হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-২৫ এবং শেষ পর্ব

0
327

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#অন্তিম_পর্ব_স্পেশাল_১

— এমা,এতো দেখছি মজনু তাঁর লেলাকে নিতে হাজির। তো একবার পেছন ফিরে মনিরটরটা দেখো? সাফিনের চোখমুখ কুঁ’চকে গিয়ে পিছু ফিরে তাকাতে থ’মকে গেল সে। ড্রাইভারের ড্রেস পরে অচেনা একটা লোক আমেনা বেগমকে গাড়িতে করে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে দেখে মনিটরের দিকে ভয়ার্ত ভাবে তাকিয়ে থাকলো সাফিন।
—আম্মাহ!
— সামনে একটা বড় খাঁ’দ আছে জানোতো সাফিন? তুমি চাইলে গাড়িটা ধপাস করে খাঁ’দে উ’ল্টে পরতেও পারে। সকাল-সকাল ব্রেকিং নিউজ হয়ে যাবে যে, প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা সাহেবের একমাএ স্ত্রী আমেনা বেগম ঝড়বৃষ্টির রাতে বাড়ি থেকে বের হলে গাড়ি বৃষ্টির কারনে পিচ্ছি’ল রাস্তায় খাঁ’দে উ’ল্টে পরে যাওয়ার কারনে অকালে প্রা’ন হারান তিনি। ভালো হবে না বলো?
মাইক্রোফোনে অচেনা আগন্তুকের কন্ঠের রেশ শুনে সিরাতের ভয়ে নিশ্বাসের গতি যেন দ্রুত থেকে দ্রুতগতির হতে থাকলো। চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরতে থাকলে সাফিনের দিকে অস’হায় চাহনিতে তাকালে সাফিনের ভেজা হাতদ্বয় প্রব’ল বেগে কাঁ’পতে থাকার কারনে হাত থেকে বন্দু’কটা পরে গেলে ওপাশের মানবটি হেসে উঠলেন যেন। সাফিনের কানের কাছে সেই হাসির রেশ অন্তর্নিহিত হতে থাকলে রাগে মাথায় র’ক্ত ট’গ>ব’গ করছে যেন তাঁর। আশপাশ কোনো কিছু না ভেবেই সিরাতের হাত-পায়ের বাঁ’ধন খুলতে থাকলে সিরাত অতিরিক্ত কান্নার কারনে রীতিমতো ফো’পাচ্ছে যেন। সাফিন ঘনঘন নিশ্বাস টে’নে ছলছল চাহনিতে সিরাতের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে তাঁকে আস্থা জোগাতে বলতে লাগলো।
—কিচ্ছু হবে না জান। একটু শান্ত হও তুমি।
—সাফিন আম্মা! কথাটা বলেই সিরাতের চোখ বেয়ে আবারও পানি পরতে থাকলে সাফিনের এবার ধৈর্যের বাঁ’ধ ভে’ঙে যেতে চাইছে যেন। খানিকটা রাগান্বিত চোখে সিরাতের দিকে তাকিয়ে দুই হাত দিয়ে সিরাতের দুই বাহু চে’পে ধরে মৃদু ঝাঁ’কি দিয়ে বললো।
—কিচ্ছু হবে না বলছি না আমি। আম্মারও কিছু হবে না। চলো আমরা এখান থেকে দ্রুত চলো। কথাটা বলে সিরাতের হাত ধরে নিয়ে যেতে চাইলে হুট করেই দরজার কাছে গু’লির শব্দের বিক’ট আওয়াজে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। ভয়ে সাফিনকে জড়িয়ে আঁক’ড়ে ধরতে ওপাশ থেকে ধীর কন্ঠের হাসির আওয়াজ শোনা গেল।
— এত দেখছি অনেক তাড়া তোমাদের সাফিন! এত তাড়া কেন তোমাদের হুম? বেড়াতে এসেছো আর আপ্যায়ন না করেই ছেড়ে দেব তোমাদের? এখানে এসেছো আমার ইচ্ছেতে, এবং যেতেও হবে আমার ইচ্ছেতে। এখন তোমাকে আমি খাবারের মেনুকার্ডটা বলছি দাঁড়াও। তোমার হাতে দুইটা অপশান খোলা আছে সাফিন। এক, নিজ হাতে নিজের লেলা সিরাতকে খু’ন করবে? অন্যথা নিজ চোখে তোমার মায়ের মৃ’ত্যু দেখবে। বাকিটা তোমার ইচ্ছের উপর ডিপেন্ড করবে যে,তুমি কি করবে?
কথাটা শুনে সাফিনের হৃদয়ে কেমন কাঁ’ম’রে উঠলো যেন। চোখদুটি জ্ব’লছে যেন তাঁর। বুকের উপর সিরাতের নিশ্বাসের গরম উ”ষ্ণতাময় স্পর্শ আঁ’ছরে পরার রেশ খুব কাছ থেকে অনুভব করতে পারছে সে।টিনের চালের উপর বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের প্রতিধ্বনিও যেন এখন বি’ষের মতো ঠেকছে তাঁর কাছে। রাগে-ভয়ে শরীরটা প্রচন্ডভাবে কাঁ’পছে যেন তাঁর। গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন ছুঁ’ড়ে দিল অচেনা আগন্তুকের দিকে।
—কি চাই তোর আমাদের পরিবারের থেকে?বল কত টাকা লাগবে তোর? ১ লাখ, দুই লাখ, পঞ্চাশ লাখ? আমি দেব তোকে। কিন্তু শুধু সত্যিটা জানতে চাইছি আমি।
—হাহাহা, এই তোমরা বাপ ছেলে আমাকে এত টাকার অফার দেখাচ্ছো কেন হুম? তবে সিরাতকে তো ম’রতেই হবে আজকে।
—ড্যাড? কে তুই? সাহ’স থাকলে সামনে এসে দেখা। এখানে ড্যাড আসলো কোথথেকে?
—সাহ’স তো আমার অনেক’ই আছে সাফিন। কিন্তু তোমাকে সবকিছু এক্সপ্লেইন করলে আমি কি পাব? আর এসব টাইম ওয়েস্টের সময় নেই আমার। পাঁচ গুনব শুধু, এর মধ্যে সিরাতকে মা’রবে, নয়তো নিজের আম্মাকে ম’রতে দেখবে। আচ্ছা মাই ডিয়ার সিরাত? তোমারতো বোঝা উচিত যে আমি মজা করছি না। সত্যি-সত্যিই কিন্তু তোমার শাশুড়ীকে মে’রে দেব। দ্রুত সামনে থেকে দূর হও তো দেখি। সিরাতের বুকের মাঝে তো’লপা’ড় হতে থাকলে কান্নাগুলো কেমন দ’লা পাকিয়ে যাচ্ছে তাঁর। সাফিনের বুক থেকে ধীরভাবে মাথাটা জাগিয়ে কান্নায়ভরা দৃষ্টিতে একগাল হাসলো শুধু। সাফিন সিরাতের দিকে অশ্রুশিক্ত নয়নে তাকালে সাফিন মাথা নাড়িয়ে না করতে থাকলে সিরাত শুধু হাসছে। ধীর পায়ে নিচু হয়ে সাফিনের হাত থেকে পরে যাওয়া বন্দু’কটা তুলে নিয়ে শীতল চাহনিতে সাফিনের দিকে তাকিয়ে সাফিনের বুকের বাম পাশে হাত রাখতে সাফিনের হৃদয় মাঝের তু’মুল ধুকপুক শব্দের রেশ যেন কান্নার সহিত কু’ন্ঠিত হচ্ছে তাঁর কানের কাছে।
সিরাত সাফিনের চোখে চোখ রেখে অন্যহাতে ব’ন্দুকটা সাফিনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে সাফিনের হাতের ব’ন্দুকটা নিজের পেট বরাবর এনে ধীর কন্ঠে বললো।
—মে’রে দিন আমাকে সাফিন। সিরাতের কন্ঠের রেশ শুনে সাফিনের হাতটা কাঁ’পতে থাকলো যেন। সিরাতের শীতল চোখের চাহনিতে যেন রাগ নিয়েও তাকাতে পারছে না তাঁর দিকে। চোখ বেয়ে ঝরে পরছে শুধু বর্ষনের রেশ।
— সিরাত…!
— গু’লিটা চালান সাফিন।
— এটা পারব না আমি।
সাফিনের কথায় হেসে উঠলো সিরাত। কান্নারত কন্ঠে বললো।
— আপনিই না কথায়-কথায় বলতেন যে, সিরাত আই সয়ার আমি তোমাকে গু’লি করে মে’রে দেব। তাহলে এখন কি হলো? মা’রুন আমাকে?
সিরাতের কথায় সাফিনের হৃদয়ে যেন প্রবল বেগে ঝর বয়ে গেল।
— আমার অভিমানের পেয়ালা না বুঝুন আমার অস্তি’ত্বের ঠিকানাটাকে টিকিয়ে রাখুন দ’য়া করে। যে বি’ষ আমি পান করেছি,সেই বি’ষের খেসা’রত তো আমাকেই দিতে হবে তাইনা? হয়তো আমাদের এই অপরিকল্পিত গল্পের শেষ এটাই লেখা ছিল।
সিরাতের প্রতিটা কথার রেশ যেন ছুঁ’ড়ির আঘা’তের ন্যায় সাফিনের বুকে এসে হানছে। সিরাতের পেটের কাছ থেকে ব’ন্দুকটা সরাতে চাইলে সিরাত শ’ক্ত করে চে’পে রাখলে সাফিন সিরাতের মাথার কাছে মাথা ঠেকিয়ে কপালে ঠোঁটের স্পর্শ ছুয়িয়ে দিয়ে এতক্ষণের জমিয়ে রাখা কান্নাগুলো যেন ডু’করে কেঁদে দিয়ে সিরাতের কপাল ছুঁ’য়িয়ে গড়িয়ে পরতে থাকলে ওপাশ থেকে গম্ভীর কণ্ঠের রেশ শোনা গেল।
— এক্সুয়ালি আমার বোধহয় তোমাকে শেষ বারের মতো একটা ইচ্ছে পূরন করতে দেওয়া উচিত। বলো তুমি কি চাও সিরাত? হুট করেই অচেনা আগন্তুকের এরুপ মন্তব্য শুনে সিরাত চোখের পানি মুছে সাফিনের থেকে সরে এসে একনজর মনিটরের দিকে তাকিয়ে আরেক পলক আবছা আলোয় অন্ধকার রুমটার দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
— ঠিকঠাক ভাবে দিতে পারবেন তো?
—আমার কাছে এমন কোনো কিছুই নেই যা আমি দিতে পারব না। শুধু তোমাকে না মা’রার কথা ছাড়া যা যাইবে তাই পূরন করব।
সিরাত ছলছল দৃষ্টিতে অজানাতে দৃষ্টি রেখে ধীর কন্ঠে বললো।
— সত্যিটা জানতে চাই। আমার জীবনের এত প্যাঁ’চ আমি নিজেই নিতে পারছি না। জানতে চাই কে আমাকে মা’রতে চাইছে। আপনাকে দেখতে চাইছি আমি। সিরাতের কথা শুনে সাফিন সিরাতের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।
—বুদ্ধি আছে তাহলে আমার বউর।
.
গগনের রিমঝিমে ঝুম বর্ষনের প্রকোপটা যেন পুরো শহরজুড়ে এক অদ্ভুত শিহরণময় পরিবেশের সৃষ্টি করতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে। হলুদরঙা আবছা আলোয়ঘেরা হলদেটে আলোয় অন্ধকার রুমটাতে তির্যকভাবে আলো হেনে যাওয়াতে চারজোড়া চোখ কেমন বুঁজে আসতে চাইছে সাফিন-সিরাতের। বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সহিত তাল মিলিয়ে তাঁদের হৃৎস্পন্দনের গতিও কেমন দৃঢ়ভাবে কড়া নাড়ার সহিত স্পন্দনের হারে বাঁ’জতে শুধু করেছে। সাফিনের তিরিক্ষি চোখদ্বয় আলো এড়িয়ে অচেনা আগন্তুকের অবয়বের সহিত খুব কাছের কারো মানুষের প্রতিচ্ছবি চোখে পরাতে নি’মি’ষেই থ’মকে গেল সাফিন। নিজের অস্থি’র চক্ষুদ্বয় যেন কোনো ভাবেই মানতে নারাজ হয়ে পরেছে নিজের চাচ্চু সরোয়ার সাহেবকে দেখে। মুখে পুরো কুলুপ এঁ’টে গেলে তীব্র আলোটুকু শীতল হয়ে আসলে সিরাত সাফিনের বিস্ম’য়মাখা চেহারা দেখে ভ্রুদ্বয় কি’ঞ্চিৎ ভাঁ’জ করে সামনে তাকাতে সরোয়ার সাহেবকে ব’ন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে থেকে ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি দেখে বুকের ভেতরটা কেমন মু’চড়ে উঠলো সিরাতের।
—এটা কিভাবে সম্ভব? আমি সত্যি দেখছি তো? মনে-মনে কথাটা আওরে চোখে হাত ক’চলে আবারও সরোয়ার সাহেবকে দেখে ত’ব্দা খেয়ে গেল যেন সে। ধীর কন্ঠে মুখ থেকে উচ্চারিত হয়ে আসলো।
—আপনি! সিরাতের কথা শুনে হেসে উঠলেন সরোয়ার সাহেব। সামনে থাকা ড্রামের বয়ামটাতে লা’থি মে’রে অ’ট্টহাসি হেসে বললেন।
— চমকে গেলে তোমরা? অবশ্য চমকে যাওয়ার কথাই বটে।
—তাঁরমানে এতদিনের এই খু’ন সবকিছুর পেছনে তুমি ছিলে? সাফিনের বড়সড় হয়ে যাওয়া চোখের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলেন সরোয়ার সাহেব। বললেন।
—ইয়াহ সাফিন বেটা। আমিই সেই কা’র্লপ্রিট, যাকে তুমি এতগুলো বছর ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছো। সরোয়ার সাহেবের কথা শুনে ধা’ক্কা খেয়ে গেল যেন সাফিন।
— উপস রে সিরাত? খু’নটা করলো তোমার বুড়ো আম্মা, আর ফেঁ’সে গেলে তুমি! একেই বলে কপাল বুঝলে। সরোয়ার সাহেবের কোনো কথা মাথায় না ঢু’কলে হা হয়ে চক্ষুদ্বয় বড়সড় করে তাকিয়ে রইলো শুধু সিরাত। সাফিন কি’ঞ্চিৎ পরিমান সময় নিয়ে এত বড় ধা’ক্কাটা সামলে সরোয়ার সাহেবের দিকে রাগ নিয়ে এগিয়ে গিয়ে তাঁর শার্টের কলার টে’নে ধরে বলতে লাগলো।
—কেন করছো এমন তুমি? তুমি কিভাবে করতে পারো এমনটা? আর তুমি আমার আম্মাকেও মা’রতে চাইছো? উনিতো তোমার খুব কাছের তাইনা? কত ভালোবাসেন তোমাকে। সরোয়ার সাহেব ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে বাঁকা হাসি হেসে গম্ভীর কন্ঠে দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে বললেন।
— নাঈম সাফিনকে একটু চটপট হাত পা বেঁ’ধে দেয়ালের সাথে বেঁ’ধে ফেলোতো দেখি। স্টরিটা শুনুক আগে। তাঁরপর নিজ হাতে নিজের লেলাকে খু’ন করে নাহয় আসল ম’জাটা নেব আমরা। সরোয়ার সাহেবের কথা শুনে ভেতর থেকে দুই-তিনজন লোককে নিয়ে নাঈম সাফিনের কাছে এসে দুইহাত ধরে ফেললে সাফিন ভ্রুদ্বয় কুঁ’চকে ফেলে বললো।
—এতো দুলাল! কথাটা আওরানোর সঙ্গে- সঙ্গে হাতে থাকা ব’ন্দুকটা নাঈমের দিকে তাক করাতে সরোয়ার সাহেব সহ সবাই হোহো করে হেসে উঠলেন যেন। সিরাত সাফিনের পেছনে আড়াল হয়ে দাঁড়ালে। সাফিন সিরাতের হাতটা শ’ক্ত হাতে চে’পে ধরে নিজের কাছে আগলে রাখলো। সরোয়ার সাহেব হাসির স্বরে বললেন।
— দুলালতো সেই কবেই ম’রে ভূ’ত হয়ে গেছে সাফিন। এইযে নাঈমকে দেখছো? এ হলো প্লাস্টিক সার্জারির তৈরি দুলাল। উফ সাফিন। তোমার আম্মার কথা ভু’লে গেলে? এইযে ব’ন্দুক নিয়ে লা’ফা>লা’ফি করছো না তুমি? এটা কিন্তু ঠিক নয় বেটা।
সিরাত কয়েকটা ঢোক গি’লে কান্নারত কন্ঠে বললো।
— সাফিন ব’ন্দুকটা নামান। আমার কিন্তু খুব ভয় করছে। সাফিন প্লিজ।
সাফিন সিরাতের কান্নারত কন্ঠ শুনে ব’ন্দুকটা নিচু করে ফেললে নাঈম আর বাকিরা সাফিনকে বাঁ’ধতে যেতে সিরাত ধীর কিন্তু খানিকটা তে’জ নিয়ে বললো।
— আমরা কিচ্ছুটি করব না। প্লিজ সাফিনকে বাঁ’ধবেন না। এই লাস্ট রিকোয়েস্টটা রাখুন অন্তুত চাচ্চু। আর কিছুক্ষণ পরতো মে’রেই দিবেন আমাকে।
নাঈম হেসে সাফিনকে বাঁ’ধতে যেতে সরোয়ার সাহেব বাঁ’ধ সেধে বললেন।
—থাকুক, বাঁ’ধার দরকার নেই ওঁদের। এমনিতেই এই পুরো বাউন্ডারি লোক দিয়ে ঘেরা। কোনো রকম চালাকি করতে পারবে না ওরা। নাঈম সাফিন বেটার হাত থেকে ব’ন্দুকটা নিয়ে নেওতো।
সাফিন হাত মুঠোবন্দি করে রাগটাকে দ’মাতে চাইছে যেন। চোখগুলো কেমন র’ক্তিম বর্ন ধারন করে গেছে তাঁর। নাঈম সাফিনের হাত থেকে ব’ন্দুকটা নিয়ে কাঠের চেয়ারটা সরোয়ার সাহেবের সামনে এগিয়ে দিয়ে নিজের শার্টটা খুলে ঝেড়ে দিলে সরোয়ার সাহেব বাঁকা হাসি হেসে পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারে বসে পরে নাঈমকে ইশারা করলে নাঈম মৃদু হেসে সাফিনকে দেয়ালের সাথে বেঁ’ধে ফেললে সিরাত ভয়ে গু’টিয়ে গেল যেন। কান্নারত কন্ঠে বললো।
—এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না চাচ্চু। বলেছিতো সাফিন কিছু করবে না। তাহলে?
সরোয়ার সাহেব হেসে উঠলেন। বললেন।
— আমার কি মাথা খা’রাপ নাকি পেট খারা’প যে, তোমার কথায় সাফিনকে না বেঁ’ধেই গল্প শোনাব! সাফিন যে কি ধুর’ন্ধর জিনিস সেটা তুমি হয়তো খুব ভালো করেই জানো।তাহলে এ রকম ন্যা’কা কান্না না কেঁদে উপরে যাবে কিভাবে সেই কথা চিন্তা করো। যাইহোক নাঈম তোমাদের ভাবিজানকে একটু নাস্তার ব্যাবস্থা করে দেওতো।বেচারা কখন থেকে না খাওয়া। আর হ্যা তাঁকেও বেঁ’ধে ফেলো তাঁর পেয়ারের স্বামী শাহনেওয়াজ সাফিনের সাথে। সিরাতের দিকে নাঈম এগিয়ে আসতে নিতে সাফিন রাগে দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে গম্ভীর কণ্ঠে বলতে লাগলো।
—খবরদার সিরাতের গাঁয়ে হাত দিবি না নাঈম। ভালো হবে না বলে রাখলাম আমি।
সরোয়ার সাহেব হেসে উঠলে সাফিন তাঁর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শুধু। একটা মানুষ কিভাবে এতটা স্বার্থপর হতে পারে? চোখের কোনে পানি চলে আসলে দীর্ঘ’শ্বাস বেড়িয়ে আসতে চাইছে সাফিনের। চোখ খিঁ’চে রাখলো সে৷ সিরাতকে কেউ টাচ করুক এটা সে কখনো স’য্য করতে পারবে না। সিরাতকে বাঁধা হয়ে গেলে নাঈম সিরাতের জন্য খাবার আনতে চলে গেলে সরোয়ার সাহেব পকেট থেকে সিগারেট বের করতে পাশ থেকে একজন ম্যা’চ দিয়ে জ্বা’লিয়ে দিতে তাঁর ধোঁয়া অন্ধকার রুমটাতে উড়িয়ে দিয়ে প্রশান্তির হাসি হাসছেন যেন।
— তো শুরু করা যাক তোমাদের প্রশ্নের উত্তর। ওহ নো, সিরাত তুমি জানলে আরও অবাক হবে যে, তোমার শশুরমশাই মোস্তফা সাহেব সয়ং নিজেই তোমাকে মা’রার জন্য আমাকে ৫০কোটি টাকা অফার করেছেন। আসলে কি জানোতো, এই শাহনেওয়াজ ভিলার কেউই তোমাকে ভালোবেসে উঠতে পারেনি। যতটুকু দেখিয়েছে সব সাফিনের দিকে তাকিয়ে বুঝলে? সরোয়ার সাহেবের কথা শুনে এতক্ষণের রাগান্বিত মুখশ্রীটাও কেমব পানসে হয়ে গেল সাফিনের। একেরপর এক বিস্ময় মাখা কথাগুলো ঠিক হ’জম করতে পারছে না সে। বাহিরের বর্ষনপাতের রেশ প্রবল বেগে ঝরে চলার সহিত বর্ষনের ন্যায় কথাটা তাঁর কানের কাছে যেন সা’জোরে আ’ঘাত হেনে গেল সিরাতের। চোখের কোন ঘেঁষে পানি ঝরানো ছাড়া আর কিছু আসতে চাইছে না যেন তাঁর। ধীর চাহনিতে মাথা নিচু করে সরোয়ার সাহেবের কথাগুলো শুনতে থাকলো সে।
— এটা কখনো পসিবল নয়। ড্যাড এমনটা কখনো করতে পারেন না। আমি বিশ্বাস করিনা এসব। সাফিনের উত্তেজিত মুখদ্বয় দেখে সরোয়ার সাহেব হেসে পকেট থেকে ফোনটা বের করে মোস্তফা সাহেবের নম্বরে ডায়াল করতে সরোয়ার সাহেব কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠস্বর শোনা গেল।
— ভাই মেয়েটাকে গু’লি করে ওখানেই মে’রে দে। আমি আমার ছেলের জীবনে এমন মেডেলক্লাস মেয়েকে চাইনা। সবথেকে বড় কথা আমার আব্বাজানকে যে বি’ষ দিয়ে মে’রেছে।
—আচ্ছা ভাই। কথাটুকু বলেই সরোয়ার সাহেব ফোনটা কেঁ’টে দিতে সাফিন পুরো অবাক হয়ে গেল তাঁর ড্যাডের কথা শুনে। সিরাতের মনের মাঝে যেন কালো আঁধারে ছেঁয়ে আছে।
—আর মাএ কিছুক্ষণ সাফিন। তারপর আমি নিজেই আপনার জীবন থেকে সরে যাব। আমাকে যদি বেঁচে থাকার একটা সুযোগ দেওয়া হত না সাফিন? তাহলে আমি আপনার হাত ধরে পুরো শহর ঘুরে দেখার সপ্ন বুনতাম।
কিন্তু আ’ফসোস, সেটা আর পসিবল নয়। কথাগুলো মনের মাঝে যেন তো’লপা’ড় খেলে যাচ্ছে সিরাতের। চোখ বেয়ে ঝরে চলেছে তাঁর অঝোরে নোনাজল।
— নিজ কানেতো সব শুনলে সাফিন বেটা। এবার ট্রাস্ট হলো তো আমাকে? সাফিন থ’ম মে’রে গেলে সরোয়ার সাহেব উঠে দাঁড়িয়ে অন্ধকারে দেয়ালের সাথে হাত ঠেকিয়ে বলতে লাগলেন।
— এক-এক করে সবটা ক্লিয়ার করি তোমাকে হুম। তোমার ড্যাডকে আমি প্রচুর পরিমানে ঘে’ন্না করি সেই ছোট বেলা থেকে। আর এবার সবকিছু আমার হাতে। তুমি শুধু সাইনটা করতে যতক্ষণ।
—কিসের সাইন? সাফিনের কথা শুনে হেসে উঠলেন সরোয়ার সাহেব। পাশ ফিরে তাকাতে একজন তিনটা ফাইল সরোয়ার সাহেবের হাতে ধরিয়ে দিলে সরোয়ার সাহেব হেসে বললেন।
— এখানে রাজবাড়ি আর তোমার ইয়াংম্যান আজাদ সাহেবের সব প্রোপার্টির দলিল রয়েছে। যেটা সিরাতের বাচ্চার নামে লিখে রেখে গেছেন তোমার ইয়াংম্যান। এগুলোতে দুজন চটপট সাইনটা করে দেও শুধু।
— এসব করে লাভটা কি পাবে তুমি? ইয়াংম্যানতো তোমার বাবা হন তাইনা?
—রাখোতো তোমার বাপ হওয়ার কথা। উনি কোনো কালেই আমার বাপ ছিলেন না। বাপতো হয় তোমার ড্যাড মোস্তফার। আমাকে তো তোমার দাদির বাচ্চা-কাচ্চা হয়না তাঁরজন্য অনাথ আশ্রম থেকে নিয়ে এসেছিলেন তোমার ইয়াংম্যান। যেমনি তোমার বাপ হয়ে গেল বছর খানেক বাদে অপ্রকাশিত ভাবে। তোমার দাদি হাসপাতালে মা’রা গেলেন তখন থেকেই আমার আদর সব উবে গেল তোমার ইয়াংম্যানের থেকে। সবকিছুতে মোস্তফা সেরা, সবার কাছে গল্পে, আসরে, পার্টিতে, মোস্তফাকে নিয়ে যেতেন সাথে করে। আর আমার গুরুত্ব ফুঁড়ি’য়ে গেল তাঁর। আমাকে দেখতে আসা পাএীর সাথেও পর্যন্ত তোমার ইয়াংম্যান মোস্তাফার সাথে বিয়ে দিলেন। একটিবার জিজ্ঞেস অব্দি করেননি যে আমার মেয়েটাকে পছন্দ হয়েছিল কিনা? এটা কি আমার প্রতি তোমার ইয়াংম্যান অন্যা’য় করেননি? এখন তুমি আমার ছেলে থাকার কথা ছিলে কিন্তু দিব্য মোস্তাফার ছেলে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছো সাফিন। আমার বিয়ে করার ইচ্ছেটাই মা’টি করে দিয়েছেন তোমার ইয়াংম্যান। এবার এই সব সম্পত্তি আমি নিজের নামে করে নিয়ে রাস্তায় বসিয়ে ছারব তোমার ড্যাডকে। তবে এ হৃদয় শান্ত হবে।
সরোয়ার সাহেবের কথা শুনে অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াল সাফিন। ধীর কন্ঠে বললো।
— আর রাজবাড়ীর পিছনে এত-এত খু’ন এগুলো কেন করলে তুমি? আর বুড়ো আম্মা?
— কিসের বুড়ো আম্মা। উনি তোমার নিজের বুড়ো আম্মা নাকি? উনিতো তোমার ইয়াংম্যানের সৎ মা। আর রাজবাড়ীর পেছনে এত মানুষ খু’ন হওয়ার কারন তোমার ওই বুড়ো আম্মা নিজেই ছিলেন। যেদিন প্রথম উনি শাহনেওয়াজ ভিলায় পা রেখেছিলেন, সেদিনই ওনার সম্পর্কে খবর নিয়ে জানতে পারলাম উনি আজাদ সাহেবের সৎ মা। তাঁরজন্য সেদিন রাতে ওনার রুমে গিয়ে হাত মেলালাম আমি। উনিই আগ বাড়িয়ে এসেছিলেন আমার সাথে। যেদিন আজাদ সাহেব তোমাকে তাঁর রুমে তলপ করে সিরাতের বাচ্চার নামে সব প্রোপার্টি দলিল করে দিয়েছিলেন সেদিন থেকে তোমার আর সিরাতের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করতে ওনাকে দিয়ে সিরাতকে তাঁর হা-পা টে’পানোর অযুহাতে পুরোপুরি ভাবে আঁ’টকে দিয়েছিলাম সিরাতকে। কিন্তু তোমাদের ঢ’লা>ঢ’লি করা তো কমছিলই না বরং বেড়ে যাচ্ছিল। তাই কায়দা করে বিদেশ থেকে ড্রা’গস আনিয়ে তোমার বুড়ো আম্মাকে দিয়ে সকিনার অজান্তে দুধে মিশিয়ে দেওয়াতাম। এতে করে সিরাতের পর্যাপ্ত ঘুম এবং তিলে-তিলে শেষ হওয়ার অ’স্ত্র হয়ে দাঁড়াল। লোক লাগিয়ে জানতে পারলাম তোমার ইয়াংম্যান রাজবাড়ীতে রেখেছিলেন এই দলিলের ফাইলগুলো। কিন্তু খবরটা কানে আসার পরপরই তোমরা লোকটাকে আঁ’টকে দিলে। যার কারনে তোমাদের জে’ম্মায় বসেই গু’লি চালাতে বলতে হলো দুলালের দ্বারা। কিন্তু পরক্ষণেই খবর আসলো রাহেলা বেগম আমার সাথে বেই’মানি করে ফাইলটা হা’তা’তে লেগে পরেছেন। তাই আমাকেও বাধ্য হয়ে একের পর এক খু’ন করতে হলো।
দুলালকে মা’রা’র কোনো ইনটেনশন ছিল না আমার। কিন্তু ও শুধু-শুধু একটা লোককে মে’রে রাজবাড়ির পেছনে ফেলে গেছিল। যেটা ছিল রাজবাড়ি রেটে নেওয়ার একমাএ অ’স্ত্র।কিন্তু ছা’গলটা এটা বুঝলো না যে, রাজবাড়ি রেটে চলে গেলে আমি পাব কিভাবে? তাই ওকেও মে’রে নদীতে ভাসিয়ে দিতে হলো। কিন্তু সেখানেও মাঝপথে চলে এলো মিরাজ চৌধুরী। একটু বেশি বা’ড়া>বা’ড়ি করতে গিয়ে ক্যামেরায় বন্দি করলেন সবটা। তাই পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীনই তাঁকে গু’লি করতে হলো আমাকে। আর আমার পুষে রাখা অকর্মা’র ঢেঁকি ওরা লা’শের সাথে আইডেন্টিটি কার্ডও রেখেছিল।তখনই আন্দাজ করেছি বিষয়টা বেগতিক হবে। তাই বেছে নিলাম দুলাল অরফে নাঈমকে। সিরাত সেই প্রথম থেকেই আমার নজরের আওতায় ছিল। তোমার গার্লফ্রেন্ড ভেবে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম ওকে। কিন্তু ভাগ্যবসত গু’লিটা লেগেছিল তোহার গায়ে। তুমি আমার সব কাজে ব্যা’ঘাত ঘটাতে থাকলে একের পর এক। প্রথমে ৫০০ মেয়ে বিদেশে পাঁচার করা থেকে আঁ’টকালে তাঁরপর এই এতসব। আমার লক্ষ্য একটাই ছিল, এই পুরো রাজবাড়ি নিজ দখলে করার। কিন্তু মাঝপথে সিরাতের বার্থডের দিন আমি আর রাহেলা বেগম সিরাতের ড্রা’গস নিয়ে কথা বলতে থাকলে দু’র্ভাগ্য ক্রমে তোমার আদরের ইয়াংম্যান সেটা শুনে নেন। আমাদেরকে শা’সালেন তিনি। মে’রে ফেলার হু’মকি দিলেন। তাই দুধের সাথে কড়া রকমের ড্রা’গস দিয়ে সিরাতকে আমাদের দ’খলে এনে পেয়ারের নাতি বউয়ের দ্বারাই ফের্নিতে বি’ষ মিশিয়ে মে’রে দিলাম তোমাদের ইয়াংম্যানকে। এতে সা’পও মর’লো আর লাঠিও ভা’ঙলো না। দুইদিক থেকেই আমার লাভের লাভ হলো। তোমাদের মাঝে দূরত্বও বাড়লো।
—আর বুড়ো আম্মা সকিনা? বুড়ো আম্মাতো তোমার দলেরই লোক ছিল? সাফিনের এরমধারা প্রশ্নে হেসে উঠলেন সরোয়ার সাহেব। বললেন।
— রাজবাড়ির পেছনে মৃ’ত লা’শগুলো থেকে যে ফোন গুলো পেয়েছো, ওটা থেকে তোমরা নিঘ্যা’ত রাহেলা বেগমকে খুব সহজেই ধরে নিতে পারতে। তাই আমিও কোনো রি’ক্স নিতে চাইনি। আর রইলো বাকি সকিনা। ও রাহেলা বেগমের পিছুপিছু আ’ঠার মতো লেগে থাকার কারনে ওকেও সরিয়ে দিয়েছি।
সরোয়ার সাহেবের কথাগুলো যেন তীরের ন্যায় সাফিনের দিকে ছুঁ’ড়ে আসছে। সিরাতের চোখথেকে পানি গড়িয়ে পরতে থাকলো। অজ্ঞা’নে হোক বা যেমনই হোক, তাঁর হাত দিয়ে আজাদ সাহেব খু’ন হয়েছে ভাবতেই কান্নায় ভে’ঙে পরছে সিরাত। সাফিন সরোয়ার সাহেবের দিকে তাকালে এখন রাগে সমস্ত শরীর থর’থর করে কাঁ’পছে যেন তাঁর। ঘৃ’নায় তাকাতেও রুচিতে বাঁ’ধছে এখন। তাঁর পরিবারের সকলের মাঝে এতটা বি’ষ পুষে রেখেছে এরা ভাবতেই চক্ষুদ্বয় কেমন ছলছল করে উঠছে সাফিনের। নিজের জন্মদাতা ড্যাডও কিনা তাঁর ভালোবাসাকে মে’রে ফেলার পরিকল্পনার সাথে জড়িত!
— পরিবারের থেকে তোমাদের কাছে সম্পত্তির এই দেয়ালটা বড় হয়ে গেল চাচ্চু? আমি সর্বক্ষণ তোমাকে সম্মান করেছি। তোমাকে মন থেকে ভালোবেসেছি। আর তুমি! সরোয়ার সাহেব হেসে উঠলেন। বললেন।
— তোমার ড্যাডের ধারনা তাঁর আব্বাকে সিরাত মে’রেছে। তাই সে তোমাকে প্রথমে বিদেশে পাঠিয়ে সিরাতকে দূরে ঠেলেছেন। সবতো ঠিক-ঠাকই চলছিল। তাহলে তুমি কেন আবার দেশে পারি জমালে? তো এখন নিজ হাতেই নিজের ভালোবাসাকে খু’ন করো। নাঈম? সরোয়ার সাহেবের কন্ঠ শুনে নাঈম বাহির থেকে খাবার নিয়ে হাজির হলে সরোয়ার সাহেব হেলান দিয়ে চেয়ারে বসে ধীর কন্ঠে বললেন।
—ওদের বাঁ’ধনটা খুলে দেও। সরোয়ার সাহেবের আদেশ অনুযায়ী নাঈম সিরাতের বাঁ’ধনটা খুলে দিয়ে খাবারের প্যাকেটটা সিরাতের সামনে তুলে দিলে সিরাতের অশ্রুগুলো ঝড়ে পরতে থাকলো যেন। ধীর কন্ঠে বললো।
—খাবনা।
—দ্রুত খাও মেয়ে। সরোয়ার সাহেবের রাগান্বিত কন্ঠ শুনে সাফিন রাগান্বিত চোখদ্বয় নিয়ে সরোয়ার সাহেবের দিকে তাকালেও আগের মতো কেমন শক্তিতে কুলিয়ে উঠছে না তাঁর। চোখদুটো জ্বা’লা করছে প্রচুর। এতগুলো বছরের এই সম্পর্কের বাঁ’ধনটা এক নিমিষেই কেমন শেষ হয়ে যাচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে প্রচুর তাঁর। হৃদয়মাঝারের হৃদকুঠোরির ভা’জে লুকিয়ে থাকা একমুঠো প্রনয় যেন কোনো ভাবেই ধরে রাখতে পারছে না সে। সিরাত সরোয়ার সাহেবের কন্ঠশুনে কেঁ’পে উঠলে কাঁ’পা>কাঁ’পা হাতে প্যাকেটের ভেতর থেকে রুটি কলা অনেক কষ্টে গ্রো’গ্রাসে গি’লছে শুধু। কিন্তু গ’লা দিয়ে নামতে চাইছে না যেন তাঁর। “দিগন্তের ক্ষ’নে- ক্ষ’নে গর্জ’নপাতটাও যেন বিষা’দে ছেয়ে রয়েছে আজ।” বৃষ্টিময় হিমশীতল হাওয়া অন্ধকার রুমময় প্রবেশ করে গেলেও কপালের ভাঁ’জে>ভাঁ’জে কেমন ঘেমে উঠেছে সিরাতের। সরোয়ার সাহেব ইশারা করতে নাঈম সাফিনের হাতের বাঁ’ধন খুলে দিলে সরোয়ার সাহেব হুঁশিয়াররি ভাবে বললেন।
— মনিটর খেয়াল রেখে কাজ করবে আশাকরি। সরোয়ার সাহেবের কথাটা কানের কাছে এসে পৌঁছাতে চোখদ্বয় বন্ধ করে নিল সাফিন। হাতদুটি মুঠোবন্দি করে রাখলো সে। আজ সবদিক থেকেই কেমন বাঁ’ধা পরে গেছে সে। নিজের আপনজনদের এই র’ক্ত নিয়ে খেলাটা কেমন হ’জম করতে পারছে না সে। অশ্রুসিক্ত নয়নে সিরাতের দিকে তাকালে সিরাতের শুকনো হাসি উপহার হিসেবে পেল সে। সরোয়ার সাহেব তাঁর হাত থেকে ব’ন্দুকটা ফ্লোরে ছুঁ’ড়ে মে’রে বললেন।
— চটপট গু’লিটা চালিয়ে দেও সাফিন। না থাকবে মা আর না আসবে তাঁর অনাকাঙ্ক্ষিত বাচ্চা। সরোয়ার সাহেবের কথাটা শুনে সাফিনের পা ঢ’লে নিচে পরে গেলে সিরাত অশ্রুসিক্ত নয়নে ধীর পায়ে নিচু হয়ে সাফিনের সামনে বসে ফ্লোর থেকে ব’ন্দুকটা হাতে নিয়ে একপলক তাঁর দিকে তাকিয়ে সাফিনের কাঁধে হাত রেখে ধীর কন্ঠে বললো।
— এভাবে ভে’ঙে পড়ার কিছু নেই সাফিন। আমাকে মে’রে দিলেই সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। অন্যথা এই বি’ষাদময় জিবনের কোনো মানে হয়না। সিরাতের ধীর কন্ঠের রেশ শুনে রাগ লাগলো সাফিনের। রাগান্বিত কন্ঠে বললো।
—কাকে মা’রবো আমি? যাকে আমি ভালোবাসি তাঁকেই মে’রে দিতে বলছো তুমি সিরাত? তাঁর থেকে তো নিজেকে গু’লি করে মে’রে দেওয়াও হাজারগুন ভালো। সাফিনের রাগান্বিত কথাটাও আজ যেন ভালো লাগছে সিরাতের। চোখের কোন ঘেঁষে অশ্রু ঝরে পরলে সাফিন সিরাতের দুইগালে হাত রেখে হুট করেই সিরাতের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিতে সরোয়ার সাহেবসহ সবাই মাথা নিচু করে ফেললেন। সরোয়ার সাহেব বললেন।
— এ ছেলে মেয়েটাকে মা’রার আগেও কেমন নিজের জোর খাটাচ্ছে! এগুলা দেখাও পা’প৷ তওবা-তওবা। কথাটা বলে বাকিদের দিকে তাকিয়ে তাঁদের উদ্দেশ্যে বললেন।
—এ কেউ মাথা জাগাবি না বলে রাখলাম।
—আচ্ছা স্যার।
.
দীর্ঘসময় নিয়ে সাফিন সিরাতকে ছাড়ার পর সিরাত মৃদু হাসলো শুধু। আজকে তাঁর ল’জ্জা, ভায় কোনোটাই যেন কাজ করছে না। মৃ’ত্যুর ঠিকানাটা অনেক আগেই নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে সে। হাতে থাকা ব’ন্দুকটা সাফিনের হাতে দিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে মুখে হাসি লে’প্টে বললো।
— গু’লিটা এবার চালান সাফিন। সাফিন সিরাতের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকাতে সিরাত হেসে বললো।
—ভু’লটা এটা নয় যে,বুড়ো আম্মা আমাকে তি’লে>তি’লে মা’রতে চেয়েছেন? ভু’লটা এটা যে, আপনি আমাকে ভু’ল বুঝেছেন। যাঁর খেসারত হিসেবে আপনিও আমাকে পাবেন না। সিরাতের ধীর কন্ঠে ছুঁ’ড়ির আ’ঘাতের ন্যায় কন্ঠস্বর যেন ভেতরটা খুব পোড়া’চ্ছে সাফিনের। র’ক্তিম চোখদুটি দিয়ে ঝরে পরছে তাঁর র’ক্তিম অশ্রুধারা।
— চেয়েছিলাম প্রেয়সীর রাগ ভাঙাতে, খেসারত হিসেবে তুমি নিজেকে আ’ঘাত হানতে বলে আমার হৃদয়টাকে ক্ষ’ত বি’ক্ষত করতে চাইছো সিরাত?
—জীবনটা ক্ষনিকের সাফিন? আজ আছি কাল নেই! ভাগ্যগতিতে নাহয় আগেই এই মোহ ছাড়িয়ে না ফেরার দেশে পারি জমাই। সাফিনের চোখের অশ্রুধারা দেখে সিরাত কান্নারত চোখে সাফিনের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকলে সাফিন সিরাতের দিকে তাকিয়ে দেখছে শুধু তাঁকে।
—তোমার কষ্ট হচ্ছে না সিরাত? সাফিনের কথা শুনে হেসে উঠলো সিরাত। হাসির স্বরে বললো।
— যে মেয়ে ছোটবেলা থেকেই তাঁর বাবা-মাকে হাঁড়িয়ে বসে আছে, তাঁর আবার কষ্ট কিসের হুম?
—তোমাদের এত এক্টিং দেখার জন্য বসে রইনি আমরা এখানে। আর পাঁচ গু’নব শুধু। অনেক টাইম ওয়েস্ট করে ফেলেছি। আর নয়।
—সাফিন গু’লিটা চালান? সাফিনের হাতটা কেমন কাঁ’পছে। সিরাত সাফিনের হাতটা টে’নে নিয়ে ব’ন্দুকটা আবারও নিজের পেটের কাছে এনে ধীর কন্ঠে বললো।
— ভালোবাসি আপনাকে সাফিন? আপনার জন্য ম’রতেও রাজি আছি….

চলবে…..

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো।🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#শেষ_পর্ব।

🚫 ভিতরে কিছু-কিছু জায়গায় অশা’লীন ওয়ার্ড ব্যাবহার করা হয়েছে গল্পের প্রয়েজনে। তাঁর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।ছোটরা দূরে থাকুন।🚫

—সাফিন গু’লিটা চালান? সাফিনের হাতটা কেমন কাঁ’পছে। সিরাত সাফিনের হাতটা টে’নে নিয়ে ব’ন্দুকটা আবারও নিজের পেটের কাছে এনে ধীর কন্ঠে বললো।
— ভালোবাসি আপনাকে সাফিন? আপনার জন্য ম’রতেও রাজি আছি। সিরাতের ধীর কন্ঠের রেশ যেন ঠিক হ’জম করতে পারলো না সাফিন। র’ক্তিম চক্ষুদুটি দিয়ে অনবরত র’ক্ত ঝরে পরছে যেন। ডু’করে উঠে কান্না পাচ্ছে যেন তাঁর। সিরাত ছলছল চাহনিতে মুখে হাসি লে’প্টে শীতল স্বরে বললো।
—একটা কথা বলব আপনাকে সাফিন? সিরাতের এরমধারা কন্ঠস্বর শুনে সাফিন নিজেকে সা’মলে রাখতে পারছে না যেন। হুট করেই আবারও সিরাতকে আ’ষ্টে>পৃষ্টে জড়িয়ে ধরে সিরাতের মাথার পিছনে হাত রেখে সিরাতের মাথাটা টে’নে নিয়ে নিজের বুকের বাম পাশে চে’পে ধরে কান্নারত কন্ঠে বললো।
— সিরাত আমি আর পারছি না জান। এমন করো না প্লিজ তুমি! আম্মার কিচ্ছু হবে না তুমি চলো এখান থেকে। সাফিনের কন্ঠ শুনে মৃদু হেসে উঠলো সিরাত।প্রতিউত্তর করলো না সে। সিরাতের চোখের পানি নাকের পানি এক হয়ে গেলে সাফিনের ভেজা শার্টটা যেন আরও ভিজিয়ে দিতে ব্যাস্ত। সিরাতের ঘনঘন নিশ্বাসের উষ্ণ’তা সাফিনের বুকের উপর আঁ’ছড়ে পরতে থাকলে সাফিনের হৃদয়ের কম্প’নতা যেন আরও তি’ব্রতর হয়ে উঠলো। নিজেকে শান্ত রাখার বৃথা চেষ্টা করে ধীর কন্ঠে বললো।
— বলো কি বলবে? প্রেয়সীর কথা শোনার জন্যইতো অব্য’ক্ত হয়ে আছে এই অধ’মের ব্যাকুল হৃদয়। সাফিনের কথার তী’ব্রতা সিরাতের কানের কাছে এসে পৌঁছাতে সিরাত সাফিনের বুক থেকে মাথাটা জাগিয়ে সাফিনের দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে কান্নার হাসি হেসে বললো।
— শেষ বারের মতো আপনাকে ছুঁয়ে দেখতে পারি সাফিন? সিরাতের এরুপ আবদারে সাফিন অসহায় চাহনিতে সিরাতের দিকে তাকিয়ে ধীর ভাবে সিরাতের চোখের দৃষ্টিতে চোখ রেখে দুইপাশে হাত মেলে দিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করতে সিরাত কোনো কিছু না ভেবেই ঝাঁপি’য়ে পরলো সাফিনের প্রসস্থ বুকে। শীতল হাতে সাফিনের ফর্সা তৈলাক্তময় গালে হাতের স্পর্শ ছুয়িয়ে দিতে চোখদুটি গিয়ে থ’মকে গেল সাফিনের নাকের ডগায় থাকা লালচে রাঙা তিলটার দিকে। ঠোঁটদুটি মৃদু ফাঁ’ক হয়ে আসলো সিরাতের। এই তিলটার উপর তাঁর লো’ভ জন্মে আছে সেই প্রথম দিন থেকে। আজকে যেন আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে করতে পারলো না সিরাত। সাফিনের সমস্ত মুখশ্রীতে পা’গলের মতো চুমু খেতে থাকলো সে। সাফিন ছলছল চাহনিতে সিরাতের পা’গলামো দেখছে শুধু। একটা মেয়ে কতটা ক’ষ্ট পেলে এ রকম নিজের ল’জ্জা’র বাঁ’ধ ভুলে গিয়ে তাঁকে আঁ’কড়ে ধরতে পারে। যেখানে সাফিন যখনই কোনো ল’জ্জাদায়ক কথা বলতো সিরাতকে তখনই সিরাত রাগে নাকের ডগা প্রথমেই লাল করে ফেলতো। সাফিনের বুকের ভেতরটা কেমন জ্ব’লে পু’রে খা’ক হয়ে যাচ্ছে যেন। শুধু পু’রে যাওয়া জায়গাটাতে তাঁর প্রেয়সীকে আগলে রেখে পানি ঢালারও জো নেই আর এখন। সেখানে এখন নিজ হাতেই নিজের প্রেয়সীকে খু’ন করার জন্য প্রে’সার দেওয়া হচ্ছে।
—হয়তো আমি আকাশের হাজারো তাঁরার মাঝে একটি কোনে ঘা’পটি মে’রে বসে থাকব সাফিন? কখনো ঝুম বর্ষনের সহিত ধরনীতে এসে সা’জোরে আ’ঘাত হানব! তবুও প্রতিটা মুহুর্ত তোমাতেই ম’রিয়া হয়ে থাকব আমি। গল্পটা হয়তো ভিন্ন হতে পারতো? কিন্তু আমি মানুষটাই যে চিরকালের অসুখী সাফিন। অন্যকে আর কি দো’ষারোপ করব? কথাগুলো হৃদয় মাঝারে ছন্দের হারে বাজতে থাকলে হুট করেই গু’লির বিক’ট শব্দে আ’ঘাতের সহিত পেটের কাছটাতে এসে বা’রি খেয়ে গেলে ছলছল দৃষ্টিতে ঠোঁটের কোনে হাসির ছাপ রেখে সিরাতের নিস্তে’জ দেহটা সাফিনের বুকের কাছে এসে ঢ’লে পরলে হৃদয় কেঁ’পে উঠলো যেন সাফিনের। সিরাতের মুখের কোন ছুঁয়ে ঠোঁট স্পর্শ করে র’ক্ত গড়ি’য়ে পরতে থাকলে আঁ’তকে উঠলো সাফিন। হুট করেই কিভাবে কি হয়ে গেল। সে তো গু’লি চালায়নি? পরক্ষণেই নিজের হাতটা সিরাতের হাতের বাঁ’ধনের কাছে দেখে এতক্ষণের ঝিম ধরে থাকা কান্নাগুলো চিৎ’কারের সহিত বেড়িয়ে আসতে চাইছে যেন সাফিনের। সিরাতকে নিজের বুকের কাছটাতে জা’প্টে ধরে ভে’ঙে পরলো সাফিন। বুকের মাঝে তো’ল>পা’ড় বয়ে যাচ্ছে তাঁর।
— সিরাত…! কেন করলে এমনটা তুমি? এভাবে শা’স্তি দিলে আমাকে তুমি? এর থেকে তো আমাকে মে’রে ফেললেও এত ক’ষ্ট হতনা সিরাত? সাফিনের কান্নার রেশ সিরাতের কানের কাছে এসে পৌঁছাতে জোরপূর্বক চোখদুটি পিটপিট করে তাকালে সাফিন সিরাতকে আরও গভীর ভাবে আঁ’কড়ে ধরলো। সাফিনের কান্নার রেশ তি’ব্র হতে থাকলে সরোয়ার সাহেব সহ সবাই হো-হো করে হেসে উঠলে সাফিনের রাগে সমস্ত শরীর থর’থর করে কাঁ’পছে যেন। তাঁদের দিকে ছলছল দৃষ্টিতে রাগান্বিত চোখে তাকালে হুট করেই বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সহিত অনবরত গু’লি বর্ষনের আওয়াজ শোনা গেলে সরোয়ার সাহেবসহ সবাই ভ’রকে গেলেন যেন। সরোয়ার সাহেব সাফিন আর সিরাতের দিকে এক পলক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নাঈমের দিকে তাকিয়ে কা’ঠ>কা’ঠ কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন।
— এসব কি হচ্ছে নাঈম? গু’লি ছুঁ’ড়তে বলেছো কেন তুমি? কেউকি এসেছে বাহিরে?
সরোয়ার সাহেব অন্ধকারে বৃষ্টিময় গেটের দিকে উঁকি দিতে নিতে নাঈমের ভ্রুদ্বয় কুঁ’চকে আসলো যেন। সে তো বলেনি গু’লি ছু’ড়তে। তাহলে? কয়েকটা ঢোক গি’লে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সরোয়ার সাহেবের দিকে তাঁকাতে জুবায়েরের বৃষ্টিতে ভিজে অন্ধকারে ল্যামপোস্টের মৃদু আলোয় জুবায়েরের শ্যামবর্ন মুখশ্রী চিকচিক করছে যেন। সঙ্গে দশ দশটা গাড়ি ভর্তি গার্ডরা পুরো বাড়িটাকে ঘিরে ফেললে গু’লি বর্ষনে কয়েকজন সেখানেই গ’ত হয়ে গেছে তো কয়েকজনের বাহুতে নয়তো পায়ে গু’লি লেগেছে। হুট করে আকষ্মি’ক ঘটনায় সরোয়ার সাহেবসহ সবাই দ’মে গেলেন যেন। ফাইলের কাগজটা বের করে দ্রুত সাফিনের সামনে কলম ধরে দাঁতে দাঁত চে’পে সরোয়ার সাহেব বলতে লাগলেন।
— সাফিন বেডা সাইনটা করে দেও দ্রুত, নয়তো তোমার বউয়ের মতো তোমার আম্মার অবস্থাও এমন করে দেব আমি। সরোয়ার সাহেবের কন্ঠের রেশ সাফিনের কানের কাছে অন্তর্নিহিত হতে রাগে সাফিনের র’ক্তিম চোখগুলো অন্ধকারে যেন আরও ভ’য়ানক দেখাচ্ছে। সিরাতের শরীর থেকে ঝড়া র’ক্তের রেশ সাফিনের সমস্ত শরীরে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে যেন। হুট করেই জুবায়ের রুমে প্রবেশ করতে মোহন আর হেলাল গু’লি ছুঁ’ড়তে থাকলে অন্ধকারে নাঈমও পাল্টা গু’লি ছুঁ’ড়তে যেতে জুবায়েরের হাত থেকে ছোঁ’ড়া গু’লিটা নাঈমের বুক বরাবর গিয়ে ছেদ খেয়ে গেলে নাঈম পা ঢলে ফ্লোরে আঁ’ছড়ে পরতে হুট করে সাদারাঙা লাইটারের আলো তী’ব্র ভাবে রুমজুড়ে ছেয়ে গেলে সরোয়ার সাহেবকে দেখে বড়জোর একটা ধা’ক্কা খেয়ে গেল জুবায়ের।
—এটা আমি কি দেখছি! জুবায়ের হা হয়ে গেলে সরোয়ার সাহেব পকেট থেকে আর একটা ব’ন্দুক বের করে জুবায়েরের দিকে তাক করতে ভ’রকে গেল জুবায়ের। সাফিনের দিকে তাকাতে সিরাতকে নিস্তে’জ অবস্থায় দেখে আরও বিষম খেল যেন জুবায়ের। এবার মুখ থেকে বেড়িয়েই গেল।
—স্যার এসব কি হচ্ছে? আর ম্যামেরই বা এ রকম অবস্থা হলো কিভাবে? জুবায়েরের ভয়ার্ত কন্ঠ শুনে সাফিন মৃদু হাসলে সরোয়ার সাহেব হাসির স্বরে বলে উঠলেন।
— আমি আগেই বলেছিলাম সাফিন বেডা যে, তোমার সাঙ্গ-পা’ঙ্গ না নিয়ে আসতে? এবার তাহলে পুরো পরিবারটাকে জমে’র ঠিকানা দেখিয়ে দেই ডিয়ার? উপস, তোমার আম্মার কথাটাও একবার ভাবলে না! মি’ছি>মি’ছি তোমার আম্মাকে বাঁ’চাতে গিয়ে তোমার বউয়েরও প্রানটা এখন যাই-যাই অবস্থা। আর সেইতো তোমার আম্মাকেও এখন বাধ্য হয়ে মা’রতে হবে তাহলে আমার। সরোয়ার সাহেবের কথা শুনে সাফিন মনিটরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি হাসলো শুধু। জুবায়ের হাত দিয়ে হ্যান্ডসাপের মতো করে সামনে ধরলে সরোয়ার সাহেবের দৃষ্টি জুবায়েরের দিকে যেতে সিরাতের বন্ধ চোখদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে একফোঁটা অশ্রু ঝড়াল সাফিন। সিরাতের কপালে চুমু খেয়ে সিরাতের হাত থেকে ব’ন্দুকটা নিয়ে সরোয়ার সাহেবের দিকে পেছন থেকে সুট করতে গু’লিটা গিয়ে সরোয়ার সাহেবের পেছন ছুঁয়ে বুক বরাবর স্পর্শ করে গেলে আঁ’চমকা আ’ক্রমণে সরোয়ার সাহেব পিছু ঘুড়ে গু’লি চালানোর উদ্যেগ নেওয়ার আগেই জুবায়ের সরোয়ার সাহেবের হাতদুটি নিজের দখলে নিয়ে গিয়ে ব’ন্দুকটা নিজ হাতে নিয়ে নিল। হাসির স্বরে বললো।
— এবার আপনিও একটু মনিটরটা দেখুন মিস্টার সরোয়ার। সরোয়ার সাহেব পিছুঘুরে তাকালে মনিটরে আমেনা বেগমকে সহিসালামতে বাড়িতে বসে থাকতে দেখে ভ্রুদ্বয় কুঁ’চকে এলো সরোয়ার সাহেবের।
—এটা কিভাবে সম্ভব? সরোয়ার সাহেবের অস্প’ষ্ট কন্ঠ শুনে হেসে উঠলো জুবায়ের। বললো।
— আপনার ড্রাইভার ভু’ল করে আমার গাড়ির সামনে পরে গিয়েছিল স্যার। উপস, সো স্যা’ড। এভাবে আপনাকেও এখন পৃথিবীর মা’য়া ত্যা’গ করতে হবে। কথাটা বলেই সামনে থেকে বুক বরাবর গু’লি ছুঁ’ড়তে এবার সরোয়ার সাহেব আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না। পা ঢ’লে ফ্লোরে পরে গেলেন। আর সমস্ত রুম জুড়ে শুধু বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের প্রতিধ্বনি বরাদ্দ থাকলো।
.
দিগন্তের প্রতিটা কোন ঘেঁষে কালো মেঘে ছেঁয়ে আছে যেন আজ। গগনের বিষন্নতার হাওয়াটা যেন সাফিনের হৃদয়টা আরও ক্ষ’ত বিক্ষ’ত করার জন্য যথেষ্ট। সকালের ফুরফুরে হিমশীতল হাওয়া শরীরে যেন কারে’ন্টের ন্যায় প্রবেশ করছে হাসপাতালের করিডোর জুড়ে। চেয়ারে শরীর এলিয়ে দুইহাত মাথায় রেখে শক্ত করে আঁ’কড়ে ধরে আছে সাফিন। ভয়ে নিশ্বাস নিতে পর্যন্ত ভু’লতে বসেছে সে। সিরাতকে সেই রাতে কখন আইসিউতে নিয়ে গেছে হায়াত এখনও তাঁর এমুখো হওয়ার নাম নেই। নির্ঘুম রাতে মাথাটা কেমন ঝিমুচ্ছে সাফিনের। হুট করেই আমেনা বেগম এসে হাজির হলে নিজের আম্মার মুখের দিকে দৃষ্টিস্থির রেখে ছুটে গিয়ে আমেনা বেগমকে জড়িয়ে ধরলো সাফিন। বুকটা কেমন খালি>খালি লাগছে তাঁর। বিতৃষ্ণা’য় গ’লা শু’কিয়ে আসতে চাইছে যেন। আমেনা বেগম সাফিনের পিঠ চা’পরে দিয়ে কান্নারত কন্ঠে বললেন।
—কি হয়েছে আমার আম্মার? এত বছর পর মেয়েটাকে বাড়ি নিতে চাইলি আর এখনই এ রকম অ’ঘটন ঘ’টতে হলো? হায় আল্লাহ, আমার আম্মারে তুমি সুস্থ কইরা তুইলো খো’দা। এই বুড়ো বয়সে আর এরুপ ঘট’নার সম্মুখীন হয়িওনা মা’বুদ। আমেনা বেগম কেঁদে উঠলে সাফিন আমেনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে এবার কেঁদে উঠলো যেন। হৃদয়ের গহীনতায় যেন প্রনয় শুরু হওয়ার আগেই ঝ’লসে দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে।
“আরও কিছুটা সময় নিয়ে আইসিউ থেকে হায়াত বেড়িয়ে আসলে সাফিন তাঁর কাছে যাওয়ার আগেই হুট করেই তোহা কান্নাভেজা চোখদ্বয় নিয়ে দৌঁড়ে এসে হায়াতের শার্টের কলার টেনে ধরে ফো’পাঁতে-ফো’পাঁতে বলতে থাকলো।”
—আমার জানের কি হইছে হুম? আমি কিচ্ছুটি শুনতে চাইছি না আমি শুধু আমার সিরাতকে সুস্থ অবস্থায় দেখতে চাই। আচমকা তোহার এরুপ আচরনে সাফিন তোহার মাথায় হাত রেখে শান্ত করার চেষ্টা করতে যেতে তোহা এতেকরে আরও রেগে উঠলো যেন। সাফিনের দিকে তাকিয়ে ক’ট>ম’ট করে বলতে লাগলো।
—এই সবকিছুর জন্য দায়ী আপনি। শুধুমাএ আপনার জন্য আমার জানের লাইফটা এভাবে হে’ল হয়ে গেছে। এখন এখানে আসছেন কেন? তা’মা’শা দেখতে এসেছেন যে, কিভাবে সিরাত ধীরে-ধীরে মৃ’ত্যুর মুখে ধা’বিত হচ্ছে তাইতো? এটাই তো দেখতে চান আপনি… কথাটা বলা মাএই তোহার গালে সাফিনের শ’ক্তপো’ক্ত হাতের স্পর্শ পরে গেলে বাহির থেকে জুবায়ের তোহার জন্য খাবার কিনে আনলে এরুপ দৃশ্য দেখে থ’মকে গেল যেন সে। সাফিনের থা’প্পড়ের কারনে তোহার এলেমেলো কোকরানো চুলগুলো সামনে চলে আসাতে গালে হাত রাখলো তোহা। সবাই কেমন চুপ করে গেল যেন। সাফিন রাগ নিয়ে দাঁতে দাঁত চে’পে ধরে বললো।
— আমি নিজে বারবার খু’ন হতে রাজি আছি তোহা। আমাকে নিয়ে যা খুশি বলো তুমি, আমি কিচ্ছুটি বলব না তোমায়। যদি বলি তো তোমার পায়ের জু’তা আর আমার এই গাল।কিন্তু সিরাতকে নিয়ে মৃ’ত্যুর সম্পর্কে ফারদার কোনো কথা বললে আমার থেকে খা’রা’প লোক তুমি একটা খুঁজে পাবে না পৃথিবীতে।
কথাগুলো বলে হায়াতের দিকে তাকিয়ে বললো।
—সিরাত ঠিক আছেতো হায়াত? সাফিনের প্রশ্ন কানের কাছে এসে পৌঁছাতেও খানিক আগের ঘটে যাওয়া ঘটনায় ত’ব্দা খেয়ে গেছে যেন হায়াত।
— আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে না থেকে বলো সিরাতের কি হয়েছে? এখন ঠিক আছে তো সে?
—উম,হুম আপদত ঠিক আছে। গু’লিটা ভা’গ্য বসত পেট ছুঁয়ে স্পর্শ করে গেছে। তবে পেটের কাছে আঘা’ত হেনেছে প্রচুর। কয়েক সপ্তাহ রেস্ট নিতে হবে। ভালো দেখভাল করলে ঠিক হয়ে যাবে খুব দ্রুত। হায়াতের কথা শুনে প্রশান্তির হাসি হাসলো সবাই। সাফিনের বুকের জ্বা’লাটাতে পানি পরলো যেন। দীর্ঘ সময় নিয়ে নিশ্বাস ছেড়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—দেখতে যেতে পারি ওকে?
—সিওর তবে পাঁচ মিনিটের বেশি টাইম দিতে পারব না স্যার। ইনফেকশন হয়ে যাবে নয়তো। ড্রেস পরে নিন ফ্রেশ রুমে গিয়ে।
সাফিন মৃদু হেসে হায়াতের সাথে ধীর পায়ে সেদিকে চলে গেলে আমেনা বেগম তোহার কাঁধে হাত রেখে তাঁকে চেয়ারে বসিয়ে মাথায় হাত বু’লিয়ে দিয়ে ধীর কন্ঠে বললেন।
—আমার ছেলেটার উপর রাগ করিস না মা। আসলে ও গম্ভীর হলেও আমার আম্মাজানটাকে মন থেকে ভালোবাসে ও। আমেনা বেগমের কথা শুনে মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলল শুধু তোহা৷ হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেললেও আবারও এসে জমা হচ্ছে যেন চোখের কোনে। শীতল কন্ঠে আমেনা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো।
—না ঠিক আছে। আসলে আমিও একটু বেশিই সিনক্রি’য়েট করে ফেলেছি বোধহয়। আমেনা বেগম মৃদু হেসে বললেন।
—আমি জানিতো তুই আমার আম্মাজানটাকে কতটা ভালোবাসিস। আমেনা বেগম তোহাকে জড়িয়ে ধরলে তোহাও আমেনা বেগমের কাঁধের উপর থু’তনি ঠেকিয়ে মৃদু হাসলো শুধু।
.
কেবিনে এসে সিরাতের নিস্তে’জ ভাবে শুয়ে থাকা দৃষ্টিগোচর হলে বুকটা কেমন কেঁ’পে উঠলো সাফিনের। চোখের কোনে জমে থাকা পানিগুলো যেন থামতে চাইছে না আজ। নিজের ড্যাড মোস্তফা সাহেবের প্রতিও কোনো অভিযোগ দেওয়ার রিজন খুঁজে পাচ্ছে না সাফিন। ভুল বোঝাবোঝি যেন মারা’ত্মক পী’ড়াদায়ক। যার যন্ত্র’না এখন হাড়ে>হাড়ে টের পাচ্ছে সাফিন। ধীর পায়ে সিরাতের দিকে এগিয়ে যেতে হায়াত মৃদু হেসে নিজের কেবিনে চলে গেল।
“টেবিল টে’নে তাঁর উপর হেলানি দিয়ে বসে সিরাতের হিমশীতল হাতে স্পর্শ করতে পিটপিট করে তাঁর দিকে তাকাল সিরাত।” হাতে থাকা ক্যা’নুলাটা যেন বি’ষের মতো করে দিয়েছে সমস্ত শরীর। সাফিন বাঁকা হাসি হেসে শীতল কন্ঠে বললো।
— যতদিন এই শাহনেওয়াজ সাফিনের হৃৎস্প’ন্দনের গতি স্থির এবং পৃথিবীর আলোয় আলোকিত থাকবে না সিরাত? ততদিন তোমার কিচ্ছুটি হতে দেব না আমি। ভালোবাসি তোমাকে। সাফিনের কন্ঠের রেশ সিরাতের কানের কাছে ছন্দের হারে কুন্ঠিত হতে থাকলে চোখদ্বয় বন্ধ করে প্রশান্তির হাসি হাসলো সে।
.
—ম্যাম আপনি কিছু খেয়ে নিন। গ্রাম থেকে জার্নি করে এতদূর এসেছেন এখনও কিছু খাননি। জুবায়েরের কথা কানের চারপাশেও লাগাল না তোহা।পরে আমেনা বেগমও জুবায়েরের সাথে সায় দিয়ে একপ্রকার জোর করে তোহাকে খায়িয়ে দিলে মুখ ভার করে ফেলল তোহা। বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে রাখার কারনে তোহাকে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসি এসে ভর করলো জুবায়েরের। খানিক বাদে হায়াত এসে তাঁদের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—এক-এক করে এখন আপনারা পেসেন্টের সাথে দেখা করতে পারেন ম্যাম। হায়াতের কথা শুনে লুফে উঠলো তেহা। আমেনা বেগমের হাত ধরে শীতল কন্ঠে আবদারের সহিত বললো।
—আমি যেতে পারি কাকি। তোহার মুখে কাকি সম্মোধন শুনে আমেনা বেগমের চোখের কোনে পানি এসে জমা হলো যেন। একগাল হেসে বললেন।
—আচ্ছা যা আম্মাজান। আমেনা বেগমের সম্মতিতে খুশিতে গ’দ>গ’দ হয়ে গেল তোহা আমেনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে হন্ত’দন্ত হয়ে যেতে থাকলে কারো ধীর কন্ঠের রেশ কানের কাছে এসে বা’রি খেয়ে গেল যেন তোহার।
—চরটা কি বেশি জোরে আ’ঘাত হেনেছে মিস আপনাকে? সিরাতকে দেখতে যেতে নিতে হুট করেই হায়াতের এরমধারা প্রশ্নে খানিকটা অবাক এবং বিব্রতবোধ করলো তোহাকে। চোখমুখ কুঁ’চকে ধীর এবং শক্তপো’ক্ত কন্ঠে উত্তর দিল।
— বন্ধুত্বের জন্য জান হাজির,সামান্য চর কোনো ফ্যাক্ট নয়। মিস্টার হায়াত মাহমুদ। কথাটা বলেই তোহা দ্রুত পায়ে সিরাতের কেবিনের দিকে চলে গেলে তোহার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বাঁকা হাসি হাসলো হায়াত। থেমে -থেমে বললো।
— বন্ধুত্বের জন্য জান হাজির? তাহলে ভালোবাসার মানুষের জন্য নিশ্চয়ই হৃদয় হাজির থাকবে তোমার। তাইনা মিস তোহা। কথাটা ভাবান্তরে ছেদ পরে গেলেই হেসে উঠলো হায়াত। তাঁদেরকে এমন ভাবে কথা বলতে দেখে পেছন থেকে জুবায়েরের ছলছল চোখদুটি আড়াল হয়ে গেল যেন এক অজানা ব্যা’থায়।
.
টানা দুই সপ্তাহ পর সিরাতকে বাড়ি নিয়ে আসতে পারলো সাফিন। তবুও ডাক্তারের করা নিষেধ হলো সিরাতকে যেন কোনো কিছুতে প্রেসার না দেওয়া হয়। নয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে।তাই সাফিনও চোখে হারাচ্ছে সিরাতকে। শাহনেওয়াজ ভিলায় আজ উৎসবের সমারোহ। আবারও তাঁদের বাসর ঘর সাজানো হবে আজকে। এক-এক করে মানুষ আসছে আর সিরাতকে দেখে যাচ্ছে। সামনে ইলেকশনেরও কোনো চিন্তা আপাদত ঘা’য়েল করতে পারেনি সাফিনকে। কেননা মোস্তফা সাহেবের জয় হবে সেটা আগে থেকেই সে নিশ্চিত। সরোয়ার সাহেবকে নিয়ে আর কোনো কথা হয়নি নিউজে। জুবায়েরকে দিয়ে সবগুলো লা’শ বস্তুা বঁ’ধে সমুদ্রে ভা’সিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই আর কেউ এর টিকিটিও জানতে পারেনি। মোস্তফা সাহেব নিজের কাজের জন্য সিরাতের কাছে মা’ফ চাইলে ল’জ্জায় সিরাত তাঁর দিকে তাকাতে পারছে না যেন। শশুরের এরুপ আচরনে সে যেন ক্ষুন্য হলো। নিজেই বরং শশুরের পা ছুঁয়ে সালাম করে নিল উ’ল্টো। আমেনা বেগমের চোখের কাছে পানির রেশ চিকচিক করছে যেন। সাফিনের হাত ধরে শাহনেওয়াজ ভিলায় আবারও পা রাখাটা ভালো লাগলেও এতদিনের সৃতি তোহার হাত ছেড়ে এ বাড়িতে থাকাটও যেন মনের ভিতরে পাঁথ’র চাঁ’পা দিয়ে রেখেছে সিরাতের। যদিও সাফিনকে বলে তোহার জন্য নতুন ফ্লাট আর ভালো একটা চাকরির ব্যাবস্থা করে দিয়েছে সে। তোহা এ বাড়িতে আসতে নারাজ তারজন্য।
সাফিন আজ প্রচুর খুশি সারাদিন সিরাতকে সবাই আঁট’কে রাখলেও চুপিচুপি লুকিয়ে-লুকিয়ে দেখাটাও আনন্দ দায়ক লাগছে তাঁরকাছে। দিনশেষে রাতেতো সিরাত ঠিকই বউয়ের সাজে সজ্জিত হয়ে তাঁর কাছে আসবে। এটাই আল্লাহর কাছে লাখ-লাখ শুকরিয়া।
.
রাত এখন ১২ টা নাগাত। গগনের কোল ঘেঁষে কালোরাঙা ভাসমান মেঘদ্বয় থেকে ক্ষনে- ক্ষনে গর্জ’নপাত করছে যেন। হয়তো কখন টুপ করে তাঁর বর্ষনপাত ঝড়ে দিবে শহরজুড়ে। ফুলে সজ্জিত রুমটাতে অনবরত পায়চারি করে চলেছে সাফিন। প্রেয়সীর অপেক্ষায় আ’প্লূত হয়ে আছে যেন তাঁর ব্যাকুল হৃদয়। বারংবার হাতে থাকা বিদেশি ঘড়িটার দিকে তাকাচ্ছে তো দরজার পানে।
” টানা তিন ঘন্টা ধরে তোহা আর আমেনা বেগম সিরাতকে বউয়ের রুপে সাজিয়ে দিলে আমেনা বেগম চোখের নিচ থেকে কাজল নিয়ে সিরাতের ঘাড়ের কাছে টিকা কেঁ’টে দিলেন যেন।” একগাল মুগ্ধতার হাসি হেসে শীতল কন্ঠে বললেন।
— আমার ছেলেটা কিন্তু খা’রাপ না আম্মাজান। একটু গম্ভীর তবে তোকে অনেক ভালোবাসে। কি পা’গলামোটাইনা করেছে তোরজন্য ও জানিস? আল্লাহ না করুন আর যেন কোনো বিপ’দ তোদের ধারেকাছেও না ভেরতে পারে। আমেনা বেগমের কথায় ল’জ্জায় মাথা নিচু করে হাসলো শুধু সিরাত।
“সিঁড়ির প্রত্যেকটা ধাঁ’পে সিরাতের পা পরছে তো সমস্ত শরীরে কাঁ’পুনি ধরিয়ে দিচ্ছে যেন সিরাতের।” অচেনা ভয়-ল’জ্জা, কেমন যেন দ’লা পা’কিয়ে যাচ্ছে তাঁর। দুইপাশে তোহা আর আমেনা বেগম পেছনে আত্মীয়রা যেন ঘির করে তাঁর পিছুপিছু আসছে। সেই প্রথম দিনের শাহনেওয়াজ ভিলায় পা দেওয়ার ফিলিংস উপলব্ধি করতে পারছে সিরাত। চারদিকে ঝাড়বাতির ঝিলমিল আলো তাঁর চোখে-মুখে এসে হাতছা’নি দিয়ে যাচ্ছে যেন। নিজের বুকের ধুকপুক শব্দের রেশ নিজেই খুব মনোযোগ সহকারে শুনতে থাকলো সিরাত। এতগুলো দিন সাফিনকে পাওয়ার জন্য ছট’ফট করেছে আর আজ তাঁকে পেয়ে ল’জ্জায় মরি’য়া হয়ে যাচ্ছে যেন। সামনেই সাফিনের রুম। আর শুধু একটা পা বাড়ানো মাএ অপেক্ষা। আমেনা বেগম পা থামিয়ে দিলে তোহা হাতে থাকা দুধ আর পানের ট্রেটা সিরাতের হাতে ধরিয়ে দিয়ে মৃদু হাসলো শুধু। চোখদুটি কেমন জ্ব’লে উঠলো সিরাতের। তোহাকে খানিক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ পর ছেড়ে দিলে তোহা শীতল কন্ঠে বললো।
— ভিতরে যা সিরাত। নিজের সুখের ঠিকানা খুঁজে নে এবার। শ’ক্ত করে আগলে রাখবি একদম। যাতে এ বাঁ’ধন ছিঁ’ড়ে না যায়।
তোহার কথায় হাসলো সিরাত। ধীর পায়ে সাফিনের রুমে পা রাখতেই আমেনা বেগম গেস্টদের নিয়ে খাওয়ার জায়গায় চলে গেলেন।
“সিরাতের উপস্থিতি টের পেয়ে সাফিন দ্রুতপায়ে দরজাটা লক করে দিয়ে সিরাতের মাথা অব্দি ঘোমটা দেখে বাঁকা হাসি হাসলো।” সিরাতের বুকের মাঝের উথাল-পাতাল ঢেউ যেন দ্রুত থেকে দ্রুতগতির হতে শুরু করেছে। কাঁ’পা-কাঁ’পা হাতে সাফিনের দিকে ট্রেটা এগিয়ে দিয়ে ধীর কন্ঠে বললো।
—দুধটা খেয়ে নিন সাফিন।
—এত দেরি হলো কেন তোমার হুম? সাফিনের এমন প্রশ্নের উত্তর কি দেওয়া যায় ভেবে পেল না সিরাত। মুখে কু’লুপ এঁ’টে রাখলে সিরাতের হাত থেকে দুধের গ্লাসটা নিয়ে একটানে ফিনিসড করে ট্রেটা টি টেবিলের উপর রেখে হুট করেই পাঁ’জাকোলা করে নিল সিরাতকে। সাফিনের এরুপ আচরনে ল’জ্জায় মি’য়িয়ে গেল যেন সিরাত। সাফিন সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপই দেখাল না। হলুদরাঙা লাইটারের আলোটা কেমন নিভু-নিভু করছে। এতক্ষণের ঝিমিয়ে থাকা আকাশটাও এখন বৃষ্টির ন্যায় সমস্ত শহরে ঝড়িয়ে দিতে ব্যাস্ত। সিরাতকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নিভু-নিভু হলুদরাঙা আলোটাকে চিরতরে বিদায় জানাল সাফিন। সিরাতের উপর খানিকটা ঝুঁ’কে গিয়ে সিরাতের মাথা সমান ঘোমটাটা সরিয়ে দিতে সাফিনের শীতল হাতের স্পর্শে কেঁ’পে উঠলো যেন সিরাত। সিরাতের নিশ্বাসের শব্দ গাঢ় থেকে গাঢ়তম হতে থাকলে বিছানার চাঁদর খিঁ’চে ধরলো সিরাত। সাফিন সিরাতের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি হেসে অনেকটা সময় নিয়ে শীতল হাতে সিরাতের শাড়ীর আঁচলটা সরিয়ে দিয়ে সিরাতের ঘারের কাছে ঠোঁটের স্পর্শ ছুয়িয়ে দিলে কেঁ’পে উঠলো সিরাত। সাফিনের স্পর্শগুলো গাঁঢ় থেকে গাঢ়তম ভাবে সমস্ত শরীরে আ’ঘাত হানছে যেন তাঁর। সাফিন সিরাতের মাঝে পা’গল হয়ে উঠলো যেন। খানিকের জন্য ভু’লে গেল সিরাতের শরীরে ক্ষ’তর কথা। সিরাতের হাতদুটি বিছানা ছেড়ে সাফিনের চুল আঁকড়ে ধরলে সাফিন নিজের শার্টটা খুলে নিয়ে আরও কাছে চলে গেল সিরাতের। সিরাতের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলে ঘনঘন নিশ্বাস টা’নতে থাকলো সিরাত। বাহিরের ঝড়ো হাওয়া যেন এই মূহুর্তে তাঁর মাঝে ঝড়ে চলেছে। চোখের কোন ছুঁয়ে পানির রেশ ঝড়ে পরলে ঠোঁটের কোনে হাশির রেশ ফুঁটে উঠলো শুধু সিরাতের।
.
সারারাতের বৃষ্টি শেষে সকালের স্নিগ্ধ হাওয়া সমস্ত শরীরে কাঁ’পুনি ধরিয়ে দিচ্ছে যেন সিরাতের। সকাল-সকাল সাফিনের বুকের উপর ঘুম ভে’ঙে গেলে আর চোখে সাফিনের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে শুধু সে।
—কিছু পাওয়া আর কিছু না পাওয়া অনেক কষ্টে’র জানেনতো সাফিন? আমি আমার মা-বাবাকে সেই ছোটবেলা থেকে পাইনি জানেন? কিন্তু আজ আপনাকে পেয়ে আমার সেই ক’ষ্ট গুলো কেমন উধাও হয়ে গেছে। সত্যি, আপনার মতো কাউকে পাব আশা করিনি আমি। কথাগুলো মনের মাঝে খেলে যেতে হেসে উঠলো সিরাত। সাফিনের ব্রাউন্ড রাঙা চুলে হাত দিয়ে কিছুটা সময় নাড়াচাড়া করে খি’ল>খি’ল করে প্রশান্তির হাসি হেসে ফ্রেশ হতে চলে গেল সিরাত।
“কালোরাঙা চাঁদর গাঁয়ে জড়িয়ে বারান্দার খোলা হাওয়ায় দাঁড়িয়ে প্রশান্তির নিশ্বাস ছারছে সিরাত।” ভেজা চুলগুলো পিঠময় ছড়ি’য়ে>ছি’টিয়ে রয়েছে তাঁর। আজ মনটা বড্ড বেশি খুশি লাগছে যেন তাঁর। মনখুলে গান আওরাতে ইচ্ছে করছে খুব। দক্ষিণা উত্রা হাওয়ায় তাঁর কানের কাছে গুঁ’জে থাকা চুলগুলো কেমন মৃদুমধুর আমেজে উড়ে বেড়াচ্ছে যেন। মনকে আর না আঁ’টকিয়ে গান আওয়াতে থাকলো সিরাত।
~তোমার খোলা হাওয়া….
হুট করেই কারো ঠোঁটের স্পর্শ ভেজা চুলগুলো সরিয়ে ঘাড়ের কাছটাতে অনুভব করতে পেরে চোখদ্বয় বন্ধ করে নিল সিরাত। সাফিনের প্রতিটা স্পর্শের সাথে যেন নিজেকে খাঁ’পখায়ি’য়ে নিয়েছে এতদিনে সে। এক মূহুর্তও লাগেনি সাফিনের স্পর্শ চিনতে। শাড়ির আঁচল ভেদ করে সিরাতের কোমর জড়িয়ে ধরে সিরাতের ভেজা চুলে নাক ডুবিয়ে দিল সাফিন। সিরাতের চুলের মিষ্টি সুগন্ধি যেন নাকের কাছে এসে টনটন করে যাচ্ছে সাফিনের। সিরাত টু শব্দ অব্দি না আজ। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলে সাফিন ঠোঁটের কোনে হাসি লে’প্টে শীতল কন্ঠে ডাকলো তাঁকে।
—সিরাত…
—হুম বলুন?
—ভালোবাসি।

#সমাপ্ত। 😌🖤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে