নীলফড়িং পর্ব-০৮

0
244

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#পর্ব ৮
.
.
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে একটু হাঁটতে বের হলাম, মুক্তিযোদ্ধা পার্কের নদীর পার ধরে অনেকটা দূরে হেঁটে গেলাম, ভাবতে ভাবতে হাঁটছিলাম যার জন্য বুঝতে পারিনি কতদূর চলে এলাম। অনেক চিল্লাচিল্লির শব্দে ধ্যান ভাঙল। তাকিয়ে দেখলাম বরফ কল এলাকা ছাড়িয়ে এসেছি, তাই সেখানের পিস ঢালা পথ দিয়ে সোজা বের হয়ে প্ল্যানেট পার্কের পাশ দিয়ে হেঁটে বের হয়ে এলাম। রাজা বাহাদুর রোড হয়ে বাসায় চলে এলাম। বাসার গেইটে পা দেবো মনে হচ্ছে উপর থেকে কেউ তাকিয়ে আছে, উপরে তাকাতেই দেখলাম স্যার তার রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছেন। আমি চোখ নামিয়ে হেঁটে বাড়ির ভেতর চলে এলাম।

…….কী রে কোথায় গিয়ে ছিলি?

…….হাঁটতে গিয়েছিলাম।

মায়ের কথার উত্তর দিয়ে আমি নিজের রুমে চলে এলাম।

দুপুরের খাবার শেষ করে, রুমে গিয়ে একটু ফোনটা ঘাটাঘাটি করলাম। কিন্তু কিছুতেই মন বসছে না। আমি চুপ করে চোখ বুঝে রইলাম। ২:৪০ মিনিটের দিকে বিছানা থেকে উঠে রেডি হয়ে নিলাম। একটা ব্লু রঙের গোল জামার সাথে ব্লু চুরিদার পড়ে রেডি হয়ে নিলাম, হাতে ব্লাক ঘড়ি। ওড়না গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লাম মা কে জানিয়ে। যেহেতু ৫টায় হসপিটালে যেতে হবে তাই এই সময়টা দিলাম। আমি বাড়ি থেকে বের হলাম তখন ৩:১৫ মিনিট তাই ভাবলাম হেঁটেই যাই। বাহাদুর রোড হয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে চললাম। বেলের্স পার্কে এসে পৌঁছলাম তখন ৩:২৬ মিনিট, তাই বঙ্গবন্ধু ব্রিজের উপর গেলাম সিঁড়ি বেয়ে, এই সময়টা এখানে খুব কম মানুষই থাকে। ৪:৩০ মিনিটের পড়ে দেখা যাবে জোড়ায় জোড়ায় সবাই বসে গল্প করছে। কিন্তু এখন অতটা মানুষ নেই। আমি সিঁড়ি বেয়ে সেখানে গিয়ে দেখলাম দুজন ব্যক্তি দু-পাশে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছেন খালে গোলাপি রঙের শাপলা গুলো কী সুন্দর করে ফুটে আছে হয়ত তারা তাই দেখছে। আমি সেখানে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবির সামনে দাঁড়িয়ে গেলাম।

…….হুম দুজনেই দেখছি চলে এসেছেন?

আমার কথা শুনে দুজনেই ঘুরে তাকাল। দুজনকেই দেখে আমি অবাক।

…….তুমি এখানে?

…….হুম।

…….আর আপনি?

……হুম কিন্তু রাইয়ান তুমি এখানে কী করছ?

……স্যার আসলে পুস্পিতা আমাকে ডেকে ছিল।

……এক মিনিট পুস্পিতা তোমাকে এখানে কেনো ডাকবে?

…….তা আপনি তাকেই জিজ্ঞেস করেন।

……..পুস্পিতা?

…….আমি এখানে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী কে ডেকেছি অন্য কাউকে নয়।

…….হ্যা আমিই তো তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী।

……এক মিনিট রাইয়ান তুমি পুস্পিতার শুভাকাঙ্ক্ষী? তবে আমি কে?

……তা আমি কীভাবে জানব স্যার?

আমি রাইয়ানের কথায় ততটা অবাক না হলেও স্যারের কথায় ভীষণ অবাক। কারণ আমি কখনো আশা করিনি স্যার আর আমার শুভাকাঙ্ক্ষী? আমার মাথাটা প্রচুর ঘুরছে আমি দাঁড়াতে পারছিলাম না ঠিক করে, আমি ছবির সাথে লেগে দাঁড়ালাম। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে গলা ভিজিয়ে নিলাম।

…….তুমি কীভাবে পুস্পিতার শুভাকাঙ্ক্ষী হবে? কারণ আমি পুস্পিতার সেই শুভাকাঙ্ক্ষী। পুস্পিতা তুমি চিনছ না আমায়?

…….না পুস্প আমি তোমার সেই শুভাকাঙ্ক্ষী, প্লিজ পুস্প তুমি বিশ্বাস করো আমায়।

……..এই তুমি ওকে পুস্প বলে কেনো ডাকছ? এই নামে শুধু আমি ওকে ডাকি।

…….মোটেই না স্যার ওর শুভাকাঙ্ক্ষী ওকে এই নামে ডাকে।

…….হ্যা তবে আমিই তো সেই শুভাকাঙ্ক্ষী।

…….স্যার আপনি মিথ্যা বলছেন কেনো? আমি ওকে ভীষণ ভালোবাসি প্লিজ স্যার মিথ্যা কথা বলবেন না প্লিজ স্যার প্লিজ।

…….আমার মিথ্যা বলার কোনো প্রয়োজন নেই, যে সত্যি তার কাছে হাজারও প্রমাণ থাকে। তুমি প্রমাণ করে দেখাও তুমি সত্যি বলছ?

…….হ্যা আমার কাছেও হাজারও প্রমাণ রয়েছে। (হাতের ট্যাটু বের করে) এই দ্যাখো পুস্প আমার হাতে #নীলফড়িং ট্যাটু রয়েছে।

…….হুম অনেক আগেই দেখেছি আমি। আর কিছু?

…….হ্যা আমি তোমাকে দুটো গিফট দিয়েছিলাম মনে আছে?

…….হ্যা থাকবে না কেনো?

…….একটা তোমার বার্থডের গিফট নুপুর ছিল যাতে ছোট ছোট #নীলফড়িং দিয়ে কারুকাজ করা ছিল। এক তোরা লাল গোলাপ ছিল সাথে। একটা চিরকুট ছিল যাতে লেখা ছিল,

…….শুভ হোক আপনার জন্মদিন। ভালো কাটুক আগামীর পথ চলা। সব দুঃখ হারিয়ে যাক, ভালোবাসা গুলো চিরস্থায়ী হোক, এই শুভকামনা গুলোই রইল আগামীর দিন গুলোতে।

ইতি
আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী।

স্যারের মুখে চিরকুটের শব্দ শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম প্রায় ৩ বছর আগের শব্দ গুলো কী সুন্দর ভাবে সে বলে দিল, একটা অক্ষর এদিক থেকে সেদিক হলো না। কিন্তু রাইয়ান যা বলেছে তাও ভুল নয়, আমি কীভাবে জানব? কে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী?

দুজনেই একটার পরে একটার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে বাট আমি কাকে বিশ্বাস করব কাকে নয় বুঝতে পারছি না। এদের কথা কাটাকাটি শুনতে শুনতে এক সময় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৪:৪০ মিনিট কাটায় কাটায়। আমার আর ভালো লাগছে না এগুলো। যে সত্যি সে এক সময় নিজেকে প্রমাণ করতেই পারবে। বাট তারা নিজেরা আগে ডিসিশন নিয়ে নিক কে সঠিক, তাই আমি তাদের টপকিয়ে রাস্তার পাশের সিঁড়ি বেয়ে নেমে হাঁটা শুরু করলাম। যা দেখে ওরা দুজনেই পিছু ছুটতে লাগল। আমি রাস্তা ওভারটেক করে রাহাত আনোয়ার হসপিটালে চলে এলাম। তারাও পেছন পেছন এলো ডাকতে ডাকতে। আমি গেইটের সামনে এসে পেছন ফিরে বলে উঠলাম।

……রাইয়ান তুমি এখন আসতে পারো। আমার দেওয়া সময় ওভার হয়ে গেছে। যাও নতুন কোনো প্রমাণ নিয়ে আসো। আর এই হসপিটালে প্রবেশ করার কথা মাথায় ও আনবে না তবে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। আর স্যার আপনার জন্য রুগী’রা নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে যান আপনার ক্যাবিনে গিয়ে রুগী দেখুন।

এই বলে আমি বাহিরের সিঁড়ি বেয়ে ভেতরে গিয়ে লিফটে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম, স্যার ও ছিল আমার পাশে।

ক্যাবিনে গিয়ে চুপ করে বসে রইলাম, স্যার ও কিছু বলেনি। আমার খুব রাগ হচ্ছিল। এতটুকু জেনো বিশ্বাস হচ্ছে স্যার মিথ্যা বলার মতো মানুষ নয়। আর স্যার গম্ভীর টাইপের মানুষ এসব বিষয়ে মজা করার মতো সে নয়। আর তার এমন করার প্রয়োজন ও নেই কারণ বাসা থেকে সবাই বিয়ের অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। তবে সে কেনো এরকম নোংরা খেলা খেলবে? আর রাইয়ানের কথা ভাবলে, সে বা এত তথ্য কীভাবে জানল? আমি তো তার সাথে কখনো এসব বিষয়ে কথা বলিনি। শুধু সে জানত আমার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী আছে, That’s all. কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে এরা দুজনেই সব জানে, যাক আমি আর এখন আপাতত এগুলো নিয়ে ভাবতে চাইছি না। কাজের সময় কাজ। আর এগুলো নিয়ে আমি এতদিন অনেক ভেবেছি, এখন তারা দুজন ভাববে আমি শুধু প্রমাণ দেখব।

কিছুক্ষণ পরে এক এক করে রুগী আসতে শুরু করে দিল। আমি চেক করে যাদের রিপোর্ট দরকার তাদের রিপোর্ট করতে পাঠাচ্ছি, যাদের ভর্তি দরকার তাদের ভর্তির পরামর্শ দিচ্ছি, আর যাদের ওষুধের দরকার তাদের ওষুধ দিচ্ছি। ব্যাচ এরপর ৭ তালায় গিয়ে আগের যে ভর্তি হওয়া রুগী ছিল তাদের দেখলাম। একটা সিজারের পেশেন্ট ছিল, তাই ৭তালা থেকে নেমে ওটিতে গেলাম। সেখানে আমার সাথে একজন সহকারি ডক্টর ছিল, আরও কয়েক জন ছিল, সেখানে গিয়ে সিজার করে, আমি ওটি থেকে বের হয়ে ক্যাবিনে এসে দেখলাম এখন আর পেশেন্ট নেই তাই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম প্রায় ৯:৩০ মিনিট বেজে গেছে, ব্যাগ হাতে নিয়ে বের হয়ে পড়লাম। গেইটে যেতেই দেখলাম স্যারের গাড়ী, আমি পাশ কাটিয়ে গেট দিয়ে বের হতে নিলাম। এর মধ্যে স্যার ডাক দিল।

…….পুস্পিতা শোনো?

আমি যেভাবে ছিলাম সেভাবেই দাঁড়িয়ে গেলাম। স্যার এগিয়ে এসে বললেন।

…….গাড়ীতে ওঠো অনেক রাত হয়েছে।

…….স্যার রাস্তা তো বেশি নয় আমি চলে যাবো।

…….আমি জানি তুমি চলে যাবে, বাট আমারও একটু বাসায় কাজ আছে যখন দুজনে একই দিকে যাচ্ছি তবে এক সাথে তো যেতেই পারি তাই না? আর বিকেলে যা হয়েছে সেটা নিয়ে প্লিজ রেগে থেকো না। এখন যেহেতু আমি সেই কথা বলার মুডে নেই, আর আমার হাতে এখন সময়ও নেই, আর এত রাতে তোমার একা যাওয়া ঠিক হবে না। প্লিজ ওঠো। তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আমি ল্যাব এইডে যাবো তাই প্লিজ ওঠো।

আমি আর কথা না বাড়িয়ে গাড়ীতে উঠে বসে পড়লাম। যেহেতু স্যার, সে আমার চোখে অনেক সম্মানীয় ব্যক্তি, তাকে অপমান করার মতো স্পর্দা আমার অন্তত পক্ষে নেই। স্যার ও এসে গাড়ীতে উঠে বসে পড়লেন। স্যার গাড়ী চালাতে শুরু করলেন।

গাড়ী এসে আমাদের বাড়ির সামনে থেমে গেল। আমি গাড়ী থেকে নেমে এগোতে নিয়ে আবার পিছু এগিয়ে স্যার কে উদ্দেশ্য করে বললাম।

…….স্যার আমি আপনাকে প্রচন্ড রকমের বিশ্বাস করি। আর অনেক সম্মান করি, আমি শুধু এতটুকুই আশা করছি আপনি এই বিশ্বাস বা সম্মান কোনটাই ভেঙে যেতে দিবেন না। আসছি স্যার।

আমি গেইটের ভেতর চলে গেলাম। নিজের রুমে গিয়ে বিছানার উপর ব্যাগটা ছুড়ে ফেললাম। এরপর ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে রইলাম।

সকাল সকাল ছাদে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। ঠান্ডা বাতাস এসে কাঁপন ধরিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। চারিদিকে কুয়াশা ধোঁয়া ধোঁয়া, চোখ দুটো বন্ধ করে খুব কাছ থেকে এই আবহাওয়ার সাধ গ্রহণ করছিলাম। কতটা সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম এভাবে জানি না, চোখ যখন মেললাম, তখন চারিদিকে হালকা হালকা রোদ্র দেখা যাচ্ছিল। অশান্ত মনটা কতটা শান্ত হলো জানি না। হঠাৎ চোখ পড়ল, আমার সামনে থাকা ফুল গাছটার উপর, সাদা গোলাপের উপর একটা #নীলফড়িং বসে ছিল, সত্যি দৃশ্যটা অমায়িক সৌন্দর্য, অনেক ভালো লাগছে দেখতে, আমি ফোনের ক্যামেরা অন করে কয়েকটা ছবি নিলাম। ছবি গুলো ও দেখতে সেই হয়েছে। ছবি তুলে আমি হাসি মুখে পেছন ঘুরে চলে আসতে নিলাম, চোখ পড়ল পাশের ছাদে প্রবেশ করার দরজার দিকে। স্যার দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলো। স্যারের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, তখনই স্যার ও আমার দিকে তাকালেন, দুজনার চোখে চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিলাম। আমি পা বাড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলাম।

দু-দিন পরে বিকেল ৪টার দিকে আমি নিজের রুমে বসে ছিলাম। এমন সময় কেউ দরজার কলিং বেল বাজাল। মা যেহেতু রুমে শুয়ে আছেন তাই আমি নিজেই গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম স্যারের মা আর দাদী দাঁড়িয়ে আছেন, আমি সালাম জানিয়ে তাদের ভেতরে আসতে আমন্তন জানালাম। তারা ভেতরে এসে বসলেন। আমি মা কে ডেকে নিয়ে এলাম। আমি রান্নাঘরে গিয়ে চা করে নিয়ে আসলাম, ততক্ষণ তারা মায়ের সাথে কথা বলল। আন্টির হাতে চা দিতে গেলাম সে আমার হাত ধরে তার পাশে বসিয়ে দিলেন। চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে সে আমার হাত ধরে বলে উঠলেন।

……..মামনি কাজ কেমন চলছে?

……জ্বি আন্টি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

……এটা শুনে খুব ভালো লাগল।

এই কথা বলেই আন্টি এক জোরা মোটা মোটা বালা বের করে আমার হাতে পড়িয়ে দিলেন। আমি অবাক হয়ে মা’য়ের দিকে তাকালাম দেখলাম সে হাসছেন।

…….আন্টি আমি আসলে।

…….কোনো সমস্যা মামনি? আমার ছেলে কে তোমার ভালো লাগে না? আমার ছেলের কিন্তু কোনো বাজে অভ্যাস নেই, ও খুব ভালো।

…….না না আন্টি তা নয় স্যার তো অনেক ভালো মানুষ বাট আমি।

…….তবে আর কোনো কথা নয় আমি তোমাকে আমার ছেলের বউ হিসাবে দেখতে চাই। আমি মা হয়ে ওকে নিয়ে গর্ভ করতে পারি, কিন্তু স্বামী হিসেবে সে কেমন হবে এটা বলতে পারছি না। কারণ ছেলে আমার একটু রাগী, একটু আন রোমান্টিক ও বলতে পারো। না হয় এই বয়সে তার কয়েকটা গার্লফ্রেন্ড থাকার কথা, বাট আজ পর্যন্ত একটা মেয়েকে এনে দেখাতে পারেনি, মা এই মেয়েকে আমি পছন্দ করি। তবে বলো ছেলে আমার কতটা আন রোমান্টিক, তাই বলে এখন ভয় পেয়ে বিয়ে ক্যান্সেল করে দিও না আবার।

এই বলে সবাই হেঁসে উঠল। তবে আন্টি মিথ্যে বলছেন না। কারণ এতদিনে সত্যি স্যার কে কোনো মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখিনি। বা তেমন ভাবে কারো দিকে তাকিয়ে থাকতে ও দেখিনি।

……. আচ্ছা মা তোমার সময় নষ্ট করব না। যেহেতু তুমি এখন বের হবে আমি জানি তাই আগেই আসছি। যাও তুমে রুমে গিয়ে রেডি হয়ে নাও।

আমি মৃদু হেসে ড্রইং রুম থেকে উঠে আমার রুমে চলে এলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৪:৪০ মিনিট, তাই তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম, ড্রইং রুমে এসে আন্টিদের মা কে আল্লাহ হাফিজ বলে এগিয়ে গেলাম।

একটা রিকশা ডেকে উঠে বসে পড়লাম।

আজ তেমন রুগী ছিল না, তাই যে কজন ছিল তাদের দেখে ভর্তি পেশেন্ট দের দেখে বেড়িয়ে পড়লাম। এমন সময় গেইটের সামনে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম, ঠিক সেই সময় বাইক নিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে গেল রাইয়ান, আমি তাকে দেখে পাশ কাটিয়ে সরে যেতে নিলাম।

…….প্লিজ পুস্প যেওনা।

…….এক মিনিট এই নামটা উচ্চারণ করবে না।

…….আরে আমি তো তোমাকে সব সময় এই নামেই ডাকি।

…….জ্বি না তুমি সব সময় আমাকে পুস্পিতা নামে ডেকেছ আর যতদিন না এটা প্রমাণ করতে পারবে তুমি শুভাকাঙ্ক্ষী ততদিন অব্দি তুমি এই নাম উচ্চারণ ও করবে না।

……ওকে তুমি বলো তুমি কী করলে বিশ্বাস করবে যে আমিই তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী?

…….আমি কিছুই জানি না, বিশ্বাস তোমাকে করাতে হবে আমাকে, যাতে আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হই তুমিই আমার শুভাকাঙ্ক্ষী এমন কিছু তোমাকে করে দেখাতে হবে That’s all.

…….বাট আমি এমন কী করব? যা করলে তুমি বাধ্য হবে?

…….তা আমি কীভাবে বলব? এটা তো তোমাকেই করতে হবে। তুমি যদি আমার শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে থাকো, তবে এটা নিশ্চয়ই মনে আছে? তুমি বলে ছিলে আমার চিনতে হবে না, তুমি নিজে চিনিয়ে নিবে আমাকে। তবে চিনিয়ে দাও আমাকে আমি সেই অপেক্ষায় রয়েছি।

এই বলে আমি রিকশা ডেকে উঠে বসে পড়লাম।

এভাবেই সময় যেতে শুরু করল। বিয়ের তারিখ প্রায় ঘনিয়ে এসেছে কেউই কিছু প্রমাণ করতে পারল না। আজ অনেক দিন পড়ে স্যারের সাথে দেখা হলো। সকাল সকাল ছাদে গিয়ে।

…….কেমন আছেন স্যার?

……আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি?

……আছি এক রকম। আচ্ছা স্যার আমি আপনাকে কিছু বলেছিলাম মনে আছে?

…….কথা তো অনেক বলেছ এখন কোন কথা, বুঝব কীভাবে?

……ওই যে আপনাকে প্রচন্ড রকমের বিশ্বাস করি ওটা। স্যার এখনো তো আপনি বা রাইয়ান কেউই প্রমাণ করতে পারেন নি কে সে? তাই বিয়ের ৫ মিনিট আগ পর্যন্ত যে প্রমাণ করে দেবে সেই আমার শুভাকাঙ্ক্ষী আমি তাকেই বিয়ে করব, আর তখন আপনাকে আমার সাথে থাকতে হবে আমার আপনার ফ্যামিলি কে বোঝানোর জন্য।

…….আর যদি দুজনের একজন ও প্রমাণ না করতে পারি?

…….তবে বিয়ের ৫মিনিট আগে হলেও বিয়ে ক্যান্সেল করে দিবেন আপনি নিজ থেকে।

……বাট আমি এটা কেনো করব?

……কারণ আপনি আমাকে মিথ্যা বলে বিভ্রান্ত করেছেন তাই।

…….কিন্তু তুমি যদি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী কে এত পছন্দ করো তবে এই বিয়ের জন্য রাজি হলে কেনো?

……আমি রাজি হইনি, কেউ আজ অব্দি আমার কাছে কিছু জিজ্ঞেসই করে নি, তবে কীভাবে তাদের জানাব আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি? আর মা যেখানে অসুস্থ, সে তার একটা ইচ্ছের কথা বলে আমাকে পূরণ করতে বলেছেন সেখানে আমি কিছু বলতেও পারছি না। আর হ্যা সবাইকে বললাম আমি একজন কে ভালোবাসি, তাকেই বিয়ে করতে চাই, তখন সবাই জিজ্ঞেস করবে কে সেই শুভাকাঙ্ক্ষী, আমি কী বলব? মা দুজন আমাকে বলেছে তারা আমার শুভাকাঙ্ক্ষী। কিন্তু এই সাড়ে ৩ বছর হয়ে গেছে আজ অব্দি আমি জানিই না আসলে কে আমার সেই শুভাকাঙ্ক্ষী? তার নামটা পর্যন্ত আমি জানি না তাকে চেনা তো দূরে থাক এটা বলব আমি মা আব্বু কে স্যার?

স্যার আমার কথার কোনো উত্তর দিতে পারলেন না চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন।

…….কী হলো স্যার চুপ করে দাঁড়িয়ে কেনো আছেন উত্তর দিন? আমি কী বলব তাদের? আপনি বলে দিন আমি এখনি গিয়ে বলে দিচ্ছি তাদের। একজন কষ্ট দিলে সহ্য করে নেওয়া যায়, মানুষ এক বার পড়ে গেলে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁসতে পারে কিন্তু দ্বিতীয় বার যদি পড়ে গিয়ে ওই একি জায়গায় ব্যথা পায় তবে সেই ব্যথাটা প্রচুর কষ্ট দায়ক হয় সে আর সেই কষ্ট সহ্য করতে পারে না, আমার বেলায় ও তাই হয়েছে। আপনি হয়ত দেখছেন আমি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, আমি শক্ত হয়ে কথা বলছি বাট আমি ভেতর থেকে একদম ভেঙে গেছি, যা কাউকে বোঝাতে পারছি না। না কারো সাথে শেয়ার করতে পারছি। প্লিজ স্যার এই দুবিধা থেকে আমাকে বাঁচান আমার আর ভালো লাগছে না। এই ৫/৬ মাস থেকে আমি এগুলো ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমি আর নিতে পারছি না।

কাঁদতে কাঁদতে দু-হাত দিয়ে মুখ ডেকে ছাদেই বসে পড়লাম। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে চোখ মুছে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। দেখলাম স্যার তাদের ছাদেই দাঁড়িয়ে আছেন, চোখ কিছুটা লাল হয়ে আছে, সে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। আমাকে দাঁড়াতে দেখে সে এদিক সেদিক তাকিয়ে বলে উঠলেন।

…….একটা প্রশ্নর উত্তর দিবে?

…….হুম।

…….তুমি বললে ৫/৬ মাস ধরে তুমি এগুলো ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত? কিন্তু এই ৫/৬ মাস আগে এমন কী হয়েছিল বলতে পারবে আমায়? তবে হয়ত তুমিও তোমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেতে পারো আর আমিও নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে পারব।

……জ্বি কেনো নয়। আমিও চাই সত্যি জানতে। ৫/৬ মাস আগে আমার ফোনটা হটাৎ একদিন চুরি হয়ে যায়। এরপর আমি নতুন ফোন নেই…………..।

এরপর স্যার কে সেদিনের সব কথা গুলো খুলে বলি কীভাবে কী হয়েছে। যা শুনে স্যার বলে উঠল।

…….ওহ তবে এই ছদ্মবেশী তোমাকে মাত্র ৫/৬ মাস ধরে বিভ্রান্ত করছে। যে থেকে তুমি কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলে? তবে আমার কাছে ৩ বছর সময় রয়েছে, নিজেকে সত্যি প্রমাণ করার? আমাকে একটু সময় দাও ভেবে দেখার জন্য।

…….সময়ই তো নেই স্যার হাতে। বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে।

…….আচ্ছা তুমি তো বিয়ের ৫ মিনিট আগ পর্যন্ত সময় দিয়েছিলে আমাকে তবে?

…….তাই বলে কী আপনি সত্যি সত্যি সেই ৫ মিনিট পর্যন্তই অপেক্ষা করাবেন আমায়?

…….না না তা নয় বাট এতদিনের কথা একটু সময়ের প্রয়োজন তো আছেই তাই-না?

…….ওকে স্যার।

আমি নিজের রুমে চলে এলাম। ফোনে দেখছি শুভাকাঙ্ক্ষীর অনেক ম্যাসেজ জমা হয়েছে। ফোন রেখে বসে রইলাম।

প্রায় ১ঘন্টা পড়ে হটাৎ ফোনে রিং বেজে উঠল তাকিয়ে দেখলাম স্যারের ফোন।

……হ্যা স্যার।

……বারান্দায় আসো।

আমি ফোন রেখে বারান্দায় ছুটে গেলাম।

…….জ্বি স্যার?

……আচ্ছা তুমি কী আমার দেওয়া গিফট-টা খুলে দেখে ছিলে? কারণ তাহলে তোমার এই সন্দেহ-টা থাকার কোনো কথাই ছিল না। আর যেহেতু এটা ৫/৬ মাস আগের কথা নয় এটা ২ বছর আগের কথা, আমার যতটুকু মনে হয় তুমি ওই গিফট-টা খুলে দেখলেই তোমার সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়ে যেতে ইন’শা’আল্লাহ। কারণ আমি যে কে এটা জানানোর জন্যই আমি তোমাকে ওই গিফ-টা দিয়ে ছিলাম। আর দ্বিতীয় কথা তোমার ফোনটা যখন চুরি হয় তখন আমি তো এইদেশে ছিলাম তোমার আব্বু আম্মুর কাছেই জিজ্ঞেস করে দেখতে পারো। রাইয়ান কোথায় ছিল এটা ভেবে দ্যাখো উত্তর তুমি নিজেই পেয়ে যাবে।

আমি স্যারের সাথে আর কোনো কথা না বলে রুমের ভেতর চলে এলাম সুটকেস খুলে ভালো করে সব খুঁজতে শুরু করলাম, অনেক খোঁজ করার পড়ে স্যারের গিফট-টা খুঁজে পেলাম। তারাহুরো করে গিফট-টা খুললাম। গিফট খোলার সাথে সাথে তার মাঝ থেকে বেরিয়ে এলো, একটা খুব সুন্দর হাত ঘড়ি যার মধ্যের ঘুরন্ত কাঁটাই ছিল #নীলফড়িং। সাথে একটা চিরকুট তার মধ্যে লেখা ছিল “ভালোবাসার #নীলফড়িং”।



চলবে…………।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে