Tuesday, June 24, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 269



আলো অন্ধকারে পর্ব-০২

0

#আলো_অন্ধকারে (পর্ব ২)

১.
রাজধানীর একটা নামকরা হাসপাতালের কেবিনে শুয়ে আছেন জাফর খান। মৃদু নাক ডাকছেন। দিলশাদ পাশেই বসে তাকিয়ে ছিল। আজ সাতটা দিন পার হয়ে গেল জাফর এখানে। অত বড়ো একটা দূর্ঘটনার খবর নিতে পারেনি। ডাক্তার বলেছেন বাজে রকমের স্ট্রোক করেছে জাফর। তাতে করে একটা পাশ পুরো অবশ হয়ে গেছে। কথা বলতে গেলে জড়িয়ে যাচ্ছে। শুন্য চোখে তাকিয়ে থাকেন দিলশাদ। একটা রাতের ব্যবধানে পুরো পৃথিবী পালটে গেল। ফ্যাক্টরি পুড়ে শেষ, একটা যন্ত্রপাতিও বাঁচানো যায়নি। আর সেই বড়ো অর্ডারের সব পোলো শার্টগুলো পুড়ে এখন কয়লা।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিলশাদ জানালার কাছে এসে দাঁড়ায়। এই ফ্যাক্টরিটাই ছিল ওদের একমাত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। জাফর যখন এটা শুরু করল তখন খুব ছোট ছিল। মনে আছে দিলশাদ বিয়ের সব গহনা বিক্রি করে দিয়েছিল এই ফ্যাক্টরিটা দাঁড় করাতে। ওর নামেই নাম রেখেছিল ‘দিলশাদ গার্মেন্টস’। আর ভাগ্য যেন পায়ে এসে ধরা দিয়েছিল। একের পর এক অর্ডার পাচ্ছিল। ব্যবসা ফুলে ফেঁপে বড়ো হচ্ছিল। কিন্তু এখন? এখন যে আর কিছুই নেই। কেন যেন এখন নিজের নামটাকে দূর্ভাগা মনে হয়। জাফর আগে বলত ওর নামটা পয়মন্ত, তাই এত উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে ওর নামটা অশুভ।

ভাবনার এই পর্যায়ে ফোন আসে। চেয়ে দেখে ফ্যাক্টরি ম্যানেজার মহিবুরের ফোন। ও ধরতেই ওপাশ থেকে সালাম দিয়ে মহিবুর বলে, ‘ম্যাডাম, আমি হাসপাতালে এসেছিলাম। আপনার সাথে দু’টো জরুরি কথা ছিল।’

এই হয়েছে এক জ্বালা। জাফর অসুস্থ, সব এখন ওকে সামলাতে হচ্ছে। এই কোম্পানির ও নামেমাত্র ডিরেক্টর ছিল। যা করার সব জাফরই করত। কিন্তু এখন ওকে দৌড়ুতে হচ্ছে। ফোনে মহিবুরকে নিচের ওয়েটিং রুমে বসতে বলে। তারপর একজন নার্সকে জাফরের দিকে লক্ষ রাখতে বলে ও বেরোয়।

হাসপাতালটা ঝকঝকে পরিস্কার। অন্য হাসপাতালগুলোর মতো না। দেখলে মনে হয় হোটেলে আছে। অবশ্য এর জন্য বেশ মোটা অংকের টাকা গুনতে হয়। টাকার কথা মনে হতেই দিলশাদে বুকের ভেতর একটা অস্থিরতা টের পায়। আগে তো প্রতি মাসে অনেকগুলো টাকা ওর একাউন্টে জমা হতো। কিন্তু এখন থেকে তো এই টাকাটা আসবে না। জাফর অসুস্থ। ও কবে সুস্থ হবে, কবে নতুন করে ফ্যাক্টরি দাঁড় করাবে কে জানে। আদৌ কি সম্ভব হবে কি-না জানা নেই। হঠাৎ করেই শরীরটা কেঁপে ওঠে, যদি সব আগেরমতো ঠিকঠাক না হয়?

দিলশাদ দূর থেকেই মহিবুরকে দেখতে পায়। লম্বা চওড়া একটা মানুষ, সবসময় প্রাণবন্ত। ফ্যাক্টরির সেই শুরু থেকেই আছেন। কত কত ঝামেলা হয়েছে তা এই মহিবুর এক হাতেই সামলেছে। একবার এক শ্রমিক ছাদ থেকে পড়ে মারা গেল। তখন তো গুজব রটানো হলো মালিকপক্ষ মেরে ফেলেছে। সেবার বেশ ঝামেলা হয়েছিল, মহিবুর তখন সেটা দক্ষ হাতেই সামলেছিল। কিন্তু আজ সেই দৃঢ়চেতা মানুষটাকে কেমন যেন ভেঙ পড়া মানুষ মনে হচ্ছে। কেমন মাথা নিচু করে বসে আছেন।

মহিবুর ওকে দেখেই উঠে দাঁড়ায়, বিনয়ের সাথে সালাম দিয়ে বলে, ‘সরি ম্যাডাম, হাসপাতালেই আসতে হলো।’

দিলশাদ মাথা নেড়ে বলে, ‘না সমস্যা নেই। আপনাকে তো আসতেই হবে। আপনার উপর এখন সব। এবার বলুন ইন্স্যুরেন্স ক্লেইম করেছেন?’

মহিবুর হতাশ গলায় বলে, ‘ম্যাডাম, আমাদের প্রাইমারি ইন্স্যুরেন্স ছিল না। তাতে করে আমরা হয়তো খুব একটা ক্ষতিপূরণ পাব না। আর বায়িং হাউজ জানিয়ে দিয়েছে ওরা ইতোমধ্যে অন্য গার্মেন্টসে আমাদের অর্ডারটা শিফট করে দিয়েছে। বায়াররা সমবেদনা জানিয়েছে কিন্তু ওরা আর দেরি করতে চায়নি।’

দিলশাদ টের পান বুকের ভেতর সেই মনের বাঘটা ওকে গ্রাস করে নিচ্ছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ও মরিয়া গলায় বলে, ‘বিজিএমইএ থেকে কোন কিছু করবে না?’

মহিবুর মাথা নিচু করে বলে, ‘ম্যডাম, আমাদের ক্ষতিটা তো অনেক বড়ো। অল্প কিছু ফান্ড পাওয়া যাবে তা দিয়ে আমাদের গতমাসের ইলেক্ট্রিসিটি বিলটা হয়তো পরিশোধ করতে পারব। কিন্তু এখন যেটা বড়ো সমস্যা সেটা হলো শ্রমিকদের বকেয়া বেতন। সবাই প্রতিদিন ফ্যাক্টরির গেটে এসে ভীড় করছে। এখনও কিছু বলছে না, কিন্তু ক’দিন পরেই এরা আন্দোলনে নামবে।’

দিলশাদ অবিশ্বাসের গলায় বলে, ‘যে মালিক এত বছর ওদের রুটি রুজির ব্যবস্থা করল তার এমন দুর্দিনে ওরা পাশে দাঁড়াবে না?’

মহিবুর ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বলে, ‘আসলে ম্যাডাম ওদের তো প্রতি মাসের বেতনের টাকায় সংসার চলে। এরা হুট করে এখন কোথাও কাজও পাবে না। তাই এরা এমন করছে।’

দিলশাদ হতাশ গলায় বলে, ‘তাহলে এখন কী করা যায় বলুন তো?’

মহিবুর কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে, তারপর গলাখাঁকারি দিয়ে নিচু গলায় বলে, ‘ম্যাডাম, আমাদের পাশেই আরেকটা গার্মেন্টস আছে। ওরা আমাদের এই পুড়ে যাওয়া গার্মেন্টস কিনে নিতে চায়। যদিও এখন জমি ছাড়া আমাদের আর কিছু নেই। পুরো বিল্ডিংটা ভেঙে ফেলতে হবে। যে নেবে তাকে নতুন করে করতে হবে। ওরা জমিটার জন্যই নিতে চেয়েছে। আর ভালো অফারও করেছে। আমার মনে হয় ওদের কাছে বিক্রি করে দেওয়াই উচিত।’

দিলশাদ তীক্ষ্ণ চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর কেটে কেটে বলে, ‘আপনাকে ওরা কত টাকা দিয়েছে এই কথা আমাকে বলার জন্য? নাকি আপনি ইতোমধ্যে ওই গার্মেন্টসে জয়েন করেছেন? এতটা অকৃতজ্ঞ হবেন আশা করিনি। সাতটা দিন পার হয়নি অমনি আপনার আসল চেহারা দেখিয়ে দিলেন? আমার তো এখন মনে হচ্ছে আপনিই শ্রমিকদের খেপিয়ে তুলছেন।’

মহিবুর রাগ করে না। ম্যাডাম এমনিতে খুব ভালো মানুষ। কতবার ফ্যাক্টরিতে এসেছেন। সবার সাথে গল্প করেছেন। এমনিতেই খুব সুন্দর, তার উপর সবার সাথে ভালো ব্যবহার করতেন। কিন্তু এখন মানুষটার মাথা ঠিক নেই। আর থাকার কথাও না। এত বড়ো বিপদ যে আসেনি আগে।

মহিবুর নরম গলায় বলে, ‘ম্যাডাম, আমাদের ব্যাংক লোন আছে প্রায় পঞ্চাশ কোটি টাকার মতো। স্যার এই বড়ো অর্ডারটা ডেলিভারি দিতে অনেক লোন করে ফেলেছিলেন। ব্যাংকে প্রতি মাসে আমাদের বড়ো একটা অংক কিস্তি দিতে হয়। এ মাস থেকে সেটা আর দেওয়া যাবে না। কিস্তি না দিতে পারলে একটা সময় ব্যাংক পুরো সম্পত্তি নিলামে তুলবে। আমি যতদূর জানি আমাদের ফ্যাক্টরিটাও মর্টগেজ রাখা। তাই বলছিলাম আমাদের দেরি করা উচিত না। সবার আগে ঋণগুলো পরিশোধ করে হাতে নগদ কিছু টাকা রাখা। স্যার সুস্থ হোক, আমরা তখন আবার নতুন করে শুরু করব।’

শেষ কথাটা তেমন জোরালো শোনায় না। দিলশাদ স্থির চোখে তাকিয়ে থাকেন। এই রুঢ় সত্যটা জানা ছিল না। মাথার ভেতরটা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে বলেন, ‘আমাকে একটু ভাবার সময় দিন।’

মহিবুর উঠে দাঁড়ায়, ‘আচ্ছা ম্যাডাম। তবে খুব বেশিদিন সময় নেবেন না। বিপদের সময় মানুষের পেছনে শত্রু আরও বেশি করে লাগে। আমি একটু এখন বিজিএমইএ এর অফিসে যাব। আপনাকে জানাব কিছু হলো কি-না।’

মহিবুর চলে যায়। দিলশাদ শুন্য চোখে তাকিয়ে থাকে। তিলে তিলে গড়ে তোলা সম্রাজ্য এক রাতেই এমন করে পুড়ে ছাই হয়ে গেল! সব বেচে দিতে হবে!?

২.
জাফর খান শরীরের সবটুকু শক্তি এক করে বাম হাতটা তোলার চেষ্টা করেন, পারেন না। একটা অক্ষম রাগ টের পান। বাম পা টাও একই অবস্থা। হুইলচেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে বেডরুমের জানালার কাছে এসে বাইরে উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করেন। শীতের সকাল, বাইরে এখনও হালকা কুয়াশা। সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করেই মনে হয় ওর জীবনে হঠাৎ করেই কুয়াশায় ঢেকে গেল।

এমন সময় পেছন থেকে দিলশাদ নরম গলায় ডাকে, ‘জানালার কাছ থেকে সরে এসো, ঠান্ডা লেগে যাবে। চা দিচ্ছি, একটু চুমুক দাও।’

জাফর ওর দিকে ব্যথিত চোখে তাকায়।

দিলশাদ চায়ের কাপটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, ‘ধরে রাখতে পারবে তো? নাকি আমি খাইয়ে দেব?’

জাফর মাথা নেড়ে একটু জড়ানো গলায় বলেন, ‘না, আমি পারব।’

কাঁপা হাতে চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলেন, ‘দিলশাদ, আমি ফ্যাক্টরিতে যাব। আমি নিজের চোখে একটু দেখতে চাই।’

গত ক’টা দিন এই একটা কথা বার বার বলছে জাফর। কিন্তু ডাক্তারের কড়া নিষেধ উত্তেজনা হতে পারে এমন কিছু না করা। পুড়ে যাওয়া ফ্যাক্টরির ছবি জাফর কিছুতেই সইতে পারবে না। উলটো ভীষণ একটা ক্ষতি হয়ে যাবে।

ও আলতো গলায় বলে, ‘হ্যাঁ, যাবে তো। আরেকটু সুস্থ হয়ে নাও। ডাক্তার বলেছেন মাস ছয়েকের মধ্যে তুমি আবার আগেরমতো হাঁটা চলা করতে পারবে। শুধু নিয়ম করে ফিজিওথেরাপি নিতে হবে। আর এই সফট বলটা ওই হাতে নিয়ে বার বার মুঠোবন্ধ করে প্রাকটিস করো। তাতে করে হাতটা সচল হবে।’

জাফর মাথা নাড়েন। বুঝতে পারেন ওকে ফ্যাক্টরি দেখতে নিয়ে যাবে না এরা। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘মহিবুরকে কাল একটু সব হিসাবপত্র নিয়ে আসতে বলো তো। অনেক টাকা ঋণ আছে।’

দিলশাদের বুকটা চলকে ওঠে। ক’টা দিন ধরে ঘুমোতে পারেন না। ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা চেপে ধরে। একটা মাস প্রায় চলে গেল কোথাও থেকে কোনো সুখবর নেই। বিজিএমইএ কিছু টাকা দিয়েছে। তাই দিয়ে গ্যাস বিল, ইলেকট্রিসিটি বিল মেটানো হয়েছে। শ্রমিকরা এর মধ্যেই এক দু’বার মিছিলও করেছে বকেয়া বেতনের দাবিতে। ফ্যাক্টরি বিক্রির ব্যাপারে জাফরের সাথে কথা বলা দরকার। কিন্তু এই ক’টা দিন সাহস হয়নি। আজ বলতেই হবে।

দিলশাদ পেছন থেকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘জাফর, আমাদের যা ক্ষতি হয়ে গেছে তা তো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। বর্তমান নিয়ে একটু ভাবতে হবে। তুমি তো নিজেও বললে অনেক টাকা ঋণ আছে। আর এদিকে আমাদের আয় রোজগারের পথ একদম বন্ধ। সব কিছু বাদ দিলেও সংসার খরচ আছে মাসে লাখ পাঁচেকের মতো। তার উপর তোমার চিকিৎসার ব্যয়। এখন জমা টাকা ভেঙে খাচ্ছি। একটা বছর পর কী হবে ভাবতেই বুক কেঁপে উঠছে। তাই ভাবছি একটা কাজ করলে কেমন হয়।’

জাফরের মুখের একটা পাশ কাঁপতে থাকে। জিভটা কেমন অবাধ্য হয়ে জড়িয়ে যায়। কষ্ট করে বলেন, ‘কী করতে চাও তুমি?’

দিলশাদ এবার ওকে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ফ্যাক্টরিটা বেচে দেই। তাতে করে ব্যাংকের ঋণগুলো শোধ হবে আর হাতেও কিছু নগদ টাকা থাকবে। সেটা ব্যাংকে রেখে ইন্টারেস্টের টাকায় আমাদের বেশ ভালোভাবেই চলে যাবে।’

জাফর বুকের ভেতর সূক্ষ্ম একটা ব্যথা টের পান। ধীরে ধীরে মুখ লালচে হয়ে ওঠে। চোখমুখ শক্ত করে বলেন, ‘আমি ফ্যাক্টরি বেচব না। আমি সুস্থ হয়ে নিই, তারপর সব ঠিক করে ফেলব।’

দিলশাদ থমকায়। জাফরের ভেতরের কষ্টটা টের পায়। কেমন বাচ্চাদের মতো জেদ করে কথাটা বলল। ও নিজেও হয়তো জানে আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব। তাও কিছুটা হয়তো হতো যদি ও সুস্থ থাকত।

ঠিক এই সময় নিচের গেটে একটা হইহল্লা শোনা যায়। দিলশাদ জানালা দিয়ে উঁকি দিতেই বুক হিম হয়ে যায়। প্রায় শ’খানেক লোক গেটের বাইরে চিৎকার চেচামেচি করছে। গেট ধরে ধাক্কাচ্ছে। এরা কারা?

এই সময় নিচ থেকে ইন্টারকমে ফোন আসে। দিলশাদ ফোনটা ধরতেই নিচের সিকিউরিটি কাশেম মোল্লা আতংকিত গলায় বলে, ‘ম্যাডাম, পুলিশে খবর দেন। গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বাইরে হট্টগোল করতেছে। এরা মনে হয় গেট ভাইঙা ফেলাইব।’

দিলশাদ বিপদ টের পান। শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে বাসায় চলে এসেছে? মাথাটা কেমন ঘুরে ওঠে। এদেরকে কতক্ষণ আটকে রাখতে পারবে ওরা? হাতে সময় নেই। দ্রুত ও ৯৯৯ এ ফোন দেয়। তারপর যতটুকু সম্ভব বুঝিয়ে বলে সাহায্য চায়।

জাফর চোখ বড়ো বড়ো করে ওর কথা শুনছিল। ব্যাপারটা বুঝতে একটু সময় লাগে। তারপর দ্রুত ও হুইল চেয়ার ঘুরিয়ে জানালার কাছে এসে উঁকি দিতেই বিস্ফারিত চোখে নিচে গেটের ওপাশে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের দিকে তাকিয়ে থাকেন।

দিলশাদ ফোন রেখে একটানে ওকে জানাল থেকে সরিয়ে আনে। তারপর ভয়ার্ত গলায় বলে, ‘জাফর, এরা মনে হয় বাসায় ঢুকে পড়বে। আমি বাসার দরজা বন্ধ করে আসি।’

দিলশাদ দ্রুত কয়েকটা কাজ করে। বাসার মূল দরজাটা ভালো করে লক করে। তারপর চিৎকার করে আরুশ আর নওরিনকে ডেকে বাবার রুমে যেতে বলে।

নওরিন বিরক্ত গলায় বিলে, ‘কী হয়েছে আম্মু, অমন করে ডাকছ কেন?’

দিলশাদ কোনো কথার উত্তর দেন না। দ্রুত হাতে বেডরুমের দরজা বন্ধ করেন। আরুশ অবাক চোখে জানাল দিয়ে বাইরে দেখছিল। ও হঠাৎ আতংকিত গলায় বলে, ‘আম্মু, দারোয়ান আংকেলকে মারছে কারা যেন। আর আমাদের গেট ভেঙে ফেলেছে।’

দিলশাদ ঝট করে ওর দিকে ফেরেন। নওরিন ততক্ষণে জানালার কাছে চলে গেছে। ও আতংক নিয়ে তাকিয়ে দেখে অনেকগুলো মানুষ ওদের বাড়ির ভেতর ঢুকছে। সবার চোখমুখ হিংস্র।

দিলশাদ চিৎকার করে ওঠেন, ‘জানালা থেকে সরে এসো।’

কথাটা শেষ হয় না, তার আগেই বড়ো একটা ইটের টুকরো এসে জানালার কাচে আঘাত হানে। নওরিন আর্ত চিৎকার করে আরুশকে জড়িয়ে ধরে মেঝেতে শুয়ে পড়ে।

দিলশাদের মনে হয় জ্ঞান হারাবেন। জাফর তোতলানো গলায় কিছু বলতে চায়, পারে না।

দিলশাদ পাগলের মতো দৌড়ে ওদের কাছে যান। টেনে হিঁচড়ে ওদের এপাশটায় নিয়ে আসেন। আরুশের সারা গায়ে হাত বুলিয়ে বলেন, ‘তুই ঠিক আছিস তো বাবা?’

আরুশ ভয় পাওয়া গলায় বলে, ‘আম্মু, আপুর কপালে রক্ত।’

দিলশাদ ঝট করে মেয়ের দিকে তাকাতেই বুকটা অবশ হয়ে যায়। দ্রুত ওর মুখটা তুলে ধরেন। তারপর নিশ্বাস চেপে ছোট্ট একটা কাচের টুকরো টেনে বের করে নিয়ে আসেন। নওরিন ‘উফ’ বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।

দিলশাদ এবার একটা টিস্যু দিয়ে জায়গাটা চেপে ধরেন। রক্তে সাদা টিস্যুটা লাল হয়ে যেতে থাকে। ওদিকে বাইরের দরজায় ধড়াম ধড়াম করে শব্দ হচ্ছে। পুলিশ কখন আসবে? যদি তার আগেই এরা দরজা ভেঙে বাসায় ঢুকে পড়ে?

আরুশ, নওরিন ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। জাফর শুধু চোখ বড়ো বড়ো করে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কেমন দ্রুত নিশ্বাস পড়ছে ওর। দিলশাদ দুই ছেলেমেয়েকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আতংকিত হয়ে পুলিশ আসবার অপেক্ষা করতে থাকে।

(চলবে)

মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সুবাস
শিমুলতলী, গাজীপুর

আলো অন্ধকারে পর্ব-০১

0

#আলো_অন্ধকারে (পর্ব ১)

১.
ছাই রঙের মার্সিডিজ সেলুন কার থেকে এইমাত্র যে ব্যক্তিটি নামলেন তার বয়স আনুমানিক বাহান্ন বছর। না, আপনারা যেমন ভাবছেন তেমন না, দেখলে এখনও তরুণ মনে হয়। লম্বায় তা পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি তো হবেনই। গায়ের রঙ গৌর, উন্নত নাক, বুদ্ধিদীপ্ত দু’টি চোখ। নিয়ম করে জিমে যান, পরিমিত খাবার খান, নামী পার্লারে এন্টি হেয়ার ফল ট্রিটমেন্টও নেন নিয়মিত। তাই মাথার চুল সেভাবে পড়েনি। হাতের ঘড়িটা যদি একটু কষ্ট করে দেখতে পান তাহলে দেখবেন সেটি রোলেক্স ব্র‍্যান্ডের দামি একটা ঘড়ি। পায়ে মার্জিত ক্লার্ক ব্র‍্যান্ডের নামী স্যূ। আর গায়ে ধূসর রঙের ব্লেজার। একটা পাশ যদি উল্টে দেখা যেত তাহলে দেখতে পেতেন সেটাও অরিজিনাল ‘CK’ ব্রান্ডের। হ্যাঁ, লোকটা সৌখিন। তা তিনি হতেই পারেন। একটা মাঝারি সাইজের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক, তাতে করে বছর শেষে বেশ ভালো মুনাফা জমা হয় ব্যাংক একাউন্টে। ওহ, ওনার নামটা এখনও বলা হয়নি। সার্টিফিকেটের নাম, জাফর খান। রাজধানী ঢাকা শহরের একটা নামকরা বিপণি বিতানে উনি ঢুকছেন। গল্পটা এখান থেকেই শুরু হলো।

কাচের দরজা ঠেলে জাফর খান ভেতরে ঢুকতেই দোকানের চৌকস ছেলেটা এক গাল হেসে সালাম দেয়, ‘স্যার, এবার একটু দেরি করে এলেন।’

জাফর ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘তাই নাকি? গত মাসেই তো এখান থেকে এই ব্লেজারটা নিয়ে গেলাম।’

কথাটা বলে গায়ে চাপানো ব্লেজারের দিকে ইংগিত করেন।

ছেলেটা হেসে বলে, ‘আপনি তো স্যার প্রতি সপ্তাহে একবার হলেও আমাদের দোকানে আসেন।’

তা কথাটা মিথ্যে না। শীতের সময় নতু নতুন ব্লেজার পরা একটা নেশার মতো। আর গতকালই ফ্যাক্টরি থেকে সেই সুখবরটা এসেছে। মাস ছয়েক আগে প্রায় পঞ্চাশ লাখ পিস পোলো শার্টের অর্ডার পেয়েছিল। সেটার সব কাজ শেষ। এই একটা অর্ডার ঠিকঠাক সাপ্লাই দিতে পারলে সারা বছর আর কোনো কাজ না করলেও হবে।

জাফর খান ক্রিম কালারের একটা গুড়ি চেকের ব্লেজার হাতে নিতেই দোকানি ছেলেটা প্রশংসার গলায় বলে, ‘স্যার একদম এক নম্বর জিনিসটাতেই হাত দিয়েছেন। আপনার জহুরির চোখ। গতকালই এটা থাইল্যান্ড থেকে এসেছে, ইতালির বিখ্যাত ব্রিওনি ব্র‍্যান্ডের। এটা কিন্তু কপি না অরিজিনাল।’

জাফর ভারিক্কি গলায় বলেন, ‘আমাকে তুমি শেখাবে? জানো তো আমার নিজের গার্মেন্টস আছে।’

ছেলেটা সলজ্জ হাসে।

জাফর এবার পরে একবার ট্রায়াল দেন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দুই কাঁধের দিকে খেয়াল করে দেখেন ব্লেজারটা নেমে গেল কি-না। মুখে একটা সন্তুষ্টির ছাপ ফুটে ওঠে। তারপর ছেলেটাকে ইশারা করতেই ব্লেজারটা খুলে নিয়ে যত্নের সাথে একটা কাভারে ভরে দেয়।

বিল দিতে যেয়ে একবার তাকান, তারপর ক্রেডিট কার্ডটা বাড়িয়ে দিতেই দোকানি ছেলেটা মেশিনে পঁচিশ হাজার টাকার অংক টাইপ করে। জাফর খান সাধারণত দামাদামি করেন না। তাতে ওরা হয়তো এক দু’হাজার টাকা বেশিই রাখে। তা রাখুক, কিন্তু দামাদামি জিনিসটা একদমই পছন্দ না।

বিল মিটিয়ে বের হতে যেতেই থমকে দাঁড়ায়, প্রবীণ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হালিমুজ্জামান সাহেবকে দেখা যাচ্ছে। সাদা পাঞ্জাবির উপর সোনালি বর্ডার দেওয়া কালো কাশ্মিরী শাল পরেছেন।

ওকে দেখে সহাস্যে হেসে এগিয়ে আসেন, ‘আরে জাফর, কী অবস্থা। কেমন চলছে সব?’

জাফর এগিয়ে গিয়ে সালাম দেয়, ‘এই তো বড়ো ভাই। আপনাদের দোয়ায় ভালোই চলছে সব।’

হালিমুজ্জামান মাথা নেড়ে বলে, ‘চললেই ভালো। থেমে যাওয়া যাবে না।’

জাফর বিনয়ের সাথে বলে, ‘আপনারা যে পথ করে দিয়ে গেছেন, আমরা তার ফল ভোগ করছি।’

হালিমুজ্জামান স্নেহের চোখে তাকান, তারপর নরম গলায় বলেন, ‘হ্যাঁ জাফর। সেই আশি একাশি সালের দিকে আমি একটা স্যূটকেসে কিছু কাপড়ের স্যাম্পল নিয়ে লন্ডনের হিথ্রো এয়ারপোর্টে নামি। বায়ারদের যখন বলি আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি তখন ওরা দেশটা চিনতেই পারত না। বলত এটা ইন্ডিয়ার কোথায়? মুম্বাইতে? সেসময় পকেটে করে ওয়ার্ল্ড ম্যাপ নিয়ে যেতাম। বিন্দুর মতো ছোট্ট দেশটা দেখিয়ে বলতাম এই যে, এটা ইন্ডিয়ার পাশেই আলাদা একটা দেশ। বায়াররা স্যাম্পল দেখতে চাইত না। কত কায়দা কানুন করে ওদের কাছ থেকে অল্প অল্প করে অর্ডার নিতাম। আজ এখন সেই শিল্পটা সারা পৃথিবীতে আমরাই নেতৃত্ব দিচ্ছি।’

এই গল্পটা ওর শোনা। যতবার দেখা হয় উনি গল্পটা বলেন। কখনোই বিরক্ত লাগেনি। এই মানুষগুলোর কাছে মনের গভীর থেকে একটা কৃতজ্ঞতা বোধ করেন জাফর খান।

কিছুক্ষণ গল্প করে বিদায় নিয়ে গাড়িতে ওঠেন। একবার হাতঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখতে পান রাত নয়টা প্রায় বাজে। এবার ফোন বের করে স্ত্রী দিলশাদ খানকে ফোন করতেই কেটে যায়। ভ্রু কুঁচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকেন জাফর খান।

২.
দিলশাদ খান আগ্রহের সাথে একটা ডায়মন্ডের আংটি দেখছিলেন। বডিটা গোল্ডের, উপরে ছোট্ট একটা হীরককুচি। আলো পড়তেই সেটা ঝিকমিক করে উঠছে। আংটিটা ফর্সা আঙুলে পরতেই সেটা যেন আরও আলো ছড়াতে লাগল। দিলশাদ আজ কটন তন্তুজ এর একটা দামি শাড়ি পরেছেন আর সেটা তার দুধে আলতা শরীরে বেশ ভালো মানিয়েছে। এই পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সেও শরীরের খাঁজগুলো বেশ আবেদনময়ী। দিলশাদ হাতের আঙুলগুলো সামনে মেলে ধরতেই দোকানি টাক মাথা মধ্যবয়স্ক লোকটা বিগলিত হাসি দিয়ে বলে, ‘ম্যাডাম, আপনার হাতে কিন্তু খুব মানিয়েছে আঙটিটা। এটার দাম তো কিন্তু আপা লাখের উপর পড়বে।’

দিলশাদ কপাল কুঁচকে তাকায়, তারপর ক্ষুণ্ণ গলায় বলে, ‘আপনাকে আমি দাম জিজ্ঞেস করেছি? আপনার দোকানে সিংগেল স্টোনের এর চেয়ে দামি হীরে থাকলে দেখাতে পারেন।’

দোকানি লোকটা দমে যায়, তোতলানো গলায় বলে, ‘সরি ম্যাডাম। আসলে অনেকেই সিংগেল স্টোনের হীরের আঙটি কিনতে আসেন। কিন্তু পরে দাম শুনে রেখে দেন। আপনাকে দেখে অবশ্য বোঝাই যায় আপনি বনেদি পরিবারের। আমি দেখাচ্ছি ম্যাডাম।’

লোকটা একবার নিচ থেকে কাঠের ভারী একটা বাক্স বের করে। তারপর ডালা মেলে ধরতেই হীরককুচির আলোয় ঝিকমিক করে ওঠে। দিলশাদ খান বেছে বেশ বড়ো একটা সিংগেল স্টোনের আংটি পছন্দ করেন। অবশ্য দোকানি লোকটা ঢোঁক গিলে ভাবে এই মহিলা আসলেই এটা কিনবেন তো? এটার দাম তো তিন লাখের কাছাকাছি।

লোকটার মনের ভাবনা যেন দিলশাদ পড়তে পারেন। ব্যাগ থেকে একটা শক্তিশালী ব্যাংকের দামি ক্রেডিট কার্ড বের করে বলেন, ‘দামটা রাখুন। আর একটু ভালো করে দেখে দেবেন, স্টোনটা ঠিকঠাক সেট করা আছে কি-না।’

ঠিক এই সময় জাফর খানের ফোন আসে। ধরতে যেয়ে তাড়াহুড়ায় কেটে যায়। থাক, দাম মিটিয়ে তারপর ফোন দেওয়া যাবে, ভাবেন দিলশাদ খান। দোকানি লোকটা বিল রেখে যত্নের সাথে হীরের আংটিটা হাতে দেয়। ভাবভঙ্গীতে এখন শ্রদ্ধার ভাবটা প্রবল।

তেলতেলে মুখে দোকানি বলে, ‘ম্যাডাম, ভালো হীরে এলে আপনাকে জানাব। আপনার মতো এক দু’জন মানুষ হলেই আমাদের আর ভাবতে হয় না।’

দিলশাদ খান স্মিত হাসি হাসেন। মনের ভেতর একটা ভালো লাগা টের পান। জীবনটা আসলেই সুন্দর।

গাড়িতে উঠে এবার জাফরকে ফোন দিতেই ওপাশ থেকে চিন্তিত গলা পাওয়া যায়, ‘এই, তুমি কোথায়?’

দিলশাদ জবাবদিহিতার গলায় বলে, ‘এই একটু ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডে এসেছিলাম। তুমি বাসায় পৌঁছে গেছ?’

জাফর একবার বাইরে তাকায়, তারপর বলে, ‘না, কেএফসি পার হচ্ছি। আর পাঁচ মিনিট লাগবে।’

দিলশাদ উচ্ছ্বসিত গলায় বলে, ‘তাহলে তুমি আগে পৌঁছুবে। নওরিন আর আরুশ বাসায়ই আছে। তুমি যেয়ে ফ্রেশ হও, একসাথেই খেতে বসব।’

ফোনটা ছেড়ে দিয়ে দিলশাদ প্রথমে মেয়েকে ফোন দেন, কেটে যায়। মেয়েটার ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা সামনে অথচ এখনও মোবাইল বিজি। তারমানে কারও সাথে কথা বলছে। ছেলেকে এবার ফোন দিতেই ধরে, ‘আম্মু, তুমি কখন আসবে?’

দিলশাদ আদুরে গলায় বলে, ‘এই তো চলে আসব। তোমার আব্বুও কাছাকাছি। আপু কী করে?’

আরুশ ষড়যন্ত্রকারীদের মতো বলে, ‘জানো আম্মু, আপু দরজা বন্ধ করে গেম খেলছে। একটুও পড়া করছে না।’

দিলশাদ ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বলে, ‘তুমি ভালো করে পড়ো। আমি আসছি একটু পরেই।’

ফোনটা রেখে একটু ভাবেন। ছেলেটা এবার স্ট্যান্ডার্ড সেভেন এ। চেষ্টা করে ভালো করতে, কিন্তু ঠিক পেরে উঠে না। নওরিনের মাথা ভালো কিন্তু মেয়েটা পড়তে চায় না। এই যে এখন দরজা আটকে কার সাথে যে কথা বলছে কে জানে?

৩.
খান প্যালেসের ভেতরের দিককার একটা বেডরুম বাইরে থেকে বন্ধ। ভেতরে নিচু গলায় একজন কিশোরী কিছুদিন পরেই যে তরুণী হবে তার কথা শোনা যাচ্ছে।

‘সুইটহার্ট তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে’, ভিডিও কলে ওপাশ থেকে আহনাফ আদুরে গলায় বলে।

নওরিন লাজুক গলায় বলে, ‘সত্যি? দেখো এই জামাটা বাবা থাইল্যান্ড থেকে নিয়ে এসেছে। সুন্দর না?’

আহনাফ দুষ্ট গলায় বলে, ‘অনেক সুন্দর। কিন্তু জামাটা না পরা থাকলে আরও সুন্দর লাগত।’

নওরিন চোখ পাকায়, ‘ইউ ব্যাড বয়!’

ওপাশ থেকে আহনাফ আবদারের গলায় বলে, ‘একটু দেখি না।’

নওরিন এবার আদুরে গলায় ধমক দেয়, ‘একদম চুপ। শোনো, তোমার প্রিপারেশন কেমন? আমি বাবার সাথে কথা বলে রেখেছি। এ লেভেল শেষ করে ইউএসএ চলে যাব। ওখানেই গ্রাজুয়েশন করব। তুমিও চলো, আমরা একসাথেই ভর্তি হব, একই ইউনিভার্সিটিতে।’

আহনাফ এবার সিরিয়াস গলায় বলে, ‘আমার তো যাবার খুব ইচ্ছে। মাম্মি চায় না। বোঝই তো, আমি একমাত্র ছেলে। কিন্তু আমি যাবই।’

নওরিন এবার আনন্দে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরার ভঙ্গি করে, ‘ইয়েএএএ! লাভ ইউ সো মাচ।’

ঠিক এই সময় দরজায় কেউ ধাক্কা দেয়। নওরিন দ্রুত বিদায় নিয়ে ভিডিও কলটা কেটে দেয়। তারপর জামাটা ঠিক করে দরজা খুলতেই দেখে ছোট ভাই আরুশ দাঁড়িয়ে আছে।

বিরক্তির গলায় বলে, ‘কী? দরজা ধাক্কাছিস কেন?’

আরুশ ফিসফিস করে বলে, ‘বাবা, এসেছে। তাড়াতাড়ি পড়তে বস আপু।’

এবার নওরিনের মধ্যে চঞ্চলতা দেখা যায়, ভাইয়ের গাল টেনে বলে, ‘থ্যাংকিউ ছোটকু।’

নওরিন দ্রুত নিজের টেবিলে বই নিয়ে পড়তে বসে। যদিও চোখে এখনও আহনাফের মুখটাই ভাসছে। কী দুষ্ট একটা ছেলে!

৪.
ডাইনিং টেবিলের এক পাশে জাফর খান, বাম পাশে দিলশাদ আর আরুশ, ডান পাশে নওরিন বসেছে। একজন সহকারী খাবার বেড়ে দিচ্ছে।

জাফর খেতে খেতে মেয়ের উদ্দেশে বলেন, ‘নওরিন মা, তোমার প্রিপারেশন কেমন?’

পাশ থেকে দিলশাদ টিপ্পনী কেটে বলেন, ‘ওর তো পড়াশোনায় মন নেই। আমি তখন ফোন দিলাম, ফোন বিজি পেলাম। সারাক্ষণ কী করিস ফোনে?’

নওরিন মুখ চোখা করে বলে, ‘আম্মু, আমি গ্রুপ স্টাডি করছিলাম। পরীক্ষা শেষে রেজাল্ট হলে মিলিয়ে দেখো। আমি ভালো করব।’

জাফর সস্নেহে মেয়ের দিকে তাকান, ‘হ্যাঁ, আমাদের নওরিন তো মেধাবী। ও নিশ্চয়ই ভালো করবে।’

আরুশ মন খারাপ গলায় বলে, ‘আর আমি?’

জাফর ছেলের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘তুমিও ভালো। পরীক্ষা শেষ হলে আপুর কাছে পড়বে তুমি।’

নওরিন নিচু গলায় বলে, ‘বাবা, আমি ইউএসএ তে পড়তে যাব। ইচ্ছে আছে ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে পড়ার। ওখান থেকে গ্রাজুয়েশন করতে চাই। একটু বেশি টাকা লাগবে, কিন্তু ওখানেই পড়তে চাই।’

জাফর খানের হাত থেমে যায়। মেয়েটা অনেক আদরের প্রথম সন্তান। একটা আবেগ কাজ করে। তখন এত টাকা পয়সা ছিল না। মনে আছে মেয়েটা একটা লাল রঙের সাইকেলের বায়না করেছিল, কিনে দিতে পারেননি। আজ দু’হাতে টাকা কামাচ্ছেন, তাই মেয়ের কোনো চাওয়া অপূর্ণ রাখেন না। কিন্তু মেয়েটা দূরে চলে যাবে ভাবতেই বুকে টান পড়ে।

মেয়ের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলেন, ‘ইয়েল ইউনিভার্সিটি তো খুবই ভালো ইউনিভার্সিটি। ওখানে পড়ার সুযোগ পেলে অবশ্যই যাবি।’

দিলশাদ খান এবার জোর গলায় বলেন, ‘হ্যাঁ, সেটাই ভালো হবে। এই দেশে ও কোথায় পড়বে? ইউএসএ তেই ভালো। আর তুই টাকার কথা কেন ভাবছিস। কত লাগবে?’

নওরিন একটু হিসেব করে বলে, ‘অন্যান্য ইউনিভার্সিটির চেয়ে এখানটায় খরচ একটু বেশি। বছরে সব মিলিয়ে চৌষট্টি হাজার ডলার লাগবে। পুরো কোর্স শেষ করতে আড়াই লক্ষ ডলার। তবে এর মাঝে আমি ঠিক স্কলারশিপ ব্যবস্থা করে ফেলব। তাতে করে খরচটা কমে যাবে।’

জাফর খান মনে মনে ডলারের অংকটা টাকায় হিসেব করেন, আড়াই কোটিরও বেশি খরচ হবে। এই টাকার জন্য মেয়ে এত ভাবছে! নাহ, মেয়েটা ওর মতোই লক্ষ্মী হয়েছে।

জাফর মজার ভঙ্গিতে বলে, ‘তোর স্কলারশিপের টাকা আমাকে দিয়ে দিস। আর টাকা নিয়ে ভাবিস না। ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পেলে আমি খুব খুশি হব মা।’

সেদিন খাওয়া শেষে ঘুমোতে যাবার আগে দিলশাদ খান মুখে ক্রিম ঘষতে ঘষতে বলেন,
‘আজ একটা হীরের আঙটি কিনেছি। এই যে এটা।’

একটা ছোট চৌকো বক্স খুলে আংটিটা পরে হাতের আঙুল মেলে ধরেন।

আলো পড়ে হাতের আংটিটা ঝিকমিক করে ওঠে। জাফর প্রশংসার গলায় বলে, ‘বাহ, দারুণ হয়েছে তো।’

দিলশাদ খুশি গলায় বলে, ‘হ্যাঁ, খুব সুন্দর। ঠিক এমন একটা আংটি খুঁজছিলাম। পেয়েও গেলাম। দামটা একটু বেশি, লাখ তিনেকের মতো।’

জাফর হাত নাড়েন, ‘আরে, তোমার পছন্দ হয়েছে নিয়েছ। আমিও আজ একটা ব্লেজার কিনেছি। গাড়িতেই আছে।’

দিলশাদ এবার চুলটা বাঁধতে বাঁধতে বলে, ‘নওরিন কী লক্ষ্মী মেয়ে হয়েছে দেখেছ? ওর পড়াশোনার ওই ক’টা টাকা নিয়ে ও কেমন দুশ্চিন্তা করছিল?’

জাফর তৃপ্তি নিয়ে বলে, ‘হ্যাঁ, মেয়েটা আমার মতো হয়েছে।’

দিলশাদ একবার ঘুরে তাকায়, ‘ভালো হলে তোমার মতো, তাই না?’

জাফর হা হা করে হাসেন। ঠিক এমন সময় ফোনটা বেজে উঠে। রাত বারোটা বাজে, ফ্যাক্টরির জিএম মহিবুরের ফোন।

ভ্রু কুঁচকে ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে আতংকিত গলা পাওয়া যায়, ‘স্যার, সর্বনাশ হয়ে গেছে। ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগেছে।।আমি ফায়ার সার্ভিসে খবর পাঠিয়েছি। আপনি একটু আসবেন?’

জাফরের হঠাৎ করেই মনে হয় কোথাও যেন ভূমিকম্প হয়েছে। বুকের বাম পাশে একটা ব্যথা অনুভব করেন। মাথাটা কেমন ভারী লাগছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। কোনোমতে বলেন, ‘ওয়্যারহাউজের ওদিকে আগুন লাগেনি তো?’

আজ সকালেই খবর পেয়েছিলেন পুরো শিপমেন্টটা রেডি করে ওয়্যারহাউজে রেখে দেওয়া হয়েছে।

মহিবুর কান্নাজড়িত গলায় বলে, ‘স্যার, ওয়্যারহাউজেই আগুন লেগেছে। আপনি আসেন।’

জাফরের মনে হচ্ছে মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন। মাথাটা কেমন দপদপ করছে। দিলশাদ খান ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘এই কী হয়েছে? কোনো খারাপ খবর?’

জাফর খান এবার হাউমাউ করে বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে যাচ্ছে পুড়ে। আগুন লেগেছে ফ্যাক্টরিতে। অর্ডারের পুরো লটটাই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। আমি যে নিঃস্ব হয়ে যাব দিলশাদ।’

হাহাকার করা গলায় প্রলাপ বকতে থাকেন জাফর খান। হঠাৎ করে টের পান মাথায় তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। জ্ঞান হারাবার আগে দিলশাদের হাতের আঙুলে পরা হীরের আঙটিটা থেকে আলোর ঝিকিমিকি চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে যায়।

(চলবে)

মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সুবাস
শিমুলতলী, গাজীপুর

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-২৫ এবং শেষ পর্ব

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#অন্তিম_পর্ব_স্পেশাল_১

— এমা,এতো দেখছি মজনু তাঁর লেলাকে নিতে হাজির। তো একবার পেছন ফিরে মনিরটরটা দেখো? সাফিনের চোখমুখ কুঁ’চকে গিয়ে পিছু ফিরে তাকাতে থ’মকে গেল সে। ড্রাইভারের ড্রেস পরে অচেনা একটা লোক আমেনা বেগমকে গাড়িতে করে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে দেখে মনিটরের দিকে ভয়ার্ত ভাবে তাকিয়ে থাকলো সাফিন।
—আম্মাহ!
— সামনে একটা বড় খাঁ’দ আছে জানোতো সাফিন? তুমি চাইলে গাড়িটা ধপাস করে খাঁ’দে উ’ল্টে পরতেও পারে। সকাল-সকাল ব্রেকিং নিউজ হয়ে যাবে যে, প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা সাহেবের একমাএ স্ত্রী আমেনা বেগম ঝড়বৃষ্টির রাতে বাড়ি থেকে বের হলে গাড়ি বৃষ্টির কারনে পিচ্ছি’ল রাস্তায় খাঁ’দে উ’ল্টে পরে যাওয়ার কারনে অকালে প্রা’ন হারান তিনি। ভালো হবে না বলো?
মাইক্রোফোনে অচেনা আগন্তুকের কন্ঠের রেশ শুনে সিরাতের ভয়ে নিশ্বাসের গতি যেন দ্রুত থেকে দ্রুতগতির হতে থাকলো। চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরতে থাকলে সাফিনের দিকে অস’হায় চাহনিতে তাকালে সাফিনের ভেজা হাতদ্বয় প্রব’ল বেগে কাঁ’পতে থাকার কারনে হাত থেকে বন্দু’কটা পরে গেলে ওপাশের মানবটি হেসে উঠলেন যেন। সাফিনের কানের কাছে সেই হাসির রেশ অন্তর্নিহিত হতে থাকলে রাগে মাথায় র’ক্ত ট’গ>ব’গ করছে যেন তাঁর। আশপাশ কোনো কিছু না ভেবেই সিরাতের হাত-পায়ের বাঁ’ধন খুলতে থাকলে সিরাত অতিরিক্ত কান্নার কারনে রীতিমতো ফো’পাচ্ছে যেন। সাফিন ঘনঘন নিশ্বাস টে’নে ছলছল চাহনিতে সিরাতের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে তাঁকে আস্থা জোগাতে বলতে লাগলো।
—কিচ্ছু হবে না জান। একটু শান্ত হও তুমি।
—সাফিন আম্মা! কথাটা বলেই সিরাতের চোখ বেয়ে আবারও পানি পরতে থাকলে সাফিনের এবার ধৈর্যের বাঁ’ধ ভে’ঙে যেতে চাইছে যেন। খানিকটা রাগান্বিত চোখে সিরাতের দিকে তাকিয়ে দুই হাত দিয়ে সিরাতের দুই বাহু চে’পে ধরে মৃদু ঝাঁ’কি দিয়ে বললো।
—কিচ্ছু হবে না বলছি না আমি। আম্মারও কিছু হবে না। চলো আমরা এখান থেকে দ্রুত চলো। কথাটা বলে সিরাতের হাত ধরে নিয়ে যেতে চাইলে হুট করেই দরজার কাছে গু’লির শব্দের বিক’ট আওয়াজে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। ভয়ে সাফিনকে জড়িয়ে আঁক’ড়ে ধরতে ওপাশ থেকে ধীর কন্ঠের হাসির আওয়াজ শোনা গেল।
— এত দেখছি অনেক তাড়া তোমাদের সাফিন! এত তাড়া কেন তোমাদের হুম? বেড়াতে এসেছো আর আপ্যায়ন না করেই ছেড়ে দেব তোমাদের? এখানে এসেছো আমার ইচ্ছেতে, এবং যেতেও হবে আমার ইচ্ছেতে। এখন তোমাকে আমি খাবারের মেনুকার্ডটা বলছি দাঁড়াও। তোমার হাতে দুইটা অপশান খোলা আছে সাফিন। এক, নিজ হাতে নিজের লেলা সিরাতকে খু’ন করবে? অন্যথা নিজ চোখে তোমার মায়ের মৃ’ত্যু দেখবে। বাকিটা তোমার ইচ্ছের উপর ডিপেন্ড করবে যে,তুমি কি করবে?
কথাটা শুনে সাফিনের হৃদয়ে কেমন কাঁ’ম’রে উঠলো যেন। চোখদুটি জ্ব’লছে যেন তাঁর। বুকের উপর সিরাতের নিশ্বাসের গরম উ”ষ্ণতাময় স্পর্শ আঁ’ছরে পরার রেশ খুব কাছ থেকে অনুভব করতে পারছে সে।টিনের চালের উপর বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের প্রতিধ্বনিও যেন এখন বি’ষের মতো ঠেকছে তাঁর কাছে। রাগে-ভয়ে শরীরটা প্রচন্ডভাবে কাঁ’পছে যেন তাঁর। গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন ছুঁ’ড়ে দিল অচেনা আগন্তুকের দিকে।
—কি চাই তোর আমাদের পরিবারের থেকে?বল কত টাকা লাগবে তোর? ১ লাখ, দুই লাখ, পঞ্চাশ লাখ? আমি দেব তোকে। কিন্তু শুধু সত্যিটা জানতে চাইছি আমি।
—হাহাহা, এই তোমরা বাপ ছেলে আমাকে এত টাকার অফার দেখাচ্ছো কেন হুম? তবে সিরাতকে তো ম’রতেই হবে আজকে।
—ড্যাড? কে তুই? সাহ’স থাকলে সামনে এসে দেখা। এখানে ড্যাড আসলো কোথথেকে?
—সাহ’স তো আমার অনেক’ই আছে সাফিন। কিন্তু তোমাকে সবকিছু এক্সপ্লেইন করলে আমি কি পাব? আর এসব টাইম ওয়েস্টের সময় নেই আমার। পাঁচ গুনব শুধু, এর মধ্যে সিরাতকে মা’রবে, নয়তো নিজের আম্মাকে ম’রতে দেখবে। আচ্ছা মাই ডিয়ার সিরাত? তোমারতো বোঝা উচিত যে আমি মজা করছি না। সত্যি-সত্যিই কিন্তু তোমার শাশুড়ীকে মে’রে দেব। দ্রুত সামনে থেকে দূর হও তো দেখি। সিরাতের বুকের মাঝে তো’লপা’ড় হতে থাকলে কান্নাগুলো কেমন দ’লা পাকিয়ে যাচ্ছে তাঁর। সাফিনের বুক থেকে ধীরভাবে মাথাটা জাগিয়ে কান্নায়ভরা দৃষ্টিতে একগাল হাসলো শুধু। সাফিন সিরাতের দিকে অশ্রুশিক্ত নয়নে তাকালে সাফিন মাথা নাড়িয়ে না করতে থাকলে সিরাত শুধু হাসছে। ধীর পায়ে নিচু হয়ে সাফিনের হাত থেকে পরে যাওয়া বন্দু’কটা তুলে নিয়ে শীতল চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকিয়ে সাফিনের বুকের বাম পাশে হাত রাখতে সাফিনের হৃদয় মাঝের তু’মুল ধুকপুক শব্দের রেশ যেন কান্নার সহিত কু’ন্ঠিত হচ্ছে তাঁর কানের কাছে।
সিরাত সাফিনের চোখে চোখ রেখে অন্যহাতে ব’ন্দুকটা সাফিনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে সাফিনের হাতের ব’ন্দুকটা নিজের পেট বরাবর এনে ধীর কন্ঠে বললো।
—মে’রে দিন আমাকে সাফিন। সিরাতের কন্ঠের রেশ শুনে সাফিনের হাতটা কাঁ’পতে থাকলো যেন। সিরাতের শীতল চোখের চাহনিতে যেন রাগ নিয়েও তাকাতে পারছে না তাঁর দিকে। চোখ বেয়ে ঝরে পরছে শুধু বর্ষনের রেশ।
— সিরাত…!
— গু’লিটা চালান সাফিন।
— এটা পারব না আমি।
সাফিনের কথায় হেসে উঠলো সিরাত। কান্নারত কন্ঠে বললো।
— আপনিই না কথায়-কথায় বলতেন যে, সিরাত আই সয়ার আমি তোমাকে গু’লি করে মে’রে দেব। তাহলে এখন কি হলো? মা’রুন আমাকে?
সিরাতের কথায় সাফিনের হৃদয়ে যেন প্রবল বেগে ঝর বয়ে গেল।
— আমার অভিমানের পেয়ালা না বুঝুন আমার অস্তি’ত্বের ঠিকানাটাকে টিকিয়ে রাখুন দ’য়া করে। যে বি’ষ আমি পান করেছি,সেই বি’ষের খেসা’রত তো আমাকেই দিতে হবে তাইনা? হয়তো আমাদের এই অপরিকল্পিত গল্পের শেষ এটাই লেখা ছিল।
সিরাতের প্রতিটা কথার রেশ যেন ছুঁ’ড়ির আঘা’তের ন্যায় সাফিনের বুকে এসে হানছে। সিরাতের পেটের কাছ থেকে ব’ন্দুকটা সরাতে চাইলে সিরাত শ’ক্ত করে চে’পে রাখলে সাফিন সিরাতের মাথার কাছে মাথা ঠেকিয়ে কপালে ঠোঁটের স্পর্শ ছুয়িয়ে দিয়ে এতক্ষণের জমিয়ে রাখা কান্নাগুলো যেন ডু’করে কেঁদে দিয়ে সিরাতের কপাল ছুঁ’য়িয়ে গড়িয়ে পরতে থাকলে ওপাশ থেকে গম্ভীর কণ্ঠের রেশ শোনা গেল।
— এক্সুয়ালি আমার বোধহয় তোমাকে শেষ বারের মতো একটা ইচ্ছে পূরন করতে দেওয়া উচিত। বলো তুমি কি চাও সিরাত? হুট করেই অচেনা আগন্তুকের এরুপ মন্তব্য শুনে সিরাত চোখের পানি মুছে সাফিনের থেকে সরে এসে একনজর মনিটরের দিকে তাকিয়ে আরেক পলক আবছা আলোয় অন্ধকার রুমটার দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— ঠিকঠাক ভাবে দিতে পারবেন তো?
—আমার কাছে এমন কোনো কিছুই নেই যা আমি দিতে পারব না। শুধু তোমাকে না মা’রার কথা ছাড়া যা যাইবে তাই পূরন করব।
সিরাত ছলছল দৃষ্টিতে অজানাতে দৃষ্টি রেখে ধীর কন্ঠে বললো।
— সত্যিটা জানতে চাই। আমার জীবনের এত প্যাঁ’চ আমি নিজেই নিতে পারছি না। জানতে চাই কে আমাকে মা’রতে চাইছে। আপনাকে দেখতে চাইছি আমি। সিরাতের কথা শুনে সাফিন সিরাতের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।
—বুদ্ধি আছে তাহলে আমার বউর।
.
গগনের রিমঝিমে ঝুম বর্ষনের প্রকোপটা যেন পুরো শহরজুড়ে এক অদ্ভুত শিহরণময় পরিবেশের সৃষ্টি করতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে। হলুদরঙা আবছা আলোয়ঘেরা হলদেটে আলোয় অন্ধকার রুমটাতে তির্যকভাবে আলো হেনে যাওয়াতে চারজোড়া চোখ কেমন বুঁজে আসতে চাইছে সাফিন-সিরাতের। বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সহিত তাল মিলিয়ে তাঁদের হৃৎস্পন্দনের গতিও কেমন দৃঢ়ভাবে কড়া নাড়ার সহিত স্পন্দনের হারে বাঁ’জতে শুধু করেছে। সাফিনের তিরিক্ষি চোখদ্বয় আলো এড়িয়ে অচেনা আগন্তুকের অবয়বের সহিত খুব কাছের কারো মানুষের প্রতিচ্ছবি চোখে পরাতে নি’মি’ষেই থ’মকে গেল সাফিন। নিজের অস্থি’র চক্ষুদ্বয় যেন কোনো ভাবেই মানতে নারাজ হয়ে পরেছে নিজের চাচ্চু সরোয়ার সাহেবকে দেখে। মুখে পুরো কুলুপ এঁ’টে গেলে তীব্র আলোটুকু শীতল হয়ে আসলে সিরাত সাফিনের বিস্ম’য়মাখা চেহারা দেখে ভ্রুদ্বয় কি’ঞ্চিৎ ভাঁ’জ করে সামনে তাকাতে সরোয়ার সাহেবকে ব’ন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে থেকে ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি দেখে বুকের ভেতরটা কেমন মু’চড়ে উঠলো সিরাতের।
—এটা কিভাবে সম্ভব? আমি সত্যি দেখছি তো? মনে-মনে কথাটা আওরে চোখে হাত ক’চলে আবারও সরোয়ার সাহেবকে দেখে ত’ব্দা খেয়ে গেল যেন সে। ধীর কন্ঠে মুখ থেকে উচ্চারিত হয়ে আসলো।
—আপনি! সিরাতের কথা শুনে হেসে উঠলেন সরোয়ার সাহেব। সামনে থাকা ড্রামের বয়ামটাতে লা’থি মে’রে অ’ট্টহাসি হেসে বললেন।
— চমকে গেলে তোমরা? অবশ্য চমকে যাওয়ার কথাই বটে।
—তাঁরমানে এতদিনের এই খু’ন সবকিছুর পেছনে তুমি ছিলে? সাফিনের বড়সড় হয়ে যাওয়া চোখের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলেন সরোয়ার সাহেব। বললেন।
—ইয়াহ সাফিন বেটা। আমিই সেই কা’র্লপ্রিট, যাকে তুমি এতগুলো বছর ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছো। সরোয়ার সাহেবের কথা শুনে ধা’ক্কা খেয়ে গেল যেন সাফিন।
— উপস রে সিরাত? খু’নটা করলো তোমার বুড়ো আম্মা, আর ফেঁ’সে গেলে তুমি! একেই বলে কপাল বুঝলে। সরোয়ার সাহেবের কোনো কথা মাথায় না ঢু’কলে হা হয়ে চক্ষুদ্বয় বড়সড় করে তাকিয়ে রইলো শুধু সিরাত। সাফিন কি’ঞ্চিৎ পরিমান সময় নিয়ে এত বড় ধা’ক্কাটা সামলে সরোয়ার সাহেবের দিকে রাগ নিয়ে এগিয়ে গিয়ে তাঁর শার্টের কলার টে’নে ধরে বলতে লাগলো।
—কেন করছো এমন তুমি? তুমি কিভাবে করতে পারো এমনটা? আর তুমি আমার আম্মাকেও মা’রতে চাইছো? উনিতো তোমার খুব কাছের তাইনা? কত ভালোবাসেন তোমাকে। সরোয়ার সাহেব ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে বাঁকা হাসি হেসে গম্ভীর কন্ঠে দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে বললেন।
— নাঈম সাফিনকে একটু চটপট হাত পা বেঁ’ধে দেয়ালের সাথে বেঁ’ধে ফেলোতো দেখি। স্টরিটা শুনুক আগে। তাঁরপর নিজ হাতে নিজের লেলাকে খু’ন করে নাহয় আসল ম’জাটা নেব আমরা। সরোয়ার সাহেবের কথা শুনে ভেতর থেকে দুই-তিনজন লোককে নিয়ে নাঈম সাফিনের কাছে এসে দুইহাত ধরে ফেললে সাফিন ভ্রুদ্বয় কুঁ’চকে ফেলে বললো।
—এতো দুলাল! কথাটা আওরানোর সঙ্গে- সঙ্গে হাতে থাকা ব’ন্দুকটা নাঈমের দিকে তাক করাতে সরোয়ার সাহেব সহ সবাই হোহো করে হেসে উঠলেন যেন। সিরাত সাফিনের পেছনে আড়াল হয়ে দাঁড়ালে। সাফিন সিরাতের হাতটা শ’ক্ত হাতে চে’পে ধরে নিজের কাছে আগলে রাখলো। সরোয়ার সাহেব হাসির স্বরে বললেন।
— দুলালতো সেই কবেই ম’রে ভূ’ত হয়ে গেছে সাফিন। এইযে নাঈমকে দেখছো? এ হলো প্লাস্টিক সার্জারির তৈরি দুলাল। উফ সাফিন। তোমার আম্মার কথা ভু’লে গেলে? এইযে ব’ন্দুক নিয়ে লা’ফা>লা’ফি করছো না তুমি? এটা কিন্তু ঠিক নয় বেটা।
সিরাত কয়েকটা ঢোক গি’লে কান্নারত কন্ঠে বললো।
— সাফিন ব’ন্দুকটা নামান। আমার কিন্তু খুব ভয় করছে। সাফিন প্লিজ।
সাফিন সিরাতের কান্নারত কন্ঠ শুনে ব’ন্দুকটা নিচু করে ফেললে নাঈম আর বাকিরা সাফিনকে বাঁ’ধতে যেতে সিরাত ধীর কিন্তু খানিকটা তে’জ নিয়ে বললো।
— আমরা কিচ্ছুটি করব না। প্লিজ সাফিনকে বাঁ’ধবেন না। এই লাস্ট রিকোয়েস্টটা রাখুন অন্তুত চাচ্চু। আর কিছুক্ষণ পরতো মে’রেই দিবেন আমাকে।
নাঈম হেসে সাফিনকে বাঁ’ধতে যেতে সরোয়ার সাহেব বাঁ’ধ সেধে বললেন।
—থাকুক, বাঁ’ধার দরকার নেই ওঁদের। এমনিতেই এই পুরো বাউন্ডারি লোক দিয়ে ঘেরা। কোনো রকম চালাকি করতে পারবে না ওরা। নাঈম সাফিন বেটার হাত থেকে ব’ন্দুকটা নিয়ে নেওতো।
সাফিন হাত মুঠোবন্দি করে রাগটাকে দ’মাতে চাইছে যেন। চোখগুলো কেমন র’ক্তিম বর্ন ধারন করে গেছে তাঁর। নাঈম সাফিনের হাত থেকে ব’ন্দুকটা নিয়ে কাঠের চেয়ারটা সরোয়ার সাহেবের সামনে এগিয়ে দিয়ে নিজের শার্টটা খুলে ঝেড়ে দিলে সরোয়ার সাহেব বাঁকা হাসি হেসে পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারে বসে পরে নাঈমকে ইশারা করলে নাঈম মৃদু হেসে সাফিনকে দেয়ালের সাথে বেঁ’ধে ফেললে সিরাত ভয়ে গু’টিয়ে গেল যেন। কান্নারত কন্ঠে বললো।
—এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না চাচ্চু। বলেছিতো সাফিন কিছু করবে না। তাহলে?
সরোয়ার সাহেব হেসে উঠলেন। বললেন।
— আমার কি মাথা খা’রাপ নাকি পেট খারা’প যে, তোমার কথায় সাফিনকে না বেঁ’ধেই গল্প শোনাব! সাফিন যে কি ধুর’ন্ধর জিনিস সেটা তুমি হয়তো খুব ভালো করেই জানো।তাহলে এ রকম ন্যা’কা কান্না না কেঁদে উপরে যাবে কিভাবে সেই কথা চিন্তা করো। যাইহোক নাঈম তোমাদের ভাবিজানকে একটু নাস্তার ব্যাবস্থা করে দেওতো।বেচারা কখন থেকে না খাওয়া। আর হ্যা তাঁকেও বেঁ’ধে ফেলো তাঁর পেয়ারের স্বামী শাহনেওয়াজ সাফিনের সাথে। সিরাতের দিকে নাঈম এগিয়ে আসতে নিতে সাফিন রাগে দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে গম্ভীর কণ্ঠে বলতে লাগলো।
—খবরদার সিরাতের গাঁয়ে হাত দিবি না নাঈম। ভালো হবে না বলে রাখলাম আমি।
সরোয়ার সাহেব হেসে উঠলে সাফিন তাঁর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শুধু। একটা মানুষ কিভাবে এতটা স্বার্থপর হতে পারে? চোখের কোনে পানি চলে আসলে দীর্ঘ’শ্বাস বেড়িয়ে আসতে চাইছে সাফিনের। চোখ খিঁ’চে রাখলো সে৷ সিরাতকে কেউ টাচ করুক এটা সে কখনো স’য্য করতে পারবে না। সিরাতকে বাঁধা হয়ে গেলে নাঈম সিরাতের জন্য খাবার আনতে চলে গেলে সরোয়ার সাহেব পকেট থেকে সিগারেট বের করতে পাশ থেকে একজন ম্যা’চ দিয়ে জ্বা’লিয়ে দিতে তাঁর ধোঁয়া অন্ধকার রুমটাতে উড়িয়ে দিয়ে প্রশান্তির হাসি হাসছেন যেন।
— তো শুরু করা যাক তোমাদের প্রশ্নের উত্তর। ওহ নো, সিরাত তুমি জানলে আরও অবাক হবে যে, তোমার শশুরমশাই মোস্তফা সাহেব সয়ং নিজেই তোমাকে মা’রার জন্য আমাকে ৫০কোটি টাকা অফার করেছেন। আসলে কি জানোতো, এই শাহনেওয়াজ ভিলার কেউই তোমাকে ভালোবেসে উঠতে পারেনি। যতটুকু দেখিয়েছে সব সাফিনের দিকে তাকিয়ে বুঝলে? সরোয়ার সাহেবের কথা শুনে এতক্ষণের রাগান্বিত মুখশ্রীটাও কেমব পানসে হয়ে গেল সাফিনের। একেরপর এক বিস্ময় মাখা কথাগুলো ঠিক হ’জম করতে পারছে না সে। বাহিরের বর্ষনপাতের রেশ প্রবল বেগে ঝরে চলার সহিত বর্ষনের ন্যায় কথাটা তাঁর কানের কাছে যেন সা’জোরে আ’ঘাত হেনে গেল সিরাতের। চোখের কোন ঘেঁষে পানি ঝরানো ছাড়া আর কিছু আসতে চাইছে না যেন তাঁর। ধীর চাহনিতে মাথা নিচু করে সরোয়ার সাহেবের কথাগুলো শুনতে থাকলো সে।
— এটা কখনো পসিবল নয়। ড্যাড এমনটা কখনো করতে পারেন না। আমি বিশ্বাস করিনা এসব। সাফিনের উত্তেজিত মুখদ্বয় দেখে সরোয়ার সাহেব হেসে পকেট থেকে ফোনটা বের করে মোস্তফা সাহেবের নম্বরে ডায়াল করতে সরোয়ার সাহেব কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠস্বর শোনা গেল।
— ভাই মেয়েটাকে গু’লি করে ওখানেই মে’রে দে। আমি আমার ছেলের জীবনে এমন মেডেলক্লাস মেয়েকে চাইনা। সবথেকে বড় কথা আমার আব্বাজানকে যে বি’ষ দিয়ে মে’রেছে।
—আচ্ছা ভাই। কথাটুকু বলেই সরোয়ার সাহেব ফোনটা কেঁ’টে দিতে সাফিন পুরো অবাক হয়ে গেল তাঁর ড্যাডের কথা শুনে। সিরাতের মনের মাঝে যেন কালো আঁধারে ছেঁয়ে আছে।
—আর মাএ কিছুক্ষণ সাফিন। তারপর আমি নিজেই আপনার জীবন থেকে সরে যাব। আমাকে যদি বেঁচে থাকার একটা সুযোগ দেওয়া হত না সাফিন? তাহলে আমি আপনার হাত ধরে পুরো শহর ঘুরে দেখার সপ্ন বুনতাম।
কিন্তু আ’ফসোস, সেটা আর পসিবল নয়। কথাগুলো মনের মাঝে যেন তো’লপা’ড় খেলে যাচ্ছে সিরাতের। চোখ বেয়ে ঝরে চলেছে তাঁর অঝোরে নোনাজল।
— নিজ কানেতো সব শুনলে সাফিন বেটা। এবার ট্রাস্ট হলো তো আমাকে? সাফিন থ’ম মে’রে গেলে সরোয়ার সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে অন্ধকারে দেয়ালের সাথে হাত ঠেকিয়ে বলতে লাগলেন।
— এক-এক করে সবটা ক্লিয়ার করি তোমাকে হুম। তোমার ড্যাডকে আমি প্রচুর পরিমানে ঘে’ন্না করি সেই ছোট বেলা থেকে। আর এবার সবকিছু আমার হাতে। তুমি শুধু সাইনটা করতে যতক্ষণ।
—কিসের সাইন? সাফিনের কথা শুনে হেসে উঠলেন সরোয়ার সাহেব। পাশ ফিরে তাকাতে একজন তিনটা ফাইল সরোয়ার সাহেবের হাতে ধরিয়ে দিলে সরোয়ার সাহেব হেসে বললেন।
— এখানে রাজবাড়ি আর তোমার ইয়াংম্যান আজাদ সাহেবের সব প্রোপার্টির দলিল রয়েছে। যেটা সিরাতের বাচ্চার নামে লিখে রেখে গেছেন তোমার ইয়াংম্যান। এগুলোতে দুজন চটপট সাইনটা করে দেও শুধু।
— এসব করে লাভটা কি পাবে তুমি? ইয়াংম্যানতো তোমার বাবা হন তাইনা?
—রাখোতো তোমার বাপ হওয়ার কথা। উনি কোনো কালেই আমার বাপ ছিলেন না। বাপতো হয় তোমার ড্যাড মোস্তফার। আমাকে তো তোমার দাদির বাচ্চা-কাচ্চা হয়না তাঁরজন্য অনাথ আশ্রম থেকে নিয়ে এসেছিলেন তোমার ইয়াংম্যান। যেমনি তোমার বাপ হয়ে গেল বছর খানেক বাদে অপ্রকাশিত ভাবে। তোমার দাদি হাসপাতালে মা’রা গেলেন তখন থেকেই আমার আদর সব উবে গেল তোমার ইয়াংম্যানের থেকে। সবকিছুতে মোস্তফা সেরা, সবার কাছে গল্পে, আসরে, পার্টিতে, মোস্তফাকে নিয়ে যেতেন সাথে করে। আর আমার গুরুত্ব ফুঁড়ি’য়ে গেল তাঁর। আমাকে দেখতে আসা পাএীর সাথেও পর্যন্ত তোমার ইয়াংম্যান মোস্তাফার সাথে বিয়ে দিলেন। একটিবার জিজ্ঞেস অব্দি করেননি যে আমার মেয়েটাকে পছন্দ হয়েছিল কিনা? এটা কি আমার প্রতি তোমার ইয়াংম্যান অন্যা’য় করেননি? এখন তুমি আমার ছেলে থাকার কথা ছিলে কিন্তু দিব্য মোস্তাফার ছেলে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছো সাফিন। আমার বিয়ে করার ইচ্ছেটাই মা’টি করে দিয়েছেন তোমার ইয়াংম্যান। এবার এই সব সম্পত্তি আমি নিজের নামে করে নিয়ে রাস্তায় বসিয়ে ছারব তোমার ড্যাডকে। তবে এ হৃদয় শান্ত হবে।
সরোয়ার সাহেবের কথা শুনে অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াল সাফিন। ধীর কন্ঠে বললো।
— আর রাজবাড়ীর পিছনে এত-এত খু’ন এগুলো কেন করলে তুমি? আর বুড়ো আম্মা?
— কিসের বুড়ো আম্মা। উনি তোমার নিজের বুড়ো আম্মা নাকি? উনিতো তোমার ইয়াংম্যানের সৎ মা। আর রাজবাড়ীর পেছনে এত মানুষ খু’ন হওয়ার কারন তোমার ওই বুড়ো আম্মা নিজেই ছিলেন। যেদিন প্রথম উনি শাহনেওয়াজ ভিলায় পা রেখেছিলেন, সেদিনই ওনার সম্পর্কে খবর নিয়ে জানতে পারলাম উনি আজাদ সাহেবের সৎ মা। তাঁরজন্য সেদিন রাতে ওনার রুমে গিয়ে হাত মেলালাম আমি। উনিই আগ বাড়িয়ে এসেছিলেন আমার সাথে। যেদিন আজাদ সাহেব তোমাকে তাঁর রুমে তলপ করে সিরাতের বাচ্চার নামে সব প্রোপার্টি দলিল করে দিয়েছিলেন সেদিন থেকে তোমার আর সিরাতের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করতে ওনাকে দিয়ে সিরাতকে তাঁর হা-পা টে’পানোর অযুহাতে পুরোপুরি ভাবে আঁ’টকে দিয়েছিলাম সিরাতকে। কিন্তু তোমাদের ঢ’লা>ঢ’লি করা তো কমছিলই না বরং বেড়ে যাচ্ছিল। তাই কায়দা করে বিদেশ থেকে ড্রা’গস আনিয়ে তোমার বুড়ো আম্মাকে দিয়ে সকিনার অজান্তে দুধে মিশিয়ে দেওয়াতাম। এতে করে সিরাতের পর্যাপ্ত ঘুম এবং তিলে-তিলে শেষ হওয়ার অ’স্ত্র হয়ে দাঁড়াল। লোক লাগিয়ে জানতে পারলাম তোমার ইয়াংম্যান রাজবাড়ীতে রেখেছিলেন এই দলিলের ফাইলগুলো। কিন্তু খবরটা কানে আসার পরপরই তোমরা লোকটাকে আঁ’টকে দিলে। যার কারনে তোমাদের জে’ম্মায় বসেই গু’লি চালাতে বলতে হলো দুলালের দ্বারা। কিন্তু পরক্ষণেই খবর আসলো রাহেলা বেগম আমার সাথে বেই’মানি করে ফাইলটা হা’তা’তে লেগে পরেছেন। তাই আমাকেও বাধ্য হয়ে একের পর এক খু’ন করতে হলো।
দুলালকে মা’রা’র কোনো ইনটেনশন ছিল না আমার। কিন্তু ও শুধু-শুধু একটা লোককে মে’রে রাজবাড়ির পেছনে ফেলে গেছিল। যেটা ছিল রাজবাড়ি রেটে নেওয়ার একমাএ অ’স্ত্র।কিন্তু ছা’গলটা এটা বুঝলো না যে, রাজবাড়ি রেটে চলে গেলে আমি পাব কিভাবে? তাই ওকেও মে’রে নদীতে ভাসিয়ে দিতে হলো। কিন্তু সেখানেও মাঝপথে চলে এলো মিরাজ চৌধুরী। একটু বেশি বা’ড়া>বা’ড়ি করতে গিয়ে ক্যামেরায় বন্দি করলেন সবটা। তাই পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীনই তাঁকে গু’লি করতে হলো আমাকে। আর আমার পুষে রাখা অকর্মা’র ঢেঁকি ওরা লা’শের সাথে আইডেন্টিটি কার্ডও রেখেছিল।তখনই আন্দাজ করেছি বিষয়টা বেগতিক হবে। তাই বেছে নিলাম দুলাল অরফে নাঈমকে। সিরাত সেই প্রথম থেকেই আমার নজরের আওতায় ছিল। তোমার গার্লফ্রেন্ড ভেবে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম ওকে। কিন্তু ভাগ্যবসত গু’লিটা লেগেছিল তোহার গায়ে। তুমি আমার সব কাজে ব্যা’ঘাত ঘটাতে থাকলে একের পর এক। প্রথমে ৫০০ মেয়ে বিদেশে পাঁচার করা থেকে আঁ’টকালে তাঁরপর এই এতসব। আমার লক্ষ্য একটাই ছিল, এই পুরো রাজবাড়ি নিজ দখলে করার। কিন্তু মাঝপথে সিরাতের বার্থডের দিন আমি আর রাহেলা বেগম সিরাতের ড্রা’গস নিয়ে কথা বলতে থাকলে দু’র্ভাগ্য ক্রমে তোমার আদরের ইয়াংম্যান সেটা শুনে নেন। আমাদেরকে শা’সালেন তিনি। মে’রে ফেলার হু’মকি দিলেন। তাই দুধের সাথে কড়া রকমের ড্রা’গস দিয়ে সিরাতকে আমাদের দ’খলে এনে পেয়ারের নাতি বউয়ের দ্বারাই ফের্নিতে বি’ষ মিশিয়ে মে’রে দিলাম তোমাদের ইয়াংম্যানকে। এতে সা’পও মর’লো আর লাঠিও ভা’ঙলো না। দুইদিক থেকেই আমার লাভের লাভ হলো। তোমাদের মাঝে দূরত্বও বাড়লো।
—আর বুড়ো আম্মা সকিনা? বুড়ো আম্মাতো তোমার দলেরই লোক ছিল? সাফিনের এরমধারা প্রশ্নে হেসে উঠলেন সরোয়ার সাহেব। বললেন।
— রাজবাড়ির পেছনে মৃ’ত লা’শগুলো থেকে যে ফোন গুলো পেয়েছো, ওটা থেকে তোমরা নিঘ্যা’ত রাহেলা বেগমকে খুব সহজেই ধরে নিতে পারতে। তাই আমিও কোনো রি’ক্স নিতে চাইনি। আর রইলো বাকি সকিনা। ও রাহেলা বেগমের পিছুপিছু আ’ঠার মতো লেগে থাকার কারনে ওকেও সরিয়ে দিয়েছি।
সরোয়ার সাহেবের কথাগুলো যেন তীরের ন্যায় সাফিনের দিকে ছুঁ’ড়ে আসছে। সিরাতের চোখথেকে পানি গড়িয়ে পরতে থাকলো। অজ্ঞা’নে হোক বা যেমনই হোক, তাঁর হাত দিয়ে আজাদ সাহেব খু’ন হয়েছে ভাবতেই কান্নায় ভে’ঙে পরছে সিরাত। সাফিন সরোয়ার সাহেবের দিকে তাকালে এখন রাগে সমস্ত শরীর থর’থর করে কাঁ’পছে যেন তাঁর। ঘৃ’নায় তাকাতেও রুচিতে বাঁ’ধছে এখন। তাঁর পরিবারের সকলের মাঝে এতটা বি’ষ পুষে রেখেছে এরা ভাবতেই চক্ষুদ্বয় কেমন ছলছল করে উঠছে সাফিনের। নিজের জন্মদাতা ড্যাডও কিনা তাঁর ভালোবাসাকে মে’রে ফেলার পরিকল্পনার সাথে জড়িত!
— পরিবারের থেকে তোমাদের কাছে সম্পত্তির এই দেয়ালটা বড় হয়ে গেল চাচ্চু? আমি সর্বক্ষণ তোমাকে সম্মান করেছি। তোমাকে মন থেকে ভালোবেসেছি। আর তুমি! সরোয়ার সাহেব হেসে উঠলেন। বললেন।
— তোমার ড্যাডের ধারনা তাঁর আব্বাকে সিরাত মে’রেছে। তাই সে তোমাকে প্রথমে বিদেশে পাঠিয়ে সিরাতকে দূরে ঠেলেছেন। সবতো ঠিক-ঠাকই চলছিল। তাহলে তুমি কেন আবার দেশে পারি জমালে? তো এখন নিজ হাতেই নিজের ভালোবাসাকে খু’ন করো। নাঈম? সরোয়ার সাহেবের কন্ঠ শুনে নাঈম বাহির থেকে খাবার নিয়ে হাজির হলে সরোয়ার সাহেব হেলান দিয়ে চেয়ারে বসে ধীর কন্ঠে বললেন।
—ওদের বাঁ’ধনটা খুলে দেও। সরোয়ার সাহেবের আদেশ অনুযায়ী নাঈম সিরাতের বাঁ’ধনটা খুলে দিয়ে খাবারের প্যাকেটটা সিরাতের সামনে তুলে দিলে সিরাতের অশ্রুগুলো ঝড়ে পরতে থাকলো যেন। ধীর কন্ঠে বললো।
—খাবনা।
—দ্রুত খাও মেয়ে। সরোয়ার সাহেবের রাগান্বিত কন্ঠ শুনে সাফিন রাগান্বিত চোখদ্বয় নিয়ে সরোয়ার সাহেবের দিকে তাকালেও আগের মতো কেমন শক্তিতে কুলিয়ে উঠছে না তাঁর। চোখদুটো জ্বা’লা করছে প্রচুর। এতগুলো বছরের এই সম্পর্কের বাঁ’ধনটা এক নিমিষেই কেমন শেষ হয়ে যাচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে প্রচুর তাঁর। হৃদয়মাঝারের হৃদকুঠোরির ভা’জে লুকিয়ে থাকা একমুঠো প্রনয় যেন কোনো ভাবেই ধরে রাখতে পারছে না সে। সিরাত সরোয়ার সাহেবের কন্ঠশুনে কেঁ’পে উঠলে কাঁ’পা>কাঁ’পা হাতে প্যাকেটের ভেতর থেকে রুটি কলা অনেক কষ্টে গ্রো’গ্রাসে গি’লছে শুধু। কিন্তু গ’লা দিয়ে নামতে চাইছে না যেন তাঁর। “দিগন্তের ক্ষ’নে- ক্ষ’নে গর্জ’নপাতটাও যেন বিষা’দে ছেয়ে রয়েছে আজ।” বৃষ্টিময় হিমশীতল হাওয়া অন্ধকার রুমময় প্রবেশ করে গেলেও কপালের ভাঁ’জে>ভাঁ’জে কেমন ঘেমে উঠেছে সিরাতের। সরোয়ার সাহেব ইশারা করতে নাঈম সাফিনের হাতের বাঁ’ধন খুলে দিলে সরোয়ার সাহেব হুঁশিয়াররি ভাবে বললেন।
— মনিটর খেয়াল রেখে কাজ করবে আশাকরি। সরোয়ার সাহেবের কথাটা কানের কাছে এসে পৌঁছাতে চোখদ্বয় বন্ধ করে নিল সাফিন। হাতদুটি মুঠোবন্দি করে রাখলো সে। আজ সবদিক থেকেই কেমন বাঁ’ধা পরে গেছে সে। নিজের আপনজনদের এই র’ক্ত নিয়ে খেলাটা কেমন হ’জম করতে পারছে না সে। অশ্রুসিক্ত নয়নে সিরাতের দিকে তাকালে সিরাতের শুকনো হাসি উপহার হিসেবে পেল সে। সরোয়ার সাহেব তাঁর হাত থেকে ব’ন্দুকটা ফ্লোরে ছুঁ’ড়ে মে’রে বললেন।
— চটপট গু’লিটা চালিয়ে দেও সাফিন। না থাকবে মা আর না আসবে তাঁর অনাকাঙ্ক্ষিত বাচ্চা। সরোয়ার সাহেবের কথাটা শুনে সাফিনের পা ঢ’লে নিচে পরে গেলে সিরাত অশ্রুসিক্ত নয়নে ধীর পায়ে নিচু হয়ে সাফিনের সামনে বসে ফ্লোর থেকে ব’ন্দুকটা হাতে নিয়ে একপলক তাঁর দিকে তাকিয়ে সাফিনের কাঁধে হাত রেখে ধীর কন্ঠে বললো।
— এভাবে ভে’ঙে পড়ার কিছু নেই সাফিন। আমাকে মে’রে দিলেই সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। অন্যথা এই বি’ষাদময় জিবনের কোনো মানে হয়না। সিরাতের ধীর কন্ঠের রেশ শুনে রাগ লাগলো সাফিনের। রাগান্বিত কন্ঠে বললো।
—কাকে মা’রবো আমি? যাকে আমি ভালোবাসি তাঁকেই মে’রে দিতে বলছো তুমি সিরাত? তাঁর থেকে তো নিজেকে গু’লি করে মে’রে দেওয়াও হাজারগুন ভালো। সাফিনের রাগান্বিত কথাটাও আজ যেন ভালো লাগছে সিরাতের। চোখের কোন ঘেঁষে অশ্রু ঝরে পরলে সাফিন সিরাতের দুইগালে হাত রেখে হুট করেই সিরাতের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিতে সরোয়ার সাহেবসহ সবাই মাথা নিচু করে ফেললেন। সরোয়ার সাহেব বললেন।
— এ ছেলে মেয়েটাকে মা’রার আগেও কেমন নিজের জোর খাটাচ্ছে! এগুলা দেখাও পা’প৷ তওবা-তওবা। কথাটা বলে বাকিদের দিকে তাকিয়ে তাঁদের উদ্দেশ্যে বললেন।
—এ কেউ মাথা জাগাবি না বলে রাখলাম।
—আচ্ছা স্যার।
.
দীর্ঘসময় নিয়ে সাফিন সিরাতকে ছাড়ার পর সিরাত মৃদু হাসলো শুধু। আজকে তাঁর ল’জ্জা, ভায় কোনোটাই যেন কাজ করছে না। মৃ’ত্যুর ঠিকানাটা অনেক আগেই নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে সে। হাতে থাকা ব’ন্দুকটা সাফিনের হাতে দিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে মুখে হাসি লে’প্টে বললো।
— গু’লিটা এবার চালান সাফিন। সাফিন সিরাতের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকাতে সিরাত হেসে বললো।
—ভু’লটা এটা নয় যে,বুড়ো আম্মা আমাকে তি’লে>তি’লে মা’রতে চেয়েছেন? ভু’লটা এটা যে, আপনি আমাকে ভু’ল বুঝেছেন। যাঁর খেসারত হিসেবে আপনিও আমাকে পাবেন না। সিরাতের ধীর কন্ঠে ছুঁ’ড়ির আ’ঘাতের ন্যায় কন্ঠস্বর যেন ভেতরটা খুব পোড়া’চ্ছে সাফিনের। র’ক্তিম চোখদুটি দিয়ে ঝরে পরছে তাঁর র’ক্তিম অশ্রুধারা।
— চেয়েছিলাম প্রেয়সীর রাগ ভাঙাতে, খেসারত হিসেবে তুমি নিজেকে আ’ঘাত হানতে বলে আমার হৃদয়টাকে ক্ষ’ত বি’ক্ষত করতে চাইছো সিরাত?
—জীবনটা ক্ষনিকের সাফিন? আজ আছি কাল নেই! ভাগ্যগতিতে নাহয় আগেই এই মোহ ছাড়িয়ে না ফেরার দেশে পারি জমাই। সাফিনের চোখের অশ্রুধারা দেখে সিরাত কান্নারত চোখে সাফিনের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকলে সাফিন সিরাতের দিকে তাকিয়ে দেখছে শুধু তাঁকে।
—তোমার কষ্ট হচ্ছে না সিরাত? সাফিনের কথা শুনে হেসে উঠলো সিরাত। হাসির স্বরে বললো।
— যে মেয়ে ছোটবেলা থেকেই তাঁর বাবা-মাকে হাঁড়িয়ে বসে আছে, তাঁর আবার কষ্ট কিসের হুম?
—তোমাদের এত এক্টিং দেখার জন্য বসে রইনি আমরা এখানে। আর পাঁচ গু’নব শুধু। অনেক টাইম ওয়েস্ট করে ফেলেছি। আর নয়।
—সাফিন গু’লিটা চালান? সাফিনের হাতটা কেমন কাঁ’পছে। সিরাত সাফিনের হাতটা টে’নে নিয়ে ব’ন্দুকটা আবারও নিজের পেটের কাছে এনে ধীর কন্ঠে বললো।
— ভালোবাসি আপনাকে সাফিন? আপনার জন্য ম’রতেও রাজি আছি….

চলবে…..

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#শেষ_পর্ব।

🚫 ভিতরে কিছু-কিছু জায়গায় অশা’লীন ওয়ার্ড ব্যাবহার করা হয়েছে গল্পের প্রয়েজনে। তাঁর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।ছোটরা দূরে থাকুন।🚫

—সাফিন গু’লিটা চালান? সাফিনের হাতটা কেমন কাঁ’পছে। সিরাত সাফিনের হাতটা টে’নে নিয়ে ব’ন্দুকটা আবারও নিজের পেটের কাছে এনে ধীর কন্ঠে বললো।
— ভালোবাসি আপনাকে সাফিন? আপনার জন্য ম’রতেও রাজি আছি। সিরাতের ধীর কন্ঠের রেশ যেন ঠিক হ’জম করতে পারলো না সাফিন। র’ক্তিম চক্ষুদুটি দিয়ে অনবরত র’ক্ত ঝরে পরছে যেন। ডু’করে উঠে কান্না পাচ্ছে যেন তাঁর। সিরাত ছলছল চাহনিতে মুখে হাসি লে’প্টে শীতল স্বরে বললো।
—একটা কথা বলব আপনাকে সাফিন? সিরাতের এরমধারা কন্ঠস্বর শুনে সাফিন নিজেকে সা’মলে রাখতে পারছে না যেন। হুট করেই আবারও সিরাতকে আ’ষ্টে>পৃষ্টে জড়িয়ে ধরে সিরাতের মাথার পিছনে হাত রেখে সিরাতের মাথাটা টে’নে নিয়ে নিজের বুকের বাম পাশে চে’পে ধরে কান্নারত কন্ঠে বললো।
— সিরাত আমি আর পারছি না জান। এমন করো না প্লিজ তুমি! আম্মার কিচ্ছু হবে না তুমি চলো এখান থেকে। সাফিনের কন্ঠ শুনে মৃদু হেসে উঠলো সিরাত।প্রতিউত্তর করলো না সে। সিরাতের চোখের পানি নাকের পানি এক হয়ে গেলে সাফিনের ভেজা শার্টটা যেন আরও ভিজিয়ে দিতে ব্যাস্ত। সিরাতের ঘনঘন নিশ্বাসের উষ্ণ’তা সাফিনের বুকের উপর আঁ’ছড়ে পরতে থাকলে সাফিনের হৃদয়ের কম্প’নতা যেন আরও তি’ব্রতর হয়ে উঠলো। নিজেকে শান্ত রাখার বৃথা চেষ্টা করে ধীর কন্ঠে বললো।
— বলো কি বলবে? প্রেয়সীর কথা শোনার জন্যইতো অব্য’ক্ত হয়ে আছে এই অধ’মের ব্যাকুল হৃদয়। সাফিনের কথার তী’ব্রতা সিরাতের কানের কাছে এসে পৌঁছাতে সিরাত সাফিনের বুক থেকে মাথাটা জাগিয়ে সাফিনের দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে কান্নার হাসি হেসে বললো।
— শেষ বারের মতো আপনাকে ছুঁয়ে দেখতে পারি সাফিন? সিরাতের এরুপ আবদারে সাফিন অসহায় চাহনিতে সিরাতের দিকে তাকিয়ে ধীর ভাবে সিরাতের চোখের দৃষ্টিতে চোখ রেখে দুইপাশে হাত মেলে দিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করতে সিরাত কোনো কিছু না ভেবেই ঝাঁপি’য়ে পরলো সাফিনের প্রসস্থ বুকে। শীতল হাতে সাফিনের ফর্সা তৈলাক্তময় গালে হাতের স্পর্শ ছুয়িয়ে দিতে চোখদুটি গিয়ে থ’মকে গেল সাফিনের নাকের ডগায় থাকা লালচে রাঙা তিলটার দিকে। ঠোঁটদুটি মৃদু ফাঁ’ক হয়ে আসলো সিরাতের। এই তিলটার উপর তাঁর লো’ভ জন্মে আছে সেই প্রথম দিন থেকে। আজকে যেন আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে করতে পারলো না সিরাত। সাফিনের সমস্ত মুখশ্রীতে পা’গলের মতো চুমু খেতে থাকলো সে। সাফিন ছলছল চাহনিতে সিরাতের পা’গলামো দেখছে শুধু। একটা মেয়ে কতটা ক’ষ্ট পেলে এ রকম নিজের ল’জ্জা’র বাঁ’ধ ভুলে গিয়ে তাঁকে আঁ’কড়ে ধরতে পারে। যেখানে সাফিন যখনই কোনো ল’জ্জাদায়ক কথা বলতো সিরাতকে তখনই সিরাত রাগে নাকের ডগা প্রথমেই লাল করে ফেলতো। সাফিনের বুকের ভেতরটা কেমন জ্ব’লে পু’রে খা’ক হয়ে যাচ্ছে যেন। শুধু পু’রে যাওয়া জায়গাটাতে তাঁর প্রেয়সীকে আগলে রেখে পানি ঢালারও জো নেই আর এখন। সেখানে এখন নিজ হাতেই নিজের প্রেয়সীকে খু’ন করার জন্য প্রে’সার দেওয়া হচ্ছে।
—হয়তো আমি আকাশের হাজারো তাঁরার মাঝে একটি কোনে ঘা’পটি মে’রে বসে থাকব সাফিন? কখনো ঝুম বর্ষনের সহিত ধরনীতে এসে সা’জোরে আ’ঘাত হানব! তবুও প্রতিটা মুহুর্ত তোমাতেই ম’রিয়া হয়ে থাকব আমি। গল্পটা হয়তো ভিন্ন হতে পারতো? কিন্তু আমি মানুষটাই যে চিরকালের অসুখী সাফিন। অন্যকে আর কি দো’ষারোপ করব? কথাগুলো হৃদয় মাঝারে ছন্দের হারে বাজতে থাকলে হুট করেই গু’লির বিক’ট শব্দে আ’ঘাতের সহিত পেটের কাছটাতে এসে বা’রি খেয়ে গেলে ছলছল দৃষ্টিতে ঠোঁটের কোনে হাসির ছাপ রেখে সিরাতের নিস্তে’জ দেহটা সাফিনের বুকের কাছে এসে ঢ’লে পরলে হৃদয় কেঁ’পে উঠলো যেন সাফিনের। সিরাতের মুখের কোন ছুঁয়ে ঠোঁট স্পর্শ করে র’ক্ত গড়ি’য়ে পরতে থাকলে আঁ’তকে উঠলো সাফিন। হুট করেই কিভাবে কি হয়ে গেল। সে তো গু’লি চালায়নি? পরক্ষণেই নিজের হাতটা সিরাতের হাতের বাঁ’ধনের কাছে দেখে এতক্ষণের ঝিম ধরে থাকা কান্নাগুলো চিৎ’কারের সহিত বেড়িয়ে আসতে চাইছে যেন সাফিনের। সিরাতকে নিজের বুকের কাছটাতে জা’প্টে ধরে ভে’ঙে পরলো সাফিন। বুকের মাঝে তো’ল>পা’ড় বয়ে যাচ্ছে তাঁর।
— সিরাত…! কেন করলে এমনটা তুমি? এভাবে শা’স্তি দিলে আমাকে তুমি? এর থেকে তো আমাকে মে’রে ফেললেও এত ক’ষ্ট হতনা সিরাত? সাফিনের কান্নার রেশ সিরাতের কানের কাছে এসে পৌঁছাতে জোরপূর্বক চোখদুটি পিটপিট করে তাকালে সাফিন সিরাতকে আরও গভীর ভাবে আঁ’কড়ে ধরলো। সাফিনের কান্নার রেশ তি’ব্র হতে থাকলে সরোয়ার সাহেব সহ সবাই হো-হো করে হেসে উঠলে সাফিনের রাগে সমস্ত শরীর থর’থর করে কাঁ’পছে যেন। তাঁদের দিকে ছলছল দৃষ্টিতে রাগান্বিত চোখে তাকালে হুট করেই বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সহিত অনবরত গু’লি বর্ষনের আওয়াজ শোনা গেলে সরোয়ার সাহেবসহ সবাই ভ’রকে গেলেন যেন। সরোয়ার সাহেব সাফিন আর সিরাতের দিকে এক পলক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নাঈমের দিকে তাকিয়ে কা’ঠ>কা’ঠ কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন।
— এসব কি হচ্ছে নাঈম? গু’লি ছুঁ’ড়তে বলেছো কেন তুমি? কেউকি এসেছে বাহিরে?
সরোয়ার সাহেব অন্ধকারে বৃষ্টিময় গেটের দিকে উঁকি দিতে নিতে নাঈমের ভ্রুদ্বয় কুঁ’চকে আসলো যেন। সে তো বলেনি গু’লি ছু’ড়তে। তাহলে? কয়েকটা ঢোক গি’লে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সরোয়ার সাহেবের দিকে তাঁকাতে জুবায়েরের বৃষ্টিতে ভিজে অন্ধকারে ল্যামপোস্টের মৃদু আলোয় জুবায়েরের শ্যামবর্ন মুখশ্রী চিকচিক করছে যেন। সঙ্গে দশ দশটা গাড়ি ভর্তি গার্ডরা পুরো বাড়িটাকে ঘিরে ফেললে গু’লি বর্ষনে কয়েকজন সেখানেই গ’ত হয়ে গেছে তো কয়েকজনের বাহুতে নয়তো পায়ে গু’লি লেগেছে। হুট করে আকষ্মি’ক ঘটনায় সরোয়ার সাহেবসহ সবাই দ’মে গেলেন যেন। ফাইলের কাগজটা বের করে দ্রুত সাফিনের সামনে কলম ধরে দাঁতে দাঁত চে’পে সরোয়ার সাহেব বলতে লাগলেন।
— সাফিন বেডা সাইনটা করে দেও দ্রুত, নয়তো তোমার বউয়ের মতো তোমার আম্মার অবস্থাও এমন করে দেব আমি। সরোয়ার সাহেবের কন্ঠের রেশ সাফিনের কানের কাছে অন্তর্নিহিত হতে রাগে সাফিনের র’ক্তিম চোখগুলো অন্ধকারে যেন আরও ভ’য়ানক দেখাচ্ছে। সিরাতের শরীর থেকে ঝড়া র’ক্তের রেশ সাফিনের সমস্ত শরীরে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে যেন। হুট করেই জুবায়ের রুমে প্রবেশ করতে মোহন আর হেলাল গু’লি ছুঁ’ড়তে থাকলে অন্ধকারে নাঈমও পাল্টা গু’লি ছুঁ’ড়তে যেতে জুবায়েরের হাত থেকে ছোঁ’ড়া গু’লিটা নাঈমের বুক বরাবর গিয়ে ছেদ খেয়ে গেলে নাঈম পা ঢলে ফ্লোরে আঁ’ছড়ে পরতে হুট করে সাদারাঙা লাইটারের আলো তী’ব্র ভাবে রুমজুড়ে ছেয়ে গেলে সরোয়ার সাহেবকে দেখে বড়জোর একটা ধা’ক্কা খেয়ে গেল জুবায়ের।
—এটা আমি কি দেখছি! জুবায়ের হা হয়ে গেলে সরোয়ার সাহেব পকেট থেকে আর একটা ব’ন্দুক বের করে জুবায়েরের দিকে তাক করতে ভ’রকে গেল জুবায়ের। সাফিনের দিকে তাকাতে সিরাতকে নিস্তে’জ অবস্থায় দেখে আরও বিষম খেল যেন জুবায়ের। এবার মুখ থেকে বেড়িয়েই গেল।
—স্যার এসব কি হচ্ছে? আর ম্যামেরই বা এ রকম অবস্থা হলো কিভাবে? জুবায়েরের ভয়ার্ত কন্ঠ শুনে সাফিন মৃদু হাসলে সরোয়ার সাহেব হাসির স্বরে বলে উঠলেন।
— আমি আগেই বলেছিলাম সাফিন বেডা যে, তোমার সাঙ্গ-পা’ঙ্গ না নিয়ে আসতে? এবার তাহলে পুরো পরিবারটাকে জমে’র ঠিকানা দেখিয়ে দেই ডিয়ার? উপস, তোমার আম্মার কথাটাও একবার ভাবলে না! মি’ছি>মি’ছি তোমার আম্মাকে বাঁ’চাতে গিয়ে তোমার বউয়েরও প্রানটা এখন যাই-যাই অবস্থা। আর সেইতো তোমার আম্মাকেও এখন বাধ্য হয়ে মা’রতে হবে তাহলে আমার। সরোয়ার সাহেবের কথা শুনে সাফিন মনিটরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি হাসলো শুধু। জুবায়ের হাত দিয়ে হ্যান্ডসাপের মতো করে সামনে ধরলে সরোয়ার সাহেবের দৃষ্টি জুবায়েরের দিকে যেতে সিরাতের বন্ধ চোখদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে একফোঁটা অশ্রু ঝড়াল সাফিন। সিরাতের কপালে চুমু খেয়ে সিরাতের হাত থেকে ব’ন্দুকটা নিয়ে সরোয়ার সাহেবের দিকে পেছন থেকে সুট করতে গু’লিটা গিয়ে সরোয়ার সাহেবের পেছন ছুঁয়ে বুক বরাবর স্পর্শ করে গেলে আঁ’চমকা আ’ক্রমণে সরোয়ার সাহেব পিছু ঘুড়ে গু’লি চালানোর উদ্যেগ নেওয়ার আগেই জুবায়ের সরোয়ার সাহেবের হাতদুটি নিজের দখলে নিয়ে গিয়ে ব’ন্দুকটা নিজ হাতে নিয়ে নিল। হাসির স্বরে বললো।
— এবার আপনিও একটু মনিটরটা দেখুন মিস্টার সরোয়ার। সরোয়ার সাহেব পিছুঘুরে তাকালে মনিটরে আমেনা বেগমকে সহিসালামতে বাড়িতে বসে থাকতে দেখে ভ্রুদ্বয় কুঁ’চকে এলো সরোয়ার সাহেবের।
—এটা কিভাবে সম্ভব? সরোয়ার সাহেবের অস্প’ষ্ট কন্ঠ শুনে হেসে উঠলো জুবায়ের। বললো।
— আপনার ড্রাইভার ভু’ল করে আমার গাড়ির সামনে পরে গিয়েছিল স্যার। উপস, সো স্যা’ড। এভাবে আপনাকেও এখন পৃথিবীর মা’য়া ত্যা’গ করতে হবে। কথাটা বলেই সামনে থেকে বুক বরাবর গু’লি ছুঁ’ড়তে এবার সরোয়ার সাহেব আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না। পা ঢ’লে ফ্লোরে পরে গেলেন। আর সমস্ত রুম জুড়ে শুধু বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের প্রতিধ্বনি বরাদ্দ থাকলো।
.
দিগন্তের প্রতিটা কোন ঘেঁষে কালো মেঘে ছেঁয়ে আছে যেন আজ। গগনের বিষন্নতার হাওয়াটা যেন সাফিনের হৃদয়টা আরও ক্ষ’ত বিক্ষ’ত করার জন্য যথেষ্ট। সকালের ফুরফুরে হিমশীতল হাওয়া শরীরে যেন কারে’ন্টের ন্যায় প্রবেশ করছে হাসপাতালের করিডোর জুড়ে। চেয়ারে শরীর এলিয়ে দুইহাত মাথায় রেখে শক্ত করে আঁ’কড়ে ধরে আছে সাফিন। ভয়ে নিশ্বাস নিতে পর্যন্ত ভু’লতে বসেছে সে। সিরাতকে সেই রাতে কখন আইসিউতে নিয়ে গেছে হায়াত এখনও তাঁর এমুখো হওয়ার নাম নেই। নির্ঘুম রাতে মাথাটা কেমন ঝিমুচ্ছে সাফিনের। হুট করেই আমেনা বেগম এসে হাজির হলে নিজের আম্মার মুখের দিকে দৃষ্টিস্থির রেখে ছুটে গিয়ে আমেনা বেগমকে জড়িয়ে ধরলো সাফিন। বুকটা কেমন খালি>খালি লাগছে তাঁর। বিতৃষ্ণা’য় গ’লা শু’কিয়ে আসতে চাইছে যেন। আমেনা বেগম সাফিনের পিঠ চা’পরে দিয়ে কান্নারত কন্ঠে বললেন।
—কি হয়েছে আমার আম্মার? এত বছর পর মেয়েটাকে বাড়ি নিতে চাইলি আর এখনই এ রকম অ’ঘটন ঘ’টতে হলো? হায় আল্লাহ, আমার আম্মারে তুমি সুস্থ কইরা তুইলো খো’দা। এই বুড়ো বয়সে আর এরুপ ঘট’নার সম্মুখীন হয়িওনা মা’বুদ। আমেনা বেগম কেঁদে উঠলে সাফিন আমেনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে এবার কেঁদে উঠলো যেন। হৃদয়ের গহীনতায় যেন প্রনয় শুরু হওয়ার আগেই ঝ’লসে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে।
“আরও কিছুটা সময় নিয়ে আইসিউ থেকে হায়াত বেড়িয়ে আসলে সাফিন তাঁর কাছে যাওয়ার আগেই হুট করেই তোহা কান্নাভেজা চোখদ্বয় নিয়ে দৌঁড়ে এসে হায়াতের শার্টের কলার টেনে ধরে ফো’পাঁতে-ফো’পাঁতে বলতে থাকলো।”
—আমার জানের কি হইছে হুম? আমি কিচ্ছুটি শুনতে চাইছি না আমি শুধু আমার সিরাতকে সুস্থ অবস্থায় দেখতে চাই। আচমকা তোহার এরুপ আচরনে সাফিন তোহার মাথায় হাত রেখে শান্ত করার চেষ্টা করতে যেতে তোহা এতেকরে আরও রেগে উঠলো যেন। সাফিনের দিকে তাকিয়ে ক’ট>ম’ট করে বলতে লাগলো।
—এই সবকিছুর জন্য দায়ী আপনি। শুধুমাএ আপনার জন্য আমার জানের লাইফটা এভাবে হে’ল হয়ে গেছে। এখন এখানে আসছেন কেন? তা’মা’শা দেখতে এসেছেন যে, কিভাবে সিরাত ধীরে-ধীরে মৃ’ত্যুর মুখে ধা’বিত হচ্ছে তাইতো? এটাই তো দেখতে চান আপনি… কথাটা বলা মাএই তোহার গালে সাফিনের শ’ক্তপো’ক্ত হাতের স্পর্শ পরে গেলে বাহির থেকে জুবায়ের তোহার জন্য খাবার কিনে আনলে এরুপ দৃশ্য দেখে থ’মকে গেল যেন সে। সাফিনের থা’প্পড়ের কারনে তোহার এলেমেলো কোকরানো চুলগুলো সামনে চলে আসাতে গালে হাত রাখলো তোহা। সবাই কেমন চুপ করে গেল যেন। সাফিন রাগ নিয়ে দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে বললো।
— আমি নিজে বারবার খু’ন হতে রাজি আছি তোহা। আমাকে নিয়ে যা খুশি বলো তুমি, আমি কিচ্ছুটি বলব না তোমায়। যদি বলি তো তোমার পায়ের জু’তা আর আমার এই গাল।কিন্তু সিরাতকে নিয়ে মৃ’ত্যুর সম্পর্কে ফারদার কোনো কথা বললে আমার থেকে খা’রা’প লোক তুমি একটা খুঁজে পাবে না পৃথিবীতে।
কথাগুলো বলে হায়াতের দিকে তাকিয়ে বললো।
—সিরাত ঠিক আছেতো হায়াত? সাফিনের প্রশ্ন কানের কাছে এসে পৌঁছাতেও খানিক আগের ঘটে যাওয়া ঘটনায় ত’ব্দা খেয়ে গেছে যেন হায়াত।
— আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে না থেকে বলো সিরাতের কি হয়েছে? এখন ঠিক আছে তো সে?
—উম,হুম আপদত ঠিক আছে। গু’লিটা ভা’গ্য বসত পেট ছুঁয়ে স্পর্শ করে গেছে। তবে পেটের কাছে আঘা’ত হেনেছে প্রচুর। কয়েক সপ্তাহ রেস্ট নিতে হবে। ভালো দেখভাল করলে ঠিক হয়ে যাবে খুব দ্রুত। হায়াতের কথা শুনে প্রশান্তির হাসি হাসলো সবাই। সাফিনের বুকের জ্বা’লাটাতে পানি পরলো যেন। দীর্ঘ সময় নিয়ে নিশ্বাস ছেড়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—দেখতে যেতে পারি ওকে?
—সিওর তবে পাঁচ মিনিটের বেশি টাইম দিতে পারব না স্যার। ইনফেকশন হয়ে যাবে নয়তো। ড্রেস পরে নিন ফ্রেশ রুমে গিয়ে।
সাফিন মৃদু হেসে হায়াতের সাথে ধীর পায়ে সেদিকে চলে গেলে আমেনা বেগম তোহার কাঁধে হাত রেখে তাঁকে চেয়ারে বসিয়ে মাথায় হাত বু’লিয়ে দিয়ে ধীর কন্ঠে বললেন।
—আমার ছেলেটার উপর রাগ করিস না মা। আসলে ও গম্ভীর হলেও আমার আম্মাজানটাকে মন থেকে ভালোবাসে ও। আমেনা বেগমের কথা শুনে মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলল শুধু তোহা৷ হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেললেও আবারও এসে জমা হচ্ছে যেন চোখের কোনে। শীতল কন্ঠে আমেনা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো।
—না ঠিক আছে। আসলে আমিও একটু বেশিই সিনক্রি’য়েট করে ফেলেছি বোধহয়। আমেনা বেগম মৃদু হেসে বললেন।
—আমি জানিতো তুই আমার আম্মাজানটাকে কতটা ভালোবাসিস। আমেনা বেগম তোহাকে জড়িয়ে ধরলে তোহাও আমেনা বেগমের কাঁধের উপর থু’তনি ঠেকিয়ে মৃদু হাসলো শুধু।
.
কেবিনে এসে সিরাতের নিস্তে’জ ভাবে শুয়ে থাকা দৃষ্টিগোচর হলে বুকটা কেমন কেঁ’পে উঠলো সাফিনের। চোখের কোনে জমে থাকা পানিগুলো যেন থামতে চাইছে না আজ। নিজের ড্যাড মোস্তফা সাহেবের প্রতিও কোনো অভিযোগ দেওয়ার রিজন খুঁজে পাচ্ছে না সাফিন। ভুল বোঝাবোঝি যেন মারা’ত্মক পী’ড়াদায়ক। যার যন্ত্র’না এখন হাড়ে>হাড়ে টের পাচ্ছে সাফিন। ধীর পায়ে সিরাতের দিকে এগিয়ে যেতে হায়াত মৃদু হেসে নিজের কেবিনে চলে গেল।
“টেবিল টে’নে তাঁর উপর হেলানি দিয়ে বসে সিরাতের হিমশীতল হাতে স্পর্শ করতে পিটপিট করে তাঁর দিকে তাকাল সিরাত।” হাতে থাকা ক্যা’নুলাটা যেন বি’ষের মতো করে দিয়েছে সমস্ত শরীর। সাফিন বাঁকা হাসি হেসে শীতল কন্ঠে বললো।
— যতদিন এই শাহনেওয়াজ সাফিনের হৃৎস্প’ন্দনের গতি স্থির এবং পৃথিবীর আলোয় আলোকিত থাকবে না সিরাত? ততদিন তোমার কিচ্ছুটি হতে দেব না আমি। ভালোবাসি তোমাকে। সাফিনের কন্ঠের রেশ সিরাতের কানের কাছে ছন্দের হারে কুন্ঠিত হতে থাকলে চোখদ্বয় বন্ধ করে প্রশান্তির হাসি হাসলো সে।
.
—ম্যাম আপনি কিছু খেয়ে নিন। গ্রাম থেকে জার্নি করে এতদূর এসেছেন এখনও কিছু খাননি। জুবায়েরের কথা কানের চারপাশেও লাগাল না তোহা।পরে আমেনা বেগমও জুবায়েরের সাথে সায় দিয়ে একপ্রকার জোর করে তোহাকে খায়িয়ে দিলে মুখ ভার করে ফেলল তোহা। বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে রাখার কারনে তোহাকে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি এসে ভর করলো জুবায়েরের। খানিক বাদে হায়াত এসে তাঁদের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—এক-এক করে এখন আপনারা পেসেন্টের সাথে দেখা করতে পারেন ম্যাম। হায়াতের কথা শুনে লুফে উঠলো তেহা। আমেনা বেগমের হাত ধরে শীতল কন্ঠে আবদারের সহিত বললো।
—আমি যেতে পারি কাকি। তোহার মুখে কাকি সম্মোধন শুনে আমেনা বেগমের চোখের কোনে পানি এসে জমা হলো যেন। একগাল হেসে বললেন।
—আচ্ছা যা আম্মাজান। আমেনা বেগমের সম্মতিতে খুশিতে গ’দ>গ’দ হয়ে গেল তোহা আমেনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে হন্ত’দন্ত হয়ে যেতে থাকলে কারো ধীর কন্ঠের রেশ কানের কাছে এসে বা’রি খেয়ে গেল যেন তোহার।
—চরটা কি বেশি জোরে আ’ঘাত হেনেছে মিস আপনাকে? সিরাতকে দেখতে যেতে নিতে হুট করেই হায়াতের এরমধারা প্রশ্নে খানিকটা অবাক এবং বিব্রতবোধ করলো তোহাকে। চোখমুখ কুঁ’চকে ধীর এবং শক্তপো’ক্ত কন্ঠে উত্তর দিল।
— বন্ধুত্বের জন্য জান হাজির,সামান্য চর কোনো ফ্যাক্ট নয়। মিস্টার হায়াত মাহমুদ। কথাটা বলেই তোহা দ্রুত পায়ে সিরাতের কেবিনের দিকে চলে গেলে তোহার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বাঁকা হাসি হাসলো হায়াত। থেমে -থেমে বললো।
— বন্ধুত্বের জন্য জান হাজির? তাহলে ভালোবাসার মানুষের জন্য নিশ্চয়ই হৃদয় হাজির থাকবে তোমার। তাইনা মিস তোহা। কথাটা ভাবান্তরে ছেদ পরে গেলেই হেসে উঠলো হায়াত। তাঁদেরকে এমন ভাবে কথা বলতে দেখে পেছন থেকে জুবায়েরের ছলছল চোখদুটি আড়াল হয়ে গেল যেন এক অজানা ব্যা’থায়।
.
টানা দুই সপ্তাহ পর সিরাতকে বাড়ি নিয়ে আসতে পারলো সাফিন। তবুও ডাক্তারের করা নিষেধ হলো সিরাতকে যেন কোনো কিছুতে প্রেসার না দেওয়া হয়। নয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে।তাই সাফিনও চোখে হারাচ্ছে সিরাতকে। শাহনেওয়াজ ভিলায় আজ উৎসবের সমারোহ। আবারও তাঁদের বাসর ঘর সাজানো হবে আজকে। এক-এক করে মানুষ আসছে আর সিরাতকে দেখে যাচ্ছে। সামনে ইলেকশনেরও কোনো চিন্তা আপাদত ঘা’য়েল করতে পারেনি সাফিনকে। কেননা মোস্তফা সাহেবের জয় হবে সেটা আগে থেকেই সে নিশ্চিত। সরোয়ার সাহেবকে নিয়ে আর কোনো কথা হয়নি নিউজে। জুবায়েরকে দিয়ে সবগুলো লা’শ বস্তুা বঁ’ধে সমুদ্রে ভা’সিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই আর কেউ এর টিকিটিও জানতে পারেনি। মোস্তফা সাহেব নিজের কাজের জন্য সিরাতের কাছে মা’ফ চাইলে ল’জ্জায় সিরাত তাঁর দিকে তাকাতে পারছে না যেন। শশুরের এরুপ আচরনে সে যেন ক্ষুন্য হলো। নিজেই বরং শশুরের পা ছুঁয়ে সালাম করে নিল উ’ল্টো। আমেনা বেগমের চোখের কাছে পানির রেশ চিকচিক করছে যেন। সাফিনের হাত ধরে শাহনেওয়াজ ভিলায় আবারও পা রাখাটা ভালো লাগলেও এতদিনের সৃতি তোহার হাত ছেড়ে এ বাড়িতে থাকাটও যেন মনের ভিতরে পাঁথ’র চাঁ’পা দিয়ে রেখেছে সিরাতের। যদিও সাফিনকে বলে তোহার জন্য নতুন ফ্লাট আর ভালো একটা চাকরির ব্যাবস্থা করে দিয়েছে সে। তোহা এ বাড়িতে আসতে নারাজ তারজন্য।
সাফিন আজ প্রচুর খুশি সারাদিন সিরাতকে সবাই আঁট’কে রাখলেও চুপিচুপি লুকিয়ে-লুকিয়ে দেখাটাও আনন্দ দায়ক লাগছে তাঁরকাছে। দিনশেষে রাতেতো সিরাত ঠিকই বউয়ের সাজে সজ্জিত হয়ে তাঁর কাছে আসবে। এটাই আল্লাহর কাছে লাখ-লাখ শুকরিয়া।
.
রাত এখন ১২ টা নাগাত। গগনের কোল ঘেঁষে কালোরাঙা ভাসমান মেঘদ্বয় থেকে ক্ষনে- ক্ষনে গর্জ’নপাত করছে যেন। হয়তো কখন টুপ করে তাঁর বর্ষনপাত ঝড়ে দিবে শহরজুড়ে। ফুলে সজ্জিত রুমটাতে অনবরত পায়চারি করে চলেছে সাফিন। প্রেয়সীর অপেক্ষায় আ’প্লূত হয়ে আছে যেন তাঁর ব্যাকুল হৃদয়। বারংবার হাতে থাকা বিদেশি ঘড়িটার দিকে তাকাচ্ছে তো দরজার পানে।
” টানা তিন ঘন্টা ধরে তোহা আর আমেনা বেগম সিরাতকে বউয়ের রুপে সাজিয়ে দিলে আমেনা বেগম চোখের নিচ থেকে কাজল নিয়ে সিরাতের ঘাড়ের কাছে টিকা কেঁ’টে দিলেন যেন।” একগাল মুগ্ধতার হাসি হেসে শীতল কন্ঠে বললেন।
— আমার ছেলেটা কিন্তু খা’রাপ না আম্মাজান। একটু গম্ভীর তবে তোকে অনেক ভালোবাসে। কি পা’গলামোটাইনা করেছে তোরজন্য ও জানিস? আল্লাহ না করুন আর যেন কোনো বিপ’দ তোদের ধারেকাছেও না ভেরতে পারে। আমেনা বেগমের কথায় ল’জ্জায় মাথা নিচু করে হাসলো শুধু সিরাত।
“সিঁড়ির প্রত্যেকটা ধাঁ’পে সিরাতের পা পরছে তো সমস্ত শরীরে কাঁ’পুনি ধরিয়ে দিচ্ছে যেন সিরাতের।” অচেনা ভয়-ল’জ্জা, কেমন যেন দ’লা পা’কিয়ে যাচ্ছে তাঁর। দুইপাশে তোহা আর আমেনা বেগম পেছনে আত্মীয়রা যেন ঘির করে তাঁর পিছুপিছু আসছে। সেই প্রথম দিনের শাহনেওয়াজ ভিলায় পা দেওয়ার ফিলিংস উপলব্ধি করতে পারছে সিরাত। চারদিকে ঝাড়বাতির ঝিলমিল আলো তাঁর চোখে-মুখে এসে হাতছা’নি দিয়ে যাচ্ছে যেন। নিজের বুকের ধুকপুক শব্দের রেশ নিজেই খুব মনোযোগ সহকারে শুনতে থাকলো সিরাত। এতগুলো দিন সাফিনকে পাওয়ার জন্য ছট’ফট করেছে আর আজ তাঁকে পেয়ে ল’জ্জায় মরি’য়া হয়ে যাচ্ছে যেন। সামনেই সাফিনের রুম। আর শুধু একটা পা বাড়ানো মাএ অপেক্ষা। আমেনা বেগম পা থামিয়ে দিলে তোহা হাতে থাকা দুধ আর পানের ট্রেটা সিরাতের হাতে ধরিয়ে দিয়ে মৃদু হাসলো শুধু। চোখদুটি কেমন জ্ব’লে উঠলো সিরাতের। তোহাকে খানিক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ পর ছেড়ে দিলে তোহা শীতল কন্ঠে বললো।
— ভিতরে যা সিরাত। নিজের সুখের ঠিকানা খুঁজে নে এবার। শ’ক্ত করে আগলে রাখবি একদম। যাতে এ বাঁ’ধন ছিঁ’ড়ে না যায়।
তোহার কথায় হাসলো সিরাত। ধীর পায়ে সাফিনের রুমে পা রাখতেই আমেনা বেগম গেস্টদের নিয়ে খাওয়ার জায়গায় চলে গেলেন।
“সিরাতের উপস্থিতি টের পেয়ে সাফিন দ্রুতপায়ে দরজাটা লক করে দিয়ে সিরাতের মাথা অব্দি ঘোমটা দেখে বাঁকা হাসি হাসলো।” সিরাতের বুকের মাঝের উথাল-পাতাল ঢেউ যেন দ্রুত থেকে দ্রুতগতির হতে শুরু করেছে। কাঁ’পা-কাঁ’পা হাতে সাফিনের দিকে ট্রেটা এগিয়ে দিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—দুধটা খেয়ে নিন সাফিন।
—এত দেরি হলো কেন তোমার হুম? সাফিনের এমন প্রশ্নের উত্তর কি দেওয়া যায় ভেবে পেল না সিরাত। মুখে কু’লুপ এঁ’টে রাখলে সিরাতের হাত থেকে দুধের গ্লাসটা নিয়ে একটানে ফিনিসড করে ট্রেটা টি টেবিলের উপর রেখে হুট করেই পাঁ’জাকোলা করে নিল সিরাতকে। সাফিনের এরুপ আচরনে ল’জ্জায় মি’য়িয়ে গেল যেন সিরাত। সাফিন সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপই দেখাল না। হলুদরাঙা লাইটারের আলোটা কেমন নিভু-নিভু করছে। এতক্ষণের ঝিমিয়ে থাকা আকাশটাও এখন বৃষ্টির ন্যায় সমস্ত শহরে ঝড়িয়ে দিতে ব্যাস্ত। সিরাতকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নিভু-নিভু হলুদরাঙা আলোটাকে চিরতরে বিদায় জানাল সাফিন। সিরাতের উপর খানিকটা ঝুঁ’কে গিয়ে সিরাতের মাথা সমান ঘোমটাটা সরিয়ে দিতে সাফিনের শীতল হাতের স্পর্শে কেঁ’পে উঠলো যেন সিরাত। সিরাতের নিশ্বাসের শব্দ গাঢ় থেকে গাঢ়তম হতে থাকলে বিছানার চাঁদর খিঁ’চে ধরলো সিরাত। সাফিন সিরাতের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি হেসে অনেকটা সময় নিয়ে শীতল হাতে সিরাতের শাড়ীর আঁচলটা সরিয়ে দিয়ে সিরাতের ঘারের কাছে ঠোঁটের স্পর্শ ছুয়িয়ে দিলে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। সাফিনের স্পর্শগুলো গাঁঢ় থেকে গাঢ়তম ভাবে সমস্ত শরীরে আ’ঘাত হানছে যেন তাঁর। সাফিন সিরাতের মাঝে পা’গল হয়ে উঠলো যেন। খানিকের জন্য ভু’লে গেল সিরাতের শরীরে ক্ষ’তর কথা। সিরাতের হাতদুটি বিছানা ছেড়ে সাফিনের চুল আঁকড়ে ধরলে সাফিন নিজের শার্টটা খুলে নিয়ে আরও কাছে চলে গেল সিরাতের। সিরাতের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলে ঘনঘন নিশ্বাস টা’নতে থাকলো সিরাত। বাহিরের ঝড়ো হাওয়া যেন এই মূহুর্তে তাঁর মাঝে ঝড়ে চলেছে। চোখের কোন ছুঁয়ে পানির রেশ ঝড়ে পরলে ঠোঁটের কোনে হাশির রেশ ফুঁটে উঠলো শুধু সিরাতের।
.
সারারাতের বৃষ্টি শেষে সকালের স্নিগ্ধ হাওয়া সমস্ত শরীরে কাঁ’পুনি ধরিয়ে দিচ্ছে যেন সিরাতের। সকাল-সকাল সাফিনের বুকের উপর ঘুম ভে’ঙে গেলে আর চোখে সাফিনের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে শুধু সে।
—কিছু পাওয়া আর কিছু না পাওয়া অনেক কষ্টে’র জানেনতো সাফিন? আমি আমার মা-বাবাকে সেই ছোটবেলা থেকে পাইনি জানেন? কিন্তু আজ আপনাকে পেয়ে আমার সেই ক’ষ্ট গুলো কেমন উধাও হয়ে গেছে। সত্যি, আপনার মতো কাউকে পাব আশা করিনি আমি। কথাগুলো মনের মাঝে খেলে যেতে হেসে উঠলো সিরাত। সাফিনের ব্রাউন্ড রাঙা চুলে হাত দিয়ে কিছুটা সময় নাড়াচাড়া করে খি’ল>খি’ল করে প্রশান্তির হাসি হেসে ফ্রেশ হতে চলে গেল সিরাত।
“কালোরাঙা চাঁদর গাঁয়ে জড়িয়ে বারান্দার খোলা হাওয়ায় দাঁড়িয়ে প্রশান্তির নিশ্বাস ছারছে সিরাত।” ভেজা চুলগুলো পিঠময় ছড়ি’য়ে>ছি’টিয়ে রয়েছে তাঁর। আজ মনটা বড্ড বেশি খুশি লাগছে যেন তাঁর। মনখুলে গান আওরাতে ইচ্ছে করছে খুব। দক্ষিণা উত্রা হাওয়ায় তাঁর কানের কাছে গুঁ’জে থাকা চুলগুলো কেমন মৃদুমধুর আমেজে উড়ে বেড়াচ্ছে যেন। মনকে আর না আঁ’টকিয়ে গান আওয়াতে থাকলো সিরাত।
~তোমার খোলা হাওয়া….
হুট করেই কারো ঠোঁটের স্পর্শ ভেজা চুলগুলো সরিয়ে ঘাড়ের কাছটাতে অনুভব করতে পেরে চোখদ্বয় বন্ধ করে নিল সিরাত। সাফিনের প্রতিটা স্পর্শের সাথে যেন নিজেকে খাঁ’পখায়ি’য়ে নিয়েছে এতদিনে সে। এক মূহুর্তও লাগেনি সাফিনের স্পর্শ চিনতে। শাড়ির আঁচল ভেদ করে সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে সিরাতের ভেজা চুলে নাক ডুবিয়ে দিল সাফিন। সিরাতের চুলের মিষ্টি সুগন্ধি যেন নাকের কাছে এসে টনটন করে যাচ্ছে সাফিনের। সিরাত টু শব্দ অব্দি না আজ। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলে সাফিন ঠোঁটের কোনে হাসি লে’প্টে শীতল কন্ঠে ডাকলো তাঁকে।
—সিরাত…
—হুম বলুন?
—ভালোবাসি।

#সমাপ্ত। 😌🖤

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-২৪

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ২৪ (#রহস্য_ভেদ_স্পেশাল_পর্ব। ১)

❌ ভেতরে কিছু জায়গায় অশা’লীন কিছু যুক্ত করা হয়েছে গল্পের প্রয়োজনে। তাঁর জন্য ক্ষ’মাপ্রার্থী।❌

—আপনার এই হাসির প্রেমে পরেছি বহুদিন আগে সাফিন।একমুঠো রোদও তাঁর আলোকে মুঠোবন্দি করার জন্য একটিবার হলেও সুযোগ খুঁজে দেয়। আমিও নাহয় আর একটু নির্ল’জ্জ হয়েই আপনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিচ্ছি। পারলে এবার আমাকে বৃষ্টির শিহরনে হৃদয় গহীনে আগলে রেখে দেখান। কথাটা মনে-মনে ভাবান্তরে ছেদ করলেই দীর্ঘশ্বা’স বেড়িয়ে আসতে চাইছে সিরাতের। বি’ষন্ন মুখদ্বয় গাড়ির কাঁচ ভেদ করে বাহিরে বাড়িয়ে দিলে সাফিন তাঁর দিকে নির্বিকার চাহনিতে তাকিয়ে মৃদু হেসে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিল।
—তোমার আর আমার মাঝে পার্থক্য কি জানো সিরাত? আমার তোমার মাঝে প্রবল বেগে মিশে যাওয়া, আর তোমার আমাকে বুঝেও অবুঝ থাকা।
সাফিনের কথাটা সিরাতের অন্তরে এসে ছেদ করে গেলে ছলছল করে উঠলো যেন তাঁর চোখদ্বয়। ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইছে শুধু একরাশ দী’র্ঘশ্বাস।
.
দক্ষিণা ঝড়বৃষ্টি মাথায় করে গাড়ি এসে রিসোর্টর সামনে দাঁড়াতে জুবায়ের দ্রুত ভেতর থেকে ছাতা হাতে তাঁদের দিকে এগিয়ে এসে একগাল হেসে বললো।
—স্যার ভিতরে গেস্টরা সব এসে পড়েছে। সব ঠিকঠাক আছে। এখন মেইন যাদের উদ্দেশ্যে পার্টিটা করা তাঁরা ভেতরে গেলেই হয়।
সাফিন মৃদু হেসে গাড়ি থেকে নেমে পরলে জুবায়ের সাফিনের মাথায় ছাতা ধরে দাঁড়াতে জুবায়েরের হাত থেকে ছাতাটা নিয়ে নিল সাফিন। ধীর পায়ে সিরাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে গাড়ির দরজাটা খুলে দিয়ে সিরাতের দিকে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলে তাঁদেরকে দেখে জুবায়ের হাসলো শুধু। বৃষ্টির উ’ষ্ণতা তাঁর চুল স্পর্শ করে যাচ্ছে যেন। হাত দিয়ে নিজের মাথার ঝাঁকরা চুলগুলো পেছন থেকে মৃদু আঁ’কড়ে ধরে বললো।
—স্যার আমি তাহলে সংগঠনের দিকটায় গেলাম। হেলাল আর মোহন একা-একা কি করছে কে জানে?
জুবায়েরের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে হাসলো সাফিন। চোখ দিয়ে ইশারা করতে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলো জুবায়ের।
সিরাত এক পলক সাফিনের হাতের দিকে তো আরেক পলক সাফিনের দিকে তাকিয়ে রইলে ভ্রু কি’ঞ্চিৎ পরিমান জাগিয়ে ফেলল সাফিন।মৃদু হেসে ধীর কন্ঠে বললো।
— কি কোলে নিতে হবে তোমাকে?
সিরাত চোখ বড়সড় করে নিলে সাফিন হো-হো করে হেসে উঠলো। বললো।
— বউ আমার গাড়ি থেকে না নামতে চাইলে তো তাঁকে কোলে করেই নামাতে হবে তাইনা?
সাফিনের কথা শুনে তাঁকে চোখ রাঙা’ল সিরাত। সাফিনের হাতের উপর হাত না রেখে উঠতে নিতে সাফিন সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের দিকে টে’নে আনলে ছাতা ভেদ করে বৃষ্টির রেশ খানিকটা শরীর স্পর্শ করে গেলে কেঁ’পে উঠলো যেন সিরাত। বিরক্তিতে চোখ মুখ খিঁ’চে রেখেছে যেন সে।
— ছাড়ুন আমাকে? এটা পাবলিক প্লেস সাফিন!
—তো কি হয়েছে?
সাফিনের সোজাসাপটা উত্তরটা যেন খুব একটা সুখকর লাগলো না সিরাতের। নাক মুখ কুঁ’চকে ফেলল সে। সাফিনকে ধা’ক্কা দিতে গেলে সাফিন সিরাতের হাতদুটো নিজের বুকের উপর চেঁ’পে ধরলে সাফিনের হৃদয়ের ধুকপুক শব্দের রেশ অনুভব করতে পেরে শিতল হয়ে আসলো সিরাতের ধীর চক্ষুদ্বয়। কোমল চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে সাফিন মৃদু হেসে শুকনো ঠোঁটদ্বয় ভিজিয়ে নিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— আমার হৃদয়ের ব্যা’কুলতার জন্য প্রধান কারন হলে তুমি সিরাত। হয়তো তোমাকে ক’ষ্ট দিয়েছি আমি? কিন্তু নিজেও প্রতিটাখন অশান্তি’তে ডু’বে রয়েছি।ট্রাস্ট মি জান।ভালোবাসি তোমাকে। আর কি করলে তুমি বুঝবে আমাকে বলো? সাফিনের গভীর দৃষ্টিতে আর চোখ রাখতে পারলো না সিরাত। চোখ ছলছল করে উঠলে চক্ষুদ্বয় নামিয়ে ফেলল দ্রুত।
— যেখানে নিয়ে এসেছেন? সেখানে চলুন সাফিন। আর কিছুক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে নির্ঘাত বৃষ্টিতে ভিজে নেয়ে একসাট হয়ে যাব আমরা। সিরাতের শীতল কন্ঠের রেশ সাফিনের কানে এসে পৌঁছাতে সিরাতের দিকে শীতল চাহনি নিক্ষেপ করে শীতল হাতে সিরাতের কোমর স্পর্শ করে বৃষ্টির উষ্ণ’তায় ছেঁয়ে পরা গাড়িটার উপর বসিয়ে দিলে হিমেল স্রোতে সিরাতের সমস্ত শরীর কেঁ’পে উঠলো যেন ভয়ে। কয়েকটা ঢোক গি’লে সাফিনের দিকে তাকাতে সাফিন বাঁকা হাসি হেসে সিরাতের হাতে ছাতাটা ধরিয়ে দিয়ে সিরাতের সামনে হাঁটু গে’ড়ে বসে পরলে সিরাত ড্যা’ব>ড্যা’ব করে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলো শুধু।
—কি করছেন সাফিন!
—প্রেয়সীর হৃদয়ে নিজের প্রতিচ্ছবি গুছিয়ে নিতে চাইছি। কথাটা বলেই একগাল হেসে পকেট থেকে পায়েল বের করে সিরাতের সামনে ধরতে বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সঙ্গে পায়েলের আওয়াজটাও কেমন মিলেমিশে সিরাতের কানের কাছে এসে অন্তর্নিহিত হতে থাকলে সাফিন সিরাতের “পা” টা হাঁটুর উপর রাখতে তব্দা খেয়ে গেল সিরাত। কিছু বলার আগেই সাফিন মুখে আঙুল দিয়ে চুপ থাকতে বলে পায়েলটা সিরাতের পায়ে পরিয়ে দিয়ে ধীর ভাবে উঠে শীতল হাতে মৃদুভাবে সিরাতের হাতটা হ্যাঁ’চকা টা’ন দিয়ে নিজের কাছে আনতে সিরাতের নিশ্বাস কেমন ভারি হয়ে আসলো যেন। বৃষ্টির প্রতিটা উষ্ণ’তাময় স্পর্শ ধরনী ছুঁয়ে তলদেশে ধা’বিত হওয়াটা যেন প্রগর ভাবে উপলব্ধি করতে পারছে সিরাত।
সাফিনের হাতের স্পর্শ কোমর ছুঁয়ে পাঁ’জাকোলা করে নিলে দিগন্তের গ’র্জনময় প্রখর বর্ষনপাত কানের কার্নিশ ঘেঁষে বা’রি খেয়ে যাচ্ছে যেন।
“ধীর পায়ে রিসোর্টের ভিতরে প্রবেশ করে গেলে উপর থেকে গোলাপের লালরাঙা পাপড়ি গুলো শরীর স্পর্শ করে ঝরে গিয়ে গোলাপের মিষ্টি সুগন্ধির সাথে সাফিনের শরীরের চিরচেনা পারফিউমের ঘ্রা’নটা মিলেমিশে গেলে যেন মা’থাচারা দিয়ে যাচ্ছে সিরাতের চোখমুখ।” সমস্ত শরীর কেমন অ’বশ হয়ে আসছে তাঁর। মনটা অস্থি’র হয়ে আসলে সাফিনের ঠোঁটের মৃদু স্পর্শ কপালের কাছে অনুভব করতে পেরে শীতল চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকাতে সাফিনের মা’দকময় দৃষ্টিতে দৃষ্টিস্থির হয়ে পরলে সাফিন মৃদু হেসে সিরাতকে শীতল হাতে কোল থেকে নামিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলে সামনে তাকালে শুধু চারিদিক অন্ধকারই দেখতে পাচ্ছে সিরাত। ভয়ে একপা পিছিয়ে গিয়ে সাফিনের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পরলে হুট করেই লাইটারের লাল নীল রাঙা আলো সিরাতের চোখেমুখে এসে সা’জোরে ছেঁ’য়ে পরতে থাকলে হঠাৎ তী’ব্র আলোয় চোখ বুঁজে আসতে চাইছে যেন সিরাতের। আলো ঠেকাতে হাত দিয়ে সামনে আগলে রাখলে সাফিন মৃদু হেসে উঠলো শুধু। সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টে’নে এনে কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীর কন্ঠে বললো। Happy anniversary জান। সাফিনের শীতল কন্ঠস্বর সিরাতের কানের লতিতে এসে তী’ব্র ভাবে আ’ঘাত হেনে গেলে থ’মকে গেল সিরাত।বুকের ভেতরটা কেমন ধুকপুক করে উঠছে তাঁর। হুট করেই লইট জ্ব’লে উঠলে স্টেজের সামনে একগা’দা মানুষের হাত তালি আর সিটির আওয়াজ শুনে আর চোখে সেদিকে তাকালে এত-এত লোকজনের সমারোহ দেখে নিজেকে সাফিনের বুকের উপর আবিষ্কার করে ল’জ্জায় ম’রে যেতে ইচ্ছে করছে যেন সিরাতের। দ্রুত সাফিনের বুক থেকে নিজেকে সরাতে যেতে সাফিন সিরাতকে আরও হ্যাঁ’চকা টা’ন দিয়ে নিজের কাছে এনে শীতল কন্ঠে বললো।
— ভালোবাসা কি জানা ছিল না আমার সিরাত। যার তী’ব্র গহীনতাও কখনো উপলব্ধি করতে পারিনি আমি। তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে প্রতিটাখন ভয়ে কাঁ’টিয়েছি আমি। যেটার তী’ব্র য’ন্ত্রণাটাও হয়তো কখনো তোমাকে বোঝাতে পারব না আমি! কিন্তু শুনে রাখো তুমি, প্রেয়সীর নামটা যে হৃদয় গহীনে গেঁথে ফেলেছি আমি। #হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো সিরাত। ভালোবাসি তোমাকে।
সাফিনের প্রতিটা শীতল কন্ঠের রেশ কান ছুঁ’য়ে স্পর্শ করে গেলে বাহিরের বর্ষনপাতের রেশ যেন এবার সিরাতের চোখের কোনে এসে হেলে পরতে থাকলো। অশ্রুশিক্ত নয়নে সাফিনের দিকে তাকালে সাফিন সিরাতের মাথার পিছনে হালকা হাত রেখে ঠোঁটের স্পর্শ ছুঁয়িয়ে নিজের হৃদয়ের প্রেয়সীকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।
“স্টেজের উপরে ওয়েটাররা কেকের ট্রলিটা নিয়ে এগিয়ে আসলে সাফিন সিরাতের কপালে চুমু খেয়ে ট্রলিটার উপর থেকে গোলাপ ফুলের গোছাটা হাতে নিয়ে সিরাতের সামনে আবারও নত হয়ে বসে পরে সিরাতের সামনে এগিয়ে দিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।”
—ভালোবাসি সিরাত। সাফিনের মৃদু কন্ঠের রেশে কেঁ’পে উঠলো যেন সিরাত। নিশ্বাস আঁ’টকে যেতে চাইলে সাফিনের গ’লা শোনা গেল।
—প্রেয়সীর অভিযো’গের পেয়ালা যেমন ভারি? আমার অভিমানের স্তর তেমন ধীর। তবেকি প্রেয়সির থেকে সত্যিই এই অধমের জন্য একটু হলেও শীতলতা আসবে না? সাফিনের কন্ঠ কঁ’পতে থাকলে সিরাতের অন্তরের তো’লপা’ড় গুলো কেমন দৃঢ় হতে থাকলো। চারপাশে লালরাঙা পর্দায় গোলাপের সাজে সজ্জিত রিসোর্টটা থেকে বৃষ্টির সহিত গোলাপের সুগন্ধির মিষ্টি হাওয়ার মিশ্রিন সিরাতের নাকের কাছে ছেঁ’য়ে গিয়ে তাঁর অস্তি’ত্বের জানান দিয়ে যাচ্ছে যেন। কয়েকটা ঢোক গি’লে কাঁ’পা>কাঁ’পা হাতে গোলাপের গোছাটা হাতে নিতে সাফিনের ঠোঁটের কোনে হাসির রেশ ফুটে উঠলো যেন। গেস্টরা সবাই তাঁদের নিয়ে ভিডিও করতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো যেন। সাফিনের কড়া রকমের আদেশে মিডিয়ায় কথাটা পাঁ’চকান করতে নিষেধ হওয়া সর্তেও মিডিয়ার চোখ এড়াল না ব্যাপারটা। হুট করেই মিডিয়া এসে তাঁদের দিকে বিভিন্ন প্রশ্ন ছুঁ’ড়ে দিতে থাকলে সাফিন তাঁদের দিকে এগিয়ে যেতে নিতে পিছুটা’ন অনুভব করলে। সিরাতের কোমল হাতের স্পর্শ সাফিনের হাতটা ধরে ফেললে চমকাল সাফিন। পিছু ফেরার আগেই সিরাতের ধীর কন্ঠের গান তাঁর কান ঘেঁষে পৌঁছাতে থ’মকে গেল সাফিন।

~ যা তুঝে মা’ফ কিয়া
পেয়ারকি রাহামে মুঝকো ছোরনে ওয়ালে।
যা তুঝে মা’ফ কিয়া,
দিলকো তোরনে ওয়ালে।
ছিতাম এ খুপায়া, কিউ পেয়ার বানায়া?
জো লুটে দিলকা ঝাহা।
দিল ইতনা রুলায়া,হে গামে মুচকো রায়া,
কে আপনে হে আনজানা…
টুটকার পেয়ার কারে দিলজো বিখার যাতাহে।
ইস্কতো সামনে আখোকে কিউ কার জাতাহে।
আপনে ধারকানকো মেরে দিলছে জোরনে ওয়ালে।
যা তুঝে মা’ফ কিয়া দিলকো তোরনে ওয়ালে….
“গানের সঙ্গে- সঙ্গে সাফিনের কাছে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে শীতল চাহনিতে তাঁর দিকে তাঁকিয়ে এক হাতে সাফিনের শার্টের কলারটা টে’নে ধরে নিজের মুখোমুখি এনে অন্য হাতে সাফিনের পকেট থেকে ব’ন্দু’কটা বের করে সাফিনের বুক বরাবর ধরতে সিরাতের হঠাৎ এ রকম আচারনে সাফিন কেমন তব্দা খেয়ে গেল যেন। ”

~বোঝহে দিলপে মোহাব্বাতকা উতারু ক্যাছে?
কেহকে দো বোলপে এক উমর গুজারু ক্যাছে?
রাখদিপে মানপে আপনোকো ভু’লনে ওয়ালে,
যা তুঝে মা’ফ কিয়া দিলকো তোরনে ওয়ালে। ছিতাম এ খুপায়া, কিউ পেয়ার বানায়া?
জো লুটে দিলকা ঝাহা।
দিল ইতনা রুলায়া,হে গামে মুচকো রায়া,
কে আপনে হে আনজানা…
“সিরাত সাফিনের ঘাড়ের কাছে মৃদু কাঁ’ম’রে দিলে চোখ বন্ধ করে সাফিন।” ধীর কন্ঠে বললো।”
— কেয়া সিন এ জানস? সবাই কিন্তু এখনও আমাদেরকে দেখছে? সাফিনের দুষ্টু’মি মিশ্রিত কন্ঠস্বর শুনে সিরাত মাথা নিচু করে ফেললে সাফিন পেছন থেকে সিরাতের হাতটা ধরে নিয়ে বন্দু’কটা নিয়ে গিয়ে পকেটে পু’রে নিয়ে সিরাতের দিকে কয়েকধাপ এগিয়ে গিয়ে সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টে’নে এনে সিরাতের মাথার পেছনে হাত ঠেকিয়ে দিয়ে রিসোর্টের একগা’দা মানুষের সামনে সিরাতের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিতে গেস্টরা কেউ-কেউ ল’জ্জায় হা হয়ে গিয়ে চোখ ঢেকে ফেলছেন তো কেউ-কেউ তাঁদের দিকে ভ্রু জাগিয়ে তাকিয়ে দেখছেন। সাফিনের কলিগ মিস্টার সিংহানিয়ার পাঁচ বছরের ছেলে রাজ ড্যা’ব>ড্যা’ব করে তাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকলে মিস্টার সিংহানিয়া নিজের ছেলের চোখ ঢাকতে নিতে তাঁর ছেলে তাঁর হাতে কাঁ’ম’রে দিয়ে হাত সরিয়ে ফু’পিয়ে>ফু’পিয়ে বললো।
—ড্যাড চোখ বন্ধ করে দিচ্ছো কেন? দেখতে দেও আমাকে।
—বাচ্চারা এসব দেখে না বাবা।
—তুমি নিজে বাচ্চা হবে।আমি না।
নিজের ছেলের এরমধারা কথা শুনে মিস্টার সিংহানিয়া হা হয়ে গেলেন পুরো।
—এই আজকাল যুগের বাচ্চারাও না! যাচ্ছে তাই একেবারে।
.
দীর্ঘ সময় নিয়ে সিরাতের ঠোঁট ছেড়ে দিতে হাঁ’প ছেড়ে বাঁচল যেন সিরাত। ঘন>ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে শুধু সাফিন মৃদু হেসে হাতের উল্টো পিঠে হাত মুছে মিডিয়ার দিকে চলে গেলে ল’জ্জায় আর কারও দিকে তাকাতে পারলো না সিরাত।
মিডিয়ার লোক এতক্ষণ সব ভিডিও করে রাখতে ধীর চাহনিতে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলে মিডিয়ার একজন বলে উঠলো।
—স্যার আপনার আর ম্যামের বিয়ের এত বছর পর anniversary পালন করার কারনটা জানতে পারি? এতগুলো বছর আপনি আমাদের জানামতে বিদেশে ছিলেন। আর ম্যাম শাহনেওয়াজ ভিলায় না থেকে তাঁর বান্ধবীর বাড়িতে থেকেছে। আবার এত বছর পর আপনাদের মিলিত হওয়া, এসবের কোনো ব্যাখ্যা বলতে পারবেন?
—কেন anniversary পালনের সাথে এসবের কারন কেন খুঁজতে যাচ্ছেন আপনারা! আমার ওয়াইফ এতদিন আমার অবর্তমানে তাঁর বান্ধবীর কাছে থেকেছে এতে দো’ষের কি দেখলেন সেটাই তো বুঝতে পারছি না আমি?আমি তাঁকে রাইট দিয়েছি তাই সে থেকেছে।
— তাহলে যে শুনলাম আপনারা সেপারেশনে যাচ্ছেন? সাফিনের ভ্রুদ্বয় কি’ঞ্চিৎ ভা’জ হয়ে আসলো যেন। মাথার প্রত্যেকটা রগ কেমন টনটন করছে। সামনে ইলেকশন না হলে মিডিয়ার এত প্যাঁ’চাল গাঁয়েই লাগাতো না। কিন্তু বাহিরে শাহনেওয়াজ সাফিনের নাম শুনলে সবাই দেশসেবক বলে জানে বিধায় সবকিছু মুখ বুঁজে স’য্য করতে হয় সাফিনকে।
ভেতরকার রাগটা চেঁ’পে রেখে হাসি-হাসি মুখ করে বললো।
— আমাদের মাঝে তেমন কিছুই হয়নি। আমরা বিয়েও করেছি নিজ থেকে আর ভালোবাসারও কোনো কমতি নেই আমাদের।
—তবেকি সবকিছু মি’থ্যা ধরে নেব।
— হ্যা সবকিছু মি’থ্যা। এবার নিশ্চয়ই আপনাদের কথা শেষ হয়েছে। এবার ভিতরে সবাই পার্টি এনজয় করুন। কথাটা বলেই পিছু ফিরে তাকিয়ে সিরাতকে খুঁজতে নিতে স্টেজের দিকে তাকিয়ে সিরাতকে না দেখতে পেয়ে ভ্রুদ্বয় নিমিষেই বেগতিক হয়ে গেল সাফিনের। পার্টি সং চালু করে সবাই ডান্স করতে ব্যাস্ত। এদিকে কেকের ট্রলিটা স্টেজেই রয়েছে কিন্তু সিরাত উধাও। চারদিকে হাই বলিয়মে মিউজিকের মাঝে কাউকে জিজ্ঞেস করাটাও খুব একটা সহজ হবে না। কানে ব্লুটুথ গুঁ’জে গার্ডদের ফোনকল করতে মিউজিকের সাউন্ট ছাড়া কিছু শোনা গেল না। এদিকে মিউজিক অফ করে দিলে মিডিয়া এক পায়ে খারা। ইলেকশনের আগে কোনো রকম অশা’ন্তিতে জড়াতে চাচ্ছে না সাফিন। এমনিতেই শহরের হাওয়া খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। মোস্তফা সাহেব বাহির থেকে এখনো দেশে এসে পৌঁছাননি। তাঁর উপর সিরাতকে নিয়ে এমনিতেই এবার একটু ভ’য়ে আছে সাফিন। সকাল থেকে বুকের উপর কেমন পাঁ’থর চাঁ’পা পরে আছে তাঁর। চারদিকে চোখ বু’লিয়ে সিরাতকে দেখতে না পেলে নিশ্বাস আঁ’টকে আসতে চাইছে যেন সাফিনের। কিছু একটা ভেবে রিসোর্টের কোনে থাকা সিসিটিভি ফুটেজটার দিকে তাকিয়ে তিরিক্ষি চোখদ্বয় দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে ভাবলো সিসিটিভি ফুটেজ থেকে অবশ্যই দেখা যাবে। অন্যথা মিউজিক অফ করে দিতে বা’ধ্য হবে সাফিন।
দ্রুত গতিতে নিজের স্থান ত্যা’গ করে বাহিরে চলে এসে স্টোর রুমের দিকে যেতে নিতে হুট করে তরিৎ গতিতে ফোনটা বেজে উঠলে ভ’রকে গেল সাফিন। ভ্রুদ্বয় কি’ঞ্চিৎ ভাঁ’জ করে ব্লুটুথ অন করে দিতে ওপাশ থেকে গম্ভীর কণ্ঠের রেশ সাফিনের কানে এসে যেন সাজোরে আ’ঘাত হেনে গেল।
— শাহনেওয়াজ, শাহনেওয়াজ, শাহনেওয়াজ সাফিন।তাইতো? অনেক স’য্য করেছি তোমার বাড়া>বাড়ি। এবার তোমার শেষ হওয়ার পালা। তোমার ভালোবাসার ওয়াইফ আমার কাছে বন্দী আছে। কি যেন নাম? ও হ্যা, সিরাত। পারলে তাঁকে মৃ’ত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে দেখাও।দেখা যাক শাহনেওয়াজ সাফিনের দৌঁড় কতদূর। আধা ঘন্টা সময় দিচ্ছি তোমাকে। বাকিটা তুমি বুঝে নেও। কিন্তু ভু’লেও তোমার সাঙ্গ- পা’ঙ্গ নিয়ে এসো না যেন? তাহলে আমার হাতের একটা গু’লি আর তোমার সাধের বউয়ের জীবন, এখানেই সমাপ্ত। হুট করেই অজানা নম্বরে এরমধারা কথা শুনে থ’মকে গেল যেন সাফিন। রাগে মাথা টনটন করে উঠলো যেন তাঁর। চোখ মুখের ভাবভঙ্গি নিমিষেই পাল্টে গেলে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে চি’বি’য়ে>চি’বি’য়ে বললো।
—শু’য়ো’রের বা’চ্চা আমার সিরাতকে কি করেছিস বল আগে? কোথায় রেখেছিস ওকে? ভু’লে যাসনা আমি একটাবার হাত তুললে জাঁকজমক পরিবেশও নিস্তে’জ হয়ে যায়। ভু’ল জায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছিস তুই। এর ফল তোকে পেতে হবে। সাফিনের কন্ঠস্বর শুনে ওপাশের মানবটি হেসে উঠলো যেন। বললো।
— জাস্ট আধা ঘন্টা। কথাটা বলেই ওপাশ থেকে ফোনটা কেঁ’টে দিতে সাফিনের মাথায় র’ক্ত চে’পে বসলো যেন। দ্রুত ওই নম্বরে আবার ডায়াল করলে ডি’সএবল শোনালে রাগগুলো এবার যেন দ’লা পা’কিয়ে গেল সাফিনের। রাগে সমস্ত শরীর রীতিমতো কাঁ’পছে যেন তাঁর। ছাতা বীহিন বৃষ্টির প্রতিটা শিশিরবিন্দু যেন সমস্ত শরীর জুড়ে ছ’ড়িয়ে পরছে সাফিনের। ফোনটা পকেটে রেখে একছুটে স্টোর রুমে চলে এলে গার্ডদের সরিয়ে দ্রুত নিজেই সিসিটিভি ফুটেজ চপক করতে নিতে কালো রাঙা অবয়ব দেখে রাগে গার্ডদের দিতে তাকাতে গার্ডগুলো হুট করে সাফিনের পদধূলিতে যেন অ’বাকের চূড়ান্ত পর্যায় গিয়ে দাঁড়াল। একজন বলে উঠলো।
—স্যার এনি প্র’বলেম? কিছু কি হয়েছে?
—গা’ধার মতো এখানে বসে থাকো আর গা’ন্ডে>পি’ন্ডে গি’লতে পারলেই কাজ শেষ তোমাদের? এদিকে সিসিটিভি ফুটেজের উপরে যে কাপর এঁ’টে দিয়েছে সেদিকে কোনো খেয়াল রাখো তোমরা? একটাকেও আমার চোখের সামনে দেখতে চাইছি না এখন। সবকটার চাকরি নেওয়া হবে যদি আমি আমার সিরাতকে না পাই। কথাটা বলেই টি টেবিলের উপর নিজের হাতটা সা’জোরে আ’ঘাত হানতে কেঁ’পে উঠলো গার্ডরা। কিছু বলার আগেই সাফিনের র’ক্তিম চোখদ্বয়ে চোখ পরে গেলে ভয়ে কয়েকটা ঢোক গি’লে দ্রুত রুম থেকে চলে গেলে ভে’ঙে পরলো যেন সাফিন। মাথা কাজ করতে চাইছে না যেন তাঁর। হৃদয় চিঁ’ড়ে বেড়িয়ে আসতে চাইছে শুধু বেহা”য়া কান্নার রেশ।
—কেন এমন হয় বলতে পারো সিরাত? তোমার আমার মাঝের এই জটি’লতার দাঁড় কি কখনো মু’ক্তি পাবে না? আমার এই অনিশ্চিত জীবনের সঙ্গী না হয়ে আসলে হয়তো তুমি মু’ক্তি পেতে। কিন্তু আমার মাঝে থাকতো শুধু দীর্ঘ’শ্বাসের রেশ। ভালোবাসি তোমাকে সিরাত। তুমি হাড়িয়ে গেলে হয়তো সেদিন এই শাহনেওয়াজ সাফিনও নিজ জীবনে হেঁ’ড়ে যাবে। শেষ হয়ে যাব আমি। শুনতে পারছো তুমি আমাকে? জানিনা তুমি কি অবস্থায় আছো সিরাত? কিন্তু আমি বেঁ’চে থাকতে বিন্দু পরিমান আঁচ’ও তোমার গাঁয়ে লাগতে দেব না আমি। কথাগুলো ভাবান্তারে ছে’দ কেঁ’টে যেতে ডু’করে কেঁদে উঠলো যেন সাফিন। ক্লান্তিতে ঘেরা মুখদ্বয় নিয়ে দ্রুত পায়ে ছাতা বীহিন বৃষ্টির শিহরন শরীরে ছুঁয়িয়ে গাড়িতে উঠে পরে গাড়ি স্টার্ট দিতে মাথায় কোনো কিছু আসছে না সাফিনের।
— আমার ব্যাকুল হৃদয়ের কারন হলে তুমি সিরাত? তোমাকে হাড়িয়ে ফেললে আমি নিমিষেই শেষ হয়ে যাব। আমার শরীরে একবিন্দু র’ক্ত অবশিষ্ট থাকলেও তোমার কিছু হতে দেব না আমি।
“বৃষ্টিতেভেজা সমস্ত শহরজুড়ে সিরাতকে তন্নতন্ন করে খুঁজেও ফল সরুপ পেল শুধু একরাশ হীনতা।” সাফিনের হৃদয় মাঝের তো’লপা’ড় হয়ে যাওয়ার অর্থহীন শব্দ শুনে নিজেই কেমন গু’টি’য়ে যাচ্ছে সিরাতের চিন্তা’য়। মাথাটা কেমন ভা’র হয়ে আসছে সাফিনের। গাড়িটা থামিয়ে দিয়ে ক্লা’ন্ত শরীর নিয়ে গড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ির পাশ ঘেঁষে রাস্তায় হাঁটু গে’ড়ে বসে পরলে বৃষ্টির প্রতিটা শিশিরবিন্দু যেন সাফিনের প্রতিটা শিরা উপশিরা স্পর্শ করে যাচ্ছে। দূরে ল্যামপোস্টের হলুদরঙা অবয়ব চোখেমুখে এসে ছেঁ’য়ে পরতে থাকলে সাফিনের ফর্সা তৈলাক্তময় চেহারা যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেলো। কালে রাঙা গাড়িটার সাথে নিজের মাথা ঠেকিয়ে দিতে ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইছে শুধু সাফিনের একরাশ দীর্ঘ’শ্বাস।
— কিছুক্ষণ আগেও যে দিনটা আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন হতে চলেছিল? এখন সেই দিনটাই আমাদের কা’ল হয়ে দাঁড়াল সিরাত? আমার হৃদয়ের এই অস’য্য যন্ত্র’ণা শুধু তুমিময় প্রাপ্তি সিরাত। তোমাকে বুকে না জড়ানো পর্যন্ত শান্তিতে নিশ্বাস অব্দি নিতে পারছি না আমি। তবেকি তোমাকে ভু’ল বোঝার শা’স্তি দিচ্ছো এটা তুমি আমাকে? এতটা নিষ্ঠু’র তুমি সিরাত? কথাগুলো সাফিনের মনের মাঝে দ’লা পাকিয়ে গেলে অদৃশ্য লোকটার টাইমের দিকটা মনে পরতে ভেতরটা কেমন মু’চড়ে উঠলো যেন সাফিনের। দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে ভাবনার অত’ল গহীনে ডু’বে থাকলো খানিক।পরক্ষণে ভাবনায় ছে’দ পরে গেলে বৃষ্টিতে ভেজা চুলগুলোতে ঝা’ড়ি দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল সাফিন।
.
অন্ধকার রুমটাতে কাঠের চেয়ারের সাথে নিজেকে হাত>পা বাঁ’ধা অবস্থায় দেখে হুট করেই সিরাতের হুঁ’শ ফিরে আসলে যেন চারদিকে অন্ধকারে আচ্ছন্ন দেখে ভ’য়ে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। টিনের চালের উপর বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজটা কানের লতিতে গাঢ় ভাবে এসে পৌঁছাতে ঝিমিয়ে থাকা আবছায়াময় হলুদরঙা লাইটারের আলো চোখেমুখে এসে ছেঁয়ে পড়তে থাকলে পিটপিট করে চারদিকে চোখ বো’লাল সে। ঘোরের মধ্যে আছে যেন সে। আশেপাশে পর্যাপ্ত পরিমান ড্রাম, বিয়ারের খালি বোতল ছড়িয়ে>ছিটিয়ে রয়েছে যেন। আবছায়াময় রুমটার ভেতর থেকে আসছে বা’জে একটা উদ্ভট গ’ন্ধ। নাক মুখ কুঁ’চকে এসে শরীরে থাকা এনার্জি যেন ব’মি হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে সিরাতের। মিনিট খানিক লাগলো তাঁর বুঝতে যে,সে আবারও কিডন্যা’প্ট হয়েছে। বুকের ভেতরকার জ্বা’লার ভাবটা যেন গাঢ় ভাবে আঘা’ত হানতে ব্যা’কুল হয়ে পরেছে। কিছুক্ষণ নিজেকে ছারানোর বৃ’থা চেষ্টা চালাতে গেলে সফল না হলে ডু’করে কেঁদে উঠলো সিরাত। তাঁর যতটুকু মনে পরছে সে স্টেজের উপর ছিল। কিন্তু তারপর আর মনে করতে পারছে না কিছু। সবকিছু ঝাঁ’পসা ভাবে চোখের সামনে ভাসতে থাকলে ভয়ে গুঁ’টিয়ে গেল যেন সিরাত। বন্ধ দরজার আড়ালে বাহিরের বৃষ্টিস্নান ময় বৃষ্টির রেশও যেন চোখে পরার জো নেই। অন্ধকারে নিশ্বাস আঁ’টকে আসতে চাইছে সিরাতের।
—কাকে ধরে এনেছি আমি এখানে? ওমা, এ দেখি আমাদের শাহনেওয়াজ সাফিনের বিবাহিতা স্ত্রী মনে হচ্ছে? হুট করেই মাইক্রোফোনে কারো গম্ভীর কণ্ঠের হাসির রেশ কানের কাছে এসে পৌঁছাতে থ’মকে গেল যেন সিরাত। ভয়ের সহিত কান খারা করে রাখলে বাহিরের ঝুম বর্ষনপাতের ঝমঝম আওয়াজের কারনে পুরোটা স্পষ্ট হয়ে আসছে না যেন সিরাতের। অনাকাঙ্ক্ষিত মানবটাকে চারদিকে খুঁজতে থাকলে প্রসস্থ ভাবে হাসির স্বর শুনে চেয়ারের সাথে আরও গুঁ’টিয়ে গেল যেন সিরাত। মুখের ভেতরে কাপড় গুঁ’জে থাকায় মুখ থেকে উম-উম শব্দ ছাড়া কিছু বের হচ্ছে না সিরাতের। কান্না গুলো দ’লা পাকিয়ে যাচ্ছে তাঁর। ঘন-ঘন নিশ্বাস টা’নতে থাকলে অদৃশ্য মানবটির কন্ঠ শোনা গেল আবারও।
—তোমার সাথে আমার কোনো শ’ত্রুতা ছিল না সিরাত? ভু’লটা তো গিয়ে ঠেকালে সাফিনকে বিয়ে করো। অবশ্য তোমাদের বিয়েটাইবা কত পারসেন্ট সত্যি ছিল? তোমাকে তো আমার গোনায়ই ধরিনি সিরাত। কিন্তু আ’ফসোসটা তো ফেলে দিল সাফিন! তোমার জন্য একটুও মা’য়া হলো না তাঁর? এই শাহনেওয়াজ ভিলার সব মানুষজন, রাজবাড়ী, এসব একটা মুখোশের আড়ালে আবদ্ধ বুঝলে তুমি? আর মাএ কয়েক প্রহর পরই তোমাকে তো সেই উপরেই চলে যেতে হবে।কি লাভ হলো বলোতো তোমার? তোমার মতো একটা মেডেলক্লাস মেয়ের এই বিশালাকার বাড়িতে সবার গোপনে বিয়ে করাটা কি ঠিক হয়েছে হুম? ওহো,মেইন টপিকে চলে আসা যাক তাহলে, তোমাকে শেষ করে দেওয়ার কড়া আদেশ এসেছে কিন্তু আমার কাছে। এর জন্য আমি ৫০ কোটি টাকা পাব বুঝলে? তবে আমার যে এইসব ৫০/৬০ এ চলবে না! আমার চাই ৫০০ কোটি দামের রাজবাড়ী। উপস, তোমার লাকটাই খা’রাপ বুঝলে সিরাত? হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েও টিকিটিও জানতে পারলে না তুমি!হাহাহা,
অদৃশ্য আগন্তকের কথার আ’গা>মাথা কিছু বুঝতে না পেরে চারপাশে ড্যা’ব>ড্যা’ব করে তাকাচ্ছে তাঁকে দেখার জন্য। বুকের ভেতরকার উথাল-পাতাল ঢেউটা কেমন দ্রুত থেকে দ্রুতগতির হয়ে আসছে তাঁর। চেয়ারের সাথে হাতের কড়াভাবে বাঁ’ধনটাও যেন সমস্ত শরীরের শিরায়>শিরায় ব্যা’থার সৃষ্টি করছে সিরাতের। চোখ বেয়ে অনবরত পানি ঝরে পরতে থাকলে বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সহিত বিক’ট শব্দে গু’লির আওয়াজ কানের কাছ ঘেঁষে তি’ব্রভাবে আঘাত হানতে ভয়ে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। সমস্ত হা>পা ক্ষনে>ক্ষনে কাঁ’পছে যেন তাঁর।
—এবারের গু’লিটা মিস্টেক হলেও, আর পাঁচ মিনিটের ভেতর তোমার আদরের শাহনেওয়াজ সাফিন এখানে এসে না পৌঁছালে গু’লিটা সোজা গিয়ে তোমার হৃদয়ে আ’ঘাত হানবে। কথাটা শেষ হতেই অপর প্রান্তের মানবটির থেকে আর কোনো আওয়াজ ভেসে না আসতে ভয়ে কাঁদতে থাকলো সিরাত। বুকের ভেতরটা কেমন মু’চড়ে উঠছে সিরাতের। বাহিরের ঝর যেন প্রবল বেগে তার হৃদয়ে কান্নার সহিত বর্ষন করতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে।
— আপনার আমার সম্পর্কের মরী’চিকা এত কঠিন কেন বলতে পারেন সাফিন? আজ হয়তো আমার জীবনের শেষ দিন হবে। আপনি কোথায় আছেন সাফিন। যদি ঘুনাক্ষরেও জানতাম না সাফিন,ভালোবাসা এত দী’ড়াদয়ক? তাহলে বিশ্বাস করুন,আমি নিজ থেকেই নিজেকে বন্ধ দরজায় গু’টিয়ে নিতাম।প্রবল বেগে ভে’ঙে পড়ার কারনে সিরাতের দ’ম বন্ধ হয়ে আসছে যেন। কান্নার রেশে বুক ভি’জে পরনে পরিহিত কালো রাঙা শরীরের সাথে লে’প্টে আছে যেন। ক্ষনে- ক্ষনে ফুঁ’পিয়ে উঠছে যেন সিরাত।
.
সকালে একবার কথা হওয়ার পর সাফিনের সাথে আর কথা না হলে আমেনা বেগম উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছেন যেন। সাফিনের দিক থেকে কোনো রেসপন্স না আসলে আমেনা বেগমের হৃদয় কেমন ব্যাকু’ল হয়ে পরেছে যেন। বাড়িতে গার্ডদের কড়া করে পাহাড়া দিতে বলে রেডি হয়ে নিল নিজেও। আজকে নাহয় সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে তাঁদের। জুবায়েরকে ফোন করলে জুবায়ের কিছুক্ষণ পরেই কলব্যাগ করলে আমেনা বেগম হাস্যজ্বল কন্ঠে বললেন।
— সাফিনরা বাড়িতে আছে জুবায়ের? নাকি বাহিরে? হুট করে আমেনা বেগমের এরমধারা প্রশ্নে জুবায়ের মৃদু নড়েচড়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—আপনাদের পার্মানেন্ট রিসোর্টে আছে ম্যাম।
—আমি সেখানে যাচ্ছি। তুমি কিন্তু ভু’লেও সাফিনকে জানাবে না এ কথা। তুমিও সেখানে চলে এসো। চম’কে দেওয়া যাবে ওদের। আমেনা বেগমের হাসির কন্ঠ শুনে আর না করতে পারলো না জুবায়ের। হেলালদের দিকে তাঁকাতে হেলাল বললো।
—যাও তুমি আমরা এদিকে আছি। হেলালের থেকে আস্থা পেয়ে জুবায়ের স্থান ছাড়লে ওদিকে আমেনা বেগমের অস্থি’র হৃদয় খুশিতে আর অজানা ভয়ে কেমন থ’ম>থ’মে হয়ে আছে যেন। ড্রাইভার ঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রিসোর্টের রাস্তা ধরতে গাড়ির কাঁচ ভেদ করে দৃষ্টি স্থির রেখে দিলে কাঁচ ঘেঁষে বৃষ্টির শিহরন বয়িয়ে থাকা দেখতে লাগলেন তিনি।
.
—আর পাঁচ গুনব সিরাত? আমার হাতে বেশি সময় নেই। আর তোমাকে মে’রে দিলে যেহেতু আমার লাভ বয়ি ল’স হবে না, তাই তোমাকে মে’রে দিতেও আমার হাত কাঁ’পবে না। অদৃশ্য লোকটার কর্ক’শ কন্ঠ শুনে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। চোখের কোন বেয়ে পানি গ’ড়িয়ে পরলে একটা সময় ধরেই নিল এটাই তাঁর শেষ দিন। নিজ মনেই হাসতে থাকলো সিরাত। ভেতরের রুম থেকে ধীর পায়ের আওয়াজ ভেসে আসলে কিছু লেকের কথা কানের কাছে পৌঁছাতে চোখ দুটি জ্ব’লছে যেন সিরাতের।
—স্যার মেয়েটাকে একটু আমাদের উপরও ছেড়ে দিন। তি’লে>তি’লে মা’রব আমরা ওকে।
অন্ধকারের আড়ালে থাকা লেকটা পকেট থেকে সিগারেট বের করে ম্যাচ দিয়ে জ্বা’লিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া অন্ধকারে ছড়িয়ে দিয়ে অট্টহাসিতে গ’ড়া>গ’ড়ি খেয়ে গেলে মোটা দড়ি দিয়ে চেয়ারের পেছন থেকে বাঁ’ধা হাত দিয়ে কাঠের চেয়ারটা খা’মচে ধরলো সিরাত।
— হৃদয় হাজারবার ক্ষ’ত হয়ে গেলেও এসব কি কেনো দরকার ছিল সাফিন?আপনার সিরাতকে স’ম্মা’নহা’নি করতে চাইছে এরা। আমার এই হৃদয়ের ধারা আপনি কোনো দিনও কি বুঝবেন না। কথাগুলো যেন হৃদয় চিঁ’ড়ে ছেদ করে যাচ্ছে সিরাতের। পায়ের আওয়াজটা খুব কাছ থেকে পৌঁছাতে চোখ খিঁ’চে বন্ধ করে নিল সিরাত। সমস্ত শরীর অব’শ হয়ে গেছে যেন তাঁর। হুট করেই এলোপাতাড়ি ভাবে গু’লির শব্দ ভেসে আসাতে আকস্মি’ক ঘটনায় সিরাতের বন্ধ চোখদ্বয় ভয়ার্ত ভাবে খুলে আসলে সাফিনের ভেজা শরীরের দিকে তাকিয়ে তাঁকে দেখে কান্নাগুলো যেন আরও প্রগরভাবে সিরাতের চোখ বেয়ে ঝরে পরছে। সাফিনের এলোপাতাড়ি গু’লিতে কয়েকজনের গা ছুঁয়ে তো হাত ছুঁয়ে স্পর্শ করে গেলে সাফিন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না দেখিয়ে অশ্রুশিক্ত ভাবে শীতল চাহনিতে সিরাতের দিকে তাকালে সিরাতের চোখের পানি গড়িয়ে পরতে থাকলে সাফিন সিরাতের কাছে গিয়ে বাঁ’ধা অবস্থাতেই সিরাতকে জড়িয়ে ধরে সিরাতের সমস্ত মুখশ্রীতে পা’গলের মতো চুমু খেতে থাকলে ওপাশ থেকে মাইক্রোফোনের হাসির রেশ ভেসে আসলো যেন।
— এমা,এতো দেখছি মজনু তাঁর লেলাকে নিতে হাজির। তো একবার পেছন ফিরে মনিরটরটা দেখো? সাফিনের চোখমুখ কুঁ’চকে গিয়ে পিছু ফিরে তাকাতে থ’মকে গেল সে….

চলবে….

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-২৩

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ২৩ (#বোনাস_পার্ট)

#বর্তমান।
সারারাতের ঝুম বৃষ্টি শেষে শুভ্রতাময় এক মিষ্টি সকালের শুরু হলো যেন। জানালা ঘেঁ’ষে দক্ষিণা উত্রা হাওয়া বাহির থেকে ঠেলে সো-সো শব্দে পুরো রুম জুড়ে ছেঁ’য়ে গেলে সকালের হিমশীতল আবেশে কেঁ’পে উঠলো যেন সিরাত। পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালে বাহিরের মৃদু আলো চোখে এসে বা’রি খেয়ে গেলে কোমরটা কেমন টনটন করছে তাঁর ব্যা’থায়। সাফিনের কাঁধের উপর থেকে মাথাটা উঠিয়ে নিজের গলায় হাত বু’লিয়ে পাশফিরে উঠতে নিতে কারো শীতল হাতের স্পর্শ কোমড় জড়িয়ে ধরে ঘাড়ের কাছে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দিতে গরম নিশ্বাসের স্পর্শে কেঁ’পে উঠলো যেন সিরাত। ভয়ার্ত চাহনিতো পাশ ফিরে তাকাতে সাফিনের ফর্সা স্নিগ্ধময় মুখশ্রী দেখে চোখদুটি কেমন শীতল হয়ে আসলো সিরাতের। পরক্ষনে কালকে রাতের হওয়া ঘটনাগুলো চোখের সামনে ভাসতে থাকলো সিরাতের। রাতে ঘোরের ভিতর ফ্লোরে বসেই ঘুমিয়ে পরেছিল দুজন। পুরো আস্ত একটা রাত ফ্লোরে ঠান্ডায় কাঁ’টিয়েছে দুজন। সাফিনের পরনে নীল রাঙা জিন্স ছাড়া উম্মুক্ত বুকের দিকে চোখ গিয়ে ঠেকে গেলে বুকের মাঝে কেমন কাঁ’ম’রে উঠলো যেন সিরাতের। হুট করেই অবাধ্য এক ইচ্ছে পোষন করতে চাইছে যেন হৃদয়ে। সাফিনের বুকে মাথা রেখে খুব কাছ থেকে তাঁর হৃৎস্প’ন্দনের ধু’কপু’ক শব্দ শোনার জন্য প্রেয়সীর হৃদয়ে অসময়ে অবেলার বিতৃ’ষ্ণায় ছেঁ’য়ে পরলো যেন। সাফিনের ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে দীর্ঘ সময় হা করে তাকিয়ে থেকে হৃদয়ের ব্যাকুলতাগুলো আড়াল করতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো সিরাত।
—আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমোনোর সেই সপ্নটা যেন আমি অনেকদিন আগেই মা’টিচা’পা দিয়ে রেখেছিলাম সাফিন। কিন্তু আজ দেখুন, হুট করে আপনি আবারও আমার জীবনে ছুঁ’ড়ির আ’ঘাতের ন্যায় প্রবেশ করে আমার শক্ত হাতে গুছিয়ে নেওয়া হৃদয়টাকে আবারও অগোছালো করতে চলে এলেন। আচ্ছা আপনি আমার সাথে এতকিছু করার পরও এখনও যে আমার উপর তদারকি করতে চলে আসেন? এগুলো আমার খা’রাপ লাগা না হয়ে ভালোলাগায় পরিনত হয় কেন বলতে পারেন সাফিন? আজ এই অবা’ধ্য হৃদয় আবারও আপনার পিছুপিছুই পিছুটা’ন অনুভব করছে। আপনার বুকে মাথা রাখাটা কি খুব বেশি অপ’রাধের হয়ে যাবে সাফিন?
—আমি বলেছি তোমাকে সে কথা?
হুট করেই সাফিনের কন্ঠ কানের কাছে এসে সা’জোরে আ’ঘা’ত হানতে কেঁ’পে উঠলো যেন সিরাত।
—ব্যাপারটা কি হলো? তাঁরমানে এতক্ষণ সাফিন ঘোমানোর ভা’ন ধরে ছিলেন? ব’জ্জা’ত কি সাধে বলি ওনাকে! মনে-মনে কথাটা ভাবতেই ল’জ্জায় মি’য়িয়ে গেল যেন সিরাত। মাথা নিচু করে ফেললে ইচ্ছা মতো ছে’ড়ে দিল সাফিনকে।
সাফিন সিরাতের ব্যান্ডেজ করে দেওয়া নিজের আ’হত হাতটার দিকে ধীর চাহনিতে একটিবার তাকিয়ে সিরাতের দিকে খানিকটা ঝুঁ’কে কোমল স্বরে বললো।
— উফ সিরাত, তুমি আমার বুকে কেন দরকার পরলে আমার ঘাড়ের উপর উঠে বসে থাকো। তোমাকে আমি একটিবার ভু’ল করেও যদি কিছু বলেছি, তো তুমি আমাকে যা খুশি শা’স্তি দিবে আমি সবটা মাথা পেতে নেব বেব্বি। একটা কথা মনে রাখবে, এই শাহনেওয়াজ সাফিনের চোখ যার উপর গিয়ে একবার ঠেকে যায় তাঁকে সে মাথায় করে রাখে। আর আমার চোখে দেখা শ্রেষ্ঠ রমনী হলে তুমি। আর তুমি এখনও আমার বিয়ে করা একটি মাএ আহ্লাদের বউ। তাই চুমু খাও, বুকে মাথা রাখো, বা অন্য কিছু করো, শাহনেওয়াজ সাফিনের জান হাজির তোমার কাছে। কথাটা বলেই সাফিন সিরাতকে চোখ মারতে বিরক্ত হলো সিরাত। রাগে ফুঁ’সতে থাকলো সে। রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললো।
—সরুন বলছি আমার থেকে,দ্রুত সামনে থেকে হাঁটুন আপনি।
—যাহ বাব্বাহ, একটু আগেও তো ঠিক ছিলে, হুট করে আবার কি ভূ’ত চা’পলো তোমার মাথায়। এই সত্যি করে বলোতো সিরাত তোমার আশেপাশে শা’ক’চু’ন্নি ঘুরেফিরে তাইনা জান?
সাফিনের কথা শুনে সিরাতের মাথায় যেন র’ক্ত উঠে যাওয়ার উপক্রম। দুইহাত দিয়ে সাফিনের বুকে কিক করে উঠে দাঁড়িয়ে পরলে সাফিন পেছন থেকে সিরাতের কালো রাঙা ওড়নাটা হাতের মু’ঠোয় নিয়ে মৃদু হেসে শীতল কন্ঠে বললো।
—প্রেয়সীর রুপমাখা মা’য়াবী মুখটা আজ বড্ড বেশি পো’ড়াচ্চে আমাকে। তবেকি প্রেয়সীর থেকে এ অধমের জন্য কখনো ক্ষ’মা আসবে না?
সাফিনের শীতল কন্ঠের রেশ কানের লতিতে প্রবেশ করে গেলে থ’মকে দাঁড়াল সিরাত। কয়েকটা ঢো’ক গি’লে নিল সে। সাফিনের দিকে পিছুফিরে তাকানোর দুঃসা’হস আর দেখালো না সিরাত। পিছু না তাকিয়েই ধীর কন্ঠে বললো।
— ছাড়ুন আমাকে, ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি আপনার জন্য ব্রেক ফাস্টের ব্যাবস্থা করছি। গু’লি লেগেছে আপনার,মেডিসিনটাও তো টাইম মতো নিতে হবে নাকি?
— আর যদি না ছাড়ি?
—তাহলে আর কি করার? না খেয়ে মরু’ন আপনি।
সিরাতের এমনধারা কথা শুনে ফিক করে হেসে উঠলো সাফিন। বললো।
— অকালে বিধবা হলে তুমিই হবে তাহলে।
সাফিনের কথা শুনে বিরক্তি নিয়ে শেষমেশ আর চোখে পিছুঘুরে তাকিয়ে সাফিনের দিকে কি’ঞ্চিৎ রাগ দেখিয়ে ওড়নাটা ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে বললো সিরাত।
—পাঁচ মিনিটের ভেতরে ফ্রেশ হয়ে আসবেন আপনি। আমি এখানে ওয়েট করছি।
সাফিন খানিকটা দুষ্টু’মির সহিত সিরাতের দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বললো।
— চলোনা বউ একসাথে যাই।
সাফিনের কথা শুনে ল’জ্জায় কান গরম হয়ে আসলো যেন সিরাতের। চোখ পাকিয়ে সাফিনের দিকে তাকিয়ে কড়া ভাবে বললো।
—আপনি যাবেন নাকি কি’ল খাবেন? শ’য়’তা’নে’র হা’ড্ডি! পাখে একটা গু’লি লাগল তবুও ওনার শিক্ষা হয়নি।
সাফিন ভ্রু জাগিয়ে নিয়ে ভাবুক দৃষ্টিতে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বললো।
—এই পাখটা আবার কি বউ?
—আমার মাথা। আপনি যান এখন এখান থেকে।
— আচ্ছা যাচ্ছি, যাচ্ছি, কিন্তু একটা কিস করো আগে, তাহলেই চলে যাচ্ছি।
— লু’ই’চ্চা ব্যা’ডা, যাবি নাকি রান্নাঘর থেকে ঝাড়ু আনা লাগবে আমার?
— তুমি একটা যাচ্ছে তাই সিরাত। পে’ন্তির মতো ঘা’ড়ের উপর বসে আছো। কথাগুলো বলতে-বলতে সাফিন টাওয়াল নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলে সিরাত খানিকটা জোরেই সাফিনকে শোনানোর জন্য বলতে থাকলো।
—প্রয়োজনে ঘা’ড়ের উপর বসে কেন? উঠে নাচা>না’চিও আরম্ভ করে দেব। ব’জ্জা’ত লোক একটা।
সিরাতের কথা শুনে সাফিন ঝর্ণাটা ছেড়ে দিয়ে বললো।
—হ্যা এটা শোনাই বাকি ছিল আমার। খোদা বউতো একটা দিলা, কিন্তু মেয়ে আমাকে পা’ত্তাই দেয়না কোনো। সারাক্ষণ শুধু রাগ নিয়ে চোখ পা’কানো খালি।
—জলদি করুন আপনি।
—আসছি-আসছি,পাঁচ মিনিট ওয়েট করো।বললাম আসো দুজনে একসাথে গোসল করি? তাতো আসবেন না মহারানী। আর এখন যত চে’চা>মে’চিঁ শোনাবেন আমাকে। যত জ্বা’লা সব আমার।
— শুনতেছি কিন্তু সব।
সিরাতের কন্ঠ শুনে হাসলো সাফিন। পা’গলী বউ একটা আমার।
.
সকাল ১১ টা নাগাদ তোহার ফোনকল আসাতে ফোনটা যেন লুফে নিল সিরাত। উৎকন্ঠার সহিত বললো।
— কালকে রাতে ফোন ধরিসনি কেন তোহা? তুই জানিস আমি কত টেনশনে ছিলাম তোর জন্য? জান চিন্তা হয় তো নাকি?
সিরাতের ব্যাকুল কন্ঠ শুনে তোহা মৃদু হেসে ধীর কন্ঠে বললো।
— আরে কুল বেব্বি। জাস্ট চিল। আমি একদম ফিট এন্ড ফাইন আছি। আসলে কাল রাতে যা ঝড়বৃষ্টি গেল৷ নেটওয়ার্ক ছিল না ফোনে। আমি খুব সাবধানেই বাড়িতে এসে পৌঁছেছি, খেয়েছি,এখন আম্মার পাশে বসে আছি আমি আর জুলিয়া। ডক্টর কিছুক্ষণ বাদেই চলে আসবে। আমিও আম্মা একটু সুস্থ হলেই কালকে নয়তো পরশুর মধ্যে চলে আসব।
তোহার কথা শুনে সস্থির নিশ্বাস ছাড়ল সিরাত। বললো।
—ভালোয়-ভালোয় এখন কাকি ঠিক হয়ে গেলেই হলো।
—হুম দোস্ত দোয়া করিস।
—অলওয়েজ করি সেটা।
—আমি জানিতো জান।
হাসলো সিরাত। বললো।
—নিজের খেয়াল রাখবি কিন্তু তোহা। টাইমের কাজ টাইমে করবি কিন্তু।
—আচ্ছা আমার সোনা আমি সব বুঝে গেছি। এই সেইম কাজটা যেন নিজেরও করতে শুনি।
সিরাত হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় দিল শুধু তোহাকে।
সাফিন নাস্তা করে সিরাতের কথা অনুযায়ী মেডিসিন নিয়ে তারপর সোফায় বসে টিভি দেখছে এবং আর চোখে সিরাতের দিকে তাকাচ্ছে। সিরাত তোহার সাথে কথা শেষ করে তাঁর দিকে এগিয়ে এসে ধীর কন্ঠে বললো।
—কি দেখছিলেন এদিকে?
—তোমাকে।
সাফিনের সোজাসাপটা উত্তর শুনে ভ্রু জাগিয়ে ফেলল সিরাত। ভ্রুযুগল নামিয়ে ফেলে ধীর কন্ঠে বললো।
—হুম। কথা বলেই রান্না ঘরের জানালার কাছে এসে দূরে একটা মেয়েকে রুমের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটা ভেং’চি কেঁ’টে সা’জোরে জানালাটা আঁ’টকে দিতে সাফিন সিরাতের দিকে তাকালে সিরাত মুখ ঝাঁ’মটা দিতে সাফিন কি হলো বুঝতে না পেরে হা হয়ে গেল পুরো। শীতল কন্ঠে বললো।
—মাঝেমধ্যে কি যে হয়না তোমার সিরাত? আল্লাহই ভালো জানেন।
” দুপুরের দিকে সাইলেন্ট করা ফোনটা হাতে নিতে একটানা জুবায়ের, আমেনা বেগম, মোস্তফা সাহেবের ফোনকল দেখে মাথা চ’ক্ক’র দিয়ে গেল যেন সাফিনের।” রান্নাঘরে সিরাত দুপুরের জন্য রান্না করতে ব্যাস্ত। আকাশটা আবারও কেমন মেঘ-মেঘ করছে। হুট করে দেখা গেল অঝরে কান্না জুড়ে দিল শহরে।আর চোখে রান্নাঘরে সিরাতের দিকে সাফিনের চোখ পরে গেলে সিরাতের নাকের ডগা’য় কেমন ঘেমে উঠেছে দেখে হাসলো সাফিন। ছোটবেলায় নিজের আম্মা আমেনা বেগমের থেকে অনেক শুনেছে সে। যে, মেয়েদের নাক ঘামালে নাকি স্বামী আদর করে বেশি।
—আমিতো সত্যিই আদর করতে যাই,কিন্তু আমার বেরশিক বউ আদরের বদলে দেয় একঝাপ মুখ ঝাঁ’মটা। কথাটা ভাবতেই ঠোঁটের কোনে হাসি এসে জড়ো হলো যেন সাফিনের। সিরাতের থেকে চোখ সরিয়ে কালকে রাতের কাজের কথা মনে পরে গেল বিধায় জুবায়েরের ফোনটাই আগে ব্যাক করলো সাফিন।
—হ্যা বলো জুবায়ের? ওদিকের কি খবর?
—স্যার মোহন লোকটাকে ধরতে পেরেছে, আপনাকে গু’লি করে পার পেয়ে যাওয়া অতটাও সহজ নয়। লোকটা হলো ওই পার্টির ছেলেটার বাপের পাঠানো লোক। আমরা যে হাত-পা ভে’ঙে দিয়ে হাসপাতালে এডমিট করেছি ওই ছেলেটা সবকিছু তাঁর বাপকে জানিয়েছে। তো তাঁর জন্যই ম্যামকে মা’রার জন্য লোক পাঠিয়েছিল। কিন্তু আপনি মাঝপথে বাঁ’ধা হয়ে গেলেন আরকি। এখন এই লোকটাকে কি করব আমরা সেটা একবার বলুন শুধু?
—যে লোকটা মা’রতে এসেছে তাঁর পা ভে’ঙে হালকার মধ্যে ছেড়ে দেও। আর মেইন যে কাজটা করতে পাঠিয়েছে? তাকে উড়িয়ে দিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেও। ওরও বোঝা উচিত যে,ও কার লে’জে পা দিতে এসেছিল।
সাফিনের কথা শুনে মৃদু হেসে উঠলো জুবায়ের। ধীর কন্ঠে বললো।
—ওকেহ স্যার।
—আচ্ছা জুবায়ের শোনো?
জুবায়ের ফোনটা কেঁ’টে দিতে যাওয়ার আগেই সাফিন বাঁ’ধ সেধে দিলে মৃদু থ’মকালো জুবায়ের। বললো।
—জ্বী স্যার বলুন?
— রাতে রিসোর্টে একটা পার্টির ব্যাবস্থা করো। কাল আমার বউয়ের বিবাহ বার্ষিকী বলে কথা। একটা সারপ্রাইজড তো হতেই হয় তাইনা?
হাসলো জুবায়ের হাসির স্বরে বললো।
—এক্ষুনি ব্যাবস্থা করছি সব স্যার।
সাফিন হাসলো শুধু।
“জুবায়েরের ফোনটা কেঁ’টে দিয়ে রান্নাঘরে সিরাতের কাছে গিয়ে সিরাতের পাশ ঘেঁষে দাঁড়াতে বিরক্ত হলো সিরাত।” বললো।
—এভাবে দাঁড়িয়ে পরলেন যে হুট করে?
— আমি আমার বউয়ের পাশে দাঁড়িয়েছি তাতে তোমার কি সিরাত?
সাফিনের কথা শুনে হা হয়ে গিয়ে নাক ফোলাল সিরাত। বললো।
— এখান থেকে যান এক্ষুনি মাং’সটা হয়ে গেলে খাবার বেরে দিচ্ছি।
— উমম, ঘ্রা’নটা কিন্তু খিদেটা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে বউ।
—সারাক্ষণ কানের কাছে বউ-বউ করে ঘ্যা’ন>ঘ্যা’ন করবেন নাতো সাফিন? বিরক্ত লাগে ওগুলো।
সিরাত কথাগুলো বলতে-বলতে মাং’সের করাইটাতে সাল আর এলাচ দিয়ে ঢকনা দিয়ে সেদ্ধ হওয়ার জন্য ঢেকে দিয়ে সাফিনের দিকে ঘুরে তাকালে সাফিন হেসে উঠলো। বললো।
— উফ সিরাত,তোমাকে রাগাতেইতো আমার খুব বেশি ভালোলাগে জান। সেটা কি করব তাহলে, হুম?
সাফিনের কথা শুনে সিরাত রাগের চোখে সাফিনের দিকে তাকাতে সাফিন একটানে সিরাতের হাতটা চে’পে ধরে সিরাতকে নিজের কাছে টে’নে এনে সিরাতের ঘাড়ের কাছে মৃদু কাঁ’ম’রে দিলে দ্রুত চোখ বন্ধ করে নিল সিরাত। সাফিনের স্পর্শ অনুভব করে শরীরে কাঁ’পুনি ধরিয়ে দিচ্ছে যেন তাঁর। খানিকটা থেমে-থেমে বললো।
— এখানে অ’সভ্য’তামি না করে টেবিলে গিয়ে বসে পরুন খাবার দিচ্ছি। সিরাতের কথা শুনে হেসে উঠলো সাফিন। বললো।
— আমার বউ আমার খাওয়া নিয়ে কত ভাবে দেখছি।
— আপনার মাথা ভাবি। এবার ছারুন দেখি আমাকে? সাফিন ছারতে না নিতে হুট করে ফোনটা বেজে উঠলে আমেনা বেগমের নাম দেখে রিসিভ করতে সিরাতকে ছেড়ে দিলে হা’প ছেড়ে বাঁ’চল যেন সিরাত। ফোনের ওপাশ থেকে আমেনা বেগম এক প্রকার কেঁদেই ফেললেন যেন৷
—কতবার ফোন করেছি তোকে সাফিন? ফোনটা ধরার প্রয়োজনও মনে করিসনা তাইনা সাফিন?আমেনা বেগমের কান্নারত কন্ঠ শুনে সিরাতের মুখটা কেমন থ’ম>থ’মে হয়ে গেল যেন। কতদিন তাঁকে দেখেনি সিরাত,কথাও বলেনি,মনটা কেমন যেন উসখু’স করছে তাঁরসাথে কথা বলার জন্য। কিন্তু কিছু বললো না সিরাত। মাং’সটা হয়ে গেলে গ্যা’সটা অফ করে টেবিলে সবকিছু গুছিয়ে নিতে থাকলে এপাশ থেকে সাফিন আমেনা বেগমের প্রশ্নের উত্তরে খানিকটা থেমে গিয়ে আবার বললো।
— ধুর আম্মা,তুমিও না। আমি তোমার ছেলের বউয়ের সাথে আছি এখন। একসাথে খাওয়া হবে রাতে ঘুরতে যাওয়া হবে। তাই আরকি ফোনটা সাইলেন্ট রাখছিলাম। সরি আম্মা। এই কানে ধরছে তোমার ছেলে। সিরাতের কথা শুনে আমেনা বেগমের চোখমুখ কেমন খুশি- খুশি হয়ে গেল। খুশিতে বললেন।
—মেয়েটা কেমন আছেরে সাফিন?
—তোমার ছেলের সাথে যখন আছে, নিশ্চয়ই খা’রাপ থাকবে না সে? এখন তো সে আছে আদরে-আদরে তাইনা বেব্বি? কথাটা বলে সিরাতের দিকে প্রশ্ন ছুঁ’ড়ে দিলে রাগে- ল’জ্জায় সিরাত চোখ বড়-বড় করে সাফিনের দিকে তাকিয়ে ফু’সতে থাকলে সাফিন হাসিতে গ’ড়া>গ’ড়ি খেল যেন। ওপাশ থেকে আমেনা বেগম বললেন।
—সবসময় ফাই’জলামি তোর। মেয়েটা নিঘ্যা’ত ল’জ্জা পেয়েছে। যাইহোক, মেয়েটার খেয়াল রাখিস আব্বা। আমার আম্মাজানকে এইবার সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে ফিরবি কিন্তু। এটাই দেখতে চাই আমি সাফিন। আমেনা বেগমের ধরা কন্ঠের রেশ শুনে সাফিন মৃদু হেসে সিরাতের দিকে তাকাতে সিরাত টেবিলে খাবার গোছাতে থাকলে সাফিন মৃদু হেসে বললো।
— অবশ্যই আম্মা। এবার আর তোমার ছেলে ভু’ল করবে না।
হাসলেন আমেনা বেগম।
“আমেনা বেগমের সাথে কথা শেষ করে টেবিলে এসে বসে পরলো সাফিন।” সিরাত ভাতের প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে নীচু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো।
—আম্মা কেমন আছেন? সিরাতের কন্ঠ শুনে তাঁর দিকে শীতল দৃষ্টি তাক করলো সাফিন। মৃদু হেসে বললো।
— ভালো আছে হয়তো? তোমার অনুপস্থিতিতে আর কতইবা ভালো থাকবে ভাবো?
সাফিনের কথার রেশ শুনে আর কথা আগাল না সিরাত।
—যেখানে নিজেই তাড়িয়ে দিলেন সাফিন? সেখানে নিজেই আবার আফ’সোস করছেন? সত্যিই আপনার আয়না আপনি নিজেই হয়তো জানেননা। যার প্রগর প্রেক্ষাপট আমার কাছে স্পষ্ট হওয়াও কোনো কাম্যের নয়। (মনে-মনে কথাগুলো বলে দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ল সিরাত।)
.
সারাদিনের ঝিমিয়ে থাকা কালো রাঙা মেঘের কোন স্পর্শ করে সন্ধ্যা ছুঁই-ছুঁই হয়ে নামলো ঝুম বেগে বর্ষনপাত। এলেমেলো ভাবে বয়ে চলা হাওয়াগুলোও যেন গর্জ’নের সহিত ধরনীতে এসে প্রগরভাবে ভাঙ’নতা ধরিয়ে দিচ্ছে। টানা পাঁচমিনিট ধরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকার পর কালো রাঙা শাড়ি পরে সিরাত রুম থেকে বের হয়ে আসলে সাফিন তাঁর দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিল না যেন। সিরাত মাথা নিচু করে থাকলেও লাল আভায় মিশ্রিত মুখশ্রী চোখ এড়াল না সাফিনের। মুচকি হেসে সিরাতের খুব কাছে এসে কোমর স্পর্শ করে সিরাতের খোঁপায় মো’ড়ানো চুগুলো মুক্ত করে দিলে বৃষ্টির শিহরনে জানালা ভেদ করে ভিতরে আশা হাওয়ায় সিরাতের ঘনকালো চুলগুলো কেমন দুলছে যেন। সাফিন সিরাতের উম্মুক্ত চুলে নাক ডুবিয়ে দিতে সিরাত চোখ খিঁ’চে বন্ধ করে নিল দ্রুত। হুট করেই সাফিন সিরাতকে পাঁ’জাকোলা করে নিয়ে বাহিরের দিকে অগ্রসর হলে সিরাত সাফিনের গ’লা জড়িয়ে ধরে সাফিনের বুকে মুখ লোকাতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে যেন। সিরাতের এরুপ ল’জ্জা-ল’জ্জা ভাবটা দেখে সাফিনের ঠোঁটের কোনে হাসির রেশ যেন উপ’চে পরছে।
—আমার এই চোখদুটি তোমার রুপ দেখে নয়, বরং তোমার মোহে বিমোহিত হয়েছে সিরাত।যার গভীরতা হয়তো এই শাহনেওয়াজ সাফিনের নিজেরও সঠিক জানা নেই। কথাগুলো মৃদুস্বরে সিরাতের কানের কার্নিশ ঘেঁষে অন্তর্নিহিত হতে কেমন মি’য়িয়ে গেল যেন সিরাত। বুকের ভেতরটা কেমন ধুকপুক- ধুকপুক করছে। যার প্রতিটা শব্দ খুব কাছ থেকে অনুভব করতে পারছে সিরাত। দরজাটা বাহির থেকে লক করে দিয়ে বৃষ্টি মাথায় করে সিরাতকে গাড়িতে বসিয়ে দিলে খানিকটা ঝুঁ’কে সিরাতের কপালে প্রগর ভাবে চুমু খেল সাফিন। বাঁকা হাসি হেসে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিতে বৃষ্টির সহিত ঝিরিঝিরি উ’ষ্ণতা গাড়ির কাঁচের সাথে ছি’টকে এসে সিরাতের চোখেমুখে শিহরনের সৃষ্টি করতে সাফিন আর চোখে সিরাতের দিকে তাকিয়ে হাস্যাজ্বল মুখশ্রীতে রিসোর্টের উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে এগোলো। সিরাত সাফিনের দিকে পলক বীহিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে গাড়ির সাইড মিরর থেকে ব্যাপারটা লক্ষ করে সাফিন সিরাতের সামনে তুরি বাজাতে হুঁশ ফিরলো সিরাতের। সাফিন একগাল হাসি হেসে। দুষ্টু’মির সহিত বললো।
—প্রেমে পরে গেছো আমার তাইতো সোনা? এই বলোনা সিরাত? প্লিজ,প্লিজ? সিরাত সাফিনের কথার পা’ত্তা না দিয়ে বাহিরের দিকে তাকাতে হিমেল স্রোতে চোখদ্বয় বন্ধ হয়ে আসছে যেন তাঁর।
— আপনার এই হাসির প্রেমে পরেছি বহুদিন আগে সাফিন।একমুঠো রোদও তাঁর আলোকে মুঠোবন্দি করার জন্য একটিবার হলেও সুযোগ খুঁজে দেয়। আমিও নাহয় আর একটু নির্ল’জ্জ হয়েই আপনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিচ্ছি। পারলে এবার আমাকে বৃষ্টির শিহরনে হৃদয় গহীনে আগলে রেখে দেখান……

চলবে……

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-২২

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ২২

পর-পর এতগুলো খু’ন হওয়াটা যেন সাফিনের ধৈর্যের বাঁ’ধ ভে’ঙে দিতে ব্যাস্ত। মাথাটা ব্যা’থায় ধরে গেছে যেন তাঁর। ক্লান্ত শরীর যেন এত কিছু মেনে নিতে পারছে না ঠিক। পা ঢলে বিছানায় বসে পরলে মোহন ফোন কেঁ’টে দিতে দরজায় কেউ কড়া নাঁড়লে ধীর চাহনিতে সেদিকে তাকালে হেলাল দরজায় দাঁড়িয়ে সাফিনের সম্মতির উদ্দেশ্যে বললো।
—ভিতরে আসব স্যার?
— আসো।
সাফিনের ধরা কন্ঠের সম্মতি শুনে হেলাল দরজাটা মৃদু চা’পিয়ে রেখে ভিতরে এসে থ’ম>থ’মে কন্ঠে বললো।
—খবর আছে স্যার।
হেলালের কন্ঠ শুনে ভ্রুযুগল কি’ঞ্চিৎ ভা’জ করে ফেলল সাফিন। মনটা যেন বি’ষিয়ে রয়েছে তাঁর। মৃদু রাগ নিয়েই বললো।
— ফর্মালিটি রাখো হেলাল। আসল কথা বলো? এমনিতেই মাথার প্রতিটা শিরা- উপশিরায় র’ক্ত বেঁ’ধে গেছে আজ।
সাফিনের কন্ঠে খানিকটা নড়েচড়ে দাঁড়াল হেলাল। গলা খাঁ’কারি দিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— স্যার প্রত্যেকটা খু’নের সাথে যে ফোনগুলো পাওয়া গেছে সেগুলো তো বেশিরভাগই ভে’ঙে গেছে, কিন্তু যেগুলো সারাই করা গেছে সেগুলো থেকে জানা গেছে…
—কি জানা গেছে দ্রুত বলো?
হেলালের পুরো কথাটা শেষ হওয়ার আগেই উৎকন্ঠার সহিত সাফিন বাঁ’ধ সেধে দিলে হেলাল খানিকটা থ’মকে গিয়ে আমতা-আমতা করে বললো।
— মৃ’ত্যুর আগ পর্যন্ত একটা নম্বরেই কল গেছে সবগুলো ফোন থেকে।
ভ্রুযুগল কি’ঞ্চিৎ ভা’জ করে ফেলল সাফিন। গম্ভীর কন্ঠে বললো।
— এই কথা আমি আগেই শুনেছি। নতুন কিছু শুনতে চাইছি।
হেলাল কয়েকটা ঢোক গি’লে মাথা নিচু করে থেমে-থেমে খানিকটা জ’ড়’তা নিয়ে বললো।
—স্যার লোকগুলো আপনার বুড়ো আম্মার নম্বরে কল করতেন।
হেলালের কথার রেশ সাফিনের কানের লতিতে প্রবেশ করার সঙ্গে-সঙ্গে ভ’রকে গেল সাফিন।
—বুড়ো আম্মা!
—জ্বী স্যার। টেক্সট গুলো দেখা যায়নি কারন লোকগুলো খুব ধুরন্ধ’র। টেক্সট করেই সবগুলো টেক্সট সঙ্গে- সঙ্গে আনসেড করে দিয়েছে।
— কি হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না হেলাল। মাথা কাজ করছে না কিছু। বুড়ো আম্মাকে ফোন করতে যাবে কেন লোকগুলো? আর বুড়ো আম্মাকে খু’নই বা করলো কে? নাকি এখানেও প্যাঁ’চ আছে কোনো?
হেলাল খানিক মাথা চুলকে ধীর গলায় বললো।
— স্যার লোকগুলো যদিওবা বুড়ো আম্মাকে ফোন করুক। কিন্তু এই সব খু’নের পেছনে যে আপনি ম্যামকে সন্দে’হ করছেন এটার তো কোনো মানে হয়না। তাইনা?
চুপ হয়ে গেল সাফিন। যতবার কোনো কিনারা খুঁজতে যায় ততবারই কোনো না কোনো স্রোতে সেটা এলোমেলো করে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরে যেন।
কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজ, হুট করে বুড়ো আম্মা আর সকিনা খু’ন, একের পর এক লা’শ, এগুলো কি হচ্ছে তারসাথে? সত্যিই তো সিরাতের কি লাভ ইয়াংম্যানকে খু’ন করে? আর সিসিটিভি ফুটেজও তো আর মি’থ্যে বলছে না। ফোনগুলো ন’ষ্ট হওয়ার পেছনেও সিরাত জড়িত। নাহলে হয়তো আরও কিছু গোপন তথ্য পাওয়া যেত। তাহলে কি সবকিছুই আগে থেকে প্লানকৃত? ঘুরেফিরে সিরাত না চাইতেও আমার মস্তিষ্কে গেঁ’থে আছে যেন। এই সবগুলো প্রশ্নের উত্তর ওকে কড়ায়-গণ্ডায় আমাকে দিতে হবে। (মনে-মনে কথাগুলো ভাবতে থাকলে হেলাল শান্ত স্বরে বললো।)
— শহরের পরিস্থিতি ঠিক লাগছে না স্যার। কি যে হচ্ছে একের পর এক!
সাফিন হেলালের দিকে শীতল চাহনিতে তাকিয়ে ধীর গলায় বললো।
— তোমাদের ম্যাম কোনো কিছুতেই নেই আবার সবকিছুর সাথেই আ’ষ্টেপৃ’ষ্ঠে জড়িয়ে আছে। তাই তাঁকে এর জবাবদিহি করতে হবে। সবকিছুর উত্তর চাই আমার। জুবায়ের কোথায় আছে?
হেলাল খানিকটা নিশ্বাস ছেড়ে বললো।
—কাল রাত থেকে দেখা যায়নি তাঁকে। মোহন সকিনা আর বুড়ো আম্মার লা’শের কাছে আছে। এবারের মতো শেষ রক্ষা হয়নি, এতক্ষণে মিডিয়ার কানে নিশ্চিত খবরটা পাঁচকান হয়ে গেছে।
— চোখ বন্ধ করে নিল সাফিন। এই শীতল পরিবেশেও কেমন ঘেমে উঠছে সে। তাঁর একমাএ বড় সম্বল ছিলেন আজাদ সাহেব। যাঁর কারনে এতদূর আসতে পেরেছে ও। নিজের ড্যাডকেও কখনো এতটা প্রায়োরিটি দেয়নি সে,যতটা আজাদ সাহেবকে সে দিয়েছে। আর আজ তাঁর অনুপস্থিতিতে কেমন কুসুমের ন্যায় কোমল হয়ে পরেছে সে। নিজের সেই তেজটা যেন ঠিক আয়ত্ত করতে পারছে না। ধীর পায়ে বসা থেকে উঠে পরলো সাফিন। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—ড্যাডকে এসব কিছু জানানোর দরকার নেই।বুড়ো আম্মা যে খু’ন হয়েছে এটা ড্যাড জানে?
— কি ভেবোছো তোমরা? যে,আমাকে না জানিয়েই নিজেরা একা-একা সব কাজ করে নিবে?
হেলালের দিকে প্রশ্নটা ছুঁ’ড়ে দিলে দরজার কাছ থেকে মোস্তফা সাহেবের কন্ঠ শুনে সেদিকে ধীর চাহনিতে তাকাল সাফিন।
—ড্যাড?
সাফিনের ওষ্ঠদয় মৃদু ফাঁ’ক হয়ে গেলে মোস্তফা সাহেব গম্ভীর দৃষ্টিতে সাফিনের দিকে তাক করে শান্ত স্বরে বললেন।
—মোহন রাতের ফ্লাইটের টিকিট দিয়ে যাবে তোমাকে। আজকে রাতের ভিতরে তুমি দেশের বাহিরে যাচ্ছো সাফিন। আর আজকে দিনটা তোমার বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ।
মোস্তফা সাহেবের কথা কানের কাছে দৃঢ় ভাবে এসে পৌঁছাতে চোখ-মুখের ভাবভঙ্গি নিমিষেই পাল্টে গেল সাফিনের। খানিকটা বাঁ’ধ সেধেই বললো।
—কিন্তু ড্যাড…
—হেলাল তোমার স্যারকে বাহির থেকে দরজা লক করে তারপর তুমি বাড়ির বাহিরে পা রাখবে। আর তোমার স্যারকে বলে দেও নিজের ড্যাডকে যদি জি’ন্দা দেখতে চায় তাহলে যা বলছি তাঁকে সব মেনে নিতে।
সাফিনের পুরো কথাটা শোনার কোনো আগ্রহ দেখালেন না মোস্তফা সাহেব। বরং নিজের কথাগুলো উগ’রে দিলেন।হেলাল ধীর চাহনিতে একবার বাপ-ছেলের মুখশ্রী দেখে নিয়ে কয়েকটা ঢোক গি’লে মাথা নিচু করে ফেললে মোস্তফা সাহেব স্থান ত্যা’গ করতে নিতে সাফিন দ্রুতগতিতে বলে উঠলো।
—কিন্তু ড্যাড আমি বুড়ো আম্মাকে তো দেখতে যাব নাকি? আর তুমি আমাকে ব্লাক’মেইল করছো রীতিমতো!
সাফিনের কথায় থেমে গেলেন মোস্তফা সাহেব ধীর চাহনিতে পিছুঘুরে গাম্ভীর্যের সহিত বললেন।
— যে ছেলে তাঁর জানের জান, প্রানের প্রান ইয়াংম্যানকেই শেষ বারের মতো দেখতে আসেনি,তাঁর কাছে বুড়ো আম্মা আর কতটুকু ইম্পর্ট্যান্ট হবে? আমি আব্বাজানকে হাঁড়িয়েছি। তোমাকে হাঁড়াতে চাইছি না সাফিন। আর ধরে নেও তাই, ব্লা’কমেইলই করছি তোমাকে।এছাড়া কোনো উপায় নেই তোমাকে থামানোর। এতদিন তোমার সব কথা মুখ বুজে ছেলেমানুষী ভেবে মেনে নিয়েছি। তুমি সিরাতকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেছো সেটাও কারন সহিত মেনে নিয়েছি। তুমি কি ভাবো? আমি কিছু জানতে পারি না? এ রকম বুদ্ধি নিয়ে নিশ্চয়ই দেশের প্রধানমন্ত্রী হইনি আমি। কথাটুকু এক নিমিষে শেষ করে মোস্তফা সাহেব চলে গেলে হেলাল মাথা নিচু করে রাখলে দুইহাত মাথায় চে’পে ধরে বিছানায় বসে পরলো সাফিন। মোস্তফা সাহেব জীবনের প্রথম তাঁর সাথে এতটা রুড বিহেব করলেন। চোখ বন্ধ করে ফেলল সাফিন। বুকের ভেতরকার জ্বা’লার ভাবটা যেন কোনোমতেই থামানো যাচ্ছে না তাঁর। চোখদুটি লাল হয়ে গেলে মৃদু ঢোক গি’লে শীতল কন্ঠে হেলালের উদ্দেশ্যে বললো।
—ড্যাড যেটা বলে গেছে সেটা করে এখান থেকে বিদায় হও।
—কিন্তু স্যার…
পুরো কথাটা শেষ করার আগে সাফিন তাঁর র’ক্তিম চোখদ্বয় হেলালের দিকে তাক করতে ভয়ে মাথা নিচু করে ফেলল হেলাল। বললো।
—আচ্ছা স্যার।
.
দিগন্তের কোন ছুঁয়ে ঘনিয়ে আসছে একরাশ অঘোছালো মেঘদ্বয়। হিমশীতল হাওয়ায় হসপিটালের জানালা পেড়িয়ে তোহার ঘন চুলগুলো উড়িয়ে দিতে ব্যাস্ত। মুখে দুহাত গুঁ’জে চেয়ারে বসে আছে তোহা। টেনশনে মাথা টনটন করছে যেন তাঁর। কালকে রাতে সিরাত দরজা না খোলায় সাফিনের নম্বর না থাকায় জুবায়েরকে ফোন করেছিল তোহা৷ জুবায়ের তৎক্ষনাৎ তাঁদের বাড়িতে চলে আসলে দরজা ভে’ঙে সিরাতকে অ’জ্ঞান অবস্থায় পেয়ে পুরো ভর’কে গিয়েছিল দুজন। অনেক চেষ্টা চালিয়েও সঠিক ফল না পেলে হসপিটালে নিয়ে আসতে হয়েছে সিরাতকে শেষমেশ। কিন্তু এখনও জ্ঞান ফিরেনি সিরাতের। প্রবল বেগে জ্বর হয়েছে তাঁর অবেলার বৃষ্টিতে ভিজে। ডক্টর এখনও তেমন কিছু না বলাতে বুকটা কেমন ভয়ে কু’করে আছে তোহার। বারংবার উঠে পায়চারি করছে তো আবার বসছে। জুবায়েরকে বারংবার সাফিনকে ফোন করতে বললেও জুবায়ের বারাবর মাথা নিচু করে রাখলে তোহার কেমন জানি অদ্ভুত লাগছিল ব্যাপারটা। অনেক ক’ষ্টে জুবায়ের হতে সিরাত আর সাফিনের ব্যাপারে জানার পর যেন এখন আরও ভয় হচ্ছে তোহার। চোখদুটি দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরতে চাইছে যেন।সিরাতের মতো মেয়েও শেষমেষ ভু’ল মানুষের মা’য়ায় জড়ালো। কথাটা যেন হৃদয় চিঁ’ড়ে একরাশ দীর্ঘশ্বাস বের হওয়ার মতন। জুবায়ের কিছুক্ষণ হলো বাহিরে গেছে কি কাজ আছে নাকি তাঁর তাই বলে।
তোহা আবারও উঠে পায়চারি করতে নিলে পেছন থেকে কেউ হাত ধরে নিলে ভ্রুযুগল বিরক্তিতে নামিয়ে নিয়ে পিছু ফিরে তাকাতে সঙ্গে- সঙ্গে জুবায়ের তোহার হাতটা ছেড়ে দিয়ে শীতল কন্ঠে বললো।
—সরি, কাল রাত থেকে কিছু খাননি আপনি ম্যাম। এখন কিছু খেয়ে নিন। নয়তো আপনিও অসু’স্থ হয়ে পরবেন। আমি সামান্য কিছু খাবার এনেছি আপনার জন্য।
কথাটা বলে হাতে থাকা খাবারের ব্যাগটা তোহার দিকে এগিয়ে দিল জুবায়ের। তোহা কি’ঞ্চিৎ পরিমান চুপ থেকে রাগান্বিত কন্ঠে বললো।
—আপনার সাহস তো কম না!আপনি আমার জন্য খাবার এনেছেন? তোহার এরমধারা কথায় চ’মকে উঠলো জুবায়ের। কিছুক্ষণ হা হয়ে গিয়ে ধীর গলায় বললো।
—বুঝলাম না ঠিক? এখানে সাহসের কি আছে?
জুবায়েরের কথায় রাগ লাগলো তোহার। দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে ক’ট’ম’ট ভাবে বললো।
—যেখানে আপনার স্যার আমার জানের সাথে এরুপ আচরণ করেছে,সেখানে আপনি কিভাবে আশা করেন আপনার ওই স্যারের দেওয়া টাকায় কেনা খাবার আমার গ’লা দিয়ে নামবে?
—আশ্চর্য! এটা স্যারের টাকা কেন হতে যাবে? এটা আমার টাকায় কেনা। আমি ক’ষ্ট করে কাজ করি বলে স্যার আমাকে মাইনে দেয় বাকি সংগঠন থেকে পাই। এখানে স্যারকে টা’নছেন কেন?
—আগে কি বললেন সেটা বলুন? তোহার রাগের কন্ঠ শুনে জুবায়ের থ’ম>থ’মে মুখ করে বললো।
—সংগঠন থেকে টাকা পাই বলেছি।
—উহুম তাঁর আগে কি বলেছেন?
জুবায়ের খানিকটা ভেবে বললো।
—স্যার মাইনে দেয় সেটা?
তোহা এবার জুবায়েরের দিকে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাগ নিয়ে বললো।
—তাহলে হলো না এটা ওই শাহনেওয়াজ না আনাচকপির টাকা।
তোহার কথা শুনে জুবায়েরের চোখগুলো কেমন বড়সড় হয়ে গেল। শুকনো ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে নিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—আপনি একটা ডে’ঞ্জারাস মেয়ে আছেন। মা’ফ করেন ভাই।
—ভাই হব না বোন হব। আ’জা’ই’রা লোক।
জুবায়ের হাতদুটি তোহার সামনে ভাঁ’জ করে ধরে বললো।
—মাফ করেন।
এবার জুবায়েরের এরুপ আচরনে তোহা যেন খানিকটা ল’জ্জা পেল৷ চুপ হয়ে গিয়ে চেয়ারে বসতে নিতে ডক্টর এসে পরাতে দ্রুত তাঁর দিকে তাকালো তোহা। ভয়ের সহিত বললো।
—ডক্টর কি হয়েছে আমার সিরাতের?
—হায়াত কি হয়েছে ম্যামের?
জুবায়ের আর তোহার দিকে ধীর চাহনিতে তাকালো হায়াত। গলায় ঝোঁ’লানো স্টেথোস্কোপটা ঠিক করে খানিকটা নিশ্বাস নিল। সে খুব ভালো করেই জানে সিরাত শাহনেওয়াজ সাফিনের স্ত্রী। তাই সাফিনকে উপস্থিত না দেখাতে জুবায়ের আর তোহার দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—কাকে বলব এখানে।
— দুজনকেই বলুন।
জুবায়েরের কথায় হায়াত খানিকটা তাঁদের দিকে তাকিয়ে নামানো কন্ঠে বললো। আমার কেবিনে যেতে হবে তাহলে আপনাদের।
হায়াতের কথা শুনে ওপর প্রান্তের মানুষদুটি ধীর চাহনিতে হায়াতের যাওয়ার পানে তাঁকিয়ে নিজেদের মধ্যে একবার তাকিয়ে মনের মধ্যকার খুঁ’ত>খুঁ’ত ভাবটা নিয়ে সামনে অগ্রসর হলো হায়াতের কেবিনের দিকে।
” গগনের এতক্ষণের ঝিম ধরে থাকা আভাটা এড়িয়ে এবার নামলো একরাশ বি’ষন্নতায় জড়াতো ঝুম বৃষ্টি।” শহর ভিজিয়ে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে যেন তাঁরা। ক্ষনে- ক্ষনে গর্জ’ন পাত হওয়াটাও যেন আজ মন খারা’পের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজ কেবিনে এসে জানালার পর্দাটা একহাত বাড়িয়ে দিল হায়াত। জুবায়ের আর তোহা কেবিনে প্রবেশ করলে হায়াত তাঁদেরকে বসতে বললে জুবায়ের বললো।
—বসার জন্য আসেনি। কি বলবেন তারাতাড়ি বলুনহায়াত। আমাকে যেতে হবে। জুবায়েরের কথা শুনে তোহা ধীর চাহনিতে জুবায়েরের দিকে তাকালে দুজানার দুটি চোখে চোখ পড়াতে চোখ নিচু করে ফেলল তোহা। হায়াতও আর চেয়ারে বসলো না তাদের কারনে। কাঁ’চের টেবিলটার উপরে কলম দিয়ে চে’পে রাখা রিপোর্টের ফাইলটা এগিয়ে দিলে জুবায়ের নিতে গেলে জুবায়েরকে ভেং’চি কেঁ’টে তাঁর হাত থেকে তোহা রিপোর্টের ফাইলটা ছি’নিয়ে নিলে জুবায়ের মৃদু হাসলো শুধু।
— পা’গ’ল মেয়ে একটা। মনে-মনে কথাটা বলা শেষ হতে-হতে হায়াত বলে উঠলো।
—ম্যাম প্রতিদিন নিয়ম করে ড্রা’গস নিতেন। এমন কোনো দিন নেই যে তিনি ড্রা’গস নিতে মিস করেছেন। কালকে অব্দিও তিনি ড্রা’গস নিয়েছেন। আর আজকে মিস হয়ে যাওয়াতে তাঁর এই অবস্থা।
হায়াতের কথা শেষ হওয়ার সাথে-সাথে তোহার হাত থেকে রিপোর্টের ফাইলটা পরে গেলে থ’ম মে’রে গেল তোহা। চোখের কোন বেয়ে এতক্ষণে অবা’ধ্যের অশ্রুপাত ঝরে পরতে থাকলো তাঁর। ডু’করে কেঁদে উঠলো তোহা। জুবায়ের পুরো ত’ব্দা খেয়ে গেল হায়াতের কথা শুনে। এই মূহুর্তে ঠিক কি রিয়াক্ট করা উচিত মাথায় আসছে না তাঁর।
— এভাবে তাকিয়েন না স্যার। রিপোর্টের ফাইলটা দেখুন। ওনাকে পুরোপুরি ভাবে ড্রা’গস আ’স’ক্তি করে নিয়েছে। এটা কোনো সাধারন ড্রা’গস নয়। ম্যাম নিজের হুঁ’শে মিনিমাম ২৪ ঘন্টার ধরতে গেলে অর্ধেকটাই ঝি’মিয়ে ছিলেন। ওনার জ্ঞান ফিরেনি কিন্তু ওনার মস্তি’ষ্ক সজাগ। এটাকে বলে এককথায় কুয়েন্সিডেন্স। ওনার ইমিডিয়েটলি চিকিৎসা প্রয়োজন।
জুবায়েরের হুঁ’শ ফিরে এলে গভীর ভাবনায় তলিয়ে গেল যেন সে।
—তাঁরমানে ম্যাম এতদিন ধরে ড্রা’গস নিতেন? কোনো ভু’ল বোঝাবোঝি হচ্ছে নাতো স্যার আর ম্যামের মাঝে?
তোহা কান্নারত কন্ঠে বললো।
— এ আমি বিশ্বাস করিনা। আমার জান কখনো এমন কাজ করতেই পারে না।
—দেখুন উনি কি পারেন আর না পারেন সেটাতো আমি জানিনা, কিন্তু উনি যে নিয়মিত ড্রা’গস নিতেন এটা সত্যি। এমনও হতে পারে, কেউ হয়তো নিয়ম করে ওনাকে ড্রা’গস দিতেন। বলাতো যায়না।
হায়াতের কথা শুনে জুবায়েরের মস্তি’ষ্ক সজাগ হয়ে উঠলো যেন। কিছু বলতে যেতেও তোহাকে দেখে থেমে গেল সে। হায়াত ব্যাপারটা খেয়াল করে তোহার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো।
—আপনি চাইলে আপনার বান্ধবীর সাথে দেখা করতে পারেন মিস।
হায়াতের পার্মিশন পেয়ে গেলে খুশি হয়ে গেল তোহা৷ একছুটে চোখের পানি আড়াল করে সিরাতের কেবিনের দিকে চলে গেল।
— দেখুন এটা কোনো সাধারন ড্রা’গস নয়। এটার এফে’ক্ট ঠিক আপনার নানুজানের মৃ’ত্যুর মতো। বিদেশি মা’ল এগুলো। আমার মনে হয় আপনাদের আরও সচেতন হওয়া উচিত।
খানিকটা ঢোক গি’লে নিল জুবায়ের। ধীর কন্ঠে বললো।
— ম্যামের চিকিৎসা শুরু করে দিন হায়াত। আমি আসছি।
—খোদা হাফেজ।
.
ঝুম বৃষ্টিপাতের কারনে পরিবেশ কেমন থ’ম>থ’মে হয়ে আছে। হসপিটালের সিটে বন্ধ চোখদ্বয় নিয়ে সেলাইন রত অবস্থায় নিস্তে’জ ভাবে শুয়ে আছে সিরাত। চোখের নিচে একদিনেই কেমন কালসিটে দা’গ পরে গেছে। সিরাতকে এভাবে নিস্তে’জ হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে কান্নাগুলো কেমন দ’লা পা’কিয়ে বেড়িয়ে আসতে চাইছে সিরাতের। পা ঢলে ফ্লোলে বসে পরে সিরাতের শীলত হাতদুটি নিজের হাতের মুঠোবন্দি করে অশ্রু ঝরাতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো যেন সে।
— কি থেকে কি হয়ে গেল জান। আমার জানটা এভাবে নিস্তে’জ হয়ে শুয়ে আছে কেন? এই সিরাত? ওঠ, দেখ আমি এসেছি? তোর তোহা এসেছে? তুই চোখ খুলে দেখবি না আমাকে?
—পেসেন্টকে এভাবে মানসি’ক ভাবে প্রে’সার দিবেন না ম্যাম। এতে পেসেন্টের উল্টো ক্ষ’তি হতে পারে। প্লিজ আপনি বাহিরে যান এখন।
তোহা ধীর চাহনিতে সামনে থাকা নার্সটার দিকে তাকালে নার্সটা ঘুমের ইনজেকশন দেওয়ার জন্য সিরাতের দিকে এগিয়ে আসলে চোখের পানি ফেললে পানিটুকু সিরাতের হাত ঘেঁ’ষে স্পর্শ করে যেতে তোহা উঠতে নিতে হুট করেই সিরাত আলতো হাতে ক্যানু’লা লাগানো হাত দিয়ে তোহার হাতটা ধরে নিতে থ’মকে দাঁড়াল তোহা। একহাতে চোখের পানি আড়াল করে পিছু ফিরে তাকালে পিটপিট করে তাকাল সিরাত তাঁর দিকে।
তোহা মৃদু হেসে উঠলো তাঁকে দেখে। হাসিটা যেন এখন খুব ক’ষ্টদায়ক হয়ে পরেছে তাঁর কাছে। ভিতর থেকে আসতে চাইছে একরাশ দীর্ঘ’শ্বাস। তবুও হাসি-হাসি মুখ করে সিরাতের সামনে হাঁ’টু গেঁ’ড়ে বসে পরলো তোহা।
—কেমন আছিস সিরাত?
তোহার ফোলা-ফোলা চোখদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো সিরাত। একদম ধীর কন্ঠে বললো।
— ভালো আছি। তুই কেমন আছিস? খেয়েছিস?
কান্নার মাঝেও ঠোঁটের কোনে হাসি চলে আসলো তোহার ৷ ধরা গলায় বললো।
—এখনও আমার কথা ভাবছিস তুই? তোর কি কোনো আ’ক্ষেপ নেই সিরাত?
—নাতো! আক্ষে’প হতে হয় তাঁর প্রতি,যে আমাকে তাঁর হৃদয় গহীনে ঠাই দিবে।আমাকে মূল্য দিবে কিন্তু আমি তাঁকে পাইনি এমন। কিন্তু যে কিনা আমার নামটা শুনলেও ক্রো’ধে জিনিসপত্র ভে’ঙে গু’ড়িয়ে ফেলে,তাঁর কাছে আর আমি কতটা মূল্যবান হব? যে তাঁকে না পাওয়ার জন্য আ’ক্ষেপ করব? তবে হ্যা, ভালোবাসি তাঁকে। আর সারাজীবন হৃদয় গহীনে ঠাঁই দিয়ে রাখব।
সিরাতের শুকনো হাসির রেশ যেন ঠিক মেনে নিতে পারছে না তোহা। কান্না পাচ্ছে প্রচুর। তাঁর সামনেই তাঁর বেস্ট ফ্রেন্ড তিলে-তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে,আর সে কিছুই করতে পারছে না। চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলে নার্সটা ইনজেকশনটা দিয়ে দিলে ধীরেধীরে চোখ নিভু-নিভু হয়ে এলো সিরাতের। একপ্রকার ভাবে পুরোটা বন্ধ হয়ে গেলে দীর্ঘ’শ্বাস ছারলো তোহা। জুবায়ের রিপোর্টের ফাইলটা হাতে নিয়ে তোহাকে জানিয়ে হসপিটাল থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। আজকে তাঁকে যে করেই হোক এই ফাইলটা সাফিনের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। নাহলে স্যার আর ম্যামের ভু’ল বোঝাবোঝি কখনো শেষ হবে না। কথাগুলো ভাবতে-ভাবতে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টর্ট দিল জুবায়ের।
.
রাহেলা বেগম আর সকিনার মৃ’ত্যুটা যেন পুরো শহরে হৈরৈ করে ছড়িয়ে পরেছে। মস্তফা সাহেব কোনো মতে জানাজার ব্যাবস্থা করে সবটা সামলে ঘেমে-নেয়ে বিকেলের দিকে শাহনেওয়াজ ভিলায় ফিরেছেন।
বাড়িটা কেমন ম’রা মানুষের ঢি’বার মতো হয়ে গেছে। না আছে কারো কথা, না আছে কোনো সজীবতা। শুধু বাড়ি ভরে লোকজন তাঁদের গুনগুন স্বরে কান্নার গান গেয়ে যাচ্ছেন। থ’ম’থ’মে চেহারা নিয়ে উপরের দিকে উঠতে নিতে কিছু কাগজপত্র হাতে জুবায়েরকে সাফিনের রুমের দিকে যেতে দেখে মাঝপথে বাঁ’ধ সেধে দাঁড়ালেন তিনি। গম্ভীর কণ্ঠে জুবায়েরের উদ্দেশ্যে ডাকলেন।
—জুবায়ের?
মোস্তফা সাহেবের থ’ম>থ’মে কন্ঠের রেশ শুনে ভয়ে গাঁ’ট হয়ে দাঁড়িয়ে গেল জুবায়ের। সারাটাদিন সাফিনের রুমের চাবি না থাকায় কাগজগুলো সম্পর্কে কোনো কিছুই জানাতে পারেনি সে। এখন মাএ হেলাল বাহির থেকে ভিরেছে পর যেতে নিতেই বিপ’ত্তি এসে যেন হাজির। কয়েকটা ঢোক গি’লে পিছু ফিরে তাকালে মোস্তফা সাহেব ধীর পায়ে তাঁর দিকে এগিয়ে আসলেন। তিরিক্ষি চোখদ্বয় দিয়ে একনজর হাতে থাকা কাগজগুলোর দিকে পরখ করে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন।
—কোথায় যাচ্ছো তুমি?
— না মানে, বড় সাহেব স্যারের রুমে যাচ্ছিলাম ইম্পর্ট্যান্ট কিছু কাজ ছিল আরকি।।
—হাতের ফাইলগুলো দেওতো, দেখি? কথাটা বলেই জুবায়েরের হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে গেলে জুবায়ের ভয়ে খানিকটা চু’পসে গেল যেন।ধীর গলায় বললো শুধু।
—তেমন কিছু আহামরি ব্যাপার নয় স্যার। আপনি আমাকে দিন ফাইলগুলো?
মোস্তফা সাহেব ধীর চাহনিতে ফাইলগুলো পরখ করে নিয়ে শীতল কণ্ঠে বললো।
— সিরাতকে চিকিৎসার ব্যাবস্থা করো। ওর সব দ্বায়িত্ব আজ থেকে আমি নিলাম। আড়াল হয়ে ওর সব দ্বায়িত্ব বহন আমি করব। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু এসবে আর সাফিনকে জড়াতে চাইছি না আমি। আমার আব্বাকে হাড়িয়েছি এটাই অনেক কিছু। এখন আর নিজের ছেলেকে হাড়াতে চাইছি না। জুবায়ের মাথা নিচু করে রাখলে মোস্তফা সাহেব যেতে নিয়েও আবারও পিছু ঘুরে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললেন।
— তোমার একটা ভাগ্নি আছে না জুবায়ের? কি যেন নাম? ওহ হ্যা অর্পা।ওর দিব্যি রইলো তোমাকে,এই ফাইলের কোনো কাগজ যেন সাফিনের হাতে না পৌঁছোয়। আজ রাতের ফ্লাইটে সাফিন বিদেশে পারি জমাচ্ছে। আমি চাইছি না সেখানে কোনো রকম বাঁ’ধা পরুক বা সাফিন এই খু’নের সাথে জড়িয়ে যাক আর অকালে আমাকে আর তোমাদের ম্যামকে একলা করে ফেলুক। বাবার মন, বুঝোইতো। সারাক্ষণ ভ’য়ে থাকছি এখন। আব্বা খু’ন হয়ে গেলেন, পরপর দাদী আর সকিনা। যাইহোক যেটা বলছি মাথায় রেখো। কথাগুলো বলে মোস্তফা সাহেব নিজের রুমে চলে গেলে জুবায়ের সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। চোখ বেয়ে পরলো শুধু একফোঁটা নোনাজল।
.
সারাদিনের বৃষ্টি একএ হয়ে ভরসন্ধ্যা বেলা নামল এক আকাশ পরিমান বৃষ্টির রেশ। আমেনা বেগম অশ্রুসিক্ত নয়নে ছেলের জামাকাপড় গুছিয়ে ট্রলিতে রাখতে বাধ্য হলেন স্বামীর করা রকনের আদেশে। বারান্দা এড়িয়ে জানালার পর্দাগুলো দক্ষিণা উত্রা হাওয়ায় উড়িয়ে ভিতরে ভেসে আসছে প্রগর গতিতে হিমেল হাওয়া। ক্লান্ত মুখশ্রী নিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াল সাফিন।বৃষ্টির শীতল স্পর্শে চোখদুটো কেমন বুঁজে আসতে চাইছে তাঁর। বন্ধ চোখদ্বয়ের আড়ালে হৃদয় গহীনে ভেসে উঠছে শুধু সিরাতের হাস্যজ্বল মুখদ্বয়। হৃদয়টা কেমন ক্ষ’ত বিক্ষ’ত করে দিচ্ছে বারংবার। একরাশ বিষাদে ঘেড়া মন নিয়ে চোখের কোন ভিজে উঠলো অশ্রুতে।
— তোমার আমাতে প্রগরভাবে মিশে যাওয়াতে, আজ এই শক্তপো’ক্ত হৃদয়টাও কেমন অশ্রুতে ভিজে উঠেছে সিরাত?আমাদের এই অগোছালো গল্পটা কি ভিন্ন হতে পারত না সিরাত?বাহিরের গম্ভীরতা দেখিয়ে হয়তো সবাইকে বোঝানো যায় আমি ভালো আছি, কিন্তু হৃদয়ের ব্যাকুলতা বোঝানো দায় হয়ে পরেছে যে আজ।সে খবর হয়তো কখনো জানতেই পারবে না তুমি।কথাগুলো মনের কোনে উঁকি দিতে থাকলে দীর্ঘশ্বা’স ছারলো সাফিন। গোটা একটাদিন সিরাতকে না দেখেই হৃদয়টা কেমন ছট’ফট করছে তাঁর। তাহলে আজ বিদেশে পারি জমালে কিভাবে থাকবে সে সিরাত বীহিন একাকী?
— স্যার আপনার ব্যাগগুলো গাড়িতে তুলে দেই?
মোহনের ধীর কন্ঠে হুঁ’শ ফিরল যেন সাফিনের। খানিকটা চুপ থেকে গেলে আমেনা বেগম কান্নারত কন্ঠে বললেন।
— তোর বাপ আর তুই আমার জীবনটা পুরো টেনশনের মধ্যেই ঘিরে রেখেছিস। হুট করেই আমার গোছালো সংসার কেমন এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। আর এখন তোকেও তোর বাপ জীবনে না কালে না আজ বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। আম্মাজানের কি দো’ষ? ওর সাথে কেন তুই এমন করলি সাফিন?
আমেনা বেগমের কন্ঠে উৎকন্ঠিত হলো সাফিন। কোনো উত্তর দিতে পারলো না যেন সে। ধীর চোখে বুকে পাথ’র চা’পা দিয়ে মোহনকে সায় দিলে জামাকাপড়ের ট্রলিটা মোহন নিয়ে গেলে ফ্রেশ হতে চলে গেল সাফিন। আমেনা বেগম রাগ নিয়ে কান্নারত কন্ঠে বললেন।
— হ তোরাতো আমাকে মানুষের মধ্যে গোনায়ই ধরিস না। আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজনই মনে করিস না।
আমেনা বেগম কিছুক্ষণ চো’ট’পা’ট করে চলে গেলে ঝর্ণাটা ছেড়ে দিয়ে দেয়ালের সাথে নিজের হাতে কয়েকটা ঘু’ষি মা’র’লো সাফিন।
— আমার হৃদয় জুড়ে তুমি না চাইতেও জড়িয়ে গেছো সিরাত। এই মোহের কালিমা হয়তো আমি চাইলেও কখনো কাঁ’টিয়ে নিতে পারব না। পরনে থাকা ধূসর রাঙা শার্টটা খুলে নিচে ফেলে দিলে সমস্ত শরীর জুড়ে ঝর্ণার পানির উষ্ণ’তা ছেঁ’য়ে পরতে থাকলো যেন সাফিনের।
.
শহরের বৃষ্টিতে ঝরে পরা বি’ষন্ন মেঘের মতো সাফিনের হৃদয়ের কোনেও যেন মেঘ জমে আছে। বাড়ির সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো সাফিন। মোস্তফা সাহেব আড়ালে বুকের ক’ষ্টটা লু’কিয়ে রেখে হাসি মুখে সাফিনকে বিদায় দিলে জুবায়ের গাড়িতে বসে পরলে মোস্তফা সাহেব তাঁর দিকে কড়া ভাবে তাকাতে জুবায়ের চেখের পানি মুখে তাঁকে আস্থা জুগিয়ে গাড়িতে উঠে বসলে বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজটা খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করতে পারছে সাফিন। চেহারায় একবিন্দু হাসির রেশও পর্যন্ত চেষ্টা করেও আনতে পারছে না যেন। জুবায়ের বারংবার চোখের পানি মুছেও আবার এসে জমা হলে শেষে হাল ছেড়ে দিল সে। সাফিন তাঁর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো।
—কাঁদছো জুবায়ের?
—এ্যা, না মানে স্যার আপনি চলে যাবেন তো তাঁরজন্য।
মৃদু হেসে উঠলো সাফিন।
—আমি যাচ্ছি শুধু আমার ছায়ায়, হৃদয়টাতো এখানেই রেখে যাচ্ছি জুবায়ের। কথাগুলো মনে-মনে বলতে থাকলে কান্না এসে জড়ো হলো সাফিনের চোখের কোনে।
“গাড়িটা এসে এয়ারপোর্টে দাঁড়াতে সাফিন৷ নেমে পরলে জুবায়েরও গাড়ি থেকে ছাতা হাতে নেমে পরলো।” ব্যাগগুলো গার্ডরা নিয়ে ভিতরে চলে গেলে ধীর চাহনিতে একটিবার পেছনফিরে তাকাল সাফিন। কিছুক্ষণ পরই বিমান ছেড়ে দিবে মাইকে জানিয়ে দিলে যাএীরা পুরো বৃষ্টির মাঝে একপ্রকার ভাবে দৌঁড়েই ভিতরে যেতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে যেন। তাদের দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে অন্ধকারের আড়াল হয়ে ল্যামপোস্টের হলদেটে আলোয় বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সহিত পুরো জায়গাটাতে এক পলক সাই দিয়ে জুবায়েরের দিকে তাকালো সাফিন। জুবায়ের মাথা নিচু করে আছে যেন। সাফিন তাঁর দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—একটা অনুরোধ রাখবে জুবায়ের?
সাফিনের ভেজা কন্ঠের রেশ জুবায়েরের কানের লতিতে প্রবেশ করে গেলে সাফিনের কথায় বাঁ’ধ সেধে সাফিনের হাত ধরে কান্নারত কন্ঠে বললো।
— আপনি আদেশ করুন স্যার। অনুরোধ বলে ল’জ্জা দিবেন না প্লিজ।
মৃদু হাসলো সাফিন। ধরা গলায় বললো।
—সিরাতের দিকে একটু নজর রেখো। কথাটা বলেই চোখের পানি আড়াল করে সাফিন এয়ারপোর্টের ভিতরে চলে গেলে জুবায়েরের চোখদুটি ভিজে উঠলো যেন। কান্নায় ভে’ঙে পরলো যেন সে।
— আমি না পারলাম আপনাকে সত্যিটা বলতে আর না পারলাম ম্যামকে এই জীবন থেকে সা’পমুক্ত করতে। আমি সত্যিই খুব অভাগা স্যার। আসল কার্লপিট হয়তো এটাই চায় আপনাদের বিচ্ছেদ……

চলবে…….

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-২১

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ২১

—স্যার আপনার কোথাও ভু’ল হচ্ছে নাতো? না মানে ম্যাম কেন এমন করতে যাবেন? পুরো ব্যাপারটা একবার যাচাই করে নিলে…
জুবায়েরের ধীর কন্ঠের রেশ কানের লতিতে প্রবেশ করে গেলে পুরো কথাটা শেষ হওয়ার আগেই সাফিনের বি’ষি’য়ে যাওয়া মন কেমন আরও বি’ষি’য়ে উঠলো ক্রো’ধে। রাগে মাথার তার ছিঁ’ড়ে যাচ্ছে যেন তাঁর। চোখ গুলো ক্রমশ র’ক্তিম বর্ন ধারন করতে ব্যাস্ত। জুবায়েরের দিকে তাকিয়ে কন্ঠে একরাশ হীনতা প্রকাশ করে বাঁ’ধ সেধে বললো।
— আজ হয়ে যাক একটা অঘ’টন। কালো রাঙা আসমানে ঘনিয়ে আশা এই ঝরের সহিত ভে’ঙে যাক সম্পর্কের এই গহীনতা। আমার জীবনে ইয়াংম্যানই সবকিছু। এভরিথিং। অন্য কারো জন্য আমার কি’ঞ্চিৎ পরিমান মাথাব্য’থা পর্যন্ত নেই জুবায়ের।
সাফিনের থ’ম>থ’মে রাগান্বিত মুখশ্রী থেকে উপছে পরছে যেন একরাশ ক্রো’ধে। থেমে-থেমে আকাশ ছেঁয়ে গ’র্জে ওঠাটাও সর্বাঙ্গ কাঁ’পি’য়ে তুলতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে আজ। সাফিনের দিকে তাঁকাতেও পর্যন্ত ভয়ে শিউরে উঠছে জুবায়ের।
কি’ঞ্চিৎ পরিমান গাঢ় ভাবে নিশ্বাস টে’নে দুইহাত দিয়ে নিজের ঘেমে উঠা মুখশ্রীতে হা’লকা ভাবে চে’পে ধরাতে রাগে শরীরের প্রতিটা শিরা উপশিরা টনটন করছে যেন সাফিনের। সাফিনের এভাবে চুপ হয়ে যাওয়াটা যেন ঝরের আগাম পূর্বাভাস জানান দিচ্ছে জুবায়েরের বিচক্ষণ মস্তি’ষ্কে। কিছু বলতে যাওয়ার আগেই সাফিন হুট করে উঠে দাঁড়ালে জানালা ভেদ করে হীমেল স্রোতে শরীরে স্পর্শ করে গেলে শান্ত স্বরে দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে বললো।
— জুবায়ের?
—জ্বী স্যার?
— রাজবাড়ির পেছনটাতে কব’র খো’রা শুরু করে দেও। আজ নাহয় সিরাত থাকবে নাহয় এই শাহনেওয়াজ সাফিন। ঘোর প’শ্চাতে হবে তাঁকে। বড় রকমের ভুল করে ফেলেছে সে, বড় রকমের। আমার ভালোবাসাটা যেমন প্রগর, প্রতি’শোধের আগু’নটাও তেমনি তী’ব্র।
সাফিনের কথা শেষ হলে রুহু কেঁ’পে উঠলো জুবায়েরের ভয়ে। কিছু বলতে যাওয়ার আগেই হনহন করে সাফিন রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে তাঁর চলে যাওয়ার দিকে ভ্যা’বলা শহিন ভাবে তাকিয়ে রইলো জুবায়ের। হেলাল কয়েকটা ঢোক গি’লে নিয়ে রয়েসয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— এটা ঠিক হচ্ছে না। স্যার সামান্য একটা সিসিটিভি ফুটেজর উপর ডিপেন্ট করে ম্যামকে ভু’ল বুঝছেন নাতো আবার? আগেতো একশো বার খোঁজ নিয়ে বুঝেশুনে কাজ করতেন। আর আজ!
জুবায়েরের ঘেমে ওঠা চোখমুখ যেন কো’টর থেকে বেড়িয়ে আশার উপদ্রব। টি টেবিলের উপর থেকে পানিভর্তি গ্লাসটা হাতে নিয়ে একটানে ঢকঢক করে শেষ করলো পানিটুকু। পরপর নিশ্বাস ছেড়ে ধরা গলায় বললো।
— সময় বড়ই অদ্ভুত এক বস্তু বুঝলে হেলাল? আজ স্যারও নিজের নানুর মৃ’ত্যুতে তাঁর এত দিনের শক্তপোক্ত করে বেঁ’ধে রাখা সম্পর্কটাও নড়বড়ে করতে চলেছেন। নানুজানের মৃ’ত্যুতে বি’ব্ভল হয়ে পরেছেন তিনি। তপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো হেলাল।
.
আষাঢ়ের তী’ব্রতাময় সো-সো শব্দে ছুটে চলা ঝড়বৃষ্টি মাথায় করে শাহনেওয়াজ ভিলার সামনে গাড়ি এসে থামলে সিকিউরিটি গার্ডরা দরজা খুলে দিলে মোস্তফা সাহেব আর দাঁড়ালেন না, বি’ষি’য়ে যাওয়া মুখবিব্ভর নিয়ে হনহন করে নিজের কামরায় চলে গেলেন তিনি।সরোয়ার সাহেবও তাঁর পাঁ’ছ ধরে চলে গেলেন। আমেনা বেগমের পা যেন চলতে চাইছে না আজ। ক্লান্ত মুখশ্রীতে একরাশ দীর্ঘশ্বাস টেনে গাড়ি থেকে নেমে পরলো সিরাতও। রাহেলা বেগম ঠায় বসে থাকলে সিরাত মৃদু স্বরে তাঁর উদ্দেশ্যে বললো।
— বুড়ো আম্মা, ভিতরে যাবেন না?
রাহেলা বেগমের কানের লতিতে সিরাতের করা প্রশ্নটা ছুটে গেলে মৃদু নড়েচড়ে উঠলেন তিনি। আমেনা বেগম দাঁড়িয়ে গিয়ে পিছুঘুরে তাঁদের দিকে ধীর চাহনিতে তাকালে সিরাত তাঁকে আস্থা দিয়ে বললো।
—আমি নিয়ে আসছি আম্মা। আপনি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।
আমেনা বেগম জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে চোখের পানি লুকিয়ে চলে গেলে রাহেলা বেগমের হাত ধরে ধীরেসুস্থে গাড়ি থেকে নামালো তাঁকে। একদিনেই ছেলের শোকে কেমন মি’য়িয়ে গেছেন তিনি। কালো রাঙা মোটা ফ্রেমের চশমাটা নাকের ডগায় উঠিয়ে ঝাঁ’পসা চোখে সিরাতের দিকে তাকিয়ে ধ’রা গলায় বললেন।
—কে’ডা তুই, সকিনা?
রাহেলা বেগমের ধ’রে যাওয়া কন্ঠস্বর শুনে উৎকন্ঠিত হলো যেন সিরাত। কান্নাটুকু আড়াল করে মৃদুস্বরে বললো।
—বুড়ো আম্মা আমি সিরাত।
—ওহ তুই।
— হ্যা আপনি আমার সাথে ভিতরে চলুন।
—আইচ্ছা ল দেহি।
রাহেলা বেগম নেমে পরলে সিরাত তাঁকে সাবধানে নিয়ে যেতে থাকলে গাড়িতে থাকা জিনিসপত্র নিয়ে সকিনাও গাড়ি থেকে নেমে পরে ছুটলো তাঁদের পিছুপিছু।
.
শাহনেওয়াজ ভিলা জুড়ে যেন আজ নিস্তব্ধ প্রহর ঠেকিয়ে নির্জনমূর্তি ধারন করতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে। আমেনা বেগম ফ্রেশ হয়ে সকিনার সাথে কাজে হাত লাগাতে তি’ব্র অনিহা থাকা সর্তেও রান্নাঘরে ছুটলেন। নয়তো আজ কারও পেটে ভাত পরবে না। মেডদের রান্না কারো মুখে যায় না এ বাড়িতে। মোস্তফা সাহেব সেই যে নিজের রুমে গিয়ে দাঁড় বন্ধ করেছেন আর এমুখো হননি। সিরাত রাহেলা বেগমকে তাঁর রুমে নিয়ে আসলে অন্ধকার রুমটাতে শ্রাবন সন্ধ্যাময় পরিবেশে জানালা ভেদ করে আকাশ ছেঁয়ে ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকালে তার নিভু-নিভু করে থেমে গিয়ে আবার জ্ব’লে ওঠাটা যেন বেশ অদ্ভুত লাগলো সিরাতের। লাইটের সুইচটা খুঁজে লাইট অন করতে গেলে রাহেলা বেগম তেঁতে উঠলেন যেন। তী’ব্রভাবে বাঁ’ধ সেধে আনমনা কন্ঠে বললেন।
—থাউক লাইট-ফাইট আর জ্বা’লাইন্না লাগবে না। রাহেলা বেগমের কথায় আর সেদিকে এগোলো না সিরাত। মনটা কেমন শ্রাবন মেঘে ছেঁয়ে আছে আজ তাঁর। কখন দেখা গেল টুপ করে মেঘের বাঁ’ধ ছুটে গিয়ে ঝমঝম করে ঝরে পরবে তাঁর চোখের কোনে। খানিক নিশ্বাস টে’নে মৃদুস্বরে রাহেলা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো।
—বুড়ো আম্মা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি আপনি একটু বসুন আমি এসে পা টি’পে দেব আনে আপনার। কথাটা বলে পিছু ফিরে যেতে নিতে রাহেলা বেগম তাঁর বিছানায় পা উঠিয়ে বসে পরে গলা খাঁ’কারি দিয়ে বললেন।
— ওই ছেমরি জানালাডা বন্ধ কইরা যা তাইলে। বাহিরের বর্ষনপাত ভিতরে আইতাছেনি। আইজগো আর তোর পা টেঁ’পা লাগব নানে।
রাহেলা বেগমের কন্ঠের রেশ কানের কাছে এসে পৌঁছাতে থ’মকে দাঁড়াল সিরাত। পিছু ফিরে মৃদু হাসার চেষ্টা করে জানালার কাছে এগিয়ে যেতে বাহিরের ঝরো হাওয়াময় ঝিরিঝিরি বৃষ্টির রেশ চোখেমুখে এসে উপসে পরছে যেন নিমিষেই। জানালার গ্রিলের সাথে হাত ঠেকিয়ে দিলে অদ্ভুত এক অনুভুতিতে ঝেঁ’কে বসেছে যেন সিরাতকে। বুকের ভেতরকার তো’লপারের কোনো ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছে না সে। অস’য্য যন্ত্র’ণায় বুকের ভিতরে জ্ব’লেপু’ড়ে ছাই হতে ব্যাস্ত যেন আজ। হিমেল হাওয়ায় সমস্ত শরীরে কাঁ’পুনি ধরিয়ে দিলেও কপালের উপরে মৃদু ঘামের রেশ দেখা গেলে পরপর কয়েকটা ঢোক গি’লে নিল সিরাত। চোখদ্বয় বন্ধ করে নিল দ্রুত।
— এই য’ন্ত্রণার সূএ হয়তো আমি জানি সাফিন। আপনি কি সত্যিই আমাকে ছুঁ’ড়ে ফেলে দিবেন সাফিন? এক আকাশ ঝুম বৃষ্টি নিয়ে জমে রয়েছে সিরাতের অভিমানের পেয়ালা। এর কি কোনো মানে হয় সাফিন? আজকে মনের কথাটা না বলতে পারলে হয়তো সত্যিই আপনি হাঁড়িয়ে….
— ওই ছেমরি, পুরা ঘর ভিইজ্জা যাওয়ার পর জানলা আঁ’টকাবি তুই?
মনে-মনে বলা কথাটুকু পুরো শেষ হওয়ার আগেই রাহেলা বেগমের কন্ঠ কানের কাছে এসে পৌঁছাতে চটজলদি চোখ খুলল সিরাত। দ্রুত জানালাটা আঁ’ট’কাতে-আঁ’টকাতে বললো।
— না-না আঁ’টকাচ্ছি বুড়ো আম্মা।
—হ তাত্তারি বিদায় হ রুমেরতোন।
হ্যা সূচক মাথা নাড়াল সিরাত। যাওয়ার সময় বাহির থেকে রাহেলা বেগমের রুমের দরজাটা মৃদু টে’নে দিয়ে বসার ঘরে পা পরলে আমেনা বেগমকে রান্না ঘরে দেখলে তাঁর দিকে এগিয়ে গিয়ে আমেনা বেগমের কাঁধে হাত রাখলে সিরাতের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন আমেনা বেগম। বললেন।
— যা আম্মাজান ফ্রেশ হয়ে খেতে বসে পর আমি পাঁচ মিনিটে খাবার রেডি করছি।
—আমি করে দিচ্ছি আপনি চলুন-চলুন সোফায় বসবেন।কথাগুলো বলতে-বলতে সিরাত আমেনা বেগমকে এক রকম টে’নে নিয়েই সোফায় বসিয়ে দিলে আমেনা বেগম বাঁ’ধ সেধে বললেন।
—আহা আম্মাজান তুই বোস এখানে,তোর আব্বাজানের মন মানসিকতা ভালো নাই এমনেতেই। সাফিন রুমে আছে মনে হয় যা উপরে যা সারাদিন অনেক ধ’কল গেছে তোর উপর দিয়েও।
—কিন্তু আম্মা,
—কোনো কিন্তু নয়, এখনই উপরে যাবি তুই।
— আপাজান খাবার প্রায় হইয়া গ্যাছে। ভাবিজান আপনার দুধটা খাইয়া নেন। রান্না ঘর থেকে সকিনা সকিনা দুধ হাতে এগিয়ে আসলে সিরাত না করতে যেতে আমেনা বেগম মৃদু রাগ নিয়েই বললেন।
— আম্মাজান বাড়িতে এখন কারো মনের ঠিক নেই। এখন না খেলে অসু’স্থ হয়ে পরলে তখন কি হবে?
আমেনা বেগমের কথা আর ফেলতে পারলো না সিরাত। একঢোকে দুধটুকু শেষ করে আঁচল দিয়ে মুখ মুছে বললো।
—এবার খুশিতো?
হাসলেন আমেনা বেগম। বললেন।
—দাঁড়া সাফিন আর তোর খাবারটা উপরে নিয়ে যা আজ। মনে হয় না আজ কেউ এমুখো হবে বলে।
ঝিম মেরে গেল সিরাত। মুখের হাসিটা কেমন মিলিয়ে গেল নিমিষেই। আমেনা বেগম আঁচলে চোখ মুছে রান্নাঘরে চলে গেলে ফাঁকা টেবিলটার দিকে তাকিয়ে রইলো সিরাত। আজাদ সাহেবের অনুপস্থিতি যেন হাহাকার করে যাচ্ছে আজ। একদিন আগেও কত হৈ হুল্লোড় হত ডাইনিংএ। আর আজ শুধু শুন্যতাময় টেবিলটা ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই।
দীর্ঘ’শ্বাস ছারল সিরাত। সকিনা খাবারের ট্রেটা সিরাতের দিকে এগিয়ে দিলে ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল সিরাত।
আমেনা বেগম আরেকটা ট্রে এগিয়ে দিতে সকিনা হেসে বললো।
—খালাম্মার ঘরে যাইতাম নি প্লেট নিয়া?
—হুম সেখানেই যাও এখানে সাফিনের চাচ্চুর প্লেটও রাখছি নিয়ে যেও জুবায়ের আর হেলালরা স্টোর রুমে থাকছে নাকি আজকে, ওদেরকে ডেকে খাবার দিয়ে দিও। আর তোমরা সবাই সময় করে খেয়ে নিও কিন্তু, আমি যাই দেখি, তোমাদের মন্ত্রী সাহেব দরজা খুলেন কিনা?
সকিনা মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে খাবারের প্লেটটা নিয়ে রাহেলা বেগমের রুমের দিক হাঁটা ধরলে আমেনা বেগম দীর্ঘ নিশ্বাস টে’নে তিনিও মোস্তফা সাহেবের উদ্দেশ্যে খাবার হাতে ছুটলেন।
.
সাফিনের রুমের কাছাকাছি আসতে লাইটারটা কেমন নিভু-নিভু হয়ে আসলে ধীর চাহনিতে সেদিকে তাকাল সিরাত। বুকের ভেতরকার উথাল-পাতাল ঢেউটা যেন প্রব’ল বেগে ছুটে চলেছে তাঁর।
—শেষ বারের মতোও আপনি নানুকে দেখলেন না সাফিন? আপনি এতটা পা’ষান হয়েও কি আমার হৃদয়ের ব্যা’কুলতা বুঝতে পারবেন? হয়তো আশা করাও বোকামি। কিন্তু আমিতো না চাইতেও আপনার হৃদয়হীনা মন গহীনের প্রেমে পরে গেছি। এটা হয়তো নিজ ইচ্ছেতে ঢেউয়ের সাগরে ঝাঁ’পিয়ে পরার সমান। যেখানে আমি সাঁতার জানিনা। কথাগুলো হৃদয়ের মাঝে তো’লপা’র করে গেলে নিশ্বাশ ছাড়লো সিরাত। অজানা ভয়ে পা দুটো কেমন সামনের দিকে অগ্রসর হতে চাইছে না,যেখানে সিরাতের ঠিকানাই সাফিনকে ঘিরে।
জোড় পূর্বক বড়ো-বড়ো পা টে’নে দরজার সামনে এসে দাঁড়াতে দরজা মৃদু চাঁ’পানো দেখে খানিকটা অবাক হলো সিরাত। একহাতে ট্রেটা নিয়ে অন্য হাতে দরজায় হাত লাগাতেই লাইটারটা নিভু-নিভু করতে-করতে চিরতরে বিদায় নিলে ভ’রকে গেল সিরাত। কানের কাছে দিগন্তের গ’র্জে ওঠা ব’জ্রপাতের ঝ’লসা’নি ছাড়া কিছুই পৌঁছাচ্ছে না যেন সিরাতের। ভ্রুযুগল কুঁ’চকে ফেলে ফিতরে পা দেওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে হ্যাঁ’চকা টা’নে হাতে থাকা ট্রেটা ভে’ঙে গু’ড়িয়ে গেলে খাবারগুলো ছড়িয়ে পরলো ফ্লোরে। হুট করেই আক্র’মণে হত’বি’হ্বল হলো যেন সিরাত। দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেলে কারো নিশ্বাসের স্পর্শ চোখেমুখে উপচে পরতে থাকলে চেখের পাপড়িগুলো কি’ঞ্চিৎ কেঁ’পে উঠলো সিরাতের। নাকের কাছে এসে বা’রি খেয়ে গেল সিগারেট সহ আরও কিছু উদ্ভট গন্ধ। অন্ধকার রুমটাতে কারো হাতে আধখাওয়া সিগারেটের জ্ব’লন্ত স্ফু’লিঙ্গ ছাড়া কিছুই চোখে পরছে না যেন। মুহুর্ত খানিক বুঝতে সময় লাগেনি সিরাতের যে,এটা আর কেউ না সয়ং সাফিন। কিন্তু এই মুহুর্তে ল’জ্জা, ভয়, কোনোটাই যেন উপলব্ধি করতে পারছে না সিরাত। বুক চি’রে আসছে শুধু আত’ঙ্ক। খানিক নিশ্বাস টে’নে কাঁ’পা>কাঁ’পা কন্ঠে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই পেটের কাছে ধা’ড়া’লো কিছু অনুভব করে চম’কে উঠলো সিরাত।
তী’ব্র ব্যা’থায় চেখের কোন বেয়ে এতক্ষণের ঝিমিয়ে থাকা বর্ষনপাতের ছুটি মেললে ঝরঝর করে পরতে থাকলে বুক ভিজে উঠলো সিরাতের।
সিরাতের হাতদুটো দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে সাফিনের ঠোঁটের স্পর্শ সিরাতের ঘাড়ের কাছে স্পর্শ করে গেলে প্রগর কাঁ’ম’রে আর্ত’নাদ করে উঠলো সিরাত।
—আহ্,সাফিন লাগছে আমার। কি করছেন আপনি? আপনি এখন নিজের মধ্যে নেই ছাড়ুন আমাকে!কথাটা বলে সাফিনকে নিজ থেকে সরানোর বৃথা চেষ্টা করতে থাকলে গ’র্জে উঠলো যেন সাফিন। সিরাতকে এখন তাঁর কাছে বি’ষের মতো লাগছে যেন। চোখ বন্ধ করতে সিসিটিভি ফুটেজ আর আজাদ সাহেবের হাস্যজ্বল মুখশ্রী ভেসে উঠলে রাগে র’ক্ত উঠে গেল যেন সাফিনের। দাঁতে দাঁত চে’পে ধা’ড়া’লো কন্ঠে বললো।
— তোমার সাথে আমার কোনো শত্রু’তা ছিল না সিরাত। তুমি হয়তো খুব ভালো করেই জানতে এই শাহনেওয়াজ সাফিন ভালোয় ভালো আর খা’রাপে গন্ডির বাহিরে। যে বি’ষ তুমি নিজে ঢেলেছো? সে বি’ষই আজ তোমার জীবনের ইতি ঘটাতে প্রস্তুত।
সাফিনের কথার রেশ কান ঘেঁষে পৌঁছাতে কেঁ’পে উঠলো যেন সিরাত। সাফিনের কথার অর্থ বোঝার সাধ্য হয়তো তাঁর কোনোদিনও হবে না, আজ কেন। লাল রাঙা ওষ্ঠ যুগল মৃদু ফাঁ’ক হয়ে আসলে বারান্দা ভেদ করে হীমেল হাওয়া ভিতরে প্রবেশ করতে সমস্ত শরীরে কাঁ’পুনি ধরিয়ে দিলে পেটের দিকটাতে ভেজা ভাবে শাড়ির আঁচল লে’প্টে পরে থাকলে য’ন্ত্রণায় চোখমুখ খিঁ’চে রাখলো সিরাত। দাঁতে দাঁত চে’পে ব্যা’থাটা হ’জম করার চেষ্টা চালালো শুধু। সাফিনের হাতে থাকা আধ খাওয়া সিগারেটটা সিরাতের মুখোমুখি তাক করাতে ভয়ে দ্রুত কয়েকটা ঢোক গি’লল সিরাত। পিটপিট করে সিগারেটের জ্ব’লন্ত স্ফু’লিঙ্গের দিতে এক পলক তাকিয়ে ধীর চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকালে সিরাতের কান্নারত চোখদ্বয় দেখে দ্রুত চোখ নামিয়ে ফেলল সাফিন।
— আজকে তোমাকে নিজ হাতে খু’ন করার জন্য এসেছি সিরাত। কিন্তু অদ্ভুত, ডু’করে কান্না এসে জমা হচ্ছে আমার এই পাথর হয়ে যাওয়া চোখদুটিতে! এতদিন যখন একের পর এক খু’ন করেছো তুমি,হাত কাঁ’পেনি তোমার? ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে চেয়েছিলাম তোমাকে,আর তুমি র’ক্ত দিয়ে শুরু করলে বিচ্ছেদ? কথাগুলো ভাবতে থাকলে তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ল সাফিন। কষ্ট হচ্ছে তাঁর। বারান্দার জানালাগুলো ঝরো হাওয়ায় খোলা বন্ধ হওয়ায় ঝুপঝাপ আওয়াজ করতে থাকলে নিজের ঠোঁট নিজে কাঁ’ম’রে ধরলো সাফিন। বুক চি’রে বেড়িয়ে আসছে শুধু একরাশ দী’র্ঘশ্বাস।
— নানু আর নেই বলে চিরতরে বিদায় দিতে চাচ্ছেন সাফিন? যাতে মিডিয়ার সামনে আপনার ফেসল’স না হয় যে আপনি আপনার স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়েছেন? আমি তো বেঁ’চে থেকেও ম’রে গেলাম আজ সাফিন। আপনি এতটা ভ’য়ংক’র। হয়তো আজ আমি হৃদয়ের কথাগুলো বলতে চেয়েছিলাম আপনাকে,আর দেখুন,আপনি এক নি’মি’ষে’ই পা’য়ের সাথে পি’ষে দিলেন আমার এক টু’করো সুখের আলো। যেখানে এখন প্রবল বেগে ঝর-তুফানে ছেঁয়ে গেছে। কথাগুলো মনের কোনে উথাল-পাতাল করতে থাকলে সাফিনের চোখেমুখ থ’ম’থ’মে হয়ে গেলে দীর্ঘ নিশ্বাস টে’নে সিরাতের দিকে তাকিয়ে সিরাতের লালরাঙা ঠোঁটের দিকে দৃষ্টি স্থির করে অনেকটা ঝুঁ’কে গেল সিরাতের দিকে। মাথার পিছনটাতে চে’পে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডু’বিয়ে দিলে সাফিনের প্রতিটা স্পর্শ আজকে যেন হিং’স্রতার সহিত সিরাতের শরীরে আ’ঘাত হা’নছে। আগের তুলনায় আজ যেন ভিন্ন সিগারেট, ম’দের টেস্টও উপলব্ধি করতে পারছে সিরাত। পেট গু’লিয়ে উঠছে যেন সিরাতের। সাফিনের হাতের স্পর্শ আঁচল ভেদ করে গেলে বরাবরের মতো আজকেও কেঁ’পে উঠলো সিরাত। শরীরটা যেন দূর্বল হয়ে পরেছে আজ তাঁর। সারাদিনে এক গ্লাস দুধ খেয়েছে শুধু। তাঁর উপর সাফিনের দেওয়া প্রতিটা ট’র’চা’র আজ যেন হৃদয় গহীনে আঘা’ত হেনে চলেছে সিরাতের। দীর্ঘ সময় নিয়ে চুমু খেয়ে ঠোঁটটা আবারও ঘাড়ে এসে ঠেকে গেলে ব্যা’থা জায়গাটা যেন আরও ব্যা’থায় কু’করে উঠলো সিরাতের। সাফিন পকেট থেকে ব’ন্দুকটা বের করে কাঁ’পা>কাঁ’পা হাতে সিরাতের পেটের কাছে আনতে বন্ধ চোখদ্বয় শীতল চাহনিতে খুলে গেলে পেটের দিকে একপলক তাকিয়ে সাফিনের দিকে তাকালে সাফিন পকেট থেকে ম্যাচটা বের করে জ্বা’লিয়ে সিরাতের মুখের সামনে ধরতে সিরাতের গোলাপিরাঙা মুখশ্রী যেন হলদেটে রুপ ধারন করেছে। মৃদু বাতাসে ম্যাচের হলদেটে আগু’নের রেশ নিভু-নিভু হয়ে আসতে চাইছে যেন।
সাফিনের বুকের ভেতরকার ধুকপুক শব্দের রেশ খুব স্পষ্ট ভাবে শুনতে পারছে সিরাত। দুজনের নিশ্বাসের গরম উ’ষ্ণতা দুজনাতে ছেয়ে যেতে থাকলে সাফিনের চোখটা কেমন ফুলে লাল হয়ে আছে যেন। হাতটা কেমন কাঁ’পছে সাফিনের। রাগে হাতটা দেয়ালের সাথে ঘু’ষি মা’রতে হৃদয় কেঁ’পে উঠলো সিরাতের।
— তোমাকে দেখে আমার বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠছে কেন সিরাত বলতে পারো? আমিতো চাই তোমাকে শেষ করে দিতে।
—তো দিচ্ছেন না কেন?
সিরাতের সোজাসাপ্টা উত্তরে তাঁর দিকে ছলছল চাহনিতে তাকালো সাফিন। শীতল কন্ঠে বললো।
— কেন এমন হয়? উত্তর চাইছি আমি?
— বি’ষিয়ে যাওয়া মন নিয়ে একমুঠো আলো খুঁজতে চেয়েছিলাম আমি। বিনিময়ে আপনি আমার প্রা’নটাই নিয়ে নিলেন সাফিন?
সিরাতের কান্নারত কন্ঠে ঢোক গি’লল সাফিন। সিরাতের পেট থেকে ব’ন্দুকটা সরিয়ে নিয়ে পিছু ফিরে তাকিয়ে রাগ মিশ্রিত গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—চলে যাও তুমি। চলে যাও আমার সামনে থেকে। তোমার মুখ অব্দি দেখতে চাইছি না আমি। নানু তো আর নেই,আমাদের সম্পর্কের মোর এখানেই সমাপ্ত করে দেও। তোমার টাকা চাই এখন তাইনা? যার জন্য এতকিছু, এই রং তামাশা আর এক মুহুর্ত নিতে পারছি না আমি। কথাগুলো বলেই আলমারি খুলে টাকা ভর্তি লাগেজটা খুলে সিরাতের পায়ের কাছে ছুঁ’ড়ে দিলে চোখ বন্ধ করে নিল সিরাত। মুখ বুজে সবকিছু স’য্য করে ধীর কন্ঠে বললো।
— অনুমতি ব্যাতিত অন্যের জিনিস চু’রি করাও মহাপা’প সাফিন। আজকে আমার ঝগড়াগুলোও কেমন দ’লা পাকি’য়ে যাচ্ছে জানেন? যাঁর নিশ্বাসের স্পর্শে সর্বাঙ্গ কেঁ’পে উঠতো ল’জ্জায়, আজ তাঁর দেওয়া প্রতিটা হিং’স্রতাও কুন্ঠিত হয়নি। শুধু রয়ে গেল একটা গভীর ক্ষ’ত, যাঁর জন্য দায়ী আমি নিজেই।জানতাম বিদায়ের দাঁড় অনেক নীকটে এসে পৌঁছাছে। কিন্তু আজ আমি হয়েও আমি রয়ে গেলাম না আপনার সাথে। ভালো থাকবেন আপনার এই টাকা,এই অহং’কার,আর এই পা’ষান হৃদয় নিয়ে। যাঁর গহীনতা বোঝার সাধ্য কখনো আমার হয়ে উঠবে না। কথাগুলো বলেই চোখের পানি মুছে ব্যা’থিত হৃদয় নিয়ে এক প্রকার দৌঁড়েই নিচে নামলে অন্ধকার রুমটাতে ফ্লোরে বসে পরলো সাফিন। ক’ষ্ট হচ্ছে তাঁর প্রচুর। চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরতে থাকলে ফ্লোরে পরে থাকা ধা’ড়ালো চাকু’টার দিকে এক পলক তাকাতে সিরাতকে দেওয়া আ’ঘাতটা যেন নিজের হৃদয়ে অনুভব করতে পারছে সে। রাগে চা’কুটা হাতে নিয়ে হাতে কয়েকটা পো’চ দিয়ে দিলে র’ক্তে ভরে উঠলো ফ্লোর। চিৎ’কার করতে থাকলো সে।
—কেন করলে এমন সিরাত? আমাদের সম্পর্কটা তো অন্য রকমও হতে পারতো? যাকে খোঁজার জন্য দিনরাত ছুঁ’টে বেড়িয়েছি, একেরপর এক লা’শের সূএ খুঁজেছি,সেই মানুষটা তুমি জেনেও আজ তোমাকে নিজ হাতে খু’ন করতে যাওয়ায় আমার হাতটা পর্যন্ত কেঁ’পেছে সিরাত! অথচ তোমাকে মা’রার জন্যই ম’রিয়া হয়ে উঠেছিলাম আমি! সাফিনের কান্নার কন্ঠে চিৎ’কারগুলো চার দেয়ালের ভিতরেই আবদ্ধ হয়ে থাকলো যেন।
“সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলে কাউকে চোখে না পরাতে বুকটা কেমন হাহাকার করে উঠলো সিরাতের।” দী’র্ঘশ্বাস ছাড়া কিছুই আসছে না যেন এখন তাঁর। বি’ষন্ন পায়ে দরজা থেকে বেড়িয়ে পরলে আমেনা বেগম হাত ধরে টে’নে ধরলে পিছু ফিরে তাকালো সিরাত।চোখেমুখে বিষ্ম’য় নিয়ে আমেনা বেগম বললেন।
— এই রাতে কোথায় যাচ্ছিস তুই? ভাগ্যিস পানি নিতে নিচে আসছিলাম। সিরাতের মুখ যেন বন্ধ হয়ে গেল ভয়ে। বাড়ির সবাই তাঁদের কনট্রাক্টের কথা জানতে পারলে নিশ্চিত ভে’ঙে পরবেন। গলা শুকিয়ে আসলো সিরাতের। কিছু বলতেও পারছে না যেন সে।
—কিরে আম্মাজান কথা বলিসনা কেন?
সিরাতের কাঁধ ধরে ঝাঁ’কি দিলে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। কিছু বলার আগেই ধীর কন্ঠে উপর থেকে শোনা গেল।
— যেতে দেও ওকে।
সাফিনের কন্ঠস্বর শুনে ছলছল চোখে সিঁড়ির দিকে তাকালে সাফিনের থ’ম’থ’মে চোখমুখ দেখে নিশ্বাস ছাড়লো সিরাত। আমেনা বেগম ভ্রু জাগিয়ে ফেললেন। বললেন।
—মা’র খাবি সাফিন। এমনিতেই বাড়িতে কারো মন-মানসিকতা ঠিক নেই তুই আবার মেয়েটার সাথে এরমধারা ব্যাবহার করছিস কোন সাহসে? নিজের আম্মার দিকে তাকিয়ে শীতল কন্ঠে বললো।
— আম্মা এখন সবাই ঘুমোচ্ছে। আমি চাইনা সবাই জেগে যাক।
—আম্মা আমি আসছি। ভালো থাকবেন আপনারা সবাই।সিরাত যেতে নিতে আমেনা বেগম বাঁ’ধ সেধে বললেন।
—আরে কি শুরু করেছিস তোরা! এই ঝরবৃষ্টির ভিতরে কোথায় যাবে আম্মাজান।একদিন দেখবি তোদের আম্মা পা’গল হয়ে যাবে তোদের এইসব দেখে।
—বলছিতো যেতে দেও ওকে। কোনো বি’ষাক্ত সা’পের আমার হৃদয়ে ঠাই হবে না কোনোদিন।
সাফিনের কা’ঠ>কা’ঠ কন্ঠ শুনে এতক্ষণের মি’য়িয়ে যাওয়া চেহারাটাও রাগে লাল হয়ে উঠলো যেন সিরাতের। আমেনা বেগম বললেন।
—আর একটা বা’জে কথা বললে তোকে আমি সত্যি চ’র বসিয়ে দেব সাফিন। দাঁড়া তোর বাপকে ডাকছি তাহলেই তুই সোজা হয়ে যাবি।
—আম্মা আমার দিব্যি রইলো আপনাকে। আমাকে যেতে দিন। যদি একটুও ভালোবেসে থাকেন তাহলে যেতে দিন আমাকে।
সিরাতের কথা শুনে থ’মকে গেলেন আমেনা বেগম। মুখ থেকে চ-ও বের করতে পারলেন না।
আমেনা বেগমকে শ’ক্ত করে একবার জড়িয়ে ধরলে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে আমেনা বেগমের হাতের সাথে স্পর্শ করে গেলে আমেনা বেগম সাফিনের দিকে অ’সহায় ভাবে তাকালে সাফিন ধীর পায়ে সেখান থেকে চলে গেলে সিরাতও শাহনেওয়াজ ভিলার চৌকাঠ পেড়িয়ে গেলে শ্রাবনের ঝরো বৃষ্টি শরীর স্পর্শ করে গেলে আমেনা বেগমের ধারনা জাগলো রাগ কমে গেলে আবার সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে তাঁদের মধ্যে। দী’র্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি। বললেন।
— যাচ্ছিস যা,বাঁ’ধা দেব না। আমি বাঁ’ধা দেওয়ার কে তাইনা? কিন্তু একটা অনুরোধ তোর কাছে, বাড়ির গাড়িতে যা যেথায় যাওয়ার।
আমেনা বেগমের ধরা কন্ঠের রেশ শুনে কান্নাগুলো ঠেলে আসতে চাইছে যেন সিরাতের।
—মায়ের অনুরোধ কিন্তু?
—অনুরোধ নয়,আদেশ করুন আম্মা।
—তাহলে যাসনা কোথাও।
থ’ম মে’রে গেল সিরাত। ধীর কন্ঠে বললো।
— একটা মোমের পুতুলের ন্যায় বাঁ’ধ দেওয়া গন্ডি পেড়িয়ে দুঃশা’হস দেখেয়েছিলাম আমি। আর আজ সেই মোমটা গ’লে নিঃশ্বেস হয়ে গেছে। তাই আর এ মেরুতে আমার কোনো স্থান নেই। ভিন্ন মেরুর বাসিন্দা হয়ে গেলাম আমিও।
সিরাতের কথার গহীনতা বুঝে উঠতে পারলেন না আমেনা বেগম। মায়ের মন কেমন কাঁ’মর দিয়ে উঠছে শুধু। সিরাতকে পিছু ফিরে ডাকার শাহ’স আর দেখালেন না তিনি। আমেনা বেগমের মান রাখতে গাড়িতে উঠে বসলো সিরাত। পিছুঘুরে একপলক দেখে নিল তাঁর এতদিনের সৃতি বিজরিত সোনার সংসার। যেখানে সে কখনো স্ত্রীর ভূমিকায় ছিলই না। বরং ডিলের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিল চারিপাশ। চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো শুধু সিরাতের। বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সহিত বাতাসের ন্যায় শাহনেওয়াজ ভিলার গেট পেড়িয়ে গেলে আমেনা বেগম আঁচলে চোখ মুছলেন।
—একদিন বুঝবি তোরা দুটিতে, ঠিকই বুঝবি তোদের মায়ের ক’ষ্টটা। আজ নাহয় দিব্যি কেঁ’টে চলে গেলি মেয়ে, পরে যখন বুঝবি তখন আম্মার কথা মনে পরবে তোর। বলে রাখলাম আমি।
.
বৃষ্টির পানি ঠেলেঠুলে গাড়িটা সিরাতদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াতে ঘোর কাঁ’টলো সিরাতের। দরজা খুলে নেমে পড়াতে তুমুল বর্ষনে ভিজে উঠেছে সিরাতের শরীর। কোমরের কাঁ’টা জায়গাটাতে পানির স্পর্শে কেমন জ্ব’লে উঠলো যেন। দ্রুত চোখ বন্ধ করে নিলে গাড়ি থেকে ছাতা হাতে ড্রাইভার এগিয়ে আসলে বাঁ’ধ সাধলো সিরাত।
—কখন নিতে আসব ম্যাম আপনাকে?
ড্রাইভারের কন্ঠ শুনে মনে-মনে অট্টহাসিতে ভে’ঙে পরলো সিরাত। ধীর কন্ঠে বললো।
— বেলা ফুরাবার আগে। যেদিন আকাশ ছেঁয়ে নামবে তুষার বর্ষন। চারিপাশে থাকবে শুধু আর্ত’নাদের করুন উৎকন্ঠা। আর আমি থাকব ওই নীল আসমানে। সেদিন হয়তো আপনাদের স্যার আমাকে বুঝতে পারবেন।
সিরাতের কথার প্যাঁ’চটা ঠিক বোধগম্য হলো না তাঁর। বোকাভাবে দাঁড়িয়ে থাকাতে মৃদু হাসলো সিরাত। বললো।
— আপনি জান। আমার ফেরার হলে আমি নিজ দ্বায়িত্বে ফিরে যাব। কথাটুকু বাড়ির সম্মানের দিকে নজর রেখে বললো সিরাত। লেকটাও ঠিক আছে বলে গাড়ি নিয়ে বৃষ্টির আড়াল হয়ে গেলে সেদিকে তাকিয়ে রইলো শুধু সিরাত। হাত-পা শরীর কেমন অ’বশ হয়ে আসছে তাঁর। ক’ষ্ট হলেও ভেজা শরীরে সামনে এগিয়ে দরজায় করা নাঁড়লে বেশ সময় নিয়ে ঘুম-ঘুম চোখে দরজা খুলল তোহা। হুট করেই সিরাতকে দেখে ঘুম উড়ে গেল যেন তাঁর। খুশিতে ভেজা অবস্থাতেই জড়িয়ে ধরলো তাঁকে।
— আল্লাহ গো, আমি ঠিক দেখছিতো নাকি? আমার জানটা এসেছে। কিন্তু সিরাত এত রাতে তুই বৃষ্টিতে ভিজে আসতে গেলি কেন?
তোহার একেরপর এক পশ্ন শুনে শুকনো হাসি হাসলো সিরাত। মৃদুস্বরে বললো।
—ভিতরে যেতে বলবি না আমাকে?
— আরে এ আবার জিজ্ঞেস করছিস তুই। জলদি আয় তারাতাড়ি।
তোহা সিরাতের দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে তাঁকে ভালোভাবে পরখ করতে চোখ ফোলা- ফোলা দেখে মনের মাঝে কেমন সন্দেহ জাগল তোহার। চটজলদি বলে উঠলো।
—কি হয়েছে রে সিরাত তোর?
—পরে কথা বলছি। আগে ফ্রেশ হয়ে আসি।
সিরাত ফ্রেশ হতে চলে গেলে মনটা কেমন উশখু’শ করতে থাকলো তোহার।
—কি হলো ব্যাপারটা? সিরাতের কোনো প্রব’লেম হয়নিতো আবার ওই বাড়িতে? কথাগুলো মাথার মধ্যে ঘুরপা’ক খেয়ে গেল যেন তোহার।
.
প্র’বল বেগে ঝর্নাটা ছেড়ে দিয়ে পা ঢলে বসে পরলো ফ্লোরে সিরাত। ঝর্নার প্রতিটা শিশিরবিন্দু যেন তাঁর শরীর ছুয়ে স্পর্শ করে যাচ্ছে ক্রমশ। হাটু ভা’জ করে বসে দুইহাত দিয়ে পরনে থাকা শাড়িটা শক্ত হাতে খিঁ’চে ধরলো সিরাত।
এতক্ষণের ডু’করে ওঠা কান্নাগুলো উ’গরে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো যেন সে। শরীরের প্রতিটা বিন্দুতে কেঁ’পে>কেঁ’পে উঠছে যেন।
— বি’ষাদের বি’ষে প্রান হেড়েছে মোর।জানতাম এর কোনো দাঁড় আসবে না, তবুও সে বি’ষাক্ত বি’ষ পান করেছি সাফিন। চেয়েছি একঝুম বৃষ্টি, তুমি দিলে একরাশ হীনতা। একতরফা ভালোবাসা গুলো সত্যি খুব পিঁ’ড়াদায়ক। কখনো জানতেও পারলে তোমাতে ম’ত্ত হয়ে ঝ’লছে গেছে সিরাত।
ডু’করে কেঁদে উঠলো সিরাত। তাঁর রেশ বাহির পর্যন্ত অন্তর্নিহিত হতে তোহা ছুটে গেল দরজার কাছে৷
—এই সিরাত? কি হয়েছে তোর জান? সত্যি করে বলনা আমায়? প্লিজ কাঁদিসনা,কি হয়েছে তোর। সিরাত?
ভেতর থেকে কোনো সারা না পেয়ে বি’চলিত হয়ে পরলো তোহা। টেনশনে মাথা কাজ করতে চাইছে না তাঁর। বিছানার কাছে ছুটে গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে একটা নম্বরে কল লাগালো শুধু।
.
সকাল-সকাল ঘুম মৃদু আলোয় ঘুম ভে’ঙে গেলে বিছানার দিকে সিরাতকে না দেখতে পেয়ে বিচলিত হয়ে পরলো সাফিন। দ্রুত ঘরটাতে সাই লাগিয়ে নিচে যেতে নিলে থ’মকে গেল সে। কালকের ঘটনাগুলো চোখে ভাসতে থাকলে ধীর পায়ে নিজের রুমে ফিরে এলো আবার। মনটা কেমন বি’ষিয়ে আছে তাঁর। হাতের কাঁ’টা জায়গাটাতেও কেমন জ্বল’লছে শুধু। খা’রাপ লাগাগুলো যেন ঝেঁ’কে বসেছে আজ তাঁকে। বারান্দায় এসে দাঁড়াতে মনটা কেমন কফি-কফি করছে। অন্যদিন হলে সিরাতই কাজটা করতো। কিন্তু আজ সকিনাকে ডাকতে হলো সাফিনের। সকিনার কোনো সারাশব্দ না পেলে ফ্রেশ হতে চলে গেল সে। কিছুক্ষণ পর ফোনটা বেজে উঠতে ফ্রেশ হয়ে ফোনটা রিসিভ করে ধীর কন্ঠে বললো।
—হ্যা মোহন বলো? মোহন ভ’রকে যাওয়া কন্ঠে বললো।
— স্যার সর্ব’নাশ হয়ে গেছে। রাজবাড়ীর পিছনে দু-দুটো লা’শ পাওয়া গেছে।
চম’কে উঠলো সাফিন। নিশ্বাস টেনে বললো।
—চেনাজানা নাকি খোঁজ করতে হবে?
থ’ম মে’রে গেল যেন হেলাল। দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে সাহস সঞ্চয় করে ধরা কন্ঠে বললো।
—খুব কাছের লোক স্যার।
সাফিনের মাথাটা কেমন ধরে যেতে চাইছে যেন। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—হেয়ালি না করে সোজাসাপটা উত্তর দেও।
কেঁ’পে উঠলো মোহন। ধীর কন্ঠে বললো।
— সকিনা আর বুড়ো আম্মা….

চলবে…..

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-২০

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা
#২০ পর্ব। (#স্পেশাল_পর্ব_২)

“কেক কেঁ’টে সর্বপ্রথম রাহেলা বেগমকে খায়িয়ে দিয়ে এক-এক করে বাড়ির প্রতিটা সদস্যকে খায়িয়ে দেওয়া হয়ে গেলে আমেনা বেগম চোখ দিয়ে ইশারা করে সাফিনের দিকে দেখিয়ে দিলে হাতটা যেন কেঁ’পে উঠলো সিরাতের। আমেনা বেগম তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকায় নাও করতে পারছে না সিরাত। ধীর পায়ে সাফিনের দিকে এগিয়ে গেলে সাফিনের মুখের সামনে কেকের টুকরোটা ধরাতে সাফিন সিরাতের হাতটা টে’নে ধরে সিরাতকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে গেলে থ’মকে গেল সিরাত। কিছু বলার আগেই সাফিন সিরাতের হাত দিয়ে অল্প করে কেক খেয়ে বাকি এ’টো কেকটুকু সিরাতের গালে লাগিয়ে দিয়ে হাসতে থাকলে বিরক্ত হলো সিরাত। আবার ভালোও লাগছে। সাফিনের সামনে রাগটা দেখিয়ে মনে-মনে খুশিতে গ’দ>গ’দ হয়ে গেল যেন সে। আঁচল দিয়ে কেকটুকু মুছে ফেলে যেতে নিতে পিছুটান অনুভব করে পিছু ফিরে তাকাতে সাফিন সিরাতের আঁচল নিজের হাতের মুঠোয় নিতে-নিতে এক পর্যায়ে সিরাতের খুব কাছে এসে ঠেকে গেলে সাফিনের গরম নিশ্বাস সিরাতের ঘাড়ের কাছে এসে স্পর্শ করে গেলে সাফিনের ঠোঁটের স্পর্শে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। কাঁ’পা>কাঁ’পা কন্ঠে বললো।
—সাফিন প্লিজ… সবাই দেখছে এখানে।
সিরাতের কথা শুনে বাঁকা হাসি হাসলো সাফিন। শীতল হাতের স্পর্শে আঁচল ভেদ করে সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে পাঁ’জাকোলা করে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলে তাঁদেরকে দেখে প্রশান্তির হাসি হাসলেন আমেনা বেগম।
মোস্তফা সাহেব আর আজাদ সাহেবতো সেই তখন থেকে খাওয়াতেই লেগে আছেন যেন। আমেনা বেগম তাঁদের দিকে একপলক পরখ করে নিজেও তাঁর চেনাজানা কয়েকজন মহিলাদের সাথে কথা বলায় লেগে পরলেন।
.
আমেনা বেগমের সাথে দেখা করে তোহা বাড়ির উদ্দেশ্যে যেতে নিতে তাঁর পথ আঁ’টকে দাঁড়ালো জুবায়ের। বাহিরে আকাশ ছেঁয়ে ঝুম বৃষ্টিপাত হচ্ছে দেখে ধীর চাহনিতে তোহার দিকে তাকিয়ে বললো।
— এই বৃষ্টির ভিতরে কোথায় যাচ্ছেন ম্যাম।
—জাহান্না’মের চৌ রাস্তায়। যাবেন আপনি আমার সাথে?
তোহার বাঁকা কন্ঠের উত্তর শুনে ভ্যা’বাচ্যা’কা খেয়ে গেল যেন জুবায়ের। মৃদু হেসে বললো।
— সোজা কথা বলা যায় না। এত ঘোরপ্যাঁ’চ লাগান কেন?
—আপনিও বা ঢং করে খা’ম্বার মতো আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলেন কেন? দেখি সাইড দেন,রাত হচ্ছে বাসায় যাব।
—ওহ আচ্ছা। চলুন আপনাকে ড্রপ করে আসি তাহলে।
জুবায়েরের কথা শুনে ভ্রু জাগিয়ে ফেলল তোহা। বললো।
—এখানে লাইন না মেরে কলেজ, ইউনিভার্সিটি এসব জায়গায় ট্রাই করে দেখতে পারেন কাজে দিবে। এ ধানে চিড়ে ভিজবে না।
তোহার কথা শুনে জুবায়ের হা হয়ে গেল যেন।
— এ মেয়ে নাকি দ’জ্জা’ল, বলি কি আর বোঝে কি? আশ্চর্য!
তোহা পাশ কাঁ’টিয়ে যেতে নিতে জুবায়ের আবারও বললো।
— ট্রাই করার হলে অনেক আগেই করতাম বুঝলেন ম্যাডাম। স্যারের অর্ডার আছে আপনাকে ঠিকঠাক ভাবে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার। তাই জন্য বলেছি কথাটা।
জুবায়েরের কথা শুনে জিভ কাঁ’টলো তোহা।
—ইশ, যা-তা ব্যাপার হলো একটা।(মনে-মনে কথাটা ভেবে সামনা-সামনি জুবায়েরের উদ্দেশ্যে বললো।)
—তাহলে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? চলুন।
হাসলো জুবায়ের।
.
আকাশ ছেঁয়ে আজ ভরা বর্ষনে ঢেকে আছে যেন। হিমশীতল হাওয়া খোলা জানালা ভেদ করে বাহির থেকে ঠেলে ভিতরে আসতে চাইছে যেন। লাইটারের হলুদ রাঙা আবছা আলোয় সিরাতকে পাঁ’জাকোলা অবস্থায় এক পলক তাঁর মা’য়াময় মুখশ্রী দেখে নিয়ে সাফিন তাঁদের রুমের দরজাটা পা দিয়ে ঠেলে দিতে দরজাটা খুলে গেলে মৃদু শব্দে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। সাফিনের বুকে মুখ লুকিয়ে রেখেছে সে। সাফিনের শরীরের পারফিউমের মিষ্টি স্মেল নাকের কাছে এসে বারংবার হানা দিয়ে গেলে মাথাটা কেমন ভার হয়ে আসতে চাইছে তাঁর। সাফিনের এতটা কাছে থেকেও যেন মনের ভিতরটা কেমন ছা’রখা’র হয়ে যাচ্ছে অজানা ভয়ে। সাফিনকে হাঁড়িয়ে ফেলার ভয়।
সাফিন ধীর চাহনিতে সিরাতের দিকে তাকাতে- তাকাতে শীতল হাতের স্পর্শে সিরাতকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে তাঁর সামনে অনেকটা ঝুঁ’কে গেলে ভয়ে দ্রুত কয়েকটা ঢোক গি’লে নিল সিরাত। সাফিনের হাতটা এখনও সিরাতের শাড়ির আঁচল ভেদ করে স্পর্শ করে আছে। বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজটা যেন আরও গাঢ় ভাবে কানের কাছে এসে কড়া নেড়ে যাচ্ছে এখান থেকে। সাফিনের ঘন হয়ে আশা নিশ্বাসের গরম উ’ষ্ণতা সিরাতের চোখেমুখে আঁ’ছরে পরছে যেন৷ অন্যরকম প্রেমানুভূতি অনুভব করতে পারছে সিরাত। চোখ খিঁ’চে বন্ধ করে দুইহাত দিয়ে বিছানার চাঁদর খা’মচে ধরলে ঠোঁটের কোনে হাসির রেশ এসে জমা হলো সাফিনের। বেশ অনেকক্ষণ এভাবে থাকার পরও সাফিন ঠিক আগের মতোই থাকাতে চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো সিরাতের। হাসলো সাফিন। সিরাতের ধৈর্য শক্তির কাছে হার মেনে গেল সে। ধীরেধীরে সিরাতের খুব কাছে এসে বালিশের পাশ থেকে রিমোটটা নিয়ে লাইটারের আলো নিভিয়ে দিলে সিরাতের মাথার পিছনে হাত রেখে সিরাতের লালরাঙা ঠোঁটে ঠোঁট ডু’বিয়ে দিলে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। সাফিনকে কিছু বলতেও পারছে না যেন সে। ভালোবাসার মানুষটার প্রতিটা স্পর্শ খুব কাছ থেকে অনুভব করতে থাকলো সিরাত। কাঁ’পা-কাঁ’পা হাতদুটো বিছানা ছাড়িয়ে সাফিনের ব্রাউন্ট রাঙা চুল আঁ’কড়ে ধরলো যেন। সিরাতের থেকে রেসপন্স পেয়ে সিরাতের মাঝে পা’গল হয়ে উঠলো যেন সাফিন। সাফিনের প্রতিটা স্পর্শ গভীর থেকে গভীরে স্পর্শ করে গেলে বাহিরের ঝরো হাওয়া যেন সিরাতের মাঝেও বইতে থাকলো এখন। কান্না পাচ্ছে তাঁর এখন। সাফিনের থেকে হাত আলগা হয়ে আসলে সিরাতের চোখের কোন বেয়ে মোটা-মোটা জলরাশি বইতে থাকলে সেই কান্নার রেশ সাফিনের হাত ছুঁয়ে স্পর্শ করে গেলে থ’মকে গেল সাফিন। নিজেকে যথাসম্ভব সংযত করে সিরাতের কপালে গাঢ় চুমু খেয়ে শীতল কন্ঠে বললো।
— কোনো তারা নেই সোনা। তোমার যখন নিজ থেকে সম্মতি আসবে সেদিনই এই শাহনেওয়াজ সাফিন তোমাকে গভীর ভাবে স্পর্শ করবে। তাঁর আগে নয়। কথাগুলো বলে বিছানায় পরে থাকা সিরাতের আঁচলটা উঠিয়ে ভালোভাবে সিরাতের গাঁয়ে জড়িয়ে দিয়ে পকেট থেকে সিগারেট বের করে ম্যাচ দিয়ে জ্বা’লিয়ে তাঁর ধোঁয়া ওড়াতে-ওড়াতে বারান্দায় চলে যেতে কেঁদে উঠলো সিরাত। দ্রুত উঠে বসে পা দুটো খিঁ’চি’য়ে ধরে জো’রে-জো’রে কাঁদতে থাকল সে।
—আপনাকে আমি এভাবে পেতে চাইনা সাফিন। আমি আপনাকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে এই ডিলের গন্ডি পেড়িয়ে সহজ ভাবে পেতে চাই। আর আজ আপনি আমার জীবনটা আরও জটি’ল করে দিলেন। আমি ভালোবাসি আপনাকে সাফিন। আপনি আর কবে বুঝবেন আমাকে। নাকি এই সিরাত নিজেই আপনাকে বুঝতে ব্যা’র্থ? (কথাগুলো মাথার ভেতর ঘোরপাক খেয়ে গেলে কান্নাগুলো যেন দলা পাকিয়ে যাচ্ছে সিরাতের।)
সিরাতের কান্নার আওয়াজ বৃষ্টির রেশের সহিত সাফিনের কানের কাছে এসে পৌঁছাতে থাকলে নিজের প্রতি নিজেরই রাগ রাগলো সাফিনের।
রাগে নিজের হাতটা বারান্দায় জানালার গ্রিলের সাথে সাজোরে বা’রি দিলে ঝরঝর করে র’ক্তের বন্যা বইতে থাকলো সাফিনের হাত থেকে।
—এটা তুই কি করতে চলেছিলিস সাফিন? তোর মাথার ঠিক আছে! একটা মেয়ের পার্মিশন ছাড়াই… নাহ, আমি আর ভাবতে পারছি না। আমার সিরাতের কাছে এক্ষুনি মা’ফ চাইতে হবে।
কথাগুলো বলেই আঁধা খাওয়া সিগারেটটা পায়ের নিচে পি’শে দিয়ে দ্রুত পায়ে ভিতরে এসে সিরাতকে কান্না করতে দেখে পিটপিট করে তাকালো তাঁর দিকে। ধীর পায়ে সিরাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে শীতল হাতে সিরাতের কাঁধে হাত রাখলে চুপ হয়ে গেল যেন সিরাত। অন্ধকারের ভিতরেও সাফিনের ফর্সা তৈলাক্তময় মুখশ্রী যেন সিরাতের চোখের সামনে ভাসছে।
—সরি সোনা। প্লিজ কেঁদো না জান। তোমার কান্না স’য্য হয়না কেন আমার হুম? আচ্ছা এই কানে ধরছি আমি। এবার অন্তত কেঁদো না সিরাত।তুমি জানো, শাহনেওয়াজ সাফিন নিজের নানু ছাড়া কখনো কারো কাছে মাথা নত করেনি। এমনকি নিজের ড্যাডের কাছেও না। তাই তোমারও এটা খেয়াল রাখা উচিত। আর এরপরও যদি তুমি কাঁদো তাহলে আমার থেকে খা’রাপ কেউ হবে না। এই বলে রাখলো সাফিন।
—কি করবেন? ওইতো হাত-পা বেঁধে স্টোর রুমে অন্ধকারে বন্ধ করে রাখার হু’মকি তাইতো?
সিরাতের ভ্যা’বলাসহিন ভাবে উত্তরে বিরক্ত লাগলো এবার সাফিনের। সিরাতের দিকে খানিকটা ঝুঁ’কে সিরাতের বসে থাকার দুইপাশের ফাঁকা জায়গাটাতে দুই হাত দিয়ে আঁ’টকে দিয়ে দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে বললো।
—তোমার সাথে ভালো আচারনটা ঠিক মানানসই নয় তাইনা সিরাত? আমি বারবার তোমার সাথে ভালো ব্যাবহার করতে যাই আর তুমি সেটাতে ডান হাত বাম ঢু’কিয়ে দিয়ে প্যাঁ’চাল করো আমার সাথে। গাঁধি কোথাকার।
সাফিনের কথা শুনে রাগে ফুঁ’সতে-ফু’সতে সিরাত কিছু বলার আগেই নিচ থেকে সকিনার চিৎ’কার-চেচা’মেচি শুনে ভর’কে গেল সাফিন। সিরাতের মনেও কেমন কাঁ’ম’র দিয়ে উঠলো যেন। সাফিন দ্রুত গতিতে নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যেতে নিতে সিরাত সাফিনের শার্টের কলারটা টে’নে ধরে নিজের মুখোমুখি নিয়ে এসে ধীর কন্ঠে বললো।
—আপনাকে কিছু বলার ছিল সাফিন।
—পরে শুনছি। এখন নিচে যেতে হবে। তুমিও আসো। কথাটা বলেই সাফিন দরজা খুলে চলে গেলে দীর্ঘশ্বা’স ছারল সিরাত। অজানা ভয়ে মেয়েটা কেমন চু’পসে আছে যেন। সকাল থেকেই শরীরটা কেমন ভালো ঠেকছে না তাঁর। তাঁর উপর সাফিনকে তাঁর মনের কথাটা না বলা পর্যন্ত মনের শান্তিও পাচ্ছে না যেন।
—এত অস্থি’র হচ্ছি কেন আজ আমি? তবে কি আবার কোনো নতুন ঝর আসতে চলেছে আমার জীবনে?
.
দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো সাফিন৷ বাড়ি পুরো খালি বললেই চলে। হুট করে ঘড়ির কাঁ’টায়-কাঁ’টায় ১২ টার ঘন্টা বেজে উঠলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হলো সাফিন। গেস্টরা তাহলে এতক্ষণে চলে যাওয়ার কথাই।
—এতটা বেজে গেছে! কথাটা ভাবতেই আজাদ সাহেবের রুম থেকে কয়েকজন চেনা কন্ঠের উত্তে’জিত হওয়া কন্ঠস্বর শুনে ঘা’বরে গেল সাফিন।
—নানুর কিছু হয়নি তো আবার? কথাটা ভেবে একপ্রকার দৌঁড়েই আজাদ সাহেবের রুমে প্রবেশ করলে বাড়ির সবাইকে সেখানে ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে অবাক হলো সাফিন।
—আব্বা চোখ খুলেন? আল্লাহ কি থেকে কি হয়ে গেল রে খোদা? আপনি কিছু করছেন না কেন? (আজাদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে।) আরে কেউ ডাক্তার ডাকো আমার আব্বা এভাবে শুইয়া আছে কেন? আব্বা,আব্বাজান চেখ খুলেন।একবারটি চোখ খুলেন, দেখেন আপনার মাইয়া আমেনা আসছে আপনার কাছে।
নিজের আম্মা আমেনা বেগমের কান্নারত কন্ঠ শুনে থ’মকে গেল সাফিন৷ দ্রুত ভিতরে এসে নিজের নানুকে নিস্তে’জ হয়ে শুয়ে থাকতে উ’ত্তিজিত কন্ঠে বললো।
—কি হয়েছে এখানে? এখানে এমন ম’রা কান্না জুড়ে দিয়েছো কেন তোমরা? ড্যাড কি হয়েছে নানুর। “মোস্তফা সাহেবের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললে মোস্তফা সাহেব একরকম পা’থর হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন যেন। মোস্তফা সাহেবের থেকে আশানুরূপ উত্তর না পেয়ে হ’তাশ হলো সাফিন।বললো।
— জুবায়ের তুমি তো অন্তত বলবে নানুর কি হয়েছে? বুড়ো আম্মা তুমিও! (কেউ মুখ থেকে টু শব্দও বের না করলে সাফিনের অস’হায় লাগছে নিজেকে এখন।) বললো।
—আরে কেউ আমাকে কিছু বলবে তো নাকি? দেখি ডক্টরকে ফোন করছি আমি। কথাটা বলেই নিজের পার্মানেন্ট ডক্টর হায়াতকে ফোন করে আসতে বলে আমেনা বেগমকে সরতে বলে নিজে আজাদ সাহেবের মাথার কাছে এসে বসে পরে পালস চেক করতে নিতে কোনো রেসপন্স না পেলে রু’হু কেঁ’পে উঠলো যেন সাফিনের।পায়ের ত’লা থেকে শক্ত মাটি যেন ধীরেধীরে সরে যেতে থাকলো সাফিনের। আজাদ সাহেবের চেহারাটা কেমন মৃদু নীলছে রাঙা আর ফ্যা’কা’সে হয়ে আছে যেন। শরীর কেমন ঠান্ডা বরফের মতো নিস্তে’জ হয়ে আছে।
—নানা জানে আর নাই সাহেব।
সকিনার কন্ঠ শুনে চোখ লাল হয়ে উঠলো যেন সাফিনের। আজাদ সাহেবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সকিনার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বললো।
— মুখ সামলে কথা বলো তুমি। আমার ইয়াংম্যানের কিচ্ছু হয়নি। কিচ্ছুটি হতে দেব না আমি তাঁর। ডক্টর আসলেই ঠিক হয়ে যাবে আমার ইয়াংম্যান।
সাফিনের এক ধ’মক শুনে কেঁ’পে উঠলো সকিনা৷ একপ্রকার ভাবে ঠিক করলো মুখে কু’লুপ এঁ’টে বসে থাকবে কদিন।
কিছুক্ষণের মধ্যে সিরাতও নিচে নামলে প্রথমেই ডক্টরের মুখোমুখি হবে ভাবেনি সে। বেশ অবাক হলো সিরাত।
আজাদ সাহেবের রুমের দিকে যেতে দেখে সেও তাঁর পিছু-পিছু চলে গেলে সবার চোখে পানি দেখে ঘা’বরে গেল সে।সাফিনের দিকে চোখ গেলে রীতিমতো ভয় পেয়ে গেল সিরাত সাফিনের এমনধারা রুপ এর আগে দেখেছে বলে মনে করতে পারছে না সে। র’ক্তিম চোখগুলো কেমন থ’মথমে হয়ে আছে তাঁর।
হায়াতকে দেখে সাফিন দ্রুত গতিতে নিজের জায়গা ছেড়ে দিয়ে উঠে হায়াতের শার্টের কলার টে’নে ধরে হাতের মুঠোয় নিয়ে পাগ’লের মতো করতে থাকলো যেন।
— আমি আমার নানুকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখতে চাই না হায়াত। আজকের মধ্যে কিভাবে কি করবেন সেগুলো আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না। আমি শুধু চাই আমার নানুজানকে।
সাফিনের এমনধারা আচারনে এই ঠান্ডার মধ্যেও কেমন ঘেমে উঠেলো হায়াত। জুবায়ের দ্রুত সাফিনকে টে’নে এনে সরিয়ে নিজের দিকে নিয়ে গিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—শান্ত হন আপনি স্যার। এভাবে করলে এখন কোনো লাভ হবে না। ডক্টর এসেছে এখন সে দেখুক।
জুবায়েরের কথা শুনে সাফিন যেন আরও রেগে উঠলো। রাগান্বিত কন্ঠে বললো।
— কিভাবে শান্ত হতে বলছো তুমি আমাকে জুবায়ের? আমি কিভাবে শান্ত হব? আমার নানু, ইয়াংম্যান এভাবে নিস্তে’জ হয়ে শুয়ে আছে আর তুমি আমাকে শান্ত হতে বলছো!
সাফিনের পা’গলামো বাড়তে থাকলে মোস্তফা সাহেব ছেলেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন নিজের বুকে। শান্ত কান্নারিত কন্ঠে বললেন।
— সাফিন চুপ করো এখন। শান্ত হও তুমি। তুৃমি হায়াতকে এনেছো আমরা কেউ তোমাকে বাঁ’ধা দেইনি। আমাদের দিকটাও একবার ভেবে দেখো তুমি।
মোস্তফা সাহেবের কন্ঠ শুনে একরকম ভাবে ভে’ঙে পরলো সাফিন।
—স্যার আপনারা সবাই যদি একটু জায়গাটা ক্লিয়ার করতেন তাহলে আমি নানুজানকে একটু চেক করতে পারতাম আরকি।
হায়াতের থেমে-থেমে কথা বলা শুনে মোস্তফা সাহেব সবাইকে চোখ দিয়ে ইশারা করতে সবাই চলে গেলে সাফিন না যেতে চাইলে মোস্তফা সাহেব কোনোমতে বুঝিয়ে-শুনিয়ে নিয়ে গেলেন তাঁকে।
“ড্রয়িং রুমে সবাই কেমন নিশ্চুপ হয়ে বসে আছেন যেন।” মৃদু স্বরে শুধু ভেসে আসছে কান্নার স্বর।কিছু না বুঝতে পেরে সিরাত ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো শুধু। মনের মাঝে কেমন একটা উথাল-পাতাল ঢেউ বইছে যেন তাঁর। সজাগ মস্তি’স্ক বেশ বুঝতে পারছে যে আজাদ সাহেবের কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কিছু বলতেও পারছে না সে। “কিছুক্ষণ পর হায়াত ভয়ে-ভয়ে বের হলে সাফিন তাঁর দিকে ছুটে যেতে হায়াত যেন আরও ভয় পেয়ে গেল।” এমনিতেই মন্ত্রীর বাড়ি এসেছে তাই নিয়ে ভয়ের শেষ নেই। তাঁর উপর মন্তীর ছেলের এমনধারা আচারন। আগে থেকেই সাফিনকে একটু বেশিই ভয় পেত হায়াত। মোস্তফা সাহেব ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে হায়াতের কাঁধে হাত রেখে ধীর কন্ঠে বললেন।
—যা হয়েছে নিশ্চিন্তে বলো। ভয় নেই তোমার।
মোস্তফা সাহেবের কথায় আস্থা পেলে মৃদুস্বরে বললো।
—হি ইজ ডেথ স্যার। নানুজান আর নেই।
হায়াতের কথাটা কানের কাছে এসে পৌঁছাতে থ’মকে গেল সিরাত। চোখের কোন বেয়ে মোটা-মোটা পানির রেশ বইতে থাকলো তাঁর। হাত-পা কেমন অবশ হয়ে আসলে পা ঢলে ফ্লোরে বসে পরলে আমেনা বেগম কান্নারত চোখেমুখে সিরাতের দিকে এগিয়ে এসে সিরাতকে জা’প্টে জড়িয়ে ধরে বললেন।
— আম্মাজান আমার বাপ ছিল না। শশুরবাড়ি এসে শশুরের কাছ থেকে বাপের ভালোবাসা পেয়েছি। আর আজ তাঁকেও হাঁড়িয়ে ফেললাম।
রাহেলা বেগম নিশ্চুপ হয়ে সোফায় বসে থাকলে সকিনা গ্লাসে করে পানি এনে তাঁর সামনে ধরলেন। যতই হোক মা বেঁচে থাকাকালীন ছেলের মৃ’ত্যু নিজ চোখে দেখাটা খুবই ক’ষ্টদায়ক।
—স্যার আপনার সাথে একটু কথা বলার আছে।
হায়াতের ধীর কন্ঠ শুনে মোস্তফা সাহেব চোখের পানি মুছে সাইডে চলে গেলেন তাঁকে নিয়ে।
সাফিন ধীর পায়ে আজাদ সাহেবের রুমের দরজার কাছে গিয়ে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়ালে আজাদ সাহেবের বন্ধ চোখদ্বয় দেখে বুকটা চিঁ’ড়ে যাচ্ছে যেন তাঁর। আশ্চর্য!সবার চোখের কোন বেয়ে পানি ঝরলেও তাঁর চোখে বিন্দুমাত্র পানি নেই। বরং র’ক্তিম বর্ন ধারন করে আছে যেন। হুট করে কাঁধের কাছে কারো স্পর্শ পেয়ে পিছু ফিরে তাঁকাতে জুবায়ের চোখের পানি মুছে বললো।
—স্যার আমি, জুবায়ের।
.
—কি বলবে দ্রুত বলো কোনো স’মস্যা আছে নাকি হায়াত?
মোস্তফা সাহেবের উদ্বি’গ্ন কন্ঠ শুনে হায়াত তাঁর শুকনো ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—স্যার এটা কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। নানুজানকে মা’র্ডা’র করা হয়েছে।
হায়াতের কথা শুনে রীতিমতো শক খেয়ে গেছেন মোস্তফা সাহেব। চোখগুলো বড়সড় রুপ ধারন করলে হায়াত বললো।
— স্যারের চেহারায় নোটিশ করেছেন কেউ? হালকা নীলছে রাঙা আফা দেখা যাচ্ছে। সম্ভবত বি’ষক্রিয়ার প্রভাবে এসব দেখা দেয়। ব্যাপারটা ভালো ঠেকেনি বিধায় টেষ্ট করেছি আপনাদের না জানিয়ে। সকালে রিপোর্ট পেয়ে জাবেন। তবে আমি এই মূহুর্তে বলতে পারছি এটা মা’র্ডার কেস। তাই আপনাকে সাইডে এনে বললাম।
মোস্তফা সাহেবের চোখমুখ কেমন পান’সে হয়ে গেল যেন। ধীর কন্ঠে হায়াতের উদ্দেশ্যে বললেন।
— কথাটা যেন এই মূহুর্তে সাফিনের কানে না পৌঁছায়। এমনিতেই আব্বার মৃ’ত্যুর খবর শুনে কেমন পাগ’লের মতো করছে আমার ছেলেটা। বাহিরেও পাঁচকান যেন না হয়। অনেকদিনের বিশ্বস্ত লোক কিন্তু তুমি।
—না-না স্যার। আপনি একদম নিশ্চিন্তে থাকুন।
মোস্তফা সাহেবের চোখেমুখে দুশ্চি’ন্তার ছাপ ফুঁটে উঠেছে যেন। কে এতবড় সর্ব’নাশটা করতে পারে তাঁদের? কে হতে পারে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি? “কথাগুলো ভাবতে- ভাবতে পিছু ফিরে হাঁটতে নিতে থ’মকে গেলেন তিনি।” সাফিনের রাগান্বিত মুখশ্রীর দিকে তাঁকাতে হায়াত মোস্তফা সাহেবের পিছনে ভয়ে আড়াল হয়ে দাঁড়ালে মোস্তফা সাহেব শীতল কন্ঠে বললেন।
— সাফিন?
সাফিন কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সেখান থেকে চলে গেলে দীর্ঘ’শ্বাস ছারলেন মোস্তফা সাহেব।
“ভোর শুরু হওয়ার নব দিনের উল্লা’সে বৃষ্টির রেশ অনেকটা কমে এলো যেন।” সারারাতে কারো চোখে কোনো ঘুম নেই। বৃষ্টির রাতেই মোস্তফা সাহেব জুবায়েরকে দিয়ে সবকিছু গুছিয়ে রেখেছেন।সরোয়ার সাহেবকেও কাল রাতে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁর আব্বার মৃ’ত্যুর কথা। তিনিও ফ্লাইটে উঠে পরেছেন তখনই। সকাল ৮ টায় জানাজা পরানো হবে। আমেনা বেগম নিশ্চুপ হয়ে গেলে সকিনার সাথে হাতে হাত লাগিয়ে রান্নার দিকটা সামলাচ্ছে সিরাত। একেরপর এক আত্মীয়- স্বজনরাও আসতে শুরু করে দিয়েছেন রাত থেকে। এ বাড়িতে আবার মেডদের রান্না কারো মুখে তুলে না যে,সেটা খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছে একমাসে সিরাত। সেই রাত থেকে সাফিনের দেখা নেই। বুকের ভিতর অযা’চিত ভয়টা যেন আরও প্রবল হয়ে গেল আজাদ সাহেবের মৃ’ত্যুতে সিরাতের। লোকটা সত্যি খুব রশিক ছিলেন। এতটা ভালোবাসা আগে কখনো পাইনি সিরাত কারো কাছে। খুব ক’ষ্ট লাগছে সিরাতের। আজাদ সাহেব যে আর নেই এটা ভাবতেই কেমন কান্না এসে জমা হচ্ছে চোখে।
সকিনা দুধ গরম করে সিরাতের সামনে দিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—ভাবিজান দুধটুকু খাইয়ালন তাত্তারি। রাইত থিকা কিছু খান নায় আপনে।
সকিনার কন্ঠে হুশ ফিরলে চোখের পানি মুছে ধীর কন্ঠে বললো।
—বাড়িতে এখনও কেউ দানাটি পর্যন্ত কাঁ’টেনি।আর তুমি আমাকে খেতে বলছো? সিরাতের কথা শুনে সকিনা চুপ হয়ে গেল যেন।সিরাত রান্নায় মনোযোগ দিল।
.
সকাল-সকাল জুবায়েরকে নিয়ে হাসপাতালে হাজির হলে ভর’কে গেল যেন হায়াত। সাফিন হায়াতের কাঁধে হাত রেখে বললো।
— কালকের জন্য সরি। রিপোর্টের কাগজটা নিতে এসেছি।
সাফিনের সরি বলাতে জুবায়ের হা হয়ে গেল যেন। যে শাহনেওয়াজ সাফিন কখনো কারো কাছে মাথা নত করতে ইচ্ছুক ছিল না সে কিনা তাঁর নানুজানের মৃ’ত্যুতে এতটা ভে’ঙে পরেছে যে এখন কাউকে সরি বলতেও দ্বি’ধাবোধ করছে না!
হায়াত সাফিনের এ রকম শান্ত আচারনে পিলে চ’মকে গেল যেন। আলমারিতে গুছিয়ে রাখা ফাইল থেকে রিপোর্টের কাগজটা বের করে সাফিনের হাতে দিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— আমি এক্ষুনি যেতাম আপনাদের বাড়িতে।কিন্তু আপনি এসে পরলেন।যাইহোক, আমি যা সন্দে’হ করেছিলাম সেটাই সত্যি স্যার।নানুজানের খাবারে বি’ষ পাওয়া গেছে। এককথায় বি’ষাক্ত কোনো ক্যা’মিকাল। এর প্রভাব পেটে যাওয়ার সঙ্গে- সঙ্গে শুরু হয় না। বরং ধীরেধীরে শরীরে প্রবেশ করে সময় নিয়ে মানুষকে শেষ করে দেয়। খু’নি খুব ধুর’ন্ধর মনে হচ্ছে। মুখ থেকে পয়’জন বের হওয়ার সময় খু’নি বড় স্যারের পাশেই ছিলেন হয়তো। নয়তো পয়জ’ন দেখা যেত। যার কারনে আপনারা বুঝতে পারেননি এটা খু’ন।
হায়াতের কথা শুনে মাথা কেমন ঘুরে গেল যেন সাফিনের। রিপোর্টটাতে একবার চোখ বু’লিয়ে বললো।
— ধন্যবাদ আপনাকে। কথাটা বলেই সাফিন চলে গেলে জুবায়েরও তাঁর পিছুপিছু ছুটলো।
“গাড়িতে বসে আমেনা বেগম বারংবার ফোন করতে থাকলে সাফিন ফোনটা সুইচঅফ করে রাখলে জুবায়ের বললো।
—স্যার হয়তো কোনো কাজে ফোন করছেন ম্যাম।
— এখন আমার ওগুলো দেখার টাইম নেই জুবায়ের। আমার মাথায় এখন একটাই শব্দ ঘুরছে,ইয়াংম্যানের মৃ’ত্যুর প্রতি’শোধ নেওয়া। ওই জা’নোয়া’রটাকে আমি এমন ক’ষ্ট দিয়ে পৃথিবী থেকে সরাব যে,এমন ভ’য়া’নক মৃ’ত্যু ও কখনো কল্পনাও করনি কখনো।
সাফিনের রাগ দেখে কেঁ’পে উঠলো জুবায়ের।
বললো।
— কালকে বাড়িতে পার্টি ছিল স্যার। এতগুলো লোকের মাঝেই যে খু’নি লুকিয়ে ছিল এটা আমি নিশ্চিত। কিন্তু এতগুলো লোকের ভিতরে খুঁজে বের করাটা অনেক টা’ফ ব্যাপার স্যার। আর বি’ষটা যদি খাবারের সাথে মেশানো থাকে তাহলে সেদিকটা তো সকিনা ভালো জানবে।
জুবায়েরের কথা শুনে মৃদু হাসলো সাফিন। বললো।
— যে করেই হোক খু’নিকে আমার খুঁ’জে বের করতেই হবে। ওকে পায়ের কাছে না আনতে পারলে আমার আ’ত্মা শান্তি পাবে না। আমার কেন জানিনা মনে হচ্ছে এইযে একের পর এক খু’ন গুলো হচ্ছে এগুলোর খু’নি একজনই। জুবায়ের।
—জ্বী স্যার?
— তোমার ফোনটা দেওতো?
সাফিনের কথা শুনে পকেট থেকে ফোনটা বের করে হেলালকে ফোন দিলে ওপাশ থেকে হেলাল বলে উঠলো।
—হ্যা বলো জুবায়ের। এদিকে জানাজা শেষ হতে চলেছে নানুজানকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর তোমাদের কোনো খবর নেই। স্যার কোথায়? তিনি শেষ বারের মতোও কি নানুজানকে দেখবেন না?
হেলালের কথা শুনে সাফিনের চোখমুখ কেমন থ’মথ’মে হয়ে গেল। ধীর কন্ঠে বললো।
—সাফিন বলছি।
সাফিনের কন্ঠ শুনে হেলাল গলা ঠিক করে দ্রুত বললো।
—জ্বী স্যার, বলুন।
— কালকের পার্টিতে যে-যে মেনুগুলো ছিল সেই প্রত্যেকটা খাবার চেক করো দ্রুত। আর তাছাড়া পার্টির প্রত্যেকটা ভিডিও, পিক, সিসিটিভি ফুটেজ আমার চাই। সবকিছু রেডি রাখো আমি আসছি।
—আচ্ছা স্যার।
সাফিন ফোনটা কেঁ’টে দিয়ে হাইস্পিডে গাড়িটা চালু করে দিলে জুবায়ের বললো।
— কি করতে চাইছেন আপনি স্যার?
—সময় হোক,নিজেই দেখতে পাবে তখন।
.
শাহনেওয়াজ ভিলার সামনে গাড়ি এসে দাঁড় করাতে পরিবেশ থ’ম>থ’মে দেখে বেশ অবাক হলো সাফিন। গার্ডদের কাছে জিজ্ঞেস করতে তাঁরা বললো নানুজানকে অনেকক্ষণ আগেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতক্ষণে শুকনো চোখদুটি দিয়েও পানি ঝরে পরলো সাফিনের।
— শেষ বারের মতোও তোমাকে দেখতে পারলাম না ইয়াংম্যান? তোমার এই অবা’ধ্য নাতিটা আজীবন এই বো’ঝা বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে নানু। সাফিনের চোখ বেয়ে পানি ঝরতে থাকলে জুবায়ের নিজের চোখের পানি মুছে সাফিনের কাঁধে হাত রাখলে সাফিন জুবায়েরকে জা’প্টে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে- কাঁদতে বললো।
—আমি এর শেষ দেখে ছারব জুবায়ের। আমার ইয়াংম্যানের খু’নিকে আমি নিজ হাতে খু’ন করে ওর শরীরের প্রত্যেকটা অংশ শে’য়াল-কু’কুরকে খাওয়াব।
.
হুট করেই গগনের বি’ষন্নে ঘেড়া এলোমেলো ভাবে ভেসে চলা মেঘদ্বয় কালো রঙে আচ্ছাদিত হয়ে হিমেল হাওয়ায় বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সহিত শহরে ঝরে পরতে থাকলে কারেন্ট চলে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ অফ হয়ে গেলে অন্ধকার রুমটাতে সাফিন জুবায়েরের দিকে তাকাতে হেলাল জেনারেটরের লাইন অন করে দিলে জুবায়ের বললো।
— স্যার এভাবে কিভাবে বোঝা যাবে? নানুজান তো আর কম খাবার খাননি। বড় সাহেবও তো ছিল তাঁর সাথে। এফে’ক্ট তো একজনের উপর হবে না? যেহেতু দুইজনই একই সাথে খাবার খেয়েছেন।
— না স্যার খাবার ঠিকই আছে। সবগুলো খাবার চেক করিয়েছি মোহনকে দিয়ে। আমার মনে হয় কেউ ইচ্ছে করে একান্তই নানুজানের খাবারেই বি’ষটা মিশিয়ে দিয়েছে।
হেলালের কথা শুনে সাফিন ভ্রু জাগিয়ে ফেলল। বললো।
—রাইট হেলাল। আমারও সেটাই মনে হচ্ছে।
—জ্বী স্যার।
বেশ অনেকক্ষণ ধরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখেও কোনো ক্লু না পেলে বিরক্ত হলো সাফিন৷ হাতটা টেবিলের সাথে বা’রি দিতে ক্ষ’ত জায়গাটা থেকে আবারও র’ক্ত পরতে থাকলে জুবায়ের ভ’রকে গেল।
— কি করছেন স্যার? এটা কখন হলো। হেলাল দ্রুত ফাস্টএইড বক্সটা দেওতো।
হেলাল নিচে থেকে ফাস্টএইড বক্সটা নিয়ে আসলে সাফিনের হাতে স্যা’ভলোন লাগাতে ব্যাস্ত হয়ে পরলে ক্ষ’ত হওয়া জায়গাটা কেমন কাঁ’ম’রে উঠলো যেন সাফিনের। চোখ খিঁ’চে ব্যা’থাটা হজ’ম করে হাতটা সরাতে যেতে সিসিটিভি ফুটেজটা হাত লেগে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলে। সিরাতকে দেখা গেল একটা প্রিজে করে হালকা নাস্তা নিয়ে গিয়ে আজাদ সাহেবের দিকে বাড়িয়ে দিতে আজাদ সাহেব হেসে বলছেন।
—আরে নাতিবউ আর কত খাব আজকে আমি। এত খাবার পেটে সইবে তো নাকি আমার? সিরাতকে কেমন অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে। আজাদ সাহেবের কথার উওর না দিয়ে ধীর পায়ে রোবটের মতো চলে গেলে আজদ সাহেব এক চামিচ মুখে দিলে কেশে উঠলেন যেন। টি টেবিলের উপর থেকে পানি খেয়ে নিলে মোস্তফা সাহেবকে তারপাশে বসতে দেখা গেল তারপরে।
সাফিনের তিরিক্ষি চোখদ্বয় আজাদ সাহেবের ঝিমিয়ে যাওয়া চেহারাটা চোখ এড়াল না যেন। আবারও জুম করে প্রিজের খাবারটা দেখতে নিলে ফের্নি জাতিয় কিছু দেখে হেলালের উদ্দেশ্যে বললো।
—হেলাল মেনুতে কি ফের্নি বা মিষ্টি জাতিয় কিছু ছিল এই খাবারটা দেখো।
সাফিনের কথা অনুযায়ী হেলাল খাবারটার দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে বললো।
— স্যার এটাতো সকিনা ভালো বলতে পারবে।
—ওকে নিয়ে আসো এখানে।
— ওতো বাড়িতে নেই এখন। তবে হ্যা মোহন বলতে পারবে। ও খাবারগুলো চেক করেছে।
সাফিন দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললো।
—ফোন করো ওকে।
— আচ্ছা স্যার।
সাফিনের কথা অনুযায়ী হেলাল মোহনকে ফোন লাগালে ফোনটা সাফিন নিজের কাছে নিয়ে মেহনকে কিছু বলাতে না দিয়েই নিজেই আগে বলে উঠলো।
—একটা পিক পাঠাচ্ছি মোহন তোমাকে। দেখে বলো এটা পার্টিতে মেনু হিসেবে ছিল কিনা?কথাটা বলেই পকেট করে ফোনটা বের করে অন করে নিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পিক তুলে মোহনকে পাঠিয়ে দিলে মোহন দীর্ঘ সময় নিয়ে বললো।
—স্যার পার্টিতে মিষ্টি জাতিয় বলতে কেকটাই ছিল শুধু। নানুজান সুগারের রো’গী হওয়ায় বড় সাহেব নিজেই পার্টিতে কোনো মিষ্টি আনতে দেন নি। আপনি যে পিকটা পাঠিয়েছেন।এটাও মেনুতে ছিল না।
মোহনের কথা শুনে থ’মকে গেল সাফিন। হাত থেকে ফোনটা পরে গেলে জানালা ভেদ করে হিমেল হাওয়া এসে তাঁর সর্বা’ঙ্গে স্পর্শ করে গেল যেন। শুকনো ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিলে কণ্ঠনালী কেমন অবশ হয়ে আসতে চাইছে তাঁর।
—তাঁরমানে সিরাত….

চলবে…..

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-১৯

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ১৯ (#স্পেশাল_পর্ব।)

গগনের বুকে আজ একরাশ বিষন্ন প্রহরে ছেঁয়ে আছে যেন। কালো মেঘের উ’ষ্ণতায় ঝরে চলেছে তাঁর তুমুল বেগে বর্ষনপাত। ঘড়ির কাঁটায়-কাঁটায় ১২ টা ছুঁইছুঁই। আজকেও সাফিনের দেখা নেই। একরাশ বিষন্নমাখা মুখদ্বয় নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতেভেজা গেটের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিরাত। সময়ের সাথে তালে-তাল মিলিয়ে প্রহরে প্রহর ঠেকিয়ে মাসের পর মাস পেরিয়ে গেছে সাফিনের সাথে সিরাতের অনিশ্চিত দম্পত্তি জীবনের। এই ক মাসেই সিরাত না চাইতেও একটু-একটু করে সাফিনের সাথে কেমন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে যেন৷ হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের সন্ধি মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে যেন তাঁদের৷ সাফিনের কেয়ার, কথাবলার ধরন, সাফিনের উষ্ণ’তাময় গভীর স্পর্শ,এগুলো যেন তাঁর সাথে এখন মানানসই হয়ে গেছে রীতিমতো। সিরাত নিজেও উপলব্ধি করতে পারে সাফিনও তাঁকে ভালোবাসে। কিন্তুহ, আর বেশি দিন নেই এক বছরের ডিলের গন্ডি পেড়িয়ে যাওয়াতে। খুব ভয় হচ্ছে এখন সিরাতের। সাফিন যদি সত্যি তাঁকে ছুঁ’ড়ে ফেলে দেয়। তখন তো এক নিমিষেই ভে’ঙে পরবে সিরাত৷ তাই নিজেকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে মনের জোর রেখে বুকে পাঁথ’র চা’পা দিয়ে আজ নিজেই তাঁর মনের কথাগুলো বলতে চেয়েছিল সাফিনকে। কিন্তু আজও সাফিন ঠিক টাইমে আসতে পারলো না। আফসোস হচ্ছে এখন সিরাতের।
— আজকেও আপনি ঠিক টাইমে আসলেন না সাফিন। আর আপনি কিনা বলেন আপনি টাইমের কাজ টাইমে করতে পছন্দ করেন!
কথাগুলো ভাবতেই কেমন হৃদয়ে এসে বা’রি খেয়ে যাচ্ছে সিরাতের। মাথাটাও প্রচন্ড বেগে ধরে আছে যেন তাঁর। সকিনা রাহেলা বেগমের নাম করে দুধের গ্লাস দিয়ে গেছিল সন্ধ্যাবেলা। এখন আর জোর করতে হয় না তাঁকে৷ দুধ খাওয়াটা বরং নেশা’য় পরিনত হয়ে গেছে সিরাতের৷ যেদিন খায়না বরং সেদিন নিজেকে পা’গল- পা’গল মনে হয় তাঁর।
কিছুক্ষণ পর ভিতর থেকে ফোনটা বেজে ওঠার রেশ কান ছুঁয়ে স্পর্শ করে গেলে বুকের ভিতরটা কেমন কেঁ’পে উঠলো সিরাতের।
—নিশ্চয়ই আপনি দিয়েছেন সাফিন।
খুশিতে উত্তে’জিত হয়ে একপ্রকার দৌঁড়েই রুমে এসে টি টেবিলের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে নাম না দেখেই কলব্যাক করে বলে উঠলো।
—আমি জানতাম আপনি টাইমে না আসলেও ফোন দিবেন সাফিন।
— শুভ জন্মদিন জানটা আমার৷ তোর প্রত্যেকটা দিন অনেক সুখের হোক৷ ইশ সিরাত, আমি ভেবেছিলাম এবার হয়তো আমরা একসাথে থাকব আর আমি তোকে ঘুম থেকে উঠিয়ে জড়িয়ে ধরে উইশ করব। কিন্তু হলো না। যাকগে, উইশ তো করেছি। অয়হোয়।
তোহা হেসে উঠলে সিরাতও মৃদু হাসার চেষ্টা করলো। তবে তোহার ফোন পেয়ে খুশি হলেও সাফিনের কথা ভেবে মনটা কেমন বি’ষিয়ে যেতে চাইছে সিরাতের। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে হেসে বললো।
— ধন্যবাদ জান৷ তাঁরপর বল, তোর কি খবর?
—আমার আবার কি খবর হবে? এইতো সকাল-বিকাল তোর সাথে কথা বলছি অফিস যাচ্ছি, খাচ্ছি-দাচ্ছি ব্যাস,চলে যাচ্ছে আমার। আচ্ছা এসব কথা রাখ, আগে বল তুই ঠিকঠাক ভাবে খেয়েছিসতো নাকি? নিজের যত্ন নিয়েছিস কিনা সেটা বল আগে?
হাসলো সিরাত। বললো।
—ওরে আম্মা আমার। আমার শাশুড়ী আমাকে খায়িয়ে-দায়িয়ে চুলটা পর্যন্ত খোঁপা করে দিয়ে তারপরে ঘুমাতে গিয়েছেন তিনি৷ আমাকে দেখার লোক আছে। তুই বল তুই খেয়েছিস কিনা?
তোহা বিছানা থেকে নেমে কানের কাছে ফোন হাতে নিয়ে ফ্রিজের কাছে গিয়ে ফ্রিজ খুলে আপেল বের করে খেতে-খেতে বললো।
— এই দেখ আমি এখনও খেতে-খেতে কথা বলছি তোর সাথে পাকনি।
—আচ্ছা হয়েছে-হয়েছে, এত রাত অব্দি আর জেগে থেকে শরীর খা’রাপ করতে হবে না তোকে। ফোন রাখ এখন। হেসে উঠলো তোহা। বললো।
—ইশরে,নানি আমার! আমাকেও জ্ঞান দিচ্ছে এখন।
—কানটা টেনে দেব বুঝলি। ঘুমা এখন।
—আচ্ছা জো হুকুম মহারানী। এখন আপনিও ঘুমান। তোহার কথা শুনে হেসে উঠলো সিরাত।
— তুই পারিসও বটে।
তোহা ফোন রেখে দিলে দীর্ঘশ্বাস ছারল সিরাত। বুকের ভিতর উথাল-পাতাল ঢেউ বইতে থাকলে চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো সিরাতের। কিচ্ছু ভালো লাগছে না তাঁর এখন। হুট করেই আবার ফোনটা বেজে উঠলে চোখে-মুখে খুশি এসে ভর করলে ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে নিতে সিম কম্পানি থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসলে রাগে মাথাটা কেমন ভার হয়ে উঠলো সিরাতের। পা ঢলে বিছানায় বসে পরে বিছানার চাঁদর শক্ত হাতে আঁ’কড়ে ধরালো। অনবরত চোখের পানি গাল বেয়ে ঝরে পরতে থাকলে রাগে দুঃখে হাতে থাকা ফোনটা ছুঁ’ড়ে ফেলে দিলে ফোনটা ভে’ঙে গু’ড়িয়ে টু’করো-টু’করো হয়ে গেলে তাঁর ভে’ঙে যাওয়ার শব্দ কানের কাছে সাজোরে এসে বা’রি খেয়ে গেল যেন।
ঘনঘন নিশ্বাস টানতে লাগলো সিরাত। এক অজানা অনুভুতি যেন ঝেঁ’কে বসেছে আজ তাঁকে৷
—আপনি সত্যিই খুব পাষাণ তাইনা সাফিন? স্বার্থপর মানুষ আপনি। আর আমিহ,আমি বড্ড বোকা যে কিনা আপনার মতো পাষাণ মানুষের সাথে না চাইতেও জড়িয়ে গেলাম।
সিরাতের কান্নাগুলো যেন দ’লা পাকিয়ে যেতে চাইছে আজ৷ তাঁর কান্নার আ’র্তনাদের স্বর এই অন্ধকার রুমটাতেই বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সহিত আঁ’টকা রয়ে গেল যেন।
.
বৃষ্টির পানি ঠেলেঠুলে ঝুম বৃষ্টি মাথায় করে সাফিনের গাড়ি শাহনেওয়াজ ভিলায় এসে দাঁড়িয়ে গেলে গার্ডরা গেট খুলে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরলে জুবায়ের সাফিনের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— স্যার আপনার শরীরে তো র’ক্ত লেগে আছে এখনও। ম্যাম এগুলো দেখে কিনাকি ভাবেন আবার৷ যাইহোক, লা’শটাকে মোহন আর হেলাল নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে এতক্ষণে।
জুবায়েরের কন্ঠ শুনে সাফিন মৃদু হাসলো। বললো।
— রাজনীতিতে এসব একটু-আধটু লাগবেই জুবায়ের। তোমার ম্যাম কোনো ফ্যাক্ট নয়। তাঁর কথা বাদ দেও। কিন্তু এই রাজবাড়ীর পিছনে একের পর এক লা’শ আসছে কিভাবে? কি রহস্য লুকিয়ে আছে এই রাজবাড়ির পিছনে। কি এমন আছে?
—স্যার এ ক মাসে মিনিমাম ১০ জন সয় কম লোকের লা’শ পাওয়া যায়নি রাজবাড়ির পদ্ম দিঘিতে। একেকজনের কাছে কমকরে হলেও দশটা করে ফোন ছিল। একেকবার একেক ফোন দিয়ে কথা বলেছে এক নম্বরে। কে কার সাথে কথা বলছে বা ম্যাসেজ করেছে, ফোনগুলো থেকে হয়তো কিছু তথ্য জানা যাবে। আমার তো ব্যাপারগুলো খুব একটা সহজ ঠেকছে না। একটা লেককেও আমাদের চেনা নেই!বেশ আশ্চর্য না ঘটনাগুলো। কেউ নিশ্চিত আপনার রাজবাড়ি পুলিশের রেটে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
—ফোনগুলো কোথায়?
—গাড়িতে আছে স্যার। ব্যাগে করে মোহন দিয়ে দিয়েছে৷ আপাদত বাড়িতে রাখি৷ বৃষ্টির ভিতরে আর জে’ম্মায় যাওয়া হবে না। মোহন আর হেলাল লা’শের ওখানে না গেলে ওরাই এতক্ষণে সব তদন্ত করতে পারত। বাকিদের খুব একটা বিশ্বাস হয়না৷ কথায় আছে ঘরের শ’ত্রু বিবিশন।
—হুম। আমার ব্যাক্তিগত রুমে রাখা যাবে। ওদিকটা খুব একটা যায়না কেউ। তুমি সারারাত বসে এগুলো ডিটেইলসএ বের করবে।
—আচ্ছা স্যার।
সাফিনের মাথা কেমন ঘোরপাক খেয়ে যাচ্ছে যেন। আর কিছু ভাবতে পারছে না আজ। গাড়ি থেকে নেমে পরলে গার্ডরা ছাতা হাতে দাঁড়ালে ছাতাটা সরিয়ে দিয়ে চোখদুটি বন্ধ করে বৃষ্টির উ’ষ্ণতা উপভোগ করতে থাকলো।
—স্যার ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যাবে। কিন্তু একটা কথা বলার ছিল।
জুবায়েরের কন্ঠ শুনে চোখ খুলল সাফিন। দীর্ঘ নিশ্বাস টেনে বললো।
— তুমি আবার কবে থেকে এসব পাতি ফর্মালিটি শুরু করেছো জুবায়ের। যাইহোক, বলো কি বলবে?
জুবায়ের গাড়ি থেকে ফোনের ব্যাগটা হাতে নিয়ে ফোনগুলো ভিজে না যায় তাঁরজন্য ছাতা হাতে নেমে পরলো গাড়ি থেকে। কিছুক্ষণ আমতা-আমতা করে বললো।
—আজ রাতে ম্যামের বার্থডে ছিল। এতক্ষণে ১২ টা ওভার হয়ে গেছে হয়তো।
মৃদু হাসলো সাফিন। আর চোখে জুবায়েরের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—তা তুমি জানলে কিভাবে শুনি?
—উম,না মানে তোহা ম্যাম বলছিলেন আরকি।
হাসলো সাফিন। বললো।
—বাহ,ইদানীং তোহার সাথে তোমার ভালোই কথা হয় দেখছি।
জুবায়ের মাথা চুলকালো। মাথা নিচু করে বললো।
—তেমন কিছু না স্যার৷ ওই জাস্ট…
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই সাফিন বাঁ’ধ সেধে বললো।
—হয়েছে-হয়েছে, আর এঞ্জাম্পল দিতে হবে না আমাকে। বাই দ্য ওয়ে,আমি অনেক আগে থেকেই জানি যে,আজকে আমার বউয়ের জন্মদিন।
জুবায়ের হা হয়ে গেলে সাফিন ভিতরে চলে গেলে জুবায়ের তাঁর যাওয়ার পানে তাকিয়ে একগাল হেসে উঠলো। তাঁরপর নিজেও চললো সাফিনের পিছুপিছু।
.
নিজের রুমের দরজাটা খোলা দেখে মৃদু হাসলো সাফিন।
—আমি জানি সিরাত, তুমি আমার উপর আজ বড্ড অভিমান করেছো। কিন্তু আমারও তো কিছু করার ছিল না সোনা। “কথাগুলো ভাবতে-ভাবতে অন্ধকার মিশ্রিত হলুদ রাঙা লাইটারের আলোয় ঘেরা রুমটাতে প্রবেশ করে ধীর চাহনিতে টি টেবিলের উপর মাথা ঠেকিয়ে বসে থাকা মেয়েটার দিকে তাকালো সাফিন৷” সামনে যেতে নিতে পায়ের কাছে কিছু একটা আঁচ করতে পেরে পকেট থেকে ফোনটা বের করে লাইট জ্বা’লিয়ে দেখতে নিতে ভা’ঙা ফোনের টু’করো গুলো দেখে হতাশ হলো সে। সাফিনের অ’স্তিত্ব টের পেয়ে সিরাত দ্রুত মাথা জাগিয়ে বিছানা হা’তরে বালিশ হাতে নিয়ে সাফিনের দিকে ছুঁ’ড়ে মারতে নিতে সাফিনের শরীরে র’ক্ত দেখে ভ’রকে গেল সিরাত। হুট করেই গলা শুঁকিয়ে আসতে চাইছে যেন সিরাতের। রাগও লাগছে প্রচুর। মনের কথা মনেই চা’পা রেখে পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে রাগ নিয়ে বালিশটা সাফিনের দিকে ছুঁ’ড়ে মারলে ক্যাঁ’চ করে নিল সাফিন। ভয় পাওয়ার সহিত লুক করে মৃদু হেসে বললো।
— ওরে বাপরে, বউ আমি তো আজকে বড্ড ভয় পেয়ে গেছি তোমাকে দেখে। লাইক শা’ক’চু’ন্নির মতো বসে ছিলে তুমি। এভাবে লাইট অফ করে রেখেছো কেন হুম?
সাফিনের কথা শুনে রাগ লাগলো সিরাতের। হাতের কাছে যা পেয়েছে সাফিনের দিকে ছুঁ’ড়ে মেরেছে আর সাফিন বারবার সরে গিয়ে তো কোনটা ধরে নিয়ে হাসিতে গ’ড়া>গ’ড়ি খাচ্ছে যেন।
— ব’জ্জা’ত লোক একটা। আবার কার সর্ব’নাশ করে এলেন হ্যা। এইসব রাজনীতি না কোন ক’ল্লা এগুলো না করলে কি হয়না আপনার?
—উফ সিরাত, এটাতো আমার কাজ তাইনা সোনা।
— বা’জে বকবেন না বলে রাখলো সিরাত। ভালো লাগছে না কিচ্ছু। ইচ্ছে করছে,ইচ্ছেতো করছে আপনাকে…
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই সাফিন সিরাতের দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বললো।
—বাসর করতে তাইতো? আহা কি রোমান্টিক বউ আমার।
—বাসর না আমার জু’তা৷ আপনি রাজনীতি ছেড়ে দিন।
সাফিন হেসে সিরাতের কাছে এসে হাতে থাকা বালিশটা বিছানার উপর রেখে বৃষ্টিতে ভেজা হাতে সিরাতের কপালে হাত রেখে বললো।
—শরীর খা’রাপ করছে তোমার তাইতো সোনা। চলো ঘুমিয়ে পরো।
রাগে ফুঁ’সতে থাকলো সিরাত। সাফিনের হাতটা সরিয়ে দিয়ে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললো।
— আমার শরীর ঠিকই আছে। আপনার ঠিক নেই। আম্মা কত আশা করে বসে আছেন আমার উপর যে, আমি আপনাকে এই রাজনীতির পথ থেকে সরিয়ে আনব আপনাকে। আপনি জানেন সেগুলো কিছু? বলছিতো রাজনীতি ছেড়ে দিন।
এতক্ষণে জুবায়ের রুমের কাছে এসে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলে সাফিন বললো।
—জুবায়ের ভিতরে আসো আর তোমার ম্যামকে হাসপাতালে এডমিট করার ব্যাসস্থা করো জলদি।
জুবায়ের মাথা নিচু করে মিটিমিটি করে হেসে ভিতরে এসে ফোনের ব্যাগটা এক সাইড করে রেখে দিয়ে চলে গেলে সিরাত রাগ নিয়ে বললো।
—কেন কি হয়েছে আমার? যে আমাকে হাসপাতালে এডমিট করতে বলছেন আপনি! হাসপাতালে তো পাঠানো উচিত আপনাকে।
হাসলো সাফিন। বললো।
—কিছুনা বেব্বি,জাস্ট মাথায় গ’ন্ডগোল আছে তোমার৷ তাঁরজন্য কিছুদিন হাসপাতালে থাকবে তাই আরকি।
সাফিনের কথা শুনে সিরাত সাফিনের দিকে তেড়ে আসতে নিতে শাড়িতে প্যাঁ’চ লেগে ফোনের ব্যাগটার সাথে ধা’ক্কা খেয়ে পরে যেতে নিতে সাফিন দ্রুত সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে নিলে ফোনগুলো ভে’ঙে যাওয়ার আওয়াজ শোনা গেলে সাফিনের মাথা হেট হয়ে গেল যেন৷ না পারছে সিরাতকে কিছু বলতে আর না পারছে সবটা গি’লতে।
— এখানে মিনিমাম ১০০ এর কাছাকাছি ফোন ছিল সিরাত। সবগুলো কাজের ছিল। আর তুমি তাঁদের মে’রে উপরে পাঠিয়ে দিলে। কাজটা কিন্তু ঠিক করোনি একদম।
—যা করেছি বেশ করেছি৷ আপনার কাজতো হবে ওই রাজনীতি-ফা’জনীতির। কথাটা বলেই সিরাত মুখ ভে’ঙালে সাফিন সিরাতের দিকে ধীর চোখে তাকিয়ে বললো।
— আজকে দিন বলে বেঁচে গেলে তুমি সিরাত। তুমি ১০০ টা কেন ২০০ ভা’ঙো ফোন তোমাকে কেউ না করত না। কিন্তু এগুলো কাজের ছিল। রাগ সামলাতে শেখো সিরাত। কথাগুলো বলে সাফিন ফোনের ব্যাগটা বের করে দেখতে নিলে প্রায় সবগুলেই ভেঙেছে কয়েকটা বাদে। কাঁ’থ হয়ে পরার কারনে এই দশা হলো ফোনগুলোর। সাফিন একটু জোরেই জুবায়েরকে ডাকতে থাকলে বেশ সময় নিয়ে জুবায়ের এসে ফোনগুলোর এই দশা দেখে চোখ বড়-বড় করে বললো।
—কিভাবে কি হলো? এটাই লাস্ট অপশান ছিল সূত্র খুঁজে বের করার।
সাফিন ব্যাগটাকে কোনোমতে উঠিয়ে সিরাতের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে বললো।
—রাতের বেলা শা’ক’চু’ন্নির উৎপাত হয়েছে আরকি। যাইহোক যে ফোনগুলো ঠিক আছে সেগুলো নিয়ে যাও আর যেগুলো মোটামুটি ভে’ঙেছে সেগুলো হেলালকে দিয়ে একটু ডাক্তার দেখিয়ে আনো। বাকিগুলো ফেলে দেও।
সাফিনের কথা শুনে হাসলো জুবায়ের। বললো।
—ওকেহ স্যার। ডাক্তার দেখিয়ে আনছি।
কথাটা বলে জুবায়ের চলে যেতে নিতে সাফিন বাঁধ সেধে বললো।
—দাঁড়াওতো জুবায়ের।
—জ্বী স্যার।
সাফিন গাঁয়ে থাকা সাদা রাঙা র’ক্তে লাল হয়ে যাওয়া শার্টটা খুলে জুবায়েরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো।
— এটাকে পু’রিয়ে দিও।
—আচ্ছা স্যার।
জুবায়ের চলে গেলে সাফিন দরজাটা ভেতর থেকে লক করে দিলে সিরাত রাগে চোখ নিচু করে রাখলো। বললো।
—ল’জ্জা করেনা একটা মেয়ের সামনে এভাবে শার্ট খুলে হিটলারের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে?
সিরাতের কথা শুনে হেসে উঠলো সাফিন।
দুষ্টুমির স্বরে বললো।
— আহা সোনা। তুমি মেয়ে কবে থেকে। অবশ্য মেয়েই বাট মহিলা। আমার বউ। আর আইন অনুযায়ী এখন আমি তোমার স্বামী। এসে জড়িয়ে ধরে চুমু খাবে, মাথায় বিলি কে’টে দিবে। মিষ্টি-মিষ্টি কথা বলবে, তা না খালি উল্টা-পাল্টা যত কথা আছে সব তোমার কাছেই পাব আমি। বড্ড বেরসিক তুমি সিরাত।
সাফিনের কথা শুনে রাগ নিয়ে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই সাফিন আলমারি থেকে টাওয়াল আর ট্রাউজার নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলে সিরাত রাগ নিয়ে সাফিনকে শুনিয়ে- শুনিয়ে বলতে লাগলো।
— আগে রাজনীতি ছেড়েছু’ড়ে তাঁরপর আমার কাছে আসুন। তাঁর আগে কিছু আশা করবেন না। আ’জা’ই’রা লোক যেন কোথাকার। আপনি সোফায় শুইয়েন আমি ঘুমাই গেলাম।
সিরাতের কথা শুনে হাসতে থাকলো সাফিন। বললো।
— আমার এত সুন্দর বউ আর এত সুন্দর খাট থাকতে আমি ওইসব সোফায়-টো’ফায় শুতে পারব না বাপু৷ সে তোমার ইচ্ছে হলেও তোমাকেও একলা শুতে দিচ্ছি না সিরাত। চুপচাপ আগের মতো মাঝখানে বালিশ দিয়ে ঘুমিয়ে পরো।
—হেহ আইসে।
—হুম আসতাছি ওয়েট।
— অস’য্যতো আপনি।
— হুম জানোইতো বিরক্তিকর লোক একজন আমিই।
সাফিনের কথার সাথে আর পেরে না উঠে মাঝখানে বালিশ দিয়ে শুয়ে পরলো সিরাত।
.
সকাল-সকাল পাখির কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভে’ঙে গেল সিরাতের। ঘড়ির দিকে তাকাতে ৫:৩০ ছুঁইছুঁই। বৃষ্টি শেষে সুন্দর এক সকালের শুরু হলো যেন। ঘাঁড় ঘুরিয়ে তাকাতে সাফিনের দিকে চোখ গেলে কেমন ঠোঁট উল্টে তাঁকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতন শুয়ে আছে যেন সাফিন৷ ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুঁটে উঠলো সিরাতের। শীতল হাতে সাফিনের এলোমেলো হওয়া ব্রাউন্ট রাঙা চুলগুলোতে বিলি কে’টে দিতে থাকলে হুট করেই হাতের দিকে চোখ যেতে সুন্দর একটা ডায়মন্ডের রিং অনামিকা আঙুলে চিকচিক করতে দেখে অবাক হলো সিরাত।
হাত দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে দেখে সাফিনের দিকে চোখ গেলে হাসলো সিরাত। সাফিনের নাকের ডগার উপরে থাকা লালচে রাঙা তিলটার দিকে তাকিয়ে রইলো অনেকক্ষণ।
—এ নিশ্চয়ই আপনার কাজ তাইনা সাফিন?
মৃদু হেসে সাফিনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে নিতে আঁচলে টান খেয়ে গেলে হাসলো সিরাত। পিছুফিরে সাফিনের দিকে তাকিয়ে নিজের আঁচলটা সাফিনের হাতে মুঠোবন্দি দেখে মৃদু হেসে সাফিনের দিকে খানিকটা ঝুঁ’কে ধীর কন্ঠে বললো।
— আপনি কখনো জানতেও পারবেন না সাফিন যে, আপনিও সিরাতের অ’স্তিত্বের সাথে গেঁ’থে গেছেন। #হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো সাফিন। উপস, সরি তুমি বলে ফেললাম আপনাকে। এটাকি খুব বেশি অপরা’ধের হয়ে গেল সাফিন?
কথাগুলো বলে নিজেই ল’জ্জা’য় পরে গেল সিরাত। শীতল হাতে সাফিনের হাত থেকে নিজের আঁচলটা ছাড়িয়ে যেতে নিতে টি টেবিলের উপরে নীল রাঙা খামের উপরে টকটকে লাল রাঙা একটা গোলাপ ফুল দেখে হাসলো সিরাত। ফুলটা হাতে নিলে তাজাই ঠেকছে সিরাতিতের। মনে হচ্ছে খুব সকালে সদ্য ফোঁটা ফুল গাছ থেকে ছিঁ’ড়ে তাঁরপর খুব যত্ন করে এনেছে কেউ।
খুশিতে চোখে পানি এসে ভর করলো যেন সিরাতের। ধীর চাহনিতে পিছু ফিরে একবার সাফিনের দিকে তাকিয়ে নীল রাঙা খামটা হাতে নিতে উপরে বড়-বড় অক্ষরে লেখা আছে
~জান। খামটা খুলে হলুদ রাঙা একটা কাগজ হাতে নিতে উপরে লেখা আছে শুভ জন্মদিন বউ। হাসলো সিরাত। খামটা হাতে নিয়ে বিছানা ছেড়ে আলমারি খুলে নিজের গোপন ডায়েরিতে ফুল সমেদ চা’পা দিয়ে রেখে আলমারির সাথে ঠে’স দিয়ে দাঁড়িয়ে ধীর কন্ঠে বলতে লাগল।
— আজকে আপনাকে হৃদয়ের কথাটা বলবোই সাফিন৷ কিন্তু স’ম’স্যা, আপনার সাথে কথা বলতে গেলেই তো ঝগ’ড়া লেগে যায় আমার। ধুর ভালো লাগে না।
.
ফ্রেশ হয়ে শাড়ি সামলে ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে গেলে সকাল-সকাল ডেকোরেশনের লোক গুলোকে ফুল দিয়ে পুরো বাড়ি সাজাতে দেখে অবাক হলো সিরাত। নিচে নামলে সকিনা টাইম অনুযায়ী দুধটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে একগাল হেসে রান্নাঘরে চলে গেলে ডাইনিংএ মোস্তাফা সাহেব আর আজাদ সাহেবকে বসে থাকতে দেখে হাসলো সিরাত। আজাদ সাহেব ফোনে সরোয়ার সাহেবের সাথে কথা বলছেন আর মোস্তফা সাহেবও তাতে তাল মেলাচ্ছেন। সেই জাবের এসে বাড়ি বয়ে খু’নের কেসটা নিয়ে আলোচনা করার পর সেদিনের ফ্লাইটটা মিস করলেও দুলালকে দেখিয়ে কেসটা ঘুড়িয়ে দেওয়ার কারনে পরের দিনই রাজবাড়ি হয়েই বিদেশে পারি জমিয়েছেন সরোয়ার সাহেব। কিন্তু রয়ে গেলেন রাহেলা বেগম। তিনি আর গ্রামে ফিরে গেলেন না।
সিরাতকে নিচে নামতে দেখে সকিনার সাথে হাতে হাত মিলিয়ে নাস্তা নিয়ে ডাইনিংএ রেখে সিরাতের দিকে এগিয়ে এসে মৃদু সাইডে নিয়ে মাথায় হাত বু’লি’য়ে দিয়ে বললেন।
— ঠিক লাগছে তো শরীর এখন?
অবাক হলো সিরাত। আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে সুধালেন।
—আমিতো অলওয়েজ ফিট। কিন্তু মাথা ভার হয়ে থাকে এই যা।তাছাড়া কি হবে?
আমেনা বেগম মুখ টি’পে হাসলেন। কন্ঠ ধীর করে বললেন।
— সকাল-সকাল তোর স্বামী আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে তাঁরপর পেইনকিলার নিয়ে গেছে আমার থেকে। আমার কাছে ল’জ্জা পেতে হবে না আম্মাজান। আমিতো মা নাকি? ডাইনিংএ বসে পর খাবার দিচ্ছি।
আমেনা বেগমের কথা শুনে আহা’ম্মক হয়ে গেল সিরাত।হা হয়ে তাকিয়ে থাকলে আমেনা বেগম চলে যেতে নিলে বাঁ’ধ সেধে বললো সিরাত।
— আম্মা বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান আছে নাকি? না মানে, এইযে এত সাজাচ্ছে!
— সন্ধ্যায় পার্টি আছে বাড়িতে। সকিনাকে দিয়ে শাড়ি পাঠিয়ে দেব সুন্দর করে পরে নিবি। আমি আজকে কাজে আছি রে আম্মাজান। অনেক গেস্টরাও আসবেন বুঝলি।
—কেন?
হাসলেন আমেনা বেগম। পিছুঘুরে সিরাতের দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে চুমু খেয়ে বললেন।
—অপেক্ষা কর নিজেই দেখতে পাবি।
মৃদু হাসার চেষ্টা করলো সিরাত।
“রাহেলা বেগম আজকে বেশ সময় নিয়ে ঘুম থেকে উঠলেন।” চোখগুলোও কেমন লাল টকটকে হয়ে তাঁর। মনে হয়না রাতে ঘুমিয়েছেন বলে। আমেনা বেগম বারবার করে বললেও এক্ষুনি খেতে বসলো না সিরাত। বরং তাঁদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে লেগে পরেছে। রাহেলা বেগম খাওয়ার পরে পান খাবেন বলে পান সেধে পাশে রাখলে রাহেলা বেগম তাঁর মোটা ফ্রেমের চশমাটা ঠিক করে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বললেন।
—ছেমরির সুবুদ্ধি হইছে তাইলে। আমেনা তোর পোলার বউর সুবুদ্ধি হইছেনি দেখতাছি।
আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললে হাসলেন আমেনা বেগম। সিরাতের দিকে তাকিয়ে বললেন।
—আলহামদুলিল্লাহ। আমার আম্মাজান।
সিরাত মাথা নিচু করে ফেললে উপর থেকে সাফিন তাঁর ব্রাউন্ট রাঙা চুলে সাই করতে-করতে নিচে নামলে আর চোখে সিরাতের দিকে তাকিয়ে থাকলে সিরাত সাফিনের দিকে চোখ করা করে তাকিয়ে চা’পা স্বরে বললো।
—এই পেইনকিলার দিয়ে কি করেছেন শুনি? নিশ্চই কালকে রাতে ওই রাজনীতি না কোন ক’ল্লা ওইসবে ব্যা’থা-ট্যা’থা পেয়েছেন? আর আম্মার কাছ থেকে আমার নাম করে নিয়েছেন যাতে আম্মার ঝা’ড়ি খেতে না হয়।
সিরাতের কথা শুনে ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি হাসলো সাফিন। সিরাতের কানের কাছে মুখ এনে শীতল কন্ঠে বললো।
— আহ্ বউ, আমিতো ওটা তোমাকেই খাওয়াতে চেয়েছিলাম। সাফিনের কথা শুনে বিরক্ত হলো সিরাত। বললো।
—আপনার ঢঙ্গে’র কথা শুনলে গা জ্ব’লে যায় বুঝলেন আপনি?
—উফ সিরাত,আমিতো তোমাকে আমার জন্য জ্ব’লতে দেখতেই চাই সুইটহার্ট।
— ম’রনদশা আমার। (কথাটা বলে সিরাত চলে গেলে হাসতে থাকলো সাফিন।) আমেনা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো।
—আম্মা নাস্তা দেও ঝটপট খাব আমি ফ’টাফ’ট।
সাফিনের কথা শুনে হেসে উঠলো সবাই। আমেনা বেগম বললেন।
— দিনকে দিন তুই কিন্তু বাচ্চাদের মতো হয়ে যাচ্ছিস সাফিন। ভুলে যাসনা এখন তোর বউও আছে। তুই এখন আর সেই বাচ্চাটি নেই।
—বাড়ির কোন কাজটায় আসেন শুনি আপনি? সারাদিন শুধু রাজনীতি আর রাজনীতি।
সিরাতের কথা শুনে সাফিন খানিক সিরাতের দিকে তাকিয়ে থেকে দুষ্টুমির স্বরে বললো।
— বাহরে বউ! তুমি এটা বলতে পরলা? এইযে তোমাকে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা চুমু খাই, আদর করি তোমার পিছনে পরে থাকি? এগুলোও কি কম কষ্টের কাজ?
সাফিনের কথা মাটিতে পরতে যতক্ষণ মোস্তফা সাহেবও সায় দিয়ে হেসে বললেন।
—কথায় যুক্তি আছে কিন্তু আমেনা। দেখছো একদম বাপকা বেটা।
— হ হবে না কেন, রতনে রতন চিনে আরকি।
আমেনা বেগমের কথা শুনে মোস্তফা সাহেব হাসলে রাহেলা বেগম বিরক্তি নিয়ে বললেন।
— ওই ছেমরা,কতা কম ক খাওয়ার সময়। এহিনে যে একজন বুড়ো মানুষ বইসা আছে হে’ডাকি চোহে পরতাছে না তোগো। পুরাই মাছ বাজার বানাই ফালাইছো বাড়িডা’রে।
রাহেলা বেগমের কথা শুনে হাসলো সাফিন। বললো।
— আরে মাই ডিয়ার জানেমন। তুমি বুড়ো হতে যাবে কেন? তুমিতো অনেক স্ট্রং তাইনা।
—সবগুলান বা’ন্দর বানাইছোত আজাদ। যেমন তুই হেমন তের পোলা আর নাতি।
আজাদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলতে থাকলে রাহেলা বেগম খাওয়া শেষ করে দ্রুত চলে গেলে সাফিনের কথা শুনে ল’জ্জায় পরে গেল সিরাত। কান থেকে যেন গরম ধোয়া বের হচ্ছে তাঁর।
—এই লোকের ল’জ্জা শ’রম যে কোনো কালেই নেই সেটা অনেক আগেই জানা ছিল সিরাতের। কিন্তু এতটাও বে’শরম ভাবেনি সিরাত। ল’জ্জায় মাথা হেট করে নিচু করে রাখলো সে।
.
নীলছে রাঙা আকাশে আজ কালো মেঘের আভাস। সন্ধ্যা নেমে পরে পাখিদের আপন নীরে ফিরে যেতে ব্যাস্ততা বাড়িয়ে দিয়েছে যেন। বাড়ি ভর্তি গেস্টরা একের পর এক চলে আসছে প্রায়। সকিনা নীল রাঙা শাড়ি বিছানার উপর রেখে গেছে অনেকক্ষণ। কালো রাঙা চাদর জড়িয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ধীর চাহনিতে আকাশের বিষন্নমাখা মুখদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে আছে সিরাত। হিমেল হাওয়ায় তাঁর কানের কাছে গুঁ’জে থাকা এলোমেলো চুলগুলো সমস্ত মুখশ্রী জুড়ে বারংবার বা’রি খেয়ে যাচ্ছে যেন। সাফিন ফ্রেশ হয়ে নীল-সাদা রাঙা শার্ট পরতে-পরতে সিরাতকে দেখার জন্য চোখ বো’লাতে থাকলে বারান্দায় গিয়ে চোখ আঁ’টকে গেলে ব্রাউন্ট রাঙা চুলগুলো পরিপাটি করে ধীর পায়ে সিরাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে সিরাতকে জড়িয়ে ধরে তাঁর উম্মুক্ত ঘাড়ের কাছে নাক ডুবিয়ে দিতে গরম উ’ষ্ণতা পেয়ে চোখ বন্ধ করে নিল সিরাত।
সাফিন ধীর কন্ঠে সিরাতের উদ্দেশ্যে বললো।
—রেডি হয়ে নিচে আসো সিরাত।
—আপনাকে কিছু বলার ছিল সাফিন।
দম বন্ধ করে কথাটা বলাতে সাফিন মৃদু হেসে বললো।
— পরে শুনছি। এখন নিচে আসো।
কথাটা বলেই সাফিন চলে গেলে চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো সিরাতের।
ধীর পায়ে রুমে আসাতে আমেনা বেগমও এসে হাজির হলেন। বললেন।
—কিরে আম্মাজান,তুই এখনও রেডিই হোসনি। তাঁরাতাড়ি রেডি হ আমি সাজিয়ে দিচ্ছি।
হাসলো সিরাত। শাড়ি হাতে ফ্রেশ হতে চলে গেলে আমেনা বেগম গোলাপ ফুল আর রজনীগন্ধা দিয়ে বানানো মালাটার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
” ভেজা চুল নিয়ে সিরাত ফ্রেশ হয়ে আসলে আমেনা বেগম একগাল হেসে সিরাতকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে হেয়ার ড্রয়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে দিয়ে সুন্দর করে খোঁপা করে দিয়ে একেরপর এক গহনা পরিয়ে দিতে থাকলে সিরাত বিষন্ন ভাবে মিররের দিকে তাঁকিয়ে রইলো শুধু। সিরাতের খোঁপায় গোলাপ আর রজনীগন্ধার মালাটা গেঁথে দিয়ে হাসলেন আমেনা বেগম। বললেন।”
—কি ভালো মানিয়েছেরে তোকে আম্মাজান।
আমেনা বেগমের কথা শুনে মৃদু হাসার চেষ্টা করলো সিরাত। আজকে মনটা কেমন যেন আনচা’ন-আনচা’ন করছে তাঁর সকাল থেকে।
অজানা ভয়ে যেন মিয়িয়ে যাচ্ছে সে। আমেনা বেগমের সাজানো হয়ে গেলে সিরাতের কাঁধে হাত রাখতে সিরাতের পা দুটো আপনা-আপনি চলতে শুরু করলে হাসলেন আমেনা বেগম। সিরাতের কাঁধে হাত রেখে তাঁকে নিয়ে সামনে আগাতে লাগলেন তিনিও।
.
~ কুছ খাছহে, কুছ পাছহে
কুছ আজনাভি এহ্সাছহে
কুছ দূরিয়া নাজদিকিয়া
কুছ হাসপারি তানহায়িয়া
কেয়া এ খুমারহে কেয়া আতবারহে
সায়াদ এ পেয়ারহে, পেয়ারহে সায়াদ
কেয়া এ বাহারহে কেয়া ইন্তেজারহে
সায়াদএ পেয়ারহে,পেয়ারহে সায়াদ…..

গিটারের টংটং আওয়াজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাফিনের মৃদু কন্ঠে গাওয়া গানের রেশটা যেন কাছের এসে বা’রি খেয়ে গেল সিরাতের। আর মাএ কয়েকটা ধাপ,তারপরই সিরাত সাফিনের মুখোমুখি হয়ে যাবে। সিরাত আর আমেনা বেগমের দিকে লাইটারের লাল-নীল আলো তাক করাতে সাফিনের শীতল চাহনিতে মা’তা’ল করাময় মুখশ্রী চোখ এড়াল না সিরাতের। নীল শাড়িতে ভাড়ি গহনায় হালকা সাজে সিরাতকে যেন মারা’ত্মক সুন্দর দেখতে লাগছে। সিরাতের গোলাপি রাঙা মুখশ্রী কেমন লাল বর্ন ধারন করে আছে যেন। এখন সাফিনের ভয় হচ্ছে। কেউ আবারনা তাঁর বউয়ের দিকে নজর দিয়ে ফেলে। কথাটা ভাবতেই নিজ মনেই হেসে উঠলো সাফিন।
—মাই কুয়িন।
” বাড়ি ভর্তি একগা’দা লোক সিরাতের দিকে গিফট হাতে এগিয়ে আসার আগেই সাফিন মনিটর অন করে দিলে সিরাতের সাথে সেই প্রথম দেখা থেখে প্রত্যেকটা পিক একেক করে সামনে ভেসে আসাতে অবাক হলো সিরাত।” সাফিনের দিকে বিষ্ময়মাখা মুখশ্রী নিয়ে তাকালে সাফিন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না দিয়ে সিরাতের হাত ডান্স করতে থাকলে সিরাতের ঘাড়ে তো কখনো গলায় সাফিনের স্পর্শ ছুয়ে গেলে দ্রুত চোখ বন্ধ করে নিল সিরাত। উপর থেকে গোলাপের পাপড়ি ঝড়ে পরতে থাকলে তাঁর মিষ্টি সুগন্ধ যেন নাকে এসে টান-টান ভাবে উষ্ণ’তা ছুঁয়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে।হুট করেই সাফিন সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে পাঁ’জাকোলা করে নিলে নিজেকে ভাসমান অনুভব করে পিটপিট করে তাঁরদিকে তাকাল সিরাত। সাফিন ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে গেলে তোহা সাফিনের কথা অনুযায়ী কেক নিয়ে হাজির হলে তোহাকে দেখে খুশিতে একরকম ভাবে সাফিনকে ছাড়িয়ে নিচে নামতে চাইলে হাসলো সাফিন।
সিরাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— সারপ্রাইজড সোনা। এত ছোটাছুটি করো কেন হুম!আমিই তো এনেছি নাকি তোহাকে? পালিয়ে তো আর যাচ্ছে না তোহা!
সাফিনের কথায় ভ্রুক্ষেপ না দিয়ে দ্রুত নিজেকে ছাড়িয়ে তোহাকে জড়িয়ে ধরলো খুশিতে।
— জান তুই এসেছিস।
হাসলো তোহা। সিরাতকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো।
— হুম জান। তোর জন্মদিন আর আমি আসব না। সেটিতো হচ্ছে না সোনা।
তোহার কথা শুনে হাসলো সিরাত। মিডিয়া এসে সিরাতকে ঘিড়ে ধরাতে সিরাত অপ্রস্তুত হয়ে গেলে সাফিন এসে শক্ত হাতে সিরাতের হাত নিজের হাতের সাথে আষ্টেপৃষ্টে ভাবে চে’পে রাখলে ধীর চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকাল সিরাত। সাফিন হাসলো শুধু। “একে-একে সবাই এগিয়ে এসে সিরাতকে উইশ করতে থাকলে গিফটগুলো জুবায়ের একটা টেবিলের উপর কারি করতে থাকলে তাঁকে দেখে হাসলো সাফিন।” দুষ্টমির স্বরপ বললো।
—বাহ,এই কাজটা তো দেখছি ভালোই পারো জুবায়ের। তা কে দিল এই কাজের দ্বায়িত্ব তোমাকে?
জুবায়ের ল’জ্জা পেয়ে গেলে সাফিন হাসলো। জুবায়েরের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে একটা বের করে মুখে দিলে জুবায়ের ম্যাচ দিয়ে জ্বা’লিয়ে দিতে-দিতে বললো।
— না মানে তোহা ম্যাম বলছিলেন তাই আরকি…
পুরো কথাটা শেষ করার আগেই সাফিন হেসে উঠলো। সিগারেটের ধোঁয়া অন্ধকারে উপরের দিকে উড়িয়ে দিয়ে বললো।
—থাক-থাক আর বলতে হবে না কন্টিনিউ করো আমি আমার বউকে দেখছি।
সাফিন চলে গেলে হাসলো জুবায়ের।
“অনেকক্ষণ পরে সিরাত একলা হয়ে গেলে তোহা সিরাতের হাত ধরে নিয়ে গিয়ে একটা কোনায় চেয়ার পেতে বসে গেলে হাসলো সিরাত। সিরাতের চোখে-মুখে হাসি দেখে তোহার মনটাও খুশি হয়ে গেল যেন। আবারও সিরাতকে জড়িয়ে ধরে সিরাতের কপালে চুমু খেয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— আজ তোকে খুশি দেখে খুব ভালো লাগছে সিরাত। বিশ্বাস কর জান।
তোহার কথা শুনে মৃদু হাসলো সিরাত। তোহাকে দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে রেখে দীর্ঘশ্বাস ছারলে তোহা সিরাতের কাঁধে থুত’নি ঠেকিয়ে শীতল কন্ঠে বললো।
—খুব ভালোবাসিস সাফিনকে তাইনা?
তোহার প্রশ্ন শুনে থ’মকে গেল সিরাত। এর কোনো উত্তর হয়না। কিন্তু বুকের ভেতরকার উথাল-পাতাল ঢেউ কিভাবে সংবরন করবে সে। হয়তোবা এই কথাটাই সত্যি যে, সিরাত সাফিনকে ভালোবাসে।
কি’ঞ্চিৎ পরিমান নিশ্চুপ থেকে মৃদুস্বরে উওর দিল।
—হুম। অনেক।
হাসলো তোহা।
—তাঁকে জানিয়েছিসতো নাকি?
সিরাতের চোখের কোনে পানি এসে ভর করলো যেন। সাফিনের সাথে তাঁর কেমন সম্পর্ক সেটা শুধু তাঁর আর সাফিনের মধ্যেই বরাদ্দ। এমনকি তোহাকেও পর্যন্ত জানতে দেয়নি সিরাত। কিন্তু আজ বড্ড উতলা লাগছে নিজেকে। হয়তো কোনো বি’পদের আগের পূর্বাভাস হবে এটা।
—খুব শিঘ্রই।
সিরাতের কথা শুনে তোহা হাসলো শুধু…..

চলবে….

হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-১৮

0

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ১৮

সকাল-সকাল রাজবাড়ির দুয়ারে পুলিশের পদধূলি পরার কারন খুঁজে পেলেন না আজাদ সাহেব। রুবেলের দিকে এক পলক তাকিয়ে ধীর চাহনিতে মোস্তফা সাহেবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
—মোস্তফা তুই পুলিশ আসতে বলেছিস নাকি বাড়িতে? তোর তো আবার উঠতে-বসতে পুলিশের সাথে মেলামেশা আছে।
মোস্তফা সাহেব না জানার সহিত আজাদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন।
— নাতো আব্বা। আমি তো নিজেই বের হতাম আজকে বাহিরে। দাঁড়াও দেখি। রুবেল ওনাদের বসার ঘরে বসানোর ব্যাবস্থা করো।
—একজনই আছেন সাহেব।
—আচ্ছা যাইহোক, আমেনা খাবার পাঠিয়ো তো ওখানে।(আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে মোস্তফা সাহেব কথাগুলো বলে হাত ধুয়ে উঠতে নিতে আমেনা বেগম বাঁ’ধ সেধে বললেন।)
— আহা, খাওয়া ছেড়ে উঠছো কেন?
— তোমরা বসো আমি যাচ্ছি ড্যাড।
সাফিন কথাটা বলে চলে গেলে মোস্তফা সাহেবও যেতে নিতে আজাদ সাহেব লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে পরলে মোস্তফা সাহেব তাঁকেও হাত ধরে নিয়ে গেলেন তাঁরসাথে। সিরাত সাফিনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছারল যেন।
— সারাক্ষণ শুধু এই খু’ন খা’রা’পি, মা’রা>মা’রি, পুলিশ এসব ছাড়া কি আর কোনে কাজ নেই আপনার সাফিন? আপনার সাথে আমার তেমন কোনো রিলেশন নেই আমি জানি,কিন্তু আপনার প্রত্যেকটা ছোঁয়া, কথা, এগুলো কিভাবে ভু’লে যাই বলতে পারেন? আমার ব্যা’কুল হৃদয় তো না চাইতেও এই কনট্রাক্টের বাহিরের জগৎ ছুঁয়ে যাচ্ছে সাফিন। যদি আবেগগুলো ভাসিয়ে দেওয়া যেত না, তাহলে হয়তো আমিই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী মানুষ হতাম৷ (মনে-মনে কথাগুলো বলে চোখদ্বয় নিচু করে ফেললে পাশ থেকে আমেনা বেগম সিরাতের কাঁধে হাত রেখে ধীর কন্ঠে বললেন।)
— তোর মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছি আমি। আমিও কখনো চাইনি তোর আব্বার মতন সাফিনও রাজনীতিতে নামুক। কিন্তু র’ক্তের টান কি আর সে কথা শুনে? আমার বিশ্বাস একমাএ তুইই পারবি সাফিনকে এই ভ’য়ান’ক পথ থেকে সুস্থ পরিবেশে আনতে।
আমেনা বেগম হসলে সিরাতের চোখদ্বয় ছলছল করে উঠলো যেন।
— আপনি হয়তো বেশি আশা করে ফেলছেন আম্মা আমাকে নিয়ে। আপনি কিভাবে জানবেন যে, এই বিয়েটা বিয়েই নয়। শুধু এবং শুধুমাত্রই একটা কনট্রাক্ট। ( মনে-মনে বলা কথাগুলো যেন দ’লা পাকিয়ে যাচ্ছে সিরাতের।)
— ওই ছেমড়া তুই খাইতে বস না কেন? কই যাবি নাকি আবার হুনলাম?
রাহেলা বেগমের কথা শুনে সরোয়ার সাহেব মৃদু হাসলেন। হাতে থাকা ট্রলিটা সিঁড়ির কাছে রেখে ডাইনিং এ বসতে নিলে আবারও রুবেল এসে সরোয়ার সাহেবকে তলপ করে গেলে সরোয়ার সাহেব ভ্রু জাগিয়ে ফেললেন যেন।
— কি যে হচ্ছে এই বাড়িতে? আমার ডাক পরলো কেন আবার! আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি।
সরোয়ার সাহেবের কথা শুনে রুবেল চলে গেলে আমেনা বেগম বললেন।
— এক দন্ড শান্তিতে খেতেও দিবে না আপনার ভাই। নিজে তো গেছে গেছেই আমার সাফিনরেও হাত করছে।
সরোয়ার সাহেব হেসে চলে গেলে আমেনা বেগম রান্নাঘরে গিয়ে খাবার সাজাতে থাকলে সকিনা আর বাকি মেডরাও হাতে হাত লাগালে সিরাত ভাবনার জগতে চলে গেল যেন। না চাইতেও বসার ঘরে কি কথা হচ্ছে সেটা জানার তী’ব্র আকাঙ্খা জাগছে যেন তাঁর মনে।
—কি এমন রাজাকার্য করছে ওখানে ব’জ্জা’তটা? ব্যাপারটা তো দেখতে হচ্ছে।
(মনে-মনে কথাগুলো বলে রাহেলা বেগমের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।)
—বুড়ো আম্মা আরেকটু তরকারি দেই আপনাকে?
— না লাগত না ছেমরি। কালকে রাইতে দুধ খাইছিলি তো নাকি? ওই সকিনা সকালে দুধ দিছোতো মনে কইরা ওরে?
রাহেলা বেগমের কথা শুনে চোখমুখ কুঁ’চকে ফেলল সিরাত। সকিনা আমেনা বেগমের দেওয়া খাবারের ট্রেটা নিয়ে বসার ঘরে যাওয়ার সময় রাহেলা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন৷
— না খালাম্মা এইডা দিয়া আহি তাঁরপর দিতাছি। সিরাত সকিনার পথ আঁ’টকে সুযোগটা লুফে নিয়ে বললো।
— আমি দিয়ে আসছি। তুমি এদিকটা দেখো।
— ওই ছেমরি,কোনো দরকার নাই তোর নাচতে-নাচতে ব্যাডা মানুষগো সামনে যাইবার! ঘরের বউগো আবার ব্যাডাগো সামনে কামকি আয়? চু’লকা’নি কম করো মনু। আমি যতদিন বাইচা আছি, এগুলান ঘুনাক্ষরেও চলবে না। যা নিজের ঘরে যা তাত্তারি।
রাহেলা বেগমের কথাগুলো কানের কাছে যেন বি’ষের মতো এসে বা’ড়ি খেয়ে খেল সিরাতের।
এতটা অ’শা’লীন কথা কেউ কিভাবে বলতে পারে কাউকে? তাও নিজে একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের চরিত্রে আ’ঘাত করে কথা শোনাচ্ছেন?
আমেনা বেগম রাহেলা বেগমের চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতেও পারছেন না। এদিকে সিরাতের চোখের পানি ছলছল করে উঠলে একরকম ভাবে মুখে কাঁপড় গুঁ’জে দৌঁড়েই সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলে সেদিকে অসহায় ভাবে তাকালেন শুধু তিনি।
—কিছু মনে করিস না আম্মাজান। আমি তোকে আগেই ওনার সম্মন্ধে জানিয়ে রেখেছি। আমি জানি তুই বুঝদার মেয়ে আমার। ভু’ল বুঝিনসনা আর তোর আম্মাকে।
(মনে-মনে কথাগুলো বলে নিশ্বাস ছেড়ে কাজে হাত লাগালেন আমেনা বেগম। ঘোর দোরের কাজ যতই হাজারটা মেড থাকুক না কেন? নিজ হাতে না করলে মনের মতন ঠিক হয়না।)
.
চায়ের কাপে চুমুক দিতে-দিতে আজাদ সাহেব সামনে বরাবর বসে থাকা ইন্সপেক্টর জাবেরের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন।
—হঠাৎ এমুখো হলে যে জাবের? জরুরি কিছু ব্যাপার আছে নাকি?
— বুঝলাম না।আমাকে কেন ডাকা হলো? আমি তো রাজনীতির ধারেকাছেই তেমন একটা ঘেঁ’ষি না। তাহলে?
সরোয়ার সাহেবের কথা শুনে মোস্তফা সাহেব জাবেরের দিকে তাকিয়ে বললেন।
—আরে কোন কাজের কথা আছে কিনা বলো। আমার আবার আজকে একটা আশ্রমে যাওয়ার কথা ছিল। কিছু টাকা আর জামাকাপড় দেওয়ার জন্য। তেরানের জন্য মাল পাঠাইছিস তো সাফিন? জুবায়ের কই? ওরে খবর দিসনি?(সাফিনের দিকে তাকিয়ে।)
মোস্তফা সাহেবের কথা শুনে সাফিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো।
—১ টার আগে মাল পৌঁছে যাবে৷ জুবায়েরকে জানিয়ে দিচ্ছি কিছুক্ষণ পরে।
“সামনে বসে থাকা সবার কথা শুনে জাবের কেমন থ’ম মেরে গেল।” গ’লা শুকিয়ে আসলে সামনে থাকা টি টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে একঢোকে পানিটুকু শেষ করে গলা ভিজিয়ে নিল সে। যতই হোক, মন্ত্রীর বাড়ি বলে কথা।কথা বলতেও কেমন তোতলাতে হচ্ছে তাঁর। এদিকে যে ইনফরমেশনটা সম্পর্কে জানতে আসছে? সেটা না জানলেও হচ্ছে না।
কিছুক্ষণ পর জ’রতা কাঁ’টিয়ে হাতে থাকা ফাইলটা আজাদ সাহেবের হাতে দিলে আজাদ সাহেব হেসে বললেন।
— এইসব দেখার বয়স কি আর আমার আছেনি জাবের। মোস্তফা দেখতো কি আছে এই ফাইলে।
মোস্তফা সাহেব ফাইলটাতে চোখ বো’লাতে থাকলে সরোয়ার সাহেব ভ্রু জাগিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলে জাবের বলে উঠলো।
— কিছুদিন আগে যে একটা গোটা আস্ত কাঁ’টা লা’শ পাওয়া গেছে সমুদ্রে? অনেক তদন্তের পর জানা গেছে লোকটা আর কেউনা,স্যার আপনার বিদেশ ফেরত ওয়াশম্যান দুলাল। মিডিয়ায় এখনও জানাজানি হয়নি ব্যাপারটা। তাহলে হয়তো এতক্ষণে হেডলাইন পরে যেত শহরে। (সরোয়ার সাহেবের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললে মোস্তফা সাহেব ভ’রকে গেলেন পুরো। জাবেরের বলা কথাগুলো ফেলে দেওয়ার মতোও শোনাল না মোস্তফা সাহেবের কাছে। কারন তিনি নিজেই কদিন ধরে নোটিশ করেছেন দুলাল বাড়িতে আসেনি পার্টির দিন থেকে। সরোয়ার সাহেবের দিকে তাকিয়ে ধীর কণ্ঠে বললেন। )
— দুলাল খু’ন হয়েছে? কিন্তু কে করবে এমন কাজ? ওতো বিদেশের লোক তাই নয় কি? ভাই তুই কিছু জানিস এ ব্যাপারে?
সরোয়ার সাহেব ভ্রু কুঁ’চকে ফেললেন যেন। বললেন৷
— কে বলেছে দুলাল খু’ন হয়েছে? আমি নিজে কিছুক্ষণ আগে ওর সাথে কথা বলেছি৷ এবং আমার বিদেশ ফেরার টিকিটটা পর্যন্ত ওকে দিয়ে কাঁ’টিয়েছি৷ ও আমার জন্য এয়ারপোর্টে ওয়েট করছে। বিলিভ না করলে ফোন দিচ্ছি কথা বলে দেখ।
সাফিন এতক্ষণ ধরে সবার কথা শুনছিল৷ এখন দুলাল নামটা শুনে কেমন মাথাচাড়া দিয়ে গেল তাঁর।
— তাঁরমানে এই দুলাল সেই লোকটা। আর ক্যামেরার লোকটা, মিরাজ চৌধুরী খু’ন। দুলাল নামটা তখনই কেমন শোনা-শোনা লাগছিল। দুয়ে-দুয়ে চার মনে হচ্ছে? কিন্তু চাচ্চুর লোক হয় কিভাবে? ব্যাপারটা যতটা ক্লিয়ার ভাবে খুঁজে বের করতে যাই, একটা না একটা প্যাঁ’চ লাগবেই৷ ডিজগাস্টিং।
“সরোয়ার সাহেবের কথা শুনে জাবের পুরো বোকা বনে গেল যেন।” সরোয়ার সাহেব ফোনকল লাগালে বসার ঘরের সবাই সেদিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে থাকলেন শুধু। আজাদ সাহেব দুইহাত ভা’জ করে মুখে ঠেস ধরে আছেন। দুশ্চি’নায় মাথা হেট হয়ে আছে যেন তাঁর।
—ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত লাগছে না স্যার? ফাইল আর টেস্টের রিপোর্ট কিন্তু অন্য কথা বলছে।
জাবেরের কথা শুনে চটে গেলেন সরোয়ার সাহেব। বললেন।
— তো আপনি কি বলতে চাইছেন, আমি মি’থ্যা কথা বলছি? আর দুলাল যদি খু’নও হয়,তাহলে সেটার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কি বুঝতে পারছি না আমি।
সরোয়ার সাহেবের উত্তেজিত মুখদ্বয় দেখে সাফিন শান্ত স্বরে বললো।
— দেখো চাচ্চু বিপ’দের কথা শুনলে মানুষের মাথা কাজ করে না আমি জানি। তাই শান্ত হও দেখো দুলাল ফোন ধরে কিনা।
জাবেরের চোয়াল বেয়ে ঘাম বয়ে গেল যেন সরোয়ার সাহেবের দিকে তাকিয়ে।
— বিষয়টা এভাবে নিচ্ছেন কেন স্যার। দেখুন আপনার কাছে আসার কারন হলো আপনার সাথেই তিনি বিদেশ থেকে দেশে এসেছেন। আর এখানে এসে খু’ন হয়েছেন, তো খবরটা আপনাকে জানালাম। আর মিডিয়া কেমন সেটা তো জানেনই। তিলকে তাল করতে ওস্তাদ যাকে বলে। আর এখানে একটা নয় এই লা’শের সূত্রধরে আরও একটা খু’ন হয়েছে থানায়। এখন আমাদের চাকরি নিয়ে টা’না>টা’নি। মন্ত্রী সাহেব তো সবকিছু জানেনই এই ব্যাপারে। সেটাই… (পুরো কথাটা শেষ করার আগেই সাফিন বাঁধ সেধে বললো।)
—আহ, এসব ছোটখাটো বিষয়। এগুলো নিয়ে এতটা মাথা না ঘামানোই ভালো।
সাফিনের কথা শেষ হতে যতক্ষণ তৎক্ষনাৎ ওপাস থেকে দুলাল ফোন রিসিভ করতে সরোয়ার সাহেব ফোনটা লাউডে দিয়ে রাখলো।
—জ্বী সাহেব৷ ফ্লাইট আর কিছুক্ষণ পরই ছেড়ে দিবে আপনি দ্রুত আসুন।
—দুলাল তুমি কোথায় আছো?
— আমিতো এই এয়ারপোর্টেই আছি।
— ওখান থেকে বাড়ি ব্যাগ করো এখনই। আজকে আমরা যাচ্ছি না কোথাও।
— আচ্ছা সাহেব।
সরোয়ার সাহেব ফোনটা কেঁ’টে দিলে দুলাল মুখের ভাবভঙ্গি পাল্টে বললো।
—সাহেবের আবার কি হলো?
কথাগুলো ভাবতে-ভাবতে গাড়ি স্টার্ট দিল দুলাল।
“কিছুক্ষণের মধ্যে দুলালের গাড়ি শাহনেওয়াজ ভিলায় প্রবেশ করে গেলে গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে- সঙ্গে সরোয়ার সাহেব গেটের কাছে এসে হাজির হলেন। “সঙ্গে মোস্তফা সাহেব সাফিন এবং জাবের। আজাদ সাহেবকে এক রকম জোর করেই সাফিন তাঁকে তাঁর রুমে দিয়ে এসেছেন। এমনিতেই বয়স হয়েছে তাঁর। এত ধকল তাঁর পোশাবে না ঠিক।
“গাড়ি থেকে নেমে পরে হুট করেই তাঁদের সমনে পরবে আশা করেনি দুলাল।” সরোয়ার সাহেব জাবেরের দিকে তাকিয়ে দুলালের উদ্দেশ্য বললেন।
— দুলাল তোমার চরনখানা এনাকে একটু ভালোভাবে দেখিয়ে দেও তো।
সরোয়ার সাহেবের কথা শুনে দুলাল কিছু না বুঝতে পারলেও জাবের চোখ-মুখ কালো করে নিচু করে রাখলে সাফিন বিষয়টা ভালো দেখায়না ভেবে মাথা চুলকে বললো।
—যাইহোক, অনেক হয়েছে এসব। এখন সবাই ভিতরে চলো। ড্যাড, চাচ্চু চলো। জাবের চলো খেয়ে-দেয়ে একসাথে যাবেনে তুমিও।
জাবের মাথা নিচু করে রাখলে সাফিন হেসে বললো।
—আরে জাবের। এসব বাদ দেও এখন। তোমার প্রফেশনটাই তো এটা৷ আর তুমি আমাদের অনেক পুরোনো দিনের লোক।
মোস্তফা সাহেব জাবেরের পিঠ চা’পরে বললেন।
— এসব নিয়ে ভাবলে আর রাজনীতি করা লাগত না তোমাদের। যাও কাজে যাও। সবাই পা’গলের দলবল একেকটা। আর হ্যা, তোমার চাকরি নিয়ে টেনশনের কারন নেই। ব্যাপারটা মিডিয়া ছড়িয়ে গেছে বলে এতদূর ঘনিয়েছে। খোঁজ চালিয়ে যাও ঠিক পেয়ে যাবে৷ বেস্ট অফ লাক মাই সের৷
জাবের হেসে বললো।
—ইনশাআল্লাহ আপনাদের দোয়া আর আল্লাহর রহমত থাকলে ঠিক হবে।
—ভেতরে আসো এখন।
— না আজ নয়৷ অন্য দিন এসে পাত পেরে খেয়ে যাব।
হাসলেন মোস্তফা সাহেব।
.
—জুবায়ের ড্যাডের তেরান দেওয়ার ব্যাপারটা খেয়াল রেখো৷ দ্রুত যাও। আর হ্যা, রাজবাড়ীর পেছনে পাওয়া লা’শটার কি খবর?চেনো লোকটাকে?
—না স্যার। হেলাল-মোহন কেউ চিনে না। বায়োডাটা কালকে পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।
—হুম যাও তাহলে এখন। আমি দেখি আমার বউ কি করছে।
জুবায়ের হেসে চলে গেলে সাফিন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নিতে হুট করে তাঁর তিরিক্ষি চোখদ্বয় নিচের দিকে চলে গেলে দুলালের পায়ের দিকে তাকাল।
— নাহ,লেকটা তো ঠিক ভাবেই হাঁটছেন! কিন্তু, দুলালের একটা পা তো ঠিক ছিল না! এটাকি শুধুই আমার চোখের ভু’ল নাকি এর মধ্যেও কোনো রহস্য আছে?
কথাগুলো ভাবতে-ভাবতে উপরে এসে দরজা চা’পানো দেখে মৃদু ঠেলে ভিতরে ঢুকতে অন্ধকার রুমটা দেখে চমকে গেল সাফিন।
— এই দিনের বেলা কেউ দরজা-জানালা, লাইট বন্ধ করে রাখে! আমার বউটা একেবারে যাচ্ছে তাই।
কথাগুলো বলে লাইটের সুইচ চে’পে লাইট অন করে দিলে চারিপাশে চোখ বু’লিয়ে সিরাতকে দেখতে না পেলে ভ্রূদ্বয় ভা’জ হয়ে এলো সাফিনের। হুট করেই বুকের ভিতরটা কেমন যেন মো’চর দিয়ে উঠলো তাঁর। দ্রুতগতিতে ওয়াশরুম, বারান্দা সবকিছু দেখা হয়ে গেলেও সিরাতকে দেখতে না পেয়ে নিজেকে কেমন পা’গল-পা’গল মনে হলো তাঁর।
—সিরাত, এই সিরাত, সোনা তুমি কোথায়? এই সিরাত? আমি আর পাঁচ গুনব, বেড়িয়ে আসো জান প্লিজ।
কিছুক্ষণ ডাকা>ডাকির পরও যখন সিরাতের সাড়াশব্দও পেল না সাফিন। তখন দ্রুত পায়ে দরজা ঠেলে নিচে যেতে নিলে কিছু একটা আঁ’চ করতে পেরে একপা পিছিয়ে আসলো সে। ক্লান্ত শরীরে ধীর পায়ে এসে খাটের পাশ ঘেঁষে ফ্লোলে বসে থাকা সিরাতের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ সময় একটা শ্বাস ছাড়লো সাফিন। নিজেও সিরাতের পাশ ঘেঁষে ফ্লোরে বসে পরলো।
সিরাত দুই হাত দিয়ে তাঁর হাঁটুদ্বয় জাপ্টে ধরে হাঁটুতে মুখ লুকিয়ে খাটের এক কোনে ঘাপটি মেরে বসে ছিল।
— কি হয়েছে ? এমন ভাবে বসে আছো তুমি যেন তোমার জামাই ম’রে গেছে এমন?
সাফিনের কথাগুলো কানের কাছ ঘেঁষে অন্তর্নিহিত হলেও সিরাত কোনো প্রতিত্তোর করলো না।
সিরাতকে নিশ্চুপ ভাবে বসে থাকতে দেখে রাগ রাগলো সাফিনের। আগের থেকে কন্ঠে একটু গাম্ভীর্যের সহিত বললো।
—কি হয়েছে বলবে তো নাকি? দেখো সিরাত, সকাল থেকে মাথা এমনিতেই প্রচন্ড তারাকের গর’ম হয়ে আছে৷ তাঁর উপর এখন আবার তোমার ন্যাকামো! আর এক সেকেন্ড স’য্য করবো দেন তুমি রেসপন্স না করলে আই সয়ার, আজকেই বাসর করে ফেলব৷
সিরাত আগের মতোই বসে থাকলে সাফিনের এবার মাথায় র’ক্ত উঠে গেল যেন। শক্ত হাতে সিরাতের দুইহাত দেয়ালের সাথে চে’পে ধরলে সিরাতের কান্নাভেজা মুখদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে ভ’রকে গেল সাফিন। হৃদয়ের মাঝে যেন প্রবল ঝড় বয়ে যাচ্ছে তাঁর। সিরাতের কান্না ভেজা ফো’লা চোখদ্বয় আর অতিরিক্ত হেঁ’চকি উঠে যাওয়ায় গোলাপি রাঙা মুখশ্রী কেমন লাল হয়ে উঠেছে।
সাফিনের হাতের বাঁধন আপনা-আপনি আলগা হয়ে এলে সিরাত সাফিনের হাত ছাড়িয়ে দিয়ে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে থাকলে সাফিনের হৃদয় ব্যা’থিত হলো। কয়েকটা ঢোক গি’লে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো।
—কেঁদেছো কেন? কি হয়েছে হুম?কেউ কিছু বলেছে তোমায়? একটাবার শুধু নামটা বলো, আজকের মধ্যে তাঁর লা’শ নদীতে ভা’সিয়ে দেব।
— বুড়ো আম্মা।
সিরাতের কান্নার কন্ঠে সহজ প্রতিত্তর পেয়ে চুপ হয়ে গেল সাফিন। খানিক বাদে নিশ্বাস টে’নে সিরাতের কপালে গাঢ় ভাবে চুমু খেয়ে সিরাতের কান্নার নোনাজল ঠোঁটের স্পর্শ ছুয়িয়ে সরিয়ে দিতে থাকলে চোখ বন্ধ করে নিল সিরাত।সাফিনের ঘন-ঘন নিশ্বাস সিরাতের চোখেমুখে আছরে পরতে থাকলে দুই জনের নিশ্বাস যেন একসূত্রে ওঠানামা করতে থাকলো। সাফিনের প্রতিটা স্পর্শ খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করতে পারছে সিরাত। কান্নাগুলো যেন আরও হা’মলে পরছে তাঁর চোখে।
— এই বাঁ’ধাহীন স্পর্শের কোনো নাম কি দিবেন সাফিন? হয়তো আমি যখন থাকব না তখন আমি না হয়েও আপনার মাঝে রয়ে যাব।
(মনে-মনে কথাগুলো বললেও মুখ ফ’সকে ভু’লেও কথাগুলো সাফিনের কাছে প্রকাশ করলো না সিরাত)
— চলো একটা জায়গায় যাওয়া যাক।
— নাহ, যেতে ইচ্ছে করছে না।
—চুমু খাই তাহলে? আপনা-আপনি যেতে ইচ্ছে করবে তখন।
—পা’জি ছেলে যেন কোথাকার।
হেসে উঠলো সাফিন। সিরাতের ঠোঁটে মৃদু কাঁ’মরে দিয়ে বললো।
— তোমার আমাকে দেওয়া গা’লি গুলো শুনে আগে ইচ্ছে করতো তোমার গ’লাটা টি’পে দেই। কিন্তু আশ্চর্য, এখন এগুলোই ভালো লাগে।
— আমি যেটা ফিল করতে করতে পারি।আপনিও কি আমার জন্য সেটাই ফিল করতে পারেন সাফিন? সিরাতের অস্পষ্ট স্বরে বিরবির করে বলা কথাগুলো সাফিনের কানের কাছে না পৌঁছাতে সাফিন বললো।
—কিছু বললে?
— নাহ। চলুন কোথায় যাবেন নাকি?
—হুম চলো। কথাটা বলেই যেতে নিয়েও আবার ফিরে তাকাল। সিরাতের লাল হয়ে ওঠা মুখশ্রীর দিকে শীতল চাহনিতে তাকিয়ে পাঁ’জাকোলা করে নিল সিরাতকে। হুট করে সাফিনের এমনধারা কান্ডে ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠলেও প্রকাশ না করে বিরক্তি দেখিয়ে সাফিনের নীল রাঙা শার্ট হাতের মুঠোয় আঁ’কড়ে রাখলো সিরাত।
—ভালোবাসা কিনা জানিনা। তবে আমার লাইফের ফার্স্ট পুরুষ আপনি। যাকে আমি আমার গন্ডির বাহিরে গিয়ে তী’ব্র ভাবে চোখে হারাচ্ছি।
কি পা’প করেছিলাম আমি? যে আমার জীবনটা এমনভাবে এলোমেলো হয়ে গেল। কি অদ্ভুত তাইনা, হ্যা মি’থ্যা হলেও সত্যি এটাই মানতে হবে যে আপনি ঠিক একবছর পর বা তাঁর আগেই আমাকে ছুুঁ’ড়ে ফেলে দিবেন। ভালোবাসা সত্যি ভয়ংকর। (হৃদয়ের মাঝে কথাগুলো ছন্দের হারে বাজতে থাকলে চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো সিরাতের।)
.
নীলছে রাঙা গগনের বুকে আজ এক রাশ বিষন্নতার দেখা মিলছে। কখন হয়তো দেখা গেল ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হবে। রাজবাড়ীর প্রশস্ত ছাঁদে পা দুলিয়ে বসে আছে দুজন৷ সিরাত ভয়ে একেবারে গু’টিশু’টি দিয়ে গেছে। এই না সে আবার পরে গিয়ে পৃথিবীর মা’য়া ত্যা’গ করে ফেলে। সাফিন তাঁর দিকে তাকিয়ে হাসছে শুধু।
প্রায় পুরো ছাঁদজুড়েই রংবেরঙের ফুলগাছের সমারোহ।বোঝাই যাচ্ছে কেউ প্রতিনিয়ত একটু-একটু করে যত্ন নিয়ে এই বাগান গড়ে তুলেছে। নিচে রয়েছে উত্তরের ঘন জঙ্গল আর দীর্ঘ জায়গা নিয়ে পদ্ম দিঘি। সিরাত চোখ খিঁ’চে বন্ধ করে বিভিন্ন ফুলের মা’তো’য়ারা সুগন্ধি উপলব্ধি করছে।
সাফিন সিরাতের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হাতটা সিরাতের কোমর স্পর্শ করে গেলে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। সঙ্গে- সঙ্গে বন্ধ চোখদ্বয় খুলে ফেললে সাফিনের ধীর কন্ঠের রেশ মন ছুঁয়ে গেল তাঁর।
— তুমি সেই মা’য়াবীনি মোহিনী সিরাত। যাঁর অন্তরের ধুকপুক শব্দ ধ্বনিতেও এই শাহনেওয়াজ সাফিনের হৃদয়ে অবেলার মেঘে ছেঁয়ে যায় বর্ষনে।
অদ্ভুত ভালোলাগা,খা’রাপ লাগাগুলোও যেন ঠিক প্রকশ করতে পারছে না সিরাত। শুধু চোখ বন্ধ করে সাফিনের বলা প্রতিটা কথাগুলো উপলব্ধি করতে থাকলো সে।
.
ভরসন্ধ্যা বেলা আজাদ সাহেবের রুমে সাফিনের তলপ পরাতে ধীর পায়ে আজাদ সাহেবের রুমের সামনে এসে দরজায় নক দিতে আজাদ সাহেব বলে উঠলেন।
—ভিতরে আয় সাফিন। তুই আবার কবে থেকে নক করে আশা শুরু করলি?
সাফিন হেসে দরজা লক করে ভিতরে আসলে আজাদ সাহেব বিছানার উপর বেশ কয়েকটা ফাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করছেন দেখে সাফিন এক পলক সেদিকে তাকিয়ে বললো।
— এগুলো কি ইয়াংম্যান?
—এখানে বোস আগে।
আজাদ সাহেবের কথা শুনে সাফিন পাশ থেকে মরা টেনে বসে ঘাঁ’ড়ের পেছনটাতে হাত বোলাতে- বোলাতে বললো।
—হুম এবার বলো দেখি এগুলো কি?
আজাদ সাহেব কিছু একটা ভেবে ফাইগুলোতে ঝটপট সাইন করে দিয়ে সাফিনের দিকে তুলে দিয়ে বললেন।
— আমার জাবতীয় যা বিষয়সম্পত্তি আছে, এই ধর গ্রাম, শহর মিলিয়ে-মিশিয়ে যেগুলো আছে, সেগুলো সবকিছু তোর আর আমার নাতিবৌ সিরাতের যে সন্তান এই পৃথিবীতে আসবে? তাঁর নামে করে দিয়েছি। আমি ম’রে যাওয়ার পর বা সে আশার সঙ্গে- সঙ্গে এই বুড়োর সবকিছু তাঁর নামে হবে। শুধু রাজবাড়ীটা তোর থাকবে। আমি উকিলের সঙ্গে কথা বলে সবকিছু ফিক্সড করে ফেলেছি। তোকে কিছু করতে হবে না।
আজাদ সাহেবের কথা শুনে থ’মকে গেল সাফিন।
—এটা কি করলে তুমি নানু? তোমার মাথার ঠিক আছে তো? যে এখনও আসেইনি এই পৃথিবীতে তাঁকে সবকিছু লিখে দিলে?
—তুই চুপ থাক ব্যাটা। আমি যা করেছি একদম ঠিকঠাক এবং বুঝেশুনেই ঠিক ডিসিশন নিয়েছি।
সাফিনের মাথা কেমন ঘুরপাক খেয়ে গেল যেন।
— তুমি কিভাবে জানবে নানু,এই বিয়েটা তো কোনো বিয়েই নয়। উফ, কি করলে এটা তুমি।
(কথাগুলো মনের মাঝে উথাল-পাতাল ঢেউয়ের সৃষ্টি করতে থাকলে ফাইলগুলো হাতে নিয়ে প্রত্যেকটা পৃষ্ঠা উল্টেপাল্টে দেখে নেওয়ার পর নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিঁ’ড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে সাফিনের।
হুট করে জুবায়েরের ফোনকল আসাতে ফাইলগুলো হাতে নিয়ে আজাদ সাহেবের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করতে হাসলেন তিনি। বললেন।)
—হইছে-হইছে যা তুই যেথায় যাওয়ার।
সাফিন দরজা খুলে বের হতে নিতে ফ্লোরে কারো কালো রাঙা কোনো মানুষের অবয়ব লাইটারের আলোয় স্পষ্ট চোখে পরতে দ্রুত সেদিকে তাকালে দক্ষিণা উত্রা হাওয়ায় দক্ষিণ দিকে টানানো সাদারাঙা পর্দাগুলো নড়তে থাকলে সাফিনের তিরিক্ষি চোখদ্বয় যেন সেদিকে বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাকিয়ে রইলো।
—কেউ তো আছে যে, আমার গতিবিধি সবকিছু পরখ করে। কিন্তু, পেছন থেকে গুটি যতই সাজাও না কেন? পাশা খেলায় হাড় মানতে কখনোই রাজি নয় এই শাহনেওয়াজ সাফিন…..

চলবে…….