Monday, June 23, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 272



মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-৩৬+৩৭

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পব_৩৬
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

আমরা ছিলাম দুই ভাই এক বোন। ছোট কাল কাটে গ্রামেই তারপর ব্যাবসার জন্য আব্বা শহরে চলে আসে।

দেখতে দেখতে কয়েক বছর কেটে যায় কোম্পানির উন্নতি হতে শুরু করে।

আমি পড়াশোনা শেষ করে কোম্পানি দেখাশোনা শুরু করি। মিরাজ পড়াশোনা করে নিরু ক্লাস 9এ উঠেছে।

আব্বা গ্রামে গিয়ে সাথে করে নিয়ে আসলো আমাদের পাশের বাড়ির এক চাচার মেয়েকে। মেয়েটা বেশ পিচ্চি ছিল। দেখতে মাশাল্লাহ ফুলের মতো ছিল। আমি আদর করে ফুল ডাকতাম।
ওর মা আরেকজনের সাথে চলে গিয়েছে আর বাপ নতুন বিয়ে করে বউ আনছে। নতুন বউ আজ ওর হাত পুড়ে ফেলেছে সেই জন্য আব্বা নিজের সাথে করে ওকে এখানে নিয়ে এসে ছিল৷ স্কুলেও ভর্তি করালো৷ আস্তে আস্তে আমাদের নিশ্চুপ বাড়িটা চঞ্চলতায় মেতে উঠলো।মারিয়া ছিল খুব চঞ্চল হাসিখুশি একটা মেয়ে। ধীরে ধীরে পিচ্চি মেয়েটা আমাদের চোখের সামনে বড় হতে শুরু করলো।

আব্বার পছন্দে আমার বিয়ে হলো আমেনার সাথে। বিয়ের চার বছরের মাথায় আমাদের সংসারে শ্রাবণ আসলো।

সেই দিন বাড়িতে কি আনন্দ ছিল বংশের প্রথম সন্তান এসেছে।

নিরুর জন্য বিয়ে আসতে শুরু করলো তার মধ্যে শুনতে পেলাম নিরুর প্রেম চলছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আফজালের সাথে। প্রথম আমি নিষেধ করি নিরুকে মেরেও ছিলাম কিন্তু ওর জেদের কাছে হার মানতে হয়ে ছিল। আফজালের সাথে ওর বিয়ে ঘরওয়া ভাবে হয়ে গেল। আফজালের এই শহরে কেউ ছিল না সেই জন্য আমাদের সাথেই বাড়িতে থাকতে শুরু করলো আমার কোম্পানিতে চাকরি দিলাম।

দিনকাল ভালোই যাচ্ছিল দেখতে দেখতে নিরুর বিয়ের পাঁচ বছর চলে গেছে এর মধ্যে মিরাজের বিয়ে হয়ে গেছে আহনাফ, নির্জন কে নিয়ে সারাদিন মেতে থাকতো মারিয়া। আব্বা ঠিক করলেন এবার মারিয়ারও বিয়ে দেওয়া উচিত।

আস্তে আস্তে মারিয়ার মধ্যে চঞ্চলতা হারিয়ে গেল, কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে, প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে বের হয় না কারো সাথে কথা বলে না। মানুষ দেখলেই ভয়ে শিউরে ওঠে, ধীরে ধীরে চোখের নিচে কালি পড়ে যাচ্ছে যেই মেয়ের মুখ থেকে হাসি সরতো না সেই মেয়ে হাসতে ভুলে গেল। আমেনা, নিরু সবাই অনেক ভাবে জিজ্ঞেস করতো সব সময় এড়িয়ে চলতে শুরু করলো সবাই কে।
আমাদের বাড়ির পেছনে একটা ভাঙা ঘর এখনো আছে। সেই ঘরটা ছিল মারিয়ার ভীষণ পছন্দের। ঘরের সামনে একটা বকুল ফুলের গাছ ছিল প্রতিদিন তিনটা ফুলের মালা গেঁথে বাড়ির দুই বউ আর নিরুর খোঁপায় পড়িয়ে দিত।এটা করে ও আনন্দ পেত।

সবাই বললো বিয়ে দিয়ে দিতে। ছেলে দেখা শুরু করলাম। মারিয়া দেখতে ভীষণ মিষ্টি একটা মেয়ে ছিল আমাদের আরেক বোন। রক্তের সম্পর্কই কি সব!?? আত্মার সম্পর্ক হয়ে গিয়ে ছিলো মারিয়ার সাথে সবার।

ছেলেও পছন্দ করা শেষ, বিয়ের তারিখ ঠিক করার আগের রাতে মারিয়া হঠাৎ আমার রুমে আসলো। আমাকে আচমকা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। আমিও কতোটা বোকা ছিলাম ভাবলাম বিয়ে ঠিক হচ্ছে তাই হয়তো সবার জন্য মায়া লাগছে তাই কাঁদছে। আমেনাও অনেক বুঝিয়ে আহনাফ কে সাথে দিয়ে ছিলো। আহনাফ ছিল মারিয়া ফুপিমণি বলতেই পাগল। আহনাফের বয়স পাঁচ তখন আর শ্রাবণের আট, নির্জন দুই।

সকালে সবাই ঘুম থেকে উঠে ড্রয়িং রুমে আসলো। শুক্রবার ছিল সবার ছুটির দিন।

একমাত্র মারিয়ার দেখা নেই। আহনাফ কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বের হয়ে আসলো। আমেনা জড়িয়ে ধরে শান্ত করাল।

সারা বাড়ি খুঁজেও মারিয়াকে পাওয়া গেলো না। সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লো।

দিন শেষ হয়ে বিকেল হয়ে গেল। আম্মা কি মনে করে বললো,’ মারিয়াকে বাড়ির পেছনের ঘরে নাই তো!..?’

হালিমা বেগম গেল মারিয়াকে দেখতে।

কিছু সময় যেতেই হালিমার চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে সেই ঘরে গিয়ে যা দেখলো তা হয়তো কখনো কল্পনা করিনি।

আজাদ চৌধুরী চশমার আড়ালে চোখের পানি মুছে নিলেন।

আহনাফ বলে উঠলো, ‘ কি হয়ে ছিল উনার সাথে!.?? ‘

আজাদ চৌধুরীঃ বন্ধ করে মারিয়ার ঝুলন্ত শরীরটা দেখে আমার আত্মা কেঁপে উঠে ছিল!!.. ছোট থেকে বোন ভেবে ভালোবেসে বড়করা পিচ্চিটার শরীর এভাবে দেখবো!! ??? আম্মা জ্ঞান হারালেন৷ কখনো কেউ ওকে পর মনে করেনি। আম্মা নিজের মেয়ের মতো ভালোবেসে বড় করেছে।

আহনাফঃ কেন উনি এমনটা করলেন..?
আজাদ চৌধুরীর চোখ মুখ শক্ত হয়ে উঠলো।
নির্জনঃ উনি কি মৃত্যুর আগে কোনো চিঠি বা ডাইরী লিখে জাননি.?
আজাদ চৌধুরী চুপ করে রইলেন।
আহনাফ কিছু সময় চুপ থেকে আফজালের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আর আপনি হঠাৎ কোথায় থেকে আসলেন.? ছোট থেকে শুনে এসেছি ছোঁয়া জন্মের আগে এক্সিডেন্টে আপনি মা-রা গেছেন। তাহলে এতো বছর পর কোথায় থেকে আসলেন.??
আফজালের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে।

শ্রাবণ শান্ত কন্ঠে বললো, ‘ সেই জন্যই কি ছোট থেকে সেই ঘরে প্রবেশ করা সবার জন্য নিষিদ্ধ ছিল!…?

নিরুপমা দূর থেকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে আজাদ চৌধুরীর দিকে। ছোট বোনটার কথা মনে হতেই ভেতরটা কেমন কেঁদে উঠলো। বলে উঠলো, ‘ তুই আমাকে বাঁচতে দিলি না আপা!!.? সে আমাকে বাঁচতে দিল না!!…

__________________

সব প্রশ্ন মাথায় রেখে সবাই নিজেদের কাজে লেগে পড়লো।

ড্রয়িং রুমে আজাদ চৌধুরী আর আফজাল সাহেব বসে আছে।

আফজাল শয়তানি হেঁসে বললো,’কি লাভ হলো কাহিনী শুনিয়ে! .? ‘
আজাদ চৌধুরীঃ তুই ঠিক আগের মতোই আছিস। কুত্তার লেজ যেমন কখনো সোজা হয় না তুই ও তেমন। আপসোস সময় থাকতে আমার বোনটা বুঝতে পারলো না, চিনতে পারলো না।
আফজালঃ তোর সব শেষ না করে আমি ভালো হচ্ছি না।
আজাদ চৌধুরীঃ আমাকে শেষ করতে এসে নিজের ধ্বংস ডেকে আনলি।
আফজালঃ তোর ছেলের বউরা তো মাশাল্লাহ।
আজাদ চৌধুরী রেগে তাকালো।
আফজালঃ বংশ,শিক্ষা সব দিক দিয়ে.!
আজাদ চৌধুরী কিছু বললেন না।
আফজালঃ একটা মজার কথা শুনবি.?এইসব আমার প্লেন ছিল। বলে হেঁসে কুটিকুটি খাচ্ছে।

আজাদ চৌধুরী হাসলেন। বোকা নিজের ধ্বংস নিজে ডেকে আনলো।

আজাদ চৌধুরী আমেনা বেগম কে ডেকে বললেন বাড়িতে ভালো ভালো রান্নার আয়োজন করো আজ জামাই আদর হবে।

আফজাল বেশ অবাক হচ্ছে আজাদ চৌধুরী আচরণে। চোখে মুখে ভয় নেই কেন!.?

______________

মহুয়া মেঘলার জন্য টেনশন করছে। সেই সকালে বের হয়েছে মেঘলা। কোনো বিপদ হলো না তো!!..?

আমেনা বেগমও আজ টুকটাক মেঘলার কথা জিজ্ঞেস করলো। বাড়ির বউ সকালে বের হয়েছে এখন রাত হয়ে গেছে। মেয়েটার কি আমার ছেলের টাকায় হয় না!.? এখনো চুরি বাটপারি করার জন্য বের হতে হয়!! কিছুটা রাগও প্রকাশ করলেন কিন্তু ছেলের জন্য বেশি কিছু বললেন না।

রান্না শেষ করে মহুয়া টিউশন করাতে বেরিয়ে গেল। আসতে আসতে রাত নয়টা বাজবে।

আহনাফ এতো বলার পরেও মহুয়া টিউশন ছাড়েনি ওর এসিস্ট্যান্ট ও আর হয়নি।

মহুয়া বের হয়ে যাওয়ার কিছু সময় পর মেঘলা নির্জন এক সাথে বাড়িতে প্রবেশ করলো। বাড়িতে এসেই আফজালকে ড্রয়িং রুমে দেখে হাসলো মেঘলা।

আমেনা বেগম মেঘলাকে দেখে মুখ কালো করে বলে উঠলো, ‘ তোমার তাহলে বাড়িতে আশার সময় হলো!?! নির্জনেরসাথে এসেছো নিশ্চয়ই জেল থেকে এসেছো৷?? এখনো কি আমার ছেলের টাকায় হয় না!!.? আমার ছেলে কি তোমার প্রয়োজন মত সব কিছু দিচ্ছে না!!.?

মেঘলা একবার আফজালের দিকে তাকালো।

আফজাল কৌতূহলি চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।

আমেনা বেগম একদম আফজালের কথা ভুলেই বসে ছিলেন। ছেলের বউকে কিছু কঠিন কথা শুনাতে গিয়ে এভাবে লজ্জা ফেলবেন ভাবতেও পারেননি।

নির্জন কিছু বলতে চাইলে মেঘলা শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ নির্জন তুমি ক্লান্ত রুমে যাওও’

আমেনা বেগম মেঘলার দিকে তাকিয়ে কঠিন আদেশের সুরে বললো,’ তুমিও রুমে যাওও।’

আফজাল জেনো মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো একটা ফাঁদ পেল।

আমেনা বেগম কে বলে উঠলো, ‘ ভাবি ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন পরিচয় করালেন না!..?’
আমেনা বেগমঃ ভাই আপনি আশার পর থেকে সময় হয়ে উঠেনি। ‘
আফজালঃ সমস্যা নেই বাড়িতেই আছি পরিচিত হয়ে যাব। তা মেয়ের বংশ কেমন.? নিশ্চয়ই আজাদের কোনো বন্ধুর মেয়ে হবে।.?

আমেনা বেগম মুখে হাসি টেনে বলে উঠলো, ‘ মেয়ের বংশ পরিচয় দিয়ে কি করবো ভাই!.? এখন মেয়েটা আমাদের বাড়িতে সারাজীবনের জন্য এসেছে এখন ওর বংশ পরিচয় সব আমার ছেলে। ‘

আফজালঃ তাও তো আছেন না বাবা কি করে.? পড়াশোনা কতোটুকু করলো.? আপনাদের সাথে যায় কিনা!.?
আমেনা বেগম রান্না ঘরের দিকে যেতে যেতে বললো, ‘ আমি নিরু কে দিয়ে চা পাঠাচ্ছি ভাই। আশার পর থেকে এখনো আপনার সামনে আসলো না। নিশ্চয়ই অভিমান করে আছে। ‘

________________

নির্জন রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে আজ যা যা তথ্য সংগ্রহ করলো সব ভালো করে দেখতে শুরু করলো।

দরজায় নক করে উঁকি দিলো ছোঁয়া।
নির্জন দরজার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিলো।

ছোঁয়া দরজা ঠেলে রুমে এসে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নির্জনের দিকে।
নির্জন একবার তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে আবার নিজের কাজ করছে।

ছোঁয়া রেগে কফি নির্জনের সামনে ধরলো।
নির্জনের এখন এটা খুব প্রয়োজন ছিল৷ হাত বাড়িয়ে কফি নিতে গেলে কফি সরিয়ে নিল ছোঁয়া।
বিছানার পাশে চেয়ারে বসে নিজে আরাম করে কফি খাওয়া শুরু করলো।

নির্জন জাস্ট অবাক হয়ে ছোঁয়ার কান্ডকারখানা দেখছে। ল্যাপটপ বন্ধ করে ছোঁয়ার দিকে ঘুরে বললো,’ এটা কি হলো ছোঁয়া!.?? ‘
ছোঁয়া কিছু না বলে মন দিয়ে কফি খাচ্ছে যেন এখানে কফি আর ও বাদে আর কেউ নেই আর ওর একমাত্র কাজ হলো তৃপ্তি করে কফির স্বাদ নেওয়া।

নির্জনঃ মুখের সামনে থেকে কফি কেঁড়ে নিলি!..??
ছোঁয়াঃ কফি আমি বানিয়েছি আবার আমি খাচ্ছি। তোমার থেকে কখন কেঁড়ে নিলাম.?
নির্জনঃ কিন্তু বানিয়েছিস আমার জন্য …. এই কফি আমার।
ছোঁয়াঃ হুহ্ আমি অর্ধেক খেয়ে ফেলেছি এখন খাবে!..?
নির্জন থমথমে মুখে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আমার জন্য পাঁচ মিনিটে কফি বানিয়ে আনবি যা।’
ছোঁয়াঃ ইসসসস এমন ভাবে অর্ডার করছে যেন আমি তাহার কাজের লোক!! মাসে মাসে বেতন দিয়ে রাখছে।
নির্জনঃ না তুই আমার ঘরের রাণী আর রাণীর কাজ রাজার আদেশ শুনা, সেটা ভালোবেসে হোক আর ভয় পেয়ে।
ছোঁয়া ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো, ‘ তা রাজা মশাই আপনার রাজ্যটা একটু দেখাবেন.? আপনার প্রাসাদটা কোথায়.? কোন গ্রহে..?আমার না দেখতে ইচ্ছে করছে…
নির্জন রাজকীয় ভাবে বলে উঠলো, ‘ এই বাড়ি হলো রাজপ্রাসাদ আর এই রুম হলো…… ‘

ছোঁয়াঃ থামেন! থামেন রাজা মশাই আজ কি নেশা টেশা করেছেন নাকি!.?
নির্জনঃ কেন..? আমাকে দেখে তোর নেশাখোর মনে হচ্ছে!.?
ছোঁয়া একটু ভাবলো, ভালো করে থুতনিতে হাত রেখে নির্জনকে দেখলো তারপর বলে উঠলো, ‘ নাহ্ চেহারা তো ঠিক আছে তবে কথার মধ্যে পাচ্ছি!! বলেই হাসতে লাগলো।

নির্জন চুপচাপ দেখলে ছোঁয়ার সেই হাসি।

ছোঁয়া আবার বলে উঠলো, ‘ তবে তোর চরিত্র রাজাদের সাথে মিলে যায়। রাজাদের যেমন এক রাণীতে হয় না তোরও তেমন এক মেয়ে,প্রেমিকা, বউয়েতে হয় না,হবে না।

নির্জন ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ ঠিক বলেছিস আমার পৃথিবীর সব নারী এনে দিলেও হবে না আমার তো তোকে লাগবে। তুই আমার রাণী হয়ে যা ছোঁয়া রাণী। এই নির্জন রাজা আর কোনো নারীর দিকে তাকাবে না।। তোর কসম…

ছোঁয়া সবে কফিতে চুমুক দিয়ে ছিল। নির্জনের এমন কথা শুনে কষ্ট করে ঢুক গিলে নিল। থমথমে মুখে নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো,,’ সত্যি করে বল তুই আজকে উল্টা পাল্টা কি খেয়ে আসছিস!.? আমি শুনেছি সব পুলিশ উল্টা পাল্টা জিনিস খায়।’

নির্জন ছু মেরে ছোঁয়ার হাতের কফির কাপ নিয়ে নিলো।
ছোঁয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই কফিটা মুখে দিয়ে বললো,’ এই ঠান্ডা কফি তোর মতো এলিয়েন ছাড়া আর কারো পক্ষে খাওয়া সম্ভব না। ‘
ছোঁয়া রেগে বলে উঠলো, ‘ নির্জনের বাচ্চা আমার কফি দে।এটা একদম খাবি না এঁটো হয়ে গেছে। ‘
নির্জনঃ এঁটো হলেও স্বাদ দিগুণ বেড়ে গেছে।

ছোঁয়া লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ দেখ উল্টা পাল্টা কথা বলবি না। কফি দে আমি বানিয়ে দিচ্ছি।

নির্জন ইচ্ছে করে কাপ উপরে তুলে ধরলো।

ছোঁয়া আনতে গেলে নির্জন কাপ সরিয়ে নিলো আর বেচারি ছোঁয়া গিয়ে পরলো নির্জনের বুকে।

ছোঁয়ার ঠোঁট ছুয়ে গেল নির্জনের বুক।

দুইজনের কেউ বুজতে পারলো না কয়েক মিনিটে হয়ে গেল কি!!!..???

ছোঁয়া লজ্জায় পুরো জমে গেছে। এতোক্ষণ নির্জনের সব কথায় লজ্জা পেলেও বুঝতে দেয়নি কিন্তু এমনটা হওয়ার পর লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেছে। নির্জনের বুক থেকে মাথা তুলে এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। রেখে গেল এক প্রেমিক পুরুষের কেঁপে উঠা বুকের ধুকপুক। আলগোছে হাতটা বুকে রাখলো নির্জন আবার সাথে সাথে হাত সরিয়ে বলে উঠলো, ” হাত লাগলে যে মুছে যাবে আমার ছোঁয়া রাণীর ঠোঁটের প্রথম স্পর্শ ”

______________________

কালো থ্রি পিস পড়া, মাথায় ঘোমটা দেওয়া, লম্বা বিনুনি কোমর ছড়িয়ে নিচে দুল খাচ্ছে। মুখের এক পাশে কিছু চুল অগোছালো ভাবে পড়ে আছে।

মহুয়া রাস্তার পাশে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আশেপাশে রিক্সা খুঁজছে। রাত দশটা বেজে গেছে আজ। কিছুটা দূরে একটা চায়ের দোকান এখনো খোলা। দোকানের মালিক একজন মধ্যে বয়সী মহিলা।

মহুয়া ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো। দোকানে। ব্যাগে দেখে নিল ৫০টাকা আছে।

মহুয়া এক কাপ চা হাতে নিয়ে পাশে ফিরে দেখলো আহনাফ তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।

চোখের ভুল ভেবে চোখ কচলে আবার তাকালো।

আহনাফ গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। মহুয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললো,’ খালা আমাকেও এক কাপ চা দেন।’

মহুয়াঃ আপনি!!..?
আহনাফঃ অবাক হয়েছেন.?
মহুয়াঃ কিছুটা, তবে আপনি এখানে কেনো.?
আহনাফঃ বাসায় যাওয়ার সময় আপনাকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম।

মহুয়াঃ তাহলে তো এসেছেন অনেক সময় হবে।
আহনাফঃ অনেক না আবার কমও না। ১০মিনিট হবে। গাড়িতে বসে ছিলাম।

দোকানী চা দিতে আহনাফ হাত বাড়িয়ে নিল।
মহুয়াঃ আপনি তো চা খাননা।
আহনাফ চায়ে চুমুক দিয়ে বললো,’ বাহ্ আমার বিষয় তো খুব ভালো জানেন!! তা আর কি কি জানেন শুনি।’
মহুয়াঃ আপনি নিজেই বলে ছিলেন আর আমার স্মৃতি শক্তি খুব ভালো তাই মনে রেখেছি।
আহনাফঃ আচ্ছা বিশ্বাস করে নিলাম। আমি চা খাই না তবে মাঝে মাঝে টং দোকানের চা খাওয়া হয় ভীষণ ভালো লাগে।
মহুয়াঃ ঠিক বলেছেন টং দোকানের চা আলাদা স্বাদ।

চা খাওয়া শেষ করে আহনাফ মহুয়ার হাত ধরে কিছু দূর নিয়ে আসলো। সুনসান নীরব চারপাশ, আহনাফ গাড়ি থেকে দুইটা বেলীফুলের মালা বের করে একটা মহুয়ার হাতে পেঁচিয়ে দিলো অন্যটা নিয়ে মহুয়ার পেছনে চলে গেল।

মহুয়া কিছু বলতে চাইলে আহনাফ ওর ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চেপে বলে উঠলো, ‘ হুসসসস একদম চুপ কোনো কথা হবে না চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।’

মহুয়া থমকে গেল, ভেতর তোলপাড় শুরু হলো। আহনাফের হাতের স্পর্শে ঠোঁট কাঁপতে লাগলো।এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে অন্য দিকে চোখ সরিয়ে নিল মহুয়া।

আহনাফ মহুয়ার ঘোমটা ফেলে বিনুনিতে দ্বিতীয় বেলীফুলের মালা পড়িয়ে দিলো।

মহুয়া সামনে গিয়ে বলে উঠলো,”‘ বেলীপ্রিয়া”

আমি তোমার একটা নাম দিয়েছি ” বেলীপ্রিয়া” যার শরীর থেকে বেলীর ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে থাকে আশপাশ।

মহুয়া লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে গেলো। লজ্জা পেলেই গাল লাল হয়ে যায় মহুয়ার।

মহুয়াকে লজ্জা পেতে দেখে হাসলো আহনাফ।

” তুমি লজ্জা পেলে তোমাকে বিশ্রী রকমের সুন্দর লাগে বেলীপ্রিয়া ”

মহুয়াঃ সুন্দর তো সুন্দর, সুন্দর আবার বিশ্রী হয় কিভাবে!!.??।
আহনাফঃ তুমি বুঝবে না। ঘোমটা দিয়ে নিজেকে আড়াল করে নাও।আমি নিজের উপর বেশি সময় কন্টোল রাখতে পারবো না ভুল কিছু হয়ে গেলে আমার দোষ দিতে পারবে না। সব দোষ এই প্রকৃতির আর তোমার।
মহুয়া প্রথম বুঝতে পারে না আহনাফ কি বলছে! যখন বুঝে সাথে সাথে উল্টো দিকে ফিরে যায়।

আহনাফ হাসে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে, কি চমৎকার সেই হাসি। কিন্তু এই মুগ্ধকর হাসি তার বেলীপ্রিয়া দেখতে পেল না। দেখলে হয়তো আবারও হাসির প্রেমে পড়তো এ যে নজর কাড়া হাসি।।

আহনাফ মহুয়ার সামনে গিয়ে আবার দাঁড়ালো।

মহুয়া আবার লজ্জায় একদম মাথা নিচু করে নিয়েছে।

আহনাফ কিছু সময় তাকিয়ে রইলো ওর লজ্জামাখা মুখের দিকে। মহুয়ার আরও কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। খুব করে ইচ্ছে করলো মহুয়ার এলোমেলো চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিতে।

যা ভাবা তাই কাজ, হাত বাড়িয়ে মহুয়ার এলোমেলো চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিলো৷ মহুয়ার শরীর কাঁপছে । আহনাফের দৃষ্টি গেল মহুয়ার কাঁপা কাঁপা ঠোঁটের উপর।

আহনাফ লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে উল্টো দিকে ফিরে বলে উঠলো, ‘ গাড়িতে গিয়ে বসো।’

মহুয়া এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না দৌড়ে গাড়ির কাছে চলে গেল। বুকে হাত দিয়ে বলে উঠলো, ‘ এতো জোরে লাফাচ্ছিস কেন!.?

আহনাফ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমার কি হয়েছে!!..? আমি আমাকে চিনতে পারছি না! নিজেকে পাগল পাগল লাগে। এই মেয়ের সামনে আসলে নিজেকে অন্য একজন মানুষ মনে হয়, প্রেমিক হৃদয় জেগে উঠে, নিজের উপর কন্ট্রোল হারাই বার বার।

গাড়িতে চুপচাপ বাহিরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে মহুয়া। আহনাফ এক মনে গাড়ি ড্রাইভ করছে।

আহনাফ নিরবতা ভেঙে বলে উঠলো, ‘ একটা প্রশ্ন করি!.?’

মহুয়া ফিরলো না, না ফিরেই বললো,’ বলেন.’

আহনাফঃ সারাক্ষণ একটা মানুষকে ভাবা, তাকে ভাবতেই মুখে হাসি ফুটে উঠা, তাকে ছাড়া অন্য কারো দিকে তাকাতে ইচ্ছে না হওয়া, তাকে দেখলেই বুকের ধুকপুক বেড়ে যাওয়া, তাকে একটু দেখার জন্য মন ছটফট করা, কাজের ফাঁকে তার মুখটা ভেসে উঠা, তাকে ছাড়া সব কিছু মৃত, শূন্য অনুভব হওয়া, তাকে দেখলেই প্রেম প্রেম পাওয়া এইগুলো কিসের লক্ষন..???এই রোগের মেডিসিন কোথায়.???

মহুয়া থমথমে মুখে আহনাফের দিকে তাকালো। আচমকা হেসে বলে উঠলো, ‘ আপনি প্রেমে পড়েছেন।..?’

আহনাফঃ প্রেমের বয়স সেই কবে ফেলে এসেছি।
মহুয়াঃ প্রেমের কোনো নির্দিষ্ট বয়স থাকে না, হয় না। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে আমরা প্রেমে পড়তে পাড়ি, প্রেমে পড়ি। ডাক্তার সাহেব আপনি নিজের মেডিসিন নিজেই খুজে নেন।

চলবে……….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৩৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

মেঘলার ঘুমের ঘোরে মনে হলো কেউ ওর দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে। কারো নিশ্বাস ওর চোখে মুখে উপচে পড়ছে।
মেঘলার ঘুম ভীষণ হাল্কা।
মেঘলা পরিচিত পারফিউমের ঘ্রাণ পেয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলো।
শ্রাবণ মেঘলার এলোমেলো চুলগুলো আলতু করে ঠিক করে দিল। শাড়ির আঁচলটা কাঁপা কাঁপা হাতে ঠিক করে দূরে সরে গেল।

ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো মেঘলা ঠিক আগের মতো ঘুমাচ্ছে চুল এলোমেলো শাড়ির আঁচল সরে গেছে।

শ্রাবণ চোখ সরিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো।

মেঘলা কিছু সময় যেতে শুয়া থেকে উঠে শ্রাবণের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ঘুম কেমন হলো!.??’
মেঘলা অন্ধকার বাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো,’ ঘুমাতে আর দিলেন কই!!.’
শ্রাবণ অবাক হয়ে মেঘলার দিকে তাকালো। মেঘলা মুচকি হেঁসে বাহিরে তাকিয়ে আছে।

শ্রাবণ এক হাতে মাথা চুলকে বলে উঠলো, ‘ আপনি জেগে ছিলেন!.?’
মেঘলাঃ কই নাতো।
শ্রাবণ যা বুঝার বুঝে নিল।

মেঘলা আচমকা শ্রাবণ কে জড়িয়ে ধরলো তাও শক্ত করে।

শ্রাবণ বেশ অবাক হলো। যেখানে এখনো নিজ ইচ্ছায় মেঘলা শ্রাবণের হাতও স্পর্শ করেনি সেই মেয়ে জড়িয়ে ধরেছে!!!

সময় গড়ায় পাঁচ মিনিট পর মেঘলা শ্রাবণকে ছেড়ে দেয় তবে দূরে যেতে পারে না। প্রথম মেঘলা জড়িয়ে ধরলেও এখন শ্রাবণ মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
মেঘলা ছুটার চেষ্টা করলে শ্রাবণ আরও শক্ত করে ধরে।
শ্রাবণঃ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো একদম নড়াচড়া করবে না।

মেঘলা লজ্জায় মুখ শ্রাবণের বুকে লুকিয়ে রেখেছে। কেমন নির্লজ্জের মতো জড়িয়ে ধরে ছিল শ্রাবণ কে! আজ কাল হুটহাট কি করে নিজেও জানেনা। শ্রাবণকে দেখলে কেমন কেমন ফিল হয়। জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে সব সত্যি বলে দিতে ইচ্ছে হয়। এই ঝামেলার জীবন ভালো লাগে না একটু শান্তি চায়। আজ সে ভীষণ ক্লান্ত একটু আশ্রয় চায় শ্রাবণের বুকে৷

______________

রাত করে আশার জন্য ছোঁয়া একটু বকা দিল মহুয়াকে। রাস্তা ঘাটে বিপদ হতে পারে এতো রাতে চলাফেরা করলে।

মহুয়া ছোয়াকে বুঝিয়ে শুনিয়ে গোসল করে আসলো।
ছোঁয়াঃ এতো রাতেও কেন গোসল করতে হয় মহুয়া!.?
মহুয়াঃ তুই তো জানিস ময়লা আমার একদম সহ্য হয় না। বাহির থেকে আসলে মনে হয় শরীর ভার হয়ে আছে গোসল করলে শান্তি লাগে।

ছোঁয়াঃ খাবার নিয়ে আসবো.??
মহুয়াঃ না খাব না আজ।

ওদের কথার মাঝেই দরজায় কড়া নাড়লো আহনাফ।
ছোঁয়াঃ ভাইয়া তুমি ?
আহনাফঃ মহুয়া নিচে আসো।
মহুয়া চুপচাপ ঘোমটা দিয়ে নিচে গেল।

আহনাফ টেবিলে বসতে বসতে বললো, ” আম্মু দাদীজানের কাছে আছে। ফুপিমণি ঘুমিয়ে পড়েছে ছোট আম্মুর মন ভালো না আমার জন্য খাবার গরম করে আনো।
মহুয়াঃ প্রথমে বললেই হতো এতো বড় কাহিনী বলার কারণ বুঝলাম না।
আহনাফঃ তোমার তো নিজের স্বামীর প্রতি একটুও মায়া, ভালোবাসা, দায়িত্ব কিছু নেই মহুয়া। কতোটা পাষাণ বউ। স্বামী সারাদিন কাজ করে বাসায় এসেছে কই একটু সেবাযত্ন করবে তা না রুমে গিয়ে বসে আছো!।

মহুয়া চুপচাপ আহনাফের কথা শুনছে আর খাবার গরম করে সামনে রাখছে।

আহনাফ মহুয়ার হাত ধরে পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিল।

একটা প্লেটে খাবার নিয়ে মহুয়ার সামনে দিল।
মহুয়াঃ আমি খাব না আহনাফ।
আহনাফের হাত থেমে গেলো অবাক হয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ এই প্রথম তোমার মুখে আমার নাম শুনলাম!.’
মহুয়াঃ এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে?
আহনাফঃ কিছু না।

মহুয়া চুপচাপ বসে আছে সে খাবে না৷
আহনাফঃ মহুয়া আমি প্লেটে নিয়ে নিয়েছি চুপচাপ বসে না থেকে হাত মুখ চালাও। তোমার খাওয়া শেষ হলে আমি রুমে গিয়ে ঘুমাবো। ভীষণ ঘুম পেয়েছে সারাদিন আজ প্রচুর প্যারার মধ্যে দিয়ে গেছে।

মহুয়া বাধ্য হয়ে খাবারে হাত দিল। কিন্তু আহনাফের সামনে খেতে লজ্জা লাগছে৷
আহনাফ হয়তো বুঝতে পারলো৷ মোবাইল বের করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইলো।

খাওয়া শেষ করে সব গুছিয়ে মহুয়া নিজের রুমে যাওয়ার সময় আহনাফ মহুয়ার হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।

মহুয়া ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই আহনাফ দুষ্টু হেঁসে মহুয়ার দিকে এগিয়ে আসলো৷

আহনাফের হাসি দেখে নিজের অজান্তেই মহুয়া দুই পা পিছিয়ে গেল।
আহনাফ মহুয়ার একদম কাছে এসে মহুয়ার মুখের দিকে হাত বাড়ালো।

মহুয়া দরজার সাথে ধাক্কা খেয়ে থেমে গেল।
আহনাফ মহুয়ার পেছন থেকে রুমাল নিয়ে আবার সোজা হয়ে দাঁড়ালো। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুমি কি ভেবে ছিলে!.?’
মহুয়াঃ আমাকে রুমে কেন এনেছেন! দরজা খুলেন কেউ দেখলে…
আহনাফঃ দরজা লাগানো কেউ কিভাবে দেখবে মহুয়া!.? দিন দিন চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে বুদ্ধি হাঁটুতে চলে আসছে। আর আমার বউ আমার রুমে কে কি বলবে!.?
মহুয়া চুপ করে রইলো, এই লোকের সাথে কথা বলে লাভ নেই।

আহনাফ সোজা গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
আহনাফঃ মেহু মাথাটা একটু টিপে দাও না ভীষণ যন্ত্রণা করছে।
মহুয়া ধীর পায়ে গিয়ে আহনাফের বিছানার পাশে দাঁড়ালো।
আহনাফ এক টানে মহুয়াকে বসিয়ে দিল।
আহনাফঃ তুমি পরপুরুষের রুমে নেই মেহু। তুমি তোমার স্বামীর রুমে আছো৷
মহুয়া হাত বাড়ালো আহনাফের চুলের দিকে।
আহনাফঃ যত্ন করে ভালোবেসে চুল টেনো আবার দেখো সব জেনো হাতে না চলে আসে। এই চুল আমার ভীষণ প্রিয়। আমি ঘুমালে ডাক দিবে না।
মহুয়া হাসলো আহনাফের কথা শুনে।

_________________

ধীরে ধীরে দরজা খুলে রুম এক নারী প্রবেশ করলো। শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে হাতের ছু*রিটা শক্ত করে চেপে ধরলো।

ড্রিমলাইটের আলোয় বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো।

কাঁথা গায়ে দেওয়া কাউকে দেখেই রাগে, ঘৃণায় চোখ জ্বলে উঠলো।

শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ছুরিটা বুকের দিকে বসিয়ে দিল। পরপর কয়েকবার ছুরি বসিয়ে তাকালো।
ছুরিতে রক্ত নেই কেন!..?

পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে!? আস্তে করে পেছনে ফিরে ভয়ে বিছানায় পড়ে গেল।

” ভয় পেয়েছো!!.? ভেবে ছিলাম তুমি আসবে আমার ভালোবাসার টানে”

নারীটি ভয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে ছুরি সামনে ধরলো।
” আমাকে খু’ন করতে এসে ছিলে!.? নিজের স্বামীকে!!.? নিরু তুমি ঠিক আগের মতো বোকা রয়ে গেছো। আমাকে মা-রা এতো সহজ!.??

~ আমি একদিন তোমাকে নিজ হাতে খু’ন করবো।
~ পারবে!.? ভালোবাসার মানুষের বুকে ছুরি বসাতে!.? তোমার বুকে বসবে না!.? বুক কাঁপবে না.?
হঠাৎ নিরুপমা শব্দ করে হেঁসে উঠলো। হাসতে হাসতে হুঁ হুঁ করে কেদে উঠলো।

~ আমি তোমার ভালোবাসা আর তোমার বুকে আজ থেকে ২০ বছর আগেই ছুরি বসিয়েছি তাও কিভাবে বেঁচে গেলে!!..??

আফজাল সিগারেট ঠোঁটে চেপে বারান্দায় চলে গেল।

নিরুপমা সেখানে বসেই কাঁদতে শুরু করলো।

চলবে,

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-৩৪+৩৫

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৩৪
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

একটা গলি থেকে বের হয়ে দৌড়তে গিয়ে হুঁচট খেয়ে রাস্তায় পড়লো মেঘলা। পেছনের দিকে ফিরে দিকে সবগুলো এই দিকেই আসছে।
মেঘলা পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো পা দিয়ে রক্ত পড়ছে। হাতে ছু*রির আঘাত খেয়ে অনেকটা কেঁটে গেছে।

মেঘলা আশেপাশে তাকালো কেউ নেই এখনি তো পেছনে ছেলেগুলো ছিল কোথায় গেল…???

” আর কতো বসে থাকবেন উঠেন”
মেঘলার ভয়ে বুক কেঁপে উঠল। পরিচিত কারো কন্ঠ শুনে চুপসে গেলো।

~ এই কি অবস্থা হয়েছে আপনার পায়ের..??
মেঘলা তাকিয়ে দেখলো সাজ্জাদ আর নির্জন দাঁড়িয়ে আছে।
মেঘলা আস্তে করে উঠে দাঁড়ালো।
নির্জনঃ হাটতে তো কষ্ট হবে।ভাইকে বলবো আসতে..?
সাজ্জাদঃ ভাই কে কেন বলতে হবে..? আমি কোলে নিব মেঘলা..?
মেঘলাঃ নাহ্ ধন্যবাদ।
নির্জনঃ গাড়িতে উঠে বসুন হসপিটাল যেতে হবে।
মেঘলা নির্জনের হাত শক্ত করে ধরে বলল,’ আচ্ছা তবে…’
নির্জনঃ এখন কোনো কথা নয় ভাবি আগে বাসায় যেয়ে নেই।
মেঘলা ভয়ে মাথা নাড়লো।

______________

হসপিটাল থেকে বাসায় আসতেই সবাই ঘিরে ধরল মেঘলার হাত পায়ে ব্যান্ডিজ কেন..?
নির্জনঃ তেমন কিছু না ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে।

শ্রাবণ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে মেঘলার দিকে।

মেঘলা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সিঁড়ির কাছে যেতেই শ্রাবণ কোলে তুলে নেয় মেঘলাকে৷
সবাই তাতে একটুও অবাক হয়নি শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সাজ্জাদ। সে নিতে চাইলো মেঘলা নিষেধ করলো আর শ্রাবণের কোলে কি সুন্দর উঠে গেল!!

শ্রাবণ চলে যেতেই আমেনা বেগম বলে উঠলো, ‘ এক এক করে আমাদের পরিবারের সাথে কি হচ্ছে আল্লাহ..? এমন কেন হচ্ছে..? দিন দিন সব খারাপ হচ্ছে!!

নিরুপমা চুপচাপ বসে আছে। তিনি কিছু ভাবতে ব্যাস্ত।
মোবাইলের রিংটোনে সবাই নিরুপমার দিকে তাকায় নিরুপমা মোবাইল হাতে নিয়ে দ্রুত নিজের রুমে চলে যায়।

আমেনা বেগমঃ আজ কাল নিরুর আবার কি হয়েছে..? কেমন অদ্ভুত আচরণ করছে।

আনোয়ার চৌধুরী কিছু না বলে মেয়ের ভীতু দৃষ্টিতে সবার দিয়ে তাকিয়ে রুমে ছুটে যাওয়া দেখলেন।

মেঘলা বাড়ির পেছনে একটা গাছ বেয়ে নিজের বারান্দায় নামলো। গ্রামে অনেক এমন গাছ বেয়ে ছিল বিধায় তেমন একটা কষ্ট হয়নি।

নিজের রুমে আস্তে করে প্রবেশ করে ছোঁয়াকে খুঁজলো। ছোঁয়াকে না পেয়ে একটা শান্তির নিশ্বাস নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। হাতের ছোট একটা পেনড্রাইভের দিকে তাকিয়ে হাসলো।

শ্রাবণ সেই কখন থেকে মেঘলা কে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে কিন্তু মেঘলা কিছুর ঠিক ভাবে উত্তর দিচ্ছে না।

শ্রাবণঃ আমি কিছু বলছি মেঘলা।
মেঘলাঃ এতো কিছু জেনে আপনার কাজ কি..? নিজের কাজ করুন আমার বিষয় এতো ভাবতে হবে না আর দশদিন পর আপনার আপনাদের সবার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক থাকবে না।
শ্রাবণঃ খাবার খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নাও।
মেঘলাঃ আপনি তো খুশি তাই না..? আমার মতো একটা খারাপ মেয়ের সাথে থাকতে হবে না।
শ্রাবণঃ মেঘলা এখন কিন্তু বেশি বেশি বলছো। আমি তোমাকে খারাপ মেয়ে বলিনি আমি শুধু বলেছি বখাটে, বাজে মেয়েদের মতো এতো রাত অব্দি বাহিরে কেন থাকো..? তুমি বুঝতে হবে তুমি একটা মেয়ে।
মেঘলাঃ মেয়ে বলে কি ঘরকুনো হয়ে থাকবো..? কেন মেয়েরা ছেলেদের থেকে এখন কম কিসে..? সব দিকে মেয়েরা ছেলেদের থেকে এগিয়ে।
শ্রাবনঃ হ্যাঁ ঠিক বলেছো এখন আর ছেলে ছিনতাইকারী দেখা যায় না, ঘরে বাইরে সব জায়গায় মেয়ে। জিনিসপত্র লুটপাট করার সাথে সাথে মনও ছিনতাই, লুটপাট করে নিচ্ছে।

মেঘলাঃ মন ছিনতাই করা যায়..?
শ্রাবণঃ হয়তো যায়, তোমার এখন বুঝতে হবে তুমি এখন একা নও।তোমার নামের সাথে এখন আমার নাম যুক্ত এই বাড়ির প্রতিটি সদস্য জড়িয়ে আছে। তুমি এখন কারো বউ,কারো জীবন যা হয়তো তুমি নিজেও জানো না। তোমার কিছু হলে কারো পৃথিবী থমকে যাবে, বেঁচে থেকে কেউ মরে যাবে। তোমার জীবনের মূল্য তোমার কাছে না থাকতে পারে অন্য কারো কাছে তোমার থাকাটা ভীষণ প্রয়োজন। এক দিন, দুই দিনের জন্য নয় একটা আস্ত জীবন কাটাতে হবে মেঘলা।

মেঘলা খুশিতে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। মুখ আড়াল করে নিলো শ্রাবণ জেনো এই খুশি দেখতে না পায়।

শ্রাবণঃ জলদি খেয়ে মেডিসিন খেয়ে শুয়ে পড়।
মেঘলা হাতের দিকে তাকালো ছুরিটা ধরতে গিয়ে হাতে লেগে গেছে অনেকটা কেঁটেছে। এই হাত দিয়ে কিভাবে খাবে।
শ্রাবণ মেঘলার কিছু বলার অপেক্ষায় ছিলো কিন্তু না এই মেয়ে ভাঙবে কিন্তু মচকাবে না।
শ্রাবণ খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে মেঘলাকে খাইয়ে দিলো।

শ্রাবণ আচমকা বলে উঠলো ” দিন দিন কেমন বউ পাগল ছেলেদের মতো হয়ে যাচ্ছি, দুই দিন পর দেখা যাবে মানুষ আমাকে দেখলেই বলবে ওই যে বউ পাগল লোক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে।”

মেঘলা হুঁ হুঁ করে হেঁসে উঠলো। মেঘলার হাসি দেখে শ্রাবণ গাল ফুলিয়ে বলে উঠলো ” মজা নিচ্ছ! নাও এখনি সময়। আমারও সময় আসবে।”

ফোনের রিংটোন বেজেই চলছে কিন্তু মহুয়ার একদম ইচ্ছে করছে না উঠে ফোনটা হাতে নিতে।
সে আজ অনেক ক্লান্ত। অনেক কষ্ট চোখ মেলে মোবাইল হাতে নিয়ে আহনাফের এতো এতো কল দেখে অবাক হলো। সাথে ভয় ও পেলো আহনাফের কিছু হয়নি তো..? দ্রুত মোবাইল হাতে নিয়ে কল দিলো। আহনাফ কল কেটে আবার ভিডিও কল দিলো।

আহনাফঃ অন্ধকার কেন সামনে আসো।
মহুয়া এক হাতে চুলগুলো ঠিক করে সামনে আসতেই আহনাফ বললো,’ শান্তি। ‘

মহুয়াঃ এতো কল, মেসেজ কিছু হয়েছে..?
আহনাফঃ হুম হয়েছে… এই যে মন, মস্তিষ্ক, চোখ সব কেউ দখল করে নিয়েছে। সব কিছু আমার হয়েও আমার কথা শুনছে না। এই যে এতো কাজের চাপেও তোমাকে দেখার তৃষ্ণা পেয়ে বসেছে।

মহুয়া হাসলো, হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আপনার শহর স্নিগ্ধতার। আমার শহর বিষাদের,বিষাক্ত । আপনার শহর ফুলের রাজ‍্য। আমার শহর কাঁটার। আমাদের দু’জনের রাস্তা দুই দিকে।’

আহনাফ মহুয়ার কথা শুনে চোখ থেকে চশমা খুলে রাখলো, ‘ তুমি বিষাক্ত পান করলে মরে যাব,তাও একবার নয় বার বার পান করতে চাই । তুমি কাঁটা পায়ে ফুটলে ব‍্যাথা পাই তবুও সেই ব্যাথায় সুখ খুঁজে পাই,। তুমি এই শীতের রাতের চাঁদর জড়িয়ে রাখলে উঞ্চ পাই না রাখলে কেঁপে উঠি।’
মহুয়াঃ এটা আবেগের বয়স নয়, রাখি।
আহনাফঃ আবেগের বয়স সেই কবেই কাটিয়ে এসেছি এটা আবেগ নয় ভালোবাসা। তুমি আমার বিয়ে করা বউ তোমার প্রতি আবেগ কেন আসবে..? এই এদিকে আসো তোমাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
মহুয়াঃ খেয়েছেন..?
আহনাফঃ নাহ্।
মহুয়াঃ বাসায় আসবেন কখন..?
আহনাফঃ আরও এক ঘন্টা লাগবে।
মহুয়াঃ রাখব..?
আহনাফঃ এদিকে আসতেবলেছিলাম।
মহুয়াঃ হুম বলিন..
আহনাফঃ একটা কিস দেই.??. ছোট একটা কপালে দিব।

মহুয়া ঠাস করে কল কেটে দিলো৷ লজ্জায় নাক,গাল লাল হয়ে গেছে। লোকটা দিন দিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে।

কি আজব মানুষের মন, যেই জিনিস কখনো পছন্দ ছিল না তা আজ অভ্যাস হয়ে গেছে। বড়,চোখ,চুল,ফর্সা মুখ,লম্বা মেয়ে যার কখনো পছন্দ ছিল না আজ সেই ছেলে এমন মেয়েকে এক নজর দেখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।

মহুয়া ফোন রেখে ভাবতে লাগলো। লোকটা কি কষ্ট পাবে আমার এমন আচরণে.?? ইসস এভাবে কলটা কেঁটে দেওয়া উচিত হয়নি। আমার কি দোষ! থুর….

মেঘলার রুমে এসে উঁকি দিতেই দেখলো মেঘলা বসে আছে আর কিছু ভাবছে।

মহুয়া মেঘলার থেকে অনুমতি নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।

” শরীর কেমন আছে…?”
~ হুম ভালো।
~ পায়ে কি বেশি ব্যাথা..?ছুরিটা কি বেশি গভীরে গিয়েছে..?
মেঘলা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো মহুয়ার দিকে।
মেঘলাঃ না বেশি গভীরে ক্ষত হয়নি। তুমি কিভাবে….
মহুয়া হেঁসে মেঘলার সামনে একটা পেনড্রাইভ রাখলো।
মেঘলার মুখ আপনাআপনি হ্যাঁ হয়ে গেলো। যেই জিনিসের জন্য এতোকিছু সেটা মহুয়ার কাছে কি করছে..?
মেঘলাঃ এটা!! তোমার কাছে কিভাবে..? তুমি কোথায় পেয়েছো..?
মহুয়াঃ আস্তে আস্তে….. তুমি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমি তোমাকে ফলো করি, ফাহিম স্যারের সাথে যা বলেছিলে সব শুনে ছিলাম তখন বুঝলাম পেনড্রাইভটা খুব প্রয়োজন। তোমাকে যখন সবাই আঘাত করে ধরতে ব্যাস্ত তখনি আমি পেছনের দরজা দিয়ে অফিসে ঢুকে যাই। বাহিরে একটা গ্লাস ফেলতেই ভেতর থেকে একটা মেয়ে বেরিয়ে আসে আর বাহিরে তোমাকে দেখে ছু*রি দিয়ে আঘাত করে তখন পুরো অফিসে কেউ ছিল না আর আমি সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পেনড্রাইভ খুঁজে নেই।
মেঘলাঃ তুমি জানো এটা কতো ইম্পর্ট্যান্ট আমার জন্য।
মহুয়াঃ এতো কিছু তো জানিনা তবে তুমি কে..? তোমার আসল পরিচয় কি..? আবার এটা বলো না বস্তি থেকে আলৌকিক শক্তি দিয়ে সিআইডি অফিসার হয়ে গেছ।

মেঘলা পেনড্রাইভ হাতে নিয়ে বললো,’ আমাকে ছাঁদে নিয়ে চলো।’

_______________

ছোঁয়া হালিমা বেগমের রুম থেকে বের হলো। সারাক্ষণ হালিমা বেগমের সাথে গল্প করতে ভালো লাগে। হালিমা বেগমের কেমন অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে ছোঁয়ার সাথে গল্প করার। এই এক মেয়ে যার কাছে শান্তি খুঁজে পায়, কথা বললে ভেতর শান্ত হয়, স্বামীর মৃত্যুর কথা কিছু সময়ের জন্য ভুলে থাকেন।

ছোঁয়া নিরুপমার রুমের সামনে এসে দরজা ধাক্কা দিবে তখন ভেতরে একটা নাম শুনে থমকে গেল।
” আফজাল” এই নামটা কালকেও বড় মামার মুখে শুনেছে। আম্মুও ফোনে কাউকে আফজাল বলছে!! ছোঁয়া দরজা ধাক্কা না দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।

______________

হসপিটালে জ্ঞান ফিরতেই আমি চারপাশে তাকিয়ে কিছুই চিনতে পারছিলাম না। আমার সারা শরীরে বেন্ডেজ করা ছিল। শুধু দূর থেকে কয়েকজনের কথা ভেসে আসছিলো ” ডাক্তার আমার মাইয়াডারে বাঁচাই দেন। এতো টাকা তো নাই আমার যা আছে তা দিয়েই চেষ্টা করতাছি ডাক্তার। ”
~ আপনার মেয়ের স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে। গাড়ি এক্সিডেন্টে খুব কম এমন রোগীদের বাঁচানো যায়।

আমি জানিনা আমার কিভাবে এক্সিডেন্ট হয়ে ছিল। একজন মহিলা এসে বললো আমি উনার সন্তান আমিও তাই বিশ্বাস করে নেই। তারপর থেকে বস্তিতে আমার অভ্যাস হয়ে উঠে। আমি ওই মহিলাকে মা ডাকতে শুরু করি, মায়ের ইচ্ছে ছিল আমাকে পড়াশোনা করানোর কিন্তু টাকা ছিল না, বাসায় বাসায় কাজ করে যা পেত তা দিয়ে আমার মেডিসিন আর আমাদের খাওয়া খরচ হয়ে যেত।ক্লাস ফাইভে উঠার পর মায়ের এক মারাত্মক রোগ হয় চিকিৎসার অভাবে মার শরীর দিন দিন খারাপ হতে শুরু করে। একদিন মা আমাকে ছেড়ে চলে যায় না ফেরার দেশে। মায়ের কেউ ছিলো না বস্তিতে আমার বাবা কোথায় তাও আমি কিছুই জানতাম না ছোট ছিলাম এক্সিডেন্টের জন্য বেশি কিছু মনেও রাখতে পারতাম না খুব জলদি ভুলে যেতাম আঘাত মাথায় পেয়ে ছিলাম চিকিৎসাও ভালো করাতে পারেনি।

মায়ের মৃত্যুর পর পড়াশোনা বন্ধ নিজের খাওয়ার জন্য ঘরে কিছু না পেয়ে বাহিরে বের হলাম। বাহিরের দুনিয়া খুব কঠিন। একদিন দুইদিন তিন দিনের দিন সবার দরজা বন্ধ। পুরো একটা দিন ঘুরেও যখন খাবার পেলাম না রাস্তায় বসে কাঁদতে শুরু করলাম, কোনো কাজও জানতাম না। খাবারের জন্য পাগল প্রায় তখন একটা দোকানে রুটি চোখে পড়তেই চুরি করার কথা মাথায় আসলো। আপনি যখন মৃত্যুকে নিজের খুব নিকটে দেখবেন তখন আপনার কোনটা সঠিক কোনটা ভুল তা মাথায় আসবে না। আমি সেই দিন দোকান থেকে রুটি চুরি করে দৌড় দেই। দোকানদারের ভয়ে দৌড় দেওয়ার সময় রাস্তায় আবারও কারো গাড়ির সাথে ধাক্কা খাই। ভাগ্য ভালো তেমন কিছু হয়নি হাত, পা ছুলে গিয়ে ছিল।

সেই দিন আমি ভাবতেও পারিনি সেই চুরি আর এক্সিডেন্ট আমার ভাগ্য এভাবে পাল্টে দিবে।

গাড়িটা ছিল সিআইডি অফিসার আরমান খানের।

দোকানদার আমাকে ধরে চোর বলে মারতে শুরু করে তখন আমাকে বাঁচিয়ে নেয় আরমান স্যার।
আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে আমাকে নিয়ে আসে নিজেদের বিশাল বাড়িতে। আরমান স্যারের কোনো সন্তান নেই। আরমান স্যারের স্ত্রী নীলা ম্যাডামও অনেক ভালো মনের মানুষ আমাকে নিজের মেয়ের মতো আদর, ভালোবাসা দিয়ে বড় করলেন, ভালো ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ করে তুললেন। নতুন জীবন দিলেন। পড়াশোনা করাচ্ছেন, স্বাধীন জীবন দিয়েছেন। সাথে সিআইডি চাকরি নিলাম নিজের সাহসীকতায় আর বুদ্ধিতে আজ আমি সিআইডি অফিসার মেঘ চৌধুরী। যাকে এক নামে সবাই চিনে তবে আমাকে দেখেনি কেউ, অনলাইনে, গুগলে সার্চ দিলে আমার সব তথ্য আসবে সাথে মাক্স, ক্যাপ পড়া ছবি আমি কখনো মাক্স, ক্যাপ ছাড়া সাংবাদিকের ক্যামেরায় ধরা দেইনি তাই আমার ফেইস কারো চিনা নাই। আর এই জন্যই আমি আমার কেইস গুলো খুব সহজে সমাধান করতে পারি।

নিজের জীবনের গল্প বলে থামলো মেঘলা।

মহুয়া খুব মন দিয়ে শুনছিলো সেই গল্প।

” তাহলে আমাদের বাড়িতে পরিচয় গোপন করে বউ সেজে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে আছেন কেন..? ”

মেঘলা, মহুয়া পেছন ফিরে তাকালো।

নির্জন দাঁড়িয়ে আছে, নির্জনের পেছনে সাজ্জাদ।

মেঘলাঃ তোমরা..?
নির্জনঃ আমরা আগে থেকেই ছাঁদে ছিলাম আপনারা খেয়াল করেননি।

মেঘলাঃ তাহলে তোমরাও সব জেনে গেলে। এমনিতেও দশদিন পর সব সত্য সামনে চলে আসবে।
নির্জনঃ আমি আর মহুয়া সেই কবেই আপনার আসল পরিচয় জানি শুধু জীবনের গল্পরা জানা ছিল না।
মেঘলাঃ কিভাবে..?
মহুয়াঃ মনে আছে আমাকে রনি তুলে নিয়ে গিয়ে ছিলো তখন একটা মেয়ে এসে ছিলো আমাকে বাচাতে আমি তখন মেয়েটার মুখ দেখিনি তবে কার্ডে নাম দেখে ছিলাম ” সিআইডি অফিসার মেঘ”

বাসায় এসে অনেক ভেবেছি কাউকে বলিনি। হঠাৎ তোমার কথাই মনে হচ্ছিল, প্রথম থেকেই তোমার পরিচয় নিয়ে আমার সন্দেহ হতো, তুমি বাহিরে যেতেই তোমার রুমে গিয়ে সব খুঁজতে শুরু করলাম লাস্টে তোমার একটা ডাইরিতে সেই কার্ড খুঁজে পেলাম।

মেঘলাঃ বাহ্ আমার থেকেও বড় গোয়েন্দা তোমরা৷

নির্জনঃ আমি তোমাকে সিআইডি অফিসে যেতে দেখতাম প্রায়, সিআইডি অফিসের পাশেই সাজ্জাদের বাসা তারপর খুঁজ নিয়ে সবটা জানতে পারি।অনোক কষ্ট হয়ে ছিলো সত্যি কথা বের করতে। ফাহিম তো মুখ খুলতে চায়নি তুলে নিয়ে মাথায় পিস্তল ধরে সত্যি কথা বের করেছি।

সাজ্জাদ এতোক্ষনে মুখ খুললো,’ গল্প এখনো বাকি আছে মেঘলা বাকিটা শেষ করুন। ‘

মেঘলাঃ বাকিটা অন্য দিনের জন্য তুলা থাক।
নির্জনঃ আমাদের বাড়িতে কেন..? আর ভাই কেই কেন.?? ভাই কি আসামী..? না মানে সিআইডিরা তো আসামীদের পেছনে লেগে থাকে তাই বললাম।

মেঘলা আকাশের দিকে তাকিয়ে হেঁসে উঠলো ” হুম তোমার ভাই অনেক বড় আসামী আর সেই জন্যই আমি সারাজীবনের জন্য তোমার ভাইয়ের পেছনে লেগে গেলাম মৃত্যুর আগে পিছু ছাড়বো না।মৃত্যুর পড়েও আমি পিছু নিব।

__________

রাত ১টায় বাড়িতে ফিরলো আহনাফ।

মহুয়া কলিং বেলের শব্দ শুনে নিচে এসে দরজা খুললো। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।মহুয়া দরজা খুলে আহনাফের সাথে অপরিচিত পুরুষ দেখে সালাম দিয়ে সরে দাঁড়ায়।

আহনাফের সাথে অপরিচিত পুরুষ এসেছে শুনে আমেনা বেগম উঠে আসলেন মেহমান এসেছে খাবারের ব্যাবস্থা করতে হবে।

নিচে এসে মহুয়াকে দেখে হাসলেন। মহুয়াকে বরাবর সব সময় উনি পছন্দ করেন।

সোফায় আহনাফ বসে কারো সাথে কথা বলছে।

আমেনা বেগম আগে রান্না ঘর গিয়ে চা বানিয়ে নিলেন মহুয়া ফ্রিজ থেকে খাবার নামালো গরম করতে হবে।

আমেনা বেগম চা হাতে নিয়ে লোকটার সামনে দাঁড়াতেই অবাক হয়ে হাত থেকে চায়ের কাপ নিচে পড়ে গেলো। কাপের সাথে সাথে উনার শরীর কেঁপে উঠল। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো ” আফজাল!!!!…”

চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৩৫
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

মধ্য রাতে সবাই ড্রয়িংরুম জুড়ে বসে আছে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।

দুইতলা থেকে মেঘলা,মহুয়া, ছোঁয়া দাঁড়িয়ে নিচে কি হচ্ছে বুঝার চেষ্টা করছে।

আনোয়ার চৌধুরী সবার দিকে তাকিয়ে আফজাল সাহেবের দিকে তাকালো।

আফজাল মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো, ‘ আব্বা কেমন আছেন!..??’
আনোয়ার চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ এতোগুলো বছর পর তুমি..? আমরা তো ভেবে ছিলাম তুমি মরে গেছ।’
আফজালঃ এতো বছর পর আমার স্মৃতি ফিরে পেয়ে ছুটে আসলাম আব্বা।
আনোয়ার চৌধুরীঃ এতোদিন কোথায় ছিলে..? নিশ্চয়ই নতুন বউ বাচ্চা আছে এখন এখানে কেন এসেছো.?
আফজালঃ কি বলছেন আব্বা!! আমার বউ বাচ্চা বলতেই নিরু আর আমার আদরের মেয়ে ছোঁয়া আর কেউ নেই আমার জীবনে।

নিরুপমা নড়েচড়ে বসলেন, অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালেন আফজালের দিকে। কতো বড় মিথ্যাবাদী!

ছোঁয়া ফিসফিস করে বলে উঠলো , ‘ এই লোকের নাম আফজাল..? আমি বড় মামা আর আম্মুকে উনার সাথে কলে কথা বলতে শুনেছি তাও ভীষণ রেগে ছিল।’
মেঘলাঃ কি কথা হচ্ছিল..?
ছোঁয়া সব বললো মেঘলাকে সাথে মহুয়াও শুনলো।

আনোয়ার চৌধুরী আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,’ ওর জন্য খাবারের ব্যাবস্থা কর বউমা যা হবার কাজ সকালে হবে। এখন বাকিরা গিয়ে ঘুমাও।’

আফজালের মুখে শয়তানি হাসি ফুটে উঠলো।

নিরুপমা রাগে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে হনহন করে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।

আমেনা বেগম রান্না ঘরে গেলেন।

আহনাফ উপরে নিজের রুমে যাওয়ার সময় ওদের সামনে পড়লো। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এক কাপ কফি নিয়ে আসেন’
মহুয়া ছোঁয়ার দিকে তাকালো ছোঁয়া হামি তুলে রুমের দিকে চলে গেল। মেঘলা ওদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ তোমাদের মধ্যে কি কিছু চলছে..?”
আহনাফ মেঘলার কথা শুনে হেঁসে বললো, ‘ হয়তো চলছে…’

মহুয়াঃ মিথ্যা কথা কিছুই চলছে না। এ-ই লোককে তো আমি চিনিও না।

আহনাফঃ আচ্ছা কফি নিয়ে আসেন চিনিয়ে দিব আ…মি কে..?
মহুয়াঃ আমি এখন পারবো না ঘুমাব।
আহনাফঃ আমি অপেক্ষা করছি।

মহুয়া ভেংচি কেটে নিচে নেমে গেল।

মেঘলা নিজের রুমে চলে গেল। শ্রাবণ ল্যাপটপ নিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে।

মেঘলাঃ অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়েন কাজ সকালেও করা যাবে।
শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
মেঘলাঃ হাসছেন কেন..? হাসার মতো কি বললাম..??
শ্রাবণঃ শাড়িতে তোমাকে একটু বেশিই সুন্দর আর বউ বউ লাগে।
মেঘলাঃ আপনার অফিসে ঝামেলা চলছে..?
শ্রাবণঃ একটু..
মেঘলাঃ সব ঠিক হয়ে যাবে এভাবে দিন রাত কাজ করলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন।
শ্রাবণঃ কি ব্যাপার আজ বউয়ের মতো কথা বলছো।
মেঘলাঃ এতোদিন কি বোনের মতো কথা বলতাম.?
শ্রাবণঃ নাহ্ মনে হতো শালিকার সাথে এক ঘরে আছি। যদিও শালিকাও এর থেকে ভালো জিজুর খেয়াল রাখে।

মেঘলা বিছানা করে মোবাইল রেখে শুয়ে পড়লো। কাল অনেক কাজ আছে কথা পেঁচালে রাত এভাবে শেষ হয়ে যাবে।
মেঘলাঃ লাইট বন্ধ করুন আলোতে ঘুম আসে না।
শ্রাবণ ল্যাপটপ বন্ধ করে লাইট বন্ধ করে দিল।

মহুয়া আমেনা বেগমের সাথে আফজাল সাহেব কে সব কিছু এগিয়ে দিলো।
আফজাল আমেনা বেগম কে বলে উঠলো, ‘ এটা কে ভাবি..!??
আমেনা বেগম কিছু সময় মহুয়ার দিকে তাকিয়ে হেঁসে বললো,’ আমার বোনের মেয়ে।”
আফজালের মুখে শয়তানি হাসি ফুটে আছে।
আফজালঃ ওহ্ আচ্ছা। বাড়িটা আগের মতোই আছে।
আমেনা বেগম টুকটাক কথা বলছেন আফজালের সাথে।
আজাদ চৌধুরী এখনো সোফায় বসে আছেন। কিভাবে কি করবেন..? আফজালের সত্য নিরুপমা, মিরাজ চৌধুরী, আর উনি ছাড়া বাসার কেউ জানে না। এতোদিন দূর থেকে ক্ষতি করে শান্ত হয়নি এখন ঘরে ঢুকে গেছে!!…ছেলেদের কি সত্যিটা বলে দেওয়া উচিত!..????

বাবা এসেছে শুনেও ছোঁয়ার মধ্যে কোনো পরিবর্তন নেই৷ এটা কেমন বাবা!.? এসেও একবার মেয়েকে দেখতে চাইলো না!!.? অভিমান জেনো ভেড়ে গেল। অভিমান! উঁহু আমরা অভিমান করি প্রিয় মানুষের প্রতি এইলোক তো প্রিয় নয়।

বাড়িতে এতোকিছু হয়ে গেল নির্জন একবারও নিচে নেমে আসলো না। বাড়িতে কে আসছে.? কি হচ্ছে.? এতে জেনো কিছুই যায় আশে না নির্জনের সে এখন নতুন পুলিশের জব নিয়েছে বাবার কেইস নিয়ে ভীষণ ব্যাস্ত।

মহুয়া কফি নিয়ে চুপিচুপি আহনাফের রুমে রেখে চলে আসতে নিলেই খপ করে হাত ধরে ফেললো আহনাফ।

মহুয়া চোখ বন্ধ করে নিজেকেই কয়েকটা বকা দিল। নিজে না এসে আমেনা বেগম কে পাঠালেই হতো।

আহনাফ মহুয়ার হাত ধরে বলে উঠলো, ‘ কি চুরি করতে এসেছো..?’
মহুয়া রেগে বলে উঠলো, ‘ আপনার রুমে আছে কি চুরি করার!.?
আহনাফ অবাক হওয়ার মতো মুখ করে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে বললো,’ আমার রুমে নেইটা কি!.??’
মহুয়াঃ আপনার রুমের কোনো কিছুই আমার প্রয়োজন নেই। আর আমি চোর নই কফি দিতে এসে ছিলাম।
আহনাফঃ সত্যি তুমি চোর না.??
মহুয়াঃ আপনি দেখতে পারেন আমি কিছুই নেইনি।
আহনাফ মহুয়ার দিকে ভালো করে তাকাতেই মহুয়া একটু সরে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি আপনার রুম দেখতে বলেছি আমাকে না।’
আহনাফঃ আমার মন, শরীর এই আমি টাকেই চুরি করে নিয়েছো মহুয়া সুন্দরী।
মহুয়ার বুক ধুকপুক করছে এই লোকের সামনে আসলেই এমনটা হয়।
আহনাফঃ এই চুরির শাস্তি হিসেবে এখন তুমি আমাকে একবার জড়িয়ে ধরবে।
মহুয়া সাথে সাথে দুই পা পিছিয়ে গেল।
আহনাফঃ থুর কি কপাল আমার!! বিয়ের পরও একবার জড়িয়ে ধরার জন্য হাজার বাহানা খুঁজতে হয়। সারাদিন হসপিটালে তোমার স্বামী এত্তো কাজ করে বাসায় আসলে তো একবার জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করতে পারো, কেমন আছি.?
মহুয়াঃ আমাদের বিয়েটা আর পাঁচটা বিয়ের মতো নয়।
আহনাফঃ তাহলে বলছো আর পাঁচটা বিয়ের মতো জলদি করে নিতে..?।
মহুয়াঃ আমি ঘুমাবো যাই।
আহনাফঃ পালাচ্ছ কেন..? আর পাঁচটা বিয়ের মতো হওয়ার আগে জমিয়ে প্রেম তো করা যায়।
মহুয়া চোখ বড় বড় করে তাকালো৷ এই লোকের কি আজ মাথার তার নড়ে গেছে!!??
আহনাফঃ আইডিয়া কিন্তু খারাপ না। সখ ছিল প্রেম করে বিয়ে করবো কিন্তু তুমি তো দিলে না। এখন আপাতত যতদিন পাই সখ পূরণ করে নেই৷ আজ থেকে তুমি আমার বউ না প্রেমিকা।
মহুয়াঃ হসপিটালে রোগী দেখে আপনি নিজেও রোগী হয়ে গেছেন। ভালো ডাক্তার দেখান।
আহনাফঃ এই রোগের ডাক্তার তুমি মেডিসিনও তুমি।
মহুয়ার লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেছে।
আহনাফঃ তুমি লজ্জা পাচ্ছ.?
মহুয়াঃ নাহ্ আমার এলার্জি সমস্যা।
আহনাফ হেঁসে পকেট থেকে বেলীফুলের মালা বের করে মহুয়ার হাতে দিয়ে বলে উঠলো, ‘ যাওও..’
মহুয়াঃ প্রতিদিন বেলীফুলের মালা নিয়ে আশার কি দরকার!!
আহনাফঃ তোমার পছন্দ তাই।
আহনাফ মহুয়ার হাত থেকে বেলীফুলের মালা নিয়ে ওকে ঘুরিয়ে চুলের খোঁপায় পড়িয়ে দিল।
আহনাফঃ ফুলের খোঁপায় ফুল।
মহুয়া একহাতে খোঁপায় বেলীফুল স্পর্শ করে লজ্জায় রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

___________________

সকাল থেকেই ছোঁয়া উঁকি মারছে নির্জনের রুমে।

নির্জন রুমে নেই।
সাহস করে নির্জনের রুমে প্রবেশ করলো ছোঁয়া।

নির্জনের পুলিশের ড্রেস বিছানার উপর ছিল।
ছোঁয়া দরজা বন্ধ করে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে ড্রেস গুলো দেখে নিল। ইচ্ছে করলো একবার পড়ে দেখতে।

আয়নার সামনে নির্জনের সুন্দর করে বাজ করা ড্রেস পড়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ছোঁয়া।

” বাহ্ তোকে তো একদম পুলিশ পুলিশ লাগছেড়ে ছোঁয়া, যদিও ড্রেস গুলো একটু বেশি লম্বা।”
নিজের প্রসংশা নিজেই করছে, মোবাইল বের করে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিল। সাথে কয়েকটা টিকটক করে নিল।

চুলগুলো ছাড়া ছিল সুন্দর করে বেঁধে পেছন ফিরতেই ভয়ে চিৎকার দিয়ে পড়ে যেতে নেয়। নির্জন সাথে সাথে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।

ছোঁয়া ভয়ে চুপসে গেছে। নির্জন রুমে কিভাবে আসলো!.? ভেতর দিয়ে তো দরজা লাগানো ছিল!!

নির্জন ছোঁয়াকে ছেড়ে দুই পা পিছিয়ে দাড়ালো। পকেটে হাত রেখে ভালো করে দেখে নিল।

ছোঁয়া নিজের দিকে তাকিয়ে নির্জনের দিকে তাকালো। বোকা হেঁসে বললো,’ রুমে কিভাবে আসলে..?’
নির্জন চাবি দেখালো।
ছোঁয়াঃ আমি আসলে.. দেখছিলাম তোমার ড্রেসটা সুন্দর হয়েছে কিনা।
নির্জনঃ এখন তো মনে হচ্ছে ড্রেসটা আমার না তোর।
ছোঁয়াঃ না,না এটা তোমার ড্রেস।
নির্জনঃ খুলে রুম থেকে বের হ আমার সময় নেই।
ছোঁয়া নির্জনের আচরণ স্বাভাবিক দেখে বলে উঠলো, ‘ আমাকে কেমন লাগছে..?’
নির্জনঃ আয়নায় তাকা…
ছোঁয়া ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো, ‘ এতোক্ষন তো আয়নায় দেখলাম..
নির্জন আবার ছোঁয়াকে আয়নার দিকে ঘুরিয়ে দিলো। ছোঁয়ার মাথা নির্জনের বুকে।
নির্জন ছোঁয়ার কানের পাশে মুখ নিয়ে বলে উঠলো, ‘ এমন বেশরম বেশে একজন ছেলের সামনে দাঁড়িয়ে বলছিস আমাকে কেমন লাগছে!!.?? এখন তুই বল তোকে কেমন লাগছে..?

ছোঁয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে আশেপাশে ওড়না খুঁজছে।
বিছানার পাশে ওড়না পড়ে আছে ছোঁয়া সরতে গেলে নির্জন আঁটকে বলে উঠলো, ‘ আয়নার দিকে তাকা৷ ‘
ছোঁয়া নিচের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ উঁহু ‘
নির্জনঃ তাকাতে বলেছি ছোঁয়া…
ছোঁয়া চোখ পিটপিট করে আয়নায় তাকালো।
নির্জনঃ সুন্দর লাগছে। এই সৌন্দর্যের বর্ননা কিভাবে দিতে হয় আমার জানা নেই, কিভাবে প্রকাশ করতে হয় জানা নেই।তবে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী নারী আমার সামনে।

ছোঁয়া লজ্জায় বার বার চোখের পলক ফেলছে।
নির্জন ছোঁয়াকে ছেড়ে বলে উঠলো, ‘ যা ড্রেস রেখে নিজের রুমে যা। প্রয়োজন ছাড়া যখনতখন আমার রুমে আসবি না।’

ছোঁয়া কথা না বাড়িয়ে ড্রেস রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

ছোঁয়া বেরিয়ে যেতেই নির্জন বলে উঠলো, ‘ আমার বোকা ফুল”

_______________

আফজাল সাহেব গেস্ট রুম থেকে বের হয়ে সোফায় বসে ছোঁয়ার দিকে তাকালো।
ছোঁয়া নিরুপমার সাথে ভার্সিটিতে যেতে হবে বলছে।

আফজাল সাহেবঃ তুমি ছোঁয়া..? আমার মেয়ে..??
উপস্থিত সবাই আফজাল সাহেবের দিকে তাকালো।
ছোঁয়া মুচকি হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে আমি আমার মায়ের মেয়ে আর কারো নই।’
আফজালঃ অভিমান….

আজাদ চৌধুরী সবাইকে ডাকলেন ড্রয়িং রুমে।

আজ নির্জন, আহনাফ, শ্রাবণ, আনোয়ার চৌধুরী সবাই ড্রয়িং রুমে আছে।

মেঘলার মুখে হাসি ফুটে আছে।
আজাদ চৌধুরী একবার মেঘলার দিকে তাকালো।
মেঘলা চোখের ইশারায় কিছু বুঝাতেই আজাদ চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ আজ তোমাদের সবাই কে একটা গল্প শুনাতে চাই।’

নির্জনঃ অন্য দিন শুনি বড় আব্বু আজ অফিসে….
আজাদ চৌধুরীঃ চুপচাপ বসে থাক নির্জন।
নির্জন চুপ হয়ে গেল।

আফজাল রাগী চোখে আজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে।

আজাদ চৌধুরী হেঁসে বলে উঠলো, ‘ গল্প শুরু করি..? বেশি বড় না ছোট। ‘

চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-৩২+৩৩

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৩২
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

মহুয়া দাঁড়িয়ে আছে মহুয়ার পিছনে আহনাফ।
মহুয়া ভাবতে লাগলো এখন কফি বানানোর জন্য কি তাকে মাটির চুলায় আগুন ধরাতে হবে.? ।
আহনাফ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মহুয়াকে দেখছে।।।
গ্রামের সচরাচর গ্যাস থাকে না। এখানে কোন৷ লাইন গ্যাস নেই এখানে সবাই মাটির চুলায় রান্না করে তবে সিলিন্ডার গ্যাস আছে।।
মহুয়া ভাবতে লাগলো কিভাবে কি শুরু করবে। এত রাতে কিভাবে কোথায় কি আছে সে কিছুই জানে না।। এখানে রান্না করে কোথায় কি থাকে সেটাও জানেনা এখানে আসার পরে সে কখনো রান্না ঘরে আসেনি।।
“এখন মাটির চুলায় রান্না করতে হবে না ভেতরে সিলিন্ডার গ্যাস আছে, আসো।। ”
আহনাফ মহুয়াকে দাঁড় করিয়ে নিজে কফি বানিয়ে নিলো।।

ছোঁয়ায় একদৃষ্টিতে ঘরের দরজা থেকে রান্না করে দিকে তাকিয়ে আছে।।

আহনাফ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ চলো বাহিরে.. ‘
মহুয়াঃ আপনার মাথা ঠিক আছে.? এতো রাতে বাহিরে কোথায় যাব..?
আহনাফঃ আসতে বলেছি পেছন পেছন আসো।

সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা হচ্ছে কারো সাথে একতরফা প্রেমে পড়া।
হৃদয় টাকে প্রতিনিয়ত চুর্ণ বিচুর্ণ করে ফেলে না বলা অনূভুতি গুলো দুমড়ে মুচড়ে খন্ড খন্ড করে ফেলে মৃত্যু হয়ে যায় হৃদয়টার, ছোঁয়া এখন সেই মৃত্যুর যন্ত্রণায় আছে তাও সে কখনো কাউকে বুঝতে দিবে না, একটা ফুল ফুটার আগেই ঝড়ে গেছে।

ওর পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তাকালো তাকিয়ে দেখে নির্জন ওর দিকে তাকিয়ে আছে।।

ছোঁয়া নির্জন কে দেখে চুপচাপ রুমের ভিতরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিতে নেয়, তখনই নির্জন দরজায় হাত দিয়ে আটকে দেয়।।
ছোঁয়া বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ওঠে সমস্যা কি..?।

নির্জন ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো আপাতত আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ওদের মধ্যে কি চলছে আর তুই কি লুকাতে চাচ্ছিস??।
ছোঁয়া বলে উঠলো ওদের মধ্যে কিছু চললে আমার আগে তো তুই জানার কথা তাই না..?
নির্জন হাসলো। হেসে বলে উঠল নিজেকে অনেক স্মার্ট আর চালাক ভাবতে শুরু করেছিস তাই না??

ছোঁয়া বলে উঠল নির্জনের বাচ্চা যাবি এখান থেকে।। এটা গ্রাম শহর না।। এখানে মানুষ দশটার পর ঘুমিয়ে যায় তোরা এত রাত পর্যন্ত কি করছিস।

নির্জন হাতের মোবাইলটা দেখিয়ে বলে উঠলো এখানে নেটের খুবই বাজে অবস্থা কারো সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না আমার পাখিগুলা নিশ্চয়ই রাগ করে আছে।

ছোঁয়া নাক মুখ কুঁচকে বল উঠলো ১৪ ভাতার।

নির্জন না রেগেই বলে উঠলো, ‘তোর হাতটা দেখি.. ‘

ছোঁয়া হাত বাড়িয়ে দিল দুই হাত মেহেদী রঙিন হয়ে আছে।। হাতের তালুতে লাভের মধ্যে৷ দুই হাতে দুইটা লাভ। লাভের মাঝে জ্বলজ্বল করছে দুইটা নাম।

লাভ গুলো দেখতে মনে পড়ে গেল সন্ধ্যার সেই দৃশ্য।। নির্জন যখন ছোঁয়াকে হাতে মেহেদি দিয়ে দিচ্ছিল তখনই মেঘলা বলে উঠলো। আমি শুনেছি,, যার হাতের মেয়েটি যত রঙিন হবে তার স্বামীর ভালোবাসা তত গভীর হবে।

ছোঁয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,’ সত্যি!..?? ‘
মেঘলাঃ হয়তো সত্যি।
ছোঁয়া মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। ওর জীবনে আর কখনো ভালোবাসা নামক শব্দটা আসবে না আর স্বামী, বিয়ে এইসবের কথা কল্পনায়ও আনে না।

নির্জন মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ভাবি আজ তাহলে পরীক্ষা হয়ে যাক ভাইয়ার ভালোবাসা কতোটা গভীর। ‘
মেঘলা হেঁসে উঠলো,’ আছিই আর এক মাস।’
নির্জনঃ ভাবি বিয়েটা ছেলে খেলা নয়, আপনি চাইলেই সব সম্ভব এক মাস নয় একটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারবেন। আমি ভাইয়ের চোখে আপনার জন্য ভালোবাসা দেখি।
মেঘলাঃ নির্জন এটা ভালোবাসা নয় দায়িত্ব।
নির্জনঃ দায়িত্ব থেকেই ভালোবাসা তৈরি হয় আর কোনটা ভালোবাসা কোনটা দায়িত্ব আমি বুঝি।

ছোঁয়াঃ সারাদিন মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করতে করতে এখন যেই দিকে তাকায় শুধু প্রেম, ভালোবাসা দেখতে পায়।

নির্জনঃ ইসসস এটা কি হয়ে গেল!!..?
ছোঁয়াঃ কি করছস.?
নির্জন অপরাধীর মতো মুখ করে বলে উঠলো, ‘ লাভের মধ্যে তোর নামের প্রথম অক্ষর লেখতে গিয়ে নিজের নামের লেখে ফেলছি।’

ছোঁয়া কিছু সময় তাকিয়ে থেকে মুখ ভার করে বলে উঠলো, ‘ অন্য হাতে আমার নাম লেখে দে।’

নির্জন মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখে অন্য হাতে ছোঁয়ার নাম লেখলো। সে যে ইচ্ছে করেই নিজের নাম লিখেছে ওর এই হাসি দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

ছোঁয়া নির্জন কে ডেকে বলে উঠলো, ‘ কি হলো? কই হারায় গেলি.?’
নির্জন পকেট থেকে দুইটা বালা বের করে ছোঁয়ার হাতে পরিয়ে বলে উঠলো, ‘ সুন্দর লাগছে, হাত গুলোতে কিছু একটা নেই নেই, শূন্য শূন্য মনে হচ্ছিল এখন পরিপূর্ণ লাগছে।

ছোঁয়া বালা গুলোর দিকে তাকিয়ে হাত স্পর্শ করলো। আসলেই বালা গুলো খুব সুন্দর আবছা অন্ধকারে কি সুন্দর জ্বলে আছে। ছোঁয়া কিছু বলার জন্য সামনে তাকিয়ে দেখলো নির্জন নেই।

” এই ছেলে কি সব সময় এইসব পকেটে নিয়ে ঘুরে নাকি!.? নিশ্চয়ই প্রেমিকাদের জন্য কিনে ছিল।

________________

সকাল হতেই বিয়ে বাড়িতে মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেল। আত্মীয় স্বজনে বাড়িতে শ্বাস নেওয়ার অবস্থা নেই।

সকাল সকাল গালে নরম ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেতেই সাজ্জাদ চমকে উঠলো, ঘুমের ঘুরে হাত গালে রাখতেই তুলে তুলে নরম হাত হাতের মুঠোয় আসতেই এক লাফে ঘুম থেকে উঠে বসলো।

নিজের চোখের সামনে সামিয়া কে দেখেই সকাল সকাল মেজাজ খারাপ হয়ে গেল৷ রুমে আর কেউ নেই, এই মেয়ে এই রুমে কি করছে..?
সাজ্জাদঃ তুমি!!..?
সামিয়াঃ হে আমি,খুশি হননি..?
সাজ্জাদ দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ এই রুমে কি করছো..?”
সামিয়াঃ এটা আমার আন্টির বাসা আমি চাইলে যেই কোনো রুমে যেতে পারি।
সাজ্জাদঃ তাই বলে একটা ছেলের রুমে এসে তার গালে হাত রাখার সাহস কিভাবে হয় তোমার!!..?
সাজ্জাদের হঠাৎ এভাবে রেগে যাওয়ায় ভয় পেয়ে যায় সামিয়া।
সাজ্জাদঃ সকাল সকাল দিনটাই খারাপ করে দিলো। এই রুম থেকে বের হও না হলে গালে একটা থাপ্পড় পড়তে বেশি সময় লাগবে না।
সামিয়াঃ আপনি আমার সাথে এভাবে কেন কথা বলছেন..?

সাজ্জাদঃ রুম থেকে বের হতে বলেছি।
সামিয়াঃ আমি তো…
সাজ্জাদঃ যাওওওওও!

সামিয়া গাল ফুলিয়ে নাক টানতে টানতে বেরিয়ে গেল।

সাজ্জাদঃ বিরক্তিকর মেয়ে….

____________

রিয়াকে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।

ছোঁয়া তিনটা তিন কালার লেহেঙ্গা বের করে মেঘলা, মহুয়া আর নিজে নিলো। সাজগোজ করে বের হলো গেইট ধরতে হবে।

ওদের সাথে যু্ক্ত হলো সামিয়া আরও কিছু মেয়ে।

গেইটে দাঁড়িয়ে অনেক মজা করলো৷ দূর থেকে দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিল আহনাফ।
নির্জন মেয়ে পটাতে ব্যস্ত এতো কিউট কিউট বেয়াইন একটাকেও হাত ছাড়া করা যাবে না।

সবাই বেশ অবাক হচ্ছে ছেলে পক্ষ টাকা নিয়ে কোনো ঝামেলা করছে না। প্রথম গ্লাসে হলুদ দেওয়া ছিল, দ্বিতীয় গ্লাসে হাল্কা মরিচ সাথে একগাদা লবন, তৃতীয় গ্লাসে পুরো গ্লাসটায় লেবুর রস ছিল একটুও পানি বা লবন ছিল না।

প্রথম গ্লাসটা ছোঁয়া তুলে জামাইর হাতে দিলো জামাই মুখে দেওয়ার আগেই তার এক বন্ধু নিয়ে নিলো। ছোঁয়া বিরক্ত হয়ে দ্বিতীয় গ্লাস জামাইর হাতে দিতে নিলে ছেলেরভাই বলে উঠলো, ‘ বেয়াইন সব কিছু আপনি করলে বাকিদের কি সাজিয়ে রেখেছেন!..? যেমন কাপড় সাজিয়ে রেখে বলে দেখে নেন,বেছে মেন, কার কোনটা চাই!.???’
সব ছেলেরা হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।

মেয়েরা বেশ রেগে গেল তর্কে লেগে গেল সামিয়া। মেয়েটার মাথার তার একটু ছিড়ে থাকলেও এখানে বেশ গুছিয়ে ঝগড়া করছে।

দুই পক্ষে ঝগড়া করেই যাচ্ছে আজ হয়তো বাড়ি থেকে ভেবেই এসেছে কেউ কাউকে ছাড়বে না।
ছেলে পক্ষঃ আপনাদের কি চাই..?
মেয়ে পক্ষঃ আমাদের কি চাই তা তো আপনারা ভালো করেই জানেন।
ছেলে পক্ষঃ এটা কেমন ছেঁচড়ামি হয়ে যাচ্ছে না..? আমাদের বউ চাই দিয়ে দেন বাড়ি চলে যাই চাইলে এক দুইটা বেয়াইন সাথে ফ্রী দিতে পারেন।
মেয়ে পক্ষঃ আপনারা হয়তো প্রথম বিয়ে বাড়িতে এসেছেন কোনটা ছেঁচড়ামি আর কোনটা অধিকার বুঝতে পারছেন না।
ছেলে পক্ষঃ আপনাদের কি মনে হয় আমার ভাইকে আরও বিয়ে দিয়ে এনেছি যে প্রথম হবে না।
মেয়ে পক্ষঃ পেঁচাল না করে আমাদের পাওনা দিয়ে ভেতরে যান, না হলে…..
ছেলে পক্ষঃ না হলে…?
মেয়ে পক্ষঃ বাড়িতে ভাই নিয়ে চলে যান। আমাদের মেয়ের জন্য ছেলের অভাব হবে না।দেখতে শুনতে কোনোদিক দিয়ে কম নেই আমাদের মেয়ে।
ছেলে পক্ষঃ আমাদের ছেলেও দেখতে নায়কের থেকে কম নয়। চল ভাই আমরা এর থেকে কিউট মেয়ে এনে দেখিয়ে দিব।

ছেলেরা ফিরে যেতে চাইলে ছোঁয়া মেঘলার দিকে তাকায় , মেঘলা হেঁসে বললো এখনি ফিরবে…
সাথে সাথে শান্ত এসে আবার চেয়ারে বসে বলে উঠলো, ‘ শালিকা আপনাদের কতো চাই..? ‘
সব মেয়েদের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ছেলেদের মুখ ফাটা বেলুনের মতো হয়ে গেছে।
শান্তর ভাই ফিসফিস করে বলে উঠলো ” আমরা কি সত্যি চলে যেতাম নাকি বউ পাগল গাধা!!”

ছোঁয়া একটা কাগজ এগিয়ে দিলো।

ছেলের ভাই বলে উঠলো, ‘ ঠিক আছে আমরা সবটাই দিতে রাজি।”

সবার চোখ আরও বড় বড় হয়ে গেল। ছোঁয়া মজা করে ৫০ হাজার লেখে ছিলো।

মেয়ে পক্ষঃ সত্যি!!..?
ছেলে পক্ষঃ হে সত্যি।

~ এই সাব্বির তোর মাথা ঠিক আছে।
~ চুপ থাক, আমারটা আমাকে বুঝতে দে।

ছেলে পক্ষঃ আপনাদের থেকে কালো পরী বেয়াইন একটা শরবতের গ্লাস এগিয়ে দেন।

“কালো পরী!!.???”

” কালো লেহেঙ্গা পড়া বেয়াইন”

সবাই মহুয়ার দিকে তাকালো। মহুয়া কালো লেহেঙ্গা সাথে কালো চুড়ি, হাল্কা সাজ,সাথে চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে দেখতে পরীর থেকে কম নয় আরও বেশি সুন্দরী লাগছে।

মহুয়া মুচকি হেঁসে লাস্টের শরবতের গ্লাসটা হাতে নিল। সাব্বিরের দিকে এগিয়ে বললো আগে টাকা।

সাব্বির একটা কাগজে মোড়ানো টাকার ব্যাগ এগিয়ে দিলো।
ছোঁয়া টাকা পেয়ে খুশিতে গেইট ছেড়ে ভেতরে চলে গেল ওর পেছন পেছন সবাই দৌড় দিলো। মহুয়ার হাতে এখনো গ্লাসটা। সাব্বির মহুয়ার হাত থেকে হেঁসে গ্লাস হাতে নিয়ে মুখে দিয়ে থমকে গেল। না পারছে ফেলে দিতে আর না পারছে গিলে নিতে।

মহুয়া অন্য দিকে ফিরে হাসতে হাসতে ভেতরে চলে গেল।

সাব্বিরের মুখে শয়তানি হাসি। বেচারি বেয়াইনগন এখন শুধু টিস্যু দিয়ে চোখ মুছবে….

ছোঁয়ার মাথায় হাত ৫০হাজারের জায়গায় শুধুই পাঁচ হাজার টাকা আর সব কাগজ। এভাবে বোকা বানালো!!.? এটা মেনে নেওয়া যায় না! সব মেয়েরা মিলে ছেলে পক্ষকে বকতে শুরু করলো।

আহনাফ এতোক্ষন সব সুন্দর ভাবে লক্ষ করলো।

মহুয়া বাহিরে আসতেই আহনাফ হাত ধরে স্টেজের সাইডে চেয়ারে বসিয়ে দিল। মহুয়ার পাশে নিজে বসে রইলো।

মহুয়াঃ আমরা এখানে বসে আছি কেন..?
আহনাফঃ কেন ভালো লাগছে না.?
মহুয়া চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে বললো” হুম”
আহনাফ মহুয়ার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে শুকিয়ে যাওয়া বেলীফুলের মালা পেচিয়ে দিল।
মহুয়াঃ অনেক আগের মনে হচ্ছে!.?
আহনাফ কিছু না বলে মুচকি হাসলো৷
মুগ্ধ হলো মহুয়া, কি সুন্দর লোকটার হাসি কিন্তু সহজে এইলোকের মুখে হাসি দেখা যায় না। সব সময় মুখে একটা গম্ভীর ভাব এনে রাখে জেনো তার হাসতে মানা, হাসলেই দাঁত গুলো খলশে পড়ে যাবে।
আহনাফঃ এভাবে তাকিয়ে থাকবে না, উল্টো পাল্টে কিছু করে দিতে দ্বিতীয় বার ভাববো না।
মহুয়া লজ্জায় অন্য দিকে ফিরে যায়।
আহনাফ মহুয়ার হাত টেনে নিজের দিকে তাক করিয়ে বলে উঠে ” তাকিয়ে থাকো।”

মহুয়া এবার সত্যি বুঝে যায় এইলোকের মাথায় সমস্যা আছে। নিজে নাকি ডাক্তার অথচ নিজের মাথায় সমস্যা নিয়ে ঘুরছে!. এখন বললো তাকাবে না আবার এখন বলছে তাকিয়ে থাকো।
আহনাফঃ নিষেধ করায় রাগ করে অন্য দিকে ফিরে গেলে এখন এটার শাস্তি হলো এক ঘন্টা আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।
মহুয়া বিরবির করে বললো,’ আমি রাগ করিনি।’

আহনাফ বুঝলো মহুয়া লজ্জা পাচ্ছে তাও বলে উঠলো, ‘ তোমার গাল এমন লাল হয়ে যাচ্ছে কেন..? আমার দিকে তাকাও আমি কিন্তু সব রোগের ডাক্তার।
মহুয়াঃ সব রোগের!..?
আহনাফঃ হুম শুধু মাত্র তোমার জন্য।

” তোকে দেখতে পেত্নীর মতো লাগছে”
ছোঁয়া পেছন ফিরে এমন কথা শুনে রেগে গেল।
নির্জনঃ এভাবে মুখে ভূতের মতো আটা ময়দা মেখে ঘুরে বেড়াচ্ছিস কেন..? দিন দুপুরে জ্বীন, পেত্নী ভেবে নিয়ে যাবে।
ছোঁয়াঃ নির্জনের বাচ্চা শুধু কি আমি সেজেছি সবাই আজ আটা ময়দা মেখেছে। এতোক্ষন তো দেখলাম আটা ময়দা মেখে ঘুরে বেড়ানো খরগোসের মতো মুখ মেয়েদের পেছনে ঘুরলি।
নির্জনঃ তুই আমাকে ফলো করছিস..?তুই এমনিতেই সুন্দর আটা ময়দা মেখে ডাইনী সেজে বাচ্চাদের সাথে সাথে আমাদের মতো ভদ্র ছেলেদের ভয় দেখানোর কি দরকার যা মুখ ধুয়ে আয়।
রাগে ছোঁয়ার ইচ্ছে করছে নির্জনের মাথা ভারি মারতে।
ছোঁয়াঃ পেত্নী, ভূত,ডাইনী আর কিছু বাকি থাকলে তাও বলে ফেল।
নির্জন ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে আসলো। ছোঁয়া নিজের অজান্তেই দুই পা পিছিয়ে গেল।নির্জন তাও এগিয়ে এসে ছোঁয়ার দিকে ঝুঁকে ছোঁয়ার এলোমেলো হয়ে থাকা চুল ফু দিয়ে উড়িয়ে দিলো।
ছোঁয়ার শরীর কেঁপে উঠল , কেমন বরফের মতো জমে গেছে।
নির্জন কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো ” বউ বউ লাগছে”

ছোঁয়া অবিশ্বাস চোখে নির্জনের দিকে তাকালো। এক ঝাঁক লজ্জা এসে ভিড় করেছে ছোঁয়ার চোখে মুখে।

______________

সাজ্জাদ মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে মেঘলার দিকে গোলাপি লেহেঙ্গায় সুন্দর লাগছে মেঘলাকে, মেঘলার টানাটানা চোখ গুলোতে আবারও প্রেমে পড়লো সাজ্জাদ ।

” কি নামে ডেকে বলবো আপনাকে মন্দ করেছে আপনার ঐ দুটি চোখে। আমি যে মাতাল হাওয়ার ই মতো হয়ে যেতে যেতে পায়ে পায়ে গেছি জড়িয়ে। কি করি ভেবে যে মরি বলবে কি লোকে.? কি নামে ডেকে বলবো আপনাকে মন্দ করেছে আমাকে ঐ দুটি চোখে”

সাজ্জাদ মেঘলার পাশে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো ” গোলাপি লেহেঙ্গায় আপনাকে সদ্য ফোঁটা গোলাপের মতো স্নিগ্ধ, মায়াবতী লাগছে।”

মেঘলা হেঁসে বললো,’ ধন্যবাদ ‘

সাজ্জাদ আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সামিয়া কাউকে খুঁজছে সাজ্জাদ উল্টো দিকে ফিরে গেলো৷

মেঘলা হেঁসে বলে উঠলো ” মেয়েটা দেখতে যেমন সুন্দরী, মিষ্টি চেহারার অধিকারী তেমনি মিশুক। আপনাকে খুঁজছে ডাক দিব..!?
সাজ্জাদঃ একদম না গোলাপের রাণী।
মেঘলাঃ গোলাপের রাণী..?
সাজ্জাদঃ আজ আপনাকে গোলাপের রাণী লাগছে।

সাজ্জাদ মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ যদিও হয় সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নারী তবুও সে তুচ্ছ। ভালোবাসি আমি যাকে দিয়েছি গোলাপ গুচ্ছ, যত্ন করে রাখবে সেটা দেবে না সে ফেলে। থাকবে সেথা যত্ন করে তার মনের ই ডালে। যদি সেটা ছুড়ে ফেলে হবো উদাসীন হারিয়ে যাবো আমি তখন স্বপ্ন মূল্যহীন।

মেঘলাঃ আপনি চেষ্টা করলে কবি হতে পারবেন। আপনিও কাউকে ভালোবাসেন..?

সাজ্জাদ হেঁসে বললো,’ এইগুলো তো পছন্দের কবিদের থেকে কপি করা।’

মেঘলা হেঁসে ফেললো।

সাজ্জাদ আবার বলে উঠলো ” আমি বলবো সে দেখতে একটি গোলাপ কিন্তু চাইলেই ধরতে পারি না কারণ গোলাপেও কাঁটা আছে,তাও আমি ভুল করে একবার সারাজীবনের জন্য ধরতে চাই।’

” সাজ্জাদ দেখি দিন দিন প্রেমের কবি হয়ে যাচ্ছ।”

সাজ্জাদ মেঘলা পেছন ফিরে তাকালো। শ্রাবণ দুইহাত বুকে ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে।

সাজ্জাদঃ তেমন কিছু না ভাইয়া।
শ্রাবণ সাজ্জাদে দিকে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ অন্যদের কপি না করে নিজে কিছু করার চেষ্টা করেন। ”

সাজ্জাদ মাথা নেড়ে কেটে পড়লো এখান থেকে।

শ্রাবণ মেঘলার সামনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি আপনাকে আমার সাথে সাথে থাকতে বলে ছিলাম।
মেঘলাঃ আমি ছোট বাচ্চা নই।
শ্রাবণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘ সাজ্জাদের থেকে দূরে থাকবে।’
মেঘলাঃ কেন..? আপনি কি সাজ্জাদের সাথে দেখলে জেলাস হন.?
শ্রাবণঃ তোমরা মেয়েরা সব সময় বেশি বুঝ। আমি নিষেধ করেছি দ্বিতীয় বার জেনো ওকে তোমার আশেপাশে না দেখি।

____________

বিয়ে খুব সুন্দর করে শেষ হয়ে গেল। বাড়ির সবার মন খারাপ। বাড়ির উঠানে বসে আছে আনোয়ার চৌধুরী আর উনার বড় ছেলে, সাথে অনেক আত্মীয় স্বজনরা।

আহনাফ রুমে ফ্রেশ হয়ে মোবাইলে কথা বলতে বলতে বের হচ্ছে শ্রাবণ বসে আছে ওরা সবাই কাল বাড়ি ফিরবে আজ সন্ধ্যা হয়ে গেছে।

নির্জনের মোবাইলে একটা কল আসলো। নির্জন ফোন কানে নিয়ে কথা বললো আচমকা নির্জনের হাত থেকে মোবাইল পড়ে গেল। সবাই নির্জনের দিকে তাকাতেই নির্জনের চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। পড়ে যেতে নিলে আহনাফ দ্রুত গিয়ে নির্জনকে ধরলো। শ্রাবণ মোবাইল হাতে নিয়ে কানে দিলো।

নির্জনের কাছে হালিমা বেগম ছুটে আসতেই নির্জন বলে উঠলো ” আব্বু!! বলেই কেমন বাচ্চাদের মতো কাঁদতে শুরু করলো।” কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। কি হয়েছে..?

শ্রাবণ মোবাইল কানে চেপেই থমকে দাঁড়িয়ে রইলো৷

আনোয়ার চৌধুরীঃ কি হয়েছে..?
শ্রাবণঃ দাদু ছোট আব্বু হসপিটাল….
শ্রাবণ চেষ্টা করেও বাকিটা কাউকে বলতে পারলো না। ওর গলায় কথা আঁটকে গেছে, কেউ মনে হচ্ছে গলা চেপে ধরে রেখেছে।

নির্জনঃ আব্বু আর নেই..

চলবে…

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৩৩
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

কখন কার মৃত্যু কিভাবে আশে কেউ বলতে পারে না। মৃত্যু কারো বয়স দেখে না, যার ডাক যখন আসবে তাকে যেতেই হবে।

গ্রাম থেকে সবাই হসপিটালে গিয়ে দেখে মিরাজ চৌধুরী আর নেই। হসপিটালে নিয়ে আসার আগেই মা-রা গেছেন।
যেই কেইসের জন্য গ্রামে যেতে পারেনি সেই কেইসের তদন্ত করতে গিয়েই মৃত্যু ঘটেছে।

হালিমা বেগমের পাগলামি দেখে কেউ নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। স্বামী হারিয়ে পাগলের মতো আচরণ করতে শুরু করেছেন।

নির্জন, চঞ্চল ছেলেটা জেনো একদম শান্ত হয়ে গেছে। সে জেনো বাবা নয় জীবনের চাবি হারিয়ে ফেলেছে। “চাবি ছাড়া যেমন তালা মূল্যহীন বাবা ছাড়া নির্জনের নিজেকে ঠিক তেমন মনে হচ্ছে। ”
মানুষ বলে ছেলেরা নাকি কষ্ট পেলেও কাঁদতে জানে না। নির্জন আজ তিনদিন দরজা বন্ধি। বাবা হারিয়ে একদম ভেঙে পরেছে।

ডাক্তার বললো এটা এক্সিডেন্ট কিন্তু সবাই এটা মেনে নিলেও মেঘলা কিছুতেই মেনে নিতে পারলো না এটা এক্সিডেন্ট! ডাক্তার কিছু লুকাচ্ছে! এটা মার্ডার! প্লেন করে মিরাজ চৌধুরীকে খু’ন করা হয়েছে।

বাড়িটা কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে। আনোয়ার চৌধুরী ছেলের এমন মৃত্যুতে নরম হয়ে গেছেন। আফরোজা বেগম কিছুই জানেন না। উনার শুধু শ্বাস চলছে কখন উনি নিজেই চলে যান সেই চিন্তায় আছে সবাই।

সকালে নাস্তা বানিয়ে সবাই কে ডাকলেন আমেনা বেগম।
নিরুপমা আস্তে ধীরে নেমে আসলো। মুখটা কেমন চুপ্সে আছে।

আমেনা বেগমঃ কি হয়েছে নিরু শরীর ভালো না..?
নিরুপমা হাসার চেষ্টা করে বললো,’ ভালো ভাবি। আব্বা ভাই কই.?”
আমেনা বেগমঃ আব্বার জন্য উপরে খাবার দিয়ে আসছে টুম্পার আম্মা। আর আপনার ভাই অফিসে চলে গেছে, অফিসে কাজের সমস্যা চলছে।

নিরুপমা খাবারের প্লেটে খাবার নিয়ে হালিমা বেগমের রুমের সামনে গেল।

দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখলো হালিমা বেগম জায়নামাজে বসে কাঁদছেন।

নিরুপমার চোখে জলে ভরে উঠলো। আজ হালিমার এই চোখের পানির জন্য যে সে নিজে দায়ী!! আজ ভাই হারিয়েছে কাল না জানি আরও কতোজন হারাতে হয়!! নিরুপমা খাবার প্লেট রেখে জলদি বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। জীবনের কালো অধ্যায় যে আবার শুরু হলো।

কি লুকাতে চাচ্ছে নিরুপমা..?

__________________

দেখতে দেখতে কেটে গেল এক মাস। এই এক মাসে সবাই কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে, স্বাভাবিক হতে পারেনি হালিমা বেগম। স্বামী হারিয়ে কেমন চুপচাপ হয়ে গেছেন। পাল্টে গেছে নির্জন। আগের মতো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ানো, কথায় কথায় ফাজলামো করা সব বন্ধ হয়ে গেছে।
বাসায় আসছে খাচ্ছে আর রুমে যাচ্ছে কারো সাথে দ্বিতীয় কোনো শব্দ খরচ করছে না।

সকাল সকাল চেঁচামেচির শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেল সবার।

সবাই নিচে নেমে আসলেও নির্জনের কোনো খবর নেই সে ঘুমাচ্ছে।

আহনাফ শ্রাবণ আনোয়ার চৌধুরীর পাশে বসে আছে। আজাদ চৌধুরী রাগে নির্জনকে ডেকে আনতে বলেছেন।

নির্জন নিচে এসে দাঁড়ালো।
আজাদ চৌধুরী নির্জনের দিকে পেপার এগিয়ে দিয়ে রেগে বলে উঠলেন,’ এইসব কি নির্জন!!.? ‘

নির্জন কাগজটা হাতে নিয়ে একটু হাসলো তারপর সবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনারা এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন..? এখানে কি সার্কাস দেখানো হচ্ছে..? ”
আহনাফ ধমক দিয়ে বলে উঠলো, ‘ নির্জন আব্বু যা বলছে উত্তর দে।’

নির্জনঃ ভাই তুমিও! এতোদিন কাজ করিনি বলে কতো কিছু বলতে এখন কাজ নিয়েছি এটাতে তো কারো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
আজাদ চৌধুরীঃ কাজ নিয়েছো ভালো কথা, পুলিশের জব কেন নিতে হবে!!..? তুমি চাইলে এখনি অফিসে জয়েন হতে পারো।
নির্জনঃ আমি এই বিষয় আর কিছু বলতে চাচ্ছি না বড় আব্বু।

আজাদ চৌধুরী রেগে বলে উঠলেন,’ যা ইচ্ছে করো দরকার হলে ঘরে বসে খাও তাও পুলিশের চাকরি করতে পারবে না।’
নির্জন মৃদু হাসলো।

হালিমা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে আবার রুমে চলে গেলেন৷

উনি খুব ভালো করেই জানেন ছেলে কেন স্বামীর পুলিশের চাকরি নিয়েছে। নির্জন তদন্ত করে সেই লোক পর্যন্ত পৌঁছাবে যে এতো নিষ্ঠুরভাবে ওর আব্বুকে মে’রেছে। সে প্রতিশোধ নিবে, একটা একটা করে সবাইকে বের করবে। চঞ্চল, হাসিখুশি একটা ছেলে শান্ত মস্তিষ্কে কতোটা ভয়ংকর হতে পারে তা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।

_____________

শ্রাবণের দিন দিন কাজের চাপ বাড়ছে। অফিসের ঝামেলার সাথে সাথে যুদ্ধ করতে করতে সে ক্লান্ত তবুও কোনো উন্নতি হচ্ছে না দিন দিন কোম্পানির অবস্থা খারাপ হচ্ছে । খারাপ সময় আসলে সব দিক দিয়ে আসে। বাড়িতে আসলে বাড়িটা কেমন নির্জীব লাগে অফিসে গেলে সব এলোমেলো লাগে। কোথায় আছে সব কিছুর সমাধান!!..???

শ্রাবণ কাগজপত্র গুছিয়ে উঠে দাঁড়ালো। মেঘলা তারাহুরো করে কফি রাখতে গিয়ে পায়ে কিছুটা ফেলে দিল।

শ্রাবণ দ্রুত পানি ডেলে দিল মেঘলার পায়ে।
মেঘলা ব্যাথা পেলেও হাসি মুখে বলে উঠলো, ‘ আমার কিছু হয়নি আপনার জন্য আরেক মগ নিয়ে আসি..? আপনার অফিসে দেরি হচ্ছে! আসলে নিচে একটা কাজ করতে গিয়ে আপনার কফির কথা মনে ছিল না..। ‘

শ্রাবণঃ চুপচাপ বসো। দেখি পা এদিকে দাও।
মেঘলাঃ কিছু হয়নি তো।
শ্রাবণ বরফ এনে মেঘলার পায়ে লাগিয়ে ঠান্ডার মলম লাগিয়ে দিল।

মেঘলাঃ আপনার ক….
শ্রাবণঃ চুপ!! আমার কফি লাগবে না। একটু রেস্ট নাও ….
মেঘলা ভদ্র মেয়ের মতো চুপচাপ বসে রইলো। শ্রাবন অফিসের জন্য রেডি হয়ে মেঘলার দিকে তাকালো।

মেঘলা হ্যাঁ করে শ্রাবণকেই দেখছিলো। এক মাসে লোকটা কতোটা চেঞ্জ হয়ে গেছে। রাতদিন কাজ করে নিজের অবস্থা করেছে কি!!..? একটুও নিজের যত্ন নেয় না।

শ্রাবণ ফাইল হাতে নিয়ে বের হতে গিয়েও ফিরে তাকালো ” বউ থেকেও পানসে মুখে অফিসে যেতে হয়।”

মেঘলা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
” তাহলে কি কাল থেকে আপনার জন্য অফিসে যাওয়ার আগে মিষ্টি এনে রাখবো!..?”

শ্রাবণ হেঁসে বললো, ‘ বউ চাইলে শুধু অফিসে যাওয়ার আগে কেন! চব্বিশ ঘণ্টা মিষ্টি দিতে পারে।’

মেঘলাঃ কিন্তু আপনি তো মিষ্টি পছন্দ করেন না।
শ্রাবণ ফুশ করে একটা শ্বাস ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। বউ কে কি মিষ্টির কথা বললো আর বোকা বউ কি বুঝলো!!..?

আহনাফ রেগে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মহুয়া কাচুমাচু করছে। এই এক মাস খুব সুন্দর করে আহনাফ কে ইগ্নোর করেছে। আহনাফের এসিস্ট্যান্টের কাজ ছেড়ে টিউশনি করাচ্ছে। বাড়ির কারো মন মানুষিকতা ঠিক নেই সেই জন্য চলে যাওয়ার কথাও বলতে পারছে না।

আহনাফঃ এই এক মাসে আমি কতোবার খবর পাঠিয়ে ছিলাম..?
মহুয়াঃ একই বাসায়,একই ছাঁদের নিচে তাও কেন চিঠি লিখে খবর পাঠাতে হবে!.?
আহনাফঃ আমার ইচ্ছে। এখন বলো আমাকে ইগ্নোর কেন করছো..?
মহুয়াঃ আমি কাউকে ইগ্নোর করিনি।
আহনাফঃ তাহলে আমার এসিস্ট্যান্টের কাজ কেন ছেড়েছো..?
মহুয়াঃ আমার এসিস্ট্যান্টের কাজ ভালো লাগে না।
আহনাফঃ তাহলে আমার বাচ্চা সামলানোর জবটা নিতে পারো।
মহুয়াঃ আপনার বাচ্চা!..?
আহনাফঃ হুম, রাজি হলে…
মহুয়াঃ আপনার বউ, বাচ্চা আছে…?
আহনাফঃ বউ তো আছে তবে বাচ্চা এখনো ডাউনলোড হয়নি, বউ বাচ্চার জব নিতে চাইলে….
মহুয়া রেগে বলে উঠলো, ‘ অসভ্য লোক।’
আহনাফঃ অসভ্য আর সভ্য যাই বলো দুইটার থেকে একটা জব তো নিতেই হবে। হয় এসিস্ট্যান্ট হয়ে যাও না হয় আমার বাচ্চার জবটা নিয়ে নাওও। আমার আম্মুও নাতিনাতনির মুখ দেখুক।
মহুয়া লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিল। ছাঁদের দরজা লাগানো চাইলেও পালাতে পারবে না।

আহনাফঃ তুমি লজ্জা পাচ্ছ..? অথচ আমি লজ্জা পাওয়ার মতো এখনো কিছুই বলিনি।
মহুয়াঃ আমি মোটেও লজ্জা পাচ্ছি না, আমার আপনার দিকে তাকাতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
আহনাফঃ কেন আমি দেখতে কি একটু বেশিই আকর্ষণীয় যে তাকালেই, কাছে আসো কাছে আসো এমন ফিলিংস হবে!!…

মহুয়া কানে দুই হাত দিয়ে বলে উঠলো ” চুপ করেন, আপনি দেখতে খুবই বাজে, আমি ভেবে পরে যানাবো।”
আহনাফঃ মনে জেনো থাকে… বলেই পকেট থেকে একটা বেলীফুলের মালা বের করে মহুয়ার দিকে এগিয়ে আসলো।
আহনাফঃ এতো বড় চুল সামলাতে সমস্যা হয় না..?
মহুয়াঃ আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।
আহনাফ বেলীফুলের মালা এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো ” তোমার জন্য ”

_____________________

ছোঁয়া একটু পর পর নির্জনের রুমে উঁকি দিচ্ছে। মহুয়াকে নিয়ে আসতে চেয়ে ছিলো কিন্তু আহনাফের জন্য পারলো না।
নির্জনের সামনে যেতে সে ভয় পাচ্ছে!! কি আজব এক সময় সারাদিন ঝগড়া মারামারি লেগে থাকত আর আজ একটু কথা বলবে কেমন ভয় লাগছে।হঠাৎ চুপচাপ হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর সাথে কথা বলতে ভয় কাজ করে।

আজকাল ছোঁয়ার দিন কাটে ভার্সিটি আর ছোট মামির ঘরে। ছোট মামির কষ্ট গুলো কেমন নিজের মনে হয়।

ছোঁয়া নির্জনের রুমে প্রবেশ করার আগেই আজাদ চৌধুরীকে রেগে ফোনে কারো সাথে কথা বলতে দেখে থেমে যায়।
আজাদ চৌধুরীঃ তুমি থেমে যাওওও এর পরিণাম ভালো হবে না!! আমি খুব জলদি তোমার মুখোমুখি হব।

…………….

আজাদ চৌধুরীঃ তুমি আমাকে আগের রুপে ফিরে যেতে বাধ্য করছো…

…………..

আজাদ চৌধুরীঃ তোমার বউ বাচ্চার প্রতি তো মায়া কর।
…..
আজাদ চৌধুরীঃ তোমার এমন দিন আসবে রাস্তার কুকুর ও ফিরে তাকাবে না আফজাল।

আজাদ চৌধুরী রেগে মোবাইল দেয়ালে ছুড়ে ফেললেন।

ছোঁয়া ভয়ে চুপসে ঠাসস করে নির্জনের রুমে গিয়ে লুকিয়ে গেলো।

আজাদ চৌধুরী আশেপাশে তাকিয়ে মোবাইল তুলে নিয়ে রুমের দিকে চলে গেলেন।

ছোঁয়া বুকে থুথু দিয়ে লম্বা শ্বাস নিলো। বড় মামা ভীষণ রাগী নিশ্চয়ই অফিসের কারো সাথে ঝামেলা হয়েছে প্রচুর রেগে আছেন।

নির্জন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ছোঁয়া কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো। এই এক মাসে আজ প্রথম ছোঁয়া নির্জনের রুমে আসলো।

নির্জনঃ ছোঁয়া…
ছোঁয়া প্রথম ভয় পেয়ে গেলো নির্জন কে দেখে হেঁসে বললো, ‘ নির্জন তুমি…’
নির্জনঃ আমার রুমে তো আমিই থাকবো। কিছু প্রয়োজন..?
ছোঁয়াঃ হুম..
নির্জনঃ কি..? জলদি বলে বের হ।
ছোঁয়া চুপ করে আছে।
নির্জনঃ এভাবে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে না থেকে যা বলবি বল।া
ছোঁয়াঃ তুমি কি বিরক্ত হয়েছ আমাকে দেখে..?
নির্জন ছোঁয়ার দিকে না তাকিয়ে শার্টের বোতাম লাগিয়ে নিলো।

নির্জনঃ এতো অভিনয় না করে কি লাগবে বলে বের হ, আমি বাহিরে যাব।

ছোঁয়াঃ তোমাকে লাগবে….!
নির্জন ঘড়ি হাতে নিয়ে থমকে যায় কিছু সময়ের জন্য। এই একটা কথায় এমন কি ছিল!..?

চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-৩০+৩১

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৩০
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

শ্রাবণ বউ নিয়ে প্রথম গ্রামের বাড়িতে এসেছে সবাই বউকে ঘিরে বসেছে।
মেঘলা ক্লান্ত মুখে সবার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করছে।
একেক জন একেক রকমের প্রশ্ন করছে। বউয়ের বাড়ি কোথায়.? পড়াশোনা কতোটুকু করেছে.? বাবা কি করে..? বিয়ের কতো গুলো দিন হলো এখনো খুশির খবর শুনছে না কেন.?? একজন তো মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ” তোমাদের কারো সমস্যা থাকলে বলো এখানে ভালো কবিরাজ আছে আমি তাবিজ এনে দিব ” মেঘলা কি বলবে বুঝতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে সে কখনো পড়েনি। কারো কোনো উত্তর দিতে পারছে না।

” কি গো বউ কি বোবা নাকি..? একটু আগে তো দেখলাম কথা কইলো এখন চুপ কেন.?”

শ্রাবণ ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে উঠানে এতো ভিড় দেখে তাকিয়ে রইলো বুঝতে বাকি নেই মাঝ খানে ওর বউ।

বাড়িটা গোল আকৃতির, মাঝ খানে উঠান, সোজা করে জায়গা রেখে গেইট।
শ্রাবণ এগিয়ে যেতে সবাই সাইডে দাঁড়ালো । মেঘলার কাছে গিয়ে বললো” তোমাকে দেখতে ক্লান্ত লাগছে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নাও।”

~ আজ কোনো বিশ্রাম নেই শ্রাবণ বাবা, এই প্রথম বউ নিয়ে গ্রামে পা রেখেছো আর কবে না কবে আসো বউয়ের সাথে আমাদের অনেক কথা আছে।
শ্রাবণঃ কি কথা চাচি আমাকে জিজ্ঞেস করেন। মেঘলার শরীর ভালো না।
~ তোমারে কেন জিজ্ঞেস করবো.? আমরা বউকে জিজ্ঞেস করবো। শরীর ভালো না আমাদের সাথে থাকলে শরীর ভালো হইয়া যাইবো।
শ্রাবণ বিড়বিড় করে বলে উঠলো ” আপনাদের সাথে থাকলে আমার বউ আর আমি খুঁজে পাব না। বউকে আমি ডিভোর্স দেওয়ার আগে বউ আমাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাবে।”

~ কিছু কইলা বাবা..?
শ্রাবণঃ না চাচি। আপনারা বসেন মেঘলা কাপড় চেঞ্জ করে নেক।

আশেপাশে তাকিয়ে ছোঁয়া আর মহুয়াকে দেখে ডাকলো। ওরা মাত্র রুম থেকে বের হয়েছে।
মহুয়া ঘোমটা ভালো করে দিয়ে চুল ডেকে রাখলো। ছোঁয়া ওড়না গলায় ঝুলিয়ে রেখেছে, চুল গুলো হাত খোঁপা করা।

ওরা আসতেই শ্রাবণ সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনারা ওদের সাথে গল্প করেন আমি মেঘলাকে নিয়ে যাচ্ছি। বলেই মেঘলার হাত ধরে নিয়ে গেল। মেঘলা লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলে উঠলো ” ধন্যবাদ ”

ছোঁয়া রেগে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে আছে। ওরা এখন রিয়ার সাথে হলুদের শাড়ি, সাজগোছ নিয়ে কথা বলতো আর ভাই এতো মহিলার মাঝে ফাঁসিয়ে দিলো!!..

মহিলারা মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ” ওমা এ দেহি পরী নাইমা আইছে গ্রামে।
মহুয়া লজ্জায় নুইয়ে গেল।

~ নিরুর মাইয়া বুঝি তুমি.?
ছোঁয়া জোর করে মুখে হাসি টেনে বললো,’ জ্বি আন্টি মহুয়া নিরুপমা আন্টির মেয়ে। ‘
মহুয়া অবাক হয়ে তাকাতেই ছোঁয়া চোখ মারলো। এখন যা জিজ্ঞেস করার মহুয়াকে করুক আমি কেটে পড়ি। যদি জানে আমি নিরুর মেয়ে কেউ ছাড়বে না।

~ তুমি কেডা.?
ছোঁয়াঃ আমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড।
এক মহিলা মহুয়ার থুতনিতে হাত রেখে বলে উঠলো ” মাশাল্লাহ নিরুর ঘরে চাঁদ নাইমা আইছে। ছোট বেলা যখন আইছলা তখন আরও কালা দেহা গেছে এখন ঠিক আফরোজা জেডির মতো দেহা যাইতাছে।

ছোঁয়া আস্তে করে মহিলাদের কাছ থেকে বেরিয়ে গেল আর ফেঁসে গেল মহুয়া।

_______

রাত আটটায় বাড়ির সবাই এক সাথে হলো। মেহমান সবাই আসেনি কাল আসবে।

আনোয়ার চৌধুরী এসেছে বাড়িতে বিয়ের মতো আয়োজন শুরু হয়েছে।
খাবার টেবিলে আনোয়ার চৌধুরীর ভাই আর পৃথিবীতে নেই উনার বউ এই বাড়ির সর্দার।

আশা বেগম আনোয়ার চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আফরোজা কেমন আছে.? শুনলাম শুয়া থেকে উঠতো পারে না।
আনোয়ার চৌধুরীঃ জ্বি ভাবি…
আশা বেগমঃ তোর ছেলের বউ কই.? দেখা করাইবি না?
আনোয়ার চৌধুরী মনে মনে একটু ভয় পেলেন। মেঘলার শ্রাবণের বিয়ে কিভাবে হয়েছে তারা কেউ জানে না। মেঘলা না আবার উল্টা পাল্টা কথা বলে বসে।

আনোয়ার চৌধুরী নির্জনকে ডেকে বললো মেঘলা আর শ্রাবণকে নিচে পাঠাতে।

নির্জন গিয়ে নিয়ে আসলো।

মেঘলা সালাম দিয়ে দাঁড়ালো।
আশা বেগম পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো৷
মেঘলা গোলাপি শাড়ি সাথে হাল্কা গয়না পড়ে আছে। আশার সময় শাশুড়ী নিজের গহনা গুলো ওর হাতে দিয়ে বলে ছিলো” এইগুলো পড়ে থাকবে, সুন্দর করে কথা বলবে, শাড়ি দিয়েছি ভালো লাগলে পড়, সাবধানে থেকো।” এই টুকুই মেঘলার জন্য অনেক ছিলো। আমেনা বেগম এইসব দিবে, এতো সহজ ভাবে কথা বলবে ভাবতেও পারেনি কেউ।

আশা বেগমঃ সব ঠিক আছে তবে গায়ের রং একটু চাপা।
নির্জনঃ আহ্ দাদি ভাই ফর্সা, ভাবিও ফর্সা হলে কেমন মূলা মূলা লাগবে না.? এটাই ওদের কিউট লাগে।
আশা বেগম নির্জনের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো ‘ জয় তুই আমার পাশে বস।’
নির্জন আশা বেগমের পাশে বসলো। আশা বেগম নির্জন কে একটু বেশিই ভালোবাসেন। ভালোবেসে জয় বলে ডাকে।
মেঘলার দিকে তাকিয়ে আশা বেগম বললো,’ তোমার বাপ কি করে..?? তোমার পড়াশোনা কি.? ‘
মেঘলা থমকে গেল। সে তো সত্যি কথা বলতে পারবে না আবার মিথ্যা ও বলতে পারবে না।

মেঘলাকে চুপ দেখে নির্জন কিছু বলার আগে শ্রাবণ মেঘলাকে এক হাতে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো,’ দাদি ওর পরিচয় আমি, এখন ও আমার পরিচয়ে বাঁচবে তাহলে আগের কথা জিজ্ঞেস করে লাভ কি.??? তুমি বরং ওকে সংসার সম্পর্কে বুঝিয়ে দাও।
আশা বেগমঃ তোর পরিচয়ের আগে ওর আরও একটা পরিচয় আছে।কিভাবে বিয়ে হলো,পরিচয় হলো জানতে হবে না। চুপচাপ বসে থাক। এখনি বউ পাগলা হয়ে গেছস। তোর দাদাও বউ পাগল ছিল, গ্রামের সবাই হাসতো।
শ্রাবণ আরও কিছু বলতে চেয়ে ছিল কিন্তু মুরব্বিদের মাজে বেশি কিছু বললে হেতে বিপরীত হবে।
নির্জন হেঁসে বলে উঠলো, ‘ দাদি আমার বন্ধুকে দেখলে না সাজ্জাদ ভাবি ওর বোন হয়। আমার বন্ধুর আবার ভাইকে একটু বেশি পছন্দ তাই বিয়ের প্রস্তাব দিল আর আমরাও রাজি। ভাবি পড়াশোনায় ভালো, পরিবার ভালো।

পেছন থেকে সাজ্জাদ বেআক্কেলের মতো তাকিয়ে রইলো। নির্জন কে খুজতে খুঁজতে এখানে এসে ছিলো এমন কথা শুনতে হবে ভাবতেও পারেনি।
শ্রাবণ মুচকি হেঁসে বললো, ‘ শান্তি হয়েছো.?’
আশা বেগমঃ হ ছেলেডারে দেখলাম ভালোই। পরিবারও শুনলাম ভালো।

আশা বেগম কিছু সময় চুপ থেকে বললো,’ শুনলাম নিরুর মাইয়া এসেছে সেই কবে দেখছি, শুনলাম একটা মাইয়াও আইছে খুব সুন্দর আর বুদ্ধিমতী।

নির্জন ছোঁয়া আর মহুয়াকেও নিয়ে আসলো।

আশা বেগম মহুয়াকে নিরুর মেয়ে ভাবে বলে উঠলো, ‘ তুমি তো দেখতে আফরোজার মতো হইছো।’

” এটা মহুয়া দাদি, আর ফুপিমণির মেয়ে হলো ছোঁয়া। ”
ছোঁয়া হেঁসে সালাম দিল, টুকটাক কথা বললো।
মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আশা বেগম বলে উঠলো, ‘ তুমি ছোঁয়ার বান্ধবী.? ‘
মহুয়াঃ জ্বি দাদি।
আশা বেগমঃ মাশাল্লাহ। আমাদের আফরোজাও যৌবন কালে তোমার মতো ছিল। তোমারে দেখে আফরোজার কথা মনে পইরা গেল।
মহুয়া বিনিময় মুচকি হাসি উপহার দিল।
আশা বেগম বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ কিছু সৌন্দর্য জীবনে অন্ধকার ডেকে আনে আবার কখনো অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যায়। সাবধানে থেকো মেয়ে তোমার জীবন না আবার আফরোজার মতো হয়।

____________

সাজ্জাদ রেগে একের পর এক সিগারেটে টান বসাচ্ছে। একটু আগেই গ্রামের দোকান থেকে কিনে এনেছে। জীবনে কখনো যা স্পর্শ করে দেখেনি আজ তাই খাচ্ছে।
নির্জনঃ তোর কি হয়েছে.? থামবি এবার.?
সাজ্জাদ কোনো উত্তর দিল না। এখন এতোটাই রাগ লাগছে সব কিছু ধ্বংস করে দিতে ইচ্ছে করছে।

যাকে ভালোবাসা, যাকে নিয়ে ঘরবাঁধার স্বপ্ন দেখছে আজ সবার সামনে তার ভাই হয়ে গেল!!।

নির্জন সাজ্জাদকে নিজের মতো ছেড়ে দিল। শান্ত হলে নিজেই বলবে এমন কি হয়েছে। হঠাৎ করে কেন রেগে গেল।

ছোঁয়া হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে সাথে রিয়াও। মহুয়া মুখ ভার করে তাকিয়ে আছে।

বিকেলে মহিলা গুলো একের পর এক প্রশ্ন করতে শুরু করলো। একজন থামছে তো আরেকজন শুরু কেউ ক্লান্ত হচ্ছে না মহুয়া উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। কেউ নিজের ছেলের কথা বলছে কেউ বোনের, ভাইয়ের, আত্মীয়স্বজন কারো ছেলে বাকি রাখেনি বিয়ের জন্য, প্রসংশা করতে করতে মুখে ফেনা তুলে নিয়েছি। মহুয়ার মনে হলো সে পাত্রের বাজারের মাঝে বসে আছে আর বাজার ভর্তি পাত্র। সবাই বলছে পাত্র রেডি বেছে নাও, দেখে নাও………

চলবে..

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৩১
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

আজ গায়ে হলুদ। সকাল থেকেই বাড়ি সাজানোর কাজ চলছে। ছেলেদের জন্য হলুদ পাঞ্জাবি আর মেয়েদের হলুদ শাড়ির ব্যাবস্থা করা হয়েছে।

বাড়িতে মানুষে গিজগিজ, আত্মীয় স্বজন এসে বাড়ি ভর্তি হয়ে গেছে। এতো মানুষের ভিড়েও মহুয়ার কেমন শূন্যতা অনুভব হচ্ছে। সব থাকার পরেও কিছু একটা নেই, কি নেই??? চোখ বন্ধ করতেই আহনাফের মুখটা ভেসে উঠলো। ঝটপট চোখ খুলে নিলো মহুয়া। না এই লোকের শূন্যতা অনুভব হতেই পারে না। মহুয়া মোবাইল হাতে নিয়ে বসে রইলো বেহায়া মন বলছে একটা ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস কর, কেমন আছে??। আবার মস্তিষ্ক বলছে, কেন সে কি একটা বার কল দিয়ে তোর খবর নিতে পারে না..? মন আর মস্তিষ্কের খেলায় মস্তিষ্ক হেরে গেল সব কিছু দূরে ঠেলে আহনাফকে কল দিল একবার বাজতে বাজতে কেটে গেল। দ্বিতীয় বার দিতেই মোবাইল বন্ধ পেল।রাগে ইচ্ছে করলো নিজের চুল ছিড়ে ফেলতে। এই লোক নিজেকে ভাবেটা কি!.? যা আর ভাবব না আমি এই লোকের কথা।

ছোঁয়া রুমে আসলো হাতে হলুদ শাড়ি সাথে লাল টকটকে ছয়টা গোলাপ।

মহুয়া ছোঁয়াকে দেখে চুল হাত খোঁপা করে উঠে দাঁড়ালো।
ছোঁয়াঃ মহু ফ্রেশ হয়ে আয়। রিয়া আপু সাথে উনার সব কাজিনদের পার্লার থেকে মেয়েরা সাজাচ্ছে আমরা রুমেই সাজব।

মহুয়া ফ্রেশ হয়ে আসতেই ছোঁয়া মহুয়ার হাতে ব্লাউজ ধরিয়ে দিল।

মেঘলা শাড়ি হাতে নিয়ে বসে আছে। শ্রাবণের নিষেধ শাড়ি পড়া যাবে না। গ্রামের বিয়েতে অনেক বখাটে ছেলে আসে।
মেঘলা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি আপনার কথা মতো কেন চলব!.? আমি এখানে এসেছি আনন্দ করবো তাও আপনার সহ্য হয় না!.? আমাকে নিয়ে আপনার এতো বেশি ভাবতে হবে না।
শ্রাবণ হাতে ঘড়ি পড়ছিলো। ঘড়ি পড়ে চুল গুলো ঠিক করে মেঘলার সামনে এসে দাঁড়ালো মেঘলা চোখ নামিয়ে নিল। এই লোকের সামনে হাজার চেষ্টা করলেও রাগ দেখাতে পারে না মেঘলা। যেই মেয়েকে সবাই ভয় পায় সিআইডি মেঘ বলতেই ভয়ে জমে যায় সেই মেয়ে কিনা আজ সাধারণ একটা ছেলেকে ভয় পায়।

” আমার দিকে তাকিয়ে বলো কি যেন বলছিলে..?”
~ কিছু না।
~ গুড, শাড়িটা আমার হাতে দাও।
মেঘলা না চাইতেও শাড়িটা দিয়ে দিলো। শ্রাবণ শাড়ি নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।

মহুয়াকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিল ছোঁয়া। বাঙালি সাজে ভীষণ সুন্দর লাগছে মহুয়াকে। ছোঁয়া মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বললো ” আজ ভাইয়ের জায়গায় আমি থাকলেও তোমার প্রেমে পড়তাম। আহনাফ ভাই একবার দেখলেই আজ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী বউ হিসেবে ঘোষণা দিতো। ভাইয়ার মতোই ভাইয়ার পছন্দ।
মহুয়াঃ তোমার ভাই আমার প্রেমে পড়েনি ছোঁয়া আমি জানিনা কেন বিয়ে করেছে। তবে এতোটুকু জানি ভালোবেসে বিয়ে করেনি।

ছোঁয়া হাসলো, সে জানে আহনাফ কেন বিয়ে করেছে!

মহুয়া ছোঁয়াকে রেডি করালো। ছোঁয়া কেউ দেখতে ভীষণ মিষ্টি লাগছে।
মহুয়া ছোঁয়ার কানের পেছনে কালো কাজল দিয়ে বলে উঠলো ” আমার আপুটার দিকে কারো নজর না লাগুক।”
ছোঁয়াঃ উঁহু, আপু নয় ননদী।

ছোঁয়া হেঁসে ফেললো।রিয়াকে খুব সুন্দর করে বাড়ির উঠানে বসানো হলো। হলুদ শাড়ির সাথে লাল ফুলের গহনা ভীষণ সুন্দর লাগছে রিয়াকে দেখতে। বাড়ির মহিলারা হলুদ মেহেদী হলুদ এর বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস আশেপাশে রাখলো বাড়ির মানুষরা সবাই রিয়াকে গিড়ে ধরল। রিয়ার মুখে ফুটে আছে লজ্জা মাখা হাসি। ছেলে পক্ষ থেকে বউয়ের জন্য গায়ে হলুদের শাড়ি মেহেদি নিয়ে এসেছে ছেলের ভাইয়ার তার দুই বন্ধু।

মেঘলা রুমে বসে আছে। এখন তার বাহিরে যেতে একদম ইচ্ছে করছে না কত শখ করেছিল এখানে এসে সাজবে সবার সাথে আনন্দ করবে কিন্তু শ্রাবণ হতেই দিল না। শাড়ি পরলে লোকটার সমস্যা কি..?
মন খারাপ করে মোবাইল হাতে নিয়ে ফাহিম কে কল দিল খুব জলদি কাজে ফিরতে হবে।

সাজ্জাদ আর নির্জন হলুদ পাঞ্জাবি পরে হাতা গোটাতে গোটাতে বাহিরে আসলো সব মেয়েরাও ওদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ওদের দেখতে অনেক হ্যান্ডসাম আর সুন্দর লাগছে।
সাজ্জাদ বাইরে এসে একবার চারপাশে মেঘলা কে খুজলো মেঘলাকে না পেয়ে দরজার দিকে যাচ্ছিল তখনই কেউ শাড়িতে পেঁচ খেয়ে সাজ্জাদের উপর পরে। একটা মিষ্টি কন্ঠের মেয়ে বলে ওঠে, ও মাগো আমার কোমর শেষ। কন্ঠটা চিনতে সাজাতের একদম দেরি হয় না সে জটপট ধাক্কা দিয়ে মেয়েটাকে দূরে সরিয়ে লাফ দিয়ে দাড়িয়ে পড়ে আর বলে ওঠে ” তুমি!!.?”

সামিয়া সাজ্জাদকে দেখে বেশ অবাক হয় ইনোসেন্ট মুখ করে বলে ওঠে, আমি তো এমনিই শাড়িতে পেচ লেগে পড়ে গেছি তার উপর আবার তুমি ধাক্কা মেরে আমার কোমরটা একদম শেষ করে দিলা!.? মা গো আমার এবার বিয়ে হবে না গো। এখন আমাকে কেউ বিয়ে করবে না গো। বিয়ে বাড়িতে এসে, বিয়ে খেতে এসে নিজের বিয়ের বারোটা বাজিয়ে দিলাম।

সাজ্জাদের কাছে সামিয়াকে ভীষণ ন্যাকা আর ছেছড়া মনে হল। সাজ্জাদ খুব ভালো করেই বুঝতে পারছিল সাইমা ইচ্ছে করে ওর উপরে পড়েছে আর এখন যা করছে সবই ন্যাকা নাটক।
সাজ্জাদের কথা বাড়াতে ইচ্ছে হলো না।সাজ্জাদ বিরক্তিকর দৃষ্টিতে সামিয়ার দিকে তাকালো। মেয়েটা এখনো ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে মনে হয় দেশের সব আটা ময়দা মেখে চলে এসেছে দেখতে জঘন্য লাগছে।
সাজ্জাদ মোবাইল পকেট থেকে বের করে এমন একটা ভাব করলো যেন ওর খুব ইম্পরট্যান্ট কল এসেছে। মোবাইল কানে দিয়ে এখনই আসছি বলে চলে গেল।

সামিয়া রেগে হাতের ফুলটার দিকে তাকিয়ে রইলো। সব প্লেন শেষ হয়ে গেল থুর।

মহুয়া ছোঁয়া বাহিরে আসতে সবার নজর গেল বউ ছেড়ে মহুয়ার দিকে মনে হচ্ছে যেন এক হলুদ পরী নেমে এসেছে। মহুয়া বেশ লজ্জা পাচ্ছিল লজ্জায় মুখ নিচের দিকে করে রেখেছে। সবাই বেশ প্রশংসা করল মহুয়ার ছোঁয়ার। কি উদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বর পক্ষের ছেলের ভাই মহুয়ার দিকে।

মহুয়ার অনেক ছবি তুলল ছোঁয়া। ছবি তুলে আহনাফের কাছে পাঠিয়ে দিল ছোঁয়া । নিজের ভালোবাসা তো পূর্ণতা পায়নি সে চায় আহনাফের ভালোবাসা পূর্ণতা পাক।।
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান খুব সুন্দর ভাবে শেষ হলো কিন্তু মেঘলা রুম থেকে একবারও বের হলো না।

বিকেলে খুব সুন্দর ভাবে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হলো তারপর সন্ধ্যার দিকে মেহেদী অনুষ্ঠান শুরু হল। মেহেদী অনুষ্ঠান হচ্ছে ছাঁদে।
মহুয়া গিয়ে বুঝিয়ে শুনিয়ে মেঘলা কে নিয়ে আসলো ছাদে। খুব সুন্দর করে মেঘলার হাতে দিয়ে দিল।
রিয়াকে ছোঁয়া মেয়েদি দিয়ে দিল অনেক সুন্দর করে মেহেদী দিতে পারে ছোঁয়া। তারপর রিয়ার হবু জামাই কাছে ভিডিও কল দিয়ে তা দেখালো। রিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে। ছোঁয়া রিয়ার হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে এখান থেকে কেটে পড়লো প্রেমের বিয়ে তাও এত লজ্জা!। অবশ্য বাড়ি কেউ জানে না রিয়া শান্ত ভাইয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

ছোঁয়া মেঘলার হাতের অনেক পপ্রসংশা করলো।
মেঘলা বিনিময় মুচকি হাসলো।
ছোঁয়া বলে উঠলো,’ মহু সুন্দরী আমার হাতে আপনার জাদুর মেহেদী দিয়ে রাঙিয়ে দিবেন পিলিজ.?
ছোঁয়ার বলার স্টাইল দেখে মেঘলা মহুয়া হেঁসে উঠলো।
মহুয়াঃ তুমি আমার থেকে ভালো মেহেদী ডিজাইন পারো।
ছোঁয়া হাত বাড়িয়ে দিলো মহুয়া মেহেদী হাতে নিয়ে ছোঁয়ার হাতে দিয়ে ছিলো। হাত ব্যাথা করছে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো সামিয়া সাজ্জাদ কে জোর করছে হাতে মেহেদী দিয়ে দিবে হাত দেওয়ার জন্য জোর করছে। বেচারা রাগে মুখ লাল করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে আবার কখনো আঁড়চোখে মেঘলার দিকে তাকাচ্ছে।
দরজা দিয়ে শ্রাবণ, নির্জন প্রবেশ করতেই সবাই ওর দিকে তাকালো। শ্রাবনের পেছনে আহনাফ কে দেখে সবাই অবাক হলো।
মহুয়া আহনাফের দিকে তাকিয়ে রইলো আহনাফ তাকাতেই মহুয়া চোখ নামিয়ে নিলো।

আহনাফ গিয়ে রিয়ার সাথে কথা বললো। রিয়া আহনাফকে দেখে ভীষণ খুশি হলো।

সবার সাথে কথা বলে মহুয়ার সামনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ রুমে আসো।’

ছোঁয়া বাদে সবাই কেমন দৃষ্টিতে তাকালো। মেঘলা আহনাফ আর মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
মহুয়াকে উঠতে না দেখে আহনাফ রেগে বলে উঠলো, ‘ তুমি কি চাও সবার সামনে কোলে তুলে নেই। ‘
ভয়ে মহুয়া সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলো। এই লোকের বিশ্বাস নেই।

মহুয়া চুপচাপ ছাঁদ থেকে নেমে গেল।
নির্জন ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো হাতে অর্ধেক মেহেদী দিয়ে বসে আছে। ছোঁয়ার পাশে গিয়ে বসে হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বললো,’ মেহেদী দে..’
ছোঁয়াঃ মেহেদী দিয়ে কি করবি.? আর আমার হাত কেন দরছিস.?
নির্জন বিরক্তি মুখে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তোর হাতটা চুরি করে নিয়ে যাব এবার দে।’
ছোঁয়া কথা না বাড়িয়ে মেহেদী নির্জনের হাতে দিল।
নির্জন খুব মন দিয়ে ছোঁয়ার হাতে মেহেদী পড়াতে শুরু করলো।
মেঘলা ছোঁয়া আর নির্জনের দিকে তাকিয়ে রইলো। সে অবাক হচ্ছে ছোয়ার হাতে নির্জন মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে এখন ওর ও উদ্ভুত একটা ইচ্ছে হলো ” শ্রাবণ যদি ওর পায়ে আলতা পড়িয়ে দিত।! ” এটা কখনো সত্যি হবে না তবে কল্পনা করতে তো দোষ নেই। বাস্তবে না হোক কল্পনায় সে শ্রাবণের হাতে পায়ে আলতা পড়ে নিল।

মহুয়া রাগে কটমট করছে তবে ভেতরে ভেতরে বাহিরে একদম শীতল। সেই কখন রুমে এনে বসিয়ে রেখেছে কিন্তু কিছুই বলছে না। লোকটার সমস্যা কি.??

আহনাফ মোবাইলে কথা শেষ করে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ পাঁচ মিনিটে শাড়ি চেঞ্জ করে সেলোয়ার-কামিজ পড়ে আসেন।’
মহুয়াঃ আপনি এই রুম থেকে বের হোন। এখানে আপনাকে আমাকে এক রুমে দেখলে মানুষ খারাপ ভাববে। আপনার ছোট আম্মু, ফুপিমণি লজ্জিত হবে।

আহনাফ ঘা ছাড়া একটা ভাব নিয়ে বললো,’ আমি নিজের বউয়ের রুমে আছি। কে কি ভাবলো তাতে আমার যায় আশে না। যা বলেছি জলদি করেন।’
মহুয়াঃ শাড়িতে সমস্যা কি.??
আহনাফ রেগে মহুয়ার বাহু চেপে ধরে বলে উঠলো, ‘ গ্রামে আসতে নিষেধ করে ছিলাম। দুই দিন হলো না এখানে এসেছেন এখনি এতো বিয়ের প্রস্তাব আসছে!! কি ভাগ্য আমার বউয়ের নামে বিয়ের প্রস্তাব আসে আমার কাছে।
মহুয়া অবাক হলো ভয় পেয়েও গেল।আহনাফের চোখ লাল মুখ ভয়ংকর হয়ে আছে।
আহনাফ আবার বলে উঠলো, ‘ শাড়ি পড়ে কাকে দেখাচ্ছেন..? শাড়ি কার জন্য পড়েছেন.??’
মহুয়া ভয়ে চুপসে গেল,’ স..সবাই পপড়েছে তাই…’
আহনাফঃ সেই জন্য আপনিও পড়তে হবে!.? নাকি আরও মহিলাদের মাথা নষ্ট করার জন্য এমন সাজ দেখাচ্ছেন.?
মহুয়া ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। যেখানে বউ, গার্লফ্রেন্ড সাজগুজ করলে জামাই,বয়ফ্রেন্ড জেলাস হয় ছেলেরা তাকাবে, বলে ছেলেদের মাথা নষ্ট করার জন্য সাজছো!.? সেখানে ওকে শুনতে হচ্ছে মহিলাদের মাথা নষ্ট করার জন্য সাজছে.? এই লোকের মাথা সত্যি সমস্যা আছে।

আহনাফঃ যাও কাপড় চেঞ্জ কর। আর কাল বিকেলেই আমরা বাড়ি যাচ্ছি।
মহুয়া কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে গেল। বাড়ি গিয়েই ও নিজের মামা মামির কাছে চলে যাবে তারপর মামা মামি যা ইচ্ছে করুক তাও সে চলে যাবে।

___________

রাত গভীর সবাই ঘুমে মগ্ন। গ্রামের দিকে দশটার পর আর কেউ জেগে থাকে না। রাত এখন দুইটা বাজে।

নির্জন, সাজ্জাদ,আহনাফ এক রুমে। এখনো কেউ ঘুমায়নি।

আহনাফ বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ থুর বিয়ের পরও ব্যাচেলার ঘুৃম।’
নির্জন আহনাফের পাশেই ছিল,’ কি ভাই বিয়ে করলা কবে.?’
আহনাফ মোবাইল হাত থেকে রেখে বলে উঠলো, ‘ তোদের ভাবির সাথে দেখা করে আসি। ‘
নির্জন আর সাজ্জাদ এক সাথে বলে উঠলো, ‘ ভাবি!!”

আহনাফ দরজার সামনে এসে কড়া নারলো কয়েক বার। ছোঁয়া চোখ ডলতে ডলতে এসে দরজা খুলে দিলো। এতো রাতে আহনাফ কে দেখে ঘুম উড়ে গেল।

আহনাফ ছোঁয়াকে মহুয়ার কথা জিজ্ঞেস করলো।
~ মহুয়া ঘুমায়।

ছোঁয়া আর কিছু বলার আগেই ঘুম জড়ানো কন্ঠে মহুয়া বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া কে এসেছে.? ‘

আহনাফ রুমে ঢুকে মহুয়াকে রুম থেকে বের হতে বললো।
মহুয়া আহনাফ কে দেখে লাফ দিয়ে উঠে বসলো।
আহনাফঃ জলদি বের হও।
মহুয়াঃ কেন..? কোথায় যাব..?
আহনাফঃ কফি বানাতে….
মহুয়াঃ কিহ্..!!? এতো রাতে কফির জন্য এভাবে ঘুম থেকে তুলেছেন আমাদের.?
আহনাফঃ হুম…
মহুয়াঃ আপনার মাথায় সমস্যা আছে।
আহনাফঃ হুম জানি,তুমি কি বের হবে নাকি কোলে তুলে নিব?

চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-২৮+২৯

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

ছোঁয়া সব শপিং মেঘলার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,’ সবার গুলো তুমি নিজ হাতে সবাইকে দিবে৷ বাড়ির বড় বউ বলে কথা। ‘

মেঘলা লাজুক হাসলো পরক্ষনেই একটু আগের সামিয়ার হাত শ্রাবণের হাতে ছিলো মনে হতেই চোখ মুখ শক্ত করে শ্রাবণের দিকে তাকালো।

________

সবার সব কিছু মেঘলা সবাইকে দিতেই সবাই অনেক অনেক খুশি হলো।

আমেনা বেগম শাশুড়ীর কাছে থাকবে সাথে দেবর, স্বামী যাবে না তাদের জন্য কাউকে থাকতে হবে। সেই জন্য আমেনা বেগম যাবে না।

মেঘলা আমেনা বেগমের দিকে ব্যাগ এগিয়ে দিতেই উনি সাফ সাফ নিষেধ করে দিলেন। উনার প্রয়োজন নেই।

মেঘলা হাসলো। হেঁসে শাশুড়ী সামনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ আর মাত্র এক মাস, এই এক মাস কষ্ট করে আমাকে আর আমার জিনিস গুলোকে সহ্য করে নেন। এইগুলো কোনো অন্যায় পথে আনা টাকার নয় আমার নিজের ইনকামের টাকায়।ভালোবেসে এনেছি। ভালোবাসার জিনিস ফিরিয়ে দিতে নেই।

আমেনা বেগম মেঘলার হাত থেকে ব্যাগটা নিলেন।
মেঘলার চোখে পানি টলমল করছে ।
আমেনা বেগমের হঠাৎ এক উদ্ভুত ইচ্ছে হলো৷ ইচ্ছে করলো মহুয়ার মাথায় হাত রাখতে কিন্তু তিনি তা করলেন না।

_________

সময় থেমে থাকে না। দিন গিয়ে রাত নেমেছে সবাই খাওয়া দাওয়া করে নিজেদের রুমে চলে গেছে।

ছোঁয়া হেলতে দুলতে ছাঁদে গিয়ে ভেতর দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
আজ আকাশে চাঁদ নেই৷ বাহিরে বাতাস নেই, অন্ধকার রাত, নিশ্চুপ চারপাশ ছোঁয়ার চুল ছাড়া।
ছোঁয়া মোবাইলের ফ্লাশ লাইট জ্বালিয়ে রেলিং ঘেঁষে বসলো৷ লাইট বন্ধ করে চোখ বন্ধ করে নিলো৷ দুই চোখে হাজারো স্মৃতি ধরা দিচ্ছে। বুকের ভেতর তুলফাল শুরু হচ্ছে, শূন্যতা চারপাশ ঘিরে ধরেছে। ছোঁয়া ডুকরে কেঁদে উঠলো। আসতে আসতে কান্না বাড়তে লাগলো।

আহনাফ কে সে কখনো ভাইয়ের নজর দেখেনি চেষ্টা করেছি তাও ওর মন কখনো আহনাফ কে ভাই মানতে চায় না। এতো এতো ছেলে থাকতে এই মন কেন পাষাণ পুরুষটির দিকেই গেল!! আজ দুইদিন কেউ জানে কিভাবে ছোঁয়ার রাত, দিন যাচ্ছে!!?
যতোবার মহুয়ার দিকে তাকাচ্ছে হৃদয় পুড়ছে, হিংসে হচ্ছে। আজ তো ওর জায়গায় ছোঁয়া থাকতো! নিজের মনকে বুঝাতে ব্যার্থ এখানে তো মহুয়ার দোষ নেই। মন বলে তাহলে কেন এই মহুয়া আমাদের মাঝ খানে আসলো!.? কেন আপনাকে নিয়ে গেল!.? আমি নিজেকে সামলাতে আর পারছি না আপনি এতো পাষাণ কেন!.? এতো কাছে থেকেও ভালোবাসা বুঝতে পারলেন না.? অনুভব করতে পারলেন না.? আমি তো শুধু রেজাল্টের অপেক্ষায় ছিলাম তারপর আমি নিজেই আপনাকে বুঝিয়ে দিতাম কিন্তু তার আগেই আপনি আমার থেকে দূরে সরে গেলেন!! ছোঁয়া হেঁচকি তুলে কাঁদতে শুরু করলো। এই কান্না যে কেউ দেখে না! ছোঁয়ার কষ্ট যে কেউ বুঝতে পারে না। কেউ বুঝতেও পারবে না, ছোঁয়া যে ছোট থেকে পাক্কা অভিনেত্রী। না হয় এতো ভালোবাসা কিভাবে গোপন রাখলো!?

_____

শ্রাবণ পাঞ্জাবি, শাড়ি আলমারিতে তুলে রাখলো।
মেঘলা একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে নিজের কাজ শুরু করলো। একটু পর পর কল আসছে সেই জন্য ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।

ফাহিম কল দিলো।
মেঘলা সব সময় স্বাভাবিক ভাবে প্রয়োজনীয় কথা বলে ফোন রেখে দেয়। আজ ফাহিম ভয়ে ভয়ে বললো,’ মেডাম একটা কথা বলি..?
মেঘলাঃ হুম বলো..
ফাহিমঃ ম্যাডাম আপনি তো মেয়ে একটু বলবেন কি করলে মেয়েরা খুশি হয়..? কিভাবে মেয়েদের সারপ্রাইজ দিলে ওরা ইমপ্রেস হবে.? বলতে পাড়েন আমি জানতে চাচ্ছি কি করলে একটা মেয়ে একটা ছেলের প্রেমে পড়ে.!?

মেঘলা হাসলো। নিশ্চয়ই এই আবুল ছেলে কোনো মেয়ের প্রেমে পড়েছে।

মেঘলা প্রথম জিজ্ঞেস করলো, ‘ কি ব্যাপার ফাহিম তুই কি কারো প্রেমে পড়েছিস!!.??
ফাহিম ভয় পেলেও সাজ্জাদের মুখের দিকে তাকিয়ে ভয় গিলে বলে উঠলো, ‘ জ…জ্বি ম্যাডাম।’
মেঘলা খুব সুন্দর করে ফাহিম কে বুঝিয়ে দিলো কি করলে, কিভাবে করলে মেয়েরা সহজে পটে যাবে।

ফোন রেখে ফাহিম রেগে সাজ্জাদের দিকে তাকালো সাজ্জাদ ফাহিমের গাল টেনে বলে উঠলো, ‘ আমাদের বিয়েতে সবচে প্রথম দাওয়াত দিব তোমাকে,ফ্রী তে খাবারও দিব, সাথে আমার ছোট শালিটাকেও দিব।’
ছোট শালির কথা শুনতেই ফাহিম লজ্জা পেল।

শ্রাবণ বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে কম ব্যালকনির দিকে কান পেতে আছে। মেঘলা এতো কার সাথে কথা বলে!.?? ওর বয়ফ্রেন্ড আছে.??

মেঘলা কথা শেষ করে রুমে এসে পানি খেয়ে দরজা খুলে বের হতে নিলে শ্রাবণ পেছন থেকে থামতে বললো।
মেঘলা থামলো না নিজের মতো রুম থেকে বের হয়ে গেল।
শ্রাবণ অবাক হলো এই প্রথম মেঘলা ওর কথা শুনেনি,ওর ডাকে সারা দেয়নি। ওকে ইগ্নোর করছে।

মেঘলা প্রায় আধা ঘণ্টা পর রুমে আসলো।
শ্রাবণ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে মেঘলার কাছে কফি চাইলো।
মেঘলা শুনেও না শোনার মতো বালিশ ঠিক করে ওয়াশরুমে গেলো, ফ্রেশ হয়ে এসে চুল আঁচড়ে রুম থেকে বের হতে নিলে শ্রাবণ মেঘলার হাত ধরে নিজের সামনে দাঁড় করায়।
মেঘলা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
শ্রাবণঃ কি হয়েছে.?? ইগ্নোর কেন করছো.??
মেঘলা কিছু না বলে হাত ছাড়িয়ে নিতে চায় শ্রাবণ কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় জমে যায় মেঘলা, বুকের ভেতর ধুকপুক বাড়ে, শরীরও কি কাঁপছে!.? এই প্রথম শ্রাবণ এভাবে স্পর্শ করেছে।

মেঘলা ছুটতে চাইলে শ্রাবণ আরও নিজের সাথে চেপে নিচ্ছে।

মেঘলা শান্ত হয়ে গেল, ছুটাছুটি করার চেষ্টা বন্ধ করে শ্রাবণের দিকে তাকালো।
শ্রাবণ মেঘলা দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
মেঘলাঃ ছা…ছাড়ুন আমাকে।
শ্রাবণঃ কি হয়েছে.? আমাকে ইগ্নোর কেন করছো.?
মেঘলাঃ আমি পাত্তা দিয়ে ছিলাম কবে যে আপনাকে ইগ্নোর করছি!.?
শ্রাবণঃ তাহলে এখন আমার তোমার থেকে পাত্তা পেতে হবে..??
মেঘলাঃ ছাড়তে বলছি!
শ্রাবণঃ ধরতেও তো বলনি কিন্তু আমি ধরে রেখেছি৷ এখন চুপচাপ লক্ষি বউয়ের মতো নিচে গিয়ে কফি বানিয়ে নিয়ে আসবে।

মেঘলা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো, ‘ কফি চাই.? তাহলে নিজের গার্লফ্রেন্ড কে ডাকুন আমি কারো কাজের লোক নই, আর না কারো……
শ্রাবণঃ থেমে গেলে কেন বলো.? ভালোই লাগছিল শুনতে..।
মেঘলাঃ আপনি আমাকে ছাড়বেন নাকি আমি চিৎকার দিব!.?
শ্রাবণঃ ভয় দেখাচ্ছ.? আমি আমার বিয়ে করা বউকে ধরে রেখেছি, দাও চিৎকার দাও…আর আমার গার্লফ্রেন্ড আসলো কোথায় থেকে.?
সাথে সাথেই শ্রাবণের মোবাইল বেজে উঠলো।

শ্রাবণ আঁড়চোখে একবার মেঘলার দিকে তাকালো।

মেঘলা রাগী দৃষ্টিতে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।

মেবাইলের স্কিনে খুব সুন্দর করে ” সামিয়া” লেখা।

শ্রাবণ মেঘলা রিয়াকশন দেখে মনে মনে হাসলো৷
মেঘলার কোমর জড়িয়ে ধরে রেখেই কল রিসিভ করে কানে দিল।

~ হ্যাঁ সামিয়া বলো…?
………
~ কি বলছো সত্যি.?
………..
~ ঠিক আছে সময়মতো চলে আসবে।
…………
~ কি পড়ে আসবে তাও বলে দিতে হবে.??
…………..
~ শাড়ি সাথে চুলগুলো ছেড়ে কানে ফুল হাতে গোলাপ।

মেঘলা রাগে বিড়বিড় করে বলে উঠলো ” আল্লাহ এই মুহূর্তে আমার কান দুইটা বন্ধ করে দাও আমি এইসব আর নিতে পারছি না। আমি শাড়ি পড়ি একবার ফিরেও তাকায় না আর গার্লফ্রেন্ড কে কি সুন্দর শিখিয়ে দিচ্ছে হারামি একটা ”

শ্রাবণ কান থেকে ফোন সরিয়ে বলে উঠলো, ‘ কিছু বললে.??’
মেঘলাঃ কই না তো।

~ হ্যাঁ সামিয়া বাকিটা একটু পর আমি কল দিয়ে বুঝিয়ে দিব।
………

কল রেখে মেঘলার দিকে তাকাতেই টলমল চোখ জোরার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তোমার চোখে পানি!!’
মেঘলা এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ চোখে কি যেন পড়েছে.’
শ্রাবণঃ দেখি আমার দিকে তাকাও।
মেঘলাঃ না, প্লিজ এবার তো ছাড়েন।
শ্রাবণঃ এদিকে তাকাতে বলেছি।
মেঘলা শ্রাবণকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

শ্রাবণ মেঘলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসে। ঠিক এতোটা আমারও জ্বলে যখন তোমার আশেপাশে সাজ্জাদ থাকে।

_______

মহুয়া সেই কখন থেকে ছোঁয়া কে খুঁজছে কিন্তু কোথাও ছোঁয়া নেই।
ছোঁয়াকে খুঁজতে নিরুপমার রুমে যাওয়ার আগেই একটা হাত টান দিয়ে ওকে রুমে নিয়ে গেলো।
মহুয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই দরজা বন্ধ করে মহুয়াকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।

মহুয়া ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। পারফিউমের ঘ্রাণ নাকে আসতেই বুঝতে পারলো এটা আহনাফ।

মহুয়া ধীরে ধীরে চোখ খুলে আহনাফের দিকে তাকালো। কিন্তু রুম একদম অন্ধকার। মহুয়া অন্ধকার ভীষণ ভয় পায়। ভয়ে আহনাফের শার্ট খামচে ধরলো।

আহনাফ রেগে বলে উঠলো, ‘ সকালে আমার কথার উপর কথা বলার সাহস কে দিয়েছে তোমাকে!.?? বার বার বলেছি আমার কথার উপর কথা বলবে না।
মহুয়াঃ আমি চাই না বিষয়টা কেউ জানুক।
আহনাফঃ কতোদিন.?
মহুয়াঃ সারাজীবন।
আহনাফঃ বিয়ে বাড়ি থেকে সবাই আশার পরেই সবটা জানিয়ে দিব।
মহুয়াঃ বিয়ে বাড়ি থেকে এসেই আমি চলে যাব আর আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিব।
আহনাফ রেগে দেওয়ালে একটা ঘুষি মেরে বলে উঠলো, ‘ একবার বলেছো দ্বিতীয় বার এই চিন্তা করলেও হাত পা ভেঙে ঘরে সাজিয়ে রাখবো।
মহুয়াঃ আপনি আমার সাথে এমনটা করতে পারেন না। জোর করে বিয়ে করেছেন। এখন জোর করে রাখতে পারবেন না।
আহনাফঃ আমি চাইলে সব পাড়ি।
মহুয়াঃ আমি সবার চোখে খারাপ হতে চাই না। উনারা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে আমি তাদের বিশ্বাস ভেঙে তাদের বাড়ির ছেলের বউ হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারি না। আমি তাদের কষ্ট দিতে চাই না। আর আমার আপনাকে পছন্দ না, আপনারও আমাকে পছন্দ না
আহনাফঃ বউ হওয়ার স্বপ্ন দেখতে কে বলেছে তুমি বাস্তবে বউ।
মহুয়াঃ আপনাকে এখন আমার সহ্য হচ্ছে না, আমার সামনে থেকে দূরে যান। আপনাকে দেখলেই আমার খু’ন করতে ইচ্ছে হয়৷ সব পুরুষ এক।
আহনাফঃ সেই জন্যই তো অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছি জেনো আমাকে দেখতে না পাও। খু’ন করতে করতে এখন আমার মতো নিষ্পাপ, ভদ্র, ইনোসেন্ট ছেলেকেও ছাড় দিচ্ছ না! এটা ঠিক না মেহু আমি তোমার বর। আমাকে খু’ন করলে তুমি বাসর রাতের আগেই বিধবা হয়ে যাবে। আমাদের ছেলে মেয়েদের কি জবাব দিবে!.?
মহুয়া আহনাফের কথা শুনে ভয় পেয়ে গেলো। খু’ন করতে করতে মানে.?? আহনাফ কি সব জেনে গেছে.?
আহনাফ আবার বলে উঠলো, ‘ আচ্ছা আমাকে কিভাবে খু’ন করতে চাও বলো.? আমি হেল্প করছি।
মহুয়া নিজের অজান্তেই বলে উঠলো, ‘ বুকের বা পাশে ছু’রি……

আর কিছু বলার আগেই আহনাফ বলে উঠলো, ‘ এ্যাঁই একদম না মেহু এখানে সব সময় তুমি থাক। এখানে আঘাত করলে আমি না তুমি ব্যাথা পাবে।

মহুয়া থমকে যায়, নিঃস্বাস বুঝি বন্ধ হয়ে আসবে!.? ছোট একটা কথা কিন্তু এটার গভীরতা কতোটুকু জানা নেই।
মহুয়াঃ আমি আপনাকে ঘৃণা করি।
আহনাফঃ প্লিজ ঘৃণা করো তবে ভালোবেস না। ভালোবাসলে আমাকে শেষ করতে পারবে আর ঘৃণা করলে নিজেই শেষ হয়ে যাবে।
মহুয়াঃ আমি শেষ হবো.?
আহনাফঃ হ্যাঁ.
মহুয়াঃ কিভাবে.?
আহনাফঃ সময় বলে দিবে।
মহুয়াঃ লাইট জ্বালান আমার অন্ধকার ভয় করে।
আহনাফঃ যার জীবন অন্ধকার সে অন্ধকার ভয় পায়!? অবাক হলাম।
মহুয়া অবাক দৃষ্টিতে অন্ধকারে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো।
আহনাফঃ এভাবে তাকাবে না। তোমার এই বড় বড় চোখের চাহনি এই অন্ধকার রুমে ডাইনীর মতো লাগছে।
মহুয়াঃ এই অন্ধকারে আমার চোখ কিভাবে দেখছেন.??
আহনাফঃ এতো প্রশ্ন কেন করো.? চুল ছেড়ে রাতে বাড়িতে হাঁটবে না হঠাৎ দেখতে ডাইনীদের মতো লাগে ।
মহুয়াঃ আমি জানি আপনার আমার মতো লম্বা চুল, বড় বড় চোখ মেয়েদের পছন্দ না তাই বলে বার বার ডাইনী বলবেন না।

আহনাফঃ তুমি একদিন চুল ছেড়ে, চোখে কাজল দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখবে তোমাকে দেখতে কেমন লাগে সম্ভব হলে সামনে একটা পাখা ধরবে চুল উড়বে বড় বড় চোখ একবার চোখ রাঙিয়ে তাকালে ভয়ে যে কেউ হিসু করে দিবে। বলেই আহনাফ হাসলো।

মহুয়াঃ আপনি ভূতের মুভি একটু বেশি দেখেন মনে হয়.?
আহনাফঃ হুম প্রচুর প্রতি রাতে দেখি, আগে দেখতাম মুভি আর এখন দেখি ছবি।
মহুয়াঃ দুইটা তো একি,ছবি মুভি।
আহনাফঃ নাহ্ দুইটা এক না। একটা মুভি আরেকটা কারো ছবি। কয়েকদিন পর থেকে আমার রুমেই হরর মুভির ডাইনী দেখতে পাব তাই মুভি দেখা বন্ধ করে দিয়েছি আপাতত তার ছবি দেখি।

মহুয়া ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ প্লিজ লাইট জ্বালান আমার ভয় করছে..’
আহনাফঃ ঠিক আছে আগে হাত দাও।
মহুয়াঃ অন্ধকারে.?
আহনাফঃ হুম।
মহুয়া ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো, ‘ হাত দিয়ে কি করবেন.?’
আহনাফঃ খু’ন করবো।
মহুয়াঃ কথায় কথায় খু’নের কথা কেন বলেন!.?
আহনাফঃ কেন ভয় পাও.?
মহুয়া থমথমে মুখে বলে উঠলো, ‘ না!’
আহনাফ মহুয়ার হাতে কিছু একটা দিয়ে দরজা খুলে চলে গেল।
মহুয়া জলদি লাইট জ্বালিয়ে আশেপাশে তাকালো আহনাফ নেই,চলে গেছে। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো বেলীফুলের মালা।
বেলীফুলের মালা দেখেই মনে পড়ে গেল সেই দিনের কথা। আহনাফ কে না বলে ওর ব্যালকনি থেকে বেলীফুলের মালা ধরে ছিল বলে কতোগুলো কথা শোনালো আর সেই পুরুষ আজ নিজেই বেলীফুলের মালা এনে দিচ্ছে।

___________

ছোঁয়া কাঁদতে কাদতে রেলিংয়ে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। রেলিংয়ের আরেক পাশ থেকে ধীরে হেঁটে একজন এসে ছোঁয়ার পাশে বসলো। গিটার পাশে রেখে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ একতরফা ভালোবাসা গুলো ভীষণ কষ্টের হয় তাই নারে ছোঁয়া!.?? এই যে তোর পাষাণ পুরুষের মতো তুইও পাষাণী হয়ে আমার ভালোবাসা বুঝতে পারিস না!…..

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২৯
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

সময় থেমে থাকে না, রাত গিয়ে সুন্দর একটা সকালের দেখা মিললো। সূর্যের আলো চোখে পড়তেই হাত চোখের উপর রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলো কিন্তু না সূর্য মামা আজ সকাল সকাল ভীষণ তেজ নিয়ে উঠেছে বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো ছোঁয়া। আশেপাশে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো ধীর পায়ে হেঁটে ছাঁদ থেকে নিচে নেমে গেল।

ছোঁয়া নেমে যেতেই দেওয়ালের ওপর পাশে বসে থাকা নির্জন মুখের উপর থেকে জ্যাকেট নামিয়ে বলে উঠলো ” মহারাণীর ঘুম ভেঙেছে, এই সকালটার মতো প্রতিটা সকাল আমার হোক।”

___________

সবাই রেডি হয়ে নিচে আসলো। সাজ্জাদ এসে সবার সাথে কথা বলে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনাকে শাড়িতে বেশি ভালো লাগে। এমন না যে সেলোয়ার-কামিজে ভালো লাগে না। আপনি মেয়েটাই এমন যা পড়েন তাতেই মুগ্ধ না হয়ে থাকা যায় না। ‘

মেঘলা হঠাৎ এমন কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে নেয়। মুখে হাসি টেনে বলে উঠলো ” ধন্যবাদ ”
বিপরীতে সাজ্জাদ কিছু না বলে মেঘলার দিকে তাকিয়ে হাসলো। বলতে চেয়েছিল অনেক কিছুই কিন্তু এখনো যে সময় আসেনি। সঠিক সময়ের অপেক্ষায়।

মহুয়া চুপচাপ সবার সামনে এসে দাঁড়ালো।

সবাই ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ তুমি রেডি হওনি..??’
মহুয়াঃ না, আসলে আমার শরীর ভালো লাগছে না। আপনারা চলে যান।’

নির্জন বাড়ি থেকে বের হয়ে মহুয়ার সামনে এসে বলে উঠলো, ‘ ক্রাশ মহুয়া সুন্দরী তুমি যদি আমাদের সাথে না যাও তাহলে কোনো মজাই হবে না, কতো আশিক হার্ট মিস করা থেকে বেঁচে যাবে এটা কিন্তু আপাতত আমি চাচ্ছি না জলদি রেডি হয়ে আসো। এতো সুন্দরী নারী, মেয়ে, বালিকা, মহিলা সরি মহিলা হবে না জাতির ক্রাশ বাংলাদেশে আছে তা গ্রামের লোকজনও দেখুক সাথে কিছু ঘটকদের পেটে ভাত পড়বে।
মহুয়াঃ ভাইয়া আমি….
নির্জন মহুয়ার সামনে এসে বলে উঠলো, ‘ ক্রাশকে ছাড়া আমরা কেউ যাব না তাই না গায়েস…!???

সবাই পেছন থেকে বলে উঠলো, ” একদম, তোমাকে ছাড়া আমরা কেউ যাব না ”

মহুয়ার রাগে মন চাচ্ছে আহনাফের ঘাড় মটকে দিতে। এই লোক নিজেও যাবে না আর ওকেও ব্লাকমেইল করছে না যাওয়ার জন্য। এটা তো কাউকে বলতেও পারব না।

ছোঁয়াঃ এই তোর আবার কি হলো মহুয়া!.? জলদি রেডি হ যা।
মহুয়াঃ আমি বললাম তো যাব না ছোঁয়া আমার শরীর খারাপ লাগছে।
ছোঁয়া রেগে বলে উঠলো, ‘ তাহলে হসপিটাল চল।’
মহুয়া ক্লান্ত চোখে ওর দিকে তাকালো।
মেঘলাও বলতে শুরু করলো চলো সবাই বলছে। তুমি একা একা বাসায় কেন থাকবে.? ভালো লাগবে চল।

মহুয়া বাধ্য হয়ে রেডি হয়ে ওদের সাথে বের হলো।

দাদু, নিরুপমা, নির্জন, ছোয়া এক গাড়িতে। অন্য গাড়িতে হালিমা বেগম, মহুয়া, মেঘলা, সাজ্জাদ।

সাজ্জাদ সামনে বসলো আর তারা পিছে।
সাজ্জাদ এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাইলো না। পেছনে ফিরে বলে উঠলো, ‘ আন্টি আমাকে ড্রাইভার বানিয়ে দিলেন.? এটা ঠিক না আন্টি আমি আপনার ছেলের মতো, ছেলের মতো কি আমি তো আপনার ছেলে..। ‘

হালিমা বেগম সাজ্জাদের ইনোসেন্ট মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এই বাবা না না আমি আসছি।’
সাজ্জাদঃ সামনে আপনার খারাপ লাগতে পারে আন্টি আপনি পেছনে শান্তিতে বসে ঘুমান।
হালিমা বেগম সামনে বসতে পারেন না মাথা ঘুরায়। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে সামনে যেতে বলার আগেই সাজ্জাদ বলে উঠলো, ‘ মেঘলা আপনি সামনে চলে আসেন।’

মেঘলা অবাক হলো সাথে বিরক্তও। এই ছেলের ব্যাবহার একদম ঠিক লাগছে না।
হালিমা বেগম মেঘলাকে বলতেই মেঘলা তৃক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সাজ্জাদের দিকে। এই ছেলের থেকে সব সময় দূরে থাকতে হবে।

সাজ্জাদের মনে খুশিতে লাড্ডু ফুটছে।এটাই তো চেয়ে ছিলো।

মেঘলা গাড়ি থেকে নেমে সামনের সিটে বসার আগেই পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো ” থামেন!!এদিকে আসেন।”

শ্রাবণের কন্ঠ শুনেই অবাক হয়ে মেঘলা পেছনে ফিরে তাকালো।
শ্রাবণ গাড়ির কাছে এসে বলে উঠলো, ‘ আপনারা চলে যান আমি আমার বউকে নিয়ে আসছি।’

সাজ্জাদ রেগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। হালিমা বেগম হেঁসে বললো নিয়ে যা সাবধানে আসবি।

মহুয়া এসে সামনে বসলো। সাজ্জাদ গাড়ি স্টার্ট দিলো৷

মহুয়াঃ আস্তে গাড়ি চালান ভাইয়া।
সাজ্জাদঃ সরি বইনা।

________

গ্রাম এখন আর আগের মতো নেই। ডিজিটালের ছুঁয়া লেগেছে গ্রামেও। আগের মতো ভাঙা রাস্তা, অশিক্ষিত সমাজ তেমন নেই। এখন রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে, মাটির বাড়ি ভেঙে কাঠের বাড়ি তৈরি হয়েছে, কাঠের বাড়ি হয়েছে বিল্ডিং, সারা রাস্তা মহুয়া আর সাজ্জাদ প্রচুর গল্প করেছে, সাজ্জাদ গান লাগিয়েছে দুইজন গানের সাথে তাল মিলিয়ে গেয়েছে প্রচুর মজা করেছে। প্রথম প্রথম সাজ্জাদ রেগে থাকলে মহুয়ার সামনে তা বেশি সময় থাকতে পারলো না এটা সেটা জিজ্ঞেস করতে করতে ফ্রী হয়ে গেল। মহুয়ার প্রতি কেমন একটা মায়া কাজ করে। সাজ্জাদ মহুয়াকে বোন বানিয়ে নিয়েছে আর মহুয়া পেয়েছে একটা ভাই।

পাকা রাস্তা পেরিয়ে একটা খুব সুন্দর বাড়ির সামনে গিয়ে থামলো গাড়ি।

সবাই বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ভেতর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসলো কিছু মহিলা, বাচ্চা, মেয়ে।

সবার সাথে ভেতর গেল মহুয়া। ছোঁয়া মহুয়ার থেকে বেশ দূরে দূরে থাকছে। মহুয়া গিয়ে ছোঁয়ার হাত ধরে বলে উঠলো, ‘ কি হয়েছে.? তুমি আমার থেকে দূরে দূরে থাকছো কেন.??’
ছোঁয়া কিছু বলার আগেই এক মেয়ে এসে ছোঁয়ার বুকে জাপ্টে পড়লো। তাল সামলাতে না পেরে ছোঁয়া পড়ে যেতে নিলে নির্জন পেছন থেকে ছোঁয়ার কোমর দু-হাত ধরে সামনের দিকে ধরলো।

~ ছোঁয়া কেমন আছিস পিচ্চি.?
ছোঁয়াঃ রিয়া আপু এখন আমাকে ছাড়ো না হলে এতোক্ষন ভালোই ছিলাম এখন কোমর ভেঙে বসে থাকবো।

রিয়া ছোঁয়াকে ছেড়ে দাঁড়ালো।
ছোঁয়া নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো ” ধন্যবাদ, জীবনে আজ একটা ভালো কাজ করলি না হলে এতোক্ষনে আমার কোমর ভেঙে, কোমর ভাঙা মেয়ে হয়ে যেতাম।বিয়ে বাড়িতে এসে ঘরের কোনে বসে থাকতাম ”
নির্জনঃ তাতে ভালোই হতো। তোর এই পেত্নী চেহারা দেখা থেকে কতো ছেলে বেঁচে যেত। বলেই সাজ্জাদকে নিয়ে উপরে চলে গেল নির্জন।

ছোঁয়া রেগে নির্জনের দিকে তাকিয়ে রইলো। রিয়া মহুয়ার দিকে তাকাতেই ছোঁয়া বলে উঠলো, ‘ আমার বোন মহুয়া। ‘
রিয়াঃ তোর বোন মানে.??
ছোঁয়া মহুয়ার হাত ধরে বলে উঠলো, ‘ রক্তের সম্পর্কই সব না আত্মার সম্পর্কই আসল।’
রিয়াঃ আচ্ছা, আচ্ছা আর জ্ঞান দিতে হবে না আস্তে আস্তে পরিচয় হয়ে যাবে এখন রুমে চল।

শ্রাবণ বাইক থামালো বাড়ির সামনে এনে।
মেঘলা রেগে তাকিয়ে আছে শ্রাবণের দিকে।
শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো ” ভালো লাগেনি মেঘরাণী..? আমি জানি আমি অনেক ভালো ড্রাইভার….

মেঘলা রাগে কিছু বলতে পারছে না।
শ্রাবণ বউ নিয়ে এসেছে শুনেই সবাই আবারও বউ নিতে গেইটে আসলো।
শ্রাবণ সুন্দর করে মেঘলার ঘোমটা টেনে দিয়ে মেঘলার হাতটা ধরে হাঁটতে শুরু করলো। মেঘলা রাগে চুপচাপ হাঁটতে লাগলো….. শুধু একবার সুযোগ পাক সব সুদে-আসলে ফিরিয়ে দিবে..।

চলবে…

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-২৬+২৭

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২৬
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

” মেঘ আপনি এখানে…?”

মেঘলা বিরক্ত হলো এই সময় সাজ্জাদকে এখানে দেখে। তবুও মুখে জোর করে হাসি ফুটালো।

সাজ্জাদঃ বললেন না তো! এতো রাতে এখানে কেন.??
মেঘলা ঘাবড়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো” অনেক রাত হয়ে গেছে বুঝি..?”
সাজ্জাদঃ আপনার কাছে মোবাইল বা ঘড়ি নেই..?
মেঘলাঃ আসলে আমি মোবাইল ব্যাবহার করতে পারি না আর ঘড়ির টাইম চিনি না।
সাজ্জাদঃ ওহ্ আচ্ছা, বেপার না আমি শিখিয়ে দিব সব।
মেঘলাঃ জ্বি এখন আমি আসি।
সাজ্জাদঃ এখানে কেন এসেছেন..? মনে হচ্ছে সিআইডি অফিস থেকে বের হলেন।
মেঘলাঃ আসলে একটা কেইসে আমাকে একটু দরকার ছিল।
সাজ্জাদঃ আপনাকে? কিন্তু কেন.?
মেঘলাঃ আসলে……. আমার বাসায় যেতে হবে উনি নিশ্চয়ই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
সাজ্জাদ অন্য দিকে ফিরে হাসলো। মেঘলা যখন জানবে মেঘলা আর শ্রাবণের সম্পর্কের কথা সাজ্জাদ খুব ভালো করেই জানে নিশ্চয়ই অবাক হবে।

মেঘলা মাথার কেপ টেনে চোখের কাছে এনে মাথা নিচের দিকে করে পকেটে হাত দিয়ে হাটতে শুরু করলো।

দূর থেকে সাজ্জাদ তাকিয়ে কিছু সময় মেঘলার যাওয়া দেখলো। কোনো মেয়েকেও এমন লোকে এতো সুন্দর লাগতে পারে সাজ্জাদের জানা ছিল না সে দৌড়ে মেঘলার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

মেঘলা দেখেও দেখলো না। এখন সে একটু একা রাস্তায় হাঁটতে চাচ্ছে।

সাজ্জাদঃ আপনি তো অনেক দ্রুত হাঁটতে পারেন।
মেঘলাঃ হুম, হাঁটতে হাঁটতে অভ্যাস হয়ে গেছে।
সাজ্জাদঃ তাহলে চলুন এই নির্জন রাস্তায় হাঁটার রেস লাগাই!.?
মেঘলাঃ আজ নয়।
সাজ্জাদঃ আজ প্লিজ, এতো সুন্দর একটা রাত। এভাবে চুপচাপ হাঁটতে ইচ্ছে করছে না।
মেঘলা সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে হাসলো।
মেঘলাঃ চলুন।
সাজ্জাদ খুশিতে মাথা ঝাঁকিয়ে মেঘলার দিকে তাকালো।

রাস্তার মাঝে দূরত্ব রেখে দাঁড়ালো সাজ্জাদ আর মেঘলা।

মেঘলাঃ যে আগে বাড়ির সামনে যেতে পাড়বে সেই আজকের বিজয়ী।

সাজ্জাদঃ আর যে বিজয়ী হবে তার জন্য..?
মেঘলা কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো, ‘ তার একটা ইচ্ছে পূরণ করা হবে।”

_____________

ছোঁয়া ছাঁদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো নির্জন ছোঁয়া দেখেও দেখলো না আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আজকের আকাশটা এতো অন্ধকার কেন.??”
নির্জন ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে হাসল। মেয়েটা অল্পতেই ইমোশনাল হয়ে যায়।
নির্জনঃ তোর চোখ অন্ধকার সেই জন্য সব কিছু অন্ধকার লাগছে।

ছোঁয়াঃ সর তুই।
নির্জন ছোঁয়ার হাতে হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,’ ওই দূরের চাঁদের মতো আমার পাশেও এক চাঁদ মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। এটা কিন্তু ঠিক না ছোঁয়া তোর জন্য আজকের আকাশটা অন্ধকার হয়ে আছে এই হাস্যজ্বল মুখে আমাবস্যা মানায় না।
ছোঁয়াঃ আমি কোনো চাঁদ নই।
নির্জনঃ তাহলে তুই কি..?
ছোঁয়াঃ আমি মানুষ।
নির্জনঃ না তুই পেত্নী।
ছোঁয়া রেগে বলে উঠলো, ‘ তাহলে তুই পেত্নীর জামাই জ্বীন।
নির্জনঃ ভুল বললি জ্বীন হলো পরীর জামাই।
ছোঁয়া রেগে আরেকটা বললো তো নির্জন বলছে আরেকটা ঝগড়া বাড়ছো কমছে না, তবে এই ঝগড়ায় রাগ ঘৃণা নেই আছে শুধু জিতার পালা…

শ্রাবণ ব্যালকনি থেকে রাস্তার দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর একের পর এক সিগারেট শেষ করছে।
রাস্তার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে মেঘলার। নিজের পরিবর্তনে সে নিজেই অবাক হচ্ছে। একটা মেয়ের জন্য সে কাজ,ঘুম ফেলে রাস্তার পানে চেয়ে চেয়ে রাত কাটাচ্ছে!!

ঘড়ির দিকে তাকালো রাত ১টা বাজে। এখন তো টেনশন হচ্ছে। মেয়েটা কোনো বিপদে পড়ল না তো!..?কোথায় এখনো.? খুব রাগ হলো মন তো চাচ্ছে!! নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলে উঠলো ” কাল থেকে এই মেয়ের বাহিরে যাওয়া বন্ধ। ”

মোবাইল পকেটে রেখে আবার রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলো। দূর থেকে কাউকে আসতে দেখে সিগারেট নিচে ফেলে তাকালো। মেঘলাকে চিনতে একটুও ভুল করলো না। এই কয়দিনে মেয়েটার হাঁটা, কথা বলার ধরন, তাকানো, রাগ, অভিমান সব শ্রাবণ চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে পারে।

মেঘলা গেইটের সামনে এসে থামলো। দশ মিনিট পর সাজ্জাদ এসে দাঁড়ালো মেঘলার পাশে। শ্রাবন মেঘলার সাথে সাজ্জাদকে দেখে তাকিয়ে রইলো। ওরা হেঁসে হেঁসে কথা বলছে আর এই সিগারেটের আগুনের ধোঁয়ার মতো শ্রাবণের ভেতর জ্বলছে, কিন্তু কেন!!..? মেঘলার আশেপাশে সাজ্জাদকে কেন শ্রাবণের সহ্য হয় না..? কেন এতো জ্বলে.??

শ্রাবণ মেঘলার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এতোক্ষনের এতো চিন্তা এক মুহুর্তেই রাগে পরিনত হলো।

নির্জন ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে রেগে বলে উঠলো, ‘ এতো বকবক কিভাবে করছ.?? সাথে আমার চুল গুলো তো অর্ধেক শেষ করে দিলি।’
ছোঁয়াঃ প্রথম তুই আমার চুল কেন দরলি..?
নির্জনঃ আমি তো আস্তে করে টান দিলাম।
ছোঁয়াঃ হাতির মতো হাত আবার বলে আস্তে করে টান দিছি সর সামনে থেকে।
নির্জনঃ আগে সরি বলে মাফচা।
ছোঁয়াঃ জীবনেও না।
নির্জন ছোঁয়ার ছোট শরীর টাকে কোলে তুলে নিল।
ছোঁয়াঃ এ্যাঁই এ্যাঁই নির্জন নামা বলছি।
নির্জনঃ আমি এখন তোকে একদম ছাঁদ থেকে ফেলে দিব।
ছোঁয়াঃ নাএএএএএএএএএএ..
নির্জন ছোঁয়ার মুখ চেপে ধরে বলে উঠলো,’ চুপ,একদম চুপ, মাফ চাইলে ছেড়ে দিব।’
ছোঁয়া একবার ছাঁদ থেকে নিচের দিকে তাকালো।
নির্জনঃ জলদি কর আমি একটা আটার বস্তা কে বেশিক্ষন নিয়ে রাখতে পারবো না।
ছোঁয়াঃ কিইই!! আমি আটার বস্তা..?
নির্জনঃ একটু কম করে খাবি..
ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে নির্জনের দিকে তাকালো।
নির্জনঃ আজ কি আমার কোল থেকে নামার ইচ্ছে নেই.??
ছোঁয়াঃ সরি..
নির্জন কান উপরের দিকে করে বললো,’ আবার বল শুনতে পাইনি!!..’
ছোঁয়াঃ সরিইই…
নির্জনঃ সুন্দর করে বল।
ছোঁয়া দাঁতের সাথে দাঁত চেপে কিছু বলার আগেই নির্জন বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া গেইটের দিকে তাকা।’

ছোঁয়া রাগি চোখে নির্জনের দিকে তাকিয়ে গেইটে তাকালো। মুহূর্তেই চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। খুশিতে নিজের অজান্তেই নির্জনের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিলো৷

নির্জন থমকে গেল। আধো অন্ধকারে তাকিয়ে রইলো ছোঁয়ার হাস্যজ্বল মুখের দিকে…

আহনাফের পিছু পিছু মেঘলা বাসায় ঢুকলো। এখন বাসার সবাই গভীর ঘুমে..
মেঘলা রেগে থাকলেও ভয়ে আহনাফ কে কিছু বলতে পারছে না আর না পারছে কিছু করতে।মন চাচ্ছে ঠিক বুকের বা পাশে চা*কু ঢুকিয়ে দিতে। কিন্তু মন চাইলেও সেই সাহস নেই মহুয়ার। সে এই পুরুষের চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারে না আর বুকে চা*কু ঢুকাবে.!!.??’

মহুয়া আহনাফের পেছনে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এমনিতেই বেশি কথা বলার জন্য একটা থাপ্পড় খেয়েছে আর কোনো কথা সে ভুলেও বলবে না।
আহনাফ পেছন ফিরে ব্যাগ মহুয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে উঠলো, ‘ কাল সব চলে আসবে নিজের রুমে যাওও.. আর তুমি চাইলে আমি কাল সবটা সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই.. আর তুমি না চাইলেও জানাতে চাই এবং জানাব’
মহুয়া রোবটের মতো ব্যাগ হাতে নিয়ে উপরের দিকে যাচ্ছে। আহনাফ পেছন থেকে ডাকলো।
মহুয়া থামলো কিন্তু আহনাফের দিকে ফিরলো না। আহনাফ কিছু বলার আগেই উপরের রুম থেকে বিরাট এক শব্দ আসল।
আহনাফ মহুয়া দুইজন উপরে তাকিয়ে দেখলো শ্রাবণ রেগে নিজের দরজায় লাথি বসিয়ে হনহন করে ছাঁদের দিকে চলে যাচ্ছে ।
ছোঁয়া ছাঁদ থেকে নামছে শ্রাবণকে দেখে থামলো। অবাক হয়ে শ্রাবনের দিকে তাকালো। দেখেই বুঝা যাচ্ছে প্রচুর রেগে আছে৷
শ্রাবণ ছোঁয়ার দিকে না তাকিয়ে ছাঁদে চলে গেল৷
ছোঁয়া ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো,’ আমাদের বাড়ির ছেলেদের সমস্যা কি!.?? এরা এখনি ভালো তো এখনি রেগে বোম।

ছোঁয়া প্রথম প্রথম কিছু সময় একটু রেগে থাকার ভান করলো। মহুয়া জড়িয়ে ধরতেই সব শেষ ।
ছোঁয়াঃ তুমি আর যাচ্ছ না তো..? দেখ মহুয়া আমি আর তোকে ভুলেও যেতে দিব না।
মহুয়া হাসলো। ছোঁয়ার পাগলামি দেখে মহুয়ার নিজেকে খুব মূল্যভান কিছু মনে হচ্ছে আজ।

ছোঁয়াঃ ভাইয়াকে তো অনেক গুলো ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।
আহনাফের কথা উঠতেই হাসি উড়ে গেল।
মহুয়া থমথমে মুখে বলে উঠলো,’ ওই লোকের নামও আমার সামনে নিবে না ছোঁয়া। ‘
ছোঁয়াঃ কিছু কি হয়েছে.?
মহুয়া চুপচাপ একটা পেপার ছোঁয়ার দিকে এগিয়ে দিলো।
ছোঁয়া পেপারটা হাতে নিয়ে মহুয়ার দিকে তাকাতেই মহুয়া বলে উঠলো, ‘ আশা করি এই বিষয় তুমি আমি আর উনি ছাড়া কেউ কোনোদিন জানবে না।

ছোঁয়ার মুখে কোনো কথা নেই সে অশ্রু টলটল চোখে পেপারটার দিকে তাকিয়ে রইলো ।

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

সকাল সকাল ভূত দেখার মতো সবাই মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
মহুয়া ঘোমটা টেনে হাসার চেষ্টা করল।
আহনাফ চুল ঠিক করতে করতে নিচে এসে খাবার টেবিলে বসলো।

আমেনা বেগম এগিয়ে এসে বলে উঠলো, ‘ আরেএ মহুয়া তুমি..? ‘
মহুয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না একবার আহনাফ আরেকবার নিজের কচলানো হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো।

আহনাফ ধীরে সুস্থ বলে উঠলো, ‘ আম্মু এদিকে আসো…’
আমেনা বেগম ছেলের দিকে গেলেন।
হালিমা বেগম সবার জন্য নাস্তা বানাচ্ছে। নিরুপমা ভ্রু কুঁচকে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

আহনাফ মায়ের হাত ধরে সামনে বসালো।
মহুয়া মাথা নিচু করে আছে।

শ্রাবণের পিছু পিছু মেঘলা নেমে আসলো।
ছোঁয়া সবে মাত্র ঘুম থেকে উঠে হেলতে দুলতে নামছে।

আনোয়ার চৌধুরী সোফায় বসে আছে।
আনোয়ার চৌধুরী সবটাই জানে। কাল আহনাফ আনোয়ার চৌধুরীর থেকে পারমিশন নিয়েই এতো বড় একটা কাজ করে বসেছে।

শ্রাবণ মহুয়াকে দেখে একবার তাকালো। কি স্নিগ্ধ শান্ত সেই চাহনি।

পেছন থেকে নির্জন শ্রাবণের গলা জড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ ভাই তোমার বউ পেছনে, অন্যের বউয়ের দিকে না তাকিয়ে নিজের বউয়ের দিকে তাকাও। পুরাই চিকনি চামিলি তোমার বউ, আর শাড়িতে তো ঐশ্বরিয়াকে হার মানায়।’

শ্রাবণ রেগে তাকাতেই নির্জন দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো, ‘ এইসব আমি বলিনি, আমার বন্ধু বলেছে আমি তো ভাবির নজরে দেখি।
শ্রাবণ রেগে মেঘলার দিকে তাকায়। যতো যাই হবে সব দোষ গিয়ে পড়বে মেঘলার উপর, রাগও দেখাবে মেঘলার উপর, ও কেন শাড়ি পড়ে ছেলেদের সামনে যাবে.?
নির্জনঃ ভাই এভাবে তাকালে বউ পালাবে, সুন্দর করে ভালোবাসা দিয়ে তাকাও, না হয় আমার দিকে তাকাও শিখিয়ে দিচ্ছি।
শ্রাবণঃ বেশি জ্ঞান না দিয়ে সর।
নির্জনঃ জ্ঞান কোথায় দিলাম, আমি তো হেল্প করছি। তুমি চাইলে এক সপ্তাহে পটিয়ে দিতে পারি।
শ্রাবণ রেগে তাকাতেই নির্জন দাঁত কেলিয়া মেঘলার পেছনে চলে গেল।

আহনাফ ওর আম্মুর হাতে হাত রেখে বলে উঠলো, ‘ আম্মু আমি যদি হঠাৎ কোনো সিদ্ধান্ত নেই তুমি মেনে নিবে!.?? তুমি তো জানো কোনো কারণ ছাড়া তোমার ছেলে কিছু করে না।
আমেনা বেগম হেঁসে আহনাফের মাথায় হাত রাখল।।

আহনাফঃ আম্মু আমি…

মহুয়া আহনাফ কে থামিয়ে বলে উঠলো, ‘ আন্টি…..’
আহনাফ থেমে গেল, এই মুহূর্তে মহুয়ার উপর ভীষণ রাগ উঠলো তাও নিজেকে শান্ত করে বলে উঠলো, ‘ আমি কথা বলছি তো!’
মহুয়া ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি তো ছোঁয়া কে ভীষণ মিস করছিলাম সেই জন্য রাতে চলে এসেছি। আপনাদের সমস্যা হলে আমি আজ……

আমেনা বেগমঃ এইসব কি বলছো! তুমি ফিরে আসাতে আমরা অনেক খুশি হয়েছি। তুমি আমার মেয়ের মতো।আমার মেয়েনেই আমি সেই জায়গাটা ছোঁয়া আর তোমাকে দিয়েছি।

উনার কথা শেষ হতেই মেঘলা বলে উঠলো, ‘ আর আমাকে.???’
আমেনা বেগম থেমে গেলেন থমথমে মুখে অন্য দিকে ফিরে তাকিয়ে রইলেন।

হালিমা বেগম রান্না ঘর থেকে হাত মুছতে মুছতে বের হলো।মেঘলার সামনে এসে বলে উঠলো, ‘ তুমি আমার মেয়ে। বড় আপা তো দুইজনকে দিয়েছে আমি আমার মেয়ের জায়গা সবটা তোমাকে দিয়ে দিলাম ।’

মেঘলা খুব সুন্দর করে নিজের চোখের জল আড়াল করে হালিমা বেগম কে জড়িয়ে ধরলো। তাও অনেক আশায় তাকিয়ে রইলো শাশুড়ীর দিকে।

আহনাফ,শ্রাবণ, নির্জন সবাই দর্শক হয়ে বসে বসে তা দেখলো। আহনাফের আর কিছু বলার সুযোগ হলো না।

আনোয়ার চৌধুরী সবাইকে ডাকলো।

উনার বড় ছেলে ছোট ছেলেও উপস্থিত হলো।

আনোয়ার চৌধুরী সবাই কে বললো, কাল গ্রামে যেতে হবে। ওখানে একসপ্তাহ থাকতে হবে। উনার ভাতিজার মেয়ের বিয়ে।

এই কথা শুনতেই খুশিতে লাফালাফি শুরু করলো ছোঁয়া। সেই ছোট থাকতে একবার গ্রামে গিয়ে ছিল আর যাওয়া হয়নি।

শ্রাবণ, আহনাফ নিষেধ করলো ওরা যেতে পারবে না।

আহনাফের হসপিটাল আর শ্রাবণের অফিস আছে।

নির্জন ভাইয়েরা যাবে না শুনে আনোয়ার চৌধুরীকে বলে উঠলো, ‘ দুই ভাই যাবে না আমি গিয়ে কি করবো!.? একা একা মন টিকবে না, আমার সাথে কি সাজ্জাদকেও নিতে পারি দাদু!.??
আনোয়ার চৌধুরী হেঁসে বললো,’ নিয়ে নাওও।’

শ্রাবণ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ এই ছেলে ওখানে কেন যাবে!.?
নির্জনঃ ভাইয়া ও আমার বন্ধু।
শ্রাবণঃ তাহলে মেয়েরা বাড়িতে থাক।
ছোঁয়াঃ এটা কেমন কথা ভাইয়া! তোমরা যাবা না ঠিক আছে তাই বলে আমরা কোন কারনে যাব না!.?
শ্রাবণঃ আমি বলেছি মানে যাবে না কেউ। আম্মু, ফুপি, ছোট আম্মু তোমরা আর আব্বু চাচ্চু, দাদু যাক।

আজাদ চৌধুরী এখন না বিয়ের দিন যাবে বললো আর মিরাজ চৌধুরী একটা কেইসে আঁটকে গেছে যেতে পারবে না।

আনোয়ার চৌধুরী এবার ছেলের বউদের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোমাদের কোনো বাহানা আছে.??

ছোঁয়া আনোয়ার চৌধুরীর গলা জড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ আমরা যাব দাদু এই রোবট মানব গুলোর কথা শুনবো না।
শ্রাবণঃ কে রোবট..?
ছোঁয়াঃ তুমি আর আহনাফ ভাই।
আহনাফঃ এখানে আমাকে কেন টানছিস..?
ছোঁয়াঃ ভাই শ্রাবণ ভাইয়াকে তুমি একটু বুঝাও, আমরা বাসায় থেকে কি করবো!.? আমি গ্রামে যাব।

মেঘলা আনোয়ার চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ” দাদু আপনি কি আমাদের নিবেন..? আমি, ছোঁয়া মহুয়া..?
আনোয়ার চৌধুরী হেসে বলে উঠলো, ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই, এরা রোবট হতে পারে আমরা তো আর রোবট না।’

মেঘলা খুশি হয়ে বললো,’ গ্রাম আমার অনেক ভালো লাগে, অনেক বার গিয়েছি কয়েকটা কেইস সল্ভ করতে।

সবাই অবাক হয়ে বললো,’ কিইই..!!???’

মেঘলা ভয় পেয়ে গেল। বেশি উত্তেজিত হয়ে এটা কি বলে দিল!.
মহুয়া সবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমি বড় হয়েছি গ্রামে। গ্রামের পরিবেশ খুব সুন্দর। ‘
ছোঁয়াঃ আজ বিকেলে আমরা মার্কেটে যেতে হবে। শ্রাবণ ভাইয়া তুমি নিয়ে যাবে।।।
শ্রাবণ নিষেধ করলো সে পাড়বে না, আহনাফেরও সময় নেই। এবার নির্জনকে ধরলো, নির্জনেরও কেনাকাটা করতে হবে সে রাজি হয়ে গেল।

মেঘলা শান্তির নিশ্বাস ফেললো। ওর কথাটা যাক কেউ গুরুত্ব দেয়নি।
_____

বিকেলে মার্কেটে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়লো সবাই। মার্কেটের সামনে এসে দেখা পেল সাজ্জাতের। নির্জন বলেছে সাজ্জাতকে আসতে।

সবাই মার্কেটের ভেতরে গেল।
সাজ্জাদ মেঘলার পাশাপাশি হাঁটছে।

এক ঘন্টা চলে গেল কাপড় পছন্দ করতে করতে নির্জন, সাজ্জাদের কেনাকাটা শেষ কিন্তু মেয়েরা এখনো কিছুই কিনেনি।

নির্জন রেগে ছোঁয়ার দিকে তাকাতে মেঘলা বলে উঠলো, ‘ আরেএ দেবরজী মাত্রই তো আসলাম। যখন বিয়ে করবেন বউয়ের আঁচল ধরে দশ ঘন্টাও ঘুরতে পারবেন বিরক্ত লাগবে না, আজ বোন বলে এক দুই ঘন্টাও ঘুরতে পারছেন না। এটা কিন্তু ঠিক না’
নির্জনঃ ভাবি তখন বউ থাকবে, বউয়ের আঁচল ধরে ঘুরার ফিলিংসটাই অন্য রকম।
সাজ্জাদ নির্জনকে থামিয়ে বলে উঠলো, ‘ মেঘলা বউ তো নেই এখন আপনারা চাইলে নিজেদের আঁচলটা আমাদের হাতে বেঁধে দিতে পারেন জামাই,জামাই, প্রেমিক প্রেমিক ফিলিংস আসবে দশ ঘন্টা কেন সারাজীবন এখানে কাটিয়ে দিতে পারবো।

ছোঁয়া হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আরেহ্ বাহ্ ভাইয়া তো হেব্বি রোমান্টিক চাইলে আপাতত আমার ওড়না কে আঁচল বানিয়ে চালিয়ে নিতে পারেন…
ছোঁয়া মজা করে বললেও নির্জন রেগে সাজ্জাদ আর ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
সাজ্জাদ সেটা বুঁজে নির্জন কে রাগানোর জন্য ছোঁয়ার ওড়না ধরতে গেলেই নির্জন ওর হাত চেপে ধরে বলে উঠে,’ দূরে থাক। ‘
সাজ্জাদঃ আমাকে ছোঁয়া বলেছে।
নির্জন রেগে সাজ্জাদের হাত আরও শক্ত করে চেপে ধরতেই সাজ্জাদ আরেক হাত দিয়ে কানে ধরে বলে উঠলো, ‘ আরে ভাই মজা করছিলাম হাত তো ভেঙে ফেলবি, আমার বউ কি তখন তোর হাত ধরে হাঁটবে!.? ছাড় না বাপ।

নির্জন ঝাড়ি মেরে সাজ্জাদের হাত ছাড়লো।
সাজ্জাদ বেচারা হাতের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ লাল করে ফেলছস।’
নির্জনঃ চুপচাপ পিছে পিছে হাট।
মহুয়া হেঁসে বললো, ‘ আপনারা ঝগড়া না করে হেল্প করলেও তারাতাড়ি হবে।’

সাজ্জাদের চোখ গেল একটা সুন্দর শাড়ির দিকে। চোখ বন্ধ করে ভাবলো শাড়িটায় মেঘলাকে কেমন লাগবে।

সাজ্জাদ খুশি হয়ে মেঘলা কে ডাকলো।
মেঘলা ফিরতেই সাজ্জাদ শাড়িটা দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনাকে খুব সুন্দর মানাবে..’

মেঘলারও শাড়িটা বেশ পছন্দ হয়েছে, মেঘলা খুশি মনে শাড়িটা হাতে নিতেই পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো, ‘ শাড়িটা আপনার জন্য একটু বেশি কড়া গোলাপি হয়ে গেল না!.??
মেঘলা পেছন ফিরে শ্রাবণকে দেখে অবাক হলো। আরও অবাক হলো শ্রাবণের সাথে একটা মেয়ে দেখে।
মেঘলা মেয়েটার দিকে শান্ত চোখে চেয়ে থাকলেও ভেতর ভেতর রাগে ফেটে পড়ছে। মেয়েটা শ্রাবণের হাত ধরে আছে।

মেঘলা রাগ করে শাড়িটা সাজ্জাদের দিকে দিয়ে বললো,’ আপনার পছন্দ হলে নিয়ে নেন।’
সাজ্জাদঃ আমার গার্লফ্রেন্ড নেই, আমি কার জন্য নিব..?’
মেঘলা দাঁতের সাথে দাঁত বলে উঠলো, ” যার জন্য মন চায়।’

শ্রাবণ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো,’ শাড়িটা তোমাকে মানাবে সামিয়া। তুমি শাড়িটা সাজ্জাদের থেকে নিয়ে নাও আর সাজ্জাদ তুমি তো দেখছি খুব ভালো মেয়েদের জিনিস চেনো প্লিজ সামিয়ার বাকি জিনিস গুলো পছন্দ করে দাও, তোমার পছন্দ খুব সুন্দর।

সামিয়া মেয়েটা শ্রাবণের হাত ছেড়ে সাজ্জাদের হাত শক্ত করে ধরে নিলো।
সাজ্জাদ থতমত খেয়ে গেল। কারেন্টের শর্ট খাওয়ার মতো দূরে সরে যেতে চাইলো কিন্তু সামিয়া ওর হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।
সাজ্জাদ ইনোসেন্ট মুখ করে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে দেখলো সামনে শ্রাবণ নেই বেচারা ভালোই ফেঁসেছে।

শ্রাবণ মেঘলার পিছু পিছু গেল। মেঘলা ছোঁয়া আর মহুয়ার পেছনে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। কিছু কিনার রুচি একদম চলে গেছে। আমাদের শপিংয়ে নিয়ে আসতে পারবে না কি সুন্দর বলে দিল অথচ গার্লফ্রেন্ড কে শপিং করাতে নিয়ে চলে আসল৷ পুরুষজাতি এমনি। ঘরে বউ থাকতে বাহিরে মেয়ে নিয়ে রংঢং না করলে শান্তি লাগে না। মেঘলা বিরবির করে হাজারো গালি দিচ্ছে পুরুষ জাতিকে।

ছোঁয়া মহুয়ার দিকে তাকিয়ে মোবাইল হাতে নিলো। আহনাফ কে ভিডিও কল দিয়ে একের পর এক শাড়ি, কাপড় দেখাচ্ছে আর বলছে কোনটা মহুয়াকে ভালো মানাবে।
মহুয়া রেগে ছোঁয়ার দিকে তাকালেও ছোঁয়া তাতে পাত্তা দিল না৷ আহনাফ ছোঁয়ার পাগলামি দেখে হাসছে। ছোট বোনরা বুঝি এমনি হয়!.?

আহনাফ যা যা বললো সব গুলোই নিল ছোঁয়া সাথে ম্যাচিং করে আহনাফের জন্য পাঞ্জাবিও নিয়ে নিলো।

শ্রাবণ মেঘলাকে যা দেখাচ্ছে মেঘলা তাই নিতে নাকচ করে দিচ্ছে।
শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়ের আবার হলোটা কি!.?
ছোঁয়া ইচ্ছে মতো শপিং করলো সাথে নিজের পছন্দ মতো, আহনাফ, শ্রাবণের পছন্দ মতো ওদের বউয়ের জন্য নিয়ে নিলো। মামি,আম্মু সবার জন্য নিল।

মেঘলা শুধু দাঁড়িয়ে চুপচাপ সবার কেনাকাটা দেখলো। ওর মাথায় এখন শুধু ঘুরছে কে সেই মেয়ে । মেয়েটাকি শ্রাবণের গার্লফ্রেন্ড!.? গার্লফ্রেন্ড মনে হতেই বুকের ভেতর চিনচিন ব্যাথা অনুভব হলো। তাহলে কি এই বিয়ের খেলায় মেঘলা ভুল করে শ্রাবনকে ভালোবেসে বসলো!!.? ভেজা চোখে তাকিয়ে রইলো শ্রাবণের মুখের দিকে। শ্রাবণ তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিল। মুচকি হাসলো শ্রাবণ।

মহুয়া মেঘলার পাশে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ চোর পুলিশের খেলা শেষ হলে বাড়িতে চলো। ‘
মেঘলা এদিক ওদিক তাকিয়ে চুল কানের পেছনে গুঁজে বলে উঠলো, ‘ কিসের চোর পুলিশ!.? ‘
মহুয়াঃ আমাকে বাচ্চা ভেবোনা আমি সব বুঝি।
মেঘলাঃ হ্যাঁ তুমি তো বুড়ি হয়ে গেছ।
মহুয়াঃ হুম তাই। বাড়িতে গিয়েও ভাইয়াকে সামনে বসিয়ে ইচ্ছে মতো দেখতে পারবে, জামাই তো তোমারি,এখন চলো।
মেঘলাঃ আমি তো কিছুই কিনলাম না।
মহুয়াঃ তুমি না কিনলেও ভাইয়া প্রচুর কিনেছে।
মেঘলাঃহুহ ওই মেয়ের জন্যই কিনেছে আমি জানি।
মহুয়াঃ কোন মেয়ে.?
মেঘলাঃ কিছু না চল।

সবাই নিচে গিয়ে সাজ্জাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

একটু পর কিছু একটা দেখে সবার চোখ বের হয়ে আশার মতো অবস্থা।

সাজ্জাদ দুই হাতে, গলায়, মাথায় শপিং ব্যাগ, বেচারার মুখও দেখা যাচ্ছে না। পেছনে সামিয়া সাজ্জাদ কে রেগে বলছে ওর এখনো শপিং শেষ হয়নি। বেচারা সাজ্জাদ পারলে এখানে বসে কান্না করে কোন পাগলের পাল্লায় পড়লো! এতো এতো শপিং করেও নাকি শেষ হয়নি।

শ্রাবণ আগে আগে গাড়িতে উঠে গেল ইশারায় সবাইকে বললো গাড়িতে উঠে বসতে। সাজ্জাদ সামিয়ার চোখ ফাঁকি দিয়ে গাড়ির দিকে আসতে নিলেই শ্রাবণ গাড়ি ছেড়ে দিল।

কিছু দূর গাড়ি যেতেই সবাই গাড়ি থেকে সাজ্জাদের দিকে তাকালো। সামিয়া টেনে শপিং করতে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে সাজ্জাদকে….

চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-২৪+২৫

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২৪
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

মেঘলা পাশ দিয়ে দ্রুত হেঁটে গেল।
সাজ্জাদ মুগ্ধ চোখে এখনো তাকিয়ে আছে মেঘলার দিকে ।
নির্জনঃ কিরেএ ভাই এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি.??
সাজ্জাদ হাত দিয়ে মাথা চুলকে হাসলো। নির্জনের সাথে রুমে যেতে যেতে আরেক বার মেঘলার যাওয়ার দিকে তাকালো।

আমেনা বেগম এখনো মেঘলাকে দেখতে পারে না, অবশ্য একটা বস্তির ছিনতাইকারী, চোর,অশিক্ষিত মেয়েকে কোনো উচ্চপদের পরিবার মেনে নিবে না।কিন্তু ছেলের ওইদিন নিষেধের পর থেকে উনি আর একটা কথাও বলেনি মেঘলার সাথে আর না বলেছে মেঘলার বিষয় অন্য কারো সাথে।

মেঘলা ফ্রেশ হয়ে সোজা চলে গেল মহুয়ার রুমে।
মহুয়া কাপড় গুছিয়ে রাখছিল মেঘলা কে দেখে হেঁসে ভেতরে আসতে বললো।
মেঘলা মায়াভরা দৃষ্টিতে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে একপা দুইপা করে কাছে গেল।
মহুয়া স্তব্ধ হয়ে গেল। আচমকা মেঘলা মহুয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

মহুয়া আসতে আসতে করে মেঘলার পিঠে হাত রাখল।
~ কিছু কি হয়েছে মেঘলা.??
মেঘলা মহুয়ার মুখটা হাতে নিয়ে বলে উঠলো, ‘ না হঠাৎ তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে ভীষণ ইচ্ছে হলো, তুমি রাগ করেছ.??’
~ না, না আমি তো খুশি হয়েছি।
মেঘলা মহুয়াকে আর কিছু বলার আগেই ছোঁয়া শব্দ করে রুমে প্রবেশ করলো।
মেঘলা মহুয়া ছোঁয়ার দিকে তাকালো। ছোঁয়া মহুয়ার সামনে গিয়ে মহুয়াকে মেঘলার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিল।
মহুয়া তাজ্জব বনে গেল ছোঁয়ার আচরণে।
ছোঁয়াঃ আমার পছন্দ না মহুয়ার আশেপাশে অন্য কেউ আসুক।
মহুয়া কি বলবে.? এই মেয়ে কি বলছে.?
ছোঁয়াঃ আমি আমার প্রিয় মানুষগুলোর আশেপাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারি না।
মেঘলা মুচকি হেঁসে বললো, ‘ আমাকে কি একটু আপন করে নেওয়া যায়না ছোঁয়া!..??’
ছোঁয়া কিছু না বলে মুখ অন্ধকার করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
আচমকা মেঘলা ছোঁয়াকেউ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
ছোঁয়া শান্ত হয়ে গেলে, কেমন মস্তিষ্ক বলছে দূরে সরিয়ে দে! কিন্তু মন বলছে একদম না ছোঁয়া, তুই তো এমন না।

ছোঁয়া চুপচাপ বসে আছে মহুয়া অনেক সুন্দর করে বুঝালো। মেঘলা যেখানেই বড় হোক,যেই পেশাই করুক তুমি একটু ভেবে দেখ। সে যদি তোমার মতো এতো বিলাসবহুল বাড়ি, পরিবার থাকত তাহলে কি ওখানে থাকতে হত.? এমন পেশা বেছে নিত.? ওর ব্যাবহার দেখ কতো সুন্দর। কেউ বলবে মেঘলা খারাপ মেয়ে! যাই করেছে ভুলে যাও।

ছোঁয়াও ভাবলো। মেঘলা তখন ছোঁয়াকে ছেড়েই রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে ছিলো।

মেঘলা ছোঁয়ার রুম থেকে বের হয়ে শ্রাবণের রুমে যাওয়ার সময় সামনে পড়লো সাজ্জাদ।

মেঘলা সামনের দিকে তাকিয়ে শাড়ির আঁচল অন্য দিকে সুন্দর করে ধরে রেখেছে। শাশুড়ীর শাড়ি পছন্দ আর বউদের শাড়িতেই ভালো মানায় সেই জন্য মেঘলা শাড়ি পড়েছে আজ। অনেক কষ্টে মায়ের কাছে শাড়ি পড়া শিখেছে সাথে কি করলে শাশুড়ী খুশি হবে, কি করলে শ্রাবণ ওকে নিজের করে নিতে চাইবে সব শিখে নিয়েছে, এমন একটা সাপোর্টার মা থাকলে জীবনটা অতোটাও কঠিন লাগে না।

সাজ্জাদ মেঘলার দিকে তাকিয়ে বুকে হাত দিলো। মেয়েটার তাকানো হাঁটা দেখলেই কোনো নাইকার থেকে কম মনে হয় না।

মেঘলা সাজ্জাদের দিকে একবার চোখাচোখি হলো। তীরের মতো চোখ ফেললো সাজ্জাদের দিকে। ছেলের তাকানো দেখেই মেজাজ চারশো চল্লিশ বুলটেজের হয়ে গেল।

সাজ্জাদ ধুকপুক বুকে মেঘলার সামনে এসে দাঁড়ালো।
~ হায় মিস আমি সাজ্জাদ।
মেঘলা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। উত্তর না দিয়ে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সাজ্জাদ পথ আগলে দাড়ালো।
মেঘলাঃ সমস্যা কি.??
সাজ্জাদঃ শাড়িতেই নারী এই কথাটা আজ সত্যি হলো। আপনাকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না।
মেঘলা আহাম্মক বনে গেল। মানে কি এইটুকু ছেলে ফ্লার্ট করতে এসেছে.!!??
মেঘলা ছেলেটার দিকে তাকালো লম্বায় ৫.৮ হবে। গায়ের রং ফর্সা, মাথার একঝাক চুল কুঁকড়ানো,দেখতে খারাপ না।

মেঘলা অপরিচিত ছেলের সাথে কথা না বলাই ভালো মনে করল।
ছেলেটা আবার বলে উঠলো, ‘ আপনার দেখি আমার প্রতি একটুও আগ্রহ নেই।’

এই পর্যায়ে মেঘলা ভীষণ বিরক্ত হলো।
মেঘলাঃ আপনার প্রতি আমি আগ্রহ কেন দেখাব.? আমি কি আপনাকে চিনি.??’
সাজ্জাদঃ কি বলছেন! একটা ছেলে আপনার প্রশংসা করল! আপনার সাথে কথা বলছে আর তার বিষয় কিছু জানার বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই আপনার.?? চিনেন না বলেই তো আগ্রহ বাড়বে।
মেঘলাঃ আমি বলেছি প্রসংশা করুন.? আর আপনার বিষয় জানার আগ্রহ দেখানোর মতো স্পেশাল কিছু দেখছি না আপনার মধ্যে।
সাজ্জাদঃ তাহলে আমিই পরিচয় দেই.?
মেঘলাঃ কোনো প্রয়োজন নেই।
সাজ্জাদ আর কিছু বলার আগেই খেয়াল করল ওদের দিকে একটা ছেলে তাকিয়ে আছে।
মেঘলা সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে। ওর মুখ যথেষ্ট গম্ভীর। কিন্তু বুঝা যাচ্ছে না রেগে আছে নাকি শান্ত।
মেঘলা সাজ্জাদের দিকে না তাকিয়ে চলে যেতে নিলে সাজ্জাদ বলে উঠলো ” আপনার সাথে তো কথা শেষ হয়নি”
মেঘলা সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে থামলো বাড়ির মেহমান না দাঁড়ালে অসম্মান করা হবে।

শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এখানে দাঁড়িয়ে কি করছেন!.? আমার লুঙ্গি খুঁজে পাচ্ছি না, কোথায় রেখেছেন..? ‘
মেঘলা থমথমে মুখে শ্রাবণের দিকে তাকালো। এই লোক লুঙ্গি পড়ে!.? কই কোনোদিন তো দেখলাম না!.।

শ্রাবণঃ কি হল.?
সাজ্জাদ একবার শ্রাবণের দিকে আরেকবার মেঘলার দিকে তাকালো।
মেঘলা সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে হেঁসে বললো,’ এখন আমার যেতে হবে আমরা না হয় পড়ে পরিচয় হয়ে নিব।’
সাজ্জাদ মেঘলা হাসি দেখে আরেক দফা ক্রাশ খেল।
সাজ্জাদঃ জ্বি,জ্বি অবশ্যই। আমি সাজ্জাদ। অনেক ভালো গান গাই।

মেঘলাঃ আমি ম….
শ্রাবণঃ আপনি কি আসবেন..!!?
মেঘলা রাগী দৃষ্টিতে শ্রাবণের দিকে তাকালো। রেগে রুমে চলে গেল,মেঘলা সাথে শ্রাবণ ও রুমে গিয়ে শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দিল।

সাজ্জাদ রাগী দৃষ্টিতে শ্রাবণের দরজার দিকে তাকালো। বিড়বিড় করে বলে উঠলো ” এমন একটা ভাব করছে বাহিরের লোক এদের সম্পর্ক সম্মন্ধে কিছুই যানে না। এইসব লোকদেখানোর জন্য করছেন সেটা এই সাজ্জাদ খুব ভালো করেই জানে। আমি যা চাই নিজের করেই ছাড়ি একদিন মেঘলাকে আমার করেই ছাড়ব। শুধু মাত্র আর কয়েকদিন।

____________

খাবারের টেবিলে সবাই বসে আছে।

বাড়ির বড়রা খাবার খেয়ে যাওয়ার পর ছোটরা আসে।
সাজ্জাদকে সবাই অনেক আপ্যায়ন করছে শুধু মাত্র শ্রাবণ চুপচাপ আছে।
মেঘলা, আমেনা,হালিমা সবাইকে খাবার দিচ্ছে।

মেঘলা সবাইকে খাবার দিয়ে সাজ্জাদকেও খেতে বললো।
সাজ্জাদ মুগ্ধ দৃষ্টিতে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আপনিও আসুন না এক সাথে খাওয়ার মজাই আলাদা। ‘
মেঘলা সবার দিকে একবার তাকিয়ে বললো, ‘ না, না আপনারা খান।’

সবাই বলতে শুরু করলো একসাথে বসার জন্য। ছোঁয়া উঠে মেঘলার হাত ধরে শ্রাবণের পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিল।

হঠাৎ সাজ্জাদের একটা উদ্ভব ইচ্ছে হলো।মেঘলাকে ওর পাশে বসিয়ে খাওয়ানোর। মেঘলা খাবে আর ও মুগ্ধ হয়ে দেখবে।

আহনাফ সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে ছোঁয়ার পাশের চেয়ারে বসলো। নির্জন সাজ্জাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।
সাজ্জাদ নির্জনের মুখে আহনাফ,শ্রাবণের অনেক কথা শুনেছে। আহনাফকে অনেক গম্ভীর আর রাগী ভেবে সাবধানে বেশি কথা বললো না। আর টুকটাক কথা শ্রাবণের সাথে বলতে চাইলে কিন্তু এখন ওর মনে হচ্ছে আহনাফ অনেকটা ফ্রেন্ডলি কিন্তু এই শ্রাবণ গম্ভীর।

আহনাফ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ খাবার শেষ হলে আমার রুমে আসবেন। ‘

মহুয়া রেগে প্লেটের ভাত শক্ত করে ধরলো। জীবনেও যাব না।

সাজ্জাদ মহুয়ার পাশের চেয়ারেই বসে ছিলো। চোখ বড় বড় করে মহুয়ার ভাত চেপে ধরার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো, আপু তুমি ঠিক আছ.??’
মহুয়া ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো”হুম”
সাজ্জাদঃ ছোট আপু রাগ ভাতের সাথে নয়, নিস্পাপ ভাত গুলো কষ্ট পাবে।
মহুয়াও ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ আমরা সবাই নিস্পাপ জিনিসের উপর জুলুম করতে ভালোবাসি।’

আহনাফ বলার পরেও মহুয়া আহনাফের রুমে যায়নি। সে আর কখনো আহনাফের সামনেও যেতে চায় না। নিজের জন্য বাসা দেখে নিয়েছে, টিউশনি করানোর পাশাপাশি একটা চাকরি খুঁজবে। কাল সকালেই সবাইকে জানাবে আর বিকেলে নতুন বাসায় উঠবে।

আহনাফ রেগে রুমে সামনে এসে বললো দরজা খুলতে, ছোঁয়া দরজা খুলতেই আহনাফ ছোঁয়াকে রুম থেকে বের করে ভেতর দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।

ছোঁয়া হ্যাঁ করে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে রইলো। কতোবার মহুয়াকে বলেছে যেটা যায়নি ভাই তো এখন রেগে আছে। আল্লাহ মহুয়া কে না আবার থাপ্পড় মেরে বসে।

ছোঁয়া ভয় পেল কেউ ওদের এক রুমে দরজা বন্ধ দেখলে খারাপ কিছু ভাবতে পারে এর থেকে ভালো ছোঁয়া নিজেই দরজার সামনে থেকে চলে যাক। তাহলে কারো নজরে পড়বে না।

ছোঁয়া হেলতে দুলতে গিয়ে ঢুকলো নির্জনের রুমে। নির্জন রুমে নেই। ছোঁয়া জানে নির্জন এখন ছাঁদে নিশ্চয়ই মোবাইলে প্রেমিকাদের নিয়ে ব্যাস্ত।

ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। হাতের মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখলো রাফির অনেক মেসেজ,কল। ছেলেটাকে আর কি করলে পিছু ছাড়বে!.?

মেঘলা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনি লুঙ্গি পড়েন.?’
শ্রাবণ ল্যাপটপের দিয়ে তাকিয়ে বলে উঠলো ” হুম”
মেঘলাঃ তাহলে আমি এই রুমে থাকব না।
শ্রাবণঃ তুমি নিজ থেকে এইরুমে এসেছ কেউ জোর করে আনেনি।
মেঘলা ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে বললো, ‘ আমি আপনার বউ..
শ্রাবণঃ মাত্র কয়েকদিনের জন্য।
মেঘলা এবার ভীষণ রেগে গেল। শ্রাবণ দিকে তাকিয়ে রেগে বলে উঠলো, ‘ আমি কাল সকালেই উকিলের কাছে যাব। তিন দিনের মধ্যে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক শেষ হবে। আমি আজ এখন এই মুহূর্তে চলে যাচ্ছি। ‘

শ্রাবণ ল্যাপটপ রেখে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আরও এক মাস পঁচিশ দিন বাকি।’
মেঘলাঃ আমি জানতে চাইনি।
শ্রাবণঃ একদিন বাকি থাকলেও এই বাড়ির বাহিরে পা দিতে পারবে না। এক সেকেন্ড আগেও না।
মেঘলাঃ আপনি আমাকে রাখতে পারবেন না। আমি কারো জীবনে আর ঝামেলা হয়ে থাকতে চাই না।
শ্রাবণঃ ঝামেলা হয়ে জীবনে প্রবেশ করেছেন আর বলছেন থাকতে চান না!.?
মেঘলাঃ হ্যাঁ এবার মুক্তি দিতে চাই।
শ্রাবণঃ আপনি চাইলেও বাকি দিনগুলো থাকতে হবে আর না চাইলেও থাকতে হবে।
মেঘলা ভীষণ রেগে গেল। রাগের চুটে সামনে থাকা ফুলদানি ড্রেসিং টেবিলের দিকে ছুড়ে ফেললো। সাথে সাথে ঝনঝন শব্দ করে ভেঙে গেল কাঁচ।

শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো,’ এইগুলো আমার কষ্টের টাকায় কেনা আপনার মতো দুই নাম্বারি করে টাকা উপার্জন করি না প্লিজ আর একটা কিছুও নষ্ট করবেন না।’

মেঘলা শ্রাবণের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রুমে থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য দরজার কাছে আসতেই পায়ে কাঁচের টুকরো ঢুকে যায়। মেঘলা আহ্ বলে পায়ে হাত দেয় শ্রাবণ শান্ত দৃষ্টিতে তখনো তাকিয়ে আছে ড্রেসিং টেবিলের টুকরো গুলোর দিকে।
মেঘলা রাগে, দুঃখে ব্যাথার কথা ভুলে যায়।আজ ওর থেকে ড্রেসিং টেবিলের দাম বেশি শ্রাবণের কাছে, থাকবে না সে দরজা খুলে রুমের বাহিরে পা দিতেই চোখ বন্ধ করে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়। ভীষণ ব্যাথা সাথে রক্ত পড়ছে।
মেঘলার প্রতিটা পায়ের রক্তের ছাপ ফ্লটে লেগে যাচ্ছে।

নির্জন আর সাজ্জাদ ছাঁদ থেকে কথা বলে নামছে। কোনো একটা বিষয় নিয়ে হাসাহাসি করছে।

ফ্লটে রক্তের ছাপ দেখে ভয়ে নির্জন বলে উঠলো, ‘ ভাই ভুতের পায়ের ছাপ!!.?’
সাজ্জাদ নিজেও তাকিয়ে রইলো বাড়িতে কোনো চিৎকার চেচামেচি হচ্ছে না। কারো পা এভাবে কাটলে এতোক্ষনে সারা বাড়ি মাথায় তুলার কথা।তাহলে কি সিনেমার ভূতের মতো কিছু এসেছে..? রাত তখন ১টা। সাজ্জাদ নিজেও ভয় পেয়ে বলে উঠলো, ‘ তোদের বাড়িতে ভূত আছে.?’
নির্জনঃ শুনেছি বাড়ির পেছনের ঘরটায় মাঝে মাঝে কোনো মেয়ের চিৎকার শুনা যায়।

লে বেচারা সাজ্জাদ পারলে এখন প্যান্টেই হিসু করে দেয়।

নির্জন কিছু একটা দেখে বলে উঠলো, ‘ ওইতো ভূত!!.??

সাজ্জাদ ভয়ে বলে উঠলো, ‘ কই!.?’
নির্জনঃ নিচে। তুই তো আমার থেকেও ভিতুরডিম। আমরা পুরুষ মানুষ আমাদের ভয় পেতে নেই।
সাজ্জাদঃ তাহলে তুই কেন ভয় পাচ্ছিস.?
নির্জনঃ প্রথম তো।

মেঘলার চোখ লাল টকটকে হয়ে গেছে। ব্যাথায় পা নাড়তেও পাড়ছে না।
সাজ্জাদ অবাক হলো ভূতের জায়গায় মেঘলাকে দেখে। নির্জনের আগে নিজেই দৌড়ে গেল। মেঘলার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে উঠলো, ‘ মেঘলা আপনার এই অবস্থা হলো কিভাবে..? আপনা পা থেকে তো অনেক রক্ত ঝড়ছে!!
মেঘলা কিছু বলছে না। এই সময় সাজ্জাদকে আরও বিরক্ত লাগছে।
নির্জনঃ ভাবি! পায়ের এই অবস্থা আপনি কাউকে একবার ডাকতে পারতেন অন্তত মহুয়া বা ছোঁয়া কে।
মেঘলাঃ আমি ঠিক আছি রুমে যাও।
নির্জনঃ আমি আহনাফ ভাইকে ডাকছি।
মেঘলাঃ প্রয়োজন নেই, দরকার হলে আমি ডেকে নিব।
সাজ্জাদঃ আমি এইসব পারি নির্জন আমার আব্বু ডক্টর।

শ্রাবণ পেছন থেকে বলে উঠলো, ‘ সাজ্জাদ তোমার কষ্ট করতে হবে না। আমি নিয়ে এসেছি আমার বউ আমি দেখে নিচ্ছি।’
মেঘলা রেগে গেলেও ওদের সামনে চুপ করে রইলো।
সাজ্জাদঃ ভাইয়া অনেক রক্ত ঝড়েছে আপনি কোথায় ছিলেন.??
শ্রাবণঃ আমি কাউকে কৈফিয়ত দিতে পছন্দ করি না সাজ্জাদ। যাও অনেক রাত হয়েছে নিজেদের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
সাজ্জাদ কিছু বলার আগেই নির্জন বলে উঠলো, ‘ ভাইয়া যেহেতু আছে আমাদের দরকার পরবে না ভাবির। চল রুমে যাই নাকি ভাবি থাকব.?’
মেঘলাঃ চলে যাও।
সাজ্জাদ চেয়েও আর কিছু বলতে পারলো না কিন্তু মন একদম যেতে চাচ্ছে না। শ্রাবণ মেঘলার সামনে বসে পা হাতে নিল।
সাজ্জাদ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শ্রাবণের হাতে মেঘলার রক্ত মাখা পায়ের দিকে।

_______

মহুয়া রেগে বলে উঠলো , ‘ আপনার বাসায় আছি বলে যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন না!! আপনি একটা মেয়ের রুমে এসেছেন আবার দরজা কোন অধিকারে বন্ধ করেছেন.? বাসার লোকজন দেখলে কি মনে করবে.?
আহনাফঃ আমি আপনাকে ডেকে ছিলাম।
মহুয়াঃ আমার যেতে ইচ্ছে হয়নি।
আহনাফ নিজেকে শান্ত করার জন্য লম্বা লম্বা শ্বাস নিল।
আহনাফঃ আপনার সাথে আমার কথা আছে।
মহুয়াঃ আমার আর কোনো কথা নেই। আমি রিজাইন লেটার পাঠিয়ে দিয়েছি।
আহনাফঃ কথা ছিল ৬মাস আপনি চাইলেও কাজ ছাড়তে পারবেন না।
মহুয়াঃ আমারও কাজ এটা ছিল না।
আহনাফঃ কাজ নির্ধারন করে আমি কখনো দেইনি৷
মহুয়াঃ আমি কাল চলে যাচ্ছি, আমি আর আপনার সাথে কাজ করব না।
আহনাফঃ কি.? কোথায় যাচ্ছেন..?
মহুয়াঃ আমার নিজের বাসায়। আমি বাসা দেখে নিয়েছি।
আহনাফ নিজেকে শান্ত করে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনি বাসা থেকে এক পা ও বাহিরে রাখবেন না আর সুন্দর করে কাল কাজে চলে আসবেন।’
মহুয়াঃ আমি আপনার কথা শুনতে বাঁধ্য নই। নিজ ইচ্ছায় এসেছি আবার নিজ ইচ্ছায় যাচ্ছি।
আহনাফঃ নিজ ইচ্ছায় সব জায়গায় প্রবেশ করা যায় তবে বের হতে মালিকের আদেশ লাগে।
মহুয়াঃ আপনি মালিক সাজতে এসেছেন!.?
আহনাফঃ আপনি কাল কোথাও যাচ্ছেন না আমার কথাই শেষ কথা।
মহুয়া বিরক্ত হলো কিন্তু কিছু বললো না। আহনাফ বের হবার পর পর ও বের হয়ে যাব এইলোক ওর ছায়াও খুঁজে দেখতে পাবে না।

আহনাফ মহুয়াকে যা বলতে চেয়েছিল তা আর বলা হলো না রুম থেকে বের হয়ে গেল।

নিজের রুমে যাওয়ার সময় নিচে চোখ গেল। শ্রাবণ যত্ন করে মেঘলার পায়ে মলম লাগিয়ে বেন্ডেজ করে দিচ্ছে। মেঘলা রেগে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
আহনাফ হাসল, আজকের জন্য এই দৃশ্যটা ওর কাছে সেরা মুহূর্ত মনে হলো। এই যে নিজে কষ্ট দিচ্ছে আবার নিজেই মলম লাগাচ্ছে।

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২৫
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

রাত গিয়ে সুন্দর একটা সকালের দেখা দিল।

আফরোজা বেগম কে ডক্টর দেখে গেছে, উনার শরীর অনেক খারাপ। আহনাফ সকাল থেকে দাদীর হাত ধরে বসে আছে।
আনোয়ার চৌধুরী সোফায় বসে বউ আর নাতি কে দেখছে। ছোট থেকেই আহনাফ দাদী ভক্ত ছিলো বেশি, আফরোজা বেগমের আশেপাশে আনোয়ার চৌধুরীকে একদম আসতে দিত না এই নিয়ে আনোয়ার চৌধুরীও বাচ্চাদের মতো ঝগড়া শুরু করতো। কি মিষ্টি ছিলো সেই দিন গুলো আজ আফরোজা বেগম মৃত্যুর সজ্জা।

খাবার টেবিলে মহুয়ার মুখে চলে যাওয়ার কথা শুনে সবার মন আরও খারাপ হয়ে গেল। এমনিতেই আফরোজা বেগমকে নিয়ে সবার মন খারাপ ছিলো। ছোঁয়া তো কিছু না বলে খাবার টেবিল ছেড়ে চলে গেল।

শ্রাবণ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’ কোথায় যাবেন.? গ্রামে.??
মহুয়া মিষ্টি হেঁসে বলে উঠলো, ‘ না ভাইয়া আমি নতুন বাসা নিয়েছি।’

আমেনা বেগমঃ কেন মা তোমার কি এখানে সমস্যা হচ্ছে.? কেউ কিছু বলেছে.? আমাকে বলো।
মহুয়াঃ না, না আন্টি কেউ কিছু বলেনি। মাঝে মাঝে আসব আন্টি এসে আপনাদের দেখে যাব।
হালিমা বেগমঃ একদম না তুমি কোথাও যাচ্ছ না, চুপচাপ নিজের রুমে যাও।
মহুয়াঃ প্লিজ আন্টি, আমি বাসা দেখে নিয়েছি আজ বিকেলে যেতে হবে।
নিরুপমাঃ ও যখন থাকতে চাচ্ছে না এতো জোরাজোরি করার কি আছে। ঠিক আছে মেয়ে যাও তুমি। মাঝে মাঝে এসো।
মহুয়াঃ ধন্যবাদ আন্টি।
আমেনা বেগম আর হালিমা বেগম কেও মহুয়া বুঝালো। কিছুতেই তারা রাজি হচ্ছে না একটা মেয়ে আলাদা একা বাসায় থাকা রিক্স।
শ্রাবণ শুধু চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে সবটা শুনে গেল।

সাজ্জাদ নিচে এসেই মেঘলা কে খুঁজল।
গুণগুণ করে বলে উঠলো ” তুমি কই.? তুমি নাই,আমি তোমাকে চাই!!”
কোথাও মেঘলাকে না দেখে মহুয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
শ্রাবণ সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। এই ছেলেটাকে ওর একদম পছন্দ না। ওর বউয়ের দিকে এভাবে ড্যাবড্যাব করে কোনো ছেলে কেন তাকিয়ে থাকবে.?? শুধু মাত্র নির্জনের বন্ধু বলে এখনো বাসায় রেখেছে।
সাজ্জাদ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ সবাই কে বলা শেষ..? কই আমাকে তো বললে না। ‘
মহুয়া হেঁসে বলে উঠলো, ‘ আপনি বাসা খুঁজে দিলেন আর নতুন করে আপনাকে কি বলব ভাইয়া.?ধন্যবাদ বলা যায় ।’

শ্রাবণঃ তোমরা আগে থেকে পরিচিত.?? ‘
মহুয়া হেঁসে বলে উঠলো, ‘ হ্যাঁ একটু, কলেজ থেকে আশার সময় উনার আব্বুকে রাস্তায় বসে থাকতে দেখে এগিয়ে গিয়ে ছিলাম। হসপিটাল নিয়ে যাওয়া তারপর বাসায় পর্যন্ত আমি সাথে ছিলাম তখন ভাইয়ার সাথে পরিচয়। তারপর কথায় কথায় আমারও বাসা খুজার কথা উঠলো আর ভাইয়া বললো উনারাও বাসা ভাড়া দিবেন।

এতোক্ষন সবাই ওর কথা শুনে চিন্তা মুক্ত হলো যাক পরিচিত কারো বাসায় উঠেছে। কিন্তু শ্রাবণের বিষয়টা একদম ভালো লাগেনি। যদিও সাজ্জাদ মহুয়াকে বোনের মতো দেখছে আর মহুয়া ভাই বলছে।

আহনাফ হসপিটালে মহুয়ার অনেক অপেক্ষা করে। আজ কিছুতেই হসপিটালে মন বসাতে পারছে না কি যেন একটা নেই আশেপাশে, শূন্য শূন্য লাগছে বুকের ভেতর ।
আজ ভালো করে কোনো রোগী ও দেখতে পারছে না। ডক্টর সোনিয়া এসে দুইবার জিজ্ঞেস করে গেছে” ঠিক আছেন তো আপনি.? অসুস্থ.? ”

আহনাফের খুব করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে ” হ্যাঁ সে মনের দিন দিয়ে খুব বাজে ভাবে অসুস্থ হয়ে গেছে! এই রোগের মেডিসিন কোথায়..? ”

আহনাফ কয়েকজন রোগী দেখে হসপিটাল থেকে বের হয়ে গেল।

____________

মেঘলা বাসায় এসে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই একটা কাগজ আর গোলাপ সিঁড়ির উপরে দেখে হাতে নিলো। আজ গোলাপি শাড়ি, সাথে চুড়ি,ছোট একটা টিপ আর কাজল দিয়েছে।

কাগজটা ভ্রু কুঁচকে হাতে নিল সাথে লাল টকটকে গোলাপ।

মেঘলা আশেপাশে তাকিয়ে এটা আবার জায়গায় রাখতে গিয়ে কাগজের উপরে সুন্দর করে ” মেঘ” নামটা দেখে থেমে গেল। চোখ মুখ শক্ত করে আশেপাশে আবার তাকালো। কাগজটা মুচড়ে হাতের মাঝে নিয়ে গটগট করে নিজের রুমে চলে গেল।

শ্রাবণ মাত্র অফিস থেকে বাসায় এসেছে।
আজ অনেকটা তারাতাড়ি বাসায় চলে এসেছে। যেখানে রাত ১০ টায় বাসায় আসে অনেক সময়১২-১টাও বেজে যায় আসতে আজ অনেক তারাতাড়ি চলে এসেছে।
মেঘলা গোসল করে বের হয়ে সামনে তাকিয়ে চিৎকার দিতে গেলে শ্রাবণ তার আগেই দ্রুত গিয়ে ওর মুখ চেপে ধরে।

মেঘলা অস্বস্তিতে, লজ্জায়, ভয়ে শ্রাবণের হাতে কামর বসায়। শ্রাবণ তাও ছাড়ে না। মেঘলার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, ভেজা চুল থেকে টপটপ পানি এসে কপাল,গাল,ঠোঁট বেয়ে পড়ছে।
মেঘলা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।
শ্রাবণ সেই লজ্জা মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কতোটা স্নিগ্ধ, সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। শ্রাবণের মনে প্রশ্ন জাগলো,’ আচ্ছা গোসলের পর কি মেয়েদের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়.?? না হলে এই মেয়েকে এখন এতো আকর্ষণীয় লাগছে কেন.?

মেঘলা ধীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ ছাড়ুন ‘
শ্রাবণ নিজের অজান্তেই বলে বসে ” উহু কাছ থেকে আরেকটু দেখি”

মেঘলার বুক কেঁপে ওঠে, বুকের ভেতর মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে। কাঁপা কাঁপা ঠোঁট নেড়ে বলে উঠলো, ‘ কি..?’
শ্রাবণঃ আপনাকে..
মেঘলাঃ আমাকে…!!? আপনি ঠিক আছেন তো..?

হুট করে শ্রাবণ ধাক্কা দিয়ে মেঘলাকে দূরে সরিয়ে দেয়। অন্য দিকে ফিরে বলে উঠে,’ এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে শাড়ি পড়ে নিন।’
মেঘলা বিছানা থেকে শাড়ি হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে দৌড় দেয়।

মেঘলা যেতেই শ্রাবণ রেগে নিজের চুল টেনে ধরে বিছানায় বসে পড়ে। ওর মধ্যে এইসব কি হচ্ছে.? আজ কাল এইসব আজব ফিলিংস কোথায় থেকে আসছে!.? এই মেয়ের থেকে দূরে থাকতে হবে। পাশের টেবিলে গোলাপ দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। গোলাপ হাতে নিয়ে দেখে এটার নিচে একটা চিরকুট। চিরকুট টা খুলতেই গুটিগুটি অক্ষরে ভেসে আছে কিছু লাইন

” আমার মেঘ! শুধুই আমার। সব মেঘই তো অন্ধকার হয়ে আসে , আপনি একটু ব্যতিক্রম হয়ে আসুন, আপনি আমার জীবনে আলো হয়ে আসুন। ”

_________

ছোঁয়া নিচে নামছে আর আহনাফ উপরে উঠছে।
ছোঁয়ার চোখ মুখ ফুলে আছে। প্রচুর কান্না করার জন্য এই অবস্থা। মহুয়াকে এই কয়দিনে বোনের আসন দিয়ে দিয়েছে কিন্তু মেয়েটাকে ওকে বুঝলো না!!।
আহনাফ ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ কি হয়েছে.? মুখের এই অবস্থা কেন.? কি হয়েছে.??
ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে বলে উঠলো, ‘ কিছু না। ‘
আহনাফঃ সত্যি.??
ছোঁয়া এই প্রথম আহনাফের সাথে উঁচু গলায় কথা বললো। রেগে বলে উঠলো, ‘ তুমি কাল কি করেছ মহুয়ার সাথে.?? হসপিটাল থেকে আশার পর থেকে ও একদম পাল্টে গেছে। আমারই ভুল কেন যে মেয়েটাকে জোর করে তোমার সাথে কাজ করার জন্য রাজি করিয়ে ছিলাম!! তুমি একদম ভালো না ভাই..’

আহনাফ থমথমে মুখে ছোঁয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া ‘
ছোঁয়া ভয় পেলো। ভয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।
পেছন থেকে নির্জন বলে উঠলো, ‘ ভাই ওর জামাই মরছে এই কষ্টে দুঃখে মাথার তার সব ছেড়ে গেছে। ‘
ছোঁয়া নির্জনের দিকে রেগে তাকিয়ে নিচে নেমে গেল৷
নির্জন গেল আহনাফের পিছু পিছু।

__________

বাসায় কেমন একটা নিশ্চুপ ভাব চলে আসলো।
মহুয়া চলে গেছে আনোয়ার চৌধুরী চেয়েও নিষেধ করতে পারেনি। ঠিকই বলেছে মহুয়া সে বিপদে পরে আশ্রয় চেয়ে ছিলো এখন নিজের একটা জায়গা তৈরি করতে হবে। সারাজীবন তো আর অন্যের বাড়িতে পরে থাকতে পারবে না। নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত। আর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে লড়াই করেই বাঁচতে হয়, কখনো জীবনের সাথে আবার কখনো মানুষের সাথে।

মেঘলা আজ একটা কাজে বেরিয়ে ছিল সেই সকালে। সন্ধ্যায় ক্রিমিনাল কে ধরে নিয়ে আসে৷ জিজ্ঞাসা বাদ করতে করতে বেজে গেল রাত দশটা। অবশ্য মহুয়া জানে ওর জন্য কেউ অপেক্ষা, টেনশন কোনোটাই করবে না। মহুয়া ওই বাড়িতে থাকলে যেই না থাকলে একই। সে তো এটাও জানে না মহুয়া চলে গেছে।

দশটায় অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় উঠতেই কাউকে দেখে হাত দিয়ে মুখ আড়াল করার চেষ্টা করল কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয়। এতো টেষ্ট করেও লাভ হলো না ঠিক ওকে দেখে ফেললো৷

” মেঘ আপনি এখানে.?? ”

চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-২২+২৩

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২২
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

মাথা ঝিমঝিম নিয়ে উঠে বসল মহুয়া। আশেপাশে তাকিয়ে নিজেকে একটা রুমে দেখে কিছু সময় বসল তারপর রুম থেকে বের হয়ে বাহিরে পা রাখতেই ফুলবানুর সামনে পরল।
ফুলবানু এক গাল হেঁসে পান চিবিয়ে থুুতু ফেললো৷ মহুয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে মিষ্টি করে বললো,’ ঘুম ভাঙছে.?’
মহুয়া ভয়ে ভয়ে আশেপাশে তাকিয়ে বললো, ‘ জ্বি আন্টি।’
ফুলবানু মহুয়ার দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললো,’ কাউরে খুঁজতাছ.??’
মহুয়াঃ জ্বি আন্টি পলাশ কোথায়.?
ফুলবানুঃ পলাশ কাজি আনতে গেছে আজ তোমাদের এহানে বিয়া হইব।
মহুয়া কিছু বললো না, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
ফুলবানু একটা মেয়েকে ইশারা করে কাপড় নিয়ে আসতে বললো।কাপড় আসতেই মহুয়ার হাতে দিয়ে বললো,’ কাপড় পইরা সুন্দর কইরা রেডি হইয়া লও।একটু পর পলাশ চইলা আইব।
মহুয়া কাপড় গুলো হাতে নিল।খুব সুন্দর একটা গোলাপি শাড়ি।
ফুলবানুঃ কাপড় পড়তে পাড় তো.?
মহুয়া চুপচাপ মাথা নিচু করে নিল। সে শাড়ি পড়তে পাড়ে না। এখন উনি শুনলে নিশ্চয়ই বলবে, পলাশ এ কেমন মেয়ে বিয়ে করতে আনছে সামান্য শাড়ি পড়তে পাড়ে না! আবার এই মেয়ে সংসার সামলাবে কিভাবে!.?

মহুয়ার চুপ থাকা দেখেই ফুলবানু বুঝে নিল। ইশারায় পাশে দাঁড়ানো মেয়েটাকে মহুয়ার সাথে যেতে বললো।

মহুয়া শাড়ি পড়ে বসে আছে। মেয়েটার এমন আজব অদ্ভুত কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না।
মেয়েটা মহুয়ার গালে হাত রেখে বললো,’ ভালোবাসা অন্ধ,আর তুমি দুইটা সুন্দর চোখ থেকেও ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গেছ। আর এখন বার বার সেই ভালোবাসা বদলাবে কিন্তু অন্ধকার পথ হাতরে আলোর পথ আর খুঁজে পাবে না। আবারও একটা পবিত্র ফুল অপবিত্র হতে যাচ্ছে। নিজেকে সুন্দর করে তৈরি করে নাও।’
মহুয়াঃ কি বলছ.?কিসের অপবিত্র আর কিসের অন্ধ পথ!! আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
~ একটু পর সব বুঝতে পারবে।

মেয়েটা বের হয়ে গেল।মহুয়া আর বেশি এই বিষয়টা ভাবল না। মেয়েটার ব্যাবহার ভীষণ আজব।

সময় যাচ্ছে, সেকেন্ড, মিনিট,ঘন্টা পেরিয়ে যাচ্ছে প্রেমিক আর আসছে না।
মহুয়া অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেল।লোকটার কিছু হল না তো.? কোথায় গেল.? হাজারটা চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

হঠাৎ মনে হলো কেউ ওর শাড়ির আঁচল সরিয়ে নিচ্ছে।মহুয়ার ঘুম অনেক হাল্কা কেউ রুমে আসলেই ঘুম ভেঙে যায়।

মহুয়া চোখ খুলে সামনে পুরুষের অবয়ব দেখে ভয় পেয়ে গেল। উচ্চ সুরে বলে উঠলো, ‘ পলাশ! পলাশ! পলাশ ভাই…? ‘
কোনো উত্তর না পেয়ে ভয়ে কিছুটা গুটিয়ে গেল।শাড়ির আচল টান দিয়ে নিজের হাতে নিয়ে বললো,” কে আপনি.? কে!.?
রুমে ড্রিম আলো।
লোকটা মহুয়ার দিকে এগিয়ে যেতেই মহুয়া ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে নেমে গেল পেছন থেকে ওর শাড়ীতে আবার টান পরলো। মহুয়া দৌড় দিয়ে দরজার সামনে গেল। দরজার পাশে লাইটের সুইচ চাপ দিতেই রুম আলো হয়ে গেল। নিজের সামনে একটা অচেনা পুরুষ দেখে ভয়ে কাঁদতে শুরু করলো।
~ এ্যাঁই ব্যা*** এতো অভিনয় না করে কাছে আয়। টাকা দিয়া অভিনয় দেখতে আহি নাই।

মহুয়া কি বলবে? কান্নার জন্য মাথায় কিছুই আসছে না। দরজার ছিটকিনি খুলতে গেলে লোকটা ওর হাত শক্ত করে ধরে ফেলে। খুব বাজে দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।
মহুয়ার ঘা গুলিয়ে বমি আসে।

লোকটা টেনে হেঁচড়ে বিছানায় ফালায় মহুয়া, আন্টি! পলাশ বলে চিৎকার শুরু করে।
লোকটা আস্তে আস্তে বিশ্রী হাসি দিয়ে ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চায়।কিন্তু তার আগেই মহুয়া সরে যায়।তাতে লোকটা রেগে যায়।
~ এখানে ডাবল টেহা দিয়া আইছি। তুই ও মজা নিবি আমিও নিব এতো চিৎকার চেচামেচি করবি না। চুপচাপ কাছে আয়।
~ আপনার আল্লাহর দুহাই লাগে আঙ্কেল আমার কাছে আসবেন না। আমি আপনার মেয়ের মতো।
~ এতোগুলা টেহা দিছি কি দূরে থাহার লাইগা। এদিকে আয় আমার কাছে, ইসস মনে হইতাছে সাক্ষাত পরী।
মহুয়া দরজার কাছে ছুটে গেলে লোকটা ওর কাছে চলে আসে। ওর হাত ধরতে গেলেই মহুয়া পাশে একটা কাঁচের বোতল দেখতে পায়। লোকটা ওর হাত ধরতেই মহুয়া ঘৃণায় বোতলটা আরেক হাত দিয়ে তুলে নেয় শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে লোকটার মাথার মাঝ খানে আঘাত করে সাথে সাথে ফিরকি দিয়ে রক্ত ছুটে। বোতল মাঝ খান দিয়ে ভেঙে যায় মহুয়া হাতের বাকি অংশ লোকটার বুকে ঢুকিয়ে দেয়।
মহুয়ার চোখের সামনে লোকটা হাত পা ছুটাছুটি করে মারা যায়। একটা জড়বস্তুর মতো মহুয়া তা দেখে।

মহুয়ার হাতে রক্ত দেখে চমকে যায় ফুলবানু।
মহুয়ার হাতে, শাড়িতে রক্তে মাখামাখি।
~ এই পুরি এতো রক্ত কই থাইকা.??

মহুয়া কিছু বলে না, নিচে বসে এক দৃষ্টিতে ফ্লটের দিকে তাকিয়ে থাকে।
~ এই মাইয়া কথা কস না কা.!!

মহুয়ার ঘর থেকে একটা মেয়ের চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে যায়।ফুলবানু একবার মহুয়ার দিকে আরক বার রুমের দিকে তাকিয়ে ছুটল রুমে।

লোকটার রক্তাক্ত লাশ নিচে পড়ে আছে। এই প্রথম হলো ফুলবানুর পল্লিতে এমনটা।

সেই দিনের ঘটনা খুব সুন্দর করে আড়াল করে নিয়ে ছিল ফুলবানু।তারপর থেকে মহুয়া একটা রুমে আটকানো। সে নিজ থেকেই সেই রুম থেকে বের হচ্ছে না ঠিক মতো কিছু খাচ্ছে না।

ফুলবানু আজ পাঁচ দিন পর এই ঘরে ঢুকল। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ এই মাইয়া রেডি হইয়া নে।’
মহুয়া পাঁচ দিন পড়েও মুখ খুললো না। সেই আগের মতো চুপ করে আছে।জীবনের প্রথম এমন ভয়ংকর কাজ ওকে ভেতর থেকে শেষ করে দিয়েছে।
ফুলবানু রেগে মহুয়ার গাল চেপে ধরে বললো,’ একটা নতুন নাগর আইছে বহুত বড়লোক, একটা তোর মতো টকটকে মিষ্টি চায়। খুব সুন্দর কইরা রেডি হইয়া ল।’
মহুয়া এতোদিনে খুব ভালো করে বুঝে গেছে এখানে কি করা হয়! কেন মেয়েদের চলাফেরা এমন!! পলাশকে ও ভালোবেসে ছিল,বিশ্বাস করে ছিল আর সে আজ এর পরিনাম এভাবে দিল.? টাকার জন্য ভালোবাসার মানুষটিকে বিক্রি করে দিল.? প্রতিদিন যেই মেয়েটি ওকে খাবার দিতে আসে সেই মেয়েটিও এক সময় পলাশের এমন বোলা ভালা চেহারার ফাঁদে পড়ে ছিল। ভালোবেসে সব ছেড়ে ওর হাত ধরে ছিল আর তার ফলাফল হিসেবে জায়গা হলো এই পতিতা পল্লীতে।

এই পাঁচ দিন কান্না করতে করতে চোখের নিচে কালি বসে গেছে।নিজের প্রতি ঘৃণা হতে শুরু করলো। সে অপবিত্র হয়ে গেছে, এই হাত দিয়ে খু*ন করেছে, এখন সে খু*নি!!।
মহুয়া আবার কাঁদতে শুরু করলো। কি বিষাদ সেই কান্নায়, এক প্রতারক কে ভালোবাসল! ঘর ছাড়ল আজ সে কোথায়!.? বুক ফেটে কান্না আসল, আমি বাঁচতে চাইনা আল্লাহ এমন জীবন নিয়ে। আত্নহত্যা কেন পাপ আল্লাহ!..?? আমি যে আত্মহত্যা ও করতে পারছি না।

ঘন্টা খানেক পর ফুলবানু আবার আশে।
মহুয়াকে আগের মতো বসে থাকতে দেখে রেগে যায়।~ তোর রেডি হওয়া লাগব না চল আমার সাথে।
মহুয়া হাত ছাড়াতে চাইলে ফুলবানু ওর গালে থাপ্পড় মেরে চুলগুলো পেছন থেকে শক্ত করে ধরে বলে,’ অনেক নাটক করছস এখন আমি আমার এতো টাকা লস হতে দিমু না। চুপচাপ যেভাবে বলে ঠিক সেভাবে করবি। যেই নাগরের লগে আইছস সে তো হালায় চইলা গেছে।
মহুয়াঃ আন্টি চুল ছাড়ুন আমি বাড়িতে যাব।
ফুলবানু হাসতে হাসতে বলে, ‘ এখানে যে একবার আসে সে আর ফিরে যেতে পারে না।’
মহুয়া কাঁদতে কাঁদতে উনার পায়ে পড়ে। পা জড়িয়ে অনুরোধ করে। কিন্তু ফুলবানুর তাতে কোনো হেলদোল হয় না। মহুয়াকে হেঁচড়ে একটা রুমে নিয়ে আসে।মহুয়া বার বার সাইফ কে ডাকে,মাইশার কথা মনে করে। জীবন এমন কেন.??আজ আপনাকে আপনার বোনের ভীষণ প্রয়োজন ভাই!!

একটু পর এক মাতাল হেলতে দুলতে রুমে আসে। রুমের দরজা বাহির দিয়ে আঁটকানো ছিল।
মহুয়া দৌড়ে বের হয়ে যেতে নিলে ফুলবানু বাহির দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।

মহুয়া দরজা ধরে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে।
মাতাল ওর সাথে দস্তাদস্তি শুরু করলে মহুয়া মাতাল ছেলের বুকে লাথি বসায়।মাতাল রেগে মহুয়াকে মারতে শুরু করে। মহুয়ার চিৎকার বাহিরে তীরের মতো সবার কানে বিঁধে। কিছু মেয়ে বলতে শুরু করে খালা মাইয়াডারে মনে হয় মারতাছে। এতো মিষ্টি মাইয়াডারে মাইরা ফেলব।
~ দয়া কইরা খালা দরজাডা খুইলা দেও।মাইয়াডা মইরা যাইব।

একটু পর সব ঠান্ডা হয়ে যায়। না ভেতর থেকে কোনো শব্দ আসে আর না বাহির থেকে।

প্রায় দুই ঘন্টা পর দরজা খুলে ভেতরে উঁকি দেয় ফুলবানু।সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে আবার তাকায়।

চুল এলোমেলো, ঠোঁটের পাশ কেটে রক্ত শুকিয়ে আছে, হাতে লাল লাল দাগ পড়ে গেছে, গালে একটা আচর খেয়ে কেঁটে গেছে।কাপড় একটু এলোমেলো নিচে এক দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে মহুয়া।
বিছানার উপরে তাকাতেই দম আঁটকে আসল। আজও এই ছেলেটাকে মে*রে ফেলেছে!!.
ফুলবানু দৌড়ে গিয়ে ছেলেটার নাকে হাত দিলো। না নিশ্বাস ফেলছে না। ফুলবানু রেগে মহুয়াকে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করলো। নিজের রুম থেকে চাবুক এনে ইচ্ছে মতো মারল কিন্তু মহুয়া একবারও টু শব্দ করল না। সেই আগের মতো স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। বাহির থেকে সব মেয়েরা ভয়ে গুটিয়ে গেল।

একটা রুমে হাত পা বেঁধে ফেলে রাখল মহুয়াকে এটা ওর শাস্তি। এক সপ্তাহ ওকে কোনো খাবার দেওয়া হবে না। নিজ থেকে যতক্ষন না এই কাজ করতে রাজি হইব ততক্ষণ ওর খাবার নাই।

ফুলবানু প্রতিদিন মহুয়াকে মারতে শুরু করল। এক ফুটা পানি নেই আশেপাশে । পানির পিপাসায় দম আঁটকে আসছে। একটা মেয়ে লুকিয়ে এসে ওকে এক গ্লাস পানি খাওয়াল। ওর দিকে তাকিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। মেয়েটা দেখতে খুব রূপবতী।

মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো, ‘ রাজি হইয়া যাও বইন তোমার কষ্ট আর দেখতে পারছি না।আমিও যে একদিন তোমার জায়গায় ছিলাম। আমাকেও এই ভাবে অত্যাচার করে রাজি করাইছে।’
মহুয়া কিছু বলে না, শুধু শূন্য দৃষ্টিতে মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
মেয়েটা চোখের পানি মুছে ফিসফিস করে বলে,” আমি দেখি তোমার জন্য একটু খাবার আনতে পারি কি না!”

আজ পাঁচ দিন। মহুয়ার শরীর খুব ক্লান্ত খুদার্ত চোখ বার বার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

ফুলবানু পানি এনে ওর সামনে রেখে বললো,’ তোর আশিক তোরে এখানে বেঁচে দিছে, আর কখনো আসব না। বাঁচতে চাইলে রাজি হইয়া যা। যা চাইবি তাই পাইবি শুধু কাস্টমাররে খুশি করাইলেই হইব।

চোখে পানির ছিটা পড়তে চোখ খুলে মহুয়া। উঠে দেখে হাতের পায়ের বাঁধন খুলা। দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
ফুলবানু ওর জন্য শাড়ি পাঠালো।সাথে বিভিন্ন খাবার। আজ যে ফুলবানুর খুশির দিন।মহুয়া রাজি হয়েছে।

মহুয়া শাড়িটার দিকে তাকিয়ে হাসল। এতো জলদি হার মেনে নেওয়ার মেয়ে নয় মহুয়া। লড়াই করতে হলে শক্তি প্রয়োজন সাথে বুদ্ধি। মহুয়া পালাবে,হ্যাঁ সে এই পল্লী থেকে পালাবে যেভাবেই হোক। পলাশের জন্য হলেও পালাবে, ওকে শাস্তি দিবে, এতোটা জঘন্য শাস্তি দিবে কোনো পুরুষ বিশ্বাস, ভালোবাসা নিয়ে পুতুল খেলার আগে একশো বার ভেবে নিবে।

মহুয়া শাড়ি পড়ে বের হতেই ফুলবানু খুশিতে লাল দাঁত বের করে তৃপ্তির হাসি হাসল।আজ থেকে এই পল্লী জমজমাট।

মহুয়া চুপচাপ ফুলবানুর সামনে দাঁড়াতেই। কিছু ছেলে খুলবানুর সাথে কথা বলতে আসল।

আস্তে আস্তে কিছু মেয়ের ছবি তুলে নিল। সেই মেয়েদের মধ্যে মহুয়ার ছবিও তুলা হলো। শাড়ি পড়া এই নারীকে দেখলে একটা মাতালও প্রেমে পড়তে যেন বাধ্য। সব ছেলেরা লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মহুয়ার দিকে।

ছবিগুলো কারো কাছে পাঠিয়ে ফুলবানুর সাথে কথা বললো। একটু পর কল আসলে ফুলবানু কারো সাথে ভয়ে ভয়ে কথা বললো। তারপর ছবিতে থাকা কিছু মেয়েদের ডাকল। মহুয়াকে ইশারায় দূরে চলে যেতে বললো।

মোট চৌদ্দ জন মেয়ে গাড়িতে বসালো। গাড়ি ছাড়ার আগে আবার কল আসল। একটা ছেলে দৌড়ে আবার ফুলবানুর কাছে গেল। ফুলবানু মনে মনে বিরক্ত হলেও উপরে প্লাস্টিকের হাসি ঝুলিয়ে রাখল।

ওই পাশের লোকটা এমন কাউকে চাইল যা শুনে ফুলবানু শক্ট হয়ে গেল। উনার এতোদিনের আশায় একজগ পানি ঢেলে দিলো কেউ। ফুলবানু কিছু বলার আগেই কল কেঁটে গেলো। দ্বিতীয় বার কল দিয়ে নিষেধ করার মতো সাহস ফুলবানুর নেই। অগত্যা কোনো ইচ্ছে না থাকলেও থমথমে মুখে মহুয়াকে গাড়িতে তুলে দিল। মহুয়া আশেপাশে এই পনেরো দিনে দেখা তিনটা মেয়েকে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। মেয়েরা কাঁদছে!! কই এতোদিন তো কাঁদতে দেখিনি। এমন কি জায়গা যেখানে যাচ্ছে শুনে প্রত্যাকের চোখে পানি.??

চলবে…

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২৩
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

গাড়ি চলছে সবার মুখ বাঁধা, হাত বাঁধা।

নতুন মেয়েদের চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে আর ফুপানোর শব্দ শুনা যাচ্ছে।

মহুয়া ক্লান্ত চোখে মেয়েদের দিকে তাকালো। ওদের জন্য ভীষণ মায়া হল৷ নিজের কথা না ভেবে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো।

ইশারায় একটা মেয়েকে বললো পেছনে বাঁধা হাতটা ওর দিকে ফিরাতে।

মহুয়া নিজের অন্য দিকে ঘুরে পেছনে বাঁধা হাতগুলো দিয়ে মেয়েটার হাত খুলার চেষ্টা করল। বেশি শক্ত করে বাঁধা ছিল না খুব সহজেই খুলে ফেললো৷ একজন একজন করে সবার হাত মুখ বাঁধা খুলে ফেললো।

মহুয়াঃ বাঁচতে চাও.? পালাতে চাও.?

সব মেয়েরা চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট।
মহুয়াঃ ভয় পেও না। আমার কথামতো কাজ কর।

প্রায় তিন ঘন্টা গাড়িটা চললো। তারপর একটা ছোট গ্রামের হোটেলের সামনে গাড়িটা থামল। গাড়ির মালিক আর ছেলেগুলো খাবার খাওয়ার জন্য হোটেলে যেতেই। মহুয়া বুদ্ধি দিয়ে দরজা খুলে মেয়েগুলোকে নিয়ে নেমে গেল তখন মধ্যে রাত। এই হোটেলটা ওদের নিজের।

মহুয়া প্রথম নামল। নেমে পেছন ফিরতেই কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভয়ে বুক কেঁপে উঠল। ছেলে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মহুয়ার দিকে। রেগে মহুয়ার দিকে তেরে আসতেই মহুয়া নিজের শরীরের ওড়নাটা ফেলে দিল,ছেলেটার দিকে তাকিয়ে মুচকি লাজুক হেঁসে ছেলেটার দিকে তাকালো। ছেলেটা আবছা অন্ধকারে থমকে গেল।কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। এই আবছা অন্ধকারে মহুয়াকে দেখতে পরীর মতো লাগছে।
মহুয়া এক পা দুই পা করে পিছিয়ে গেলো ছেলেটাও এক পা দুই পা করে এগিয়ে আসছে। গাড়ির পেছনে গিয়ে মহুয়ার শরীরে রাগ চেপে বসলো। হিংস্র বাঘিনীর মতো ছেলেটার কলার ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে মাথা থেকে লম্বা পিন বের করে ছেলেটার ঘলায় ঢুকিয়ে দিয়ে ওড়না দিয়ে গলা পেচিয়ে নিলো আরও দুইটা মেয়ে ছেলেটার মাথায় ইটের ভারি মারলো সাথে সাথে ছেলেটা এখানেই শেষ।

” এটা তোরা কি করলি!! ” বলার সাথে সাথে পেছন থেকে আরেকটা মেয়ে ইট দিয়ে এই ছেলেটাকেও ভারি মারলো আর সবগুলো মেয়ে মিলে এই ছেলেটাকেও মেরে ফেললো আর একজন। ড্রাইভার ছেলেটা ভয়ে চুপসে গেলো উল্টো দিকে দৌড় দিতে গিয়ে উল্টে পড়লো, মেয়েগুলো আজ বাঘিনীর রুপ নিয়েছে ওকেও ইচ্ছে মতো মারল।

তারপর সবাই মিলে দ্রুত সেই গ্রাম থেকে বের হয়ে গেল। তিন তিনটা খুন করেও আজ ওদের নিজেদের খুনি মনে হচ্ছে না। আজ থেকে ওরা স্বাধীন, মুক্ত।

__________

বর্তমান,

কথা শেষ করে মাথা নিচু করে বসে রইলো পলাশ,রনি।

মেঘলার মুখে কোনো শব্দ নেই, চোখে পানি চিকচিক করছে। পলাশ কে কিছু না বলে ফাহিমের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ওকে নিয়ে যাওও,আমি আবার আসব।’

আহনাফ রনির মুখ চেপে ধরে বলে উঠলো, ‘ এখানেই শেষ না আরও আছে। তোর সাথে মহুয়ার কিসের সম্পর্ক.? তুই কিভাবে মহুয়াকে চিনিস.? মহুয়াকে তুলে কেন নিয়ে ছিলি.?

রনি ভয়ে ভয়ে ঢুক গিলল।
~ আমার সাথে মহুয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। ওকে প্রথম দিন দেখেই আমি প্রেমে পড়ে গিয়ে ছিলাম। ভালোবেসে ফেলেছি।

আহনাফ রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো।রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়ে রইলো রনির দিকে।

~ আমি ওর পিছু নেওয়া শুরু করি, ওকে আমার ভালোবাসা বুঝাতে চাই, একদিন খবর আসল একটা মেয়ে পাঁচটা ছেলেকে খুন করেছে তার মধ্যে আমার ভাইও ছিল। গাড়ির ড্রাইভার ছিল আমার ছোট ভাই। ভাগ্য ভালো ও বেঁচে গিয়ে ছিলো। আমি রেগে ফুলবানুর পল্লীতে গিয়ে মেয়ের ছবি দেখে অবাক হয়ে ছিলাম। ফুলবানুকে মে’রে ফেলার হুমকি সাথে পল্লীকে উড়িয়ে দেওয়ার কথা বলতেই আমাকে সব বলে দিয়ে ছিলো।
আহনাফঃ আর ওই মেয়ে গুলোকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিল.?
রনির গলা শুকিয়ে আসলো।
রনিঃ আমি জানিনা, আমাদের কাজ ছিল বসের আস্তানা পর্যন্ত মেয়ে গুলোকে পৌঁছে দেওয়া। বিভিন্ন জায়গা থাইকা মাইয়া তুলে এনে পতিতা পল্লীতে, হোটেলে না হয় বড় বসের আস্তানায় বিক্রি করি।
আহনাফঃ মহুয়া কে তুলে এনে ছিলি কেন.?
রনিঃ বড় বস মহুয়ার জন্য পুলিশ, সন্ত্রাস লাগিয়ে রেখেছে কিন্তু এখনো মহুয়ার চেহারা দেখিনি আমি ফুলবানুর কাছ থেকে সব ছবি মুছে ফেলেছি, মহুয়ার জায়গায় অন্য মাইয়ার ছবি দিয়া আসছি। মহুয়াকে আমি কাল বিয়ে করার জন্য তুলে আনছি।।

আহনাফ রেগে রড দিয়ে রনির কান বরাবর ভারি মারলো সাথে সাথে রনির কান দিয়ে রক্ত পড়ছে আর রনি সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যায়।

__________

আহনাফ হসপিটালে এসে সোফায় পাশ থেকে টেবিল সরিয়ে নিল।
মহুয়া ঠিক ১২টায় আজকে হসপিটাল আসল। আজ কলেজে যেতে হয়েছে যার জন্য লেইট।

মহুয়া ভয়ে ভয়ে আহনাফের ক্যাবিনের সামনে দাঁড়ালো

চুপচাপ দরজা খুলে ভেতরে যেতেই ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেল।
আহনাফ গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মহুয়ার দিকে। মেয়েটা যেখানে সেখানে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাবে, না হয় কিছুর সাথে উষ্ঠা খাবে, ভারি খাবে! কেন এই মেয়ে কি চোখে দেখে না!..?

মহুয়া সামনে আহনাফকে দেখে লজ্জা পেয়ে গেল। ইসস তাহলে কি ধাক্কাটা আহনাফের সাথেই খেল! কি লজ্জার বিষয় বার বার আহনাফের সামনেই কেন এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়?

~ আজ কি আর উঠবেন না.? নাকি এভাবে এখানে বসেই কাজ করার চিন্তা ভাবনা করছেন.??

মহুয়া চট জলদি উঠে দাঁড়ালো। আশেপাশে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। এখান থেকে ওর টেবিল টা কোথায়!.?

আহনাফের দিকে তাকাতেই আহনাফ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আজ আপনি ফাইল তৈরি করবেন, ২টা থেকে রোগী আশা শুরু হবে রাত ৮টা পর্যন্ত দেখব।

মহুয়া কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।
~ আমি কি বলেছি শুনতে পাচ্ছেন.?
মহুয়াঃ জ..জ্বি।
আহনাফঃ গুড এবার কিছু খেয়ে তৈরি হন। আর চাচার কাছ থেকে কাজটা বুঝে নেন।
মহুয়া ক্যাবিন থেকে বের হয়ে যেতেই আহনাফ দরজার দিকে তাকালো। কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসল।

মহুয়া ক্যান্টিনে চুপচাপ কিছু সময় বসে রইল। ডাক্তার সোনিয়া আসল ক্যান্টিনে। মহুয়ার পাশে এসে বসল।
মহুয়া বেশ কয়েক বার এই ডাক্তার কে আহনাফের সাথে কথা বলতে দেখেছে।

সোনিয়াঃ কেমন আছো মহুয়া.?
মহুয়াঃ আলহামদুলিল্লাহ মেম,আপনি.?
সোনিয়াঃ মেম না বলে আপু বল শুনতে ভালো লাগবে।
মহুয়া হাসল। মেয়েটার কথার মধ্যে খুবই মিষ্টি একটা ভাব আছে। এই যে কতোবড় একটা ডাক্তার হওয়ার শর্তেও কতো সুন্দর ভাবে কথা বলছে।

এখানে তাদের মধ্যে টুকটাক কথা হল৷

২টার আগেই মানুষ এসে বসে আছে। সিরিয়াল অনুযায়ী মহুয়া ফাইল তৈরি করছে।

ঘন্টা খানেক ঠিকি ছিল। প্রথম প্রথম শুধু মেয়ে,মহিলা আসলেও এখন ছেলে আশা শুরু করেছে।দেখতে দেখতে ওয়েটিং রুম ভর্তি হয়ে গেল। মহুয়া চোখ তুলে চারপাশে তাকিয়ে শুধু ছেলেই দেখতে পাচ্ছে৷ ওর আশেপাশেও এসে ছেলেরা দাঁড়াচ্ছে মহুয়া মাথা নিচু করে নাম্বার, নাম ডাকছে আর ফাইল তৈরি করছে।

এখানে প্রায় ৮০% ছেলে এই মাত্র এসেছে। একজন ছেলের সাথে ৭-৮ জন বন্ধু এসেছে। বোনের সাথে ভাই, প্রথম তো ছেলে, মেয়ে, একাই এসে ছিল আস্তে আস্তে তাদের চোদ্দগুষ্টির যত ছেলে আছে সব চলে আসছে।

দরজায় দাঁড়ানো লোকটা আহনাফ কে বলে উঠলো ” স্যার একটু তারাতাড়ি করে দেখবেন,না মানে বাহিরে অনেক ভীড়।এই প্রথম কোনো পুরুষ ডাক্তারের কাছে এতো ছেলে রোগী আসতে দেখলাম। এরা সবাই একদিনে কিভাবে অসুস্থ হল? ”

আহনাফ সিসি ক্যামেরা দিয়ে বাহিরের অবস্থা দেখে হাসল।
আসলে আহনাফ কি করতে চাচ্ছে.??

মহুয়ার অস্বস্তি বাড়তে লাগলো। মাথা উপরে তুলে তাকাতেই ছেলেদের এমন দৃষ্টি ওর অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। দুই বার ধমক ও দিয়েছে দূরে গিয়ে দাঁড়ান আপনারা। যারা রোগী একমাত্র তারা ছাড়া বাকিরা নিচ তলায় অপেক্ষা করুন।আপনাদের জন্য রোগীদের সমস্যা হচ্ছে।

রাত ৯টায় মহুয়া বাড়িতে ফিরলো তাও একা। রিক্সা দিয়ে আসার সময় ভীষণ ভয় পেয়ে ছিল। আজ ওর জীবনের আবারও একটা ভয়ংকর দিন গেল।

মহুয়া বাসায় এসেই ঠান্ডার মধ্যে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।

ছোঁয়া নিষেধ করল গোসল করতে কিন্তু আজ মহুয়া ছোঁয়ার সাথেও কোনো কথা বললো না।

ওয়াশরুমে প্রায় এক ঘন্টা ভিজল, হঠাৎ কান্নায় ভেঙে পড়ল। আমাদের আশেপাশে নরপিশাচদের আনাগোনায় মুখরিত। মানুষ রুপি পিশাচ এরা। সাথে সাথে ভীষণ রাগ হল আহনাফের উপর।

মহুয়া বের হতেই ছোঁয়া চমকে ওর গালে হাত রেখে বলে উঠলো, ‘ মহুয়া তুই ঠিক আছিস।’
মহুয়াঃ হুম ঠিক আছি।
ছোঁয়াঃ একদম তুই ঠিক নেই। কিছু কি হয়েছে.??
মহুয়াঃ না..
ছোঁয়াঃ তোর কন্ঠ এমন লাগছে কেন.?
মহুয়াঃ ভালো লাগছে না, বলেই ব্যালকনিতে চলে গেল।
ছোঁয়া মহুয়াকে টেনে রুমে এনে বিছানায় বসিয়ে কাঁথা গায়ে জড়িয়ে বললো,’ চুপচাপ বসে থাক আমি এখনি খাবার নিয়ে আসছি।তোকে দেখেই মনে হচ্ছে কিছু খাসনি,মুখটা কেমন এই টুকু হয়ে গেছে।
মহুয়া ছোয়ার চিন্তিত মুখটার দিকে তাকিয়ে হাসল।

ছোয়া দ্রুত নিচে আসতে গিয়ে হুঁচট খেয়ে পড়তে নিলে কেউ একজন সুন্দর করে ওর কোমর জড়িয়ে বাঁচিয়ে নেয়।

ছোঁয়া ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।এই বুঝি কোমর গেলরেএএগগ।
কোমরে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই চোখ খুলে সামনে তাকায়। নিজের সামনে অপরিচিত ছেলে দেখে ভয়ে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে যায়।

~ এই জন্যই কারো সাহায্য করতে নেই। সাহায্য করলাম আর আপনি আমাকে ধাক্কা মারলেন!..
ছোঁয়াঃ তো কি আপনাকে আঠার মতো জড়িয়ে রাখব.?
ছেলেটা লজ্জা পাওয়ার মতো মুখ করে বললো,’ রাখতে পারেন।’

” সাজ্জাদ!! ”

কারো গম্ভীর কণ্ঠ পেতেই সাজ্জাদ ছেলেটা বিরক্ত হয়ে পেছনে ফিরে।
সাজ্জাদঃ তোর আর আসার সময় হলো না।
নির্জন ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে রেগে বলে উঠলো, ‘ এখানে সং সেজে দাঁড়িয়ে আছিস কেন.?? যা নিজের কাজে।’
অচেনা কারো সামনে ধমক খেয়ে ইনোসেন্ট মুখ করে রান্না ঘরের দিকে চলে গেল ছোঁয়া। এই নির্জনের বাচ্চা সব সময় এমন করে।

নির্জন সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ তুই ওকে কেন ধরে ছিস.?’
সাজ্জাদঃ কেন তুই কি চোখে দেখিসনি কিউট বাচ্চাটা নিচে পড়ে যাচ্ছিল।
নির্জনঃ তাই বলে তোকে ধরতে হবে.? পড়ে যাক, কোমর ভেঙে যাক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব ঠিক হয়ে যাবে। তুই কেন ধরতে যাবি, নেক্সট ও পড়ে যাক, হাত,পা, কোমর ভেঙে যাক হাতেও স্পর্শ করবি না।”

সাজ্জাদ কিছু সময় নির্জনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর হাসতে হাসতে বলে উঠলো ” জ্বলে.. জ্বলে… জ্ব….লেএএএ..”

নির্জন সাজ্জাদের দিকে রেগে তাকিয়ে আবার নিজেই হেঁসে ফেললো। সাজ্জাদ খুব ভালো করেই জানে নির্জন ছোঁয়াকে পছন্দ করে, ছবিও দেখে ছিল একবার চিনতে একদম ভুল করেনি এটাই ছোঁয়া।

সাজ্জাদ নির্জনের অনলাইন বন্ধু, এই বাসায় কখনো আসেনি, তবে সাজ্জাদকে নিয়ে অনেক কাহিনী শুনিয়েছে সবাইকে নির্জন, মুখে মুখে প্রায় সবাই চিনে সাজ্জাদকে। অনলাইনেই এদের পরিচয় তারপর বন্ধুত্ব আর এখন এরাএকজন আরেকজনকে নিজের ভাই , বন্ধু সব মনে করে।

সাজ্জাদ ড্রয়িং রুমে সবার সাথে পরিচিত হয়ে নির্জনের সাথে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার সময় দরজায় চোখ আঁটকে যায়। শ্যামবর্ন গায়ের রং, একটা শাড়ি পড়া মেয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে চুপচাপ হেঁটে এদিকে আসছে, মুখে কোনো সাজসজ্জার ছিটেফোঁটাও নেই, চুল গুলো খোলা কি অপরুপ সুন্দরী লাগছে। লোকে বলে চাপা গায়ের রঙে নাকি মেয়েদের সুন্দর লাগে না সাজ্জাদ তো চোখ সরাতেই পারছে না।

সাজ্জাদ কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নির্জন নেমে এসে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে.??
সাজ্জাদ ইশারায় জিজ্ঞেস করল , মেয়েটা কে..?’

নির্জনঃ মেঘলা ভাবি, তোকে তো বলে ছিলাম সবটা।

সাজ্জাদ অবিশ্বাস্য চোখে নির্জনের দিকে তাকিয়ে আবার মেঘলার দিকে তাকালো। এতো সুন্দর একটা মেয়ে বস্তির ছিনতাইকারী, চোর!!?? বিশ্বাস হলো না সাজ্জাদের।

সাজ্জাদ মনে মনে হেঁসে বলে উঠলো, “‘ আপনি বস্তির মেয়ে হোন বা ছিনতাইকারী আমার আপনাকেই চাই মেঘলা”

চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-২০+২১

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২০
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

একটা অন্ধকার রুমে চেয়ারে হাত পা বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে আছে পলাশ।

অন্ধকার রুমের দরজা ঠেলে একজন লোক প্রবেশ করলো। অন্ধকার রুমটা সেকেন্ডে আলো জ্বলে উঠলো। যত্ন সহকারে একটা চেয়ার পলাশের মুখোমুখি রেখে বলে উঠলো, ‘ মেডাম আসেন। ‘

দরজা দিয়ে ফরমাল ড্রেসআপে প্রবেশ করলো একটা নারী। খুব সুন্দর করে হেঁটে এসে চেয়ার টেনে পলাশের মুখোমুখি বসল। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে বললো,’ ফাহিম ওর মুখে পানি ঢেলে দাও।’

__________

আহনাফ বসে আছে রনির সামনে।
এতোক্ষন প্রচুর মেরেছে রনিকে। কিন্তু এই ছেলে ভয় পাওয়ার বদলে কেমন বিশ্রী হাসছে।

~ ভাই শা*লা পাগল হয়ে যায় নাই তো.?
রনি~ ওই তোর কাছে আমার বইন বিয়া দিছি.? শা*লা কছ কোন সম্পর্কে.?

ছেলেটা আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফ খুব শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রনির দিকে। ঝড় আশার আগে যেমন প্রকৃতি শীতল থাকে এখন ঠিক তেমনই আছে।

রনি ঘারটা বাঁকা করে এক হাত দিয়ে ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা রক্তটা মুছে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ দুলাভাই একগ্লাস পানি দে.. বইন তো নাই তাও তোরে দুলাভাই বানায় নিলাম। এই খুশিতে একটা সিগারেট দে।’

ছেলেটা ভয়ে ভয়ে আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফ এখনো চুপচাপ রনিকে দেখছে।
রনির সে দিকে খেয়াল নেই। দেখেও না দেখার মতো একে ওকে এটা আনতে ওটা আনতে বলছে৷ আর হুঁ হুঁ করে হাসছে।

আহনাফ হঠাৎ বলে উঠলো, ‘ সাদ ওই রুম থেকে আগুনে দিয়ে রাখা রডটা নিয়ে আয়।’
রনি থামলো ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আহনাফ দিকে তাকালো। হাত জোর করে বলে উঠলো ” ভাই ভাই আমাকে মারবেন না ভাই মারবেন না, আমি সব বলছি।’

আহনাফ ঠিক আগের মতোই।

রনি আহনাফের দিকে তাকিয়ে বিশ্রী ভাবে হাসতে হাসতে বলে উঠলো, ‘ তোর কি মনে হয় আমি আমার জীবন ভিক্ষা এভাবে তোর কাছে চাইব.?? এই রনি কারো কাছে মাথা নত করে না সবাই রনির পায়ে ধরে জীবন ভিক্ষা চায়। তুইও চাইবি শুধু একবার এখান থেকে বের হই তোর জীবন আমি জাহান্নাম বানিয়ে ছাড়ব।

আহনাফঃ আগে বের হয়ে দেখা। জীবন নিয়ে বের হতে পারবি তো.?
এর মধ্যে সাদ ছেলেটা গরম রড এনে আহনাফের সামনে রাখল। রড লাল হয়ে আগুনের লাভার মতো হয়ে আছে।

রনি উপর দিয়ে এইসব বললেও ভীষণ ভয় পেয়ে গেছে। ভয়ে হাত পা কাঁপছে।

আহনাফ রনির অবস্থা খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো। তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো, ‘ তোকে দুইটা অপশন দিচ্ছি যে কোনো একটা বেছে নে.’
রনি ভয়ে আহনাফের দিকে তাকালো। রডের দিকে একবার তাকালো আরেকবার আহনাফের দিকে।
আহনাফঃ প্রথম, তুই প্রথম থেকে মহুয়ার সব কিছু বলবি। তাহলে খুব সহজ মৃত্যু দেওয়া হবে।
দ্বিতীয়, এই সব কিছুর পেছনে কে.? আর না বললে , বলেই রডটা হাতে নিয়ে রনির হাতে চেপে ধরলো।

রনি চিৎকার দেওয়ার আগেই সাদ ছেলেটা রনির মুখ টেপ মেরে ছিলো।

রনি যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে ইশারা করলো সে সব বলবে।
বিজয়ী হাসি ফুটে উঠলো আহনাফের চোখে মুখে।

____________

পলাশ চোখ পিটপিট করে আশেপাশে তাকালো। সে এখানে কেন? ওতো হসপিটাল ছিলো”!

পলাশঃ আমি এখানে কেন? আর আপনি.?
মেয়েটা অবাক হলো না। জেনো সে জানতো ছেলেটা ওকে চিনে ফেলবে।

মেয়েটা পকেট থেকে রিভলবার বের করে ওর আর ছেলেটার মাঝ খানে ছোট টেবিলের উপর রাখলো।
ভয়ে চুপসে গেলো পলাশ।

~ তাহলে আগে পরিচিত হয়ে নেই।
পলাশ ভয়ে ভয়ে মাথা নাড়ল।
~ আমি CID মেঘলা ইসলাম মেঘ।

CID শুনেই কপাল বেয়ে ঘাম পড়তে শুরু করলো পলাশের।

মেঘলা চঞ্চল চোখে পলাশকে ভালো করে দেখে নিলো তারপর ফাহিমের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আচ্ছা ফাহিম আমাকে দেখতে কি ডাইনীদের মতো লাগছে.??

ফাহিম নিজেও মেঘলাকে ভয় পায়। মেঘলাকে ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারন আছে। এই যে সামনে বসে থাকা মেয়েটা এখন কি মিষ্টি করে হাসছে, কিছু জিজ্ঞেস করছে এখন যদি সঠিক উত্তর না পায় সাথে সাথে সে ডাইনী রুপ দারন করতে এক মুহূর্ত দেরি করবে না। CID সব চেয়ে সাহসী আর রাগী অফিসার হলো মেঘলা। যার তাকানোতেই সবাই ভয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।

ফাহিমঃ না মেডাম আপনাকে দেখতে খুবই মিষ্টি লাগছে।
মেঘলা খুশি হলো উত্তর শুনে। সাদা সার্ট,চুল গুলো উপরে করে জুটি বাঁধা, দেখতে আসলেই মিষ্টি একটা মেয়ে লাগছে।

মেঘলা পলাশের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনি ভয় পাচ্ছেন কেন.? কাঁপছেন কেন.? ‘
পলাশ কিছু না বলে রিভলবারের দিকে তাকিয়ে পানি খেতে চাইল।
মেঘলা ফাহিমকে ইশারায় পানি নিয়ে আসতে বললো।
ফাহিম পানি নিয়ে আসতেই মেঘলা পলাশকে দেখিয়ে সবটা পানি একটু একটু করে খেয়ে নিল।।
মেঘলাঃ পানি কেন সাথে বিরিয়ানি ও পাবেন আগে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
পলাশঃ জ…জ্বি।
মেঘলাঃ ভয় পাবেন না উত্তর ঠিকঠাক হলে আপনার কিছু হবে না আর ভুল হলে বলেই পাশ থেকে একটা ছুরি হাতে নিয়ে পলাশের হাতের চারপাশ ঘুরিয়ে বলে উঠলো, ‘ একটা আঙ্গুল ও থাকবে না।’

পলাশ CID শুনার পর থেকেই ভীষণ ভয়ে আছে। আজ হয়তো তার জীবনের শেষ দিন। আজ কি তাহলে জীবনের সব পাপের ধুলো পড়া পৃষ্ঠা নাড়া খাবে!!??.

মেঘলা এবার সিরিয়াস হয়ে পলাশের মুখোমুখি বসল। গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ মহুয়ার জীবনের প্রথম থেকে সবটা শুনতে চাই।’
পলাশের ভয় দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।
পলাশঃ কে মহুয়া.? আ…আমি কিছু জানিনা।

মেঘলা ছুরি হাতে নিয়ে ফাহিম কে বলে উঠলো, ‘ সুপারি কাঁটার যন্ত্রটা নিয়ে আয়। আমার চোখের সামনে একটা একটা করে ওর আঙ্গুল গুলো কাঁট যতোক্ষন না সত্যি কথা বলে।

পলাশের ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেলো। ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো, ‘ বলছি বলছি..’
মেঘলা মুচকি হেঁসে তাকালো।

___________

অতীত,

মহুয়ার বাবা মা ওর জন্মের পরপর মা-রা যায়।
মহুয়া বড় হয় ওর মামা মামির কাছে। মামার ছিল দুই ছেলে এক মেয়ে।

মুর্শেদ তালুকদার ছিল মহুয়ার মামা। একমাত্র মুর্শেদ আর ওর দুই ছেলে ছাড়া আর কেউ তেমন মহুয়াকে পছন্দ করত না। রাস্তা দিয়ে বের হলে পাড়াপ্রতিবেশিরা বুঝিয়ে দেয় ওর বাবা মা বোনের মৃত্যুর জন্য একমাত্র ও দায়ী। মহুয়া অলক্ষী যার জন্য ওর জন্মের প্রথম দিন ওর বাবা বোন আর দ্বিতীয় দিন মা পৃথিবী ছাড়েন।

নিজের মামিও কোনোদিন ছাড় দেয় না প্রতিদিন নিয়ম করে মনে কড়িয়ে দেয় মহুয়া অপয়াঅলক্ষী।

রুমের পাতলা পর্দা টেনে নিলো মহুয়া। সূর্য মামা আজকে একটু বেশি জ্বালাতন করছে। আজ নিশ্চয়ই সূর্য মামা মামির সাথে ঝগড়া করে এসেছে,সেই জন্যই এতো সকাল সকাল মামির সব রাগ আমার মতো নিরীহ বাচ্চার উপর ঝারছে।

বালিশে মুখ গুঁজে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করতেই নিচে চেচামেচি, ভাঙচুরের শব্দ শুনতে পেল। এটা নতুন কিছু না প্রতিদিন হয়ে আসছে।

রায়মা বেগম রেগে ভাঙচুর করছেন আর মহুয়াকে ইচ্ছে মতো গালাগালি করছেন।

মহুয়া বিছানা থেকে উঠে রুমের দরজা জানালা ভালো করে লাগিয়ে আবার এসে শুয়ে পড়লো দশটার দশ মিনিট আগে ঘুম থেকে উঠবে। এর আগে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও সে নিচে যাবে না।

আর এই দিকে রাইমা বেগম বলেই চলেছেন,’ জমিদারের মাইয়া সারাদিন ঘুমাইব আর আমি এই বাড়ির কাজের লোক। সারাদিন রান্না ঘরে পড়ে থাকি রুপ দিয়ে কি ধুয়ে ধুয়ে পানি খাইব আপদ আল্লাহ আপদ চোখের সামনে থেকে দূরও করে না। এতো মানুষ ম’রে তোরে দেখে না। আজ থেকে মেপে মেপে খানা দেওয়া হইব। খানা কি রাস্তায় পইরা থাহে।সারাদিন ঘুম, বন্ধুদের সাথে আড্ডা ঘরে কোনো কাম নাই। আরও হাজারো কথা বলছেন আর হাঁড়ি পাতিলের উপর রাগ ঝাড়ছেন।

মহুয়া এইসব শুনতে শুনতে অভস্ত্য।
ফ্রেশ হয়ে দশটার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে বের হলো বাড়ি থেকে। আজ সকালের খাবার যে পাবেনা আগে থেকেই জানত। ব্যাগে দেখে নিল কতো টাকা আছে। ৫০ টাকা পেলো।

এই দুতলা বাড়িটি মহুয়ার বাবার। ওর বাবার মৃত্যুর পর পর যখন ওর মা ও মা-রা যায় তারপর ওর দায়িত্ব নেয় মুর্শেদ তালুকদার। সম্পর্কে ওর দূর সম্পর্কের মামা হয়। তারপর থেকে তারা এই বাড়িতেই থাকে মহুয়ার আব্বুর সব কিছু দেখাশোনা করে। মহুয়া কখনো দাদা বাড়ি ঠিকানা বা নানা বাড়ির ঠিকানা পায়নি। না কখনো কোনো আত্মীয় স্বজনরা এসেছে। সে একমাত্র তাদের ছাড়া আর কাউকে চিনে না। মা বাবার, বোন তাদের ছবিও কোনোদিন দেখেনি। পাড়াপ্রতিবেশিদের মুখ থেকে শুনে ওর মা বাবা ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন। ওর বাবা খুব ভালো মনের মানুষ ছিলো। ওর বাবা ছিল পুলিশ আর মা উকিল। মহুয়া এইসবের সত্যি কতোটুকু তাও জানেনা। মামা মামি কখনো ওর মা বাবার কথা তুলে না। কিছু জিজ্ঞেস করলেও ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। সে নাকি বড় হয়নি সে এখনো ছোটো।

মহুয়া পাঁচ মিনিট হাঁটতেই স্কুলে চলে আসলো। সে এবার দশম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলে আসতেই বেস্টুর সাথে দেখা হয়ে গেল। দুইজন কথা বলতে বলতে গেইট দিয়ে ঢুকার সময় লক্ষ করলো একটা বোকাসোকা, চশমা পড়া ছেলে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

মহুয়া বেস্টু মাইশা দুষ্টু হেঁসে বলে উঠলো, ‘ তোর আশিক।’
মহুয়া রেগে মাইশার দিকে তাকালো।
মাইশাঃ ওফ্ফ তোর রাগী তাকানো তে আমিই প্রেমে পড়ে গেলাম বেচারা আশিক তো আছাড় খেয়ে পড়বে।

মহুয়াও মাইশার কথা শুনে হেঁসে ফেললো। আজ একটা বছর এই ছেলেটাকে দেখে আসছে। মহুয়া বাড়ি থেকে বের হলেই ছেলেটাকে দেখবে রাস্তার পাশে টং দোকানে, কখনো স্কুলের গেইটের পাশে, আবার কখনো ওদের বাড়ির রাস্তায়। মোট কথা মহুয়া যেখানে এই ছেলেও সেখানে। মহুয়া বুঝে পায় না এই ছেলে কি জাদু জানে.? না হলে মহুয়া কোথায় আছে এই ছেলে কিভাবে জানতে পারে.?? দেখতে বোকাসোকা, চোখে গোল ফ্রেমের চশমা, গায়ের রং ফর্সা, চুল গুলো এক পাশে লেপ্টে রাখা যেন তেল দিয়ে রেখেছে। শার্টের সব গুলোই বোতাম লাগানো, গলার কাছের বোতাম টাও যার জন্য একটু বেশিই বোকা টাইপের লাগছে।

বোকাসোকা চোখে তাকিয়ে থাকে মহুয়ার দিকে। এই এক বছরে কখনো মহুয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে একটা কথা বলেনি। শুধু পাঁচটা চিঠি দিয়ে ছিলো তাও বিশেষ দিনে, চিঠির ভাষায় যে কোনো নারী এই বোকাসোকা ছেলের প্রেমে পড়তে দ্বিতীয় বার ভাববে না। মহুয়া মাঝে মাঝে ভাবে এই ছেলে কি কোনো লেখকের লেখা চিঠি চুরি করে আমাকে দিল.?? এতো সুন্দর কিভাবে হয় একটা মানুষ চিন্তা ভাবনা!!..?

মহুয়া ক্লাস শেষে স্কুল থেকে বের হতেই রাস্তার পাশে তাকালো। ছেলেটা কে না দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। আশেপাশে খুঁজতে শুরু করলো। না কোথাও নেই, ছেলেটাকি চলে গেল.??

মন খারাপ হলো মহুয়ার। মাইশা এসে মহুয়ার পেছনে দাঁড়িয়ে বললো,’ চল বাড়িতে যাওয়া যাক।’
মহুয়াঃ হুম।
মাইশাঃ এই মেহু তোর মুখ এতো শুখনা কেন.? সকালে খেয়েছিস.?
মহুয়ার পেটে মোচড় দিয়ে উঠলো। ভীষণ খিদে পেয়েছে ক্লাসে পড়ার চাপে ভুলে ছিলো আর এখন সেই নোকাবোকা লোকটা খুজতে গিয়ে।

মহুয়াঃ চল মাইশা দুইটা সিঙ্গারা কিনে নিয়ে আসি।
মাইশাঃ তোর বাড়ি, তোর সব কিছু আর ওই ডাইনী মহিলা তোর উপর এতো অত্যাচার করে! কিভাবে সহ্য করিস তুই.? আমি হলে তো ডাইনীর ঘার মটকে দিতাম।
মহুয়াঃ তোর ঘার মটকানো শেষ? এবার চল. আমার প্রচুর খিদে পেয়েছে।
মাইশাঃ তুই এমন কেন.?
মহুয়াঃ উনি যেমনি হোক মাইশা, উনারা আমাকে লালন পালন করে বড় করেছে। আজ আমি কোথায় থাকতাম যদি উনারা আমাকে আগলে না নিত.? আমার উনারা ছাড়া কেউ নেই। মামি আমাকে আপন নাই ভাবুক আমার উনাকে আমার মামি নয় মা মনে করি। ছোটো থেকে মা ঢেকেছি বলে কতো মার খেয়েছি তাও আমি মা ডাকি, মামি বলতে চাইলেও মুখ দিয়ে মা চলে আসে। আমি ভালোবাসি উনাদের। একদিন তারাও বাসবে।

মাইশা আর কিছু বললো না চুপচাপ একটা হোটেল থেকে সিঙ্গারা আনতে গেল।মহুয়া রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

হুট করে সেই বোকাসোকা টাইপের ছেলেটা মহুয়ার সামনে এসে দাঁড়ালো। বেশ অবাক হলো, থাকে বুক ধুকপুক করা শুরু করলো। কেমন লজ্জা লাগতে শুরু করলো।

ছেলেটার হাতে একটা প্যাকেট, প্যাকেট টা মহুয়ার দিকে বাড়িয়ে দিলো।
মহুয়া কি বলবে..? কিছু জিজ্ঞেস করতে চেয়েও পারছে না। হুট করে সামনে আশায় সব গুলিয়ে যাচ্ছে। এতোদিন তো কতো কিছু ভেবে রেখে ছিলো। কত শব্দ সাজিয়ে রেখে দিলো।

ছেলেটা এই প্রথম মহুয়ার সাথে কথা বললো,’ নেন দরুন.’
মহুয়াঃ এটা কি.?
~ বাসায় গিয়ে খুলে দেখবেন।
মহুয়া হাত বাড়িয়ে প্যাকেট টা নিল।
ছেলেটা হাসলো। কি চমৎকার সেই হাসি। সদ্য কিশোরী মেয়ে মহুয়া মুগ্ধ হলো। এখন বুঝি মুগ্ধ হওয়ার বয়স? হুটহাট প্রেমে পড়ার বয়স.? মিথ্যা মায়াজালে আঁটকে পড়ার বয়স.? ! এই যে মহুয়া ছেলেটার হাসি দেখেই মুগ্ধ হলো। পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দর হাসির অধিকারী হিসেবে সামনে দাঁড়ানো বোকা ছেলেটাকে ঘোষণা করল।

মহুয়ার ভাবনার মধ্যেই খেয়াল করলো ছেলেটা চলে যাচ্ছে। মহুয়া এক ভয়াবহ কাজ করে বসলো। হঠাৎ পেছন থেকে ছেলেটা কে ডেকে বলে উঠলো, ‘ আপনার নাম কি..?’

ছেলেটা পেছন ফিরে মুচকি হেঁসে বললো, ‘ পলাশ’

ব্যাস এই মুচকি হাসি তীরের মতো মহুয়ার কিশোরী মনে এসে বিঁধল। কি বিঁধল!? কাঁটা নাকি গোলাপ.? এটা কাঁটা যুক্ত গোলাপ।

________

বাড়িতে এসেও মহুয়া শুধু সেই বোকাসোকা ছেলের কথাই ভাবছে। চাইলেও মাথা থেকে নামাতে পারছে না। হুট করে সব কিছু রঙিন মনে হচ্ছে। ফুল দেখে কানে গুজতে ইচ্ছে করছে, শাড়ি পড়ে ছেলেটার সামনে যেতে ইচ্ছে করছে কি আজব! মহুয়া কি প্রেমে পড়েছে.? তাও এক বোকাসোকা ছেলের.?

পাঁচটা চিঠি হাতে নিয়ে বসে আছে। ঠিক জানা নেই এই এক বছরে এই চিঠি গুলো কতোশবার পড়েছে। ফ্রী হলেই চিঠি গুলো পড়তে শুরু করে মিটিমিটি হাসে, আবার মন খারাপ করে। কেন ছেলেটা সাহস করে সামনে এসে কথা বলে না। দূর থেকে শুধু তাকিয়ে দেখে। ছেলেটার কি একটু দু চারটা কথা বলতে ইচ্ছে হয় না.?? মহুয়ার তো হয়, অনেক কথা বলতে ইচ্ছে হয়।

রাতে বাড়িতে সাইফ আসল। সাইফ, সবুজ জমজ ভাই। সবুজ বিদেশ থাকে আর সাইফ নতুন চাকরি নিয়েছে।

সাইফ খেতে বসতেই মিম দৌড়ে এসে ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো, ‘ আমার চকলেট কোথায় ভাই.?’
সাইফ চকলেট বের করতেই মিম দুইটা চকলেট নিতে চাইল। সাইফ একটা মিমের হাতে দিয়ে মহুয়াকে ডাকল। মহুয়া রুম থেকে বের হয়ে আসলে। সাইফ মহুয়ার হাতে আরেকটা চকলেট দিল।

মিম রেগে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ বাহিরের লোকের জন্য আমি আমার ভাইদের ভালোবাসাও ঠিক মতো পাচ্ছি না। এখানে ভাগ বসাতে চলে আসে। অলক্ষী আমার জীবন থেকে কবে যাবে!!..??

সাইফ মিম কে ধমক দিয়ে বলে উঠলো, ‘ মিম এইসব কেমন ব্যাবহার! দিন দিন তুই বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস! মহুয়া আমাদের আরেক বোন। রক্তের সম্পর্ক সব নয় আত্মার সম্পর্কই সব। মহুয়ার সাথে আমাদের রক্তের সম্পর্ক নেই তবে আত্মার সম্পর্ক আছে।

মিম বিরক্ত হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কেটে নিজের রুমে চলে গেল।

সাইফ মহুয়ার হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে প্লেটে খাবার বেরে বড় মাছের মাথাটা মহুয়াকে দিল। মহুয়ার মাছের মাথা পছন্দ।

রেনু বেগম রান্না ঘর থেকে ছেলের জন্য তরকারি বাটি এনে টেবিলে রেখে মহুয়ার প্লেটের দিয়ে তৃক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।

এই মাছটা উনি সাইফের জন্য রেখে ছিলেন। মিম কতো বার বলেছে মাথাটা আমাকে দাও তাও দেননি। আর এখন কিনা নবাব জাদি বসে বসে খাচ্ছে। রাগ হলো ভীষণ তাও ছেলের সামনে কিছু বলা যাবে না। দুই ছেলে কে কি জাদু করেছে এই কালনাগিনী আল্লাহ ভালো জানে। কারো কাছেই ওর নামে কিছু বলা যায় না৷

রাত গিয়ে দিন আসছে। সময় নিজের মতো চলে যাচ্ছে।
এই এক সপ্তাহে পলাশ বেশ কয়েকবার মহুয়াকে এটা সেটা দিয়েছে তবে আগের মতো অন্য কাউকে দিয়ে নয়। নিজ হাতে চোখে চোখ রেখে দিয়েছে।

একদিন সাহস করে পলাশ বলে উঠলো, ‘ আপনি কি আমার বন্ধু হবেন মহুয়া ? আমার জন্য অপেক্ষা করবেন.?’

মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মতো অবাক হয়ে ছিলো মহুয়া। তবে সেদিন কিছু বলেনি, চুপচাপ চলে গিয়ে ছিলো।

তারপর থেকে মহুয়া স্কুলে আসলেই রাস্তার আশপাশে তাকাতে শুরু করত । কিন্তু কোথাও পলাশ কে দেখা যেত না। দুইদিন হয়ে গেল কিন্তু পলাশ কে একবারও দেখা যায়নি।
মহুয়া মন খারাপ হলো। বুকের ভেতর কিছু একটা নেই, শূন্যতা অনুভব হলো।যেখানেই যেত আশেপাশে তাকাত। এই বুঝি পলাশকে একটু দেখা গেল।

এর মধ্যে স্কুল থেকে অনেক মেয়ে গায়েব হয়ে গেছে। স্কুলে এসে ছিলো কিন্তু তারা আর বাড়ি ফিরে যায়নি। ১-২ জন নয় ২৫জন ছাত্রী নিখুঁজ। সবার মা বাবা মেয়েদের চিন্তায় পাগল প্রায়। সবাই স্কুলের কর্তৃপক্ষের উপর দোষ দিচ্ছে। পুলিশরাও আজ দুইদিন মেয়েদের কোনো খুঁজ বের করতে পারছে না।খুব নিখুঁত পরিকল্পনায় ওদের কিডন্যাপ করা হয়েছে। ভুলেও এক ফোটা খুঁত রেখে যায়নি কিডন্যাপার।

তিনদিনের দিন দেখা মিললো পলাশের। চোখে চশমা ঠেলে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে এই দিকে। কাউকে এক মুহূর্ত দেখার তৃষ্ণায় যেন সে বেআকুল হয়ে আছে।

মহুয়া পলাশকে দেখে থমকে গেলো। চোখে পানি চিকচিক করে উঠলো। মন তাকে জানিয়ে দিল তুমি ভীষণ বাজে ভাবে এই বোকা ছেলের প্রেমে পড়ে গেছ।

চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_২১
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

দিন গিয়ে রাত নামছে,রাতের পর সকাল। দেখতে দেখতে এক মাস চলে গেছে।
একটা মেয়ের ও সন্ধান পাওয়া যায়নি। আস্তে আস্তে চাপা পড়ে গেল সেই ঘটনা আর মেয়ে গুলো।
মহুয়া খেয়াল করল হুট করে মেয়েগুলোর মা বাবা আত্মীয় স্বজনরা স্কুলে এসে ভাংচুর, চিৎকার চেচামেচি করা বন্ধ করে দিলো। স্কুলের আশেপাশেও দেখা যায় না তাদের।

পলাশের সাথে মহুয়ার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। মহুয়া, মাইশা আর পলাশ এক সাথে ফুচকা খাওয়া,ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যাওয়া শুরু করলো।

দিন দিন মহুয়া ভীষণ ভাবে দূর্বল হয়ে পরল পলাশের প্রতি।

একদিন মহুয়া কে মাইশা ফোন দিয়ে বললো জলদি সুন্দর করে রেডি হয়ে স্কুলের পেছনে পুকুর পাড়ে চলে আয়।
মহুয়াঃ কেন.?
মাইশাঃ আল্লাহ মহু তুই জানিস না! আজ তো পলাশ ভাইয়ার জন্মদিন।

নিমিষেই মনটা খাারাপ হয়ে গেল মহুয়ার। আজ পলাশের জন্মদিন আর মহুয়া এটা জানে না৷ পলাশ একবার ওকে বললোও না! মন খারাপ করে স্কুল ড্রেস পড়ে নিল।

স্কুলে আসতেই কিছুটা অবাক হলো মহুয়া। রাস্তায় আশার সময় খেয়াল করল কিছু ছেলে মিটিমিটি হাসছে। কেউ বা ভাবি বলে সালাম দিচ্ছে।
মহুয়া ভয়ে মাথা নিচু করে রাখল।
আজ বুঝলো মাইশা ভুল বলে না মহুয়া আসলেই ভীষণ ভীতু। এমনিতেই কয়েকদিন আগে এতোগুলা মেয়ের কিডন্যাপ হয়ে যাওয়া তারপর আজ অচেনা ছেলেদের এমন আচরণে ভয়ে হাত পা কাঁপছে। দ্রুত পা চলাতে গিয়েও মনে হচ্ছে পা চলছে না।

স্কুলে এসে মাইশা কে দেখে হাত চেপে ধরলো।
মাইশাঃ কি হয়েছে মহু.? এতো ভয় পেয়ে আছিস কেন.?
মহুয়াঃ পানি দে..
মাইশা বোতল বের করে পানি দিল।
মহুয়া পানি খেয়ে ক্লাসের দিকে যেতেই মাইশা ওর হাত শক্ত করে ধরে বললো,’ ভয় কেন পেয়ে আছিস.? মামি কিছু করেছে.? মিম কিছু বলেছে..? শুধু বল আজ আমি একটা কেও ছাড়বও না কি পেয়েছে ওরা।
মহুয়াঃ তেমন কিছু না। ক্লাসে চল..

মাইশা মহুয়াকে জোর করে স্কুলের পেছনে নিয়ে গেলো। কিছু ছেলে মেয়ে ঘিরে আছে। মাইশা মহুয়ার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো সামনে যা।

মহুয়া কিছুই বুঝতে পারছে না এখানে হচ্ছেটা কি..??

মহুয়া সামনে যেতেই একটা কেক দেখলো। চারপাশে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে আছে। মহুয়া সামনে যেতেই গাছ থেকে আরও গোলাপের পাপড়ি পড়তে শুরু করলো ওর মাথার উপর।

মহুয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই চশমা পড়া বোকাসোকা পলাশ ওর সামনে এক গুচ্ছ গোলাপ থেকে একটা গোলাপ নিয়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো।
মহুয়ার মনে হলো সব স্বপ্ন!! আসলেই কি স্বপ্ন..? নিজের হাতে চিমটি কাটলো। না সবটা সত্যি..

সেদিন পলাশের সেই প্রপোজে লজ্জায় মিইয়ে পড়া মহুয়া সম্মতি দেয়। শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়।

তাদের ভালোবাসা চলতে থাকে, সম্পর্ক আস্তে আস্তে ভীষণ গভীর হয়। কিন্তু পলাশ কখনো মহুয়ার গায়ে বাজে ভাবে হাত দেয়নি। শুধু ভালোবেসে কখনো হাতে ফুলের মালা পড়িয়ে দিয়েছে আবার কখনো শক্ত করে হাতটা ধরে রাস্তা পাড় হয়েছে, কখনো বা যত্ন করে হাতে চকলেট গুঁজে দিয়েছে।

মহুয়া পলাশের এই আচরণে ভীষণ মুগ্ধ।

চারমাস পেড়িয়ে গেছে ওদের সম্পর্কের।

আজকাল মামির সাথে হাঁটতে বসতে ঝগড়া হচ্ছে, মিম কখনো সখনো মহুয়া গায়ে হাত তুলছে। আজ তো সকাল, দুপুর দুই বেলাই খাবার পায়নি। রাতে সাইফ মহুয়াকে সব সময় নিজের সাথে খেতে বসায়। দিনে অফিসে থাকে বাড়ির খবর সে কিছুই জানতে পারে না।

রেনু বেগম আজ মুরশেদ তালুকদার বাড়িতে আসতেই মহুয়াকে নিয়ে নালিশ দিতে শুরু করলো।
মুরশেদ তালুকদার বউয়ের কথায় পাত্তা না দিয়ে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে মহুয়াকে ডাকলেন৷
রেনু ভাবলো হয়তো মহুয়াকে বকবে বলে ডেকেছে। মনে মনে অনেক খুশি হলো৷ কিন্তু উনার খুশি বেশি সময় টিকল না মুরশেদ তালুকদার মহুয়াকে পড়াশোনার বিষয়, এটা সেটা জিজ্ঞেস করে ভালো করে পড়তে বললো।

রেনু শুধু অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মহুয়ার দিকে। মহুয়া দেখে ঘা জ্বালানো হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
রেনু অবাক হয়, যেই মেয়ে চোখ তুলে তাকাত না আজ সে মুখে মুখে তর্ক করছে, উনাকে টেক্কা দিয়ে চলছে। তাহলে কি সময়ের সাথে মানুষ পরিবর্তন হয়.?? ধৈর্য ধরতে ধরতে এক সময় তা ভয়ংকর রুপ নেয়.?? আজকাল মহুয়াকে দেখে চিন্তেই পারে না।

মুরশেদ তালুকদার সাইফকে ডেকে মহুয়ার দিকে নজর রাখতে বললো। এতোদিন টেনশন না হলেও এখন মহুয়া বড় হয়েছে। দেখতে পরীর মতো যে কোনো ছেলে এক দেখায় প্রেমে পড়বে। এমন মেয়েদের নিয়ে অবিভাবকের একটু টেনশন বেশিই থাকে। উনি সব সময় দোয়া করেন কোনো কাল নজর যেন মহুয়ার উপর না পড়ে। মেয়েটা দেখতে ওর মায়ের মতো সুন্দরী হয়েছে।

একদিন সন্ধ্যার কথা হুট করে সাইফ সন্ধ্যায় বাসায় চলে আসলো। খুব চিন্তিত হয়ে মিম আর মহুয়ার কথা রেনুকে জিজ্ঞেস করলো।

পড়ের দিন সাইফ ওদের স্কুলে দিয়ে আসল। আর মিম কে কলেজে।
মহুয়া স্কুলে গিয়ে শুনতে পেল গ্রাম থেকে দশজন মেয়ে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সে সেদিন ভীষণ ভয় পেয়ে ছিলো৷

পলাশ ওকে বুঝালো ভয় পাওয়ার কোনো কারন নেই ওর পাশে সব সময় পলাশ আছে। ওর কিছু হবে না।
মহুয়া সেদিন পলাশের হাত শক্ত করে ধরে রেখে ছিলো।

ঠিক এই ঘটনার এক সপ্তাহ পর মাইশাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । মহুয়া ভীষণ কান্না শুরু করলো। মাইশা একমাত্র ওর বান্ধবী ছিল, শুধু বান্ধবী নয় বোন ছিল। পুলিশ এসে মহুয়াকে মাইশার বিষয় অনেক জিজ্ঞাসা বাদ করল। মহুয়া শুধু পাথরের মতো বসে ছিলো। কি হচ্ছে এই গ্রামে..? কে করছে এই কিডন্যাপ.? কে এই কিডন্যাপার.? পুলিশ এতো চেষ্টা করেও কেন খুঁজে বের করতে পারছে না.?

পলাশ সারারাত ফোনে ওকে বুঝালো। মাইশা ফিরে আসবে মিথ্যা আশা দিল। এভাবে কেটে গেল একমাস। গ্রামের মানুষ এখন ভীষণ সচেতন। তারা নিজেদের মেয়েদের একা ঘর থেকে বের হতে দেয় না। কারন কিডন্যাপার শুধু কিশোরী মেয়েদের কিডন্যাপ করছে।

এর মধ্যে মহুয়া শুনতে পায় ওর বিয়ে ঠিক করেছে মুরশেদ তালুকদার।
মহুয়া আকাশ থেকে পড়ে। বলা নেই কওয়া নেই কিসের বিয়ে!.? সেই দিন অনেক কেঁদে ছিল মহুয়া। ওর সাহস নেই যে মুরশেদ তালুকদারকে নিষেধ করবে বা পলাশের কথা বলবে।

রাতে পলাশকে সবটা বলতে পলাশ হঠাৎ বললো, ” চলো আমরা এই গ্রাম ছেড়ে বহুদূরে পালিয়ে যাই!”
মহুয়াঃ পালিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। আমি মামাকে তোমার কথা বলি।
পলাশ ভয় পেয়ে যায়, ভয়ে বলে উঠে,’ মহুয়া তুমি আমাকে ভালোবাস না!! আমি তো গরিব একটা ছেলে আমার কাছে তোমাকে দেওয়ার মতো ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু নেই তোমার মামা আমাদের সম্পর্ক কখনো মেনে নিবে না। আরও ইনিয়েবিনিয়ে হাজার কথা বলতে শুরু করলো। বোকা মহুয়া তাই বিশ্বাস করে নিল৷

মহুয়ার বিয়েতে সাইফ কোনো কিছুর বাদ রাখল না। যদিও এই বিয়ের বিরুদ্ধে সাইফ৷ পাত্রের আগেও একটা বউ ছিল। বয়স ৪০ হবে। বাবা কোন আক্কেলে এমন লোকের সাথে মহুয়ার বিয়ে ঠিক করলো..? কিছুই বুঝতে পারল না! অনেক ঝগড়াও হয়ে গেছে এই নিয়ে মুরশেদ তালুকদারের সাথে কিন্তু উনি উনার সিদ্ধান্ত অনর। মহুয়াও কিভাবে রাজি হলো! সাইফ অনেক বার মহুয়াকে জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু এই মেয়ে প্রতিবার খুশি মনে রাজি বলেছে। সাইফের মনে প্রশ্ন জাগে মুরশেদ তালুকদারও কি রেনুর মতো মহুয়াকে কখনো দেখতে পারত না!?? শুধু মুখে আদর,ভালোবাসা দেখাত.? কিন্তু কেন.? এর পেছনে কিসের রহস্য.? আর এতো পাত্র থাকতে এই লোকের সাথেই কেন বিয়ে ঠিক করলো.? মহুয়া যথেষ্ট সুন্দরী, শুধু যথেষ্ট নয় আগুন সুন্দরী। ওর জন্য পাত্রের অভাব পড়ত না!

এই সকল প্রশ্ন মাথায় নিয়ে সাইফ বিয়ের আয়োজন করে আর অন্য দিকে নিজের বন্ধুদের কল দিয়ে বলে। এই বুইড়া বেডা যখন বিয়ে করতে লোকজন নিয়ে আসবে রাস্তায় গাড়ি ভেঙে ওর মাথা ফাটিয়ে হসপিটাল ভর্তি করবি। তারপর আমি মুরশেদ তালুকদারের মুখোমুখি দাঁড়াবো। মহুয়াকে আমি সব সময় নিজের বোনের মতো দেখেছি। পুরনো সব স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো। সব সময় মহুয়ার রাগ, অভিমান, কষ্ট সাইদ বুঝত কিন্তু সাইদ বিদেশ চলে যাওয়ার পর থেকে সাইদের জায়গাটা সাইফ নিয়ে নিল। মহুয়াকে নিয়ে ফুচকা খেতে যাওয়া প্রতি সপ্তাহ, প্রতিদিন নিয়ম করে চকলেট, আইসক্রিম নিয়ে আশা।মহুয়া কি লাগবে সব ইচ্ছে পূরণ করা একজন বড় ভাই হিসেবে সব সময় চেষ্টা করেছে। আর এখন বড় ভাইয়ের কর্তব্য পালনও করবে।

বিয়ের দিন চলে আসলো৷ মহুয়াকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়ে গেল পার্লারের মেয়েরা। মিম এসে ঘা জ্বালানো কিছু কথা বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো। রেনু বেগম ভীষণ খুশি আপদ চোখের সামনে থেকে দূর হচ্ছে। সাথে টাকাও লাগছে না আরও পাচ্ছে। ওই লোক পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছে মুরশেদ তালুকদারের হাতে বিয়ের পর বলেছে আরও দিবে। আর এই বাড়ি ঘর জায়গা সম্পত্তি সব এখন উনাদের।

সাইফ এসে একবার দেখে গেল। মহুয়ার মাথায় হাত রেখে বললো” বড় ভাই এখনো তোমার পাশে আছি, এমন কিছু হতে দিব না যা তোমার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে।”

খুব সাবধানে বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল মহুয়া। লেহেঙ্গা শক্ত করে ধরে দৌড় লাগালো। পায়ের জুতা হাতে নিয়ে দৌড়াচ্ছে বউ বেসে কি অপূর্ব সুন্দরী এক নারী। আজ মহুয়ার কী ভাগ্য রাস্তায় তেমন মানুষও নেই। সুনশান রাস্তা পেয়ে মহুয়ার দৌড় আরও বেড়ে গেল। নিশ্চয়ই এতোক্ষনে বিয়ে বাড়িতে মহুয়ার অনুপস্থিতি সবাই বুঝে ফেলেছে। ওকে খুঁজতে সবাই বের হয়ে গেছে৷ কিন্তু বেচারি কি জানে ওর না হওয়া বর এখন হসপিটালে ICU তে।

এরি মধ্যে সামনে এসে দাঁড়ালো একটা বাইক। মহুয়া ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়ে ছিলো। আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো সামনে পলাশকে দেখে অবাক হয়ে তাকালো। আজ পলাশ কে চিনা যাচ্ছে না। সেই বোকাসোকা ছেলে লাগছে না। কালো পাঞ্জাবি সাথে চুলগুলো কি সুন্দর সিল্ক কপালে এসে পড়ে আছে।হাতে দামী ঘড়ি,সাথে বাইক মহুয়ার কাছে স্বপ্নের রাজপুত্র লাগছে।
পলাশঃ জলদি উঠ মহুয়া সুন্দরী।
ধ্যান ভাঙলো মহুয়া।

পেছনে তাকিয়ে দেখলো সাইফ আসছে।
মহুয়া ভয়ে কিছু বলার আগেই এক হাত ধরে বাইকে বসিয়ে দিল পলাশ। হাওয়ার বেগে বাইক নিয়ে সাইফের চোখের আড়াল হয়ে গেল।

বাইক থেকে ট্রেন, ট্রেন থেকে বাস তারপর টেক্সি করে আসলো একটা জায়গায়। মহুয়া অসুস্থ হয়ে গেছে এতো বড় জার্নিং করে। ৯ ঘন্টার পথ।

পলাশ মহুয়ার হাত শক্ত করে ধরে প্রবেশ করলো এক নিষিদ্ধ জায়গায়। ইসস বোকা মহুয়া বুঝতেই পারলো না ওর সাথে কি হতে যাচ্ছে!!।
পলাশ এখানে এসেছে ওর খালার থেকে দোয়া আর পারমিশন নিতে। সেই ছোটো থেকে বড় হয়েছে খালার কাছে। আজ জীবনের এতো বড় সিদ্ধান্ত নিবে খালার দোয়া তো অবশ্যই লাগবে।

মহুয়া চারপাশে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’ পলাশ ভাই জায়গাটা এমন কেন.? সবাই এভাবে তাকিয়ে আছে কেন.? মেয়েদের জামা কাপড় এমন কেন.?
পলাশঃ মাথা নিচু করে রাখ মহুয়া। একদম মুখ থেকে কাপড় সরাবে না।
মহুয়াঃ সবাই আপনার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন.?
পলাশ মুচকি হাসলো। এখানে আসলে সব মেয়েরা পলাশের আশেপাশে ঘুরঘুর করে। বিভিন্ন ভাবে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। আজ হয়তো সাথে এক নতুন মেয়ে দেখে অবাক হয়েছে তাই এভাবে তাকিয়ে আছে।

পলাশ দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। এক মধ্যে বয়সী মহিলা লাল শাড়ি পড়ে বসে আছে। ঠোঁটে কড়া লাল লিপস্টিক মুখে ভাড়ি মেকআপ, মুখে ভেতর পান। পলাশকে দেখেই ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে বলে উঠলো, ‘ আমার বাঘের বাচ্চা হঠাৎ না বলে আসলি যে..? .’
পলাশ ইশারায় মহুয়াকে দেখাল। তারপর বললো,’ দেখ তো খালা তোমার বাঘের বাচ্চার চয়েস কেমন.?’
মহিলাটা দুষ্টু হাসি দিয়ে হেলতে দোলতে মহুয়ার সামনে এসে এক টানে মহুয়ার মুখের কাপড় সরিয়ে ফেললো। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘ মাশাল্লাহ এই যে পরী নিয়া আইছস, কই পাইলি এই হুরপরী!!??’
পলাশ মুচকি হেঁসে বললো ” আমরা আজ বিয়ে করছি খালা তোমার থেকে দোয়া নিতে আসলাম।
মহুয়া মহিলাটিকে সালাম করতে গেলে পলাশ আঁটকে বলে উঠলো ” মুখে সালাম করো ”
মহুয়া তাই করলো। মহিলাটি মুগ্ধ হয়ে বললো,’ এই যে কোকিলের কন্ঠ। ‘
পলাশ আবারও হাসলো যাক খালার পছন্দ হয়েছে।
~ আমি ফুলবানু এই মহল্লার সরদারনী। তুমি আমাকে ফুলবানু খালা বলে ডাকতে পারো।
মহুয়া শুধু আড়চোখে চারপাশে তাকাচ্ছে। মেয়েদের আকার ভঙ্গি কেমন অদ্ভুত লাগছে।এইগুলো কি পড়ছে.? সব দেখা যাচ্ছে!! চকচকে লিপস্টিক দিয়ে, মুখে মেক-আপ করে, চোখে গাড় কাজল কি উদ্ভুত লাগছে চারপাশের মেয়েদের। মহুয়া পলাশের হাত শক্ত করে ধরতেই ফুলবানু তা দেখে হাসলো৷ যত যাই হোক এই টকটকে আপেল উনি কিছুতেই হাত ছাড়া করবেন না। এই একটা মেয়েই পারবে এই পল্লী মহলকে আরও উপরে নিয়ে যেতে৷ অনেক দামে এই মেয়েকে পেতে চাইবে লোকজন। কিছুতেই হাত ছাড়া করা যাবে না এতো সুন্দরী কে। এর রুপে যেন চারপাশ আলোয় ঝলমলে করে উঠেছে।

ফুলবানু পান চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,’ কতো দূর থাইকা আইছস যা ফ্রেস হইয়া ল। আর এই মাইয়ারে একটু বিশ্রাম নিতে দে।
পলাশঃ না খালা আমাদের এখনি যেতে হবে। আমি থাকার জন্য জায়গা আর কাজি কে বলে রেখেছি।
~ যাবি ত এতো তারা কিসের । আগে কিছু খাইয়াল। আমার মহল্লায় গার্লফ্রেন্ড লইয়া আইছস খালি মুখে যাবি.? কিছু খাইয়া তারপর যাবি। এখন বাদ একটু পর বউ হইব। নাকি আমারে আপন মনে করস না.?

ফুলবানুর জোরাজুরিতে রাজি হয়ে গেল পলাশ। মহুয়াকে একটা মেয়ে নিয়ে যেতে চাইলে পলাশ নিজে একটা রুমে নিয়ে গেল। ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নিতে বলে নিজে অন্য রুমে গেল।

খাবার সাজিয়ে শয়তানি হাসলো ফুলবানু। পলাশ আর মহুয়া আসলো। মহুয়ার ভয় লাগছে সব অচেনা মানুষ, জায়গা সব। শুধু পলাশ একমাত্র পরিচিত । পলাশ মহুয়ার হাত শক্ত করে ধরে আছে যেন ভয় না পায়। পলাশের নিজেরও ভালো লাগছে না মহুয়াকে এখানে বেশিক্ষন রাখতে।এই জায়গা সম্পর্কে ওর থেকে ভালো কে জানে.??

পলাশ ফুলবানুকে বললো,’ তুমিও বস না খালা’
~ না তোরা খা আমি নিজ হাতে বেরে দেই। নতুন বউ বলে কথা আমি নিজ হাতে খাওয়াব।
নতুন বউ শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো মহুয়া এখনো তো বিয়ে হয়নি।
পলাশ খাবার খাওয়ার মাঝে অনুভব করলো মাথা ঘুড়াচ্ছে সাথে মহুয়ারও। এক পর্যায়ে দুইজন জ্ঞান হারায়।

ওদের দিকে তাকিয়ে ফুলবানু হেঁসে বলে সরি আমার বাঘের বাচ্চা। এতো সুন্দর পবিত্র ফুল নিয়ে এখানে আশা তোর উচিত হয়নাই। এই ফুলের খুশবুয়ে আমার মহল্লা এখন থেকে জমজমাট থাকব।

একজনকে ইশারা করলো পলাশকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য।

” এক রুমে আঁটকে রাখবি কয়েকদিন। খেয়াল রাখবি যেন বের না হতে পারে। এই মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করলে বলবি, কিছুই জানিনা। আমি যতোদিন না ছাড়তে বলব ছাড়বি না। নিয়ে যা…”

চলবে……
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-১৮+১৯

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_১৮
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

ছোঁয়া বই টেবিলের উপর রেখে রুম থেকে কিছু একটা হাতে নিয়ে বের হয়ে নির্জনের রুমের সামনে দাঁড়ালো।
দরজা খুলে ভেতর দেখে নিলো কেউ আছে কিনা।
ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দে বুঝে গেলো নির্জন ওয়াশরুমে।
শয়তানি একটা হাসি দিয়ে আশেপাশে তাকালো । বিছানার উপর নির্জনের তোয়ালে রাখা।
ছোঁয়া এই সুযোগটা সুন্দর করে কাজে লাগালো।

নির্জন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তোয়ালে হাতে নিয়ে মুখ মুছে হাত, ঘার, পা মুছে আবার বিছানায় রাখলো। মোবাইল হাতে নিয়ে বিছানায় শুয়ে ফেসবুকে স্কল করলো।
মুখে এক দুই বার চুলকিয়ে নিল। আস্তে আস্তে হাতে,পায়ে,ঘারে,মুখে প্রচুর চুলকাতে শুরু করলো৷ নির্জন শুয়া থেকে উঠে বসে পড়লো হাত দিয়ে চুলকিয়ে হচ্ছে না। নির্জনের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। শরীরে কেমন ছোট ছোট কি জেনো বের হচ্ছে আর চুলকানো দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

এক পর্যায়ে নির্জন সহ্য করতে না পেরে হালিমা বেগম কে ডাকতে লাগলো। নির্জনের এমন চিৎকার চেচামেচি শুনে সবাই দৌড়ে রুমে আসলো।

ছোঁয়া মনের খুশিতে মোবাইলে DJ গান লাগিয়ে রুম দরজা বন্ধ করে নাচতে লাগলো। প্রতিশোধ নিতে পেরেছে সে।

হালিমা বেগম কান্না জুড়ে দিলেন ছেলের অবস্থা দেখে। আনোয়ার চৌধুরী নির্জনের অবস্থা খারাপ থেকে আরও খারাপ দেখে জলদি ওকে গাড়িতে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য বের হলো। গাড়িতে নির্জন ছটফট করছে। এমনিতেই নির্জনের শরীরে এলার্জি বেশি , আজেবাজে কিছু খেলে,একটু ময়লায় গেলেই এলার্জি দেখা দেয় আর ছোঁয়া তো চুলকানোর পাউডার সবটা তোয়ালে আর বিছানায় ছিটিয়ে দিয়েছে।

ছোঁয়া তাকিয়ে রইলো নির্জনের গাড়ি যাওয়ার দিকে ওর চোখে পানি টলমল করছে। ভাবতেও পারিনি নির্জন এতোটা অসুস্থ হয়ে যাবে। সে তো একটু মজা করার জন্য এমনটা করেছে নির্জন এতোটা কষ্ট পাবে ভাবতে পারিনি। চোখের পানি গাল বেয়ে পরছে। ওর কি একবার হসপিটাল যাওয়া দরকার.? কি অবস্থা এখন নির্জনের.??? ওর ভীষণ কান্না পাচ্ছে আজ নির্জনের কিছু হয়ে গেলে!! এইসব ভেবে হেঁচকি তুলে কান্না শুরু করলো।

বাড়িতে একমাত্র ছোঁয়া ছাড়া আর কেউ নেই সবাই হসপিটাল গেছে হালিমা বেগমের কান্না কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। মিরাজ চৌধুরীও হসপিটাল পৌঁছে গেছে ছেলে দুষ্টু হলেও মা বাবার কাছে বেঁচে থাকার একমাত্র কারন। মা বাবার কাছে দুষ্টু মনে হয় না সব সময় তাদের কাছে আদুরে রাজপুত্রের মতোই থাকে।

হসপিটাল আনার পর নির্জনের অবস্থা দেখে আহনাফ ভয় পেয়ে গেলো তাও নিজেকে সামলে বলে উঠলো, ‘ ওর এই অবস্থা কিভাবে হলো.??’
নির্জনের শরীরে একটা ইনজেকশন পোষ করে আহনাফ চিকিৎসা শুরু করলো।

নির্জনের শরীর লাল হয়ে গেছে।

আহনাফ বের হয়ে বললো,’ টেনশন না করে একজন থেকে বাকিরা বাসায় চলে যান নির্জনকে ঘুমের মেডিসিন খাইয়েছি সে এখন ঘুমাবে, ঘুম থেকে উঠে ঠিক হয়ে যাবে। আমি যা যা প্রয়োজন করে দিয়েছি।ইনশাআল্লাহ আক রাতের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবে।

পেছন থেকে ছোঁয়া বলে উঠলো, ‘ ভাই আমি থাকি.? ছোঁয়াও চলে এসেছে।
আহনাফঃ তোর তো কাল এক্সাম এখন বাসায় যা। তুই ছাড়াও অনেকে আছে।
ছোঁয়াঃ বড়,ছোটো মামী, আম্মু,নানাভাই কেউ থাকতে পারবে না। কিছু হবে না একদিনে তো আর সব মুখস্থ করতে পারবো না। আমি আজ রাত থেকে কাল সকালে চলে যাবো।

সবাই চেষ্টা করেও ছোঁয়া কে নিতে পারলো না। ছোঁয়া নির্জনের ক্যাবিনের সামনে চেয়ারে বসে রইলো। কান্না করে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।

আহনাফ বিরক্ত হয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো। চার ঘন্টা হয়ে গেছে মহুয়া এখনো আসেনি। অথচ বাড়ি থেকে আহনাফের আগে বের হয়েছে। আহনাফ ছোঁয়া কে ডাকলো।

ছোঁয়াঃ বলো ভাইয়া।
আহনাফঃ মহুয়া কি আজ কলেজ গিয়েছে.?
ছোঁয়াঃ না ভাইয়া। ছোঁয়া তো হসপিটাল থাকার কথা।
আহনাফঃ চার ঘন্টা হয়ে গেছে এখনো আসেনি।
ছোঁয়াঃ কি বলো!! ওর কোনো বিপদ হলো না তো.??
আহনাফের মনও কেমন করে উঠলো ‘ কোনো বিপদে পরলো না তো.??’
আহনাফঃ ওর কি কোনো ফ্রেন্ড আছে.? ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছে.?
ছোঁয়াঃ না ভাইয়া ওর কোনো ফ্রেন্ড নেই কলেজে। ও কারো সাথেই কথা বলে না। প্লিজ ভাইয়া খুঁজ নাও মহুয়া কোথায় আমার ভীষণ টেনশন হচ্ছে।

আহনাফ বাড়িতে কল দিয়ে মহুয়ার কথা জিজ্ঞেস করলো৷

আহনাফ চিন্তিত হয়ে মোবাইল রেখে চোখ বন্ধ করে ছোঁয়া কে নির্জনের কাছে যেতে বললো।

ছোঁয়াঃ ভাই মহুয়া.?
আহনাফঃ তোর ওকে নিয়ে টেনশন করতে হবে না। তুই নির্জনের পাশে থাক আর কোনো সমস্যা হলে আমি ডাক্তার সোনিয়া কে বলে যাবো।

____

আহনাফ গাড়িতে বসে আছে সে জানে না কোথায় যাচ্ছে। তবে বাড়ি থেকে হসপিটাল ভালো করে রাস্তায় মহুয়াকে খুঁজলো না পেয়ে কলেজ গেলো। কলেজ না পেয়ে ওর নাম্বারে কল দিলো মোবাইল বন্ধ। মহুয়ার কোনো খোঁজ না পেয়ে আনোয়ার চৌধুরীর কাছ থেকে ওর নিজ বাড়ির নাম্বার চাইলো। আনোয়ার চৌধুরী ভড়কে গেলেন উনার কাছে তো মহুয়ার বাড়ির কোনো ঠিকানা বা নাম্বার নেই।
আনোয়ার চৌধুরী আমতা আমতা করে বললেন,’ নাম্বার হারিয়ে ফেলেছেন।’
আহনাফ ভীষণ বিরক্ত হলো। এটা কোনো কথা একটা নাম্বার রাখতে পারো না!!

আনোয়ার চৌধুরী অবাক হচ্ছে আহনাফের ব্যাবহারে। আহনাফ পাগলের মতো মহুয়াকে খুঁজছে। মনে হচ্ছে ওর কোনো মূলবান কিছু হারিয়ে গেছে

ছয় ঘন্টা পেরিয়ে গেছে মহুয়ার কোনো খবর নেই৷ এর মধ্যে মেঘলা মাত্র বাড়িতে আসলো। কারো দিকে না তাকিয়ে নিজের মতো নিজের রুমে চলে গেলো। এই বাড়ির কোনো খবর ও জানে না। সকাল থেকে একটা কাজে আঁটকে গিয়ে ছিলো।এখন সে নিজেই ভীষণ ক্লান্ত।

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো অনেক খিদে পেয়েছে।

রান্না ঘরের দিকে যাওয়ার সময় দেখলো বাড়িতে পুলিশ। কৌতুহলে সামনে গেলো দেখতে একজন পুলিশ দেখেই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে আড়ালে চলে গেলো। আর একটু হলে সবার সামনে ধরে পড়ে যেতো। কিন্তু উনি এখানে কেনো..??
মেঘলা আড়াল থেকে ওদের সব কথা শুনলো। মহুয়াকে ৭ঘন্টা ধরে পাওয়া যাচ্ছে না শুনেই মেঘলা চমকে উঠলো। মহুয়ার বিষয় সবটা না জানলে অনেকটাই জানে। মহুয়ার যাওয়ার মতো তেমন কোনো জায়গা নেই। তাহলে কি মহুয়ার খুঁজ ওরা পেয়ে গেছে..? এটা কিভাবে সম্ভব! মহুয়ার খুঁজ করা বা ওকে চিনে এমন সবাই তো জেলে, ফুলবানু আর ওর দল-বল সবাই জেলে তাহলে মহুয়াকে নিলো কে.??? অবশ্য মহুয়া নিজেও জানেনা ওরা যে জেলে এখন।

মেঘলা দেরি না করে নিজের রুমে চলে গেলো। শার্ট, প্যান্ট মুখে মাক্স, মাথায় ক্যাপ পড়ে বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো।

বাড়ির সবাই খুব চিন্তিত মহুয়াকে নিয়ে । এতোক্ষন নির্জনকে নিয়ে চিন্তিত ছিলো আর এখন মহুয়াকে নিয়ে।

আহনাফ রাস্তায় মহুয়ার জুতা দেখে হাতে নেয়। এখানে জুতা কেনো.?? এটা তো মহুয়ার!! আহনাফ আশেপাশে তাকায় রাস্তার পাশে সিসিটিভি আছে কিনা.?

সিসিটিভি অফিসে গিয়ে চেক দিয়ে দেখতে পায় ” কয়েকজন ছেলে জোর করে মহুয়াকে কালো একটা গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে। ”

গাড়ির নং এবং লাস্ট লোকেশন দেখে আহনাফ নিজেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। সাথে পুলিশদের কল দিয়ে লোকেশন জানিয়ে দেয়।

আহনাফ গাড়ি থেকে নেমে একটা অন্ধকার গলিতে ঢুকে পড়লো। সন্ধ্যা হয়ে গেছে সেই ৮টায় মহুয়া কিডন্যাপ হয়েছে আর এখন বাজে সন্ধ্যা ৭টা।

অন্ধকার গলি একটু হাঁটতেই আলোর দেখা মিলল। কিছু লোক গোল করে বসে জুয়া খেলছে, কিছু লোক খেলা দেখছে আর সিগারেট টানছে, কেউ বা নেশা করে পড়ে আছে। আহনাফ এই পর্যন্ত এসে থেমে গেলো এখন সে কোথায় খুঁজবে.?? চারপাশে ছোটো ছোটো ঘর কোথায় আছে মহুয়া.? আর ঠিক আছে তো.?? বুক ধুকপুক করছে, মাথা ঝিমঝিম করছে,হাত, পা কাঁপছে।
আহনাফ কিছু লোক দেখে আড়ালে লুকিয়ে গেলো।
একটা লোক আরেকটা কে বলছে,’ মাইয়াডারে দেখে আয় ভাই একটু পর আসবো। ‘
~ ভাই মাইয়াডা পুরাই আগুন একটু ধরে দেখি।
~ একদম এই ভুল করলে ভাই জিন্দা কবর দিয়ে ফেলবো এই পাখি অন্য কারো শিকার।
~ ভাই এতো সুন্দর টকটকে ফল সামনে দেখলে…
~ আর একটা কথাও মুখ থাক্কা বার করবি না, মুখ বন্ধ করে বাহিরে দাড়ায় থাক।
~ ভাই দাঁড়াইলেই কি আর না দাঁড়াইলেই কি রনি ভাইয়ের আস্তানায় পা রাখার সাহস কারো নাই।

আহনাফ হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো। রাগে ইচ্ছে করছে সব গুলোর জীবন নিয়ে নিতে। ইতিমধ্যে আহনাফের কিছু লোক চলে আসলো। আহনাফ ইশারা দিতেই সবগুলো লুকিয়ে গেলো আর একটা একটা করে নিয়ে আড়ালে চলে যাচ্ছে।

মহুয়ার সামনে কেউ হাঁটু গেড়ে বসে ওর জ্ঞান ফিরানোর চেষ্টা করলো। মহুয়ার পায়ের বাঁধন খুলে হাতের বাঁধন খুলবে তখনি মনে হলো ঘরে কেউ আসছে। খুব সাবধানে দরজার পেছনে লুকিয়ে গেলো।

লোকটা ঘরে ঢুকে লাইট জ্বেলে মহুয়ার মুখে পানি মারলো। মহুয়া চোখ পিটপিট করে খুলতেই বিশ্রী একটা হাসি দিয়ে ময়লা দাঁত গুলো বের করে মহুয়ার দিকে তাকালো।

মহুয়ার মাথা ঘুরছে।সারাদিন একটু পানিও খাওয়া হয়নি, হঠাৎ করে তার সেই আগের বন্দি অবস্থার কথা মনে পড়লো, মনে পড়লো সেই অসহ্য যন্ত্রণা আর মারের কথা, এভাবে হাত পা বাঁধা অবস্থায় তিনদিন ছিলো এক ফুটা পানির জন্য কতো কাতরেছে। ওইসব মনে হতেই শরীর কাঁপতে লাগলো। চোখ ঝাপসা হয়ে আবার জ্ঞান হারালো৷ এবার হয়তো তার মুক্তি নেই, সে আগের মতো মনে শক্তি পাচ্ছে না, ওর ভাগ্যে আসলেই এই জীবন লেখা হয়ে গেছে ও পালিয়ে বেড়াবে কতো দিন..???? পালিয়ে যাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ! আর কেউ হয়তো আসবেও না। ওলকে বাঁচাতে তখনো কেউ আসেনি নিজেকে লড়তে হয়েছে। এবার কি সে পারবে.? হয়তো পারবে না মনে শক্তি নেই এখানেই ওর হার।

লোকটা মহুয়াকে আবার জ্ঞান হারাতে দেখে বিরক্ত হলো। প্রতি সপ্তাহে এভাবে পাঁচ থেকে সাতজন মাইয়া এমনে তুইললা আনে তবে এবারের মেয়েটারে মনে হয় বেশিই গুরুত্ব দেওয়া হইতাছে কারন এই মাইয়ারে বড় বসের কাছে পাঠানো হইব, বলে মুখে বিরক্তির ছাপ এনে।

লোকটা মহুয়ার দিকে তাকিয়ে পেছনে ফিরতেই কেউ ওর মুখে স্প্রে মারে এটা অজ্ঞান হওয়ার স্প্রে ছিলো লোকটা সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায়। এখানে আসার সময় দশজনকে অজ্ঞান করে এসেছে।

মহুয়ার মুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফিরাতে চেষ্টা করলো। মহুয়া ঝাপসা চোখে তাকালো। সে অজ্ঞান হয়নি তখন শুধু ক্লান্ত শরীরে চোখ বন্ধ করে নিয়ে ছিলো।

মহুয়ার হাতের বাঁধন খুলে হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসতে নিলে মহুয়া হাত ধরা ব্যক্তির দিকে তাকালো সারা শরীর ডাকা চোখও ক্যাপের কারনে ডেকে আছে।কে এই আগুন্তকঃ? ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে.? মহুয়ার চোখ গেলো কোমরের দিকে পকেট থেকে একটা কার্ড অর্ধেক বের হয়ে আছে যেখানে লেখা CID এর একটু নিচে নামের পাশে লেখা ” মেঘ” আর কিছু পড়ার আগেই পায়ের শব্দ পেয়ে মহুয়াকে ধাক্কা দিয়ে বসিয়ে ব্যক্তিটি লুকিয়ে গেলো।

মহুয়া ধাক্কায় ভীষণ ব্যাথাও পেয়েছে তাও চোখের সামনে আলো দেখতে পাচ্ছে মুক্তির পথ দেখতে পাচ্ছে। কেউ তো এসেছে ওকে বাঁচাতে!

দরজা দিয়ে আর কেউ নয় আহনাফ প্রবেশ করলো। দরজার ভেতরে এসে দাঁড়িয়ে গেলো আহনাফ। মহুয়াকে দেখেই দ্রুত এসে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো থমকে গেলো মহুয়া। আহনাফ শান্ত হলো, বুকের ভেতর জ্বলতে থাকা আগুন নিভল।মস্তিষ্ক ঠান্ডা হলো কিন্তু মহুয়াকে ছাড়লো না।
মহুয়ার মনে হলো সে স্বপ্ন দেখছে এখানে আহনাফ কিভাবে আসলো.? আর এভাবে জড়িয়ে ধরলো কেনো.??

বেশি কিছু ভাবতে পারলো না তার আগেই জ্ঞান হারিয়ে আহনাফের বুকের সাথে মিশে রইলো।

” আজ থেকে তুমি আমার বাহুডোরে বন্দী হয়ে গেলে মেহুরাণী,তোমার অতীত আর এই অন্ধকার জীবন থেকে খুব জলদি মুক্তি পাবে শুধু সূর্যোদয়ের অপেক্ষা ”

চলবে……
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_১৯
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

মেঘলার মাথার চারপাশ ঘুরছে তাও সে থামছে না, দ্রুত পা ফেলছে সাথে এক টাকাও নেই যে গাড়ি করে বাসায় যাবে। অনেকটা দূর আসার পর দূর থেকে একটা গাড়ি আসতে দেখে ঝাপসা চোখে তাকালো, হাত তুলে থামার ইশারা দিলো কিন্তু গাড়িটা থামল না, দ্রুত ওর পাশ দিয়ে চলে যেতেই মেঘলা মাথা ঘুরে পড়ে গেলো রাস্তার পাশে।

গাড়িটা কিছু দূর গিয়ে আবার ফিরে আসলো। গাড়ি থেকে নেমে আসলো শ্রাবণ। গাড়িটাতে শ্রাবণ ছিলো প্রথম খেয়াল করেনি পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হলো মেঘলাকে দেখেছে। একবার মন বললো ” মেঘলা হলে ওর কি..? চলে যাবে, আবার মনে হলো, মেয়েটা এতো রাতে এখানে কি করছে.? বিপদে পড়েনি ত.? বিপদে না পড়লেও এখানে আর কিছু সময় থাকলে বিপদে পড়ে যাবে, এই জায়গাটা একদম নিরাপদ নয় মেয়েদের জন্য । এইসব ভাবতে ভাবতে আনমনে আবারও ফিরে আসলো।

চুল গুলো সামনে এসে মুখ ঢেকে আছে৷ শ্রাবণ দ্বিধায় পরে গেলো! আসলেই কি এটা মেঘলা নাকি অন্য কেউ.? সে কি মেয়েটাকে রেখে চলে যাবে.? কিন্তু মন সায় দিলো না। কিন্তু এখনি তো দেখলো দাঁড়িয়ে আছে, মেয়েটা কি অভিনয় করছে.??
শ্রাবণ মেয়েটার মুখ থেকে চুল সরাতেই চোখ বড় হয়ে গেলো। বুকের ভেতর ধক করে সুচের মতো কিছু একটা বিঁধল। মেঘলার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। দাঁতের সাথে দাঁত খিঁচে রেখেছে বাহিরে প্রচুর ঠান্ডা বাতাস বইতে এখনি বৃষ্টিও নামতে পারে।
শ্রাবণ কোনো কিছু না ভেবে মেঘলাকে কোলে তুলে নিলো। গাড়িতে বসিয়ে ড্রাইভিং সিটে নিজে বসলো, পাশেই মেঘলা। দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিলো হসপিটালের দিকে। বেশি সময় লাগলো না পাশেই একটা হসপিটাল ছিলো সেখানে নিয়ে গেলো।

___________

নির্জনের ঘুম ভাঙার পর থেকেই দেখছে ছোঁয়া ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কাঁদছে আর নাক টানছে।

নির্জন খুব ভালো করে জানে ওর এই অবস্থার জন্য ছোঁয়া দায়ী।

ছোঁয়া নির্জনের দিকে স্যুপ এগিয়ে দিলো।
নির্জন ওর দিকে না তাকিয়ে বললো,’ খাব না।’
ছোঁয়া তাও চামচে স্যুপ নিয়ে ওর মুখের সামনে ধরল।
নির্জনঃ ফ্যাঁচফ্যাঁচ করা বন্ধ কর আমি মরে যাইনি যে তোর অভিনয় করতে হবে।
ছোঁয়াঃ আমার এতো যত্নের চোখের পানি পড়ছে আর তুই সান্ত্বনার জায়গায় বলতেছস আমি অভিনয় করি!.?
নির্জনঃ যেটা সত্যি সেটাই বলেছি।এখন আমার সামনে থেকে যা। এখানে কেন তুই.? আম্মু,ভাবি,ফুপি,বড় আম্মু তারা কই.?
ছোঁয়াঃ আমি তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি।
নির্জনঃ গুড, আমিও এখন বাসায় যাব।
ছোঁয়াঃ একদম না তুমি এখানে থাকবে, আজ রাত থাকতেই হবে আরও চিকিৎসা বাকি।
নির্জন একবারও ছোঁয়ার দিকে তাকায়নি।
ছোঁয়া বুঝতে পেরেছে নির্জন বুঝে গেছে ছোঁয়ার জন্য ওর এই অবস্থা।
ছোঁয়াঃ সরি নির্জন ভাইয়া।
নির্জন উঠে নিজের শার্ট ঠিক করে মোবাইল হাতে নিলো।
ছোঁয়াঃ তুমি কোথায় যাচ্ছ। চুপচাপ শুয়ে পড়।তোমার শরীর এখনো ঠিক হয়নি। ভাইয়া চলে আসবে এখনি আমি ডাক্তার আপুে ডাকছি। তোমার মেডিসিন খাওয়া বাকি।
নির্জনঃ আমাকে নিয়ে তোর ভাবতে হবে না। নাকি এখানেও আমাকে মা-রার প্লেন কষে রেখেছিস! সেই জন্য আমাকে রাখার এতো তারা।
ছোঁয়া হেঁচকি তুলে কান্না শুরু করলো।
~ আমার ভুল হয়ে গেছে ভাইয়া।
নির্জন দরজা টেনে বের হয়ে যেতে নিলে ছোঁয়া পেছন থেকে শার্ট খামচে ধরলো।
নির্জন থামলো পেছনে না ফিরে বললো,’ শার্ট ছাড় ছোঁয়া আমার জরুরি কাজ আছে যেতে হবে।’
ছোঁয়া হেঁচকি তুলতে তুলতে বললো,’ এতো রাতে কিসের কাজ!.? কোথাও যাবে না তুমি..।
নির্জনঃ এমন ভাব করছিস যেনো আমি মরে যাচ্ছি নাকি সবাইকে বলে দিব সেই ভয় পাচ্ছিস!.? সবাইকে বুঝাতে চাচ্ছিস আমার প্রতি তোর ভালোবাসা ভীষণ গভীর! আমার জন্য তুই খুব চিন্তা করিস!।
ছোঁয়া মাথা নিচু করে রেখেছে। সে তো মজা করে এমনটা করে ছিলো। ও তো নির্জনকে এতোটা কষ্ট দিতে চায়নি। এখনো নির্জনের শরীরে ছোটো ছোটো লাল লাল হয়ে আছে।

নির্জনঃ শার্ট ছাড়।
ছোঁয়াঃ না।
নির্জন বিরক্ত হয়ে পেছন ফিরলো, ছোঁয়ার দিকে তাকাতেই বুকটা কেঁপে উঠল। কান্না করে চোখ মুখের কি অবস্থা করেছে! নির্জন নিজেও জানে ছোঁয়া মজা করে এমন করেছে। ছোটো থেকেই ছোঁয়া হাজার ঝগড়া করলেও নির্জনের অসুখ হলে, খেলতে গিয়ে ব্যাথা পেয়ে আসলে, কলেজে ছেলেদের সাথে ঝামেলা, মারামারি করে আসলে ছোঁয়া নির্জনের ব্যথায় নিজে কান্না করে ফেলত। যত্ন করে খাবার মেডিসিন এগিয়ে দিত, আবার মিনিটও যেত না দুইজন ঝগড়া শুরু করতো।

নির্জন ছোঁয়ার একদম কাছে এসে শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ উপরের অসুখ সরাতে এতো ব্যস্ত,কিন্তু ভেতরের অসুখে যে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি সেই খবর কি রাখিস..?’

ছোঁয়ার কান্না বন্ধ হয়ে গেলো। অবাক দৃষ্টিতে তাকালো নির্জনের দিকে। কথাটাতে কি কিছু ছিল!?.

নির্জন ছোঁয়াকে অবাক করে দিয়ে, ওর হাত নিয়ে নিজের বুকের পাশে রেখে বলে উঠলো, ‘ আমি সুস্থ হতে চাই ভেতর থেকে ছোঁয়া, না হয় এই অসুখ দিন দিন বেড়েই চলবে আমার হৃদয়ে, মনে,শরীরে, তুই কি আমার ডাক্তার হবি..?’

ছোঁয়া সেই আগের মতোই তাকিয়ে আছে। সে কি বলবে.?? নির্জনের ভেতরে কি রোগ.? কোনো বড় ধরনের রোগ নয়তো.?? ছোঁয়া ত ডাক্তার নয়!।
ছোঁয়া কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই নির্জন চলে গেলো। ছোঁয়া পিছু ডাকতে গিয়েও থেমে গেল। কি একটা মনে করে ছুটল নির্জনের পিছু কিন্তু পেল না। কোথায় হারিয়ে গেলো.? এখনই তো এখানে ছিল!!.? মাথায় হাজার চিন্তা নিয়ে বসে পড়লো। নির্জনের কি রোগ হয়েছে.?? ওকে যেভাবেই হোক আহনাফের কাছে আনতে হবে। ভালো কিছু টেস্ট করাতে হবে। ভালো চিকিৎসা দিলে নির্জন সুস্থ হয়ে যাবে, দরকার হলে দেশের বাহিরে নিয়ে চিকিৎসা করবে। ছোঁয়া যেভাবেই হোক নির্জনের অসুখ সারিয়ে সুস্থ করে তুলবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো।

_________

মহুয়ার জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে অচেনা রুমে দেখে ধীরে ধীরে উঠে বসলো। শরীর দূর্বল লাগছে সারাদিন পানিও খাওয়া পড়েনি যার জন্য শরীর অনেকটা দূর্বল।
মহুয়া আশেপাশে ভালো করে তাকিয়ে অবাক হলো এটা আহনাফের রুম। বেশ কয়েক বার এই রুমে এসেছে সে যার জন্য চিনতে ভুল হলো না। কিন্তু এই রুমে কেনো.?? সারাদিনের সব কিছু মনে পড়লো এক এক করে তখন ভয় পেলেও এখন ভয় করছে না। শেষ সময় আহনাফ ওকে জড়িয়ে ধরে ছিলো। ভাবতে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। নিশ্চয়ই সবাই অনেক খুঁজেছে ওকে, আহনাফ হয়তো বুঝতে পেরেছিল মহুয়া পড়ে যাবে তাই জড়িয়ে ধরে ছিলো। হাজার কিছু ভেবে এটাকে সাধারণ ভাবে উড়িয়ে দিলো। ধীর ধীরে বিছানা থেকে নিচে নামল। আস্তে আস্তে হেঁটে দরজার কাছে গেলো। সারা শরীর কেমন ব্যথা করছে।সারাদিন হাত পা বাঁধা অবস্থায় এক জায়গায় পড়ে ছিলো হয়তো এইজন্য শরীর ব্যথা করছে।

মহুয়া দরজা খুলবে তখনি পেছন থেকে পুরুষালী গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে আসলো।

মহুয়ার হাত থেমে গেলো, গলা শুকিয়ে আসলো। আহনাফ কি বাড়িতে!..? উনার তো হসপিটালে এখন থাকার কথা!! এই কন্ঠ চিনতে সে ভুল করতে পারে না,এটা আহনাফ এর রসকষহীন গম্ভীরকন্ঠ।

মহুয়া চুপচাপ পেছন ফিরতেই আহনাফ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ চোরের মতো কোথায় যাচ্ছেন!.??’
মহুয়া মাথা নিচু করে বলে উঠলো, ‘ চোরের মতো যাব কেন!.? আমি তো আমার রুমে যাচ্ছি। ‘
আহনাফঃ আপনার রুম..? এই বাড়ির প্রতিটা রুম আমাদের আপনি মেহমান আপনাকে যখন যেই রুম দেওয়া হবে সেই রুমেই থাকতে হবে।
মহুয়া এখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, এক হাতে মাথার ঘোমটা টেনে নিল। আহনাফ ভুল বলেনি তবুও ধীরে শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আমি জানি এটা আপনাদের বাড়ি,রুমও আপনাদের। এখন তো একটা রুম আমাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে আমি সেখানেই যাচ্ছি। ‘

আহনাফ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিল। মেয়েটার মুখটা কেমন সাদা হয়ে ফেঁকাসে হয়ে আছে। শরীর মৃদু কাঁপছে।
আহনাফঃ চুপচাপ বিছানায় এসে বসুন।
মহুয়া এবার চোখ তুলে তাকালো আহনাফের দিকে। খুব বিরক্ত আর অসহ্য লাগছে আহনাফের কথাগুলো। ওর এখন কিছু খাওয়া দরকার সাথে বিশ্রাম। মহুয়া জানে শুধু আহনাফ নয় এখন বাড়ির সবাইকে এক এক করে বিস্তারিত খুলে বলতে হবে কি হয়ে ছিলো। কেউ জানতে চাইবে না মহুয়া এখন বলতে চায় কি না!!? আহনাফ ও হয়তো এখনি আবার জিজ্ঞেস করবে, কিভাবে ওখানে গেলো.? ওরা কি কিছু করেছে.? ওরা কেন ওকে নিয়ে গেলো.? আরও হয়তো অনেক কিছু!!

আহনাফ ওর এইসব ভাবনায় এক বালতি জল ঢেলে বলে উঠলো, ‘ আপনাকে একটা কথা বার বার কেন বলতে হয়.?’
মহুয়া নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে আহনাফের দিকে তাকালো।
আহনাফঃ আপনি নিজ থেকে আসবেন নাকি কোলে করে আনতে হবে। যদিও আপনি অনেক ভাড়ি।আমার হাত ব্যথা হয়ে গেছে আপনাকে কোলে নিয়ে। আপনার ওজন কতো.?
আহনাফের কথা শুনেই মহুয়া চোখ বড় করে তাকালো৷
আহনাফ নিজেকে কঠিন দেখাতে গিয়েও হেঁসে ফেললো। কি সুন্দর সেই হাসি।সুদর্শন পুরুষরা হাসলে বুঝি এতোটা সুন্দর লাগে!? মহুয়া মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখলো। শ্যামবর্ন এক সুদর্শন পুরুষ, 6ফুট লম্বা, সব চেয়ে আকর্ষণীয় হলো আহনাফের চুলগুলো। সিল্ক চুলগুলো কপালে এসে লেপ্টে আছে, সাথে হাল্কা চাপ দাড়ি,চোখগুলোও খুব সুন্দর। একটা পুরুষ এতটা সুন্দর হওয়া একদম উচিত নয়। পুরুষ মানুষ এতোটা সুন্দর, আকর্ষণীয় কেন হবে..? তাকালেই চোখ আঁটকে যায়,চোখ সরাতে গিয়েও থমকে যায় মহুয়া বার বার।

আহনাফ মহুয়াকে ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুখ আবার আগের মতো গম্ভীর করে নেয়।
~ আমি জানি আমি হ্যান্ডসাম তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকবেন না। আমার লজ্জা লাগে।
আহনাফের কথাটা কানে যেতেই মহুয়ার ইচ্ছে করলো হুঁ হুঁ করে হেঁসে ফেলতে। মহুয়া চোখ সরিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি কিছু ভাবছিলাম সেই জন্য খেয়াল ছিল না কোনদিকে, কারদিকে তাকিয়ে আছি।
আহনাফঃ হ্যাঁ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে কতো অযুহাত বের হয়।
মহুয়া কিছু বললো না সত্যি তো হ্যাবলার মতো তাকিয়ে ছিলো। কতোটা নির্লজ্জ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় বার সে কখনো কারো প্রশংসা করবে না,আর না কারো প্রেমে পড়বে। সে অনেক আগেই প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছে জীবনে আর যাই হোক ” ভালোবাসা নামক বি*ষ সে পান করবে না,কখনো না।”

মহুয়া রুমে বসে আছে আহনাফ রুম থেকে বের হয়েছে দশ মিনিট হয়ে গেছে।

আমেনা বেগম হাতে খাবার নিয়ে মহুয়ার কাছে আসলো। খাবার দেখে খিদে যেন আরও বেড়ে গেল।
আমেনা বেগম মহুয়াকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বললো।
মহুয়া ফ্রেশ হয়ে এসে বসলো।
আমেনা বেগমঃ খেয়ে বিশ্রাম নিবে।
মহুয়া খুশি হল কেউ ওকে কিছু জিজ্ঞেস করছে না।

আহনাফ বাসায় এসেই সবাই কে নিষেধ করেছে মহুয়া কে জেনো কিছু জিজ্ঞেস না করা হয়। কেউ জেনো এই বিষয় বাড়িতে কথা কখনো না তুলে।

খাবার খেয়ে বসে আছে এখন সে কি করবে.? নিজের রুমে যাবে.? ওফ্ফ নিজের রুমও তো বলা নিষেধ!..

আহনাফ অনেকক্ষন পর রুমে আসলো। শার্ট ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে,দেখেই বুঝা যাচ্ছে বৃষ্টিতে ভিজে এসেছে। এই সময় উনি কোথায় গিয়ে ছিলো..? বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে সাথে ঝড় তুফান । মহুয়ার দিকে একবার তাকিয়ে বললো, ‘ এখনো আছেন!।’
মহুয়ার ভীষণ রাগ হলো। সে কি ইচ্ছে করে আছে!? এই লোক তো বললো এই রুমে বসে থাকতে যতক্ষন না উনি ফিরে আসছে।
আহনাফ কিছু মনে করার ভঙ্গিতে বলে উঠলো, ‘ ওহ্ হে আমি তো বলে ছিলাম অপেক্ষা করতে। ‘
মহুয়া কিছু বললো না ওর অস্বস্তি হচ্ছে এই রুমে থাকতে।
আহনাফ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ রুমে যাও বিশ্রাম নাও। ‘

মহুয়া অবাক হলো একবারও কেউ ওকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। আজ বাড়িতে হলে মামি হাজারটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করত!!..কতো মিথ্যা অপবাদ ওর দিকে ছুড়ে মারতো। এই ঘটনার জন্য ওর খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিত। এইসব ভাবতেই বুক চিঁড়ে এক দীর্ঘ শ্বাস বের হয়ে আসলো।
আহনাফ মহুয়ার হুট করে মহুয়ার অনেকটা কাছে চলে আসলো, ‘ আমি জানি আমার আশেপাশে মেয়েরা সারাক্ষণ থাকতে চায়,যেন আমি মধু আর মেয়েরা মৌমাছি। আমি কিন্তু আপনাকে মৌমাছি ভাবিনি মহুয়া আপনিও কেমন মৌমাছি হয়ে যাচ্ছেন।’

মহুয়া আহনাফের দিকে না তাকিয়ে বললো,’ বৃষ্টিতে ভিজে আপনার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে, কাপড় চেঞ্জ করে নেন চিন্তা ভাবনাও চেঞ্জ হয়ে যাবে। বলেই বড় বড় পা ফেলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

আহনাফ ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেঁসে উঠলো। জেনো ভীষণ মজা পেয়েছে।

আহনাফ তার ছেলেদের কল দিয়ে বললো সে কাল সকালে আসবে। এখন বাহিরে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে যাওয়া সম্ভব না।

ফোন রেখে বাহিরে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি আপনার বিষয় সবটা জানতে চাই মহুয়া একদম শুরু থেকে,..’

_______

ডাক্তারের সামনে শ্রাবণ বসে আছে।
ডাক্তার বলে উঠলো, ‘ রোগী আপনার কি হয়.?’
শ্রাবণ কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বলে উঠলো, ” আমার ওয়াইফ’
ডাক্তারঃ উনি হয়তো ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না,টেনশন করে বেশি, উনাকে রেস্টে রাখবেন কিছু দিন, একটুও টেনশন করা যাবে না, খাবারের দিকে খেয়াল রাখবেন।

শ্রাবণ ডাক্তারের কাছ থেকে মেঘলার কাছে এসে বলে উঠলো, ‘ চলুন। ‘
মেঘলাঃ কোথায়।
শ্রাবণঃ জাহান্নামে।
মেঘলাঃ আমার আপনাকে নিয়ে জান্নাতে যাওয়া স্বপ্ন দেখি, আমি কেন জাহান্নামে যাব।?
শ্রাবণঃ আপনার জায়গা জাহান্নামেও হবে না।
মেঘলাঃ আপনার বুকে হলেই হবে।
শ্রাবণ থমকে গেলো, এমন জবাব আশা করেনি শ্রাবণ। মুখ গম্ভীর করে বললো,’ বাড়িতে চলুন।’

গাড়িতে বার বার মেঘলা শ্রাবণের দিকে তাকাচ্ছে।
শ্রাবণ এটা খেয়াল করে ইচ্ছে করে ব্রেক কষলো মেঘলা ভয় পেয়ে গেলো।
শ্রাবণঃ সমস্যা কি তোমার.?
মেঘলা অবাক হওয়ার মতো মুখ করে বলে উঠলো, ‘ আমার সমস্যা!!.? আমার তো কোনো সমস্যা নেই।
শ্রাবণঃ তাহলে চোখ গাড়ির বাহিরে রাস্তায় রাখুন। না হলে গাড়ি থেকে বের করে দেব।
মেঘলা ইনোসেন্ট মুখ করে বলে উঠলো, ‘এতো কিউট মুখে এমন তিক্ত কথা আমার নরম হৃদয় ছিদ্রকরে দিল প্রিয় স্বামী ।’

শ্রাবণ কথা না বাড়িয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। এই মেয়ের সাথে কথা বলে লাভ নেই। কখন কি বলে হয়তো নিজেও জানেনা।
মেঘলা আবার বলে উঠলো, ‘ আপনি কখনো কাউকে ভালোবেসেছেন.???’
সাথে সাথে শ্রাবণের চোখের সামনে ভেসে উঠলো এক মায়াবতীর মুখ, যাকে প্রথম দেখায় ওর হার্ট বিট ফার্স্ট হয়ে গিয়ে ছিলো, যার হাসিতে হৃদয়ে বসন্তের ফুল ফুটে ছিলো,যার তাকানোতে ওর দুই চোখ আঁটকে গিয়ে ছিল, ঘোমটার আড়ালে লুকিয়ে রাখা মুখটার প্রেমে পড়ে গিয়ে ছিল, যেভাবে মেঘ আড়াল করে নেয় রোদ কে, সেভাবে সেই নারী নিজেকে আড়াল করে নেয় ঘোমটার ভেতরে।

মেঘলা প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে গাড়ির বাহিরে তাকালো। আজ সারাদিন ব্যস্ততায় কেটেছে কাল সে এইসব কিছুর সমাধান বের করবে। কে এই মহুয়া? কোথায় থেকে এসেছে? ওর অতীত কি? কি হয়ে ছিলো ওর সাথে? সব কিছু জানতে হবে! পলাশকে হসপিটাল থেকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে সকালেই মেঘলা ওর লোকদের দিয়ে ।এইসব কিছুর উত্তর একমাত্র পলাশ দিতে পারবে।

মহুয়ার ঘুম আসছে না মাথায় শুধু ঘুরছে সেই আগুন্তকঃ এর কথাই। কে ছিলো? CID মেঘ!! কে এই মেঘ.?? মহুয়া চোখ বন্ধ করে ভাবল, এটা মেয়ে ছিল, মহুয়াকে জড়িয়ে ধরতেই মহুয়া বুঝে ছিল, মহুয়া আরও ভাবল, এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে ব্যালকনিতে গেলো। বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি, বৃষ্টির ছিটা এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে ওকে।

মহুয়া ব্যালকনি থেকে দৌড়ে ছাঁদে গেলো। মিনিটে বৃষ্টির পানি ওকে ভিজিয়ে দিলো। মহুয়া হঠাৎ কাঁদতে কাঁদতে হাঁটু গেড়ে ছাঁদে বসে পড়লো চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, ‘ আল্লাহ আমাকে পথ দেখান, আমি মুক্তি চাই এই জীবন থেকে। এই জীবনের শেষ কোথায়!..????’

চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।