Monday, June 30, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 314



শেষ ঠিকানা পর্ব-০১

0

#পর্ব_১
#শেষ_ঠিকানা
#লেখিকা_মেহরিন_রিম

_এমন একটা পঙ্গু মেয়েকে আমি বাড়ির বউ করে আনবো তুই ভাবলি কি করে অপু? শেষমেশ কিনা একটা অচল মেয়েকে পছন্দ করে আনলি তুই!
নিজের প্রেমিকের মায়ের মুখে এমন কথা শুনে কষ্টে, অপমানে মাথা নিচু করে রইলো হিমি। দুচোখ থেকে গড়িয়ে পরছে অবাধ্য অশ্রুধারা। ছুটে বেড়িয়ে যেতে ইচ্ছে করলো, তবে এই ক্ষমতা টুকুও নেই তার মাঝে। অবাক চোখে অপূর্বর দিকে তাকাতেই সে চোখ সরিয়ে নিলো। বেশ জোড় গলায় বলে উঠলো,
_মা, কি বলছো তুমি এসব? আমার সামনে তুমি এভাবে হিমিকে অপমান করতে পারোনা, তোমার কথায় আমি ওকে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। তুমি এমন ব্যবহার করবে জানলে আমি কখনই ওকে নিয়ে আসতাম না।

ফরিদা বেগম রাগী চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
_হ্যা বলেছিলাম,তখন তো আমি জানতাম না যে আমার ছেলে এমন এক মেয়েকে পছন্দ করেছে যে কিনা নিজের পায়ে হাটতেই পারেনা। তুই আমাকে এই ব্যাপারে তো কিছু বলিসনি। এই মেয়ে পঙ্গু জানলে তো আমি কখনোই ওকে নিয়ে আসতে বলতাম না।

নিজের ব্যাপারে এমন কথা শুনে সেখানে বসে থাকা সম্ভব হলো না হিমির পক্ষে। এতক্ষন সোফায় বসে ছিলো, হাতের উপর ভর দিয়ে কোনোভাবে পাশে থাকা হুইল চেয়ারে বসার চেষ্টা করতে লাগলো সে। নিজের কাজে সক্ষম হতেই একবার অপূর্বের দিকে অশ্রুভরা চোখে তাকালো,পরক্ষণেই নিজের চোখের জলটুকু মুছে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলো। অপূর্ব এখনো নিচের দিকেই তাকিয়ে আছে, এখানে এসে হিমিকে অপমানিত হতে হবে জানলে সে কখনোই তাকে আনতো না নিজের বাড়িতে। হিমিকে চলে যেতে দেখেই অপূর্ব ছুটে গিয়ে তার সামনে দাড়ালো। করুন সুরে বলতে লাগলো,
_হিমি প্লিজ,মায়ের হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি। আমি আসলেই বুঝতে পারিনি এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।

হিমি অপূর্বের দিকে একনজর তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো,তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
_তুমি ক্ষমা চাইছো কেনো অপু? আন্টি তো ভুল কিছু বলেনি। আমিতো সত্যিই অচল..
গলা ধরে এলো হিমির, তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
_আমাকে যেতে দাও প্লিজ।

অপূর্ব এবার হিমির সামনে হাটু গেড়ে বসে বললো,
_এভাবে চলে যেওনা প্লিজ। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি নিয়ে যাচ্ছি তোমাকে।

অপূর্ব উঠে দাড়াতেই পিছন থেকে তার মা বলে উঠলো,
_একদম না অপু,ঐ পঙ্গু মেয়ের সঙ্গে তুই একদম যাবি না।

আর কিছু শুনতে পেলোনা হিমি। কানের কাছে ‘পঙ্গু’ শব্দটা বাজতে লাগলো,অপূর্ব তার মাকে কিছু বললো কিনা জানা নেই হিমির। কোনোরকম নিজেকে সামলে অপূর্বর পাশ থেকে চলে এলো সে।

——-
চোখ বন্ধ করে নিলো হিমি,চোখে থেকে গড়িয়ে পরলো অশ্রু। চোখ খুলতেই নিজের মাথার উপর ফ্যান ঘুরতে দেখিতে পেলো সে। মাথা সামান্য ঘুরিয়ে পাশে তাকাতেই জানালার সাদা পর্দার দিকে চোখ পড়লো তার,সম্পূর্ন না হলেও সামান্য সূর্যের আলো রুমে এসে পরছে। নিজের হাতের ব্যান্ডেজ এর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো হিমি। বর্তমানে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে সে,সেদিনের ঘটনার পর নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল হিমি।
সোফায় ঘুমিয়ে থাকা নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে খারাপ লাগলো হিমির। নিজের উপর চরম বিরক্তি লাগলো তার। সে এতো নরম মনের মেয়ে নয়,তবে সেদিন কি করে এতো বড় একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেললো ভেবে পায়না হিমি। মানুষের কথা শুনতে শুনতে এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে সে, ফরিদা বেগমের কথায় সেদিন তাৎক্ষণিক ভাবে কষ্ট পেলেও তার কারণে এমন একটা পদক্ষেপ সে গ্রহণ করেনি। হিমি ভেবেছিল অপূর্ব হয়তো তাকে ফোন করবে,তবে এমনটা হয়নি। বেশ অবাক হয়েছিলো হিমি, দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেও অপূর্বর থেকে কোনো মেসেজ,কল কিছুই পায়নি সে। তার ফলেই এমন একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল।

হিমির চিন্তার মাঝেই কেবিনে প্রবেশ করলো তার বাবা। হিমিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো মানিক সাহেব। হাতে থাকা ঔষধগুলো পাশে রেখে মেয়ের মাথার কাছে চেয়ার টেনে বসে পড়লেন। হিমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন,
“এখন কেমন লাগছে মা?”

হিমি তার বাবার দিকে না তাকিয়েই বললো,
“ভালো বাবা।”

বাবার দিকে তাকানোর সাহস টাও অর্জন করতে পারলো না হিমি,নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে তার। একটা ছেলের জন্য কিনা নিজের পরিবারকে এতটা কষ্ট দিলো সে।
মানিক সাহেব একটু পর বেরিয়ে গেলেন। কিছুক্ষন পর তার মা এসে তাকে খাইয়ে দিলো। তার মাঝেই কেবিনে প্রবেশ করলো হুর। হিমির ছোট বোন সে, হুর কেবিনে ঢুকেই দৌড়ে এসে বোনকে জড়িয়ে ধরলো। কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,
_তুই এমন কেনো করলি আপু?জানিস আমি কতো ভয় পেয়ে গেছিলাম।

হিমি কিছু বলার আগেই তার মা রিপা বলে উঠলেন,
_আহ হুর! কি হচ্ছে এসব হ্যা, ওকে এখন এতো প্রশ্ন করতে হবেনা।

হুর তবুও মায়ের কথার তোয়াক্কা না করে বলতে লাগলো,
_জানিস আপু সকালে…
কথা শেষ করতে পারলো না হুর,মায়ের চোখ রাঙানো দেখে থেমে গেলো সে। হিমি এবার হুর এর দিকে তাকিয়ে বলল,
_কি বলছিলি বল,কি হয়েছে সকালে?

হুর একবার মায়ের দিকে তাকালো তারপর আবার হিমির দিকে তাকিয়ে বললো,
_কিছু না আপু,তুই খেয়ে নে।

কথাটা বলেই হুর বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে, কিছুক্ষন পর মেয়েকে খাইয়ে রিপাও কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। হুরের কথাটা নিয়ে বেশি একটা ভাবলোনা হিমি, বর্তমানে তার মাথায় অপূর্বের কথা ঘুরছে। তার এই খবরটা নিশ্চই এতক্ষনে অপূর্বের কাছেও পৌঁছে গেছে। হিমি ভেবেছিলো অপূর্ব হয়তো তার অবস্থা জেনে ছুটে আসবে, কিন্তু আবারো তার চিন্তা ভুল প্রমাণিত হলো। সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চললো,এখনো অপূর্ব আসেনি।
___
হিমির সামনে চেয়ারে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে দিবা। সে এভাবে বসে আছে আরও বিশ মিনিট আগে থেকে। হিমি এবার বিরক্তির সুরে বললো,
“তুই কি এখানে রোবটের মতো বসে থাকতে এসেছিস?”

দিবা এবার হিমির দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত স্বরে বললো,
_তো কি করবো?তোকে মাথায় তুলে নাচবো?এই মহান কাজের জন্য আপনাকে পুরস্কৃত করবো?

হিমি চুপ করে বসে রইলো। দিবা এবার চেয়ার টা আরেকটু সামনে এগিয়ে বলতে লাগলো,
_আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না ঐ ছেলেটার জন্য কিনা তুই এত বড় একটা কাজ করলি! যেই ছেলে কিনা তোকে বাড়িতে নিয়ে অপমান করলো,তার জন্য? সিরিয়াসলি!

হিমি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,
_অপমান তো অপু করেনি,ওর মা করেছে।

দিবা এবার হাততালি দিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
_বাহ,খুব ভালো। তুই এখনো ওকে সাপোর্ট করছিস।

হিমি আর কিছু বললো না, দিবা যে এখন প্রচণ্ড রেগে আছে তা সে ভালোই বুঝতে পারছে। তবে এতকিছুর মাঝে যে একজোড়া চোখ তার দিকে নজর রাখছে তা হয়তো বুঝতেও পারলো না হিমি।
____
পনেরো দিন হলো বাড়িতে ফিরেছে হিমি,তবে এর মাঝে অপূর্ব একবার ও তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। হিমি কয়েকবার কল দিলেও তা রিসিভ হয়নি।
জানালার পাশে বসে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সম্পর্কে ভাবতে লাগলো হিমি। এরই মাঝে সেখানে উপস্থিত হয় হুর, হাতে একটি ব্যাগ। হিমির পিছনে এসে হাপাতে হাপাতে বললো,
_আপু,মা বলেছে তোকে তৈরি করে দিতে।

হিমি হুইল চেয়ারটা ঘুরিয়ে হুর এর তাকালো।কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
_আমাকে! কিন্তু আমি আবার এখন তৈরি হয়ে কোথায় যাবো?
_না না আমরা কোথাও যাবো না।
_তাহলে?
_আমাদের বাড়িতে লোকজন আসবে।

হিমি কিছুটা বিরক্তি মিশ্রিত কণ্ঠে বললো,
_তুই একটু ঠিকভাবে বলবি প্লিজ। কে আসবে বাড়িতে? আর তার জন্য আমি তৈরি হবো কেনো?

হুর কিছু বলার আগেই হিমির মা রিপা দরজার কাছ থেকে বললেন,
_তোকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে।

মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো হিমির। মাকে কিছু বলার আগেই সে কিছু গহনা বিছানার উপর রেখে হুরের উদ্দেশ্যে বললেন,
_হুর, আপুকে জলদি এগুলো পরিয়ে দে। তারা কিছুক্ষন এর মধ্যেই চলে আসবে।

#চলবে

নীলফড়িং পর্ব-২৩ এবং শেষ পর্ব

0

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#শেষপর্ব ২৩
.
.
গাড়ী ড্রাইভ করছিল ফাইয়াজ, হটাৎ পুস্পিতা বলে উঠল গাড়ী থামান।

……এখন কেনো?

……বলছি তো গাড়ী থামান।

……দেরি হয়ে যাবে পুস্পিতা?

……এখনো সময় আছে আমাদের হাতে ২০ মিনিট, তাই পাশ করে গাড়ী থামান।

……ওকে।

ফাইয়াজ পাশ করে গাড়ী থামাল রাজাবাহাদুর রোডে পদ্ম পুকুরের ওই পাশে। পুকুরটা ফুলে ফুলে সাদা হয়ে ছিলো। খুব সুন্দর একটা দৃশ্য চোখ আঁটকে যাওয়ার মতো। সেখানেই দুজন নেমে গাড়ীর সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।

দুপুরে ওরা বাসায় এলো। দেখল নিবিড়, নিশা সামনেই বসে কথা বলছিল, ওদের দেখে তাকালো বাট পুস্পিতা প্রচুর রেগে রুমের দিকে চলে গেল। আর ফাইয়াজ ওদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে রুমে চলে গেল।

বিকেল দিকে পুস্পিতা চোখ বন্ধ করে ছাদের দোলনায় বসে ছিলো, ঠিক তখনই কেউ বলে উঠল।

……কী ব্যাপার মন খারাপ নাকি ম্যাডাম?

তাকিয়ে দেখল নিবিড় দাঁড়িয়ে ছিলো। তাই পুস্পিতা দোলনা থেকে উঠে চলে আসতে নিলো। তার মন খুবই খারাপ ছিলো, আজ এই নিবিড়ের সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছেই নেই তার। কিন্তু পুস্পিতা যখন ছাদ থেকে চলে আসতে নিলো, ঠিক তখনই নিবিড় এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে গেল পথ আঁটকে।

……কোথায় যাচ্ছ ম্যাডাম? একটু কথাই তো বলতে আসছি, নাকি প্রেম করতে আসছি? হ্যা তুমি চাইলে করতেও পারো প্রেম।

…….দেখেন আমার এখন আপনার চেহারা দেখার ইচ্ছেও নেই, তাই প্লিজ পথ ছাড়েন।

……পথ না ছাড়লে?

……আমি সরিয়ে নিতে জানি।

……ওকে নাও তবে।

পুস্পিতা চারিদিকে তাকিয়ে দেখল তার সোজাসুজি একটা
ঝাটা রাখা আছে, যেটা দিয়ে ছাদ পরিষ্কার করে, তাই সে এগিয়ে গিয়ে ঝাটা-টা হাতে নিয়েই এগিয়ে এলো।

……আমি সকালেই বলে ছিলাম, আমি জুতার থেকেও খারাপ কিছু এপ্লাই করতে পারি। এটা দেখছেন? এটা দিয়ে এমন ঝাড় দেবো না, যে আপনার এসব নোংরামি এক ঝাড়ায় পালাবে।

……তাই বুঝি? আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম ম্যাডাম।

এই বলে নিবিড় পুস্পিতার হাত ধরে ঘুরিয়ে নিলো, তার সাথে মিশিয়ে নিয়ে পেছন দিক থেকে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠল।

…….আমি নিজের রক্ষা করতে জানি ম্যাডাম, এত অবলা হাত দিয়ে আমার কিছুই করতে পারবে না। তোমার এই হাতে চুড়িই মানায় ঝাটা নয়।

……আমার হাতে শুধু ঝাটা নয় ঝাটার বারিও বেশ মানায়।

এই বলে পুস্পিতা, নিবিড়ের পায়ে খুব জোরে একটা পারা দিলো। যার জন্য নিবিড় ওকে ছেড়ে দিয়ে পায়ে হাত দিয়ে মালিশ করতে লাগল, যেহেতু জুতো ছিলো পুস্পিতার পায়ে তাই খুব বেশিই একটু লেগে গেল, তাই সে উবুড় হয়ে পা মালিশ করছিল। আর এদিকে পুস্পিতা ঝাটা নিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে দিলো নিবিড় কে, নিবিড় ধরার খুব চেষ্টা করছিল বাট যে হাত দিয়ে নিবিড় ধরতে আসছে সেই হাতেই তার ঝাটার বারি পড়ছে।

পুস্পিতার যত রাগ ছিলো সব রাগ আজ ওর উপর ঝাড়ল। পুস্পিতা থামছিল না। মারতে মারতে নিবিড় ছাদেই শুয়ে পড়ল। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে পুস্পিতার কপালে নাকের ডগায়, তার চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল সেদিন যখন নিবিড় অত মানুষের মাঝে তার গায়ের থেকে ওড়না টান দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তাই সে তার গায়ে যতটা জোর ছিলো সব দিয়ে নিবিড় কে ঝাটা পিটা করতে শুরু করল। প্রায় ১০/১৫ মিনিট পড়ে কেউ এসে পুস্পিতা কে ধরে রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু পুস্পিতা তাকে ঠেলে সরিয়েও নিবিড় কে ইচ্ছে মতো পেটাতে শুরু করল। আজ হয়ত সে নিবিড় কে মেরেই ফেলতো কিন্তু কেউ তাকে খুব শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো যার জন্য পুস্পিতা নড়তেও পারছে না। পুস্পিতা তাকিয়ে দেখল ফাইয়াজ ছিলো।

…….আমাকে ছেড়ে দিন বলছি।(ছোটাছুটি করতে করতে)

…….পুস্পিতা শান্ত হও প্লিজ।

…….ফাইয়াজ প্লিজ ছাড়ুন আমাকে?

পুস্পিতা এতটাই রেগে ছিলো যে ফাইয়াজের নাম ধরেই বলে ফেলল। সে ফাইয়াজ কে খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। তারপরে আবার নিবিড়ের দিকে যেতে নিলো। কিন্তু ফাইয়াজ পুস্পিতাকে ধরে নিবিড় কে ধমকের শুরে বলল।

…….তুই এখনো কী করছিস এখানে? যেতে পারিস না এখান থেকে?

ফাইয়াজের কথা শুনে নিবিড় উঠে ছুটে পালালো সেখান থেকে। পুস্পিতা ও যেতে চাইছিল বাট ফাইয়াজ পুস্পিতাকে টেনে নিজের কাছে এনে জড়িয়ে ধরল, যার জন্য পুস্পিতা নড়তেও পারছে না। এখন পুস্পিতার খুব কান্না পাচ্ছে। বাট সে কাঁদতে চাইছে না এখন, তাই সে চোখের পানি মুছে ফাইয়াজ কে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ছুটে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।

পুস্পিতা নিজের রুমে এসে ফ্লোরে বসে বিছানায় মাথা রেখে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ভাবছিল। সকালে গাড়ী থামিয়ে যখন ফাইয়াজ কে সব খুলে বলল, তখন ফাইয়াজ বলে উঠল।

…….শেষ তোমার কথা?

পুস্পিতা অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলো ফাইয়াজের দিকে।

……কী হলো? আরও কিছু বলার আছে?

……নাহ।

……তবে এখন যেতে পারি? কারণ আর মাত্র ৭ মিনিট আছে এর মধ্যে আমাদের গিয়ে পৌঁছাতে ও হবে।

পুস্পিতা গিয়ে গাড়ীতে উঠে বসে পড়ল। ফাইয়াজ ও গাড়ীতে উঠে বসে পড়ল। ফাইয়াজ আর কিছু বলে নি পুস্পিতা কে। এজন্য পুস্পিতার খুব কষ্ট হচ্ছে, কারণ সে বুঝতে পারছে ফাইয়াজ রেগে আছে তার সাথে। কিন্তু কেনো রেগে আছে এটাই সে বুঝতে পারছে না। পুস্পিতা চুপ করে এখনো ফ্লোরে বসে ছিলো, বেশকিছু পড়ে দরজায় কড়া নড়ে উঠল।

……পুস্পিতা দরজা খোলো দেরি হচ্ছে।

পুস্পিতা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল, ৪:৪৫ মিনিট তাই সে উঠে চোখ মুছে দুটো ড্রেস বের করে, ফাইয়াজেরটা বিছানায় রেখে তারটা হাতে নিয়ে দরজা খুলে দিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল।

দুজনে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল, কেউ কারো সাথে কথা বলল না। আজ আর চা খাওয়ার সময় হলো না।

৬টার দিকে পুস্পিতা একটু ফ্রী হলো। তাই দু-কাপ চা অর্ডার করল, ফাইয়াজের রুমে এক কাপ তার রুমে এক কাপ। চা দিয়ে যেতেই পুস্পিতা তাকে জিজ্ঞেস করল।

……ডক্টর ফাইয়াজের রুমে দিয়েছেন?

……জ্বি ম্যাম।

……ওকে আসুন তবে।

এদিকে ফাইয়াজের ও খুব চায়ের প্রয়োজন ছিলো, কিন্তু রুগীর চাপে অর্ডার দেওয়ার সময় করে উঠতে পারেনি। চা পেয়ে একটু খুশিই হয়েছে সে। তাই চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ফোন হাতে নিয়ে একটা ম্যাসেজ দিলো। যাতে লেখা ছিলো, ধন্যবাদ চায়ের জন্য।

রাতে বাসায় ফিরে দুজন শুনতে পেলো নিবিড়, নিশা দুজনই চলে গেছে, যা শুনে ফাইয়াজ পুস্পিতার দিকে তাকালো, কিন্তু পুস্পিতা তার দিকে না তাকিয়েই রুমে চলে গেল।

রাতে দু’জন দু-দিক ফিরে শুয়ে ছিলো, ফাইয়াজ ভাবছে তার রাগের কারণ আছে, কারণ পুস্পিতা তার থেকে এতবড় একটা কথা লুকিয়ে রেখেছে, যদি পুস্পিতার কিছু হয়ে যেত তখন? এটা ভেবেই সে রেগে গিয়েছিল তখন, বাট পুস্পিতা কেনো রেগে আছে? এটাই সে বুঝতে পারছে না। যাক কী আর করার এখন রেগে যখন আছে তবে তাকেই এই রাগ ভাঙাতে হবে, নায়ত এই রাগ কবে ভাঙবে তার জানা নেই। তাই সে পুস্পিতার দিকে ফিরে আস্তে করে পুস্পিতার হাতের উপর হাত রাখল, পুস্পিতা তার হাত সরিয়ে দিলো।

…….আচ্ছা আমি রাগ করেছি তা না ভাঙিয়ে তুমি কেনো রাগ করলে? তোমার কী উচিৎ ছিলো না একবার আমার রাগ ভাঙানোর? তা না করে উল্ট রাগ করে আছো

…….(ঘুরে গিয়ে) আপনার রাগ করার কী হয়েছে?

……এইযে তুমি আমার থেকে এতবড় কথা লুকালে? যদি তখন তোমার কিছু হয়ে যেত? তখন কী হতো?

……আমি তো ভেবেছিলাম আপনি টেনিশন করবেন এজন্য বলিনি। আর নিরা তো ছিলো তখন আমার সাথে।

……বাট তোমার বলা উচিৎ ছিলো আমাকে।

……হুম আমিও মানছি, আমার ভুল হয়েছে, বাট আমি তো আপনি টেনশন করবেন এজন্যই কিছু বলিনি।

…….ঠিক আছে যা চলে গিয়েছে তা গেছে। বাট আগে থেকে আমার থেকে কিছু লুকালে তখন কিন্তু আর আমি কথা বলব না তোমার সাথে। তাই যা করবে বুঝে শুনে করবে।

…….হুম স্যরি।

এই বলে পুস্পিতা ফাইয়াজের বুকে মাথা রাখল। আর ফাইয়াজ ও তাকে আগলে নিলো।

…….পুস্পিতা?

……হুম।

…….প্রচুর পরিমানে ভালোবাসি তোমাকে, তাই রুমি কোনো কথা আমার থেকে লুকাবে না। আমার খুব কষ্ট হয় এটা জানলে, তুমি কথা লুকিয়েছ আমার থেকে।

……হুম ইন’শা’আল্লাহ আর কখনো কিছু লুকাব না আপনার থেকে। কথা দিলাম।

…….ভালোবাসি তোমাকে খুব বেশি।

…….আমিও যে ভালোবাসি আপনাকে অনেক বেশি।

এভাবেই দিন গুলো তাদের যেতে লাগল। এভাবেই তাদের ভালোবাসা আরও গভীর হতে লাগল। জীবনটা খুব ছোট তার মাঝে যদি এমন একটা ভালোবাসার, বিশ্বাস করার, কেয়ার করার মতো মানুষ থাকে তবে এই ছোট জীবনটা মধুময় হয়ে যায়। আল্লাহ তায়া’লা জানো সবাইকে এমন ভালোবাসার একটা মানুষ দাণ করেন যাতে কেউ একাকিত্ব বোধ না করে। আল্লাহ হাফিজ বন্ধুরা। আগামীতে আবার নতুন কিছু নিয়ে আশার চেষ্টা করব ইন’শা’আল্লাহ। আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো থাকবেন।

………………সমাপ্তি সকাল।…….. ❤️ u friends ❤️❤️

নীলফড়িং পর্ব-২২

0

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#পর্ব ২২
.
.
দু-দিন পরে দুপুরের দিকে ফাইয়াজ, পুস্পিতা বাসায় ফিরে কলিং বেল দিতেই শিরিন গিয়ে দরজা খুলে দিলো। দুজনেই ড্রইং রুমে এসে দাঁড়িয়ে গেল। সবাই হাসি ঠাট্টা করছিল ড্রইং রুমে। যা দেখে পুস্পিতা বলে উঠল।

……কী ব্যাপার আজ সবাই খুব খুশি মনে হচ্ছে?

পুস্পিতার কথা শুনে সবাই ওদের দিকে ঘুরে তাকাল। একটা ছেলে যে উল্ট হয়ে বসে ছিলো সেও ঘুরে তাকাল। যা দেখে পুস্পিতার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। আর ফাইয়াজ বলে উঠল।

…….আরে নিবিড়? কেমন আছিস?

কিন্তু নিবিড় ও কোনো উত্তর না দিয়ে পুস্পিতার দিকে তাকিয়ে আছে, যা দেখে ফাইয়াজ নিবিড়ের সামনে গিয়ে চুটকি বাজিয়ে বলে উঠল।

……কী রে কী দেখছিস? ও তোর ভাবী

…….হোয়াট? ভাই তুই সত্যি বলছিস? এই আমাদের ভাবী?

……হ্যা মিথ্যে বলার কী আছে? সবাই তো এখানেই আছে।

পুস্পিতা ফাইয়াজের মুখে নিবিড় নামটা শুনে আরও চমকে উঠল। নিবিড় কে রেখে ফাইয়াজের দিকে তাকিয়ে আছে পুস্পিতা।

…….হ্যালো ভাবী। (হাত বাড়িয়ে দিয়ে)

পুস্পিতা কোনো কথা না বলে কিছুক্ষণ নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে থেকে সেখান থেকে জোর পায়ে হেঁটে চলে গেল নিজের রুমে।

…….ভাবীর হয়ত আমাকে পছন্দ হয়নি ভাই?

…….আরে নাহ তেমন কিছু নয়। পড়ে কথা বলে নিস এখন আমরা দু’জনেই খুব টায়ার্ড ফিল করছি। হয়ত এজন্য ও চলে গেছে।

এই বলে নিবিড়ের কাধে হাত রেখে, ফাইয়াজ ও রুমে চলে এলো।

……কী ব্যাপার পুস্পিতা? তুমি তখন ওমন বিহেভিয়ার করলে কেনো?

……আমার খুব ক্লান্ত লাগছে।

……ওকে।

এই বলে ফাইয়াজ টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল। আর পুস্পিতা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল, সে ভাবছে তার কী ওই বিষয় গুলো ফাইয়াজ কে বলা উচিৎ? নিবিড় সেই যে কি-না ঢাকায় বসে পুস্পিতার সাথে নোংরা আচরণ করে ছিলো। আচ্ছা ফাইয়াজ যদি রেগে যায় তার সাথে? যদি নিবিড়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করে? না না পুস্পিতার এসব ভাবলে হবে না। সে ফাইয়াজের থেকে এতদিন এই কথা লুকিয়ে রেখেছে এটাই অনেক বড় অপরাধ। আর অপরাধ করতে চায় না পুস্পিতা। কারণ এসব বিষয়ে পুস্পিতার আগে যদি ফাইয়াজ নিবিড়ের থেকে শোনে তবে বিষয়টা খুব খারাপ হবে। চায়না সে ফাইয়াজ তাকে সন্দেহর চোখে দেখুক। কারণ তার বিষয়ে এমন কোনো কথা নেই যা ফাইয়াজ না জানে। তারপর ও ফাইয়াজ তাকে এতটা ভালো বেসে আপন করে নিয়েছে। এখন যদি সে চুপ করে থাকে তবে হয়ত ফাইয়াজের বিশ্বাস ভেঙে যাবে। তাই সে আর চুপ থাকবে না, এই কথাই ভাবছিল পুস্পিতা।

…….একি তোমার নাকি খারাপ লাগছে, তবে এখানে কেনো দাঁড়িয়ে আছো?

ফাইয়াজের কথায় পুস্পিতা চমকে উঠল। সে ঘুরে ফাইয়াজ কে দেখে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠল।

……আমার আপনার সাথে জরুরি কিছু কথা আছে।

……আচ্ছা তা পড়ে বললেও হবে, এখন আগে ফ্রেশ হয়ে নাও প্রচুর ক্ষিধে পেয়েছে।

…….নাহ প্লিজ আমাকে আগে বলতে দিন প্লিজ।

……ওকে বলো।

ফাইয়াজ গ্রিলের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল, পুস্পিতা বলতে নিলো।

…….আমি যখন ঢাকায় ছিলাম, তখন রোজ আসার পথে………।

কারো দরজায় নক করার শব্দে পুস্পিতা থেমে গেল।

……একটু করো আমি দেখছি কে আসছে তারপর তোমার কথা শুনব ঠিক আছে?

এই বলে ফাইয়াজ দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দরজা খুলে দেখল ফারিজ, আর নিবিড় দাঁড়িয়ে আছে।

…….ভাই রোজ তো ভাবীর সাথেই কথা বলিস আজ না হয় একটু আমাকেও সময় দিয়ে দে, প্লিজ ভাই চল।

……তোরা যা আমি আসছি।

……তোকে রেখে গেলে আজ আর তোকে পাওয়া যাবে না। চল চল। ভাবী টাটা, আজ আর ভাইকে এত জলদি পাচ্ছ না।

এই বলে নিবিড় ফাইয়াজ কে জোর করে টেনে নিয়ে গেল। আর পুস্পিতা তাকিয়ে দেখল, এ ছাড়া আর কী করবে সে এখন। তাই সেও ফ্রেশ হতে চলে গেল।

ড্রইং রুমে এসে পুস্পিতা ওদের কাউকে না দেখে তার শাশুড়ী কে প্রশ্ন করল।

…….আম্মু বাকি সবাই কোথায়?

……ওহ ওরা বুঝি ফারিজের রুমে আছে।

……ওহ আচ্ছা।

পুস্পিতা তার শাশুড়ির সাথে মিলে খাবার গুলো টেবিলে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখল। এরপর শিরিন গিয়ে সবাইকে ডেকে নিয়ে আসলো।

সবাই এক সাথে বসে খাবার খাচ্ছিল, তখন পুস্পিতা নিজের পায়ের উপর হালকা স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠল। সে ফাইজের দিকে তাকিয়ে দেখল না সে ওদের সাথে কথা বলতে বলতে ঠিক মতই খাবার খাচ্ছে, তাই সে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল নিবিড় মুচকি হেঁসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে বুঝতে পারছে এটা নিবিড়ের ই কাজ, সে কীভাবে এখন এখান থেকে সরে যাবে বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে, সে একটা কাটা চামচ ফেলল নিচে, কাউকে না দেখিয়েই, এরপর অন্য পা দিয়ে কাটা চামচ টা তুলে সেটা দিয়ে নিবিড়ের পায়ে আঘাত করল। যার জন্য নিবিড় চিৎকার করে উঠল।

…….কী রে কী হয়েছে নিবিড় (সবাই)

…….(মুচকি হেঁসে) কী হলো মিস্টার দেবর মশাই? কামড় খেয়েছেন বুঝি? একটু সাবধানে খাবেন তো? এত তারাহুরো করে খাওয়ার কী আছে?

……এত সুন্দরী ভাবী সামনে বসে থাকলে খাবার কী আর সাবধানে খাওয়া যায় বলো? তোমার দিকে তাকাতে গিয়েই তো সব হলো, ভাই তো আমার এজন্যই পাগল হয়েছে। এত সুন্দরী বধু ঘরে থাকলে কী আর ভাই বোনের কথা মনে থাকে?

নিবিড়ের কথা শুনে ফাইয়াজের কাশি চলে এলো। কারণ তার পাশে তার বাবা মা ও তো বসে ছিলো। সে নিজেকে সামলে নিয়ে। নিবিড় কে বলে উঠল।

……..নিবিড় তুই লম্বায়ই বড় হয়েছিস, বয়সে ছোটই রয়ে গিয়েছিস। চুপ করে খা।

এই বলে ফাইয়াজ নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে খেতে লাগল।

সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে যার যার রুমে চলে গেল। শিরিনের সঙ্গে মিলে পুস্পিতা খাবার টেবিল পরিষ্কার করে নিজের রুমে গিয়ে দেখল, সেখানে ফাইয়াজ নেই, বারান্দায় ওয়াশ রুমে কোথাও সে নেই। তাই ফোন হাতে নিয়ে কল করল, ফোন রুমেই বেজে উঠল। যা দেখে পুস্পিতা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বিছানার রেলিং এর সাথে মাথা এলিয়ে দিলো।

প্রায় যখন ৪:৩০ মিনিট তখন ফাইয়াজ তারাহুরো করে রুমে এসে দেখল পুস্পিতা হ্যালান দিয়ে বসে বসেই ঘুমাচ্ছে, তার চুল গুলো বাতাসে উড়ে এসে চোখে মুখে পড়ছে। ফাইয়াজ মুচকি হেঁসে, পুস্পিতার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পুস্পিতা কে ভালো ভাবে দেখল কিছুক্ষণ। এরপর হালকা হেঁসে রেডি হতে চলে গেল।

কারো দরজা আঁটকানোর শব্দে পুস্পিতার ঘুম ভেঙে গেল। তাকিয়ে দেখল ওয়াশ রুমের দরজা বন্ধ করছে কেউ ভেতর থেকে, সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ৪:৩৫ মিনিট, তাই বিছানা থেকে উঠে দু-হাতে মুখ গুঁজে একটু সময় বসে থেকে, উঠে রান্নাঘরে চলে গেল। চুলায় চায়ের পানি বসিয়ে দিয়ে রুমে এলো, তখন ফাইয়াজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়ে নিচ্ছিল। তাই পুস্পিতা রেডি হতে চলে গেল। রেডি হয়ে এসে রান্নাঘরে গিয়ে চা বানিয়ে নিয়ে এলো। এরপর ফাইয়াজ কে চা দিয়ে নিজে চা পান করতে করতে বাকি রেডি হয়ে নিলো।

পুস্পিতা আর ফাইয়াজ তারাহুরো করে বাড়ি থেকে বের হচ্ছিল। ঠিক তখনই নিবিড় পিছু থেকে ডাকল।

…….ভাই চলে যাচ্ছিস?

…….হ্যা কেনো কিছু বলবি।

…….নাহ তেমন কিছু নয়। আমাকে একটু বেলের্স পার্কে নামিয়ে দিয়ে যাবি?

……ঠিক আছে আয়।

ওরা দু’জন গাড়ীতে উঠে বসে পড়ল। নিবিড় ও এসে বসে পড়ল।

ফাইয়াজ গাড়ী ড্রাইভ করছে, আর নিবিড় এটা সেটা বলে যাচ্ছে কখনো পুস্পিতা কে ইঙ্গিত করে, কখনো আবার ফাইয়াজ যাতে সন্দেহ করে সেই ভাবে।

গাড়ী এসে বেলের্স পার্কের সামনে থেমে গেল। নিবিড় গাড়ী থেকে নেমে আল্লাহ হাফিজ বলে চলে গেল। আর ওরা দু’জন হসপিটালে চলে গেল।

এত ব্যস্ততার মাঝে ফাইয়াজের সাথে আর কথা হলো না পুস্পিতার। রাতে দু’জন বাড়িতে ফিরে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।

খাবার শেষ করে ফাইয়াজ রুমে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই নিবিড় বায়না করে বসল, আজ সে ফাইয়াজের সাথেই রাতে ঘুমাবে। পুস্পিতার কিছুটা ভয় হলো। কিন্তু ফাইয়াজ না করল না, কারণ এতদিন পড় ভাই এসেছে, আর সে তো এমন কিছু চায়নি, শুধু রাতে গল্প করার জন্যই এক সাথে থাকতে চাইছে। তাই সে না বলল না। সে পুস্পিতা কে শুয়ে পড়তে বলে নিজে ভাইয়ের সাথে চলে গেল। আর নিবিড় পেছনে ঘুরে পুস্পিতা কে চোখ টিপ দিয়ে মুচকি হেঁসে ভাইকে সাথে করে নিয়ে গেল। পুস্পিতা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখল। কী বলবে সে?

রাত তখন ১টা পুস্পিতার চোখে একটুও ঘুম নেই সে শুধু এপাশ ওপাশ করে চলেছে।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পুস্পিতা ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে দরজা খুলতে যাবে তার আগেই কেউ দরজা নক করে উঠল। পুস্পিতা দরজা খুলে দেখল, ফাইয়াজ দাঁড়িয়ে আছে, সে পুস্পিতার সাথে কথা না বলেই রুমের ভেতর চলে গেল, পুস্পিতা কে পাশ কাটিয়ে। যা দেখে পুস্পিতা কিছুটা অবাক হলো। ফাইয়াজ ওয়াশ রুমে চলে যেতেই পুস্পিতা তার জন্য একটা ড্রেস বের করে রেখে রান্নাঘরে চলে গেল।

ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছিল পুস্পিতা তারাহুরো করে আজ শিরিন ও আসে নি এখনো তাই সে একাই কাজ করছিল। এর মধ্যে কারো পায়ের শব্দ পেয়ে সেদিকে তাকিয়ে দেখল নিবিড় দাঁড়িয়ে আছে। সে নিবিড় কে রান্নাঘরে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেল। কিন্তু নিবিড় কে তা বুঝতে না দিয়ে সে রান্নার দিকে মনযোগ দিলো। নিবিড় ফ্রিজ খুলে একটা আপেল বের করে এসে পুস্পিতার গাঁ ঘেঁষে দাঁড়াতে গেল পুস্পিতা সরে গেল যা দেখে নিবিড় হাঁসল। আপেলে কামড় বসাতে বসাতে নিবিড় বলে উঠল।

…….ভালো, আমি ভাবতেও পারিনি তোমাকে এভাবে এখানে পেয়ে যাবো। সেদিনের পড়ে আর তোমাকে না দেখে ভেবেছিলাম আর হয়ত খুঁজে পাবো না, বাট এত জলদি খুঁজে পেয়ে যাবো বুঝতেই পারিনি। সেদিন তুমি কিন্তু কাজটা ঠিক করো নি। যদিও সেদিন তার উত্তর দিতে পারিনি কিন্তু আজ তো আর ছাড়ছি না ম্যাডাম।

…….আমি যদি আগে জানতাম আপনি আমার দেবর হন, তবে শুধু চোচড়া পাতা নয়, তার থেকে খারাপ কিছু এপ্লাই করতাম।

……ওহ তাই বুঝি? তা কী করতে?

……দেবর তো সন্তানের মতই হয় তাই-না? এখন যখন আপনার মাতা পিতা আপনাকে ভদ্রতা শিখাতে পারে নাই, তবে সেটা তো আমারই দ্বায়িত্ব সেখানোর। তাই কীভাবে ভদ্রতা শিখাতে হবে তা আমার খুব ভালো করে জানা রয়েছে।

…….ওহ তাই? তবে কীভাবে ভদ্রতা শেখাবে আমায়?

…….জুতা পেটা করে। কারণ ভদ্র ভাবে তো আপনি ভদ্রতা শিখবেন না, তাই এভাবেই শেখাতে হবে।

…….একটু বেশি হয়ে গেল না?

……মোটেই না? আমি এর থেকে খারাপ ভাবেও শিখাতে পারি, একবার বলে দেখেন কীভাবে শিখাতে হয় এখনি শিখিয়ে দিচ্ছি।

……এত তেজ থাকা ভালো না।

……তেজের দেখলেনটা কী? (রুটি বেলা ব্যালুন হাতে নিয়ে সামনে ঘোরাতে ঘোরাতে বলল)

নিবিড় আপেল খেতে খেতে বের হয়ে গেল, রান্নাঘর থেকে।

সবাই ব্রেকফাস্ট করে বসে কথা বলছিল। পুস্পিতা নিজের রুমে গিয়ে রেডি হয়ে নিলো। ফাইয়াজ ও গিয়ে রেডি হয়ে নিলো। দুজন রুম থেকে বাহিরে বের হতেই। নিবিড় এসে বলে উঠল

…….ভাই আমরা কিন্তু আজ রাতেই চলে যাবো।

……আজই কেনো আর দুদিন থেকে যা।

……নাহ আসলে আব্বু ফোন দিয়েছিল, আজই যেতে বলেছেন।

……আমি কী কথা বলে দেখব একবার?

……নাহ থাক বলতে হবে না। আমার মনে হচ্ছে ভাবীর হয়ত আমাদের ভালো লাগছে না, তাই চলে যাওয়াটাই বেটার।

নিবিড়ের কথা শুনে পুস্পিতা তার দিকে তাকালো, সে পুস্পিতা কে ইঙ্গিত করে আবার বলে উঠল।

…….কী ভাবী ভুল কিছু বললাম নাকি?

…….আমি এমন কী করেছি যার জন্য আপনার মনে হচ্ছে আমি আপনাদের পছন্দ করছি না?

……এই যে আমাদের সাথে তো তেমন ভাবে কথাও বলছ না। আমাদের কী প্রয়োজন, না প্রয়োজন তাও তো একটু জিজ্ঞেস করতে পারো?

……তাই? তা কী প্রয়োজন আপনার? বউ প্রয়োজন নাকি? তা কাকিমা, বা চাচ্চুকে বলে দিলেই তো হয়। যে দেবরের এখন বিয়ে করার সাধ জেগেছে। কী ফোন দিয়ে বলব নাকি তাদের?

…….তাদের কেনো বলবে, তুমি যখন বুঝেছ তবে তুমিই খুঁজে দাও।

……আমি তো এমনিতেই অনেক ব্যস্ত, তাই এই কাজটা তারাই করুক। শুনুন আজকেই বরং কাকিমা কে একবার ফোন দিয়ে বলে দেবেন, আপনার ভাইয়ের বউ লাগবে।

এই কথা বলে পুস্পিতা সেখান থেকে হেঁটে চলে গেল। ফাইয়াজ ও নিবিড়ের কাধে হাত রেখে পুস্পিতার সাথে সাথে বের হয়ে এলো।

গাড়ীতে বসে ছিলো পুস্পিতা, ফাইয়াজ এসে গাড়ীতে বসে পড়ল। পুস্পিতার খুব রাগ হচ্ছে। তাই জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রয়েছে। একটা মানুষ কী করে এতটা খারাপ হতে পারে? তা পুস্পিতার জানা ছিলো না।



চলবে………….।

নীলফড়িং পর্ব-২১

0

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#পর্ব ২১
.
.
ফাইয়াজ পার্টি হাউজের সামনে এসে গাড়ী থামিয়ে নামল। পুস্পিতাও নেমে দাঁড়ায়, ফাইয়াজের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল পুস্পিতা। হাতে হাত রেখে এগিয়ে গেল দুজন। সেখানে গিয়ে সবার সাথে পরিচিত হতে শুরু করল। অনেকে পুস্পিতা কে চেনে না, অনেকে আবার এটা জানে না যে ফাইজের ওয়াইফ পুস্পিতা। তাই পুস্পিতা কে পরিচয় করিয়ে দিলো সবার সাথে ফাইয়াজ।

পুস্পিতা তার পরিচিত একজনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল, ফাইয়াজ ও অন্য কারো সাথে কথা বলছিল। তখন হঠাৎ ফাইয়াজের চোখ পড়ল, পুস্পিতার দিকে, তার চোখে আজ পুস্পিতা খুবই সুন্দর এক রমনী, যার থেকে চোখ সরাতে ইচ্ছে করছে না তার। ঝলমলে ব্লাক শাড়ি, চুল গুলো মুড়িয়ে বেঁধেছে, এক পাশ থেকে কয়েকটা চুল গাল ছুঁয়ে আছে, টানা টানা চোখ দুটো কাজল কালো, লাল খয়েরি রঙে ঠোঁট দুটো আরও সুন্দর দেখা যাচ্ছে, নাক ফুলটা জেনো পুস্পিতার জন্যই বানানো হয়েছে এতটা সুন্দর মানিয়েছে তাকে এই নাক ফুলে যা বলার মতো নয়। সেই বিয়েতে দেওয়া ডায়মন্ড সেট-টা পড়ে আজ পুস্পিতার সৌন্দর্য আরও দ্বিগুণ হয়েছে। তার মধ্যে ওর হেঁসে হেঁসে কথা বলা দেখলে ফাইয়াজ এমনিতেই ঘায়েল হয়ে যায়। পুস্পিতার চোখ পড়ল ফাইয়াজের দিকে, ফাইয়াজ ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো যা দেখে ইশারায় জিজ্ঞেস করল পুস্পিতা। কী হয়েছে? ফাইয়াজ হালকা হেঁসে মাথা নাড়িয়ে কিছু না বলল।

রাত তখন ১১ টা ফাইয়াজ ডক্টর জাফর কে বলে বিদায় নিতে গেল। কিন্তু ডক্টর জাফর এত জলদি তাদের যেতে দেবে না তাই রিকোয়েস্ট করল আর ঘন্টা খানেক থাকার জন্য। বাট ফাইয়াজ বুঝতে পারছে তার মা এখন টেনশন করবে। তাই ফাইয়াজ এগিয়ে গিয়ে তার আম্মুকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলো।

……..আসসালামু আলাইকুম আম্মু।

……ওয়ালাইকুম আসসালাম। হ্যা ফাইয়াজ বল?

……আম্মু আসতে আর একটু দেরি হবে। তোমরা বরং খেয়ে শুয়ে পড়ো, আমরা খেয়ে আসবো।

…….বেশি দেরি হবে?

……নাহ আম্মু এই তো ঘন্টা খানেক।

…….আচ্ছা বাবা জলদি চলে আসিস, দু’জন সাবধানে থাকিস কেমন?

……জ্বি আম্মু।

ফোন রেখে এগিয়ে গেল ফাইয়াজ দেখল পুস্পিতা তাকেই হয়ত খুঁজছে, তাই পেছন থেকে গিয়ে পুস্পিতা কে জিজ্ঞেস করে উঠল।

……কাকে খুঁজছেন ম্যাডাম?

পুস্পিতা কারো কণ্ঠ শুনে পেছনে ঘুরে দেখল ফাইয়াজ দাঁড়িয়ে, চারিদিকে মাঝামাঝি শব্দে গান বাজনা হচ্ছিল যার জন্য ঠিক মতো কথা শোনা যাচ্ছে না।

…….আপনি কোথায় ছিলেন?

…….আম্মুর সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম।

……জানিয়ে দিয়েছেন আমাদের ফিরতে দেরি হবে?

……হ্যা দিয়েছি।

ওরা একে অপরের সাথে কথা বলছিল, এর মধ্যে পেছনে অনেক সোরগোল শুনে সেদিকে তাকিয়ে দেখল কেউ প্রচুর চিল্লাচিল্লি করছে তাই দুজনেই আস্তে আস্তে সেদিকে এগিয়ে গেল। কিছু দূর যেতেই পুস্পিতা, ফাইয়াজের হাত খুব শক্ত করে চেপে ধরল। কারণ চারিদিকের গান বাজনা থেমে যাওয়ায় এখন কন্ঠস্বরটা খুব ভালো ভাবেই বোঝা যাচ্ছে। আর কন্ঠস্বরটা পুস্পিতার খুব চেনা মনে হচ্ছে। যা কিছু পুরানো স্মৃতি তাকে মনে করিয়ে দিতে যথেষ্ট। পুস্পিতার এমন ভয় পাওয়া দেখে ফাইয়াজ দাঁড়িয়ে গেল।

…….কী হয়েছে তোমার?

……কিছু না, চলেন এখান থেকে, আমার ভালো লাগছে না।

……বাট কী হয়েছে তা তো বলবে?

…….প্লিজ চলেন না এখান থেকে।

পুস্পিতা এই কথা বলতে বলতেই, সেই ঝামেলা করার মানুষটা সবাইকে ঠেলে বের হয়ে এলো, যা দেখে পুস্পিতা ফাইয়াজের হাত আরও শক্ত করে ধরল। ফাইয়াজ পুস্পিতা কে এতটা ভয় পেতে দেখে, ফাইয়াজ ওর চোখ অনুসরণ করে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল রাবীত এগিয়ে আসছে। সে এখন বুঝতে পারছে পুস্পিতা কেনো এমন করছে? পুস্পিতা রাবীত কে দেখে ফাইয়াজের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে গেল প্রায় ফাইয়াজের সাথে মিশে, ফাইয়াজ ও পুস্পিতা কে ধরে রেখেছে, এর মধ্যে রাবীতের নজর পড়ল ফাইয়াজের দিকে, সে পুস্পিতা কে খেয়ালই করে নি। রাবীত এসে ফাইয়াজের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। আর বলে উঠল।

…….আরে স্যার যে? কেমন আছেন আপনি?

……তোমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করছি না।

……ওহ এই ব্যাপার। আচ্ছা ইনি কে? আপনার ওয়াইফ নাকি? হ্যালো ম্যাম? কেমন আছেন?

পুস্পিতা কোনো কথাই বলছিল না যা দেখে রাবীত এদিক সেদিক উঁকি ঝুঁকি মেরে তাকে দেখার চেষ্টা করছিল, বাট দেখতে পারছিল না।

…….ওহ আচ্ছা ম্যাম হয়ত লজ্জা পাচ্ছে? ওকে ম্যাম আমি চলে যাচ্ছি টাটা।

রাবীতের কন্ঠ শুনে আর হালচাল দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে নেশা করে আছে, যার জন্য সে নিজের মধ্যেই নেই। সে হেলতে দুলতে পার্টি হাউজ থেকে বেরিয়ে গেল।

…….পুস্পিতা ও চলে গেছে।

এই কথাটা শুনে পুস্পিতা অনেকটা শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। কিন্তু ওর চেহারা থেকে এখানো ভয়টা যায়নি। পুস্পিতা দাঁড়িয়ে তো আছে বাট ফাইয়াজের হাত খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে। তার ভয় করছে এখনো এই বুঝি রাবীত চলে আসবে।

এরপর ওরা আরও ঘন্টা খানেক সময় থেকে সেখান থেকে বেরিয়ে এলো।

দরজায় এসে ওরা লক খুলে দুজনে ভেতরে চলে এলো, ওদের রুমে ঢুকতে যাবে ঠিক তখনই দেখল ওদের আব্বু আম্মুর রুমের আলো জ্বলছে। তাই পুস্পিতা কে রুমে যেতে বলে ফাইয়াজ তার আব্বু আম্মুর সাথে দেখা করতে এগিয়ে গেল।

ফাইয়াজ রুমে এসে দেখল পুস্পিতা এখনো বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে, অন্যমনস্ক হয়ে। ফাইয়াজ পুস্পিতার সামনে গিয়ে বসে পুস্পিতার হাত তার হাতে নিয়ে বলে উঠল

……পুস্পিতা সে চলে গেছে।

…….বাট সে আবার কেনো আমার সামনে এলো?

…….আরে একই শহরে যখন আমরা থাকি তবে আজ না হয় কাল তো এটা হবারই ছিলো, তাতে যদি তুমি এতটা ভয় পাও তবে কী করে হয়? আচ্ছা আমি তো আছি তোমার সাথে নাকি?

…….আপনার জন্যই তো আজ আমি বেঁচে আছি। নয়ত সেই কবেই তো…….। আমি ভাবতে পারছিনা সেদিনের সেই কথা গুলো।

…….কে বলেছে তোমাকে তা ভাবতে? তুমি শুধু আমার, তাই তোমার ভাবনায় শুধু আমি থাকতে চাই আর কেউ নয়।

……কিন্তু……..।

…….আর একটা কথাও নয়। যাও অনেক রাত হয়েছে, চেঞ্জ করে এসো।

…….হুম।

পুস্পিতা চেঞ্জ করে এসে বিছানা গুছিয়ে নিলো। ততক্ষণে ফাইয়াজ ও চেঞ্জ করে চলে এলো।

পুস্পিতা, ফাইয়াজের বুকে মাথা রেখে চুপ করে শুয়ে রইল। ফাইয়াজ ও পুস্পিতা কে আগলে নিলো নিজের মাঝে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট করে দুজন পুস্পিতার বাবার বাসায় গেল। আজ পুস্পিতা সারাদিন ওর বাবা মায়ের সাথেই থাকবে তাই।

বিকেল দিকে পুস্পিতা আর ফাইয়াজ তাদের বাড়ি ফিরে এসে দেখল সবাই মিলে ড্রইং রুমে বসে কথা বলছে। ফারিজ তার ভাই ভাবীকে দেখে বলে উঠল।

……খুব ভালো করেছ এখন এসে।

……কেনো?

……জানো আজ নিশা নাকি আমাদের বিকেলের নাস্তা করে খাওয়াবে।

…….ওহ এটা তো খুব ভালো কথা। তবে এতো দেরি না করে একটু জলদি জলদি করলেই তো হতো। আমরাও একটু টেস্ট করে যেতে পারতাম।

……কেনো তোমরা কোথাও বের হচ্ছ না-কি?

……হ্যা নিশা আমরা তো এখন হসপিটালে যাবো।

……আরে ভাবী ভাইকে যেতে দাও, তুমি আর দু-দিন পরে যাও।

……স্যরি মিস্টার দেবর, আমিতো আগেই জানিয়ে দিয়েছি আজ থেকে চেম্বার করব। তাই ক্যান্সেল করতে পারছি না।

……তবে আর কী করার। ওকে যাও।

……যাচ্ছি বলে এই নয় যে খেতে পারব না নিশা রেখে দিশ আমাদের দুজনের ভাগের খাবার, এসে খেয়ে নেবো।

এই বলে ওরা দু’জন রুমে চলে গেল। দুজনে রেডি হয়ে বেরিয়ে এলো। সবার থেকে বিদায় নিয়ে হসপিটালের জন্য বের হয়ে গেল।

রাতে দুজন খুবই ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরল, দুজনেই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। এর মধ্যে দরজায় কড়া নড়ে উঠল। তাই পুস্পিতা গিয়ে দরজা খুলে দেখল। নিশা দাঁড়িয়ে আছে।

…….আরে নিশা তুমি?

……হ্যা ভাবী ওই বিকেলের স্ন্যাকস আপনাদের জন্য।

…….ধন্যবাদ নিশা। বাট এগুলো রুমে কেনো আনতে গেলে? তুমি ডাইনিং রুমে নিয়ে যাও, আমরা আসছি।

……ওহ আচ্ছা আমি ভাবছি হয়ত এখানে বসেও খেতে পারেন তাই।

……নাহ তুমি নিয়ে যাও।

নিশা খাবার নিয়ে চলে যেতেই, পুস্পিতা দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানা গুছিয়ে নিলো। ফাইয়াজ ফ্রেশ হয়ে আসতেই দুজনে মিলে খাবার খেতে চলে এলো।

দুজনের সামনেই নিশার বানানো খাবার রাখা আছে। যা দেখে ফাইয়াজ বলে উঠল।

……এখন পাস্তা? খেতে ইচ্ছে করছে না, তারপরও যখন এত কষ্ট করে তুই বানিয়েছিস না খেয়েও তো থাকা যায় না। পুস্পিতা দুই প্লেট নষ্ট করার প্রয়োজন নেই, এখান থেকেই নাও। আমি এতটা খাবো না এখন।

……হুম।

…….ভাইয়া আমি এগুলো এত কষ্ট করে রান্না করেছি আর তুমি এখন খেতে চাইছ না।

……তুই কী দেখছিস? খাচ্ছি তো, অল্প করে হলেও তো খাচ্ছি।

…….আরে অল্প করে কেনো খাবে? ভাবীর খাবার ভাবী খাবে তোমারটা তুমি।

…….দ্যাখ আমি এখন প্রচুর টায়ার্ড ফিল করছি, তাই এত কথা বলতে মোটেও ভালো লাগছে না।

…….আচ্ছা ও যখন এত কষ্ট করে রান্না করেছে তবে খেয়ে দেখেন না।

…….তোমার ইচ্ছে হলে তুমি সবটা খেতে পারো।

এই বলে ফাইয়াজ নিজের প্লেট থেকে বেশি অর্ধেক খাবার পুস্পিতার প্লেটে দিয়ে দিলো। এরপর নিজের প্লেট থেকে চামিচে করে কিছুটা উঠিয়ে মুখে দিয়ে চোখ মুখ কেমন করে উঠল। যা দেখে পুস্পিতাও একটু মুখে দিলো, দিতেই সে বুঝতে পারছে লবণের পরিমান একটু বেশিই হয়েছে, আর পান্সা লাগছে খেতেও, মনে হচ্ছে কিছুটা পুরেও গিয়েছিল, যার জন্য খাওয়া যাচ্ছে না।

…….নিশা তুই খেয়েছিলি?

……নাহ আসলে কাকিমা খেতে দেইনি।

……আচ্ছা এখন তবে একটু খেয়ে দ্যাখ।

……এই কী বলছেন? নিশা তোমার খেতে হবে না। তুমি বরং সবাইকে ডেকে নিয়ে আসো।

……জ্বি যাচ্ছি।

এই বলে নিশা চলে যেতেই পুস্পিতা ফাইয়াজ কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল।

……আপনি কী পাগল?

……এখানে পাগলের কী আছে? এগুলো মানুষ খেতে পারে?

……আরে ও কত আশা করে রান্না করেছে, আম্মু যার জন্য ওকে খেতে দেয়নি। এখন আপনি যদি ওকে বলেন খাবার খারাপ হয়েছে তবে ও খুব কষ্ট পাবে। ওর কিছু করার ইচ্ছে শক্তি নষ্ট হয়ে যাবে। তাই প্লিজ এমন করে বলবেন না। আচ্ছা দিন আপনার খেতে হবে না।

এই বলে পুস্পিতা খাবার গুলো ময়লার ভান্ডে ফেলে দিয়ে আবার এসে চেয়ারে বসে পড়ল। ততক্ষণে সবাই চলে এলো খাবার টেবিলে এরপর সবাই মিলে রাতের খাবার খেয়ে যার যার রুমে চলে এলো।

এভাবেই দুই-তিন দিন চলে গেলো। ওরা আগের মতই দুজন ব্যস্ত হয়ে গেল। তার মধ্যেও নিজেদের জন্য ভালোবাসার কিছুটা সময় বের করে নেয়। যতটুকু শুধু নিজেদের। ভালো আছে দুজন ভালোবেসে।



চলবে………….।

নীলফড়িং পর্ব-২০

0

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#পর্ব ২০
.
.
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে চলে গেল পুস্পিতা, তার শাশুড়ী মা তাকে দেখে হাসি মুখে জিজ্ঞেস করল।

……এত জলদি উঠলে কেনো? আর একটু ঘুমাতে। দুই দিন একটু রেস্ট নিয়ে নাও মা, এতদিন তো আর তেমন রেস্ট নেওয়ার সময় পাওনি।

……জ্বি আম্মু তা ঠিক আছে, তবে এটা কাজের ক্ষেত্রে, বাসার ক্ষেত্রে নয়। কারণ এতদিন আপনি একাই তো সব করেছেন। আমি বরং করিনি। তাই আজ থেকে আমি কাজ করব আপনি এই দুদিন রেস্ট নিবেন।

…….আরে না না এটা হবে না।

…..এটাই হবে আম্মু।

এই বলে শাশুড়ী কে রান্নাঘর থেকে বের করে দিয়ে পুস্পিতা শিরিনের সঙ্গে মিলে ব্রেকফাস্ট বানিয়ে নিলো। এরপর শিরিন কে সব ডাইনিং টেবিলে গুছিয়ে রাখতে বলে সে ফাইয়াজ কে ডাকতে চলে গেল। যেহেতু আজ শুক্রবার, তাই ফাইয়াজ ও নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। তাই পুস্পিতা গিয়ে ফাইয়াজের কানের কাছে চুড়ি নাড়া শুরু করল। যার শব্দে ফাইয়াজ খুব বিরক্ত হচ্ছে।

……কী করছ? ঘুমাতে দাও।

……মোটেই না, ব্রেকফাস্ট ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে এই মিস্টার ডক্টর ওঠেন বলছি না হয় পানি ঢেলে দেবো।

……আচ্ছা ঠিক আছে।

এই বলে পুস্পিতা কে টান দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো এরপর তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমিয়ে পড়ল।

……এই এই কেউ এসে যাবে, দরজা ভেজানো আছে।

……আসুক যার ইচ্ছে। তুমি চুপ করে আমাকে ঘুমাতে দাও।

……উঠুন না। এই মিস্টার ডক্টর ওঠেন।

ফাইয়াজ নিজের হাতের আঙুল দিয়ে পুস্পিতার ঠোঁট চেপে ধরতে চাইলো বাট পুস্পিতা একটা কামড় বসিয়ে দিলো তার আঙুলে। যার জন্য আহ বলে চিৎকার করে একেবারে উঠে বসে পড়ল।

……এই মেয়ে কামড় কেনো মারলে?

……তো কী করব? সবাই এতক্ষণে ব্রেকফাস্ট করতে হয়ত চলে আসছে, বাট আমরা দু’জন নিরালায় শুয়ে আছি। দরজাও খোলা আছে কেউ চলে আসলে?

…….দাঁড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি মজা। আমাকে কামড় দেওয়া বুঝাচ্ছি।

এই শুনে পুস্পিতা উঠে যেতে নিলো বাট ফাইয়াজ তাকে ধরে বিছানায় ফেলে দিলো। ফাইয়াজ পুস্পিতা কে শক্ত করে বিছানার সাথে আঁটকে ধরল।

……এই প্লিজ প্লিজ বলছি ছেড়ে দিন আর হবে না।

……এখন আর ছাড়া ছাড়ি নেই ম্যাডাম, আগেই বারণ করেছিলাম। শুনো নাই কেনো তখন।

……প্লিজ প্লিজ কেউ এসে যাবে।

……একদম চুপ করে থাকো।

এই বলে ফাইয়াজ পুস্পিতার দিকে এগিয়ে যেতে নিলো। অনেকটা কাছে চলে যেতেই কেউ এসে রুমে প্রবেশ করল।

…….স্যরি স্যরি।

পুস্পিতা ঠেলা দিয়ে ফাইয়াজ কে সরিয়ে দিয়ে নিজের শাড়ি ঠিক করতে করতে উঠে বসে পড়ল, দরজায় তাকিয়ে দেখল নিশা দাঁড়িয়ে আছে চোখের সামনে এক হাত দিয়ে। ফাইয়াজ উঠে বসে লজ্জা পেয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল। আর পুস্পিতা নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বিছানা গোছাতে গোছাতে বলে উঠল।

……হ্যা নিশা কিছু বলবে?

……নাহ আসলে ল্যাপটপ-টা দিতে এসেছিলাম।

……ওহ আচ্ছা রেখে যাও তবে।

নিশা টেবিলের উপর ল্যাপটপ রেখে চুপচাপ বের হয়ে গেল রুম থেকে, সে যাওয়ার সাথে সাথেই পুস্পিতা দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় বসে পড়ল৷ ইশ খুব খারাপ হলো।

…..আর এই লোকটা কে কতবার করে বললাম দরজা খোলা আছে, কে শোনে কার কথা? এবার বোঝো ঠেলা। নিজের ছোট বোনের সামনে এমন লজ্জা পেলে যা হয় আর কী?

ফাইয়াজ ওয়াশ রুম থেকে বের হওয়ার আগে ভালো করে উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখল, না পুস্পিতা একাই রুমে আছে। তাই সে বের হয়ে এলো।

……কী ম্যাডাম দরজা লক করেছ তো?

পুস্পিতা চোখ দুটো ছোট ছোট করে মাজায় হাত রেখে বলে উঠল।

……যখন আমি কিছু বলি তখন গায়ে লাগাবেন না। যখন সমস্যা হয়ে যাবে তখন বলবেন সাবধানে আছি তো?

……হ্যা হ্যা এখন তুমিও বলো।

……আপনি যা করছেন সেখানে আমি কিছু এখনো বলিনি। আর বলব ও না। দেখছি আপনি এখন বাহিরে কীভাবে যান নিজের ছোট বোনের সামনে?

……ইশ সত্যি এখন কী করব?

……আমি কী জানি। (কাপড় গুছিয়ে রাখতে রাখতে।)

……তুমি বরং আমার ব্রেকফাস্ট রুমেই নিয়ে আসো।

……ইশ নিজে যেতে পারবে না আমাকে যেতে বলছে। নিজে গিয়ে বরং আমারটা ও নিয়ে আসেন।

…..এটা কেমন কথা?

……তবে লজ্জা বুঝি একা আপনারই আছে আমার নেই? আমি এখন বাহিরে যেতে পারব না। কাজ আছে আমার রুমে।

……প্লিজ প্লিজ জান একটু দয়া করো তোমার এই হাসবেন্ড কে।

……আচ্ছা আজকাল দেখছি ভালোই কথা বলছেন। আগে তো একটা জিজ্ঞেস করলে আরেকটা উত্তর বলে দিতেন। এখন দেখছি অনেকটা চেঞ্জ।

……আরও কত কী দেখবে, সব তো তোমার প্রেমেই হয়েছি। অন্য কারো সাথে দেখেছ এতটা ফ্রি আমাকে?

……নাহ তাই তো বলছি। আচ্ছা দেখছি কী করা যায়।

এই বলে পুস্পিতা রুম থেকে বের হয়ে আগে চারিপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো না নিশা কোথাও নেই, তাই সে ডাইনিং রুমে গিয়ে ফাইয়াজের জন্য খাবার তুলে নিলো একটা প্লেটে খাবার গুছিয়ে নিয়ে এগোতে নিলো এর মধ্যে তার শাশুড়ী এসে সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে উঠল।

…..আরে পুস্পিতা এগুলো কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?

……আম্মু আসলে আপনার ছেলে একটু জরুরি কাজ করছে তাই বলছে এখন কিছু খাবে না, তাই আমি ভাবলাম তার খাবারটা তার রুমেই দিয়ে দেই।

…..এই ছেলেটা কাজ ছাড়া কিছুই বোঝে না। আচ্ছা ঠিক আছে দিয়ে আসো তুমি।

পুস্পিতা তারাতাড়ি করে হেঁটে এগিয়ে গেল তার রুমের ভেতর। রুমে গিয়ে ফাইয়াজের সামনে খাবার রেখে বলে উঠল।

……আপনার জন্য আজ আম্মুর সাথে মিথ্যা কথা বলতে হলো। আপনাকে যে কী করা উচিৎ বলে বুঝাতে পারব না।

……যাক বুঝাতে হবে না। সত্যি প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে, তুমি খেলে বসে পড়ো না খেলে দাঁড়িয়ে থাকো আমি খাই দেখো।

……আমার খাওয়াও লাগবে না, দেখাও লাগবে না, আপনি খেয়ে নিন। (যেতে নিয়ে আবার ঘুরে গিয়ে) আর শুনুন দরজাটা লাগিয়ে নিন।

এই বলে পুস্পিতা রুম থেকে বের হয়ে গেল।

বিকেল দিকে পুস্পিতা আর ফাইয়াজ ঘুরতে বের হতে নিলো। নিশা এসে ওদের বের হতে দেখে বলে উঠল।

……ভাই তোমরা কোথাও যাচ্ছ?

……হ্যা একটু বাহিরে যাচ্ছি।

……আমিও আশি তোমাদের সাথে?

……তুই কোথায় যাবি?

……আরে তোমরা যেখানে যাবে আমিও সেখানেই যাবো।

……আমাদের তো একটু কাজ ছিলো। তুই এক কাজ কর ফারিজের সাথে চলে যা। ও তোকে ঘুরিয়ে আনবে।

…….থাক লাগবে না আমার কোথাও যাওয়া।

……নিশা যাও তুমি রেডি হয়ে আসো।

……কিন্তু পুস্পিতা?

…….থাকনা যেতে চাইছে যখন।

…….তোমার ইচ্ছে।

নিশা খুশি হয়ে চলে গেল রেডি হতে। এদিকে ফাইয়াজ রাগ করে বলে উঠল।

…….কতদিন পড়ে তুমি এলে চাইছিলাম দুজনে এক সাথে একটু সময় কাটাব। কিন্তু তুমি, যাক তোমার যা ইচ্ছে তাই করো।

এই বলে ফাইয়াজ রুম থেকে বের হয়ে গেল। পুস্পিতা হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে রুম থেকে বের হয়ে এলো।

পুস্পিতা গাড়ীর সামনের দরজায় হাত দিতে যাবে ঠিক তখনই নিশা অন্য পাশ থেকে এসে দরজা খুলে ঢুকতে নিলো। যা দেখে পুস্পিতা সাথে সাথে দরজা ধরে বলে উঠল।

…….নিশা এটা তোমার জায়গা নয় এটা আমার জায়গা, তাই তুমি গিয়ে পেছনে বসো।

…….ভাবী আমার গাড়ীর পেছনে বসার অভ্যাস নেই। আপনি একটু ম্যানেজ করে নিন না।

……স্যারি ননদিনি আমি আমার নিজের বলতে কোনো কিছুর সাথে ম্যানেজ করতে শিখিনি। তাই তোমাকেই এডজাস্ট করে নিতে হবে। যাও পেছনে গিয়ে বসে পড়ো।

নিশা প্রচুর রেগে গিয়ে পেছনে বসে পড়ল। আর পুস্পিতা সামনে ফাইয়াজের পাশেই বসে পড়ল। ফাইয়াজ মুচকি হেঁসে গাড়ী ড্রাইভ করতে শুরু করে দিলো।

……কোন দিকে যাবেন ম্যাডাম?

……বগুড়া রোড বাসের কঞ্চির ওখানে যাই।

……জ্বি অবশ্যই।

বাসের কঞ্চির সামনে গিয়ে গাড়ী থামিয়ে দুজনে নেমে দাঁড়াল।

……নিশা আসো।

……নাহ ভাবী আমি এসব জায়গায় কিছু খেতে পারি না।

……ওহ আচ্ছা, ঠিক আছে খেতে হবে না তুমি বসো আমরা আসছি।

এই বলে ফাইয়াজের হাত ধরে পুস্পিতা ভেতরে চলে গেল। দুজনে খুব মজা করে দই ফুচকা আরও কয়েক পদ খেয়ে প্রায় ৩০ মিনিট পড়ে বের হয়ে দেখল নিশা গাড়ীর সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা দু’জন গাড়ীতে উঠে বসে পড়ল, যা দেখে নিশাও বসল। ওরা আরও অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করে বাসায় চলে এলো।

বাসায় আসতেই নিশা তার রুমে চলে গেল। তাই ফাইয়াজ পুস্পিতা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল।

…….পুস্পিতা।

……হ্যা।

……আসলে একটা কথা বলতে ভুলেই গিয়েছি।

……জ্বি বলেন?

……আজ একটা জন্মদিনের পার্টির দাওয়াত ছিলো। না গেলেই নয়। ডক্টর জাফর এর মেয়ের বার্থডে তাই কষ্ট করে একটু রেডি হয়ে নাও।

…….জ্বি নিশ্চয়ই।

পুস্পিতা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ৭টা ১০মিনিট, তাই পুস্পিতা গিয়ে রেডি হয়ে নিলো। ফাইয়াজ ও ম্যাচিং করে পড়ে নিলো পুস্পিতার সাথে এরপর দু’জনে বেরিয়ে পড়ল ওদের আম্মুকে জানিয়ে।



চলবে………..।

নীলফড়িং পর্ব-১৯

0

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#পর্ব ১৯
.
.
খুব সকাল সকাল ঘুম ভাঙল পুস্পিতার ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখল ফাইয়াজের বুকে মাথা রেখে সে ঘুমিয়ে ছিলো। অনেক দিন বাদে এমন একটা সকাল আবার তার জীবনে ফিরে পেলো এটা ভেবে সে মুচকি হেঁসে ফাইয়াজ কে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। খুব ভালো লাগছে আজ পুস্পিতার কাছে ইচ্ছে করছিল না তার আজ ঘুম থেকে উঠতে, বাট কী করবে সে ফাইয়াজের ও তো আজ যেতেই হবে। তাই মন খারাপ করে সে উঠে বসতে নিলো, বাট ফাইয়াজ এবার তাকে খুব শক্ত করে ধরে রাখল যার জন্য চেষ্টা করে ও উঠতে পারছে না পুস্পিতা।

…….আপনি উঠে গেছেন?

…….উঁহু না তো (চোখ বন্ধ রেখেই)

…….তবে উত্তর কীভাবে দিচ্ছেন?

সে চুপ করে গেল আর কোনো উত্তর না দিয়ে। যা দেখে পুস্পিতা নিজের চুল নিয়ে ফাইয়াজের নাকে, কানে সুড়সুড়ি দিতে লাগল। যার জন্য ফাইয়াজ আর চোখ বন্ধ করে থাকতে পারল না। সে পুস্পিতা কে নিয়ে ঘুরে গেল চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলে উঠল।

…….কী ম্যাডাম আজ এত ফাজলামো কেনো করছ?

…….তবে না ঘুমিয়েও ঘুমের ভাং কেনো ধরেছেন?

……আর একটু সময় তোমার সাথে থাকব তাই সময় তো আর ধরে রাখতে পারব না তোমাকে ধরে রাখার একটু চেষ্টা শুধু মাত্র।

…….তাই? আর তো মাত্র ১০ দিন এরপর আবার সব ঠিক হয়ে যাবে ইন’শা’আল্লাহ।

…….এই ১০ দিন (লম্বা শ্বাস নিয়ে) আমার কাছে ১০ বছরের সমান ম্যাডাম।

……..তবে বরং আপনি থেকে যান এই ১০ দিন।

…….এটা যদি সম্ভব হতো তবে তোমার বলার প্রয়োজনই পড়ত না গো। (নাকের সাথে নাক ঘষে দিয়ে)

……. আচ্ছা ৮টা বেজে গেছে এখন ওঠেন নায়ত দেরি হয়ে যাবে।

…….আরে আর একটু পড়ে এত জলদি কীসের?

……ব্রেকফাস্ট ও তো বানাতে হবে?

……উঁহু আজ কিছু করতে হবে না।

……তবে না খেয়েই চলে যাবেন?

…….কে বলেছে? আমি না খেয়ে চলে গেলে তুমিও তো খাবে না। তাই এটা কী সম্ভব বলো?

……তবে?

……আজ বাহিরে খাবো। অন্যরা বানাবে আমরা খাবো। (দুজনেই হেঁসে উঠল।)

প্রায় যখন ৮:৪৫ মিনিট, তখন ফাইয়াজের ফোন বেজে উঠল তাই ফাইয়াজ উঠে ফোন রিসিভ করল। তার আম্মু ছিলো তাই সে কথা বলতে বলতে সামনের রুমে চলে গেল।

পুস্পিতা ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে দেখল ফাইয়াজ বিছানায় বসে ফোন টিপছে।

…….কী মিস্টার আজ বুঝি যাওয়ার কোনো ইচ্ছে শক্তি নেই?

…….না থাকলেও তো যেতেই হবে ম্যাডাম।

…….আম্মু কী বলল?

…….রহণা দিয়েছি কিনা এটা জানার জন্য।

…….ওহ আচ্ছা। আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন আমি ব্রেকফাস্ট বানিয়ে দিচ্ছি।

…….আরে বললাম তো বাহিরে খেয়ে নেবো।

…….বাহিরে খেতে হবে না, আমার ১০ মিনিট লাগবে আপনি ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে নিন, আমি বানিয়ে আনছি।

…….ওকে ম্যাডাম।

ফাইয়াজ ফ্রেশ হতে চলে গেল। পুস্পিতা রান্নাঘরে গিয়ে দুজনের জন্য ব্রেকফাস্ট বানিয়ে নিলো।

ফাইয়াজ বের হয়ে দেখল পুস্পিতা খাবার নিয়ে বের হয়ে আসলো রান্নাঘর থেকে। এরপর দু’জনে মিলে ব্রেকফাস্ট শেষ করল। এর মধ্যে নিরাও চলে এলো। এরপর তিন জন রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল। ওদের দু’জন কে নামিয়ে দিয়ে ফাইয়াজ চলে গেল। পুস্পিতার প্রচুর খারাপ লাগছিল। ইচ্ছে করছিল না ফাইয়াজ কে যেতে দিতে, কিন্তু কী বা আর করার ছিলো, যেতে দেওয়া ছাড়া?

আজও যখন ওরা যেতে নিলো বাসায় ফেরার জন্য, তখন সেই বকাটে ছেলেটা তাদের আজও ডিস্টার্ব করতে লাগল। পুস্পিতা ভাবছে একে তো একটা শিক্ষা না দিলেই নয়। কিন্তু কী করবে সে এটাই ভাবতে পারছিল না।

আজও খুব বিরক্তি নিয়ে চলে আসলো পুস্পিতা, নিজের রাগ সামলে ফ্রেশ হয়ে দুজনে মিলে খাবার বানিয়ে নিলো।

এভাবেই চলে গেল আরও সপ্তাহ খানেক, আজ পুস্পিতার এখানে শেষ দিন ছিলো, তাই সে ভাবলো কিছু একটা করার প্রয়োজন। তার হাতে সময় ছিলো আরও দু-তিন দিন, কিন্তু হঠাৎ করে আজকেই টেনিং শেষ হয়ে গেল। এমনিতে তো তার আজ মন খুব ভালো ছিলো। কিন্তু একটা শিক্ষা তো দিয়েই যেতে হবে এই ছেলেকে নায়ত না। সে প্ল্যান করল খুব গভীর ভাবে। এরপর হেঁটে এগিয়ে গেল।

পুস্পিতা সেই বকাটে ছেলেটার পাশ থেকে যখন যেতে নিলো সে এসে ওদের রাস্তা আঁটকে দাঁড়াল। সে তো জানত না আজ কী করতে চাইছে পুস্পিতা? তাই সে এগিয়ে গেল।

…….কী ম্যাডাম আজ তো একটু কথা বলে যান।

এই বলে সে পুস্পিতার হাত ধরে নিলো। পুস্পিতা ও তার দিকে এগিয়ে গেল। পুস্পিতা নিজের হাত দিয়ে লোকটার গাল ছুঁয়ে দিয়ে বলে উঠল।

…….জ্বি বলেন?

…….আজ এত ভালোবাসা? O M G আমার তো ভাগ্যই খুলে গেল।

……..তাই আগে বলবেন তো? তবে তো কবেই এই ভালোবাসা আপনাকে দিয়ে দিতাম। আসলে জমা থাকতে থাকতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। তাই আজ আর পারলাম না এই ভালোবাসা নিজের মাঝে লুকিয়ে রাখতে। তাই আপনাকে দিয়েই দিলাম যত ভালোবাসা ছিলো আপনার জন্য আমার মাঝে।

এই বলে পুস্পিতা নিজের দু-হাতই ছোঁয়াল ছেলেটার গালে।

…….আচ্ছা আজ তবে আশি আবার দেখা হবে।

…….আর একটু থাকলে হতো না ম্যাডাম?

……..উহু বাসায় মেলা কাজ রয়েছে যে। তাই আজ আশি?

……..ঠিক আছে যাবেনই যখন যান তবে।

এই বলে সে ধ্যানে পড়ে গেল। আর পুস্পিতা মুচকি হেঁসে সেখান থেকে চলে আসছিল। এইটা রিকশা ডেকে দুজনে উঠে বসল। রিকশায় উঠে টাটা দিচ্ছিল ছেলেটা কে, তখনই দেখতে পেলো ছেলেটা নিজের গাল চুলকাতে শুরু করে দিয়েছে। যা দেখে পুস্পিতা শয়তানি হাঁসি হেঁসে উঠল। আর নিরা জিজ্ঞেস করতে লাগল।

……কী হয়েছে পুস্পিতা? তুমি কী করেছ তখন?

……চোচড়া পাতা গুড়ো করে দিয়ে দিয়েছি। এখন বোঝ কেমন লাগে? আমার পেছনে লাগা।

…….খুব ভালো করেছ। আমার ও খুব ইচ্ছে ছিলো ওকে একটা শিক্ষা দেওয়ার, বাট এসব ছেলেদের সাথে লাগাটা খুব খারাপ তাই চুপ করে ছিলাম। বাট আজ তো আর ভয় নেই চলেই তো যাবো আমরা।

দুজনেই খিলখিল করে হেঁসে উঠল। পেছনে দুজনে তাকিয়ে দেখল, ছেলেটা গাল গলা মাথা, এরপর আস্তে আস্তে সারা শরিল চুলকাতে লাগল। তা দেখে দুজন খুশি মনে বাসায় চলে এলো।

দুজনে সব গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। সকালে যা রান্না করে রেখে গিয়েছিল তাই গরম করে খেয়ে নিলো। এরপর রহণা দিলো। বাসায় দুজনে কাউকে কিছু জানাল না সবাইকে সারপ্রাইজ দেবে ভেবে নিলো। আজ বৃহস্পতিবার ছিলো, বাট ফাইয়াজের জরুরি কিছু পেশেন্ট ছিলো যার জন্য সে কাল সকালের গাড়ীতে আসবে বলেছিল, এজন্য পুস্পিতার জন্য খুব ভালোই হয়েছে। তাই সে খুব এক্সাইটেড হয়ে গাড়ীতে উঠে বসে পড়ল। তার খুব আনন্দ লাগছে।

নিরা অর্ধেক পথে নেমে গেল গাড়ী থেকে। পুস্পিতা একা রয়ে গেল। নিরা খুব জোর করে বলল।

……তুমি কিন্তু আমাকে ভুলে যেওনা। আসবে কথা দাও।

……ইন’শা’আল্লাহ চেষ্টা করব। কিন্তু তোমার ও যেতে হবে, বরিশাল আসলেই কিন্তু আমার সাথে দেখা করবে।

……ইন’শা’আল্লাহ। খুব মিস করব তোমাকে।

……আমিও করব। আল্লাহ হাফিজ।

……আল্লাহ হাফিজ।

দুজনে চলে গেল, যার যার পথে।

পুস্পিতার আসতে আসতে রাত হয়ে গেল। মাঝ পথে গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়ে ছিলো যার জন্য প্রায় ১০:৩০ মিনিট বেজে গেল আসতে আসতে। সে গাড়ী থেকে নেমে একটা সিএনজি নিয়ে বাড়িতে চলে আসলো, সে জানত ফাইয়াজ বা ফারিজ কে বললে তারা বাসস্ট্যান্ডে চলে আসতো বাট তবে সারপ্রাইজ দেওয়ার মজাটা যে আর থাকত না। তাই সে একাই চলে আসবে ভাবল। সে খুব এক্সাইটেড হয়ে বাড়িতে আসলো, প্রথমে তার বাবার বাসায় গেলে কত দিন হলো সবাইকে একটু কাছ থেকে দেখতে পারে না। মাঝে একদিন এসেছিল, তাও একদিন থেকেই তার চলে যেতে হয়েছিল, এজন্য আর সে আসে নি। আজ সে এতদিন পড় সবাইকে দেখবে সরাসরি ফোনে নয়। এটা ভেবেই তার খুব ভালো লাগছে।

কলিং বেলের শব্দে পুস্পিতার মা এসে দরজা খুলে মেয়েকে দেখে তাও এই সময় চমকে উঠল। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। পুস্পিতার বাবাও ছুটে এসে মেয়েকে দেখে আবেগী হয়ে পড়ল। পুস্পিতা তাদের সাথে ৩০ মিনিট সময় কাটিয়ে তারপর তার শশুড় বাড়ির জন্য বেরিয়ে আসলো। তার মা বাবার থেকে বিদায় নিয়ে।

শশুড় বাড়ি এসে কলিং বেল বাজাতেই ফারিজ এসে দরজা খুলে দিলো। সে পুস্পিতা কে দেখে শুধু ভা……। বলতেই পুস্পিতা নিজের ঠোঁটে আঙুল লাগিয়ে চুপ থাকতে বলল। যার জন্য সে চুপ করে হাঁসি দিলো। পুস্পিতা ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল।

……কে কোন রুমে আছে?

……(ফিসফিস করে) আম্মু রান্নাঘরে, আব্বু তার রুমে, ভাই তোমাদের রুমে।

…….পুস্পিতা ব্যাগ রেখে চুপিচুপি আস্তে আস্তে পা ফেলে এগিয়ে গেল রান্নাঘরে, তার শাশুড়ির কাছে পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল।

……আম্মু কেমন আছেন?

সে পুস্পিতার কণ্ঠ শুনে চমকে উঠল। ঘুরে গিয়ে পুস্পিতা কে দেখে বলে উঠল।

……পুস্পিতা মামণি তুমি কখন এলে? আমি কী স্বপ্ন দেখছি নাকি?

…….চিমটি কেটে দেখেন।

সে সত্যি সত্যি নিজের হাতে চিমটি কেটে নিয়ে পুস্পিতা কে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।

এরপর তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে পুস্পিতা তার শশুড়ের সাথে দেখা করে, ফাইয়াজের রুমে চলে গেল। তাদের রুমের দরজাটা দেখল ভেজানো ছিলো তাই আস্তে আস্তে ভেতরে ঢুকেই তাকে চমকানোর জায়গায় নিজেই চমকে উঠল পুস্পিতা। কারণ রুমে একটা মেয়ে ছিলো যে কিনা সোপায় বসে ফাইয়াজের ল্যাপটপে কিছু করছিল। সে একটা শাড়ি পরে বসে আছে। দেখতে খারাপ নয়, কিন্তু এ এই রুমে কেনো? শাড়িটা ভালো করে খেয়াল করে দেখল শাড়িটা পুস্পিতারই ছিলো। একটা অজানা ভয় এসে ছুঁয়ে গেল তাকে। মেয়েটা পুস্পিতা কে লক্ষ করে বলে উঠল।

…….আপনি?

পুস্পিতা কিছু যে বলব তার জ্ঞানই নেই মনে হচ্ছে তার মাঝে। সে শুধু তাকিয়ে ছিলো মেয়েটার দিকে কে সে? সে পুস্পিতার রুমে পুস্পিতার শাড়ি পরে বসে আছে অথচ পুস্পিতাই জানে না সে কে?

…….আপনি কে? এক তো নক না করে রুমে চলে এসেছেন, তার উপর কথাও বলছেন না?

মেয়েটার কন্ঠ শুনে বারান্দা থেকে ফাইয়াজ এগিয়ে এলো। সে পুস্পিতা কে দেখে অবাক হবে নাকি খুশি হবে বুঝতে পারছে না। সে ভাবছে হয়ত সে স্বপ্ন দেখছে তাই নিজের হাতেই একটা চিমটি কাঁটল। সে যখন বুঝতে পারল এটা স্বপ্ন নয় সত্যি পুস্পিতা এসেছে। তখন সে ছুটে আসলো পুস্পিতার কাছে।

…….পুস্পিতা তুমি? এখানে কীভাবে?

এই বলে সে পুস্পিতাকে জড়িয়ে ধরতে নিলো, বাট পুস্পিতা তাকে চোখের ইশারায় মেয়েটা কে দেখিয়ে দিলো। যা দেখে সে নিজের মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে উঠল।

…….ওহ আচ্ছা। নিশা ওকে চিনেছিস? এটা তোর ভাবী।

……ওহ আচ্ছা? তাই তো বলি কে নক না করেই চলে এলো। হ্যালো ভাবী।

……হ্যালো। কেমন আছো নিশা?

……জ্বি ভালো, কিন্তু আমি যতটুকু জানি তুমি তো ঢাকায় ছিলে। এখানে কীভাবে?

……যে কাজে গিয়ে ছিলাম তা শেষ তাই চলে এলাম। কেনো ভালো লাগে নি বুঝি?

……হ্যা খুব ভালো লাগছে, আসলে আমার ও খুব ইচ্ছে ছিলো তোমার সাথে দেখা করব। কারণ এটাও তো দেখার ছিলো ভাই কার জন্য এতটা পাগল হয়েছে। মিস্টার আবরার ফাইয়াজ কার জন্য উন্মাদ হয়েছে। এটা খুব জানার ইচ্ছে ছিলো।

…….যাক তবে তো ভালোই হয়েছে জেনে গেলে।

…….হ্যা তা তো বটে।

……আচ্ছা নিশা তুই বরং ল্যাপটপ নিয়ে তোর রুমে যা, তোর ভাবী এত দূর থেকে আসছে ফ্রেশ হবে রেস্ট নেবে তাই তুই তোর রুমে গিয়ে কাজ কর। কাজ শেষ হলে ল্যাপটপ দিয়ে যাস।

…….ঠিক আছে ভাইয়া।

নিশা ল্যাপটপ নিয়ে রুম থেকে চলে গেল। তাই পুস্পিতাও ওর সাথে এগিয়ে গিয়ে দরজা লক করে দিয়ে ফাইয়াজের কাছে এগিয়ে আসলো। ফাইয়াজের কাদে পুস্পিতার দু-হাত রেখে বলে উঠল।

……কী ব্যাপার মিস্টার কেমন লাগল আমার সারপ্রাইজ?

……একদম অবাক করা (এই বলে জড়িয়ে ধরে) তুমি ধারণা ও করতে পারবে না আমি কতটা আনন্দিত হয়েছি তোমাকে এখানে দেখে।

কিছুক্ষণ এভাবেই থেকে পুস্পিতা, ফাইয়াজের বুকের থেকে মাথা তুলে বলে উঠল। আচ্ছা এখন ফ্রেশ হয়ে আশি, রাস্তার কত জীবাণু রয়েছে গায়ে।

…….হ্যা যাও।

পুস্পিতা একটা ড্রেস নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখল ফাইয়াজ বিছানায় বসে ফোন টিপছিল। পুস্পিতা কে দেখে বলে উঠল।

……এত কষ্ট করে একা একা এত দূর আসার কী প্রয়োজন ছিলো? আমাকে না বলো ফারিজ কে বলতে ও গিয়ে তোমাকে এগিয়ে নিয়ে আসতো?

…….আরে আমি কী আপনাকে একা সারপ্রাইজ দিতে চাইছিলাম নাকি? আমি তো সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম আর দিয়েওছি।

…….ওহ তাই? আচ্ছা যাই হোক না কেনো এরপর আর কখনো এতবড় রিক্স নিবে না।

……ওকে ডক্টর সাহেব।

এরপর ওরা ডাইনিং রুমে গিয়ে সবার সাথে বসে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নিলো। সবার সাথে অনেক কথাও বলল পুস্পিতা।

বেশ কিছুক্ষণ পরে দুজনে রুমে চলে এলো। বিছানা গুছিয়ে নিতেই ফাইয়াজ এসে শুয়ে পড়ল। তাই পুস্পিতা ও এসে ফাইয়াজের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল।

……আচ্ছা নিশা কবে আসলো?

…….কাল হঠাৎ করে এলো, বলল ফ্রেন্ডদের সাথে নাকি আসছে। অনেক দিন দেখা হয়না তাই চলে এসেছে।

……হুম ভালো। কিন্তু মিস্টার তার পড়নে আমার শাড়ি কেনো?

……ও আচ্ছা, আসলে আমি দেইনি, আমি যখন হসপিটালে ছিলাম তখন হয়ত রুমে এসে নিয়েছে। আমি বাড়ি ফিরে খুব করে বকা দিয়েছিলাম এইজন্য, কারণ তোমার জিনিস শুধু তোমার ওগুলো তোমার পারমিশন ছাড়া কেউ ধরবে এটা আমার একদম পছন্দ না। কিন্তু আম্মু এসে আমাকে থামিয়ে দিলো, সে বলল তার থেকে নাকি অনুমতি নিয়েই ও শাড়িটা পড়েছে। ওর কাছে খুব ভালো লাগছে শাড়িটা।

…….ওহ আচ্ছা। যাক তাও ভালো শুধু শাড়ি নিয়েছে, আপনাকে যে নিয়ে নেয়নি এটাই অনেক।

…….ইশ আমি কী কোনো আসবাবপত্র নাকি? যে চাইলো আর আমাকে নিয়ে নিলো? আমি তো একান্তই আমার ডাক্তার ম্যাডামের তাই নো চান্স ম্যাডাম।

এই বলে রুমের আলো নিভিয়ে দিলো।



চলবে…………।

নীলফড়িং পর্ব-১৮

0

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#পর্ব ১৮
.
.
পুস্পিতা একদিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল, তার সাথে আরও একজন মহিলা ডাক্তার ছিলো। ঠিক তখনই আচমকা একটা বাইক গেল ওদের পাশ থেকে, আর সেই বাইক থেকেই কেউ পুস্পিতার গায়ের থেকে ওড়নাটা টান দিয়ে নিয়ে গেল। পুরো রাস্তায় মানুষ থৈথৈ করছে। সবার চোখ আঁটকে আছে পুস্পিতার দিকে, চোখ থেকেই মনে হচ্ছে সবাই গিলে খাবে পুস্পিতা কে। ভাগ্যিস পুস্পিতা এপ্রোন পড়া ছিলো। পুস্পিতা হাতের ব্যাগটা দিয়ে নিজেকে ঢেকে নিয়ে পাশে তাকাল দেখল এই এলাকার বকাটে ছেলে দাঁত গুলো বের করে হাসছিল বাইকে বসে পুস্পিতার ওড়নাটা তার হাতেই ছিলো। কয়েক দিন ধরেই ছেলেটা আজে বাজে মন্তব্য করত, আজ তো পুরো লেভেল ক্রস করে ফেলল। পুস্পিতা চারিদিকে তাকিয়ে একবার দেখে এগিয়ে গেল সেই ছেলেটার কাছে, সে এখনো হাসছিল দাঁত বের করে, তার সাথে বাকি দুটো ছেলে ও হাসছিল খুব জোরে জোরে। কাছে গিয়ে পুস্পিতা একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো ছেলেটার গালে। থ মেরে গেল চারিদিকে, ছেলেটার হাত থেকে তার ওড়নাটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বলে উঠল।

……..তোর মতো অসভ্যরা আর পারবে কী বল। শিক্ষা দেওয়ার মতো নেই হয়ত কেউ যার জন্য শিখতেই তো পারিস নি কীভাবে ভদ্র হয়। কীভাবে মেয়েদের সম্মান দিতে হয় তোর থেকে আর কী আশা করা যায়। তোদের মতো মানুষের জন্য মেয়েরা ঠিক করে হাঁটা চলা পর্যন্ত করতে পারে না দিনে দুপুরে। তোদের তো একটা শিক্ষা না দিলেই নয়।

এই বলে পুস্পিতা পুলিশ কে ফোন দিতে নিলো কিন্তু পুস্পিতার সাথের মেয়েটা এসে জোর করে পুস্পিতা কে টেনে নিয়ে যেতে নিলো।

…….এই যে ডাক্তার ম্যাডাম কোথায় যাচ্ছ একটু শুনে যাও গো। আর একটা থাপ্পড় মেরে যাও, ভালোই লাগল তোমার হাতের ছোঁয়া।

ওর কথা শুনে পুস্পিতা আরও ভরকে গেল, পুস্পিতা এগিয়ে আসতে নিলো কিন্তু ওর সাথের মেয়েটা ওকে আসতে দিলো না।

…….পুস্পিতা প্লিজ ওরা বকাটে, বড় লোক বাপের অসভ্য ছেলে। এরা সব সময় এমনই করে। ওরা খুব খারাপ প্লিজ চলো এখান থেকে।

…….তাই বলে এভাবে ছেড়ে দেবো নাকি? তুমি দাঁড়াও আমি পুলিশ কে ডেকে নিচ্ছি।

……আরে পুলিশ আসবে না। শুধু শুধু তুমি আরও অপমানিত হবে, তার থেকে চলো প্লিজ এখান থেকে। আচ্ছা নিজের জন্য না যাও আমার জন্য তো চলো প্লিজ প্লিজ।

পুস্পিতা নিরার কথা শুনে আর কিছু বলল না ওর সাথে রিকশায় উঠে চলে এলো।

বাড়িতে ফিরে পুস্পিতা একটু বসছে একটু হাঁটাহাঁটি করছে, তার প্রচুর অশান্তি লাগছে, এভাবে কেউ ওর ওড়না টেনে নিয়ে গেল, অথচ ও তার কিছুই করতে পারল না। ওর চোখের সামনে শুধু ওই দৃশ্য টাই বহমান। নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছে, আজ ফাইয়াজ থাকলে ওর সাথে, ছেলেটা কে একটা উচিৎ শিক্ষা দিয়ে দিত। কিন্তু তার যে এখন একটুও শান্তি লাগছে না। কী করবে সে এখন। সে ব্যাগ থেকে মুঠো ফোনটা বের করে নিলো, ঘড়িতে তখন ২:৩০ মিনিট কাটায় কাটায়। তবে ফাইয়াজ এখন বাড়িতেই আছে তাই সে চট করে ফোন দিয়ে দিলো ফাইয়াজ কে। রিং হচ্ছে।

……..আসসালামু আলাইকুম।

…….. ওয়ালাইকুম আসসালাম। জ্বি ম্যাডাম বলেন।

…….ডাক্তার সাহেব আমার স্বাস্থ্যটা ইদানিং ভালো যাচ্ছে না। একটু চেক করে বলতে পারেন কী হয়েছে?

…….কেনো নয়, বাট ফোনের মাঝে না বলে সামনে আসলে ভালো করে বুঝানো যেত। তা ম্যাডাম লক্ষণ গুলো কী কী? একটু যদি ডিটেইলসে বলতেন?

…….এই যে ঘুম আসে না চোখে, মন কেমন কেমন করে, খাবার খাওয়ার ইচ্ছে নেই। মন বসে না পড়ার টেবিলে। শুধু ফোন নিয়ে সারাক্ষণ বসে থাকতে ইচ্ছে করে। কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয়না শুধু একজন কে ছাড়া। সারাদিন শয়নে স্বপনে শুধু তাকেই খুঁজে ফিরি এখন বলেন ডাক্তার মশাই এই রোগের চিকিৎসা কী?

…….ওহ সম্ভবত প্রেম রোগ ম্যাডাম। আমার কাছে আসলে ওষুধ দিয়ে দেবো।

…….না আসলে বুঝি দেয়া যাবে না?

…….না আসলে কীভাবে দেবো?

…….খাবার খেয়েছেন?

…….আগে বলো না আসলে কীভাবে দেবো?

…….আপনি চলে আসেন, খুব মিস করছি।

…….আজ তো কোনো ভাবেই সম্ভব নয়, আমারও যে অনেক ইচ্ছে করছে, কিন্তু কী করব বলো, চাকরিটাই তো এমন।

…….হুম বুঝতে পারছি। আচ্ছা বাদ দিন, খেয়েছেন?

…….নাহ। তুমি খেয়েছ?

……এই তো এখন খাবো। কিন্তু আপনি কেনো খান নাই এখনো?

…….তোমার ফোনের অপেক্ষা করছিলাম তাই।

…….ইশ, আচ্ছা তবে আর কথা নয়, এবার গিয়ে খেয়ে আসেন, আমিও খেয়ে আসছি, তারপর অনেক কথা হবে।

……হুম ঠিক আছে।

এরপর ফোন রেখে দুজনেই চলে গেল খাবার খেতে।

খাবার শেষ করে আবার দুজনে প্রেম আলাপনে ব্যস্ত হয়ে গেল।

সন্ধ্যায় পুস্পিতা বসে পড়ছিল ঠিক তখনই নিরা পাশ থেকে বলে উঠল।

…….পুস্পিতা জানো আমার না খুব ভয় করছে।

…….কেনো নিরা?

……..ওই ছেলে গুলো খুব খারাপ।

…….এর থেকে খারাপ মানুষ আমি জীবনে বহুবার দেখেছি, এদের তো পুরা লেভেল খারাপ, আর আমি যাদের দেখেছি, তারা মুখোশ ধারি ছিলো। তাই এখন আর এসব নিয়ে ভয় করি না। তুমি বরং পড়ায় মন দাও।

ওরা দু’জন আবার নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পুস্পিতা, ফাইয়াজের সাথে কথা বলছিল ফোনে, তখন নিরাও তার হাসবেন্ডের সাথে কথা বলছিল। দু’জন দুই রুমে বসে প্রেম আলাপে ব্যস্ত।

আজও যখন টেনিং শেষ করে ওরা দু’জন ফিরছিল, ঠিক তখন ওই বকাটে ছেলেটা এসে দুজনের পথ আটকে দেয়।

…….হ্যালো সুন্দরী ম্যাডাম কেমন আছেন?

…….(পাশ থেকে নিরা) জ্বি আলহামদুলিল্লাহ।

…….খুব ভালো, কিন্তু ম্যাডাম আমি তো আপনাকে জিজ্ঞেস করিনি, আমি তো এই ম্যাডাম কে জিজ্ঞেস করেছি।

ছেলেটার কথা শুনে পুস্পিতা খুব রেগে যাচ্ছিল। যা নিরা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে। তাই নিরা পুস্পিতার হাত চেপে ধরে বলে উঠল।

……আমিও ওরটাই বলেছি।

……ওহ তবে ঠিক আছে।

…….নিরা চলো এখান থেকে।

…….হ্যা হ্যা চলো।

এই বলে ওরা চলে আসছিল ঠিক তখনই ছেলেটা এসে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে যায়।

…….এত জলদি কীসের ম্যাডাম আর একটু দাঁড়িয়ে যাও। একটু কথা বলে যাও।

পুস্পিতা এবার প্রচুর রেগে যাচ্ছে যা দেখে নিরা বলে উঠল।

……দেখেন আমাদের একটু তারা আছে। আপনি প্লিজ পথ ছাড়েন, যেদিন সময় থাকবে হাতে সেদিন কথা হবে।

…….ওহ আচ্ছা তাই ঠিক আছে চলে যান। তবে কথা হবে কিন্তু সেদিন।

……জ্বি কেনো নয়।

এরপর ওরা চলে এলো। ওদের ঠিকানায়।

পরদিন থেকে রোজ এভাবেই ছেলেটা ওদের ডিস্টার্ব করতে শুরু করে দিলো। প্রতিদিন ওদের রাস্তা আঁটকে দাঁড়ায়। আর নিরা কিছু না কিছু বলে চলে আসে, যার জন্য ধীরে ধীরে পুস্পিতার রাগ বাড়তে থাকে। পুস্পিতা শুধু মাত্র নিরার জন্য নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে রইল।

এভাবে কিছুদিন চলে যাওয়ার পরে আজ ফাইয়াজ এলো, তাই পুস্পিতা আজ খুব আনন্দিত ছিলো। শুক্রবার সব কিছু বন্ধ থাকায় সারাদিন মনের আনন্দে দুজন ঘুরতে বের হলো। শপিং করতে গেল দুজন, ফাইয়াজ খুব সুন্দর একটা লেমন কালার শাড়ি কিনে দিলো। পুস্পিতাও তাকে সেইম কালারের পাঞ্জাবী কিনে দিলো। দু’জন শপিং করে যখন বের হতে নিলো, ঠিক তখনই ওদের সামনা সামনি একজন মুরুব্বি এসে হাজির হলেন, যাকে দেখে ফাইয়াজ দাঁড়িয়ে গিয়ে পুস্পিতার থেকে একটু সরে দাঁড়াল। তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল।

……..আসসালামু আলাইকুম চাচ্চু।

…….ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছিস?

……..জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?

…….হ্যা আমি আছি কোনো রকম। আজকাল বেশি একটা ভালো যাচ্ছেনা স্বাস্থ্য। তুই বল এখানে কবে এলি?

……এই তো চাচ্চু আজ সকালেই আসছি।

……তাহলে চল বাসায় চল।

……না আসলে চাচ্চু একটু কাজে আসছিলাম।

……ওহ আচ্ছা। (পুস্পিতার দিকে তাকিয়ে ছিলো যা দেখে ফাইয়াজ বলে উঠল)

……চাচ্চু ও পুস্পিতা, আপনার বউ মা। আর পুস্পিতা ইনি আমার মেজো চাচ্চু।

……আসসালামু আলাইকুম চাচ্চু।

……ওয়ালাইকুম আসসালাম। তা বউ মাকে নিয়ে আসছিস বাসায় যাবি না? এভাবে রাস্তায় বসে পরিচয় করাবি?

……চাচ্চু আসলে বললাম তো একটু কাজের জন্য এসেছি, তাই যেতে পারছি না। আজ রাতেই আবার ফিরতে হবে, তাই রাগ করবেন না চাচ্চু। আবার যেদিন আসবো ইন’শা’আল্লাহ যাওয়ার চেষ্টা করব।

…….হুম ঠিক আছে।

…….চাচ্চু বাসায় সবাই কেমন আছে?

……হ্যা আছে সবাই ভালোই।

……আচ্ছা চাচ্চু তবে এখন আশি?

……আচ্ছা সাবধানে যাস।

এরপর ওরা চলে এলো সেখান থেকে।

……এনাকে তো বিয়েতে দেখলাম না?

……হ্যা আসলে চাচ্চুর আর আব্বুর মাঝে কয়েক বছর আগে একবার খুব রাগারাগি হয়েছিল, যার জন্য সেই থেকে চাচ্চু ঢাকায় চলে আসে, এরপর থেকে আমাদের মধ্যে আর তেমন দেখা হয়না। বা কথাও হয়না। মাঝে মধ্যে (কাজিন) নিবিড় আর নিশা বরিশালে গেলে আমাদের বাসায় যায়, বা আমি ফারিজ এখানে আসলেও গিয়ে দেখা করে আশি চাচ্চু আর কাকি মায়ের সাথে। তাই বিয়েতে ওদের কাউকে দেখনি।

……ওহ আচ্ছা।

…….এখন কোথায় যাবে?

…….খুব ক্ষুধা পেয়েছে কিছু খেয়ে নেই।

…….ঠিক আছে চলো ম্যাডাম।

দুজনে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে, টুকটাক কিছু খেয়ে নিলো। এরপর আরও অনেক ঘোরাঘুরি করল। আজ সারাদিন দুজন খুব আনন্দ হাসি-ঠাট্টায় মেতে রইল। সন্ধ্যায় রুমে ফিরে এসে দরজা খুলে ভেতরে চলে গেল। রুমটা পুরো অন্ধকার ছিলো। কারণ নিরা আজ তার বাড়ি চলে গেছে। সে প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেলে চলে যায়, আবার শনিবার সকাল সকাল চলে আসে, তার বাড়ি বেশি দূরত্বে না থাকার কারণে সে যেতে পারে। মাত্র ২ ঘন্টা সময় লাগে যেতে।

পুস্পিতা দু-কাপ চা করে নিয়ে আসলো দুজনে কাছাকাছি বসে চায়ের সাধ নিলো। একে অপরের সাথে সুখ দুঃখের কথা শেয়ার করল। দুজনে আজ অনেক দিন বাদে এক সাথে হয়েছে, তাই দুজনে অনেক কথা বলল।

……পুস্পিতা একটা কথা রাখবে?

……হুম বলেন?

……শাড়িটা একটু পড়ে আসবে? আমি দেখতে চাই শাড়িটায় তোমাকে কেমন লাগে।

……(.মুচকি হেসে) হুম আপনি বসেন আমি আসছি।

পুস্পিতা গিয়ে শাড়িটা পড়ে খুব সুন্দর করে রেডি হয়ে আসলো। রুম থেকে বের হয়ে আসতেই ফাইয়াজ ওর দিকে তাকিয়েই রইল। কারণ শাড়িটায় খুব সুন্দর মানিয়ে ছিলো পুস্পিতা কে। তার মাঝে খোলা চুল, পুস্পিতা চুল সব সময় বেঁধেই রাখে কিন্তু আজ সে চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে, যার জন্য তাকে আজ বেশ লাগছে। ফাইয়াজ আস্তে আস্তে পুস্পিতার কাছে এগিয়ে গেল।

…….সত্যি আমি যা ভেবেছিলাম তার থেকেও বেশি সুন্দর লাগছে শাড়িটায় তোমায়।

পুস্পিতা লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল। যা দেখে ফাইয়াজ হালকা হাঁসল।

…….পুস্পিতা তুমি জানো আজ তোমাকে দেখে আবার নতুন করে তোমার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করছে। কীহ ম্যাডাম প্রেম করবেন নাকি আমার সাথে?

……কেনো নয়।

……তবে ঠিক আছে বাকি যে রয়েছে ১০ দিন এই ১০ দিনে আমরা দু’জন চুটিয়ে প্রেম করব, ঠিক আছে?

……কীভাবে?

…….যেভাবে সবাই প্রেম করে। ফোনে ম্যাসেজ দিয়ে, কল করে, দুজনে এভাবে চুপিচুপি দেখা করে।

…….তা তো সব সময়ই করি।

……হ্যা এখন থেকে সেই কলেজ স্টুডেন্ট হয়ে যাবো দুজন ঠিক আছে?

……আপনিও না?

……আগে বলো করবে প্রেম আমার সাথে?

……হুম।

এরপর দু’জনে আরও কিছুক্ষণ কথা বলল, সময় কাঁটাল দুজন দুজনার সাথে। এভাবেই কাঁটছে হাসি আনন্দে তাদের দিন সময় ক্ষণ।



চলবে………….।

নীলফড়িং পর্ব-১৭

0

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#পর্ব ১৭
.
.
প্রায় ৫/৬ মাস এভাবেই চলে গেল। অনেক ব্যস্ততার মাঝেও একটু আনন্দ ছিলো দুজনে তো ছিলো পাশে। এক সাথে। বাট আজ জানতে পারল পুস্পিতা টেনিং এর জন্য প্রায় এক মাসের জন্য ঢাকা যেতে হবে। উফ বড্ড খারাপ লাগছে তাই একা একা ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে ছিলো পুস্পিতা। কীভাবে সবাইকে ছেড়ে এই একটা মাস পাড়ি দেবে সে। কান্নাও পাচ্ছিল খুব খুব, কিন্তু কান্না থামিয়ে রেখে কোনো এক দিকে তাকিয়ে আছে সে। উঁচু উচু বিল্ডিং গুলো দাঁড়িয়ে আছে একটু শ্বাস নেওয়ার জায়গার ও যে বড্ড বেশি অভাব রয়েছে এই এলাকা জুড়ে। শুধু রাস্তা ছাড়া আর একটু জায়গাও কেউ অবশিষ্ট রাখে নি। চাঁদটা ও ভালো দেখা যায় না ছাদ থেকে, এত উচু বিল্ডিং থাকলে কীভাবে চাঁদ দেখে মানুষ? তার আজ চাঁদটা দেখার খুব ইচ্ছে জেগেছিল। কিন্তু না চাঁদ আর আজ দেখা যাবে না বোধহয়।

……ভাবী তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কী করছ?

…….হ্যা ফারিজ কিছু বলছিলে?

…….নাহ তেমন কিছু না। কিন্তু তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো এত রাতে?

……নাহ এমনিতেই। তুমি বলো? কিছু বলার ছিলো?

…….হ্যা ভাই ফোন দিয়েছিল, তোমাকে নাকি ফোনে পাচ্ছে না।

…….ওহ হ্যা ফোনটা বোধহয় রুমে রেখে আসছি। (চলে যেতে নিলো)

……ভাবী?

……হ্যা?

……কিছু হয়েছে তোমার?

……আমার কই নাতো।

……আচ্ছা তবে চলো।

দুজনে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসলো। পুস্পিতা রুমে গিয়ে তার মুঠো ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল ফাইয়াজ এর ১০ টা মিসড কল জমেছে মুঠো ফোনে সে বুজতে পারছে আজ অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে তার। হয়ত কোনো জরুরি প্রয়োজন ছিলো ফাইয়াজের তাই এত গুলো কল দিয়েছে, সে আর কিছু না ভেবে ফোনে ফাইয়াজের নাম্বার তুলে ফোন দিলো ফাইয়াজ কে।

……হ্যালো কোথায় ছিলে এতক্ষণ?

……স্যরি আসলে ফোনটা রুমে রেখে ছাদে গিয়েছিলাম।

……এত রাতে একা ছাদে কেনো গিয়েছ?

……কিছু না এমনিতেই। আপনি বলেন ফোন কেনো দিয়েছেন?

……তুমি এত জলদি চলে গেলে যে?

……আসলে ভালো লাগছিল না তাই।

…….কেনো কী হয়েছে আমি কী আসবো?

……নাহ তেমন কিছু না। আপনি বলেন কিছু বলার ছিলো?

…… আগে বলো কিছু হয়েছে তোমার?

……নাহ বললাম তো? আপনার আসতে খুব দেরি হবে?

……হ্যা একটু তো হবে। তুমি বললে চলে আসবো।

…….নাহ থাক পেশেন্ট দেখা শেষ হলেই আসবেন। তারাহুরো করে আসতে হবে না।

……পুস্পিতা কী হয়েছে তোমার?

……কিছু না রাখছি তবে।

……এই শোনো?

কিন্তু পুস্পিতা আর কোনো কথা না শুনেই ফোনটা কেটে দিলো। পুস্পিতা কথা বলবে কীভাবে তার যে কান্নায় গলা ভেঙে আসছিল। সে ফোন রেখে কান্না করতে করতে বিছানায় বসে পড়ল। তার একটুও ইচ্ছে নেই এতদূরে যাওয়ার। জীবনের অনেক গুলো বছর সে তার ফ্যামিলির থেকে দূরে ছিলো পড়ালেখার জন্য, আজ আর তার সেই ধৈর্য নেই দূরে যাওয়ার, তাই সে কান্না করছে।

বেশ কিছুক্ষণ পরে, পুস্পিতা কান্না থামিয়ে বিছানায় বসে বসে কিছুটা দূরে রেখে দেওয়া খামটা দেখছিল এক ধ্যানে। তখনই তার রুমের দরজার কড়া নড়ে উঠল। কয়েক বার নড়ার পড়ে তার ধ্যান ভাঙল। সে হকচকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঠিক করে নিয়ে, দরজা খুলে দেখল ফাইয়াজ দরজায় দাঁড়িয়ে।

…….আপনি এখন? বলেছিলেন তো আসতে নাকি দেরি হবে?

…….. ভাবলাম সব সময় তো কাজই করি আজ না হয় একটু তোমার সাথে সময় কাঁটাই।

……কিন্তু পেশেন্ট?

……পেশেন্ট তো তোমার জন্যও অপেক্ষা করছে?

……নাহ মানে আমি ফোন দিয়ে বলে দিয়েছি আজ আসবো না।

……হ্যা আমিও বলে দিয়েছি।

দুজনেই রুমের ভেতর চলে এলো। ফাইয়াজ খুব ভালো করে পুস্পিতা কে পর্যবেক্ষণ করল। সে শার্টের বুতাম খুলতে খুলতে বলে উঠল।

…….একটা টি-শার্ট বের করে দাও।

…….আপনি সত্যি আর যাবেন না?

……আচ্ছা তোমার কী মনে হয় (পুস্পিতার কাঁধে দু হাত রেখে) আমার সহধর্মিণী আমার কাছে মুখ ফুটে কিছু বলেছে আর আমি তা না করেই বসে থাকব? আমি কিন্তু অতটাও খারাপ নই।

পুস্পিতা নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো, সে এতক্ষণ নিজেকে অনেক কষ্টে ঠিক রেখে ছিলো বাট এখন আর পারছে না। ফাইয়াজের মনে হলো তার পায়ের উপর গরম কিছু পড়ল। সে ঠিক করে তাকিয়ে বুঝতে পারলো পুস্পিতার চোখের পানি, যা তার পায়ের উপর ফোঁটা ফোঁটা পড়ছে। সে সাথে সাথে তার দু’হাতের মাঝে পুস্পিতার মুখটা তুলে নিয়ে দেখল, হ্যা সত্যি পুস্পিতা কান্না করছে। সে ভীষণ ভয় পেয়ে গেল, এভাবে সে কখনো পুস্পিতা কে কাঁদতে দেখে নি, দেখেনি বলতে ভুল হবে দেখেছিল সেই শুভাকাঙ্ক্ষীর ভেদাভেদ চলছিল তখন এক বার, আর বিয়ের পড়ে একবার, কিন্তু সে আর কাঁদতে দেখেনি পুস্পিতা কে। ভয়ে তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল।

…….এই কাঁদছ কেনো তুমি? কী হয়েছে বলো আমায়? পুস্পিতা প্লিজ বলো?

এবার পুস্পিতা আর নিজেকে সামলে রাখতে না পেরে ফাইয়াজ কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দিলো। এখনো ফাইয়াজ কিছুই বুঝতে পারছে না। তারও যে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার ভালোবাসার মানুষটি কে এভাবে কাঁদতে দেখে। সেও খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখে ছিলো পুস্পিতা কে।

বেশ কিছুক্ষণ পড়ে। ফাইয়াজ পুস্পিতা কে বিছানার এক পাশে বসিয়ে দিয়ে। ফাইয়াজ পুস্পিতার সামনে হাটু গেড়ে বসে।

……পুস্পিতা কী হয়েছে বলো আমায়?

পুস্পিতা এখনো কিছু বলতে পারছিল না, তাই সে খামটা এগিয়ে দিলো ফাইয়াজের কাছে, ফাইয়াজ খাম দেখে একবার পুস্পিতার দিকে তাকিয়ে এরপর খামটা খুলে পড়তে শুরু করল। চিঠিটা পড়ার পড়ে সেও চুপ করে আধবসা থেকে পুরপুরিই বসে পড়ল মেঝেতে বিছানার সাথে ঠেস দিয়ে। সে পুস্পিতা কে কী বলবে বুঝতে পারছে না। কারণ সে নিজেও তো পুস্পিতা কে ছাড়া এতদিন থাকতে পারবে না।

দুজনেই চুপ করে বসে ছিলো, অনেক সময়। হঠাৎ দরজা ভেজানো থাকায় কেউ দরজা ঠেলে ভেতরে চলে এলো।

……পুস্পিতা, শুনলাম ফাইয়াজ আসছে।

ফাইয়াজের মায়ের কন্ঠ শুনে দুজনেই চোখ মুছে উঠে দাঁড়িয়ে গেল।

…….কী রে তোদের এমন দেখা যাচ্ছে কেনো? আর দুজনেই এত জলদি চলে এলি যে? কিছু কী হয়েছে?

…….নাহ আম্মু আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। রুমকি কে বলো একটু চা করে দিতে। পুস্পিতা আমার ট্রাউজার আর টি-শার্ট বের করে দাও।

এই বলে ফাইয়াজ ওয়াশ রুমে চলে গেল। যা দেখে সে পুস্পিতার কাছে এসে দাঁড়িয়ে গেল।

…….কী রে কী হয়েছে মামণি?

…….কোথায় আম্মু কিছু না। আমিই বরং গিয়ে চা করে নিয়ে আসছি।

……দাঁড়াও কী লুকাচ্ছ আমার থেকে দুজনে। তুমি এসেছ তখনই আমার একটু সন্দেহ হয়েছিল, কিছু তো হয়েছে। ঝগড়া হয়েছে ফাইয়াজের সাথে, দাঁড়াও আমি তবে ওকে বকে দিচ্ছি।

……নাহ আম্মু তেমন কিছু নয়। ওই আসলে আমাকে এক মাসের জন্য ঢাকা যেতে হবে। এই জন্য

…….কীহ? কিন্তু হঠাৎ কেনো?

…….টেনিং এর জন্য।

পুস্পিতার কথা শুনে সে আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল। যা দেখে পুস্পিতা ড্রয়ার থেকে ফাইয়াজের জন্য একটা ড্রেস বের করে দিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। সেখানে গিয়ে সবার জন্য চা বানিয়ে রুমকির কাছে সবার জন্য দিয়ে, দু-কাপ চা নিয়ে রুমে চলে এলো। রুমে এসে দেখল ফাইয়াজ কে দেখছে না, তাই এগিয়ে বারান্দায় গেল, হুম সেখানেই ছিলো ফাইয়াজ।

…….চা।

ফাইয়াজ ঘুরে গিয়ে চা নিলো, এরপর চায়ে চুমুক বসিয়ে সাথে সাথে চা ফেলে দিলো। যা দেখে পুস্পিতা বলে উঠল।

…….কী হলো?

……ওহ আসলে চা বেশি গরম ছিলো।

……পানি এনে দিচ্ছি দাঁড়ান।

…….পুস্পিতা, প্রয়োজন নেই ঠিক আছে। তুমি নিচ্ছ না কেনো?

…….হুম এইতো নেবো।

পুস্পিতা চা নিয়ে এসে ফাইয়াজের পাশে দাঁড়িয়ে চায়ের কাপে ঠোঁট বসিয়ে দিলো।

চা শেষ করে দুজনে আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল।

রাতে খাবার খেয়ে এসে ফাইয়াজ বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে ছিলো। একটু পড়ে পুস্পিতা ও এলো। ফাইয়াজ তাকিয়ে দেখল এখনো পুস্পিতার মন খারাপ। বিছানা পরিষ্কার করতে এসেছিল পুস্পিতা, ফাইয়াজ তার হাত ধরে বসিয়ে দিলো।

…….এখানে বসো।

পুস্পিতা বসে পড়ল। পুস্পিতার দু গালে হাত রেখে কপালে হালকা স্পর্শে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলে উঠল।

…….তুমি চিন্তা করো না। শনি শুক্রবার যেহেতু শেরে বাংলা মেডিকেলে ডিউটি থাকবে না আমি চলে যাবো এই দুদিন। আর মাঝে মধ্যে বন্ধ থাকবে যখন তুমিও চলে আসবে, তবেই তো আর এত দিন গ্যাপ থাকবে না। প্রয়োজনে সবাইকে নিয়ে যাবো, তারপরও প্লিজ তুমি এভাবে মন খারাপ করে থেক না। তুমি এমন করলে আমি কীভাবে থাকব? প্লিজ, দেখো এখন কিছুদিন পর পরই এভাবে যেতে হবে তোমাকে, তোমাকে যে একা যেতে হবে তা কিন্তু নয়, আমাকেও যেতে হবে, তাই এটা মনকে বোঝাতে হবে, আমিও তো কয়েকবার গিয়েছি। তাই এভাবে মন খারাপ করার কিছুই নেই।

এই বলে ফাইয়াজ পুস্পিতার মন ভালো করার চেষ্টা করতে শুরু করে দিলো। একটু সুড়সুড়ি দিচ্ছে, নাক ধরছে। গাল ধরছে যার জন্য পুস্পিতা হাঁসতে বাধ্য হলো। দুজনেই এক সাথে খিলখিল করে হেঁসে উঠল।

রাত তখন ১১ টা পুস্পিতা, ফাইয়াজের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। ফাইয়াজ ও চুপ করে পুস্পিতার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

কয়েক দিন পড়ে পুস্পিতার যাওয়ার সময় হয়ে গেলো। গাড়ীতে যাওয়ার কথা ছিলো, বাট ফাইয়াজ চাইছে নিজে গিয়ে এগিয়ে দিয়ে আসবে। তাই রাতের লঞ্চে যাবে, সবাই গিয়ে ওদের এগিয়ে দিয়ে আসলো, ওরা দু’জন একটা ক্যাবিন নিলো। সারারাত দু’জনে ঘুমালো না সারারাত দু’জনে বসেই কাটিয়ে দিলো বিছানার রেলিং এর সাথে আধশোয়া হয়ে, পুস্পিতা ফাইয়াজের বুকে মাথা রেখে বসে ছিলো।

……..তুমি কিন্তু ঠিক করে নিজের খেয়াল রাখবে। একটুও কান্নাকাটি করবে না। সময় মতো খাওয়া-দাওয়া করে নেবে। ফোন সব সময় নিজের কাছেই রাখবে। কী হলো শুনছ আমার কথা?

…….হুম।

ওরা সকালে গিয়ে সেখানে নামলো। এই শুক্রবার সারাদিন পুস্পিতার সাথেই রইল শনিবার সকালে গাড়ীতে উঠে চলে এলো ফাইয়াজ। দুজন দুই-দিকে রয়ে গেল। এভাবেই চলতে শুরু করে দিলো ওদের জীবন। কখনো দুজন ফোনে কথা বলছে। কখনো ম্যাসেজে।



চলবে…………।

নীলফড়িং পর্ব-১৬

0

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#পর্ব ১৬
.
.
পুস্পিতা রুমে বসে তার আব্বু কে মা কে খুব মিস করছিল। তাই সে কান্না করছিল। চোখ বন্ধ করে তাদের কে নিজের পাশে অনুভব করছিল। এমন সময় তার মুঠো ফোনটা বেজে উঠল। আচমকা হওয়ায় সে একটু ভয় পেয়ে উঠল। ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখল ফাইয়াজ স্যার লেখা। সে চোখ মুছে নিজেকে সামলে নিয়ে ফোন রিসিভ করল।

……হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।

…..ওয়ালাইকুম আসসালাম। তুমি কী করছ? কোথায় আছো?

……আপনার রুমে আছি। বসে আছি কেনো?

……তবে একটু বারান্দায় এসো।

পুস্পিতা ভালো করে নিজের চোখ মুছে নিয়ে বারান্দায় এগিয়ে গেল, সেখানে গিয়ে রাস্তায় উঁকি ঝুঁকি মেরে স্যারকে খুঁজছিল। হঠাৎ তার পাশ থেকে স্যারের কন্ঠ শুনে চমকে উঠল। পাশে তাকিয়ে সে প্রচুর অবাক হলো।

……কাকে খুঁজছ?

……আপনি ওই খানে কী করছেন?

…..পড়ে বলছি। এখন যার জন্য ডেকেছি সেই কাজটা করে নেই। এখানে আসেন।

এই বলে ফাইয়াজ দুজন লোক এনে দাঁড় করিয়ে দিল। যা দেখে পুস্পিতা আবেগী সুরে বলে উঠল।

……মা আব্বু তোমরা কেমন আছো?

……এতক্ষণ ভালো ছিলাম না রে মা এখন তোকে দেখে খুব খুব ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?

…..আমিও এখন আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোমরা ব্রেকফাস্ট করেছ?

…..(তারা চুপ হয়ে গেল)

……এর মানে এখনো ব্রেকফাস্ট করো নি? মা দেখেছ কটা বাজে? প্রায় ১১ টা এখনো তোমরা ব্রেকফাস্ট করো নি? তোমরা মনে করো এটা শুনে আমি এখানে ভালো থাকতে পারব? প্লিজ মা, আব্বু তোমরা নিজেদের খেয়াল রাখো। আচ্ছা আমি তো এত জলদি বিয়ে করতে চাইনি তোমরাই জোর করলে তবে এখন কেনো এত কষ্ট পাচ্ছ?

……তুই মা হ তারপর বুঝবি কেনো তোকে জোর করেছি।

……আচ্ছা বাবা তা না হয় বুঝলাম, এখন ব্রেকফাস্ট বানিয়েছ নাকি তাও বানাও নি?

…..হুম তোর খালামণি আর ফুপি মিলে বানিয়েছেন।

……তবে আগে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করবে তারপর এসে আমাকে বলবে ব্রেকফাস্ট করে নিয়েছ, ততক্ষণ আমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকব যাও।

……তোর দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না আমরা করে নেবো।

……মোটেই না, যাও। আর শোনো তোমরা আমার রুমে এলে আমাকে একটা ফোন দিয়ে আসবে ওকে?

…..হুম ঠিক আছে।

…..আচ্ছা যাও।

তারা চলে গেল, যাওয়ার আগে কয়েকবার পিছু ফিরে নিজেদের মেয়েকে দেখল, ফাইয়াজ ইশারায় পুস্পিতা কে কান্না করতে বারণ করে সেও তাদের সাথে এগিয়ে গেল।

পুস্পিতা আরও কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো আকাশ পানে তাকিয়ে। আর ওদিকে ফাইয়াজ তার শশুড় শাশুড়ী কে নিজে বসে থেকে ব্রেকফাস্ট করিয়ে তারপর সে সেখান থেকে চলে এলো।

বিকেল দিকে পুস্পিতা সবার সাথে বসে কথা বলছিল, মানে সে বলছিল কম শুনছিল বেশি। ঠিক তখনই তার ফ্যামিলির সবাই তাকে দেখতে এলো। সবাইকে দেখে পুস্পিতা খুবই আনন্দিত হলো। সবার কাছে গিয়ে সবার আদর লুফে নিলো।

সবাই খুব হাসি-ঠাট্টায় মেতে রইল, সন্ধ্যা পার করে সবাই চলে গেল।

পুস্পিতার ফ্যামিলির সবাই যেতেই এক এক করে এলাকা বাসীরা আসতে শুরু করে দিলো। সবাই নতুন বউ দেখতে আসছে, কিন্তু সবই চেনা মুখ।

রাতে পুস্পিতা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো মন খারাপ লাগছে তার ভীষণ তাই আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো সে। তখনই কেউ এসে পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরল, এবার আর তার ভয় লাগল না, কারণ এখন সে বুঝতে পারছে এটা কে? সে চোখ বন্ধ করে তার ভালোবাসা কুড়িয়ে নিচ্ছে।

……এখানে কেনো এই ঠান্ডার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছো? তা আবার শীতের কিছু না পড়ে? ঠান্ডা লেগে যাবে, এখন কিন্তু ছুটি চাইলেও ছুটি দেবে না। কারণ অল রেডি ছুটি নিয়েছ কয়েক দিনের, তাই বুঝে শুনে কাজ করো ম্যাডাম।

……ছুটি না দিলে তাতে কী আপনি তো আছেন আপনার ভালোবাসা দিয়ে সব ঠিক করে দিবেন।

……ভালোবাসা দিয়ে সব হয় না ম্যাডাম কিছুটা সাবধানতার ও প্রয়োজন আছে।

……এর জন্য আপনি আছেন তো? এই যে এখন যেমন চাঁদর হয়ে গেলেন।

ফাইয়াজ হাঁসল, পুস্পিতার কথা শুনে। তারা আরও কিছুক্ষণ এভাবেই দাঁড়িয়ে রইল বারান্দায়।

সকাল সকাল সবার সাথে বসে ব্রেকফাস্ট করছিল পুস্পিতা, ফাইয়াজ। ব্রেকফাস্ট করে সব মেহেমান বিদায় নিবে।

খাবার শেষ করে একে একে সবাই যার যার পথে রহণা দিলো। সবাই চলে যেতেই ফাইয়াজ আর পুস্পিতাও রেডি হয়ে চলে গেল পুস্পিতার মা বাবার কাছে।

সেখানে এসে পুস্পিতা তার মা বাবা কে পেয়ে খুবই আবেগী হয়ে পড়ল। ফাইয়াজ আজ আর তাদের কিছু বলল না কারণ তাদের আবেগ ঘন মূহুর্ত গুলো তাকেও আবেগী হতে বাধ্য করে দিয়েছে।

বেশ কিছুক্ষণ পরে সবাই বসে গল্প করতে শুরু করে দিলো, সবাই নানান প্রশ্ন করে যাচ্ছে ফাইয়াজ কে, সে বুঝতে পারছে এখন, এই দুদিন পুস্পিতার কত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। সে এত কথা এমনিতেও বলে না কখনো, বাট আজ বলতে হচ্ছে। তার নিজেকে আদালতের আসামি মনে হচ্ছে, যাকে উকিল একে একে এক গাধা প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে। আর সে চুপচাপ উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। আজ পুস্পিতার খুব হাঁসি পাচ্ছে, কারণ সে জানে তার স্যার এত কথা বলতে পছন্দ করে না। তাই সে মুখ চেপে হাঁসছে। তার প্রশ্নের ই তো ঠিক করে উত্তর দেয় না সে, সব সময় উল্টো জবাব দেয়, এখন বোঝো ঠেলা স্বামী জান।

বিকেল দিকে ফাইয়াজ ছাদের এক কোণে গিয়ে দাঁড়িয়ে পুস্পিতার লাগানো ফুল গুলো মনযোগ সহকারে দেখছিল। ঠিক তখনই সেখানে জুঁথি চলে আসলো।

……কী গো দুলাভাই কী দেখছেন?

……(মুচকি হেঁসে) ভাবছি শালিকা আমার এখনো কেনো এলো না? এত দেরি হওয়া কী তার সাজে?

……তাই বুঝি? তবে আগে কেনো বলেন নি? আমি তো এমনিতেই এসেছিলাম। আগে জানলে আপনি অপেক্ষা করছেন তবে কবেই চলে আসতাম।

……তাই? ওহ ঠিক আছে এরপর থেকে জানিয়ে দেবো।

…… দুলাভাই আপনি খুব ভালো।

……তাই? যাক কেউ তো বলল। আচ্ছা বাদ দাও তুমি বলো তুমি কবে বিয়ে করছ? আছে তো কেউ পছন্দের?

……..কী যে বলেন দুলাভাই আমি আর প্রেম।

…….কেনো?

……ভালো লাগে না ওসব, তার মধ্যে আম্মু আব্বু শুনলে মেরেই ফেলবে আমায়।

……তাই কিন্তু কেনো?

……তারা সাফ সাফ বলে দিয়েছে প্রেম করবে না। যদি শুনি তবে সেদিনই তোমার জীবনের শেষ দিন হবে।

…….খুব শাসন করে বুঝি তোমাকে?

……নাহ তেমন নয় কিন্তু এদিকে তারা খুব কড়া।

……যাক তবে ঠিক আছে। তুমিও তবে তাদের কথা মেনে চলবে, যখন তারা তোমাকে ভালোবাসে।

…….হুম।

এরপর দুজনে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে নিচে চলে এলো।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট করে পুস্পিতাদের বাড়ির মেহেমান’রাও সবাই চলে গেল।

সন্ধ্যার পড়ে পুস্পিতা আর ফাইয়াজ তাদের বাসায় ফিরে এলো।

এভাবেই দিন গুলো তাদের যেতে লাগল। পরদিন সকাল থেকেই তারা দুজন এক সাথে হসপিটালে যেতে শুরু করে দিলো।

তাদের জীবনটা খুব সুন্দর ভাবেই কাঁটতে লাগল। ভালো আছে তারা দুজন দুজনার সাথে। এভাবেই মাস খানেক কেটে গেল।

হঠাৎ একদিন রাহাত আনোয়ার হসপিটালে দুজনেই ডিউটি পালন করছিল, পুস্পিতার মুঠো ফোনে কল আসলো তার স্যারের, পুস্পিতা পেশেন্ট কে একটু বসতে বলে ফোন রিসিভ করল। ফাইয়াজ তাকে এখনি ক্যাবিনে ডেকেছেন। সে এই পেশেন্ট কে বিদায় দিয়ে, রুম থেকে বের হয়ে এগিয়ে গেল। তার এসিস্ট্যান্ট তাকে জিজ্ঞেস করল।

…….ম্যাডাম কোথায় যাচ্ছেন অনেক পেশেন্ট আছে তো এখনো।

…….আসছি আমি।

তার মন খুব অশান্ত হয়ে আছে, হবেই না বা কেনো? ফাইয়াজ এই সময় তাকে শুধু শুধু ডাকার মতো মানুষ নয়, কারণ সে জানে এখন পুস্পিতা কতটা ব্যস্ত, তবে এই মূহুর্তে এত আর্জেন্ট কেনো? পুস্পিতা তারাহুরো করে হেঁটে এগিয়ে গেল, সে রুমে যেতে নিলো, কিন্তু ফাইয়াজের এসিস্ট্যান্ট বাধা দিতে যাচ্ছিল, কিন্তু সে পুস্পিতার চোখে রাগ দেখে সরে দাঁড়িয়ে গেল। পুস্পিতা দরজা ঠেলে ভেতরে যেতেই দেখল ফাইয়াজ চুপ করে চেহারে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বসে ছিলো। তাই পুস্পিতা ফাইয়াজের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে উঠল।

…….কী হয়েছে এভাবে ডাকলেন যে?

ফাইয়াজ তাকিয়ে দেখল পুস্পিতা দাঁড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারছে পুস্পিতা ঘাবড়ে আছে। ফাইয়াজ কিছু না বলে উঠে দাঁড়িয়ে একটা খাম এগিয়ে দিলো পুস্পিতার দিকে। পুস্পিতা খামটা নিয়ে খুলে দেখল তাতে লেখা আছে, সে শেরে বাংলা মেডিকেলে চান্স পেয়ে গেছে। যা দেখে সে খুশি হয়ে ধরল তার স্যার কে জড়িয়ে। যা দেখে স্যার বলে উঠল।

……এই এটা হসপিটাল কেউ চলে আসবে তো।

……আসুক তাতে আমার কী? আমি আজ অনেক খুশি, আমি যা চেয়েছি আজ সব পেয়ে গেছি আলহামদুলিল্লাহ। আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হবার দিন, আমি খুব খুব খুশি।

এই বলে পুস্পিতা কান্না করে দিলো। সে ফাইয়াজের বুকে মাথা রেখেই কাঁদছিল।

…….এত খুশি হয়ে কাঁদছ কেনো?

…….জানি না খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে, আমি কখনো ভাবিনি এত জলদি আমার সব স্বপ্ন পূরণ হবে। আপনি সাথে না থাকলে হয়ত এত জলদি সব কিছু হতো না, তাই ধন্যবাদ দিয়ে আপনাকে ছোট করব না। আপনি সব সময় আমার জীবনের এক শুভাকাঙ্ক্ষী হয়েই থাকবেন। ভালোবাসি আপনাকে অনেক বেশি। এভাবেই সব সময় আমাকে আগলে রাখবেন তো?

…….হুম ইন’শা’আল্লাহ।

এর মধ্যে হঠাৎ রুমের দরজা নক করে উঠল কেউ, তাই পুস্পিতা তার স্যারের থেকে সরে দাঁড়িয়ে চোখ মুছতে ছিলো। তার স্যার ও চোখ মুছে বসে গেল।

…….স্যার পেশেন্ট?

……হুম ৫ মিনিট পড়ে আসতে বলো।

……জ্বি স্যার।

……পুস্পিতা তবে যাও তোমার পেশেন্ট ও অপেক্ষা করছে হয়ত।

……জ্বি। আপনি বের হবার সময় দেখা করে যাবেন।

……হুম নিশ্চয়ই।

পুস্পিতা রুম থেকে বের হয়ে হাঁসি মুখে খুবই এক্সাইটেড হয়ে তার কেবিনে ঢুকলো।

……ম্যাম অনেক খুশি খুশি লাগছে আপনাকে?

……হ্যা আজ আমি প্রচুর খুশি। তুমি মিষ্টি এনে সবাইকে দিও এই টাকা দিয়ে। কিন্তু ম্যাম কিছুক্ষণ আগেই তো দেখলাম রহিত মিষ্টি নিয়ে এসেছে বলল ফাইয়াজ স্যার আনতে বলছেন।

……ওহ আচ্ছা ঠিক আছে তবে আর লাগবে না। তবে এটা তুমি রাখো আমার তরফ থেকে।

কিছু টাকা এসিস্ট্যান্ট এর হাতে দিয়ে বলে উঠল পুস্পিতা। এসিস্ট্যান্ট খুশি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। এরপর ধীরে ধীরে সব পেশেন্ট দেখে, দুজনেই বেরিয়ে পড়ল হসপিটাল থেকে।

দুজনে বাসার সবার জন্য মিষ্টি কিনে নিয়ে রহনা দিলো বাসায় যাওয়ার জন্য। দুই বাড়ির সবাইকে মিষ্টি মুখ করিয়ে, দুজনে এক সাথে এবার গেল ল্যাব এইডে। সেখানে রাত ১২ টা অব্দি পেশেন্ট দেখে দুজনে এরপর ফিরে এলো তাদের ছোট্ট সেই রুমটিতে। ভালো আছে তারা অনেক বেশি।



চলবে………..।

নীলফড়িং পর্ব-১৫

0

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#নীলফড়িং
#পর্ব ১৫
.
.
রাত তখন ১১টা বাজে সবাই মিলে আমাকে স্যারের রুমে দিয়ে গেল। আমি রুমের ভেতর চলে আসতেই সবাই দরজা বন্ধ করে দিল। তাকিয়ে দেখলাম রুমটা ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে। আমি সব ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। এর আগে তেমন একটা স্যারদের বাসায় আসা হয়নি। দু একবার আসলেও ড্রইং রুম থেকেই চলে গিয়েছি। আজ প্রথম স্যারের রুমে এলাম। স্যারের রুমে #নীলফড়িং যুক্ত অনেক আসবাবপত্র রয়েছে। লজ্জায় তো এমনিতেই আমি শেষ হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। প্রচুর পরিমানে ভয় করছে। এর মধ্যে হঠাৎ ওয়াশ রুম থেকে শব্দ হলো আমি ভয়ে আঁতকে উঠলাম। ওয়াশ রুমের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম দরজাটা একা একাই খুলে যাচ্ছে, ওহ গড ভূত বলে চিৎকার দেবো না কী করব বুঝতে পারছি না। এর মধ্যে হঠাৎ একটা আবছায়া দেখে আমি চোখ বুঝে ভয় পেয়ে এবার চিৎকার না করে আর পারলাম না।

…….ভূত ভূত ভূত ভূ………।

আমি আর চিৎকার করতে পারলাম না। কেউ এসে আমার মুখ চেপে ধরল। আমি আরও ভয় পেয়ে গেলাম। কিন্তু পরক্ষণেই কেউ কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠল।

……এই এভাবে কেউ চিৎকার করে? কেউ শুনলে কী বলবে?

আমি ভয়ে ভয়ে চোখ মেলে তার দিকে তাকালাম দেখলাম স্যার দাঁড়িয়ে আছে। আমি চোখ দুটো ছোট ছোট করে তার দিকে তাকিয়ে ইশারায় মুখ থেকে হাত সরাতে বললাম। সে হাত সরিয়ে নিতেই বলে উঠলাম।

…….আপনি ছিলেন ওখানে?

……হ্যা তবে কে থাকবে?

……কী করছিলেন আপনি?

……আরে ওয়াশ রুমে সবাই যা করে আমিও তাই করছিলাম। তোমার সন্দেহ আছে কোনো?

…….আমি তা জিজ্ঞেস করিনি। আমি বলেছি আপনি তো বাহিরে ছিলেন, তবে এখানে কখন এলেন?

……ওহ এই কথা? আমি তো আরও ৩০ মিনিট আগেই চলে এসেছিলাম। ল্যাপটপে কিছু কাজ ছিলো তাই করছিলাম।

এই বলে সে সরে গেল। কিন্তু তুমি এখনো এত ভারি ড্রেস পড়ে আছো কেনো? বিরক্তি লাগছে না বুঝি?

…….লাগলেও কী করার আছে?

……কেনো?

……কিছু না।

স্যার গিয়ে ওয়াশ রুমের দরজা বন্ধ করে দিল। আমি গিয়ে বিছানার এক পাশে বসে পড়লাম।

……..বালিশের পাশে দেখো কিছু রাখা আছে।

আমি স্যারের কথা শুনে তার দিকে তাকালাম, সে চোখের ইশারায় আবার দেখতে বলল। আমি এগিয়ে গিয়ে বালিশের পাশে হাত দিতেই দেখলাম একটা বক্স সেটা বের করে উঁচু করে স্যারের দিকে ধরতেই বলে উঠল।

…….খুলে দেখো।

আমি খুলতে নিলাম। খুলে দেখলাম একটা খুব সুন্দর ডায়মন্ড সেট ছোটর ভেতর কিন্তু খুব সুন্দর। সাথে একটা ছোট্ট #নীলফড়িং এর আংটি। যা দেখে ঠোঁটে এক চিলতে হাসি চলে এলো। স্যারের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেও মুচকি হাসছে।

স্যার আমার সামনে এসে বসে পড়লেন। আমার হাত দুটো তার দু-হাতের মাঝে নিয়ে বলে উঠলেন।

…….জানো? আজকের এই দিনটার জন্য আমি কতটা অপেক্ষা করেছি? আমি কখনো ভাবিনি তোমাকে একেবারে নিজের করে পাবো। প্রতিটি মূহুর্তে প্রতিটি সময় আমি ভেবেছি তুমি হয়ত হারিয়ে যাবে, পাবো না হয়ত তোমাকে আর। বাট আজ সব বাধা পেড়িয়ে তুমি শুধু আমার হয়ে এসেছ, এটাই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। তুমি জানো আজও যখন এক্সিডেন্ট করেছিলাম, তখন বারবার তোমার চেহারাটাই চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল। মনে হয়েছিল আর কোনোদিন হয়ত তোমাকে দেখতে পারব না। কিন্তু দেখো কোথা থেকে আমি কোথায় চলে এসেছি? আজ আমি অনেক খুশি অনেক অনেক খুশি। আজ আর আমাদের মধ্যে কোনো ৩য় ব্যক্তি নেই আজ শুধু তুমি আর আমি।

স্যারের কথা শুনে আমার চোখের কোণে পানি জমা হলো। সত্যি আজ অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে আমরা এক হয়েছি। আমার চোখের পানি গুলো স্যার নিজের হাতে যত্ন করে মুছে দিল।

……কাঁদছ কেনো? আজ কান্না নয়, আজ শুধু হাঁসবে, তুমি মন খুলে হাঁসবে আমি দেখব।

স্যার বিছানায় শুয়ে পড়ল। স্যারের পা দুটো ঝুলে আছে স্যার একটি কুশন বালিশ মাথার নিচে দিয়ে বেশ আড়াম করেই শুয়ে ছিলো। আমি বসে ছিলাম নিচের দিকে তাকিয়ে। স্যার আমার হাত ধরে টান দিল। যার জন্য আমিও পড়ে গেলাম তার পাশে। দুজনে পাশাপাশি শুয়ে ছিলাম। স্যার উপর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল।

……তুমি কিছু বলবে না?

……কীহ বলব?

……কিছুই কী বলার নেই?

…….উঁহু। আজ শুধু শুনতে ইচ্ছে করছে। বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি যে।

…….আচ্ছা তবে চলো।

…….কোথায়?

……বলছি যাও আগে চেঞ্জ করে এসো।

……হুম

আমি গিয়ে লেহেঙ্গা-টা চেঞ্জ করে নিলাম, একটা সুতির শাড়ি পরে এলাম, পড়া ঠিক হয়নি জানি, বাট যেমন হয়েছে তাতেই চলবে। আমি শাড়িটা পড়ে বেরিয়ে আসলাম। সব গহনা খুলে নর্মাল ভাবে সাজলাম।

বারান্দায় উঁকি দিয়ে দেখলাম স্যার আকাশ পানে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাশি দিলাম, যা শুনে স্যার ঘুরে তাকাল।

……হুম এখন মনে হচ্ছে তুমি আমার রাজ্যের রানী।

আমি লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছিলাম। স্যার বলে উঠল।

……দাড়াও একটু।

স্যার এগিয়ে গিয়ে দরজা ফাঁকা করে কী জানি দেখল, এরপর এগিয়ে এসে একটা চাঁদর নিলো ড্রয়ার থেকে। আমাকে ডেকে নিয়ে বের হয়ে গেল রুম থেকে আমিও তার সাথে এগিয়ে গেলাম। দেখলাম বাইরের রুম গুলোর আলো নিভিয়ে রাখা হয়েছে সম্ভবত সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমরা দু’জন ছাদের দিকে পা বাড়ালাম।

ছাদে উঠে স্যার চাঁদরটা দোলনায় রেখে বলে উঠল।

……এখন ভালো লাগছে।

……স্যার এত রাতে ছাদে কেনো?

স্যার রাগী লুক নিয়ে আমার দিকে ঘুরে গিয়ে এগিয়ে এসে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে উঠলেন।

……আমি এখনো তোমার স্যার?

……না মানে হ্যা।

……ওহ গড। তবে তোমার হাসবেন্ড কে?

……(কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে) আপনি।

……তবে কে তার হাসবেন্ড কে স্যার বলে?

……স্যার আপনি তো আগে থাকতেই জানতেন আমি আপনাকে সম্মান দিয়ে স্যার বলে ডাকি। তবে আমাকে কেনো বিয়ে করতে হলো? যে আপনাকে নাম ধরে বলে আপনি তেমন কাউকে বিয়ে করলেই তো পারতেন।

……এখানেই তো সমস্যাটা হয়ে গেছে। চোখ বুঝতে পারেনি, মন ভাবার সময় পায়নি। আর আমি নিজেকে বোঝাতে পারিনি। যার জন্য আজ তুমি ছাত্রী আমি শিক্ষক।

……বাট স্যার।

……আবার স্যার?

……তবে কী বলব?

……সেটাও আমি বলে দেবো?

……তবে থাক কিছুই বলব না।

…….তাও ভালো।

এই বলে পুস্পিতা দোলনায় বসে পড়ল। তার স্যার গিয়ে তার পাশে বসল। কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ করে বসে পূর্ণিমার চাঁদটা দেখল। কেউ কোনো কথা বলল না। এই নিস্তব্ধতা উপভোগ করতে লাগল দুজনেই।

বেশ কিছুক্ষণ পরে স্যার এগিয়ে বসে চাদর-টা পুস্পিতার আর তার গায়ে জড়িয়ে নিলো। ঠান্ডা বাতাশ এসে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে তাদের।

……পুস্পিতা ভেতরে চলো এখানে অনেক ঠান্ডা।

……হুম চলেন।

এরপর দুজনে সেখান থেকে উঠে রুমে চলে এলো।

স্যার গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। তাই পুস্পিতা গিয়ে বিছানার এক পাশে বসে পড়ল।

দুজনেই দু’দিকে ফিরে শুয়ে ছিলো হটাৎ রুমের আলো নিভিয়ে দিয়ে স্যার পুস্পিতার হাতের উপর হাত রাখলেন। পুস্পিতা চোখ বন্ধ করে নিলো। স্যার পুস্পিতার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে গেল।

খুব সকালে ঘুম ভাঙল দরজার খটখট শব্দে, চোখ মেলে তাকিয়ে দেখল পুস্পিতা, স্যার তাকে খুব শক্ত করে ধরে রেখে ছিলেন। পুস্পিতা আস্তে আস্তে স্যারের হাত সরাতে নিলো, বাট স্যারের ঘুম ভেঙে গেল। স্যার চোখ মেলে তাকিয়ে দেখল পুস্পিতা ওঠার চেষ্টা করছে তাই সে হাত সরিয়ে নিলো।

…….কী হলো?

……কেউ এসেছে দরজা নক করছে।

……আচ্ছা আমি দেখছি।

ফাইয়াজ শার্ট গায়ে দিতে দিতে দরজা খুলতে চলে গেলেন। পুস্পিতা বিছানা থেকে উঠে ওয়াশ রুমে চলে গেল।

পুস্পিতা বের হয়ে দেখল ফাইয়াজ সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছিল, পুস্পিতা ভেজা চুল গুলো মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। পুস্পিতার চুল ঝাড়া দিতেই পানি এসে ফাইয়াজের গায়ে পড়ল।

……এই যে ম্যাডাম আমি ভিজে যাচ্ছি তো।

……ওহ স্যরি।

পুস্পিতা আস্তে আস্তে চুল মুছতে নিলো। হটাৎ তার মনে হচ্ছে কারো হাত তার কোমড় স্পর্শ করছে। সে ভয় পেয়ে পেছনে ঘুরতেই খেলো ফাইয়াজের মাথার সাথে সজোরে একটা টাক।

……আহ। আপনি এখানে কী করছেন? ইশ (মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে)

……আমি ও হ্যা ফুটবল খেলছিলাম।

……রুমের মধ্যে ফুটবল, কিন্তু এত জায়গা থাকতে এখানেই কেনো?

……ওহ গড। আচ্ছা তোমার মাথায় কী আছে?

……আমার মাথায়? চুল রয়েছে।

……উফ, ঘিলু নেই মোটেও তোমার মাথায়।

এই বলে ফাইয়াজ রাগ করে ওয়াশ রুমে চলে গেল। আর পুস্পিতা রেডি হয়ে ড্রইং রুমে চলে এলো। সেখানে এসে দেখল সবাই বসে আছে বাট তার শাশুড়ী রান্নাঘরে সাথে কাজের মেয়েটা কাজ করছে, তাই সে মাথার কাপড়টা ভালো করে টেনে নিয়ে এগিয়ে গেল রান্নাঘরের দিকে।

……আম্মু আমি সাহায্য করি?

……আরে না না মামণি তুমি কেনো এত জলদি কাজ করবে? এসেছ কিছুদিন রেস্ট নাও তারপর না হয় করবে।

……কিন্তু হসপিটালে যেতে নিলে তো অতটা কাজ করতে পারব না। তাই যেকদিন ছুটিতে আছি সেই কদিন তো করি।

……সমস্যা নেই তুমি যতটুকু পারবে ততটুকুই করে নিও। এখন যাও সবার সাথে গিয়ে কথা বলো।

……আপনি একা একা কাজ করবেন আর আমি বসে থাকব? প্লিজ আম্মু দিন আমি কিছু করি?

……আমার লক্ষী একটা মেয়ে( গালে হাত রেখে) এখন তুমি কাজ করলে সবাই আমাকে কথা শুনাবে, বাকা দিবে, যে কী দিন আসলো নতুন বউ আসতে না আসতেই তাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে। যাও মা সবার সাথে গিয়ে বসো, এখানে রুমকি আছে তো, ও আর আমি মিলে সব সামলে নেবো।

……ঠিক আছে।

পুস্পিতা এসে সবার সাথে ড্রইং রুমে বসে পড়ল। সবার সাথে কথা বলছিল। সবাই অনেক ইয়ার্কি ফাজলামো করছিল তার সাথে।



চলবে………..।