Saturday, July 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1036



স্পর্শ পর্ব-১০

0

#স্পর্শ
#part_10
#sarika_Islam

দিতি সোজরে দিয়া গালে চর বসিয়ে দিল।দিয়া মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে।দিতি রিপোর্টটা দূরে ফালিয়ে দিয়ে বলল,
-যার জন্য এতকিছু করলাম তাই হলো!!

দিয়া মাথা তুলে দিতির দিকে তাকাল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
-মানি?

দিতি রাগের মাথায় বলল,
-আরমানকে তোর থেকে দূর করলাম আর তুই কিনা আরমানের অংশ নিয়ে এসেছিস নিজের মধ্যে??

দিয়া আরেকদফা অবাক হয়ে বলল,
-দুর করেছ মানি?তুমি কি বলতে চাইছো স্পষ্ট করে বলছ না কেন??

দিতি বলল,
-সেই শুরু থেকে তোকে আরমান থেকে দূরে রাখার আপ্রান চেষ্টা করেছি।কিন্তু তুই মানতে নারাজ তাই আরমানকেই আমার নিশানার শিকার বানালাম।আমি সফলও হয়েছিলাম কিন্তু তোর সেইরাতের ভুলের জন্য আমার সব প্লানিংএ পানি ঢেলে গেল।

দিয়া দিতির কথা শুনে ধপ করে নিচে বসে পরলো,কাদতে কাদতে বলল,
-তুমি করেছো এইসব?আরমান,,আরমানের কোন দোষ নেই এইখানে?সব তোমার রটানো কান্ড!!!

দিতি দিয়ার কাছে বসে দিয়ার হাত ধরে বলল,
-দেখ দিয়া যা করেছি তোর জন্যই করেছি তোর ভালোর জন্য,,

দিয়া দিতির হাত ঝারা দিয়ে ফেলে বলল,
-এই ভালো করেছো তুমি?নিজেরই মেয়ের জীবন শেষ করে দিয়েছ তুমি শেষ করে দিয়েছ,
-দেখ আমি আর রায়ান তোর ভালোর জন্যই করেছি,,

দিয়া এইবার খুব বেশিই অবাক হয়ে গেল।রায়ান!!!সে কখনো ভাবতেও পারেনি এই সব নোংরামির সাথে রায়ান জরিত থাকবে।দিয়া চোখের পানি মুছে উঠে দারালো দিতিও দিয়ার সাথে সাথে দারালো,
-রায়ানও ছিল তোমার সাথে??

দিতি অপরাধী স্বরে বলে উঠে,
-হুম

দিয়া আর এক মুহুর্তও সেখানে দারায় না রায়ানকে আজ হিসাব দিতে হবে কেন সে দিয়ার সাথে এমন পল্টি বাজী করলো।দিতি পিছন থেকে বহুবার ডেকেছে কিন্তু দিয়া একবারও পিছে ফিরে তাকায়নি।
রায়ানের বাড়ির সামনে এসে দারাল কলিং বেল বাজাতেই ডলি এসে দরজা খুলল।ডলি দিয়াকে দেখে বলল,
-আরে দিয়া আসো ভিতরে আসো।

দিয়া ভিতরে ঢুকে রায়ানকে খুজতে লাগলো।
-আন্টি রায়ান কোথায়?
-ওতো ওর রুমে,তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?কিছু কি হয়েছে?

দিয়া উওর না দিয়ে উপরে উঠলো ঠিক রায়ানের রুমে দিকে।দরজা খুলে দারালো রায়ান বিছানায় শুয়ে ফোন ঘাটছিল।দিয়াকে হঠাৎ সন্ধ্যার দিকে নিজের বাড়ি দেখে কিছুটা চমকালো,,আবার দিয়ার এই অবস্থা দেখে কিছুটা চিন্তিত হলো।রায়ান দিয়ার সামনে গিয়ে দারালো কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই দিয়া রায়ানের গালে এই থাপ্পর বসিয়ে দিল।রায়ান গালে হাত দিয়ে অবাক নয়নে দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
-লজ্জা করে না একটা মেয়ের জীবন এইভাবে নষ্ট করতে?একটা বারের জন্যও ভাবলে না এরপরে আমার কি হতে পারে?আমি কি করবো?

রায়ান তখনও ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলো না।রায়ান অবাক হয়ে জিগ্যেস করলো,
-কি বলে যাচ্ছো এইসব দিয়া?ঠিক আছো তো?

বলে দিয়াকে ধরতে নিলে দিয়া কিছুটা পিছিয়ে যায়,
–dont you dare,,সাহসও করবেনা নিজের নোংরা হাত দিয়ে আমাকে ছোয়ার।আরমান আর আমাকে আলাদা করার জন্য এতটা নিচে নেমে গেছ তুমি রায়ান ছিহ ভাবতেও ঘৃনা হচ্ছে।

রায়ান দিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
-আমি ভালোবাসি তোমাকে দিয়া তাই এমনটা করেছি আমি।আমিই কিছু করে বসতাম আরমানের সাথে কিন্তু পরে জানলাম আন্টিও অপছন্দ করে আরমানকে তাই আন্টির সাথে মিলে সব করেছি।

দিয়ার দুই বাহু ধরে বলল,
-আমি ভুল কিছু করিনি দিয়া আমি ঠিক করেছি।everything is fair in love & war,তুমি জানো না?

দিয়া নিজেকে ছারিয়ে বলল,
-তাই বলে তুমি এতটা নিচে নেমে যাবা?আমি তো আরমানকে ভালোবাসি,,আমি কখনোই তোমার মতো একজন ছেলেকে ভালোবাসতে পারবো না।

বলে সেখান থেকে বেরিয়ে পরলো।
ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে রাস্তার কিনারা ধরে হাটছে দিয়া। কেমন পাগল পাগল লাগছে নিজেকে শুন্যহীনা মনে হচ্ছে।নিশব্দে চোখ বেয়ে পানি গরিয়ে পরতে লাগলো।কিছুক্ষন পর দরজার কলিং বেল বাজালো শ্রেয়া এসে দরজা খুলল।এই অবেলায় দিয়াকে নিজের বাড়ির দরজায় দেখে শ্রেয়া কিছুটা ভড়কে গেল।দিয়া একদম পরে যেতে নিলে শ্রেয়া ধরে ফেলে।ভিতরে এনে বসায় আর বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকে হয়েছে টা কি?কিন্তু দিয়ার মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছে না।শ্রেয়াকে জরিয়ে শব্দ করে কেদে উঠলো শ্রেয়া শান্তনা দিতে দতে বলল,
-কি হয়েছে দিয়া বল আমায়!

দিয়া হেচকি তুলতে তুলতে বলল,
-আমার আমার মা আর রায়ান মিলে সব করেছে শ্রেয়া।আমার জীবন টা তারাই বরবাদ করে দিল শ্রেয়া শেষ করে দিল।

দিয়া এক এক করে সব কাহিনি খুলে বলল শ্রেয়ার কাছে।শ্রেয়া অনেকটা অবাক হয়ে গেল,
-বুঝেছিস তো আরমান কিছুই করেনি তাহলে ফোন কর ওকে।ওকে বল তুই প্রেগন্যান্ট!

দিয়া নিজের পেটে হাত রেখে বলল,
-নাহ, আমি অনেক দূরে কোথাও চলে যাবো যেখানে কেউ আমাদের চিনবে না জানবে না।এই সার্থপরতা থেকে বহু দূরে।যেখানে কেউ আমাদের খুজে পাবে না।

বলে শ্রেয়ার গায়ের উপর ঢলে পরলো দিয়া।শ্রেয়া দিয়ার মুখে হাল্কাভাবে চাপর মারতে লাগলো কিন্তু দিয়া উঠছে না।
চোখ মেলে দিয়া নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে।শরির দুর্বল প্লাস অনেক কান্নার ফলে হুশ হারিয়ে ফেলেছিল দিয়া।পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে আরমান দারিয়ে আছে।দিয়া আরমানকে দেখে চোখ গরিয়ে পানি পরতে থাকে।আরমান দিয়ার হাত ধরে তার পাশে বসে।
-তোমার তো সাহস কমনা আমাকে ফেলে তোমরা দূরে যাওয়ার প্লানিং করছিলে!!

দিয়া আরমানের কথায় অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়।পাশেই শ্রেয়া দারিয়ে,
-আমি আরমানকে ফোন করে ডেকেছি।তোরা কথা বল আমি বাহিরে,

বলে বাহিরে যায় শ্রেয়া।দিয়া উঠে বসার চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা আরমান ধরে বসিয়ে দেয়।এক হাতে ক্যানেল লাগানো আরেক হাত আরমানের হাতের মুঠোয়।
-আরমান আম সরি তোমাকে ভুল বুঝার জন্য,

অপরাধীর মতো হয়ে বলল দিয়া।আরমান দিয়ার এক গালে হাত রেখে বলল,
-নাহ বরং আমি সরি তোমাকে এতটা কষ্ট দেওয়ার জন্য।
-তুমি আমাকে সব বললেই পারতে আরমান কেন বললে না তুমি??
-তোমার মা আমাকে এমনভাবে বলেছে যে আমি তোমার সাথে অমন আচরন করতে বাধ্য হয়েছিলাম দিয়া।আমার কাছে খুব কান্না কাটি করেছে খুব আকুতিমিনুতি করেছে তোমাকে ছারার জন্য।কিন্তু প্রথমে আমি মানতে চাইনি পরে তার মায়ের মমতায় আমি রাজী হয়ে গিয়েছিলাম।
-ওই মেয়েটা?
-সেটা শুধুই তোমাকে দেখানোর জন্য ছিল আর কিছুই নয়,আমি জানতাম তুমি অবশ্যই আমার খোজ করতে আসবে।
-তুমিও আমাকে কম বড় ধোকা দাওনি আরমান।

বলে মুখ ঘুরিয়ে নেয় আরমান দিয়ার মুখ নিজের দিকে নিয়ে মাথা নিচু করে বলে,
-আম রিয়েলি সরি দিয়া প্লিজ মাফ করে দাও,,

দিয়া আরমানের হাত নিজের পেটের উপর রেখে বলল,
– যদি বেবী মাফ করে তাহলে আমিও মাফ করে দিব,

আরমান মাথা তুলে দিয়ার দিকে তাকায়,
-আরমান তুমি বাবা হতে যাচ্ছো।আরমান আমি প্রেগন্যান্ট,উই আর প্রেগন্যান্ট আরমান,

বলে কপালে কপাল ঠেকালো।আরমানের চোখ বেয়ে খুশির এক ফোটা অশ্রু গরিয়ে পরে। দিয়ার কপালে চুমু খেল,দিয়া আরমানের হাত ধরে বলল,
-আরমান আমরা বিয়ে করবো এখনি এই মুহুর্তে,

আরমান দিয়াকে উঠালো দিয়া দারাতে গিয়ে পরে যেতে নিলে আরমান ধরে ফেলে।কোলে নিয়ে গড়িতে বসায়।
কাজী অফিসের সামনে দারিয়ে আছে তারা।দুইজন দুইজনের হাত ধরে ভিতরে ঢুকলো।তিন কবুল পরে তারা বিয়ের বন্ধনে আবব্ধ হয়ে গেল।
একটা পুকুরের সামনে গিয়ে বসলো। অন্ধাকার খোলা আকাশের নিচে প্রিয় মানুষটির সাথে থাকার আনন্দই আলাদা।আরমান দিয়ার হাত ধরে চুমু খেয়ে বলল,
-ভালোবাসি,

দিয়া আরমানের দিকে তাকিয়ে বলল,
-সত্যি?এইযে এইবার বলেছো কিন্তু ভালোবাসি।

আরমান দিয়ার এমন বাচ্চামো কথায় হেসে উঠলো,
-হুম ভালোবাসি খুব বেশিই ভালোবাসি,

দিয়া আরমানের কাধে মাথা রেখে বলল,
-আমিও

————-সমাপ্ত———–

স্পর্শ পর্ব-০৯

0

#স্পর্শ
#part_9
#sarika_Islam

সন্ধ্যার দিকে দিয়ার খুবি অস্বস্তি ফিল হচ্ছে কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে এর কারন ঠিক দিয়াও বুঝে উঠতে পারলো না।কেবিন থেকে বের হয়ে কফি সাইডে গেল সেখানে কিছুটা খোলামেলা পরিবেশ দক্ষিনা বাতাসও বয়ে চলে।দিয়া ফ্রেশ air নিতে সেখানে গেল।হয়ত মনের অস্বস্তি দূর হবে কিছুটা।
এক সাইডে দারিয়ে হাতে কফির মগ নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।কফির মগে চুমুক দিচ্ছে।তখনি ফোন আসলো রায়ান ফোন করেছে।দিয়া ফোন রিসিভ করলো,
-হ্যালো,
-হুম হ্যালো,কি করা হচ্ছে?
-এইতো কফি খাচ্ছি,
-আজ নিতে আসবো?নাকি একাই আসবে?

দিয়ার এভাবেও ভালোলাগছে না আবার একা বাসায় যাবে কেমন যেন লাগছে আজ। একটু ভেবে বলল,
-আচ্ছা পিক করে নিও,
-ওয়াহ দেটস গ্রেট,

দিয়া ফোন কাট করে দিল।ঘুরে দেখে আরমান পকেটে হাত গুজে দারিয়ে আছে দিয়ার দিকে তাকিয়ে।দিয়া আরমানকে ইগ্নোর করে সামনে বারতে নিলে আরমান প্রশ্ন ছুরে মারে,
-কার সাথে কথা বলছিলে?

দিয়া আরমানের প্রশ্নর কোন ধরনের উওর না দিয়ে ঘুরে বলল,
-আমার কাজ শেষ স্যার আমি তাহলে এখন আসি?

আরমান দিয়ার কিছুটা কাছে গিয়ে দারিয়ে বলল,
-নো,কাম টু মাই কেবিন,

বলেই চলে গেল,দিয়ার এখন খুব রাগ লাগছে কেন বারেবারে তার কাছে আসার আবার চেষ্টা করছে আরমান?দিয়ার মনের গহীনে আরমানের জন্য অনেক অভিমান জমা হয়ে আছে।দিয়া জোরে নিশ্বাস টেনে রিলেক্স করে নিজেকে আরমানের কেবিনের সামনে গেল।নক করে ভিতরে ঢুকলো সেখানে অলরেডি কয়েকজন আছে কাজ দেখাচ্ছে দিয়া হাফ ছেরে বাচলো।তাদের সামনে আর কিছুই জিজ্ঞেস করতে পারবে না আরমান।সবার সাথে দারালো আরমান এক এক করে সবার ডিজাইন দেখছে আর তাদের ভুল ধরিয়ে দিচ্ছে।দিয়ার করা স্কেচ গুলো বের করে সবার সামনে প্রেজেন্ট করলো সকালে যেগুলো দিয়েছিল দিয়া।আরমান সেগুলো দেখিয়ে সবাইকে বলল,
-মিস দিয়ার মতো কাজ করো অবশ্যই ভালো হবে।

দিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
-দিয়ার এক একটা কাজ এক একটা জিনিস আমাকে খুবিই আকৃষ্ট করে তুলেছে।আই থিংক আমার জন্য দিয়া বেস্ট,

দিয়া সহ বাকি সবাই অবাক হয়ে আরমানের দিকে তাকালো।আরমান সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
-আই মিন আমাদের কোম্পানির জন্য দিয়ার মতো ডিজাইনার বেস্ট।।

সবাই একমত করলো আরমানের সাথে।
রাত প্রায় নয়টা বেজে গেছে এক এক করে সবাই চলে যাচ্ছে।দিয়া ডিজাইন করতে ব্যাস্ত তখন রায়ান ফোন করলো।দিয়া পেন্সিল মুখের মধ্যে দিয়ে স্কেচের মধ্যে তাকিয়ে ফোন রিসিভ করলো,
-হুম,
-কি হলো কাজ শেষ হয়নি?
-হ্যা হ্যা প্রায় শেষ,
-আমি কিন্তু নিচে,
-আসছি,

বলে দিয়া ফোন রাখলো সব ঠিকঠাক করে উঠলো যাওয়ার জন্য দরজা খুলে বের হতে নিলে খেল এক ধাক্কা।কিছুটা পরে যেতে নিলে আরমান ধরে ফেলে। দিয়া আরমানের দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে আছে। আরমানকে দেখলে যেন তার আর কিছুরই হুশ থাকে না।দিয়া সোজা হয়ে দারিয়ে যেতে নিলে আরমান পিছন থেকে বলে উঠে,
-ড্রপ করে দেই?

দিয়া আরমানের কাছে এসে ভ্রু কুচকে বলল,
-মানি কি এইসবের আরমান?
-মানি কি মানি?ড্রপ করে দিতে চাইলাম,
-নো থেংকস,তোমার এই sympathy র আমার কোন দরকার নেই।

আরমান দিয়া একিই লিফটে একসাথেই নামলো।দিয়া আরমানের সাথে তো কোন কথাই নেই পুরো নিরবতা কাজ করছে তাদের মাঝে।লিফট থেকে নেমে বাহিরে গেল রায়ান বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দারিয়ে ছিল।দিয়াকে দেখে হাত উচু করে হায় করলো।দিয়া রায়ানের সামনে গেল। আরমান পিছনেই ছিল দিয়ার,, রায়ান আরমানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-তোমার বস?

দিয়া পিছে ফিরে আরমানকে দেখে ভরকে গেল ভয় পেয়ে গেল সে ভেবেছে আরমান চলে গেছে তার পিছে আসছে সেতো ভাবেইনি।দিয়া কিছুটা পিছে যেতে নিলে রায়ান ধরে ফেলে ধরতে গিয়ে কোমরে হাত পরে।আরমান রায়ানের হাত দেওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।রায়ান বলল,
-কি হলো দিয়া?

দিয়া ঠিকভাবে দারিয়ে বলল,
-হুম হুম বস,

রায়ান হাত বারালো আরমানের দিকে,
-হ্যালো আমি রায়ান,
-হায় আরমান,নাইস টু মিট ইউ,

বলে সেখান থেকে চলে গেল নিজের গাড়ির মধ্যে বসে পরলো।দিয়া তাকিয়ে দেখছে আরমানের দিকে। রায়ান বাইকে বসে হর্ন বাজাতে লাগলো,
-সিট দিয়া,

দিয়া বসে পরলো রায়ানের কাধে হাত রেখে।আরমান গাড়ির ভিতর থেকে ঠিক সব দেখছে আর জ্বলছে।গাড়ি নিয়ে চলে গেল রায়ানও এসে পরলো।

এভাবেই কাটলো আরো এক সপ্তাহ।
রায়ানের দিয়ার দিকে একটু একটু আগানো, আরমানের জেলাসি,,দিয়া আরমানেক ইগ্নোর করা এভাবেই দিনকাল যাচ্ছে।
দিয়া আজ ‘Deabook’ থেকে বিদায় নিবে আর সম্ভব না একিই ছাদের নিচে আরমানের সাথে থাকা।দিয়া আরমানের কেবিনে গেল একটা লেটার আরমানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-আমি resign করছি,

বলে যেতে নিলে আরমান রেগে উঠে দারায়।দিয়ার সামনে গিয়ে ওকে আটকায়,
-ও হ্যালো তুমি কি করছো এইসব?
-তোমাকে ইগ্নোর।

আরমান দিয়ার এমন শক্ত কথা শুনে কিছুটা ব্যাথিত হলো।দিয়ার দিকে মলিন ভাবে তাকিয়ে বলল,
-এতটা হেট করো আমায়?
-খুব,

বলে সেখান থেকে চলে গেল।আরমানও আর আটকালো না। তাকে তো হেটই করা উচিত সে যা করেছে তা মোটেও ঠিক করেনি দিয়ার সাথে।আরমানের সামনে থাকা টেবিলের উপর জোরে একটা লাথি মারে।

সন্ধায় দিয়া টিভি দেখছে হঠাৎ চকলেট খেতে মন চাইলো ফ্রিজ থেকে চকলেট নিল খাওয়ার জন্য,,মুখে দিল এক কামড় দেওয়ায় কেমন মুখ নুয়ে আসলো আর খেতে ইচ্ছে করছে না রেখে দিল।এখন মুখটা কেমন যেন করছে কিছু টকঝাল খেতে ইচ্ছে করছে বাসায় দিতিও নেই যে কিছু বানিয়ে দিতে বলবে।মনের আশাটা দমন করে দিল পুরোন করার মতো নয়।
দিতি ফিরলো এগারোটার দিকে একটু রাত করে।দিয়া টিভি দেখতে দেখতে সোফায়ই ঘুমিয়ে পরলো খুবি ঘুম পেয়েছিল তার।দিতি মেয়েকে সোফায় দেখে হাল্কা ভাবে ডাক দিতে লাগলো।দিয়া ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসলো,
-তুমি কখন আসলে?
-এইতো এখন,কি হয়েছে তোমার শরির খারাপ?

দিয়ার মাথায় হাত দিয়ে বলল দিতি।দিয়া হাল্কাভাবে হেসে বলল,
-নাহ

দিতি ঝাল পরাটা দিয়ার সামনে ধরলো,
-খাবে?

দিয়া খুশি হয়ে গেল সেটা নিয়ে টেবিলে বসলো দিতি ফ্রেশ হয়ে এসে মেয়ের সাথে বসল।দিয়া খুব মজা করে খাচ্ছে মুখে দিতে দিতে বলল,
-তুমি জানো আমার খুব ঝাল কিছু খেতে ইচ্ছে করছিল,

হঠাৎ দিয়ার কেমন যেন লাগা শুরু হলো বমি চলে আসছে দিয়া মুখে হাত দিয়ে বেসিং এ দৌড় দিল।কিছুক্ষন পর অস্থির হয়ে এসে টেবিলে বসলো।দিতি দিয়ার এই অস্থিরতা দেখে বলল,
-কি হয়েছে?
-জানি না আজ কেমন যেন লাগছে।
-চলো ডাক্তারের কাছে যাই,

বলে উঠে দারালো।দিয়া উঠে উপরে যেতে যেতে বলল,
-দরকার নেই রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবো,

সকালে,
ফোনের রিং বাজাতে দিয়ার ঘুম ভাংলো ঘুমের চোখেই ফোন রিসিভ করলো,ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
-হ্যালো,

অপর পাশ থেকে আরমান বলল,
-এখন অব্দি ঘুমাচ্ছো?টাইম দেখেছ?সারে দশটা বাজে।কাম টু মাই অফিস hurry,,,

বলে ফোন কেটে দিল।দিয়া আরমানের এমন কথা শুনে হা হয়ে গেল কি হলো এইটা?জিদ্দে উঠে বসলো,
-উফ উফ উফ আমার কথা না শুনেই ফোন কেটে দিল উফ।নিজেকে কি ভাবে হ্যা?আমি যাবো না আমি বিদায় নিয়ে এসেছি আর পারাও দিব না।

উঠে ফ্রেশ হয়ে নিল নিচে ব্রেকফাস্ট করে সেখানেই বসে রইলো।সকাল পার হয়ে দুপুর হয়ে এসেছে দিয়া উঠে রুমে গেল গোসল করতে। বিছানার থেকে ফোন তুলে দেখলো 71টা মিসড কল আরমানের।দিয়া আবার ফোন উলটো করে রেখে দিল।শাওয়ার নিয়ে থ্রিপিস পরে নিচে গেল।
দিতি খাবার বেরে দিল এক লোকমা মুখে পুরতেই দিয়ার কেমন আবার বমি বমি ভাব হলো দিয়া খাবার টেবিল থেকে উঠে বেসিংএ গেল। দিতি মেয়ের পিছু পিছু গেল পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।দিয়া মুখে পানির ছিটে দিতে লাগলো ইচ্ছেমতো।চেয়ারে বসে চেয়ারের উপর মাথা রাখলো।এই খাবারের ঘ্রানটাও সহ্য হচ্ছে না টেবিল থেকে উঠে সোফায় বসে পরলো।দিতি দিয়ার এমন আনচান দেখে বলল,
-কি হয়েছে তোমার?
-জানি নাহ,
-চলো ডাক্তারের কাছে যাই,
-হুম,

বিকেলের দিকে দিয়া আর শ্রেয়া ডাক্তারের কাছে গেল।দিতির কাজ পরে গিয়েছিল বিধায় সে যেতে পারেনি।দিয়া আর শ্রেয়া ডাক্তারের কেবিনে বসে আছে রিপোর্ট এর জন্য।দিয়ার খুব নার্ভাস লাগছে কি হয় রিপোর্টে কে জানে!!
নার্স কিছুক্ষন পর রিপোর্ট এনে দিল।ডাক্তার রিপোর্ট চেক করে হাসি মুখে বলল,
– কংগ্রাচুলেশনস,ইউ আর প্রেগন্যান্ট।

দিয়া প্রেগ্ন্যাসির কথা শুনে অবাক হলো অনেকটাই অবাক হলো।শ্রেয়া হা হয়ে দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আর দিয়া ডাক্তারের দিকে।ডাক্তার বলল,
-দিয়া আর ইউ ওকেহ?

দিয়া তরিঘরি করে বলল,
-হুম হুম আম ওকেহ,থে,,থেংক্স ডাক্তার।

রিপোর্ট হাতে নিয়ে উঠে দারালো। বাহিরে এসে খুশি হয়ে শ্রেয়াকে জরিয়ে ধরলো।
-শ্রেয়ু আমি মা হবো!!শ্রেয়ু আই কান্ট বিলিভ আমি মা হবো!!!

শ্রেয়াও খুশি হয়ে জরিয়ে ধরলো।কিন্তু পরক্ষনেই বলে উঠলো,,
-দিয়া?কি হবে এখন?

দিয়া শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
-এখন যা হবে দেখা যাবে,

বাড়ি আসলো দিতি ওর জন্য আগের থেকেই অপেক্ষা করছে।দিয়াকে দেখে দিয়ার সামনে গিয়ে বলল,
-কি হয়েছে?

দিয়া দিতির সামনে রিপোর্টটা দিল,,দিতি রিপোর্টটা দেখে দিয়াকে সজোরে একটা চর মারলো।দিয়া ছিটকে কিছুটা দূরে সরে গেল।

চলবে,,,,

স্পর্শ পর্ব-০৮

0

#স্পর্শ
#part_8
#sarika_Islam

দিয়া বাড়ি চলে আসে নিজেকে ঘর বন্ধি করে ফেলে।সেইদিনের পর প্রায় এক সপ্তাহ দিয়া ঘরেই থাকে পুরো একা হয়ে যায় না কারো সাথে কথা না ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করে সে।নিজের রুমেও কাউকে আস্তে দেয়না সেও বাহিরে যায় না যেমন তেমন করে বেচে আছে এই আরকি।
আজ শুক্রবার দিয়া গোসল করে নতুন একটা থ্রিপিস বের করে পরলো।নিজ ঘর থেকে বের হয়ে নিচে আসলো।দিতি দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করছিলো দিয়াকে আজ এক সপ্তাহ পর নিচে নামতে দেখে খুব বেশিই খুশি হয়ে গেল।দিয়া খাবার টেবিলে বসে দিতিকে বলল,
-আজ বিরিয়ানি খাবো বানাবে?

দিতি মেয়ের মলিন হওয়া মুখশ্রীর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সামনে গেল।মাথায় হাত দিয়ে বলল
-অবশ্যই বানাবো, তুই ঠিক আছিস তো?

দিয়া ঠোঁটের কোনে খানিকটা হাসি ঝুলিয়ে বলল,
-হুম,,যাও এখন কথায় সময় নষ্ট করো নাতো,

দিতি মেয়ের খুশি দেখে নিজেও এক ফালি হাসি নিয়ে রান্নাঘরে গেল বিরিয়ানি বানাতে।
দুপুরে তারা খাওয়াদাওয়া শেষ করে বসে আছে। দিয়ার এখন অনেক বোর ফিল হচ্ছে দিতির দিকে তাকিয়ে বলল,
-শ্রেয়াকে আসতে বলি?

দিতি ফোন থেকে মাথা তুলে বলল,
-হুম বলো,

দিয়া শ্রেয়াকে ফোন করে আস্তে বলল শ্রেয়া বিকেল দিকে এসে হাজির।দুই বান্ধুবী ছাদে গেল বিকেলের দিকে এখন রোদ কিছুটা কমেছে।দিয়া ছাদের এক কোনে রেলিং ধরে দারিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশে কিছু কবুতর উড়ছে সারিবদ্ধ ভাবে একই সরলরেখায় আবার কিছু কিছু কবুতর ডিগবাজীও খাচ্ছে।তা দেখে দিয়া আনমনেই বলে উঠলো,
-আমিও যদি পাখি হতাম মন্দ হতো না!!কারো ফ্রেমে বন্দী থাকার চেয়ে এই মুক্ত আকাশে আজাদ পাখির মতো উড়া অনেকটা শ্রেয়।

শ্রেয়া দিয়ার এমন ভাবলেশহীন কথা শুনে দিয়ার দিকে তাকালো দিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
-তুই কি সত্যিই ঠিক আছিস দিয়া?

দিয়া মুখে আলগা হাসি দিয়ে বলল,
-ভালো আর রইলাম কই,যাকে ভালোবেসেছি সেই তো পর করে দিল,
-এখন?

দিয়া শ্রেয়ার দুই বাহু ধরে বলল,
-এখন এইসব সেন্টিনেস বাদ,,এখন থেকে বেক টু ওল্ড লাইফ ওকেহ!!
-পারবি?
-হুম অবশ্যই,

আরো কিছুক্ষন কথা বলে দুইজন নিচে গেল।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে দিতি তরিঘরি করে কোর্টে গেল কাজ এসে পরেছে। দিয়া আর শ্রেয়া বাসায় একা,দিয়ার রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে।
-শ্রেয়া এখনও কি তুই শপে আছিস?
-হুম একাই সামাল দেই,
-আমিও ফিরে আসি?আরমানের জব ছেরে দিব,

শ্রেয়া দিয়ার হাতে হাত রেখে বলল,
-সেকি আসবি কেন?তুই এখন শুধু তোর প্রফেশনাল লাইফে ফোকাস কর।তোর ফিউচার ভাব আর কিছু না।
-হুম,

সকালে,
দিয়া রেডি হয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য নিচে নামলো দিতিও এখন কোর্টে যাবে দিয়াকে এভাবে রেডি হওয়া দেখে ভ্রু কিছুটা কুচকে বলল,
-কোথায় যাওয়া হচ্ছে?

দিয়া টেবিল থেকে আগুলে জ্যাম নিয়ে খেতে খেতে বলল,
-অফিসে,

দিতি দিয়ার এমন কথা শুনে অবাক হয়ে বলল,
-তুমি সেই অফিসে আবার যাবে?আরমানের সামনে?
-সবচেয়ে বড় কাম্পানি ‘Deabook’ মম,সবার স্বপ্ন সেখান যাওয়ার কাজ করার আর আমি তো সেখানে এস এ ডিজাইনার হিসেবে আছি।

দিতি দিয়ার কাছে এসে বলে,
-ঠিক আছে স্বপ্ন পুরোন করো কিন্তু যেই কাজ করেছ তা যেন আর না হয়,ড্রপ করে দিব?
-না,

বলে দিয়া একাই বেরিয়ে পরলো। হেটে হেটেই দিয়া কিছুদুর পর্যন্ত এগুচ্ছে। মাঝরাস্তায় একটা বাইক এসে দিয়ার সামনে থামলো দিয়া হুট করে থেমে গেল ভয়ও পেল কিছুটা।রেগে গিয়ে বাইকে বসা ছেলেটাকে বলল,
-ও হ্যালো মারার ইচ্ছা আছে নাকি?এইভাবে বাইক চালালে লাইসেন্স ক্যান্সাল করে দিব।

বাইকে থাকা ছেলেটি মাথা থেকে হেলমেট খুলল, দিয়া রায়ানকে দেখে অবাক হয়ে বলল,
-তুমি?

রায়ান বাইক থেকে নেমে দারিয়ে বলল,
-এইভাবে কেউ কাউকে থ্রেট দেয়?ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,প্লিজ লাইসেন্স ক্যান্সাল করেন না আপা,,

হাত জোর করে দিয়াকে বলল,দিয়া হেসে ফেলল,
-নটাংকি বাজ,

রায়ান বুকের মধ্যে হাত গুজে বলল,
-যাক হাসাতে তো পেরেছি,আসো ড্রপ করে দেই,

দিয়া রায়ানের বাইকে চরে অফিসে আসলো।রায়ানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অফিসে ঢুকলো,,লিফটের সামনে গেল সেখানে অলরেডি আরমান দারিয়ে অপেক্ষা করছে লিফট এর।দিয়া আরমানকে দেখে সামনে না যেতে চেয়েও সামনে গিয়ে দারালো।
-গুড মর্নিং স্যার,

বলে লিফটের দিকে মুখ করে দারালো। আরমান তার সাইডে ফিরে দিয়াকে দেখতে পেল।দিয়াকে আগের মতো একটুও দেখাচ্ছে না কেমন যেন শুকনা হয়ে গেছে আগের থেকে,, চোখগুলো ডেবে গেছে একদম অন্যরকম লাগছে।লিফট এসে থামলো, আরমান প্রথমে ভিতরে ঢুকলো দিয়া ঢুকছে না আবার আসলে সে যাবে আরমানের সাথে মোটেও যাবে না একই সাথে।লিফট বন্ধ হতে নিলে আরমান আবার খুলে দেয় লিফটের বাটন ধরে, দারিয়ে আছে যেন বন্ধ না হয় আর দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
আর না পেরে বিরক্তি হয়ে দিয়া ভিতরে ঢুকলো।আরমান ছেরে দিল লিফট উপরে উঠা শুরু করলো।দিয়া পুরো সোজা তাকিয়ে আছে ভুলেও আরমানের দিকে মুখ করে তাকাচ্ছে না।আরমান বারংবার আড়চোখে দিয়াকে দেখে যাচ্ছে।লিফট এসে পরলে দিয়া ফটাফট বের হয়ে গেল নিজের কেবিনে গিয়ে হাফ ছেরে বসলো।
-উফ উফ উফ আমি এভাবে থাকতে পারবো না উফ।বারবার আরমানের সম্মুখীন হতে আমি পারবো না উফফফ।।

ডেস্কের উপর মাথা রাখলো তখনি দরজায় টোকা পরলো।নীল ভিতরে ঢুকে বলল,
-আরমান ডেকে পাঠিয়েছে,

দিয়া ভ্রু কুচকে বলল,
-কেন?
-নিজেই গিয়ে জিজ্ঞেস করো,

বলে চলে গেল আর কিছু বললও না।দিয়ার এখন কি করা উচিত? সেকি যাবে?নাকি যাবে না?নাহ যাবে এইটাতো প্রফেশনাল লাইফ নট পার্সোনাল।দিয়া উঠে বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে কিছুটা ঠিক করে হাতে কিছু ডিজাইনের পেজ নিয়ে বের হলো।
আরমানের রুমে নক করে ভিতরে ঢুকলো।নিচের দিকে তাকিয়েই আরমানের সামনে ডিজাইন গুলো দিল।আরমান উঠে এসে দিয়ার সামনে দারালো পকেটে এক হাত গুজে আরেক হাত দিয়ে পেজগুলো নারাচারা করতে করতে বলল,
-কেমন আছো?
-পেপারে সব ডিজাইন আছে ভালো না লাগলে বলবেন আবার ড্র করবো,

বলে দিয়া ঘুরে যেতে নিলে আরমান দিয়ার হাত ধরে ফেলে।দিয়া সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয় আরমানের স্পর্শে।আরমান দিয়াকে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে আনে দিয়া আরমানের বুকের উপর গিয়ে পরে।দিয়া চোখ খুলে আরমানের দিকে মাথা উচু করে তাকালো,, আরমান দিয়ার মুখের উপর পরে যাওয়া চুলগুলো সরাতে সরাতে বলল,
-সেইদিনের বিহেভিয়ারের জন্য আম সরি,

দিয়া আরমানের বাহুডোর থেকে নিজেকে ছারাতে চেষ্টা করতে করতে বলল,
-ই,,ইটস ওকেহ,
-আসলে,,

কেউ দরজায় নক করলো আরমান আর কিছু বলতে পারলো না, দিয়াকে ছেরে দিয়ে কিছুটা দূরে দারালো দিয়া যেন এইবার শান্তি পেল ছাড়া পেয়ে।একজন ভিতরে ঢুকলো হাতে কিছু পেপার নিয়ে
-স্যার কিছু ডিজাইন,

বলে আরমানের সামনে ধরলো আরমান তার হাত থেকে নিয়ে দিয়ার দিকে তাকালো।দিয়া একদম দরজার কাছে গিয়ে বলল,
-হেভ এ গুড ডে স্যার,

বলে বের হয়ে গেল,

চলবে,,

স্পর্শ পর্ব-০৭

0

#স্পর্শ
#part_7
#sarika_Islam

সেদিনের পর গুনে গুনে দুইদিন পার হয়ে গেল আরমানের না কোন কল না ঠিকঠাকভাবে কথা বলা কিছু বললে ইগনোর,দিয়া যত এগুতে চায় আরমানের দিকে আরমান ততই শুধু দূরে যায়, দিয়া ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না তাও সে আরমানকে কিছুই বলেনি কোন কিছুরই জবাব চায়নি,
সকালে দিয়া রেডি হয়ে প্রতিদিনের মতোই আজও অফিসে যাচ্ছে তখনি দিতি তার রুমে প্রবেশ করলো।দিতিকে দেখে দিয়ার হাসি কিছুটা মলিন হয়ে গেল।ড্রেসিংটেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে বের হতে নিলে দিতি আটকে দেয়।
-দিয়া,,

দিয়া মুখে কিছুটা বিরক্তি ভাব নিয়ে ঘুরে তাকায়,
-ডলিরা কিছুদিন পর আসছে ডেট ফিক্সড করতে,

দিয়া খানিকটা চিল্লিয়ে বলল,
-মানি কি?কেন পিছে পরেছ আমার?আমি রায়ানকে বিয়ে করবো না ব্যাস,

দিতি মেয়ের এমন বিহেভিয়ার অনেক সহ্য করেছে এখন আর নয় দিয়ার সামনে গিয়ে দারালো,
-কেন বিয়ে করবে না?অন্য কাউকে ভালোবাসো?
-হ্যা, (অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল)
-ওই আরমানকে?যার সাথে তুমি রুম ডেট করেছ?

দিতির মুখে এই কথা শুনে বেশ অবাক হলো দিয়া।দিতির দিকে অবাক নয়নে তাকালো,হুট করেই দিয়ার গালে পরলো এক চর,
-লজ্জা করেনা এইসব কিছু করতে?কখনো ভাবতেও পারিনি তুমি এমনটা করবে দিয়া,

দিতির চরে দিয়া কিছুটা দূরে সরে যায় কাধ থেকে ব্যাগ পরে গেল এতটা জোরে লেগেছে,, থাপ্পরটা সাথে সাথে চোখ বেয়ে পানি গরিয়ে পরলো,দিয়া রাগের মাথায় চিল্লিয়ে দিতিকে বলল,
-তোমার লজ্জা করেনি এই বয়সে বিয়ে করতে?
-নাহ আমার করেনি কারন একটা সাপোর্ট লাগতো আমার।আমার বয়সে আসলে তুমি ঠিক বুঝতে।
-আমারও সাপোর্ট লাগবে,
-তাহলে রায়ানকে বিয়ে করো,
-আমি আরমানকেই বিয়ে করবো,আরমান নেই তাহলে কেউ নেই,

বলে কাধের ব্যাগটা তুলে বের হয়ে গেল বাসা থেকে।
দিয়া শ্রেয়ার বাসায় গেল শ্রেয়া দিয়াকে দেখে খুব বেশি খুশি হয়ে গেল বেস্ট ফ্রেন্ডকে সে কতদিন পর দেখছে।কিন্তু দিয়ার এই মলিন চেহারা দেখে কিছুটা চিন্তিত শব্দে বলল,
-কি হয়েছে দিয়া?

দিয়া ছলছল চোখে শ্রেয়ার দিকে তাকালো শ্রেয়াকে এইকয়দিন তার সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা খুলে বলল।শ্রেয়া খুশিও হয়েছে আরমানের সাথে প্রেমের কথা শুনে কিন্তু পরক্ষনেই চিন্তিত হয়ে পরেছে দিতির কথা শুনে।
-তাহলে তুই এখন কি করবি দিয়া?
-আমি আজিই আরমানকে বলবো বিয়ের কথা,আমাকে বিয়ে করতে,
-যদি না করে?

দিয়া কান্নাভেজা চোখেই রাগী হয়ে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
-হোয়াট ডু ইউ মিন যদি না করে?আরমান আমাকে ভালোবাসে ও অবশ্যই আমাকে বিয়ে করবে কেন করবে না?

শ্রেয়া দিয়াকে শান্তনা দিয়ে বলল,
-ওকে ওকে ওকে আম সরি,

দিয়া শ্রেয়ার সাথে সন্ধ্যা পর্যন্ত থেকে বের হয়ে গেল সেখান থেকে।আরমানকে সেই কখন থেকে ফোন করেই যাচ্ছে আরমান ফোনই তুলছে না।দিয়া বুঝতে পারছে না আজ কি এমন হলো সকাল থেকে তার কল এভোয়েড করছে।দিয়ার এইবার আরমানের প্রতি বেশ রাগ লাগছে মন চাইছে সামনে পেলে খুনই করে দিবে।তখন দিয়ার ফোন আসলো ভেবেছে আরমান খুশি মনে ফোন মুখের সামনে নিয়ে দেখলো দিতি ফোন করেছে রাগের মাথায় কেটে দিল।দিতি আবার ফোন করেছে দিয়া এইবার ধরলো,
-কি হয়েছে?
-কোথায় তুমি?
-জাহান্নামে তাতে তোমার কি?

দিতি মেয়ের এমন রাগীভরা কথা শুনে উত্তেজিত না হয়ে বরং শান্তভাবে বলল,
-দেখ দিয়া তুমি যার জন্য অপেক্ষা করছো এমন রাস্তার মাঝে দারিয়ে সেকি আদো তোমার চিন্তা আছে?
-আছে তা তোমার বলতে হবে না,
-তাহলে গিয়ে দেখ তোমার আরমান কি করছে,সে মোটেও ভালোনা তোমার জন্য,
-মানি?
-তার বাড়ি যাও তার খোজ নাও,
-সেটা আমি বুঝে নিব তোমার সো কল্ড চিন্তা তোমার কাছেই রাখো,

বলে ফোন কাট করে দিল দিয়া,দিতি কেন বলল তার বাড়ি যেতে?তার কি সত্যিই আরমানের বাড়ি যাওয়া উচিত?যেই ভাবা সেই কাজ দিয়া আরমানের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলো।কিছুক্ষনের মধ্যেই আরমানের বাড়ি পৌছে গেল কলিং বেল ইচ্ছেমতো চাপছে কিন্তু কেউই দরজা খুলছে না।দিয়ার এইবার রাগ সপ্তম আসমান। আরমানের কি এমন জরুরি কাজ যা দিয়ার থেকে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট??গার্ডেন সাইড থেকে উকিঝুকি দিয়ে দেখতে লাগলো আরমান কি আদো ভিতরে আছে কি না?এই দারোয়ান টাকেও খুজে পাচ্ছে না অসময় সব কিছুই খারাপ হয়।দিয়া কাউকে পেয়ে বাড়ি থেকে বের হতে নিলে মেউন গেটে দারোয়ান এসে দারায়। তাকে দেখে দিয়া তারাতারি করে তার সামনে গিয়ে বলে,
-আংকেল আরমান কোথায়?

দারোয়ান আংকেল পান চিবুতে চিবুতে বলল,
-কেন স্যার তো বাড়িতেই সাথে একটা মেডামও আছে,

মেডাম কথাটা শুনে দিয়ার মনে কেমন যেন একটা খটকা লাগলো আরমানের তো মা বাবা নেই তাহলে মেডাম?দিয়া ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
-কোন মেডাম?
-সে আমি কেমনে বলতে পারুম,দেখে তো মনে হচ্ছিল প্রেমিকা,মানি গার্লফ্রেন্ড আপনারা যা বলেন আরকি,

বলেই দাত কেলালো দিয়া অবাকের সপ্তম চুরায় প্রেমিকা?গার্লফ্রেন্ড? তাহলে দিয়া কি?দিয়া এইবার রাগের মাথায় আরমানের বাড়ির দরজা আরো ইচ্ছামতো পেটাতে লাগলো ইচ্ছেমতো কলিং বেল চাপতে লাগলো।
একটা মেয়ে এসে দরজা খুলে দিল দিয়া মেয়েটাকে দেখে আর অবাক হলো না কারন আংকেল তো বলেই দিয়েছে।কিন্তু মেয়েটার ড্রেসাপ দেখে বেশ অবেকটা অবাক হলো।ছোট একটা টপ্স আর জিন্স পরে আছে।আরমানের তো এইসব ড্রেসাপ পছন্দ না তাহলে?আবার আরমানের বাড়িতে মেয়ে?দিয়া মেয়েটির দিকে কিছুক্ষন চোখ বুলালো তারপর জিজ্ঞেস করলো,
-আরমান কোথায়?

সে নিজেই মেয়েটিকে সরিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল তাকে আর কিছু বলার সুযুগ দিল না।উপরে গিয়ে আরমানের রুমে গেল দেখলো আরমান বিছানায় শুয়ে আছে ওপাশ হয়ে। গায়ের শার্ট বিছানায় পরানো দিয়ার আর বুঝতে বাকি নেই এইসব কি হয়েছে দিয়া আরমানের কাছে গিয়ে ডাক দিল,
-আরমান

আরমান ঘুরে তাকালো দিয়াকে দেখে উঠে বসলো,দিয়া আরমানের সামনে গিয়ে সজোরে তার গালে এক থাপ্পর বসিয়ে দিল।আরমান জিদ্দে উঠে দারালো,আরমান বলল,
–how dare you,
-এইসব কি আরমান?কে ওই মেয়েটা?বলো আমি যা দেখেছি সব মিথ্যে,

আরমানের সামনে গিয়ে তার হাত ধরে বলল দিয়া।আরমান দিয়ার হাত ছারিয়ে বিছানা থেকে শার্ট পরতে পরতে বলল,
-কি মিথ্যে?

দিয়া আরমানের শার্টের কলার ধরে চিল্লিয়ে বলল,
-এইসব করার ছিল তাহলে সেই রাতে কি ছিল?

আরমান নিজের কলার ছারিয়ে দিয়াকে কিছুটা দূরে দার করালো ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
-তুমিই এসেছিল নিজেকে বিলীন করতে আমি যাইনি,
-বিকস আই লাভ ইউ,ডোন্ট ইউ লাভ মি?
-কখনো বলেছি ভালোবাসি?

দিয়া অবাক হয়ে বলল,
-মানি কি আরমান?এইসব কি বলছো আরমান?আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি প্লিজ এমন করো না প্লিজ,

আরমানকে রিকুয়েষ্ট করতে করতে বলল আরমান দিয়ার দিকে কোন ধরনের মায়া না দেখিয়ে ডিরেক্ট বলল,
-সে রাতে যা হয়েছে তুমিও উপভোগ করেছো আমিও।এর থেকে বেশি আর কিছুই নেই তুমি ভুলে যাও সব।

দিয়া এইবার রেগে গেল আরমানকে চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,
-সেরাত শুরু মাত্র একটা রাত ছিল তোমার জন্য?সব মেয়ের সাথেই তুমি ছলনা করো?তোমার কেরেক্টার চিনতে আমার ভুল হয়েছে সেই প্রথম দেখায় চোখ মারা ধীরে ধীরে এত কাছে আসা আমি সেটাকে ভালোবাসা ভেবে নিয়েছি, সেটাই আমার সব চেয়ে বড় ভুল ছিল তোমার মতো ক্যারেক্টারলেস মানুষকে চিনতে আমি খুব বড় ভুল করেছি।

আরমান চিল্লিয়ে দিয়ার দিকে আংগুল তুলে বলল,
-শাট আপ,আমার ক্যারেক্টর নিয়ে কিছু বলার তোমার কোন অধিকার নেই জাস্ট শাট আপ,

দিয়া অবাক হয়ে শুধু আরমানের কথা শুনছে কি বলছে এইসব আরমান?আদো কি এইটা দিয়ার সেই আরমান যাকে সে কতটা ভালোবেসেছে নাকি এইটা আরমানের কোন প্রতিচ্ছবি??দিয়ার মাথা কাজ করছে না দিয়া কিচ্ছু বুঝতে পারছে না সে সব কিছু গুলিয়ে ফেলছে সব কিছু।

চলবে,

স্পর্শ পর্ব-০৬

0

#স্পর্শ
#part_6
#sarika_islam

আরমানের বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে কারন রাতের পার্টিটা এখানেই হবে।
এক এক করে সবাই এসে পরেছে আরমানের বাড়িতে।তার বাড়িটা বেশ বড় না বেশ ছোটও না একা মানুষ থাকার জন্য যতটুকু যথেষ্ট এই আরকি।বাড়ির আঙ্গিনা বাগান খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়েছে আরমান।বাড়ির মাঝে একটা সুইমিং পুলও আছে পুলের চারপাশে বাগান। পুরো বাড়ি লাইটিং করানো বাগান সাইডে ছোট বড় সব গাছের উপর মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো পুল সাইডেও ধিমিধিমি আলোয় আলোকিত করানো সেখানেই উপস্থিত হয়েছে সবাই।আরমান সবার সাথে জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে কথা বলছে কিন্তু তার চোখ বারংবার একজনকেই খুজে চলছে।পুল সাইডে দেখলো দিয়া আসছে দিয়াকে দেখে আরমানের চোখ কিছুক্ষনের জন্য থমকে গেল এ যেন সদ্য আকাশ থেকে নামা কোন এক অপ্সরিকে দেখছে সে।কালো শাড়ি পরেছে সামনের কাটা চুলগুলো ছেরে দিয়ে পিছনের চুলগুলো খোপা করা খুব বেশি সাজা হয়নি চোখে হাল্কাভাবে কালোসেড দেওয়া আর ঠোঁটে নুড লিপ্সটিক,কালো হাই হিল।আরমানের হাত আপনাআপনিই বুকে চলে গেল দিয়ার এই ঘায়েল করা রুপ দেখে।আর মুখ থেকে বেরিয়ে এলো’হায়য়য়য়য়’।।।
দিয়া দূর থেকে আরমানকে দেখে আরমানের দিকে এগুচ্ছে। আরমানও আজ কালো শার্ট আর কোর্ট পরেছে এতেই যেন আরমানের সৌন্দর্য উপচে পরছে।দিয়া আরমানের সামনে এসে দারালো কোল্ড ড্রিংক হাতে দিয়ে।আরমান এক টুকরো হাসি নিয়ে দিয়ার দিকে তাকালো।
-আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে,

দিয়া নিজের প্রশংসা শুনে অন্যদিনের মতো এত লাজুক হলো না বরং হাল্কা ভাবে এক গাল হাসলো।গানের হাল্কা ভলিউমে সবাই কাপল ডান্স করছে লাইট ধিমিধিমি আলোতে জ্বলছে।আরমান দিয়ার দিকে হাত বারিয়ে বলল,
-শেল উই?

দিয়া আরমানের দিকে তাকিয়ে হাতের উপর হাত রাখলো।আরমান আর দিয়া ডান্স করছে গানের তালে তালে পা ফেলুচ্ছে।আরমান ঘুরিয়ে দিয়াকে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসলো দিয়ার নিশ্বাস খুব দ্রুতগতিতে উঠানামা করা শুরু হয়ে গেল হৃদপিন্ড খুব জোরে জোরে ধুকপুক ধুকপুক করছে আরমানের এতটা কাছে নিজেকে পেয়ে।আরমান দিয়ার হৃদপিন্ডের এই ধুকপকানি ঠিক অনুভব করতে পাচ্ছে।আরমান দিয়ার কোমড় জরিয়ে আরো কিছুটা কাছে টানলো।দুজন দুজনের উপর নিশ্বাস আচড়ে পরছে এতটা কাছে তারা।দিয়ার নিশ্বাস এইবার বন্ধ হওয়ার উপক্রম এই স্পর্শকে আর সহ্য করতে পারছে না তাই ডান্স স্টপ করে চলে গেল।দূরে এক কোনে গিয়ে নিজেকে রিলেক্স করার চেষ্টায় আছে।আরমান দূর থেকে দারিয়ে দিয়ার কান্ড দেখতে লাগলো৷
পার্টির একদম শেষ মুহুর্তে এক এক করে সবাই চলে যেতে শুরু করলো।দিয়া যেতে নিলে আরমান আটকে দেয় ‘আর কিছুক্ষন থাকো’বলে। দিয়াও আর বারন করতে পারে না।ধীরেধীরে সবাই চলে গিয়েছে আরমান আর দিয়াই রয়ে গেল।আরমান আর দিয়া পুল সাইডে দারিয়ে কথা বলছে এক সময় দিয়া বলে উঠলো,,
-তাহলে এখন আসি,
-ওয়েট,লাস্ট একটা ড্রিংক একসাথে,

বলে আরমান ড্রিংক আনতে গেল দিয়াকে অরেঞ্জ জুস আর নিজে স্টবেরি জুস নিল।দিয়া জুসের গ্লাসটা হাতে নিল আরমান তার গ্লাসের এক সিপ নিল,
-কি হলো খাও,আরে কিছুই মেশাই নেই ডোন্ট ওয়ারি,

দিয়া হাল্কা হাসার চেষ্টা করে বলল,
-আসলে আমি অরেঞ্জ জুস তেমন খাই না স্টবেরিটা খাই,

বলে আরমানের গ্লাসের দিকে তাকালো আরমান দিয়ার গ্লাসটা নিয়ে নিজের গ্লাসটা দিয়ার দিকে এগিয়ে দিল,
-মাত্র এক সিপ নিয়েছি খাবে?নাকি এক্সচেঞ্জ করে আনবো?

আরমান নিয়ে যেতে নিলে দিয়া ধরে ফেলে,
-ইটস ওকেহ সমস্যা নেই,

দিয়া খেতে লাগলো খেতে খেতে তারা কিছু কথা বলল। খাওয়া শেষ করে আরমানের থেকে বিদায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘুরলো।যেইনা এক পা ফেলতে যাবে অমনি পা মচকে নিজেকে সামলাতে না পেরে পুরো পুলের উপর গিয়ে পরলো।হঠাৎ এভাবে তৎক্ষণাৎ দিয়া পুলে পরায় বেশ ঘাবরে যায় উপরে উঠার চেষ্টা চালায় আর বারববারে ডুবে যেতে লাগে।আরমান কোন কিছু না ভেবেই পুলে নেমে পরে দিয়াকে বাচাতে।দিয়াকে তুলে আনে দিয়া অনবরত কাপতে শুর করলো আরমান দিয়ার এমন কাপাকাপি দেখে তারাতারি করে দিয়াকে বাড়ির ভিতর নিল।নিজের রুমে নিয়ে বসালো টাওয়াল দিয়ে আস্তে আস্তে করে চুল মুছতে লাগলো।হুট করে দিয়া হাচি দিয়ে বসলো আরমান টাওয়াল সরিয়ে বলল,
-লাগিয়ে ফেললে তো নিজের ঠান্ডা,

দিয়া আরমানের কথা শুনে ভোলাভালা চেহারা করে বলল,
-আমি কোথায় লাগিয়েছি?
-যেটা পরতে পারে না সেটা যে কেন পরে মানুষ বুঝি না,

দিয়া চুপচাপ মানা নামিয়ে নাক টানতে লাগলো আরমান নিজের কাবার্ড থেকে একটা টি-শার্ট আর টাউজার এনে দিয়ার সামনে ধরলো।দিয়া টিসু দিয়ে নাক মুছে আরমানের দিকে জিজ্ঞেসা দৃষ্টিতে তাকালো,
-পরে নাও নাকি আমিই পরিয়ে দিব?

দিয়া তারাতারি আরমানের হাত থেকে সেগুলো নিয়ে ওয়াশ্রুমে চলে গেল। আরমানের দেওয়া টিশার্ট আর টাউজার পরে দিয়া বের হলো।টিশার্টটা শরিরের এপাশ ওপাশ করতে করতে বলল,
-এত্ত ঢিলেঢালা আরো কেউ আসতে পারবে এর মধ্যে,
-তাহলে আমি আসি?

চুল মুছতে মুছতে ঘরের ভিতরে ঢুকে বলল আরমান।দিয়া আরমানকে দেখে তারাতারি করে চোখে হাত দিল,
-এই আপনি এমন খালি গায়ে এসেছেন কেন?

আরমান কাবার্ডের কাছে গিয়ে জামা নিতে নিতে বলল,
-এইখান থেকে জামা নিব বলে,

দিয়া আংগুলের ফাক দিয়ে হাল্কা করে আরমানকে দেখে আরমান গেঞ্জি পরতে পরতে বলল,
-এইভাবে চুপিচুপি দেখার কি দরকার?বলো সামনা-সামনিই দেখাই,

দিয়া অন্যদিকে ফিরে হাল্কা কাশ দিয়ে বলল,
-কে,,কে বলল আমি আপনাকে দেখছিলাম?আমি মোটেও আপনাকে দেখছিলাম না,
-সে তোমার ব্যর্থতা,,

দিয়া বিছানার সামনে যেতে নিলে বেডের সাইড পায়ে লেগে যায় খুব করে দিয়া ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে পা ধরে বসে পরে বিছানার কোন ঘেষে।আরমান জলদি করে এগিয়ে আসে দিয়ার দিকে দিয়া খিচে পা ধরে বসে আছে আরমান সাথে সাথে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিয়ে ফু দিতে থাকে।দিয়া আরমানের দিকে নেশাঘোরে তাকিয়ে আছে আরমানের হাতটা শক্ত করে ধরলো আরমান পায়ের থেকে মুখ তুলে দিয়ার দিকে তাকালো দিয়া ধীরেধীরে আরমানের দিকে এগুতে লাগলো একদম আরমানের কাছ ঘেঁষে বসলো।দিয়া আরমানের এক গালে হাত রেখে ধীরেধীরে এগুতে লাগলো।আস্তে আস্তে করে ঠো* ঠো* মিশিয়ে দিল ঘভিরভাবে চুমু খেয়ে দিয়া আরমান ঘভির ভাবে শ্বাস নিতে লাগলো।
-দিয়া,,,,

আরমান কিছু বলতে নিলে দিয়া আরমানের ঠোঁটে আংগুল দেয়,,আরমানের ঠোঁটের খুব কাছে নিজের ঠোঁট নিয়ে বলে,
-কালকের চিন্তা বাদ দিয়ে আজকের উপর ফোকাস করো,,

বলে আরমানের ঠোঁ* ঠোঁ* ডুবিয়ে দিল।ধীরেধীরে অধর প্রেমের তলে তলিয়ে গেল তারা।

চলবে,,

স্পর্শ পর্ব-০৫

0

#স্পর্শ
#part_5
#sarika_Islam

লিফট পাচ তালায় এসে থেমে গেল দিয়া তারাতারি করে আরমানের হাত ধরেই বের হয়ে গেল,আরেকহাত বুকে দিয়ে জোরে নিশ্বাস নিল।
-উফফফ বেচেছি,
-এত্ত ভয় পাও লিফটে?
-আসলে তেমন কিছুনা,

আরমান দিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার হাতের দিকে তাকালো দিয়া আরমানের দৃষ্টি অনুসরন করে তাকিয়ে দেখলো সে আরমানের হাত ধরে আছে তা দেখে বড় বড় চোখ করে একবার আরমানের দিকে তাকিয়ে হাত ছেরে কিছুটা দূরে গিয়ে দারালো,
-আ,,আম সরি
-ইটস ওকেহ, এখন কি বাহিরেই দার করিয়ে রাখবে?

দিয়া আবার আরমানকে দেখে হারিয়ে গিয়েছিল।তারাতারি করে ব্যাগ থেকে চাবি বের করতে গিয়ে চাবিটা পরে গেল।আরমানের দিকে তাকিয়ে হাল্কা হাসির চেষ্টা করে উঠাতে নিলে আরমান উঠিয়ে দিয়ার হাতে দিল,
-রিলেক্স এত্ত হাইপার হওয়ার কি আছে?

দিয়া লক খুলে ভিতরে ঢুকে সব লাইট অন করে নিল।টেবিলে কফির মগ সোফার কুসুন কিছুটা আগোছালো দিয়া তারাতারি করে সব ঠিক করতে লাগলো।আরমান সোফায় বসতে বসতে বলল,
-ইটস ওকেহ এত্ত ফরমালিটির কিছুই নেই।তুমি একজন working women ঘর এমন থাকাটাই স্বাভাবিক।

দিয়া হাল্কা হাসলো কাধের ব্যাগটা রাখলো,
-কি খাবেন?
-যা খাওয়াবে,
-আসলে আমার ঘরে তো তেমন কিছু নেই গেস্টদের জন্য,

সেড হয়ে বলল,একটু ভাবার ভংগি করে বলল,
-হ্যা নুডলুস আছে বানাবো?

আরমান এতক্ষন দিয়ার কান্ড দেখছিল সেড হয়ে ঠোঁট উলটানো ভংগি কিছু ভাবার ভংগি আরমান যেন আরো বেশি আসক্তি হয়ে যাচ্ছে দিয়ার প্রতি।আরমান দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে দিয়া পালটে উত্তর না পেয়ে আরমানের মুখের সামনে তুড়ি বাজালো,
-কি হলো বললেন না যে বানাবো?খাবেন?

আরমান হচকচিয়ে উঠলো সে ভাবতে পারেনি এমনটা হবে তার সাথে দিয়ার প্রতি এত এত ফিলিংস জমা হবে তার মনের কোনে।আরমান এখন এখানে থাকলে কিছু একটা করে বসবে তাই চটজলদি উঠে দারালো,
-আমি এখন যাই,
-সেকি বৃষ্টি তো,
-এখন থাকলে কিছু একটা হয়ে যাবে,

বলেই চলে গেল দিয়া আহাম্মকের মতো দারিয়ে রইলো কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না সে।কিছু হয়ে যাবে?মানি কি ছিল?

সকালে দিয়া ফ্রেশ হয়ে সবে মাত্র ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে অমনি তার মার ফোন।রিসিভ করে কিছুটা বিরক্তি স্বরে বলল
-বলো,
-বাড়ি আয়
-কেন?

দিতি আর কিছু নিজেও বলল না দিয়াকেও সুজুগ দিল না ফোন কেটে দিল।দিয়া না চাওয়া স্বত্তেও যেতে হলো।খান বাড়ির সামনে দারিয়ে আছে ভিতরে যেতে মোটেও ইচ্ছে করছে না তার বাবার পদবিতে আজো আছে কিন্তু অন্য পুরুষের সাথে তা দিয়া কখনোই মেনে নিতে পারছে না।জোর পুর্বক বাড়ির কলিং বেল বাজালো বুয়া এসে খুলে দিল।দিয়া ধীরপায়ে ভিতরে ঢুকছে দিতি সোফায় বসা ছিল দিয়াকে দেখা মাত্রই ডাক পরলো,
-দিয়া,

দিয়া পাশ ফিরে মায়ের দিকে তাকালো তার সামনে গিয়ে পাশের সোফায় বসলো,
-আমাকে কেন ডেকেছ?
-আজ থেকে তুমি এই বাড়িতেই থাকবে এন্ড দেটস ফাইনাল নো মোর talk..
-এইসব বলতে ডেকেছ?
-আরো কিছু কথা আছে তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো,

এমনটা নয় দিয়া আজ প্রথম এই বাড়িতে এসেছে ছোট থেকে এই বাড়িতেই বড় হয়েছে কিন্তু দিতির বিয়ের কথা চলা কালিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল যেখানে সেই সো কল্ড হাসবেন্ড থাকবে সেখানে সে মোটেও থাকতে চায়না।কিন্তু আজ কয়েকমাস পর আবার সেই না চাওয়া বাড়িতেই থাকতে হবে।
দিয়া নিজের ঘরে গিয়ে কাবার্ড থেকে ড্রেস নিবে ফ্রেশ হওয়ার জন্য সেখনে অনেক ধরনের জামা কাপর দিয়ে ভরা আর বেশির ভাগ জিন্স টপস গেঞ্জি লেডিস শার্ট এইসব।যা এখন দিয়া পরা ছেরে দিয়েছে।খুজে টুজে একটা লং টপ্স আর জিন্স বের করে ওয়াশ্রুমে গেল শাওয়ারের জন্য।শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে নিচে নামলো আজ আর অফিস যাওয়া হবে না তার।নিচে গিয়ে দিতির সামনে বসলো। দিতি পেপার পরতে পরতে বলল,
-তুমি এত আলিশান বাড়িঘর ছেড়ে কেন সেই ভাড়াটিয়াতে থাকো?
-তোমার কুকর্মের জন্যই যেতে বাধ্য হয়েছিলাম ভুলে যেওনা,

পেপার থেকে মুখ তুলে মেয়ের দিকে এক নজর তাকালো পুনরায় পেপারে মুখ গুজে বলল,
-রায়ানের সাথে তোমার বিয়ে ফিক্সড করেছি,

এই কথা শুনা মাত্রই দিতি বেশ হাইপার হয়ে গেল,খানিকটা চিল্লিয়ে বলল,
-আমার লাইফের ডিসিশন তুমি আমার পার্মিশন ছারাই নিয়েছ?কেন?
-চিল্লিয়ো না,,

পেপার থেকে মুখ তুলে দিয়ার সামনে গিয়ে ওর হাত ধরে নরম সুরে বলে,
-আমি তোমার মা দিয়া তোমার ভালোমন্দ আমি বুঝি কখনো তোমার খারাপ চাইবো না,

দিয়া এক ঝাটকায় হাত সরিয়ে নিল।দারিয়ে পরলো,
-এতই যখন আমার ভালোমন্দ বুঝো তাহলে এই বয়সে কেন আরেকটা বিয়ে করেছ?আমার ফিউচারে কি হবে সেটা ভাবোনি একবারের জন্যও?আমার বাবার সারনেমে বেচে আছো এখন পর্যন্ত,,

হাত দুটো উচু করে চেংরানো টাইপ করে বলল,
-তোমার সো কল্ড স্বামির কি কোন সারনেম নেই নাকি?তোমার বাড়িতে থাকে তার বাড়ি নেই তোমাকে রাখার?আবার আমার ভালো চায় সে,,

বলে দৌড়ে উপরে চলে যায় নিজের রুমে।দরজা আটকে বিছানায় শুয়ে পরে উপর হয়ে কান্না করতে থাকে আজ সব মনের কথাগুলো বলতে পারলো সে এতদিনের জমানো কথাগুলো আজ সে বলল।দিতি মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে চোখ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো।

সকাল পেরিয়ে বিকেল পেরিয়া সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে দিয়া নিজের রুম থেকে আর এক মুহুর্তের জন্যও বের হয়ে আসেনি।হঠাৎ সন্ধ্যার দিকে আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো।দিয়া বারান্দায় রকিং চেয়ারে দুলছিল ফোন আনতে মোটেও ইচ্ছে করছে না বারবার বেজেই চলছে বেজেই চলছে।বিরক্তি হয়ে উঠে দিয়া রুম থেকে ফোন আনলো আননোন নাম্বার দেখে আরো রাগ লাগলো।ধরতে ধরতে ফোন কেটে গেল সাথে সাথেই আবার বেজে উঠলো।দিয়া রিসিভ করে বিরক্তি স্বরে বলল,
-কে?

অপর পাশ থেকে কিছুটা চিন্তিত শব্দে বলল,
-কি হয়েছে তোমার আজ আসোনি কেন?

দিয়া গলার আওয়াজ বেশ চিনতে পেরেছে।এখন তার কান্না পাচ্ছে গলা ধরে আসছে কথাগুলো গলায় যেন আটকে আছে মুখ দিয়ে বের হতে চাইছে না।ভাংগা ভাংগা গলায় বলল,
-আরমান,,

বলেই কেদে ফেলল,অপর পাশ থেকে আরমান আরো চিন্তিত হয়ে উঠলো।বেশ বিচলিত হয়ে বলল,
-দিয়া কি হয়েছে তোমার?কান্না করছো কেন?বলো আমায়,

দিয়া একাধারে কান্না করেই যাচ্ছে।আরমান কিছুটা শান্তনা দিল দিয়া কিছুটা শান্ত হয়ে হেচকি তুলতে তুলতে বলল,
-আরমান আমার মা আমাকে বিয়ে দিতে চায়,

বলে কান্না করতে লাগলো।আরমান আশা করেনি এমন কিছু কথা শুনার জন্য কিছুক্ষন চুপ থেকে নিচু স্বরে বলল,
-আর তুমি?
-আমি আমি চাইনা এই বিয়ে,, আমি তো তোমাকে,,

‘ভালোবাসি’ সেই অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিসটা আর বলা হয়ে উঠলো না দিয়ার ফোন বন্ধ হয়ে গেল।কান থেকে এনে দেখলো বেটারি লো অফ হয়ে গেছে দিয়া রাগে জিদ্দে ফোনটা বিছানায় ছুরে মারলো।

সকালে
দিয়া নিত্যদিনের মতো আজও অফিসে গেল, অন্যদিন অফিসে যাবে এই কথাটা ভাবলেই চেহারায় এক আলাদা আভা ফুটে উঠতো আজ সেটা নেই।কেবিনে মুখ ভার করে বসে আছে আজ নাকি তাদের কাম্পানি অনেক বড় একটা প্রজেক্ট সাইন করেছে পুরো অফিসে লোকজন হৈচৈ করছে কিন্তু দিয়ার মনে খুশির এক ছিটেফোটাও নেই।কেমন যেন খালি খালি লাগছে।আরমান ঠোঁটের কোনে এক ফালি হাসি ঝুলিয়ে দিয়ার কেবিনে ঢুকলো দিয়ার গম্ভির চেহারা দেখে মুহুর্তেই ঠোঁটের হাসি মিহিয়ে গেল।দিয়ার কাছে গিয়ে বিচলিত কন্ঠে বলল,
-কি হয়েছে?

দিয়া আরমানের দিকে তাকিয়ে মিথ্যে হাসির রেখে ফুটিয়ে বলল,
-কই কিছু নাতো।
-সিওর?
-হুম

আরমান দিয়ার হাত ধরে বাহিরে সবার সামনে আনলো।দিয়া না চাওয়া স্বত্তেও আরমানে সাথে আসতে হলো আরমানকে তো আর সে না করতে পারেনা।সবাই একসাথে প্লান করেছে আজ রাতে পার্টি করবে তারা এই খুশিতে।।

চলবে,,

স্পর্শ পর্ব-০৪

0

#স্পর্শ
#part_4
#sarika_Islam

দিয়া নিজের দিকে তাকিয়ে হাল্কা মুচকি হাসলো রায়ান দিয়ার মুচকি হাসা দেখে নিজেও হাল্কা হেসে বলল,
-বাহ তুমি হাসতেও জানো?

সাথে সাথেই দিয়ার হাসি গায়েব হয়ে গেল,দিয়া তারাহুরো দেখিয়ে রায়ানকে নিয়ে বের হয়ে পরলো। রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়,, রায়ান পার্কিং থেকে নিজের বাইক টা দিয়ার সামনে আনলো দিয়া দেখেও না দেখার ভান করে রইলো।রায়ান হর্ন বাজাতেই লাগলো দিয়া বিরক্তিতে বলল,
-পরিবেশ দুষন করো কেন?
-বাইকে উঠো ড্রপ করে দেই,
-নো থেংস,

বলে দিয়া হেটে কিছুটা সামনে গেল আজকে সব রিকশার হয়ত হরতাল লেগেছে দিয়া মনে মনে বেশ রেগে গেল।রায়ান আবার দিয়ার সামনে এসে বলল,
-দেখ তোমার লেট হচ্ছে আমি ড্রপ করে দিতে পারি কিন্তু,

দিয়া আর না ভেবেই উঠে গেল আসলেই এভাবে অনেক লেট হয়ে গেছে আর লেট করাতে চায়না।রায়ান সারা রাস্তা বকবক করতে করতে আসলো দিয়া তারাতারি করে নেমেই দিল দৌড়।রায়ান নিজে নিজেই বলল,
-কেমন মেয়েরে বাবা একটা থেংস ও দিল না,

দিয়া তারাতারি করে নিজের কেবিনের দিকে ছুটলো কেবিনে গিয়ে রিলেক্স এ বসলো এসির টেম্পারেচার কিছুটা বাড়িয়ে দিয়ে।হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে পনে দশটা বেজে গেছে প্রায়।নীল এসে বলল,
-আরমান ডেকেছে,
-আসছি

বলে দিয়া আরমানের কেবিনের সামনে গেলো কেবিনে নক করে ভিতরে ঢুকলো।আরমান থাইয়ের সাইডে দারিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে ছিল।দিয়ার হাল্কা কেশে উঠাতে আরমান পিছে ফিরলো,
-জি আরমান!!

আরমান দিয়াকে দেখে সামনে আসলো,হাত বারালো দিয়ার সামনে দিয়া জিনিসটা বুঝতে পারলো না আরমান কি চাইছে ভ্রু কুচকে তাকালো বুঝার জন্য। আরমান বলল,
-ডিজাইন?

ডিজাইনের কথা বলায় দিয়ার মনে পরলো সেতো তারাহুরো করায় ডিজাউন গুলো আনতেই ভুলে গিয়েছে এখন কি হবে?আরমান আবার তার কথা রিপিট করলো,
-আই সেড ডিজাইন? ডিজাইন দাও,

কিছুটা রেগে বলল,দিয়া বুঝতে পারলো না হঠাৎ এভাবে রেগে যাওয়ার কি আছে?দিয়া আমতা আমতা করে বলল,
-আ,,আসলে আনতে ভুলে গিয়েছি,
-তোমাকে এখানে সো করাতে রেখেছি?আউট গেট আউট,

জোরে ধমক দিয়ে বলল আরমান দিয়া কিছুটা কেপে উঠলো ভয়ে।তারাতারি করে চলে গেল কেবিন থেকে নিজের কেবিনে।কান্না পাচ্ছে খুব কেও কখনো এভাবে ধমক দিয়ে কথা বলেনি তার সাথে তাই আজ অনেকটাই কষ্ট লাগছে দিয়ার।দিয়া একরাশ অভিমান নিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে দিল কানের দুল খুলে ফেলল হাল্কা লিপ্সটিক লাগিয়েছিল টিস্যু দিয়ে সেটাও মুছে ফেলেছে।
-কেন এত্ত ড্রেসাপ করেছি আমি কেন?হুদ্দাই কোন কাজের না এইসব কোন কাজের না,,

চোখের পানি মুছে দিয়া ওয়াশ্রুমে গেল ফ্রেশ হয়ে চোখ নাক মুখে ইচ্ছে মতো পানি ছিটাতে লাগলো।নিজের কেবিনে এসে চুপচাপ ড্র করতে বসলো।দুপুর পেরিয়ে বিকেল ঘনিয়ে এসেছে দিয়ার সেদিকে হয়ত খেয়ালই নেই সে এক মনে আর্ট করছে আর এক এক করে ছিরে ফেলছে।কোন ড্রইংই আজ সুন্দর হচ্ছে না মাথায় কিছুই আসছে না।মাথা খুব যন্ত্রণা করছে কিছুক্ষন কান্না করার ফলে।মাথা চেপে ধরে ডেস্কের উপর হাত রেখে নিচু হয়ে আছে। কেবিনে কারো আসার শব্দ পেয়ে মাথা তুলে বিরক্তিতে কপাল কুচকে সেদিকে তাকালো।আরমানের দু হাত আজ পকেটে নেই তার দু হাত আজ কফির মগ ধরে আছে??তা কি আদো সত্যি??অবাক দৃষ্টি নিয়ে দিয়া উঠে দারলো।আরমান দিয়ার সামনে এসে কফির মগটা তার সামনে ধরলো।দিয়া আরো অবাক হলো আরমান এই কিছুক্ষন আগে তাকে ধমক দিল আবার এখন কফি এনেছে?বুঝতে পারছে না দিয়া।
-আর কতক্ষন আমি এভাবে ধরে রাখবো?

দিয়া তারাতারি করে মগটা হাতে নিল।থাইয়ের সাইডে গিয়ে দারালো দুজন।একসাথেই কফির মগে চুমুক দিল আরমান হাল্কা হেসে বলল,
-আজ ওয়েদারটা দেখেছ?বেশ সুন্দর কালো মেঘে ঢেকে আছে পুরো আকাশ না বৃষ্টি না রোদ না কোন বাতাশ না কোন তুফান,স্তব্ধ হয়ে আছে প্রকৃতি।

আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলল আরমান।দিয়া আরমানের এমন ভাবলেশহীন কথা শুনে তার দিকে তাকিয়ে বলল,
-সুন্দর কোথায়?না কোন হাওয়া আছে এই আবহাওয়ায় না কোন বৃষ্টি হচ্ছে।যেন থমকে আছে পুরো পৃথিবী যেন কারো সাথে রাগ করে আছে কথা বলতে চাইছে না এই থমকানো প্রকৃতি।
-তোমার মতো!!

দিয়ার চোখে চোখ রেখে বলল আরমান।দিয়া কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে বেশ ঘভির ভাবে।যেন দুজন দুজনকে কিছু বলতে চায় মনের ভাব প্রকাশ করতে চায়।হঠাৎ আরমানের ফোন বেজে উঠলো দুইজনিই চমকিয়ে উঠলো।আরমান ফোন হাতে নিয়ে দিয়ার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে আসলো সেখান থেকে।দিয়া মুচকি হাসলো।

সন্ধ্যার দিকে খুব জোরে বৃষ্টি নামলো দিয়া চেয়ারে বসে গ্লাস দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখতে লাগলো।প্রচুর বেগে বৃষ্টি পরছে বৃষ্টির পানি থাইগ্লাস বেয়ে বেয়ে পরছে দিয়ার দেখতে বেশ ভালোই লাগছে এখন মনটা একটু ভালো কারন কিছুক্ষন আগে আরমান এসে কথা বলে গিয়েছে।চেয়ারে মাথা রেখে খুব আবেশে বৃষ্টি অনুভব করছে।সন্ধ্যা থেকে সেই যে শুরু হয়েছে থামার নামিই নেই দশটা বেজে গেছে বাড়ি যাবে কিভাবে এখন সে!!ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পরলো কাম্পানি থেকে কাম্পানির গেটে দারিয়ে আছে কোন টেক্সিও পাচ্ছে না ভাবছে কেব বুক করবে।ক্যাব বুক করার জন্য ফোনটা বের করেছে অমনি তার সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো।দিয়া এত বৃষ্টির বেগে ভালোভাবে বুঝতেও পারছে না কিছু।গাড়ির উইন্ডো খুলে আরমান ভিতর থেকে বলছে,
-গাড়ির ভিতর এসে বসো,

দিয়া কিছু না ভেবে মাথায় ব্যাগটা হাল্কা ভাবে ধরে গাড়ির ভিতরে বসলো।জামা কিছুটা ভিজে গেছে আরমান গাড়ি স্টার্ট করলো। দিয়া গাড়ির জানালা খুলে দিল বেশ বাতাস ছেরেছে বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু ফোটা এসে গা ছুয়ে দিচ্ছে।দিয়া চোখ বন্ধ করে উপলব্ধি করছে। আরমান সব জানালা বন্ধ করে দিল দিয়া কপাল কুচকে তাকালো আবহাওয়াটাকে বেশ উপভোগ করছিল আরমান জানালা বন্ধ করায় কিছুটা বিরক্ত হয়ে আরমানের দিকে তাকালো,
-বন্ধ করলেন কেন?
-বৃষ্টি আসছে ভিতরে,

দিয়া জানালার দিকে তাকিয়ে জানালা বেয়ে বৃষ্টির ফোটা গুলোর উপর আংগুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে আবেশময় কন্ঠে বলল,
-তো কি হয়েছে ভালোই তো লাগছিল,
-কিন্তু আমার গাড়িতো ভিজছিল,

দিয়া আরমানের এমন কথা শুনে সব রোমান্টিকতা ফুরর হয়ে গেল।তার দিকে অভিমানি চোখে তাকালো,আরমান দিয়ার অভিমান দেখে হাল্কা মুচকি হাসলো,
-আজ তুমি সেলোয়ার সুট পরেছ??

দিয়া আরমানের কথায় নিজের দিকে একবার তাকিয়ে মুচকি হাসলো আরমান দিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
-মুচকি হাসলে বেশ মানায় তোমাকে,

দিয়ার অভিমান সরে খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেল তার প্রশংসা হওয়ায়।আরমান দিয়ার লজ্জা মাখা মুখশ্রী দেখে আবার বলল,
-লজ্জা পেলে খুব মায়াবী লাগে,

দিয়া এইবার তো শেষ আরমান তার এত্ত প্রশংসা করছে।দিয়া লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নেয় আরমান সামনে তাকিয়ে বলল,
-প্রকৃতি এখন হয়ত বেশ খুশি খুব বেগে বৃষ্টি পরছে।
-আমিও,

দিয়া ওইদিক ফিরেই বলল আরমান দিয়ার কথায় এক গাল হাসলো।বাসার একদম সামনে এসে গাড়ি থামলো দিয়া গাড়ি থেকে নামার সময় আরমানকে বলল,
-খুব জোরে বৃষ্টি নামছে আপনি কিছুক্ষন আমার বাড়িতে থাকতে পারেন,

আরমান দিয়ার দিকে প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে আছে।
-আন্টি?
-আমি একা থাকি,

আরমান আর দিয়া লিফটে উঠলো একসাথে পাচ তলায় থাকে দিয়া,, লিফটের বাতি টিপটিপ করছে এই বুঝি বন্ধ হয়ে যায় লিফট।দিয়ার খুব ভয় লাগছে এখন কখনো এমন কিছু হয়নি তার সাথে দিয়া হুট করেই আরমানের হাত শক্ত করে ধরে ফেলল। আরমানের হাত ধরায় পাশ ফিরে তাকালো দিয়া চোখ খিচে বন্ধ করে তার হাত শক্ত করে ধরে আছে।আরমান দিয়ার এমন ভয় দেখে হাতটা সুন্দর ভাবে ধরলো।

চলবে,,,

স্পর্শ পর্ব-০২+০৩

0

#স্পর্শ
#part_2+3
#sarika_Islam

পরেরদিন সকালে দিয়ার ফোন খুব বেশি বাজছে অন্যদিনের থেকে একটু বেশিই।ঘুম ঘুম চোখে দিয়া ফোন রিসিভ করলো,
-জানুউউউউ কই তুই?
-ঘুমের দেশে
-আরমানের পিএ নীল এসেছে
-আজ তো ছুটির দিন আজ কেন?
-আই ডোন্ট নো তুই এসে জিজ্ঞেস কর,
-হুম

ফোন কেটে দিয়ে উঠে বসতে বসতেই একদফা হাচি শুরু হলো টিস্যু দিয়ে নাক মুছে শাওয়ার নিতে গেল।ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিল তার নিত্যদিনের মতো টপস জিন্স আর গলায় ঝুলানো স্কার্ফ চুলগুলো ছাড়া।ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পরলো।শপে গিয়ে পৌছালো,নীল অলরেডি সেখানেই বসে ছিল দিয়াকে দেখে উঠে দারালো,
-হায় মিস দিয়া
-হ্যালো,
-আরমান স্যার আপনাকে আমাদের কাম্পানিতে জব করার অফার দিয়েছে এস এ ডিজাইনার হিসেবে!!!

কথাটা শুনা মাত্রই দিয়া আর শ্রেয়া দুইজনিই অবাক বেশ অনেক অবাক হলো তারা,আরমান মাত্র কাল তাদের কালেকশন নিল আর আজিই অফার?হাউ ইস দিস পসিবল??দিয়া নিজেকে সামলিয়ে বলল,
-জি?
-জি,আপনি কাল থেকে জয়েন করতে পারেন,

বলেই চলে গেল নীল,, দিয়া আর শ্রেয়া এখনো স্টাচুর মতোই দারিয়ে আছে মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে।কখনো ভাবেনি ‘DEABOOK’ এর মতো এত বড় কাম্পানিতে এস এ ডিজাইনার হিসাবে সে যেতে পারবে।দিয়া খুশিতে চিৎকার করে উঠলো,
-আয়ায়া শ্রেয়ু শ্রেয়ু শ্রেয়ু আমি আমার স্বপ্নের DB তে কাজ করতে পারবো ওয়াওওওওও আম সো সো সো হ্যাপি।
-আম আলসো হ্যাপি ইয়ার,আমাকে আবার ভুলে যাস না,
-ধুর বোকা তা কি হতে পারে কখনো,

বলেই হাগ করলো দিয়া আর শ্রেয়া দিয়ার ফোন আসলো,
-হ্যালো
-দিয়া কোথায় তুমি?
-আমি শপে মম
-আমি আসছি পিক করতে,
-মম সবে তো বারোটা,,

দিয়া তার কথা পরিপূর্ণ করতে পারলো না তার আগেই দিতি ফোন কেটে দিল।
-কিরে কি হলো?
-আমার সো কল্ড মম কোথায় যেন নিয়ে যাবে,
-ওহ যা গিয়ে দেখে আয়,
-না যাওয়া ছাড়া কি আর উপায় আছে,

কিছুক্ষন পর শপের বাহিরে জোরে জোরে হর্ন বাজাতে লাগলো দিয়া বিদায় নিয়ে বের হলো।গাড়িতে বসলো দিতি ড্রাইভ করছে আর দিয়া তার পাশের সিটে,,গাড়ি স্টার্ট করলো।
-মম হোয়ার উই গোইং?
-গেলেই না হয় দেখ আর দিয়া ওয়েল বিহেভড ওকেহ
-ইয়েস মমা,(মাথা কিছুটা ঝাকিয়ে বলল)

এক ঘন্টার মধ্যে দিয়া আর দিতি পৌছে গেল,দিয়া গাড়ি থেকে বের হয়ে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে বলল,
-আমরা ডলি আন্টির বাড়ি কেন এসেছি?(ভ্রু কুচকে বলল)

দিতি গাড়ি থেকে বের হতে হতে বলল,
-তোমাকে দেখাতে,

দিয়া অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকালো কিছুটা রেগে বলল,
-হোয়াট ননসেন্স, এইসব তুমি কি বলছ?এখন আমি আমার ক্যারিয়ারের উপর ধ্যায়ান দিতে চাই নাকি এই সো কল্ড বিয়ে সাদির উপর,

দিতি দিয়ার কাছে এসে বলল,
-তোমার ক্যারিয়ার আমি দেখে তুমি বরং বিয়ের উপর ফোকাস করো,
-কিন্তু,,,

দিতি সবসময়ের মতো দিয়াকে কিছু না বলতে দিয়ে ভিতরে চলে গেল,দিয়াও বাদ্ধ মেয়ের মতো পিছু পিছু গেল,কলিং বেল বাজাতেই ডলি এসে দরজা খুলল,,দিয়া সালাম দিল, ডলি সালামের উত্তর নিয়ে তাদের ভিতরে ঢুকালো,
-আসতে আসতে এত্ত দেরি করলি কেন দিতি?
-ওই একটু জ্যামে পরে গিয়েছিলাম,
-আয় বস,

দিয়া আর দিতি একবারে টেবিলে বসলো লাঞ্চের জন্য,সার্ভেন্টরা এসে সব খাবার সার্ব করতে লাগলো পুরো টেবিল জুরে খাবার এত এত খাবার,,তখনি সিড়ি দিয়ে কেউ নেমে এসে ঠিক দিয়ার বরাবর বসলো,দিয়া মাথা নিচু করে আছে উপরে দেখছে ও না কে এসেছে না এসেছে।দিতি ডলির একমাত্র ছেলেকে দেখে বলল,
-রায়ান বাবা কেমন আছো?

দিয়া রায়ান নামটা শুনে হঠাৎ মনে হলো কোথায় যেন শুনেছে এই নামটা হুট করেই মাথা উঠিয়ে নিল রায়ানকে দেখে সেইদিনের কথা মনে পরে গেল তারাতারি করে মাথা নিচু করে হাত দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টায় আছে।রায়ান বসতে বসতে বলল,
-জি আলহামদুলিল্লাহ আপনি কেমন আছেন?
-আমিও ভালো আছি,আমার মেয়ে দিয়া,

দিয়ার দিকে ইশারা করে দিতি বলল,দিয়া মাথা উঠিয়ে হাল্কা হাসির চেষ্টা করে তাকালো।রায়ান দিয়াকে দেখে কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে দেখে দিতির দিকে তাকিয়ে বলল,
-এইটা আপনার মেয়ে?
-কেন চিনো নাকি?

রায়ান দিয়ার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বলল,
-নাহ,হায় দিয়া

বলে দিয়ার দিকে হাত বারালো,দিয়ার এখন হাত না বাড়িয়ে উপায় নেই তাই চুপচাপ হাত বাড়িয়ে দিল,
-হ্যালো রায়ান,নাইস টু মিট ইউ
-সেম টু,

সবাই খাওয়া শুরু করলো খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে দিতি আর ডলি গল্প গুজবে বেস্ত।
-দিয়া আর রায়ানকে একা কথা বলতে পাঠাই কি বলিস দিতি?
-হ্যা অবশ্যই,যাও তোমরা কথা বলো,

দিয়া সোফায় বসে ফোন টিপছিল হঠাৎ এই কথা বলায় তার মার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো,
-আমি কেন একা কথা বলবো?

ডলি হাল্কা একটু হেসে বলল,
-কেন আমার ছেলেকে বুঝি ভালোলাগে নি?

দিয়া এখন কি বলবে খুজেই পাচ্ছে না,
-না আসলে তেমন কিছু না আন্টি,

দিতি ইশারা করে যেতে বলল দিয়া উঠে দাড়ালো,ডলি বলল,
-রায়ান তার রুমে হয়ত উপরের সেকেন্ডে রুমটা ওর,

দিয়া উপরে তাকিয়ে ধীরে ধীরে যেতে লাগলো,
-কি মুসিবতে পরেছি বাবা এই হোয়াটএভারের সাথে দেখা করতে হবে এখন নিজে গিয়ে বাহহহহ,

নিজে নিজেই দিয়া বলতে বলতে উপরে গেল,সেকেন্ড রুমের সামনে গিয়ে দরজার দিকে হাত বাড়িয়েও আবার ফিরিয়ে নিল।দরজা না খুলে থার্ড রুমে চলে গেল,ভাবলো সেখানে অবশ্যই রায়ান নেই গিয়ে বলবে রায়ানকে পায়নি।হ্যা এইটা ঠিক হবে,যেই ভাবা সেই কাজ দরজা খুলে যেই ভিতরে যাবে সামনে রায়ানকে দেখে স্তব্দ হয়ে গেল,রায়ান সেল্ফ থেকে কিছু বই পরছিল চোখে চশমা দিয়ে।রায়ান দরজা খোলার শব্দ পেয়ে সেদিকে তাকিয়ে দিয়াকে দেখে দিয়ার দিকে তাকিয়ে হাল্কা বাকা হাসলো।বইটা নিয়ে টেবিলে গিয়ে বসলো।
-আমাকে খুজছিলে?

দিয়া থতমত খেয়ে গেল কি ভেবেছিল আর কি হয়ে গেল,আস্তে আস্তে ভিতরে ঢুকে বলল,
-না তেমন কিছু না
-আসো বসো
-না না থাক,গল্পের বই পরা হচ্ছে?

রায়ান বইয়ের উপর পেজ দেখালো,
-ওপ্স লয়ারেরর

একটু টান মেরে বলল রায়ান চশমাটা খুলে উঠে এসে দিয়ার সামনে দাড়ালো,
-কেন ভালোলাগে না লয়ার?
-নাহ মোটেও ভালোলাগে না,
-কেন?
-আমার ইচ্ছা,

রায়ান কিছুটা হেসে বলল,
-সবার সাথেই কি এভাবে কথা বলো?

দিয়া স্টাডি রুম ঘুরতে ঘুরতে বলল,
-আমি যেমন সেভাবেই কথা বলি,

দিয়া এক জায়গায় দারিয়ে কিছু বই নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো।রায়ান তার পিছু এসে দারিয়ে বলল,
-শাড়িতে কিন্তু বেশি ভালো লেগেছিল,

এই কথা শুনে দিয়ার পেজ উল্টানো হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল পিছে ঘুরে দেখলো রায়ান তার খুব কাছে এসে দারিয়ে আছে।দিয়া রায়ানের দিকে তাকালো রায়ান এক গাল হেসে তাকিয়ে আছে দিয়া এক আংগুল রায়ানের বুকে রেখে দূরে সরিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে বলল,
-থেংস ফর দি কমপ্লিমেন্ট,
-ইউর ওয়েলকাম মিস,

সারাটা দিন দিয়া আর দিতি ডলিদের বাড়িতেই ছিল রাতের দিকে তারা চলে আসলো দিয়া নিজের ফ্লাটে আর দিতি তার বাড়িতে।দিয়া ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

সকালে,দিয়া আজ একটু তারাতারিই উঠলো আজ তার জবের ফাস্ট ডে একটু বেশিই এক্সাইটেড।আজ একটা লেডিস শার্ট আর জিন্স পরলো চুলগুলো ঝুটি করে নিল আর কাধে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে বের হলো DB এর উদ্দেশ্য।।এক ঘন্টার মধ্যে পৌছে গেল তার বাসা থেকে বেশ অনেকটা দূর এই কাম্পানিটা।দিয়া হাত ঘড়ি টা দেখে নিল সবে নয়টা বাজে লেট হয়নি।কোম্পানির সামনে এসে দারালো বিল্ডিংটার উপর বড় বড় অক্ষরের DB লেখা।দিয়া চোখ বন্ধ করে ভিতর থেকে শ্বাস নিয়ে একটা ফালি হাসি ঝুলিয়ে ভিতরে ঢুকলো।সবাই কাজ করছে একজনকে বসের কেবিন জিজ্ঞেস করায় দেখিয়ে দিল।দিয়া আরমানের কেবিনের সামনে দারিয়ে নিজেকে একটু ঠিক করে নক করলো।ভিতর থেকে আওয়াজ আসলো,
-কাম ইন

দিয়া ভিতরে ঢুকলো আরমান কিছু ফাইল দেখছিল আর নীল তার সামনে দারিয়ে ছিল।নীল দিয়াকে দেখে বলল,
-আরমান মিস দিয়া,

নীলের কথা শুনে আরমান ফাইল থেকে মুখ তুলে দিয়ার দিকে তাকালো।দিয়া আরমানের তাকানো দেখে কিছুক্ষন আরমানের দিকেই তাকিয়ে রইলো।আরমান দিয়ার এমনভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে উঠে দারালো পকেটে দুই হাত গুজে দিয়ার সামনে এসে দারালো।দিয়ার তাও যেন হুশিই নেই,আরমান এক গাল হেসে দিয়ার সামনে তুড়ি বাজালো দিয়া তখন হয়ত হুশে আসলো।আরমানকে তার এতটা সামনে দেখে হচকচিয়ে গিয়ে তারাহুরো করে পিছনে যেতে নিয়ে হিল বাকা হয়ে পরে যেতে নিলে আরমান ধরে ফেলে।নীল এইসব দেখে চোখ বাহির হওয়ার উপক্রম প্রায়।দিয়া আরমানের বাহুতে থেকেই বলল,
-গু,,গুড মর্নিং স্যার,
-ইউ কল মি আরমান,
-জ,জি আরমান,

দিয়া সেভাবেই রয়েছে এখনো আরমানের বাহুতেই আরমান হাল্কা হেসে বলল,
-আর কতক্ষন এভাবে আমার বাহুতে থাকার চিন্তা ভাবনা করছেন?

দিয়া এখন খেয়াল করলো সে আসলে কোথায় তারাতারি করে উঠে ঠিকভাবে দারালো।আরমান পুনরায় হাত গুজে নীল কে বলল,
-নীল মিস দিয়াকে কেবিন দেখিয়ে দাও,
-জি আরমান

নীল দিয়াকে কেবিনে নিয়ে গেল দিয়া আরমানের দিকে তাকিয়ে হাত কিছুটা উচু করে বলল,
-বা,,বায়

আরমান সেই এক গাল হেসেই বলল,
-বায়,সি ইউ এগেন,

বলেই এক চোখ মারলো তা দেখে দিয়ার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেল হঠাৎ হেচকি উঠা শুরু হয়ে গেল।তারাতারি করে দিয়া আরমানের কেবিন থেকে বের হয়ে গেল।

চলবে,,
(ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন🖤)

#স্পর্শ
#part_3
#sarika_Islam

দিয়া নিজের কেবিনে গিয়ে ব্যাগটা টেবিলে রেখে বসলো,
-উফফ কি বস রে বাবা,রিলেক্স দিয়া নিজের কাজের উপর ফোকাস কর।

নিজে নিজেই বলে জোরে শ্বাস টেনে রিলেক্স হয়ে বসলো।পেন্সিল হাতে নিয়ে ড্রইং করতে শুরু করলো একেক স্টাইলের ড্রেস ড্র করতে লাগলো। হঠাত ফোন বেজে উঠলো ড্রইং থেকে চোখ সরিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ফোন রিসিভ করলো,
-কে?(ড্র করতে করতে বলল)

অপর পাশ থেকে বলল,
-আমি
-আমি কে?
-লয়ার রায়ান,

দিয়া রায়ানের নাম শুনে কান থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে নাম্বার টা দেখে আবার কানে দিল,
-কি কাজ?
-ফ্রি ছিলাম তাই কল করেছি,
-কিন্তু আমি বিজি বায়,

বলেই ঠুস করে ফোনটা কেটে দিল দিয়া।ডিজাইন করতে করতে বেশ টায়ার্ড হয়ে গেছে আবার বেশ ক্ষুধাও লেগেছে উঠে দারালো কেন্টিনে গিয়ে কিছু খাওয়ার উদ্দেশ্যে।ক্যান্টিনে গেল কিন্তু সেখানে এখন কিছুই নেই খাবার নাকি শেষ মিজাজটা একদম বিগরে গেল।হিল পরে এখন হাটতেও দিয়ার বেশ অসহ্য লাগছে তাও যেমন তেমন করে হেটে কফি স্টলে গেল।এক কাপ কফি নিয়ে সেটাতে চুমুক দিল সাথে সাথেই।
-আহহহ শান্তি লাগছে এখন,

বলেই পিছে ঘুরতেই দেখলো আরমান পকেটে হাত গুজে একদম ডেসিং লুকে তাকিয়ে আছে।দিয়া কিছুক্ষন তাকিয়ে সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিল আবার না জানি সে কতক্ষন তাকিয়ে থাকে।আরমান দিয়ার আরএকটু কাছে এসে বলল,
-কফি
-জি?
-কফি খাবো যদি একটু চেপে দারান,
-ওহহ সরি সরি,

বলেই দিয়া তারাতারি করে সরে দারালো।আরমান দিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
-আপনার টা খেতে পারি?

দিয়া পুরোই টাস্কি খেয়ে গেল কি বলল এইটা আরমান?দিয়া কি বলবে এখন দিবে নাকি না করে দিবে ভেবে পাচ্ছে না,
-আ,,আমার টা?

আরমান দিয়ার দিকে হাল্কা একটু ঝুকে বলল,
-হুম,,

সাথে সাথেই দিয়ার হেচকি শুরু হয়ে গেল,আরমান এক গাল হেসে আরেক কাপে কফি নিয়ে খেতে খেতে চলে গেল।দিয়া নিজের কফির কাপে চুমুক দিয়ে আরমানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।দিয়া নিজের কেবিনে গিয়ে বসলো,
-এই ছেলে পেয়েছে টাকি?যখন তখন সামনে এসে পরে?আর আমার এমন অবস্থা হয়ে যায় কেন সে সামনে আসলে?উফফফফ আমি জানি নায়ায়া,,

কফি শেষ করে আবার কাজে মন দিল,,বেশ কয়েকটা ড্রেস ড্র করে ফেলল এখন নিজের ডিজাইন এক এক করে নিজেই দেখতে লাগলো।নীল কেবিনে এসে বলল,
-মিস দিয়া আরমান ড্রইং দেখতে চাচ্ছে,

দিয়া উঠে যাওয়ার জন্য বের হওয়ার সময় নীলকে বলল,
-মিস না শুধু দিয়া বলো,
-ওকেহ,

দিয়া মুচকি হেসে হাতে ড্রইং গুলো নিয়ে আরমানের কেবিনের সামনে গেল।নক করে ভিতরে ঢুকলো,দিয়া আরমানের সামনে সব ডিজাইন গুলো পেশ করলো আরমান এক এক করে সব গুলো দেখছে।আরমান ডিজাইন গুলো হাতে নিয়ে দিয়ার সামনে এসে দারালো,
-সব ওয়েস্টার্ন ড্র করেছেন?
-হুম
-কিছু সেলোয়ার-কামিজ অথাবা শাড়ি ড্র করলেও কিন্তু বেশ খারাপ হতো না,

বলেই দিয়ার দিকে তাকালো দিয়া আইস্তা আইস্তা করে বলল,
-আসলে আমি একটু এগুলোই বেশি পছন্দ করি তাই এগুলোই বেশি ড্র করি,
-হ্যা তা আপনাকে দেখে বুঝা যাচ্ছে,কিন্তু বাংগালী মেয়েরা সেলোয়ার-কামিজ অথবা শাড়িতেই বেশি মানায়,আপনি লাইক করেন না এইসব?
-হ্যা হ্যা করি করবো না কেন,করি
-ওকেহ,

বলে আরমান চেয়ারে গিয়ে বসলো দিয়ার দিকে আর্ট গুলো দিয়ে বলল,
-নেক্সট টাইম আশা করি আর একটু ইম্প্রুভমেন্ট হবে
-জি অবশ্যই

বলে দিয়া কেবিন থেকে বের হয়ে গেল।রাত দশটার দিকে বাড়ি ফিরলো খুব বেশিই অস্থির লাগছে তার।কাধের ব্যাগটা সোফায় ফালিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল নাইট সুট পরে ডিনার করে নিল।রাত বারোটা বাজে দিয়া বেডে গেল ঘুমানোর জন্য কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পরলো কিন্তু ঘুম আসছে না আরমানের কথাই বারংবার মাথায় ঘুরপার খাচ্ছে।দিয়া হুট করে উঠে বসলো,
-এখন একটু ড্র করি তাহলে হয়তো ভালোলাগবে,

দিয়া উঠে পেন্সিল পেপার সব নিয়ে বিছানায় বসলো,এক এক করে তিন চারটার মতো ড্রইং করে ফেলল কখন যে চারটা বেজেও গেল হুশিই নেই তার। সাইডেই পেপার পেন্সিল রেখে ঘুমের দেশে পারি জমালো।

সকালে কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভাংগলো দিয়ার ঘুম ঘুম চোখে ফোন চেক করলো সবে মাত্র আটটা বাজে এখন কে আসতে পারে কিছুক্ষন আগেই তো সে ঘুমালো।দিয়া যেমন তেমন করে উঠে গিয়ে দরজা খুলল তার মাকে দেখে দরজা খুলেই হেলেদুলে চলে আসতে নিলে হঠাৎ থমকে যায়।আবার পিছে ঘুরে দেখে তার মার সাথে রায়ানও এসেছে দিয়া বিরক্তি হয়ে গেল একেতো পুরো ঘুম হলো না আবার এসে পরেছে তাকে জ্বালাতে উফফফ জীবনটাই বেদনার।।।
-আজ এত সকালে কেন এসেছ মম?
-রায়ান তোর বাড়ি চিনতে আসলো

দিয়া তার মার দিকে তাকিয়ে বলল,
-চিনতে আসলো মানি?

রায়ান সোফায় বসতে বসতে বলল,
-সে কিছু না

দিয়া সোফার থেকে ব্যাগ চিপসের প্যাকেট সব উঠিয়ে নিল একা ঘর কিছুটা অগোছালো তো থাকেই আবার সকাল সকাল এসে হাজির।দিতি তারা দেখিয়ে বলল,
-আচ্ছা দিয়া আমার কোর্টে কাজ আছে আমি যাই,
-আর রায়ান?
-ও না হয় কিছুক্ষন থাক,
-মা,,

দিতি চলে গেল,রায়ান চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পুরো ঘর দেখতে লাগলো দিয়া ফ্রেশ হতে গেল।ফ্রেশ হয়ে এসে চুলগুলো খোপা করে নিল তাও সামনে অবাদ্ধ চুলগুলো বেরিয়ে আসলো।নাইট সুটেই সোফায় এসে বসলো হাতে একটা টোস্ট আর কফি নিয়ে।
-আমি শুনেছি মেয়েদের ঘর অনেক গোছালো থাকে,

দিয়া ব্রেডে কামর দিয়ে বলল,
-আমি একজন working women তো আমার ঘর একটু অগোছালো টাই স্বাভাবিক।
-হুম তাও বটে,আমি কিন্তু গেস্ট,

দিয়া কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বলল,
-তো?
-আমাকে খাবারের জন্য কিছু জিজ্ঞেস করবে না?
-তুমি গেস্ট তো আমার জন্য কিছু আনবে না?
-এইযে আমি এসেছি না?
-এইযে আমি আছি না?
-কি খাওয়ার জন্য?

দিয়া টিভির দিকে তাকিয়ে বলছিল হঠাৎ এমন কিছু বলায় রায়ানের দিকে তাকালো রায়ান এক গাল হেসে দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।দিয়া প্রসংগ পালটে বলল,
-আচ্ছা দারাও কফি আনছি,

দিয়া উঠতে নিবে রায়ান বলল,
-আনার কি দরকার তোমার টাই শেয়ার করতে পারো আমি কিছু মনে করবো না,

দিয়া নিজের কফির মগের দিকে একবার তাকালো রায়ানের দিকে একবার তাকালো।হুট করেই কাল আরমানের কথা টাও মনে পরে গেল।দিয়া আর কিছু না বলে কফি আনতে গেল।দিয়া চটজলদি ব্রেকফাস্ট শেষ করে উঠে দারালো,
-এখন তুমি যেতে পারো,

রায়ান কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলল,
-মাত্রতো কফিটা দিলে শেষ তো করতে দাও,

দিয়া দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলো নয়টা বাজতে আর মাত্র পনের মিনিট বাকি আছে দিয়া রায়ানের সাথে কথা বলে আর সময় নষ্ট করতে চায় না তাই সে তারাতারি করে শাওয়ার নিতে চলে গেল।শাওয়ার শেষ করে ড্রেস পরে নিল কানের দুল পরতে পরতে ব্যাগ নিতে লাগলো।চুলগুলো পুরোই ভিজা যেমন তেমন করে নেরেচেরে রেখে দিল।যেই বেরুতে যাবে ওমনি রায়ানের ডাক পরলো,
-এই এই কোথায় যাচ্ছো?

দিয়া পিছে ঘুরে বলল,
-কেন দেখ না কাজে যাচ্ছি,
-তো আজ কোন খুশিতে সেলোয়ার সুট?

দিয়া নিজের দিকে তাকিয়ে হাল্কা মুচকি হাসলো।

চলবে,,

স্পর্শ পর্ব-০১

0

#স্পর্শ
#part_1
#sarika_Islam

-কি দিন এসে পরেছে ওয়াও মেয়ে হয়ে মায়ের বিয়ে খেতে যাচ্ছি আই কান্ট বিলিভ,,

আয়নার দিকে তাকিয়ে শাড়ির আচল দিতে দিতে বলল দিয়া,,বিরক্তি মুখে আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকেই বলতে লাগলো,
-কি দরকার তোর দা মোস্ট ফেমাস লয়ার দিতির বিয়েতে যাওয়ার?মানি আমি বুঝি না এত্ত ফিলিংস আসে কোথা থেকে তোর দিয়া?

হুট করে দিয়ার ফোন আসলো,স্ক্রিনে নাম দেখে দিয়া আরেকদফা বিরক্তি হলো,
-হ্যালো!!
-দিয়া কোথায় তুমি?
-অন দা ওয়ে মম,
-কাম ফাস্ট
বলেই ফোন কাট হয়ে গেল,দিয়া হাই হিল পরলো যা দিয়া একদমি না পছন্দের তাও আজ পরতে হলো, নিজেকে একবার দেখে বেরিয়ে পরলো বিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য,কিছুক্ষনের মধ্যেই দিয়া পৌছে গেল খান বাড়িতে।গেটের সামনে বড় বড় করে লেখা ‘খান বাড়ি’ দিয়া এক নজর নেম প্লেট টার দিকে তাকিয়ে ভিতরে চলে গেল।
ভিতরে একদম মেহমানে গিচগিচ করছে পুরো বাড়ি।বেশির ভাগ মানুষকে দিয়া আগের থেকেই চিনে আর খুব ভালো ভাবেই।দিয়া স্টেজের সামনে গেল তার মা একদম সেজেগুজে বসে আছে।দিয়াকে দেখে দিতি হাত দিয়ে কাছে আসার জন্য ইশারা করলো।দিয়া না চাওয়া স্বত্তেও স্টেজের উপর উঠে দিতির কাছে গেল।মুখে একটা আলগা হাসি দিয়ে বলল,
-মম ইউ লুকিং সো প্রিটি,
-থেংস

একখানা হাসি দিয়ে দিতি বলল,দিয়া মুখটাকে একটু হাসির ভংগি করে আবার বিরক্তিতে চলে গেল।ঘুরে ঘুরে দেখতে মোটেও দিয়ার ভালোলাগছে না তাই সে ড্রিংক সাইডে গিয়ে বসলো।একটা স্ট্রবেরি জুস নিল দিতির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে স্ট্র দিয়ে জুসটা নাড়তে লাগলো,
-পাপা আই মিস ইউ সো মাচ,

দিয়ার খুব তার বাবার কথা মনে পরছে তার মা তার নতুন হাসবেন্ড এর সাথে কি ধরনের পোজে সেল্ফি তুলছে যা দিয়ার একদম ভালোলাগছে না,জুসের এক সিপ নিয়ে সেখান থেকে উঠে পরলো।হঠাৎ হিলের সাথে শাড়ির কুচিটা লেগে পরে যেতে নিলে কেউ এসে ধরে ফেলে।দিয়া একদম তার উপর গিয়ে পরে।সোজা হয়ে দারিয়ে কুচি নারাচারা করতে থাকে সামনে থাকা ব্যাক্তিটি হাত বারিয়ে বলে,
-হায় আমি রায়ান
-হোয়াটএভার

দিয়া চলে গেল রায়ান হাত বারানোটাই দিয়ার দিকে ঘাড় খানিকটা কাত করে টাটা করে দিল।দিয়ার আর এক মুহুর্তও থাকতে ইচ্ছে করছে না সে বাড়ি চলে আসলো।শাড়ি চেঞ্জ করে টপস আর প্লাজু পরে এসির টেম্পারেচার হাই করে গায়ে কম্বল টেনে শুয়ে পরলো।সাইডে থাকা ফোনটা বাইব্রেশনে বো বো করছে জানে এখন কে ফোন করতে পারে তাই না ধরেই একদম কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

সকালে,ঘুমের চোখেই কম্বল থেকে হাত বের করে এসি অফ করে দিল মুখ থেকে কম্বল সরিয়ে উঠে বসলো।বসতে না বসতেই হাচি শুরু হয়ে গেল।ঠান্ডা লেগে গেছে বেড সাইড থেকে টিসু নিল।চুলগুলো পুরোটাই লেয়ার কাটার ফলে সব চুল বের হয়ে গেছে।চুলগুলো খুলে ফেলল গায়ের কম্বল নিয়েই রান্নাঘরে গেল পাউরুটি টোস্ট হতে দিল আর জ্যাম টেবিলে এনে রাখলো।ফ্রেশ হয়ে টোস্ট করা পাউরুটি আর জ্যামটা নিয়ে সোফায় বসে পরলো আর গায়ে একটা কম্বল তো আছেই আর সাইডে টিসু বক্স।টিভি দেখতে দেখতে দিয়া ব্রেকফাস্ট করছে তখনি ফোন আসলো।ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে খুব এক্সাইটেড হয়ে বলল,
-হায় মেরি জান,আমাদের সব কালেকশন পছন্দ হয়ে গেছ।

এটা শুনা মাত্রই দিয়া খুশি হয়ে গেল দিয়াও একটু এক্সাইটেড হয়ে বলল,
-সত্যি বলছিস?শ্রেয়ু আম সো সো সো হ্যাপি,

বলেই দিল হাচি,সাইড থেকে টিস্যু নিয়ে নাক মুছতে লাগলো।অপর পাশ থেকে শ্রেয়া বলল,
-আবার এসি অন করে শুয়েছিস?
-হুম
-আবার ঠান্ডা লাগাইসস?কি হইসে এইবার?
-আরে আইসা বলুম নে
-আচ্ছা।

দিয়া চটজলদি টপস জিন্স আর গলায় একটা স্কার্ফ ঝুলিয়ে রেডি হয়ে নিল। দরজার সামনে দারিয়ে জুতা পরতে লাগলো তখন ফোন আসলো আবার দিয়া ফোনটা একবার দেখে আর ধরলো না এখন খুশির সময় এই সময়টা নষ্ট করতে চায়না।একটা রিকশা করে নিজের ড্রেসিং শপে আসলো সেখানে অলরেডি শ্রেয়া এসে হাজির।দিয়া ভাড়া মিটিয়ে ভিতরে গেল শ্রেয়াকে দেখে খুশি হয়ে জরিয়ে ধরলো।
-আর কিছুক্ষন পর ক্লাইন্ট আসবে আমাদের কালেকশন দেখতে।আর আন্টির কি খবর?
-আমি জানি না আমাকে জিজ্ঞেস করিস না।কাল থেকে ফোন রিসিভ করছি না।

শ্রেয়া আর কিছু বলল না দিয়ার মুডটা এখন নষ্ট করতে চায়না।দিয়া তার চেয়ারে বসে ফোন ঘাটছে আর বারেবারে নাক মুচছে।শ্রেয়া এক কাপ চা নিয়ে আনলো,
-নে খা এইটা তাহলে একটু ভালো লাগবে,

দিয়া ফোন থেকে মুখ তুলে চা দেখে দিয়ার দিকে একটা মিষ্টি হাসি দিল,
-থেংস বেব এক তুই তো আছিস আমার,
-হইসে আর সেন্টি খাইতে হইবো না চা খা,

দিয়া একটা ভেটকি মেরে চায়ের কাপে চুমুক দিল তখনি তাদের ক্লাইন্ট আসলো।ফুল ব্লাক সুট টাই চোখে সানগ্লাস চুলগুলো খুব বেশি বড় না কিন্তু তাকে মানিয়েছে হাইট ছয় ফিট।পকেটে দুই হাত গুজে দিয়ার সামনে এসে দারালো দিয়া হাত বারিয়ে বলল,
-হায় আমি দিয়া খান,
-হায়,আমি আরমান আহুজা

দিয়া এক এক করে তার ড্রেসের কালেকশন দেখাতে লাগলো।আরমান আবার সেই পকেটেই হাত গুজে দেখতে লাগলো।কিছুক্ষন পর বলল
-হুম সিলেক্টেড,

বলে আরমান তার পিএর থেকে চেক নিয়ে দিয়ার মুখের সামনে ধরলো,
-আপনার চেক,

দিয়ার কিছুটা রাগ লাগলেও আপাতত রাগটাকে দমিয়ে রেখে এক ফালি হাসি দিয়ে চেকটা হাতে নিল।আরমান চলে গেল তার পিএ ড্রেসগুলো নিয়ে গেল।রাতে দিয়া আর শ্রেয়া একসাথে ডিনার করে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলো দিয়া বাড়ি গিয়ে দিতি খানকে দেখে খানিকটা বিরক্ত হয়ে গেল।বিরক্তি মুখে চাবিটা টেবিলে রেখে নিজের রুমে গেল।দিতি মেয়ের পিছু পিছু রুমে গেল।
-তোকে কতবার বলেছি আমার বাড়ি চল এই ভারাটিয়া বাড়িতে আর কতদিন?

দিয়া কিছু বলল না কাধে ঝুলানো ব্যাগটা বিছানায় রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেল।টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বের হলো।
-তুই আজ আমার সাথে যাচ্ছিস,
-আমি কোথাও যাচ্ছি না আমি এইখানে একা সুখে আছি।

দিয়া রুম থেকে বাহির হতে নিলে দিতি হাত ধরে ফেলে,
-কাল তোকে কোথাও নিয়ে যাবো

দিয়া হাত ছারিয়ে বলল,
-আমি কোথাও যাচ্ছি না
-আমি কাল 1টায় তোকে নিতে আসবো,

দিয়ার আর কোন কথা না শুনে দিতি চলে গেল,দিয়া ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল পুরো বিল্ডিং কেপে উঠলো দরজার শব্দে।

চলবে,

পাওয়া না পাওয়া সুখ পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0

#পাওয়া_না_পাওয়া_সুখ
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#অন্তিম_পর্ব

হাত পুড়ে যাওয়ায় দুপুরের খাবার সুফিয়ার হাতেই খেলো নীহা। রাতে বাঁধলো বিপত্তি। সুফিয়ার মাথা ব্যথা হচ্ছে বলে ঘুমিয়ে পড়লো। নাফিজের মা ডায়াবেটিস এর রোগী বলে ঘরে বসেই রুটি খেয়ে নিলেন। খাবার টেবিলে শুধু নাফিজকে দেখা যাচ্ছে। নীহা খাবারটা বেড়ে দিয়েই উঠে যাওয়া ধরলো। তাকে থামিয়ে দিলো নাফিজ।

-“আপনি খাচ্ছেন না কেনো?”

গমগমে স্বরে উত্তর আসলো,
-“ক্ষিধে নেই। আপনি খেয়ে নিন।”

হাত বাড়িয়ে হাতটি ছুঁয়ে দিলো নাফিজ। চকিত ভঙ্গিতে তাকালো নীহা। নাফিজ ইশারায় বোঝালো পাশের চেয়ারে বসতে। নীহা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,

-“খাবো না আমি, ছাড়ুন।”

নাফিজ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলল,
-“খাবেন না, নাকি আমার হাতে খাবেন না। কোনটা?”

নীহা বিরক্ত হওয়ার ভান করে বলল,
-“বললামতো খাবোনা।”

নাফিজ ক্ষীণ হেসে বলল,
-“বসুন, কিছু কথা বলি।”

না চাইতেও পাশের চেয়ারে বসে পড়লো নীহা।
লম্বা শ্বাস ফেলে নাফিজ বলল,
-“অযথা রাগারাগি করে কি লাভ হবে? দুটো পরিবার কষ্ট পাবে। নতুন করে আপনার বাবা মায়ের চোখে শোকের ছায়া নামবে। আপনি সেদিনের ঘটনা নিয়েই রে’গে আছেন তাইনা? আচ্ছা আপনি কি দেখেছিলেন আমি বাহার ভাইকে বিনা শাস্তিতে ছেড়ে দিয়েছি? দেখেননি। ছোট্ট পরিসরের জীবনটাকে উপভোগ করতে শিখুন। বিষাদে মুড়িয়ে নিজের সাথে চারপাশের মানুষদের ও ঝলসে দেবেননা। বেশি কিছু বলার নেই আমার। খাবারটা খেয়ে নিন। না খেয়ে শুয়ে পড়লে ঘুম হবেনা ভালো করে।”

এতক্ষণ খাবেনা বলেছে, এখন কিভাবে হা করে বসবে? নীহা ইতস্তত করে বলল,
-“আসলে খেতে ইচ্ছে করছেনা।”

নাফিজ কথা না বাড়িয়ে নীহার মুখে খাবারের লোকমা তুলে দিয়ে নিজেও এক লোকমা খাবার মুখে তুলে নিলো।
নীহা নির্নিমেষ চেয়ে রইলো। তার চাহনিতে কি ছিলো? বিস্ময় নাকি মুগ্ধতা?
ধীরস্থির ভাবে চুপচাপ দুজনেই খাবার শেষ করলো।
পাশাপাশি দুটি মানুষ শুয়ে আছে। নাফিজ স্বভাব সুলভ কপালে ডান হাত রেখেই চোখ বন্ধ করে রেখেছে। উসখুস করছে নীহা। কিছুতেই আজ চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না। সে কি ভুল ধারণা নিয়ে ছিলো এতদিন? অভিমানের দেয়াল মনে হচ্ছে আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে। ধ্বসে পড়ছে রাগ, ক্ষোভ এর পাহাড়। ধূলো জমা হৃদয়টা ঝকঝকে হয়ে উঠছে।

[১৩]
সময়ের সুর কা’টেনা। সে তো বয়ে চলে অবিরাম। তার কোনো ক্লান্তি নেই। সময়ের তালে তালে জীবন বদলায়। মানুষ কিছু পায় কিছু হারায়।
নাফিজের দায়িত্ব, ভালোবাসা গুলো একে একে চোখে ধরা দিচ্ছে। এতদিন কেনো চোখে পড়েনি? অভিমান বাঁধা হয়েছিলো বলে? তবে কোথায় গেলো অভিমান? ভেঙে গুড়িয়ে গেলো বুঝি ভালোবাসার পদতলে। দূর হয়েছে সমস্ত অহংকার, ক্ষোভ। তবুও কাছে যেতে কেনো এত লজ্জা? সকালেই অফিস যাওয়ার পূর্বে ললাট ভিজিয়ে দিতে চেয়েছিলো নাফিজ। নীহা লজ্জায় খানিক আড়ষ্ট হলো, আড়াল হলো দৃষ্টি সীমানার বাইরে। আজ খুব অভিমান জমলো নাফিজের মনে। সে আর কখনোই নিজ থেকে ধরা দেবেনা। চাইলেই কিন্তু সে ঝাপটে ধরতে পারে, হিং’স্র হতে পারে। বাঁধা দেওয়ার সাধ্য নীহার নেই। তবুও নিজের বিবেক সায় দিচ্ছেনা। দুজন মানুষের মনমালিন্য পরিবারের মানুষগুলোর মাঝেও যখন ছড়িয়ে পড়বে কোথায় লুকোবে তখন নাফিজ?
আজ আর অন্তঃকরণ রংবেরঙের প্রজাপতিরা ডানা ঝাপটালোনা। মুখ ঘুরিয়ে পালিয়ে বেড়ালো। লাল রঙা হৃদয়খানা বিবর্ণ হয়ে গেলো।

তরকারি কা’টায় মনযোগ দিয়েছে নীহা। মনযোগ তার নাফিজের মধ্যে। মনে মনে আফসোস করছে মানুষটাকে কেনো ফেরালো? আজ অন্তত একটু কাছে আসতে পারতো। উত্তপ্ত গরম শ্বাস ওঠানামা করছে। ভেতরটা উসখুস করছে।
ফেসবুক স্ক্রোল করছিলো সুফিয়া। দৌঁড়ে রান্নাঘর ঢুকে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
-“একটু আগে বাস দু’ঘটনায় অনেক মানুষ মা’রা গেছে। অনেকেই আহত হয়েছে।”

বুকটা তড়াক করে উঠলো নীহার। নাফিজও তো বাসেই যাতায়াত করে। নাফিজের মা চিন্তায় কথা বলতে পারছেননা। গলায় এসে শব্দগুলো জট পাকিয়ে যাচ্ছে। মুখ খুলে বলতে পারছেননা একবার কল করে দেখতে। নীহা তরকারি ফেলে দৌঁড়ে ঘরে গেলো। নাফিজের নাম্বারে ডায়াল করলো। একটি মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসছে,
-“দুঃখিত! আপনি যে নাম্বারটিতে কল করেছেন তা এই মুহূর্তে বন্ধ আছে। একটু পরে আবার ডায়াল করুন।”

বারবার কল করে একই বাক্য ভেসে আসছে। হাত থেকে ফোন পড়ে গেলো। শরীর বেয়ে দরদরিয়ে ঘাম ছুটলো। কাঁপা হাতে ফোন তুলে ছুটলো বসার রুমে।
নাফিজের মা কোনোভাবে জিজ্ঞেস করলেন,
-“নাফিজ ফোন ধরেছে?”

নীহা জড়ানো গলায় উত্তর দিলো,
-“ন না আম্মা।”

সুফিয়াকে বলল,
-“তোমার কাছে উনার অফিসের নাম্বার আছেনা। একটু নাম্বারটা দাও।”

সুফিয়া নাম্বার ঘেটে ও পাচ্ছে না। বিপ’দের সময় আতঙ্ক বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সবকিছুই যেনো ওত পেতে থাকে। অনেক খোঁজার পর নাম্বারটা পেলো সুফিয়া। নীহা ঝটপট নাম্বার তুলে অফিসে কল দিলো। নিজের পরিচয় দিয়ে নাফিজের কথা জিজ্ঞেস করতেই তারা জানালো নাফিজ অফিসেই আসেনি। কল কে’টে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো নীহা। নাফিজের মা আতঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
-“কি হয়েছে মা?”

নীহা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। নাফিজের মা আর কিছুই শুনতে পেলেননা। প্রেশারটা মনে হয়ে বেড়ে গিয়েছে। রুদ্ধ হয়ে আসছে শ্বাস। বড় বড় শ্বাস টেনে সোফাতেই জ্ঞান হারালেন তিনি। এক ছেলে বুকে ছু’রি বসিয়ে বিদায় নিয়েছে। আর একটাই আল্লাহ তার ভাগ্যে রেখেছে। তবে সেও কি দ্বিতীয়বার আ’ঘাত করে বসলো?
সুফিয়া আর নীহার কান্নায় শুনে নিচতলা থেকে ভাড়াটিয়ারা উঠে আসলেন। এক্সি’ডেন্ট এর খবর তারাও শুনেছে। তাই নাফিজকে নিয়ে একটা ধারাণা করে নিলো সবাই। নাফিজের মায়ের কাছে দোতলার মহিলাটি আছেন বলে তার ছেলের সাথে নীহা আর সুফিয়াকে পাঠিয়ে দিলো হাসপাতালে। ছেলেটি দায়িত্ব নিয়ে নীহা আর সুফিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে পৌঁছালো। হাসপাতালে ঢুকতেই চারদিকে মানুষের আহাজারি শুনে দম আটকে আসলো নীহার। নিচে ফ্লোরে বসে একটি অল্প বয়সী মেয়ে পাগ’লের মতো বিলাপ করে যাচ্ছে। তার বিয়ে হয়েছে বেশিদিন হয়নি। এর মাঝেই স্বামীকে হারালো। নীহা আর পা চালাতে পারছেনা। শরীর ভর ছেড়ে দিলো। অজানা আতঙ্ক ভেতরে বাসা বাঁধালো। আরও একবার কি সে পরাজিত হবে? বারবার ভালোবাসা খুঁজতে গিয়ে মরিচীকার পেছনে ছুটেছে সে? যদি নাফিজ ও হারিয়ে যায়? ধপ করে হাসপাতালের নোংরা ফ্লোরে শরীর ছেড়ে দিলো নীহা। চোখের পানি বাঁধ মানছেনা। অনুভূতি শূন্য হয়ে পড়েছে। সুফিয়া আর ভাড়াটিয়া ছেলেটি সাথে সাথে বসে নীহাকে দুপাশ থেকে ধরলো।

সামনের করিডোর দিয়ে দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে নাফিজ। এক্সি’ডেন্ট টি মা’রা’ত্মক ভাবে ঘটেছে। ভাগ্য সহায় ছিলো বলে সে অন্য বাসে ছিলো। দু’র্ঘটনা দেখে আর অফিস যায়নি। ছুটে আসলো মানুষগুলোকে সাহায্য করতে। ভীড়ের মাঝেই অনুভব করলো পেছনে হাত দিয়ে কেউ ফোনটা নিয়ে গিয়েছে। বিপ’দের সময় চো’ররা তক্কে তক্কে থাকে। ফোন চু’রি হওয়া সাথে হাসপাতালে দৌঁড়ঝাপের কারণে আর বাড়িতে ফোন করা হয়নি। করিডোর দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ মনে হলো সুফিয়াকে দেখেছে। ছুটলো সেদিকে। সুফিয়া এখানে কেনো এসেছে? কারণ উদ্ধার করতে গিয়ে সেখানে নীহাকেও দেখতে পেলো। যা বোঝার বুঝে গেলো। নিশ্চয়ই তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করে এখানে এসেছে। বউ, বোন দুজনের চোখমুখের করুণ অবস্থা দেখে মনে মনে খানিক হাসলো। নাফিজকে সামনে দেখে ঝরে পড়া শরীরখানা যেনো খানিক শক্তি পেলো। উঠে দাঁড়িয়ে নাফিজকে ধরে হাউমাউ করে কাঁদলো নীহা। এত জোরে চিৎকার করে কাঁদছে যে সব মানুষ উৎসুক হয়ে তাদের দিকেই তাকিয়ে রইলো।
ক্রন্দনরত গলায় নীহা বলল,
-“আমাকে মাফ করে দিন। আমাকে আর একা করবেনা। এতবার আর ধা’ক্কা নিতে পারবোনা আমি।”

নাফিজ একহাতে আগলে নিলো নীহাকে, অপর হাত বাড়িয়ে সুফিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। দুজনেই কেঁদে কে’টে ওর শার্ট নষ্ট করে দিলো। এমনিতেও র’ক্ত লেগে শার্টের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিলোনা। মায়ের কথা শুনে তৎক্ষনাৎ বাড়ি ফিরলো নাফিজ।
জ্ঞান ফেরার পর নাফিজকে দেখে ঝাপিয়ে পড়লেন মা। যেনো এখনি বুকের খাঁচায় সন্তানকে বন্দি করবেন। ভ’য় কাটলো। আজ নিজের প্রতি পরিবারের প্রতিটি মানুষের ভালোবাসা দেখলো। প্রশান্তিতে বুক ভ’রে এলো নাফিজের।
এবার নীহা নিজ থেকেই কাছে ভীড়লো। দূরত্ব ঘুচলো। এক হলো দুটো হৃদয়, দুটো শরীর। ভালোবাসার সাক্ষী হলো প্রতিটি দেয়াল। সূচনা হলো নতুন অধ্যায়ের।

[১৪]
বছর ঘুরলো। নানার মৃ’ত্যু বার্ষিকীতে সবাই একত্রিত হলো। প্রেমার আর সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া হলোনা। নাফিজকে ভোলার চেষ্টায় নিজেই নিজের শরীরে কতবার আ’ঘা’ত করেছে। সেই সমস্ত তিক্ত আ’ঘাতের দাগ থেকে যাওয়ায় অনুমোদন পেলোনা প্রেমা। তখন আর পাবলিকে এডমিশন নেওয়ার সময় সুযোগ কোনটাই ছিলোনা। একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেলো। আজ সবাই নানার বাড়ী এসেছে। অন্তিক ও দুদিনের ছুটি নিয়ে ছুটে এসেছে। নীহা, নাফিজ সবাই এসেছে। নীহা নাফিজের সুখী পরিবার। অভীকের সাথে আলাপ জুড়ে দিয়ে প্রেমা সরু রাস্তা ধরে হাঁটলো। যোগ দিলো অন্তিক। ভাইয়ের ইশারায় কথা কা’টিয়ে কে’টে পড়লো অভীক। একটা বাঁশের তৈরি মাচায় বসলো অন্তিক, প্রেমা।

বাতাসের শুনশান শব্দ আর সাথে দুজন মানুষের মধ্যে নিরবতা। নিরবতায় সুর কা’টলো অন্তিক।
-“পড়ালেখা কেমন চলছে?”

-“ভালো।”

-“প্রেম?”

শব্দ করেই হাসলো প্রেমা।
-“সেসবে আমার আগ্রহ নেই।”

অন্তিক আড়চোখে তাকিয়ে বলল,
-“তাহলে বিয়ে করে ফেল। আশেপাশে কত ছেলে আছে।”

প্রেমার হাসি চওড়া হলো। অন্তিকের দিকে মুখ করে তাকালো।
-“জানো তো অন্তিক ভাইয়া আমি না একটা মানুষকে বড্ড চেয়েছিলাম। কিন্তু নিয়তি তাকে আমার করলোনা। আজীবন ভর তাকে আমি মনে জায়গা দিয়ে রাখবো। তার পরে এখন আর কাউকে চাইতে ইচ্ছে করেনা।”

গলা ধরে আসলো অন্তিকের। গতবছর যখন প্রেমা তাদের বাড়ি গেলো তখন থেকেই প্রেমার প্রতি আলাদা কিছু অনুভব করলো। ম্লান হেসে বলল,
-“তাকে নিজের করে নিতি।”

আবারও হাসলো নীহা।
-“সম্ভব না। আমি কে’ড়ে নিয়ে সুখী হতে চাইনা। তাকে না পেয়ে ও আমি সুখ সুখ অনুভব করি। যখন দেখি সে তার স্ত্রীকে কতইনা ভালোবাসে। তখন বিষাদ যন্ত্রণায় আছড়ে পড়ি। তবে বিশ্বাস করো আমি তার ভালোবাসাকে হিং’সা করতে পারিনা। তার ভালোবাসা দেখলে পুড়ে ছাঁই হই, তার ভালোবাসার মানুষের দিকে তাকালে একবুক শান্তিতে দম ফেলি। তখন আমার মনে হয় বিষাদ আছে বলেই দুনিয়াতে সুখের এত কদর।”

প্রেমার টলমলে চোখজোড়া ঘোলাটে হয়ে আসলো। মাচা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। সরু রাস্তায় পা বাড়ালো। অন্তিক নির্নিমেষ চেয়ে রইলো প্রেমার যাত্রা পথে। গাল জোড়া ভিজে উঠলো তার। ওহ পুরুষের কাঁদতে মানা। দীর্ঘশ্বাসে দুমড়েমুচড়ে ফেললো সকল অনুভূতি।

হাঁটতে হাঁটতেই পাওয়া না পাওয়ার খাতা খুলে বসলো প্রেমা। বাবাকে দিয়েই শুরু করলো। মানুষটা ছোটবেলা থেকে সুখ পায়নি। অল্প বয়সে বাবা মা’রা যাওয়ায় জীবিকার তাগিদে বেরিয়ে পড়ে। শেষ বয়সে এসে একটু সুখের দেখা পেলো। বাবার সংসারে এসে মা ও অনেক কষ্ট করলো। এরপর বড় আপু। সবাই বলে সে একটা পা’ষাণ। বাবার বাড়ী আসেনা তেমন। কিভাবে থাকে? বাইরের গল্প সবাই জানে। ভেতরটা কজনে জানে? স্বামী সংসার থেকেই তাকে শিকলে আটকে রেখেছে। তাদের অবাধ্য হলেই শুরু হয় সংসারে অ’শান্তি। তাই সংসার বাঁচিয়েই চলে সে। বাবার ঘাড়ে এসে উঠে কদিন খাবে? এর আগেই সমাজ তাকে খাবে। তারপর আসলো মেজো আপু, নীহা। কৈশোরে প্রেম হারালো। যৌবনে স্বামী হারালো। শেষে এসে একমুঠো সুখের ভাগীদার হলো। আল্লাহ কবে কখন কার দ্বারা কাকে সুখী করেন সেটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেননা। সর্বশেষে নিজের খাতাটা খুললো।
পঞ্চম শ্রেণীতে যখন আশানুরূপ ফল পেলোনা তখন মনে হয়েছিলো সে বড়ই অভাগী মেয়ে। যখন আশেপাশে চোখ রাখলো, তারই এক সহপাঠী খা’রা’প রেজাল্ট করলো।
তাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য বাবা ছিলো কিন্তু মেয়েটির বাবা নামক বটগাছের ছায়া ছিলোনা। তখন মনে হয়েছে না আমিই সবচেয়ে সুখী মেয়ে। যে একসাথে বাবা মা দুজনের ভালোবাসা পেয়েছে। কজনের এমন ভাগ্য হয়? তারপর জীবনে প্রেম আসে। তাকে পাওয়া হলোনা। হয়তো তার জন্য আরও উত্তম কিছু অপেক্ষা করছে।

-“তোমারে পেয়ে গেলে সুখের যন্ত্রণায় আমার আর বাঁচা হইতো না।”
কথাটি বলেই তাচ্ছিল্য হাসলো প্রেমা।
আঙ্গুর ফল টক। নাফিজকে না পেয়ে নিজেকে বুঝ দিচ্ছে।
আমরা মানুষরা বড্ড লোভী। একজীবনে শুধু সুখ খুঁজে বেড়াই। কেউ দুঃখের খোঁজ করেনা। তাইতো দুঃখ নিজে এসে ধরা দেয়। একজীবনে মানুষ সবকিছু পায় না। কিছু পেতে হলে কিছু হারাতে হয়। আকাশে দৃষ্টি রেখে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে,

-“হে পৃথিবী শুনছো তুমি? আমি সুখী। জীবনের কিছু সুখ পাওয়া না পাওয়ার খাতায় লিখে দিলাম। না পাওয়াতে ও চরম সুখ পাওয়া যায়। বিষাদ যন্ত্রনায় ছটফট করেও চরম সুখ অনুভব করা যায়। আমি প্রেমা সেটা প্রমাণ করে দিয়ে গেলাম।”

আমরা জলফড়িং এর মতো সুখের পেছনে ছুটে বেড়াই। আপনার সুখী হওয়ার জন্য যতটুকু প্রয়োজন আল্লাহ ততটুকুই আপনাকে দেবে। এর বেশি নয়। কিছু জিনিস না পাওয়ার খাতায় জমা থাকে। হয়তো সেগুলো আমাদের জন্য মঙ্গলকর নয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার বান্দাকে শ্রেষ্ঠ টা দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। তিনিই ভালো বুঝেন কোনটায় বান্দার সুখ নিহিত।

#সমাপ্ত।