Tuesday, July 1, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 315



নীলফড়িং পর্ব-১৪

0

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#পর্ব ১৪
.
.
অনেক ক্ষণ বসে সবাই আমাদের শান্ত করল। আমি এখনো হিসকী তুলছি। যা দেখে খালামণি বলে উঠলেন।

……আরে এত কান্নার কী আছে আপা? তুইও কাঁদছিস মেয়েটাকেও কাঁদাচ্ছিস। উঁকি দিলেই মেয়েকে দেখবি, তারপরও এত কান্নার কী আছে?

……তুই কী বুঝবি? তোর মেয়েকে বিয়ে দে তারপর বুঝবি, কাল থেকে আমি আর এই রুমে এসে আমার মেয়েটাকে দেখতে পারব না। সময় মতো নিজের হাতে বেড়ে খাবার ও খাওয়াতে পারব না। আমার কলিজাটা কষ্টে ফেঁটে যাচ্ছে, আর তুই বলছিস উকি দিলেই দেখব। হ্যা উঁকি দিলেই দেখব কিন্তু নিজের মতো করে আর কাছে রাখতে পারব না। সময় পেলেই ছুটে যেতে পারব না। আমি মা আমি নিজেকে কীভাবে শান্ত করব।

মায়ের কান্না শুনে আমি আর নিজেকে আঁটকে রাখতে পারছিলাম। দু-হাতে মুখ গুজে কান্না করতে রইলাম। সবাই মিলে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে মাকে আর আমাকে থামাল।

আজ মা আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিল। আজ আমি মায়ের কোলে মাথা রেখে নিশ্চিন্তায় ঘুমাতে চাই। মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। এরপর আমার পাশেই শুইয়ে পড়ল। কিন্তু কারো চোখেই ঘুম নেই। না মা ঘুমাচ্ছে না আমি। বেশ কিছুক্ষণ পরে দরজা খোলার শব্দে তাকিয়ে দেখলাম আব্বু এসে দাঁড়িয়েছেন। আমি আর মা দুজনেই উঠে বসে পড়লাম। পানি তো আমাদের চোখেও ছিলো, আব্বুর চোখেও পানি। আব্বু দরজা ভেজিয়ে দিয়ে এগিয়ে আসলো। এরপর ৩ জন মিলে খুব খুব কাঁদলাম।

৩ জন সারারাত আর ঘুমালাম না। বসে বসে কথা বলে কাঁটিয়ে দিলাম। মাঝে মধ্যে আমি গিয়ে চা করে নিয়ে এলাম। তারপর মা আব্বুর সাথে বসে খেলাম। কখনো হাসছি, কখনো আবার কাঁদছি, মন ভরে কাঁদছি। এই তো জীবন, মানুষ হয়ে যখন জন্ম নিয়েছি তবে হাসতেও হবে, আবার কাঁদতেও হবে।

{সত্যি মা থাকাটা খুব জরুরি ছোট ছোট জীবনের সুখ গুলোতে মা ছাড়া ভালো থাকা যায় না। যার মা নেই সেই জানে, এমন কিছু কিছু মূহুর্তে মায়ের খুব প্রয়োজন। যখন একটা মেয়ের বিয়ে হয়। যখন একটা মেয়ে মা হয়। যখন একটা মেয়ে স্বামীর হাজারো অত্যাচার সহ্য করে, এই সময় গুলোতে মা নামক মানুষটা কে খুব প্রয়োজন হয় মেয়েদের। যাদের মা আছে তারা কখনো বুঝবে না। তবে যারা মাকে হারিয়েছে তারা খুব মিস করে প্রতিটি মূহুর্তে মা নামক মানুটা কে। “মা” খুব স্পেশাল একটি শব্দ। পৃথিবীর সব চেয়ে ছোট একটি শব্দ। কিন্তু পৃথিবীর সব থেকে বড় ও গভীর একটি সম্পর্ক। মা আমাদের যতটা বুঝতে পারে, বাবাও খুব খুব স্পেশাল, তারপরও সে কখনোই বুঝতে পারবে না। কারণ মা সব সময় তার সন্তানের সাথে জড়িয়ে থাকে, আষ্টেপৃষ্টে থাকে। সেই গর্ভে ধারণ করা নিয়ে মৃ*ত্যু পর্যন্ত}

সকালে মা রান্নাঘরে চলে গেল, আমিও গেলাম কিন্তু মা আমাকে তার পাশে বসে থাকতে বলল, একটা কাজও ধরতে দিল না।

আজকে মা আমার পছন্দের ব্রেকফাস্ট বানিয়ে দিল। এন্ড নিজের হাতে খাইয়েও দিল।

১০ টার দিকে জোর করে সবাই মিলে পার্লারে নিয়ে গেল। আমার যাওয়ার মোটেই ইচ্ছে ছিলনা।

সবার সাথে চলে এলাম পার্লারে। সেখান থেকে রেডি হয়ে স্যারের পছন্দ করা সেই লেহেঙ্গা পড়ে বধু সেজে বেড়িয়ে এলাম পার্লার থেকে। পার্লার থেকে সোজা বরিশাল ক্লাবে চলে এলাম। সেখানে বিয়ের ফাংশন হবে। দুই বাড়ির অনুষ্ঠান একই সাথে করা হয়েছে। আলাদা বউ ভাত করা হবে না আর। তাদের মেহেমান তারা দাওয়াত দিয়েছে আমাদেরটা আমরা। সবাই আমাকে নিয়ে সোজা নিচ তালায় বর বধুর স্টেজে বসিয়ে দিল। ফুল দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো ছিলো চারিপাশ। আমার সামনেই বসে আছে মেহমানরা।

ক্যামেরা ম্যান, একজন ভিডিও করছে, একজন ছবি তুলছে। দু একজন মিডিয়ার লোকও ছিলো, যারা স্যারের সাথে পরিচিত হবে হয়ত বা। আমি চুপটি করে বসে ছিলাম।

প্রায় ২টা বাজে, কিন্তু এখনো স্যার বা তার ফ্যামিলির কেউ আসেনি। হয়ত নামাজ টাইম শেষে আসবে তাই ভেবে বসে আছি।

বাট দুটা থেকে ৩টা বাজতে চলল, বর যাত্রী এখনো আসছে না, যা দেখে সবাই একটু টেনশনে পড়ে গেল। অনেক মেহেমান খাবার খেয়ে চলে গেছে। অনেকে এখনো আসছে সবাই জিজ্ঞেস করছে বর এখনো কী করছে? আব্বু, আঙ্কেল (স্যারের আব্বু) দেখতে গেল বাড়ি অব্দি। আমার ও খুব টেনশন হচ্ছে। কী করছে এখনো তারা?

একটু পড়েই শুনলাম বর যাত্রী চলে এসেছে। সবাই খুব আনন্দ করে তাদের নিয়ে আসলো। স্যারকে দেখলাম ফুল দিয়ে মুখ ডেকে রেখেছেন। স্যার এগিয়ে এসে আমার পাশে বসে পড়লেন। যা দেখে আমি নিচের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

……এত দেরি কেনো হলো?

……ভাবী আমি ভাই নয়।

……হোয়াট? বাট তুমি কেনো? স্যার কোথায়?

……আস্তে ভাবী। আসলে ভাই ১টার দিকে বের হয়েছে এখনো আসছে না। যা দেখে আঙ্কেল আব্বু বলল ভাইয়ের জায়গায় যাতে আমি এখানে কিছুক্ষণ বসে থাকি, ততক্ষণে ভাই চলে আসবে। প্লিজ ভাবী আমাকে আবার ভুল বুঝো না। আমি শুধু বড়দের আদেশ পালন করছি।

……স্যার কে ফোন দিয়েছ?

……ভাই ফোন ধরছেন না।

……স্যার কিছু বলে গেছে?

……হ্যা বলে ছিলো খুব আর্জেন্ট কাজ আছে। একটা ইমার্জেন্সি পেশেন্ট আছে, চলে আসবে ঘন্টা খানেকের মাঝে। বাট এখনো এলো না।

আমি ওর সাথে আর কথা না বলে স্যারের ফোনে ফোন দিতে লাগলাম। স্যারের ফোন বন্ধ বলছে। খুব টেনশন ফিল করছি। আমি বারবার ঘেমে যাচ্ছি টিস্যু পেপার দিয়ে ঘাম গুলো মুছে নিচ্ছি।

…….ফারিজ স্যারের ফোন বন্ধ তো?

……হ্যা ভাবী।

…….কোন হসপিটালে গিয়েছে বলে গেছে?

……নাহ। কিন্তু তারপরও নয়ন ভাই আর আমি সব প্রাইভেট হসপিটাল গুলোতে খুঁজেছি ভাই যেখানে যেখানে যেতে পারে।

……জুঁথি পানি নিয়ে আয় আমার জন্য।

…….জ্বি আপু।

জুঁথি পানি নিয়ে আসতেই আমি এক চুমুকে সব পানি পান করে নিলাম। এত টেনশন হচ্ছিল না, আমি বসে থাকতেও পারছিলাম না।

প্রায় ৪টা বাজে। এখন সবাই টেনশনে পড়ে গেল। এদিকে কাজি সাহেব বার বার জিজ্ঞেস করছেন বিয়ে কখন পড়াবে? বাট কে কী বলবে? কারো কাছে কোনো উত্তর নেই।

মেহেমান বেশিরভাগ চলে গেছে, শুধু আত্মীয়স্বজনরা বসে আছে। নিজেকে বড়ই অসহায় মনে হচ্ছে। আমি আবার ফোন দিলাম। বাট এখনো ফোন সুইচ অফ বলছে। ওহ গড এটাই বাদ ছিলো। আমি উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। যা দেখে সবাই এগিয়ে এলো।

……কী রে মা কী হয়েছে?

……আব্বু আমি এখনি আসছি, তোমরা এখানে থাকো।

……কোথায় যাচ্ছিস তুই।

……আসছি আমি।

……শোন মা যাস না।

আমি কিছু না শুনে এই বলে দু-হাতে লেহেঙ্গা তুলে আমি জোর পায়ে এগিয়ে যেতে নিলাম। দরজা থেকে বের হতেই দেখলাম একটা অটো এসে থামলো গেইটের ভেতরে। আমার পিছু পিছু সবাই এগিয়ে এলো। এর মধ্যে দেখলাম স্যার অটো থেকে নেমে গিয়ে আমাদের দেখে এগিয়ে এলো। আমিও ছুটে গেলাম তার সামনে।

…….এতক্ষণ কোথায় ছিলেন?

……স্যারি আসলে একটা ইমার্জেন্সি পেশেন্ট ছিলো না গেলেই হতো না। আজ শুক্রবার ছিলো যার জন্য কোনো ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই আমাকে যেতে হয়েছে। প্লিজ স্যারি। আর কেউ না জানলেও তুমি তো বোঝো।

……ফাইয়াজ ওকে না হয় বুঝিয়ে দিলি। বাট আমাদের? জানিস আজ কতটা অসহায় বোধ করেছি মানুষের প্রশ্নের কাছে? তুই এক ঘন্টার কথা বলে গিয়েছিস এখন কয় ঘন্টা হয়েছে দেখেছিস?

সবাই স্যার কে প্রশ্ন করছিল। বাট আমার চোখ স্যারের হাতের দিকে পড়ল, স্যারের হাতে, শেরওয়ানির হাতায় ব্লাড লেগে ছিলো, যা দেখে আমি স্যারের কাছে এগিয়ে গেলাম। স্যারের হাত ধরতেই সে হাত সরিয়ে নিতে চাইল। আমি জোর করে তার হাত ধরলাম।

…..কী করছ, সবাই আছে এখানে?

……এক মিনিট আমি দেখছি তো?

……পুস্পিতা প্লিজ।

……একদম চুপ করে থাকেন।

এই বলে আমি তার হাত ধরে শেরওয়ানির হাতা সরাতেই দেখলাম হাত ব্যান্ডেজ করা।

…..এটা কীভাবে হলো?

……ও কিছু না। একটু লেগেছিল।

……আমি যা জিজ্ঞেস করছি ভালো ভাবে উত্তর দিন না হয় আমি এখনি এখান থেকে চলে যাবো।

…….আসলে ওই তারাহুরো করে আসতে গিয়ে বাইক এক্সিডেন্ট করে ছিলাম। আমি ঠিক ২:৩০ মিনিটের দিকেই রহনা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ একটা অটোর সাথে সংঘর্ষ হলো। আমি মাথায় ব্যাথা পেয়ে কিছুক্ষণ অজ্ঞান হয়ে ছিলাম। যখন জ্ঞান ফিরল নিজেকে শেরে বাংলা মেডিকেল হসপিটালে পেয়েছি। তারা চিকিৎসা দিচ্ছিল। তাই সেখান থেকে তারাহুরো করে চলে এলাম।

স্যারের কথা শুনে আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না, শুধু চোখ থেকে দু-ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। আমি স্যারের দিকে তাকিয়েই ছিলাম। কতটা কষ্ট করে এখানে এসেছেন সে। অবশ্যই পুরপুরি চিকিৎসা নিতেও পারে নি?

…….তুই ঠিক আছিস তো বাবা?

……হ্যা আম্মু এখন আমি একদম ঠিক আছি।

……আচ্ছা বাকি কথা পড়ে হবে, ফাইয়াজ চল বিয়েটা সম্পূর্ণ করে নে আগে।

……জ্বি আব্বু।

স্যার এক হাতে আমার হাত ধরল। অন্য হাতে তার মায়ের কাঁধে হাত রেখে এগিয়ে গেল। আমি চোখ মুছে তার সাথে এগিয়ে গেলাম।

স্টেজে গিয়ে সবাই দাঁড়িয়ে গেল। স্যার আর আমি বসে ছিলাম। কাজি সাহেব এসে বসে বিয়েটা সম্পূর্ণ করল। এরপর আত্মীয় স্বজনরা যারা চলে যাওয়ার তারা চলে গেলেন, আর যারা থাকার তারা খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমাদের সাথে চলে এলো বাসায়। আমার আর খাবার মুখে দিয়ে গেল না।

আমাদের বাসায় গিয়ে সব রীতিনীতি, যা যা করার সব করল মা খালামণি, মামি ফুপি মিলে। এরপর আমাদের বিদায় দিল।

স্যারদের বাড়িতে এসে তাদের নিয়মকানুন মেনে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলাম। অল্প সময়ের মাঝে তারা সব অনুষ্ঠান শেষ করে আমাকে একটা রুমে দিয়ে আসলো। দেখলাম সেখানে স্যারও আছেন। সে ড্রেস চেঞ্জ করে এলো। একটা হাপ হাতার ট্রি শার্ট পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তার দিকে এগিয়ে গেলাম।

…….প্রচন্ড লেগেছে তাই না?

……আরে না অতটাও না।

…….মাথায় দেখি কতটা লেগেছে?

……আরে তেমন লাগেনি বলছি তো।

……তবে আমাকে দেখাতে সমস্যা কী? দেখি এখানে বসেন।

এই বলে স্যারকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে চুল সরিয়ে দেখলাম নর্মাল ব্যান্ডেজ করা। সেলাইয়ের প্রয়োজন হয়নি হয়ত বা।

…….আর কোথায় লেগেছে?

…….বললাম তো আমি ঠিক আছি।

…….পায়ে লাগেনি?

……সামান্য লাগছে।

……দেখি?

……আরে তুমি তো এখন থেকেই পুরো গিন্নি হয়ে গেছ। আরে আর একটু অপেক্ষা করো।

…….আমি একদম ফাজলামোর মুডে নেই প্লিজ স্যার।

……ওকে ওকে আমি মোটেই আর ফাজলামো করছি না। ঠিক আছে তোমার যা ইচ্ছে করো। আমি একটু শুয়ে পড়ছি কেমন প্রচুর ক্লান্ত লাগছে।

এই বলে স্যার বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল। আমি তার ট্রাউজার হালকা পায়ের কাছ থেকে সরিয়ে দেখলাম অনেকটা কেঁটে গেছে, আমি ফোন হাতে নিয়ে ফারিজ কে ফোন দিয়ে মেডিসিন বক্স নিয়ে আসতে বললাম। সে অল্প সময়ের মাঝেই এসে দরজা নক করে উঠল। আমি গিয়ে দরজা খুলে তার থেকে বক্সটা নিয়ে এসে স্যারের পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিলাম।

সে ঘুমিয়ে গেছে অনেক আগেই। আমি তার পাশে বসে তাকিয়ে ছিলাম তার ওই চেহারার দিকে, কত নিশ্চিন্তায় ঘুমিয়ে আছে সে। আমার যে খুব ভয় করছে, যদি আজ এমন কিছু হয়ে যেত যা ভাবিনি কখনো? আমার চোখ থেকে টুপ টুপ করে অশ্রু পড়ছে যে গড়িয়ে, খুব ভয় করছে।

হঠাৎ দরজায় কড়া নড়ে উঠল। তাই চোখ মুছে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম দাঁড়িয়ে আছে ফারিজ।

…….ভাবী তুমি কাঁদছিলে?

……..কই নাতো। (ভালো করে চোখ মুছে)

……ভাই কোথায়?

……ঘুমিয়েছে।

……তখন ঘুমিয়েছে আর উঠে নি?

……নাহ, হয়ত মেডিসিন নিয়েছে তাই। তুমি কিছু বলবে?

……হ্যা আম্মু তোমাকে নিচে যেতে বলেছেন।

……ঠিক আছে আমি আসছি।

এই বলে আমি দরজা ভেজিয়ে দিয়ে ওর সাথে এগিয়ে গেলাম। স্যারের মা আমাকে দেখে হাসি মুখে এগিয়ে এলো।

…….কী রে মা সমস্যা হচ্ছে না তো তোর কোনো?

…….জ্বি না আন্টি। আমি ঠিক আছি।

……আরে আন্টি কে তোর? আমি তো তোর আরেক মা হই। মা না বললেও হবে, আম্মু বলে ডাকিস না হয়। আমার তো মেয়ে নেই, আজ থেকে তুই না হয় মেয়ে হয়ে থাকিস।

……আমি মুচকি হেঁসে মাথা নাড়িয়ে দিলাম।

আন্টি আমাকে তার সাথে নিয়ে গেল। অনেক কিছু বুঝিয়ে দিল। কোথায় কী রাখা আছে, কোথায় কার রুম সব কিছু দেখিয়ে দিলেন। আমিও খুব ভালো ভাবেই সব বোঝার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আন্টি কথায় কথায় বলে উঠলেন।

……..আচ্ছা মা তুই কী আমার ছেলের উপর রেগে আছিস এখনো?

…….কোথায় না তো? আপনার হঠাৎ এই কথা কেনো মনে হচ্ছে?

…….না আসলে ওর আসতে তো অনেক দেরি হয়ে গেছে। তোর অনেক অপেক্ষা করতে হয়েছিল এজন্য।

…….সে যে আজ এসেছে এটাই আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া ছিলো। আচ্ছা আ….আম্মু, সে যদি আজ না আসতো তবে কী হতো? আমি ভাবতে চাইনা এই কথাটা। সে যে সুস্থ ভাবে এসেছে এটাই অনেক। আর আমিও একজন ডক্টর, আমি জানি তার দূর্বলতা কোথায় ছিলো। তাই আমি তার সাথে কোনো ভাবেই রেগে নেই, আপনি নিশ্চিন্তায় থাকতে পারেন।

…….আমি খুব খুশি হয়েছি তোর কথা শুনে। আল্লাহ তায়া’লা তোদের সম্পর্ক সব সময় মিষ্টি মধুর করে রাখুক। এই দোয়াই করি। (মাথায় হাত দিয়ে)

আম্মুর সাথে কথা বলতে বলতে বাকি সবাই এগিয়ে এলো, স্যারের সব কাজিনরা, তারা আমাকে সাথে করে নিয়ে ড্রইং রুমের সোপায় বসিয়ে দিল। তারাও পাশে বসে পড়ল। এরপর অনেক ইয়ার্কি ফাজলামো করতে শুরু করে দিল।



চলবে…………।

নীলফড়িং পর্ব-১৩

0

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#পর্ব ১৩
.
.
বিকেল দিকে সবার সাথে বসে হাসি-ঠাট্টা করছিলাম। ঠিক তখনই মা এলো রুমে সাথে, স্যারের বাড়ি থেকে কিছু মেহেমান। মেহেদির থালা সাজিয়ে নিয়ে। আমি উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিলাম। তারাও বেশ ভালো ভাবেই উত্তর দিল। তারা আমার পাশে এসে বসে নানান ধরণের প্রশ্ন করতে রইল। মা খালামণি তাদের জন্য স্ন্যাকস এনে দিল। বেশ কিছুক্ষণ পরে তারা চলে গেলেন বিদায় নিয়ে।

সন্ধ্যায় আমাকে লালের মধ্যে সবুজ সুতোর কারুকাজ করা একটা ঘাগড়া সেলোয়ার-কামিজ পড়তে দেওয়া হলো। লাল রঙের কামিজ, লাল ঘাগড়া সেলোয়ার সাথে লাল ওড়না। ড্রেসটা পড়ার পড়ে সবাই খুব সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে দিল। আজ তাজা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে আমায়।

আমি সবার সাথে ছাদে পা রাখতেই দেখলাম অপর ছাদে সবাই গান বাজনায় মেতে আছে, বাহ খুব আনন্দ করছে সবাই।

তারা সবাই ব্লু রঙের পাঞ্জাবী, ব্লু চুরিদার পড়েছে। আর আমাদের এখানে সবাই সবুজ কামিজ, সবুজ ঘাগড়া সেলোয়ার সবুজ ওড়না। ভালো লাগছে সবাইকে এক রঙের ড্রেসে।

বেশ কিছুক্ষণ পড়ে স্যার আসলো দেখলাম ছাদে। সাদা পাঞ্জাবীর সাথে সাদা রঙের চুরিদার পড়ে। বেশ লাগছে তাকে, দেখলাম সে ইশারায় কিছু বলল। কিছুক্ষণ ভাবতে ভাবতে বুঝতে পারলাম সে ভালো লাগছে আমাকে এটাই বুঝাতে চেয়েছে। আমি মুচকি হেঁসে তাকেও সেইম ভাবে ইশারা করলাম সেও হাঁসল।

দুজন আমার দু-পাশে বসে মেহেদি পড়ানো শুরু করল। ওপাশে আমাদের নিয়ে ঠ্যাস দিয়ে গান বাজনো হচ্ছে। এপাশে সবাই ও সেভাবেই গান বাজাচ্ছে। খুব আনন্দ উল্লাস চারিদিকে। ভালো লাগছে। সব জেনো মনের মতই হচ্ছে। নাচ গানে মেতে উঠেছে চারিদিক।

এভাবেই চলছিল অনুষ্ঠান, এমন সময় আমার ফোন বেজে উঠল। পাশে থাকা ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখলাম রাইয়ান নামটা ভেসে উঠল ফোনের স্কিনে।

…….আপু আমি তোমার কানের কাছে ধরছি তুমি কথা বলো।

……আরে না অতটা জরুরি না। এমনিতেও এত শব্দের মধ্যে শোনা যাবে না কথা, তাই বাদ দে ফোনটা বন্ধ করে রাখ।

…….আপু ম্যাসেজ আসছে ওই নাম্বার থেকে।

……কই দেখি।

জুঁথি ম্যাসেজ ওপেন করে আমার চোখের সামনে ধরল। আমি অবাক হলাম ম্যাসেজ দেখে। লেখা ছিলো।

….আমি তোমার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। যদি না চাও আমি সবার সামনে তোমার বাবা মায়ের মান-সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দেই তবে নিচে এসে আমার সাথে সরা সরি কথা বলো। নয়ত আমি এখনি উপরে চলে আসছি। আর যা করব সেখানে গিয়ে তা ভাবতেও পারবে না।

ইতি
তোমার রাইয়ান

আমি ম্যাসেজ দেখে বুঝতে পারছি, রাইয়ান নিশ্চয়ই কোনো প্লান নিয়ে এসেছে। কিছু তো ও করবে। আমি ভয়ার্ত চোখের চাউনিতে স্যারের দিকে তাকালাম দেখলাম সে আনন্দ করছে সবার সাথে। আমি কী করব বুঝতে পারছিলাম না। আমি মেহেদি দেওয়া বন্ধ করে, উঠে ছাদের এক পাশে এসে দেখলাম, হ্যা রাইয়ান দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার অপর পাশে। আমি আবার ঘুরে তাকালাম স্যারের দিকে সে আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করল কী হয়েছে। আমি কিছু না বলেই সোজা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলাম।

গেইট খুলে দিতেই রাইয়ান এগিয়ে এলো।

…….তুমি এখানে কেনো আসছ? কী চাইছ তুমি এখানে?

……তুমি এই বিয়ে করতে পারো না?

……তার পারমিশন আমার তোমার থেকে নিতে হবে?

…….হ্যা কারণ আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি কোনো ভাবেই এমনটা করতে পারো না।

…….বাট আমি বাসি না। দ্যাখো কারো সাথে হাসি মুখে কথা বলার মানে এই নয় যে, আমি তাকে ভালোবাসি। বন্ধু ও ভাবা যায় তাকে। আমি তোমাকে খুব ভালো বন্ধু ভেবেছিলাম। বাট বুঝতে পারিনি ভালো বন্ধু আমার ভাগ্যে নেই।

…..প্লিজ পুস্পিতা, তুমি একবার আমাকে বিশ্বাস করো। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, অনেক সুখে রাখব। আমাকে এভাবে দূরে ঠেলে দিও না।

…….সুখে রাখার তুমি কে? সুখ দেওয়ার মালিক আল্লাহ। রাইয়ান প্লিজ তোমার মুখে ভালোবাসি শব্দটা আমার শুনতে ইচ্ছে করছে না। তুমি প্লিজ এখান থেকে চলে যাও। না হয় খুব খারাপ হবে।

……কী খারাপ হবে বলো কী করবে তুমি?

আমার দিকে এগোতে এগোতে কথা গুলো বলছিল। আমিও পেছনে এগোতে লাগলাম।

……রাইয়ান ওখানেই দাঁড়াও, এক পা এগোবে না বলে দিচ্ছি।

……আমিও তো দেখতে চাই তুমি কী করবে। ডাকবে সবাইকে ডাকো, আমিও ডাকছি তোমার হয়ে। চলো দুজনে মিলে ডাকি।

এই বলে রাইয়ান এগোতে লাগল আরও বেশি করে, তাই আমি হাত উঠিয়ে খুব জোরেই ওকে একটা থাপ্পড় দিলাম। সাথে সাথে ও আমার হাতটা ধরে ফেলল। যার জন্য মেহেদি গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। আমি হাত ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করে চলেছি। বাট রাইয়ান কোনো ভাবেই আমার হাতটা ছাড়ছিল না।

……রাইয়ান আমার হাত ছেড়ে দাও বলছি।

……না ছাড়লে কী করবে তুমি?

……রাইয়ান খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু?

……হুম আমিও তো খারাপ করতেই আসছি।

এই বলে রাইয়ান আমার হাত ধরে টান দিয়ে গেইটের দিকে নিয়ে যেতে নিলো। কিন্তু কেউ এসে রাইয়ান যে হাতটা ধরে রেখেছিল সেই হাতটাই ধরল। যার জন্য রাইয়ান এগোতে পারল না। আমি পাশে তাকিয়ে দেখলাম স্যার ছিলো। যা দেখে আমার সাহস অনেকটা বেরে গেল। স্যার রাইয়ানের হাত থেকে আমার হাতটা ছাড়িয়ে নিলো। আমি স্যারের দিকে এগিয়ে গেলাম। স্যার আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে নিজের গায়ের যত শক্তি ছিলো সব দিয়ে রাইয়ান কে একটা থাপ্পড় মারলো। যার জন্য রাইয়ান ছিটকে গিয়ে গেইটের উপর পড়ল।

…….কী করবে ও জিজ্ঞেস করছিলি না? আয় দেখাচ্ছি ও কী করবে?

……স্যার প্লিজ আপনি আমাদের মধ্যে আসবেন না।

……(রাইয়ানের কাছে এগিয়ে গিয়ে) তুই যদি আমাদের মধ্যে আসতে পারিস তবে আমি কেনো পারব না? হুম বল তুই কী করতে চাইছিলি? ওকে নিয়ে যেতে এসেছিস? আয় নিয়ে যা, ধরে দ্যাখ ওর হাত আবার। তোকে সেদিন ছাড়াটাই উচিৎ হয়নি। তুই ভালো কথা বোঝার মতো মানুষই না। তোকে আজ আমি।

এই বলে স্যার ওকে আরও কয়েকটা থাপ্পড় মারলো। রাইয়ান ও মারার জন্য হাত উঠাচ্ছে বাট স্যার ওর হাত ধরে ফেলছে সাথে সাথেই। স্যার ওর হাত ধরে ওকে ঠেলা দিল। স্যার চারিদিকে তাকিয়ে কিছু একটা দেখে ছুটে গিয়ে একটা শাপল নিলো। মাটি খোদাই করার শাপল। যা ফুল গাছের পাশে রাখা ছিলো। নিয়ে ছুটে এলো ওকে মারার জন্য, যা দেখে রাইয়ান ছুটে পালাতে নিলো বাট স্যার ওর ট্রি শার্ট পেছন থেকে ধরে টান দিয়ে মাটিতে ফেলে দিল ওকে। এরপর শাপল জাগিয়ে তুলল বারি দেওয়ার জন্য। যা দেখে আমি এগিয়ে গিয়ে স্যারের হাত ধরলাম।

…….স্যার প্লিজ না।

……পুস্পিতা ছাড়ো বলছি, ওকে আজ আমি মে*রে-ই ফেলব।

……না স্যার কাউকে মে”রে ফেলা আমাদের কাজ নয়। আমাদের কাজ জীবন বাঁচানো। প্লিজ স্যার ওকে ছেড়ে দিন। রাইয়ান যাও তুমি এখান থেকে। আর কখনো যদি আমাদের সামনেও পরো সেদিন কিন্তু আর আমি তোমাকে বাঁচাতে আসবো না। যাও বলছি এখান থেকে।

রাইয়ান উঠে সেখান থেকে ছুটে পালিয়ে গেল। কিন্তু স্যারের রাগ থামছিল না। তার মাথায় এক ধরনের ভূত চেপে বসে ছিলো। যা নামার নাম নিচ্ছিল না।

…….পুস্পিতা তুমি ওকে ছেড়ে দিয়ে ঠিক করলে না।

……স্যার আজ যদি আপনি ওকে মে*রে ফেলতেন তবে আপনার কী হতো? আর আমাদের ফ্যামিলির সবাইকেই বা কী উত্তর দিতাম আমরা? আপনার কী হতো ভেবে দেখেছেন? প্লিজ স্যার মাথা ঠান্ডা করুন এভাবে রাগের মাথায় কিছু করতে নেই। আপনি ভেবে দেখেছেন আপনার কিছু হলে আমার কী হবে?

স্যার আমার কথা শুনে আমার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে দেয়ালের কাছে গিয়ে খুব জোরে একটা ঘুসি মারলো দেয়ালে। যা দেখে আমি এগিয়ে গিয়ে স্যারের হাত ধরলাম। দেখলাম হাতের মুঠিটা লাল হয়ে গেছে। যা দেখে আমার চোখ থেকে দু-ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল, স্যারের হাতে।

…….পুস্পিতা আমি তো ওকে কিছুই করিনি তবে এখন কাঁদছ কেনো?

…….সব তো আমার জন্যই হয়েছে। তবে আমাকে আঘাত না করে নিজেকে কেনো আঘাত করছেন?

স্যার আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে আমাকে তার বুকের মাঝে টেনে নিলো। আমিও চুপটি করে সেখানে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলাম অনেকটা সময়।

…….একটু অপেক্ষা করো ম্যাডাম কাল থেকে এই জায়গাটা শুধু তোমার জন্যই বরাদ্দ থাকবে। আজ কেউ দেখে নিলে মান-সম্মান বিলিন হয়ে যাবে। তাই এই ভালোবাসা কালকের জন্যেও কিছুটা রেখে দাও।

আমি স্যারের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে তারাহুরো করে দাঁড়িয়ে গেলাম। সত্যিই তো কেউ দেখলে কী বলবে? কিন্তু তাই বলে স্যার এভাবে লজ্জা দেবে? ইশ কীভাবে বলল স্যার কথাটা? আমি নিচের দিকে তাকিয়েই হেঁটে যাচ্ছিলাম ঠিক তখনই স্যার হাত ধরে নিলো।

…….কোথায় যাচ্ছ?

…….ছাদে।

…….একটা কথা বলব?

…….হুম।

……তোমার এই লাজুক হাঁসিটায় তোমাকে খুব মানায়।

আমি দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে হালকা হেঁসে, তার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ছুটে পালিয়ে এলাম। নিজের রুমে এসে আগে মেহেদি গুলো পরিষ্কার করলাম। ভাগ্যিস বেশির ভাগ মেহেদি শুকিয়ে গিয়েছিল। না হয় সবাই প্রশ্ন করতো এমন হলো কীভাবে? আমি হাত পরিষ্কার করে, আস্তে আস্তে উপরে চলে এলাম। দেখলাম স্যার আমাদের ছাদ টপকিয়ে তাদের ছাদে যাচ্ছে। ওহ গড স্যার এভাবে গিয়েছিল, সবাই কী ভাবছে?

আমি গিয়ে স্টেজে বসে পড়লাম। আবার সবাই নাচে গানে মেতে উঠেছে। ওরা বাকি মেহেদি গুলো আমার হাতে পায়ে দিতে শুরু করে দিল।

……আপু কোথায় গিয়েছিলি?

…….ওই এক পেশেন্ট এসেছিল।

……দুলাভাই ও তো তোর পেছন পেছন গিয়েছিল।

……ওহ আচ্ছা? কই তুই মেহেদি লাগিয়েছিস?

…….হ্যা এই দ্যাখ।

…….হুম খুব সুন্দর হয়েছে।

…….আপু তোর হাতে দুলাভাইয়ের নাম লেখা হবে কিন্তু।

……আচ্ছা তবে তুই আগে খুঁজে বের করে নিস।

……হুম তা তো বের করব। কিন্তু দুলাভাইকেও বের করতে হবে, না হয় টাকা দিতে হবে।

…….আচ্ছা তুই যদি চেয়ে নিতে পারিস তবে নিস। তাতে আমার কী?

…….দেবে তো দুলাভাই?

…….তা তুই আমাকে কেনো জিজ্ঞেস করছিস? তোর দুলাভাই কে গিয়ে জিজ্ঞেস করে আয়।

……হ্যা তবে এখনি যাচ্ছি।

……এই এই জুঁথি। তুই পাগল হয়েছিস? একদম এখানে চুপ করে বস। নয়ত খালামণি কে বলে একটা থাপ্পড় খাওয়াব।

……আপু এই তো তুই বললি, দুলাভাইকে জিজ্ঞেস করতে। আবার এখনি তুই থাপ্পড় খাওয়াচ্ছিস আমায়?

…….এই মেয়ে তাই বলে তুই এখনি যাবি নাকি? যখন তোর দুলাভাই তার নাম খুঁজবে, তখন গিয়ে তুই জিজ্ঞেস করে নিস।

…….আচ্ছা তবে তাই করব।

এভাবেই আজকের অনুষ্ঠান চলতে লাগল। বাসার সবাই মেহেদি লাগাচ্ছেন। ছোট বড় কেউ বাদ নেই। ভালো লাগছে সবাইকে খুশি দেখে।

রাতে মেহেদি তুলছিলাম।। অমন সময় মা এলো রুমে।

……কীরে খাবার খেতে আয়।

…….হ্যা মা তুমি যাও আমি আসছি।

মা যেতে নিয়ে আবার এগিয়ে এসে আমার কাঁধে হাত রাখল। দেখলাম মায়ের চোখে পানি। মা কাঁদছিল। মায়ের চোখ ভেজা দেখে আমার চোখ ও নিমিষেই ভিজে গেল। আমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম। মা ও আমাকে ধরে কান্না করছিল। আমাদের কান্না শুনে খালামণি কাকি মা, ফুপি, মামি সবাই ছুটে আসলো। সবাই আমাদের শান্তনা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।



চলবে………।

নীলফড়িং পর্ব-১২

0

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#পর্ব ১২
.
.
মা আব্বু আজ সকাল সকাল আমার সাথেই বের হলো। আমি হসপিটালে চলে এলাম তারা কার্ড বিলাতে গিয়েছে। আমি বুঝি না এত আনুষ্ঠানিকতার কী প্রয়োজন আছে? বিয়েতে তো যত কম খরচ হয় ততই ভালো। বাট এরা কী করছে এরাই জানে।

দুপুর দিকে বাসায় ফিরে দেখলাম তারা এখনো ফেরেনি। ফোন দিলাম। বলল দেরি হবে আমি জানো খেয়ে নেই। আরে একা একা খাওয়া যায় নাকি? কী আর করব খেতে তো হবেই। অল্প করে খেয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।

ঘুম ভাঙল কলিং বেলের শব্দে। উঠে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কে? আব্বু বলল আমরা। তাই দরজা খুলে দিলাম। ভেতরে আসতে আসতে দেখলাম ঘড়িতে ৪ টা বাজে আরে বাবা এত দেরি?

…….খাবার খেয়েছ তোমরা?

……হ্যা খেয়েছি?

……কোথায় খেয়েছ? কী খেয়েছ?

……তোর খালামণির বাসায় খেয়েছি, এত জোর করল না খেয়ে আসতে পারলাম না।

……ওহ আচ্ছা। যাও ফ্রেশ হয়ে নাও গিয়ে, নাকি আবার যাবে?

……হ্যা যাবো তো নিশ্চয়ই। কিন্তু একটু জিরিয়ে নিয়ে সন্ধ্যার দিকে এলাকায় যে কজন রয়েছে তাদের দেবো। আর বাকি সবাইকে কাল দেবো।

……এখনো বাকি রয়েছে?

……হ্যা তাহলে? তুই ভাবিস কী এত গুলো কার্ড দেওয়া কী এই সেই কথা?

…….মা এত গুলো কার্ড করার কী প্রয়োজন ছিলো?

…….তোর এত মাথা ঘামাতে হবে না। তুই যা তোর কাজে, এগুলো আমাদের উপর ছেড়ে দে।

…….ঠিক আছে তোমাদের যেমন খুশি।

আমি রান্নাঘরে গিয়ে চা করে মা আব্বু কে দিয়ে আমি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। চায়ের কাপে চুমুক বসাতেই মনে হচ্ছে কেউ তাকিয়ে আছে। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে যখন কাউকে দেখতে পেলাম না তখন রাস্তায় চোখ পড়ল। একটা বাচ্চা আমার দিকেই তাকিয়ে আছে দেখলাম খুব কিউট বেবিটা আমি হাতের ইশারা দিতেই সে ছুটে পালালো। আমি চা শেষ করে ঘুরে যেতেই দেখলাম স্যার দাঁড়িয়ে আছে তার রুমের বারান্দায়। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে চলে আসতে নিলাম। ঠিক তখনই সে বলে উঠলেন।

……আর তো মাত্র কয়েক দিন তারপর এই দূরত্বটা আর থাকবে না ইন’শা’আল্লাহ। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে এদিক সেদিক খুঁজতে হবে না। পানি ছুতোয় ছাদে যাওয়ার সাধ ও আর জাগবে না।

বুঝতে পারছি স্যার কথা গুলো আমার উদ্দেশ্যেই বলল। কী বাজে লোক একটা? আমি নাকি ছাদে যাই পানির ছুতোয়? বারান্দায়ও আশি চায়ের ছুতোয়? যাক আর আসবো না এবার নিজেই খুঁজতে আসবে আমায়। আরে আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে চা খাই ভালো লাগে দেখে। আমি সকাল সকাল ছাদে যাই বাহারি বাতাস গায়ে মাখবো বলে। কিন্তু কত্তবড় দুর্নাম আমার বিরুদ্ধে। যা থাকব না আর বারান্দায়। আমি পা বাড়িয়ে চলে এলাম সেখান থেকে। ছিঃ ছিঃ কতবড় অপমান। ভাবছি চা খাওয়াই ছেড়ে দেবো। নাহ নাহ চা খাওয়া কেনো ছাড়ব? আমি বারান্দায় আসা ছেড়ে দেবো।

আমি রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। গেইটের সামনেই দেখলাম সে দাঁড়িয়ে আছে, আমি তার গাড়ী ওভারটেক করে চলে যেতে নিলাম। বাট সে আমার সাথে সাথে গাড়ী এগোচ্ছে। কিছুদূরে গিয়ে আমি রিকশা ডাকব ঠিক তখনই সে গাড়ী এনে আমার সামনে বাকা করে থামিয়ে দিল।

…….কী ম্যাডাম এখন জোর করে গাড়ীতে তুলতে হবে নাকি?

…….প্রয়োজন নেই আমি নিজে নিজেই যেতে পারব।

…….তা আমিও জানি। বাট একই তো পথ চলো উঠে আসো।

…….নাহ যাবো না।

……..ওকে।

আমি ভাবছি চলে যাবে কিন্তু না সে গাড়ী থেকে নেমে আমার হাত ধরে নিয়ে গাড়ীতে বসিয়ে দিল।

…….এখানে বসে থাকবে এক পা বাহিরে দেবে না, আমি না বলা অব্দি।

এই বলে স্যার গাড়ীর দরজা আঁটকে দিয়ে নিজেও গিয়ে গাড়ীতে উঠে বসে পড়ল। ইশ কী ঢং, নিজেই ঠ্যাস দিয়ে কথা বলে আবার নিজেই দরদ দেখায়।

স্যার গাড়ী চালিয়ে এগিয়ে গেল। আমি জানালার বাহিরে তাকিয়ে রইলাম। দেখলাম স্যার রাজাবাহাদুর রোড হয়ে মহিলা ক্লাবের সামনে দিয়ে ঘুরে গ্রিন পার্কের দিকে যাচ্ছে। এদিকে কেনো যাচ্ছে বুঝতে পারছি না। সে গ্রিন পার্কের সামনে থেকে বেলের্স পার্কে গিয়ে একেবারে শেষে যেই বেল পুড়ির ছোট দোকানটা ছিলো তার সামনে গাড়ী থামিয়ে বলে উঠল।

…….বেল পুড়ি খাবে?

……এখানে?

…….হুম এই লোকটা খুব ভালো বেল পুড়ি বানায়, খাবে?

…….ওকে।

স্যার দু-প্লেট বেল পুড়ি অর্ডার করল। দুজনে গিয়ে গাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে গেলাম। ভালো লাগছে মোটামুটি ভীড় জমে আছে চারিদিকে। দোকানী প্লেট এগিয়ে দিল দুটি। স্যার এক প্লেট নিলো আমাকে এক প্লেট দিল। এক পিস মুখে দিতেই ভালো লাগল।

…….হুম খুব টেস্ট তো।

…….হুম বলে ছিলাম না?

এরপর দু’জনে বেল পুড়ি শেষ করলাম।

…….আরও খাবে?

…….নাহ অল্প খেলে সাধ ভালো লাগে। বাট বেশি খেলে মুখ ফিরে আসে।

…….হুম তা ঠিক।

স্যার বিল মিটিয়ে গাড়ীতে বসতে বলল। দুজনেই বসে পড়লাম। অল্প সময়ের মাঝেই হসপিটালে চলে এলাম।

এভাবেই চলতে শুরু করে দিল দিন ক্ষণ প্রতিটি মূহুর্ত। কখনো রাগ, কখনো অভিমান, কখনো আনন্দ। বিয়ের তারিখটা খুব কাছে ঘনিয়ে এলো। এদিকে আমাদের সম্পর্কটাও আরও মধুর হতে লাগল।

আজ হসপিটাল থেকে ছুটি নিলাম। অল্প কিছুদিনের জন্য, শুধু অনুষ্ঠান যে কদিন চলবে, সে কদিনের। কাল থেকে শুরু হবে সব ফাংশন। তাই কাল বিকেল থেকে বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ। সব আত্মীয়স্বজনরা এক এক করে চলে এসেছেন।

বিকেল দিকে রুমে এসে মা বকনি দিয়ে উঠল।

…….কীরে এখানে বসে কী করছিস? বাহিরে কত মেহেমান, আনন্দ উৎসবে মেতে আছে, আর তুই রুমে বসে আছিস?

…….মা বাহিরে গিয়ে কী করব? আমার লজ্জা লাগছে। 🫣

…….এত লজ্জা কীসের? চল বাহিরে চল।

…….মা আমি যাবো না প্লিজ।

……চল বলছি।

মা জোর করে আমাকে এনে সবার সামনে বসিয়ে দিল। আর সবাই শুরু হয়ে গেল। আমাকে লজ্জা মাখানো কথা বলার জন্য।

সন্ধ্যার আগে আগে, সবাই মিলে আমাকে সাজিয়ে দিল, লাল হলুদ জামদানী শাড়ি, ফুলের গহনা দিয়ে। দুই ছাদে অনুষ্ঠানের সব ব্যবস্থা করা হয়েছে, ওপাশে বর পক্ষ, এপাশে কনে পক্ষ।

সন্ধ্যার পরে সবাই আমাকে নিয়ে ছাদে এগিয়ে গেল। চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে ছাদ দুটো। আলোয় আলোয় আলোকিত হয়ে আছে চারিদিক।

আমাকে নিয়ে স্টেজে বসিয়ে দেওয়া হলো। কিছুক্ষণের মধ্যে স্যারও চলে এলো তাদের ছাদে, দুজনার চোখে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কিছুটা লাজুক হাসি ঠোঁট ছুঁয়ে গেল। সবাইকে ছেড়ে যাবো এই ভেবে মনে খারাপ লাগা আনতে চাইছি, বাট আসছেই না। মন উল্ট বলছে, মন খারাপের কী আছে? উঁকি দিলেই তো দেখব সবাইকে, তবে এত কষ্ট পাওয়ার কী আছে?

সবাই এক এক করে গায়ে হলুদ দিয়ে এলো স্যারকে। এরপর সেই হলুদ লাগিয়ে দিল আমার গায়ে, জাস্ট শুধু অনুভূতির কিছুটা ছোঁয়া, এটা যে নিয়ম তা নয় কিন্তু, এটা একটা অনুভূতি, এটা একটা অনন্দের মূহুর্ত শুধু।

সবাই গান বাজনা বাজাচ্ছে। কেউ নাচ করছে, কেউ গান গাইছে। খুব সুন্দর ভাবেই অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেল।

রাত তখন ১ টা আমি বিছানায় বসে ছিলাম। মাইনুল আমার পাশেই ছিলো। আরও একজন কাজিন ছিলো, খালামণির মেয়ে। দুজনে মিলে আমার সাথে খুব করে ফাজলামো করছে। বোনটা আমার ফোন নিয়ে স্যারকে ম্যাসেজ দিতে শুরু করে দিল, তাও আমার হয়ে।

……আসসালামু আলাইকুম।

……ওয়ালাইকুম আসসালাম। হ্যা বলো?

……আমি কী বলব? তার থেকে আপনি বলেন আমি শুনবো।

…….ম্যাসেজ তো তুমি দিলে আমি কী বলব?

……নাহ আসলে ইচ্ছে করছিল আপনার সাথে কথা বলার তাই দিলাম।

…….ওহ আচ্ছা? তবে বারান্দায় আসো বলছি।

……নাহ নাহ বারান্দায় না, অনেক রাত হয়ে গেছে কেউ দেখলে সমস্যা হবে।

…….সমস্যা কী করে হবে? রুমের দরজা নক করে আসবে।

……আরে নাহ আমার সাথে কাজিনরা আছে তো।

……ওহ তবে তাদের নিয়ে আসো। তাদের সাথেও কথা হবে ভরপুর।

……উঁহু। তার থেকে এভাবেই বলেন, আমি শুনি?

…….হুম আগে বলো কতটা ভালোবাসো আমায়?

স্যারের ম্যাসেজ দেখে আমার একটু সন্দেহ হচ্ছে, স্যার এভাবে কথা বলছেন? স্যার এত রাতে বাহিরে যেতে বলার লোক তো নয়? তাও আবার মজা করছে এভাবে।

…….জুঁথি ওটা স্যার নয়। স্যারের কোনো কাজিন বা ভাই ম্যাসেজ দিচ্ছে সম্ভবত।

……তুই কীভাবে বুঝলি আপু?

…….আমার সন্দেহ হচ্ছে।

ওরা হাসি মুখে ভয় পেয়ে ফোন রেখে দিল। আমি রুমের আলো নিভিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম।

সকাল সকাল উঠে ফ্রেশ হয়ে ছাদে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। অনেক দিন বাদে ছাদে এসে ভালো লাগছে। ফুল গুলো অনেক সুন্দর ভাবে ফুটে আছে, একটা সাদা গোলাপ ফুটে ছিল, খুব ভালো লাগল দেখে, তাই এগিয়ে গেলাম ফুলের কাছে। তাকে স্পর্শ করে দেখছিলাম। হঠাৎ পেছন থেকে কারো কাশির শব্দে আঁতকে উঠলাম হটাৎ হওয়ায়। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম স্যার দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি লজ্জা পেয়ে আবার ঘুরে গেলাম।

……কাল ম্যাসেজ কে দিয়েছিল?

……জুঁথি আমার কাজিন।

……হুম বুঝতে পেরেছি।

……রিপ্লাই কে দিয়েছিল?

…….নয়ন আমার কাজিন।

……হুম জানতাম।

……এতদিন ছাদে কেনো আসোনি?

…….কেনো?

…….গাছ গুলো কাউকে খুব মিস করছিল।

……তাই? গাছ গুলো নাকি অন্য কেউ?

……হয়ত বা। বাট গাছে রোজ পানি দিতে হয়। না হয় তারা শুকিয়ে যাবে।

……কেনো আপনিই তো বলেছিলেন, ছাদে ভূত আছে যে কিনা রোজ পানি দিতে আসে। তবে আমি না এলেও তো চলবে।

……(হেঁসে দিয়ে) হুম বলেছিলাম। বাট ভূতটা আসছে না কিছুদিন ধরে।

……তবে আমি তো নাকি পানির ছুতোয় আশি, ভূত কেনো আসেনি?

…….(জোরে হেঁসে দিয়ে) ওহ আচ্ছা ম্যাডাম অভিমান করেছে বুঝি?

…….অভিমান কার সাথে করব? এমন কাউকে তো আশেপাশে দেখতেই পাচ্ছিনা।

…….কেনো ভাবী তুমি আমার ভাইকে দেখতে পাচ্ছ না?

কারো মুখে ভাবী ডাক শুনে পেছনে ঘুরে তাকালাম। দেখলাম ফারিজ আর নয়ন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাঁসছে স্যারের কাঁধে হাত রেখে। যা দেখে স্যার ও কিছুটা অপস্তুত হয়ে গেল। তার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। আমি তো বেশ অনেকটা লজ্জা পেলাম। আমি ভাবছি কোথায় লুকাব বাট জায়গা খুঁজে পাচ্ছিনা। স্যার ওদের কে বলে উঠল।

……তোদের আর কোনো কাজ নেই নাকি?

……আছে তো সবাইকে এই কথাটা বলার।

স্যার ওদের সাথে কথা বলছিল, এই ফাঁকে আমি ছুটে পালালাম ছাদ থেকে।

……এই মিষ্টি ভাবী কোথায় যাচ্ছ? দাঁড়াও কথা বলে যাও আমাদের সাথেও একটু। শুধু ভাইয়ের সাথে বললেই হবে নাকি?

কে শোনে কার কথা আমি তো একদম নিচে এসে আমার রুমে চলে গেলাম। ওহ গড আমি তো একদম শেষ।



চলবে……….।

নীলফড়িং পর্ব-১১

0

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#পর্ব ১১
.
.
গাড়ী এসে থামল হসপিটালের সামনে। হায়রে আমার ইচ্ছে পূরণ হবে না রে কখনো। ডাক্তার প্রেমিক আর বর জুটলে এমনই হবে, বাসা থেকে হসপিটাল, আর হসপিটাল থেকে বাসা অব্দি সীমাবদ্ধ। ৫ মিনিটের জন্যই না হয় একটু অন্য কোথাও গাড়ী থামিয়ে নিত। কিন্তু না সোজা এসে হসপিটালের সামনেই থামাতে হলো। এই ভাবতে ভাবতে মুড অফ করে, আস্তে আস্তে গাড়ী থেকে নেমে দাঁড়িয়ে গেলাম। স্যারের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম সে ঠোঁটের মাঝে আঙুল রেখে মিটমিট করে হাঁসছে, একটু সন্দেহ হলো আমাকে দেখে আবার হাসছে না তো। আমি একটু ভালো করে নিজেকে দেখে নিলাম। দেখলাম না সব ঠিকঠাক আছে, তাই গাড়ীর দরজা লাগিয়ে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম ঠিক তখনই স্যার গাড়ীর জানালা দিয়ে উঁকি মেরে বলে উঠলেন।

…….তুমি যাবে কখন?

…….হয়ত ১ টার সময়।

……হুম আমি এসে যাবো।

এই বলে স্যার গাড়ী ড্রাইভ করতে শুরু করল। আর আমি একটু মুখ খুলেই হেঁসে দিলাম। যাক তাও বলেছে তো।

উপরে উঠে সেই পেশেন্ট কে দেখলাম, না আগের তুলনায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। তাই তাকে দেখে চেম্বারে চলে এলাম। সেখানে সিরিয়াল শেষ করে। ঘড়িতে দেখলাম ১২:৪০ মিনিট তাই নিজেকে একটু ঠিক করে গুছিয়ে নিলাম। আর একটু সময় বসে ১০ মিনিট আগেই বেরিয়ে পড়লাম।

দাঁড়িয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ পুরো ১টা যখন বাজে তখন দেখলাম, দূর থেকে তার গাড়ী আসছে, আমি আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম। সে আমাকে দেখে গাড়ী থামিয়ে দিল। গাড়ীতে উঠে বসতেই দেখলাম সামনেই কয়েকটা রজনী গন্ধার স্টিক তার সাথে লাল রঙের গোলাপ রাখা আছে। বুঝলাম সে অতটা আন রোমান্টিক ও নয়।

স্যার গাড়ী চালিয়ে এগিয়ে গেল। কিছুদূর আসতেই দেখলাম স্যার আমাদের বাসার রাস্তা পার হয়ে এগিয়ে গেল।

……স্যার রাস্তা তো পেছনে রয়ে গেল?

……হুম (মুচকি হেঁসে)

……আমরা কী কোথাও যাচ্ছি?

……দেখি?

স্যারের হাঁসি দেখে বুঝলাম সে দেখেছে রাস্তা পেছনে ফেলে আসছে। কিন্তু এত শট করে উত্তর দেওয়ার কী আছে? বলবি তো ভালো করেই বলে দে? না তা কেনো বলবে?

গাড়ী এসে থামল কাকলির মোর অবস্থিত গার্ডেন ইন রেস্তোরাঁর সামনে।

……নামো।

আমি নেমে দাঁড়িয়ে যেতেই স্যার ও নেমে গেল। এরপর স্যার ধীরে ধীরে পা বাড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে চলে গেল রেস্টুরেন্টের ভেতর। একটা চেয়ার টেনে আমাকে বসতে বলল। আমি বসে যেতেই সেও বসল।

…….এখানে কেনো?

…….ভাবলাম আজ এখানে বসেই রুগী দেখব।

……আপনি সিরিয়াসলি বলছেন?

……আচ্ছা একটা কথা বলো তো? মানুষ এখানে কেনো আসে?

…….খাবার খেতে।

…….তবে আমরাও নিশ্চয়ই খাবার খেতেই এসেছি।

…….জ্বি?

…….এখানে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে?

আমি আর কথা বাড়ালাম না। বুঝতে পারছি স্যারের কথার মানে। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছিলাম, স্যার বলে উঠলেন।

…….ভাই ডাক্তার যখন হয়েই গেছি তবে এমন ভাবেই ঘুরতে হবে। নয়ত ঘোরা ক্যান্সেল।

এবার খুব হাঁসি পাচ্ছিল, বাট নিচের দিকে তাকিয়েই বসে রইলাম। বুঝতে পারছি স্যার আমার শাড়ি পড়ার কারণ বুঝে নিয়েছেন, তাই একটু লজ্জা লাগছে।

স্যার খাবার অর্ডার করল। কিছুক্ষণের মধ্যে খাবার চলে এলো।

দুজনে খাবার শেষ করে উঠে আসলাম। বিল মিটিয়ে বের হয়ে এলাম রেস্টুরেন্টে থেকে। গাড়ীর কাছে এসে আমি দাঁড়িয়েই রইলাম পেছন থেকে ঘুরে দেখলাম স্যার গায়েব, এতক্ষণ তো আমার পাশেই ছিল হঠাৎ কোথায় গেল? এর মধ্যে রাস্তার উপার থেকে ছুটে আসলো। গাড়ীর দরজা খুলে উঠে বসে পড়ল। আমিও বসলাম, বসতেই সে একটা আইসক্রিম আমার সামনে ধরল। আমি হাঁসি মুখে তার হাত থেকে আইসক্রিমটা নিলাম।

…….আপনি?

…….গাড়ী চালাব নাকি আইসক্রিম খাবো?

…….ওহ তবে খেয়েই না হয় চালাবেন।

…….থাক আমি আইসক্রিম অতটা খাইনা।

…….ওকে এখান থেকেই না হয় একটু খান।

…….(সে মৃদু হেসে) খেতেই হবে?

……হুম আমি কী একা খাবো নাকি?

…….(সে একটু খেলো।) ওকে এইটুকুই।

……..আর একবার।

……জ্বি না ম্যাম এখন আপনিই খান।

এরপর সে গাড়ী ড্রাইভ করতে লাগল।

……..এখন কোথায় যাবে?

…….হুম?

…….বলছি কোথায় যাবে?

…….আপনি যেখানে যাবেন সেখানেই।

স্যার মুচকি হেঁসে গাড়ী ড্রাইভ করতে শুরু করলেন।

গাড়ী এসে থামল বাসার গেইটের সামনে।

…….আজ এতটুকুই থাক বাসার সবাই টেনশন করছে।

আমি গাড়ী থেকে নেমে চলে আসতে নিলাম, প্রায় গেইটের সামনে আসতেই শুনতে পেলাম।

…….পুস্পিতা?

…….জ্বি স্যার?

……এদিকে এসো।

আমি এগিয়ে যেতেই স্যার ফুল গুলো আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠল।

……..এটা নিতে ভুলে গেছ।

…….এটা আমার জন্য ছিলো?

…….না হয়ত কোনো পেশেন্টের ভুল করে রেখে গেছে।

এই বলে স্যার মুচকি হাঁসল। আমি চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম স্যারের দিকে, আজকাল একটু বেশিই ফাজলামো করছে স্যার। আমি তার হাত থেকে ফুল গুলো নিয়ে ঘুরে গিয়ে হাঁসতে হাঁসতে চলে এলাম সেখান থেকে। স্যার ও চলে গেলেন তার বাড়ির ভেতরে।

বেশ ভালোই কাটছিল দিন গুলো। সন্ধ্যায় রিপোর্ট দেখাতে নিয়ে এলো চৈতী, ক্যাবিনের দরজা খুলে ভেতরে এসে বসে পড়ল।

…….এই রিপোর্ট।

আমি বসে বসে ফোনে কিছু কাজ করছিলাম। চৈতীর কথা শুনে সামনে তাকিয়ে দেখলাম সে বসে আছে। আমি ফোন রেখে রিপোর্ট গুলো খুলে দেখলাম। রিপোর্ট দেখে বুঝতে পারলাম, ওর প্রেগন্যান্সির মাত্র দের মাস হয়েছে। আমি রিপোর্ট গুলো দেখে কিছু না বলে, কিছু ওষুধের নাম লিখে দিলাম। ওর সামনে রিপোর্টের ফাইলটা দিতেই বলে উঠল।

…….আমাকে এমন কিছু ওষুধ দে যাতে বাচ্চাটা পড়ে যায়।

আমি ওর কথা শুনে অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম। যা দেখে ও বলে উঠল।

……আসলে আমার দের বছরের একটা বেবি আছে, এজন্য এখন এই বাচ্চাটা আমি চাইছি না, তাই যেভাবে হোক প্লিজ।

…….যেহেতু আপনার বাচ্চার দের বছর হয়ে গেছে, সেখানে আপনার সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এরপরও এটা আপনাদের ব্যক্তি গত ব্যাপার। বাট বাচ্চার হার্টবিট হয়ে গেছে, এখন আমার দ্বারা এই পাপ কাজ করা সম্ভব নয়। আপনি অন্য ডাক্তার দেখাতে পারেন। আর এখন ওষুধ খেলে আপনার অনেক সমস্যা হতে পারে। তাই আমি কোনো রিক্স নেবো না। স্যরি আপনি চাইলে অন্য ডাক্তার দেখাতে পারেন।

…….প্লিজ কিছু একটা উপায় বল।

……স্যরি আমার জানা নেই কোনো উপায়। আপনি ১ মাসের আগে আসলেও কথা ছিলো, বাট এখন আর আমি কিছু করতে পারছি না। আপনি জানেন একটা বাচ্চার জন্য মানুষ কত কিছু করে? বাহিরে গিয়ে দেখেন অনেক রুগী বসে আছে, তার মধ্যে দুই একজন খুঁজে পেয়েই যাবেন যাদের বাচ্চা হচ্ছে না। যারা মা ডাক শোনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন, কিন্তু আল্লাহ তাদের একটা সন্তান দিচ্ছেন না। আর আপনাকে দিয়েছে কিন্তু আপনি নিতে চাইছেন না। আপনার মতো হয়ত অনেকে আছে। বাট আমি বলব ওর তো কোনো দোষ নেই তবে ওকে ওর অধিকার থেকে বঞ্চিত কেনো করবেন? ওকে কেনো আপনাদের ভুলের শাস্তি দিবেন?

আমি আর কিছু না বলে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। চৈতী উঠে আস্তে আস্তে বের হয়ে গেল রুম থেকে।

রুগী শেষ করে আমি হসপিটালের গেইটে যেতেই দেখলাম ফারিজ দাঁড়িয়ে দারোয়ানের সাথে কথা বলছে। আমি এগিয়ে গেলাম ওর দিকে।

……ফারিজ আপ স্যরি তুমি এখানে?

…….হ্যা ভাই ফোন দিয়ে ডেকে ছিলো। আসলে ভাই আসার সময় তার ফোন রেখে এসেছিল, আর তা দিয়ে যাওয়ার জন্যই ডেকেছেন।

…….দিয়েছ?

……হ্যা দিয়েছি।

…….তবে এখানে দাঁড়িয়ে কী করছ?

…….তোমার অপেক্ষা।

…….আমার অপেক্ষা কিন্তু কেনো?

…….দেখলাম তোমার ক্যাবিনের সামনে রুগী ছিলনা, তাই তোমার এসিস্ট্যান্ট কে জিজ্ঞেস করলাম সে বলল তুমি নাকি এখনি বের হবে, তাই দাঁড়িয়ে আছি তোমার অপেক্ষায়।

……(হাঁসলাম ওর কথা শুনে) আচ্ছা তবে এখন চলো?

……হুম চলো। আচ্ছা দারোয়ান ভাই আসছি কেমন?

…….হুম।

দারোয়ান ওর কথা শুনে হাঁসল। আমরা দু’জন এগিয়ে গেলাম ফারিজ বাইকে উঠে স্টার্ট দিল, আমি উঠে বসে পড়লাম। বাইক চলতে শুরু করল।

এভাবেই সময় যেতে লাগল। হাসি আনন্দ কিছুটা দুষ্টুমির মাঝ দিয়ে।

কয়েক দিন পড়ে আজ বাসায় ফিরে দেখলাম, মা বিয়ের কার্ড নিয়ে বসে আছেন, সম্ভবত সবার নাম লিখছে কার কাছে কোনটা পাঠাবে। আমি সোজা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলাম।

…….মা সব কাজ শেষ?

…….কোথায় শেষ সবে তো শুরু।

……ওহ আচ্ছা। আমি সাহায্য করব কী?

…….করবি? আচ্ছা কর। এই নে এই কার্ড গুলো এই লিস্টের সাথে মিলিয়ে দ্যাখ কারো নাম বাদ পড়েনি তো?

…….মা এত কিছুর কী বেশি প্রয়োজন ছিল? তার থেকে কাজি অফিসে গিয়ে বিয়েটা সেরে আসলেই তো হতো। কোনো ঝামেলা ছাড়া।

…..আরে তুই আমাদের এক মাত্র মেয়ে, তোর বিয়েতে অনুষ্ঠান করব না তো কার বিয়েতে করব? ওই নিচ তালার ভাড়াটিয়া ভাবীর মেয়ের বিয়েতে?

…….মা খুব ভালো আইডিয়া দিয়েছ তুমি। হ্যা এটা কিন্তু করাই যায়। কারণ আমার বিয়েতে আমি কী আনন্দ করতে পারব বলো? তার থেকে আন্টির মেয়ের বিয়েতে আনন্দ করতে পারব, হ্যা তুমি বরং এটাই করো।

…….থাপ্পড় খাবি বলে দিচ্ছি এসব ফালতু কথা বলবি না একদম। যে কাজ দিয়েছি তা চুপ করে কর।

হুম মায়ের কথায় আমি মুখ গোমড়া করে বসে বসে কাজ করতে শুরু করলাম।

রাতে রুমে বসে বসে একটা বই নিয়ে পড়ছিলাম। কিছু জানার ছিলো, তা জানতে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। তখনই মুঠো ফোনটা বেজে উঠল। আমি বইয়ের পাতায় মুখ গুজে ফোনটা রিসিভ করলাম।

……..আসসালামু আলাইকুম। জ্বি কে বলছেন?

……..আমি বলছি, নাম্বার দেখে ফোনটা রিসিভ করা যায় না?

……ওহ স্যরি স্যার। আসলে খেয়াল করিনি।

…….হ্যা শোনো তোমার ম্যাসেঞ্জারে কিছু ছবি দিয়েছি, একটু চেক করে এখনি আমাকে জানাও।

…….জ্বি স্যার।

স্যারের ফোন রেখে আমি ম্যাসেঞ্জারে গিয়ে দেখলাম কয়েকটা রিপোর্ট এর ছবি দেওয়া ছিলো। চেক করে স্যার যা জানাতে বলেছেন তা জানালাম। এরপর ফোন রেখে বইয়ের পাতায় আবার মুখ গুঁজে দিলাম।



চলবে………….।

নীলফড়িং পর্ব-১০

0

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#পর্ব ১০
.
.
সন্ধ্যায় আমি বসে রুগী দেখছিলাম, এমন সময় একজন রুগী এলো দরজা ঠেলে, আমি নিচের দিকে তাকিয়ে কাজ করছিলাম। তাই তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম।

……জ্বি বসেন। বলেন আপনার কী কী সমস্যা হচ্ছে?

এই বলে আমি মুচকি হেঁসে রুগীর দিকে তাকালাম। তাকিয়ে আমি প্রচুর অবাক হয়ে গেলাম এমন কাউকে দেখব আশা করি নি। তাই কিছু বলতে না চেয়েও বলে উঠলাম।

……তুই এখানে?

…….সরি আসলে আমি জানতাম না তুই ডাক্তার পুস্পিতা রহমান। আমি আসলে শুনিছি কারো থেকে বাহির থেকে পড়াশোনা করে একজন ভালো ডাক্তার এসেছে। তাই চলে এসেছি।

…….ইটস ওকে, এখানে পূর্ব পরচিত বলতে কিছু নেই, আপনি রুগী আমি ডক্টর এখানে শুধু এই সম্পর্ক অব্দি সীমাবদ্ধ। তাই আপনার ইচ্ছে হলে সমস্যা বলতে পারেন। না ইচ্ছে হলে চলে যেতে পারেন, আমি আমার এসিস্ট্যান্ট কে বলে দিচ্ছি সে আপনার টাকা ফেরত দিয়ে দেবে।

…….না আমি সমস্যার কথা বলছি।

…….(ওহ সমস্যা গুলো বলল)

…….আপনি তো নিজেও একজন ডাক্তার তবে আমার কাছে আসতে হলো কেনো?

…….আমি আসলে সেদিনের পড়ে আর হসপিটালে যেতে পারিনি। পরিক্ষা গুলোও দেওয়া হয়নি। ওখানেই আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল, আর এগোতে পারি নি। অনেক সমস্যায় আঁটকে পড়েছিলাম যার জন্য পরিক্ষাটা আর দেওয়া হয়নি।

…….তাতেও তো অনেকটা বুঝতে পারেন, তাই না?

…….হ্যা বাট অনেক দিন হয়েছে পড়া ছেড়েছি, সংসার করতে গিয়ে সব ভুলে বসে আছি। তাই আর বুঝতে পারিনি।

……একটা টেস্ট দিচ্ছি করে নিয়ে আসবেন।

……..আচ্ছা তুই কী মনে করছিস কোনো জটিল সমস্যা?

…….রিপোর্ট করেন নিজেও বুঝতে পারবেন। আমি যতটুকু ধারণা করতে পারছি, আপনি প্রেগন্যান্ট।

আমার কথা শুনে ও মন খারাপ করে উঠে চলে গেল। আমি নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।

রাত তখন ৮ টা বাজে আমি চেম্বার থেকে বের হবো এমন সময় ইসলামীয়া হসপিটাল থেকে ফোন এলো এখনি যেতে হবে, মুমূর্ষু একজন পেশেন্ট এসেছে তাই। আমি রিকশা নিয়ে সেখানে গেলাম।

আমার ওটি করতে হয়েছিল যার জন্য বের হতে হতে প্রায় ১০: ৩০ মিনিট বেজে গেল। তাই হসপিটালে বসেই আব্বুকে ফোন দিলাম। আব্বু বলল আসছেন।

প্রায় ১১টা বেজে গেছে আব্বু এখনো আসছেন না। তাই আবার ফোন দিলাম। আব্বু ফোন রিসিভ করে বলে উঠল।

…….পুস্পিতা মা আর একটু সময় বস, আমি তো যেতে পারিনি, তবে ফারিজ গেছে, তুই ওর সাথে চলে আসিস।

……কিন্তু আব্বু?

আব্বু ফোন রেখে দিলেন। ফারিজ, স্যারের ছোট ভাই। কিন্তু আব্বু না এসে ওকে কেনো পাঠালেন বুঝতে পারছি না। প্রায় ১০ মিনিট পড়ে ফারিজ এসে আমাকে ফোন দিল।

…….হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।

…….ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভাবী আমি ফারিজ বলছিলাম। আমি হসপিটালের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।

……আচ্ছা আপনি ওখানেই দাঁড়ান আমি আসছি।

আমি ক্যাবিন থেকে বের হয়ে এগিয়ে গেলাম। গেইটের সামনে গিয়ে দেখলাম ফারিজ বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি এগিয়ে গেলাম।

…….আব্বুর কী হয়েছে?

…….ভাবী তুমি গিয়েই দেখে নিও, এখন ওঠো না হয় আরও দেরি হয়ে যাবে।

……হুম।

আমি বাইকে উঠে বসলাম। ফারিজ বাইক স্টার্ট দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল।

……ভাবী তুমি আমাকে আপনি করে কেনো বলছ? আমি তোমার বড় তো হবো না ছোটই হবো, আর দ্বিতীয় সম্পর্কেও তোমার ছোট দেবর হবো আগামীতে ইন’শা’আল্লাহ। তাই তুমি আমাকে এখন থেকে তুমি করেই বলবে কেমন?

…….আমি হালকা হাঁসলাম।

বাসায় গিয়ে দুজনেই ভেতরে চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, আব্বু সোফায় বসে আছেন, স্যার আব্বুর সামনে বসে আব্বুর পা ব্যান্ডেজ করছেন। যা দেখে আমি আতঙ্কিত হয়ে এগিয়ে গেলাম।

…….আব্বু কী হয়েছে তোমার? আমাকে নিতে যাওনি দেখেই আমি বুঝে ছিলাম কিছু একটা তো হয়েছে? কীভাবে হলো আব্বু?

……..আরে তুই এত টেনশন নিশ না। আমি ঠিক আছি। ওই গেটের সাথে পা বেজে একটু ব্যথা পেয়েছিলাম, আর তা ফারিজ দেখে নিলো। এরপর সে ফাইয়াজ কে ফোন দিয়েছে বাসায় আসার জন্য, এমন কী আমাকে ধরে এখানে বসিয়ে দিয়ে তোকে নিতে গেছে।

…….আঙ্কেল এটা মোটেই একটু ব্যথা নয়। আপনার আঙুলে অনেকটা লেগেছে, আপনি কাল বরং একটা টেস্ট করিয়ে নিবেন। এখন অনেক রাত হয়ে গেছে না হয় আমি নিজেই যেতাম আপনাকে নিয়ে।

…… আরে ফাইয়াজ তুমি তো বাবা আমার মেয়েকে আরও ভয় পাইয়ে দিচ্ছ।

…….কেনো আব্বু আমি কী কচি খুকি কিছু বুঝি না? তুমি একটু সাবধানে চলা ফেরা করবে, তা না দেখো তো কী থেকে কী হয়ে গেল।

…….ফাইয়াজ, ফারিজ নাও চা নাও।

……আন্টি এগুলো কেনো? রাত ১১:৩০ মিনিট বাজে আপনি শুধু শুধু এগুলো কেনো করতে গেলেন?

…….আরে বাবা বেশি কিছু নয় একটু চা ই তো করেছি। ধরো ধরো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। নে পুস্পিতা তুই ও নে।

সবাই চা নিয়ে বসে পড়ল। আব্বু চা খেতে খেতে বলে উঠলেন।

…….পুস্পিতা আজ তবে তোর এত দেরি হলো কীভাবে?

…….আব্বু ওই আসলে একটা ইমারজেন্সি পেশেন্ট ছিল, সার্জারী করতে হয়েছিল। তাই দেরি হয়ে গেছে।

এরপর স্যার আর ফারিজ চলে গেল। আমি ফ্রেশ হয়ে এলাম সবাই মিলে খাবার খেয়ে নিলাম।

খুব সকাল সকাল উঠে আজও ছাদে গেলাম। দেখলাম স্যার এক্স্যাসাইজ করছেন। আমি গিয়ে গাছে পানি দিয়ে চলে আসতে নিলাম। ঠিক তখনই স্যার বলে উঠল।

……..শোনো?

…….(ঘুরে গিয়ে চারিদিকে উঁকি ঝুঁকি মেরে) আমাকে বলছেন?

…….. না রোজ ওই ছাদে যে ভূতটা গাছে পানি দিতে আসে তাকে বলছি।

…….. কীহ আমাদের ছাদে ভূত আসে রোজ? ওহ গড কাল থেকে সেই তবে পানি দিবে, এই ঠান্ডায় এমনিতেও আমার আসতে ইচ্ছে করে না। তবে আমি গেলাম।

এই বলে যেতে নিলাম স্যার রাগী লুক নিয়ে বলে উঠলেন।

…….এই মেয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে একটু কথা শুনতে পারো না? একদম চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে।

আমি স্যারের কথায় চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। স্যার কিছুক্ষণ এদিক সেদিক তাকিয়ে তার রাগ কিছুটা কমিয়ে আমাকে বলে উঠলেন।

…….তুমি কী জানো কাল রাহাত আনোয়ার হসপিটালে চৈতী এসেছিল?

…….হুম জানি। কারণ সে আমার কাছেই এসেছিল।

…….মানে? কিন্তু কেনো?

…….ডাক্তার দেখাতে, সে নাকি জানত না যে আমিই ডক্টর পুস্পিতা রাহমান। সে শুনেছে ভালো একজন ডক্টর এসেছে বাহির থেকে পড়াশোনা কমপ্লিট করে তাই এসেছে।

…….তুমি তাকে রুম থেকে বের করে দাওনি?

…….নাহ কারণ সে আমার পেশেন্ট আর আমি একজন ডক্টর, সে হসপিটালে না এসে যদি আমার বাড়িতেও আসত তবেও আমি তাকে বের করে দিতাম না। কারণ আমার মা সব সময় বলে, ঘর আমাদের না আল্লাহর সে আমাদের যদি এই বাড়ি ঘরের যোগ্য না ভাবত তবে এগুলো আমাদের দিত না। তবে এই বাড়িতে কাউকে আসতে দেবো না এটা বলার আমরা কারা? কখনো কাউকে এটা বলবি না যে এখান থেকে বেরিয়ে যাও। তাই বলতে পারিনি তাকে বেরিয়ে যেতে। আর যেহেতু আল্লাহ তায়া’লাই আজ আমাকে এতদূর আসতে সাহায্য করেছেন। আমার কী যোগ্যতা যে আমি নিজ ইচ্ছেতে এতদূর আসব? তবে কীভাবে কাউকে অপমান করি? আর সে যা করেছে তার শাস্তি তাকে মহান আল্লাহ তায়া’লা দিবেন, আমি যদি বিচার করতে যাই তবে আল্লাহ তায়া’লা কী করবেন?

…….কী জন্য আসছিল?

……He is pregnant.

……তুমি শিওর?

…….হুম বাট রিপোর্ট করতে দিয়েছি, বাকিটা রিপোর্ট আসলে জানা যাবে। কিন্তু ভাবনার বিষয় কী জানেন? ও খবরটা শুনে খুশি হতে পারেনি।

…….তাই?

……হুম। যাক বাদ দিন, অন্য কারো কথা ভেবে নিজেদের মূল্যবান সময় কেনো নষ্ট করব? আপনি তো মেডিকেলে যাবেন তাই না?

…….হ্যা কেনো?

…….না এমনই যান তবে, আমারও বের হতে হবে। কাল যে সার্জারী-টা করলাম ওই পেশেন্ট কে একটু দেখতে যেতে হবে।

…….ওকে। (আমি যেতে নিলাম স্যার বলে উঠল)

…….শোনো, রেডি হয়ে নিচে থেকো।

এই বলে স্যার নিচে চলে গেলেন। আমি একটু দাঁড়িয়ে মুচকি হেঁসে পা বাড়িয়ে নিচে চলে এলাম। ভাবছি, স্যারের আবার কী হলো? রাগ ভাঙছে মনে হচ্ছে একটু একটু করে। তাই হাঁসলাম।

ব্রেকফাস্ট করে রুমে গিয়ে দেখলাম ৮:৩০ মিনিট, ভাবলাম আজ একটু অন্য রকম সাজব। তাই ড্রয়ার থেকে একটা ড্রেস বের করে রেডি হয়ে মা কে আওয়াজ দিলাম। মা এসে আমাকে দেখে বলে উঠল।

…….কী করছিস তুই?

…….মা প্রশ্ন করো না এটা পড়িয়ে দাও।

…….হঠাৎ শাড়ি কেনো?

…….এমনিতেই, ইচ্ছে করছে তাই।

……তাই নাকি অন্য কিছু?

…….মা অন্য কী হবে হ্যা? নিজেই তো মাঝে মধ্যে বলো শাড়ি পড় তোকে ভালো লাগবে। আজ বারণ করছ পড়তে?

…….আরে না বারণ কেনো করব? আমি তো বলছি হঠাৎ করে আমার মেয়ের শাড়ি পড়ার মন জাগলো কেনো?

……..মা তেমন কিছু না এমনই পড়ছি।

…….ঠিক আছে বুঝে নিলাম না হয় তাও।

আমি হালকা হাঁসলাম। মা আমাকে খুব সুন্দর করে শাড়িটা পড়িয়ে দিল, কালো রঙের শাড়ির সঙ্গে সব ম্যাচিং করে পড়ে নিলাম।

…….মা কেমন লাগছে তোমার মেয়ে কে? (আয়নায় নিজেকে দেখতে দেখতে)

…….এক কথায় বললে অসাধারণ লাগছে।

…….তাই মা?

…….হ্যা তাই।

…….আচ্ছা তবে এখন আমি আসছি।

……সাবধানে যাস। না হয় একটু দাঁড়া তোর আব্বু দিয়ে আসবে।

……না মা আমি চলে যাবো।

আমি এই বলে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম, হাসতে হাসতে। গেইট খুলে বের হতেই দেখলাম স্যার গাড়ীর সাথে হ্যালান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে দেখে সানগ্লাসটা খুলে হাতে নিলো, এরপর চোখ সরিয়ে নিয়ে গাড়ীতে উঠে বসে পড়ল। আমিও গিয়ে অপর পাশে উঠে বসে পড়লাম। সিট ব্যালট বেঁধে নিলাম।

……আজ কোনো স্পেশাল দিন নাকি?

……না তো স্যার কিন্তু কেনো?

…..না এমনিতেই।

স্যারের প্রশ্নর মানে আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি। বাট এড়িয়ে গেলাম।



চলবে………..।

নীলফড়িং পর্ব-০৯

0

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#পর্ব ৯
.
.
আমি স্যারের সাথে আর কোনো কথা না বলে রুমের ভেতর চলে এলাম সুটকেস খুলে ভালো করে সব খুঁজতে শুরু করলাম, অনেক খোঁজ করার পড়ে স্যারের গিফট-টা খুঁজে পেলাম। তারাহুরো করে গিফট-টা খুললাম। গিফট খোলার সাথে সাথে তার মাঝ থেকে বেরিয়ে এলো, একটা খুব সুন্দর হাত ঘড়ি যার মধ্যের ঘুরন্ত কাঁটাই ছিল #নীলফড়িং। সাথে একটা চিরকুট তার মধ্যে লেখা ছিল “ভালোবাসার #নীলফড়িং”।

আমার ঠোঁটের কোণে নিজের অজান্তেই হাঁসি চলে এলো। আমি ভাবতেই পারিনি এত বড় প্রমাণ আমার কাছেই রয়েছে অথচ আমি প্রমাণ খুঁজে ফিরছি। আমি ছুটে বারান্দায় গেলাম বাট স্যার সেখানে ছিলনা আমি আর অপেক্ষা করতে পারছিলাম না, তাই বক্স চিরকুট ঘড়ি সব তেমন ভাবেই হাতে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম। স্যারদের দরজার কলিং বেল বার বার টিপে যাচ্ছি, দাঁড়িয়ে থাকার ধৈর্যই জেনো হচ্ছিল না। দরজা খুলতেই দেখলাম স্যারের ছোট ভাই দাঁড়িয়ে আছে।

……আরে ভাবী তুমি?

……স্যার কোথায়?

……ভাই? ভাই তো একটু বেরিয়েছে।

……কোথায় গেছে?

…… ভাই তো হসপিটালে গেছে, জরুরি ফোন এসেছিল তাই।

……ওহ আচ্ছা।

আমি মুড অফ করে চলে এলাম। আমাদের বাসার ড্রইং রুমে এসে সোপায় মুখ ভাড় করে বসে রইলাম।

সকাল ১০টার দিয়ে একটা ফোন আসলো, ইসলামীয়া হসপিটাল থেকে, আমাকে ডাকা হয়েছে সেখানে। তাই মা কে জানিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। প্ল্যানেট পার্কের সোজা সুজি যেতেই দেখলাম পার্কের সামনে স্যারের গাড়ী থামানো ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম স্যার ও দাঁড়িয়ে আছে সামনে রাইয়ান দাঁড়িয়ে আছে, খুব রাগী চেহারা নিয়ে স্যার কে কিছু বলে যাচ্ছে আমি রিকশা থামিয়ে এক পাশে, ভাড়া মিটিয়ে এগিয়ে গেলাম। দুজনের কেউই আমাকে খেয়াল করল না। আমি কাছে যেতেই শুনতে পেলাম।

…….দেখেন স্যার আমি পুস্পিতা কে অনেক ভালোবাসি, তাই আপনি আমাদের মাঝ থেকে সরে যান না হয় ভালো হবে না বলছি।

……তাই কী করবে তুমি?

…….তা পড়ে বুঝে যাবেন।

…….ওহ হুমকি দিচ্ছ আমাকে?

……হ্যা তাই ভেবে নিন।

……আচ্ছা একটা কথা বলো তো? তুমি আমাদের মাঝে আসছ নাকি আমি তোমাদের মাঝে আসছি?

……আপনি আমাদের মাঝে আসছেন।

……তাই? তুমি কত বছর ধরে পুস্পিতার পেছন ঘুরছ?

…….যেদিন পুস্পিতা আমার সাথে বাহিরে গিয়েছিল দুজন একই প্লেনে পাশাপাশি ছিটে বসে ছিলাম। সেই থেকেই আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছি।

……তাই তবে তুমি পুস্পিতার শুভাকাঙ্ক্ষী হলে কীভাবে?

……হ্যা আমিই পুস্পিতার শুভাকাঙ্ক্ষী।

……হাহাহাহা (জোরে হেসে) হাসালে পুস্পিতা ও তার শুভাকাঙ্ক্ষী, কম হলেও সাড়ে তিন বছর ধরে একে অপরের সাথে কথা বলছে, আর তুমি মাত্র ২ বছর ধরে পুস্পিতার পেছন ঘুরছ? জাস্ট অসাধারণ কথা, আর পুস্পিতা কেও বলি বিশ্বাস করার জন্য এমন একটা মানুষ পেয়েছিল ও?

……স্যার আমি পুস্পিতা কে ভালোবাসি।

ঠাশ করে একটা থাপ্পড় পড়ল রাইয়ানের গালে তাকিয়ে দেখল পুস্পিতা দাঁড়িয়ে আছে।

……পুস্প তুমি?

ঠাশ করে আর একটা থাপ্পড় পড়তেই। পুস্পিতা বলে উঠল।

……আমি সেদিনও বলেছিলাম তোমাকে, আমাকে এই নামে ডাকবে না, একটা থাপ্পড় এই জন্য। আর একটা যেদিন তুমি আমাকে প্রপোজ করেছিলে সেদিনই আমি তোমাকে বলে দিয়ে ছিলাম আমি শুভাকাঙ্ক্ষী কে অনেক ভালোবাসি। বাট তোমার এই মিথ্যে অভিনয়ের জন্য আমি কতটা কষ্ট করেছি তা তুমি ভবতেও পারবে না। সেই কষ্টর কাছে একটা থাপ্পড় কিছুই না। তোমাকে যদি মারতে মারতে রাস্তার বালুর সাথে মিশিয়েও ফেলি তাও সে কষ্ট আমার দূর হবে না। ছিঃ এটা কে তুমি ভালোবাসা বলছ? এটাকে ভালোবাসা নয় স্বার্থপরতা বলে। যা শুধু নিজের জন্য করা হয়, অন্যের কষ্ট অন্যের দুঃখ এগুলো তোমার মতো স্বার্থপর মানুষ কখনো বুঝবে না।

……তুমি আমাকে ভুল ভাবছ?

……তোমার মতো মানুষ কে ভুলই ভেবে যায় আমাদের মতো মেয়েরা, যদি আজকের এই সঠিক ভাবনাটা আগেই ভাবতে পারতাম তবে হয়ত এতটা কষ্ট পেতাম না। আজকের পড়ে আমি আর তোমার চেহারা পর্যন্ত দেখতে চাইনা। যাও এখান থেকে।

……পুস্পিতা আজ তুমি আমাকে দূর দূর করে তারিয়ে দিয়ে যে ভুল করছ, একদিন এই ভুল শুধরে তুমি নিজেই আবার আমাকে ডেকে নিবে।

…….ঠিক আছে আজ চলে যাও সেদিন না হয় আবার এসো এখন যাও এখান থেকে।

প্রচুর রাগ দেখিয়ে চলে গেল রাইয়ান। স্যার গাড়ীতে উঠে বসে পড়ল। আজ আর আমাকে বসতে বলল না। খা’টাশ একটা, আমি গিয়ে অপর পাশ থেকে গাড়ীতে উঠে বসে পড়লাম। সে গাড়ী চালাতে শুরু করে দিল।

…….আমি ইসলালীয়া হসপিটালে যাবো।

সে আমার সাথে কোনো কথা না বলে গাড়ী ঘুরিয়ে নিলো, ইসলামীয়া হসপিটালে আমাকে নামিয়ে দিয়ে সে গাড়ী নিয়ে চলে গেল। আমি বুঝতে পারছি সে প্রচুর রেগে আছে হয়ত আমার সাথে। থাক রেগে তাতে আমার কী? আমি আস্তে আস্তে হসপিটালের ভেতর এগিয়ে গেলাম।

পরদিন মা ডেকে বলে উঠল।

…….পুস্পিতা শপিং করতে যেতে চাইছিলাম। তোর সময় হবে কখন?

……মা আমি তো পারব না শুক্রবার ছাড়া, আর সেদিন সব কিছু বন্ধ, তাই বরং তোমরাই যাও।

…….সকালে চল তবে?

…….তাও পারব না, আজ থেকে সকাল টাইম ইসলামীয়া হসপিটালে বসতে হবে।

……এর জন্য বলে ছিলাম বিয়েটা জলদি করতে, এখন ভাবছি বিয়ের দিনও কিনা বলিস মা আমি সময় পাবো না বিয়েটা তোমরা সবাই মিলে পরিয়ে নাও।

…….( পেছন থেকে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে) মা বিয়েতে কনের প্রয়োজন পড়ে না, বর থাকলেই হয়। কনে তো পড়ে কাজি অফিসে গিয়েও সিগনেচার দিয়ে আসলেই হয়ে যায়। তাই আমার চিন্তা না করে তুমি যে বর খুঁজেছ তোমার মেয়ের জন্য তার চিন্তা করো। সে সময় পাবে তো?

……..সে ঠিকই পাবে, পাবি না তুই।

……..মা আমার থেকেও সে কিন্তু বেশি ব্যস্ত মানুষ। আচ্ছা মা আমি এখন রেডি হতে গেলাম।

…….এই শোন বলছি পুস্পিতা?

কে শোনে কার কথা আমি তো রেডি হতে চলে এলাম। আজ একটা সাদা গোল জামার সাথে কালো চুরিদার কালো ওড়না পড়ে রেডি হয়ে নিলাম। খুবই হালকা সাজে।

মা কে বলে বের হয়ে পড়লাম। রিকশা নিয়ে চলে এলাম ইসলামীয়া হসপিটালে। নিচ তালায় সোজা এগিয়ে গেলাম নিজের নামের নেইম প্লেট দেখে সেই রুমের সামনে এগিয়ে গেলাম, রুমে প্রবেশ করে চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লাম।

দুপুর বেলা হসপিটাল থেকে বের হয়ে বাসায় চলে এলাম। বাসায় ঢুকতেই দেখলাম মা জননী রাগী মুডে বসে আছেন।

…….কী শপিং করা শেষ?

…….যা একটু জলদি জলদি রেডি হয়ে আয় গিয়ে।

…….কেনো মা?

…….শপিংয়ে যাবো তাই।

…….মা খুব টায়ার্ড ফিল করছি, তোমরা যাও না প্লিজ।

…….যা বলছি করতে কর গিয়ে।

উফ ভালো লাগছে না, স্যার থাকলে একটা কথা ছিল, সে তো আমার সামনেই পড়ে না, আজ তো কোনো ভাবেই সে শপিংয়ে যাবে না। একা একা বোর ফিল করব। ধ্যাৎ এটা বুঝতে পারলে আরও দেরি করে আসতাম।

আমি ফ্রেশ হয়ে ড্রেস আর পাল্টালাম না, নিচে চলে এলাম। মা খাবার নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে ছিলেন, আমাকে দেখে খাবার খেতে শুরু করে দিলেন, তাই আমিও গিয়ে খাবার শেষ করলাম। এরপর দু’জনে বেরিয়ে পড়লাম। গেইটের বাহিরে আসতেই দেখলাম স্যারের গাড়ী, মা গিয়ে আন্টির সাথে কথা বলতে শুরু করে দিল। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম এর মধ্যে দেখলাম স্যার বের হয়ে এলো। ইশ কী মুড ভাব নিয়ে এসেছে, আমারও মুড ভাব আছে তাই আমিও নিচের দিকে তাকিয়ে ফোন দেখছিলাম। মায়ের ধাক্কা খেয়ে তাকালাম।

……কী রে এখন কী তোকে গাড়ীতে উঠতেও দাওয়াত দিতে হবে?

…….মা এই কথাটা ভালো ভাবেও তো বলা যেত।

……তোর সাথে ভালো ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছি, যা ওঠ।

আমি গাড়ীর পেছনের ছিটে বসতে যাবো দেখলাম আন্টি আর মা উঠে বসে পড়ল।

……আরে আমি কোথায় বসব?

…….তুই সামনে গিয়ে বস।

…….উফ মা।

আমিও সামনে গিয়ে বসে পড়লাম। গাড়ী চলতে শুরু করল। আমি জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ছিলাম। যাক তাও আছে তো খা’টাশ-টা সাথে, একটু হলেও বোরিং ফিল কম হবে।

গাড়ী এসে থামল, চকের ভেতর পালকী শপে, আমরা নেমে এগিয়ে গেলাম। তিন তালায় উঠে গেলাম সোজা। তারা শাড়ি লেহেঙ্গা সবই দেখাচ্ছে, বাট আমি চুপ করে বসে ছিলাম। যা দেখে মা বলে উঠল।

…….কী রে তোদের দুজনকে এখানে কেনো নিয়ে আসছি? শুধু বসে থাকার জন্য?

…….আন্টি আমি এসব বিষয়ে কিছুই বুঝি না তাই আপনারা চয়েজ করেন। (ফাইয়াজ)

……আরে বুঝিনা বললেই হবে? আজ আমরা এসেছি দু-দিন পর থেকে তো তোদের একাই আসতে হবে, আজ আমরা দেখব তোরা যেটা নিচ্ছিস সেটা ভালো না খারাপ, কাল কে দেখবে? তাই চুপ করে চয়েজ কর। না হয় তোরা থাক আমরা যাচ্ছি। ভাবী চলেন।

……এই আম্মু কী করছ এটা একটা দোকান, আর তোমরাও না? এই যে ভাইয়া ওই যে খয়েরি রঙের লেহেঙ্গা-টা দেখান তো।

লোকটা লেহেঙ্গা-টা খুলে দেখাল, বাহ বেশ ভালোই তো আমার শুভাকাঙ্ক্ষীর পছন্দ। আমিও বসে বসে দেখতে রইলাম। হঠাৎ মা মাথার উপর একটা থাপ্পড় মেরে বলে উঠল।

……তোকে কী এখানে সো পিস বানিয়ে রাখতে এনেছি, বসে না থেকে চয়েজ কর।

…….মা একজন চয়েজ করছে তো?

……..করছে তাই বলে তুই চয়েজ করবি না তা কীভাবে হয়? তুই ওর জন্য চয়েজ করবি। আর ও তোর জন্য।

আমি মুখ ভাড় করে দেখতে রইলাম, ওই লেহেঙ্গা, শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে শেরওয়ানি, পাঞ্জাবি, ছুট চয়েজ করতে লাগলাম।

সেকেন্ড ফ্লোরে গিয়ে কয়েকটা থ্রি-পিস নিলো। এরপর কহিনুর শপে গিয়ে জুতা কেনা হলো ম্যাচিং করে, জুয়েলারি সব কিছু কিনে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় ৫টা বেজে গেছে আর একটু রেস্ট নিতে পারলাম না। স্যার মা কে আর আন্টিকে নামিয়ে দিয়ে হসপিটালে রহণা দিল।

এভাবেই দিন গুলো যেতে লাগল। দু-তিন দিন পড়ে, আজ ছাদে গিয়ে দেখলাম স্যার এক্স্যাসাইজ করছেন। ইশ রে আজ এখানে কীভাবে মিস্টার ডক্টর? আমি গাছে পানি দিতে আসছি তাই ওদিকে আর না তাকিয়ে গাছে পানি দিতে নিলাম। আচ্ছা রাগ সে কেন করবে? রাগ করার মতো আমি কী এমন করেছি? হু যাক গিয়ে যা ইচ্ছে করুক তাতে আমার কী? আমিও রাগ করতে পারি, এমনিতেও স্যারের সাথে কথা বলতে এখন কেমন কেমন লাগছে তার উপর তার ঢং দেখলে কথা বলার বাকি ইচ্ছেটাও চলে যায়। যা ব্যাটা আজ কথা না বলিস না বল, আগামীতে তো বলতেই হবে।

আমি গাছে পানি দিয়ে ফুল গুলো হালকা স্পর্শ করে ছাদ থেকে চলে এলাম।

আমি রুমে এসে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম দেখলাম সে গাড়ী নিয়ে তাদের গেইট থেকে বের হচ্ছে। আমি যাবো না আজ তার মতো খা’টাশের সঙ্গে হু। আমি তারাহুরো করে একটু এগিয়ে রিকশা ডেকে উঠে গেলাম, দেখলাম সে তাকিয়ে আছে, থাক তাকিয়ে তাতে আমার কী? কিছুটা মুড ভাব আমিও দেখাতে পারি বুঝে নে ব্যাটা রাম ছাগল।

এভাবেই দিন গুলো হাসি আনন্দে পার হতে লাগল। জীবন-টা অনেক সুন্দর যদি ঠিক করে উপভোগ করতে পারো।
তার জন্য কী খারাপ হতে হবে? না।
তার জন্য কী স্মার্ট হতে হবে? না।
তার জন্য কী কাউকে কষ্ট দিতে হবে? না।
তার জন্য কী নোংরা চিন্তা ভাবনা থাকতে হবে? না।
তার জন্য কী আমাকে প্রচুর সৌন্দর্যের অধিকারী হতে হবে? না।
তার জন্য কী প্রচুর টাকা পয়শা থাকতে হবে? মোটেই না।
তার জন্য শুধু সুন্দর একটা মন থাকতে হবে।
তার জন্য একটা মনের মতো মানুষ থাকতে হবে।
তবে অল্পতেই মানুষ প্রচুর সুখী হতে পারবে, নিজের জীবন কে অনেক সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে পারবে।



চলবে………..।

নীলফড়িং পর্ব-০৮

0

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#পর্ব ৮
.
.
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে একটু হাঁটতে বের হলাম, মুক্তিযোদ্ধা পার্কের নদীর পার ধরে অনেকটা দূরে হেঁটে গেলাম, ভাবতে ভাবতে হাঁটছিলাম যার জন্য বুঝতে পারিনি কতদূর চলে এলাম। অনেক চিল্লাচিল্লির শব্দে ধ্যান ভাঙল। তাকিয়ে দেখলাম বরফ কল এলাকা ছাড়িয়ে এসেছি, তাই সেখানের পিস ঢালা পথ দিয়ে সোজা বের হয়ে প্ল্যানেট পার্কের পাশ দিয়ে হেঁটে বের হয়ে এলাম। রাজা বাহাদুর রোড হয়ে বাসায় চলে এলাম। বাসার গেইটে পা দেবো মনে হচ্ছে উপর থেকে কেউ তাকিয়ে আছে, উপরে তাকাতেই দেখলাম স্যার তার রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছেন। আমি চোখ নামিয়ে হেঁটে বাড়ির ভেতর চলে এলাম।

…….কী রে কোথায় গিয়ে ছিলি?

…….হাঁটতে গিয়েছিলাম।

মায়ের কথার উত্তর দিয়ে আমি নিজের রুমে চলে এলাম।

দুপুরের খাবার শেষ করে, রুমে গিয়ে একটু ফোনটা ঘাটাঘাটি করলাম। কিন্তু কিছুতেই মন বসছে না। আমি চুপ করে চোখ বুঝে রইলাম। ২:৪০ মিনিটের দিকে বিছানা থেকে উঠে রেডি হয়ে নিলাম। একটা ব্লু রঙের গোল জামার সাথে ব্লু চুরিদার পড়ে রেডি হয়ে নিলাম, হাতে ব্লাক ঘড়ি। ওড়না গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লাম মা কে জানিয়ে। যেহেতু ৫টায় হসপিটালে যেতে হবে তাই এই সময়টা দিলাম। আমি বাড়ি থেকে বের হলাম তখন ৩:১৫ মিনিট তাই ভাবলাম হেঁটেই যাই। বাহাদুর রোড হয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে চললাম। বেলের্স পার্কে এসে পৌঁছলাম তখন ৩:২৬ মিনিট, তাই বঙ্গবন্ধু ব্রিজের উপর গেলাম সিঁড়ি বেয়ে, এই সময়টা এখানে খুব কম মানুষই থাকে। ৪:৩০ মিনিটের পড়ে দেখা যাবে জোড়ায় জোড়ায় সবাই বসে গল্প করছে। কিন্তু এখন অতটা মানুষ নেই। আমি সিঁড়ি বেয়ে সেখানে গিয়ে দেখলাম দুজন ব্যক্তি দু-পাশে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছেন খালে গোলাপি রঙের শাপলা গুলো কী সুন্দর করে ফুটে আছে হয়ত তারা তাই দেখছে। আমি সেখানে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবির সামনে দাঁড়িয়ে গেলাম।

…….হুম দুজনেই দেখছি চলে এসেছেন?

আমার কথা শুনে দুজনেই ঘুরে তাকাল। দুজনকেই দেখে আমি অবাক।

…….তুমি এখানে?

…….হুম।

…….আর আপনি?

……হুম কিন্তু রাইয়ান তুমি এখানে কী করছ?

……স্যার আসলে পুস্পিতা আমাকে ডেকে ছিল।

……এক মিনিট পুস্পিতা তোমাকে এখানে কেনো ডাকবে?

…….তা আপনি তাকেই জিজ্ঞেস করেন।

……..পুস্পিতা?

…….আমি এখানে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী কে ডেকেছি অন্য কাউকে নয়।

…….হ্যা আমিই তো তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী।

……এক মিনিট রাইয়ান তুমি পুস্পিতার শুভাকাঙ্ক্ষী? তবে আমি কে?

……তা আমি কীভাবে জানব স্যার?

আমি রাইয়ানের কথায় ততটা অবাক না হলেও স্যারের কথায় ভীষণ অবাক। কারণ আমি কখনো আশা করিনি স্যার আর আমার শুভাকাঙ্ক্ষী? আমার মাথাটা প্রচুর ঘুরছে আমি দাঁড়াতে পারছিলাম না ঠিক করে, আমি ছবির সাথে লেগে দাঁড়ালাম। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে গলা ভিজিয়ে নিলাম।

…….তুমি কীভাবে পুস্পিতার শুভাকাঙ্ক্ষী হবে? কারণ আমি পুস্পিতার সেই শুভাকাঙ্ক্ষী। পুস্পিতা তুমি চিনছ না আমায়?

…….না পুস্প আমি তোমার সেই শুভাকাঙ্ক্ষী, প্লিজ পুস্প তুমি বিশ্বাস করো আমায়।

……..এই তুমি ওকে পুস্প বলে কেনো ডাকছ? এই নামে শুধু আমি ওকে ডাকি।

…….মোটেই না স্যার ওর শুভাকাঙ্ক্ষী ওকে এই নামে ডাকে।

…….হ্যা তবে আমিই তো সেই শুভাকাঙ্ক্ষী।

…….স্যার আপনি মিথ্যা বলছেন কেনো? আমি ওকে ভীষণ ভালোবাসি প্লিজ স্যার মিথ্যা কথা বলবেন না প্লিজ স্যার প্লিজ।

…….আমার মিথ্যা বলার কোনো প্রয়োজন নেই, যে সত্যি তার কাছে হাজারও প্রমাণ থাকে। তুমি প্রমাণ করে দেখাও তুমি সত্যি বলছ?

…….হ্যা আমার কাছেও হাজারও প্রমাণ রয়েছে। (হাতের ট্যাটু বের করে) এই দ্যাখো পুস্প আমার হাতে #নীলফড়িং ট্যাটু রয়েছে।

…….হুম অনেক আগেই দেখেছি আমি। আর কিছু?

…….হ্যা আমি তোমাকে দুটো গিফট দিয়েছিলাম মনে আছে?

…….হ্যা থাকবে না কেনো?

…….একটা তোমার বার্থডের গিফট নুপুর ছিল যাতে ছোট ছোট #নীলফড়িং দিয়ে কারুকাজ করা ছিল। এক তোরা লাল গোলাপ ছিল সাথে। একটা চিরকুট ছিল যাতে লেখা ছিল,

…….শুভ হোক আপনার জন্মদিন। ভালো কাটুক আগামীর পথ চলা। সব দুঃখ হারিয়ে যাক, ভালোবাসা গুলো চিরস্থায়ী হোক, এই শুভকামনা গুলোই রইল আগামীর দিন গুলোতে।

ইতি
আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী।

স্যারের মুখে চিরকুটের শব্দ শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম প্রায় ৩ বছর আগের শব্দ গুলো কী সুন্দর ভাবে সে বলে দিল, একটা অক্ষর এদিক থেকে সেদিক হলো না। কিন্তু রাইয়ান যা বলেছে তাও ভুল নয়, আমি কীভাবে জানব? কে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী?

দুজনেই একটার পরে একটার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে বাট আমি কাকে বিশ্বাস করব কাকে নয় বুঝতে পারছি না। এদের কথা কাটাকাটি শুনতে শুনতে এক সময় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৪:৪০ মিনিট কাটায় কাটায়। আমার আর ভালো লাগছে না এগুলো। যে সত্যি সে এক সময় নিজেকে প্রমাণ করতেই পারবে। বাট তারা নিজেরা আগে ডিসিশন নিয়ে নিক কে সঠিক, তাই আমি তাদের টপকিয়ে রাস্তার পাশের সিঁড়ি বেয়ে নেমে হাঁটা শুরু করলাম। যা দেখে ওরা দুজনেই পিছু ছুটতে লাগল। আমি রাস্তা ওভারটেক করে রাহাত আনোয়ার হসপিটালে চলে এলাম। তারাও পেছন পেছন এলো ডাকতে ডাকতে। আমি গেইটের সামনে এসে পেছন ফিরে বলে উঠলাম।

……রাইয়ান তুমি এখন আসতে পারো। আমার দেওয়া সময় ওভার হয়ে গেছে। যাও নতুন কোনো প্রমাণ নিয়ে আসো। আর এই হসপিটালে প্রবেশ করার কথা মাথায় ও আনবে না তবে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। আর স্যার আপনার জন্য রুগী’রা নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে যান আপনার ক্যাবিনে গিয়ে রুগী দেখুন।

এই বলে আমি বাহিরের সিঁড়ি বেয়ে ভেতরে গিয়ে লিফটে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম, স্যার ও ছিল আমার পাশে।

ক্যাবিনে গিয়ে চুপ করে বসে রইলাম, স্যার ও কিছু বলেনি। আমার খুব রাগ হচ্ছিল। এতটুকু জেনো বিশ্বাস হচ্ছে স্যার মিথ্যা বলার মতো মানুষ নয়। আর স্যার গম্ভীর টাইপের মানুষ এসব বিষয়ে মজা করার মতো সে নয়। আর তার এমন করার প্রয়োজন ও নেই কারণ বাসা থেকে সবাই বিয়ের অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। তবে সে কেনো এরকম নোংরা খেলা খেলবে? আর রাইয়ানের কথা ভাবলে, সে বা এত তথ্য কীভাবে জানল? আমি তো তার সাথে কখনো এসব বিষয়ে কথা বলিনি। শুধু সে জানত আমার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী আছে, That’s all. কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে এরা দুজনেই সব জানে, যাক আমি আর এখন আপাতত এগুলো নিয়ে ভাবতে চাইছি না। কাজের সময় কাজ। আর এগুলো নিয়ে আমি এতদিন অনেক ভেবেছি, এখন তারা দুজন ভাববে আমি শুধু প্রমাণ দেখব।

কিছুক্ষণ পরে এক এক করে রুগী আসতে শুরু করে দিল। আমি চেক করে যাদের রিপোর্ট দরকার তাদের রিপোর্ট করতে পাঠাচ্ছি, যাদের ভর্তি দরকার তাদের ভর্তির পরামর্শ দিচ্ছি, আর যাদের ওষুধের দরকার তাদের ওষুধ দিচ্ছি। ব্যাচ এরপর ৭ তালায় গিয়ে আগের যে ভর্তি হওয়া রুগী ছিল তাদের দেখলাম। একটা সিজারের পেশেন্ট ছিল, তাই ৭তালা থেকে নেমে ওটিতে গেলাম। সেখানে আমার সাথে একজন সহকারি ডক্টর ছিল, আরও কয়েক জন ছিল, সেখানে গিয়ে সিজার করে, আমি ওটি থেকে বের হয়ে ক্যাবিনে এসে দেখলাম এখন আর পেশেন্ট নেই তাই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম প্রায় ৯:৩০ মিনিট বেজে গেছে, ব্যাগ হাতে নিয়ে বের হয়ে পড়লাম। গেইটে যেতেই দেখলাম স্যারের গাড়ী, আমি পাশ কাটিয়ে গেট দিয়ে বের হতে নিলাম। এর মধ্যে স্যার ডাক দিল।

…….পুস্পিতা শোনো?

আমি যেভাবে ছিলাম সেভাবেই দাঁড়িয়ে গেলাম। স্যার এগিয়ে এসে বললেন।

…….গাড়ীতে ওঠো অনেক রাত হয়েছে।

…….স্যার রাস্তা তো বেশি নয় আমি চলে যাবো।

…….আমি জানি তুমি চলে যাবে, বাট আমারও একটু বাসায় কাজ আছে যখন দুজনে একই দিকে যাচ্ছি তবে এক সাথে তো যেতেই পারি তাই না? আর বিকেলে যা হয়েছে সেটা নিয়ে প্লিজ রেগে থেকো না। এখন যেহেতু আমি সেই কথা বলার মুডে নেই, আর আমার হাতে এখন সময়ও নেই, আর এত রাতে তোমার একা যাওয়া ঠিক হবে না। প্লিজ ওঠো। তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আমি ল্যাব এইডে যাবো তাই প্লিজ ওঠো।

আমি আর কথা না বাড়িয়ে গাড়ীতে উঠে বসে পড়লাম। যেহেতু স্যার, সে আমার চোখে অনেক সম্মানীয় ব্যক্তি, তাকে অপমান করার মতো স্পর্দা আমার অন্তত পক্ষে নেই। স্যার ও এসে গাড়ীতে উঠে বসে পড়লেন। স্যার গাড়ী চালাতে শুরু করলেন।

গাড়ী এসে আমাদের বাড়ির সামনে থেমে গেল। আমি গাড়ী থেকে নেমে এগোতে নিয়ে আবার পিছু এগিয়ে স্যার কে উদ্দেশ্য করে বললাম।

…….স্যার আমি আপনাকে প্রচন্ড রকমের বিশ্বাস করি। আর অনেক সম্মান করি, আমি শুধু এতটুকুই আশা করছি আপনি এই বিশ্বাস বা সম্মান কোনটাই ভেঙে যেতে দিবেন না। আসছি স্যার।

আমি গেইটের ভেতর চলে গেলাম। নিজের রুমে গিয়ে বিছানার উপর ব্যাগটা ছুড়ে ফেললাম। এরপর ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে রইলাম।

সকাল সকাল ছাদে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। ঠান্ডা বাতাস এসে কাঁপন ধরিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। চারিদিকে কুয়াশা ধোঁয়া ধোঁয়া, চোখ দুটো বন্ধ করে খুব কাছ থেকে এই আবহাওয়ার সাধ গ্রহণ করছিলাম। কতটা সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম এভাবে জানি না, চোখ যখন মেললাম, তখন চারিদিকে হালকা হালকা রোদ্র দেখা যাচ্ছিল। অশান্ত মনটা কতটা শান্ত হলো জানি না। হঠাৎ চোখ পড়ল, আমার সামনে থাকা ফুল গাছটার উপর, সাদা গোলাপের উপর একটা #নীলফড়িং বসে ছিল, সত্যি দৃশ্যটা অমায়িক সৌন্দর্য, অনেক ভালো লাগছে দেখতে, আমি ফোনের ক্যামেরা অন করে কয়েকটা ছবি নিলাম। ছবি গুলো ও দেখতে সেই হয়েছে। ছবি তুলে আমি হাসি মুখে পেছন ঘুরে চলে আসতে নিলাম, চোখ পড়ল পাশের ছাদে প্রবেশ করার দরজার দিকে। স্যার দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলো। স্যারের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, তখনই স্যার ও আমার দিকে তাকালেন, দুজনার চোখে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিলাম। আমি পা বাড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলাম।

দু-দিন পরে বিকেল ৪টার দিকে আমি নিজের রুমে বসে ছিলাম। এমন সময় কেউ দরজার কলিং বেল বাজাল। মা যেহেতু রুমে শুয়ে আছেন তাই আমি নিজেই গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম স্যারের মা আর দাদী দাঁড়িয়ে আছেন, আমি সালাম জানিয়ে তাদের ভেতরে আসতে আমন্তন জানালাম। তারা ভেতরে এসে বসলেন। আমি মা কে ডেকে নিয়ে এলাম। আমি রান্নাঘরে গিয়ে চা করে নিয়ে আসলাম, ততক্ষণ তারা মায়ের সাথে কথা বলল। আন্টির হাতে চা দিতে গেলাম সে আমার হাত ধরে তার পাশে বসিয়ে দিলেন। চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে সে আমার হাত ধরে বলে উঠলেন।

……..মামনি কাজ কেমন চলছে?

……জ্বি আন্টি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

……এটা শুনে খুব ভালো লাগল।

এই কথা বলেই আন্টি এক জোরা মোটা মোটা বালা বের করে আমার হাতে পড়িয়ে দিলেন। আমি অবাক হয়ে মা’য়ের দিকে তাকালাম দেখলাম সে হাসছেন।

…….আন্টি আমি আসলে।

…….কোনো সমস্যা মামনি? আমার ছেলে কে তোমার ভালো লাগে না? আমার ছেলের কিন্তু কোনো বাজে অভ্যাস নেই, ও খুব ভালো।

…….না না আন্টি তা নয় স্যার তো অনেক ভালো মানুষ বাট আমি।

…….তবে আর কোনো কথা নয় আমি তোমাকে আমার ছেলের বউ হিসাবে দেখতে চাই। আমি মা হয়ে ওকে নিয়ে গর্ভ করতে পারি, কিন্তু স্বামী হিসেবে সে কেমন হবে এটা বলতে পারছি না। কারণ ছেলে আমার একটু রাগী, একটু আন রোমান্টিক ও বলতে পারো। না হয় এই বয়সে তার কয়েকটা গার্লফ্রেন্ড থাকার কথা, বাট আজ পর্যন্ত একটা মেয়েকে এনে দেখাতে পারেনি, মা এই মেয়েকে আমি পছন্দ করি। তবে বলো ছেলে আমার কতটা আন রোমান্টিক, তাই বলে এখন ভয় পেয়ে বিয়ে ক্যান্সেল করে দিও না আবার।

এই বলে সবাই হেঁসে উঠল। তবে আন্টি মিথ্যে বলছেন না। কারণ এতদিনে সত্যি স্যার কে কোনো মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখিনি। বা তেমন ভাবে কারো দিকে তাকিয়ে থাকতে ও দেখিনি।

……. আচ্ছা মা তোমার সময় নষ্ট করব না। যেহেতু তুমি এখন বের হবে আমি জানি তাই আগেই আসছি। যাও তুমে রুমে গিয়ে রেডি হয়ে নাও।

আমি মৃদু হেসে ড্রইং রুম থেকে উঠে আমার রুমে চলে এলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৪:৪০ মিনিট, তাই তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম, ড্রইং রুমে এসে আন্টিদের মা কে আল্লাহ হাফিজ বলে এগিয়ে গেলাম।

একটা রিকশা ডেকে উঠে বসে পড়লাম।

আজ তেমন রুগী ছিল না, তাই যে কজন ছিল তাদের দেখে ভর্তি পেশেন্ট দের দেখে বেড়িয়ে পড়লাম। এমন সময় গেইটের সামনে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম, ঠিক সেই সময় বাইক নিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে গেল রাইয়ান, আমি তাকে দেখে পাশ কাটিয়ে সরে যেতে নিলাম।

…….প্লিজ পুস্প যেওনা।

…….এক মিনিট এই নামটা উচ্চারণ করবে না।

…….আরে আমি তো তোমাকে সব সময় এই নামেই ডাকি।

…….জ্বি না তুমি সব সময় আমাকে পুস্পিতা নামে ডেকেছ আর যতদিন না এটা প্রমাণ করতে পারবে তুমি শুভাকাঙ্ক্ষী ততদিন অব্দি তুমি এই নাম উচ্চারণ ও করবে না।

……ওকে তুমি বলো তুমি কী করলে বিশ্বাস করবে যে আমিই তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী?

…….আমি কিছুই জানি না, বিশ্বাস তোমাকে করাতে হবে আমাকে, যাতে আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হই তুমিই আমার শুভাকাঙ্ক্ষী এমন কিছু তোমাকে করে দেখাতে হবে That’s all.

…….বাট আমি এমন কী করব? যা করলে তুমি বাধ্য হবে?

…….তা আমি কীভাবে বলব? এটা তো তোমাকেই করতে হবে। তুমি যদি আমার শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে থাকো, তবে এটা নিশ্চয়ই মনে আছে? তুমি বলে ছিলে আমার চিনতে হবে না, তুমি নিজে চিনিয়ে নিবে আমাকে। তবে চিনিয়ে দাও আমাকে আমি সেই অপেক্ষায় রয়েছি।

এই বলে আমি রিকশা ডেকে উঠে বসে পড়লাম।

এভাবেই সময় যেতে শুরু করল। বিয়ের তারিখ প্রায় ঘনিয়ে এসেছে কেউই কিছু প্রমাণ করতে পারল না। আজ অনেক দিন পড়ে স্যারের সাথে দেখা হলো। সকাল সকাল ছাদে গিয়ে।

…….কেমন আছেন স্যার?

……আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি?

……আছি এক রকম। আচ্ছা স্যার আমি আপনাকে কিছু বলেছিলাম মনে আছে?

…….কথা তো অনেক বলেছ এখন কোন কথা, বুঝব কীভাবে?

……ওই যে আপনাকে প্রচন্ড রকমের বিশ্বাস করি ওটা। স্যার এখনো তো আপনি বা রাইয়ান কেউই প্রমাণ করতে পারেন নি কে সে? তাই বিয়ের ৫ মিনিট আগ পর্যন্ত যে প্রমাণ করে দেবে সেই আমার শুভাকাঙ্ক্ষী আমি তাকেই বিয়ে করব, আর তখন আপনাকে আমার সাথে থাকতে হবে আমার আপনার ফ্যামিলি কে বোঝানোর জন্য।

…….আর যদি দুজনের একজন ও প্রমাণ না করতে পারি?

…….তবে বিয়ের ৫মিনিট আগে হলেও বিয়ে ক্যান্সেল করে দিবেন আপনি নিজ থেকে।

……বাট আমি এটা কেনো করব?

……কারণ আপনি আমাকে মিথ্যা বলে বিভ্রান্ত করেছেন তাই।

…….কিন্তু তুমি যদি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী কে এত পছন্দ করো তবে এই বিয়ের জন্য রাজি হলে কেনো?

……আমি রাজি হইনি, কেউ আজ অব্দি আমার কাছে কিছু জিজ্ঞেসই করে নি, তবে কীভাবে তাদের জানাব আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি? আর মা যেখানে অসুস্থ, সে তার একটা ইচ্ছের কথা বলে আমাকে পূরণ করতে বলেছেন সেখানে আমি কিছু বলতেও পারছি না। আর হ্যা সবাইকে বললাম আমি একজন কে ভালোবাসি, তাকেই বিয়ে করতে চাই, তখন সবাই জিজ্ঞেস করবে কে সেই শুভাকাঙ্ক্ষী, আমি কী বলব? মা দুজন আমাকে বলেছে তারা আমার শুভাকাঙ্ক্ষী। কিন্তু এই সাড়ে ৩ বছর হয়ে গেছে আজ অব্দি আমি জানিই না আসলে কে আমার সেই শুভাকাঙ্ক্ষী? তার নামটা পর্যন্ত আমি জানি না তাকে চেনা তো দূরে থাক এটা বলব আমি মা আব্বু কে স্যার?

স্যার আমার কথার কোনো উত্তর দিতে পারলেন না চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন।

…….কী হলো স্যার চুপ করে দাঁড়িয়ে কেনো আছেন উত্তর দিন? আমি কী বলব তাদের? আপনি বলে দিন আমি এখনি গিয়ে বলে দিচ্ছি তাদের। একজন কষ্ট দিলে সহ্য করে নেওয়া যায়, মানুষ এক বার পড়ে গেলে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁসতে পারে কিন্তু দ্বিতীয় বার যদি পড়ে গিয়ে ওই একি জায়গায় ব্যথা পায় তবে সেই ব্যথাটা প্রচুর কষ্ট দায়ক হয় সে আর সেই কষ্ট সহ্য করতে পারে না, আমার বেলায় ও তাই হয়েছে। আপনি হয়ত দেখছেন আমি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, আমি শক্ত হয়ে কথা বলছি বাট আমি ভেতর থেকে একদম ভেঙে গেছি, যা কাউকে বোঝাতে পারছি না। না কারো সাথে শেয়ার করতে পারছি। প্লিজ স্যার এই দুবিধা থেকে আমাকে বাঁচান আমার আর ভালো লাগছে না। এই ৫/৬ মাস থেকে আমি এগুলো ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমি আর নিতে পারছি না।

কাঁদতে কাঁদতে দু-হাত দিয়ে মুখ ডেকে ছাদেই বসে পড়লাম। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে চোখ মুছে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। দেখলাম স্যার তাদের ছাদেই দাঁড়িয়ে আছেন, চোখ কিছুটা লাল হয়ে আছে, সে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। আমাকে দাঁড়াতে দেখে সে এদিক সেদিক তাকিয়ে বলে উঠলেন।

…….একটা প্রশ্নর উত্তর দিবে?

…….হুম।

…….তুমি বললে ৫/৬ মাস ধরে তুমি এগুলো ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত? কিন্তু এই ৫/৬ মাস আগে এমন কী হয়েছিল বলতে পারবে আমায়? তবে হয়ত তুমিও তোমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেতে পারো আর আমিও নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে পারব।

……জ্বি কেনো নয়। আমিও চাই সত্যি জানতে। ৫/৬ মাস আগে আমার ফোনটা হটাৎ একদিন চুরি হয়ে যায়। এরপর আমি নতুন ফোন নেই…………..।

এরপর স্যার কে সেদিনের সব কথা গুলো খুলে বলি কীভাবে কী হয়েছে। যা শুনে স্যার বলে উঠল।

…….ওহ তবে এই ছদ্মবেশী তোমাকে মাত্র ৫/৬ মাস ধরে বিভ্রান্ত করছে। যে থেকে তুমি কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলে? তবে আমার কাছে ৩ বছর সময় রয়েছে, নিজেকে সত্যি প্রমাণ করার? আমাকে একটু সময় দাও ভেবে দেখার জন্য।

…….সময়ই তো নেই স্যার হাতে। বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে।

…….আচ্ছা তুমি তো বিয়ের ৫ মিনিট আগ পর্যন্ত সময় দিয়েছিলে আমাকে তবে?

…….তাই বলে কী আপনি সত্যি সত্যি সেই ৫ মিনিট পর্যন্তই অপেক্ষা করাবেন আমায়?

…….না না তা নয় বাট এতদিনের কথা একটু সময়ের প্রয়োজন তো আছেই তাই-না?

…….ওকে স্যার।

আমি নিজের রুমে চলে এলাম। ফোনে দেখছি শুভাকাঙ্ক্ষীর অনেক ম্যাসেজ জমা হয়েছে। ফোন রেখে বসে রইলাম।

প্রায় ১ঘন্টা পড়ে হটাৎ ফোনে রিং বেজে উঠল তাকিয়ে দেখলাম স্যারের ফোন।

……হ্যা স্যার।

……বারান্দায় আসো।

আমি ফোন রেখে বারান্দায় ছুটে গেলাম।

…….জ্বি স্যার?

……আচ্ছা তুমি কী আমার দেওয়া গিফট-টা খুলে দেখে ছিলে? কারণ তাহলে তোমার এই সন্দেহ-টা থাকার কোনো কথাই ছিল না। আর যেহেতু এটা ৫/৬ মাস আগের কথা নয় এটা ২ বছর আগের কথা, আমার যতটুকু মনে হয় তুমি ওই গিফট-টা খুলে দেখলেই তোমার সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়ে যেতে ইন’শা’আল্লাহ। কারণ আমি যে কে এটা জানানোর জন্যই আমি তোমাকে ওই গিফ-টা দিয়ে ছিলাম। আর দ্বিতীয় কথা তোমার ফোনটা যখন চুরি হয় তখন আমি তো এইদেশে ছিলাম তোমার আব্বু আম্মুর কাছেই জিজ্ঞেস করে দেখতে পারো। রাইয়ান কোথায় ছিল এটা ভেবে দ্যাখো উত্তর তুমি নিজেই পেয়ে যাবে।

আমি স্যারের সাথে আর কোনো কথা না বলে রুমের ভেতর চলে এলাম সুটকেস খুলে ভালো করে সব খুঁজতে শুরু করলাম, অনেক খোঁজ করার পড়ে স্যারের গিফট-টা খুঁজে পেলাম। তারাহুরো করে গিফট-টা খুললাম। গিফট খোলার সাথে সাথে তার মাঝ থেকে বেরিয়ে এলো, একটা খুব সুন্দর হাত ঘড়ি যার মধ্যের ঘুরন্ত কাঁটাই ছিল #নীলফড়িং। সাথে একটা চিরকুট তার মধ্যে লেখা ছিল “ভালোবাসার #নীলফড়িং”।



চলবে…………।

নীলফড়িং পর্ব-০৭

0

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#পর্ব ৭
.
.
সকাল টাইম বসে বসে মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম। হঠাৎ কেউ দরজায় নক করে উঠল। আমি গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম, সেই লোকটা, যার বেবি হয়েছে।

……জ্বি?

……আপু আপনি কী একটু আমাদের ক্যাবিনে আসবেন?

……কেনো সব ঠিক আছে তো?

……জ্বি আপু, আসলে আমার স্ত্রী আপনাকে একটু ডেকে ছিল।

……কিন্তু এখন আমি?

……পুস্পিতা কে রে?

……এক মিনিট। (পেছনে ঘুরে) মা আমার এক পেশেন্ট।

……তুই কাল এসে আজই পেশেন্ট কোথায় পেলি?

……মা ওই কাল রাতে (সব খুলে বলে)

……তবে গিয়ে দ্যাখ হয়ত কোনো সমস্যা হতে পারে।

……তুমি একা থাকতে পারবে?

…….হ্যা পারব যা তুই।

…….ওকে তুমি সাবধানে থাকবে কিন্তু, বিছানা থেকে এক পা কোথাও যাবে না।

……ঠিক আছে এখন যা তুই।

মাকে ফোন এগিয়ে দিয়ে, তার কাছে প্রয়োজনীয় সব কিছু রেখে আমি দরজা ভেজিয়ে দিয়ে এগিয়ে গেলাম লোকটার সাথে। লোকটা আমাকে রুমের ভেতর যেতে বলে সে দাঁড়িয়ে রইল। আমি রুমের ভেতর যেতেই দেখলাম বাচ্চা নিয়ে বাচ্চার মা শুয়ে আছে, পাশে দুজন মহিলা বসে আছে।

…….কী হলো বেবি এবং বেবির মা কী ঠিক আছে?

…….জ্বি আপু আলহামদুলিল্লাহ, কাল রাতে আপনি না থাকলে কী যে হতো বুঝতেই পারছি না।

…….ইন’শা’আল্লাহ কিছুই হতো না। কারণ এই হসপিটালে আরও ডক্টর ছিল আমি বাদেও।

……তারপরও তাদের ডাকতাম তারা আসতো তারপর তো? আর আপনি যেভাবে আমাকে সাহস দিয়েছিলেন তার জন্যই হয়ত আমি অনেকটা সাহস পেয়ে ছিলাম। আর আমার বাচ্চাকে বাঁচানোর জন্যও অনেক করেছেন আমি দেখেছি সব।

আমি হাঁসলাম ওনার কথা শুনে।

……আপু আপনার জন্য এটা। (একটা খাম)

……কী এটা?

……আপনি নিন নিজে দেখে নিবেন।

আমি মেয়েটার হাত থেকে খামটা নিয়ে খুলে দেখলাম, তাতে অনেক গুলো ৫০০ টাকার নোট ছিল। কম হলেও ১০/১৫ হাজার টাকা তো হবেই। আমি মুচকি হেঁসে, খামে টাকা গুলো রেখে বাচ্চার হাতে খামটা রেখে দিলাম।

…….আপু কী করছেন?

…….আপনি আমাকে দিয়েছেন, আমি নিয়েছি, এখন এই টাকা দিয়ে আমি যা করি এটা দেখা আপনার বিষয় নয়।

……কিন্তু আপু আপনি তো অনেক কষ্ট করেছেন, যার জন্য এটা কিছুই নয়।

…….আমি কী, না বলেছি যে নেবো না। আমি তো নিয়েছি, এখন আমি যা করি এটা কিন্তু একান্তই আমার বিষয়। এটা ওর নামে জমা রেখে দিবেন, ওর যখন প্রয়োজন হবে তখন ওকে দিয়ে বলবেন ওর এক আন্টি ওকে দিয়েছে।

……আপু আপনি অনেক ভালো। আজকাল আপনার মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না।

…….তবে এখন আশি?

…….ঠিক আছে আপু। তবে আপু আপনার নামটা যদি বলতেন? বা আপনাকে এর পড়ে আমরা কীভাবে খুঁজে পাবো?

……আমি? আচ্ছা কাগজ কলম হবে?

……জ্বি আপু।

একজন এসে কাগজ কলম দিল। আমি আমার ফোন নাম্বার নাম লিখে দিলাম। যেহেতু এখন অব্দি কিছু ঠিক হয়নি আমি কোন কোন হসপিটালে থাকব, তাই শুধু নাম নাম্বার দিলাম। এরপর রুম থেকে বের হয়ে মায়ের কাছে চলে এলাম।

বিকেল দিকে মায়ের নাম কাটিয়ে বাসায় চলে এলাম, ওনাদের সাথেও একটু দেখা করে এলাম৷

দু-দিন চলে গেল মায়ের সেবাযত্ন করতে করতেই। মামা-মামী নানা বাড়ি গেছেন আজ সকালে। রাতে আমি বসে বসে আব্বুর আর মায়ের সাথে কথা বলছিলাম। এমন সময় মা বলে উঠলেন।

…….তোর ইচ্ছে তো তুই পূরণ করেই ফেলেছিস। এখন আমাদেরও একটা ইচ্ছা পূরণ করে ফেল।

…….কী ইচ্ছে মা?

…….আগে বল, আমার এই ইচ্ছেটা তুই পূরণ করবি?

……মা আমি তোমাদের জন্য তো নিজের জীবন ও দিয়ে দিতে পারি, আর তোমাদের ইচ্ছে পূরণ করব না এটা কীভাবে ভাবলে? বলো কী ইচ্ছে তোমাদের?

……এবার বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যা মা। আমি মা’রা যাওয়ার আগে তোকে সংসার করতে দেখে যেতে চাই। না হয় তোর চিন্তায় আমি মা’রা গিয়েও শান্তি পাবো না।

…..মা এত তারাহুরো কীসের?

…….তুই কী বুঝবি যেদিন মা হবি সেদিন বুঝবি।

……মা এতদিন যখন অপেক্ষা করেছ, আর একটু অপেক্ষা করা যায় না? এই তো আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে চলেছি, এখনও পূরণ হয়নি। একটু আমাকে প্রতিষ্ঠিত হতে দাও।

…….বিয়ের পড়েও তো প্রতিষ্ঠিত হতে পারবি?

…….মা সেই ছেলে যদি আমার স্বপ্ন পূরণের পথে আমাকে বাধা দেয়?

…….আমি এমন ছেলের হাতে তোকে দেবই না ইন’শা’আল্লাহ, যে আমার মেয়ের স্বপ্ন পূরণে বাধা দেবে।

…….আর এমন ছেলে তুমি কোথায় পাবে?

…….আছে আমাদের কাছে তুই শুধু একবার হ্যা বল।

……কে সে?

……আগে তুই হ্যা বল।

……মা আমাকে একটু সময় দাও প্লিজ।

…….না একটু সময়ও না। আমি আজকাল যেমন অসুস্থ থাকি এতে আমি আর এক মূহুর্ত দেরি করতে চাইছি না। তাই তুই রাজি থাকিস বা না থাকিস বিয়ে তো তোর এই ছেলের সাথেই হবে আর এটাই ফাইনাল। এই তুমি কালকেই ওই ছেলের বাবার সাথে কথা বলবে। আমার মেয়ে এখন ডক্টর কে বারণ করবে এমন মেয়েকে বাড়ির বউ বানাতে?

…….আব্বু মাকে বোঝাও প্লিজ আমি এখনি বিয়ে করতে পারব না। আমার একটু সময় প্রয়োজন প্লিজ আব্বু।

এই বলে আমি রুমে চলে এলাম। আমি এখনই মাকে বলতাম শুভাকাঙ্ক্ষীর কথা, বাট কী বলব তাদের? আমি তো তার নামটাও জানি না। আর এখন তো তার সাথে কথাও হয় না। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে এই কথা গুলোই ভাবছিলাম। তখন ফোনে আবার ম্যাসেজ এলো, তাকিয়ে দেখলাম শুভাকাঙ্ক্ষী।

……দেশে ফিরে এলে আমাকে জানানোর প্রয়োজনও মনে করলে না?

……যদি পারেন সামনে এসে কথা বলেন। না হয় এমন লুকিয়ে কথা বলার কোনো প্রয়োজন নেই।

সব হসপিটালের সাথে কথা হয়ে গেছে, কাগজপত্রও জমা দেওয়া হয়েছে, এখন শুধু তাদের ডাকার পালা। তাদের একটা ফোনের অপেক্ষায় বসে আছি। কখন আসবে ফোন।

দু-দিন পরে সকাল ১০ টার দিকে বসে ছিলাম। এমন সময় ফোন বেজে উঠল। ফোন রিসিভ করতেই তারা আমাকে ডাকল। তাই মাকে বলে আমি রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

হসপিটালে এসে তাদের সাথে কথা বললাম। তারা আমার সাথে কথা বলে প্রচুর ইমপ্রেস হলো। তাই আগামী কাল থেকেই জয়েন্ট করতে বলল। আমি খুব এক্সাইটেড হয়ে মিষ্টি নিয়ে বাসায় গেলাম, মাকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে সু-সংবাদ দিলাম। মা বলে উঠল

……আমি তো আগেই জানতাম আমার মেয়েকে কেউ রিজেক্ট করতেই পারবে না।

মা আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করল।

পরদিন বিকেলে রেডি হয়ে মায়ের থেকে আব্বুর থেকে দোয়া নিয়ে কাজের প্রথম দিন শুরু করতে যাচ্ছি। আব্বু বলেছেন আজ আমাকে এগিয়ে দিয়ে আসবে তাই সে তারাতাড়ি করে কাজ থেকে চলে এসেছেন। গেটের বাহিরে বের হতেই দেখলাম স্যার গাড়ী নিয়ে বের হচ্ছিল। তাই স্যার কে ডাক দিলাম। স্যার গাড়ী থামিয়ে গাড়ী থেকে নেমে এগিয়ে এলো, আব্বুকে সালাম দিল। আমিও স্যার কে সালাম জানিয়ে বলে উঠলাম

…….স্যার আজ আপনার দোয়া আমার জন্য খুব জরুরি, তাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার জীবনের বিশাল স্পেশাল একটা দিন আজ।

…….আমি সব সময় তোমার জন্য দোয়া করি যাতে তুমি তোমার লক্ষে পৌঁছাতে পারো। বাট আমার দোয়া স্পেশাল কেনো তোমার জন্য এটা বুঝলাম না?

…….কারণ আপনি আমার স্যার, আর সব সময় স্যারই থাকবেন, আপনি আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন, অনেক সাহায্য করেছেন, আজ এখানে পৌঁছানোর পেছনেও আপনার সাহায্য অপরিসীম।

…….তোমার চাওয়ার প্রয়োজন নেই, আমি সব সময় তোমাকে দোয়া করি, যাতে তোমার ইচ্ছে পূরণ হয়। আল্লাহ তায়া’লা জেনো তোমার স্বপ্ন পূরণ করেন। যাও “all the best”

……..Thank you sir.

……. welcome. আঙ্কেল চলেন তবে আমি এগিয়ে দেই।

…….না থাক বাবা আমরা বাইকে চলে যাবো।

……পুস্পিতা কোন হসপিটালে যাচ্ছ?

……স্যার রাহাত আনোয়ার হসপিটাল।

……আমিও তো সেখানেই যাচ্ছি।

……ওহ তাহলে পুস্পিতা, তুই বরং ফাইয়াজের সাথেই যা।

……আব্বু তুমি?

……আমি তবে থেকে যাই, তোর মা তো একা আছেন বাসায় যদি প্রয়োজন পড়ে কোনো।

……আব্বু আজ প্রথম দিন তুমি যাবে না? প্লিজ আব্বু স্যার না আসলেও তো তুমি যেতে।

…….আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।

আমি আর আব্বু বাইকেই রহনা দিলাম, স্যার গাড়ীতে কারণ আব্বু বাইক রেখে গেলে ফিরতে ঝামেলা হবে।

আমরা এসে হসপিটালের সামনে নেমে গেলাম। আব্বু আমার ক্যাবিন অব্দি আমাকে এগিয়ে দিলেন। আমরা রুমে ঢুকে সব ঘুরে ঘুরে দুজনে দেখলাম, আব্বু বলল।

……মা তুই চেহারে বস আমি তোর একটা ছবি তুলে নিয়ে যাই, তোর মা দেখবে।

……জ্বি আব্বু।

আমি চেহারে বসতেই আব্বু কিছু ছবি তুলে নিলো।

……আচ্ছা মা তুই থাক তবে আমি আসছি এখন।

……জ্বি আব্বু সাবধানে যেও।

……তুই ফিরবি কখন?

……তা তো জানি না তবে আমি তোমাকে ফোন দেবো বেশি রাত হয়ে গেলে।

……হ্যা তাই করিস।

আব্বু চলে গেলেন। আজ প্রথম দিন তাই বেশি রুগী হলো না। অল্প ছিল তাই রুগী দেখা শেষ করে, আমি রুম থেকে বের হলাম, চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার রুম থেকে ৪/৫ টা রুম পড়েই স্যারের রুম। স্যারের নামের নেইম প্লেট লাগানো ছিল সেখানে। স্যারের রুমের সামনে বেশ ভীড় জ্বমে আছে রুগীর। খুব ভালো। স্যার অবসর সময়ে ওই হসপিটালে থাকেন। তবে বেশির ভাগ সময় স্যার ওই হসপিটালেই থাকেন। এছাড়া স্যার অনেক হসপিটালেই যায় যে যখন যেই হসপিটালে ফোন দিয়ে ডাকে সেখানেই স্যার যায়। বরিশাল খুব ছোট একটি শহর, কিন্তু হসপিটালের কোনো কমতি নেই।

…….ম্যাডাম আপনি কী এখন চলে যাবেন?

কারো কথা শুনে ঘুরে তাকালাম। দেখলাম একজন মধ্য বয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে আছেন।

……আসলে রুগী তো দেখা শেষ, কিন্তু কী করব বুঝতে পারছি না। চলে যাবো নাকি থাকব?

……জ্বি আপনি দাঁড়ান আমি দেখছি।

লোকটা চলে গেলেন, আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আবার চারিদিক দেখতে রইলাম।

বেশ কিছুক্ষণ পরে লোকটা এসে বলে উঠলেন।

…….ম্যাডাম আজ ডক্টর তানিয়া আফরোজ আসেনি, তাই আপনাকে তার মুমূর্ষু রুগী গুলো হ্যান্ডেল করতে হবে।

…….ওকে।

আমি আবার রুমে গিয়ে বসে পড়লাম। এক এক করে সেই সব রুগী আসতে শুরু করে দিল।

রাত তখন প্রায় ৮: ১৫ রুম থেকে বের হয়ে লিফটে উঠলাম। নিচে এসে একটা রিকশা নিয়ে বাসায় চলে এলাম।

রাত তখন ১১ টা চোখে ঘুম ছিলনা তাই বারান্দায় এসে উঁকি দিলাম। চাঁদটা ছিল ওই দূর আকাশে মনে হচ্ছে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। হয়ত এটাই বুঝাতে চাইছে যে সেও আমার মতই একা ওই বিশাল আকাশের মাঝে। যেমন এই বিশাল পৃথিবীর মাঝে আমি একা।

দু-দিন পরে শুক্রবার ছিল, আমি বিকেল দিকে রুমে বসে ছিলাম। এমন সময় মা এসে বলে উঠল।

……একটু রেডি হয়ে নে তো।

……কেনো মা, কোথায় যাচ্ছি আমরা?

……হ্যা তাই ভেবে নে।

মায়ের কথায় আমি রেডি হয়ে নিলাম। একটু পড়ে মা এসে, আমাকে তার সাথে নিয়ে গেল। আমি ব্যাগ নিতে চাইছিলাম। মা বলল লাগবে না এতটুকুতেই হবে।

মায়ের সাথে ড্রইং রুমে গেলাম দেখলাম ড্রইং রুমে ফাইয়াজ স্যারের বাবা, মা, দাদী, ছোট ভাই বসে আছেন, আমাকে দেখে হাসি মুখ করে তাকিয়ে রইলেন। আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলাম।

…….আসসালামু আলাইকুম।

……ওয়ালাইকুম আসসালাম।

…….অনেক দিন পড়ে তোমাকে দেখলাম। ভালো আছ পুস্পিতা?

…….জ্বি আন্টি, আপনারা সবাই কেমন আছেন?

……হ্যা আলহামদুলিল্লাহ আমরাও ভালো আছি। এসো বসো।

আমি গিয়ে মায়ের পাশে বসলাম।

……ভাবী মেয়ে তো আমাদের মা’শা’আল্লাহ।

ওনাদের কথায় মা হাঁসল। আমি আমার জেনো কেমন একটা লাগছে, এনারা কীভাবে জেন চাইছে আমার দিকে। স্যারের দাদী উঠে এসে আমার পাশে বসল।

…….কী গো আমাদের বাড়িতে যাইবা নি বু?

আমি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, মা হাসছিল। উনি আবার বলে উঠলেন।

…….কী গো কথা কও না কেন? আমাগো বুঝি ভালা লাগে নাই?

……না না দাদী তেমন কিছু না।

এর মধ্যে হটাৎ কলিং বেল বেজে উঠল। আমি উঠে যেতে নিলাম আব্বু বসতে বলে সে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল।

…….আরে ফাইয়াজ আসো আসো।

আমি তাকিয়ে দেখলাম স্যার কে।

……আঙ্কেল আমাদের বাসা থেকে কী কেউ এসেছে এখানে?

…….হ্যা সবাই আছে এখানেই। আসো তুমিও।

স্যার ভেতরে এসে একবার আমার দিকে তাকিয়ে দেখে তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল।

…….আজ হঠাৎ তোমরা সবাই এখানে? আর দারোয়ান আঙ্কেল বলল আমাকেও নাকি এখানে ডেকেছ কিন্তু কেনো কোনো কারণ আছে কী?

…….আরে দাদুভাই কারণ ছাড়া কী আর আহন যাইব না?

…….না তা নয় কিন্তু হঠাৎ করে এলে এজন্য?

…….ভাবলাম পুস্পিতা আসছে এতদিন পরে, তার মাঝে ভাবী ও অসুস্থ তাই এক সাথে এসে সবাইকে দেখে যাই। কিন্তু তোর আসতে এত দেরি হলো কেনো?

…….ওই একটু কাজ ছিল।

…….ওহ আচ্ছা।

…….আচ্ছা পুস্পিতা যা মা তোরা দুজন ছাদ থেকে ঘুরে আয় গিয়ে।

……কিন্তু মা।

…….আরে যাও গো বুইন কথা কও গিয়া একটু দুইজনে।

…….দাদী আমি এখানে ঠিক আছি।

……বুঝবার পারছি, কিন্তু কইছি যহন তয় যাইয়া একটু ঘুইরা আহো দেহি।

সবার জোরাজুরিতে ছাদে গেলাম স্যার আর আমি, আমার একটু কেমন জানি লাগছে আমার আজ প্রথম স্যারের সাথে কথা বলতে লজ্জা লাগছিল। স্যারও এক পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অন্য দিকে তাকিয়ে। কিছুক্ষণ পরে স্যার বলে উঠলেন।

…….বুঝতে পারছি না এরা কী করতে চাইছে। আমি নিচে যাচ্ছি।

এই বলে স্যার পা বাড়িয়ে নিচে যেতে শুরু করলেন। আমিও তার পিছু পিছু নিচে গেলাম। দুজনেই ড্রইং রুমে গিয়ে দাঁড়াতেই শুনলাম।

…….ভাবী পুস্পিতাকে তো ছোট থেকেই দেখছি, আমার সব সময়ই ওকে খুব ভালো লাগে, তাই আমিও আর দেরি করতে চাইছি না। আমি এ মাসেই পুস্পিতা কে আমার বাড়িতে নিয়ে যেতে চাই। এখন আপনারা কী বলেন?

……জ্বি আমাদেরও কোনো সমস্যা নেই।

……. তবে বিয়ের সময় ক্ষণ ফিক্সড করে নেই, কী বলেন?

…….হ্যা কেনো নয়।

সবার কথা শুনে আমার আর বুঝতে বাকি নেই, কী চাচ্ছেন এরা। আমি এক পা এক পা করে আমার রুমে ছুটে চলে এলাম।

রাতে বসে ছিলাম ফোন হাতে নিয়ে, হটাৎ ফোনে একটা ম্যাসেজ এলো তাকিয়ে দেখলাম শুভাকাঙ্ক্ষী।

…….কী এখনো কথা বলবে না? মনে হচ্ছে ডক্টর হয়ে তোমার অহংকার বেরে গিয়েছে, এখন আর আমাকে ভালো লাগে না তাই-না?

…….যদি আপনি সত্যি আমাকে ভালোবেসে থাকেন তবে কাল বিকেল ৩:৩০ মিনিটে বেলের্স পার্কে বঙ্গবন্ধুর ব্রিজের উপর আমি অপেক্ষায় থাকব আপনার আশা করছি চলে আসবেন।

২টি আইডিতেই সেন্ড করে দিলাম এই ম্যাসেজ। এরপর ফোন রেখে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। প্রচুর অশান্তি লাগছে, কী করব ভেবে পাচ্ছি না। তাই এই সিদ্ধান্ত নিলাম। আশা করছি যেকোনো একটা রেজাল্ট আসবে। ।



চলবে……….।

নীলফড়িং পর্ব-০৬

0

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং 🧚‍♂️🧚‍♂️
#পর্ব ৬
.
.
কয়েক মাস বাদে একদিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম একা, হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে এক পাশে বসার জায়গা দেখে একটু বসে পড়লাম। খুব ক্লান্ত লাগছে, সামনের দেখলাম একটা #নীলফড়িং উড়ে এসে বসলো। আমি তাকে দেখে ভাবছিলাম শুভাকাঙ্ক্ষীর কথা। আর মুচকি মুচকি হাসছিলাম। হঠাৎ মনে হলো কেউ কিছু টান দিল। তাকিয়ে দেখলাম আমার পাশ থেকে কেউ ছুটে গেল। আমার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার ব্যাগটা নেই, ওহ গড আমার ব্যাগ নিয়ে গেছে লোকটা।

আমিও তার পিছু নিলাম অনেক দূর অব্দি তাকে ফলো করতে লাগলাম। ছুটতে ছুটতে অনেকটা পথ পারি দিয়ে এলাম। বাট হঠাৎ করে লোকটা গায়েব হয়ে গেল। আমি চারিপাশে তাকে খুঁজতে লাগলাম, বাট সে কোথাও নেই আমি হতাশ হয়ে রাস্তায় বসে পড়লাম, কারণ আমার ফোন, টাকা, সব ওই ব্যাগেই ছিল। আমি এখন কী করব ভেবে পাচ্ছিনা।

আমি আস্তে আস্তে বাসায় চলে এলাম। দরজা নক করতেই মামী এসে দরজা খুলে দিল।

…….কী রে পুস্পিতা তোকে এমন কেনো দেখাচ্ছে?

……মামী আসলে আমার ব্যাগটা সিনতাই হয়ে গেছে।

এরপর মামী কে সব খুলে বললাম মামী সব শুনে বলল।

…….চল পুলিশ এর কাছে যাবো এখানের আইন খুব কড়া।

…….না থাক মামী ভালো লাগছে না।

আমি রুমে চলে এলাম, মামা বাড়িতে এসে আমাকে জোর করে শপিংয়ে নিয়ে গেল, একটা ফোন কিনে দিল সাথে আগের সিমকার্ড তুলে দিল। বাট বাংলাদেশের সিমটা?

আমি বাসায় এসে ফোনে গুগল একাউন্ট ওপেন করলাম। সব চলে এলো আমি ফেসবুক একাউন্ট ওপেন করতেই দেখলাম, ইরোর দেখা যাচ্ছে। মানে কী? বুঝা যাচ্ছে কেউ হয়ত হ্যাক করে রেখেছে আমার ফেসবুক একাউন্ট। ম্যাসেঞ্জারে গেলাম, সেখানে গিয়ে দেখলাম, ম্যাসেঞ্জারেও সেইম সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আমি এখন কী করব? শুভাকাঙ্ক্ষী কে কীভাবে খুঁজব? এই আইডিটাই তো ছিল তার সাথে আমার পরিচয়ের একমাত্র প্রমাণ, আর কিছু নেই তার আমার কাছে, আমি কীভাবে তাকে চিনবো? প্রোফাইলে যাচ্ছি আবার ম্যাসেঞ্জারে যাচ্ছি কিন্তু কোনো কিছু কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। এখন আমার খুব কান্না পাচ্ছে, নিজেকে বড়ই অসহায় মনে হচ্ছে। আমি এখন তাকে কোথায় খুঁজে পাবো, এই আইডি ছাড়া তার সাথে যোগাযোগ করার কোনো অপশন আমার কাছে নেই। আমি এখন তাকে কোথায় খুঁজব?

……আপু তুমি কাঁদছ কেনো?

…….(চোখ মুছে) কিছু না ভাই।

……..তোমার বাসার কথা মনে পড়েছে?

…….হ্যা ভাই।

…….আপু কান্না করে না আমি আছি তো।

আমার চোখ মুছে দিয়ে মাইনুল বলল। আমিও কান্না থামিয়ে নিলাম। ওর সাথে দুষ্টুমি করলাম অনেক সময়, এরপর মাইনুল পড়তে চলে গেল। আমি ফোন হাতে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় আবার নতুন আইডি খুললাম সব সেইম ইনফরমেশন দিয়ে যাতে সে আমাকে চিনতে পারে। আমি ফোন নিয়ে তার নাম সার্চ দিয়ে দেখতে পেলাম ২টা আইডি সেইম ছিল সব কিছু রিকোয়েস্ট দেবো কী দেবো না ভাবছি বাট ভেবে পাচ্ছিনা। সে কোনটা হবে? যদি সে না হয়? আমি ফোন রেখে আবার চুপিসারে বসে রইলাম।

বেশ কিছুক্ষণ পরে ফোনে টুং করে ম্যাসেজ আসলো, তড়িঘড়ি করে চেক করতেই দেখলাম হ্যা শুভাকাঙ্ক্ষী নামের আইডি দিয়ে রিকোয়েস্ট এসেছে, আমি এক্সেপ্ট করলাম।

…….কে আপনি?

…….ভুলে গেছেন আমাকে? আমি আপনার সেই চির চেনা শুভাকাঙ্ক্ষী।

…….হুম চিনেছি।

…….আচ্ছা আমি আনফ্রেন্ড হলাম কীভাবে?

…….আসলে আমার আইডিটা কেউ নষ্ট করে দিয়েছে, তাই।

……ওহ আচ্ছা?

আমি শুভাকাঙ্ক্ষীর সাথে কথা বলতে বলতে ভাবছি এমনটা কে করল? আমি শুভাকাঙ্ক্ষীর সাথে কথা বলছিলান এমন সময় আর একটা রিকোয়েস্ট ম্যাসেজ এলো, রিকোয়েস্ট অপশনে গিয়ে দেখলাম সেইম নাম, আইডিতে গিয়ে দেখলাম সব সেইম ইনফরমেশন, আমি সব দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলাম। ম্যাসেজ রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করতেই সে ম্যাসেজ দিল।

…….কী হলো আমাকে আনফ্রেন্ড করেছেন কেনো?

আমি অবাক হয়ে গেলাম, আমি তবে কার সাথে কথা বলছি কে? দুজন কোথা থেকে আসলো? আমি কাকে বিশ্বাস করব? ওদিকে প্রথম শুভাকাঙ্ক্ষী ম্যাসেজ দিল।

…..কী হলো কথা বলছেন না যে?

……(দ্বিতীয় শুভাকাঙ্ক্ষী) কী হয়েছে পুস্প? আমি কী কোনো ভুল করেছি?

আমি ফোন বিছানায় ছুড়ে মেরে কান্না করতে করতে মেঝেতে বসে পড়লাম।

রাত তখন ১১ টা বাজে আমি ফোন আর হাতে নিলাম না।

সকালে ঘুম থেকে উঠে আগে ফোনের সব ইনফরমেশন লিখে রেখে আমার সব ইনফরমেশন গুগল একাউন্ট থেকে ডিলিট করে ফোনে রিস্টার্ট দিলাম। এরপর সব আবার নতুন করে শুরু করলাম। আইডিটা ওপেন করে দেখলাম অনেক ম্যাসেজ জমা হয়েছে দুজনের, আমি কোনো রিপ্লাই দিলাম না। ফোন রেখে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে কাজে চলে এলাম।

এভাবেই কাটতে থাকল বাকি দিন গুলো। প্রায় আরও মাস খানেক চলে গেল, ইদানীং আব্বু, মা, আর স্যার এদের সাথেই কথা হয়, শুভাকাঙ্ক্ষীর সাথে আর কথা হয় না। আমি কাকে সত্যি ভাবব? স্যার ও একটু ভাড় ভাড় কথা বলে।

আমি শুভাকাঙ্ক্ষী কে বলে ছিলাম একটা অন্ততপক্ষে প্রমাণ দিতে কে সে? সে বলে ছিল আমার খুঁজতে হবে না সে চলে আসবে আমার কাছে। তবে থাকনা সেই অপেক্ষাই দুজনার মাঝে। আমি এখন পড়াশোনার দিকে ভীষণ মনযোগী হয়েছি।তাই এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই এখন আমার।

পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে মন খারাপ বাড়ছে বয়ে কমছে না। কিন্তু মাইনুলের সাথে সময় কাটিয়ে সেই মন খারাপটা কমিয়ে নিচ্ছি। ভাবছি এখানে তাকে না পাই, দেশের মাটিতে গিয়ে খোঁজ করে নেবো। এভাবেই ব্যস্ততায় সময় কেটে যাচ্ছে। ভাবলাম আমার এসব নিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকলে চলবে না। আমার বাবা মাকে ছেড়ে এতদূর থাকার, এত কষ্ট করেছি যেই সফলতার জন্য, সেই সফলতা অর্জন করতেই হবে। তাই খুব খুব মনযোগী হয়ে পড়লাম পড়াশোনার দিকে, এত ব্যস্ততার মাঝে সব কিছুই জেনো ভুলে গেছি।

যখন মন খারাপ বেশি হয় তখন স্যারের গিফট-টার খোঁজ করি। সবার দেওয়া গিফট গুলো দেখা হয়েছে অনেক আগেই বাট স্যারের গিফট-টা কোথায় জানো হারিয়ে গেছে, অনেক খুঁজেও পেলাম না। আজও অনেক খুঁজলাম বাট পেলাম না। কোথায় যেতে পারে বুঝতে পারছি না।

আজ রাইয়ানের হাতে একটা জিনিস দেখলাম খুব অবাক লাগছে যা দেখে। রাইয়ানের হাতে #নীলফড়িং এর একটা ট্যাটু লাগানো ছিল। যা দেখে আমি অবাক হলাম কিছুটা।

বাসায় চলে এলাম, ফোনটা হাতে নিয়ে খুব নিঁখুত ভাবে ম্যাসেজ গুলো চেক করতে নিলাম, বাট সেইম ম্যাসেজের ধরণ দুজানার, কীভাবে বুঝব আমি? দুজনেরই অনেক অনেক ম্যাসেজ জমে ছিল ফোনে। আমি ভেবেই অবাক হচ্ছি কে এই অন্য লোকটা? যে কিনা একেবারে আমার শুভাকাঙ্ক্ষীর মতো। আমাদের দুজনের সব কথা জানে সব একই রকম কথা, কথার ধরণ। আমি কীভাবে জানব কে সত্যি কে মিথ্যা?

এভাবেই চলতে লাগল, দিন গুলো। পরিক্ষা ভালোয় ভালোয় শেষ হয়ে গেল। এখান থেকেই অনেক অফার আসতে শুরু করল, বাট আমি এই দু-বছরই অনেক কষ্টে কাটিয়েছি, আর থাকতে পারব না কোনো ভাবে। মামা ছুটি নিলো, তারাও আমার সাথে যাবে দেশে, দু-মাস থেকে আবার ফিরে আসবে। যেহেতু আমি এখানে এতদিন ছিলাম এখন চলে গেলে তাদের মন খারাপ লাগবে তাই। আর অনেক দিন হয়েছে তারা দেশে যায়ও নি তাই যাবেন সবাই মিলে।

যাওয়ার জন্য জামা কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছিলাম, ঠিক তখনই মামী ড্রয়ারের নিচ থেকে কিছু একটা বের করে নিয়ে এগিয়ে আসলো।

……..পুস্পিতা এটা কী তোর?

আমি তাকিয়ে দেখলাম স্যারের সেই গিফটের বক্সটা। তাই মামীর হাত থেকে বক্সটা নিয়ে।

……হ্যা মামী এটা আমার হারিয়ে গিয়ে ছিল বাট আপনি কোথায় পেলেন?

…….ওই তো ড্রয়ারের নিচে মাইনুলের বল চলে গিয়েছিল তা আনতে গিয়ে পেলাম।

…….ধন্যবাদ মামী আমি অনেক খুঁজেছিলাম বাট ওখানে খোঁজ করা হয়নি।

মামী চলে যেতেই গিফটা খুলতে নিলাম। এর মধ্যে ফোন বেজে উঠল। তাই গিফট-টা সুটকেসে রেখে ফোন রিসিভ করলাম।

…….হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।

……🤫

…….জ্বি বলছি।

…….🤫

…….অবশ্যই ওকে ওকে।

ফোন রেখে মামীর কাছে চলে এলাম। মামীর সাথে মিলে বাকি সব গুছিয়ে নিলাম। সব গুছানো শেষ করলাম। সবার জন্য কিছুনা কিছু গিফট নিয়ে নিলাম। মামী আর আমি শপিং করলাম।

আমরা প্লেনে উঠে রহণা দিলাম। কাউকে না জানিয়েই আসলাম, ভাবলাম এসে সবাইকে সারপ্রাইজ দেবো।

আমরা সরাসরি বাসায় চলে এলাম। খুব আনন্দ লাগছে কতদিন পরে সবাইকে দেখব ভেবে। খুব এক্সাইটেড হয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকলাম, দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম বড় একটা তালা ঝুলে আছে। যা দেখে একটু চিন্তিত হলাম, বাট ভাবলাম হয়ত কোথাও গিয়েছে। তাই নিচের ফ্লাটের ভাড়াটিয়া আন্টিকে জিজ্ঞেস করলাম।

…….আসসালামু আলাইকুম আন্টি উপর তালার সবাই কোথায়?

…….আরে তুমি পুস্পিতা না?

……জ্বি আন্টি।

……আরে তোমার মা তো অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তাই তাকে কাল সকালে হসপিটালে নিয়ে গেছে সবাই মিলে।

……হোয়াট? কোন হসপিটালে আন্টি?

……ওই যে পাশের বিল্ডিংয়ে ডক্টর ফাইয়াজ সেই তো হসপিটালে নিয়ে গেছে। আমিও গিয়েছিলাম কাল বিকেলে দেখে এলাম।

…….আন্টি কয় তালায় কোন ক্যাবিনে?

আন্টি সব ডিটেইলস বলল। তার থেকে সব জেনে আমি মামা মামী মাইনুল কে নিয়ে রহণা দিলাম। সুটকেস গুলো আন্টিদের বাসায় রেখে গেলাম। সুটকেস যেহেতু লক করা সমস্যা হবে না।

আমরা সিএনজি নিয়ে হসপিটালে রহণা দিলাম। চিন্তায় বুক ভাড় হয়ে যাচ্ছে। আমি তো কান্নাই করে যাচ্ছি অনবরত। মামী শান্তনা দিচ্ছেন।

……..মামী হঠাৎ করে কী হলো মায়ের?

…….তেমন কিছু নয়। দেখবি আপা ঠিক আছে, হয়ত প্রেশার বেড়ে ছিল।

…… মামী তাই জেনো হয়। এতদিন পড় দেশে ফিরেছি কই সবাইকে হাসি মুখে দেখব, তা নয় মাকে ওই হসপিটালে দেখতে হবে এখন আমার?

…….চিন্তা করিস না দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।

অনেক সময় পড়ে আবার ফিরে এলাম সেই চির চেনা জায়গায়। হসপিটালে এসে আন্টির বলা অনুযায়ী ফ্লোরে গিয়ে ক্যাবিনে ঢুকলাম। ক্যাবিনের দরজা ভ্যাজানো ছিল নক না করেই প্রবেশ করলাম, এতটা চিন্তিত ছিলাম সেদিকে খেয়ালই ছিলনা, যে নক করি বা কিছু, ভেতরে গিয়ে দেখলাম আব্বু দাঁড়িয়ে আছেন মা বেডে শুয়ে আছে স্যালাইন চলছে। আর ফাইয়াজ স্যার মায়ের পাশে চেয়ারে বসে মায়ের প্রেশার মাপছিল। আমার ভেতরে প্রবেশ করার শব্দে সবাই ঘুরে তাকাল। আমাকে দেখে সবাই অবাক প্রায়। আমার চোখে পানি ছিল, মায়ের কী হয়েছে সেই ভেবে। আমি কোনো ভাবেই নিজের চোখের পানি থামিয়ে রাখতে পারছিলাম না। আব্বু আমাকে দেখে বলে উঠল।

…….পুস্পিতা তুই এখানে কীভাবে?

…….আব্বু মায়ের কী হয়েছে?

…….আরে তেমন কিছু না, ওই একটু ব্লাডে কলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। এখন ঠিক আছে।

……পুস্পিতা এসেছিস? আমার কাছে আয়।

স্যার উঠে সরে দাঁড়ালেন। আমি মায়ের সামনে গিয়ে ফ্লোরে আধবসা হয়ে বসে পড়লাম, মায়ের মাথার কাছে। মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠল।

…….তুই আগে জানাস নি কেনো আসবি?

…….আমি তো তোমাদের সারপ্রাইজ দেবো ভেবেছিলাম, বাট নিজেই যে সারপ্রাইজ পেয়ে যাব ভাবতে পারিনি।

……এই পাগল আমি একদম ঠিক আছি, বিশ্বাস না হলে ফাইয়াজ কে জিজ্ঞেস কর।

…….সে তো তোমাদের মুখের কথাই বলবে, তবে আমার থেকে কোনো কথা লুকিয়ে লাব হবে না, আমি নিজেই যাচাই করে নেবো।

…….আচ্ছা বাবা নিস।

আমি চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালাম, মামা-মামী এসে মায়ের সাথে কথা বলল। স্যার ক্যাবিন থেকে চলে যেতে নিলো, তাই আমিও স্যারের সাথে বের হলাম। স্যার চলে যাচ্ছিল, তাই পিছু ডাকলাম।

…….স্যার।

…….(স্যার পিছু ফিরে) আমাকে বলছ?

……জ্বি স্যার। ধন্যবাদ।

……কী জন্য?

……এই যে আপনার দেওয়া কথা আপনি রেখেছেন তাই।

……(স্যার হালকা হাঁসল) তাই? আচ্ছা তবে চলি।

……স্যার আপনি কী বেশি ব্যস্ত?

……না তো কিন্তু কেনো?

……না আসলে চলে যাচ্ছেন তাই জিজ্ঞেস করলাম।

……হুম কারণ আন্টির এখন আমাকে প্রয়োজন হবে না। তার ডক্টর মেয়ে এখন চলে এসেছে, সেই এখন আন্টির খেয়াল রাখতে পারবে।

…….বাট স্যার আমি তো এসব বিষয়ে নতুন তাও গাইনি ও সার্জারী নিয়ে পড়াশোনা করেছি। আমি অতটা বুঝব না, আপনি যতটা বুঝবেন, তার মধ্যে আপনি পুরাতন সব বিষয়ে, তাই আপনার প্রয়োজন অপরিসীম।

…….পুস্পিতা আমি যতটুকু জানি তুমি পারবে, তাই আমার আর প্রয়োজন পড়বে না। যেহেতু আন্টির ওষুধ সব লেখা আছে, কখন কোনটা দিতে হবে সব কিছু লেখা রয়েছে, এর থেকে বেশি কিছু মনে হয় না আর প্রয়োজন পড়বে।

…….স্যার আপনি কী কোনো বিষয় আমার উপর রেগে আছেন?

……(হালকা হেসে) তোমার উপর? কোথায় না তো। আচ্ছা দেরি হচ্ছে আমি এখন আসছি।

স্যার চলে গেলেন, কেমন জানি মনে হচ্ছে স্যার কোনো বিষয়ে রেগে আছে হয়ত আমার উপর।

আমি ক্যাবিনে এসে মায়ের পাশে বসলাম। মায়ের হাত ধরে মায়ের সাথে কথা বললাম। বাট মা খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে। উঠে বসতেও পারছে না ঠিক মতো, আমি রিপোর্ট গুলো সব দেখলাম। সবই ঠিক আছে। আব্বু আমাকে বাসায় যেতে বলল, বাট আমি তাকে মামা মামীকে নিয়ে যেতে বললাম। আমি মায়ের কাছে আছি বললাম। আব্বু সবাইকে নিয়ে চলে গেলেন। রাত হয়ে গেছে।

আমি মায়ের এক পাশেই আধশোয়া হয়ে বসে রইলাম। মাথা দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে, তখন রাত ১০:৩০ মিনিট ঘড়িতে। আমি চোখ বন্ধ করে বসে ছিলাম। হঠাৎ দরজা নক করে কেউ আসলো ক্যাবিনে, আমি তড়িঘড়ি করে উঠে ঠিক করে বসে পড়লাম। তাকিয়ে দেখলাম স্যার ছিল, সে আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে, মাকে ভালো করে দেখল, প্রেশার মাপলো, ডায়াবেটিস মাপলো সব নিজের হাতেই করল। যা অন্যের বেলায় কখনো করত না একজন ডক্টর।

স্যার মাকে দেখে চলে যেতে নিলো, ঘুরে গিয়ে বলল,

……আমি হসপিটালেই আছি কোনো প্রবলেম হলে ডেকে নিও।

…….জ্বি স্যার।

স্যার চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে একজন ওয়ার্ড বয় এসে একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে গেল। খুলে দেখলাম কিছু খাবার, বিরানির প্যাকেট ছিল। আমার যতটুকু মনে আছে আব্বু কে বারণ করেছিলাম খাবার দিতে, মায়ের জন্য নিয়ে আসা রুটি সবজি রাখা ছিল ওতেই হবে বলে ছিলাম, কিন্তু এগুলো কে দিল? আব্বু কে মায়ের ফোন থেকে একটা ফোন দিলাম। সে জানাল সে পাঠায় নি। তবে ফাইয়াজ স্যার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল আমার জন্য কী, খাবার দিয়ে গেছে আব্বু? বুঝতে পারছি হয়ত স্যারই পাঠিয়েছেন।

সারারাত মায়ের পাশে বসে থাকতে থাকতে বোর ফিল করছিলাম। অর্ধ রাতে একটু ক্যাবিন থেকে বের হলাম। দেখলাম চারিদিকে সবাই ঘুমিয়ে আছে, নার্সরা কেউ নেই না আছে কোনো ইন্টার্নি ডক্টর। হটাৎ দেখলাম একজন ছোটাছুটি করছে, যা দেখে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

…….এক্সকিউজমি কী হয়েছে এভাবে আতঙ্কিত হয়ে কোথায় যাচ্ছেন?

…….আসলে কোনো নার্স কে দেখছি না। আমার স্ত্রী অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

…….নার্স-রা হয়ত সবাই ওই রুমে। কিন্তু তারা তো বুঝবে না। আচ্ছা ওনার কী সমস্যা?

…….আমার ওয়াইফের বাচ্চা হবে, সিজারের জন্য সন্ধ্যায় ভর্তি করেছি, গাইনি ডাক্তার নাকি আজ আসে নি, তাই সিজার হয়নি, ওনারা বলেছে সময় আছে এখনো হাতে। কিন্তু ওর তো অনেক কষ্ট হচ্ছে।

…….আচ্ছা আমি যাচ্ছি চলেন।

…….কিন্তু আপনি?

…….আপনি চলেন আপনার স্ত্রী যেহেতু একা সেখানে যাওয়া সব থেকে জরুরি।

…….ঠিক আছে চলেন।

আমি ওনার সাথে ক্যাবিনে গেলাম, সেখানে গিয়ে দেখলাম ওনার স্ত্রী ব্যথায় ছটফট করছেন। ওনাকে বাহিরে যেতে বলে, আমি দেখে যতটুকু বুঝতে পারছি, ওনার সিজারের প্রয়োজন হবে না। নর্মাল ডেলিভারিতেই বাচ্চা হবে। তাই রুম থেকে বেড় হয়ে আমি বললাম।

…….আপনি ওই খানের রুমে গিয়ে একজন নার্স কে ডেকে নিয়ে আসেন, না আসতে চাইলে বলবেন ফাইয়াজ স্যার ডেকেছে ওকে?

……..জ্বি

লোকটা এগিয়ে গেল, অল্প সময়ের মধ্যে নার্স এগিয়ে এলো।

……জ্বি ফাইয়াজ স্যার কোথায়?

…….আচ্ছা আপনারা এভাবে সেবা দেন? এই পেশেন্ট এর কতটা খারাপ অবস্থা জানেন? আপনাদের তো পড়ে দেখছি। এখন কাগজ কলম আছে আপনার সাথে?

……..জ্বি কিন্তু আপনি কে?

…….আমার পরিচয় ফাইয়াজ স্যারের থেকে পড়ে জেনে নিবেন আগে যা চেয়েছি তা দিন। আর ওনাকে এখনি ওটিতে নিয়ে যাওয়ার ব্যাবস্থা করেন।

…….কিন্তু আপনার কথায় আমরা কিছুই করতে পারব না সরি।

…….তবে কার কথায় পারবেন? তাকে গিয়ে এখনি ডেকে নিয়ে আসেন যান।

…..জ্বি নিশ্চয়ই।

.নার্স এগিয়ে গিয়ে ফাইয়াজ স্যার কে ডেকে নিয়ে আসলো। স্যার এসে আমাকে দেখে।

…….পুস্পিতা তুমি এখানে?

…….স্যার ওনার পেইন শুরু হয়েছে এখনি কিছু একটা করতে হবে। প্লিজ স্যার।

……হুম আমি দেখছি। নার্স ম্যাডাম যা বলছে তা করেন।

……জ্বি স্যার।

নার্স গিয়ে সব ব্যবস্থা করে এলো স্যারও সাহায্য করল। আমি পেশেন্ট এর সাথে ওটির ভেতর চলে এলাম। পেশেন্ট এর হাতে স্যালাইন পুশ করলাম।

অল্প সময়ের মাঝেই একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তান হলো ওনাদের। কিন্তু বাচ্চা শ্বাস নিচ্ছিল না। অনেক চেষ্টা করছিলাম। শেষ মেশ দিসা না পেয়ে মুখের ভেতর শ্বাস দিলাম। অনেক সময় পড়ে বাচ্চা কান্না করে উঠল। যা দেখে আমার ভয় নিমিষেই মিটে গেল। আমি বাচ্চাকে তার মায়ের গালের সাথে ধরলাম। মা দেখল তার নবাগত সন্তান কে। নার্স কে বাচ্চা পরিষ্কার করতে দিয়ে সব গুছিয়ে নিলাম।

…….নার্স ওনাকে ওনার রুমে শিফট করার ব্যবস্থা করেন।

আমি গ্লাভস দুটো ফেলে হাত পরিষ্কার করে বাচ্চা নিয়ে এগিয়ে গেলাম হাসি মুখে। স্যার আমার মুখে হাসি আর কোলে বাচ্চা দেখে সেও হাসল। বাচ্চা কে তার বাবার কোলে দিলাম।

……ধন্যবাদ ম্যাডাম।

…….ইটস ওকে। এটাই আমার কাজ।

…….Congratulations ডক্টর পুস্পিতা, এটা তোমার প্রথম লড়াই ছিল।

…….ধন্যবাদ স্যার। আসলে আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

……হুম এটাই স্বাভাবিক।

এরপর হাঁটতে হাঁটতে স্যারের সাথে আরও অনেক কথা বললাম ক্যাবিনের সামনে এসে স্যার আমাকে এগিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। আমি মায়ের ক্যাবিনে চলে এলাম। স্যার তার ক্যাবিন রুমে।



চলবে……….।

নীলফড়িং পর্ব-০৫

0

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#পর্ব ৫
.
.
আজ সবাই মিলে বিদায় জানাল আমাকে। প্লেনে উঠে বসে পড়লাম। খুব কান্না পাচ্ছে, বার বার চোখ মুছে নিচ্ছি টিস্যু পেপার দিয়ে। হঠাৎ কেউ পাশে এসে বসে পড়ল। তাকিয়ে দেখলাম চেনা চেনা মনে হচ্ছে। একটু ভালো করে ভাবতেই মনে পড়ল, এ তো আমার সাথেই একই হসপিটালে ছিল বাট ওনার ওয়ার্ড ভিন্ন ছিল। সম্ভবত দুই তালায়, আমার মুড এতটাই খারাপ ছিল যে আমি এখন আর ওনার সাথে কথা বলতে পারলাম না। শুধু বন্ধ জানালার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

…….এক্সকিউজমি।

লোকটার কথায় আমি চোখ মুছে তার দিকে তাকালাম।

……আরে আপনি? আমি ভুল না ভাবলে আপনি পুস্পিতা রাইট?

……জ্বি।

……আমাকে চিনতে পারছেন?

…..জ্বি।

……খুব ভালো হয়েছে, আমি ভাবছিলাম আমি একাই যাচ্ছি, তাও ভালো অচেনা দেশে চেনা মানুষ গুড গুড।

আমি হালকা হেঁসে চুপ করে বসে রইলাম।

লোকটা কিছু ক্ষণ পর পর কিছু না কিছু বলেই যাচ্ছে, বাচাল মনে হচ্ছে। বিরক্তি ধরিয়ে দিচ্ছে এমনিতেই মন ভালো না তার উপর, এত কথা শুনতে কার ভালো লাগে?

আমরা এসে পৌঁছে গেলাম। অনেক জার্নি শেষে। তাও শান্তি এসেছি তো।

আমি এয়ার্পোরটের বাহিরে আসতেই দেখলাম, আমার নামের সানবোর্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমার ছোট মামা, আমি তারাহুরো করে এগিয়ে গেলাম।

…….মামা কেমন আছেন?

……আমি ঠিক আছি তুই কেমন আছিস?

……আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

মামার গাড়ীতে উঠে বসে পড়লাম। হুম আমার মামা এখানেই থাকে যার জন্য আব্বু মা আমাকে আসতে দিয়েছেন খুব সহজেই না হয় আব্বু কে রাজি করাতে পারলেও মাকে রাজি করানো যেত না।

আমরা বাসায় গেলাম। দরজা খুলে দিল মামী।

…….কেমন আছিস পুস্পিতা?

……জ্বি মামি আলহামদুলিল্লাহ আপনি?

……হ্যা আমি ভালো আছি। আয় ভেতরে আয়।

আমি মামা মামীর সাথে ভেতরে এলাম। অনেক সময় কথা বললাম, মামার জন্য মায়ের দেওয়া জিনিস গুলো বের করে মামাকে দিলাম। এরপর মামী একটা রুম দেখিয়ে দিল। আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসলাম। ভাবছি বাসায় একটা ফোন দিতে হবে। তাই বাহিরে এসে মামার কাছে ফোন চাইলাম। মামা ফোন দিয়ে দিল, সবার সাথে কথা বললাম আব্বু মা, এদের সাথে। মা খুব কান্না করছিল, আব্বু লুকিয়ে লুকিয়ে চোখের পানি মুছে নিচ্ছিল বারবার।

ফোন-টা আজ আর ওপেন করা হলো না। তাই মন খারাপ লাগছে খুব হালকা করে কিছু খেয়ে নিলাম। রুমে গিয়ে বসে রইলাম। এখানে মামা-মামী ছাড়া ছোট একটি ভাই আছে মাত্র ৮ বছরের মাইদুল। আমি বিছানায় শুয়ে ছিলাম কিন্তু ভালো লাগছে না কিছুতেই খুব কান্না পাচ্ছে। তাই সুটকেস-টা নিয়ে খুলে সবার দেওয়া গিফট গুলো বের করে সামনে নিলাম। এক এক করে গিফট গুলো খুলে দেখতে শুরু করলাম, হটাৎ হাতে উঠল স্যারের গিফট-টা, ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির রেখা ফুঁটে উঠল। আমি গিফট খুলে দেখছিলাম, গিফট-টা পুরাপুরি খোলার আগেই মামী ডাক দিল, তাই রেখেই মামীর কাছে এগিয়ে গেলাম।

…….হ্যা মামী?

……তোর জন্য তোর মামা কত জায়গায় ঘুরে ঘুরে তোর পছন্দের খাবার সংগ্রহ করেছেন, তা শুধু সেই জানে। নে খেয়ে নে।

…….মামী এত কষ্টের কী প্রয়োজন ছিল, আমি তো এখন লম্বা সময়ের জন্য এখানেই থাকব।

……হুম কিন্তু এখন তো প্রথম এলি এখন তোর একটু খাতিরযত্ন করতে হবে না। পরের টা পরে।

আমি খাবার থেকে প্রথমে কিছুটা মামীকে খাইয়ে দিলাম এরপর নিজে খাওয়া শুরু করলাম। খাবার শেষ করতেই ছোট ভাইটা এসে আমার হাত টেনে ধরে নিয়ে গেল তার রুমে যেখানে কিনা খেলনায় ভরপুর, তার সাথে খেলতে বলল আমাকে, তাই খেলতে শুরু করলাম। দুজনে খেলতে খেলতে কখন যে সময় চলে গেল টেরই পাইনি, মামী এসে ডিনারের জন্য ডেকে গেল। তাই দুজনে খেলা রেখে খেতে চলে এলাম।

খাওয়া-দাওয়া শেষ করে মামা-মামীর সাথে অনেক সময় কথা বললাম, তার মধ্যে দিয়ে ছোট ভাইটা এসে আমার হাত ধরে টেনে আমার রুমে নিয়ে গেল।

…….আপু আমরা আজ এক সাথে ঘুমাব।

……তাই?

……হুম।

……ওকে জানু চলো।

আমার সাথে সাথে ভাই গিফট গুলো সব ড্রয়ারে রেখে দিল। দুজনে মিলে জামা কাপড় সব গুছিয়ে ড্রয়ারে রাখলাম। বাকি জিনিস গুলো বই সব কিছু গুছিয়ে রাখলাম দুজনে, এরপর দু’জনে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ছোট ভাইটা আমার গলা পেচিয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেল। আমিও তার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট করে মামার সাথে বেরিয়ে পড়লাম। মামা আমার সাথে সাথে সব জায়গায় গেল, সব গুছিয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে দুপুর পার হয়ে গেল। মামা আমি দুজনে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে একটু রেস্ট নিলাম এরপর বাকি কাজ গুলোর জন্য আবার বের হলাম।

সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে খুব ক্লান্তি ফিল করছিলাম। তাই গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ভাইটা আর শুয়ে থাকতে দিলে তো? সে কান্নাকাটি করে আমাকে উঠিয়ে তার সাথে খেলতে নিয়ে গেল।

রাতে দুজনে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
মাইদুল অল্প সময়ের মাঝেই ঘুমিয়ে পড়ল। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে নেট ওপেন করলাম, দেখলাম অনেক ম্যাসেজ জমেছে। সবার প্রথমে ফাইয়াজ স্যারের নামটা ভেসে উঠল। ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে দেখলাম লেখা রয়েছে একটা নয় একাধিক ম্যাসেজ ছিল। মানে কম করে হলেও ১০ বার সে ম্যাসেজ সেন্ড করেছেন। আমি তার প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিলাম। সে সাথে সাথেই রিপ্লাই দিল। মনে হচ্ছে সে আমার ম্যাসেজের জন্যই বসে ছিল।

তার সাথে কথা বলতে বলতে আমি অন্য ম্যাসেজ গুলো চেক করতে গেলাম দেখলাম সেই শুভাকাঙ্ক্ষীর ও ম্যাসেজ ছিল অনেক। তাকেও রিপ্লাই দিলাম। এরপর আস্তে আস্তে সবার ম্যাসেজর রিপ্লাই দিলাম। শুভাকাঙ্ক্ষী আরও কিছুক্ষণ কথা বলল আমার সাথে, কিছুক্ষণ পরে ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়লাম কাজের তাগিদে।

বাড়িতে ফিরে দেখলাম মাইনুল গালে হাত দিয়ে ছোপার উপর বসে আছে।

…….কী হয়েছে আমার ভাইটার?

…….আপু তুমি কথা বলবে না আমার সাথে।

……কেনো কেনো?

…….আমি রাগী রাগী হয়ে আছি দেখছ না?

……ওহ তাই? আপুর সাথে রাগী?

……হুম তুমি কোথায় ছিলে সারাদিন, আমি তোমাকে মিস করেছি।

……ওহ মাই সুইটহার্ট আমি তো জানতাম না। আপু কাজ করছিলাম তো তাই দেরি হয়ে গেল। আচ্ছা এখন আপু খেলবে আমার মিষ্টি ভাইয়ের সাথে চলো চলো।

আমি জোর করে মাইনুল কে নিয়ে রুমে চলে এলাম, ফ্রেশ হয়ে আমার রুমে বসেই খেলতে শুরু করলাম। আব্বু মায়ের সাথেও ফোনে কিছুক্ষণ কথা বললাম ভিডিও কলে।

আজও রাতে শুভাকাঙ্ক্ষীর সাথে অনেক কথা বললাম, ভালো লাগে তার সাথে কথা বলে, একা একা ভাবটা অনেক অংশে কমে যায়। মাইনুল আর শুভাকাঙ্ক্ষী দুজনে মিলে আমার সময়টা কাটাতে অনেক সাহায্য করছে।

সকালে উঠে আজও চলে এলাম, মামা আমাকে আমার গন্তব্যে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় রোজ। আজ এসে সেই ছেলেটার সাথে দেখা হয়ে গেল।

…….হায় পুস্পিতা।

…….হ্যালো।

…….খুব ভালো হয়েছে আপনি এখানেই আছেন তাই দেখে। আসলে এখানে এসে আমি খুব একা হয়ে পড়েছিলাম, আপনাকে দেখে কিছুটা হলেও ভালো লাগছে।

…….তাই?

……হ্যা তাই।

…….আচ্ছা আপনি আমাকে চিনতে পারছেন তো?

…….হুম মোটামুটি, আপনার নাম মনে নেই তবে চেহারা চেনা পরিচিত।

…….আমি রাইয়ান।

…….ওহ আচ্ছা।

এরপর রাইয়ান আর আমি আরও কিছুক্ষণ কথা বললাম। রাইয়ানের সাথে কথা বলে খুব ভালো লাগল।

এভাবেই দিন গুলো যেতে লাগল। এখন রাইয়ানের সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। সে সব সময় আমার মন ভালো রাখার চেষ্টা করে, আমার কখন মন খারাপ কখন ভালো তাও সে বুঝতে পারে। রোজ আমাকে মামার বাসা অব্দি এগিয়ে দিয়ে যায়। অনেক ভালো একজন বন্ধু হওয়ার সকল গুণ তার মাঝে রয়েছে। এভাবেই কেটে গেল বছর খানেক।

এদিকে স্যার মাঝে মধ্যে ফোন করে আমার কেমন কাটল দিন, কেমন চলছে সময় সব কিছু জিজ্ঞেস করে। স্যারের সাথেও এখন অনেকটা ফ্রী হয়ে গেছি, আব্বু মা দুজনেই বলছে স্যার নাকি রোজ দুবার করে বাসায় গিয়ে আব্বুর মায়ের খোঁজ খবর নিয়ে আসে। তাদের কী প্রয়োজন সেদিকেও লক্ষ রাখেন। খুব ভালো লাগছে কথা গুলো জেনে। স্যারের সাথেও একটা বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।

তবে আমি হয়ত এত মানুষের ভীড়ে আবার কারো প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছি। আর সে হলো শুভাকাঙ্ক্ষী তার প্রতিটি ম্যাসেজ আমায় বাধ্য করে তার কথা ভাবতে, সে ম্যাসেজ না দিলে কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগে, তার ম্যাসেজের অপেক্ষায় প্রতি রাতে বসে থাকি, একটা অভ্যাসে সে পরিণত হয়েছে। ভালো লাগে না এখন আর তার ম্যাসেজ ছাড়া। সময় পেলেই ফোন হাতে নিয়ে বসে পড়ি তার একটা ম্যাসেজের আশায়। কী জানি কী হয়েছে আমার। মাঝে মাঝেই তার কথা মনে করে হেঁসে ফেলি। যা দেখে মামী চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করে

…….কী হয়েছে রে?

…….নাহ মামী তেমন কিছু না।

এতটা দূর্বলতা আমি রাবীতের জন্য কখনো ফিল করিনি। কিন্তু আজ করছি তাও একজন অচেনা মানুষের জন্য। যাকে কখনো দেখিনি, যার সাথে ফোন কলে কখনো কথা বলিনি, তার জন্য আমি এতটা ফিল করব কখনো ভাবিনি।

এভাবেই সময় গুলো শেষ হয়ে গেল প্রায়। আজ শপিং করতে গেলাম, ছুটি থাকায় বাড়িতে বসে বসে বোর ফিল করছিলাম, তাই চলে এলাম মাইনুল কে নিয়ে। ঘুরতে ঘুরতে চোখ আঁটকে গেল একটা শার্টের উপর খুব সুন্দর ছিল শার্ট-টা, তাই শার্ট-টা নিয়ে নিলাম। মায়ের জন্য একটা শাড়ী খুব পছন্দ হলো তাই শাড়ীটাও নিয়ে নিলাম। আব্বুর জন্য মামা-মামী মাইনুল সবার জন্য কিছু না কিছু নিলাম। এরপর বাড়ি ফিরে এলাম।

আজ হঠাৎ রাইয়ান ফোন দিয়ে ডাকল, তাই তার বলা অনুযায়ী জায়গায় গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম রাইয়ান দাঁড়িয়ে আছে, আমাকে দেখে এগিয়ে আসল। আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে উঠল।

…….Happy valentine’s day.

…….ওহ এজন্য ডেকেছ। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।

…….(হাটু গেড়ে বসে পড়ে) I love you পুস্পিতা।

আমি ওর এমন অবস্থা, এমন কথা শুনে পুরো চমকে গেলাম। আমি তো তাকে নিয়ে কখনো এমন কিছু ভাবিও নি। তবে সে কী করে ভাবল এমনটা?

……..sorry রাইয়ান আমি তোমাকে কখনো এই নজরে দেখিনি।

…….তবে এখন থেকে দেখবে।

…….Sorry but আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।

…….(উঠে দাঁড়িয়ে গিয়ে) কিন্তু তুমি তো কখনো এমন কিছু বলো নি?

…….বলার প্রয়োজন পড়ে নি। আর এটা আমার একদম পার্সোনাল বিষয় আমি কারো সাথে শেয়ার করতে চাইও নি। বাট তুমিও তো কখনো জিজ্ঞেস করো নি?

……..আমি ভেবেছিলাম তোমার আমার মাঝে এতদিন ধরে যা ছিল…….।

……..সেটা শুধু মাত্র বন্ধুত্ব।

……..আচ্ছা সে কে জানতে পারি?

…….হুম তার নাম জানি না তবে হ্যা সে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী।

…….মানে? নাম না জেনে প্রেমে পড়েছ?

…….হুম পড়েছি, কারণ সে এমনই। তাকে দেখার বা নাম জানার প্রয়োজন পড়ে নি, তার সাথে কথা বলেই তার প্রেমে পড়ে গেছি।

…….(একটু হেঁসে) শুভাকাঙ্ক্ষী এটা তো সেই যার কথা তোমার মুখে আরও কয়েক বার শুনেছি তাই-না?

…….হুম।

…….আচ্ছা কখনো যদি জানতে পারো আমিই সেই শুভাকাঙ্ক্ষী তবে আমার প্রপোজালে রাজি হবে?

……এটা কেমন প্রশ্ন?

……প্লিজ বলো না? ধরে নাও আমিই তোমার সেই শুভাকাঙ্ক্ষী এখন কী করবে?

……Sorry এটা কোনো মজার বিষয় নয়। প্লিজ আমি এই সম্পর্কে একটা কথাও বলতে চাইনা। (চলে যেতে নিয়ে)

…….(হাত ধরে) ওকে ওকে যা হয়েছে বাদ দাও আমি Sorry বলছি। ভালো না বাসো বন্ধুত্ব-টা ভেঙে দিও না। আমি এইটুকু নিয়েই না হয় সুখে থাকব প্লিজ প্লিজ।

……ঠিক আছে।

আমি আর রাইয়ান আরও কিছুক্ষণ ঘুরে ফিরে বাসায় চলে এলাম, রাইয়ান আমাকে এগিয়ে দিয়ে চলে গেল।

আমি বাসায় ফিরে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বই নিয়ে বসে পড়লাম, মাইনুলও বই নিয়ে এলো এরপর দুজন এক সাথে পড়াশোনা করলাম।

রাতে শুভাকাঙ্ক্ষীর সাথে কথা বলছিলাম।

……পুস্প কেমন আছেন আপনি?

…….আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?

……আমি ভালো নেই।

……কেনো?

……কতদিন আপনাকে দেখিনি তাই। আজ খুব দেখতে ইচ্ছে করছে আপনাকে।

…….তবে ভিডিও কল দেই?

……এই না না। আমি এভাবে দেখা করতে চাইনা আপনার সাথে, আমি তো সরাসরি সারপ্রাইজ দিতে চাই, যা দেখে আপনি চমকে যাবেন।

…….তাই? আচ্ছা আপনি কী আমার চেনা পরিচিত কেউ?

…….হতে পারে খুব চেনা। আবার এও হতে পারে অনেকটা অচেনা।

……এতটা কনফিউজড কেনো করছেন? প্লিজ কিছু তো বলেন যার জন্য আমি আপনাকে চিনতে পারি?

……আপনার চিনতে হবে না, আমি নিজে এসেই বলব আমি আপনার খুব পরিচিত শুভাকাঙ্ক্ষী।

…….হুম বুঝেছি আপনি এভাবে বলবেন না। থাক আপনার ইচ্ছে।

…….🧚‍♂️🧚‍♂️🧚‍♂️

……আচ্ছা একটা কথা বলেন তো। আপনি সব সময় #নীলফড়িং ইমোজি কেনো দেন?

…….আমার খুব পছন্দ এই #নীলফড়িং তাই। আপনি নিশ্চয়ই খেয়াল করেন নি আপনার জন্য আমার পাঠানো প্রতিটি গিফটে #নীলফড়িং এর স্টিকার লাগানো রয়েছে, আর এটাই আমার সব থেকে বড় পরিচয়।

…….ওহ আচ্ছা যাক তাও ভালো কিছু তো জানতে পারলাম।

…….হুম অনেক রাত হয়েছে নিশ্চয়ই আপনাদের ওখানে, এখন ঘুমিয়ে যান, আবার সকাল সকাল তো আপনাকে উঠতেও হবে।

…….জ্বি আল্লাহ হাফিজ।

…….আল্লাহ হাফিজ।

এরপর ফোন রেখে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। বেশ কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়েও গেলাম।



চলবে………….।