Tuesday, June 24, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 270



হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-১৭

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ১৭

নব দিগন্তের কোল ছুঁয়ে আজ এলোমেলো ভাবে ভেসে চলা অবসন্ন কালো রাঙা মেঘদ্বয় থেকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে বিদ্যুৎ চমকানোর সহিত ধরনীতে এসে বা’রি খেয়ে যাচ্ছে যেন। শ্রাবন সন্ধ্যার হিমশীতলময় পরিবেশে রিমঝিমে বর্ষায় বর্ষিত হয়ে রাস্তার পাশে জমে থাকা পানি ঠেলেঠুলে ড্রেনের দিকে লাইন লাগিয়ে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে যেন৷ ঝমঝমে বৃষ্টির মধ্যে পাঁচ-পাঁচটা গাড়ি গাছপালায় আচ্ছাদিত রাজবাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলে ভিতর থেকে সিকিউরিটি গার্ডরা ছাতা হাতে দৌঁড়ে এসে গেট খুলে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে যেন। ইয়া বড় প্রাচীর ঘেরা বিশাল প্রশস্ত রাজবাড়িটার দিকে তাকালে বর্ষনের মৃদু শিহরনময় আবেশ গাড়ির কাঁচ ভেদ করে শীতল চোখদুটোতে ছেয়ে পরলে আপনা-আপনি বড়সড় হয়ে গেল যেন সিরাতের বিষ্ম’য়মাখা চোখদ্বয়। সাফিন সিরাতের দিকে খুব একটা নজর না দিয়ে নিজ ভাবনার অ’তল গহীনে ত’লিয়ে আছে যেন।
—কে জানে জুবায়ের আর মোহন লা’শটাকে সরাতে পেরেছে কিনা? একটা বার লা’শটা কারও চোখে পরে গেলেই সর্ব’নাশের মাথায় বা’ড়ি হয়ে যাবে তখন। কি কু’ক্ষণে যে বুড়ো আম্মার মাথায় রাজবাড়ি বেড়ানোর ভূত চা’পলো কে জানে।
কথাটা ভাবতে- ভাবতেই সমস্ত শরীর এই দক্ষিণা উত্রা হাওয়ায় বর্ষনময় পরিবেশেও ঘেমে নেয়ে একসাট হয়ে যেতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে যেন সাফিনের ৷ মাথা হেট করে সামনে তাকালে জুবায়ের একগাল হাসি হেসে সাফিনের দিকে ছাতা হাতে এগিয়ে আসলে সাফিন ভ্রুদ্বয় কি’ঞ্চিৎ ভাবে জাগিয়ে ইশারা করাতে জুবায়ের হেসে উঠলো যেন। বিরক্ত হলো সাফিন। জুবায়ের কাছাকাছি আসতে সাফিন গাড়ি থেকে নেমে পরলে জুবায়েরকে হালকা ভাবে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে কিছু বলার আগেই জুবায়ের মৃদুস্বরে বলে উঠলো।
—কাজ হয়ে গেছে স্যার। মোহন লা’শটাকে নিয়ে আমাদের জে’ম্মায় চলে গেছে এতক্ষণে। টেনশনের কোনো কারন নেই আপনার।
হেসে উঠলো সাফিন। জুবায়েরের পিঠ চা’পরে ধীর কন্ঠে বললো।
—গুড যব জুবায়ের। এ বিষয়ে আমরা পরে আলোচনা করছি, এখন এদিকে সামলানো যাক আগে।
জুবায়ের হাসলো শুধু।
“সাফিন রাহেলা বেগমের গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে জুবায়েরও তাঁর পিছুপিছু ছাতা হাতে ছুটলো।” সাফিন রাহেলা বেগমের গাড়ির দিকে অগ্রসর হয়ে দরজাটা খুলে দিলে হেসে উঠলেন রাহেলা বেগম। সাফিন হাত বাড়িয়ে দিলে সাফিনের শীতল হাতে ভর দিয়ে লাঠি হাতে নিয়ে বেড়িয়ে পরলেন রাহেলা বেগম৷ জুবায়ের বড়জোর একগাল হেসে বললো।
—আসসালামু আলাইকুম বড় ম্যাডাম।
জুবায়েরের কথা শুনে রাহেলা বেগম তাঁর তিরিক্ষি চোখদ্বয় দিয়ে একবার পরখ করে নিলেন জুবায়েরকে৷ বললেন।
—ওই ছেমরা তুই কইত্তে আইলি এহিনে? আর ওইসব ম্যাম না ট্যা’ম বুঝিনা বাপু। বুড়ো আম্মা কইরা ডাকবি নাইলে ঠ্যা’ঙ্গে’র চা’ম’ড়া একখানও আস্ত থাকব না তোর। (কথাগুলো বলার আগে রাহেলা বেগম তাঁর হাতে থাকা লাঠিটা দিয়ে জুবায়েরের পায়ের কাছে একটা বা’রি দিয়ে দিলেন।) জুবায়ের মৃদুহেসে বললো।
—ঠিক আছে বুড়ো আম্মা।
রাহেলা বেগম রাজবাড়ীর দিকে তাকিয়ে পুরো রাজবাড়ীটাতে এক নজর চোখ বো’লালেন।
— এহনও এত ঝড়বৃষ্টি লাগে কোন কামে! বাড়িডাতো চোহে পরার মতনই রং-ঢং কইরা বানাইছোত আজাদ?
রাহেলা বেগমের কথা শুনে শুনে আজাদ সাহেব গাড়ি থেকে নেমে রাহেলা বেগমের একপাশে দাঁড়িয়ে হেসে বললেন।
— সবই আল্লাহর রহমত আর আপনার আর আব্বার দোয়ায় আরকি।
রাহেলা বেগম হাসলেন।
—তা বিয়া শাদি করছোত নাকি এহনও একলা-একলা থাহোস ছেমরা?
জুবায়েরের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললে। রাহেলা বেগমের কন্ঠ শুনে জুবায়ের মাথা চুলকালো। কন্ঠ নিচু করে বললো।
— না এখনও করিনি বুড়ো আম্মা। তবে আপনি দেখে শুনে করিয়ে দিলে ম’ন্দ হয়না ব্যাপারটা।
রাহেলা বেগম হেসে উঠলেন। বললেন।
—এত্ত বড় দা’মরা ছেরা বিয়া হরেনায় এহনও। কিরে সাফিন তুইদি বিয়া হরবার কালে কাউরে খবরও দেওনায় আর তোর চে’লাপেলারা এ্যা কি কয় আয়!
—আম্মাজান এখন এগুলান বাদ দেন ভিতরে চলেন৷ আবহাওয়া খা’রা’প এমনিনেই৷ কিরে সাফিন তোর বুড়ো আম্মারে নিয়ে ভিতরে যা৷
আজাদ সাহেবের কথার সাথে তাল মিলিয়ে মোস্তফা সাহেবও সায় দিয়ে একে-একে সবাই ভিতরে চলে গেলে সিরাতও ছাতা ছাড়া বৃষ্টিময় রাস্তায় নেমে পরলো গাড়ি থেকে। ধীর চাহনিতে সাফিন আর রাহেলা বেগমের ভিতরে চলে যাওয়া খুব মনোযোগ সহকারে দেখতে থাকলো। সিরাতের মনের কোনে বিশ্বাস ছিল যে,সাফিন একটিবার হলেও পিছুঘুরে তাকাবে তাঁর দিকে। কিন্তু সিরাতের বিশ্বাসের উপর এক গাবলা পানি ঢেলে দিয়ে সাফিন পিছু না তাকিয়েই ভিতরে চলে গেল রাহেলা বেগমকে নিয়ে।
—একটি বার তাকানোরও প্রয়োজনবোধ করলো না ব’জ্জাতটা! তবে কি আপনি কালকে রাতের জন্য এখনও আমার উপর রেগে আছেন? (মনে-মনে কথাগুলো বলতে থাকলে আমেনা বেগম গাড়ির ভিতর থেকে খাবারের বাটিগুলো নিয়ে বেড়িয়ে পরলে সিরাতকে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে ভিজতে দেখে একজন গার্ডের কাছ থেকে ছাতাটা নিতে নিলে গার্ডটা নিজে এগিয়ে আসতে চাইলে আমেনা বেগম বাঁ’ধ সেধে নিজেই ছাতা হাতে এগিয়ে এলেন সিরাতের কাছে। সিরাতের মাথায় শীতল হাতের স্পর্শ ছুঁয়িয়ে দিলে আমেনা বেগমের উপস্থিতি টের পেয়ে সিরাত পিছুঘুরে তাকিয়ে মৃদু হাসার চেষ্টা করলো শুধু।)
আমেনা বেগম আরেক ঝলক রাজবাড়ির খালি দরজার দিকে তাকালেন৷ সাফিনরা এতক্ষণে ভিতরে চলে গেছে। আমেনা বেগম সিরাতের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললেন।
— কফি করতে পারিসতো নাকি?
আমেনা বেগমের এহেন কথাশুনে সিরাত মৃদু হেসে বললো।
—জ্বী আম্মা জানি৷
—তাহলে ভিতরে গিয়ে এক কাপ করা রকমের কফি করে তোর স্বামির মুখের সামনে ধরিস রাগ কমে যাবে সাহেবের।
আমেনা বেগমের কথা শুনে ল’জ্জায় পরে গেল সিরাত৷ মাথা নিচু করে হ্যা সূচক মাথা নাড়াল শুধু।
.
সিকিউরিটি গার্ডরা গাড়িভর্তি প্রয়োজনীয় জামাকাপড়ের ব্যাগসহ টুকিটাকি জিনিসপএ এক-এক করে ভিতরে নিয়ে যেতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো যেন৷
রাজবাড়ির ভিতরে প্রবেশ করার সময় সিরাতের ডান পা রাজবাড়ির দুয়ারে পরার সঙ্গে- সঙ্গে মৃদু বাতাস এসে চোখমুখে এসে বা’রি খেয়ে গেলে সিরাত তাঁর চোখদ্বয় বন্ধ করে নিল দ্রুত। সকাল থেকেই মাথাটা কেমন ধরে আছে সিরাতের। তাঁর উপর সমস্ত দিনের জার্নিতে ক্লান্তিতে চোখে ঘুম এসে ঝেঁ’কে বসতে চাইছে যেন তাঁর। কোনো রকমে নিজকে সামলে নিয়ে আমেনা বেগমের সাথে ভিতরে আসলে চারদিকে চোখ বু’লিয়ে সাফিনকে না দেখতে পেয়ে মনটা আরও বিষি’য়ে গেল যেন সিরাতের।
—এত রাগ! ব’জ্জা’তের হা’ড্ডি একটা। আমি কি ইচ্ছে করে কালকে রাতে যাইনি নাকি? ধুর,আমার তাতে কি? যেখানে খুশি যাক, যা খুশি করুক গিয়ে। আমার কিচ্ছু যায় আসে না। নাহ কফিও করব না ওনার জন্য। বয়েই গেল সিরাতের ওনার রাগ ভা’ঙাতে। মনে-মনে কথাগুলো বলতে থাকলেও বুকের ভিতর উথাল-পাতাল ঢেউ বইতে থাকলো সিরাতের। ইদানীং না চাইতেও সাফিনেকে যেন চোখে হারাচ্ছে সে। প্রেমে-ট্রেমে পরে যাইনি তো আবার? কথাটা ভাবতেই নিজের মাথায় নিজেই গাট্টা মারলো সিরাত।
—পাগ’ল নাকি তুই সিরাত? ওই শ’য়তা’নের প্রেমে পরার থেকে গলায় কলসি বেঁ’ধে নদীতে ঝাঁ’প দেওয়া ঢের ভালো।
.
— রুবেল তুমি তোমার ভাবিজানকে সাফিনের রুমে নিয়ে যাও। ক্লান্ত দেখাচ্ছে আমার মেয়েটাকে।
আমেনা বেগমের কন্ঠে হুঁ’শ ফিরলো সিরাতের। ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে এসে চারদিকে তাকালে সবকিছু রাজকীয় রকমের দেখে চোখ যেন বড়সড় হয়ে গেল তাঁর৷ ভাবলো বড় লোকের বড়-বড় ব্যাপার-স্যাপার।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ফর্সা গোলগাল চেহারার লোকটার দিকে ধীর চাহনিতে তাকালে আজাদ সাহেব হেসে বললেন।
— এ আমাদের অনেক পুরোনো লোক বুঝলি নাতিবউ। এই রাজবাড়ির দেখাশোনা ওই করত আগে। আম্মাজান আরে একদিন আগে বললে পুরো রাজবাড়ি আরও সুন্দর করে সাজাই দিতাম লোক লাগিয়ে। সকালে হুট করেই আশার তারা পরলে এটুকু সময়ে সাদা কাপর সরিয়ে চারদিক ঝাড়পোছ করাও তো কম দমের কাজ না। আমার এই রুবেল সব একা হাতে সামলিয়েছে।
আজাদ সাহেবের কথা শুনে সিরাত হাসলো।
সরোয়ার সাহেব আর মোস্তাফা সাহেব সোফায় বসে পরলে টি টেবিলের উপরে ঝুড়িতে রাখা নানা রকমের ফল থেকে আপেলটাকেই বেছে নিয়ে খেতে থাকলে আমেনা বেগম তাঁদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন।
— বাড়িতে আসতে পারলো না এনাদের দুই ভাইয়ের খাওয়া শুরু। সারাক্ষণ শুধু খাই-খাই, আর কি চাই তাইতো?
— আহা আমেনা, সামনে এত খাবার থাকা সর্তেও যেন পেট ভরছে কিন্তু মনটা ঠিক ভরতে চাইছে না। কি বলিস সরোয়ার?
মোস্তফা সাহেবের কথা শুনে সরোয়ার সাহেব কলার খোসাটা টেবিলের উপর রেখে হেসে বললেন।
— ভাবি আপনার হাতের কষা মাং’সের ঝোল, বিরিয়ানি আর চিংড়ি মাছের মালাইকারি এসবে আলাদা একটা টান আছে বুঝলেন। এগুলো না হলে খাওয়াটা ঠিক জমে না আমাদের।
মোস্তফা সাহেব চোখ মারলে সরোয়ার সাহেব হেসে হাইফাইভ করলে আমেনা বেগম বললেন।
— এএএহ, এখন তো দুই ভাই মিলে আমাকে ফাইফরমাশ খাটানোর ধা’ন্ধা শুরু করেছেন আরকি।
আমেনা বেগমের কথা শুনে সবাই হেসে উঠলে সকিনা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলে আমেনা বেগম অবাক হওয়ার সহিত বললেন।
—একি সকিনা, তুমি আবার উপরে গেছিলে কখন?
— আসলে আপা খালাম্মায় উপরের রুমে থাকতাছেন তো হেইলে আমি তাঁরে একটু দিয়া আসলাম আরকি।
সকিনার কথা শুনে অবাক হলেন আমেনা বেগম৷
— দাদি আম্মা উপরে থাকছেন!
—কইলেন তো তিনি আমারে।
সকিনার কথা শুনে ড্রয়িং রুমের সবাই তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকলে আমেনা বেগম বললেন।
—আচ্ছা যাইহোক, এখানে কোথায় কি আছে ঘুরে দেখে নিউ কিন্তু। রান্নাঘরটা কিন্তু ওই দক্ষিণ দিকের রুমের দিকে। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তুমিও যাও৷ রান্না করতে হবে দেখছোনা কর্তাসাহেবদের অর্ডার। আর আমরা তাঁদের কৃতদাস হই আরকি।
— কাকি রান্না তো হয়ে গেছে। নানুজান আমাকে সকালে জানানোর সঙ্গে- সঙ্গে আমি মেডদের দিয়ে রান্না করিয়ে নিয়েছি। ভাবিজান চলুন আপনাকে উপরে দিয়ে আসি ভাইজানের রুমে।
রুবেলের কথা শুনে আজাদ সাহেব সোফায় বসতে-বসতে বললেন৷
—দেখছো কি কাজের পোলা পাইছি৷ যাও আমেনা আজকে আর রান্না করতে হইব না তোমার। নাতিবউ, উপরে যাও সাফিনের কাছে৷ (সিরাতের দিকে তাকিয়ে।)
আজাদ সাহেবের কথা শুনে সিরাত খানিক হাসার চেষ্টা করলে রুবেল বলে ছেলেটা সিরাতের জামাকাপড়ের লাগেজটা হাতে নিয়ে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালে রুবেলের পিছু-পিছু সিরাতও উপরে যেতে থাকলো।
.
সাফিনের রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলে রুবেল দরজায় নক দেওয়ার আগেই দরজা ঠেলে জুবায়ের বেড়িয়ে এসে তাঁদের দুজনের দিকে তাকিয়ে একগাল হাসি হেসে নিচের দিকে চলে গেলে সিরাত সেদিকে ধীর চাহনিতে তাকালে রুবেল ভিতরে ঢু’কে সিরাতের লাগেজটা একটা সাইডে রেখে রুমটার দিকে শীতল চাহনিতে তাকালে বাড়ান্দা থেকে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে-উড়াতে সাফিন রুমের ভিতরে আসলে হাসলো রুবেল।
—আরে, কেমন আছো রুবেল? কেমন চলে দিনকাল তোমার?
সাফিনের কথা শুনে রুবেল একগাল হাসি হেসে সাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো।
—এইতো আপনাদের দোয়া আর আল্লাহর রহমতে ভালোই চলছে৷ আচ্ছা নিচে যাই আপনার লাগেজটাও নিয়ে আসি তাহলে।
—আচ্ছা যাও।
রুবেল চলে গেলেও সিরাত দরজার কাছে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো৷ রাগ অভিমান মিলেমিশে পুরো একটা পাহাড় জমা হয়েছে তাঁর মন জুড়ে। দরজার মৃদু আড়াল থেকে সাফিনের ফর্সা তৈলাক্তময় চেহারা দেখা গেলে সেদিকে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে খুঁটিয়ে-খঁটিয়ে দেখছে শুধু তাঁকে৷
—লুকিয়ে-লুকিয়ে আমাকে দেখা বন্ধ করে রুমে এসে চব্বিশ ঘণ্টা আমার দিকে তাকিয়ে থাকো কিচ্ছু বলব না তোমাকে সিরাত।
হুট করে সাফিনের এমন ধারা কথা শুনে ভাবনার আকাশে ছেদ পরে গেলে কেঁ’পে উঠলো যেন সিরাত। সাফিনের উপর রাগও লাগছে প্রচুর৷ রাগ নিয়ে হন-হন করে ভিতরে আসতে সাফিন পু’ড়ে যাওয়া সিগারেটের অর্থেক অংশ পায়ের নিচে পি’শে দিয়ে দরজাটা ভিতর থেকে লক করে দিলে সিরাত সেদিকে একবার তাকিয়ে লাগেজ থেকে ধূসর রাঙা শাড়ি বের করে ফ্রশ হতে চলে গেলে হাসলো সাফিন৷
— এ মেয়ে সত্যি পা’গল। নিজেতো আগে থেকেই পা’গল এখন আমাকেও এর মতো পা’গল বানাচ্ছে আরকি।
— হ্যা আমিতো পা’গল৷ আর আপনি এক নম্বর ছা’গল, ব’জ্জা’ত, ভে’ড়া৷
সিরাতের কথা শুনে হাসি পেল সাফিনের৷ তবুও হাসিটা চাঁ’পা রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
— আড়ি পাতছো কেন এখানে? ওয়াশরুমে বসে কথা বলছো আর উল্টো আমাকে পা’গ’ল- ছা’গ’ল বলছো৷ উল্টা-পাল্টা কথা কম বলো নয়তো আধা ঘন্টার বেশি সময় নিয়ে চুমু খাব বলে রাখলাম আমি।
সাফিনের কথা শুনে রাগে ফুঁ’সতে থাকলো সিরাত।
— এই লোকের মতো অস’য্য আর বিরক্তিকর লোক আর দুটো হয়না। একটু হলেই চুমু খাব, চুমু খাব! কেন রে সিরাতের গাল আর ঠোঁট কি তের বাপের কেনা হোটোল? যে, একটু হলেই চুমু খেতে মন চায়? (কথাগুলো নিজে-নিজেই বিরবির করে বলতে-বলতে ঝর্নাটা ছেড়ে দিলে ঝর-ঝর করে বর্ষার পানির শিহরন বয়িয়ে দিতে থাকলো যেন তাঁর শরীর জুরে।)
৩০ বছরের পুরনো রাজবাড়ি হলেও মেরামত করে যে নতুন করে সবকিছু তৈরি করা হয়েছে, তাঁর ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
সিরাতদের মামা বাড়ির পুরো বাড়িটা জুড়ে যা জায়গা আছে, তাঁর পুরোটা জুড়ে যেন এই একটা ওয়াশরুম। ঝর্নার পানি দিয়ে খেলা করতে-করতে রুমটার দিকে তাকালে যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না তাঁর। যে,সে এই রকম এত বড় একটা রাজবাড়িতে থাকছে।
.
আকাশে মেঘের কনাগুলো কিছুক্ষণ ধরে থম মেরে থাকলে কালো রাঙা ছন্নছাড়া ভাবে ভেসে চলা মেঘদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে আছে সাফিন।
রুবেল সময় করে লাগেজটা দরজার কাছে রেখে নক করে বলে গেছে যে লাগেজ রেখে গেছে সে।
আলসেমি কাঁ’টিয়ে তবুও সেদিকে গেল না সাফিন৷ রাজবাড়ির প্রশস্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁ’কছে সে।
“মাথায় টাওয়াল পেঁচি’য়ে সিরাত ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসলে দরজার কাছে সকিনার কন্ঠস্বর শোনা গেল।”
— ভাবিজান দরজা খুলেন। আছেননি ভিতরে?
সকিনার জো’ড়ালো কন্ঠস্বর শুনে বিরক্ত হলো সাফিন। বারান্দা ছেড়ে ভিতরে আসলে এতক্ষণে দরজা খুলে দিয়েছে সিরাত৷
— আপনের দুধ৷ খালাম্মায় পই-পই করে বলে পাঠাই দিছেন৷ আর বলছেন প্রেত্যেকদিন দিতে। এইটা খাইয়া পশ্চিম দিকে তাঁর রুমে যাইতে কইছে আপনেরে৷
সিরাত নাকমুখ কুঁ’চকে ফেলল যেন। এই বিরক্তিকর খাবারটা তাঁর কোন কালেই পছন্দ ছিল না। আর এখন থেকে নাকি রেগুলার খেতে হবে। ভাবতেই কেমন গা গো’লাচ্ছে সিরাতের।
সকিনা চলে যেতে সাফিন জামা-কাপড়ের লাগেজটা টেনে ভিতরে এনে আবারও দরজাটা লক করে দিয়ে তালা এঁটে দিল এবার। সাফিনের কান্ডে অবাক হলো সিরাত।কিছু বলার আগেই সাফিন গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো।
— দুধটা ফিনিশড করো জলদি। আমি আলমারিতে জামাকাপড়গুলো গোছাচ্ছি।
— পা’গ’ল নাকি আমি। সকিনাও চলে গেছে আমার দুধ খাওয়াও ওখানেই খতম হয়ে গেছে। নিন আপনি খেয়ে নিন তো এটা ঝটপট।
সিরাতের কথা শুনে সাফিন লাগেজদুটো খাটের উপরে রেখে সিরাতের দিকে রাগ নিয়ে তাকিয়ে ধীর পায়ে তাঁর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে সিরাতও এক পা এক পা করে পিছু হাঁটতে থাকলো যেন। একটা সময় এসে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সাফিন সিরাতের চোখে চোখ রেখে সিরাতের মাথার বাম পাশে হাত দিয়ে আঁ’টকে দিলে ভয়ে কয়েকটা ঢোক গি’লে নিল সিরাত। সাফিনের দৃষ্টি থেকে নিজের দৃষ্টি এড়ানোর জন্য চোখ নিচু করে আমতা-আমতা করে বলতে লাগল।
— কি করছেন আপ..নি! এসব কি অস’ভ্যতামি হচ্ছে? নিন দুধটা খেয়ে নিন আপনি।
—ওহ রিয়েলি বেব্বি? কোনটা অস’ভ্যতামি মনে হচ্ছে তোমার? তোমাকে ছোঁয়া’টা নাকি তোমারকে এভাবে আঁ’টকে দেওয়াটা? তাহলে তো বলতে হচ্ছে আমার পুরো রাইট আছে তোমাকে ছোঁয়ার আর তোমাকে খুব কাছ থেকে পাওয়ার। দুধটা তুমি নিজেই খাবে ওকে।আর এক্ষুনি আমার সামনেই খেতে হবে তোমাকে।
—অধিকার ফলাতে আসছেন? খাবনা আমি।
—ধরে নেও তাই।
সাফিন হেসে উঠলে সিরাত সাফিনকে সরিয়ে দিয়ে যেতে চাইলে সাফিনের শীতল হাতের স্পর্শ সিরাতের শাড়ির আঁচল ভেদ করে কোমর স্পর্শ করে গেলে কেঁ’পে উঠলো সিরাত।
সিরাতের হাতের সাথে প্রগরভাবে স্পর্শ করে সিরাতের হাত থেকে দুধের গ্লাসটা নিজের হাতে নিয়ে নিলে ধীর চাহনিতে সিরাত সেদিকে তাকালে সাফিন সিরাতের মুখের কাছে গ্লাসটা ধরতে মুখ ফিরিয়ে নিল সিরাত। রাগে ফুঁ’সতে- ফুঁ’সতে দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে বললো।
— খাবনা আমি।
—তুমি খাবে তোমার ঘাঁ’ড়ও এসে খাবে।
— অস’য্য!
—বিরক্তিকর।
—আপনাকেতো আমি।
—কিচ্ছু করতে পারবে না তুমি। দ্রুত দুধটা ফিনিশড করো এক্ষুনি। নয়তো কি হবে সেটা খুব ভালো ভাবেই জানো তুমি। অন্ধকার রাত, নির্জন জায়গা। জানোতো রাজবাড়ীর পিছনদিকে বিশাল জায়গা জুড়ে গভীরতম একটা দীঘিও আছে৷ আমাকে ক’ষ্ট করে আর নদীতে ফেলতে হবে না তোমাকে।
সাফিনের কথার রেশ শুনে সিরাতের গ’লার কাছের রগগুলো কেমন দাঁড়িয়ে গেল যেন ভয়ে। চোখদুটো ছলছল করে উঠলে সাফিন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না দিয়ে দুধটা এক রকম জোর করেই খায়িয়ে দিল সিরাতকে। সিরাত নাক মুখ কুঁ’চকে ফেললে সাফিন হাতে থাকা খালি দুধের গ্লাসটা হাত থেকে ছেড়ে দিয়ে নিচে ফেলে দিলে গ্লাসটা ভে’ঙে গুড়ি’য়ে গিয়ে কাঁচগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফ্লোরে পরলে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। চোখদ্বয় খিঁ’চে বন্ধ করে ফেললে এতক্ষণের ঝিম ধরে থাকা বর্ষার বর্ষনময় রেশও যেন ঝমঝমিয়ে সমস্ত শহর ভিজিয়ে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরেলো৷ হুট করে কারেন্টের সুইচ অফ হয়ে গেলে নিচে জুবায়েরসহ আজাদ সাহেবের গলার স্বর শোনা গেলেও সেদিকে খুব একটা ভ্রুক্ষেপ দেখালো না সাফিন। সিরাতের দিকে অনেকটা ঝুঁ’কে আসলে সাফিনের ঘন হয়ে আশা নিশ্বাসের রেশ যেন সিরাতের চোখে মুখে এসে ছেঁয়ে পরতে থাকলে চোখ বুজে আসতে চাইছে সিরাতের৷ সিরাতের মাথার পিছন থেকে মাথায় প্যাঁ’চানো টাওয়ালটা খুলে নিচে ফেলে দিলে সিরাতের ভেজা চুলগুলো কোমর অব্দি ছুঁই-ছুঁই ভাবে ছড়িয়ে পরলে দুই হাত দিয়ে সিরাতের মাথার পেছন থেকে চে’পে ধরে ঠোঁট ঠোঁট ডুবিয়ে দিল সাফিন। হুট করে এভাবে আক্র’মনে সমস্ত শরীর অব’শ হতে থাকলো যেন সিরাতের। সাফিনের হাতের স্পর্শ গভীর থেকে গভীরতম ভাবে আঁছ’রে যেতে থাকলে সিরাতের চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরতে থাকলে অন্ধকারে বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সঙ্গে কানের কার্নিশ ঘেঁ’ষে যেন সিরাতের নীরবে হাড় মেনে নেওয়ার আত্ম’ত্যা’গ উপলব্ধি করতে পারলো সাফিন। খোলা বারান্দার দাঁড় এড়িয়ে দক্ষিণা উত্রা হাওয়া যেন শরীরে কাঁ’পুনি ধরিয়ে দিচ্ছে সিরাতের৷ সাফিন সিরাতকে ছেড়ে দিতে সিরাত দ্রুত পায়ে মুখ লুকিয়ে চলে যেতে চাইলে সিরাতের ধূসর রাঙা শাড়ির আঁচলটা টেনে ধরলো সাফিন। সিরাতের পা দুটো আপনা-আপনি ভাবে থ’মকে দাঁড়িয়ে গেলে সাফিন মৃদুস্বরে বললো।
— চাবিটা নিয়ে যাও। তালা দেওয়া আছে।
.
সকাল-সকাল ইলেক্ট্রিসিটির লোক এসে কারেন্টের সুইচটা ঠিক করে দিয়ে গেলে আজাদ সাহেব সস্থির নিশ্বাস ছারলেন যেন। অনেকদিনের লাইন লাগানো ছিল। রাহেলা বেগম এতটা তারা দেওয়ার কারনে সবকিছু এটুকু সময়ের মধ্যে ঠিকঠাক ভাবে করতেও পারেননি তিনি। তাঁর উপরে তুমুল বেগে ঝর বৃষ্টির কারনে মেইন সুইচের তারটা কেঁ’টে গেছিল।
“জানালা ঘেঁষে ভোর হওয়ার মৃদু আলো এসে চোখে-মুখে পরাতে ঘুম ভে’ঙে গেল সিরাতের।” আজকেও রাহেলা বেগমের পা টি’পতে-
টি’পতেই রাহেলা বেগমের পায়ের কাছেই মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে পরেছিল সে।
বারান্দা থেকে হীমেল হাওয়া ভেসে আসতে থাকলে শাড়িটা ঠিক করে ধীর পায়ে সেদিকে এগিয়ে গেলে বৃষ্টি শেষে সুন্দর এক সকালের শুরু হলো যেন। আকাশের বুক থেকে কালো রাঙা মেঘের রেখা ফুঁড়িয়ে পুরো রামধনু নেমে পরেছে যেন আজ। দূরদূরান্ত পর্যন্ত শুধু জঙ্গলের দেখা পাওয়া যাচ্ছে যেন। হালকা চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস ছেড়ে আবার পিটপিট করে তাকিয়ে যেতে নিতে পর্যাপ্ত পরিমানে জায়গা নিয়ে একটা দিঘি চোখে পরলো উত্তর দিকটাতে। এই দিঘির শেষ কিনারা দেখা না গেলেও বাতাসের স্রোতের সাথে ঢেউয়ে-ঢেউয়ে খেলতে থাকা পানির উপরে ফুঁটে থাকা পদ্মফুলগুলো চোখ এড়াল না সিরাতের৷ চোখগুলো খুশিতে চিকচিক করে উঠলো যেন তাঁর।
—ওই মাইয়া সক্কাল-সক্কাল এহিনে কাম কি তোর?
রাহেলা বেগমের কন্ঠ শুনে পিছু ফিরে রাহেলা বেগমের দিকে তাকিয়ে তাঁর করা নির্দেশ অনুযায়ি মাথার ঘোমটাটা এক হাত আরও বেশি নামিয়ে দিল সিরাত। ধীর কন্ঠে বললো।
—কিছু না বুড়ো আম্মা।
.
সকালের ব্রেকফাস্ট টেবিলে সবাই এক-এক করে চলে আসলে সরোয়ার সাহেব তাঁর লাগেজ নিয়ে নেমে পরলে আমেনা বেগম রান্নাঘর থেকে সকিনার সাথে মিলে খাবারের প্লেটগুলো এনে সাজিয়ে রাখতে থাকলে সিরাতও এগিয়ে এসে হাতে হাত লাগালে আমেনা বেগম বাঁ’ধ সাধলে রাহেলা বেগম লাঠিতে ভর দিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসতে-বসতে তাঁর মোটা ফ্রেমের চশমাটা ঠিক করে বললেন।
—মাইয়া মাইনষে আবার কাম-কাইজ করবে না কেন রে আমেনা? ওই ছেমরি, ভাগ্য কইরা এহেন শাশুড়ী পাইছো। শাশুড়ী যতই কাম করতে না করুক না কেন তুই তোর কাম চালাইয়া যাইবি বুঝছোসনি আমার কতা।
রাহেলা বেগমের কথা শুনে সিরাত মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।
হুট করেই লাগেজ হাতে করে সরোয়ার সাহেবকে নামতে দেখে আজাদ সাহেব ভ্রু জাগিয়ে ফেললেন। বললেন।
—তুই আবার কই যাচ্ছিস?
সরোয়ার সাহেব মৃদু হেসে বললেন৷
—কম দিনতো হলো না দেশে।এবার নিজের কাজে ফিরে যাই আরকি।
সাফিন উপর থেকে হাতে ঘড়ি পরতে-পরতে নামলে আর চোখে একবার সিরাতের দিকে তাকিয়ে নিচে আসলে হুট করেই রুবেল দুশ্চিন্তায় মাখা চেহারা নিয়ে রাজবাড়ির দরজায় হাজির হয়ে বললো।
— নানুজান পুলিশ আসছে গেটের সামনে….

চলবে……

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-১৬

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ১৬

( ভিতরে কিছু-কিছু জায়গায় অশা’লীন ওয়ার্ড ইউস করা হয়েছে গল্পের প্রয়োজনে। তাঁর জন্য ক্ষ’মাপ্রার্থী। )

সিরাত চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরই দরজার কাছে কিছু ভে’ঙে যাওয়ার আওয়াজ কানের খুব কাছ থেকে অন্তর্নিহিত হতে সাফিনের তিরিক্ষি চোখদ্বয় হুঁশি’য়ারি ভাবে দরজার কাছে এসে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে ভ্রু কুঁ’চকে ফেলল নিমিষেই। গাম্ভীর্যের সহিত বললো।
—তুমি এখানে?
সাফিনের গম্ভীর কন্ঠের রেশ শুনে সকিনার হাতে থাকা দুধের গ্লাসটা কেমন কেঁ’পে উঠলো যেন৷ অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হাতে থাকা দুধের গ্লাসটা সাফিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে মৃদু হেসে বললো।
—খালাম্মায় ভাবিজানের জন্য পাঠাইছেন। এইটাই দিবার জন্য আসলাম আরকি।
সাফিন তাঁর কুঁ’চকে ফেলা ভ্রুদ্বয় নিচে নামালো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
— সিরাত তো বুড়ো আম্মার কাছেই গেল মাএ। যাইহোক তুমি এখানে দাঁড়াও আমি কফির মগটা এনে দিচ্ছি নিয়ে যাও আর দুধটা তুমি বুড়ো আম্মার রুমেই নিয়ে যাও।
সকিনা কয়েকটা ঢোক গি’লে মৃদু হেসে কোমরে আঁচল গুঁ’জে বললো।
—আইচ্ছা সাহেব।
সাফিন কফির মগটা সকিনার হাতে ধরিয়ে দিলে সকিনা চলে যেতে সাফিন রুমের ভিতরে চলে গিয়ে দরজা লক করে দিল ভিতর থেকে।
.
— ওই ছেমরি, ভালোভাবে তেলতা মালিশ করে দে তাত্তারি৷ গাঁ-গোত্ত’রে রাজ্যের বে’তারে আমার। ভালো কইরা মালিশ কর। তোর শরীরে তো হাঁ’ড় ছাড়া মাং’স দেহাই যায় না ছেমরি। ভাতা’রের কি প্রেম মোহব্বত কম পইরা গেল নি আয়। স্বামী হইলো গিয়া বিয়ার পরে একখান মাথা গোঁ’জার জায়গা বুঝছোত ছেমরি৷ হগ্গ’ল সময় ভালোবাসা দিয়া আগলা’ইয়া রাখবা যাতে অন্য মাইয়া ফাঁ’দে না ফালা’ইতে পারে। ব্যা’ডা মানুষগো মন বোঝা দায় বুঝলা মাইয়া৷ কোন সময় না আবার আঁচলের ফাঁক দিয়া ফাঁকি দিয়া চইয়া যায়গা টেরও পাইবা না।
রাহেলা বেগম বিছানায় শুয়ে কোমরের পিছনে হাত ঠেকিয়ে অনবরত কথাগুলো বলতে থাকলে সিরাতের শরীরে কেমন গি’জগি’জ করতে থাকলো যেন। কান থেকে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে তাঁর। এ রকম কথাবার্তা আগে কখনো শুনেনি সিরাত। ইচ্ছে না থাকা সর্তেও তবুও গাঁ’ট হয়ে বসে-বসে রাহেলা বেগমের কথাগুলো শুনতে হলো তাঁকে। মাঝখানে সকিনা দুধের গ্লাস দিয়ে গেলে নাক-মুখ কুঁ’চকে ফেললেও রাহেলা বেগমের তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে আঁচল দিয়ে নাক চে’পে ধরে ঢকঢক করে দুধটুকু শেষ করলো সিরাত।
রাহেলা বেগম তখন হেসে কু’টিকু’টি হয়ে বলেছিলেন।
— ছেমরি খাবি বেশি-বেশি। নাইলে স্বামি ধরার লগে-লগেই তো হাঁ’ড়’গো’র ভাই’ঙ্গা বইসা থাকবি মাইয়া৷ আমি যে কয়দিন এহিনতে আছি শ্বাসও ছাড়তে পারবা মনু শান্তিতে কই’য়া রাখলাম আগেত্তে।
সিরাতের চোখ-মুখ বিরক্তিতে ছেঁয়ে গেলেও মুখ থেকে টু শব্দও করতে পারলো না সে। শাশুড়ী বার>বার হলপ করে বলে দিয়েছেন রাহেলা বেগমের সবকথা শুনতে। তাই একেবারে বাধ্য হয়েই রাহেলা বেগমের অশা’লীন কথাগুলো গি’লতে হলো বসে-বসে।
.
সকালের দিকে বৃষ্টি থেমে গেলে জানালা ভেদ করে হিমশীতল হাওয়া ভিতরে ঠেলে আসতে থাকলে শীতের কারনে কাঁ’পা-কাঁ’পা চোখদ্বয় খুলে এলো সিরাতের। পিটপিট করে চারপাশে চোখ বো’লাতে রাহেলা বেগমের পায়ের কাছে নিজেকে ঘুমিয়ে গেছিল দেখে শাড়ি ঠিক করে দ্রুত উঠে বসলো সে। রাহেলা বেগম আরামে ঘুমোচ্ছেন। সিরাত রাহেলা বেগমের পায়ের কাছে থাকা কাঁথাটা ভালোভাবে তাঁর গাঁয়ে জড়িয়ে দিয়ে হাত দিয়ে চোখ ক’চলে নিজের রুমের দিকে রহনা হলো।
—ইশরে, সারাটা রাত এখানেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম আমি। মাথাটাও কেমন ভাড়-ভাড় লাগছে। মিস্টার ব’জ্জা’ত তো রাত ১ টার আগেই রুমে যেতে বলেছিলেন আমাকে। আর এখন সকাল হয়ে গেল। যাকগে, ওনার কথার ধার ধারে কে আবার।
কথাগুলো বলতে-বলতে মাথাটা হালকা চে’পে ধরে ড্রয়িং রুমে হালকা উঁকিঝুঁ’কি দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল সিরাত৷
.
সাফিনের রুমের সামনে এসে দরজাটা লাগানো দেখে কলিং বেল আর বাঁজাল না। সকাল-সকাল আবার আশেপাশের রুমের লোকনা জেগে যায়। মৃদু ধা’ক্কা দিতেই দরজাটা খুলে গেলে অবাক হলো সিরাত।
—একিরে বাবা! এ লোক আবার কবে থেকে দরজা লক না করেই কুম্ভ’কর্ণের মতো পরে-পরে ঘুমোয়? কথাগুলো মনে-মনে বলতে থাকলে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢু’কে গেলে চারদিক দিয়ে ঘেরা অন্ধকার রুমটা চোখে পরছে শুধু। বিরক্তি নিয়ে চোখ বড়-বড় করে তাকিয়ে কারেন্টের সুইচ খুঁজতে থাকলে হুট করেই কারো শক্ত হাতের বাঁ’ধনে বাঁ’ধা পরে গেল সিরাত। জোড়া’লো হাতের স্পর্শে নড়তেও পারছে না যেন। কারো ঘন হয়ে আশা নিশ্বাসের গরম উষ্ণ’তা ঘাঁ’ড়ের কাছে খুব কাছ থেকে অনুভব করলে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। শরীরের ভিতরে প্রবল বেগে ঝর বয়ে যাচ্ছে যেন। চোখ খিঁ’চে খানিক বন্ধ রেখে ম’স্তিষ্কে বা’রি খেয়ে গেলে রাগে ফুঁ’সতে থাকলো সে। সাফিন ছাড়া এ আর কেউ হবে না ভেবে রাগ নিয়ে বলতে লাগলো সিরাত।
—ব’জ্জা’ত লোক একটা, ছাড়ুন আমাকে। আপনার ওই ত’ক্তা মার্কা হাত দিয়ে ছুঁবেন না আমাকে। উফ রে আমার নরম হাতটা ভে’ঙেই গেল বলে আজ। ছড়ুন বলছি আমাকে?
সিরাতের অনবরত কথাগুলো শুনে রাগে সাফিন সিরাতের মুখ চে’পে ধরে দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে চি’বিয়ে-চি’বিয়ে বললো।
—চুপ, একদম চুপ থাকো তুমি। আর একটা বা’জে বকলে আই সয়ার তোমাকে এক্ষুনি গু’লি করে বস্তুা বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দেব সিরাত৷
সাফিনের মাত্রাতিরিক্ত রাগান্বিত কন্ঠ শুনে আপনা-আপনি চুপ হয়ে গেল সিরাত। ভয়ে কয়েকটা ঢোক গি’লে নিল সে। অন্ধকারে আবছা আলোয় সাফিনের যেটুকু চেহারা বোঝা যাচ্ছে তাতেই সে ভয়ে গাঁ’ট হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। আলোয় রাঙা রুমে সাফিনের চেহারাটা দেখলে বোধহয় বেহু’শই হয়ে যেত আজ। সাফিনকে দেখে মনেও হচ্ছে না সারারাত ঘুমিয়েছে বলে। নয়তো রুমে ঢোকা মাএই এ্যাটা’কটা ঠিক যাচ্ছে না সময়ের সাথে।
— মিস্টার ব’জ্জা’ত কি রাতে ঘুমাননি নাকি?
কথাটা মাথার মধ্যে ঘোরপাক খেয়ে গেলে
সাফিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে গম্ভীর কণ্ঠে রাগ নিয়ে বলে উঠলো।
— এখন কয়টা বাজে হুম। আমি তোমাকে কয়টায় রুমে আসতে বলেছি? তুমি জানো আমি টাইমের কাজ টাইমে করতে পছন্দ করি সিরাত৷ তোমাকে আমি কি বলেছিলাম? আর তুমি আমার কথা কানে কেন নেওনি হ্যা! তোমার রাগ, তোমার অভিমান, এগুলো তো আমি মুখ বুঁজে সবটা স’য্য করি। এগুলো কি তোমার চোখে পরেনা সিরাত? তুমি জানো শাহনেওয়াজ সাফিন কখনো কারো কথা শুনতে অভ্যস্ত ছিল না। আর সেখানে তুমি প্রতিটাখন, প্রতিটাদিন আমাকে যা খুশি কথা শোনাও তারপরও,তারপরও আমি মুখ বুঁজে সবটা স’য্য করে যাই৷ আর একটা রাত,মাএ একটা রাত তোমার কাছে চেয়েছি সেটাও টাইমে আসতে পারলে না তুমি!
— বিয়েটাতো একটা ডিল তাইনা? তাহলে?
সিরাতের ভ্যা’বলা সহিন শীতল কন্ঠের রেশ শুনে রাগ রাগলো সাফিনের। বিরক্তি নিয়ে সিরাতকে গাঁয়ের জো’রে ধা’ক্কা দিতে দেয়ালের সাথে বা’ড়ি খেয়ে গেল সিরাত। ব্যা’থায় কুক’রে উঠলেও নিশ্বব্দে চোখের পানি ফেলতে থাকলে সাফিন গম্ভীর কন্ঠে বললো।
— গাঁ’ধি একটা। যা খুশি করো তুমি। সামান্য কমান্সেস পর্যন্ত নেই মাথায়। তোমাকে কি বাসর করার জন্য ডাকছিলাম নাকি? গ্রামের বাড়িতে বুড়ো আম্মার দুইটা গরু আছে বুঝলে, বুড়ো আম্মার সঙ্গে- সঙ্গে ওদেরও সেবা করে আসো যাও। (কথাগুলো বলেই সাফিন লাইট জ্বা’লিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলে ব্যা’থার জায়গাটাতে হাতে হাত ঘ’ষতে থাকলো সিরাত।)
—নিজে গিয়ে গাঁ’ধার সাথে থাক শ’য়’তা’ন। আ’জা’ই’রা কোথাকার। হাতটা ভে’ঙে গেল মনে হয় আমার। সাধে ব’জ্জা’ত ডাকি। পারফেক্ট নাম৷ তোর সাথেই যায় এটা। (মনে- মনে কথাগুলো বলে রাগে ফুঁস’তে থাকলো সিরাত।)
.
সকাল-সকাল সকিনা তিন-চারটে সুটকেস নিয়ে নিচে নামতে আমেনা বেগম রান্নাঘর থেকে ধীর চাহনিতে সেদিকে তাকিয়ে ভ্রুটা কি’ঞ্চিৎ ভাজ করে সকিনার উদ্দেশ্যে বললো।
—আরে এগুলোতো দাদির সুটকেস!এগুলো নিয়ে কোথায় যাচ্ছো তুমি সকিনা?
—খালাম্মায় কই’লো কইত্তে নাকি যাইব, তো আমারে এগুলান নামাইতে কই’লো।
সাফিন কালো রাঙা শার্ট পরে পরিপাটি ভাবে তৈরি হয়ে ভা’জ করা চুলগুলোতে সাই দিয়ে গাড়ির চাবিটা ঘোরাতে-ঘোরাতে নিচে নামতে সকিনার হাতে সুটকেস গুলো দেখে ভ্রু জাগিয়ে ফেলল সে। বললো।
—এগুলো আবার কি?
— এগুলান আমার কাপর-চো’পর ছেমরা। হুনলাম আজাদ নাহি তোর নামে রাজবাড়ী লিইখ্যা দিল, রং-ঢং করাইলো। তো আমি আইসি যহন রাজবাড়ী তো যাইমই যাইম৷ তোরা হগ্য’লে আমারে না জানাইয়াই কাম কাইজ করো। মনে করবার পারছো তোরা না কই’লে আমি জানবারই পারুম না।
রাহেলা বেগম লাঠিতে ভর দিয়ে এগিয়ে আসলে সাফিন মৃদু হাসলো শুধু।
—বুড়ো আম্মার কানে খবরটা আবার কে দিল? অবশ্য দেওয়ার লোকেরও অভাব নেই।
মনে-মনে কথাটা ভাবতে থাকলে, উপর থেকে সরোয়ার সাহেব আর মোস্তফা সাহেব নিচে নামলে সাফিন হেসে উঠলো। বললো।
— আরে তোমরা কখন এলে?
— কালকে রাতে এসে দরজা ধা’ক্কিয়ে উঠিয়েছে তোর বাপ আমাকে। সারাক্ষণ শুধু রাজনীতি ফা’জনীতি নিয়াই তালে আছে। রাদ আর দুপুর নেই ফাইফরমাশ খাঁ’টি আমি আরকি। কি আর করার আমার। কপালটাই তো এই বুড়োর কাছে এসে ঠেকেছে।
আমেনা বেগমের কথা শুনে হেসে উঠলো সাফিন। মোস্তফা সাহেব হেসে বললেন।
— যতই আফ’সোস করো না কেন আমেনা। এই বুড়োর মুখ দেখেই ম’রতে হবে তোমাকে। (কথাটা বলতে-বলতে ডাইনিং টেবিলে বসলেন মোস্তফা সাহেব।) আমেনা বেগম মুখ বাঁ’কিয়ে বললেন।
—তবেই হলো আমার।
সরোয়ার সাহেব রাহেলা বেগমকে হেসে মৃদুভাবে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন।
—ওহ দাদিজান আপনাকে কত বছর পরে সামনাসামনি দেখলাম আমি।
—ওই ছেমরা ছাড় আমারে। এত্তর ডাঙ্গর পোলায় আমারে জড়াই ধরে। তোর মায় ম’রছে কম দিনতো হইলো না, বুদ্ধি জ্ঞান কি লোপ পাইছে তোর? গেল রে গেল তোর দাদার পরে আমি আর কা’উরে আমারে জড়াই ধরবার দেইনায়। আর তুই কিনা আইজকে আমার এতদিনের ধরে রাখা পর্দা শ্যাষ কইরা দিলি। হতচ্ছা’ড়া আইজকে তোর হইব আমার হাতে। কথাগুলো বলতে যতক্ষণ রাহেলা বেগমের শক্ত হাতের লাঠির বা’ড়ি নিচে পরলো না একটাও সরোয়ার সাহেবের পিঠ থেকে।
“সদ্য ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পাল্টে নিচে নামছিল সিরাত।” রাহেলা বেগমের চেচামেচি দেখে নিচে নামা থেকে আরেকধাপ উপরেই চলে গেল সে।
রাহেলা বেগমের এমনধারা কান্ড আর নতুন নয়। আগেও করেছেন এমন পা’গলামো। আজাদ সাহেবের আব্বা জাফর সাহেব গ’ত হওয়ার পর থেকেই তাঁর মাথার গন্ড’গো’ল বলে সবাই জানেন। তবে ভদ্রমহিলার ম’স্তিষ্ক খুব বিচক্ষণ। মোস্তফা সাহেব সহ আমেনা বেগম সাফিন মিলে সরোয়ার সাহেবকে সরিয়ে দিলে আজাদ সাহেব নিচে আসতে নিতে সিরাতকে সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মৃদু হেসে বললেন।
— আরে নাতিবউ ভয় পাইস না তুই। চল আমার সাথে নিচে চল। আমার আম্মাজান কিন্তু মানুষটা খা’রাপ না বুঝলি। আব্বারে অনেক মোহাব্বত করে তো তারজন্য এমন। তোর আম্মায় কিছু বলেনায় আমেনা?
সিরাত আজাদ সাহেবের কথা শুনে মৃদু হাসলে আজাদ সাহেব সিরাতের মাথায় হাত রাখলেন শুধু।
.
— তুমি কি পা’গল? আমি মাএ কয়েকদিন শহরে ছিলাম না তাতেই এত গন্ড’গোল পা’কিয়ে রেখেছো আমার জন্য? কে বলেছিল আইডেন্টিটি কার্ড লা’শের সাথে দিয়ে দিতে? আমি বলেছি? আনসার মি? ভাবতেই অবাক লাগছে কতগুলো ছা’গ’ল মাইনে দিয়ে পুষতেছি আমি।
অন্ধকারে থাকা লোকটা দেয়ালের সাথে নিজের হাতটা সজোরে ঘু’ষি দিতে সামনে কাচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা ভয়ে কেঁ’পে উঠলো যেন। কাঁ’পা>কাঁ’পা কন্ঠে বললো।
—সাহেব আমি নিজেতো যাইনি। লোক লাগিয়েছিলাম। মন্দাকে দিয়ে কাজটা করিয়েছি। আমার ভায়রাভাই হয়। ওযে এমন কান্ড বাঁধাবে ভাবিনি।
অন্ধকারের লোকটা যেন আরও রেগে গেলেন তাঁর কথা শুনে৷ রাগান্বিত কন্ঠে বললেন।
—এর নামটাই যখন মন্দা তাহলে তুমি ভাবলে কিভাবে কাজেকর্মে মন্দামি ছাড়া ভালো কিছু হবে? আমার এতদিনের প্লান সব এক নিমিষেই ভেস্তে দিতে চাইছো তুমি? ভুলে যেওনা আমি আমার বহুদিনের চ্যা’লা দুলালকেও পর্যন্ত মে’রে দিয়েছি। সেখানে তুমি তো কোন খেতের মূলা।
সামনে থাকা লোকটা মাথা নিচু করে ফেলল। ধীর কন্ঠে বললো।
—রাজবাড়ীর ওখানে একটা লা’শ ফেলে এসেছি বস্তুা বেঁ’ধে। একটা বার মিডিয়ায় হৈচৈ পরে গেলেই শাহনেওয়াজ সাফিনের রাজবাড়ী পুলিশের রেটে চলে যাবে সাহেব। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
লোকটা হেসে উঠলে অন্ধকারের লোকটা পকেট থেকে বন্দু’কটা বের করে সামনে থাকা লোকটার দিকে নিচু ভাবে ছুঁড়ে দিয়ে মৃদু হেসে উঠলেন। শীতল কন্ঠে বললেন।
—গু’লি করো।
—কাকে করতে হবে সাহেব। একবার বলুন শুধু এক্ষুনি করে দিচ্ছি।
—আপাদত নিজের মাথায় নিজে গু’লিটা করে আ’হাম্মকের যে একটা লিস্ট আছে না? ওই লিস্ট থেকে নিজের নামটা কাঁ’টিয়ে পৃথিবীর মা’য়া ত্যা’গ করে আমার সামনে থেকে দূর হও।
ভয়ে কেঁপে উঠলো যেন লোকটা। নিজের দ্রুতগতির নিশ্বাস নিজে খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করতে পারলে অনুনয়-বিনয় করে অন্ধকারের লোকটার উদ্দেশ্যে বললো।
—ভু’ল হয়ে গেছে সাহেব৷ এবারের মতো মা’ফ করে দিন আমাকে?
অন্ধকারের লোকটা বাঁকা হাসি হেসে সামনে থাকা চেয়ারটা পা দিয়ে সোজা করে বসে পরলে সামনে থাকা লোকটা তাঁর পা জড়িয়ে বসে পরলে হেসে উঠলেন যেন তিনি। রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললেন।
— মাএ পাঁচ গুনব আমি। তাঁর মধ্যে নিজেকে নিজে গু’লি না করলে যেটুকু শান্তিতে ম’রতে পারতে না তুমি? তাঁর থেকেও ভয়াবহ ভাবে ম’রতে হবে তোমায়।
সামনে থাকা লোকটা ফু’পিয়ে কেঁদে উঠলো যেন।
—সাহেব আমার পাঁচ বছরের একটা ছেলে আর বয়স্কা মা রয়েছে বাড়িতে সাহেব। মা ম’রা ছেলেটা সাহেব এতিম হয়ে যাবে সাহেব৷ দোহাই লাগে আপনার।
অন্ধকারের লোকটা সামনে থাকা লোকটাকে পা দিয়ে লা’থি দিয়ে সরিয়ে দিলে লোকটা দুই হাঁটু ভা’জ করে কান্নারত ভাবে বসে পরলো ফ্লোরে৷ ফ্লোর থেকে বন্দু’কটা হাতে নিলে তাঁর পাঁচ বছরের ছেলের হাস্যজ্বল মা’য়াময় চেহারাটা ভেসে উঠলে চোখ বন্ধ করে ফেললে অঝোরে কান্না ঝরে পরলো তাঁর চোখ বেয়ে।
—আব্বা তোর বাপরে পারলে মা’ফ কইরা দিস আব্বজান৷ তোর বাপ না চাইলেও সামান্য টাকার জন্য, খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার জন্য, তোরে মানুষ করবার জন্য এই মৃ’ত্যুর পথে নাম লিখিয়েছিল৷ আমি ভালা না আব্বা৷ তুই ভালা থাকিস তোর দাদিরে নিয়া।
লোকটা কেঁদে উঠলে বিক’ট শব্দে বন্দু’কটা লোকটার মাথা ফুঁ’টো করে এফোর-ওফোর হয়ে গেলে পা ঢলে লুটি’য়ে পরলো ফ্লোরে সে। তৎক্ষনাৎ ফ্লো’র র’ক্তে লাল হয়ে গেলে অন্ধকারের লোকটা তৃপ্তির হাসি হাসলো৷ তাঁর হাসির রেশে পুরো রুমটা কেঁ’পে উঠলো যেন।
—তোমাকেও ঠিক এভাবে শেষ হতে হবে শাহনেওয়াজ সাফিন। সেদিন আমিও হাসব। জাস্ট সময়ের অপেক্ষা। এখন নাহয় তোমার মুখের হাসিটাই বরাদ্দ থাকুক……

চলবে…….

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-১৫

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ১৫

গগনের তুমুল বর্ষনপাতের আওয়াজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হুট করে গেটের সামনে গাড়ির হর্ণের আওয়াজ কানের কার্নিশ ঘেঁষে পৌঁছাতে ভ্রুদ্বয় কিঞ্চিৎ ভা’জ করে ফেলল সিরাত। চোখে মুখে যেন বিরক্তির রেখা ফুটে উঠছে তাঁর।
— কোন আ’হা’ম্মক আবার এই রাতের বেলা ছা’গলে’র মতো বাড়ির সামনে হর্ন বাজাচ্ছে!আ’জব কান্ডকারখানা সব।
সেফা আলু ধুয়ে এনে একটা করাইতে পানি ঢেলে আলু দিয়ে সেদ্ধ করার জন্য চরিয়ে দিয়ে বললো।
—আমি দেখতেছি আপা।
সেফা যেতে নিতে সিরাত বাঁ’ধ সেধে বললো।
—না থাক,তুমি রান্নাঘরে থাকো আমি দেখছি।
সেফা হেসে সিরাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে ফ্রিজ থেকে ডিম বের করে আলুর সাথে দিয়ে কাজে মন দিল।
.
সিরাত গেট খুলতে না খুলতেই বাহিরের বর্ষনপাতের রেশ ভিতরে ঠেলে প্রবেশ করতে চাইছে যেন। গেটের দুইপাশে পানি জমে গেছে পুরো। দক্ষিণা উত্রা হাওয়া সো-সো শব্দ করে বাড়ির ভিতরে ঢু’কে যেতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে আজ।
সিরাতকে দরজা খুলতে দেখে হর্ন বাজানো থামিয়ে দিল সাফিন৷ গাড়িতে লাগানো লাইটারের হলুদরাঙা আলো সাফিনের চোখে-মুখে ছেঁ’য়ে পরাতে সাফিনের ফর্সা তৈলাক্তময় চেহারাটাতে যেন আরও দ্বীগুন সুন্দর দেখতে লাগছে তাঁকে। সাফিনকে দেখে সিরাতের এতক্ষণের বুকের মাঝে জ্ব’লতে থাকা অনুভবটাতে পানি পরলো যেন৷ মনের শহরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঢেউ উথালপাতাল করে উঠতে চাইছে তাঁর৷ কিছুক্ষণ আগের বিরক্তিটা যেন নিমেষহীন ভাবেই উবে গিয়ে ভর করে বসছে একরাশ অভিমানের পেয়ালা।
—মিস্টার ব’জ্জা’ত? তাহলে ইনিই এতক্ষণ ছা’গলে’র মতো হর্ণ বাজিয়েছেন গেটের
সামনে। মৃদুস্বরে কথাটা আওরাতে রাগ লাগলো প্রচুর।এতক্ষণে শ’য়’তা’নটার আসার সময় হলো তাহলে?
ইদানীং সাফিনকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবা পরছে সিরাতের। সাফিনের প্রত্যেকটা কর্মকান্ডেই রাগ দেখানোটা কেমন অধিকারে পরিনত হয়ে গেছে তাঁর। ধীর চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকাতে বাঁকা হাসি হাসলো সাফিন। গাড়িটা লক করে দিয়ে গাড়ি থেকে নামতে নিতে হুট করে ফোনটা বেজে উঠলে ফোনের স্ক্রিনে আম্মা লেখা দেখে মৃদু হেসে ফোনটা রিসিভ করলো সে।বললো।
— কি বেড়ানো হলো তোমাদের? একেতো আমাকে না জানিয়েই বেড়াতে গেলে,তাঁরউপর বাড়ির সব মেডগুলোকেও ভাগিয়ে দিয়ে গেলে। এ নিশ্চয়ই নানুর কাজ। ভালো হলে না তোমরা৷ মতলব কি এঁটেছিলে বেশ বুঝতে পেরেছি আমি।
সাফিনের কথা শুনে হেসে উঠলেন আমেনা বেগম। বললেন।
— আরে ওসব কথা রাখ এখন। এখন কই আছিস তোরা সেটা বল। তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয় বুঝলি। তোর বুড়ো আম্মা এসেছেন গ্রাম থেকে। আমার মেয়েকে নিয়ে আয় জলদি৷ দেখবেন বলে সেই তখন থেকে বাড়ি মাথায় করে ফেলেছেন তিনি। জানিসইতো তিনি পুরোনো দিনের লোক।এসব ঘোরাফেরা খুব একটা পছন্দ নয় তাঁর। যখন যেটা বলবেন তখন সেটাতেই অটুট থাকেন সে।
ভ্রু জাগিয়ে ফেলল সাফিন। হাসির স্বরে বললো।
— ব্যাস হয়ে গেল। আমরা তো এখন তোহার কাছে আছি। তিনি আসার আর সময় পেলেন না নাকি! বয়স তো কম হলো না। একশো তিন পেড়িয়ে গেল৷ আমার সুপার বুড়ির হায়াত আছে বলতে হবে।
সাফিনের কথাটা মজা হিসেবে হলেও আমেনা বেগম কড়া ভাবে শাসালো সাফিনকে৷ বললেন।
— মার খাবি এখন আমার হাতে সাফিন। বড় হয়েছিস বলে ভাবিসনা যে, পার পেয়ে যাবি আমার হাত থেকে। বড়দের নিয়ে এভাবে ঠাট্টা করতে শিখিয়েছি আমি তোকে? এই শিক্ষা দিয়েছি এতকাল আমি তোকে?
—উফ আম্মাজান,ভু’ল হয়ে গেছে আমার। আমিতো জাস্ট মজাই করছিলাম নাকি? তুমি সিরিয়াসলি নিয়ে নিচ্ছো। আচ্ছা আর বলবো না সরি। এই কানে ধরলাম। হেসে উঠলেন আমেনা বেগম। বললেন।
—মনে থাকে যেন। তারাতাড়ি বাড়িতে আয় আমার মেয়েকে নিয়ে এখন।
—হুম আসছি।
ফোনটা কেঁ’টে দিয়ে শীতল দৃষ্টিতে সিরাতের দিকে তাকালে ক্ষনে- ক্ষনে বিদ্যুৎ চমকালে কিছুক্ষণ পর-পর পরিবেশ সাদারাঙা রুপ ধারন করে আবার মিয়িয়ে যাওয়াতে হীমেল হাওয়ায় সিরাতের কানের পিছনে গুঁ’জে থাকা এলোমেলো চুলগুলো উড়ে বেড়ালে সেদিকে খুব মনোযোগ সহকারে তাকালো সাফিন। এতক্ষণের জমে থাকা রাগ অভিমানগুলো এখন যেন মাথায় উঠে যাচ্ছে সিরাতের৷ একেতো শীতে সমস্ত শরীর কেঁ’পে-কেঁ’পে উঠছে। তাঁরউপর এতক্ষণ দরজার সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকাতে ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে যেন পা। কন্ঠটা একটু জোড়ালো করেই বললো।
— আপনাকে কি এখন বরন করে ঘরে তুলতে হবে আমার! একেতো এলেন রাত করে। তাঁর উপর খা’ম্বার মতো করে এক জায়গাতেই এঁ’টে বসে আছেন। রাতটা কি শেয়াল-কু’কুরের সাথেই কাটানোর প্লান আটছেন নাকি?
সিরাতের কথা শুনে হেসে উঠলো সাফিন। গাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টি ঠেকাতে মাথার উপর হাত দিয়ে হালকা দৌঁড় দিয়ে সিরাতের ঠিক সামনে এসে থেমে গেলে তাঁর দিকে রাগ নিয়ে তাকাল সিরাত। হাত দিয়ে বৃষ্টি ঠেকালেও খুব একটা লাভ হলো না সাফিনের। ব্রাউন্ট রাঙা চুলে বৃষ্টির উ’ষ্ণতা ছেঁয়ে যাওয়াতে হাত দিয়ে চুলগুলোতে সাই করে সিরাতের কোমরে গুঁ’জে থাকা শাড়ির আঁচলটা নিয়ে বৃষ্টিতে ভেজা মুখশ্রী মুছতে-মুছতে সিরাতের দিকে মৃদু ঝুঁ’কে দুষ্টুমির স্বরে বললো।
— উফ বউ। বরন করে না হোক, জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে গাঢ় চুমু খেয়ে নিয়ে যেতে পারো আমাকে। ডোন্ট মাইন্ড। আফটারঅল আমার একমাএ বউয়ের ইচ্ছে বলে কথা। নাও তো করতে পারিনা তাইনা? আচ্ছা যাইহোক গাড়িতে উঠে বসো এখন। আম্মা ফোন করে এক্ষুনি জরুরি তলপ করেছে তোমাকে।
সাফিনের প্রথমে বলা কথাগুলো শুনে বিরক্ত হলেও শেষে আম্মার কথা শুনে শ্বাস ছেড়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—খিচুড়ি রান্না করেছি বাড়ির জন্য নিয়ে যাবনে ভিতরে আসুন।
—ওসব এখন নিতে-টিতে হবে না তোমার। গ্রাম থেকে বুড়ো আম্মা এসেছেন তোমাকে দেখতে৷ এক্ষুনি না গেলে গ’ন্ডগোল পাকাবেন তিনি৷ তিনি একটু অন্য ধাঁ’চের মানুষ এমনিতেই। পুরোনো দিনের মানুষতো তাঁরজন্য।এমনিতে খোলা মনের মানুষ আছেন। কিন্তু তবুও তাঁর সামনে একটু সাবধানে থাকবে৷ এখন আর তাঁর সার্টিফিকেট দিতে চাইছি না কদিন মিশলে নিজেই বুঝে যাবে তিনি কেমন। দ্রুত গাড়িতে উঠে বসো এখন। সাফিনের কথার আ’গামা’থা খুব একটা বুঝতে পারলো না সিরাত। বললো।
—আরে ধুর। নিতে আসছি বললেই হলো নাকি? এত কষ্ট করে রান্না করলাম আর না খেয়েই চলে যাবেন আপনি?
সাফিন সিরাতের আঁচলটা ছেড়ে দিয়ে সিরাতের দুই কাঁধের পাশে হাত দিয়ে আগলে রেখে একগাল হেসে বললো।
—বাহ,বউ তারমানে আমার জন্য রান্না করেছে বলতে হচ্ছে। এই সোনা নিশ্চয়ই আমার প্রেমে পরে গেছো হুম, বলোনা সিরাত? প্লিজ,প্লিজ।
সাফিনের কথা শুনে রাগ রাখলো সিরাতের। কান থেকে ধোয়া বের হচ্ছে যেন। চটজলদি কাঁধ থেকে সাফিনের হাতদুটো সরিয়ে দিয়ে রাগে মিশ্রিত কন্ঠে বললো।
—বয়েই গেল সিরাতের আপনার মতো গোব’র মুখো লোকের জন্য রান্না করতে! আমিতো রান্না করেছি আমার জানের জন্য।
সাফিন ভ্রু জাগিয়ে ফেলল। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
— ওহ তাই নাকি? মাই ব্যা’ড লাক বলতে হয় তাহলে। আচ্ছা দ্রুত চলো এখন। নাকি কোলে নিতে হবে সেটা বলো?
—আরে ব্যাগটা তো আনতে দিন। তোহাকেও বলতে হবে।
—ওসব দেখার টাইম নাই এখন। বউ আমার সাথে যাবে এটাই আমি জানি। বাকি কথা এক কান দিয়ে ঢু’কেছে তো আরেক কান দিয়ে বের হয়ে গেছে।(কথাগুলো বলেই সিরাতের কোনো কথায় কান না দিয়ে পাঁ’জাকোলা করে নিয়ে বৃষ্টি মাথায় করে গাড়ির দরজা খুলে গাড়িতে বসিয়ে দিল তাঁকে।)
—আরে ধুর, অদ্ভুত লোকতো আপনি! আমার ব্যাগটা তো রয়ে গেল ভিতরে। আপনাকে সাধে আমি মিস্টার ব’জ্জা’ত ডাকি।(কথাটা মুখ ফস’কে বের হয়ে গেলে সিরাত দুইহাত দিয়ে মুখটা চে’পে ধরলে সাফিন তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সিরাতের দিকে তাকালে চুপসে গেল সিরাত। একটু বেশিই বলে ফেলেছে বোধহয় সে।)
—ধুর বলার আর সময় হলো না। এবার নিশ্চয়ই হতচ্ছা’ড়াটা আমাকে হাত পা বেঁধে রুমে আঁ’টকে রাখার হুমকি দিবে।(মনে-মনে কথাগুলো বলে ভয়ের দৃষ্টিতে সাফিনের দিকে তাকালে সাফিন সাজোরে গাড়ির দরজাটা খুলে থ’ম>থ’মে চেহারায় ড্রাইভিং সিটে বসে পরলো।) দাঁতে দাঁত চে’পে চি’বিয়ে-চি’বিয়ে বললো।
— আমি তোমার সাথে ফ্রীলি কথা বলতে চাই সেটা ভালো লাগে না তাইনা সিরাত? আমার রাগান্বিত চেহারাটা খুব বেশি ভালো লাগে তাইতো? আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি, শাহনেওয়াজ সাফিন ভালোতে ভালো আর খা’রাপে তুমুল খা’রাপ। যেটা হয়তোবা তোমার ধারনার বাহিরের জগৎ হবে।
সাফিনের রাগান্বিত কন্ঠে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। ভয়ে কয়েকটা ঢোক বেশিই গি’লে নিল সে। বাহিরে যতই নিজেকে সাহসী বড়াই করে না কেন, আসলে তো ভিতরে-ভিতরে ঠিকই সাফিনকে ভয় পায় সে।
.
হাই স্পিডে গাড়ী চালিয়ে শাহনেওয়াজ ভিলার সামনে গাড়ি এসে থামাতে সিকিউরিটি গার্ডরা ছাতা মাথায় করে গেট খুলে দিতে সিরাত একবার তাঁদের দিকে তো আরেকবার সাফিনের দিকে আর চোখে তাকাচ্ছে। পুরোটা রাস্তা এতটা হাই স্পিডে চালিয়েছে সাফিন যে নিজের নিশ্বাসের শব্দটা পর্যন্ত শুনতে পায়নি সিরাত। সাফিনের চোখগুলো কেমন রাগে লাল হয়ে আছে। তাঁর দিকে তাকাতেও এখন ভয় লাগছে সিরাতের। তাই চুপচাপ বসে রইল সে।
সাফিন গাড়ি থেকে নামতে হেলাল ছাতা হাতে এগিয়ে আসলে সাফিন সিরাতের দিকে না তাকিয়েই চলে গেলে মন খা’রাপ করলো সিরাতের। আমেনা বেগম ছাতা নিয়ে সিরাতের কাছে ছুটে এসে গাড়ি থেকে নামালে মৃদু হাসলো সিরাত৷ বললো।
—কেমন আছেন আম্মা।
—আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আমি। তুই কেমন আছিস? আচ্ছা ওসব পরে হবে আগে আমি কি বলছি সেগুলো মনোযোগ দিয়ে শোন, বাড়িতে আমার দাদি শাশুড়ী আসছেন বুঝলি৷ বেশ কিছুদিন থাকবেন এখানে। উনি একটু অন্য ধাঁচের লোক বুঝলি। ওনার কথাগুলো সব মেনে চলবি। আর বাকিসব আমাকে বলবি আমি বুঝিয়ে দেব। ওনার কথায় কিছু মনে করবি না বুঝলি। উনি আগেকার যুগের মানুষতো, গ্রামে থেকেছেন, তাই একটু কথা বলার ধরনটা আলাদা। এমনিতে মানুষটা খা’রাপটা না। তুই একবার মিশতে পারলেই হলো। বুড়ো আম্মা বলে ডাকিস কিন্তু।
আমেনা বগমের কথা শুনে সিরাত হেসে মাথা ঝাঁকাল শুধু। খুব করে বুঝতে পারছে যে এসেছেন তিনি এই বাড়ির বড় কেউ হবেন। তাঁর কথা সব শুনতে হবে।
.
শাহনেওয়াজ ভিলার ভিতরে পা দিতে না দিতেই আজাদ সাহেবের আম্মা রাহেলা বেগম লাঠিতে ভর দিয়ে চশমা পরা তিরিক্ষি চোখদ্বয় জাগিয়ে সিরাতের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন।
—ওই ছেমরি৷ বাড়িতে ঢোকবার সময় যে হাত-পাও ধুইতে হয় এগুলান শিখায় নায় তোর মায়। নাকি গাঁয়ে গো’তরেই বড় হইছিস খালি। কিরে সাফিন, তোর বউর ঘ’টে বুদ্ধি কম নাকি? এত শুকনা কেঙ্গা’রু মাইরা চোখে পরলো কেমনে তোর! এতো ঝর বন্যায়ই উইয়া যাইব গা।
রাহেলা বেগমের কন্ঠ শুনে সাফিন মৃদু হেসে বললো।
— তুমি এসে পরেছো যখন এখন নিজে গড়ে পিঠে নেও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। কথাটা বলে সাফিন হেলালের হাতে গাড়ির চাবিটা দিয়ে উপরে চলে গেল।
বাড়িতে ঢোকা মাএ রাহেলা বেগমের এরুপ আচারনে ঘাবরে গেল সিরাত৷ শীতল দৃষ্টিতে বৃদ্ধাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করে নিল। পরনে ঢিলেঢালা সাদা কাপড় পরিহিত৷ মাএাতিরিক্ত ফর্সা চেহারায় গোল ফ্রেমের মোটা চশমা। ঠোঁটগুলো পান চিবোনোর কারনে লাল লিপস্টিকের মতো দেখাচ্ছে। বয়সের ছাপটা যেন তাঁকে বেশ একটা আঁচ করতে পারেনি। হাতে থাকা লাঠিটাতে ভর দিয়ে পিঠের পিছনে হাত ঠেকিয়ে কপালে ভা’জ ফেলে তাকিয়ে রয়েছেন সিরাতের দিকে। ভদ্রমহিলা বয়সের তুলনায় স্ট্রিট আছেন বলতে হবে। আমেনা বেগম থ’ত’ম’ত খেয়ে গেলেন কেমন৷ রান্নাঘরে থাকা নতুন কাজের মেয়ে সকিনার উদ্দেশ্যে বললেন।
—সকিনা পানি দিয়ে যাও তো এদিকে, তোমার ভাবিজানের পা ধুয়ে নিক একটু।
সকিনা গামলায় করে পানি নিয়ে আসলে সিরাত গামলার ভিতরে দুই পা রেখে পা ধুয়ে নিয়ে পাপসে পা মুছে গামলাটা হাতে নিতে গেলে রাহেলা বেগম গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন।
—থাউক, তোর ওমন ধারা শরীর লইয়া আর গামলা জাগাইতে হইব না৷ শাড়ি ছাইরা দক্ষিণ কূলের ঘরের দিকে আইও। আমার হাত পা টি’ইপ্যা দিবা৷ এত্তর ডাঙ্গ’র ছেমরি লইয়া বাড়ির বাইরে ঘোরাঘুরি আমার এক্কেরে পছন্দ না। খবরদার যদি বাড়ির বাইরে এক পাও দিতে দেখছি আর। কথাগুলো বলতে-বলতে রাহেলা বেগম ধীর পায়ে হেঁটে যেতে নিতে উপর থেকে আজাদ সাহেব একগাল হেসে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন।
—আরে আইসা পরছিস তুই। আমি কখন থেকে বসে আছি তোর জন্য। আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আস গল্প করা যাবে দুজন মিলে।
আজাদ সাহেবের কথা মাটিতে পরতে যতক্ষণ রাহেলা বেগম গম্ভীর কণ্ঠে পিছু ফিরে বললেন।
— কিয়ের গপ্প কবি আবার আজাদ৷ শহরে আইসা তোর মাথা ভো’গে খাইছে নাকি? ওই ছেমরি, আইজ থিকা আমার খাওন থিকা শুরু কইরা পা টে’পা পর্যন্ত সব কাইম তোর। তুই করবি। কোনো কামের মাইয়া যেন আমার ঘরে না আহে। আমি ওইসব আ’কামে যাইনা।
সিরাতের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললে আমেনা বেগম কিছু বলার আগেই আজাদ সাহেব বলে উঠলেন।
—আম্মা,বাড়িতে এত মেড থাকতে নাতি বউ কেন করবে? দরকার পরলে আপনার জন্য আলাদা কাজের মেয়ে ঠিক করে দিচ্ছি আমি।
—ওই ছেমরা, তোর কাছ থিকা এহন আমারে জিজ্ঞেস করা লাগবে? আমি যেই’ডা কই’ছি ওইডাই হুনতে হইব।
আজাদ সাহেব আবারও কিছু বলতে নিলে সিরাত বাঁ’ধ সেধে বললো।
—আচ্ছা বুড়ো আম্মা। আপনি রুমে জান আমি শাড়িটা ছেড়ে আসছি। রাহেলা বেগম সিরাতের কথা শুনে তৃপ্তির হাসি হেসে খোঁড়াতে -খোঁড়াতে নিজের রুমের দিকে চলে গেলেন।
.
কোমরে আঁচল গুঁ’জে শাড়িটা মৃদু জাগিয়ে উপরে এসে সাফিনের দরজায় ধুরি এখন তো এটা সিরাতেরও রুম। তাই উঁকিঝুঁ’কি দিতে নিতে সাফিন ফ্রেশ হয়ে পরনে টাওয়াল পেঁচিয়ে বের হলে সিরাতকে উঁকিঝুঁ’কি দিতে দেখে টেবিলের উপরে সদ্য সকিনার রেখে যাওয়া কফির মগে চুমুক দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো।
— চোরের মতো উঁকি দিচ্ছো কেন তুমি সিরাত? ভিতরে আসো গাঁ’ধি।
—আপনার বউ হবে গাঁ’ধি,সিরাত না।
সিরাতের কথা শুনে হেসে উঠলো সাফিন। দুষ্টমির স্বরে বললো।
— ঠিকই বলেছো তুমি। আমার বউ শুধু গাঁ’ধি নয়, এক নাম্বার ছা’গল ও।
—হ্যা তাই। (কথাটা বলে রুমে ঢুকতে নিতে সাফিনের কথাগুলো মাথাচাড়া দিয়ে গেলে নিজের কথার জালে নিজেই ফেঁ’সে গেলে রাগে শাড়ির আঁচল মুখে গুঁ’জে ফু’স’তে থাকলে শব্দ করে হেসে উঠলো সাফিন।)
— আপনাকে তো আমি!
সিরাত সাফিনের দিকে তেড়ে আসতে নিতে সাফিন কফির মগটা টি টেবিলের উপর রেখে পরনের টাওয়ালটা চে’পে ধরে হাসতে-হাসতে সিরাতকে রাগানোর জন্য বললো।
—এই টাওয়াল খুলে যাবে কিন্তু বলে রাখলাম আমি। পরে কিন্তু আমাকে কিছু বলতে পারবে না তখন। এখন ভালোয়-ভালোয় বলছি পরে কিন্তু অন্য কিছু হয়ে যাবে সোনা।
সিরাত রেগে গেলে নাকের ডগা লাল হয়ে উঠলো যেন তাঁর। রাগের নিশ্বাস ছেড়ে বললো।
—আপনাকে পরেই দেখছি। নেহাত বুড়ো আম্মার রুমে যেতে হবে তাঁরজন্য বেঁচে গেলেন আপনি।
হেসে উঠলো সাফিন। হাসির স্বরে বললো।
—রাতে দেখিও জানস৷ তুমি চাইলে ক্রিকেট টিম বানিয়ে ফেলতে পারব।
— বা’জে লোক একটা। বিরক্তিকর।
(কথাগুলো বলতে-বলতে আলমারি থেকে কালো রাঙা শাড়ি হাতে ফ্রেশ হতে চলে গেল সে।)
সাফিন হেসে ভেতর থেকে দরজাটা আঁ’টকে দিয়ে সাদা রাঙা টিশার্ট আর হাফ ট্রাউজার পরে কফির কাপটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেল।
ঝুম বৃষ্টি পরছে শহরে। বর্ষনের রেশটা এক বিন্দুও কমেনি যেন। টিভিতে নিউজ দেখাল তাপমাত্রা আরও বাড়বে বয়ি কমবে না কদিন। মুশলধারা ঝড় বৃষ্টির মধ্যে কিছুদিন ফ্রীতে শীত উপভোগ করা আরকি।
হুট করে ভিতর থেকে ফোনটা বেজে উঠলে ঘাড়ের পেছনটাতে হাত বো’লাতে-বো’লাতে রুমে এসে ফোনটা হাতে নিলে জুবায়েরের নাম দেখে ফোনটা লাউডে দিয়ে কফির মগটা টি টেবিলের উপর রেখে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ওপাশ থেকে জুবায়েরের কন্ঠ শোনা গেল।
—স্যার রাজবাড়ীর পিছনের দিঘিটাতে নাকি বস্তায় বাঁ’ধা ম’রা লা’শ পাওয়া গেছে। খবরটা এখনও পাঁচকান হতে দেইনি। মোহন মাএ খবরটা দিল আমাকে। আপনার ফোনে নাকি ওর নাম্বার ডায়াল হচ্ছিল না। লা’শের বিষয়টা কেমন গন্ডগোলের ঠেকছে।
জুবায়েরর কন্ঠ শুনে ভ্রু জাগিয়ে ফেলল সাফিন। একের পর এক লা’শ পরে যাচ্ছে শহরে। এর পিছনের হাতটা যে খুব গ’ভীরে সেটা ঢের বুঝতে পারছে সে। চিন্তিত স্বরে বললো।
— লা’শটাকে খুলে দেখো চেহারা চেনা যায় কিনা। আর হ্যা, চিনলে ভালো আর চিনলে আরও ভালো। নদীতে ভাসিয়ে দেবে যাতে খবরটা কোনোমতেই মিডিয়ার কানে না পৌঁছায়।
—জ্বী স্যার।
—বাড়িতে কখন আসছো?
—আমি গ্যারেজে আছি গাড়ি নিয়ে। দশ মিনিটের ভিতরে আসছি।
সাফিন ফোনটা কেঁ’টে দিয়ে গভীর ভাবনায় তলি’য়ে যেতে নিতে দরজার আড়াল থেকে কাউকে সরে যেতে দেখে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সেদিকে তাকাল শুধু। বাহিরের ঝরের গতির থেকে তাঁর ভিতরে এখন অজানা রহস্যের ঝর বয়ে চলেছে। কে হতে পারে এই অজানা শ’ত্রু?
“সিরাত ফ্রেশ হয়ে বের হতে ভেজা চুলগুলো টাওয়াল দিয়ে ঝাড়তে থাকলে চুলের পানির ঝিরিঝিরি উ’ষ্ণতা সাফিনের চোখেমুখে ছেঁ’য়ে পরতে মৃদু হাসলো সাফিন। সিরাত মিররের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝারতে থাকলে সাফিন লাইটটা অফ করে দিতে বিরক্ত হলো সিরাত। কিছু বলার আগেই শাড়ির আঁচল ভেদ করে কোমরে কারো শীতল স্পর্শ পেতে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। বিরক্তির স্বরে বললো।
—কি করছেন সাফিন? ছাড়ুন আমাকে। আমার ডিমান্ডের কথা ভুলে বসে আছেন নাকি! বুড়ো আম্মার রুমে যেতে হবে পা’গলা’মি বাদ দিন এখন।
সিরাতের কথা শুনে হেসে উঠলো সাফিন। সিরাতের ঘাঁ’ড়ের কাছে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে মৃদুস্বরে বললো।
—যাচ্ছো যাও,আঁ’টকাচ্ছি না আমি। কিন্তু এখন ঠিক ১২:৪৫ মিনিট বাজে। তোমাকে আমি ১ টার আগে রুমে দেখতে চাই।
সাফিনের নিশ্বাসের গরম উ’ষ্ণতা সিরাতের ঘাঁ’ড়ের কাছে আছড়ে পরতে থাকলে চোখ খিঁ’চে রাখলো সিরাত। কোমর থেকে সাফিনের শক্ত হাতের বাঁধনটা ছাড়িয়ে দিয়ে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললো।
—বয়েই গেল আমার। (কথাটা বলে দরজা ঠেলে চলে যেতে হাসতে থাকলো সাফিন।)
সিরাত চলে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরই দরজার কাছে কিছু ভে’ঙে যাওয়ার আওয়াজ কানের খুব কাছ থেকে অন্তর্নিহিত হতে সাফিনের তিরিক্ষি চোখদ্বয় হুঁশি’য়ারি ভাবে দরজার কাছে এসে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে ভ্রু কুঁ’চকে ফেলল নিমিষেই। গাম্ভীর্যের সহিত বললো।
—তুমি এখানে…..

চলবে……

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-১৪

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ১৪

দীগন্তের কোল ঘেঁষে মেঘাচ্ছন্ন প্রহরটা আজ বারংবার বৃষ্টির আগমনের ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে যেন। গাড়ির কাঁচ ভেদ করে হীমেল হাওয়ার উ’ষ্ণতা যেন সমস্ত শরীরে কাঁ’পুনি ধরিয়ে দিচ্ছে সিরাতের। সাফিন ড্রাইভিং করতে-করতে আর চোখে সিরাতের থ’মথ’মে মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে আবার ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিল৷
— বাড়িতে কে দেখবে এখন তোহাকে? না মানে, এতদিন তো হাসপাতালে ছিল প্রবলেম হয়নি। কিন্তু এখনতো বাড়িতে থাকছে তাইনা। এখন কে দেখবে ওকে?
সিরাতের চিন্তিত মুখদ্বয় দেখে সাফিন ধীর চাহনিতে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি হেসে বললো।
—কেয়ারিং বউ আমার৷ এমন কেয়ার তো আমাকেও একটু আথটু দেখাতে পারো নাকি?
বিরক্ত হলো সিরাত। কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে বললো।
— আপনার বা’জে বকা থামান তো। আগে কাজের কথা বলুন?
হাসলো সাফিন। ধীর কন্ঠে বললো।
— টেনশন নিও না জানস। আমি আছি তো নাকি?
—সেটাই তো টেনশনের কারন।
—কিছু বললে?
মৃদু হাসার চেষ্টা করলো সিরাত। ধীর কন্ঠে সাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো।
—কই কিছু না তো? আপনি ড্রাইভিংএ ফোকাস করুন।
—হুম।
.
সিরাতদের বাড়ির সামনে এসে গাড়িটা সাইড করে দাঁড়িয়ে যেতে সিরাত চটজলদি গাড়ি থেকে নেমে পরলে হাসলো সাফিন৷ গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
— ধীরেসুস্থে যাও সিরাত! মনে হচ্ছে এক যুগ পর বান্ধবীকে দেখতে এসেছো।
সাফিনের কথা কানের চারপাশেও না নিয়ে দরজায় কলিং বেল ক্লিক করতে না করতেই জুবায়ের দরজা খুলে দিতে অবাক হলো সিরাত। জুবায়েরের দিকে চ’মকে তাকালে জুবায়ের হেসে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সাফিনের উদ্দেশ্যে বললো।
— স্যার তিনজন মেড ঠিক করে দিয়েছি আপাদত। ব্রাক অফিস থেকে কোলে করে নিয়ে এসেছি ম্যামকে। বিছানা থেকে উঠতে দেইনি একদম।
সাফিন হাসলো। বললো।
— গুড জব জুবায়ের৷
হাসেলো জুবায়ের। সিরাত সাফিনের কথাগুলো শুনে সাফিনের দিকে হা হয়ে তাকাতে সাফিন গাড়িটা লক করে সিরাতের দিকে এগিয়ে এসে খানিকটা ঝুঁ’কে সিরাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে শীতল কন্ঠে বলতে থাকলো।
— বউকে খুশি করার জন্য শাহনেওয়াজ সাফিন সবকিছু করতে পারে বুঝলে সিরাত। এখন চলো ভিতরে আমার বউয়ের ভালোবাসার অর্থেক ভাগিদারকে দেখে আসি।
—হিংসে হচ্ছে স্যার আপনার?
জুবায়েরের কথা শুনে হেসে উঠলো সাফিন৷ জুবায়েরকে চোখ মেরে ধীর চাহনিতে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বললো।
—বলার বাহিরে। যেখানে শাহনেওয়াজ সাফিন কোনোদিন তাঁর কোনো জিনিসের চুল পরিমান ভাগও কাউকে দেয়নি, সেখানে বউয়ের ভালোবাসা ভাগ করতে হচ্ছে! হিংসে তো হবেই তাইনা।
সাফিনের কথার পাত্তা না দিয়ে সিরাত ভিতরে চলে গেলে জুবায়ের হেসে উঠলো। বললো।
—ম্যাম রেগে গেছেন মনে হচ্ছে।
সাফিন জুবায়েরের কাঁধে হাত রেখে হেসে বললো।
—রাগলে অবশ্য ম’ন্দ লাগে না তোমার ম্যামকে।
সাফিনের কথা শুনে হাসলো জুবায়ের।
.
না চাইতেও জোরপূর্বক তোহাকে বিছানায় শুয়িয়ে রাখাতে রাগে মুখ ভার করে শুয়ে রয়েছে তোহা।
সিরাত তোহার দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাতে থাকা ব্যাগটা টি টেবিলের উপরে রেখে মরা টেনে বিছানার পাশে বসলে তোহা খুশিতে দ্রুত উঠতে নিতে চোখ রাঙাল সিরাত। রাগ নিয়ে বললো।
—শুয়ে থাক এখানে। বেশি পা’কনা’মি করতে হবে না তোর৷ তুই জানিস হাসপাতালে তোকে খুঁজতে-খুঁজতে পাগ’ল হয়ে গেছি আমি। ফারদার এমন কখনো যদি করিস না তাহলে হাত-পা ভে’ঙে বিছানায় শুয়িয়ে রাখব বলে রাখলো সিরাত।
হেসে উঠলো তোহা৷ বললো।
— ওরে আমার আম্মা। বিয়ে করে পুরো নানিদের মতো জ্ঞান দেওয়া শিখে গেছিস দেখছি। এগুলো আগে আমি তোকে বলতাম। আর আজ তুই উল্টো আমাকে বলছিস।
—দেখতে হবে না বউটা কার।
দরজার কাছে হেলান দিয়ে সাফিন বাঁকা হাসি হেসে কথাটা বললে হেসে উঠলো তোহা। সিরাত সাফিনের দিকে রাগ নিয়ে চোখ গরম করে তাকালে সাফিন সিরাতকে চোখ মেরে ভিতরে এসে চেয়ার টেনে পায়ের উপর পা রেখে বসে পরলে জুবায়েরের উদ্দেশ্যে বললো।
—জুবায়ের টিভিটা অন করোতো।
— জ্বী স্যার করছি।
টিভিটা অন করে দিতেই মেয়েলি কন্ঠের নিউজটা কানের কাছে এসে বা’রি খেয়ে গেল যেন সাফিনের।
— পুলিশ কাস্টারিতে থাকা কালীন সময়ে পুলিশের অগোচরে থানায় বসে খু’ন হয় মিস্টার মিরাজ চৌধুরী। ঘটনাক্রমে মৃ’ত্যুর আগে তাঁর রেখে যাওয়া বয়ান অনুযায়ী জানা গেছে, গত সাতদিন আগে মুশলধারা ঝড় বৃষ্টির মধ্যে সমুদ্রের বীচ থেকে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ক্যামেরা দিয়ে পিক তোলার সময় তাঁর ক্যামেরাতে ভেসে ওঠে এক নি’র্ম’ম ঘটনা। চার-পাঁচ জন লোক মিলে একটা ভাড়ি বস্তা সমুদ্রের অতল ঢেউয়ের সাথে ভাসিয়ে দিতে দেখে মিরাজ চৌধুরী সাথে-সাথে পুলিশের সাথে কনট্যাক্ট করেন৷ তুমুল বৃষ্টির কারনে লোকগুলোর চেহারা স্পষ্ট ভাবে ক্যামেরায় ধরা পরেনি৷পুলিশ সেখানে গেলে ঝর বৃষ্টির মধ্যে তুফা’নের গতি কমলে অনেক খোঁজা-খুঁজির পর বস্তাটা পেলে সেখান থেকে বের হয় একটা গোটা লা’শ। যেটাকে কেঁ’টে টুকরো-টুকরো করা হয়েছে নি’র্ম’ম ভাবে। ঘটনাক্রমে বস্তার ভিতর থেকে তাঁর আইডেন্টি কার্ড পাওয়া গেলেও সমুদ্রের পানিতে ভেজার কারনে সেটা পুরো ন’ষ্ট হয়ে গেছে। শুধু আ’ব’ছা-আ’বছা ভাবে দেখে জানা গেছে লেকটার নাম দুলাল। পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে এই দুটো খু’নের আসা’মিকে খুঁজে বের করার। থানায় বসে মিরাজ চৌধুরী খু’ন হওয়ার কারনে যথাসম্ভব জবাবদিহি করতে হবে অন ডিউটি পুলিশ অফিসারদের। আজকের মতো এখানেই খবর শেষ। পরবর্তী খবর পেতে চোখ রাখুন মাইটিভি চ্যানেল ঢাকা।
জুবায়ের টিভিটা অফ করে দিলে সাফিন ভ্রু কি’ঞ্চিৎ ভাঁ’জ করে ফেলল। দুলাল নামটা কেমন শোনা-শোনা ঠেকছে তাঁর কাছে। কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছে না এখন। একে বলে অতি টেনশনে মাথা কাজ না করা। সিরাত কয়েকটা ঢোক গি’লে তোহার হাতটা চে’পে ধরে ভয়ের কন্ঠে বললো।
— আমার এখন খুব ভয় হচ্ছে। শহরের অবস্থা ঠিক লাগছে না তেমন। আমাকে কে মা’রা’র চেষ্টা করছে সেটাও তো এখনও বুঝতে পারছি না। কারন আমার জানামতে শহরে কেউই আমাকে তেমন চিনে না। তাঁর উপর গ্রাম থেকে মামা-মামী যে এখানে আসবেন সেটাওতো সম্ভব নয়। কারন আমি চলে এসেছি যখন জায়গা- সম্পত্তি তো এখন তাঁদের দ’খলেই চলে গেছে তাইনা। আর তাঁরাই বা খামখা আমাকে মা’রার চে’ষ্টা কেন করতে যাবেন।
সিরাতের ভয়ার্ত কন্ঠ শুনে সাফিনের তিরিক্ষি চোখদ্বয় সিরাতের দিকে থ’মকে গেলে গম্ভির কন্ঠে বললো সাফিন।
—যতদিন এই শাহনেওয়াজ সাফিনের গাঁয়ে বিন্দুমাত্র র’ক্ত অবশিষ্ট আছে সিরাত? ততদিন তোমার গাঁয়ে কেউ আঁ’চও ফেলতে পারবে না। সে আমি তোমার কাছে থাকি বা না থাকি।জুবায়ের?
—জ্বী স্যার?
— চলো আমরা একটু বাহির থেকে ঘুরে আসি।
জুবায়ের গাড়ির চাবিটা বের করে হাতে নিয়ে বললো।
—ওকে স্যার চলুন।
সাফিন বাঁকা হাসি হেসে সিরাতের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—দুই বান্ধবী থাকো তাহলে। যাওয়ার সময় এখান থেকে নিয়ে যাব তোমাকে।
সিরাত মৃদু চুপ হয়ে গেল। তোহার দিকে তাকাতে তোহা হাসলো। সাফিন চলে যেতে নিতে সিরাত বাঁ’ধ সেধে বললো।
—শুনুন?
সিরাতের মৃদুস্বরের রেশ কান ছুঁয়ে স্পর্শ করে গেলে থ’মকে গেল সাফিন। মাথা চুলকে পিছু ফিরে বাঁকা হাসি হেসে সিরাতকে রাগানোর জন্য বললো।
—উফ সিরাত, এবার নিশ্চয়ই বলবে যেও না জান।তোমাকে ছাড়া আমার ভালো লাগেনা। আহা।
সিরাত রাগ নিয়ে শ্বাস ছেড়ে বললো।
—সাবধানে যাবেন। আরকিছু না। বিদায় হ শ’য়’তা’ন এখান থেকে।
সাফিন হা হয়ে গেল সিরাতের কথা শুনে। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
— এখন কিছু বলছি না সিরাত তোমাকে। পরে এর ম’জা ঠিকই বোঝাব তোমাকে।
— হেহ আইসে, আমিও দেখবনে কি দেখাবেন আমাকে। ব’জ্জা’ত লোক একটা। (মনে-মনে কথাগুলো বলে বিরক্তির নিশ্বাস ছাড়ল সিরাত।)
.
সারাদিনের ঝিম মেরে থাকা শান্ত আবহাওয়ার রেশ কাঁ’টিয়ে বিকেলের দিকে নামলো ঝুম বর্ষন। টিনের চালের উপর বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সহিত কালো রাঙা এলোমেলো মেঘদ্বয় থেকে ক্ষনে- ক্ষনে গর্জ’নপাত হয়ে ধরনীতে এসে বা’রি খেয়ে যাচ্ছে যেন।
বৃষ্টি ভেজা জানালাগুলো আঁ’টকে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো সিরাত।
তোহা বিছানা ছেড়ে উঠতে নিতে একজন মেড তাঁকে বাঁ’ধ সাধলে বিরক্ত হলো তোহা। বললো।
— আরে ধুর, এভাবে কতক্ষণ শুয়ে-বসে থাকা যায়! সিরাত? জান তুই কিছু বলবি তো নাকি?
হাসলো সিরাত। বললো।
—চুপচাপ ওখানে শুয়ে থাক তুই। আমি তোর পছন্দের খাবার রান্না করছি।
নিরা’শ হলো তোহা। অভিমানের স্বরে বললো।
— দোস্ত তুইও! যা কথাই বলব না কারো সাথে।
তোহার কন্ঠ শুনে হাসলো সিরাত৷ মাঝারি সাইজের ড্রাম থেকে খিচুড়ির চাল আর মুগডাল বের করতে-করতে বললো।
— জান শোন?
তোহা টি টেবিলের উপর থেকে কমলা নিয়ে ছা’ড়িয়ে খেতে-খেতে বললো।
—হুম বল। আমি আসি ওখানে?
—একদম না। ওখানে শুয়ে থাক একটু পরে বলছি। এখন কাজ করছি।
সিরাত বেসিংএ চাল>ডালগুলো ভালো ভাবে ধুতে থাকলে একজন মেড সিরাতের হাত থেকে কুকারটা নিতে যেয়ে বললেন।
—ম্যাম আমাকে দিন আমি করে দিচ্ছি।
হাসলো সিরাত৷ মেয়েটা তাঁর থেকে দু-এক বছের ছোট হবে হয়তো৷ সাদা রাঙা মেডের ড্রেস পরিহিত শ্যামা রাঙা চেহারায় ধোঁয়াসা চোখগুলো নিয়ে সিরাতের দিকে হেসে তাকিয়ে মেয়েটা। ঠোঁটের কোনে আপনা-আপনি হাসির রেখা ফুটে উঠলো সিরাতের। ধীর চাহনিতে তোহার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো।
—আমার জান আমার হাতের বানানো খিচুড়ি খুব পছন্দ করে। আজকে নাহয় আমি করি এরপর থেকে তো আপনারাই করবেন তাইনা।
মেয়েটা হেসে বললো।
—আচ্ছা তাহলে আমি ঘড়টাকে পরিষ্কার করে দিচ্ছি ম্যাম। মেয়েটা চলে যেতে নিতে সিরাত পিছু ডেকে বললো।
—নাম কি তোমার? সরি তুমি বলে ফেললাম আপনাকে।
মেয়েটা একগাল হাসলে চোখগুলোও যেন হেসে উঠলো মেয়েটার। এই প্রথম কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে এত ভালো লাগছে সিরাতের।
—তামান্না ম্যাম। আপনি আমাকে তুমি করেই বলুন। তাহলে একটা আলাদা আপন-আপন মনে হয় নিজেকে।
হাসলো সিরাত। চালগুলোতে পানি অবস্থায় রেখে আঁচলে হাত মুছে জড়িয়ে ধরলো মেয়েটাকে। ধীর কন্ঠে বললো।
— তোমরা যে তিনজন আছো এখানে, এইসব ম্যাম-ট্যা’ম বলতে হবে না আমাদের।সোজা আপা বলে ডাকবে। মনে করবে আমরা পাঁচ বোন একসাথে থাকছি এখানে। তামান্না হাসলো। চোখে পানি এসে ভর করলো যেন৷ এতবছরের কাজের মধ্যে এই প্রথম কেউ এভাবে কথা বলছে তাঁদের সাথে।
—আরে বোকা মেয়ে। আবার কাঁদে! আর একবার কাঁদতে দেখলে কড়া বকুনি দেব আমি। ওদের দুজনের নাম কি?
— সেফা আর নাহিদা।
হাসলো সিরাত। চালগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিয়ে রান্নাঘরে ছুটলো সে। পিছু ফিরে বলে গেল।
তামান্না ফ্রিজে উপরের বক্সে কাঁচা মরিচ আছে ওখান থেকে নিয়ে আসো তো তিন চারটা৷ আর সেফাকে বলো নিচের বক্স থেকে মাং’স বের করে ফিজিয়ে রাখতে।
—আচ্ছা আপা। সিরাত হেসে কাজে মন দিল।
তোহা মুখ বেঁ’কিয়ে বললো।
— হ তোরাই সব কাজ করে উদ্ধার করে দে আমাকে। আর আমি সারাদিন এখানে শুয়ে-বসে থাকি।
— আহা সোনা। তোমার ক’ষ্ট আমার চোখে সই’তেছে না জান।
— মার খাবি সিরাত। আমার কি এমন হয়েছে যে এত ধরে বেঁ’ধে রাখতে হবে আমাকে! হাসপাতাল থেকেতো দিব্য ব্রাক অফিস পর্যন্ত গেছিলাম। তখন তো কিছু হয়নি? তোহার কথা শুনে সিরাতের মাথায় ঘোরপাক খেয়ে গেল যেন। এই বিষয়ে কথা বলার জন্যই এতক্ষণ হাস’পা’স করছিল সে। খিচুড়ি চরিয়ে দিয়ে কোমরে আঁচল গুঁ’জে তোহার দিকে এগিয়ে আসলে নাহিদা রান্না ঘরে চলে গেল।
“বিছানার পাশে তোহার মাথার কাছে বসে তোহার মাথায় শীতল হাতের স্পর্শ ছুঁয়িয়ে দিয়ে ধীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো।
—একটা কথার ঠিকঠাক উত্তর দিবি জান।
তোহা মাথার নিচ থেকে বালিশ সরিয়ে পিঠের নিচে বালিশ রেখে আধসোয়া হয়ে উঠে বসলে সিরাত তাঁকে উঠাতে হাতে হাত লাগাল।
মৃদু হাসলো তোহা৷ বিচক্ষণ ম’স্তিষ্ক বারংবার করা নেড়ে বোঝাতে চাইছে যে,সিরাত এই মূহুর্তে ঠিক কি জিজ্ঞেস করতে পারে? তাই নিজেই সিরাতের জড়’তা কাঁ’টাতে ধীর কন্ঠে বলতে থাকলো।
—আমাদের গ্রামের বাড়িটা তো দেখেছিস তুই।
সিরাত তাঁর শুঁ’কনো ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— হুম দেখেছি।
তোহা মৃদু হাসলো। দৃষ্টিদ্বয় নিচু করে কয়েকটা ঢোক গি’লে ধীর কন্ঠে বললো।
— কিছু কথা চাইলেও কাউকে বলা যায় না জানিস। আমি অনেক আগেই তোকে বলতে চেয়েছি এই কথাগুলো। কিন্তু বিবেক, বাবার সম্মান, মায়ের চোখের জল বাঁ’ধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিটাখন। আর আজকে সিচুয়েশনটাই এমন যে,আমি তোকে না বলেও থাকতে পারছি না।
তোহা কেঁদে উঠলে সিরাত থ’ম মেরে গেল। এ যেন বিনাবাক্যে দুশ্চিন্তার আভাস। তোহাকে আস্থা যুগিয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো সিরাত। গগনের গর্জ’নের প্রতিটা মূহুর্তের সাথে যেন তাঁর হৃৎস্পন্দনের গতিও কেঁ’পে উঠতে থাকলো বারংবার।
— স্কুল জীবনটা খুব ভালোভাবেই কাঁ’টছিল আমাদের। আমার আব্বা ছোটখাটো একটা ব্যাবসা করতেন বিদেশে। আমরা থাকতাম বাড়িতে। মাঝেমধ্যে ভিডিও কলে কথা হতো আব্বার সাথে। কখনো এমন কোনো ব্যাবহার করেননি আব্বা যাতে আমরা কোনো রকম ক’ষ্ট পাই৷ দিনকাল খুব ভালোই চলছিল।কিন্তু হঠাৎ এক বৃষ্টির রাতে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাউকে না জানিয়েই বাড়িতে চলে আসলেন আব্বা। নে’শাগ্র’স্ত অবস্থায় ছিলেন তিনি। সেদিন রাতে আব্বাকে দেখে একটু অন্যরকমই ঠেকছিল আমার কাছে। ভয় পাচ্ছিলাম রীতিমতো তাঁকে দেখে। আম্মা কাছে গিয়ে আব্বার সাথে কিছু জিজ্ঞেস করতে নিতে আব্বা আম্মাকে নিয়ে দরজা আঁ’টকে বিনা কারনেই প্রচুর পরিমানে মা’রধো’র করলেন। আমি তখন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি কলেজে এডমিশন নেব। আব্বার এ রকম আচারন দেখে আমি আর জুলিয়া ভয়ে কেঁদেছি শুধু। দরজা ধাক্কিয়েছি কিন্তু দরজা খুলেননি আব্বা। দরজার ওপাশ থেকে আম্মা আর আব্বার কথা কাঁ’টা>কাঁ’টি আর আম্মার অঝরে কান্না শুনতে থাকলাম আর নিজেও প্রচুর কেঁদেছিলাম সেদিন। সকালে আম্মা রুম থেকে বের হতে চেনা যাচ্ছিল না তাঁকে। ফর্সা চেহারায় শক্ত হাতের মা’র কেমন শিরায়-শিরায় দা’গ পরে র’ক্ত জ’মাট বেঁ’ধে গেছে। জিজ্ঞেস করেছি আম্মাকে প্রচুর। কিন্তু আম্মা টু শব্দও করেনি কি হয়েছে। শুধু বলেছে তোর আব্বার বিদেশের চাকরিটা আর নেই। আমার ছোট মস্তি’ষ্কে এতকিছু কেমন খাপছাড়া ভাবে যাচ্ছিল যেন। দিনকেদিন আব্বার আম্মার প্রতি অ’ত্যা’চার বেড়ে গেল। আমি মাঝে মধ্যে বাঁ’ধা হয়ে দাঁড়ালে আমিও কম মা’র খাইনি আব্বার হাতে। মাঝরাতে ম’দ্যপান করে বিদঘুঁ’টে গন্ধ নিয়ে বাড়িতে ফিরতেন আব্বা। বাড়িতে বাজার হত না। আম্মা সেলাই মেশিন চালিয়ে যেটুকুওবা ডালেচালে চালাতে চাইতেন সেটাও আব্বা কেরে নিয়ে যেতেন ওইসব হাবিজা’বি কেনার জন্য। সাথে তাঁর অ’শা’লীন মুখের ভাষা ছারতেন। কান্না পেত খুব। আম্মা নিজে না খেয়ে জুলিয়া আর আমাকে খাওয়াতেন। রাত শেষে আব্বার সামনে ভাত বেড়ে দিলে আব্বা লা’থি দিয়ে ফেলে দিতেন। এদিকে সবাই কলেজে ভর্তি হয়ে গেছে আর আমি এখনও কলেজে যেতেই পারিনি। আম্মাকে আঁচলে মুখ লুকিয়ে কান্না করতে দেখেতাম শুধু। কি নিপুন তাঁর মৃদু কান্নার স্বর। শুধু ভাবতাম, সুখের সংসারটার কি হয়ে গেল।
“টানা দুই সপ্তাহ আব্বা বাড়িতে এলেন না। আম্মার মুখে বিন্দুমাএ হাসি খুঁজে পেলাম না আমি।” একদিন খবর এলো আব্বা কোন দোকানদারকে নাকি দা দিয়ে কু’পিয়েছেন ওইসব আজে-বা’জে জিনিস টাকা ছাড়া দেয়নি বলে। লোকটা সেখানেই মা’রা গেছেন। আম্মা পরিপূর্ণ রুপে ভে’ঙে পরেছিলেন আমাদের দু বোনের কথা ভেবে। আব্বাকে পুলিশে এসে ধরে বেঁ’ধে নিয়ে গেলেন। উপর মহল থেকে ফাঁ’সির রায় দিয়ে দিলেন। আব্বার ফাঁ’সির রায় হওয়ার পরপরই কাগজ এসে হাজির হলো বাড়িতে৷ আব্বা বিদেশে যাওয়ার সময় ২৫ লাখ টাকা লোন নিয়েছিলেন তাঁর এক বন্ধুর থেকে৷ বিদেশ থেকে ফিরে দিয়ে দিবেন বলেছিলেন৷ এখন আব্বার ফাঁ’সির খবর শুনেই টাকা নিতে হাজির হলেন। বাড়ি ভাং’চুর করলেন। নয় তাঁরা বাড়ি নিবেন নয়তো তাঁদের টাকা কালকে সকালের মধ্যে সুদ সমেত ফেরত দিতে হবে। কাঁন্নাগুলো যেন দ’লা পা’কিয়ে যাচ্ছিল আমার৷ লোকমুখে শুনতে পারলাম আব্বা আম্মাকে পালিয়ে এনে বিয়ে করেছে বলে আম্মার বাড়ি থেকে কোনো টাকা পয়শা দেয়নি আব্বাকে তাঁর জন্য আম্মাকে এত মা’র>ধো’র করত আব্বা। মা’নসি’ক শান্তির থেকেও পাড়াপ্রতিবেশি যেন তাঁদের মুখের বলা কথা দিয়ে মস্তি’ষ্কে চাঁ’পের সৃষ্টি করতে থাকলো। আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আম্মা শহরে আসলেন আমাদের দুবোনকে না জানিয়ে৷ আশ্চর্য জনক হলেও আম্মার পরিবারের কোনো বান্দা আমাদের দিকে ফিরেও তাকান নি পর্যন্ত। আম্মা তাঁর বান্ধবীর সহায়তায় ব্রাক অফিস থেকে ৩০ লাখ টাকা লোন নিলেন। পরেরদিন টাকা নিতে হাজির হয়ে গেলে আমি আর জুলিয়া পুরো থ মেরে গেছিলাম আম্মা ছাড়া। বাড়ির ভিতরে ঢুকে নোং’রা ভাষায় গা’লি দিতে-দিতে যেটুকু রয়ে গেছে ভা’ঙার সেগুলোও ভা’ঙতে থাকলে কেঁদে উঠলাম আমি আর জুলিয়া। অনেকক্ষণ পর গাড়ি এসে বাড়ির সামনে দাঁড় হতে আম্মাকে দেখে হৃদয়ে পানি পরলো যেন। কান্নারত অবস্থায় দৌঁড়ে গিয়ে আম্মাকে জড়িয়ে ধরলাম। আম্মাও কাঁদছেন। কালো রাঙা বোরকার মুখোশটা খুলে ব্যাগ থেকে টাকা থলেটা বের করে দিলে লোকগুলো হা হয়ে গেছিলেন আম্মার দিকে তাকিয়ে। আমিও কম অবাক হইনি সেদিন৷ এতগুলো টাকা আম্মা কোথায় পেলেন?
লোকগুলো চলে গেলে পাড়াপ্রতিবেশি এসে জমা হলে রাগ নিয়ে বলেছিলাম আমি।
— এখানে কোনো সার্কাস হচ্ছে না যে এত মনোযোগ সহকারে দেখতে হবে! জান এখান থেকে সবাই।
—বাপ আ’কাম কইরা বেড়াইবে আর মাইয়া বড় গলায় কতা কইবে৷ গলা নামাইয়া কতা ক মাইয়া৷ খু’নির মাইয়ার আবার কি দে’মাক।
সেদিন তাদের কথায় আ’ঘাত পেয়েছিলাম প্রচুর৷ কিন্তু আম্মা কান্নারত চোখে বারংবার বাঁধ সাধলেন বলে বলতে পারিনি কিছুই। আম্মা তাঁর সেলাই মেশিনের কাজটা চালিয়ে গেলেন।
কলেজে ভর্তি করে দিল আমাকে। সে নিয়েও অনেক কথা শুনতে হয়েছে লোকের। আম্মা বলতেন কারো কথায় কিছু যায় আসে না। উওর দেওয়ার দরকার নেই। কিন্তু আমার মন কেমন মানতে চাইতো না। দুই একটা উওর দিয়েই দিতাম৷ আম্মা সময় করে আব্বাকে দেখতে যেতেন জেলখানায়। কাঁদতেন প্রচুর। আব্বা তাঁর করা ভু’ল বুঝতে পারলেও ততদিতে সময়, পরিস্থিতি সবকিছুই পাল্টে গেছে।
কলেজে দেখা হলো তোর সাথে। ভালো বন্ধত্ব হলো। তোর সম্পর্কে সবকিছুই বললি তুই৷ কিন্তু আমি বলতে পারলাম না। যদি তুইও আব্বার কথা জেনে গেলে মুখ ফিরিয়ে নিস আমার থেকে। ভয় হত খুব। আস্তে-আস্তে বড় হলাম। কলেজের গন্ডি পেড়োলাম। ভালো রেজাল্ট হওয়ায় চাকরিও পেয়ে গেলাম এক টিচারের সহায়তায়। আম্মাকে আর সেলাই মেশিন চালাতে দিলাম না। শহরে চলে আসলাম। খবর এলো আব্বার ফাঁ’সি হয়ে গেছে। আম্মা সেদিন প্রচুর পরিমানে কেঁদেছেন৷ আব্বার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী আম্মা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আব্বাকে ফাঁ’সি হতে দেখেছেন। আম্মার ধৈর্য শক্তির কথা আগেই জানতাম আমি। কিন্তু এতটা আশা করিনি। আর তারপর জানতে পারলাম আম্মার নেওয়া লোনের কথা। যেটা প্রতিমাসে আম্মাকে একটু-একটু করে শোধ করতে হত৷ আর মাস দুয়েক ধরে দিতে না পারায় সুদ সমেত ২৫ লাখ টাকা এসে হাজির হলো আমার মাথায়। বিগত কয়েকমাস ধরে আম্মা অসুস্থতায় ভু’গছেন। তাঁর চিকিৎসা। বোনের পড়াশোনা। বাড়িতে টাকা পাঠানো,নিজের খাওয়া-দাওয়া লোন সামলানো যেন টা’ফ হয়ে দাঁড়িয়েছে আমার কাছে। ভাবছি শুধু, আম্মা কিভাবে এতদিক সামলাতেন। তোহা অনবরত কাঁদতে থাকলে সিরাতের চোখের পানিও যেন বাঁধ মানতে চাইছে না। তোহাকে জড়িয়ে ধরে কান্নারত কন্ঠে বললো।
— তুই ভাবলি কিভাবে আমি তোর অতীত যেনে তোকে ছেড়ে যাব?এই তোর বিশ্বাস আমার প্রতি!
—মা’ফ করে দে জান। তখন কিছুই মাথায় আসছিল না আমার। আমি নিজেই খুব ডিপ্রেশনে ছিলাম।
সিরাত তোহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকলে খিচুড়ির মিষ্টি সুগন্ধ নাকে এসে পৌঁছাতে কান্নারত অবস্থায় মৃদু হেসে তোহাকে ছেড়ে দিয়ে আঁচল দিয়ে তোহার চোখ মুছে দিয়ে হেসে বললো।
—তোর খিচুড়ি হয়ে গেছে বলে। দাঁড়া একটু দেখে আসি ওদিকে নাহিদা একা-একা কি করছে।
হাসলো তোহা। আজ যেন নিজেকে হালকা ঠেকছে মনের কথাগুলো সব উ’গরে দিতে পেরে।
.
রান্না ঘরে এসে নাহিদা একগাল হেসে বললো।
— খিচুড়ি হয়ে গেছে আপা। আমি শুধু একটু মরিচ কেঁ’টে দিয়ে নেড়েচেড়ে দিয়েছি। গন্ধটা কিন্তু সেই।
হাসলো সিরাত। সেফা মাং’সের বাটিটা এনে দিলে হলুদ-মরিচ মশলা পরিমাপ মতো দিয়ে ক’সাতে থাকলো। হুট করে কারেন্ট চলে গেলে তামান্না জেনারেটর অন করে দিয়ে চিংড়ি মাছ বা’টতে বসে পরলো। জেনারেটর দেখে অবাক হলো সিরাত। মনে-মনে ভাবলো এ নিশ্চই সাফিনের কাজ৷ মৃদু হেসে মাং’সে আরেকটু পানি দিয়ে ক’সাতে-ক’সাতে বললো।
— চিংড়ির ভর্তা বানাবে নাকি?
—হ আপা। বৃষ্টির মধ্যে এসব ভর্তার স্বাদটাই আলাদা। হাসলো সিরাত৷ বললো।
— আলু সেদ্ধ দিয়ে দি তাহলে। ফ্রিজে বাদাম খো’টা আছে ওগুলোও বে’টে ফেলো।
হাসলো তামান্না। বললো।
—আইছ্যা আপা।
.
বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজটা যেন গাঢ় থেকে গাঢ়তম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে সাফিনের কোনো খবর নেই। বিকেল গড়িয়ে রাত হতে চললো। অস’স্থি হচ্ছে যেন সিরাতের। ক্ষনে- ক্ষনে প্রবল বেগে গর্জ’নপাত হওয়াটা যেন আরও ভয়ের কারন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মাং’সের করাইটা সেদ্ধ হওয়ার জন্য বেশি করে পানি দিয়ে ঢকটা দিয়ে ঢেকে দিয়ে ধীর পায়ে এসে রান্না ঘরের জানালাটা খুলে দিতে হীমেল হাওয়ায় বৃষ্টির রেশ চোখে মুখে এসে ছেঁয়ে পরলো যেন সিরাতের। তাঁর চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। জানালার গ্রিলে হাত রেখে বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে যাওয়া রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছারল সে।
— এখনও আসছেন না কেন সাফিন…..

চলবে……

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-১৩

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ১৩

—আমাকে ছাড়ো নয়তো আই সয়ার কালকে সকালের মধ্যে তোমাকে পা’গ’লা গা’র’তে রেখে আসব। আর তুমিতো জানোই, শাহনেওয়াজ সাফিন কখনো কথার খেলাপ করে না।
সাফিনের কথা শুনে যেন তেলে বেগুনে জ্ব’লে উঠলো সিরাত। রাগে ফুঁ’সতে-ফুঁ’সতে বললো।
—শাহনেওয়াজ সাফিন না কাউ’য়া। হেহ আসছেন! আমি ওসব ভয় টয় পাইনা বুঝলেন মিস্টার শাহনেওয়াজ সাফিন। ওসব কথা আমাকে বলে লাভ নাই৷
সাফিন ভ্রু জাগিয়ে ফেলল রাগে। পিছন থেকে সিরাতের হাতটা শক্ত হাতে নিজের আয়ত্তে নিয়ে গিয়ে সিরাতকে উল্টো করে ঘুড়িয়ে নিজের সামনে এনে সিরাতের দুইহাত পিছন থেকে চে’পে ধরে সিরাতের ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দিতে কেঁ’পে উঠলো সিরাত৷ সাফিন রাগে দাঁতে দাঁত চে’পে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
— বেশি বার বেড়ো না ঝড়ে পরে যাবে। একটা প্রবাত আছে জানোতো সিরাত? তোমার দ’শা এখন ঠিক তেমনটা। একটা কথা সবসময় তোমার এই মোটা মাথায় ঢু’কিয়ে রাখবে কেমন। আমি ভালোতে ভালো, আর খা’রাপে খা’রাপের চর’ম পর্যায়। যেটা তোমার কল্পনারও বাহিরের জগৎ হবে। আমার খা’রা’প রুপটা দেখলে তখন খুশি হবে তো বেব্বি?
ভয়ে চোখ খিঁ’চে রাখলো সিরাত৷ কয়েকটা ঢোক গি’লে কাঁ’পা-কাঁ’পা কন্ঠে বললো।
— আপনার দেওয়া এগ্রিমেন্ট পেপারে যেমন সিরাত সাইন করে দিয়েছে। ঠিক তেমনি আমার ডিমান্ডও আপনাকে মানতে হবে। আমাকে হুটহাট এভাবে ছোঁয়া চলবে না আপনার৷ আমার থেকে দুই হাত দূরেই থাকুন আপনি।
হাসলো সাফিন। সিরাতকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে দেয়ালের সাথে চে’পে ধরে সিরাতের কোমরে হাত ছুঁয়িয়ে সিরাতের অনেকটা কাছে গিয়ে ধীর কন্ঠে বললো ।
— এখানে শুধু শাহনেওয়াজ সাফিনের রাজত্ব চলে বুঝলে সিরাত। তোমার কোনো ডিমান্ডই আপাদত শুনছি না। বা শুনতে বাধ্যও নই আমি।
কথাটা বলে সাফিন লাইটটা অফ করে দিতে লাইটারের মৃদু আলোয় সিরাতের কপালে চুমু খেয়ে সিরাতের চুলে নাক ডুবিয়ে দিলে সিরাতের দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলে সাফিনের হাতে স্পর্শ করে গেলে থ’মকে গেল সাফিন৷ আপনা-আপনি হাতের বাঁ’ধন আলগা করে দিলে অবাক হলো সিরাত৷ সাফিন পিছু ঘুরে নিজের মাথাটা নিজে চে’পে ধরে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—সবকিছু মানতে পারি বুঝলে সিরাত। কিন্তু কোনো মেয়ের চোখের পানি স’য্য করতে পারি না বা পারবও না কোনোদিন। আর বিশেষ করে সেটা যদি তুমি হও।
সিরাত কাঁ’পা-কাঁ’পা কন্ঠে বললো।
— তো এখন আবার ট’র্চার করবেন বন্দু’ক নিয়ে তাইতো?
সিরাতের অস্পষ্ট স্বর শুনে সাফিন সিরাতের দিকে ঘুড়ে শীতল হাতে সিরাতের দুইগাল স্পর্শ করে ধীর কন্ঠে বললো।
—এখন কিছু বলছি না বা বলার ইচ্ছেও পাচ্ছি না। যে অবুঝ তাঁকে হাজার বোঝালেও যে কোনো কাজ হবে না সেটা আমি জানি। যাও ঘুমাও। রাত হয়েছে অনেক৷ বৃষ্টি পরছে এমনিতেই। টায়ার্ড দেখাচ্ছে তোমাকে।
সিরাত বিষ্ম’য় নিয়ে সাফিনের দিকে তাকালে সাফিন হেসে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে ম্যাচ দিয়ে জ্বা’লিয়ে মুখে দিয়ে ধোঁয়া ওড়াতে-ওড়াতে গিটার হাতে বাড়ান্দায় চলে গেলে শীতল দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকলো শুধু সিরাত। সাফিনের ভাড়ি কথার বহার যেন কখনোই তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠে না। নিরাশ হলো সে।
বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সঙ্গে গিটারের টুংটাং আওয়াজটা খুব একটা ম’ন্দ লাগছিল না সিরাতের। ধীর পায়ে এসে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলে একরাশ অনিশ্চয়তা যেন ঝেঁ’কে বসেছে তাঁকে। ঘুম আসতে চাইছে না আর। সেও চাতক পাখির ন্যায় হাওয়া হয়ে গেছে যেন।
— আপনাকে বোঝার সাধ্য হয়তোবা কোনো কালেই হয়ে উঠবে না আমার৷ তবে হ্যা, আপনি হয়তোবা রাগি হবেন, একটু অন্য ধাঁচের। কিন্তু মানুষটা খারা’প না সাফিন।
(মনে-মনে কথাগুলো ভাবতে-ভাবতে অনেক্ষণ চোখ করে রাখাতে একটা সময় সেও ঘুমের অতল সমুদ্রে পারি জমাল।)
.
নীল দিগন্তের কোল ঘেঁ’ষে আজ কালো রাঙা মেঘের ঘনঘটা৷ এলোমেলো মেঘদ্বয় হতে গু’ড়ুম-গু’ড়ুম আওজটাও যেন প্রগর গতিতে ধরনীতে এসে বা’রি খেয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। মুশলধারা বরষায় অন্ধকার রুমটাতে ডাইনিং টেবিলের উপরে মাথা গুঁ’জে বসে আছে সিরাত। মাথাটা কেমন ভার হয়ে আছে তাঁর। সমস্ত শরীরে যেন বিষন্নতা ঝেঁ’কে বসে আছে সিরাতের৷সময়ের তালে তাল মিলিয়ে প্রহরে প্রহর ঠেকিয়ে চোখের সামনে দিয়ে এক সপ্তাহ কেঁ’টে গেল তাঁর বিবাহীত জীবনের৷
কালকে তোহাকে হাসপাতাল থেকে সিট কাঁ’টিয়ে বাড়িতে নেওয়া হবে। তোহাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই প্রচন্ড মাথা ব্যা’থায় আর ক্লান্তিতে ডাইনিং টেবিলেই ঘুমিয়ে গেল সিরাত৷
“আষাঢ়ে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে র’ক্তে ভেজা শরীরে শাহনেওয়াজ ভিলার সামনে সাফিন গাড়ি থামিয়ে দিতে সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরলে সাফিন বৃষ্টি ভেজা চুলে ঝাড়ি দিয়ে বাড়ির দিকে তাকিয়ে বেশ অবাকই হলো আজ৷” গেটের কাছে কোনোমতে হলুদ রাঙা লাইটারের নিভু-নিভু আলো ছাড়া সমস্ত বাড়িটা জুড়ে যেন অন্ধকারের সমারোহ।
ভ্রু জাগিয়ে ফেলল সাফিন। কানে থাকা ব্লুটুথটা অন করার সাথে-সাথে জুবায়ের কন্ঠ শোনা গেল।
—স্যার লা’শটাকে বস্তা বেঁধে দিয়েছে হেলাল। এবার কি করব সেটাতো বলে গেলেন না?
—নদীতে ভাসিয়ে দেও। আর শোনো?
—জ্বী স্যার?
—ক্যামেরাটা প্যাক করে বাড়িতে নিয়ে এসো।
জুবায়ের সামনে থাকা হেলালের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—ক্যামেরাটা দাওতো হেলাল।
হেলাল হেসে নিজের সাদারাঙা গেঞ্জিটাতে হাতে থাকা র’ক্ত মুছে টেবিলের উপর থেকে ক্যামেরাটা জুবায়েরের দিকে এগিয়ে দিতে জুবায়ের হেসে সাফিনের উদ্দেশ্যে বললো।
—জ্বী স্যার। সকালে পেয়ে যাবেন। তবে পালের গো’দাটাকে মা’রতে পারলে হত।
সাফিন বাঁকা হাসি হাসলো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
— চে’লা যখন মা’রা পরেছে তো মা’থাটাকেও ধরতে টাইম লাগবে না জুবায়ের। তুমি শুধু খেয়াল রাখো আর কে? কে? যায় ওই রাজবাড়ীর আশে-পাশে। যাকেই দেখবে তাকেই আজকের মতো করে উপরের ঠিকানা দেখিয়ে দিবে। যে বা যাঁরা আমাকে বারবার এ্যা’টাক করতে চাইছে, শাহনেওয়াজ সাফিনের গাড়ির ব্রেকফেল করেছে। তাঁরা হয়তো এতদিন ঘুঘু দেখেছে,ঘুঘুর ফাঁ’দটা এখনও দেখেনি। আমিও এর শেষ দেখে ছারব।
জুবায়ের হাসলো। হাতে থাকা ক্যামেরাটার দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—স্যার ক্যামেরার লোকটা যে খু’ন হয়েছে এটা তো কালকে নিউজ হবেই হবে। আমাদের জে’ম্মায় আনতে না পারলেও ক্যামেরাটা যে পেয়েছি এটাই অনেক। আমার কেন জানিনা মনে হচ্ছে আজকের রাজবাড়ীর পিছন দিক থেকে যে লোকটাকে আপনি গু’লি করেছেন, যাকে কিছুক্ষণ বাদে নদীতে ভাসানো হবে, সেই হলো ক্যামেরার লোকটার খু’নি।
মৃদু হাসলো সাফিন। বললো।
—সে যেই হোক। রাজবাড়ীর আশেপাশেও কাউকে দেখলে ওখানেই খ’তম।
হাসলো জুবায়ের।
” প্রগর দৃষ্টিতে শাহনেওয়াজ ভিলার দিকে তাকিয়ে অনেকক্ষণ যাবৎ বৃষ্টির উ’ষ্ণতা শরীরে ছুঁয়িয়ে ভেজা শরীরে পকেট থেকে ফোনটা বের করে টর্চ জ্বা’লিয়ে ধীর পায়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলে হিমেল হাওয়ায় সাফিনের সমস্ত শরীরে ছুঁয়িয়ে গেল যেন। আশেপাশে তাকাতে- তাকাতে ভিতরে আসলে ডাইনিং টেবিলে চোখ যেতে থ’মকে গেল সাফিন। সিরাতের ঘুমাতুর গোলাপি রাঙা মুখশ্রীর দিকে টর্চ ধরাতে সঙ্গে- সঙ্গে কপালে ভাঁ’জ পরে গেল যেন সিরাতের৷ প্রচন্ড পরিমানে কাঁ’পছে সিরাত। ঠান্ডা আবহাওয়ার পরিবর্তিত মৌসুমটা বড্ড খা’রাপ। এই সময় অসু’খ-বিসু’খেরও পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে হয় যেন। একবার অ’সুখ বাঁ’ধলে আর ছাড়াবার নাম নেয়না। মা’য়া হলো সাফিনের৷ আবার বিরক্তও হলো সিরাতের প্রতি। ঘড়ির কাঁটায়-কাঁটায় ১ টার ঘন্টা বেজে উঠতে লাইটারের মৃদু আলোয় ঘড়িটার দিকে ধীর চাহনিতে তাকাল সাফিন। ডাইনিং টেবিলের উপরে ধোঁয়া ওঠা ভাতের কুকারটা দেখে শীতল চাহনিতে সিরাতের দিকে তাকাল সাফিন। ধীর পায়ে সিরাতের কাছে গিয়ে মাথায় হাত ছোঁয়াতে চ’মকে উঠলো যেন সে৷ প্রচন্ড জ্বরে রীতিমতো কাঁ’পছে সিরাত। রাগ উঠে গেল সাফিনের। ইচ্ছে করছে ঠাটি’য়ে একটা চ’র মেরে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করতে যে,
—এই মেয়ে এত রাত অব্দি আমার জন্য ভাত নিয়ে বসে থাকতে কে বলেছে তোমাকে হুম?( কিন্তু কথাটা আর মুখ থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে না সাফিনের)। কে জানে মেয়েটা নিজে খেয়েছে কিনা?
চেয়ার থেকে দ্রুত সিরাতকে উঠিয়ে পাঁ’জাকোলা করে নিলে কারো শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে সিরাতও ঘুমের ঘোড়ে সাফিনের শার্টের কলার টেনে ধরতে সাফিন খানিকটা ঝুঁ’কে সিরাতের দিকে তাকাল।
সিরাতের নিশ্বাশের উ’ষ্ণতা সাফিনের চোখে মুখে এসে ছেঁ’য়ে পরতে থাকলে বাঁকা হাসি হাসলো সাফিন। সিরাতের ঠোঁটে প্রগরভাবে চুমু খেয়ে ধীর কন্ঠে বলতে থাকলো।
—না চাইতেও তুমি আমার মা’য়ায় জড়িয়ে গেলে তো শেষমেশ সিরাত? এর পরিনাম ঠিক কি হবে আমার জানা নেই। হয়তো তুমিই সবথেকে বেশি ক’ষ্ট পাবে। আমার জীবনেরতো কোনো ঠিকঠিকানাই নেই। সাফিনের চোখ জ্ব’লে উঠলো যেন। কয়েকটা ঢোক গি’লে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল সে৷
.
রুমে এসে সিরাতকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে কাঁথাটা জড়িয়ে দিয়ে সাফিন সরে যেতে চাইলে ঘুম-ঘুম চোখে জ্বরের ঘোরে সিরাত সাফিনের হাত জড়িয়ে নিয়ে নিজের কাছে টেনে নিলে সাফিন হাসলো। সিরাতের কপালে চুমু একে দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিতে-নিতে বললো।
—এক্ষুনি আসছি জান। জাস্ট অন মিনিট ওয়েট সোনা। আমি যাব আর আসব।
কথাটা বলে গায়ে থাকা র’ক্তে ভেজা শার্টটা খুলে ফ্রেশ হতে চলে গেল সাফিন।
“ঝর্নাটা ছেড়ে দিয়ে তাঁর নিচে দাঁড়াতে চোখ বন্ধ হয়ে আসলো সাফিনের। আগের থেকে কেমন পাল্টে যাচ্ছে সে। আগের মতো স্বাধীনতাটা থাকা সর্তেও স্বাধীনতাটা ঠিক আসতে চাইছে না নিজের ভিতরে। বার-বার সিরাত না চাইতেও বাঁ’ধা হয়ে পরেছে তাঁর মাঝে৷ কোনো খু’ন খা’রা’পি করতে গেলেই সিরাতের মা’য়াময় মুখশ্রী যেন মাথাচাড়া দিয়ে যায় তাঁর হৃদয়ের গহীনে। ভয় হয় এখন তাঁর। যে, সিরাত যদি জেনে যায় তাঁর এইসব কর্মকান্ডের কথা৷ যদিওবা ও কখনো কারন ছাড়া কাউকে খু’ন করেনি। আজকেও যথেষ্ট কারন থাকার কারনেই একজনকে খু’ন করেছে৷ হাতটা কেঁ’পেছে প্রচুর। আগে এমন হয়নি কখনো তাঁর সাথে। এই রাজনীতির পথে এসব খু’ন খারা’পি যে থাকবেই থাকবে, এসব আগেই আমেনা বেগম বলেছিল তাঁকে। কিন্তু তাঁর যে র’ক্তেই মিশে আছে রাজনীতি। দীর্ঘশ্বাস ছারল সাফিন।
মিররে নিজের লাল রাঙা তিরিক্ষি চোখদ্বয় পরখ করে টাওয়াল নিয়ে বেড়িয়ে পরলো সাফিন।
রুমে এসে শীতে সিরাতের গু’টিশু’টি হয়ে শুয়ে থাকার দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে আলমারি খুলে কম্বল বের করে সিরাতের গাঁয়ে জড়িয়ে দিতে আরামে আরও ঘুমের গহীনে তলিয়ে গেল যেন সিরাত৷ মৃদু হাসলো সাফিন। কালো রাঙা টিশার্ট আর নীল রাঙা ট্রাউজার পরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো সে।
—আরে ধুর, বাড়ির সবাই কই গেল আজ৷ আমার বউটা অসু’স্থ আর কারো কোনো পাত্তাই পাওয়া যাচ্ছে না৷ না আছে ওয়াসম্যান না আছে কেউ!বাড়িতে এতগুলো মেড থাকা সর্তেও এখন একটু পানি গরম করার লোকও পাচ্ছি না আজকে!
নিজে-নিজেই কথাগুলো বলতে-বলতে রান্না ঘরের দিকে ছুটলো সাফিন। কোনোমতে গ্যাস অন করে পানি গরম করে নরম টাওয়াল নিয়ে উপড়ে ছুটতে নিতে ডাইনিং এ চোখ গেল সাফিনের৷ ধীর পায়ে সেদিকে এগিয়ে গিয়ে সবগুলো খাবারের দিকে চোখ বুলি’য়ে দীর্ঘশ্বাস ছারল একটা৷
—পা’গ’লি বউ আমার। এ নিশ্চই আম্মা বলেছে আমার জন্য বসে থাকতে৷ ইশ, মেয়েটা নিজেই অসু’স্থ। আম্মার খেয়াল রাখা উচিত ছিল।
(মনে-মনে কথাটা ভাবতে-ভাবতে খাবারের প্লেটটা একহাতে নিয়ে উপরে ছুটলো সে।)
.
তীব্র জ্বরে শরীর পু’রে যাচ্ছে যেন সিরাতের৷ ক্ষনে- ক্ষনে গগনের গর্জ’নপাতে যেন মিয়িয়ে যাচ্ছে সিরাত। বুকটা যেন জ্ব’লছে সাফিনের। দীর্ঘক্ষণ সিরাতের মাথায় জলপট্টি দিতে থাকলো সে। প্রায় ঘন্টা ঘানেক পর আবারও সিরাতের মাথায় হাত রেখে জ্বর খানিকটা কমে গেছে দেখে মৃদু হাসলো সাফিন। সিরাতকে ডাকতে মা’য়া হচ্ছে তাঁর। কিন্তু কিছু করার নেই৷ মেয়েটা কিছু না খেলে ঔষধ খাওয়ানো মুশকিল হয়ে যাবে সাফিনের৷ শীতল হাতে সিরাতের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে সিরাতের দিকে খানিকটা ঝুঁ’কে ধীর কন্ঠে ডাকলো তাঁকে।
—সিরাত? এই সোনা, উঠো প্লিজ৷ জান উঠো একটু খেয়ে নাও। সিরাত?
বৃষ্টির ঝমঝম শব্দের সঙ্গে সাফিনের কোমল কন্ঠের রেশ সিরাতের কানের কাছে এসে ধ্বনিত হতে থাকলে মৃদু নড়ে উঠলো সিরাত৷ ঘুমের ঘোরে সাফিনের দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে হুট করেই সাফিনের হাতটা টেনে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসতে সাফিন তাল সামলাতে না পেরে সিরাতের গাঁয়ের উপর পরে গিয়েও দুইহাত সিরাতের মাথার দুইপাশে রেখে তাল সামলে সিরাতের দিকে তাকাল সাফিন। বেশ বুঝতে পারছে সিরাত নিজের মধ্যে নেই এখন। নয়তো নিজেই কুরুক্ষে’ত্র করে বাড়ি মাথায় তুলতো এমন কান্ডে। বাঁকা হাসি হাসলো সাফিন। সিরাত সাফিনের টিশার্ট টেনে ধরে সাফিনের মুখটা নিজের খুব কাছে টেনে এনে সাফিনের গালে গাল ঠেকিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলতে থাকলো।
— মিস্টার শাহনেওয়াজ সাফিন। আপনি নিজেকে খুব বড় করে ভাবেন তাইনা। ভাবেন সিরাত খুবই স’স্তা। আপনার টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে, তাইতো? আসলে কি জানেন? একটা সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া অনেক ক’ঠিন কাজ। কিন্তু আপনি খুব সহজেই টাকার কারনে সম্পর্কের মরীচি’কাও বেঁ’ধে ফেললেন। তাই আপনার কাছে ভেঙে ফেলা খুব সহজ হবে। একদিন আপনিও আপনার কাজ শেষে আমাকে ছুঁ’ড়ে ফেলে দিবেন। সেই দিনটার অপেক্ষায় আমি। অপেক্ষায় আ….
” পুরো কথাটা শেষ হওয়ার আগেই সিরাত পুনরায় ঘুমের অতল সমুদ্রে তলিয়ে গেলে সাফিন শীতল চাহনিতে সিরাতের দিকে তাকিয়ে তাঁর উপর সিরাতের দেওয়া অভি’যোগগুলো খুব মনোযোগ সহকারে শুনলো শুধু৷” মেয়েটার চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।সাফিন সিরাতের দিকে তাকালে সিরাতের নিশ্বাসের প্রত্যেকটা শব্দ সাফিনের কানের কাছে এসে যেন সা’জরে আ’ঘাত হেনে যাচ্ছে আজ। দুজনের হার্টবিটের ধুকপুক শব্দ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলে সাফিন কয়েকটা ঢোক গি’লে নিজের টিশার্ট থেকে সিরাতের হাতটা সরিয়ে দিয়ে উঠে সোজা বারান্দায় চলে গেল সে। শহর জুড়ে আজ হিমেল হাওয়ায় পরিপূর্ণ থাকলেও এই হিমশীতল আমেজেটা যেন সাফিনকে আজ ঘা’য়েল করতে পারছে না। প্রচন্ড পরিমানে ঘামছে সাফিন। গ’লা শুঁ’কিয়ে কা’ঠ হতে চাইছে যেন আজ৷ সিরাতের প্রত্যেকটা কথা যেন না চাইতেও বারংবার রেডিওর সমেত কানের কাছে এসে করা’ঘাত করে চলেছে তাঁর। আজ বড্ড উতলা মনে হচ্ছে নিজেকে সাফিনের। অন্ধকারে বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজও যেন বিষা’দে পরিপূর্ণ হতে চাইছে। পকেট হাতরে সিগারেট বের করে ধোঁয়া উড়াতে থাকলেও শান্তি হচ্ছে না যেন। বাড়ির সবাইই বা গেল কোথায়? আশ্চর্য! ভাবনায় করাঘা’ত করে ফোনটা বের করে মোস্তফা সাহেবকে ফোন লাগালে বন্ধ বলাতে বিরক্তির চরম পর্যায় গিয়ে এক-এক করে সবাইকে ফোন করার পরও বন্ধ শোনালে শেষমেশ জুবায়েরকে ফোন করলে ওপাশ থেকে জুবায়ের ঘুম-ঘুম কন্ঠে বললো।
— স্যার হেলাল পাহাড়া দিচ্ছে রাজবাড়ী, টেনশন করিয়েন না আপনি৷
— আরে রাখো তোমার রাজবাড়ী। বাড়ীর সবাই কোথায় কিছু জানো তুমি?
— জ্বী স্যার। সবাই গ্রামের বাড়ী গেছেন। নানুর নাকি বাড়িতে ভালো লাগছে না তাঁরজন্য গেছে। বড় সাহেব বাহিরে গেছেন কদিনের জন্য। এখন আপনিও ঘুমান স্যার। গুড নাইট স্যার।
— আরে ধুর, জুবায়ের? বাড়িতে এতগুলো গার্ড, তাঁরাও কি বেড়াতে গেছে নাকি?
জুবায়ের ঘুমিয়ে-ঘুমিয়ে মৃদুস্বরে বলতে লাগল।
—জানিনা স্যার, আমি ঘুমাই আপনিও ঘুমিয়ে পরুন এখন অনেক রাত হয়ে গেছে।
— ধ্যাত, সবগুলো অক’র্মার ঢেঁকি।
বিরক্ত হলো সাফিন। হাতে থাকা সিগারেটটা পায়ের তলায় পি’শে বারান্দার দরজা ভিতর থেকে আঁ’টকে দিয়ে ভিতরে আসতে সিরাতের দিকে তাকিয়ে রইলো অনেক্ষণ। সিরাত খানিক মোড় দিয়ে শুতে নিতে কম্বল সরে গেলে শাড়ির আঁচল ভেদ করে সিরাতের উম্মুক্ত গোলাপিরাঙা নাভিদ্বয় দেখে চোখ সঙ্গে- সঙ্গে চোখ বন্ধ করে ফেলল সাফিন হার্টবিট যেন দ্রুত থেকে দ্রুততম হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর। আবারও খানিকটা চোখ খুলে তাকিয়ে ধীর পায়ে সিরাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে খানিকটা ঝুঁ’কে সিরাতের অনেকটা কাছে যেতে গিয়ে সিরাতের ঠোঁটে গাঢ় করে চুমু খেয়ে মৃদুস্বরে বললো।
— তুমি জানতেও পারলে না জান, তোমার অজান্তেই তোমার মূল্যবান সম্পদ দেখে নিয়েছি। আমার চোখ অন্ধ হয়ে গেল না কেন আল্লাহ মালুম। তবে আজ যে রাতে আর দুচোখের পাতা এক করতে পারবনা,সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। কি জানেতো সিরাত, আমি হয়তো বা পাষা’ন। হৃদয়হীন, তুমি যেটা ভাবো আমাকে। কিন্তু ব্যাবহার করে ছুঁ’ড়ে ফেলে দেব, এতটাও অমানু’ষ আমাকে আমার আম্মা তৈরি করেননি।
( কথাগুলো বলে সযত্নে সিরাতের শাড়ির আঁচলটা ঠিক করে দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে সিরাতের ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখতে-দেখতে চোখ বন্ধ করলো সাফিন।)
.
সকালের শুভ্ররাঙা আলো এসে চোখেমুখে ছেঁ’য়ে যেতে ঘুম ভেঙে গেল সাফিনের। হুট করেই প্রথমেই পাশ ফিরে তাকিয়ে সিরাতকে না দেখতে পেলে ঘুম উড়ে গেল যেন তাঁর। দ্রুত বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুম চেক করেও লাভ না হলে চটজলদি নিচে চলে এলো সাফিন।
চারদিকে চোখ বো’লালে রান্নাঘরে নাস্তা করতে দেখে হাঁ’প ছেড়ে বাঁচল যেন সে। ধীর পায়ে সিরাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে কপালে হাত ছুঁয়িয়ে দিতে অবাক হলো সিরাত৷ ভ্রু কুঁ’চকে ফেলল যেন। বললো।
—কি দেখছেন এভাবে হুম?
—আমার মা’থা আর তোমার মু’ন্ডু। বাড়িতে এতগুলো মেড থাকতে তোমার রান্না ঘরে কি কাজ হুম? নেক্সট টাইম যেন না দেখি। আমার যখন তোমার হাতের রান্না খেতে মন চাইবে আমি বলব তখন করো। সারারাততো জ্বরে কেঁ’পেছো৷ আমি একবারও বলেছি তোমাকে আমার জন্য এত রাত অব্দি না খেয়ে বসে থাকতে? গোটা একটা রাত না খেয়ে থেকেছো! ফারদার যদি এসব ন্যা’কামো চোখে পরে না সিরাত, তো হাত পা বেঁধে টানা এক সপ্তাহ স্টোর রুমে আঁ’টকে রাখব বলে রাখলাম আমি৷
সাফিনের কথা শুনে রাগে ফুঁ’সতে থাকলো সিরাত। মাথাটা এখনও কেমন ঝিমঝিম করছে তাঁর। তবুও চোখ গরম করে সাফিনের দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বললো।
—নেহাত আম্মা বলেছে আপনার জন্য বসে থাকতে নয়তো এই সিরাত ম’রে গেলেও আপনার জন্য বসে থাকত না বুঝলেন মিস্টার শাহনেওয়াজ সাফিন। আর হ্যা, আপনাকে কে বললো আমি খাইনি!
—খেয়েছো?
সাফিন ভ্রু জাগিয়ে ফেললে সিরাত খানিকটা স্বরটা ডাউনে এনে ধীর কন্ঠে বললো।
—হ্যা,হ্যাতো,খাবনা কেন! অবশ্যই খেয়েছি৷
— আমার চোখে চোখ রেখে বলোতো?
সিরাত চুপ হয়ে গেলে সাফিন দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে কট’ম’ট করে বললো।
— আর একটা মি’থ্যা কথা বললে আমার এই চোখ আর তোমার ওই ঠোঁট কথা বলবে শুধু। লাস্ট ওয়ার্নিং ফর ইউ জান৷ উম্মাহ।
—শা’লা শয়’তান, এক নাম্বার ব’জ্জা’ত। সবসময় রাজনীতি গিরি দেখাতে আসে৷ ইচ্ছে করে গ’লাটা টি’পে দেই। (মনে-মনে কথাটা বলে নিশ্বাস ছাড়তে সাফিন গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো।
—সব ইচ্ছের দাম দিতে নাই সোনা। তাই তোমার ইচ্ছে পূরন নাও হতে পারে।
সাফিনের কথায় সিরাত অবাক হয়ে গেল রীতিমতো।
—কিহ?
—যেটা ভাবছো তুমি। যাইহোক রেডি হও তোমার বান্ধবীকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসব আজকে৷
কথাটা বলেই সাফিন চলে যেতে রাগে ফুঁ’সতে থাকলো সিরাত।
—শয়’তা’ন বে’ডা জানি কোথাকার।
.
নীল রাঙা সালোয়ার কামিজ পরে সিএনজি থেকে নেমে ডিরেক্ট ব্রাক অফিসের সামনে গাড়ি থামিয়ে নেমে পরলো তোহা। রাতে বৃষ্টি হওয়ার কারনে রাস্তার আশেপাশে কাদামাখা পানি জমে গেছে প্রায়। সকাল-সকাল রুবাইতের থেকে টাকা এনে ব্রাক অফিসের সামনে হাজির সে। রুবাইতের দ্বারা ব্যাংক থেকে বিশ হাজার টাকা উঠিয়েছিল তোহা। হাসপাতালে কাউকে কিছু না জানিয়েই চলে আসছে এখানে। নয়তো বাড়িছাড়া হতে হবে হয়তো তাঁকে। ব্রাক অফিসের ভিতরে ঢুকে ম্যানেজারের সামনে টাকার ব্যাগটা বাড়িয়ে দিতে ম্যানেজার হেসে বললেন।
—আপনার সব মানি ওকে হয়ে গেছে মিস তোহা৷
কথাটা কান পর্যন্ত পৌঁছাতে অবাকের চরম পর্যায় পৌঁছাল তোহা। দ্রুত জিজ্ঞেস করলো।
—কে করেছে এটা? আমিতো কোনো টাকা দেইনি!
—আপনার বোন, মানে মিসেস শাহনেওয়াজ সব পেমেন্ট করে দিয়েছেন। আপনি নিশ্চন্তে থাকতে পারেন। আল্লাহ হাফেজ।
মাথা ঘুরে যাচ্ছে যেন তোহার।
—মিসেস শাহনেওয়াজ? মানেহ,সিরাত? ও কোথায় এত টাকা পেল? আর হুট করে ওর বিয়েটাও কেমন অবাক লাগছে আমার। সিরাত কেনো ভু’ল করে ফেলেনি তো আমার জন্য?
দ্রুত সিরাতকে ফোন লাগাতে হাসপাতালে তোহাকে খুঁজতে ব্যা’কুল হয়ে পরেছে যেন সিরাত। সাফিন ওর পিছু-পিছু হেঁটে রাগ দেখাচ্ছে তাঁকে।
তোহার ফোন পেয়ে চটজলদি ফোনটা লুফে নিয়ে ভয়ের কন্ঠে বললো।
—জান কই তুই? হাসপাতাল থেকে বের হয়েছিস কোন সাহসে তুই? তুই জানিস তুই অসুস্থ, এই অবস্থায়ও নিজের প্রতি যত্ন নিবি না নাকি!সামনে আশ শুধু আজকে তুই, একটা মা’রব তোকে আমি। কথাগুলো বলেই কেঁদে উঠলো সিরাত। তোহা থ’মকে গেল। মৃদু হেসে কান্নারত কন্ঠে বললো।
— আমার জন্য বিয়ে করেছিস সিরাত? কেন করলি এমন তুই? আমি বেঁচে আছিতো জান নাকি? ঠিক একটা ব্যাবস্থা হয়ে যেত আমার৷ তুই কেন তোর সারাটা জীবন এভাবে শেষ করে দিলি?
থ’মকে গেল সিরাত। পা দুটো থেমে গেলে হিমেল হাওয়ায় কানের পাশে গুঁ’জে থাকা এলোমেলো চুলগুলো উড়তে থাকলো তাঁর। সাফিন ভ্রু জাগিয়ে জিজ্ঞেসের সহিত তাঁর দিকে তাকাতে
সিরাত নিচের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে শুঁকনো ঠোঁটদ্বয় ভিজিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— তুই যেসব ভাবছিস ওসব কিছুই নয় জান। টাকার প্রয়োজন ছিল আমার। তোর জন্য করেছি ভেবে ভু’ল করিস না। বাড়িতে আশ দেখা হবে।
তেহা চুপ হয়ে গেল। ওপাশ থেকে সিরাতের দীর্ঘশ্বাসের মৃদু শিরহন শোনা গেলে চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো তোহার।
সিরাত পিছুঘুরে তাকাতে সাফিনের বুকে ধা’ক্কা খেয়ে গেলে সাফিন মৃদু হাসলো। ধীর কন্ঠে বললো।
—মিথ্যা কেন বললে সিরাত?
হাসলো সিরাত। ভেজা চোখে সাফিনের চোখের দিকে চোখ রেখে মৃদুস্বরে বললো।
— কখনো-কখনো একটা মিথ্যেও যদি মানুষের জন্য সুখকর হয়না, সেটা বলা দো’ষের কিছু নয়৷ ওসব আপনি বুঝবেন না। কথাটা বলেই সিরাত হাসপাতালের গেট খুলে বেড়িয়ে যেতে সাফিন ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে।
— দুনিয়ায় এত মানুষের ভিড়ে তোমাকেই আমার বেঁছে নিতে হলো সিরাত? আজ আফসোস হচ্ছে কেন যেন, দ্বিধাগ্রস্তে বারংবার করা নেড়ে বলে যাচ্ছে যেন, আমি তোমার জন্য ঠিক মানুষ নই…..

চলবে…….

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-১২

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ১২

(❌ ভিতরে কিছু অশালীন ওয়ার্ড ব্যাবহার করা হয়েছে গল্পের প্রয়োজনে। তারজন্য ক্ষমাপ্রার্থী❌)

শাহনেওয়াজ ভিলার পিছন দিকের গেটের সামনে এসে সাফিন গাড়ি দাঁড় করালে সিরাত শীতে কাঁ’পতে-কাঁ’পতে পিটপিট করে সাফিনের দিকে তাকাল।
সাফিন সিরাতের দিকে ভ্রুক্ষেপ না দিয়ে বৃষ্টি ভেজা রাস্তার দিকে দৃষ্টি স্থির করলো। যেখানে অসময়ে ঝড়ে যাওয়া লালচে রাঙা পাতাগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পুরো রাস্তাজুরে।
পকেট হাতরে ফোনটা বের করে হেলালের ফোনে ফোন লাগিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—হেলাল বাড়ির পেছনের গেটটা খুলে দেও তো।
অবাক হলো হেলাল৷ বললো।
—স্যার আপনি এখনো আসছেন না কেন? গেস্টরা সবাই এসে পরেছে। আর পিছন থেকে কেন আসতে গেলেন! আচ্ছা এক্ষুনি আসছি আমি।
—আর শোনো,আমি যে বাড়ির পেছন থেকে আসছি এটা এক্ষুনি কাউকে বলার দরকার নেই বাড়িতে।
—আচ্ছা স্যার।
ঝমঝমিয়ে মুশল ধারা বৃষ্টির মধ্যে সাফিন গাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে পরে নিজের মাথাটা খানিকটা চে’পে রাখলো তাঁর। ঝিম ধরে গেছে যেন। সিরাত ধীর পায়ে নামতে নিতে পায়ে ব্যা’থা অনুভব করলে সেদিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকাতে পায়ের মোটা নুপুর বেয়ে র’ক্ত জমা’ট বেঁ’ধে গেছে দেখে খেয়াল করলো পা টা অনেকটা সেঁ’চে গেছে তাঁর। চলন্ত গাড়ি থেকে পরে সাফিনকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরলে এসব খেয়ালেই আসেনি সিরাতের।
সন্ধ্যা নামো-নামো অবস্থা। দিগন্তের কোন ঘেঁষে ভেসে যাওয়া কালো রাঙা মেঘদ্বয় যেন আজ ক্ষনে-ক্ষনে গর্জ’নপাত হওয়ার খেলায় মে’তে উঠেছে। ভয়ে চোখদ্বয় বন্ধ করে রেখেছে সিরাত।
” বাড়ির পেছনের দিকটাতে তেমন একটা আশা হয়না সাফিনের৷” মোটা-মোটা আমরুল গাছ দেখে সেদিকে ধীর দৃষ্টিতে তাকাল শুধু। গাছের প্রত্যেকটা পাতা বেয়ে ঝমঝমে বৃষ্টির উ’ষ্ণতা যেন ছেঁয়ে পরেছে শহরে।
পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে ম্যাচ দিয়ে জ্বা’লিয়ে মুখে দিয়ে ধোঁয়া উড়াতে থাকলে সিরাত সাফিনের দিকে ধীর চাহনিতে তাকালো শুধু। উঠতে ক’ষ্ট হচ্ছে তাঁর। এতক্ষণ বসে থাকাতে যেন ব্যা’থাটা আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তাঁর।
হুট করে হেলাল মৃদু আওয়াজে গেট খুলে দিতে সাফিন সিরাতের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে মৃদু হেসে তাঁর দিকে এগিয়ে গিয়ে পাঁ’জাকোলা করে নিল সিরাতকে। বৃষ্টির রিমঝিমে উ’ষ্ণতা তাঁর চোখেমুখে অনুভব করে বন্ধ চোখদ্বয় খুলে পিটপিট করে তাকাল সিরাত। সাফিন হেলালের দিকে চাবি ছুঁ’ড়ে দিলে হেলাল সাফিনের বিদ্ধ’স্ত মুখদ্বয় পরখ করে ভয়ের কন্ঠে বললো।
—আপনাদের এ অবস্থা হলো কি করে স্যার? এমন দেখাচ্ছে কেন আপনাদের? জুবায়ের কোথায়? আমি এক্ষুনি বড় সাহেবকে খবর দিচ্ছি।
হেলাল ব্যাস্ত হয়ে পরলে সাফিন ভ্রু জাগিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—ড্যাডকে এসব কিছু জানানোর দরকার নেই হেলাল। তোমাকে আমি পরে সব বোঝাব। আজকে বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে সিন’ক্রিয়েট হোক বা সবাই আমাদের নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরুক এটা আমি চাইছি না বলেই পেছন থেকে এসেছি। তুমিও স্বাভাবিক থাকো। গাড়িটা ওয়াশ করানোর ব্যাবস্থা করো আমি ভিতরে যাচ্ছি।
— আচ্ছা স্যার।
.
ঝর্ণার পানিটা ছেড়ে দিয়ে সাফিন সিরাতকে তাঁর নিচে দাঁড় করিয়ে দেয়ালের সাথে আঁ’টকে দিতে ঝর্ণার প্রত্যেকটা শিশিরকনা যেন সিরাতের সসস্ত শরীরে ছুঁয়িয়ে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে। সিরাতের ভেজা গোলাপি রাঙা চেহারাটা কেমন টকটকে লাল হয়ে রয়েছে ঠান্ডায়। লালচে ঠোঁটদ্বয় কাঁ’পতে থাকলে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল সিরাত।
বাঁকা হাসি হাসলো সাফিন। ধীর পায়ে সিরাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে আলতো হাতে সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে সিরাতের ভেজা চুলে নাক ডুবিয়ে দিতে হুট করেই সিরাতের বন্ধ চোখদ্বয় খুলে গেলে ক্লান্ত শরীরে নরতেও পারছে না সে। যথাসম্ভব সাফিনকে ঠেলে দিতে চাইলে সাফিন বাঁকা হাসি হেসে শীতল হাতে সিরাতের মাথার পেছনে চে’পে ধরে নাকের সাথে নাক ঠেকিয়ে সিরাতের লালরাঙা ওষ্ঠে ঠোঁট ডুবিয়ে দিতে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। চোখদ্বয় খিঁ’চে বন্ধ করে ফেললে নিশ্বাস ঘন হয়ে আসলো সিরাতের। সাফিনের হৃৎস্পন্দনের ধুকপুক শব্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিরাতের হার্টের গতি মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে যেন ক্রমশ। ঝর্ণার রিমঝিমে উ’ষ্ণতা সমস্ত শরীরে কাঁ’পুনি ধরিয়ে দিলেও সাফিনের নিশ্বাসের মৃদু তাপে যেন সিরাত নিজেও গাঁ’য়ের জোরে সাফিনের চুল আঁ’কড়ে ধরলো। দীর্ঘক্ষণ দুজনের নিশ্বাসের সঙ্গে নিশ্বাস স্পর্শ করে গেলে সাফিন সিরাতকে ছেড়ে দিয়ে উল্টোদিকে ঘুরে দাঁড়াল। কয়েকটা ঢোক গি’লে নিজেকে সামলে নিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
— এক মিনিটের ভিতরে ভেজা অবস্থা থেকে চেইঞ্জ করে বাহিরে বের হবে সিরাত। নয়তো আজকে একটা অঘ’টন ঘটে যাবে আমাদের মাঝে।
সাফিনের কথায় সিরাতের হুঁশ ফেরাতে নিজেই নিজের প্রতি বিরক্তি অনুভব করলো। ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজেই ছি’ড়ে ফেলতে। ল’জ্জা রাগ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলে সাফিন কালোরঙা শার্টটা খুলে ছু’ড়ে ফেলে দিয়ে টাওয়াল নিয়ে বেড়িয়ে গিয়ে সাজোরে দরজা আঁ’টকে দিলে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরতে থাকলো তাঁর।
.
কালো রাঙা সুট পরে চুলগুলো সুন্দরভাবে সাই করে রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে সাফিন। কিছুক্ষণ পর ধীর কন্ঠে রুমের ভিতরে থাকা সিরাতের উদ্দেশ্যে বললো।
—এখনও হয়নি তোমার? এত টাইম কেন লাগছে! নিচে সবাই ওয়েট করছে আমাদের জন্য৷ আর এক মিনিট দেখব তারপর তুমি যে অবস্থাতেই থাকোনা কেন আমি ভিতরে যেতে বাধ্য হব সিরাত।
লালরাঙা সিল্কি শাড়ি পরে চুলগুলো হাতখোঁপা করে খোঁপার উপরে রজনীগন্ধার মালাটা গেঁথে নিল সিরাত। সাফিনের কথার পাত্তা নিলে কিছুক্ষণ পর সাফিন বিরক্ত হয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে আসতে চেয়ার থেকে সিরাত উঠতে নিতে সাফিন হা হয়ে তাকিয়ে থাকলো শুধু সিরাতের দিকে। বাড়ি জুড়ে ঝাড়বাতির রঙবেরঙের আলো সিরাতের চোখমুখে উ’পছে পরাতে সিরাতের সাজহীন মা’য়াবী মুখশ্রী থেকে চোখ ফেরাতে পারলো না সাফিন। দীর্ঘক্ষণ দুটি চোখের মিলন হতে সাফিন ধীর পায়ে সিরাতের দিকে এগিয়ে আসতে নিতে সিরাতের গ’লা শুঁ’কিয়ে আসতে চাইছে যেন। আজকে সাফিনকে একটু বেশিই অন্য রকম ঠেকতে পারছে সে। বাঁকা হাসি হাসলো সাফিন। সিরাতের খুব কাছে গিয়ে তাঁর চোখে চোখ রেখে ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখা ভাড়ি-ভাড়ি গহনার ভিড়ে নরমাল একটা সেট সিরাতের গলায় জড়িয়ে ধরার সহিত পরিয়ে দিলে চোখ বন্ধ করে নিল সিরাত৷ সাফিন সরে যাওয়ার আগে সিরাতের ঘাড়ের কাছে গা’ঢ় করে কাম’ড়ে দিলে ব্যা’থায় আহ করে উঠলো সিরাত। হেসে উঠলো সাফিন। কাম’ড়ের জায়গাটাতে ঠোঁটের স্পর্শ ছুঁ’য়িয়ে দিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— তোমার এই রুপের আ’গুনে না চাইতেও প্রতিনিয়ত পু’রে ছার’খার হয়ে যাচ্ছে একজন। সে খবর থাকুক অজানা৷ অল্প সাজে গভী’র মা’য়ার ভিন্নতা জানা নেই এই শাহনেওয়াজ সাফিনের। কিন্তু তোমার চোখের ভাষা বোঝার সাধ্য কখনো হয়েও হয়ে উঠলো না আমার।
সিরাত সাফিনের কথার আ’গা>মা’থা কিছু না বুঝলে কিছু বলার আগেই সাফিন সিরাতকে পাঁ’জা কোলা করে নিলে সিরাত আর কিছু বলতে পারলো না সাফিনকে। ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে থাকলো শুধু তাঁর দিকে।
.
— শাহনেওয়াজ সাফিন আর তাঁর মিসেস শাহনেওয়াজ হাজির সবার সামনে।
সাফিনের হাসির কন্ঠের রেশ যেতে না যেতেই হেলাল লাইটারের আলো সিঁড়ির দিকে তাক করলে গেস্টরা সবাই তাঁদের দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো যেন। সাফিনের কোলে বসেই এভাবে সবার সামনে চলে আসাতে ল’জ্জায় ম’রে যেতে ইচ্ছে করছে সিরাতের। কিন্তু পায়ে ব্যা’থার কারনে নড়তেও পারছে না সে। সাফিনের বুকে মুখ লোকালে সাফিন হেসে ধীর কন্ঠে বললো।
—উফ সিরাত। তোমার এই লাজুক-লাজুক ভাবটা না জাস্ট ওয়াও। ইচ্ছে করছে সবার সামনে চুমু খেয়ে তোমার লাজুকতা আরও বাড়িয়ে দেই৷
সাফিনের কথা শুনে নিমিষেই যেন সিরাতের কান গরম হয়ে উঠতে থাকলো। দাঁ’তে দাঁ’ত চেঁ’পে রাগে ফুঁ’সতে-ফুঁ’সতে বললো।
— চুপ থাকবেন নাকি আমি এখান থেকে চলে যাব এখন।
বাঁকা হাসি হাসলো সাফিন। বললো।
—উপস জান, তুমি ভাবলে কিভাবে এভাবেই তোমাকে আমি চলে যেতে দেব। আমাকে যেন তুমি কয়টা চর মেরেছিলে? মনে পরে তোমার? আজকে তাঁর ঝা’লটা এমন ভাবে মে’টাব যে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না সেটা৷
ভয়ে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। সাফিনের হাস্যজ্বল মুখশ্রীর দিকে তাকাতেও যেন এখন ভয় হচ্ছে তাঁর। এই হাসির পেছনেও নিশ্চয়ই কিছু লুকিয়ে রয়েছে তাঁর।
.
সিরাতকে নিয়ে নিচে নামতে উপর থেকে লালরাঙা গোলাপের পাপড়ি ঝড়ে পরাতে ধীর চাহনিতে সেদিকে তাকালো সিরাত। পুরো বাড়িটা এতটা সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে যে এগুলো সিরাতের কল্পনার বাহিরের জগৎ মনে হচ্ছে এখন। সাফিন সিরাতকে শীতল হাতে কোল থেকে নামিয়ে দিলে ক্যামেরা ম্যান পিক তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে তাঁকে নিয়ে যেন। সিরাত ধীর চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকাতে সাফিন হেসে খাবারের দিকে চলে গেলে আমেনা বেগম সিরাতের দিকে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন সিরাতকে। একগাল হেসে বললেন।
—মাশাআল্লাহ। আমার মেয়ে না সাজলেও সবার সেরা। চল সবার সঙ্গে আলাপ করাই তোর৷ মৃদু হাসলো সিরাত। পায়ে ব্যা’থার কারনে নড়তেও পারছে না আবার না নড়ে থাকতেও পারছে না। ব্যা’থাটা চে’পে গিয়ে আমেনা বেগমের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে সামনে আগাল সিরাত৷
“ড্রিংসের গ্লাসটা মুখের সামনে ধরতে সরোয়ার সাহেব হেসে সাফিনের দিকে তাকিয়ে গ্লাসটা ধরে নিতে মৃদু হাসলো সাফিন।”বললো।
—ক্লা’ন্তি সারাবার ঔষধ আরকি। জীবনে আর যাই হই না কেন, ক্লা’ন্তির কাছে কখনো নিজেকে হা’র মানতে দেইনা চাচ্চু।
সরোয়ার সাহেব হেসে সাফিনের পিঠ চা’পরে বললেন।
—এটাই তো চাই সাফিন বেটা।
সাফিন হাসলো। সরোয়ার সাহেবের হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে এক ঢোকে শেষ করে ফেলতে সরোয়ার সাহেব হেসে যেতে নিতে সাফিন বাঁ’ধ সেধে বলে উঠলো।
—চাচ্চু তোমার সাথে যে ওই লোকটা এসেছিল না বিদেশ থেকে। তাঁকে তো দেখছি না? আমাদের গেস্ট বলে কথা, আর পার্টিতে না থাকলে হয়!
—দুলালের কথা বলছো? ওহ আচ্ছা, ও একটু বেড়িয়েছে সকালে। বলছিল স্যার আপনাদের শহরটা একটু ঘুরে দেখতে চাই। বিদেশ বিভূঁইয়ে তো এতকাল ঘুরলাম এখন একটু দেশে ঘোরা যাক৷ আমিও আর আঁ’টকালাম না।
হাসলো সাফিন। বললো।
—ওহ আচ্ছা। থাকো তাহলে, আমি আমার বউয়ের সাথে একটু ডুয়েট ডান্স করে আসি।
কথাটা বলে সাফিন বাঁকা হাসি হেসে সামনে আগালে সরোয়ার সাহেবও আর দাঁড়ালেন না সেখানে।
.
—আমার হাতের বন্দু’কটা দেখতে পাচ্ছো তো তুমি?
অন্ধকারে চেয়ারে বসা হুডি পরা লোকটার কথা শুনে সামনে থাকা লোকটা কেঁ’পে উঠলো যেন। কয়েকটা ঢোক গি’লে কান্নারত কন্ঠে বললো।
—হ্যা সাহেব, সরি সাহেব। আমি আপনার কথা মতো সাফিনের গাড়ির ব্রেকফে’ল করেছিলাম সাহেব। কিন্তু বুঝতে পারছি না এ জী’বিত কিভাবে ফিরলো এখানে। আমার হিসেবে ওর এখন সোজা উপরে থাকার কথা।
অন্ধকারের লোকটা হেসে উঠলো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—তুমি কি নিজে বো’কা হচ্ছো নাকি আমাকে বো’কা বানাচ্ছো কোনটা?
—না সাহেব। আর একটা সুযোগ দিন শুধু,এবার আর ভুল হবে না। অন্ধকারের লোকটা হেসে চেয়ার ছেড়ে উঠে লোকটার চারপাশে ঘুরতে-ঘুরতে বলতে লাগল।
—একটা ঘোড়া, দুইটা ঘোড়া, তিনটা ঘোড়া সই,চারটা ঘোড়া হয়ে গেলে তোমার ঠিকানা কই? হাহাহা। সাফিন যাইনি তো কি হয়েছে? তুমি নিজেই এখন উপরে চলে যাও৷
কথাটা বলার সঙ্গে- সঙ্গে ঝমঝমে বৃষ্টির সহিত গু’লির বি’কট শব্দে ছেঁয়ে গেলে অন্ধকারের লোকটা মাটিতে লু’টিয়ে পরলে সামনের লোকটা হেসে উঠলেন। পাশে থাকা আর একটা লোকের উদ্দেশ্যে বললেন।
— লা’শটাকে কেঁ’টে বস্তায় বেঁ’ধে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়ে আসো৷ যাতে এর অস্তি’ত্ব সমুদ্রের অতলে ত’লিয়ে যেতে পারে।
—জ্বী স্যার।
হেসে উঠলো লোকটা।
.
~ আজ ফের তুমপে পেয়ার আয়াহে
বে হাদ অর বে সুমায়ারাহে…..

গানের সাথে তালে তাল মিলিয়ে সাফিন সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে আনতে সিরাত চোখ বড়-বড় করে তাকাতে সাফিন বাঁকা হাসি হেসে সিরাতকে গাঁ’য়ের জোরে ঘুড়িয়ে আনতে গিয়ে সিরাত পরে যাওয়ার আগেই একহাতে সিরাতের আঁচল এড়িয়ে কোমরে স্পর্শ করে গেলে সিরাত ভয়ে চোখ খিঁ’চে রাখলে সাফিন খানিকটা সিরাতের দিকে ঝুঁ’কে সিরাতের কাঁ’পা>কাঁ’পা ওষ্ঠে কা’ম’ড়ে দিলে সিরাত চোখ বড়-বড় করে সাফিনের দিকে তাকালে সাফিন হেসে উঠলো। সিরাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে শীতল কন্ঠে বললো।
—সবে তো শুরু জানস। আগে-আগে দেখো হোতাহে কেয়া?
সিরাত সাফিনের দিকে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালে সাফিন সিরাতকে সোজা ভাবে দাঁড় করিয়ে দিলে সিরাত শাড়ি সামলে সাফিনের দিকে রাগ নিয়ে তাকিয়ে বললো।
— যা দেখাবার দেখান গিয়ে। এক হাতে তালি বাজে না মিস্টার শাহনেওয়াজ সাফিন।
—ওয়াহ, দেখা যাক বেব্বি। সাফিন হেসে উঠলে আজাদ সাহেব হেসে তাঁদের দিকে এগিয়ে আসলে সাফিন আজাদ সাহেবের হাত ধরে এগিয়ে আনলে মোস্তফা সাহেব তাঁর গেস্টদের সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত হয়ে পরলেন।
আদাজ সাহেব ধীর কন্ঠে পাশে থাকা মোহনের উদ্দেশ্যে বললেন।
—মোহন ফাইলটা দেওতো।
—জ্বী স্যার।
মোহন ফাইলটা এগিয়ে দিলে আজাদ সাহেব মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়ে বলতে লাগলেন।
—আমাদের পরিবারের ঐতিহ্য ৩০ বছরের পুরনো রাজবাড়ী। যার দাম এখনও অব্দি ৫০০ কোটি টাকা৷ আমি মো. আজাদ আজ থেকে ওই রাজবাড়ী আমার একমাত্র নাতী শাহনেওয়াজ সাফিনের নামে লিখিত করে দিলাম৷
আজাদ সাহেবের কথা শুনে সবাই তাঁর দিকে তাকিয়ে হাতহালি দিতে থাকলে হেলাল মনিটর অন করে পুরো রাজবাড়ীটা ঘুড়িয়ে-ঘুড়িয়ে দেখাতে থাকলে সবাই সেদিকে হা হয়ে তাকিয়ে থেকে বলাবলি করতে থাকতে আজাদ সাহেব হেসে ফাইলটা সাফিনের হাতে তুলে দিলে প্রশান্তির হাসি হাসলো সাফিন। সিরাত মনিটরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলে সাফিন ভ্রু জাগিয়ে হেসে উঠলো।
—এত দিনের খেলাটা নাহয় এখন সামনা-সামনি খেলা যাক। দেখা যাক কে জিতে আর কে হারে। (কথাটা মনে-মনে বলে হেসে উঠলো সাফিন।)
এতক্ষণে জুবায়ের উইল চেয়ারে করে তোহাকে নিয়ে আসলে সিরাতের চোখেমুখে খুশিতে ভরে উঠলো যেন। দৌঁড়ে তোহার কাছে ছুটে গেলে হাসলো সাফিন। জুবায়ের সাফিনের দিকে এগিয়ে এসে পকেট থেকে বন্দু’কটা বের করে সাফিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে চাঁ’পা কন্ঠে বললো।
— স্যার লোকটা কে জানতে পারিনি। কিন্তু খবর আছে।
—কি খবর দ্রুত বলো?
জুবায়ের ধীর কন্ঠে বললো।
—মাএ নিউজে দেখলাম একটা লোককে কেঁ’টে বস্তায় বেঁ’ধে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে নাকি। লা’শ উদ্ধার করা যাইনি এখনও। তবে লা’শ ফেলার সময় সমুদ্রের ধারে পিক তুলতে ছিল একজন তখন তাঁর ক্যামেরায় ধরা পরেছে।
ভ্রু জাগিয়ে ফেলল সাফিন। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—কতজন ছিল মিনিমাম?
— চার-পাঁচজন হবে। একেতো ঝুম বৃষ্টি, তারউপর অন্ধকার আবহাওয়া, তাই চেহারাগুলো বোঝা যাচ্ছে না।
—লোকটা কোথায় এখন?
—কোন লোকটা স্যার?
—যার ক্যামেরাতে পিকগুলো উঠেছে?
জুবায়ের খানিকটা ভেবে বললো।
—সম্ভবত পুলিশের হেফাজতে আছে।
হাসলো সাফিন। জুবায়েরের কাঁধে হাত রেখে ধীর কন্ঠে বললো।
—লোকটাকে আমাদের জেম্মা’য় এনে আদর-আপ্যায়ন করো।
জুবায়ের হেসে উঠলো। বললো।
—কোন টাইপের আপ্যায়ন করব স্যার? না মানে ধোঁ’লাই নাকি জামাই আদর।
—আরে ধুর জুবায়ের। তুমিও না। লোকটা এত ভালো কাজ করেছে তো তাই ওর এখন জীবন সং’কট হতে পারে। লোকটাকে আমার প্রয়োজন।
—জ্বী স্যার।
.
তোহাকে জড়িয়ে ধরে সিরাত কেঁদে উঠলে তোহা রাগ নিয়ে বললো।
—একটা খাবি সিরাত। আমি একদম পারফেক্ট আছি। কাঁদিস না প্লিজ।
সিরাত তোহার একগালে হাত রেখে মৃদু হেসে বললো।
— কিচ্ছু ঠিক দেখতে পাচ্ছি না আমি। আমার জন্য তোর এই অবস্থা।
— এটা কোন ড্রামা সিরিয়াল হচ্ছে এখানে হুম। না মানে শাশুড়ী তো মাশাআল্লাহ পেয়েছো। তারজন্যতো এত ন্যা’কা কান্না করা লাগে না জানস।
সাফিনের কথা শুনে সিরাত বিরক্তি নিয়ে তাঁর দিকে চোখ গরম করে তাকালে সাফিন হেসে উঠলো। বললো।
—যাহ বাবাহ, তোমার বান্ধবীকে যে এত ক’ষ্ট করে উইল চেয়ারে করে হলেও তোমার কাছে নিয়ে এলাম শুধু তোমার চোখেমুখে খুশি দেখতে চাই বলে। আর তুমি উল্টো ন্যা’কা কান্না জুড়ে দিলে! তো জুবায়েরকে বলি তোহাকে হসপিটালে নিয়ে যেতে। যদিও এক সপ্তাহ ওকে সেখানেই থাকতে হবে। এবার তোমার খুশি, কন্না করবে নাকি বান্ধবীকে পাশে রাখবে?
সিরাত সাফিনের দিকে রাগ নিয়ে তাকিয়েও আবার চু’পসে গেল।
—ব’জ্জা’ত লোক একটা৷ সবসময় খালি ওনার হুকুম আর হুকুম। যেন বিয়ে করে আমাকে উদ্ধার করে ফেলেছেন। জীবনটাই তেজপাতা হয়ে গেল আমার। ( মনে-মনে কথাটা বলে তোহার দিকে তাকাতে তোহা হেসে উঠলে সিরাতও হেসে দিল।)
—-যাক শান্তি। বউয়ের হাসি তো দিল খুশি। তবে হ্যা কথা হবে বাসর ঘরে। এখন টাটা।
কথাটা বলেই সাফিন চলে গেলে সিরাত রাগে ফুঁ’সতে- ফুঁ’সতে সাফিনের দিকে তাকালে আমেনা বেগমও হেসে তাঁদের দিকে এগিয়ে আসলেন। বললেন।
— আরে আম্মাজান তুই এখানে? কিছু খেয়েছিস এখনও? সাফিন বললো তুই নাকি ওয়াশরুমে পরে গেছিস। পায়ে কি খুব লেগেছে নাকি আবার?
সিরাত অবাক হলো।
—ওয়াশরুম!
— হ সাফিন বললো তো।
সিরাত রাগ নিয়ে দূরে সাফিনের দিকে তাকাল। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ব্যাস্ত সে। সিরাত রাগে ফুঁ’সতে থাকলো।
— শ’য়’তা’নের কারখানা৷ ব’জ্জা’ত লোক একটা৷ এই সিরাত বলে রাখলো এক বছর পর যখন সিরাত চলে যাবে তখন তোর বউ যেন একটা রা’ক্ষসী হয়। উঠতে বসতে ঝাঁ’ড়ি খাবি তুই৷ (মনে-মনে কথাটা বলে একশো একটা গা’লি দিল সাফিনকে সিরাত।)
.
রিমঝিমে বর্ষায় বর্ষিত শহরের নিস্তব্ধ প্রহরে অন্ধকার রুমটাতে খাটের উপরে গা’ট হয়ে বসে আছে সিরাত৷ ভয়ে নিজের হৃৎস্পন্দনের ধুকপুক কম্প’ম নিজেই খুব মনোযোগ সহকারে শুনতে ব্যাস্ত সে৷ দশ মিনিট হলো আমেনা বেগম সাফিনের রুমে বসিয়ে রেখে গেছেন তাঁকে। অন্ধকার রুমের ফুলের টানটান সুভ্রুতাও যেন নাকে এসে প্রগর ভাবে বা’রি খেয়ে যেতে ব্যাস্ত। হুট করে বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সহিত দরজা খোলার আওয়াজ ভেসে আসাতে দাঁতে দাঁত চে’পে রাগ নিয়ে কন্ঠে দৃঢ়তা এনে বললো।
— এক পা আগাবি না শ’য়’তান৷ আমাকে ছুঁ’বিনা শ’য়’তান। ছুঁ’বি তো কিল খাবি।
হঠাৎ লাইটটা অন হয়ে গেলে আমেনা বেগম দুধের গ্লাসটা টি টেবিলের উপরে রেখে ধীর চাহনিতে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বললেন।
— গ্লাসটা দিতে ভুলে গেছিলাম।
আমেনা বেগম চলে যেতে সিরাত ল’জ্জায় লাল হয়ে উঠলো যেন। ল’জ্জায় আজ তাঁর মাথা কাঁ’টা যাচ্ছে প্রায়।
কিছুক্ষণ পর সাফিন এসে দরজা আঁ’টকে দিতে সিরাত সেদিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে নিজের জায়গা থেকে উঠে পিছন থেকে সাফিনের গ’লা চে’পে ধরে মৃদু রাগ নিয়ে বলতে লাগল।
— আমাকে ছোঁয়ার একদম চেষ্টা করবেন না মিস্টার শাহনেওয়াজ সাফিন। আমাকে ছুঁবেন তো কারে’ন্ট খাবেন।
এমনিতেই ক্লা’ন্ত শরীর। তাঁর উপর এত রাতে সিরাতের পা’গলা’মি দেখে বিরক্ত হলো সাফিন। রাগ নিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
— আমাকে ছাড়ো নয়তো আই সয়ার কালকে সকালের মধ্যে তোমাকে পা’গ’লা গা’র’তে রেখে আসব৷ আর তুমিতো জানোই, শাহনেওয়াজ সাফিন কখনো কথার খেলাপ করে না…..

চলবে…….

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-১১

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ১১

কোকিলডাকা সকালের মৃদুমধুর আলো হীমেল হাওয়ার সহিত জানালা ঘেঁষে সিরাতের চোখে-মুখে এসে ছেঁয়ে পরাতে হাই তুলে পিটপিট করে তাকাল সিরাত। অস্পষ্ট ঝাপসা চোখে অচেনা রুমে নিজেকে আবিষ্কার করতে পেরে দ্রুত উঠে বসলো সে। গায়ে জড়িয়ে থাকা পাতল কাঁথাটা সরিয়ে পুরো রুমটাতে চোখ বোলা’ল সে। রুমটা যে কোনো নিখুঁত হাতের স্পর্শে খুব যত্ন সহকারে প্রচুর সময় নিয়ে গুজিয়েছে সেটা বুঝতে পারছে খুব সিরাত।
হুট করে বাম পাশের ওয়াশরুম থেকে টাওয়াল পরে ভেজা শরীরে সাফিন মৃদুস্বরে গান গাইতে-গাইতে বের হলে সিরাত সেদিকে চোখ বড়-বড় করে তাকাল৷ সাফিনের জিম করা বডির উপরে পানির আলতো স্পর্শ করে ঝরে যাওয়াটা চোখে পরাতে শরীরের ভিতরে ভয় জেঁকে বসলো সিরাতের। মাথা ঘোরপাক খেয়ে গেলে মনে পরলো যে কালকেই তো এই বজ্জা’ত লোকটার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে তাঁর। হুট করেই নিজের দিকে ভয়ের সহিত এক নজর পরখ করে সব ঠিকঠাক দেখে চোখ গরম করে তাকাল সাফিনের দিকে ।
—এর কি ল’জ্জা নেই নাকি! একটা মেয়ের সামনে কেউ এভাবে আসে?(মনে-মনে কথাটা বলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সাফিনের দিকে।)
সাফিন সিরাতকে খেয়াল না করে আলমারি থেকে কালো রাঙা শার্ট প্যান্ট বের করে ড্রেসিং টেবিলের পাশে তাকের উপর রেখে গান আওরাতে-আওরাতে টাওয়ালটা খুলতে নিতে সিরাত রাগে চোখ মুখ খিঁ’চে বিরক্তি নিয়ে বিছানার উপর থেকে সাদারাঙা বালিসটা সাফিনের গাঁয়ে ছু’রে মারতে নিতে মিরর থেকে ব্যাপারটা লক্ষ করে সাফিন টাওয়াল সামলে নিয়ে বালিসটা ক্যাঁ’চ করে নিল দ্রুত।
—শ’য়’তা’ন বে’ডা, একটা মেয়ের সামনে কেউ এভাবে আসে? ল’জ্জা নেই নাকি! খ’বি’শ লোক একটা৷
সাফিন সিরাতের দিকে খানিক স্টাচু হয়ে তাকিয়ে হেসে উঠতে সাফিনের হাসি দেখে সিরাত রাগে ফুঁ’সতে থাকলো। বিছানা ছেড়ে উঠে সাফিনের দিকে এগিয়ে আসতে-আসতে বলতে থাকলো।
—আপনাকে তো আমি আজ মজা দেখিয়েই ছাড়ব।
সাফিন সিরাতরকে চোখ মেরে সিরাতের বেখেয়ালে একটা পা তাঁর দিকে বাড়িয়ে দিতে সিরাত উ’ষ্ঠা খেয়ে পরে যাওয়ার আগে সাফিনই আবার সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে নিল সিরাতকে।
সিরাত রাগে সাফিনের দিকে তাকাতে সাফিন হেসে উঠলো। দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে বললো।
—আগে নিজেকেতো সামলাও বেব্বি। হাহাহা।
সিরাত মুখ বাঁকা করে সাফিনকে ঠেলে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচলটা কোমরে গুঁ’জে রাগের কন্ঠে বললো।
—আপনি পা দিয়েছেন কেন? ব’জ্জা’ত লোক একটা৷ কোনো মেয়ের সামনে এভাবে কেউ আসে৷ তাও আবার সিরাতের সামনেই আসতে হলো আপনার!
— বাহরে, বউ আমার বলে কি! বরের মুখতো এখন থেকে ২৪ ঘন্টাই দেখতে হবে তোমাকে। সে তুমি চাও আর না চাও।
সাফিন মিটমিট করে হেসে টাওয়ালটা খুলে সিরাতের দিকে ছুঁড়ে দিলে ক্যাঁ’চ করে নিল সিরাত৷ রাগে চোখ বন্ধ করে নিল সঙ্গে- সঙ্গে। দাঁতে দাঁত চে’পে বললো।
—ছিহ,
—কি ছিহ!
সিরাত এক চোখ খুলে পিটপিট করে তাকিয়ে সাফিনকে হাফ ট্যাউজার পরা দেখে নিজের জিহ্বায় নিজে কাঁ’মর কা’টাতে সাফিন হেয়ারড্রয়ার দিয়ে চুল শোকাতে-শোকাতে বললো।
— নেও সব দেখে নিয়েছো বরের। এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো৷
সিরাত কিছু বলতে যাওয়ার আগেই সাফিন কালোরঙা শার্টটা পরে বোতাম আঁ’টকাতে- আঁ’টকাতে সিরাতের দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বললো।
—পাঁচ মিনিটের ভিতরে যদি ফ্রেশ হতে না গেছো সিরাত, তো আই সয়ার এক্ষুনি সব কিছু খুলে নেব তোমার সামনেই। সিরাতকে রাগানোর জন্যই কথাটা বলেছে সাফিন৷ আর সিরাতও রাগে ফুঁ’সতে-ফুঁ’সতে ফ্রেশ হতে চলে গেলে হাসিতে গ’ড়া>গ’ড়ি খেল সাফিন। হাসির কন্ঠে বললো।
— আলমারিতে শাড়ি রাখা আছে পরে নিও। রাতেতো জ্বরে কাঁ’পছিলে তুমি। প্রথম রাতেই আমার বউ ভয়ে হুহু কাঁ’পা>কাঁ’পি করে অ’জ্ঞান। মাই ব্যা’ড লাক৷ যাইহোক, আমি নিচে যাচ্ছি দ্রুত এসো নয়তো আম্মাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
—ভালো হবে না বলে রাখলাম আপনার। বজ্জা’ত লোক একটা। কোনো ল’জ্জা শর’ম বলতে কিছুই নেই! আল্লাহ জানেন কোন পা’গলের খ’প্পরে পরেছি আমি।
—উফ সিরাত শাহনেওয়াজ সাফিনের কপালেই আছো তুমি। বাই দ্য ওয়ে বিছানার উপরে একটা জিনিস রেখে যাচ্ছি দেখে নিও সব ঠিকঠাক আছে কিনা।
সিরাত রাগে ফুঁ’সতে-ফুঁস’তে বললো।
—আমি কোনো জিনিস-ফিনিস দেখতে পারব না। আপনি যখন বলেছেন এখন তো আরও দেখব না।
সাফিন কালো রাঙা ঘড়িটা হাতে পরে নিয়ে মৃদু হেসে বললো।
—তোমার খুশি, আচ্ছা আমি নিচে যাচ্ছি। দশ মিনিটের ভিতরে তোমাকেও নিচে দেখতে চাই।
—বয়েই গেল সিরাতের। (মনে-মনে কথাটা বলে ঝর্নাটা ছেড়ে দিতে তাঁর ঝড়ে যাওয়া রিমঝিমে উ’ষ্ণতা শরীর ছুঁয়িয়ে গেলে হাঁটু ভা’জ করে দুই হাত দিয়ে শাড়ি খিঁ’চে চোখ বন্ধ করলো সিরাত। চোখের সামনে তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া একের পর এক অনিশ্চিত ঘটনাগুলো ভেসে উঠতে থাকলে আপনা-আপনি চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরতে থাকলো সিরাতের।
—আমিই হয়তো কোনো আনলাকি পারসোন,যার নিজের বলতে শুধু নামটা ছাড়া আর কিছুই নেই। এ বাড়ির সবাই কত ভালো। শুধু ওই লোকটা ছাড়া৷ কিন্তু কি অদ্ভুত, এটাও একটা কনট্রাক্ট। যার ইতি ঘটে যাবে এক বছর পরে।
“শাওয়ার নিয়ে বের হলে আমেনা বেগমকে দেখে মৃদু হাসলো সিরাত। ”
—আরে আম্মাজান কি সুন্দরটাই না লাগতাছে তোরে। সিরাত হাসলো। বললো।
— অতটাও সুন্দর নই আম্মা। আপনি সুন্দর আমার থেকে বেশি।
আমেনা বেগম হেসে সিরাতের হাত ধরে তাঁকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে চুল শুকিয়ে দিতে থাকলে সিরাত আমেনা বেগমের হাত ধরে বাঁধ সাধলো।
—কি করছেন আম্মা, আমি করছি আপনি বসুন এখানে। সিরাত উঠতে নিতে আমেনা বেগম চোখ রাঙালেন। বললেন।
—চুপচাপ বোস তুই এখানে। মায়ের কাছে আবার জড়তা কিসের মেয়ে হুম! আমি করছি তো আমাকেই করতে দে। ওইসব পার্লার- টার্লার দিয়ে লোক আনিনি আমি। তোর বাপতো বলতে ছিল আমাকে,কিন্তু আমার মেয়ে আমি নিজে হাতে সাজাব। কথাটা বলেই হাত দিয়ে সিরাতের গালে চুমু খেলেন আমেনা বেগম।
সিরাত হাসলো। চোখটা কেমন ছলছল করে উঠতে চাইছে তাঁর। মায়ের ভালোবাসা কখনো পায়নি সিরাত। দেখেইনি তাঁর মাকে কখনো৷ যখন স্কুলে যেত তখন সব মায়েদের দেখত তাঁদের ছেলে-মেয়েদের আদর করতে। আফসোস হত সিরাতের।
—ইস আমার মা বেঁচে থাকলে হয়তো আমাকে এমনটাই আদর করতেন।
চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরাতে আমেনা বেগম ব্যাপারটা খেয়াল করে সিরাতকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে শীতল হাতে সিরাতের চোখের পানি মুছে দিলেন। ধীর কন্ঠে বললেন।
—এই মাইয়া,কি হয়েছে রে তোর? কান্না করোছ কেন? সাফিন কিছু বলেছে নাকি তোকে? একবার শুধু বল ওরে আমি….
পুরো কথাটা শেষ হওয়ার আগেই সিরাত আমেনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলে আমেনা বেগম পুরো থ’ত’ম’ত খেয়ে গেলেন।
সিরাতের মাথায় হাত বু’লি’য়ে দিতে-দিতে শান্ত স্বরে বললেন।
—কি হয়েছে বলতো মায়ের কাছে?
—কিছু না আম্মা। তোহার পরে এক আপনিই আমাকে এভাবে যত্ন করছেন। আমার খেয়াল করছেন তো, তাই নিজেকে আজকে খুব সুখী মনে হচ্ছে জানেন।
আমেনা বেগম চোখের পানি আড়াল করে সিরাতের মাথায় বিলি কে’টে দিয়ে বললেন।
— আজ থেকে সব গোপন কথা এই আম্মার কাছে বলবি কেমন। আমার ছেলেটা খুব ভালো জানিসতো। বড্ড রাগি,তবে হ্যা, অভিমানি প্রচুর। ওকে নিজের করে গুছিয়ে নিবি বুঝলি। আমি ওর চোখে তোর জন্য ভালোবাসা দেখেছি। আমার বিশ্বাস ও তোকে ক’ষ্ট দেবে না কখনো৷ ওকে একমাএ তুইই পারলে পারবি রাজনীতি থেকে সরিয়ে আনতে। জানিসতো ভয় হয় খুব ওকে নিয়ে, কখন কি হয়ে গেল ওর। একদম আঁচলের সাথে বেঁধে রাখবি ওকে বুঝলি।
মিয়িয়ে গেল সিরাত।
—আপনার ছেলে আমাকে ভালোবাসেননা আম্মা। এটা শুধুই একটা কনট্রাক্ট। যার সীমানা পেড়িয়ে গেলে এই সিরাত নিজেই হারিয়ে যাবে এ বাড়ি থেকে। (মনে-মনে কথাটা বলতে থাকলে আমেনা বেগম সিরাতের কপালে চুমু খেয়ে গালে হাত রেখে বললেন৷)
—আজকে থেকে এই সংসার তোর কিন্তু। আমি এখন আর এই সংসারের হাল ধরে রাখতে পারব না।
মৃদু হাসলো সিরাত। বললো।
— উহুম আম্মা, সেটি হচ্ছে না৷ এই সংসার আপনার ছিল আপনারই থাকবে। তবে হ্যা আমিও আছি আপনার পাশে।
আমেনা বেগম সিরাতের মাথায় হাত রেখে প্রশান্তির হাসি হেসে বললেন।
—আচ্ছা নিচে আস আমি যাচ্ছি এখন। তোর বাপ দাদা মিলে নিচে কি কান্ড করছে আল্লাহ জানেন। সেই সক্কাল-সক্কাল ফুলের অর্ডার গরু কিনেছে ডেকোরেশনের লোককে ফোন করেছে। পুরো পা’গল বুঝলি। এককাপ চা করে সামনে নিয়ে যাবি, দেখবি তোকে ছাড়া আর কিছু বুঝবে না। (হাসলো সিরাত।)
আমেনা বেগম চলে যেতে ধীর চাহনিতে সেদিকে তাকিয়ে বিছানার উপর চোখ যেতে নিজের ব্যাগটা দেখে খুশিতে লুফে নিল ব্যাকটা। উত্তেজ’নার সহিত ব্যাগটা খুলে নিজের মায়ের রেখে যাওয়া শেষ সৃতিটুকু বুকে জড়িয়ে রাখলো সিরাত। (মনে-মনে বললো)
— দেখো মা৷ এখানে সবাই কত ভালো। তুমি দেখো যে কদিন এখানে আছি, আমি যাতে আম্মার কথার মান রাখতে পারি।
.
—নানু বিয়েতো করে নিলাম এবার আমার রাজবাড়ী আমাকে দিয়ে দেও।
আজাদ সাহেব হাসলেন। চায়ে চুমুক দিতে-দিতে সাফিনের কাঁধে হাত রেখে বললেন।
—তোর নানু কখনো কথার খেলাপ করে না বুঝলি সাফিন। ঠিক সময়মতো পেয়ে যাবি তুই। সরোয়ারকে বলেছি রাজবাড়ী পুরোটা নতুন করে রাঙিয়ে তুলতে। আমার নাতিবউ যখন নতুন রাজবাড়ীটাওতো নতুন হওয়া চাই।
সাফিন হেসে ডাইনিং টেবিলে চেয়ার টেনে বসে পরলে মোস্তফা সাহেব বাহির থেকে কপালের ঘাম মুছতে-মুছতে ভিতরে আসলেন৷ পিছনে থাকা জুবায়েরের উদ্দেশ্যে বললেন।
—জুবায়ের গাড়ি থেকে সব মিষ্টির প্যাকেটগুলো এই জায়গাটায় রাখবে৷ ডেকোরেশনের লোক এক্ষুনি চলে আসবে। গেটের সামনের ঝাড়বাতিগুলো সরিয়েছো তো? ওখানটাতে নতুন ঝাড়বাতি লাগানোর ব্যাবস্থা করো।
—জ্বি স্যার, সবাইকে ইনভাইট করতে পাঠিয়ে দিয়েছি হেলালকে৷ ওয়াসম্যান গুলো খাবারের দিকটা সামলাবে। সিঁড়ির দিকটাতে ফুল দিয়ে সাজাব তাইতো?
—হ্যা,হ্যা সবকিছু যেন নিখুঁত ভাবে হয়। ইনভাইটেশনের কার্ডাটা কিন্তু চকচকে হওয়া চাই। শাহনেওয়াজ সাফিনের বিয়ের পার্টি বলে কথা।
আমেনা বেগম ডাইনিং টেবিলের উপর গরম-গরম খিচুড়ি আর মাং’সের প্লেটগুলো সাজিয়ে দিতে-দিতে বললেন।
— হয়েছে-হয়েছে এবার বসো তুমি। কার্ড আমি সিলেক্ট করে দিয়েছি বুঝলে। যেমন তেমন কার্ড না।
আমেনা বেগমের কথা শুনে মোস্তফা সাহেব তাঁর দিকে ধীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে হেসে বললেন।
—হয়ে গেল।
—কি হয়ে গেল?
আমেনা বেগম তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালে মোস্তফা সাহেব বাঁকা হাসি হেসে ডাইনিং এর চেয়ার টেনে বসলেন। বললেন।
—আরে কিছু না।
—বেশি-বেশি। আমেনা বেগম মুখ ঝা’মটা মারতে সাফিন হেসে উঠলে মোস্তফা সাহেব সাফিনের দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বললেন।
— হিহি, বেশি হাসিস না সাফিন বুঝলি। তোরও সময় আসতে বেশি দেরি লাগবে না। তখন আমিও হাসব। বলে রাখলাম।
প্লেট থেকে এক চামিচ খিচুড়ি খেতে-খেতে সাফিন হেসে বললো।
— আমার বউ আমাকে কিচ্ছুই বলতে পারবে না ড্যাড। তাঁর আগেই চুমু খেয়ে মুডটা অন্য দিকে নিয়ে যাব বুঝলে।
মোস্তফা সাহেব কেশে উঠলে পানি খেতে থাকলে জুবায়ের মোস্তফা সাহেবের মাথায় ঝাঁ’কি দিতে থাকলে আজাদ সাহেব বললেন।
— তোরা জীবনে ভালো হইতি না মোস্তফা।
তোর ছেলে তোর আরও একঘাটি উপরেই চলে।
সাফিন হাসলে আমেনা বেগম সাফিনের প্লেটে মাং’স দিতে-দিতে সাফিনের কানটা টেনে ধরে বললেন।
— বড্ড পেকে গেছিস তাইনা। যেমন বাপ তাঁর তেমন ছেলে। চুপচাপ খা এখন, নয়তো এই বয়সে এসেও আমার হাতে মার খাবি।
সাফিন হেসে উঠলো। বললো।
— আম্মা আমার বউ এখনও উপরে কি করে? তোমাকে পাঠালাম নিয়ে আসতে আর তুমি নিজেই গল্প করে চলে আসলে। ইট’স নট ফেয়ার হুম।
আমেনা বেগম হাসলেন। বাটিতে করে মিষ্টি ঢেলে প্লেটটা নিয়ে সাফিনের পাশে রাখতে-রাখতে সাফিনের কানটা টেনে দিয়ে বললেন।
—ওরে পাঁ’জি ছেলে। আমার মেয়ে যাই করুক ওকে কিচ্ছু বললে তোর সেদিন খবর আছে।
সাফিন চামিচ দিয়ে একটা মিষ্টি ওঠাতে নিতে আজাদ সাহেবও চামিচ এগিয়ে দিলে সাফিন খপ করে হাতটা ধরে নিয়ে আমেনা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো।
—বাহরে,এখন মেয়েই সব হয়ে গেল? ছেলে এখন কেউ না। ভালো,ভালো, আমিও দেখব।
আমেনা বেগম হাসলেন।
—আরে একটা তো নিতে দে সাফিন।
সাফিন আজাদ সাহেবের দিকে রাগ নিয়ে তাকিয়ে আমেনা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো।
—আম্মা সুগার ছাড়া মিষ্টি দেওতো নানুকে ফ্রিজে আছে।
আজাদ সাহেব হ’তা’শ হওয়ার সহিত সাফিনের দিকে তাকিয়ে বললেন।
—তুইই খা ওই করলা মিষ্টি। শান্তি নাই একটু আমার। আমাকে নিয়ে কেউ ভাবে না।
—আহা সোনা, এত ক’ষ্ট রাখি কোথায় গাবলা পাতব আমি।
—একটা কানে খাবি সাফিন। নানুর সাথে মসকরা করিস।
আমেনা বেগমের কথা শুনে আজাদ সাহেব হাসলেন। বললেন।
—আহ আমেনা, আমরা তো মজা করি তাইনা সাফিন।
সাফিন হাসলে আমেনা বেগম আজাদ সাহেবের সামনে স্যুপের বাটিটা রাখতে আজাদ সাহেব চোখমুখ কুঁচ’কে ফেললেন। বললেন।
—জীবনটাই বেদনার হয়ে গেল এই স্যুপ খেতে-খেতে।
—আব্বা আজকে সন্ধ্যায় যা খাওয়ার খেও পার্টিতে। ডক্টররাও আসবে সো নো প্রবলেম।
মোস্তফা সাহেবের কথাটা শুনে আজাদ সাহেব খুশিতে গ’দ>গ’দ হয়ে গেলে সাফিন দাঁত কে’লি’য়ে বলে উঠলো।
—হাহা, খুশি হওয়ার রিজন নেই বুঝলে নানু, আমি থাকতে সেটা হতে দেব না। সে ড্যাড যতই পার্মিশন দেননা কেন?
—শা’লা শ’য়’তা’ন।
হেসে উঠলো সাফিন।
.
গোলাপ- রজনীগন্ধা দিয়ে সজ্জিত বাড়িটার দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে হেসে উঠলো সিরাত।
ধীর পায়ে নিচে নামতে আমেনা বেগম সিরাতের হাত ধরে নিয়ে এসে সাফিনের পাশে বসিয়ে দিলে আর চোখে সাফিনের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙা’লো সিরাত।
—উম আইসে, বিশ্ব ব্রিটিশ। আল্লাহ জানে এক বছর কবে শেষ হবে আর এই খ’বিশের থেকে মু’ক্তি পাব। (মনে-মনে কথাটা বলে শেষ করার আগেই সাফিন বলে উঠলো।)
—আম্মা আমার বউকে নিয়ে বের হব একটু। পার্টিতো সেই সন্ধ্যায়,তাঁর আগেই চলে আসবনে আমরা।
—কেন রে কই যাবি?
আজাদ সাহেবের কথা শুনে মোস্তফা সাহেব কেশে উঠলেন। ধীর চাহনিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন।
—আব্বা,নয়া-নয়া বুঝেন না। এগুলোও এই বয়সে বুঝিয়ে দিতে হবে আমার।
সিরাত ল’জ্জায় চোখ নিচু করে ফেললে আমেনা বেগম সিরাতের দিকে তাকিয়ে হাসলেন। বললেন।
—খাওয়ার সময় কথা কম বলো এখন। আম্মাজান খিচুড়ি দেই।
সিরাত আমেনা বেগমের দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে বললো।
—আপনার সঙ্গে একসাথে খাব আনে আম্মা। তাঁরা খেয়ে নিক আগে।
আমেনা বেগম হাসলেন। কিছু বলার আগেই সাফিন বলে উঠলো।
—তাঁরাতাড়ি খাও আমার সঙ্গে যেতে হবে তোমাকে।
সিরাত রাগ নিয়ে তাকালে সাফিন তাঁকে পাত্তা না দিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো।
— আজকে আশ্রমে জামা-কাপড়টা নাহয় আমরা দিয়ে আসি।
সরোয়ার সাহেব উপর থেকে শার্টের হাতা ভাজ করতে-করতে নিচে নামলেন। বললেন।
—ওয়াহ,নাইস। বাড়িটা তো পুরো আনন্দে ভরে উঠেছে দেখছি। তবে সাফিন ভালো বলেছো কিন্তু। আশ্রমে জামা-কাপড়ের দ্বায়িত্বটা নাহয় আজকে তুমি আর নতুন বৌ মিলে নাও।আলাদা সময়ও পাবে দুজনে, ঘোড়াও হবে।
— উফ চাচ্ছু, এইজন্য তোমাকে এত্ত ভালোবাসি।
সাফিনোর দিকে হেসে চোখ মারলেন সরোয়ার সাহেব।
.
— এতটা বে’শর’ম হওয়ার কি খুব দরকার ছিল আপনার? সবার সামনে থেকে কোলে করে নিয়ে আসলেন আমাকে! আমি যাবনা আপনার সাথে।
সিরাতের কথার উত্তর না দিয়ে সিরাতকে পাঁ’জা কোলা করে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে দরজা লক করে দিল সাফিন।নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে ধীর চাহনিতে বাঁকা হাসি হেসে সিরাতের দিকে তাকাতে নিতে সিরাত রাগে চোখ গরম করে সাফিনের দিকে তাকালো। বললো।
—আপনি একটা যাচ্ছে তাই।
—উফ সিরাত, এত রেগে যেওনা তো বেব্বি। এখন কিন্তু আমি আর চুপ থাকব না। আর একটা বারতি কথা বললে সোজা বাসর করে নেব। আফটারঅল তোমার একমাএ হাসবেন্ড কিনা। উম্মাহ।
সাফিন চোখ মারলে বিরক্ত হলো সিরাত। চোখ মুখ খিঁ’চে সাফিনের দিকে এগিয়ে আসতে নিলে সাফিন মৃদু হেসে সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে সিরাতকে কাছে টেনে এনে সিরাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো।
— তোমার এই রাগনা,যেটা তুমি দেখাও আমাকে? এতে শাহনেওয়াজ সাফিনের কিছুই যায় আসে না বুঝলে সিরাত? সিরাত রাগে ফুঁ’সতে থাকলে সাফিন গাড়ির পিছনে থাকা ফাইলটা থেকে একটা কাগজ বের করে সিরাতের দিকে তাক করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—সাইনটা করে দেও সিরাত।
—কি এটা?
সাফিন হাসলো। বললো।
—নিজেই দেখে নেও বেবস।
বিরক্ত হলো সিরাত। কাগজটা হাতে নিতে সাফিন বলতে থাকলো।
— এই এক বছর কোনো ছেলের আশেপাশেও ঘেঁ’ষা যাবে না। ডান্স করাতো দূরে থাক। আমাকে সেবাযত্ন করতে হবে। আমি যা বলব সেগুলো শুনতে হবে। আমাকে নিয়ে সারাক্ষণ ভাবতে হবে। আর নানুকে ভালোবাসতে হবে। ধরে নেও নানুর জন্য এসব কিছু করা, নানু যতদিন আছে ঠিক ততদিনই তোমার অস্তিত্ব থাকবে আমার কাছে তাঁরপর থেকে তুমি মুক্তি। ব্যাস, এটাই। কনট্রাক্ট পেপারে সাইনটা করে দেও এখন।
সিরাত ধীর চাহনিতে পেপারটার দিকে তাকালো শুধু। রাগ হচ্ছে প্রচুর সিরাতের। দাঁতে দাঁত চে’পে বললো।
—আপনাকে নিয়ে ভাবব মানে! আপনার মতো খ’বি’শ, ডে’ভিল লোককে নিয়ে ভাবার থেকে ম’রে যাওয়াও ঠের ভালো।
সিরাতের কন্ঠের রেশ শুনে রাগে সাফিন গাড়ির ড্রয়ার থেকে বন্দুকটা বের করে সিরাতের শারির আঁচল ভেদ করে কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে বন্দুকটা পেটের কাছে ধরে দাঁতে দাঁত চে’পে রাগের কন্ঠে বললো।
— তাহলে ম’রেই যাও তুমি। ভালো হবে না বলো? কি জানো তো সিরাত, আমি চাই না তোমাকে হার্ট করতে বাট তুমি বাধ্য করো আমাকে। আমি যেমন ভালো বাসতেও পারি ঠিক তেমন প্রয়োজনে ভয়ঙ্ক’রও হতে পারি।
ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিল সিরাত। গলা শুঁকিয়ে আসছে তাঁর। কয়েকটা ঢোক গি’লে কাঁ’পা>কাঁ>পা স্বরে বললো।
— ভালোবাসা শব্দটা আপনার মুখে বেমানান লাগছে মিস্টার শাহনেওয়াজ সাফিন। আপনি শুধু মানুষকে ক’ষ্ট দিতেই জানেন। ভালোবাসা এমনটা হয় না। তাঁর ভিতরটা প্রবল গাঢ় হয়। একরাশ বৃষ্টিতে ছেয়ে যায় শহরে। তাঁর তীব্রতা আপনার ভাবনার বাহিরে। আর আমরা তো মাএ এক বছরের কনট্রান্ট মাএ। তাই নয় কি?
সিরাতের বন্ধ চোখদ্বয়ের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলে সাফিন হাতটা মুঠ করে রাগে সিরাতকে ছুঁ’ড়ে ফেলে দিতে গাড়ির সাথে ধা’ক্কা খেল সিরাত।
—আম্মা আপনার ছেলে অভিমানী নয় ঠিক। রাগি এবং দাম্ভিক একজন মানুষ। যে কিনা নিজের আয়না নিজেই সঠিক জানেননা। (মনে-মনে কথাটা বলে ধীর চাহনিতে বাহিরে দৃষ্টিপাত করলে সাফিন হাই স্পিডে গাড়ি স্টার্ট দিতে হিমেল হাওয়ায় তাঁর শরীরে স্পর্শ করে গেল যেন। সিরাত বেশ বুঝতে পারছে সাফিন রেগে গিয়েই এমনটা করছে। তবুও চুপ রইলো সে৷)
.
— সাফিন ওর বউকে নিয়ে আশ্রমে গিয়েছে। ওখানেই ওর লা’স ফেলে দেও। এই সুযোগ পরে আর আসবে না। মেয়েটাকেও উড়িয়ে দেও পারলে।
মুশোখ পরা লোকটা পিছুফিরে দাঁড়ালে উল্টো দিকের মানষটা খাকিনটা হাসার চেষ্টা করে বললো।
— জ্বী সাহেব। কিন্তু এবারও কি আমি যাব? না মানে আগেরবার তুহিন ছিল ও দেখেছে। আমি পালাতে গিয়ে যে পায়ে ব্যা’থা পেয়েছি এখনও সারেনি।
লোকটা বিরক্ত হলো প্রচুর। রাগান্বিত কন্ঠে বললো।
— কালকের কথা নিমিষেই ভু’লে বসে আছো দেখছি! হয় সাফিনকে সরাবে নয়তো নিজে সরে যাবে। হিসাব বরাবর। কোনটাতে খুশি হবে সেটা তুমি ভালো বলতে পারবে।
পিছনে থাকা লোকটা ভয়ে ঢোক গি’লে দ্রুত বলে উঠলো।
— না সাহেব দেখছি আমি। আজকেই সরিয়ে দিচ্ছি সাফিনকে আর ওর বউকে।
—সোজা কথায় কথা না শুনলে আঙুলটা বাঁকাতে হয়। আর বাঁকা কথাটাই তুমি বোধহয় ভালো বুঝো। তাইনা?
অন্ধকারের লোকটা মিলিয়ে গেলে ভয়ে হাত-পা কাঁপতে থাকলো লোকটার।
.
তটিণীর বুকে আজ কালো আভাসে ছেঁয়ে আছে। কখন দেখা গেল কালো মেঘের কোল ঘেঁষে ঝুম বর্ষনে বর্ষিত হবে শহরে। মেঘেদের আপনমনে ভেসে চলার গতি দ্রুত থেকে দ্রুততম হতে থাকলে গুড়ুম- গুড়ুম করে গর্জ’নপাত শুরু হলো শহরজুড়ে।
আশ্রমের গেটের সামনে গাড়ি থামিয়ে দিলে পিছনে এক গাড়িতে করে জুবায়ের জামা-কাপড়গুলো এক-এক করে গুনে গার্ডদের সাথে হাতে হাত লাগিয়ে ভিতরে নিয়ে গেলে গাড়ি থেকে নেমে পরলো সাফিন।
সিরাতের জন্য দরজা খুলে দাঁড়াতে সিরাত এক নজর কালো রাঙামেঘে ছেঁয়ে যাওয়া দিগন্তের দিকে তাকিয়ে সাফিনের দিকে তাকাল। ধীর পায়ে গাড়ি থেকে নামলে হিমশীতল বাতাসে কেঁ’পে উঠলো তাঁর সমস্ত শরীর। সাফিন আর তাঁর দিকে তাকাল না। রাগ লাগছে প্রচুর সাফিনের।
আশ্রমের ভিতরে ঢুকলে বাচ্চারা দৌড়ে এসে সাফিনকে জড়িয়ে ধরতে সিরাত চোখ বড়-বড় করে ধীর চাহনিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকলে জুবয়ের জামা-কাপড়ের প্যাকেটগুলো এক-এক করে সাজিয়ে টেবিলের উপর রাখলো। সিরাতের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো।
— স্যার এ রকমই। খুব ভালো একজন মানুষ। সবার কথা ভাবেন তিনি। বাহিরে রুড দেখালেও ভিতরটা কিন্তু নরম ম্যাম। আপনি খুব ভাগ্যবতী।
জুবায়েরের কথা শুনে তাঁর দিকে ধীর চাহনিতে তাকালো সিরাত।
— আমি ঠিক যতবারই আপনাকে নিয়ে ভাবতে যাইনা সাফিন? কেমন যেন সবকিছু গু’লিয়ে যায়৷ আপনার এই টরচার, যেটা আমাকে করেন প্রতিনিয়ত, এটা সত্যি ভাবব নাকি আম্মা আর জুবায়ের যেগুলো এক্সপ্লেইন করছে আমাকে এগুলো? (কথাগুলো মনে-মনে বললেও প্রকাশ্যে সিরাত কিছুই বলতে পারলো না সাফিনকে।)
.
ঝমঝমিয়ে মুশল ধারে বৃষ্টি এসে সমস্ত শহর ভিজিয়ে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরলে বাচ্চাদের সাথে অনেকটা সময় কাটিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য নেমে পরলো সাফিন। সিরাতের দিকে তাকালোও না পর্যন্ত। মৃদু হাসলো সিরাত। হিমেল হাওয়ায় সিরাতের লালরাঙা শাড়ির আঁচল বেঘোরে উড়ে বেড়াচ্ছে। জুবায়ের ধীর কন্ঠে সিরাতের উদ্দেশ্যে বললো।
—ম্যাম আপনি চলুন আমি ছাতা ধরছি।
সিরাত শুঁকনো হাসি হেসে পা বাড়ালো সাফিনের দিকে।
“ড্রাইভিং সিটে সাফিনকে বসে থাকতে দেখে বুকটা কেঁ’পে উঠলো সিরাতের। হুট করে শাফিনের কথা না বলাটা কেন জানিনা তাঁকে খুব পো’ড়াচ্ছে।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গাড়িতে উঠে বসলে জুবায়েরও নিজের গাড়িতে বসে পরলো।
সাফিন গাড়ি স্টার্ট দিতে আমেনা বেগম ফোন দিতে কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে অন করে ড্রাইভ করতে-করতে বললো।
— হ্যা আম্মা বলো কি বলবে?
— আরে তোরা আসবি কখন। সন্ধ্যা হয়ে গেলে আসবি নাকি?
সাফিন মৃদু হেসে বললো।
— আসছি।
—হ তারাতাড়ি আস। গেস্টরা এসে পরছে আর যাদের জন্য এতকিছু তারাই নেই।
সাফিন ঠোঁট কাঁ’ম’রে ধরে ফোনটা কে’টে দিল।
ক্লা’ন্ত শরীরে গাড়ির সাথে মাথা এলিয়ে দিল সিরাত। চোখ বন্ধ করে ফেললে হুট করে গাড়িটা এলোমেলো ভাবে চলতে শুরু করলে সাফিন ভ’রকে গেল। দ্রুত ব্রেক করতে গিয়েও যখন দেখলো ব্রেক করছে না তখন গাড়ির দরজা খুলে সিরাতকে ধা’ক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে বের করলে সিরাত আকষ্মিক ঘটনায় পুরো চমকে গেল। চলন্ত গাড়ি থেকে রাস্তায় গড়ি’য়ে পরাতে প্রচন্ড পরিমানে আ’ঘাতও পেয়েছে সে৷ কিন্তু এখন ওসব কিছু মাথায় না নিয়ে মুশলধারা বৃষ্টির মধ্যেই সাফিনের গাড়ির দিকে তাকিয়ে ভয়ে দৌঁড় লাগাল গাড়ির পিছু-পিছু। সিরাতের পায়ের মোটা নুপুরের ঝম-ঝম আওয়াজ বৃষ্টির রিমঝিমে শব্দের সঙ্গে মিলে সাফিনের কানের কাছে যেন বা’রি খেয়ে গেল। মাথা কাজ করতে চাইছে না তাঁর। বেশ বুঝতে পারছে গাড়িটা কেউ ইচ্ছে করেই ব্রেক ফেল করে রেখেছে। কিছুক্ষণ পরে গাড়িটা একটা গাছের সাথে ধা’ক্কা খেতে সিরাত ভয়ে চিৎ’কার করে চোখ বন্ধ করে নিল। চোখ বেয়ে অজস্র নোনাজল গড়িয়ে পরলে কাঁ’পা-কাঁ’পা পায়ে সামনে এগিয়ে গেলে গাড়ির দরজা খুলে সাফিন বেড়িয়ে আসলে হুশ ফিরলো সিরাতের। একটুর জন্য প্রা’নটা উড়ে যেতে চেয়েছিল তাঁর।
পিছন থেকে জুবায়েরের গাড়িটাও মোর ঘুড়িয়ে চলে আসাতে তাঁদের এই অবস্থায় দেখে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পরলো সে। সিরাতের দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে ভয় কাটানোর জন্য বললো।
—কিচ্ছু হয়নি ম্যাম। আপনি গাড়িতে গিয়ে বসুন আমি স্যারকে দেখছি।
জুবায়ের সাফিনের দিকে এগিয়ে যেতে সাফিন মাথায় আলতো হাত রেখে চোখ খিঁ’চে সিরাতের কান্নারত মুখশ্রী দেখে মৃদু হাসলো।
সাফিন ইচ্ছে করেই গাড়িটা গাছের সাথে তাক করেছে। যাতে বের হতে পারে সে। নয়তো একবার খাদে পরে গেলে বাঁচা মুসকিল হয়ে পরতো তাঁর। মাথায় আর পিঠে ব্যা’থা পেয়েছে সে। জুবায়ের ভয়ের সহিত সাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো।
—কিভাবে হলো স্যার এমনটা? ঠিক আছেন তো আপনি? চলুন এক্ষুনি হাসপাতালে যাবেন আপনি, গাড়িতে উঠে বসুন।
সাফিন হাসলো। বললো।
— এসব ছোটখাটো বিষয়ে শাহনেওয়াজ সাফিনের কিচ্ছু হয়না বুঝলে জুবায়ের। কিন্তু কেউ যে ইচ্ছে করে ব্রেকফেল করেছে সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। ওই সু’য়ো’রটাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমার পায়ের নিচে দেখতে চাই। ও হয়তো জানেনা ও কার সাথে গুটি সাজাতে চাইছে। এর ফল আমি ওকে হারে-হারে বোঝাব। জুবায়ের,
—জ্বি স্যার?
—গাড়িটার ভিতরে কিছু ফাইল আছে নিয়ে নিও। গ্যারেজে নিয়ে যাও আমি এটা নিয়ে যাচ্ছি।
—জ্বী স্যার।
সাফিন হেসে সিরাতের দিকে আগাতে থাকলে সিরাত ধীর চাহনিতে তাঁর দিকে তাকালো। ঘন হয়ে আসা নিশ্বাসগুলো যেন দ’লা পাকিয়ে যাচ্ছে তাঁর। সাফিন সিরাতের দিকে তাকাতে বৃষ্টিভেজা পানির উষ্ণতা গুলো সিরাতের চুল বেয়ে কপাল ছেঁয়ে গিয়ে সমস্ত শরীরে ছুঁয়িয়ে দিতে থাকলে সাফিন সিরাতের লাল হয়ে ওঠা গালে হাত ছোঁয়াতে চোখদ্বয় বন্ধ করে নিল সিরাত। শিতে আর ভয়ে রীতিমতো কাঁপছে সে। সাফিন ঠোঁটের কোনে প্রশান্তির হাসি হেসে পাঁ’জাকোলা করে নিল সিরাতকে। সিরাত সাফিনের গলা জড়িয়ে ধরে চোখ খিঁচে বন্ধ করে রাখলো…

চলবে…

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-১০

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ১০

গগনের বুকে আজ একরাশ বিষন্ন মেঘে আচ্ছন্ন। বিকেলের হিমশীতল হাওয়ায় সিরাতের কানের পিছনে গুঁ’জে থাকা এলোমেলো হওয়া চুলগুলো ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে। মনটা কেমন আঁধারে তলিয়ে রয়েছে তাঁর। বুক চি’রে একরাশ দীর্ঘশ্বাস ছারলে চোখের কোনে এসে জমা হলো জমে থাকা নোনাজল।
— সাইনটা করো সিরাত।
সাফিনের শীতল কন্ঠের রেশ কানের কাছে এসে বা’রি খেয়ে গেলে সাদারাঙা কাগজটার দিকে ধীর চাহনিতে তাকাল সিরাত। এতক্ষণে জমে থাকা নোনাজলগুলো চোখ বেয়ে অনবরত ঝরে পরতে থাকলো সিরাতের৷ তোহার জন্য এটা তাকে করতেই হবে। তোহা নিজের জীবনের পরোয়া না করে তাঁকে বাঁচিয়েছে। হয়তো এই ঋন সিরাত কখনো ভু’লতে পারবে না। বোধহয় এই স্যা’করিফাই’জডটাও কম পরে যাবে তাঁরজন্য।
কাজি অপিসের কাঠের চেয়ারটাতে যেন হাত-পা অবশ হয়ে গাঁ’ট হয়ে বসে আছে সিরাত।
সামনে বসে থাকা কালো সাদা রাঙা কোর্ট পরা লোকটা কলমটা সিরাতের দিকে বাড়িয়ে দিলে সাফিন সেটা নিয়ে সিরাতের হাতে ধরিয়ে দিলে সাফিনের দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে আবার কাগজের দিকে তাকালো সিরাত৷ যেখানে বড়-বড় অক্ষরে শাহনেওয়াজ সাফিন লেখা রয়েছে।
চোখ খিঁ’চে নিজেকে শ’ক্ত করে শীতল হাতে সাফিনের নামের পরে সিদ্রাতুল সিরাত লিখে দিলে বাঁকা হাসি হাসলো সাফিন। কাগজটা হাতে নিয়ে এক নজর চোখ বু’লিয়ে পাশে থাকা জুবায়েরের উদ্দেশ্য বললো।
— জুবায়ের আমি বিয়ে করে নিয়েছি। নানুকে জানাও আর বলো রাজবাড়ী আমার নামে লিখে দিতে।
জুবায়ের একগাল হেসে বললো।
— কংগ্রাচুলেশনস স্যার। ম্যাম আপনাকেও। এক্ষুনি জানাচ্ছি আমি স্যার। সাফিন হাসলো।
সিরাত দীর্ঘক্ষণ চোখ বন্ধ রেখে নিজেকে শান্ত করে ধীর চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকালো। বললো।
— আমার টাকাটা।
মৃদু হাসলো সাফিন সিরাতের দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে সিরাতের চেয়ারটা নিজের দিকে ঘুড়িয়ে আনতে বিরক্ত হলো সিরাত। পিটপিট করে সাফিনের দিকে তাকাতে সাফিন বাঁকা হেসে শীতল হাতে সিরাতের দুই গালে হাত ছুঁয়িয়ে দিয়ে সিরাতের কপালে গাঢ় চুমু খেল। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
— তুমি এখন মিসেস শাহনেওয়াজ বুঝলে সিরাত। সে তুমি এক বছরের জন্য হও বা সারাজীবনের জন্য। তাই ব্রাক অফিসের মতো চিপ জায়গায় তোমাকে আমি যেতে দেব ভাবলে কিভাবে তুমি! জুবায়ের।
—জ্বী স্যার?
— বাড়িতে পরে জানিয়ো। আমি নিজে সবাইকে জানাব। তুমি আপাদত গাড়িতে যে লাগেজটা দেখেছো ওতে ২৫ লাখ টাকা আছে, ওটা ব্রাক অফিসে দিয়ে আসো।
—জ্বী স্যার৷
—সিরাত কাগজটা দেওতো।
শুঁকনো ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে ব্যাগ থেকে কাগজটা সাফিনের দিকে বাড়িয়ে দিতে সাফিন কাগজটা নিয়ে এক নজর পরখ করে জুবায়েরের দিকে বাড়িয়ে দিল। বললো।
— ওখান থেকে সোজা নির্বাচনে যাবে। মোহন আর হেলাল কি সামলেছে কে জানে। আমিতো থাকতে পারলাম না এবার তবে সব গুছিয়ে তো এসেছি। ড্যাড নিশ্চয়ই রেগে আছেন আমার উপর। জুবায়ের কাগজটা নিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বেড়িয়ে পরলো।
সাফিন রেজিষ্ট্রেরি পেপারটা ফাইলে ভরে সামনের লোকটার সাথে কিছুক্ষণ কুশল বিনিময় করে সিরাতের দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে বললো।
—চলো সিরাত।
ক্লান্ত মিয়িয়ে যাওয়া শরীর নিয়ে সাফিনের দিকে পিটপিট করে তাকালে সাফিন মৃদু হেসে সিরাতকে পাঁ’জাকোলা করে নিল। সিরাত অবাক হলো ঠিকই কিন্তু মুখ খুলে কিছু বলতে পারলো না। ক্লান্তিতে সমস্ত শরীর যেন থ’ম মেরে গেছে তাঁর। সাফিনের বুকের সাথে লে’প্টে গিয়ে চোখ বুজতে সাফিন সিরাতের মা’য়াময় চেহারার দিকে এক নজর তাকিয়ে দরজা ঠেলে বেড়িয়ে পরলো।
.
গাড়ির দরজাটা খুলে সিরাতকে বসিয়ে দিলে সিরাত নিস্তে’জ হয়ে পরে রইলো সিটের সঙ্গে।
সাফিন ধীর চাহনিতে সেদিকে তাকালো। বুকটা কেমন মু’চরে উঠলো তাঁর।
— তোমাকে এভাবে মানাচ্ছে না সোনা! তোমার চঞ্চলতা না দেখা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না আমি।
(মনে-মনে কথাটা বলে সিরাতের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে পরলো সাফিন।)
“গগনের লালছে হয়ে যাওয়া দৃশ্যটা যেন সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বাভাস জানিয়ে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে।” সো-সো শব্দ করে বাতাস বয়ে গেলে সিরাতের সমস্ত শরীরে যেন কাঁ’পুনি ধরিয়ে দিচ্ছে। গাড়ির কাঁচ ভেদ করে লালচে রাঙা আকাশে পাখিদের নিজেদের নীরে ফিরে যাওয়ার ব্যাকুলতা দেখতে থাকলো সে।
ড্রাইভিং করার পাশাপাশি আর চোখে সিরাতের শুঁকনো চেহারাটা দেখে সাফিন বললো।
—শা’ক’চু’ন্নি হাসপাতালে যাবা নাকি তোহার কাছে?
সিরাত ধীর চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকালো। মৃদুস্বরে বললো।
— হুম৷ আচ্ছা আমি আপনার সাথে চলে গেলে তোহাকে কে দেখবে? ওতো একা হয়ে যাবে তাইনা?
— ওরে আমার বউ, তোমাকে এত ভাবতে হবে না। আমি সব ব্যাবস্থা করে এসেছি। তোহার জ্ঞান ফিরেছে নাকি কিছুক্ষণ আগে। তুমি চাইলে নিয়ে যেতে পারি নয়তো সোজা শশুরবাড়ি চলো।
সিরাতকে রাগানোর জন্য সাফিন কথাগুলো বললেও আজ আর সিরাত রাগলো না। সিটের সঙ্গে মাথা এলিয়ে দিয়ে শুধু বললো।
— হাসপাতালে চলুন।
সাফিন মৃদু হাসলো। গাড়িটা সামনে গিয়ে বা দিকে ঘুড়িয়ে ফেলতে ফোনটা বেজে উঠলে কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে অন করতে জুবায়ের উৎফুল্ল কন্ঠে বলে উঠলো।
— স্যার বড় সাহেব নির্বাচনে জিতে গেছেন। আজকে পুরো শহর কাঁ’পিয়ে ফেলা হবে আনন্দে।
হেসে উঠলো সাফিন। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
— এটা হবে জানাই ছিল। যাইহোক পার্টি-সার্টির ব্যাবস্থা করো তাহলে। কালকে আশ্রমের বাচ্চাদের জামা-কাপড় দিতে ভুলোনা যেন। আমি ব্যাস্ত আছি তোমার ম্যামকে নিয়ে।
জুবায়ের হাসলো।
ফোন কাটার আগেই পর-পর আমেনা বেগম আজাদ সাহেব মোস্তফা সাহেবের ফোনকল আসাতে ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখে দিল সাফিন৷ একসাথে বাড়িতে গিয়ে সব কথা হবে ভেবে।
.
হাসপাতালের সামনে এসে গাড়িটা থামাতে ধীর পায়ে নেমে পরলো সিরাত। সাফিন গাড়িটা লক করে বের হয়ে সিরাতের পাশে এসে দাঁড়াতে না চাইতেও শরীরের দূর্বলতার কারনে সিরাত সাফিনের হাত ধরাতে সাফিন হেসে সিরাতকে উল্টো ভাবে পাঁ’জা কোলা করে নিল। সিরাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো।
—আমার ঝগ’ড়ুটে বউটা এভাবে বরের সাথে ঝগ’ড়া না করে শান্ত হয়ে গেল কিভাবে হুম!
সিরাত সাফিনের দিকে এবার রাগ নিয়ে তাকালে হেসে উঠলো সাফিন। বললো।
— উফ সিরাত। মাই জান তোমাকে এমন নিরামিষ ঠিক মানাচ্ছে না বেব্বি। ট্রাস্ট মি তোমাকে ঝগ’ড়াতেই যায় এভাবে নয়।
— এ থামবেন কিনা বলেন? সেই সকাল থেকে আপনার প্যা’ন>প্যা’নানি শুনেছি। শান্ত আছি ভালো লাগছে না তাইনা? শ’য়’তা’ন বে’ডা।
সাফিন জোরে হেসে উঠলো। সিরাতের নাকটা টেনে দিয়ে বললো।
— এইতো আমার ঝগ’ড়ুটে বউটা হাজির। এবার ঠিক আছে চলো যাওয়া যাক।
সিরাত রাগে ফুঁ’সতে থাকলে সাফিন মিটমিট করে হাসতে থাকলো।
.
হাসপাতালের বেডে তোহার পাশে টুল টেনে বসে শীতল হাতে তোহার মাথায় হাত ছোঁয়াতে চোখ খুললো তোহা। সিরাত একবার ভাবলো লোনের ব্যাপারটা নিয়ে জিজ্ঞেস করবে কিনা তোহাকে। কিন্তু বিবেক বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে চুপ হয়ে গেল সে। মৃদু হেসে সিরাতের দিকে তাকাল তোহা। কেঁদে উঠলো সিরাত। কান্নারত কন্ঠে বললো।
— আই এম সরি দোস্ত। আমার জন্য আজ তোর এই অবস্থা। মাফ করে দিস দোস্ত আমাকে।
তোহা সেলাইন লাগানো হাতটা ক’ষ্ট করে জাগিয়ে সিরাতের হাতের উপর রাখলে তোহার হাতটা জলদি নিজের হাতের মুঠোয় করে নিল সিরাত৷ তোহা রাগ নিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— একটা কানে খাবি সিরাত। তোকে এত কে ভাবতে বলেছে হ্যা। নিজের কি হাল করেছিস রে তুই। চোখের নিচে কালি পরে গেছে তোর। এই তুই খেয়েছিসতো নাকি?
—তোমার বান্ধবীকে জোর করে খায়িয়েছি আমি৷ মেয়ে কথা শুনে না। তোমার জন্য অস্থি’র সে।
দরজার কাছে হেলান দিয়ে থাকা সাফিনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু জাগিয়ে ফেলল তোহা। সেদিন শপিংমলের টিভির স্ক্রিনে নিউজটা চোখে ভাসতে চোখ বড়-বড় করে সিরাতের দিকে তাকালো তোহা।
সাফিন ধীর পায়ে ভিতরে এগিয়ে এসে তোহার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো।
— তোমার বান্ধবীর হাসবেন্ড। শাহনেওয়াজ সাফিন। কথাটা বলে তোহার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে সেলাইন লাগানো দেখে হাতটা সরিয়ে নিল।
—উপস সরি, তুমি এখন ঠিক আছো তো নাকি?
সিরাত সাফিনের দিকে রাগ নিয়ে তাকিয়েও আবার চু’পসে গেল। তোহা একবার সিরাত তো একবার সাফিনের দিকে তাকাতে নার্স খাবারের ট্রেটা নিয়ে এসে সাফিনের দিকে তাকিয়ে চোখ বড়-বড় করে তাকিয়ে হেসে বললো।
—স্যার আপনি নিজে এসেছেন, আপনার পেসেন্টের কোনো অজন্ত হতে দিব না ইনশাআল্লাহ। মনে হচ্ছে পেসেন্ট আপনার কাছের কেউ হবেন।
সিরাত সাফিনের দিকে ধীর চাহনিতে তাকাতে সাফিন হেসে হাতে থাকা ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে টাইম দেখে বললো।
—আমার বউয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড তো তারজন্য।
বাই দ্য ওয়ে, কতদিন থাকতে হবে ওনাকে এখানে?
নার্সটা তোহাকে জাগাতে নিতে সিরাতও হাতে হাত লাগিয়ে উঠে বসালো তোহাকে।
— এটাতো আমি বলতে পারছি না স্যার। এটা ডক্টর বলতে পারবেন। আমি ডেকে আনছি তাকে এক্ষুনি। তিনি হয়তো জানেন না আপনি আসছেন, নয়তো চলে আসতেন এতক্ষণে নিজেই।
সাফিন মৃদু হেসে বললো।
—না থাক আপনি ওনাকে দেখুন আমি দেখছি।
সিরাত তোহাকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরলো। সাফিন কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেলে তোহা চটজলদি সিরাতের দুইহাত পাকরাও করে ফেলল। বললো।
— তুই বিয়ে করেছিস সিরাত! লাইক সিরিয়াসলি? আমাকে জানাসও পর্যন্ত নি।
সিরাত কয়েকটা ঢোক গি’লে মৃদু হেসে তোহার কপালে চুমু খেয়ে বললো।
— বাদ দে না দোস্ত এসব। বিয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে? আমি সারাক্ষণ তোর কাছে তোর পাশে আছি, আর সবসময় থাকব৷ এবার নে তো লক্ষী মেয়ের মতো ফলের রসটা খেয়ে নে।
গ্লাসটা এগিয়ে দিতে তোহা এক ঢোক খেয়ে নার্সের দিকে তাকালে তিনি বললেন।
— ড্রেসিং করতে হবে ওনাকে এখন। প্লিজ আপনি যদি একটু বাহিরে যেতেন ম্যাম৷
সিরাত গ্লাসটা তোহার হাতে ধরিয়ে দিয়ে রাগ নিয়ে বললো।
— পুরোটা খাবি।
—আরে ও কেন যাবে। ও থাকুক এখানে।
সিরাত মৃদু হেসে বললো।
— এখানেই আছি তুই বোস চুপচাপ এখানে।
.
— স্যার এটা যেহেতু আপনার পেসেন্ট তো আর কিসের কথা। আপনি আপনার ইচ্ছেতে নিয়ে যেতে পারেন।
চেয়ারের উপর পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে সাফিন। ধীর চাহনিতে ডক্টরের দিকে তাকিয়ে বললো।
— ভালো হবে কিসে সেটা জানতে চাইছি?
—মিনিমাম এক সপ্তাহ থাকুক এখানে। আপনার ইচ্ছে আরকি।
হাসলো সাফিন। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
— আচ্ছা তাহলে পাঁচজন বিশ্বস্ত নার্স ঠিক করে রাখুন। আমি আবার এসে দেখে যাব মেয়েটাকে।
—আচ্ছা স্যার।
সাফিন চলে যেতে ডক্টর যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। চেয়ারে বসে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলেন।
.
—চলো সিরাত। তোহার কিছু হবে না আর। টেনশনের কারন নেই আর। কালকে এসে দেখে যাবে আবার এখন চলো শশুরবাড়ি।
বাহির থেকে এক নজর তোহার মুখটার দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললো।
—আসছি দোস্ত।
তোহা ছলছল চাহনিতে সিরাতের দিকে তাকাতে দী’র্ঘশ্বাস ছারল সিরাত।
“শাহনেওয়াজ ভিলার সামনে গাড়ি এসে থামতে দ্রুত গার্ডরা দরজা খুলে দিলে ফুল দিয়ে সজ্জিত সাদা রাঙা বাড়িটার দিকে তাকিয়ে চোখ বড়-বড় করে ফেলল সিরাত। ”
সাফিন দরজার সামনে গাড়ি থামাতে ভিতর থেকে আমেনা বেগমসহ আরও কিছু মহিলারা ফুল আর ডালা নিয়ে ছুটে আসলে ভ্রু জাগিয়ে ফেলল সাফিন। আজাদ সাহেব এবার আর লাঠি নয় বন্দুক হাতে নিয়ে বের হলেন। সাফিন গাড়ি থেকে নেমে পরলে সিরাত অসস্থি নিয়ে গাড়িতে বসে থাকলে সাফিন সেদিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— তোমাকে কি এখন কোলে করে নামাতে হবে সিরাত?
সিরাত রাগ নিয়ে তাকানোর আগেই আজাদ সাহেব সাফিনের বুক বরাবর বন্দুক তাক করে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন।
— শালা শ’য়’তান৷ বিয়া করছো আর বাড়িতে কাউকে জানাস নি? ফোন বন্ধ করে রাখছো’ত। যেমন তোর বাপ তেমন তুই। আমার কত শখ ছিল নাতিবউ আনার সময় ধূমধাম করে পুরো শহর নাচিয়ে ঘোড়ায় করে আনব। সেই রকম খাওয়া-দাওয়া হবে। খাসি,গরুর গোস্ত, আহা কি স্বাদ। সবকিছুতে দিলিতো মাটি করে। তুই একবার বলতে পারতি আমাকে। সাফিন হেসে উঠলো। বললো।
— আহা সোনা, তোমার খালি খাই-খাই। অসুস্থ ছিলা ভুলে গেলা নানু৷
—অসুস্থ হবে তোর বাপ এই আজাদ না।
সাফিন হেসে উঠতে আমেনা বেগম সাফিনের কানটা টেনে ধরে বললেন।
— আম্মার প্রতি এই তোর ভালোবাসা? আম্মার কাছে নাকি সব শেয়ার করিস তুই। এই তাঁর নমুনা কই দেখি আমার মেয়ে কই।
—আহ আম্মা ছাড়ো আমাকে। তোমার ছেলে যে বিয়ে করেছে এটা কি অনেক নয় নাকি?
— তোকে পরে দেখাচ্ছি। আগে আমার মেয়েকে দেখে নেই। আমেনা বেগম গাড়ির দরজাটা খুলে সিরাতের দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে সিরাতের গালে হাত দিয়ে চুমু খেয়ে বলে উঠলেন।
— মাশাআল্লাহ। মেয়ে আমার হুরপরী।
আজাদ সাহেব বন্দুকটা জুবায়েরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে গাড়ির সামনে এসে সিরাতকে দেখে চোখে মুখে খুশিতে সাফিনের উপর আর রাগ দেখাতে পারলেন না। সিরাত চোখ বড়-বড় করে শশুরবাড়ির সবাইকে দেখে নিল। ধীর পায়ে গাড়ি থেকে নেমে দাদাশ্বশুর আর শাশুড়ীকে পা ছুঁয়ে সালাম করতে যেতে আমেনা বেগম সিরাতের দুইহাত ধরে উঠিয়ে জড়িয়ে ধরলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন।
— ওই মাইয়া মায়ের পা ছুঁচ্ছিস কেন হুম। আমি কিন্তু শাশুড়ী-টাশুড়ী না কোনো তোর। তোর মা আমি। তা তোর মা আবার রাগ-টাগ করলেও আমাকেও নিজের মা ভাবতে হবে বলে রাখলাম। কথাটা বলে নিজ হাত থেকে সর্নের মোটা বালাদুটো পরিয়ে দিলেন সিরাতকে।
আমেনা বেগমের মমতাময়ী স্পর্শে সিরাতের চোখে পানি এসে ভর করলো।
আমেনা বেগম ভ্রু জাগিয়ে ফেললেন বললেন।
—উহুম, কান্নাকাটি কিসের আবার!
সিরাত শুকনো হাসি হেসে মাথা নিচু করে বলল।
—আমার মা-বাবা কেউ নেই।
আমেনা বেগম খানিক চুপ থেকে সিরাতকে জড়িয়ে ধরে বললেন।
— আমরা বুঝায় ভেসে আসছি তোর কাছে! এইসব কথা যেন আর না শুনি মেয়ে কখনো।
সিরাতের কথাটা সাফিনের কানে পৌঁছাতে ধীর চাহনিতে তাঁর দিকে তাকালো শুধু।
এতক্ষণে মোস্তফা সাহেব আর সরোয়ার সাহেব বের হলেন বাড়ি থেকে। মোস্তফা সাহেব সাফিনের বুকের উপর হালকা কি’লের মতো দিয়ে বললেন।
—বাপ কা বেটা।
সাফিন হেসে উঠলে সরোয়ার সাহেব সাফিনকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন।
— ইসরে খাওয়া-দাওয়াটা হলো না।
মোস্তফা সাহেবের গলায় থাকা নির্বাচনের মোটা-মোটা ফুলের মালা থেকে একটা সিরাতের গলায় পরিয়ে দিয়ে বললেন।
— খাওয়া-দাওয়া হলো না মানে! কালকে সকালের মধ্যে পুরো শহরে কাঁপিয়ে দেওয়া হবে। শাহনেওয়াজ সাফিনের বিয়ে বলে কথা। এ রকম একঘেয়ে ভাবে হয়ে গেলেই হলো নাকি?মোস্তফা সাহেব সিরাতের দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বললেন।
— এই নাহলে আমার ছেলের পছন্দ। যা সাফিন তোর উপর যে রাগ জমেছিল না আজকে নির্বাচনে বসে। এখন তা আর নাই, মা’ফ করে দিলাম বাঁ’ছা আমার।
সিরাত শশুরের দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে মৃদু হেসে পা ছুঁতে যেতে নিতে রাগ নিয়ে বললেন।
—হোপ, এইমাএ তোর আম্মা কি বললো ভুলে গেলি। হাসলো সিরাত। বললো।
—আচ্ছা ভুল হয়ে গেছে আমার।
—আরে ধুর তোমরা আমার বউকে আর কতক্ষণ এখানে দাঁড় করাই রাখবা। ভিতরে কি ঢুকতে দেবে না নাকি?
হুট করে সাফিনের এমনধারা কথা শুনে সবাই হেসে উঠলে সিরাত চোখ গরম করে তাকাতে চোখ মারলো সাফিন তাঁকে।
আজাদ সাহেব বললেন।
— তোর বউ কি রে আবার? আজকে দিনে বউকে ভুলে যা কাল আসিস। আসসালামু আলাইকুম।
হেসে উঠলো সাফিন। চোখ মেরে বললো।
— আমার বউকে আমি এক মিনিটও ছারছি না হুম।
সিরাত পুরো ল’জ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে সাফিনের কথাবার্তা শুনে।
— এই লোকের কি কোনো ল’জ্জা নেই নাকি! মানে মুখে যা আসবে বলে দিলেই হলো। এ রকম বেশ’রম লোক একটা দেখিনি আমি। (মনে-মনে কথাটা বলে রাগে ফুঁ’সতে থাকলো সিরাত।)
.
—তোমাকে দিয়ে যদি একটা কাজ হয়। আমি ভাবছি আমি টাকা দিয়ে কতগুলো গরু-ছাগল পালছি এতদিন ধরে। একটা গু’লি পর্যন্ত ঠিকঠাক ভাবে করতে পারো না তুমি। কাকে রেখে কাকে গু’লি করেছো হ্যা। এ রকম আহা’ম্মকের মতো কাজ করার জন্য মাসে-মাসে আমার থেকে গুনে-গুনে টাকা নেও।
সামনে দাঁড়ানো লোকটা মুখটা কাঁ’চু>মা’চু করে মাথা নিচু করে ধীর কন্ঠে বললো।
—সরি সাহেব। আপনি তো দেখেছেন আমি চেষ্টা করেছি।
—চুপ থাকো তুমি। তোমার চেষ্টা দিয়ে আমার এখন কিচ্ছু হবে না। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন দলিলে সাইন করার আগে ওই বুড়োকে মা’রবে নয়তো সাফিনকে চিরতরে উপরে পাঠিয়ে দেবে। নয়তো তোমাকেই আমি উপরে পাঠিয়ে দেব।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা ভয়ে ঢোক গিললে পিছু ফিরে থাকা অন্ধকারের লোকটার দিকে ধীর চাহনিতে তাকাতে নিজের প্যান্ট ভে’জা অনুভব করে ভয়ে কেঁ’পে উঠলেন সে।
.
পুরো বাড়িটাতে ঝাড়বাতির জ্বলে নেভে আলো চোখেমুখে এসে ছেঁয়ে পরছে যেন সিরাতের। রাত এখন আটটা নাগাত। আমেনা বেগম সিরাতকে পুরো বাড়ি ঘুড়িয়ে দেখিয়েছেন। নিজের হাতে খায়িয়ে দিয়ে তাঁকে লালরাঙা শাড়ি পরিয়ে দিয়ে গহনা পরাতে যেতে সিরাত ধীর চাহনিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললেন।
—আজকে এসব থাকনা আম্মা। মাথাব্যাথা করছে প্রচুর।
আমেনা বেগম হাসলেন সিরাতকে জড়িয়ে ধরে বললেন।
—কি বললি আবার বল?
ভরকে গেল সিরাত। কিছু ভু’ল বলে ফেলেনি তো আবার?
—না মানে মাথা ব্যা’থা করছে সেটাই আরকি।
— আরে ওটানা তার আগে কি বলেছিস।
— আম্মা।
হাসলেন আমেনা বেগম। বললেন।
—আবার বলতো একবার।
সিরাত আমেনা বেগমের দিকে শীতল চাহনিতে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো।
—আম্মা।
আমেনা বেগম সিরাতের হাত ধরে বললেন।
— আচ্ছা চল তাহলে তোকে তোর বরের রুমে দিয়ে আসি। কালকে তোদেরকে নিয়ে পার্টির ব্যাবস্থা করবে তোর আব্বা।
কথাগুলো বলতে-বলতে একধাপ-একধাপ করে সিঁড়ির দিকে এগোতে থাকলে সিরাতের হার্টবিট যেন ক্রমশ বাড়তে থাকলো। গলা শুকিয়ে আসতে চাইছে যেন তাঁর।
কয়েক কদম পর পা থ’মকে দাঁড়াতে আমেনা বেগম হেসে ধীর কন্ঠে বললেন।
— যা ভিতরে যা৷ আর শোন, আমার ছেলেটা কিন্তু সামনে থেকে কঠোর দেখালেও ভিতর থেকে অনেক নরম৷ ওকে কিভাবে শাসনে রাখবি কালকে এই নিয়ে গবেষণা করবনে দুই মা মেয়ে মিলে। যা এখন ভিতরে যা।
আমেনা বেগম চলে গেলে হেসে উঠলো সিরাত।
ভয়ে-ভয়ে দরজাটা ঠেলে ভিতরে পা দিতে অন্ধকার রুমটাতে চোখ বো’লাতে থাকলে হুট করে গিটারের টং-টাং আওয়াজের সাথে গান ভেসে আসলো বারান্দার দিক থেকে।

~ চাহে কুছনা কেহনা
ভালে চুপতো রেহনা
মুঝে হে পাতা
তেরে পেয়ার কা
খামোস চেহরা
আখোপে পেহরা
বুন্দ হে গাওয়া
মেরে পেয়ার কা।
মেরি ছুপি নাজার
তেরি হার আদা
মুঝে কেহরাহিরে এ রাস্তা……

বাড়ান্দার দোলনায় বসে সাফিনের গানের কন্ঠ শুনে বাড়ান্দার দরজায় মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়াল সিরাত। আকাশের মেঘের কনাগুলো এলোমেলো ভাবে ভেসে যাওয়ার শহিত হীমেল হাওয়ায় পরিবেশে কাঁ’পুনি ধরিয়ে দিতে সিরাত হাতের সাথে হাত ঘ’ষতে থাকলে সাফিন ধীর চাহনিতে ঝাড়বাতির নিভু-নিভু আলোয় সিরাতকে দেখে তাঁর ব্রাউন্ড রাঙা চুলে ঝাড়ি দিয়ে গিটারটা দোলনার উপর রেখে ধীর পায়ে তাঁর দিকে এগিয়ে আসতে নিতে সিরাত ভয়ে কয়েকটা ঢোক গি’লে পিছিয়ে যেতে নিতে দরজার পাশে থাকা ফুলের টপটা ভে’ঙে গুড়িয়ে গেলে সাফিন হেসে সিরাতকে পাঁ’জা কোলা করে নিল। সিরাত ভয়ে সাফিনের বুকে এলোপাথাড়ি কি’ল ঘু’ষি দিতে থাকলে সাফিন সিরাতকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে দুইহাত চে’পে ধরতে সিরাতের নিশ্বাস ঘন হয়ে আসলো যেন ভয়ে। কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে ঝাড়বাতির মৃদু আলোয় সিরাতের গোলাপি রাঙা মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে থেকে তাঁর কপালে চুমু খেয়ে সাফিন ধীর কন্ঠে বললো।
— তো এখন গু’লি করে মে’রে দেই তোমাকে বেব্বি। চর মেরেছিলে না আমাকে।
ভয়ে চোখ মুখ খিঁ’চে বন্ধ করে রাখলো সিরাত…

চলবে…..

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-০৯

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ৯

বাড়িতে এসে লাইট অফ করে অন্ধকার রুমটাতে বসে আছে সাফিন। বারংবার রাফির সাথে সিরাতের ডুয়েট ডান্সটা চোখে ভেসে উঠতে থাকলে রাগে মাথা হে’ট হয়ে যাচ্ছে তাঁর। জুবায়ের দরজাটা ঠেলে ভিতরে এসে লাইট অন করে দিলে বিরক্তি নিয়ে তাঁর দিকে তাকালো সাফিন৷
জুবায়ের খানিকটা থ’ত’ম’ত খেয়ে গিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—স্যারের মুড অফ মনে হচ্ছে।
সাফিন চুপ করে থাকতে জুবায়ের সাফিনের র’ক্তে ভেজা হাতটার দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে ড্রয়ার থেকে ফাস্টএইড বক্সটা বের করে চেয়ার টেনে সাফিনের পাশে বসে হাতটা নিজের কাছে আনলো।
সাফিন দাঁতে দাঁত চে’পে চোখ বন্ধ করে যন্ত্র’ণাটা স’য্য করে নিল।
অনেকটা কাঁচ ঢুকে গেছে হাতের ভিতর। জুবায়ের ভালোভাবে হাতটাকে ড্রেসিং করতে-করতে বললো।
— আমার কেন জানিনা মনে হচ্ছে স্যার মেয়েটার প্রতি একটু হলেও দূর্ব’ল হয়েছেন। না মানে, আমার ধারনা আরকি। যেভাবে রিয়াক্ট করে বিয়ে বাড়ি থেকে চলে এলেন কাউকে না জানিয়ে। সবাই এখন আমাকে ফোন করে-করে পা’গল বানিয়ে ফেলেছে।
সাফিন দীর্ঘ নিশ্বাস টেনে জুবায়েরের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
— জানিনা দূর্ব’ল কিনা৷ কিন্তু মেয়েটা আমার হৃদয়ের সাথে গেঁথে গেছে। ওর পাশে অন্য কোনো ছেলেকে দেখলে আমার মাথায় র’ক্ত উঠে যায় কেন যেন! রাগ হয় প্রচুর। আজকে মোটেও ভালো লাগেনি আমার ওকে অন্য কারো সাথে ডুয়েট ডান্স করতে দেখে। ছেলেটা ওকে ছুঁয়েছে এটা ভাবতেই ওকে খু’ন করতে ইচ্ছে করছে আমার। রুবাইয়াতের কাজিন বলে সিনক্রি’য়েট করিনি, নয়তো দেখিয়ে আসতাম ওর ম’জা।
জুবায়ের হেসে উঠলো। সাফিনের কাঁধে হাত রেখে বললো।
—স্যার মেয়েটার উপর পাক্কা প্রেমে পরেছেন। আপনি একবার আদেশ করুন শুধু আমি তুলে নিয়ে আসছি ম্যামকে।
সাফিন ধীর চাহনিতে জুবায়েরের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে হাসলো। বললো।
—মেয়েটাকে আমি যদি কোনে ভাবে ভালোও বেসে থাকি তবুও ওকে আমি সেটা এত সহজেই বুঝতে দেব না। আমাকে চর মারা’র মূল্যতো ওকে দিতেই হবে।
জুবায়ের হা হয়ে সাফিনের দিকে তাকাতে তাঁর ফোন বেজে উঠলে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতে অপর প্রান্তের কথা শুনে নিমিষেই চেহারার রঙ উড়ে গেল জুবায়েরের। সাফিন জুবায়েরের দিকে ভ্রু জাগিয়ে তাকাতে জুবায়ের ভয়ের কন্ঠে বললো।
—স্যার স্টোর রুমের লোকটা নিজেকে নিজে গু’লি করেছে। হেলাল আমাদের পার্মানেন্ট ডক্টরকে এনেছে ওখানে। কিন্তু,
সাফিন দ্রুত বসা থেকে উঠে বসলো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—কিন্তু কি জুবায়ের? ড্যাম ইট৷ বন্দুক কোথায় পেল ও। আর হেলালই বা কি করছিল তখন? বেঁচে আছেতো নাকি? জুবায়ের মাথা নিচু করে ফেলল। ধীর কন্ঠে বললো।
— নো স্যার, হি ইজ ডে’ট। গু’লিটা ঠিক বুকের উপর লেগেছে, ডক্টর কিছুই করতে পারেননি।
বিরক্ত হলো সাফিন৷ বললো।
—দ্রুত চলো এখন। কে জানে ওদিকে এখন কি সিচুয়েশন কারি করে রেখোছো তোমরা আমার জন্য। লোকটাকে আমার প্রয়োজন ছিল। হেলাল ওর বয়ান রেখেছে কিনা আল্লাহই জানেন।
জুবায়ের মাথা নিচু করে ফেলল।বললো।
—সরি স্যার।
— তোমার সরি এখন আমার কোনো কাজে আসবে না জুবায়ের৷ চলো এখন।
—জ্বী স্যার।
.
—সাহেব ওকে মে’রে দিয়েছি। ভাগ্যিস আমি নিজে যাইনি মিশনে৷ ওকে মে’রে দিয়েছি এবার সবকিছু শান্ত হয়ে যাবে। ওই সাফিন আর আপনার টিকিটিও ধরতে পারবে না।
কালো রাঙা জ্যাকেট পরা লোকটা পিছুঘুরে দেয়ালের সাথে হাত ঠেকিয়ে হেসে উঠলেন। গম্ভীর কণ্ঠে বললেন।
— সাফিন আমার টিকিটিও যে ধরতে পারবে না সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত৷সাফিনকে নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যা’থা নেই আপাদত। কিন্তু আমার মাথাব্যা’থা শুধু এবং শুধু মাএই রাজবাড়ী নিয়ে। ওই রাজবাড়ি আমার চাই৷ ৫০০ কোটি টাকার মহল কিছুতেই হাতছাড়া করতে পারব না আমি। মেয়েটাকে আজকের মধ্যে উড়িয়ে দেও। কিভাবে দিবে, কি করবে ওসব আমি জানতে চাইছি না। আমি চাই মেয়েটার লা’শ৷ আর সেটা আজকের মধ্যেই। এতদিনের চেষ্টা এক মূহুর্তে শেষ হয়ে যাবে ওই মেয়ের কারনে, সেটাতো আমি বেঁচে থাকতে কখনোই হতে দেব না।
—জ্বী স্যার, আজকের মধ্যেই মেয়েটার লা’শ আপনার পায়ের কাছে এনে রাখব।
লোকটা হেসে উঠলো। বললো।
—পায়ের কাছে আনতে হবে না। জাস্ট নদীতে ভাসিয়ে দেবে।
—আচ্ছা স্যার।
.
গগনের কোল ঘেঁষে আজ শ্রাবন সন্ধ্যায় পরিপূর্ণ। এলোমেলো হয়ে ভেসে যাওয়া কালো রাঙা মেঘদ্বয় থেকে গুড়ুম-গুড়ুম গর্জ’ন পাতের সহিত শহর জুড়ে ঝমঝম বৃষ্টিপাতে বর্ষিত হয়ে গেলে বিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে নিতে রুবাইয়াত তোহার হাত ধরে পথ আঁ’টকে দাঁড়িয়ে পরলো। বললো।
— মাএ বিয়ে হলো আমার তোরা এখনই চলে যাচ্ছিস। বৃষ্টি পরছে এমনিতেই। এই ঝড় বাদলের মধ্যে কোথাও যাওয়া হচ্ছে না আজ তোদের।
তোহা হাসলো। বললো।
—ওরে জান আমার, আমরা বাড়ি খালি রেখে এসেছি৷ ভিতরে কিছুই লক করিনি আজকে দরজা ছাড়া। আমি গ্রামের বাড়ি গেলে লক করে যেতাম পুরো বাড়ি৷ কিন্তু আজকে কিছুই লক করিনি ফিরব বলে। সন্ধ্যাও হয়ে গেল। আজ আর ব্যাংক থেকে টাকাও তুলতে পারলাম না৷ সিরাতকে নিয়ে বাজারে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যা ঝড় তুফান শুরু হয়েছে শহরে, এর মধ্যে আজ আর যাব না। এখন ডিরেক্ট সিএনজি নিয়ে বাসায় চলে যাব।
রুবাইয়াত মুখ ভার করে ফেলল। রাফি তাঁদের দিকে এগিয়ে আসলে রুবাইয়াত রাফির উদ্দেশ্যে বললো।
— ভাইয়া ওদের দুজনকে একটু ড্রপ করে দিয়ে আসো তো৷ এই ঝড় বাদলের মধ্যে সিএনজি পাবে কিনা সন্দেহ।
তোহা বাঁধ সেধে বললো।
—আরে লাগবে না। বেচারা ভাইয়া শুধু-শুধু আমাদের সাথে যাবেন। সিরাত তোহার হাত ধরে রুবাইয়াতের উদ্দেশ্যে বললো।
— আমরা যেতে পারব তুমি টেনশন কোরো না৷ আমার জান অনেক স্ট্রিট আছে৷ আর তোমাকেও তো এখন শশুরবাড়ি যেতে হবে নাকি? ভাইয়া ওয়েটিংএ আছে তোমার জন্য৷ গাড়িওতো এসে পরেছে। সাবধানে যেও কেমন। আমাদের নিয়ে ভেবো না।
রুবাইয়াত ল’জ্জা পেলে রাফি বলে উঠলো।
— তোর বর ডাকছে তোকে৷ তুই নাকি আজকে নিজ বাড়ি থেকে শশুরবাড়ি যাবি, না আছে চোখে কোনো পানি না আছে কোনো চিন্তা৷ আর বাকিরা তোর জন্য কেঁদে-কেঁ’টে একসাট অবস্থা করে ফেলেছে নিজেদের।
হেসে উঠলো রুবাইয়াত। চোখ মেরে বললো।
—উফ রে, এই কান্নাটাই যে আমার আসে না কেন জানি!
রুবাইয়াতের কথা শুনে রাফি সহ সিরাত আর তোহাও হেসে উঠলো। তোহা বললো।
—তুই পারিসও বটে। আচ্ছা আসলাম আমরা। ভালো থাকিস দোস্ত।
তোহা রুবাইয়াতকে জড়িয়ে ধরে মৃদু হেসে সিরাতের হাত ধরে বেড়িয়ে পরলো দুজনে।
“শহরজুড়ে বৃষ্টির রেশটা বাড়াবাড়ি রকমের ভাবে ছেঁয়ে পড়েছে যেন আজ।” প্রচন্ড উত্তাপে হিমেল হাওয়ায় শরীরের প্রত্যেকটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেন কাঁ’পিয়ে দিয়ে ছাড়ছে।
মাথার উপরে ছাতা দিয়ে বর্ষনের রেশ খানিকটা কমালেও শরীরের কাঁ’পা>কাঁ’পি যেন
কোনো ভাবেই থামানো যাচ্ছে না।
হিমেল হাওয়ায় সিরাতের নীল রাঙা সিল্কি শাড়ির আঁচল উড়তে থাকলে অর্থেকটা ভিজে একাকার৷কিছুদূর এসে একটা সিএনজি দেখতে পেলে তোহা হা’ক দিয়ে ডাকাতে সিএনজিটা তাদের সামনে এসে থামলে শাড়ি সামলে উঠে পরলো দুজন। বাতাসের সো-সো শব্দে সিএনজি চলতে শুরু করলে তোহা সিরাতের একগালে হাত রেখে হাসতে থাকলে সিরাত তোহাকে জড়িয়ে ধরলো একহাতে। শীতল কন্ঠে বললো।
—হুট করে তোর কি হলো রে জান। কিছুকি হয়েছে? মুখটা কেমন বাংলার পাঁ’চ করে রেখেছিস!
তোহা মৃদু হেসে বাহিরে তাকালো। ধীর কন্ঠে সিরাতের উদ্দেশ্যে বললো।
—নাহ তেমন কিছু না।
সিরাতও হালকা হেসে উঠলো। বললো।
—সামনে থেকে জিলাপি নিয়ে নেব। আজকে রাতে খাওয়া যাবে দুজনে।
হাসলো তোহা।
.
স্টোর রুমে এসে লোকটার নিস্তে’জ চেহারাটা দেখে রাগে মা’থা ঠিক রাখতে পারলো না সাফিন। হেলালের দিকে বন্দুক তাক করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—এ মা’রা গেল কিভাবে হুম? থাকো কোথায় তোমরা? আর এ বন্দুকই বা পেল কই?
হেলাল কয়েকটা ঢোক গি’লে সাফিনের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললো।
—স্যার লোকটা বোধহয় নিজেকেই নিজে গু’লি করেছে। কিন্তু আবার গু’লিও দেখছি না। তাছাড়া অন্য ভাবে দেখতে গেলে এই অন্ধকার স্টোর রুমে কেই বা আসবে বা জানবে এখানে কেউ আছে কিনা।
সাফিন সন্দেহের সহিত স্টোর রুমটাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে লোকটার চেয়ারের পিছন বরাবার খোলা জানালাটা ঘেঁষে বৃষ্টির শিহরণ ঝড়ে পরতে দেখে বন্দুক হাতে সেদিকে কয়েক পা হেঁটে গিয়ে আবার ফিরে এসে লোকটার দে’হটার দিকে তাকিয়ে উল্টো করলে খানিকটা ভ্রু জাগিয়ে তাকিয়ে হেসে উঠলো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—একে গু’লি করা হয়েছে। বাই দ্য ওয়ে, লোকটা কে জানতে পেরেছো?
হেলাল চমকিত হলো। শুকনো ঠোঁটটা ভিজিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—রশিদ স্যার। বাড়ি রাজশাহী। ফলের দোকান দেয়। স্ত্রী আর সন্তানরা ওখানেই থাকেন। তাছাড়া ওর বসের কথা অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি এবং মেরে’ছিও প্রচুর। মুখ খোলেনি ও। আপনি চাইলে ওর পরিবারকে ধরে আনতে পারি।
সাফিন বাঁধ সেধে বললো।
—উহুম, আমার মনে হচ্ছে এর মধ্যেও কিছু চালাকি আছে। যাইহোক, কালকে নির্বাচনে যেন এইসব উট’কো ঝামে’লা না আসে সেদিকে খেয়াল রাখো হেলাল। মোহনকে বলো সবকিছু যেন ঠিক থাকে।আর লা’শটাকে বস্তা বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দেও। জুবায়ের,
—জ্বী স্যার।
—চলো বের হব আমরা।
—ওকেহ স্যার।
সাফিন বন্দুকটা পকেটে ঢোকাতে নিতে ফোনটা বেজে উঠলে ফোনের স্ক্রিনে আম্মা নামটা ভেসে উঠতে ফোনটা রিসিভ করতে ওপাশ থেকে উদ্বী’গ্ন কন্ঠ ভেসে আসলো।
—সাফিন তোর নানু অসুস্থ হয়ে পরেছে রে। বিয়ে বাড়ি থেকে আসার পর থেকেই কেমন জেনো করছেন৷ দ্রুত বাড়িতে আস বাবা।
সাফিন রাগ এবং চিন্তায় মিশ্রিত কন্ঠে বললো।
—নিশ্চিই বিয়ে বাড়ির ওই হাবিজা’বি জিনিস খেয়েছে? নানু কেন ভুলে যান উনি সুগারের রোগী! মেজা’জ খারাপ করে৷ এখনই আসছি আমি৷ আব্বা কই আছেন ওখানে?
আমেনা বেগম ধীর কন্ঠে বললেন৷
—তোর বাপ আর চাচ্চুতো বাড়িতেই আসেন নাই। দুজনে কই গেছেন কে জানে৷ ফোনটাও আমার কাছে দিয়ে গেছেন। কালকে নির্বাচন সেই নিয়ে পরে আছে সে। মানুষ যে একটু ফোন করে খোঁজ খবর নিবে তাঁরও কোনো জো রাখে নাই৷
সাফিন গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলে জুবায়ের গাড়ি স্টার্ট দিল৷ সাফিন সেদিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে আমেনা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো।
—ডক্টরকে কল করেছো তো নাকি?
—হুম মোহন করেছে এসে পরবে এখনই। তুইও আস। আমার মাথা কাজ করছে না এখন।
—আচ্ছা টেনশন করো না বেশি আসতাছি আমি।
–হ দ্রুত আয়।
আমেনা বেগম ফোন কেঁ’টে দিতে সাফিন দুইহাতে মাথা চে’পে ধরে গাড়ির সঙ্গে সমস্ত শরীর এলিয়ে দিল। আজ বড্ড ক্লা’ন্ত লাগছে নিজেকে তাঁর।
.
বাড়ি থেকে দশ মিনিটের দূরত্বে থাকা জিলাপির দোকানটার সামনে তোহা সিএনজি থামাতে বললে সিরাত হাসলো৷ তোহা বললো।
—তুই বসবি নাকি নামবি। চল একসাথেই দুজন মিলে কিনে আনি।
—আচ্ছা জান। উম্মাহ, চল টেষ্টও করা যাবে।
ছাতাটা খুলে তোহা বেড়িয়ে পরে সিরাতের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতে সিরাতও নেমে পরলো। রিমিঝিমে শ্রাবন সন্ধ্যাময় পরিবেশে গরম-গরম জিলাপি খাওয়ার মজাই আলাদা।
—মামা জিলাপি দেন তো আধা কেজি।
দোকানদার তোহার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো।
—আচ্ছা আম্মা দিতাছি। খেয়েও যাও এখান থেকে ভালো লাগবে।
—আচ্ছা দেন দুই প্রিস।
.
কালো রাঙা গাড়িটা সিরাতদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গাড়ির কাঁচ সরিয়ে দূর থেকে বন্দুক তাক করতে পিছনের সিটে বসে থাকা কালো রাঙা জ্যাকেট পরিহিত মুখ ঢাকা লোকটা গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন।
— নীল শাড়ি পরে আছে মেয়েটা৷ স্যুট হিম।
সামনে থাকা লোকটা পিছনের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—স্যার দুজনই নীল শাড়ি পরে আছে তো। কিভাবে বুঝব।
পিছনে থাকা লোকটা গলায় ঝোলানো দূর্বিনটা সিরাতদের দিকে তাক করে হেসে বললো।
—ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। এই ঝমঝমে গর্জ’ন মূখর পরিবেশে গু’লির শব্দ আশা করি কারো দৃষ্টিগোচর হবে না। দ্রুত কাজ সারো।
সামনে থাকা লোকটা মাথা ঝাকিয়ে বন্দুকটা সিরাতের দিকে তাক করে স্যুট করতে নিতে তোহা দোকানদারের থেকে জিলাপির প্রিসটা নিয়ে সিরাতের দিকে দিতে যেতে হুট করে গাড়িটার দিকে চোখ যেতে সিরাত বলে চিৎ’কার করে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে নিজে সরে যাওয়ার আগেই গু’লিটা তোহার পেটের বাম পাশে লাগলে ঝমঝমে বৃষ্টির পানির সঙ্গে তোহার শরীরের র’ক্তের অশ্রুস্নিগ্ধ পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল। পা ঢলে রাস্তায় পরে গেল তোহা। আকস্মিক ঘটনায় সিরাত পুরো তব্দা খেয়ে গেল। তোহার দিকে চোখ বড়-বড় করে তাকিয়ে ভয়ে কয়েকটা ঢোক গিলল সঙ্গে- সঙ্গে। ছাতা ফেলে দিয়ে রাস্তায় বসে পরে তোহার নিস্তে’জ হয়ে থাকা শরীরটা নিজের কোলে নিয়ে আঁকড়ে ধরলো তাঁকে। চোখ বেয়ে অজস্র কান্নার রাশি ছেঁয়ে গেলে গলা শুকিয়ে এলো তাঁর।
চারপাশে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেও যখন কাউকে দেখতে পেলনা তখন ডু’করে কেঁদে উঠলো সিরাত। সিএনজির লোকসহ দোকানের ভিতরে থাকা সবাই বেড়িয়ে এসে তাঁদের দিকে তাকিয়ে। হুট করে ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটে যাওয়ায় সবাই পুরো শ’ক খেয়ে গেছে। কেউ-কেউ রাস্তার অপর প্রান্তে দৌঁড়ে গিয়ে কাউকে দেখতে পায় কিনা সেদিকে ছুঁটলো। সিরাতের রু’হু নিস্তে’জ হয়ে গেছে যেন। শরীর বেয়ে বৃষ্টির রেশ চুল থেকে সমস্ত শরীরে ছুঁয়িয়ে দিচ্ছে যেন।
হৈচৈ লেগে গেল ওখানে। কালকে নির্বাচনের কারনে এমনিতেই পরিবেশটা গরম ছিল। এই ঘটনায় যেন লোকজন আরও অবাক হয়ে গেল।
—আপা এনাকে হাসপাতালে নিতে হবে জলদি। আপনে সিএনজিতে উঠে বসুন এভাবে কান্নাকাটি করে কিচ্ছু হবে না। আল্লাহ জানে কোন হা’রা’মি এমনটা করেছে। তারাতাড়ি উঠে বসুন এটা পুলিশ কেস হলেও ওই আপাকে এখন বাঁচানোটা জরুরি।
সিরাতের হুঁশ ফিরতে কান্নায় ভে’ঙে পরলো সে। মা-বাবার পরে এই তোহাই তাকে আগলে রেখেছে। আর আজ তোহারও এই অবস্থা হয়ে গেল। চোখের পানি বাঁধ মানছে না সিরাতের। তোহাকে বুকে জড়িয়ে নিজে একা ওঠাতে নিতে দোকানদার সহ সিএনজির লোকটা হাতে হাত লাগিয়ে সিএনজিতে উঠিয়ে দিলে লোকটা দ্রুত সিএনজি ছেড়ে দিল। দোকানদার সিএনজির দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে আশেপাশে থাকা লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন।
—কখন কি হয়ে যায় আল্লাহই ভালো জানেন। আল্লাহ যেন মেয়েটাকে রক্ষা করে।
.
বাড়িতে এসে সোজা নানুর রুমে চলে গেল সাফিন।
আজাদ সাহেব জোড়ে-জোড়ে শ্বাস টানছেন শুধু।
সাফিন ডক্টরের দিকে তাকাতে তিনি বললেন।
— মসলা জাতীয় খাবার খেয়ে ফেলেছেন বেশি। মেডিসিন দিয়ে দিয়েছি ঠিক হয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।
আমেনা বেগম শশুরের পায়ে তেল মালিশ করতে থাকলেন। সাফিন আজাদ সাহেবের পাশে টুল টেনে বসে মাথায় হাত রাখতে আদাজ সাহেব পিটপিট করে তাকালেন তাঁর দিকে। সাফিন রাগ নিয়ে বললো।
—কতবার বলেছি হাবিজা’বি খাবার খাবে না। কথা শুনো না কোনো! এবার ক’ষ্টটা তো সেই তুমিই পাচ্ছো নাকি?
আজাদ সাহেব হেসে উঠলেন। মৃদুস্বরে বললেন।
—কিচ্ছু হবে না আমার। তোর বিয়ে না দেখে আমি ম’রছি না আপাদত।
সাফিন বিরক্ত হলো। বললো।
—চুপ থাকো তুমি। রেস্ট নেও এখন।
আজাদ সাহেব সাফিনের দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে শীতল কন্ঠে বললেন।
—বিয়েটা কর সাফিন। আমি আজ আছি কাল তে নাও থাকতে পারি। ম’রে গেলেও নাতিবউ না দেখার ক’ষ্টটা এই বুড়োটার বুকে রয়ে যাবে কিন্তু।
আজাদ সাহেব কেঁদে উঠলে সাফিন গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—খুব শিঘ্রই বিয়ে করছি। তুমি রেস্ট নেও।
আজাদ সাহেব হেসে চোখ বুজলেন।
সাফিন রুম থেকে বেড়োতে নিতে জুবায়ের হন্তদন্ত হয়ে তাঁর কাছে আসলে সাফিন ভ্রু জাগিয়ে তাকালো তাঁর দিকে। বললো।
—কি হয়েছে হাঁ’পাচ্ছো কেন তুমি?
—সর্ব’নাশ হয়ে গেছে স্যার। মাএ খবর পেলাম বাসের ওই মেয়েটার গু’লি লেগেছে নাকি। মোহন ফোন করে জানালো আমাকে। ও বাজার থেকে শুনেছে নাকি।
সাফিনের মুখশ্রী হুট করেই কালো মেঘে ছেঁয়ে গেল।
দ্রুত দৌঁড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে আমেনা বেগম পিছু ডাকলেও উওর না দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলে জুবায়েরও সাফিনের পিছনে গাড়ি নিয়ে ছুটলো।
.
হাসপাতালের সাদা রাঙা ফ্লোরে হাঁটু ভাজ করে দুই হাত দিয়ে নিজের পা আঁকড়ে ধরে কাঁদছে সিরাত। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে তোহার এই অবস্থা হয়েছে এটা ভাবতেই আরও কান্না চলে আসছে তাঁর। ভেজা শরীরে ঠান্ডায় রীতিমতো কাঁ’পছে সে। সমস্ত শরীরে তোহার র’ক্তে ছেঁয়ে আছে তাঁর। আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে তোহাকে।
নার্স এসে সিরাতের দিকে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিয়ে বললো।
—এটাতো পুলিশ কেস।তবুও পেসেন্টকে বাঁচানো জরুরি বলে রি’ক্স নিয়েছে ডক্টর। আপনি পেসেন্টের কে হন এখানে সাইন করুন।
সিরাত ধীর পায়ে উঠে দাঁড়িয়ে কাগজটা হাতে নিয়ে কাঁ’পতে থাকলো সে।
কিছু একটা ভেবে বোন লিখে সাইন করে দিলে নার্সটা কাগজটাতে এক পলক চোখ বু’লিয়ে বললেন।
—বোন হন। আচ্ছা ইমিডিয়েটলি কিছু পেমেন্ট করে আসুন। আসছি আমি।বেশি চিন্তা করিয়েন না। ইনশাআল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে আপনার বোন।
নার্সটা চলে যেতে কেঁদে উঠলো সিরাত৷ দীর্ঘশ্বা’স ছাড়া কিছুই আসছে না তাঁর। শহরের কোনো কিছুই তেমন চিনে না সে। একবার তোহার ব্যাগের দিকে তাকিয়ে ফোনটা বের করতে তোহার বাড়িতে ফোন দিবে ভেবেও থেমে গেলে এবার ফোনটা নিজেই বেজে উঠলে জুলিয়া লেখা আছে তাই মুখ চে’পে রিসিভ করতে ওপাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠের রেশ শোনা গেল।
—আপা আমি না পরীক্ষায় এ+ পেয়েছি। এবার কিন্তু আমাকে মোবাইল ঘড়ি কিনে দিতে হবেই হবে।
থ’মকে গেল সিরাত৷ চোখ বেয়ে অনবরত পানি ঝড়ে পরলে আর কথা বলতে পারলো না সে। ফোনটা কে’টে দিয়ে চুপচাপ বসে থাকলে কারো হাতের স্পর্শ মাথার উপরে অনুভব করতে মাথা তুলে তাকিয়ে সাফিনকে দেখে কোনোকিছু না ভেবেই ঝা’পিয়ে পরলো তাঁর বুকে। বুকের ভিতর অজস্র যন্ত্র’ণায় ছেঁয়ে গেছে সিরাতের৷ ভারি হয়ে আশা কান্নাগুলো সাফিনের বুকে ঝড়িয়ে দিতে থাকলো সে। সাফিনের শার্ট ভিজে উঠলে সাফিন ধীর চাহনিতে সিরাতের দিকে তাকিয়ে সিরাতের কান্নাভেজা মুখশ্রী বুক থেকে তুলে দুইগালে তাঁর শীতল হাতের স্পর্শ ছোঁয়াতে সিরাত সাফিনের দিকে তাকালো।
চোখ লাল হয়ে আছে তাঁর। সাফিন সিরাতের কপালে চুমু খেয়ে আবারও বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত ছুঁয়িয়ে দিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—সব ঠিক হয়ে যাবে জান।
সাফিনের কথাটা শান্তনা দেওয়া হলেও এই মূহুর্তে সাফিনকেই বটগাছের ছাঁয়া ভেবে আঁ’কড়ে রাখলো সিরাত।
.
ভোর হওয়ার মৃদু আলো এসে চোখেমুখে ছেয়ে যেতে ঘুম ভে’ঙে গেল সিরাতের। সাফিন তাঁকে দুইহাতে জড়িয়ে ধরে আছে তাঁর বুকে।
আজ আর রাগের মুডে নেই সিরাত। ধীর চাহনিতে হাসপালে পরখ করলে সাফিনের চোখ আপনা-আপনি খুলে গেল।
সিরাতের দিকে মৃদু হেসে মাথায় হাত রেখে বললো।
—চলো বাসায় চলো এখন তুমি। তোহা ঠিক আছে। খেয়ে আসবে কিছু তুমি। সারারাততো কিছু খাওয়া হয়নি তোমার।
সিরাত মৃদুস্বরে বললো।
—ওকে দেখতে চাই।
—উমম, আচ্ছা চলো।
হাসপাতালের বেডের উপর শুয়ে আছে তোহা। এখনও জ্ঞান ফিরেনি তাঁর। বাহির থেকে এক নজর দেখে কেঁদে উঠতে সাফিন রাগ নিয়ে বললো।
— তোমার ন্যা’কা কান্না থামাওতো সিরাত। এতে ও আরও অসুস্থ বোধ করবে। সিরাত সাফিনের দিকে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
— আপনার বা’জে বকা থামান।
সাফিন হাসলো। বললো।
—এখন আমার সাথে বাড়ি যাবে তুমি। দেন ফ্রেশ হয়ে আসবে। ভেজা শরীরে সারারাত জ্বরে কেঁ’পেছো তুমি। এখনই না গেলে হাত পা বেঁধে নিয়ে যেতে বাধ্য হব আমি।
— পেমেন্ট দেওয়া হয়নি এখনও।
—ওসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না চলো এখন।
—মানে?
—মানে কিছু না চলো এখন তুমি।
সিরাত আর কথা বাড়াল না। সত্যিই মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে তাঁর।
.
বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামাতে সিরাত নেমে পরলে কয়েকজন লোক সিরাতের দিকে এগিয়ে এসে ধীর কন্ঠে বললো।
— এটা মিস তোহার বাড়ি না?
সিরাত খানিকটা অবাক হয়ে বললো।
—হ্যা আমি ওর বোন।
লোকটা খানিক ভ্রু জাগিয়ে একটা কাগজ ধরিয়ে দিল সিরাতের হাতে। বললো।
—পাঁচ দিনের ভিতরে এডভান্স ১০ লাক টাকা জমা না দিলে আপনাদের নামে মামলা দেওয়া হবে। আপনার বোন ২৫ লাক টাকা লোন নিয়েছিলেন ব্রাক অপিস থেকে। গত কয়েকমাস ধরে তাঁর কোনো খবরই নেই। এমন হলে তো আর চলে না। তাই খবরটা দিয়ে গেলাম।
সিরাত অবাক হয়ে গিয়ে লেকগুলোর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলে সাফিন ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো তাঁর দিকে।
এক নজর কাগজটার দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বললো।
— আমি তোমাকে ২৫ লাখ কেন পুরো ১ কোটি দেব সিরাত। শুধু শর্ত একটাই আমাকে বিয়ে করতে হবে…..

চলবে……

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-০৭

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ৭

—নানু আমাদের রাজবাড়ীটার কি খবর? ওটা কিন্তু জোস৷ ওইটা আমার চাইই চাই।
খাবার টেবিলে চেয়ার টেনে সাফিন আজাত সাহেবের পাশে বসতে-বসতে কথাটা বললে আজাদ সাহেব হাসলেন। সাফিনের পিঠ চা’প’রে বললেন।
— আমার সবকিছুই তো তোর দাদুভাই। কিন্তু এই রাজবাড়ীতো তোকে আমি এত সহজে দেব না। তাঁর জন্য আমারও কিছু শর্ত আছে।
সাফিন ভ্রু জাগিয়ে ফেললে আমেনা বেগম আচারের চাটনিটা এনে টেবিলে রাখতে-রাখতে হেসে বললেন।
—আমি বেশ বুঝতে পারছি আব্বা কি শর্ত দিবেন।
—বাহ তোমরাতো দেখছি আমাকে নিয়ে ইদানীং সলাপরামর্শ করছো তাঁরমানে?
সাফিনের কথা শুনে হেসে উঠলেন আজাদ সাহেব। বললেন।
—সে তো করতেই হচ্ছে সাফিন। তোর মতো দা’ম’ড়া একটা ছেলের বউ থাকবে না আর তোর বন্ধু- বান্ধবদের বিয়ে হয়ে বাচ্চা-কাচ্চা পর্যন্ত হয়ে যাবে এটাতো আমি বেঁচে থাকতে কখনো হতে দিচ্ছি না ডিয়ার।
সাফিন টেবিল থেকে আচারের চাটনিতে হাত দিতে গেলে আমেনা বেগম চোখ রাঙা’লেন৷ বললেন।
—ওই রাখ আগে ওটা৷ আগে ভাত খাবি তাঁরপর যা খুশি খাস। কোনটা কোন সময় খেতে হয় সেটাও ঠিক ভাবে জানিসনা এখনও। বাপের মতো খালি রাজনীতি করলেই বাঁচিস। আগে বউ ঘরে আসুক একবার তাঁরপর বোঝাব তোর মজা৷ আমি যেটা পারিনি তোর বাপকে দিয়ে, তোর বউকে দিয়ে সেটা করিয়ে ছারব।
হেসে উঠলো সাফিন। বললো।
— বিগ উপস আম্মা৷ তোমার ছেলে যদি বিয়েও করে না কখনো, তবুও রাজনীতি ছারবে না এতটুকু নিশ্চিত থাকো তুমি।
—একটা দেব পাঁ’জি ছেলে।
—যাইহোক নানু কাজের কথায় আসি। রাজবাড়ীটা আমার চাই৷ যেকোন মূল্যেই হোক আমার চাইই চাই।
আজাদ সাহেব ভাতে মাং’সের ডালটা নিয়ে সাফিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে সাফিনের কাঁথে হাত রেখে বললেন।
— এই তোকে ছুঁয়ে কথা দিচ্ছি, তুই যেদিন বিয়ে করে আমার নাতিবউ ঘরে নিয়ে আসবি,সেদিনই রাজবাড়ী তোর নামে লিখে দেব।
সাফিন বাঁকা হাসি হাসলো। বললো।
—তাহলে তো বিয়েটা করতেই হচ্ছে। তা পুরো বাড়ীটার দাম কত হবে বুঝো মিনিমাম। অনেক আগে দেখেছি মনে নাই ঠিক।
—৫০০ কোটি।
দরজা থেকে গম্ভীর কন্ঠের শব্দটা শুনে সাফিন ধীর চাহনিতে সেদিকে তাকালো।
সরোয়ার সাহেব হেসে সাফিনের দিকে তাকিয়ে বললেন।
—হে সাফিন বেটা। কেমন আছো তুমি? কেমন চলে দিনকাল তোমার?
এত দিন পর চাচ্চুকে দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে হেসে জড়িয়ে ধরলো তাঁকে। বললো।
—এইতো চকো’মকো আছি চাচ্চু। তোমার কি খবর?
—আমার খবরও এইতো ভালোই৷
হাসলো সাফিন৷ বললো।
—তো ফ্রেশ হয়ে আসো একসাথে খাওয়া যাবে।
আজাদ সাহেব প্লেট থেকে এক লোকমা সরোয়ার সাহেবের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন।
—নে এক লোকমা খেয়ে যা আব্বার হাতে। কতদিন পর দেশে আসলি আর এসেই তোর রাজ্যের কাজ শুরু করে দিলি। কি চাও বসে কথা বলবি আব্বার সাথে। তা নয়, সারাদিন কাজ তোর!
সরোয়ার সাহেব হাসলেন। এক লোকমা মুখে নিয়ে খেতে-খেতে বললেন।
—আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে আসছি দাঁড়াও। তুমি সাধলে তাই ফ্রেশ না হয়েই খেয়ে নিলাম আজ।
আজাদ সাহেব হাসলেন। বললেন।
—যা তুই তাইলে। তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আস।
সরোয়ার সাহেব উপরে চলে গেলে সাফিন নিজের জায়গায় এসে বসলো। খেতে-খেতে বললো।
—উফ আম্মা, তোমার হাতের রান্নায় জাদু আছে। একবার খেলে আঙুল চাট’তে ইচ্ছে করে।
আমেনা বেগম হাসলেন। বললেন।
—বেশি বলে ফেলছিস।
—কিচ্ছু বেশি বলছি না আমি সুইটহার্ট। আমেনা বেগম হাসলেন। বললেন।
—হয়েছে থাম, খা এখন।
হাসলো সাফিন।
.
শহর থেকে ৪৯৯ জন মেয়েকে কিডন্যাপ্ট করে গ্রামে নিয়ে গিয়ে অন্ধকার রুমে আঁটকে রেখে বিদেশে পাচারের চেষ্টা চালানো হয়েছিল।কিন্তু আমাদের প্রধান মন্ত্রী মো. মোস্তফা কামালের একমাএ ছেলে শাহনেওয়াজ সাফিন অজ্ঞ্যাত লোকগুলোর মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে ওই দলের ১৫ জনকে আটক করে নিরী’হ মেয়েগুলোকে সুস্থ ভাবে সেখান থেকে উদ্ধার করেছেন। উদ্ধার করতে গিয়ে শাহনেওয়াজ সাফিনের হাতে গু’লিও পর্যন্ত লেগেছে৷ জনগনের জন্য এতটা ভাবার জন্য সত্যিই শাহনেওয়াজ সাফিনকে ধন্যবাদ জানালেও কম পরে যাবে জনগনের।
শপিংমলের টিভির স্ক্রিনে নিউজটা দেখা মাএ সিরাতের চোখ বড়-বড় হয়ে গেল সাফিনকে দেখে৷ সিরাত এভাবে তাকিয়ে থাকলে তোহা বললো।
—জান চল ওদিকটাতে ভালো ড্রেস পাওয়া যাবে।
সিরাত তোহার দিকে এক নজর তাকিয়ে ধীর চাহনিতে আবারও নিউজের দিকে তাকলে তোহাও এবার তাঁর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে নিউজটা দেখে ধীর কন্ঠে বললো।
— ৪৯৯ জন মেয়ে! ভাবা যায়,ছেলেটার এলেম আছে বলতে হবে। আচ্ছা যাইহোক ড্রেস দেখবি চল। আমাদের এসব দেখে কাজ নেই।
সিরাতের গ’লা শুঁকিয়ে আসলো যেন।
—তাঁরমানে লোকটা আমাকে বাঁচিয়েছেন? আর আমি তাঁকে চর মেরেছি! উফ সিরাত,তোর দ্বারা কিচ্ছু হবে না৷ এবার কি আর করার, দেখলে সরি বলে দিবি সঙ্গে- সঙ্গে। কিন্তুহ আদৌও কি আর ওনার সাথে দেখা হবে? এত বড় মানুষ উনি আর আমি না জেনেই ওনাকে যাচ্ছে তাই বলে দিয়েছি। খার’প লাগল সিরাতের। আবার কিছুটা রাগও লাগল সাফিনের লিফ কিস আর হু’মকি দেওয়ার কথা মনে পরাতে।
.
শপিংমলের দোতালায় চলে আসাতে লাল-হলুদ লাইটারের আলো চোখেমুখে এসে ছেয়ে যেতে সিরাত ভ্রু কুঁ’চকে ফেললে তোহা হাসলো৷ বললো।
—এখানটাতে এমনটাই থাকে জান। সিরাত মৃদু হাসলো৷ পায়ের ব্যা’থাটাও এখনও কমেনি খুব একটা। তোহা জোর করার কারনে তাঁর সাথে এসেছে নয়তো জীবনেও এখানে আসার ইচ্ছে ছিল না তাঁর।
দোকানদার একের পর এক সালোয়ার কামিজ দেখাতে থাকলে তোহা একেকটা সিরাতের গাঁয়ের সাথে সুট করে কিনা দেখতে থাকলো। বললো।
—উফ দোস্ত। তোর এই কিউট লুকিংয়ে সব ড্রেসই সেই লাগতাছে৷ সিরাত হাসলে তোহা বললো।
—আরে ধুর মজা নিচ্ছি না সিরিয়াসলি বলছি।
সিরাতের দিকে গোলাপিরাঙা সালোয়ার কামিজটা এগিয়ে দিয়ে বললো।
—যা এটা চেঞ্জ রুমে গিয়ে পাল্টে আস ফটাফট। আমি এখানে আছি।
—ছারনা দোস্ত।
তোহা সিরাতের দিকে রাগ নিয়ে তাকাতে সিরাত হাসলো। বললো।
—আচ্ছা মা আমার যাচ্ছি আমি।
.
—স্যার মেয়েদুটো শপিংমলে এসেছে।
জুবায়েরের কথা শুনে সাফিন নীল রাঙা শার্টটা পরতে-পরতে কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে অন করে বললো।
—তুমি এখন কোথায়? ওদের পিছন-পিছন আছো তো নাকি?
জুবায়ের গাড়ির কাঁচটা নামিয়ে শপিং মলের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বললো।
—না স্যার বাহিরে আছি৷ ওরা ভিতরে আছে।
সাফিন রেগে উঠলো। রাগের কন্ঠে বললো।
—ড্যাম ইট । জুবায়ের মেয়েটার বি’পদ এখন। তোমাকে আমি বাহিরে বসে থাকার জন্য পাঠাইনি ওখানে! মেয়েটা কখন কি করছে না করছে? কোথায় যাচ্ছে? পাইটুপাই আমাকে জানাবে৷ দ্রুত ভিতরে যাও৷ আমার অনুমান যদি ভু’ল না হয় তাহলে আজকে সিরাতের উপর এ্যা’টাক হবে নিশ্চিত।
জুবায়ের চমকে উঠলো। ধীর কন্ঠে বললো।
—কিন্তু স্যার এটা লেডিস শপিংমল তো। আমি কিভাবে যাব?
—আরে রাখো তোমার লেডিস শপিংমল। তুমি নিজেই বা মেয়েদের থেকে কম কিসে? দ্রুত ভিতরে যাবে এখনই। দরকার পরলে ছদ্মবেশে যাও।
জুবায়ের কেশে উঠলো। বললো।
—আরও কি-কি যে করাবেন আমাকে দিয়ে আল্লাহই জানেন। এবার আমাকে মেয়ে সেজে যেতে বলছেন ভিতরে।
—কথা কম বলো তুমি। মেয়েটার জীবন বাঁচাতে হবে এখন৷
—ওকেহ স্যার। যাচ্ছি।
বিছানার উপরে থাকা ঘড়িটা হাতে নিয়ে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামাতে সরোয়ার সাহেব মোস্তফা সাহেবের সাথে কথা বলতে-বলতে সাফিনের দিকে এগিয়ে এসে বললেন।
—আরে সাফিন যাচ্ছো কোথায় এখন তুমি? কালকে আমাদের সঙ্গে বিয়েতে এটেন করতে হবে কিন্তু তোমাকে।
সাফিন ভ্রু জাগিয়ে ফেলল। বললো।
—কিসের বিয়ে? মানে কার বিয়ে?
মোস্তফা সাহেব হাসলেন। বললেন।
— আমাদের দলের লোক আছে না ওইযে তোর মিজান কাকা। ওর মেয়ের বিয়ে কালকে। বাড়ি বয়ে এসে ইনভাইট করে গেছে সবাইকে। নির্বাচন না হলে ওসব গাঁয়ে মাখাতাম না। যাইহোক তোকে আমাদের সাথে যেতে হবে কালকে।
বিরক্ত হলো সাফিন৷ বললো।
— আমি কোথাও যাচ্ছি না আপাদত। এখন ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে ড্যাড আসছি পরে কথা হবে এ ব্যাপারে। সাফিন ঘড়িটা হাতে পরতে-পরতে বেড়িয়ে গেলে মোহন সাফিনের দিকে গাড়ির চাবিটা দিতে সাফিন হেসে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো তাঁর।
.
—সাহেব মেয়েটা সাফিনের গার্লফ্রেন্ড মনে হচ্ছে। ৫০০ মেয়ের ভিতরে একজন মাইনাস হয়ে গিয়ে ৪৯৯ হয়ে গেছে। আর সাফিনের কথাবার্তা সেদিকেই ইঙ্গিত করছে আপাদত।
অপর প্রান্তের মানুষটা হেসে উঠলেন। গম্ভীর কণ্ঠে বললেন।
—গু’লি করে উড়িয়ে দেও মেয়েটাকে। সাফিনের সাথে এখন কোনো মেয়েকে মিশতে দেওয়া যাবে না৷ আমার এতদিনের সর্মাজ্য একদিনে শেষ করে দিবে ওই মেয়ে? সেটাতো হচ্ছে না। আজকের ভিতরে মেয়েটার লা’শ আমি নদীতে দেখতে চাই।
—আচ্ছা সাহেব৷ তাহলে আজকেই মেয়েটাকে জ’মের দুয়ারের ঠিকানা দেখিয়ে আসি। মেয়েটার ভাগ্য খারা’প যে শাহনেওয়াজ সাফিনের চোখে লেগেছে সে৷ এবার অনায়াসে অকালে প্রানটা যাবে।
ওপাশ থেকে গাম্ভীর্যপূর্ন হাসির স্বর ভেসে আসলো।
.
গোলাপি রাঙা সেলোয়ার-কামিজটা পরে সিরাত বের হলে তোহা হেসে ছুটে গিয়ে সিরাতকে জড়িয়ে ধরলো। বললো।
—ওয়াও দোস্ত। ইউ আর লুকিং সো হট৷ যে ছেলে তোকে দেখবে আর চোখই ফেরাতে পারবে না বেব্বি।
সিরাত হেসে উঠলো। বললো।
—ধুর, তোর বা’জে বকা থামা। আমি অতটাও সুন্দর নই, তুই বাড়িয়ে বলছিস।
তোহা সিরাতের নাকটা টেনে দিয়ে বললো।
—কলিজাটা আমার। কতদিন পর তোর সাথে এত মজা করছি। সত্যি খুব ভালো লাগছে৷ আচ্ছা তুই এখানে দাঁড়া আমি জাস্ট যাচ্ছি আর আসছি।
—ওকে বেব্বি। যা তুই আমি আছি এখানে।
তেহা চলে যেতে হুট করে কারো শক্ত হাতের বাঁধনে বাঁধা পরে গেলে পিটপিট করে সেদিকে তাকানোর আগেই পাশ থেকে গু’লিটা চলে গিয়ে বিক’ট শব্দ হতে কেঁ’পে উঠলো সিরাত৷ গলা শুকিয়ে আসলো তাঁর। সামনে থাকা মানুষটাকে না দেখেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাঁকে৷
সিরাতের হুট করে এভাবে জড়িয়ে ধরাতে থ’মকে গেল সাফিন। বুকের উপর সিরাতের ঘন হয়ে আশা নিশ্বাসের গরম স্পর্শে কয়েকটা ঢোক গিলল সাফিন। সিরাতের হৃৎস্পন্দনের গতি ক্রমশ বেড়ে যেতে সাফিন নিজেও একহাতে সিরাতকে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখে কানে থাকা ব্লুটুথ অন করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—জুবায়ের লোকটাকে ধরেছো তো নাকি?
—জ্বী স্যার ধরেছি৷ মোহন লোকটাকে গাড়িতে তুলে নিয়েছে অলরেডি। এবার আপনি বললেই গু’লি করে নদীতে ভাসিয়ে দেব।
হেসে উঠলো সাফিন। বললো।
—আপাদত ওকে বাঁচিয়ে রাখো। ওর হাত পা বেঁধে বাড়ীর পিছনে স্টোর রুমে আঁটকে রাখো। ওর পেট থেকে সব কথা বের হলেই নদীতে ভাসিয়ে দেব।
সাফিনের গাম্ভীর্যপূর্ন ভাড়ি-ভাড়ি কন্ঠের রেশ শুনে কেঁপে উঠলো সিরাত। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে তাঁর। দ্রুত সাফিনের বুক থেকে সরে যেতে মৃদু হাসলো সাফিন।
সিরাত কয়েকটা ঢোক গি’লে পিছনে থাকা দেয়ালের সাথে মিশে গেলে সাফিন বাঁকা হাসি হেসে সিরাতের দুইপাশে দেয়ালের সাথে হাত রেখে আঁটকে দিল সিরাতকে। সিরাত এক নজর সাফিনের হাতের দিকে তাকিয়ে তো আরেক নজর সাফিনের তৈলাক্তময় চেহারার দিকে তাকিয়ে রাগ নিয়ে বলতে লাগল।
—আপনাকে একটুর জন্য হলেও সরি বলতে চেয়েছিল সিরাত জানেনতো! কিন্তু নাহ, ভুল ছিল সিরাত ৷ আপনি কারো সরি তো দূরের কথা আপনি কারো ধন্যবাদেরও যোগ্য না এই মূহুর্তে। আপনি আবারও কারো খু’ন করতে চাইছেন!
সিরাতের কথায় সাফিন রাগ নিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস টেনে হাত দিয়ে দেয়ালের সাথে নিজের হাতটা বাড়ি দিতে দ্রুত চোখ বন্ধ করে ফেলল সিরাত। ভয়ে চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরতে থাকলো তাঁর।
সিরাতের বুকের ধুকপুক শব্দ সাফিনের কান ঘেঁষে অন্তর্নিহিত হতে সাফিন চোখ বন্ধ করে আবার খুলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সিরাতের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চে’পে বললো।
—গু’লিটা যদি তোমার বুকে এসে লাগত না সিরাত? তখন খুব ভালো হত তাইনা? আমি তোমাকে বাঁচালাম আর তোমার কোনো অনুতাপই নেই! বরং যে তোমাকে মার’তে চেয়েছে তাঁর জন্য এত দরদ!বাহ লা জাবাব। তো আমি তোমাকে মেরে দেই এখন? ভালো হবে না বলো?
সাফিনের উচ্চকণ্ঠের রেশ কানে এসে পৌঁছাতে ভয়ে কেঁদে উঠলো সিরাত।
বিরক্ত হলো সাফিন৷ রাগের কন্ঠে বললো।
—একটা কথা কতবার বলতে হবে তেমাকে হ্যা? আমার সামনে তোমার ন্যাকা কান্না দেখাতে আসবে না একদম। আমার সয্য হয়না ওসব ন্যাকামো৷ আর একটা ফোঁটা পানি যদি তোমার চোখ বেয়ে আমার শার্টে এসে পরে না সিরাত। তাহলে আমি তোমাকে বাঁচিয়েছি না মাএ? আমিই আবার নিজ হাতে গু’লি করে তোমাকে নদীতে ভাসিয়ে দেব।
শুকনো ওষ্ঠদ্বয় ভিজিয়ে ভয়ে কান্নায় ফোপাঁতে- ফোপাঁতে সিরাত সাফিনের দিকে পিটপিট করে তাকাতে সাফিন সিরাতের লাল হয়ে ওঠা গালের দিকে ধীর চাহনিতে সেদিকে তাকিয়ে দুইহাতে সিরাতের গালে হাত রেখে সিরাতের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে দিলে কেঁপে উঠলো সিরাত। দুজনের নিশ্বাস দুজনের চোখেমুখে ছেয়ে পরাতে সিরাত চোখ নিচু করে তাকাতে সাফিনের পকেট থেকে বন্দুকটা অর্থেক বের হওয়া দেখাতে ভয়ে ঢোক গিলল সে।
—এই বজ্জা’ত লোকটা সবসময় এই বন্দুকটা নিয়ে ঘোরাঘুরি করেন কেন! এনাকে আমি যতবার ভালো ভাবতে চাই ততবারই কোনো না কোনো ভাবে খা’রাপ হবেনই উনি আমার চোখে। বা’জে লোক একটা।
—আমাকে গা’লা>গা’লি করা বন্ধ করবে নাকি আবারও চুমু খাব তোমাকে হুম।
সিরাত চোখ বড়-বড় করে তাকাতে সাফিন সিরাতের কোমরে হাত ছোঁয়াতে নিতে সিরাত দ্রুত সাফিনকে ধা’ক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। রাগে ঘৃ’নায় ফুঁ’সতে-ফুঁ’সতে বললো।
— আপনার উদ্দেশ্যটা ঠিক কি আমাকে নিয়ে? শহরে পা দিতে না দিতেই আপনার ওই গো’মরা মুখো চেহারা দেখতে হয় কেন আমাকে। আর, আর কে বা কারা আমাকে মা’রতে চাইছে? আমিতো কারো কোনো ক্ষ’তি করিনি। কারো পাকা ধানে গিয়ে মইও দেইনি, তাহলে!
সিরাতের কথা শুনে সাফিন হাসলো।
ধীর পায়ে সিরাতের দিকে এগিয়ে আসতে নিতে সিরাত কয়েকপা পিছিয়ে গিয়ে রাগ নিয়ে বললো।
—ব্যাস, আর এক পা আমার দিকে এগোলে ভালো হবে না বলে রাখলাম।
সাফিন হেসে উঠলো। বললো।
—ওহ তাই বুঝি সিরাত। তো কি ভালো খারা’প দেখাবে তুমি আমাকে? আর তোমার মনে যে এই এত-এত প্রশ্ন নিয়ে ঘুরছো না তুমি? যেগুলোর উওর পাচ্ছো না এখনও? সেগুলো মন থেকে মুছে ফললে ভালো হবে বেব্বি। ওগুলো তোমার ওই মোটা মাথায় ঢুকবে না। আগে বাচ্চাদের মতো কান্না করা বন্ধ করো সোনা৷ বাই দ্য ওয়ে,ইউ আর সো প্রিটি বেব্বি। সাফিন সিরাতের দিকে ভ্রু জাগিয়ে তাকাতে সিরাত কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে লোকজনের পায়ের আওয়াজ শুনে সাফিন সেদিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে পিছনের সিঁড়ি থেকে যেতে-যেতে সিরাতের দিকে আঙুল তাক করে বললো।
—খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে আমাদের বেব্বি। রেডি থেকো। এই শাহনেওয়াজ সাফিনের চোখ আর তোমার ওই ঠোঁট। উম্মাহ,বাব্বাই সোনা।
ঠায় দাঁড়িয়ে গেল সিরাত। ক্লা’ন্ত লাগছে আজ তাঁর। শরীরে কোনো শুক্তিই যেন পাচ্ছে না আজ সে। বুক চি’রে একরাশ দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসতে চাইছে তাঁর। লোকজন ছুটে আসতে তোহা সিরাতের দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দৌঁড়ে এসে সিরাতকে জড়িয়ে ধরলো। দ্রুত গতিতে চিন্তার স্বরে বলে উঠলো।
—জান তুই ঠিক আছিস তো নাকি? তোর লাগেনি তো কোথাও। আল্লাহ চল দ্রুত এখান থেকে। এখানে এখন ইনভেস্টিকেশন হবে৷ তোর কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষ’মা করতে পারতাম না রে। তোহা কেঁদে উঠলে সিরাত হাসলো। বললো।
—ধুর ছাই৷ কিচ্ছু হইনি আমার। আমি একদম ঠিক আছি। তুই বল তুই ঠিক আছিস কিনা?
তোহা মৃদু হাসলো। সিরাতের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে সিরাতের কাঁধে হাত দুই হাত রেখে বললো।
— তুই থাকতে আমার কিছু হবে না জান।কলিজাটা আমার।
সিরাত হেসে উঠলো। বললো।
— আচ্ছা চল যাওয়া যাক তাহলে। মাথা ব্যা’থা করছে আজ প্রচন্ড।
— উফ,হুম তারাতাড়ি চল তাহলে এখান থেকে।
.
অন্ধকার রুমটাতে ক্যান্ডেলের নিভু-নিভু আলো এসে চেয়ারে হাত-পা বাঁধা লোকটার চেহারায় এসে ছেঁয়ে যেতে মুখটা স্পষ্টভাবে দেখা গেল তাঁর।
সাফিন ভ্রু জাগিয়ে ফেলল তাঁর দিকে তাকিয়ে। হেসেও উঠলো দৃঢ় ভাবে। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
— কি জানিস তো, এই শাহনেওয়াজ সাফিন কখনো কাঁচা খেলায় নামে না। আমি টোপ ফেললাম, আর তোরা সেই টোপে পা রেখে টোপটা গি’ললি৷ মাছতো জাল ফেললে সেই জালে ধরা পরবেই এটা স্বাভাবিক। ওহ নো, তুইতো জানিসই না টোপটা কি ছিল। হাহাহা।
সাফিনের হাসিতে কালো রাঙা জ্যাকেট পরিহিত মানবটি সাফিনের দিকে ভয়ের সহিত তাকাল।
সাফিন বললো।
— এক-এক করে বলি তাহলে তোকে। প্রথমে ৫০০ মেয়ে থেকে একজনকে সরিয়ে দিয়ে ৪৯৯ করলাম। কেন করেছি? শাহনেওয়াজ সাফিন কি এতটাই বোকা যে নিজের লাভ ছাড়া কাজ করবে। উপস, ওটার মাধ্যমে তোদের মাথাটা একটু নাড়ালাম আরকি, যাতে তোদের ফোকাসে চলে আসে মেয়েটি। তারপর মেয়েটাকে নিয়ে সিএনজিতে উঠে প্রমান করলাম মেয়েটার প্রেমে হা’বু’ডু’বু খাচ্ছি আমি। আমি খুব ভালো করেই জানতাম আসল মাথাটা ওখানে আসেইনি। বরং আমাদের বাসের পিছু নিয়েছিস তুই। অবশ্য শাহনেওয়াজ সাফিনের বাঘের চোখ। তাই বাসের মিরর থেকে কালো গাড়ি চোখ এরাইনি। খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছি তোর বসকে পায়ের ত’লায় এনে না ফললে আমার শান্তি হবে না। আর তুই যে তোর বসের খাশ চাক’র, তাই তোকেই আটকালাম। বাই দ্য ওয়ে, এখন নিশ্চয়ই ভাবছিস শাহনেওয়াজ সাফিন ফুল বোকা নয়তো তখনই তোকে ধরে ফেলতে পারতো।
আসলে কি জানিসতো, আমি খুব ভালোভাবে ঠান্ডা মাথায় তোদেরকে ধরতে চেয়েছি। এইসব দৌঁড়া দৌঁড়ি আমার পোশায় না আবার৷ আর তোরাও যে মেয়েটাকে আমার গার্লফ্রেন্ড ভেবে এ্যা’টাক করবি, এটা আমি খুব ভালোভাবেই জানতাম৷ আর হলোও তাই, আসলি তোরা৷ বাট বিগ উপস,ধরা খেয়ে গেলিতো সেই শাহনেওয়াজ সাফিনের হাতে! আসলে কি বলতো,পিপিলিকার পাখা গজে মরিবা’র পরে। তোর আর তোর বসের ঠিক একই অবস্থা হয়েছে।মেইন টপিকে আশা যাক তাহলে, এবার বল তোর বস কে? কোনো রকম চালাকি করার চেষ্টা করলে ওইযে জুবায়েরের হাতে বন্দুকটা দেখছিস, সোজা তোর মাথায় এসে মাথা ফু’টো হয়ে এফোর-ওফোর হয়ে যাবে।
সাফিনের কথা শুনে ভয়ে ঢোক গিলল লোকটি। ভয়ে জড়সড় হয়ে গেলে সাফিন দরজা ঠেলে বের হয়ে যেতে-যেতে জুবায়েরের উদ্দেশ্যে বললো।
—জুবায়ের ছেলেটাকে আচ্ছা মতো মালিশ করো দুই-তিন ঘন্টা। হয় ও মুখ খুলবে নয়তো ওকে উড়িয়ে দেবে৷ শাহনেওয়াজ সাফিন অন্য ভাবেও আসল কার্লপ্রিট ধরতে পারবে খুব।
জুবায়ের হেসে উঠলো। বললো।
—জ্বী স্যার।
.
—দোস্ত উঠ তারাতাড়ি। আজকে একটা অনুষ্ঠানে যাব তোকে নিয়ে।
সকাল-সকাল তেহার চেচামেচি শুনে প্রচন্ড মাথা ব্যা’থায় মাথার উপর বালিস চে’পে রাখলো সিরাত৷ ধীর কন্ঠে বললো।
—জান আমি কোথাও যাচ্ছি না আজকে। তুই যা প্লিজ।
তোহা রাগ নিয়ে মুখ ভার করে বললো।
—তুই যাবি তোর ঘাঁ’ড় যাবে। কথাটা বলেই সিরাতকে টেনে খাট থেকে নামিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে হাতে ব্রাশ ধরিয়ে দিয়ে বললো।
—প্লিজ বেব্বি ফ্রেশ হয়ে নে। আমার একটা কলিগের বিয়ে আজকে৷ আমি যাব আর তুই এখানে বাড়িতে বসে থাকবি, সেটাতো তোহা কিছুতেই হতে দিচ্ছে না জান। পাঁচ মিনিট ওয়েটিং এ থাকছি জলদি বের হ আমি শাড়ী বের করছি তোর জন্য।
তোহা চলে যেতে সিরাত আয়নায় নিজেকে দেখতে নিতে সাফিনের তৈলাক্তময় চেহারাটা ভেসে উঠতে নিজের গালে নিজে চর মেরে বিরবির করে বললো।
—এই শ’য়’তা’নটা আমার পিছু ছাড়ে না কেন? বাসাও শান্তি নেই! খোদা ওই বজ্জা’ত লোকটার সাথে যেন আমার আর জীবনে দেখা না হয়। কথাটা বলেই ব্রাশ করতে থাকলো সিরাত।

চলবে…..