজী গলায় আম্মু এক নাগারে কথা গুলো বললো।”

“আম্মু তুমিও না এতো কিছু আমি করতে পারবোনা। আর যার বাড়িতে নিবে সে আমাকে কাজ করেই খাওয়াবে নইতো নিবেনা। আমি আগে থেকে বলেই যাবো যে আমি কিছু পারিনা হই বিয়ে করবেন না হয় চলে যাবেন। বলেই ন্যাকা ভেঙছি দিলাম মুখ। ”

“আহ কত শখ মেয়ের তুমিতো জমিদার এর কন্যা যে তোমাকে ওইভাবে নিয়ে গিয়ে খাটে বসিয়ে খাওয়াবে। ”

“আম্মু বেশি বেশি হচ্ছে খাবার দাও। এর মাঝেই ভাইয়া এলো। ”

“কিরে তুই এতক্ষন এ নাস্তা করছিস কলেজ যাবি কখন? ক্লাস মিস করার ধান্দা করছিস নাকি? ”

“না ভাইয়া ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেছে তাই আর কি। ”

“আচ্ছা শুন আমার আজ একটু তাড়া আছে অফিসের। আমি চলে যাচ্ছি কার নিয়ে। অফিস থেকে কাওকে পাঠিয়ে দিবো কার নিয়ে কলেজ দিয়ে আসবে তোকে। একদম একা যাওয়ার ফন্দি আট*বিনা।”

“আমি পরোটা চি’বাতে চি’বাতে বললাম, ভাইয়া আমি বলছিলাম কি তুমি চলে যাও কার পাঠাতে হবেনা। আমি চলে যেতে পারবো তো।”

“একদম চুপ। আর একদিন বলবি তো তোর খ’বর আছে। যা বলেছি আমি তাই হবে। বলেই ভাইয়া চলে গেলো।”

“আমি দু:খ ভারা’ক্রান্ত মন নিয়ে ঠোঁট উলটে খাবার ফিনিশ করলাম। টেবিল ছেড়ে উঠতে যাবো ওমনি দেখি রায়াফ আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে। ওর হাসি দেখে আমার শরীর রা’গে ফেটে যাচ্ছে। কিরে হাসছিস কেনো।”

“আপু তুমি যতই ভাইয়ার কবল থেকে ছুটতে চাওনা কেনো পারবেনা। হি হি! তুমি যে খুব উড়ন’চন্ডি ভাইয়া সেটা জানে। তাইতো তোমাকে এটে রাখে। বলেই খিল খিল করে হাসতে লাগলো রায়াফ।”

“তাই না! দাঁড়া আজকে তোকে মে’রেই ফেলবো। বলেই ছুটা ছুটি করতে লাগলাম। পরে আম্মুর বকোনি শুনে রেডি হয়ে গেলাম কলেজ যাবো বলে। ”

“আব্বু বিজনেস এর ডিল ফাইনাল করতে আমেরিকায় গেছেন। তাই বাসায় বেশি কিছু করিনা। কারন আব্বুই আমার একমাত্র সম্বল যিনি আমাকে সব সময় আম্মুর মারা আর ব’কোনির হাত থেকে বাঁচায়। যাই হোক ভাইয়া গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে তাই তাড়াতাড়ি করে আমি আর রায়াফ গাড়িতে গিয়ে বসলাম। আমি আর রায়াফ একই সাথে পড়ি। স্কুল এন্ড কলেজ বিদাই আমরা একই সাথে পড়ি আসা যাওয়া করি। এই রয়াফ হলো আমার এক নাম্বার শ’ত্রু ওর জন্য কলেজে নিজ ইচ্ছা মতো কিছু করতে পারিনা। সিকিউরিটির দায়িত্ব পালনে বেশ পটু রায়াফ। যাদের বাসায় এই ছোট ই’দুর চেলা’পেলা আছে এক মাত্র তারাই জানে যে এসব কতোটা ভ’য়ানক। যাই হোক কলেজ এ চলে এসেছি। গাড়িও চলে গেছে। রায়াফ কে ক্লাসে দিয়ে আমি নিজের ক্লাসে চলে গেলাম। ”

“কেমিস্ট্রি ক্লাস চলছে এখন । বিরক্তিকর সাবজেক্ট মনে হয় আমার কাছে। যদি ক্লাস না করে কমন রুমে গিয়ে বসে থাকি। তাহলে তো স্যার সোজা ভাইয়ার কাছে বিচার দিবে। এই ভয়ে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ৪৫ টা মিনিট পার করলাম। আর রয়েছে আমার এক বেস্টু ইতি। ওর তো পুরো ক্লাসে ধ্যানই ছিলোনা ওর বি এফ এর সাথে চেটিং এ বিজি ছিলো। ওর প্রেম আলাপ শুনলে মনে হয় আমি মঙ্গল গ্রহের উপজাতি। এ জীবনে কি করিলাম। ভাইয়ার ভয়ে ছোট ভাই এর প্যারায় জীবনটা আমার অতিষ্ট। না পারি ফ্রেন্ডদের সাথে কোথাও ঘুড়তে যেতে। আর না পারি একটা রিলেশন করতে।”

“কিরে তোর কি জামাই মা’রা গেছে নাকি এভাবে গালে হাত দিয়ে বসে কি ভাবছিস? ইতি বললো। ”

“জামাই যদি থাকতো রে ইতু তাইলে তো ভালোই ছিলো। তোর মতো প্রেম ও করতে পারিনা। ভাইয়া আব্বু বিয়ে ও দেয়না। খালি পড়া আর পড়া আর ভালো লাগেনা। ইচ্ছে করে কি! আলাদীনের চেরাগের খুঁজ করি। হইতো ওই জিনি আমাকে এই মহা রু’গ মানে ভাইয়ার কবল থেকে বাঁচাতে পারে। ”

“আহারে কি দু:খ আমার বেস্টুর। আচ্ছা শুন না তুই রিলেশন করবি?”

“কীহ! আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ইতির দিকে। আমার কীহ শুনে ও ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। আমি বললাম, তোর কি মাথা খারাপ ইতু। তুই কি আমার এই মূলার জীবন সম্পর্কে জানিস না। এই মূলার সাথে কেও প্রেম করবে! ভাইয়ার ভয়ে কেও তো আমার ধারে’কাছেই আসতে চাইনা। আর তুই বলছিস প্রেম! আমার মনে হয় কি ভাইয়া আমার আসে পাশে মূলার পারফিউম দিয়ে রাখে। তাই হইতো এই মূলার বিচ্ছিরি গন্ধে কেও আমার পাশে আসতে চাইনা! তর্জনী আঙ্গুল ডান গালে ঠোকা দিয়ে বলতে লাগলাম কথা গুলো। আর রইলো আমার সিকিউরিটি গার্ড রায়াফ তুই তো ওরে খুব ভালো করে চিনিস কিছু হলেই ভাইয়া ভাইয়া ভাইয়া। ভেঙ্গিয়ে বললাম। ভাইয়া করে করেই ওর জান যাই যাই। যাত শ’ত্রু ও আমার। সব কিছুতেই ভেজাল করে। ”

“আরে বেস্টু এতো চিন্তা করিস কেনো? আমি তো আছি। কোনো একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আর তুই এতো ভয় পেলে চলবে নাকি। যদি পড়ে যাওয়ার ভয়ে উঠে না দাঁড়াস তাহলে তো তোর হাঁটায় হবেনা। এতো চিন্তা করিস না মেনেজ করে নিবো ঠিক। তার আগে তোর পিচ্চি ভাই টার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। ইতি এক নাগারে কথা গুলো বললো।”

“টিফিন টাইমে ক্যান্টিন এ গিয়ে বসলাম। খাবার খাওয়ার সময় দেখলাম সেকেন্ড ইয়ার এর এক সিনিয়র ভাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু ঠিক কার দিকে তাকিয়ে আছে সেটা বুঝতে পারলাম না। আমার দিকে নাকি ইতির দিকে। ইতিকে ইশারা দিলাম চোখে। ইতি চোখ ঘুড়াতেই বুঝতে পারলো ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন পর খাবার শেষ করে ক্যান্টিন থেকে উঠে চলে আসলাম। ক্লাসের শুরু আরও ১৫ মিনিট পর। তাই ইতিকে নিয়ে কৃষ্ণচূড়া গাছ টার নিচে একটা বেঞ্চ পাতানো আছে ওইটাই বসলাম। আমি পড়ে থাকা কিছু ফুল হাতে নিয়ে তার থেকে সবুজ অংশগুলো ছাড়িয়ে নিলাম৷ যেগুলো আমরা ছোট বেলায় নোখ হিসেবে লাগাতাম । আজও তাই করলাম ৫ টা নোখে লাগাইলাম। ইতির ফোন আসলো। মানে আর কি ওর বি এফ ফোন করেছে ও কথা বলতে লাগলো। আমি জন্মের সিঙ্গেল মানুষ তাই ওকে বিরক্ত না করে অন্য দিকে হাঁটতে লাগলাম। ডান পাশে ফিরতেই দেখলাম ক্যান্টিনে থাকা সেই সিনিয়র ভাইটা আমার দিকে তাকিয়ে বন্ধুদের সাথে কথা বলছে আর হাসছে। আমার বিরক্তিকর লাগলো বিষয়টা। এড়িয়ে চলে গেলাম আবার গাছের নিচে। গিয়ে দেখি ইতি নেই। কোথায় গেলো মেয়েটা? তারপর দেখি ও দুই নম্বর ফ্লোর থেকে আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করছে উপরে যেতে। আমিও চলে গেলাম উপরে। তারপর ক্লাস শুরু হলো। জীববিজ্ঞান ক্লাস চলছিলো তখন। স্যার পড়াচ্ছিলেন এই সময় খেয়াল করলাম আমার চোখে কোনোকিছুর রশ্নি এসে পড়ছে। সেই রশ্নি খেয়াল করতেই দেখলাম সেই সিনিয়র ভাইয়া টা তার ওয়াচ এর গ্লাস দিয়ে সূর্যের রশ্নির বিকিরন ছাপ দিচ্ছে আমার উপর। (আপনারা কখনো এমনটা করবেন না এতে চোখের ক্ষতি হয়।)
আমি সেই দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে ক্লাসে মনযোগ দিলাম। কলেজ ছুটির পর ক্যাম্পাস এ রায়াফ এর জন্য বসে আছি কারন ওর ক্লাস হতে আরও ১০ মিনিট বাকী আছে। একা একাই বসে ছিলাম। তখন দেখি সিনিয়র সেই ভাইয়া টা আমার দিকে হেঁটে আসছে, তৎক্ষনাৎ আমি উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম। তখনই রায়াফ চলে আসলো। রায়াফ আমার দিকে কি রকম একটা ভঙ্গিতে যেনো তাকালো। এর মানে আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না। গাড়ি আসলে আমি রায়াফ গাড়িতে উঠে পড়ি। সব সময় ভাইয়া নিতে আসে আমাদের আবার দিয়েও যায়। কিন্তু আজ ভাইয়ার কাজ আছে বিদাই আসতে পারেনি হইতো। গাড়িতে রায়াফ একটা কথাও বলেনি নাক ফুলিয়ে বিসে ছিলো হাত বুকে গুজে। যে ছেলে বক বক করে আমার মাথা খেতো এর আজ হলো কি?ভাবতে ভাবতেই গাড়ি বাসার সামনে থামলো। বাসায় গিয়ে গোসল করে বেলকনিতে চলে গেলাম চুল ঝাড়তে ঝাড়তে। বেশ লম্বা চুল হওয়ায় শুকাতে সময় লাগে তাই বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। একটা উপন্যাস বই নিয়ে গেছিলাম। পড়তে পড়তে সন্ধ্যা হয়ে গেলো খেয়াল করিনি। ভাইয়া বাসায় এসে ডাক দিলো সন্ধ্যা তখন ৭ টা বাজে। ”

“কিরে আজকে কোনো রকম সমস্যা হয়নি তো আমি না থাকায়? ”

“না ভাইয়া কিছু হয়নি। আমার কথা রায়াফ আড়চোখে আমার দিকে চোখ বড় করে তাকালো। আমি সেটা খেয়াল করেছি ঠিকি কিন্তু আজকে ওর এমন অঙ্গি ভঙ্গি আমি ঠিক কোনো কিছু আন্দাজ করতে পারলাম না। ”

“রাতে পড়তে বসলাম হটাৎ কারেন্ট চলে গেলো। তাই ছোট ছোট প্রহর হেঁটে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে আজকে। দেখতে ভীষন ভালো লাগছে। আনমনে চাঁদের দিকে চেয়ে রইলাম আর ভাবতে থাকলাম। এই সময় যদি কেও আমার পাশে থেকে চন্দ্র বিলাশ করতো কতোই না ভালো লাগতো। আমার সেই সঙ্গীকে নিয়ে আমি এই চাঁদ টাকে উপভোগ করতাম আর একটু মনোরঞ্জন করে। ভাবনার মাঝেই আম্মুর ডাক পড়লো। আম্মু তোমার আর আসার সময় ছিলোনা। এতো সুন্দর একটা ভাবনা জগতে ছিলাম তুমি সব ভেস্তে দিলা ধূর। বির বির করে বলেই চলে গেলাম দরজার দিকে। ”

“কিরে দরজা খুল অন্ধকারে কি করছিস। ”

“দরজা খুলে দিলাম আম্মু ক্যান্ডেল টা আমার হাতে দিয়ে বেড়িয়ে গেলো। ”

চলবে,,