ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও পর্ব-১৪

0
358

#ভালোবাসায়_রাঙিয়ে_দাও(১৪)

ইশান বাসায় এসে দেখে মুন খাবার টেবিলে বসে ফোন স্ক্রল করছে। ইশান মুনের সাথে দেখা করে রুমে যায় প্রথমে সে ফ্রেশ হবে। মুন রুমে এসে ইশানের বাসায় পরে থাকার কাপড় বের করে বিছানার উপরে রাখে ইশান বাইরে এসে দেখে তার জনু রাখা টিশার্ট আর মুনের জামার রঙ সেম। মুন কি সেম রঙ এর জন্যিই রেখেছে মাকি?হবে হয়তো বাচ্চা মেয়েরা তো এসবই চায় জামাই তাদের পছন্দের হোক তাদের ভালো লাগর প্রতি খেয়াল রাখুক তাদের সময় দিক আর অধিক ভালোবাসুক।
ইশান চেঞ্জ করে খাবার টেবিলে আসে। মুন প্লেট দেয় সামনে ইশান ভাত নেয় সবজী নেয়, মুন গোশতের তরকারি তুলে দেয় প্লেট এ। দারুণ রান্না হয়েছে আজকে।ইশান খাবার শেষ করে রুমে যায়। মুন নিজেও সবটা গুছিয়ে নিয়ে রুমে আসে। ইশান ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে মুন গিয়ে বিছানা ঠিক করেছে। বিছানাতে বসতেই ইশান ল্যাপটপ রেখে ওর পাশে গিয়ে বসে। মুনের দিকে তাকিয়ে বলে,

ঘুমাবে?

হুম।

তাছাড়া আর কিইবা করবে এখন?সারাদিন কি একা একা খারাপ লেগেছে?

বিকেলে ওই মেয়েটাও ছিলো।

হুম। বাসায় কথা বলেছিলে?

হুম।

ইমরানের সাথে?

ইমরান ভাইয়া কল রিসিভ করেনি।

ওহ। আচ্ছা ঘুমাও তাহলে তুমি।

আচ্ছা।

মুন শুয়ে পরে । ঘুম আসছেনা ওর এভাবে আজকে হঠাৎ বুঝতে পারে ইশান তার খুব কাছে শুয়েছে আজকে ভাবনা দীর্ঘ না হতেই ওকে পেছন থেকে ইশান জড়িয়ে ধরে। মুনের মনে হয় পুরো রুমে ভুমিকম্প শুরু হয়েছে। শরীর কাপঁছে।
ইশান ওর কম্পন বুঝতে পারে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসঁফিস করে বলে, তুমি এক পা এগুলে আমি দশ পা এগিয়ে আসবো মুন!

মুন লজ্জা পায় তবে কিছুই বলতে পারেনা। কানের কাছে গরম নিশ্বাঃস পরছে এখনো মুন আবেশে বালিশের পাশে দুই হাতে খামছে ধরে।

———————

এই যে রুমে কেউ আছেন?

দরজার দিকে ফিরে ইশান বিরক্ত হয় কেউ নক করছে। বুক থেকে মুনকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। মুনের ক্লান্ত মুখটা ইশানের বুকে ব্যাথা দিচ্ছে অল্প বয়সী মুনকে আরও কিছুটা সময় দেওয়া দরকার ছিলো কিন্তু ইশান তা করেনি করবে কি করে?সে তো ছোট বাচ্চা নয়।আর মুনের সম্মতি ছিলো তাই তো কাছে আসা। তাকে ভালোবাসায় রাঙিয়ে দেওয়া।

ইশান দরজা খুলে দেয় পত্রিকা দিতে এসেছে টাকা দিয়ে তা ভেতরে এনে রাখে ইশান। সদ্য গোসল নেওয়া মুনকে কতটা স্নিগ্ধ লাগছে তা কি মুন জানে?
নিভু নিভু চোখে মুন ইশানকে দেখছে। ইশান ওর দিকে গিয়ে পাশে একটু ঝুঁকে বলে, আমি ঔষুধ দেব দেখবে শরীর ঠিক লাগবে। আজ তো তুমি রান্না করতে পারবেনা আমি করবো চলো কিচেনে যাই।

মুন এবার আশ্চর্য হয় তাকে দিয়ে রান্না করাবে না তাহলে সে কেন কিচেনে যাবে?

ইশান মুনকে দুই হাত দিয়ে কোলে তুলে নেয় কেবিনেট এর উপরে বসিয়ে বলে,

আমি রান্না পারিনা মুন।

বাইরে থেকে খাবার আনুন।

না। এ সময় বাইরের খাবার তুমি নিতে পারবেনা। আমাকে বলবে আমি রান্না করবো।

মুন অস্ফুটে বলে, কি?

হুম। তুমি দেখিয়ে দেখিয়ে দিবে আমি রান্না করবো। এখন থেকে প্রায় সকালেই তুমি রান্না করতে পারবেনা তখন আমি নিজ দায়িত্ব নিয়ে রান্নাটা করবো চলবে না?
মুন লজ্জা পেয়ে মাথা নিচে নামিয়ে নেয়।

*
ইমরান আজ কোচিং থেকে বের হয়ে কলেজ এর সামনে বট গাছটার নিচে বসেছে। ব্যাগ কাধঁ থেকে নামাতেই দেখলো জেরিন আসছে। মেয়েটাকে সেদিন রাগের মাথায় ওভাবে একটা চ*র দিয়ে ফেলেছে তার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।

জেরিনের পথের দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে সবে তবে দেখলো ইমরান কে দেখেই জেরিম সামনে এগুনো থামিয়ে দিয়েছে।

ইমরান বুঝে ফেলে জেরিন কেন আসছেনা এই পথে! ব্যাগ কাধেঁ তুলে নিজেই এগিয়ে যায়। জেরিন একাঁ আছে এই সময়ে। সকাল আর প্রায়ভেট, কোচিং এর ছাত্র ছাত্রী রা আছে শুধু আশে পাশে। ইমরান জেরিনের দিকে এগিয়ে যায়। জেরিন ওকে এগিয়ে আসতে দেখেই হকচকিয়ে যায় এখন আবার কি বলবে ইমরান?অপমান করবে নাকি?

জেরিন!

জেরিন ইমরানের মুখে নিজের নাম শুনে অবাকের সহিত মাথা তুলে দেখে। এই নামটা ইমরানের মুখে এত সুন্দর করে কেন শুনা যায়?কেন ইমরান ওকে ভালোবাসেনা। সেই প্রথম দিন দেখার পর থেকেই ইমরানকে সে প্রপোজাল পাঠিয়েছে একটা মেয়ে হয়ে ইমরানের কাছে ভালোবাসা চাইছে অথচ ইমরান তা বিনা সংকোচে মানা করে দিয়েছে একটু যদি ইমরান ওকে ভালো বাসতো তাহলে কি এমন ক্ষতি হতো?

ইমরান কেন জেরিনকে ভালো বাসলো না?
ইমরানের ডাকে জেরিন মাথা তুলে শুধু বলে,

হ্যাঁ।

ইমরান জেরিনকে কি বলতে যেনো এসেছে? নিজেই ভুলে যায়! আবার মস্তিস্কে চাপ দিয়ে মনে করে নেয় জেরিনের কাছে সে ক্ষমা চাইবে এখন। কিন্তু কথা কোথায় থেকে শুরু করবে? কি বলে ক্ষমা চাইবে?
ছেলে হয়েও আজ ইমরানের একটা মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে গিয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। অনেক চেষ্টা করে মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করে বলে,

আসলে, আসলে আম সেদিনের জন্য সরি জেরিন।

জেরিনের ভেতরটা ব্যাথা সৃষ্টি করে ভালোবাসার মানুষের হাতের দেওয়া আঘা*ত অথচ সে চেয়েছিলো ভালোবাসা।

আমি কিছু মনে করিনি ইমরান ভাইয়া।

ইমরানের কেন যেনো খারাপ লাগে। এতদিন এই মেয়েটা বেয়া*দবের মতো তাকে শুধু ইমরান বলে ডেকে এসেছে। সেই কারণে কত কথা শুনিয়েছে ইমরান! ছোট একটা মেয়ে হয়ে বড় ভাইয়াদের নাম ধরে বলে?অথচ জেরিন শুনেইনি। আর আজ?

আসলে জেরিন সেদিন আমি অন্য একটা কারণে অনেক আপসেট ছিলাম।তাই তোমাকে সামনে দেখে……

বললাম তো আমি কিছু মনে করিনি। যাই হোক ভাইয়া আসছি আমার প্রায়ভেট আছে।

ইমরান কিছুই বলেনা জেরিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে শুধু।
জেরিন কি আসলেই কিছু মনে করেনি?নাকি জেরিন কে সেদিন সে অনেক বেশিই আঘা*ত দিয়ে ফেলেছে??ব্যাগ নিয়ে আবার ও গাছের নিচে বাধাঁই করা বেঞ্চ এ বসে। আর ভাবতে থাকে জেরিন কে নিয়ে।

চলবে
#মিশকাতুল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে