ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও পর্ব-১৩

0
357

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(১৩)

দুপুরে ইশান একা আসেনি সাথে করে একটা মেয়েকেও এনেছে মেয়েটাকে এর আগে মুন কখনো দেখেনি। চিকন, ফর্সা করে লম্বাটে মুখের মেয়েটা দুই হাতে রুপার চুড়ি নাকে পাথরের একটা পিন। মুন ওর দিকে তাকিয়ে আছে বয়স হবে ১৮-২০।

ও কে?ইশান!

ইশান মুনের দিকে তাকিয়ে বলে,

ওর নাম ছাবিনা। তোমার সঙ্গ দিতে নিয়ে আসলাম। দুপুরের পর তিন ঘন্টা থেকে চার ঘন্টা সময় তোমাকে দিবে। ওকে দিয়ে নানা রকম বাসার কাজ করিয়ে নিতে পারবে তুমি।

ওহ আচ্ছা। মুন অবাক হয় এত সুন্দর মেয়েটা অন্যর বাসায় কাজ করে? অবশ্য দারিদ্র কখনো মানুষ এর চেহারাতে প্রকাশ পায় না। গরীব হলে কি সুন্দরী হওয়া যাবেনা?
মেয়েটা মুনের কাছে আসে। ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে,

ভাইয়া আপনার বউটা অনেক সুন্দরী।

ইশান মুনের দিকে তাকিয়ে হাসে মুন লজ্জা পেয়েছে। ইশান খাবার খেয়ে নেয় এরপর রুমে গিয়ে বসে ফ্যানের নিচে। মুন এসে পানির গ্লাস দিয়ে যায়। ইশান ওকে থামিয়ে দেয় সামনে আসতে বলে। একটা বাক্স নিয়ে ওর ভেতরে থেকে মোটা দুটি সোনার বালা বের করে মুনের হাত দিতে বলে মুন কম্পমান হাত বাড়িয়ে দিতেই ইশান ওর ডান হায় নিয়ে একটা বালা পরিয়ে দিতে দিতে বলে,
তোমার হাতের রান্না খুবই মজাদার হয় মুন। তুমি কি তা জানো?

না।

কেন?

এর আগে কেউ প্রশংসা করে নি খাবার নিয়ে।

ইশান মুখ টা ভাবুক বানিয়ে বলে, কি বললে?এত মজাদার খাবার খেয়েও কেউ প্রশংসা করেনি?

করবে কি করে?আমি তো এর আগে রানা করিনি।

ইশানের চোখে যেনো রাজ্যর কৌতুহল দেখা গেলো মুখে বললো,

তুমি গত কালের আগে কখনো রান্না করো নি?

না।

তাহলে পারলে কি করে?

দাদুর, আম্মুর, তোমার মায়ের রান্না দেখেছিলাম রিয়া ভাবীর পাশে দাঁড়িয়ে ও দেখেছি অনেক সময়। তখন আমি বই নিয়েই ওদের রান্না করা দেখতাম আর পড়তাম তাই শিখে নিয়েছিলাম।

ইশান মুখটা বড়সড় বানিয়ে বলে,

এভাবে শিখেছ?তাহলে তো তুমি পাক্কাঁ রাধুনী হতে পারবে মুন!!
বলেই বাম হাতেও বালা পরিয়ে দেয়।

এরপর আবার বলে,একদিন আমি তোমার পছন্দের কেনা অনেক চুড়ি ফেলে দিয়েছিলাম মুন তোমার কি তা মনে আছে?

মুন বুঝতে পারে মেলা থেকে আসার পরের কথাই ইশান মনে করিয়ে দিচ্ছে।

সেদিন আমার অনেক কতটা খারাপ লেগেছিলো তা কি তুমি জানো মুন?আমি কতক্ষন দৌড়ে পুরো মেলাতে তোমাকে খুজেছিলাম?তা যদি তুমি জানতে। তখন আমি তোমাকে নিজের জন্য মানতেও পারছিলাম না আবার তুমি ছোটদের মতো হারিয়েও গেলে সবটা মিলিয়ে আমার নিজেকে পাগোল মনে হয়েছিলো। আম সরি মুন!

আমি ওটা নিয়ে কিছু মনে করিনি ইশান।

ইশান হাতঘড়ি তে সময় দেখে বলে, আমি তাহলে যাচ্ছি মুন। ছাবিনা মেয়েটা চলে গেলে দরজা আবার ও লাগিয়ে দিও আমি বাসায় এসেই কল করবো দরজা খুলে দেওয়ার জন্য কেমন?

হুম।

——————
মিম হলো মুনের বড় বোন। মিমের বিয়ের পর মিমের শশুড় তার ছোটো ছেলের জন্য মিমের বোন মুনকে পছন্দ করেছিলো তা নিয়ে তিনি প্রস্তাব ও দিয়েছিলেন বড় ছেলের শশুর অর্থাৎ মুনের বাবার কাছে। কিন্তু তারা বলেছিলো মুনের বিয়ের বয়স হয়নাই এখনই বিয়ে নিয়ে কথা হবেনা। অথচ ইশানের সাথে দুই বছর আগেই ওনারা মুনের বিয়ে দিলেন। এ নিয়ে তাদের মনে ভয়াবহ আচ*ড় সৃষ্টি হয়েছে যে কেন তারা মুনকে তার ছেলের সাথে দিলেন না। প্রথম প্রথম মিমের প্রতি তারা জুলু*ম করতে চেয়েছিলো কিন্তু বড় ছেলে ফারুকেওল্র কারণে তা পারেনি। একটু কঠোর হতেই ছেলে তার বউমাকে নিয়ে বাসায় চলে গেলো। বর্তমানে তারা পঞ্চগড়ে রয়েছে। কিন্তু তার ছোটো ছেলেটা মুনের সৌন্দর্যের কারণে আপ্লুত হয়ে এখনো মুনের জায়গায় অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছেনা। ফারুক যদিও ছোট ভাই ফারিশের জন্য অনেক মেয়েই দেখিয়েছে তবুও তার নাকি পছন্দ নয়। ফারিশ এখন বর্তিমানে ঢাকাতেই একটা কোম্পানিতে চাকরি করছে। ইশানের সাথে মুনকে আজ সকালে বাজার করতে গিয়ে দেখে এসেছে তখন থেকেই বুকের ভেতর কেমন জ্বলছে তার। তার পছন্দ করা মেয়ে মুন তার ভালো লাগা সেই মেয়ে এখন অন্য একটা ছেলের সাথে? তা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা। যদিও মুনের বিয়ে হয়েছে তবুও সে চায় মুন তার কাছে ফিরে আসুক। সে বাধ্য করবে ফিরে আসতে।

ইশান রাতের সাতটা বাজতেই বের হয়েছে আজকে পেশেন্ট না থাকায় তেমন এক ঘন্টা আগেই বের হতে পেরেছে কিন্তু কিছি পথ আসতেও নৌমির গাড়ির সামনা সামনি পরেছে তার গাড়ি। ইশান গাড়ি ঘুরিয়ে নিতেই নৌমি ওকে থামতে বলে। ক্লাসমেট ও ফ্রেন্ডশিপ থাকার কারণে ইশান ভদ্রতার খাতিরে গাড়ি থেকে নেমে আসে।

ইশান কে দেখে নৌমি মুচকি হাসে এইতো তার ভালোবাসা সেই কলেজ লাইফ থেকে। অথচ ইশান তাকে কখনো পাত্তাই দিলো না।

নৌমি হাত বাড়িয়ে হ্যান্ড শেক করে নেয়। এরপর মুখে হাসি তুলে বলে,
কেমন আছো ইশান?

ইশান নৌমির দিকে তাকিয়ে কিছুটা ভাবার চেষ্টা করে এখন কি বলতে পারে এই মেয়ে তাকে?

আলহামদুলিল্লাহ।

জিজ্ঞেস করবেনা আম কেমন আছি?

জানার প্রয়োজন মনে করিনা।

নৌমির খারাপ লাগে ইশানের উওর শুনে। সে তো ইশানকে কতটা ভালোবাসে তা জানেও না। অথচ তাকে কতটা ব্যাথা দিচ্ছে ইশান?

তা শুনলাম!
তুমি নাকি এখানে ফ্ল্যাট নিয়েছ?মাসুদ ভাইয়ের বাসায় কেন থাকছো না ইশান।

ওখানে কি সারা জীবন আমাকে থাকতে হবে?

না সেরকম নয়। হুট করে ফ্ল্যাট কিনলে।
তাই বল্ললাম।

ইশান বিরক্ত এই রাতের বেলাতে একা একা মু কি করছে বাসায় কে জানে?দ্রুত ফিরতে পারবে বলে ভেবেছিলো কিন্তু এই মেয়ের কারণে কখন ফিরতে পারবে জানেনা।

প্রয়োজন ছিলো তাই ফ্ল্যাট নিয়েছি। আমাকে দ্রুত বাসায় ফিরতে হবে নৌমি।

নৌমি কিছুটা ভেবে বলে, এই তুমি কি তোমার সেই পিচ্চি বউ আনলে নাকি?

তোমায় ঠিকানা টেক্সট করে দিচ্ছি গিয়ে দেখে আসো একদিন। সে আসলে কেমন পিচ্চি একদম লম্বা, চওড়াতে এখন তোমার সমান শুধু চেহারাতে বাচ্চামোর ছাপটা রয়ে গেছে।

ওকে!কাল গিয়ে দেখে আসবো একজন বুদ্ধিমান ডাক্টার,অতি শিক্ষিত ব্যাক্তি কতটা বাচ্চা মেয়েলে বিয়ে করে তুলে এনেছে। আমাকে রিজেক্ট করে দিয়ে।

ইশান ঠোঁটে হাসি একেঁ ওকে বিদায় দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে আসে বাসার দিকে।

চলবে
#মিশকাতুল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে