Monday, June 23, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 273



মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-১৬+১৭

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_১৬
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

আহনাফ পলাশের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখ ফেঁকাশে হয়ে গেছে। রক্ত গিয়েছে অনেক। ব্যথায় চোখ লাল হয়ে আছে।

একজন নার্স বলে উঠলো, ‘ স্যার আমি রুমে এসে ছিলাম স্যালাইন চেক করতে এসে দেখি রোগী ছটফট করছে,হাত থেকে রক্ত পড়ে ফ্লট লাল হয়ে আছে।

আহনাফ পলাশের দিকে তাকিয়ে বললো সিসিটিভি ফুটেজ দেখেন। এই রুমে আপনার আগে কে এসে ছিলো দেখুন।

পলাশের অবস্থা দেখে মহুয়া ভেতর ভেতর ভীষণ খুশি হয়েছে ভেতর ভেতর পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করছে। সে তো চায় এই লোক ওর সামনে কাতরাতে কাতরাতে নিজের মৃত্যু ভিক্ষা চাক।

পলাশের কানে অনেক পিঁপড়ে ঢুকে গিয়ে ছিলো। পিঁপড়ের কামড় সহ্য করতে না পেরে এক পর্যায় পলাশ জ্ঞান হারায়।

সিসিটিভির কথা শুনে মহুয়া মুচকি হাসে। সে এতোটাও কাঁচা খেলোয়াড় নয়। সিসিটিভি অন্য পাশে ঘুরতেই মহুয়া পলাশের রুমে এসে ছিলো।

সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে এসে জানালো সন্দেহ জনক কাউকে দেখা যায়নি। তার মানে পলাশ নিজের হাত নিজেই কেঁটেছে।

আহনাফ পলাশের দিকে খেয়াল রাখতে বলে চলে আসে।

ক্যাবিনে এসে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ ব্যাগ গুছিয়ে চলে যান।’
মহুয়া ব্যাগ হাতে নিয়ে বের হতে গিয়ে দরজার সাথে কপালে ভারি খায়।

আহনাফ ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে মহুয়ার দিকে তাকায়।
মহুয়া কপাল ডলতে ডলতে বেরিয়ে যায়।

হসপিটাল থেকে বের হয়ে একটা রিক্সা দাঁড় করিয়ে বসে পরলো।

রিক্সা চলছে আর মহুয়া তাকিয়ে আছে সন্ধ্যার রাস্তার পাশে ছোটো ছোটো দোকান গুলোর দিকে। হঠাৎ মনে হলো সে কাউকে দেখেছে! রনি.? হ্যাঁ সে রনিকে দেখেছে তাও আজ কতোগুলো দিন পর। ওইদিন কোথাও রনিকে দেখা যায়নি। আজ চায়ের দোকানে রনিকে দেখে ব্যাস অবাক হয়েছে সে।

বাসায় এসে নিজের রুম দেখে ভীষণ অবাক হয়। সব কিছু এলোমেলো হয়ে আছে। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে বসলো। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে যদিও আহনাফ ওকে দিয়ে বেশি কাজ করায়নি। প্রথম দিন খুব সুন্দর করে কাজ বুঝিয়ে দিয়েছে, বেশি কাজ দেয়নি। তাও এই কাজ ওর জন্য প্রথম ছিলো।

কিছু সময় বসে থেকে উঠে ব্যালকনিতে গেলো। ব্যালকনিতে গিয়ে পা থেমে গেলো। হৃদয় মুচড়ে উঠলো দ্রুত ছোঁয়ার কাছে ছুটে গেলো।

ছোঁয়া ব্যালকনিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।
মহুয়া ছোঁয়াকে কোলে করে রুমে নিয়ে আসতে চাইলো। মেয়েটার শরীর পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। মহুয়া চেষ্টা করেও কোলে নিয়ে রুমে আসতো পারলো না৷ অজ্ঞান ছোঁয়ার ওজন একটু বেশিই হয়ে গেছে। মহুয়ার মাথা শূন্য শূন্য লাগছে। সে এখন কি করবে..? ওর জ্বর আর বাড়ির কেউ একটু খুঁজ ও নেয়নি.? ভীষণ রাগ হলো বাড়ির প্রতিটি সদস্যর উপর। ছোঁয়ার চোখে মুখে পানির ছিটা দিলো কিন্তু তাতে কোনো কাজ হলো না।

মহুয়া রুম থেকে বের হয়ে আহনাফের রুমে আসলো কিন্তু রুমে আহনাফ নেই। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে তারমানে আহনাফ ওয়াশরুমে মহুয়া দেরি না করে আহনাফের রুম থেকে বের হয়ে নিচে যাচ্ছিলো তখনি নির্জন কে দেখে বললো,’ ভাইয়া আমার সাথে একটু আমাদের রুমে আসুন।’
নির্জনের মন ভালো না তাই বলে উঠলো, ‘ এখন আমি একটু ব্যস্ত মহুয়া। ‘
মহুয়ার রাগ আকাশ ছেয়ে গেলো অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়ার শরীর খারাপ অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে প্লিজ আমার রুমে দুই মিনিটের জন্য আসুন।’

ছোঁয়ার শরীর ভালো না শুনেই নির্জন ঘাবড়ে গেলো। মহুয়াকে রেখেই দৌড়ে রুমে আসলো।

মহুয়া পেছন থেকে বলে উঠলো, ‘ ব্যালকনিতে।’

নির্জন ব্যালকনিতে গিয়ে ছোঁয়ার মুখে হাত রেখে কয়েক বার ডাকলো তারপর কোলে নিয়ে রুমে এসে বিছানায় শুইয়ে আহনাফ ভাইকে ডাকতে বললো।
মহুয়া অবাক হয়ে নির্জনের ছটফট দেখতে লাগলো।
নির্জন ছোঁয়ার মুখে পানির ছিটা মেরে মাথায় হাত বুলিয়ে ডাকছে।
মহুয়া এক নজর তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আবার আহনাফের রুমে গেলো।
আহনাফ সবে মাত্র গোসল করে বের হয়েছে। গেঞ্জি বা শার্ট কিছু গায়ে নেই, চুল গুলো কপালে এসে লেপ্টে আছে।

মহুয়া ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢুকেই আহনাফের দিকে তাকিয়ে আছে।
আহনাফঃ নিজের চোখ সরাও,আমি জানি আমি অনেক হ্যান্ডসাম তাই বলে তাকিয়ে তাকিয়ে অন্যের সম্পত্তি তে নজর লাগাবে না।

মহুয়া আহনাফের থেকে চোখ সরিয়ে অন্য দিকে ফিরে বলে উঠলো, ‘ ফালতু কথা রাখুন আপনি হ্যান্ডসাম..? ওপ্স আপনি না বললে তো আমি জানতামি না।অন্যের সম্পত্তির দিকে তাকানোর মতো স্পেশাল কিছু আপনার মধ্যে নেই।
আহনাফঃ তুমি আমাকে অপমান করছো.? অথচ একটু আগেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলে।
মহুয়াঃ কাপড় পড়ুন। আমি আপনার দিকে নয় অন্য দিকে তাকিয়েছি।
আহনাফঃ যখন তখন আমার রুমে এভাবে চলা আশা আমার পছন্দ না। কেনো এসেছেন.?
মহুয়াঃ ছোঁয়া অসুস্থ অজ্ঞান হয়ে গেছে,অনেক জ্বর।
আহনাফঃ আরও আগে বলা উচিত ছিলো।
মহুয়াঃ আপনি সুযোগ দিয়েছেন.??

নির্জন ছোঁয়ার সামনে বসে আছে। ছোঁয়ার জ্ঞান ফিরেছে তবে জ্বরের গুড়ে আবল তাবল বকছে। নির্জন একবার কান পেতে শুনতে গিয়ে ছিলো। ছোঁয়া বিড়বিড় করে নির্জন কেই বকছে। এটা দেখে মুচকি হাসলো নির্জন।

আহনাফ আর মহুয়ার পিছু পিছু বাড়ির সবাই আসলো।

নিরুপমা মেয়ের পাশে চিন্তিত হয়ে বসলেন। মেয়েটার কয়েকদিন পর পর এভাবে জ্বর আসে। একদম বাবার মতো হয়েছে। ছোঁয়ার আব্বুরও জ্বর আসলে অজ্ঞান হয়ে যেতো, অল্পতেই জ্বর উনাকে কাবু করে ফেলতো। আর ছোঁয়া হয়েছে একদম ওর আব্বুর মতো।

আহনাফ জ্বর মেপে দেখলো ১০৩°জ্বর। আহনাফ কিছু মেডিসিন দিয়ে বললো কিছু খাইয়ে মেডিসিন গুলো খাইয়ে দিতে এখনি।
হালিমা বেগম ছোঁয়ার মাথায় পানি দিচ্ছে।
নির্জন অপরাধীর মতো তাকিয়ে আছে। আজ ওর জন্য ছোঁয়ার এই অবস্থা। মেয়েটা অনেক কেঁদেছে। চোখ মুখ ফুলে আছে। কেমন ফর্সা মুখ লাল হয়ে, চোখ গুলো ফুলে গেছে।

ছোয়াকে একটু স্যুপ খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিলো৷ মহুয়া নিজে ওর যত্ন নিবে বলে সবাইকে চলে যেতে বলল।

সবাই চলে গেছে অনেক সময় হলো। নিরুপমা যেতে চায়নি মহুয়া বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠিয়ে দিলো। ছোঁয়ার চুল মুছে, হাল্কা করে ঘা মুছে দিলো। নিচটা মুছে এসে ছোঁয়ার পাশে বসলো। ছোঁয়া ঘুমাচ্ছে। মহুয়ার নিজের ও ক্লান্ত লাগছে লাইট বন্ধ করে ওর পাশে ঘুমিয়ে পরলো।

রাত ২টা ছুঁই ছুঁই দরজায় কেউ কড়া নাড়তেই মহুয়ার ঘুম ভেঙে যায়।

মহুয়া লাইট জ্বালিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো নির্জন দাঁড়িয়ে আছে।
নির্জনঃ গুড মর্নিং না হওয়া ভাবি।
মহুয়া বিরক্ত হলো। এটা কেমন মজা এতো রাতে এই ছেলে এখানে কেনো.? আর এইসব উল্টো পাল্টা কি বলছে.?
নির্জনঃ ভাবি ছোঁয়া এখন কেমন আছে.?
মহুয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো ” ভাবি কে.?? আপনি নিজেই সুস্থ আছেন তো.??
নির্জনঃ সরি ক্রাশ।
মহুয়া এবার বুঝে যায় আসলেই ছেলেটা উল্টো পাল্টা কিছু খেয়েছে।
নির্জনঃ আমার উত্তর দিলেন না.?
মহুয়াঃ কয়টা বাজে.?
নির্জন হাত সামনে এনে ঘড়ি দেখে দরজায় ঠেস মেরে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ ২:৩৪। ‘
মহুয়াঃ আপনি ঘুমাননি.?
নির্জনঃ ঘুম আসছে না।
মহুয়াঃ ছোঁয়া ঠিক আছে ঘুমাচ্ছে।
নির্জনঃ ও কিছু খাবে.?
মহুয়া কিছু সময় চুপ থেকে বললো,’ হুম স্যুপ, নুডলস, কফি।এখন এইগুলো হলেই হবে। বলেই ওর মুখের উপর দরজা বন্ধ করে হাসতে লাগলো।

নির্জন ঠোঁট উল্টে কিছু ভাবতে ভাবতে একবার দরজার দিকে তাকিয়ে নিচে নেমে গেলো।

রান্না ঘরে ঠুস ঠাস শব্দ শুনে আহনাফ এগিয়ে আসলো। নির্জন কে দেখে অবাক হলো এতো রাতে কি করছে.?
~ কি করছিস.?
নির্জন ভয়ে পেছন ফিরে আহনাফ কে দেখে হেঁসে বলে, ‘ নুডলস। ‘
আহনাফঃ তুই তো নুডলস পছন্দ করিস না। আর ফ্রিজে তো খাবার আছে গরম করে খেয়েনে।
নির্জনঃ আমি তো এই খাবার অন্য কারো জন্য বানাচ্ছি।
আহনাফঃ কার জন্য.?
নির্জনঃ মহুয়ার জন্য।
আহনাফ কিছু সময় চুপচাপ তাকিয়ে রইলো নির্জনের দিকে।
আহনাফঃ মহুয়ার জন্য মানে.?
নির্জনঃ মহুয়া সারা রাত ছোঁয়া কে পাহারা দিয়েছে এখন ওর নুডলস খেতে ইচ্ছে করছে তাই ভাবলাম ক্রাশ বলে কথা।
আহনাফ থমথমে মুখে নুডলসের দিকে তাকালো তারপর নির্জন কে জিজ্ঞেস করলো,’ আর কখনো রান্না করেছিস..?’
নির্জনঃ না, তবে ইউটিউব থাকতে এটা কোনো ব্যপারি না।

আহনাফ নুডলসের দিকে তাকিয়ে হাসলো। নির্জনের কথা একটাও বিশ্বাস হয়নি ওর। মহুয়া নিশ্চয়ই খাবার বানাতে ওকে বলবে না, কি লুকাচ্ছে.?
আহনাফ কথা না বাড়িয়ে পানি নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। আর যাওয়ার সময় বলে গেলো ‘ অনেক ভালো রান্না হচ্ছে, আগে উনাকে খাওয়াবি তুই প্রথম খেলে রান্নার স্বাদ চলে যাবে। এতে তোর ক্রাশ তোর প্রেমেও পড়ে যেতে পারে ‘ বলেই মুচকি হেঁসে উপরে চলে গেলো।

নির্জন সব কিছু বানিয়ে কফি হাতে নিয়ে সামনে শ্রাবণ কে দেখে থমকে গেলো সাথে বিরক্ত ও হলো। আজ রাতে কি সবাই ওকে পাহারা দিতে জেগে আছে।
নির্জনঃ ভূতের মতো সামনে এসে দাঁড়ানোর কি আছে! সুন্দর করে কথা বলতে বলতে আসতে পারো।এভাবে মাঝ রাতে হার্ট অ্যাটাক করানোর ধান্দায় ঘুরতেছো!?
শ্রাবণঃ তুই এতো রাতে রান্নাঘরে কেনো.?
নির্জনঃ আর কয়জন কে বলতে হবে একসাথে আসো.!!
শ্রাবণ নির্জনের এমন পাগলের মতো কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
নির্জনঃ ভাবির জন্য রান্না করতে এসেছি।
শ্রাবণঃ ভাবি.?
নির্জনঃ দেখো ভাই তুমি মান আর না মান আমি তো মেঘলা ভাবিকে, ভাবি মেনে নিয়েছি। সারাদিন এক বারও ভাবির একটু খুজ নাও না। দেবর হিসেবে আমার ভীষণ খারাপ লাগে।কতো মিষ্টি একটা মেয়ে দেখলেই মন গলে যাওয়ার কথা। ভাবির ঘুম আসছে না আমি জিজ্ঞেস করলাম কিছু খাবেন বললো নুডলস খাবে। যেটা তোমার করার কথা সেটা আমি করে দিচ্ছি মানবতার ফেরিওয়ালা বলে কথা।

শ্রাবণ চুপচাপ নির্জনের সব কথা শুনলো।তারপর জিজ্ঞেস করলো, ‘ তোর ভাবি কোথায় আছে এখন.?’
নির্জনঃ গেস্ট রুমে।
শ্রাবণঃ চল দেখে আসি।
নির্জনঃ তুমি কেন যাবে। ভাবি এখন ঘুমাবে।
শ্রাবণঃ মিথ্যা কথা বলার আগে দেখে নেওয়া দরকার মানুষটা কোথায়!? মিথ্যা কথাও ঠিক ঠাক বলতে পারিস না। এক কাজ করবি কাল থেকে ভালো করে তোর ভাবির কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিবি। বলেই নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। রান্না ঘরে লাইট দেখে ভেবেছিলো চোর হবে।

বেচারা নির্জন হাতে খাবারের বাটি নিয়ে শ্রাবণের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ভাবি তোমার রুমে.? তোমাদের মধ্যে কি কিছু চলছে.? আমি জানতাম এতো সুন্দর বউ রেখে আমার ভাই সিঙ্গেল ঘুমায় কিভাবে! আজ একটা বউ নেই বলে একা ঘুমাতে হয়।’

শ্রাবণ সোফা থেকে একটা বালিশ নির্জনের দিকে ছুঁড়ে মারলো। বেচারা একটুর জন্য খাবার গুলো সহ বেঁচে গেলো।

শ্রাবণ রুমে এসে বিছানার দিকে তাকায়। মেঘলা ঘুমিয়ে আছে। অফিসের সব কাজ শেষ করে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। আজকের চাঁদটা একটু বেশিই সুন্দর আর বড়।
আকাশে দিকে তাকিয়ে তাঁরা গুনতে শুরু করলো। কিছু সময় ব্যালকনিতেই পার করে দিলো। মেঘলার হঠাৎ চেঞ্জ ওকে ভাবায়। সারাদিন আজ ওকে অনেক জ্বালিয়েছে।

হঠাৎ চোখ গেলো পাশে একটা বইয়ের দিকে।
বইটা হাতে নিয়ে দেখলো একটা ইংরেজি রোমান্টিক বই। শ্রাবণ কৌতূহলি হয়ে বইটা নিয়ে রুমে আসলো। কে এই বই পড়ছে.? সোফায় বসে বইটার প্রথম পৃষ্ঠা খুলে আরও চমকে উঠলো।

খুব সুন্দর করে গুটিগুটি ইংরেজি অক্ষরে লেখা “Meghla ”

শ্রাবণ অবিশ্বাস চোখে ভাবতে লাগলো, এই মেঘলা কে..? চোখ তুলে মেঘলার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ তুমি কে.? আর এই বই কার.?বইয়ে মেঘলা নাম কেনো.?

চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_১৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

হাতে খাবার নিয়ে মহুয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নির্জন।
মহুয়া বিরক্ত হয়ে খাবার গুলো হাতে নিয়ে রুমের দরজা লাগাবে তখনি নির্জন বলে উঠলো, ‘ আগে আপনি একটু খেয়ে নিবেন তারপর ছোঁয়া কে খাওয়াবেন।আর ছোঁয়া কে বলবেন না আমি এই খাবার রান্না করেছি ওর খুঁজ খবর নিতে এসেছি। ‘
মহুয়া খাবারের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তাহলে কার রান্না বলবো.?’
নির্জন কিছু একটা ভেবে বললো,’ বলবেন আহনাফ ভাই রান্না করেছে ওর জন্য। ‘
মহুয়া কথা না বাড়িয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। এই ছেলের মাথা সমস্যা আছে।

মহুয়া খাবার গুলোর দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলো৷ নুডলস এতো লাল টকটকে কেনো.? আস্তে করে টেবিলের উপর রেখে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

_______

সকালের মিষ্টি রোদের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো ছোঁয়ার। আশেপাশে তাকিয়ে মহুয়াকে খুঁজলো। শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার। ওড়নাটা বিছানার এক কোনে পড়ে আছে। ছোঁয়া ওড়নাটা হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। শরীরে জ্বর নেই।

মহুয়া ব্যালকনি থেকে রুমে এসে ছোঁয়া কে বিছানায় না দেখে ওয়াশরুমের দরজায় ধাক্কা দিলো।
মহুয়াঃ ছোঁয়া তুমি কি ভেতরে আছ.?
ছোঁয়াঃ হুম।

ছোঁয়া গোসল শেষ করে বিছানায় বসে পড়লো। মহুয়া একটা তোয়ালে এগিয়ে দিয়ে বললো,ভালো করে চুল মুছে নাও, না হয় ঠান্ডা লেগে যাবে।
ছোঁয়াকে এমন চুপচাপ দেখে মহুয়া নিজেই ওর চুল সুন্দর করে মুছে দিলো।
মহুয়াঃ জ্বর তো নেই। শরীর কি খারাপ লাগছে.?চা বানিয়ে দিবো.?
ছোঁয়াঃ না।
মহুয়াঃ মন খারাপ।
ছোঁয়া কিছু না বলে টেবিলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো এইগুলো কি.?
মহুয়াঃ তোমার জন্য ছিলো কিন্তু এখন তো ঠান্ডা হয়ে খারাপ হয়ে গেছে।
ছোঁয়া একবার তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’ তুমি রান্না করে ছিলে.?’
মহুয়াঃ না।
ছোঁয়াঃ কে.?
মহুয়াঃ আহনাফ চৌধুরী।
ছোঁয়া চোখ বড় বড় করে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আবার খাবার গুলোর দিকে তাকিয়ে হাতে নিলো।
আহনাফ কোনোদিন নিজের জন্যও বাসায় কিছু রান্না করেনি আজ কিনা ওর জন্য রান্না করেছে! এখন তো আপসোস লাগছে কেন সে সুস্থ হলো। অসুস্থ থাকলে তো আহনাফ আরও ওর দেখাশোনা করতো।ওকে নিয়ে ভাবতো।

নুডলসের বাটি হাতে নিয়ে একটু নুডলস মুখে দিয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

মহুয়া চুপচাপ ছোঁয়ার কাহিনী দেখছে। ছোঁয়ার কাহিনী দেখে ওর একটু সন্দেহ হলো। আহনাফের নাম শুনতেই ওর চোখে আলাদা খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠেছে। মহুয়া মুচকি হাসলো। ওর বুঝতে বাকি নেই ছোঁয়ার এই পরিবর্তনের মানে। মহুয়া মনে মনে বলে উঠলো, ‘ ওয়েলকাম তুমি খুব শীগ্রই নরকের যন্ত্রণায় পা বাড়াচ্ছ।’

ছোঁয়া একটু নুডলস মুখে নিয়ে বাটি টেবিলে রেখে বলে উঠলো, ‘ জঘন্য ‘

মহুয়া পেছনের দিকে ফিরে মুচকি হেঁসে উঠলো।

___________

শ্রাবণ এখনো ঘুমাচ্ছে। চোখে পানির ছিটা পড়তেই চোখ পিটপিট করে তাকালো। রিনঝিন শব্দে ঘুম ঘুম চোখে পেছন ফিরে তাকালো।

মেঘলা কমলা রঙের শাড়ি হাতে নিয়ে পড়ার চেষ্টা করছে ইউটিউব দেখে। চুল থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। ভেজা চুল যারা দিতেই চুলের পানি গিয়ে শ্রাবণের মুখে পড়েছে, হাতে কাঁচের চুড়ি যার রিনঝিন শব্দ শুনতে খুবি সুন্দর লাগছে।

শ্রাবণের মনে হলো এটা তার দেখা সবচেয়ে সুন্দর সকাল।

মেঘলা শাড়ির কুঁচি দেওয়ার চেষ্টা করছে। সে কখনো নিজে শাড়ি পড়েনি। কুঁচি তো কিছুতেই দিতে পারছে না। হঠাৎ চোখ গেলো আয়নার কোনায়। শ্রাবণ কেমন অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

ভয়ে মেঘলা শাড়ি দিয়ে শরীর ঢেকে বুকের উপর ভালো করে শাড়িটা ধরলো। শ্রাবণের দিকে রেগে বলে উঠলো, ‘ এ্যাঁই এ্যাঁই শ্রাবণ চৌধুরী অন্য দিকে ফিরেন। আর একবার এই দিকে তাকালে আপনার চোখ গেলে দিবো।
শ্রাবণঃ আমি তো আপনার দিকে তাকাইনি।
মেঘলাঃ আমি নিজ চোখে দেখেছি আপনি তাকিয়ে ছিলেন।
শ্রাবণঃ আমি তো অন্য কিছুর দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
মেঘলাঃ ঠিক মতো মিথ্যাও বলতে পারেন না।
শ্রাবণঃ দেখুন আপনার বাম পাশে দেয়ালে একটা টিক টিকি।
মেঘলা তাকালো, সত্যি টিক টিকি।
মেঘলাঃ আমি এইসব ছোটো খাটো পোকামাকড় ভয় পাই না।
শ্রাবণঃ কিন্তু আমি পাই।
মেঘলাঃ কিইইই!!.?
শ্রাবণ কথা ঘুরিয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনি কেনো পোকামাকড় ভয় পাবেন বরং পোকামাকড় আপনাকে ভয় পাবে। আপনি পোকামাকড় থেকে ভয়ংকর আর বিষাক্ত।

মহুয়া ছোঁয়ার কাপড় গুলো ছাঁদে ভালো করে ছড়িয়ে দিলো। ফুল গাছগুলোতে পানি দিয়ে পেছনে ফিরতেই আহনাফ কে দেখলো কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।

মহুয়া আহনাফ কে দেখেই দ্রুত ছাঁদ থেকে নেমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
আহনাফ পেছন থেকে ডেকে উঠলো।
মহুয়ার পা থেমে গেলো। পেছনের দিকে না ফিরে বলে উঠলো, ‘ কিছু বলবেন.?’
আহনাফ মোবাইল পকেটে রেখে দুই হাত সুন্দর করে বুকের মাঝে বাজ করে রেখে বললো,’ এদিকে ফিরুন।’
মহুয়া পেছনের দিকে ফিরতে আহনাফ বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া কেমন আছে.?’
মহুয়াঃ হুম এখন ভালো।
আহনাফঃ জ্বর আছে?
মহুয়াঃ না।
আহনাফঃ কাল রাতে আপনার কিছু খেতে ইচ্ছে হয়ে ছিলো। কিছু খেতে ইচ্ছে হলে ফ্রিজে দেখবেন। ফ্রিজে সব কিছু আছে।
মহুয়াঃ বুঝলাম না, কাল রাতে খেতে ইচ্ছে করে ছিলো মানে.?
আহনাফঃ নির্জন কে দেখলাম আপনার জন্য রান্না করে নিয়ে গেলো। বললো আপনার খেতে ইচ্ছে করছে।

মহুয়া যা বুঝার বুঝে গেলো। এই বাঁচাল ছেলে আর কাউকে না পেয়ে ওকে ফাঁসিয়েছে। জায়গায় জায়গায় মানুষ ফাঁসিয়ে নিজে ভালো থাকছে।

মহুয়াঃ আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। উনি একটা বলেছে আপনি আরেকটা শুনেছেন।
আহনাফঃ হয়তো।

মহুয়া চুপচাপ ছাঁদ থেকে নামতে গিয়ে ছাঁদের দরজার সাথে ধাক্কা খেয়ে কপালে হাত ডলতে শুরু করলো।

আহনাফ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে অন্য দিকে ফিরে হেঁসে উঠলো।
____

মহুয়া ছোঁয়াকে নিয়ে নিচে এসে দেখে রান্না ঘরে আজ মেঘলা।

আমেনা বেগম অনেক বার নিষেধ করার পরও মেঘলা নিজে রান্না করছে। আমেনা বেগম, হালিমা বেগম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওর রান্না দেখছে।আমেনা বেগম ভীষণ রেগে আছেন এমনিতেই মেঘলার ছায়াও দেখতে পারেন না আর এখন কিনা রান্না ঘরেও চলে এসেছে। ছেলের ওই দিনের কথার পর আর আমেনা বেগম মেঘলা কে কিছুই বলে না। রাগ হলেও চুপচাপ হজম করে নেন।

শ্রাবণ ওর আব্বুর সাথে অফিসের কথা বলছে। দিন দিন কোম্পানির লস হচ্ছে। কোম্পানি এভাবে চলতে থাকলে এতো কষ্ট করে তৈরি করা স্বপ্নের কোম্পানি একদম শেষ হয়ে যাবে। হঠাৎ কোম্পানির এই পরিণতির কারন শ্রাবণ কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছে না। কোম্পানির সব চেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল চুরি হয়ে গেছে।

আজাদ চৌধুরী কিছুই বললেন না শুধু শ্রাবণের কথাগুলো চুপচাপ শুনলেন।তারপর উঠে রুমের দিকে চলে গেলো।

শ্রাবণ আহনাফের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ মনে হচ্ছে আব্বু কিছু লুকাচ্ছে! তাই না আহনাফ.? ‘

আহনাফ শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে মোবাইল হাতে নিলো।

মেঘলা সব কিছু সুন্দর করে টেবিলে সাজিয়ে ছোঁয়ার কপালে হাত রেখে বললো,’ জ্বর কমেছে.??’
ছোঁয়া নিজেও মেঘলা কে একদম পছন্দ করে না।
~হুম।
মেঘলাঃ তোমার জন্য কি অন্য কিছু রান্না করে দিবো.?
ছোঁয়াঃ প্রয়োজন নেই।

নির্জন বসতে বসতে বলে উঠলো, ‘ ভাবি আমার জন্য আজ খিচুড়ি রান্না করবে.?’
মেঘলাঃ ঠিক আছে।

মেঘলা একবার আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফ মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে। মোবাইলে কিছু একটা হয়তো করছে।

মেঘলা সব সময় অবাক হয়। ও এই বাড়িতে আসার পর আহনাফ যতবার ওর সামনে পড়েছে কখনো ওর দিকে তাকায়নি। আর না কখনো ওর সাথে কথা বলেছে। এই বাড়ির এক একটা ছেলে এক এক রকম।

শ্রাবণ ছোঁয়ার মাথায় হাত রেখে স্নেহের সাথে বলে উঠলো, ‘ হঠাৎ শরীর কিভাবে খারাপ হলো.? তুমি কি ঠান্ডা কিছু খেয়েছো.?’
আহনাফ অন্য পাশ থেকে বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া রাণীকে কি কেউ কিছু বলে ছিলো.? আমাদের ছোঁয়া রাণী তো বেশি কষ্ট পেলেও অসুস্থ হয়ে পড়ে..।
শ্রাবণঃ স্যার বকেছে.?
আহনাফঃ ভাইয়াকে বলো কোনো ছেলে ডিস্টার্ব করেছে.?

শ্রাবণ আর আহনাফ সব সময় ছোঁয়াকে একটু বেশি ভালোবাসে।ওদের বোন নেই ছোঁয়া ওদের এক মাত্র বোন।

ছোঁয়া আদরের হাত,আর কন্ঠ পেয়ে ঠোঁট উল্টে কান্না করে দিলো। কেউ কিছু বুঝার আগেই নির্জনের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘ এই কুত্তা আমাকে সবার সামনে রাস্তায় থাপ্পড় মেরেছে, রেগে ধমকিয়ে কথা বলেছে আরও মারার হুমকি দিয়েছে।

সবাই চোখ তুলে নির্জনের দিকে তাকালো। বেচারা মুখের সামনে রুটিটা মাত্র নিয়ে ছিলো। সবার তাকানো দেখে রুটি প্লেটে রেখে রাগী দৃষ্টিতে ছোঁয়ার দিকে তাকালো।

মহুয়া মনেমনে বলে উঠলো, ‘এই জন্য বেচারা কাল রাতে এতো যত্ন, এতো কেয়ার করে ছিলো। ‘

আহনাফ রেগে নির্জনের দিকে তাকালো।
হালিমা বেগম রান্না ঘর থেকে গরম খুন্তি হাতে নিয়ে নির্জনের দিকে আসলো৷ শ্রাবণ থামিয়ে বলে উঠলো, ‘ নির্জন তুই কোন সাহসে ছোঁয়ার গায়ে হাত তুলেছিস.?
নির্জনঃ ভাই আমার কোনো দোষ নেই এই ডাইনী রাস্তায় আমার ইয়ারফোন ফেলে দিয়ে ছিলো।
আহনাফঃ তোর ইয়ারফোন কয়টা লাগবে আমাকে বলতি! তাই বলে বাচ্চা মেয়ের গায়ে হাত তুলবি.?
নির্জনঃ বাচ্চা মেয়ে.? কে বাচ্চা মেয়ে.? বাচ্চা মেয়ে কিভাবে কলেজে গিয়ে ছেলেদের জড়িয়ে ধরতে পারে!..?
আহনাফঃ কিসের ছেলে.?
নির্জনঃ তোমার বাচ্চা বোনকে জিজ্ঞেস করো।
আহনাফ ছোঁয়ার দিকে তাকাতেই ছোঁয়া রেগে বলে উঠলো, ‘ ভাই আমি ধরিনি ওই বেয়াদব,অসভ্য ছেলে আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিলো। আমি ক্লাস থেকে বের হয়ে মহুয়ার ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলাম তখনি হঠাৎ আমার সামনে ফুল নিয়ে এসে দাঁড়ায় রাফি। আমি রেগে তাকাতেই হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরে কানে ফুল গুঁজে আবার হাওয়ার বেগে কোথায় জেনো চলে গেছে। আমি কিছুই বুঝতে পারিনি।

নির্জনঃ হ্যাঁ তুই তো খুকি, খুকিরা কিছু বুঝে-ও না।
ছোঁয়াঃ তোর কি হ্যাঁ.! তোর কি.? কেমন ভাই তুই যে বোনকে একটা ছেলে জড়িয়ে ধরেছে দেখেও নাচতে নাচতে চলে এসেছিস।
নির্জনঃ তো কি ডাক ঢোল বাজিয়ে পার্টি দিবো.?
আহনাফঃ চুপ! আর একটাও কথা এখানে শুনতে চাই না। ছোঁয়া খাওয়া শেষ হলে আমার রুমে আসবে। আর নির্জন তুই আমার সাথে চল।

আহনাফ উঠে যেতেই নির্জন ছোঁয়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ তোর ওই রাফি আর বাইকের ছেলে দুই প্রেমিক এখন হসপিটাল ভর্তি, ফলমূল নিয়ে একটু ভালোবাসা দেখিয়ে আসিস।
ছোঁয়া সহ সবাই অবাক হয়ে নির্জনের দিকে তাকালো।
নির্জন কিছু দূর গিয়ে ফিরে তাকিয়ে আবার বলে উঠলো, ‘ ওদের আশপাশে তোকে দেখলে নেক্সট টাইম ওদের জান টাই নিয়ে নিবো।

মেঘলা মুচকি হেঁসে তাকিয়ে রইলো নির্জনের দিকে। ছেলেটার কথায় ধম আছে।
শ্রাবণঃ এই ছেলের মাথায় কখন কি চলে কে জানে। ছোঁয়া রাণী আমি ওকে বকে দেবো এখন নিশ্চয়ই আহনাফ ওকে মারবে। তুমি আর মন খারাপ না করে সবটা ভুলে যাও।

ছোঁয়া চুপচাপ মাথা নেড়ে খাবারে হাত দিলো।
মহুয়া মেঘলাকে সাথে বসতে বললো। একসাথে খেলে ভালো লাগবে।
মেঘলা আমেনা বেগম, হালিমা বেগম, নিরুপমা সবাইকে জোর করে সাথে নিয়ে এসে বসলো।
মেঘলাঃ এক সাথে খেলে আপনাদেরও ভালো লাগবে।
শ্রাবণ মেঘলার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’ আপনার দেবর আপনার জন্য রান্না করে ছিলো খেয়েছেন.?
মেঘলাঃ কিসের খাবার.? কোন দেবর.?
শ্রাবণ মুচকি হেঁসে বলে উঠলো, ‘ নির্জন, কাল রাতে কতো কষ্ট করে আপনার জন্য মধ্য রাতে রান্না করলো। ‘

ছোঁয়ার খাবার থেমে গেলো সাথে হালিমা বেগমের। যেই ছেলে পানি ডেলে খায় না সে রান্না করেছে তাও ভাবির জন্য!!..

ছোঁয়া রাগে অগ্নি দৃষ্টিতে মহুয়ার দিকে তাকালো। ছোঁয়ার বুঝতে বাকি নেই এই জঘন্য খাবার আর কেউ নয় নির্জন বানিয়ে ছিলো তাও ওর জন্য ।

মহুয়া মুচকি হাসলো ছেলেটা আসলেই বাঁচাল আর মজার মানুষ। এক এক জায়গায় এক এক জনকে ফাঁসিয়ে দিলো।

___________

ছোঁয়ার কাল থেকে এক্সাম বই হাতে নিয়ে সারা রুমে হাঁটছে আর বই নিয়ে পড়ছে। আজ সারাদিন আর রাত পড়ে সে সব মুখস্থ করে নিবে।

মহুয়া ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। কালো সেলোয়ার-কামিজ পড়েছে সাথে ওড়না দিয়ে সুন্দর করে ঘোমটা দিয়ে নিলো।

সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যেতে নেয়। ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। কিছু সময় যেতে নিজেকে হাওয়ায় ভাসছে অনুভব করলো। হাতে আর কোমরে কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে নিলো। নিজের অন্য হাত দিয়ে সামনের মানুষটির কলার চেপে ধরে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।

আহনাফ কে দেখে ভয়ে মাথা নিচু করে সরি বলে উঠলো। লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেলো।
আহনাফঃ একটু দেখে শোনে চলে ফেরা করবেন। এখনি পা ভেঙে হসপিটাল ভর্তি হওয়া লাগতো।
মহুয়াঃ জ্বি ধন্যবাদ।

মহুয়া রিক্সা করে হসপিটাল যাওয়ার পথে রাস্তার মাঝে এসে রিক্সা থামিয়ে দিলো রনি।

মহুয়া রনিকে দেখে অবাক হলো। সাথে একটু ভয়ও পেলো।

রনি মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ গাড়ি থেকে নাম।’
মহুয়াঃ রাস্তা ছাড়ুন এটা কোন ধরনের বেয়াদবি!!…
রনিঃ রাস্তার মাঝ খানে সিনক্রিয়েট না করে নেমে আয়।
মহুয়া রেগে রনির দিকে তাকাতেই রনি বিশ্রী হাসি দিয়ে মোবাইল থেকে একটা ছবি সামনে ধরলো। মহুয়ার সারা শরীরে এক ভয়াবহ কম্পন বয়ে গেলো। বুকের ভেতর কেমন ধুকধুক শুরু হলো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে।কিছু বুঝে উঠার আগেই রনি ওর মুখে রুমাল চেপে ধরলো। একটা কালো গাড়ি আসতেই জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিলো।

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-১৪+১৫

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_১৪
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

আহনাফের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ছোঁয়া।
আহনাফ ওকে বেশি বকবক করার জন্য রুম থেকে বের করে দিয়েছে। দরজায় কান খাঁড়া করে দাঁড়িয়ে আছে চেষ্টা করছে ভেতরে কি কথা হচ্ছে শুনার।

মহুয়া চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে রুমের দরজা খুলে বের হতেই ছোঁয়া ধপাস করে মুখ থুবড়ে পড়লো।

মহুয়া ছোঁয়াকে ধরতে চেয়েও পারলো না।
ছোঁয়া বেচারি তো ভীষণ লজ্জা পেয়েছে সাথে ব্যাথাও।
মহুয়াঃ বেশি ব্যাথা পেয়েছো.? এই হাত ধরে উঠ।
ছোঁয়া মহুয়ার হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো। আহনাফ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে, ছোঁয়া আহনাফের দিকে তাকিয়ে বোকা হেঁসে নিজের রুমের দিকে দৌড় দিলো। ইসস আহনাফ এখন কি ভাবছে!.?

ছোঁয়াঃ ভাইয়া কি বলেছে..?
মহুয়াঃ দেখি পা এদিকে দাও।
ছোঁয়াঃ কিছু হয়নি পায়ে।আমি ঠিক আছি এমন একটু আধটু ব্যাথায় ছোঁয়ার কিছু হয়না। আগে বলো..?
মহুয়াঃ এই কার্ড দিয়েছে মেইল, সিভি সেন্ট করতে বললো। আর..
ছোঁয়াঃ আর.?
মহুয়াঃ ছয় মাস আগে আমি চাইলেও চাকরি ছাড়তে পারব না। কিন্তু আমি এই লোকের সাথে ছয় মাস কাজ করতে পারবো না।
ছোঁয়াঃ মেহু প্লিজ রাজি হয়ে যাওও প্লিজ প্লিজ। ছয় মাস পর আমি ভাইয়ার এসিস্ট্যান্ট হয়ে যাবো।

মহুয়াঃ তাহলে এখন কেনো হচ্ছ না.?

ছোঁয়া কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
____________

শ্রাবণ মেঘলাকে ওর রুম পরিস্কার করে ভালো করে মুছে দিতে বললো।
মেঘলাঃ আমাকে দেখে কি কাজের লোক মনে হচ্ছে.??
শ্রাবণঃ একদম না, ছেলে ছেলে মনে হচ্ছে।
মেঘলাঃ আপনার চোখে সমস্যা!.
শ্রাবণঃ আমার চোখে নয় তোমার কাপড়ে সমস্যা। এভাবে শার্ট, প্যান্ট পড়ে থাকলে ছেলে মনে হবে না তো কি মেয়ে মনে হবে.?
মেঘলাঃ আমি এইগুলো পড়ি সব সময় আজ নতুন না।
শ্রাবণঃ এই বাড়িতে যতোদিন আছ এইসব আর কখনো পড়বে না। আমাদের বাড়ির মেয়েরা এইসব পড়ে না। বাড়িতে আব্বু, চাচ্চু, দাদু, ভাই সবাই আছে তোমার এইসব ড্রেসের জন্য লজ্জায় পড়তে হয়।

মেঘলা চুপ করে থাকে।

শ্রাবণঃ আমার রুম পরিস্কার করে দাও পাঁচ মিনিটে।
মেঘলাঃ আমি পারবো না।
শ্রাবণ মেঘলার দিকে এগিয়ে আসতে মেঘলা পিছিয়ে যায়।
শ্রাবণঃ তাহলে আমিও বাড়ির সবাইকে বলে দেই তুমি আমার রুমে টাকা চুরি করতে এসে ছিলে.? আমার চাচ্চু কিন্তু পুলিশ।
মেঘলা ভয় পেলেও শ্রাবণের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে উঠলো,’ আপনি আমার বন্ধু হবেন.? যতোদিন আছি আমরা বন্ধু হয়ে, বন্ধুর মতো থাকি। আমি আপনার রুম পরিস্কার করে দিবো। আমার আপনার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই না আপনার আমার প্রতি আছে! আমরা শুধু ভালো বন্ধু হয়ে থাকতে পারি। বন্ধুত্ব তো সবার সাথেই করা যায়।

শ্রাবণ হাসলো মুগ্ধ হলো মেঘলা কিন্তু সে বুঝতেই পারলো না এই হাসির পেছনে কতোটা যন্ত্রণা লুকিয়ে আছে। শ্রাবণ সব কিছুর জন্য কাউকে দোষ দেয় না। এটা ওর ভাগ্যে লেখা ছিলো। সে নিজের ভাগ্য মেনে নিয়েছে এখন আর মেঘলার প্রতি রাগ হয় না।

শ্রাবণঃ আমার সাথে কেনো বন্ধুত্ব করতে ইচ্ছে হলো.? আমি তোমাকে পছন্দ করি না। সব কিছুতেই মুগ্ধত্বা, ভালো লাগা, পছন্দ, এইসব একটু হলেও থাকতে হয় না হলে কোনো সম্পর্ক হয় না, হোক সেটা ভালোবাসার কিংবা বন্ধুত্বের টান অনুভব করতে হয়। কিন্তু আমার তোমার প্রতি কিছুই নেই৷

মেঘলাঃ ওহ্ আচ্ছা ঠিক আছে। আস্তে আস্তে হয়েও যেতে পারে।
শ্রাবণঃ কখনো হবে না এটা অসম্ভব।
মেঘলাঃ হবে, হবে সব কিছুই হবে ভালোবাসাও।বলেই
মেঘলা পিছিয়ে যেতে গিয়ে পড়ে যেতে নেয় শ্রাবণ মেঘলার কোমর জড়িয়ে ধরে সামনে টেনে নেয়।
মেঘলা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়ে ছিলো। হঠাৎ কোমরে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেতেই একদম জমে যায়। চট করে চোখ খুলে শ্রাবণের দিকে তাকায় সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে শ্রাবণের দিকে। আজ ওর কি হয়েছে.? শ্রাবণ কে দেখলেই কেনো এমন ফিল হচ্ছে.? কেমন বুকের ভেতর হার্ট বিট ফার্স্ট হয়ে যাচ্ছে। অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে।

শ্রাবণঃ দেখে চলতে পারো না..?
মেঘলাঃ আসলে.. বলেই সে আবার শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে থাকে।
শ্রাবণ মেঘলা কে ছেড়ে দূরে সরে যায়।
মেঘলা এই প্রথম লজ্জা পেলো তাও কোনো ছেলের স্পর্শে। অন্য কোনো ছেলে হলে এতোক্ষনে রেগে বোম হয়ে যেতো, হাত ভেঙে গলায় ঝুলিয়ে দিতো। এই হঠাৎ আশা অনুভূতির মানে জানা নেই ওর!!

______

ড্রয়িং রুমে সবাই বসে ছিলো মহুয়ার চাকরির কথা শুনে নিরুপমা ছাড়া সবাই খুশি।

আমেনা বেগম মহুয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে, কিছু দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে দিলো৷ আনোয়ার চৌধুরী মহুয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। এতো স্ট্রং মেয়ে উনি কখনো দেখেননি। ভেবে ছিলেন মেয়েটা অন্য মেয়েদের মতো কিন্তু এখন দেখছেন একদম ভিন্ন। নিজেকে কি সুন্দর সামলে নিয়েছে। এক মাত্র আনোয়ার চৌধুরী মহুয়ার অতীত জানেন।

মহুয়া আজ দ্বিতীয় বারের মতো আফরোজা বেগমের রুমে প্রবেশ করলো।
আফরোজা বেগম রুম থেকে বের হননা।উনার রুমে অনেক বড় আর সুন্দর একটা বুকশেলফ আছে৷ এখানে বিভিন্ন বই আছে। মহুয়ার প্রথমেই বইগুলোর দিকে নজর গেলো। বই ওর ভীষণ পছন্দ।

আফরোজা বেগম অসুস্থ। বিছানায় শুয়ে আছে।
মহুয়া ধীর পায়ে গিয়ে টুলে বসলো। নিজের ডান হাত দিয়ে উনার হাতটা আলতো করে ধরলো। আসতে করে মিষ্টি কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আমার প্রথম চাকরির আজ প্রথম দিন। আমার জন্য দোয়া করবেন দাদি। আর আপনি জলদি সুস্থ হয়ে উঠুন।’

আফরোজা বেগম চোখ খুলে মহুয়ার দিকে তাকালো।
মহুয়াঃ সরি দাদু আমার জন্য আপনার ঘুম ভেঙে গেলো।
আফরোজাঃ তুমি ভীষণ মিষ্টি একটা মেয়ে। আমি তো চোখ বন্ধ করে ছিলাম ঘুমাইনি। তোমার সৌন্দর্য তুমি লুকিয়ে রেখো। আমি প্রথম যেদিন তোমাকে দেখি ভীষণ অবাক হয়ে ছিলাম। আমিও তোমার মতোই সুন্দরী ছিলাম। সব সুন্দর জীবনে সুখ ভয়ে আনে না কিছু সৌন্দর্য জীবনে অন্ধকার ডেকে আনে। আমি তোমার মধ্যে সেই অন্ধকার দেখতে পাচ্ছি।

মহুয়া হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আফরোজা বেগমের দিকে।

পেছন থেকে আহনাফের কথায় চোখের পলক ফেলে মহুয়া।

আফরোজা বেগম একদম ঠিক বলেছেন। মহুয়া একটা অন্ধকার! ও যেখানে যায় সেখানেই অন্ধকার ডেকে আনে। সৌন্দর্য অভিশাপ নয় অভিশপ্ত ওর ভাগ্য, তা না হলে ওর জন্মের পরেই কেনো ওর পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়!! ! সে নিজেই বলতে লাগলো।

মহুয়া ঘোমটা টেনে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

____________

শ্রাবণ সোফায় বসে আছে। সে যখন থেকে শুনেছে মহুয়া আহনাফের এসিস্ট্যান্টের জব নিয়েছে ওর ভালো লাগছে না৷

তিন কাপ চা খেয়েছে তাও শান্তি লাগছে না, অফিসেও যেতে ইচ্ছে করছে না। মহুয়ার যদি চাকরির প্রয়োজন হতো তাহলে শ্রাবণ কে বললেই হতো ও নিজের এসিস্ট্যান্ট বানিয়ে দিতো যদিও মহুয়ার পড়াশোনা এখন খুব কম।

শ্রাবণ চায়ের কাপ রেখে সামনে তাকাতে স্তব্ধ হয়ে যায়।
শুধু শ্রাবণ নয় সবাই হ্যাঁ করে তাকায়।

মেঘলা শাড়ি পড়েছে। নীল কালার শাড়ি সাথে নাকে নথ, কানে ছোটো ঝুমকো,হাতে নীল চুড়ি।

মেঘলা এসে শ্রাবণের পাশে বসলো।

নির্জন বলে উঠলো, ‘ এতো দিনে আপনাকে বউ বউ মনে হচ্ছে সাথে আমাদের ভাবি।’

মেঘলাঃ তোমার ভাইয়ার নাকি আমাকে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখার খুব সখ যদিও আমাকে সব কিছুতেই উনার চোখে সুন্দর লাগে।

শ্রাবণের মোবাইল দেখছিলো মেঘলার কথা শুনে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো। সে কখন এইসব বলেছে.?? সে তো ভালো করে কখনো মেঘলার দিকেও তাকায়নি।

শ্রাবণ সবে মাত্র পানিটা মুখে দিয়ে ছিলো মেঘলার মুখে এমন কথা শুনে তা আর গলা দিয়ে নামলো না সবটা গিয়ে ছোঁয়ারউপর পড়লো।
ছোঁয়াঃ ছিঃ নির্জনের বাচ্চা এটা কি করলি কুত্তা!!..?? বেয়াদব ছেলে।
নির্জন ছোয়াকে পাত্তা না দিয়ে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ভাই আর কি কি বলেছে.???
মেঘলাঃ তোমার ভাই বললো উনার শ্যামবর্ন মেয়ে পছন্দ, চঞ্চল মেয়ে পছন্দ, যেমন আমি, শাড়ি পড়া মেয়ে পছন্দ, আমার হাসি পছন্দ, আমার কন্ঠ নাকি ভীষণ মিষ্টি।

নির্জনঃ আর..??
ছোঁয়াঃ নির্লজ্জ ছেলে আর কি শুনতে চাস..?
নির্জনঃ তুই চুপ থাক, তোর নাম ছোঁয়া কে রাখছে হে!?? ছোঁয়াছুঁয়ি দেখলেই তোর এলার্জি শুরু হয়ে যায়।
ছোঁয়াঃ আমি তোর মতো নির্লজ্জ ছেলে আর একটাও দেখিনি।

শ্রাবণঃ থাম তোরা যে বলছে তার লজ্জা নেই আর ও শুনতে কেনো লজ্জা পাবে!?
মেঘলা শ্রাবণ দিকে তাকিয়ে চোখ মে’রে বলে উঠলো, ‘ আপনি তো জানেনি আমার এক চিমটি লজ্জা কম।

শ্রাবণ বার বার অবাক হচ্ছে মেঘলার আচরণ দেখে। সকালের মেঘলা আর এখানের মেঘলার মধ্যে অনেক তফাত। এতোদিন মেঘলা শ্রাবণ কে ভয় পেতো আর এখন এই মেয়ে কি বলছে!? কি করছে.??
শ্রাবণ গলা যেরে বলে উঠলো, ‘ এই মেয়ে তুমি কি উল্টা পাল্টা কিছু খেয়ে এখানে এসেছো!.??
মেঘলা শ্রাবণের আরও ঘা ঘেঁষে বসলো।
ছোঁয়া আর নির্জন চোখ বড় বড় করে মেঘলার কাহিনী দেখছে।

মেঘলা মুখটা শ্রাবণের একদম মুখের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ আমি কি আপনার মতো মাতাল নাকি! আপনি ওইসব খান। আমি মাতাল হওয়ার জন্য আপনার মুখটাই যথেষ্ট। ‘

শ্রাবণ দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ আমার থেকে দূরে থাকো আর দ্বিতীয় বার আমাকে মাতাল বললে ধাক্কা দিয়ে ছাঁদ থেকে নিচে ফেলে দিবো। উল্টা পাল্টা কথা না বলে এখানে থেকে যাও।

নির্জনঃ ভাই কি বলছো তোমরা.? আমাদেরও একটু শুনিয়ে বলো, তোমাদের থেকেই তো আমরা শিখবো।

শ্রাবণের সামনে একটা বই ছিলো। শ্রাবণ বইটা নির্জনের দিকে ছুঁড়ে মারলো।

ছোঁয়া মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো,’ শ্যামবর্ন মেয়ে আমাদের আহনাফ ভাইয়ার পছন্দ। ‘
নির্জন হেঁসে বললো, ‘ শ্রাবণ ভাইয়ার সুন্দরী মেয়ে পছন্দ সেই জন্য শ্যামবর্ন মেয়ে পেয়েছে আর আহনাফ ভাইয়ার শ্যামবর্ন মেয়ে পছন্দ সে পাবে ভীষণ সুন্দরী মেয়ে।

মেঘলা চোখ ঘুরিয়ে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনাদের বড় ভাই বেশি ফর্সা সেই জন্য শ্যামবর্ন মেয়ে পেয়েছে আর ছোটো ভাই শ্যামলা তাই সুন্দরী বউ পাবে।
নির্জনঃ আর আমি.??
ছোঁয়াঃ তোর কপালে মোটা, কালো কুচকুচে পাতিলের তলা বউ আছে।
নির্জনঃ আর তোর কপালে..? তোর কপালে তো মাথা নেড়া, ফুকরা দাঁত ওয়ালা, আধা বুড়া বেডা।

” আমার বড় ছেলের জন্যও আমি ভীষণ সুন্দরী মেয়ে বউ করে নিয়ে আসবো”

সবাই পেছন ফিরে তাকালো।

আমেনা বেগম রাগী দৃষ্টিতে মেঘলার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো।

আমেনা বেগমঃ আমার বড় ছেলের বউ দেখে সবাই মুগ্ধ হবে, এই বাড়ি উজ্জল হয়ে উঠবে, প্রান ফিরে পাবে। শুধু অন্ধকার জিনিসটা আমার ছেলের জীবন থেকে দূর হওয়ার অপেক্ষা।

মেঘলা খুব ভালো করেই বুঝছে আমেনা বেগম কথা গুলো ওকে মিন করেই বলছে।

আমেনা বেগম মেঘলার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো, ‘ কাক কখনো ময়ূর হতে পারে না যতোই চেষ্টা করুক, কাক কাকেই থাকে। ‘

মেঘলার চোখ জ্বলতে শুরু করে আজ কতোগুলো বছর পর ওর চোখ জ্বলছে! এখনি বুঝি পানি গড়িয়ে পড়বে। সে আমেনা বেগম কে কিছু বলতে চায় না। সে চাইলেই কথার পিঠে কথা ফিরিয়ে দিতে পারে কিন্তু ইচ্ছে করলো না যদি উনি কষ্ট পেয়ে যায়।

মেঘলা শাড়ির আঁচল টেনে সিঁড়ি দিয়ে দুপদাপ পা ফেলে মহুয়ার রুমের দিকে চলে গেলো।

মেঘলাকে মহুয়ার রুমের দিকে যেতে দেখে আমেনা বেগমের রাগ আরও বাড়লো। এই মেয়ে মহুয়াকে খারাপ বানিয়ে ছাড়বে!.

শ্রাবণের ব্যাস খারাপ লাগে আমেনা বেগমের এমন কথায়।

শ্রাবণঃ আম্মু কিছু মনে করো না। তুমি আমার মা আর মেঘলা আমার স্ত্রী। বিয়েটা যেভাবেই হোক সে এখন আমার অর্ধাঙ্গিনী ওকে অসম্মান, অপমান করে কথা বলা মানে আমাকে অসম্মান, অপমান করা। যতোদিন ও এই বাড়িতে আমার পরিচয়ে আছে আমি চাইনা ওর সাথে কেউ বাজে ব্যাবহার করুক।

আমেনা বেগম রাগী দৃষ্টিতে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তুমি ভুলে যাচ্ছে মেয়েটা আমাদের সাথে কি করেছে! তোমার জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে।
শ্রাবণঃ আমি আমার ভাগ্য কে মেনে নিয়েছি আম্মু।
আমেনা বেগমঃ মেয়েটা তোমার উপর জাদু করেছে।
শ্রাবণ আমেনা বেগমের হাতে হাত রেখে বলে উঠলো, ‘ এই আধুনিক যুগে ও আপনি এইসব বিশ্বাস করেন!.?

আমেনা বেগম দোয়া দুরুদ পড়ে ছেলেকে ফুঁ দিতে শুরু করেন। আজই উনি একটা বড় হুজুরের সাথে জাদু টুনা নিয়ে কথা বলবেন। যেভাবেই হোক এই মেয়ের কাছ থেকে ছেলেকে দূরে রাখতে হবে।

__________________

মহুয়া হসপিটাল এসেছে। সে তো আগে থেকেই আহনাফের কেবিন চিনে তাই আর অসুবিধা হলো না।

আহনাফের কেবিনের সামনে করিম চাচা এসে বললো একটা মেয়ে এসেছে যে এখন থেকে আহনাফের এসিস্ট্যান্ট বলছে।

আহনাফ ভেতরে পাঠিয়ে দিতে বললো।

মহুয়া সাথে করে কিছু একটা নিয়ে এসেছে যেভাবেই হোক পলাশের কাছে পৌঁছাতে হবে আর ওর জন্য স্পেশাল ট্রিটমেন্ট নিয়েও এসেছে। জিনিসটা হাত ব্যাগের ভেতর রেখে আহনাফের কেবিনে এক পা রাখতেই ধপাস করে নিচে পড়ে গেলো। দরজায় মেডিসিন পড়ে ছিলো আর সেটায় পিছলে পড়েছে মহুয়া।

বেচারি শুধু আহনাফের সামনেই এখানে সেখানে ধপাস করে পড়ে যায় আর আজ তো একদম হসপিটালেও।

আহনাফ মহুয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনি কি জব করবেন! আপনার তো পায়ে সমস্যা পায়ের ডাক্তার দেখানো দরকার। যেখানে সেখানে পড়ে যাওয়ার রোগ আছে আপনার!!.?।

চলবে…

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_১৫
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

আহনাফ মহুয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনি কি জব করবেন! আপনার তো পায়ের ডাক্তার দেখানো দরকার। হুটহাট যেখানে সেখানে পড়ে যাওয়ার রোগ আছে আপনার।’

মহুয়া লজ্জায় আহনাফের হাত ধরলো না। নিজেই উঠার চেষ্টা করলো সাথে রাগও হলো ভীষণ সে তো এমনি এমনি পড়ে যায়নি এখনে কিছু পড়ে ছিলো। তাই সে পিছল খেয়ে পড়েছে।

মহুয়া আহনাফ কে ইগ্নোর করে নিজে উঠে দাঁড়ালো।

আহনাফ থমথমে মুখে নিজের হাত পকেটে ঢুকিয়ে মহুয়ার দিকে তাকালো। এই মেয়ে সব সময় ওকে অপমান করার একটু ক্লু পেলে ছাড়ে না।

মহুয়ার পায়ে ব্যাথা পেয়েছে সাথে হাতের কনুইও ছুলে লাল হয়ে গেছে।

আহনাফ দেখেও না দেখার মতো গম্ভীর মুখে নিজের চেয়ারে গিয়ে বাসলো।

মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ কাজে কোনো গাফলতি আমার একদম পছন্দ না। কাজের প্রতি আমি খুব সিরিয়াস। পেশেন্টের সকল ডিটেইলস, পেশেন্টের ফাইল তৈরি করা, সার্জারী টাইম হাতে লিখে রাখবেন, যেদিন যেদিন আমার ডিউটি সপ্তাহে পাঁচ দিন, সেই পাঁচদিনের সকল কাজের বিবরণ আপনার নোট বুকে লিখে রাখবেন।রিমাইন্ডার দিবেন আমাকে, মাখে মধ্যে ফিল্ড ওয়ার্কে যাওয়া লাগে, সেখানেও আমার সাথে থাকবেন, সব কিছু একদিনে বুঝানো সম্ভব না আস্তে আস্তে বুঝে যাবেন।

~ জ্বি।

আহনাফের ক্যাবিনটা অনেকটাই বড়। সোফায় পাশে টেবিল রেখে মহুয়ার জন্য ডেক্স বানালো।

মহুয়াঃ আগের এসিস্ট্যান্ট ও কি এখানেই ছিলো.?
আহনাফঃ না, ওর জন্য বাহিরে ছিলো।
মহুয়াঃ তাহলে আমি এখানে কেনো..?
আহনাফ পকেটে হাত দিয়ে মহুয়ার দিকে তাকালো, ‘ কেনো সমস্যা হবে.?
মহুয়া বলতে চাচ্ছিলো আসলেই সমস্যা হবে।সারাদিন একটা ছেলের সামনে পুতুলের মতো সে বসে থাকতে পারবে না। তবুও মুখে বললো,’ নাহ্’
আহনাফঃ সমস্যা হলেও এখানেই থাকতে হবে।

মহুয়া চুপচাপ গিয়ে বসলো। আঁড়চোখে আহনাফের দিকে তাকালো। কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে একটা ছেলের সামনে বসতে আর সারাদিন সে কিভাবে থাকবে!.? কিভাবে কথা বলবে! কাজ করবে..? এইসব ভাবতেই মন খারাপ হয়ে গেলো।

আহনাফ মহুয়া কে এতোক্ষন পর্যবেক্ষণ করলো। মেয়েটার গাল ভীষণ লাল হয়ে গেছে, এলার্জি সমস্যা..?

আহনাফ নিজের চেয়ারে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে মহুয়াকে জিজ্ঞেস করলো,’ আপনার এলার্জি সমস্যা আছে..??’
মহুয়াঃ না।
আহনাফঃ তাহলে আপনার মুখ এতো লাল হয়ে আছে কেনো.?
মহুয়াঃ আমি যখন লজ্জা পাই আমার গাল লাল হয়ে যায়। বলেই দুই হাতে মুখ চেপে ধরলো। এটা সে কি করলো.? ভুলে সত্যি কথা বলে দিলো!!.এখন আহনাফ কি ভাববে.?

আহনাফ অবাক হয়ে মহুয়ার দিকে তাকালো। মেয়েটা লজ্জা কেনো পাচ্ছে.? আহনাফ তো লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু বলেনি!
মহুয়া লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, এক হাত দিয়ে মুখ আড়াল করে রেখেছে।

আহনাফ হাসলো, নিঃশব্দে হাসি। বুঝলো মেয়েটা এমনিতেই লজ্জা পেয়ে আছে তার উপর সত্যি কথা বলে আরও লজ্জা পেয়ে গেছে এখন কিছু বললে আরও লজ্জা পাবে।

আহনাফ নিচের দিকে তাকিয়ে মহুয়াকে ওর সামনে আসতে বললো।

মহুয়া ধীর পায়ে এসে দাঁড়ালো।

আহনাফঃ বসেন।
মহুয়া বসতেই আহনাফ খুব সুন্দর করে ওকে শুরুটা বুঝিয়ে দিচ্ছে। কিভাবে কি করতে হবে।

___________________

শ্রাবণ রুমে শুয়ে আছে। আজ সে অফিসে যায়নি। ভালো লাগছে না।

মেঘলা দরজা ঠেলে রুমে আসলো।
শ্রাবণ মেঘলা কে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো, ওর দিকে তাকিয়ে কুঁচকানো ভ্রু আরও কুঁচকে গেলো।

মেঘলা রুমে এসে হাতের ব্যাগ গুলো রেখে ভেতর দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।

শ্রাবণঃ দরজা লাগালে কেনো.??
মেঘলাঃ স্বামী, স্ত্রীর মধ্যে কথা হবে বাহিরে জেনো না যায় সেই জন্য।
শ্রাবণঃ তোমার সাথে আমার কোনো কথা নেই রুম থেকে বের হও। আর নিজেকে আমার স্ত্রী ভাবা বন্ধ কর।
মেঘলাঃ আচ্ছা বন্ধ করলাম কারন আমি ভাববো কেনো.? আমি তো কাগজ কলমে আপনার স্ত্রী।
শ্রাবণঃ হুম শুধু কাগজ কলমে আর কোথাও না।
মেঘলাঃ কাগজ কলমে হোক আর যেভাবেই হোক বিয়ে তো বিয়েই আর আমি বিয়ের পর সিঙ্গেল কেনো থাকবো!? আমি আজ থেকে এই রুমে থাকবো।

শ্রাবণ দুই হাত বাজ করে বুকে রেখে বলে উঠলো, ‘ তোমার মনে হচ্ছে না একটু বেশি বেশি করছো.??’
মেঘলাঃ একদম মনে হচ্ছে না, কেনো মনে হবে.? এখনো আমাদের ডিভোর্স হয়নি আমি আপনার বিয়ে করা বউ। আমি এইরুমে এই বিছানায় থাকবো শেষ কথা আমার।

শ্রাবণঃ তাহলে আমি কোথায় থাকবো.??
মেঘলাঃ আবার কোথায় এই রুমে। এটা সিনেমা নয় যে আপনি অন্য রুমে আমি অন্য রুমে ছুটাছুটি করবো।
শ্রাবণঃ আমি তোমার সাথে এক রুমে থাকবো না।
মেঘলাঃ কেনো আপনি আমার প্রেমে পড়ে যাওয়ার ভয় পাচ্ছেন.?? নাকি আমাকে দেখলে এমনিতেই প্রেম প্রেম পায়!? যে এক রুমে থাকলে নিজেকে আটকাতে পারবেন না।

শ্রাবণ রেগে মেঘলার গাল চেপে ধরে বলে উঠলো, ‘ তোমাকে দেখলেই আমার রাগ হয়, বিরক্ত লাগে, ঘৃণা আসে এখানে প্রেম ভালোবাসা কোনো দিন আসবে না।এই সব ফালতু স্বপ্ন দেখা বন্ধ করো মাত্র তিন মাস আছো।
মেঘলাঃ খুব জলদি আসবে প্রেম, ভালোবাসা। ঘৃণা হয়েই থাকতে চাই তাওও তো আপনার মনে থাকবো। ভালোবেসে না হোক আপনার ঘৃণায় আমাকে রেখে দেন আপনার মনে।

শ্রাবণ মেঘলাকে ধাক্কা দিয়ে রুমে ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

মেঘলা চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ এ্যাঁই জামাই আপনার চরিত্র তো ঠিক নেই। মুখে বলেন এক আর হাতে করেন আরেক। কিছু বলতে না বলতেই দেয়ালে চেপে ধরেন, গাল চেপে ধরেন ব্যাপার কি হ্যাঁ.?।

মেঘলার এইসব শুনে আরও রাগ বেড়ে যায় শ্রাবণের। ফিরে আসতে গিয়েও চলে যায়।

____________

মেঘলা এই নিয়ে চার ঘন্টায় ১৪ গ্লাস পানি খেয়েছে। আবার গ্লাসে হাত দিতেই আহনাফ মহুয়ার দিকে তাকালো।

আহনাফঃ বাসা থেকে খেয়ে এসেছিলেন.?
মহুয়াঃ জ্বি।
আহনাফঃ আপনার কি শরীর খারাপ.?
মহুয়াঃ না।
আহনাফঃ আরও পানি এনে দিতে বলবো.?
মহুয়াঃ হুম।
আহনাফঃ এদিকে আসেন।
মহুয়াঃ কোথায়.?
আহনাফঃ আমার সামনে।
মহুয়া উঠে আহনাফের সামনে দাঁড়াতে আহনাফ মহুয়ার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো।
মহুয়া মাথা নিচু করে আছে।
আহনাফ মহুয়ার থেকে চোখ সরিয়ে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে.?? এতো পানি খাচ্ছেন কেনো.?
মহুয়াঃ পানির পিপাসা পেয়েছে তাই।

কিছু সময় থেমে মহুয়া আবার বলে উঠলো, ‘ আমি কি হসপিটালটা একবার ঘুরে দেখতে পারি!.?’
আহনাফঃ বেশি সময় নিবেন না।

মহুয়া মাথা নেড়ে ঘুরে দাঁড়ালো। সে তো এতোক্ষন এটা বলতেই চেয়ে ছিলো সাহসের জন্য বলতে পারিনি তাই বার বার পানি খাচ্ছিলো।

মহুয়া ক্যাবিন থেকে বের হয়ে লম্বা শ্বাস নিলো। সে মেঘলার থেকে আগেই জেনে নিয়েছে পলাশ কোন ক্যাবিনে আছে। সে দেরি না করে দ্বিতীয় ফ্লোরে চলে গেলো। ২০৩ নং রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মনে সাহস নিয়ে মাক্স পড়ে দরজা খুলে ভেতরে গেলো।

পলাশ ঘুমিয়ে আছে আশেপাশে কেউ নেই। ওইদিন ইট দিয়ে মহুয়া কানের পাশে মেরে ছিলো। ঠিক এতোটাই শক্তি দিয়ে মেরে ছিলো ইটটা যে কানের পাশ ফেটে গিয়ে ছিলো। কান অপারেশন করানোর পর এখন সে কানে শুনতে পায় না।কাল ওকে রিলিজ দিয়ে দিবে।সে আর কোনোদিন ডান কানে শুনবে না।

মহুয়া চুপচাপ পলাশের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। ব্যাগ থেকে গুড় বের করে পলাশের বাম কানের ভেতর দিয়ে কতোগুলো পিঁপড়ে কানের পাশে ছেড়ে দিলো। হাত পা বেঁধে মুখে ট্যাপ মেরে দিলো। পলাশকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়ে ছিলো যার জন্য ওর ঘুম ভাঙছে না।

মহুয়া ব্যাগ থেকে ছুরি বের করে পলাশের হাত টান দিয়ে অনেকটা কেঁটে ফেললো, রক্ত গড়িয়ে পড়ছে সেখানে মরিচ গুঁড়ো ডেলে চুপচাপ বেরিয়ে গেলো।

মাক্স খুলে দ্রুত নিচে নেমে ক্যাবিনের সামনে এসে দাঁড়ালো।

মহুয়াঃ আসবো ভাইয়া..?
আহনাফঃ আসুন।
মহুয়া নিজের জায়গায় গিয়ে বসে পড়লো। নিচের দিকে তাকিয়ে আহনাফের দেওয়া কাজ গুলো শেষ করতে লাগলো।

আহনাফঃ আমি আপনার স্যার আর কখনো ভাইয়া বলবেন না।
মহুয়াঃ ঠিক আছে।
আহনাফঃ হসপিটাল দেখা হয়েছে.?
মহুয়াঃ জ্বি।
আহনাফঃ পাঁচ মিনিটেই শেষ!
মহুয়াঃ আমি পড়ে ভালো করে দেখে নিবো এখন শুধু আশপাশটা একটু দেখে আসলাম।

আহনাফ মহুয়ার দিকে আঁড়চোখে তাকালো। মনে মনে বলে উঠলো ” মেয়েটা কি সব সময় লজ্জা পায়.? গাল গুলো এতো লাল হয়ে আছে কেনো.? নাকি আমার সামনে আসতে লজ্জা পায়!.? কই এতোদিন তো লাল দেখিনি।
_________

ছোঁয়া রেগে নির্জনের দিকে তাকিয়ে আছে এটা বাইক চালাচ্ছে নাকি ঠেলা গাড়ি!!

ছোঁয়াঃ এ্যাঁই থাম, থাম বলছি!!
নির্জন কানে ইয়ারফোন কানে দিয়ে গান শুনছিলো। আসলে সে গান শুনছে না ছোঁয়া কে বুঝানোর জন্য কানে ইয়ারফোন গুঁজে রেখেছে।
ছোঁয়া ওর কান থেকে ইয়ারফোন খুলে রাস্তায় ছুড়ে ফেললো।

নির্জনঃ কটকটির বইন এটা কি করলি!.? তুই জানোস এটার দাম কতো.?
ছোঁয়াঃ তোরে থামতে বলছি না!..
নির্জনঃ মাঝ রাস্তায় কেনো থামবো.?
ছোঁয়াঃ এটা বাইক নাকি ঠেলা গাড়ি.?
নির্জনঃ আমার ইয়ারফোন খুঁজে নিয়ে আয়।
ছোঁয়াঃ পারবো না।
নির্জনঃ আমাকে রাগাবি না ছোঁয়া। ভালোই ভালো বলছি খুঁজে আন।
ছোঁয়াঃ আমি পারবো না তুই যা করার করে নে আমি পারবো না! না! না। তোর যে রাগটা।

নির্জন ছোঁয়ার কথা শুনে আরও রেগে গেলো। ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে ঠাসসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।

থাপ্পড়টা অনেকটা জুড়ে ছিলো। ছোঁয়ার নরম গাল লাল টকটকে হয়ে গেছে। পাচ আঙ্গুলের ছাপ পড়ে গেছে।

ছোঁয়া স্তব্ধ হয়ে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নির্জনের দিকে। আস্তে আস্তে নিজের হাত গালে রাখলো চোখ গুড়িয়ে আশেপাশে তাকালো। রাস্তার পাশ দিয়ে মানুষ তাকিয়ে যাচ্ছে।
ছোঁয়ার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। কান্না আটকিয়ে রাখার চেষ্টায় ফুঁপানো শুরু করলো।

নির্জন রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ পাঁচ মিনিটের ভেতরে আমার ইয়ারফোন সামনে না দেখলে ঠিক এভাবে আরও কয়েকটা তোর গালে পড়বে। যাএএএএএ!!

ছোঁয়া নির্জনের লাস্ট চিৎকার দিয়ে বলা কথা শুনে আবার কেঁপে উঠল। ভেতর থেকে চিৎকার করে কান্না আসছে। কখনো কেউ ওর গায়ে হাত তুলেনি, এই নির্জন হাত তুললেও এতো শক্ত মাইর কখনো দেয়নি আর না এমন ব্যাবহার করেছে। এর থেকেও বেশি দুষ্টুমি, বেয়াদবি করেছে ছোঁয়া কিন্তু এমনতো কখনো করেনি নির্জন। চোখ ঝাপসা হয়ে বার বার পানি গড়িয়ে পড়ছে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছছে আবার চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।

নির্জনঃ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি আমার চেহারা দেখছিস! নাকি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ন্যাকা করে আশেপাশে ছেলেদের Attention পাওয়ার চেষ্টা করছিস..?

ছোঁয়া এক পা দু পা করে পিছিয়ে গেলো। পেছনের দিকে ফিরেই হাঁটা শুরু করলো। একটা বাইক দেখতেই সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো। বাইকটা থামতেই ছোঁয়া কিছু না বলে বাইকে বসে” শান্তি নীড়ে” যেতে বললো।

হেলমেট পড়া ছেলেটা ছোঁয়ার চোখে পানি দেখে আর কিছু জিজ্ঞেস না করেই বাইক নিয়ে হাওয়ার বেগে নির্জনের চোখের আড়াল হয়ে গেলো।

হাত মুষ্টি বদ্ধ করে শক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো নির্জন ওদের যাওয়ার দিকে।

ছোঁয়া নিজেও জানেনা সে কার বাইকে উঠেছে। রাগের মাথায় যেটা মন বলেছে সে সেটাই করেছে। এই মাঝ রাস্তায় সে না কোনো রিক্সা পাবে আর না কোনো গাড়ি।

নির্জন রেগে বলে উঠলো, ‘ নিজের শাস্তির পাল্লা আরও ভারি করলি’

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-১২+১৩

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_১২
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

হাতের লাল টকটকে গোলাপ ফুলগুলো নিয়ে মেয়েটার সামনে এসে দাঁড়ালো।

কলেজের মেয়েরা হ্যাঁ করে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে।

মেয়েটা খুশিতে আত্নহারা হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে লজ্জায় মুখ ডেকে নিলো। জেনো সে ভীষণ লজ্জা পেয়েছে ,।

মহুয়া থমথমে মুখে তাকিয়ে আছে মেয়েটার মুখের দিকে। হঠাৎ করে মেয়েটার মাঝে নিজেকে দেখতে পেলো…

” ১৬ বছরের এক কিশোরী মেয়ে এভাবে মুখে হাত দিয়ে লাজুক হাসছে আর মুগ্ধ হয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। কাঁপা কাঁপা হাতে ফুলগুলো নিয়ে নিলো।

~ আমার দেখা পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দর নারী তুমি মহুয়া। এই ছেড়ে যাওয়ার যুগে, তুমি একটু কষ্ট করে থেকে যেও। আমি দুনিয়াতে এতো এতো নারী থাকতে শুধু তোমাতেই আসক্ত হতে চাই বার বার। তুমি থাকবে তো.??

ছেলেটার এমন মুগ্ধকর কথা সামনে দাঁড়ানো কিশোরী আবারও নতুন করে প্রেমে পড়ে গেলো। ধীর মিষ্টি লাজুক কন্ঠে বলে উঠলো ‘ পলাশ ভাই জীবনে কখনো যদি ছেড়ে যাওয়ার শব্দ আসে তাহলে আমি আমার মৃত্যু বেছে নিবো তাও আপনাকে ছেড়ে যাবো না”

সেই একই পুরুষ, সেই একই কথা, কিন্তু সেই কিশোরীর জায়গায় আজ অন্য নারী।
” ইতিহাস সাক্ষী পুরুষ তুমি শান্ত মস্তিষ্কের এক নিকৃষ্ট খু’নি!ছলনাময় !” এটা কথাটা জেনো খাপেখাপ মিলে গেলো আজ।

মহুয়া হাত মুষ্টি বদ্ধ করে তাকিয়ে রইলো। আজকাল কান্না আসে না কোনো কিছুতে নিজেকে পাথর মনে হয়।

” ছোঁয়া ইনি হলো তুহিন, তোকে সব সময় যার কথা বলি।”

ছোঁয়া মুচকি হেঁসে বললো,’ কেমন আছেন.? ‘
~ জ্বি ভালো, আপনাকে দেখে আরও ভালো হয়ে গেছি। আপনার কথা সব সময় বলে। অনেক ইচ্ছে ছিলো একবার দেখার। কল্পনায় আপনার ছবিও একে নিয়েছি তবে কল্পনার থেকেও বেশি সুন্দর আপনি।

ছোঁয়া তুহিনের দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলো। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আমাদের এখন যাওয়া দরকার ‘

ছেলেটার নজর এবার গেলো ছোঁয়ার পেছনে দাঁড়ানো মেয়েটার দিকে।

মহুয়া স্বাভাবিক ভাবে হেঁসে মাথা দোলালো।

হঠাৎ তুহিনের চোখ মুখের রঙ পাল্টে গেলো। এক ঝাঁক ভয় এসে ভীর করলো। ভয়ে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেলো। হাত কাঁপছে সাথে হৃদয় ও। চোখের রঙিন চশমাটা ভালো করে দিয়ে চোরের মতো এদিক ওদিক তাকালো। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো বাঁকা হেঁসে তাকিয়ে আছে। সে কি চোখে বেশি দেখছে.???
ভালো করে তাকালো, না সে ভুল দেখছে না!! ওর সামনে মহুয়া দাঁড়িয়ে আছে।
মহুয়ার এই হাসি সবার কাছে স্বাভাবিক হলেও তুহিন ওরফে পলাশ ঠিক বুঝে গেলো এই হাসির পেছনে কতোটা ভয়ংকর হাসি লুকিয়ে আছে।

মহুয়া ছোঁয়ার হাত ধরে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসলো। আশার সময় একবার পেছনে ফিরে দেখে নিলো তুহিনের ভয়ার্ত মুখটা।

মহুয়া খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে সামনে যা হবে একদম ভালো কিছু হবে না। এতোদিনের লুকোচুরি খেলা হয়তো আজ এই মূহুর্ত থেকে শেষ। আজ থেকে বাড়ির বাহিরে প্রতিটি পা সাবধানে ফেলতে হবে। আজ আবার বুকের ভেতর ভীষণ ব্যাথা করছে। মস্তিষ্কে প্রতিশোধের নেশা চরে বসলো। সে নিজ হাতে শাস্তি দিবে এই মানুষ টাকে।

মহুয়া আর ছোঁয়া একটা রেস্টুরেন্টে আসলো। রেস্টুরেন্টে ঢুকার আগেই নির্জনের সাথে দেখা হলো।
নির্জনঃ এখানে কি..?
ছোঁয়াঃ এখানে কি করতে আসে মানুষ..??
নির্জনঃ এখানে মানুষ খাবার খেতে আসে কিন্তু তুই তো আমার জানা মতে মানুষ না।
ছোঁয়া রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ তাহলে আমি কি এলিয়েন!.?? ‘
নির্জনঃ নাহ্ পেত্নী..।
ছোঁয়া আশেপাশে তাকিয়ে রাস্তার পাশ থেকে ইটের টুকরো হাতে নিতেই নির্জন বলে উঠলো, ‘ আরেএ পাগল কে পাগল বললে রেগে যায়, পেত্নী কে পেত্নী বললে পেত্নীও রেগে যায় কিন্তু তুই কেনো রেগে যাচ্ছিস!..?’

মহুয়া বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া শান্ত হও, চুপ করো এটা রেস্টুরেন্ট।’

ছোঁয়া ইটের টুকরো নির্জনের পায়ে ছুঁড়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকে গেলো।
নির্জন ব্যাথা পেয়ে মহুয়ার দিকে ইনোসেন্ট মুখ করে বলে উঠলো, ‘ ভাবি সরি আপু আপনাকে সুন্দর লাগছে, এভাবে হাসবেন সব সময়। ‘

মহুয়া সাথে সাথে হাসি বন্ধ করে দিলো।
নির্জনঃ চলুন, আমিও রেস্টুরেন্টে এসে ছিলাম।

মহুয়া এই ছেলের ব্যাবহারে মাঝে মাঝে অবাক হয়। সব সময় প্রথম ভাবি বলবে তারপর আপু কিন্তু দেখা যাবে বয়সে মহুয়া নির্জনের থেকে অনেক ছোটো।

মহুয়া, নির্জন, ছোয়া বসে আছে। ছোঁয়া একটু পর রাগী চোখে নির্জনের দিকে তাকাচ্ছে। নির্জন মুচকি মুচকি হাসছে।

মহুয়া আশেপাশে তাকাতে গিয়ে দেখলো ওদের দুই টেবিল সামনে আহনাফ বসে আছে পাশে একটা মেয়ে। মেয়েটা দেখতে ভীষণ সুন্দর । মুখে ভারী সাজ, ঠোঁটে কড়া লাল লিপস্টিক। মহুয়া বিড়বিড় করে বলে উঠলো, ‘ ডাক্তার রেস্টুরেন্টে বসে রোগীর চিকিৎসা করছে। তাহলে হসপিটাল কিসের জন্য!.? অপ্স সব চিকিৎসার মেডিসিন তো আর হসপিটালে থাকে না ‘
ওর পাশেই ছোঁয়া ছিলো। ছোঁয়া ভ্রু কুঁচকে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে সামনে তাকালো। আহনাফ কে দেখেই খুশি হয়ে উঠে দাঁড়ালো। নির্জন ও আহনাফ কে দেখলো।
ছোয়ার খুশি আর বেশি সময় রইলো না। মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেলো। ছোঁয়া নিজের জায়গা বসে বলে উঠলো, ‘ এই মেয়ে কে.?’
মহুয়াঃ হয়তো উনার গার্লফ্রেন্ড।
ছোঁয়াঃ ভাইয়ার তো গার্লফ্রেন্ড নেই ভাইয়া বলেছে।
নির্জনঃ নেই বলেছে হতে কতোক্ষন।
ছোঁয়া মুখ কালো করে নির্জনের দিকে তাকালো।
নির্জন আয়েশ করে মুখে খাবার দিয়ে বলে উঠলো, ‘ আজকের খাবার গুলো অন্য দিনের থেকে তেতু, সবাই গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে আমি সিঙ্গেল বলেই হয়তো।
ছোঁয়াঃ প্রতিদিন একটা করে মেয়ে নিয়ে আসিস আজ তো অন্য রকম লাগবেই।
নির্জনঃ মেয়েটা ভাইয়ার এসিস্ট্যান্ট।
ছোঁয়াঃ তুই চিনিস.?
নির্জনঃ হুম সাথে ভাইয়ার আর ওর মধ্যে কিছু চলছে।
ছোঁয়াঃ তুই সিউর কিভাবে.??
নির্জনঃ ওদের মুখের হাসি দেখে।

ছোঁয়া চুপচাপ তাকিয়ে রইলো আহনাফ আর মেয়েটার দিকে। রাগ হলো ভীষণ মেয়েটার উপর। ইচ্ছে করছে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে আহনাফের থেকে দশ হাত দূরে ফেলতে কিন্তু সাহস তো থাকতে হবে!.

মহুয়া আহনাফের দিকে তাকাতেই আহনাফ ওর দিকে তাকালো। হাত দিয়ে মুখ ডেকে নিলো মহুয়া তাও কিছুই লাভ হলো না আহনাফ দেখে ফেললো ওদের।

___________

বাড়িতে আশার পর থেকে ছোঁয়া একদম চুপচাপ হয়ে আছে।
মহুয়াঃ মন খারাপ..?
ছোঁয়াঃ হুম।
মহুয়াঃ তাহলে ব্যালকনিতে গিয়ে অন্ধকার আকাশের ওই বহু দূরের চাঁদের কাছে মনে জমে থাকা কষ্ট, মন খারাপ খুলে বলো মন হাল্কা হয়ে যাবে।
ছোঁয়াঃ আমার ফ্রেন্ডদের বললে, আম্মুকে বললে বলতো আমার কাছে বলো কি হয়েছে? মন হাল্কা হবে আর তুমি বলছো চাঁদের সাথে বলতে!..।

মহুয়া হাসলো,’ মানুষের কাছে কষ্ট গুলো শেয়ার করার থেকে চাঁদের সাথে শেয়ার করা ঢের ভালো, করে দেখো, আমি আর কিছু বলতে হবে না।’

ছোঁয়া তাই করলো। এক ছুটে ব্যালকনিতে চলে গেলো।

মহুয়া নিচে এসে রান্নাঘরের সামনে দাঁড়ালো।
আমেনা বেগম রান্নায় ব্যস্ত।মহুয়ার দিকে একবার তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ মহুয়া আমার একটা কাজ করে দিবে.?।
মহুয়াঃ জ্বি আন্টি বলুন।
~ আমি একটু কাজে ব্যস্ত তুমি কি আহনাফের রুমে এই কফিটা দিয়ে আসতে পারবে.?
মহুয়া নিষেধ করলো না। কফির মগ হাতে নিয়ে আহনাফের রুমের সামনে আসলো। দরজায় শব্দ করতেই ভেতর থেকেবলে উঠলো, ‘ দরজা খুলা ভেতরে আসতে।

মহুয়া ভয়ে ভয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে আসলো। রুমটা খুব সুন্দর করে গুছানো।

আহনাফ ল্যাপটপ হাতে নিয়ে ব্যালকনি থেকে রুমে আসলো। মহুয়াকে রুমে দেখে অবাক হলো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো , ” আপনি..?’
মহুয়াঃ আপনার কফি।
আহনাফঃ আপনি কেনো এনেছেন.?
মহুয়াঃ আন্টি ব্যস্ত সেই জন্য।
আহনাফ বিছানায় ল্যাপটপ রেখে নিজেও বসলো।
মহুয়াঃ এটা কোথায় রাখব.?
আহনাফঃ আমার হাতে দেন।
মহুয়া হাতে দিয়ে বেরিয়ে আসতে নিলে আহনাফ বলে উঠলো, ‘ দাঁড়ান ‘
মহুয়া দাঁড়াল পেছন ফিরে আহনাফের দিকে তাকাতেই আহনাফ বললো,’ কফিতে মিষ্টি কম হয়েছে। ‘
মহুয়া হাত কচলে বললো,’ আচ্ছা তাহলে দেন আবার বানিয়ে নিয়ে আসি।’
আহনাফ মুচকি হেঁসে কফির মগ দিলো।

মহুয়া নিজে কফি বানিয়ে আনলো।
আহনাফ এবার মুখে দিয়ে বললো,’ মিষ্টি অনেক বেশি হয়ে গেছে। ‘
মহুয়াঃ আমার কাছে তো ঠিক মনে হলো। আচ্ছা আমি আবার বানিয়ে আনছি।

মহুয়া আবার কফি বানিয়ে আনলো।
আহনাফঃ কফি তো ঠান্ডা হয়ে শরবত হয়ে গেছে।
মহুয়ার ভীষণ রাগ হলো তাও নিজেকে সামলে আবার কফি বানাতে গেলো।

নিরুপমা, হালিমা,আমেনা বেগম মহুয়ার এভাবে কফি নিয়ে দৌড়া দৌড়ি দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো।

মহুয়া খুব ভালো করে বুঝতে পারছে আহনাফ ইচ্ছে করে এমন করছে। এবার আহনাফের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনা ঠান্ডা কফিতে দুই চামচ হলুদের গুঁড়া, তিন চামচ লবন, এক চামচ মরিচ সাথে বেশি করে চা পাতা দিয়ে স্পেশাল কফি বানিয়ে নিয়ে গেলো।

এতোক্ষন মহুয়ার এই কফি রান্না চোখ বড় বড় করে দেখছিলো সবাই। আজ আহনাফের কফি খাওয়ার সখ আকাশে পাঠাবে।

আহনাফ ব্যাস মজা পাচ্ছে মহুয়াকে খাঁটিয়ে।

মহুয়া এবার হেঁসে আহনাফের দিকে কফি এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘ এবার আমি যাই আমার টিউশনে যেতে হবে।’

আহনাফ কফির দিকে না তাকিয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’ আপনি টিউশন কেনো নিয়েছেন.? আমাদের বাড়িতে কি সব কিছু পাচ্ছেন না.?’

মহুয়াঃ আমার নিজের পরিচয় এবং বাড়ি প্রয়োজন। আর বাড়ি বাড়া নিতে হলে টাকা লাগবে সেই জন্য টিউশন নেওয়া।
আহনাফঃ ওহ।

আহনাফ কফি মুখে দিয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। সে না পাড়ছে ফেলতে আর না পাড়লে গিলতে।
মহুয়াঃ ভালো হয়নি.?
আহনাফ কিছু না বলে চুপচাপ কফির মগের দিকে তাকিয়ে আছে।
মহুয়া আস্তে করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। বাহিরে এসেই হাসতে শুরু করলো। বেচারার মুখটা দেখার মতো ছিলো।

______

মহুয়া টিউশন থেকে ফিরতে ফিরতে বাহিরে অন্ধকার হয়ে গেলো।আশেপাশে তাকিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। কিছু দূর এসেই মহুয়ার পা আপনা আপনি থেমে গেলো। ওর সামনে তুহিন দাঁড়িয়ে আছে।

মহুয়া সতর্ক চোখে আশেপাশে তাকালো বুঝার চেষ্টা করলো কতো জন আছে এখানে!?

তুহিন মহুয়ার সামনে এসে কাতর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ মহুয়া’
মহুয়া অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই এই ছেলেকে খু’ন করবে।
তুহিনঃ তুমি রেগে আছো.? আমি তোমাকে ওখানে রেখে আস্তে চাইনি, আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি বিয়ে করার জন্য নিয়ে গিয়ে ছিলাম কিন্তু ওরা আমাকে আঁটকে ফেলে, আমি গিয়ে ছিলাম টাকা চাইতে! তুমি তো জানো আমার কাছে টাকা ছিলো না। আমি তোমাকে খুঁজতে কতোবার সেখানে গিয়েছি তোমাকে পাইনি। আমি তোমাকে অনেক খুজেছি মহুয়া আমার ভালোবাসা সত্যি ছিলো তাই তো তোমাকে আবার ফিরে পেলাম।

মহুয়া নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েও পাড়লো না। তুহিনের কলার চেপে ধরে ঠাসস ঠাসস করে গালে থাপ্পড় মারতে শুরু করলো।
~ মহুয়া স্টপ! মহুয়া কি করছো.!!??
~ তোকে এখন জীবিত রেখেছি আলহামদুলিল্লাহ বল। তোর ভালোবাসা না মৃত্যু তোকে আমার সামনে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে এসেছে।তুই আমাকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেছিস আর এখন বুঝাতে এসেছিস আমাকে! আমাকে বাচ্চা মনে হয়..? তোর নিখুঁত অভিনয় আমি বুঝতে পারিনি। ভালোবেসে বিশ্বাস করে বাড়ি ছাড়লাম তোর হাত ধরে আর তুই আমার জায়গা করে দিলি পতিতা পল্লীতে বলেই ব্যাগ থেকে কলম হাতে নিয়ে তুহিন কিছু বুঝার আগেই ওর বুকের বাম পাশে কলমটা একদম ঢুকিয়ে দিলো সবটা।

তুহিন বুকে হাত দিয়ে রেগে মহুয়ার চুল ধরতে গেলেই মহুয়া কারাতে মাইর দিয়ে নিচে ফেলে দিলো। রাস্তার পাশ থেকে বড় একটা ইট এনে শরীরের শক্তি দিয়ে তুহিনের মাথায় আঘাত করলো। মাথা ফেঁটে রক্ত পড়ছে। মহুয়া ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ তুই এতো জলদি মরবি না তোকে আমি এতো কম শাস্তি দিয়ে মুক্তি দিবো না । আমার মতো হাজারটা মেয়ের জীবন নষ্ট করেছিস আমি তো ভাগ্যের জুড়ে বেঁচে গেছি কিন্তু বাকি মেয়েগুলো তোদের মতো নরপশুদের প্রেমে ফেঁসে নিজের সব হারিয়েছে। তোর মৃত্যু এতোটা ভয়ংকর হবে যে এমন বিশ্বাস ঘাতকতা করার আগে প্রতিটা পুরুষের বুক কেঁপে উঠবে! এর আগে চারটা খু’ন করেছি তুই আমার শেষ খু’ন।

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_১৩
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

মেঘলা আশেপাশে তাকিয়ে দরজা ঠেলা দিলো ভাগ্য ভালো দরজা খুলা। আস্তে করে মাথাটা ভেতরে দিয়ে দেখে নিলো রুমে শ্রাবণ আছে কিনা! তারপর ধীর পায়ে রুমে ঢুকে দরজা ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে একটা লম্বা শ্বাস নিলো।

এখন মিশন হলো শ্রাবণে মানিব্যাগ খুঁজে বের করা। বিছানার উপর, নিচে, বালিশের কভারের ভেতর, টেবিল সব জায়গায় খুঁজে নিরাশ হলো। কোথাও মানিব্যাগ নেই।

আলমারির দিকে চোখ যেতেই খুশিতে হাত দিয়ে চুল গুলো উড়িয়ে বলে উঠলো, ” চিল মেঘু ভয় পাবি না এটা তোর রুম, আর এখানের সব কিছু তোর জামাইর, এই বিছানা, এই টেবিল, এই রুম, এই আলমারি আর আলমারি ভেতরের সব কিছু। বাহিরে চুরি করলে অপরাধ কিন্তু জামাইর থেকে চুরি করলে অপরাধ নেই।
বলেই আলমারি খুলতে গিয়ে থেমে গেলো ড্রেসিং টেবিলের উপর শ্রাবণের কাপড় ভাজ করে রাখা।
মেঘলা ভাজ করা শার্ট হাতে নিয়ে দেখলো। কালো শার্টটা ভীষণ ভালো লেগে গেলো সাথে সাথে ইচ্ছে জাগলো এটা একবার পড়ে দেখার।

” আমার জামাইর শার্ট গুলো এতো সুন্দর কেনো!!.??”

শ্রাবণ রুম থেকে বের করে দেওয়ার পর মেঘলা শ্রাবণের পাঁচটা শার্ট চুরি করে নিয়ে ছিলো। হয়তো এতো এতো শার্টের ভেতর শ্রাবণ খেয়াল করেনি কখনো।

মেঘলা শার্ট নিজের কাপড়ের উপর পড়ে আয়নার সামনে নিজেকে বার বার দেখছিলো। চুল গুলো জুটি করা ছিলো ছেড়ে দিলো। আয়নার সামনে ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখল কিছু সময়।

শ্রাবণের শার্টের নিচেই ওর মানিব্যাগ ছিলো। মেঘলার নজর গেলো মানিব্যাগের দিকে। ওফ্ফ মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! মানিব্যাগ হাতে নিয়ে বলতে লাগলো,’ আমি চোর হলেও ভালো বউ! বেশি না মাত্র ৫০০ টাকা নিবো। স্বামী আপনি রাগ করবেন না।’ বলেই মানিব্যাগ খুলে দেখলো ভেতরে সব হাজার টাকার নোট। একটা নোট নিয়ে পকেট থেকে ৫০০ বের করে আবার রেখে দিলো কারন সে ভালো বউ।

মেঘলা সব কিছু জায়গায় রেখে শার্টের দিকে তাকালো ইচ্ছে করছে না শার্টটা রেখে যেতে। একটা একটা করে বোতাম খুলে আবার রুমের চারদিকে তাকালো। হঠাৎ কিছু দেখেই এক চিৎকার দিয়ে হাত দিয়ে মুখ ডেকে নিলো। ভয়ে হাত পা কাঁপছে। এখনি বুঝি সে জ্ঞান হারাবে। মনে মনে বলতে লাগলো, ‘ আল্লাহ জীবনে আর এই ঘরে চুরি তো দূর প্রবেশও করবো না শেষ বারের মতো বাঁচিয়ে দাও, অজ্ঞান করে দাও।’

শ্রাবণ ব্যালকনির দরজায় হেলান দিয়ে মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে।
মেঘলা ভয়ে মানিব্যাগ জায়গায় রেখে দিলো একটা একটা করে শার্টের বোতাম খুলে শার্ট খুলে রাখলো। শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আপনি এখানে!.? ‘
শ্রাবণঃ আমার রুম আমি থাকবো না কে থাকবে.? তুমি এখানে কেনো!.?

মেঘলা কি বলবে ভয়ে ভয়ে হাসলো। মুখে লজ্জা লজ্জা ভাব এনে বলে উঠলো, ‘ আপনাকে দেখতে এসেছি। কতোগুলো বছর হলো দেখিনা ‘

শ্রাবণঃ দেখা শেষ..??
মেঘলাঃ আরেকটু সামনে আসুন ভালো করে দেখতে পাচ্ছি না…

বলেই নিজের গালে থাপ্পড় মেরে বলে উঠলো ‘ মেঘু তোর কি হয়েছে.? এখানে চুরি করতে এসেছিস কাউকে দেখতে নয় পালা।’

শ্রাবণ এগিয়ে আসতে নিলেই মেঘলা চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ এ্যাঁই এ্যাঁই নিজের জায়গায় থাকেন একদম আর এক পা এগিয়ে আসবেন না।’

শ্রাবণ দাঁড়িয়ে গেলো। শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

” তোমাকে নিষেধ করেছি এই রুমে আসতে তার পরেও এই রুমে কেনো এসেছো..??”

মেঘলা আমতাআমতা করে বললো,’ আপনাকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল। এতো কিউট, গুলুমুলু, হ্যান্ডসাম পুরুষ আমার জীবনে আর দেখিনি তো তাই’

শ্রাবণের রাগ হলো, রাগে কপালের রগ ভেসে উঠলো ঝড়ের বেগে মেঘলার সামনে এসে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।

মেঘলা ভয়ে কাঁপছে।

শ্রাবণ রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকালো মেঘলার দিকে বেচারির আত্মা এখনি দেহ থেকে বেরিয়ে যাবে।

” মিথ্যা কথা আমার একদম পছন্দ না!”

~ আমি….
~ চুপ!! প্রথমত আমার রুমে আমার অনুমতি ছাড়া এসেছো, দ্বিতীয়ত আমার শার্টে হাত দিয়েছো, তৃতীয়ত আমার মানিব্যাগ থেকে টাকা নিয়েছো। এখন বলো আগে কোনটার শাস্তি দিবো..??’

মেঘলা ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে ভেতর, বাহির সব ভয়ে কাঁপছে। বিশ বছরে কোনোদিন ও এভাবে ধরা খায়নি। কোনো ছেলেকেও এতোটা ভয় পায়নি।
~ চুপ থাকলে শাস্তির পরিমাণ বাড়বে।
~ আগে আমার কাছ থেকে দূরে সরে দাঁড়ান।
শ্রাবণ মেঘলা কে ভয় দেখানোর জন্য আরও কাছে এসে দাঁড়ালো।
~ জলদি বলো.!
~ আমার আপনাকে ভয় লাগছে দূরে সরেন।
শ্রাবণ গুণে গুণে দুই পা পিছিয়ে গেলো।

মেঘলাঃ আপনি আমার স্বামী তাই না..??
শ্রাবণ মুখে বিরক্তিকর ছাপ ফেলে বললো, ‘ এটা শুধু নামের, বাধ্য হয়ে তোমার মতো মেয়েকে বিয়ে করতে হয়েছে। যাদের আমার গেইটেও দাঁড়ানোর যোগ্যতা নেই তাদের আজ বাড়িতে থাকতে দিতে হচ্ছে নিজের নামের পাশে নাম দিতে হয়েছে! আমার চোখের সামনে আসতে নিষেধ করে ছিলাম’

মেঘলা ভয় সরে গেলো জেনো সে শ্রাবণের কথায় কষ্ট পেয়েছে। কষ্ট পাবে না কেনো! সেও তো একটা মানুষ। কেউ কি কখনো বলেছে কেনো সে এই পথ বেছে নিয়েছে!..? সবাই শুধু অবহেলা, ঘৃণার চোখেই দেখে এসেছে। এতোদিন কষ্ট না পেলেও আজ শ্রাবণের কথায় ভীষণ কষ্ট পেয়েছে, স্বামী বলেই বুঝি কষ্টটা বুকে তীরের মতো বিঁধেছে!!??
মেঘলাঃ যেভাবেই হোক করেছেন তো! প্রথমত এই রুম আপনার যেখানে আপনি আমার স্বামী সেখানে আপনার আর আমার মধ্যে পার্থক্য আসছে কোথায় থেকে.? আপনার জিনিস মানেই আমার। আর নিজের রুমে আসতে কারো পারমিশন লাগে না…। দ্বিতীয়ত শার্টটা আমার অনেক ভালো লেগেছিলো তাই পড়ে ফেলে ছিলাম তার জন্য সরি। তৃতীয়ত আমার টাকার প্রয়োজন ছিলো, আপনি আমার স্বামী তাই আপনার রুমে এসে ছিলাম, স্বামীর কাছ থেকে টাকা নিতে পারমিশন লাগে না। আপনি উত্তর পেয়েছেন..? আমি এই তিন মাস বাহিরে চুরি, ছিনতাই করবো না, আমি চাই না আপনাদের পরিবারের কোনো সমস্যা হোক।

শ্রাবণঃ যেখানে তুমি নিজেই একটা সমস্যা সেখানে আর চাওয়া না চাওয়ার কি আসে যায়!.. খুব সুন্দর করে যুক্তি দিয়ে দিলে স্বামীর মানেই তোমার। ঠিক আছে আমিও সেটাই মানি, সাথে স্বামীর সেবা করতে হয় সেটা জানো না..?

মেঘলা ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই শ্রাবণ শয়তানি হাসি দিয়ে নিজের অনেকগুলো কাপড় মেঘলার সামনে ফেলে বলে উঠলো, ‘ এই গুলো সাবান দিয়ে হাতে কেচে ভালো করে ধুয়ে ছাঁদে দিয়ে আসো। তারপর বাকি কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছি। ‘

মেঘলা ভালো মতো ফেঁসেছে। এই দেখতে শান্ত, ভদ্র লোক যে আসলেই একটা বজ্জাত কে জানতো!

মেঘলা মুখ ভার করে কাপড় গুলো নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো আর মনে মনে শ্রাবণের চৌদ্দগুষ্ঠিকে বকতে শুরু করলো।

মেঘলা যেতেই শ্রাবণ হেঁসে ফেললো।

______________

মহুয়া আহনাফ কে দেখলেই লুকিয়ে থাকে যেই কফি খাইয়েছে আহনাফ না ওকে এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেয়।

টেবিলে আহনাফ, নির্জন, শ্রাবণ বসে আছে। ছোঁয়া, মহুয়া এসেও বসলো।

মেঘলা নিজের রুমে সব সময় খাবার খায়।

নির্জনঃ ভাই ভাবিকেও ডেকে আমাদের সাথে আনি..?
শ্রাবণ নির্জনের কথায় পাত্তা না দিয়ে খাবার খাচ্ছে।
নির্জন বিড়বিড় করে বলে উঠলো,’ এতো সুন্দর, কিউট বউ রেখে মানুষ একা খায় কিভাবে.? আমি তো আমার বউকে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়ে তারপর নিজে খাবো। বউ কে সাথে নিয়ে সব জায়গায় যাবো।’

ছোঁয়া পাশ থেকে বলে উঠলো, ‘ ওয়াশরুমে গেলেও সাথে নিয়ে যাস কেমন!.?। ‘

সবাই হেঁসে উঠলো ওদের কথা শুনে।
নির্জনঃ এই কটকটি তোরে বলছি সব জায়গায় নাক গলাতে তোর জামাই ঠিক শ্রাবণ ভাইয়ের মতো হইবো দেখে নিস।

শ্রাবণ নির্জনের দিকে তাকাতেই নির্জন ভয়ে বলে উঠলো, ‘ সরি ভাই মুখ ফস্কে সত্যি কথা বের হয়ে গেছে। ‘

শ্রাবণ নির্জনের কথায় পাত্তা না দিয়ে আহনাফের দিকে তাকালো, ‘ তোর হসপিটালের কি খবর..? শুনলাম এসিস্ট্যান্ট খুঁজছিস!’
আহনাফঃ হুম, আগের এসিস্ট্যান্টের বিয়ে হয়ে গেছে।
নির্জনঃ বিবাহিত মহিলা কি তোমার এসিস্ট্যান্ট হতে পারে না..? তুমি অবিবাহিত মেয়ে এসিস্ট্যান্ট খুঁজছ কেনো?
আহনাফ রেগে নির্জনের গালে ঠাসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। বেচারা গালে হাত দিয়ে মহুয়ার দিকে তাকালো কি লজ্জা! একটা মেয়ের সামনে ভাই এভাবে মারলো! এই মুখ সে আর কিভাবে দেখাবে..? তার তো এখন বনবাসে চলে যাওয়া উচিত।

আহনাফঃ মেয়েটার স্বামী চাচ্ছে না তার ওয়াইফ বাহিরে কাজ করুক।
নির্জন মুখে তালা মেরে বসে রইলো। কথা বললে যদি আরেকটা দেয় তাহলে যতোটুকু মানসম্মান ছিলো সেটাও থাকবে না।

ছোঁয়া কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো, ‘ ভাই তোমার তো এসিস্ট্যান্ট লাগবে তাই না..??’
আহনাফঃ হুম।
ছোঁয়াঃ মহুয়াও সাইন্স নিয়ে পড়ছে আর ও একটা জব ও খুঁজছে যেহেতু এসিস্ট্যান্ট লাগবে ওকে নিয়ে নাওও।

আহনাফ ছোঁয়ার থেকে চোখ সরিয়ে মহুয়ার দিকে তাকালো। মহুয়া খাবার মুখে দিতে গিয়ে থেমে গেলো ছোঁয়ার কথা শুনেই।

আহনাফ কিছু না বলে খাওয়ার মধ্যে মন দিলো।

মহুয়া ছোঁয়ার দিকে তাকাতেই ছোঁয়া ইনোসেন্ট মুখ করে বলে উঠলো, ‘ প্লিজ প্লিজ প্লিজ এখানে কিছু বলো না আমি রুমে গিয়ে তোমাকে বুঝিয়ে বলছি।’

শ্রাবণ হাত ধুয়ে উঠে গেলো। যাওয়ার সময় আঁড়চোখে মহুয়ার দিকে তাকালো। যতো চেষ্টা করে মেয়েটার থেকে দূরে সরে যেতে ততই যেনো আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। যত কষ্টই হোক সে ওর জীবনে এই ফুলের মতো মেয়েটাকে জড়াবে না। ওর থেকে দূরে দূরে থাকবে।

রুমে আশার পর থেকে ছোঁয়া মহুয়া কে বার বার বুঝিয়ে যাচ্ছে।
মহুয়া বিরক্ত হয়ে বললো,’ ছোঁয়া আমি কেনো এই বদরাগী, গম্ভীর মানুষটার এসিস্ট্যান্ট হতে যাবো.? আমি পারবো না।

ছোঁয়াঃ ভাইয়া খুব ভালো। আর কোনো মেয়ে এসিস্ট্যান্ট আসলে তুমি ভেবে দেখো মেয়েটা ভাইয়াকে পটিয়ে যদি প্রেমে ফাঁদে ফেলে দেয়।
মহুয়াঃ তাতে তোমার সমস্যা কি..? এমন বদরাগী বেয়াদব লোকের প্রেমে কোনো মেয়ে কখনো পড়বে না।

ছোঁয়া তাও হার মানার মেয়ে নয় বার বার এটা সেটা বলে বুঝাচ্ছে।

মহুয়া যখন বুঝছে না তখন রুম থেকে বের হয়ে আহনাফের রুমের সামনে গেলো। সে যেভাবেই হোক অন্য কোনো মেয়েকে এসিস্ট্যান্ট হতে দিবে না।

______________

পাশাপাশি ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে মহুয়া আর মেঘলা।
মেঘলা নিরবতা ভেঙে বললো,’ ছেলেটাকে হসপিটাল ভর্তি করিয়েছি।
মহুয়াঃ বাঁচবে তো.?
মেঘলাঃ হুম তবে অনেকদিন ভর্তি থাকবে।
মহুয়া মুচকি হাসলো।এতো জলদি মৃত্যু এই লোকের কপালে লেখা নেই।
মেঘলাঃ আমি তোমাদের সব কথা শুনে ছিলাম।ছেলেটা যতো টুকু বুঝলাম তোমার প্রেমিক। কি হয়ে ছিলো তোমার সাথে.? সে কেনো তোমাকে ওই রকম জায়গায় রেখে এসে ছিলো..? কিভাবে এমন জায়গা থেকে মুক্তি পেলে.? তোমার সাথে কি কিছু হয়ে ছিলো ওখানে.? তুমি আসলে কে.? আর খু’ন গুলো কাকে করেছো.??

মহুয়াঃ আস্তে ধীরে প্রশ্ন করো মেঘ।
মেঘলাঃ তুমি আস্তে ধীরে উত্তর গুলো দিলেই হয়।
মহুয়াঃ আজ বলতে ইচ্ছে করছে না।
মেঘলাঃ তোমার বাড়িতে কে কে আছে.?
মহুয়াঃ মামা, মামী দুই ভাই।
মেঘলাঃ বাবা মা..?
মহুয়াঃ নেই আমি ছোটো থাকতেই না ফেরার দেশে পারি জমিয়েছে।
মেঘলাঃ আপন ভাই.?
মহুয়াঃ না। আমার ভাই বোন নেই। আমার আম্মু একজন বড় উকিল ছিলেন, আর আব্বু পুলিশ। আমি যখন জন্ম নেই সেই খবর পেয়ে আব্বু আমার বোনকে নিয়ে হসপিটাল যেতে নেয় মাঝ রাস্তায় গাড়ি এক্সিডেন্ট করে বড় একটা ট্রাকের সাথে সেখানেই তারা মা-রা যায়। সেই কথা শুনতে পেয়ে আম্মুও স্টক করে আমি হয়ে যাই দুই দিনেই এতিম। তারপর আমার দেখা শোনা করে মামা মামী। লোক মুখে শুনতাম আমি অপয়া, অলক্ষী সেই জন্যই আমার জন্মতে আমার পুরো পরিবার শেষ হয়ে যায়।

মেঘলাঃ তোমার কখনো মনে হয়নি এই গুলোর পেছনে অন্য কারো হাত থাকতে পারে.?? তুমি ভেবে দেখো! আমার কাছে অন্য কিছু মনে হচ্ছে।
মহুয়াঃ না কখনো মনে হয়নি। আর আমি আমার আব্বু আম্মুর বিষয় তেমন কিছু জানি ও না। মামা মামী যতোটুকু বলেছে ততটুকুই জানি।
মেঘলাঃ তার মানে তোমরা দুই বোন ছিলে। এই ছেলের সাথে কিভাবে পরিচয়.?
মহুয়াঃ কোনো একদিন তোমার সাথে বসে চায়ের আড্ডা দিবো তখন আমার জীবনের ছোটো গল্পটা বলবো।

মেঘলাঃ আচ্ছা তবে সেই আড্ডা খুব জলদি হোক।
মহুয়াঃ তুমি কেনো এই পেশা বেছে নিয়েছো। পৃথিবীতে এতো কাজ থাকতে!.?
মেঘলাঃ তুমি কেনো খু’ন করে ছিলে দেশে আইন থাকতে.? এতো মানুষ থাকতে..?
মহুয়াঃ রাখো দেশের আইন এরা শুধু বাংলা সিনেমার মতো লাস্ট মুহূর্তে এন্ট্রি নিতে আসে। নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমার কাছে আর কোনো রাস্তা ছিলো না। সাথে এতো গুলো মেয়ের আর্তনাদ আমার মধ্যে অন্য মহুয়াকে খুঁজে পেয়ে ছিলাম।
মেঘলাঃ আমিও নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য এই পথ বেছে নিয়েছি।যখন নিজের মা’কে চিকিৎসার অভাবে কষ্টে হসপিটালের সামনে কাতরাতে কাতরাতে মরতে দেখেছি। আমি সেই দিন অনুভব করে ছিলাম এই পৃথিবীতে বাঁচতে হলে টাকার প্রয়োজন। মা মা-রা যাওয়ার পর খাওয়ার জন্য এক মুঠ ভাত পাইনি কতো লোকের ঘরের দরজায় গিয়েছি ছোটো ছিলাম। একদিন খিদায় রাস্তার পাশে বসে ছিলাম একটা ছেলের হাতে বিস্কুট দেখে তা নিয়ে দৌড় দেই। তারপর থেকে এই পথ বেছে নিলাম।

মহুয়া মেঘলার হাতের উপর হাত রাখে। মেঘলার কষ্টটা বুঝার চেষ্টা করে।

__________

মহুয়া রুমে এসে বললো আমি রাজি।
ছোঁয়া খুশিতে মহুয়াকে জড়িয়ে,ধরে বলে উঠলো, ‘ সত্যি মেহু.?’
মহুয়াঃ হুম।

ছোঁয়াঃ ভাইয়ার কাছে চলো।
মহুয়াঃ কেনো..?
ছোঁয়াঃ ভাইয়া বলে ছিলো তুমি নিজে বললে ভাইয়া ভেবে দেখবে।

মহুয়ার হাতে হসপিটাল যাওয়ার এটা একটা দাড়ুন সুযোগ কিছুতেই হাত ছাড়া করলে চলবে না। পলাশকে শায়েস্তা করতে হলে হসপিটাল যেতেই হবে। কঠিন থেকে কঠিন মৃত্যু দিবে তাকে। বিশ্বাসঘাতক, বেইমানদের কোনো ক্ষমা নেই।

চলবে…..

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-১০+১১

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_10
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

ব্যস্ত নগরী।চারপাশ শুনশান নীরবতা। রাত না হলেও ১২টা বাজে। জানালার পর্দা টেনে বাহিরে তাকালো আহনাফ। দুইপ্রান্তে জ্বল জ্বল করছে হলুদ রঙের ল্যাম্পপোস্টের বাতি।

বিকেলের দিকে হসপিটাল এসেছে। এসেই একের পর এক পেসেন্ট দেখে যাচ্ছে। ভিন্ন মানুষ ভিন্ন রোগ।

রনির থেকে বেশি কিছুই জানা যায়নি ওকে ওই বাড়িতেই আঁটকে রেখেছে যতোক্ষন সব সত্যি না বলবে এক ফোঁটা পানিও দেওয়া হবে না।

পেসেন্ট দেখা শেষ করে করিম চাচাকে ডাকলো।

হসপিটালে এখন কেউ ঝিমোচ্ছে, কেউ দায়িত্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
করিম চাচাঃ জ্বি স্যার।
আহনাফঃ আমার জন্য এক মগ কফি পাঠিয়ে দেন ।

করিম ছুটলো ক্যান্টিনের দিকে। হসপিটালের দুইতালায় ক্যান্টিন।

কফি খেয়ে বেরিয়ে পড়লো হসপিটাল থেকে। বাড়ি যাওয়া প্রয়োজন। ওর ডিউটি শেষ।

বাড়ি ফিরে লম্বা একটা শাওয়ার নিলো। সারাদিনের ক্লান্তি এসে ভীর করলো। এখন একটু বিশ্রামের প্রয়োজন। কিছু খেতেও ইচ্ছে করছে না। সাদা স্বচ্ছ কাঁচের চশমা খুলে পাশে রাখলো। ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো কিছু কাজ বাকি শেষ করেই ঘুমাতে হবে।

দরজার কড়া নাড়তেই বিরক্ত হলো! এতো রাতে আবার কে এসেছে..? আম্মু নয় তো..? নিশ্চয়ই খাবার খাওয়ার জন্য এখনো জেগে আছে!!..।

আহনাফ ল্যাপটপ রেখে উঠে চশমা পড়ে দরজা খুলে দিলো। সামনে ছোঁয়াকে দেখে অবাক হলো।
ছোঁয়ার শরীর কাঁপছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
আহনাফঃ কি হয়েছে..? তুই এভাবে ভয় পেয়ে আছিস কেনো..? কান্না কেনো করছিস.?
ছোঁয়াঃ ভাইয়া জলদি আমার রুমে চলো। প্লিজ ভাইয়া,
আহনাফঃ শান্ত হ! কি হয়েছে আগে সেটা বল.?
ছোঁয়াঃ মহুয়া…রক্ত..
আহনাফঃ কি হয়েছে উনার.? বলেই ছোঁয়ার সাথে পাশের রুমে দ্রুত আসলো৷

ছোঁয়া আহনাফ কে ওয়াশরুমে দরজার কাছে নিয়ে গেলো৷ ভেতরে মহুয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। কপাল ফেঁটে রক্ত পড়ছে।

আহনাফ মহুয়ার এমন অবস্থা দেখে দ্রুত ওকে কোলে তুলে নিলো। মহুয়ার ঘা পুড়ে যাচ্ছে । আহনাফ মহুয়াকে বিছানায় শুইয়ে কপাল শক্ত করে চেপে ধরলো জেনো রক্ত পড়া বন্ধ হয়। ছোয়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ দ্রুত আমার রুম থেকে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আয়।’

ছোঁয়া দাঁড়িয়ে ফুপিয়ে কান্না করছিলো আহনাফের কথা শুনতেই দৌড় দিলো আহনাফের রুমের দিকে। মহুয়ার এমন অবস্থার জন্য নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে! সে ঠিক মতো মহুয়ার খেয়াল রাখতে পারেনি সেই জন্যই এখন মেয়েটার এই অবস্থা।

আহনাফ দরজা থেকে চোখ সরিয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে হাসফাস করতে লাগলো৷ ওড়না নেই মহুয়ার গায়ে হয়তো ওয়াশরুমে পড়ে আছে। আহনাফ মহুয়ার কপালটা শক্ত করে ধরেই আশেপাশে ওড়না খুঁজলো। পাশেই একটা ওড়না দেখে, ওড়না একটা হাতে অন্য দিকে ফিরে মহুয়া উপর দিয়ে তাকালো। কেমন শান্ত হয়ে পড়ে আছে বিছানায়। কপাল পুড়ে যাচ্ছে! জ্বর অনেক।

ছোঁয়া ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এসে আহনাফের সামনে রাখলো। আহনাফ যত্ন করে দ্রুত ব্যান্ডেজ করে দিলো। মহুয়ার পেসারও মেপে নিলো।

~ উনার তো জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়াও করে না..? । পেসার তো একদম কম।

ছোঁয়া নাক টেনে বলে উঠলো, ‘ বিকাল থেকেই শরীর ভালো না। জ্বর এসেছে আমি অনেকবার বলেছি চলো ডাক্তারের কাছে যাই, মেডিসিন নিয়ে আসি। কিন্তু বললো একটু পর সেরে যাবে প্রয়োজন নেই। আম্মুকে বলতে চেয়ে ছিলাম নিষেধ করেছে। সন্ধ্যার পর তিনবার বমি করেছে আমাকে বলেনি।আর এখন ওয়াশরুমে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে কপাল ফেঁটে গেছে। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না, তুমি তো জানো রক্ত দেখলে আমি নিজেও অজ্ঞান হয়ে যাই। বলেই মহুয়ার হাত ধরে কান্না শুরু করলো।

~ এমন ফ্যাঁচফ্যাঁচ না করে মুখ চোখ দুইটাই বন্ধ রাখো। আমাকে বিকেলে বলতে পারতে ফোন করে নাকি আমাকে ডাক্তার মনে হয় না?

ছোঁয়া মাথা নিচু করে আছে।আহনাফ কে আসলেই বলা উচিত ছিলো।

~ উনার শরীর ভীষণ দূর্বল ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করার কারনে। কিছু খাইয়ে মেডিসিন খাওয়াতে হবে।

~ আমি স্যুপ করে নিয়ে আসছি। বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো ছোঁয়া।

আহনাফ মহুয়ার পাশে টুলের উপর বসে আছে। পাশে গ্লাস থেকে পানি হাতে নিয়ে মহুয়ার মুখে হাল্কা ছিটা মারলো৷ কিছু সময় যেতেই পিটপিট চোখ খুলে তাকালো মহুয়া। সব কিছু চোখের সামনে ঝাপসা দেখছে৷ আস্তে আস্তে চোখ ঝাপটে আশেপাশে তাকালো৷ বুঝার চেষ্টা করলো সে এখন কোথায় আছে.? পাশে তাকাতেই আহনাফ কে দেখে উঠে বসতে চাইলো। কিন্তু শরীর ভীষণ দূর্বল উঠতে গিয়েও চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো।

আহনাফ ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ চুপচাপ শুয়ে থাকুন। আপনার শরীর ভালো নেই।এখন বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। ডক্টরের কাছে অসুস্থ হওয়ার সাথে সাথে যাওয়ার দরকার ছিলো! এতোটা অসুস্থ আর বাড়ির কেউ জানেও না.? এখন আপনার কিছু হয়ে গেলে আপনার বাড়ির লোকেরা বলতো আমরা আপনার ঠিক খেয়াল রাখতে পারিনি। বাড়িতে ডাক্তার থেকেও চিকিৎসা করিনি! আমরা কি জবাব দিতাম তখন.?? ‘

মহুয়াঃ আপনি এখানে কেনো.? আর আমি একদম ঠিক আছি বেলেন্স হারিয়ে পড়ে গিয়ে ছিলাম।
আহনাফঃ পাকনামো করে ডাক্তারের কাছে জাননি আবার নিষেধ করেছেন ডাক্তার ডাকতে। এখন আকাম করে পড়ে আছেন। তাই নিজ থেকে ডাক্তার চলে এসেছে। বেলেন্স হারাবেন না কেনো.? শরীরে এতো শক্তি যে বেলেন্স রাখতে পারেননি!!।
মহুয়াঃ আমি এখন ঠিক আছি ডাক্তার এবার আপনি প্লিজ আসুন। আর অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

আহনাফের ভীষন রাগ হলো। এই মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে তাও এটিটিউড দেখাচ্ছে!!??

” মাথা চিনচিন ব্যাথা করছে মহুয়া কথা বলতে চাইলেই ব্যাথা বাড়ছে।”

আহনাফ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো।

আহনাফঃআপাতত মুখ বন্ধ রাখুন, মুখে মুখে কথা বলা আমার একদম পছন্দ না৷ কিছু খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নিলে ব্যাথা কমে যাবে।”

মহুয়ার শরীর কেঁপে জ্বর আসলো। জ্বরে থরথর করে কাঁপছে। বিরবির করে কি জেনো বলছে।

আহনাফ দ্রুত ওর হাত ধরলো।

” মিস মহুয়া আপনি ঠিক আছেন..? জ্বর তো বেড়ে চলছে। আহনাফের অস্থিরতা বাড়তে লাগলো। সে এখন কি করবে.? এখন কি হসপিটাল নিয়ে যাবে.?

ছোঁয়া স্যুপ নিয়ে আসলো। মহুয়া খেতে চাইল না জোর করে দুই চামচ খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিলো।

মহুয়া আহনাফের হাত শক্ত করে ধরে আছে৷ জ্বরের ঘুরে ছোঁয়া ভেবে আহনাফ কে আঁকড়ে ধরে আছে।
আহনাফ না চাইতেও মহুয়ার দিকে তাকালো। ফর্সা মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেছে। চুলগুলো নিচে পড়ে আছে। চোখ গুলো লালচে হয়ে ফুলে আছে।

ছোঁয়াঃ ভাইয়া আম্মুকে ডাকবো.?
~ প্রয়োজন নেই। একটু পর জ্বর কমে আসবে, ব্যাথাও কমে যাবে। কাল সকালে হসপিটালে নিয়ে আসবি আমি কিছু টেস্ট দিবো।

ছোঁয়াঃ মামী জেগে ছিলো তোমার জন্য। আমি বললাম আমি জেগে আছি ঘুমিয়ে পড়তে তাই মামী চলে গেছে আমি কি তোমার খাবার গরম করে দিবো.?
আহনাফঃ না লাগবে না। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো আর উনার খেয়াল রেখো।

মহুয়ার হাত থেকে নিজের হাতটা আস্তে করে ছাড়িয়ে নিলো। ঘুমের মেডিসিন খাওয়ায় মহুয়া কিছু সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে।

আহনাফ ফিরে একবার মহুয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

সেই ছোটো বয়স যখন থেকে বুঝতে শিখেছে। তখন থেকেই সয়নে স্বপ্নে মনের ঘরে জায়গা দিয়ে রেখেছে ছোঁয়া এই কঠিন মানবটিকে। যদি এই পুরুষটি একবার বুঝতো!.? ছোঁয়া একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আহনাফের যাওয়ার দিকে। সে খুব ভালো করে জানে আহনাফ শুধু ওকে বোন ভাবে তাও নিজের আপন বোনের মতো দেখে। ওর এই ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই৷ আহনাফ কখনো ওকে বোন ছাড়া অন্য নজরে দেখেনি।

ছোঁয়া মহুয়ার চুলগুলো যত্ন করে মুছে শরীরটা হাল্কা মুছে দিলো। গায়ে কাঁথা টেনে দিয়ে কপালের ব্যান্ডেজটার দিকে তাকালো বলে উঠলো ইসস কতোগুলো রক্ত ঝড়েছে!.

ছোঁয়া খুব মিশুক একটা মেয়ে। যার সাথে মিশে একদম মন থেকে মিশে। তাকে আপন ভাবতে শুরু করে।

মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে লাইট বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লো।

আহনাফ রুমে এসে আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসে । কিন্তু কাজে আর মন দিতে পারছে না। মেয়েটা কি জেগে গেছে.? মাথা কি ব্যাথা করছে.? নিশ্চয়ই ভীষণ কষ্ট পেয়েছে কপালে!.?

কিছু আজগুবি চিন্তাভাবনা মনে এসে উঁকি মারছে। ল্যাপটপ বন্ধ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো।

_______________

ফজরের দিকে শরীর ঘাম দিয়ে ঘুম ভেঙে গেলো মহুয়ার। শরীর থেকে ছোঁয়ার হাত সরিয়ে উঠে বসলো। মাথাটা কেমন ভার হয়ে আছে। কপালে হাত দিতেই আহ্ বলে হাত সরিয়ে ফেললো। শরীরে জ্বর নেই৷

আজান শেষ হতেই মহুয়া আস্তে ধীরে ওয়াশরুমে গিয়ে ঘা দোয়ে নিলো। কপাল না ভিজিয়ে আলগোছে মাথায় পানি ঢালার চেষ্টা করলো।

আহনাফ বাগানে গিয়ে একবার মহুয়ার ব্যালকনির দিকে তাকালো। মেয়েটা কি ঘুম থেকে উঠেছে..? এখন শরীর কেমন আছে..? আজ রাতে একদম ঘুম হয়নি আহনাফের। সারা রাত হাসফাস করে সকাল হতেই বাগানে ছুটে এসেছে যদি মেয়েটাকে দেখা যায়.? আবার নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছে, ” এই মেয়ের জন্য তার কেনো এতো টেনশন কেনো এতো বেকুলতা.?? এইসবের উত্তর মিলবে কোথায়..?

সকালে মহুয়ার কপালে ব্যান্ডেজ দেখে সবাই অবাক হলো।
ছোঁয়া কাল রাতের সব কথা সবাইকে বললো।
আমেনা বেগম মহুয়ার কাছে এসে বললো,’ আমাদের আপন মনে করো না তাই না..? এতো কিছু হয়ে গেলো আর আমরা কেউ কিছু জানতে পারলাম না!.. ‘

মহুয়া এক হাতে ঘোমটা টা টেনে ধরলো। নিচু স্বরে বলে উঠলো ” কি বলছেন আন্টি! আমি আপনাদের আপন মনে করছি বলেই তো আপনাদের সাথে আছি। আমি আপনাদের টেনশনে ফেলতে চাইনি আন্টি.’

নিরুপমা বিরক্ত হয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। এইসব আধিখ্যেতা দেখানোর সময় নেই। দেখারও সময় নেই এর থেকে বসে বসে সিরিয়াল দেখা ভালো।

আনোয়ার চৌধুরীঃ কিছু খেয়ে এখন মেডিসিন খেয়ে নিও। একবার হসপিটাল গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে আসবে।

মহুয়া চুপচাপ সোফায় বসে আছে ওর মুখে কোনো শব্দ নেই।
আহনাফ আঁড়চোখে একবার মহুয়াকে দেখে নিলো। খাবার শেষ করে রুমে চলে গেলো।

আহনাফ বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে ছোঁয়া উঠে পড়ে লাগলো হসপিটাল নিয়ে যাওয়ার জন্য। মহুয়া বুঝানোর চেষ্টা করলো সে ঠিক আছে কিন্তু কে শুনে কার কথা! এক পর্যায় রেডি হয়ে বের হলো হসপিটালের উদ্দেশ্য।

আহনাফ হসপিটালে এসে পেশেন্ট দেখে এসে বসলো। সাদা এপ্রোন পাশে রেখে কফি হাতে নিলো।

দরজায় খটখট আওয়াজে বলে উঠলো।
” আসুন”
করিম ভেতরে এসে বলে উঠলো, ‘ স্যার একটা পেশেন্ট এসেছে বলছে উনি নাকি আপনার বোন।’
আহনাফ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ আসতে বলুন।’

ছোঁয়া মহুয়া কে নিয়ে ক্যাবিনে আসলো।
আহনাফ মাথা নামিয়ে ফাইল দেখছে।
ছোঁয়া চেয়ার টেনে বসতে নিলে মহুয়া হাত ধরে থামিয়ে দিলো। চোখের ইশারায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে বললো। ছোঁয়াও ভালো মেয়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে।

আহনাফ একবার ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,’ বসুম’

মহুয়া আর ছোঁয়া বসতেই আহনাফ বলে উঠলো, ‘ কিছু টেস্ট করতে হবে আপনার।’

____

মহুয়া টেস্ট করে এসে আহনাফের সামনে বসে আছে। খুব বিরক্ত লাগছে। এই অসুস্থ শরীর নিয়ে তিন ঘন্টা হসপিটালে। খিদেও পেয়েছে ভীষণ।

ছোঁয়া বার্গার, পিজ্জা নিয়ে হসপিটালে আসলো। নিশ্চয়ই মহুয়ারও খিদে পেয়েছে। সকালে একটা রুটি শুধু খেয়েছে।

আহনাফ রিপোর্ট দেখে মুখ গম্ভীর করে তাকিয়ে আছে রিপোর্টের দিকে।

ছোঁয়া চুপচাপ ক্যাবিনের বাহিরে বসে আছে। আহনাফ করিম চাচাকে ডাকলো। পেশেন্টের সাথে যে এসেছে তাকে আসতে বলুন।

ছোঁয়া ভেতরে গিয়ে মুখ ভার করে বলে উঠলো , ‘ ভাইয়া তুমি হসপিটালে এমন ভাব করছো জেনো আমাদের এর আগে কখনো কোথাও দেখোনি!.? আমরা সম্পূর্ণ অপরিচিত। এর থেকে ভালো ছিলো অন্য ডাক্তারের কাছে যেতাম টিকেট কাটতে এতো গুলো টাকা লাগতো না বলেই দুঃখী দুঃখী মুখ করে ডেস্কে হাতের উপর মুখ রেখে আপসোস করতে শুরু করলো। অন্য ডাক্তারের কাছে গেলে না খাইয়ে এতোক্ষন রাখতো না। ভালো ভালো খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করতো।

আহনাফের ভীষণ হাসি পেলো তাও মুখে গম্ভীরতা বজায় রেখে বললো,’ তাহলে তুই হসপিটালে না এসে কোনো রেস্টুরেন্টে চলে গেলেই পারতি খুব ভালো আপ্যায়ন করতো। এটা হসপিটাল কোনো আপ্যায়ন সালা নয়, আর তুই যেমন ভাবছিস তেমন কিছু না আমি বাড়িতে তোর ভাই কিন্তু হসপিটালে একজন দায়িত্ববান ডাক্তার। ‘
ছোঁয়া মাথা তুলে আহনাফের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো,’ ডাক্তার না কসাই।’

আহনাফ রেগে ছোঁয়ার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকালো।

” মিস মহুয়া আপনার শরীর দুর্বল ঠিক ঠাক ভাবে খাওয়া দাওয়া করা প্রয়োজন। আমি সব কিছু লিখে দিয়েছি আর যে মেডিসিন গুলো দিচ্ছি ঠিক ঠাক সব গুলো খেলে আর নিয়ম মেনে চললে আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন। আর এইসব বাহিরের খাবার খাওয়া আপনার জন্য বন্ধ। আমি এখানে লিখে দিয়েছি কি কি খেতে হবে..১৫দিনের মধ্যে আপনার মধ্যে পরিবর্তন দেখতে চাই .’

মহুয়া উঠতে গেলে আহনাফ বলে উঠলো, ” আপনার কি কোনো জমজ বোন আছে”..???

__________

সন্ধ্যায় ছোঁয়া কিছুতেই একটা সাবজেক্ট বুঝতে পারছে না। হেলতে দুলতে বই নিয়ে নির্জনের রুমের সামনে আসলো। নির্জনের থেকে বুঝে নিবে।

” অক্সিজেন ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচতে পারে না তেমন তুমি ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না নিহা।”

ছোঁয়ার পা আপনা আপনি থেমে গেলো। দরজা আলগোছে খুলে মাথা প্রথম ভেতরে দিলো। নির্জনের ব্যালকনি থেকে শব্দ আসছে।

” তুমি মিশে গেছো আমার প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তুমিহীনা আমি কিছু ভাবতে পারি না কোনো মেয়ের দিকে তাকালেই তোমাকে দেখতে পাই। ভোরের আলো শুরু হয় তোমাকে ভেবে, রাতের আঁধারের সমাপ্তি আসে তোমার কথা ভেবে।”

ছোঁয়া খুব কষ্ট হাসি আঁটকে রাখলো। নির্জনের টেবিলের উপর বসে মোবাইল বের করে রেকর্ড চালু করে রাখলো।

” এই বুকেতে লিখেছি তোমার নাম, স্বপ্ন তুমি, সাধনা তুমি, তুমি আমার প্রান।”

এই পর্যায় এসে ছোঁয়া আর নিজের হাসি আঁটকে রাখতে পারলো না। খিলখিল করে হেসে উঠলো।

কারো হাসির শব্দ শুনেই নির্জন ফোন কেটে দিলো। ভ্রু কুঁচকে রুমে আসতেই টেবিলের উপর ছোঁয়াকে এভাবে হাসতে দেখে বুঝলো সব এই কটকটি শুনে নিয়েছে। কিন্তু তাতে সমস্যা ছিলো না সমস্যা তো যখন দেখলো মোবাইলে রেকর্ডিং অপশন চালু। তার মানে এতোক্ষন ওর বলা সব কথা রেকর্ড হয়েছে..?
ভীষণ রেগে হুংকার দিয়ে বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়ার বাচ্চা কটকটি তোর জন্য কি প্রেম করেও শান্তি পাবো না??। কতোটা নির্লজ্জ তুই লুকিয়ে একজনের প্রেম ভালোবাসা রেকর্ড করিস!..?’

ছোঁয়া ভয় পাওয়ার বদলে নির্জনের কথা শুনে আরও হাসতে শুরু করলো। বই রেখে মোবাইল নিয়ে রুম থেকে বের হতে নিলে নির্জন হাওয়ার বেগে সামনে চলে আসলো।

” মোবাইল দে.?”
~ ফুট সামনে থেকে।
~ ছোঁয়া ভালো হবে না মোবাইল দে।
~ তুই প্রেম করবি লোক দেখিয়ে আর আমরা দেখলেই দোষ!.? আহারেএএ কি ভালোবাসা! বলেই আবার হাসতে লাগলো।
~ আমি লোক দেখিয়ে কখন করলাম.?
~ দরজা তো খুলা ছিলো!
~ তাই বলে না পারমিশন নিয়ে কেনো রুমে আসবি?!

ছোঁয়া নির্জনের দিকে ইনোসেন্ট মুখ করে বলে উঠলো, ‘ ভাইয়া।’

~ হুম বল শুনছি তবে আগে মোবাইল থেকে রেকর্ড ডিলিট কর।

ছোঁয়া এক পা দুই পা করে নির্জনের আরও কাছে এগিয়ে গেলো।

বেচারা ছোঁয়ার এমন এগিয়ে আশা দেখে পিছিয়ে গেলো,’ এ্যাঁই দূরে থাক’।

ছোঁয়া আরও এগিয়ে আসলো। কেমন করে তাকালো সাথে সাথে নির্জন থমকে গেলো৷ ছোঁয়া নির্জনের বুকে এক হাত রাখলো। সাথে সাথে নির্জন জমে গেলো বরফের মতো। ছোঁয়া মুচকি হাসি দিতেই নির্জনের ভাবনা গুলো এলোমেলো হতে শুরু করলো।

ছোঁয়া হঠাৎ নির্জন কে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে দৌড় দিলো মোবাইল নিয়ে, আজ সে সবাই কে শুনাবে নির্জনের ভালোবাসার গল্প ৷

নির্জন এখনো সেই আগের মতো থমকে দাঁড়িয়ে আছে।

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_11
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

দিনের পর রাত, রাতের পর দিন এভাবে চলছে সময়।

শ্রাবণ অফিসের কাজ শেষ করে অফিস থেকে বের হলো।

গাড়িতে উঠতেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিলো।

শ্রাবণ চুপচাপ বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। শ্রাবণ এমনিতেই কম কথা বলতো আর এখন তো প্রয়োজন ছাড়া কোনো শব্দ বের করে না। হঠাৎ ওর মনে হলো সামনে কাউকে দেখেছে! ড্রাইভার কে গাড়ি থামাতে বলে বাহিরে তাকালো।

এতিম খানা থেকে মেঘলা বের হয়ে এদিক ওদিকে তাকালো। কিছু সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কিছুর জন্য অপেক্ষা করছে।

শ্রাবণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেঘলার দিকে। মনে উঁকি দিচ্ছে হাজারটা প্রশ্ন, এই মেয়ে এতো রাতে এখানে কি করে..? এতিম খানায় এর কাজ কি..? নাকি এতিম খানা থেকে চুরি করতে এসেছে..? হঠাৎ শান্ত মস্তিষ্ক গরম হয়ে গেলো।মন মেজাজ বিগড়ে গেলো! লাস্ট পর্যায় এতিম খানা!..? শ্রাবণ চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিলো আজ এই মেয়ে কোনো কুকীর্তি করতে গিয়ে ধরা খেলে কাল নিউজে খুব সুন্দর করে লেখা থাকবে বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী শ্রাবণ চৌধুরীর বউ চুরি, ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে!… মুখে না মানলেও কাগজ কলমে তো বউ।

শ্রাবণ চোখ মেলে আবার রাস্তার পাশে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে তাকালো। সাদা টিশার্টের উপর সবুজ শার্ট আর জিন্স পড়া, চুল গুলো উপরে করে জুটি বাঁধা, মুখে কোনো সাজ সজ্জা নেই। একটা বাস আসতেই চলন্ত বাসের ভিতর লাফ দিয়ে উঠে গেলো।

শ্রাবণ শুধু দূর থেকে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে বলে উঠলো, ‘ মেয়েটার কি মৃত্যুর ভয় নেই!!..?”

ম্যানেজার কে ফোন দিয়ে বলে উঠলো এক ঘন্টার ভেতরে মেঘলার সব ইনফরমেশন এনে দিতে আর এতিম খানা থেকে কতো টাকা চুরি হয়েছে তাও জানাতে।

ফোন রেখে চুপচাপ বসে রইলো৷

_____________

সারা রুম জুড়ে পায়চারী করছে ছোঁয়া। কি করবে ভেবে ভেবে হাত কচলাচ্ছে। দুইদিন পর এক্সাম কিন্তু সে তো কিছুই পাড়ে না। কলেজ যায় আর আসে এটাই তো অনেক বই খুলে পড়ার মতো ধৈর্য ওর নেই। এখন এক রাতে কিভাবে সব বই শেষ করা যায় কিছু আইডিয়া নিতে হবে ইউটিউব থেকে সার্চ দিয়ে। যেই ভাবা সেই কাজ মোবাইল নিয়ে সার্চ দিলো।

মহুয়া ছোঁয়ার অবস্থা দেখে মুচকি মুচকি হাসছে বারান্দায় দাঁড়িয়ে।

মহুয়া ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার, আর ছোঁয়া সেকেন্ড ইয়ার। দুইদিন পড়েই এইচএসসি পরীক্ষা।

ছোঁয়া অনেক ভাবে সার্চ দিচ্ছে শুধু একটা সহজ উপায় পাক এক রাতে সবগুলো বই মুখস্থ করে ফেলবে।

নির্জন ছোঁয়ার দরজার সামনে এসে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় নির্জনের কাজের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই তবে সে পড়াশোনায় ভীষণ ভালো স্টুডেন্ট ছিলো। কলেজের টপ বয়। এইচএসসি পরীক্ষার আগে রাতে সাথে পানির মগ আর চা নিয়ে রাতে বসতো। পড়তে পড়তে ঘুম আসলে পানি নিয়ে চোখে ছিটা দিতো আর হামি আসলে চা খেতো। এই কষ্টের ফলাফল ছিলো কলেজের সেরা স্টুডেন্ট মধ্যে নির্জনের নাম প্রথমে। সে একটু প্লে বয় তবে স্টুডেন্ট হিসেবে অনেক ভালো। এই গাধা মেয়ে এক্সামের দুইদিন আগেও মোবাইল নিয়ে বসে আছে! হঠাৎ রাগ হলো।

এইসব ভাবে ছোঁয়ার পেছনে এসে দাঁড়ালো।

ছোঁয়ার মনে করলো মহুয়া পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। হাত পা ছড়িয়ে, মোবাইল কপালে ঠেসে ছোঁয়া গোঙ্গিয়ে বলে উঠলো ” মেহু আমি এখন কি করবো..?? কোনো আইডিয়া পাচ্ছি না কিভাবে এতো বই শেষ করবো..? আমি তো শেষ! আবার বুঝি একই ক্লাসে থাকতে হবে..? তবে ভালোই হবে তুমি আর আমি তাহলে এক সাথে আগামী বছর পরীক্ষা দিবো! ভালো হবে না..?? বলেই পেছন ফিরে দেখে মহুয়ার জায়গায় নির্জন বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!!..।

ছোঁয়াঃ তুই!..? তুই এখানে কেনো.? মেহু কই..?

নির্জন ছোঁয়ার থেকে চোখ সরিয়ে রুমে দেখে নিলো কেউ নেই। বারান্দায় ও নেই তার মানে মেহু রুমে নেই।

নির্জনঃ এতো এতো বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাস কিভাবে..??
ছোঁয়াঃ ঘুমানোর সময় মোবাইলে সব বুদ্ধি জমা রাখি সকালে আবার নিজের মাথায় মস্তিষ্কে ডাউনলোড করে নেই।
নির্জনঃ বাহ্ এতো বুদ্ধি, আইডিয়া থাকতে তোর কেনো আবার পরীক্ষা দেওয়ার টেনশন করতে হবে। বড় আব্বুকে শুনলাম বলছেন” পরীক্ষায় পাস না করলে কোম্পানির সামনে চায়ের ছোটো একটা দোকান নিয়ে বসে থাকে আবুল ভাই উনার সাথে তোর বিয়ে দিবে।

ছোঁয়া অবিশ্বাস্য চোখে নির্জনের দিকে তাকাতেই নির্জন সিরিয়াস মুখ করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,’ বিশ্বাস না হলে বড় আব্বুকে জিজ্ঞেস কর! আমি নিজ কানে শুনেছি। ‘

ছোঁয়া কাঁদো কাঁদো মুখ করে একদম কান্না করে দিলো।
ছোঁয়াঃ এটা কোনো কথা..? আবুলের সামনের দুইটা দাঁত নেই। হাসলে ফোকলা দাঁতের কপাটি বেরিয়ে থাকে কি যে বিশ্রী লাগে!. হেঁসে তাকালে লুচ্চা ভিলেন গুলোর মতো লাগে। আল্লাহ ছিঃ শেষে কিনা আবুল!! ।

নির্জনঃ তোর সাথে ভালো মানাবে। পড়া শোনা করার কি দরকার নাক ডেকে ঘুমা কাঁথা গায়ে দিয়ে। বলেই শিষ বাজাতে বাজাতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

ছোঁয়া গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো এখন সে কি করবে!!.? বড় মামাকে সে ভীষণ ভয় পায় কিছু বলতে পারবে না। দৌড় লাগালো বইয়ের দিকে। এক এক করে সব গুলো বই সামনে সাজিয়ে পড়া শুরু করলো। কিন্তু মাথায় কিছুই ঢুকছে না শুধু আবুল ছাড়া!।

_____________

মহুয়া ছাঁদ থেকে নেমে নিচে আসলো। আমেনা বেগমের সাথে বসে বসে টিভি দেখছে। আমেনা বেগম টিভি দেখার থেকে বেশি মহুয়ার সাথে কথা বলছে। হালিমা বেগম বিরক্ত হয়ে আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ ভাবি প্লিজ এই সিরিয়ালটা ঠিক মতো দেখতে দাও, ওই মেঘলা না টেগলাকে ছেলের বউ না করে এই মহুয়াকে ছেলের বউ করে নিলেই পারতে! আমরাও সিরিয়ালের মতো বউ শাশুড়ীর যুদ্ধ না দেখে ভালোবাসা দেখতাম। তোমার কথা বলতে হলে রুমে নিয়ে সারা রাত কথা বলো।

মহুয়া চুপচাপ বসে হালিমা বেগমের কথা শুনে মাথা নিচু করে আছে।

আমেনা বেগম রেগে বলে উঠলো, ‘ ওই মেয়ে আকাশ থেকে টপকে না পড়লে আমি মহুয়াকেই বউ বানিয়ে নিতাম। ওই রাক্ষসী মেয়ে এসে সব শেষ করে দিলো।তোর মন টিভিতে দে এদিকে কি!!?..।’

হালিমা বেগমঃ এখন তো আরেক ছেলে আছে বউ করে নিও।। বলেই হালিমা বেগম হেঁসে উঠলেন। বুঝাই যাচ্ছে উনি মজা করে বলেছেন।
আমেনা বেগমঃ হুম ঠিক বলেছো কষ্ট করে আর মেয়ে খুঁজতে হবে না।

মহুয়া কোনো একটা অজুহাত দিয়ে উঠে গেলো। বুঝা যাচ্ছে উনারা মজা করছে তবে মহুয়া বার বার লজ্জা পাচ্ছে ।

পেছন ফিরে আহনাফ কে দেখে থমকে গেলো। আহনাফের পেছনেই শ্রাবণ দাঁড়িয়ে। মহুয়া লজ্জায় পড়ে গেলো। এই দুইজন কি তাদের সব কথা শুনে ফেলেছে!.?
আহনাফ একবার মহুয়ার দিকে তাকিয়ে পকেটে এক হাত দিয়ে গম্ভীর মুখে সিঁড়ির দিকে চলে গেলো। মহুয়ার সামনে থেকে গিয়ে মুচকি হেঁসে ফেললো, মেয়েটার গাল, নাক লাল হয়ে আছে, চোখ নিজের পায়ের দিকে স্থির,ওড়না দিয়ে মাথার অর্ধভাগ ডাকা, কালো সেলোয়ার-কামিজ পড়া দেখতে অসম্ভব সুন্দরী। কোনো কারনে কি মেয়েটা লজ্জা পেয়ে আছে.??

আহনাফ, শ্রাবণ কেউই কিছু শুনেনি।

শ্রাবণ মহুয়াকে দেখে নিজের রুমে না গিয়ে সোফায় বসলো। মহুয়ার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো, ‘ এক গ্লাস পানি দিবেন..?’

পেছন থেকে কেউ হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাস ধরলো।
শ্রাবণ ভ্রু কুঁচকে পেছনে ফিরে রেগে গেলো। গ্লাসটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। ধীর পায়ে মেঘলার সামনে দাঁড়িয়ে গ্লাসটা ওর মুখের সামনে তুলে ধরলো৷

মহুয়া ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘলার মুখের রিয়াকশন বুঝতে পারছে না। না আছে বিরক্তির ছাপ, আর না সে খুশি। শুধু শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্রাবণের দিকে।

শ্রাবণ মেঘলার মুখের সামনে গ্লাসটা ছেড়ে দিলো।চোখের সামনে গ্লাসটা নিচে পড়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।

ঝনঝন শব্দে টিভি বন্ধ করে পেছনে ফিরলো সবাই।

মেঘলাঃ যাহ বাবাহ্ ভেঙে ফেললেন!..? আপনি তো বললেন পানি দিতে!।
শ্রাবণঃ তুমি ভাবলে কিভাবে তোমার মতো মেয়ের হাতে শ্রাবণ চৌধুরী কিছু খাবে!! আমার থেকে দূরে থাকবে..

শ্রাবণ হনহন করে ফিরে যেতে নিলে নিজের ভাঙা গ্লাসের টুকরোর মধ্যে পা দিয়ে বসলো। সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো।

আমেনা বেগম দৌড়ে ছেলের কাছে আসলেন।
শ্রাবণ পা থেকে কাঁচের টুকরো বের করলো। রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।

মহুয়া কি বলবে.? কি করবে.? বুঝতে পারছে না। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে হাঁটু ভেঙে বসলো। শ্রাবণ থমকে গেলো, হৃদপিণ্ড অস্বাভাবিক ভাবে লাফাচ্ছে। বুকের ভেতর ধুকপুক বেড়ে চলছে।
মহুয়া মেঘলার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তোমার হাতের রুমালটা দাও’
মেঘলা শ্রাবণের দিকে তাকালো। শ্রাবণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মহুয়ার দিকে।

মেঘলা রুমাল মহুয়ার হাতে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। মহুয়া শ্রাবণের পায়ে রুমাল পেচিয়ে দিয়ে বললো,’ আহনাফ চৌধুরীর কাছ থেকে মেডিসিন নিয়ে নিবেন।

ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে পাশের ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে আছে মহুয়া।

পাশের ব্যালকনিটা আহনাফের। দুইটাই এক সাথে লাগানো।

আহনাফের ব্যালকনিতে অনেকগুলো বেলীফুলের মালা রাখা। বেলীফুলের ঘ্রাণেই ওই দিকে নজর গিয়েছে।

ফুল মহুয়ার ভীষণ পছন্দ তার উপর বেলীফুলের ঘ্রাণ তো আরও বেশি ভালো লাগে। আগে প্রায় বাহিরে গেলে বেলীফুলের মালা এনে খোঁপায় দিয়ে রাখতো। লোভ সামলাতে না পেরে ধীর পায়ে ব্যালকনির কিনারায় গিয়ে ওকি দিলো। নাহ্ আহনাফ নেই। হাত বাড়িয়ে বেলীফুলের মালা গুলো হাতে নিয়ে খোঁপায় গুঁজে নিলো একটা। বাকি মালাগুলো জায়গায় রেখে দিলো। পেছন ফিরে চলে আসতে নিলেই আহনাফ বলে উঠলো ” মালিক কে না বলে তার জিনিসে হাত দেওয়া অপরাধ আর সাথে করে নিয়ে যাওয়াকে বলে চুরি!!.।

ভয়ে মহুয়া কেঁপে উঠল। লজ্জা, ভয়ে পেছন না ফিরে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আস্তে করে খোঁপা থেকে বেলীফুলের মালা খুলে পেছন ফিরলো। ঘোমটা দিয়ে মাথা নিচু করে আহনাফের দিকে মালা এগিয়ে দিলো।

আহনাফ এটিটিউড দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘ কারো ব্যাবহার করা জিনিস আহনাফ চৌধুরী নেয় না!’

মহুয়া হঠাৎ বলে উঠলো, ‘ তাহলে তো বাকি গুলোও আমি ধরেছি, হাতে দিয়েছি।সব গুলোই তো ব্যাবহার হলো! বলেই নিজের মুখ নিজে চেপে ধরলো। ভুল সময় ভুল কথা বলার জন্য কবেনা জেলে বসে মশার কামড় খেতে হয়!..

আহনাফ সবগুলো ফুল মহুয়ার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে রুমে চলে গিয়ে ব্যালকনির দরজা বন্ধ করে দিলো।

মহুয়া অপমানে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আহনাফের দরজার দিকে। অসভ্য, বেয়াদব লোক।বড়লোকী দেখাতে আসে নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ডের জন্য এনে ছিলো। আমি তো জাস্ট খোঁপায় একটা দিয়েছি আরও তো নয়টা মালা ছিলো। এতো এটিটিউড দেখানোর কি আছে.??

______________

শ্রাবণ ফ্রেশ হয়ে এসে বসলো। রুমাল বাঁধা পায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। আজ প্রথম মহুয়া ওর এতো কাছে এসেছে ওকে কেয়ার করেছে। মহুয়া ও কি আমাকে পছন্দ করে..? থুর কি ভাবছি মহুয়ার জায়গায় অন্য কেউ হলেও এগিয়ে আসতো। যে আঘাতে তোমার ছুঁয়া পাওয়া যায় তবে এমন আঘাত আমি প্রতিদিন পেতে চাই মায়াবতী।

এইসব ভাবনার মাঝে ফোনটা বেজে উঠলো।

ম্যানেজার সাহেব কল দিয়েছে।

ম্যানেজার সাহেবঃ স্যার ভাবির বিষয় সব কিছু জানতে পারিনি যা একটু জেনেছি তা হলো, মেয়েটা ছোটো থেকে এই বস্তিতে বেড়ে উঠেছে। পড়াশোনা বেশি করতে পারেনি দরিদ্রতার জন্য। এতিম খানায় চুরি করতে না বরং ৫০হাজার টাকা দিয়ে ছিলো আজকে বাচ্চাদের জন্য। আর এক লাক্ষ টাকা বস্তিতে খরচ করছে সবার জন্য বাথরুম, গোসলখানা তৈরি করছে। বস্তিতে দুইটা হাতকল আর কয়েকটা মাত্র বাথরুম আছে৷ ভাবি….

আর কিছু বলার আগে শ্রাবণ বলে উঠলো, ‘ আপনার কথা বলা আগে শিখা উচিত। আর একবার ভাবি বললে আপনার চাকরি খুঁজে পাবেন না। বলেই ফোরাম কেটে দিলো। ওর বিশ্বাস হলো না ম্যানেজারের একটা কথাও কাল ও নিজে ওই মেয়ের সম্পর্কে নিজেই খুঁজ নিবে।ম্যানেজার হয়তো অন্য কারো সাথে এই মেয়েকে ঘুলিয়ে ফেলেছে।

___________

সকালে টিউশন থেকে বের হয়ে কলেজ চলে গেলো। আজ অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।

ছুটির পর ছোঁয়া দুইটা মেয়ে নিয়ে এসে মহুয়ার সাথে পরিচয় করছি দিলো। মেয়েগুলো ভীষণ মিশুক ছোঁয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড।

একটা মেয়ে প্রচুর কথা বলে বিরক্ত হয়ে হাত দিয়ে কান চেপে ধরে আছে মহুয়া।

মেয়েটা হঠাৎ খুশি হয়ে ওদের বলে উঠলো, ‘ একটু পর আমার বয়ফ্রেন্ড আসবে আমার সাথে দেখা করতে।’

সবাই আগ্রহ নিয়ে বসে আছে এই বাচাল মেয়ের বয়ফ্রেন্ড দেখার জন্য। যেখানে একটু তে ওরা সবাই বিরক্ত সেখানে ওই লোক কিভাবে মেয়েটিকে সামলায় তা দেখার জন্য মূলতঃ সবাই বসে আছে।

কিছু সময় পর মেয়েটা বলে উঠলো, ‘ এই তো চলে এসেছে ‘

সবাই মাঠের দিকে তাকালো। বাইক থেকে হ্যান্ডসাম একটা ছেলে নামলো হাতে অনেকগুলো গোলাপ।

ছেলেটা ফুল নিয়ে ওদের সামনে আসতেই মহুয়া সবার মতো ছেলেটার দিকে তাকালো। কাঁপা কাঁপা পায়ে সে দাঁড়িয়ে গেলো। রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো ছেলেটার দিকে আর মনে মনে বলে উঠলো ” আমাদের তো এক সময় সামনা-সামনি হতেই হতো কিন্তু এতো জলদি হয়ে যাবে ভাবতেও পারিনি। এখন শুধু হিসাব করা বাকি,জীবনের হিসাব,মৃত্যুর হিসাব!!

চলবে..

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-০৯

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_9
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

আহনাফ কে বাসায় ফিরে আসতে দেখে আমেনা বেগম জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে..? শরীর খারাপ কিনা.!?

আহনাফ চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেলো। গাড়িটা আহনাফের অনেক প্রিয় গাড়ি ছিলো। চোখের সামনে নিজের গাড়ির এই অবস্থা দেখে থমকে গিয়ে ছিলো। এই গাড়িতে তো তখন ও থাকার কথা!!

আহনাফ চলে যেতেই হন্তদন্ত হয়ে আজাদ চৌধুরী বাড়িতে এসে আহনাফ কে খুজতে লাগলেন।

আমেনা বেগমঃ আহনাফ তো এইমাত্র বাড়িতে আসলো। শরীর মনে হয় ভালো নেই আমি কফি করে নিয়ে আসছি ওর জন্য এখন রুমে গেছে। কি হয়েছে.? ওকে খুঁজছ কেনো..? অফিস থেকে চলে আসলে যে.?
আজাদ চৌধুরী বুকে হাত দিয়ে সোফায় বসলেন।একটুর জন্য পুরো পৃথিবী থমকে গিয়ে ছিলো।
আমেনা বেগম পানি এনে দিলেন।
আমেনা বেগমঃ তোমার কি শরীর ভালো নেই.?
আজাদ চৌধুরীঃ আমি ঠিক আছি।
আমেনা বেগম গ্লাস নিয়ে উঠে যেতেই আজাদ চৌধুরীর মোবাইলে মেসেজ আসলো ” কি বন্ধু ভয় পেয়েছো..?? ইসসস তোমার ভয়ার্ত মুখটা দেখে আমার পৈশাচিক আনন্দ লাগছে! বলতে হবে তোর ছেলের ভাগ্য ভালো না হয় গাড়ির সাথে নিজেও পরপারে চলে যেতো।তবে টেনশন নেই নেক্সট টাইম শুধু গাড়ি নয় গাড়ির সাথে তোর ছেলেকেও পাঠিয়ে দিবো। এক এক করে সবাইকে পাঠাবো”

আজাদ চৌধুরী বার কয়েক কল দেওয়ার চেষ্টা করলেন। নাম্বার বন্ধ। ক্লান্ত শরীরটা সোফায় ছেড়ে চোখ বুঁজে রাখলেন কি করবেন এখন..? ছেলেদের কিভাবে বন্ধু নামের শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করবে!..? বোনটার মতো কি ছেলেদের ও হারাতে হবে!!..?? সিদ্ধান্ত নিলেন মিরাজ চৌধুরী কে আজ সবটা জানাবেন আর পুলিশের সাহায্যে রায়হানকে খুঁজে বের করবে।

_____________

আহনাফ রুমে এসে চুপ করে বসে ছিলো। সে কিছুতেই হিসাব মিলাতে পারছে না। মেঘলার আগমন, বিয়ে, বাবা ছেলের মধ্যে আস্তে আস্তে ঝামেলা তৈরি করা, আর আজকের এক্সিডেন্ট সবটাই সাজানো কারো প্লেন।খুব সুন্দর করে নিজের প্লেন অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে।

ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে মেঘলার রুমের কাছে গেলো। রুমে তালা দেখে ভীষণ অবাক হলো। রুম কেনো তালা দেওয়া.? বাড়িতে এতো মানুষ থাকতে চোর তো আসবে না!

নিচে গিয়ে নিরুপমা কে জিজ্ঞেস করতেই বললো। এই রুম শ্রাবণ তালা দিয়ে গেছে জেনো মেঘলা রুমে কখনো প্রবেশ করতে না পারে।

আহনাফ পেছন ফিরতেই দেখলো মেঘলা বাহির থেকে এসেছে। কারো দিকে না তাকিয়ে গেস্ট রুমে চলে যাচ্ছে ।

আহনাফ আজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে কিছু বললো না। আজাদ চৌধুরী চোখ বন্ধ করে বসে আছেন।

আহনাফ কফি খেয়ে মেঘলার দরজার সামনে টুকা দিলো।

মেঘলা দরজা খুলে আহনাফ কে দেখে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো।
~ কি চাই.?
আহনাফঃ আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।
মেঘলাঃ বলেন।
আহনাফঃ একটু ছাঁদে আসুন।

ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে আহনাফ আর মেঘলা।

আহনাফঃ আমি আপনার বিষয় জানতে চাচ্ছি না। আমি শুধু জানতে চাই।আপনাকে এখানে কে পাঠিয়েছে.? কেনো পাঠিয়েছে.?
মেঘলাঃ এতে আমার লাভ কি.?
আহনাফ হাসলো। সে জানে এমনিতে কিছু বলতে চাইবে না মেয়ে।
আহনাফঃ এর পরিবর্তে আপনি যা চাইবেন দেওয়া হবে।
মেঘলার মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। তারপর সে বলে উঠলো,
মেঘলাঃ আমি প্রতিদিনের মতো সেদিনও নিজের কাজে বেরিয়ে ছিলাম। তখন একটা ছেলে এসে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো” যদি এক ঘন্টার জন্য কাজ করি অনেক টাকা দিবে। ‘আমি রেগে গিয়ে ছিলাম কাজের কথা জিজ্ঞেস ছেলেটাকে মে’রে হসপিটালনা করেই ভর্তি করিয়ে দেই। দুইদিন পর কয়েকজন ছেলে অজ্ঞান করে একটা আস্তানায় নিয়ে আসলো। যখন আমার জ্ঞান ফিরে নিজেকে চেয়ারে বাঁধা দেখলাম৷ একটা কালো কোট পড়া লোক সামনে আসলো কিন্তু মাক্স দিয়ে মুখ ডাকা ছিলো। আর উনার পাশে রনি মাস্তান দাঁড়িয়ে ছিলো। রনিকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি।

সেখানে লোকটার সাথে বেশি কথা হয়নি। লোকটা ৫০হাজার টাকা আমার সামনে রেখে বললো দুই ঘন্টা প্রেগন্যান্ট হওয়ার অভিনয় করলে এই টাকা আমার। যেহেতু শুধু অভিনয় ছিলো তাই আমিও রাজি হয়ে যাই।

আহনাফঃ এইটুকু কাজের জন্য এতো টাকা!..? সন্দেহ হয়নি.?
মেঘলাঃ হয়েছে!
আহনাফঃ তাহলে জিজ্ঞেস করেননি কেনো.?
মেঘলাঃ আমি নিষেধ করে দিলে অন্য মেয়ে আসতো। একজন না একজন তো সেজে আসতো। আমারও টাকার প্রয়োজন ছিলো কিন্তু সাংবাদিকের জন্য ফেঁসে গেলাম বিয়ের ফাঁদে।
আহনাফঃ রনি কোথায় থাকে.??
মেঘলাঃ কলেজের সামনে পাওয়া যাবে।
আহনাফঃ চলুন আমার সাথে..।
মেঘলাঃ কোথায়.?
আহনাফঃ রনির কাছে।
মেঘলাঃ আমি পারবো না।
আহনাফ অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলো৷ সে এই রহস্যের সমাধান করতে চায়! কে আসলে, কোথায় থেকে গেইম খেলছে..? ওর পরিবারের সাথে কার এতো শত্রুতামী.?

আহনাফঃ আজ আমার গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে..।
মেঘলা অবাক হলো। কিছু সময় চুপ থেকে বললো,’ কিভাবে..? ‘
আহনাফ সবটা বলতেই মেঘলা চুপ করে রইলো। মেঘলা খুব চালাক মেয়ে। তার বুঝতে বাকি নেই এই কাজ নিশ্চয়ই ওই লোকের। আর এক্সিডেন্ট নিশ্চয়ই রনি করিয়েছে!।

মেঘলা রাজি হলো রনির কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

__________

মেঘলা কলেজের সামনে গাড়ি থেকে নামলো৷ ওর সাথে আহনাফ ও বের হলো৷

মেঘলা আশেপাশে রনিকে খুঁজলো কিন্তু কোথাও না দেখে কিছুটা অবাক হলো। কলেজ ছুটি হওয়ার আগ পর্যন্ত রনি কলেজের আশেপাশে ঘুরঘুর করে।

মেঘলা কলেজের পাশে চায়ের দোকানে বসলো।

~ চাচা কেমন আছেন.?
~ আরেএএ মেঘলা মা না.? কতোদিন পর আইলা দোকানে! কই থাকো দেখা যায় না। তোমার চাচি বলছিলো তোমারে দেখারলাই একদিন যদি যাইতা।
~ চাচা সময় করে একদিন যাবো। চাচির কেমন অবস্থা.?
~ এখন আগের থাইকা ভালা।
~ কোনো সমস্যা হলে বস্তুিতে চলে আসবেন।
~ আল্লায় তোমার মঙ্গল করুক মা। আজ তুমি না থাকলে…

~ প্লিজ চাচা এমনে বইলেন না। উনি আমার মায়ের মতো।নিজের তো মা নাই। মা দেখতে কেমন তাও জানিনা আমার মা অসুস্থ হইলে কি আমি চিকিৎসা করতাম না.? মনে করেন আমি আমার মা কে দিছি।

আহনাফ গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। মেঘলার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হলো। সেই কখন দোকানে গিয়েছে আশার নাম নেই।

কিছুক্ষন পর মেঘলা ফিরে এসে জানালো রনি চলে গেছে।
আহনাফঃ কোথায় গেছে.? কোথায় গেলে পাওয়া যাবে.?
মেঘলাঃ ঠিক জানা নেই। কলেজের কোন মেয়ে নাকি ওরেএ সবার সামনে জুতা খুলে মে’রছে। রেগে কই গেছে জানিনা। কলিজা আছে মেয়েটার বলতে হবে।

আহনাফঃ নিশ্চয়ই বাজে কিছু করেছে তাই মেয়েটা মেরেছে।
মেঘলাঃ এখন আমি যাই।
আহনাফঃ কোথায়.?
মেঘলা কিছু না বলেই চলে গেলো।

আহনাফ গাড়িতে উঠতে গিয়ে দেখলো কলেজ ছুটি হয়েছে। আহনাফ গাড়িতে উঠার আগেই ছোঁয়া এসে হাজির হলো ওর সামনে।

কলেজের মেয়েরা আহনাফের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে যাচ্ছে। এটা একদম সহ্য হলো না ছোঁয়ার। শাঁকচুন্নি গুলো কি জীবনেও ছেলে দেখেনি! চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।

মহুয়াও এসে দাঁড়ালো।

ছোঁয়াঃ ভাইয়া তুমি এখান.?
আহনাফঃ একটা কাজে এসে ছিলাম।
ছোঁয়াঃ খুব ভালো হলো। তোমার সাথে মহুয়াকে নিয়ে যাও।
আহনাফঃ তুই কোথায় যাবি.?
ছোঁয়াঃ সামনে আমার একটু কাজ আছে।
আহনাফ গাড়িতে বসে পড়লো। মহুয়া পেছনে বসতে নিলে আহনাফ রেগে বলে উঠলো, ‘ আমাকে কি ড্রাইভার মনে হয়.!?? ‘মহুয়া ফুস করে একটা নিশ্বাস ফেললো তারপর সামনে বসলো।

গাড়ি চলছে কারো মুখে কোনো কথা নেই৷ নিরবতা ভাঙে আহনাফ বলে উঠলো, ‘ আপনার গ্রামের বাড়ি কোথায়.?’
মহুয়াঃ হৃদয় পুড় গ্রামে।

আহনাফ হাসলো। তারপর আবার প্রশ্ন করলো,’ আপনারা ভাই বোন..?’
মহুয়াঃ আমি একজন। আমার বাবা-মা নেই,আমি মামা-মামীর কাছে বড় হয়েছি, আমি ছোটো থাকতেই নাকি মা-বাবা এক্সিডেন্টে মা-রা যায় ।

হুট করে গাড়ি থেমে যাওয়াই মহুয়ার হুস ফিরে।
মহুয়াঃ কি হয়েছে.?
আহনাফঃ একটু আগে কি বললেন.?
মহুয়াঃ কি.?
আহনাফঃ আপনার আব্বু আম্মু এক্সিডেন্টে মা-রা গেছে.?
মহুয়ার গলা শুকিয়ে আসলো। আমতাআমতা করে বলে উঠলো, ‘ আমার খেয়াল ছিলো না। আমি হয়তো ভুল বলেছি।আব্বু আম্মু গ্রামে’
আহনাফঃ গ্রামটাও কি তাহলে খেয়াল ছিলো না? এটাও তো ভুল বলেছেন!ভাই-বোন ও ভুল বলেছেন.

মহুয়া কিছু না বলে চুপ করে আছে।এখনি তো ধরা খেয়ে গিয়ে ছিলো। কিন্তু সে সত্যি থেকে কেনো লুকাতে চাচ্ছে..? কেনো নিজের সব পরিচয় লুকিয়ে মিথ্যা বলে বেড়াচ্ছে.? সত্যি বেশি দিন চাপা থাকে না!

আহনাফ আর কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো। সে খুব জলদি সব রহস্যের সমাধান বের করবে। কে এই মহুয়া.? কি পরিচয়.?

___________

রনি একটা ছেলের গায়ে গরম লোহা চেপে ধরে আছে।
~ সামান্য একটা মেয়ের ছবি রাখতে পারছ না তোদের মতো জা*নো*য়া*র বিশ্বাস ঘাতক আমার দরকার নাই। এখন আমি কি জবাব দিমু বসকে!..? আজ যদি তোদের কারনে আমি পৃথিবী ছাড়তে হয় তাহলে তোদের সাথে নিয়েই ছাড়মু শ** বাচ্চারদল।

~ ভাই!! ভাই এবারের মতো ছাইড়াদেন। আমি কথা দিচ্ছি মাইয়া ডারে আমি নিজে আপনার সামনে নিয়া আসমু।
রনি রাগে আরও শক্ত করে লোহা চেপে ধরলো। মোবাইলে মেয়ের ছবি ছিলো আর সেই মোবাইল পানিতে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন বসকে কি জবাব দিবে রনি.? একতো একটা মেয়ের হাতে সবার সামনে জুতাপিটুনি খেয়ে এসেছে মাথা গরম তার উপর এমন একটা খবর শুনে মাথা আরও খারাপ হয়ে গেছে।

কে সেই বে**.? একটা মাইয়া হয়ে তিনটা পুরুষ কে খু*ন করছে। সাথে ১৫টা মাইয়া নিয়া পলায় গেছে। যেমনেই হোক ওই মাইয়ারেএ বসের সামনে নিতে হইবো। পতিতা পল্লীতে থাইকাও বে** গিরি কমে নাই!

রনিঃ ওই গাড়ি বার কর ফুলবানুর পল্লীতে যামু ওখানে তো মাইয়ার ছবি থাকবো। যেভাবেই হোক ওই মাইয়ারে খুঁজে বের করতে হইবো।

___________

মহুয়াকে নামিয়ে দিয়ে আহনাফ গাড়ি ঘুরিয়ে কাউকে কল দিলো।

কিছু কথা বলেই বলে উঠলো, ‘ আজ রাতেই এই ছেলেকে পুরান বাড়িতে দেখতে চাই। ‘
~ কাজ হয়ে যাবে।

মহুয়া ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে বসে আছে।

আহনাফ গেইটের ভেতর এসেই চোখ গেলো বেলকনির দিকে। বাগান থেকে মহুয়ার বেলকনি দেখা যায়।
মহুয়া গোসল করে চুল গুলো ছেড়ে বই নিয়ে বসে আছে। একটু পর পর বই পড়ছে আর হাসছে।এই প্রথম আহনাফ মহুয়াকে হাসতে দেখে তাকিয়ে রইলো। সারা দিনের ক্লান্তি এক নিমিষেই ভুলে গেলো। কারো হাসিতেও জাদু থাকে!..?

মহুয়ার মনে হলো কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। বই থেকে চোখ সরিয়ে এদিক ওদিকে তাকালো। কেউ তো নেই হয়তো মনের ভুল।

মহুয়া তাকানোর আগেই আহনাফ সরে গিয়ে ছিলো।

________

সন্ধ্যার দিকে আহনাফ তারাহুরো করে রুম থেকে বের হতে গিয়ে মহুয়ার সাথে ধাক্কা খেলো।
মহুয়া কপাল ঢলতে ঢলতে আহনাফের দিকে রেগে তাকালো৷
আহনাফঃ এভাবে তাকাবেন না দোষ আপনার!.
মহুয়াঃ একদম নিজের দোষ অন্যের ঘারে চাপিয়ে দিবেন না। আমি তো যাচ্ছিলাম আপনি দেখে বের হবেন না।গরুর মতো ছুটেছেন।
আহনাফঃ আমি গরু!.?
মহুয়া কিছু না বলে চুপ করে রইলো। আহনাফ রাগী দৃষ্টিতে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ বেয়াদব মহিলা ‘ বলেই চলে গেলো।
মহুয়া সাপের মতো ফুঁসে উঠলো৷ কতো বড় সাহস বার বার বিনা দোষে ওকে বেয়াদব মহিলা বলছে! কিন্তু এখন আর ঝগড়া করতে ইচ্ছে হলো না।

মহুয়া রান্না ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো আমেনা বেগম রান্না করছেন।
মহুয়া গিয়ে উনার পাশে দাঁড়াতেই আমেনা বেগম খুশি হলেন।
~ কিছু লাগবে.?
মহুয়াঃ না আন্টি। হেল্প করতে আসলাম।
~ সব কিছু করা শেষ আর হেল্প করতে হবে না। আন্টির সাথে গল্প করো।
মহুয়া টুকটাক এটা সেটা জিজ্ঞেস করলো। আমেনা বেগম উনার শাশুড়ী থেকে শুরু করে এই বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের বিষয় সব বলতে শুরু করলেন মহুয়াও মন দিয়ে তা শুনছে আর হাসছে।

_______

আহনাফ বাড়িটার ভেতরে ঢুকে লাইট জ্বেলে দিলো৷

রনির হাত পা বাঁধা অবস্থায় ঝুঁকে আছে।
আহনাফ রনির সামনে গিয়ে তাকাতেই অবাক হলো। এটা তো সেই দিনের অসভ্য ছেলেটা!

আহনাফ ওর সামনে হাতে চাকু নিয়ে বসলো৷ রনির মুখে পানির ছিটা মারতে আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো।
সামনে আহনাফ কে দেখে ভয় পেলো। আজও সেই দিনের মাইরের কথা মনে আছে! কিন্তু আজ তো সে কিছু করেনি! নাকি কলেজের মেয়েটার জন্য তুলে এনেছে.? হাজারটা প্রশ্ন আর ভয় নিয়ে আহনাফের দিকে তাকিয়ে আছে।

আহনাফ শান্ত ভাবে পুরো রুমটার দিকে তাকালো।
রনির চেয়ারটা ঠিক করতে একজনকে ইশারা দিলো।

চেয়ার ঠিক করতেই রনির পকেট থেকে মোবাইলটা নিচে পড়ে গেলো।

আহনাফ বিরক্ত হলো। ওর পায়ের কাছ থেকে মোবাইলটা তুলে রনির পকেটে রাখতে গিয়েও থেমে গেলো৷ মোবাইলটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে স্কিনে পরিচিত একটা মেয়ের ছবি দেখে কৌতুহলী চোখে আরও ভালো করে তাকালো। রনির দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে ফেললো। যদিও স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না মেয়েটাকে কারন মেয়েটার মুখে অনেক কাঁটা দাগ,ঠোঁটে রক্ত জমাট বেঁধে আছে, চুল এলোমেলো, শরীরে জরজেট পাতলা শাড়ি।

চলবে…….

ভুলত্রুটি মার্জনীয়

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-০৪

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_8
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

মহুয়ার মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো। রুমে পানি খুঁজলো কোথাও একটুও পানি নেই। আস্তে করে রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িং রুমে আসলো। ড্রয়িং রুমে এসে অবাক হলো, রান্না ঘরের লাইট জ্বালানো সাথে ঠুকঠাক শব্দ আসছে।

ধীর পায়ে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো৷

আহনাফ এক হাত পকেটে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মহুয়া আরও ভালো করে তাকালো। আহনাফ কে দেখেই যেভাবে এসে ছিলো সেভাবেই হাঁটা ধরলো।

” মাঝ রাতে চুল ছেড়ে ভূতের মতো সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেনো..?”

মহুয়ার পা থেমে গেলো। পেছন ফিরে বলে উঠলো, ‘ ভূত বিশ্বাস করেন..?’
আহনাফ কিছু সময় চুপ থেকে বললো,’ হুম অবশ্যই আমাদের বাড়ির পেছনে যে বন্ধ ঘর আছে ওখানে অনেকে ভূত দেখেছে। ওই ঘরে এক মেয়ে আত্মহত্যা করে ছিলো তারপর থেকে মাঝে মাঝে মেয়ের আত্মাকে অনেকেই দেখতে পায়। আর যে দেখে সে আর বেঁচে থাকে না।’

মহুয়া আস্তে ধীরে আহনাফের কাছে এসে দাঁড়ালো।

মহুয়াঃ কিন্তু আমি তো শুনেছি ভূত বলতে কিছু নেই।
আহনাফঃ ভূত বলতে নেই তবে পেত্নী, আত্মা, জ্বীন তো আছে।
মহুয়া ভয়ে এদিক ওদিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘ মেয়েটা আত্মহত্যা কেনো করেছে…?

আহনাফ কাপে কফি ঢেলে বললো,’ তা তো আমি জানিনা৷ তবে মাঝ রাতে মেয়েটার চিৎকারের শব্দ শুনা যায়।’

মহুয়াঃ আপনি শুনে ছিলেন..?
আহনাফঃ না। লোকের মুখে শুনেছি।
মহুয়া ভয়ে আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমি এইসব ভয় পাই না।’
আহনাফঃ তাহলে এভাবে কাঁপছেন কেনো..? আগে চুল গুলো বেঁধে নিন আপনাকে দেখে আমার ভয় লাগছে বলে আহনাফ চলে যেতে ধরলো।
মহুয়াও আহনাফের পিছন পিছন যাচ্ছে।
আহনাফ পেছন ফিরে বলে উঠলো, ‘ এখানে কেনো এসে ছিলেন.??’
মহুয়া শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ পানির জন্য। ‘
আহনাফঃ খেয়েছেন..?
মহুয়াঃ না!
আহনাফ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,’ তাহলে খেয়েনিন।’

মহুয়া চুপচাপ পানি খেয়ে আহনাফের পিছু পিছু দোতলায় চলে আসলো। আহনাফ নিজের রুমে প্রবেশ করতে গিয়েও থেমে গেলো৷
মহুয়া আহনাফ কে পাশ কাটিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো ।
আহনাফও এবার নিজের রুমে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিলো৷

মহুয়া রুমে এসে দেখে ছোঁয়া ঘুমাচ্ছে। দরজা বন্ধ করতে গিয়ে থেমে গেলো। দক্ষিণ পাশের রুম থেকে একটা মেয়েকে নিচে নেমে যেতে দেখে অবাক হলো সাথেও একঝাঁক ভয় এসে হানা দিলো। তাও সাহস করে মহুয়া এগিয়ে আসলো মেয়েটাকে দেখার জন্য। এটাই কি আহনাফের বলা সেই মেয়েটি!..?তাহলে কি আহনাফ সত্যি বলে ছিলো!..?

মহুয়া ভালো করে তাকালো। মেয়েটা নিচে গিয়ে পানি খেয়ে আবার উপরে উঠে আসলো। সিঁড়ি দিয়ে ছাঁদে উঠতে নিলেই মহুয়া পেছন থেকে ডাক দিলো।

মেঘলা বিরক্ত হয়ে পেছন ফিরলো৷ এই মাঝ রাতেও এই বাড়িতে শান্তি নেই এর থেকে তো বস্তিতেই ঢের ভালো শান্তিতে ঘুমানো যায়!..

মহুয়াঃ এতো রাতে তুমি ছাঁদে কেনো যাচ্ছো.?
মেঘলাঃ ঘুমাতে!..
মহুয়া ভ্রু কুঁচকে ফেললো। এই মেয়ে এতো রাতে ছাঁদে ঘুমাতে যাবে.? এমনতো নয় আত্মা মেঘলার মতো সেজে এসেছে!..
মহুয়াঃ তোমার রুমে কি হয়েছে.?
মেঘলাঃ রুম থেকে বের করে দিয়েছে আর কিছু জিজ্ঞেস করবে..? আমার এখন ঘুম প্রয়োজন।
মহুয়াঃ কে রুম থেকে বের করেছে..?
মেঘলাঃ আমার প্রানপ্রিয় স্বামী।
মহুয়াঃ কিন্তু উনি তো বাসায় নেই, আসেও না।
মেঘলাঃ এই মেয়ে এতো কথা জিজ্ঞেস না করে রুমে গিয়ে দেখে আসো। এতো রাতে না ঘুমিয়ে বাড়ি কেনো পাহাড়া দিচ্ছো.?
মহুয়াঃ আমি পানি খাওয়ার জন্য বেরিয়ে ছিলাম। এতো রাতে ছাঁদে না গিয়ে আমাদের সাথে আজকের রাত থেকে যেতে পারো।
মেঘলাঃ লাগবে না বাহিরে ঘুমিও অভ্যস আছে।

মহুয়াঃ এখানে শুনেছি রাতে কোনো এক মেয়ের আত্মা ঘুরে বেড়ায়। আমার রুমে আসো না হয় ভয় পাবে।
মেঘলাঃ এই সব ফালতু কথা মাথায় না নিয়ে ঘুমাতে যাওও। মানুষ মৃত্যুর পর আর কখনো ফিরে আসতে পারে না, নিজের হিসেব-নিকেশ দিয়ে কোল পায় না। আর আত্মা মেয়ে সেজে ঘুরে বেড়াবে!! যাওও মেয়ে ঘুমিয়ে পরও। বলেই মেঘলা হেলতে দুলতে ছাঁদে চলে গেলো।

মহুয়া চুপচাপ নিজের রুমে চলে আসলো। কেনো জানি এই মেয়েটার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে মহুয়ার। কেমন আপন আপন মনে হয়।

_______

সেই প্রতিদিনের মতো আজও নামাজ পড়ে মহুয়া, ছোঁয়া ছাঁদে আসলো।

মেঘলা তখনো ঘুমাচ্ছে।

ছোঁয়া মেঘলাকে ছাঁদে দেখে প্রথম ভয় পেয়ে ছিলো।
ছোঁয়াঃ এই মেয়ের কি রুমে শান্তিতে ঘুম আসে না! অবশ্য আসবে কিভাবে কখনো চোখে এতো সুন্দর রুম দেখেছে!.? হুট করে তো আর এতো ভালো রুমে ঘুম আসবে না। লোভী মেয়ে একটা! দেখলেই বিরক্ত লাগে।

মহুয়া একবার মেঘলার দিকে তাকালো। ছোঁয়াকে মুখ বন্ধ রাখতে বললো। ওর কথার শব্দে মেয়েটার ঘুম ভেঙে যাবে।

ছোঁয়া বুঝে পায় না এই মেয়ের প্রতি এতো আদিখ্যেতা দেখানোর কি আছে.?? এই মেয়ের জন্য আজ ওর ভাই বাড়ি ছাড়া, বড় মামি ভালো নেই। সামনে আরও কি কি সমস্যা যে এই মেয়ে তৈরি করে আল্লাহই জানে।

________

আমেনা বেগম অনেক খুশি বড় ছেলে বাড়ি ফিরে এসেছে। নিজ হাতে ছেলের পছন্দের সব কিছু রান্না করলেন।

সবাই এক এক করে নিচে নেমে আসলো।

আহনাফ দাদিজানকে খাবার, মেডিসিন খাইয়ে নিচে নেমে আসলো৷

আজাদ চৌধুরীকে বসে থাকতে দেখে উনার পাশে গিয়ে বসলো।
আহনাফঃ আব্বু আপনি মনে হচ্ছে আমাদের থেকে কিছু লুকাচ্ছেন!.?
আজাদ চৌধুরীঃ এমনটা কেনো মনে হচ্ছে তোমার.?
আহনাফঃ আমি খেয়াল করছি আপনি সব সময় টেনশনে আর ভয়ের মধ্যে থাকছেন!।
আজাদ চৌধুরীঃ তুমি ভুল ভাবছো।
আহনাফঃ মেঘলা মেয়েটার বিষয়টা আপনি যতোটা সাধারণ সবার সামনে দেখাচ্ছেন ততোটাও নয়। মেয়েটা কে.? আর কে পাঠিয়েছে.?? কেনোই বা পাঠিয়েছে..? এতে লোকটার লাভ কি.?কে সেই লোক.? তার সাথে আমাদের কিসের শত্রুতা.?
আজাদ চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,’ এতো কিছু তোমার ভাবতে হবে না। নিজের হসপিটালে মন দাও আর সাবধানে সব কিছু দেখা শোনা করো। তোমাদের আর এই পরিবারের নিরাপত্তার জন্য এখনো তোমার আব্বু বেঁচে আছে।’

আহনাফ স্থির চোখে তাকিয়ে রইলো আজাদ চৌধুরীর দিকে। আজাদ চৌধুরী মুখে কিছু না বললেও আহনাফ ঠিক বুঝতে পারছে কিছু তো একটা রহস্য লুকিয়ে আছে।

খাবার টেবিলে মেঘলা ছাড়া সবাই বসে আছে।

আমেনা বেগম সব কিছু এগিয়ে দিচ্ছেন।
আজাদ চৌধুরীঃ শ্রাবণ কিছু দিন অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কিছুদিন বাসায় থাকো বন্ধুদের সাথে সময় কাটাও।
শ্রাবণ খাবারের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আজাদ চৌধুরীর দিকে তাকালো,’ আমি ঠিক আছি আজ থেকে অফিসে আসবো।’
আজাদ চৌধুরীঃ আমি নিষেধ করেছি।
শ্রাবণঃ আমি এখন ছোটো বাচ্চা নেই আপনার সকল সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপিয়ে দেওয়া বন্ধ করুন!!..
আজাদ চৌধুরীঃ আমি কিছু চাপিয়ে দিচ্ছি না তোমার ভালোর জন্য বলছি।
শ্রাবণঃ অনেক ভালো বুঝেছেন এখন আমার ভালো আমাকে বুঝতে দেন।
আজাদ চৌধুরী চুপ করে ছেলের দিকে তাকিয়েরইলেন৷ বুঝতে পারলেন উনার উপর ছেলের অনেক অভিমান জমে গেছে।

শ্রাবণ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে উঠে গেলো। বড় বড় পা ফেলে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।

_______

শ্রাবণ রুমে এসে শার্ট খুলে বিছানায় ফেলে দেয়ালে স-জোরে একটা ঘুষি মারলো। বুকের ভেতর কিছু একটা নেই মনে হচ্ছে। ভীষণ খালি খালি লাগছে৷ চুল খামচে ধরে বিছানায় বসে পড়লো। কেমন জীবনটাই এলোমেলো হয়ে গেছে। এই এলোমেলো জীবনে সে আর কাউকে চায় না। কিন্তু বেহায়া মন মানতে চায় না নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি এতো মায়া, টান কেনো…? কেনো দেখলেই বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যাথা হয়!.?

পর্দার আড়ালে লুকিয়ে আছে মেঘলা। রুমে এসে ছিলো নিজের কাপড় নিতে। কাপড় হাত দিতেই বুঝলো শ্রাবণ আসছে ভয়ে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে আছে। এখন তো এই ছেলের রাগ দেখে বের হতে আরও ভয় লাগছে।

শ্রাবণ পাশে টেবিল থেকে একটা ফাইল তুলে নিলো। হঠাৎ চোখ আটকালো পর্দার নিচে এক জোরা পায়ের দিকে।

শ্রাবন কিছু সময় তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে বলে উঠলো, ‘ পর্দার আড়াল থেকে বের হয়ে আসো।’
গুণে গুণে পাঁচ মিনিট চলে গেলো মেঘলা বের হলো না।
শ্রাবণ দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ বের হতে আর এক মিনিট দেরি হলে গুণে গুণে ছয়টা থাপ্পড় পড়বে গালে।’

থাপ্পড়ের কথা শুনে সাথে সাথে মেঘলা বের হয়ে গেলো।
শ্রাবণঃ কি চুরি করতে এসে ছিলে..?
মেঘলাঃ আমি চুরি করতে আসিনি।
শ্রাবণ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো, ‘ তাহলে কি আমাকে দেখতে এসে ছিলে..?’
মেঘলাঃ আপনি দেখতে অতোটাও হ্যান্ডসাম নন যে আপনাকে দেখতে রুমে এসে লুকিয়ে থাকবো!..
শ্রাবণ ভীষণ রেগে গেলো। স্কুল,কলেজ, ভার্সিটিতে কতো মেয়ে ওর জন্য পাগল ছিলো আর এই সামান্য বস্তির অশিক্ষিত মেয়ে কিনা খুব সুন্দর করে ওকে অপমান করে ফেললো‌!..? শ্রাবণ নিজেকে বুঝালো ” বস্তির মেয়েদের চয়েস আর কতো টুকু ভালো হবে শ্রাবণ তুই এই মেয়ের কথায় রেগে যাচ্ছিস!!.?”

শ্রাবণঃ তাহলে এই রুমে কি..? আমি কাল রাতে বলে দিয়েছি এই রুমে তোমার ছায়াও জেনো না দেখি!।
মেঘলাঃ কাপড় নিতে এসে ছিলাম।
শ্রাবণঃ শুধু কাপড় নয় সব কিছু নিয়ে বের হয়ে যাও। তোমার গায়ের গন্ধ ও জেনো বাতাসের সাথে এই রুমে না থাকে।

মেঘলা চুপচাপ সব কিছু নিয়ে বের হয়ে গেলো। এখানে ঝগড়া ঝামেলা করে লাভ নেই বস্তিতে যেতে হবে অনেক কাজ বাকি।
যাওয়ার আগে বলে উঠলো, ‘ আমার শরীর থেকে আপনার মতো বিশ্রী গন্ধ আসে না মাতাল লোক।’

________

মহুয়া, ছোয়া কলেজের উদ্দেশ্য বের হলো।

আজাদ চৌধুরী নির্জন কে ওদের নিয়ে যাওয়া আবার ছুটির পর নিয়ে আশার কাজ দিলো। কিন্তু তাতে রাজী হলো না ছোঁয়া। ছোঁয়া কিছুতেই এই নির্জনের সাথে যাওয়া আশা করবে না।

নির্জন ও বলে দিলো এই ছোঁয়া কটকটি কে সাথে নিবে না।

অনেক ঝামেলার পর সিদ্ধান্ত হলো যাওয়ার সময় আহনাফের সাথে যাবে আশার সময় নির্জন নিয়ে আসবে।

মহুয়া তো প্রচুর রেগে আছে আহনাফের উপর বেয়াদব লোক কাল রাতে ওকে মিথ্যা বলে ভয় দেখিয়েছে। সকালে মহুয়া ছোঁয়া কে জিজ্ঞেস করে ছিলো। ছোঁয়া তো মহুয়ার কথা শুনে প্রচুর হেঁসে ছিলো।

আহনাফ গাড়ি নিয়ে ওদের জন্য অপেক্ষা করছে।

মহুয়া শুভ্র রঙের সেলোয়ার-কামিজ পড়েছে, চুল গুলো বেনি করে এক পাশে রাখা। বাড়ি থেকে বের হয়েছে।
আহনাফ একবার তাকিয়ে চশমা ঠিক করে গাড়িতে বসে পড়লো।

ছোঁয়া, মহুয়া পেছনে বসতেই আহনাফ বলে উঠলো, ‘ আমাকে দেখে কি তোর ড্রাইভার মনে হয় ছোঁয়া!..? ‘

ছোঁয়াঃ আমাদের জন্য হয়ে যাওও ভাই। শ্রাবণ ভাইয়া সব সময় আমাদের এক সাথে বসতে দিয়েছে।
আহনাফঃ আমি শ্রাবণ নই। একজন সামনে চলে আয়।
ছোঁয়াঃ তুমি তো জানো সামনে বসলে আমার মাথা ঘুরায়, শরীর খারাপ লাগে, বমি আসে।

আহনাফ মোবাইল ছোঁয়ার হাতে দিয়ে বলে উঠলো, ‘ তাহলে পেছনে বসে গেইম খেল আর পাশের জনকে সামনে চলে আসতে বল।
মহুয়াঃ একদম মোবাইলের লোভ দেখাবেন না আমি আপনার সাথে বসবো না। ছোঁয়া সামনে যাওও।
ছোঁয়াঃ তাহলে আজ আর কলেজ না হসপিটাল যেতে হবে।
মহুয়াঃ তাহলে চলো রিক্সা দিয়ে যাই আমরা।
ছোঁয়াঃ ভাই রেগে যাবে।
মহুয়াঃ আমি আছি।

আহনাফ এতোক্ষন ওদের কথাগুলো চুপ করে শুনলো।এবার গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ যে গাড়ি থেকে এক পা নিচে রাখবে তাকে আজ হেঁটে কলেজ যেতে হবে!!..।
ছোঁয়া বাধ্য মেয়ের মতো সামনে বসতে গেলে আহনাফ নিষেধ করে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

মহুয়া বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো।

আহনাফ ওদের কলেজ গেইট নামিয়ে চলে গেলো।
কলেজে আসতেই আরেক ঝামেলা এসে সামনে দাঁড়ালো।

রনি দলবল নিয়ে মহুয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
ছোঁয়াঃ এই সমস্যা কি তোর..?
রনিঃ তোর সাথে আমার কোনো সমস্যা নেই শালিকা, বোন জিজুর মাঝে কাবাবে হাড্ডি না হয়ে গুস্ত হওয়ার চেষ্টা কর।
ছোঁয়া লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে হাসলো।, ‘ কাক ও আজকাল দেখি নিজেকে ময়ূর ভাবতে শুরু করেছে গুড! অনেক জোক্স শুনলাম এবার রাস্তা ছাড়।’
রনি সিগারেটে আগুন জ্বালিয়ে মহুয়ার দিকে তাকালো। মাথা নিচু করে ভদ্র মেয়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
রনিঃ আমার বিষয় কি ভাবলে.?
ছোঁয়া কিছু বলার আগেই রনি ইশারায় একটা কে কিছু বললো। কালো চিকনা একটা ছেলে ছোঁয়ার মুখে টেপ মেরে দিলো। হাতগুলো শক্ত করে ধরে বললো” আগে বসের সাথে মেডামের কথা শেষ হোক।”

মহুয়া তখন মাথা নিচু করে আছে।
রনিঃ দেখ আমি একটা কথা সোজাসাপটা কইয়া দেই ভালোই ভালো বিয়ে করতে রাজি হয়ে যা, না হয় এই রনি এমন অবস্থা করবো লোকের সামনে মুখ দেখাইতে পারবি না। রনির চোখ শিকারীর চোখ। বলেই বিশ্রী হাসি দিলো। যা চাই নিজের করেই ছাড়ি।

ছোঁয়া ছুটার চেষ্টা করেও লাভ হলো না চিকনার শরীরে এতো শক্তি!

মহুয়া রনির দিকে তাকাতেই রনি বলে উঠলো, ‘ এভাবে তাকিয়ে লাভ নাই রনি ভয় পায় না আরও প্রেমে পড়ে, মুগ্ধ হয়,নিজের করবার ইচ্ছে জাগে।’

মহুয়া ব্যাগটা রনির এক চেলার হাতে রাখলো। তারপর ঠাসস ঠাসস করে রনির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার গালে কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে, ছোঁয়ার হাত ধরা ছেলেটার গালেও মারলো। রনির চুপচাপ তাকিয়ে দেখতে লাগলো। মহুয়া রনির দিকে তাকালো কিছু সময় তাকিয়ে পা থেকে জুতা খুলে রনির গালে মারতে শুরু করলো।
কেউ ভাবতেও পারেনি এমন কিছু হবে!!৷ রনিও হয়তো কল্পনাও করেনি। এতোক্ষন রনির ছেলেদের মেরেছে রনি কিছু বলেনি, এখন রনিকে মারছে রনির ছেলে গুলো দর্শকের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছে। মানে সমানে সমান!! মহুয়ার দিকে পুরো কলেজের স্টুডেন্ট অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মহুয়া জেনো নিজের হুসে নেই। রনির এখন মনে হচ্ছে ওরসামনে সামান্য একটা মেয়ে নয় ওর মৃত্যু দাঁড়িয়ে আছে। একটা মেয়ের সামনে আজ সে বিড়াল। মেয়েদের শরীরে এতো শক্তি!.?

মহুয়াঃ লজ্জা, ভয় থাকলে আর দ্বিতীয় বার এই কলেজের আশেপাশে তোকে দেখবো না।

সব ছেলে মেয়েরা এক সাথে হাত তালি দিতে লাগলো।
________

আহনাফের রাস্তায় এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেলো। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অনেক কথা বলে গাড়ি রেখে রেস্টুরেন্টের দিকে যাচ্ছিলো।

বিকট শব্দ শুনে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো ওর গাড়িকে বড় একটা ট্রাক ধাক্কা মেরেছে। গাড়িটা দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ে একদম ভেঙে মুচড়ে আগুন ধরে গেছে।

আহনাফ স্তব্ধ হয়ে শুধু তাকিয়ে রইলো।

চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-০৭

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_7
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

শ্রাবণ আর আহনাফ পাশাপাশি এক নির্জন নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে। একটু পর অন্ধকার নেমে আসবে।

আজ এক সপ্তাহ শ্রাবণ বাসায় আসে না৷ আমেনা বেগম ছেলের টেনশনে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলেন। আহনাফ তন্নতন্ন করে সারা শহর খুঁজেছে, এক পর্যায় খুঁজতে খুঁজতে শ্রাবণের বন্ধুর বাসায় পেলো৷

আহনাফঃ এভাবে নিজেকে আড়াল করে নিলে কি সব আগের মতো হয়ে যাবে..?
শ্রাবণ কিছু না বলে চুপচাপ পানির ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
আহনাফের ভীষণ রাগ হলো। এভাবে চুপ করে থেকে কি বুঝাতে চাচ্ছে!..??
আহনাফ আবার বলে উঠলো, ‘ আম্মু তোমার জন্য টেনশন করে। দাদিজান বার বার তোমার কথা জিজ্ঞেস করে ‘
শ্রাবণ হাসলো।
আহনাফ ভাইয়ের কষ্টটা বুঝতে পারছে।
আহনাফঃ নিজের মনের সব কথা চিৎকার করে এই নদীর তীরে বলে মনটা হাল্কা করো৷ যা হয়েছে ভুলে যাও। তখন চুপ করে মুখে তালা মেরে ছিলে এখন এমন লুকোচুরি খেলা বন্ধ করে বাসায় চলো।

শ্রাবণঃ চিৎকার করে নদীর তীরে সব বললেই কি আবার সব আগের মতো হয়ে যাবে..?
আহনাফঃ দিন দিন কি ছোটো বাচ্চা হয়ে যাচ্ছো..?
দুইভাই অনেক কথা বললো। শ্রাবণ বললো সে রাতে বাসায় আসবে আহনাফ জেনো চলে যায়।

শ্রাবণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নদীর বুকে ভয়ে যাওয়া একের পর এক ঢেউয়ের খেলা।

নদীর স্রোত, সময় আর মানুষের জীবন যা দ্বিতীয় বার ফিরিয়ে আনা যায় না।

____________

এই এক সপ্তাহে মহুয়া দুইটা টিউশন ঠিক করেছে। সকালে একটা, সন্ধ্যায় আরেকটা। আরও একটার জন্য চেষ্টা করছে।

আজ সন্ধ্যায় টিউশন শেষ করতে একটু দেরি হয়ে গেলো। বাহিরে অন্ধকার হয়ে গেছে।

একটা গলি থেকে বের হয়ে সোজা হাঁটা শুরু করলো। একটু সামনে যেতেই মনে হলো ওর পেছনে কেউ আসছে।
ভয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। পা চালানোর শক্তি ফুরিয়ে গেছে পেছন ফিরে দেখলো না কেউ নেই। হঠাৎ মনে হতে শুরু করলো ভূত নয়তো!!.?
দ্রুত হাঁটা শুরু করলো আরেকটু সামনে গিয়ে আবার থেমে গেলো কেউ কি ওকে ফলো করছে!..? আস্তে আস্তে পেছন ফিরে সাহস করে বলে উঠলো, ‘ কে কে ওখানে!.? সাহস থাকলে সামনে আসো! দুর্বল, ভীতুদের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে ফলো করছো কেনো কাপুরুষ।’

ল্যামপোস্টের আলোয় একটা ছায়া দেখলো। গলির আড়াল থেকে একটা ছেলে বের হয়ে আসলো।

মহুয়া উপর দিয়ে শক্ত থাকলেও ভেতর ভেতর ভয় পেয়ে গেলো। এখানে কি একজন নাকি আরও আছে!.?

ছেলেটা ধীর পায়ে মহুয়ার সামনে ব্যাস দূরত্ব রেখে দাঁড়ালো।

মহুয়া ভালো করে ছেলেটার দিকে তাকালো। লম্বা, কালো, চুল এলোমেলো, শার্টের উপরের দুইটা বোতাম খুলা, হাতে কিসের পুতির মালা, পাক্কা বখাটে ছেলে। ছেলেটাকে দেখে চিনতেও ভুল করলো না মহুয়া। এই ছেলের জন্যই না বুঝে আহনাফের গায়ে হাত তুলে ছিলো সে।

মহুয়া রেগে বলে উঠলো,’ আপনি আমার পিছু কেনো করছিলেন!..?’
~ কখন.? আমি তো এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম।
মহুয়াঃ মিথ্যা কথা আমার পছন্দ না। আমি সব সময় খেয়াল করছি কেউ আমাকে ফলো করছে আর সেটা আপনি আমি নিশ্চিত।
~ হ্যাঁ করছি তো..? আরও করবো। এখন থেকে ফলো নয় সামনাসামনি দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে কথা বলবো।
মহুয়াঃ আপনাদের মতো বখাটে ছেলেদের কাজেই এটা। যখন যেই মেয়ে দেখেন তাদের জীবন শেষ না করা অবদ্ধি শান্তিতে নিশ্বাস অব্ধি নিতে দেননা। আমার রাস্তা ছেড়ে দাঁড়ান।
~ আমি অন্য প্রেমিকদের মতো ঘুরায় কথা কই না। আমি সোজাসাপ্টা বলে দেই তোরে আমার ভাল্লাগছে। তোর সাথে প্রেম না আমি তোরে বিয়ে করমু। প্রমিজ তুই আমারে বিয়ে করলে আমি আর কোনো মেয়ের দিকে তাকামু না। ভালো না হয় পড়েই বাসিস আর ভালো না বাসলেও সমস্যা নাই আমি তো বাসি এটাই যথেষ্ট।

মহুয়ার রাগে শরীর কাঁপতে শুরু করলো।
মহুয়াঃ রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ান।
~ আমি উত্তরের অপেক্ষা করমু। তোরে রাগলে আরও বেশি সুন্দর লাগে।
মহুয়া রেগে ঠাসস করে রনির গালে একটা থাপ্পড় মেরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ রাস্তা ছাড়েন না হয় শুধু হাত নয় পায়ের জুতাও চলবে।’

রনি সরে যায় রেগে যাওয়ার বদলে মুচকি হেঁসে বলে উঠলো, ‘ রনির বউ রনির মতোই সাংঘাতিক । ‘

মহুয়া ব্যাগটা শক্ত করে ধরে দ্রুত মেইন রাস্তায় চলে আসে।
রনিও মহুয়ার পেছন পেছন আসছিলো তবে অনেকটা দূরে।

মহুয়া সামনে নির্জন কে ফোনে কথা বলতে বলতে এদিকে আসতে দেখে দ্রুত ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

নির্জন হঠাৎ ওর সামনে মহুয়াকে দেখে ভড়কে যায়। মুখ ফস্কে বলে ফেলে,’ ভাবি আপনি এখানে.!..? ‘

মহুয়া চোখ বড় বড় করে তাকাতেই নির্জন হাত দিয়ে মুখ চেপে বলে উঠলো, ‘ গালতিসে মিস্টিক আপু। আপনি এখানে..? ‘

মহুয়া আশেপাশে তাকায় না রনি নেই। শান্তির একটা নিশ্বাস ফেলে বলে উঠলো, ‘ টিউশন থেকে আসছিলাম।’

নির্জন সতর্ক চোখে মহুয়ার তাকানো খেয়াল করে। কিছুটা দূরে একটা ছেলের ছায়া দেখে মহুয়ার এমন ভয়ার্ত চেহারার মানে বুঝতে পারে।

নির্জনঃ চলুন আমিও বাসায় যাবো।
মহুয়াঃ চলুন।
নির্জনঃ আইসক্রিম, ফুচকা খাবেন.?
মহুয়াঃ না ধন্যবাদ।
নির্জনঃ আপনি টিউশন নিয়েছেন.?
মহুয়াঃ হুম।
নির্জন আরও অনেক কথা জিজ্ঞেস করলো। কথা বলতে বলতে বাড়িতে চলে আসলো।

নির্জন সোফায় বসলো আর মহুয়া নিজের রুমে চলে যাচ্ছিলো।
হালিমা বেগম নির্জনের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, ‘ কিরেএএ তুই না ফ্রেন্ডের বাসায় যাচ্ছি বললি আবার চলে আসলি যে.শরীর খারাপ .?’

মহুয়া বুঝলো ওর জন্যই নির্জন ফ্রেন্ডের বাসায় না গিয়ে আবার বাসায় ফিরে এসেছে।

______

মেঘলা রুমে থেকে বিরক্ত হচ্ছে। এখন সে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিতো বা কারো মানি ব্যাগ চুরি করার ফন্দি আঁটত।কিন্তু এখন বিয়ে নামের কারাগারে বন্ধি হয়ে রুমে বসে বসে বোরিং হচ্ছে। রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে৷

নির্জন সিঁড়ির দিয়ে তাকিয়ে বোকার মতো তাকিয়ে রইলো।

শ্রাবণের শার্ট আর টাউজার পড়ে নিচে চলে এসেছে মেঘলা। চুল খোঁপা করা, হাতে ঘড়ি,গলায় রুপার ছোট্ট রকেট, শ্যামবর্ন গায়ের রং, ঠোঁটের নিচে কালো একটা তিল, লম্বায় ৫.৫ হবে। দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে। একদম মনে হয়না বখাটে মেয়ে। তখনি নির্জনের মনে পড়ে আজ থেকে ঠিক দুই মাস আগের একটা কাহিনি…..

নির্জন বন্ধুদের সাথে ভার্সিটির সামনে আড্ডা দিচ্ছিলো হুট করে কোথায় থেকে দৌড়ে একটা মেয়ে এসে ওর উপর পড়ে যায়।
নির্জন মাথায় প্রচন্ড ব্যথা পেয়ে হাত দিয়ে চেপে ধরে। রেগে মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে তাকায়।শার্টের উপর হাফ কটি,প্যান্ট, চুলগুলো উপরে করে জুটি বাঁধা, ঠোঁট গোলাপি, চোখ টানাটানা, নির্জন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েটার দিকে ।
মেয়েটা বার বার বলতে থাকে সরি! সরি! আমি সত্যি সরি ভাইয়া। ব্যাথা পেয়েছেন.?। আমি দেখতে পাইনি ফ্রেন্ডের জন্য এমনটা হলো বলেই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে চলে যায়।

নির্জনের হুসস ফিরে বন্ধুদের ধাক্কায় সে আশেপাশে মেয়েটাকে খুঁজতে শুরু করে। সারা ভার্সিটিতে খুঁজেও আর এই মেয়েটিকে কোথাও পায় না।

মন খারাপ করে বাসায় এসে পকেটে হাত দিয়ে দেখে ওর মানি ব্যাগ টাকা, মোবাইল কিছুই নেই৷ সে ভেবে ছিলো মেয়েটিকে খুঁজতে গিয়ে হয়তো সব হারিয়ে ফেলেছে৷ আজ চোখের সামনে মেয়েটিকে দেখে তার আসল পরিচয় জেনে নির্জন বুঝতে পারলো আসলে সেদিন সবটা ইচ্ছে করেই হয়ে ছিলো। আর দশ হাজার টাকা, মোবাইল সব এই মেয়ে চুরি করে ছিলো। কে জানতো একদিন তাকে ফকির বানানো মেয়েটিই তার ভাইয়ের বউ হয়ে যাবে। শ্রাবণ বাসায় আসলে ভীষণ কড়া ভাবে সাবধান করে দিতে হবে সাংঘাতিক মেয়ে মানুষ থেকে দূরে টাকা, মোবাইল রাখতে।

হাতের তুরির শব্দে ভাবনা থেকে বের হয় নির্জন। মেঘলা ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
নির্জন ঠিক হয়ে বসতেই মেঘলা ওর পাশে বসলো।
নির্জনঃ তুমি আমাকে চিনতে পেরেছো.?
মেঘলা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, ‘ হ্যাঁ আমার দেবর।’
নির্জন নিজেকে একটু বড় বড় করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,’ ভার্সিটিতে আমার টাকা, মোবাইল চুরি করে ছিলে!সেটার কথা বলছি.’
মেঘলাঃ কি বলছেন স্যার, আমি তো এই প্রথম আপনাকে দেখছি। আর আপনি কিনা আমাকে চোর বানিয়ে দিচ্ছেন!.?
নির্জন অবাক হয়ে বললো,’ স্যার..? আর এই প্রথম! তুমি তো সকালেও আমাকে দেখলে।

মেঘলা বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। মুখে ইনোসেন্ট ভাব করে বলে উঠলো, ‘ আপনার ভাইয়ার চিন্তায় সব ভুলে যাচ্ছি।’
নির্জনঃ কিইই!..? ভাইয়ার জন্য আপনি চিন্তা করছেন.?
মেঘলাঃ এভাবে অবাক হচ্ছেন কেনো! বিয়ে যেভাবেই হোক তিন মাস উনি আমার স্বামী একজন বউ হিসেবে তো টেনশন হবেই। আমি অনেক দয়াবতী মেয়ে।

নির্জন ভাবলো,’ মায়াবতী শুনেছি কিন্তু এই প্রথম শুনলাম দয়াবতী। ‘

পেছন থেকে আমেনা বেগম রেগে হুংকার দিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমার বাড়িটাও কি এখন বস্তি হয়ে যাবে! এই বাড়িতে থাকতে হলে ভদ্র মেয়েদের মতো থাকতে হবে। এইসব কাপড় পড়ে চলাফেরা করা যাবে না। না হয় রুমেই জেনো বন্ধি হয়ে থাকে।

মেঘলা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
আমেনা বেগমঃ ডাইনীর মতো দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে গিয়ে কাপড় চেঞ্জ করো। এটা ভদ্রলোকের বাড়ি বস্তি, বখাটে মেয়েদের বাড়ি নয়। তোমার জন্য আমার বাকি দুই মেয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। ওদের থেকে দূরেও থাকবে। ছেলে দেখলেই তোমাদের মতো কিছু মেয়েদের চেহারার রং বদলে যায়। এই বাড়ির ছেলেদের থেকেও দূরে থাকবে। রুম থেকে প্রয়োজন ছাড়া বের হবে না।

মেঘলা বিরক্ত হয়ে আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে বলে উঠে,’ বাংলা ছবির দজ্জাল শাশুড়ী রিনা খান আমার কপালে জুটলো। মাত্র তিনটা মাস সহ্য করে নে মেঘলা।

নির্জন পকেটে হাত দিয়ে দেখলো ওর মানিব্যাগ নেই। শান্ত চোখে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেঘলার যাওয়ার দিকে। কারন ওর মানি ব্যাগে মাত্র একশো টাকা আছে।
________

আহনাফ রুম থেকে বের হয়ে মোবাইল নিয়ে ছাঁদে চলে আসলো৷ কিছুক্ষন কথা বললো কারো সাথে।

ছাঁদের রেলিঙের উপর বসে আছে মহুয়া । আকাশের দিকে তাকিয়ে কান্না করছিলো। আহনাফের কন্ঠ শুনে ফিরে তাকালো৷

আহনাফ কারো সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে। ইংরেজিতে কথা বলছে যার জন্য বুঝতে অসুবিধা হলো না আহনাফ একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে যার নাম হিয়া। হয়তো গার্লফ্রেন্ড।

আহনাফ কথা শেষ করে রেলিঙের দিকে তাকিয়ে দেখলো কেউ বসে আছে। ঘোমটা দেওয়া দেখেই বুঝলো এটা মহুয়া।

আহনাফ না চাইতেও গিয়ে মহুয়ার থেকে দূরত্ব রেখে দাঁড়ালো।

আহনাফঃ সুইসাইড করার পরিকল্পনা করছেন..?
মহুয়াঃ জ্বি হেল্প করুন। এখান থেকে নিচে পড়লে ঠিক কতোক্ষন লাগবে দেহ থেকে প্রাণ যেতে!.?’
আহনাফ একবার নিচের দিকে তাকালো আবার মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ এখান থেকে নিচে পড়লে প্রাণ যাবে কে বলেছে..? এখানে থেকে নিচে পড়লে আপনার হাত, পা ভাঙবে, মাথা ফাঁটবে এর থেকে বেশি কিছু না। আপনি কেনো ম’রার পরিকল্পনা করছেন..?

মহুয়াঃ আমি একবারও বলেছি আমি ম’রার জন্য এসেছি!.?.
আহনাফঃ তাহলে নেমে আসুন।
মহুয়াঃ এভাবেই ভালো লাগছে।

আহনাফ মহুয়ার দিকে এগিয়ে গেলো। মহুয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই আহনাফ মহুয়াকে ধাক্কা দিলো।

মহুয়া ভয়ে আহনাফের হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো।মাথা থেকে ওড়না গিয়ে বাগানে পড়লো।
আহনাফ মুচকি হেঁসে মহুয়ার হাতটার দিকে তাকালো। চুল গুলো খুলে গেছে বাতাসে উড়ছে, ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মহুয়া বলে উঠলো, ‘ কি করছেন আহনাফ উপরে তুলুন।’
আহনাফঃ বসার আগে ভেবে বসা উচিত আমরা কোথায় বসছি, যেদিকে পা বাড়াচ্ছি জায়গাটা আমাদের জন্য কতোটা সেফটি.?। অন্ধের মতো জীবনের ঝুঁকি নিতে নেই।একজন অন্ধ লোক ও পা বাড়ানোর আগে লাঠি দিয়ে বার বার বুঝার চেষ্টা করে আমি সঠিক পথে পা দিচ্ছি তো!.? এখন যদি এখানে আমি না থাকতাম .? ব্যাচুটে নামতে গিয়ে কিংবা পেছলে পড়ে যেতেন হাত ধরে বাঁচার জন্য কাউকে পেতেন না। কিছু করার আগে একবার ভালো করে ভেবে নিবেন লাস্টে ফলাফল কি হবে.?।

মহুয়াঃ আগে তো উপরে তুলুন না হলে এবার সত্যি গেলাম পড়ে। জ্ঞান দেওয়া বন্ধ করুন।
আহনাফ মহুয়াকে উপরে নিয়ে আসে। মহুয়া ভয়ে এখনো আহনাফের হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আছে।ভীষণ ভয় পেয়েছে।

আহনাফঃ এবার আমার হাত ছাড়ুন।
মহুয়া রেগে এক আকাম করে বসলো। আহনাফের বুকে রেগে একের পর এক থাপ্পড়, কিল মারতে শুরু করলো।
মহুয়াঃ বেয়াদব লোক আরেকটু হলে আমি পড়ে যেতাম।আমার থেকে দূরে দূরে থাকবেন। বলে উঠতে গিয়ে ধপাস করে আহনাফের উপরেই পড়ে গেলো।

আহনাফ মনে মনে হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো। নিজে বললো দূরে থাকবেন আর এখন নিজেই ওকে জড়িয়ে ধরে আছে।মনে মনে হাসলেও উপরে হাসি চেপে রাখলো। মহুয়ার সামনে হাসলে নিশ্চয়ই এখন আরও রেগে যাবে মেয়েটা।

মহুয়া লজ্জায় জলদি সরে গেলো। চুল গিয়ে আহনাফের ঘড়ির সাথে পেচিয়ে গেলো। মহুয়ার তো ইচ্ছে করছে চুল গুলোই কেটে ফেলতে।
চুল টানাটানি শুরু করলে আহনাফ মহুয়াকে থামিয়ে আস্তে ধীরে চুলগুলো ছাড়িয়ে বলে উঠে,’ এতো বড় চুল সামলান কিভাবে..? ‘
মহুয়াঃ যেভাবে এতোক্ষন আপনাকে সহ্য করেছি!! বলেই চুলগুলো ওড়নার মতো সামনে এনে দ্রুত পায়ে ছাঁদ থেকে নেমে গেলো৷

মহুয়া যেতেই আহনাফ বলে উঠলো, ‘ মেয়েটা আবার আমাকে অপমান করে গেলো..? আমি কি এতোটাই বোরিং যে আমাকে সহ্য করা চুলের মতো হয়ে গেলো!!.? বেয়াদব মেয়ে!!..

___________

গভীর রাতে দরজায় কড়া শুনে চোখ ঢলতে ঢলতে দরজা খুললো মেঘলা। এতো রাতে কে ওর রুমের সামনে!.?

দরজা খুলেই শ্রাবণ কে দেখে অবাক হয়৷ বিয়ের দিনের পর আজ দেখলো।
শ্রাবণ মেঘলার পাশ দিয়ে যেতেই মেঘলার চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসলো৷ কারণ শ্রাবণের শরীর থেকে বিশ্রী গন্ধ আসছে নিশ্চয়ই উল্টা পাল্টা কিছু খেয়ে এসেছে।

মেঘলা রেগে শ্রাবণের সামনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ এ্যাঁই মাতাল আমার রুম থেকে বের হ!.’
শ্রাবণ চোখ ঘুরিয়ে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ কি! কি বললি আরেকবার বল..? কে মাতাল.? তুই এই রুমে কেনো..? বের হ আমার রুম থেকে!।
মেঘলাঃ মাতাল কে মাতাল বলবো না কি সাধু বাবা বলবো.? এই রুম আমাকে দেওয়া হয়েছে রুম থেকে বের হন।
শ্রাবণ মেঘলার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে বলে উঠলো, ‘ আই ওয়ান্ট ডিভোর্স! একটা বস্তির, অশিক্ষিত, চোর, ছিনতাইকারীর সাথে আমি এক ছাঁদের নিচে থাকতে পারবো না আর না কখনো এক রুমে!। তোর মতো মেয়ে শ্রাবণ চৌধুরীর নখেরও যোগ্য না,আর না কখনো হয়ে উঠতে পারবে।কাল যখন আমার বন্ধু, পাড়াপ্রতিবেশি আমার বউ দেখতে চাইবে আমার লজ্জায় মাথা কা’টা যাবে। তোকে এই রুমের আশেপাশে দেখলে কি করবো আমি নিজেও জানিনা। আমার রুম আর আমার থেকে দূরে থাকবি।

ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে রেখেছে মেঘলা।

শ্রাবণ ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো মেঘলার।

চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-০৬

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_6
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

( প্রথমেই কিছু কথা বলে নেই।অনেকেই চাচ্ছেন শ্রাবণ নায়ক হোক৷ কিন্তু আবেগ দিয়ে ভাবলে হবে না মহুয়ার জন্য স্ট্রং একটা নায়ক প্রয়োজন। মহুয়ার জীবনে এমন একটি চরিত্র লাগবে যে নিজে তো ধাক্কা দিয়ে গর্তে ফেলবে যেন আঘাতে ঘুরে দাঁড়াতে শিখে বিনা সাহায্যে। তবে অন্য কাউকে অন্যায় করতে দেবে না। শ্রাবণ ওর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছে কখনো জানতে আগ্রহী হয়নি ওর অতীত। আর না ওর সম্পর্কে কিছু। আমি না ভাই ভাইয়ের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি করবো আর না কোনো বন্ধুত্ব নষ্ট করবো। সবটা আস্তে আস্তে ঠিক করে নিবো দুই তিনটা পর্বে একটু সময় দিতে হবে। প্রথমেই যদি ভালোবাসার কথা বলেন তাহলে গল্প শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে। আর আমি গল্প কোনো সিরিয়ালের মতো লিখছি না নিজের মতো করে লেখার চেষ্টা করছি।)

___________

(মেঘলা যার পরিচয় সে নিজেই। মা-বাবা, আত্মীয় স্বজন বলতে কেউ নেই। কুটির বস্তিতে যার বেড়ে উঠা।লোক মুখে শোনা যায় এক্সিডেন্টে ওর মা-বাবার মৃত্যু হয়। ওই বস্তির পাশে এক মহিলা এক বছরের মেঘলা কে খুঁজে পায়৷ তারপর থেকে ওকে নিজের কাছেই রেখে দেয়। বস্তিতে কষ্টে বেড়ে উঠতে শুরু করে। এক সময় ওই বুড়ি মা-রা যায় তারপর থেকে নিজের পেট বাঁচানোর জন্য চোরি, ছিনতাইয়ের পথ বেছে নেয় মেঘলা। ওর আসল পরিচয় এখনো কেউ জানেনা আর মেঘলার নিজেরো কখনো জানতে ইচ্ছে হয়নি।)

ড্রয়িং রুম জুড়ে সবাই চুপচাপ বসে আছে।

আমেনা বেগম মুখে আঁচল টেনে কান্না করছেন।
নিরুপমা ভাবিকে বুঝাচ্ছেন।

শ্রাবণ আনোয়ার চৌধুরীর দিকে ফিরে প্রশ্ন করলো,’ দাদাভাই আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন তো..?’
আনোয়ার চৌধুরীঃ আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে তোমার উপর দাদুভাই। আমি পুলিশ কে কল করছি।

মেঘলা ভয়ে মনে মনে বিড়বিড় করতে শুরু করলো। সাথের সখীরা বার বার নিষেধ করে ছিলো। এতো গুলো টাকা দেখে লোভ সামলাতে পারেনি। লোকে ঠিক বলে লোভে পাপ পাপে জেল খানা।

দূর থেকে ছোঁয়া আর মহুয়া চুপচাপ মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে।
মহুয়া ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ এতো ঝামেলা না করে তোমার ভাই ডাক্তার বলো আবার প্রেগন্যান্সি টেস্ট করাতে, ডিএনএ টেস্ট করাতে তাহলেই ঝামেলা মিটে যায়।

ছোঁয়া খুশিতে মহুয়ার দুই গাল আলতু করে ছুয়ে এটা নিজের আম্মুর কাছে বললো।

নিরুপম বেগম ভাইদের বলতেই সবাই এই সিদ্ধান্ত নিলো৷

মেঘলা বেচারি একটু ফাঁক খুঁজছে পেলেই পালিয়ে যাবে৷ ওকে শুধু একটু ভয় দেখাতে বলে ছিলো কিন্তু এমন ভাবে ফেঁসে যাবে ভাবতে পারেনি। এখন সে কি করবে..? কোনো বাচ্চা টাচ্চা কিছু নেই, কিসের বাচ্চা! এই দ্বিতীয় বার সে শ্রাবণ কে দেখেছে, প্রথম বার দেখেছে ছবিতে আর এখন সামনাসামনি।

_______

অন্ধকার এক রুমে থেকে অট্টহাসিতে কেঁপে উঠল রুমটি। কি ভয়ংকর সেই হাসি।

রুমের বাহির থেকে কেউ দৌড়ে এসে বলে উঠলো, ‘ বস ঝামেলা হয়ে গেছে। ‘

অন্ধকার রুম থেকে কেউ বলে উঠলো, ‘ মোবাইল দে।’

ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে একজন হাতে মোবাইল তুলে দিলো।

” ওই শান্তি নীড়ে আমি অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে ছাড়বো”

শ্রাবণ রেগে চুপ করে বসে আছে। না পারছে মেয়েটাকে কিছু করতে আর না পারছে কাউকে কিছু বলতে। ইচ্ছে তো করছে থাপ্পড়িয়ে দাঁত ফেলে দিতে কিন্তু শ্রাবণ মেয়েদের গায়ে হাত তুলে না তাই চুপ করে বসে আছে।

শ্রাবণের এমন শান্ত আচরণ একদম পছন্দ হলো না মহুয়ার। এ কেমন ছেলে! এতোটা সিরিয়াস মুহূর্তে এতোটা শান্ত কিভাবে আছে.? আস্তে আস্তে করে নিজের রুমে চলে গেলো মহুয়া।

শ্রাবণ নিচের দিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবছে। মেয়েটা হঠাৎ এসে এমন কথা বলার নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে! কে পাঠিয়েছে মেয়েটাকে.???

আজাদ চৌধুরী আহনাফের সাথে কথা বলে ফোন রাখতেই অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো। কল রিসিভ করে কানে দিতেই কেউ বলে উঠলো, ‘ কি বেপার আজাদ চৌধুরী খুব টেনশনে আছো!..???’

কন্ঠটা চিনতে কিছুটা সময় লাগলো কিছু সময় যেতে কন্ঠটা চিনতে ভুল করলো না আজাদ চৌধুরী। ততক্ষণাত আবার নাম্বারটার দিকে তাকালো ১৮বছর পর সেই চিরচেনা কন্ঠ শুনে থমকে গেলেন।
~ হ্যালো আজাদ আমার বন্ধু চিনতে পেরেছো!!..? নাকি এতো বছর পর বন্ধুর কথা শুনে আনন্দে বোবা হয়ে গেছো.? নাকি ভয় পেলে!.? কেমন আছো বন্ধু..?
আজাদ চৌধুরীঃ তুই!! তুই বেঁচে আছিস..?
~ হিহিহি তোদের কি মনে হয়! আমি ম’রে গেছি..? একটু টিভি তো অন কর।

আজাদ চৌধুরী রিমোট হাতে টিভি অন করতেই দেখতে পেলেন টিভিতে শ্রাবণ আর মেঘলার ছবি পাশাপাশি দেওয়া আর সাংবাদিকরা উনাদের কোম্পানির নিচে ঘেরাও করে রেখেছে।

~ কি অবাক হলে!.? একটু পর তোমার বাড়িতেও চলে আসবে বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী শান্তি কোম্পানির মালিকের ছেলেদের একি পতন হচ্ছে!..?

আজাদ চৌধুরীঃ তুই করেছিস এমনটা তাই না!..?
~ এখন তো কেবল শুরু আমার কাছ থেকে যেভাবে এক এক করে সব কেঁড়ে নিয়েছিস তোর জীবন থেকেও সব সুখ শান্তি কেঁড়ে নিয়ে শান্তি নিড়ে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দিবো। এখন তোর ঘর সামলা আবার কথা হবে।

আজাদ চৌধুরী রেগে কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেলো। উনি দপ করে সোফায় বসে পড়লেন৷ কিছু সময় চোখ বন্ধু করে রাখলেন৷ ইতিমধ্যে দারোয়ান এসে বলে গেলো গেইটে অনেক সাংবাদিক দাঁড়িয়ে আছে, ভেতরে আসতে চাচ্ছে।

আজাদ চৌধুরী ছেলের দিকে তাকালেন৷
শ্রাবণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে টিভির দিকে।
মেঘলা টিভিতে এইসব শুনে বলে উঠলো, ‘ সব মিথ্যা কথা এই লোককে আমি চিনি না। আমি চলে যাচ্ছি। সরি আপনাদের বিরক্ত করার জন্য। আমি তো নাটক করছিলাম।’

মেঘলা দ্রুত পায়ে বের হয়ে যেতে নিলে আজাদ চৌধুরী ডেকে দাঁড় করালেন।

আজাদ চৌধুরীঃ কতো টাকা পেয়ে ছিলে.?
মেঘলা মিরাজ চৌধুরীর দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ ৫০হাজার।’

দুইজন সাংবাদিক বাড়ির ভেতর চলে আসলো। এসেই বলতে শুরু করলো, ‘ ম্যাম আপনি বলুন চৌধুরী বাড়ির লোকরা কি আপনাকে মে’রে তারিয়ে দিচ্ছে!..? আমরা আছি আপনার পাশে ভয় পাবেন না সত্যিটা বলুন আমাদের .?’

আজাদ চৌধুরী সাংবাদিকের সামনে গিয়ে রেগে বলে উঠলেন,’ আপনারা আমাদের পারিবারিক বিষয় মাথা না ঘামিয়ে বেড়িয়ে যান। আর আমার পুত্রবধূকে বিভ্রান্ত করবেন না ও এমনিতেই প্রেগন্যান্ট।’

সাংবাদিকঃ শ্রাবণ চৌধুরী কি উনাকে বিয়ে করেছেন..?
আজাদ চৌধুরীঃ জ্বী।
সাংবাদিকঃ কখন, কোন সময়.? প্রমাণ কি.?
আজাদ চৌধুরীঃ এক মাস পর বড় করে আয়োজন করে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে তখন জেনে যাবেন এখন বাসা থেকে বের হন।

দারোয়ান এসে সাংবাদিকদের বের করে দিলো।

বাসার সবাই স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আজাদ চৌধুরীর দিকে।

মেঘলা বিরক্ত হয়ে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ এবার আমি আসি। আমার কাজ এতো টুকুই ছিলো।’

আজাদ চৌধুরীঃ তুমি আজ থেকে এই বাড়িতেই থাকবে। আর বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমি এখনি পুলিশ ডাকছি। সারাজীবনের জন্য কারাগারে বন্ধি হয়ে থাকবে।
মেঘলা রেগে বলে উঠলো, ‘ এটা কি মামা বাড়ির আবদার! আমি এখানে কেনো থাকবো.?’

আজাদ চৌধুরীঃ যতো টাকা কন্টাক্ট করে এখানে এসেছো তার থেকে দ্বিগুণ টাকা দিবো তিন মাস আমার ছেলের বউ হওয়ার অভিনয় করবে তারপর তোমার মুক্তি।

শ্রাবণঃ আব্বু!!.
আজাদ চৌধুরীঃ আর কারো একটা কথাও আমি শুনবো না আমি যা বলবো তাই। রেডি হও একটু পর কাজী আসবে।

শ্রাবণঃ এই মেয়েকে কখনো আমি বিয়ে করবো না!
আজাদ চৌধুরীঃ তিন মাস সহ্য করে নাও।
শ্রাবণঃ আমাকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করবেন না! এটা জীবন কোনো পুতুল খেলা নয়।
আজাদ চৌধুরীঃ তাহলে পারবে সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে..? আজ কে এই মেয়েকে বিয়ে না করলে কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাবে। আমার এতো কষ্টে তিলে তিলে গড়া কোম্পানি, সম্মান সব এক নিমেষেই শেষ ।

শ্রাবণঃ নিজের সার্থের জন্য ছেলের জীবন নষ্ট করে দিচ্ছেন..? আর কে করছে এইসব..?
আজাদ চৌধুরীঃ রুমে গিয়ে রেডি হয় শ্রাবণ।

রেগে নিজের রুমে চলে আসলো শ্রাবণ ।

মেঘলা দাঁড়িয়ে আছে। এখান থেকে বের হলে কারাগারে আর এখানে থাকলে বিয়ে করতে হবে।টাকাও পাবে মাত্র তিন মাসের ব্যাপার। অনেক কিছু ভেবে রাজি হয়ে গেলো।

আজাদ চৌধুরী নিরুপমা কে ইশারা করলো মেয়েটাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
আমেনা বেগম নিজের রুমে গিয়ে ছেলের জন্য কান্না করছেন।এমন ছেলের বউ সব মা’র মেনে নিতে কষ্ট হবে।না আছে পড়াশোনা আর না আছে কোনো পারিবারিক শিক্ষা।

আজাদ চৌধুরী মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে রইলেন। রায়হান ফিরে এসেছে! প্রতিশোধ নিতে চাইবে আজাদ চৌধুরীও ছেড়ে দিবে না। যতো যাই হোক এই পরিবারকে উনি শেষ হতে দিবেন না এটা তো রায়হানের ছোটো একটা চাল মাত্র। রায়হান যে কতোটা ভয়ানক আজাদ চৌধুরী খুব ভালো করে জানেন। ওর নেক্সট পরিকল্পনা নিশ্চয়ই আরও ভয়ংকর কিছু হতে যাচ্ছে।

_____

কাজী আসার পর শ্রাবণ একবার নিচে নেমে এসে ছিলো। বিয়ে পড়ানো শেষ হওয়ার পর বাসা থেকে বের হয়ে কোথায় জেনো বাইক নিয়ে চলে গেছে।

মেঘলাকে শ্রাবণের রুমে বসিয়ে গেলো ছোঁয়া।
মেঘলার ভীষণ খিদে পেয়েছে। রুমের এদিক ওদিকে তাকিয়ে কিছু খুঁজলো। রুমটা খুব সুন্দর পরিপাটি। এতো সুন্দর রুম সে কখনো দেখেনি। দেখবে কিভাবে থেকেছে বস্তিতে।

ছোঁয়া আবার ফিরে এসে একটা শাড়ি রুমে দিয়ে গেলো। কাল এই মেয়ের জন্য কাপড় আনা হবে।

মেঘলা শাড়ি হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখে রেখে দিলো। সামনে আলমারি টান দিয়ে খুলে একটা শার্ট আর প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।

_________

আহনাফ বাসায় এসে বাসার পরিস্থিতি বুঝলো। প্রথম দিন হসপিটালে ভীষণ দখল গিয়েছে ক্লান্ত শরীর নিয়ে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে দাদির রুমে গেলো। দাদির শরীর বেশি ভালো না। হয়তো আজ যা হয়েছে কিছুই উনাকে জানানো হয়নি। এইসব জানলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বেন।

দাদির মেডিসিন, খাবারের কথা জিজ্ঞেস করে টুকটাক কথা বলে বের হয়ে নিচে আসতে নিলে মহুয়ার রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।

ভেতরে ছোঁয়া বলছে,’ আচ্ছা মহুয়া আমার কি ছোটো বোন হিসেবে বাসর ঘরটা একটু সাজিয়ে আসা উচিত না!..?
মহুয়াঃ তুমি দেখেছো কিভাবে বিয়ে হয়েছে! এটাকে বিয়েও বলে না।
ছোঁয়াঃ যাই বলো কবুল তো বলেছে।
মহুয়াঃ হুম আস্তে আস্তে একরুমে থাকতে থাকতে ভালোবাসাটা তৈরি হয়ে গেলেই হয়।
ছোঁয়াঃ থুর ভাবির পেশা কি ছিলো শুনলে না।
মহুয়াঃ মানুষের পেশা নয় তার আচরণ কেমন সেটা লক্ষ করো! সে এমন পথ কেনো বেছে নিয়ে ছিলো সেটা একবার ভাবো! তার অতীত জানতে চাওও ছোঁয়া। সেও আমাদের মতো মানুষ আজ পর্যাপ্ত সব কিছু পেলে সেও আমাদের মতো থাকতো আমাদের থেকে ভিন্ন পথ বেছে নিতো না। এক বেলা না খেয়ে থাকলে কেউ মুখে খাবার তুলে দিবে এমন কেউ নেই মেয়েটার। কয়লা থেকেও হিরে পাওয়া যায়।

ছোঁয়াঃ আমার তো তোমার অতীত জানতে ইচ্ছে হয়।

মহুয়া হেঁসে বারান্দায় চলে গেলো।

বাহির থেকে ওদের সব কথা শুনছিলো আহনাফ। এই মেয়েটা সবার থেকে ভিন্ন। খুব কৌতুহল জাগলো মহুয়ার সম্পর্কে জানতে। আসলেই কি দাদাভাইয়ের আত্মীয় নাকি অন্য কোনো কাহিনী!.? ।কিন্তু এখন নয় আগে এই ঝামেলা শেষ হোক।

মেঘলাকে হালিমা চৌধুরী রুমে খাবার দিয়ে গেলো।

রাতে আর শ্রাবণ বাড়িতে আসেনি। টেনশনে আমেনা বেগমের পেশার বেড়ে গেলো। মাথায় পানি ঢাললো মহুয়া। খুব যত্ন করে খাবার খাইয়ে দিতে চাইলো কিন্তু আমেনা বেগম মুখে কিছু তুললেন না। পেশারের মেডিসিন খাইয়ে রুমে এসে দেখে ছোয়া ঘুমাচ্ছে। ছোঁয়ার পাশে শুয়ে পড়লো।

আজাদ চৌধুরী ড্রয়িং রুমে বসেই রাত কাটিয়ে দিলেন ছেলের জন্য উনারও টেনশনে হচ্ছে। ঠিক আছে তো শ্রাবণ? শান্ত সৃষ্ট ছেলেটার ভাগ্য কেনো এমন হলো!! রায়হান না সুযোগ পেয়ে আবার শ্রাবণের কোনো ক্ষতি করে দেয়। ছেলেটা এখনো আসছে না কেনো.? আজ পরিবার আর কোম্পানির ভালো দেখতে গিয়ে ছেলেটার জীবনে শেষ করে দিলো।

মেঘলা দরজা বন্ধ করে শান্তিতে নিচে ঘুমিয়ে গেলো। ওর কোনো টেনশন নেই। সকালে আবার বস্তিতে একবার যেতে হবে এখন ঘুম প্রয়োজন।

_________

প্রতিদিনের মতো আজও মহুয়া সকালে উঠলো সাথে ছোঁয়া কেও তুলে দুইজন নামাজ পড়ে রুম থেকে বের হয়ে ছাদে গেলো আজ আর বাগানে জায়নি। এই বেয়াদব লোকের মুখোমুখি হতে চায় না মহুয়া।

ছাঁদ থেকে নেমে রুমের সামনে আসতেই আহনাফের মুখোমুখি হয়ে গেলো। আহনাফ ওদের দেখেও না দেখার মতো নিজের রুমে চলে গেলো।

_______

মেঘলা ঘুম থেকে উঠে বাহিরে বের হয়ে আসলো।

ছোঁয়া আর মহুয়া কলেজে যাওয়ার জন্য বের হলো। ছোঁয়া এক নজর মেঘলার দিকে তাকিয়ে গটগট করে মহুয়াকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

মেঘলা ঘুরে ঘুরে পুরো বাড়ি দেখতে শুরু করলো। ঘুরতে ঘুরতে একটা ঘরের সামনে এসে থামলো। ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখলো একটা ছেলে বৃদ্ধ মহিলার হাত ধরে বসে আছে।

_________

একটা ছেলে দৌড়ে এসে বলে উঠলো, ‘ রনি ভাই আকাম তো ঘইট্টা গেছে।’

রনি কলেজের সামনে বসে সিগারেট টান বসিয়ে আকাশের দিকে ধুঁয়া ছেড়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ কি আকাম করছোস!.?’
~ ভাই আমি না জামিলরে ফুলবানোর থাইকা যেই ১৫টা মাইয়া আনতে বলছিলো সেই ১৫টা মাইয়া পালায় গেছে পাঁচ দিন আগে।

রনি পকেট থেকে পিস্তল বের করে ছেলেটাকে চেপে ধরে বিশ্রী গালি দিয়ে বলে উঠলো, ‘ কেম্নে পালাইছে এত্তোগুলো গরু সাথে দিয়ে ছিলাম কিসের জন্য!? মাইয়া গুলোরে তিন দিনের মধ্যে আমার সামনে দেখতে চাই।’

ছেলেটা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে উঠলো, ভাই ওদের মধ্যে একটা মেয়ে জামাল আর তার লগের দুইটারে মে’রে ফেলছে।’

রনিঃ কি কচ!? ছবি দেখা মাইয়ার। নিজ হাতে কে’টে টুকরো টুকরো করমু কতো বড় কলিজা ওই মাইয়ার দেখমু। ব্যা*** বাচ্চার।

ছেলেটা ছবি বের করার আগেই আরেকটা ছেলে এসে বলে উঠলো, ‘ ভাই মাইয়াটা কলেজে আইছে।’

” খা*** পোলার খবর কি..?”
~ ভাই কেউ চিনে না। আমি আরও খবর নিয়া দেখতাছি।

রনিঃ আমি আসছি তুই ছবি নিয়ে দাঁড়ায় থাক। বলেই সেই বোরকা পড়া মেয়েকে দেখতে চলে গেলো।

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-০৫

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_5
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

ছোঁয়া কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আহনাফের সামনে।

আহনাফ গম্ভীর কণ্ঠে ছোঁয়াকে বলে উঠলো, ‘ যা যা জিজ্ঞেস করবো ঠিক ঠিক উত্তর দিবে।একটা মিথ্যা বললে বাহিরে এক পা উপরে তুলে কানে ধরে দাঁড় করিয়ে রাখবো সারারাত।’

ছোঁয়া ভয়ে চুপসে গেলো, এদিক ওদিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আমি কিছু জানিনা ভাইয়া।’

আহনাফ বাঁকা হেঁসে বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া আমি তোমার ভাই, তুমি তোমার ভাইকে ভয় পাচ্ছো..?এতো বোকা কেনো তুমি। ‘
ছোঁয়া মনে মনে বলে উঠলো, ‘ এ্যাঁহ আসছে ভাই বলতে, কে মানে তোমাকে ভাই। আজ ভয় পাই বলে মুখের উপর বলতে পারলাম না। ‘

~ আমার দিকে তাকাও।
ছোঁয়া আহনাফের দিকে তাকাতেই আহনাফ বলে উঠলো, ‘ মেয়েটি কে ছিলো..?’
ছোঁয়া যেটার ভয় পেয়েছিলো সেটাই হয়েছে।
আহনাফঃ মিথ্যা বলবে না। আমি তোমাকে দেখেছি মেয়েটির হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে।
ছোঁয়াঃ আমি চিনিনা জিজ্ঞেস করে ছিলাম আমার ভাইকে কোন সাহসে মেরেছে!! হুমকি দিয়ে ছিলাম।
আহনাফঃ আচ্ছা তাই নাকি..?
ছোঁয়া গর্বের সাথে বলে উঠলো, ‘ হুম, কতোবড় সাহস আমার ভাইয়ার গায়ে হাত তুলে, বাজে কথা বলে মন তো চেয়ে ছিলো মেয়েটার গালে ঠাসস ঠাসস করে লাগিয়ে দেই। ‘

আহনাফ চুপচাপ ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ সত্যি..? ‘
ছোঁয়াঃ একদম সত্যি।
আহনাফঃ এখনো কিন্তু সুযোগ আছে।
ছোঁয়া ভয়ে কেঁপে উঠে, সুযোগ আছে মানে..? সে তো জীবনেও মহুয়ার গায়ে হাত তুলতে পারবে না।

আহনাফঃ আমি এখন মেয়েটাকে তোমার সামনে এনে দেই আর তুমি ঠাসস ঠাসস গালে লাগিয়ে দিবে। বোন হয়ে নিজের কর্তব্য পালন করবে।

ছোঁয়াঃ মেয়েটাকে এতো রাতে কোথায় পাবো!.?
আহনাফঃ আমি লোকেশান বলে দেই..?

ছোঁয়া আহনাফের দিয়ে কৌতুহলি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

আহনাফ বাঁকা হেঁসে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ এখন আমার রুম থেকে বের হবে, তারপর আমার পাশের রুমটায় প্রবেশ করবে ওখানে বেলকনিতে যেই মেয়েটি একদৃষ্টিতে বাহিরে তাকিয়ে আছে তাকে আমার রুমে নিয়ে আসবে।

ছোঁয়া মাথা নিচু করে ফেললো।তার এই ভাইয়ের চোখে কিছু এড়িয়ে যাওয়া যায় না। কিভাবে জেনো সব বুঝে ফেলে। মহুয়াকেও চিনে ফেললো এতো সহজে!..।

ছোঁয়াঃ ভাইয়া..

ছোঁয়া আর কিছু বলার আগেই আহনাফ বলে উঠলো, ‘ এখন আমি আর একটা কথাও শুনতে চাচ্ছি না, যাওওও জলদি।’

ছোঁয়া আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

মহুয়ার চোখ দেখেই চিনে ফেলে ছিলো আহনাফ। তখন সবার সামনে কিছু বলেনি তবে অতো সহজে এই বেয়াদব মেয়েকে সে ছেড়ে দিবে না।

মহুয়া বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছে।
ছোঁয়া ধীরে ধীরে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
মহুয়া পেছন ফিরে ছোঁয়াকে দেখে মুচকি হাসলো।ছোঁয়া মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, ‘ ভাই তোমাকে ডেকেছে!..’
মহুয়াঃ তোমাকে বকেছে..?
ছোঁয়াঃ তোমাকে চিনলো কিভাবে..?
মহুয়াঃ আমি কিভাবে জানবো! আর আমি এমনিতেও উনাকে সুযোগ করে সরি বলে দিতাম।
ছোঁয়াঃ ভাই তো রেগে আছে এখন।
মহুয়াঃ এখন কি করবো..?
ছোঁয়াঃ যেতে হবে।

মহুয়া আহনাফের দরজার সামনে দাঁড়াতেই ভেতর থেকে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ ভেতরে আসুন।’

মহুয়া আর ছোঁয়া প্রবেশ করলো। মহুয়া ঘোমটা দিয়ে চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

আহনাফ এক পলক মহুয়ার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। দেখে মনে হয় বাজা মাছ উল্টে খেতে পারে না বেয়াদব মহিলা একটা।

আহনাফের আগেই মহুয়া বলে উঠলো, ‘ সরি ভাইয়া। সবটাই একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। ‘

আহনাফ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ এটা আপনার আগে বুঝা উচিত ছিলো। যার বাসায় থাকছেন, যাদের আশ্রয়ে আছেন তাদের ছেলের বুকেই চাকু ছুঁড়ে মারলেন!.? আগে ঘটনাটা বুঝে, জিজ্ঞেস করে স্টেপ নেওয়া উচিত ছিলো। আপনি সবার সামনে আমার গালে থাপ্পড় মেরেছেন আপনার সরিতে সেটা ফিরে আসবে না! আমার পরিবারিক শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, আমাকে অপমান করেছেন।

মহুয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

আহনাফঃ আমি এই মুহূর্তে আপনাকে বাসা থেকে বের করে দিতে পারি। আমার গায়ে হাত তুলে জীবনের সব থেকে বড় ভুলটা করলেন। আমি এখন সবটা দাদাভাইকে জানাচ্ছি বাকিটা উনি বুঝে নিবেন।

ছোঁয়া আঁতকে উঠল, ‘ প্লিজ না ভাইয়া এমনটা করো না। বড় আম্মু, দাদি সবাই জানতে পারলে মেহু কে বাসা থেকে বের করে দিবে। সে এখানকার কিছুই চিনে না, কোথায় যাবে। ও তো বলেছে বুঝতে পারেনি।

আহনাফ কিছু সময় চুপ থেকে কিছু একটা ভাবলো তারপর মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ ঠিক আছে তবে এক সর্তে।

মহুয়া মাথা তুলে আহনাফের দিকে তাকালো।
ছোঁয়াঃ কি সর্ত..?
আহনাফঃ ছোঁয়া আমি তোমার সাথে না এই মেয়ের সাথে কথা বলছি। এই মেয়ে এখন আমার পায়ের কাছে বসে বলবে, সব কিছুর জন্য আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।দ্বিতীয় বার আমি আপনার সামনে আসবো না। আমাকে মাফ করে দিন। আপনাকে থাপ্পড় মেরে আমি লজ্জিত, সরি।’

মহুয়া চোখ বড় বড় করে আহনাফের দিকে রেগে তাকালো। প্রয়োজন হলে বাসা ছাড়বে কিন্তু মাথা নত করবে না সে।

মহুয়া আহনাফ কে কিছু না বলে দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা নিজের রুমে ঢুকে গেলো। ছোয়াও ওর পিছু পিছু আসলো।

আহনাফ চুপচাপ তাকিয়ে রইলো ওদের যাওয়ার দিকে। এই মেয়েকি ওকে আবার নীরবতায় অপমান করলো..? ভাবতেই চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো। বেয়াদব মহিলা একটা।

মহুয়া রুমে এসে বিছানায় বসে পড়লো।
ছোঁয়াঃ সরি মহুয়া।
মহুয়াঃ তুমি কেনো সরি বলছো..?
ছোঁয়াঃ ভাইয়ার কথায় কষ্ট পেয়েছো..?
মহুয়াঃ না।
ছোঁয়াঃ আমি কি তোমার অতীত জানতে পারি মহুয়া..? প্রতিরাতে তুমি চিৎকার করে ঘুম থেকে জেগে ওঠো, ভয়ে কাঁপতে থাকো। মনে হয় কোনো এক দুঃস্বপ্ন তোমার পিছু ছাড়ছে না৷ তোমার অতীত কি ভীষণ ভয়ংকর কিছু আছে..?
মহুয়া এক পলক ছোঁয়ার দিকে তাকালো।
মহুয়াঃ ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে।
ছোঁয়াঃ ভাইয়া যদি বলে দেয়।
মহুয়া হেঁসে ছোঁয়ার গালে হাত রেখে বলে উঠলো, ‘ তাহলে চলে যাবো।’
ছোয়ার ভীষণ মায়া হলো সামনে বসে থাকা মায়াবতীর জন্য। সে একটু হলেও বুঝতে পারে মহুয়ার কষ্ট গুলো।

মহুয়া চুপচাপ লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। জীবন আলোর সন্ধ্যান আর করে না, আলো খুঁজতে খুঁজতে গহীন অন্ধকারে তলিয়ে গেছে সে, এখন আলোর খুঁজ করা মানে মৃত্যুকে ডেকে আনা। কি হবে কাল জানা নেই তবে মহুয়া বুঝতে পারছে সামনে ভীষণ বিপদ তার জন্য অপেক্ষা করছে।

_______

মহুয়া নামাজ পড়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে বাগানে গেলো। সকালের ঠান্ডা ঠান্ডা মিষ্টি বাতাসটা ভীষণ ভালো লাগে।

বাগানে কিছু সময় বসে রইলো। একটা ফুলে প্রজাপতি দেখে এগিয়ে গেলো ফুলটার দিকে।প্রজাপতিটা উড়ে আরেকটা গাছে গিয়ে বসলো মহুয়াও হেঁসে ওই ফুলটার দিকে এগিয়ে গেলো।

তখনি কেউ গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। মহুয়ারসে দিকে খেয়াল নেই সে তো প্রজাপতির দিকেই তাকিয়ে আছে। এক পা সামনে দিবে তখনি পেছন থেকে কেউ একটা ইটের টুকরো ওর সামনে নিয়ে ফেললো আর মহুয়া হুঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়লো।

ভীষণ ব্যাথায় চোখ মুখ খিঁচে রাখলো মহুয়া। তখনি সামনে কাউকে দেখে মাথা তুলে তাকালো হুডি পড়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে আহনাফ।
আহনাফঃ এতো বড় মেয়ে হয়েও হাঁটতে পারেন না।

মহুয়া রেগে দাঁতে দাঁত চেপে ধরলো বেয়াদব লোক। সে তো ইচ্ছে করে পড়েনি, মজা নিতে চলে এসেছে।

মহুয়া চুপচাপ উঠে বসলো কিন্তু পায়ে ভীষণ ব্যাথা পেয়েছে, চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কিন্তু মুখ স্বাভাবিক।
আহনাফ ব্যাস অবাক হলো মহুয়ার এমন আচরণে। ব্যাথা পেয়েছে সিউর কিন্তু এতো চুপচাপ হয়ে বসে আছে। অন্য কোনো মেয়ে হলে চিৎকার করে কান্না শুরু করতো।

আহনাফ হাত বাড়িয়ে দিলো মহুয়া একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। আবার তাকিয়ে হাতটা ধরতে যাবে তখনি আহনাফ হাতটা সরিয়ে নিলো।

আহনাফঃ যার গায়ে কাল হাত তুললে আজ তার কাছেই সাহায্য চাচ্ছেন! যার জন্য আহত হয়ে এখানে বসে আছেন তার হাতটা ধরেই দাঁড়াতে চাচ্ছেন..? এতোটা দূর্বল প্রজাতিকেনো আপনারা মেয়েরা।

মহুয়া অপমানে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে বসে আছে। কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু মনে হচ্ছে কেউ ওর গলা চিপে ধরে আছে। ও তো বলেনি হাত দেওয়া জন্য, নিজ থেকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে আবার নিজেই অপমান করছে!

ছাঁদ থেকে এক জোরা চোখ তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। এখন নয় মহুয়া যখন বাগানে এসেছে তখন থেকেই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো। আহনাফের এমন আচরণে ভীষণ রাগ হলো। এক ছুটে নেমে আসলো নিচে।

আহনাফ মহুয়া দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বাসার ভেতর চলে গেলো। মহুয়ার রাগে এখন ইচ্ছে করছে সব কিছু শেষ করে দিতে। আহনাফের বুকে পর পর তিনবার ছু*রি ঢুকিয়ে দিতে। সুযোগ পেলে সেটাই করবে এই লোককে। অপমানে ব্যাথার কথা ভুলেই গিয়ে ছিলো।
আস্তে আস্তে উঠতে চাইলো পা চিনচিন ব্যাথা শুরু হলো। তখনি সামনে আরেকটা হাত দেখে বিরক্ত হয়ে তাকালো।

শ্রাবণ হাত বাড়িয়ে আছে।

মহুয়া রেগে নিজেই আস্তে আস্তে দাঁড়িয়ে গেলো, শ্রাবণ হাত ধরলো না। শ্রাবণ হাতটা সরিয়ে নিলো। এই মেয়ে বড্ড জেদি।

মহুয়া খুড়িয়ে খুড়িয়ে বাসার ভেতর চলে গেলো। বিরক্ত লাগে এই দুই ভাই কে।একজন অপমান করে হয়নি আরেকজন নতুন করে এসেছে। দুই দিনের মধ্যে কয়েকটা টিউশনি খুঁজে এই বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে।

______

আনোয়ার চৌধুরীঃ কি ভাবলে..?
আহনাফঃ আজ থেকে জয়েন করবো দাদাভাই।
আনোয়ার চৌধুরীঃ এতো জলদি কেনো! দেশে এসেছো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দাও, একটু ঘুরেফিরে আসো কোথাও থেকে।
আহনাফঃ বন্ধুরা বাসায় আসবে আজ রাতে। আমি এখন হসপিটাল যাচ্ছি।
আনোয়ার চৌধুরী খুশি হলেন। দুই নাতি নিজেদের বুঝ বুঝলো শুধু টেনশন নির্জনের জন্য উনার।

ছোঁয়া সকাল সকাল গোসল করে কাপড় নিয়ে ছাঁদে আসলো। কাপড় দিয়ে যাওয়ার সময় গিটারের টুংটাং শব্দ শুনে থেমে গেলো। পেছন ফিরে আশেপাশে তাকাতেই শুনতে পেলো..

” আম্মু বলে খোকা তুই প্রেম করিস না, ভালো ছেলেদের কপালে ভালো মেয়ে জুটে না”

কপাল কুঁচকে বিরক্ত হয়ে তাকালো। ওর আর বুঝতে বাকি নেই এই কাক গলা কার!

ছোঁয়াঃ সকাল সকাল নিজের এই ফালতু গিটার আর কাক গলা দিয়ে আমার দিনটাই খারাপ করে দিলি!!

নির্জনের রাগ উঠে গেলো। ওর এতো মিষ্টি কোকিলের কন্ঠকে কাকের কন্ঠ বললো!

নির্জনঃ তুই আমার এতো সুন্দর কোকিল কন্ঠকে কাকের কন্ঠ বললি..?
ছোঁয়াঃ কানে কি কম শুনছ..? একবার বলছি কানে যায় নাই।
নির্জনঃ গুণে গুণে আমি তোর ৫বছরের বড়।আর তুই আমাকে তুই করে বলে অপমান করতেছিস!..

ছোঁয়া তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো, ‘ যার মান নেই তাকে অপমান কেম্নে করে। তা এতো সকালে সকাল এখানে গান কেনো..?

নির্জন দুঃখী দুঃখী মুখ করে বলে উঠলো, ‘ আজ আমার ১৭তম ব্রেকআপ হয়ে গেছে। ‘

ছোঁয়া অবাক হয়ে নির্জনের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে ওর পাশে বসে পড়লো। কিছুতেই ওর হাসি থামছে না। নির্জন রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে।
কিন্তু ছোঁয়ার সেই দিকে খেয়াল নেই সে তো হেসেই যাচ্ছে।

ছোয়াঃ বিয়ের পর গার্লফ্রেন্ডের মতো তোর বউও এভাবে চেঞ্জ করতে হবে৷ প্রতি মাসে দুইটা করে বিয়ে করবি।
____

আহনাফ হসপিটাল উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেলো। মহুয়া বেলকনি থেকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আহনাফের যাওয়ার দিকে।

ছোঁয়া আর মহুয়া রেডি হয়ে নিচে আসলো।
শ্রাবণ ওদের কলেজে দিয়ে অফিসে যাবে।

নির্জন সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে উঠলো, ‘ ভাই তুমি অফিস চলে যাও আমি কলেজে একটা প্রয়োজনে যাবো ওরা আমার সাথে যাবে। ‘

শ্রাবণ রাগী দৃষ্টিতে নির্জনের দিকে তাকালো। নির্জন দাত বের করে বলে উঠলো, ‘ তোমার অফিসে দেরি হচ্ছে যাও।’

ড্রয়িং রুমে আনোয়ার চৌধুরী, আজাদ চৌধুরী, মিরাজ চৌধুরী বসে চা খাচ্ছে আর এটা সেটা আলাপ করছে। আফরোজা বেগমের শরীর দিন দিন খারাপ হচ্ছে। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

শ্রাবণ শান্ত কন্ঠে ওদের বললো, ‘ তোমরা আমার গাড়িতে গিয়ে বসো। ‘

তখনি দরজা ঠেলে কেউ দাঁড়ালো দরজার সামনে।

পেছন থেকে দারোয়ান দৌড়ে এসে বললো,’ দুঃখীত্ব মালিক আমি বার বার নিষেধ করার শর্তেও মেয়েটা ভেতরে ঢুকে গেছে।

সবাই মেয়েটার দিকে তাকালো।

মাথা লম্বা ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক শ্যামকন্যা।

বাড়ির মহিলারাও ড্রয়িং রুমে আসলো।

মিরাজ চৌধুরী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মেয়েটির দিকে।

আনোয়ার চৌধুরী মেয়েটিকে ভেতরে আসতে বললো।

ধীর পায়ে ভেতরে আসলো।
আনোয়ার চৌধুরীঃ কে তুমি..?

মেয়েটা কাঠকাঠ কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আমি আপনার বড় নাতির বাচ্চার মা হতে যাচ্ছি। বলতে পারেন আপনার বড় নাতির হবু বউ।’

উপস্থিত সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো! এই মেয়ে এইসব কি বলছে..? সবাই শ্রাবণের দিকে তাকালো। শ্রাবণ বোকার মতো মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে! যেখানে আজ প্রথম মেয়েটাকে দেখছে সেখানে ওর বাচ্চার মা কিভাবে হলো!..??

মিরাজ চৌধুরী রেগে মেয়েটার সামনে দাঁড়ালো। মিরাজ চৌধুরী কে দেখেই ভয় পেয়ে গেলো মেয়েটি। এই পুলিশ এখানে কি করছে..? এটা কি উনার বাড়ি..? তাহলে ভালো করেই ফেঁসেছে সে।

মিরাজ চৌধুরীঃ মেঘলা তুমি তো ১৫দিন হয়েছে জেল থেকে ছাড়া পেলে।

সবাই আরেক দফা অবাক হয়ে তাকালো।

মেঘলা হেঁসে মিরাজ চৌধুরীর দিকে একটা পেপার এগিয়ে দিলো।
মিরাজ চৌধুরী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন পেপার গুলোর দিকে। একটা একটা করে সবগুলো পেপার দেখে রেগে শ্রাবণের সামনে গিয়ে ওর গালে থাপ্পড় মেরে দিলেন৷ উনার বিশ্বাস হচ্ছে না শ্রাবণ একটা চোর, ছিনতাইকারীর সাথে রিলেশন করেছে আর এখন সেই মেয়ে প্রেগন্যান্ট!!…

মেঘলা শয়তানি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে শ্রাবণের দিকে।

চলবে..

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব-০৪

0

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_4
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

নিরবতা ভাঙে ছোঁয়া বলে উঠলো, ‘ আহনাফ ভাই! ‘

সে দিকে ছোঁয়ার কোনো খেয়াল নেই। সে তো থাপ্পড় মে*রেও শান্ত হয়নি।
~ লজ্জা করে না বোনের বয়সী একটা মেয়ের গায়ে হাত দিতে!.? আপনাদের মতো ছেলেদের শুধু থাপ্পড় নয় জুতা খুলে মা’রা উচিত।
আহনাফ রেগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে তাকিয়ে আছে বোরকা পড়া মেয়েটার চোখের দিকে।

নিচে মা*র খেয়ে পড়ে থাকা ছেলেটা ফাঁকে পালিয়ে গেলো।

মহুয়া আহনাফের হাত থেকে ওড়নাটা এক টানে নিজের হাতে নিয়ে নিলো। রেগে আশেপাশে মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আর আপনারা দেখে দেখে মজা নিবেন! আজ রাস্তায় এক গুন্ডা অন্যের বোন, মেয়ে, বউয়ের সাথে এমন করছে কালজে আপনাদের মেয়ের সাথে এমন হবে না তার কি গ্রান্টি..? প্রতিবাদ না করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখবেন,ভিডিও করবেন। আপনারা একটু প্রতিবাদ করলে, এগিয়ে আসলে এরা মেয়েদের সাথে কথা বলতেও ভয় পেতো।

ছোঁয়া কি বলবে মাথায় কাজ করছে না। মহুয়া এইসব কি বলছে.? এখানে কি হয়ে ছিলো.? ভাই এভাবে মারছিলো কেনো ছেলেটাকে..? এই ওড়না কার.? সব কিছু কেমন এলোমেলো লাগছে!

আহনাফ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো , ‘ শেষ আপনার বক্তব্য দেওয়া..? ‘
মহুয়া রেগে আহনাফের দিয়ে আঙ্গুল দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমি আপনাকে পুলিশে দেবো।’
আহনাফ দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ আজ মেয়ে মানুষ বলে চুপ করে আছি তা না হলে এতোক্ষন এখানেই পুঁ*তে ফেলতাম।একটা থাপ্পড়ের পরিবর্তে মুখের সবগুলো দাঁত ফেলে দিতাম। বেয়াদব মহিলা।
শুধু মেয়ে বলে ছেড়ে দিলাম। দ্বিতীয় বার আমার সামনে জেনো আপনার মতো বেয়াদব মহিলাকে না দেখি।

মহুয়া রেগে গেলো কতো বড় সাহস ওকে বেয়াদব মহিলা বলছে!.? মহুয়া আর কিছু বলার আগেই কেউ একছুটে মহুয়ার হাত চেপে ধরলো। হাত ধরে টেনে সেখান থেকে নিয়ে আসলো।

আহনাফ রেগে সবার দিকে তাকিয়ে নিজের গাড়ির ভেতর গিয়ে বসলো। ছোঁয়ার মোবাইলে কল দিলো।

ছোঁয়া ভয় পেয়ে গেলো৷ এখন যদি ভাইয়ার সামনে মহুয়াকে নিয়ে যায় নিশ্চয়ই ভাইয়া মহুয়ার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিবে। না হয় কি করবে আল্লাহ জানে,বাড়িতে তো এই জীবনে আর ওর জায়গা হবে না সোজা বাসা থেকে বের করে দিবে। ছোঁয়া খুব ভালো করে আহনাফ কে চিনে। আজ মহুয়ার জায়গায় অন্য কোনো ছেলে হলে ICU তে ভর্তি করাতে হতো এতোক্ষনে।

মহুয়া তখনো রাগে ফুঁসছে। কতো বড় বেয়াদব ছেলে অপরাধ করেছে তারপরও ওকেই কথা শুনিয়ে গেলো, বেয়াদব মহিলা বললো৷ আরও কয়েকটা থাপ্পড় দেওয়া প্রয়োজন ছিলো।

ছোয়া মহুয়া দিকে ভালো করে তাকালো।, ‘ এতোদিন শান্ত সৃষ্ট, চুপচাপ ভেবে আশা মেয়েটা আজ তার আসল রুপে ফিরলো। ছোঁয়া ব্যাস অবাক হয়ে গেলো এটা ভেবে মহুয়া কে সে বোকা, ভীতু ভেবে ছিলো। এই মেরে তো ছোঁয়া কে টপকে গেছে।তাহলে এমন বোকা,ভীতু সেজে থাকে কেনো.??মাথায় হাজারটা প্রশ্ন, চিন্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

ছোঁয়া মোবাইল রিসিভ করে বলে উঠলো, ‘ ভাইয়া তুমি চলে যাও আমি রিক্সা দিয়ে বাসায় চলে যাচ্ছি। ‘
আহনাফ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘মিথ্যা কেনো বলছো ছোঁয়া!.? আমি তোমাকে এখন দেখেছি।’
ছোঁয়া ভয়ে চুপসে গেলো। আমতাআমতা করে বলে উঠলো, ‘ ভাইয়া আমি রিক্সা থামিয়ে দেখতে গিয়ে ছিলাম কি হয়েছে। এখন আবার রিক্সায়।’

আহনাফ কিছু না বলে কল কেটে দিলো। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো বাড়ির দিকে।

ছোঁয়া একটা গভীর শ্বাস ফেলে মহুয়ার দিকে তাকালো,
~ কি হয়ে ছিলো মহুয়া..?
মহুয়া চুপ করে রইলো।
ছোঁয়ার ব্যাস রাগ হলো।
~ কি হয়েছে.? তুমি ভাইকে কেনো সবার সামনে মে*রে*ছো..?
মহুয়া অবাক হয়ে বললো,’ ভাই!.? ‘
ছোঁয়াঃ তুমি যার গায়ে হাত তুলেছো সে আহনাফ চৌধুরী।
মহুয়ার চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসলো। কঠিন কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ এমন বেয়াদব ছেলে তোমার ভাই!.? পৃথিবীতে সব পুরুষ এক! অন্তত তোমাদের বাড়ির ছেলেরা এমন ভাবতে পারিনি।..
ছোঁয়া ভীষণ রেগে গেলো। সব সহ্য হলেও ভাইদের নিয়ে সে কখনো কটুকথা সহ্য করে না।আর যদি হয় আহনাফের কথা তাহলে আজ মহুয়ার জায়গায় অন্য কেউ হলে ছোঁয়া মুখ বাঁকা করে দিতো। তবুও নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলে উঠলো, ‘ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বলো মহুয়া.. ‘

মহুয়া সবটা বললো। হাতের ওড়নাটাও দেখালো।

ছোঁয়া গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ আমার ভাই এমন নয়। এখানে তুমি ভুল বুঝেছো। ভাই যাকে মা’র ছিলো সে এই এলাকার বখাটের লিডার রনি। প্রতিদিন একটা না একটা মেয়েকে বিরক্ত করা ওর প্রধান কাজ।

তখনি ওদের সামনে ওই মেয়েটা এসে দাঁড়ায়।
মহুয়া ওড়না ওই মেয়ের হাতে দেয়। মেয়েটা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
ছোঁয়া মেয়েটার সামনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ তোমার সাথে রনি আর ওর দল-বলরা বেয়াদবি করে ছিলো..?
মেয়েটা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো।

ছোঁয়া মহুয়ার দিকে ফিরে আহত কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ এটা কি করলে মহুয়া!..? ‘

মহুয়া উপরে নিজেকে শান্ত রেখে ছোঁয়ার দিকে তাকালো কিন্তু ভেতর ভেতর অনুতপ্ত হয়ে পড়লো। না জেনে এমনটা করা একদম উচিত হয়নি। কিন্তু ওর কি দোষ মেয়েটা যা বললো সব তো আহনাফের সাথে মিলে গিয়ে ছিলো হাতেও ওড়না ছিলো। সামনে কি হতে যাচ্ছে ওর সাথে!..?

____

রাগে চোখ দিয়ে আগুন জ্বলছে। বাড়িতে প্রবেশ করেই দোতলায় নিজের রুমে চলে আসলো।রুমে ঢুকেই ধরাস করে দরজা’টা লাগিয়ে দিলো। গায়ের শার্ট টা খুলে বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেললো। চশমা খুলে টেবিলের উপর রেখে ওয়াশরুম ঢুকে ঝরনার নিচে দাঁড়িয়ে রইলো। রাগে ইচ্ছে করছে মেয়েটার গাল লাল করে ফেলতে৷ কতো বড় সাহস আহনাফ চৌধুরীর গায়ে হাত তুলে! এই মেয়ে দ্বিতীয় বার ওর সামনে পড়লে জীবন নিয়ে নিবে৷ আস্ত রাখবে না এই মেয়ের৷ খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিবে আহনাফ চৌধুরীর গায়ে হাত তুলার পরিণাম কতোটা ভয়ংকর বেয়াদব মহিলা।

________

ছোঁয়া বিছানার উপর বসে গম্ভীর হয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মহুয়া কে দেখে মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি সেই আগের মতো শান্ত হয়ে আছে।

ছোঁয়াঃ তোমার ভয় করছে না মহুয়া..?
মহুয়া শান্ত দৃষ্টিতে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ না ‘
ছোঁয়াঃ মহুয়া তুমি জানো এই বাড়ির সব থেকে রাগী ছেলে আহনাফ চৌধুরী। যেমন রাগী তেমনি খুব ভালো মনের মানুষ। ভাই কখনো এমন কাজ করতে পারে না তুমি সন্দেহের বসে এমন কাজ কিভাবে করলে! ভাই ভীষণ কষ্ট পেয়েছে। বড় আম্মু জানতে পারলে এক মূহুর্ত আর এই বাড়িতে তোমার জায়গা থাকবে না। সবার ভীষণ আদরের আহনাফ ভাইয়া। ভাইয়ার সামনে ভুলেও যেও না। তুমি বোরকা পড়ে মুখ ডাকলে কি হবে! তোমার চোখ দেখলেই ভাই চিনে ফেলবে তারপর নিশ্চিত এই বাড়ি থেকে বের করে দিবে।দাদাভাই ও কিছু বলতে পারবে না।

মহুয়া চুপচাপ ছোঁয়ার কথা শুনে বেলকনিতে চলে গেলো। সে তো জানতো না, এখানে ওর দোষ কোথায়..? এখন আর নিজের জন্য ভয় হয় না। চোখ বন্ধ করতেই সমস্ত সুন্দর স্মৃতি গুলো ঝাপসা হয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠে। আস্তে আস্তে জীবন থেকে সুন্দর স্মৃতিগুলো মুছে যাচ্ছে। কতোগুলো জা*নো*য়া*রের মুখ ছাড়া স্মৃতির পাতা শূন্য। সে শুধু বাঁচতে চায় পি*শা*চটার মাথা থেকে দে*হটা আলাদা করে ফেলার জন্য!. ভালোবাসার নামে ছলনা করা পুরুষটির দেহ থেকে হৃদয়টা টেনে বের করে ফেলবে, প্রতারক, ঠকবাজ সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে তার ভালোবাসা, সম্মান আর সব শেষে জীবন নিয়ে খেলার অধিকার কে দিয়েছে..?

__________

রাতে সবাই ডাইনিং বসে আহনাফের জন্য অপেক্ষা করছে।
আহনাফ নিজের রুমে দরজা আঁটকে বসে আছে।
ছোঁয়া ভয়ে ভয়ে দুইবার ডেকে এসেছে। আহনাফের ভীষণ কান্না আসছে এখন তার।
শ্রাবণঃ আহনাফের কি শরীর খারাপ.?
নির্জনঃনা ভাইয়ার মন ভালো না কোনো কারনে ভীষণ রেগে আছে।

আমেনা বেগম সবাইকে সব কিছু সামনে দিয়ে নিজেই ছেলেকে আনতে গেলেন।

আনোয়ার চৌধুরী মহুয়া কে কলেজের কথা জিজ্ঞেস করলেন। কেমন লাগলো..? আরও অনেক কথা। মহুয়াও সুন্দর করে উত্তর দিলো।

শ্রাবণ মহুয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো৷ মেয়েটা সব সময় মাথা নিচু করে রাখে৷ কখনো হাসে না মুখ স্বাভাবিক। প্রয়োজনের বাহিরে কোনো কথাও বলে না৷ এতো বড়ঘোমটা দিয়ে রাখতে কি বিরক্ত লাগে না..?

নির্জন শ্রাবণের দিয়ে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ এভাবে হ্যাবলার মতো তাকিয়ে না থেকে খাবার খাও৷ আমার আপসোস লাগছে আমার এতো হ্যাডসাম ভাইটাকে পাত্তা দিচ্ছে না হবু ভাবি!! ভাই কিভাবে ভাবিকে পটাবে সেটাই তো বুঝতে পারছি না।ভাবি তো ভুলেও তোমার দিকে তাকায় না।এখন যদি জিজ্ঞেস করি এখানে শ্রাবণ কে ভাবি মনে হয় বুঝতেই পারবে না এখানে শ্রাবণ কে। বলেই হেসে ফেললো।

শ্রাবন হতাশার নিশ্বাস ফেলে মহুয়ার দিকে তাকালো নির্জন মিথ্যা কিছু বলেনি।

শ্রাবণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আবার বললো, ‘ কেনো পটানো কি অসম্ভব কাজ নাকি..? আর আমি পটাবো কেনো আমি তো আস্তে আস্তে ভালোবাসতে শিখাবো।’

নির্জন বিরক্ত হলো,’ তুমি আস্তে আস্তে ভালোবাসা শিখানোর আগেই যদি বিড়াল এসে কবুতর নিয়ে চলে যায়। তুমি আজ থেকে আমার কথায় চলো দেখবে এক সপ্তাহে ভাবি তোমাকে জড়িয়ে ধরে বলছে ” শ্রাবণ আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না ”

শ্রাবণ নির্জনের নাটকীয় কথায় ফিক করে হেঁসে ফেলে৷

আফরোজা বেগম শ্রাবণ আর নির্জনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে’ কি হয়েছে.? ‘

শ্রাবণঃ একটু ভাইদের মধ্যে কথা হচ্ছিলো দাদিজান।
আফরোজা বেগমঃ তোমার কি সন্ন্যাসী হওয়ার সখ জেগেছে নাকি.?
শ্রাবণ একবার আফরোজা বেগমের দিকে নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ নির্জন দেখতো আমাকে দেখে কি সন্ন্যাসীদের মতো লাগছে.? আবার ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ ছোঁয়া আমাকে দেখে কি সন্ন্যাসী মনে হচ্ছে..? ‘

ছোঁয়াঃ একদম না আমার ভাই দেখতে তো হিন্দি মুভির হিরোদের থেকেও হ্যান্ডসাম।
শ্রাবণ বিজয়ী হেঁসে দাদির দিকে তাকালো।

শ্রাবণের এমন বাচ্চামু কাহিনি দেখে তেতে উঠলেন আফরোজা বেগম।

~ আমি মেয়ে দেখছি তোমার জন্য একসপ্তাহের মধ্যে তোমার জন্য মেয়ে ঠিক করবো। পড়ের সপ্তাহে আহনাফের জন্য। নাতির বউ বাচ্চা দেখে শান্তিতে মরতে চাই।

শ্রাবণ বিড়বিড় করে বলে উঠলো,’ মেয়ে খুঁজার কি আছে, তোমাদের চোখের সামনেই তো মেয়ে আছে।

নির্জন মুখটা শুখনো করে দাদির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ তা বুড়ি সবার বিয়ে নিয়ে ভাবছো আমার যে একটা বউ নেই সেটা মনে নেই! কয়েকদিন পর শীত আসছে আমি আর একা ঘুমাতে পারবো না। ভীষণ শীত লাগে আমার জন্যও বউ দেখো তৃতীয় সপ্তাহে আমি বিয়ে করবো। ২৩টা বসন্ত চলে গেলো বউয়ের মুখ দেখি না।এখন শীতে বউয়ের মুখ দেখিয়ে দাও এর পরের শীতে বাচ্চাকাচ্চার মুখ দেখিয়ে দিবো।

মহুয়া হাত দিয়ে মুখ আড়াল করে হেঁসে যাচ্ছে। ছোঁয়া হুঁ হুঁ করে হেঁসে উঠলো।

শ্রাবণ বেআক্কেল মতো নির্জনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে কোথায় কি বলতে হয় এই ছেলে তাও জানে না!ভাগ্যিস আজাদ চৌধুরী আর মিরাজ চৌধুরী আগে আগে খেয়ে নিজের রুমে চলে গেছেন।

আফরোজা বেগম নির্জনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন প্রয়োজন হলে আরেকটা কোলবালিশ নিয়ে আসো। যতোদিন নিজে কোনো কাজে মন দিচ্ছো না ততদিন শশুরবাড়ির মুখ দেখবে না।

নির্জন বিড়বিড় করে বলে উঠলো, ‘ শশুরবারির মুখ দেখে কি হবে বউয়ের মুখ দেখিয়ে দিলেই হয়।’

আমেনা বেগম আহনাফ কে নিয়ে আসলেন।
একটা চেয়ার টেনে আহনাফ বসে পড়লো। মুখটা গম্ভীর করে আছে। কেউ আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলো না আহনাফের মুখের দিকে তাকিয়ে।
শ্রাবণঃ কি হয়েছে..? মন খারাপ কেনো.? রেগে আছো কেনো.? কিছু কি হয়েছে.??

আহনাফ কারো দিকে না তাকিয়ে প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে।

শ্রাবণ উত্তর না পেয়ে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।

মহুয়া চুপচাপ খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ালো। এখান থেকে যেতে পারলেই বাঁচে।

পা বাড়িয়ে আহনাফের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পেছলে পড়ে যেতে নেয় ভয়ে চোখ বন্ধ করে সামনের কিছু একটা খামচে ধরে।
আহনাফ ব্যাথায় দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে থাকে সামনের দিকে ।

মহুয়ার কপাল বাড়ি খেয়েছে আহনাফের চেয়ারে আর হাত দিয়ে খামচে ধরেছে আহনাফের বুকের একপাশের শার্ট। হাতের নখ গিয়ে বিঁধেছে আহনাফের বুকে।

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো।
আমেনা বেগম মহুয়ার কাছে এসে বলে উঠলো, ‘ বেশি ব্যথা পেয়েছো.?’

মহুয়া মাথা নিচু করেই বলে উঠলো, ‘ আমি একদম ঠিক আছি। ‘

হালিমা চৌধুরী অবাক হয়ে বলেন,’ ভালো জায়গায় কিভাবে পড়ে গেলে..?’

মহুয়া এক হাত নিচে রাখে। বুঝার চেষ্টা করে নিচে কি ছিলো।হাত নিচে রাখতেই অনুভব করে তেল জাতীয় কিছু। কিন্তু এখানে কে ফেলেছে.? আর কেনো ফেলেছে..? একবার ঘার ঘুরিয়ে রান্না ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নিরুপমার দিকে তাকায় মহুয়া।

আহনাফ দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ হাত সরিয়ে উঠে দাড়ান। আর না হয় সারা রাত এখানে বসে থাকুন আমার শরীর থেকে হাত সরান।’

মহুয়া খেয়াল করেনি কাকে আঁকড়ে ধরে ছিলো।মুখ ঘুরিয়ে আহনাফের দিকে তাকায়, ভয়ে জলদি হাত সরিয়ে নেন। একটু ধরেই তো ছিলো তাই বলে রেগে যাওয়ার কি আছে! বেয়াদব লোক একটা।

মহুয়া হাত সরিয়ে নিতেই নিজের সামনে আরেকটা হাত দেখতে পায়। মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে শ্রাবণ হাত বাড়িয়ে আছে মহুয়ার দিকে।

মহুয়া বিরক্ত হয়ে ‘চ’ শব্দ করে শ্রাবণের হাত না ধরে নিজেই উঠে দাঁড়ায়। কারো দিকে না তাকিয়ে সিঁড়ির দিকে জেতে জেতে বিড়বিড় করে বলে উঠে, ‘ একজনকে বাঁচার জন্য আঁকড়ে ধরেছি বলে অপমান করলো তো আরেকজন হাত বাড়িয়ে মানবতা দেখাচ্ছে।’

নির্জন মুচকি মুচকি হেঁসে শ্রাবণের দিকে তাকাচ্ছে, আহারে বেচারা।

আহনাফ ছোঁয়ার দিকে তাকালো। ছোঁয়া ভয়ে ভয়ে খাবার খাচ্ছিলো। আহনাফকে তাকাতে দেখে খাবার রেখে বলে উঠলো, ‘ আমি আসি খাওয়া শেষ। ‘

আহনাফ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো, ‘ আমি রুমে যাওয়ার পর আমার রুমে আসবে, এক মিনিট দেরি হলে তার জন্য শাস্তি দেওয়া হবে ।’

ছোঁয়ার আত্মা শুকিয়ে গেলো। আহনাফ কি বলবে ভাবতেই।

চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।