Wednesday, August 20, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 453



প্রিয়দর্শিনী পর্ব-৪৭

0

#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব__৪৭

সময় মতো নিহাল গাড়িতে করে দর্শিনীকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দেয়। দৃশ‍্যটা দূর থেকে একজন লক্ষ‍্য করেছে। দর্শিনীকে সবসময় আবিদই পৌঁছে দিতো। আবার যাওয়ার সময় হলে নিয়ে যেতো। সেখানে আজ দর্শিনীকে অন‍্যকারো সঙ্গে দেখে সাফিনের সাহস হলো। সে ভাবলো আজকে হয়তো দর্শিনীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হবে। সাফিন দেখল নিহাল আদিবাকে কোচিং সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছে। সে দর্শিনীর সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে আসে। কিন্তু দর্শিনী বান্ধবীদের সঙ্গে ডিপার্টমেন্টের ক্লাসে চলে যায়। সাফিনের সুযোগ হয়নি দর্শিনীর সঙ্গে কথা বলার।

নিহাল আদিবাকে কোচিং এ পৌঁছে দিয়েছে। সে তাড়াতাড়ি ফিরে যাবে! তখনি আদিবার ব‍্যাচমেট একটা ছেলে নিহাল, আদিবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘হাই আদিবা, তোমার ভাইয়া নাকি?’

আদিবা কী বলবে বুঝতে পারেনা। ভাবলো নিহালের পারমিশন ছাড়া তাকে বয়ফ্রেন্ড বলাটা ঠিক হবে না। সে নিহালের দিকে তাকিয়ে ছেলেটাকে বলে,

‘হ‍্যাঁ অনিক, উনি আমার কাজিন হয়, ডা. নিহাল রায়হান!’

এদিকে বয়ফ্রেন্ডকে কাজিন বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়ায় নিহাল চোখ ছোট করে আদিবার দিকে তাকায়। আদিবা কিছু একটা ইশারা করে। বিষয়টি এমন যে, আদিবা সবটা সামলে নিবে! নিহাল যেন কিছু মনে না করে। এবার অনিক নামের ছেলেটা নিহালের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ওহহ, হ‍্যালো ভাইয়া! আমি অনিক মাহমুদ, আদিবার কোচিং এর ব‍্যাচমেট! আপনার বোন আদিবা দারুণ মেধাবী ভাইয়া। বিউটিফুল উইথ অ‍্যা ব্রিলিয়ান্ট ব্রেইন!’

বলেই হাসলো অনিক। নিহালের এবার ছেলেটার প্রতি রাগ হলো। সে বেশ বুঝতে পারছে অনিক তাকে আদিবার ভাই হিসাবে প্রশংসা করে পটাতে চাইছে! সেই সঙ্গে আদিবাকে ইমপ্রেস করতে চাইছে। শুধু তাই নয়, আদিবাকে প্রতিটা কথায় নিহালের বোন বলে সম্বোধন করছে। কিন্তু আদিবা তো কোনভাবেই নিহালের বোন নয়। সে নিহালের গার্লফ্রেন্ড! তা সত্ত্বেও যদি বয়ফ্রেন্ডকে বারবার এমন কথা বলা হয়, তাহলে রাগ করাটা কী স্বাভাবিক নয়? নিহাল চোয়াল শক্ত করে আদিবার দিকে তাকায়! আদিবা পড়েছে মহা ঝামেলায়। নিহাল ছেলেটাকে কিছু না বলে চলে যেতে থাকে। আদিবা স্পষ্ট বুঝতে পারছে নিহাল রাগ করেছে। সে নিহালের পিছু পিছু যেতে থাকে। নিহাল গাড়ির কাছে আসে। সে নিজেকে শান্ত করতে বিরবির বলে,

‘বি ইজি নিহাল।’

ঠিক সেই মুহূর্তে আদিবা এসে বলে,

‘সরি, আসলে অনিক আমার ব‍্যাচমেট! তেমন ফ্রেন্ড নয় শুধু কোচিং এর পরীক্ষায় একবার একসঙ্গে বসেছিলাম। সেই থেকে সে আমাকে পছন্দ করে! তাকে আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে না করলেও সে আমাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। আমি তাকে কৌশলে এড়িয়ে যাই!’

সবটা বলে আদিবা করুণ ফেস করে নিহালের দিকে তাকায়। নিহাল তখন রাগের মাথায় বলতে থাকে,

‘ছেলেটা বারবার তোমাকে আমার বোন বানাতে চেষ্টা করছিল। তুমি এটা কী করলে আদিবা? আমি তোমার কাজিন হই? তুমি তাকে কি সুন্দর করে বললে, আমি নাকি তোমার কাজিন! কীভাবে পারলে?’

‘তো কী করতাম আমি? আমাদের রিলেশনশীপ পাবলিক করা? যেখানে আমাদের ব‍্যাপারে কেউ জানেনা! সেখানে অনিককে বলে কী হবে? আপনার জানানোর হলে সর্বপ্রথম নিজের ফ‍্যামেলীকে জানান। তখন সবাই জানতে পারবে আমি আপনার কে।’

‘সে তোমাকে পছন্দ করে। ছেলেটা তোমাকে এভাবেই ডিস্টার্ব করতে থাকবে, স্টুপিড!’

‘এমন অনেকজন আমাকে পছন্দ করে! তাই বলে কী তাদেরকে গুরুত্ব দেওয়া সাজে? এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই আমার। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি ওকে নিষেধ করবো! আপনি রাগ করবেন না প্লীজ।’

নিহাল একবার আদিবার দিকে তাকিয়ে গাড়িতে চড়ে চলে যায়। আদিবা সবটা দেখে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। তার কী খুশি হওয়া উচিত? যেই লোকটাকে নিয়ে সে সবসময় ইনসিকিয়র ফিল করেছে। এখন সেই লোকটা তাকে নিয়ে ইনসিকিয়র ফিল করছে। ভাগ‍্য বড়ই অদ্ভুত, তার নিশ্চয়ই খুশি হওয়া উচিত হবে!

.

দর্শিনী ক্লাস করে ক‍্যাম্পাসে আসে। তার সঙ্গে ‘ল’ ডিপার্টমেন্টের একজন বান্ধুবী আছে। নাম রাইমা! কয়েকমাসের মধ‍্যেই মেয়েটা দর্শিনীর অনেকটা ক্লোজ হয়ে গেছে। দর্শিনী আর রাইমা ক‍্যাম্পাসে দিয়া, নাদিম, আহানাফ, হৃদিতাকে দেখতে পায়। দর্শিনী এদের সঙ্গে রাইমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। সেই সুবাদে তাদের বন্ধু মহলে রাইমা কয়েকমাস আগেই যুক্ত হয়েছিল। নিজ নিজ ডিপার্টমেন্টের ক্লাস শেষে, রাইমা সবাইকে ক‍্যান্টিনে কফি খাওয়ার কথা বলে। সবাই রাজি হয় ঠিকই তবে হৃদিতা বলে,

‘ক‍্যান্টিনে নয়! আশেপাশের রেস্টুরেন্টে গেলে ভালো হবে।’

তারা সবাই হৃদিতার কথায় রাজি হয়ে যায়। ভার্সিটির পাশে সুন্দর পরিচ্ছন্ন একটা রেস্টুরেন্টে সবাই বসে খাওয়ার অর্ডার দিচ্ছে। দর্শিনী তখন আবিদকে টেক্সট করে জানিয়ে দেয়; সে বান্ধুবীদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে এসেছে। আবিদ জানতে চায় তারা কোন রেস্টুরেন্টে আছে। দর্শিনী নামটা টেক্সট করে বলে দেয়। সবাই বেশ আনন্দ করছিল। কিন্তু তখনি সাফিন নামের ছেলেটি তাদের ফলো করে রেস্টুরেন্টে চলে আসে। ছেলেটির সঙ্গে দুজন মেয়ে, দুজন ছেলে ছিল। তারা দর্শিনীদের পাশের টেবিলে বসে বিশৃঙ্খলা, বিভিন্ন নয়েজ সৃষ্টি করছিল। সাফিন শুধু দর্শিনীকে দেখছিল! তার বন্ধুরা তখন মেয়েদের নামে কটূক্তি করছিল। দর্শিনীর মেয়ে বন্ধবীরা ভুক্তভোগী ছিল! বিশেষ করে দর্শিনীর উদ্দেশ্যে তারা নানান কথা বলছিল। দর্শিনী সবটাই বুঝতে পারছিল। নাদিম আহানাফ রেগে কিছু বলবে; তখনি দর্শিনী তাদেরকে থামিয়ে দেয়। মূলত সাফিন এতো সাহস পাচ্ছে আজকে দর্শিনীর হাসবেন্ড আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী নেই ভেবেই! নাহলে কখনো এমন বাড়াবাড়ি করেনি সাফিন। দর্শিনী ছেলেটাকে একটু ভদ্র ভেবেছিল। অথচ তার জঘন্যতম দ্বিতীয় রূপ দেখে রীতিমতো বিস্মিত হচ্ছে দর্শিনী। আবিদ সবকিছু জানলে ছেলেটাকে চরম শিক্ষা দিয়ে দিতো। দর্শিনী ভাবলো আবিদকে না জানিয়ে আসলেই ভুল হয়েছে তার।

আবিদ ইতিমধ্যে ভার্সিটিতে পৌঁছে গেছে। ভার্সিটির পাশে রেস্টুরেন্টটা দেখে আবিদ ড্রাইভারকে বলে দেয় আদিবার কোচিং শেষ হলে তাকে নিয়ে বাড়িতে যেতে। আজকে সে দর্শিনীকে নিয়ে রিক্সায় চড়ে বাসায় যাবে। ড্রাইভার তখন মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মতি দিয়ে চলে যায়। আবিদ তখন রেস্টুরেন্টের দিকে এগিয়ে যায়। দর্শিনী এখনো জানেনা আবিদ রেস্টুরেন্টে চলে আসছে। সে নাদিম, আহানাফকে সাফিনের গ‍্যাঙ্গের কোন কথা গায়ে মাখতে নিষেধ করে। তাদের পারিবারিক শিক্ষার অভাব রয়েছে। দর্শিনী সেটা বেশ বুঝতে পারছে! তাদের সঙ্গে কথা বলে নিজেদের সম্মান নষ্ট করতে চায়না দর্শিনী।

সাফিন ছেলেটাও পরিবার থেকে শিক্ষা পায়নি স্পষ্ট! নাহলে একজন বিবাহিত মেয়েকে কেউ পছন্দ করতে পারে? শুধু পছন্দ নয় রীতিমতো বিরক্ত করছে এখন! দর্শিনী এসব সুস্থ মস্তিষ্কে কল্পনাও করতে পারছে না। সাফিনের গ‍্যাঙ্গের সদস‍্যরা দর্শিনী সহ অন‍্যান‍্য মেয়েদের নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলেছে। অনেক ক্ষণ ধরে তাদের বাজে কথা দর্শিনীর কানে আসছে। সে বাধ‍্য হয়েই নিশ্চুপ ছিল! কিন্তু সাফিনের পাশে বসা মেয়েটির শেষের কথা দর্শিনীর কানে গরম শীষা ঢেলে দেওয়ার মতো যন্ত্রণা অনুভব হলো। মেয়েটির কথা কিছুটা এমন ছিল যে,

‘দোস্ত, সুন্দর আছে তো! কিন্তু প্রবলেম হচ্ছে বিবাহিত মাল! বিবাহিত মেয়েকে যখন পছন্দ করেছিস সামলাতে পারবি তো? যদি পারিস দেখিয়ে দিস তুই তার স্বামীর চেয়ে কতোটা সক্ষম! তখন দেখা যাবে স্বামীকে ছেড়ে ঠিকই তোর কাছে ছুটে আসবে ****।’

দর্শিনীকে এতো বাজে কথা শুনতে হবে কখনো কল্পনা করেনি সে। এখানে শুধু দর্শিনীকে একা বাজে কথা বলা হয়নি! আবিদকে টেনে বাজে কথা বলা হয়েছে। প্রচণ্ড রাগে থরথর করে কেঁপে ওঠে দর্শিনীর শরীর! সে চেয়েছিল অশিক্ষিত মেয়েটাকে ইগনোর করতে। নিজেকে কন্ট‍্রোল করতে পারেনা দর্শিনী। কান্না পাচ্ছে তার! শাড়ি পরিহিত অবস্থায় সহসা উঠে গিয়ে মেয়েটার চুলের মুঠি ধরে সর্বশক্তি দিয়ে দুটো থাপ্পড় বসিয়ে দেয় দর্শিনী। ঘটনার আকস্মিকতায় উপস্থিত সকলে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। দর্শিনীর ফেন্ডরা সবাই তখন দর্শিনীর পিছনে এসে দাঁড়ায়। মেয়েটি থাপ্পড় খেয়ে সাফিনের দিকে তাকায়। সাফিন তখন দিকবেদিক ভুলে গিয়ে দর্শিনীর তেজস্বী রূপ দেখে মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে থাকে। মেয়েটি কিছু বলবে, তখনি দর্শিনী স্বশব্দে আরো একটা থাপ্পড় বসিয়ে বলে,

‘তোর মতো নর্দমার কী’ট ভেবেছিস, সবাইকে? নাকি তোর মতো দুঃশ্চরিত্রের? আমি আগ্নেয়গিরির উত্তপ্ত লাভা! লাভা মানে বুঝিস তো? আগ্নেয়গিরির লাভা অনেক সময় নিশ্চল থাকে। এর মানে এটা নয়, লাভা তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। লাভার ভেতরে উত্তাপ, তেজস্ক্রিয়তা বিদ‍্যামান থাকে সর্বদা। আমাকে নম্র ভেবে ভুল করেছিস সবাই। তোদের মতো কী’টদের জন‍্য আমি সবসময় নম্র থাকব ভুল ধারণা তোদের। হ‍্যাঁ আমি বিবাহিত মেয়ে। আর আমাকে সামলানোর জন‍্য আমার স্বামীই যথেষ্ট। অন‍্যকারো ক্ষমতা নেই উত্তপ্ত আগুনে হাত দেওয়ার। কেবলমাত্র আমার স্বামী ছাড়া! তাইতো আমি জ্বলন্ত লাভার মতো। এমন উত্তপ্ত তেজস্বিনীকে শান্ত করতে সক্ষম ব‍্যক্তির সক্ষমতা সম্পর্কে তোর মতো নোংরা কী’টের ধারণা হাঁটুর নিচে থেকে গেছে। এবার আমার তোদের সক্ষমতা সম্পর্কে সন্দেহ থেকে গেলো।’

দর্শিনীর কথায় সাফিন এবং তার বাকি দুজন বন্ধু দপ করে জ্বলে উঠে। নাদিম আহানাফ দর্শিনীর ঢাল হয়ে পিছন থেকে সাবধান করে দেয় ওদেরকে। রাগ হয় তাদের দর্শিনীর প্রতি! নিজের স্বামীকে নিয়ে দশিনীর এমন গর্ব করাটা ভালো লাগেনি সাফিনের। সে আবিদকে নিয়ে কিছু বলতে চাইছিল। কিন্তু দর্শিনী সাফিনকে স্বজোরে থাপ্পড় বসিয়েছে। সাফিন থাপ্পড় খেয়ে একদম চুপ হয়ে যায়। সাফিনকে মারার জন‍্য দর্শিনীর কাছে থাপ্পড় খাওয়া মেয়েটা ক্ষিপ্ত হয়ে দর্শিনীর সামনে দাঁড়ায়। সাফিন তখন তার উদ্দেশ্যে বলে,

‘ইরা থাম! প্রিয়দর্শিনীকে কিছু বলবি না তুই।’

দর্শিনী ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। এমনিতেই জা’নোয়ার মেয়েটা তাকে বাজে কথা বলেছে। এতো সহজে তার রাগ কমবে না। সে ইরার চুল খামচে ধরে হাত স্বজোরে মুচড়ে দেয়। ব‍্যথায় ইরা কেঁদে ফেলে। দিয়া, রাইমা, হৃদিতা, দর্শিনীকে ছাড়াতে যায়নি। মেয়েটা দর্শিনীর হাতের মার খেয়ে দেখুক! হয়তো আজন্মের মতো শিক্ষা হয়ে যাবে। ইরার সঙ্গে আরেকটি মেয়ে ছিল। সেই মেয়েটা মৃদু রাগ দেখিয়ে এগিয়ে আসে। ঠিক তখনি রাইমা তার সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ায়। যাকিছু ঘটেছে আবিদ সবটা দেখেছে, ভালো করে শুনেছে। সাফিন নামের ছেলেটা দর্শিনীকে অনেকদিন ধরে পছন্দ করে এটাও আজকে জানতে পারলো। ছেলেটি নিশ্চয়ই দর্শিনীকে ফলো করেছে! মুগ্ধতা মিশিয়ে দর্শিনীর দিকে তাকিয়েছে। এসব ভেবে আবিদের প্রচণ্ড রাগ হয়! তার গমরঙা ত্বকে নীল রগ ফুটে উঠেছে। দর্শিনীর উপর তার মৃদুমন্দ রাগ হচ্ছে। আবার দর্শিনীর তেজস্বী রূপ, কথাবার্তা দেখে অনেক ভালো লেগেছে। কতোদিন পরে স্বচক্ষে দর্শিনীর দৃঢ়চেতা প্রতিবাদী রূপটা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আবিদের। দর্শিনী একজন ভবিষ্যৎ লয়ার বা জজ। সে সবসময় চায় প্রিয়দর্শিনী সবদিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ হোক। কেউ যেন কখনো তাকে অন‍্যায় ভাবে দমাতে না পারে!

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে ইরা নামের মেয়েটি! তাদের কাজের লোক, ইমান আবদুল্লাহ আর সুফিয়ার মেয়ে ইরা। এই মেয়েকেই তার বাবা শাহরিয়ার চৌধুরী নিজ উদ্যোগে টাকা খরচ করে ভার্সিটিতে পড়াচ্ছে। মেয়েটা মোটামুটি মেধাবী ছিল! তাই যখন ভার্সিটিতে চান্স পেলো ইমান আবদুল্লাহর সার্মথ‍্য ছিলনা মেয়েকে পড়ানোর। তিনি যেহেতু অনেক আগে থেকে চৌধুরী পরিবারের বিশ্বস্ত কাজের লোক। তাই উনার মেয়ে ইরার পড়াশোনার খরচ চৌধুরী পরিবার থেকে দেওয়া হয়। সেখানে মেয়েটা বাজে ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে মিশে কী তৈরি হচ্ছে! আবিদের ইমান চাচা আর সুফিয়ার বেগমের কথা ভেবে খারাপ লাগছে। তারা কী জানে, তাদের মেয়ে বখে যাওয়া জঘন্য জীবন লিড করছে। ছিঃ পোশাকের অবস্থা যথেষ্ট শোচনীয়! আবিদ তার দিকে দ্বিতীয়বার তাকালো না। মেয়েটা শর্ট ক্রপটপ, জিন্সের প‍্যান্ট পড়ে আছে। পেটের অনেকটা দৃশ‍্যমান। মেয়েটাকে একবার দেখে কেউ কাজের লোকের মেয়ে বলবে না। তাকে দেখে মনে হচ্ছে যথেষ্ট ধনী ফ‍্যামেলী থেকে এসেছে। মেয়েটি নিশ্চয়ই সবার কাছে পরিচয় গোপন করে অশ্লীল কাজকর্ম করে বেড়াচ্ছে। সে হয়তো জানেনা দর্শিনী আবিদের স্ত্রী! না জেনেই দর্শিনীকে হাজারটা উল্টাপাল্টা কথা বলেছে। আবিদ সাফিন সহ দুজনকে নোটিশ করে তাদের ছবি সহ গার্ডদের ছোট্ট একটা টেক্সট করে দেয়। এদেরকে আজ সে নিজের সক্ষমতা দেখাবে। অনেক ভালো করেই দেখাবে। নিহাতই সে মেয়েদের মা’রধর করেনা! নাহলে ইরাকে শিক্ষা দিয়ে দিতো। তবে আবিদ ঠিক করল ইরাকে শিক্ষা দেওয়ার জন‍্য ইমান আবদুল্লাহর হাতে ছেড়ে দিবে।

রেস্টুরেন্টের মধ‍্যে বেশ তর্কাতর্কি শুরু হয়েছে। দর্শিনী ইরার চুলটা এখনো ছাড়েনি। আবিদ এবার এগিয়ে আসে। সাফিনের গ‍্যাঙ্গের একটা ছেলে দর্শিনীর হাত থেকে ইরাকে ছাড়াতে তার দিকে হাত বাড়ায়। আবিদ তৎক্ষণাৎ ছেলেটির হাত মুচড়ে ধরে। মূহুর্তেই মটমট শব্দ হয়। ছেলেটা গলা ফাঁটা চিৎকার করে উঠে। ছেলেটার আঙ্গুল গুলো বুঝি ভাঙ্গলো! সবাই তখন দর্শিনীর পাশে সুট-বুট পরিহিত লম্বাটে সুদর্শন পুরুষের দিকে তাকিয়ে দেখে। সাফিন সহ বাকি দুজন ভয়ে মৃদু ঢোক গিলে ফেলে। আবিদ ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দর্শিনীর দিকে ফিরে। দর্শিনী তখনও ইরার চুল ধরে আছে। ইরা তখন ব‍্যথায় কাঁদছে। আবিদ রুমাল দিয়ে দর্শিনীর শুভ্র কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামটুকু মুছে দেয়। তারপর চুলটা ঠিক করে কানের পিছনে গুঁজে দেয়। রাইমা, আবিদকে এতোদিন দেখেনি শুধু আবিদের সম্পর্কে দর্শিনীর কাছে শুনেছে। আজকে আবিদকে দেখে রাইমা হা হয়ে আছে! আবিদ তখন দর্শিনীর কমল হাত ধরে বলে,

‘দর্শিনী, ছেড়ে দেও! আমি দেখছি বিষয়টা।’

‘আবিদ, মেয়েটা প্রচণ্ড বাজে! আপনাকে নিয়ে প্রচুর বাজে কথা বলেছে। আমি ওকে ছাড়বো না। মে’রে ফেলবো ওকে!’

‘দর্শিনী, ইরা ইমান আবদুল্লাহ চাচার মেয়ে!’

সহসা দর্শিনীর হাত থেমে যায়। সে কী ঠিক শুনলো? ইরার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিলো সে। মনে মনে ভাবলো ইমান চাচার মতো ভালো মানুষের এমন জঘন‍্য মেয়ে কীভাবে সম্ভব? ইরা আবিদের গলা পেয়ে ভয়ে নীল হয়ে গেলো। আবিদকে সে চিনে! মানুষটা প্রচণ্ড রাগী! এই লোকটার বাড়িতেই তার বাবা-মা কাজ করে। তাছাড়া আগে থেকে আবিদকে দেখেছে ইরা। আবিদের মতো ঠান্ডা মস্তিষ্কের মানুষকে প্রচণ্ড ভয় পায় সে। কিন্তু ইরা জানতো না দর্শিনী আবিদের স্ত্রী। আজকে ইরা দর্শিনীকে যত খারাপ কথা বলেছে। সবটা আবিদ শুনেছে। ইরা ভয় পায় তার সিক্রেট সবার কাছে ফাঁস হয়ে যাবে ভেবে। তাছাড়া তার বাবা-মাকে এসবের জন‍্য যদি চাকরী চ‍্যূত হতে হয় তাহলে কী হবে? তাকে জীবন্ত কবর দিবে তার বাবা-মা। আজকে যাকিছু ঘটল সবটা জানতে পারলে তাকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। সে পারিপাশ্বিক অবস্থা চিন্তা করে কেঁদে ফেলল। আবিদ দর্শিনী দুজনেই তখন ইরার দিকে ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল।

আবিদ সাফিন এবং তার বন্ধুদের নিজের পরিচয় বলে বকঝকা করতে থাকে। তারা সবাই ভয়ে ঢোক গিলছে। আবিদ তাদেরকে ভিসির সঙ্গে কথা বলে ছাত্রত্ব বাতিল করে দিবে বলে হুমকি দেয়। সবাই ভয় পেয়ে আবিদের পায়ের উপর হুরমুর করে পরে। আবিদ তাদের থেকে অনেক চেষ্টা করে পা ছাড়িয়ে নেয়। পরবর্তীতে সবাইকে ওয়ার্নিং দিয়ে দর্শিনীর হাত ধরে নিয়ে যেতে থাকে। দর্শিনীর পাশে ঢাল হয়ে থাকার জন‍্য, যাওয়ার আগে দর্শিনীর বন্ধুদের ধন্যবাদ দেয় আবিদ। তাছাড়া তাদের খাবারের বিলটা আবিদ দিয়ে দেয়। আবিদ রেস্টুরেন্টের ম‍্যানেজারকে সবটা বলে সিচুয়েশন নিজের দখলে করে নেয়। সে রেস্টুরেন্টের সিসিটিভি ফুটেজটা সংগ্রহ করে নেয়। পরবর্তীতে আবিদ দর্শিনী চলে যায়। দর্শিনীর বন্ধুরা তখন আবিদ দর্শিনীদের পরে যেতে থাকে।

সাফিন বন্ধুরা কী মারাত্মক ভুল করেছে ভেবে একে অপরকে দোষ দিতে থাকে। অবশেষে তাদের মধ‍্যেই বড়সড় ঝগড়া বেঁধে যায়। সবাই রেগে গিয়ে ইরাকে সব দোষ দিতে থাকে। ইরা তখনও কাঁদছিল। সাফিন সবাইকে থামাতে চেষ্টা করছিল। কিন্তু কাউকে থামাতে পারেনা। সবার মনে ছাত্রত্ব বাতিলের ভয়টা ছিল। পরবর্তীতে রেস্টুরেন্টের ম‍্যানেজার এসে জরিমানা নিয়ে তাদেরকে বের করে দেয়। সবাই ঝামেলা করে আলাদা আলাদা পথে চলে যায়। ইরা ভয়ে সাফিনের সাহায্য চায়। সাফিন তাকে মানা করে নিজের মতো চলে যায়। ইরা তখন সবদিক থেকে বিপদে পরে যায়। সে রাস্তাতেই কাঁদতে থাকে।

আবিদের সেট করা গার্ডস আবিদের কথা মতো সাফিন সহ দুজনকে অচেতন করে সিক্রেট প্লেসে উঠিয়ে নিয়ে যায়। মেয়ে দুটোকে আবিদ ভিসি, গার্ডিয়ান দিয়ে শিক্ষা দেবে তাই আপাতত ছেড়ে দেয়। আজকের ঘটনায় দর্শিনীর মন প্রচণ্ড খারাপ ছিল। আবিদ কিছু খাবার প‍্যাক করে আলাদা গাড়ি ডেকে নেয়। কিছুক্ষণ পরে গাড়ি আসলে দর্শিনী উঠে বসে। আবিদ ড্রাইভারকে কিছু টাকা দিয়ে অন‍্য গাড়িতে করে বাড়িতে চলে যেতে বলে। দর্শিনীর মন ভালো করার জন‍্য আবিদ ঠিক করে লংড্রাইভে যাবে। সেই অনুযায়ী অনুসা বেগমকে জানিয়ে দেয়। তারপর দুজনে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যেতে থাকে। দর্শিনীকে খুশি করার জন‍্য অনেক রকম চেষ্টা করে আবিদ। কোন কিছুতেই লাভ হয়নি। পরবর্তীতে আবিদ তাকে বলে রেস্টুরেন্টে পৌঁছে ইরার বাজে কথাবার্তা শুনে সে কীভাবে রাগ কন্ট্রোল করেছে। তাছাড়া দর্শিনীর সাফিনের ব‍্যাপারে কথা লুকানোর জন‍্য আবিদের ইচ্ছে করছিল দর্শিনীকে শিক্ষা দিতে। সবকিছু আবিদ দর্শিনীকে বলতে থাকে। দর্শিনী না শোনার ভান করে থাকে। আসলে সে সবটা শুনেছে। দর্শিনী শুনে অবাক হয় আবিদ তাকে দূর থেকে বাহবা দিচ্ছিল। আবিদ দর্শিনীকে বলে,

‘তোমার তেজস্বী রূপ, উত্তপ্ত আগুনের ন‍্যায় দৃঢ়চেতনায় বারবার খু’ন হয়েছি, তেজস্বিনী। ঠিক এভাবেই তোমার নিজস্বতায় ভিন্ন অনুভূতি, ভালোবাসায় প্রতিনিয়ত আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছি। সত্যিই তোমাকে ছোঁয়ার সাধ‍্য আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী ছাড়া কারো নেই সুদর্শিনী।’

দর্শিনী আবিদের দিকে তাকিয়ে সবটা শুনল। আবিদের মুখে ভালোবাসার কথা শুনে মন খারাপ আংশিক কমে গেছে। কিন্তু হঠাৎ-ই আবিদ মৃদুমন্দ রেগে যায়। দর্শিনীর উপর রাগ করে বলে উঠে,

‘ছেলেটা তোমাকে পছন্দ করতো। তোমাকে ফলো করতো। না জানি কতোবার মুগ্ধ হয়ে তোমাকে দেখেছে। আমাকে আগে বলোনি কেনো? আমার ব‍্যক্তিগত নারীকে মুগ্ধ হয়ে দেখার অধিকার তার ছিলনা, দর্শিনী! আমাদের মাঝে কথা হয়েছিল একে-অপরকে সবকথা শেয়ার করবো। তাহলে তুমি বলোনি কেনো?’

দর্শিনী আবিদের তেজী কন্ঠে ভয় পায়। ছেলেটা তাকে সরাসরি ডিস্টার্ব করেনি তাই সে বলতে চায়নি! কিন্তু আবিদ কী তার কথা শুনবে? আবিদকে সেদিন সবটা বলে দেওয়া উচিত ছিল। দর্শিনীর এখন আফসোস হচ্ছে!

#চলবে

[ সবাই ভুলত্রু’টি মানিয়ে নিবেন প্লীজ ]

বেড়াজাল পর্ব-৩৯ এবং শেষ পর্ব

0

গল্পঃ #বেড়াজাল
লেখিকা: #চন্দ্রাবতী
পর্ব – #৩৯ (সমাপ্তির অন্তিম খন্ড)

দিন গড়িয়েছে, মাস গড়িয়েছে গড়িয়েছে বছর। প্রায় তিন বছর কেটে গেছে যেনো চোখের পলকে। যদিও ঠিক চোখের পলকে না। এই দিনগুলোতে কখনো সবাই ভীষণ আনন্দে কাটিয়ে ভেবেছে সময় এখানে থেমে যাক। তো আবার কখনও বিষাদের সময় গুলো চেয়েছে তাড়াতাড়ি পার করতে।

আজ সিনথিয়া আর পিয়াসের বিয়ে। এতদিন দুটো মিলে চুটিয়ে প্রেম করে দুই বছর পর এক হতে যাচ্ছে দুজন। সিয়ামদের বাড়িতে বেশ রমরমা পরিবেশ। সবাই বেশ ব্যস্ত কাজে। এইযে যেমন চন্দ্রা এখন তার দুই বছরের মেয়েকে অস্থির হয়ে খুঁজছে সাড়া বাড়িতে। সবরকম আয়োজন হচ্ছে চারিদিকে চন্দ্রা বেশ ভয় পেলো কই মেয়েটা তার..?
চন্দ্রা হটাৎ কি মনে করে চন্দ্রা সিরাজের ঘরের দিকে গেলো।
চন্দ্রা ঠিক যা ভেবেছিল তাই চন্দ্রার দুই বছরের মেয়ে চন্দ্রিমা সিরাজের জিনিস পত্র নিয়ে টানাটানি করছে। বোঝানোর চেষ্টায় আছে যে কেনো মানুষটাকে সে দেখতে পাচ্ছে না কয়েকদিন যাবত।

চন্দ্রা সামনে গিয়ে কোলে তুলে গালে একটা চুমু দিতেই চাঁদ ছোট্ট ছোট্ট দাঁত বের করে হাসি দিল। চাঁদ নামটা চন্দ্রিমার ডাক নাম যা বলে ওকে ঘরের সবাই সম্মোধন করে। এই নামটা যদিও সিয়ামের দেওয়া। চন্দ্রা তাকিয়ে দেখলো চাঁদ সিরাজের জামা গুলো টেনে টেনে নামিয়ে রেখেছে। চন্দ্রা হালকা হেসে চাঁদকে কোল থেকে নামিয়ে সিরাজের জামাগুলো তুলে একটা সাইডে রাখলো। চাঁদ ভালোবাসা, মন খারাপের মানে বোঝে না। কিন্তু তাও সিরাজকে দেখতে না পেয়ে তার মন খারাপ হয়েছে চন্দ্রা ভালোই বুঝেছে। সিরাজ দুদিন হলো অফিসের কাজে বাইরে গেছে। আর তাতেই চাঁদ এসে তার জামাকাপড় ঘেঁটে সিরাজের অনুপস্থিতি বোঝাতে চাইছে।

চন্দ্রা আবার চাঁদকে কোলে তুলে বুকে জড়িয়ে আদর করতেই চাঁদ নিঃশব্দে হাসি হাসলো। চন্দ্রা করুন চোখে তাকালো সেই দিকে।
মেয়েটা তার কানে কম শোনে কথা বলতে পারে না ঠিকঠাক ডাক্তার বলেছে আরেকটু বড়ো হলে অপারেশন করালে ঠিক হয়ে যাওয়ায় চান্স আছে।

চাঁদ ঘরের সকলের চোখের মণি। কেউ ফুলের টোকাও লাগতে দেয় না তাকে। চন্দ্রার মনে হয় এইদিক দিয়ে চাঁদ ভীষণ লাকি।

চন্দ্রা নীচে নামতেই দেখলো সিয়া আর অপূর্ব হাসি মুখে ঢুকছে। চন্দ্রা আর চাঁদকে খেয়াল করেনি তখনও। সিয়ার পেটটা একটু ফোলা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সে। এই তিন বছরে তার দুই বার মিসক্যারেজ হয়েছে। ভীষণ মানসিক ও শারীরিক ভাবে ভেঙে পড়েছিল সে কিন্তু ভেঙে পরেনি অপূর্ব আর তার পরিবার। তারা সিয়াকে এই ট্রমা থেকেও বের করতে সক্ষম হয়েছে। অপূর্বর ইচ্ছে ছিলো না আবার সিয়ার জীবন এইভাবে ঝুঁকিতে ফেলার, কিন্তু সিয়ার জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছে সে।

অপূর্ব সিয়াকে ধরে ধরে নিয়ে এসে সোফায় বসিয়ে দিলো। বেশ গলুমোলু হয়েছে সিয়া। ফরসা টোপা টোপা গাল গুলো দেখলেই অপূর্বের মন চায় খেয়ে নিতে গাল গুলো। অপূর্ব এবার হালকা হেসে সিয়ার গালটা ধরে টিপে দিল। সিয়াও হাসলো খানিক। আগের দুই বারের প্রেগন্যান্সিতে প্রবলেম ছিলো বলে সিয়া ভীষণ শারীরিক দূর্বলতায় রোগা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবারে তার উল্টো হয়েছে।

চন্দ্রা হেসে চাঁদকে সোফার সামনে নিয়ে যেতেই চাঁদ নীচে নেমে সিয়াকে জড়িয়ে ধরে গালে হামি দিলো। সিয়াও হেসে চাঁদকে জড়িয়ে ধরে দুটো চুমু খেল তার গেলে।

অপূর্ব তা দেখে চাঁদের সামনে মুখ ফুলে বসে রইলো। চাঁদ তা দেখে সিয়ার কাছ থেকে নেমে অপূর্বের কাছে গিয়ে তাকে একটা চুমু দিতেই অপূর্ব ধরে আদর করে দিলো চাঁদকে। চাঁদও প্রাণখোলা হাসি হেসে উঠলো।

সিয়া এবার চন্দ্রাকে উদ্দেশ্য করে বলল “বাকিরা কই ভাবী..? ভাইয়ারা..?সিনথিয়া..?”

চন্দ্রা হেসে বললো “সিয়াম অফিসে একটু পরেই চলে আসবে। সিরাজ নতুন ফ্যাক্টরির সাইড দেখতে গেছে আজ দুপুরের আগেই চলে আসবে। আর সিনথিয়া মহারানী এখন রূপচর্চায় ব্যাস্ত তার বিয়ে বলে কথা।

সিয়া হেসে উঠে বললো “যাই আমিও একটু রূপচর্চা করি ওর সাথে আমাকেও সাজতে হবে।”

অপূর্ব এই দেখে ঘোর আপত্তি করে বললো ” অতো গুলো সিড়ি চড়ে তোমায় রূপচর্চা করতে যেতে হবে না। এমনিই সুন্দরী হয়ে গেছো আগের থেকে। বেশি সাজলে যদি আবার কেউ বউ ভেবে বিয়ে করতে চায় আমার কি হবে তখন ..?”

সিয়া ভালোই বুঝলো অপূর্ব যতোই মজা করুক সিড়ি দিয়ে উঠতে দেবে না তাকে এই অবস্থায়। এমনকি নিজের ঘরেও সে সব জিনিস ওপর থেকে নীচে শিফট করেছে এই প্রেগনেন্সির পর। সিয়া নাকমুখ কুঁচকে বললো ” উফ আমি ঠিক আছি তো এখন। ডাক্তার বলেছে না বলো এবারে কোনো সমস্যা নেই। তাহলে..? যেতে দাও না দাও না আমি সত্যি বেশি লাফালাফি করবো না।” অপূর্ব একবার চাঁদের দিকে তাকিয়ে আবার সিয়ার দিকে তাকালো। দুটোর মধ্যে বেশি পার্থক্য সে খুঁজে পেলো না। অগত্যা রাজি হয়ে বললো “চলো আমি যাচ্ছি সাথে।”

সিয়া বড়োসড়ো একটা হাসি দিয়ে পা বাড়ালো উপরের তোলার দিকে।

___________________________________

বিয়ের সময় নির্ধারিত হয়েছে বিকেলের পরে। কারণ সিয়াম সিরাজের বাড়ি ফিরতে দুপুর হবে।
চন্দ্রা হাতের কাজ শেষ করলো। চাঁদকে খাইয়ে ঘুম পাড়ালো। সিনথিয়াকে গিয়ে একবার তারা লাগালো। আজ আরও কিছু বিশেষ কাজ আছে দুপুরের দিকে।

চন্দ্রা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো অলরেডি একটা বাজতে যায়। চন্দ্রা সিয়াম সিরাজকে আসতে দেখেই আগে খেতে বসিয়ে দিলো।

খাওয়া দাওয়ার পর্ব সবার শেষ হতেই যে যার ঘরে চলে গেল। সিয়াম এসে চাঁদকে তার ঘুমের মধ্যেই আদর করলো। তারপর কিছুক্ষণ রেস্ট নিতেই চন্দ্রা এসে তাড়া লাগলো বাইরে সবাই রেডি এখন ডাকছে সিয়ামকে। সিয়াম উঠে জামা বদলে বাইরে গিয়ে ডাইনিং রুম দেখে হেসে দিলো। বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে বড়ো বড়ো করে এক সাইডে ” HAPPY BIRTHDAY SIRAJ” টাঙানো। তারপর চারিদিকে বেলুন মাঝে টেবিলে মাঝারি সাইজের কেক। পুরো প্ল্যান টাই সিয়ার আর সিনথিয়ার।

সিনথিয়া এবার সিরাজের কাছে গিয়ে বললো “ভাইয়া একটা জিনিস দেখবে..?”
সিরাজ ভ্রু কুঁচকে বললো “হ্যাঁ দেখা..”
সিনথিয়া এবার বড়ো করে হেসে বললো “নীচে আছে কিন্তু একটা শর্ত, তোমার চোখ কিন্তু আমি ধরে থাকবো।”
সিরাজ অবাক হয়ে বললো “এমন কি দেখবি রে যার জন্য এইভাবে যেতে হবে।”

সিনথিয়া জোড়াজুড়ি করতে সিরাজ রাজি হলো। কিন্তু সমস্যা হলো সিরাজের চোখ পিছন থেকে সিনথিয়া ধরতে পারলো না। কারণ সিরাজ বেশ লম্বা সিনথিয়া নিতান্তই তার সামনে লিলিফুট। সিরাজ এবার হাঁপ ছেড়ে বললো “তোকে আর চোখ ধরতে হবে না আমি নিজেই চোখ বন্ধ রাখছি চল কি দেখবি নিয়ে চল।” বলেই সিরাজ চোখ বন্ধ করতে সিনথিয়া সিরাজের হাত ধরে সিড়ি বেয়ে নীচে নামতেই সবাই চেঁচিয়ে উঠলো “হ্যাপি বার্থডে ভাইয়া/সিরাজ” সিরাজ ফট করে চোখ খুলে চারদিক তাকালো। এমনিতেই বিয়ে উপলক্ষে আগে থেকেই হালকা সাজানো হয়েছে তারউপর বলুন রঙিন কাগজ যেনো সেখানকার সৌন্দর্যতা বৃদ্ধি করছে।

সিরাজ হালকা একটা হাসি দিল। সবাই এবার হামলে পড়লো কেক কাটার জন্য। সিরাজ চাঁদকে দেখা মাত্রই তার কাছে যেতে চাঁদ একপ্রকার সিয়ামের কোল থেকে লাফিয়ে চলে গেলো সিরাজের কাছে। সিরাজ তা দেখে হাসলো হালকা। এই ছোট্ট মানুষটা তার জীবনে আসার পর থেকে সে আবার হাসতে শিখেছে। তার এইসব বাচ্চাদের মত বার্থডে সেলিব্রেট তার ভালো লাগে না। তবে সবার উচ্ছসিত মুখ এতো উত্তেজনা সাথে চাঁদের আনন্দিত চেহারা তাকে এইসব ভালো লাগাতে বাধ্য করে। সিরাজ কেক কেটে প্রথমেই চাঁদকে দিলো। সে খেলো কি ঠিক বোঝা গেলো না সবটাই মুখে গেলে মেখে হেসে দিল। তাকে দেখে বাকি সবাইও হেসে দিল।

এইসবের মধ্যে পিয়াসও উপস্থিত ছিল। কারণ তার পরিবারে তার মা ছাড়া কেউ নেই। তিনিও অসুস্থ গ্রামে থাকেন তার ভাইয়ের বাড়ির পাশে তার নিজের স্বামীর ভিটেতে। পিয়াস জোর করেও তাকে শহরে আনতে পারেনি থাকার জন্য। পিয়াস ছোটো থেকেই শহরে হোস্টেলে বড়ো হয়েছে। পরে কর্মসূত্রেও এখানেই ফ্ল্যাট কিনেছে। পিয়াসের বাড়ি থেকে তার মা আসতে পারবে না বলে সবাই তাকে সিয়াম দের বাড়ি থেকেই বিয়ে দেবে ঠিক করেছে। বিয়েটা ঘরোয়া ভাবেই হবে। পরে বড়ো করে রিসেপশন হবে।

কেক সবাইকে ভাগ করে দেওয়ার পর। সিনথিয়া সিয়াকে চোখের ইশারায় কিছু বললো। সিয়া আবার অপূর্বকে বলতেই অপূর্ব সিয়ামকে ইশারা করলো। সিয়াম চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করলো সবাইকে।
সবাই সবটা সিরাজের চোখের আড়ালে করলেও সিরাজের চোখে ঠিকই পড়লো। সিরাজ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল “কি রে কি লুকচ্ছিস সবাই আমার থেকে..?”

সিয়া এবার হালকা কেশে একটা হাসি দিয়ে বললো “আসলে ভাইয়া আমরা তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ এনেছি। কিন্তু তোমার সেটা পছন্দ হবে কি বুঝতে পারছি না তাই আর কি..?”

সিরাজ এবার স্বাভাবিক ভাবেই বললো “তোদের দেওয়া কোনো জিনিস কি কখনো আমার অপছন্দ হয়েছে যে আজ হবে..?”

সিনথিয়া এবার বললো “সিয়া অপুই তাহলে দিয়েই দি বলো গিফ্টটা তারপর ভাইয়া ঠিক করবে পছন্দ কি অপছন্দ” সবাই সম্মতি জানালো।
সিরাজকে আবার চোখ বন্ধ করতে বলা হলো। সিরাজ আর তর্কাতর্কিতে না গিয়ে বাচ্চাদের মত চোখ বন্ধ করলো।

সবাই ” থ্রি, টু, ওয়ান ” বলতেই সিরাজ চোখ খুলে চমকে গেলো। এই উপহারটা সে মোটেই আশা করেনি। কিছুমুহূর্তের জন্য প্রতিক্রিয়া করতেই ভুলে গেলো সিরাজ। তার চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না তার সামনে স্বয়ং ইন্দ্রা দাঁড়িয়ে। সিফনের হালকা শাড়িতে অপূর্ব লাগছে তাকে। আগের থেকে বেশ সুন্দর হয়েছে যেনো।

সবাই তাদের দেখে মিটিমিটি হাসতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। সবাই বুঝতেই পেরেছে সিরাজ বেশ শক খেয়েছে সারপ্রাইজ টায়।

সিরাজ পারছে না তার সামনে দাঁড়ানো মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে পিষে ফেলতে। এক মুহূর্ত যেন তার এই সামান্য কয়েক হাতের দূরত্ব টুকু সহ্য হচ্ছে না।

এরই মধ্যে কাজী এসে যাওয়ায়। এবার সিরাজের ধ্যান ভাঙলো, নীচের দিকে তাকিয়ে রইলো চোখ লাল করে। না ছেলে মানুষদের চোখের জল ফেলতে নেই।

এবার সবচেয়ে বড়ো ধামাকাটা দিলো সিয়াম। সে জানালো আজ একই সাথে পিয়াস-সিনথিয়ার সাথে সিরাজ-ইন্দ্রারও বিয়ে পড়িয়ে নেওয়া হবে।

বিয়েতে ইন্দ্রার আপত্তি আছে কিনা জানতে চাইলে সে লাজুক হেসে মাথা নামিয়ে নিলো, এতেই সবাই সবার উত্তর পেয়ে গেলো। সিরাজে একইভাবে নীচের দিকে শুধু বললো “যা ভালো বুঝিস সবাই তাই কর।” বলেই গট গট করে উপরে চলে গেলো।

ইন্দ্রা সেই দিকে তাকিয়ে মুখটা মিলন করে ফেললো। সিয়া এগিয়ে গিয়ে ইন্দ্রাকে বললো “মন খারাপ কোরো না আপুই ভাইয়া মনে অভিমানের পাহাড় হয়ে আছে। যদিও সেটা তোমার থেকে বেশি বড়ো নয় ওর কাছে তাও। ব্যাপার না আজ বাসরে সব মিটমাট করে করে নিও কেমন..?” বলেই সিয়া চোখে টিপ মারলো। ইন্দ্রা তা দেখে লাল নীল হয়ে দৌড়ে চলে গেলো সেখান থেকে।

____________________________

রাত দশটা বেজে দশ।

বিকেলের দিকেই দুই জুটির বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। তবে এতোক্ষণ বাড়িতে খুব বেশি না হলেও বেশ মেহমান ছিলো। সাথে গ্রাম থেকে পিয়াসের মা আর তার মামা এসেছিলেন সিয়াকে আশীর্বাদ করতে। চয়ন সাহেবও ছিলেন সবটা সময়। বিকেল থেকে রাতের সময় টুকু বেশ ব্যস্ততায় কেটেছে সবার।

সব মেহমানকে বিদায় দিয়ে সিনথিয়া ও ইন্দ্রাকে পাঠানো হলো তাদের ঘরে।

___________________________________

ইন্দ্রার বাসরঘরে বসে থাকার আধ ঘণ্টার ভিতরই সিরাজ এলো। ইন্দ্রা লাজুক হেসে মুখ নীচু করে ঘোমটাটা আরেকটু টেনে বসে রইল। কিন্তু তার আশানুরূপ কিছুই হলো না। সিরাজ এসে ঘড়ি খুলতে খুলতে ইন্দ্রাকে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর হয়ে বললো ” চেঞ্জ করে শুয়ে পড়ো।”

ইন্দ্রা এবার লাজুক মুখটা বিষাদে ছেয়ে গেল। মানুষটার তার উপর এতো অভিমান জন্মেছে..?যে একটা বারও তার মুখের দিকে তাকাচ্ছে না সিরাজ।

ইন্দ্রা এবার বেড থেকে নেমে সিরাজের কাছে গিয়ে করুন স্বরে বলল “এখনও রেগে আছেন..?আমাকে নিজের টুকু বলতে তো দিন..?”

সিরাজ কিছু বললো না। টুকটাক এদিক ওদিক কীসব ঘাঁটতে লাগলো। যদিও দেখেই বোঝা হচ্ছে এটা তার নিজেকে ব্যস্ত দেখানোর চেষ্টা।

ইন্দ্রা তা দেখে নিজেই বললো ” আমার সেইসময় কিছু করার ছিলো না সিরাজ। বাবাকে আমি কথা দিয়েছিলাম, আপনি তো জানেন চন্দ্রা আর বাবা আমার জন্যে কি..? আমি আগেই একবার সবার বিরুদ্ধে গিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাইকে ভীষণ অসন্তুষ্ট হতো আমার উপর আমি চাইনি আবার এমন কিছু করতে যাতে তাদের আবার কষ্ট দিই”

সিরাজ এবারেও কিছু বললো না। ইন্দ্রার সিরাজের এই নীরবতা সহ্য হলো না। সিরাজের পায়ের কাছে বসে পায়ে হাত দিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলতে লাগলো “কিছু তো বলুন সিরাজ আপনার নীরবতা যে আমার সহ্য হচ্ছে না। আমি আর পারছি না সহ্য করতে আমার বুকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সিরাজ।”

আকস্মিক ঘটনায় সিরাজ হকচকিয়ে গেলো। সিরাজ কল্পনাও করেনি ইন্দ্রা এইরকম কিছু করবে। সিরাজ দ্রুত ইন্দ্রাকে উঠিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো ” চুপ চুপ হও ইন্দ্রা, আমি রাগ করে নেই তোমার উপর বিশ্বাস করো। তবে হ্যাঁ একটু অভিমান হয়েছিল । যাওযার পর থেকে তুমি একবারও যোগাযোগ করনি বলে। তাও আমি তোমার সব খবর এখানে বসে থেকেই নিয়েছি। তবে হ্যাঁ তোমায় দেখার পর আমার আর একটু অভিমান হয়েছিল বটে তবে তার এখন আর যায়গা নেই।” বলে সিরাজ ইন্দ্রার মুখ দুই হতে তুলে চোখের জল মুছিয়ে বিছানায় নিয়ে গিয়ে বসলো। তারপর আলমারি থেকে একটা বক্স এনে ইন্দ্রাকে দিলো।
ইন্দ্রা জুয়েলারি বক্স দেখে সিরাজের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই সিরাজ ইশারা করলো সেটা খোলার জন্য। ইন্দ্রা সেটা খুলতেই নজরে এলো একটা সেট তাতে সরু একটা হার সমেত লকেট, ছোটো দুটো ইয়াররিং , হাতের একটা সরু আংটি, হাতের একটা সরু ব্রেসলেট আর একটা নোসরিং সবকটাই ডায়মন্ডের।

ইন্দ্রা অবাক হয়ে বললো “এতো দামী জিনিস..?”

সিরাজ হেসে বললো “আমার উপার্জনের টাকায় তোমায় দেওয়া এই প্রথম উপহার আমার ইন্দ্রা। এটা নিয়ে যতটা না তুমি খুশি আমি তোমায় দিতে পেরে তার থেকে দ্বিগুণ খুশি। এই জিনিস গুলো তুমি সবসময় পরে থাকবে কেমন..?”

ইন্দ্রা হেসে বললো ” আমার কাছেও এই উপহারটি সবথেকে প্রিয়। ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর অনুভুতি মেশানো একটা উপহার দেওয়ার জন্য। কিন্তু একটা বিষয় আমার ভালো লাগলো না।” শেষ কথাটা বলেই ইন্দ্রা মুখটা বেশ গম্ভীর করলো। সিরাজ তা দেখে বললো “মানে ঠিক বুঝলাম না ইন্দ্রা কোন জিনিসটা তোমার ভালো লাগেনি বলো আমায়।”

ইন্দ্রা এবার বললো “বউকে কেউ এইভাবে উপহার দেয়..?নিজের দেওয়া উপহার নিজের হতে পরিয়ে দিতে হয় আপনি জানেন না..?”

সিরাজ এবার ঠোঁট এলিয়ে হেসে বেডের সামনের দিকে হেলান দিয়ে বললো “হ্যাঁ তাই তো। আগে এই নিয়মটা মনে পড়লে একটা শাড়িও আনতাম সঙ্গে।”

ইন্দ্রা বিড়বিড় করলো “দূর এই লোকটার সামনে কথা বলাই ঠিক না।” বলেই ইন্দ্রা জুয়েলারি বক্সটা পাশে রাখতে যেতেই সিরাজ হ্যাঁচকা টান মেরে ইন্দ্রাকে নিজের উপর ফেলে দিল। তারপর এক এক করে তার গায়ে থাকা গয়না গাটি গুলো খুলে নিজের দেওয়া গয়না গুলো পড়িয়ে দিলো। এই পুরো সময়টায় সিরাজের আঙুল গুলো যে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গভীর ভাবে স্পর্শ করে গেলো তা অনুভব করতেই ইন্দ্রা কেঁপে কেঁপে উঠলো মাঝে মাঝে।

গয়না পড়ানোর শেষে ইন্দ্রা বেড থেকে নামতে গেলেই সিরাজ টেনে নেশালো গলায় বললো “কোথায় যাচ্ছো..?”

ইন্দ্রা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল “চে-ঞ্জ ক-র-তে।”

সিরাজ টান মারে ইন্দ্রাকে নিজের কাছে নিয়ে বললো “তার আর দরকার নেই।”

ইন্দ্রার শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বাড়লো নিজের অতি নিকটে সিরাজের গরম নিঃশ্বাসে। ইন্দ্রা ওইভবেই বললো ” আপনিই তো বললেন চেঞ্জ করে নিতে।”

সিরাজ ইন্দ্রার থেকে আরেকটু দূরত্ব কমিয়ে মুখের পাশে মুখ নিয়ে গিয়ে বললো “হুম এখন আমিই তো বলেছি আবার দরকার নেই তার। আমি থাকতে বেকার বেকার আজ রাতে তুমি এতো কষ্ট কেনো করতে যাবে বলো..?”

ইন্দ্রা চোখ বুজে নিলো। দম বন্ধ হলো বলে তার। কিন্তু তার দম বন্ধ হওয়ার আগেই সিরাজ রুমের লাইট বন্ধ করে দিল।

সূচনা হলো আরো একটি নতুন দম্পত্ত জীবনের।

_______________________________

পিয়াস তাড়াহুড়ো করে ঘরে ঢুকলো। মা আর মামাকে ছেড়ে আসতে গিয়ে একটু বেশিই দেরি হয়েছে তার। সিনথিয়া বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে এতক্ষনে।

পিয়াস রুমে ঢুকে দেখলো তাই সিনথিয়া শুধু নিজের শাড়িটা পাল্টে একটা স্লীভলেস কুর্তি পরে এলোমেলো হয়ে ঘুমোচ্ছে। না মেকাপ না গয়নাগাটি কিচ্ছু খোলেনি। পিয়াস হেসে দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে সিনথিয়া সামনে গিয়ে পাশে বসে তাকে দেখতে লাগলো। বেশ অময়িক লাগছে তাকে আজ। এলোমেলো হয়ে থাকায় কুর্তিটা বেশ খানিকটা সরে গেছে। পিয়াস কুর্তিটা ঠিক করে আবার তাকালো সিনথিয়ার পানে। কিভাবে যে তার মতো এত বড়ো একটা ছেলে এই পিচ্চি মেয়েটার মায়ায় জড়িয়ে গেলো সে ভাবতেই হেসে ফেললো পিয়াস। অবশেষে এই শহরে আর পুরোপুরি নিজস্ব একটা মানুষ হলো।

পিয়াস উঠে সিনথিয়ার গয়নাগাটি ধীরে সুস্থে খুলে রুমের লাইট অফ করে সিনথিয়ার ঘাড়ে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়লো। সিনথিয়াও ঘুমের মাঝে হালকা হেসে পিয়াসকে জড়িয়ে ধরলো।

______________________________

“আমি এক্ষুনি চাউমিন খেতে চাই। এক্ষুনি মানে এক্ষুনি।” বলেই সিয়া বিছানায় মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।

অপূর্ব অসহায় দৃষ্টিতে সেই দিকে তাকিয়ে বললো “সারাদিন আজ এটা সেটা খেয়েছো সিয়া। আজ থাক আবার কাল খেয়ো কেমন..? আমি কাল সকালেই বানিয়ে দেবো।”

সিয়া জেদ ধরে বললো ” না না আমার এক্ষুনি চাই। নইলে আমি সারারাত বসেই থাকবো।”

অপূর্ব তাকালো সিয়ার দিকে এই মেয়েটার জেদের কাছে সে বারবার পরাজিত হয়। সে জেদ ছোটো হোক কি বড়ো। অপূর্ব তারপর হেসে সিয়ার গাল টিপে বললো “জো হুকুম মহারানী এক্ষুনি বানিয়ে আনছি আমি।”

বলেই অপূর্ব নীচে কিচেনে গেলো চাউমিন বানাতে। আজ তার উপর দিয়ে ভীষন ধকল গেছে সারাদিন ছোটাছুটি করেছে এদিকওদিক। কিন্তু সিয়ার আবদার সে কখনই ফেলতে পারে না সে ও যেই পরিস্থিতিতেই থাকুক না কেনো। এই মেয়েটাকে সে সবসময় এমনই দেখতে চায়। সিয়ার মিসক্যারেজের পর সিয়ার কষ্ট দেখে ওর যে কি অবস্থা হয়েছিল সেটা ও বলে বোঝাতে পারবে না।

অপূর্ব চাউমিনের প্লেট হাতে নিয়ে সিয়ার ঘরে ঢুকতেই দেখলো সিয়া বসে বসে কাঁদছে। অপূর্ব চাউমিনের প্লেটটা পাশে রেখে সিয়ার কাছে বসে তার মুখটা দুই হতে তুলে বললো “হে সিয়া, কাঁদছো কেন..? আমি তো চাউমিন বানিয়ে এনেছি দেখো।”

সিয়া এবার অপূর্বের হাতের উপর হাত রেখে বলল ” আমি তোমায় খুব জ্বালাই তাই না..? এই দখো আজ সারাদিন তুমি খেটে খুটে ক্লান্ত শরীর নিয়ে এসে কই একটু বিশ্রাম নেবে, তা নয় আমি কেমন বাচ্চাদের মত আবদার জুড়ে দিলাম আর তুমিও সেই আবদার রাখতে চাউমিন বানাতে চলে গেলে নির্দ্বিধায়। আমি কি করবো বলো আমার এতো ঘন ঘন মুড সুইং হয় কিন্তু তুমি কেনো আমায় ধমকে দাও না বলো..?”

অপূর্ব সিয়ার চোখের জল মুছে বললো “দূর পাগলি এই জন্য তুমি কাঁদছো..?তুমি জানো না তোমার চোখের জল আমার সহ্য হয় না..? আর ধমকাবো কেনো আমি কি বলেছি আমি এইসব কাজে বিরক্ত হই কখনও। তুমি যদি আমার অংশকে পৃথীবিতে আনতে মা হয়ে এতো কষ্ট করতে পারো তাহলে আমি বাবা হয়ে কি এই টুকু কষ্ট করতে পারবো না..? আর আমার তো ভালই লাগে তোমার এই ছেলে মানুষী আবদার আর আবদার পূরণ করার পরের রিটার্ন গিফ্ট গুলোও।” বলেই এক চোখ টিপ মারলো অপূর্ব।

সিয়া কান্না মুছে হালকা হেসে অপূর্বকে ধাক্কা মারে বললো” ধ্যাত তুমিও না।”

অপূর্ব চাউমিনের প্লেট থেকে চাইমিন তুলে সিয়ার সামনে ধরে বললো “হম আমি তোমার ওয়ান অ্যান্ড ওনলি সুইট হ্যান্ডসাম জামাই।”

সিয়া হেসে দিয়ে বললো “তুমিও একটু খাও।”

অপূর্ব বললো ” নাহ্ আমার পেট ভরা পুরো।”

সিয়া জেদ ধরে বললো ” না না একটু খাও। খেতেই হবে তোমায়। এই নাও এই একটা চাউমিন খাও।” বলেই সিয়া একটা চাউমিন তুলে অপূর্বের মুখের কাছে ধরলো।

অপূর্ব সিয়ার এমন বাচ্চামী দেখে হেসে ওই একটা চাউমিন মুখে না নিয়ে সিয়ার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা চাউমিনটা ঠোঁট দিয়ে জিভ স্পর্শ করে মুখে নিয়ে নিল।

সিয়া আর কিছু বলতে পারলো না। নিজের টমেটোর মতো লাল হয়ে যাওয়া মুখটা নিয়ে চুপচাপ বসে রইল।

_____________________________________

চন্দ্রার দায়িত্ত্ব শেষ হলো সবার পরে। সব গোছগাছ করে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো কানের হার খোলার জন্য। তখনই ওর নজর পড়লো আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে। আজ ব্যস্ততায় নিজেকে দেখাই হয়নি তার আয়নায়।

চন্দ্রা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নিজের প্রতিবিম্বের দিকে। আজ প্রায় কতোগুলো দিন বাদ সে এইভাবে সেজেছে। সারাদিন সংসারের কাজ চাঁদকে সামলে তার নিজের দিকে খেয়াল করায় তেমন সময় হয় না। মাঝে মাঝে সিয়াম বেলী ফুল সাজের টুক টাক জিনিস এনে দেয় ঠিকই তবে সেইরকম ভাবে তার সাজা হয়ে ওঠে না। তাই আজ হটাৎ সেই পুরোনো চন্দ্রার রূপ দেখে চন্দ্রা নিজেই থমকে গেলো।

টানা টানা চোখের সারাদিনের ক্লান্তির কাজল হালকা লেপটানো, সুন্দর ডিজাইনার খোঁপা থেকে কিছু কুঁচো চুল এদিক ওদিক দিয়ে বেরিয়ে আছে। লিপস্টিকের রঙটা আসল রঙের থেকে একটু হালকা হয়ে এসেছে। আর সাদা ডিজাইনার শাড়ি গায়ে নিজেকে দেখে চন্দ্রা নিজেই নিজের একটু প্রশংশা। পরিপাটির থেকে বেশি এই ভাবেই তাকে যেনো বেশি সুন্দর লাগছে।

নিজেকে দেখায় যখন ব্যস্ত ছিল চন্দ্রা সে বুঝতেই পারেনি তার শাড়ী পড়ার পর থেকেই কেউ একজোড়া দৃষ্টি দিয়ে তার প্রতিটা অঙ্গ স্পর্শ করে যাচ্ছে।

সিয়াম অনেকক্ষণ ধরেই অপেক্ষা করছিল চন্দ্রার রুমে আসার। চাঁদকে সে আগেই ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। চন্দ্রার নিজেকে এইভাবে পর্যবেক্ষণ করতে দেখে সিয়াম এগিয়ে গিয়ে চন্দ্রাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো “কি ম্যাডাম আপনিও কি আমার চন্দ্রাবতীর প্রেমে পড়ে গেলেন নাকি…?” চন্দ্রা হালকা হেসে আয়নায় সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বললো ” না আমি চন্দ্রাবতীর অস্তিত্বের প্রেমে পড়েছি সেই কবেই। যাকে ছাড়া চন্দ্রাবতীর নিঃস্ব, অচল।”

সিয়াম হেসে চন্দ্রাকে আরেকটু পিছন থেকে জড়িয়ে নেশালো গলায় বললো “আজ তোমায় সেই আগের মতো প্রাণোচ্ছল লাগছে। চোখ ঝলসে যাচ্ছে যে আমার চন্দ্রাবতী এর দায় ভার কে নেবে বলো তো।”

চন্দ্রা হালকা হাসলো। সিয়াম চন্দ্রাকে টেনে ব্যালকনিতে নিয়ে গেলো। আজ পূর্ণিমা আকাশে গোল থালার মতো চাঁদটা নিজের জ্যোৎস্না ছড়াচ্ছে চারদিকে।

সিয়াম চন্দ্রাকে কলে নিয়ে দোলনায় বসলো। না বেশি কিছু পাল্টায়নি তারা আগের মতোই একে অপরকে বিশ্বাস করে ভরসা করে দিনশেষে একে অপরের সান্নিধ্য খোঁজে।
সিয়াম যেমন বাইরে থেকে এটা ওটা নিয়ে এসে চন্দ্রার মন ভালো করে চন্দ্রাও তেমন নতুন নতুন রান্না, ঘর টাকেই সিনেমা হল বানিয়ে সিনেমা দেখা ইত্যাদি করে সিয়ামের মন ভালো রাখার চেষ্টা করে। সময়ের সাথে যতটুকু পরিবর্তন হওয়ার তারা শুধু ততটুকু হয়েছে। সিয়াম একজন দায়িত্ববান স্বামী থেকে একজন দায়িত্ববান বাবা হয়েছে। তেমনই চন্দ্রাও একজন দায়িত্ববান স্ত্রী থেকে দায়িত্ত্ববান মা হয়েছে। এই তিন বছরে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি, মনোমালিন্য, ঝগড়াঝাটি হয়নি বললে ভুল হবে। আর পাঁচটা সম্পর্কের মতোই তাদেরও সম্পর্কে এই সব হয় কিন্তু তাতে তারা কখনোই এইসব জিনিসকে বড়ো করে দেখে নিজেদের একে অপরের থেকে দূরে ঠেলে দেয় না। একে অপরের দোষ গুন ধরিয়ে দেয়। আর এতে ভালোবাসা কমে তো নাই উল্টে বেড়ে যায়।

চন্দ্রা সিয়ামের বুকে মাথা রেখেই বললো ” আমার এখন মনে হয় জীবনে কিছু কিছু ভুল হয়তো ভালোর জন্যই হয় সিয়াম। নইলে কি আর আমি তোমায় পেতাম বলো..?”

সিয়াম হেসে চন্দ্রার মাথার হাত বুলিয়ে বললো ” অবশ্যই পেতে তুমি না পেলেও আমি তোমায় ঠিক খুঁজে নিতাম। নিজের সুখ নিজের হাতেই থাকে সর্বদা। আর আমার ভাগ্যে ছিলে তুমি আমার আলাদা হতে কিকরে বলো..?”

চন্দ্রা হালকা হাসলো। ততক্ষনে সিয়ামের হাতের বিচরণ অবাধ্য হয়েছে। চন্দ্রার সারা শরীরে ঘুরে বাড়াচ্ছে সিয়ামের শক্তপোক্ত আঙুলগুলি। চন্দ্রার ঘন ঘন শ্বাস ফেলা দেখে সিয়াম চন্দ্রার মুখটা তুলে ঠোঁটে ঠোঁট ডোবালো। দীর্ঘ চুম্বনের পর দুজনে একে অপরের কপালে মাথা ঠেকালো।

চন্দ্রা হটাৎ বলে উঠলো “একটা গান শোনাও না ওই গিটারে।”

সিয়াম নিজের হাত ঘড়ি দেখে বললো “এখন..?”

চন্দ্রা করুন স্বরে বলল “প্লিজ প্লিজ একটা।”

চন্দ্রার এইরকম করুন মুখ দেখে সিয়াম উঠে গিয়ে ঘর থেকে গিটার নিয়ে এসে চাঁদকে একবার দেখে ব্যালকনির দরজাটা হালকা বন্ধ করে বললো ” সিয়ামের চন্দ্রাবতীর ইচ্ছের লঙ্ঘন স্বয়ং সিয়ামও করতে পারে না।”

বলেই গিটারে সুর তুললো –

” গোটা পৃথিবীতে খুঁজো আমার মতো কে তোমারে এত ভালোবাসে..? ”

চন্দ্রা সেই সুরে সুর মিলিয়ে গেয়ে উঠলো –

” এই মনের ঘরে এসো এই বুকের বাঁ পাশেতে তোমার নামই জপে ”

বলেই দুজনে দুজনার দিকে তাকিয়ে এক প্রাপ্তির হাসি দিল। আজ তাদের ভরা সংসার পরিপূর্ণ।

অবশেষে সবাই নিজের দুঃখ কষ্টের #বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে ভালোবাসার #বেড়াজালে আবদ্ধ হলো।

_________________সমাপ্তি ___________________

ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(২০/শেষ পর্ব)

জেরিন আর জেরিনের বড় বোন এসেছে ইশান আর মুনকে দাওয়াত দিতে। ইশানের সাথে জেরিনের বড় বোন কথা বলছে। সে নাকি ইশানকে আগেও দেখেছে জেরিনের বড় আপু হলো একজন নার্স সেই হিসেবেই হয়তো ইশানকে হসপিটালে দেখেছে জানে। জেরিন মুনের সাথে বসে আছে। মুন জেরিনকে ভালো করে পর্যবেক্ষন করে এ হবে ইমরানের বউ তাই না?জেরিন মুনের বড় তাই মুন ওকে আপু বলেই ডাকছে। মুনের জেরিনকে ভালোই লাগে শ্যামলা গায়ের রঙ তবুও চেহারাতে মায়া মায়া ছাপ রয়েছে। জেরিনের সাথে যে কয়েক বারই দেখা হয়েছে তাতে মনে হয় মেয়েটা খুবই ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ।
জেরিন রা ওদের কে দাওয়াত করে যায়। ইশান কে অনেক বলে কিয়ে রাজি করিয়েছে জেরিনের বড় আপু জারিন।ইশান চাইছিলো না মুনকে এই অবস্থায় হৈ, হুল্লোড় পরিবেশে নিয়ে যেতে।
দেখতে দেখতে জারিনের বিয়ের দিন এগিয়ে আসে সুমনদের সাথে ইমরান আর মুন ও আসে। সেই সাথে ইমরান,নাইমরাও আসে। ওদের তিন জন কে এখানে দেখে মুন অবাক হয় বিয়ের আগেই ইমরান শশুড় এর বাসায় দাওয়াত খেতে চলে এসেছে??
মুন ইমরান কে দেখে এগিয়ে আসে পেছন থেকে বলে,
ইমরান ভাইয়া!!

ইমরান ঘুরে দেখে মুনকে তারপর হাসি হাসি মুখ করে মুনকে নিয়ে চেয়ারের দিকে যায় সেখানে বসে বলে,

আসলে জেরিনের সাথে আমার প্রেম হয়েছে মুন!তাই দাওয়াত পেয়েই চলে এসেছি।

মুন অবাক হয় ও ভেবেছিলো ইমরান এ ব্যাপার তাদের কাছে লুকাবে কিন্তু

এ তো আগেই সব বলে দিলো।

তার মানে তুমি প্রেম করছো ইমরান ভাইয়া?

হুম। তুই আর ইশান ভাইয়া এখন আমায় হেল্প করবি ওকে?

আমি না হয় করলাম কিন্তু তোমার ভাইয়া কি করবে?

কেন?আব্বু আম্মুকে বাসায় গিয়ে জানাবে তবেই হবে।

মুন অবাক হয়ে বলে, বাসায় এখুনি জানিয়ে দেবে?

তা নইলে কবে জানাব? বড় বোনের বিয়ে হবে এর পর নিশ্চয়ই ওর ও বিয়ে দিতে চাইবে।

মুন কিছুটা ভেবে বলে, তাও তো ঠিক কথাই।
আচ্ছা এবার বাসায় গিয়েই জানানো হবে সবাইকে আগে রিয়া ভাবীকে জানাতে হবে তাহলেও অর্ধেক কাজ হয়েযাবে।

ভালো আইডিয়া। ভাইয়া কই?

সুমনের বাবার সাথে।

ওহ আচ্ছা।

—–
জেরিনের আপুর বিয়েতে সবাই অনেক মজা করে। এর মাঝে ইশান ইমরানকে নিয়ে এ ব্যাপারে কথাও বলেছে।
ইমরান আর জেরিনের সম্পর্ক এখন খুব ভালো। মুনকে গ্রামে নিয়ে রেখে এসেছে ইশান । সময় নেই খুব একটা মাত্র এক মাসের সময় আছে। এই সময় অবশ্যই একা থাকা রিস্কের হবে।
ইশান এখন সপ্তাহের চার দিনই গ্রামে এসে থাকে। মুনকে সময় দিতে চেষ্টা করে। মুন তো অল্প বয়সী একটা মেয়ে এই সময়ে কতটা পেইন হয় তা বুঝার চেষ্টা করে ইশান। মুনকে সব সময় সব ভাবেও শক্ত রাখার চেষ্টা করে ইশান। ওকে সাহস যুগিয়ে দেয়।
মুনের ভালো লাগে ইশান তাকে নিয়ে কতটা ভাবে?কতটা কেয়ার করে?এই এত এত ভালোবাসা ছেড়ে মুন যাবে কই?
শুধু বয়স এর পার্থক্যতে ভালোবাসা কমে যায় না। উল্টো ও তো হতে পারে তাই না?বয়স বা যোগ্যতা কিছুই না মনের সাথে মনের বন্ধন টাই সবার আগে।

প্রেগন্যান্সিতে মুড সুইমং চলে এই ভালো তো এই খারাপ যেমন মুনের এই ইচ্ছে করবে ওটা খেতে সামনে আনলেই আর খেতে চাইবেনা । এটা পছন্দ তো আবাফ ওটা পছন্দ। এই বসে থাকতে ভালো লাগবে তো এই দাঁড়িয়ে। এই হাসি পাচ্ছে আব্বার কান্নাঁ করতেও ইচ্ছে করবে । মনে হয় আর বেশি দিন ইশানের সাথে মা বাবার সাথে বাচাঁ হবে না। এই বুঝি সে হারিয়ে যাবে আর আবার মনে হবে সবার সাথে চিরকাল বেচেঁ থাকি না কি এমন ক্ষতি হবে?তবুও মুনের ভয় হয় সবাইকে হারিয়ে একা চলে যেতে হবে কি না তাকে কতটা ভয় কাজ করে?

দেখতে দেখতে সেই দিন ও চলে আসে মুনের পেইন উঠে। মুনকে ইশান হস্পিটাল নিতে চাইলেও মুনের দাদী বলেন, কিছুই হবে না আমি আছিতো মুনের অবস্থা ভালো শুধু শুধু এই সময় গাড়ি তুলে ঝাকিঁ তে রাস্তা দিয়ে না গেলেই ভালো হবে। ইশানের মোন মানে না কি যে হবে কে জানে?মুনের কান্নাঁর আওয়াজ আসছে। ইশান বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো। ভোর রাত হতে চলেছে। ইশান মুনদের বাসাতেই ছিলো। মুনের খবর পেয়ে রিয়া, শাহেদা ও এসেছে। ছেলেকে চিন্তিত দেখে শাহেদা পাশে এসে হাত রাখে কাধেঁ ছেলেকে শান্ত হতে বলে। ইশান ও মাকে পেয়ে মায়ের বুকে মাথা রাখে। এই তো মায়ের বুকে কতটা শান্তি রয়েছে! তার সন্তান ও নিশ্চয় মুনের বুকে শান্ত হবে?ভাবতেই কেমন কেমন লাগছে।

আযান হতেই ইশান বাবা, দাদু,শশুড়দের সাথে মসজিদে চলে যায়। মুনের কান্নাঁ তার বুকে এসে লাগছে কেন?ওর জন্য প্রার্থনা করতে হবে তো নাকি?
ইশান নামাজ শেষ করে আসতেই মিম আর রিয়া ছুটেঁ এসে বলে,

অভিনন্দন! ডাক্তার সাহেব!

ইশানের ঠোঁটে হাসি দেখা মেলে তার সন্তান কি এসে গেছে তবে?
ইশান যেনো ক্কথা বলতেই ভুলে গেছে।

ওকে চুপ করে থাকতে দেখে রিয়া বলে,
কি হলো কথা বলছো না কেন?মুন আর তোমার মেয়ে একদম সুস্থ আছে। তোমাদের বংশে কত বছর পর মেয়ে সন্তান এসেছে তার হিসেব আছে?একশত বছরে মাত্র দুটো কন্যা। মুনের দাদী আর তোমায় মেয়ে। সেই খুশিতে আমাদের ট্রিট দেবে তুমি ওকে?

ইকবাল পেছন থেকে ছুৃঁটে আসে ইশানকে সামনে থেকে সরিয়ে দিতে দিতে বলে, কই ? রিয়া কই?আমার বউ মা কই?নিয়ে আসো দেখি তাকে।

রিয়া হেসে হেসে বলে, আমি নিয়ে আসছি।

——–

ইশান মুনের এক হাত ধরে বসে আছে বিছানার পাশে চেয়ার নিয়ে। মুন এখনো ঘুমিয়ে আছে। মেয়েকে দেখে ইশান তখন আবেগে কান্নাঁ করে ফেলেছে। তার প্রথম সন্তান । মুনের জন্য মোনটা কেমন করছিলো মেয়েকে আদর করেই মুনের কাছে এসেছে ইশান । স্বাভাবিক ভাবে বাচ্চা জন্ম নিলেও ইশান ডাক্টার নিয়ে এসেছে সে চেকআপ করে কিছু মেডিসিন দিয়ে গেছে।

সকাল সাতটার দিকে মুন উঠেই বাচ্চাকে দেখেছে। কত আদরের এই সন্তান? ইশানের দিকে তাকিয়ে মুন বলে,

খুশি?বাবুকে নিয়েছিলেন দুই হাতে?

হুম। অনেক খুশি আমি মুন।

মুন ইশানের দিকে তাকিয়েই রয় চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করে না।

**

সময় চলে যায় চোখের পলক এর মতো কখন কিভাবে কতটা সময় চলে যায় আমরা বুঝতেই পারিনা। মুন আর ইশানের মেয়ে মেধার আজ ২য় তম জন্মদিন বাসায় সবাই উপস্থিত সেই সাথে ইশান সুমন দের ও ইনভাইট করেছে। ইমরান আর জেরিনের বিয়ের কথা দুই বছর আগেই ইশান বাসায় সবাইকে জানিয়েছে ওরাও অমত করেনি যেখানে ছেলের পছন্দ তারা সেখানেই বিয়ে করাবে ইমরান কে। এই জন্য জারিন কে ও তার জামাই সহ এক সাথেই দাওয়াত করেচগে। জেরিন তার বাবা মায়ের সাথে আসবে । মিম এবং তার শশুড় বাড়ির ও সবাই এসেছে। সবাই বললে ভুল হবে মিমের দেবর ফারিশ সে আসেনি। আসলে ফারিশ চায় না মুনের সামনে আসতে। নৌমির মতো শক্ত মনের মানুষ ফারিশ নয় যে নিজের ভালোবাসার মানুষ কে অন্য কারো সাথে সুখে দেখবে। তাইতো দুরেই থাকতে চায়। প্রতি ক্ষনে ক্ষনে ভালোবাসতে চায় তার মতো সে জানে তার ভালোবাসা কখনো মুনকে রাঙিয়ে দিতে পারবেনা। তাতে কি সে তো ভালোবাসে মুনকে।

যেহেতু মেধা ছোট বাচ্চা তাই জন্ম দিন এর আয়োজন রাতে না করে দুপুরে করেছে ইশান সবাই এসেও গেছে। মেধাকে সাদা রঙ এর পার্টি ড্রেস পরিয়ে দিয়েছে মুন। মেয়েকে সাজাতে সে পারদর্শী না হলেও রিয়া নিজের মতো করে সাজিয়ে দিয়েছে। সেই সাথে মুনকেও সাজিয়েছে। মুন ওত সাজবে কিভাবে সে তো এখনো মেয়ে আর বই নিয়েই বেচেঁ আছে ইশান মাঝে মাঝেই বিরক্ত হয় এত এত পড়াশোনা
নিয়ে ব্যাস্ত থাকে বলে। জবাবে মুন বলেছিলো, ইশানের পাশে দাঁড়িয়ে যেনো চলতে গেলে কেউ তাকে অযোগ্য না বলতে পারে তাই তো জ্ঞান অর্জন করছে।
ইশান আর তারপর থেকে এ নিয়ে কিছুই বলে নি। বিদ্যা অর্জন সকল নারী পুরুষের জন্য প্রয়োজন । এখন ইশানই মেয়েকে অতিরিক্ত সময় দেওয়ার চেষ্টা করে। মুনকে হেল্প করে।।
অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী মুন প্রথম থেকেই ভালো রেজাল্ট করতে চায় সে।

জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষ করে সকলে মিলে গ্রাম ঘুরে দেখতে বের হয়। গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার কথা থাকলেও মিম আর রিয়ার জন্য সেই গাড়ি ও সাথে নিয়ে বের হয়নি ওরা নাকি পায়েঁ ঘুরে দেখবে এতেই তো ভালো করে গ্রামটা ঘুরে দেখা যাবে তাই না?

মুন মেধাকে ইশানের কাছে দিয়ে জেরিন, রিয়া মিমের সাথে হাঁটছে। একটু পরেই মুনকে ইশান ডাকে মুন ইশানের কাছে এসে জানতে চায় কি হয়েছে?

তুমি আমার পাশে থাকো না প্লিজ।

কেন?

পিচ্চি বউ আমার কখন কোন দিকে হারিয়ে যাবে বলা যায় কি?আমি রিস্ক নিতে চাই না। এছাড়াও মেয়ে তার মায়ের সাথে যাবে বলছে।
মেধা মায়ের মুখ টুকু দেখেই ঝাপিয়ে চলে আসে। মুন ওকে কাধেঁর সাথে মিলিয়ে হাটঁতে থাকে। একটু পরেই মেধা ঘুমিয়ে যায় সেভাবেই ইশান মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে নেয়। এরপর মুনের বাম হাত নিজের ডান হাতের মুঠোয় রাখে।
মুনের ঠোঁটের ভাজে হাসির দেখা মেলে। সামনে তাকিয়ে দেখে ইমরান জেরিনের
সাথে মিলিয়ে পথ চলছে। মুন জানে ইশান ভাবে মুনকে কিশোরী মেয়েদের প্রেম এ যেরকম ইচ্ছা অনুভুতি থাকে সব পুর্ন করতে চাইছে যেনো মুনের কখনো মনেই না হয় ইশানের সাথে তার বয়সের গ্যাপ রয়েছে অধিক।
মুন ও ইশানের কাধেঁ নিজেফ মাথা হেলিয়ে দিয়ে পথ চলা শুরু করে।
ইশান খুবই আস্তে করে গানের সুরে বলে,
ভালোবাসি, ভালোবেসে যাবো সারা জনম ধরে।

মুন চমকে ওঠে ইশানের গানের গলা এত সুন্দর?তবুও গায় না কেন?মুন এখন থেকে রোজ রোজ ইশান কে দিয়ে গান বলাবে।
মুনকে অপলক তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশান টুপ করে মুনের কপালে চু**মু দেয়। মুন ও আস্তে করে বলে,

অতলে… অতলে…
বুকেরই ভেতরে….
হয়েছো আকাশ…
আমার এই অন্তরে…..
……………………..
………………………

ভালোবাসি, ভালোবেসে….
যাবো সারা জনম ধরে…….

**হিমু মাত্রই কলেজ থেকে ফিরছিলো ক্লাস করে রাস্তা দিয়ে আসার সময় ইমরানদের সবাইকে আসতে দেখে চমকে যায় এত গুলি দিন পর ইমরান কে দেখছে সে। সেদিন ইমরান জবাব না দিয়েই চলে গেছিলো আজকে হিমু শুনবেই। আবার ও বলবে নিজের…… কিন্তু এ কি?ইমরান এর সাথে একটা মেয়ে?হেসে হেসে এগিয়ে আসছে। হাতে হাত রাখা নিশ্চই বিয়ে করছে ওরা?তাহলে কি সে ইমরান কে আর কখনো ভালোবাসি বলতে পারবে না? না বলবে না আর কখনো ইমরানকে সে চাইবে না!ওর ভালোবাসায় নিজেকে রাঙিয়ে নিতে পারবে না।
তবুও ওরা ভালো থাকুক…………..

সমাপ্ত
#মিশকাতুল

ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও পর্ব-১৯

0

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(১৯)

ইমরান আজ বেশ সেঁজে গুজে এসেছে কলেজ মাঠে তাই তো সবাই ওকে নিয়ে নানা রকম কথা বলছে। কেউ কেউ বলছে, আজ কি ক্রিম লাগিয়েছিস?
সব কিছু অন্যরকম লাগছে যেনো। ঘটনা কি?প্রেম এ পরছাও নি মামা!!
আরিফ আর নাইম ওকে নানা রকম ভাবেই টিপ্পনি দিয়ে গাঁইছে আজ যে সুযোগ পেয়েছে ওরা ইমরান কি রোজ এরকম সুযোগ তাদের দিবে?এভাবে চুপ করে সব শুনবে?

আরিফ বলে,
তুই কি আসলেও প্রেমে পরেছিস?তোর হাব ভাব সুবিধার লাগছেনা!

নাইম ও বলে, একদম! আসল কথা বল রে ইমরান!

ইমরান বলে, হ্যাঁ ।

দুজনে এক সাথেই বলে, হ্যাঁ? কি মানে এর?

ইমরান ওদের দিকে দেখে নিয়ে সামনের দিকে চোখ রেখে বলে,
প্রেমে পরেছি।
আমার প্রেম আমি ফিরে পেয়েছি।

মানে?

আসলে আমি কাকে চাই তা ঠিক করে ফেলেছি আজ শুধু বলবো তোরা কয়েকটি সুন্দর সুন্দর প্রেম নিবেদন এর লাইন বলে দে।

নাইম বলে,
সে না হয় বলে দিলাম কিন্তু বলবি কাকে?

ও’কে! ওই যে আসছে!

দুজনে ইমরানের হাতের ইশারার দিকে তাকিয়ে দেখে, জেরিন আসছে।
দুজনে বেশ খুশি হয়। যাক এতদিনে ইমরান মেয়েটাকে বুঝেছে। কত শত বার মেয়েটা অপমানিত হওয়ার পর ও বন্ধুত্ব করেছে ওদের সাথে। কত ভালো বাসে সে ইমরান কে!

জেরিন আসছে ওর দুই জন বান্ধবী কে সাথে নিয়ে। ইমরান ও ওদের দুজনের সাথেই দাঁড়িয়ে থাকে। আজ মেয়েটাকে প্রেম নিবেদন জানিয়ে চমকে দেবে ইমরান!জেরিন নিশ্চিত খুশি হবে ওর প্রস্তাব পেয়ে?

জেরিন এখন ক্লাসেই যেতো কিন্তু ওদের কে দেখে এদিকেই আসে খুশি মুখে দাঁড়িয়ে পরে ইমরানদের সাথে। ওর সাথের মেয়ে দুটো মুখ ভাড় করে রেখেছে কেন?কিছু কি হয়েছে ওদের?সেদিকে আর ইমরান ভাবে না আপাতত জেরিনকে কিভাবে মনের কথা জানাবে সেই ভাবনা তে মশগুল রয়েছে ও।

জেরিন ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করে। ওতে কি চিঠি রাখা আছে?কিন্তু খামটা এত সুন্দর করে প্রিন্ট করেছে কেন?ইমরানের একটু চিন্তা হয় এরপর খেয়াল করে ওটা তো বিয়ের কার্ড মনে হচ্ছে।
ফ্যাল ফ্যাল করে জেরিনের দিকে তাকিয়ে থাকে ইমরান।

জেরিন হাসি মুখেই বলে,
কেমন আছেন আপনারা?

ইমরান কিছু বলেনা। আরিফ বলে,
আআলহামদুলিল্লাহ! তুমি?

জ্বি ভালো ।
এই নিন এটা আপনাদের জন্য।আরিফ হাত বাড়িয়ে নেয়।

এটা কি জেরিন?

বিয়ের নেমন্তন্ন করলাম আপনাদের অবশ্যই আসবেন খুশি হবো। বলেই জেরিন ওর বন্ধুদের নিয়ে ক্লাসের দিকে যায়। ইমরান উদাস চোখে জেরিনের চলে যাওয়া দেখে এখন কি হবে?জেরিন তো বিয়ে করতে চলেছে!অবশ্য করবে নাই বা কেন?মেয়েটাকে কত বার যে ফিরিয়ে দিয়েছে ইমরান তার কি হিসেব আছে?হয়তো জেরিন ওকে এখনো ভালোবাসে কিন্তু জেরিনের পরিবার?ওরা যে বিয়ে দিতে চাইছে?

ইমরান থামে না দৌড়েঁ যায় জেরিনের যাওয়ার পথে পিঁছু পিঁছু!
পেছন থেকে আরিফ আর নাইম উচ্চ শব্দে বলে, ভয় শুধু তুই না আমরাও পাইছি!! ভালো করে তুই বদলা নিস দোস্ত ।!

জেরিনের সামান্য পেছন থেকে ইমরান গানের সুর তুলে বলে,
ওওও মেয়ে শুনে যাও……
একটুখানি ফিরে চাওওও!
তোমার সাথে কইবো কথা
এএএএক নজরে!!

জেরিন সহ পাশের দুজনেও চমকে পেছন ফিরে দেখে ইমরান কে। জেরিন এর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করে এরপর বলে, ক্লাস শেষ করে আমার সাথে দেখা করবে জেরিন আমি অপেক্ষায় রইলাম।

————————-

মুন আর ইশান এক সাথে চেকআপ করাতে বের হয়েছিলো দুপুরের পর। গাড়ি নিয়ে আসার সময় মুনের চোখ যায় জানালার বাইরে সেখানে একটা মেয়ের সাথে ইমরান বসে বসে গল্প করছে মুন ইশানকে গাড়ি থামাতে বললেই ইশান থামিয়ে নেয়। মুনের দিকে তাকিয়ে বলে,

কি হয়েছে?খারাপ লাগছে?গাড়ির ঝাকুঁনি লাগছে?

মুন কিছু না বলে ইমরামনের পাশে থাকা মেয়েটাকে সনাক্তকরণ করতে চায় ওটা কে হতে পারে?চেনা চেনা লাগছে!এক পাশ থেকে দেখা যাচ্ছে মেয়েটাকে তার উপর পেছন ফিরে বসে আছে দুজনেই। আচ্ছা ইমরান ভাইয়া কি এই মেয়েকে ভালোবাসে নাকি?এটাই কি ওর প্রেমিকা?সেদিন তো খুব করে মাথা ছাতাঁ বললো আর এখন?মেয়ে নিয়ে পার্কে বসা?

তোমার ভাই আর তার হবু বউ!

ইশান মুনের কথা শুনে ভ্রুঁ কুচকে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখা ইমরান আর একটা মেয়ে। এ কে?

হুম তাইতো দেখছি!

একটা পিক তুলে রাখি বাসায় গিয়ে রিয়া ভাবী আর মিম আপুকে দেব ওদের সাথে ঝগড়া করেছে যে প্রেম করে না।

হু।

এই মেয়েটা কে চেনা চেনা লাগছে আমার।

চেনো।.ওওই মেয়ে সুমনের কাজিন।

মুন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলে, হ্যাঁ হ্যাঁ একদম তাই! চলো এখন যাই! ওদের প্রায়ভেসি দেই।

ইশান হেসেঁ বলে, বাসায় গিয়ে আমাকেও দিও।

মুন লজ্জা পায় তবুও চোখ মুখ শক্ত করে বলে,
তুমি দিন দিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছো ইশান।

ইশান অবাক হয়ে বলে,
বাহবা! এখন আমি নির্লজ্জ? আর তুমি যে বিয়ের প্রথম দিনেই আমাকে ব্রাশ না করে চু**মু দিলে?

মুন এবার ল*জ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। ইশান এরকম করে কেন?মাঝে মাঝেই তাকে এই একটা বিষয় নিয়ে নানা রকম ভাবে হেনস্তা করে ফেলে। ইশ্ সেদিন দাদীর কথা রাখা উচিৎ হয় নাই।

—–

ইমরান আর জেরিন বসে নানা রকম গল্প করছে। এর মাঝে ইমরান তাকে তার মনের কথাও বলে দিয়েছে খুশি, আনন্দে জেরিনের চোখে জল এসেছে। ইমরান স্বাভাবিক করতে জেরিনকে সকালের দেওয়া ভয়া*বহ দাওয়াতের কথা বলে,

তুমি জানো সকালে আমি কতটা ভয় পেয়েছিলাম জেরিন?

কেন?

পাবো না?কত গুলো রাত না ঘুমিয়ে আমি প্রেম প্রস্তাব দেব বলে লাইন সাজিয়েছি তুমি জানো?

তো এর সাথে বিয়ের দাওয়াতের সম্পর্ক কই?

আরেএ আবার বলো কি সম্পর্ক?আমি তো এক মুহুর্তের জন্য দম বন্ধ হয়ে ম*রে যাচ্ছিলাম।
ভেবেছিলাম আমার আর তোমাকে পাওয়া হবে না জেরিন।
ভেবেছিলাম বিয়ের কার্ড তুমি নিজের বিয়ের জন্য দিয়েছ।
নাম দেখার আগেই আমার ওই অবস্থা হয়েছিলো!

জেরিন হাসতে হাসতে ইমরানের কাধেঁ মাথা রাখে এর পর বলে,
তার মানে তুমি ভেবেছিলে আমার বিয়ে হবে?

ইমরান হতাশ গলায় বলে, হুম।

আমার বড় আপুর বিয়ে। মুন ভাবী আর ইশান ভাইয়াকেও মামাকে দিয়ে দাওয়াত করা হবে আমিও যাবো।

সত্যই?

হুম সুমন মুন ভাবীকে না নিয়ে আসবে না।

তাই? ভাইয়ার তো আজকাল ছুটি রয়েছে বেশ মনে হয় যাবে। তবে মুনের দাদু আর দাদী ও বাসায় আছে মুন কি যাবে?

হুম। আমি মামীর থেকে শুনেছি ওনারা গত কাল গ্রামে যাবে। মুন কে ইশান ভাইয়াই সময় দিতে পারে ওনাদের নাকি এখানে খাচাঁ বন্দি লাগে।

ওহ আচ্ছা।

চলো উঠি। বাসায় গিয়ে মামার বাসায় যেতে হবে আপুর সাথে।

চলো।

চলবে
#মিশকাতুল

ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও পর্ব-১৮

0

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(১৮)

ইশান চলে গেছে সকালে রিয়ার ছেলে রাইফি এখন অনেক বড় হয়েছে প্রায় আড়াই বছর হবে তার। মুন ওকে সাথে নিয়ে নিজের বাবার বাসাতে যায় যেহেতু একদম পাশাপাশিই দুটো বাসা। মিমকে থাকতে বললেও মিম দুই দিন থেকেই এখানে এসেছে তাই মিমের সাথে গল্প করতে মুন নিজেই এসেছে ভাতিজাকে নিয়ে। মুনের দাদীও খুশি হন মুন আসাতে তিন জন মিলে সোফায় বসে বসে মুনকে জ্ঞান বিতরণ করছে। রাইফি নিজের মতো খেলছে। মিথিলা ছোটো মেয়ে আসাতে দ্রুত হাতে নাস্তা বানানো শুরু করে দিয়েছে।
মুনের কল আসাতে মুন মোবাইল নিয়ে সোফা থেকে উঠে রুমে যায়। ইশানের কল।

মুন রিসিভ করে সালাম দেয়। ইশান ও উত্তর দিয়ে বলে,

কি করো?

আপুর সাথে দেখা করতে এসেছি।

ওহ। একা গিয়েছ?

না। রাইফিকে নিয়ে এসেছি।

ওহ আচ্ছা আজ মিমের সাথেই থাকবে?

কেন?

না এমনি জিজ্ঞেস করলাম।

আজকে চলে যাব সন্ধ্যার সময় আগামীকাল রিয়া ভাবী বাবার বাসায় যাবে আমিও এখানে আসবো।

আচ্ছা। তার পর গিয়ে আমি নিয়ে আসবো।

এখন না গেলে হয় না?

না।

কেন?
আমার সব পড়া হয়ে যাবে তো এখানেও ।

আর আমার কি হবে?ছয় মাস পর থেকে আমি আরেকটু ফ্রি থাকবো সপ্তাহে তিনদিন বন্ধ পাব।

এই জন্য?এখন নিয়ে যাবে?

হ্যাঁ। আমি যার তার হাতের রান্না খেতে পারবো না আর। জানি তোমার অসুবিধা হবে আমি সাহায্য করবো প্রমিস । এখন রাখছি গল্প করো । আর সন্ধ্যার একটু আগেই চলে যেও। মিম কে সাথে নিয়ে যেও । কাল ওর সাথেই আবার চলে আসবে।

তুমি একটু আপুকে বলে দাওনা প্লিজ!

আচ্ছা ওকে ফোন টা দাও আমি বলে দেই।

———————

ইমরান বাসার সামনে বাগানে বসে আছে। মিমের সাথে মুনকে এই সন্ধ্যা বেলায় শাহেদা বাগানে আসতে দেয়নি। রিয়ার সাথে কিচেনে দাঁড়িয়ে রয়েছে মুখ ফুলিয়ে। শাহেদা যেতে দিবে কিভাবে এই সন্ধ্যা বেলা? কার না কার নজর লেগে যায়! গ্রামের বাড়ি বলে কথা।

ইমরান আর মিম চেয়ার নিয়ে বসেছে মিম মজার ছলে ইমরানকে নানা রকম ভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তা তুই প্রেম ট্রেম করছিস নাকি?আজকাল?

কেন?

না আমার মনে হলো তাই! আজকাল তোকে অন্যরকম দেখায়!

ইমরান ও হেঁসে বলে, শুনেছিলাম বিয়ের পর মেয়েরা সুন্দরী হয় তাই অন্যরকম দেখায় আর তুমি আমায় বলছো?

হ্যাঁ বলছি! সত্যই তোকে কেমন যেনো দেখাচ্ছে! শহরে প্রেমিকা রেখে এসেছিস বুঝি?

সেরকম না।

তাহলে?

কিছুনা।

আমায় বল, শুনি।

আমি প্রেম করছিনা!

কাউকে পছন্দ করিস না?

করতাম।

মানে?

এখন করিনা!

ওহ্ বাবা!বিষয় টা কেমন?

সেই লেভেলের।

বুঝলাম না।

তোমায় বুঝতেও হবে না।

আচ্ছা চল ভেতরে যাই। মুন হয়তো একা একা।

ভাবী আছে।

তুই এখানে আর ও সময় থাকতে চাস?

হুম।

কেন চল ভেতরে যাই।

একটু একা থাকি!

প্রায়ভেট টাইম চাচ্ছিস?

হু।

বুঝেছি এখন ফোন কল চলবে?ওকে আসি!

মিম ইমরানের দিকে চোখ নাচিঁয়ে ভেতরে যায়।

ইমরান ভাবতে বসে একাঁ একাঁ। হিমুকে সে অনেক আগেই ভুলতে পেরেছে। তবে হিমু ছিলো প্রথম ভালো লাগা। সে যদি ফিরে এসে তার কাছে ধরা দেয় তাহলে ইমরান কি করবে?তাকে কি মেনে নিবে?তার ভালোবাসা কি গ্রহণ
করব? তখন হিমুকে কিছু না বলেই বাইক নিয়ে চলে এসেছে কিন্তু এখন ভাবতে হচ্ছে কি করবে? এত এত চিন্তা সে নিতে পারছেনা।

চলবে
#মিশকাতুল

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(বোনাস পর্ব)

ইমরান ভাবতে বসে একাঁ একাঁ। হিমুকে সে অনেক আগেই ভুলতে পেরেছে। তবে হিমু ছিলো প্রথম ভালো লাগা। সে যদি ফিরে এসে তার কাছে ধরা দেয় তাহলে ইমরান কি করবে?তাকে কি মেনে নিবে?তার ভালোবাসা কি গ্রহণ
করব? তখন হিমুকে কিছু না বলেই বাইক নিয়ে চলে এসেছে কিন্তু এখন ভাবতে হচ্ছে কি করবে? এত এত চিন্তা সে নিতে পারছেনা।
হিমু তাকে আঘা*ত দিয়েছিলো শুধু মুনের সাথে দেখে ফেলার কারণে একবার ও ভাবেনি?যে ছেলেটা তিনটা বছর ধরে ওর পিছু্ঁ নিয়েছে ওকে প্রস্তাব দিয়েছে। শহর থেকে এসে প্রথমে ওর সাথে দেখা করতে সকাল সকাল রাস্তা দিয়ে হেঁটপ এসে আরেগ গ্রামের রাস্তার সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছে সে কি না!অন্য একটা মেয়েকে নিয়েও ভাববে??এখন যেই বুঝেছে মুন ওর বড় ভাইয়ের বউ সেই তখনই সে ফিরে আসতে চেয়েছে।
ইমরান আর ওসব নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করছে না । বাসার ভেতরে চলে আসে। মুন , রিয়া আর মিম বসে টিভি দেখছে। শাহেদা পাশেই বসে কাঁথা সেলাই করছে। রাইফি হয়তো ইকবালের সাথে রুমে আছে। আর ইমরানের বাবা রুমে শুয়ে আছে।
তাই সোফার এক পাশে বসে।
ওকে আসতে দেখেই রিয়া বলে,
কিরে! তোর কথা বলা শেষ?

ইমরান সন্দেহী গলায় বলে,
কিসের কথা?

রিয়া আবার বলে, ওওই!যার জন্য মিম হতে প্রায়ভেট টাইম চেয়ে নিলে?

সেরকম নয়!

মিম তেতেঁ উঠে বলে,আবার বলছিস সেরকম নয়??

ইমরান আহত গলায় বলে,
তোমরা যেমন ভাবছ সেরকম আসলেই নয়।

ওহ্ তাই না?তাহলে বল কি রকম!!

আমার মা**থা!
রেগে বলেই ইমরান নিজের রুমের দিকে চলে যায়।
কিচ্ছু ভালো লাগছেনা ওর।

—-পরের দিন রিয়া চলে যায়। ইমরান ও কলেজ খোলা বলে চলে যায়। বিকেলে মুনকে নিয়ে মিম চলে আসে বাবার বাসায়। মুন কে ইশান নিয়ে গেলেই মিম আবার চলে যাবে।

মুন যে কয়টা দিন গ্রামে থেকেছে সবাই তাকে অনেক অনেক টিপস বলে দয়েছে এই সময় কি করতে হবে? কেমন করে থাকতে হবে?কিসব খাবাদ খেতে হবে?এছাড়া দাদী তো যাবেই মুনের সাথে। একটু খেয়াল রাখবে। মুনের দাদুকেও নিয়ে যাবে বলেছে।

দেখতে দেখতে মুন আর দাদু -দাদীকে ইশান গিয়ে নিয়ে আসে। এখন মুনের পাচঁ মাস চলে। তাই ইশান ও মুনের সাথে বেশি সময় দেওয়ার চেষ্টা করে এই যে মুন মা হবে কত যন্ত্রনা সহ্য করে তবুও বই পড়ে। আসলে পড়াশোনাটা হয় নিজেকে দিয়ে। নিজের ইচ্ছা কাজ করে সম্পুর্ন অন্য কেউ বলে কয়েও শেখাতে পারবেনা তোমাকে। ইশান জানে মুন তার থেকেও ভালো একজন ডাক্টার হতে পারবে।
কিন্তু মুন তা চায়না সে চায় শিক্ষকতা করতে যেনো সবাইকে শেখাতে পারে সে। চিকিৎসা তো ইশান করছেই।

ইশান মুনকে নিয়ে বের হবে তাই দাদী আর দাদুকে বলে বেরিয়ে পরে। ইশানের সাথে মুন নৌমির বাসাতে এসেছে। আজকে নাকি নৌমির বিয়ে হবে নৌমির কাজিনের সাথে হুট করে ছোট আয়োজন করেছে বিয়েতে। নৌমি ইশান আর মুনকে আসতে বলেছে। তাই তো ইশান নৌমির কথা রাখতে বিয়েতে এসেছে । এখানে এসে মুন নৌমির বাসার অনেকের সাথেই পরিচয় হয়ে নেয়। এরপর ফারিশ কে দেখে একসময় এই সময় ফারিশকে দেখে মুন অবাক হয়। মিম আপুর দেবর এই বিয়েতে কেন এসেছে?ওদিকে ফারিশ মুনকে দেখে মুনের সাথে কথা বলতে এগিয়ে আসে।

মুন ভয় পায়। আশে পাশে দেখে ইশান কই কি করছে?মুন অন্যদিকে ফিরে যেতে নেয় কিন্তু ফারিশ দ্রুত পাঁ চালিয়ে আসে সামনে।

ফারিশ এসেই বলে, ভয় পেলে নাকি?

মুন কিছুই বলেনা চুপ করে শুধু ফারিশকে দেখে।

কি হলো কথা বলছ না কেন?

কি বলবো?

ভয় পেওনা মুন!আমি তোমায় ভালোবাসি সেই ভালোবাসাতেই তোমাকে ভালো রাখতে চাই। আমি ভেবেছিলাম তুমি আমার ভালো বাসা পেয়ে ভালো থাকবে কিন্তু তা নয় তুমি ইশানের সাথে ভালো আছো আমি জানি। আর আমি চাই তুমি যেখানে যার সাথেই থাকো না কেনো শুধু ভালো থাকো।

মুন এবারেও কিছুই বলে না ফ্যাঁল ফ্যাঁল করে ফারিশকে দেখেই যায়।

ভয় পেওনা মুন। আমি তোমার আর ইশানের ক্ষতি করবো না। এটুকু বিশ্বাস রাখো প্লিজ।

জ্বি। মুন ভয়ে ভয়ে বলে।

ভালো থেকো মুন। আমার ভালোবাসা নিয়ে হলেও আমি তোমার সামনে আসবো না। এরপর থেকে মিম আপুকে ও কেউ কথা শুনাবেনা। আমি আব্বু আম্মুকে সব বলবো। সব ঠিক হয়ে যাবে মুন।

হুম।

ভালো থেকো মুন। আসছি!!

ফারিশ মুনের সামনে থেকে চলে যায় মুন স্পষ্ট দেখেছে ফারিশের চোখের জল কিন্তু এখানে মুনই বা কি করবে?চাইলেও কি ফারিশের ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে পারবে যেখানে মুন সম্পুর্ন ইশানের ভালোবাসার রাঙা হয়ে আছে।

নৌমি দূর থেকে ফারিশ আর মুনকে দেখছিলো তার মতো করেই আর ও একজন নিজের ভালোবাসার কাছে জিতে গেলো! শুধু ভালোবাসাকে পেলেই মানুষ জিতে যায় না। কিছু কিছু ভালোবাসা দূরে রাখিলেও জিতে যাওয়া যায় সে তো বুঝবে শুধু তারাই যারা নিঃস্বার্থ ভাবে ভালো বেসেছে। চলে যাচ্ছে ফারিশ!!

মুন ফারিশ যেতেই ইশানের দিকে এগিয়ে যায় সবার মাঝে থেকে ইশান কে তুলে নিয়ে অন্য দিকে যায় একটু নির্জন হতেই ইশান কে দাঁড়িয়ে রাখে সামনে ওই ইশানকে ভালো ভাবে দেখে এত দেখেও দেখার শেষ হয় না যে ইশানকে ঘিরে তাই তো ঝাঁপিয়ে পরে ইশানের বুকের ওপর।

চলবে
#মিশকাতুল

ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও পর্ব-১৭

0

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(১৭)

নৌমি এসেছে মুনের সাথে দেখা করতে ফারিশ তখন নিজের বাসার সামনেই নেমে গেছে।
যখন ফারিশ ইশানের ছবি দেখে সেই তখন থেকেই ফারিশকে অন্যরকম লাগছিলো খেয়াল করেছে নৌমি. তবে গভীর পর্যন্ত ফারিশ কে প্রশ্ন করেনি নৌমি ।
মুন নৌমিকে কফি বানিয়ে দেয়। পাশের সোফায় বসে। ইশান এখন বাসায় নেই। একটু বেড়িয়েছে। আগামী কাল মুনকে নিয়ে গ্রামে যাবে।যদি বাড়ির সবাই বলেছে মুনকে একেবারে রেখে আসতে হবে বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত কিন্তু ইশানের সে নিয়ে মাথা ব্যা*থা! যাবে মুনকে কয়েকদিন রেখে আসবে আবার আসবে। বাচ্চা হওয়ার কয়েকদিন আগে আবার রেখে আসবে। গ্রামে থাকলে কলেজ এর পড়া কে পড়বে? ফাইনাল দিতে হবে তো আবার। মাত্র দুই মাস আছে ইয়ার চেঞ্জ এর এক্সামের দেখা যাবে এইস এস সি সময় এমনিতেই মুনের সমস্যা হবে। তাই এই কয়েকটি মাস ভালো করে প্রিপারেশন নিতে হবে।
নৌমি ঘন্টা খানেক সময় থাকে মুনের সাথে ওকে অভিনন্দন জানিয়ে ইশান আসার আগেই চলে যায়।

ইশান আর মুন গ্রামে এসে প্রথমে ইশান্দের বাসাতেই যায়। শাহেদা ছেলে, বউ আসবে বলে আগেই নানা রকম রান্না করে রেখেছে। মুনিকে দেখেই তিনি এগিয়ে এলেন।

কেমন আছিস মা?মুখ এরকম শুকনো কেন?

ভালো মা। তুমি?

আছি আছি!আমার ঘরে নতুন মেহমান আসবে আমি কেমন থাকবো তুই ভাব?

মুন শাশুড়ীর কথা শুনে লজ্জা পায় মাথা নিচু করে রাখে।
মুন আর ইশানের গলার আওয়াজ শুনে রিয়া রুম থেকে ছুটেঁ আসে মুনকে দেখেই ওকে কাছে নিয়ে আসে হালকা আওয়াজে বলে,

একটা মেয়ের জন্ম দিও গো সুন্দরী! এই পরিবারে মেয়ে বাচ্চা নেই!তাছাড়া ও বড় কথা মেয়ে হলে আমি আমার ছেলের বউ বানিয়ে নেব।

মুন তাজ্জব বনে গিয়ে প্রশ্ন করে, রাইফির বউ বানাবে?

হ্যাঁ। তা নয়তো কি!!

মুন লজ্জা মিশ্রিত গলায় বলে,
তুমি একটা জিনিস ভাবী!!

রিয়া আসে ইশানের দিকে ওর লাছে গিয়ে আস্তে করে বলে,
বউ বাসায় নিতে না নিতেই কাজ টা ঘটিয়ে ফেললে?

ইশান ও মুনের মতো বলে,
আসলেই তুমি একটা জিনিস ভাবী!
বলেই ইশান রুমের দিকে যায়। আর রিয়া!সে দুইজনকে দেখে আর ভাবে,সে কি করলো?ইশান আর মুন একটা জিনিস হে খোদা!!

———————————-
পরের দিনই মিম সহ মুনের বাবা মা দাদা দাদী সবাই আসে ইশানদের বাসায়। ইশান ওর দাদু আর মুনের দাদুর সাথে বসে আছে। ইকবাল ও এসে যোগ দেয় সেখানে গল্প কররতে।।
মিম, মুন আর রাইফি বসে আছে। মিমের বাচ্চা জন্ম নেওয়ার আগেই মুনের খবর হয়ে গেলো এ নিয়ে মিম একটু ভেতর ভেতর বিব্রত হচ্ছে সবাই কি মনে করবে না করবে এখন তাকে নিয়ে?কিন্তু মিমের খুশিও লাগছে মুনের বাচ্চা হবে সে খালামুনি হবে এই বা কম কিসের?

ইশানের নানুর বাসা থেকেও অনেকে আসে মুনকে দেখতে। গ্রামে মুন কয়েকদিন থাকবে এরপর মুনের দাদীকে সহ ইশান নিয়ে যাবে এই কয়েকটি মাস সে মুনের সাথে থাকবে। এভাবে এত দিন গ্রামে থাকলে অনেক পড়াশোনাতে মুন পিছিয়ে যেতে পারে যা ইশানের চেয়ে বেশি মুন নিজেই চায় না।

এর মাঝে ইশান ওকে রেখে আবার যায় তবে সে প্রতি সপ্তাহে শুক্রবারে আসে আবার রবিবার সকালে চলে যায়। ইমরান ও আসে এক্সাম শেষ করে। এদিন বিকেলে বের হয় ইমরান ইকবালের সাথে। ইকবাল কে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে ইমরান। একসময় ইকবাল এক পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা হওয়াতে তার সাথেই গল্পতে মশগুল হয় আর ইমরান নিজের মতো বাইক নিয়ে যেতে থাকে একস্ময় রাস্তায় হিমুকে দেখতে পারে। হিমুর সাথে দুটো বছর পর দেখা হলো। হিমু সেই আগের মতো বান্ধবীদের সাথে আসছে। ওলে দেলহেই ইমরান অন্যদিকে যেতে নেয় কিন্তু পেছন থেকে কেউ ওকে থামতে বলে। ইমরান মা শোনার ভাণ করে আবার যেতে নেয় তখন হিমু দৌড়ে আসে পেছন থেকে ইমরান গতি বাড়িয়ে দেয় তবুও হিমু থামেনা তাই ইমরান নিজেই বাইক থামিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।

হিমু এসেছে নীল একটা থ্রি পিস পরে। এতক্ষন দৌঁড়ানোতে মেয়েটা হাঁপাচ্ছেও।

কেমন আছো ইমরান?

ইমরান একটু বিব্রত হয় জড়তা নিয়ে বলে, ভা ভালো।

আমি কেমন আছি? জিজ্ঞেস করবেনা?

ভালোই আছো। ভালো থাকার জন্যই তো আমাকে এক্সেপ্ট করোনি লাইফে।

হিমু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে, ইমরান আমার সেদিন তোমার সাথে ওরকম ব্যাবহার করা ঠিক হয়নি।
আসলে সেদিন আমি খুব ডিপ্রেশনে ছিলাম।

ইমরান ভ্রু যুগল কুচকে প্রশ্ন করে, এখন আমাকে এসব কেন বলছ?

আসলে ইমরান সেদিন আমি ভুল ভেবেছিলাম।
আমি আসলে ভেবেছিলাম যে তুমি…………

পুরনো কথা এখন শুনতে এখন আর ভালো লাগছেনা।

হিমু একটু অপমান বোধ করে তবুও বলে,
আসুএ ইমরান সেদিন এর কথা বাদ দিলে আজকের কথাই বলি?

ইমরান একটু ভাবে এরপর বলে,

আজকে আবার কি বলতে চাও?

আসলে সেদিন রাগে তোমায় কিসব বলে ফেলেছিলাম। কিন্তু পরে জানলাম ওই মেয়ে তোমার বড় ভাইয়ের বউ। আমি খুব করে নিজের কাছে নিজের ভাবনা। নিয়ে লজ্জিত হয়েছি ইমরান।
আমাকে ক্ষমা করে দাও।

আচ্ছা।
বাদ দাও ওসব কথা।

না ইমরান। আজ আমাকে বলতে দাও।

বলো।

আমি তোমাকে ভালোবাসি ইমরান!!

ভেবেছিলাম একদিন গ্যাপ যাওয়াতে বড় পর্ব দিব কিন্তু জ্বর এর কারণে লিখতেও ইচ্ছে করছেনা। ক্ষমা করে দিবেন প্লিজ।
চলবে
মিশকাতুল

ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও পর্ব-১৬

0

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(১৬)

ইমরান আসবে বলে মুন আজ অনেক রকমের রান্না তে হাত দিয়েছে ইশান নিজেও হেল্প করছে মুনকে। সব রান্না শেষ করে রুমে এসে বিছানায় বসেছে আজ কয়েকদিন হয় মুনের শরীর ভালো লাগছেনা না কেমন একটা যেনো লাগে। মুন নিজেও বুঝতে পারেনা। ইমরান এসেছে মনে হয় ইশান দরজা খুলে কার সাথে যেনো কথা বলছে মুন ওদের রুমের দরজা খুলে বের হয়ে বসার রুমে আসে সোফায় বসে দুই ভাই কথা বলছে। কিছু মাস আগেও দুই ভাইয়ের মাঝে কিছু একটা চলছিলো হয়তো মন কষা*কষি টাইপ কিছুই। এখন সব ঠিক হয়েছে। মুন এসে ইশানের পাশে বসে বলে,

কেমন আছো ইমরান ভাইয়া?

এইতো তুই কেমন আছিস?চেহারা এরকম লাগছে কেন?

মুন একটু অপ্রস্তুত হয়ে নিজের মুখে হাত দিয়ে বলে,
কেমন লাগছে ইমরান ভাইয়া?

শুকনো!

ইশান একটু গলার স্বর কঠিন করে বলে, শুকনো লাগবে না?সারা দিন বই নিয়ে বসে থাকে খাবার কি মুখে দেয়?আমার কথা কি শুনে?

মুন মন খারাপ করে বলে,
আচ্ছা ইমরান ভাইয়া তুমিই বলো! এস এস সি এর পর দুটো বছর ভালো করে কি প্রস্তুত নিয়ে এইস এস সি দিতে হবে না?হাতে সময় কই?

সে তো ঠিক! সাইন্স নিলে আর ও সময় থাকেনা । তবুও খেতে তো হবে।

কেন যেম খেতে ইচ্ছে করেনা ইমরান ভাইয়া! বাদ দাও ওসব!

না না কিছুতেই বাদ দেব না আমি। ইশান ভাই! তুই রোজ ওকে জোড় করবি। ওদের কথার মাঝেই আবার কেউ দরজাতে নক করে মুন গিয়ে দরজা খুলতেই সুমনকে চোখে পরে সাথে আর ও একটা মেয়ে শ্যামারঙা মেয়েটা হাসি আর বিব্রত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুমনের সাথে। মুন সুমনে দেখে বলে,

এসো সুমন…. তোমার সাথে কাকে এনেছ?

সুমন হাসি হাসি মুখ বানিয়ে বলে, আমার আপু! তোমায় দেখাতে এনেছি।

মুন সুন্দর করে সালাম জানায় তার বড় হবে মেয়েটা। মুন ওকে দেখে বলে,
আসুন আপু আমি খুব খুশি হয়েছি আপনাকে দেখে। সুমনের অর্ধেক বেলা আমার রুমেই চপে যায় তাই হয়তো আমাকে দেখাতে এনেছে আপনাকে।

মেয়েটা আর কেউ না জেরিন। তখন দেখেছে ইমরান এই বাসাতেই এসেছে। এখন আবার মামার এক মাত্র ছেলেটা এখানে নিয়ে এসেছে।
জ্বি। আমার নাম জেরিন।

মুন ও নিজের নাম বলে ওদেরকে ভেতরে আসতে বলে। জেরিনকে দেখে ইশান সুমনকে বলে,
কে হয় ভাইয়ার?

আপু।

ওহ আচ্ছা এসো বসো।

জেরিন একটু লজ্জায় পরে যায় এভাবে সুমন তাকে এখানে নিয়ে এলো ইমরান কি ভাবছে না ভাবছে তাকে নিয়ে!!
জেরিন বিব্রত হয়েই ইশানের সাথে ও মুনের সাথে পরিচিত হয়ে নেয়। আসার পর জেরিন চেঞ্জ ও করতে পারেনি মামা আর মামীর সাথে দেখা হওয়ার পরেই সুমন তাকে এখানে এনেছে।
মুন সুমন আর জেরিনকেও ডিনারের দাওয়াত করে কিন্তু ওরা বলে বুঝায় সুমনের আব্বু আম্মু মানে জেরিনের মামা মামী ওদের জন্য অপেক্ষা করবে। তাই আর এখন জোড় করেনা বলে সকালে আবার যেনো আসে সুমনের সাথে।

————————
আজকে সকাল হতেই মুন কিচেনে রান্না শুরু করে দিয়েছে ইশান কে আবার নাস্তা করে ক্লিনিকে যেতে হবে।
মুন একা হাতেই সব করে ইশান গত রাতে অনেক্ষন ভাইয়ের সাথে গল্প করেছে তাই এত সকাল সকাল উঠে পরলে সারা দিন অসুবিধা হতে পারে। নাস্তা বানিয়ে ইশান কে তুলে দেয় মুন ইমরান ও ততক্ষনে ফ্রেশ হয়ে চলে আসে কোচিং এ না গেলেও কলেক এ গিয়ে ক্লাস করে আসবে। মুন ও সাথে বসে নাস্তা করে । দুর্বল লাগছে কেমন শরীরে ভেতর। ইশান কিছুটা অন্যরকম চিন্তা করে ফেলে। তা প্রমান করতেই মুনকে সাথে করে ক্লিনিকে নিয়ে এসে একজন মহিলা ডাক্টার এর সাথে কথা বলে কিছু টেস্ট করে নেয়। এরপর সবটা জেনে ইশান রিয়েক্ট করবে কেমন তা ও গুলিয়ে ফেলে! মুন তো চার মাসের গর্ভবতী অথচ সে কিছুই বুঝেনি?নাকি খেয়াল করেনি?এমনকি ইশান ও ব্যাপারটা নিয়ে একটুও ভাবেনি।

আজ আর ইশান চেম্বারে বসে না। মুনকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসে। মুনের সাথে এখনো ইশান একটা কথাও বলেনি। কিন্তু তার বাচ্চা আসার কথা শুনে মিনিটের পর মিনিট ছোট মুনের পেটের দিকে অপলক তাকিয়ে দেখেছে সে বাবা হবে??আর মুন?মুন তার সন্তানের মা হবে। এই খুশির বার্তা স্ত্রী তার স্বামী কে জানায় অথচ এখানে ইশান জানলেও মুন এখনো কিছুই জানেনা। ভয়ে ভয়ে ইশান কে
দেখছে শুধু।

বিছানায় বসে মুন ইশান দরজা লাগিয়ে মুনের কাছে এসে মুনকে জড়িয়ে ধরে।

কি হয়েছে?

অনেক কিছু হয়েছে মুন! আমার জীবনে আমি এত সুখের দিন পাইনি! আমার মেডিকেল রেজাল্ট পাওয়ার থেকেও আজ আমি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা অর্জন পেয়েছি মুন!

কি?

ইশান মুনের পেট এর উপর হাত রেখে বলে,
ও আসছে!!

মুন স্তম্ভিত হয় ইশানের মুখের দিকে তাকিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করতেই ভুলে যায়!সে মা হবে??ইশান বাবা হবে?এত আনন্দ কেন লাগছে মুনের?

—-মুন মা হবে এই খবর মা বাবা জানতেই মুনকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে বলছে! চার মাস হয়েছে! এই সময় ওখানে বাসায় একদম একা কিভাবে মেয়েটা কি করবে?ইশান কি সময় দিতে পারবে দিনের বেলাতে?ইমরান ও ছেলে মানুষ এসময় মায়ের পাশে থাকা জরুরী। ইমরান ও অনেক খুসবি সে চাচ্চু হবে?নৌমি এসেছিলো মুনকে দেখতে! ইশান তাকে ভালো না বাসুক সে তো ইশানকে ভালো বাসে! সে চায়না মুনকে ইশানেদ থেকে আলাদা করতে যদিও এখনো মুনকে হিংসে হয় তার লাছে তবুও চায় ইশান ভালো থাকুক। ইশান বাবা হবে মুনকে নিয়ে সে সামনের সপ্তাহে নিজের বাসায় দিয়ে আসবে মেয়েটার সাথে আরেকবার দেখা করবে আসে তাই মুনের বাসায়। রিক্সা নিয়ে বের হতেই ওর বাবা অফিসের একটা কর্মকর্তার সাথে দেখা হয় ছেলেটার নাম ফারিশ। নৌমির ওকে খুব ভালো লাগে শুনেছে ছেলেটা কিছুটা সাইকো টাইপের। একটা মেয়েকে ভালো বাসে তার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর মাথায় অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। যে কোন সময় যে কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।
ফারিশ নৌমিকে দেখে এগিয়ে আসে ।

কোথায় যাচ্ছেন?

আমার এক বন্ধুর বাসাতে।

ওহ আচ্ছা।
আসলে আমার ও এদিকেই বাসা আমি কি আপনার পাশে যায়গা পেতে পারি?

ওহ। নিশ্চয়ই।

ফারিশ উঠে বসে। নৌমির ফোনের ওয়াল পেপারে আলো জ্বলছে সেখানে একটা ছেলে হাসি মিখে দাঁড়িয়ে আছে। ফারিশের চোখ সেদিকে যেতেই মেজাজ গরম হয়। নোমিকে বলে,

এই ছেলেটা কে?

আমার বন্ধু। ওর বাসাতেই যাচ্ছি।

ফারিশ কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলে, বন্ধুর ছবি ফোনের ওয়ালপেপারে স্থান নিয়েছে?

ও আমার প্রথম ভালোবাসা।

মানে?

আমি ওকে কলেজ লাইফে ভালোবাসতাম। বলতে পারো এখনো ।

কিন্তু ইশান তো বিয়ে করে নিয়েছে।

নৌমি আশ্চর্য হয়ে বলে,
তুমি ইশান কে চেন?

হ্যাঁ। আমার ভাইয়ার শালিকার জামাই।

ওহ! মুনের বোনের সাথে তোমার ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে?

হ্যাঁ।
তা তুমি ওর বাসাতে যাচ্ছ কেন?

মুন মা হতে চলেছে ওকে অভিনন্দন জানাতে যাচ্ছি।

ওর সুখ দেখে আসতে পারবে?

নৌমি শান্ত উদাস গলায় বলে, কেন পারবো না?আমি মুনের সুখ দেখতে যাবো না ফারিশ। আমি আমার ভালোবাসার সুখ দেখতে যাবো ইশা ওর সাথে ভালো আছে। আর যাকে ভালোবাসই আমি চাই সে যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক।

নৌমির কথায় ফারিশকে চিন্তিত হতে দেখা যায়!ফারিশ কি নিজের ভুল বুঝতে পারবে এবার?

চলুক না কি বলেন?
#মিশকাতুল

ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও পর্ব-১৫

0

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(১৫)

ইশান আর মুনের সংসার এখন খুব ভালো ভাবে চলছে। দুজনে নিজেদের মাঝে আত্নিক সম্পর্ক ঠিক করে নিয়েছে । মুনের রেজাল্ট আউট হওয়ার পর স্থানীয় একটা কলেজ এ ভর্তি করিয়ে দিয়েছে ইশান। বই এমে দিয়েছে। মুন সেই বই গুলিই নিয়ে বিছানায় বসে আছে। নতুন বই পড়তে ওর খুব ভালো লাগে সে ক্লাসের বই হোক আর উপন্যাসের বই । রসায়ন প্রথম পত্র নিয়ে দেখছে। ইশান আসবে রাত নয়টার দিকে। মুন দরজার দিকেই তাকাচ্ছে বার বার। কখন আসবে ইশান?ঘড়িতে সময় দ্রুত চলছে না কেন?পাশের ফ্ল্যাট থেকে একটা পিচ্চি এসেছে মুনের সাথে খেলতে বাচ্চাটা দেখতে কালো হলেও খুবই কিউট মুনের ওলে খুব পছন্দ কি সুন্দর করে কথা বলে!মুনকে আপু বলে আর ইশান কে ভাইয়া। বয়স হবে মাত্র তিন বছর ওর আম্মুই রেখে গেছে। ওর নাম সুমন। মুন সুমনের দিকেও খেয়াল রাখছে।। ইশান আসতেই সুমন উঠে ইশানের দিকে ছুটেঁ যায়। মুন বই রেখে বিছানা থেকে নেমে এসে ইশানের দিকে যায়। ইশান ব্যাগ সোফায় রেখে সুমনকে কোলে তুলে নেয়। মুন জানে ইশানের খুব ক্ষুদা পেয়েছে হয়তো আজ দুপুরে আসতে পারেনি। তাই ইশানের কাপড় বের করে দিয়ে টেবিলের দিকে যায়।

ইশান সুমনকে সাথে নিয়েই খাবার খায় মুন ও বসে পাশের চেয়ারে। খাবার শেষ করে ইশান সুমিনকে ওদের ফ্ল্যাটে দিয়ে আসে। মুন বিছানা গুছিয়ে একটা বই নিয়ে এক পাশে বসে । ইশান এসে বই নিয়ে নেয় হাত থেকে মুন কপাল কুচঁকে ইশানকে দেখে বলে, এরকম করলে কেন?

কেন আবার?

বই দাও।

এত বিদ্যা নদী হতে হবে না।

আমার কালকের পড়া দেখছিলাম তো!

সারাদিন অনেক দেখেছ! এখন আমাকে দেখবে তুমি!

এমন করছো কেন?

উফ্ মুন কেমন করলাম?বুড়ো জামাই বলে কি পছন্দ হয় না আর আমাকে?
ইশান কথাটা মজা করে বললেও মুনের যেনো কি হলো!! হুট করেই দুই চোখ ভর্তি জল জমা হলো। মুনের এরকম রিয়েকশনে ইশানের বুকের মাঝে ব্যাথা উদয় হলো। মুন কি এখন আবার কান্নাঁ করবে নাকি.?কলেজ এ একদিন ইশান মুনকে রাখতে গিয়েছিলো সেদিন ও মুনের সাথে ইশানকে দেখে মুনের ক্লাসমেট গুলো ওকে নিয়ে হাসাঁহাসি করেছে ইশান নাকি মুনের জন্য ঠিক হয়নি ইশানের পাশে পিচ্চি মুনকে একদম মানায় না । ইশান কতটা হ্যান্সসাম আবার ডাক্টার তার তো সেরকমই একটা এডাল্ট বউ দরকার ছিলো। সেদিন ও মুন বাসায় ফিরে অনেক কাঁন্না করেছে।

কাদঁবে নাকি এখন মুন?

মুন ঠোঁট কাপিয়ে হিসহিস করতে করতে বলে,
আপনি এরকম করে বলছেন কেন? আমি কি আপনার পাশে একদমই ঠিক নই?
আমি কি ভালো স্ত্রী হতে পারছিনা?

ইশান বুঝতে পারে মুন রা*গ করেছে এই কয়েক মাসে সে বুঝে গেছে মুন রা*গ করলে তুমি থেকে আপনিতে চলে যায়।

না মুন! আমি সেরকম বলতে চাইনি ।

তাহলে কি? আর বুঝাবেন আপনি?

কিছুনা। এই কান ধরলাম। আর বলবো না।

মুন ইশানের দিকে চলে আসে ঝাপিয়ে পরে ইশানের বুকের মাঝে। ইশান তার কিশোরী মনের প্রথম মানুষ যাকে সে কখনোই ছেড়ে যাবেমা হোক না বয়সের পার্থক্য কি যায় আসে ইশান কতটা সুদর্শন তা কি ইশান জানে?রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করার সময় মুন খেয়াল করেছে মেয়েরা একবার দুবার হলেও ইশান কে তাকিয়ে দেখে। শুধু ইশানের পাশে কাউকে তারা সহ্য করতে পারেনা বলেই মুনকে নিয়ে উপহাস করার চেষ্টা করে। মুন এও জানে ইশান হয়তো ভাবে যে মুন সবাফ মন্তব্য শুনে তাকে ছেড়ে চলে যাবে কি না?কিন্ত্য মুন এরকম করবেনা। কখনোই।

কান্নাঁ করো না আমার চাঁদ!
তবুও মুন কিছুই বললো না সেভাবেই রইলো ইশানের সাথে মিশে।

——————-
ইমরান আসবে ইশানদের বাসায় ভাইয়ে ভাইয়ে সব ভুল বুঝাবুঝি শেষ হয়েছে মাস খানেক আগে। মুনের প্রতি সে তার অনুভূতি শেষ করে ফেলেছে । মুন তার ভাইয়ের সাথে ভালো আছে সেখানে সে কি করবে?কি করে চাইবে?ইশানের বাসায় যাবে বলে মাসুদের স্ত্রী কেও বার বার বলছে সাথে নিয়ে যাবে রেেডি যেনো হয়। কিন্তু যাবেনা বলছে সে এখন তিন মাসের গর্ভবতী। এত বছর পর বাচ্চার মুখ দেখবে সে এই সময় গাড়ি তে না উঠাই ভালো হবে। তাই আর ইমরান জোড় করলো না।

ইমরান বাসে যাবে তাই সামনে বাস আসতেই উঠে পরলো বাইকে কি যেনো হয়েছে। একটা সিট চোখে পরতেই গিয়ে বসে পরলো পাশে চোখ যেতেই আতকে উঠে ইমরান জেরিন?

তুমি?

জেরিন জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিলো এতক্ষন পাশে কে বসেছে খেয়াল করেনি, ইমরানকে দেখে ধক করে উঠে জেরিনের ভেতরটা।

আপনি?

হু।

আপনি এই পাবলিক বাসে?

কেন? উঠা যাবেনা?

সেরকম নয়….. আমি এর আগে আপনাকে দেখিনি বাসে!

তুমি যেমনটি ভাবো সেরকম ও নয় মাঝে মাঝেই চলাফেরা করি বাসে।

ওহ আচ্ছা।

এখন কই যাবে?

মামার বাসায়।

ওহ আচ্ছা।

আপনি যাবেন কই?

ভাইয়ার বাসায়।

ওহ আচ্ছা। ওখানে থাকবেন?সাথে ব্যাগ!

হুম। কয়েকদিন থাকবো ভাইয়ার আদেশ।

আপনার ভাইয়া আপনাকে অনেক আদর ভালোবাসেন বুঝি?

ইমরান উৎফুল্ল হয়ে বলে, হুম অন্নেক! আমার ভাইয়া আমাকে প্রচুর?ফ ভালোবাসে।

বুঝলাম।

তুমি ও কি কলেজ মিস দিবে নাকি?

হ্যাঁ।

সেম।

জেরিন সহজ হয় ইমরানের সাথে। এই কয়েক মাসে ইমরানের সাথে অনেক বার দেখা হলেও আগের মতো জেরিন ইমরানকে জ্বালা**তন করেনি। তবে ইমরান ওকে দেখা মাত্রই কেমন আছে, পড়াশোনা কেমন চলছে সব খবর নিয়ে নেয়। জেরিনের ভালো লাগে এভাবেই ভালো বাসবে সে ইমরানকে।

বাস থামতেই ইমরান ভাড়া মিটিয়ে দেয় দুজনের। এক সাথে নেমে সামনের দিকে হাট*তে থাকে দুজনে একই দিকে রাস্তার গন্তব্য তাদের কথা বলতে বলতে দুজনেই এক সাথে একই দিকে আংগুল তুলে দেখিয়ে বলে, ওই যে ওই বিল্ডিং………

থেমে যায় দুজনেই তারপর বুঝতে পারে একই বিল্ডিং এ তাদের ফ্ল্যাট রয়েছে। দুজনেই হেসে উপরের দিকে এগিয়ে যায়…………..

চলবে কি!
#মিশকাতুল

ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও পর্ব-১৪

0

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(১৪)

ইশান বাসায় এসে দেখে মুন খাবার টেবিলে বসে ফোন স্ক্রল করছে। ইশান মুনের সাথে দেখা করে রুমে যায় প্রথমে সে ফ্রেশ হবে। মুন রুমে এসে ইশানের বাসায় পরে থাকার কাপড় বের করে বিছানার উপরে রাখে ইশান বাইরে এসে দেখে তার জনু রাখা টিশার্ট আর মুনের জামার রঙ সেম। মুন কি সেম রঙ এর জন্যিই রেখেছে মাকি?হবে হয়তো বাচ্চা মেয়েরা তো এসবই চায় জামাই তাদের পছন্দের হোক তাদের ভালো লাগর প্রতি খেয়াল রাখুক তাদের সময় দিক আর অধিক ভালোবাসুক।
ইশান চেঞ্জ করে খাবার টেবিলে আসে। মুন প্লেট দেয় সামনে ইশান ভাত নেয় সবজী নেয়, মুন গোশতের তরকারি তুলে দেয় প্লেট এ। দারুণ রান্না হয়েছে আজকে।ইশান খাবার শেষ করে রুমে যায়। মুন নিজেও সবটা গুছিয়ে নিয়ে রুমে আসে। ইশান ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে মুন গিয়ে বিছানা ঠিক করেছে। বিছানাতে বসতেই ইশান ল্যাপটপ রেখে ওর পাশে গিয়ে বসে। মুনের দিকে তাকিয়ে বলে,

ঘুমাবে?

হুম।

তাছাড়া আর কিইবা করবে এখন?সারাদিন কি একা একা খারাপ লেগেছে?

বিকেলে ওই মেয়েটাও ছিলো।

হুম। বাসায় কথা বলেছিলে?

হুম।

ইমরানের সাথে?

ইমরান ভাইয়া কল রিসিভ করেনি।

ওহ। আচ্ছা ঘুমাও তাহলে তুমি।

আচ্ছা।

মুন শুয়ে পরে । ঘুম আসছেনা ওর এভাবে আজকে হঠাৎ বুঝতে পারে ইশান তার খুব কাছে শুয়েছে আজকে ভাবনা দীর্ঘ না হতেই ওকে পেছন থেকে ইশান জড়িয়ে ধরে। মুনের মনে হয় পুরো রুমে ভুমিকম্প শুরু হয়েছে। শরীর কাপঁছে।
ইশান ওর কম্পন বুঝতে পারে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসঁফিস করে বলে, তুমি এক পা এগুলে আমি দশ পা এগিয়ে আসবো মুন!

মুন লজ্জা পায় তবে কিছুই বলতে পারেনা। কানের কাছে গরম নিশ্বাঃস পরছে এখনো মুন আবেশে বালিশের পাশে দুই হাতে খামছে ধরে।

———————

এই যে রুমে কেউ আছেন?

দরজার দিকে ফিরে ইশান বিরক্ত হয় কেউ নক করছে। বুক থেকে মুনকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। মুনের ক্লান্ত মুখটা ইশানের বুকে ব্যাথা দিচ্ছে অল্প বয়সী মুনকে আরও কিছুটা সময় দেওয়া দরকার ছিলো কিন্তু ইশান তা করেনি করবে কি করে?সে তো ছোট বাচ্চা নয়।আর মুনের সম্মতি ছিলো তাই তো কাছে আসা। তাকে ভালোবাসায় রাঙিয়ে দেওয়া।

ইশান দরজা খুলে দেয় পত্রিকা দিতে এসেছে টাকা দিয়ে তা ভেতরে এনে রাখে ইশান। সদ্য গোসল নেওয়া মুনকে কতটা স্নিগ্ধ লাগছে তা কি মুন জানে?
নিভু নিভু চোখে মুন ইশানকে দেখছে। ইশান ওর দিকে গিয়ে পাশে একটু ঝুঁকে বলে, আমি ঔষুধ দেব দেখবে শরীর ঠিক লাগবে। আজ তো তুমি রান্না করতে পারবেনা আমি করবো চলো কিচেনে যাই।

মুন এবার আশ্চর্য হয় তাকে দিয়ে রান্না করাবে না তাহলে সে কেন কিচেনে যাবে?

ইশান মুনকে দুই হাত দিয়ে কোলে তুলে নেয় কেবিনেট এর উপরে বসিয়ে বলে,

আমি রান্না পারিনা মুন।

বাইরে থেকে খাবার আনুন।

না। এ সময় বাইরের খাবার তুমি নিতে পারবেনা। আমাকে বলবে আমি রান্না করবো।

মুন অস্ফুটে বলে, কি?

হুম। তুমি দেখিয়ে দেখিয়ে দিবে আমি রান্না করবো। এখন থেকে প্রায় সকালেই তুমি রান্না করতে পারবেনা তখন আমি নিজ দায়িত্ব নিয়ে রান্নাটা করবো চলবে না?
মুন লজ্জা পেয়ে মাথা নিচে নামিয়ে নেয়।

*
ইমরান আজ কোচিং থেকে বের হয়ে কলেজ এর সামনে বট গাছটার নিচে বসেছে। ব্যাগ কাধঁ থেকে নামাতেই দেখলো জেরিন আসছে। মেয়েটাকে সেদিন রাগের মাথায় ওভাবে একটা চ*র দিয়ে ফেলেছে তার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।

জেরিনের পথের দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে সবে তবে দেখলো ইমরান কে দেখেই জেরিম সামনে এগুনো থামিয়ে দিয়েছে।

ইমরান বুঝে ফেলে জেরিন কেন আসছেনা এই পথে! ব্যাগ কাধেঁ তুলে নিজেই এগিয়ে যায়। জেরিন একাঁ আছে এই সময়ে। সকাল আর প্রায়ভেট, কোচিং এর ছাত্র ছাত্রী রা আছে শুধু আশে পাশে। ইমরান জেরিনের দিকে এগিয়ে যায়। জেরিন ওকে এগিয়ে আসতে দেখেই হকচকিয়ে যায় এখন আবার কি বলবে ইমরান?অপমান করবে নাকি?

জেরিন!

জেরিন ইমরানের মুখে নিজের নাম শুনে অবাকের সহিত মাথা তুলে দেখে। এই নামটা ইমরানের মুখে এত সুন্দর করে কেন শুনা যায়?কেন ইমরান ওকে ভালোবাসেনা। সেই প্রথম দিন দেখার পর থেকেই ইমরানকে সে প্রপোজাল পাঠিয়েছে একটা মেয়ে হয়ে ইমরানের কাছে ভালোবাসা চাইছে অথচ ইমরান তা বিনা সংকোচে মানা করে দিয়েছে একটু যদি ইমরান ওকে ভালো বাসতো তাহলে কি এমন ক্ষতি হতো?

ইমরান কেন জেরিনকে ভালো বাসলো না?
ইমরানের ডাকে জেরিন মাথা তুলে শুধু বলে,

হ্যাঁ।

ইমরান জেরিনকে কি বলতে যেনো এসেছে? নিজেই ভুলে যায়! আবার মস্তিস্কে চাপ দিয়ে মনে করে নেয় জেরিনের কাছে সে ক্ষমা চাইবে এখন। কিন্তু কথা কোথায় থেকে শুরু করবে? কি বলে ক্ষমা চাইবে?
ছেলে হয়েও আজ ইমরানের একটা মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে গিয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেক চেষ্টা করে মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করে বলে,

আসলে, আসলে আম সেদিনের জন্য সরি জেরিন।

জেরিনের ভেতরটা ব্যাথা সৃষ্টি করে ভালোবাসার মানুষের হাতের দেওয়া আঘা*ত অথচ সে চেয়েছিলো ভালোবাসা।

আমি কিছু মনে করিনি ইমরান ভাইয়া।

ইমরানের কেন যেনো খারাপ লাগে। এতদিন এই মেয়েটা বেয়া*দবের মতো তাকে শুধু ইমরান বলে ডেকে এসেছে। সেই কারণে কত কথা শুনিয়েছে ইমরান! ছোট একটা মেয়ে হয়ে বড় ভাইয়াদের নাম ধরে বলে?অথচ জেরিন শুনেইনি। আর আজ?

আসলে জেরিন সেদিন আমি অন্য একটা কারণে অনেক আপসেট ছিলাম।তাই তোমাকে সামনে দেখে……

বললাম তো আমি কিছু মনে করিনি। যাই হোক ভাইয়া আসছি আমার প্রায়ভেট আছে।

ইমরান কিছুই বলেনা জেরিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে শুধু।
জেরিন কি আসলেই কিছু মনে করেনি?নাকি জেরিন কে সেদিন সে অনেক বেশিই আঘা*ত দিয়ে ফেলেছে??ব্যাগ নিয়ে আবার ও গাছের নিচে বাধাঁই করা বেঞ্চ এ বসে। আর ভাবতে থাকে জেরিন কে নিয়ে।

চলবে
#মিশকাতুল

ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও পর্ব-১৩

0

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(১৩)

দুপুরে ইশান একা আসেনি সাথে করে একটা মেয়েকেও এনেছে মেয়েটাকে এর আগে মুন কখনো দেখেনি। চিকন, ফর্সা করে লম্বাটে মুখের মেয়েটা দুই হাতে রুপার চুড়ি নাকে পাথরের একটা পিন। মুন ওর দিকে তাকিয়ে আছে বয়স হবে ১৮-২০।

ও কে?ইশান!

ইশান মুনের দিকে তাকিয়ে বলে,

ওর নাম ছাবিনা। তোমার সঙ্গ দিতে নিয়ে আসলাম। দুপুরের পর তিন ঘন্টা থেকে চার ঘন্টা সময় তোমাকে দিবে। ওকে দিয়ে নানা রকম বাসার কাজ করিয়ে নিতে পারবে তুমি।

ওহ আচ্ছা। মুন অবাক হয় এত সুন্দর মেয়েটা অন্যর বাসায় কাজ করে? অবশ্য দারিদ্র কখনো মানুষ এর চেহারাতে প্রকাশ পায় না। গরীব হলে কি সুন্দরী হওয়া যাবেনা?
মেয়েটা মুনের কাছে আসে। ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে,

ভাইয়া আপনার বউটা অনেক সুন্দরী।

ইশান মুনের দিকে তাকিয়ে হাসে মুন লজ্জা পেয়েছে। ইশান খাবার খেয়ে নেয় এরপর রুমে গিয়ে বসে ফ্যানের নিচে। মুন এসে পানির গ্লাস দিয়ে যায়। ইশান ওকে থামিয়ে দেয় সামনে আসতে বলে। একটা বাক্স নিয়ে ওর ভেতরে থেকে মোটা দুটি সোনার বালা বের করে মুনের হাত দিতে বলে মুন কম্পমান হাত বাড়িয়ে দিতেই ইশান ওর ডান হায় নিয়ে একটা বালা পরিয়ে দিতে দিতে বলে,
তোমার হাতের রান্না খুবই মজাদার হয় মুন। তুমি কি তা জানো?

না।

কেন?

এর আগে কেউ প্রশংসা করে নি খাবার নিয়ে।

ইশান মুখ টা ভাবুক বানিয়ে বলে, কি বললে?এত মজাদার খাবার খেয়েও কেউ প্রশংসা করেনি?

করবে কি করে?আমি তো এর আগে রানা করিনি।

ইশানের চোখে যেনো রাজ্যর কৌতুহল দেখা গেলো মুখে বললো,

তুমি গত কালের আগে কখনো রান্না করো নি?

না।

তাহলে পারলে কি করে?

দাদুর, আম্মুর, তোমার মায়ের রান্না দেখেছিলাম রিয়া ভাবীর পাশে দাঁড়িয়ে ও দেখেছি অনেক সময়। তখন আমি বই নিয়েই ওদের রান্না করা দেখতাম আর পড়তাম তাই শিখে নিয়েছিলাম।

ইশান মুখটা বড়সড় বানিয়ে বলে,

এভাবে শিখেছ?তাহলে তো তুমি পাক্কাঁ রাধুনী হতে পারবে মুন!!
বলেই বাম হাতেও বালা পরিয়ে দেয়।

এরপর আবার বলে,একদিন আমি তোমার পছন্দের কেনা অনেক চুড়ি ফেলে দিয়েছিলাম মুন তোমার কি তা মনে আছে?

মুন বুঝতে পারে মেলা থেকে আসার পরের কথাই ইশান মনে করিয়ে দিচ্ছে।

সেদিন আমার অনেক কতটা খারাপ লেগেছিলো তা কি তুমি জানো মুন?আমি কতক্ষন দৌড়ে পুরো মেলাতে তোমাকে খুজেছিলাম?তা যদি তুমি জানতে। তখন আমি তোমাকে নিজের জন্য মানতেও পারছিলাম না আবার তুমি ছোটদের মতো হারিয়েও গেলে সবটা মিলিয়ে আমার নিজেকে পাগোল মনে হয়েছিলো। আম সরি মুন!

আমি ওটা নিয়ে কিছু মনে করিনি ইশান।

ইশান হাতঘড়ি তে সময় দেখে বলে, আমি তাহলে যাচ্ছি মুন। ছাবিনা মেয়েটা চলে গেলে দরজা আবার ও লাগিয়ে দিও আমি বাসায় এসেই কল করবো দরজা খুলে দেওয়ার জন্য কেমন?

হুম।

——————
মিম হলো মুনের বড় বোন। মিমের বিয়ের পর মিমের শশুড় তার ছোটো ছেলের জন্য মিমের বোন মুনকে পছন্দ করেছিলো তা নিয়ে তিনি প্রস্তাব ও দিয়েছিলেন বড় ছেলের শশুর অর্থাৎ মুনের বাবার কাছে। কিন্তু তারা বলেছিলো মুনের বিয়ের বয়স হয়নাই এখনই বিয়ে নিয়ে কথা হবেনা। অথচ ইশানের সাথে দুই বছর আগেই ওনারা মুনের বিয়ে দিলেন। এ নিয়ে তাদের মনে ভয়াবহ আচ*ড় সৃষ্টি হয়েছে যে কেন তারা মুনকে তার ছেলের সাথে দিলেন না। প্রথম প্রথম মিমের প্রতি তারা জুলু*ম করতে চেয়েছিলো কিন্তু বড় ছেলে ফারুকেওল্র কারণে তা পারেনি। একটু কঠোর হতেই ছেলে তার বউমাকে নিয়ে বাসায় চলে গেলো। বর্তমানে তারা পঞ্চগড়ে রয়েছে। কিন্তু তার ছোটো ছেলেটা মুনের সৌন্দর্যের কারণে আপ্লুত হয়ে এখনো মুনের জায়গায় অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছেনা। ফারুক যদিও ছোট ভাই ফারিশের জন্য অনেক মেয়েই দেখিয়েছে তবুও তার নাকি পছন্দ নয়। ফারিশ এখন বর্তিমানে ঢাকাতেই একটা কোম্পানিতে চাকরি করছে। ইশানের সাথে মুনকে আজ সকালে বাজার করতে গিয়ে দেখে এসেছে তখন থেকেই বুকের ভেতর কেমন জ্বলছে তার। তার পছন্দ করা মেয়ে মুন তার ভালো লাগা সেই মেয়ে এখন অন্য একটা ছেলের সাথে? তা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা। যদিও মুনের বিয়ে হয়েছে তবুও সে চায় মুন তার কাছে ফিরে আসুক। সে বাধ্য করবে ফিরে আসতে।

ইশান রাতের সাতটা বাজতেই বের হয়েছে আজকে পেশেন্ট না থাকায় তেমন এক ঘন্টা আগেই বের হতে পেরেছে কিন্তু কিছি পথ আসতেও নৌমির গাড়ির সামনা সামনি পরেছে তার গাড়ি। ইশান গাড়ি ঘুরিয়ে নিতেই নৌমি ওকে থামতে বলে। ক্লাসমেট ও ফ্রেন্ডশিপ থাকার কারণে ইশান ভদ্রতার খাতিরে গাড়ি থেকে নেমে আসে।

ইশান কে দেখে নৌমি মুচকি হাসে এইতো তার ভালোবাসা সেই কলেজ লাইফ থেকে। অথচ ইশান তাকে কখনো পাত্তাই দিলো না।

নৌমি হাত বাড়িয়ে হ্যান্ড শেক করে নেয়। এরপর মুখে হাসি তুলে বলে,
কেমন আছো ইশান?

ইশান নৌমির দিকে তাকিয়ে কিছুটা ভাবার চেষ্টা করে এখন কি বলতে পারে এই মেয়ে তাকে?

আলহামদুলিল্লাহ।

জিজ্ঞেস করবেনা আম কেমন আছি?

জানার প্রয়োজন মনে করিনা।

নৌমির খারাপ লাগে ইশানের উওর শুনে। সে তো ইশানকে কতটা ভালোবাসে তা জানেও না। অথচ তাকে কতটা ব্যাথা দিচ্ছে ইশান?

তা শুনলাম!
তুমি নাকি এখানে ফ্ল্যাট নিয়েছ?মাসুদ ভাইয়ের বাসায় কেন থাকছো না ইশান।

ওখানে কি সারা জীবন আমাকে থাকতে হবে?

না সেরকম নয়। হুট করে ফ্ল্যাট কিনলে।
তাই বল্ললাম।

ইশান বিরক্ত এই রাতের বেলাতে একা একা মু কি করছে বাসায় কে জানে?দ্রুত ফিরতে পারবে বলে ভেবেছিলো কিন্তু এই মেয়ের কারণে কখন ফিরতে পারবে জানেনা।

প্রয়োজন ছিলো তাই ফ্ল্যাট নিয়েছি। আমাকে দ্রুত বাসায় ফিরতে হবে নৌমি।

নৌমি কিছুটা ভেবে বলে, এই তুমি কি তোমার সেই পিচ্চি বউ আনলে নাকি?

তোমায় ঠিকানা টেক্সট করে দিচ্ছি গিয়ে দেখে আসো একদিন। সে আসলে কেমন পিচ্চি একদম লম্বা, চওড়াতে এখন তোমার সমান শুধু চেহারাতে বাচ্চামোর ছাপটা রয়ে গেছে।

ওকে!কাল গিয়ে দেখে আসবো একজন বুদ্ধিমান ডাক্টার,অতি শিক্ষিত ব্যাক্তি কতটা বাচ্চা মেয়েলে বিয়ে করে তুলে এনেছে। আমাকে রিজেক্ট করে দিয়ে।

ইশান ঠোঁটে হাসি একেঁ ওকে বিদায় দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে আসে বাসার দিকে।

চলবে
#মিশকাতুল