Wednesday, July 30, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1007



স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-০৯

0

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৯

সূর্যের রশ্মি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে বাড়িতে মানুষজন গিজগিজ করছে নাস্তা করেই দুপুরের খাবারের তোড়জোড় চলছে রান্নাঘরে।স্নিগ্ধতার ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস,স্নিগ্ধতার সঙ্গে থাকতে থাকতে স্তব্ধেরও এমন একটা অভ্যাস হয়ে গেছে তাই ফজরের সময় উঠে নামাজ পড়ে আবারও ঘুম দিয়েছে।

স্নিগ্ধতা রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো রান্নাঘরে স্তব্ধের মামী সঙ্গে আরও কিছু মাঝ বয়সী মহিলারা রান্নার আয়োজন করছেন।স্নিগ্ধতা ভেতরে প্রবেশ করতেই মামী স্নিগ্ধতার দিকে একবার তাকিয়ে মৃদু হেসে,

– ঘুম ভেঙ্গে গেছে? কিছু লাগবে?

– না।

– তাহলে এখানে এলে যে?

– একা ভালো লাগছিল না তাই এসেছি আমি কাজ করে দেই?

– তোমাকে কিছু করতে হবে না।

– দিন না মামী আমার রান্না করতে ভালো লাগে কোন কাজটা করবো বলুন।

– তোমার যেটা ইচ্ছে করো।

স্নিগ্ধতা সবার সঙ্গে কাজ করতে লাগলো।অরিত্রি শিকদারকে দেখতে অনেক খুশি খুশি লাগছে রাতুল শিকদার কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বললেন,
– কি ব্যাপার আজ এতো খুশি কেন?

– রুশি আসছে।

– কোথায়!

– মিলির বিয়ে উপলক্ষে এখানে আসছে।

– ওহ কবে আসবে?

– এইতো এলো বলে তুমি বরং তোমার ছেলের বউয়ের দিকে খেয়াল রেখো বাচ্চা মেয়ে কখন কি হয়ে যায়।

বলেই অরিত্রি শিকদার বাঁকা হাসলেন রাতুল শিকদার চিন্তিত হয়ে গেলেন ঘর থেকে বেরিয়ে হাঁটা ধরলেন।স্তব্ধ বিছানায় হেলান দিয়ে গেইম খেলছে রাতুল শিকদার ছেলের কাছে এসে বললেন,

– বসে বসে বাচ্চাদের মতো গেইম খেলা ছাড়া কোনো কাজ নেই? স্নিগ্ধতা কোথায়?

– জানি না।

– জানি না বললে হবে না নিজের বউয়ের খবর জানতে হবে, নতুন এক জায়গা নতুন মানুষ ওর কাছে সবকিছু অচেনা তাই ওকে দেখে রাখার দায়িত্ব তোর।

– পারবো না তুমি গিয়ে তোমার পুত্রবধূর খেয়াল রাখো।

– ভেবেছিলাম এবার হয়তো ভালো হয়ে গেছো কিন্তু না আমার ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল মা যেমন ছেলে তো তেমনই হবে।

স্তব্ধ নিজের মতো করে গেইম খেলছে, ছেলের কাছে পাত্তা না পেয়ে রাতুল শিকদার রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেলেন।

স্নিগ্ধতা রান্না করে মিলির ঘরের দিকে যাচ্ছিল এখন গোসল করা খুব জরুরী ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে শাড়ির কিছু কিছু জায়গা ঘামে ভিজে গেছে। আচমকা কেউ স্নিগ্ধতার হাত টেনে ধরল স্তব্ধকে দেখে স্নিগ্ধতার ঠোঁটের কোণে হাসি প্রশস্ত হয়েছে স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে টানতে টানতে ধমক দিয়ে বলল,

– এতক্ষণ কোথায় ছিলে? তোমার জন্য ড্যড এর কাছে বকা খেতে হয়েছে।

– রান্নাঘরে ছিলাম।

– রান্নাঘরে যেতে হবে কেন সবসময় পাকামো।

– এখানে এসে আপনি তো আমায় ভুলেই গেছেন গতকাল রাত থেকে আপনার খবরই নেই, একা একা ভালো লাগছিল না তাই তো রান্নাঘরে গিয়েছিলাম।

স্তব্ধ স্নিগ্ধতার হাত ছেড়ে ব্রু নাচিয়ে বলল,
– মিস করছিলে আমায়?

স্নিগ্ধতা থতমত খেয়ে গেল কিছুটা তুতলিয়ে বলল,
– মি..মিস করেছি কখন বললাম!

– তার মানে মিস করোনি?

স্নিগ্ধতা চুপ করে রইল মুখ খুললেই বিপদ লজ্জায় পড়তে হবে। স্তব্ধ আবারো ধমক দিয়ে বলল,
– ছিহ তোমার শরীরে জীবাণু আছে তাড়াতাড়ি গোসল করতে যাও।

স্নিগ্ধতা মুখ বাঁকিয়ে,
– এ্যহ আসছে আমার জীবাণুমুক্ত জামাই।

স্নিগ্ধতা ওয়াশরুমে ঢুকে গেল স্তব্ধ মুচকি হেসে বিছানায় বসে পড়লো।
_____________

নিচে অনেক হৈচৈ হচ্ছে মিলি স্তব্ধ আর স্নিগ্ধতাকে নিচে যাওয়ার জন্য ডেকে গেছে। স্তব্ধ সামনে স্নিগ্ধতা তার পিছু পিছু সামনে এগোচ্ছে, হল ঘরে অনেক লোকজন হেসে হেসে কথা বলছে মোটামুটি সবার মুখ খানিকটা পরিচিত হলেও তিনজন নারীকে পুরোপুরি অপরিচিত লাগছে স্নিগ্ধতার কাছে। স্তব্ধকে দেখতেই একজন মাঝ বয়সী মহিলা এগিয়ে এসে,

– স্তব্ধ বাবা কেমন আছিস?

স্তব্ধ হেসে জবাব দিল,
– ভালো আন্টি, তুমি কেমন আছো?

– আমিও ভালো।

স্নিগ্ধতা একপাশে দাড়িয়ে তাদের দেখছে।অরিত্রি শিকদার মহিলার কাঁধে হাত রেখে,
– রুশি আমার সঙ্গে চল তোর সাথে অনেক কথা আছে।

– আপা একটু সবুর কর আমারও তোর সঙ্গে অনেক কথা আছে।

স্নিগ্ধতার চিনতে এবার অসুবিধা হয়নি এর আগেও অনেকবার এই নামটা শুনেছে এবার শুধু চোখের দেখাটা হয়ে গেছে। রুশি স্নিগ্ধতার দিকে এগিয়ে গেল স্নিগ্ধতার গালটা টেনে মৃদু হেসে বললেন,

– তুমিই তাহলে স্তব্ধের বউ যাকে দুলাভাই জোর করে স্তব্ধের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে।

স্নিগ্ধতা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল রুশি নামক মহিলাটি যে সুবিধার না এটা তার বোধগম্য হয়ে গেছে।রুশি মেয়ে দু’টোর উদ্দেশ্যে বললেন,
– নাতাশা, নেহা যাও গিয়ে চেঞ্জ করে নাও আমি তোমার আন্টির ঘরে যাচ্ছি।

অরিত্রি শিকদার এবং রুশি উপরে চলে গেলেন, মেয়ে দুটিও পেছনে পেছনে চলে গেল।

‘তোর আসাতে আমি যে কি খুশি হয়েছিরে রুশি।’

– তুই খুশি হলেও আমি খুশি হতে পারিনি সবাই জানে স্তব্ধের সঙ্গে নাতাশার বিয়ে হবে যেই আমি মেয়েদের নিয়ে ট্যুরে গেলাম অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে স্তব্ধের বিয়ে হয়ে গেল।

– সবকিছু রাতুলের প্লান ও ইচ্ছে করে আমার ছেলেটাকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করিয়েছে।

– নাতাশাকে কিভাবে বুঝাবো? স্তব্ধের বিয়ের কথা শুনেই মেয়েটা আমার কষ্ট পেয়েছে।

– নাতাশাকে আমি বুঝিয়ে বলবো আর হ্যা উকিলের সঙ্গে কথা হয়ে গেছে মিলির বিয়েটা শেষ হলেই বাড়িতে গিয়ে ডিভোর্স করিয়ে মেয়েটাকে বিদায় করে দিব।

– এখনও অনেকগুলো দিন বাকি এ ক’দিনে লোকজন জানাজানি হলে মান সম্মান থাকবে না।

– আমাদের বাড়ির লোক ছাড়া কেউ জানেনা।

স্নিগ্ধতার হাতের রান্না খেয়ে সবাই অনেক প্রশংসা করেছে অরিত্রি শিকদারের অনেক রাগ হচ্ছিল। সন্ধ্যায় মিলির গায়ে হলুদ তাই বিকেলে পার্লার থেকে সাজানোর জন্য কিছু মেয়ে এসেছে, মিলির সঙ্গে স্নিগ্ধতার ভালোই ভাব জমে গেছে, মিলির জোরাজুরিতে স্নিগ্ধতাকেও সাজতে হলো।

ছেলেপক্ষ থেকে অনেক লোকজন এসেছে হলুদ লাগানোর জন্য। একটা ছেলে বারবার স্নিগ্ধতার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে প্রথমে খেয়াল না করলেও এখন স্নিগ্ধতা ঠিক বুঝতে পারছে ছেলেটা তাকে দেখছে।স্নিগ্ধতার বেশ অস্বস্তি লাগছে এখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ছেলেটা তার সামনে এসে দাড়ালো লাজুক হেসে বলল,

– আপনি দেখতে অনেক সুন্দর।

স্তব্ধ এসে স্নিগ্ধতার ঘাড়ে হাত রাখলো, এতে দু’জনেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে।স্তব্ধ নিজের চুলগুলো স্লাইড করতে করতে বলল,

– সুন্দর তো লাগবেই দেখতে হবে না বউটা কার।

ছেলেটা বিষ্মিত দৃষ্টিতে প্রশ্ন করলো,
– বউ! কে বউ? কার বউ?

– যাকে তুমি এতক্ষণ ধরে চোখে হারাচ্ছিলে যাকে তোমার কাছে সুন্দর লাগছে সেই আমার বউ।

– ও আপনার!

– ও আমার একমাত্র বউ।

– দেখে বুঝাই যায় না উনি যে বিবাহিত।

বলেই ছেলেটি দ্রুত জায়গা ত্যাগ করলো।স্নিগ্ধতা স্তব্ধের হাত নিজের কাঁধ থেকে সরিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিল স্তব্ধ সঙ্গে সঙ্গে তার হাত ধরে,

– কি বলে গেল শুনলে তোমাকে দেখে নাকি বিবাহিত বুঝা যায় না, তাহলে এখন আমার কি করা উচিত বলো তো যাতে সবাই তোমায় দেখলেই তুমি যে বিবাহিত বুঝে যায়।

– জানি না।

– জানি না বললে তো হবে না নিজের বউয়ের সেফ্টির জন্য আমাকে জানতেই হবে।

– ছাড়ুন আমায় মানুষজন দেখলে কি ভাববে।

– আমার বউকে আমি ধরেছি দরকার হলে কোলে নিয়ে বসে থাকব কার কি?

– দিনে দিনে আপনি অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন।

– কি অসভ্যতামি করলাম?

স্নিগ্ধতা নিজের হাত ছাড়িয়ে চলে গেল স্তব্ধও পিছু পিছু যাওয়া ধরল। দূর থেকে পুরো দৃশ্যটা একজন মনোযোগ সহকারে দেখল তার চোখ ভিজে গেছে অরিত্রি শিকদার কাঁধে হাত রাখতেই মেয়েটা চোখের পানি আড়ালে মুছে নিলো। অরিত্রি শিকদার বললেন,

– নাতাশা এসব দেখে একদম কষ্ট পাবি না।

– ছোট থেকে জেনে এসেছি স্তব্ধ শুধু আমার ওর সঙ্গে আমার বিয়ে হবে আজ কিনা অন্য একটা মেয়ে আমার কাছ থেকে ওকে কেড়ে নিলো আন্টি।

– কেউ কেড়ে নেয়নি সবকিছু পরিস্থিতির কারণে হয়েছে চিন্তা করিস না স্তব্ধ এখনও তোর।

– ওই মেয়েটা?

– ওর ব্যবস্থা আমি আর তোর মা করবো।

নাতাশার চোখে খুশি চকচক করছে। গায়ে হলুদ শেষ মানুষজন যেতে যেতে অনেক রাত হয়ে গেছে আজকেও স্নিগ্ধতা মিলির সঙ্গে থেকেছে মিলির অনুরোধে।
____________

দুপুরে বরযাত্রী এলো খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিয়ে পড়ানো শেষ হলো। যাওয়ার সময় মিলি অনেক কান্নাকাটি করেছে, মিলি যেতেই বাড়ির সবাই যেন মনমরা হয়ে গেল হওয়ারই কথা এত যত্নে বড় করা মেয়ে আজ অন্য এক বাড়িতে চলে গেল।

স্নিগ্ধতারও খারাপ লাগছে এই দু’দিনে মিলির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠেছিল।আরও একদিন থেকে সবাই বাড়িতে ফিরে এলো। রাহেলা বেগম বাড়িতেই ছিলেন অনেকবার অরিত্রি শিকদার যেতে বলেছিলেন কিন্তু তিনি যাননি।

স্নিগ্ধতা বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়েই রাহেলা বেগমের ঘরে গেল। রাহেলা বেগমের মাথায় তেল মালিশ করতে করতে বলল,

– কেমন আছো দিদান?

– এখন ভালো আছি।

– আগে কি ভালো ছিলে না?

– না তুই ছিলি না কেউ এত যত্ন করে তেল মালিশ করে দেয়নি।

– এখন আমি এসে গেছি রোজ তেল লাগিয়ে দিব।

– আমার দাদুভাইয়ের মাথায়ও লাগিয়ে দিস এর বদৌলতে যদি মাথা থেকে ভূত নামে।

– উনার মাথায় ভূত আছে!

– হুম।

স্তব্ধ বাড়িতে নেই এসেই চেঞ্জ করে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে বের হয়েছে। স্নিগ্ধতা রাহেলা বেগমের ঘর থেকে নিজের ঘরে চলে এলো, আরিয়া শশুর বাড়িতে চলে গেছে অরিত্রি শিকদার আরো কিছুদিন থেকে যেতে বলেছিলেন কিন্তু কয়েকদিন পর আবার আসবে বলে মা’কে বুঝিয়ে চলে গেছে।

স্নিগ্ধতার সেদিনকার রাতের কথা মনে পড়তেই ভেতরে একটা ভয় ঢুকে গেল দ্রুত মোবাইলটা নিয়ে স্তব্ধের নাম্বারে কল দিল। রাতুল শিকদার স্নিগ্ধতাকে নতুন মোবাইল কিনে দিয়েছে যাতে যখন ইচ্ছে পরিচিত মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে পারে। কয়েকবার রিং হওয়ার পর স্তব্ধ ফোন ধরে বলল,

– কি হয়েছে ইদানিং আমায় মিস করছো মনে হচ্ছে?

– একটা দরকারি কথা ছিল।

– বলো।

– যেখানেই যান যার সঙ্গেই মিশুন না কেন উল্টো পাল্টা কিছু ভুলেও খেয়ে আসবেন না সেদিন রাতে কিছু বলিনি বলে আজও যে বলবো না এসব ভাববেন না।

– এটা বলার জন্য আমার সময় নষ্ট করলে? আমি তো ভাবলাম আমাকে হয়তো মিস করছিলে যাই হোক ভয় পেও না বউ ফলের জুস ছাড়া আর কিছুই খাব না।

– না খেলে ভালো।

বলেই স্নিগ্ধতা কল কেটে দিল।স্তব্ধ ফোনের দিকে তাকিয়ে,’যাহ কেটে দিল! কি আনরোমান্টিক বউ।’

অরিত্রি শিকদার রাতুল শিকদারের পাশে বসে বললেন,
– রুশি নাতাশা এবং নিতুকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে কিছুদিন থাকবে আমিই বলেছি আসতে একা একা ভালো লাগে না।

– এক কোথায় ছেলের বউ আছে মা আছে।

– মা তো এখন তার নাত বউয়ের ভক্ত হয়ে গেছে রুশি এসে থেকে যাক ক’দিন।

– নিজের বাড়ি ছেড়ে আমাদের বাড়িতে?

– আমি বলেছি তাই আসবে এ নিয়ে কোনো কথা শুনতে চাই না আগেই জানিয়ে দিলাম।

অরিত্রি শিকদার গুনগুন করতে করতে চলে গেলেন। রাতুল শিকদার কপালে হাত দিয়ে,’কে জানে এদের মনে কি চলছে?

চলবে……

স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-০৮

0

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৮

স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে নিয়ে শশুর বাড়ি বেড়াতে এসেছে আসার সময় অরিত্রি শিকদার একবারও তাদের সামনে আসেননি। অচেনা জায়গা হওয়ায় স্তব্ধের ভেতর ছটফট করছে, বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরাঘুরি আর পার্টি করাই তার অভ্যাস সব ছেড়ে এভাবে ঘর বন্দি বিরক্ত লাগছে।

সানজিদ ওয়াজেদ এবং শাহিলী ওয়াজেদ মিলে মেয়ে জামাইকে অনেক আপ্যায়ন করছেন। দুপুরে সবাই খেতে বসেছে শাহিলী ওয়াজেদ খাবার পরিবেশন করছেন স্নিগ্ধতার সবটা স্বপ্ন মনে হচ্ছে বাবার চোখের আড়ালে ছোট থেকে খাবার নিয়ে কম খোটা শুনতে হয়নি তার এমন অনেক বেলা গেছে না খেয়েই কাটিয়েছে আর অবসর সময়ে বাড়িতে খেটেছে। স্তব্ধের প্লেটে একের পর এক পদ দিয়েই যাচ্ছেন শাহিলী ওয়াজেদ স্তব্ধ নিষেধ করার পরেও শুনছেন না এবার স্তব্ধ অসহায় দৃষ্টিতে স্নিগ্ধতার দিকে তাকিয়ে ইশারা দিল। স্তব্ধের ইশারা বুঝতে পেরে স্নিগ্ধতা শাহিলী ওয়াজেদকে আটকিয়ে বলল,

– উনি এত খাবার খেতে পারবেন না মা জামাই আদরের জন্য এখনও অনেক সময় আছে এখন উনাকে ছেড়ে দাও।

স্তব্ধও তাল মিলিয়ে,
– হুম আন্টি এত খাবার খাওয়া আমার পক্ষে পসিবল না।

– তা কি করে হয় বাবা? সব রান্না তোমার জন্যই তো করা এগুলোর কি হবে?

– রেখে দিন রাতে আমি আর স্নিগ্ধ মিলে খেয়ে নিব প্রমিস।

– কিন্তু..

– প্লিজ আন্টি এমন করবেন না আমি আর খেতে পারবো না।

– আচ্ছা বাবা যাও।

স্তব্ধ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দ্রুত জায়গা ত্যাগ করলো।শাহিলী ওয়াজেদ স্নিগ্ধতার উদ্দেশ্যে বললেন,
– তুই দাড়িয়ে আছিস কেন? যা গিয়ে দেখ জামাইয়ের কি লাগবে।

– যাচ্ছি।

স্নিগ্ধতাও স্তব্ধের কাছে গেল।স্তব্ধ বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে আছে স্নিগ্ধতা পাশে বসে বলল,
– এভাবে শুয়ে পড়লেন কেন?

– শশুর বাড়ি মনে হয় এমনই হয় একবেলাই খাওয়ার টেবিলে বসিয়ে আমার অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে আল্লাহ যানে বাকি সময়গুলো কি অবস্থা করে।

– আপনার কি এত আদর যত্ন ভালো লাগছে না?

– এটা তো আদর যত্নের নামে রীতিমত অত্যাচার তোমার শশুর বাড়িতে কি তোমার সঙ্গে এমন হয়েছে?

– আপনার মা তো আমাকে ছেলের বউ হিসেবে মানেন না কিভাবে আপনার থেকে আমায় আলাদা করবে সেই চিন্তায় মশগুল তাই এসব আমার সঙ্গে হবে কি করে।

– মম তোমায় মেনে নেয়নি তা জানি তাই বলে আমাদের আলাদা করবে এটা ভুল বললে।

– আমি ঠিক বলেছি কিছুদিন পর আপনিও টের পাবেন তবে কে মানলো না মানলো তা যেনে আমার কি আপনি নিজেই কি বিয়েটা মেনে নিয়েছেন? আমাকে নিজের বউ হিসেবে মেনে নিয়েছেন?

স্তব্ধ শোয়া থেকে উঠে বসলো নিচের দিকে দৃষ্টি রেখে বলল,
– আমার পরিস্থিতিটাও তোমার একটু বুঝতে হবে হুট করে আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে এর জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না রাগ দেখিয়ে হয়তো প্রথমদিন বলেছিলাম তোমায় বউ হিসেবে মানি না তাই বলে আমাদের সম্পর্ক কি মিথ্যে হয়ে যাবে? তোমার পরিস্থিতিও আমি বুঝেছি তোমাকেও বাধ্য হয়ে আমাকে বিয়ে করতে হয়েছে তাই তোমার উপর আমার কোনো রাগ ক্ষোভ নেই, তবে তুমি কি সম্পর্কটা মেনেছ?

– আমি প্রথম থেকেই বিয়েতে রাজি ছিলাম না কেউ আমার ইচ্ছা অনিচ্ছাকে গুরুত্ব দেয়নি মা জোর করে ভয় দেখিয়ে বিয়েতে বসিয়েছিল বিয়েটা হয়েছে শুধু বর পরিবর্তন হয়ে গেছে কিন্তু যার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল তাকে আমি চিনি না কখনও দেখিনি তাই আপনাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে আমার কোনো সমস্যা নেই তবে আমি জোর করবো না আপনি যা চাইবেন তাই হবে আপনার সব সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিব।

স্নিগ্ধতা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।স্নিগ্ধতার কথায় যে অভিমান মিশে আছে স্তব্ধ বুঝতে পেরেছে তবে কিসের এত অভিমান তাই অজানা।

শাহিলী ওয়াজেদকে কাজে সাহায্য করতে লাগলো স্নিগ্ধতা।শাহিলী ওয়াজেদ মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
– মনে হচ্ছে বেশ সুখে আছিস সুখে থাকারই কথা যেই বড়লোক বাড়িতে বিয়ে হয়েছে শাশুড়ি কেমন মেনে নিয়েছে তোকে?

স্নিগ্ধতা কথাগুলো এড়িয়ে যাওয়ার জন্য,
– শুভ কোথায়?

– কাল সন্ধ্যায় মামার বাড়ি গেছে।

– আমি আসবো জেনেও মামার বাড়ি গেছে?

– আমি পাঠিয়েছি আমার ছেলেটার চাকরির ইন্টারভিউ আছে তোর মুখ দেখলে যদি চাকরিটা না হয়! তাই পাঠিয়ে দিয়েছি ওখান থেকেই ইন্টারভিউ দিতে যাবে।

– মা শুভ আমার ভাই হয় আমার মুখ দেখলে ওর চাকরি হবে না এগুলো কি বলো?

– বলেছি না আমায় মা বলে ডাকবি না আমি শুধু শুভর মা।

চোখের পানি আড়াল করে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেল স্নিগ্ধতা। সানজিদ ওয়াজেদ স্নিগ্ধতাকে ডাক দিলেন সেও বাবার পাশে গিয়ে বসলো। সানজিদ ওয়াজেদ স্নিগ্ধতার মাথায় হাত বুলিয়ে,

– সব জেনে বুঝে কেন ওই মহিলার কথা কানে নিয়ে মন খারাপ করিস? ওই মহিলার কোনো কথা কানে তুলবি না এখন আর ভয় নেই ওই মহিলা তোর কিছু করতে পারবে না।

– এইভাবে মা’কে সম্বোধন করছো কেন বাবা? আর যাই হোক উনি তোমার স্ত্রী।

– এখানেই তো সব দুর্বলতা, এই দুর্বলতার কারণে সব অন্যায় মেনে নিয়েছি দেখেও না দেখার ভান করেছি এর শাস্তি হয়তো আমাকেও একদিন ভুগতে হবে।

– তোমার উপর আমার কোনো অভিযোগ নেই বাবা।

সানজিদ ওয়াজেদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
– দোয়া করি তুই যাতে অনেক সুখী হোস সব কষ্ট গুলো যেন ভুলে যাস।
_______________

শশুর বাড়ি একদিন থেকেই এত আদর আপ্যায়নে অস্থির হয়ে গেছে স্তব্ধ আজ বাড়িতে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সানজিদ ওয়াজেদ আজ যেতে নিষেধ করলেও অনেক বাহানা দিয়ে রাজি করিয়েছে।

সবার থেকে বিদায় নিয়ে স্নিগ্ধতা গাড়িতে গিয়ে বসেছে। সানজিদ ওয়াজেদ স্তব্ধকে আলাদা ডাকলেন,স্তব্ধ গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– ডেকেছেন আঙ্কেল?

– হ্যা বাবা তোমার সঙ্গে কথা ছিল।

– জ্বি বলুন।

– আমি জানি আমার মেয়ে তোমার সঙ্গে সুখী হবে তবুও একটা অনুরোধ আমার মেয়েকে দেখে রেখো কখনও কষ্ট পেতে দিও না ছোট থেকে অনেক কষ্ট পেয়েছে তাই নিজের কষ্ট প্রকাশ করতে জানে না সব কষ্ট নিজের মধ্যেই লুকিয়ে রাখে।

– চিন্তা করবেন না আমি আছি তো।

– কখনও ওর হাতটা ছাড়বে না কথা দাও বাবা।

– কথা দিলাম আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।

– এবার শান্তি লাগছে দোয়া করি তোমরা ভালো থাকো।

স্তব্ধ মৃদু হেসে,
– আসি এবার।

– হুম সাবধানে যাও।

– আল্লাহ হাফেজ।

স্তব্ধ গাড়িতে উঠতেই ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিল। স্তব্ধ মোবাইলে গেইম খেলছে স্নিগ্ধতা আড়চোখে তাকিয়ে,
– আপনার নাম স্তব্ধ কে রেখেছে বলুন তো? নামের সঙ্গে চরিত্রের কোনো মিল নেই এত ছটফট করেন কেন?

– তোমার শশুর রেখেছে তবে আমার মত শান্ত-শিষ্ঠ ছেলে তুমি কোথাও পাবে না বুঝলে।

– হ্যা তার নমুনা দেখতেই পাচ্ছি।

– বিলিভ মি তোমার হাজব্যান্ড অনেক চুপচাপ।

– ওহ।

– ওহ কোনো উওর হলো? রোমান্টিক ভাবে কথা বলতে পারো না?

– না পারি না আপনি তো পারেন?

– হুম তোমার হাজব্যান্ড অনেক রোমান্টিক দেখবে?

– কি!

– রোমান্টিকতা।

– দেখার ইচ্ছে নেই আমি ভদ্র একটা মেয়ে তাই এসব বুঝি না।

– আমি কি অভদ্র নাকি?

– হ্যা আপনার বাবা আপনার সম্পর্কে সব বলে দিয়েছে আমায় উনার কথা শুনে আপনার কোনো ভদ্র এবং ভালো গুণ আমি জানতে পারিনি।

স্তব্ধ দুই আঙ্গুল দিয়ে কপাল ঘষে,
– এটা কি আমার ড্যড নাকি শত্রু? বউয়ের কাছে মান সম্মান রাখল না।

স্নিগ্ধতা মুচকি মুচকি হাসছে স্তব্ধের কথাগুলো শুনে।
______________

অরিত্রি শিকদারের ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে শিকদার বাড়ির সবাই সেখানে গিয়েছে।অরিত্রি শিকদার সেদিনের পর থেকে পুরো ঠান্ডা হয়ে গেছে স্নিগ্ধতার ব্যাপারে কোনো কথাই বলেনি এতে রাতুল শিকদার অনেক অবাক হয়েছেন।

বাড়িতে এক প্রকার হৈচৈ লেগে গেছে,অরিত্রি শিকদারের ভাই বরাদ্দকৃত ঘরে তাদের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। স্তব্ধ ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে স্নিগ্ধতাও ফ্রেশ হয়ে আসলো কপাল কুঁচকে তাকিয়ে,

– বিছানার মাঝখানে শুয়ে আছেন কেন?সরুন আমি বসবো।

– এতক্ষণ জার্নি করে এসে বসবে কেন? আসো একটা ঘুম দেই একেবারে বিকেলে উঠবো।

– আপনি ঘুমান।

– আমি তো ঘুমাবোই তবে তোমায় নিয়ে।

– মগের মুল্লুক পেয়েছেন।

স্তব্ধ মুচকি হেসে স্নিগ্ধতাকে হেচকা টান দিয়ে নিজের সঙ্গে আবদ্ধ করে ফেললো আকষ্মিক এমন ঘটনায় স্নিগ্ধতা অনেকটা হকচকিয়ে গেছে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারেনি স্তব্ধ তাকে শক্ত করে ধরে আছে।স্তব্ধ চোখ বন্ধ করে বলল,

– এমন নড়াচড়া করে ক্লান্ত হওয়ার কি দরকার আমি না চাইলে এখান থেকে উঠতে পারবে না তাই নিজেও ঘুমাও আমাকেও ঘুমাতে দাও।

– রাতারাতি পাল্টে গেলেন কিভাবে?

– যেভাবে রাতারাতি ব্যাচেলর থেকে বিবাহিত হয়ে গেছিলাম সেভাবে।

স্নিগ্ধতা চুপসে গেল নড়াচড়াও বন্ধ করে দিয়েছে এছাড়া কোনো উপায় নেই স্তব্ধ এত সহজে ছাড়বেও না।

‘মিলির হবু জামাই কি করে? কোথায় থাকে জানা হলো না।’

– ছেলে এডভোকেট উওরা থাকে, ছেলে-মেয়ে দু’জন দু’জনকে পছন্দ করে আমাদেরও ছেলেকে ভালো লেগেছে তাই কথা-বার্তা বলে বিয়ে ঠিক করলাম।

– তাহলে তো ভালোই।

– স্তব্ধের বউকে এখনও মেনে নিচ্ছো না কেন অরিত্রি?

– এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন করো না ভাবী।

অরিত্রি শিকদারের ভাবী এ বিষয়ে আর কথা বললেন না। ভাইয়ের থেকে বয়সে ছোট হলেও সবাই অরিত্রি শিকদার সম্পর্কে অবগত যার কারণে কেউ অরিত্রি শিকদারের উপরে তেমন একটা কথা বলে না।
______________

চারিদিকে অন্ধকার ঠাণ্ডা শীতল বাতাস বইছে বিয়ে উপলক্ষে সবাই একসঙ্গে হয়েছে তাই বড়রা বাদে বাকি সবাই ছাদে বসেছে আড্ডা দেওয়ার জন্য।স্নিগ্ধতা সবার সঙ্গে যোগ দিতে রাজি হয়নি মিলি জোরপূর্বক স্নিগ্ধতাকে ছাদে নিয়ে বসিয়ে দিল। মিলির সঙ্গে পরিচয় পর্ব শেষ কিন্তু বাকিদের মুখগুলো স্নিগ্ধতার কাছে অচেনা আশেপাশে চোখ বুলিয়ে স্তব্ধকেও দেখতে পেল না। মিলি স্নিগ্ধতার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

– ভাইয়া তার বন্ধু এবং স্তব্ধ ভাইয়া একসঙ্গে ঘুরতে বের হয়েছে আপাতত তুমি আমাদের সঙ্গেই গল্প করো ভাবী।

স্নিগ্ধতা কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেল মনে মনে অভিমান ও হচ্ছে স্তব্ধ একবারও বলে গেল না পরক্ষনে নিজের মনকে শান্তনা দিল,’এতদিন পর পরিচিত জায়গায় এসেছে তাই হয়তো বলতে ভুলে গেছে।’

মিলিরা তিন ভাই বোন, মিলির বড় ভাই বিবাহিত মিলি মেজো আর ছোট আরেকটা ভাই আছে যে এবার কলেজে ভর্তি হয়েছে। মিলি স্নিগ্ধতার সঙ্গে সবার পরিচয় করে দিল, প্রথমে লজ্জা লাগলেও সবার সঙ্গে কিছুক্ষণ মিশে স্নিগ্ধতার ভালোই লাগছে।

মিলির মা সবাইকে খাওয়ার জন্য ডেকে গেছে তাই যে যার মতো নিচে নেমে গেল। বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে অনেক অতিথির ভিড় তাই যার যেখানে ইচ্ছে সেখানে খেতে পারবে।মিলি নিজের এবং স্নিগ্ধতার খাবার নিয়ে নিজেদের ঘরে চলে আসলো। দু’জনে খাবার খেয়ে বসে আছে,মিলি বায়না ধরে বলল,

– স্নিগ্ধ ভাবী আজ তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাবে।

স্নিগ্ধতা ব্রু জোড়া কুঁচকে,
– স্নিগ্ধ বলে তো তোমার ভাই আমায় ডাকে।

– ভাইয়া তোমায় ভালোবেসে ডাকে তাই আমিও এবার থেকে তোমায় স্নিগ্ধ ভাবী বলেই ডাকবো।

স্নিগ্ধতা মৃদু হাসলো কিন্তু মনে মনে একটা কথাই আওড়াচ্ছে,’সত্যিই কি উনি আমায় ভালোবাসে?’

মিলি স্নিগ্ধতাকে ধাক্কা দিয়ে,
– ভাবী তোমাকে কিন্তু আজ আমার সঙ্গে থাকতে হবে আমরা অনেক গল্প করবো।

– তোমার ভাইয়াকে বলে আসি।

– ভাইয়াকে আমি বলেছি।

– কি বলল?

– রাজি হয়েছে।

স্নিগ্ধতা মন খারাপ করে বলল,
– ওহ।

চলবে……

স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-০৭

0

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৭

‘তোমার ঘাড়ে গলায় কামড়ে দিল কে?ইস রক্ত জমাট হয়ে গেছে।’

স্নিগ্ধতা রাগে ফুঁসছে কিছুক্ষণ আগেই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে বসেছে স্তব্ধও ফ্রেস হয়ে এসেই স্নিগ্ধতাকে দেখে প্রশ্নটা করল কোনো উত্তর না পেয়ে ড্রয়ার থেকে একটা মলম এনে স্নিগ্ধতার পাশে বসলো।স্নিগ্ধতার রাগি মুখটা দেখে আবারো বলল,

– রাগলে তোমায় অনেক সুন্দর লাগে বাই দ্য ওয়ে কে কামড় দিল বললে না তো?

– কাল রাতে একটা বাঁদর কামড়েছে তার ধারালো দাঁত দিয়ে।

– কি বলো বাঁদর কামড়েছে! বাঁদর আসলো কোত্থেকে? আমাদের বাড়িতে বাঁদর ঢুকার কোনো ব্যবস্থা নেই তো।

– সদর দরজা দিয়েই এসেছে তাও আবার সবার সামনে দিয়ে।

– তাও কেউ কিছু বলল না? এত মানুষ রেখে আমার ঘরে এসে আমার বউকেই কামড়ে দিল কত বড় সাহস অনেক ব্যথা লেগেছে তাই না?

স্নিগ্ধতা নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না বসা থেকে দাড়িয়ে গেল আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বিছানা থেকে বালিশ গুলো নিয়ে স্তব্ধের দিকে ছুড়ে মে’রে,

– নাটক করছেন আমার সামনে? সারারাত আমায় ঘুমাতে দেননি বাইরে থেকে কি খেয়ে এসেছেন? খেয়ে এসেছেন ভালো কথা চুপচাপ ঘুমাবেন তা না করে আমার ঠোঁট আর গলার অবস্থা খারাপ করে দিয়েছেন আপনার নামে আমি বউ নির্যাতনের মামলা করবো অসভ্য লোক একটা।

স্নিগ্ধতা একটানা কথাগুলো বলে হাপাচ্ছে,স্তব্ধ ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে,
– তুমি কি বলতে চাচ্ছো আমি এসব করেছি? আমি কি শিয়াল নাকি যে কামড় দিব।

– আপনি শিয়াল হবেন কেন আপনি তো বাঁদর আপনার বাবা ঠিক বলে।

– কি বলে?

– আপনি বাঁদর, আপনি কি বলতে পারবেন গতকাল রাতে আজেবাজে কিছু খেয়ে বাড়িতে আসেননি?

গতকাল রাতের কথা মনে পড়তেই স্তব্ধের মুখটা মলিন হয়ে গেল কাঁচুমাচু মুখে বলল,
– একটু ড্রিংকস করেছি তাই বলে তোমার সঙ্গে এসব মুটেও করিনি।

– আপনি বলতে চাচ্ছেন আমি মিথ্যে বলছি তাহলে দাগগুলো কিসের?

– তা কেন বলবো তবুও…

– ঘরে একটা সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে তারপর দেখা যাবে কে সত্য বলে আর কে মিথ্যে বলে।

– ছি ছি কি বলো আমাদের একটা প্রাইভেসি আছে না।

স্নিগ্ধতা রাগি লুক দিতেই স্তব্ধ অসহায় কন্ঠে বলল,
– স্যরি।

স্নিগ্ধতা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখল স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে মলম লাগিয়ে দিতে দিতে বলল,
– আরো কিছু কি আমাদের মধ্যে হয়েছে?

স্নিগ্ধতা চোখ পাকিয়ে তাকাতেই স্তব্ধ শুকনো ঢুক গিলে,
– আমার কিছুই মনে নেই তাই জিজ্ঞেস করলাম।

– না।

স্তব্ধ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল তারপর আবারো জিজ্ঞেস করল,
– ঠোঁটেও কি আমিই…

স্নিগ্ধতা পুনরায় স্তব্ধের দিকে তাকাতেই স্তব্ধ থেমে গেল মলম লাগিয়ে দিয়ে বলল,
– লাগানো হয়ে গেছে।

স্নিগ্ধতা উঠে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে স্তব্ধ ডেকে বলল,
– রাগ করেছ আমার উপর? কি করতে কি করেছি আমার মনে পড়ছে না আর কখনও এমন হবে না।

– আপনি চাইলেও আর হবে না আমি আজই আপনার বাবাকে বলবো আপনি বাইরে থেকে যে আজেবাজে জিনিস খেয়ে আসেন।

– তোমার কষ্ট লাগবে না জামাইয়ের নামে শশুরের কাছে বিচার দিতে?

– বউয়ের এমন অবস্থা করার সময় জামাইয়ের যদি কষ্ট না লাগে তাহলে বউয়ের কিসের কষ্ট।

– জ্ঞান থাকতে জীবনেও এসব খাবো না তবে ড্যডকে বলো না প্লিজ,ড্যড জানলে আমার একাউন্ট বন্ধ করে দিবে তখন তোমায় নিয়ে কোথায় যাব কি খাবো।

– নাটকবাজ ছেলে।

স্নিগ্ধতা গোমটা টেনে নিচে চলে গেল।স্তব্ধ বিছানায় বসে, ‘ছিহ স্তব্ধ ছিহ বিয়ে করবি না বলে চিল্লিয়ে বউকে চুমু দিতে গিয়ে কামড় দিয়ে বসলি এই মুখ সবাইকে কিভাবে দেখাবি? ইজ্জতের ফালুদা হয়ে গেল স্নিগ্ধর কাছে,সব দোষ ওই ম’দের বোতলের আর জীবনেও খাবো না।’

রাতুল শিকদার অনেক তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেছেন বাকিরা খাবার টেবিলে বসে আছে।স্নিগ্ধতা নামতেই অরিত্রি শিকদার প্রশ্ন করলেন,
– স্তব্ধ কোথায়?

– ঘরে।

– তাহলে একা আসলে কেন ওকে নিয়ে আসতে পারতে।

স্তব্ধও চলে আসলো চেয়ারে বসে,
– ড্যড কোথায়?

– অফিসে গেছে।(অরিত্রি শিকদার)

– আজ এত তাড়াতাড়ি।

– তোর ড্যড বলে গেছে তোকে যেন দশটার আগে অফিসে দেখতে পায়।

– আজ না গেলে হয় না?

– গতকাল যাসনি আজ যেতেই হবে না গেলে তোর কপালে দুঃখ আছে।

– মম এভাবে বলতে পারলে!

– আমি বলিনি তোর ড্যড বলেছে।

স্তব্ধ মুখ গোমড়া করে খেতে লাগলো অরিত্রি শিকদার মৃদু হাসলেন। স্নিগ্ধতার দিকে চোখ যেতেই আরিয়া বলল,
– স্নিগ্ধতা তোমার ঠোঁট ফুলে আছে কেন কিছুতে কামড় দিয়েছে নাকি?

স্নিগ্ধতা ঘাবড়ে গেল স্তব্ধ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে,
– তুই দিনে দিনে লুচু হয়ে যাচ্ছিস আপু শেষে কিনা ছোট ভাইয়ের বউয়ের ঠোঁটের দিকে নজর দিলি ছি ছি কি লজ্জা।

স্তব্ধ খাবার রেখে ঘরের দিকে হাঁটা ধরলো আরিয়া পেছন থেকে ডেকে বলল,
– আরে আমি তো মেয়ে এখানে লুচুর কি আছে?

স্তব্ধ কোনো কথা কানে না নিয়ে চলে গেছে।আরিয়া অবাক হওয়ার ভঙিতে,
– যাহ বাবা এর আবার কি হলো কি এমন বললাম খাওয়া ছেড়ে উঠে চলে গেল।

স্নিগ্ধতাও সুযোগ বুঝে উঠে গেল নইলে এখন অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।অরিত্রি শিকদার আরিয়াকে বললেন,
– খাওয়া শেষ হলে আমার কাছে আসিস তোর সঙ্গে কথা আছে।

– আচ্ছা মম।

অরিত্রি শিকদার যেতেই রাহেলা বেগম আরিয়াকে ধমক দিয়ে বললেন,
– তোর জন্য কি আমার নাতি তার বউয়ের সঙ্গে প্রেমও করতে পারবে না সবার সামনে এভাবে জিজ্ঞেস করতে হয়?

– স্নিগ্ধতার ঠোঁট ফোলা ছিল বলেই তো জানতে চাইলাম।

– তোর জানতে হবে কেন? জানার জন্য দেখার জন্য দাদুভাই আছে সবার সামনে ছেলে-মেয়ে দু’টোকে লজ্জায় ফেলে দিল।

রাহেলা বেগম হাত ধুয়ে সালেহাকে ডেকে ঘরে গেলেন। আরিয়া মাথায় হাত দিয়ে,
– আমার কি দোষ আমি তো শুধু জানতে চাইলাম।

স্নিগ্ধতা দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে ঘরের ভেতরে যাবে কি যাবে না ভাবছে সকালে যতই স্তব্ধকে রাগ দেখাক না কেন এখন ভেতর জুরে লজ্জা ভর করছে। স্তব্ধের সামনে কিভাবে দাড়াবে সেই ভাবনায় আরো লজ্জা পাচ্ছে। তখনি ভেতর থেকে স্তব্ধের কথা ভেসে আসলো,

– তোমার লজ্জা পাওয়া শেষ হলে ভেতরে আসতে পারো।

স্নিগ্ধতা ভরকে গেল মনে মনে ভাবছে,’বুঝলো কিভাবে আমি যে এখানে দাড়িয়ে আছি?’

স্নিগ্ধতা ভেতরে এসে বিছানায় বসে পড়ল দৃষ্টি নিচের দিকে। স্তব্ধ অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে আড়চোখে স্নিগ্ধতাকে একবার দেখে বেরিয়ে গেল।স্তব্ধ যেতেই স্নিগ্ধতা হাফ ছেড়ে বাঁচলো।

আরিয়া অরিত্রি শিকদারের ঘরে বসে আছে।অরিত্রি শিকদার পাইচারি করছেন আরিয়া বিরক্ত হয়ে বলল,
– মম ডেকেছ কেন বলবে তো?

– তুই কিছু দেখিস না? বলতে হবে কেন?

– কি দেখবো?

– মেয়েটা স্তব্ধকে হাত করে ফেলছে সকালের ঘটনাটা ভাব ওদের ব্যবহারে এটাই প্রমাণ হচ্ছে স্তব্ধ ওই মেয়েটাকে বউ হিসেবে মেনে নিচ্ছে।

– মেনে নিলে সমস্যা কি?

– মেনে নিলে ওদের ডিভোর্স করানো সম্ভব হবে না স্তব্ধ হাতের বাইরে চলে যাবে।

– মম তুমি নিজেই তো চাও স্তব্ধ ভালো থাকুক তাহলে ওদের মিল হলে তোমার ছেলেই তো সুখী থাকবে।

– আমার ছেলে শুধু আমার পছন্দের মেয়ের সঙ্গেই সুখী হবে ওই মেয়েকে দ্রুত বিদায় করতে হবে উকিলের সঙ্গে আজ আবার কথা বলবো।
_____________

একটা দিন চলে গেল স্তব্ধ স্নিগ্ধতার সঙ্গে স্বাভাবিক ব্যবহার করলেও স্নিগ্ধতা কোনভাবেই স্বাভাবিক হতে পারছে না স্তব্ধকে দেখলেই কেমন জানি অস্বস্তি হয় লজ্জা লাগে আবার না দেখলেও মনটা বারবার স্তব্ধের কথা ভাবে।

হল ঘরে সবাই বসে আছে রাতুল শিকদার সবাইকে ডেকেছে কিছু বলবেন বলে। সবার উপস্থিতি দেখতে পেয়ে রাতুল শিকদার বলা শুরু করলেন,
– অরিত্রি তোমার ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে দু’দিন পর যেতে হবে ভুলে গেছ?

অরিত্রি শিকদারের মনে পড়তেই বিড়বিড় করে, ‘ছেলের কথা ভাবতে ভাবতে মিলির বিয়ের কথা ভুলেই গেছি।’

রাতুল শিকদার উওর না পেয়ে বললেন,
– কি হলো?

– মনেই ছিল না কবে যাবে?

– আমাদের তো দু’দিন পরেই যাওয়ার কথা।

– হুম

– তাই ভাবলাম এই দু’দিন স্নিগ্ধতা তার বাপের বাড়ি থেকে ঘুরে আসুক সাথে স্তব্ধও যাবে বিয়ের পর তো যাওয়া হয়নি।

– ড্যড!

– তোকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি চুপ থাক যা বলবো তাই শুনবি।

স্তব্ধ করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে,
– এই লোকটাকে বিয়ে করে চরম ভুল করেছ মম আমার জীবন পুরোপুরি তেজপাতা বানিয়ে দিয়েছে।

স্তব্ধ বসা থেকে উঠে চলে যাচ্ছিল রাতুল শিকদার বললেন,
– উঠলি কেন?

– থেকেই বা কি করবো আমার কথার তো কোনো দাম নেই।

– কাল সকালে তোরা বের হবি নতুন জামাই সেজে রেডি থাকিস।

স্তব্ধ রাতুল শিকদারের কথায় পাত্তা না দিয়ে চলে গেল সাথে স্নিগ্ধতাও গেল।অরিত্রি শিকদার বললেন,
– কি শুরু করলে অচেনা জায়গায় স্তব্ধের অস্বস্তি হয়।

– অচেনা জায়গা কোথায়? ওইটা ওর শশুর বাড়ি যেতে যেতে পরিচিত হয়ে যাবে।

– আমার ভাইয়ের বাড়িতে ওই মেয়েটা যাবে কেন?

– কি বলো? ছেলের বউ ছাড়া যাবে কি করে? স্তব্ধ যাবে স্তব্ধের বউ যাবে না এটা কিভাবে সম্ভব তার উপর তোমার ভাই ভাবী বারবার করে বলে দিয়েছে স্তব্ধ আর স্নিগ্ধতাকে যেন একসঙ্গে নিয়ে যাই তারা নতুন বউকে দেখতে চায়।

– হুয়াট! ভাই জানলো কিভাবে স্নিগ্ধতার কথা?

– আমি বলেছি।

– সমস্যা কি তোমার সব জায়গায় স্তব্ধের বিয়ের কথা বলে বেরাচ্ছ কেন? রুশিও কিন্তু ওখানে আসবে।

– কে আসলো গেল তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার ছেলে আর ছেলের বউ সব জায়গায় একসঙ্গে যাবে তোমার আপত্তি থাকলে তুমি একাই গিয়ে বিয়ে খেয়ে আসো আমরা কেউ যাচ্ছি না।

– রাতুল ভালো হচ্ছে না কিন্তু।

– এই কথাটা আমার বলার দরকার তুমি যা শুরু করেছ তা ভালো হচ্ছে না ছোট থেকে ছেলের ভালো মন্দের দায়িত্ব তোমার হাতে ছিল সঠিক ভাবে মানুষ করতে পেরেছ? ভালো শিক্ষা দিয়েছ? কাজ তো একটাই বাপের টাকা উড়ানো আর রাত বিরেতে মাতাল হয়ে বাড়িতে ফেরা, একটা পয়সা রোজগার করতে কত কষ্ট তা তো জানে না জম্মেছে ধনী পরিবারে চলাফেরা তেমন। মুসলিম মা হয়েও আদব-কায়দা নামাজ পড়াও শেখাওনি কয়েকদিন ধরে দেখছি স্নিগ্ধতা মায়ের কারণে নামাজ পড়ে, তুমি কি শেখাবে তোমার নিজের মধ্যেই তো এসব গুন নেই সবসময় নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলে ছেলের বিয়েও ঠিক করেছিলে এক উচ্ছৃঙ্খল মেয়ের সঙ্গে এতে কি তোমার ছেলের ভবিষ্যৎ সুন্দর হবে?শোনো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা হচ্ছে স্থায়ী সম্পর্ক এখানে একজন দায়িত্ব জ্ঞানহীন হলে আরেকজনকে দায়িত্বশীল হতে হয় একজন খারাপ হলে সেই খারাপকে ভালো করার জন্য আরেকজনকে ভালো হতে হয় তোমার ওই উচ্ছৃঙ্খল ছেলের জন্য স্নিগ্ধতাই পারফেক্ট একদিন ঠিকই বুঝবে।

– তুমি আমাকে এসব বলতে পারলে আমি ছেলেকে সঠিক শিক্ষা দেইনি?

– আমাকে নয় নিজের বিবেককে প্রশ্ন করো আর হ্যা আমার ছেলে এবং ছেলের বউয়ের মাঝখানে আসার চেষ্টা করলে তোমাকে আমার মুখোমুখি হতে হবে।

রাতুল শিকদার রাগ দেখিয়ে চলে গেলেন,অরিত্রি শিকদার রাগে গজগজ করতে করতে সোফার সামনের টি-টেবিলটা ভেঙে ফেললেন।আরিয়া মা’কে শান্ত করার চেষ্টা করে,

– শান্ত হও মম এসব ভেঙে লাভ কি?

– তুই শুনিসনি তোর ড্যড কি বলে গেল? আমি আমার ছেলেকে ভালো মন্দ শিখাইনি? ওদের মাঝখানে গেলে তোর বাবার মুখোমুখি হতে হবে ঠিক আছে আমিও দেখে নিব ওই মেয়েটা কিভাবে আমার ছেলের জীবনে টিকে থাকে।

চলবে……

স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-০৬

0

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৬

‘তুই ভুল বুঝছিস রুশি এটা যাস্ট একটা এক্সিডেন্ট স্তব্ধের বিয়ে নাতাশার সঙ্গেই হবে আমি শিঘ্রই ওই মেয়েটার সঙ্গে স্তব্ধের ডিভোর্স করাবো।’

– যা করার কর তুই আমি এই সপ্তাহের মধ্যেই দেশে ফিরছি।

কলটা কেটে গেল,অরিত্রি শিকদার চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। চিৎকার করে আরিয়াকে ডাকতেই আরিয়া চলে আসলো। মায়ের পাশে বসে,
– কি হয়েছে মম?

– রুশি ফোন করেছিল সবকিছু কিভাবে যেন জেনে গেছে।

– সবকিছু জেনেছে!কি জেনেছে?

– স্তব্ধের বিয়ের কথা জেনে গেছে।

– তাতে কি হয়েছে?

– কি হয়েছে মানে? বুঝতে পারছিস না রুশিকে কথা দিয়েছিলাম নাতাশার সঙ্গে স্তব্ধের বিয়ে দিব এখন স্তব্ধের বিয়ে হয়ে গেছে আজই উকিলের সঙ্গে কথা বলতে হবে যা রেডি হয়ে আয় আমরা এখনি বের হব।

– মম কাউকে না জানিয়ে এসব করা ঠিক হবে না।

– তোর কাছ থেকে ঠিক ভুল শিখতে হবে নাকি? যা বলছি তাই কর।

আরিয়া মাথা নাড়িয়ে রেডি হতে চলে গেল।রেডি হয়ে মা-মেয়ে দু’জনে বেরিয়ে গেল নৌসিনকে রাহেলা বেগমের কাছে দিয়ে গেছে।

স্নিগ্ধতা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে স্তব্ধ সোফায় বসে মোবাইল টিপছে। গতকাল রাতে আরিয়া আর স্তব্ধ মিলে স্নিগ্ধতার মাথায় পানি ঢেলেছে ওষুধ খাইয়েছে জ্বরের ঘোরেই,এখন তেমন জ্বর নেই তবে স্তব্ধ বিছানা থেকে নামতে নিষেধ করেছে। স্নিগ্ধতা করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

– আমি এখন সুস্থ তবুও কেন ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছেন না?

– পুরোপুরি সুস্থ নও বিশ্রাম করো।

– এভাবে বসে থাকলে আরও অসুস্থ হয়ে যাব।

– যেতে দিতে পারি একটা শর্তে।

– কি শর্ত?

– আমার প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে হবে।

– ঠিক আছে বলুন।

মোবাইল রেখে স্নিগ্ধতার কাছাকাছি এসে বসে স্তব্ধ জানতে চাইল,
– আদ্রিককে তুমি কিভাবে চেনো?

স্নিগ্ধতার হাস্যজ্জল মুখটা মলিন হয়ে গেল।ক্ষীণ স্বরে বলল,
– আমরা এক ভার্সিটিতে পড়তাম উনি আমার দুই ব্যাচ সিনিয়র ছিলেন ওখান থেকেই পরিচয়।

স্তব্ধের যেন এই উওরটা পছন্দ হলো না কপাল কুঁচকে বলল,
– ওহ তবে তোমার মুখ দেখে কেন জানি মনে হচ্ছে অন্য কোনো ব্যাপার আছে।

– অন্য কি থাকবে?

– না কিছু না সত্যি বললে ভালো।

– আপনার সঙ্গে কিভাবে পরিচয়?

– ড্যড এর ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বন্ধুর ছেলে।

– ওহ। এবার আমি যাই?

– কোথায় যাবে?

– নিচে।

– নিচে কি কাজ?

স্নিগ্ধতা করুন চোখে তাকালো স্তব্ধ দৃষ্টি সরিয়ে,
– যাও।

স্নিগ্ধতা দৌড়ে চলে গেল স্তব্ধ পেছন থেকে বলল,
– আস্তে যাও পড়ে যাবে তো….

স্নিগ্ধতা রাহেলা বেগমের ঘরে এসে বিছানায় বসে পড়লো। রাহেলা বেগম ছোট নৌসিনের সঙ্গে খেলছিলেন,নৌসিন স্নিগ্ধতাকে দেখতেই দৌড়ে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বলল,

– মামী কুতায় গেথিলে?

– ঘরে ছিলাম নৌসি মামণি।

– আসো আমরা খেলি।

স্নিগ্ধতাও নৌসিনের সঙ্গে খেলতে লাগলো, তারপর খেলা শেষে নৌসিনকে গোসল করিয়ে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। রাহেলা বেগম বললেন,

– শুনলাম তোর নাকি জ্বর এসেছিল?

– হুম এখন আর নেই আমি সুস্থ।

– দাদুভাই সেবা যত্ন করেছে নাকি?

– হুম আপুও ছিল।
_______________

‘মি. শাহিল দু-তিন দিনের মধ্যেই আমার ছেলের ডিভোর্সটা করাতে চাই প্লিজ আপনি তাড়াতাড়ি এর ব্যবস্থা করুন যত টাকা লাগে দিব।’

– আপনার ছেলে আর ছেলের বউকে এখানে আসতে হবে তাদের সঙ্গে কথা না বলে কিভাবে কি।

– কারো সঙ্গে কথা বলার দরকার নেই আমি যা বলবো আমার ছেলে তাই শুনবে।

– কিন্তু..

একটা টাকার বান্ড্যালে মি.শাহিলের দিকে এগিয়ে দিয়ে অরিত্রি শিকদার বললেন,
– ডিভোর্স পেপার তৈরি করে রাখবেন আমি লোক পাঠিয়ে দিব নেওয়ার জন্য সাইন হয়ে গেলে বাদ বাকি কাজ আপনার।

অরিত্রি শিকদার মি.শাহিলের অফিস থেকে বেরিয়ে গেলেন আরিয়াও সাথে ছিল। নিজের মা’কে আজ অচেনা লাগছে তার কাছে। গাড়ির কাছে আসতেই আরিয়া বলল,

– মম তুমি বাড়িতে চলে যাও আমার একটা কাজ আছে কাজটা করে চলে আসব।

– কি কাজ? আমিও যাই চল।

– না মম তোমায় কষ্ট করে যেতে হবে না তুমি বাড়িতে যাও।

– আচ্ছা সাবধানে যাস।

অরিত্রি শিকদারের গাড়ি চোখের আড়াল হতেই আরিয়া তার গন্তব্যে চলে গেল।

‘স্টুপিড কোথাকার সামান্য একটা কাজও করতে পারো না শুধু বলেছিলাম স্নিগ্ধতাকে বিয়ে করতে কিন্তু তাও করতে পারলে না কি দরকার ছিল বিয়ের আগের দিন আকাম করতে?’

– আমার কাজ সম্পর্কে পুলিশ জানলো কিভাবে এটাই তো বুঝতে পারছি না স্যার।কত বড় বড় ডিল করলাম কাক পক্ষীও টের পেল না আর এই ছোট একটা কাজের জন্য গেলাম খবর পেয়ে গেল।

– সত্যিই তো পুলিশ জানলো কিভাবে? কে জানালো?

– স্যার আমার মনে হয় কি জানেন।

– কি?

– সব চাল ওই স্নিগ্ধতার, মেয়েটা অনেক চালাক ওই এসব করেছে।

– স্নিগ্ধতা এসব কখনও করতে পারবে না ওর এতটা সাহস নেই এর পেছনে অন্য কারো হাত আছে।

– সে কে স্যার?

– স্টুপিড আমি জানলে কি চুপ করে বসে থাকতাম? বিয়ে যখন হলোই অন্য কারো সঙ্গে হতে পারতো তা না হয়ে স্তব্ধ শিকদারের সঙ্গে কেন বিয়ে হতে হলো।

– স্নিগ্ধতাকে কেউ বাঁচাতে চাইছে।

– হুম তুমি তোমার মুখ বন্ধ রাখো তোমাকে দেশের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করে ফেলেছি ভোরের আলো ফুটার পর যেন এই দেশে দেখতে না পাই।

– আচ্ছা স্যার আসি তাহলে।

ভাঙাচোরা গোডাউন থেকে বেরিয়ে গেল রিয়াদ।যাকে স্যার বলে সম্বোধন করছিল সেই মাস্ক পরিহিত ব্যক্তিটিও কিছুক্ষণ পর চলে গেল।
_____________

‘আরিয়া তুই এখানে! কোনো কিছু হয়েছে নাকি?’

– কি হয়নি তাই বলো ড্যড।

– কেন?

– মম আজ উকিলের কাছে গেছিল ভাই আর স্নিগ্ধতার ডিভোর্স করাতে এডভান্স টাকাও দিয়ে এসেছে।

– কিহ!

– আমাকে নিয়ে গেছিল সাথে করে,মমকে দেখে বুঝতে পারলাম ওদের ডিভোর্স করিয়েই ছাড়বে দু’দিনের মধ্যে।

আরিয়া সোজা অফিসে চলে এসেছে রাতুল শিকদারের সঙ্গে দেখা করতে।আরিয়াকে আলাদা ভাবে রাতুল শিকদার বুঝিয়েছেন যার কারণে আরিয়াও স্নিগ্ধতাকে মেনে নিয়েছে। রাতুল শিকদার কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,

– এত কাঠ খড় পুড়িয়ে তোর ভাইয়ের বিয়ে দিলাম আর তোর মম কিনা এত সহজে ডিভোর্স করিয়ে দিবে? তোর মম এখনও আমায় চিনতে পারেনি তুই ওই উকিলের ঠিকানাটা আমায় দিয়ে যাস তোর মম যেন জানতে না পেরে তুই যে আমাকে সব বলেছিস।

– ওকেহ ড্যড কোনো প্রয়োজন হলে বলো আমি আছি।

– তোর প্রয়োজন হবে খুব শিঘ্রই।

– প্রথম প্লান কি?

– তোর ভাইকে আমার বউমার প্রেমে ফেলতে হবে তারপর যা করার তোর ভাই করে নিবে ছেলেকে চিনি তো।

– তাহলে তো অনেক খাটতে হবে।

– তা তো হবেই বাড়িতে যা এবার তোর মম আবার চিন্তা করবে।

– আসছি আমি বাড়িতে দেখা হবে।

– হুম।

রাতুল শিকদার রহস্যের হাসি হাসলেন। একজনকে ফোন করে গাড়ি বের করতে বলে অফিস থেকে বেরিয়ে গেলেন।

আরিয়া বাড়ি পৌঁছে গেছে, বাড়িতে এসে ঘুমন্ত নৌসিনকে দেখে স্বস্তি পেল।স্নিগ্ধতা আরিয়ার খাবার ঘরেই দিয়ে গেছে। স্তব্ধ আজ অফিসে যায়নি কারণটা মূলত স্নিগ্ধতা।স্নিগ্ধতার জ্বর এসেছিল বলে অনেক চিন্তায় পড়ে গেছিল তাই বাড়ি থেকে বের হয়নি অথচ তাকেই এখন দেখতে পাচ্ছে না। স্তব্ধের রাগ ক্রমশ বাড়ছে এভাবে বাড়িতে একা একা বসে থাকতে বিরক্ত লাগছে বিড়বিড় করে বলছে, ‘যার জন্য বাড়ির বাইরে গেলাম না সেই এখন ঘরের বাইরে কতবড় সাহস আমায় ইগনোর করছে স্তব্ধ শিকদারকে ইগনোর করছে এর শোধ আমি তুলবোই।’

স্তব্ধ গিয়ে তৈরি হয়ে নিলো স্নিগ্ধতা ঘরে এসে স্তব্ধকে এভাবে দেখে,
– কোথাও যাচ্ছেন আপনি?

স্তব্ধ শুনেও না শোনার ভান ধরে রইলো।স্নিগ্ধতা স্তব্ধের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়ে,
– কিছু বলছেন না কেন কোথাও কি যাচ্ছেন?

– হুম।

– আপনি তো আজ কোথাও যাবেন না বলেছিলেন।

– এখন যাব একা একা ভালো লাগছে না।

– একা কোথায় এই যে আমি আছি।

স্তব্ধ ব্রু কুঁচকে স্নিগ্ধতাকে ভালো করে দেখে নিয়ে বলল,
– তোমাকে দরকার নেই যাও গিয়ে দিদান আর নৌসির কাছে বসে থাকো ওরাই তোমার সব।

স্তব্ধ ওয়ালেট নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল স্নিগ্ধতা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অবাক দৃষ্টিতে,
– আমাকে রাগ দেখালো কেন আমি কি করলাম?
.
.
রাত হয়ে গেছে স্তব্ধ বাদে সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে।স্তব্ধ এখনও বাড়িতে ফেরেনি, রাতুল শিকদার অরিত্রি শিকদারের দিকে তাকিয়ে,

– তোমার ছেলে কি আবারো রাত করে বাড়ি ফেরা শুরু করছে নাকি? এখনও বাড়িতে ফিরলো না অফিসেও গেল না।

– আমি কি করে জানবো ছেলের ব্যাপারে সব সিদ্ধান্ত তুমিই তো নাও।

– এখন তো কেউ কিছুই জানবে না।

সবাই চুপচাপ খাবার খেয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।স্নিগ্ধতার অনেক চিন্তা হচ্ছে স্তব্ধের জন্য তাই সে আর খেলো না স্তব্ধের অপেক্ষায় বসে রইল। এক ঘন্টা বসে থাকার পরেও স্তব্ধের ফেরার নাম নেই সালেহা এসে বলল,

– তুমি খাইয়া নেও মা স্তব্ধ বাবা খেয়েই আসবো।

– অপেক্ষা করতে তো সমস্যা নেই।

– স্তব্ধ বাবা বিয়ার আগেও অনেক দেরি কইরা বাড়ি ফিরত রাতে খাইয়া আসতো তাই কইলাম।

– ওহ আমি ঘরে গেলাম তাহলে।

– খাইবানা?

– না।

স্নিগ্ধতা না খেয়েই ঘরে চলে গেছে এমন দুয়েক বেলা না খেয়ে থাকার অভ্যাস আছে তার এমন অনেক দিন গেছে কোনো কাজে ভুল হলে শাহিলী ওয়াজেদ তাকে খেতে দেয়নি। স্তব্ধের ঘরে ছোট খাটো একটা বুকসেল্ফ আছে সেখান থেকে একটা বই নিয়ে পড়া শুরু করলো।

সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরাঘুরি করে রাতে ক্লাবে গিয়ে ইচ্ছে মতো ড্রিংকস করেছে স্তব্ধ। আগেও খেতো তবে বিয়ের পর স্নিগ্ধতার কথা ভেবে খায়নি কিন্তু আজ স্নিগ্ধতার উপর রাগ করেই আবারো খেলো কেন এত রাগ নিজেরই অজানা।

বাড়িতে ফিরেছে স্তব্ধ দরজা খুলে দিয়েছে সালেহা।স্তব্ধ চুপচাপ এলোমেলো পায়ে নিজের ঘরে চলে গেল সালেহা বুঝতে পেরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলেন।

এখনও বই পড়ছে স্নিগ্ধতা ঘুম গুলো হারিয়ে গেছে।স্নিগ্ধতা ছোট থেকেই বই প্রেমি বই পেলে আর কোনদিকে খেয়াল থাকে না।স্তব্ধ ঘরে এসে জোরে দরজা আটকে দিতেই স্নিগ্ধতা কিছুটা ভয় পেয়ে গেল বুকে থু থু দিয়ে আবারো বইয়ের দিকে তাকালো তবে মনোযোগ স্তব্ধের দিকে আড়চোখে স্তব্ধের কর্মকাণ্ড দেখছে। স্তব্ধ এলোমেলো পায়ে বিছানায় এসে মাথা নিচু করে বসে আছে একটু পর স্নিগ্ধতার দিকে চোখ গেল তার। দৃষ্টি সরিয়ে বিছানায় ঢপাস করে শুয়ে পড়ল,স্নিগ্ধতা বইটা রেখে স্তব্ধকে পরখ করে দেখে নিলো।

– এভাবে শুয়ে পড়লেন কেন? ফ্রেশ হয়ে আসুন যান।

স্তব্ধ চোখ মেলে তাকাল স্নিগ্ধতার দিকে তারপর আচমকা স্নিগ্ধতাকে টেনে নিজের পাশে শুইয়ে দিয়ে স্নিগ্ধতার মুখের দিকে ঝুঁকে আছে।স্নিগ্ধতা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছে কিন্তু স্তব্ধের থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারছে না।স্তব্ধ নেশালো কন্ঠে বলল,

– স্নিগ্ধ বেইবি নাড়াচাড়া করো না একটু দেখতে দাও তো।

– কি!

– তোমাকে, তুমি এত সুন্দর কেন? জানো তোমার নামের সঙ্গে তোমার মুখশ্রীর অনেক মিল আছে।

– ওহ।

– তুমি একটা চোর।

– কিহ!আমি চোর? কি চুরি করেছি?

– আমার মন চুরি করেছ।

– এ্যা!

– হু তোমাকে দেখার পর থেকে আমার মন আর আমার কথা শুনে না তুমি আগে কেন আসলে না?

– সত্যি করে বলুন তো কি খেয়ে এসেছেন?

– ইয়াম্মি জুস খেয়েছি।

– জুস খেলে মানুষ উল্টো পাল্টা বকে?

– তুমি খাবে ইয়াম্মি জুস? জুসটা অনেক টেস্টি, আসো তোমাকে উম্মাহ দেই।

– একদম না মুখে এত গন্ধ কেন কতদিন ব্রাশ করেন না?

– উম পাঁচদিন।

– আবারো ভুল কথা বলছে সরুন তো।

– সরলেই তুমি পালিয়ে যাবে আমায় রেখে।

– যাব না।

চলবে……..

স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-০৫

0

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৫

‘গতকাল বলেছিলাম অস্বীকার করেছ আজ কি বলবে? আজ প্রমাণ তোমার সামনে তুমি নিজেই আমায় জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছ।

– আমি ইচ্ছে করে ধরিনি।

– আবার মিথ্যে বলছো, ওয়েট তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো? শুনো আমাকে তোমার জড়িয়ে ধরার ইচ্ছে হলে বলতেই পারতে আমি নিজে তোমায় জড়িয়ে ধরতে হেল্প করতাম কিন্তু তুমি এভাবে লুকিয়ে কেন ধরলে? এখন আমি সবাইকে মুখ দেখাবো কি করে একটা মেয়ে আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে রাতের আঁধারে জড়িয়ে ধরে শুয়ে ছিল কি লজ্জা কি লজ্জা।

স্তব্ধ কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল স্নিগ্ধতা হা করে এখনও ওইদিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে কিছুক্ষণ আগের কথা। সকালে স্তব্ধের ঘুম আগে ভেঙেছিল ঘুম ভাঙতেই স্নিগ্ধতার এক হাত নিজের উপর দেখে চেঁচিয়ে উঠে স্তব্ধ। স্তব্ধের চেঁচামেচির শব্দে স্নিগ্ধতা জেগে যায় আর তারপরেই কথাগুলো বলে।

স্নিগ্ধতা গালে হাত দিয়ে বসে বিড়বিড় করছে,’কি নির্লজ্জ ড্রামাবাজ ছেলে কি বলে গেল আমি উনার সুযোগ খুঁজছি কাউকে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবে না ভুলে না হয় হাতটা চলে গেছিল তাই বলে এসব বলবে এছাড়া আমি তো তার বউ নাকি।’

– আমায় কি বকা দিচ্ছো?

স্নিগ্ধতা ঘাবড়ে গিয়ে তাকাতেই স্তব্ধকে দেখতে পেল।লাল টি-শার্ট কালো টাউজার পরিহিত,চুল গুলো ভেজা কপালে পড়ে আছে হাতে সাদা টাওয়াল।স্নিগ্ধতা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্তব্ধের দিকে,স্তব্ধ টাওয়ালটা স্নিগ্ধতার দিকে ছুড়ে দিয়ে,

– আমাকে হট লাগছে তাই না?

স্নিগ্ধতা টাওয়াল হাতে নিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে,
– এ্যা!

– এ্যা নয় হ্যা যাও গোসল করে এসো।

– গোসল কেন করবো?

– শরীরের জীবাণুগুলোকে দূর করতে হবে না।

– জীবাণু!

– হুম দ্রুত যাও।

স্নিগ্ধতা মাথা নাড়িয়ে গোসল করতে চলে গেল।স্তব্ধ মাথা মুছতে মুছতে আনমনে বলল,’একটা মেয়ে এমন শান্ত শিষ্ঠ কিভাবে হয়?এত কিছু বললাম একটুও ঝগড়া করলো না ইন্টারেস্টিং গার্ল।’
_______________

ব্লাক প্যান্ট,ব্লাক ব্লেজার হুয়াইট শার্ট আর গলায় টাই পড়ে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গেছে স্তব্ধ। নাস্তা করে রাতুল শিকদারের সঙ্গে অফিসে বের হয়ে গেল। স্তব্ধকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে নিজের কেবিনে চলে গেলেন রাতুল শিকদার।

‘আপু ভেতরে আসবো?

– হুম এসো।

স্নিগ্ধতা চায়ের কাপ আরিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে,
– আপু চা টা খেয়ে নিন।

– আমি তো চা আনতে বলিনি।

– সালেহা আন্টির কাছে শুনলাম আপনার নাকি মাথা ধরেছে তাই কড়া করে চা বানিয়ে আনলাম খেলেই কমে যাবে।

– সাংসারিক মেয়ে।

স্নিগ্ধতা ট্রে নিয়ে চলে যাচ্ছিল পেছন থেকে আরিয়া ডাক দিয়ে,
– কোথায় যাচ্ছো?

– নিচে।

– কোনো কাজ আছে?

– না।

– তাহলে বসো তোমার সঙ্গে ভালো করে কথাই হলো না আমার ভাইয়ের বউ বলে কথা তোমার সঙ্গে ভালো করে পরিচিত হই।

স্নিগ্ধতা মাথা নিচু করে আরিয়ার পাশে গিয়ে বসলো। আরিয়া জানতে চাইল,
– তুমি কি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছ?

– বিবিএ

– কোন বিষয়ে?

– ফাইন্যান্স।

– ভালো তো।

কিছুক্ষণ কথা বলে স্নিগ্ধতা চলে গেল।স্নিগ্ধতা এমনিতে অনেক শান্ত শিষ্ট মেয়ে কেউ কিছু না বললে সহজে কথা বলে না।
______________

রাতুল শিকদারকে বলে অফিস থেকে বেরিয়ে যায় স্তব্ধ। হাতে অনেকগুলো শপিং ব্যাগ নিয়ে বিকেলে বাড়িতে ঢুকলো। আশেপাশে ভালো করে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে,’কেউ নেই দেখছি বাঁচা গেল।’

নিজের ঘরের দিকে যাওয়া ধরলো স্তব্ধ পেছন থেকে অরিত্রি শিকদার ডাক দিয়ে,
– কিরে তোর হাতে ব্যাগ গুলো কিসের?

স্তব্ধ শুকনো ঢুক গিলে মেকি হেসে,
– শপিং ব্যাগ।

– তা তো জানি কিন্তু কার জন্য এত শপিং করেছিস?

স্তব্ধ কিছু একটা ভেবে মনে মন বলছে,’সত্যিটা বললেই মম ক্ষেপে যাবে।’

– চুপ করে আছিস কেন?

– আমার জন্যই করেছি এখন কি নিজের জন্যও কিছু কিনতে পারবো না মম?

– পারবি না কেন আমি এমনিতেই জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা ঘরে যা।

– হু।

স্তব্ধ ঘরে এসে বিছানায় ব্যাগ গুলো রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেল।কয়েক মিনিট পর ঘরে এসে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে ডাকা শুরু করলো,
– স্নিগ্ধ…..স্নিগ্ধ……

স্নিগ্ধতা বেলকুনি থেকে বের হয়ে,
– জ্বি বলুন।

স্তব্ধ কপাল কুঁচকে,
– তুমি এতক্ষণ বেলকুনিতে ছিলে অথচ ঘরে আমি এলাম টের পাওনি সত্যি করে বলোতো তোমার মাথায় কি সমস্যা আছে?

– এমন করে বলছেন কেন!

– এই ব্যাগ গুলোতে কিছু শাড়ি আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আছে সব তোমার যাও গুছিয়ে রাখো।

স্নিগ্ধতা সব গুছাতে লাগলো স্তব্ধ গালে হাত দিয়ে স্নিগ্ধতার দিকে তাকিয়ে আছে। গুছানো শেষ হতে স্তব্ধ আবারো ডাক দিয়ে,
– স্নিগ্ধ শুনো।

– বলুন।

আরেকটা ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে,
– এই শাড়ি আর গহনা পড়ে সন্ধ্যায় রেডি হয়ে থেকো আমরা বাইরে যাব।

– বাইরে কেন যাব?

– পার্টি আছে আমার ফ্রেন্ডরা তোমায় দেখতে চায়।

– আচ্ছা।

স্নিগ্ধতা ব্যাগটা আলাদা রেখে রাহেলা বেগমের ঘরের দিকে গেল।স্তব্ধ মোবাইল নিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে।

রাহেলা বেগম বসে বসে পান চিবুচ্ছেন স্নিগ্ধতা উনার পাশে বসে,
– দিদান এত পান খাওয়া ভালো না।

– অভ্যাস হয়ে গেছে রে নাত বউ তুই খাবি একটা বানিয়ে দিব?

– উহু আমি তোমার মতো অভ্যাস বানাতে চাই না।

রাহেলা বেগম হেসে,
– দাদুভাই কোথায়?

– ঘরে।

– তাহলে তুই এখানে কি করছিস? যা ঘরে যা।

– পরে যাব।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল স্নিগ্ধতা স্তব্ধের দেওয়া শাড়ি আর গহনা পড়ে রেডি হয়ে নিলো। স্তব্ধ আগেই রেডি হয়ে গাড়ির কাছে গেছে।অরিত্রি শিকদার প্রথমে রাগ করলেও আরিয়া তাকে ম্যানেজ করে নিয়েছে।

স্তব্ধ গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মোবাইল টিপছে স্নিগ্ধতা স্তব্ধের সামনে এসে দাঁড়িয়ে,
– আমি রেডি।

স্তব্ধ মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে স্নিগ্ধতার দিকে তাকাতেই চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেছে।স্নিগ্ধতার পরনে গাড় সবুজ রঙের জরি বসানো শাড়ি সাথে ম্যাচিং গহনা এবং হিজাব পরা। স্তব্ধের এমন চাহনিতে স্নিগ্ধতার অস্বস্তি লাগছে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

– এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? দেখতে কি খারাপ লাগছে?

– তোমাকে দেখতে খারাপ লাগবে কেন? তুমি আকাশ থেকে নামা অপ্সরী আহা আমার বউটা কি সুন্দরী।

স্নিগ্ধতা থতমত খেয়ে গেল লাজুক দৃষ্টি দিয়ে,
– কি বলেন এগুলো?

স্তব্ধ নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে,
– যাও গাড়িতে গিয়ে বসো দেরি হয়ে যাচ্ছে।

স্নিগ্ধতা গাড়িতে গিয়ে বসলো স্তব্ধ চালকের জায়গায় বসে গাড়ি চালানো শুরু করলো।গাড়ি চালানোর ফাঁকে আড়চোখে বারবার স্নিগ্ধতাকে দেখছে কিন্তু স্নিগ্ধতার কোনো খেয়াল নেই সে তো জানালা দিয়ে বাইরের সৌন্দর্য দেখতে ব্যস্ত। স্তব্ধের মন আজ নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও বারবার স্নিগ্ধতাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। গাড়ি এসে গন্তব্যে থামলো স্তব্ধ নেমে স্নিগ্ধতাকেও নামিয়ে দিল।

ফাইভ স্টার হোটেলে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে বাইরের দৃশ্যটা অনেক সুন্দর।স্তব্ধ স্নিগ্ধতার হাত ধরে,
– ভেতরে চলো।

ভেতরে প্রবেশ করে স্নিগ্ধতা আরও চমকে গেছে চারিদিকে মানুষজন ভর্তি সাজানো গুছানো,বিভিন্ন ফ্লোরে পার্টি চলছে। ওরা দুতলায় গেল, স্তব্ধের সব বন্ধু-বান্ধব এবং তাদের গার্লফ্রেন্ডরা এসেছে।স্তব্ধ আর স্নিগ্ধতা যেতেই বন্ধুরা এগিয়ে এসে একসঙ্গে বলল,

– কংগ্ৰাচুলেশন।

স্তব্ধ এবং স্নিগ্ধতা মুচকি হাসলো।রাজ এগিয়ে এসে,
– ভাবী তো অনেক সুন্দর।

স্নিগ্ধতা যেন লজ্জা পেয়েছে স্তব্ধ চোখ রাঙানি দিতেই রাজ থেমে গেল এদের মধ্যে স্তব্ধ আর নিলয় হচ্ছে বিবাহিত রাজ অবিবাহিত সিঙ্গেল বাকিদের গার্লফ্রেন্ড আছে ।নিলয় প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করেছে, এতক্ষণ এদের লাভ স্টোরির কথাই স্নিগ্ধতা মনোযোগ সহকারে শুনছিল। সবাই খুব দ্রুত স্নিগ্ধতার সঙ্গে ভাব জমিয়ে নিয়েছে এমনিতে স্তব্ধের বন্ধুরা মিশুক প্রকৃতির।

স্তব্ধ সবাইকে,সাথে স্নিগ্ধতাকেও দেখছে আর ভাবছে,’বিয়ে হয়েছে তিনদিন হলো একদিনও আমার সামনে হাসতে দেখলাম না ঝগড়া করার জন্যও কথা বলল না অথচ আমার বন্ধু আর তাদের গার্লফ্রেন্ড বউদের সঙ্গে কি হেসে কথা বলছে আমি কেউ না মনে হচ্ছে এরাই আপন।’

নিলয় স্তব্ধকে কনুই দিয়ে ধাক্কা মে’রে
– বউয়ের দিকে তাকিয়ে কি ভাবছিস?

– কই কিছু না তো।

– খুব তো বিয়ে করবি না বলেছিলি কোনো মেয়ে ছুঁতে আসলে কত থাপ্পড় মে’রেছিস আর এখন রাতারাতি এক মেয়ের জামাই হয়ে গেলি।

– সবটা জেনেও আজেবাজে বকিস কেন?

– আঙ্কেলের সঙ্গে একদিন দেখা করে গালে চুমু খাবো।

– কেন!

– তোকে এভাবে ট্রাপে ফেলে বিয়ে করানোর জন্য ভাবী কিন্তু সবদিক দিয়ে বেশ ভালো।

– দেখাই তো হলো আজকে এত তাড়াতাড়ি কিভাবে বুঝলি?

– এই নিলয়ের মানুষ চিনতে সময় লাগে না বুঝলি।

– এই জন্যই প্রথম প্রেমে ছ্যাকা খেয়েছিলি।

– আস্তে বল নায়রা শুনতে পেলে ঝাটা পেটা করবে।

– করুক তোর ঝাটাই দরকার।

– বন্ধু হয়ে এসব বলিস যা প্রমিস করলাম একদিন তোকে তোর বউয়ের হাতে মার খাইয়েই ছাড়বো।

– আমাকে মা’রবে তাও আবার স্নিগ্ধ! হাসি পাচ্ছে তবুও তুই এই আশায় বেঁচে থাক।

রাজ ব্রু নাচিয়ে,
– তোরা দু’জন কি ফিসফিস করছিস?

– তোকে বলবো কেন?(নিলয়)

– আমি না তোদের বন্ধু আমাকে বললে কি সমস্যা?

– এগুলো বিবাহিত পুরুষের গোপন কথা তোর শোনার দরকার নেই।(নিলয়)

– আজ বিবাহিত না বলে।

অনেকক্ষণ গল্প করে তারপর সবাই একসঙ্গে রাতের খাবার খেল। রাত এগারোটা বাজে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে স্তব্ধ আর স্নিগ্ধতা সেখান থেকে বের হয়ে গাড়ির কাছে আসলো স্নিগ্ধতাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে আজকে সে অনেক হ্যাপি।

গাড়িতে উঠতে যাবে সেসময় পেছন থেকে কেউ জোরে ডাক দিল,
– এই স্তব্ধ….

স্তব্ধ আর স্নিগ্ধতা দু’জনেই পেছনে ঘুরলো, আগন্তুক লোককে দেখে স্তব্ধ হালকা হাসলো স্নিগ্ধতার কপাল কুঁচকে এসেছে মুখে ভয় স্পষ্ট স্তব্ধের শরীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে ডান হাত জড়িয়ে ধরে আছে, স্নিগ্ধতার এমন কাজে বিষ্মিত হয়ে গেল স্তব্ধ। লোকটি এগিয়ে এসে,

– স্তব্ধ তুমি এখানে?

স্তব্ধ হাসার চেষ্টা করে উওর দিল,
– একটা পার্টি ছিল বন্ধুদের সঙ্গে তাই এসেছিলাম কিন্তু তুমি এখানে?

– সেইম কারণ।

স্নিগ্ধতার ভয়টা ক্রমশ বাড়ছে লোকটা স্নিগ্ধতার দিকে তাকাতেই স্তব্ধ হেসে বলল,
– এ হচ্ছে আমার ওয়াইফ স্নিগ্ধতা আর স্নিগ্ধতা এ হচ্ছে..

– বলতে হবে না ও আমাকে খুব ভালো করেই চেনে তাই না স্নিগ্ধা?

স্তব্ধ অবাক হয়ে গেছে স্নিগ্ধতা আরও শক্ত করে স্তব্ধের হাত আঁকড়ে ধরলো স্নিগ্ধতার এমন ব্যবহারে স্তব্ধের মনে অনেক প্রশ্নের সঞ্চয় হয়েছে।স্তব্ধ জানতে চাইল,
– তোমাকে চেনে মানে?

– হুম আমরা দু’জন দু’জনকে চিনি কিভাবে চিনি সেটা না হয় স্নিগ্ধার কাছ থেকেই জেনে নিও আজ তাহলে আসি অন্য একদিন দেখা হবে।

– ওকেহ।

লোকটি চলে যেতেই স্নিগ্ধতাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে স্তব্ধ বলল,
– তুমি একে চেনো?

– ও হচ্ছে আদ্রিক।

– কিভাবে চেনো আর এমন করছো কেন?

– কেমন করছি? বাড়িতে চলুন না এখানে ভালো লাগছে না।

স্তব্ধকে আর কিছু বলতে না দিয়ে স্নিগ্ধতা গাড়িতে উঠে বসলো।স্নিগ্ধতার এমন ব্যবহারে স্তব্ধ চুপ হয়ে আছে নিজেও গাড়িতে উঠে চালানো শুরু করলো আর একটু পর পর তাকিয়ে স্নিগ্ধতার ছটফটানি দেখছে। বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই স্নিগ্ধতা গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত ভেতরে ঢুকে গেল।

গাড়ি গ্যারেজে রেখে স্তব্ধও ঘরে চলে এলো এর মধ্যেই স্নিগ্ধতা ফ্রেশ হয়ে গেছে।স্তব্ধও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো এতক্ষণে স্নিগ্ধতা বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়েছে। স্তব্ধও চুপচাপ লাইট নিভিয়ে তার পাশে শুয়ে পড়লো মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি মা’রছে।
___________

অনেক বেলা হয়েছে স্তব্ধ ঘুম থেকে উঠে জিম করে গোসল সেরে ফেলল কিন্তু স্নিগ্ধতার এখনও ঘুম থেকে উঠার নাম নেই।স্তব্ধ ঘুমন্ত স্নিগ্ধতার পাশে গিয়ে বসে ঘুম ভাঙানোর জন্য অনেকবার ডাকল কিন্তু স্নিগ্ধতা উঠলো না গালে হাত দিতেই চমকে গেল। জ্বর এসেছে স্নিগ্ধতার শরীর অনেক গরম স্তব্ধ ভয় পেয়ে গেছে দ্রুত আরিয়াকে ডেকে আনলো।

চলবে………

স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-০৪

0

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৪

‘এসব কি রান্না করেছিস? তুই জানিস না বাড়িতে কেউ এসব খায় না।

– আমি কেন রাঁধতে যাব? এগুলো তো নতুন বউ রান্না করেছে।

– ওই মেয়েটা এসব করেছে! বাড়িতে কি এখন ওর নিয়ম চলবে নাকি?

সবাই সকালে নাস্তা করার জন্য খাবার টেবিলে বসলেন। রাহেলা বেগম বললেন,
– কি হয়েছে বউমা সকাল সকাল রাগারাগী করছো কেন?

– দেখুন তো মা এসব কি রান্না করেছে আমরা কি সকালে কেউ এসব খাই?

– আসলে আমি জানতাম না আপনারা এগুলো খান না।(স্নিগ্ধতা)

– জানো না যখন রান্নাঘরে গেলে কেন?

স্নিগ্ধতা মাথা নিচু করে আছে,স্তব্ধ বিরক্ত হয়ে বলল,
– মম খাবার নিয়ে বকাঝকা করার কি দরকার ভুল করে যেহেতু রান্না করেই ফেলেছে খেয়ে নাও বেশি সমস্যা হলে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে নিও।

অরিত্রি শিকদার খেয়ে ফেলবো লুকে ছেলের দিকে তাকালেন স্তব্ধ শুকনো ঢুক গিলে নিজেই বেরে খাওয়া শুরু করলো আর রাতুল শিকদার মুখ টিপে হাসছেন।

রাহেলা বেগম খাবারের দিকে চোখ বুলিয়ে,
– রুটি,কয়েক পদের বাজিও আছে দেখছি বেশ তো অনেকদিন হলো এগুলো খাই না স্যান্ডউইচ খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে গেছি নাত বউ আমায় দে।

স্নিগ্ধতা রাহেলা বেগম এবং রাতুল শিকদারকে বেরে দিল তারা অনেক প্রশংসা করলো। রাতুল শিকদার অরিত্রি শিকদারকে বললেন,
– অনেক মজাদার খাবার অরিত্রি তুমি বসো স্নিগ্ধতা তোমার শাশুড়িকে দাও।

– আমি খাবো না।

– বউমা খেতে বসো (রাহেলা বেগম)

অরিত্রি শিকদার বাধ্য হয়ে খেতে বসলেন। রাতুল শিকদার খাওয়া শেষ করে বললেন,
– স্তব্ধ নাস্তা সেরে রেডি হয়ে নে আজ থেকে তুই অফিসে যাবি।

– এই বছর কোনো অফিসেই আমি যাচ্ছি না।

– অফিসে না গেলে তোর একাউন্ট বন্ধ করে দিব গাড়ির চাবিগুলোও সিন্ধুকে তালা দিয়ে রেখে দিব।

স্তব্ধ অসহায় দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকালো কিন্তু অরিত্রি শিকদার কিছু বললেন না তাই স্তব্ধই বলল,
– ব্ল্যাকমেইল ছাড়া আর কিছু পারোনা?

– তোমাকে সোজা করতে এছাড়া তো কোনো উপায় দেখছি না।

– আজ নয় কাল থেকে যাব।

– আচ্ছা আমার ঘরে এসো কথা আছে অরিত্রি তুমিও এসো ছেলের গুনের খবর জানাবো।

– কেন কি করেছে স্তব্ধ?(অরিত্রি শিকদার)

– বলবো মা-ছেলে উপরে আসো।

রাতুল শিকদার ঘরে চলে গেলেন অরিত্রি শিকদার চোখ পাকিয়ে,
– কি করেছিস?

স্তব্ধ মাথা নাড়িয়ে,
– উহু কিছু করিনি।

– তোর ড্যড যে বলে গেল?

– তোমার হাজব্যান্ড তো হুদাই আমার পেছনে লেগে থাকে এই লোকটাকে বিয়ে করলে কেন? আমার জীবনটা তেজপাতা করে দিচ্ছে।

স্তব্ধ রাতুল শিকদারের ঘরের দিকে হাঁটা ধরলো।অরিত্রি শিকদার মৃদু হেসে,
– মা আপনি খান আমি শুনে আসি আপনার নাতি আবার কি করলো।

– হুম যাও।

রাহেলা বেগম স্নিগ্ধতাকে বললেন,
– দাঁড়িয়ে আছিস কেন তুইও খেতে বস।

– পরে খাবো এখন আপনি খান।

– চুপ করে বস এখানে।

স্নিগ্ধতা চেয়ার টেনে বসলো, রাহেলা বেগম মৃদু হেসে বললেন,
– বুঝলি নাত বউ তোর এই জামাইকে আগে মানুষ বানাতে হবে তারপর সংসার করতে হবে।

– উনি কি মানুষ না!

– উহু একটা বান্দর ছেলে সবসময় বাইরে বাঁদরামি করে বেড়াবে আর ভুগতে হবে তোর শশুরকে।

স্নিগ্ধতা মুচকি হাসলো। রাতুল শিকদার গম্ভীর মুখে বিছানায় বসে আছেন তার সামনে সোফায় ভাবলেশহীন ভাবে স্তব্ধ বসে আছে অরিত্রি শিকদার রাতুল শিকদারের পাশেই বসে আছে।স্তব্ধ জানতে চাইল,

– কেন ডেকেছ বলছো না কেন?

– ফাহাদ হোসেনের মেয়ে জেসিকে তুই মে’রেছিস?

স্তব্ধ চমকায়িত দৃষ্টিতে,
– তোমায় কে বললো?

– জেসি তার বাবাকে বলেছে আর তার বাবা ফাহাদ হোসেন আমাকে ফোন করে জানালো।

– ওহ।

– তোর জন্য আমার মান সম্মান কিছুই থাকবে না দেখছি শেষ পর্যন্ত মেয়েদের গায়ে হাত তুলিস।

– আমাকে সবার সামনে টাচ করেছিল তাই মে’রেছি এতে দোষের কি আছে?

– অরিত্রি আরো আশকারা দাও ছেলেকে বাড়িতে তোর বউ আছে তার কানে গেলে কি ভাববে?

– তুমি ওর কানে না দিলেই হবে কিছুই জানবে না ভাববেও না।

– অন্যায় করেও মুখে মুখে কথা বলিস লজ্জা করে না?

– আমি কোনো অন্যায় করিনি তাই লজ্জাও করছে না এবার বলো তোমার কথা শেষ হয়েছে?

– হুম।

– তাহলে বসে আছো কেন অফিসে যাও আমিও ঘুরতে যাই বাই বাই টাটা।

বলেই স্তব্ধ শিস বাজিয়ে চলে গেল রাতুল শিকদার রাগে ফুঁসছেন,
– দেখলে আমায় অপমান করে চলে গেল।

– ছেলের পেছনে এত লেগো না তো ও বড় হয়েছে।

– বড় হয়েছে বলেই সমস্যা ছোট থাকতেই ভালো ছিল যা বলতাম তাই শুনতো।

– অফিসে যাও দেরি হয়ে যাচ্ছে।

– যেমন মা তেমন ছেলে।

রাতুল শিকদার রাগ দেখিয়ে রেডি হতে চলে গেলেন।
______________

দুপুর পাড় হয়ে গেছে রাহেলা বেগম দুপুরের খাবার খেয়ে ভাত ঘুম দিয়েছেন সালেহাও কাজ শেষে ঘরে গিয়েছে,অরিত্রি শিকদারও নিজের ঘরে।স্নিগ্ধতা হল ঘরে বসে আছে একা একা ভালো লাগছে না বসা থেকে উঠে ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই সদর দরজার বেল বেজে উঠল। স্নিগ্ধতা গিয়ে দরজা খুলে দিতেই একটা মেয়েকে দেখতে পেল মেয়েটার হাত ধরে আড়াই তিন বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

মেয়েটি তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে স্নিগ্ধতাকে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
– তুমি কে?

স্নিগ্ধতাও পাল্টা প্রশ্ন করল,
– আপনি কে?

– রাতুল শিকদারের একমাত্র মেয়ে স্তব্ধ শিকদারের বড় বোন আরিয়া।

স্নিগ্ধতা কিছুটা অবাক হলো দু’দিন বাড়িতে এসেছে অথচ জানেই না স্তব্ধের বড় বোন আছে।স্নিগ্ধতা মৃদু হেসে দরজার কাছ থেকে সরে গিয়ে বলল,
– আসসালামু আলাইকুম আপু ভেতরে আসুন।

– ওয়া আলাইকুমুসসালাম।

আরিয়া বাড়ির ভেতরে ঢুকে সোফায় বসলো।স্নিগ্ধতা রান্নাঘরে চলে গেল দুয়েক মিনিট পর দুই গ্লাস শরবত হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসলো। টেবিলের উপরে রেখে,
– শরবত খেয়ে নিন আপু ভালো লাগবে।

আরিয়া এক চুমুকে শরবত শেষ করে ফেলল আরেকটা গ্লাস বাচ্চা মেয়েটার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
– নৌসিন খেয়ে নাও মামনি।

নৌসিন ছোট ছোট চুমুক দিয়ে শরবত খাচ্ছে, আরিয়া স্নিগ্ধতার দিকে তাকিয়ে,
– তোমার পরিচয় তো পেলাম না? কে তুমি?

স্নিগ্ধতা বলতে যাবে তখনি অরিত্রি শিকদার নিচে নেমে এলো আরিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– আরিয়া বাবু কতদিন পর দেখলাম তোকে।

– মম গত সপ্তাহেই তো এসে গেলাম।

– তাতে কি হয়েছে নৌসিন নানু এদিকে আসো।

নৌসিন গ্লাস রেখে দৌড়ে অরিত্রি শিকদারের কাছে চলে গেল।অরিত্রি শিকদার নাতনিকে কোলে তুলে নিয়ে চুমু খেলেন। আরিয়া বলল,

– মম এই মেয়েটা কে?

অরিত্রি শিকদার একবার স্নিগ্ধতার দিকে তাকালেন তারপর বললেন,
– স্তব্ধের বউ।

– ওহ এর সঙ্গেই ড্যড ভাইয়ের বিয়ে দিয়েছে তো মেয়ে তোমার নাম কি?

– স্নিগ্ধতা।

– আচ্ছা নৌসিনকে নিয়ে ঘরে যাও ও কিন্তু অনেক দুষ্টু দেখে রেখো।

– আচ্ছা আপু।

স্নিগ্ধতা নৌসিনকে কোলে তুলে নিলো ছোট নৌসিন মায়ের ইশারায় স্নিগ্ধতার সঙ্গে গেল।

স্নিগ্ধতা চলে যেতেই অরিত্রি শিকদার মেয়ের দিকে তাকিয়ে,
– আরিয়া যা করার তোকেই করতে হবে স্তব্ধের সঙ্গে এই মেয়ের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডিভোর্স করাতে হবে স্তব্ধের বিয়ের কথা জানাজানি হলে তোর আন্টির কাছে আমি মুখ দেখাতে পারবো না।

– মম স্তব্ধের তো নাতাশাকে পছন্দ নয়।

– তোর এসব ভাবতে হবে না তুই ডিভোর্সের ব্যবস্থা কর।

– তুমিও তো করতে পারো।

– তোর দিদান আর বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে আমি কিভাবে করবো তবে তুই যদি চাস তাহলে সম্ভব তোর কথা কেউ ফেলতে পারবে না স্তব্ধও তোকে ভালোবাসে আর যাই হোক বোনের কথা কখনও অমান্য করবে না।

– ড্যড,স্তব্ধ কোথায়?

– তোর ড্যড অফিসে আর স্তব্ধ মনে হয় বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়েছে।

– দিদান?

– মা ঘরে আছেন ঘুমাচ্ছে।

– ওহ আমি ফ্রেশ হয়ে আসি পরে কথা হবে।

– যা তাহলে।

আরিয়া নিজের ঘরে চলে গেল।আরিয়া স্তব্ধের বড় বোন, স্তব্ধের থেকে পাঁচ বছরের বড় সে বিয়ে হয়ে গেছে ছোট একটা মেয়েও আছে নৌসিন।

স্নিগ্ধতা নৌসিনের সঙ্গে খেলছে, নৌসিন অনেক মিশুক এই কয়েক মুহূর্তেই স্নিগ্ধতার সঙ্গে মিশে গেছে।নৌসিন খেলা রেখে স্নিগ্ধতার গলা জড়িয়ে ধরে,
– আমি তুমাকে কি বলে ডাকব?

স্নিগ্ধতার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল ভাবতে লাগলো, ‘সত্যিই তো কি বলে ডাকবে?’

– মামী বলে ডাকবে।

আচমকা এমন একটা কথা শুনে স্নিগ্ধতা এবং নৌসিন দরজার দিকে তাকিয়ে স্তব্ধকে দেখতে পেল।নৌসিন দৌড়ে গিয়ে স্তব্ধকে ধরলো,স্তব্ধ নৌসিনকে কোলে নিয়ে বিছানায় বসতেই নৌসিন জানতে চাইলো,

– মামা কুতায় গেথিলে?

স্তব্ধ চকলেট বের করে,
– আমার নৌসি পরীর জন্য চকলেট আনতে গিয়েছিলাম।

– এত্তগুলা তকলেট!

– হুম।

– তেংকিউ মামা।

– ওয়েলকাম নৌসি পরী।

নৌসিন স্তব্ধের কোল থেকে নেমে স্নিগ্ধতার কাছে গিয়ে একটা চকলেট বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
– এই নাও তুমিও খাও।

– খাব না মামণি তুমি খাও।

বিছানার এক পাশে বসে চকলেট খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো নৌসিন।স্নিগ্ধতা উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল স্তব্ধ স্নিগ্ধতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নৌসিনের সঙ্গে দুষ্টুমি করতে লাগলো। আরিয়া ভেতরে এসে ভাইয়ের পাশে বসলো স্তব্ধ বোনকে দেখে হেসে,

– কেমন আছিস আপু।

– ভালো,তুই কেমন আছিস?

– আমিও ভালো।

– এভাবে বিয়ে করার পরেও ভালো আছিস?

– এখন কি মেয়েদের মতো কান্না করবো?

– তা নয় তবে জোর করে ড্যড তোকে বিয়ে করিয়ে দিল এত সহজে মেনে নিয়েছিস? আবার ওই মেয়েটা আই মিন স্নিগ্ধতা তোর ঘরেই থাকে শুনলাম।

– আমি মানলেই কি না মানলেই কি বিয়ে তো হয়ে গেছে এছাড়া ওর আমার ঘরে থাকাটাই স্বাভাবিক।

– হুম মম চাইছে তোদের ডিভোর্স করাতে তুই কি বলিস?

স্তব্ধ ব্রু নাচিয়ে,
– ওহ এই কারণেই এখানে এসেছিস।

– এই কারণে আসতে যাব কেন? আমার বাড়িতে আমি আসতে পারি না?

– পারবি না কেন কিন্তু তুই তো বছরে সম্ভবত দুই থেকে তিন বার আসিস কিন্তু গত সপ্তাহে বেড়িয়ে গেলি আবার এই সপ্তাহে আসলি এমনিতে তো বললেও আসিস না।

– ছোট থেকেই আমরা দু’জন বেস্ট ফ্রেন্ডের মতো ছিলাম দু’জন দু’জনের সব সিক্রেট কথা শেয়ার করতাম নুহাশের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা তুই সবাইকে বুঝিয়ে বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিস তোর জন্যই আমি নুহাশকে পেয়েছি কিছু ভুলিনি।

– এসব কথা এখন কেন আসছে?

– কারণ আছে তাই আসছে। দেখ মম যখন নাতাশাকে তোর জন্য পছন্দ করেছে নাতাশার সঙ্গেই তোর বিয়ে দিয়ে ছাড়বে মমকে তুই তো চিনিস।

– কিন্তু আমার নাতাশাকে পছন্দ নয়।

– জানি এখন তুই এটা আমায় বল তুই কি এই বিয়েটা মেনে নিয়েছিস? যদি মেনে নিস তাহলে আমি মমকে বুঝাবো যদি না নিস তাহলে বাবাকে বুঝিয়ে তোদের সম্পর্কের ইতি টেনে দিব।

স্তব্ধ কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
– আমার সময় লাগবে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাই না আমার জন্য কারো জীবন নষ্ট হোক তাও চাই না।

আরিয়া স্তব্ধের কাধে হাত রেখে আশ্বস্ত করে,
– সময় নে ভালো করে ভেবে সিদ্ধান্ত নে তোর সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করবো তোর মন যা বলবে তাই করবি কারো কথা ভাবার দরকার নেই কারণ জীবনটা তোর।

স্তব্ধ বোনের দিকে একবার তাকালো আরিয়া নৌসিনকে নিয়ে স্তব্ধের ঘর থেকে চলে গেল।স্তব্ধ সোজা হয়ে শুয়ে পড়লো আর সবটা ভাবতে লাগলো।
___________

‘রান্নাটা অনেক ভালো হয়েছে কে রেঁধেছে?’

স্নিগ্ধতা মৃদু হেসে জবাব দিল,
– আমি।

আরিয়াও হেসে বলল,
– তোমার রান্নার হাত অনেক ভালো।

রাতে সবাই খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে একসঙ্গে, সবাই থাকলেও স্তব্ধ আসেনি সে নাকি রাতে খাবে না।

রাহেলা বেগম বললেন,
– আরিয়া দিদা কতদিন থাকবে?

– দেখা যাক দিদান ইচ্ছে আছে কিছুদিন বেড়ানোর।

– নুহাশকেও নিয়ে আসতে পারতি।

– দিদান ওর প্রচুর কাজের চাপ তাই আসতে পারবে না।

– ওহ।

অরিত্রি শিকদার আরিয়াকে ইশারা করছে আরিয়া ইশারার মানে বুঝতে পেরে,
– স্নিগ্ধতা তোমার আর স্তব্ধের খাবার নিয়ে ঘরে যাও একসঙ্গে গিয়ে খাও।

অরিত্রি শিকদার কিছুটা রেগে গেলেন কি বলতে বলেছে আর মেয়ে বলছে কি কপাল কুঁচকে বললেন,
– স্তব্ধ খাবে না বলেছে।

– রাতে না খেয়ে থাকতে নেই স্নিগ্ধতা যা বলছি তাই করো খেতে না চাইলে জোর করে খাওয়াবে।

রাতুল শিকদার এবং রাহেলা বেগমও আরিয়ার সঙ্গে তাল মিলালেন।স্নিগ্ধতা বাধ্য মেয়ের মতো খাবার বেরে ঘরে গেল। আরিয়া একটু কেশে বলল,

– ড্যড সবটা শুনলাম কাজটা কি ঠিক করলে?

– বাবা হিসেবে সবসময় তোদের ভালো চাই আমি, তোর আর নুহাশের কথা জানতে পেরেই নুহাশের খোঁজ খবর নিয়েছিলাম যখন নুহাশকে তোর জন্য উপযুক্ত মনে হয়েছে তখন তোদের বিয়ে দিলাম, স্তব্ধেরও ভালো চাই তাই সুযোগ পেয়ে বিয়েটা দিয়ে দিলাম।

– তুমি তো মেয়েটার উপকার করার জন্য এটা করলে।

– এটা তো স্তব্ধ এবং স্নিগ্ধতা জানে।

– তার মানে অন্য কোনো কারণ আছে! কি কারণ ড্যড? আমাদেরকে বলো।

রাতুল শিকদার হাতটা ধুয়ে নিলেন বসা থেকে উঠতে উঠতে মুচকি হেসে বললেন,
– খাওয়ার সময় এত কথা বলতে নেই আমি গেলাম আমার ওষুধ খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।

রাতুল শিকদারের কথাগুলো এবং হাসির মধ্যে রহস্য রয়েছে যা আরিয়া বুঝতে পেরেছে।

স্তব্ধ উল্টো পাশ ফিরে শুয়ে আছে ঘর অন্ধকার।স্নিগ্ধতা ভেতরে এসে লাইটটা জ্বালাতেই স্তব্ধ চেঁচিয়ে বলল,
– লাইট জ্বালালো কে?

– আমি।

স্তব্ধ পাশ ফিরে স্নিগ্ধতাকে দেখে আবারো আগের ন্যায় শুয়ে রইল।স্নিগ্ধতা খাবারের প্লেট নিয়ে বিছানায় বসে,
– আবার শুয়ে রইলেন কেন উঠুন।

– কেন কি দরকার?

– আগে উঠুন তো।

স্তব্ধ বিরক্তি নিয়ে উঠে বসলো,স্নিগ্ধতা খাবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে,
– খেয়ে নিন।

– আমি তো বলেই দিয়েছি খাবো না।

– মানুষ কত কথাই বলে সব কি শুনতে হয় আমাকেও গতকাল জোর করেই খাইয়েছেন হুহ।

– আমি তোমার মতো অজ্ঞান হয়ে যাই না।

– অজ্ঞান না হলেই ভালো।

– কেন?

– আমি অজ্ঞান হলে আপনি আমায় কোলে নিতে পারলেও আমি তো আর আপনার মতো এত ভারি লোককে কোলে নিতে পারবো না।

– আমি ভারি লোক!

– হুম।

– মোটেও না বরং তুমি দুর্বল।

– আচ্ছা খেয়ে নিন।

– খাবো না বলেছি।

– আপু বলেছে রাতে না খেয়ে থাকতে নেই।

– ওহ তোমাকে আপু খাবার আনতে বলেছে।

– জ্বি।

– আপু না বললে আনতে না?

স্নিগ্ধতা চুপসে গেল আমতা আমতা করে,
– মা…নে?

– কিছু না।

দু’জনেই খাবার খেয়ে ঘুমানোর উদ্দেশ্যে শুয়ে পড়লো।

চলবে……

স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-০৩

0

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৩

‘আমাদের সুখ তোর সহ্য হয় না মুখপুড়ি? নিজে রাজপ্রাসাদে আস্তানা গেড়ে আমাদের না খাইয়ে মা’র’তে চাইছিস?

– কি হয়েছে মা? কি করেছি আমি?

– আমায় মা ডাকতে নিষেধ করেছি না,ন্যাকামো করিস জানিস না কি হয়েছে? তোর বাবা চাকরি ছেড়ে দিয়েছে তোর কারণে এখন সংসার চলবে কি করে? বড় ভুল করেছি ছোট থাকতেই যদি তোকে মে’রে ফেলতাম তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না জীবনেও সুখী হবি না তুই দেখে নিস।

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে কল কেটে দিল শাহিলী ওয়াজেদ।স্নিগ্ধতার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কথাগুলো বারবার কানে বাজছে শরীরটা দুর্বল লাগছে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না সবকিছু ঝাপসা মনে হচ্ছে চোখগুলো বন্ধ হয়ে গেল অচেতন হয়ে মেঝেতে পড়ে গেল স্নিগ্ধতা।

কিছু একটা পরার শব্দ পেয়ে সালেহা রান্নাঘর থেকে হল ঘরে আসতেই চমকে গেল সবাইকে চিৎকার করে হাক ডাক দিয়ে স্নিগ্ধতাকে ডাকতে লাগল কিন্তু স্নিগ্ধতার কোনো সাড়াশব্দ নেই কপাল কিছুটা থেতলে গেছে রক্ত জমাট বেঁধে খয়রী রঙ ধারণ করেছে।

সালেহার এমন চেঁচামেচিতে সবাই হল ঘরে চলে আসলো স্তব্ধও বাড়িতে ছিল দ্রুত স্নিগ্ধতার কাছে এসে গালে হাত রেখে ডাকছে,

– এই মেয়ে কি হলো তোমার? শুনছো?এই মেয়ে।

স্নিগ্ধতা অচেতন হয়ে আছে, রাতুল শিকদার এগিয়ে এসে,
– ওকে ঘরে নিয়ে যা আমি ডাক্তারকে কল করছি।

স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে ঘরে চলে গেল। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কপালে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছে, অরিত্রি শিকদার একপাশে দাঁড়িয়ে ছেলে আর ছেলের বউকে দেখছেন। কিছুক্ষণ পর রাতুল শিকদার ডাক্তার নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন, মহিলা ডাক্তার স্নিগ্ধতাকে ভালো করে চেকাপ করে একটা ইঞ্জেকশন দিলেন আর কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে বললেন,

– উনার শরীর দুর্বল মনে হচ্ছে অনেক সময় ধরে না খেয়ে আছেন একটু পরেই জ্ঞান ফিরে আসবে খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিবেন।

– অবশ্যই।(অরিত্রি শিকদার)

ডাক্তার উঠতে যাবেন তখনি আবারও বসে স্নিগ্ধতার হাতটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন রাতুল শিকদার জিজ্ঞেস করলেন,

– কি হয়েছে ডাক্তার?

– এই আঘাত গুলো কিসের? মনে হচ্ছে কেউ কিছু দিয়ে মে’রে’ছে।

সবাই এবার সেদিকে নজর দিলো।স্নিগ্ধতার হাতে বেশ কয়েক জায়গায় লম্বা দাগ রয়েছে জায়গা গুলোতে কালচে দাগ পড়ে গেছে। ডাক্তার তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে স্তব্ধের দিকে তাকালো,স্তব্ধ ডাক্তারের চাহনি বুঝতে পেরে বলল,

– আমার দিকে তাকাচ্ছেন কেন? আমি এসব করিনি।

রাতুল শিকদার বললেন,
– ও আমাদের বাড়ির নতুন বউ গতকাল স্তব্ধের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে।

ডাক্তার চশমা ঠিক করে দাঁড়িয়ে পড়লেন আর বললেন,
– আজ তাহলে আসি আমার চেম্বারে একদিন ওকে নিয়ে আসবেন পরীক্ষা করে দেখা উচিত পরে এর থেকে বড় কিছু হয়ে যেতে পারে।

বলেই ডাক্তার চলে গেলেন রাতুল শিকদার তাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য গেলেন। অরিত্রি শিকদার রেগে বললেন,
– না খেয়ে কি বুঝাতে চাইছে শশুর বাড়ীর লোকেরা খেতে দেয় না।

রাহেলা বেগম বিরক্ত হয়ে,
– আহ বউমা এগুলো কি কথা? নতুন এক পরিবেশে আসলে এমন হয় আমাদের উচিত ছিল ওকে দেখে রাখার।

– হ্যা মা এখন সব দোষ আমাদের এই সালেহা খাবার নিয়ে এসে এখানে রেখে যাও।

সালেহা নিচে চলে গেল খাবার আনতে।অরিত্রি শিকদার স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে,
– বাবু তোর না বন্ধুদের সঙ্গে কোথায় যাওয়ার কথা ছিল তুই যা আমি এখানে আছি।

রাহেলা বেগম উঠে দাঁড়িয়ে,
– অসুস্থ বউকে রেখে কোনো বন্ধু বান্ধবের কাছে যাওয়ার দরকার নেই দাদুভাই তুমি নাত বউয়ের কাছে থাকো জ্ঞান ফিরলে খাবার আর ওষুধ খাইয়ে দিও আর বউমা তুমি আমার সঙ্গে চলো।

– মা..

– চলো তো।

অরিত্রি শিকদারকে নিয়ে রাহেলা বেগম স্তব্ধের ঘর থেকে চলে গেলেন। সালেহা খাবার দিয়ে গেছে, অরিত্রি শিকদার বললেন,
– মা এভাবে স্তব্ধকে রেখে আসা ঠিক হয়নি।

– ঠিক হবে না কেন? বউকে সেবা করা ওর দায়িত্ব।

– কিসের বউ? এই বিয়ে আমাদের অমতে হয়েছে স্তব্ধ এখনও মানতে পারেনি।

– একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে।

অরিত্রি শিকদার বুঝলেন শাশুড়িকে বললেও কোনো লাভ হবে না তাই থেমে গেলেন।

স্তব্ধ পলকহীন দৃষ্টিতে স্নিগ্ধতার দিকে তাকিয়ে আছে কেন তাকিয়ে আছে নিজেও জানে না।স্নিগ্ধতার হাতটা নিজের গালে ছুঁইয়ে আনমনে বলছে,
– গতকাল বিকেল পর্যন্ত সিঙ্গেল ছিলাম আর আজ কিনা এমন জলজ্যান্ত একটা মেয়ের হাজব্যান্ড হয়ে গেলাম।

মুচকি হাসলো স্তব্ধ, স্নিগ্ধতার জ্ঞান ফিরে এসেছে চোখ জোড়া খুলতেই হাস্যজ্জল স্তব্ধকে দেখতে পেল। ভালো করে তাকাতেই দেখলো নিজের হাতটা স্তব্ধের গালে,স্নিগ্ধতা নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিতেই স্তব্ধের হুস আসল কপালটা কুঁচকে,

– জ্ঞান ফিরলো তবে।

স্নিগ্ধতা উঠার চেষ্টা করলো স্তব্ধ উঠতে সাহায্য করে বালিশ উঁচু করে বসিয়ে দিল।স্তব্ধ এবার ধমক দিয়ে বলল,
– এই মেয়ে না খেয়ে ছিলে কেন আর অজ্ঞান হলেই বা কেন? তোমার মতো চালের বস্তাকে কত কষ্ট করে কোলে তুলে এখানে আনতে হয়েছে এখন আমার কোমর কি তুমি মালিশ করে দিবে?

– আপনি আমায় কোলে করে নিয়ে এসেছেন।

– হুম।তোমার নাম কি যেন?

স্নিগ্ধতা আহত দৃষ্টিতে স্তব্ধের দিকে তাকালো আর বিড়বিড় করে বলতে লাগল,’এ কেমন ছেলে বিয়ে করা বউয়ের নাম জানে না।’

– কি হলো বলছো না কেন? ভুলে গেছি বলেই নাম জিজ্ঞেস করছি।

– আমার নাম স্নিগ্ধতা।

– স্নি…গ্ধ….তা…. স্তব্ধের বউ স্নিগ্ধতা উহু স্তব্ধের স্নিগ্ধতা গুড নেম যাই হোক আমি তোমায় স্নিগ্ধ বলেই ডাকবো ঠিক আছে।

স্নিগ্ধতা হ্যাবলার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
– আচ্ছা।

স্তব্ধ খাবারের প্লেট স্নিগ্ধতাকে ধরিয়ে দিয়ে,
– খাবারটা খেয়ে নাও।

খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই খিদেটা যেন ম’রে গেছে মায়ের তখনকার কথাগুলো মনে পড়তেই শরীরে কাঁটা দেওয়া শুরু করলো স্তব্ধের ধমকে কিছুটা কেঁপে উঠে বলল,
– খেতে ইচ্ছে করছে না।

– তারপরেও খেতে হবে তাই খেয়ে নাও।

– পরে খেলে হয় না?

– এখন যদি না খাও তাহলে তোমায় নিয়ে তেলাপোকা ভর্তি ড্রামে ফেলে দিয়ে আসব।

স্নিগ্ধতা ভিতু চোখে স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে খাওয়া শুরু করলো স্তব্ধ আড়চোখে স্নিগ্ধতাকে দেখে মুচকি হাসছে। খাওয়া শেষ হতেই ওষুধ খাইয়ে দিয়ে,

– তুমি বিশ্রাম নাও কিছু লাগলে সালেহা খালাকে বলবে।

– আপনি কোথায় যাবেন?

– কাজ আছে।

স্তব্ধ রেডি হয়ে চলে গেল।স্নিগ্ধতা বিছানায় বসে বসে শাহিলী ওয়াজেদের কথাগুলো ভাবছে,’বাবা কেন চাকরি ছেড়ে দিল? এখানে আমার অন্যায় কোথায়? বাবার সঙ্গে কথা বলা দরকার কিন্তু কিভাবে বলবো?

রাতুল শিকদার দরজার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
– স্নিগ্ধতা মা ভেতরে আসবো?

– হ্যা বাবা আসুন।

বাবা ডাকটা শুনে মৃদু হাসলেন ঘরে এসে সোফায় বসলেন,
– এখন শরীর কেমন লাগছে মা?

– ভালো।

– নিজের খেয়াল নিজেকেই রাখতে হবে তাই কখনও খাবারের প্রতি অবহেলা করবে না দেখলে তো আজ কি একটা দুর্ঘটনা ঘটলো।

স্নিগ্ধতা মাথা নিচু করে হ্যা সূচক জবাব দিল। রাতুল শিকদার বললেন,
– একটা সম্পর্কে যখন বাধা পরলেই এই সম্পর্কটা কখনও শেষ হতে দিও না আমার ছেলেটা খাপছাড়া স্বভাবের মনে হয় না তোমাদের সম্পর্কটা বেশিদিন বয়ে নিতে পারবে ওর মাও তো এখনও তোমায় মেনে নেয়নি কিন্তু তোমার উপর আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে যাই হয়ে যাক কখনও স্তব্ধকে ছেড়ে যাবে না।

স্নিগ্ধতা শশুরের দিকে ছলছল চোখে তাকালো একটু ভেবে বলল,
– আপনার কথা রাখার চেষ্টা করবো বাবা।

রাতুল শিকদার তৃপ্তির হাসি হেসে,
– এখন তাহলে আসি তুমি বিশ্রাম নেও।

– একটু ফোনটা দেওয়া যাবে বাবার সঙ্গে কথা বলতাম।

– এই নাও।

স্নিগ্ধতাকে মোবাইলটা দিয়ে চলে গেলেন।ভার্সিটিতে যাওয়ার পর সানজিদ ওয়াজেদ একটা মোবাইল কিনে দিয়েছিল স্নিগ্ধতাকে একদিন রান্না করতে দেরি হওয়ায় শাহিলী ওয়াজেদ মোবাইলটা ভেঙে ফেলে আর তারপর থেকে আর কখনও মোবাইল ব্যবহার করেনি স্নিগ্ধতা।

নাম্বার মুখস্থ ছিল তাই সানজিদ ওয়াজেদকে কল দিল দুইবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হতেই স্নিগ্ধতা সালাম দিল,
– আসসালামু আলাইকুম।

– ওয়া আলাইকুমুসসালাম।স্নিগ্ধা নাকি?

– হ্যা বাবা কেমন আছো?

– আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুই কেমন আছিস?

– আলহামদুলিল্লাহ, বাবা তুমি নাকি চাকরি ছেড়ে দিয়েছ? কেন চাকরি ছেড়েছ এই চাকরি দিয়েই তো সংসারটা চলে এখন কি হবে?

– তুই জানলি কিভাবে?

– মা বলেছে।

– শাহিলী তোর কানে কথাটা তুলে দিয়েছে বাহ? এতদিন চাকরিটা করেছি ঠিক আছে কিন্তু এখন রাতুল শিকদার তোর শশুর তোর শশুরের অফিসে চাকরি করলে মানুষ কি ভাববে বল তো তবে তুই চিন্তা করিস না আরেকটা চাকরি আমি পেয়ে যাবো।

– আমার জন্যই তোমাদের এত কষ্ট তাই না আজ চাকরিটাও ছাড়তে হলো?

– এসব মুখেও আনবি না বরং আমি এক অসহায় বাবা যে কিনা সারাজীবন মেয়েকে কষ্ট পেতে দেখেও কিছু করতে পারেনি তুই তোর মায়ের সঙ্গে আর কথা বলবি না চিন্তা করিস না চাকরির জোগাড় হয়ে যাবে।

সানজিদ ওয়াজেদ কল কেটে দিল স্নিগ্ধতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো।
_______________

চারিদিকে হরেক রঙের লাইট জ্বলছে,হাই ভলিউমে মিউজিক বাজছে তার তালে তালে কাপলরা ডান্স করছে আবার কেউ কেউ ড্রিংকস করছে।স্তব্ধ বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করতে এসেছে ওর বন্ধুরা মেয়েদের সঙ্গে নাচতে ব্যস্ত কিছুটা দূরে বসে বিয়ারের বোতলে চুমুক দিতে দিতে সেই দৃশ্য দেখছে স্তব্ধ।একটা শর্ট ড্রেস পরা মেয়ে স্তব্ধের পাশ ঘেঁষে বসে,

– কাম অন স্তব্ধ সবাই কি সুন্দর ডান্স করছে চলো না আমরাও ওদের সঙ্গ দেই।

– তোমার ইচ্ছে হলে তুমি যাও এসব ডান্স আমার ভালো লাগে না।

– তাহলে এসেছ কেন?

– সবাইকে দেখতে।

মেয়েটা স্তব্ধের হাত ধরে টেনে,
– কোনো কথা শুনবো না আজ তোমাকে আমার সঙ্গে যেতেই হবে।

– হাতটা ছাড়ো জেসি ধরাধরি আমার একদম পছন্দ নয়।

মেয়েটি স্তব্ধের কোলে বসে পড়লো গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
– আমার তো তোমাকে অনেক পছন্দ এতক্ষণ হাত ধরেছিলাম এখন পুরো তোমাকেই ধরেছি কি করবে জান?

স্তব্ধের রাগটা বেড়ে গেছে জেসির হাতের কব্জি ধরে নিজের থেকে সরিয়ে জোরে একটা চড় লাগিয়ে দিল। সবার দৃষ্টি এখন তাদের দিকে স্তব্ধ কিছুটা ঝুঁকে পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলল,

– তোমার মতো দুই পয়সার মেয়ের সঙ্গে স্তব্ধ শিকদার ডান্স করবে ভাবলে কি করে? এই চড়টা আমাকে টাচ করার পানিশমেন্ট আশা করি মনে থাকবে ওকেহ বাই বেইবি।

একটা বিয়ারের বোতল হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল স্তব্ধ। জেসি টেবিলে রাখা গ্লাসটা ছুঁড়ে ফেলে দিল তার বান্ধবী মৌনি কাধে হাত রেখে শান্ত করার জন্য বলল,

– জেসি রাগ কন্ট্রোল কর সবাই দেখছে।

– দেখুক, স্তব্ধ শিকদারের এত বড় সাহস জেসির গায়ে হাত তুলে এর শোধ তো আমি নিবোই।

স্তব্ধ ড্রাইভ করছে তার পাশের সিটে বসে আছে তার বন্ধু রাজ। রাজ বলল,
– জেসিকে চড় মা’রাটা কি ঠিক হলো?

– ভুল কিছু হয়নি ইদানিং অনেক বাড়াবাড়ি করছিল আজ তো আমাকে টাচ করেছিল।

– কত মেয়ের সঙ্গে ফ্লাটিং করলি অথচ একটা মেয়ে নিজ থেকে ছুঁয়েছে বলে দোষ।

– দু’টো আলাদা টপিক ফ্লাটিং করা কবেই ছেড়ে দিয়েছি তবে ইউ নো কখনো কোনো মেয়ের সংস্পর্শে যাইনি ভার্জিনিটিরও তো একটা ব্যাপার আছে।

– শুনলাম তুই নাকি বিয়ে করেছিস ট্রিট দিলি না বন্ধুদের?

স্তব্ধ ব্রু নাচিয়ে,
– ওইটা একটা এক্সিডেন্ট ট্রাপে পড়ে বাবার কথায় বাধ্য হয়ে করতে হয়েছে বাই দ্য ওয়ে তুই জানলি কিভাবে?

– আঙ্কেল বলেছে।

– শুধু বিয়ে করিয়েই ক্ষান্ত হয়নি এখন দেখছি ঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানাতে ব্যস্ত হয়ে গেছে।

– তেমন না তোকে কল করেছিলাম ফোনটা মেবি আঙ্কেলের কাছে ছিল তোর কথা জিজ্ঞেস করতেই বললো তুই নাকি বিয়ে করছিস।

গাড়ি থেমে গেল রাজ ব্রু কুঁচকে,
– থামালি কেন?

– তোর বাড়ির কাছাকাছি এসে গেছিস।

– ওহ।

রাজ গাড়ি থেকে নেমে গেল গাড়ির জানালায় উঁকি দিয়ে বলল,
– ভাবীর সঙ্গে কবে দেখা করাবি? বড় একটা পার্টি চাই কিন্তু আর পার্টিতে ভাবীকেও আনতে হবে।

– যা ফোট।

স্তব্ধ গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। বাড়িতে আসতে আসতে রাত বারোটা বেজে গেছে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।স্তব্ধ সবসময় এমন রাত করেই ফেরে অরিত্রি শিকদারের জন্য রাতুল শিকদার ছেলেকে তেমন কিছু বলতেও পারে না।স্নিগ্ধতা বেশ কিছুক্ষণ জেগে ছিল কিন্তু ওষুধের পাওয়ারের কাছে হার মেনে ঘুমিয়ে গেছে। ঘরে নীল রঙের ডিম লাইট জ্বলছে,স্তব্ধ ঘরে ঢুকে দরজা আটকে আবছা আলোতেই ফ্রেশ হতে চলে গেল। ঘরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই শরীরে কারো স্পর্শ পেল ভালো করে তাকাতেই স্নিগ্ধতাকে দেখতে পেয়ে মুচকি হেসে মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু খেল। ধ্যান ফিরতেই নিজেই নিজের মনকে প্রশ্ন করলো,’এটা কি করলি স্তব্ধ? একটা মেয়েকে এভাবে চুমু খেলি? এই মেয়েটার মধ্যে কি আছে কে জানে দেখলেই সবকিছু গুলিয়ে যায়, ভাগ্যিস ঘুমিয়ে ছিল দেখে ফেললে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারতাম না।

কিছুটা দুরত্ব রেখে স্তব্ধ ঘুমিয়ে গেল।
__________

ফজরের আজান হয়ে গেছে স্নিগ্ধতা উঠে ওযু করে নিল। নামাজ পড়তে যাবে তখনি স্তব্ধের দিকে চোখ গেল কিছু একটা ভেবে বিছানায় বসে,

– এই যে শুনছেন আজান শেষ নামাজ পড়তে হবে তাড়াতাড়ি উঠুন।

স্তব্ধের কোনো সাড়াশব্দ নেই স্নিগ্ধতা হাত ঝাঁকিয়ে,
– উঠছেন না কেন? এখন কি ঘুমের সময় নামাজটা তো পড়ে নিন।

আচমকা স্নিগ্ধতাকে টেনে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমঘুম কন্ঠে বলল,
– আরেকটু ঘুমাতে দাও না।

স্নিগ্ধতা বরফের ন্যায় জমে গেছে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না কিছুক্ষণ এমন ভাবেই কেটে গেল স্তব্ধ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।স্নিগ্ধতা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে স্তব্ধ এবার বিরক্ত হয়ে চোখ মেলে নিজের এত নিকটে স্নিগ্ধতাকে দেখে এক লাফে উঠে দূরে সরে গেল, বেচারি স্নিগ্ধতা স্তব্ধের এমন কর্মকাণ্ডে ভরকে গেছে।

স্তব্ধ রাগী স্বরে বলল,
– তুমি আমার কাছে কি করছিলে? লজ্জা করে না অসহায় একটা ছেলেকে একা পেয়ে এভাবে তার কাছে আসতে?

স্নিগ্ধতা উঠে বসলো স্তব্ধের দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে,
– আমি তো আপনাকে নামাজ পড়ার জন্য ডাকলাম কিন্তু আপনি আমায় টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরলেন আমার কি দোষ?

– তুমি বললেই বিশ্বাস করতে হবে নাকি? আমি কখনও এমন কাজ করতে পারি না।

– এটা নিয়ে পরে কথা বলা যাবে এখন চলুন নামাজ পড়তে হবে সময় চলে যাচ্ছে।

স্তব্ধ একবার স্নিগ্ধতার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে ওযু করতে চলে গেল। তারপর দু’জনে একসঙ্গে নামাজ আদায় করে নিলো।

চলবে…….

স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-০২

0

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০২

হঠাৎ করে মুখের উপর পানি পড়তেই হুড়মুড় করে ঘুম থেকে উঠে গেল স্নিগ্ধতা। সামনে তাকিয়ে স্তব্ধকে দেখেই থমকে গেছে ভেতরকার ভয়গুলো আবারও জেগে উঠেছে।স্তব্ধ হাঁটু মুড়ে স্নিগ্ধতার সামনে বসে আছে হাতে জগ মোহ ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আজই প্রথম স্নিগ্ধতার মুখশ্রী দেখতে পেয়েছে স্তব্ধ, স্নিগ্ধতা ওতোটা ফর্সা না হলেও এককথায় সুন্দরী বলা যায় চিকন ঠোঁট টানা টানা চোখ চাহনিতে অনেক মায়া আছে,পিঠ পর্যন্ত পাতলা কালো চুল। স্তব্ধ এক হাত স্নিগ্ধতার গালে রাখতেই স্নিগ্ধতা কেঁপে উঠলো যা স্তব্ধ বুঝতে পেরেছে। ভিতু স্নিগ্ধতাকে তার কাছে অনেক ভালো লাগছে দৃষ্টি যেন সরছেই না স্পর্শটা আরও গভীর করতেই কাঁপা কাঁপা কন্ঠে স্নিগ্ধতা বলল,

– কি হয়েছে? আমি কি করেছি পানি দিলেন কেন?

স্তব্ধের এবার ধ্যান ভাঙলো এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিয়ে,
– তোমাকে সোফায় ঘুমাতে বলেছিলাম কিন্তু তুমি ঘরের মাঝখানে মেঝেতে ঘুমিয়েছ কেন?

স্নিগ্ধতা আশেপাশে তাকিয়ে নিজেকে মেঝেতে আবিষ্কার করতেই রাতের কথা মনে পড়লো,
– আসলে সোফায় ঘুমাতে পারছিলাম না তাই এখানে শুয়েছি।

– আমাকে বললেই তো হতো।

– আপনি ঘুমাচ্ছিলেন।

– ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো।

স্নিগ্ধতা মাথা নাড়িয়ে উঠে ওয়াশরুমের দিকে হাঁটা ধরলো পেছন থেকে স্তব্ধ ডেকে,
– এই মেয়ে ফ্রেশ হতে যে যাচ্ছো পড়বেটা কি?

স্নিগ্ধতা পেছনে ঘুরে,
– এই শাড়িটা রাতেই তো গোসল করে পরলাম এখন আপাতত এটা দিয়েই হয়ে যাবে।

– ছিহ নোংরা মেয়ে বাসি পোশাক পড়ে থাকবে কি করে সোফায় গিয়ে বসো আমি শাড়ি নিয়ে আসছি।

স্তব্ধ কোনো উত্তর না শুনে বেরিয়ে গেল স্নিগ্ধতা দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করছে,’রাতেই তো গোসল করে এই শাড়ি পরলাম আর সাথে সাথে বাসি হয়ে গেছে বড়লোকদের কত কারবার।’

স্তব্ধ ঘরে চলে আসলো হাতে একটা নীল রঙের শাড়ি, স্নিগ্ধতার দিকে এগিয়ে দিয়ে,
– এবার যাও।

স্নিগ্ধতা শাড়ি নিয়ে চলে গেল, স্তব্ধের ধারণা নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য দিনে তিন-চার বার গোসল করা উচিত তাই সে নিজেও বাইরে থেকে এসেই গোসল করে।ঘুমানোর পূর্বে গোসল করে আবার ঘুম থেকে উঠে জিম করেই গোসল করে এতে অরিত্রি শিকদার অনেক রাগারাগী করলেও স্তব্ধ নিজেকে বদলায়নি।

‘বুঝলে মা স্নিগ্ধতা মেয়েটা খুব ভালো আগেও অনেকবার দেখা হয়েছে একবার তো আমার জীবন পর্যন্ত বাঁচিয়েছিল।’

পানের পিকটা ফেলে আরেকটা পান বানাতে বানাতে রাহেলা বেগম বললেন,
– তোর জীবন বাঁচিয়েছে কিভাবে?

– আমার ব্লাড প্রেসার আছে জানোই তো ড্রাইভার ছুটি নিলো না কিছুদিন আগে তখন নিজেই গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলাম রাস্তায় জ্যামে আটকে গেছিলাম বাইরে কি গরম গাড়ির এসিটাও খারাপ ছিল ড্রাইভার তো বললোই না ওই রাস্তার মধ্যেই হঠাৎ করে প্রেশার হাই হয়ে গেল কেউ এগিয়ে এলো না কিন্তু কোত্থেকে যেন মেয়েটা আসলো সিএনজি করে আমায় হাসপাতালে নিয়ে গেল ক’জনই বা অপরিচিত মানুষদের বিপদে এগিয়ে আসে।

– এই মেয়েটাই সেদিন তোকে হাসপাতালে নিয়ে গেছিল!

– হুম মা তারপর মি.সানজিদের সঙ্গে দেখলাম জানলাম উনার বড় মেয়ে স্নিগ্ধতা। মেয়েটার আচার ব্যবহার অনেক সুন্দর তাই সুযোগ হাত ছাড়া করলাম না স্তব্ধের বউ করে বাড়িতে নিয়ে আসলাম কাউকে জানানোর মতো পরিস্থিতি ছিল না।

– সব বুঝলাম কিন্তু বউমা কি মানবে তার উপর দাদুভাই? দাদুভাই কি সম্পর্কটার মধ্যে মানিয়ে নিতে পারবে?

– স্তব্ধের কথা বাদ দাও ও তো খাপছাড়া ছেলে মায়ের আশকারাতে এমন হয়েছে তবে আমার জানামতে কোনো মেয়ে ওর জীবনে নেই কিছুদিন গেলেই ঠিক হয়ে যাবে স্নিগ্ধতা মায়ের উপর ভরসা আছে,আর অরিত্রিকে তুমি সামলে নিও।

– বউমা তো তার বোনের মেয়ের সঙ্গে দাদুভাইয়ের বিয়ে ঠিক করেছিল।

– আমি আরও তোমার ভরসায় আছি আর তুমি কিনা এসব বলছো? তুমি সব বুঝে নিও সব দায়িত্ব তোমার।

– আচ্ছা আচ্ছা আগে নাত বউকে দেখি জানি যখন আমার নাতির জন্য ঠিক মনে হবে তখনি ওকে বাড়িতে স্থায়ী করার দায়িত্ব আমার।

রাহেলা বেগম রাতুল শিকদারের মা,বাড়ির কর্তৃত্ব অরিত্রি শিকদারের হাতে দিয়ে দিলেও সব কিছু উনার অনুমতি নিয়েই করা হয়।অরিত্রি শিকদার শাশুড়িকে অনেক মান্য করেন।মান্য করাটাই স্বাভাবিক স্তব্ধের মা শিকদার বাড়ির বউ হয়ে আসার পর থেকেই শাশুড়ির অনেক ভালোবাসা পেয়েছেন সবসময় উনার মায়ের মতো ব্যবহার করেছেন।

সালেহা দরজার কাছে এসে,
– চাচী, ভাইজান আপনাগোরে নাস্তা করার জন্যে ভাবী ডাকতাছে।

রাহেলা বেগম খাবার টেবিলে গিয়ে বসলেন।অরিত্রি শিকদার খাবার টেবিলে রেডি করে বসে ছিলেন, রাহেলা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,

– স্তব্ধ দাদুভাই কোথায় বউমা?

অরিত্রি শিকদার কিছু বলতে যাবেন তার আগেই স্তব্ধ চলে আসলো চেয়ার টেনে বলল,
– এইতো দিদান চলে এসেছি।

রাহেলা বেগম মৃদু হেসে,
– একা একা চলে এলে যে তোমার বউ কোথায়? শুনলাম রাতে নাকি বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছ।

স্তব্ধের মুখটা মলিন হয়ে গেল ঢপ করে চেয়ারে বসে পড়লো তারপর একটু থেমে উওর দিলো,
– বিয়ে কি আর শখে করেছি? তোমার ছেলে বিয়ের দাওয়াত খাওয়াতে নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে উল্টো আমায় বিয়ে দিয়ে দিলো।

– বিয়ে যেভাবেই হোক হয়েছে তো বউ তো পেয়েছ এখন সেই বউটা কোথায় আমায় একটু দেখাও।

অরিত্রি শিকদার ভেতরে ভেতরে অনেক রেগে আছেন তারপরেও শাশুড়ির সামনে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে,

– মা এই বিয়ে আমি স্তব্ধ কেউ মানি না যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের ডিভোর্স করিয়ে দিবো।

– সেকি বউমা স্তব্ধ দাদুভাই কি কাউকে পছন্দ করে নাকি?

স্তব্ধ হকচকিয়ে গেল,
– কাউকে পছন্দ হলে তুমিই জানতে পারতে দিদান।

– তাহলে তোমার মম ডিভোর্সের কথা বলছে কেন?

স্তব্ধ নিরুত্ত্যর অরিত্রি শিকদার বললেন,
– মা আপনি সব জানার পরেও কেন এসব বলছেন আচ্ছা মা আপনি কি চাইছেন মেয়েটা এই বাড়িতে থাকুক।

– আমাদের চাওয়াতে কি আসে যায় বউমা যারা সংসার করবে তাদের চাওয়াই আসল এছাড়া দাদুভাই তোমার মমের পছন্দের নাতাশাকে কেমন লাগে তোমার?

স্তব্ধ একবার অরিত্রি শিকদারের দিকে তাকালো তারপর দৃষ্টি সরিয়ে,
– ইডিয়ট মেয়ে একটা দেখা হলেই গায়ে পরে থাকে।

অরিত্রি শিকদার স্তব্ধের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালেন কিন্তু স্তব্ধ উনার দিকে তাকায়নি। রাহেলা বেগম বললেন,
– দাদুভাই কি হলো বউকে নিয়ে আসো মেয়েটা নতুন এসেছে এই বাড়িতে স্বামী হিসেবে তোমাকেই তো সবটা চেনাতে হবে।

রাতুল শিকদার স্নিগ্ধতাকে নিয়ে এসে,
– ওর আর যাওয়ার দরকার নেই আমিই আমার ছেলের বউকে নিয়ে আসলাম।

রাতুল শিকদার স্নিগ্ধতাকে সাথে করে খাবার টেবিলে আসলেন।স্তব্ধ স্নিগ্ধতার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো, অরিত্রি শিকদার তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে স্নিগ্ধতার দিকে তাকিয়ে,

– তোমার পরনে আমার শাড়ি না? আমার শাড়ি তুমি পড়লে কেন পেলে কোথায়?

সবাই স্নিগ্ধতার দিকে তাকিয়ে আছে,স্নিগ্ধতার পরনে অরিত্রি শিকদারের শাড়ি।স্নিগ্ধতার মৌনতা দেখে অরিত্রি শিকদার চেঁচিয়ে বললেন,

– চুপ করে আছো কেন? বাড়িতে আসতে না আসতেই আমার শাড়ির দিকে নজর দিলে।

– আমি জানতাম না এটা আপনার শাড়ি।

– তাহলে পেলে কোথায় পড়লে কেন?

– বাড়ি থেকে কাপড়ের ব্যাগ আনতে ভুলে গিয়েছিলাম তাই উনি দিয়েছেন শাড়িটা।

স্তব্ধকে ইশারা করে দেখালো স্নিগ্ধতা, অরিত্রি বিষ্ময় ভরা দৃষ্টিতে স্তব্ধের দিকে তাকাতেই স্তব্ধ বলল,

– মম শাড়ি নিয়ে ঝামেলা করো না তো।

– তুই আমার শাড়ি কেন দিলি ওকে?

– তোমার শাড়ি দিবো না তো কি আমার প্যান্ট-শার্ট দিবো? ওর কাছে ছিল না বলেই তো তোমারটা দিয়েছি।

– রাতারাতি আমার ছেলে বউ পেয়ে বদলে গেল আমার এত দামী শাড়িটা এই মেয়েকে দিয়ে দিল এই দিন দেখার জন্য বেঁচে ছিলাম, এই ছিল আমার কপালে বুঝেছি তোর বাপ আর তোর বউ মিলে তোর মাথা খেয়েছে।

স্নিগ্ধতা অবাক দৃষ্টিতে অরিত্রি শিকদারের দিকে তাকিয়ে আছে। অরিত্রি শিকদার খাবার রেখে চলে গেলেন স্তব্ধও মায়ের পেছনে ছুট লাগালো। রাতুল শিকদার মৃদু হেসে বললেন,

– তোমার শাশুড়ি মা একটু রাগী তবে মনটা অনেক ভালো ওসব মনে নিও না খেতে বসো।

– উনারা তো ঠিক মতো খেলেন না।

– স্তব্ধ আছে না ছেলের কথায় গলে গিয়ে একটু পর ঠিক খেয়ে নিবে।

– আচ্ছা আমি তাহলে আপনাদের পরিবেশন করি।

– করো তাহলে আগে পরিচয় হয়ে নাও ইনি তোমার দাদী শাশুড়ি।

স্নিগ্ধতা রাহেলা বেগমের দিকে তাকালো এতক্ষণ লজ্জায় কারো দিকে তাকায়নি তাই দেখাও হয়নি। রাহেলা বেগমের মাথায় কাঁচা পাকা চুলে ভর্তি,চুল গুলো খোঁপা করা অনেক ফর্সা চামড়া কুঁচকে গেছে।স্নিগ্ধতা মৃদু হেসে,

– আসসালামু আলাইকুম।

– ওয়া আলাইকুমুসসালাম। নাম কি তোমার?

– স্নিগ্ধতা ওয়াজেদ সবাই স্নিগ্ধা বলে ডাকে।

– মিষ্টি একটা নাম কিন্তু আমি তোমায় নাত বউ বলেই ডাকবো কি বলো?

– আচ্ছা।

– আমার খাওয়া শেষ তুমি খেয়ে আমার ঘরে এসো।

স্নিগ্ধতা মাথা নাড়িয়ে উওর দিলো, রাহেলা বেগম উঠে ঘরে চলে গেলেন। স্নিগ্ধতার কথা বলার ধরণ তার ভালো লেগেছে মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। রাতুল শিকদারও উঠে গেলেন অফিসে যাবেন তিনি।

সবাই যেতেই স্নিগ্ধতা টেবিল গুছাতে লাগলো খেতে ইচ্ছে করছে না তাই এঁটো বাসন গুলো রান্না ঘরের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল সালেহা তাকে বাঁধা দিয়ে,
– কি করেন এগুলা? দেন আমি নিয়া যাই।

– আমি নিয়ে যেতে পারবো।

– কেউ দেখলে…

– কিছু হবে না আন্টি।

বলেই স্নিগ্ধতা সবগুলো রান্না ঘরে নিয়ে ধুয়ে রেখে দিলো। তারপর সালেহার কাছ থেকে জেনে রাহেলা বেগমের ঘরের কাছে গিয়ে,
– আসবো?

– হুম এসো।

স্নিগ্ধতা ভেতরে গিয়ে দাড়ালো, রাহেলা বেগম বললেন,
– দাঁড়িয়ে আছো কেন আমার পাশে বসো।

স্নিগ্ধতা বাধ্য মেয়ের মতো বসতেই রাহেলা বেগম আবারো বললেন,
– স্তব্ধ দাদুভাইয়ের মতো তুমিও আমাকে দিদান বলে ডাকবে আর যখন ইচ্ছে আমার কাছে চলে আসবে এসব অনুমতি নেওয়ার দরকার নেই।

স্নিগ্ধতা হেসে,
– আচ্ছা দিদান।

– বাড়িতে কেউ যদি কিছু বলে তাহলেও আমাকেই বলবে।

– আচ্ছা।

– আচ্ছা আচ্ছা করছিস কেন? আমার মাথায় একটু তেল দিয়ে দে তো মাথা ভার হয়ে গেছে।

এই প্রথম কেউ ভালোবেসে তুই সম্বোধন করায় স্নিগ্ধতার মনটা উৎফুল্ল হয়ে উঠলো।ড্রেসিং টেবিল থেকে তেলের বোতল এনে যত্ন সহকারে রাহেলা বেগমের মাথায় তেল মালিশ করে দিতে লাগলো। রাহেলা বেগম প্রশান্তিতে চোখ বন্ধ করে আছেন।

অরিত্রি শিকদার মুখ গোমড়া মুখে বসে আছেন বিছানায় স্তব্ধও একপাশে বসে মায়ের মতিগতি দেখছে।অরিত্রি শিকদার আড়চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে,

– এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?

– দেখছি আর ভাবছি।

– কি?

– আমার মম একটা শাড়ির জন্য এভাবে রেগে আছে।

– শাড়ির জন্য রাগীনি তোর কর্মকাণ্ডে কষ্ট পেয়েছি একটা অপরিচিত মেয়েকে আমার শাড়ি দিলি?

– ওর কাছে ছিল না তাই তোমার শাড়ি দিয়েছি এছাড়া ও তো তোমার ছেলের বউ।

অরিত্রি শিকদার চোখ বড় বড় করে,
– তুই মেয়েটাকে মেনে নিয়েছিস স্তব্ধ!

– মানলেও সে আমার বউ না মানলেও সে আমার বউ বিয়েটা হয়ে গেছে প্রথমে মেয়েটার উপর অনেক রাগ হয়েছিল কিন্তু বুঝতে পারলাম ওর উপর রাগ করে লাভ নেই ও পরিস্থিতির স্বীকার আর আমি.. আমাকে ড্যড জোর করে বিয়েটা করিয়েছে।

অরিত্রি শিকদার চুপ করে ছেলের কথা শুনছেন স্তব্ধ থেমে আবারও বলতে লাগলো,
– অযথা খারাপ ব্যবহার করে কি হবে মম? মেয়েটার কষ্ট একবার ভাবো হুট করে বিয়ে ভেঙে গেল তার উপর অপরিচিত একটা ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়ে অপরিচিত এক জায়গায় আসলো প্লিজ বকাঝকা করো না।

– কি করবো না করবো তোর কাছ থেকে শিখব না আমি তোকে পেটে ধরেছি বুঝলি খুব শিঘ্রই তোদের ডিভোর্স করিয়ে ফেলব আজই উকিলের সঙ্গে কথা বলবো।

স্তব্ধ আর কিছু বলল না বসা থেকে উঠে মায়ের ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।কিই বা বলবে সে তো নিজ ইচ্ছায় বিয়েটা করেনি আর অপরিচিত কারো জন্য মায়ের বিপক্ষেও যেতে পারবে না।
________________

রাতুল শিকদার দুপুরে বাড়িতে চলে এসেছেন তাই সবাই একত্রে খাবার টেবিলে খেতে বসেছে স্নিগ্ধতা সবাইকে খাবার পরিবেশন করছে। খাওয়া শেষ হতেই রাহেলা বেগম বললেন,

– স্তব্ধ দাদুভাই নাত বউকে নিয়ে আজ বিকেলে কেনাকাটা করতে যাবে ওর যা যা প্রয়োজন নিয়ে আসবে।

– আমি কেন?

– তুমি ওর স্বামী তাই।

– বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাবো তাই আজ হবে না।

– আমি কিছু জানি না নাত বউ তুই বিকেলে তৈরি থাকিস দাদুভাই তোকে নিয়ে যাবে।

কারো কথা না শুনেই তিনি চলে গেলেন অরিত্রি শিকদার শাশুড়ির কথার উপরে কিছু বলার সাহস পেলেন না, স্তব্ধের মুখটা চুপসে গেছে সে আহত দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে আশাহত হলো।

যে যার মতো খেয়ে ঘরে চলে গেছে।স্নিগ্ধতা কাজ সেরে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে রাহেলা বেগমের ঘরে যাচ্ছিল পথিমধ্যে রাতুল শিকদার ডেকে,
– স্নিগ্ধা মা তোমার মা ফোন করেছে তোমার সঙ্গে কথা বলতে চান।

বলেই স্নিগ্ধতার হাতে মোবাইল ধরিয়ে চলে গেলেন,স্নিগ্ধতার অন্তর কেঁপে উঠছে ভয়ে শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে মনে মনে ভাবছে,’মা কেন ফোন দিলো? কি বলবে?কি করেছি আমি?

চলবে………..

স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-০১

0

#সূচনা_পর্ব
#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)

কবুল বলার আগ মুহূর্তে বিয়ের আসর থেকে বরকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। মুহূর্তেই বিয়ে বাড়িতে গোলমাল বেঁধে গেল কনের বেশে বসে আছে স্নিগ্ধতা আশেপাশে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল তাতে কোনো হেলদোল নেই।স্নিগ্ধতার বাবা সানজিদ ওয়াজেদ মাথায় হাত দিয়ে একপাশে বসে আছেন লজ্জায় মেয়ের সামনে যাওয়ার মুখ নেই তার। শাহিলী ওয়াজেদ মেয়েকে এভাবে শান্ত হয়ে বসে থাকতে দেখে রেগে গেলেন স্নিগ্ধতাকে টেনে তুলে অনবরত থাপ্পড় মা’র’তে মা’র’তে,

– মুখপুড়ি আমাকে শান্তি দিবি না সারাজীবন আমার ঘাড়ে বসে খাওয়ার ইচ্ছে তাই না? আমি জানি সব তোর চাল তুই এসব করে বিয়ে ভেঙেছিস তোকে আমি মে’রে’ই ফেলব।

স্নিগ্ধতার চোখ দিয়ে পানি ঝরছে গাল দুটো লাল টকটকে বর্ণ ধারণ করেছে।শাহিলী ওয়াজেদ ক্লান্ত হয়ে খাটের নিচ থেকে বাঁশের কঞ্চি বের করে জোরে স্নিগ্ধতার হাতে আঘাত করতেই সে ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো। স্নিগ্ধতার বান্ধবী শিরিন দৌড়ে এসে শাহিলী ওয়াজেদের হাত থেকে লাঠি কেড়ে নিয়ে,

– এভাবে কেউ নিজের মেয়েকে মা’রে? এসবকিছুর মধ্যে স্নিগ্ধার দোষ কোথায়? এই ছেলেটার সঙ্গে বিয়ে আপনি ঠিক করেছেন।

– তুমি একদম আমাদের মাঝখানে আসবে না এই মুখপুড়িকে আমার থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।

বলেই আবারো তেড়ে যাচ্ছিলেন শাহিলী ওয়াজেদ কিন্তু আশেপাশের কিছু মহিলা তাকে ধরে জোর করে বাহিরে নিয়ে যান। স্নিগ্ধতা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে শিরিন স্নিগ্ধতার মাথায় হাত বুলিয়ে,

– কাঁদিস না স্নিগ্ধা আন্টি কেন যে তোর সঙ্গে এমন খারাপ ব্যবহার করে বুঝি না এত বড় মেয়ের গায়ে কেউ হাত তুলে?

আজ স্নিগ্ধতার বিয়ে ছিল বিয়েটা স্নিগ্ধতার মা শাহিলী ওয়াজেদ ঠিক করেছিলেন তবে স্নিগ্ধতার এই বিয়েতে কোনো মত ছিল না মায়ের ভয়েই বাধ্য হয়ে রাজি হতে হয়েছিল। কিন্তু কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করতে যাবেন ঠিক সেই সময় পুলিশ এসে স্নিগ্ধতার হবু স্বামী রিয়াদকে মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত থাকায় গ্ৰেফতার করে নিয়ে গেল।

সানজিদ ওয়াজেদ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন কি করবেন বুঝতে পারছেন না। রাতুল শিকদার সানজিদ ওয়াজেদের পাশে বসে,

– মি.ওয়াজেদ এভাবে ভেঙ্গে পড়লে হবে বলুন তো? যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে বিয়ের পর যদি এমনটা হতো তাহলে মেয়েটার জীবন নষ্ট হয়ে যেত।

– আমি কি করবো বুঝতে পারছি না কিভাবে মেয়েটাকে মুখ দেখাব? আজ যদি স্নিগ্ধা মায়ের বিয়েটা দিতে না পারি তাহলে আর কখনো হয়তো আমার মেয়েটার বিয়ে হবে না কিভাবে রাস্তায় চলাচল করবো মান সম্মান যা ছিল সব শেষ।

রাতুল শিকদার কথাগুলো শুনে নিজেও বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন কিছুক্ষণ ভেবে তারপর শক্ত গলায় বললেন,
– আপনার মেয়ের বিয়ে আজই হবে আমার ছেলে স্তব্ধ শিকদারের সঙ্গে।

– স্যার!

– দ্রুত গিয়ে সবকিছুর ব্যবস্থা করুন আমি স্তব্ধকে বিয়ের আসরে আনছি।

সানজিদ ওয়াজেদের চোখে পানি আর খুশি একত্রে চিকচিক করছে দ্রুত তিনি বসা থেকে উঠে ঘরের দিকে গেলেন। সানজিদ ওয়াজেদ রাতুল শিকদারের অফিসে ম্যানেজার পদে কাজ করেন দশ বছর ধরে।এই দশ বছরে উনি রাতুল শিকদারের অনেক বিশ্বস্ত হয়ে গেছেন আজ স্নিগ্ধতার বিয়ে উপলক্ষে রাতুল শিকদার ছেলেকে নিয়ে সানজিদ ওয়াজেদের বাড়িতে এসেছিলেন।

স্তব্ধ একপাশে বিরক্তিমাখা মুখ নিয়ে বসে আছে রাতুল শিকদার ছেলের পাশে এসে বসতেই স্তব্ধ প্রশ্ন করলো,

– ড্যড আর কতক্ষন এখানে বসে থাকব? তোমার জন্য বাধ্য হয়ে এখানে আসতে হলো এখন তো বিয়ে ভেঙে গেছে তবুও আমরা বসে আছি কেন?

– মি.সানজিদের মেয়েকে তোর বিয়ে করতে হবে বিয়ে শেষ হলেই তোদের নিয়ে বাড়িতে ফিরব।

– হুয়াট!আর ইউ ক্রেজি ড্যড? কি বলছো?

– মি. সানজিদকে আমি কথা দিয়েছি।

– আমাকে না জিজ্ঞেস করে কেন কথা দিয়েছ? আমি এখন বিয়ে করছি না তার উপর মম যদি জানতে পারে কি হবে ভাবতে পারছো?

– তোর মমকে আমি সামলে নিবো তুই শুধু বিয়েটা কর আমি কথা দিয়ে ফেলেছি কথার খেলাপ হোক তা চাই না চল।

– যাই হয়ে যাক আমি অপরিচিত একটা মেয়েকে এভাবে বিয়ে করতে পারবো না।

– মেয়েটার বিয়ে এভাবে ভেঙে গেছে তুই যদি বিয়ে না করিস কি হবে বল তো?

– এখন কি যার যার বিয়ে ভেঙে যাবে তাকেই আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিবে?

– কি বলিস সবাইকে তোর ঘাড়ে চাপাবো কেন?

– তাহলে এই মেয়েটাকে বিয়ে করতে বলছো কেন?

– মি.সানজিদ এবং স্নিগ্ধতাকে আমি চিনি তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি মেয়েটা অনেক ভালো।

– কিন্তু ড্যড..

– কোনো কিন্তু নয় তুই যদি এখন এই মেয়েকে বিয়ে না করিস তাহলে..

স্তব্ধ কপাল কুঁচকে,
– তাহলে কি?

– আমার সম্পত্তির এক কানা-কড়িও তোকে দিবো না আজকেই তোর একাউন্ট বন্ধ করে দিবো।

– তুমি কিন্তু আমায় ব্ল্যাকমেইল করছো।

– যা মনে করিস এবার বল বিয়ে করবি কি করবি না?

স্তব্ধ মুখটা মলিন করে,
– কখন কবুল বলতে হবে বইলো।

রাতুল শিকদার মুচকি হেসে মনে মনে,’ওষুধে কাজ দিয়েছে।’ স্তব্ধের দিকে আবারো কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে,
– চল আমার সঙ্গে।

সানজিদ ওয়াজেদ স্নিগ্ধতার পাশে বসলেন করুন চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে,
– স্নিগ্ধা মা যা হয়েছে মন থেকে ঝেড়ে ফেল, আমার স্যার তার ছেলের সঙ্গে তোর বিয়ে দিতে রাজি হয়েছেন তৈরি হয়ে বাইরে আয় আজই তোর বিয়ে হবে।

স্নিগ্ধা বাবার দিকে তাকিয়ে,
– আমি কি বুঝা হয়ে গেছি বাবা? আমি তো একটা চাকরি খুঁজছিলাম তারপরেও জোর করে বিয়ে দিচ্ছিলে এখন বিয়ে ভেঙে গেছে তাহলে আবার কেন?

– আমাকে ভুল বুঝিস না মা, আমি তোর ভালো চাই আর এই নরকে তোকে রাখতে চাই না সবসময় তোর উপর তোর মায়ের অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করতে হয়েছে প্রতিবাদ করতে পারিনি কিন্তু আর নয় এবার তোর সুখ দেখে ম’র’তে চাই তুই না করিস না।

স্নিগ্ধতা বলার মতো আর কিছু পেল না কিই বা বলবে তার বাবা তো ভুল কিছু বলেনি। সানজিদ ওয়াজেদ চলে যেতেই শিরিন স্নিগ্ধতাকে পুনরায় বধূ বেশে সাজিয়ে দিলো। শাহিলী ওয়াজেদ স্নিগ্ধতাকে মা’রা’র ফলে সে কান্না করেছে এতেই সাজ নষ্ট হয়ে গেছিল। শিরিন স্নিগ্ধতার হাত ধরে,

– আর কান্না করিস না তোর ভাগ্যে যা লেখা আছে তাই হচ্ছে হয়তো এই বিয়ের মাধ্যমেই তোর জীবনে সুখ নামক পাখির আগমন ঘটবে।

স্নিগ্ধতা মনে মনে আওড়াচ্ছে,’সুখ! সত্যিই কি সুখ নামক কিছু আমার ভাগ্যে আছে?

স্তব্ধ এবং স্নিগ্ধতার বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেল দু’জনে জড়িয়ে গেল নতুন এক সম্পর্কে। কবুল বলেই স্তব্ধ এখান থেকে বেরিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। রাতুল শিকদার সানজিদ ওয়াজেদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে স্নিগ্ধতাকে স্তব্ধের পাশে বসিয়ে নিজেও গাড়িতে উঠে গেলেন ড্রাইভারের পাশের সিটে বসলেন।

স্তব্ধ একবারের জন্যও পাশ ফিরে তাকায়নি স্নিগ্ধতাও চুপচাপ জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।আসার সময় শাহিলী ওয়াজেদকে একবারের জন্যও দেখতে পায়নি
_________________

গাড়ি থেমেছে এক আলিশান ভবনের সামনে, গাড়ি থামতেই স্তব্ধ চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে চলে গেল।স্নিগ্ধতা স্তব্ধের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে রাতুল শিকদার পুত্রবধূর মাথায় হাত দিয়ে,

– হুট করেই বিয়ে হয়ে গেল তাই স্তব্ধ মেনে নিতে পারছে না দুয়েক দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে।

স্নিগ্ধতা মৃদু হাসলো। রাতুল শিকদার আবারও বললেন,
– চলো মা ভেতরে যাই।

স্নিগ্ধতা সম্মতি দিলো, স্তব্ধ অনবরত কলিং বেল চেপে যাচ্ছে সাথে সাথে একজন মাঝ বয়সী মহিলা দরজা খুলে দিলেন। পরনে বেশ দামী গাড় ডিজাইনের শাড়ি ঠোঁটে হালকা গোলাপী রঙের লিপস্টিক অনেক স্মার্ট।স্তব্ধকে দেখে বিরক্ত নিয়ে বললেন,

– এভাবে কেউ বেল বাজায় বাবু? তুই একা কেন তোর ড্যড কোথায়?

রাতুল শিকদার পেছন থেকে বলে উঠলেন,
– এই তো আমি এখানে।

– ভেতরে এসো বাপ-ছেলে।

স্তব্ধ ভেতরে ঢুকে যাচ্ছিল সঙ্গে সঙ্গে রাতুল শিকদার স্তব্ধের হাত চেপে ধরে,
– চুপ করে এখানে দাঁড়া।

স্তব্ধ পেছনে ঘুরলো না মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে আছে।মহিলাটি স্তব্ধের গাল টেনে,
– তোর মুখ ভার কেন কি হয়েছে? বিয়ে কেমন লাগলো?

– মম…

– উফ অরিত্রি আমার কথা শুনো তোমার জন্য একটা গিফ্ট এনেছি।

– কি গিফ্ট?

রাতুল শিকদার একটু সরে গিয়ে স্নিগ্ধতাকে দেখিয়ে,
– এই যে দেখো তোমার জন্য ছেলের বউ করে একটা মেয়ে এনেছি।

অরিত্রি শিকদারের দৃষ্টি দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক অবাক হয়ে গেছেন। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন,
– ছেলের বউ! মানে স্তব্ধের বউ! কি বলছো?আমায় দেখে কি তোমার মজা করার অবস্থায় মনে হচ্ছে?

– মজা করছি না স্তব্ধের সঙ্গে স্নিগ্ধতার বিয়ে দিয়েছি আমি।

অরিত্রি শিকদার এবার স্তব্ধের বাহু ধরে,
– তোর ড্যড কি বলছে এসব?

স্তব্ধ মলিন কন্ঠে,
– মম ড্যড আমায় ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে দিয়েছে বিলিভ মি আমি বিয়েটা মানি না প্লিজ তুমি কিছু করো আমার ভালো লাগছে না ঘরে গেলাম।

স্নিগ্ধতা একপাশে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে এতক্ষণে এটা সে বুঝতে পেরেছে বাড়ির কেউ তাকে মানবে না এমনকি নিজের স্বামীও না। স্তব্ধ চলে গেল নিজের ঘরের দিকে।

অরিত্রি শিকদারের মুখে রাগ স্পষ্ট, দৃষ্টি দিয়েই রাতুল শিকদারকে ঝলসে দিচ্ছে। রাতুল শিকদার ঢুক গিলে,
– আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে বলছি।

– চুপ করো স্তব্ধের ব্যাপারে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত তুমি কি করে নিতে পারলে তুমি জানতে না

রাতুল শিকদার চেঁচিয়ে,
– সালেহা….সালেহা….

রাতুল শিকদারের ডাকে একটি মহিলা দৌড়ে এসে,
– ভাইজান কি করতে হইবো কন।

– এ হচ্ছে স্নিগ্ধতা স্তব্ধের বউ ওকে স্তব্ধের ঘরে দিয়ে আসো।

– স্তব্ধ বাবায় বিয়া করলো কবে!

– আজই করেছে এখন যা বলছি তাই করো।

– আচ্ছা ভাইজান।

সালেহা স্নিগ্ধতাকে নিয়ে স্তব্ধের ঘরে যাচ্ছে। অরিত্রি শিকদার রাতুল শিকদারকে হুংকার দিয়ে,
– ওই মেয়ে স্তব্ধের ঘরে থাকবে?

– তাহলে আর কোথায় থাকবে।

– তুমি জানতে না আমি আমার বোনের মেয়ে নাতাশার সঙ্গে স্তব্ধের বিয়ে ঠিক করেছি সব কথা বার্তা ঠিক তারপরেও কেন এই কাজটা করলে এখন রুশিকে আমি মুখ দেখাব কিভাবে?

– রুশির সঙ্গে আমরা কথা বলে নিবো দরকার হলে নাতাশার জন্য আমি ভালো একটা ছেলে খুঁজে দিব তারপরেও তুমি এমন করো না মেনে নাও স্নিগ্ধতাকে মেয়েটা অনেক ভালো।

– এই বিয়ে আমি মানি না আর কখনও মানবো না এই মেয়েটাকে স্তব্ধের জীবন থেকে সরিয়ে নাতাশার সঙ্গেই আমি আমার ছেলের বিয়ে দিব।

বলেই হনহন করে চলে গেলেন অরিত্রি শিকদার, রাতুল শিকদার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে,’স্নিগ্ধতাকে এই বাড়িতে স্থায়ী করতে হলে অনেক লড়াই করতে হবে সকাল হলেই মায়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’

স্তব্ধ ফ্রেশ হয়ে বিছানায় অর্ধ শুয়ে মোবাইল টিপছে সালেহা স্নিগ্ধতাকে স্তব্ধের ঘরে নিয়ে এসে,
– স্তব্ধ বাবা এই নাও তোমার বউ ভাইজান কইছে নতুন বউরে তোমার ঘরে রাইখা যাইতে।

স্তব্ধ ব্রু জোড়া কুঁচকে সামনে তাকালো স্নিগ্ধতার মুখে গুমটা টানা মুখ দেখা যাচ্ছে না।

– বিয়ে করালো জোর করিয়ে এখন আবার ঘরও দখল করাবে বাহ।

– কিছু করার নাই আমি গেলাম।

সালেহা দরজা চাপিয়ে চলে গেল, সালেহা স্তব্ধদের বাড়িতে অনেক বছর ধরে কাজ করে।স্নিগ্ধতার ভেতরে ভয় কাজ করছে এক পলকে একবার স্তব্ধকে দেখে নিলো।

মোটামুটি ফর্সা মুখের গড়নটা বেশ সুন্দর চিকনও না আবার মোটাও না ছাঁটা দাড়ি চুলগুলো সুন্দর করে কাঁটা এতে দেখতে বেশ লাগছে। স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে ধমক দিয়ে,
– এই মেয়ে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।

স্নিগ্ধতা কিছুটা কেঁপে উঠলো ভয়ে ঠোঁট জোড়া কাঁপছে।স্তব্ধ বিছানা থেকে নেমে স্নিগ্ধতার কাছাকাছি এসে,
– কথা কানে যায়নি? নাকি কানে শুনো না।

স্তব্ধের এভাবে কাছে আসাতে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না অনেক কষ্টে বলল,
– কি পরবো?

– আচ্ছা দাঁড়াও আমি আসছি।

বলেই স্তব্ধ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল,স্নিগ্ধতা গুমটা উঠিয়ে আশেপাশ দেখে নিলো ঘরটা খুব গুছানো আর দামি দামি জিনিস দিয়ে সাজানো। মিনিট দুয়েক পর স্তব্ধ ঘরে এসে দরজা আটকে দিলো তারপর স্নিগ্ধতার দিকে একটা শাড়ি ছুঁড়ে দিয়ে,

– ফ্রেশ হয়ে এটা পড়ে নিও ওইখানে সোফা আছে ঘুমিয়ে পড়বে তোমাকে আমি বউ হিসেবে মানি না মানতেও পারবো না তাই আমার থেকে দূরে থাকবে।

স্নিগ্ধতার দিকে না ঘুরেই কথাগুলো বলে বিছানায় গিয়ে উল্টো দিক ফিরে শুয়ে পড়লো স্তব্ধ।স্নিগ্ধতা শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।

সারাদিনের এত ক্লান্তি দূর করতে একেবারে গোসল করে বের হলো স্নিগ্ধতা। একবার স্তব্ধের দিকে চোখ বুলিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো,স্তব্ধ পূর্বের মতো শুয়ে আছে।স্নিগ্ধতাও লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লো আর ভাবতে লাগলো,’কি ঘটতে চলেছে তার সঙ্গে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এই সম্পর্কটা।’

চলবে……..

কাঁচের সংসার পর্ব-১২ এবং শেষ পর্ব

0

#কাঁচের_সংসার
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_১২(অন্তিম পর্ব)

আরোহী নতুন বাসাতে উঠলো আজ বেশ কয়েকদিন হলো। বাসায় উঠার প্রথম-দিনই আশ্রমে গিয়ে খোঁজ নিল। খালা অসুস্থ ছিল বিধায় এখন আর আগের মতো দায়িত্ব পালন করতে পারতো না। তবুও নিজের অসুস্থতা লুকিয়ে বাচ্চাগুলোর দায়িত্ব পালন করার যথাসম্ভব চেষ্টা করতো। আরোহী সেদিন প্রথম দেখাতেই বুঝে গিয়েছিল যে খালা ভালো নেই। উনি অসুস্থ। আরোহী জিজ্ঞেস করাতে খালা ব্যাপারটা লুকাতে চেয়েছিল কিন্তু পারলো না।
আরোহী খালাকে নিজের সাথে নিয়ে আসতে চাইলে তিনি বাচ্চাগুলোকে কে দেখবে বলে আপত্তি জানালো। সে ওই আশ্রমের আঠারোর পর বেরিয়ে যাওয়া একটা মেয়েকেই রেখে দিল বাচ্চাগুলোর দেখা-শোনার জন্য। আরোহী মেয়েটির মধ্যে নিজেরই প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছিলো। যখন আরোহীর আঠারোর পর আশ্রমে থাকার দিন শেষ হয়েছিল তখন সে আশ্রম থেকে বেরিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল যে কোথায় যাবে!কী করবে! ঠিক সেসময় একজন তার পাশে দাঁড়াতেই সে যাচাই-বাছায় না করে সুযোগটা লুফে নিয়েছিল কিন্তু এই মেয়েটা কই যাবে!

আরোহী মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আস্বস্ত-ভরা কণ্ঠে তাকিয়ে হাসলো। কারণ মেয়েটিও বাইরের দুনিয়ার সাথে পরিচিত না। এই শহরে চাকরির জন্যও অনেক দৌঁড়াতে হয়। মেয়েটি আরোহীর কথায় এক বাক্য’তে রাজি হয়ে গিয়েছিল।

আরোহী নিজেও ছুটির দিনে খালাকে সাথে নিয়ে বাচ্চাগুলোর সাথে সময় কাটায়।

———-
কেটে গেল আরও কয়েকদিন। আশ্রমের খালা এখন আরোহীর সাথেই থাকে। আরোহী দিনটি চাকরি করেই কাটিয়ে দেয়। সবমিলিয়ে ভালোই যাচ্ছে দিন কিন্তু সারা দিনের ব্যস্ততা শেষে রাত হলেই কোথাও যেন কাঁটার মতো বিঁধে। এর মাঝে ঐদিনের পর আমেনা আহমেদ আর আসেনি বা খোঁজ নেয়নি হয়ত অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছে।

আরোহী বাসায় উঠার পর প্রায়দিন আমেনা আহমেদ রুহানকে সাথে নিয়ে আসতো। মাঝে মাঝে আরোহীর সাথে দেখা হতো আবার মাঝে মাঝে হতো না।
সেদিন এক সপ্তাহের মাথায় আমেনা আহমেদ আরোহীকে যেতে বললেন। মিথিলার মৃর্তুবার্ষিকী ছিল আর রুহানের জন্মবার্ষিকী। আরোহী বিনা বাঁধায় গেল। নিহানও ঘরেই ছিল। আরোহীকে দেখে নিহানের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হলো, সে হয়ত আরোহীকে আশা করেনি। আরোহীর হুট্ করে সবাইকে অন্য রকম মনে হলো। আমেনা আহমেদ কিছু বলার আগেই নিহান আরোহীকে ডেকে নিয়ে গেল। এতদিনে এই প্রথম নিহানের রুমে তাও বা সে নিজেই ডেকে এনেছে। আরোহীর কিছুই বোধগম্য হলো না। তার ভাবনার মাঝেই নিহান বলে উঠল,

‘আমি সোজাসাপ্টা কথা বলি। আপনাকে ডেকে আনার কারণও হচ্ছে এটা।’

আরোহী চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। সে বুঝে উঠতে পারলো না যে কী বলবে! হঠাৎ এমন আচরণ সবার!

‘জি বলুন।’

আরোহীর সম্মতি পেয়ে নিহান আরোহীর দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো।

‘মা-বাবা চাচ্ছেন, আমি যেন আপনাকে বিয়ে করি। অন্তত রুহানের জন্য হলেও।’

আরোহী চমকে নিহানের দিকে তাকালো। সবার এতক্ষন অন্য রকম আচরণের মানে বুঝে উঠতে পারলো সে।

আরোহী কিছু না বলে চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আসার পথে ড্রয়ইং রুমে কাউকে দেখেনি বিধায় আর কাউকে বলে আসেনি। সোজা বেরিয়ে গেল।
রাতে খালা অনেক করে আরোহীর কাছ থেকে জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করেছে যে কী হয়েছে। এতো এতো খুশি হয়ে গিয়েছিল কিন্তু দুপুরের আগেই হুট্ করে চলে এসেছে। এসে কথাও বলছে না। আর উপায় না পেয়ে তিনি আড়ালে গিয়ে আমেনা আহমেদের কাছে কল লাগালেন। মাঝে মাঝে আমেনা আহমেদ আরোহীকে দেখতে আসতো তখন আরোহী চাকরিতে থাকতো বিধায় বাকি সময় আমেনা আহমেদ আরোহী আসার অপেক্ষা করতেন। এই সময়টাতে আমেনা আহমেদের সাথে তার গল্প-গুজব করে কাটাতো বলে আমেনা আহমেদের সাথে তারও একটা ভীষণ ভালো সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে।

কিছুসময় পর খালা আবারও এলো। আরোহী খালার অস্তিত্ব বুঝে পেছনে ফিরলো।
‘তুমি খেয়ে ওষুধ খেয়ে নাও খালা।’ ইদানিং খালার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। এই একমাস চাকরির টাকা আর কয়েকদিন গড়ালেই দিবে। আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। এই একমাস আমেনা আহমেদই সব টুকটাক নিয়ে এসেছে। তা দিয়েই আরোহীরা ভালোমতো চলে যাচ্ছে। এই মানুষটা না থাকলে এই একমাস কিভাবে চলতো আরোহী ভেবে পায় না।

আরোহী ভাবনায় ডুবে গেল। কারো আলতো পরশে পেছনে ফিরে দেখলো খালা তার একদম কাছে দাঁড়িয়ে আছে।

‘কিছু বলবে খালা? ওষুধ খেয়ে নিও।’

‘আমার একটা আবদার রাখবি আরু!’ খালার কণ্ঠস্বর মলিন শুনালো। আরোহী খালার দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালো। মানুষটাকে এখন আর আগের মতো হাসিখুশি দেখায় না। সেদিন আরোহী জোর করে ডাক্তারের কাছে পাঠিয়েছিল, আরোহী নিজেও যেতে চেয়েছিল কিন্তু খালা একায় চলে গিয়েছিল আর আরোহী চাকরিতে। সেদিনের পর থেকেই খালার মুখ থেকে হাসি সরে গিয়েছিল। আরোহী বুঝে উঠে পায় না, হুট্ করে মানুষটাকে ভীষণ অসুস্থ মনে হয়।

মাথায় আবারও কারো স্পর্শে আরোহী ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। সে তাকিয়ে দেখলো, খালা তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইদানিং কথায় কথায় বেশি অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে আরোহী। সে হেসে খালার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,

‘তুমি এভাবে বলছো কেন খালা? অবশ্যই রাখবো। তুমি বলো?’

‘তুই বিয়েটা করে নেয় মা।’

আরোহী শান্ত রইল। প্রতিত্তরে কোনো জবাব দিল না।

‘তোর জীবন এখনো পড়ে রয়েছে মা। আমি আর কয়দিনই বা বাঁচবো! মানুষের সুখের জন্য হলেও একটা নিজের মানুষ থাকা দরকার। যাকে দিন শেষে সবকিছু বলা যায়। একদিন হয়ত আফসোসও করবি। এই যে তুই রাত্রে এভাবে থাকিস সেটা আমার ভালো লাগে না রে। যদি আমি না থাকি তুই আরও একা হয়ে পড়বি। আর আমেনা মানুষটা ভালো, যা শুনেছি নিহান ছেলেটাও ভালো। নিহানের সাথে সাথে তোর একটা সুন্দর জীবন পাবি। তুই একটা পূর্ণ পরিবার পাবি। আফসোস রইবে না আর। হয়ত তোর এই দুঃখগুলো ওই পরিবারে গিয়ে সুখ হয়ে পূর্ণ পাবে। আমি চাই, তুই একটা সুন্দর ভবিষ্যত পাস।’

আরোহী জানে খালা তার নিজেরই কথা ব্যাখ্যা করছে। হয়ত এই বয়সে এসে নিজের একটা কাছের মানুষের অভাবে দগ্ধ হচ্ছে। আরোহী মলিন শ্বাস ফেলে জানালার বাইরে ব্যস্ত শহরের দিকে দৃষ্টি দিল।
————

আরোহী আজ চাকরিতে গেল না। সে পাশাপাশি একটা কলেজে স্নাতকে অ্যাডমিশন নিয়েছে। একবছর আগে উচ্চ-মাধ্যমিক দিয়েছিলো বিধায় বেশি বেগ পোহাতে হয়নি। কলেজ থেকে বের হতেই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেল। সে দ্রুত পায়ে রাস্তার দিকে গাড়ির উদ্দেশ্যে এগিয়ে যেতেই ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি নামলো। সে দ্রুত দৌড়ে যাত্রী চাওনির দিকে এগিয়ে যেতে যেতেই প্রায় ভিজে গেল। পরনের সাদা রঙের কুর্তিটা ভিজে অবস্থা কাহিল। চুলগুলো থেকে টপটপ পানি পড়ছে। কোনো গাড়িও দাঁড়াচ্ছে না। চারদিকে আস্তে আস্তে আরও অন্ধকার ঘনিয়ে আসতেই আরোহী উড়না দিয়ে নিজেকে যথাসম্ভব আবৃত করে নিল। ঠান্ডা লাগছে বড্ড।

‘উঠে আসুন।’

কারো চেনা কণ্ঠস্বর শুনতেই আরোহী সামনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল রাস্তার বিপরীত পাশে নিহান গাড়ি থেকে ছাতা নিয়ে বের হচ্ছে। নিহানকে এই মুহূর্তে মোটেও আশা করেনি সে। দীর্ঘ একমাস পর দেখছে।

নিহান আরেকবার বলতেই আরোহী গাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে নিতেই নিহান ইশারা দিয়ে ওখানেই দাঁড়াতে বললো। আরোহী দাঁড়িয়ে রইল।

নিহান রাস্তায় এসে আশেপাশে গাড়ি আসছে কিনা দেখে ছাতা নিয়ে আরোহীর সামনে এসে দাঁড়ালো।
‘চলুন।’

আরোহী একফলক নিহানের দিকে তাকিয়ে ছাতার ভেতরে আসতেই নিহান হাঁটা ধরলো। আরোহীর কানে তখন খালার কথায় বাজছে যে,’নিহানের কাছ থেকে তোর একটা সুন্দর জীবন পাবি।’

নিহান আরোহীকে পাশের সিটে বসতে বলতেই আরোহী গাড়িতে উঠে পড়লো। নিহান আরোহীর সিটের বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে ঘুরে নিজের ড্রাইভিং সিটে এসে বসলো। কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠল,’দুঃখিত আসলে ঐদিনের ব্যাপারটার জন্য। আমি মা-বাবার দিকেই তাকিয়ে রাজি হয়েছিলাম। উনারা আপনি না হলেও অন্য কোনো মেয়ের সাথে আমার জীবন আবদ্ধ করতে বাধ্য করতো তাই আমি ভেবেছিলাম আপনার জীবনেও তো অনেক কষ্ট তাই আপনার কথা বলতেই রাজি হয়েছিলাম। আর হয়ত বাইরের কোনো মেয়ে আমার রুহানের অতো যত্ন করতো না কিন্তু আপনি প্রথম থেকেই রুহানকে একদম নিজের মতো করে যত্ন করেছেন। যেদিন রাতে রুহানের জ্বর ছিল সেদিন দেখেছিলাম আপনার পাশে পানির গামলা। সেদিনই বুঝে নিয়েছিলাম যে আপনি আমার রুহানের জন্য একদম পারফেক্ট। তাই এরপরে মায়ের কথা শুনে রুহানের চিন্তা করে আর না করতে পারিনি কিন্তু আমি ভুল করেছিলাম। সেদিনের ঘটনাটা ভুলে যান।’

আরোহী বাহিরের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিহানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

তাতেই নিহান পুনরায় কথাটা বলার সাহস পেয়ে গেল,
‘আপনি কী রুহানের মা হতে পারবেন!’

‘হ্যাঁ পারবো। রুহান আমার অপূর্ন জীবনের পূর্ণতা।’মুচকি হেসে সামনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল আরোহী।

‘সপ্তাহে তিনদিন আপনাকে ওই ব্রিজে নিয়ে যাবো কিন্তু বাকি তিনদিন মিথিলার মানে আমি একাই।’

‘আমি আপনাকে মিথি আপুকে ভুলতে বলবো না। কেউ কারো প্রথম ভালোবাসা ভুলতে পারে না। আমিও বাধ্য করবো না। আমার জন্য রুহানই যথেষ্ট কিন্তু আপনি যখন তিনদিন আমাকে দিবেন বলছেন তাহলে না করি কিভাবে!’ বলেই হাসলো আরোহী।

————-
পরিশিষ্ট : কেটে গেল কয়েকবছর। আরোহী রুহানকে স্কুল থেকে নিয়ে সোজা হাসপাতালে চলে এসেছে। নিহান বলেছিল, আজ কোথায় জানি ঘুরতে নিয়ে যাবে আর আরোহীকে রুহানকে নিয়ে স্কুলের গেটে দাঁড়াতে বলেছিল কিন্তু সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে নিহানের আসার কোনো খবর নেই তাই আরোহীর আর অপেক্ষা সহ্য হলো না। সে রুহানকে নিয়ে সোজা হাসপাতালে এসে পৌঁছেছে।
আরোহীর কল পেয়ে নিহান তড়িঘড়ি করে ক্যাবিন ছেড়ে বেরিয়ে আসলো।

‘দুঃখিত দুঃখিত রুহি। দেরি হয়ে গেল।’
আরোহী কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে নিতেই নিহানের পেছনে কেউ একজনকে নার্সের সাথে তর্ক করতে দেখে থমকে গেল।

‘বাবা রাগ করেছো তুমি!’

নিহানের কথা শুনে রুহানও মুখ ফিরিয়ে নিতেই নিহান হেসে আরোহীর দিকে তাকাতেই আরোহীকে তার পেছনে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেও পেছন ফিরলো।

‘এই যে ডাক্তার।’ আরিয়ান অগোছালো ভাবে নিহানের দিকে তাকিয়ে নার্সকে ইশারা করে বলতেই নার্স এসে বাধা দিল।

‘দেখুন, স্যারের ডিউটি শেষ। আর আপনি টাকা না দিয়ে এখানে এতো উন্নত চিকিৎসার আশা করতে পারেন না।’

আরিয়ান অগোছালো ভাবে আশেপাশে তাকিয়ে নিহানকে হাত জোর করলো। নিহান কিছু বলে উঠার আগেই আরিয়ানের দৃষ্টি আরোহীর দিকে পড়তেই সে থমকে গেল। আরোহী রুহানকে কাছে টেনে নিল।

‘আরু!’ আরিয়ানের দৃষ্টি অগোছালো। আরোহী এতক্ষনে যা বুঝার বুঝে নিয়েছে। সে নিহানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
‘আজকে না হয় ঘুরতে না যাই । আপনি উনার মায়ের চিকিৎসা শুরু করুন।’
আরোহী কথাটা বলে থামতেই আরিয়ান আরোহীর আরেকটু এগিয়ে আসলো। এসেই আরোহীর পায়ের কাছে বসে পড়লো। আরোহী সরে যেতে নিতেই আরিয়ান পা জড়িয়ে ধরে বলে উঠল,
‘আমাকে মাফ করে দিও। তুমি যাওয়ার পর আমি একটা দিনও ভালো ছিলাম না। স্নেহা একবছর পেরোতেই আমাদের ধোঁকা দিয়ে বাসার সম্পদ নিয়ে চলে গিয়েছে। সে পর্যন্ত মা আর ভালো ছিল না। মা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর সবকিছু বলেছে আমাকে। আমাকে ক্ষমা করো।’

আরোহী জবাব দেওয়ার মতো ভাষা পেল না।
‘উঠুন। আপনার মায়ের চিকিৎসা সুষ্ঠুভাবেই হবে। চিন্তা করবেন না।’

নিহান আরোহীর কাছ থেকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। সে আরোহীকে ভালোভাবে বাসায় যেতে বলে আরিয়ানের মায়ের চিকিৎসার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।
আরোহী পেছনে থেকে ডেকে বলে উঠল,
‘একটু উনার মা’কে দেখে আসি?’

নিহান হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়তেই আরোহী এগিয়ে গেল।
লুৎফা বেগমকে চেনায় যাচ্ছে না। কী শক্ত-পোক্ত শরীরের মহিলা একদম জীর্ণ-শীর্ন হয়ে গেল!
লুৎফা বেগম বাইরেই তাকিয়ে ছিলেন। আরিয়ানের ডাক শুনে ফিরতেই আরোহীকে দেখে কাঁপা কাঁপা হাতে ইশারা করে কিছু বলতে লাগলো কিন্তু শোনা গেল না। উনার আওয়াজ বাহিরে এলো না। শুধু এটুকুই বুঝা যাচ্ছে উনি হয়ত আরোহীর কাছ থেকে মাফ চাইছেন।
‘আমার স্বামী নিহানের হাতেই আপনার মায়ের চিকিৎসা সফে দিলাম। আশা রাখি, আল্লাহ চাইলে সব ভালোই ভালোই হবে।’
আরোহী আরিয়ানের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে শেষবারের মতো একফলক তাকিয়ে রুহানকে নিয়ে ক্যাবিন ছেড়ে বেরিয়ে গেল । আরোহী একটা মলিন শ্বাস ফেলল। তার কাঁচের মতো স্বচ্ছ সংসারটাকে শেষ করে দেওয়ার আফসোস হচ্ছে লুৎফা বেগমের কিন্তু এখন আর আফসোস করে কী লাভ! কাঁচ যেমন দেখতে সুন্দর, পরিশুদ্ধ তেমন ভাঙলে আর জোড়া লাগানো যায় না। লাগলেও সেটাতে স্পষ্ট একটা দাগ বসে রই। আর আগের মতো স্বচ্ছ হয় না।
আরিয়ান পেছনে থেকেই আরোহীর দিকে তাকিয়ে আছে। আরোহীর মতো একটা মেয়েকে কাছে পেয়েও হারিয়ে তার নিজেকে সবচেয়ে পরাজিত মনে হচ্ছে। এ জীবনে আর কিছুই রইল না।
বিধাতা কাউকে ছাড় দেন না। দেরি হলেও যার যার কর্মফল সে ভোগ করে আর দুঃখের পরই সুখ আসে। আরোহীর সুখ এখন নিহান। সৃষ্টিকর্তা কাউকেই হয়ত নিরাশ করেন না। ধৈর্য্য ধরলেই হয়ত ফল পাওয়া যায়।

#সমাপ্ত।