Wednesday, June 25, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 292



অনুরক্তি এসেছে তোমার শহরে পর্ব-৯+১০

0

#অনুরক্তি_এসেছে_তোমার_শহরে
#পর্বঃ৯_১০
#বর্ষা

ইলিয়ানার জ্ঞান ফিরতে অবাক হয় সে।চারদেয়ালে ঘেরা সুন্দর রুম।জ্ঞান হারানোর আগে দেখা মানুষটির কথা মনে পড়তেই দ্রুত শয্যা ত্যাগ করে উঠে বসে সে।দশবছর পূর্বের সেই কালো রাত!বর আসছে,বর আসছে এমন টাইপ কিছু কথা।তবে বর আসার পূর্বেই পুলিশ এলো।এলো সাঁই সাঁই করে কয়েকটা বিশাল গাড়ি।সব বদলে গেলো। ইলিয়ানার মাথা ব্যথা করতে থাকে।

দরজা খোলার শব্দে সেদিকে তাকায় ইলিয়ানা।ইলিয়ানার চেয়ে বয়সে বেশ যে বড় তা দেখেই আন্দাজ করা যায়।ইলিয়ানাকে বসা দেখে আনন্দ আপ্লুত হয়ে বলে,

—উঠে পড়েছিস ইলিয়ানা।যা ফ্রেশ হয়ে আয়।খেয়ে নে।

ইলিয়ানার অবাক হয়ে সব শুনছে।এত স্বাভাবিক ব্যবহার!কিভাবে সম্ভব!ইলিয়ানার অবাকতা কাঁটার পূর্বেই বাধ্য মেয়ের মতো ফ্রেশ হয়ে আসে সে। একসঙ্গে বেরিয়ে আসে রুমটা থেকে।ডাইনিং স্পেসে এসে অবাক হয়।অতি প্রিয় মুখ।চোখে ইলিয়ানার জল। তাদেরও চোখে জল।ইলিয়ানা ঠাঁই দাঁড়িয়ে তবে সামনে বসা মাঝবয়সী রমনী এসে বুকে জড়িয়ে ধরে ইলিয়ানাকে। চুম্বন করে।

—কেমন আছো সোনা?আপাই ভুলে গেছো!

কান্না মিশ্রিত কন্ঠে ইলমা আপু জিজ্ঞেস করে।ইলিয়ানাকে বেশ ভালো বাসে কিনা।কখনো তুই বলেও বলেছে কিনা তা ইলিয়ানার স্মরণে আসে না। রোবটের মতোই দাঁড়িয়ে সে।মস্তিষ্ক সাড়া দিচ্ছে না।

—এই ইলিয়ানা কথা বলো বোন।চুপ করে আছো কেন?ইলিয়ানা!

ইলমা আপুর স্নেহভরা কন্ঠস্বর ভাসতেই ইলিয়ানা ঢেকুড় তুলে কেঁদে ওঠে।সামনে খেলতে থাকা বাচ্চাগুলোর খেলাও বন্ধ হয়ে যায়।অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে কান্নারত রমনীর দিকে।ইলিয়ানা বলে,

—আপাই আমি কি খুব খারাপ প্রথমে তোমাদের থেকে দূর হলাম,এখন প্রিয় মানুষদের থেকে দূর হচ্ছি!ও আপাই বলো না আমি কি খুব খারাপ?

বোনের কান্নায় কেঁদে দেয় ইলমা। রায়হান সেখান থেকে সরে পড়েছে। বোনেদের কান্না যে সহ্য হচ্ছে না। রায়হানের স্ত্রী তমা মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে।মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস হয়তো তার নেই। কেননা তার দোষের কারণেই রায়হান ইলিয়ানাকে ভুল বুঝে বিয়ে দিয়ে দিতে চেয়েছিলো।আর তখনই সব এলোমেলো হয়ে গেলো।এখনও কেউ বুঝতে পারেনি কি থেকে কি হয়েছে!

—বোন দেখো‌ আপাই এইখানেই আছি।আমায় বলো কে কি বলেছে।ও বোন বলো না?

ইলমা কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করে।ইলিয়ানার ফাঁকা মস্তিষ্কে হঠাৎ মনে পড়ে তার বোন যে তার কষ্ট সহ্য করতে পারে না।সেই ছোট বেলায় মাথা ফেটে রক্ত পড়ায় সে যেখানে চুপ ছিল,সেখানে তার বোনটা অঝোরে কাঁদছিলো।শেষমেশ তো তাকে রেখেই যেতে হলো হসপিটালে ইলিয়ানাকে নিয়ে।ইলিয়ানা অতিরিক্ত প্রচেষ্টায় কান্না থামিয়ে ফেললেও বারবার বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছিলো।আর ঢোক গিচ্ছিলো।

—আপাই নুকতা আর জোয়া কোথায়?

ইলিয়ানার কথায় নুকতা নামক বারো বছর বয়সী এগিয়ে আসে।আর দশ বছর বয়সী ছটফটে জোয়াও এগিয়ে এসে মা ইলমার পেছনে দাঁড়ায়।ইলিয়ানা নুকতাকে কাছে টেনে এনে ইলমার দিকে তাকিয়ে বলে,

—আপাই আমার নুকতা কত বড় হয়ে গেছে?কত ছোট রেখে গিয়েছিলাম।আমার বাবাটার বেড়ে ওঠা আমি দেখতে পারলাম।

ইলিয়ানার চোখ দিয়ে আবারো অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।পনেরোতে পা দেওয়া কিশোরী অবস্থায় তার মনে মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণের ভুত চেপে ছিলো,তবে বিয়ে না করতে পারায় মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণের কথাই ওঠে না।তাইতো ভাগ্নেকে নিজের সন্তানের মতো খেয়াল করতো বাসায় আসলেই।আর ভাগ্নি জোয়াকে পেয়ে তো মা হয়ে ওঠার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আরো বেড়ে গিয়েছিলো।

—জোয়া মামনি কাছে আসো।আমি তোমাদের ইলিয়ানা মামনি।তোমরা আমায় চেনো না।

ইলিয়ানা নুকতা আর জোয়া দুজনের কপালে চুমু খায়।নুকতা যে লজ্জা পায় তা বোঝাই যায়।তবে ছটফটে জোয়া ইলিয়ানার পাশ ঘেঁষে গল্প করতে বসে।জোয়ার আচরণে ইলিয়ানা মায়ের আচরণ খুঁজে পায়।আম্মু যে বেঁচে নেই।তার জীবন এলোমেলো হওয়ার আগেই ইন্তেকাল করেছেন।

—রাহিদ,রায়দা তোমরা জোয়া আপু আর নুকতা ভাইয়াকে নিয়ে খেতে আসো।

তমা ভাবীর কথায় ইলিয়ানা সেদিকে তাকায়।ইলিয়ানা ভাবী শব্দটাকে ঘৃণা করতে এই রমনীর জন্য।তবে এমেলিকে পেয়ে সে বুঝতে পেরেছিলো ভাবী শব্দটার মাহাত্ম্য কত,ভাবী শব্দটা শুধুমাত্র কোনো শব্দ নয়।ভাবী তো এক অনুভুতি যা সবাই উপলব্ধি করতে পারে না!

বাচ্চারা চলে যেতে নিলেই ইলিয়ানার চোখ যায় আরো দু’টো বাচ্চার দিকে।ইলিয়ানা এদের চেনে না।তবে যতটুকু বুঝলো তাতে বোঝা যায়,এরা ওর ভাইয়ের সন্তান।আদর করে দেয়।ডাকতে বলে,পিপি। বাচ্চাগুলো লজ্জা পেয়ে দ্রুত সরে যায়।তমা ভাবী বাচ্চাদের খাবার দিয়ে এগিয়ে এসে ইলিয়ানার পাশে দাঁড়ায়। ইলিয়ানা সরে বসে। ছোটবেলার ভয় বলে কথা!

ইলিয়ানার এখন অবশ্য সেই স্মৃতিগুলো ধামাচাপা দিয়েছে।কেন রাখবে সে কুৎসিত স্মৃতি!তবে বাইরে সবাই এটা মনে করলেও স্মৃতি তো আর মুছে ফেলা যায় না। তাইতো মাঝেমাঝেই স্মৃতিতে ভাসে কালো সে অতীত।

—ইলিয়ানা ভাবীকে ক্ষমা করবে না!ভাবী তো মায়ের মতো ভাবীকে ক্ষমা করে দেও প্লিজ

তমা ভাবীর কথায় ইলিয়ানা সেদিকে তাকায়।মনে মনে সকলের অগোচরে তাচ্ছিল্য হেসে বলে,

”দয়া করে মা শব্দটা কুলসিত করো না।মা কখনো খারাপ হয়না।আর যারা খারাপ তারা কখনো মা হয় না। তুমি ভাবী হয়েও ভাবী নও। তুমি বদলে গেলেও অনুশোচনায় দগ্ধ হলেও আমার যে কিছুই করার নেই।মন যে বুঝবে না”

সকাল অতিক্রম হয় বোন আর ভাবীর যত্ন-আত্মীতে।এগারোটার দিকে রায়হান আহমেদ বাসায় আসে। বাচ্চাদের হাতে চিপস দিয়ে একটা চিপস হাতে নিয়ে বোনের দিকে এগিয়ে দেয়।রায়হান বেশ জানে তার বোন তার অস্তিত্ব টের পেয়েছে। কেননা সেই ছোট্ট থেকেই বোনটা তার উপস্থিতি টের পেতো।না হোক রক্তের,তবে আত্মা যে জোরানো।

ইলিয়ানা কিছুক্ষণ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে চিপসটা হাতে নেয়।সে উপলব্ধি করেছে তার ভাই আর ভাবীর সম্পর্কটা এতোটা জোড়ালো না।তবে কি এর পেছনেও কোনো ভাবে সে জড়ানো! ইলিয়ানা ভাবতে ভাবতে দেখতে পায় তার ভাবী রাগ দেখাচ্ছে তমা ভাবীকে।কারণ অতিক্ষুদ্র।তমা ভাবী পানি গরমে দিতে ভুলে গেছেন।তাই এই রাগ দেখানো।ইলিয়ানা প্রথমে জড়াতে না চাইলেই মাথা বিগড়ে যায় তার।

—বাচ্চাদের সামনে কি শুরু করছোস ভাইয়া?আর ভাবী নাহয় ভুলে গেছে একটু অপেক্ষা কর।পানি গরম হতে হতে কি বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে নাকি।আর একটা শব্দ যেন না শুনি!

রায়হান চুপ হয়ে যায়।বোনটা কি শেষমেশ তাকে ক্ষমা করলো।আবারো আম্মু থাকাকালীন সময়ের মতো অধিকার দেখিয়ে কথা বলছে। বোনটাকে হয়তো সে ফিরে পাচ্ছে।কালকে রাতে তো রায়হানের হৃৎস্পন্দন থেমেই গিয়েছিলো প্রায়। রাতে বোনকে এগিয়ে আনতেই ঢাকা গিয়েছিলো সে।মাঝরাস্তায় গাড়িতে সমস্যা হওয়ায় ড্রাইভারকে গাড়ি ঠিক করতে বলে রায়হান একটু এদিক ওদিক যায়।তখনই নজরে আসে একটা মেয়ে এলোমেলো আসছে আর পেছনে ট্রাক।ছুটে গিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলতেই মেয়েটা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অস্পষ্ট বলে,”ভাইয়া”

রায়হানের বুকটা ছ্যাত করে ওঠে। কেননা ওর বোনটাই তো ওকে এভাবে ডাকে।জ্ঞান হারাতে দেখেই পাগল প্রায় হয়ে বোনকে তার ফোনসহ কোলে নিয়ে গাড়ি অব্দি আসে।গাড়িও ঠিক হয়ে গেছে।ইলিয়ানার ফোন ইলিয়ানার ফিঙ্গার প্রিন্টে খুলতেই গ্যালারির পরিচয় দিয়ে সেভ করা ফোল্ডারে যেতেই চোখ আটকে যায়।ইলিয়ানা নামটাই বুঝিয়ে দেয় এ আর কেউ না বরং তাদের বোন।মুখের আদলে তাকিয়ে থেকে ইলমা আপু হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।

দুপুরে খাওয়ার টেবিলে ইলিয়ানা সহজ আচরণ করে।যেন কাল তার সাথে কিছুই হয়নি।এমনকি সে যেন এই পরিবারেরই সদস্য হয়ে বেড়ে উঠেছে।ইলিয়ানার সহজ আচরণ সকলের মনে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। বাচ্চাগুলোর সাথেও মিষ্টি এক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

—আমি বিকালের দিকে ফিরবো।(ইলিয়ানা)

—কোথায় যাবি তুই?(রায়হান)

—কোথায় যাবে তুমি?(ইলমা)

—আপু আমি তো তোমাদের অতিথি মাত্র।আমাকেও যে ফিরতে হবে।আর আমি অলরেডি রিইউনিয়নে এসে অনেকটা সময় বাইরে কাটিয়েছি।তাই এখন আমাকে যেতে হবে(ইলিয়ানা)

—তুই আমার কাছে থাকতে চাস না এর মানে!

ইলমা আপু কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে।ইলিয়ানা ফেঁসে যায়।সে যে তার বোনটার দুঃখ সহ্য করতে পারে না।তবে হয়তো তার বোনটা তাকে একটু হলেও ভুলতে পেরেছিলো। তাইতো এসেছিলো ভাইয়ের বাড়ি। অবশ্য না আসার কি আছে।ভাইয়ের বাড়ি আসবে এটা তো স্বাভাবিক।আর স্পেন থেকে এখানে ভাইয়ের বাড়িতে এসেছে সে।তবুও ইলিয়ানা ইলমা আপুর মন রক্ষার্থে বলে,

—আপু আমি দুইদিন বাদে তোমাদের সাথে দেখা করতে আসবো।দুইদিন থেকে যাবো তোমাদের সাথে।তবে এখন যে যেতেই হবে।

—ভাইয়ার ওপর এখনো রেগে আছিস?

রায়হান ভাইয়ের কন্ঠে প্রবল আবেগ।ইলিয়ানা কারো ওপরেই রেগে নেই।আল্লাহ যা করেছেন ভালোই করেছেন।তবে খুব মনে পড়ে তার রায়হান ভাই আর ইলমা আপুকে।তারাই তো ইলিয়ানার দুনিয়া ছিলো।তবে এখন ইলিয়ানার দুনিয়া যে তার একমাত্র ভাই ইলিয়াস ভাই আর ডেড জুনায়েদ চৌধুরীকে ঘিরে।

—তোর ওপর রেগে থাকবো কেন ভাইয়া?

ইলমা মুচকি হেসে দেয়।বলে,

—দেখছো রায়হান,আমাদের ইলিয়ানা আবারো আগের মতো হয়ে গেছে। আমাদের ইয়াং মাফিয়া তার বারো বছরের বড় ভাইকে তুই করে বলছে।হি হি হি

স্কুল মাঠে ফিরে চমকায় ইলিয়ানা।চারপাশটা অনেকটা চুপচাপ।সবাই থেকেও যেন কেউ নেই।ইলিয়ানার পাশে কেস জুতো।রায়হান ভাই এনে দিয়েছিলো।কেন কাল রাতে সে খালি পায়ে ছিলো।আর রক্ত ঝড়ছিলো তার পা হতে।তাইতো কেস জুতোয় সুবিধা হবে।ব্যান্ডেজগুলোতে ময়লা যাবে না অন্তত।আর শীতের মাঝে পা ঘামার ব্যাপারটাও হবে না বলেই এই ধারণা।

—কি হয়েছে সবাই এতো চুপচাপ কেন?

ইলিয়ানা মাথা চেপে ধরে চেঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করে।মাথা ধরেছে তার অনেক। অতিরিক্ত চিন্তা করলে এমন একটু আকটু হয় তার।ইলিয়াস ভাই ভয়ে ইলিয়ানার মাথার চেকআপ করিয়েছিলো দেখতে যে বোন সুস্থ তো।তবে আল্লাহর রহমতে কোনো সমস্যা দেখা মেলেনি।

—কোথায় ছিলিস তুই?জানিস এদিকে কি কি হয়েছে?

মেহেরের কথায় কেয়ারলেস জবাব দেয় ইলিয়ানা।বলে,

—ছিলামই তো না।তাহলে জানবো কি করে!

—আহান স্যার তোকে পাগলের মতো খুঁজছিল।এখন ….(মেহের)

—আমাকে কি আরো‌ দুটো থাপ্পর মাড়তে খুঁজছিলো নাকি?

ইলিয়ানার কন্ঠে তাচ্ছিল্য প্রকাশ্য। হঠাৎ কেউ ইলিয়ানাকে টেনে ঘুরিয়ে নেয়।থাসিয়ে চড় লাগিয়ে দেয় আহান স্যার।ইলিয়ানা পড়ে যায়।পায়ে প্রচন্ড ব্যথা পায়। ইলিয়ানার তাচ্ছিল্য হাসি প্রশস্ত হয়।

আহান স্যারের রাগ নিভে যায়।বসে হয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইলিয়ানাকে।ইলিয়ানা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় আহান স্যারকে। তাচ্ছিল্য হাসি বজায় রেখে বলে,

—যেই দেহ থেকে এখনো পরনারীর গন্ধ আসছে তাকে কি করে জড়িয়ে ধরা যায়!

আহান স্যার তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারেন না কথার মানে।তবে একেবারে অবুঝ তিনি নন।তাই মিনিট এক বাদেই বুঝে ফেলেন ইলিয়ানার বলা কথাটা।আহান স্যার ইলিয়ানা হাতটা আঁকড়ে ধরে বলেন,

—একটা মেয়ের ছবি দিয়ে তোমায় বলেছিলাম আগামী মাসে বিয়ে করছি তাও দশ বছর আগে। তুমি বিশ্বাস করে সরে গেলেও ঘন্টাদুয়েক বাদে আবার আমায় ম্যাসেজ দিয়েছিলে,কথা বলেছিলে।সেখানে তোমায় কিন্তু এও বলেছিলাম যে আমি তুমিহীন কোনো নারীর সাথে এতো কথা বলিনি।তাহলে তুমি ভাবলে কি করে যে আমি ওই মেয়েটাকে বিয়ে করেছি!আরে পাগলী ওইটা আমার ভাগ্নি।তোমাকে জ্বালাতেই দিয়েছিলাম।তবে কাল ও ওর জামাইয়ের সাথে দেখা করতে এসেছিলো আমার সাথে।আর…

ইলিয়ানা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে।লোকটা কি নিখুঁত অভিনেতা!ইলিয়ানার চোখে জল,মুখে হাসি।ইলিয়ানাকে কষ্ট দিয়ে বেশ শান্তি পেতো এই লোকটা তাই না!ইলিয়ানাও একটু শোধ তুলবে।

—জানেন তো মানুষের প্রতি আস্থা চলে গেলে তা আর আসে না। ভালোবাসা থাকলেও আসে না। ফিকে পড়ে যায়!(ইলিয়ানা)

—তোমার ভালোবাসা তো আমি চাই না।আমি তো তোমাকে চাই,চাই তোমার থেকে সময়।চাই তোমার সাথে পথ চলতে।(আহান)

—ভালোবাসাটা অবহেলায় অবহেলায় চাপা পড়েছে।আপনি সরুন আমি তাঁবুতে যাবো।আমার ভালো লাগছে না(ইলিয়ানা)

ইলিয়ানা চলে যায়। আহান স্যার ঠাঁই অসহায় দাঁড়িয়ে থাকে।সে তো তখন একটু সময়ের সন্ধানে চলে গিয়েছিলো।চাইনি প্রেয়সীসহ বাকি কাউকে অশ্রু দেখাতে।ইলিয়ানা তাঁবুতে এসে শুয়ে পড়ে।পাশ ফিরে দেখে অন্তরা শুয়ে শুয়ে ভিডিও কলে ছেলের সাথে গল্প করছে।ইলিয়ানা হাসে।

কিছুক্ষণ বাদেই ইলিয়ানার ফোনটা বেজে ওঠে।ম্যারিও ফোন দিয়েছে।ইলিয়ানার একসময়ের বেষ্ট ফ্রেন্ড তবে এখন আর নেই।ছেলেটা ওকে ভালোবাসে।এটা জানার পর সে আর স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারেনি ম্যারিও এর সাথে।ছেলেটা যে কথায় কথায় ইজহার করে নিজেকে।তবুও বন্ধুত্বের খাতিরে কল রিসিভ করে ইলিয়ানা।

—জেহের একবার কি কল দেওয়া‌ যায় না?(ম্যারিও)

—যায় না।(ইলিয়ানা)

—ইচ্ছে থাকলে সবাই সম্ভব কথাটা তুই বলেছিলি জেহের!(ম্যারিও)

—আমার যে ইচ্ছেটাই নেই।ম্যারিও জাস্ট ম্যারি এনি।সি লাভস ইউ ইয়ার।ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।মূল্যায়ন কর ওকে(ইলিয়ানা)

—আমি যে এনিকে নয় বরং তোকে ভালোবাসি।কি করে ওর ভালোবাসার মূল্যায়ন করবো বল?(ম্যারিও)

—তেমনি আমি তোকে নয় বরং অন্য কাউকে ভালোবাসি ম্যারিও।(ইলিয়ানা)

ইলিয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে অন্তরা।ছেলের সাথে কথার মাঝেও সে ইলিয়ানার দিকে তাকিয়ে।ইলিয়ানাও তাকায় অন্তরার দিকে।অন্তরা দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। অন্তরা ইলিয়ানার দৃষ্টিতে অসহায়ত্ব দেখেছে। ভালোবাসা কি মানুষকে অসহায় বানায়? প্রশ্ন জাগে অন্তরার হৃদয়ে!

চলব?

অনুরক্তি এসেছে তোমার শহরে পর্ব-০৮ এবং বোনাস পর্ব

0

#অনুরক্তি_এসেছে_তোমার_শহরে
#পর্বঃ৮
#বর্ষা
ভোর হতেই ঘুমেরা অক্ষু হতে বিদায় নিয়েছে।সময়ের ব্যবধানে থাকলেও অভ্যাস হয়ে গেছে মাত্র দিন দুয়েকের মাঝেই। তৃতীয়তম দিন রিইউনিয়নের। সহসা সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নতুন শিক্ষকদের সাথে পরিচিত হওয়ার। অর্থাৎ নতুন শিক্ষকদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে আজ স্কুল মাঠে আসার। অবশ্য প্রথমদিন বর্তমান প্রিন্সিপাল সকলের সাথে মিট করে গেছে।

ইলিয়ানা লেডিস লং শার্ট,জিন্স আর চুলগুলো উঁচু করে বেঁধে নিয়েছে।ঘাড়ের ওপর দিয়ে দুপাশে ওড়না ফেলেছে।আর কাঁধে ছোট ব্যাগ। সুন্দর লাগছে তাকে।এখানে আসার পর সে থ্রীপিস ছাড়া অন্য কিছুই পড়েনি।তবে আজ পড়েছে। কেননা আজ অনেক বেশিই ছোটাছুটি করতে হবে।আর এই ছোটাছুটির মাঝে কমফোর্ট না থাকলে তা আদৌ সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ।তাই..

—ইলিয়ানা কোথাও যাচ্ছিস?

মেহেরের প্রশ্নে পিছু ফেরে ইলিয়ানা।ট্যান্ট থেকে মাত্রই বেরিয়েছে সে।ব্যাগ নিতেই ঢুকেছিলো।আর স্কুল ওয়াসরুম থেকেই ফ্রেশ হয়ে ড্রেশ চেঞ্জ করে এসেছে।

—হ্যা রে।একটু মৌচাকের দিকে যাবো।কেন কোনো দরকার?

মেহের কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বললো,

—দোস্ত আমি তো গাজীপুরেই আছি।মন চাচ্ছে আম্মুর সাথে দেখা করে আসি।তবে আম্মু জানলে অনেক রাগ করবে যে আমি এখানে সবার সাথে থাকছি।এই বিষয় নিয়েই ভয় লাগছে।

—আরে চিন্তা করিস না।তোর শাশুড়ি আম্মুকে কল দিয়ে ধরিয়ে দিবি।আন্টি আর না করতে পারবে না তোকে এখানে থাকতে।(ইলিয়ানা)

—তাই যেন হয়।(মেহের)

—আচ্ছা তুই কি এখন যাবি?(ইলিয়ানা)

—না,ভেবেছি দুপুরের দিকে যাবো।সকালে কিংবা বিকালে নতুন শিক্ষকরা আসবে। তাদের দেখবো।(মেহের)

—হুম,দেখে আমাকে জানাইস।মনে আছে তো আমি একজন শিক্ষককে বিয়ে করবো।হি হি হি(ইলিয়ানা)

—হা হা হা।মনে থাকবে না আবার!তুই যে পাগল ছিলি আহান স্যারের!(মেহের)

ইলিয়ানা ঘড়ি দেখে মেহের দিকে তাকিয়ে বলে,

—আচ্ছা দোস্ত থাক।আমার আসতে আসতে বিকেল হবে।আর আমাকে ফোনে না পেলে চিন্তিত হোস না।আর কেউ চিন্তিত হলে তাকেও চিন্তিত হতে নিষেধ করিস।

—আচ্ছা।বাই দ্যা ওয়ে তোকে কিন্তু সো বিউটিফুল লাগছে।(মেহের)

—থ্যাংকস।

—ওই হারামী আমি বলছিলাম না ফ্রেন্ডসদের মাঝে নো থ্যাংকস,নো সরি। তুই দাঁড়া খালি,তোর খবর আছে।

ইলিয়ানা থ্যাংকস বলেই দৌড় দিয়েছে।আর তার পিছু পিছু দৌড় লাগিয়েছে মেহের।সবাই অবাক হয়েছে ওদের এভাবে দৌড়াতে দেখে।ইলিয়ানা একছুটে রিক্সায় উঠে চলে গেছে।আর মেহের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বকছে তাকে।তাসনিম সেখানে এসে একবার ইলিয়ানার চলন্ত রিক্সার দিকে তাকিয়ে আবার মেহেরের মুখের দিকে তাকায়। দুষ্টুমি মার্কা হাসি দিয়ে পেছন থেকে মেহেরকে ধাক্কা দিয়ে বলে,

—সুইটহার্ট…ওপস সুইসাইড আমাদের বেবি কি তোমার জামাই নিয়ে পলাইছে!হা হা হা

মেহের ”ইয়ার ফিরছে তু শুরু হোগেয়ি ” এমন লুক দিয়ে চলে যায়।তাসনিম হাসতে থাকে। একবার হাসা শুরু হলে এই মেয়েকে থামানো কষ্ট সাধ্য। অনন্যা পিঠে থাপড়িয়ে তাসনিমকে বলে,

—আর হা করে হাসিস না মশা ঢুকবো।

তাসনিমের হাসি বন্ধ হয়ে যায়। ছোট ছোট চোখ করে অনন্যার দিকে তাকায়।আজ যেন ওরা সবাই তাদের ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছে।ইশ,কতই না মজা করতো ওরা ছোটবেলায়!ক্লাস ফাঁকি দিয়ে দৌড়াদোড়ি করা।ক্যান্টিনে বসে থাকা।স্যারের কাছে ধরা পড়তে নিলে ওয়াসরুমে দৌড় দেওয়া।আরো কত কি!

রিক্সায় বসে বসে ইলিয়ানা হাসছে। ছোটবেলার দৃশ্য গুলো ফিরে আসছে চোখের সামনে।ইলিয়ানা একটু পরই হাসি বন্ধ করে ফোন লাগায় ‘ভাই’ দিয়ে সেভ করা নাম্বারটায়।আজ মেডিকেল বোর্ডের সকলেই আসবে। অনেকে অলরেডি উপস্থিত।যদি রোগীর অবস্থা পজেটিভ থাকে তবে আজ রাতের মধ্যেই অপারেশন করা হবে।প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টার এ অপারেশন!

—হাই, জেহের কেমন আছো(ইলিয়াস)

—আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।তুমি কেমন আছো?(ইলিয়ানা)

—ভালো।তা এত সকাল সকাল ভাইয়ের কথা মনে পড়লো যে?(ইলিয়াস)

—ভাইয়া তুমি বলতে চাও আমি তোমায় মনে করি না!(ইলিয়ানা)

—আরে আমার অভিমানী দেখি রাগ করেছে! আচ্ছা ভাইয়া সরি।রাগ করো না।(ইলিয়াস)

—ভাইয়া ডেডকে কল করেছিলাম ধরেনি।হয়তো আবারো ফ্রেন্ডসদের সাথে নতুন ট্রিপে যাওয়ার প্ল্যান করছে।তাই তোমায় বলছি শোনো,আমাকে হয়তো আজ ফোনে পাবে না।তাই চিন্তা করো না।ডেডকে এবং ভাবীকেও জানিয়ে দিও।(ইলিয়ানা)

—কেন জেহের?কোনো সমস্যা?আমায় বলো।আমি সলভ করে দিবো।(ইলিয়াস)

—ভাইয়া উদ্দিগ্ন হয়ো না।আমি একজন চিকিৎসক ভুলে গেলে চলবে!একটা সার্জারি আছে। সময়সাপেক্ষ বিষয়।তাই বললাম চিন্তা করো না।(ইলিয়ানা)

—আচ্ছা, জেহের অল দ্যা বেষ্ট।(ইলিয়াস)

—হুম,আচ্ছা ভাইয়া রাখছি।(ইলিয়ানা)

ইলিয়ানা কল কেটে দেয়।ফোনটা মুখের সামনে এনে ভাবতে থাকে কল দেবে কিনা তাকে। অবশ্য সেই দশবছর আগে নাম্বারটা মনে করেছিলো।এখন স্মরণে না থাকলেও নাম্বারটা সেভ করা আছে।একবার ভাবে কল দেবে,আরেকবার ভাবে দেবে না।তবে শেষমেশ ইলিয়ানা কল দেয় আহান স্যারকে।দুই থেকে তিনবার রিং হতেই কেউ কল রিসিভ করে।

—আসসালামু আলাইকুম কে বলছেন?

ওপাশ থেকে পুরুষনালী কন্ঠস্বর ভেসে আসে।কন্ঠটা আর কারো নয় বরং আহান স্যারের।ইলিয়ানা নিঃশব্দ হাসে।তারপর বলে,

—ওয়ালাইকুমুস সালাম।তা আপনাকে কে কল করতে পারে?

—ইলিয়ানা?(আহান)

—হুম

—আমার নাম্বার তোমার কাছে ছিলো?(আহান)

—কত বছর আগেই তো মুখস্থ করেছি।আপনাকে তো শুনিয়েও ছিলাম।(ইলিয়ানা)

—তাহলে এতদিন ফোন না দিয়ে আজ এতো কাছে থেকে ফোন দিচ্ছো কেন?(আহান)

—কিছু জানাতে (ইলিয়ানা)

—কি?(আহান)

—আমায় আজ ফোনে না পেলে কিংবা খুঁজে না পেলে চিন্তিত হবেন না।রাত এগারোটার আগে ফিরে আসবো যেখানেই থাকি না কেন!আর বেশি জরুরি হলে তানহা হসপিটালে নিচে জিজ্ঞেস করতে পারেন।(ইলিয়ানা)

—তুমি হসপিটালে কি করতে যাবা?(আহান)

—প্রয়োজন আছে তাই।আচ্ছা রাখছি। সাবধানে থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ (ইলিয়ানা)

—তুমিও। আল্লাহ হাফেজ (আহান)

কল কেটে আহান স্যার ভাবুক হোন।তবে কাজের তৎপরতার মাঝে ইলিয়ানাকে দুইবার টেক্সট করে আবারো কাজ করতে থাকেন।হয়তো ইলিয়ানা ম্যাসেজ পাবে,হয়তো পাবে না।তাই বলে কি হয়েছে!ম্যাসেজ দিতে তো বাঁধা নেই।

রাত দশটা পঞ্চাশ। হসপিটাল থেকে মাত্রই বেরিয়েছে ইলিয়ানা।রোগীকে অর্ধদিনের অবজারভেশনে আইসিইউতেই থাকতে হবে।সকালে এসেই সব ডক্টরদের সাথে আলাপ আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয় আজই হবে অপারেশন।এদিকে চলতে থাকে ডক্টরদের আলাপ আলোচনা। আরেকদিকে রোগীর শরীরে চলতে থাকে স্যালাইনের প্রবেশ।রোগীর পরিবার আনতে ব্যস্ত রক্ত প্রদান কারী। এককথায় সবাই প্রস্তুত হয়ে দুপুর দুইটার দিকে অপারেশন থিয়েটারে দল ঢোকে।দুই ধাপে অপারেশন হয়।যেহেতু হার্ট ট্রান্সপেলেশন আগে হয়েছে।সেহেতু সাবধানতা অবলম্বন করেই হার্ট ব্লকের উপশম শুরু হয়। তাছাড়া রোগী দুইবার হার্ট অ্যাটাক অলরেডি করেছে।তাইতো এতো রিস্কি অপারেশন!সবশেষ সন্ধ্যা সাতটার দিকে অপারেশন সাকসেসফুল হয়।

সব ডক্টররা ফ্রেশ হয়ে রোগীর কন্ডিশন দেখে।মেডিসিন ডিসাইড করে। রোগীর শরীরে রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা অপারেশন থিয়েটারেই করা হয়েছিলো কেননা রক্ত অনেক বেরিয়ে যাচ্ছিলো।

—ডক্টর জেহের চৌধুরী আপনার নাম-ডাক তো সারা এশিয়া মহাদেশে ছড়ানো। ইউরোপের দেশগুলোতেও কম খ্যাতি নেই আপনার।তা এত অল্প বয়সেই কি করে সম্ভব হলো?(সিনিয়র ডক্টর আরমান মাল্লিক)

—উমমম..স্যার আমি আমার স্টাডি গ্যাপ দেইনি।দেশে এসএসসি দিয়ে যখন প্রদেশে গেলাম। তৎক্ষণাৎ মেডিকেল স্টাডির জন্য এপ্লাই করলাম।তবে এইচএসসি তো লাগবে।তাই সেটা কমপ্লিট করতে আড়াই বছরের জায়গায় দেড় বছরের টার্গেট নেই।আর তারপর সবচেয়ে কম সময়ে মেডিক্যাল কোর্স কমপ্লিটে ঢুকে পড়ি।তিনবছরে কমপ্লিট করেই।ইন্টার্নির পাশাপাশি সার্জারি নিয়ে একটা কোর্স কমপ্লিট করি একবছরের। এভাবেই চলছে।আর দেখতেই পারছেন এখন কোথায় আছি!(ইলিয়ানা)

—তা ঠিক ম্যাম।তবে বিশ্বাস হয় না আপনি এত কমবয়সে এত নামকরা কার্ডিওলজিস্ট জেহের চৌধুরী।(ডক্টর মোতালেব হোসেন)

—আমার নিজেরই বিশ্বাস হয় না (ইলিয়ানা)

এভাবে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে রোগীকে আবারো দেখতে যায় ইলিয়ানা।ডক্টররা আজ হসপিটালেই অবস্থান করবেন।একটু রেস্ট প্রয়োজন সবার।ইলিয়ানাকে থাকতে বললেও সে থাকতে পারবে না।তাইতো তিন ঘন্টা নিজ দায়িত্বে অবজারভেশন করে কিছু মেডিসিন অন্যান্য ডক্টরদের সাথে শলা পরামর্শ করে চেঞ্জ করে দেয়।যতই সে নামকরা চিকিৎসক হোক না কেন এমনও অনেক কিছু আছে যা তার থেকে অপারেশনে উপস্থিত চিকিৎসকেরা ভালো জানেন।তাইতো এই শলা পরামর্শ।

রাত এগারোটা পনেরোতে স্কুল মাঠে পৌঁছে অবাক হয় ইলিয়ানা।সবার সামনেই আহান স্যার ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে ইলিয়ানা।তবে মুহুর্তবাদেই জোরে এক চড় লাগায়।ইলিয়ানার কান আর মাথা ধরে যায়।সে বুঝতেও পারে না তার দোষটা কি!

—আপনি আমায় মারলেন?

ইলিয়ানা ছলছল চোখে জিজ্ঞাসা করতেই আহান স্যার রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে বলে,

—কোথায় ছিলে সারাদিন?কত চিন্তা করেছি আমরা ধারণা আছে?কই তানহা হসপিটালে তো তোমার কথা কেউ বলতে পারলো না।তাহলে বল কোথায় ছিলে তুমি?

আহান স্যার চিৎকার করে জিজ্ঞেস করতে থাকে ইলিয়ানাকে।লোকটা যে বেশ তেতেছে বুঝতে পারে ইলিয়ানা।রাগ হয় তার কেন এই লোকটা তাকে মারলো এই নিয়ে।তবে পরক্ষণেই মনের মাঝে প্রজাপতিরা উড়তে শুরু করে।লোকটা তার মানে ওর জন্য চিন্তা করছে।ভালোবাসে নাকি?

—আমি তানহাতেই ছিলাম। আপনি হয়তো ভালো করে খোঁজ নেননি।আর তাছাড়া আমি মেহেরকেও তো বলে গিয়েছিলাম।আর আপনাকেও তো বলেছিলাম যে এগারোটার আগে ফিরবো।

—এখন কয়টা বাজে?(আহান)

—এগারোটা বিশ।সরি(ইলিয়ানা)

—ইলিয়ানা গ্রোআপ।তোমার জন্য সবাই চিন্তা করে।এরকম বাচ্চামি করলে জীবন চলবে না।আর কি এমন গুরু দায়িত্ব করছিলে যে ফোন ধরতে পারলে না?

লাবিব স্যার তাচ্ছিল্য করে কথাগুলো বলে।নীড়কে ওর চাচা এসে নিয়ে গেছে।ছেলেকে নিয়ে রিইউনিয়নে সমস্যা হচ্ছে বলেই ছেলেকে বাড়ি পাঠিয়েছে। অবশ্য সমস্যাটা রিইউনিয়নে নয়, বরং তার ফ্লার্ট করায় হচ্ছিলো।লাবিব স্যার বলার সাথে সাথেই আহান স্যার তার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকাতেই সে আর কিছু বলে না।ইলিয়ানাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

—তুমি কোথায় গিয়েছিলে তা তুমি আমায় জানিয়েছো।এখন আমি তোমায় জানাবো তুমি সেখানে যাওনি।(আহান)

আহান স্যার কাউকে ফোন করেন।কল রিং হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই কল রিসিভ হয়।লাউড স্পিকারে দেওয়া।আহান স্যার জিজ্ঞেস করে,

—ম্যাম ইলিয়ানা নামক কোনো মেয়ে কি আপনাদের হসপিটালে এসেছে?

অপরপাশ থেকে জবাব আসে,

—স্যার আপনাকে কতবার বলবো যে ইলিয়ানা নামে এখানে কেউ আসেনি।প্লিজ স্যার শুধু শুধু ডিস্ট্রাব করবেন না। আপনার অন্য কোনো প্রশ্ন থাকলে করুন নয়তো রাখুন।

আহান স্যার ইলিয়ানার দিকে তাকায়।ইলিয়ানা আহান স্যারের হাত থেকে ফোন নিয়ে বলে,

—ডক্টর ইলিয়ানা জেহের চৌধুরী তো আজ হসপিটালেই ছিল তাই নয়কি মিস?

অপরপাশ থেকে কোনো জবাব আসে,—জ্বী!তবে আপনি?

সবাই আগ্রহভরা দৃষ্টি নিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চায়।সবার চোখেই আজ এক প্রশ্ন।কে ইলিয়ানা?আসলেই তো তিনদিন শেষের পথে তাদের রিইউনিয়নের তবুও ওরা কেউ জানে না ইলিয়ানার প্রফেশন কি!

চলবে?

#অনুরক্তি_এসেছে_তোমার_শহরে
#বোনাস_পর্ব
#বর্ষা

”তুই ডক্টর জেহের চৌধুরী?”

অনন্যার প্রশ্নে সেদিকে ফিরে তাকায় ইলিয়ানা।মাথা ঝাঁকায় অর্থাৎ হ্যা সেই ডক্টর জেহের চৌধুরী।অনন্যাসহ বাকি সবাই অবাক হয়।প্রথমত সবার জানা মতে ইলিয়ানার নাম ইলিয়ানা বিনতে মুজিবুর।দ্বিতীয় সে যে এতো বড় চিকিৎসক তাও সবারই অজানা‌।নাহ,সাঈদাও জানতো না যে তার বন্ধু এতো বড় চিকিৎসক।কখনো পোষ্টও করেনি ইলিয়ানা এ বিষয়ে।

—আমাদের আগে জানাস নাই কেন এবিষয়ে?

অন্তরার প্রশ্নে কি উত্তর দেবে তাই ভাবছিলো ইলিয়ানা। তার পূর্বেই আহান স্যার বলে উঠে,

—ম্যাম জানতাম না আপনি এত বড় চিকিৎসক।দুঃখিত আপনাকে অজান্তেই থাপ্পর মেরে বসেছি।

ইলিয়ানার বুকটা ছ্যাত করে ওঠে।ইলিয়ানা চাইনি কেউ তার আসল পরিচয় জেনে তাকে সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে তার থেকে দূরত্ব বানিয়ে ফেলুক।আহান স্যার চলে যেতে নেয়।ইলিয়ানা পিছু করতে নিবে তার পূর্বেই জ্যাক ফোন করে।ইলিয়ানা জ্যাকের কল কেটে আহান স্যারের হাত ধরে আটকায়। সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাদের দিকে।

ইলিয়ানা আগে ভয় পেতো কেউ যদি তার অনুভূতি সম্পর্কে জেনে বাসায় জানিয়ে দেয় এই ভয়।তবে এখন আর তা পায় না।এখন সে আত্মনির্ভরশীল। পাশাপাশি তার ভাই,বাবা নিজেই চায় এখন সে কাউকে নিজ জীবনে আনুক।তাইতো এখন প্রকাশ্যে যদি নিজের ভালোবাসার ইজহার করেও তাকে না পায় থাকবে না কোনো গ্লানি।তবে আফসোস নিয়ে বাঁচা যাবে না যে,ইশ আমি যদি তাকে সামনাসামনি প্রপোজ করতাম সে হয়তো মেনে নিতো! ইলিয়ানার ফোনে জ্যাক অনবরত কল দিয়েই যাচ্ছে।তবে ইলিয়ানা ফোন সাইলেন্ট করে সবার সামনে নিজ অনুভূতিকে প্রকাশ করে।সেদিন যা ছিল গেমের ছলে তা আজ বাস্তবে।

—ভালোবাসা কি তা আপনার থেকেই জেনেছি আমি।না,আপনি শেখাননি‌ আমায়।আমার অনুভূতিরা শিখিয়েছে আমায় আপনিই সে যে আমার অনুভূতি।হ্যা,দশম শ্রেণীতে থাকতে ইগোর বসে কয়েকটা দিন আপনার সাথে কথা বলেনি‌।একদিন মিসবিহেভ করেছি।আবার স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিলাম আগের মতো।তবে অনুভূতিগুলো এখনো সেই আগের মতো।আপনার ভালোবাসায় এমনি ভাবে জড়িয়েছি যে আর কাউকে জীবনে আনার প্রয়োজন বোধ করেনি।আপনি কি আমায় বিয়ে করবেন?

ইলিয়ানা নিজের সব ইমোশন ঢেলে কথাগুলো বলেছে।সে কাঁদছে।আহান স্যারের চোখ জোড়া চলছে। হয়তো তারও কান্না পাচ্ছে।তবে পুরুষ মানুষের সবার সামনে কান্না করা যে বারণ।আহান স্যার ইলিয়ানার হাত ছাড়িয়ে দ্রুত সেখান থেকে চলে যান অন্যদিকে।হয়তো কান্না লুকাতে।ইলিয়ানা একদৃষ্টিতে সেই পথের দিকে তাকিয়ে।

হঠাৎ ইলিয়ানার গালে কেউ ঠান্ডা হাত লাগায়।ইলিয়ানা চোখ তুলে চেয়ে অবাক হয়।জ্যাক,ম্যারিও ক্যালিস,নোয়া আর এনা দাঁড়িয়ে আছে।জ্যাক মাথা নুইয়ে ফেলে ইলিয়ানা চোখ তুলে তাকাতেই।ক্যালিস জড়িয়ে ধরে ইলিয়ানাকে।বলে,

—কাম ডাউন।কাম ডাউন বেভ।উই অল আর হেয়ার ফর ইউ ডন্ট ওয়ারি।

ইলিয়ানা চোখ ঘুরিয়ে অশ্রু সিক্ত নয়নে এখনো আহান স্যার যেদিক গিয়েছেন সেদিকে তাকিয়ে। ভালোবাসা বড্ড পোড়ায়।সবার মাথার উপর দিয়ে ঘটনাগুলো গেলেও ইলিয়ানাদের সময়কার প্রিন্সিপাল স্যার বেশ বুঝেছেন ইলিয়ানা আহান স্যার বলতে কেন পাগল ছিল তার মানে।তবে তার যে কিছুই করার নেই!আহান স্যার আর ইলিয়ানার বয়সের পার্থক্য যে অনেকটাই বেশি।বারো বছর!

ক্যালিসের বুকে কিছুক্ষণ মাথা রেখে চোখ তুলে তাকায় ইলিয়ানা।ক্যালিস ইলিয়ানার তাকানোর মানে বুঝতে না পারলেও নোয়া বুঝতে পারে।ক্যালিসের থেকে ইলিয়ানাকে নিজের কাছে নিয়ে আস্তে আস্তে বলে,

—তোকে সারপ্রাইজ দিতেই আসা।জ্যাক বলেছিলো তুই কোথায় আছিস ও জানে।তাই চলে আসলাম।তবে এসে হয়তো ভালোই করেছি।

চারজন বিদেশীর ইলিয়ানার সাথে এতো গভীর সম্পর্ক দেখে ইলিয়ানার কিশোর কালের বন্ধুগুলো সত্যিই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মেহের,সাঈদা এগিয়ে আসে ইলিয়ানাকে ধরতে।নোয়া চোখ তুলে ওদের দেখে।আবার ইলিয়ানার দিকে তাকায়।ইলিয়ানা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায়। চারজন বিদেশীর দিকে একবার তাকিয়ে জ্যাককে বলে,

—ওদের থাকার ব্যবস্থা করো।এখান থেকেই মিনিট কয়েক দূরে রিসোর্ট আছে।সেখানে কথা বলে দেখো।

ইলিয়ানা আর দাঁড়ায় না।এনা পেছন যেতে চাইলেও নোয়া আর ম্যারিও আটকে দেয় তাকে।ম্যারিও এর চোখে জল।বেচারা গত সাত বছর ধরে পাগলের মতো ভালোবাসে ইলিয়ানাকে।ইলিয়ানা বলেই দিয়েছে বন্ধু হিসেবে ভালোবাসা গ্রহণযোগ্য হলেও এই ভালোবাসা সে একজন জীবনসঙ্গী হিসেবে কখনই চায় না ম্যারিও এর কাছে।আজ ম্যারিও বুঝেছে কেন তাকে মেয়েটা বারবার রিজেক্ট করেছে। ম্যারিও বিড়বিড় করে বলে,

—কোথায় সে তো আমার মতো এতো সুন্দর না,না সে আমার মতো লম্বা,সিক্স প্যাক্সের অধিকারী!তবুও কেন ইলিয়ানা আমায় ফেলে এই লোকটাকেই এতো ভালোবাসে!..

ইলিয়ানা তাঁবুতে এসে বসে পড়ে।কান্না পাচ্ছে তার আরো।সে জানতো এমন কিছুই হবে তার প্রফেশন বেরিয়ে আসলে। তাই তো খুব গোপনে এড়িয়ে যেতো।তবে আজ বিশ্বাস অবিশ্বাসের দাড়ে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো তার বলা কথাগুলো।তাইতো গোপনীয়তা আজ বজায় না রেখেই প্রকাশ্যে এনেছে তার প্রফেশন।তবে বিশ্বাস না ভাঙলেও প্রিয় মানুষটার মনে জমেছে অনেক বেশি অভিমান।

ইলিয়ানা উঠে দাঁড়ায়।বসে থাকলে আরো বিগড়ে যাবে ব্যাপারটা।ইলিয়ানা বোঝে সময় যতো গড়ায় বিষয় তত জটিল হয়।তাইতো হাঁটা দেয় আহান স্যারের তাঁবুর দিকে।তবে বেশিদূর আর যায় না।পাগুলো থেমে যায়।আহান স্যার একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে।এই মেয়েটাকে ইলিয়ানা চেনে।এই মেয়েটার কথা সে আহান স্যারের কাছেই শুনেছিলো।মেয়েটা স্যারকে অনেক ভালোবাসতো।স্যার তাকে সেটা বলেছিলো।ইলিয়ানার যে কত কষ্ট হতো তা করে বোঝাতো সে!এমনকি আহান স্যার তো এও বলেছিলো যে আগামী মাসে এই মেয়েটার সাথে তার বিয়ে!হাহ,সবাই সুখেই আছে।শুধু ইলিয়ানার ভালোবাসাই একজনের অপেক্ষায় আমৃত্যু রয়েছে গেছে।

ইলিয়ানা উল্টো দিকে হাঁটা দেয়। বিড়বিড় করে বলে,

—মেয়ে তোমার প্রতি আমার একদম হিংসে নেই।তবে তোমাকে আমি সহ্যও করতে পারবো না। তুমি খুব ভাগ্যবতী যে আমার প্রিয় মানুষটির বুকে তুমি।আমি আর ফিরবো না এদেশে‌‌।তুমি সুখে রেখো আমার প্রিয় মানুষটিকে।আমার সহ্য হচ্ছে না তোমায় হে মেয়ে।আমি পারবো না তোমায় তার বুকে সহ্য করতে।কেন আমি এতো ভাগ্যবতী হলাম না!কেন আমি পেলাম না তাকে!

ইলিয়ানা স্কুল মাঠ ত্যাগ করে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। অজান্তেই কখন সে রাস্তার মাঝামাঝি এসে পড়েছে তা সে জানে না।তবুও সে হেঁটেই চলেছে।কোথায় যাচ্ছে আদৌ জানা নেই।একহাতে শক্ত করে ফোন চেপে ধরা। পায়ে জুতো নেই। রক্তাক্ত পা।সামনেই কতগুলো মানুষের অবয়ব।দুলতে দুলতে এগিয়ে আসছে এদিকেই।হিংস্র পশুর মতো মনুষ্য নাকি মানুষরূপী জন্তু!

ইলিয়ানার হাতে টান পড়ে।আছড়ে পড়ে কারো বুকে।চোখ তুলে তাকাতেই মুখে হাসি ফোটে।জ্ঞান হারায় সে। সাঁই সাঁই করে ট্রাকটা চলে যায় সেখান দিয়ে!কে বাঁচালো ইলিয়ানাকে যার জন্য জ্ঞাত হওয়ার পূর্বেই ভয়ের দেখা মেলেনি তার মুখে!কে সেই বিশ্বস্ত!

মেহের, আফরোজা, অন্তরা সবাই অবাকের শেষ সীমায়।এখনও তারা চুপচাপ। তাদের মুখে একটা রা অব্দি নেই।তবে শেষমেশ অন্তরা নিশ্চুপতা ভেঙে বললো,

—আমি সত্যিই ভেবেছিলাম ইলিয়ানা মুভ অন করেছে।এই তিনদিনে আহান স্যারের প্রতিও ওর কোনো দূর্বলতা নজরে আসেনি তেমন করে।তবে আমি ভুল প্রমাণিত হলাম!

মেহের অন্তরার কথায় নিরবতা আর পালন করেনা।বলে,

—স্যারের মাথার পাশটায় একটা ঘাতের দাগ দেখেছিস?ইলিয়ানা স্যারের মাথায় ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছিলো। আমাদের এখানে আসার দ্বিতীয়তম রাতে। এছাড়া দ্বিতীয়তম দিনে ওরা সারাদিন নিরুদ্দেশ ছিলো।আর তৃতীয়তম রাতে তো ট্রুথ,ডেয়ার খেললাম।আজ তো তৃতীয়তম দিন আর চতুর্থতম রাত।

মেহের কথায় তাসনিম আর সাঈদা রাগ দেখিয়ে বলে,

—আমাদের আগে জানাসনি কেন এগুলো?

—জানালে কি-ই বা করতি?(অনন্যা)

চলবে?

অনুরক্তি এসেছে তোমার শহরে পর্ব-৬+৭

0

#অনুরক্তি_এসেছে_তোমার_শহরে
#পর্বঃ৬
#বর্ষা

—ম্যাম,আপনি এদিকটায় কি করছেন?এপাশটা তো অনেক নিরিবিলি।

ফাতেহ বাইক থামিয়ে ইলিয়ানার উদ্দেশ্যে বলে।ইলিয়ানা হঠাৎ করে ফাতেহ-র উপস্থিতিতে বিরক্ত হয়।ঠিক তখনই আহান স্যার আইসক্রিম হাতে উপস্থিত হন।সন্ধ্যা গড়িয়ে এসেছে। নদীর পাড়েই ছিলো ওরা এতক্ষণ। মাত্রই উঠেছে এসেছে।রাত গভীর‌ হলে যেতে সমস্যা।

—ম্যাম ইনি কে?(ফাতেহ)

—তা আপনি এদিক থেকে যাচ্ছেন,আপনার বাসা কি এতদূরেই?(ইলিয়ানা)

আহান স্যার চোখ ছোট ছোট করে রেখেছেন।ফাতেহ বাইক থেকে নেমে কথা বলতে উদ্দিগ্ন হতে নিলেই ইলিয়ানা বলে,

—এই ছেলে শুনুন কর্মস্থলে যান।এখানে সময় অপচয় না করে।

ফাতেহ হাত দিয়ে নিজের চুল গুলো অগোছালো করে বহু কষ্টে মুচকি হাসে।হ্যান্ডসাম ছেলে ফাতেহ।বহু নারীর ক্রাশ হিসেবে বেশ সুনাম এখনো তার নিজ মেডিকেল কলেজে।তাইতো সিনিয়র ম্যামকেও নিজের দিকে অ্যাটট্রাক্ট করার চেষ্টা করছে সে।বেশি কিন্তু বড় হবে না তারা। কেননা ইলিয়ানা গ্যাপহীন স্টাডি করেছে, পাশাপাশি বেস্ট রেজাল্টের কারণে সিনিয়র ডক্টরদের সাথেও বিভিন্ন অপারেশন এটেন্ড করার সুযোগ পেয়েছে।তবে সেক্ষেত্রে ফাতেহ তো অনেক পিছিয়ে। এক্ষেত্রে বছর দুই/আড়াইয়ের পার্থক্য হবে হয়তো।

ফাতেহ বিদায় নিয়ে চলে যেতেই আহান স্যার মাথায় আঙুল ঘসতে ঘসতে প্রশ্নসিক্ত করেন ইলিয়ানাকে। জিজ্ঞেস করেন,

—আমার সাথে তো এখন আর তেমন হেসে কথাই বলো না।আর বাইরের অচেনা মানুষদের সাথে কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলো!

—আর ইউ জেলাস?

ইলিয়ানার প্রশ্নে হকচকিয়ে গেলেও দ্রুত নিজেকে সামলে নেন তিনি।নিজের থেকেই তিনি শিখেছেন যে,কাউকে ভালোবাসার ইজহার করলে অপর ব্যক্তি তাকে বেশি মূল্যায়ন করে না।এই শিখটা তো সে নিজের কর্মেই খুঁজে পেয়েছেন।ইলিয়ানা যখন তার জন্য পাগলামি করতো, তখন তিনি ইলিয়ানার মনের বাসনা জেনেও তার ভালোবাসাকে‌ বুঝিয়ে‌ সমাজ মানবে না এ সম্পর্ক।

—একদমই না।তা তোমার এমন কেন মনে হলো?(আহান)

—মেয়েদের মন তো তাই কতকিছুই ভাবে।(ইলিয়ানা)

—মেয়েদের মন!(আহান)

—আপনার সন্দেহ আছে?(ইলিয়ানা)

—না,না।তবে আশ্চর্য হলাম।যেই মেয়ে মাঝরাতে ভয় না পেয়ে একজন পুরুষকে উত্তম মধ্যম দিতে পারে সেই মেয়ের মন তো মেয়েদের মন হওয়ার কথা নয়!(আহান)

—আপনি আপনার এক লাইনে কতবার মেয়ে উচ্চারণ করছেন তা জানেন?আর যেহেতু আমি মেয়ে সেহেতু আমার মনটাও মেয়েদের মন হিসেবে গণ্য হবে।(ইলিয়ানা)

—আচ্ছা বাদ দেও।আগেও তোমার সাথে তর্ক লাগতে পারতাম না।আর এখনও পারি না।(আহান)

—আপনি ইচ্ছাকৃত পিছু হটতেন আগে। আপনার জন্য আমাকে কতবার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে জানেন!(ইলিয়ানা)

—আচ্ছা, সব কথাই শুনবো।তবে আগে যাওয়া তো যাক।ওই যে একটা রিক্সা আসছে ওইটা করেই যাই চলো।(আহান)

—আগে রিক্সা চালককে দাড় করান।তারপর যাওয়ার দিকটা ভাবছি (ইলিয়ানা)

রিক্সা চালক প্রথমে ভয় পেলেও পরে রিক্সা থামান। সচরাচর এদিকে মানুষ দেখা যায় না।এতোটাই নিরিবিলি।তবে বাম দিকের রাস্তায় দু্ই মিনিটের দূরত্ব পেরিয়েই একটা গলি আছে সেখান থেকেই লোকালয়ের শুরু। কিন্তু ডান দিকে কয়েক মিনিট হাঁটলেও কোন কূলকিনারা পাওয়া যাবে না।শেষমেশ রিক্সা উঠে আহান স্যার বলেন,

—এখন বলো

—কি?(ইলিয়ানা)

—ওইযে আমার জন্য তুমি কত প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছো তা।(আহান)

—অনেক আছে।এতকিছু কিভাবে বলবো এতো কম সময়ে!(ইলিয়ানা)

—ছোট করে বলে দেও(আহান)

—মনে পড়ে একদিন আমি আপনাকে ভাইয়া ডাকবো বলে বলেছিলাম।আপনি হয়তো সেদিন আশ্চর্য হয়েছিলেন বটে।তবে আমি যখন বললাম এটা ডেয়ার তখন আপনি আমাকে তো কিছু বলেননি নাই। পাশাপাশি যাকে দেখিয়ে ছিলাম তাকেও কিছু বলেন নাই।আর তাই তার প্রথম কথাই ছিলো যে স্যার তোকে কিছু বললো না কেন!(ইলিয়ানা)

—তাই?(আহান)

—না

ইলিয়ানা কপট রাগ দেখিয়ে বলে।আহান স্যার ইলিয়ানাকে আরো রাগাতে বলে,

—মাত্রই না বললা।তাহলে এখনই আবার ‘না’ হলো কিভাবে?

—ধূর আপনার সাথে কথাই বলবো না।(ইলিয়ানা)

—বাপজান,আম্মায় মনে হয় রাগ করছে।আম্মাজানরে আজ রাইতেই গোলাপ আর চকলেট দিয়া দেইহেন।রাগ গইলা যাইবো।(রিক্সাচালক চাচা)

রিক্সাচালক চাচার কথায় আহান স্যার হাসেন।তবে ইলিয়ানা লজ্জা পায়। রিক্সাচালক চাচা হয়তো ওদের স্বামী-স্ত্রী ভেবেছেন। কেননা ওরা যেমন আচরণ করছে,গল্প করছে তা ওরকমই বোঝায়।

গল্পের মাঝেই ইলিয়ানার ফোনটা বেজে ওঠে।’মাই লাভ’দিয়ে সেভ করা নাম্বার।আহান স্যার ইলিয়ানার দিকে এমনভাবে তাকান যেন ইলিয়ানা বিশাল অপরাধ করে ফেলেছে।রাগে ফুলতে থাকেন।ইলিয়ানা কিছুই বলেনা তবে মজা পায়।ইলিয়ানা ফোন রিসিভ করে।

আহান অবাক চোখে ইলিয়ানার দিকে তাকিয়ে। হাস্যোজ্জল একটা বাচ্চা হাসছে।কি মায়াবী মুখশ্রী।বাচ্চাটাকে দেখে বিদেশীই মনে হচ্ছে আহান স্যারের তবে কিছু বলেন না।বাচ্চাটা বলে ওঠে,

—আন্ট আই মিস ইউ

—আন্ট মিস ইউ ঠু জেনি

—হোয়েন ইউ উইল ক্যাম আন্ট?

—ভেরি সুন বেবি।ওকে ফর নাউ আই নিডস টু গো।আন্ট লাভ ইউ বেবি। আল্লাহ হাফেজ

—আল.. আল্লাহ হাফেজ

ইলিয়ানারা পৌঁছে গেছে।স্কুল মাঠে এখন এই গলি পেড়িয়ে গেলেই চলবে।আজ কয়েকটা মুহুর্ত ক্যাপচার করেছে ওরা।ইলিয়ানার ইচ্ছে পূরণ করেছে। দুজনের একসঙ্গের ছবি।বহু বছর পূর্বে ইলিয়ানা পাগলামি করেছিলো দুজন একত্রে ছবি তুলবে।আহান স্যার বারবার জেনির ঘটনার পর শুধু ইলিয়ানার দিকে তাকাচ্ছেন আর হাসছেন। এদিকে ইলিয়ানা আজ হসপিটালে যাওয়ার প্ল্যান ক্যান্সেল করেছে কেননা খবর এসেছে যেই মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে তা আদৌ এসে পৌঁছায়নি।

ইলিয়াস চৌধুরী ড্রয়িংরুমে লেপটপে কাজ করছিলো।এমেলি এসে কফির কাপ হাতে দিতেই ইলিয়াস চোখ তুলে তাকায়। ভালোবাসার মানুষটার দিকে তাকানোর সময়টা বহুদিন সে পায়না।ভালোবেসেই তো সতেরো বছর বয়সেই রেজিঃ করিয়ে ফেলেছিলো।আর তখন থেকেই প্রেম চলছে ওদের। পবিত্র ভালোবাসা/প্রেম।

—এমেলি সিট হেয়ার(ইলিয়াস)

—বাহ,বাহ,আজ দেখি ভালোবাসার মানুষের কথা মনে পড়ছে?(এমেলি)

—আমি কি তোমায় ভুলে বসেছি নাকি!(ইলিয়াস)

—তা আপনিই ভালো জানেন মহাশয় (এমেলি)

—এমেলি তুমি দেখছি ইলিয়ানার সংস্পর্শে ভালোই বাংলা শিখেছো!বাহ বাহ(ইলিয়াস)

—আমার ননদিনী যে সুপারব তা কি জানো না তুমি?(এমেলি)

—দেখতে হবে তো কার বোন!

ইলিয়াসের কোলে বসেই এমেলি কথা বলেছিলো।তখনই ছোট্ট জেনি ছুটে আসে ওদের কাছে।এমেলি ইলিয়াসের পাশে বসতেই ছুটে এসে সোফায় ট্যাব ফেলে পাপাইয়ের কোলে উঠে বলে,

—পাপা,আর ইউ নো হোয়াট আই ডিসকভার টু ডে?

—হোয়াট বেবি?

—আন্ট ইজ উইথ অ্যা গায়!

ইলিয়াস চৌধুরী সিরিয়াস হয়ে বসেন। বোন কোনো পুরুষের সাথে তা শুনে যেন ভয় পান, রাগান্বিত হোন।মেয়েকে জিজ্ঞেস করতে নেবেন তার পূর্বেই অন্যদিকে ছুট দেয় জেনি। ছটফটে হয়েছে মেয়ে।এমেলি বলে,

—আরে ইলিয়াস সিরিয়াস হয়ো না।জেনি বাচ্চা মেয়ে ও কি দেখতে কি দেখেছে!হয়তো ভুল দেখেছে।এমন কিছু হলে অন্তত আমি তো জানতাম।(এমেলি)

—এমেলি তুমি ইলিয়ানাকে ঢাকার/আবৃত করার চেষ্টা করো না।এরকম কিছুর হলে আমাকে বিষয়টা দেখতে হচ্ছে।তুমি এগুলো বাদ দিয়ে মেয়েকে খাইয়ে দেও দশটা প্রায় বাজে।(ইলিয়াস)

—আচ্ছা।তুমিও চলে আসো।পুরো পরিবার একসাথে ডিনার করবো।(এমেলি)

—ডেড খেয়েছেন?(ইলিয়াস)

—ডেডকে আমি ডাক দিচ্ছি।তুমি তোমার মেয়েকে নিয়ে আসো(এমেলি)

জেনির পেছন ইলিয়াস ছুটতে থাকতে।মেয়েটা খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।একবার এদিক যাচ্ছে তো একবার ওদিক যাচ্ছে।আর হাসছে।পুরো তার আন্টের প্রতিচ্ছবি।ইলিয়ানা বাসায় থাকলেই দুজন একসাথে খুনসুটি করতো।তবে পড়াশোনার তাগিদে চারবছর দূরে ছিলো ইলিয়ানা। কিন্তু জেনি হওয়ার পর এইবারই তার প্রথম এতদিনের সফরে যাওয়া।

মেহেরের ফোনে ওর শাশুড়ি আম্মু কল করেছেন। মেহেরকে ঝাড়ছেন।কেন সে এই শীতের মাঝে বাড়ি ছেড়ে বাইরে। অবশ্য প্রকৃত কারণ এটা না। প্রকৃত কারণ হচ্ছে মেয়েটা ছাড়া দূরে থাকা। আল্লাহর রহমতে এবং তাকদির নির্ভরে মেহের পেয়েছে উচ্চ মানসিকতা সম্পন্ন শশুরবাড়ি।সবাই এতো এতো ভালো।

মেহেরের যত্ন-আত্মীয় কোনো অংশ কম করেনা।শিফাক আহমেদ বর্তমান সময়ের জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটর।তাইতো খেলার সূত্রে এদিক-ওদিক কিংবা এদেশ-ওদেশ করতে হয়।সে মেহেরকে বাপের বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দিয়ে রাখলেও মেহের যায়না। কেননা বাপের বাড়ি থেকে বেশি শান্তি যে সে তার শশুর বাড়িতেই পায়। শশুর আব্বু তো ‘আম্মু’ ছাড়া কথাই বলেনা।আর শাশুড়ি মা শাসন করলেও আদর কিন্তু কম করেন না।

চলবে?

#অনুরক্তি_এসেছে_তোমার_শহরে
#পর্বঃ৭
#বর্ষা

—স্যার আপনি বিয়ে করেছেন?

সাঈদা সরাসরি আহান স্যারকে প্রশ্ন করে।প্রশ্নটা করতে একটু বিব্রতবোধও তার মাঝে লক্ষণীয় নয়।আহান স্যার যে বিব্রত বোধ করছেন তাও কিন্তু না।এই মেয়েগুলো যে এরকম তা তিনি ভালোই জানেন। অভিজ্ঞতা বলেও তো একটা কথা আছে।যখন ক্লাস নিতেন তখন বুঝতেন এরা একেকটা কতবড় বড় ড্রামাবাজ।

—না তবে শীঘ্রই করবো।(আহান স্যার)

সাঈদা জাস্ট ‘ওহ’ বলে ওখান থেকে সরে আসলেও কিছুটা দূরে গিয়ে বিশাল শ্বাস নেয়।দমটা যেন বেরিয়ে আসতো আরেকটু হলেই।কত গম্ভীর হয়েছে আগের থেকে তাদের এই স্যারটা!সাঈদা ইলিয়ানাদের উদ্দেশ্যে হাঁটলেও পথিমধ্যে শুভ-র সাথে দেখা হয়।ছেলেটা কারো সাথে কথা বলছে। কথাবার্তা ফর্মালিটিতে ভরপুর।কল কাটতেই সাঈদা লাফিয়ে ভয় দেখায় শুভকে।বেচারা ভয় না পেলেও বিরক্ত হয়। সাঈদা যেহেতু পুরোপুরি পরিবর্তন হয়েছে তাই চেনার উপায় নেই।

—এই যে মিস দেখেতো মনে হয় আপনি প্রাপ্তবয়স্ক।তবে বাচ্চাদের মতো বিহেভ করছেন কেন?(শুভ)

—ওই তুই প্রাপ্ত বয়স্ক,আমি না। সাঈদার যখন নিজেকে প্রাপ্তবয়স্ক বলে মনে হবে সে তখন তেমন বিহেভ করবে।(সাঈদা)

অবিশ্বাস্য ভঙ্গিমায় চলে যেতে গিয়েও ফিরে এসে সাঈদার সামনে দাঁড়ায় শুভ। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে।না, পুলিশের চোখেও ধরা পড়ে না সেই আগের সাঈদার।আগের সাঈদা বোঝার একটাই উপায় আর তা হলো তার আচরণ এখনো সেই তৎকালীন সময়েরই রয়েছে।

—তোর মাঝে সেই আগের সাঈদার একভাগও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

শুভ কথাটা বলে কিছুক্ষণ চুপ থাকে।তবে সাঈদা কিছু বলতে নেওয়ার পূর্বেই বলে উঠে,

—তা বিয়ে সাদী করেছিস?নাকি এখনো শুধু দুষ্টামি ফাজলামোর উপরেই আছিস!

সাঈদা মুচকি হাসে।তবে সে হাসিতে আছে আনন্দের বার্তা।সাঈদার হাসিতে হাসে শুভও।একসময় সাঈদা সবচেয়ে বেশি তাকেই পচাতে।তবে তাদের মাঝেকার বন্ধুত্বপূর্ণ শয়তানিটা ছিলো তার চেয়েও বহুগুণ বেশি।তাইতো টান রয়েই গেছে।

—হ্যা,বিয়ে করেছি।একটা ছেলেও আছে।
যাইহোক তোর আর স্নিদ্ধার কি অবস্থা?একসাথে আছিস তো?সেই স্কুল লাইফের প্রণয় বলে কথা।(সাঈদা)

শুভ-র মুখে মলিনতা ভার করে।হাসি খুশি মুখটা চুপসে যায়।সাঈদার মুখের হাসিও বিলীন হয়।স্কুল লাইফে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ঘটনা ছিলো শুভ,স্নিদ্ধার প্রণয়।তবে কি এমন হয়েছে যে শুভ-কে ওদের দুজনের প্রণয় নিয়ে প্রশ্ন করায় মুখশ্রীতে তার মলিনতা ভর করেছে!

—শুভ?(সাঈদা)

—স্নিদ্ধা আমার জন্য অপেক্ষা করেনি।বহু আগেই আমাদের প্রণয়ের সমাপ্তি ঘটেছে।ওর স্বপ্ন ছিলো ফ্যাশন ডিজাইনার হবে।আর আমার ক্যাডার হওয়ার।তবে ও চাইনি আমি দেশেই আটকে থাকি।তাই আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়টা ওকে বোঝাই।তবে ও একদমই বোঝেনি।শেষে এই না বোঝাবুঝির প্যারায় আমাদের সম্পর্কটা কখন যানি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়!(শুভ)

সাঈদা কি বলবে ভেবে পায় না। ভালোবাসার মানুষকে হারানোটা অনেক কষ্টের তবে তাকে হারানোর পরও ভালোবাসা আরো কষ্টের। কিন্তু সবাইকেই একটা সময় মুভ অন করতে হয়।হয় নিজের ভালো থাকার জন্য,নয়তো পরিবারের জন্য।তবে ভালোবাসা তো তখনই স্বার্থক যখন ভালোবাসার মানুষটির সাথে যৌবন অতিক্রম করে বার্ধক্যে পা ফেলা যায় হাতে হাত রেখে!

—তা স্নিদ্ধার পর কেউ এসেছে জীবনে?(সাঈদা)

—এসেছে।বলতে গেলে এখন বেশ ভালোই আছি। স্নিদ্ধা তো কলেজ লাইফেই হাত ছেড়েছিলো। উচ্ছন্নে যাওয়া জীবনটা তোদের ভাবীই গুছিয়ে দিয়েছে। একদম শেষ অব্দি বন্ধু হয়েই পাশে থেকেছে।তার মনে আমার জন্য অনুভূতি ছিলো।তবে আমার ভয়টাও সে জানতো,তাইতো লুকিয়েছিলো তার অনুরক্তি।তবে আমি তাকেই জীবনসঙ্গী করেছি।(শুভ)

সাঈদা খুশি হয়।কিছু কিছু মেয়েদের জন্য মেয়ে জাতির ওপর কতই না কলঙ্ক অর্পিত হয়।তবে সব মেয়ে যে সমান না তা অধিকাংশই প্রমাণ করে দেয়।সাঈদা শুভকে বিদায় জানিয়ে আরেক পাশে চলে আসে। ভালোবাসা শব্দটাই যেন আলাদা আনন্দ দেয় সাঈদাকে।

ইলিয়ানারা আটটার দিকে পৌঁছানোর পরই অন্তরা আর মেহের আটকিয়েছে ওকে। কেননা ওর ওদের প্রশ্নের উত্তর চায়।কাল এতো রাত্রি কেন হলো ইলিয়ানার? পাশাপাশি আজ সে কোথায় বা গিয়েছিলো!তবে ইলিয়ানা মাথা ব্যথার বাহানায় বারবার শুয়ে পড়ছে।আর অন্তরা নাকের পাটা ফুলিয়ে বসে আছে।

রাত দশটা।এবার ঠান্ডা যেন একটু ভালোই পড়েছে।তবে ইলিয়ানার কাছে তেমন অনুভব হচ্ছে না। রিসার্চের জন্য দুইমাস কানাডা ছিলো সে। গ্রীষ্মকাল চলছিলো তখন।তবুও ঠান্ডা ভালোই ছিলো।তবে ইলিয়ানা তখন নিজেকে সে দেশের নাগরিকদের মতোই হ্যান্ডেল করতে গিয়ে ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলো। অবশ্য সপ্তাহ অতিক্রম হতেই ইলিয়ানা অভ্যস্ত হয়।

রান্না-বান্না বলতে রাত্রি ভোজনে খিচুড়ি হয়েছে।সবজি খিচুড়ি।ইলিয়ানা খায়।ভালোই রান্না হয়েছে।অনেকদিন খাওয়া হয়নি খিচুড়ি।তবে গতকালকে সকালেও খিচুড়িই হয়েছিলো।আর এখন রাতেও!ইলিয়ানা খাবার খেয়ে নেয় দ্রুত।তবে ওর স্মরণে আসে পছন্দের মানুষটার সবচেয়ে অপছন্দের খাবার খিচুড়ি।সে কি সকাল থেকেই অভুক্ত!আর ইলিয়ানা সেই দিকটা খেয়ালও করেনি।ইলিয়ানা দ্রুত ফোন দেয় আহান স্যারকে।

—হ্যা বলো..(আহান)

—কোথায় আপনি?(ইলিয়ানা)

—খেতে এসেছি(আহান)

—সকালে খেয়েছিলেন?(ইলিয়ানা)

—হুম

—আচ্ছা রাখছি। আল্লাহ হাফেজ (ইলিয়ানা)

কল রাখতেই ইলিয়ানার সামনে পড়ে অন্তরা তার দিকেই কেমন করে তাকিয়ে আছে।যে চোখে সন্দেহরা ভরপুর।তবে সেদিকে লক্ষ্য দেওয়ার পূর্বেই সাঈদা ইলিয়ানার ওপর দৌড়ে এসে পেছন থেকে হামলে পড়ে।

—দোস্ত আহান স্যার তো আবিয়াত্তা (সাঈদা)

—তো?(ইলিয়ানা)

—আগের ফিলিংস কি নাই আর?

ভ্রু কুঁচকে সাঈদা তাকায়।ইলিয়ানা নিশ্চুস থাকে।সাঈদা নিজেকে আবারো প্রফুল্ল করে বলে,

—ভুলিসনি যখন তখন একবার ট্রাই করে দেখ।স্যার তো এখনো তোর মনের কথা তোর মুখে শুনেনি। তুই স্যারকে বলে দে।আমি নিশ্চিত তোর মতো কিউটের ডিব্বাকে স্যার না করতেই পারবেনা।

ইলিয়ানা জাস্ট মুচকি হাসি দেয়।তবে যে তা কৃত্রিমতায় ভরা তা বোঝা যায় না।ইলিয়ানা মনে মনে বলে,

—দোস্ত তোরা তো জানিস না তোদের স্যার আমাকে আরো এগারো বছর আগেই রিজেক্ট করেছে।তবে আমার মনে হয় সে আমাকে ভালোবাসে।কিন্তু সেই চিন্তা আমার ভুলও হতে পারে।তবে তার সত্যতা যাচাই করার আগ্রহটা নেই। কেননা যদি জানতে পারি যে স্যার আমায় নয় এখনো অন্য কাউকেই ভালোবাসে!

সাঈদা হয়তো আরো কিছু বলতে চেয়েছিলো তবে তৎক্ষণাৎ ওদের চোখ পড়ে আফরোজার ওপর।মেয়েটা কারো সাথে মিষ্টি বুলিতে পটরপটর করছে।আজ সকাল থেকে বেশ অনেকক্ষণ উধাও ছিলো।আর সন্ধ্যার পর জন্য দেখলো তখন থেকেই ফোনে।সাঈদা কপাল চাপড়িয়ে ইলিয়ানাকে বললো,

—ওই এই হারামীগুলো রিইউনিয়নে আসছে কেন?

ইলিয়ানা অবাক হলেও তৎক্ষণাৎ বান্ধুবীর কথার মানে বুঝে বললো,

—ফোনে প্রেম করতে।

—বা**,চল তো দেখি বাকিগুলো কই! আমাদের খোঁজও নিলো না। আমরা তো পর হয়ে গেছি।(সাঈদা)

—দোস্ত তোর ইমোশনাল কথা দেখলে হাসি পায়।যেমনে বলছ!হি হি হি

ইলিয়ানার কথায় সাঈদাও হেসে দেয়।সাঈদার স্মরণে আসে ছোটবেলা থেকেই মেয়েটা সবসময় হাসিখুশিতে মেতে থাকতো।তবে হঠাৎ কি যেন একটা হলো।টেনের বছরের মাঝামাঝিতে গিয়েই ওর হাসি মাখা মুখটা দেখা বন্ধ হয়ে গেলো।আজ অব্দি সেই কারণ ওদের নিকট অজানা।এস.এস.সির পর তো একপ্রকার লাপাত্তাই হয়ে গেল।

চলবে?

অনুরক্তি এসেছে তোমার শহরে পর্ব-০৫

0

#অনুরক্তি_এসেছে_তোমার_শহরে
#পর্বঃ৫
#বর্ষা
মৌচাক থেকেই ইলিয়ানা আর আহান স্যারের পথ আলাদা হয়েছে।আহান স্যার আজ একজনের সাথে এদিকটায় দেখা করতে এসেছেন বলেই জানিয়েছেন। অবশ্য বর্তমানে সে একজন ক্যান্টমেন্ট কলেজের ইংলিশ প্রফেসর। সুদর্শন,সিঙ্গেল প্রফেসর!তাই হয়তো সুন্দরী রমনীদের কাছে তার দামটাই আলাদা।

ইলিয়ানা গাজীপুর জেলায় আজ দুদিন যাবৎ।সফিপুর তানহায় তার যেতে হবে নিজ প্রফেশনের স্বার্থে

তানহা হসপিটালে যেতেই হসপিটাল স্টাফরা সংবর্ধনা জানায় তাকে।বয়স অনুযায়ী এতোটা প্রাপ্তি তার হওয়ার কথা নয়।তবে সে যেখানে পড়াশোনা করেছে সেখানে পাঁচ বছরের স্টাডি/কোর্স সে সাড়ে তিনবছরে কমপ্লিট করেছে।আবার দুই বছরের স্টাডি মাত্র দেড় বছরে। অবশ্য এতে সে সিনিয়রদের সাথে পড়তে বা নিজেকে কম্পেয়ার করে এগিয়েছে।তাইতো তেইশে ডাক্তার হিসেবে জয়েনিং আর পঁচিশের আগেই নামকরা কার্ডিওলজিস্ট জেহের চৌধুরী নামে পরিচিত হয়েছে সে।ডক্টর জোবেদা আউট অফ টাউন তাই আসতে পারেননি।তবে ভিডিও কলে সংবর্ধনা জানান। এবং বাকিদেরকে ইলিয়ানার সাথে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে বলেন। বহু আগে একবার কিংবা দুইবার আসা হয়েছিলো তানহা তে তার।তবে তা প্রায় সব বছর চৌদ্দ আগের ঘটনা।

ইলিয়ানার ফাতেহ নামের ছেলেটাকে বেশ লেগেছে।বয়স অল্প।ইন্টার্নে শেষে সদ্য ডাক্তার পদবী পেয়েছে সে এই হসপিটালে। অবশ্য এই হসপিটালের ওনার তথা ডক্টর জোবেদার দূরসম্পর্কের আত্মীয় ফাতেহ রেহমান।সেও কার্ডিওলজি নিয়ে পড়াশোনা করায় তাকেই নিজের সহায়ক হিসেবে কাজে থাকতে বলেছে ইলিয়ানা। অবশ্য উক্ত কথাটা ডক্টর জোবেদাকে জানাতে সে খুশি হয়েছেন।

রাত দুইটা/তিনটার দিকে ইলিয়ানা হসপিটাল থেকে বের হওয়ার কথা বলে। ফাইলগুলো চেকিং করা।তারপর রোগী সজাগ থাকায় তাকে পরিদর্শন করা এবং টাইমলি না ঘুমানোর কারণে একটু রাগ দেখানো। অবশ্য পেশেন্টদের সন্তানের মতো শাসন না করলে যে পেশেন্টদেরই ক্ষতি।তারপর বই আনিয়ে তা ঘাঁটাঘাঁটি।সবশেষ একটু গবেষণা করে বের হতে চাওয়া।

—মিষ্টার ফাতেহ আমি চলছি। আপনার সিফটও তো শেষ তাই নয় কি?(ইলিয়ানা)

—আমার সিফট তো এগারোটার সময়ই শেষ।আপনি যেহেতু এসেছিলেন তাই ছিলাম।(ফাতেহ)

—তাহলে আমার জন্য তো আপনার অনেক লেইট হয়ে গেলো(ইলিয়ানা)

—পেশেন্টদের সুস্থতার জন্য এই দেরী কোনো দেরী নয়!(ফাতেহ)

ফাতেহ-র কথায় ইলিয়ানা অত্যন্ত খুশি হয়।ইলিয়ানা ভান্নারার দিকে যাবে শুনে ফাতেহ বলে সেও সেই দিকেই যাবে। এক্ষেত্রে তারা একত্রেই যেতে পারে।আর যেহেতু ফাতেহ-র বাইক আছে সেহেতু যেতে মাত্র মিনিট দশেক লাগবে।

ইলিয়ানা একবার রিক্সায় করে যেতে চাইলেও পরে ভাবে এতো রাতে তার জন্য অন্তত পক্ষে বাংলাদেশে কেউ রিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে নেই।তাইতো রাজি হয় ফাতেহ-র প্রস্তাবে।ভান্নারাতে স্কুলের কাছাকাছি নামতেই দেখতে পায় রাস্তাটা বেশ অন্ধকার আচ্ছন্ন।তবে মাঠের দিকটা আলোয় আলোকিত। কেননা সেদিকটায় যে নারী, পুরুষ সদস্য সকলেরাই আছে।

—ম্যাম,আপনি কি রিইউনিয়নে এসেছেন?(ফাতেহ)

—হুম.. কেন?(ইলিয়ানা)

—তেমন‌ কিছু না।আমি তো জানতাম আপনি ফরেন থেকে এসেছেন। তাই অবাক হলাম এখানের স্কুলে আপনি স্টাডি করেছেন শুনে।(ফাতেহ)

—স্কুল বড় বিষয় না তবে আমরা শিক্ষকদের থেকে কি নিতে সক্ষম হলাম এবং তারা আমাদের কি দিলো এটাই হচ্ছে বড় বিষয়!হ্যা এসএসসি অব্দি আমি এই স্কুলেই ছিলাম (ইলিয়ানা)

—আচ্ছা ম্যাম চলি।কাল দেখা হচ্ছে তো?(ফাতেহ)

—যেহেতু তিন/চারদিনের মাঝে অপারেশন করাতে হবে, সেহেতু কালকেও যেতে হবে। আল্লাহ হাফেজ (ইলিয়ানা)

ইলিয়ানা আর দাঁড়ায় না।অন্ধকারের মাঝে ঢুকে পড়ে।বড় বড় বিল্ডিং হয়েছে এদিকটায়। অবশ্য ঝাপসা আলো আছে।কেউ ইলিয়ানার হাত টান দিয়ে গলির দেয়ালে আটকায় তাকে।ইলিয়ানা ভয় পেয়ে যায়।তাইতো চেহারা না দেখেই আত্মরক্ষা কৌশলে কুপোকাত করে সামনের ব্যক্তিকে।নিচে ফেলে তারপর মোবাইলের ফ্লাশে নিজের প্রিয় ব্যক্তিটিকে দেখে।সরি সরি বলে ধরে তুলে।

নিজের ব্যাগ থেকে চুপচাপ ফাস্ট এইড বক্স‌‌‌ এনে একদম মাঠের বাইরের দিকটায় বসে আহান স্যারকে নিয়ে।মাথায় অনেকটা চোট পেয়েছে।ইলিয়ানা আলতো হাতে মলম লাগিয়ে দিতে দিতে বলে,

—এভাবে অন্ধকারের মাঝে আমার পথ রোধ করেছিলেন কেন?(ইলিয়ানা)

—কে ছিলো ছেলেটা?(আহান স্যার)

—আমি একটা প্রশ্ন করেছিলাম।

—আমিও করেছি।

—আগে আমার প্রশ্নের জবাব দিন।

আহান স্যার ইলিয়ানার কথা গ্রাহ্য না করেই বলে,
—শোনো মেয়ে ওই ছেলে যেই হোক তাকে ভুলে যাও।আর আমাকে ফ্রি হয়েই ম্যাসেজ দিবা।রেস্ট্রেকশন সরিয়ে নিয়েছি।কালকে তোমায় একস্থানে নিয়ে যাবো।যাবা?

—কোথায়?(ইলিয়ানা)

—আমি যেখানে নিয়ে যাবো সেখানে।

—জায়গাটা কোথায় সেটা তো বলবেন নাকি!

—কালকে গেলেই দেখতে পাবা।এখন গিয়ে শুয়ে পড়ো। রাতদুপুরে বাইরে ঘুরঘুর করো না পেত্নি ভেবে কেউ ভয় না পেলেই হয়!যাও

আহান স্যার হাসতে হাসতে কথাটা বলেন। ইলিয়ানা কপট রাগ দেখিয়ে বলে,

—পেত্নি আপনার বউ।

—তাইতো বললাম।এখন আর ঝগড়া না করে গিয়ে শুয়ে পড়ো।আমিও যাচ্ছি।বাই।

—আল্লাহ হাফেজ।

ইলিয়ানা বিরবির করে সরে আসে সেখান থেকে। তাঁবুতে এসে দেখে মেহের বসে আছে বড় বড় চোখ করে।ইলিয়ানার দিকে তাকিয়ে ইশারায় ফোন দেখায়।ইলিয়ানা ফোনের দিকে তাকাতেই মেহের ম্যাসেজ পাঠায় যে,”তুই কি এখনো মরীচিকার পেছনে ছুটছিস?”

ইলিয়ানা ম্যাসেজের জবাবে শুধু এতোটুকুই বলে যে,”মরীচিকার পেছনে ছুটছি কিনা জানি না।তবে এখন অনেক রাত হয়েছে।ঘুমা আর ভাবছি দুলা ভাইয়ের সাথে কথা বলমু।সেই কত বছর আগে তোদের গুপ্ত চরের কাজ করতাম ভাবা যায়!”

সকালবেলা ইলিয়ানার উঠতে উঠতে আটটা বেজে যায়। কাছাকাছি অনন্যাদের বাড়ি। সেখানে থাকার ব্যবস্থা চাইলেই করা যেতো।তবে এতে সব বন্ধুরা এবং শিক্ষকরা থাকবে না বলেই আর যাওয়া হয়নি।আজ ঘুরতে সেদিকটায় নিয়ে যাবে অনন্যা।

ইলিয়ানা ফ্রেশ হয়ে একটু এদিক ওদিক হাঁটা হাঁটি করছিলো।সকালে খিচুড়ির আয়োজন হয়েছে।পূর্বে প্রিয় খাবারের তালিকায় থাকলেও এখন আর তা প্রিয় নেই।বেশি খাওয়াও হয় না আর।তাইতো এদিক থেকে বেরিয়ে দোকান থেকে কলা আর ব্রেড কেনার উদ্দেশ্যে যেতেই ইলিয়ানার মুখশ্রী ঝলঝল করে ওঠে কাছের বান্ধুবীদের আরেকজনকে দেখে।মেয়েটাকে মিস করছিলো সে।

ইলিয়ানা ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,

—বেবি ভালো আছিস?

ওমা,ওই মেয়ে অর্থাৎ সাঈদা ইলিয়ানাকে ছাড়িয়ে আগে থেকে মাথা ইলিয়ানাকে পর্যবেক্ষণ করে বলে,

—বেবি তুই এতো চিকন হইছোস কেন?হাড্ডি লাগে।আমারে দেখে তো শিখতে পারোস কত গুলুমুলু হইছি।

সাঈদার কথায় ইলিয়ানা গাট্টা মেরে বলে,

—হ,যে গুলুমুলু হইছোস যে হাড্ডি গুড্ডি সব বোঝাই যায়।

সাঈদা আর ইলিয়ানা খুনসুটি করতে করতেই স্কুল মাঠের দিকে যায়।খাবার কেনার কথা ভুলেই বসে সে।আর কোনো ফ্রেন্ডের সাথে যোগাযোগ না থাকলেও সাঈদা মাঝেমাঝে কমেন্ট করতো আর তখনই হঠাৎ হঠাৎ ইলিয়ানা রিপ্লাই দিতো।আর তখনই একটু আকটু ম্যাসেঞ্জারেও কথা হতো।এই যা যোগাযোগ।

প্রিন্সিপাল স্যারকে পেয়ে যেন সাঈদার খুশি ধরে না।প্রিয় স্যারটা যখন চলে যাবেন বলে জানালেন তখন কি কান্নাই না জুড়ে ছিলো সাঈদা,অনন্যা, অন্তরা আর তাসনিম।তবে এবার পাগলিগুলো অত্যন্ত আনন্দিত।

অধিকাংশ পুরনো স্যাররা চলে গিয়েছেন অন্য জায়গায়।তাইতো হঠাৎ আবারো সবাইকে পেয়ে খুব খুশি তারা।ইলিয়ানার ফোনে টুং করে ম্যাসেজ আসে। সবগুলো সাঈদাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় একটু সরে আসে সে।জ্যাকের ম্যাসেজ।

”ম্যাম প্লিজ কাম ব্যাক উইথ মি।দিস প্লেস ইজ নট সুইটেবল ফর আস।”

ইলিয়ানা হাসে।বিদেশী হিসেবে জ্যাকের জন্য একটু নয় বরং অনেকটাই কষ্টসাধ্য এই পরিস্থিতিতে বসবাস। তাইতো একদিনেই বিরক্ত হয়ে ম্যাসেজ দিয়ে দিয়েছে। কেননা সে জানে তার ম্যাম অলরেডি তার অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত।

”কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?এখন তো বলুন।”

ইলিয়ানা আহান স্যারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে। দু’জনে রিক্সায় বসা।আজকে সবাই আলাদা আলাদা ঘুরতে গিয়েছে। তবে কয়েকজন আবার কোথাও না গিয়ে ছুটির কাজগুলো অনলাইনে বসেই করে নিচ্ছে।যাতে মাস শেষে বেতনটা আসে। ছোটবেলায় পরিবারের দায়িত্ব অধিকাংশের ওপর না থাকায় বড়বড় অনেক স্বপ্নই দেখেছিলো এরা যে বড় হয়ে একমাসের লম্বা একটা রিইউনিয়ন কাটাবে।তবে সম্ভব হলো না।তবে শেষমেশ বহু কষ্টে সবাইকে ম্যানেজ করে আয়োজিত হলো রিইউনিয়ন।

”স্যার এটা কোথায় আসলাম আমরা?”

পুরো ফাঁকা একটা মাঠের কাছাকাছি রিক্সা থেকে নামলো ওরা।ইলিয়ানা অবাক এবং জানতে আগ্রহী। সামনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ইলিয়ানা হঠাৎ লক্ষ্য করে আহান স্যার নেই।

”স্যার,স্যার?”

ইলিয়ানা চারপাশটা ভালো মতো দেখতে থাকে।ওর মনে ভয় জেঁকে বসে। একেতো অচেনা জায়গা, তারওপর নির্জন।ইলিয়ানা আর ভাবে না।ভয় পেলে মস্তিষ্ক একদম শূন্য হয়ে যায়।এতে বিপদে বাঁচার সম্ভাবনা থাকলেও তা হ্রাস পেতে লাগে। তাইতো নিজে কাম ডাইন করে ইলিয়ানা আশপাশ তাকায়। হঠাৎ আহান স্যার ইলিয়ানার সামনে এসে দাঁড়ায়। অবশ্য সে দৌড়ে এসেছে তা তার দম ফেলা দেখেই ইলিয়ানা বোঝে।

আহান স্যার ইলিয়ানাকে বলে,

” তোমার না সূর্যাস্ত দেখার শখ।এর থেকে আরেকটু দূরেই হেঁটে গেলে ছোটখাটো নদী আছে।চল,আজ দুজনে একসাথে সূর্যাস্ত দেখবো।আর এটা তোমার জন্য…

ইলিয়ানার দিকে গোলাপের থোকা এগিয়ে দেয়। চুলগুলো যেহেতু ঝুঁটি বাঁধা তাই তার মাঝে ইলিয়ানা ফুলটাকে গাঁথার চেষ্টা চালায় তবে ব্যর্থ হয়। ফুলের দুটো পাপড়ি ছিড়ে যায়।তা দেখে আহান স্যার ইলিয়ানার হাত থেকে ফুল নিয়ে চুলের মাঝে গেঁথে দেয়।ইলিয়ানা অন্যরকম শিহরণ অনুভব করে।

চলবে?

অনুরক্তি এসেছে তোমার শহরে পর্ব-০৪

0

#অনুরক্তি_এসেছে_তোমার_শহরে
#পর্বঃ৪
#বর্ষা
ইলিয়ানা ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে।ইশ,কি সুন্দর লাগছে আহান স্যারকে।সব মেয়েরা কেমন করে তাকিয়ে আছে!ইলিয়ানার রাগ হয়। প্রচন্ড রাগ হয়।কেন আহান স্যারের কালো গেঞ্জি পড়তে হবে!হুয়াই?ইলিয়ানা রাগের বহিঃপ্রকাশ করতে ম্যাসেঞ্জারে যায়।ইলিয়ানা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।এখনো অব্দি সে আহান স্যারের রেস্ট্রেক্টড আইডির মাঝেই আছে। তাইতো আজও তাকে সে অফলাইনেই দেখছে।ইলিয়ানা প্রতিবারই ব্যর্থ তাকে তার ভালোবাসা বোঝাতে।এবারও কি ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাবে নাকি তাকে আপন করে পেয়ে মাতৃভূমিতেই থাকবে!

—কিরে কি হইছে (আফরোজা)

—ওই তোর মুখ এমন প্যাচার মতো কেন ইলিয়ানা (অন্তরা)

ওদের দুইজনের কথায় বাকিগুলোও ইলিয়ানার দিকে তাকায়।সত্যিই ইলিয়ানার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আছে।অনন্যা এগিয়ে এসে চেক করতে নিলে সুরসুরি অনুভব হতেই লাফিয়ে ওঠে সে, পাশাপাশি হেসেও দেয়।যে সে হাসি না অট্টহাসি। তাসনিম বলে,

—এই মেয়ে আর চেঞ্জ হয় নাই এখনো!

ইলিয়ানা ওদের সাথে খুনসুটিতে মেতে উঠলেও মনের গহীনে প্রিয় মানুষটার থেকে প্রাপ্ত নতুন ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য ক্ষতটা তো অনেক আগের সৃষ্টি।কিছুক্ষণ খুনসুটিতে মেতে ওরা রান্নার দিকটায় যায়। রিইউনিয়নের দ্বিতীয় দিন। সাতদিনের আয়োজন করা হয়েছে। অবশ্য সবার সহযোগিতা এবং চাওয়াতেই সম্ভব হয়েছে এতো বড় একটা সময়ের রিইউনিয়ন। রান্না-বান্নার দিকটা মেয়েদের।তবে ইলিয়ানা কিছু ধরছে না। রান্না-বান্না বলতে ডেডের প্রিয় ডেজার্ট,ভাইয়ের প্রিয় সালাদ এই যা সে পারে।কখনো শেখার প্রয়োজন বোধ করেনি। অবশ্য দশবছর আগে সে ভালোই রান্না বান্না জানতো।তবে তা তো অনেক পুরনো কথা।

—এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে না দেখে ওদের সাহায্যও তো করতে পারো

লাবিব স্যার নীড়কে কোলে নিয়ে এগিয়ে এসে কথাটা বলে।ইলিয়ানা নীড়কে ওর বাবার কোলে দেখেই বুঝে ফেলে বাচ্চাটা এখনো মেহেরের কথায় ভয়ে আছে।তবে তৎক্ষণাৎ লাবিব স্যারের বলা কথাটা মনে হতেই বলে,

—দুঃখিত।আমি সালাদ মেক করতে পারবো।তবে রান্না-বান্না আমি পারি না।

—এতো বয়স হয়েছে তাও রান্না বান্না পারো না?তোমার জামাই কি তোমাকে তোমার রুপ দেখেই রেখেছে?

ইলিয়ানার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।হাত মুঠো করে নেয় সে।ইলিয়ানা বিয়ে করেনি তা জানে না ঠিক আছে তাতে সমস্যা নেই।তবে তাকে এতো বড় কথা বলার পরও সে কিভাবে চুপ থাকবে।যখনই কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই আহান স্যার গম্ভীর কন্ঠে বলেন,

—ওকে ওর জামাই রুপ দেখে রাখুক কিংবা ভালোবেসে তাতে তো আপনার সমস্যা হবার কথা নয়!আর এটা একদমই ওর পার্সোনাল বিষয় যে ও রান্না বান্না করবে কি করবে না।আর যদি কখনো ওকে কিংবা অন্য কাউকে এভাবে বলতে শুনেছি তো খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু!

লাবিব স্যার ছেলেকে কোলে নিয়ে চলে যায়।আহান স্যার ইলিয়ানার দিকে কিছুক্ষণ রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চলে যান স্কুল মাঠ থেকে।ইলিয়ানা পিছু নেয় ওনার।তবে কিছুদূর গিয়ে আর যায় না।ক্রোধের বশে কেঁদে দেয়।আহান স্যার অন্য একজন রমনীর সাথে কথা বলছেন।এদিকটায় তিনটা স্কুল। ডিসেম্বর মাস চলায় তিনটিই বন্ধ।তাইতো দোকানপাট খোলা থাকলেও ছাত্রছাত্রীদের অভাব অনুভূত। পাশাপাশি রাস্তাটাও অনেকটা নিরিবিলি।ইলিয়ানাকে আহান স্যার দেখে ফেলেন।ইলিয়ানারও চোখ পড়ে স্যারের ওপর।ইলিয়ানা চলে আসে।

দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে ইলিয়ানা রেস্ট নিচ্ছে। হঠাৎ ওর ফোনে একটা নোটিফিকেশন আসে।ইলিয়ানার কষ্ট লাগে অনেক।কেউ একজন আহান স্যারের পাশাপাশি আরেকজন রমনীর পিক দিয়েছে গ্রুপে।বলেছে,কি সুন্দর লাগছে দুজনকে!ইলিয়ানা কষ্টের কথা কিভাবে বলবে!না,ইলিয়ানার তো কোনো অধিকার নেই তার ওপর যে বলবে আপনি কোনো মেয়ের সাথে কথা বলবেন না।ইলিয়ানা যথেষ্ট ম্যাচিউর।তার প্রফেশনটাই ম্যাচুরিটি সম্পন্ন।তবে প্রিয় মানুষদের কাছে ম্যাচুরিটি শব্দ যদি থাকতে হয়/রাখতে হয় তবে কিসের/কেমন প্রিয় মানুষ সে আমাদের!

—মন খারাপ? (আহান স্যার)

—এতো বছর পর বন্ধু-বান্ধবদের সাথে দেখা মন খারাপ কি হতে পারে?(ইলিয়ানা)

—সেই আগের মতোই আছো দেখছি।প্রশ্নের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন করা ছাড়লে না!

—ছেড়ে দিয়েছে শুধুমাত্র আমার প্রিয়দের জন্য।

—আমি কি তোমার প্রিয়ের তালিকায় নেই তাহলে?

—আপনাকে প্রিয়ের তালিকায় রাখা মানুষের সংখ্যা অহরহ। সেক্ষেত্রে আমি রাখলেও যা আর না রাখলেও একই কথা।

তখনই ইলিয়ানার ফোনটা বেজে ওঠে।ভিডিও কল ইলিয়াস চৌধুরীর।ইলিয়ানা ইচ্ছে করেই ওখান থেকে সরে যায় না। বরং ওখানেই কল রিসিভ করে। ইলিয়াস চৌধুরী বলে ওঠে,

—আসসালামু আলাইকুম কলিজা,কেমন আছো?

ইলিয়ানা চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।ভাইয়ের যে মতলব ভালো না ভালোই বোঝে।তবে কি মতলব এটেছে সে তা ইলিয়ানার জানা!কলিজা শব্দটা শুনেই আহান স্যারের বুকের ধুকপুক বেড়ে গেছে।মনে তার ভয় জেঁকেছে।তিনি ভাবছেন,সময় কি তবে পেরিয়ে গেল নাকি আমি তাকে নিজ থেকেই হারালাম!

—আলহামদুলিল্লাহ। তবে আমি তোমার বিয়ে সমন্ধে কোনো কথাই শুনছি না।রাখছি

—ইলি

ইলিয়াস চৌধুরী সম্পূর্ণ কথা আর সম্পন্ন করতে পারেন না।তার আগেই ইলিয়ানা কল কেটে দেয়।আহান স্যারের চোখে লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে।বিয়ে?করাছে সে ইলিয়ানাকে বিয়ে।ইলিয়ানার হাত শক্ত করে ধরে স্কুল মাঠ পেরিয়ে সরকারি প্রাথমিক স্কুলের ওদিকটায় চলে আসে।

—আরে আপনি কি পাগল হয়েছেন? আমাকে এভাবে টানছেন কেন?

ইলিয়ানা কপট রাগ দেখিয়ে বলতেই খেপে ওঠে আহান স্যার।রাগী এবং গম্ভীর স্বরে বলে,

—ওই ছেলেটা কে ছিলো?

—আপনি জেনে কি করবেন?

—আমি জানতে চাই। তুমি বলো?

—আমি জানাতে আগ্রহী না

—ইলিয়ানা

—চিৎকার করবেন না স্যার।আমার এখনো মনে আছে আপনি আমাকে কিভাবে ট্রিট করতেন।হ্যা আমি জানি আমি ছ্যাছড়ামি কম করেনি।তবে আপনার অবহেলাও কম ছিলো না।আজও আমি আপনার রেস্ট্রেক্টড আইডিতে আটক।ভালোবেসে ঠেকেছি নাকি!

ইলিয়ানা হাইপার হয়ে পড়ছে। রাস্তার মানুষেরাও এদিকটায় তাকিয়ে দেখছে।তাইতো ইলিয়ানাকে তিনি বললেন,

—বিয়ে করবে আমায়?

—কতবার তো আগেও বলেছেন।তবে ঠিক তার ঘন্টাখানেক পরেই বলেছিলেন যে আপনি রিপ্লাই একজন মেয়েকে ভালোবাসেন,,,ইত্যাদি।আবার আপনার পছন্দের রমনীর খোঁজ পেয়ে যাওয়ায় আপনি কে বলেছে তা জানতে চেয়েছিলেন।বলেনি তাই তো রেস্ট্রেক্টড করে রেখেছেন।

—ইলিয়ানা বিয়ে করবে?

—আমি কখনোই বিয়ে করবে না। পুরুষ মানুষ সন্তান,ভাই আর বাবা হিসেবেই শ্রেষ্ঠ।স্বামী হিসেবে কাউকে চাই না।

—ইলিয়ানা আমি বললাম আবারো জিজ্ঞেস করছি বিয়ে করবে?

ইলিয়ানা চুপচাপ অশ্রুশিক্ত নয়নে ওনার দিকে তাকিয়ে থাকে।নিজেকে যথাসাধ্য শান্ত করে।ইলিয়ানা অবাক হয়।সে তো কান্না করার মতো মেয়ে না।তবে কি করে সে আহান স্যারের সামনে কাদলো!

—হুম(ইলিয়ানা)

—কাকে?(আহান স্যার)

ইলিয়ানা ক্ষোভে ফেটে পড়ে।এবার আর কাঁদে না।ওই জায়গাটা থেকে সরে আসে।আর একটা কথাও বলেনা।সে ছুটে এসে দূরত্ব রেখে পাশাপাশি হাঁটছে।তবে ইলিয়ানা পাত্তা দেয় না তাতে।

রাতে ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলার বিশাল আসর বসেছে। ইলিয়ানা দের ব্যাচের সবাই আসেনি।তো আবার কমও আসেনি।প্রায় পঞ্চানজন উপস্থিত সাইন্স, কমার্স মিলে।বিশাল আসরে সব শিক্ষার্থীরা আবার বসেনি।তবে শিক্ষার্থীদের জোরাজুরিতে স্যাররা বসেছে।সবাই ভেবেছিল আহান স্যার বসবেন না।তবে ইলিয়ানার পাশে তিনি বসে পড়েন।তার বা’পাশে ইলিয়ানা আর ডানপাশে লাবিব স্যার।

খেলার শুরু হয়।বোতল ঘুরে সামীমের দিকে পড়ে।সবাই চিৎকার করে ওঠে।বেচারা ওদের ভয়ে ট্রুথ নেয়।একে একে যতজনের দিকে বোতল পড়েছে সবাই ট্রুথ।তাইতো তাসনিম বিরক্ত হয়ে বলে,

—সবাই যদি ট্রুথই নেয় তাহলে এই গেমের চেয়ে বিরক্তকর গেম আর দ্বিতীয়টি নেই।

—আচ্ছা মন খারাপ করিস না।আমার দিকে আসলে আমি ডেয়ার নিবো।(ইলিয়ানা)

আবারো খেলা শুরু হয়। তবে প্রথমেই ইলিয়ানার দিকে পড়ায় তাসনিম খুশিতে চেঁচিয়ে ওঠে। আমাদের প্রিন্সিপাল স্যার হেসে বলেন,

—এই মেয়ের চিল্লাচিল্লি এখনো যায়নি দেখছি!

সবাই হেসে দেয়। তাসনিম স্যারের কথা বেশি পাত্তা না দিয়ে ডেয়ার চিন্তা করে ফেলে। অতঃপর অতি দ্রুত তা মেহের,অনন্যাসহ সবার সাথে শেয়ার করে।অন্তরা যে রাজি না তা তার ডানে-বামে মাথা ঘুরানো দেখেই বোঝা যাচ্ছে।তবে বাকিরা রাজি।তাইতো তাসনিম বলে উঠলো,

—ইলিয়ানা বেবি প্রপোজ কর আহান স্যারকে।

—হোয়াট,ডেয়ার চেঞ্জ কর ইয়ার(ইলিয়ানা)

—কোনো চেঞ্জ হবে না।দ্রুত কর।(মেহের)

ইলিয়ানা জায়গা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।সবাই ভেবেছিলো সে চলে যাবে।তবে সবার ভাবনা ভুল করে আহান স্যারের হাত প্রথমবারের মতো স্পর্শ করে তাকে গোলকের মাঝে এনে দাঁড় করায়।ইলিয়ানা স্কুল গার্ডেন থেকে ফুল এনে বসে পড়ে স্যারের সামনে।

—ভালোবাসা কি জানি না। আসক্তি আপনি।বয়সটা হয়তো অনেক পার্থক্যের।তবুও চাই আপনাকে।বলতে পারেন আসক্তি কেটে যাবে।যদি তাই হতো তবে আরো আগেই কেটে যেতো!ভালোবাসি।আপনি কি একান্তই আমার হবেন?

কথাগুলো বলেই ইলিয়ানা উঠে দাঁড়ায়।বলে,

—ডেয়ার ইজ কমপ্লিট।এখন আমি আসছি।আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কল আসছে।

সবাই এক অবাকতা থেকে যেখানে বের হতে পারেনি।সেখানে আরেক অবাকতা।কিঞ্চিত দূরে গিয়ে ফোন রিসিভ করে ইলিয়ানা। একজন জানায়,

—ম্যাম বাংলাদেশে সিরিয়াস একটা অপারেশন আছে। আপনি বাংলাদেশে জেনে তারা চাচ্ছে আপনি এই অপারেশনটা করুন।মেবি গাজীপুরের কোনো হসপিটালে এখন আছে।আপনি বললে ঢাকাতে সিফট করতে বললো।

—ঢাকা থেকে সব মেডিকেল সরঞ্জাম,প্রয়োজনীয় মেডিসিন প্রভৃতির ব্যবস্থা রাখতে বলো।আর আমাকে হসপিটালের লোকেশন পাঠাও।(ইলিয়ানা)

—ওকে।ম্যাম আপনাকে লোকেশন পাঠিয়েছি।আপনি কি আজই যাবেন?

—হ্যা। তাদের জানিয়ে দেও।কর্মরত চিকিৎসককে উপস্থিত থাকতে বলো।রোগীর রিপোর্টগুলো রেডি রাখতে বলো।(ইলিয়ানা)

—ওকে ম্যাম।

ইলিয়ানা কথা শেষে এগিয়ে এসে সকলের উদ্দেশ্যে বলে,

—আপনারা সবাই ইঞ্জয় করুন।আমাকে একটু মৌচাকের দিকে যেতে হবে।

—রাত এগারোটায় একাকী যাবে?কোনো ফ্রেন্ডকে নিয়ে যাও।

প্রিন্সিপাল স্যারের বলা কথাটা খারাপ না।তবে ইলিয়ানা কাউকে সঙ্গে নিতে চায় না। কেননা সে আরেকজন গার্ডের থেকে অলরেডি জেনে গিয়েছে জ্যাক বাংলাদেশে।আর জ্যাকের লোকেশনও ইলিয়ানা থেকে খুব বেশি দূরে দেখাচ্ছে না।যাওয়ার পূর্বে ইলিয়ানা এদিক-ওদিক তাকায়‌।আহান স্যার নেই।

ইলিয়ানা রিক্সায় উঠার সাথে সাথেই আহান স্যার লাফিয়ে ওঠে রিক্সায়। ইলিয়ানা ভয় পেয়ে দূরে সরে যায়।তবে আহান স্যারকে দেখে ধাতস্থ হয়।তবুও দূরত্ব রেখেই বসে।আর‌ আহান স্যারও অনেকটা দূরত্ব রেখে বসে এবং বলে,

—বন্ধুদের চক্করে আর কত মানুষকে প্রপোজ করেছে নিজের সাহসীকতা প্রদর্শনে?

চলবে?

অনুরক্তি এসেছে তোমার শহরে পর্ব-০৩

0

#অনুরক্তি_এসেছে_তোমার_শহরে
#পর্বঃ৩
#বর্ষা
ইলিয়ানা সকাল সকালই হাঁটতে হাঁটতে স্কুল মাঠ পেরিয়ে রাস্তায় উঠে এসেছে।প্রাইমারি স্কুল দেখেই স্কুল জীবনের দুষ্টামিগুলো নাড়া দেয় তাকে। ইচ্ছে হয় ক্ষুদ্র দেয়াল টপকে ওপাশে যাওয়ার।তবে একাকী কি আর মজা আছে নাকি।সবাই মিলে যাওয়ার জন্য পেছনে ঘুরতে নিলেই ফোনটা বেজে ওঠে। ইলিয়াস চৌধুরী দিয়ে সেভ করা নাম্বারটা।ইলিয়ানা ডানে-বামে মাথা ঝাঁকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,

”ওফ ডেড তোমাকে মামানো তো সহজ ছিলো। কিন্তু এই ব্যক্তিকে আমি কিভাবে মানাই!”

ইলিয়ানা ফোন রিসিভ করে চুপ করে থাকে।কিই বা বলবে।অপরপাশ থেকেও কোনো কথা আসে না।তবে কিঞ্চিত সময় পরই ওপাশ থেকে কেউ গম্ভীর কন্ঠে বলে,

”ইলিয়ানা জেহের চৌধুরীর সাথে কি কথা বলা যাবে?”

ইলিয়ানা বুঝে যায় তাই গুরুগম্ভীর ভাইটা তার সাথে প্রচন্ড রেগে আছে।দ্রুত কলটা কেটে ভাবী এলিনার ফোনে ভিডিও কল দেয়।এলিনা আমেরিকান।ইলিয়াসের সাথে তার প্রেমের বিবাহ।বছর তিনেকের মেয়ে জেনি চৌধুরী।ইলিয়ানা ভাবীকে বললো,

—মাই ডিয়ার ভাবী প্লিজ সে মাই ব্রেদার দ্যাট হিজ সিস্টার উইল বি ক্যাম ইন টেন ডেইস।

এলিনা মুচকি হেসে বললো,

—তুমিই কেনো বলছো না বেবি

এই বলেই এলিনা মোবাইলটা ইলিয়াস চৌধুরীর হাতে ধরিয়ে দেয়।ইলিয়ানা ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া হাসি হাসে। ইলিয়াস বোনকে প্রচন্ড ভালোবাসে।তবে জুনায়েদ চৌধুরীর কারণে বোনের জীবনটা নিয়ে সবসময়ই ভাবনায় থাকে সে। তাইতো ভালোবাসার চেয়ে রাগ,শাসনটাই বেশি প্রকাশিত হয়।

—কার অনুমতিতে গিয়েছো বাংলাদেশে?

—ব্রো আই এম সরি।বাট আমি তো তোমার সিস্টার যে নিজের সুরক্ষা এবং খেয়াল রাখতে পারে।প্লিজ চিন্তা করো না।মাত্র তো দশটা দিন।প্লিজ

—আমি জ্যাককে বলছি সে বাংলাদেশে আসবে এবং তোমার সুরক্ষার দায়িত্বে থাকবে।

—ভাই তুমি তোমার বোনের যোগ্যতায় সন্দেহ করো?

—জেহের আমি কি একবারো তা বলেছি?

—তুমি যদি আমার যোগ্যতায় বিশ্বাস করতে তবে এমনটা বলতে না!তুমি আমার যোগ্যতায় অবিশ্বাস করো।

ইলিয়ানার বাচ্চা ফেস দেখে গলে যায় ইলিয়াস।বোনটাকে মাত্র দশবছর ধরে কাছে পেলেও সম্পর্ক যেন আরো পুরনো।ইলিয়াসের রাগ হয় তার বাবা-মায়ের প্রতি কেন তারা তখন এতোটা কেয়ারলেস হয়েছিলো!কেন তাদের কারণে ইলিয়ানা আর ইলিয়াসের দূরত্ব ছিলো অনেকগুলো বছর!ইলিয়ানা ভাইয়ের থেকে বিদায় নিয়ে কল কেটে দেয়।ইলিয়াস ইলিয়ানাকে না বলেই জ্যাককে জানায় বাংলাদেশে আসার কথা।জ্যাক বিনা সময়ব্যয়ে টিকিট বুক করে বেড়িয়ে পড়ে ব্যাগ নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে।ইলিয়াস বলে,

—জেনি আমার নিকট যতটা আপন।জেহের তুমি যে তার চেয়েও শতাধিকগুণ আপন আমার কাছে।হ্যা আমি জানি বাপ-মেয়ের চেয়ে ভাই-বোনের সম্পর্কটা এতোটা গভীরত্ব পায় না।তবে প্রতিটা সম্পর্কের মাহাত্ম্য প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিটা মানুষের স্থান আলাদা।

—ওই ছেড়ি কই গেছিলি তুই?

মেহের প্রশ্নে ইলিয়ানা ওর কানে কানে বলে,
—দোস্ত চল না ছোটবেলার আশাটা পূরণ করি।

—কোনটা?

—ওই যে দেয়াল টপকে সরকারি স্কুলে যাওয়ার।

মেহের বিরক্তিমাখা এমন একটা লুক দেয় যে ইলিয়ানা অবাকসহ আশ্চর্য। কেননা মেহের মোবাইল থেকে একটা ছবি বের করে ইলিয়ানার সামনে ধরে বলে,

—চিনিস একে?

—সায়মান?

—আমার জামাই।

—তো?

—আমারে ঠেঙাইবো এমন বাঁদরামি করলে।ভাগ্য ভালো শালায় ক্রিকেট খেলার জন্য বিভিন্ন জায়গায় যায় বলে সেই ছুতায় আমিও একটু আকটু ঘোরাঘুরি করতে পারি। নয়তো বাড়িতে থাকলে শাসনে শাসনে পাগল বানায়।

—জামাইকে শালা বলা ঠিক না মেহের

—ওই ছেড়ি জ্ঞান দেওয়া বাদদে।আর ওইটা একটা কথার কথা ছিলো।বিয়ে কর তোর মুখ থেকেও বের হইবো।

মেহের আর কিছু না বলেই ইলিয়ানাকে টেনে একপাশে নিয়ে আসে।ইলিয়ানা অবাক দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে।রোমান কি করছে এখানে!রোমান এগিয়ে আসে ইলিয়ানার দিকে। সমবয়সী দুজনই।মেহের চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

—দোস্ত চিনোস নাকি?

—রোমান আহমেদ।

রোমানের নাম শুনেই মেহের ইলিয়ানাকে ফেলে ছুটেছে অন্যদিকে।রোমান এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,

—কেমন আছেন?

—আলহামদুলিল্লাহ,আপনি?

—আছি কোনো মতন।

নিরবতা!ইলিয়ানা মনে মনে ভাবছে রোমান তো তাদের স্কুলের নয় তাহলে সে এখানে কেন!আর কার কাছেই বা খবর পেল যে ইলিয়ানা এসেছে।আর চিনলোই বা কিভাবে! হঠাৎ ইলিয়ানার মনে পড়লো যে সে এবং রোমান এখনো অব্দি ফ্রেন্ডলিস্টে আছে।ইলিয়ানা নিরবতা ভেঙে জিজ্ঞেস করে,

—এখানে কেন?

—আপনি জানেন না?

—না.

—এমনি আসলাম।

—ওহ

—হুম

রোমান চলে যায়।কয়েকবার পিছু তাকাতে গিয়েও পিছু ফেরে না।রোমান বুঝে গেছে এতদিনে যে তার পরিচিত ইলিয়ানা আদৌ কখনো তার পরিচিত ছিল না কিংবা তার হবে না। রোমান মনকে মানানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হয়। অপেক্ষা করাটা অনেক কষ্টের বিষয়।রোমান তো দশ বছর ধরে কোনো প্রমিস ছাড়াই অপেক্ষা করে আসছে।

রোমান চলে যেতেই মেহের হাজির হয় আধো ঘুমে থাকা তাসনিম,অন্তরাকে নিয়ে।অনন্যা আর আফরোজা তো ছুটে এসেছে আগে আগেই।অনন্যা উৎসাহ সহিত জিজ্ঞেস করে উঠলো,

—কিরে আমরা শুনলাম রোমান এসেছে।কইরে?

— আমাকে এভাবে দেখছিস কেন!আমি কি লুকিয়ে রেখেছি নাকি আমার পেছনে!

ইলিয়ানার রাগান্বিত কন্ঠ শুনেও পাত্তা দেয় না ওর বন্ধুমহল।ইলিয়ানাকে আরো রাগাতে তাসনিম বলে ওঠে,

—পেছনে লুকাবি কেন?লুকাবি তো অন্তরে!

—তাসনিম ইয়ার তুইও!

—আচ্ছা সরি বাবা।চল ব্রেকফাস্টটা করে নেই সবাই।আর কালকে তো জার্নি করে আসায় সবার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হয়ে ওঠেনি,আজকে করতে হবে।

অনন্যার কথায় সবাই মাথা নাড়ায়।এই মেয়েটা প্রচন্ড ব্রিলিয়ান্ট। একজন গাইনোকলজিস্ট কি কম বুদ্ধিমান হলে হওয়া যায় নাকি!হওয়া যায় তবে তার জন্য প্রয়োজন জঘন্যতম কঠোর পরিশ্রম। বুদ্ধিমত্তা এবং পরিশ্রম দুইটাই ছিলো এ মেয়েটার মধ্যে।অনন্যার কথায় ইলিয়ানাসহ সবাই পার্টি এরিয়া অর্থাৎ মাঠ সংলগ্ন ক্যান্টিনে চলে আসে। অবশ্য ওদের ব্যাচের অনুরোধেই এখানে ক্যান্টিন নির্মাণ কার্য শুরু হয়েছিলো। তবে ওরা ততদিনে এসএসসি পাশ।

ক্যান্টিনে বসা না থেকে স্যান্ডউইচ হাতে বাইরে আসে ইলিয়ানা। চোখ ঘুরিয়ে সবাইকে দেখে নেয়।দূরে সব স্যার-ম্যামদের সাথে আহান স্যার গল্প করছেন। অবশ্য একে গল্প করা নয় বরং মোবাইল হাতে বসে থাকা বলে।ইলিয়ানা ভাবে একটা ম্যাসেজ দেওয়াই যায়;আবার ভাবে না এখন ম্যাসেজ দেওয়া ঠিক হবে না,যদি অন্য কোনো স্যার ম্যাসেজ দেখে নেয় তবে আহান স্যারের সমস্যা হতে পারে।

ইলিয়ানা স্যান্ডউইচ খেতে খেতে স্যারদের সাথে নিকটে যায়। অবশ্য দুই-তিনটা চক্কর দিয়েছে আগে যাতে স্যান্ডউইচ খাওয়া প্রায় শেষের দিকে।শেষ বাইট মুখে পুড়েই গিয়েছে সে দিকে। সুন্দর করে সালাম দিয়েছে।ইলিয়ানার কন্ঠ পেতেই আহান স্যার উপরে তাকিয়েছেন।মুখে লেপ্টে হাসে প্রশস্ত হাসি।

সব স্যার-ম্যামদের সাথেই কথা হলো।কতই না কথা।তার মধ্যে ইলিয়ানার দুষ্টু বান্ধুবীদের পাশাপাশি আরো কয়েকজন যুক্ত হলো।সবশেষ মুহাম্মদ স্যার (তৎকালীন বাংলা শিক্ষক)জিজ্ঞেস করেই ফেললেন,

—বলেছিলে তো ভুলবে না।ম্যাসেজ তো দিলে না।আর না নিলে খোঁজখবর। তাছাড়া গল্প/কবিতাও তো ছাড়তে না।কি হয়েছিলো?

আগ্রহভরা দৃষ্টিতে সবাই ইলিয়ানার দিকেই তাকিয়ে।ইলিয়ানা আমতা আমতা করে বললো,

—গল্প/কবিতা ওগুলো তো কাল্পনিক ছিলো তাই আর লেখা হয়ে ওঠেনি। সময়টা অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে।আর খোঁজ খবরের বিষয়টা? অনলাইনে খুউউউব কম আসা হতো।ধরতে গেলে জাস্ট একটা পিক পোষ্ট করতে আসা।এর বেশি কিছুই না।তাই বলে কিন্তু কাউকেই ভুলে যাইনি।

ইলিয়ানা ওখান থেকে উঠে চলে যায়। মুহাম্মদ স্যার বলেন,
—মেয়েটার জীবনে কি কিছু ঘটেছে?

মুহাম্মদ স্যারের প্রশ্ন শুনে মেহের,আফরোজা,অন্তরা সবাই পেছনে তাকায়।ইলিয়ানার স্কুল মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটা দেখে।

রজনীগন্ধা ফুল হাতে ইলিয়ানা দাঁড়িয়ে আছে।ব্লাস করছে সে।একদম ন্যাচারল ব্লাসিং।খুবই প্রিয় মানুষটার পছন্দের ফুল। অবশ্য তার সব পছন্দ আবার ইলিয়ানার পছন্দ নয়। একসময় তার পছন্দের মানুষটারও একজন পছন্দের মানুষ ছিলো। তবে কেন সে বিয়ে করলো না এখনও তেমনই প্রশ্ন‌ রয়ে গেলো!

—এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো?

আহান স্যারের কথায় ইলিয়ানার মুখের হাসি প্রশস্ত হয়।ফুলটা এগিয়ে দেয় আহান স্যারের দিকে।আহান স্যার ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করে কিসের জন্য এটা।ইলিয়ানা জোর করে আহান স্যারের হাতে ফুলটা দিয়ে বলে,

—একসময় আপনাকে বলেছিলাম রজনীগন্ধা দিবো।তবে সময়টা আসতে একটু দেরি হলো।

—একটু নয় কিন্তু অনেকটাই

—হুম

আহান স্যার ফুলের সুবাস নিচ্ছেন। দুজনের মাঝেই নিরবতা।ইলিয়ানা নিরবতা ভেঙে হাসতে হাসতে বলে,

—স্যার আপনার পেছনে আমি যতটা ঘুরছি ততটা তো আমার কোনো বন্ধু-বান্ধবের পেছনেও ঘুরি নাই ছোটবেলায়।

আহান‌‌ স্যার অট্টহাসি হাসেন।এনাকে আগে কখনো অট্টহাসি হাসতে দেখেনি ইলিয়ানা।প্রাণ জুড়ানো সেই হাসি। হঠাৎ ইলিয়ানার মনে হলো এটা তো তার কথাকে ফাজলামো হিসেবে উড়িয়ে দেওয়া।তাইতো কপট রাগ দেখিয়ে বললো,

—হাসির কথা বললাম বুঝি?

আহান স্যার হাসি থামিয়ে সিরিয়াস হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—ছোটবেলায় ঘুরেনি অন্যদের পেছনে।এখন কি ঘুরো?

—ভাবতে হবে

—তাহলে ভাবো আমি এখানেই আছি। তাড়াতাড়ি ভেবে তাড়াতাড়ি বল..

—স্যার কি বলার কথা বলতাছেন?(মেহের)

মেহেরকে দেখে ইলিয়ানা এমন লুক দেয় যে ”তোর এখনই আসতে হবে”!মেহের হাসে।আহান স্যার কাজের বাহানা দিয়ে অন্যদিকে চলে যান।কি একটা পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন তিনি ভাবা যায়!ইলিয়ানা মেহেরের কান ধরে বলে,

—কেন খুঁজেছিস আমাকে?

—ওমা তোকে খুঁজতে আবার কারণ লাগবে নাকি!

মেহের আর ইলিয়ানার কথার মাঝেই লাবিব স্যারের ছেলেটা এসে ধাক্কা খায় ওদের সাথে।মেহের তো কি সুন্দর করে কথা বলছে। জিজ্ঞেস করছে নাম কি।ছেলেটা ইলিয়ানা ভ্যাংচি মেরে মেহেরের সাথে কথা বলছে।

—আমার নাম লিহাস হাসান নীড়।তোমার নাম কি ?

—বাবু শুনো অচেনা মানুষদের নাম বলতে হয়না।যদি কিডন্যাপ করে নেই।দৌড়ে বাবার কাছে গিয়ে বসে থাকবা।নয়তো ওইযে ওই অন্ধকার দিক থেকে বিরাট বড় কালো ভুত বের হয়ে তোমাকে তুলে নেবে!

নীড় ভয়ে চলে যায় ওখান থেকে।মেহের হাসতে থাকে।ইলিয়ানা কিছুই বুঝতে পারেনা।প্রথমে মিষ্টি তারপর ভয়।এসব ওর বন্ধু-বান্ধবের দাঁড়াই সম্ভব।ইলিয়ানা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মেহের বলে,

—ওই লাবিবে আর একেক মেয়ের দিকে এখন তাকাইতে পারবো না।পোলা এখন কোলে উইঠা বইসা থাকবো। তহন বুঝবো মজা কি জিনিস!

চলবে?

অনুরক্তি এসেছে তোমার শহরে পর্ব-০২

0

#অনুরক্তি_এসেছে_তোমার_শহরে
#পর্বঃ২
#বর্ষা
ইলিয়ানা অনেকক্ষণ ধরে এপাশ ওপাশ করছে।অস্বস্তিতে মরে যাচ্ছে।লাবিব স্যার ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।আর বন্ধুমহল শয়তানি হাসি হাসছে।ইলিয়ানা বুঝতে পারছে এগুলো কিছু তো একটা করবে।তাই হলো।মেহের একটু জোরেই বললো,

—লাবিব স্যার আমাদের ইলিয়ানা সুন্দরী হয়েছে তা আমরা জানি।তাই বলে আপনি এভাবে আমাদের বান্ধুবীর দিকে তাকিয়ে থেকে নজর লাগিয়েন না।

মেহেরের কথায় সবগুলো ফিক করে হেসে দিয়েছে। ইলিয়ানাও হেসে দিয়েছে।তবে সেই দশবছর আগের এ্যাটিটিউড বজায় রেখে লাবিব স্যার বললেন,

—স্যারদের সম্মান করতে হয়, অপমান নয়!

লাবিব স্যার উঠে যেতে নিবেন ঠিক তখনই অন্তরা খোঁচা মেরে বলে উঠলো,

—সবাই স্যার হওয়ার যোগ্যতা রাখে না,কেউ কেউ তবুও স্যার হয়ে নিজ ক্যারেক্টারের জন্য অপমানিতই হয়।

লাবিব স্যার চলে যাওয়ার সময় ত্যাড়া লুক দিয়ে যায় ইলিয়ানাকে।তাতে অবশ্য ওর কিছুই যায় আসে না।লাবিব স্যার চলে যেতেই ইলিয়ানা বলে ওঠে,

—জানিস লাবিব স্যার বিবাহিত।ওনার একটা ছেলে আছে

—তাও তো ছ্যাছড়ামি কমেনি।এরকম মানুষ কেমনে যে এতো শ্রদ্ধেয় প্রফেশনে যায় আল্লাহ মালুম

আফরোজার কথায় বন্ধুমহলের সবাই ঠিকঠিক করছে।ইলিয়ানা আকাশের দিকে তাকিয়ে। তাঁরারা ঝিলিমিলি করছে।কতই না সুন্দর লাগছে আকাশটা।ইলিয়ানা ঘাসের ওপরেই সুয়ে পড়ে।আড় চোখে তাকায় মেহের,আফরোজা,অন্তরা।তবে অনন্যা,তাসনিম ইলিয়ানাকে সঙ্গ দিয়েছে। উপভোগ করছে তাঁরায় ভরপুর আকাশের সৌন্দর্যতা।এদিকটায় প্রায় শিক্ষক,স্টুডেন্টরাই বসে আছে। অবশ্য রিইউনিয়নের আয়োজন তো হয়েছেই স্কুল মাঠে। তাঁবুতে থাকবে ওরা। অবশ্য যারা দূরদূরান্ত থেকে এসেছে তাদের অনেকের সাথেই ফ্যামিলি আছে।তবে হাতে গোনা চার-পাঁচজন।

ইলিয়ানার ফোন বেজে ওঠে। রিংটোনের মাধ্যমেই বুঝে ফেলে কে ফোন করেছে। কেননা একমাত্র এই নাম্বারের জন্যই সে রিংটোন আলাদা দিয়েছে।ইলিয়ানা ধড়ফড়িয়ে উঠে অন্য পাশে চলে আসে।এপাশটা অনেকটাই অন্ধকার।

—আসসালামু আলাইকুম,কেমন আছো?

—ওয়ালাইকুমুস সালাম, আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?

—আলহামদুলিল্লাহ।কি করছো?

—কোরিয়া থেকে আজকের ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর ফিরছি।তোমাকে অনেক মিস করছিলাম।তাই দ্রুতই ফিরছি।আমার ফেবারিট ডিশ কি কেউ তৈরি করবে?

ইলিয়ানা ভয় পেয়ে যায়। জুনায়েদ চৌধুরী কোরিয়া গিয়েছেন বলেই তো ইলিয়ানা বাংলাদেশে আসতে পারলো।এখন যদি তিনি আজকেই ফ্লাইটে ওঠেন। তবে নিশ্চিত কালকেই তিনি সিঙ্গাপুর।তাহলে কি সে ইলিয়াস চৌধুরীর রাগান্বিত হওয়ার কারণ হতে চলেছে!ইলিয়ানা বুঝে ফেলে সবকিছু বিগড়ে যাওয়ার আগেই ঠিক করতে হবে তাই বলে,

—ডেড আই ওয়ান্ট টু সে ইউ সামথিং

—হোয়াট বেবি?

—আ’ম ইন‌ বাংলাদেশ। প্লিজ ডন্ট বি এংগ্রি।আই প্রমিস ইউ আই উইল বি ব্যাক আফটার টেন ডেইস

—কবে গিয়েছো?

—আজই এসেছি।

—বেবি কেন এমন করো?তুমি তো জানো আমি তোমাকে নিয়ে চিন্তিত থাকি।আমার শত্রুর কমতি নেই।তাহলে আমায় না জানিয়ে কেন বাংলাদেশে গেলে তুমি?

—প্লিজ ডেড..জাস্ট টেন ডেইস..প্লিজ রাজি হয়ে যাও

—ওকে.তবে আমার যোগাযোগে থাকবে। আর শোনো আনহাইজেনিক খাবার খাবে না এবং নিজের খেয়াল রাখবে

—তুমিও।রাখছি তবে আল্লাহ হাফেজ

—আল্লাহ হাফেজ

ইলিয়ানা কথা বলতে বলতে অনেকটাই এগিয়ে এসেছিলো।তবে পেছনের দিকে যেতে এখন মন চাইছে না। কেননা এদিকটা আরো বেশি সুন্দর।একটু ছোটখাটো পুকুর। অবশ্য এটা অনেক বড় একটা পুকুর ছিলো।তবে এখন ভরাট করা হয়েছে। তবুও পুকুরটা ছোট হলেও সৌন্দর্যতা আছে। পুকুরে নামবার যে সিঁড়িটা সেখানের একেবারে উপরের দিকে ইলিয়ানা বসে। মোবাইলে সময় দেখে নয়টা তিপ্পান্ন। চাঁদটা এখানে থেকে বেশ সুন্দর দেখা যায়।ইলিয়ানার মনে পড়ে সেই দশবছর কিংবা তারও আগে যখন সে স্কুল শিক্ষার্থী তখন সে একটা ব্লগ ছেড়েছিলো,যেখানে শুরুটা ছিলো ‘বয়স বাড়ার সঙ্গে মানুষ নিরবতার প্রেমে পড়ে’।সত্যিই যা এখন ইলিয়ানা উপলব্ধি করতে পারে।

—নির্জনে একাকী কি করছো?

ইলিয়ানা পেছনে তাকায়।আহান স্যার যে এসেছে তা বেশ বুঝা যায়।ইলিয়ানা সামনে ঘুরে নিশ্চুপ বসে রয়।আহান স্যার আবারো প্রশ্ন করেন,

—এখানে একাকী কি করছো?

—প্রেম করছি

—কার সাথে?

—নিরবতার সাথে।

—তোমার বেষ্টু কই?ছেলেটা কিন্তু তোমায় বেশ ভালোই বাসতো। স্ক্রিনশটগুলো তো তেমনই ছিলো

ইলিয়ানার সত্যিই হঠাৎ করে রোমানের কথা মনে পড়ে।সময় তো কম হয়নি।দশবছর যাবৎ সে বিদেশ ছিলো।অতীত তো প্রায় মুছেই গিয়েছিলো।তবে আবারো সে বাংলাদেশে আসলো।এস.এস.সির‌ পরপরই তো জীবন বদলে গিয়েছিলো তার।পরিচয়,নাম, বাসস্থান সব বদলে গিয়েছিলো!

—হয়তো বিয়ে করে নিয়েছে

—তা বললে না তো তুমি বিয়ে করেছো কিনা

—সকালেও‌ একটা কথা বলেছিলাম

—কথা‌ না ঘুরিয়ে সরাসরি বলো না

—করিনি।তা আপনার পছন্দের রমনীর সাথে বিবাহ সম্পন্ন করেছেন?

আহান স্যার আর কিছুই বললেন না। চুপচাপ ইলিয়ানার থেকে দূরত্ব রেখে ওইদিকটায় বসলেন।কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙে নিজ থেকেই বললেন,

—বুঝলে ইলিয়ানা কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনের বিরোধিতা করতে হয়।সময় একটা অনেক বড় জিনিস।তখন সময় আসলো যাকে মনের গহীনে লুকিয়ে রেখেছিলাম সে হারিয়ে গেলো।

—বুঝলাম না।

—তুমি ছোট্ট।বোঝার বয়স এখনো হয়নি তোমার।

আহান স্যারের শীতল কথাগুলোর চেয়ে ”তুমি ছোট্ট” কথাটা যেন মস্তিষ্ক উল্টেপাল্টে দিচ্ছে তার।একজন ছাব্বিশ বছর বয়সী রমনীকে সে বলছে নাকি সেই রমনীটা ছোট ভাবা যায়!ইলিয়ানা কিঞ্চিত রাগ দেখিয়ে বললো,

—আপনি জানেন আমার বয়স কত?ছাব্বিশ বছর দুইমাস।আপনি আমাকে কিভাবে ছোট বললেন!

আহান স্যার হাসে।দশবছর আগেও যে এই মেয়েটা এমনি করেই রাগ দেখাতো।তবে তা শুধু তার প্রতিই।অন্য কারো সাথে কখনো সে ইলিয়ানাকে রাগ দেখাতে দেখেনি। অবশ্য বন্ধু-বান্ধব ছাড়া ইলিয়ানা শুধু তার সাথে রাগ,অভিমান, অভিযোগ করতো।তবে সে বুঝেও যে বুঝতো না। কেননা ইলিয়ানা তখন বয়ঃসন্ধিকালে পা দিয়েছিলো।রঙিন চশমা ছিলো চোখে।ভালো লাগতেই পারে যে কাউকে।তাই বলে যে সে ভালোলাগা/ভালোবাসাটা স্থায়ী হবে তার তো কোনো মানে নেই তাই নয়কি!তাছাড়া সমাজ যে মানতো না তাদের বয়সের বিশাল পার্থক্য।বারো বছরের পার্থক্য কি কম নাকি!

—ইলিয়ানা?

—আপনার বউয়ের সাথে পরিচয় করাবেন না?

ইলিয়ানার কথায় কান্নার সংমিশ্রণ।চোখ দু’টো ছলছল করছে। ভালোবাসার মানুষকে কি অন্য কারো সাথে সহ্য করা যায়?সহ্য করা না গেলেও সহ্য করতে শিখতে হয় কেননা অধিকারবোধ বলতে যে কিছুই নেই ভালোবাসার মানুষটির ওপর তার!

—বিয়ে করেনি

—সত্যি?

প্রফুল্ল কন্ঠে ইলিয়ানা চেঁচিয়ে ওঠে।আহান স্যার মাথা ওপর নিচ করে। চাঁদের আলোয় ইলিয়ানার উজ্জ্বল মুখশ্রী নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করতে থাকে।আহান স্যার আপন মনেই বিড়বিড় করে কিছু একটা বলেন।মুখে তার লেপ্টে আছে হালকা হাসি।

চলবে?

অনুরক্তি এসেছে তোমার শহরে পর্ব-০১

0

#অনুরক্তি_এসেছে_তোমার_শহরে
#পর্বঃ১
#বর্ষা

”বুঝছো বাবু তোমার বাবা আমায় বিয়ে করলে তুমি আমার মতো কিউট একটা আম্মুর ছেলে হতে!তোমার জন্য আমার দুঃখ হচ্ছে বুঝছো”

ইলিয়ানা দূরে দাঁড়ানো বহু বছরের পুরনো প্রেমিক পুরুষের দিকে তাকিয়ে বাচ্চা ছেলেটিকে বললো।বয়স কত হবে ছেলেটার পাঁচ বা ছয়।ইলিয়ানা তো তার প্রেমিক পুরুষটিকে হারিয়েছিলো আরো আগে।তখন হয়তো তার মাঝে কিউটনেস ছিল,তবে সৌন্দর্যতা চোখ ঝাঁজালো ছিলো না।তবে এখন ইলিয়ানাকে একবার দেখলে দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থবার সবাইকেই তাকাতে হবে। সৌন্দর্যতা মাশাআল্লাহ। চোখের নিচের কালো দাগ গুলো আর নেই।আগের মতো গোলুমোলু দেহের অধিকারী এখন আর সে নেই। পারফেক্ট দেহের অধিকারী সুন্দরী রমনী হয়েছে সে।ইলিয়ানা বাচ্চাটাকে আবারো তার দিকে কিছুটা টেনে এনে বললো,

”ঐ ব্ল্যাক টিশার্টের লোকটাই তো তোমার বাবা তাই না?”

”হুম!”

”আচ্ছা বাবু শোনো,আমি তোমাকে অনেকগুলো চকলেট কিনে দিবো তুমি আজ থেকে মাম্মা বলে ডাকবে।ঠিক আছে?”

”এহহ,লাগবে না তোমার চকলেট।আমি আব্বুকে বলে দেবো!”

পিচ্চিটা ছুট লাগায়।তবে ইলিয়ানার প্রেমিক পুরুষটিকে পেরিয়ে আরেকজনের কাছে যায়।সেই লোকটাও ব্ল্যাক টিশার্ট পড়েছে।ইলিয়ানা যখন বুঝতে পারে কিছু একটা গড়বর সে পাকিয়ে ফেলেছে তখন উল্টা দিকে হাঁটা শুরু করে।

পার্টি এরিয়ার দিক থেকে যেতে নিলেই ইলিয়ানা এবার মুখোমুখি হয় ওই বাচ্চার বাবার সাথে।বাচ্চাটা ইলিয়ানাকে দেখেই বলে,

”আব্বু আব্বু এই আন্টিই ছিলো!”

ইলিয়ানা ‘ইয়ার মেনে গালতি কার বেঠি হুঁ ‘এমন একটা এক্সপ্রেশন দিয়ে সালাম দেয় সামনের ব্যক্তিটিকে।লোকটা সালামের জবাব নিয়ে রাগ দেখিয়ে বলে,

”আমার ছেলেকে কি বলেছেন এগুলো?ও বাচ্চা মানুষ। বাচ্চাদের মস্তিষ্কে ভুলভাল ঢুকাচ্ছেন কেন!”

”ও হ্যালো স্যার আমিও তখন বাচ্চা ছিলাম। অবশ্য ওর থেকে ছয় বা সাত বছরের বড় ছিলাম তাতে কি।আপনি আমাকে সেই বয়সে ভালোবাসার মানে শিখিয়েছেন।তো এখন আমি আপনার ছেলেকে কিছু বললেই দোষ লাবিব স্যার!”

”আপনাকে চেনাচেনা লাগছে কে আপনি?”

”চিনতে পারেন নাই!চিনতে না পারারই কথা।হাই,আমি ইলিয়ানা।”

লাবিব স্যার অবাক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ছেলেকে কোল থেকে নামিয়ে ওইপাশে খেলতে পাঠিয়ে দেয়।বলে,

”তোমাকে একদম চেনা যাচ্ছে না।আগের থেকেও অনেক সুন্দরী হয়েছো!”

”হুম জানি।যাইহোক,আসল কথা হলো আমি জানতাম না ওটা আপনার ছেলে।আমি ভেবেছিলাম ও…”

”কার ছেলে ভেবেছিলা?”

”বাদ দেন। রিইউনিয়নে এসেছেন। পুরনো শিক্ষার্থীদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ করেন।চলি!”

ইলিয়ানা চলে আসে।লাবিব স্যার তাকিয়ে থাকে।মনে মনে বলে যে ইলিয়ানা আগের থেকে তোমার এ্যাটিটিউড দ্বিগুণ না না ট্রিপল হয়েছে।ইলিয়ানা লাগেজ নিয়ে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত টেন্টে চলে আসে।পুরনো বন্ধুগুলো সত্যিই আগের মতোই আছে।ইলিয়ানার চোখগুলোর মাধ্যমেই তাকে চিনে ফেলেছে। ঝাঁপিয়ে পড়েছে তার ওপর।সত্যিই ছোটবেলার বন্ধুত্বে ততটা স্বার্থের সন্ধান থাকে না।

—ইলিয়ানা আমাদের সিক্রেটটা বল না ইয়ার কিভাবে এখনো তোর সৌন্দর্যতা ধরে রেখেছিস!

ইলিয়ানা হাসে আয়শার কথায়।মেয়েটার চোখে সে সুন্দরই রইলো।ইলিয়ানার চোখ দুটোই নাকি তাকে বেশি আকৃষ্ট করে!একে একে অনন্যা, তাসনিম,অন্তরা,মেহের,আফরোজ সবার সাথেই দেখা। ইলিয়ানার মনটা মুহুর্তেই প্রফুল্লতায় ভরে ওঠে। বন্ধুত্ব জিনিসটাই এমন।যেখানেই থাকুক না কেন এবং যেমনই মনের অবস্থা থাকুক না কেন,মনটা সকলের সঙ্গে ভালো হতে বাধ্য!গল্পের ভান্ডার খুলে বসেছে ওরা।

—ইয়ার শেষমেশ বিয়ে করছিই।জামাই আমার সদা ব্যস্ত থাকে।তবে এবার শাস্তি স্বরুপ ছেলের দায়িত্ব দিয়ে এসেছি ওর ওপর। অবশ্য শাশুড়ি আম্মু তো আছেনই।(অন্তরা)

—এখানে ইঞ্জয় করতে এসেও মেয়েটার চিন্তায় পাগল পাগল লাগছে। আম্মুর কাছে অবশ্য নিশ্চিতেই রেখে এসেছি।তবুও ভয়ভয় লাগছে।(তাসনিম)

—ভাগ্য ভালো ওয়াইল্ড লাইফ লিড করতে গিয়ে এখনো বিয়ে করেনি।নয়তো এখানে এসেও তোদের মতো চিন্তা চিন্তা মরতাম!(আফরোজ)

—হ,ওইযে মোবাইলের দিকে দেখ।তোর বিএফ কল দিছে।

মেহেরের কথায় আফরোজ দ্রুত ফোন হাতে নেয়। ঠোঁট কামড়ায়।ধরা পড়ে গেছে তাই‌।বিএফের সাথে লুতুপুতু করতে শুরু করে। ইলিয়ানাসহ ওর ফাজিল বন্ধুদল হাসছে। অবশ্য এদের ফাজিল বলা চলে না।এরা তো চঞ্চল।

ইলিয়ানার মোবাইলে কল আসতেই ‘এক্সকিউস মি’ বলে সরে আসে সে।সাইডে দাঁড়িয়ে ফোন রিসিভ করে।ভিডিও কল তাও কনফারেন্সে।একসাথে চার জন চিল্লিয়ে বলে,

”আর ইউ ক্রেজি!হয়াই ডিড ইউ গো টু বাংলাদেশ উইথ আউট টেলিং আস?হ্যাভ ইউ থট হোয়াট উইল হেপেন ইফ আংকেল ফাইন্ডস আউট?”

”ডন্ট ওয়ারি।আই উইল কাম আফটার টেন ডেস!”

ইলিয়ানা কথা বলতে বলতেই আটকে যায় সামনে থাকা লোকটার চাহনিতে।লোকটা যে একদৃষ্টিতে তারই দিকে তাকিয়ে তা সে বেশ বুঝতে পারে।লোকটার চাহনিতে তো কিছু একটা আছে।দম বন্ধকর,গলা শুকিয়ে আসাময় কিছু একটা।ইলিয়ানার হার্টবিট দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে।এটা কি ওর ভ্রম নাকি বাস্তব!

ইলিয়ানা কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে লোকটার সামনে দাঁড়ায়।কল সে কেটে দিয়েছে কখন তা সে নিজেও জানে না।লোকটার সামনে গিয়ে বলে একটা চিমটি কাটেন তো!লোকটা ভ্রু কুঁচকে তাকায়।ইলিয়ানা আবারো একই কথা বলে।

”আউচ,আপনি আমায় চিমটি কাটলেন কেন?”

”তুমিই না বললা!”

”আপনি না মেয়েদের বিশ্বাস করেন না। তাহলে আমার কথায় বিশ্বাস করে আমাকে চিমটি কাটলেন কেন?”

কোনো জবাব আর দেয় না লোকটা।এখনো সেই আগের মতো সৌন্দর্য এবং গম্ভীরতায় সেরাই রয়ে গেলো সে। বাস্তবতায় ইলিয়ানার সাথে তার এতোটা কথা হয়নি যতটা অনলাইন জগতে হয়েছে।পাগলের মতো আচরণ করেছে সে এই লোকটার সাথে।তবে তা এখন ধামাচাপা পড়েছে।নিরবতা ভেঙে লোকটা বললো,

”কি অবস্থা তোমার?”

হাতে চিমটির ব্যথা ভুলে প্রফুল্লতাময় এক হাসি মুখে ফুটিয়ে ইলিয়ানা প্রফুল্লতা নিয়ে বললো,

”বিন্দাস। আপনার?স্যার আমার সাথে আপনার বউয়ের পরিচয় করিয়ে দিবেন না?”

”আলহামদুল্লিলাহ।হুম তা নাহয় দেখা করিয়ে দিবো।তার আগে বলো হাজব্যান্ডকে আনোনি নাকি?”

ইলিয়ানার হাসি আরো প্রশস্ত হয়।লোকটার দিকে কিছু এগিয়ে গিয়ে ধিম কন্ঠে বলে,

”অনেক আগে কাউকে বলেছিলাম,যদি কাউকে জীবনে চাই তবে সেটা একমাত্র সেই,নয়তো অন্য কাউকেই এ জীবনে চাই না”

”ভালোবাসো এখনো আমায়?”

ইলিয়ানার জবাব দেওয়ার পূর্বেই পেছন থেকে অবশ্য কিছুটা দূর থেকে একজন রমনী ডেকে ওঠেন,”আহান স্যার ”

আহান স্যার পেছনে ফেরেন।সামনে ঘুরে ইলিয়ানার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকান।ইলিয়ানা হেসে উল্টো চলে আসে।আহান স্যার তো আগে থেকেই তাকে বলতো যে ইলিয়ানা তোমাকে আমি বিয়ে করতে পারবো না কেননা সমাজ মানবে।তুমি আমাকে ভালোবেসো না। কিন্তু ইলিয়ানা তো ততদিনে পাগলপ্রায় আহান স্যারের প্রতি। অনেকে বলে বয়ঃসন্ধিকালের ভালোবাসা হচ্ছে আবেগ,রঙিন চশমা চোখে থাকার ফল। তাহলে এখনো হয়তো ইলিয়ানার চোখের চশমাটা সরেনি!

চলবে?

জনম জনমে পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

1

#জনম_জনমে
#পর্বসংখ্যা_১০ [অন্তিম পর্ব]
#ইসরাত_ইতি

প্রাসাদের সিংহদুয়ার রুদ্ধ করে দেওয়া হলো। দ্বারের দিকে ছুটতে ছুটতে যেতে থাকা পারু চোখের পানি মুছছে। কানের কাছে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে তার দেবদার বলা সেই কথাগুলো,

“আচ্ছা দুলি একটু মজা করছি,রেগে যাসনা! একটা দৃশ্য কল্পনা কর। ধর তুই পারু। আমি তোর দেবদা। পারিবারিক দ্বন্দ্বে তোর অমন করে অন্য আরেকজনের সাথে বিয়ে হলো। আমি ওভাবে মাতাল হয়ে তোর দুয়ারে গিয়ে চেগিয়ে পরে থাকলাম। তুই শাড়ির আঁচল উড়িয়ে দৌড়ে দৌড়ে এলি, কাঁদতে কাঁদতে। তুই আমার কাছে এসে পৌঁছানোর আগেই সিংহদ্বার বন্ধ হয়ে গেলো।”

তার দেবদা আসেনি, অভিমানী দেবদা আসেনি দোলার কাছে। শুধু অভিমানেই দূর থেকে আরেকটু দূরে চলে যেতে চাইলো। আসেনি দোলার দোরে। তাতে কি? জারিফের স্বার্থপর পারু যাবে। গিয়ে শুধু বলবে,“জারিফ শাস্তি আমরা দু’জনেই পেয়েছি দেখো! আমিও ভালো নেই। তুমি ভেবো না আমাকে ছাড় দেওয়া হয়েছে! ভেবো না।”

আর কি কি বলবে দোলা সাজাতে লাগলো,তবে গিয়ে দেখলো সিংহদ্বারে তালা ঝোলানো। বড় একটা তালা। তবে এখন উপায়?

হাপাচ্ছে দোলা। বাড়ির কাজের লোকেরা আঙিনায় দাঁড়িয়ে ভ্রষ্টাচারিনী দোলার ছটফটানি দেখছে। কিছু মুখে না বললেও মনে মনে ধিক্কার দিচ্ছে দোলাকে। দোলা দাড়োয়ান চাচাকে বললো গেটের তালা খুলতে। দাড়োয়ান চাচা নির্বিকার। কাঁদতে কাঁদতে মুর্ছা যেতে চাইলো দোলা। তখনই তার বৈধ পুরুষ এসে তার চুলের মুঠি ধরলো। ধরবেই তো! স্বাভাবিক! ভ্রষ্টাচারিনীকে শাস্তি দেওয়া উচিত।

টেনে হিচরে শেখ বাড়িতে ঢোকানো হলো পারুকে। পারু শুধু বলতে লাগলো,“মাত্র আধাঘণ্টা। দূর থেকে দেখে চলে আসবো!”

বৈধ পুরুষ অমন মুখপুড়ি,চরিত্রহীনাকে টেনে হিচরে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে। পুরো দোতলা ফাঁকা। আজ স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কেউ ঢুকবে না। সবাই যার যার ঘরে দরজা লাগিয়েছে।

ঘরে ঢুকিয়ে বিছানার উপরে ফেলে ঘরের দরজা বন্ধ করা হলো। পারু কাঁদছে। কাঁদার প্রয়োজন কি এখন? সে গেলেই কি দেবদা সুস্থ হয়ে যাবে?

বৈধ স্বামী ভ্রষ্টাচারিনী স্ত্রীকে শাস্তি স্বরূপ চামড়ার বেল্ট দিয়ে কিছুক্ষণ মা’রলো। কত বড় দুঃসাহস! আজ জন্মের তরে দ্বিচারিতার শখ ঘুচিয়ে দিলো। হাপাচ্ছে সে। ততক্ষণে চুপ হয়ে গিয়েছে দোলা। শরীরের যন্ত্রনা আর টের পেলো না সে। উপুড় হয়ে পরে রইলো। বৈধ পুরুষ এসে চুলের মুঠি ধরে স্ত্রীকে ঘুরিয়ে শুইয়ে দিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো,“এই প্রথম আর এই শেষ। এরপর পরপুরুষের জন্য চোখের পানি ফেলতে দেখলে শক্তি অপচয় করবো না আর। জানে মে’রে বাড়ির আঙিনায় কবর দিয়ে দেবো।”

দোলা নিষ্পলক সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোয়াল চে’পে ধরে বৈধ পুরুষ চেঁ’চি’য়ে ওঠে,“শরীরে স্বামীর গন্ধ নিয়ে মামাতো ভাইয়ের জন্য শোক? এই তোর হয়না? কি কম দিয়েছি তোকে? জবাব দে! জবাব দে!”

জবাব পাওয়ার জন্য শেখ তৌসিফ আহমেদ প্রশ্নটা করেনি। স্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এতটুকু মা’র যথেষ্ট ছিলো।

শেখ বাড়ি নিস্তব্ধ এখন। তৌসিফ বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঘন্টা খানেক সিগারেট ফুঁকতে থাকে। শরীরকে আটকানো যায়,কিন্তু মন? মন কিভাবে আটকাবে তৌসিফ বুঝতে পারছে না। শেখ তৌসিফ আহমেদ জীবিত থাকতে তার বৌকে তালাক দেবে না, তাহলে মানুষ বলার সুযোগ পাবে বৌ দ্বিচারীনি হুলো কারণ শেখ তৌসিফ আহমেদ ব্যর্থ! হয়তো তার ত্রুটি আছে! সে দেবে না তালাক। সে ঐ বৌকেই মানুষ বানিয়ে সংসার করবে। কুমারী ছিলো, শুদ্ধ শরীর ছিলো। মনটা শুধু বেহায়া। ঐ বেহায়া মনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে মনটাকেই ন’ষ্ট করবে তৌসিফ।

রাগ আর প্রচন্ড জেদেও তৌসিফ উত্তেজিত হয়না। এক হাতে মাথার চুল খামচে ধরে,চার নাম্বার সিগারেটে শেষ টান দিয়ে সে বারান্দা থেকে ঘরে ঢোকে।

বিছানায় স্ত্রীর কাছে এগিয়ে যায়। আজ একে একেবারে জব্দ করে তবেই তৌসিফ থামবে। যেন ভবিষ্যতে এমন পাপ করার সাহস না পায়। একটানে শাড়ির আঁচল সরিয়ে হামলে পরে। পারু শুধু সিলিংয়ের দিকেই তাকিয়ে। তার বৈধ পুরুষ তার অবস্থান বুঝিয়ে দিতে তাকে আরো একবার দখল করে নিলো।

সময় গড়ায়। শেখ তৌসিফ তার স্বামীত্ব ফলিয়ে তার স্ত্রীর থেকে সরে গিয়ে আবারও চোয়াল চে’পে ধরে বলে,“হয়নি? নাকি আরো লাগবে? এখনও মামাতো ভাইয়ের কথা মনে পরছে?”

দোলা নিষ্পলক তাকিয়ে আছে ঘরের সিলিংয়ের দিকে।

তৌসিফ দোলার খুলে ফেলা লাল রঙের শাড়িটা তুলে দোলার শরীর ঢেকে, নিজে টি-শার্ট পরতে পরতে উঠে দাঁড়ায়। হন্তদন্ত হয়ে ড্রয়ার থেকে সবধরনের জন্মনিরোধক ওষুধের পাতা ন’ষ্ট করে বিনে ছুঁড়ে ফেলে একটা সিগারেট ধরায়। মন আটকানোর একটা অভিনব উপায় পেয়ে গিয়েছে শেখ তৌসিফ আহমেদ।

সিগারেট টা শেষ করে ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে চলে যায় তৌসিফ।

বিছানায় স্বামীর অত্যাচার আর সম্ভোগের চিহ্ন শরীরে নিয়ে পরে হয় দোলা। আর মেঝেতে পরে রয় শেখ তৌসিফ আহমেদের চামড়ার বেল্ট। যেটা একজন ভ্রষ্টাচারিনীকে শাস্তি দিয়েছে আজ।

★★★

বাড়ির বৌয়ের এমন আচরণ কারোরই সহ্য হচ্ছে না। রাতে খেতে বসে এই নিয়ে বিশদ আলোচনা সভা বসেছে শেখ বাড়ির পুরুষদের মধ্যে। এ বাড়ির মানসম্মান জড়িত,তাই তৌফিকুল ইসলাম ছেলের কাছে জানতে চাইছে তার ছেলে এখন কি করবে। শেখ তৌসিফ আহমেদ সাফ জানিয়ে দিলো সে বৌ তালাক দেবে না,বৌকে মানুষ বানিয়ে ফেলবে।

তৌসিফ বৌকে মানুষ বানাতে কি কি করতে চায় তা কেউ জানতে চাইলো না। রাতের খাবার শেষে তৌসিফ বৌয়ের জন্য প্লেটে খাবার আর একটা মলম নিয়ে নিজের ঘরের দিকে গেলো। শরীরে যতো আঘাত পরেছে সেগুলোতে মলম লাগাবে তৌসিফ আহমেদ। পথভ্রষ্টা হলেও বৌ তো! মেজাজ টা তার রাতে ঠিক হয়েছে খানিকটা। সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন একটু বোঝাবে। এমনিতেও কম মা’র পরেনি গায়ে। অত সুন্দর নরম শরীর, কিভাবে এতো মা’র খেয়েও না চেঁ’চি’য়ে পারলো তৌসিফকে বেশ অবাক করেছে।

দরজার সিটকিনি খুলে ভেতরে ঢুকে দেখে দোলা তখনও বিছানায়। তৌসিফ বেড সাইডের টেবিলে খাবার প্লেট টা রেখে গিয়ে দরজা লাগিয়ে মলম নিয়ে এগিয়ে যায় বৌয়ের কাছে। চোখ বন্ধ দোলার। গা থেকে শাড়িটা সরিয়ে তৌসিফ দেখলো সায়া-ব্লাউজ পরিহিতা অর্ধনগ্ন শরীরে রক্ত লাল আঘাতের দাগ।

মেজাজ তখন পরেই গিয়েছিলো পুরোপুরি, বৌয়ের জন্য খানিকটা দরদও লাগলো তার। ভীষণ শখের বৌ তার। কখনও কোনো মেয়েকে দেখে এক দেখায় তৌসিফের মাথায় বিয়ের ভুত চাপেনি।

সে দোলাকে না ডেকে দরদ নিয়ে মলম আঙুলে নিয়ে দোলার পেটের কাছে আঘাতে লাগিয়ে দিতেই চ’ম’কে ওঠে।

মুহুর্তও লাগলো না তার,দোলাকে আগলে নিয়ে গালে চা’পড় মেরে বলে,“দোলা! দোলা!”

দোলা সাড়া দেয়না। তৌসিফের বুঝতে বাকি নেই দোলা কখনোই আর সাড়া দেবে না। শরীরটা কাঁপছে তার। এসব কেনো! এসব কি! কেনো হলো!

★★★

ক্ষীণ আশা দোলা বেঁচে আছে। দোলার দায়িত্ববান বৈধ পুরুষ অ্যাম্বুলেন্সে দোলার হাত ধরে বসে ছিলো। বাকরুদ্ধ সে।‌ দোলার অর্ধনগ্ন শরীরটা তার স্বামীর কেনা চার হাজারের লাল শাড়িতে মোড়া।

অ্যাম্বুলেন্স থেকে দোলাকে নামানো হলো,ডাক্তার দেখলেন, জানালেন দোলা নেই।

মৃত্যুর কারণ অজানা,শরীরে শুধু আঘাতের চিহ্ন।

দোলার পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে এলো দোলাকে হসপিটালে নিয়ে আসার তিনঘন্টা আগে দোলা মারা গিয়েছে। মৃত্যুর কারণ “কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট!”

দোলার গল্প ফুরিয়ে গেলো। বাকি রইলো দোলার জীবনে বৈধ মানুষ গুলো। তারা শোকাহত হলেন, বিষন্ন মনে দোলার দাফন কার্য সম্পন্ন করলেন। পুলিশ কেস হয়নি,কারন দোলা দোলার স্বামীর হাতে তো মরেনি। রিপোর্টে “কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট” থাকলেও দোলার মৃত্যুর আসল কারণ এই পৃথিবীর কেউ না জানুক। ওটা রহস্য হয়েই থাকুক।

দোলার কবর শেখ বাড়ির পূর্ব পাশের পারিবারিক কবরস্থানে। দোলার শ্বশুর ভাসুর মনে মনে পছন্দ করলো না অমন দ্বিচারীনি বৌয়ের কবর এবাড়িতে হোক। কিন্তু তবুও দোলার কবর স্বামীর বাড়িতেই হলো। এতে শেখ বাড়ির মান সম্মান জড়িত। বাড়ির বৌয়ের কবর অন্যখানে কেনো হবে?

শোক যথাযথ ভাবে পালন হলো দোলার মৃত্যুর। দোলার দায়িত্ববান স্বামী দোলার দাফনের দিন থেকে এতিম খাইয়েই যাচ্ছেন। এখন অবধি মাথা থেকে টুপিটা খোলেনি, সিগারেট হাতে নেয়নি।

আত্মহত্যা মহাপাপ। পাপী দোলার এই মহাপাপ টা করতে হলো না। তার প্রতি সৃষ্টিকর্তা সদয় হলেন। অত্যন্ত সুখের মৃ’ত্যু ছিলো ওটা।

বৌ মরে গেলো,আত্মীয়তা ফুরিয়ে গেলো। শেখ বাড়ির ছোট ছেলে বিপত্নীক হলেন। দোলার কবরের পাশে লাগানো পাতাবাহার গাছগুলো ডালপালা ছাড়ার আগেই শেখ বাড়ির মুরব্বিরা শেখ তৌসিফ আহমেদের জন্য মেয়ে খুঁজতে লাগলেন। এবার তারা নিজেরা পছন্দ করবেন, ভালো মেয়ে।

শেখ তৌসিফ আহমেদ বিষন্ন ভঙ্গিতে সরাসরি বারণ না করলেও সময় চাইলেন। সম্ভবত তিনি ভুলে গিয়েছেন সময়ের দরকার হয়না স্বামী হতে,একদলা মাংস পিন্ড হাতের কাছে পেলে আর শারীরিক সক্ষমতা থাকলেই স্বামী হওয়া যায়।

সময় লাগে তো স্ত্রী হতে, এতগুলো দিন নিজের মনকে মানিয়েও যা হতে পারেনি দোলা, বেঁচে থাকলে হয়তো পারতো, যদি তৌসিফের পরিকল্পনা মাফিক তৌসিফের বাচ্চা তার পেটে আসতো।

কবরস্থান নতুন। দোলার কবর রাজমিস্ত্রীরা মার্বেল পাথরের দেয়ালে ঘেরাও দিয়ে দিতে এসেছেন। শেখ তৌসিফ আহমেদ জীবিত থাকতে বৌকে অলংকারে আবৃত করে রাখতে চাইতেন,মরে যাওয়ার পর বৌয়ের কবরটাও পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা করলেন। স্বামী হিসেবে তিনি যে দায়িত্ববান।

রাজমিস্ত্রীরা তাদের কাজ করছে, শেখ তৌসিফ তার ঘরের বারান্দা দিয়ে তা দেখছেন, একদৃষ্টে। কাজের মেয়ে এসে তৌসিফের হাতে একটা নোংরা কাগজ দিয়ে বলে এটা ময়লার ঝুড়িতে পেয়েছে সে,দেখে মনে হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাগজ।

কাগজটা আসলেই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো, একটা চেক তাতে রয়েছে সাত লক্ষ টাকা। যার বিনিময়ে সে তার বৌকে পেয়েছিলো, তবে শুধু শরীরটা। মন নয়। কারন তার বৌ ছিলো যে ভ্রষ্টাচারিনী।

★★★

দোলা মরলো,সব ল্যাটা চুকে গেলো।

গল্পে তো দেবদা মরে যায়। বাস্তবে একটু ভিন্নই থাক। পারু মরুক। দেবদারা বেঁচে থাকুক।
আর এই পৃথিবীর সব দুধে ধোয়া তুলসী পাতা মানুষ গুলো বেঁচে থাকুক। যারা খুব গুছিয়ে জীবন যাপন করতে পারে, দোলার মতো অগোছালো নয়, হটকারী নয়, অসহায় নয়, স্বার্থপর নয়,চরিত্রহীনা নয় সবশেষে যারা দোলা নয়।

পারু মরেছে, পৌষ গিয়ে মাঘ পেরিয়ে ফাল্গুন এসেছে। শেখ বাড়ির ছোট ছেলের বৌয়ের কবর ফুলে ফুলে ভরে গিয়েছে। দোলার স্বামী নিয়ম করে সপ্তাহে একবার পরিষ্কার করায়, দায়িত্ব থেকে।

আচ্ছা দোলার স্বামীর কথা বাদ দিই। চলুন পারুর দেবদার কাছে যাই। সে কি করছে জানতে ইচ্ছে করছে না?

★★★

অ্যাক্সিডেন্টের পরে তিনমাস সময় নিয়ে দোলার দেবদা সুস্থ হলো। গল্পের মতো দেবদা কখনও জানতে পারেনি পারু তার কাছে আসবে বলে ছুটছিলো। দেবদার জানার প্রয়োজন তো নেই, সে জানলে তার কষ্ট বাড়তো বৈ কমতো না। রাগও হতো। দেবদা জানেনি ভালো হয়েছে।

আজকাল দেবদা দেখে শুনে বাইক চালায়। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে সে জীবনের মানে বুঝতে পারলো, এবারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার টা ছিড়লো না সে। চাকুরী টা গ্রহণ করলো, জীবনে ফিরলো দেবদা। নিজেকে বদলে ফেললো। শুধু বদলাতে পারলো না পারুর প্রতি তার ভালোবাসা,কমাতে পারলো না কিছুতেই।

পারু ম’রেছে তা সে জেনেছে। তবে তাতে কি? পারুর শরীরটা ম’রেছে। ঐ শরীরের সাথে দেবদার কি লেনা দেনা?

সে তো ভালোবাসে ঐ নামটিকেই,তার দুলিকে। অফিস শেষে ফাঁকা সময়ে ছুটে যায় জারিফ দুলির পছন্দের যায়গাগুলোতে। রাতে নিস্তব্ধ মফস্বলে হেটে বেড়ায়। হাটতে হাটতে ফজিলাতুন্নেসা ছাত্রী নিবাসের পেছনের গলিতে যায়। আজও গেলো,শেফা ফার্মেসির সামনে কুকুর ডাকে। সে তাড়িয়ে দেয়। ঘাড় ঘুরিয়ে তিনশো চারের কামরার জানালার দিকে তাকায়। তাকিয়ে আজ জারিফ অবাক হলো,তার বুকে কাঁপন ধরলো। তিন তলার রুমটাতে আলো জ্বলছে আজ।

দেবদার শরীর কাঁপছে। থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে। জানালা খুলে যায়। দেখে এক অন্য মেয়ে জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সম্ভবত ঐ রুমে নতুন এসেছে। তার কানেও ফোন চে’পে ধরে রাখা।

জারিফ মেয়েটিকে দেখে। ঠিক তখনই গলিতে একটা বাইক এসে থামে। একটা ছেলে বাইক থেকে নেমে ফোন কানে চেপে ধরে কথা বলছে, ছেলেটার দৃষ্টি তিনশো চারের কামরায়।

জারিফ দুজনকেই দেখে। তারপর স্মৃতিচারণ করে। জারিফের একবার ইচ্ছে করলো ওদের থামিয়ে দিতে,বলতে,“অনিশ্চয়তা নিয়ে স্বপ্ন বুনতে নেই।”

কিন্তু সে থামালো না। দেখুক না স্বপ্ন, মন ভাঙবে বলে স্বপ্ন দেখা বারণ নাকি!

কিছুক্ষণ দেখে জারিফ চলে যায়। কাল হয়তো আর আসবে না এখানে। এদেরকে বিরক্ত করা যাবে না,স্বপ্ন দেখতে দিতে হবে,যে স্বপ্ন ভাঙবে বছর চারেক পরে।

রাত করে হলেও জারিফ বাড়িতে যায়, আজও গিয়েছে। পরপর কলাপসিবল গেট খোলার শব্দ হয়, বন্ধ হয় গেট। জারিফ ভেতরে ঢুকে দেখে জাহিদা আনাম খাবার নিয়ে বসে আছে। জারিফ ফ্রেশ হয়ে বাধ্য ছেলের মতো মায়ের সামনে বসে রাতের খাবার খায়। কি কি বাজার লাগবে তা জানতে চায়। খেয়ে হাত ধুয়ে উঠে পরে। তারপর বলে,“তোমার তেইশতম পাত্রী রিজেক্টেড মা। পছন্দ হলোনা!”

জাহিদা শোনে। জারিফ নিজের ঘরের দরজা খোলা রেখে বিছানায় গিয়ে উপুড় হয়ে শোয়। মাথাটা ঢুকিয়ে দেয় বালিশের নিচে। বালিশ দিয়ে চেপে ধরে মাথা।

জাহিদা আনাম ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে রোজ অর্ধেক রাত ছেলের চাপা আর্তনাদ শোনে। খুব ক্ষীণ স্বরে। কিছুক্ষণ পর থেমেও যায়। জারিফ ঘুমিয়ে যায়। তার ছেলে তাকে শাস্তি দিচ্ছে,রোজ।

সকালে ঘুম থেকে ওঠে জারিফ, নাস্তা খেয়ে মায়ের প্রেসক্রিপশন নিয়ে নেয় ওষুধ আনবে বলে। রোজ খুব মন লাগিয়ে অফিস করে,অফিস শেষে ছুটে যায় আবারও তার দুলির পছন্দের যায়গা গুলোতে।

মাঝে মাঝে জারিফের খুব ইচ্ছে করে দোলার কবরটা একটু দেখতে। সবসময় না। মাঝে মাঝে। তবে সে নিজেকে সংযত করে নেয়। পারু পরস্ত্রী তাই। ওটা তো পরস্ত্রীর কবর। দুলি তো তার মনেই আছে,যার কখনো দাফন হয়নি। এইতো এখনও জারিফ স্টাফ কোয়ার্টারের দিঘির পাড়ে বসে আছে। তার পারুকে সাথে নিয়ে। তবে পাশে নয়,মনে।

সূর্যি মামা পশ্চিমে ঢলে পরলো,আজান হলো,জারিফও তার দুলিকে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। আর তারপর?

তারপর আর কি! ইতির গল্প ফুরালো,নটে গাছটিও মুড়ালো।

~~~~~সমাপ্ত~~~~~

জনম জনমে পর্ব-০৯

0

#জনম_জনমে
#পর্বসংখ্যা_৯
#ইসরাত_ইতি

জারিফের হাত থেকে অরিনকে কোনোমতে ছাড়িয়ে নেন জবা আর জেসমিন। জারিফ পুনরায় তে’ড়ে গিয়ে বলে,“ফের আমার আশেপাশে দেখলে থা’বড়া মেরে চেহারার মানচিত্র চেঞ্জ করে ফেলবো।”

জাহিদা আনাম জারিফকে ধাক্কা মে’রে সরিয়ে দিয়ে ধ’ম’কে ওঠে,“কি হচ্ছে কি জারিফ! এসব কোন ধরনের অ’স’ভ্যতামি!”

অরিন এতটাই আ’ত’ঙ্কি’ত হয়ে পরেছে যে সে কান্না অবধি করতে পারছে না। মায়ের পেছনে গিয়ে লুকিয়ে আছে।

জারিফ মায়ের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,“কি মেয়ে পছন্দ করো মা আমার জন্য? দেখলেই তো থুথু দিতে ইচ্ছে করে। তুমি না ভালো মা? আরো বেস্ট কাউকে খুঁজে বের করো।”

জাহিদা আনাম নির্বাক। জারিফ বিছানা থেকে শার্ট টা উঠিয়ে গায়ে চাপিয়ে ফোন আর বাইকের চাবি নেয়। তারপর হন্তদন্ত হয়ে সদর দরজার দিকে যেতে যেতে বলে,“তোমার পছন্দ করা এই পাত্রী রিজেক্টেড। বিকেলে এসে যেনো ওর ঐ বদন না দেখি!”

★★★

অগ্রহায়ণের শুরুতে,প্রকৃতি ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদল করে নিজের। দুপুরে কাঠ ফাটা রোদ,রাতের বাতাস নাতিশীতোষ্ণ। তবে ভোরের দিকটা আশ্চর্য রকমের ঠান্ডা। গাঁয়ে চাদর না টেনে উপায় নেই, কখনো কখনো এই পাতলা চাদরেও শীত মানতে চাচ্ছে না যেন। ঘরের জানালাটা রাতে খোলাই ছিলো, ভোর রাতের মৃদু মন্দ বাতাস ঢুকে ঘরের শোভা বর্ধনে ব্যবহৃত ফুলদানিতে থাকা প্লাস্টিকের টিউলিপ গুলোকে নাচাচ্ছে। ঘরের বাতি নেভানো থাকলেও বেলকনি থেকে আসা আলোতে দোলা সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে শক্ত করে আকড়ে ধরে রেখেছে স্বামী নামের মানুষটা। লোকটা হয়তো বুঝতে পেরেছে তার বৌ পালাতে পারে,তবে লোকটা জানে না দোলারা বাস্তবতা থেকে পালাতে পারেনা। আর সেটা যদি নিজের দোষে হয় তবে তো কথাই নেই! দোলার দোষ, দোলার ভুল,দোলার অন্যায়, দোলার পাপ, দোলার মহাপাপ। সবকিছু দোলারই ছিলো। দোলা সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে অলিখিত একটা লিস্ট করে ফেলে সবকিছুর।
নাম্বার এক: দোলা একজন ত্রুটিপূর্ণ মহিলার গর্ভে জন্ম নিয়েছে।
নাম্বার দুই: দোলা নিষিদ্ধ মানুষকে ভালোবেসে ফেলেছে।
নাম্বার তিন: একজন মায়ের অনুভূতির দাম দিতে গিয়ে ঐ মানুষটাকে ভেঙেছে।
নাম্বার চার: দোলা নিঃস্বার্থ হতে গিয়ে স্বার্থপর হয়েছে।

আরো আরো আরো লম্বা এই লিস্ট টা, দোলা আর এগোতে পারলো না সামনে। এতো এতো দোষ দোলার। সে তুলনায় দোলার এই শাস্তিটা এখন ঠিক লাগছে দোলার কাছে। দোলা মনে মনে ভাবলো এমনই চলুক, ওর এই অনূভুতিহীন, ভালোবাসাবাসিহীন, প্রেমহীন, দরদ বিহীন ছোঁয়া ছুয়ি এই কদিনে সয়ে গিয়েছে। শাস্তি টা তেমন কঠিন নয়, সামান্য কষ্ট হয়, দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করা যায়। এই স্পর্শ গুলো দোলা শাস্তি হিসেবেই চায়, যদি কখনও দোলা এই স্পর্শের মাঝে দরদ,স্নেহ,টান খুঁজে পায় তাহলে যে মুখপুড়ি দোলার শাস্তি হলো না।

তৌসিফ নড়েচড়ে উঠে হাতের বাঁধন দৃঢ় করে। দোলার হাসি পেলো, দোলা কি পালাবে? না। বাস্তবতা থেকে তো একদমই না। এই যে পাশে শুয়ে থাকা মানুষটা,এই মানুষটা একটা আস্ত বাস্তবতা বৈ কিছুই না।

বাস্তবতার প্রসঙ্গে দোলা ভাবতে থাকলো,স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে হয়তো বাস্তবতা হচ্ছে দেওয়া এবং নেওয়া। এইতো রাতে দোলার পা দু’টোতে এক জোড়া দামী পায়েল পরিয়ে দিলো শেখ তৌসিফ আহমেদ। এটা হচ্ছে দেওয়া। তারপর যখন দোলার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চাইলো,দোলা অনুরোধের সুরে বলেছিলো,“আমার না আজ একটু মাথা ব্যথা করছে। আজ থাক!”
লোকটা শুনলোই না, সে দিয়েছে, এখন যে তার নেওয়ার পালা। নয়তো হিসেব বরাবর হবে কি করে ? শুধু কন্ঠে একটু দরদ ঢেলে বলেছিলো,“মাথা‌ ব্যথা একদম ভ্যানিশ করে দেবো জান।”

দোলা মানতে না চাইলে মেজাজ দেখালো, চ’ড় থাপ্পড় খাওয়ার আগেই দোলা রাজি হয়ে গেলো।

দোলার মাথা ব্যথা রাতে আসলেই ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছিলো,কারন ব্যথা টা উপলব্ধি করার মতো অনূভুতি অবশিষ্ট ছিলোনা। প্রত্যেকবার অনূভুতি শূন্য হয়ে পরে থাকে।

গলার কাছে পুরুষালি উষ্ণ অধরের স্পর্শে দোলা বুঝতে পারে তার জীবনের বাস্তবতা জেগে উঠেছে। আবারও, আরও এক দফা দেওয়া নেওয়ার হিসেব শুরু হবে এই ভোররাতে,দোলা অভ্যস্ত হয়ে উঠছে এতে।

কিন্তু না,এবার লোকটা যেন একটু সদয় হয়েছে দোলার প্রতি। ঘুমঘুম কন্ঠে জানতে চাইলো,“রাতে শরীর খারাপ লাগছিলো বললে। এখন ঠিক আছো?”

আটঘন্টা! আট ঘন্টা পরে লোকটা আগ্রাসী স্বামীর চরিত্র থেকে বেরিয়েছে, হঠাৎ তার মনে পরেছে তার বৌয়ের শরীর ভালো নেই।

দোলার নীরবতা ভাঙতে তৌসিফ আর একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে বলে,“বলো জান‌। এখন মাথা ব্যথা করছে?”

দোলা অস্ফুট স্বরে বলে,“নাহ।”

দোলার চুলের মধ্যে আঙুল বিচরণ করে তৌসিফের। আঙুল গুলো কিছুক্ষণের ব্যবধানে অবাধ্য হয়ে দোলার স্পর্শকাতর স্থান ছোঁয়। ঐ যে শুনলো,দোলার শরীর এখন ঠিক আছে। আরো একবার আস্কারা পেলো স্বামীত্ব ফলাতে। কারন এটাই বাস্তবতা। আর কার জীবনে হয় কি না দোলা জানে না, তবে দোলার জীবনে হচ্ছে। বাস্তবতা যা এড়ানোর উপায় নেই।

★★★

শেখ বাড়ির ছোটো ছেলের বৌ দোলার কাজ কর্মের প্রশংসায় পঞ্চমুখ শ্বশুর বাড়ির সবাই। কাজের লোক থাকা সত্ত্বেও সবকিছু হাতে হাতে করে। দোলা যে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে এসব করে তা জানে না কেউই। বারোদিন পেরিয়েছে বিয়ের। তিনদিন ব্যাপী রিসিপশন শেষ হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে,বাড়ি থেকে মেহমান সব চলে গিয়েছে। বাড়িটা আগের মতোই ফাঁকা। তৌসিফ সদরের অফিসে বসা শুরু করেছে। দিনটা দোলার ইউরার সাথে কাটে,রাতটা কাটে স্বামীর সাথে দেওয়া নেওয়ার হিসেব করে। দোলার প্রাত্যহিক রুটিন এখন থেকে এটাই। মাঝে মাঝে দোলাদের বাড়ি থেকে দোলার ফুপু,চাচীরা আসে দোলার সুখ দেখতে,নির্লজ্জের মতো। দোলা বাক্স খুলে খুলে তাদেরকে তার সুখ দেখায়। দামী পায়েল,দামী ব্রেসলেট, নতুন গয়না। আরো কত সুখ দোলার। আলমারি ভর্তি সুখ দোলার। অন্যের কাছ থেকে ধার করে শাড়ি পরা দোলার আলমারি ভর্তি শাড়ি, থুড়ি সুখ। ওয়্যারড্রোবে আছে তিন চার রঙের পাতলা ফিনফিনে দামী নাইটি। যেগুলো মাঝে মাঝে রাতে স্বামী আদেশ দিলে পরে স্বামীর সামনে যেতে হয়। দোলার ইচ্ছে করে ফুপু চাচীদের সেসবও দেখিয়ে দিতে। গয়নার ডিজাইন দেখে দোলার চাচী ফুপুরা বলে তাদের জামাই কতো রুচিশীল! নাইটিগুলো দেখলে বলবে তাদের জামাই কত শৌখিন!

কথাটা ভাবতে ভাবতেই দোলা হেসে ওঠে। রান্নাঘরে আনমনে দাঁড়িয়ে ছিলো দোলা। একা একা পাগলের মতো কিছুক্ষণ হাসার পর টের পায় দু’চোখে পানি জমেছে । এতো ব্যস্ত জীবনেও হুট করে কখনো কখনো ঐ মানুষটার মুখটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। কানে শুনতে পায় কেউ বললো,“চলনা একটু স্বার্থপর হই।”

এটা কি ঠিক? ঠিক না তো। সেদিন তৃপ্তির সাথে ফোনালাপের সময় শুনেছে মানুষটা রোগা হয়ে গিয়েছে এই কদিনে। দোলার খুব ইচ্ছা করেছিলো মামীকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করতে কেনো এই হাল? সে মা হয়ে কি করছে এখন?

★★★

রিসিপশনে পুরুষ বলতে জারিফ একাই। এই অফিসে জারিফ এর আগেও দুবার এসেছে। শেষবার এসেছিলো জুলাইয়ে, ইন্টারভিউ দিতে। চাকরিটা তখন কনফার্ম ছিলো না।
এতো মহিলাদের মধ্যে জারিফের সংকোচ বোধ হচ্ছে কিছুটা। কিন্তু সে পাত্তা না দিয়ে ফোন ঘাঁটতে থাকে। সময় গড়াতেই তার ডাক পরে। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ায় সে।

তার সামনে এই অফিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক,মুখ হাসি হাসি করে তাকিয়ে আছে তারই দিকে। জারিফ পাথুরে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার কি করা উচিত এখন? হাসির বিনিময়ে হাসি ফিরিয়ে দেওয়া উচিত?

লোকটা জারিফের দিকে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দিয়ে বলে,“চারমাস ধরে পেন্ডিংয়ে ছিলেন। নিন আপনার অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার।”

জারিফ একদৃষ্টে তার হাতের অ্যাপয়েনমেন্ট লেটারটার দিকে তাকিয়ে। লোকটা বলতে থাকে,“এখন কেমন বোধ করছেন? চাকরি টা পেয়ে কেমন লাগছে?”

জারিফ লোকটার কথায় গা দুলিয়ে হাসতে থাকে। লোকটা রীতিমতো অবাক, হতবাক। জারিফ লোকটাকে আরো অবাক করে দিয়ে অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার টা ছিঁড়ে ফেলে হাসতে হাসতেই বলে,“জঘন্য লাগছে।”

★★★
দেবদাসের এই গল্পটাতে পারুও চেষ্টা করছিলো মেনে না নিলেও মানিয়ে নিতে, চলছিলো সবকিছু চলার মতোই। দুলির দেবদা কখনও চন্দ্রমুখীর কাছে যায়নি,আর না এসেছে পারুর সিংহদুয়ারে।দুলির দেবদা কখনো তার সিংহদুয়ারে এসে মুখ থুবড়ে না পরলেও পারুর গল্পের শেষ পরিচ্ছেদ লেখার সময় হয়ে এলো।

“কফিইই”
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে তৌসিফ গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে। রান্নাঘরে ব্যস্ত থাকা দোলার ঘোর কে’টে যায়। সে ভুলেই গিয়েছিলো তৌসিফ আজ বাড়িতে। স্বামীর আদেশ পেয়ে দোলা তাড়াহুড়ো করে কফির পানি ফুটিয়ে নেয়।

কফি বানানোর সময় ফারিন বললো,“একি দোলা! তৌসিফ তো এক চামচ চিনি খায়। তুমি তো চিনি দিয়েই যাচ্ছো!”

ফারিনের কথায় দোলার অন্যমনস্ক ভাব কেটে যায়,হাতে কফির মগটা তুলে ঠান্ডা গলায় বলে,“অসুবিধে নেই। উনি এই কফি ছুঁয়েও দেখবে না।”

ফারিন দোলার কথা বুঝলো না। দোলা হেঁটে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। ফারিনকে বলা দোলার কথার মানে হলো কফি ছিলো একটা ইশারা। এই ভরদুপুরে শেখ তৌসিফ আহমেদের তার বৌকে চাই। ডাইনিং টেবিলে বসা বাবা ভাইয়ের সামনে বৌকে সরাসরি ডাকতে পারছিলো না। তাই কফি চেয়েছে। দোলা এই কদিনে তার স্বামীর ইশারাও শিখে গিয়েছে। দোলা কি লক্ষি বৌ!

ঘরে ঢুকে বেড সাইডের টেবিলে কফির মগ টা রাখতেই তৌসিফ দোলাকে বলে ওঠে,“দরজার লাগিয়ে এসো।”

★★★

অ্যাপয়েন্ট লেটার ছিঁড়ে জারিফ শহর চষতে বেরোয়। ছুটে যায় তার পছন্দের জায়গাগুলোতে,তার দুলির পছন্দের জায়গা গুলোতে। ইদানিং জারিফ বাইক নিয়েও বেরোয় না। হাঁটতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে সে।
সকালে ঘুম থেকে ওঠে, মাকে দেখিয়ে সুন্দর ভাবে নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে যায়,ভালো লাগলে দুয়েকটা টিউশনি করায়। ছকবাঁধা জীবন ভালো লাগে না জারিফের। ছুটে যায় কুটুম বাড়িতে খেতে। রাতে ফজিলাতুন্নেসা ছাত্রীনিবাসের পেছনের গলিতে যায়। রুম নাম্বার তিনশো চারে এখনো কোনো ছাত্রী ওঠেনি। কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে মশার কামড় খেয়ে রাত করে বাড়ি ফিরে মাকে দেখিয়ে রাতের খাবার খায়। ঘরের দরজা খোলা রেখে বিছানায় গিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে নিজের মাথাটাকে বালিশের নিচে ঢুকিয়ে নেয়। তবে জারিফ এখন আর কাঁদে না। ওভাবে ঘুমাতে ভালো লাগে তাই ঘুমায়।

হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে জারিফ তার স্টুডেন্টের বাসার সামনে যায়,সেখানে তার বাইকটা পার্ক করে রাখা,আজ অনেকদিন পরে বাইকে উঠবে সে, উদ্দেশ্য উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাইওয়েতে ঘুরবে। ভবঘুরে জীবনে আজ একটু অ্যাডভেঞ্চার করবে সে।

★★★

দোলা সিটিকিনি তুলে স্বামীর দিকে ঘুরে তাকায়। না আজ ভরদুপুরে ডাকার কারন দেওয়া-নেওয়া নয়,কারন অন্যকিছু!

তৌসিফ নির্বিকার চিত্তে হাতের ফোনে থাকা জারিফ আর দোলার ছবি গুলো থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দোলার দিকে তাকায়। দোলা ততক্ষণে বুঝে গিয়েছে কি ঘটেছে। সে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। তারপর ধীরে ধীরে মেঝেতে বসে, হাঁটু মুড়ে। তৌসিফ ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলে,“তো এজন্য প্রথমে মত দাওনি বিয়েতে। তো তারপর কেনো দিলে?”

দোলা শুকনো গলায় কাঠ কাঠ বলে,“আপনার টাকা দেখে। আপনি বড়লোক দেখে রাজি হয়েছি।”

তৌসিফ হাসে। কিছুক্ষণ হেসে দোলার সামনে হাঁটু ভেঙে বসে বলে,“তোমরা মফস্বলের মেয়েরাও খুব চালু। এতো গভীর প্রনয় ছিলো অথচ আমি খোঁজ লাগিয়েও কিছু জানতে পারলাম না। অবশ্য আমার এসবে কিছু যেতো আসতো না। বিয়ে তোমাকে করতামই।”

দোলা কোনো জবাব দেয়না। শুধু ফিচেল হাসে। তৌসিফ হাতের ফোন থেকে ছবিগুলো ডিলিট করে ফেলে খুবই শান্ত ভঙ্গিতে দোলাকে বলে,“বিয়ের দিন সন্দেহ হয়েছিলো যদিও। এনিওয়ে, ওসব নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। তুমি শেখ তৌসিফ আহমেদের বৌ এটাই চিরন্তন সত্যি। এবং তৌসিফ আহমেদ খুব ভালো করে জানে কিভাবে বৌ পালতে হয়! আজ থেকে বাড়ির বাইরে যাওয়া,কোনো বান্ধবীদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ। পরিক্ষার সময় আমার সাথে যাবে।”

দোলাও সাথে সাথে তাচ্ছিল্যের সহিত জবাব দেয়,“জো হুকুম মেরে আকাহ।”

তৌসিফ উঠে দাঁড়াতেই দোলার ফোন বেজে ওঠে, দোলা উঠে ফোনটা তুলে হাতে নিতেই তৌসিফ বলে,“কলটা রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দাও।”

দোলা তাই করে। ওপাশ থেকে তৃপ্তির কান্নাভেজা গলার আওয়াজ ভেসে আসে,“দুলি রে! জারিফ ভাইয়ের অ্যা’ক্সি’ডেন্ট হয়েছে!”

★★★

দুলির দেবদা মুখ থুবড়ে তার সিংহদুয়ারে এসে পরেনি। তবে দেবদার ঘোর বিপদ অবশেষে হয়েইছে। হয়তো তার দুলির কারনেই।

খবরটা পেয়ে দোলা বিকট চিৎকার দিয়ে ওঠে। চিৎকারে তালা লেগে যায় শেখ বাড়ির সবার কানে। ছুটে আসে সবাই,কি হয়েছে জানতে চায়।

দোলা ত’ড়পাতে থাকে। শেখ তৌসিফ আহমেদ শান্ত চোখে দেখতে থাকে দোলাকে।

সত্যিটা জেনে পুরো শেখ বাড়িতে ছি ছি পরে গেলো। বাড়ির বৌ পরপুরুষের জন্য চোখের পানি ফেলছে? কি পাপ! এতো মহাপাপ! আগে হলে দোররা মে’রে মে’রে মেরেই ফেলতো!

দোলা কারো কথা গাঁয়ে মাখলো না, সে একটুও কার্পন্য করলো না তার দেবদার জন্য গলা ফাটিয়ে কাঁদতে।

শেখ তৌসিফ আহমেদ বৌকে নিয়ন্ত্রণের আনার সম্পূর্ণ চেষ্টা করলো, টেনে হিচরে ঘরে ঢোকালো। দোলা শুধু বলেই যাচ্ছে,“আমাকে একটি বারের জন্য যেতে দিন! অল্প কিছু সময়!”

তৌসিফ শান্ত ভঙ্গিতে বলে,“না! তুমি আমার স্ত্রী!”

দোলাকে ধমকাতে লাগলেন তার ভাসুর, শ্বশুর। দোলা যেন সেসব কিছু গায়েই মাখলো না। সে ছুটে পা বাড়াতে চাইলো সামনে। পেছন থেকে বৈধ পুরুষ তার পথরোধ করলো। দোলা উন্মাদের মতো কেঁ’দে কেঁ’দে বলে,“অল্প কিছু সময়!”

_তুমি আমার স্ত্রী দোলা। ভুলে যেওনা।

_হ্যা জানি। জানি তো। বিশ্বাস করুন,আপনি রাতে সময়মতো আপনার স্ত্রীকে আপনার বিছানায় পাবেন। শুধু অল্প কিছু সময়ের জন্য যেতে দিন।

কি ভয়ংকর কথা বলে ফেললো বাড়ির বৌ শ্বশুর ভাসুরের সামনে। ছিঃছিৎকারে গুমোট হয়ে উঠলো পরিবেশ। মুখ ফিরিয়ে যে যার ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো, তৌসিফকে বুঝিয়ে দিয়ে গেলো বৌয়ের রাশ টানতে। নইলে শেখ বাড়ির মান ধুলোয় মিশে যাবে।

দোলা নিজের হাত ছাড়াতে ব্যস্ত, আর্তনাদ করেই যাচ্ছে,“দয়া করে যেতে দিন।”

_না। তুমি আমার স্ত্রী।

_দয়া চাইছি! এ জীবনে আর কখনও কিছু চাইবো না আপনার থেকে। শুধু এক ঘন্টা! আর কখনও আপনার বাড়ি থেকে বেরোবো না আমি, আমার সীমা হবে আপনার রান্নাঘর আর বিছানা।
হাতজোড় করে তৌসিফকে দোলা।।

তৌসিফ নির্বিকার ঘরের ভেতরে টেনে ঢোকানোর চেষ্টা করে দোলাকে।

দোলা ধা’ক্কা দিয়ে পা বাড়ায় সামনে। তৌসিফ শান্ত স্বরেই বলতে থাকে,“শোনো দোলা,আজ যদি এ বাড়ি থেকে আমার অনুমতি ব্যতীত তুমি বের হও তাহলে দুনিয়ার কাছে তুমি ভ্রষ্টাচারী হবে ‌।”

দোলা শুনলো,তবে পা থামালো না। হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে ছুটতে সিঁড়ি ভাঙে। ছুটতে থাকে সিংহদুয়ারের দিকে। তার দেবদা এলো না! সে যাবে। যাবেই!

তৌসিফ দোতলায় শান্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে,ফারিনের দিকে তাকিয়ে বলে,“ঘরের ভেতর যাও। আজ এখানে যাই হয়ে যাক না কেনো আমি না বলা পর্যন্ত ঘর থেকে বেরোবে না,কেউই।”

ফারিন চলে যায় দেবরের আদেশে। তৌসিফ পকেট থেকে ফোনটা বের করে গেট দাড়োয়ানকে কল দেয়, তারপর অত্যন্ত শান্ত কিন্তু দৃঢ় স্বরে বলে,“গেটে তালা দাও!”

চলমান…..