Tuesday, June 24, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 271



হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-০৬

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ৬

সিরাতের মাথার পেছনে হাত রেখে বাসের সাথে চে’পে ধরে সাফিন সিরাতের লালরাঙা ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিতে সিরাতের বন্ধ চোখদ্বয় নিমিষেই কেঁপে উঠলো। রাগে চোখ বড়-বড় করে তাকিয়ে সাফিনকে ধা’ক্কা মেরে সরিয়ে দিতে হেসে উঠলো সাফিন। হুট করে সাফিনের এ রকম আচারনে জুবায়ের হা হয়ে গিয়ে মাথা নিচু করে নিজের সিটে গিয়ে বসে কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে জানালার কাঁচ সরিয়ে দিয়ে বৃষ্টিভেজা অন্ধকার রাতের দিকে তাকিয়ে গান শুনতে লাগল।
সিরাত সাফিনের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁ’স’তে-ফঁসতে বললো।
— কোনো ম্যানার্স নেই আপনার! অচেনা অজানা নিরী’হ একটা মেয়ের সাথে এ রকম ব্যাবহার করতে? আপনি আমাকে কতটুকু চিনেন হ্যা? আপনার মতো বা’জে আর অ’স’ভ্য লোক আমি দুটো দেখেনি।
সাফিন ভ্রুদ্বয় কি’ঞ্চিৎ ভাজ করে সিরাতের দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো।
— তুমি নিরী’হ! হাসালে, শাহনেওয়াজ সাফিনের গালে চর মেরে এখন নিজেকে নিরীহ বলে দাবি করছো বেব্বি।
সিরাত রাগ নিয়ে সাফিনের দিকে তেরে আসতে নিতে সাফিন ভয় পাওয়ার মতো করে সিট থেকে মাথাটা সরিয়ে খানিকটা পিছিয়ে যেতে সিরাত দাঁতে দাঁত চে’পে বললো।
—আপনাকে তো আমি দেখেই নেব মিস্টার।
— শাহনেওয়াজ সাফিন।
নিজের নামটা বলে সাফিন সিরাতের দিকে ঝুঁ’কে যেতে সিরাত এবার পিছিয়ে গেল।
বললো।
— আপনার নাম জানতে চাইনি ওকে।
সিরাতের কথা শুনে একহাতে বাসের সাথে ঠেকিয়ে দিতে সিরাত বাসের সাথে লে’প্টে গেলে বাঁকা হাসি হেসে সাফিন সিরাতের দিকে চোখ মেরে বললো।
— আমিও তোমাকে দেখেই নেব মিস সিরাত। কয়েকটা ঢোক গি’লে সাফিনের দিকে ভয়ের সহিত তাকিয়েও কন্ঠ দৃঢ় করলো সিরাত। বললো।
—কিহ!কি দেখে নিবেন আপনি হ্যা? আবারও অস’ভ্যতামি করবেন তাইতো? আপনাদের মতো ছেলেদের কাজটাই তো এমনটা। আপনার সাথে কথা বলতেও এখন ঘৃ’না করছে আমার। আপনি একটা চরিএহী’ন লোক।
সিরাতের নিমেষহীন কথাগুলো শুনে সাফিনের মাথায় র’ক্ত উঠে গেল যেন। রাগে পকেট থেকে বন্দুকটা বের করে সিরাতের বুক বরাবর তাক করে রাগান্বিত কন্ঠে বললো।
—আর একটা বা’জে কথা বললে আমার এই হাতের বন্দুক আর তোমার জীবন, এখানেই শেষ। জানোইতো একজনকে গু’লি করে বস্তায় বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছি।
সাফিনের রক্তি’ম চোখদ্বয় দেখে ভয়ে গু’টিয়ে গেল সিরাত। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে তাঁর। চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরতে সাফিন বিরক্ত হলো। গাঢ় শ্বাস টেনে বন্দুকটা সরিয়ে মাথা হেট করে মৃদুস্বরে বললো।
—এই ন্যা’কা কান্না থামাও তোমার। এসব ন্যা’কামো আমাকে দেখাতে আসবে না। নয়তো আবারও হাত পা বেঁধে যেখান থেকে নিয়ে আসছি সেখানেই রেখে চলে আসব বুঝলে।
সিরাতের সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো। যেন প্রানটা একটুর জন্য বেঁচে গেল তাঁর। আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বসে থাকলো সে।
.
ভোর হওয়ার মৃদু আলো জানালার কাঁচ ঘেঁ’ষে এসে সাফিনের চোখেমুখে এসে বারি খেয়ে গেলে হাই তুলে উঠতে নিতে বুকের উপর ভারি কিছু অনুভব করে শীতল চাহনিতে তাকাল সেদিকে। তাঁর বুকের উপর ঘুমিয়ে আছে সিরাত। সিরাতের গোলাপিরাঙা মুখশ্রীর উপর ভোরের স্নিগ্ধমাখা আলো এসে ছেঁয়ে পরাতে তাঁর চেহারার মাধুর্য যেন সদ্যফোঁটা ফুলের মতো লাগল সাফিনের কাছে। আপনা-আপনিই ঠোঁটের কোনে হাসি এসে ভর করলো সাফিনের। বুকের ভিতর চিনচিন ব্যা’থা অনুভব করতে পারলো সে।
সিরাতের লালরাঙা ওষ্ঠের উপর তাঁর হিমশীতল হাত ছুঁয়িয়ে দিতে নড়েচড়ে উঠলো সিরাত। হাসলো সাফিন। পিছনে তাকিয়ে সবগুলো মেয়ে ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে সামনের সিটে বসা জুবায়েরের উদ্দেশ্যে ধীর কন্ঠে বললো।
—জুবায়ের ঘুমে তুমি?
— না স্যার বলুন? জেগে আছি আমি।
—সামনে সিনএজির ওখানে বাস থামাতে বলো ড্রাইভারকে।
হুট করে মাঝ রাস্তায় সাফিন বাস থামাতে বললে জুবায়ের সাফিনের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকালো। বললো।
—স্যার শহরের ভিতরে পৌঁছে গেছি আমরা প্রায়। এখন বাস থামাতে বলব!
সাফিন বাঁকা হাসি হাসলো।বললো।
—সময় হোক সব বলব। আপাদত যেটা বলছি সেটা করো।
জুবায়ের মাথা চুলকে বললো।
—ওকে স্যার।
বাস থামিয়ে দিতে সাফিন সিরাতের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাসলো। বললো।
—কিউট বেব্বি। চলো তোমাকে নিয়ে এখন একটা গেম খেলা যাক। যে গেমের মাস্টার মাইন্ড হব আমি আর গুটি হবে তুমি। শাহনেওয়াজ সাফিনের গালে চর মারার এটাই হবে তোমার শা’স্তি।
সাফিন সিরাতকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাঁ’জাকোলা করে নিতে জুবায়ের তাঁর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল।
সাফিন বাঁকা হাসি হেসে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—৫০০ মেয়ের ভিতরে একজনের অস্তি’ত্ব সরিয়ে ফেলো জুবায়ের। লিস্ট থেকে সিরাতের নাম সম্পর্ন রুপে মুছে ফেলো। আর হ্যা,হেডলাইনটা যেন আর কিছুক্ষণ পরই কানে এসে পৌঁছায়। এটার মাধ্যমে নির্বাচনে আমাদেরকে কেউ আঁচও করতে পারবে না।
জুবায়ের হেসে মাথা ঝাঁকল। বললো।
—জ্বী স্যার।
.
রুমাল দিয়ে মুখটা ভালোভাবে ঢেকে নিয়ে সিরাতকে নিয়ে সিএনজিতে উঠে বসলো সাফিন। সিএনজি চলতে শুরু করলে তাঁর ঝাঁ’কুনিতে সিরাতের ঘুম ভে’ঙে গেলে পিটপিট করে তাকালো সে। সাফিন মৃদু হেসে চোখ মেরে বললো।
—গুড মর্নিং বেব্বি। ইউ আর লুকিং জাস্ট ওয়াও৷ কি কিউট তুমি। উম্মাহ।
চোখ-মুখে বিরক্তিতে ছেঁয়ে গেলে নিজেকে সাফিনের বুকের উপর অনুভব করে দ্রুত উঠে বসলো সিরাত। চারপাশে এক নজর চোখ বো’লাতে চমকে উঠলো সে। দ্রুত বলে উঠলো।
—আমার ব্যাগ, আমার ব্যাগ কোথায়? আমার ব্যাগের ভিতরে ফোন জামা-কাপড় আমার মায়ের গহনা সবকিছু রয়েছে। আমার ব্যাগ কোথায়?
সিরাত সাফিনের দিকে তাকিয়ে তাঁর শার্টের কলার ধরে বললো।
—এই আপনি,আপনি সরিয়েছেন তাইনা? ভালোয়-ভালোয় বলছি আমার ব্যাগ আমাকে ফেরত দিন।
সাফিন সিরাতের হাতের উপর হাত রেখে তার শার্টের কলার ছাড়িয়ে দাঁতে দাঁত চে’পে বললো।
—তোমার ওই দু পয়সার ব্যাগ নিয়ে আমি কি করব? আজব! আমি কোনো ব্যাগ নেইনি।
কেঁদে উঠলো সিরাত। দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদতে থাকলে সাফিন পুরো থতমত খেয়ে গেল। সামান্য একটা ব্যাগের জন্য মেয়েটা এত কাঁদাছে কেন? কথাটা ভেবে শীতল কন্ঠে বললো।
— সামান্য ব্যাগের জন্য এত কান্না! মনে হচ্ছে তোমার জীবন চলে গেছে এমন করছো তুমি। হেসে উঠলো সাফিন।
সিরাত রাগ নিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—ওটা হয়তো সামান্য কিছু,কিন্তু ওতে আমার মায়ের শেষ সৃতি মায়ের রেখে যাওয়া গহনা ছিল। আর আমি সেটাও হাঁড়িয়ে ফেললাম আজ। সিরাত কাঁদতে থাকলে সাফিন চুপ হয়ে গেল। যদিও কোনো ব্যাগ সে দেখেনি তবুও সিরাতকে শান্ত করার জন্য সিরাতকে নিজের দিকে ফিরিয়ে তাঁর লাল হয়ে ওঠা গালে হাত রেখে ধীর কন্ঠে বললো।
—ট্রাস্ট মি সিরাত আমি কোনো ব্যাগ নেইনি। তবে হ্যা, ব্যাগটা আমি খুঁজে দেব তোমাকে। এবার তোমার ন্যা’কা কান্না থামাও প্লিজ বেব্বি।
সাফিনের প্রথমের কথাগুলোতে সিরাত গ’লে যেতে চাইলেও শেষের কথাগুলো শুনে রাগে নাক লাল হয়ে উঠলো তাঁর। সাফিনের হাতদুটো সরিয়ে দিয়ে কান্নাভেজা চোখে সকালের মৃদুমধুর শহর দেখতে লাগল। যদিও সে জানে না কখনো তাঁর ব্যাগ ফিরে পাবে কিনা? কিন্তু এখন তাঁর নিজেকে নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। তোহাকেও খুঁজে বের করতে হবে তাকে। তোহার দেওয়া ঠিকানাটা তো ফোনেই সেভ করে রেখেছিল সে৷ সেটাও হাঁড়িয়ে ফেলেছে এখন।
.
সিএনজি এসে বাসটপে দাঁড়াতে সিরাত মুখ থেকে হাত সরাতে নিতে বাসটপের সামনেই কয়েকজন পুলিশের সঙ্গে তোহাকে কথা বলতে দেখে খুশিতে চোখ দিয়ে পানি ঝরে পরলো সিরাতের৷ সাফিন সিরাতের দিকে তাকিয়ে তাঁর চোখেমুখে খুশি দেখে দৃষ্টি অনুসরণ করে তোহাকে দেখে ধীর কন্ঠে বললো।
— মনে হচ্ছে তোমার ঠিকানায় পৌঁছে গেছো তুমি?
সিরাত হেসে সিএনজি থেকে নেমে পরতে চটজলদি সাফিন সিরাতের হাতটা শক্তহাতে ধরে নিতে সিরাত সাফিনের দিকে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল।
—হাত ছাড়ুন আমার।
হাসলো সাফিন। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—যাচ্ছো যাও। কিন্তু কালকে রাতে তোমার সাথে যা-যা হয়েছে সবকিছু নিজের মেমোরি থেকে মুছে ফেলো। কোনো কিছু ব্লা’স্ট হলে বুঝে নিবে সেদিনই তোমাকে হাত-পা বেঁধে অন্ধকার রুমে নিয়ে আঁটকে রাখব। তুমি নিশ্চয়ই কালকের খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরে গেছো শাহনেওয়াজ সাফিন কি পারে আর কি না পারে।
সাফিনের গম্ভীর কণ্ঠের রেশে ঢোক গি’লল সিরাত৷ ভয়ে সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো তাঁর।
চোখের সামনে থেকে সো-সো শব্দে সিএনজিটা চলে যেতে সিরাত ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে।
.
শাহনেওয়াজ ভিলার সামনে গাড়ি এসে থামাতে ভিতর থেকে সিকিউরিটিরা দৌঁড়ে এসে দরজা খুলে দাঁড়াল। গ্যারেজ থেকে ঠিক টাইমে গাড়িটা নিয়ে চলে এসেছে সাফিন।
বাড়ির ভিতরে গাড়ি প্রবেশ করার সঙ্গে- সঙ্গে ভীতর থেকে আমেনা বেগম দৌঁড়ে আসলেন।
সাফিন গাড়ি থেকে নামতে তাঁর র’ক্তে জ’মা’ট বাঁ’ধা শার্ট আর হাতে ব্যান্ডেজ করা দেখে কেঁদে উঠলেন তিনি৷ সাফিনকে আঁকরে ধরে আঁচল দিয়ে সাফিনের নাকমুখ মুছে দিয়ে কান্নারত কন্ঠে বললেন।
— তুই কি আমাকে শান্তি দিবি না সাফিন? এক তুই আরেক তোর বাপ। সারাটাজীবন আমাকে টেনশনের উপর রাখিস। আমিকি মানুষ না? আমার কথার কি কোনো দাম নাই তোর? তোর বাপ নাহয় তাঁর মর্জিমতো চলাফেরা করে। তোকে তো আমি এই রাজনীতির পথে দেখতে চাইনি। তুই কেন তোর বাপের পথে গেলি?
সাফিন মৃদু হেসে নিজের মাকে জড়িয়ে ধরলো। বললো।
—আম্মা, কাঁদছো কেন তুমি! দেখো তোমার ছেলের এইসব হালকা গু’লিতে কিচ্ছু হয় না। হাত ঘেঁষে বেড়িয়ে গেছে গু’লি৷ তোমার ছেলে একদম ফিট আছে দেখো।
আমেনা বেগম কেঁদে উঠলেন। বললেন।
— মায়ের মন আব্বা। মা তো আমি৷ সারাক্ষণ আ’তঙ্কের ভিতর থাকি তোর কিছু হয়ে গেল নাতো? তোর কাছে যেটা সামান্য মনে হয় ওটাই আমার কাছে বড়কিছু।
—আমার ছেলে সাফিন। বাপ কা বেটা। কিচ্ছু হবে না ওর। আমার একমাএ ভরসার আলো আমার ছেলে।
মোস্তফা সাহেবের কন্ঠ শুনে পিছু ঘুরে তাকালেন আমেনা বেগম৷ সাফিন হাসলো। চোখ মেরে বললো।
—ইয়াহ ড্যাড৷ সবটাই তোমার উপর গিয়েছি৷
— স্টাচু। এক পা নড়বি না সাফিন। আমার নাতিবউ আনতে পারলি না আবার বলিস বাপের মতো গেছিস! তোর বাপতো তোর আম্মাকে ৯/১০ এ পড়ে যখন তখন তুলে এনে বিয়ে করেছে৷ আর তুই ২৩ বছরের দা’ম’রা হয়েও পারলি না নাতি বউর মুখ দেখাতে।
নিজের নানু আজাদ সাহেব লাঠি হাতে এগিয়ে আসতে-আসতে কথাগুলো বললে হেসে উঠলো সাফিন। ভ্রু জাগিয়ে বললো।
— বিয়ে তো আমি করব না ইয়াংম্যান। আগে নির্বাচনটা শেষ হোক।
আজাদ সাহেব নিজের ছেলে মোস্তফার দিকে তাকিয়ে বললো।
— এ তোর ছেলে মোস্তফা? তোর নাক ডোবাবে এ। মেয়ে খোঁজা শুরু কর। আমি কিছু জানিনা আমি এক সপ্তাহের মধ্যে আমার নাতি বউ দেখতে চাই৷
মোস্তফা সাহেব হাসলেন। সাফিনের কাছে এসে সাফিনের কাঁধে হাত রেখে বললেন।
— সাফিনের বিয়ে হবে খুব ধূমধাম করে। তুমি চিন্তা করো না আব্বা। এবার ভিতরে চল সাফিন। ফ্রেশ হ গিয়ে৷ অনেক ধকল গেছে তোর উপর দিয়ে।
সাফিন হেসে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে-ঢুকতে শার্টটা খুলে দিতে মোহন শার্টটা নিয়ে নিল। আমেনা বেগম রান্না ঘরে চলে গেলেন। বাড়িতে কাজের লোকের অভাব না থাকা সর্তেও নিজের হাতের রান্না করায় একটা আলাদা ভালোলাগা থাকে। আর সাফিনও তাঁর হাতের রান্না ছাড়া খেতে চায় না।
সাফিন উপরে উঠতে নিতে কালো রাঙা কোর্ট পরিহিত একটা লোক খোরাতে-খোরাতে নিচে নামলে সাফিন তাঁর দিকে ভ্রু জাগিয়ে তাকালো।বললো।
—ওয়েট, তুমি কে? আগে দেখিনি তো বাড়িতে। আম্মা নতুন ওয়াসম্যান রেখেছো নাকি বাড়িতে?
লোকটা কিছু বলার আগেই আমেনা বেগম টেবিলে খাবার সাজাতে-সাজাতে বলে উঠলেন।
— আরে না তোর চাচ্চু আসছে বিদেশ থেকে কালকে। বাহিরে গেছে তাই দেখতে পাসনি এখন। বিদেশে ওনার বাড়ির রান্না-বান্না করতেন ইনি। এ বাড়িতেই থাকবে তোর চাচ্চু যে কয়দিন আছে।
সাফিন লোকটার দিকে ধীর চাহনিতে পরখ করে উপরে চলে গেল।
.
—জান তোকে কত খুঁজেছি জানিস তুই? আমি পা’গল হয়ে গেছিলাম পুরো। শেষমেশ পুলিশের কাছে গেছি।
সিরাত মৃদু হাসলো। মাথা ভার হয়ে আছে তাঁর। তোহা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে লাইট অন করে দিল। পরিপাটি গোছালো রুমটা দেখে হাসলো সিরাত। বললো।
—বাহ দোস্ত, তোর রুমটাতো জোস।
তোহা চোখ মেরে বললো।
— আরে আমার কলিজাটা তুই আসবি তাইতো এত গোঁজগাছ করলাম আমি। আচ্ছা তুই এখনও বললি না তুই কই গেছিলি।
চুপ করে গেল সিরাত। সাফিনের লাস্ট কথাগুলো কানের কাছে বেজে ওঠাতে ভয়ে ঢোক গি’লল সে৷ তোহা মৃদু হেসে বললো।
— আচ্ছা যাইহোক, পরে বলিসক্ষন। এখন যা ফ্রেশ হয়ে আস।
তেহা দরজা লক করে দিয়ে আলমারি থেকে সুতি সেলোয়ার-কামিজ বের করে সিরাতের হাতে দিয়ে হেসে বললো।
— উফ সিরাত। যা ফ্রেশ হয়ে আস জান। বিকালে শপিং করবনে তোর জন্য। এখন এটা পরে আস আমি খাবার বারছি একসাথে খাওয়া যাবে দুজনে।
তোহা রান্না ঘরে চলে গেলে সিরাত ধীর পায়ে ওয়াশরুমে চলে গিয়ে ঝর্নাটা ছেড়ে দিয়ে তাঁর নিচে হাঁটু ভা’জ করে বসে পরলো। চোখ বেয়ে পরতে লাগল একরাশ জমে থাকা কান্নার রেশ।
.
— মেয়েটাকে নজরে-নজরে রাখো জুবায়ের৷ একনজরও যেন হেরফের না হয়।
সাফিনের গম্ভীর কণ্ঠস্বর শুনে জুবায়ের বললো।
—কোন মেয়েটাকে স্যার৷ ওই বাসের মেয়েটাকে?
হাসলো সাফিন। ধীর চাহনিতে জুবায়েরের দিকে তাকিয়ে বললো।
—সিরাত।
জুবায়ের হাসলো বললো।
—সামথিং রং মনে হচ্ছে স্যার।
বাঁকা হাসি হাসলো সাফিন । বললো।
— সবকিছু রং।
জুবায়ের হাসলে দরজার আড়ালে থাকা অবয়েবটা সরে গেলে হেসে উঠলো সাফিন।
— খেলাটা নাহয় তোমরা শুরু করেছো৷ আর তাঁর ইতি ঘটাবে এই শাহনেওয়াজ সাফিন….

চলবে…….

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-০৫

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো। 🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ ৫

#অতীত‌‌।
—বস আজকে নতুন একটা পাখি পেয়েছি। মনে হয় বিয়ে থেকে পালিয়ে এসেছে শহরে। নতুন মনে হচ্ছে এখানে।গাঁয়ে বিয়ের বেনারশী এমনকি হাতে থাকা ব্যাগেও কিছু সর্ন পাওয়া গেছে। বাসটপ থেকে তুলে এনেছি। ওকে নিয়ে ৫০০ জন ডান। এবার আপনি পার্মিশন দিলেই বিদেশে পাচার করা যাবে।
অন্ধকার ঘরটাতে কালো রাঙা শার্ট পরিহিত লোকটা দেয়ালের সাথে হাত ঠেকিয়ে হেসে উঠলো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—গুড জব তুহিন। মেয়েটার জ্ঞান আছে নাকি এখনও অজ্ঞা’ন?
—ভিতরের রুমে আছে। চলুন দেখে আসবেন।
লোকটা অন্য হাতে থাকা সিগারেটটাতে একটা টান দিয়ে তাঁর ধোঁয়া অন্ধকার রুমটাতে উড়িয়ে দিয়ে হেসে উঠলো। বললো।
—এবার দেখা যাবে মন্ত্রী সাহেব, কিভাবে এই মেয়ে গুলোকে বিদেশে পাচার করা থেকে আটাকান। হাহাহা।
.
শ্রাবন রাতের বৃষ্টিভেজা কান্নায় ভিজে উঠেছে আজ শহর। ক্ষনে-ক্ষনে আকাশের গ’র্জনপাত কানের কাছে এসে বারি খেয়ে যেতে হুশ ফিরল সিরাতের৷ মাথাটা কেমন ভার হয়ে আছে তাঁর। পিটপিট করে তাকাতে চারপাশে বিদঘু’টে অন্ধকার দেখে রীতিমতো ভয় পেয়ে গেল সিরাত।
—এটা কোথায় আমি?
ভয়ের সহিত চারপাশে এক নজর চোখ বোলা’লে শুধু আবছা কালোয় ঢাকা অন্ধকারের দেখা মিলতে হতা’শ হলো সে। তবুও সাহস যুগিয়ে যখন উঠতে নিল, তখন নিজেকে বাঁ’ধা অনুভব করলো। চমকে উঠলো সে। হুট করেই কান্না এসে ভর করলো চোখের কোনে। হাত-পা এমনকি মুখটাও বাঁধা অবস্থায় নড়তেও পারছে না সিরাত। কোনো ভাবে একটু মো’ড়া>মো’ড়ি করাতে নিজের পাশে আরও কয়েক জনের জ্ঞানহী’ন শরীরের অনুভব করতে পেরে আরও ভয় পেয়ে গেল সিরাত৷ তাঁর মানে সে একা নয়,আরও অনেকে রয়েছে এখানে। ভয়ে কয়েকটা ঢোক গিল’ল সিরাত।
তাঁর যতটুকু মনে আছে সে,বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে বাসে উঠেছে আর বাস থেকে নেমে তোহাকে ফোন করেছিল। তাঁরপর নাকের কাছে মিষ্টি একটা স্মেল অনুভব করলো। আর কিছু মনে করতে পারলো না সে।
কয়েকজনের পায়ের আওয়াজ অনুভব করতে কান পেতে রাখল সেদিকে৷ এদিকেই আসছে হয়তো। ভয়ে নিশ্বাস ঘন হয়ে আসলো সিরাতের। বুক চি’রে একরাশ কান্না বেড়িরে আসতে চাইছে তাঁর।
হুট করে দরজা খোলার আওয়াজ আসাতে দ্রুত চোখ বন্ধ করে নিয়ে অজ্ঞান হওয়ার ভান ধরে থাকলো সিরাত। সমস্ত শরীর কাঁপ’ছে তাঁর।
হলুদরাঙা লাইটারের আলো চোখেমুখে ছেয়ে যেতেও দাঁতে দাঁত চে’পে চোখ খিঁ’চে বন্ধ করে রাখলো সে।
—কি জিনিস এনেছিস রে তুই। এটাকে পাচার করতে পারলে তো কথাই নেই। সাহেব খুব খুশি হবেন।
—এবার খুশিতো বস।
—খুশি মানে,খুব খুশি।
চোখ বন্ধ করে নিজেকে নিয়ে গম্ভীর কণ্ঠের ভারি-ভারি কথাগুলো শুনে যেন কান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে সিরাতের৷ খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে সে কিডন্যাপ্ট হয়েছে। বন্ধ চোখদ্বয় বেয়ে নোনাজল ঝরে পরতে থাকলো তাঁর।
.
—জুবায়ের বাড়িটাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলো লোক লাগিয়ে। আরও লোক আনার ব্যাবস্থা করো দরকার পরলে।
সাফিনের গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে জুবায়ের মাথা নিচু করে বললো।
—স্যার সবদিক থেকেই ঘিরে ফেলা হয়েছে। জানা নেই ভিতরে কতজন অসহা’য় মেয়ে রয়েছে? কিন্তু নিশ্চয়ই পা’লের গো’দাগুলো এখনও ভিতরেই আছে ।
হেসে উঠলো সাফিন। বললো।
—নির্বাচনের আগে মন্ত্রীর লে’জে পা দিতে আসছে আবার।ভেবেছে এসব করে মন্ত্রীর ফেস লস করবে সবার সামনে। এই মুখোশের আড়ালের লোকটা হয়তো জানেনা মন্ত্রীর পিছনে তাঁর বাঘ রয়েছে। এই শাহনেওয়াজ সাফিন যতদিন বেঁচে আছে ততদিন হাজার চেষ্টা করলেও ড্যাডের টিকিটিও করতে পারবে না কেউ। এ্যা’টা’ক হিম। একটাকেও ছারবে না সব কটাকে গু’লি করে উড়িয়ে দেবে৷ কালকে সকালের সেরা হেডলাইন হওয়া চাই।
হাসলো জুবায়ের।
.
একসাথে কয়েকটা গু’লির শব্দ কানের কাছে বিক’ট ভাবে পৌঁছাতে কেঁপে উঠলো সিরাত। মুখের ভিতরে থাকা কাপরটার কারনে কাঁদতেও পারছে না ঠিক করে। অনবরত পানি গড়িয়ে পরছে শুধু চোখ বেয়ে।
—আল্লাহ, এ আমি কোথায় ফেঁ’সে গেলাম। রক্ষা করো তুমি আমাকে।
বাঁধা পা দুটো কিছুক্ষণ ছাড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টা করতে থাকলো সে।
.
—বস মেয়েগুলোকে এখনই এখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। অনুমান করতে পারছি বাড়িটা পুরো চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে মন্ত্রীর ছেলে।
—ড্যা’ম ইট, এই শাহনেওয়াজ সাফিনকে আমি দেখে নেব। ওর জীবনের বিনা’শ না দেখা পর্যন্ত আমার শান্তি হবে না। দ্রুত মেয়েগুলোকে ওঠানোর ব্যাবস্থা কর। আমি যাচ্ছি এখান থেকে। ধরা পরে গেলেও ভুলেও যদি আমার নাম নিয়েছিস তো সাফিনের হাতে গু’লি না খেলেও আমার হাতে ঠিক খাবি। রিমেম্বার দ্যাট। দ্রুত হাত চালা। বাকিদের ইনফরমেশন কর। আমি S.R.K কে জানাচ্ছি।
কালোরাঙা অ’বয়বটা দেয়াল টপকে কোনোমতে বেড়িয়ে গেলে গলা শুকিয়ে গেল তুহিনের। মাএ দশ পনেরোজন লোক নিয়ে ৫০০ অজ্ঞা’ন মেয়ে এই পুরোনো বাড়ি থেকে বের করা অতটাও সহজ কাজ নয়।এখন নিজের জীবন রক্ষা করাটাই শ্রেয় মনে করলো তুহিন। বাকিদের মেয়েগুলোকে বের করতে বলে চাঁদর দিয়ে মুখ ঢেকে দেয়াল টপকাতে যেতে সাফিন গু’লি ছুঁ’ড়ে দিতে তুহিনের পায়ে গু’লি লাগলেও পাল্টা গু’লি সাফিনের দিকে তাক করলে সাফিনের হাত ঘেঁ’ষে গু’লিটা বের হয়ে যায়। বৃষ্টির পানির সাথে সাফিনের শরীরের র’ক্ত মিলেমিশে একাকার হওয়ার পরেও তুহিন দেয়াল টপকানোর আগেই সাফিন আরেকটা গু’লি ছুঁ’ড়ে দিতে এবার অন্ধকারে ডিরেক্ট তুহিনের পিঠ বরাবার লেগে যেতে বৃষ্টির কাঁদা মাখা পানিতে পা ঢলে পরে গেল তুহিন।
সাফিনের হাতে গু’লি লাগাতে জুবায়ের ছুটে আসলো দ্রুত।ভয়ার্ত কন্ঠে বললো।
—ওহ গড, স্যার আপনার ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন ইমিডিয়েটলি। চলুন গাড়িতে চলুন নয়তো বড় সাহেবের কানে একবার কথাটা গেলে…
জুবায়ের পুরো কথাটা শেষ করার আগেই সাফিন বাঁধ সেধে রাগ নিয়ে বললো।
—আমাকে ছাড়ো, লোকটাকে দেখো। এসব ছোট খাটো গু’লি’তে শাহনেওয়াজ সাফিনের কিচ্ছু হয় না। পাশ ঘেঁষে বেড়িয়ে গেছে। আগে দেখো এ বেঁচে আছে কিনা? ভিতরের সবকটাকে ধরে নিয়ে এসে গাড়িতে তুলে দেও।
—স্যার ভিতরের সবকটা ধরা পরে গেছে। অলরেডি গাড়িতে তুলে দিয়েছি সবকটাকে। এতক্ষণে মোহন ওদেরকে নিয়ে চলে গেছে। মেয়েগুলোকে বের করে বাসে তুলছে এখন। ৫০০ মেয়ে কিডন্যাপ্ট করেছে এরা। ভাবা যায় কি ডেঞ্জা’রাস!
— ওরা যদি চলে ডালে-ডালে তাহলে শাহনেওয়াজ সাফিনও চলে পাতায়-পাতায়। এবার দেখো জা’নো’য়া’র’টা বেঁচে আছে কিনা?
জুবায়ের তুহিনের কাছে গিয়ে বৃষ্টিতে ভেজা কাঁদায় মাখা ঘাসের উপর হাটু গেঁ’ড়ে বসে মাথার সাথে বেঁধে রাখা টর্চটা তুহিনের দিকে ধরে উল্টো হয়ে থাকা তুহিনকে সোজা করে শুয়িয়ে দিতে বৃষ্টির পানির রেশে তুহিনের কাঁদায় মাখা চেহারাটা ধুয়ে মুছে গেলে সাফিন ভ্রু জাগিয়ে এক নজর তুহিনের কালো রাঙা চেহারার দিকে তাকাল।
জুবায়ের তুহিনের নাকের কাছে হাত নিয়ে সাফিনের দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বললো।
—স্যার এ তো ম’রে গেছে।
সাফিন বিরক্ত হলো। হাতে থাকা বন্দু’কটা দিয়ে নিজের চুলের উপরে জমে থাকা পানি ঝাড়িয়ে বললো।
—উফ সিট, মাই ব্যা’ড লাক। কিন্তু একে দেখে মনে হচ্ছে না রিয়াল কার্ল’পিট এ হবে। আমার মনে হচ্ছে এই খেলার রিয়াল মাথা এখানে আসেইনি। তবে একজন পালিয়েছে নিশ্চিত।
.
গাড়িতে না উঠে মেয়েগুলোকে প্রটেক্ট করার জন্য সাফিন বাসে উঠে বসলো। পিছু ফিরে প্রত্যেকটা মেয়ের দিকে তাকাতে মা’য়া হলো তাঁর।মোটামুটি অনেকেরই জ্ঞান ফিরেছে।তবে হাত-পা বাঁধার কারনে কেমন মিয়িয়ে গেছে তাঁরা।
জুবায়ের বাসে উঠে সামনের সিটে বসে পরে বললো।
—স্যার মেয়েগুলোকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল। তাই এই অবস্থা।
—সবগুলো মেয়েকে বাসে তুলেছো তো ঠিকঠাক ভাবে? জুবায়ের পিছু তাকিয়ে এক-এক করে গুনতে থাকলে ৪৯৯ তে এসে থেমে গেলে সাফিন জুবায়েরের দিকে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দ্রুত বাস থেকে নেমে পরলো।
বৃষ্টির উষ্ণ’তা সমস্ত শরীর বেয়ে গড়িয়ে পরতে থাকলো তাঁর। এলোমেলো ভেজা চুলগুলোতে ঝাড়ি দিয়ে অন্ধকার রুমটাতে প্রবেশ করতে পুরোনো দরজাটাতে লা’থি দিতে দরজাটা ভে’ঙে গেল।
ভয়ে গুটি-শুটি হয়ে পুরোনো ড্রামের পিছনে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বসে ছিল সিরাত। সমানে কেঁদে চলেছে সে৷ বাকি মেয়েগুলোকে নিয়ে যাওয়ার সময় সুযোগ বুঝে অনেক কষ্টে ড্রামের পিছনে এসে লুকিয়েছিল সে।
অন্ধকার ঘরটার চারদিকে এক পলক সাই দিল সাফিন। পকেট থেকে ফোনটা খুঁজতে নিয়ে না পেতে মনে পরলো ফোনটা বাসেই ফেলে এসেছে সে। বিরক্তি নিয়ে আশেপাশে পা দিতে কাঁচের কিছু ভা’ঙার আওয়াজ ভেসে আসলে সেদিকে অনুসরন করে আগাতে থাকলো সাফিন।
সিরাতের গাঁয়ের সাথে ধা’ক্কা লেগে কাঁচের বিয়ারের বোতলগুলো ভে’ঙে গুড়ি’য়ে গেলে অন্ধকারে তাঁর খালি পায়ে কাঁচ ঢুকে গেলে আহ করে উঠলো সিরাত। যন্ত্র’নায় পা বি’ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে যেন তাঁর কাছে।
টিনের চালের উপর বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সাথে মৃদু পায়ের আওয়াজ ভেসে আসাতে চোখ বন্ধ করে ফেলল সিরাত৷ ভয়ে ড্রামের পিছনে এঁ’টে থাকলো সে।
— দেখো তুমি যেই হও, ভয় না পেয়ে বেড়িয়ে আসো। আমি তোমার কোনো ক্ষ’তি করার জন্য আসিনি৷
গাম্ভীর্যপূর্ন শীতল কন্ঠে মিশ্রিত কথা শুনে সিরাত চুপ হয়ে গেল।
—এ আবার কে? কিডনাপার নয়তো? কিন্তু আগের কন্ঠের থেকে কন্ঠটা কেমন ভিন্ন লাগছে।
সাফিন অন্ধকারে ধীর পায়ে হাঁটতে থাকলে দেয়ালের সাথে বারি খেয়ে গেলে আহ’ত হাতটাতে আরও আ’ঘাত পেল সে।
হুট করে পায়ের কাছে কারো শাড়ির আঁচল অনুভব করতে পেরে হাত দিয়ে আঁচলটা ধরে নিতে কেঁপে উঠলো সিরাত।ভয়ে কয়েকটা ঢোক গি’লল সে৷
—উঠে দাঁড়াও চলো তোমাকে নিতে এসেছি৷ এত ভয় পাচ্ছো কেন? ন্যা’কামি বন্ধ করে চলো।
—এ লোক আমাকে ন্যাকা বলছে! আজ যদি মুখটা বাঁধা না থাকত। রাগ এবং ভয়ে ফুঁ’সতে থাকলো সিরাত৷ মুখ দিয়ে উমমম, উমমম করতে থাকলে সাফিন ভ্রু জাগিয়ে ফেলল।
—এত টাইম নেই আমার৷ কথাটা বলেই বাঁধা অবস্থাতেই অন্ধকারে সিরাতকে পাঁ’জা কোলা করে নিতে সিরাত রাগে যতটুকু সম্ভব নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো আর মুখ বাঁধা থাকার কারনে উমমম,উমমম করতে লাগলো। সাফিন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না দিয়ে দ্রুত অন্ধকার রুম থেকে বেড়িয়ে পরলো তাঁকে নিয়ে।
.
বাসের লাল রাঙা লাইটারের আলো এসে সিরাতের গোলাপি রাঙা মুখশ্রীতে ছেঁয়ে গেলে সিরাতের চেহারার মাধুর্য যেন দ্বীগুন সৌন্দর্যে পরিনত হলো। এই প্রথম সাফিন সিরাতকে দেখতে পেল।
সাফিন সিরাতকে বাসে তুলে সিটে বসিয়ে দিতে সিরাত সাফিনের শরীরে র’ক্ত দেখে ভয়ে কেঁদে উঠলো। চোখদ্বয় ভিজে উঠলে বাসের সাথে একদম মিশি’য়ে বসলো সিরাত৷ সাফিন শীতল দৃষ্টিতে সিরাতের দিকে তাকাতে সিরাতের পরনে বিয়ের লাল বেনারশী আর হালকা সাজে ভয়ার্তে পরিপূর্ন মুখশ্রী দেখে খানিক তাকাতে বাস ছেড়ে দিলে বাসের ধা’ক্কানিতে সাফিন সিরাতের উপর আঁ’ছ’ড়ে পরার আগে দুইহাত সিরাতের দুইপাশে বাসের জানালার কাঁচের সাথে ঠেকাল। সাফিনের দুই হাতের মাঝে আঁ’টকে যেতে সিরাত চোখ বড়-বড় করে ভয়ে সাফিনের দিকে র’ক্তেভেজা শার্টের দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারলো না। দ্রুত চোখ বন্ধ করে নিল।চোখ বেয়ে অনবরত বৃষ্টিভেজা কান্না ঝরে পরছে তাঁর। আর পায়ে অজ’স্র যন্ত্র’ণা।
দীর্ঘক্ষণ সিরাতের ভয়ার্ত মা’য়া’ময় মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি হাসলো সাফিন।
হুট করে ফোনটা বেজে উঠতে ধীর চাহনিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে সিরাতের পাশে বসে পরলো সাফিন৷ ওপাশ থেকে মোস্তফা সাহেব কিছু বলার আগেই সাফিন বলে উঠলো।
—ড্যাড মেয়েগুলোকে নিয়ে আসছি। আর ১৬ জন আঁ’টক করেছি৷ তাঁদের মধ্যে একজনকে অন্ধকারে গু’লি করেছি। জা’নো’য়া’র’টা ওখানেই খ’ত’ম।
মোস্তফা সাহেব চিন্তিত হলেন। দ্রুত বলে উঠলেন।
—লা’শ’টা কি করেছো তাহলে?ওখানেই ফেলে এসেছো নাকি?
সাফিন হাসলো।বললো।
—শাহনেওয়াজ সাফিন অতটাও কাঁ’চা খেলা খেলে না মাই ডিয়ার ড্যাড। ওটাকে বস্তায় ভরে এতক্ষণে নদীতে ভা’সিয়ে দিয়েছে হেলাল।
মোস্তফা সাহেব হাসলেন।
সাফিনের কথাগুলো শুনে রাগে সমস্ত শরীর কেঁ’পে উঠছে যেন সিরাতের।
—তাঁর মানে এই লোকগুলোই মেয়েগুলোকে আঁ’টকে রেখেছিল৷ হে আল্লাহ, এরা কি মানুষ নাকি জা’নো’য়া’র?(মনে-মনে কথাগুলো বলে দাঁতে দাঁত চে’পে কাঁদতে থাকলো সিরাত।)
—স্যার হাতটা দিন ড্রেসিং করে দিচ্ছি। ইনফেক’শন হয়ে যাবে নয়তো। জুবায়ের ধীর চাহনিতে সিরাতের পায়ের দিকে তাকাতে র’ক্তে ভেজা পা টা দেখে বললো।
—ওনার পা টাও ড্রেসিং করতে হবে মনে হচ্ছে।
সাফিন হাসলো। এক নজর সিরাতের পায়ের দিকে তাকিয়ে আলতো হাতে কাঁচটা বের করে দিতে ব্যা’থায় সিরাত চোখ বন্ধ করে ফেলল।সাফিন জুবায়েরের উদ্দেশ্যে বললো।
—ওয়েট, মেয়েটার হাত মুখ খুলে দেই আগে।
জুবায়ের বাঁ’ধ সেধে বললো।
—আমি খুলে দিচ্ছি আপনি বসুন।
সাফিন পিছুফিরে এক নজর জুবায়েরের দিকে তাকাতে জুবায়ের চুপ হয়ে গেল।বললো।
—ঠিক আছে, আপনি খুলুন।
সাফিন সিরাতকে উল্টো করে বসিয়ে পিঠের পিছনে থাকা মোটা দরি দিয়ে বাঁ’ধা হাতটা খুলে দিতেই সিরাত রাগে সাফিনের গালে ক’ষি’য়ে একটা চর মেরে দিতে জুবায়ের এগিয়ে আসতে নিতে সাফিন হাত দিয়ে থামিয়ে দিল তাঁকে।
ধীর চাহনিতে সিরাতের দিকে তাকিয়ে মুখের ভিতর থেকে রুমালটা খুলে দিতে সিরাত কিছু বলার আগেই সাফিন সিরাতের লালরাঙা ঠোঁটে আঙুল ছুয়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—হুঁশশ, নাম কি?
সিরাত ভয়ে কয়েকটা ঢোক গি’লে সাহস যুগিয়ে সাফিনের হাতটা সরিয়ে দিয়ে রাগের কন্ঠে বললো।
—সি,সিরাত।
—লাইক ইট। তুমি জানো আমি কে?
সিরাত রাগে ফুঁ’সতে থাকলো। বললো।
—আপনি কে আমি জানতে চাইছি না।শুধু জানি আপনি একটা খু’নি। ব্যাস এটাই।
সাফিন হেসে উঠলো।
সাফিনের হাসির রেশে যেন সিরাত তেলে বেগুনে জ্ব’লে উঠলো।
—এই ব’জ্জা’ত লোকটা আবার হাসছে।ল’জ্জাও কি করছে না এতগুলো মেয়েকে আঁ’টকে রাখতে। (মনে-মনে কথাটা বলে সাফিনের দিকে ঘৃ’নার দৃষ্টিতে তাকাল সিরাত)
—তোমার বিয়েটা হলো না তাই বলে রাগ দেখাচ্ছো তাইনা?
—মানেহ,এখানে বিয়ে কোথায় দেখলেন আপনি!
সাফিন হাসলো। সিরাতের দিকে মৃদু ঝুঁ’কে ধীর কন্ঠে বললো।
—বাহরে,বিয়ের বেনারশী পরে বলছো কিসের বিয়ে? হাসালে বেব্বি।
সাফিনকে ধা’ক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে সিরাত রাগে বলতে লাগল।
—আপনার কোনো প্রশ্নের উওর দিতে আমি বাধ্য নই। আমার ব্যাগ কোথায়? ব্যাকটা দিন।
সাফিন বাঁকা হেসে জুবায়েরের দিকে তাকাতে জুবায়ের বললো।
—কোনো ব্যাগতো পাইনি স্যার।
সিরাত পায়ের দড়িটা খুলতে-খুলতে বললো।
—আমার ব্যাগ যদি না পাইনা তাহলে আপনাদের খবর আছে।
সাফিন এক গালে হাত রেখে সিরাতের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো। বললো।
—কি করবে শুনি সিরাত? শাহনেওয়াজ সাফিনের সামনে কোনো মেয়ে চোখ তুলে পর্যন্ত তাকাতে পারে না। আর তুমি আমাকে চর মেরেছো৷ আমার ড্যাডও কখনো আমার গাঁয়ে হাত তুলেনি। এর ফলতো তুমি হাড়ে-হাড়ে পাবে।
কথাটা বলেই দাঁতে দাঁত চে’পে সাফিন সিরাতের দিকে এগিয়ে আসতে সিরাত ঢোক গি’লে বাসের সাথে লে’প্টে গেলে সাফিন ভ্রু জাগিয়ে সিরাতের দিকে তাকাতে সিরাত ভয়ে দ্রুত চোখ বন্ধ করে নিল….

চলবে…..

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-০৪

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ৪

ভরা অপিসের একগা’দা লোকের সামনে সাফিন সিরাতকে লিফ কিস করাতে সবাই চোখ নিচু করে হাসতে থাকলো আর হাত তালি দিতে থাকলো।
সিরাত চোখ বড়-বড় করে তাকিয়ে দুইহাত দিয়ে সাফিনকে ঢেলে সরিয়ে দিতে সাফিন হাতের উল্টো পিঠে তাঁর ভেজা ও’ষ্ঠদ্বয় মুছে হেসে সিরাতের দিকে তাকালো।
এতগুলো মানুষের সামনে এইভাবে সাফিন তাঁকে এ্যা’টা’ক করবে কল্পনাতেও আনেনি সিরাত।প্রচন্ড রাগ আর ল’জ্জায় মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে যেন তাঁর।
— উফ সিরাত,তোমাকে টাচ করার সাথে-সাথে তোমার শরীরে যে কারে’ন্টটা লাগে না ওটা কিন্তু জোস বেব্বি। অবশ্য এটা তো প্রথম নয় আমাদের তাই না?
সিরাত মাথা নিচু করে চারপাশে না তাকিয়ে রাগের কন্ঠে বললো।
—চুপ করবেন আপনি? সবাই দেখছে এখানে! নয়তো আমি এখনই এখান থেকে চলে যাচ্ছি। আপনি থাকুন।
সাফিন হাসলো। বললো।
—দেখুক। দেখানোর জন্যই তো তোমাকে এখানে নিয়ে আশা।বাট ভু’লেও এখান থেকে যাওয়ার চেষ্টা করো না জান। তুমি এখানে এসেছো শাহনেওয়াজ সাফিনের হাত ধরে আর গেলেও তাঁর হাত ধরেই যেতে হবে তোমাকে। নয়তো কি হবে সেটাতো জানোই বেব্বি।
সাফিন হেসে উঠলে সিরাত তাঁর দিকে রাগ নিয়ে তাকিয়ে ফু’স’তে থাকলো।
—একটা বার, জাস্ট একটা বার যদি আমি সুযোগ পেতাম না বেব্বি তো তোমাকেই হাত পা বেঁধে উগান্ডা পাঠাই দিতাম। (মনে-মনে কথাটা বলে রাগে নাক লাল করে ফেলল সিরাত।)
.
চেয়ারের উপর পায়ের উপর পা তুলে সাফিন তাঁর দুই হাতে নিজের ব্রাউন্ড রাঙা চুলে মৃদু টেনে ধরতে ডোরের কাঁচ সরিয়ে সিরাত রুমে প্রবেশ করাতে সাফিন হাসলো। বললো।
— সিরাত,সিরাত,সিরাত, তোমাকে যতবার ডেকেছি তুমি তো আসলে না। কি হলো বেব্বি দরজা আটকানো দেখে সেইতো আমার কাছেই আসতে হলো তোমাকে। তো বলো সিরাত কি খাবে তুমি? চা,কফি, নাকি আমার আদর?
সাফিনের কেবিনে পা রাখার সঙ্গে- সঙ্গে তাঁর এমন ধারা কথা শুনে সিরাত বিরক্তি নিয়ে তাঁর দিকে তাকালো। বললো।
—এখানে আমাকে এনেছেন কেন আগে সেটা বলুন?
সাফিন বসা থেকে উঠে এসে ডোরের কাঁচটা ভিতর থেকে লক করে সিরাতের খুব কাছে এসে তাঁর দিকে ঝুঁ’কে দাঁড়ালো। মৃদু হেসে বললো।
—শাহনেওয়াজ সাফিনের বউ অন্যের অপিসে চাকরি করবে সেটাতো হবে না সোনা। তাই দেখো তোমার জন্য এই পুরো অপিসটা কিনে নিলাম। তবে হ্যা,এখানে তোমার কাজ হবে শুধু আমাকে নিয়ে। আমাকে চুমু খাবে জড়িয়ে ধরবে আর আদর করবে। ব্যাস এটুকু তোমার রেগুলার কাজ। বাকিটা আমি সামলাব।
সিরাত রাগে সাফিনকে সরিয়ে দিতে চাইলে সাফিন সরলো না। বরং সিরাতের দুইহাত দেয়ালের সাথে চে’পে ধরে সিরাতের কপালে ভরাট ভাবে চুমু খেলে গরম উষ্ণ’তায় সিরাত চোখ বন্ধ করে ফেলল।
সাফিনের শরীরের পারফিউমের মিষ্টি স্মেল নাকের কাছে এসে বারি খেয়ে গেলে সিরাতের সমস্ত শরীরে শিহরন বয়ে গেল যেন।
—ছাড়ুন আমাকে?
—নাহ সেটি হচ্ছে না।
—বলছি তো ছাড়ুন।
সাফিন হাসলো। বললো।
—আর যদি না ছাড়ি, তখন কি হবে? চুমু খাবে? টেল মি বেব্বি?
সিরাত বিরক্ত হলো। রাগ নিয়ে বললো।
—বা’জে বকা থামান। আর আমাকে ছাড়ুন। লাগছে আমার।
—লাগুক।
সাফিনের নিমেষহীন উওরে সিরাত চোখ তুলে সাফিনের দিকে তাকালো। দীর্ঘক্ষণ দুটি চোখের মিলন হতে হেসে উঠলো সাফিন। মৃদুস্বরে বললো।
—ওয়াহ বেব্বি! তোমার ওই আর চোখের রেশ যতটানা শীতল এবং কোমল,তাঁর থেকেও বেশি ভয়ংকর। এই চোখের বি’ষে শাহনেওয়াজ সাফিন প্রতিনিয়ত খু’ন হতেও রাজি।
.
—দোস্ত আমাকে একটু গ্রামের বাড়ীতে যেতে হবে জান। বেশিদিন না দুইদিন পর ফিরে আসব৷ তুই চাইলে আমার সাথে যেতে পারিস। আম্মা অনেক অসুস্থ নাকি। জুলিয়া ফোন করে জানাল আমাকে। মাথা কাজ করছে না রে কি করব এখন? (জুলিয়া তোহার বোন)
তোহা জামা-কাপড় গোছাতে-গোছাতে কথাগুলো বলতে থাকলে সিরাত বিছানার উপর আসন দিয়ে বসে তোহার সাথে হাতে হাত লাগিয়ে গোছাতে লাগল। বললো।
—ওকেহ বেব্বি। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে বেশি চিন্তা করিস না তুই। বাট আমি অনেক মিস করব তোকে। সিরাত চোখ মুখের ভঙ্গি কাঁদো-কাঁদো করে তাকাতে তোহা সিরাতকে জড়িয়ে ধরলো। বললো।
—টেনশন করিস না জান৷ আমি খুব তাঁরাতাঁড়ি আসার চেষ্টা করব। তুই গেলে আমার সাথে চল।
সিরাত গালে হাত দিয়ে বললো।
—না থাক তুই যা। আমি এখানে দেখছি। বাড়ী একেবারে ফাঁকা রাখা ঠিক হবে না।
—হুম সেটাও ঠিক বলেছিস৷ সাবধানে থাকবি কিন্তু। সময় করে খাবারটা খাবি। আমি কিন্তু বার-বার ফোন করব বলে রাখলাম। বাই দ্য ওয়ে ওই আনাচকপি তোকে ফোন কিনে দিয়েছে!সামথিং রং সিরাত?
সিরাত ল’জ্জা পেল। নাক লাল হয়ে উঠলে মৃদু হেসে বললো।
—তেমন কিছু না।
তোহা হাসলো। বললো।
—একটা মাই’র দিব বুঝলি। আমিকি ঘাস খেয়ে চলি যে বুঝতে পারব না। যাইহোক টেক কেয়ার বেব্বি। এবার যা করবি ভেবে করিস।
সিরাত তোহাকে জড়িয়ে ধরে বললো।
—ওকে মা আমার। তুইও তোর খেয়াল রাখবি।আর পৌঁছেই আমাকে ফোন লাগাবি।
—হুম জান।
.
বাসটপে এসে দাঁড়াতেই কালো রাঙা গাড়ি এসে তোহার সামনে থামলে তোহা জুবায়েরকে দেখে মৃদু হেসে বললো।
—চা’ম’চা এখানে তাহলে বস নিশ্চয়ই আশে-পাশেই আছে?
জুবায়ের হেসে উঠলো। বললো।
—উপর মহল থেকে করা আদেশ আছে আপনাদের দুজনকে চোখে-চোখে রাখা।
—তাই বুঝি!তো এখানে কি কাজ?
—গাড়িতে উঠে বসুন ম্যাম, স্যার পাঠিয়েছেন আমাকে।ভাবির একমাএ বেস্ট ফ্রেন্ড আপনি। আপনার জন্য স্পেশাল গাড়ি।
তোহা ভ্রু জাগিয়ে ফেলল।বললো।
—আপনার স্যার, মানে শাহনেওয়াজ সাফিন। তাঁকে বলবেন আমার জানকে আবারও ক’ষ্ট না দিতে। ও বড্ড সহজ-সরল। সামনে যেটা দেখায়, ওটা ওর বাচ্চামো।
জুবায়ের মৃদু হেসে গাড়ির দরজা খুলে দিলে তোহা ব্যাগটা পিছনে রেখে বসে পরলো।
.
দক্ষিণা উত্রা হাওয়ায় আকাশের কোলে মেঘে ছেঁয়ে গেলে রিমঝিমে বৃষ্টিতে ভিজে উঠলো শহর। রাত এখন গভীরে গিয়ে। কারেন্ট না থাকায় সিরাত কোনো রকম ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে বিছানার উপরে উবু হয়ে শুয়ে একটা উপন্যাসের বই খুলে বসেছে। মাথার মধ্যে তোহার চিন্তা ঘোরপাক খাচ্ছে তাঁর। মনটা ঠিক মানতে চাইছে না। এই নিয়ে পাঁচটা ফোনকল দিয়েছে তোহাকে কিন্তু বন্ধ বলছে ফোন।টেনশন কমাতেই উপন্যাসের বই খুলে বসা।
হুট করে দরজায় ঘন-ঘন কলিং বেল বেজে ওঠাতে দরজার দিকে ভয় নিয়ে ধীর চাহনিতে তাকালো সে।
—সিরাত দরজা খোলো।
অস্পষ্ট স্বরে চীরচেনা কন্ঠ ভেসে আসাতে দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠলো সিরাত।
দরজা খুলে দিতে সাফিনের র’ক্তে ভেজা হাতটা দেখে কেঁপে উঠলো সে। কিছু বলার আগেই সাফিন সিরাতকে জড়িয়ে ধরতে সিরাত রীতিমতো শ’ক খেয়ে গেল তাঁকে এই অবস্থায় দেখে। কাঁদো-কাঁদো কন্ঠে বললো।
—-কি হয়েছে আপনার? এত র’ক্ত এলো কিভাবে? আল্লাহ আপনি কোথায় গিয়েছিলেন এমনটা কিভাবে হলো?
সিরাতের চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে পরাতে সাফিন মৃদু হাসলো। বললো।
—সামান্য গু’লি হাত ঘেঁষে বেড়িয়ে গেছে। কান্নাকাটি করো না জান।
— আপনাকে কতবার বলেছি রাজনীতি ছেড়ে দিন, এসব আর ভালো লাগে না। হয় আপনি রাজনীতি ছারবেন নয়তো আমাকে ছেড়ে দিন। আল্লাহ কতটা র’ক্ত ঝরেছে। সিরাত কেঁদে উঠলে সাফিন সিরাতের ঘাঁড়ের কাছে ঠোঁট ছুয়িয়ে চুমু খেল। হেসে বললো।
—সামান্য গু’লি লেগেছে। ম’রে তো যাইনি! এত কান্নাকাটি করো না বেব্বি। জাস্ট চিল করো।
সিরাত রাগ নিয়ে সাফিনের দিকে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
—চুপ,একদম চুপ এসব কথা আর কখনো বলবেন না। আর একটাবার এসব কথা বললে আমি আজ আপনাকে হাত পা বেঁধে টয়লেটে আঁটকে রাখব। সাফিন হেসে উঠলো। বললো।
—রিয়েলি সিরাত? কুকু’রটা আমাকে পেছন থেকে এ্যা’টা’ক করেছে। সামনা-সামনি আসার সাহস নেই ওর। এসব ছোট খাটো আঘা’তে শাহনেওয়াজ সাফিনের টিকিটিও হয়না বুঝলে।
.
সিরাত ফাস্টএইড বস্কটা নিয়ে আসাতে সাফিন তার পরনে পরিহিত কালো রাঙা শার্টটা খুলে বিছানার পাশে রাখলো। ক্যান্ডেলের হলদেটে আলোয় সাফিনের জিম করা ফর্সা বডির দিকে ধীর চাহনিতে তাকাতে সিরাতের ভেতরটা কেমন মু’চ’রে উঠলো। বুকের ভিতর কেমন জ্ব’লছে তাঁর। যেন আ’ঘা’তটা সাফিন নয় সিরাত নিজে পেয়েছে। কান্নাভেজা চোখদ্বয় নিচে নামিয়ে সাফিনের পাশে বসে হাতে স্যাভলোন লাগিয়ে ড্রেসিং করে দিল জায়গাটা। সাফিন সিরাতের দিকে তাকিয়ে হাসছে শুধু।
—মনে আছে বেব্বি? আমাদের প্রথম দেখা? সেই বাস থেকে। সেদিনও তুমি আমার শরীরে র’ক্ত দেখে কেঁদেছিলে। তোমার এই আবেগী কান্নাটা না আমার প্রচুর ভালো লাগে। ইচ্ছে করে চুমু খেয়ে তোমার চোখের জল মুছে দেই। ট্রাস্ট মি। সিরাত ল’জ্জা পেয়ে গেলে সাফিন হাসলো।
হুট করে সাফিনের ফোনটা বেজে উঠাতে ফোনের স্কিনে ড্যাড লেখা দেখে মৃদু হাসলো সাফিন।
—হাই ড্যাড। কেমন আছো?
ওপাশ থেকে গম্ভীর এবং ভয়ার্ত কন্ঠে মোস্তাফা সাহেব বলে উঠলেন।
—তোমাকে এ্যা’টা’ক করেছে নাকি? কোথায় তুমি? আর জুবায়েরই বা কোথায়? আমি বুঝতে পারছি না সাফিন তুমি এতটা বিচক্ষণ হয়েও এই ভু’ল করলে কিভাবে? তোমার আম্মা কেঁদে-কেঁটে শেষ। ফোনটাও তুলছিলে না তুমি! এতটা কেয়ারলেস হও কিভাবে তুমি?
— এ্যা’টা’কটা ঠিক আমাকে করতে চাইনি সে ড্যাড। কিন্তু ভু’ল জায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছে সে। ১ ঘন্টা শুধু ড্যাড। যে আমাকে এ্যা’টা’ক করেছে তাঁকে খুঁজে বের করব দেন তাঁর লা’শ কালকে সকালে নদীতে ভাসবে। তুমি নিশ্চিন্তে তোমার কাজ করো।
মোস্তফা সাহেব হাসলেন।
সাফিনের কথা শুনে কেঁপে উঠলো সিরাত। ভয়ের কন্ঠে বললো।
— কি করবেন আপনি? আমি বলছি আপনি কিচ্ছু করবেন না। প্লিজ রাজনীতি ছেড়ে দিন আপনি। সাফিন হাসলো।বললো।
—আমি কিছুই করবো না বেব্বি। তুমি ভেবো না। তোমার মনে আছে আমাদের প্রথম লিফ কিসের কথা। সেই স্বাদ।
সিরাত কানে হাত চে’পে ধরে বললো।
—আপনার বা’জে বকা থামাবেন। ভালো লাগছে না আমার কিছু।
—তাহলে চুমু দেই আমি ঠিক হয়ে যাবে। স্বামীর চুমু খেলে যেকোনো মেয়ের মুডই আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়। লাইক বি ট্রাই। প্লিজ,প্লিজ জান। জাস্ট অনটা কিস করবো।
সিরাত রাগ নিয়ে তাকাতে সাফিন হেসে উঠলো। বললো।
—উফ সিরাত। তোমার এই লাজুক দৃষ্টিতে রাগী-রাগী ভাবটাও জোস। সেই প্রথম দেখায় লাভ লাইন…..

চলবে…….

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-০৩

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ৩

বৃষ্টির রেশ শরীর বেয়ে শিহরন বয়িয়ে দিলে গাড়ি থেকে নেমে পরলো সিরাত। সাফিন এবার আর ছাতা হাতে সিরাতের জন্য নামলো না। ড্রাইভিং সিটে হেলান দিয়ে তাঁর দিকে মা’দ’কময় চাহনিতে তাকালো শুধু। বৃষ্টির প্রত্যেকটা শিশির বিন্দু সিরাতের চুল বেয়ে সর্বাঙ্গে ঝরিয়ে দিচ্ছে।
সাফিন একহাতে সিগারেট টেনে ধোঁয়া উড়িয়ে মৃদু হেসে পকেট থেকে একটা নীল খাম বের করে সিরাতের দিকে তাক করে ধীর কন্ঠে বললো।
— তোমার পেমেন্ট। আর হ্যা, কালকে ঠিক নয়টায় তোমাকে নিতে আসব বউ। উম্মাহ, এবার যাও ভিতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আমাকে কল লাগাবে দেন দশবার আই লাভ ইউ সোনা বলে ফোন কাটবে।
—এহ, কাজ নাইতো সিরাতের আপনাকে আই লাভ ইউ সোনা বলতে যাবে৷ তাঁর থেকে সারারাত হিরো আলমের গান শুনে কাটিয়ে দেবে। (মনে-মনে কথাটা বলে নিজেই হাসতে থাকলো)
সাফিন পকেট থেকে তাঁর ফোনটা বের করে বললো।
— হেই তুমি হিরো আলমকে নিয়ে ভাবতাছো? ও এম ঝি! হাহাহা। তুমি চাইলে আমি এক্ষুনি ওর গান প্লে করে দিচ্ছি। একটা মাএ বউ আমার। তাঁর মনের বাশনা পূরন না করলে হয়।
—এই লোক আমার মনের কথাগুলো কিভাবে জেনে জান! ধুর জিজ্ঞেস করবো ওনাকে? নাকি মনে-মনে ভাবাই বন্ধ করে দেব।
— ইট’স সিক্রেট।তবে শুনো সিরাত, তোমার মনের কথা পড়ে ফেলা কোনো ব্যাপারই না বুঝলে। কারন তুমি আমার আ’ত্মা’র সাথে মিশে আছো। আমি চাইলেই তোমাকে হাত পা বেঁধে এখন আমার সাথে নিয়ে যেতে পারি। কিন্তু আমি সেটা করব না কারন এখনও সেই সময়টা আসেনি। সিরাত সাফিনের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রাগ নিয়ে বললো।
—আমি কোথাও যেতে-টেতে পারব না বলে রাখলাম কালকে। আর টাকা দেখাতে আসবেন না আমাকে। যখন প্রয়োজন ছিল তখন নিয়েছি এখন প্রয়োজন নেই।
সাফিন হেসে উঠলো। বললো।
—বোকা বউ আমার। তোমাকে টাকা দেখাতে যাব কেন? আমার যাবতীয় সবকিছু তো তোমারই। এটা পেমেন্ট না কি সেটা পরে দেখো, বাই দ্য ওয়ে আমাদের বাসরটা এখনও হয়নি মেবি। আগেরবারতো নো টাসিং নো টাসিং খেলা চলছিল। নো টেনশন জানস,খুব শ্রিঘ্রই আমাদের বাসর হবে। আর হ্যা,ওইসব হিরো আলমকে নিয়ে ভাবা-টা’বা চলবে না। কি সুন্দর জামাই তোমার। তোমারতো আমাকে নিয়ে গর্ভ হওয়া উচিত। কথাটা বলেই সাফিন চোখ মারতে সিরাত রাগে ফুঁ’স’তে থাকলো।
—হ্যা আপনাকে নিয়ে তো আমার গর্ভে গর্ভব’তী হওয়া উচিত। ব’জ্জা’ত লোক একটা। ভাবেন সিরাত আপনার খেলার পুতুল।যখন ইচ্ছে বিয়ে করবেন যখন খুশি ছুঁ’ড়ে ফেলে দিবেন। এগুলো তো আপনার নে’শায় পরিনত হয়েছে এখন আমাকে নিয়ে। (মনে-মনে কথাটা বললেও মুখ থেকে টু শব্দও বের করতে পারলো না সে।)
সাফিন সিরাতের লাল হয়ে ওঠা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি হাসলো।
ধীর পায়ে নিজেও গাড়ি থেকে নেমে পরলো। সিরাতের খুব কাছে এসে তাঁর কালো রাঙা কাজলে আঁকা চোখে চোখ রাখলো। বৃষ্টির উষ্ণ’তায় সিরাতের চোখের প্রতিটি পাপরিতে শিহরন ঝরে পরছে। সাফিন সেদিকে গভীর ভাবে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সিরাতের কোমর জড়িয়ে কাছে আনতে নিতে সিরাতের লালরাঙা ঠোঁটের সাথে সাফিনের ঠোঁট বারি খেয়ে গেল। সাফিন মৃদু হেসে সিরাতের কানের কাছে মুখ এনে শীতল কন্ঠে বললো।
—ইউ আর সো হট বেব্বি।
সিরাত বিরক্ত হলো।রাগ নিয়ে সাফিনকে নিজের থেকে ছারানোর ব্যার্থ চেষ্টা করতে থাকলে সাফিন হেসে উঠলো। বললো।
—উফ সিরাত। তুমি এত সহজেই রেগে যাও কেন? তোমাকে রাগাতেও আমার খুব ভালো লাগে ট্রাস্ট মি জান। এই বলোনা একবার জান আই লাভ ইউ। বলোনা-বলোনা?
সিরাত দাঁতে দাঁত চে’পে সাফিনের দিকে চোখ রাঙিয়ে বললো।
—ছারুন আমাকে। আপনার টাকা নিয়ে আপনি চলে যান এখান থেকে। আপনার কাজ তো এটাই যে, যখন খুশি সিরাতের কাছে আসবেন আর যখন খুশি ছুঁ’ড়ে ফেলে দিয়ে চলে যাবেন। এইসব আদিখ্যে’তা আমাকে দেখাতে আসবেন না আর।
সাফিন হেসে উঠলো।তাঁর বৃষ্টিতে ভেজা চুলে ঝাড়ি দিতে তাঁর রিমঝিমে উষ্ণ’তা সিরাতের চোখে মুখে ছেঁয়ে গেলে সিরাত চোখ বন্ধ করে ফেলল।
সাফিন সিরাতকে আরও কাছে টেনে এনে সিরাতের ঘাড়ের কাছের এলোমেলো হওয়া চুলগুলো সরিয়ে কিস করে সুযোগ বুঝে সিরাতের হাতে খামটা ধরিয়ে দিল। শীতল কন্ঠে বললো।
—হাউ ফানি। তুমি আমাকে যা খুশি বলতে পারো কিন্তু আমার ভালোবাসাকে স’স্তা ভাববে না কখনো। ওটা রিয়াল।
—খুব সহজ তাইনা!
সাফিন সরে যেতে সিরাত ছলছল চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকালো। সাফিন ভেজা শরীরে গাড়িতে উঠতে নিতে সিরাতও আর দাঁড়াল না হাতে থাকা নীল খামটা না দেখেই ছিঁ’ড়ে টুকরো-টুকরো করে সাফিনের দিকে ছুঁড়ে দিতে সাফিন হাসলো। সাফিনের হাসি দেখে সিরাত রাগ নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢোকার সময় সাফিন বাঁধ সেধে ধীর কন্ঠে বললো।
—শোন সিরাত?
সিরাত থ’মকে দাঁড়াতে সাফিন শীতল কন্ঠে বললো।
—ভালোবাসি তোমাকে। এটাই লেখা ছিল খামে। বাট মাই ব্যা’ড লাক আমার বউ খামটা না দেখেই ছিঁড়ে ফেলেছে৷
সাফিনের শীতল কন্ঠের রেশ সিরাতের কান ঘেঁষে পৌঁছাতে হাতে থাকা পার্সটা নিচে পরে গেলে পার্সের ভিতরে থাকা ফোনটা ভে’ঙে গু’ড়িয়ে গেলে সাফিন হেসে উঠলো। বললো।
—৯৬!
সিরাত রাগ নিয়ে পিছু ঘুরে তাকাতে সাফিন হাসতে থাকলো। বললো।
—কুল বেব্বি। শাহনেওয়াজ সাফিনের বউ ৯৬ টা কেন ১০০ টা ফোন ভা’ঙলেও তাঁকে কিনে দেওয়ার সামর্থ্য আছে তাঁর। জাস্ট চিল।
—রাজনীতি ছেড়ে দিন তাহলে।
সাফিন ভ্রু জাগিয়ে সিরাতের দিকে তাকাতে সিরাত হাসলো।
—পারবেন না তো?
—ছেড়ে দেব কিনা জানিনা। বাট শর্ত আছে আমার। কালকে যেখানে নিয়ে যাব সেখানে সবার সামনে আমাকে লিফ কিস করে বলতে হবে জামাই আমি তোমাকে অনেক-অনেক ভালোবাসি। তখন ভেবে দেখব।
সিরাত চোখ বড়-বড় করে তাকালো।
—কিহ?
—কিহ না জ্বিহ বেব্বি। এখন নেও আমার এই ফোনটা রাখো নিজের কাছে, আমি কালকে ফোন কিনে দেব। নয়তো সারারাত জ্বা’লা’ব কাকে।
—আপনার ফোন আমি কেন নেব?
— তোমার এই একটা প্রবলেম বুঝলে সিরাত। বেশি-বেশি কথা বলো। আর একটা কথা বললে এখনই হাত পা বেঁধে আমার সঙ্গে তুলে নিয়ে গিয়ে বাসর করব। তখন ভালো হবে না বলো। সিরাত রাগে ফুঁ’স’তে-ফুঁ’স’তে বললো।
—সেই শখ তোর কখনো পূরন হবে না শ’য়’তা’ন। (মনে-মনে)
.
—কিরে সাফিন বৃষ্টিতে ভিজেছিস কেন? এক তুই আর এক তোর বাপ। সারাক্ষণ জ্বা’লি’য়ে রেখেছিস আমাকে। এই মা’রা>মা’রি খু’না>খু’নি আর ভালো লাগে না আমার। শখ করে ছেলের বউ এসেছিল ঘরে তাঁকেও তাঁড়িয়ে দিলি।
নিজের আম্মা আমেনা বেগমের কন্ঠে উৎক’ন্ঠা শোনাতে সাফিন হাতে থাকা গাড়ির চাবিটা সোফায় ছুঁ’ড়ে মেরে আমেনা বেগমকে চোখ মেরে বললো।
—ওহ আম্মা। আমিতো তোমার একমাএ ছেলের একমাএ বউয়ের সাথেই ডেটে গেছিলাম। ড্যাড আজকে রাতের ফ্লাটে বেড়িয়ে পরেছে মেবি এতক্ষণে।
আমেনা বেগমের চোখে মুখে খুশি চিকচিক করে উঠলো। বললো।
—রাখতো তের বাপের কথা। এর আগে কি বললি সেটা বল। তুই সিরাতের কাছে গেছিলি? কেমন আছে মেয়েটা?
—ফ্রেশ হয়ে আসছি তুমি বসো আমি এই যাচ্ছি আর এই আসছি। তারপর সব বলবো।
সাফিন উপরে চলে যেতে আমেনা বেগম টিভি ছেড়ে সোফায় বসে পরলেন৷
.
—স্যার ছেলেটার হাত পা ভে’ঙে দিয়েছি এখন নদীতে ভাসিয়ে দেব নাকি?
সাফিন ফোনটা লাউডে রেখে ওয়াসরুমে বসে বললো।
—না হাসপাতালে এডমিট করে সেল লাগিয়ে দেও যে ছেলেটা নির্বাচনে পে’দা’নি খেয়েছে আর শাহনেওয়াজ সাফিনের উদার মন তাঁকে হাসপাতালে এডমিট করে দিয়েছে।
জুবায়ের হেসে উঠলো। বললো।
—আপনার জবাব নেই স্যার। এলেম আছে বলতে হবে।
সাফিন হাসলো। বললো।
—শাহনেওয়াজ সাফিনের বউয়ের দিকে যে চোখ তুলে তাকাবে তাঁর চোখটাও উ’প’রে নেওয়া হবে।
জুবায়ের হাসলো।
.
—সাফিন তুই ছেলেটাকে ঠিক টাইমে হাসপাতালে এডমিট করে খুব ভালো করেছিস আব্বা। দেখ ছেলেটার কি অবস্থা করছে কারা যেন?
সকাল-সকাল নিউজে খবরটা ছেঁপে যেতে বাঁকা হাসলো সাফিন। সাদা রাঙা টিশার্ট পরে নিজের ব্রাউন্ট রাঙা চুলে সাই দিতে-দিতে নিচে নামলো সে। নিউজফিডে কালকের ছেলেটার হেডলাইন হয়ে গেলে ভ্রু নাচিয়ে নিজের আম্মার দিকে তাকিয়ে বললো।
—জানোই তো আম্মা তোমার ছেলে মানুষের বী’প’দের বন্ধু৷ মানুষের বি’পদে পাশে দাঁড়ানোই তো মন্ত্রীর ছেলের কাজ তাইনা? যাইহোক তোমার ছেলে তাঁর বউয়ের কাছে যাবে টিফিন কেরিয়ার করে দাও তাঁর বউকে এত সকালে রান্না করতে হবে না তাহলে।
আমেনা বেগম হাসলেন। বললেন।
—এমন না করে মেয়েটাকে বাড়িতে নিয়ে আয়।
সাফিন হাসলো।বললো।
—খুব শীঘ্রই।
আমেনা বেগম রান্না ঘরের দিকে চলে গেলে কালো রাঙা ড্রেস পরিহিত দুইজন গার্ড সাফিনের কোর্ট আর ঘড়ি নিয়ে এগিয়ে এসে পরিয়ে দিলে সাফিন তাদের কাঁধে হাত রেখে ধীর কন্ঠে বললো।
— সিরাতকে তো চিনো?
—জ্বী স্যার।
—গুড, তাহলে আজ থেকে টানা তিনদিন দিনরাত ওর বাড়ির সামনে গার্ড দিবে।
জুবায়েরের পরে এই দুইজন সাফিনের খুব কাছের লোক। মোহন আর হেলাল। সাফিনের কথা শেষ হওয়া মাএ হেলাল চোখ নিচু করে মৃদুস্বরে বললো।
— বড় সাহেবের অবর্তমানে বাড়ি ছেড়ে বাহিরে পাহাড়া দিতে যাওয়া ঠিক হবে না বোধহয়। সামনে নির্বাচন। যেকোন সময় এ্যা’টা’ক হতে পারে বাড়ির উপর। সাফিন হেসে উঠলো।
— শাহনেওয়াজ সাফিন ওসব ভয় করে না। আর আমার মন বলছে খুব শীঘ্রই সিরাতের উপর এ্যা’টা’ক হতে পারে। কিন্তু শাহনেওয়াজ সাফিন যতদিন বেঁচে আছে ততদিন তাঁর কলিজায় কেউ আঁচও ফেলতে পারবে না। যেটা বলছি সেটা করো। ইট’স মাই অর্ডার।
—আচ্ছা স্যার।
সাফিন হাসলো।
.
—জান উঠ রান্না শেষ অপিস যাবি না আজ?
তোহা সিরাতের দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল।
—জান দশ মিনিট ওয়েট কর।
—রাখ তোর ওয়েট ফোয়েট করতে পারতাম নাই৷ প্রমোশন…
তোহা তরিঘড়ি করে উঠে বসলো। সিরাত হাসতে থাকলো। বললো।
—সেই ছিল দোস্ত। প্রমোশনে কি পারে৷
তোহা চোখ মুখ ভার করে মৃদু হেসে সিরাতের দিকে বালিস ছুঁ’ড়ে দিতে সিরাত ক্যাঁ’চ করে নিয়ে বললো।
—দিস ইজ নট ফেয়ার দোস্ত।
—ধুর ভালো লাগে না।
—যা ফ্রেশ হয়ে আস।এক মিনিট টাইম দ্রুত যাবি৷
—ওকে বেব্বি যাচ্ছি আমি।
সিরাত হেসে উঠলো।
সকাল-সকাল কলিং বেল বেজে ওঠাতে সিরাত বিরক্ত হলো। গ্যাসে ভাজির তরকারিটা পাওয়ার স্লো করে দিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে দরজা খুলে দিতে সাফিন ভ্রু নাচিয়ে বললো।
—মাই গুডনেস বেবস। আমার বউ এত সকালে উঠে? আমি তো জানতামই না!
—এ ছাগল আবার সক্কাল-সক্কাল হাজির হলো কেন? শ’য়’তা’নে টানে মনে হয়। (মনে-মনে কথাটা বলে দরজা ছেড়ে দিতে সাফিন ফিতরে ঢুকে পরলো।)
—কি চাই এখানে?
সাফিন রুমটার চারপাশ দেখতে থাকলে জুবায়ের কেরিয়ার বাটিটা টেবিলে রাখলে সিরাত সেদিকে এক পলক তাকিয়ে সাফিনের দিকে তাকালো। বললো।
—সকাল-সকাল চলে এলেন যে?
—কালকেই বলে ছিলাম। আমার আবার বউকে ছাড়া ভালো লাগে না বেব্বি। বউয়ের এই গোল-গোল গালে চুমু না খেলে ঘুম হয়না৷ এতদিন যে কিভাবে থেকেছি সেটাই ভাবছি এখন। যাইহোক খবর শুনেছো?
সিরাত ভ্রু জাগিয়ে তাকিয়ে বললো।
—কিসের খবর?
—আরে বউ আমার খবরই দেখেনি। জুবায়ের।
—জ্বী স্যার?
সাফিন সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—নিউজটা দেখাও আমার বউকে।
জুবায়ের পকেট থেকে ফোনটা বের করে সিরাতের সামনে ধরতে দেখল।
—নির্বাচনে মা’র খেয়ে একটা ছেলের হাত পা ভে’ঙে নদীতে ভাসানোর চেষ্টা চালানো হয়েছিল৷ কিন্তু আমাদের প্রধান মন্ত্রী মো. মোস্তফা কামালের ছেলে শাহনেওয়াজ সাফিন তাঁকে নদীতে ফেলার আগে উদ্ধার করে হাসপাতালে এডমিট করেন।
সিরাত ফোনটার দিকে ড্যাব-ড্যাব করে তাকিয়ে জুবায়েরের হাত থেকে ফোনটা নিজের হাতে নিতে সাফিন হাসলো। বললো।
—এবার বুঝতে পারছো সিরাত? তোমার দিকে যে ছেলে চোখ তুলে পর্যন্ত তাকাবে তাঁর ঠিক এমন অবস্থা করে ছারব আমি।
—বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না এটা!
—বাড়াবাড়ির আর দেখেছো কি তুমি? এবার দেখবে যে,তোমার বর তোমার জন্য কি-কি করতে পারে…

চলবে…..

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-০২

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ ২

রিসোর্টের ভিতরে প্রবেশ করাতে সিরাতের মাথার উপর লালরাঙা গোলাপের পাপড়ি ঝরে পরতে লাগল। সেদিকে ধীর চাহনিতে তাকাতে সাফিন হাসলো। বললো।
—খুশি হওয়ার কারন নেই বুঝলে সিরাত।এগুলো কিছুই তোমার জন্য নয়।
সাফিনের কথা শুনে সিরাত তেলে বেগুনে জ্ব’লে উঠলো যেন। আমার মুখের টেপটা খালি খুলে দে শ’য়’তা’ন। তারপর বোঝাব সিরাত কি জিনিস।(মনে-মনে)
ভিতর থেকে কয়েকজন কালো রাঙা কোর্ট পরা লোক এসে সাফিনের সাথে হ্যান্ডসেক করে কথা বলার সময় সাফিন সিরাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—তুই তুকারি কেন করছো নিজের স্বামীকে? লক্ষী বউয়ের মতো তুমি করে বলবে। নয়তো কি হবে সেটা তুমি খুব ভালোকরেই জানো সিরাত।
সিরাত সাফিনের দিকে চোখ বড়-বড় করে তাকিয়ে রাগে নাক লাল করে ফেলল।
—এ লোক জাদুটোনা জানেন নাকি? মনের কথা কিভাবে বুঝে যান!
সামনে থাকা কোর্ট পরা লোকগুলোর মধ্য থেকে একজন সিরাতের দিকে হেসে হাত বারিয়ে দিতে-দিতে বললেন,
—হ্যালো মিসেস শাহনেওয়াজ নাইস টু মিট ইউ। সাফিন হাতটা নিজের দিকে ঘুড়িয়ে আবারও হ্যান্ডসেক করে মৃদু হেসে বললো।
—উহুমম,এই ভু’ল করবেন না মি. সিকদার। ওই হাত শুধু এবং শুধুমাএই শাহনেওয়াজ সাফিনের জন্য লিখিত। আপনি আমার সাথে হ্যান্ডসেক করুন।
সিরাত সাফিনের দিকে নাক মুখের ভাবভঙ্গি অবাক হওয়ার মতো তাকাতে সাফিন মৃদু হেসে সামনে থাকা লোকগুলোর সাথে তাঁর পরিচয় করাতে লাগল।
—এইযে চারজনকে দেখছো? এরা আমার খুব কাছের লোক৷ মানে আমার কলিগ৷ মি. সিকদার, মি. চৌধুরী, মি. রুবেল, মি. সিংহানিয়া।
সিরাত সাফিনকে ভেঙিয়ে বললো।
—আমার কলিগ। হে আসছেন,কলিগ তো হবে ওই রাজনীতির। সবকয়টা শ’য়’তা’নের দলবল। আর তাঁর লিডার হলেন আপনি।(মনে-মনে কথটা বলেই হাসতে থাকলো সিরাত)
সাফিন সিরাতের দিকে শীতল চাহনিতে তাকিয়ে বললো।
—আর এই হলো মাই ডিয়ার, মাই ওয়াইফ মিসেস সিদ্রাতুল সিরাত।
—ওয়াইফ না ওয়াইফাই, এত বছর কই ছিল এত দর’দ? এখন আসছেন অধিকার খাটাতে?
কথাটা মনে-মনে বললেও প্রকাশ্যে সিরাত তাঁদের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করার মতো করে সালাম জানালে রুবেল বলে লোকটা সিরাতের দিকে তাকিয়ে তাকে পরখ করে বললো।
—আরে মি. শাহনেওয়াজ আপনার ওয়াইফের মুখে টেপ আঁটকে গেছে তো?
সাফিন সিরাতের দিকে তাকাতে সিরাত চোখ গরম করে তাকালে সাফিন হেসে বললো।
— আরে কি বলব ভাই বলুন? আমার বউ মানে সিরাত, আমাকে এতটা ভালোবাসে,এতটা ভালোসে, যে মুখ খুলে দিলেই কানের কাছে এসে আই লাভ ইউ জান, সোনা, কলিজা বলে-বলে কান ঝা’লা’পালা করে দেয়। তাই কি আর করার মুখে টেপ মেরে দিলাম। যতই হোক আমার বউয়ের এত প্রেম-প্রেম ভাবটা আমি একান্তই একা পেতে চাই লোকজন জানলে কেমন দেখায় না।
কথাগুলো এক নিশ্বাসের সঙ্গে বলেই সাফিন ফেসটাকে লাজুক-লাজুক করে ফেলল।
সাফিনের এতগুলো মি’থ্যা কথা এক সাথে শুনে তাও আবার যখন নিজের নামে। সিরাতের রাগে, দুঃখে ইচ্ছে করছে সাফিনের গ’লা’টা টি’পে দিতে৷
— ব’জ্জা’ত লোক একটা। মি’থ্যার একটা লিমিট থাকা দরকার। আমি নাকি ওনাকে আই লাভ ইউ, জান, সোনা বলেছি! ম’রে গেলেও বলব না।
সামনে থাকা লেকগুলো হেসে সিরাতের দিকে ল’জ্জার সহিত তাকিয়ে চলে গেলে সিরাত সঙ্গে- সঙ্গে তাঁর হাতের নখ দিয়ে গাঁয়ের জোরে সাফিনের হাতে খাঁ’ম’চি কেটে দিতে সাফিন আহ করে উঠলো৷ তবুও মুখে হাসি ঝুলিয়ে বললো।
—উফ সিরাত। তোমাকে রাগলে যা লাগে না কি বলব আমি৷ থাক বেশি বলে কাজ নেই ভিতরে চলো। আচ্ছা যাক তোমার মুখের টেপটা খুলে দিচ্ছি। বলেই টেপটা খুলে দিতে সিরাত রাগে ফুঁ’স’তে-ফুঁ’স’তে বললো।
—এতগুলো মি’থ্যা কথা কেন বললেন আমার নামে আপনি?
সাফিন সিরাতের কথা গাঁয়ে না লাগিয়ে তাঁর দিকে শীতল চাহনিতে তাকাতে সিরাত খানিকটা থ’মকে গেল৷ সাফিনের তৈলাক্তময় ফর্সা চেহারায় নাকের উপরে থাকা ছোট্ট কালো রাঙা তিলতায় চোখ যেতে শরীরের ভিতরে কেমন যেন মু’চ’ড়ে উঠলো সিরাতের। আর কিছু বলতে পারলো না সে।
সাফিন মৃদু হাসলো। ধীর কন্ঠে বললো।
—ভারি দু’ষ্টুতো তুমি সিরাত!
—কেন?
—কিছুনা চলো ভিতরে চলো।
.
গগনের বৃষ্টিভেজা শিহরনের শ্রাবন সন্ধ্যা ময় পরিবেশে রিসোর্টের সামনে তোহা গাড়িটা থামাতে বললে জুবায়ের একবার রিসোর্ট তো একবার তোহার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
—ম্যাম এখানে নামবেন নাকি?
তোহা বিরক্তির স্বরে বললো।
—তো না নামলে থামাতে বলেছি কেন? আজব!
জুবায়ের একটা ঢোক গি’লে মৃদু হাসলো। বললো। —আচ্ছা ঠিক আছে চলুন ভিতরে চলুন।
তোহা গাড়ি থেকে নামতে নিতে জুবায়ের ছাতা হাতে বেড়িয়ে পরলো। তোহার মাথার উপর ছাতা ধরাতে তেহা আর চোখে জুবায়েরের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বললো।— খা’ম্বা’র মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
জুবায়ের কেশে উঠলো। বললো।
—নাহ ঠিক আছে আপনি চলুন।
তোহা সামনে আগাতে নিতে হাইহিল শাড়ির সাথে পেঁ’চিয়ে পরে যেতে নিতে জুবায়ের একহাতে ছাতা সামলে তোহার কোমর জড়িয়ে ধরে ফেলল তাঁকে। শীতল দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো।
—ম্যাম কোলে নিতে হবে?
তোহা চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রাগ নিয়ে বললো।
—আমি বলেছি নিতে! হাত ছাড়ুন। সাফিনের চাম’চা আসছে হেহ।
—কিছু বললেন।
— না বলিনায়, এখন কথা না বাড়িয়ে ভিতরে গেলে চলুন না গেলে আপনি আপনার জায়গায় যান। মে’জা’জ এমনিতেই বি’গ’রে দিয়েছে আপনার ওই শাহনেওয়াজ না আনাচকপি।
জুবায়ের তোহার কথা শুনে চোখ বড়-বড় করে তাকিয়ে পিছু ফিরে নিজের চুল নিজে টেনে ধরে মনে-মনে বললো।
—মেয়ের সাহ’সটা কি। শাহনেওয়াজ সাফিনকে গা’লি গা’লা’জ করছে।একবার যদি স্যার এসব শুনতে পারে তো হবে এর।
.
হাই বলিয়মে মিউজিক আর বিভিন্ন কালারের লাইটার দিয়ে ভর্তি রুমটাতে প্রবেশ করতে সবাইকে ডান্স করতে দেখে সাফিন সিরাতের হাতটা নিজের হাতের সাথে জড়িয়ে নিতে সিরাত শীতল চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকালো। সাফিন মৃদু হেসে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—সামনে দেখো। স্টেজের দিকে আঙুল তাক করে দিতে সাদারাঙা লং ড্রেস পরিহিত সাওদাকে দেখে সিরাত চোখ বড়-বড় করে ফেলল। একবার সাফিনের দিকে তো আরেকবার সাওদার দিকে তাকাল।
সাওদা সিরাতকে দেখে হেসে ভির এড়িয়ে এগিয়ে আসলো তাঁর দিকে।
—আরে দোস্ত তুই এসে গেছিস। তোহা কোথায়?
তোহার কথা ওঠাতে সিরাত সাফিনের দিকে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাগে ফুঁ’স’তে থাকলো।
সাফিন সাওদার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো।
—আসছে এখনই এসে পরবে। তোমার বান্ধবীকে বলো এ রকম বাঘি’নীর মতো আমার দিতে না তাকাতে। শাহনেওয়াজ সাফিন ওসব ভয় পায় না। বরং ভয় পাওয়ায়।
সিরাত দাঁ’তে দাঁ’ত চেঁ’পে রাগে সাফিনের দিকে তেরে আসতে নিতে সাওদা হেসে উঠলো। বললো।
—ওহ গড সিরাত। কুল বেব্বি, জাস্ট চিল আমি দেখছি তোহার ব্যাপারটা। সাওদা চলে যেতে সাফিন সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে সিরাতকে আরও কাছে নিয়ে এসে মৃদু হেসে বললো।
—তোমার এই এত রাগনা যেটা তুমি দেখাও আমাকে এতে কাজ হবে না জড়িয়ে ধরে বলবা সোনা থামো দেখবে আমি অলরেডি থেমে যাব৷ এছারা বে’হুদা রাগ দেখাতে আসবে না।
—জড়িয়ে ধরা মাই ফুট। পারলে আপনাকে আমি আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিতাম মি. শেহজাদের সাফিন। কিন্তুহ আজ’ব সবকিছু, আপনি আমাকে আপনার কাজ শেষে নানু চলে যাওয়ার পর ছুঁ’ড়ে ফেলে দিয়েছেন জেনেও আমি আপনাকে ভালোবাসি! হৃদয়ের গহীনে গেঁথে গেছেন আপনি যেটার ক্ষ’ত প্রতিটা মুহুর্ত উপলব্ধি করতে পারি আমি। (মনে-মনে কথাটা ভাবতেই চোখের কোন ঘেঁষে পানি গড়িয়ে পরলো সিরাতের।)
—কি ভাবছো? আচ্ছা তুমি জানতে চাওনা আমি তোমাকে এত বছর পর আবার আমার কাছে ডেকেছি কেন?
সিরাত শীতল চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকাতে সাফিন সিরাতের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকালো। সিরাতের ঘন হয়ে আশা নিশ্বাসের স্পর্শ সাফিনের চোখেমুখে ছেয়ে যেতে সাফিন সিরাতের ঠোঁটে মৃদু কাম’রে দিল।
সিরাতের বন্ধ চোখদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো সাফিন। বললো।
—হাউ কিউট৷ ইট’স সিক্রেট। এটা তোমাকে পৌঁছে দেওয়ার সময় বলব ওকে।
সাফিন ড্রিংকসের দিকে চলে যেতে সিরাত ছলছল চাহনিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকলো।
.
—সিরাত, জানটা আমার। তুই এখানে?
তোহা দৌঁড়ে এসে সিরাতকে জড়িয়ে ধরতে জুবায়ের ভ্রু জাগিয়ে তাঁদের একপলক দেখে চারপাশে সাফিনকে খুঁজতে থাকলো। তারপর সেও সাফিনের কাছে চলে গেল।
—স্যার মেয়েটা তো এখানেই আসলো। বুঝলাম না কিছু!
সাফিন হাসলো। জুবায়েরের পকেট থেকে সিগারেট বের করে মুখে দিতে জুবায়ের সিগারেটটা দিয়াশলাই দিয়ে জ্বালিয়ে দিল।
—স্যার বড় সাহেবের ম্যাসেজ এসেছে সে নাকি আজকে রাতে দেশের বাহিরে যাবেন। নির্বাচন সামনেই। এই সময় বড় সাহেবের নিজের জায়গা ঠিক রাখা জরুরি৷
সাফিন হাসলো। সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে দূরপানে সিরাতের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বললো।
— হুমম, ড্যাড আর যাই করুক তার মন্ত্রীর পদ থেকে নরবর হবেন না কখনো। অন্ততপক্ষে যতদিন আমি বেঁচে আছি। আম্মাকে জানিয়ে দেও তাঁর ছেলে ঠিক আছে শাহনেওয়াজ সাফিনের কেউ টিকিটিও করতে পারবে না।
জুবায়ের হাসলো।
.
—হেই শালিকা কা শালি মেরি আথি ঘারওয়ালি। এসে পরেছো,বাহ সুন্দর।
সাফিন তোহার দিকে তাকিয়ে হাসলে তোহা বিরক্ত হলো। সিরাতের হাত শক্ত করে নিজের হাতের সাথে জড়িয়ে রাখলো।
সাফিন সিগারেটটা নিচে ফেলে পা দিয়ে পি’শে দিতে সিরাত সেদিকে খুব মনোযোগ সহকারে তাকালো।
হুট করে পাশ থেকে একটা ছেলে এসে সিরাতের দিকে ডান্সের জন্য হাত বাড়িয়ে দিতে সাফিন ছেলেটার দিকে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঠান্ডা কন্ঠে বললো।
—সিরাত সামনে গিয়ে বা দিকে একটা স্টোর রুম আছে৷ এখান থেকে এক পা ছেলেটার দিকে গেলে তোমার হাত পা বেঁ’ধে মুখে টেপ মেরে সাতদিন ওখানে বন্ধ করে রাখব। আর যে ছেলে তোমার দিকে হাত বাড়িয়েছে ডান্সের জন্য, তাঁর হাত পা বাঁ’ধা হবে না, ডিরেক্ট ভে’ঙ্গে দিয়ে এমন হাল করে ছারব যে সকালে প্রত্যেকটা নিউজে শুধু একটা সো ই হবে যে, শহরে রিসোর্টে কোন এক ছেলের হাত পা ভে’ঙে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে…..

চলবে……

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-০১

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ ১

—কেমন আছো সিরাত?
ওপাশ থেকে গাম্ভীর্যপূর্ন শীতল কন্ঠের রেশ কানের কাছ ঘেঁষে বা’ড়ি খেয়ে খেলে থমকে গেল সিরাত। এত বছর পর নিজের প্রাক্তনের ফোনকল আশা করেনি সে। ঠিক প্রাক্তন নয়, কিন্তু আলাদা।
দাঁড়ানো থেকে পাশে থাকা বিছানায় পা ঢ’লে বসে পরলো সে।
সিরাতের ঘন হয়ে আসা নিশ্বাসের শিহরনময় আবেশে অপর প্রান্তের মানবটি খানিকটা বিভ্রা’ন্ত বোধ করলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে মৃদু গলা খাঁ’কারি দিয়ে শীতল কন্ঠে বললো।
— আজকে সন্ধ্যা সারে সাতটায় তোমাদের বাড়ির সামনে যাব তোমাকে নিতে। রেডি থেকো।
সিরাতের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরাতে অপর প্রান্তের মানবটি স্থীর কন্ঠে বলে উঠলো।
—টেনশনের কোনো কারন নেই। টাকা পেয়ে যাবে। সো সুন্দর ভাবে আমার বউয়ের মতো রেডি থেকো।
হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে রা’গের কন্ঠে বলে উঠলো সিরাত।
—শুনুন আমি আপনার টাকার ধার ধারিনা। তাই ভদ্রভাবে কথা বলুন। আর শুনুন আমি কোথাও যাচ্ছি না ওকে। আমার কাজ ছিল এক বছর আপনার বউ হয়ে থাকা সেটা শেষ। আপনার নানুও আর নেই আমাদের সম্পর্কও আর নেই। আল্লাহ হাফেজ।
—বেশি বকছো। তুলে নিয়ে আসব বলে রাখলাম।
—আপনার রাজনীতি আপনি অন্য কাউকে দেখান আমাকে না।
—শাহনেওয়াজ সাফিন কখনো কথার খেলাপ করে না । সেটা তুমি খুব ভালো ভাবেই জানো সিরাত। তাই রেডি থেকো। বলেই ফোনটা কেটে দিতে রাগে নাক লাল হয়ে উঠলো সিরাতের৷ আর কিছু না পেয়ে হাতে থাকা ফোনটাকে ছুঁড়ে মারাতে চটজলদি তোহা ফোনটা ক্যাঁ’চ ধরে নিল। চোখ মুখের ভাবভঙ্গি অসহায় করে দরজা লক করে ভিতরে ঢুকলো সে। ফেসটা কাঁদো-কাঁদো করে বললো।
— ভাগ্যিস ধরে ফেলেছি। তুই এই নিয়ে কয়টা ফোন ভে’ঙেছিস তাঁর হিসাব নেই সিরাত। এটাও ভে’ঙে ফেললে তুই ফ’কির হয়ে যাবি বলে রাখলাম আমি। তা বল কাঁদছিস কেন? আবার কি হলো তোর?
সিরাত বিছানার উপর উল্টো হয়ে শুয়ে পরে ধীর কন্ঠে বললো।
— রাখতো তোর ফ’কিরের কথা। নিজের শান্তি বড় শান্তি৷ ফোন ভা’ঙলে এবার আর কিনতামও না৷ যত ন’ষ্টের গো’রা ওই ফোন।
তোহা মুখ গো’মরা করে ফেলল।
—ধুরো, এসব কথা রাখতো এখন।এই উঠ আজকে সন্ধ্যায় সাওদার এনগেজমেন্ট পার্টি আছে। জাস্ট চিল বস৷ তারাতাড়ি উঠ।
সিরাত চটজলদি উঠে পরলো। বিছানা থেকে ওড়নাটা হাতে নিয়ে গলায় জড়িয়ে হাসি-হাসি মুখ করে মনে-মনে বললো। এই সুযোগ সাফিনের সাথে না যাওয়ার। তাঁর আগেই তোহার সাথে চলে যাবে ও। উফ ভাবতেই খুশি লাগছে মনটা সিরাতের।
—আচ্ছা যাবনে। আজকে তাহলে রান্না করতে হবে না।
তোহা হাতে থাকা ব্যাগটা টেবিলে রেখে মৃদু হেসে ফ্রিজ থেকে আপেল বের করে খেতে লাগল। বললো।
— জান শোন আমার প্রমোশনটা না ঠিক হয়ে গেছে। যেটার জন্য সকাল-সকাল বের হয়েছিলাম। কি যে ভালো লাগছে কিভাবে বোঝাব তোকে। একবার প্রমোশনটা হয়ে গেলে একটা ফ্লাট কিনে নিব দুজনের জন্য। ভালো হবে না বল?
সিরাত মৃদু হেসে বললো।
—তোহা শোন।
সিরাতের চোখ-মুখ থমথ’মে হয়ে গেলে তোহা খাওয়া রেখে সিরাতের সামনে মরা টেনে বসে পরলো। শীতল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো।
—কি হয়েছে বলতো তোর? আমি এতক্ষণ সিরিয়াসলি নেইনি। দোস্ত বলনা!
সিরাত কয়েকটা ঢোক গিলে মাথা নিচু করে ফেলল৷ ধীর কন্ঠে বললো।
—সাফিন ফোন করেছিল।
তোহা নিশ্চুপ হয়ে যেতে সিরাতের চোখ বেয়ে পানি ঝরে পরলো। কান্নারত কন্ঠে বললো।
— উনি বলছেন আজকে সন্ধ্যায় নাকি নিতে আসবে আমাকে। না গেলে তুলে নিয়ে যাবে। টাকা দেখাচ্ছে আবারও।
তোহা খানিকটা চুপ থেকে হাসলো। বললো।
—ধুল পা’গলি। বাদ দে তো ওসব! তখন আমরা পরিস্থিতির স্বী’কার ছিলাম। আমারও কিছু করার ছিল না।আর উনি ভয় দেখালেই তুই ভয় পেয়ে যাবি নাকি! আমি আছিতো নাকি? উনি আসার আগেই আমরা সাওদার এনগেজমেন্ট পার্টিতে চলে যাব। চিল বস জাস্ট চিল।
সিরাতও খানিকা হাসার চেষ্টা করলো। বললো।
— আমিও সেটাই ভাবছি।
.
আকাশ ছেঁয়ে আজ ভরা বর্ষনে শিহরিত পরিবেশ৷ থমথ’থে স্নিগ্ধ আবহাওয়ায় কালো রাঙা শাড়ী পরে তৈরি হয়ে গেল সিরাত। তোহাও সেম কালারের শাড়ী পরে স্টাইল দিয়ে পিক তুলছে একের পর এক। সিরাত হাইহিলটা পরে নিলে ছাতা হাতে বেড়িয়ে পরলো তাঁরা।
সিরাত তোহা অন্ত প্রান৷ ওদের দুজকে সবাই হরিহর আ’ত্মা বলেই জানে। তোহা হলো সিরাতের বেস্ট ফ্রেন্ড। সেই কলেজ লাইফ থেকে ওদের বন্ধুত্ব। সিরাতের নিজের বলতে ওর মামা-মামি ছিল৷ কিন্তু তাঁরা সিরাতকে জোর করে টাকার লো’ভে পরে বয়স্ক লোকের সাথে বিয়ে দিতে চাইলে সিরাত বিয়ের রাতে পালিয়ে এসেছিল তোহার কাছে ঢাকাতে। আর এখন ও তোহার সাথেই তোহার বাড়িতে থাকে। তোহাও একা থাকে এখানে৷ এই ঢাকার শহরে তোহা চাকরির সূএে এসেছিল। আর সিরাতকেও চাকরি পেতে সাহায্য করেছিল। বলতে গেলে সিরাতের জীবনে তখন তোহাই ছিল একমাএ অবলম্বন।
.
রিমঝিমে বৃষ্টির শিহরণময় আবেশে ঢাকার শহরে এত-এত জ্যা’ম থাকা সর্তেও আজ কেমন শুনসান নিরবতা পালন করতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে সে।
সিরাতের হাতটা শক্ত হাতে ধরে রোড ক্রশ করতে নিতে দুটো কালো রাঙা গাড়ি এসে তাঁদের সামনে এসে দাঁড়াল। সন্ধ্যা হওয়ার আবছা আলোয় গাড়ির ভিতরে থাকা সুদর্শন চেহারার মানবটিকে চোখ এরাল না সিরাতের। চোখেমুখে একরাশ বি’ষন্নতা এসে ঝেঁ’কে বসেছে যেন তাঁকে। হয়তো কোন এক সময় এই সুদর্শন মানটিকে তাঁর হৃদয়ের গহীনে অজান্তেই জায়গা করে দিয়েছিল সে। এত ঠান্ডার মাঝেও ঘামছে সে। তোহা বিরক্তি নিয়ে তাকাতে সাফিন গাড়ির কাঁচটা নামিয়ে দরজা খুলে দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো।
—সিরাত উঠে বসো তারাতাড়ি। এক মিনিটও ওয়েট করতে চাইছি না আমি।
তোহা রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললো।
—সিরাত কারো সাথে যাবে না আপনি আপনার মতো যেখানে খুশি যান।
সাফিন ভ্রু জাগিয়ে এক পলক তোহার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো৷ বললো।
— তোহা সিরাত এখনও আমার স্ত্রী আমি ওকে ছেড়ে দিয়েছি ঠিকই কিন্তু ডিভোর্স দেইনি। তাই আমি ওকে আমার সাথে নিতেই পারি। তুমি চাইলে তুমিও আমাদের সাথে যেতে পারো।
সিরাত তোহার হাত ধরে ধীর কন্ঠে বললো।
— আর যদি না যাই, তখন কি হবে?
সাফিন মাথায় জড়ানো কালো রাঙা হুডিটা খুলে গাড়ী থেকে বেড়িয়ে পরলো। বৃষ্টির রেশে সাফিনের গোছানো চুলগুলোর ওপর তাঁর উষ্ণ’তা ছুয়িয়ে দিচ্ছে যেন। সিরাত শীতল দৃষ্টিতে সাফিনের দিকে তাকাতে সাফিন মৃদু হেসে সিরাতকে পাঁ’জাকোলা করে নিল। সিরাত সাফিনের বুকে এলোপাথাড়ি কি’ল ঘু’ষি দিতে থাকলে তোহা রাগ নিয়ে কতক্ষণ চিৎ’কার চেচা’মেচি করলে সাফিন কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে তাঁর পিছনে থাকা গাড়িটার উদ্দেশ্যে আদেশের স্বরে বললো।
— জুবায়ের মেয়েটাকে গাড়িতে তুলে নিও। যেখানে যাবে সেখানে নামিয়ে দিয়ে আসো।
জুবায়ের বাঁধ সেধে বললো।
—কিন্তু স্যার আপনাকে প্রটেক্ট না করে মেয়টাকে নিয়ে গেলে বড় সাহেব জানলে রেগে জাবেন তো?
—যেটা বলছি সেটা করো। ইট’স মাই অর্ডার।
—ওকে স্যার।
পিছনে থাকা গাড়িটা সামনে আসার সাথে-সাথে সাফিন সিরাতকে নিয়ে চলে গেল।
—ম্যাম উঠে বসুন।
তোহা রাগান্বিত কন্ঠে রোখ রাঙিয়ে বলে উঠলো।
—যাব না। আপনি যান এখান থেকে।
জুবায়ের সাফিনের ফোনে ফোন লাগিয়ে ব্লুটুথ অন করে বললো।
—স্যার ম্যাম যাবেননা বলছেন।
— তুমি তাহলে কি করছো তাঁকে ঠিক জায়গা মতো দিয়ে আসবে। আর বলবে তাঁর বন্ধুকে ঠিক টাইমে পৌঁছে দিয়ে আসব।
—যাবেননা বলছে তো?
—কোলে নিয়ে নেও।
—ওকেহ।
জুবায়ের গাড়ি থেকে বের হওয়ার আগেই তোহা চটজলদি বলে উঠলো।
—না থাক। উঠছি আপনি বসুন।
—গুড গার্ল।

সিরাত গাড়িতে বসে বের হওয়ার জন্য ছ’ট’ফ’ট করতে থাকলে সাফিন হেসে উঠলো।
সাফিনের হাসির কন্ঠ শুনে যেন সিরাত আরও রেগে যাচ্ছে। মনে-মনে একশো একটা গা’লি দিতে থাকলো সাফিনকে। মুখ ফ’স’কে বের হয়ে গেলেও ভালো হতো। কিন্তু রাগ ভয় দুটোই কাজ করছে এখন নিজের ভিতর।
— এখন আবার কি চাই আপনার আমার কাছে! আপনি না বলেছিলেন নানু আর নেই তো সিরাত তোমার এই বাড়িতে আর প্রয়োজন নেই তুমি তোমার মতো থাকতে পারো। তাহলে আবার এত বছর পর কোন নাটক শুরু করতে চলেছেন?
সাফিন বিরক্ত হলো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—চুপ থাকো সিরাত! কথা কম বলো। ড্রাইভিং করছি দেখতে পাচ্ছো না নাকি?
সিরাত রাগে ফু’স’তে-ফু’স’তে বললো।
—না চুপ থাকতে পারব না আমি। কি করবেন আপনি? যা ইচ্ছে করুন গিয়ে। ভয় পাই নাকি আপনাকে আমি?
সাফিন গাড়িটা থামিয়ে দিয়ে গাড়ির পেছন থেকে ফাস্টএইড বক্সটা হাতে নিতে সিরাত চোখ বড়-বড় করে তাকালো। একটু জোড়েই বলে উঠলো।
— ছুঁ’ড়ি খুঁজছেন নাকি? আইমিন মা’র্ডার করতে চাইছেন আমাকে। পুলিশ,পুলিশ, হেল্প মি প্লিইইজ এই লোক আমাকে মে’রে ফেলবে,প্লিজ হেল্প…
সাফিন রাগ নিয়ে টেপ আর ছুঁ’ড়ি বের করে সিরাতের কাছে এগোতে সিরাতের গাড়ির সাথে পিঠ ঠেকিয়ে গেল যখন। তখন সিরাত তাঁর চোখদ্বয় ভয়ে বন্ধ করে ফেলল। এই লোক নিশ্চিত আমাকে মা’রা’র জন্যই নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর সাথে। (মনে-মনে)
সাফিন সিরাতের মুখের সাথে টেপটা এঁ’টে দিয়ে কেঁ’চি না থাকায় ছুঁ’ড়ি দিয়ে বাকি টেপটা কেঁটে দিয়ে নিজের জায়গায় এসে বসলো।
সাফিন সরে গেছে অনুভব করতে পেরে সিরাত পিটপিট করে তাকালো।
—এবার ঠিক আছে। হাত পাও কি বাঁ’ধ’তে হবে? না তুমি চাইলে আমি সেটাও করে দিচ্ছি। বলেই হাসলো সাফিন। সিরাত সাফিনের কথা শুনে চোখ রাঙিয়ে সাফিনের দিকে তাকালো। যেন চোখ দিয়েই গি’লে খেয়ে নেবে সাফিনকে।
সাফিন গাড়ি স্টার্ট দিয়ে শীতল কন্ঠে বলতে লাগল।
— যেখানে নিয়ে যাচ্ছি সেখানে গিয়ে মোটোই লা’ফা>লা’ফি, চিৎ’কার, চেচা’মে’চি করবে না বলে রাখলাম। সেখানে গিয়ে লক্ষী মেয়ের মতো আমার পিছনে-পিছনে হাঁটবে।
সিরাত সাফিনের দিকে মুখ ভে’ঙিয়ে বললো।
—বয়েই গেছে আমার। শ’য়তা’নকা হা’ড্ডি। (মনে-মনে)
—মনে-মনে যা খুশি বলতে পারো সিরাত। কিন্তু প্রকাশ্যে বললে কিন্তু বি’পদ।
সাফিনের কথা শুনে সিরাত বললো।
—পা’গল নাকি সিরাত! যে প্রকাশ্যে বলতে যাবে? মনে -মনে কথাটা বলেই হাসিতে গ’ড়া>গ’ড়ি খেল সে।
.
ঝুম বৃষ্টির ভিতরেও সুন্দর করে ঝাড়বাতি দিয়ে সাজানো গোছানো রিসোর্টটা দেখে সিরাতের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। সাফিন গাড়ি থেকে নামার আগেই ভিতর থেকে ওয়েটাররা দৌঁড়ে ছাতা হাতে এগিয়ে আসলে সাফিন সিরাতের দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে শীতল কন্ঠে বললো।
—টেপটা কি খুলে দেব? নাহ থাক তোমার ট্যাপ রেকর্ড আবার শুরু করে দিবে তাহলে। নামো এখন। সিরাত দাঁ’তে দাঁ’ত চেঁ’পে রাগে ফু’স’তে থাকলো। সাফিন হেসে বললো।
—শাহনেওয়াজ সাফিন কখনো তাঁর কথার খেলাপ করে না বুঝলে সিরাত। চলো ভিতরে চলো। তোমার জন্য সারপ্রাইজড অপেক্ষা করছে ভিতরে….

চলবে……

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-৪৪ এবং শেষ পর্ব

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৪৪( শেষ পর্ব)
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

গাল ফুলিয়ে বসে আছে লম্বা ঘোমটা দিয়ে মেঘলা। দ্বিতীয় বাসর! উঁহু দ্বিতীয় কিভাবে হয়.? প্রথম বাসর তো হয়নি শুধু বিয়ে হয়ে ছিল যেখানে জামাই হাতটাও ধরেনি সেটাকে বাসর বললে বাসর শব্দটাকে অপমান করা হবে।

মেঘলা মনে মনে এইসব ভাবছে আর শ্রাবণের অপেক্ষা করছে।

কিছু সময় যেতেই খট করে রুমের দরজা খুলে কেউ প্রবেশ করলো।

মেঘলা ঘোমটা টেনে সোজা সুন্দর হয়ে বসলো।
শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকিয়ে রেগে গেল। রাগে শেরওয়ানির বোতাম একটা একটা করে খুলে বেলকনিতে চলে গেল। কিছু সময় বেলকনিতে কাটিয়ে রুমে উঁকি দিল।
মেঘলা আগের মতোই বসে আছে।
শ্রাবণ রুমে এসে কন্ঠ একটু মোটা করে বলে উঠলো, ‘ ঘোমটা উঠান।’

মেঘলা নিজের মেহেদী দেওয়া হাতটা বের করে ঘোমটা শক্ত করে ধরে বলে উঠলো, ‘ আমি শুনেছি বর নিজে ভালোবেসে যতক্ষন ঘোমটা না তুলে বউ ঘোমটা তুলতে নেই এতে অমঙ্গল হয়।

মেঘলার এমন স্বাভাবিক কন্ঠ আর ভালোবাসার কথা শুনে শ্রাবণের রাগ সপ্তাহ আকাশে।

নিজের বউ আজ অন্যের জন্য এভাবে সেজেগুজে বসে আছে আবার কি সুন্দর করে ভালোবেসে ঘোমটা তুলতে বলছে রাগে দুঃখে শ্রাবণ কিছু সময় ঘোমটা দেওয়া মেঘলার দিকে তাকিয়ে রইলো।
মেঘলাঃ এভাবে বসে থাকতে থাকতে আমার কোমর ব্যাথা হয়ে গেল কি পাষাণ বর আপনি।

শ্রাবণ নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। হাত বাড়িয়ে ঘোমটায় হাত দিতেই মেঘলা ইচ্ছে করে নিজের হাত শ্রাবণের হাতে স্পর্শ করালো।
শ্রাবণ থমথমে মুখে একবার তাকিয়ে হাত সরিয়ে বলে উঠলো, ‘ নিজে ঘোমটা তুলে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। ‘

মেঘলার মন খারাপ হলো। যেখানে নিজে রাগ দেখানোর কথা সেখানে এইলোক কেন দেখাচ্ছে!.?

মেঘলা ঘোমটা না তুলেই বসে পড়লো৷

শ্রাবণঃ আপনাকে সব সময় এক কথা বার বার কেন বলতে হয় মেঘলা!.??
মেঘলা সাথে সাথে ঘোমটা তুলে অবাক হওয়ার মতো মুখ করে বলে উঠলো, ‘ আরেএ আপনি!.?’
শ্রাবণ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ কেন!.? অন্য কেউকে আশা করে ছিলেন.?’
মেঘলাঃ হুম অবশ্যই! আজ আমার বিয়ে হয়েছে বর কে আশা করেছি। আপনি এখানে কেন.? আমার বর রাগ করবে এখানে কেন এসেছেন! বের হন।
শ্রাবণ রেগে বলে উঠলো, ‘ মেঘলা! আপনার সাথে আমার ডিভোর্স হয়নি এখনো আপনি অন্য কেউকে বিয়ে করে সংসার করার স্বপ্ন দেখছেন? আপনি তো আজকাল বস্তির মেয়েদের মতো আচরণ করছেন!! আমি আপনার থেকে এমনটা আশা করিনি।
মেঘলাঃ তাহলে কি আশা করে ছিলেন.??
শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, আপনি বিবাহিত হয়ে অন্য কেউকে বিয়ে করতে এভাবে সাজগোছ করেছেন! এতো দিনে কি আমি আপনার মনে একটুও জায়গা পাইনি.?’
মেঘলা মুচকি হেসে বলে উঠলো, ‘ আপনিও তো বিবাহিত পুরুষ হয়ে বিয়ে করতে ড্যাং ড্যাং করে নাচছিলেন। ‘
শ্রাবণঃ নিজের বউকে বিয়ে করতে নেচেছি অন্য কেউকে নয়।
মেঘলাঃ আমিও নিজের জামাই কে বিয়ে করবো বলে সেজেছি অন্য কেউকে দেখাতে নয়।
শ্রাবণ ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই মেঘলা কোমরে হাত গুঁজে বলে উঠলো, ‘ রাগ আমি দেখানোর কথা অথচ আপনি দেখাচ্ছেন!.? এভাবে লুকিয়ে বিয়ে করার কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছি না। ‘
শ্রাবণঃ সবাই তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়ে ছিল।
মেঘলা রেগে বলে উঠলো, ‘ এটা কেমন সারপ্রাইজ.? আপনার বাড়িতে বিয়ে আমার বাড়িতেও সাজগোজ চলছে একই দিনে সব কিছু, ডিভোর্স ও হয়নি এতো কিছুর পরেও কি আমি বুঝার বাকি আছি?
শ্রাবণ মাথা চুলকে বলে উঠলো, ‘ তার মানে তুমি জানতে.? ‘
মেঘলাঃ হুম।
শ্রাবনঃ তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে এই সাজগোজ দেখে আমি নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেছি।
মেঘলা হেসে উঠলো।
শ্রাবণ মেঘলার কাছে আসতে নিলে মেঘলা থামিয়ে দিল।
মেঘলাঃ দূরে থাকেন।
শ্রাবণঃ এখনো….!!
মেঘলা কিছু না বলে বিছানার উপরে গিয়ে সুন্দর করে ঘোমটা দিয়ে বসলো।
শ্রাবণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
মেঘলাঃ এবার ঘোমটা তুলেন।
শ্রাবণ হেঁসে উঠলো।
বিছানায় বসে ঘোমটা তুলে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ মাশাল্লাহ ‘
মেঘলা লজ্জায় মুখ নিচু করে রেখেছে।

____________

মহুয়া গাল ফুলিয়ে বসে আছে আহনাফ ঘুরে ঘুরে একটু পর পর মহুয়াকে দেখছে।

আহনাফঃ সরি..
মহুয়া চোখ বড় বড় করে রেগে তাকালো।
আহনাফঃ এই জন্যই আমার বড় বড় চোখ মেয়েদের পছন্দ না। চোখে কাজল দিয়ে এভাবে তাকালে ডাইনী পিশাচিনীদের মতো লাগে।
মহুয়া আরও রেগে গেল। আহনাফ মহুয়া কে রাগানোর জন্য বলে উঠলো, ‘ দ্বিতীয় বাসরও মনে হচ্ছে সিঙ্গেল ঘুমাতে হবে।’
মহুয়া চুপচাপ উঠে যেতে নিলে আহনাফ পেছন থেকে ডেকে উঠলো’ বউ সরি আমি তো সারপ্রাইজ দিতে চেয়ে ছিলাম। ‘
মহুয়া রেগে বলে উঠলো, ‘ এটা কেমন সারপ্রাইজ আহনাফ ভাইয়া!.? ‘
আহনাফঃ ভাইয়া! আমি তোমার ভাই হই.? কি কপাল বিয়ের রাতেও বউয়ের মুখে ভাইয়া ডাক শুনতে হয়।
মহুয়াঃ ভাইয়া মানে সাইয়া আর সাইয়া মানে ভাইয়া…
আহনাফঃ বাহ্ কি লজিক।
মহুয়াঃ কানে ধরেন।
আহনাফঃ এদিকে আসো।
মহুয়াঃ আমি কেন আসবো.?
আহনাফঃ তুমি তো বললে কানে ধরতে দূরে থাকলে ধরবো কিভাবে.?
মহুয়াঃ আমি আপনার কানের কথা বলেছি।
আহনাফ ছোট বাচ্চাদের মতো কানে ধরলো।
আহনাফের দিকে তাকিয়ে সব রাগ নিমিষেই উড়ে গেল মহুয়ার।
মহুয়াকে হাসতে দেখে আহনাফ হাফ ছেড়ে বাচলো।

আহনাফ ফ্রেশ হয়ে এসে বসলো। মহুয়া ফ্রেশ হওয়ার জন্য উঠতেই আহনাফ ওর হাত ধরে বলে উঠলো , ‘ চলো।’
মহুয়াঃ কোথায়.?
আহনাফঃ তোমাকে বিক্রি করে দিব।
মহুয়া থমথমে মুখে আহনাফের দিকে তাকালো। ভেতরটা হঠাৎ কেমন করে উঠলো চোখের সামনে ভেসে উঠলো পলাশের মুখ। সেই পুরোনো স্মৃতি। চোখে জল এসে ভিড় করলো।
আহনাফঃ চলো..
মহুয়া নিজেকে সামলে আহনাফের দিকে তাকালো।
আহনাফ মহুয়ার হাত ধরে রুমের বাহিরে নিয়ে গেল মধ্য রাত হওয়ায় বাড়ির সবাই ঘুম। ড্রয়িং রুম জুড়ে মেহমানের ছড়াছড়ি কেউ সোফায় ঘুমিয়ে আছে।
আহনাফ মহুয়াকে নিয়ে সাবধানে পা ফেলে বের হয়ে গেল।

রাস্তার মাঝে গিয়ে দুইজন হাত ধরে হাঁটতে শুরু করলো।

বাড়ি থেকে অনেক দূর এসে আহনাফ মহুয়ার কানে ফুল গুঁজে দিল,মহুয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো৷
মহুয়া তাকালো আহনাফের দিকে৷
আহনাফ পকেট থেকে এক জোড়া পায়েল বের করে মহুয়ার পা নিজের পায়ের উপর রাখলো যত্ন করে মহুয়ার পায়ে পায়েল পড়িয়ে মুগ্ধ চোখে মহুয়ার দিকে তাকালো।

মহুয়ার চোখ জলে ভরে উঠলো। পা সরিয়ে আহনাফের সামনে নিজেও রাস্তায় বসলো আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমার দেখা সেরা সুন্দর পুরুষ আমার সামনে বসা পুরুষটি।’
আহনাফ মহুয়ার কথা শুনেহেসে বলে উঠলো, ‘ আজ এই রাতের চাঁদ ও হিংসে করবে আমার সামনের চাঁদটাকে দেখে। চাঁদের শরীরে কলঙ্ক থাকলেও আমার চাঁদের গায়ে কোনো কলঙ্ক নেই।
মহুয়া হাসলো আহনাফের কথা শুনে। এই পুরুষ কি জানে ওর সেই অন্ধকার অতীত সম্পর্কে!!? না সে কিছু জানে না জানলে আজ এমন কথা বলতো না। চাঁদের থেকেও যে বড় কলঙ্ক ওর জীবনে লেগে গেছে।

মহুয়াঃ আহনাফ আমি আপনাকে আজ কিছু বলতে চাই।
আহনাফ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ বলো..’
মহুয়াঃ আমার অতীত বলতে চাই।
আহনাফঃ আজ নয় মহুয়া অন্য একদিন দুঃখবিলাস করবো।
মহুয়াঃ কিন্তু…
মহুয়া আর কিছু বলার আগেই আহনাফ মহুয়ার ঠোঁটে হাত রেখে চুপ করিয়ে দিল।
আহনাফঃ আজ সুখের রাতে আমরা সুখবিলাস করি…
মহুয়া হেঁসে অন্য দিকে তাকালো।
মহুয়া কিছু একটা মনে করার মতো আহনাফের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এ্যাই আপনি আমাকে প্রপোজ করলেন না!’
আহনাফঃ তুমি আমার প্রেমিকা নও যে প্রপোজ করতে হবে।
মহুয়া মুখ ভার করে বলে উঠলো, ‘ হুম আমি তো আর প্রেমিকা নই।’
আহনাফ মহুয়াকে নিজের পাশে বসিয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনি আমার বউ’
মহুয়া দূরে সরে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ কাল থেকে আমি আপনার প্রেমিকা আগে পটাতে হবে তারপর প্রপোজ তারপর কাছে আশা।’
আহনাফঃ দ্বিতীয় বিয়ে করেও সিঙ্গেল জীবন।
মহুয়া হাসছে আহনাফ মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখতে লাগলো। এই মেয়েটা শুধুই ওর ভাবতেই জীবন ভীষণ সুন্দর মনে হচ্ছে। আজ থেকে সে পরিপূর্ণ।

________________

ছোঁয়া আশেপাশে তাকিয়ে হাত বাড়াতেই খপ করে ওর হাত ধরে ফেললো কেউ।

ভয়ে কেঁপে উঠল বুক। ধীরে ধীরে চোখ তুলে পাশে তাকাতেই নির্জন কে দেখে ভয়ে বলে উঠলো, ‘ হাত ছাড়ো’
নির্জনঃ তুই এখানে এতো রাতে দরজার সামনে কি করিস..।
ছোঁয়াঃ আ..আমি তো এখান দিয়ে ছাঁদে যাচ্ছিলাম।
নির্জন হেঁসে বললো,’ তাই নাকি.?’
ছোঁয়াঃ হুম।
নির্জনঃ তাহলে দরজায় নক করতে যাচ্ছিলি কেন.?
ছোঁয়াঃ এমনি, সর সামনে থেকে।
নির্জনঃ আজ তাদের দ্বিতীয় বাসর রাত আপাতত ডিস্টার্ব না করে গিয়ে ঘুমা।
ছোঁয়া মুখ ভেংচি কেটে বলে উঠলো, ‘ আসছে আমার সাধু। ‘

ছোঁয়া হেলতে দুলতে ছাঁদে চলে গেল।
ছোঁয়ার পিছু পিছু নির্জন ও ছাদে গেল।

চুপচাপ পাশাপাশি বসে রইলো দুইজন।

রাত প্রায় শেষ আজান দিবে ছোঁয়া ছাঁদ থেকে নেমে যেতে নিলে পেছন থেকে নির্জন বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া আমাকে বিয়ে করবি.?’
ছোঁয়ার পা থেমে গেল। অবিশ্বাস চোখে নির্জনের দিকে তাকালো ছোঁয়া।
ছোঁয়াঃ কি বললে!!..?
নির্জনঃ আমাকে বিয়ে করবি.?
ছোঁয়াঃ আমি ফাজলামোর মুডে নেই নির্জন।
নির্জনঃ আমি মোটেও ফাজলামো করছি না সিরিয়াস।
ছোঁয়া কি বলবে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো।
নির্জনঃ এভাবে তাকিয়ে থাকার মতো কি বললাম!
ছোঁয়াঃ নিজেকে জিজ্ঞেস করো…
ছোঁয়া চলে যেতে নিলে নির্জন পেছন ফিরে আকাশের দিকে তাকালো। সে জানে ছোঁয়া ওকে পছন্দ করে না সে আজও ব্যর্থ হলো ভালোবাসা বুঝাতে। কেন সে ছোঁয়ার সামনে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে না!!?

পাশে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে তাকিয়ে দেখলো ছোঁয়া দাঁড়িয়ে আছে।
ছোঁয়া রেগে নির্জনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ ডায়রীতে তো ভালোই সব লেখা যায় সামনে আসলে মুখ বন্ধ!!।’
নির্জন অবাক হয়ে বললো,’ ডায়েরী! তুই কোথায় পেয়েছিস.?
ছোঁয়াঃ কোথায় পেয়েছি সেটা বড় কথা নয়। সেই ছোট থেকে ভালোবাসিস কিন্তু এখনো বলার মতো সাহস হয়নি.? তোকে কে পুলিশ হতে বলেছে গাধার সাথে ঘাস কাট গিয়ে।
নির্জনঃ তোর মতো পেত্নী কে ভালোবাসে কে.? সর যা..
ছোয়াঃ আমি পেত্নী!.? তাহলে তুই কি.? তুই তো পেত্নীর জামাই।
নির্জনঃ যাক নিজের মুখেই শিকার করলি তুই পেত্নী।
ছোঁয়া রেগে তাকিয়ে অন্য দিকে ফিরে গেল।
নির্জন হেঁসে আবার বললো,’ ছোঁয়া আমাকে বিয়ে করবি..?’
ছোঁয়া কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ তোর মতো গাধা আমি জীবনেও দেখিনি। এমন গাধার মতো বিয়ের প্রস্তাব দেয় কে.?’

নির্জন ঠাসস করে নিচে পড়ে গেল৷
ছোঁয়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই নির্জন বলে উঠলো, ‘ ঠিক এভাবে আজ থেকে ১৫বছর আগে আপনার প্রেমে পড়ে ছিলাম ছোঁয়ারাণী, ছোঁয়ারাণী আপনি কি আমার রাজ্যের রাণী হবেন..? আমার কিউট কিউট বাচ্চার আম্মু হবেন.? আমার জলদি বাড়িতে আশার কারণ হবেন.?আমার অর্ধাঙ্গিনী হবেন.?

সমাপ্ত

মেঘের আড়ালে রোদ সিজিন-২ পড়তে লেখাটির উপর ক্লিক করুন

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-৪২+৪৩

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৪২
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

একটা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ঠিকানাটা ভালো করে দেখে নিল মেঘলা।

ছোঁয়াঃ বাড়ি দেখে তো বেশ বড়লোক মনে হচ্ছে।
মহুয়াঃ হুম শুধু মনটা ছোট।
মেঘলা চলো যাওয়া যাক।
ছোঁয়া থেমে বলে উঠলো, ‘ বাই চান্স মহুয়া কে দেখে ও-ই লোক চিনি ফেললো তারপর কি হবে!.?’
মেঘলাঃ কিছু হবে না শুধু নিজের মুখ বন্ধ রাখ আর মহুয়া মাক্স পড়ে নাও।
মহুয়াঃ আগে ওই লোকের কথা মাথায় আসলে বোরকা পড়ে আসতাম যদি চিনে ফেলে।
ছোঁয়াঃ চিনে ফেললে আর কি কাজী ডেকে জোর করে বিয়ে করে নিবে এই শেষ বয়সে দুই পাশে দুই সুন্দরী বউ বাহ্ বাহ্ বুড়ার তো চাঁন কপাল।

ছোঁয়ার কথা শুনে মহুয়া রেগে তাকালো পর মুহূর্তে সবাই আবার এক সাথে হেঁসে উঠলো।

দারোয়ান প্রথম ওদের ঢুকতে দিতে চায়নি মিমের কাজিন বলে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে ঢুকলো। বিশাল বড় বাড়ি, দুই পাশে কি সুন্দর ফুলের বাগান মাঝে বাড়িতে প্রবেশ করার রাস্তা।
ছোঁয়াঃ মহুয়া সুন্দরী তুই তো এই বাড়িতে রাণী হয়ে থাকতি রে কি সুন্দর।
মহুয়াঃ ছোঁয়া তোমাদের বাড়িটা এটার থেকেও বেশি সুন্দর।
ছোঁয়াঃ হুহ্ কচু এতো সুন্দর ফুল বাগান তো নেই। এক পাশে ফুল বাগান আর এখানে দুই পাশে।
মেঘলাঃ ঠিক আছে ছোঁয়া দেখি এই বাড়িতে আর একটা সুগার ডেডি পাই কিনা। পেলে তোকে আজকেই এই বাড়ির রাণী বানিয়ে দিয়ে যাব।
ছোঁয়াঃ ছিঃ ভাবি।
মেঘলাঃ হিহিহি তুমি তো বাড়ি দেখে আপসোস করতেছো।
ছোঁয়া মুখ ভেকে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,’ কিউট, হ্যান্ডসাম ছেলে থাকলে নিষেধ করতাম না।’
মেঘলাঃ তাহলে আমার দেবরের কি হবে শুনি.??
মহুয়াঃ দেবর,!.?
মেঘলাঃ ছাড় এখন সব কিছু নিজেদের কাজ শেষ করি আগে।

বাড়ির মেইন দরজা খুলা তিনজন একসাথে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করতেই একটা প্লেট এসে পড়লো মহুয়ার কপালে। ব্যাথায় আহ্ বলে কপাল চেপে ধরলো মহুয়া।

ছোঁয়া মেঘলা অবাক হয়ে সামনে তাকালো বাড়ির সব লোক ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। কাজের লোকরা ভয়ে কাঁপছে।

মেঘলা এসে মহুয়ার কপাল দেখলো অনেকটা ফোলে গেছে রাগে সামনে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই একজন মধ্য বয়স্ক লোক বলে উঠলো, ‘ মেয়েটাকে সোফায় বসিয়ে কপালে পানি দাও।’

মিম দৌড়ে ওদের সামনে এসে বললো,’ সোফায় বসুন আমি পানি নিয়ে আসছি। ‘
মহুয়া স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো মিমের দিকে মুখ থেকে সব কথা যেন হারিয়ে ফেলেছে।
মিমের শরীরে দামী শাড়ি,গহনা। মুখে কালচে অসংখ্য দাগ, ঠোঁটের নিচে রক্ত জমাট বেঁধে আছে।

দামী শাড়ি,গহনা কি সুখ আনতে পারে.? টাকা পয়সা কি মনের শান্তি আনতে পারে.? এই বিশাল বড় বাড়ি কি জীবনে আনন্দ দিতে পারে..?

মিম দৌড়ে পানি এনে দিতে চাইলে মহুয়া থামিয়ে বললো,’ আমি ঠিক আছি।’

কন্ঠ শুনে মিমের হাত থেকে গ্লাস নিচে পড়ে গেল। এতোক্ষন কষ্টে আঁটকে রাখা জল গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।

” এটা কি করলেন আপনি!!.?? অন্যের জিনিস ভাঙতে তো গায়ে লাগবে না। জানেন এই গ্লাসের দাম কতো.? আপনার মতো দশটা মেয়েকে বিক্রি করলেও একটা গ্লাসের দাম আসবে না। ”

মেঘলা টেবিলে বসে ফুঁসতে ফুঁসতে রেগে কথাগুলো বলা ছেলেটার দিকে তাকালো।

ছোঁয়াঃ এইগুলো কেমন আচরণ!.?
মেঘলা চুপ করে পরিস্থিতি বুঝতে চাইলো। আসলে এতোক্ষন এখানে হচ্ছিল কি.? কে প্লেট ছুড়ে মারলো।?

~ মাহিন তুমি দিন দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছ বাহিরের মানুষের সামনে এইগুলো কেমন আচরণ!.?
~ প্লিজ আপনি চুপ থাকুন আর আপনার বউকে বলে দিবেন আমার সামনে যেন কখনো না আসে।
~ মাহিন দাদুভাই খাবার শেষ করে রুমে যাও।
~ এই মহিলার হাতের রান্না আমি খাব ভাবলেন কিভাবে দাদু। উনি হাজার চেষ্টা করলেও আমার মায়ের জায়গা নিতে পারবে না।

মধ্য বয়স্ক লোকটা বলে উঠলো, ‘ আপনারা কে.??’
মেঘলাঃ আমরা মিমের কাজিন।

লোকটা হঠাৎ রেগে গেল, ‘ এদের ভেতরে আশার জায়গা কে দিয়েছে.? দারোয়ান কোথায়.?
ছোঁয়াঃ আস্তে দাদাভাই আমরা শুধু একটু দেখা করেই চলে যাব।
মিম ভয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,’ আ..আমি কি..ছু জা জানিনা বিশ্বাস করু…ন।’

মহুয়াঃ মিম কিছু জানেনা আমরা ওর সাথে যোগাযোগ না করেই এসেছি। কেন আমার বোনকে আমি দেখতে আসতে পারি না.?
~ তুমি কে.?
~ আমি মিমের বোন।
~ পালিয়ে যাওয়া মেয়েটা।
মহুয়া চুপ করে রইলো।

মাহিনঃ যতসব ছোটলোকের কাজ কারবার।
মহুয়া দাঁড়িয়ে মিমের হাত ধরে বলে উঠলো, ‘ আজ এই মুহূর্তে আমি নিজের সাথে মিম কে নিয়ে যাচ্ছি পারলে কেউ আটকিয়ে দেখাক।’

লোকটা রেগে মহুয়ার হাত থেকে মিমের হাত ছাড়ানোর জন্য হাত বাড়াতেই মেঘলা লোকটার হাত শক্ত করে ধরে ফেললো।

মাহিন বসে বসে তাদের ড্রামা দেখছে।

উপর থেকে একটা মেয়ে চিৎকার চেচামেচি করে নামছে আর মিমের নাম নিয়ে গালি দিচ্ছে।
~ আব্বু আপনি এখানে আর আমি আমার ড্রেসটা খুঁজে পাচ্ছি না আপনার বউ কোথায় রেখেছে.?

~ ঠিক ভাবে কথা বলো তোমার আম্মু হয়।
লোকটা দারোয়ানকে কল দিয়ে বললো জলদি এদের বের করে দিতে।

মেঘলা ব্যাগ থেকে নিজের আইডি কার্ড বের করে দেখালো।
সাথে সাথে লোকটা চুপ হয়ে গেল।
মেঘলাঃ আমি একজন সিআইডি অফিসার বেশি বাড়াবাড়ি করলে….
লোকটার মেয়ে রেগে বলে উঠলো, ‘ এখানে হচ্ছেটা কি.?’
ছোঁয়া মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনার ড্রেসআপ নিয়ে আলোচনা চলছে।’

মহুয়া মিমের হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মাহিন ছেলেটা পেছন থেকে ডাক দিলো।

~ মাক্সটা খুলুন।
মহুয়া ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই ছেলেটা নিজের পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে এটার ভেতর থেকে একটা ছবি বের করে মহুয়ার সামনে রেখে বললো,’ এটা আপনি.? ‘
মহুয়া অবাক হয়ে বললো,’ আপনার মানিব্যাগে এই ছবি!.?’
মাহিনঃ আপনার.?
মহুয়া রেগে ছবিটা হাতে নিয়ে ছিড়ে ফেললো।
মাহিন হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আরও আছে। মাক্স খুলতে বলে ছিলাম না হয় এখান থেকে এই মহিলা যাবে আপনি বের হতে পারবেন না।
মহুয়াঃ দেখা যাক কে বের হয় আর কে না হয়।
ছোঁয়া, মেঘলা বের হয়ে এসে বললো,’ চলো।’
মাহিনঃ আপনারা সবাই বের হন শুধু এই মেয়ে থাকবে।
মেঘলা ছেলেটার দিকে ভালো করে তাকালো বয়স কতো হবে.? ২৫! মিমের থেকেও বড় আর এ-ই ছেলের মা নাকি ১৭ বছরের একটা বাচ্আা মেয়ে!। টাকা থাকলে সবই সম্ভব।

ছোয়াঃ কি আজব আরেক ঝামেলা।
মহুয়ার রাগে ইচ্ছে করলো ছেলেটার চোখের সাথে সাথে হাত পা ভেঙে দিতে।

ছেলেটা হেঁসে বলে উঠলো , ‘ আচ্ছা এই মহিলাকে নিয়ে যাচ্ছেন আর কখনো যেন এই বাড়িতে না দেখি। আর আপনার সাথে খুব জলদি দেখা হবে।’

ছোঁয়া গেইট থেকে বের হয়ে বলে উঠলো, ‘ বাপ বেটা সব গাঞ্জাখোর। তাকানোর, কথা বলার স্টাইল দেখলেই ঘা জ্বলে উঠে।

___________

মিম কে দেখেই ওর আম্মু জড়িয়ে ধরলেন বুকের সাথে। মিমও মাকে দেখেই কান্না শুরু করলো। জেনো কতো বছর পর মা মেয়ের মুখ দেখছে।

মেঘলা বললো খুব জলদি সব ঝামেলা শেষ হয়ে যাবে। মিমের ডিভোর্স করিয়ে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিবে।

মিমঃ এতো জলদি উনি ছাড়বে না এতো সহজে নয়।
মেঘলাঃ এই বিষয় তোমার ভাবতে হবে না। তোমার পুরো জীবন সামনে পড়ে আছে উঠে নিজের পায়ে দাড়াও আমি সব ঠিক করে দিব। নিজে শক্ত হও।

এই রাতটা থেকে পরের দিন সকালে নিজেদের শহরে চলে গেল ছোঁয়া, মেঘলা।

মিম আগের সব অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চাইলো মহুয়ার কাছে।

__________

দিন গিয়ে রাত নামছে, রাত গিয়ে দিন দেখতে দেখতে ১৫দিন চলে গেল।

সকাল থেকেই বাড়ি সাজগোছ শুরু হলো।

মহুয়া বেশ কয়েকবার মামিকে জিজ্ঞেস করলো বাড়িতে কি কোনো অনুষ্ঠান আছে.??
মামি শুধু কথা এড়িয়ে যাচ্ছে।

বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজানো শেষ। পুরো বিয়ে বাড়ির মতো করে বাড়ি সাজানো হলো।

মহুয়া মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো একদিনও আহনাফ কল বা মেসেজ দেয়নি। এই ১৫দিন পনেরো বছরের মতো ছিল।

মিম এসে মহুয়ার পাশে বসে বলে উঠলো, ‘ আপু হাতটা দাও।’
মহুয়া হাতের বইটা রেখে মিমের দিকে তাকালো।
মিমঃ দাও না।
মহুয়াঃ আমাকে না জানিয়ে কি হচ্ছে বাড়িতে মিম!.?
মিমঃ তেমন কিছু না আগামীকাল ভাই ভাবি আসবে। ভাবি বললো বাড়িটা বিয়ে বাড়ির মতো সাজাতে। এখন দাও তোমার হাতে মেহেদী দিয়ে দেই।

মহুয়া নিষেধ করতে চাইলো কিন্তু মিমের মুখের দিকে তাকিয়ে নিষেধ করলো না। চঞ্চল মেয়েটা কেমন গম্ভীর হয়ে গেছে এই প্রথম কাছে এসে আবদার করেছে কিভাবে নিষেধ করবে!?

মহুয়া হাত বাড়িয়ে দিল খুব সুন্দর করে মিম দুই হাত ভর্তি মেহেদী দিয়ে দিল।
মিমঃ তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে আপু।

বিনিময় মহুয়া মুচকি হাসলো।

_____________

মেঘলা রাত বারো টায় বাড়িতে আসলো৷ বাড়ির দিকে তাকিয়ে অনেক অবাক হলো। আজ সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় আব্বুকে দেখেছে কিছু লোক এসেছে এতোটাও গুরুত্ব দেয়নি। এখন বাড়ি এভাবে এতো সুন্দর করে সাজানো কেন.? মেঘলা গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে আশপাশে চোখ বুলিয়ে বাড়িতে আসলো।

বাসায় এসে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করে নিজের রুমে গেল। রুমে গিয়ে আরও অবাক হলো বিছানায় গোলাপ ছড়িয়ে আছে মেঘলা বিছানার পাশে গিয়ে ফুলগুলো হাতে নিল। ফুলের নিচে খুব সুন্দর একটা চিরকুট। চিরকুট খুলেই দেখলো লেখা ” অপেক্ষা ”

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৪৩
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

সকাল সকাল দারোয়ানের কল পেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো মেঘলা।

এলোমেলো চুলগুলো সামনে এসে পড়ে আছে, চোখ গুলো লাল হয়ে আছে সাজ্জাদের।

সাজ্জাদের এমন অবস্থা দেখে অবাক হলো মেঘলা। দ্রুত ওর সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’ কি হয়েছে…!!?’

সাজ্জাদ কেমন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো মেঘলার শ্যামবর্ন মুখটার দিকে।
মেঘলা কিছু বলার আগেই সাজ্জাদ বলে উঠলো, ‘ আপনি রাজি! আপনি রাজি মেঘলা!.? এখানে আপনাকে জোর করা হলে আমাকে বলুন আমি সব কিছু ঠিক করে দিব।’

মেঘলা কিছুই বুঝতে পারছে না। সাজ্জাদ কিসের কথা বলছে.?

সাজ্জাদঃ মেঘলা..
মেঘলাঃ আপনি কিসের কথা বলছেন.? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

সাজ্জাদঃ আপনি সত্যি বুঝতে পারছেন না!.?
মেঘলা মাথা নেড়ে না বুঝালো।
মেঘলাঃ বাসায় আসুন বসে কথা বলি।
সাজ্জাদঃ আপনি তো বলে ছিলেন তিন মাস পর ডিভোর্স তাহলে আবার বিয়ে কেন.?
মেঘলাঃ মানে…? আমি আপনাকে কখন বলেছি? আর কিসের কথা বলছেন.?

সাজ্জাদ বাড়ির দিকে তাকিয়ে হাসলো তারপর মেঘলার দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল দিয়ে বাড়ির সাজগোছ দেখিয়ে বললো,’ তারপরও আমার বুঝিয়ে বলতে হবে মেঘলা। আপনি একজন সিআইডি হয়ে এতোটুকুও বুজেন না!.?

মেঘলা চুপ হয়ে গেল। মনের ভেতর উঁকি দিয়ে থাকা সব সন্দেহ প্রশ্ন কেমন সত্যি হয়ে যাচ্ছে।

সাজ্জাদ দুই পা এগিয়ে এসে মেঘলার হাত ধরতে নিলে মেঘলা পিছিয়ে গেল।

মেঘলাঃ সাজ্জাদ বাসায় যান আপনাকে দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে।
সাজ্জাদঃ আমার সুস্থ হওয়ার সব কিছু আপনার হাতে আপনি আমার হয়ে যান মেঘলা আমি সুস্থ হয়ে যাব।
মেঘলাঃ আমি আপনার বন্ধুর ভাইয়ের বউ আপনার লজ্জা থাকা উচিত সাজ্জাদ।
সাজ্জাদ তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো, ‘ এটা বিয়ে নয় গেইম ছিল।’
মেঘলাঃ আপনাকে আমি কখনো বলেছি গেইম ছিল.? কখনো বলেছি এই বিয়ে আমি মন থেকে মানি না.? কখনো বলেছি.? অন্যের বউয়ের দিকে নজর দেওয়া পুরুষদের পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ আমি মনে করি। বিয়ে যেভাবেই হোক আমি কারো বউ নিজের চোখ সংযত করুক। আমার চোখের সামনে দ্বিতীয় বার যেনো আপনারকে কখনো না দেখি।
সাজ্জাদ আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেঘলার দিকে।
মেঘলা রেগে গেইট শব্দ করে বন্ধ করে ভেতরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।
সাজ্জাদ গেইটের বাহির থেকে তাকিয়ে আছে সাজানো বাড়িটার দিকে।
এই প্রথম কাউকে মনে ধরে ছিল, ভালো লেগে ছিল আর তাকেই এভাবে হারাতে হচ্ছে!

মেঘলা বাসায় এসে রায়হান সাহেবের সাথে রাগারাগি করে নিজের রুমে চলে গেল। সে বুঝতে পারছে না এখানে লুকোচুরি কেন খেলা হচ্ছে.??? সব রাগ গিয়ে জন্মালো শ্রাবণের উপর। শুধু একবার সামনে পাই মেঘলা কি সেটা বুঝিয়ে দিবে।

_____________

ছোঁয়া সোফায় বসে টিভি দেখছে আর চা খাচ্ছে।
নির্জন এসেই ছোঁয়ার পাশে বসে পড়লো।
ছোঁয়া নাকে হাত দিয়ে বলে উঠলো, ‘ ছিঃ দূরে গিয়ে বস না ঘা থেকে বিশ্রী গন্ধ আসছে।’

নির্জন রেগে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এই গন্ধ শোনার জন্য কতো মেয়ে পাগল জানিস.? তুই জানবি কিভাবে তুই তো মেয়েই না, মেয়েদের কাতারেই পড়িস না, এটা কে গন্ধ নয় ঘ্রাণ বলে। আর মেয়েরা ছেলেদের এই ঘ্রাণেই পাগল। ‘
ছোঁয়া হ্যাঁ করে নির্জনের কথা গুলো শুনে হুঁ হুঁ করে হেঁসে উঠলো।
ছোঁয়াঃ ভাই উল্টা পাল্টা কি খেয়ে এসেছিস বলতো.? তোর পাশে বসেই আমার বমি আসতেছে।
নির্জন ইচ্ছে করে ছোঁয়ার ঘা ঘেঁষে বসলো। ছোঁয়া দূরে সরে যেতে চাইলে নির্জন ছোঁয়ার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের উপর এনে ফেললো।
ছোঁয়া চেঁচামেচি শুরু করলো ছেড়ে দিতে।
নির্জনঃ ছোঁয়া..
ছোঁয়া চুপ হয়ে গেল হৃদপিণ্ড থমকে গেল, কেমন উদাসীন দৃষ্টিতে তাকালো নির্জনের দিকে।
নির্জন ছোঁয়ার মুখের উপর ফু দিয়ে চুল গুলো উড়িয়ে দিল।
সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিল ছোঁয়া।
নির্জন তা দেখে মুচকি হাসলো। ধীরে ধীরে ছোঁয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ বিশ্রী ঘ্রাণে মাতার মাতার স্মেল আছে নারে ছোঁয়া!! ‘

ছোঁয়া লজ্জায় নির্জনের থেকে দূরে সরে যেতে চাইল।নির্জনের এক হাত ছোঁয়ার কোমরে অন্য হাত ঘাড়ে। নির্জন ছোঁয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তাকা আমার দিকে।’
ছোঁয়া লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না।
নির্জনঃ একবার তাকা।
ছোঁয়াঃ উঁহু..
নির্জনঃ ছোঁয়া রাণী আপনি তাকাবেন আপনার জাহাপনার দিকে।
ছোঁয়া নির্জনের দিকে না তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আম্মুওও!!’

সাথে সাথে নির্জন ওকে ছেড়ে দিল।
ছোঁয়া ছাড়া পেয়ে সাথে সাথে দাঁড়িয়ে মুখ ভেংচি কেটে বলে উঠলো, ‘ আসছে আমার জাহাপনা হতে ভিতুর ডিম..’
নির্জনঃ ছোঁয়া এটা চিটিং…
ছোঁয়া সোফা থেকে বালিশ নিয়ে ছুড়ে মারলো নির্জনের দিকে।

______________

মহুয়া রেগে বসে আছে কি আজব! মামিকে জিজ্ঞেস করলো বাড়িতে কি হচ্ছে..? মামি হাসতে হাসতে উত্তর দিল মিমের বিয়ে। মানে কি..? ডিভোর্স হয়নি এক জনের সাথে আবার বিয়ে! আর মিম আজও ভালো হলো না বিয়ের কথায় নাচতে নাচতে কিভাবে রাজি হলো.? এতো কিছুর পরেও এই মেয়ে ভালো হবে না।

দুপুরের দিকে পার্লার থেকে দুইটা মেয়ে এসে হাজির হলো মহুয়ার রুমে।
মহুয়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো তাদের দিকে।
তাদের পেছন পেছন এসে হাজির হলো মিম আর ওর দুই ভাবি।
মহুয়াঃ এরা কারা.??
মিমঃ ভাবিদের সাথে পরিচয় হয়ে যাও।
মহুয়া কথা বললো ভাবিরাও ভীষণ মিশুক।

মিমঃ তোমার জন্য আজ অনেক বড় সারপ্রাইজ আছে।
মহুয়া একটু হাসলো যদিও এখন মিম কে দেখলেই রাগ হচ্ছে তাও জোর পূর্বক হাসলো।

ভাবিঃ মহুয়া দেখো তো সব কিছু পছন্দ হয় কিনা! অবশ্য প্রিয় মানুষের আনা সব কিছুই পছন্দ, অপছন্দ জিনিসটাও পছন্দ হয়ে যায়।
মহুয়াঃ মানে.??
মিম চোখ ঘুরিয়ে ভাবিকে কিছু একটা ইশারা করতেই ভাবি চুপ হয়ে গেল।

তারা জোর করেও কেউ মহুয়াকে কিছু পড়াতে পারলো না। মহুয়া উল্টো রেগে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। কিসের সারপ্রাইজ! উল্টো মনে হচ্ছে মিমের নয় বিয়েটা ওর।

সময় গড়িয়ে যায় রুম থেকে নিচের হৈচৈ শুনতে পায়। তাহলে কি জামাই চলে এসেছে.? একবার কি গিয়ে দেখা উচিত!.? সব কিছু ছেড়ে ধপ করে বিছানায় বসে মোবাইল হাতে নিল। আজকে আহনাফ কে একটু বেশিই মিস করছে।

কিছু সময় পর দরজায় নক হতেই মহুয়া বিরক্তিকর দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকালো। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই ভূত দেখার মতো চমকে তাকিয়ে রইলো।

______________

মেঘলা খুব সুন্দর করে সেজেছে বিয়ে সাজগোজ নিয়ে কখনো সখ ছিল না মেঘলার তারপরও আজ সে মন ভরে সেজে নিচ্ছে। শ্রাবণ কি মনে করেছে সে মেঘলাকে চমকে দিবে!.? মোটেও না আজ মেঘলা ওকে চমকে দিবে। নিশ্চয়ই মেঘলা কে দেখেই শ্রাবণ ভাঙা মন নিয়ে বলবে ” মেঘলা তুমি অন্য কারো জন্য এতো ভারিভারি সাজে সেজেছো!.? নিশ্চয়ই ছ্যাঁখা খাওয়া লোকদের মতো বড় বড় ডায়লগ দিবে ভাবতেই হাসি পেল মেঘলার।

নিচে হৈচৈ শুনে রুম থেকে বাহির হয়ে ছাদে গেল। পেছন পেছন পার্লারের মেয়েরাও গেল। ওরা নিশ্চয়ই ভাবছে কি উদ্ভুত মেয়ে নিজের বিয়ের সাজ নিজে সাজছে তাহলে আমাদের বসিয়ে রাখছে কেন.? মেঘলা পেছনের দিকে তাকিয়ে একটা মেয়ের হাতে মোবাইল দিয়ে বললো,’ ভিডিও করুন তো, এটাই আপনাদের কাজ।’

পার্লারের লোকদের ফটোগ্রাফার বানিয়ে দিল!

~ আপু আমাকে দেন আমার তো ছোট থেকেই ফটোগ্রাফার হওয়ার সখ ছিল। যদিও আপনার বিয়েতে অনেক ফটোগ্রাফার এসেছে তবে সব নিচে আপনার কাছে কিছুই নেই।

মেঘলা হেঁসে বললো,’ বিয়েটা শুধু ছেলে আর ছেলে পক্ষের হচ্ছে তাই সব কিছু ওদের হাতে। ‘
~ এটা কেমন বিয়ে.?
মেঘলা হেঁসে বললো,’ এটাই তো মজার। ‘
~ আপনি দেখছি অনেক খুশি বিয়েতে।
আরেকটা মেয়ে বলে উঠলো, ‘ জামাই তো নয় যেনো নায়ক।’
মেঘলা হেঁসে বললো,’ তাই নাকি.?’
~ কেন আপু আপনি এখনো নিজের জামাই দেখেন নি.?
মেঘলা ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো, ‘ নাহ্..!’

___________

মহুয়া সামনে আহনাফ কে দেখেই খুশি হলেও অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিল।
মহুয়াঃ আপনি এখানে.?
আহনাফ এক হাতে কপাল স্লাইড করে বলে উঠলো, ‘ রেডি হওনি কেন.?’
মহুয়াঃ আজ তো আপনার বিয়ে ছিল! এখানে কেন.?
আহনাফ হেঁসে বলে উঠলো, ‘ বউ সাজছে না তাই বিয়ে ছেড়ে বউয়ের কাছে চলে আসতে হয়েছে। ‘
মহুয়াঃ মানে.?
আহনাফঃ মানে, বউ আমার সামনে দাঁড়িয়ে মানে! মানে! করছে তাও বর চিনছে না।

মহুয়ার মুখ আপনা আপনি হা হয়ে গেল।

আহনাফ রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
আহনাফ মহুয়াকে বিছানায় বসিয়ে সব কিছু ওর সামনে রেখে বললো পাঁচ মিনিটে রেডি হও।
মহুয়া রেগে আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমি কিছু পড়বো না। ‘
আহনাফঃ কেন.?
মহুয়াঃ আপনারা সবাই আমাকে বোকা বানালেন.?
আহনাফঃ আমরা তো শুধু সারপ্রাইজ…
মহুয়াঃ থামুন প্লিজ।আপনার সারপ্রাইজ কারো কাছে বিষের থেকেও বিষাক্ত ছিল। কতোটা কষ্ট পেয়েছি জানেন.!!
আহনাফ মহুয়া সামনে বসে ওর গালে হাত রাখতেই মহুয়া ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।
আহনাফঃ সরি মেহু..
মহুয়া আহনাফের হাত সরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে কাঁদছে।
আহনাফঃ যতো শাস্তি দেওয়ার বাড়িতে গিয়ে দাও তাও রেডি হয়ে নাও, সবাই বসে আছে তোমার অপেক্ষা করছে।

মহুয়া সবার কথা ভেবে রাডি হতে শাড়ি হাতে নিল।

মহুয়া রেডি হয়ে প্রথম আহনাফের সামনে আসলো। সাথে সাথে আহনাফ কথা বলতে ভুলে গেল৷ বুক পকেট থেকে হাত দিয়ে কিছু খুঁজলো।

“তোমার ঐ চোখ দেখে আমি সব ভুলে গেছি।আর তোমার জন্য বেলি ফুলের মালা কিনে ছিলাম নিয়ে আসতে ভুলে গেছি। আর তুমি এতোই সুন্দরী কি বলবো হায় আল্লাহ..
ছাড়ো এইসব,,,,,
আমি পরের লাইন ভুলে গেছি।

মহুয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে নিল।

____________

নির্জন সেই ভাবসাব নিয়ে মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করতে গেলেই ছোঁয়া মাঝে গিয়ে গন্ডগোল করে দিচ্ছে।
নির্জনঃ তোর সমস্যা কি.?
ছোঁয়াঃ আমার তো কোনো সমস্যা নেই শুধু তোর মতো ফ্লার্ট বাজের হাত থেকে মেয়েদের রক্ষা করছি।
নির্জন পাশ থেকে একটা ফুল এনে ছোঁয়ার কানে গুঁজে দিয়ে বলে উঠলো, ‘ এখন তোকে রক্ষা করবে কে.!??’

চলবে…

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-৪০+৪১

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৪০
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

গাড়িটি গিয়ে থাকলো একটা খোলা অন্ধকার মাঠে।

রাত তখন গভীর।

গাড়ি থেকে পুলিশ আর মুখোশ পড়া ছেলেগুলো নেমে গেল৷

আফজাল রেগে বলে উঠলো, ‘ তোমরা কোথায় যাচ্ছ.? আর এটা কোথায়.??

কেউ কোনো শব্দ করলো না। আফজাল গাড়ি থেকে নেমে অন্ধকারে চারপাশ দেখার চেষ্টা করলো।

পেছন থেকে দুইজন লোক এসে আফজালের হাত, পা বেধে হাঁটু গেড়ে নিচে বসিয়ে দিলো। মুখ শক্ত কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেললো।

আফজাল বুঝতেও পারলো না এই কয়েক মিনিটে কি হয়ে গেল!!

অন্ধকার মাঠে আলো জ্বলে উঠলো। সাদা শাড়ি পড়ে এগিয়ে আসলো এক রমনী।

আফজাল তাকিয়ে রইলো চেষ্টা করেও মুখ থেকে একটা শব্দ বের করতে পারলো না।

” ওয়েলকাম তোমাকে নরপিশাচ। আজ তোমাকে এইসব কিছু থেকে মুক্ত দিতে নিয়ে আসলাম। ভালো লাগছে না..??”

সময় ঘড়ায় উত্তর আসে না।

~ ওপ্স তুমি তো এখন একটা পুতুল হয়ে আছো। আমাকে দেখে ভালো লাগছে না.??

আফজাল মুখ দিয়ে শব্দ বের করার চেষ্টা করলো৷

রমনীটি পাশে দাঁড়ানো একজন পুলিশের থেকে ছুরি নিয়ে আফজালের সামনে বসলো।

আফজালের ভয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে। এতো ভয়ংকর লাগছে কেন সামনের রমনীটি কে..? আফজাল এই নারী কে চিনে না। এটা ওর নিরু হতেই পারে না। ওর নিরু ছিলো কোমল, নরম মনের মেয়ে। একটু কষ্ট পেলেই কান্না করে পুরো বাড়ি মাথায় নিয়ে নিত। আঘাত পেলে চুপচাপ সরে যেত নিজেকে কষ্ট দিত তবুও কাউকে কিছু বলতো না। আফজাল বলতেই পাগল ছিল। আজ সে কাকে দেখছে..??

~অবাক হচ্ছ.? বলেই আফজালের গালে ছু*রি রেখে আলতো করে টান দিল।

হঠাৎ কোমল মুখটা শক্ত হয়ে গেল। আফজালের গাল গুলো শক্ত করে চেপে ধরলো কাঁটা জায়গা দিয়ে ফিরকি দিয়ে রক্ত ঝড়ছে।

নিরুপমা রক্ত হাতে নিয়ে হাসতে লাগলো কি ভয়ংকর হাসি। এই মাঝ রাতে আশেপাশে কোনো জীবজন্তুর ও শব্দ শুনা যাচ্ছে না নিরবতায় চারপাশ থমকে আসে তার মধ্যে এই হাসি ভীষণ ভয়ংকর শোনালো।

নিরুপমা একজন কে ইশারা করলো ফুটন্ত গরম পানি নিয়ে আসলো।

আফজাল কে পানিটা দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘ মনে আছে এই পানির কথা!.???’

আজফার ভীতু চোখে পানির দিকে তাকালো। নিরু কিভাবে জানলো!.?? ভয়ে জীবন যায় যায়।

নিরুপমা পানিটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বললো,’ আমার পিচ্চি বোনটা। কতোবার অনুরোধ করে ছিল, পায়ে ধরে ছিল তুমি শুনোনি। নরপিশাচদের মনেও তো একটু মায়া হয় তোর মতো নরপিশাচের মায়া হলো না। আমার বোন তো তোরও বোন ছিল। সারাদিন জিজু জিজু বলে মাথায় নিয়ে রাখতো কি করলি ওর সাথে!! ।

নিরুপমার রাগে শরীর কাপছে। পাশের জনকে ইশারা করতেই ফুটন্ত গরম পানি আফজালের উপর ডেলে দিল।

গরম পানি পড়তেই ছটফট শুরু করলো আফজাল।

নিরুপমা আবার ইশারা করতে দুইজন গিয়ে আফজালর গলায় রশ্মি পেচিয়ে দুই পাশ থেকে টেনে ধরলো।

আফজালের জীবন যায় যায় অবস্থা নিরুপমা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আফজালের পাশে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ এখন কেমন লাগছে.? এই শাস্তি গুলো ২০, বছর আগে দিতে চেয়ে ছিলাম কিন্তু এই ভূয়া সমাজ, আইনের হাতে তুলে দিয়ে ভুল করে ছিলাম।

আফজালের চোখ উল্টে যাওয়া দেখে তৃপ্তির হাসি হেঁসে একজন কে ছেড়ে দিতে বললো। রুহ দেহ থেকে যেতে যেতে বেঁচে গেল।

নিরুপমা একটা চেয়ারে আয়েশ করে বসে বলে উঠলো, ‘ বাড়িতে সেইদিন কেউ ছিল না। সবাই গ্রামে গিয়ে ছিলো বিয়ের দাওয়াত খেতে। তুই অফিসের কাজের জন্য আঁটকে পড়ে ছিলি সিলেট। মারিয়াম ওর বাবার সাথে অভিমান করে গ্রামে যেতে চায়নি। বাসায় একমাত্র মারিয়াম ছিল। মারিয়াম প্রায় বাসায় একা থাকে তাই কেউ টেনশন করলো না ওকে রেখে গেল।

সব ঠিক ছিল কিন্তু মাঝ রাতে তুই বাড়িতে আসলি তাও নেশা করে। আমি তোর নেশা করার কথা সবার থেকে লুকিয়ে গিয়ে ছিলাম। ভালোবেসে বিয়ে করে ছিলাম বলে তুই বলতেই পাগল ছিলাম হাহ্ কতোটা ভালোবাসায় অন্ধ ছিলাম। তোর দোষ গুলো আমার চোখে পড়লেও দোষ মনে হতো না। বার বার বুঝিয়ে ছিলাম শুধু একটাই অজুহাত দেখাতি ভালোবাসার তুই তো জানতি আমার দূর্বলতা কি!!

সেই রাতে তুই মারিয়াম কে দেখে নিজের মধ্যে কাপুরুষের রুপ ধারণ করে ছিলি আমার পিচ্চি বোনটা কে জোর করে ধর্ষন করে ছিলি ওর চিৎকার চার দেয়াল ছাড়া কারো কানে যায়নি।

পিচ্চি মেয়েটা লজ্জায় কাউকে বলতে পারেনি। ও তো জানতো আমি কতোটা আফজাল বলতে পাগল ছিলাম।

ও গ্রামে চলে যেতে চাইলো কিন্তু আমরা কেউ দিলাম না। সবার এতো ভালোবাসা সেও ছেড়ে যেতে পারলো না।

তারপর থেকে বার বার এটা সেটা বলে ভয় দেখিয়ে ওর সাথে সম্পর্ক করতে চাইলি মারিয়াম নিষেধ করলে, প্রতিবাদ করতে চাইলে আমাকে ব্যাবহার করলি। দিন দিন মেয়েটার জীবন অন্ধকার নেমে আসলো।

একদিন ঘুমের ঔষধ খাইয়ে তুলে নিয়ে গেলি বন্ধুদের আস্তানায়। তোর বুক কাঁপলো না একবারও! তুই তো পশুদের কাতারেও পরছ না। পশুদের এক বেলা খানা ছিটিয়ে দিলে মালিকের সঙ্গ ছাড়ে না। আমার ভাই নিজের কোম্পানিতে চাকরি দিল নতুন জীবন দিল আর আমি….

তাও আমাদের বুকেই ছু*রি মারলি.?

সেই দিন নিজের সাথে আরেক বন্ধু নিয়ে। নিরুপমার চোখ জলে ভরে উঠলো।

পিচ্চিটার যখন জ্ঞান ফিরলো তোর পায়ে ধরলো বাড়িতে আসতে দিতে তুই হেঁসে ছিলি, বিশ্রী হেসে গরম পানি, এসিডের ভয় দেখিয়ে পিচ্চিটার বেঁচে থাকা জাহান্নাম করে দিলি। ওখান থেকে এসেই নিজের জীবন দিয়ে দিলো মেয়েটা রেখে গেলো আমার জন্য উপহার হিসেবে একটা ডায়রী।

নিরুপমা নিজের চোখের পানি মুছে আফজালের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তোর মতো পিশাচ কে নিজের হাতে শেষ না করলে আমার পিচ্চিটার আত্মা ও শান্তি পাবে না।’

নিরুপমা রেগে আফজালের হাতে কোপ বসালো। দুই কোপে দুই হাত শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেল।

রক্ত চারপাশ ভেসে যাচ্ছে।

নিরুপমার চোখে মুখে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে।

আবারও রশ্মি পেচিয়ে টেনে ধরতে বললো।
গাড়িতে বসা মুখ কালো কাপড় দিয়ে পেঁচানো ছেলেটাকে চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ নির্জন গাড়ি চালিয়ে দে যেভাবে আমার ভাইয়ের উপর চালিয়ে ছিলো।’

নিরুপমা বলতে দেরি গাড়িটা আফজালকে পিষে দিতে দেরি হলো না।

রক্ত লাল হাতের দিয়ে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসলো নিরুপমা।

_________

ডায়রীটা কাঁপা কাপা হাতে শক্ত করে ধরে রাখলো মহুয়া।

সে এসে ছিলো নিরুপমার রুমে । নিরুপমা কে রুমে না পেয়ে চলে যাওয়ার সময় টেবিলের উপর পুরোনো ডায়রী দেখে হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখছিল। কিন্তু ডায়রীতে এমন কিছু পাবে হয়তো সে কখনো কল্পনা করেনি। মারিয়ামের মৃত্যুটা জেনো ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো। পৃথিবীতে কেউ ভালো নেই আর না ছিল। জীবন এতো কঠিন কেন.? মহুয়ার চোখ থেকে পানি পড়ছে। কেউ ইচ্ছে করে এতো সুন্দর পৃথিবী ছাড়তে চায় না আর যে ছাড়ে তার পেছনে হয়তো অনেক বড় সত্যি লুকিয়ে থাকে। মহুয়ার ইচ্ছে করলে সেই লোকগুলোর মতো আফজালের বুকেও নিজের সব রাগ শেষ করে দিতে। আজ থেকে একদিন আগেও কেন এই ডায়রী সে পেল না! তাহলে হয়তো আফজালের শেষ রাত কাল হয়ে যেত।

মহুয়ার ভাবনার মাঝে ঘরের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো নিরুপমা।
কারো উপস্থিতি বুঝতেই হাত থেকে ডায়রীটা নিচে পড়ে গেল।

নিরুপমা শক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো মহুয়া আর নিচে ডায়রীটির দিকে।

মহুয়া জলদি ডায়রীটা তুলে ভয়ে ভয়ে নিরুপমার দিকে তাকালো।

মহুয়াঃ আমি আসি বলে মহুয়া বের হয়ে যেতে নিলে নিরুপমা শান্ত এক গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ যতোটুকু জেনেছো নিজের মধ্যে রাখো।’

মহুয়া ঘোমটা টেনে আঁড়চোখে তাকালো। নিরুপমার সাদা শাড়িতে রক্তের দাগ লাল হয়ে যাওয়া শাড়ি দেখে থমকে গেল।

মহুয়াঃ রক্ত!!
নিরুপমা মুচকি হাসলো।

মহুয়া কি বুঝলো জানা নেই তবে ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা দেখা গেল।

________________

সকাল থেকে সব চ্যানেলে একই সংবাদ দেখাচ্ছে। রাতে আফজাল জেল থেকে পালিয়েছে আর সকালে তার টুকরো টুকরো শরীর মাঠে পাওয়া গেছে। কে খু’ন করেছে.? খুনির কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। যে খু’ন করেছে খুন ঠান্ডা মাথায় আর বুদ্ধি দিয়ে করেছে কোনো ক্লো পাওয়া যাচ্ছে না।

ছোঁয়া চুপচাপ বসে তাকিয়ে রইলো টিভির দিকে। ওর কোনো অনুভূতি হচ্ছে না। সে তো ছোট থেকেই যেনে আসছে বাবা নামক ব্যক্তিটি জন্মের আগেই মা-রা গেছে হঠাৎ ঝড়ের মতো কেউ এসে বললো,’ সে ওর বাবা এক সপ্তাহ না যেতেই এতো নিষ্ঠুরতম ভাবে মৃত্যু। ‘ ওর কোনো অনুভূতি হচ্ছে না চোখে পানি আসছে না।

__________

নির্জনের উপর দিয়ে খুব পেশার গেল কয়েকদিন। আফজালের মৃত্যু নিয়ে ঝামেলা চললো। লাস্ট প্রমাণিত হলো নিজের লোকদের হাতেই খু’ন হয়েছে আফজাল এটাসেটা দিয়ে ধামাচাপা পড়ে গেল আফজালের বিষয়টা।

নিরুপমা ছাঁদে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে । মেঘলা এসে পাশে দাঁড়ালো। নিরুপমা হেঁসে বলে উঠলো , ‘ তোমাকে ধন্যবাদ মেঘলা।’
মেঘলাঃ ধন্যবাদ বলবেন না আন্টি।
নিরুপমাঃ আমাকে আন্টি না বলে ফুপিমণি বলো। আমি তোমার ফুপিশাশুড়ি।
মেঘলা হাসলো।
মেঘলাঃ আর মাত্র তিনদিন ফুপিমণি তারপর আমাদের সব শেষ। তিন মাস শেষ।
নিরুপমাঃ ভালো করে ভেবে দেখো বিয়ে, জন্ম, মৃত্যু আল্লাহর ইচ্ছে। শ্রাবণ কিন্তু খারাপ ছেলে নয় সব দিক দিয়ে সেরা।
মেঘলাঃ আমার শাশুড়ী আমাকে পছন্দ করে না।

দেখতে দেখতে তিনদিন চলে গেল।

মেঘলা ব্যাগ গুছিয়ে রাখলো। শ্রাবণ আসলে চলে যাবে। আচ্ছা শ্রাবণ কি ওকে আটকাবে..? বলবে যেও না, আমি তোমার সাথে শেষ অব্দি থাকতে চায়। জীবন তো একটাই এই এক জীবনে আমি তোমাকে চাই।

নিজের ভাবনায় নিজেই বিরক্ত হলো। আবার নিজেকে জিজ্ঞেস করলো ” তুমি কি পারবে ওকে ছাড়া থাকতে.? ওকে ভুলে যেতে.? ওর পাশে অন্য নারীকে দেখতে.? পারবে না মেঘ! তাহলে যেতে চাচ্ছ কেন.? তারা তো তোমাকে যেতে বলেনি।

মহুয়া মন খারাপ করে মেঘলার রুমে বসে আছে। মেঘলা যাওয়ার পর সেও চলে যাবে। মেঘলা গেলে বাড়িটা কেমন নিশ্চুপ হয়ে যাবে। এমনিতেই বাড়িটা কেমন হয়ে গেছে আগের মতো হুই হুল্লোড় নেই।

মেঘলা ব্যাগ নিয়ে নিচে নেমে আসলো। সবাই মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে। আমেনা বেগম সোফায় বসে আছেন।

আনোয়ার চৌধুরী মেঘলার মাথায় হাত রেখে বলে উঠলেন,’ ভালো করে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নও। তুমি যথেষ্ট বড় হয়েছো নিজের মন যা বলে তাই করো।’

হালিমা চৌধুরী জড়িয়ে ধরলেন। নিষেধ করলেন যেতে। ছোঁয়া রাগ করে বলে উঠলো, ‘ ভাবি মিস করবো। কয়েকদিন থেকে আবার ভাইয়ার কাছে চলে এসো। ‘

মেঘলা শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে হেঁসে বললো, ‘ আসি আন্টি দোয়া করবেন। ভালো থাকবেন। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবেন নিজের যত্ন নিবেন। ‘

ধীর পায়ে দোতলায় গিয়ে আফরোজা বেগমের পাশে বসলো। মেঘলার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে সবাইকে ছেড়ে যেতে চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি আফরোজা বেগমের হাতে পরলো। আফরোজা বেগম শুধু উপরের দিকে তাকিয়ে আছেন উনি তো মানুষ চিনেন না। শুধু বেঁচে আছেন, তাকিয়ে আছেন জীবন চলছে।

মেঘলা বাড়ি থেকে বের হতে নিলে কেউ আটকাতে গেলে আমেনা বেগম বলে উঠলো, ‘ আটকাবে না যেতে দাও। এই কয়েকদিনের মধ্যে বাড়িতে দুই ছেলের বিয়ের আয়োজন শুরু হবে।’

হালিমা বেগমঃ দুই ছেলে.?
আমেনা বেগমঃ হুম আমার বড় আর ছোট ছেলের।

মেঘলা আর এক মুহূর্ত দাড়ালো না মহুয়ার দিকে তাকিয়ে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। দুইজন আজ একই জায়গায় দাঁড়িয়ে।

হালিমা বেগমঃ কি বলছেন ভাবি শ্রাবণের বউ দাঁড়িয়ে আছে কিসের বিয়ে.?
আমেনা বেগম মুচকি হেঁসে বসে রইলেন। কি চলছে উনার মাথায়!.??

মেঘলা শ্রাবণের সাথে দেখা না করে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। গাড়িতে বসেই কাঁদতে শুরু করলো। এতো শক্ত মনের মেয়েটাও আজ কাঁদছে প্রিয় মানুষটিকে হারানোর ভয়ে।

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৪১
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। মেঘলা চলে গেছে আজ দুইদিন।

মহুয়া হাতের ঘড়িটার দিকে তাকালো। সময় দেখে নিলো আর পাঁচ মিনিট তারপরেই ট্রেন ছেড়ে দিবে।

মহুয়া দুই একবার জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো। মনে মনে বলে উঠলো, ‘ আপনি তো আসেন, একবার বলেন যেও না।’

বুকে সব না বলা যন্ত্রণা গুলো চাপা দিয়ে ছুটলো নিজের গন্তব্যে। চোখে ভিজে উঠতে চাইলে চোখ বন্ধ করে রাখলো।

কি হবে সামনে..? কিছুই জানে না মহুয়া সে ছুটছে নিজের বাড়িতে মামা মামি কি ওকে দেখে জড়িয়ে ধরবে নাকি তাড়িয়ে দিবে!! তাড়িয়ে দিলে সে কোথায় যাবে..??

বাড়ি থেকে সবাই কে বলে বের হলেও কেউ থাকতে বলেনি ছোঁয়াও না। শুধু বললো সাবধানে থেকো খুব জলদি দেখা হবে।

মহুয়া শুধু মুচকি হাসলো। এটাই হয়তো শেষ দেখা। সে আর কখনো এখানে আসবে না তাদের মুখোমুখি হবে না৷

আমেনা বেগম যখন বললো,’ আহনাফের বিয়েতে তুমি আসবে, না আসলে কষ্ট পাব।’

মহুয়া জোর পূর্বক তাকিয়ে হেঁসে ছিলো। ভেতরে মনে হচ্ছিল কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

তিন ঘন্টা পর গাড়ি থেকে নেমে রিক্সায় উঠে গেল। মনে হাজারো ভয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাড়ির দিকে।

বাড়ির সামনে এসে মহুয়া বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।
বাড়ির আশপাশে কেমন আগাছায় ভরে গেছে। মহুয়া এক পা এগিয়ে যাচ্ছে আর বুকের ভেতর কাপছে। দরজার সামনে টুকা মারলো কয়েক বার।

অনেক সময় চলে গেল খট করে দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো মহুয়ার মামি।

মহুয়া মামিকে দেখেই ভয়ে মাথা নিচু করে নিল।

বৃদ্ধ মহিলা মহুয়াকে দেখে অশ্রুসীক্ত চোখে তাকিয়ে বললো।

~ মহুয়া!…
মহুয়া ভয়ে চুপসে গেছে।
~ মহুয়ারে তুই এতোদিন পর কই থাইকা আইলি.??
মহুয়াঃ মামি..

মহুয়া আর কিছু বলার আগেই মহুয়ার মামি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

মহুয়া থমকে গেল কিছু সময়ের জন্য। কখনো যেই মহিলা ভালোবেসে ওর হাতটাও ধরেনি আজ ওকে জড়িয়ে ধরে আছে। এটাও বিশ্বাস করতে হবে.? মহুয়া কি স্বপ্ন দেখছে!.?

মহিলা মহুয়াকে ছেড়ে টেনে ঘরে নিয়ে গেল।

মহুয়া কে বসিয়ে পানি এনে দিল।
মহুয়া মাথা নিচু করে বললো,’ মামি আমি আগে ফ্রেশ হয়ে আসি।’
মামিঃ গরম পানি করে দিব.?
মহুয়াঃ না, না প্রয়োজন নেই মামি।
মামিঃ তাহলে ফ্রেশ হয়ে আয়।
মহুয়া আশেপাশে তাকিয়ে বললো,’ মামি মামা, ভাই,বোন ওরা কই.??
মামি আঁচলে মুখে গুঁজে চোখের পানি মুছে বলে উঠলো, ‘ তুই আগে গোসল করে খেয়ে দেয়ে একটু ঘুমা তারপর তোর সাথে অনেক গল্প করবো। ‘

মহুয়া বার বার অবাক হচ্ছে মামির আচরণে। কি হয়েছে.? এটা তো মহুয়ার সেই মামি নয় এতোটা চেঞ্জ কিভাবে হলো.? মাথায় এতো এতো প্রশ্ন নিয়ে নিজের সেই ছোট ঘরটার দিকে যেতে নিলে ওর মামি ওকে আঁটকে ঘরের সবচেয়ে সুন্দর রুমটা ওকে দিল।

মহুয়া রুমটার দিকে তাকিয়ে ভাবলো,’ কতো শখ ছিল একদিন এই রুমে ঘুমানোর কখনো আশেপাশেও আসতে দিত না মিম আর আজ এই রুম মামি আমাকেই দিয়ে দিল!!.? কিছু তো একটা হয়েছে না হলে মামি এতোটা পাল্টে যেত না। বাকিরা সবাই কোথায়.?

____________

অফিস থেকে বাসায় আসতেই রায়হান সাহেব মেঘলা কে ডাকলো।
মেঘলা ফ্রেশ হয়ে এসে রায়হান সাহেবের পাশে বসলো।

রায়হান সাহেবঃ কি হয়েছে তোমার.?? ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছো না কারো সাথে কথা বলো না।
মেঘলাঃ অফিসে ঝামেলা তাই ঠিক ভাবে সময় পাচ্ছি না।
রায়হান সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমাকে তুমি কাজ, অফিস সম্পর্কে শিখিও না মেঘলা। যা হয়েছে ভুলে যাও। তোমার আম্মু কষ্ট পায় তোমাকে এভাবে দেখলে।’

মেঘলা কিছু না বলে উঠে নিজের রুমের দিকে চলে গেল। রায়হান সাহেব তাকিয়ে রইলো মেয়ের যাওয়ার দিকে।

মেঘলা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে কফির মগ হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেল।

আজ দুই দিন শ্রাবণ একবারও কল দেয়নি। ওর কি একবারও মেঘলার কথা মনে পড়েনি? মেঘলা কি শ্রাবণের মনে একটুও জায়গা করে নিতে পারেনি..? চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে মেঘলা চোখের পানি মুছে মোবাইল হাতে নিয়ে মহুয়া কে কল দিল মোবাইল বন্ধ। আজ মহুয়ার চলে যাওয়ার কথা মেয়েটা চলে গেছে.? মামা মামি কি ওকে বাসায় জায়গা দিয়েছে.?? মেঘলা চুপচাপ বসলো খুব টেনশন হচ্ছে মেয়েটার জন্য।

মেঘলা বসে হেলান দিয়ে আকাশের তাঁরা গুণতে শুরু করলো। ছোট থেকেই মেঘলার এটা অভ্যাস। যখন সে ভীষণ চিন্তিত থাকে তখনি আকাশের তাঁরা গুণতে শুরু করে।

দূর থেকে এক জোরা চোখ তাকিয়ে আছে মেঘলার বারান্দার দিকে। মেঘলা কি তা জানে? উঁহু জানে না। প্রতিরাতে শ্রাবণ অফিস থেকে ফেরার পথে তাকিয়ে থাকে মেঘলার বারান্দার দিকে একবার চোখের দেখা দেখে চলে যায় নিজের বাড়িতে।

_______________

মহুয়া ঘুমানোর চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারলো না৷ রুম থেকে বের হয়ে পুরো বাড়ি একবার ঘুরে দেখলো এক বছরে বাড়িটা কতোটা পাল্টে গেছে।

মামির রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো মামি জায়নামাজে বসে আছে।

মহুয়া হাসলো এই প্রথম মামিকে জায়নামাজে দেখলো।

চলে যেতে নিলে উনি ডাকলেন। মহুয়া রুমে গিয়ে চুপচাপ বসলো।

মামিঃ কোথায় ছিলি এতোদিন মহুয়া.? কেমন আছিস.?
মহুয়াঃ আলহামদুলিল্লাহ মামি ভালো।
মামিঃ কোথায় ছিলি বললি না। আচ্ছা যখন তোর মন চায় বলিস।
মহুয়াঃ মামা আর….
মহুয়া আর কিছু বলার আগেই ওর মামি বলে উঠলো , ‘ তোর মামা আর পৃথিবীতে নেই। তুই পালিয়ে যাওয়ার পর ছেলে পক্ষ পাঁচ লাখ টাকা দাবী করে এক টাকাও কম নিবে না। তোর মামা তো পাঁচ লাখ এনে খরচ করে ফেলে ছিল তখন হাতেও টাকা ছিল না বাধ্য হয়ে তোর জায়গায় মিম কে বিয়ে দিয়ে দেই। অন্যের সন্তানের জীবন নষ্ট করতে গিয়ে আল্লাহ আমাকে বুঝিয়ে দিল আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেননা। মেয়ের টেনশনে সারাদিন চুপচাপ হয়ে গেল তোর মামা ঠিক তখনি দুই ছেলে না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়ে আসলো কয়েকদিন আমাদের সাথেই ছিল তারপর ওদের বউ নিজেদের সাথে নিয়ে শহরে চলে গেল। আমাদের আর খুজ খবর নেয়নি।প্রথম প্রথম এক দুই বার কল দিয়ে খুঁজ নিলেও এক সময় একদম যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। মিম একদিন কান্নাকাটি করে পালিয়ে আসলো আমাদের বাড়ি। প্রতিরাতে মাইর খাইতে খাইতে আমার মাইয়াডার মুখের দিকে তাকানো যায় না। ওরা পাওয়ারফুল লোক পুলিশ নিয়ে এসে ওরে নিয়ে গেল। ৬০বছরের আধা বুড়া স্বামী আমার মেয়েটার বয়স তো ১৮ ও হয় নাই। মেয়ের টেনশনে টেনশনে তোর মামা স্টোক করে ঘুমেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। দুই ছেলে আসলো কিন্তু বউরা পরের মেয়ে তারা আসলেই কি না আসলেই কি। মেয়েটাও বাবার শেষ মুখ দেখতে পারলো না ওরা আর আসতে দেয়নি কোনো যোগাযোগ রাখেনি।

শেষ করে মহুয়ার দিকে তাকালো। মহুয়ার চোখে জলে ভরে উঠলো।

উনি চোখের জল মুছে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ এইগুলো আমাদের পাপের শাস্তিরে মহুয়া। অনেক অন্যায় করেছি তোর সাথে কোন মুখে ক্ষমা চাইবো। আমাদের ঘরের লক্ষী বের হয়ে যেতেই সুন্দর গুছানো সংসারটা ভেঙে গেল।
মহুয়া আর এক মুহূর্ত বসলো না বের হয়ে রুমে চলে গেল। কেমন জেনো সব কিছুর জন্য নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে। ওইদিন না পালালে মিমের জীবন সবার জীবন এমন হতো না।

____________

সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে মহুয়া বাহিরে বের হতেই অবাক হলো। চোখ কচলে আবার তাকালো।

মেঘলা হেঁসে এসে মহুয়া কে জড়িয়ে ধরলো সাথে ছোঁয়া।

মহুয়া দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো ওদের।

ওদের ফ্রেশ হতে দিয়ে মহুয়া আসলো রান্না ঘরে ওর মামি বারবার নিষেধ করলো। মহুয়া উনাকে বের করে দিয়ে নিজের সকালের নাস্তা তৈরি করে ওদের আগে খাবার দিল।

ছোঁয়াঃ মেহু তোদের বাড়িটা খুব সুন্দর।
মহুয়া হেঁসে বললো,’ তোমাদের বাড়ির এক কোনা হবে।”
ছোঁয়াঃ এভাবে বলো না সুন্দর ভীষণ ছোট হলেও।
মেঘলা চুপচাপ খাচ্ছে,’ তোমাকে বার বার কল দিয়ে বন্ধ পাচ্ছিলাম। খুব টেনশন হচ্ছিলো।’

মহুয়ার মামির দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেল। ওর টেনশন ছিল মহুয়াকে বের করে দিল নাকি মারধর করলো।হয়তো মোবাইল নিয়ে আঁটকে রেখেছে। অনেক কিছু ভেবে ছোঁয়া কে কল দিয়ে চলে আসলো। মহুয়াকে ভীষণ আপন মনে হয়।

মহুয়া তো ভীষণ খুশি ওদের পেয়ে সাথে মামিও।

মামিকে এতোটা ভালো আচরণ করতে দেখে ছোঁয়া বলে উঠলো, ‘ কি ব্যাপার এতো ভালো হলো কিভাবে.? ‘
মহুয়াঃ রাতে সব বলবো।

_______
মেঘলা ছোঁয়া এসেছে দুইদিন। দুইদিনে মামি ওদের অনেক আপন করে নিয়েছে নিজের মেয়ের মতো আদর যত্ন করেছে।

মেঘলা বললো খুব জলদি ওরা মিমের শশুর বাড়ি যাবে কিন্তু তার আগে একটা জায়গায় যেতে হবে আজ। মিমের ঝামেলা শেষ করবে বলে কথা দিল।

তিনজন মিলে রেডি হয়ে বের হলো। মেঘলা মহুয়াকে একটা কালো শাড়ি পড়িয়ে দিল সাজগোজ ছাড়াই ভীষণ সুন্দর লাগছে৷

নিজেদের গন্তব্যে এসে মেঘলা মহুয়াকে নিয়ে ঢুকলো। প্রায় রুম গুলো অন্ধকার।

মহুয়াঃ এখানে তো…
মেঘলাঃ চুপপ এখন কোনো কথা হবে না।

মহুয়াকে একটা রুমে নিয়ে গেল।

লাইট জ্বালাতেই নিচে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকতে কাউকে দেখে বুক ক্ষনিকের জন্য কেঁপে উঠল।
মহুয়াঃ পলাশ।
রুমে লাইটের আলো পেয়ে পিটপিট করে তাকালো পলাশ। চোখের সামনে মহুয়াকে দেখে প্রথম চিনতে পারেনি।
ছোঁয়াঃ কে উনি.?
মেঘলাঃ উনার পরিচয় অনেক কয়টা বলবো! তার থেকে ভালো এখন শুধু দেখে যাও।

পলাশ মহুয়াকে দেখে শুয়া থেকে উঠে বসে তাকিয়ে থাকে। দাঁড়িয়ে মহুয়াকে ছুতে আসলে মহুয়া কয়েক পা পিছিয়ে যায়।

মহুয়া রুম থেকে বের হয়ে যেতে নিলে মেঘলা হাত ধরে বলে উঠে,’ বাকি সবার শাস্তি আমি দিয়েছি। কাউকে ছাড় দেইনি কিন্তু এই বিশ্বাসঘাতকের শাস্তি তুমি নিজে দিবে।মহুয়া ভুলে গেলে হবে না সে তোমার সাথে অন্যায় করতে না চাইলেও হাজারো মেয়ের স্বপ্ন ইজ্জত শেষ করেছে ওদের নরকে ঠেলে দিয়েছে।

মহুয়া পেছন ফিরে পলাশের দিকে তাকালো। চুল বড়বড়, দাঁড়ি মুখ ভর্তি হয়ে গেছে, পড়নের কাপড় ছিড়া কেউ দেখলে পাগল ছাড়া কিছুই বলবে না।

মহুয়া শক্ত চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ ওর খাবার বন্ধ করে দাও। প্রতি সপ্তাহে একটা রুটি আর এক গ্লাস পানি দিবে। এভাবে যতোদিন বাঁচে। খাবারের যন্ত্রণার চেয়ে পৃথিবীতে এর চেয়ে বড় শাস্তি আমি মনে করি কিছুতেই নেই।’

পলাশ আজ ছটফট করলো না। হয়তো নিজের ভুলগুলো আজ চোখে পড়েছে।

এখান থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়াতেই ছোঁয়া বলে উঠলো, ‘ শহরে যেহেতু এসেছি চলো একটু শপিং করে যাই। ‘
মেঘলাও না করলো না মহুয়ার মন খারাপ ইচ্ছে না থাকলেও ওদের সাথে গেল।

শপিং মলের সামনে গিয়ে থমকে গেল সবাই। মেঘলা মাক্স দিয়ে মুখ ঢেকে নিল আর মহুয়া চুলগুলো সামনে এনে কেটে পড়তে চাইলো তবুও ওদের দেখে ফেললো নির্জন।

নির্জনঃ আরেএ আমার দেখো কি ভাগ্য দুই ভাবি আর সাথে ব…..

আহনাফ ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই নির্জন হেঁসে বললো, ‘ বোন আরকি। দুই ভাবি আর উনাদের বোনের সাথে দেখা হয়ে গেল।’
আহনাফঃ চোখে কম দেখলে আমার কাছে আয় চশমা দিয়ে দিব ওটা উনাদের বোন নয় আমাদের বোন।

নির্জন মুখ ভেংচি কাটলো।
শ্রাবণ হেঁসে বললো,’ দিন দিন পুলিশে গিয়ে নিজের মধ্যে মেয়েলি সব ভাব নিয়ে নিচ্ছিস। ‘

নির্জনঃ তোমরা দুইজন আমার পিছু না দৌড়ে নিজের বউদের ধর।

আহনাফ ছোঁয়া কে ঢাক দিতে ছোঁয়া থেমে গেল।

মহুয়া মেঘলা চলে গেল ভেতরে।

ওরা কিনা কাটা শেষ করে বের হলো আহনাফ বা শ্রাবণ কেউ ওদের সাথে কথা বললো না ডাকও দিলো না।

নির্জন এসে টুকটাক ফাজলামো করলো।

ছোঁয়া ওদের বিদায় জানিয়ে মেঘলা মহুয়ার সামনে গাড়িতে উঠে গেল।

রাগে দুঃখে মেঘলার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। খুব সুন্দর করে সেই জল আড়াল করে নিলো মেঘলা।

মহুয়া চুপচাপ বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
একবারও তাকালো না আহনাফ। তাহলে কি সব ক্ষনিকের ভালো লাগা ছিল!.? বিয়ে করে নিচ্ছে পুরুষ মানুষ হয়তো এমনি। মনে মনে কতো কথা ভেবে নিল মহুয়া।

বাড়িতে এসেও তেমন কথা বললো না কেউ। ছোঁয়া বুঝতে পারছে মহুয়া মেঘলার মুখ এমন ভার কেন।

মামি সবাই কে ডেকে গেল কিন্তু কেউ আর নামলো না খেতে।

রাতে মোবাইল বন্ধ করে ঘুমিয়ে গেল মহুয়া।

মেঘলার ঘুম আসছে না রুম থেকে বের হয়ে পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখলো। মামির রুমে উঁকি দিয়ে দেখে উনি জেগে আছে। মহুয়া হেঁসে বললো,’ মামি কি করছেন!.??’
মামি একটা এলবাম বন্ধ করে বললো, ‘ আসো মেঘলা।’

মেঘলা ভেতরে গিয়ে টুকটাক কথা শুরু করলো। দুইজন কয়েক দিনে বেশ মিশে গেছে। মামি বললো,’ চলো তোমাকে এই বাড়ির সবার ছবি দেখাই। এই এলবাম অনেক পুরোনো মহুয়া কখনো দেখেনি। ‘
মেঘলাঃ এটাতে ওর আব্বু আম্মুর ছবি আছে.?
মামিঃ হুম
মেঘলাঃ কেন দেখেনি কখনো.?
মামিঃ আমি এটা কখনো বের করিনি। আজকাল প্রায় বের করা হয় একা একা থাকি মন খারাপ হলে ছবি গুলো দেখি আর নিজের পাপের জন্য মাফ চাই।

মেঘলা আগ্রহ নিয়ে এলবাম হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতে শুরু করলো।

অনেক পুরোনো ছবি চোখে পড়ছে। আসতে আসতে এলবামের মাঝ পৃষ্ঠা গুলোতে এসে চোখ আটকে গেল মেঘলার পাগলের মতো একের পর এক পৃষ্ঠা পাল্টাতে শুরু করলো। মামির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ এই বাচ্চা মেয়েটা কে.? আর পাশের মহিলা পুরুষটি কে…???’

মামি কাঁপা কাঁপা হাতে হাতবুলিয়ে বললো,’ এটা মহুয়ার বড় বোনছিল আর উনারা ওর আব্বু আম্মু। একটা এক্সিডেন্টে বড় বোন মাহি আর ওর আব্বু মা-রা যায় এই কথা শুনেই ওর মা ও তিনদিনের দিন ঘুমের মধ্যে না ফেরার দেশে চলে যায় মহুয়া একদম এতিম হয়ে যায় তখন আমি ওকে বুকে আগলে নেই। ‘

মেঘলা কথা বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না একদম চুপ হয়ে গেল অথচ শরীর কাঁপছে, ঠোঁট, চোখ কাপছে। কাঁপা কাঁপা পায়ে রুম ছেড়ে নিজের রুমে চলে আসলো। মহুয়া গভীর ঘুমে মেঘলা গিয়ে ওর পাশে বসে তাকিয়ে রইলো। কাঁপা কাঁপা হাত মহুয়ার মাথায় রেখে বলে উঠলো, ‘ সেই পিচ্চি বোনটা আজ এতো বড় হয়ে গেছে। চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি পড়লো মহুয়ার গালে।’

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-৩৮+৩৯

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৩৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

সকাল থেকেই আফজালের মন বেশ ফুরফুরে।

আমেনা বেগম স্বামীকে চা দিয়ে আফজাল সাহেবের জন্য চা বানালেন।

নিরুপমা আমেনা বেগমের হাত থেকে চা নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসলেন।

আফজাল হাসলো নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বিনিময়ে নিরুপমাও মুচকি হাসলো।

আজাদ চৌধুরী চা শেষ করে উঠে গেলেন।।

নিরুপমা আফজালের দিকে চা বাড়িয়ে দিল।
আফজাল ধরার আগেই হাত থেকে কাপ ছেড়ে দিলো।
চায়ের কাপ গিয়ে পড়লো আফজালের হাঁটুর উপর।

নিরুপমা ভয়ে চুপসে গেলেন।আফজাল ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে নিয়েছেন।
নিরুপমা সরি সরি বলে টেবিলে রাখা গ্লাসের সবটা পানি ডেলে দিলো আফজালের উপর এতে আফজাল আর্তনাদ করে উঠলো।

টেবিলের উপর এই মাত্র ফুটন্ত গরম পানি রেখে ছিলেন আমেনা বেগম উনার শশুরের জন্য।

আফজালের আর্তনাদে সবাই দৌড়ে আসলো।

আফজাল রাগী চোখে নিরুপমার দিকে তাকালো নিরুপমার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি।

নিরুপমা আফজালের কানে কানে বলে উঠলো, ‘ তুমি এখনো আগের মতোই কাঁচা রয়ে গেলে বৃদ্ধ হচ্ছ একটু তো বুদ্ধি আনো না হয় তোমার ভাড়া করা কুত্তা গুলো থেকে ধার নাও।’
আফজাল অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাতেই নিরুপমা হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আজ তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে অপেক্ষা করো।’

আফজালের পা জ্বলে যাচ্ছে চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে নিরুপমার কথায় তেমন গুরুত্ব দিলো না।

আফজাল নিজের রুমে বসে আছে। পায়ে বার বার পানি দিচ্ছে। একদম চামড়া উল্টে গেছে।

আমেনা বেগম দুই বার এসে জিজ্ঞেস করে গেছেন ডাক্তার ডাকবে কিনা। আফজাল বার বার নিষেধ করে দিয়েছে।

নিরুপমা হাতে মলম নিয়ে এসে আফজালের সামনে রাখলো৷
আফজালঃ ইচ্ছে করে করেছো তাই না!.?
নিরুপমাঃ যাক এতো দিনে একটু বুদ্ধি হয়েছে তোমার।
আফজাল হাসলো।
নিরুপমাঃ ভাঙবে তাও মচকাবে না।
আফজালঃ এইগুলো করে লাভ কি!.? আমার কিছুই করতে পারবে না।

নিরুপমাঃ তোমার কিছু করতে পারবো কিনা জানিনা তবে তোমার পাপের রাস্তা সব এক এক করে শেষ করে দিব।
আফজালঃ হাস্যকর।
নিরুপমাঃ মলমটা লাগিয়ে নাওও।
আফজাল মলমটা ভালো করে দেখে লাগিয়ে নিল।
নিরুপমা মুচকি হেঁসে পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
আফজাল সাহেব আসতে আসতে বলে উঠলো, ‘ পা জ্বলছে কেন!.?’
নিরুপমার মুখে হাসি দেখেই রাগ আর কন্ট্রোল করতে পারলো না।এক তো দুইবার ফুটন্ত গরম পানি একই জায়গায় পড়েছে তার উপর মলমে কিছু মিশানো ছিল।

আফজাল রেগে নিরুপমার গালে থাপ্পড় মারতে গেলে নিরুপমা নিজেই আফজালের গালে থাপ্পড় মেরে বসে।
আফজাল হতভম্বের মতো তাকিয়ে আছে নিরুপমার দিকে।

নিরুপমা রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেই আফজালের ফোন বেজে ওঠে সাথে হাসি ফুটে উঠে নিরুপমার মুখে।

আফজাল থমথমে মুখে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে হাতে নেয়। থাপ্পড় খেয়েছে তাও নিরুপমার হাতে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। এতো সাহস কিভাবে আসলো!.?

আফজাল ফোন কানে দিয়ে হেলো বলতেই অপর পাশ থেকে কিছু একটা শুনে চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো রেগে মোবাইল দেওয়ালে ছুড়ে মারলো।
চিৎকার করে বলে উঠলো, এতো গুলো মেয়ে পুলিশ কিভাবে ধরলো!? কার এতো বড় সাহস.!??

_____________

আজ দুপুরের দিকে নির্জন মেঘলা বাড়িতে আসলো।

মেঘলার দিকে সন্দেহের সৃষ্টিতে তাকালেন আমেনা বেগম।
আমেনা বেগমঃ আজকাল তোমাদের দুইজনকে সব সময় এক সাথে দেখা যায়। আমার ছেলেকে ফাঁসিয়ে শান্তি হয়নি তোমার!.?? এখন দেবরের সাথেও!

মেঘলা অপমানে মাথা নিচু করে নেয়।
নির্জন অবাক হয়ে বলে, ‘ কি বলছো বড় আম্মু!.??’
আমেনা বেগমঃ তুমি চুপ থাকো!!. আক্কেল জ্ঞান সব তো পকেটে নিয়ে রাখো। নিজের মায়ের অবস্থা দেখেছো.? দিন কে দিন ঘর বন্ধি হয়ে যাচ্ছে এর মধ্যে এমন কাজ করো না জেনো একদম শেষ হয়ে যায়।
নির্জনঃ বড় আম্মু তুমি একটু বেশি ভেবে ফেলছো।
আমেনা বেগমঃ আমি অন্ধ নই। আজ বাসার মানুষের চোখে পড়ছে কাল বাহিরের মানুষ বলাবলি শুরু করবে।
মেঘলা লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সে কিছুতেই শাশুড়ীর সাথে তর্ক করতে চায় না। অবশ্য শাশুড়ী ভুল কিছু বলছে না। ওদের সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন ছিল।

” আন্টি আপনি যেমন ভাবছেন তেমন কিছু না, নির্জনের ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে সেই জন্য হসপিটালে আমি মেঘলা কে কল দিয়ে ডেকে ছিলাম।”

আমেনা বেগম পেছনে ফিরে সাজ্জাদ কে দেখলেন।
আমেনা বেগমঃ আরে সাজ্জাদ অনেক দিন পর আসলে।
সাজ্জাদ হেঁসে আমেনা বেগমের দিকে তাকালো।

আমেনা বেগম চিন্তিত হয়ে নির্জনের দিকে তাকালো। এত্তোক্ষন রাগের বসে খেয়াল করা হয়নি।

হাতে, পায়ে বেন্ডেজ করা কপালেও কেটে আছে।

আমেনা বেগমঃ কিভাবে হলো এইসব!.?

নির্জনঃ গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়ে ছিলো বড় আম্মু তবে বেশি কোনো সমস্যা হয়নি।
আমেনা বেগম নির্জনের কপালে হাত রেখে দেখছেন হাত, পা দেখে রেগে বলে উঠলো, ‘ বার বার তোর বড় আব্বু নিষেধ করেছে এই জব নিস না তাও তুই এটাই নিলি৷ কি করেছিস শরীরের। এদিকে আয়।

নির্জনকে সোফায় বসিয়ে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে আর বকছে।

সাজ্জাদ মেঘলার পাশে গিয়ে দাড়ালো।

সাজ্জাদঃ মেঘলা..
মেঘলাঃ ভাবি!
সাজ্জাদঃ কেনো! নাম ধরে বললে সমস্যা.??
মেঘলাঃ ভাবি ডাকটা সুন্দর আর ভাইয়ের বউকে ভাবি বলে।
সাজ্জাদ মেঘলার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আপনার জন্য একটা জিনিস এনে ছিলাম।’
মেঘলাঃ আমার জন্য! কি.?

সাজ্জাদ একটা পেকেটে মুড়ানো ব্যাগ মেঘলার হাতে দিলো।
মেঘলা খুলতে চাইলে সাজ্জাদ এখন খুলতে নিষেধ করলো।

নিজের রুমের দরজা থেকে দাঁড়িয়ে ড্রয়িং রুমের সব দেখছে আফজাল।

ঈগল চোখে তাকিয়ে রইলো মেঘলার দিকে এতোদিন মেয়েটাকে সন্দেহ না হলেও আজ ভীষণ ভাবে রহস্যময়ী লাগছে। এইসব কিছুর পেছনে নির্জন আছে আর নির্জনের পেছনে কে!.??? মেঘলা.?

আফজাল মনে মনে ছয় নয় কষলো একপর্যায়ে কাউকে কল দিয়ে বললো,’ আজকের মধ্যে এই মেয়ের সব বায়ু ডাটা চাই।’

_________

মহুয়া আহনাফের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
আহনাফ অবাক হয়ে মহুয়ার দিকে তাকালো।

মহুয়া রাগী দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে তাকিয়ে চোখ অন্য দিকে করে নিলো।

ডক্টর সোনিয়া বেশ লজ্জায় পড়ে গেলেন৷

এমন কিছু হবে জানলে এই সময় আহনাফের কাছে আসতেন না।

আহনাফ শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ মহুয়া বসো।’
মহুয়া হাতের টিফিন বক্স রেখে চুপচাপ বসলো।

ডক্টর সোনিয়া কিছু বলতে চাইলে আহনাফ থামিয়ে দিল।

আহনাফঃ ডক্টর সোনিয়া আপনি এখন আসেন আমরা বাকি কথা পড়ে বলব।

মহুয়া রাগে বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ হুহ্ এখন প্রেম আলাপ করলে তো আমি শুনে ফেলবো।’

আহনাফ মনে মনে হাসছে মহুয়ার মুখ দেখে।

ডক্টর সোনিয়া চলে যেতেই আহনাফ চেয়ার ছেড়ে মহুয়ার সামনে এসে বসলো।
মহুয়া অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
আহনাফঃ আমার বউ দেখি ভীষণ হিংসুটে। এটা ঠিক না উদার মনের ডক্টর আহনাফ চৌধুরীর বউ এতো কিপটে।
মহুয়াঃ কিপটে.?
আহনাফঃ না, ভীষণ জেলাস।
মহুয়া মুখ ভেংচি কেটে বলে উঠলো, ‘ মোটেও না।’
আহনাফঃ তাহলে তো ভালোই হলো আমার আর কিছু বলতে হবে না। শুধু শুধু প্যারা নিচ্ছিলাম।

আহনাফ উঠে দাঁড়ালো, মহুয়া অভিমানী সুরে বলে উঠলো, ‘ আপনি ওই মেয়ের সাথে কি করছিলেন!.?’

আহনাফঃ প্রেম করছিলাম। ঘরের বউ একজন পাষাণী সেই জন্য বাহিরে প্রেম খুঁজতে হয়।

মহুয়া রাগে ফুঁসে ওঠলো।
মহুয়াঃ সব ছেলেরাই এক।

মহুয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বের হয়ে যেতে চাইলো আহনাফ মহুয়ার হাত ধরে নিলো। নিজের দিকে ঘুরিয়ে টেনে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরলো। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলো, ‘ শান্ত হও, এতো রেগে গেলে হবে!.? তুমি জানো রাগ শরীরের জন্য কতোটা ক্ষতিকর!.?’
মহুয়াঃ জানতে হবে না আমার ছাড়েন। যার কাছে প্রেম খুঁজেন তাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন।
আহনাফঃ তুমি তো আমাকে ভালোবাস না, পছন্দ করো না, স্বামী হিসেবে মানো না তাহলে জ্বলছে কেনো.? এতো জেলাস কেনো.??
মহুয়াঃ আমি মোটেও জেলাস না।
আহনাফঃ আচ্ছা মেনে নিলাম জেলাস না। তাহলে আমি প্রেম করতে পারি.? বউ নিজেই পারমিশন দিয়ে দিলো! এমন বউ প্রতিটা ছেলের হোক।
মহুয়াঃ ছিঃ! কি দোয়া করছেন..??? আজ বাসায় আসেন আপনার প্রেম করার শখ মিটে যাবে। লুচু পুরুষ বউ থাকতে বাহিরে প্রেম খুঁজেন!. অন্য মেয়ের কাছে! এইসব করার জন্য হসপিটালে আসেন.? আমি আজ বাসায় গিয়ে আন্টিকে সব বলবো।
আহনাফঃ আচ্ছা তোমার শাশুড়ী কে বলো।
মহুয়া আহনাফকে দূরে সরাতে চাইলো কিন্তু আহনাফ ছাড়লো না।
আহনাফঃ শুনো.. সোনিয়া একটা কাজে আমার কাছে এসে ছিলো। কথা বলতে বলতে চোখে কি জেনো পড়েছে এখানে তো আর কেউ নেই তাই বাধ্য হয়ে আমি চোখ দেখতে ছিলাম তুমি দরজার কাছে ছিলে তাই উল্টা পাল্টা ভেবেছো। মেয়েটা অনেক ভালো।

মহুয়া শুনলো আহনাফের কথা। সে আহনাফ কে বিশ্বাস করে। আহনাফ মিথ্যা বলে না।

মহুয়া হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আমি জানি ডক্টররা কসাই হয় তাদের মনে প্রেম ভালোবাসা থাকে না। ‘

আহনাফঃ তোমাকে তো বললাম এসিস্ট্যান্ট হয়ে চলে আসো, তোমার একটাই কাজ থাকবে কসাই থেকে প্রেমিক বানানো।’

মহুয়া আহনাফ কে সরিয়ে বলে উঠলো, ‘ থুর! আমি বাসায় যাব।’
আহনাফঃ যাও আমি তো ধরে রাখিনি।
মহুয়া বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ এতোক্ষণ কি তাহলে জ্বীনে ধরে রেখে ছিলো!.?’

আহনাফ হেসে বলে উঠলো, ‘ নাহ্ আমার আত্মায়।’

_________

রাতে শ্রাবণ বাসায় আসলো। সোফায় বসে পানি খেয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।

আফজাল নিজের রুম থেকে খুড়িয়ে খুড়িয়ে বের হয়ে আসলো। শ্রাবণের পাশে বসে টুকটাক কথা জিজ্ঞেস করলো অফিসের বিষয়।

এক পর্যায়ে নির্জনের কথা, নির্জন থেকে মেঘলা সাজ্জাদ সব কথাই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তুললো আফজাল।

শ্রাবণ এমনিতেই ক্লান্ত ছিল সাজ্জাদের কথা শুনতেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।

আমেনা বেগম কিছু বলতে আসলে না শুনেই সিঁড়ি বেয়ে হনহন করে রুমে চলে গেলো।

শ্রাবণের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো আফজাল। সে মেঘলার ভীষণ সব তথ্য সংগ্রহ করে নিয়েছে। নিজের বোকামির জন্য নিজের উত্তর রাগ হচ্ছে এতো বড় ভুল কিভাবে করলো!.? যেভাবে ভুল করেছে সেভাবেই ঠিক করবে। মেঘলার অস্তিত্ব মুছে দিবে। এখন টার্গেট মেঘলা। এইসব দুই পয়সার সিআইডি সরাতে বা হাতের কাজ মাত্র।

___________

ছোঁয়া পিঠার প্লেটটা ঠাসস করে রাখলো নির্জনের সামনে।
নির্জন ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে প্লেটের দিকে তাকালো।
নির্জনঃ এভাবে রেগে আছিস কেন.? কেউ কিছু বলেছে.??
ছোঁয়াঃ আগে তুই বল তোরে এই চাকরি কে করতে বলছে.??
নির্জনঃ ছোঁয়া আমি তোর বড় একটু তো সম্মান দিয়ে তুমি করে বল।
ছোঁয়াঃ মরতে মরতে ফিরে এসেছে আবার আছে সম্মান নিয়ে। এইসব পুলিশ টুলিশ দের কেউ সম্মান দেয় না।
নির্জনঃ পুলিশ বুঝলাম কিন্তু টুলিশটা কি!.??
ছোঁয়া রেগে প্লেট থেকে কাটা চামচ নির্জনের সামনে ধরে বলে উঠলো, ‘ একদম ফাজলামো করবি না নির্জনের বাচ্চা! ‘
নির্জনঃ ছোঁয়া আমার এখনো বিয়ে হয়নি বাচ্চা আসবে কোথায় থেকে.?
ছোঁয়াঃ এখন কি বাচ্চার জন্য মামিকে বলবো বিয়ে দিয়ে দিতে!.??
নির্জন লজ্জা পাওয়ার মতো মুখ করে বলে উঠলো, ‘ আমি তো প্রথমে আলহামদুলিল্লাহ কবুল।’

ছোঁয়া রেগে তাকিয়ে রইলো নির্জনের দিকে।

নির্জনঃ যা রুম থেকে বের হ।
ছোঁয়াঃ কেন.? রুমটা তোর.?
নির্জনঃ তো কার.?
ছোঁয়াঃ কোথাও কি নাম লেখা আছে..?
নির্জনঃ তোর চোখের পাওয়ারের সাথে সাথে পড়ালেখার পাওয়ার ও কমে গেছে ভালো করে রুমের দেওয়াল গুলোতে তাকা।
ছোঁয়াঃ তাতে কি আমি রুম থেকে বের হবো না।
নির্জনঃ তাহলে চুপচাপ বসে থাক বিরক্ত করবি না।
ছোঁয়াঃ আমি তোকে বিরক্ত করছি.? আমাকে তো বিরক্ত লাগবেই। ভালো লাগবে সব রাস্তার পেত্নী গুলোকে।
নির্জন তাকালো ছোয়ার দিকে।
নির্জনঃ কি হয়েছে তোর.??
ছোঁয়াঃ আমার আবার কি হবে..?
নির্জনঃ এমন করতেছিস কেন.?
ছোঁয়াঃ তুই পুলিশের চাকরি ছেড়ে দে। এই চাকরি ভালো না।
নির্জনঃ কে বলেছে ভালো না.?
ছোঁয়াঃ আল্লাহ না করুক আজ যদি তোর কিছু হয়ে যেত।
নির্জনঃ তাতে তো তোর আরও ভালো হতো।
ছোঁয়ার অভিমানে চোখ ভরে উঠলো। নির্জন বুঝি ওর বিষয় এইসব ভাবে!!.?

নির্জনঃ আবার কি হলো.? এদিকে আয়।
ছোঁয়া উঠে যেতে নিলে নির্জন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।
ছোঁয়াঃ সর।
নির্জনঃ আমার দিকে তাকা ছোঁয়া।
ছোঁয়াঃ আমি কেন তোর দিকে তাকাবো! তোর দিকে তাকানোর তো মেয়ের অভাব নেই। আমার কথা কেন শুনবি.? ওদের কথা শুনবি।
নির্জন পকেট থেকে চকলেট বের করে বলে উঠলো, ‘ তোর জন্য এনে ছিলাম।’

ছোঁয়া হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো।
ছোঁয়াঃ তোর এমন অবস্থা দেখে আমার কেন এতো কষ্ট হচ্ছে.?
নির্জনঃ এই পাগলি আমার কিচ্ছু হয়নি, এই দেখ আমি সুস্থ।
ছোঁয়াঃ হু কতোটা সুস্থ দেখতে পাচ্ছি।
নির্জনঃ বিছানায় বস আজ গল্প করি।
ছোঁয়াঃ এখনি তো আবার বলবি আমার রুম থেকে বের হ।
নির্জনঃ বলবো না।
ছোঁয়াঃ প্রমিজ।
নির্জনঃ প্রমিজ।

________

শ্রাবণ রুমে এসেছে সেই কখন একবারও মেঘলার দিকে তাকায়নি ব্যালকনিতে বসে আছে।

মেঘলা ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই সাজ্জাদের বক্সটা চোখে পড়লো।
হাতে নিয়ে খুলতেই শাড়ি,চুড়ি,কানের ঝুমকো চোখে পড়লো। বলা যায় সাজ্জাদের চয়েস সুন্দর।

মেঘলার বেশ পছন্দ হলো। মেরুন রঙের শাড়ি,চুড়ি, ঝুমকো। দেখেই পড়তে ইচ্ছে হলো।

শাড়ি,চুড়ি,ঝুমকো পড়ে নিজেকে বার কয়েক আয়নায় দেখে নিলো। চুলগুলো ছেড়ে ব্যালকনিতে উঁকি দিলো।

শ্রাবণ কখনো সিগারেট খায় না চুপচাপ বসে আছে।

মেঘলা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে অন্যের দেওয়া শাড়ি,চুড়ি, গহনা পড়ে যখন প্রিয় পুরুষটির সামনে দাঁড়ালো। তখন কেমন করে জেনো শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকালো।

মেঘলা,’ আমাকে কেমন লাগছে..?’

শ্রাবণ অভিমানী,গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ সুন্দর লাগছে।’

মেঘলার বুক কেঁপে উঠল, এতোটা গম্ভীর কণ্ঠ!!? কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘ কতোটা সুন্দর লাগছে!.?’

শ্রাবণ হাসলো, কি ছিল সেই হাসিতে!.? হঠাৎ সেই হাসির রং পাল্টে গেল৷ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘ বিশ্রী রকমের সুন্দর লাগছে।’

চলবে,

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৩৯
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

সকাল সকাল বাড়িতে পুলিশ দেখে চমকে যায় সবাই।

আফজাল রাগী দৃষ্টিতে পুলিশের দিকে তাকিয়ে আছে।

সবাই নাস্তা করছিল ঠিক সেই সময় দারোয়ান এসে বললো বাড়িতে পুলিশ আসছে। গেইটের বাহিরে প্রচুর সাংবাদিক।

পুলিশের সামনে মেঘলা আর ফাহিম এসেছে।

আমেনা বেগম ভয় পেয়ে গেলেন ছেলের বউ বুঝি কিছু করে বসলো!..??

পুলিশ দেখে আমেনা বেগম মেঘলার কাছে গিয়ে হাত ধরে সাইডে নিয়ে আড়াল করলেন মেঘলা বেশ অবাক হলো শাশুড়ীর আচরণে।
মেঘলাঃ কি হয়েছে আন্টি.?
আমেনা বেগমঃ ভয় পেয়ো না আমরা আছি। কি করেছো.? পুলিশ কেনো তোমাকে ধরতে এসেছে.?
মেঘলাঃ আন্টি তেমন কিছুই নয়।
আমেনা বেগমঃ চুপচাপ এখানে দাঁড়িয়ে থাকো আমি দেখছি পুলিশের সামনে তুমি আসবে না একদম।
মেঘলা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়লো।

আমেনা বেগম মেঘলাকে রেখে আসলেন।

ইতিমধ্যে বাড়ির সব সদস্য বাড়িতেই ছিলো সবাই ড্রয়িং রুমে এসে দাঁড়ালো।

পুলিশ আফজাল সাহেবের দিয়ে তাকিয়ে একজন পুলিশ কে ইশারা করলো ধরে নিয়ে আসো।

আফজাল রেগে বলে উঠলো, ‘ আমার দোষ!.???’
পুলিশঃ তা তো মামা শশুর বাড়িতে গেলেই বুঝতে পারবেন। এই উনাকে নিয়ে চলো।

আমেনা বেগম অবাক হয়ে বলে উঠলেন,’ আপনারা প্রমাণ ছাড়া, কারণ ছাড়া উনাকে নিয়ে যেতে পারেন না।’

পুলিশঃ ম্যাডাম আমরা সব প্রমাণ নিয়েই উনাকে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সব প্রমাণ সিআইডি মেঘ চৌধুরীর কাছে আছে।
আমেনা বেগমঃ উনাকে বলুন আসতে।

স্বামী ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনারা কিছু বলছেন না কেনো.??’
পুলিশঃ সিআইডি অফিসার মেঘ চৌধুরী আপনাদের বাড়িতেই আছে জিজ্ঞেস করে নিন। আমাদের কাজ আমাদের করতে দিন।

আমেনা বেগম আরও অবাক হলেন। হালিমা বেগম এসে আমেনা বেগম কে সাইডে নিয়ে গেলো।

পুলিশ আফজাল কে নিয়ে বাসা থেকে বের হতেই আফজাল হাত দিয়ে মুখ ডাকতে শুরু করলো। গেইটের বাহির প্রচুর সাংবাদিক। সবাই ভিডিও করছে , আগামীকাল পাওয়া মেয়েদের কথা জিজ্ঞেস করছে। কালো জগতের লিডার আফজাল সাহেব কি না.?

নিরুপমা শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে সব দেখলো, ধীর পায়ে নিজের রুমে চলে গেলো। নিরুপমার পেছন পেছন ছোঁয়া দৌড়ে মায়ের কাছে গেল।

মহুয়া গিয়ে দাঁড়ালো মেঘলার পাশে।

আমেনা বেগম মহুয়ার সামনে এসে বলে উঠলো, ‘ তুমি সিআইডি..? ‘
মহুয়া অবাক হয়ে বললো,’ না, না আন্টি।’
আমেনা বেগমঃ তাহলে মেঘ কে.?
আজাদ চৌধুরী আমেনা নিয়ে সোফায় বসালেন।

শ্রাবণ, আহনাফ চুপচাপ বসে আছে। নির্জন অফিসে সে নিজে আসেনি।

ফাহিম মেঘলার পাশে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ ম্যাডাম আপনি এখন অফিসে যেতে হবে।’
মেঘলাঃ তুমি যাও আমি আসছি।

মেঘলা আমেনা বেগমের সামনে এসে বলে উঠলো, ‘ আমিই মেঘ। সিআইডি অফিসার মেঘ চৌধুরী।

আমেনা বেগম অবিশ্বাস্য চোখে তাকালেন।

মেঘলা সবার দিকে তাকিয়ে শ্রাবণের দিকে তাকালো। শ্রাবণ চুপচাপ শান্ত দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

মেঘলা আবার বলতে শুরু করলো, ‘ আমি এক বছর ধরে চেষ্টা করছিলাম কিভাবে এই কেইসের সব তথ্য বের করবো। কিভাবে আসল ক্রিমিনাল কে ধরবো। বস্তিতে বখাটে মেয়েদের আসর করি নিজেকে সবার সামনে বখাটে মেয়ে হিসেবে তুলে ধরি তখনি রনি এসে প্রস্তাব দেয় AF কোম্পানির মালিকের ছেলের গার্লফ্রেন্ড হওয়ার অভিনয় করতে। আমি অনেক ভাবলাম শুধু তো অভিনয় পাঁচ মিনিটের অভিনয় যদি আমি সব চেয়ে বড় ক্রিমিনাল কে ধরতে পারি তাহলে সমস্যা কি!.? প্রথমে সব ঠিক ছিলো তারপর তো সব এলোমেলো হয়ে গেল। আমি মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ছিলাম জেনো কেউ আমাকে চিনতে না পারে সন্দেহ না করতে পারে।

ইন্সপেক্টর মিরাজ চৌধুরী প্রথম দেখেই আমাকে চিনে ফেলে ছিলেন কিন্তু আমার অনুরোধে কাউকে কিছু বলেননি। আমি আজ মন থেকে দুঃখিত আপনাদের মিথ্যা বলার জন্য।

মেঘলা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আমাকে এখন আসতে হবে। আফজাল সাহেবের বিষয় কোনো প্রশ্ন থাকলে আজাদ চৌধুরী কে জিজ্ঞেস করে নিবেন।

আজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে মেঘলা বের হয়ে গেল।

আমেনা বেগম ছাড়া সবার মুখ স্বাভাবিক জেনো এইসব সবাই আগে থেকেই জানতো।

___________

ইতি মধ্যে সব টিভি চ্যানেল গুলোতে বলতে শুরু করেছে আফজাল সাহেবের অপকর্মের কথা।

আফজাল রেগে নির্জনের দিকে তাকিয়ে আছে। নির্জন হেঁসে বললো,’ ওয়েলকাম শশুর মশাই। ‘
আফজাল চাইলেও মুখে কিছু বলতে পারছে না তবে মনে মনে কয়েকটা বিশ্রী গালি দিয়ে বসলো নির্জন কে।

মেঘলা এসে বললো,’ এখন সব স্বাভাবিক করো সাংবাদিক যেতে বলো। ‘
নির্জনঃ বাড়িতে কি অবস্থা.?
মেঘলাঃ জানিনা।
নির্জনঃ তোমার বিষয় সবাই জেনে গেছে.?
মেঘলাঃ জানার বিষয় আর কতো গোপন রাখবো?
নির্জনঃ হুম তাও ঠিক।
মেঘলাঃ তোমার শশুর কে একটু বেশি ভালো ভাবে যত্ন নিবে।
নির্জনঃ জিজ্ঞাসা বাদ আপনি করবেন।

_____________

বাহিরের সব কাজ শেষ করে আসতে আসতে রাত হয়ে গেছে।

মেঘলা বাড়িতে এসে দেখলো সব নিরব হয়ে আছে।

আমেনা বেগম মেঘলা কে দেখে চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেলেন।

মেঘলা আজাদ চৌধুরীর পাশে বসলেন।
আজাদ চৌধুরীঃ সব বলেছে.?
মেঘলাঃ রাতের মধ্যে সব শেষ হয়ে যাবে।
আজাদ চৌধুরীঃ ওর ফাঁসি চাই।

মেঘলা হাসলো। ফাঁসি!.? কম হয়ে যায় না.?

মেঘলা টুকটাক কথা বলে উপরে চলে আসলো।

নিজের রুমে এসে দেখলো শ্রাবণ নেই হয়তো অফিসে।

মেঘলা ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুয়ে পড়লো। দুই চোখে ঘুম এসে ভীড় করলো।

__________

মহুয়া ব্যাগ গুছিয়ে রাখলো।
ছোঁয়াঃ ব্যাগ কেনো গুছিয়ে রাখছিস.?
মহুয়াঃ আমি চলে যেতে চাই ছোঁয়া।
ছোঁয়াঃ বাড়িতে কারো মন ভালো নেই এখন.? ভাই মে’রে ফেলবে।
মহুয়াঃ কিছু হবে না।
ছোঁয়াঃ ভেবে দেখ ভালো করে।
মহুয়াঃ বাদ দে এইসব তোর মন খারাপ…
ছোঁয়াঃ উঁহু।
মহুয়াঃ চল গল্প করি মন হাল্কা হবে।
ছোঁয়ার মনে পড়ে গেল কাল নির্জনের বলা ” আজ গল্প করবোশ নিজের অজান্তেই মুখে হাসি চলে আসলো। কিছু একটা মনে করার মতো করে এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে নির্জনের রুমে গেল।

মহুয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়ের আবার হঠাৎ কি হলো.??

ছোঁয়া বের হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আহনাফ রুমে এসে বললো,’ ছাঁদে চলো।’
মহুয়াঃ আপনি.?
আহনাফঃ হুম চলো।

ছাঁদে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে আহনাফ মহুয়া।

আহনাফ মহুয়ার বাহু শক্ত করে চেপে ধরে রাগে বলে উঠলো, ‘ তুমি চলে যাবে.? এতো বড় সাহস.?
মহুয়াঃ দেখুন আহনাফ..
আহনাফঃ কি দেখবো আমি.?? যাওয়ার কথাও যদি মাথায় এনেছো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। হাত পা ভেঙে ঘরে সাজিয়ে রাখবো।মহুয়া তুমি আমার রাগ সম্পর্কে জানো না আমার কথা না শুনলে আমি যা বলি তাই করি।
মহুয়াঃ আহনাফ পাগলামি করবেন না।
আহনাফঃ এটা তোমার কাছে পাগলামি মনে হচ্ছে!.?? হ্যাঁ তাহলে এমন পাগলামি আমি সারাজীবন করবো। আমি কাল বাসায় জানাচ্ছি সব কিছু।
মহুয়াঃ এমনটা করবেন না আপনি।
আহনাফঃ আজ থেকে তুমি আমার কথায় চলবে। নিজের সিদ্ধান্ত নিজের নেওয়া বন্ধ।
মহুয়াঃ আহনাফ…
আহনাফঃ চুপপপপপপপ

আহনাফ রাগে অন্য দিকে ফিরলো মহুয়া ভয় পেয়ে আছে আহনাফ কিভাবে জানলো.? এতোটা রেগে আছে!! ভয় লাগছে কিছু বলতে।

মহুয়া ভয়ে ভয়ে হাত রাখলো আহনাফের কাঁধে।
আহনাফঃ আমাকে তুমি ভয় পাও মহুয়া! কিন্তু কেনো.?? আমি তোমার মধ্যে, চোখে ভয় নয় একটু ভালোবাসা চাই। তুমি আমার এখানেই থাকতে হবে মহুয়া তোমার শেষ ঠিকানা আমার বুক। তুমি চাইলেও থাকতে হবে না চাইলেও।

_____________

নির্জন রুমে এসেই থমকে গেলো পর মুহূর্তে মুখে হাসি টেনে বলে উঠলো, ‘ হাতে ফুলের বদলে ঝাড়ু কেনো ছোঁয়া রাণী!.?’

ছোঁয়া রেগে নির্জনের দিকে তেড়ে গেলে নির্জন দুই পা পেছনে গিয়ে ছোঁয়ার হাত ধরে সামনের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। ছোঁয়ার হাত নির্জনের হাতের মুঠোয়, পিঠ নির্জনের বুকে।
ছোঁয়াঃ ছাড় আমাকে।
নির্জনঃ আগে বল কি হয়েছে.???
ছোঁয়াঃ তোর মতো লুচু ছেলেকে ঝাড়ু পিটা করা উচিত।
নির্জনঃ যাহ্ বাবাহ্ এখনো লুচুগিরি কিছুই করলাম না তাও নাম দিয়ে দিলি! এটা ঠিক না ছোঁয়া এতে করে তুই আমাকে লুচু হতে বাধ্য করছিস।

ছোঁয়া এক ঝটকায় নির্জন কে দূরে সরিয়ে সামনে কোমরে হাত রেখে তাকালো। একটা ডাইরী বের করে নির্জনের সামনে ধরতেই টান দিয়ে নির্জন ডায়রীটা নিয়ে নিলো।

ছোঁয়াঃ প্রেমিকা কে নিয়ে ডায়রীও লেখা হয়।
নির্জনঃ তাতে তোর কি.? রুম থেকে বের হ। তোকে না বললাম আমার অনুমতি ছাড়া আমার রুমে আসবি না।

ছোঁয়া ছলছল চোখে তাকালো নির্জনের দিকে।
নির্জন ছোঁয়ার গালে হাত রাখতে গেলে ছোয়া এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দিলো।
ছোঁয়াঃ নির্জন তুই এমন কেনো.? সর আমার সামনে আসবি না।
নির্জনঃ ছোঁয়া আমি ক্লান্ত প্লিজ একটু ঠান্ডা পানি খাওয়া।

ছোঁয়া কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এই মুহূর্তে পানি না চেয়ে বিষ চাইলে খুশি হতাম।’

নির্জন হেঁসে বলে উঠলো, ‘ জেলাস.? ছোঁয়া তুই জেলাস.?
ছোঁয়া কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আসলেই সে ভীষণ জেলাস সেই মেয়ের উপর। যার কথা ডায়রীর প্রতিটি পাতায় লেখা আছে কিন্তু নাম লেখা নেয়। মনে মনে বলে উঠলো, ‘ আমার ভাগ্য এমন কেন!.?? ‘

_____________

শ্রাবণ অনেক রাত করে বাসায় আসলো। নিজের কাছে চাবি আছে খুব সহজেই বাসায় ঢুকে গেলো৷

রুমে এসে দেখে মেঘলা ঘুমাচ্ছে । কিছু সময় ঘুমন্ত মেঘলার দিকে তাকিয়ে রইলো। ধীর পায়ে কাছে গিয়ে চুল সরিয়ে কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো৷ মেঘলা নড়ে উঠতেই সরে গেল।

ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে খাবার গরম করে প্লেটে নিয়ে রুমে আসলো।

মেঘলা কে ডাক দিতেই মেঘলা চোখ পিটপিট করে তাকালো।
শ্রাবণ কে দেখে চোখ ঢলে উঠে বসলো।

শ্রাবণঃ মুখ ধুয়ে আসো।
মেঘলাঃ কেনো.?
শ্রাবণঃ আমার খিদে পেয়েছে তাই।
মেঘলাঃ আমি খাবার গরম করে আনছি আপনি বসুন।
শ্রাবণঃ প্রয়োজন নেই আমি গরম করে নিয়েছি।একা একা খেতে ইচ্ছে করছে না।
মেঘলা মুখ ধুয়ে এসে বসলো।

শ্রাবণ খাবার সামনে রাখলো।
মেঘলাঃ আপনি রেগে নেই তো.?
শ্রাবণঃ কিসের জন্য.?
মেঘলাঃ আমি যে মিথ্যা বলেছি আপনাদের।
শ্রাবণ চুপ করে রইলো। মনে মনে হাসলো সে তো প্রথম থেকেই জানতো মেঘলার পরিচয়। বিয়ের পর প্রথম প্রথম সন্দেহ হতো মেঘলার আচরণ সাথে ভিন্ন ভিন্ন বই দেখে।বেশি কষ্ট করতে হয়নি এসিস্ট্যান্টের মাধ্যমেই জেনে গিয়ে ছিলো মেঘলার পরিচয় কিন্তু এতোদিন না জানার মতো ছিল কি দরকার যেখানে মেঘলা নিজে চাচ্ছে না সেখানে নিজ থেকে আগবাড়িয়ে বলার।

মেঘলাঃ কি হলো.?
শ্রাবণঃ তোমার ইচ্ছে ছিলো না তাই জানাওনি। মেঘলা তুমি যেমন তেমন দেখে তোমাকে বিয়ে করিনি। পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। শুধু আম্মু কষ্ট পেয়েছে তবে ঠিক হয়ে যাবে। খেয়ে নাও।

মেঘলা কথা বাড়ালো না পেটে ভীষণ খিদে। রাতে খাওয়া হয়নি ক্লান্ত ছিল এসেই ঘুমিয়ে পড়েছে।

______________

জেল থেকে বের হয়ে আসেপাশে তাকালো। সব পুলিশ গভীর ঘুমে।

আফজালকে খুব গোপনে পালাতে সাহায্য করছে চারজন পুলিশ সাথে কিছু আফজালের লোকও আছে যারা কালো কাপড় দিয়ে মুখ ডেকে আছে।

আফজাল মনে মনে বলে উঠে শুধু এখান থেকে বের হই একটাকেও ছাড়বো না।

আফজাল গিয়ে গাড়িতে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করে। আফজালের সেই দিকে খেয়াল নেই ওরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।?? সে তো ভেবেছে সব তার লোক। সে ভাবতেও পারছে না সামনে ওর জন্য কি অপেক্ষা করছে।

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।