Sunday, July 27, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1015



হৃদমাঝারে পর্ব-০২+০৩

0

#হৃদমাঝারে [০২+০৩]
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।

সূর্যিমামা পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। চারদিকে লাল আভা ছড়িয়ে আছে। ধূসর কালো ছায়া নেমে আসছে পৃথিবীর বুকে। প্রকৃতি জানান দিচ্ছে সন্ধা নেমে আসছে। বেলকনিতে বসে চোখ বন্ধকরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মুন। চোখদুটো ভিষন জ্বালা করছে। ফারহানের বলা কথাগুলো বারবার কানের কাছে ভেজে উঠছে। মুন মনে মনে বলে উঠলো,

– তুমি এই শহরের ছেলে সেটা জানতাম কিন্তু তাইবলে এতটা কাছে থাকবে সেটা জানতাম না। পৃথীবি গোল এটা জানতাম তাই বলে ঘুরেফিরে আবার তোমার সম্মুখীন হতে হলো। আমি তো ভেবেছিলাম আর কোন দিন তোমার সাথে দেখা হবে না ফারহান। ফারহান আর মেহরিমার কোন দিন দেখা হবে না। কিন্তু এটা কি হয়ে গেলো। এতগুলা বছর পর আবার কেন তোমার সম্মুখীন হতে হলো আমাকে। বিশ্বাস করো ফারহান যদি জানতাম দেশে ফিরে তোমার সম্মুখীন হতে হবে তাহলে আমি কখনোই দেশে ফিরতাম না।

চোখ মেলে তাকায় মুন। আকাশের দিকে তাকিয়ে বড় করে শ্বাস নেয়। তখনি ওর মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে। স্কিনে ভেসে থাকা নামটা দেখে পরপর কয়েকবার শ্বাস নিয়ে গলার ভয়েজ ঠিক করে নিয়ে কল রিসিভ করে সে। ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠলো,

– তাহলে কাল থেকে নার্সিংহোমে জয়েন করছো।

– জ্বি আংকেল। আমি জয়েনিং লেটার পেয়ে গেছি। কাল থেকেই জয়েন করবো।

– সাবধানে থেকো মা।

– জ্বি আংকেল। তারপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর কল রেখে আবারো চোখ বন্ধকরে বসে থাকে মুন। আর তখনি ওর কাছে আসে অর্ণা আর ওর নানুভাই। অর্ণা এসে মুনের কাঁধে হাত রাখতেই চোখ মেলে তাকায় সে। নানুভাই প্রশ্ন করে,

– এই কি সেই ফারহান! যার কারনে তুই,,,,,

– হ্যাঁ। এই সেই ফারহান। মুন অর্ণার গালে হাত রেখে বলে, আমার কারনে তোর বিয়ে ভেঙেছে তো তাহলে আমিই সব ঠিক করে দিবো। কথা বলবো আমি ফারহানের সাথে।

– তার কোন দরকার নেই মুন। যে বা যারা আমার মুনের নামে মন্দ কথা বলে যেখানে তোর কোন সম্মান নেই সেই বাড়িতে আমি বিয়ে করবো না। মুন তুই আমার খালাতো বোন হলেও তোকে আমি আমার নিজের ছোট বোন মানি। তুই তো আমার সোনা বোন রে মুন। তোর অস্মান আমি কি করে মেনে নেই বলতো।

– ফারহান তো ভুল কিছু বলে নি। ও যেটা দেখেছে সেটাই বলেছে। সত্যিই তো আমি,,,

– চুপ, একদম চুপ।

মুনকে থামিয়ে বলে অর্ণা। তুই কেমন সেটা আমরা সবাই জানি। মুন মৃদু হেসে অর্ণার দিকে তাকিয়ে বলে, আমি কথা বলবো ফারহানের সাথে। তখন মুনের নানুভাই বলে উঠে,

– কথা বলে দেখ কি হয়। তুই তো ওকে ভালো চিনিস।

নানুভাইয়ের কথা শুনে স্মিত হাসে মুন। তারপর তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে,

– চিনতে আর পারলাম কই নানুভাই। সেই তো নতুন প্রেমের অনুভূতি তারপর প্রেম শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেলো।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুন। তারপর ওদের সকলের সাথে নিচে চলে যায়।

২,
এদিকে অফিসে বসে পেপার ওয়েটটা হাতে নিয়ে সেটা পর্যবেক্ষন করছে আর মিটমিট করে হাসছে ফারহান। ওর থেকে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে আছে পলাশ। সে ফারহানে এমন রহস্যজনক হাসির কারন খুঁজায় ব্যাস্ত। তীক্ষ্ণ চাহনি নিক্ষেপ করে সে ফারহানের দিকে। মনে মনে বলে,

– স্যার এভাবে হাসছে কেন? রহসের গন্ধ পাচ্ছি। মনে হচ্ছে রহস্যটা ভিতর থেকে আসছে। পলাশ নাকটা খোলা রাখ।

ফারহান পেপার ওয়েটটা রেখে মোবাইল হাতে নিয়ে রহস্যময় হাসি দিলো। হাতে থাকা মোবাইলটা এপিট ওপিঠ ঘুড়িয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

– ডঃ মেহরিমা খান তোমাকে তো আমার কাছে আসতেই হবে। আমি জানি তুমি কল করবে। আমিও যে তোমার কলের অপেক্ষাতেই আছি। তোমাকে তো এত সহজে ছাড়বো না আমি।

নিজের মনে কথাগুলো বলছিলো ফারহান। আর তখনি ওর মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে। স্কিনে ভেসে থাকা আননোন নাম্বার দেখে পৈশাচিক হাসি হাসে ফারহান। তারপর কল রিসিভ করে কানের কাছে ধরতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ আসে,

– ক্যাপ্টেন ফারহান সাদিক বলছেন?

– ডঃ মেহরিমা খান। আমি জানতাম তুমি কল করবে কিন্তু সেটা এত তাড়াতাড়ি সেটা জানতাম না। তা বলো কি জন্যে কল করেছো।

– বিকাল ঠিক চারটায় সামনের ওই তিন রাস্তার মোরে আমি অপেক্ষা করবো। আপনি আসবেন।

– এই শুনো তুমি কি আমাকে অর্ডার করছো। ভুলে যেওনা তুমি কার সাথে কথা বলছো। আমি যাবো না।

ফারহানের গলার স্বর কিছুটা মোটা। এতে ওপাশে থাকা লোকটার ভ্রুক্ষেপ হলো না। সে বলে উঠলো,

– আমি শুধু টাইমটা জানিয়ে রাখলাম।

– এই শোন ডন্ট ট্রাই টু বি ওভার স্মার্ট।

– ও আমার জন্ম থেকেই ছিলো। আপনি আসবেন কি আসবেনা সেটা সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছে। আমি অপেক্ষা করবো। কথাগুলো বলেই কল কেটে দেয় মুন। ফারহান কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারে না। রাগে মোবাইলটা টেবিলের উপর ছুড়ে মারে। বড় বড় করে কয়েকবার শ্বাস নিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। রাগে ফুসছে আর কেবিনের ভিতরে পাইচারি করছে। কি ভাবেটাকি নিকেজে। আমার মুখের উপর কল কেটে দিলো। ছাড়বো না আমি তোমাকে ডঃ মেহরিমা খান ওরফে মুন।

দূর থেকে ফারহানের এই ছটফটানি লক্ষ করছে পলাশ। সে এতক্ষণ ভ্রু কুচকে কপালে চিন্তার কয়েকটা ভাজ ফেলে তাকিয়ে ছিলো ফারহানের দিকে। এবার সে নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে না পেরে ফারহানের কেবিনে ডুকে পরে।

– স্যার কেসটা কি?

– ওটা তুমি বুঝবে না। যাও নিজের কাজ করো।

– আচ্ছা স্যার এই মেহরিমাটা কে? কই আগে তো এর নাম শুনিনি। গার্লফেন্ড নাকি?

পলাশের কথা শুনে হচকচিয়ে উঠে ফারহান। শীতল দৃষ্টিতে পলাশের দিকে তাকালেও পরক্ষনে তার দৃষ্টি কঠিন হয়ে উঠে। পলাশ। ধকম দিয়ে উঠে ফারহান। তুমি ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার সিনিয়র।

– তাতে কি স্যার, আমি তো আপনার ভাইয়ের মতো তাইনা স্যার। স্যার একটা প্রশ্ন করি,

– হুম বলো।ফারহান তার মাথায় হাত রেখে চেয়ারে বসে পরে। ও জানে পলাশ এখন বকবক শুরু করবে। তবে তার এই প্রশ্নের ভান্ডার কখন শেষ হবে সেটা জানা নেই তার।

পলাশ নিজেই বকবক করে যাচ্ছে আর ফারহান পুরনো কিছু ফাইল দেখছে। কথা বলার মাঝে পলাশ ডাকলে ফারহান ফাইলে মাথা রেখে শুধু বলে যাচ্ছে তুমি বলো আমি শুনছি।

চারটা বাজার কয়েক মিনিট আগে ফারহান অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়লো। পলাশ সাথে আসতে চাইলে ওকে বারণ করে ফারহান। পলাশ হা করে তাকিয়ে থাকে ফারহানের দিকে। এটা কোন ফারহান? একবছর ধরে সে ফারহানের সাথে কাজ করছে। ফারহানের সব কাজের সঙ্গী পলাশ, আর আজ ফারহান পলাশকে তার সাথে নিচ্ছে না। ফারহান বেড়িয়ে গেলে পলাশ গালে হাত দিয়ে বসে মনে মনে বলে,

– মনে হচ্ছে রহস্যটা বেশ গভীর। পলাশ নাক কান চোখ সবটাই খোলা রাখতে হবে তোকে। বাই দ্যা ওয়ে মেয়েটা কে?

গন্তব্যে পৌঁছাতেই ফারহান দেখতে পেলো মুন একটা ছেলের সাথে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলছে। ফারহান গাড়ি থেকে নেমে ওদের কাছে আসতেই ছেলেটা চলে যায়। মুন তার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকায়। আর তখনি তার চোখ আটকে যায় ফারহানের উপর। ইউনিফর্ম পড়ে বেশ স্মার্ট লাগছে ওকে। কয়েক সেকেন্ডের জন্যে হলেও মুন স্তব্ধ হয়ে যায়। পরক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়ে অন্যদিকে ঘুরে তাকায়। ফারহান তার হাত দুটো বুকের উপর ভাজ করে মুনের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো অতঃপর বলল,

– ছেলেটা কে ছিলো? নিউ বয়ফেন্ড।

– আমি কাউকে কইফিয়ত দিতে বাদ্য নই।

– এই তুমি সোজাসাপ্টা কথা বলতে পারো না। তা কি এমন দরকার পড়লো হুম। ডঃ মেহরিমা খান নিজে আমাকে ডাকলো।

ফারহানের চোখ-মুখে বেশ কৌতুহল। মুন ফারহানের দিকে একপলক তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিলো। পরপর কয়েকবার শ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো,

– আমাদের মাঝে যা হয়েছে তার জন্যে অর্ণা আর আপনার ভাইয়ের বিয়ে বন্ধ করাটা কি খুব জরুরি। মানছি আমি খারাপ খুব খারাপ। কিন্তু অর্ণা, ও সত্যিই অনেক ভালো। আমার ভুলের জন্যে আপনি পরিবারের এতগুলা মানুষের সিদ্ধান্ত নাকচ করতে পারেন না।

– কি বলতে চাইছো তুমি?

– আপনি এই বিয়েটা ভেঙে দিবেন না। প্রথমবার কোন ছেলেকে অর্ণার পছন্দ হয়েছে। হ্যা মানছি এটা এরেঞ্জ মেরেঞ্জ ছিলো। অর্ণা কোন দিনও সং সেজে পাত্র পক্ষের সামনে বসতে চাইতো না। আর বিয়েতো দূরের কথা। ও বিয়েতে রাজি হয়েছে কারন রওনাককে দেখে ওর পছন্দ হয়েছে তাই। তাছাড়া পরিবারের সকলে যেখানে রাজি সেখানে আপনার আর সমস্যার জন্যে এই বিয়েটা ভাঙা ঠিক হবে না। আপনি এই বিয়েটা ভেঙে দিবেন না প্লিজ।

মুন ফারহানের সামনে হাত জোর করে নিলো। ফারহান তার আঙ্গুলের সাহায্যে কপালের কিছু অংশ স্লাইড করে নিলো। ওর মুখে এক অদ্ভুত হাসি, যেটা মুন দেখতে পেলো না। অতঃপর সে পকেটে হাত গুজে বলল,

– ডঃ খান, আমি আমার সিদ্ধান্ত বদলাতে পারি তবে আমার শর্ত আছে। তুমি যদি আমার শর্ত মেনে নাও তবেই হবে এই বিয়ে।

– বলুন আপনার কি শর্ত?

– প্রথম শর্ত, তুমি আমার বাড়ি যেতে পারবে না। আর দ্বিতীয়ত্ব, কখনো আমার সংস্পর্শে আসার চেষ্টাও করবে না। সুযোগ পেলেও না।

ফারহানের কন্ডিশন শুনে মৃদু হাসে মুন। অতঃপর বলে,

– আজকে ছয় বছর পর দাঁড়িয়ে আমার জিবনে নিজেকে এত ইম্পরট্যান্ট দেওয়ার কিছু নেই। বাড়িতে যাওয়ার কথা দিতে পারছি না যেহেতু আপনার বাড়িতে আমার বোনের বিয়ে হচ্ছে তাই ও বাড়ি যাবনা তার গ্যারান্টি দিতে পারবো না। তবে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন আমি কখনোই আপনার সংস্পর্শে আসবো না। সরাসরি জানিয়ে দিচ্ছি ছয় বছর আগে ওটা বয়সের ইনফিসিয়ন ছাড়া আর কিছুই ছিলো। এখন এটা বুঝতে পারি। তাই খুব হাসি পায়। এতে যদি কেউ মনে করে আমি চরিত্রহীন থার্ডক্লাস তাতে আই ডোন্ট কেয়ার।আমার সিদ্ধান্তটা আমি জানিয়ে দিলাম। বাকিটা আমি আমার বাড়ির লোকদের থেকে জেনে নিবো।

কথাগুলো বলে আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে না মুন। লম্বা পা ফেলে চলে যায়। মুনের চলে যাওয়ার পর ফারহান বলে উঠে,

-ইনফিসিয়েশন। তারপরের হেসে উঠে।

৩,
বদ্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে চার বছরের একটা কন্যাসন্তান। ওর পাশেই দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে এক অর্ধবয়স্ক মহিলা। দরজার ওপাশে কি চলছে সেটা সে ভালোই আন্ধাজ করতে পারছে। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে বেড়িয়ে এল একটা যুবক। বয়স তার আটাইশ ঊনত্রিশ হবে। শার্টের বাটনগুলো লাগাতে লাগাতে মেয়েটার সামনে এসে হাটুগেরে বসে তার চোখের জল মুছে দিয়ে মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলো।

– কি হয়েছে মামনি? এই তো পাপা এসে গেছে। আর কাঁদে না। সোনা মা আমার। যুবকটা মেয়েটার কপালে চুমু একে দেয়ে। সাথে সাথে মেয়েটা তার নাক চেপে ধরে। আর বলে,

-পাপা তুমি আবারও ওই পচা গন্ধ পানি খেয়েছো। তুমি জানোনা পাপা এতে আমার কষ্ট।

যুবকটা তার মাথা নিচু করে নিয়ে বলে,

-সরি মামনি। দেখো সোনা পাপা খুব তাড়াতাড়ি এসব খাওয়া ছেড়ে দিবে। এখন নিচে চলো।মেয়েটা আবার বলে, মাম্মাম কোথায়? আমি মাম্মামের কাছে যাবো।

যুবকটা শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেয়েটার দিকে। এই মেয়েটা তার মা বলতে পাগল। অথচ তার মা তার দিকে ঘুরেও তাকায় না। পৃথীবিতে এমন সার্থপর মা-ও আছে। যুবকটা মেয়েটাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে ছুটলো। এই মুহূর্তে সে কিছুতেই মেয়েটাকে তার মায়ের কাছে যেতে দিবে না। পিছন থেকে অর্ধবয়স্ক মহিলাটি ডেকে বলল,

– রনি, মিষ্টি কিন্তু এখনো কিছু খায়নি?

হ্যাঁ এই যুবকটি নাম রনি। এই বিশাল সম্রাজ্যের মালিক, মালিক বললে ভুল হবে। মালিকের বাবা। কারন তার এই সম্রাজ্যের মালিক তার চার বছরের মেয়ে মিষ্টি।আর রনি এক অন্ধকারে নিমজ্জিত মানব। মদ আর নারী যার একমাত্র নেশা। তবে মেয়েকে খুব ভালোবাসে। একদিকে তার পৃথীবি আর অন্যদিকে তার মেয়ে। অর্ধবয়স্ক এই মহিলাটির কথা শুনে এবার রনির রাগ হয়। প্রচুর রাগ হয়। পিছনের দিকে ফিরে শক্ত গলায় বলে উঠে,

– বাড়িতে এতগুলা লোক থাকতেও কেন আমার মেয়ের ঠিকমত খাওয়া হয়না। তোমরা সবাই আছো কি করতে?

– ভদ্রভাবে কথা বলো রনি। ভুলে যেওনা তুমি কার সাথে কথা বলছো?

– আওয়াজ নিচে। তুমি ভুলে যেওনা যে তোমার মাথার মাথার উপর যে ছাদটা আছে না সেটাও আমার। শুধু মাত্র কাকার কারনে তোমাকে সহ্য করছি। না হলে তোমার মতো মহিলাদের আমি,, আর কিছু বলল না রনি। কারন দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়েগেছে অথচ তার মেয়েটা এখনো কিছু খায়নি। হসপিটাল থেকে ফেরার সময় নেশা করে বাড়ি ফিরেছে তাই আর মেয়ের খবর নেওয়া হয়নি। তাড়াতাড়ি করে নিচে চলে যায়। তারপরেই বেড়িয়ে আসে রনিও ওয়াইফ। সে তার অধোরে তাচ্ছিল্যের হাসির রেখা টেনে অর্ধবয়স্ক মহিলাটির দিকে তাকিয়ে থাকে।

মুন আজ বাড়িতে ফিরতেই দেখে সকলে বেশ হাসিখুশি। তবে এর কারনটা ওর অজানা নয়। ফারহানদের বাড়ি থেকে হয়তো বিয়ের কথা বলেছে তাই। অর্ণাও আজ অনেক খুশি। এদিকে ফারহান বাড়ি ফিরতেই রওনাক আসে ওর কাছে। আর ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,

– তুই হঠাৎ বিয়েতে রাজি কেন হলি?

– আমার আর মেহরিমার মাঝের ঝামেলা আমরা মিটিয়ে নিয়েছি তাই।

– তুই মুনকে কি করে চিনিস? আর ওকে বারবার মেহরিমা কেন বলছিস?

ফারহান কিছু বলতে যাবে তখনি ওর ফোনটা বেজে উঠে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে কমিশনড স্যারের কল।ফারহান কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল,

– তোমার সাথে আমার জরুলি কিছু কথা আছে।এখনি আমার বাংলোতে চলে এসো।

-ইয়েস স্যার।

ফারহান ফরমাল ড্রেস পরেই বেড়িয়ে পরে। যাওয়ার আগে পলাশকে কল করে। কারন ফারহান সেখানে পলাশকেও নিয়ে যাবে।

কমিশনড স্যারের সামনে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফারহান ও পলাশ। আর কমিশনড স্যার সুফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে ওদের দুজনের দিকেই তাকিয়ে আছে। কিছু সময় পর তিনি নিজেই ফারহানের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন,

-তুমি তোমার টিম মেম্বারদের কতটা ভরসা করো?

– যতটা আমি নিজেকে করি। আমার টিমের সবাই দেশের জন্যে কাজ করে। দেশের অগ্রগতির জন্যে তারা তাদের জিবন বাজি রাখতে পারে। তাই আমাদের সকলকে আপনি ভরসা করতে পারেন স্যার।

– তাহলে তুমি তেমার ব্রাঞ্চের হয়ে কাজ করবে?

– সেটাইতো করি স্যার। আমি নামমাত্র সৈনিক। ক্রাইম ব্রাঞ্চ আমাদের ব্যাক্তিগত প্রতিষ্ঠান হলেও এটা থেকে আমরা অনেক কেইসের প্রবলেম সলভ করেছি। এমনকি পুলিশ সিআইডি এরাও মাঝে মাঝে আমাদের হেল্প নেয়।

– ঠিক আছে। তারপর কমিশনড স্যার একটা কার্ড বের করে ফারহানের হাতে দিয়ে বলে,

– এই হলো আরএন নার্সিংহোম। আমাদের কাছে খবর আছে এখানে বেআইনি কাজ কারবার হয়। তুমি তোমার টিম নিয়ে কাজে লেগে পরো। আশাকরি খুব তাড়াতাড়ি অপরাধীদের ধরতে সক্ষম হবে।

ফারহান কাটটা হাতে নিয়ে সেটা এপিঠ-ওপিঠ করে দেখে নিলো। অতঃপর বলল,

– স্যার, যেহেতু এটা এত বড় একটা হসপিটালের ব্যপার তাই আমাদের আইনি সাহায্য লাগতে পারে।

– তোমরা সবরকম সাহায্য পাবে তাছাড়া ওখানে আগে থেকেই একজন পুলিশ রয়েছে।

– স্যার একটা কথা বলবো যদি কিছু মনে না করেন আপনি? না মানে বলছিলাম কি আপনি তো কেইসের দায়িত্বটা পুলিশের উপর দিতে পারতেন। অপরাধীদের ধরা ইনভেস্টিগেশন করা এসব তো পুলিশের কাজ।

– যেখানে ইনভেস্টিগেশন করতে গিয়ে এসিসট্যান্ট পুলিশ কমিশনার প্রাণ হারিয়েছে সেখানে অন্য কোন পুলিশ সাহস পায় না। আর তাছাড়া থানার সমস্ত পুলিশই ওদের কেনা গোলাম।

– ওকে স্যার। তাহলে এবার আমরা আসি।

ফারহান ও পলাশ চলে যায়। তবে ওরা কেউই বাড়ি ফিরে না। ওরা সোজা চলে যায় ক্রাইম ব্রাঞ্চ অফিসে আর সেখানে গিয়ে সকলকে যার যার কাজে বুজিয়ে দেয়।

চলবে,,,,,,

হৃদমাঝারে পর্ব-০১

0

#হৃদমাঝারে [০১]
#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।

১,
সদ্যজন্ম নেওয়া এই আমি ছিলাম পরিবারের সকলের কাছে অপয়া অলক্ষ্যি রাক্ষসী। কারন আমার জন্মের কয়েক ঘন্টা পরই আমার শস্যাশয়ী নানা মারা যান। বাবা আমার মুখ পর্যন্ত দেখেননি। কারন আমি মেয়ে হয়েছিলাম তাই। তার চার দিন পর যখন আমাকে হসপিটাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসে সেদিন আমার দাদি মারা যান। সেদিন থেকেই আমি আমার বাবা মায়ের চক্ষুশূল হয়ে উঠি। বাবা মা কেউই আমাকে তাদের কাছে রাখতে চাইছিলো না। তারা চেয়েছিলো কোন অনাথ আশ্রমে আমাকে পাঠিয়ে দিতে কিন্তু তখনই আমার নানি যাকে আমি নানুভাই বলে ডাকি সে তার স্বামির মৃত্যুর শোক ভুলে আমাকে তার কোলে তুলে নেয়। তারপর থেকে আমি আমার মামার বাড়িতেই বড় হয়ে উঠি। বাবা মা আমার খরচ বহন করতো না,এমনকি আমি জানতামই না কে আমার বাবা মা। বড় হওয়ার সাথে সাথে আমি আমার বাবা মায়ের পরিচয় জানতে পারি। তখনো তারা আমাকে তাদের কাছে টেনে নেয়নি। কোন দিনও পাইনি আমি আমার বাবা মায়ের ভালোবাসা। নানুভাইয়ের কথায় তারা শুধু তাদের সন্তান হিসাবে আমার পরিচয়টাই বহন করেছে।

চোখের কোটর থেকে দুফোটা নোনাজল বেয়ে পড়লো মুনের। ছয় বছর পর দেশের মাটিতে পা রাখছে সে। একদিন প্রিয় মানুষগুলোর থেকে পাওয়া আঘাত সহ্য করতে না পেরে অভিমানে সে চলে যায় দেশের বাহিরে। মুন আজ একজন ডাক্তার। ডক্টর মেহরিমা খান। ডাকনাম মুন। সদ্য এমবিবিএস পাশ করে দেশে ফিরছে সে। চোখের জল মুছে হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল আধ ঘন্টা হয়েগেছে সে দেশের মাটিতে পা রেখেছে অথচ অর্ণা এখনো আসছে না। ছয় বছর আগের মুন হলে সে নিজেই একটা গাড়ি নিয়ে বাড়ি চলে যেতো। কিন্তু আজকের মুন সে খুব চুপচাপ। কোন ঝামেলায় পরতে চায়না সে। তাই সে অপেক্ষা করতে লাগলো কখন অর্ণা আসবে।

সেনানিবাসের ভিতরে কমিশনড অফিসার ও নন কমিশনড অফিসার দুজনে কথা বলছেন।

– গতকাল রাতে স্বরাষ্ট্র মুন্ত্রি নিজে আমাকে কল করে ওই কেস নিয়ে কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্র মুন্ত্রি ও স্বাস্থ্যমূন্ত্রি দুজনের মাঝে এ নিয়ে কথা হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা এই কেসের সমাধান চান। আমি আপনাকে বলেছিলাম বিশ্বস্ত কোন অফিসার আছে কিনা? যাকে চোখ বন্ধকরে ভরসা করে এই কেসের দায়িত্ব দেওয়া যায়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা এর সমাধান চান।

– স্যার, আমি কথা বলেছি ক্যাপ্টেন ফারহান সাদিকের সাথে।বয়স কম হলে ছেলেটার দম আছে। দুই বছরের ক্যারিয়ারে সে যে কেইসটা হাতে নিয়েছে সেটাতেই সাকসেস হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে ডিপার্টমেন্টে তার নাম ছড়িয়ে আছে।শুনেছি ছেলেটার নিজের ব্রাঞ্চ আছে। তার বিশ্বস্ত লোকদের নিয়ে সে একটা ব্রাঞ্চ অপেন করেছে। যেটা ক্রাইম ব্রাঞ্চ নামে পরিচিত। তাছাড়া ফারহান দুদকের একজন স্পেশাল অফিসার। একটা কেসের কাজে সে কক্সবাজার গিয়েছিলো। আজই সে কক্সবাজার থেকে ফিরছে। তারপর আমাদের এই কেইসটা হাতে নিবে। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন স্যার।

– তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার সাথে দেখা করতে বলো। চার বছর আগের ঘটনা আবার পুনরাবৃত্তি হবে। তবে এইবার এই খেলা শেষ দেখে ছাড়বো।

– জ্বি স্যার। আচ্ছা স্যার আমরা ছাড়া কি আরো কেউ জানে এই কেসের বিষয়ে?

– আরো দুজন জানে।

– তারা কে কে স্যার?

– সময় হয়ে সবটা জানতে পারবে।

-ওকে স্যার।

বাম হাতের ভাজে কোট আর ডান হাতে ট্রলি ব্যাগ নিয়ে হেটে মেইন রাস্তার দিকে আগ্রসর হচ্ছে ক্যাপ্টেন ফারহান সাদিক। এয়ারপোর্ট এসে নেমেছে প্রায় আধঘণ্টা হলো। অথচ তার ভাই তাকে এক একঘন্টা আগে কল করে বলেছে সে তাকে রিসিভ করার জন্যে রওনা দিয়েছে। বেশ রাগ হচ্ছে ফারহানের। ফারহান সময়ানুবর্তী। সময়ের কাজ সময়েই হওয়া চাই তার। আর তাকেই কিনা এখানে বিনা কারনে আধঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। আশেপাশের মেয়েগুলা হা করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। আর থাকবেই না কেন? এমন লম্বা সুঠাম দেহের অধিকারী ছেলে আজকাল পাওয়া মুশকিল। বুক পকেটে তাকা সানগ্লাসটা চোখে পরে বিরক্ত সহিত হাটছে ফারহান। এমন সময় কয়েকটা মেয়ে এসে ভীড় জমালো তার সামনে। ফারহান সানগ্লাসটা খুলে সেটা আবার তার বুকে গুজে দিলো। ভ্রু কুচকে কপালে কিঞ্চিৎ ভাজ ফেলে মেয়েগুলার দিকে তাকাতেই তাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো,

– স্যার, আপনি ক্রাইম ব্রাঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা ও দুদকের স্পেশাল অফিসার ক্যাপ্টেন ফারহান সাদিক রাইট! আমি আপনার অনেক বড় ফ্যান। নিউজ চ্যানেলে আপনাকে যতবার দেখেছি ততবারই আপনার উপর ক্রাশ খেয়েছি।

কথাগুলো বলেই মেয়েটা ফারহানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। ফারহান মেয়েটার দিকে বিরক্তি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কিছু বলবে তখনি পাশ থেকে পুরুশনালী একটা কন্ঠশ্বর ভেসে আছে,

– আসলে হয়েছে কি! স্যারের রুমটা না অনেক ছোট তাই এত বড় ফ্যান স্যার নিতে পারবে না। তাছাড়া স্যাররে রুমে এসিও আছে তাই ফ্যানের কোন প্রয়োজন হবে না। তবে আমার রুমটা না অনেক বড় সাথে মনটাও। ফেন্ডস্। কথাটা বলেই ছেলেটা মেয়েটার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। এটা দেখে ফারহান ঠোট চেপে হাসছে আর মেয়েটা থতমত খেয়ে বলে,

– আমার না মাথাটা ঘুরছে। আমি আসছি। বলেই মেয়েটা চলে যায়। সাথে অন্য মেয়েগুলাও। মেয়েগুলা চলে যাওয়ার পর ছেলেটা বলে,

– হ্যালো স্যার, কেমন আছেন?

– বাঁচালে আমায়, পলাশ। বড় করে শ্বাস ত্যাগ করে ফারহান। তখন পাশ থেকে আরেকটা ছেলে এসে ফারহানকে জড়িয়ে ধরে বলল,

– কেমন আছিস ভাই?

ফারহান ছেলেটাকে ছাড়িয়ে কড়া গলায় বলে উঠলো,

– এক ঘন্টা আগে বাসা থেকে বের হয়েও এয়ারপোর্ট পৌঁছাতে এত লেট।

– আসতে দেরী হয়নি তো। ভেতরে আসতে দেরী করেছি ভাই।

– কি এমন রাজকার্য করছিলি বাহিরে শুনি।

– একটা পরী দেখছিলাম। ডানাকাটা পরী। মন খারাপ করে বলল ছেলেটা, কিন্তু জানিস ভাই বেশী স্মার্ট সাজতে গিয়ে তার সাথে ঝগড়া করে এলাম। ধূর ভাল্লাগেলা।

ফারহান ছেলেটার কথা ইগনোর করে বলল,

– গাড়ির চাবিটা?

পলাশ ফারহানের হাতে গাড়ির চাবি দিতেই ফারহান তার ব্যাগটা গাড়ির ডিকিতে রেখে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে। তারপর ছেলেটা মন খারাপ করে তার পাশের সিটে বসে। আর পলাশ বসে পিছনে।

পলাশকে তার বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে ফারহান তার ভাইকে নিয়ে বাসায় চলে যায়।

ফারহান বাসায় ফিরতেই বাড়িতে চাঁদেরহাট বসে। কিন্তু খুশি হয়নি ফারহানে মা আমেনা বেগম। এটা দেখে ফারহানের বাবা ফয়সাল সাদিক বলে বলেন,

– ছেলে বাড়ি এসেছে তুমি খুশি হওনি গিন্নী। এমন মন মরা হয়ে বসে আছো কেন?

আমেনা বেগম গালে হাত দিয়ে বসে ফারহানের দিকে তাকিয়ে ছিলো। ফয়সাল সাদিকের কথা শুনে তিনি গাল থেকে হাত সড়িয়ে নিয়ে বড় করে শ্বাস নেন। অতঃপর বলেন,

– ইন্ডিয়ান সিরিয়ালে দেখি ছেলে কাজের জন্যে বাড়ির বাহিরে যায় আর আসার সময় সাথে একটা বউ নিয়ে বাড়ি ফিরে। আমার বোধহয় এ জমনে আর পুত্রবধূর মুখ দর্শন করা হবে না। আহা কপাল আমার। কপলা চাপড়ান আমেনা বেগম। কপাল করে একটা ছেলের জন্ম দিয়েছিলাম আমি।

ফারহান ড্রয়িংরুমের বসে সবার সাথে কথা বলছিলো, আমেনা বেগমের কথা কানে আসতেই সে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে গলার স্বর কিছুটা কঠিন করে বলে উঠলো,

– তোমাকে কতকরে বলেছি ইন্ডিয়ান সিরিয়ালগুলা দেখবেনা। সিরিয়াল দেখতে দেখতে নিজেকে সিরিয়ালের ক্যারেক্টার ভাবা শুরু করে দিয়েছো। কত করে বলেছি আমি বিয়ে করবো না। তবুও কেন তোমরা আমার পিছনে পরে আছো। রওনাক আছেই ওকে বিয়ে দিয়ে ঘরে তোমার বৌ-মা নিয়ে আসো।

কথাগুলো বলেই রাগে ঘটঘট করতে করতে উপরে নিজের রুমে চলে গেল ফারহান। রওনাক এসে আমেনা বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,

– ছোট মামার মৃত্যুটা মেনে নিতে পারেনি ফারহান। আসলে ও তো ছোট মামাকে অনেক ভালোবাসতো তাই হয়তো তার মৃত্যুটা ফারহানের উপর এমন প্রভাব ফেলছে। মন খারাপ করো না মামি। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। রওনাক চলে যায় ফারহানের রুমে। ফারহান চেঞ্জ করে মাত্র ওয়াশরুম থেকে ফিরছে। পরনে শুধু মাত্র একটা টাওজার। হাতে তাকা টাওয়ালটা বিছানার এক পাশে রেখে রওনাকের দিকে তাকিয়ে বলল,

– কিছু বলবি!

– কাল তুই আমাদের সাথে যাচ্ছিস তো? দেখ না করবি না।

– ওকে ওকে ব্রো, যাবো আমি। স্মিত হাসে ফারহান।

রওনাক ফারহানকে জড়িয়ে ধরে রুম থেকে বের হয়ে যায়। ফারহান একটা টিশার্ট পরে পলাশকে কল করে। নতুন কেইস নিয়ে কথা হচ্ছে দুজনের মাঝে। এর মাঝে ফারহান বলে উঠে কাল রাওনাকের জন্যে মেয়ে দেখতে যাবে সেই কথা। তখন পলাশ প্রশ্ন করে,

– স্যার আপনি বিয়ে করবেন না?

– না।

-কখনোই না?

– মনের মতো মেয়ে পেলে অবশ্যই বিয়ে করবো।

– আপনার কেমন মেয়ে পছন্দ স্যার।

– যেহেতু আমি সুন্দর তাই আমার বউকে অবশ্যই সুন্দরী হতে হবে। স্মার্ট হবে। যেহেতু এখন আধুনিক যুগ তাই সে ড্রিংক করতেই পারে। তবে সেটা শালিনতা বজায় রেখে। প্রয়োজনে দুজনে বসে সিগারেটের আড্ডা দিবো। একে অপরের ছায়া হয়ে থাকবো। তার চোখে আমি নিজেকে দেখতে চাই।

– স্যার আমার সাথে একটু বায়োলজিক্যাল ল্যাবে যাবেন?

-কেন? সেখানে আবার তোমার কি প্রয়োজন?

– না মানে সেখানে অর্ডার করে আপনার জন্যে এমন গুণবতী একটা মেয়ের বানাতাম। আপনার যে ছোট চাহিদা এমন মেয়ে পাবে বলে তো আমার মনে হয়না। তাই আরকি!

-পলাশ। ধমক দিয়ে উঠে ফারহান। তারপর মনে মনে বলে, পাবো, নিশ্চয় পাবো। আর এমন মেয়ে একজনই হতে পারে।

২,
পরেরদিন বিকালে শিকদার ফয়সাল সাদিকের পুরো পরিবার আসে অর্ণাদের বাসায়। রওনাক ফারহানের ফুবাতো ভাই। স্বামির মৃত্যর পর রওনাকে মা তার বাপের বাড়িতেই থাকেন। রওনাক আর ফারহান দুই ভাই হলেও তারা বেস্ট ফ্রেন্ড। রওনাকে জন্যে তারা অর্ণাকে দেখতে আসছে। তারা আসতেই লাভলী বেগম তাদের ড্রয়িংরুমে বসিয়ে সমাদর করতে ব্যাস্ত। এদিকে মুন অর্ণাকে সাজিয়ে তার নানুভাইয়ের সাথে পাত্রপক্ষের সামনে পাঠিয়ে দেয়। আর মুন সে তার রুমের বসে থাকে। অর্ণাকে দেকে তাদের পছন্দ হয়েছে। বিয়ের পাকা কথা চলছে এমন সময় আনোয়ার সাহেব মানে অর্ণার বাবা বলে উঠলেন,

– সবাই এখানে উপস্থিত কিন্তু মুনকে তো দেখতে পাচ্ছি না। মুন কোথায়? ডাকো ওকে!

লাভলী বেগম চলে গেলেন মুনকে ডাকতে। কিছুক্ষণ পর তিনি মুন সমেত চলে আসেন। শিড়ি দিয়ে নামতেই মুনকে দেখে অবাক ফারহান। কখন যে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেছে সে খেয়ালই নেই তার। সবচেয়ে বেশী অবাক হয়েছিল মুনের ড্রেসআপ দেখে। জিন্স প্যান্টের সাথে একটা গোলাপি কুরতি। মাথার চুলগুলো ছেড়ে একপাশে ক্লিপ দিয়ে আটকে রেখেছে। চোখে হালকা কাজলে বেশ লাগছে মুনকে। যে মেয়ে ওয়েস্টার্ন ড্রেস ছাড়া অন্য কোন ড্রেস পরতো না সে কিনা কুর্তি পরেছে। শিঁড়ি দিয়ে নিচে নিমে এলো মুন। আর তখনি শুনতে পেলে এক অতিপরিচিত কন্ঠশ্বর। যেটা শুনে জমে যায় মুনের পা।

– মেহরিমা। মেহরিমা খান এখানে?

সামনে তাকাতেই ফারহানকে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে যায় মুনের। শীতল কন্ঠে ফারহানের দিকে তাকিয়ে থাকে সে। এদিকে ফারহান রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিয়েছে। হাতের শিড়া ফুলে উঠেছে তার। উপস্থিত সকলে ফারহানের দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রওনাকে বলে উঠলো,

– তোরা কি একে অপরকে চিনিস।

ফারহান রওনাকের কথার কোন জবাব না দিয়ে বলল,

– এই বিয়ে হবে না। বাবা তোমার আগেই মেয়ের বাড়ির খোঁজ খবর নেওয়া উচিৎ ছিলো। শুধু মাত্র মেয়ে পছন্দ হয়েছে বলেই তাকে বাড়ির বউ করে নেওয়া যায় না। তার আশেপাশের মানুষগুলো দেখতে হয় জানতে হয়। এই রকম চরিত্রহীন মেয়ে যে বাড়িতে আছে সে বাড়িতে আমার ভাইয়ের বিয়ে হবে না।

আনোয়ার সাহেব মুনকে জিগ্যেস করলেন,

– এসব কি কথা শুনছি মুন?

মুন অশ্রুসিক্ত নয়নে ফারহানের দিকে এক পলক তাকিয়ে মাথা নিচু করে বলল,

– কেউ যদি আমার সম্পর্কে খারাপ কিছু ভেবে থাকে তাহলে আমার কি করার আছে। আমি তো তার ভাবনা বদলাতে পারবো না।

– তোমার থেকে এর চেয়ে ভালো এ্যানসার আশা করা ভুল। জিবনেও শুধরাবে না তুমি। চরিত্রহীন অসভ্য মেয়ে একটা।

কথাগুলো বলেই ফারহান ঘটঘট করতে করতে চলে যায়। মুন নিঃপলক তাকিয়ে থাকে ফারহানের চলে যাওয়ার দিকে।

চলবে,,,,,,

তাসের ঘর পর্ব-১০(অন্তিম পর্ব)

0

#তাসের ঘর
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ১০(অন্তিম পর্ব)

জর্জঃ সব তত্ত্ব-প্রমাণ বিচার বিবেচনা করে আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছে যে রিপন আর রাত্রী দুজনেই দোষী।আদালত দোলা দাস এবং রিপন দাসের ডিবোর্স মঞ্জুর করছে এবং দীপের কাস্টাডি দোলাদাসকে দিচ্ছে।রিপন দাস চাইলেও কোনোদিন দীপ দাসকে নিজের কাছে আনতে পারবেন না।
অন্যদিকে অনিক দাস চাইলে রাত্রীদাসকে বিনা ক্ষতিপূরণ দিয়ে ডিবোর্স দিতে পারেন।অত্রি দাসের কাস্টাডিও অনিক দাসকে দেওয়া হলো।অত্রি দাসের উপর রাত্রী দাসের কোনো অধিকার থাকবে না।
আদালত ধোঁকা,নারী নির্যাতন ও খুনের চেষ্টা এবং এক্সটা মেরিটাল অ্যাফেয়ারের জন্য *** ধারা মোতাবেক রিপন দাসকে ২০বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০লক্ষ টাকার অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করছে।সেই সাথে উনাকে বিসিএস ক্যাডার তালিকা বর্হিভুত করছে।আদালত রিপন দাসের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করছে।দীপ দাস বড় হয়ে যদি সেসব চায় তাহলে দীপ দাসকে সসম্মানে নিজের প্রাপ্য দেওয়া হবে।
এবং ধোঁকা,অন্যকে খুন/অত্যাচারের জন্য উস্কানো,আদালতে দাঁড়িয়ে মিথ্যা সাক্ষ্যদান এবং এক্সটা মেরিটাল অ্যাফেয়ারের জন্য *** ধারা মোতাবেক রাত্রী দাসকে ১৫বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২৫লক্ষ টাকার অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করছে।
আজকের মতো কোর্টের কাজ এখানেই শেষ।
আদালতের রায়ে রিপন-রাত্রী আর তাদের উকিল ছাড়া সবার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল।
🍁
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে রিপন,রাত্রী আর অনিক।অনিকের ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি।রিপন ভাব শূণ্য।রাত্রী করুণ চোখে অনিকের দিকে তাকিয়ে আছে।
রাত্রীঃ অনিক বিশ্বাস করো আমার সাথে রিপনের কোনো সম্পর্ক নেই।সব দোলার চাল।ও আমাকে ফাঁসিয়েছে।দোলা তো আমাকে কোনোদিনও সহ্য করতে পারত না।তাই এভাবে ফাঁসিয়েছে।প্লিজ অত্রির মুখের দিকে তাকিয়ে আমাকে বিশ্বাস করো।আমি যদি জেলে চলে যাই অত্রির কি হবে?ও যে এই বয়সে মা-হারা হয়ে যাবে।আচ্ছা তুমিই বলো আমাদের এমন একটা মেয়ে থাকা সত্ত্বেও আমি কি অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়াতে পারি?আমাদের তো প্রেমের বিয়ে।তোমাকে ভালোবেসে আমি নিজের মা-বাবাকে ছেড়ে এসেছি।এখন তুমিই আমাকে বিশ্বাস করবে না?অনিক প্লিজ বিলিভ..
বাকিটা বলার আগেই অনিক রাত্রীর গালে ঠাস্ করে একটা চড় বসিয়ে দেয়।রক্তচক্ষু নিয়ে রাত্রীর দিকে তাকিয়েঃ আর কত নাটক করবি?বল?তোর মতো নাগিন আমি জীবনে দুইটা দেখি নি।রিপনকে কি দোষ দেব আমি নিজেই তো মায়া জ্বালে ফেসে গেছি।তোর জন্য নিজের ঘর-পরিবার সব ছেড়ে এই শহরে পাড়ি জমিয়েছি।আর তুই?তুই আমাকে বিশ্বাস ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিস।তোর কি মনে হয় অনিক বোকা।কিচ্ছু বুঝে না।যেখানে বিল্ডিংয়ের সবাই জানত তোর আর রিপনের অ্যাফেয়ারের কথা সেখানে আমি অন্ধের মতো কিছুই জানতাম নাহ?
রাত্রী চমকে অনিকের দিকে তাকাল।
অনিকঃ(দীর্ঘশ্বাস ফেলে) আমি তোমাদের সম্পর্কের কথা অনেক আগেই জানতে পারি।কিন্তু কিচ্ছু বলি নি ভয় হচ্ছিল যদি আমাকে আর অত্রিকে ছেড়ে চলে যাও।যেভাবেই থাকো আমাদের কাছেই তো ছিলে।ভালোবাসায় অন্ধ ছিলাম কিনা?ভেবেছিলাম রিপন তোমার মোহ একদিন নিজের ভুল বুঝতে পারবে।কিন্তু না তা আর হলো না।বরং দিনকে দিন তোমার প্রতি আমার ঘৃণা সৃষ্টি হলো।তোমাকে যতটা ভালোবাসতাম তার থেকে কয়েক গুণ বেশি ঘৃণা করি।ইউ নো তোমার সাথে একই বাসায় থাকতে আমার রুচিতে বাঁধত।যখন রাতে আমি আর অত্রি ঘুমিয়ে পড়লে তুমি ফোনে প্রেমালাপ করতে তখন মন চাইত তোমার গলাটা চেপে ধরি।হাহ তুমি কি ভেবেছ কিচ্ছু জানতাম না?তুমি আমার খাবারে ঘুমের ঔষধ মেশাবে আর আমি জানিতে পারব না?প্রথম কয়েকদিন যখন আমার ঘুম বেড়ে গেছিল তখন সন্দেহ হয়।পরীক্ষা করে জানতে পারি তুমি আমার খাবারে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দাও।তাই আমি ঔষধ চেঞ্জ করে দেই।ভুলে যেও না আমি ঔষধ কোম্পানিতেই কাজ করি।তুমি ভাবো আমি ঘুমিয়ে পড়েছি কিন্তু আমি তোমাদের সব কথা জানতাম।ভাবছ তাও কেন ভালোবাসতাম?না ভালোবাসতাম না ঘৃণা করতাম।কিন্তু কিচ্ছু বলতাম না।তুমি যেমন ভালোবাসার নাটক চালিয়ে গেছ আমিও তেমন নাটকই করেছি।অন্ধ ভালোবাসার নাটক।আর হ্যাঁ ডিবোর্স পেপার আমি অনেক আগেই রেডি করে রেখেছি।শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা করেছি।তুমি যে মহিলা তোমাকে ডিবোর্স দিতে গেলে আমাকেই ফাঁসিয়ে দিতে।কিন্তু আজ পারবে না।আজ যে সঠিক সময়।তোমার আমার গড়া #তাসের_ঘর ভেঙে দেওয়ার সুবর্ণ মুহূর্ত।জানো আমি খুব করে চাইতাম দোলা রুখে দাঁড়াক।তোমাদের অন্যায়ের শাস্তি দিক।নিজের অধিকার বুঝে নিক।আজ দিয়েছে তোমাদের শাস্তি।আজ আমি খুব খুশি।আজকের বাতাসে আমি আনন্দের ঘ্রাণ খুঁজে পাচ্ছি।কারণ আজ তোমাদের মুখোশ খুলে গেছে।আজ আমার #তাসের_ঘর ভেঙে যাবে।এর থেকে খুশির আর কি হতে পারে।চিন্তা করো না আমি আর আমার মেয়ে খুব ভালো থাকব।মেয়ের জন্য নতুন মাও নিয়ে আসব।মেয়ে ঠিকও করে ফেলেছি।জানো কে?তোমার বেস্টফ্রেন্ড।হ্যাঁ তোমারই বেস্টফ্রেন্ড অর্না, যে কোনোদিনও মা হতে পারবে না জেনে স্বামী ছেড়ে দিয়েছে বলে তুমি সবসময় অপমান করতে।কথা শুনাতে।সেই হবে তোমার সতীন।উহ সতীন না।তোমার এক্স হাসবেন্ডের বর্তমান স্ত্রী আর তোমার মেয়ের মা।চিন্তা করো না তোমাকে রেখে বিয়ে করব না।কোর্ট থেকে স্পেশাল অর্ডার এনে বিয়ের দিকে তোমাকে নিয়ে যাবো।তোমার সামনেই আমরা বিয়ে করব।দোলার সংসার ভাঙ্গতে চাইছিলে না।দেখবে তোমার সামনেই কি করে তোমার সংসার অন্য কারো হয়ে যায়।
রাত্রি বাকরুদ্ধ।
🍁
পুলিশ রিপন আর রাত্রীকে নিয়ে যাচ্ছিল সামনে দাঁড়ায় দোলা।রিপন রাত্রী দুজনেই দোলার দিকে তাকায়।দোলার চোখে আজ একরাশ ঘৃণা যেন ঘৃণার আগুনে দুজনকে জ্বালিয়ে দেবে।দোলা কিছু না বলে রিপন-রাত্রী দুজনের গালে ঠাস্ করে চড় বসাতে থাকে।থামার নামই নেয় না।লেডি কন্সটেবলরা অনেক কষ্টে দোলাকে থামান।
দোলাঃ এই চড়গুলো অনেক আগে দেওয়া উচিত ছিল আমার।তাহলে অন্তত আজকে ভরা আদালতে আমার চরিত্রে কালিমা লাগানোর চেষ্টা তোমরা করতে না।নিজেরা তো চরিত্রহীন অন্যের চরিত্র দাগ লাগাতে লজ্জা করে না?আর রিপন তোমার সাহস কি করে হয় আমার ছেলের জন্ম নিয়ে কথা তুলার।তুই কাপুরুষের মতো নিজের ছেলেকে স্বীকার করবি না করিস না।নিজের রক্তকে দুষিত বলতে একটুও বুক কাঁপল না।শুনে রাখ তোকে স্বীকার করতে হবে না।আজ আমি বললাম দীপ শুধু আমার ছেলে।ওর কোনো বাবা নেই।মরে গেছে ওর বাবা।দীপের বাবা আমার আর দীপের জন্য মৃত।
রিপনঃ দোলায়ায়ায়া
দোলাঃ চুপপপ।গলা নামিয়ে(রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে)অনেক দেখিয়েছিস তোর পুরুষত্ব।আর দেখাতে আসিস না।কারাগার পর্যন্ত জীবিত যেতে পারবি না।আর এই যে রাত্রী তুই(রাত্রীর চুলে ধরে)একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের সংসার ভাঙ্গতে তো লজ্জা করে নি কিন্তু ভরা সভায় তার চরিত্র মিথ্যা কালি লাগাতে লজ্জা করল না।তুই কি মেয়ে?নিজে তো স্বামী সন্তান রেখে অন্যের স্বামীর দিকে নজর দিয়েছিস।তোর মতো কি সবাই নাকি যে তুই আমার চরিত্রে আঙুল তুলিস?দুশ্চরিত্রা মেয়ে,কুলটা কোথাকার।(রাগে হিসহিস করতে করতে)
পূজাঃ(দোলাকে ছাড়িয়ে)ছেড়ে দিন আন্টি।কেঁচো মেরে হাত গন্ধ করবেন না।এদের ছুঁলেও পাপ লাগবে।এই যে আংকেল আন্টি আপনারা নিজেদের এই অবৈধ সম্পর্কের জন্য নিজেদের সন্তানদের ছেড়ে দিতে চাইছিলেন না?একদিন এই সন্তানের জন্য কাঁদবেন।পাবেন না।ঈশ্বরের অশেষ কৃপা আপনাদের ফুটফুটে দুইটা সন্তান দিয়েছেন।আগলে রাখতে পারলেন না ঈশ্বরের আশীর্বাদ।ফল তো ভোগ করতেই হবে।
🍁
রিপন রাত্রীকে পুলিশ ভ্যানে তোলার আগেই কয়েকজন ঘেরাও করল।ছেলেরা রিপনের মুখে আর মেয়েরা রাত্রীর মুখে চুনকালি মাখিয়ে ভিডিও করছে।দুজনের গলায় জুতোর মালা পড়িয়ে দিল।পুলিশ উৎসুক জনতাকে অনেক কষ্টে শান্ত করল।কিন্তু রিপন-রাত্রীর যা সম্মানহানি হওয়ার তা তো হয়ে গেছেই।
আড়ালে দাঁড়িয়ে দোলার ছোটভাই দিশান বাঁকা হাসল।দিশানই নিজের ভার্সিটির দলকে ডেকেছে রিপন-রাত্রীকে শায়েস্তা করার জন্য।
🍁
আজ অনিক আর অর্ণার বিয়ে ছিল।অনিক অনেক চেষ্টা করে রাত্রীকে বিয়েতে আনিয়েছে।রাত্রীর সামনেই অনিক অর্ণাকে বিয়ে করে।চোখের সামনে স্বামীকে থুরি প্রাক্তন স্বামীকে নিজেরই বেস্টফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে দেখে রাত্রীর বুক জ্বলে যাচ্ছিল কিন্তু টু শব্দও করতে পারে নি।অত্রিও আজ মায়ের কাছে আসে নি বরং ঘৃণায় দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে।ছোট্ট অত্রি মায়ের কালোরূপটা জানে।মেয়েকে ঘৃণার চোখে তাকাতে দেখে রাত্রীর মনে হয়েছিল মরে যেতে।কিন্তু হাত-পা বাঁধা।রাত্রী ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারছে কি হারিয়েছে।কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে।চাইলেও কিচ্ছু ফেরত পাবে না।এখন আফসোস করা ছাড়া আর কিছু করণীয় নয়।
🍁
কেটে গেছে বাইশটা বছর।আজ দীপের বিয়ে।দীপ আজ অনেক বড় ডাক্তার।বিয়েও করছে একজন ডাক্তারকে।মেয়েটাকে অবশ্য দোলাই পছন্দ করেছে।দোলা পেরেছে ছেলেকে মানু্ষ করতে, একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যত দিতে।এখন ওর আর কোনো আফসোস নেই।দোলা এখন একটা প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক।ডিবোর্সের পর দোলা মুভ অন করে।সেবছরের প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়।দোলার মাস্টার্স কমপ্লিট ছিল।বয়সও যায় নি তাই মায়ের কাছে দীপকে রেখে পুরোদমে প্রিপারেশন নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং সাফল্য লাভ করে।দোলা আর বিয়ে করে নি।দীপকে নিয়েই জীবন কাটিয়ে দিয়েছে।দোলা একাই ভালো আছে।ছেলে-পরিবার আর স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে থেকে কখনো একাকীত্ব বোধ করে না।দোলার ভাইরা বিয়ে করলেও দোলা ভাইদের সাথে থাকে।দোলা স্বাবলম্বী তাই ভাইয়ের বউরাও কিছু বলে না।বরং সম্মান করে।তাছাড়া দোলার বাবা নিজের জমিজমার এক তৃতীয়াংশ দোলার নামে করে গেছেন।
রাত্রী ১৫বছর পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফিরে আসে।স্বামী না পাক মেয়েকে পাওয়ার আশায় কিন্তু অত্রি ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়।অত্রি ভালো আছে বাবা আর নতুন মার সাথে।রাত্রীকে ওর প্রয়োজন নেই।না তো অনিকের আছে।অনিক অর্ণাকে নিয়েই সুখে আছে।অর্ণার যেহেতু নিজের বাচ্চা কাচ্চা নেই তাই অত্রিকে আপন সন্তানের মতো বড় করেছে।অত্রিরও ভালো ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে।স্বামী সংসার নিয়ে সুখেই আছে।
সবাই ভালো আছে শুধু ভালো নেই রিপন আর রাত্রী।অতীতের পাপ বড্ড পোড়ায়।মেয়ে ফিরিয়ে দেওয়ায় এক বুক কষ্ট নিয়ে রাত্রী কোথাও হারিয়ে যায়।তবে তার আগে অনিক আর দোলার পায়ে ধরে ক্ষমা চায়।তারাও ক্ষমা করে দেয়।
দুবছর আগে রিপন জেল থেকে ছাড়া পেলে দোলা আর দীপকে খুঁজে।পায় নি।এই বিশ বছর দোলা আর দীপের স্মৃতি বড্ড পুড়িয়েছে।বিশ বছরের জীবনে কোথাও রাত্রী ছিল না।শুধু ছিল দোলা আর দীপের স্মৃতি।রিপন বুঝতে পেরেছে দোলা আর দীপ ওর লাইফে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।দুবছর অনেক খুঁজেছে ওদের।অবশেষে দীপের বিয়ের কথা জানতে পেরে সেখানে উপস্থিত হয়।দীপ আর দোলা আর দীপের বউ অঞ্জলি গেস্টদের এটেন্ট করছিল তখন রিপন ওদের সামনে আসে।রিপনের আগের জৌলুশ আর নেই।গায়ের রঙটা চাপা হয়ে গেছে।চামড়া কুঁচকে গেছে।চুলে পাঁক ধরেছে।অনেকটা শুকিয়ে গেছে।একলা জীবন পার করতে করতে হাঁপিয়ে গেছে।দীপ রিপনকে না চিনলেও দোলা ঠিকই চিনতে পেরেছে।এতবছর পর প্রাক্তন স্বামীকে দেখেও দোলা অনুভূতি শুন্য।কিন্তু রিপন কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দোলার দিকে।
দীপঃ কে আপনি?
রিপন কাঁপা কাঁপা হাতে দীপের গালে হাত রাখল।টলমল চোখে রিপনঃ দ..দীপ সোনা আ..আমি তোর বাব..বাবা।
দীপ বুঝতে পারল এটা রিপন।দীপ মেচুর হওয়ার পর দোলা দীপকে রিপনের কথা সব বলেছে।দীপ এখন রিপনকে শুধু ঘৃণা করেছে।তাছাড়া দীপের মস্তিষ্কে এখন আছে নিজের মায়ের মার খাওয়ার দৃশ্য।দীপ একবার দোলার দিকে তাকাল।
দীপঃ বাবা?কিন্তু আমার বাবা তো মারা গেছে।
দীপের কথা শুনে রিপনের হাত খসে পড়ল।মনে হলো ওর কলিজায় কেন আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
রিপনঃ ক..কি বলছিস দীপ?বাবা দেখ আমি তো বাবা।দোল.দোলা এই দোলা ওকে বলো না আমি ওর বাবা।
দোলাঃ আপনি ওর বাবা?কবে থেকে?একদিন তো ভরা কোর্টে দাঁড়িয়ে অস্বীকার করেছিলেন আজ দীপের বাবা কি করে হলেন।আমার জানামতে দীপের বাবা মৃত।দীপের বাবা আর যেই হোক না কেন আপনি নন।
রিপনঃ জানি দোলা তুমি আমার উপর অভিমান করে এসব বলছ..
দোলাঃ অভিমান?তাও আপনার উপর?অভিমান তো আপনজনদের উপর করা হয়।আপনি আমার কে যে আপনার উপর অভিমান করব?
দোলার কথায় রিপনের বুকটা ক্ষতবিক্ষত হলো।
রিপনঃ জানি অনেক অন্যায় করেছি শেষ বারের মতো ক্ষমা করে দাও।আচ্ছা ক্ষমা করতে হবে না।আমার কাছে ফিরেও যেতে বলব না।শুধু দীপ সোনা একবার বাবা বলে ডাক না।
দীপঃ সরি মিস্টার দাস।আমি যাকে তাকে বাবা বলি না।এই যে দেখছেন আমার মা,উনিই আমার মা-বাবা উভয়।আমার আর কাউকে চাই না।আপনার জন্য আমি বাবা শব্দটাকে ঘৃণা করতে চাই না।আজ আমার লাইফের একটা বিশেষ দিন।আপনি যেহেতু বিনা নিমন্ত্রণে এসেই পড়েছেন তখন খেয়েই যাবেন।আপনাকে অতিথি হিসেবে আপ্যায়ন করতে সমস্যা নেই।দয়া করে আমার আর আমার মায়ের লাইফে ইন্টারফেয়ার করার চেষ্টা করবেন না।আপনাকে ছাড়াই আমরা ভালো আছি ভালো থাকতে দেন।রিপন নামের কোনো কালো অতীত আমাদের জীবনে ছিল সেটা আমরা ভুলে গেছি।আপনি ভুলে যান।নমস্কার।(হাত জোর করে)
বলে একহাত দিয়ে মায়ের হাত আর অন্যটা দিয়ে বউয়ের হাত ধরে সেখান থেকে চলে গেল।রিপন ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।দু চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।ভাবতে লাগল ও যদি ঠিক থাকত তাহলে এই পরিবারের একজন হতে পারত।
স্ত্রী-সন্তান তো এই জন্যই।শেষ সময়ে পাশে পাওয়ার জন্য।সুখে দুঃখে ঢাল হওয়ার জন্য।রিপনের দুর্ভাগ্য একটা সুন্দর পরিবার পেয়েও পেল না।হাজারও মানুষ এমন ভুল করে।কিন্তু ভুলটা বুঝতে বুঝতে সব শেষ হয়ে যায়।সমাজে এক্সটা মেরিটাল অ্যাফেয়ার যতদিন থাকবে হাজার সোনার সংসার ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।যা কোনো একদিন জোড়া লাগলেও দাগ থেকে যাবে।
(সমাপ্ত)

তাসের ঘর পর্ব-০৯

0

#তাসের ঘর
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ০৯(বোনাস)

রাত্রী+রিপনঃ প্রমাণ?
পূজাঃ মাই লর্ড আমার কাছে প্রমাণ আছে।
জর্জঃ আপনার যা বলার উইটনেস বক্সে এসে বলুন।
পূজা উইটনেস বক্সে এসে দাঁড়াল।
দোঃউকিলঃ আপনার পরিচয়?
পূজাঃ আমি পূজা দত্ত।প্রিয়ন্ত দত্ত আর পূর্বী দত্তের মেয়ে।রিপন আংকেলদের উপরের ফ্লাটে থাকি।
রিঃউকিলঃ মিস পূজা আপনার বয়স?
পূজাঃ ১৭ইয়ারস।
রিঃউকিলঃ মাই লর্ড মিস পূজার বয়স বলে দিচ্ছে উনি একজন নাবালিকা।একজন নাবালিকার কথার উপর ভিত্তি করে কি কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে?উনি এসবের কি বুঝেন?
দোঃউকিলঃ অবজেকশন মাই লর্ড।সাক্ষ্য দিতে কি বয়স ফ্যাক্ট?মানছি মিস পূজা নাবালিকা কিন্তু উনার কাছে তো এমন কোনো প্রমাণ থাকতেই পারে যা আমাদের সামনে আসল সত্য তুলে ধরবে।উনাকে সত্য প্রমাণ করার জন্য একটা সুযোগ দেওয়া উচিত।
জর্জঃ অবজেকশন সাসটেন্ট।
দোঃউকিলঃ আপনার কি বলার আছে মিস পূজা?
পূজাঃ আমি কিছু বলব না মাই লর্ড কিছু দেখাব।অনুমতি আছে?
জর্জঃ অনুমতি দেওয়া হলো।
পূজা একটা ভিডিও ফুটেজ আদালতে পেশ করল।
ফুটেজে ভেসে উঠল সেদিন রাতে রিপন যে দোলাকে মারছিল সেই দৃশ্য।দেখে রিপনের গলা শুকিয়ে গেল।রিপন রাত্রীর দিকে তাকাল।রাত্রীও ঢুক গিলল।
তারপর ভেসে উঠল দোলা বাসা থেকে চলে যাওয়ার পরেরদিনের ফুটেজ।সন্ধ্যায় সব যখন নিজ নিজ বাসায় ব্যস্ত ছিল তখন রিপন রাত্রীকে নিয়ে খালি বাসায় উঠে।তারপর দুজনের কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ভেসে উঠে যেগুলো blur করা কেবল দুজনের মুখই দৃশ্যমান।একের পর এক এরকম আরো কিছু ফুটেজ স্কিনে ভেসে উঠে।দোলা চলে আসার পর থেকে আজ পর্যন্ত রিপন আর রাত্রীর সব কুকর্ম,সব কথাবার্তা সব ফুটেজে ফুটে উঠে রেকর্ডিং সহ।তারপর পূজা আরেকটা ভিডিও দিল।যাতে ব্লিডিংয়ের ওই সাইটটার ফুটেজ ভেসে এলো যেখানে রিপন-রাত্রী সবার অগোচরে দেখা করত,প্রেমালাপসহ রাত্রী রিপনের কানে দোলার নামে কুমন্ত্রণা দিত,রিপন দোলাকে মেরে এসে রাত্রীকে বলত আর দুজনে আনন্দ বিনোদন করত।
পূজা আরো কিছু ছবি পেশ করল যেখানে রিপন-রাত্রী অত্রিকে স্কুলে দিয়ে বিভিন্ন পার্কে ঘুরতে গেছে,রাত্রী রিপনের কাঁধে মাথা রেখে গল্প করছে,রিপন রাত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর হেসে হেসে কথা বলছে।দুজনে হাতে হাত ধরে হাঁটছে।
পূজাঃমাই লর্ড লাস্টডে বিকালে দীপের কাছ থেকে জানতে পারি রিপন আংকেল সকালে অসুস্থ দোলা আন্টিকে মেরে গেছেন।রোজ রোজ উনার এই স্বেচ্ছাচারিতা মানা যাচ্ছিল না তাই আমি উনাদের বাসায় সিসি ক্যামেরা লাগাই।দোলা আন্টি অসুস্থ ছিলেন তাই বুঝতে পারেন নি আর রিপন আংকেল বাসায় ছিলেন না।এই ফুটেজে রিপন আংকেল আর রাত্রী আন্টির সব কুকর্ম ফুটে উঠেছে।জানি কারো বাসায় না জানিয়ে এরকম ক্যামেরা ফিট করা উচিত না কিন্তু আর কোনো উপায় ছিল না।রিপন আংকেল আর রাত্রী আন্টির আসল চেহারা দেখানোর জন্য এটা প্রয়োজন ছিল।আর বিল্ডিংয়ের ওই জায়গায় বিল্ডিংয়ের মালিক আগে থেকেই সিসি ক্যামেরা ফিট করে রেখেছেন।এটা কেউ জানত না।উনিই এই ফুটেজ দেন।আর এই যে ছবি এগুলো আমার বন্ধুরা তুলেছে।আন্টি আংকেলরা বাসা থেকে বেরিয়ে গেলে আমার বন্ধুরা উনাদের ফলো করত।ওরাই প্রমাণ যোগাড় করেছে।সব প্রমাণ আপনার সামনে।আশা করি দোলা আন্টিকে ন্যায় বিচার দেবেন।
রিপন-রাত্রীসহ সবাই অবাক।কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি পূজা যে এভাবে সব প্রমাণ যোগাড় করছে।পূজার মা-বাবার মেয়ের উপর গর্ব হচ্ছে।রিপন রাত্রী কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।এই পূজা যে ওদের সব কুকর্ম সবার সামনে তুলে ধরবে কল্পনাও করে নি।
রিঃউকিলঃ মাই লর্ড এসব যে সত্য তার কি প্রমাণ আছে।বর্তমান যুগে এসব মিথ্যা ফুটেজ বানানো কোনো ব্যাপার না।
পূজাঃ আপনি চাইলে টেকনিশিয়ানদের ডেকে সত্য মিথ্যা যাচাই করতে পারেন।
রিঃউকিলঃ মাই লর্ড মিস পূজার উপর মানহানীর মামলা হওয়া উচিত।উনি কারো বাসায় এভাবে সিসি ক্যামেরা লাগাতে পারেন না।উনার উপর লিগ্যালি স্টেপ নেওয়া উচিত।
দোঃউকিলঃ মাই লর্ড মিস পূজা সত্যটাকে সবার সামনে তুলে ধরেছেন।এজন্য কি উনাকে শাস্তি পেতে হবে?আমার লার্নেড ফ্রেন্ড নিজের ক্লাইন্ডদের দোষ না দেখে মিস পূজাকে শাস্তি দিতে চাইছেন কেন আমি তো সেটাই বুঝতে পারছি না।এখন যদি মিস পূজাকে শাস্তি দেওয়া হয় কেউ অন্যকে ন্যায় পাইয়ে দিতে চাইবে না।
রাত্রীঃ সব মিথ্যা।আমি নির্দোষ।অ..অনিক বিশ্বাস করো আমার সাথে রিপনের কোনো সম্পর্ক নেই।
অনিক ঘৃণায় চোখ সরিয়ে ফেলল।
রিপনঃ মাই লর্ড সব দোলা আর পূজার চাল।আমরা নির্দোষ।
জর্জঃ সব বিচার বিবেচনা করে আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছে যে…
(চলবে)

তাসের ঘর পর্ব-০৮

0

#তাসের ঘর
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ০৮

দোলাঃ আই ওয়ান্ট জাস্টিস।রিপনের শাস্তি চাই।আমাকে ঠকানোর শাস্তি,দিনের পর দিন আমার উপর অত্যাচার করার শাস্তি,আমাকে মেরে ফেলতে চাওয়ার শাস্তি,দিনের পর দিন ঘরে বউ রেখে এক্সটা মেরিটাল অ্যাফেয়ার চালিয়ে যাওয়ার শাস্তি,আমাকে ডিবোর্সের জন্য বাধ্য করার শাস্তি চাই।
রিপনঃ এ..এসব তুমি কি বলছ?আমি এসব করেছি?মাই লর্ড দোলা মিথ্যা বলছে একটাও সঠিক না।ও আমার উপর মিথ্যা আরোপ দিচ্ছে।বিশ্বাস করুন মাই লর্ড।
দোলাঃ আমি একটাও মিথ্যা কথা বলছি না মাই লর্ড।সব সত্যি।
জর্জঃ দোলাদেবী আপনার কাছে কি কোনো প্রমাণ আছে?বিনা প্রমাণে আপনি রিপন বাবুর উপর এলিগেশন আনতে পারেন না।
রিপনঃ কোনো প্রমাণ নেই মাই লর্ড।দোলা একটা জঘন্য মহিলা।একাধিক পুরুষের সাথে ওর সম্পর্ক ছিল।আমি অফিসের জন্য বেরিয়ে গেলে দোলাও বেরিয়ে যেতো ওর বয়ফ্রেন্ডদের সাথে।কখনো কখনো তো আমার অনুপস্থিতিতে বাসায়ও নিয়ে আসত।এই যে দীপ,ও আমার ছেলে কি না আমি শিওর নই।তাই তো দীপের দায়িত্ব নিতে চাই না।আমার দৃঢ় বিশ্বাস দীপ আমার ছেলে না দোলার কোনো পাপের ফসল।দোলা নিজের দোষ ঢাকতে আমার উপর মিথ্যা আরোপ দিচ্ছে।(একশ্বাসে বলে ফেলল)
দোলা ঘৃণার দৃষ্টিতে রিপনের দিকে তাকাল।রিপনের কথা শুনে গা গুলিতে আসছে।মানুষ এতটা নিকৃষ্ট কি করে হতে পারে।নিজে অন্যায় করে কি সুন্দর অন্যকে ব্লেম করতে পারে।
দোলাঃ মাই লর্ড আমি মিস্টার রিপনের নামে মানহানির মামলা করতে চাই।উনার কাছে কি প্রমাণ আছে এসবের?বিনা প্রমাণে উনি আমার চরিত্রে প্রশ্ন তুলেছেন।
রিপনঃ হ্যাঁ আমার কাছে প্রমাণ নেই।তোমার কাছেও তো নেই।কিন্তু মাই লর্ড আমি যা বলছি সব সত্যি।যদি আপনার বিশ্বাস না হয় তাহলে আমাদের নিচের ফ্লাটের রাত্রীকে জিজ্ঞেস করুন।রাত্রী সব জানে।
জর্জঃ মিসেস রাত্রীকে ওয়েটনেস বক্সে ডাকা হলো।
রাত্রী এসে গীতা স্পর্শ করেঃ “যাহা বলিব সত্য বলিব।সত্য বহি মিথ্যা বলিব না।”
রিপনের পক্ষের উকিলঃ মিসেস রাত্রি আপনার পরিচয়?
রাত্রীঃ আমি রাত্রী দাস।অনিক দাসের ধর্মপত্নী।দোলাদের নিচের ফ্লাটে থাকি।
রিঃ উকিলঃ আপনি দোলা সম্পর্কে কি জানেন?
রাত্রীঃ এটা যে দোলা একজন অসতী মহিলা।নিজের স্বামী থাকা সত্ত্বেও অন্য পুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছেন।রিপনদা বাসা থেকে যাওয়ার পর পরই উনি বাসা থেকে বেরিয়ে যান।আমি আমার মেয়েকে নিয়ে পার্কে গেলে প্রায়ই দোলাকে বিভিন্ন পুরুষের সাথে পার্কে ঘুরতে দেখি।তাছাড়া মাঝে মধ্যে বাসায়ও অন্য পুরুষ নিয়ে আসেন।ঘণ্টার পর পর ঘণ্টা তালাবদ্ধ হয়ে বসে থাকেন।উনি প্রায়ই রিপনের সাথে যেচে ঝামেলা করতেন।রিপন অফিস থেকে ফিরলে এটা ওটা নিয়ে রিপনকে বিরক্ত করতেন।বিয়ের পর থেকে একটা দিনের জন্যও রিপনকে শান্তি দেন নি।রোজ রোজ ঝগড়া করতেন।
দোলার উকিলঃ তাই নাকি?তা ওদের বাসায় কি হতো আপনি কি করে জানতেন?আপনি কি উনাদের বাসায় বসে থাকতেন নাকি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বন্ধ বাসায় কি হচ্ছে তা আড়ি পেতে শুনতেন?
রাত্রী থতমত খেয়ে যায়।কি বলবে খুঁজে পায় না।
রিঃ উকিলঃ অবজেকশন মাই লর্ড।আপনার বিপক্ষের উকিল রাত্রীদেবীকে কনফিউজড করতে চাইছেন।রাত্রীদেবী যতটুকু জানেন তাই বলছেন।
দোঃউকিলঃ মাই লর্ড আমার বিপক্ষের বন্ধু আমার কাজে বাধা দিচ্ছেন।রাত্রী দেবী এসব কিভাবে জানলেন আমি তো শুধু তাই জানতে চাইছি।উনি নিচের ফ্লাটে থেকে উপরের ফ্লাটে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কি চলছে জানবেন কিভাবে?
জর্জঃ অবজেকশন ওভার রুট।
রিঃ উকিলঃ মাই লর্ড(বলে মাথা নত করে সম্মান দেখিয়ে নিজের জায়গায় বসলেন)
দোঃউকিলঃ থ্যাংক ইউ মাই লর্ড।(মাথা নত করে সম্মান দেখিয়ে)
তা মিসেস রাত্রী আপনার কাছে কি উত্তর আছে?
রাত্রীঃ আম..আমি দেখেছি দোলাকে বাইরে..
দোঃউকিলঃ নো মিসেস রাত্রী আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি রিপনবাবু আর দোলাদেবীর মধ্যে কি নিয়ে ঝামেলা হতো,কে কাকে বিরক্ত করত এসব পারশনাল কথা আপনি কি করে জানলেন?
রাত্রীঃ রি..রিপন হ্যাঁ রিপন বলেছে।ও বলেছে ও নিজের স্ত্রীর উপর কতটা বিরক্ত।
দোঃউকিলঃ কিন্তু রিপনবাবু এসব কথা আপনাকেই কেন বলতেন?বিল্ডিংয়ের অন্য অনেকেই তো ছিলেন সবাইকে ছেড়ে আপনাকেই কেন?
রাত্রীঃ কারণ..কারণ আমি রিপনের শুভাকাঙ্ক্ষী।ও আমাকে বিশ্বাস করত।নিজের সুখ দুঃখের কথা আমার সাথে শেয়ার করত।আমিও ওর সাথে সব শেয়ার করতাম।
দোঃউকিলঃ তো আপনি বলতে চাইছেন আপনার সাথে রিপনের সুসম্পর্ক ছিল?
রাত্রীঃ হ্যাঁ।অফকোর্স।রিপনের সাথে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক।ভালোবা..
দোঃউকিলঃ ভালোবাসার সম্পর্ক?
রাত্রীঃ হ্যাঁ ভালোবাসার সম্পর্ক।আমি রিপনকে ভালো…
উকিলের কথায় পড়ে রাত্রী সত্যটা বলে দিল।যখন রিয়েলাইজড হলো তখন থেমে গেল।
দোঃউকিলঃ আপনি বলতে চাইছেন আপনি রিপনকে ভালোবাসেন?
রাত্রীঃ না..নাহহ আমি কেন রিপনকে ভালোবাসব।আমার স্বামী আছে আমি অনিককে ভালোবাসি।
দোঃউকিলঃ কিন্তু আপনিই বলেছেন আপনাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক আছে।
রিঃউকিলঃ অবজেকশন মাই লর্ড।আমার বিপক্ষের বন্ধু রাত্রীদেবীকে কনফিউজড করে নিজের কথা উনার মুখে বসাচ্ছেন।
দোঃউকিলঃ মাই লর্ড উনি যদি বারবার আমার কাজে বাধা সৃষ্টি করেন তবে আসল সত্য কীভাবে বের হবে?
জর্জঃ অবজেকশন ওভার রুট।আপনি নিজের জায়গায় বসুন।(রিপনের উকিলকে)আর আপনি নিজের কাজ চালিয়ে যান(দোলআর উকিলকে)
দোঃউকিলঃ আচ্ছা মিসেস রাত্রী রিপনের সাথে আপনার খুউব ভালো সম্পর্ক ছিল।আপনাকে উনি সব কথা শেয়ার করতেন তাই না?
রাত্রীঃ হ..হ্যাঁ (একটু ভয়ে ভয়ে)
দোঃউকিলঃ তো রিপনবাবু কি আপনাকে বলেন নি যে উনি রোজ রোজ দোলাদেবীকে মারতেন?
রাত্রীঃ না মাই লর্ড রিপন রোজ রোজ দোলাকে মারত না মাঝে মাঝে মারত,রোজ রোজ তো বকাবকি করত, মারত না(গড়গড়িয়ে)
রাত্রী আবার উকিলের জ্বালে পা দেয়।রিপনের নিজের মাথা ফাটাতে ইচ্ছে করছে কেন রাত্রীকে সাক্ষীর জন্য ডাকল।
দোঃউকিলঃ মাই লর্ড রিপনের পক্ষের সাক্ষী মিসেস রাত্রীই নিজের মুখে স্বীকার করলেন রিপনবাবু দোলাদেবীকে মারতেন।
রাত্রীঃ না মাই লর্ড আমি তা বলতে চাই নি।আমি তো..উকিলবাবু আমাকে দিয়ে বলিয়েছেন।রিপন দোলার গায়ে কোনোদিনও হাত দেয় নি।(উত্তেজিত হয়ে)
দোঃউকিলঃ মাই লর্ড রাত্রীদেবী কিন্তু একটু আগেই বলেছেন উনার আর রিপনের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল আর রিপনবাবু দোলাদেবীকে মারতেন।আসল কথা এটাই,বিয়ের পরও রিপনবাবু এক্সটা মেরিটাল অ্যাফেয়ার চালিয়ে যান।বউ থাকা সত্ত্বেও রাত্রীদেবীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক রাখেন।দোলাদেবী তা জানতে পারেন বলেই দোলাদেবীর উপর রিপন বাবু অকথ্য অত্যাচার করতেন।দিনের পর দিন নিজের সংসার বাঁচানোর জন্য রিপনবাবুর সব অত্যাচার সহ্য করে এসেছেন কিন্তু উনিও একজন মামুষ।যখন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে তখন উনি রিপনবাবুর এগেইনস্টে মামলা করেন।
রিপন+রাত্রীঃ সব মিথ্যে।
রিঃউকিলঃ মাই লর্ড আমার লার্নেড ফ্রেন্ড নিজের ক্লাইন্ডকে বাঁচাতে কিছু মিথ্যা কথা বলছেন।রিপনবাবু আর রাত্রীদেবী ভালো বন্ধু।উনি সেই পবিত্র সম্পর্কে কালিমা লাগাতে চাইছেন।
দোঃউকিলঃ মাই লর্ড বিবাহিত কেউ যদি স্বামী/স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও অন্য পুরুষ/মহিলার সাথে এক্সটা মেরিটাল অ্যাফেয়ার চালিয়ে যায় আর সেই সম্পর্ককে যদি পবিত্র বলা হয় তবে অপবিত্র কোনটা?ন্যায় কোনটা?
রিঃউকিলঃ মাই লর্ড রিপনবাবু আর রাত্রীদেবীর মধ্যে যে এক্সটা মেরিটাল অ্যাফেয়ার আছে তার কি প্রমাণ আছে?
পূজাঃ প্রমাণ আছে মাই লর্ড।
পূজার কথায় সবাই অবাক।
(চলবে)

তাসের ঘর পর্ব-০৭

0

#তাসের ঘর
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ০৭

মিসেস গোপঃ দিদি আপনি কি সত্যিই রিপনদাকে ডিবোর্স দিয়ে দেবেন?
দোলাঃ এছাড়া কি কোনো পথ খোলা রেখেছে?
মিসেস গোপঃ কিছু মনে করবেন না একটা কথা বলি, স্বামী হলো বটগাছের মতো।যতদিন আছে তার ছায়ায় আশ্রয় নেওয়া যায়।বটগাছের একটা ডাল ভেঙে গেলে,পাতা ঝড়ে গেলেও আশ্রয় দিতে সক্ষম।কিন্তু যদি গাছটাই উপড়ে ফেলা হয় তখন আর আশ্রয় পাওয়া যায় না।বাইরের কুনজরের শিকার হতে হয়।
রিপনদা যেমনই হোক আপনার হাসবেন্ড ছিলেন।উনি ঘরে যাই করুক না কেন বাইরে থেকে আপনাকে রক্ষা করেছেন।আপনাকে কারো কুনজরের শিকার হতে দেন নি।যখন সেই বটবৃক্ষ থাকবে না তখন আপনাকে বাইরের কুনজর থেকেও রক্ষা করার মতো কেউ থাকবেন না।বলবেন বাবা-ভাই আছে।কিন্তু কতদিন?আপনার বাবা কতদিন থাকবেন আপনাকে প্রটেক্ট করার জন্য?উনারও তো বয়স হয়েছে।আর আপনার ভাইয়ের যখন বিয়ে হবে তখন উনি কি আপনাকে সবসময় প্রটেক্ট করতে পারবেন?একজন স্বামী যেভাবে তার স্ত্রীকে প্রটেক্ট করেন ভাই সেভাবে হাজার চেষ্টা করেও পারে না।এক্সেপশন ছাড়া।সাপোস ধরেন আপনার ভাইয়ের স্ত্রী আপনার সাথে এক বাড়িতে থাকতে না চান তখন?আপনার ভাই কি নিজের সংসার ফেলে আপনাকে প্রটেক্ট করার জন্য থাকবেন?
দোলাঃ আপনার কথা ঠিক দিদি।ভাই হয়তো সবসময় প্রটেক্ট করতে পারবেনা।হয়তো একদিন বিরক্ত হবে ডিবোর্সী বোন আর ভাগ্নের সাথে থাকতে থাকতে।বিয়ের আগে মেয়েদের পরিবারে এক স্থান থাকে আর বিয়ের পর এক।সে যদি বিধবা/ডিবোর্সী হয় তাহলে তো..সে আর নাই বললাম।বিয়ের পর বাপের বাড়িতে মেয়েদের ১মাস বেশি থাকলেও সম্মান থাকে না।কিন্তু রিপনের সঙ্গে কিভাবে থাকব?রিপন রক্ষক ছিল ঠিকই কিন্তু যদি সেই রক্ষকই ভক্ষক হয়ে যায় তখন?রিপন যেকোনো সময় আমাকে খুনও করে দিতে পারে।আমি অসুস্থ ছিলাম তাও ও আজ দুবার আমাকে মেরেছে।একবার বেল্ট দিয়ে মেরে রক্তাক্ত করেছে আরেকবার গলা টিপে ধরেছে।আপনারা সঠিক সময়ে না আসলে হয়তো আমাকে আজই…আমি সংসার ভেঙে চলে যাওয়ার জন্য বিয়ে করি নি দিদি।স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে থাকার জন্য বিয়েটা করেছিলাম।আমারও কিছু স্বপ্ন আশা ছিল।রিপন সব ভেঙে দিয়েছে।অনেক তো চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না।ও কখনোই আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেয় নি।বিয়ের আগে থেকেই একজন বিবাহিত মহিলার সাথে..ও আমাকে কেন বিয়ে করেছে জানি না।সুখে সংসার করবে বলে যে নয় সেটা বলতে পারি।এখন ও যেকোনোভাবে আমাকে ওর জীবন থেকে সরাতে চায়।মেরে ফেলে হলেও।কিন্তু আমাকে যে মরলে হবে না।আমাকে বাঁচতে হবে আমার দীপের জন্য।আমার কিছু হয়ে গেলে দীপের কি হবে?
মিসেস গোপঃ সব তো ঠিক আছে কিন্তু…
পূজাঃ এই কিন্তুটাই থাকা উচিত নয়।সরি আমার হয়তো আপনাদের বড়দের মাঝে কথা বলা উচিত নয় তবুও বলতে হচ্ছে।আপনার সব কথাই ঠিক।রিপন আংকেল হয়তো আন্টিকে বাইরে থেকে রক্ষা করেছেন।একজন বিবাহিত মহিলার উপর সহজে কেউ নজর দেয় না।কিন্তু একজন ডিবোর্সী মহিলার উপর সবারই নজর থাকে।তাছাড়া অনেকেই সেকেন্ডে সেকেন্ডে কথা শুনায়।আন্টি হয়তো খেয়ে পরে ভালোভাবে বাঁচতে পারবেন কিন্তু সুরক্ষাটা পাবেন না।কিন্তু এতে দোষটা কার?এই সমাজের।প্রতিটা পরিবারের।প্রতিটা মেয়েকে যদি ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার সাথে সাথে আত্মরক্ষাটাও শিখানো হতো তাহলে তাদের হয়তো এই সমাজে কোনো ধর্ষিতা থাকতো না,না থাকতো কোনো ধর্ষক।কিন্তু এখানে তো মেয়েদের পড়ালেখার ব্যাপারেই নাক কুঁচকানো হয়।সুরক্ষা তো অনেক দূর।খুব কম মেয়েই স্বাবলম্বী হওয়ার সাথে সাথে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম তারা কেবলই যারা বিভিন্ন ফোর্সে কাজ করে।
সে যাই হোক।ছোট মুখে বড় কথা হলেও এটাই বলব সংসার একে জনে হয় না।দুজনকে সমানভাবে সংসার ধরে রাখতে হয়।জোর করে আর যাই হোক ভালোবাসা কিংবা সংসার হয় না।এখন যদি জোর করে রিপন আংকেল আর আন্টির সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয় তাহলে হয়তো আমরা আন্টিকেই হারাবো।যে পুরুষ নিজের সন্তানের কথা ভাবে না সে নিজের স্ত্রীকে মেরে ফেলতেও দুবার ভাববে না।
মিসেস দেঃ পূজা কিন্তু ভুল বলছে না।রিপনের মতো মানুষের সাথে থাকার চেয়ে সারাজীবন একা থাকাই বেটার।
তখন দোলার বড়ভাই দিহান এলো।
দিহানঃ আমি আমার বোনকে ওই রিপনের সাথে আর এক মুহূর্তও থাকতে দেবো না।
দোলাঃ দাভাই তুই?
দিহানঃ মা বাসা যাওয়ার পর থেকে মন খারাপ করে বসে ছিল।অনেক চাপাচাপির পর জানতে পারি আজ সকালে রিপন তোকে..বাবা বলেছেন তোকে এই মূহুর্তেই আমাদের বাসায় নিয়ে যেতে।আর একমুহূর্তও এখানে না।
দিহান দোলা আর দীপকে নিয়ে চলে গেল।
🍁
অনিকঃ রিপনবাবু আজ আবার দোলাদেবীকে মেরেছেন?
রাত্রী বিরক্ত হলো।সবার মুখে কেবল দোলা।এতো দোলা দোলা করার কি আছে?
রাত্রীঃ আমি কি করে জানব?আমি কি ওদের বাসায় গেছি নাকি?
অনিকঃ একটু আগেই তো খুশি ছিলে এখন বিরক্ত হচ্ছো কেন হঠাৎ?
রাত্রীঃ 😬
অনিকঃ বিল্ডিংয়ের সবাই তো গেল রিপনকে বুঝাতে তুমি গেলে না কেন?এভাবে বউকে মারা কি ঠিক?
রাত্রীঃ আমি কেন যাবো?আমি এতো দোলার হয়ে সাফাই গাইতে পারব না।নিশ্চয়ই ও কিছু করেছে তাই রিপনও মেরেছে।ব্যটা ছেলে একটু রাগ তো থাকবেই।দোলার রিপনের কথা শুনা উচিত।
অনিকঃ তাই বলে বউকে মারবে?
রাত্রীঃ কেন বউ বলে পার পাবে কেন?স্বামীর অধিকার বউকে মারা।
অনিকঃ তাহলে আমিও তোমাকে মারি?
রাত্রী অবাক হয়ে অনিকের দিকে তাকাল।অনিক হুহা করে হেসে দিল।
অনিকঃ মজা করছিলাম।আমি কি আমার লক্ষ্মী বউটাকে হাতে মারব?সে যাই হোক।তোমার উচিত ছিল ওদের সঙ্গে যাওয়া।যতই হোক বউ পিটানো তো ঠিক না।তুমি রিপনকে বলো এভাবে বউ পিটিয়ে ব্যাটাগিরি না দেখাতে।
শুনেছি রিপনের এক্সটা মেরিটাল এফ্যায়ার চলছে।তাই এভাবে দোলাদেবীর উপর অত্যাচার করে।যে মহিলা অন্যের সংসার ভাঙ্গতে চায় সে কখনোই সুখে সংসার করতে পারে না।একচুয়েলি সে কখনো একটা হ্যাপি ফ্যামিলি পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না।দিনশেষে সেই মহিলাই একা থেকে যায়।দোলারা না।
অনিক আর কিছু না বলে চলে গেল।রাত্রী অনিকের যাওয়ার দিকে কেমন করে তাকিয়ে রইল।
🍁
আজ আইনীভাবে দোলা আর রিপন আলাদা হবে।কোর্টের ডেট পরেছে।
জর্জ সাহেব দোলা আর রিপনকে একসাথে ডেকেঃ আপনারা কি শিওর ডিবোর্সটা নিতে চান?নিজেদের মধ্যে সব ঠিক করতে চান না?
দোলা একবার রিপনের দিকে তাকাল।তারপরঃ না আই ওয়ান্ট ডিবোর্স।
রিপনঃ এন্ড আই অলসো।আই কান্ট টলারেট দিস ওউমেন।
জর্জঃ বাচ্চাটার দায়িত্ব কে নেবে?
রিপনঃ দোলা যেহেতু মা তাই দীপের দায়িত্ব ওই পাক।(গা-ছাড়া ভাব নিয়ে)
জর্জঃ আপনার কি দীপের দায়িত্ব নিতে সমস্যা আছে?
দোলাঃ না।আমি প্রস্তুত।
জর্জঃ তাহলে দীপ দোলাদেবীর কাছেই থাকবে।তবে দীপের খাওয়া-পরার দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে মিস্টার রিপন।আপনার আপত্তি আছে?
রিপনঃ অসম্ভব!আমি কেন দীপের খাওয়া-পরার দায়িত্ব নেব।দীপ দোলার কাছে থাকলে দোলাকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
জর্জঃ দীপ কিন্তু আপনার সন্তান।নিজের সন্তানের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চাইছেন?আপনাকে শুধু দীপের না দোলাদেবীরও খাওয়া-পরার দায়িত্ব নিয়ে হবে।আপনি যখন ডিবোর্স চাইছেন তখন ক্ষতিপূরণ তো দিতে হবে।
দোলাঃ আমার কিচ্ছু চাই না।দীপ আর নিজের দায়িত্ব আমি নিজেই নিতে সক্ষম।বাট আই ওয়ান্ট জাস্টিস।
রিপন অবাক হয়ে দোলার দিকে তাকাল।দোলা নির্ভিক।
(চলবে)

তাসের ঘর পর্ব-০৫+০৬

0

#তাসের ঘর
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ০৫+০৬

দীপকে খেলনা দিয়ে বসিয়ে দোলা শুয়ে আছে।শরীরটা খুব খারাপ লাগছে।যদিও এখন জ্বর নেই।কিন্তু জ্বর জ্বর ভাব আছে।শরীরও দুর্বল লাগছে।তখন ঝড়ের গতিতে রিপন রুমে এসে দোলাকে টেনে মাটিতে নামাল।
রিপনঃ অলক্ষ্মী তুই আমার জীবনে কেন এসেছিস?আমার লাইফটা জাস্ট হেল করে দিয়েছিস।তোর মরণ নেই?কেন চলে যাচ্ছিস না আমার জীবন থেকে?আমি তোর মুখও দেখতে চাই না।আমাকে একটু শান্তিতে বাঁচতে দিবি না?
বলে দোলাকে মারতে লাগল।অসুস্থ শরীরে আগের আঘাতের উপর আঘাত করায় দোলা ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠল।
দোলাঃ আমাকে মারছ কেন?আমি কি করেছি?প্লিজ মেরো না।আহ লাগছে।মাগো আহহ্।
রিপনঃ চুপ একটা শব্দও করবি না।
ব্যথায় দোলা চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।
রিপনঃ চুপ করতে বলেছি না?চুপ।কোন সাউন্ড করবি না।কথা শুনবি না নাহ?
বলে দোলার গলা টিপে ধরল।দোলা রিপনের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা মরছে।কিন্তু পুরুষালি শক্ত হাতের শক্তির সাথে পারছে না।এদিকে দোলার দম বন্ধ হয়ে আসছে।ফর্সা মুখটা লাল বর্ণ ধারণ করেছে।কিন্তু রিপনের সেদিকে খেয়াল নেই।নিজের রাগ ঝাড়তে ব্যস্ত।দীপ।কাঁদতে কাঁদতে রিপনের হাত সরানোর চেষ্টা করছে।
দীপঃ সালো।মা ব্যতা পাচ্চে।সালো না।মায়ায়া।বাবা সালো।মায়ের কত্ত হচ্চে।
দীপ রিপনে ধাক্কাচ্ছে কিন্তু একটুও নড়াতে পারছে না।কলিংবেলের আওয়াজে রিপনের হুঁশ ফিরল।দোলার গলা ছেড়ে দিল।ভীত দৃষ্টিতে দোলার দিলে তাকাল।কতবড় ভুল করতে যাচ্ছিল বুঝতে পারল।যদি দোলার কিছু হয়ে যায় ও ফেঁসে যাবে।দোলার বাবা-ভাই রিপনকে ছেড়ে দেবে না।
রিপনের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে দোলা কাশতে লাগল।একটুর জন্য দম বন্ধ হয়ে যায় নি।গলায় পুরুষালি দশ আঙ্গুলের দাগ দৃশ্যমান।দীপ মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।
আবার কলিংবেল বেজে উঠায় রিপন দরজার কাছে গেল।লেন্সের দিকে তাকিয়ে দেখে বাইরে বিল্ডিংয়ের মিসেস দত্ত,মিসেস দে,মিসেস গোপ দাঁড়িয়ে আছে।মিসেস দেব আর রাত্রী ছাড়া।রিপনের ওদের দেখে ঘাম ছুটতে লাগল।দৌড়ে দোলার রুমে গেল।দোলাকে ছেলে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
রিপনঃ এই এই মেয়ে কান্না অফ কর।উফ বলছ না ফ্যাসফ্যাস করবি না।দোলা মানা করছি কিন্তু।কান্না অফ কর।
দোলা থামল না।
রিপনঃ যদি কান্না অফ না করিস তাহলে আবার মারব।
রিপনের কথায় দোলা ভয় পেয়ে গেল।আস্তে আস্তে ফোঁপানো বন্ধ করল।ছেলেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে রইল।রিপন সোফায় থম মেরে বসে রইল।দরজা খুলবে কি না ভাবতে লাগল।এদিকে বাইরে থেকে রিপনের নাম ধরে ডেকে সবাই দরজা খুলতে বলল।
রিপনদের বিল্ডিং তিন তালা।নীচতালায় রাত্রীরা আর মিসেস দেবরা থাকেন।দুতালায় রিপনরা আর অজয় গোপের পরিবার থাকে।তিনতালায় পূজারা আর সীমান্ত দে এর পরিবার থাকে।
মিসেস দেঃ রিপনদা দরজা খুলুন।দরকার আছে।
ভিতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই।
মিসেস গোপঃ কি হলো দরজা খুলছেন না কেন?কি করছেন এতক্ষণ ধরে।
মিসেস দত্তঃ এবার দরজা না খুললে আমরা কিন্তু দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকব।
রিপনঃ আসছি।এক মিনিট দাঁড়ান।
দোলার দিকে তাকিয়েঃ এই শুন একদম বেশি কথা বলবি না।ওরা যেন জানতে না পারে নি।ঠিক হয়ে বস।
বলে রিপন এসে দরজা খুলে দিল।দরজা খুলতেই মিসেস দত্ত,মিসেস গোপ,মিসেস দে ভিতরে ঢুকলেন।
রিপনঃ আরে আপনারা?হঠাৎ?
মিসেস দত্তঃ আপনি যা শুরু করেছেন তাতে আসতে তো হবেই।
রিপনঃ আ..আমি?আমি আবার কি করলাম।আচ্ছা আপনারা দাঁড়িয়ে কেন বসেন।
ওরা বসল।
মিসেস দেঃ দিদি কোথায়?উনাকেও ডাকুন।
রিপনঃ দো..দোলা?দোলাকে কেন?ও তো ঘুমাচ্ছে।
মিসেস গোপঃ ও তাই নাকি?একটু আগেই মারলেন আর আমরা আসতে আসতে উনি ঘুমিয়েও পড়লেন?
মিসেস দত্তঃ আপনি কি শুরু করেছেন বলবেন?এভাবে দোলাদিকে কেন মারেন?উনি আপনার স্ত্রী আর আপনি?ছিঃ
রিপনঃ হ্যাঁ ও আমার স্ত্রী আমার যা ইচ্ছা তাই করব আপনাদের কি?
ততক্ষনে দোলা দীপকে নিয়ে ওখানে চলে আসে।ওর শরীরের মারের দাগ স্পষ্ট।মিসেস দত্ত দোলাকে সোফায় বসালেন।
মিসেস দেঃ আপনার স্ত্রী বলে আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন মি.রিপন।
মিসেস গোপ দীপকে কোলে নিলেন।
মিসেস গোপঃ দীপ তোমার বাবা তোমার মাকে মেরেছে?
দীপঃ হ্যাঁ মেলেছে।বাবা পঁচা মাকে মালে।এভাবে এভাবে মেরেছে(হাত দিয়ে মার দেখিয়ে),বেল্ত দিয়ে মেলেছে,গলা তিপে মেলেছে।
দীপের কথা শুনে সবাই দোলার দিকে তাকাল।ওর গলা লাল হয়ে আছে।দাগ পড়ে গেছে।
মিসেস দত্তঃ এসব কি মি.রিপন।আপনি বাচ্চটার সামনে ওর মাকে জানোয়ারের মতো মারেন?একটুও লজ্জা করে না?
মিসেস দেঃ আপনার সমস্যাটা কোথায়?প্রতিদিন এই অশান্তি কেন করেন?আজ বলেই দিন।দোলাদিকে নিয়ে কি সমস্যা।কেন উনার গায়ে হাত তুলেন।আপনি পরিবেশটা নষ্ট করছেন মি.রিপন।
মিসেস দত্তঃ তা নয় তো কি?বউয়ের গায়ে হাত তুলা আইনত অপরাধ জানেন না?আপনি আইন লঙ্ঘন করছেন।তাছাড়া আপনার জন্য আমাদের বাচ্চারা ভুল শিক্ষা নিচ্ছে।আপনার নিজের বাচ্চার সাথে সাথে আমাদের বাচ্চাদের মনে খারাপ প্রভাব বিস্তার করছেন।ওদের একটা অসুস্থ পরিবেশ উপহার দিচ্ছেন।
মিসেস গোপঃ একজন শিক্ষিত ব্যক্তি হয়ে অশিক্ষিতের মতো কাজ করতে লজ্জা করে না?আপনি তো উচ্চশিক্ষিত,বিসিএস ক্যাডার।এই আপনার শিক্ষা?নিজের পুরুষত্ব জাহির করতে বউ পিটান?
রিপনঃ তো কি করব?চলে যাচ্ছে না কেন ও?কত বার বলেছি চলে যেতে তাও কেন নির্লজ্জের মতো পড়ে আছে।সহ্য হয় না ওকে আমার।প্রতিদিন চোখের সামনে দেখতে রাজি না।ওকে আমার পছন্দ না।ওর মুখও দেখতে চাই না।ওকে বলুন চলে যেতে।আমাকে মুক্তি দিতে।
মিসেস দত্তঃ কেন যাবেন?উনি কি ফেলনা?যদি ভালো নাই লাগে তাহলে বিয়েটা কেন করেছিলেন?কেউ কি দোলাদিকে আপনার ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিয়েছে?নাহ দেয় নি।বিয়ের প্রস্তাব আপনি পাঠিয়েছিলেন।তাহলে এখন কেন এই ব্যবহার?
রিপনঃ আমি কিচ্ছু না জানি।কিচ্ছু এক্সপ্লেইন করতে চাই না।আমি ডিবোর্স চাই।আর কিছুদিন পরেই আমাদের ডিবোর্স।
মিসেস গোপঃ বাহ সুন্দর কথা বললেন।একবারও নিজের ছেলের কথা ভেবেছেন?আপনাদের ডিবোর্স হলে ওর কি হবে?
রিপনঃ কেন ও ওর মায়ের কাছে থাকবে।
মিসেস দেঃ আপনার কোনো দায়ভার নেই?আপনি জানেন এই সমাজে ডিবোর্সীদের হাল কি হয়?আপনি জানেন পিতৃহীন একটা সন্তানের ভবিষ্যতে কতটা অন্ধকার?তাও বলছেন ডিবোর্স দিতে চান।ওকে ডিবোর্সের কারন?ওটা তো বলুন।
রিপনঃ আপনাদের বলতে বাধ্য নই।
মিসেস দত্তঃ এটা তো ভাবেন এরপর দোলা আর দীপের কি হবে?
রিপনঃ ওকে আমি দোলাকে তাড়িয়ে দেব না।ও সারাজীবন আমার বাসায় থাকতে পারবে কাজের লোক হিসেবে।এইবাড়িতে কাজ করবে থাকবে খাবে।আমি দীপের পড়ালেখার দায়িত্ব নিতেও রাজি।শুধু আমাকে আমার মতো চলতে দিতে হবে।
মিসেস দত্তঃ সহজ কথায় বলতে চাইছেন দোলাকে সতীনের ঘর করতে হবে?সতীনের দাসী হয়ে থাকতে হবে?
রিপনঃ না সতীনের ঘর করতে কেন?ওকে তো আমি বউ বলে মানি না।ও আমার বউ না।ও যদি আমার বউই না হয় সতীন আসবে কোথা থেকে?
দোলাঃ অনেক হয়েছে রিপন।অনেক বলেছ।আমি তোমার অগ্নিসাক্ষী করে বিয়ে করা বউ।তুমি বলছ আমি তোমার বউ না?তাহলে আমি কে?ডিবোর্স চাই না তোমার?পেয়ে যাবে।তোমার সাথে সংসার করা আমার পক্ষেও আর সম্ভব না।অনেক সহ্য করেছি।তোমার মতো স্বামীর আমার প্রয়োজন নেই।তুমি একটা অমানুষ।যেকোনো সময় আমাকে মেরে ফেলতেও তোমার হাত কাঁপবে না।যে তুমি নিজের সন্তানকেও মানতে চাও না সেই তোমাকে আমিও স্বামী হিসেবে মানতে চাই না।তোমাকে স্বামী মানতে ঘৃণা করে।সে ব্যক্তি ঘরে বউ-বাচ্চা রেখে..(বড় করে শ্বাস ফেলল)
রাগে শরীর কাঁপছে।
দোলাঃ আমি শুধু সংসারটা বাঁচাতে সব সহ্য করেছি কিন্তু আর না।তুমি আমাকে তোমার রক্ষিতার দাসি বানাতে চাও?থেক তুমি তোমার রক্ষিতা নিয়ে।তোমার সাথে আমিও আর সংসার করব না।
রিপনঃ দোলায়ায়ায়া।তোর সাহস..
মিসেস দত্তঃ গলা নামিয়ে।আপনার সাহস তো কম না আমাদের সবার সামনে উনাকে ধমকি দেন।
রিপনঃ আপনারাও কি শুনেন নি ওর কথা?কি বলছে ও?ওর সাথে সংসার করব?যে আমাকে স্বামী হিসেবে সম্মান করতে পারে না?একটুও শ্রদ্ধাবোধ আছে ওর আমার প্রতি?
মিসেস দেঃ যে স্বামী বউকে এভাবে মারতে পারে,নিজের বউকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে পারে না,দিনের পর দিন দুর্ব্যবহার করে,স্ত্রী হিসেবে মানে না তাকে শ্রদ্ধা করা তো দূর লাথি মেরে পা নষ্ট করার ভুলটাও করা উচিত না।
মিসেস দে এর জবাব রিপনের গায়ে কাঁটার মতো বিঁধল।
রিপনঃ আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন।
মিসেস দত্তঃ মান অপমান বোধ আপনার আছে?
রিপন তো রাগে ফুঁসতে আছে।
মিসেস দত্তঃ সে যাই হোক দোলাদিকে এখানে রেখে যাওয়ার ভুল করব না।অনেক সহ্য করেছেন উনি।আর না।আপনার বাসায় আর একমুহূর্তও না।এখানে থাকলে আপনি উনাকে কখন জানি মেরেই ফেলবেন।যদি মন থেকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ফিরিয়ে আনতে পারেন তাহলেই উনি এখানে আবার আসবেন।নইলে না।দোলাদি আর দীপ আপনার সাথে থাকবে না।
চলুন দিদি।
দোলাও সায় জানিয়ে উঠে দাঁড়াল।ওর মনে এক প্রকার ভীতি জেগেছে।রিপনের ওকে মেরে ফেলতেও হাত কাঁপবে না।
মিসেস দত্তঃ তবে হ্যাঁ একটা কথা বলতেই হয় আপনি আসল সোনা রেখে নকল হীরা বেছেছেন দাম তো আপনাকেই দিতে হবে।
উনারা দোলা আর দীপকে নিয়ে রিপনের বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন।দোলার চলে যাওয়াতে রিপন খুশিই হলো।ঝটপট রাত্রীকে কল দিল।
🍁
বাইরে মিসেস গোপ দোলাকে যা বললেন তাতে সবাই অবাক।
(চলবে)

তাসের ঘর পর্ব-০৩+০৪

0

#তাসের ঘর
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ০৩+০৪

হেলমেট খোলার সাথে সাথে রিপনের হাস্যজ্বল মুখটা দৃশ্যমান হলো।রিপন রাত্রীকে বাইকে উঠতে বলে বাইক স্টার্ট করল।
রিপনঃ আরে রাগছ কেন?ইচ্ছে করে দেরি করেছি নাকি?দোলাকে উত্তমমধ্যম দিতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল।
রাত্রীঃ আজ আবার মেরেছ?
রিপনঃ হ্যাঁ মারব না তো কি করব?একটা কাজও ঠিক মতো করেনা।ওকে কি এমনিতে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াচ্ছি?আজ তরকারিতে লবণ কম হয়েছে তাই দিয়েছি গালে একটা বসিয়ে।তারপর ও মুখে মুখে তর্ক করতে শুরু করে দিল।যতবড় মুখ না তত বড় বড় কথা বলে তাই দিয়েছিও সেইভাবে।
রাত্রীঃ আমি কিন্তু রান্নাবান্না কিছুই তেমন পারি না।রান্না ঠিক করে না হলে আমাকেও দিবে নাকি চড়থাপ্পড়?(ভ্রূ কোঁচকে)অনিক কিন্তু আমাকে রাঁধতে দেয় না।ও নিজেই রাঁধে।
রিপনঃ উফ মাঝখানে ওই অনিককে টানছ কেন?তুমি আর দোলা এক নাকি?দোলা এসেছে কাজের লোক হয় আর তুমি যাবে রাজরানি হয়ে।তোমাকে আমি মাথায় তুলে রাখব।কোনোকাজ করতে দেবোই না।একবার শুধু ওই দোলাকে বিধায় হতে দাও।
রাত্রীঃ হুম আপদটা যত তাড়াতাড়ি বিধায় হবে ততো আমাদের মঙ্গল।আচ্ছা আজ তুমি ওকে মারলে কিন্তু শব্দ শুনা গেল না কেন?
রিপনঃ মুখ বেঁধে মেরেছি আওয়াজ করছিল বলে।
রাত্রীঃ বেশ করেছ।সবসময় খালি আমাদের কাজে ব্যাঘ্রা দেয়।অসহ্য একটা।একটুও লজ্জাও করে না।তুমি বারবার ওকে চলে যেতে বলো কিন্তু ও যাওয়ার নামই নেয় না।ঘাঁটি গেড়েই বসেছে।
রিপনঃ চিন্তা কর না খুব শীঘ্রই ডিবোর্স দেব।আর মাত্র কিছুদিন।তারপর শুধু তুমি আর আমি।(মুচকি হেসে)
রাত্রীর হেসে রিপনের কাঁধে মাথা রাখল।
দুজনে একটা পার্কে চলে গেল।
রিপনঃ আজ ছুটি নিয়েছি।সারাদিন একসাথে কাটাব।
রাত্রীঃ সারাদিন?কিন্তু অত্রি?
রিপনঃ উমম।অত্রির স্কুল যতক্ষণ ততক্ষণ নাহয় থাকি।
রাত্রীঃ হুম সেটাই হবে।
এটা আজ প্রথম না।প্রতিদিনই রাত্রী অত্রিকে স্কুলে দেওয়ার নাম করে রিপনের সাথে ঘুরে বেড়ায়।রিপন অফিস টাইম থেকে ২ঘণ্টা আগে বাড়ি থেকে বের হয়।তারপর রাত্রীর সাথে ঘুরে ফিরে অফিস যায়।মাঝে মাঝে ছুটি নিয়েও ঘুরে।কিন্তু নিজের বউকে ১মিনিটও টাইম দেয় না।
🍁
সকালের রান্নাবান্না সেরে,স্বামী-পুত্রদের খাইয়ে দোলার মা মিসেস দেব দোলাদের বাসায় এলেন।হাসিমুখে ঘরে ঢুকলেও মেঝেতে রক্তাক্ত মেয়েকে দেখে হাসিমুখ বিলীন হয়ে গেল।বড্ড আদরের মেয়ে দোলা তাদের।মা-বাবার একমাত্র মেয়ে হিসেবে যেমন আদুরে দুইভাইয়ের একমাত্র বোন হিসেবেও তেমন আদুরে।এটাই বোধহয় মেয়েদের কপাল বাপের বাড়িতে যেখানে রাজকন্যা স্বামীর বাড়িতে সেখানে রাজরানীর জায়গায় চাকরানির মতো থাকতে হয়।
মিসেস দেব তাড়াতাড়ি মেয়ের কাছে ছুটে গেলেন।
মিসেস দেবঃ দোলা মা কি হয়েছে তোর?দাদুভাই তোমার মায়ের কি হয়েছে?
দোলার গায়ে হাত দিয়ে বুঝতে পারলেন জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।
দীপঃ দিদা বাবা মালে?মাকে মেলেছে?বাবা পুঁচা।
মিসেস দেব আর কিছু না বলে দোলাকে কোনোরকমে তুলে বিছানায় শুয়ালেন।জল এনে গা মুছিয়ে দিলেন।কাপড় পালটে দিয়ে ক্ষতস্থানে ঔষধ লাগিয়ে কপালে জল পটি দিলেন কিছুক্ষণ।ফাঁকে ফাঁকে ঘরটা গুছিয়ে দীপকেও খাইয়ে দিলেন।যদিও দীপ খেতে নারাজ।দোলার একটু একটু জ্ঞান ফিরলে দোলাকেও তুলে খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলেন।কিছুবাদে দোলার জ্বরটা ছাড়ল।মিসেস দেব আবার গাটা মুছিয়ে দিলেন।দোলাকে ঘুম পাড়িয়ে দীপকে পাশে বসিয়ে রান্নাঘরে গেলেন।মায়ের আদর পেয়ে দোলাও অনেক দিন বাদে শান্তিতে ঘুমাল।মিসেস দেব রান্নাবান্নার কাজ সেরে আবার দোলার কাছে এলেন।
দুপুর ১ঃ৩০টায় দোলার ঘুম ভাঙ্গল।
মিসেস দেবঃ আজ কেন মেরেছে?
দোলা সবটা মাকে বলল।
মিসেস দেবঃ সহ্য কর মা আরেকটু সহ্য কর।আমাদের হাতে যে কিছু নেই।যদি কিছু করতে যাই রিপন যে তোকে ডিবোর্স দেবে।তখন কি হবে ভেবে দেখেছি।বাচ্চা ছেলেটাকে নিয়ে কি করবি?ভেবেছিলাম একটা বাচ্চা কাচ্চা হলে ছেলেটা শুধরে যাবে।কিন্তু না এমন একটা ফুটফুটে ছেলে থাকা সত্ত্বেও..সব কপালের দোষ।কোন কুক্ষণে যে এমন ছেলের সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছিলাম।
দোলা মাকে জড়িয়েঃ মা আমি আর এখানে থাকব না মা।ওই লোকটা আমাকে মেরে ফেলবে(কাঁদতে কাঁদতে)
মিসেস দেবঃ কাঁদে মা।একটু ধৈর্য ধর।একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
দোলাঃ সব ঠিক হতে হতে না আমিই না থাকি।
মিসেস দেবঃ দোলায়া।এমন কথা বলিস না।ভগবানে বিশ্বাস থাক।একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
মিসেস দেব দোলাকে ফ্রেশ হতে বলে খাবার নিয়ে এলেন।দোলাকে খাইয়ে রিপনের জন্য খাবার বেড়েঃ দোলা আমি দীপের বাবার জন্য খাবার বেড়ে দিয়েছি ও আসলে দিয়ে দিস।আমি এখন বাসায় যাই।ওর বাবা আর ভাইরা এলো বলে।
দোলাঃ ঠিক আছে।সাবধানে যেও আর আমার জন্য চিন্তা করো না আমি ঠিক আছি।
🍁
রাত্রী অত্রিকে নিয়ে বাসায় ফিরে দরজা খুললে অত্রি লাফাতে লাফাতে রুমে গেল।রাত্রী জুতো ঠিক করে ঢুকতে যাবে তখন পাশের ফ্ল্যাটের মিসেস ধরের কথা শুনে পিছু ফিরল।
মিসেস ধরঃ কোথায় গেছিলে?
(মিসেস ধর রাত্রীর থেকে অনেক বড় তাই তুমি করেই ডাকেন)
রাত্রীঃ এইত্তো অত্রিকে স্কুল থেকে নিয়ে আসলাম দিদি।
মিসেস ধরঃ তা রিপনের সাথে পার্কে কি করছিলে?
রাত্রী ধরা খাওয়ার মতো মিসেস ধরের দিকে তাকাল।
রাত্রীঃ রিইরিপনের স..সাথে?কই?
মিসেস ধরঃ মিথ্যে বলে লাভ নেই।সবাই সব জানে।তোমার লজ্জা করে না তোমার নিজের সংসার থাকতে অন্যের সংসার ভাঙ্গতে?কত সুন্দর সংসার তোমার।অনিক তোমাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে।মেয়েকে নিয়ে তো ভালোই আছো।তাহলে দোলার সংসার ভাঙ্গছ কেন?নির্লজ্জ মেয়েমানুষ তুমি না তো সংসার করার যোগ্য না তো কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য।অনিক আসলে আমি ওকে সব বলব।তুমি যে রিপনের কাঁধে মাথা রেখে ঢং করছিলে সব ছবি আছে আমার কাছে।প্রমাণ সহ দেখাব।
রাত্রী কিছুটা ঘাবড়ে গেল।পরক্ষণে নিজেকে সামলেঃ ঠিক আছেন বলে দিয়েন।কি হবে?এমনিতেই দোলাকে ডিবোর্স দিয়ে রিপন আমাকে বিয়ে করবে।অনিকের সাপোর্ট দিয়ে কি করব?
আচ্ছা দাদা তো সবসময় বাসায় থাকেন না,ধরেন আপনি যখন বাইরে গেলেন তখন হিয়াকে(মিসেস ধরের মেয়ে) একটা ছেলে সমেত ঘরে পাওয়া গেল তাহলে কি হবে?কিংবা কলেজ থেকে ফিরার সময় হিয়াকে যদি কেউ কিডন্যাপ করে রেপ করে কিংবা আপনাদের অনুপস্থিতিতে বাসায় এসে রেপ করে তখন?মেয়ে বিয়ে দিতে পারবেন তো?আশেপাশের লোক যখন ছিঃ ছিঃ করবে তখন?মান-সম্মান থাকবে তো?
মিসেস ধর দমে গেলেন।একটাই মাত্র মেয়ে উনার।ওর কোনো ক্ষতি হলে কি করবেন।
রাত্রীঃ পার্কের কোনো খবর যদি অনিকের কান পর্যন্ত পৌঁছে তাহলে হিয়া..
বলে শয়তানি হাসল।
🍁
বিকালে মিস্টার দত্তের মা আর মেয়ে ছাদে বসে আছেন।তখন নাচতে নাচতে অত্রি ছাদে এলো।মিস্টার দত্তের মেয়ে পুজাকে দেখে ওর কাছে দৌড়ে গেল।
অত্রিঃ দিদি আমার সাথে খেলবে?
পূজাঃ আমি তোমার সাথে কি খেলব?আমি তো কত্তো বড় আর তুমি কত্তো ছোট?
অত্রিঃ বড় হয়ে গেছ বলে কি খেলতে পারবে না?
পূজাঃ তা পারব।এবার বল কি খেলবে?
অত্রিঃ উমমম্(একটু ভেবে)লুকোচুরি।
পূজাঃ ঠিক আছে।তুমি লুকাও আমি খোঁজব।
অত্রিঃ আচ্ছা।তুমি দিদার কাছে গিয়ে দাঁড়াও আমি ১০গুনার পর খুঁজবে।
পূজাঃ আচ্ছা।
পূজা আর ঠাকুমার কাছে চলে গেল।
পূজার ঠাম্মাঃ উফ এই মেয়ের সাথে বেশি মিশিস না তো।দূরে দূরে থাকবি।
পূজাঃ কেন?
পূজার ঠাম্মাঃ কেন আবার এই মেয়ের ভালো না।
পূজাঃ অত্রি আবার তোমার কোন পাকা ধানে মই দিল?
পূজার ঠাম্মাঃ অত্রি দেয় নি ওর মা দিয়েছে।খারাপ মেয়েমানুষ কোথাকার।নিজের সংসার রেখে অন্যের সংসার ভাঙ্গতে যায়।(রাগে গজগজ করতে করতে)
পূজাঃ এতে অত্রির দোষ কোথায়?ও কি করেছে?
পূজার ঠাম্মাঃ করে নি কিন্তু দেখিস বড় হয়ে ঠিক অন্য কারো সংসার ভাঙ্গবে।যেমন মা তেমনই তো মেয়েও হবে।বদ মেয়েমানুষ।
পূজাঃ তুমি সব জেনে বসে আছো?অত্রির মা করেছে অত্রিও কি তাই করবে নাকি?তাহলে তো বলতে হয় দীপের সাথেও মিশা উচিত না।দীপের বাবা যা করছে দীপও তা করবে।
পূজার ঠাম্মাঃ উফ তুই বুঝতে পারছিস না।দীপ আর অত্রি কি এক হলো নাকি?দীপ দোলার আদর্শে বড় হয়েছে রিপনের না।
পূজাঃ আর অত্রিও অনিক আংকেলের আদর্শে বড় হচ্ছে রাত্রী আন্টির না।
পূজার ঠাম্মাঃ ওই অনিকই বা কোন ধোঁয়া তুলসী পাতা।অন্ধের মতো বউকে বিশ্বাস করে।আমার তো মনে হয় ওর ও কোনো বাইরে চক্কর চলছে।
পূজাঃ উফ ঠাম্মি তুমি একটু বেশিই সন্দেহ করো।
পূজার ঠাম্মাঃ কি বেশি সন্দেহ করি হুম?আমি সবসময় ঠিক সন্দেহই করি।তোদের মতো চোখ কান বন্ধ রেখে চলি না।রিপন আর রাত্রীর মাখামাখি দেখে আমারই তো প্রথমে সন্দেহ হয়েছিল।তখন তোরা আমার কথআ পাত্তা দিস নি।দেখলি তো আমার কথাই মিলল।আর অনিক কেমন ধরণের মানুষ।নিজের বউয়ের উপর একটুও কর্তৃত্ব নেই?বউ যেমন বলে ও তেমন চলে।পুরো বিল্ডিংয়ের মানুষ জানে রিপন আর রাত্রীর ব্যপারে।আর ওই অনিক নিজের বউয়ের পরক্রিয়ার কথা জানে না।কেমন ব্যাটাছেলেরে বাবা!ঢং(মুখ বাকিয়ে)
পূজাঃ উফ থাম।অত্রি শুনতে পাবে।ও এখনো বাচ্চা।এসবের খারাপ প্রভাব ওর উপর পড়বে।
পূজার ঠাম্মাঃ এই একদম জ্ঞান দিবি না।
অত্রিঃ দিদি কোথায় তুমি?আমাকে খুঁজে বের করো।
পূজাঃ হ্যাঁ আসছি।
বলে পূজা অত্রিকে খুঁজতে লাগল।
🍁
রাতে রাত্রী আর রিপন সবার দেখা করল।অনিক এখনো বাড়ি ফিরে নি তাই রাত্রী আসতে পেরেছে।
রাত্রীঃ উফ এভাবে আর কতদিন?আমার একটুও ভালো লাগছে না।জানো আজ কি হয়েছে?
রিপনঃ কি?
রাত্রী মিসেস ধরের কথা সব বলল।
রিপনঃ ভালো করেছে।হিয়ার নামে ভয় দেখালে উনি কিছু করতে পারবেন না।
রাত্রীঃ কিন্তু এভাবে কাকে কাকে কতদিন আটকাবে?পুরো বিল্ডিং ওই দোলার দলে।সবাই উত পেতে থাকে কীভাবে আমাদের ধরবে।এখনো কোনো প্রমাণ পায় নি তাই চুপ আছে।যেদিন পাবে ছাড়বে না।সব ওই দোলার ষড়যন্ত্র।কাটার মতো গলায় আটকে আছে।না এপারে যাচ্ছে মা ওপারে।লাইফটা হেল করে দিল।
রিপনঃ (রেগে)ঠিক বলেছ।ওই দোলার জন্য সব হচ্ছে।ও না থাকলে কবেই তোমাকে নিজের করতাম।আজ ওর আর রক্ষে নেই।এমন শাস্তি দেব জীবনেও ভুলবে না।
বলে হনহনিয়ে বাসার দিকে রওয়ানা হলো।পিছন থেকে রাত্রী শয়তানি হাসল।
(চলবে)

তাসের ঘর পর্ব-০২

0

#তাসের ঘর
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ০২

রিপন বাসায় এসে দেখে দোলা সোফায় বসে ঝিমাচ্ছে।দীপ খেলছে আর ঘরের সব এলোমেলো করছে।তা দেখে রিপন রেগে গেল।দোলার চুলে ধরে দাঁড় করাল।আচমকা কেউ চুলে টান দেওয়ায় দোলা ঘাবড়ে গেল।ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠে দাঁড়াল।
রিপনঃ নবাবের বেটি এখানে বসে ঝিমাচ্ছিস কেন?তোর ছেলে যে ঘর এলোমেলো করছে দেখতে পাচ্ছিস না?এখন কেউ যদি বাসায় আসে তাহলে আমার মান-সম্মান থাকবে?তোর মান-সম্মান নেই বলে কি আমারও নেই?তুই তো মান-সম্মান সব খুইয়ে এখানেই পরে আছিস।কেন রে চলে যেতে পারিস না আমার জীবন থেকে?আপদ একটা আমার চোখের সামনে থেকে সর।তাড়াতাড়ি খাবার দে আমি অফিসে যাবো।তোর জন্য তো আর লেট করে যাবো না?
পরে হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।
দোলাঃ হ্যাঁ আমি গেলেই তো তোমার সুবিধা অন্যের বউকে ঘরে তুলতে পারবে।(মনে মনে)
দোলা টেবিলে খাবার দিতে দিতে রিপন তৈরি হয়ে চলে আসল।খাবার মুখে নিতেই টের পেল তরকারিতে লবণ কম।তাই উঠে দাঁড়িয়ে দোলার গালে ঠাসস্ করে একটা চড় বসিয়ে দেয়।
রিপনঃ বেকামা মেয়েমানুষ একটা কাজও ঠিক করে করতে পারিস না?বসে বসে শুধু গিলতেই পারিস?বলি রান্নাটাও কি ঠিক করে করতে পারিস না?লবণ কম কেন?
দোলাঃ আমার শরীরটা খারাপ ছিল তাই লবণ একটু কম হয়ে গেছে।(মাথা নত করে)
রিপন দোলাকে ভয়ংকর গালি দিয়ে বলেঃ শরীর খারাপ না ছাই।সব কাজ না করার বাহানা।সারাদিন তো ঘরেই শুয়ে বসে কাটাস আর একবেলা ভালো করে খেতেও দিতে পারিস না?আমি সারাদিন খেটে খেটে মরি আর তুই বসে বসে গিল।গিলার সময় তো শরীর খারাপ থাকে না শুধু কাজের বেলাই থাকে?
এবার দোলার রাগ হলো।জ্বরের কারণ এমনিতেই মেজাজ খিটখিটে আর উপর রিপনের ব্যবহার।সহ্য করতে না পেরেঃ সে সারাদিন কোন কাজে ব্যস্ত থাকো ভালো করেই জানি।আমি তোমার স্ত্রী রিপন।তুমি নিজেও জানো আমি অসুস্থ।তাও সকাল থেকে খেটে মরছি।তুমি তো একটু হেল্প ও করতে পারো।অন্য কিছু নাই বা করলে রান্নার সময় ছেলেটাকে তো একটু দেখতে পারতে।ছেলেটা কি আমার একার।তোমারই তো রক্ত।কিন্তু তুমি তো সব আমার উপর চাপিয়ে দেও।এতকিছু করেও সবসময় তোমার কটুক্তি শুনতে হয়।কেন কর আমার সাথে এমন?
রিপন আরো রেগে গেল।দোলার চুলে ধরেঃ তুই আমার মুখে মুখে তর্ক করছিস?এতো সাহস কে দিলো তোকে?আমি তোকে হেল্প করব?আমাকে তোর চাকর পেয়েছিস?
দোলাঃ তাহলে আমি কি তোমার চাকর?
রিপনঃ হ্যাঁ তুই আমার চাকর।তোকে আমি বউ করে আনি নি ঘরের কাজের লোক করে এনেছি।নিজের লিমিটে থাক।
দোলাঃ ছিঃ ছিঃ রিপন নিজের স্ত্রীকে কাজের লোক বলতে লজ্জা করে না?আমি তোমার বউ কাজের লোক নই আর না তো রাত্রী তোমার বউ।রাত্রীকে ঘরের মালকিন আর আমাকে কাজের লোক করে রাখো কোন সাহসে?লজ্জা করে না অন্যের স্ত্রীর সাথে..
বাকিটা বলার আগে রিপন দোলার গালে আরেকটা চড় বসিয়ে দিল।দোলাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে কোমরের বেল্ট খুলে সর্বশক্তি দিয়ে মারতে লাগল।
রিপনঃ হ্যাঁ রাত্রী ঘরের মালকিন আর তুই চাকরানী।তোকে এখানে থাকতে হলে রাত্রীর চাকর হয়ে থাকতে হবে।যদি ভালো না লাগে তাহলে এখানে পরে আছিস কেন?তোর ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারিস না?তোকে তো আমি বউ মানি না কেন পরে আছিস?
বলে আরো মারতে লাগল।
রিপনঃ নির্লজ্জ মেয়েমানুষ।আমার ঘাড়ের উপর পড়ে আছিস।আমার খেয়ে আমার পরে আবার আমার বিরুদ্ধেই কথা বলিস?একটা রাত্রী কেন হাজারটা রাত্রীকে এনে ঘরে তুলব।কি করবি তুই বল?জানিস তো আমি রাত্রীকে ভালোবাসি তা জানা সত্ত্বেও কেন পড়ে আছিস?শান্তিতে থাকতে দে আমাকে আর আমার রাত্রীকে।
মারের চোটে দোলা চিল্লিয়ে উঠলে রিপন একটা ওড়না এনে দোলার মুখে বেঁধে বেঘোরে মারতে থাকতে।দীপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মায়ের উপর অত্যাচার হতে দেখছে আর কাঁদছে।ক্লান্ত হয়ে রিপন দোলাকে এভাবে ফেলেই চলে যায়।দোলা সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারায়।রিপন চলে গেলে দীপ দোলাকে ডাকতে লাগে।
দীপঃ মা উথো।মায়া ও মা উথো না।(কেঁদে কেঁদে)
🍁
এদিকে রাত্রী বাসায় গিয়ে দেখে ওর স্বামী অনিক রান্না সেরে ঘর গোছাচ্ছে।মেয়ে অত্রি অনিকের গলা জড়িয়েঃ বাভি কি করো?
অনিকঃ কিছু না মা।এইতো ঘরটা একটু গোছাচ্ছিলাম।
অত্রিঃ কিন্তু তুমি কেন গোছাচ্ছ বাভি এসব তো মেয়েদের কাজ।মামনি কেন গোছায় না?আমি তো দেখেছি দোলা আন্টি ঘরের সব কাজ করেন রিপন আংকেল তো কিছুই করেন না।তাহলে আমাদের ঘরের কাজ তুমি কেন করো?
অত্রির কথা শুনে রাত্রী রেগে গেল।অত্রির দিকে তেড়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই
অনিকঃ ছিঃ মা এমন বলে না।কাজ তো কাজই।একটা ছেলেদের একটা মেয়েদের না।সবকাজ সমান।সবকাজ ছেলেমেয়ে মিলে করতে হয়।আর তোমার মামনি তো অসুস্থ তাই আমি হেল্প করছিলাম।তুমিও দুষ্টু করবে না কেমন?
অত্রিঃ আচ্ছা।
অনিকঃ এইত্তো গুড গার্ল।
রাত্রীঃ অত্রি আমাকে তোমার দোলা আন্টির সাথে তুলনা করবে না।ও কিই বা কাজ করে।সারাদিন খায় আর ঘুমায়।অধিকাংশ কাজ তো ওর মাই করে দেন।ওর তো ভাগ্য ভালো ওর বাপের বাড়ির লোক আশেপাশেই থাকেন।যখন ইচ্ছা চলে আসেন।যেমন ভাগ্য করে মা-বাবা পেয়েছে তেমন স্বামী।বিসিএস ক্যাডার স্বামী।সারাজীবন রানীর হালে থাকবে।
অনিকঃ আহ রাত্রী এভাবে বলছ কেন?দোলার মা কি সব করে দেন নাকি?উনার নিজেরও তো একটা সংসার আছে।
রাত্রীঃ এই তুমি একদম ওর হয়ে কথা বলবে না।যত্তসব আহ্লাদ(মুখ বাকিয়ে)
অনিকঃ আচ্ছা আচ্ছা বলব না।তুমি একটু খাবার বেড়ে দেবে।যদি তোমার কষ্ট নাহয়।আসলে দেরি হয়ে যাচ্ছে।গা ধুয়ে আসছি কেমন?
রাত্রীঃ (জোর করে মুখে হাসি টেনে)এটুকু আর কি কাজ।তুমি ফ্রেস হয়ে এসো আমি খাবার দিচ্ছি।অত্রি যাও তুমিও হাত পা ধুয়ে এসো।উপরে খেলতে গিয়ে ময়লা লাগিয়েছ।
অনিকঃ মামনি আমার সাথে চল আমি তোমাকে ফ্রেস করিয়ে রেডি করে দিচ্ছি স্কুলেও তো যেতে হবে নাকি?রাত্রী আজ আমি বরং ওকে স্কুলে পৌঁছে দেব।তোমার তো শরীর খারাপ।
রাত্রীঃ না না আমি ঠিক আছি।ছাদে গিয়ে খোলা হাওয়ায় ছিলাম তো এখন ভালো লাগছে।অত্রিকে আমি স্কুলে দিয়ে আসব।তোমার দেরি হবে।
অনিকঃ শিওর পারবে তো।
রাত্রীঃ হ্যাঁ হ্যাঁ পারব।
অনিকঃ এইত্তো আমার লক্ষ্মী বউ আমার জন্য কত্তো ভাবে।
রাত্রী হাসল।অনিকে অত্রিকে নিয়ে চলে গেলেঃ উফ যত্তসব ন্যাকামি।(মুখ ঝামটা মেরে)
🍁
রাত্রি মেয়েকে স্কুলে দিয়ে স্কুলের পিছনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কারো জন্য অপেক্ষা করছে।৫মিনিট পর কেউ রাত্রীর সামনে বাইক থামাল।লোকটিকে দেখে রাত্রী মুখ ঝামটা দিয়েঃ এতো দেরি হলো কেন?আমি কখন থেকে ওয়েট করছি।
তখন লোকটি..
(চলবে)

তাসের ঘর পর্ব-০১

0

#তাসের ঘর
ঐশিতা সেন
পর্বঃ০১

তরকারিতে সামান্য লবণ কম হওয়ায় রিপন নিজের স্ত্রী দোলার গায়ে হাত তুলল।এটা আজ প্রথম না,প্রতিদিনের রুটিন।সামান্য বিষয়েই রিপন দোলাকে মারে,তাও খুবই নির্মম ভাবে।কখন লাঠি দিয়ে তো কখনো গলা টিপে ধরে।মেরে রক্তাক্ত করে দিতেও দুবার ভাবে না।রিপন যেন দোলাকে সহ্যই করতে পারে না।নিজের সংসার বাঁচানোর জন্য দোলাও সহ্য করে যায় কিছু বলে না।কেউ যেন ওর মুখে আঠা লাগিয়ে দেয়।রিপন তো সংসারটা ভাঙ্গতেই চায়।কিন্তু মাঝে মাঝে যখন সহ্যের সীমা পেরিয়ে যায় তখন প্রতিবাদ করে।প্রতিবাদ করলে আরো বেশি জুলুমের শিকার হয়।রিপন কোনোদিনও দোলাকে বোঝার চেষ্টা করে নি।
কাল রাত থেকে দোলা জ্বরে ভুগছে।সেবা শুশ্রূষা তো দূর রিপন একবার দেখেও যায় নি।বরং জ্বরে যখন গোঙ্গাচ্ছিল তখন মুখে কসটেপ লাগিয়ে দিয়ে গেছে।সারারাত দোলা জ্বরের প্রকোপ সহ্য করে আর চোখের জল ফেলেই কাটিয়েছে।পাশে চার বছরের বাচ্চা ছেলেটার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে সবটা সহ্য করেছে।ভোরের দিকে চোখটা লেগেছিল।সকাল হতে না হতেই আবার এলার্মের শব্দে উঠতে হয়।দোলা তাড়াতাড়ি উঠে স্নান শেষে রান্না বসায়।ঠাকুরের জন্য প্রসাদ তৈরি করে তারপর পুজো দিতে বসে।রিপন উঠার আগে পুজো শেষ করতে হবে।নইলে আরেক অশান্তি।রিপন স্নান শেষে প্রসাদ খেয়েই দিন শুরু করে।ওর উঠার আগেই প্রসাদ রেডি চাই।তাই বলে কখনো মাসের বিশেষ দিনগুলো ছাড়া নিজে পুজো দিতে চায় না।দোলা হাজার অসুস্থ থাকুক না কেন দোলাকেই সব করতে হয়।রিপন কখনো দোলাকে সাহায্য করে না।পুজো সেরে দোলা নিজেদের জন্য রান্না চড়াতে যায়।এরই মধ্যে দোলার চার বছরের ছেলে দীপ উঠে মাকে ডেকে কাঁদতে থাকে।এদিকে এখন দীপের কাছে গেলে তরকারি পুড়ে যাবে।দোলা কি করবে বুঝতে পারে না।দীপের কান্নার আওয়াজে রিপনের ঘুম ভেঙে যায়।রিপন রেগেঃ দোলা এই দোলা কোথায় তুমি?দেখছ না তোমার ছেলে কাঁদছে।তাড়াতাড়ি সামলাও ওকে।উফ এই মেয়ে কোথায় গেলে?করছটা কি?কাজের কাজ তো কিছুই কর না সারাদিন শুয়ে বসেই কাটাও।একটা বাচ্চা সামলাতে পারছ না?
রিপনের কথায় খারাপ লাগলেও দোলা কিছু বলল না।মনে মনে শুধু বললঃ আমি তো কাজ করছি।তুমিও তো ছেলের কাছে যেতে পারো।ছেলে তো শুধু আমার না তোমারও।আমার প্রতি নাই বা করলে কিন্তু নিজের ছেলের প্রতি তো কিছু দায়িত্ব পালন করতে পারো।শুধু খাওয়া-পরার ভার নিলেও বাবা হওয়া যায় না।সারাক্ষণ আমাকে খোঁটা না দিয়ে কখনো নিজের ছেলের কথাও তো ভাবতে পারো।কিন্তু তোমার সেই সময় কোথায়?অন্যের স্ত্রীর কথা ভাবতে ভাবতেই তো জীবন পার করবে।
দোলা নিজের চোখের জল মুছে তড়িঘড়ি করে ছেলের কাছে যায়।ছেলেটা মাকে দেখেই কান্না থামিয়ে কোলে উঠার জন্য হাত বাড়ায়।দোলাও হাসিমুখে ছেলেকে কোলে নেয়।ছেলের চোখে মুখে আদর দিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকে।ফুটফুটে বাচ্চা ছেলেটা মা-বাবার মতো ফর্সা হয়েছে।চেহারাটা বাবার মতো।আর মুখে মায়ের মতো একটা আলাদা মায়া কাজ করে।রিপন কি এই ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়েও নিজেকে শোধরাতে পারে না?
দোলা গরম জল করে ছেলেকে স্নান করিয়ে প্রসাদ খাইয়ে দেয়।ততক্ষণে রিপনও স্নান সেরে চলে আসে।রিপনের প্রার্থনা শেষ হলে দোলা রিপনকেও প্রসাদ দেয়।রিপন প্রসাদ খেয়ে ছাদে চলে যায় হাঁটতে।দোলা দীপকে খেলনা দিয়ে বসিয়ে রান্না শেষ করতে যায়।কিন্তু দীপ তো আর খেলনা নিয়ে বসে থাকার পাত্র নয়।দোলার পিছু পিছু কিচেনে চলে আসে।আর দোলাকে জ্বালাতে লাগে।এটাই প্রতিদিনের রুটিন।
দোলাঃ বাবাসোনা ড্রয়িংরুমে গিয়ে খেলো না।বাচ্চাদের রান্নাঘরে থাকতে নেই সোনাটা।মাকে জ্বালিও না পাখি।রান্না নষ্ট হয়ে যাবে।পরে তোমার বাবা রাগ করবে না?
দীপঃ মা তোমাল কাতে থাকব।দুত্তু কলব না।
দোলা আর কিছু বলল না।ছেলের জ্বালাতন দেখে ভাবে ওর বাবাও তো জানে ছেলেটা কত জ্বালায়।সাথে করে ছাদে নিয়ে গেলে কি হতো?দোলা ঠিক করে রান্নাটা তো করতে পারত।এমনিতেই অসুস্থ শরীর চলছে না।
হঠাৎ দোলার মাথা ভার হয়ে আসল।জ্বরটা আবার বেড়েছে।রাতে ঔষধ খাওয়ায় সকালের দিকে একটু কম ছিল।কিন্তু স্নান করায় আবার বেড়ে গেছে।সাথে মাথা ব্যথা ফ্রী।ইচ্ছে করছে এখন শুয়ে থাকতে।কিন্তু তা সম্ভব নয়।অনেক কাজ বাকি।ঘরটাও গুছানো হয় নি।আবার ৯টার আগে রান্না শেষ করতে হবে।রিপন অফিসে যাবে।দোলা মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলে কোনোকিছুতে ধরে নিজেকে সামলায়।কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।সবটাই দীপ লক্ষ করে।মায়ের আঁচল টেনেঃ মা কি হয়েছে তোমাল?কত্ত হত্তে?বাবাকে দাকি?(কাঁদো কাঁদো হয়ে)
দোলা ছেলের মুখে হাত বুলিয়েঃ না সোনা কিচ্ছু হয় নি।মা ঠিক আছি।সোনা তুমি ওই রুমে গিয়ে খেল।তুমি না মায়ের ভালো ছেলে?মায়ের সব কথা শুন।যাও না সোনা।মা তাড়াতাড়ি রান্না সেরে তোমার কাছে আসব কেমন?
দীপঃ আত্তা মা।আমি তোমাল সব কতা সুনব।
দোলাঃ এইত্তো আমার লক্ষ্মী সোনা।
বলে দীপকে আদর করল।দীপও মায়ের গালে আদর দিয়ে ছুটে চলে গেল।দোলা কোনোরকমে রান্না করতে লাগল।শরীরটা অনেক খারাপ লাগছে।কিন্তু কিচ্ছু করার নেই।
এদিকে ছাদে নীচের ফ্ল্যাটের রাত্রী দাশকে বসে থাকতে দেখে রিপনের মুখে হাসি ফুটে উঠল।ও চলে যায় রাত্রীর কাছে।দুজনে বসে হাসিমুখে গল্প করতে শুরু করে দেয়।রাত্রীর ৬বছরের মেয়ে অত্রিও আছে ছাদে।অত্রি খেলছে।কিছু বাদেই ছাদে প্রবেশ করেন উপরের ফ্ল্যাটের মি.দত্তের মা।উনাকে দেখে রিপন দাঁড়িয়ে পড়ল আর দুজনে স্বাভাবিক কথাবার্তা শুরু করে।যেন গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনা করছে।অত্রিও ছুটে যায় মি.দত্তের মায়ের কাছে।
অত্রিঃ দিদা দিদা আমার সাথে খেলবে?
মিসেস দত্তঃ(সৌজন্য মূলক হেসে)তুমি খেল বাছা।আমি একটু হেঁটে আসছি।
অত্রিঃ আচ্ছা আমিও হাঁটব।
মিসেস দত্তঃ আচ্ছা চলো।(কিছুটা বিরক্ত হয়ে)
মিসেস দত্ত একবার রিপন আর রাত্রীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাঁটতে লাগলেন।মিসেস দত্তের কোনো কারণে অত্রিকে ভালো লাগে না।রাত্রীর মেয়ে বলেই।আবার দীপকে খুব আদর করেন।দীপের জন্য উনার মায়া কাজ করে।
রিপনঃ এই মহিলা আমার দিকে সবসময় এভাবে তাকান কেন যেন আমি কারো খুন করেছি?(ফিসফিসিয়ে)
রাত্রীঃ করো নি তো কি?করতে কতক্ষণ?
রিপনঃ মানে?
রাত্রীঃ কিছু না।আমি এখন বাসায় যাই বরং।এখানে বেশি সময় কথা বললে বুড়ি আবার সন্দেহ করবে।সকাল বেলা তো ছাদে কেউ আসে না শুধু এই বুড়িই হাঁটতে চলে আসে।
রিপনঃ হাঁটতে না আমাদের বিরক্ত করবে বলে আসে।
রাত্রীঃ তা ঠিক।
রাত্রী অত্রির কাছে এসেঃ অত্রি বাসায় চলো।
অত্রিঃ না আরো কিচ্ছুক্ষণ থাকি?
রাত্রী চোখ রাঙ্গিয়েঃ এসো তাড়াতাড়ি।বায়না করবে না।স্কুলে যেতে হবে তো।
অত্রিঃ(মুখ ভার করে) আচ্ছা।
ওরা দুজন চলে গেল।
রিপনও কিছুসময় হেঁটে বাসায় গেল।বাসায় গিয়ে দেখে যা দেখল তাতে মাথা গরম হয়ে গেল।
(চলবে)