হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-২৪

0
218

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ২৪ (#রহস্য_ভেদ_স্পেশাল_পর্ব। ১)

❌ ভেতরে কিছু জায়গায় অশা’লীন কিছু যুক্ত করা হয়েছে গল্পের প্রয়োজনে। তাঁর জন্য ক্ষ’মাপ্রার্থী।❌

—আপনার এই হাসির প্রেমে পরেছি বহুদিন আগে সাফিন।একমুঠো রোদও তাঁর আলোকে মুঠোবন্দি করার জন্য একটিবার হলেও সুযোগ খুঁজে দেয়। আমিও নাহয় আর একটু নির্ল’জ্জ হয়েই আপনাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিচ্ছি। পারলে এবার আমাকে বৃষ্টির শিহরনে হৃদয় গহীনে আগলে রেখে দেখান। কথাটা মনে-মনে ভাবান্তরে ছেদ করলেই দীর্ঘশ্বা’স বেড়িয়ে আসতে চাইছে সিরাতের। বি’ষন্ন মুখদ্বয় গাড়ির কাঁচ ভেদ করে বাহিরে বাড়িয়ে দিলে সাফিন তাঁর দিকে নির্বিকার চাহনিতে তাকিয়ে মৃদু হেসে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিল।
—তোমার আর আমার মাঝে পার্থক্য কি জানো সিরাত? আমার তোমার মাঝে প্রবল বেগে মিশে যাওয়া, আর তোমার আমাকে বুঝেও অবুঝ থাকা।
সাফিনের কথাটা সিরাতের অন্তরে এসে ছেদ করে গেলে ছলছল করে উঠলো যেন তাঁর চোখদ্বয়। ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইছে শুধু একরাশ দী’র্ঘশ্বাস।
.
দক্ষিণা ঝড়বৃষ্টি মাথায় করে গাড়ি এসে রিসোর্টর সামনে দাঁড়াতে জুবায়ের দ্রুত ভেতর থেকে ছাতা হাতে তাঁদের দিকে এগিয়ে এসে একগাল হেসে বললো।
—স্যার ভিতরে গেস্টরা সব এসে পড়েছে। সব ঠিকঠাক আছে। এখন মেইন যাদের উদ্দেশ্যে পার্টিটা করা তাঁরা ভেতরে গেলেই হয়।
সাফিন মৃদু হেসে গাড়ি থেকে নেমে পরলে জুবায়ের সাফিনের মাথায় ছাতা ধরে দাঁড়াতে জুবায়েরের হাত থেকে ছাতাটা নিয়ে নিল সাফিন। ধীর পায়ে সিরাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে গাড়ির দরজাটা খুলে দিয়ে সিরাতের দিকে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলে তাঁদেরকে দেখে জুবায়ের হাসলো শুধু। বৃষ্টির উ’ষ্ণতা তাঁর চুল স্পর্শ করে যাচ্ছে যেন। হাত দিয়ে নিজের মাথার ঝাঁকরা চুলগুলো পেছন থেকে মৃদু আঁ’কড়ে ধরে বললো।
—স্যার আমি তাহলে সংগঠনের দিকটায় গেলাম। হেলাল আর মোহন একা-একা কি করছে কে জানে?
জুবায়েরের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে হাসলো সাফিন। চোখ দিয়ে ইশারা করতে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরলো জুবায়ের।
সিরাত এক পলক সাফিনের হাতের দিকে তো আরেক পলক সাফিনের দিকে তাকিয়ে রইলে ভ্রু কি’ঞ্চিৎ পরিমান জাগিয়ে ফেলল সাফিন।মৃদু হেসে ধীর কন্ঠে বললো।
— কি কোলে নিতে হবে তোমাকে?
সিরাত চোখ বড়সড় করে নিলে সাফিন হো-হো করে হেসে উঠলো। বললো।
— বউ আমার গাড়ি থেকে না নামতে চাইলে তো তাঁকে কোলে করেই নামাতে হবে তাইনা?
সাফিনের কথা শুনে তাঁকে চোখ রাঙা’ল সিরাত। সাফিনের হাতের উপর হাত না রেখে উঠতে নিতে সাফিন সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের দিকে টে’নে আনলে ছাতা ভেদ করে বৃষ্টির রেশ খানিকটা শরীর স্পর্শ করে গেলে কেঁ’পে উঠলো যেন সিরাত। বিরক্তিতে চোখ মুখ খিঁ’চে রেখেছে যেন সে।
— ছাড়ুন আমাকে? এটা পাবলিক প্লেস সাফিন!
—তো কি হয়েছে?
সাফিনের সোজাসাপটা উত্তরটা যেন খুব একটা সুখকর লাগলো না সিরাতের। নাক মুখ কুঁ’চকে ফেলল সে। সাফিনকে ধা’ক্কা দিতে গেলে সাফিন সিরাতের হাতদুটো নিজের বুকের উপর চেঁ’পে ধরলে সাফিনের হৃদয়ের ধুকপুক শব্দের রেশ অনুভব করতে পেরে শিতল হয়ে আসলো সিরাতের ধীর চক্ষুদ্বয়। কোমল চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে সাফিন মৃদু হেসে শুকনো ঠোঁটদ্বয় ভিজিয়ে নিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— আমার হৃদয়ের ব্যা’কুলতার জন্য প্রধান কারন হলে তুমি সিরাত। হয়তো তোমাকে ক’ষ্ট দিয়েছি আমি? কিন্তু নিজেও প্রতিটাখন অশান্তি’তে ডু’বে রয়েছি।ট্রাস্ট মি জান।ভালোবাসি তোমাকে। আর কি করলে তুমি বুঝবে আমাকে বলো? সাফিনের গভীর দৃষ্টিতে আর চোখ রাখতে পারলো না সিরাত। চোখ ছলছল করে উঠলে চক্ষুদ্বয় নামিয়ে ফেলল দ্রুত।
— যেখানে নিয়ে এসেছেন? সেখানে চলুন সাফিন। আর কিছুক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে নির্ঘাত বৃষ্টিতে ভিজে নেয়ে একসাট হয়ে যাব আমরা। সিরাতের শীতল কন্ঠের রেশ সাফিনের কানে এসে পৌঁছাতে সিরাতের দিকে শীতল চাহনি নিক্ষেপ করে শীতল হাতে সিরাতের কোমর স্পর্শ করে বৃষ্টির উষ্ণ’তায় ছেঁয়ে পরা গাড়িটার উপর বসিয়ে দিলে হিমেল স্রোতে সিরাতের সমস্ত শরীর কেঁ’পে উঠলো যেন ভয়ে। কয়েকটা ঢোক গি’লে সাফিনের দিকে তাকাতে সাফিন বাঁকা হাসি হেসে সিরাতের হাতে ছাতাটা ধরিয়ে দিয়ে সিরাতের সামনে হাঁটু গে’ড়ে বসে পরলে সিরাত ড্যা’ব>ড্যা’ব করে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলো শুধু।
—কি করছেন সাফিন!
—প্রেয়সীর হৃদয়ে নিজের প্রতিচ্ছবি গুছিয়ে নিতে চাইছি। কথাটা বলেই একগাল হেসে পকেট থেকে পায়েল বের করে সিরাতের সামনে ধরতে বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সঙ্গে পায়েলের আওয়াজটাও কেমন মিলেমিশে সিরাতের কানের কাছে এসে অন্তর্নিহিত হতে থাকলে সাফিন সিরাতের “পা” টা হাঁটুর উপর রাখতে তব্দা খেয়ে গেল সিরাত। কিছু বলার আগেই সাফিন মুখে আঙুল দিয়ে চুপ থাকতে বলে পায়েলটা সিরাতের পায়ে পরিয়ে দিয়ে ধীর ভাবে উঠে শীতল হাতে মৃদুভাবে সিরাতের হাতটা হ্যাঁ’চকা টা’ন দিয়ে নিজের কাছে আনতে সিরাতের নিশ্বাস কেমন ভারি হয়ে আসলো যেন। বৃষ্টির প্রতিটা উষ্ণ’তাময় স্পর্শ ধরনী ছুঁয়ে তলদেশে ধা’বিত হওয়াটা যেন প্রগর ভাবে উপলব্ধি করতে পারছে সিরাত।
সাফিনের হাতের স্পর্শ কোমর ছুঁয়ে পাঁ’জাকোলা করে নিলে দিগন্তের গ’র্জনময় প্রখর বর্ষনপাত কানের কার্নিশ ঘেঁষে বা’রি খেয়ে যাচ্ছে যেন।
“ধীর পায়ে রিসোর্টের ভিতরে প্রবেশ করে গেলে উপর থেকে গোলাপের লালরাঙা পাপড়ি গুলো শরীর স্পর্শ করে ঝরে গিয়ে গোলাপের মিষ্টি সুগন্ধির সাথে সাফিনের শরীরের চিরচেনা পারফিউমের ঘ্রা’নটা মিলেমিশে গেলে যেন মা’থাচারা দিয়ে যাচ্ছে সিরাতের চোখমুখ।” সমস্ত শরীর কেমন অ’বশ হয়ে আসছে তাঁর। মনটা অস্থি’র হয়ে আসলে সাফিনের ঠোঁটের মৃদু স্পর্শ কপালের কাছে অনুভব করতে পেরে শীতল চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকাতে সাফিনের মা’দকময় দৃষ্টিতে দৃষ্টিস্থির হয়ে পরলে সাফিন মৃদু হেসে সিরাতকে শীতল হাতে কোল থেকে নামিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলে সামনে তাকালে শুধু চারিদিক অন্ধকারই দেখতে পাচ্ছে সিরাত। ভয়ে একপা পিছিয়ে গিয়ে সাফিনের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পরলে হুট করেই লাইটারের লাল নীল রাঙা আলো সিরাতের চোখেমুখে এসে সা’জোরে ছেঁ’য়ে পরতে থাকলে হঠাৎ তী’ব্র আলোয় চোখ বুঁজে আসতে চাইছে যেন সিরাতের। আলো ঠেকাতে হাত দিয়ে সামনে আগলে রাখলে সাফিন মৃদু হেসে উঠলো শুধু। সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টে’নে এনে কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীর কন্ঠে বললো। Happy anniversary জান। সাফিনের শীতল কন্ঠস্বর সিরাতের কানের লতিতে এসে তী’ব্র ভাবে আ’ঘাত হেনে গেলে থ’মকে গেল সিরাত।বুকের ভেতরটা কেমন ধুকপুক করে উঠছে তাঁর। হুট করেই লইট জ্ব’লে উঠলে স্টেজের সামনে একগা’দা মানুষের হাত তালি আর সিটির আওয়াজ শুনে আর চোখে সেদিকে তাকালে এত-এত লোকজনের সমারোহ দেখে নিজেকে সাফিনের বুকের উপর আবিষ্কার করে ল’জ্জায় ম’রে যেতে ইচ্ছে করছে যেন সিরাতের। দ্রুত সাফিনের বুক থেকে নিজেকে সরাতে যেতে সাফিন সিরাতকে আরও হ্যাঁ’চকা টা’ন দিয়ে নিজের কাছে এনে শীতল কন্ঠে বললো।
— ভালোবাসা কি জানা ছিল না আমার সিরাত। যার তী’ব্র গহীনতাও কখনো উপলব্ধি করতে পারিনি আমি। তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে প্রতিটাখন ভয়ে কাঁ’টিয়েছি আমি। যেটার তী’ব্র য’ন্ত্রণাটাও হয়তো কখনো তোমাকে বোঝাতে পারব না আমি! কিন্তু শুনে রাখো তুমি, প্রেয়সীর নামটা যে হৃদয় গহীনে গেঁথে ফেলেছি আমি। #হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো সিরাত। ভালোবাসি তোমাকে।
সাফিনের প্রতিটা শীতল কন্ঠের রেশ কান ছুঁ’য়ে স্পর্শ করে গেলে বাহিরের বর্ষনপাতের রেশ যেন এবার সিরাতের চোখের কোনে এসে হেলে পরতে থাকলো। অশ্রুশিক্ত নয়নে সাফিনের দিকে তাকালে সাফিন সিরাতের মাথার পিছনে হালকা হাত রেখে ঠোঁটের স্পর্শ ছুঁয়িয়ে নিজের হৃদয়ের প্রেয়সীকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।
“স্টেজের উপরে ওয়েটাররা কেকের ট্রলিটা নিয়ে এগিয়ে আসলে সাফিন সিরাতের কপালে চুমু খেয়ে ট্রলিটার উপর থেকে গোলাপ ফুলের গোছাটা হাতে নিয়ে সিরাতের সামনে আবারও নত হয়ে বসে পরে সিরাতের সামনে এগিয়ে দিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।”
—ভালোবাসি সিরাত। সাফিনের মৃদু কন্ঠের রেশে কেঁ’পে উঠলো যেন সিরাত। নিশ্বাস আঁ’টকে যেতে চাইলে সাফিনের গ’লা শোনা গেল।
—প্রেয়সীর অভিযো’গের পেয়ালা যেমন ভারি? আমার অভিমানের স্তর তেমন ধীর। তবেকি প্রেয়সির থেকে সত্যিই এই অধমের জন্য একটু হলেও শীতলতা আসবে না? সাফিনের কন্ঠ কঁ’পতে থাকলে সিরাতের অন্তরের তো’লপা’ড় গুলো কেমন দৃঢ় হতে থাকলো। চারপাশে লালরাঙা পর্দায় গোলাপের সাজে সজ্জিত রিসোর্টটা থেকে বৃষ্টির সহিত গোলাপের সুগন্ধির মিষ্টি হাওয়ার মিশ্রিন সিরাতের নাকের কাছে ছেঁ’য়ে গিয়ে তাঁর অস্তি’ত্বের জানান দিয়ে যাচ্ছে যেন। কয়েকটা ঢোক গি’লে কাঁ’পা>কাঁ’পা হাতে গোলাপের গোছাটা হাতে নিতে সাফিনের ঠোঁটের কোনে হাসির রেশ ফুটে উঠলো যেন। গেস্টরা সবাই তাঁদের নিয়ে ভিডিও করতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো যেন। সাফিনের কড়া রকমের আদেশে মিডিয়ায় কথাটা পাঁ’চকান করতে নিষেধ হওয়া সর্তেও মিডিয়ার চোখ এড়াল না ব্যাপারটা। হুট করেই মিডিয়া এসে তাঁদের দিকে বিভিন্ন প্রশ্ন ছুঁ’ড়ে দিতে থাকলে সাফিন তাঁদের দিকে এগিয়ে যেতে নিতে পিছুটা’ন অনুভব করলে। সিরাতের কোমল হাতের স্পর্শ সাফিনের হাতটা ধরে ফেললে চমকাল সাফিন। পিছু ফেরার আগেই সিরাতের ধীর কন্ঠের গান তাঁর কান ঘেঁষে পৌঁছাতে থ’মকে গেল সাফিন।

~ যা তুঝে মা’ফ কিয়া
পেয়ারকি রাহামে মুঝকো ছোরনে ওয়ালে।
যা তুঝে মা’ফ কিয়া,
দিলকো তোরনে ওয়ালে।
ছিতাম এ খুপায়া, কিউ পেয়ার বানায়া?
জো লুটে দিলকা ঝাহা।
দিল ইতনা রুলায়া,হে গামে মুচকো রায়া,
কে আপনে হে আনজানা…
টুটকার পেয়ার কারে দিলজো বিখার যাতাহে।
ইস্কতো সামনে আখোকে কিউ কার জাতাহে।
আপনে ধারকানকো মেরে দিলছে জোরনে ওয়ালে।
যা তুঝে মা’ফ কিয়া দিলকো তোরনে ওয়ালে….
“গানের সঙ্গে- সঙ্গে সাফিনের কাছে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে শীতল চাহনিতে তাঁর দিকে তাঁকিয়ে এক হাতে সাফিনের শার্টের কলারটা টে’নে ধরে নিজের মুখোমুখি এনে অন্য হাতে সাফিনের পকেট থেকে ব’ন্দু’কটা বের করে সাফিনের বুক বরাবর ধরতে সিরাতের হঠাৎ এ রকম আচারনে সাফিন কেমন তব্দা খেয়ে গেল যেন। ”

~বোঝহে দিলপে মোহাব্বাতকা উতারু ক্যাছে?
কেহকে দো বোলপে এক উমর গুজারু ক্যাছে?
রাখদিপে মানপে আপনোকো ভু’লনে ওয়ালে,
যা তুঝে মা’ফ কিয়া দিলকো তোরনে ওয়ালে। ছিতাম এ খুপায়া, কিউ পেয়ার বানায়া?
জো লুটে দিলকা ঝাহা।
দিল ইতনা রুলায়া,হে গামে মুচকো রায়া,
কে আপনে হে আনজানা…
“সিরাত সাফিনের ঘাড়ের কাছে মৃদু কাঁ’ম’রে দিলে চোখ বন্ধ করে সাফিন।” ধীর কন্ঠে বললো।”
— কেয়া সিন এ জানস? সবাই কিন্তু এখনও আমাদেরকে দেখছে? সাফিনের দুষ্টু’মি মিশ্রিত কন্ঠস্বর শুনে সিরাত মাথা নিচু করে ফেললে সাফিন পেছন থেকে সিরাতের হাতটা ধরে নিয়ে বন্দু’কটা নিয়ে গিয়ে পকেটে পু’রে নিয়ে সিরাতের দিকে কয়েকধাপ এগিয়ে গিয়ে সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টে’নে এনে সিরাতের মাথার পেছনে হাত ঠেকিয়ে দিয়ে রিসোর্টের একগা’দা মানুষের সামনে সিরাতের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিতে গেস্টরা কেউ-কেউ ল’জ্জায় হা হয়ে গিয়ে চোখ ঢেকে ফেলছেন তো কেউ-কেউ তাঁদের দিকে ভ্রু জাগিয়ে তাকিয়ে দেখছেন। সাফিনের কলিগ মিস্টার সিংহানিয়ার পাঁচ বছরের ছেলে রাজ ড্যা’ব>ড্যা’ব করে তাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকলে মিস্টার সিংহানিয়া নিজের ছেলের চোখ ঢাকতে নিতে তাঁর ছেলে তাঁর হাতে কাঁ’ম’রে দিয়ে হাত সরিয়ে ফু’পিয়ে>ফু’পিয়ে বললো।
—ড্যাড চোখ বন্ধ করে দিচ্ছো কেন? দেখতে দেও আমাকে।
—বাচ্চারা এসব দেখে না বাবা।
—তুমি নিজে বাচ্চা হবে।আমি না।
নিজের ছেলের এরমধারা কথা শুনে মিস্টার সিংহানিয়া হা হয়ে গেলেন পুরো।
—এই আজকাল যুগের বাচ্চারাও না! যাচ্ছে তাই একেবারে।
.
দীর্ঘ সময় নিয়ে সিরাতের ঠোঁট ছেড়ে দিতে হাঁ’প ছেড়ে বাঁচল যেন সিরাত। ঘন>ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে শুধু সাফিন মৃদু হেসে হাতের উল্টো পিঠে হাত মুছে মিডিয়ার দিকে চলে গেলে ল’জ্জায় আর কারও দিকে তাকাতে পারলো না সিরাত।
মিডিয়ার লোক এতক্ষণ সব ভিডিও করে রাখতে ধীর চাহনিতে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলে মিডিয়ার একজন বলে উঠলো।
—স্যার আপনার আর ম্যামের বিয়ের এত বছর পর anniversary পালন করার কারনটা জানতে পারি? এতগুলো বছর আপনি আমাদের জানামতে বিদেশে ছিলেন। আর ম্যাম শাহনেওয়াজ ভিলায় না থেকে তাঁর বান্ধবীর বাড়িতে থেকেছে। আবার এত বছর পর আপনাদের মিলিত হওয়া, এসবের কোনো ব্যাখ্যা বলতে পারবেন?
—কেন anniversary পালনের সাথে এসবের কারন কেন খুঁজতে যাচ্ছেন আপনারা! আমার ওয়াইফ এতদিন আমার অবর্তমানে তাঁর বান্ধবীর কাছে থেকেছে এতে দো’ষের কি দেখলেন সেটাই তো বুঝতে পারছি না আমি?আমি তাঁকে রাইট দিয়েছি তাই সে থেকেছে।
— তাহলে যে শুনলাম আপনারা সেপারেশনে যাচ্ছেন? সাফিনের ভ্রুদ্বয় কি’ঞ্চিৎ ভা’জ হয়ে আসলো যেন। মাথার প্রত্যেকটা রগ কেমন টনটন করছে। সামনে ইলেকশন না হলে মিডিয়ার এত প্যাঁ’চাল গাঁয়েই লাগাতো না। কিন্তু বাহিরে শাহনেওয়াজ সাফিনের নাম শুনলে সবাই দেশসেবক বলে জানে বিধায় সবকিছু মুখ বুঁজে স’য্য করতে হয় সাফিনকে।
ভেতরকার রাগটা চেঁ’পে রেখে হাসি-হাসি মুখ করে বললো।
— আমাদের মাঝে তেমন কিছুই হয়নি। আমরা বিয়েও করেছি নিজ থেকে আর ভালোবাসারও কোনো কমতি নেই আমাদের।
—তবেকি সবকিছু মি’থ্যা ধরে নেব।
— হ্যা সবকিছু মি’থ্যা। এবার নিশ্চয়ই আপনাদের কথা শেষ হয়েছে। এবার ভিতরে সবাই পার্টি এনজয় করুন। কথাটা বলেই পিছু ফিরে তাকিয়ে সিরাতকে খুঁজতে নিতে স্টেজের দিকে তাকিয়ে সিরাতকে না দেখতে পেয়ে ভ্রুদ্বয় নিমিষেই বেগতিক হয়ে গেল সাফিনের। পার্টি সং চালু করে সবাই ডান্স করতে ব্যাস্ত। এদিকে কেকের ট্রলিটা স্টেজেই রয়েছে কিন্তু সিরাত উধাও। চারদিকে হাই বলিয়মে মিউজিকের মাঝে কাউকে জিজ্ঞেস করাটাও খুব একটা সহজ হবে না। কানে ব্লুটুথ গুঁ’জে গার্ডদের ফোনকল করতে মিউজিকের সাউন্ট ছাড়া কিছু শোনা গেল না। এদিকে মিউজিক অফ করে দিলে মিডিয়া এক পায়ে খারা। ইলেকশনের আগে কোনো রকম অশা’ন্তিতে জড়াতে চাচ্ছে না সাফিন। এমনিতেই শহরের হাওয়া খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। মোস্তফা সাহেব বাহির থেকে এখনো দেশে এসে পৌঁছাননি। তাঁর উপর সিরাতকে নিয়ে এমনিতেই এবার একটু ভ’য়ে আছে সাফিন। সকাল থেকে বুকের উপর কেমন পাঁ’থর চাঁ’পা পরে আছে তাঁর। চারদিকে চোখ বু’লিয়ে সিরাতকে দেখতে না পেলে নিশ্বাস আঁ’টকে আসতে চাইছে যেন সাফিনের। কিছু একটা ভেবে রিসোর্টের কোনে থাকা সিসিটিভি ফুটেজটার দিকে তাকিয়ে তিরিক্ষি চোখদ্বয় দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে ভাবলো সিসিটিভি ফুটেজ থেকে অবশ্যই দেখা যাবে। অন্যথা মিউজিক অফ করে দিতে বা’ধ্য হবে সাফিন।
দ্রুত গতিতে নিজের স্থান ত্যা’গ করে বাহিরে চলে এসে স্টোর রুমের দিকে যেতে নিতে হুট করে তরিৎ গতিতে ফোনটা বেজে উঠলে ভ’রকে গেল সাফিন। ভ্রুদ্বয় কি’ঞ্চিৎ ভাঁ’জ করে ব্লুটুথ অন করে দিতে ওপাশ থেকে গম্ভীর কণ্ঠের রেশ সাফিনের কানে এসে যেন সাজোরে আ’ঘাত হেনে গেল।
— শাহনেওয়াজ, শাহনেওয়াজ, শাহনেওয়াজ সাফিন।তাইতো? অনেক স’য্য করেছি তোমার বাড়া>বাড়ি। এবার তোমার শেষ হওয়ার পালা। তোমার ভালোবাসার ওয়াইফ আমার কাছে বন্দী আছে। কি যেন নাম? ও হ্যা, সিরাত। পারলে তাঁকে মৃ’ত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে দেখাও।দেখা যাক শাহনেওয়াজ সাফিনের দৌঁড় কতদূর। আধা ঘন্টা সময় দিচ্ছি তোমাকে। বাকিটা তুমি বুঝে নেও। কিন্তু ভু’লেও তোমার সাঙ্গ- পা’ঙ্গ নিয়ে এসো না যেন? তাহলে আমার হাতের একটা গু’লি আর তোমার সাধের বউয়ের জীবন, এখানেই সমাপ্ত। হুট করেই অজানা নম্বরে এরমধারা কথা শুনে থ’মকে গেল যেন সাফিন। রাগে মাথা টনটন করে উঠলো যেন তাঁর। চোখ মুখের ভাবভঙ্গি নিমিষেই পাল্টে গেলে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে চি’বি’য়ে>চি’বি’য়ে বললো।
—শু’য়ো’রের বা’চ্চা আমার সিরাতকে কি করেছিস বল আগে? কোথায় রেখেছিস ওকে? ভু’লে যাসনা আমি একটাবার হাত তুললে জাঁকজমক পরিবেশও নিস্তে’জ হয়ে যায়। ভু’ল জায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছিস তুই। এর ফল তোকে পেতে হবে। সাফিনের কন্ঠস্বর শুনে ওপাশের মানবটি হেসে উঠলো যেন। বললো।
— জাস্ট আধা ঘন্টা। কথাটা বলেই ওপাশ থেকে ফোনটা কেঁ’টে দিতে সাফিনের মাথায় র’ক্ত চে’পে বসলো যেন। দ্রুত ওই নম্বরে আবার ডায়াল করলে ডি’সএবল শোনালে রাগগুলো এবার যেন দ’লা পা’কিয়ে গেল সাফিনের। রাগে সমস্ত শরীর রীতিমতো কাঁ’পছে যেন তাঁর। ছাতা বীহিন বৃষ্টির প্রতিটা শিশিরবিন্দু যেন সমস্ত শরীর জুড়ে ছ’ড়িয়ে পরছে সাফিনের। ফোনটা পকেটে রেখে একছুটে স্টোর রুমে চলে এলে গার্ডদের সরিয়ে দ্রুত নিজেই সিসিটিভি ফুটেজ চপক করতে নিতে কালো রাঙা অবয়ব দেখে রাগে গার্ডদের দিতে তাকাতে গার্ডগুলো হুট করে সাফিনের পদধূলিতে যেন অ’বাকের চূড়ান্ত পর্যায় গিয়ে দাঁড়াল। একজন বলে উঠলো।
—স্যার এনি প্র’বলেম? কিছু কি হয়েছে?
—গা’ধার মতো এখানে বসে থাকো আর গা’ন্ডে>পি’ন্ডে গি’লতে পারলেই কাজ শেষ তোমাদের? এদিকে সিসিটিভি ফুটেজের উপরে যে কাপর এঁ’টে দিয়েছে সেদিকে কোনো খেয়াল রাখো তোমরা? একটাকেও আমার চোখের সামনে দেখতে চাইছি না এখন। সবকটার চাকরি নেওয়া হবে যদি আমি আমার সিরাতকে না পাই। কথাটা বলেই টি টেবিলের উপর নিজের হাতটা সা’জোরে আ’ঘাত হানতে কেঁ’পে উঠলো গার্ডরা। কিছু বলার আগেই সাফিনের র’ক্তিম চোখদ্বয়ে চোখ পরে গেলে ভয়ে কয়েকটা ঢোক গি’লে দ্রুত রুম থেকে চলে গেলে ভে’ঙে পরলো যেন সাফিন। মাথা কাজ করতে চাইছে না যেন তাঁর। হৃদয় চিঁ’ড়ে বেড়িয়ে আসতে চাইছে শুধু বেহা”য়া কান্নার রেশ।
—কেন এমন হয় বলতে পারো সিরাত? তোমার আমার মাঝের এই জটি’লতার দাঁড় কি কখনো মু’ক্তি পাবে না? আমার এই অনিশ্চিত জীবনের সঙ্গী না হয়ে আসলে হয়তো তুমি মু’ক্তি পেতে। কিন্তু আমার মাঝে থাকতো শুধু দীর্ঘ’শ্বাসের রেশ। ভালোবাসি তোমাকে সিরাত। তুমি হাড়িয়ে গেলে হয়তো সেদিন এই শাহনেওয়াজ সাফিনও নিজ জীবনে হেঁ’ড়ে যাবে। শেষ হয়ে যাব আমি। শুনতে পারছো তুমি আমাকে? জানিনা তুমি কি অবস্থায় আছো সিরাত? কিন্তু আমি বেঁ’চে থাকতে বিন্দু পরিমান আঁচ’ও তোমার গাঁয়ে লাগতে দেব না আমি। কথাগুলো ভাবান্তারে ছে’দ কেঁ’টে যেতে ডু’করে কেঁদে উঠলো যেন সাফিন। ক্লান্তিতে ঘেরা মুখদ্বয় নিয়ে দ্রুত পায়ে ছাতা বীহিন বৃষ্টির শিহরন শরীরে ছুঁয়িয়ে গাড়িতে উঠে পরে গাড়ি স্টার্ট দিতে মাথায় কোনো কিছু আসছে না সাফিনের।
— আমার ব্যাকুল হৃদয়ের কারন হলে তুমি সিরাত? তোমাকে হাড়িয়ে ফেললে আমি নিমিষেই শেষ হয়ে যাব। আমার শরীরে একবিন্দু র’ক্ত অবশিষ্ট থাকলেও তোমার কিছু হতে দেব না আমি।
“বৃষ্টিতেভেজা সমস্ত শহরজুড়ে সিরাতকে তন্নতন্ন করে খুঁজেও ফল সরুপ পেল শুধু একরাশ হীনতা।” সাফিনের হৃদয় মাঝের তো’লপা’ড় হয়ে যাওয়ার অর্থহীন শব্দ শুনে নিজেই কেমন গু’টি’য়ে যাচ্ছে সিরাতের চিন্তা’য়। মাথাটা কেমন ভা’র হয়ে আসছে সাফিনের। গাড়িটা থামিয়ে দিয়ে ক্লা’ন্ত শরীর নিয়ে গড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ির পাশ ঘেঁষে রাস্তায় হাঁটু গে’ড়ে বসে পরলে বৃষ্টির প্রতিটা শিশিরবিন্দু যেন সাফিনের প্রতিটা শিরা উপশিরা স্পর্শ করে যাচ্ছে। দূরে ল্যামপোস্টের হলুদরঙা অবয়ব চোখেমুখে এসে ছেঁ’য়ে পরতে থাকলে সাফিনের ফর্সা তৈলাক্তময় চেহারা যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেলো। কালে রাঙা গাড়িটার সাথে নিজের মাথা ঠেকিয়ে দিতে ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইছে শুধু সাফিনের একরাশ দীর্ঘ’শ্বাস।
— কিছুক্ষণ আগেও যে দিনটা আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন হতে চলেছিল? এখন সেই দিনটাই আমাদের কা’ল হয়ে দাঁড়াল সিরাত? আমার হৃদয়ের এই অস’য্য যন্ত্র’ণা শুধু তুমিময় প্রাপ্তি সিরাত। তোমাকে বুকে না জড়ানো পর্যন্ত শান্তিতে নিশ্বাস অব্দি নিতে পারছি না আমি। তবেকি তোমাকে ভু’ল বোঝার শা’স্তি দিচ্ছো এটা তুমি আমাকে? এতটা নিষ্ঠু’র তুমি সিরাত? কথাগুলো সাফিনের মনের মাঝে দ’লা পাকিয়ে গেলে অদৃশ্য লোকটার টাইমের দিকটা মনে পরতে ভেতরটা কেমন মু’চড়ে উঠলো যেন সাফিনের। দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে ভাবনার অত’ল গহীনে ডু’বে থাকলো খানিক।পরক্ষণে ভাবনায় ছে’দ পরে গেলে বৃষ্টিতে ভেজা চুলগুলোতে ঝা’ড়ি দিয়ে গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল সাফিন।
.
অন্ধকার রুমটাতে কাঠের চেয়ারের সাথে নিজেকে হাত>পা বাঁ’ধা অবস্থায় দেখে হুট করেই সিরাতের হুঁ’শ ফিরে আসলে যেন চারদিকে অন্ধকারে আচ্ছন্ন দেখে ভ’য়ে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। টিনের চালের উপর বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজটা কানের লতিতে গাঢ় ভাবে এসে পৌঁছাতে ঝিমিয়ে থাকা আবছায়াময় হলুদরঙা লাইটারের আলো চোখেমুখে এসে ছেঁয়ে পড়তে থাকলে পিটপিট করে চারদিকে চোখ বো’লাল সে। ঘোরের মধ্যে আছে যেন সে। আশেপাশে পর্যাপ্ত পরিমান ড্রাম, বিয়ারের খালি বোতল ছড়িয়ে>ছিটিয়ে রয়েছে যেন। আবছায়াময় রুমটার ভেতর থেকে আসছে বা’জে একটা উদ্ভট গ’ন্ধ। নাক মুখ কুঁ’চকে এসে শরীরে থাকা এনার্জি যেন ব’মি হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে সিরাতের। মিনিট খানিক লাগলো তাঁর বুঝতে যে,সে আবারও কিডন্যা’প্ট হয়েছে। বুকের ভেতরকার জ্বা’লার ভাবটা যেন গাঢ় ভাবে আঘা’ত হানতে ব্যা’কুল হয়ে পরেছে। কিছুক্ষণ নিজেকে ছারানোর বৃ’থা চেষ্টা চালাতে গেলে সফল না হলে ডু’করে কেঁদে উঠলো সিরাত। তাঁর যতটুকু মনে পরছে সে স্টেজের উপর ছিল। কিন্তু তারপর আর মনে করতে পারছে না কিছু। সবকিছু ঝাঁ’পসা ভাবে চোখের সামনে ভাসতে থাকলে ভয়ে গুঁ’টিয়ে গেল যেন সিরাত। বন্ধ দরজার আড়ালে বাহিরের বৃষ্টিস্নান ময় বৃষ্টির রেশও যেন চোখে পরার জো নেই। অন্ধকারে নিশ্বাস আঁ’টকে আসতে চাইছে সিরাতের।
—কাকে ধরে এনেছি আমি এখানে? ওমা, এ দেখি আমাদের শাহনেওয়াজ সাফিনের বিবাহিতা স্ত্রী মনে হচ্ছে? হুট করেই মাইক্রোফোনে কারো গম্ভীর কণ্ঠের হাসির রেশ কানের কাছে এসে পৌঁছাতে থ’মকে গেল যেন সিরাত। ভয়ের সহিত কান খারা করে রাখলে বাহিরের ঝুম বর্ষনপাতের ঝমঝম আওয়াজের কারনে পুরোটা স্পষ্ট হয়ে আসছে না যেন সিরাতের। অনাকাঙ্ক্ষিত মানবটাকে চারদিকে খুঁজতে থাকলে প্রসস্থ ভাবে হাসির স্বর শুনে চেয়ারের সাথে আরও গুঁ’টিয়ে গেল যেন সিরাত। মুখের ভেতরে কাপড় গুঁ’জে থাকায় মুখ থেকে উম-উম শব্দ ছাড়া কিছু বের হচ্ছে না সিরাতের। কান্না গুলো দ’লা পাকিয়ে যাচ্ছে তাঁর। ঘন-ঘন নিশ্বাস টা’নতে থাকলে অদৃশ্য মানবটির কন্ঠ শোনা গেল আবারও।
—তোমার সাথে আমার কোনো শ’ত্রুতা ছিল না সিরাত? ভু’লটা তো গিয়ে ঠেকালে সাফিনকে বিয়ে করো। অবশ্য তোমাদের বিয়েটাইবা কত পারসেন্ট সত্যি ছিল? তোমাকে তো আমার গোনায়ই ধরিনি সিরাত। কিন্তু আ’ফসোসটা তো ফেলে দিল সাফিন! তোমার জন্য একটুও মা’য়া হলো না তাঁর? এই শাহনেওয়াজ ভিলার সব মানুষজন, রাজবাড়ী, এসব একটা মুখোশের আড়ালে আবদ্ধ বুঝলে তুমি? আর মাএ কয়েক প্রহর পরই তোমাকে তো সেই উপরেই চলে যেতে হবে।কি লাভ হলো বলোতো তোমার? তোমার মতো একটা মেডেলক্লাস মেয়ের এই বিশালাকার বাড়িতে সবার গোপনে বিয়ে করাটা কি ঠিক হয়েছে হুম? ওহো,মেইন টপিকে চলে আসা যাক তাহলে, তোমাকে শেষ করে দেওয়ার কড়া আদেশ এসেছে কিন্তু আমার কাছে। এর জন্য আমি ৫০ কোটি টাকা পাব বুঝলে? তবে আমার যে এইসব ৫০/৬০ এ চলবে না! আমার চাই ৫০০ কোটি দামের রাজবাড়ী। উপস, তোমার লাকটাই খা’রাপ বুঝলে সিরাত? হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েও টিকিটিও জানতে পারলে না তুমি!হাহাহা,
অদৃশ্য আগন্তকের কথার আ’গা>মাথা কিছু বুঝতে না পেরে চারপাশে ড্যা’ব>ড্যা’ব করে তাকাচ্ছে তাঁকে দেখার জন্য। বুকের ভেতরকার উথাল-পাতাল ঢেউটা কেমন দ্রুত থেকে দ্রুতগতির হয়ে আসছে তাঁর। চেয়ারের সাথে হাতের কড়াভাবে বাঁ’ধনটাও যেন সমস্ত শরীরের শিরায়>শিরায় ব্যা’থার সৃষ্টি করছে সিরাতের। চোখ বেয়ে অনবরত পানি ঝরে পরতে থাকলে বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সহিত বিক’ট শব্দে গু’লির আওয়াজ কানের কাছ ঘেঁষে তি’ব্রভাবে আঘাত হানতে ভয়ে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। সমস্ত হা>পা ক্ষনে>ক্ষনে কাঁ’পছে যেন তাঁর।
—এবারের গু’লিটা মিস্টেক হলেও, আর পাঁচ মিনিটের ভেতর তোমার আদরের শাহনেওয়াজ সাফিন এখানে এসে না পৌঁছালে গু’লিটা সোজা গিয়ে তোমার হৃদয়ে আ’ঘাত হানবে। কথাটা শেষ হতেই অপর প্রান্তের মানবটির থেকে আর কোনো আওয়াজ ভেসে না আসতে ভয়ে কাঁদতে থাকলো সিরাত। বুকের ভেতরটা কেমন মু’চড়ে উঠছে সিরাতের। বাহিরের ঝর যেন প্রবল বেগে তার হৃদয়ে কান্নার সহিত বর্ষন করতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে।
— আপনার আমার সম্পর্কের মরী’চিকা এত কঠিন কেন বলতে পারেন সাফিন? আজ হয়তো আমার জীবনের শেষ দিন হবে। আপনি কোথায় আছেন সাফিন। যদি ঘুনাক্ষরেও জানতাম না সাফিন,ভালোবাসা এত দী’ড়াদয়ক? তাহলে বিশ্বাস করুন,আমি নিজ থেকেই নিজেকে বন্ধ দরজায় গু’টিয়ে নিতাম।প্রবল বেগে ভে’ঙে পড়ার কারনে সিরাতের দ’ম বন্ধ হয়ে আসছে যেন। কান্নার রেশে বুক ভি’জে পরনে পরিহিত কালো রাঙা শরীরের সাথে লে’প্টে আছে যেন। ক্ষনে- ক্ষনে ফুঁ’পিয়ে উঠছে যেন সিরাত।
.
সকালে একবার কথা হওয়ার পর সাফিনের সাথে আর কথা না হলে আমেনা বেগম উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছেন যেন। সাফিনের দিক থেকে কোনো রেসপন্স না আসলে আমেনা বেগমের হৃদয় কেমন ব্যাকু’ল হয়ে পরেছে যেন। বাড়িতে গার্ডদের কড়া করে পাহাড়া দিতে বলে রেডি হয়ে নিল নিজেও। আজকে নাহয় সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে তাঁদের। জুবায়েরকে ফোন করলে জুবায়ের কিছুক্ষণ পরেই কলব্যাগ করলে আমেনা বেগম হাস্যজ্বল কন্ঠে বললেন।
— সাফিনরা বাড়িতে আছে জুবায়ের? নাকি বাহিরে? হুট করে আমেনা বেগমের এরমধারা প্রশ্নে জুবায়ের মৃদু নড়েচড়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—আপনাদের পার্মানেন্ট রিসোর্টে আছে ম্যাম।
—আমি সেখানে যাচ্ছি। তুমি কিন্তু ভু’লেও সাফিনকে জানাবে না এ কথা। তুমিও সেখানে চলে এসো। চম’কে দেওয়া যাবে ওদের। আমেনা বেগমের হাসির কন্ঠ শুনে আর না করতে পারলো না জুবায়ের। হেলালদের দিকে তাঁকাতে হেলাল বললো।
—যাও তুমি আমরা এদিকে আছি। হেলালের থেকে আস্থা পেয়ে জুবায়ের স্থান ছাড়লে ওদিকে আমেনা বেগমের অস্থি’র হৃদয় খুশিতে আর অজানা ভয়ে কেমন থ’ম>থ’মে হয়ে আছে যেন। ড্রাইভার ঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রিসোর্টের রাস্তা ধরতে গাড়ির কাঁচ ভেদ করে দৃষ্টি স্থির রেখে দিলে কাঁচ ঘেঁষে বৃষ্টির শিহরন বয়িয়ে থাকা দেখতে লাগলেন তিনি।
.
—আর পাঁচ গুনব সিরাত? আমার হাতে বেশি সময় নেই। আর তোমাকে মে’রে দিলে যেহেতু আমার লাভ বয়ি ল’স হবে না, তাই তোমাকে মে’রে দিতেও আমার হাত কাঁ’পবে না। অদৃশ্য লোকটার কর্ক’শ কন্ঠ শুনে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। চোখের কোন বেয়ে পানি গ’ড়িয়ে পরলে একটা সময় ধরেই নিল এটাই তাঁর শেষ দিন। নিজ মনেই হাসতে থাকলো সিরাত। ভেতরের রুম থেকে ধীর পায়ের আওয়াজ ভেসে আসলে কিছু লেকের কথা কানের কাছে পৌঁছাতে চোখ দুটি জ্ব’লছে যেন সিরাতের।
—স্যার মেয়েটাকে একটু আমাদের উপরও ছেড়ে দিন। তি’লে>তি’লে মা’রব আমরা ওকে।
অন্ধকারের আড়ালে থাকা লেকটা পকেট থেকে সিগারেট বের করে ম্যাচ দিয়ে জ্বা’লিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া অন্ধকারে ছড়িয়ে দিয়ে অট্টহাসিতে গ’ড়া>গ’ড়ি খেয়ে গেলে মোটা দড়ি দিয়ে চেয়ারের পেছন থেকে বাঁ’ধা হাত দিয়ে কাঠের চেয়ারটা খা’মচে ধরলো সিরাত।
— হৃদয় হাজারবার ক্ষ’ত হয়ে গেলেও এসব কি কেনো দরকার ছিল সাফিন?আপনার সিরাতকে স’ম্মা’নহা’নি করতে চাইছে এরা। আমার এই হৃদয়ের ধারা আপনি কোনো দিনও কি বুঝবেন না। কথাগুলো যেন হৃদয় চিঁ’ড়ে ছেদ করে যাচ্ছে সিরাতের। পায়ের আওয়াজটা খুব কাছ থেকে পৌঁছাতে চোখ খিঁ’চে বন্ধ করে নিল সিরাত। সমস্ত শরীর অব’শ হয়ে গেছে যেন তাঁর। হুট করেই এলোপাতাড়ি ভাবে গু’লির শব্দ ভেসে আসাতে আকস্মি’ক ঘটনায় সিরাতের বন্ধ চোখদ্বয় ভয়ার্ত ভাবে খুলে আসলে সাফিনের ভেজা শরীরের দিকে তাকিয়ে তাঁকে দেখে কান্নাগুলো যেন আরও প্রগরভাবে সিরাতের চোখ বেয়ে ঝরে পরছে। সাফিনের এলোপাতাড়ি গু’লিতে কয়েকজনের গা ছুঁয়ে তো হাত ছুঁয়ে স্পর্শ করে গেলে সাফিন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না দেখিয়ে অশ্রুশিক্ত ভাবে শীতল চাহনিতে সিরাতের দিকে তাকালে সিরাতের চোখের পানি গড়িয়ে পরতে থাকলে সাফিন সিরাতের কাছে গিয়ে বাঁ’ধা অবস্থাতেই সিরাতকে জড়িয়ে ধরে সিরাতের সমস্ত মুখশ্রীতে পা’গলের মতো চুমু খেতে থাকলে ওপাশ থেকে মাইক্রোফোনের হাসির রেশ ভেসে আসলো যেন।
— এমা,এতো দেখছি মজনু তাঁর লেলাকে নিতে হাজির। তো একবার পেছন ফিরে মনিরটরটা দেখো? সাফিনের চোখমুখ কুঁ’চকে গিয়ে পিছু ফিরে তাকাতে থ’মকে গেল সে….

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে