বক্ষ পিঞ্জর পর্ব-১৩+১৪

0
739

#বক্ষ পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#পর্বঃ১৩+১৪

“ফয়সাল ভাইয়া খুব সুন্দর একটা গান শুরু করলো।”

*তোর মন পাড়ায় থাকতে দে আমায়
আমি চুপটি করে দেখবো আর ডাকবো ইশারায়।

তুই চাইলে বল আমার সঙ্গে চল
ঐ উদাস পুরের বৃষ্টি তে আজ ভিজবো দুজনায়।

অভিমানি মন আমার চাই তোকে বারেবার
অভিমানি মন আমার চাই তোকে বারেবার।

তাই বলি আইরে ছুটে আয়।

তোর মন পাড়ায় থাকতে দে আমায়
আমি চুপটি করে দেখবো আর ডাকবো ইশারায়।

তুই চাইলে বল আমার সঙ্গে চল
আজ উদাস পুরের বৃষ্টি তে আজ ভিজবো দুজনায়।*

“বাকী গানটা নিজ দায়িত্বে গেয়ে নিবেন। ”

“গান শেষে সবাই আবারও হাতে তালি দিলো।”

“রাত ১ টা বেজে গেছে সমাবেশ শেষ করার পালা। রায়াফ আমার কুলেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আবির ভাইয়া বলল, সবাই এখন ঘুমাতে যা। অনেক রাত হয়ে গেছে। ”

“সবাই ধীরে ধীরে নিচে চলে যেতে লাগলো। কিন্তু রায়াফ কে কিভাবে নিবো ভেবে পাচ্ছিনা। তাই আমি চুপ করে বসে আছি। একে একে সবাই চলে গেলেও ইভা রয়ে গেছে ছাদে৷ আবির ভাইয়া ছাদের এক কর্ণারে দাঁড়িয়ে ছিলো। ”

“ইভা আবির ভাইয়ার পাশে গিয়ে দাড়ালো আর বলল, ভাইয়া একটা কথা বলার ছিলো আপনাকে।”

“হুম বলো।”

“আ আসলে ভাইয়া আমি আপনাকে অনেক পছন্দ করি। মানে আমি আপনাকে ভালোবাসি ভাইয়া। বলেই ইভা তার হাত দিয়ে চোখ দুটো ঢেকে নিলো।”

“হুয়াট! কি বলছো। এই টুকু একটা মেয়ে তুমি কিনা ভালোবাসা নিয়ে আবদার করতে এসেছো। ”

“আমি সত্যি বলছি ভাইয়া। ”

“আচ্ছা বেশ। আমাকে বলো তো ভালোবাসা কাকে বলে? ভালোবাসা কি? কয় প্রকার ভালোবাসা? তুমি যদি এগুলো এক্সপ্লেইন করতে পারো আমি বিশ্বাস করবো যে তুমি আমাকে ভালোবাসো।”

“ইভা মাথা নিচু করে বলল আমি জানিনা এতোকিছু। শুধু ভালোবাসি আপনাকে এই টুকুই জানি।”

“আবির ভাইয়া আড়চোখে রাত্রির দিকে তাকালো। আর মনে মনে বলল, ইশ আমার পিচ্চি পাগলি টার মুখটা একবার দেখো। কি রকম রেগে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। পাগলি তুমি যে জেলাস ফিল করছো সেটা আমি খুব ভালো বুঝতে পারছি। মনে মনে হাসলো ও। তারপর ইভা কে বলল, দেখো তুমি এখনো অনেক ছোট বুঝলে। এসব আজে বাজে চিন্তা ভাবনা এখন একদম মাথায় আনবেনা। যখন বড় হবে আস্তে আস্তে বুঝতে শিখবে তখন দেখবে আমার থেকেও সুন্দর আর স্মার্ট ছেলে কে তুমি হাজবেন্ড হিসেবে পাবে। তখন চুটিয়ে প্রেম ভালোবাসা করো তার সাথে কেমন। ”

“সত্যি! আমি আপনার থেকেও সুন্দর ছেলে পাবো।”

“হুম আমার চেয়ে দ্বিগুন সুন্দর ছেলে পাবে। সে তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসবে। বুঝেছো।”

“হুম ভাইয়া বুঝেছি। আচ্ছা তাহলে আমি সরি বলছি কেমন। যখন বড় হবো তখন কিন্তু আপনি আমাকে আপনার থেকেও সুন্দর ছেলে খুঁজে দিবেন কেমন।”

“হুম ইনশাআল্লাহ দিবো। কিন্তু তার আগে তোমাকে অনেক ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে। ভালো রেজাল্ট করতে হবে পারবে।”

“হুম পারবো একদম।”

“ওকে এখন তাহলে ঘুমিয়ে পড়ো গিয়ে যাও।”

“আচ্ছা ভাইয়া গুড নাইট।”

“গুড নাইট স্মলি।”

“তারপর ইভা চলে গেলো রুমে। আবির ভাইয়া বলল, কি হয়েছে মন খারাপ নাকি।”

“ক কই না তো।”

“আচ্ছা তুমি বসো এখানে আমি রায়াফ কে রুমে দিয়ে আসছি।”

“বসবো কেনো আমিও রুমে যাবো ঘুমাবো তো অনেক রাত হয়েছে।”

“একদিন মানা করেছি কেনো কেনো করবেনা। এখন ছাদেই আছো একদম ছুঁড়ে ফেলে দিবো চুপচাপ বসে থাকো আমি যাবো আর আসবো।তারপর রায়াফ কে কুলে নিয়ে চলে গেলো আবির ভাইয়ার রুমে। ”

“ভয়ে চুপ করে গেলাম। বিশ্বাস নেই যদি ছাদ থেকে ফেলে দেই। আবার এই কিছুক্ষন একা ছাদে ভয় ও তো লাগছে। এরই মধ্যে ফয়সাল ভাইয়া ছাদে এলো। আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরলাম। আর বললাম, ভাইয়া আপনি ঘুমাতে যান নি। ”

“কোনো কথা না বলে ফয়সাল ভাইয়া ঝরের গতিতে এসে আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো হাত দুটো চেপে রাখলো দেয়ালে। আর আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে রইলো। ”

“কি হয়েছে ফয়সাল ভাইয়া আপনি এমন করছেন কেনো। আমি কি করেছি ছাড়ুন আমাকে।”

“আমি তোমার ভাইয়া নয় একদম ভাইয়া বলবেনা আর। আবির ভাইয়ার সাথে তোমার রিলেশন কইদিনের। কিছুটা রেগে বলল। ”

“ম মানে কি বলছেন এসব। আমার কেনো আবির ভাইয়ার সাথে রিলেশন থাকবে। এসব বাজে কথা আপনি কেনো বলছেন।”

“তাহলে আবির ভাইয়া তোমাকে এতো প্রটেক্ট করে কেনো? এতো দায়িত্বশীলতা দেখায় কেনো তোমার প্রতি? আজকেও আসরে দুজন দুজনের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে ছিলে। কি ভেবেছো আমি কিছু দেখিনি।”

“চুপ করুন আপনি। আপনি যা ভাবছেন তা নিতান্তই আপনার ভুল ধারনা। ভাইয়া এতো রেস্পন্সিবিলিটি কেনো দেখায় জানেন না। আমার রাত ভাইয়ার অবর্তমানে তিনি আমাকে বোনের চোখেই দেখেন প্রটেক্ট প্রদান করেন। আর সেটাকে আপনি এতো দূর অবদি নিয়ে যাচ্ছেন। এতো নিচু মন মানসিকতা কেনো আপনার ছিঃ। আর যদিও রিলেশন থাকে তাহলে আপনার সমস্যা কোথায়। আপনার এতো জলে কেনো।”

“স্টপ দিস । তুমি জানোনা কেনো জলে। আমি তোমাকে ভালোবাসি রাত্রি। ভালোবাসি তোমাকে। চিল্লিয়ে বলল। আমার সহ্য হয়না কারও পাশে তোমাকে দেখলে। নিজের ভাই বলে কিছু বলতে পারিনা। প্লীজ বিশ্বাস করো রাত্রি আই লাভ ইউ আই রিয়েলি লাভ ইউ রাত্রি। সেদিনও তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছো অন্তত আজ ফিরিয়ে দিয়োনা প্লীজ। তারপর ফয়সাল ভাইয়া আমার কপালে কপাল ঠেকালো ঝুঁকে। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।”

“ফয়সাল! পেছন থেকে আবির ভাইয়া বেশ জোরে চিৎকার করে ডাক দিলো। ফয়সাল ভাইয়া কে টেনে নিয়ে বেশ জোরে একটা থা’প্পর মারলো।”

“ভাইয়া! তুমি আমায় মেরেছো কেনো?”

“তুই নিজেকে এই প্রশ্ন টা কর কেনো মেরেছি। একটু আগে কি সব বলছিলি ভালো বাসিস তাই না! তাও রাত্রিকে! তোর সাহস কি করে হলো ওকে টাচ করার তোকে কি রাত্রি সেই অধিকার দিয়েছে। বল! ”

“আমি ওকে ভালোবাসি ভাইয়া। আজ থেকে ৪ বছর আগে থেকে ওকে আমি ভালো বাসি। কিন্তু ও আমাকে রিজেক্ট করেছে৷ কেনো সমস্যা কি। আর তুমিই বা কেনো সিনক্রিয়েট করছো। কি হয় ও তোমার। এতো সিম্প্যাথি কেনো দেখাও ওর প্রতি। তোমার কিসের এতো অধিকার যে সব সময় তুমি ওকে প্রায়োরিটি দাও। ”

“আবারও একটা থা’প্পর দিলো ফয়সাল ভাইয়া কে। আর বলল, তর্ক করছিস আমার সাথে। শুনতে চাস কি হয় ও আমার? কেনো ওর প্রতি আমার এতো প্রায়োরিটি বেশি থাকে? তাহলে শুন, শি ইজ মাই ফিয়ন্সি। আর সেটা এখনকার নয় যখন রাত্রি ছোট ছিলো ঠিক সেই সময় থেকে। ওকে আমি ভালোবাসি। তাই ওর প্রতি প্রতিটা পদক্ষেপে আমি সিরিয়াস থাকি। এই জন্যই ওর প্রতি আমার এতো দায়িত্ব শীলতা। আরও কিছু শুনা বাকী আছে। ধমক দিয়ে বলল ফয়সাল কে।”

“আমি আর ফয়সাল ভাইয়া দুজনেই যেনো আকাশ থেকে পড়লাম। কি বললো ওনি আমার মাথা তো এখন চুড়কির মতো ঘুড়ছে।”

“ফয়সাল ভাইয়া বলল, তুমি এসব কি বলছো ভাইয়া। আর ছোট বেলায় কি না কি হয়েছে এসব তুমি এখনো মাথায় রেখেছো। ”

“হুম রেখেছি। কারন আমার ইচ্ছেতেই ওকে আম্মু আমার বউ হিসেবে সেই ছোট বেলা থেকেই ঠিক করেছে। একমাত্র রাত্রি বাদে সেটা সবার জানা। আমিই নিষেধ করেছি সবাইকে ওকে সব কিছু বলতে। কারন আমি চেয়েছিলাম যেনো রাত্রি নিজের বুঝ টুকু বুঝে উঠুক। লেখাপড়া শেষ করুক। আমার প্রতি রাত্রির অনুভূতি জন্ম নেওয়ার জন্য আমি ওকে এতোদিন সময় দিয়ে এসেছি। দীর্ঘ ১৮ বছর অপেক্ষা করে আছি৷ আর তুই আজকে সব মাটি করে দিলি।আমার ভাই ভাবতেও অবাক হচ্ছি তোকে। আর তুই ৪ বছরের ভালোবাসা দেখাতে এসেছিস। এই নিয়ে যেনো নেক্সট এ আর কোনো কিছু না শুনি আমি। আজ ছাদে যা হয়েছে সেটা যেনো কারও কান অব্দি না পৌঁছাতে পারে। যদি শুনেছি আমি তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেও হবেনা। নাও গো। যা গিয়ে ঘুমা। ফয়সাল ভাইয়া দাঁত চেপে সব কথা হজম করে চলে গেলো।”

“আমি নিঃশব্দে কান্না করছি। অবাক যেমন হয়েছি ভয় ও পাচ্ছি। আবির ভাইয়ার এমন রাগ আমি কোনোদিন দেখিনি। ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক নয় কি। আর আজকে ক্লিয়ার হয়ে আমার জট পাকানো প্রশ্ন গুলো৷ কেনো আবির ভাইয়া আমাকে এতো দেখা শুনা কর‍তো কেয়ার করতো। কেনো রাত ভাইয়া বাকিরা কিছু বলতোনা। সব কিছু পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো। ”

“আবির ভাইয়া আমার সামনে এসে দাঁড়ালো আর বলল, উপরে তাকাও।”

“আমি নিশ্চুপ।”

“রাত্রি উপরে তাকাতে বলেছি ফাস্ট উপরে তাকাও। হালকা ধমক দিয়ে বলল।”

“কেঁপে উঠলাম আমি সাথে সাথে উপরে তাকালাম। আবির ভাইয়ার ওই নেশাক্ত চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে থমকে গেলাম। আবির ভাইয়া ও আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর ওনি হুট করেই আমাকে শক্ত করে তার বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলেন। আমিও বিড়ালের বাচ্চার মতো গুটি শুটি হয়ে আবির ভাইয়ার বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে আছি।”

“বড় বড় নিশ্বাস ফেলছেন ওনি। ওনার হৃদপিন্ডের ধুকপুকানির শব্দ আমি গভীরভাবে মস্তিষ্কে শ্রবণ করছি। ভয় টা যেনো মুহুর্তের মধ্যেই হারিয়ে গেলো। যেনো একটা প্রশান্তির যায়গায় শুয়ে আছি। মানুষটা আমাকে ভালোবাসে ভাবতেই শরীরে শীহরন বয়ে যাচ্ছে। বার বার কানে প্রতিধ্বনি হচ্ছে রাত্রিকে আমি ভালোবাসি। শি ইজ মাই ফিয়ন্সি। ভাবতেই লজ্জা লাগছে খুব। একটু আগে যে এতো গুলো কাহিনি হয়ে গেলো সেটা যেনো আমি ভুলেই গেলাম।”

“আবির ভাইয়া বেশ খানিক্ষন পর আমাকে বলল, সরি মাই কুইন। ভয় পেয়েছো অনেক তাই না! আমি সত্যি সরি চেয়ে নিচ্ছি। ফয়সাল এর কথা শুনে আর ওকে তোমার সাথে এতো ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে মাথা ঠিক ছিলোনা। তাই রেগে গিয়েছিলাম। আর যা যা শুনেছো তার কোনো টাই মিথ্যে নয় সব সত্যি। এতোদিন সবাই লুকিয়েছি তোমার থেকে কথা গুলো৷ প্লীজ ক্ষমা করে দিয়ো। আর কিছু লুকাবোনা মাই পিচ্চি কুইন। খুব ভালোবাসি তোমায়। সেই ছোট বেলা থেকে তোমায় আমি নিজের বউ হিসেবে মেনে এসেছি। যখন তোমার জন্ম হয়েছিলো আমি আম্মু আভা তোমাকে দেখতে গিয়েছিলাম। সেদিনই আমি আম্মু কে বলেছিলাম যে বড় হলে আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। কিন্তু সেদিন ওরা হেসে কথা টা ফেলে দিয়েছিলো। আস্তে আস্তে যখন তোমার ৫ বছর হয় তখনও আমি প্রতিদিন আম্মুকে বলতাম এই লিটল কুইন কে আমি বিয়ে করবো। আমার এই কুইন টা কে সব সময় চাই। হ্যাঁ সেদিনই সবাই বসে কথা বলেছিলো। আর কথা দিয়েছিলো সবাই আমাকে যে, আমার বউ হবে তুমি। আমার খুশির শেষ ছিলোনা সে দিন। সে সময় বিয়ে কি বউ কি যদিও বুঝতাম না তাও আমার বায়না ছিলো যে আমার তোমাকেই লাগবে৷ ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলাম তোমার প্রতি ভালোলাগা ভালোবাসা টুকু বাড়তে লাগলো বুঝে গেলাম যে ভালোবাসা কি। আমার যে তোমায় ছাড়া চলেনা। তোমার পড়াশুনার ক্ষতি হবে ভেবে কিছু এই পর্যন্ত বলা হয়নি। কিছুক্ষন থেমে বলল, চুপ করে আছো কেনো আর কেঁদোনা। কথা বলো, তুমি কি এই পাগল টাকে ভালোবাসবে পাগলি। সারা জীবন থাকবে আমার পাশে। খুব ভালোবেসে আমার পিঞ্জরে আগলে রাখবো। কি বলো থাকবে আমার পাশে।”

“হুহ আসছে বলতে তুমি কি আমায় ভালোবাসবে। ভেঙিয়ে মনে মনে বলতে লাগলাম। দাঁড়ান আমার থেকে এতোকিছু আড়াল করেছেন। আর আমি যে ভিতরে ভিতরে আপনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি আমার কি কষ্ট হয়নি। সুযোগ পেয়েছি। এবার আপনাকে জ্বালাবো কষ্ট দিবো। চট করে মাথা উচু করে বললাম, সরি আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারবোনা। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি অনেক আগে থেকেই। আমি তাকেই বিয়ে করবো। ছোট বেলায় কি হয়েছে সেটা ভুলে যান। আমার তো ইচ্ছে অনিচ্ছে আছে নাকি। আমাকে ক্ষমা করবেন।”

“আবির ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে থমকে দাঁড়ালো আর বলল, র রাত্রি ত তুমি এসব কি বলছো। তুমি এমন টা বলতে পারোনা। আর কাকে ভালোবাসো তুমি ফয়সাল কে? নাকি অন্য কাউকে। ”

“আপনাকে কেনো বলবো। কে আপনি।”

“পেঁচার মতো মুখটা মলিন করে মাথা টা নিচু করে আছে। আবির ভাইয়ার চোখ দুটো টলমল করছে। যেনো এক্ষুনি স্রোতদ্বারা গুলো বর্ষন করবে। তার এই চোখের জল যেনো আমার সহ্য হলোনা। আমি ঝাপটে ধরলাম আবির ভাইয়া কে। পেছন এ হাত দুটো নিয়ে টি-শার্ট টা আকড়ে ধরে বললাম, ভালোবাসি তো আপনাকে। আমিও খুব ভালোবাসি৷ যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই আপনাকে ভালো লাগতো ভাইয়ার বন্ধু বলে বলার সাহস হয়ে উঠেনি। ইভা যখন কথা বলত আপনাকে নিয়ে হিংসে হতো সত্যি। কিছুক্ষন আগেও হিংসে হয়েছে। সত্যি আমি জেলাস ফিল করতাম। কিন্তু এখন বুঝতে পারলাম যে আমি আপনাকে ভালোবাসি ভাইয়া। খুব ভালোবাসি। আপনি চোখের পানি ফেলবেন না প্লীজ। ছেলেরা কাদে নাকি। হুতুম পেচার মতো লাগছে তো আপনাকে।”

“অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেলো আবির ভাইয়া। আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, এই পাগলি কেনো খানিক সময়ের জন্য আমাকে ভয় পাইয়ে দিলে বলো। জানো এই এক মুহুর্ত আমার কাছে মনে হয়েছে আমি অন্ধকার জগতে চলে গিয়েছি। আর এমন করবেনা বলো। প্রমিস করো কোত্থাও যাবেনা আমাকে ছেড়ে।”

“প্রমিস করছি কোথাও যাবোনা। আপনার কুইন আপনার কাছেই থাকবে। কুইন কি কিং কে ছাড়া থাকতে পারবে নাকি হুম।”

“না একদম পারবেনা সত্যিই তো। তারপর আমার ললাটে তার অধর ছোয়ালো৷ আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। তারপর আবারও জড়িয়ে ধরে বলল, খুব শিঘ্রই তোমাকে বউ করে নিয়ে আসবো পাগলি। আমি চাইছি তোমার এইচ এস সি পরিক্ষা টা শেষ হওয়ার জন্য। নইলে যে তুমি তোমার লক্ষ্য থেকে সরে যাবে।”

“না পারবোনা এতোদিন অপেক্ষা করতে। আমি বিয়ের পরেই না হয় পরিক্ষা দিবো। মন খারাপ করে বললাম।”

“এতো বছর অপেক্ষা করতে পেরেছি আর ১ টা বছর পারবেনা তুমি। ”

“না পারবোনা। বলেই শক্ত করলাম হাতের বাধন।”

“উম উম ভালোবাসা, আদর পাওয়ার প্রবণতা বেশি বেরে গেছে বুঝি। তাহলে চলো এখনই একটু আদর করে দেই। ”

“ছিঃএসব কি কথা বলছেন। মুখে লাগাম দিন। নইতো টেপ লাগিয়ে দিবো।”

“শব্দহীন হেসে বলল, পাগলি। চলো রাত হয়ে গেছে অনেক ২ঃ৪৫ বেজে গেছে ঘুমাবে চলো। রায়াফ রুমে এতোক্ষন একা রয়েছে যদি ভয় পায়।”

“রায়াফ এর কথা শুনে সটান হয়ে গেলাম। সত্যিই তো ভাইটা আমার অন্য বাড়িতে একা এতো বড় রুমে ঘুমাচ্ছে ভয় পাবে তো। আচ্ছা চলুন চলুন ভাইয়া। আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন নইতো সত্যি সত্যি ও ভয় পাবে।”

“এক মিনিট ভাইয়া বললে কেনো। হবু স্বামীকে কেউ কি ভাইয়া বলে।”

“আচ্ছা সরি চলুন আর ঢং করতে হবেনা। ”

“তাহলে একটু আদর করে যাও। নইতো যাবোনা।”

“জমিয়ে রাখি বিয়ের পর দিয়ে দিবো। চলুন তো।”

“তারপর আমি গিয়ে ইভার পাশে শুয়ে পড়লাম। আবির ভাইয়া মুচকি হাসতে হাসতে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লক করে রায়াফ এর পাশে শুয়ে পড়লো। রায়াফ কে জড়িয়ে ধরে ঘুমালো।”

“ওইদিকে ফয়সাল অন্য রুমে বসে আছে। তার চোখে ঘুম নেই। চোখের পাতা গুলো যেনো আজ বড্ড অস্থির হয়ে আছে৷ হইতো ওর ভালোবাসা টাও সত্যি ছিলো। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস। আমরা যে চাইলেই সব কিছু পেতে পারিনা। বাচ্চাদের মতো আজ ফয়সাল কান্না করছে আর বলছে। ভালোবাসি রাত্রি আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি। প্লীজ ফিরে এসো আমার কাছে। একবার বলো আমাকে ভালোবাসো। আমি সব বাধা ভেঙ্গে দিবো। প্লীজ কাম ব্যাক। কথা গুলো বলছে আর চোখের পানি ফেলছে। নেশাক্ত কিছু থাকলে হইতো এখন সেটাও খেতো ফয়সাল। কিন্তু সে টা কাছে নেই। ভালোবাসা যদি সত্যি হয় ভালোবাসার মানুষ টার প্রতি। তাকে হারানো যে কতোটা বেদনা দায়ক সেটা একমাত্র সেই জানে যে হারিয়েছে। ”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে