হৃদয় গহীনে তুমি আছো পর্ব-০৫

0
251

#হৃদয়_গহীনে_তুমি_আছো। 🦋
#লেখনীতে_ফাতিমা_তুয_যোহরা।
#পর্বঃ ৫

#অতীত‌‌।
—বস আজকে নতুন একটা পাখি পেয়েছি। মনে হয় বিয়ে থেকে পালিয়ে এসেছে শহরে। নতুন মনে হচ্ছে এখানে।গাঁয়ে বিয়ের বেনারশী এমনকি হাতে থাকা ব্যাগেও কিছু সর্ন পাওয়া গেছে। বাসটপ থেকে তুলে এনেছি। ওকে নিয়ে ৫০০ জন ডান। এবার আপনি পার্মিশন দিলেই বিদেশে পাচার করা যাবে।
অন্ধকার ঘরটাতে কালো রাঙা শার্ট পরিহিত লোকটা দেয়ালের সাথে হাত ঠেকিয়ে হেসে উঠলো। গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—গুড জব তুহিন। মেয়েটার জ্ঞান আছে নাকি এখনও অজ্ঞা’ন?
—ভিতরের রুমে আছে। চলুন দেখে আসবেন।
লোকটা অন্য হাতে থাকা সিগারেটটাতে একটা টান দিয়ে তাঁর ধোঁয়া অন্ধকার রুমটাতে উড়িয়ে দিয়ে হেসে উঠলো। বললো।
—এবার দেখা যাবে মন্ত্রী সাহেব, কিভাবে এই মেয়ে গুলোকে বিদেশে পাচার করা থেকে আটাকান। হাহাহা।
.
শ্রাবন রাতের বৃষ্টিভেজা কান্নায় ভিজে উঠেছে আজ শহর। ক্ষনে-ক্ষনে আকাশের গ’র্জনপাত কানের কাছে এসে বারি খেয়ে যেতে হুশ ফিরল সিরাতের৷ মাথাটা কেমন ভার হয়ে আছে তাঁর। পিটপিট করে তাকাতে চারপাশে বিদঘু’টে অন্ধকার দেখে রীতিমতো ভয় পেয়ে গেল সিরাত।
—এটা কোথায় আমি?
ভয়ের সহিত চারপাশে এক নজর চোখ বোলা’লে শুধু আবছা কালোয় ঢাকা অন্ধকারের দেখা মিলতে হতা’শ হলো সে। তবুও সাহস যুগিয়ে যখন উঠতে নিল, তখন নিজেকে বাঁ’ধা অনুভব করলো। চমকে উঠলো সে। হুট করেই কান্না এসে ভর করলো চোখের কোনে। হাত-পা এমনকি মুখটাও বাঁধা অবস্থায় নড়তেও পারছে না সিরাত। কোনো ভাবে একটু মো’ড়া>মো’ড়ি করাতে নিজের পাশে আরও কয়েক জনের জ্ঞানহী’ন শরীরের অনুভব করতে পেরে আরও ভয় পেয়ে গেল সিরাত৷ তাঁর মানে সে একা নয়,আরও অনেকে রয়েছে এখানে। ভয়ে কয়েকটা ঢোক গিল’ল সিরাত।
তাঁর যতটুকু মনে আছে সে,বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে বাসে উঠেছে আর বাস থেকে নেমে তোহাকে ফোন করেছিল। তাঁরপর নাকের কাছে মিষ্টি একটা স্মেল অনুভব করলো। আর কিছু মনে করতে পারলো না সে।
কয়েকজনের পায়ের আওয়াজ অনুভব করতে কান পেতে রাখল সেদিকে৷ এদিকেই আসছে হয়তো। ভয়ে নিশ্বাস ঘন হয়ে আসলো সিরাতের। বুক চি’রে একরাশ কান্না বেড়িরে আসতে চাইছে তাঁর।
হুট করে দরজা খোলার আওয়াজ আসাতে দ্রুত চোখ বন্ধ করে নিয়ে অজ্ঞান হওয়ার ভান ধরে থাকলো সিরাত। সমস্ত শরীর কাঁপ’ছে তাঁর।
হলুদরাঙা লাইটারের আলো চোখেমুখে ছেয়ে যেতেও দাঁতে দাঁত চে’পে চোখ খিঁ’চে বন্ধ করে রাখলো সে।
—কি জিনিস এনেছিস রে তুই। এটাকে পাচার করতে পারলে তো কথাই নেই। সাহেব খুব খুশি হবেন।
—এবার খুশিতো বস।
—খুশি মানে,খুব খুশি।
চোখ বন্ধ করে নিজেকে নিয়ে গম্ভীর কণ্ঠের ভারি-ভারি কথাগুলো শুনে যেন কান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে সিরাতের৷ খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে সে কিডন্যাপ্ট হয়েছে। বন্ধ চোখদ্বয় বেয়ে নোনাজল ঝরে পরতে থাকলো তাঁর।
.
—জুবায়ের বাড়িটাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলো লোক লাগিয়ে। আরও লোক আনার ব্যাবস্থা করো দরকার পরলে।
সাফিনের গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে জুবায়ের মাথা নিচু করে বললো।
—স্যার সবদিক থেকেই ঘিরে ফেলা হয়েছে। জানা নেই ভিতরে কতজন অসহা’য় মেয়ে রয়েছে? কিন্তু নিশ্চয়ই পা’লের গো’দাগুলো এখনও ভিতরেই আছে ।
হেসে উঠলো সাফিন। বললো।
—নির্বাচনের আগে মন্ত্রীর লে’জে পা দিতে আসছে আবার।ভেবেছে এসব করে মন্ত্রীর ফেস লস করবে সবার সামনে। এই মুখোশের আড়ালের লোকটা হয়তো জানেনা মন্ত্রীর পিছনে তাঁর বাঘ রয়েছে। এই শাহনেওয়াজ সাফিন যতদিন বেঁচে আছে ততদিন হাজার চেষ্টা করলেও ড্যাডের টিকিটিও করতে পারবে না কেউ। এ্যা’টা’ক হিম। একটাকেও ছারবে না সব কটাকে গু’লি করে উড়িয়ে দেবে৷ কালকে সকালের সেরা হেডলাইন হওয়া চাই।
হাসলো জুবায়ের।
.
একসাথে কয়েকটা গু’লির শব্দ কানের কাছে বিক’ট ভাবে পৌঁছাতে কেঁপে উঠলো সিরাত। মুখের ভিতরে থাকা কাপরটার কারনে কাঁদতেও পারছে না ঠিক করে। অনবরত পানি গড়িয়ে পরছে শুধু চোখ বেয়ে।
—আল্লাহ, এ আমি কোথায় ফেঁ’সে গেলাম। রক্ষা করো তুমি আমাকে।
বাঁধা পা দুটো কিছুক্ষণ ছাড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টা করতে থাকলো সে।
.
—বস মেয়েগুলোকে এখনই এখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। অনুমান করতে পারছি বাড়িটা পুরো চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে মন্ত্রীর ছেলে।
—ড্যা’ম ইট, এই শাহনেওয়াজ সাফিনকে আমি দেখে নেব। ওর জীবনের বিনা’শ না দেখা পর্যন্ত আমার শান্তি হবে না। দ্রুত মেয়েগুলোকে ওঠানোর ব্যাবস্থা কর। আমি যাচ্ছি এখান থেকে। ধরা পরে গেলেও ভুলেও যদি আমার নাম নিয়েছিস তো সাফিনের হাতে গু’লি না খেলেও আমার হাতে ঠিক খাবি। রিমেম্বার দ্যাট। দ্রুত হাত চালা। বাকিদের ইনফরমেশন কর। আমি S.R.K কে জানাচ্ছি।
কালোরাঙা অ’বয়বটা দেয়াল টপকে কোনোমতে বেড়িয়ে গেলে গলা শুকিয়ে গেল তুহিনের। মাএ দশ পনেরোজন লোক নিয়ে ৫০০ অজ্ঞা’ন মেয়ে এই পুরোনো বাড়ি থেকে বের করা অতটাও সহজ কাজ নয়।এখন নিজের জীবন রক্ষা করাটাই শ্রেয় মনে করলো তুহিন। বাকিদের মেয়েগুলোকে বের করতে বলে চাঁদর দিয়ে মুখ ঢেকে দেয়াল টপকাতে যেতে সাফিন গু’লি ছুঁ’ড়ে দিতে তুহিনের পায়ে গু’লি লাগলেও পাল্টা গু’লি সাফিনের দিকে তাক করলে সাফিনের হাত ঘেঁ’ষে গু’লিটা বের হয়ে যায়। বৃষ্টির পানির সাথে সাফিনের শরীরের র’ক্ত মিলেমিশে একাকার হওয়ার পরেও তুহিন দেয়াল টপকানোর আগেই সাফিন আরেকটা গু’লি ছুঁ’ড়ে দিতে এবার অন্ধকারে ডিরেক্ট তুহিনের পিঠ বরাবার লেগে যেতে বৃষ্টির কাঁদা মাখা পানিতে পা ঢলে পরে গেল তুহিন।
সাফিনের হাতে গু’লি লাগাতে জুবায়ের ছুটে আসলো দ্রুত।ভয়ার্ত কন্ঠে বললো।
—ওহ গড, স্যার আপনার ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন ইমিডিয়েটলি। চলুন গাড়িতে চলুন নয়তো বড় সাহেবের কানে একবার কথাটা গেলে…
জুবায়ের পুরো কথাটা শেষ করার আগেই সাফিন বাঁধ সেধে রাগ নিয়ে বললো।
—আমাকে ছাড়ো, লোকটাকে দেখো। এসব ছোট খাটো গু’লি’তে শাহনেওয়াজ সাফিনের কিচ্ছু হয় না। পাশ ঘেঁষে বেড়িয়ে গেছে। আগে দেখো এ বেঁচে আছে কিনা? ভিতরের সবকটাকে ধরে নিয়ে এসে গাড়িতে তুলে দেও।
—স্যার ভিতরের সবকটা ধরা পরে গেছে। অলরেডি গাড়িতে তুলে দিয়েছি সবকটাকে। এতক্ষণে মোহন ওদেরকে নিয়ে চলে গেছে। মেয়েগুলোকে বের করে বাসে তুলছে এখন। ৫০০ মেয়ে কিডন্যাপ্ট করেছে এরা। ভাবা যায় কি ডেঞ্জা’রাস!
— ওরা যদি চলে ডালে-ডালে তাহলে শাহনেওয়াজ সাফিনও চলে পাতায়-পাতায়। এবার দেখো জা’নো’য়া’র’টা বেঁচে আছে কিনা?
জুবায়ের তুহিনের কাছে গিয়ে বৃষ্টিতে ভেজা কাঁদায় মাখা ঘাসের উপর হাটু গেঁ’ড়ে বসে মাথার সাথে বেঁধে রাখা টর্চটা তুহিনের দিকে ধরে উল্টো হয়ে থাকা তুহিনকে সোজা করে শুয়িয়ে দিতে বৃষ্টির পানির রেশে তুহিনের কাঁদায় মাখা চেহারাটা ধুয়ে মুছে গেলে সাফিন ভ্রু জাগিয়ে এক নজর তুহিনের কালো রাঙা চেহারার দিকে তাকাল।
জুবায়ের তুহিনের নাকের কাছে হাত নিয়ে সাফিনের দিকে ধীর চাহনিতে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বললো।
—স্যার এ তো ম’রে গেছে।
সাফিন বিরক্ত হলো। হাতে থাকা বন্দু’কটা দিয়ে নিজের চুলের উপরে জমে থাকা পানি ঝাড়িয়ে বললো।
—উফ সিট, মাই ব্যা’ড লাক। কিন্তু একে দেখে মনে হচ্ছে না রিয়াল কার্ল’পিট এ হবে। আমার মনে হচ্ছে এই খেলার রিয়াল মাথা এখানে আসেইনি। তবে একজন পালিয়েছে নিশ্চিত।
.
গাড়িতে না উঠে মেয়েগুলোকে প্রটেক্ট করার জন্য সাফিন বাসে উঠে বসলো। পিছু ফিরে প্রত্যেকটা মেয়ের দিকে তাকাতে মা’য়া হলো তাঁর।মোটামুটি অনেকেরই জ্ঞান ফিরেছে।তবে হাত-পা বাঁধার কারনে কেমন মিয়িয়ে গেছে তাঁরা।
জুবায়ের বাসে উঠে সামনের সিটে বসে পরে বললো।
—স্যার মেয়েগুলোকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল। তাই এই অবস্থা।
—সবগুলো মেয়েকে বাসে তুলেছো তো ঠিকঠাক ভাবে? জুবায়ের পিছু তাকিয়ে এক-এক করে গুনতে থাকলে ৪৯৯ তে এসে থেমে গেলে সাফিন জুবায়েরের দিকে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দ্রুত বাস থেকে নেমে পরলো।
বৃষ্টির উষ্ণ’তা সমস্ত শরীর বেয়ে গড়িয়ে পরতে থাকলো তাঁর। এলোমেলো ভেজা চুলগুলোতে ঝাড়ি দিয়ে অন্ধকার রুমটাতে প্রবেশ করতে পুরোনো দরজাটাতে লা’থি দিতে দরজাটা ভে’ঙে গেল।
ভয়ে গুটি-শুটি হয়ে পুরোনো ড্রামের পিছনে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বসে ছিল সিরাত। সমানে কেঁদে চলেছে সে৷ বাকি মেয়েগুলোকে নিয়ে যাওয়ার সময় সুযোগ বুঝে অনেক কষ্টে ড্রামের পিছনে এসে লুকিয়েছিল সে।
অন্ধকার ঘরটার চারদিকে এক পলক সাই দিল সাফিন। পকেট থেকে ফোনটা খুঁজতে নিয়ে না পেতে মনে পরলো ফোনটা বাসেই ফেলে এসেছে সে। বিরক্তি নিয়ে আশেপাশে পা দিতে কাঁচের কিছু ভা’ঙার আওয়াজ ভেসে আসলে সেদিকে অনুসরন করে আগাতে থাকলো সাফিন।
সিরাতের গাঁয়ের সাথে ধা’ক্কা লেগে কাঁচের বিয়ারের বোতলগুলো ভে’ঙে গুড়ি’য়ে গেলে অন্ধকারে তাঁর খালি পায়ে কাঁচ ঢুকে গেলে আহ করে উঠলো সিরাত। যন্ত্র’নায় পা বি’ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে যেন তাঁর কাছে।
টিনের চালের উপর বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজের সাথে মৃদু পায়ের আওয়াজ ভেসে আসাতে চোখ বন্ধ করে ফেলল সিরাত৷ ভয়ে ড্রামের পিছনে এঁ’টে থাকলো সে।
— দেখো তুমি যেই হও, ভয় না পেয়ে বেড়িয়ে আসো। আমি তোমার কোনো ক্ষ’তি করার জন্য আসিনি৷
গাম্ভীর্যপূর্ন শীতল কন্ঠে মিশ্রিত কথা শুনে সিরাত চুপ হয়ে গেল।
—এ আবার কে? কিডনাপার নয়তো? কিন্তু আগের কন্ঠের থেকে কন্ঠটা কেমন ভিন্ন লাগছে।
সাফিন অন্ধকারে ধীর পায়ে হাঁটতে থাকলে দেয়ালের সাথে বারি খেয়ে গেলে আহ’ত হাতটাতে আরও আ’ঘাত পেল সে।
হুট করে পায়ের কাছে কারো শাড়ির আঁচল অনুভব করতে পেরে হাত দিয়ে আঁচলটা ধরে নিতে কেঁপে উঠলো সিরাত।ভয়ে কয়েকটা ঢোক গি’লল সে৷
—উঠে দাঁড়াও চলো তোমাকে নিতে এসেছি৷ এত ভয় পাচ্ছো কেন? ন্যা’কামি বন্ধ করে চলো।
—এ লোক আমাকে ন্যাকা বলছে! আজ যদি মুখটা বাঁধা না থাকত। রাগ এবং ভয়ে ফুঁ’সতে থাকলো সিরাত৷ মুখ দিয়ে উমমম, উমমম করতে থাকলে সাফিন ভ্রু জাগিয়ে ফেলল।
—এত টাইম নেই আমার৷ কথাটা বলেই বাঁধা অবস্থাতেই অন্ধকারে সিরাতকে পাঁ’জা কোলা করে নিতে সিরাত রাগে যতটুকু সম্ভব নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো আর মুখ বাঁধা থাকার কারনে উমমম,উমমম করতে লাগলো। সাফিন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না দিয়ে দ্রুত অন্ধকার রুম থেকে বেড়িয়ে পরলো তাঁকে নিয়ে।
.
বাসের লাল রাঙা লাইটারের আলো এসে সিরাতের গোলাপি রাঙা মুখশ্রীতে ছেঁয়ে গেলে সিরাতের চেহারার মাধুর্য যেন দ্বীগুন সৌন্দর্যে পরিনত হলো। এই প্রথম সাফিন সিরাতকে দেখতে পেল।
সাফিন সিরাতকে বাসে তুলে সিটে বসিয়ে দিতে সিরাত সাফিনের শরীরে র’ক্ত দেখে ভয়ে কেঁদে উঠলো। চোখদ্বয় ভিজে উঠলে বাসের সাথে একদম মিশি’য়ে বসলো সিরাত৷ সাফিন শীতল দৃষ্টিতে সিরাতের দিকে তাকাতে সিরাতের পরনে বিয়ের লাল বেনারশী আর হালকা সাজে ভয়ার্তে পরিপূর্ন মুখশ্রী দেখে খানিক তাকাতে বাস ছেড়ে দিলে বাসের ধা’ক্কানিতে সাফিন সিরাতের উপর আঁ’ছ’ড়ে পরার আগে দুইহাত সিরাতের দুইপাশে বাসের জানালার কাঁচের সাথে ঠেকাল। সাফিনের দুই হাতের মাঝে আঁ’টকে যেতে সিরাত চোখ বড়-বড় করে ভয়ে সাফিনের দিকে র’ক্তেভেজা শার্টের দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারলো না। দ্রুত চোখ বন্ধ করে নিল।চোখ বেয়ে অনবরত বৃষ্টিভেজা কান্না ঝরে পরছে তাঁর। আর পায়ে অজ’স্র যন্ত্র’ণা।
দীর্ঘক্ষণ সিরাতের ভয়ার্ত মা’য়া’ময় মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি হাসলো সাফিন।
হুট করে ফোনটা বেজে উঠতে ধীর চাহনিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে সিরাতের পাশে বসে পরলো সাফিন৷ ওপাশ থেকে মোস্তফা সাহেব কিছু বলার আগেই সাফিন বলে উঠলো।
—ড্যাড মেয়েগুলোকে নিয়ে আসছি। আর ১৬ জন আঁ’টক করেছি৷ তাঁদের মধ্যে একজনকে অন্ধকারে গু’লি করেছি। জা’নো’য়া’র’টা ওখানেই খ’ত’ম।
মোস্তফা সাহেব চিন্তিত হলেন। দ্রুত বলে উঠলেন।
—লা’শ’টা কি করেছো তাহলে?ওখানেই ফেলে এসেছো নাকি?
সাফিন হাসলো।বললো।
—শাহনেওয়াজ সাফিন অতটাও কাঁ’চা খেলা খেলে না মাই ডিয়ার ড্যাড। ওটাকে বস্তায় ভরে এতক্ষণে নদীতে ভা’সিয়ে দিয়েছে হেলাল।
মোস্তফা সাহেব হাসলেন।
সাফিনের কথাগুলো শুনে রাগে সমস্ত শরীর কেঁ’পে উঠছে যেন সিরাতের।
—তাঁর মানে এই লোকগুলোই মেয়েগুলোকে আঁ’টকে রেখেছিল৷ হে আল্লাহ, এরা কি মানুষ নাকি জা’নো’য়া’র?(মনে-মনে কথাগুলো বলে দাঁতে দাঁত চে’পে কাঁদতে থাকলো সিরাত।)
—স্যার হাতটা দিন ড্রেসিং করে দিচ্ছি। ইনফেক’শন হয়ে যাবে নয়তো। জুবায়ের ধীর চাহনিতে সিরাতের পায়ের দিকে তাকাতে র’ক্তে ভেজা পা টা দেখে বললো।
—ওনার পা টাও ড্রেসিং করতে হবে মনে হচ্ছে।
সাফিন হাসলো। এক নজর সিরাতের পায়ের দিকে তাকিয়ে আলতো হাতে কাঁচটা বের করে দিতে ব্যা’থায় সিরাত চোখ বন্ধ করে ফেলল।সাফিন জুবায়েরের উদ্দেশ্যে বললো।
—ওয়েট, মেয়েটার হাত মুখ খুলে দেই আগে।
জুবায়ের বাঁ’ধ সেধে বললো।
—আমি খুলে দিচ্ছি আপনি বসুন।
সাফিন পিছুফিরে এক নজর জুবায়েরের দিকে তাকাতে জুবায়ের চুপ হয়ে গেল।বললো।
—ঠিক আছে, আপনি খুলুন।
সাফিন সিরাতকে উল্টো করে বসিয়ে পিঠের পিছনে থাকা মোটা দরি দিয়ে বাঁ’ধা হাতটা খুলে দিতেই সিরাত রাগে সাফিনের গালে ক’ষি’য়ে একটা চর মেরে দিতে জুবায়ের এগিয়ে আসতে নিতে সাফিন হাত দিয়ে থামিয়ে দিল তাঁকে।
ধীর চাহনিতে সিরাতের দিকে তাকিয়ে মুখের ভিতর থেকে রুমালটা খুলে দিতে সিরাত কিছু বলার আগেই সাফিন সিরাতের লালরাঙা ঠোঁটে আঙুল ছুয়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
—হুঁশশ, নাম কি?
সিরাত ভয়ে কয়েকটা ঢোক গি’লে সাহস যুগিয়ে সাফিনের হাতটা সরিয়ে দিয়ে রাগের কন্ঠে বললো।
—সি,সিরাত।
—লাইক ইট। তুমি জানো আমি কে?
সিরাত রাগে ফুঁ’সতে থাকলো। বললো।
—আপনি কে আমি জানতে চাইছি না।শুধু জানি আপনি একটা খু’নি। ব্যাস এটাই।
সাফিন হেসে উঠলো।
সাফিনের হাসির রেশে যেন সিরাত তেলে বেগুনে জ্ব’লে উঠলো।
—এই ব’জ্জা’ত লোকটা আবার হাসছে।ল’জ্জাও কি করছে না এতগুলো মেয়েকে আঁ’টকে রাখতে। (মনে-মনে কথাটা বলে সাফিনের দিকে ঘৃ’নার দৃষ্টিতে তাকাল সিরাত)
—তোমার বিয়েটা হলো না তাই বলে রাগ দেখাচ্ছো তাইনা?
—মানেহ,এখানে বিয়ে কোথায় দেখলেন আপনি!
সাফিন হাসলো। সিরাতের দিকে মৃদু ঝুঁ’কে ধীর কন্ঠে বললো।
—বাহরে,বিয়ের বেনারশী পরে বলছো কিসের বিয়ে? হাসালে বেব্বি।
সাফিনকে ধা’ক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে সিরাত রাগে বলতে লাগল।
—আপনার কোনো প্রশ্নের উওর দিতে আমি বাধ্য নই। আমার ব্যাগ কোথায়? ব্যাকটা দিন।
সাফিন বাঁকা হেসে জুবায়েরের দিকে তাকাতে জুবায়ের বললো।
—কোনো ব্যাগতো পাইনি স্যার।
সিরাত পায়ের দড়িটা খুলতে-খুলতে বললো।
—আমার ব্যাগ যদি না পাইনা তাহলে আপনাদের খবর আছে।
সাফিন এক গালে হাত রেখে সিরাতের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো। বললো।
—কি করবে শুনি সিরাত? শাহনেওয়াজ সাফিনের সামনে কোনো মেয়ে চোখ তুলে পর্যন্ত তাকাতে পারে না। আর তুমি আমাকে চর মেরেছো৷ আমার ড্যাডও কখনো আমার গাঁয়ে হাত তুলেনি। এর ফলতো তুমি হাড়ে-হাড়ে পাবে।
কথাটা বলেই দাঁতে দাঁত চে’পে সাফিন সিরাতের দিকে এগিয়ে আসতে সিরাত ঢোক গি’লে বাসের সাথে লে’প্টে গেলে সাফিন ভ্রু জাগিয়ে সিরাতের দিকে তাকাতে সিরাত ভয়ে দ্রুত চোখ বন্ধ করে নিল….

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে