Wednesday, June 25, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 246



তুমিময় প্রাপ্তি পর্ব-১৮+১৯+২০

0

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৮
#মেহরিন_রিম
_যাবো ঠিক আছে,কিন্তু যাবো টা কোথায়?
সোফায় বসে চিপস খেতে খেতে প্রশ্নটা করলো ইশা। ফাইজা তার পাশে বসেই টিভি দেখছিল। ইশার প্রশ্নে উত্তর দিয়ে বলে,
_আমার ইউনিভার্সিটিতে পিঠা উৎসব চলতেছে। চাইলে আমরা সেখানেই যেতে পারি।

ইশা বোকার মতো প্রশ্ন করলো,
_কিন্তু আমার তো পিঠা পছন্দ না,তুমি তো জানোই।

_আরে বলদি, যাবো ঘুরবো ফিরবো মজা করবো। পিঠা খেতেই হবে তা তো নয়।

_তাও ঠিক বলেছো।

_আর ওখান থেকে বেড়িয়ে রেস্টুরেন্ট এ যাবো। ওখানে ডিনার করে তারপর ফিরবো।

_তাহলে মোহনা কেও নিয়ে যাই?

_হ্যা অবশ্যই।

_আচ্ছা শোনো, তুমি শাড়ি পরবে তো?

_আমি? তুই পরবি তাহলে আমিও পড়তাম।

_আমার এখন শাড়ি পরার মুড নেই গো। কিন্তু তুমি পরো না প্লিজ। কতদিন তোমাকে শাড়ি পড়তে দেখিনা।

_যদি হাটতে গিয়ে পড়ে যাই তখন?

_আরেএএএ,আমি থাকতে তোমায় পড়তেই দেবোনা।

ফাইজা সামান্য হেসে ইশার গাল টেনে দিয়ে বলল,
_আচ্ছা ঠিক আছে বাবা পড়বো। মোহনাকে ফোন করে জানিয়ে দে। আর আমায় শাড়ি পড়িয়ে দিতে হবে কিন্তু।

_হ্যা হ্যা চলো চলো।

ইশাকে এমন হাসিখুশি দেখে ফাইজাও অনেক খুশি হলো। মেয়েটার সাথে মুড অফ করে থাকাটা একদম ই মানায় না।

___
আদৃত অফিসে বসে কিছু ফাইল চেক করছিল তখনই তার ফোনে সায়ান এর কল আসে। আদৃত ফোনটা রিসিভ করতেই সায়ান বলে ওঠে,
_কোথায় তুই?

_অফিসে,কেন?

_যেখানেই থাকিস না কেন। এক্ষুনি বেড়িয়ে ভার্সিটিতে আসবি,কতদিন বন্ধুরা একসাথে আড্ডা দেওয়া হয়না বলতো!

_তো তোরা যা না, আমার কাজ আছে কিছু।

_কোন দিন তোর কাজ থাকেনা বলতো? কোনো কথা নয়, আসতে বলছি যখন আসবি ব্যাস।

কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলো সায়ান। আদৃতের এখন বন্ধুমহলে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। এমনিতেই এই কদিন ধরে ইশার কোনো দেখাই পায়নি। কখনো বা ঐ আশ্রমের আশেপাশে গিয়ে ঘুরেছে আবার কখনো ছাঁদে গিয়ে দুরবিন দিয়ে ইশার বাড়ির ছাঁদের দিকে নজর রেখেছে,তবে কোনো লাভ ই হয়নি। আদৃত বুঝতেই পারছেনা ও এমন পাগলামি কেন করছে।
মাথা চেপে ধরে কিছুক্ষন বসে রইলো আদৃত। অত:পর বাইকের চাবিটা হাতে নিয়ে উঠে দাড়ালো, ভাবলো হয়তো বন্ধুদের সাথে থাকলে ওর মনটাও কিছুটা শান্ত হবে।

পূর্ণও নিজের কাজ নিয়ে বিজি, কদিন ধরেই একটা কিডন্যাপিং কেস এর ইনভেস্টিগেশন নিয়ে খুব ব্যাস্ত সময় কাটছে তার। অবশেষে সেই কেস সলভ করতেও সক্ষম হয়েছে সে। তবে পূর্নর কাজটা সবসময় গোপন ভাবেই সম্পন্ন হয়, এমনকি নিজের পরিচয় ও তাকে গোপন রাখতে হয়। নিজের ব্যাক্তিগত জীবনে যাই ঘটে যাকনা কেন, কাজের ক্ষেত্রে তার প্রভাব কখনোই পড়তে দেয়নি পূর্ন আর দেবেও না।
সায়ান পূর্ণকে ফোন করেও ভার্সিটিতে যেতে বলেছে, পূর্ণ আর আপত্তি করেনি। এমনিতেও দেশে ফেরার পর পুড়নো বন্ধুদের সাথে দেখা করা হয়নি, একটা গেটটুগেদার হলে খারাপ হয়না।

___
_ইশা হয়েছে তোর?

_চুপ করে দাড়াও তো আপু,ঠিক করে পড়াতে দাও শাড়িটা।

_দেখিস ভাই, আমি কিন্তু সেই কবে লাস্ট শাড়ি পরেছি নিজের ও মনে নেই। উষ্টা খেয়ে পড়ে গেলে কিন্তু মান ইজ্জর সব শেষ।

ইশা শাড়ির কুচিটা ঠিক করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
_আরে এত ভয় পাও কেনো বলো তো, আমিতো শাড়ি পড়ে দৌড়াতেও পারি।

_তোর তো অভ্যাস আছে আমার নেই।

_কিচ্ছু হবে না, মোহনা মেবি দাঁড়িয়ে আছে নিচে এসে। চলো যাই..

ফাইজা শাড়ির কুচি ধরে সাবধানে পা বাড়িয়ে নিচে এলো। রুকসানার থেকে বিদায় নিয়ে ইশা,ফাইজা,মোহনা তিনজন বেড়িয়ে পরলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

___
পূর্ন,সায়ান,আদৃত সহ তাদের আরো পাঁচ থেকে ছয়জন বন্ধু একসঙ্গে মাঠে বসে আছে। একটা কথা একদম সত্যি, লাইফে যতই ঝামেলা থাকুক না কেন বন্ধুরা একসঙ্গে থাকলে সবকিছু গায়েব হয়ে যায়। তাদের মধ্য থেকে অনিক নামের একটি ছেলে বলে উঠলো,
_প্রেম করায় ভীষণ প্যারা ভাই, ভাবতেছি এবার বিয়েটা করেই ফেলবো।

সায়ান বলল,
_তোরা বিয়ার চিন্তা করতাছোস,আর আমি কিনা একটা প্রেমও করতে…

হঠাৎ সামনের দিকে সায়ানের চোখ পড়তেই থেমে যায় সে। মোহনাকে দেখতে পেয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,
_প্রে…ম, এবার একটা প্রেম তো আমি করবোই। ঐ তোরা থাক, আমি আসতেছি একটু পর।

পূর্ণ ভ্রু কুঁচকে বলল,
_তোর আবার হঠাৎ হলো টা কি?

কে শোনে কার কথা,সায়ান সেখান থেকে উঠে মোহনার দিকে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়।
গাড়ি থেকে নেমে মোহনা একটু আগেই ভিতরে ঢুকেছিল, আর ফাইজা তার শাড়ি সামলে ইশাকে নিয়ে কিছুটা পড়ে ভিতরে আসে, ক্যাম্পাস অনেক বড় হওয়ায় মাঝে অনেক জায়গা রয়েছে,চারপাশে সব স্টল।
ইশা ভিতরে ঢুকেই দেখতে পেলো মোহনা একটা স্টল এর দিকে যাচ্ছে আর সায়ান তার দিকেই এগিয়ে আসছে। এটা দেখে ইশা ফাইজাকে বলল,
_আপু তুমি ধীরে ধীরে আসো হ্যা।

কথাটা বলেই ইশা ছুটে গিয়ে সায়ান এর সামনে দাঁড়িয়ে মেকি হেসে বলল,
_আরে আপনি এখানে ভাইয়া? ভালো আছেন তো?

হঠাৎ ইশা সামনে এসে পড়ায় সায়ান ও কিছুটা চমকে যায়, তবে সেও মুচকি হেসে জবাব দেয়,
_হ্যা তুমি ভালো আছো তো?

_আমিতো ভালোই থাকি, কারোর কাছে যাচ্ছিলেন বুঝি?

এতক্ষনে ইশার গলার আওয়াজ শুনে মোহনাও সেখানে উপস্থিত হয়। সায়ান কে দেখে বেশ ভালোই বুঝতে পারে যে সে তার দিকেই আসছিল আর ইশা মাঝখানেই তাকে আটকে দিয়েছে।
সায়ান কিছু না বলায় ইশা আবারো বলে,
_শুধু মেহুকে গিফট দিলে চলে বলুন তো? ওর বেস্টফ্রেন্ড কেও মাঝে মাঝে কিছু গিফট দিতে পারেন তো নাকি।

মোহনা ইশার কানে কানে গিয়ে বলল,
_কিসব বলছিস ইশা,চুপ কর।

ইশা এবার হেসে বলে,
_আরে তুই থাম তো। আর ভাইয়া আপনাকে বলছি,এত নার্ভাস হলে চলে? থাক আমি আবার কারোর মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হতে চাইনা। যেদিকে যাচ্ছিলেন যান।

ইশার কথায় মোহনা কিছুটা লজ্জা পায়। ইশা সেখান থেকে সরে যাওয়ায় সায়ান ও খুশি হয়ে মোহনার সাথে কথা বলতে চলে যায়।

ফাইজা একটু দূড়ে দাঁড়িয়েই ওদের কার্যকলাপ দেখছিল। ইশা তার কাছে আসতেই জিজ্ঞেস করে,
_কিরে? কেসটা কি বল তো,আমাকে তো আগে বলিসনি কিছু।

ইশা হাসতে হাসতে বলে,
_আরে বলবো বলবো, আমিতো একটু মজা নিতে গেছিলাম আরকি। ওরা থাকুক তো, আমরা ঐদিকে যাই চলো।

_ওকে চল।

এদিকে আদৃত,পূর্ণদের গ্রুপের একটা ছেলে ফাইজা কে দেখতে পেয়ে বলে,
_এই, ঐ মেয়েটা আমাদের জুনিয়র ছিল না? নামটা যেন কি?
ছেলেটার নজর লক্ষ্য করে সেদিকে তাকাতেই আদৃত আর পূর্ন দুজনেই অবাক হয়ে যায়। পূর্ণ ফাইজাকে শাড়ি পরা অবস্থায় এর আগে কখনো দেখেনি, আর আদৃত যে এখানে ইশাকে পেয়ে যাবে সেটা তো সে কল্পনাও করেনি।

_আরে মনে নেই তোর! ওটা তো ফাইজা,পূর্ণর পিছনে ঘুড়ে বেড়াতো যে।

ছেলেটার কথা শুনে সেখানের সবাই ই হাসতে লাগলো।আদৃত ওদের দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
_এখানে হাসার কি হলো?

একজন পূর্ণর দিকে তাকিয়ে বলল,
_হাসা নাহয় থামালাম। কিন্তু পূর্ণ, তুই ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? প্রেমে ট্রেমে পড়লি নাকি?

পূর্ণর ধ্যান ভাঙে এবার। ফাইজার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলে,
_এই টপিক বাদ দে। ও এই ভার্সিটিতেই পড়ে, আমরা যেমন এসেছি তেমনি ও এসেছে। এ নিয়ে আর কোনো কথা শুনতে চাইছিনা আমি।

বাকিরাও আর কিছু বললোনা এই নিয়ে। তবে আদৃত এর নজর অন্যদিকে, সে তাকিয়ে দেখছে প্রাণোচ্ছল ইশাকে। তার এই কদিনের সকল অস্থিরতা যেন নিমিষেই কেটে গেলো এই প্রাণোচ্ছল ইশাকে দেখে। ভাগ্যেস সায়ানের কথায় এখানে এসেছিল,নাহলে তো ইশার দেখাই পেতোনা। আর দেখতেও পেতোনা তার হাস্যজ্জল মুখখানা।

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৯
#মেহরিন_রিম
_ফাইজা? তুই আসবি আমায় বলিসনি তো।
ক্যাম্পাসের অন্যপাশ থেকে ফাইজার বান্ধবী সোহা এসে বললো কথাটা। ফাইজা সামান্য হেসে বলল,
_ঐতো একটু বোনেদের নিয়ে এলাম,তাই আর জানানো হয়নি।

সোহা ইশার দিকে দেখিয়ে বললো,
_ইশা রাইট? ফাইজা আমাদেরকে তোমার কথা অনেক বলেছে।

ইশা মুচকি হাসলো। সোহা আগেই দেখেছে পূর্ন এখানে এসেছে। সোহা ফাইজা কে একটু পাশে নিয়ে এসে ফিসফিস করে বললো,
_পূর্ণ ভাইয়া কবে দেশে ফিরলো রে? তুই জানিস কিছু।

ফাইজা কপাল কুঁচকে বলল,
_আমায় জিজ্ঞেস করছিস কেন? আমি কি করে জানবো?

_ঐদিকে দেখ।
পূর্নর দিকে নজর রেখে কথাটা বলল সোহা। ফাইজা সোহার দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকাতেই পুর্ন, আদৃতসহ আরো অনেককে দেখতে পেল। ফাইজা বেশ বিরক্ত হয়ে অন্যদিকে ঘুরে বললো,
_যার ইচ্ছে আসতেই পারে,এখানে আমাকে দেখানোর কি আছে সোহা?

সোহা কিছুটা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
_না এমনিই বললাম আরকি।

ইশা ওদের সামনে এসে বিরক্ত হয়ে বললো,
_কি হলো আপু? আমরা কি এখানে দাঁড়িয়েই থাকবো নাকি অন্যদিকেও যাবো? চলো ঐদিকটায় যাই…

কথাটা বলেই ইশা ফাইজার হাত ধরে পূর্নরা যেদিকে বসে আছে সেদিকে যেতে নিলেই ফাইজা তাকে থামিয়ে দিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
_ওখানে তেমন কিছু নেই রে ইশা, আমরা বরং ঐদিকটায় যাই? মোহনাও তো বোধহয় ওদিকেই গেছে।

_মোহনাকে ছাড়ো তো ওর মতো। আর ওদিকে মেবি নাচগান ও হচ্ছে,চলো না যাই।

ফাইজা আর কিভাবে বোঝাবে যে সে পূর্নর সামনে পড়তে চায়না। বাধ্য হয়ে ইশার সঙ্গে সেদিকেই যেতে হলো।
ইশার এখনো আদৃতের দিকে চোখ পড়েনি তাই হয়তো সে ওদিকটায় যেতে চাইছে,নাহলে সে নিজেও যেতোনা।

আদৃতের ফোনে একটা কল আসায় সে একটু সাইডে গিয়ে ফোনে কথা বলছিল আর ইশার দিকে নজর রাখছিল।
ইশা ফাইজা কে নিয়ে একদম আদৃতের পাশ থেকে হেটে দু কদম গিয়েই হাটা থামিয়ে দেয়। ফাইজা ভ্রু কুঁচকে বলে,
_কি হলো থামলি কেন?

ইশার যেন মনে হলো ও আদৃত কে দেখেছে। তাই ধীরেধীরে ঘাড় ঘুরিয়ে একটু পিছনে তাকালো। আদৃত ও তখন ফোন কানে ধরে ইশার দিকেই তাকিয়ে ছিল। ইশা চট করে চোখটা সরিয়ে নিয়ে বিরক্তির সুরে ফিসফিস করে বলল,
_এই লোকটা অল টাইম আমার সামনে চলে আসে কেন!

_কি হলো,কিছু বললি?

_হ্যা,না না কিছুনা চলো।

পূর্নদের কিছুটা পাশ থেকেই চলে গেলো ইশা আর ফাইজা। পূর্ণ চোখ তুলে ফাইজার দিকে তাকালেও ফাইজা একবারের জন্যও তাকায়নি তার দিকে।

___
সায়ান মোহনার সঙ্গে হেটে হেটে বিভিন্ন কথা বলে চলেছে। মোহনাও তার সঙ্গে হাটছে আর এটা ওটা খাচ্ছে। মোহনা এবার সায়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে,
_আপনি যে এত ভীতু জানতাম না তো।

_হুয়াট! আমি ভীতু? কেন কেন?

_ইশার কথায় যেভাবে নার্ভাস হয়ে যাচ্ছিলেন,তাতেই তো বোঝা যায় আপনি কত্ত ভীতু। এত ভীতু হলে মোটা,চিকন কোনো মেয়েই আপনাকে বিয়ে করবেনা হুম..

সায়ান মোহনার কানের কাছে গিয়ে বাঁকা হেসে বলে,
_বউতো বোধ হয় আমি পেয়েই গেছি।

সায়ান এর কথায় বেশ লজ্জা পায় মোহনা। আমতা আমতা করে বলে,
_ই ইশা আমাকে খুজছে মনে হয়,আমি গেলাম।

কথাটা বলেই সেখান থেকে ছুটে চলে যায় মোহনা। আর সায়ান সেই একই যায়গায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন হেসে আবারো বন্ধুমহলে ফিরে যায়।

সায়ান হাসিমুখে ফিরে আসতেই পূর্ণ গম্ভীর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
_তোর হাবভাব কিন্তু ভালো ঠেকছে না সায়ান। কি করতে গিয়েছিলি তুই?

সায়ান বেশ ভাব নিয়ে বললো,
_তোদের জন্য ভাবি নিয়ে আসার প্ল্যান করছি বুঝলি।

সায়ান এর কথা শুনে সেখানে বসে থাকা সবাই হাসলো, পূর্ন আবারো বলল,
_তাই জন্য বাচ্চা একটা মেয়ে?

_আরে মেরা ভাই, পেয়ার উমার নেহি দেখতা হে রে..

___
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে, তবে ক্যাম্পাসে মানুষের সংখ্যা কমেনি বরং বেড়েছে। পূর্ণ,সায়ান সহ বাকি সবাই চলে গেলেও আদৃত এখনো ক্যাম্পাসেই রয়েছে। ঘুড়েঘুড়ে ইশাকে খুজতে তার কিছুটা অস্বস্তি লাগছে, তাই ফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে একই জায়গায় থেকে আশেপাশে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করছে ইশাকে।

মোহনা,ফাইজা,ইশা পুড়ো ক্যাম্পাস ঘুরে বেশ ভালোই মজা করেছে। ফাইজা প্রথম থেকে একটু আনইজি থাকলেও পূর্নকে বেড়িয়ে যেতে দেখার পর সেও কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। তিনজনই বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হবে তখন ই ইশার কানে একটা বিড়ালের ডাক ভেসে আসে। ইশা পাশে তাকাতেই দেখতে পায় একটা পার্সিয়ান বিড়াল মানুষের মাঝে গুটিসুটি মেড়ে বসে জোড়ে জোড়ে ডাকছে,তার গলায় একটা বেল্ট বাধা। ইশা দৌড়ে গিয়ে বিড়াল টাকে কোলে নিয়ে আদর করে,ইশার পিছন পিছন মোহনা আর ফাইজাও চলে আসে সেখানে।
ইশার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে বিড়াল টা হয়তো তার মালিক এর থেকে হারিয়ে গেছে। ইশার ভীষণ মায়া হলো বিড়াল টার জন্য। ইশা ফাইজা আর মোহনার দিকে তাকিয়ে বললো,
_তোমরা একটু পানি নিয়ে আসোনা ওর জন্য, কি জানি বেচারা কতক্ষন ধরে কাঁদছে।

_আচ্ছা তুই দাঁড়া এখানে, আমরা পানি নিয়ে আসছি।
কথাটা বলেই মোহনা আর ফাইজা পানি আনতে চলে গেলো। ইশা বিড়াল টাকে নিচে নামিয়ে নিজেও ওর সামনে বসে আফসোস এর সূরে বললো,
_ইশ কি কিউট বিড়াল টা। কার কাছ থেকে হারিয়ে গেছে কে জানে! এখন ওর মালিককে খুঁজবো কি করে? আর ওকে তো এভাবে রেখেও যেতে পারবো না।

আদৃত দূর থেকে দাঁড়িয়ে সবটাই দেখছিলো। একটা বিড়ালের জন্য কিনা মেয়েটা কত টেনশন করছে, আসলেই সেদিনের আন্টি ঠিক ই বলেছিল। মেয়েটা ভীষণ সহজ সরল। মনে মনে এসব ভেবে আদৃত শান্ত পায়ে হেটে ইশার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

ইশা বিড়ালটার দিকে তাকিয়েই তার কথা ভাবছিল। হঠাৎ সামনে একজনকে দাঁড়াতে দেখে সেই দৃষ্টি অনুসরণ করে উপরে তাকায় সে। দেখতে পায় আদৃত বুকে হাত গুজে তার দিকেই তাকিয়ে আছে, চট করে উঠে দাঁড়ায় ইশা। তার মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে ওঠে। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকার পরও আদৃত কে সেখানে থেকে যেতে না দেখে ইশা এবার বলে ওঠে,
_এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?

আদৃত কিছু বলে না, ইশা আবার ও বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে,
_কি হলো চুপ করে আছেন কেন? আর আপনি সবসময় আমার সামনে চলে আসেন কেন বলুন তো?

আদৃত কিছুটা ঝুকে বিড়াল টা কে কোলে নিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে,
_একই প্রশ্ন তো আমিও করতে পারি।

ইশা আঙুল উঁচিয়ে বলতে যায়,
_আপনি আবারো…

ইশার কথা সম্পূর্ন হতে দেয়না আদৃত। তার মাঝেই বিড়ালের থেকে চোখ সরিয়ে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
_ঝগড়া করে নিশ্চই বিড়ালের মালিককে খুঁজতে পারবে না।

থেমে গেলো ইশা। বিড়ালটার দিকে তাকিয়ে আবারো মায়া হলো তার। আদৃতের দিকে মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
_তাহলে কি করবো?

আদৃত সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
_ঝগড়া করার ক্ষেত্রে পিএইচডি না করে নিজের ব্রেইন খাটালেই উপায় পাওয়া যায়, আর সেটা তো তুমি করবে না।

ইশা রাগী দৃষ্টিতে তাকালো আদৃতের দিকে। আদৃত সেদিকে খেয়াল না করে সামনে এগোতে এগোতে বলল,
_এসো আমার সাথে।

ইশা ঘুড়ে গিয়ে আদৃর এর দিকে তাকিয়ে বলল,
_কেন কেন কেন? আপনার সাথে আমি কেন যাবো শুনি? মতলব কি আপনার?

আদৃত বিরক্তিসূচক দৃষ্টিতে ইশার দিকে তাকিয়ে বলল,
_আসতে হলে এসো,নাহলে থাকো এখানে।

আদৃত চলে যেতে নিলেই ইশাও তার পাশেপাশে যেতে লাগল। আর অনর্গল বলতে রইলো,
_আরে আরে,এভাবে ওকে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? চুপ করে আছেন কেন? কথা বলতে পারেন না? আরে কিছু তো বলুন।

আদৃত মনে মনে হাসলো ইশার কথা শুনে কিন্তু বাহিরে তা প্রকাশ করলো না। আদৃত বিড়াল টাকে নিয়ে ক্যাম্পাসে স্টেজ এর পাশে এসে কয়েকজন লোকের সঙ্গে কিছু কথা বলল। তারপর সেখান থেকে একজন লোক স্টেজ এ উঠে বিড়াল টার হারিয়ে যাওয়ার কথা বলল এবং তার মালিককে স্টেজ এর সামনে এসে বিড়ালটাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলল।
ইশা এতক্ষনে সবটা বুঝতে পারলো। নিজের মাথায় গাট্টা মেরে ক্ষীণ স্বরে বলল,
_ইশ,এই আইডিয়া টা আমার মাথায় এলোনা কেন?

দু তিন মিনিট এর মধ্যে বিড়ালের আসল মালিক সেখানে এসে আদৃতের কোল থেকে বিড়ালটিকে নিয়ে আদর করতে লাগলেন। আদৃত কে ধন্যবাদ জানাতে গেলে সে বাধা দিয়ে ইশার দিকে দেখিয়ে বলল,
_না না আমাকে থ্যাংকস বলতে হবেনা, আপনার বিড়ালটিকে ও পেয়েছিল আমি না।

মহিলাটি ইশাকেও ধন্যবাদ জানিয়ে বিড়ালটিকে নিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। ইশা আশাপাশে তাকিয়ে আদৃতের থেকে নিজের নজর লুকোনোর চেষ্টা করতে লাগলো। আদৃত কিছুক্ষন ইশার দিকে তাকিয়ে থেকে সেখান থেকে চলে যেতে নিলেই ইশা পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলে,
_শ শুনুন..

আদৃত মুচকি হেসে পিছনে ঘুরে গম্ভীর দৃষ্টিতে ইশার দিকে তাকিয়ে বলল,
_হুম বলো।

ইশা ঘাড়ে হাত ঘষে আমতা আমতা করে বলল,
_থ্যাংক ইউ।

আদৃত খানিকটা অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলে,
_হুম? কি বললে?

_ব বললাম থ্যাংক ইউ।

_হঠাৎ থ্যাংক ইউ কিসের জন্য?

_আপনি যে বিড়াল টাকে ওর মালিক এর কাছে পৌঁছে দিতে হেল্প করলেন তাই।

আদৃত নিজের সানগ্লাস টা চোখে দিতে দিতে ঠোঁটের কোণে সামান্য হাসির রেখা টেনে বলল,
_যাক তুমি তাহলে থ্যাংক ইউ ও বলতে পারো।

ইশা সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
_পারবো না কেন শুনি? আমি মোটেই অকৃতজ্ঞ নই, হেল্প করেছেন তাই থ্যাংক ইউ বলেছি।

আদৃত ঠোঁট চেপে হেসে বলল,
_ওয়েলকাম..

কথাটা বলেই আদৃত আবারো পিছনে ঘুড়ে হাটতে লাগলো। আজকে আর ইশার রাগ হচ্ছেনা কোনো। আদৃতের যাওয়ার পানে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
_না ইশা,লোকটাকে যেমন ভেবেছিলি উনি ততটাও খারাপ নয়..

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২০
#মেহরিন_রিম
_তোকে আমরা পুড়ো ক্যাম্পাস এ খুজে বেড়াচ্ছি,আর তুই স্টেজ এর পিছনে দাঁড়িয়ে কি করছিস? বিড়াল টাই বা কোথায়?

একনাগাড়ে কথাগুলো বলল ফাইজা। ইশা সামনে হাটা শুরু করে বলল,
_ওর মালিক এসে নিয়ে গেছে।

মোহনাও ইশার পাশে হাটতে হাটতে বলল,
_ওর মালিক কে তুই কোথায় পেলি?

_সন্ধ্যা হয়ে গেছে,চল যেতে যেতে বলছি।

ইশা,ফাইজা,মোহনা গাড়িতে উঠে পড়লো রেস্টুরেন্ট এ যাওয়ার উদ্দেশ্যে। গাড়িতে বসেই ইশা সব ঘটনা খুলে বলতে লাগলো। সবটা শুনে ফাইজা বললো,
_আমি তোকে আগেই বলেছিলাম, লোকটা খারাপ নয়। তুই শুধুশুধুই ওনার সঙ্গে ঝগড়া করিস।

ইশা চুপ করে রইলো,মোহনা হঠাৎ করে সোজা হয়ে বসে বলল,
_ভাইয়ার সাথে তোর এতবার দেখা হলো,আর তুই কিনা একটা সেলফি ও তুলতে পারলিনা ইশা!

সেলফির কথা মাথায় আসতেই ইশা হা করে তাকালো মোহনার দিকে। তারপর অসহায় চোখে ফাইজার দিকে তাকিয়ে বললো,
_ওনার সঙ্গে বোধ হয় সত্যিই এ জীবনে আমার আর সেলফি তোলা হবেনা।

ইশার কথা শুনে ফাইজা,মোহনা দুজনেই হাসতে লাগলো, আর তা দেখে ইশা মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।

___
_কি ব্যাপার বলতো আদি? হঠাৎ এত খুশি খুশি লাগছে তোকে।

সোফায় বসে খুশিমনে এলোমেলোভাবে গিটারে সুর তুলছিলো আদৃত। পূর্ন বেড এ বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিল। আদৃতের দিকে চোখ পড়তেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথাটা বলল পূর্ন। আদৃত গিটার থেকে মনোযোগ সরিয়ে পূর্নর দিকে তাকিয়ে বলে,
_কোথায়? আমি তো নরমাল ই আছি।

_হ্যা কিন্তু একটু বেশিই নরমাল আছিস,আর এটাই তো অদ্ভুত লাগছে।

আদৃত মুখে কিছুটা বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে বলল,
_এত বেশি ভাবতে কে বলেছে তোকে?

পূর্ণ আর কথা বাড়ালো না,সে জানে আদৃত এখন তাকে কিছুই বলবেনা। তবে আদৃতের হাবভাব দেখে পূর্ন বেশ ভালোই বুঝতে পারছে যে তার মনে কিছু তো চলছে।

___
রেস্টুরেন্ট থেকে ডিনার করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সারে আটটার মতো বেজে গেলো ইশা আর ফাইজার। অবশ্য তারা বাড়িতে বলেই গিয়েছিল ফিরতে দেড়ি হবে।
এত ঘোরাফেরা করে ইশা বেশ ক্লান্ত,আর এতক্ষন শাড়ি পরে থাকায় তো ফাইজা আরো বেশি বিরক্ত। বাড়ির দরজায় এসে কলিং বেল দিতেই রুকসানা এসে দরজা খুলে দিলেন। তবে ভিতরে এসে যে ইশা এত বড় সারপ্রাইজ পেয়ে যাবে তা ভাবতেও পারেনি।

ভিতরে দিকে সোফার দিকে তাকিয়ে তার বাবা জহির আহমেদ কে দেখে ঠোঁটে চওড়া হাসি ফুটে ওঠে ইশার। দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
_হুয়াট আ সারপ্রাইজ বাবাই! কখন এলে তুমি? আই মিস ইউ সো মাচ।

জহির সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললে,
_আই মিস ইউ টু মাই গার্ল।

ফাইজাও তার কাছে এসে বলল,
_কেমন আছো ছোট আব্বু? আর তুমি আসবে বলোনি তো।

জহির সাহেব হেসে বললেন,
_সারপ্রাইজ দেবো বলেই তো বলিনি কিছু।

ইশা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
_এবার কিন্তু দু তিনদিন থেকে চলে গেলে হবেনা বাবাই। অন্তত দশদিন থাকতেই হবে।

_আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে থাকবো। যা তোরা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।

ব্যাবসায়িক কাজে জহির সাহেবকে অধিকাংশ সময় বিভিন্ন শহরে যেতে হয়,তাই বাড়িতে থেকে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো টা আর হয়ে ওঠেনা। তবে এবার তিনিও ভাবছেন ব্যাবসায়িক কাজ থেকে একটু দূড়ে সরে আসবেন,অনেক তো কাজ করলো জীবনে। এখন নাহয় পরিবার এর সাথে থাকা যাক।
এমনিতেই আজ ইশার মনটা ভালোই ছিল,তার উপর বাবাকে পেয়ে আরো দ্বিগুণ ভালো হয়ে গেলো। খুশিমনে নিজের ঘরে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।

___
আরো দশদিন কেটে গেছে। ইশা এখন নিরব এর বিষয় থেকে অনেকটাই বেড়িয়ে এসেছে, ছুটির সময়টা বেশ আনন্দের মধ্যেই কাটাচ্ছে সে। তার উপর বাবা থাকায় রোজই বিভিন্ন জায়গায় ঘুড়তে যাওয়া তো আছেই।

তবে ইশার দিন যতটা ভালো কাটছে আদৃত এর দিন এখক্ন ততটাই খারাপ কাটছে। অফিস এর কাজে তাকে চারদিন আগে সিলেট আসতে হয়েছে, সায়ান আর পূর্ণ ও তাকে কম্পানি দিতে চলে এসেছে। ঢাকায় থাকাকালীন সময়ে যেকোনোভাবে ইশাকে এক নজর দেখতে পারতো সে, তবে এখানে এসে চারদিনে ইশাকে না দেখতে পেয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে তার মন।

রাত দুটো বাজে। আরো এক ঘন্টা আগে থেকে ঘুমানোর চেষ্টা করছে আদৃত,তবে কিছুতেই তার চোখে ঘুম নামছে না। অবশেষে মুখে হাজারো বিরক্তির ছাপ নিয়ে উঠে বসলো আদৃত। পাশের দুটো বেডে তাকিয়ে দেখলো পূর্ণ আর সায়ান শান্তিতে ঘুমোচ্ছে। ওদের এই ঘুমও এখন সহ্য হচ্ছেনা আদৃত এর। আশেপাশে তাকিয়ে কিছু খুজতে লাগলো আদৃত, অবশেষে তেমন কিছু না পেয়ে বেডসাইড টেবিল থেকে চার্জার টা নিয়ে ছুড়ে মারলো সায়ান এর গায়ে।
কোমড়ের উপর আঘাত পেতেই হকচকিয়ে উঠে বসে সায়ান। আশেপাশে তাকিয়ে চার্জার টা হাতে নিয়ে কপাল কুচকে তাকায় আদৃতের দিকে। তারপর বিরক্তিকর ভাবে বলে ওঠে,
_এটা কি হল? চার্জার মারলি কেন?

আদৃত আর কিছু না পেয়ে বললো,
_কি তখন থেকে নাক ডেকে চলেছিস,তোর নাক ডাকার শব্দে ঘুমোতে পারছিনা আমি।

_এমন ভাব করতেছিস যেন আমি আজকে নতুন নাক ডাকতেছি! কি সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখতেছিলাম, শালা দিলিতো নষ্ট করে।

ওদের কথাবার্তা শুনে পূর্নরও ঘুম ভেঙে গেলো। বিরক্তিকর চোখে দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,
_রাত দুটোর সময় কি শুরু করলি তোরা? নিজেরাও ঘুমা আমাকেও ঘুমোতে দে।

সায়ান এক নজর আদৃত এর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবারো শুয়ে পড়লো। কিন্তু আদৃত এর চোখে যে ঘুম নেই। বিছানা থেকে উঠে ফোনটা নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো আদৃত। ইশার নম্বরটা সে অনেক আগেই নিয়েছিল, ইশার থেকে নয় তার এক ফ্রেন্ড এর থেকে গোপনে ম্যানেজ করেছিল।
নম্বরটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো আদৃত,এত রাতে কল দেওয়া কি ঠিক হবে? আর কল দিয়ে কি ই বা বলবে?
হাজারো চিন্তা ছাপিয়ে অবশেষে কলটা করেই ফেললো আদৃত,যা বলার বলবে কিন্তু এখন ইশার কণ্ঠ না শুনলে তার কিছুতেই ঘুম হবেনা।

আজ একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ায় বেশ গভীর ঘুমে মগ্ন ছিল ইশা, এর মাঝে ফোনটা বেজে ওঠায় চোখমুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে ওঠে তার। ধীরেধীরে চোখ খুলে ফোনটা হাতে নিতেই দেখে একটা আননোন নম্বর, রাত দুটোর সময় কে ই বা কল করবে ওকে? এসব ভাবতে ভাবতেই কলটা রিসিভ করে কানে ধরলো ইশা।
চোখ বন্ধ করেই ঘুমঘুম কণ্ঠে বলল,
_হ্যালো..

কোনো প্রতিত্তর করলোনা আদৃত, ইশার কণ্ঠস্বর শুনতে পেরে এখন কিছুটা শান্তি লাগছে তার। কোনো উত্তর না পেয়ে ইশা বিরক্তির সুরে বলল,
_কে রে ভাই? এত রাতে কল দিয়ে এখন চুপ করে আছেন কেন?

আদৃতের মাথায় বুদ্ধি এলো ইশাকে রাগানোর। তাই নিজে বেশ শান্ত গলায় বললো,
_আরে আজব তো? আপনি আমাকে কল করে এখন জিজ্ঞেস করছেন আমি কে! আপনি কে সেটা আগে বলুন।

ইশা কপাল কুঁচকে রাগী গলায় বললো,
_ফালতু কথা বলার জায়গা পাননা তাইনা? এত রাতে কল দিয়ে ইয়ার্কি করছেন আমার সঙ্গে? রাখুন ফোন, যতসব আজাইরা পাবলিক।

কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলো ইশা। ইশাকে এমন রাগিয়ে বেশ মজা পেলো আদৃত,নম্বরটার দিকে তাকিয়ে আনমনেই বলল,
_কে তুমি মেয়ে? কেন তোমার সান্নিধ্য আমায় প্রশান্তি দেয়? আর কেনই বা তোমার অনুপস্থিতি আমার মাঝে অস্থিরতার সৃষ্টি করে?

#চলবে

তুমিময় প্রাপ্তি পর্ব-১৫+১৬+১৭

0

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৫ (বোনাস পর্ব)
#মেহরিন_রিম
_আমি না গেলে হয়না ইশা?
আয়নার দিকে তাকিয়ে চুল বাধছিল ইশা। তখন ই পিছন থেকে ফাইজা এসে তাকে এই প্রশ্ন করে। চুলে বেণী করা শেষ হলে ইশা ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলে,
_তুমি না গেলে আম্মুকে মানাতে ঝামেলা হয়ে যাবেতো আপু। কেন তোমার কোনো কাজ আছে?

_হ্যা রে একটু বই কিনতে যেতাম আরকি। আচ্ছা একটা কাজ করা যায়তো। মোহনা যখন যাবেই তাহলে তুই ওর সাথে ফিরে আসিস। আমরা একসাথে বের হবো তাহলে আর ছোট আম্মু কিছু বলবে না।

ইশা এসে ফাইজার গালদুটো টেনে দিয়ে হাসিমুখে বললো,
_উফ,এইজন্য তোমাকে আমি এত্ত ভালোবাসি জানোতো আপু। এত ভালো ভালো আইডিয়া তোমার মাথায় কি করে আসে বলতো।

_হয়েছে আর পাম দিতে হবেনা। কিন্তু দেখিস বোন, বেশি দেড়ি করিস না কিন্তু। তাহলে আবার ছোট আম্মু চিন্তা করতে পারে।

_আরে তুমি এসব নিয়ে ভেবোনা তো,আমি তাড়াতাড়ি ই চলে আসবো। এখন তুমি জলদি রেডি হয়ে এসো তো।

_জাস্ট পাঁচ মিনিট।

ফাইজা বেড়িয়ে যেতেই ইশা খাটে বসে পা নাড়াতে নাড়াতে ভাবতে লাগলো,
_কি এমন সারপ্রাইজ দেবে নিরব ভাইয়া? আবার বিদেশ টিদেশ চলে যাচ্ছে নাতো? না না, তাহলে তো তুই মিঙ্গেল হওয়ার আগেই সিঙ্গেল হয়ে যাবি ইশা! আচ্ছা আমিতো এমনিতেও সিঙ্গেল,যাই হোক সেটা বড় কথা নয়।

_ইশা আমি রেডি, নিচে আয়।

ফাইজার ডাকে ইশা উঠে দাঁড়িয়ে ড্রেসিং টেবিল এর সামনে গিয়ে নিজের বেণী টা সামনে এসে কিছুক্ষন দেখলো। তারপর উচ্চস্বর এ “আসছি” বলে নিচে চলে গেলো।

ইশা নিচে আসতেই রুকসানা নিজের ঘর থেকে বেড়িয়ে বললেন,
_কিরে কোথাও যাচ্ছিস তোরা?

ইশা ফাইজার দিকে একনজর তাকিয়ে বলল,
_হ্যা আম্মু,ঐ নিরব ভাইয়া বলেছে আমাদের ট্রিট দেবে তাই যাচ্ছি। ফাইজা আপুও যাচ্ছে আমার সাথে,আর মোহনাও যাবে।

রুকসানা বেগম আপত্তি করলেন না। সোফায় বসে বললেন,
_ঠিক আছে যা। আবার বেশি কিছু খেতে যাসনা। রাতে কাচ্চি রান্না করবো, বাহিরের খাবার খেয়ে গ্যাস্ট্রিক বাড়িয়ে আসলে কিন্তু আমার কোনো দোষ নেই।

_ঠিক আছে,ঠিক আছে।

_এই দাঁড়া,গাড়ি নিয়ে যা তোরা।

ইশা আর ফাইজা একে অপরের দিকে তাকালো। তারপর ইশা আপত্তি জানিয়ে বলল,
_না না আম্মু, এর সুন্দর বিকেলে গাড়ি নিয়ে বের হবো কেন? আমরা হেটেই যাবো আর নাহলে রিক্সার করে চলে যাবো।

_হ্যা ছোট আম্মু,আর গাড়ি নিয়ে যেতে হবেনা।

_ঠিক আছে তোদের ইচ্ছে।

ইশা আর ফাইজা একই সাথে বাইরে বেরিয়ে মোহনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। মোহনা এসে পৌঁছানোর পর ফাইজা বই কেনার উদ্দেশ্যে চলে গেল, অন্যদিকে ইশা আর মোহনা গেলো কলেজের উদ্দেশ্যে।

_ইশা,আমার না একটু ডাউট হচ্ছে।

ইশা ভ্রু কুঁচকে মোহনার দিকে তাকিয়ে বলল,
_কিসের ডাউট?

_নিরব ভাইয়াকে অনেকদিন ধরে দেখছি ফোনের মধ্যে ডুবে থাকতে,কেন তুই খেয়াল করিসনি।

_হ্যা করেছি তো?

_তো মানে? তুই কিছু আন্দাজ করতে পারছিস না?

ইশা যে একদমই কিছু আন্দাজ করেনি তা নয়। তবে নেগেটিভ চিন্তা থেকে দূড়ে থাকতে মোহনাকে একটা ঝাড়ি দিয়ে বলল,
_দেখ আমার আন্দাজ কখনো সঠিক হয়নি তাই আমি কিছু আন্দাজ করতেও যাবোনা। আর তুই এত নেগেটিভ ভাবছিস কেন বলতো, বি পজিটিভ ইয়ার..

_হ্যা তুমি থাকো তোমার চিন্তা নিয়ে।

ইশা ভেঙচি কেটে সামনের দিকে তাকিয়ে হাটতে লাগলো। মোহনার কথায় পাত্তা না দিলেও ইশা নিজেই অনেকটা আন্দাজ করতে পারছে নিরবের সারপ্রাইজ এর ব্যাপারে। সেসব ভাবলে এখনই মনটা খারাপ হয়ে যাবে তাই আর মাথা ঘামাতে চাইলো না ইশা। গেলেই বুঝতে পারবে কি সারপ্রাইজ নিরব এর।

___
বই পড়ার নেশাটা ফাইজার অনেক আগে থেকেই। মূলত পূর্নর থেকেই এই অভ্যাস আয়ত্ত করেছে সে। ভার্সিটিতে যাওয়ার পর থেকেই দেখতো পূর্ন যখন ই বসে থাকে কোথাও তখন ই তার হাতে একটা বই থাকবেই। বিশেষ করে গোয়েন্দা বিষয়ক থ্রিলার বই তার বেশ পছন্দ ছিল। ফাইজাও সেই থেকে বই পড়ার ভালোই অভ্যাস তৈরি করেছে, বিশেষ পূর্নকে ভোলার জন্য বই পড়াটা তার কাছে মেডিসিন এর মতো।

বুক শপ এ এসে অনেক খোজার পর নিজের কাঙ্ক্ষিত বইটি খুজে পেলো ফাইজা। তবে যখন ই বইটা নিতে যাবে তখনি পাশ থেকে আরো একটি হাত এসে পড়ে একই বই এর উপর। পাশ ফিরে তাকাতেই থমকে যায় ফাইজা।
পূর্ন ও এই বইয়ের উদ্দেশ্যেই এসেছিল এখানে। ফাইজা কে দেখে ও নিজেও বেশ অবাক হয়ে যায়। নিজেদের অজান্তেই একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে দুজন।
বেশ কিছুটা সময় পেড়িয়ে গেলো এভাবেই। হঠাৎ পাশ থেকে কারোর আওয়াযে ধ্যান ভাঙলো দুজনের।

_আপু,ভাইয়া আপনারা কেউকি বইটা নিবেন? নাহলে আমি এটা নিতাম আরকি।

চমকে ওঠে দুজন, ঝড়ের বেগে হাত সরিয়ে কিছুটা দূড়ে সরে যায় ফাইজা। পূর্নও বইয়ের উপর থেকে হাতটা সরিয়ে নেয়। তাদের দুজনের থেকে উত্তর না পেয়ে তৃতীয় ব্যাক্তিটি ই বইটি নিয়ে যায়।

____
অফিস থেকে বেড়িয়ে পাশের একটা কফিশপে বসে কফি খাচ্ছিল আদৃত,মাথার মধ্যে তার এখনো ইশার চিন্তাই ঘুড়ে বেরাচ্ছে। বিল দেওয়ার জন্য সামনে থাকা লোকটিকে ডাকতে যাবে তখনি আদৃতের চোখ যায় অপর পাশের একটা টেবিলের দিকে। খেয়াল করে দেখে বুঝতে পারে সেখানে নিরব একটা মেয়েকে নিয়ে বসে আছে,বেশ হেসে হেসে কথা বলছে তারা। তাদের দেখে যে কেউ বলবে যে তারা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড। আদৃত এই নিয়ে ভাবতে চাইলো না। বিলটা দিয়ে বেড়িয়ে যাবে তখনি তাদের কিছু কথা কানে আসে আদৃতের। বুঝতে পারে নিরব এখন মেয়েটাকে নিয়ে কলেজে যাবে বন্ধুদের সাথে আলাপ করাতে।

আদৃত বেড়িয়ে এলো কফিশপ থেকে। কেন যেন মনে হলো ইশাও সেখানে আসবে। কিছু একটা ভেবে বাইক নিয়ে কলেজের দিকে গেলো আদৃত।

তার কিছুক্ষন এর মধ্যেই নিরব ও সেই মেয়েটিকে নিয়ে বেড়িয়ে যায় কফিশপ থেকে।

___
কলেজে এসে বেশ কিছুক্ষন ধরে নিরব এর জন্য অপেক্ষা করছে ইশা,মোহনা সহ নিরবের আরো দু তিনজন বন্ধু।
তাদের কথা শুনে এতক্ষনে ইশা বেশ ভালোই আন্দাজ করতে পারছে যে তার নেগেটিভ ভাবনাটা সত্যি হলেও হয়ে যেতে পারে। ইশা বেশ মনমরা হয়ে বসে আছে আর মোহনা তাকে বিভিন্ন কথা বলে তার মন ভালো করার চেষ্টা করে চলেছে।

যেই ভাবনা নিয়ে ভয় পাচ্ছিল সেটাই সত্যি হলো। একটা মেয়ের হাত ধরে কলেজে ঢুকলো নিরব। মেয়েটাকে আগেও দেখেছে ইশা। পাশের কলেজেই ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার এ পড়ে মেয়েটা। নিরব সবার নিকট মেয়েটাকে নিজের গার্লফ্রেন্ড বলে পরিচয় করিয়ে দিলো নিরব। সবাই ট্রিট দেওয়ার জন্য নিরব কে জোড় করতেই নিরব বলে উঠলো,
_আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে খাওয়াবো। এই ইশা? কি হয়েছে তোর,চুপ করে আছিস যে?

মোহনা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ইশার মনের অবস্থাটা। ইশা অনেক কষ্টে নিজের কান্না আটকে বললো,
_কই না তো, আচ্ছা আম্মু না আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে বলছে। আমার ট্রিটটা নাহয় অন্যদিন নিয়ে নেবো কেমন।

কথাটা বলে ইশা সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে মোহনাও তার সঙ্গে চলে এলো সেখান থেকে। অন্যদিকে এতক্ষন ধরে সবটাই দূর থেকে দেখছিলো আদৃত। ইশা কলেজ থেকে বেড়িয়ে যেতেই আদৃত ও বেড়িয়ে আসে কলেজ থেকে।

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৬
#মেহরিন_রিম
পূর্ন তাকিয়ে দেখলো বইটার আরো একটা কপি আছে সেখানে। ফাইজা চলে যেতে নিলেই সে পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলল,
_তুমি নিয়ে যাও বইটা, আমি অন্য সময় এসে নেবো নাহয়।

ফাইজা থমথমে গলায় বলল,
_দ দরকার নেই,আপনি নিয়ে যান।

পূর্ন ফাইজা সামনে এসে বইটা ওর হাতে দিয়ে বলে,
_তুমি না নিলেও এটা আমি এখন নেবোনা। তাই বলছি নিয়ে যাও।

ফাইজা পূর্নর হাতে আবার বইটা দিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
_বললাম তো আমার দরকার নেই। আপনার নেওয়ার হলে নিন,নাহলে রেখে যান।

কথাটা বলে ফাইজা পাশ থেকে চলে যেতে নিলে পূর্ন নিজের স্থানে স্থির থেকে বলে,
_কারণ টা কি আমি?

কথাটা বলেই পিছনে ঘুরে তাকায় পূর্ন। ফাইজা সামান্য ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,
_আপনি আমার কাছে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ মানুষ নন, তাই এমনটা ভাবার কোনো মানেই হয়না।

ফাইজা বেড়িয়ে যায় সেখান থেকে, আর পূর্ন একদৃষ্টিতে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। ফাইজার এমন কঠোর রূপের সাথে সে মোটেই পরিচিত নয়। এই ফাইজা কে বড্ড অপরিচিত মনে হচ্ছে তার। তাচ্ছিল্যের সূরে শব্দহীন হাসে পূর্ন। মনে মনে ভাবে,
_এমন টাই তো চেয়েছিলাম আমি, আমার উদ্দেশ্যে আমি সফল। তবুও কেন ওর এমন ব্যবহার আমার মনে কষ্টের সৃষ্টি করছে? হাহ, বাস্তবতা বড্ড কঠিন।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে পূর্ণ। হাতে থাকা বইটা রাখতে গিয়েও রাখলোনা । ফাইজা যে এই বই এ জীবনে আর কিনবেনা সেটা ভালো করেই বোঝা হয়ায়ে গেছে তার, তাই বইটা নিজেই নিয়ে নিলো সে।

__
কলেজ থেকে বেড়িয়েই রিক্সায় উঠে পড়লো ইশা আর মোহনা। ইশা মুখে কিছুই বলছে না, কেবলই তার চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। মোহনা তাকে শান্ত করার জন্য বলল,
_ইশা আমি তোকে আগেই বলেছিলাম, তেমনটাই হলো। আর তুই নিরব ভাইয়া জন্য কাঁদছিস? ও তো তোকে কখনো ভালোই বাসেনি।

_কিন্তু আমিতো বেসেছিলাম মেহু, তুই আমার দিকটা বুঝতেই পারছিস না।

_বুঝতে পারছি আমি, কিন্তু এখন একটা ছেলের জন্য কেঁদেকেটে অসুস্থ হওয়ার কোনো মানেই হয়না ইশা। আন্টি যদি বুঝতে পারে তখন কি বলবি তুই?

ইশা চুপ করে রইলো। মোহনা রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলল,
_মামা এখানেই দাড়ান। ইশা আমার একটু ফুফির বাসায় যেতে হবে। আমি এখানেই নেমে যাই,তুই চলে যা বাসায়।

ইশা চোখের জলটুকু হাত দিয়ে মুছে বলল,
_আমি একা রিক্সায় যাবোনা। আমিও নেমে যাই এখানে, হেটে চলে যাবো।

মোহনা আর ইশা সেখানেই নেমে গেলো। মোহনা ইশাকে বুঝিয়ে ওর ফুফির বাসার দিকে চলে গেলো। একদম আশ্রমের সামনেই নেমেছে তারা। ইশা সেদিকে তাকিয়েই দেখতে পেলো আয়শা আশ্রমের উঠোনে একটা চেয়ারে বসে রয়েছেন। এই কদিনে আয়শার সঙ্গে বেশ ভালোই সখ্যতা গড়ে উঠেছে ইশার। ইশা অনেক সময়ই তার সঙ্গে এসে গল্প করে, আয়শার ও ইশার সঙ্গে কথা বলতে খুব ভালো লাগে।
ইশা মন খারাপ করেই আশ্রমের দিকে যেতে লাগলো। অন্যদিকে আদৃত ও ওদের ফলো করে এদিকেই আসছিল, সে এর আগেও দেখেছে ইশাকে এই আশ্রমের দিকে যেতে। আদৃতের জানতে ইচ্ছে করলো ইশা কি করতে যাচ্ছে এখানে,তাই সে বাইক নিয়ে কিছুটা আড়াল থেকে ইশার দিকে নজর রাখলো।

আয়শা আশ্রমের গেইটের পাশে একটা চেয়ারে বসে চোখে চশমা পরে কাথা সেলাই করছিলেন। ইশা তার পাশে এসে মুখ গোমড়া করে আরেকটা চেয়ারে বসে পরে।
ঘাড় ঘুরিয়ে ইশাকে দেখেই আয়শার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তবে পরক্ষণেই তার গোমড়া মুখ থেকে অবাক হয় আয়শা, ইশাকে সবসময় সে হাসিখুশি থাকতে দেখেছে কখনো এমন মন খারাপ করে থাকতে দেখেনি। আয়শা কাথাটা পাশে রেখে ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
_কি হয়েছে ইশা? মন খারাপ করে আছিস কেন? পরীক্ষা ভালো হয়নি বুঝি?

ইশা টলমলে চোখে একবার আয়শার দিকে তাকায়। তারপর তাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। ইশার কান্না দেখে আয়শা অবাক হয়ে যায়। ইশার মুখটা দুহাতে ধরে সামনে এনে বলে,
_কি হয়েছে মা,কাঁদছিস কেন? না বললে আমি বুঝবো কি করে? বাড়িতে মা বকেছে?

ইশা মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়। আয়শা ইশার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলেন,
_তাহলে?

ইশা নিজের কান্না নিয়ন্ত্রনে এনে সবটা খুলে বলে আয়শা কে। সবটা শোনার পর আয়শা ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
_আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন মা। হয়তো ছেলেটা তোর জন্য ভালো ছিলোনা তাই তুই তাকে পাসনি, তুই ওর চেয়ে আরো অনেক ভালো ছেলে পাবে নিজের জীবনে।

_কিন্তু আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে আন্টিমনি।

_এগুলো ক্ষনিকের কষ্ট মা, তুই বরং ওকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা কর। দেখবি তখন আর কষ্ট হবেনা ওর জন্য। দেখবি, তোর জীবনে একদম রাজপুত্রের মতো ছেলে আসবে।

আরো কিছুক্ষন আয়শার সঙ্গে কথা বলল ইশা। আদৃত তাদের সব কথাই আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনছে। ইশাকে এভাবে কাঁদতে দেখে তার মোটেই ভালো লাগছে না। ইশার মুড ঠিক করার কথা ভেবে আদৃত রাস্তার পাশে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
ইশা নিজের চোখ মুছে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই সামনে আদৃত কে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন চালাতে দেখতে পেলো। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
_আপনি এখানে?

আদৃত ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ইশার দিকে তাকালো। তারপর নিজের ফোনটা পকেটে রেখে তার সামনে গিয়ে বলল,
_কেন? রাস্তাটা কি তোমার কেনা নাকি?

অন্য সময় হলে হয়তো ইশা রেগে গিয়ে ঝগড়া শুরু করে দিতো,আদৃত ও তেমনটাই ভেবেছিল। কিন্তু বর্তমানে ঝগড়া করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ইশার নেই। তাই সে কিছু না বলেই চলে যেতে নেয়। আদৃর বেশ অবাক হয়, ইশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
_কি ব্যাপার,ঝগড়া করলে না যে? নাকি শোকে কাতর হয়ে ঝগড়া করতেই ভুলে গেছো?

আদৃতের কথা শুনে ইশা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল,
_আপনি এতক্ষন আমার কথা শুনছিলেন?

থতমত খেয়ে গেলো আদৃত। তবে সেটা প্রকাশ না করে ইশার সামনে গিয়ে বলল,
_তোমার কথা শোনার কোন ইচ্ছে নেই আমার। কিন্তু তোমার যা গলার স্বর,অনেক দূর থেকেও তা শোনা যায়।

ইশার ঠিক বিশ্বাস হলোনা আদৃতের কথা,কেননা সে মোটেই জোড়ে জোড়ে কথা বলেনি। তবে এ নিয়ে খুব বেশি ভাবলোনা ইশা, আদৃত কিছু শুনলে শুনুক তাতে তার কি।
ইশাকে চুপ থাকতে দেখে আদৃত বুকে হাত গুজে বলল,
_চোখে রঙিন চশমা পড়ে থাকলে এভাবেই কাঁদতে হয়।

এবার কিছুটা রাগ হলো ইশার। তবে সে গম্ভীর সুরে বলল,
_আমি চোখে রঙিন চশমা পরবো নাকি সাধারণ চশমা পরবো সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবেনা।

কথাটা বলে সেখান থেকে চলে গেল ইশা। আদৃত তো ইশার মন ভালো করার জন্য এমনটা বলেছিল,কিন্তু সে এটা কি বলে গেল? আদৃত মনে মনে ভাবলো,
_ভুল কিছুতো বলেনি। আসলেই তো, ওর লাইফ ও যা খুশি করবে। আমি কেন তা নিয়ে ভাবতে যাচ্ছি?

নিজের কাধে কারোর স্পর্ষ টের পেয়ে পিছনে ফিরে তাকালো আদৃত। আয়শা তার দিকে তাকিয়ে বলল,
_ইশাকে চেনো বুঝি তুমি?

আদৃত কি বলবে বুঝতে পারলো না। আমতা আমতা করে বললো,
_হ্যা মানে কিছুটা..

আয়শা মুচকি হেসে বললেন,
_তুমি যে আমাদের কথা লুকিয়ে লুকিয়ে শুনছিলে সেটা কিন্তু আমি আগেই দেখেছি।

আদৃত কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়শা হাতের ইশারায় তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
_থাক,কিছু বলতে হবেনা। আর তুমি চিন্তা করোনা আমি ইশাকে কিছু বলবোনা।

চুপ করে রইলো আদৃত। আয়শা তার গায়ে হাত বুলিয়ে সামান্য হেসে বললেন,
_মেয়েটা বড্ড সহজ সরল। ওকে কিছু বলতে চাইলে ঠিক সময়ে বলে দিও…

কথাটা বলে আয়শা চলে গেলেন সেখান থেকে। আর আদৃত একই জায়গায় দাড়িয়ে মনে মনে তার কথার অর্থ খুজতে লাগলো।

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৭ (বোনাস পর্ব)
#মেহরিন_রিম
ফাইজা বুকশপ থেকে বেড়িয়েই রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে এলো। পূর্নর কথা ভেবে একদম ই কষ্ট পেতে চায়না সে।
কলিং বেল এর শব্দ পেয়ে রুকসানা দরজা খুললেন। ফাইজা ভিতরে ঢুকতেই সে জিজ্ঞাসা করলেন,
_ইশার কি কিছু হয়েছে ফাইজা?

ফাইজা রুকসানার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,
_কেন? ও ফেরেনি এখনো?

_সেতো অনেক আগেই ফিরেছে। কিন্তু ওর চোখমুখ থেকে স্বাভাবিক মনে হলোনা। আবার আমি জিজ্ঞেস করতে ঘরে গেলাম, কিন্তু সে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। যাওয়ার আগে তো সব ঠিক ই ছিল,হঠাৎ করে কি হলো বলতো?

ফাইজা কিছু বুঝতে পারলো না। তাই মুচকি হেসে রুকসানার সামনে গিয়ে বললো,
_আরে তুমি চিন্তা করোনা তো, ঐ বন্ধুদের সাথে একটু ঝগড়া হয়েছিল তো তাই হয়তো মন খারাপ করে আছে। আমি দেখছি গিয়ে, তুমি না কাচ্চি রান্না করবে? কাচ্চি দেখলে ইশার মন আপনা আপনিই ভালো হয়ে যাবে।

_ঠিক ই বলেছিস,আচ্ছা তুই ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।

_হুম।

ফাইজা উপরে উপরে স্বাভাবিক থাকলেও রুকসানার কথা শুনে তারও কিছুটা চিন্তা হচ্ছে। তাই সে নিজের ঘরে না গিয়েই আগে ইশার ঘরের দিকে গেলো। ইশার ঘরের সামনে এসে দেখলো দরজা বন্ধ। ফাইজা কয়েকবার দরজায় নক করে বলল,
_ইশা আমি, দরজা আটকে রেখেছিস কেন? দরজা খোল।

ইশা বালিশে মুখ গুজে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে ছিল। ফাইজার গলার আওয়াজ পেয়ে ইশা বিছানা থেকে উঠে এসে দরজা খুলে দেয়। ফাইজা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশা তাকে জড়িয়ে ধরে, ফাইজা ঠিক বুঝতে পারলো না ইশার কি হয়েছে। ইশাকে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে বলল,
_এই মেয়ে কি হয়েছে তোর? চোখ মুখ এর কি হাল বানিয়েছিস।

ইশা ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ফাইজা কে সবকিছু বলতে লাগলো।

___
_ভালোবাসার মানে কি পূর্ণ?

ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে সিগারেট হাতে কথাটা বলল আদৃত। পূর্ণ রুমে সোফায় বসে কিছু কাজ করছিল। আদৃত এর এমন প্রশ্ন শুনে ল্যাপটপ টা রেখে ব্যালকনির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
_কি বললি?

আদৃত সিগারেট এর ধোয়া ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়েই বলে,
_আই সেইড, হুয়াট ডু ইউ মিন বাই লাভ?

পূর্ণ আদৃতের পিছনে এসে তার কাধে হাত দিয়ে মজার সুরে বললো,
_আদৃত মেহরাজ কি প্রেমে পড়লো নাকি?

মাথা নিচের দিকে ঝুঁকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে হাসলো আদৃত। পিছন ফিরে পূর্ণর দিকে তাকিয়ে বলল,
_যা জিজ্ঞেস করলাম সেটা তো বল।

_এমনভাবে জিজ্ঞেস করছিস যেন আমি কোন মস্তবড় প্রেম বিশেষজ্ঞ!

_ভালো তো বেসেছিস।

চুপ করে গেল পূর্ণ। আদৃত সামান্য হেসে বলল,
_অস্বিকার তো করতে পারবিনা। বলতে পারবি তুই কখনোই ফাইজাকে ভালো বাসিসনি?

দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে পূর্ণ। মুচকি হেসে বলে,
_ভালোবাসা বলে কয়ে হয়না, অপ্রত্যাশিত ভাবেই হয়তো কাউকে ভালোবেসে ফেলি আমরা। কখনো সেটা ভালো আবার কখনো দুজনের জন্যই ক্ষতিকর।

পূর্ন ব্যালকনি থেকে রুমে চলে আসে। ফাইজার জন্য তার মনে কোন অনুভূতি আছে কিনা এটা তার পক্ষে বলা মুশকিল। থাকলেও সেটা অব্যাক্ত রাখাই উচিৎ বলে পূর্নর ধারনা।
আদৃত আবারো আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেট এ টান দিলো। আজকাল নিজেকেই ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারেনা সে। নিজের মনকে যা বোঝাচ্ছে আর তার মন যা বুঝছে তা সম্পূর্ণই ভিন্ন।

___
_আমি তোকে আগেই বুঝিয়েছিলাম ইশা, কাউকে এভাবে ভালোবাসিস না। এগুলো কেবলই বয়সের দোষ, দেখবি কয়েকদিন পড়ে ঠিকই ভুলে গেছিস নিরব কে।

মুখে এমনটা বললেও ফাইজা নিজেই বুঝতে পারে সত্যিকারের ভালোবাসা এত সহজে ভোলা যায়না, তা শুধুই তাড়া করে বেরায়। চাইলেও সেখান থেকে বেড়িয়ে আসা যায়না। তবুও ইশাকে শান্ত করার জন্য কথাগুলো বলছে ফাইজা, আর ফাইজার ধারণা ইশা যেটাকে ভালোবাসা বলে দাবি করছে সেটা কেবলই তার মোহ।

ইশা চুপ করে ফাইজার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে, ফাইজা এত কিছু বললেও তার মুখে কোনো কথা নেই। ফাইজা ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
_এই ইশা,কিছু তো বল। এই চুপ করে থাকাটা কিন্তু তোর সাথে মানাচ্ছে না। আর নিরব তো তোকে কখনো ভালোই বাসেনি।

ইশা চোখ তুলে ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলে,
_কিন্তু কেন আপু? কেন ভালোবাসেনি আমায়? যেখানে সবাই বুঝতে পেরেছে আমি নিরব ভাইয়াকে পছন্দ করি সেখানে ও কেন বুঝতে পারলোনা?

উঠে বসলো ইশা। করুণ চোখে তাকিয়ে বলল,
_আমি কি দেখতে খুব খারাপ যে আমাকে ভালোবাসা যায়না? মুখে বলিনি বলে কি ও একটুও বুঝবে না?

ফাইজা মুচকি হেসে বলে,
_সবসময় সব কথা মুখে বলতে হয়না রে পাগলি। তোকে যে ভালোবাসবে, তোর না বলা কথাগুলোও সে বুঝতে পারবে। তুই আর একটু বড় হলেই বুঝতে পারবি সবটা, তখন নিজের এই কান্নার কথা চিন্তা করে নিজেই অবাক হবি। মিলিয়ে নিস আমার কথা।

রুকসানা নিচ থেকে ডাক দিয়ে বলেন,
_ফাইজা,ইশা খেতে আয় তোরা।

ফাইজা ইশার গালে হাত দিয়ে বলে,
_অনেক হয়েছে কান্নাকাটি। তোর ফেভারিট কাচ্চি রান্না করেছে ছোট আম্মু, বিকেলেও কিছু খাসনি নিশ্চই। চল খেতে যাবি এখন।

_আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা আপু। তুমি আম্মুকে একটু বলে দিও আমার গ্যাস্ট্রিক এ প্রবলেম হচ্ছে তাই খেতে পারবোনা।

_এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে ইশা। আমি কিন্তু ছোট আম্মুকে গিয়ে সবকিছু বলে দেবো,তখন ভালো হবে তো?

_আমার সত্যি ই খেতে ইচ্ছে করছেনা আপু।

_কোনদিন তুই রাতে না খেয়ে ঘুমিয়েছিস শুনি? এবার শরীর খারাপ করবে তো বোন, চল আমি খাইয়ে দেবো তোকে।

_কিন্তু আপু…

_কোনো কিন্তু নয়,চল আমার সঙ্গে।

জোড় করে ইশাকে খেতে নিয়ে গেল ফাইজা। তবে তাকে খুব বেশি খাওয়াতে পারলো না। রুকসানা বেশ অবাক হলেন, যেই মেয়ে কাচ্চি পেলে অন্যদিনের চেয়ে ডাবল খেয়ে নিতে পারে। সেই মেয়ের কিনা খাওয়ার প্রতি কোনো আগ্রহ ই নেই। ফাইজা কে জিজ্ঞেস করলে ও কোনোভাবে ম্যানেজ করে নিলো তাকে।

___
এরই মাঝে আরো সাতদিন কেটে গেছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর কতকিছু করবে বলে ঠিক করে রেখেছিল ইশা,কিন্তু তার কিছুই করা হয়নি এই কদিনে। এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে ইশা, তবুও অধিকাংশ সময়ই মন খারাপ করে বসে থাকে। ফাইজা তাকে আরো তিনদিন আগে থেকে ঘুরতে যাবে বলতে বলতে আজকে রাজি করাতে পেরেছে। ইশাও ভাবছে একটু ঘুড়তে গেলে হয়তো মনটা ভালো হবে তার।

#চলবে

তুমিময় প্রাপ্তি পর্ব-১৩+১৪

0

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৩
#মেহরিন_রিম
_এসব পরীক্ষা দিয়ে কি হবে বলতো মেহু? একদিন তো ম’রেই যাবো। শুধু শুধুই যত আজাইরা ঝামেলা। নতুন শিক্ষামন্ত্রী না আমাকেই বানানো উচিৎ ছিল বুঝলি, তাহলে এবছরের পরীক্ষা টাও বাদ দিয়ে দিতাম।

কদিন বাদেই পড়িক্ষা বলে ইশা বেশ চাপের মধ্যে আছে। সারাদিন শুধু তার কানের কাছে একটা কথাই বাজতে থাকে, “পরিক্ষা,পরিক্ষা,পরিক্ষা”
ব্যাচ শেষ করে বাড়িতে ফিরছে ইশা আর মোহনা। বরাবরের মতোই ইশা ননস্টপ বকবক করে চলেছে। অন্যসময় হলে হয়তো মোহনাও ওর সাথে যুক্ত হতো, কিন্তু আজ সে একদম চুপচাপ। হাটতে হাটতেই দাঁত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে কি করে সায়ান এর এই জ্বালাতন থেকে মুক্তি পাবে।
এতক্ষন করে কথা বলার পরও মোহনার কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে ইশা জহুরি চোখে তাকায় তার দিকে। হাঁটা থামিয়ে মোহনাকেও হাত ধরে থামিয়ে দেয়। তবে এখনো মোহনা তার নিজের ধ্যানে মগ্ন। ইশা এবার মোহনার মাথায় গাট্টা মেড়ে ভ্রু কুচকে বলে,
_ঐ,তোর কি হয়েছে বল তো। কোন সাড়াশব্দ নেই, রোবটের মতো হাঁটছিস। এক্সাম এর টেনশন এ কি তুই ডিপ্রেশন এ পড়ে গেলি নাকি? অবশ্য এক্সাম নিয়ে এত প্যারা নেওয়ার মতো মেয়েতো তুমি,আমি না। তাহলে? হঠাৎ করে হলোটা কি তোর?

ইশার কথায় এবার ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো মোহনা। একবার ভাবলো ইশাকে বলবে সায়ান এর কথা, পরক্ষণেই ভাবলো ইশাকে বলা যাবেনা। তাহলে সে এটা নিয়ে তো মজা নেবেই, তার সঙ্গে বাকি বন্ধুদেরও জানিয়ে দেবে। আর যদি কোনোভাবে সায়ান এর থেকে ছবিগুলো নিয়ে নেয়,তাহলে কি হবে! এসব ভাবতেই চোখ বড়বড় হয়ে আসছে মোহনার।
মোহনাকে আবারো চুপ করে থাকতে দেখে ইশা তার সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,
_আবার কোথায় হারিয়ে গেলি তুই?

মোহনা ইশার দিকে তাকিয়ে দ্রুতগতিতে বলল,
_কি হবে? কিছু হয়নি তো। আসলে কালকে রাতে একটা ভুতের মুভি দেখেছিলাম,এখনো না ওটার থেকে বের হতে পারছিনা। তাই আরকি, হা হা..

ইশা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো মোহনার দিকে। এরপর তার কপালে হাত দিয়ে চেক করে অবাক হয়ে বলল,
_মেহু,তুই একা একা ভুতের মুভি দেখেছিস? তাও আবার এক্সাম এর আগে?

ব্যাস,মোহনা এবার ভালোমতোই ফেসে গেলো। নিজেকে নিজেই বকতে লাগলো,একটা মিথ্যে কথাও ঠিক মতো বলতে পারলোনা! নরমালি অনেকের সাথে একসাথে বসেও মোহনা ভুতের মুভি দেখতে রাজি হয়না কখনো।সেখানে কিনা একা একা!

আদৃত এই রাস্তা দিয়েই বাইক নিয়ে যাচ্ছিল। ইশাকে দেখতে পেয়ে হুট করে তার একদম সামনে এসে ব্রেক কসলো। আকষ্মিক এমন বাইক সামনে এসে পড়ায় ইশা আর মোহনা দুজনেই খানিকটা ভয় পেয়ে যায়। কয়েক সেকেন্ড পড় ইশা চোখ খুলে বুঝতে পারে বাইকটা তাদের গায়ে উঠে যায়নি। মেজাজ টা এবার গরম হয়ে গেলো ইশার, সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বুকে থুথু দিয়ে বলতে লাগলো,

_পাগল নাকি আপনি? বাইক চালানো না শিখেই নিশ্চই রাস্তায় বাইক নিয়ে বেড়িয়েছেন! ঠিক টাইম এ ব্রেক না করতে পারলে কি হতো? আপনার তো কিছু হতোনা ক্ষতি টা তো আমাদের ই হতো। আর আপনি রাস্তার এত জায়গা ছেড়ে সাইড দিয়ে কেন যাচ্ছেন? কি হলো কথা বলছেন না কেন?

আদৃত যে কেন এমনটা করলো তা সে নিজেও জানেনা। তবে ইশার এত কথা শুনে আর হেলমেট না খুলে থাকতে পারলো না।
আদৃত বাইক থেকে নেমে হেলমেটটা খুলে ভ্রু কুঁচকে তাকায় ইশার দিকে। আদৃত কে দেখেই ইশার মুখটা একদম চুপসে যায়। এই লোকটা যে কেন বারবার তার সামনে চলে আসছে সেটাই বুঝতে পারছে না ইশা।
মাঝখান থেকে মোহনার বেশ লাভ হলো। আদৃত কে দেখে যতটা খুশি হয়েছে তার চেয়েও বেশি খুশি হয়েছে এই ভেবে যে, এই যাত্রার মতো অন্তত ইশার প্রশ্ন থেকে বেঁচে গেছে।

আদৃত কিছুক্ষন চুপ করে তাকিয়ে থেকে বলল,
_এত ঝগড়ুটে কেন তুমি? না মানে অল টাইম কি এভাবেই ঝগড়া করতে থাকো?

_দেখুন আমি মোটেই ঝগড়ুটে নই,আমি অত্যন্ত ভদ্র মেয়ে।

আদৃত সরু দৃষ্টিতে ইশার দিকে তাকাতেই সে শুকনো ঢোক গিলে করুণ সুরে বললো,
_দেখুন ওভাবে তাকাবেন না। আজকে কিন্তু দোষটা আপনার ই ছিল। ভুল যখন করেছেন তখন সরি বলে দিলেই ঝামেলা মিটে যায়।

_হুয়াট? আমি তোমাকে সরি বলবো?

ইশা শুকনো ঢোক গিলে বললো,
_থাক থাক,আমি আবার মানুষকে এমনিতেই ক্ষমা করে দেই। আপনাকেও ক্ষমা করে দিলাম। এই মেহু চল তো।

_দাঁড়াও…
হাত বাড়িয়ে ইশাকে আটকে দিলো আদৃত। ইশা ভ্রু কুচকে বললো,
_আবার কি হলো? বললাম তো আপনার সরি বলতে হবেনা।

ইশার সামনে এসে দাঁড়ালো আদৃত। বুকে হাত গুজে বলল,
_বারবার আমার সামনে চলে আসছো কেন বলতো? ফলো টলো করছো নাকি আমাকে?

আদৃতের এমন উদ্ভট প্রশ্ন শুনে হা করে তাকিয়ে রইলো ইশা। অতি বিস্ময়ের সাথে বললো,
_আমি আপনাকে ফলো করতে যাবো কেন? আর আপনাকে ফলো করে আমার কি লাভ?

নিজের করা এমন প্রশ্নে নিজেই লজ্জিত হলো আদৃত। মনে মনে ভাবলো,
_শিট! এটা কি বললাম আমি? সিরিয়াসলি আমার মাথাটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে এবার। না না,এখানে থাকলে চলবে না।

_কি হলো বলুন? আমি আপনাকে কোন দুঃখে ফলো করতে যাবো?

মোহনা এবার মাঝখান থেকে খুশিমনে বলে উঠলো,
_ফলো করছেনা ভাইয়া। আমি না শুনেছি,আমরা কারোর কথা খুব বেশি চিন্তা করলে তার সাথে আমাদের দেখা হয়ে যায়। আর আমি আপনার কথা এতবার মনে করেছি, তাই জন্যই হয়তো বারবার দেখা হয়ে যাচ্ছে।

আদৃত ইশার দিকে তাকিয়ে মোহনার বলা কথাটা ভাবতে লাগলো। আদৃত মনে মনে ইশার কথা ভাবতে না চাইলেও নিজের অজান্তেই ইশার কথা বারবার মনে পড়েছে তার। তার জন্যই কি দেখা হচ্ছে ইশার সঙ্গে?

ইশা মোহনার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
_তুমি চুপ করেই থাকো। সারাদিন পাগল ছাগল নিয়েই তো তোমার ভাব…

আদৃতের দিকে চোখ পরতেই ইশা মেকি হেসে বলে,
_আপনাকে বলিনি আপনাকে বলিনি, চিন্তা করবেন না। এই মেহু চল তো।

কথাটা বলেই মোহনাকে নিয়ে আদৃতের পাশ থেকে চলে গেলো ইশা। আদৃত হালকা পিছনে ঘুড়ে ওদের যাওয়া দেখলো। তারপর ইশার বলা কথাগুলো চিন্তা করে আনমনেই মুচকি হাসলো। পরক্ষণেই বিষ্মিত হলো সে,মনে মনে ভাবলো,
_ওয়েট! হাসছি কেন আমি? মেয়েটার এমন উদ্ভট কথাবার্তা আমার কাছে ভালো লাগছে কেন?

বেশি চিন্তা করতে পারলোনা আদৃত। সময়ের দিকে খেয়াল করতেই বুঝতে পারলো অনেকটা দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। মাথা ঝাঁকিয়ে হেলমেট টা পড়ে নিজের গন্তব্যে ছুটলো আদৃত।

___
কেটে গেছে আরো অনেকগুলো দিন। আজ ইশার এসএসসি পরীক্ষার শেষ দিন। প্রতিটা এক্সাম ই বেশ ভালো হয়েছে তার। আজকের এক্সাম টা শেষ হলেই তার শান্তি,যেন জেলখানা থেকে মুক্তি পাবে ইশা।
তবে পরিবর্তন এসেছে আদৃতের মাঝে। যতই ইশার কথা ভুলতে চাইছে ততই যেন আরো বেশি চিন্তা করছে তাকে নিয়ে। এমনকি ইশাকে দেখার জন্য দু তিন দিন তার বাড়ির আশেপাশে দাড়িয়েও ছিল একনজর তাকে দেখার জন্য। কেন এসব করছে তা জানা নেই আদৃতের।

গত এক্সাম এর দিন আদৃত ইশা আর মোহনার কথা দূর থেকে শুনেছিল, তারা বলছিল লাস্ট এক্সাম শেষে স্কুলে গিয়ে একটু আনন্দ করবে। তাই আজকে এক্সাম শেষ হওয়ার টাইম এ আদৃত কলেজে এসে দাঁড়িয়ে ছিল। সঙ্গে সায়ান কেও নিয়ে এসেছে যেন কেউ সন্দেহ না করে।

আদৃত অনেক্ষন ধরে খেয়াল করছে, ইশা কলেজ এ আসার পর থেকেই নিরব এর আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। নিরব তার সাথে কথা বললেও তার আসল নজর ফোনের দিকেই। কিছু একটা সন্দেহ হলো আদৃতের। মোহনা কে এদিকে আসতে দেখে আদৃত কিছু না ভেবেই তাকে ডাক দেয়। মোহনাও সঙ্গে সঙ্গে এসে বলে,
_আরে আপনি এখানে!

_হ্যা একটু আসা হলো আরকি। আচ্ছা একটা কথা বলতে পারবে?

_হ্যা হ্যা বলুন।

আদৃত ইশা আর নিরব এর দিকে তাকিয়ে বলে,
_আচ্ছা ওরা কি রিলেটিভ?

মোহনা ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,
_আরে না,রিলেটিভ হতে যাবে কেন? নিরব ভাইয়া তো আমাদের সিনিয়র,আর ইশা ওকে…

চুপ করে গেলো মোহনা। আদৃত বলল,
_ইটস ওকে,তুমি বলতে পারো।

_কাউকে বলবেন না হ্যা, ইশা নিরব ভাইয়াকে অনেক আগে থেকেই লাইক করে। কিন্তু নিরব ভাইয়া সেটা বুঝতে পারে বলে আমার মনে হয়না…

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৪
#মেহরিন_রিম
_কাউকে বলবেন না হ্যা, ইশা নিরব ভাইয়াকে অনেক আগে থেকেই লাইক করে। কিন্তু নিরব ভাইয়া সেটা বুঝতে পারে বলে আমার মনে হয়না…

মোহনার কথা শুনে আদৃত আবারো ইশার দিকে তাকায়, সে এখনো নিরব এর সাথে হেটে হেটে তাকে অনেক কিছু বলে চলেছে। ইশার কার্যকলাপ দেখে সে আগেই এমন কিছু আন্দাজ করতে পেড়েছিল।

_কি হলো ভাইয়া? কিছু ভাবছেন?

আদৃত মোহনার দিকে তাকিয়ে বলল,
_হুম, না না আর কিছু না।

_আচ্ছা।

মোহনা চলে যেতে নিলে আদৃত আবারো তাকে ডাক দিয়ে বলে,
_তোমার নাম যেন কি? হ্যা মোহনা, তুমি যে আমাকে কথাটা বললে এটা যেন ইশা জানতে না পারে ঠিক আছে?

_ওকে বলতে যাবো কেন?

_হুম দরকার নেই বলার। ঠিক আছে,তুমি কোথায় যাচ্ছিলে যেতে পারো।

মোহনাও মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। আদৃত কিছুক্ষন ইশা আর নিরব এর দিকে তাকিয়ে রইলো, নিরব কে দেখে কোনোভাবেই মনে হচ্ছেনা সে ইশাকে পছন্দ করে বা এমন কিছু।
আদৃত দু আঙুল কপালে স্লাইড করতে লাগলো, মুখ থেকে তার বিরক্তিসূচক ‘চ’ আওয়ার বেড়িয়ে এলো। মনে মনে ভাবলো,
_আমি ইশার লাইফ নিয়ে ভাবতে যাচ্ছি কেন? ওর লাইফ, ও যা খুশি করতে পারে তাতে আমার কি!

আশেপাশে তাকিয়ে সায়ানকে খুজলো আদৃত, তবে তার দেখা পেলোনা। সায়ান কে খোজার ইচ্ছে নেই এখন, তাই নিজের বাইক নিয়েই আদৃত বেড়িয়ে গেলো কলেজ থেকে।

___
অনেক্ষন ধরে নানান কথা বলে চলেছে ইশা, তবে নিরব তার খুব একটা পাত্তাই দিচ্ছে না। ইশা এসব নিয়ে না ভাবলেও এখন বেশ খারাপ লাগছে তার, কতদিন পর নিরবের সাথে কথা বলতে এসেছে আর তার মাঝে কিনা কোনো ভাবান্তর ই নেই। যেখানে ইশার আচরণ দেখে তার প্রায় সব ক্লাসমেট রাই বুঝতে পারে যে সে নিরবকে পছন্দ করে,সেখানে নিরব কি কিছুই বুঝতে পারেনা? বুঝতে পারেনা নাকি বুঝতে চায় না মাঝেমধ্যে এটাই ভাবে ইশা।

_এই নিরব ভাইয়া, একটু তো কথা বলবে নাকি। আমি কতক্ষন ধরে কতকিছু বলছি,আর তুমি সেই ফোনের মধ্যেই ঢুকে আছো। কি আছে এই ফোনে?

নিরব ফোনের দিকে তাকিয়েই মুচকি হেসে বলল,
_অমূল্য রত্ন,বুঝলি?

ইশা অন্য দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলো। নিরব এবার ফোনটা পকেটে রেখে বলল,
_শোন, বলেছিলাম না তোদের সারপ্রাইজ দেবো?

_সে তো আরো দুমাস আগে থেকেই দাও।

_এবার আসলেই দেবো,সঙ্গে আমার তরফ থেকে ট্রিট ও পাবি। বিকেলে কলেজে চলে আসিস।

_আম্মু আসতে দিলে তো।

_আরে আন্টি কে ম্যানেজ করে নিস, না এলে কিন্তু অনেক কিছু মিস করবি।

কথাটা বলেই নিরব চলে গেলো সেখান থেকে। ইশা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে মাথা খাটিয়ে ভাবতে লাগলো,কি এমন সারপ্রাইজ দেবে নিরব?
এত কিছু নিয়ে ভাবার ইচ্ছে নেই ইশার,পরীক্ষা শেষ হওয়ার খুশিতে পারলে এখানে নাচা শুরু করে দেয় সে। অনেক্ষন ধরে মোহনাকে দেখতে পায়নি ইশা, তাই মোহনাকে খোজার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো সে।

___

মাঠের এক সাইড থেকে আইসক্রিম খেতে খেতে হাটছে মোহনা আর সায়ান। মোহনা আইসক্রিম খেতে খেতে আড়চোখে বারবার সায়ান এর দিকে। পরীক্ষার কারণে এই কদিনে সায়ানের সঙ্গে খুব বেশি কথা না বললেও রোজ অন্তত ১০ মিনিট এর জন্য বাধ্য হয়ে হলেও সায়ান এর সঙ্গে সুন্দর করে কথা বলতে হয়েছে মোহনার। প্রথমে বিরক্ত লাগলেও এখন আর কথা বলতে খুব বেশি খারাপ লাগেনা বা রাগ ও হয়না।

_আই নো আই এম সো হ্যান্ডসাম, কিন্তু এভাবে নজর দেওয়া তো উচিৎ নয় তাইনা?

খানিকটা থতমত খেয়ে যায় মোহনা। মাঠের সাইডে থাকা বেঞ্চে বসে বলে,
_আপনার দিকে নজর দিতে যাবো কোন দুঃখে।

সায়ান মোহনার পাশে বসে বললো,
_ছবিগুলো কিন্তু আছে আমার কাছে।

মোহনা করুণ দৃষ্টিতে সায়ান এর দিকে তাকিয়ে বলল,
_এমন করছেন কেন? আমার মত একটা বাচ্চাকে এত ব্লাকমেইল করা কিন্তু ঠিক না।

_ওহ রিয়েলি! তুমি বাচ্চা?

_তা নয়তো কি? এত গুলুমুলু কিউট সা বাচ্চা আমি। আপনি শুধু শুধু আমায় ছবির কথা বলে ভয় দেখাচ্ছেন।

সায়ান কিছুক্ষন মোহনার দিকে তাকিয়ে হুট করে হো হো করে হেসে উঠলো। মোহনা কপাল কুঁচকে সায়ান এর দিকে তাকিয়ে বলল,
_হাসছেন কেন আপনি? খুব মজা লাগছে আপনার তাইনা।

সায়ান অতি কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে বলল,
_সিরিয়াসলি, সামান্য কিছু ছবির জন্য তুমি এত ভয় পাচ্ছো? হাউ ফানি!

_তো আপনি ছবিগুলো ডিলিট করে দিলেই তো পারেন।

সায়ান মোহনার দিকে কিছুটা এগিয়ে বলল,
_ডিলিট আমি করে দেবো। তবে তোমার ও প্রমিস করতে হবে যে, আমার সাথে এভাবেই কথা বলবে। যদি রাজি থাকো..

_রাজি রাজি…কিন্তু আপনি ছবিগুলো এক্ষুনি ডিলিট করবেন,আমার সামনে।

সায়ান আবারো হাসতে হাসতে নিজের ফোনটা বের করে মোহনাকে দেখিয়ে ছবিগুলো ডিলিট করে দিলো। মোহনা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল এবার। মনের আনন্দে আইসক্রিম খেতে লাগলো।
সায়ান এবার নিজের পকেট থেকে একটা ছোট্ট টেডিবিয়ার চাবির রিং বের করে মোহনার সামনে ধরে বলল,
_এটা তোমার জন্য।

মোহনা এক ঝটকায় সেটা হাতে নিয়ে নিলো। খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলল,
_সিরিয়াসলি? কি কিউট এটা! থ্যাংক ইউ।

_মেহু…

বেশ গম্ভীর কণ্ঠের ডাকটা শুনে মোহনা আর সায়ান দুজনেই পিছনের দিকে তাকালো। ইশা কোমড়ে হাত দিয়ে সরু চোখে একবার মোহনার দিকে,আরেকবার সায়ান এর দিকে তাকিয়ে দুজনকে পর্যবেক্ষণ করছে।
ইশাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মোহনা শুকনো ঢোক গিলে মেকি হাসলো। একনজর সায়ান এর দিকে তাকিয়ে নিজের ব্যাগটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম এর কাঠিটা সাইডে ফেলে দিলো। তারপর ইশার কাছে গিয়ে বলল,
_আরে দোস্ত,তোকেই তো খুজছিলাম।

কথাটা বলেই ইশার হাত ধরে অন্যদিকে নিয়ে যেতে লাগলো মোহনা। সায়ান আর ওদের মাঝে গেলোনা, উঠে দাড়িয়ে নিজের বাইকের দিকে অগ্রসর হলো।

ইশা সরু চোখে মোহনার দিকে তাকিয়ে থেকে ওর হাতটা ছাড়িয়ে দেয়। তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
_কি চলছিল ওখানে?

_ক কী চলবে? আরে তুই যা ভাবছিস তেমন কিছুই না।

_তেমন কিছুই না তাই টেডিবিয়ার গিফট করা হচ্ছে তাইনা? আমাকে পাগল ভাবিস তুই?

_দোহাই লাগে বইন,আম্মুরে কিছু বলিস না। আর সেরকম কিছুই নেই,আমি তোকে যেতে যেতে সব বলতেছি চল।

কথাটা বলেই মোহনা ইশার সাথে হাটতে হাটতে তাকে সব কিছু খুলে বলে। সবশেষে মোহনা বলে,
_সত্যি বলতেছি দোস্ত,আমাদের মধ্যে তেমন কিছুই নেই।

ইশা ভ্রু নাচিয়ে বলল,
_আচ্ছা….তাহলে তুই এত লজ্জা পাচ্ছিস কেন শুনি?

মোহনা নিচের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো,
_কোথায় লজ্জা পাচ্ছি!

_বুঝছি বুঝছি। এখন শোন, বিকেলে কলেজে যাবো একবার।

_কেন?

_নিরব ভাইয়া যেতে বলছে, কি যেন সারপ্রাইজ দিবে বললো।

_আন্টি যেতে দিবে তোকে?

_ফাইজা আপুকে নিয়ে যাবো,তাহলেই যেতে দিবে। এসব ভাবতে হবে না,তুই টাইমমতো চলে আসিস কিন্তু।

_ওকে..

#চলবে

তুমিময় প্রাপ্তি পর্ব-১১+১২

0

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১১
#মেহরিন_রিম
আদৃত অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে যায় যখন ইশা কে সেই একই শাড়ি পরে একইভাবে নাচতে দেখে। তারমানে এই কদিনে তার মাথার মধ্যে শুধু ইশাই ঘুরপাক খাচ্ছিল? ইশাকে দেখার জন্য সে রোজ ছাঁদে গিয়ে অপেক্ষা করতো! এমনি হাজারো প্রশ্নতে জর্জরিত হলো আদৃতের মন। তবে এরই মাঝে তার স্থির দৃষ্টি নিমজ্জিত রয়েছে ইশার পানে। আশেপাশের এত কোলাহলের মাঝেও তার মাঝে এক অদ্ভুত অনুভূতি বাসা বাঁধছে। এক নাম না জানা অনুভূতি,যেই অনুভূতি এর আগে কখনো হয়নি। সবার করতালির আওয়াজে চিন্তা ভঙ্গ হয় আদৃতের, ফিরে আসে বাস্তবে। আর এক মুহূর্তও এখানে থাকা সম্ভব নয় তার পক্ষে, চেয়ার থেকে উঠে দ্রুতগতিতে পা বাড়িয়ে একটা ফাঁকা যায়গায় চলে যায় আদৃত। ঘনঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজের অশান্ত মনকে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে সে। কেন হচ্ছে এমন? এই অদ্ভুত অনুভূতির অর্থই বা কি?

___
প্রোগ্রাম শেষ হতে এখনো অনেকটা সময় বাকি। তবে ফাইজা আর এখানে থাকতে চাইছে না, ইশার কথায় এতক্ষন থাকলেও এখন আর পারছে না। ইশাকে কোনোরকম মানিয়ে কলেজ থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয় ফাইজা। তখন ই পিছন থেকে কেউ বলে ওঠে,
_ফাইজা দাড়াও….

নিজের হাতে থাকা ব্যাগটা খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয় ফাইজা। কণ্ঠটা যে পূর্নর এটা বুঝতে সময় লাগেনি তার।এই কণ্ঠস্বর তার অতি পরিচিত,একটা সময় এই কণ্ঠ শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকতো সে। আর এখন, হাহ এখন সেই কণ্ঠই তার কাছে সবচেয়ে অস্বস্তিজনক লাগছে। পিছনে তাকালো না ফাইজা, নিজের জায়গায় স্থির থেকেই উত্তর দিলো,
_জি বলুন।

ফাইজার মুখে আপনি সম্বোধন শুনে খুব বেশি অবাক হলোনা পূর্ন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
_ফাইজা…ফাইজা আই এম সরি।

চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো ফাইজার। তবুও নিজের কণ্ঠ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল,
_স সরি কেন?

_দেখো সেদিনের বিহেভিয়ার এর জন্য আমি আসলেই দুঃখিত। ওভাবে রিয়েক্ট করাটা আমার উচিৎ…

_ভুল কিছুতো বলেন নি আপনি,আমার মতো মেয়ের সাথে ওর চেয়ে ভালো আচরণ করাও যায়না।

ফাইজার কণ্ঠে অভিমান স্পষ্ট। পূর্ন কোনো প্রতিত্তর দেওয়ার ভাষা খুজে পেলোনা। ফাইজা আবারো বলল,
_আর কিছু বলবেন আপনি?

পূর্ন কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,
_না..

_ঠিক আছে।

কথাটা বলেই ফাইজা ছুটে বেরিয়ে গেল কলেজ থেকে। নিজের চোখের জল সে কাউকে দেখাতে চায়না, পূর্নকে তো একদমই না। যার কাছে এই চোখের জলের কোনো মূল্যই নেই, ফাইজার মতে তাকে এই চোখের জল দেখানোর কোনো মানেই হয়না।

পূর্ন একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো। ফাইজার এমন আচরণের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পূর্নর এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে দু বছর আগের সেই দিনের কথা। তখন ফাইজার সদ্য ভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছে আর পূর্ন মাস্টার্স এর ফাইনাল এক্সাম দিবে।

“””
_কি হচ্ছে টা কি ফাইজা? বললাম তো আমাকে ফলো করা বন্ধ করো। আমার কথা শুনতে চাওনা কেন তুমি?

পূর্নর এমন কথায় ফাইজার মাঝে তেমন কোনো ভাবান্তর দেখা গেলোনা। সে আপনমনে পূর্নর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
_বিকজ আই লাভ ইউ..

_বাট আই ডোন্ট লাভ ইউ। এন্ড ইউ হ্যাভ টু নো দ্যাট।

_তুমি বললেই কি আমার মেনে নিতে হবে নাকি?

পুর্নর আগে থেকেই মাথা গরম ছিল তার উপর ফাইজার কারণে মেজাজ টা আরো বিগড়ে যেতে লাগলো। পূর্ন কোনো উত্তর না দিয়ে ফাইজার পাশ থেকে সামনের দিকে হাটা শুরু করলো। ফাইজাও তার পাশে হাটতে হাটতে বললো,
_তুমি যদি আমাকে ভালোই না বাসো তাহলে আমাকে তুমি করে বলো কেন শুনি। তার মানে আমি বাকিদের থেকে স্পেশাল আর…

_কথা একবার বললে কানে যায়না তোমার?
পূর্নর ধমকে খানিকটা কেপে ওঠে ফাইজা। পূর্ন এবার বলতে শুরু করে,
_তোমার মতো মেয়ে না আমি জীবনে দুটো দেখিনি। একটি ভালো করে কথা বলেছি কিনা তাতেই ভেবে নিলে আমি তোমাকে ভালোবাসি। হাউ ফানি! অবশ্য তোমার মতো মেয়ের থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আশাও করা যায়না বোধ হয়। আগেও নিশ্চই অভ্যাস আছে ছেলেদের পিছনে ঘুড়ে বেড়ানোর? নাহলে তো আমার পিছনে এমন আঠার মতো চিপকে থাকতে পারতে না। ভালোভাবে বলেছিলাম তোমাকে,শুনলে না তো। এবার লাস্ট বারের মতো বলছি, আমার পিছনে একদম ঘুরঘুর করবে না। অসহ্য লাগে আমার।

কথাটা বলেই সেখান থেকে হনহন করে চলে যায় পূর্ন। আর ফাইজা সেই একই জায়গায় পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে। আশেপাশের মানুষ তার দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন কথা বলে চলেছে। সেই মুহূর্তে কষ্টে,লজ্জায় যেন মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছিল ফাইজার। আশেপাশে একনজর তাকিয়ে এলোমেলো পায়ে সেই স্থান ত্যাগ করে ফাইজা।

“””
আর ভাবতে চাইলো না পূর্ন। সেদিনের এই কঠিন কথাগুলো বলতে যে পূর্নর কতটা কষ্ট হয়েছিল সেটা হয়তো ফাইজা কখনো জানতেও পারবেনা,পূর্ন জানাতেও চায়না। সে শুধু চায় ফাইজা নিজের জীবনে এগিয়ে যাক, নতুন করে সবকিছু শুরু করুক।

_কিরে তুই দারিয়ে আছিস কেন? আর আদি কোথায়?

সায়ান এর কথায় তার দিকে তাকায় পূর্ন। সায়ান ফোনের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছে। পূর্ন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
_ফোন করে দেখ।

_ফোনে পেলে কি আর তোকে জিজ্ঞেস করতাম? ফোনটাও তো বন্ধ করে রেখেছে।

_ওকে তো চিনিস ই, দেখ গিয়ে হয়তো বাসায় চলে গেছে আর নাহলে অফিসে।

_তাই হবে হয়তো। আচ্ছা তাহলে তুই চল আমার সঙ্গে।

_তুই যা,আমার কিছু কাজ আছে আমি পড়ে আসবো।

_ঠিক আছে রাতে আসিস কিন্তু। আম্মু তোকে আসতে বলছে,আদিকেও নিয়ে আসিস।

_হুম।

____
_আপুর কি হয়েছে আম্মু? শরীর খারাপ লাগছে বলে যে তাড়াতাড়ি চলে এলো।

বাড়িতে এসেই রুকসানার কাছে গিয়ে কথাগুলো বলল ইশা। রুকসানা সোফায় বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
_ফাইজা তো এসেই নিজের ঘরে চলে গেলো। তুই গিয়ে একটু দেখতো, কে জানে মেয়েটার আবার কি হলো।

_আচ্ছা আমি একটু ফ্রেশ হয়ে তারপর দেখছি।
কথাটা বলে নিজের ঘরে ফ্রেশ হতে চলে গেলো ইশা।

প্রায় এক ঘণ্টা যাবৎ শাওয়ার এর নিচে বসে আছে ফাইজা। চোখের অশ্রুগুলো পানির সাথে মিশে যাচ্ছে। ফাইজার মনে শুধু একটা কথাই ঘুরছে,
_কার জন্য কষ্ট পাচ্ছি আমি,কার জন্যই বা কাঁদছি? যেই মানুষটার কাছে আমার কোনো দামই নেই তার জন্য?

অনেক চেষ্টা করছে ফাইজা নিজের কান্না আটকানোর। তবুও বারংবার সে ব্যার্থ হচ্ছে। যেই মানুষটার থেকে দূড়ে সরে থাকতে চাইছে,সেই মানুষটা কেন তার সামনে এল?

_আপু? তুমি কি ওয়াশরুম এ? ঠিক আছো তুমি?

ইশার ডাকে হুশ ফেরে ফাইজার। নিজের কণ্ঠ স্বাভাবিক রেখে উত্তর দেয়।
_হ্যা ইশা,আমি ঠিক আছি।

_আচ্ছা তুমি বের হও,অনেক ছবি দেখানো বাকি আছে।

কথাটা বলেই খাটে গিয়ে বসলো ইশা। ফাইজা এবার দূর্বল পায়ে উঠে দাঁড়াল। মনকে স্থির করার চেষ্টা করলো সে। পূর্ণ কেবলই তার অতীত,তার জন্য সে একটুও কষ্ট পাবেনা। একটুও না।

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১২
#মেহরিন_রিম
ঘরের লাইট নিভিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছে আদৃত। পুরো ঘরে এখন আলো বলতে কেবলই ড্রেসিং টেবিল এর সামনের ছোট লাইট টি জ্বলছে। জানালা থেকে বাহিরের শীতল বাতাস এসে লাগছে আদৃতের গায়ে, যার ফলে তার চুলগুলোও সামান্য উড়ছে। তবে এই হাওয়ার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি বেগে তার মনে প্রশ্নের ঝড় বইছে।
আয়নার সামনে বসে নিজের সাথে কথা বলাটা আদৃতের বেশ পুরনো অভ্যাস। যখনি নিজের মন অতিরিক্ত অশান্ত হয়ে যায়,তখনি এই পদ্ধতি অবলম্বন করে সে। নিজের মনকে শান্ত করার সামান্য প্রচেষ্টা মাত্র।
বেশ কিছুক্ষন বসে থাকার পর উঠে দাঁড়ায় আদৃত। আপন মনে নিজেকে প্রশ্ন করে,
_হুয়াট’স রং উইথ ইউ আদৃত? একটা মেয়ের জন্য আমি কেন এত অস্থির হয়ে যাচ্ছি? তাও আবার ঐ মেয়েটার জন্য? নো নো নো, আমি একটু বেশি ভাবছি ঐ মেয়েটাকে নিয়ে তাইনা? এইজন্যই এমন হচ্ছে, আই আন্ডারস্ট্যান্ড দ্যাট।

লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজের শান্ত করার চেষ্টা করে আদৃত। অত:পর শান্ত কণ্ঠে বলে,
_আমি এসব নিয়ে আর ভাববোই না, রাইট? তাহলেই সব ঠিক হয়ে যায়। লিসেন আদি, ইউ উইল নট থিংক আবাউট দা গার্ল ফ্রম নাও,ওকে?

রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিলো আদৃত। নিজের টাওয়াল টা নিয়ে শাওয়ার নিতে চলে গেল। পূর্ন তাকে কয়েকবার ফোন করেছিল সায়ান এর বাসায় যাওয়ার জন্য, তবে আদৃত বলেছে সে যেতে পারবেনা। পূর্ন ও আর জোড় করেনি, আদৃত যখন একবার বলেছে যাবেনা তখন সে কিছুতেই যাবেনা এটা পূর্নও ভালো করে জানে।

___
ইশা মনের আনন্দে ফাইজা কে সব ছবি,ভিডিও দেখাচ্ছে। কিন্তু ফাইজার সেদিকে তেমন কোনো নজর নেই,সে নিজের ধ্যানে মগ্ন থেকে শুধু ইশার কথায় সায় দিচ্ছে।

_আপু দেখো তো এটা আপলোড দেই?

_হুম

_কিন্তু এই ছবিটাও তো সুন্দর। দুটোর মধ্যে কোনটা দিবো বলো।

_হুম

ইশা এবার ফাইজার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
_কতক্ষন ধরে দেখছি শুধু হুম হুম করছো। বলোনা দুটোর মধ্যে কোনটা আপলোড দিবো?

_হুম

ইশা এবার ফাইজার কাধে হাত দিয়ে কিছুটা ঝাঁকি দিয়ে বলে,
_এই আপু,কি হয়েছে তোমার?

ফাইজার ধ্যান ভাঙে এবার। ইশার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
_হ্যা হ্যা,কি যেনো বলছিলি?

ইশা এবার কিছুটা শান্ত সুরে বলে,
_আপু,তুমি ঠিক আছো তো? কেমন যেন লাগছে তোমাকে।

অনেক্ষন শাওয়ার এর নিচে থাকায় শরীরটাও ঠিক লাগছে না ফাইজার। তবুও মুচকি হেসে বলল,
_কি হবে আমার?একদম ঠিক আছি আমি,তুই টেনশন করিস না তো।

ইশার যেন বিশ্বাস হলোনা ফাইজার কথা। তাই সে নিজে থেকেই ফাইজার কপালে,গালে হাত দিয়ে বলল,
_ওমা, গায়ে তো বেশ ভালোই জ্বরে। তুমি বলবেনা আমায়?

_আরে ঐ একটু আকটু জ্বরে কিছুই হবেনা। ছাড় তো তুই।

_কিছু হবেনা মানে? তুমিতো কিছু খাওনি। দাঁড়াও আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি। খেয়ে তারপর ঔষধ খেয়ে শুয়ে থাকবে বুঝেছো?

_ইশা,আমার একদম খেতে ইচ্ছে করছেনা বোন। শোন আমার কথা।

কে শোনে কার কথা, ইশা ছুটে চলে গেলো ফাইজার জন্য খাবার আনতে। মুচকি হাসলো ফাইজা, এখন ইশা তাকে খাবার,ঔষধ সব খাইয়ে তবেই শান্ত হবে। ফাইজা নিজের বাড়িতেও এতটা আদর পায়না যতটা ইশা আর রুকসানার থেকে পায়।
খাটে হেলান দিয়ে বসলো ফাইজা। মনে মনে ভাবলো,
_কত ভাগ্যবতী আমি, এমন একটা পরিবার পাচ্ছি, এমন একটা বোন পাচ্ছি। আর আমি কিনা বাহিরের একটা লোকের জন্য নিজেকে কষ্ট দিচ্ছি! হাহ…

দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ফাইজা। এরই মাঝে ইশাও খাবার নিয়ে হাজির হয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছুটা খেতে হয় ফাইজাকে। এরপর ইশা তাকে ঔষধ খাইয়ে দেয়। ইশার টিচার চলে আসায় সে আর থাকতে পারেনি। ইশা চলে যাওয়ার পড় ফাইজা বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। কিছুটা ঘুমের বিশেষ প্রয়োজন তার।

___
রাত প্রায় একটা বাজে। পড়াশোনার প্রতি খুব বেশি আগ্রহ না থাকলেও বাধ্য হয়ে অনেকটা রাত জেগে পড়তে হচ্ছে মোহনাকে। পরীক্ষার আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি, তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও এখন একটু সিরিয়াস ভাবেই পড়ছে সে।

পড়তে পড়তেই মোহনার মনে পড়লো সে টানা দেড় ঘন্টা যাবৎ মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে। পড়া বাদ দিয়ে মনে মনে ভাবলো,
_মেহু! তুই এতটা ব্রিলিয়ান্ট কবে থেকে হয়ে গেলি বলতো? আমি তো নিজেই চিনতে পারছি না। বাট, অনেকক্ষণ হয়ে গেল পরছি, বই খাতার ও তো একটু রেস্ট দরকার। আমি আবার এত দয়ালু, থাক ওদের একটু রেস্ট দেই।

বই খাতা বন্ধ করে খাটে বসে নিজের ফোনটা হাতে নিলো মোহনা। ফোনটা অন করতেই দেখলো হোয়াটস অ্যাপ এ কেউ বেশ কয়েকটা ছবি পাঠিয়েছে। ভ্রু কুঁচকে ছবিগুলো দেখতে গেলো সে। কিন্তু ছবিগুলো দেখার পড় তার মাথায় একটা ডায়লগ ই এলো,
“হে মা মাতাজি!”

পুরো আটটা ক্যান্ডিড ছবি তার। তবে ছবিগুলো কেউ দেখলে মোহনার প্রেস্টিজ একদম ই পাঞ্চার হয়ে যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। একটা ছবিতে সে রাক্ষস এর মতো হাসছে, আবার অন্য এক ছবিতে পাগল এর মতো নাচছে।
মোহনা ছবিগুলো দেখে সেই লোককে কিছু একটা লিখতে যাবে তার আগেই অপর প্রান্ত থেকে মেসেজ আসে,
_হেই মিস হাতি,ভালো আছেন তো?

কাঙ্ক্ষিত লোকটি যে সায়ান তা বুঝতে সর্বোচ্চ দশ সেকেন্ড সময় লাগলো মোহনার। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে এই নম্বরেই কল করলো সে, সঙ্গে সঙ্গে কলটা রিসিভ ও হলো। মোহনা রেগে গিয়ে বলতে লাগলো,
_সমস্যা কি আপনার হ্যা? এত মানুষ থাকতে আমার ই এসব ফালতু ছবি তুলতে হলো আপনার? ভাই তুলবেন যখন ভালো ছবি তুলতেন। আর আপনি আমার নম্বর পেলেন কোথায়?

_রিল্যাক্স, এত প্রশ্ন একবারে করলে আমি কোনটার উত্তর দেবো বলতো। এবার তুমি ই বলো, কোন প্রশ্নের উত্তর আগে দেবো?

মোহনা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সায়ান আবারো বলে,
_আচ্ছা ঠিক আছে আমি ই এক এক করে বলছি,হ্যা? প্রথমত তোমার ছবি কেন তুললাম,গুড কোয়েশ্চেন। এর এন্সার হলো আমার ইচ্ছে। আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই তুলেছে। আর তোমার ফোন নম্বর? তুমি কোন সেলিব্রিটি যে নম্বর জোগাড় করতে পারবো না হুম?

_আপনি কি জনেন যে আপনি একটা মেন্টাল।

_এখনো হইনি, বাট তোমার জন্য হলেও হতে পারি।

_মানে? শুনুন ফালতু কথা বলবেন না, ভালোভাবে ছবিগুলো ডিলিট করে দিন বলছি।

_এত সুন্দর ছবি তুললাম কি ডিলিট করার জন্য নাকি? আমিতো আরো ভাবছিলাম ছবিগুলো যদি কোনোভাবে তোমাদের ফ্রেন্ডস গ্রুপ এ দেওয়া যায় তাহলে কেমন হতো!

এবার খানিকটা দমে গেলো মোহনা। করুন সুরে বলল,
_এমনভাবে কেন বলছেন? আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি? আর আপনি তো এত ভালো মানুষ, প্লিজ ভাইয়া ছবিগুলো ডিলিট করে দিননা। এগুলো আমার ফ্রেন্ডস রা দেখলে আমাকে সেই রকম পচাবে…প্লিজ ভা..

_ওয়েট ওয়েট, তোমার কোন জন্মের ভাই লাগি আমি হ্যা? ভুলেও এই ওয়ার্ড ইউজ করবে না। আর এই ছবিতো আমি ডিলিট করবোনা। তবে তুমি যদি ঝগড়া বাদ দিয়ে আমার সাথে সুন্দর করে কথা বলো তাহলে ভেবে দেখতে পারি।

_আরে ঝগড়া আবার কি জিনিস? খায় না মাথায় দেয় তাই তো জানিনা। আর আমি তো অল টাইম সুন্দর করেই কথা বলি। লোকে তো বলে,আমার কথার সাথে নাকি মধু ঝড়ে।

_এইতো এভাবেই কথা বলবে। তাহলে আমি ভেবে দেখতে পারি ছবি ডিলিট করবো কিনা।

রুমের বাহিরে কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেরে মোহনা সরু গলায় বলে,
_আমার না অনেক পড়া বাকি আছে। ফোনটা রাখি আমি?

_ওকেই গুড নাইট।

ফোন টা কাটতেই হাফ ছেড়ে বাঁচলো মোহনা। তার সঙ্গে সায়ান কে মনে মনে কয়েকশো গালি দিতে লাগলো। আফসোস এর সুরে বলল,
_কেয়সা নাসিব হে তেরা মেহু! নিজের প্রেস্টিজ বাঁচানোর জন্য কিনা এই লোকের সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে হচ্ছে!

#চলবে

তুমিময় প্রাপ্তি পর্ব-৯+১০

0

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৯
#মেহরিন_রিম
সকাল থেকে স্কুলে এসে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে ইশা। অধিকাংশ স্টুডেন্টস স্কুল ড্রেস এ এলেও ইশা আর বাকি কয়েকজন পারফর্ম করবে বলে সিভিল ড্রেস এই এসেছে। স্কুলে আসার পর থেকে নিরব এর খোজ করে চলেছে ইশা,তবে তার দেখা এখনো পাওয়া যায়নি। মোহনা স্কুল ড্রেস এ এলেও তার মেকআপ দেখে যে কেউ মনে করবে সে যেকোনো পার্টিতে এসেছে।

অনেকক্ষণ খোজ করার পর নিরব এর দেখা পেলো ইশা। ফোনের দিকে তাকিয়ে গেইট দিয়ে ভিতরে ঢুকলো সে। নিরব কে আসতে দেখে ইশা ছুটে যায় তার কাছে। তারপর খানিকটা রাগী সুরে বলে,
_আর আসার কি দরকার ছিল? একেবারে এসে স্টেজ এ উঠতে তাহলেই তো হতো।

নিরব ফোনের দিকে তাকিয়েই হাটতে হাটতে বললো,
_আমার ঘুম অনেক ইম্পর্টেন্ট বুঝলি।

ইশা নিরবের পাশে হাটতে হাটতে বললো,
_ফোন থেকে একটু চোখটা সরাও তো। এভাবে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকলে তোমার চোখে সমস্যা হবে। আর চোখে সমস্যা হলে তোমার চোখে পাওয়ার চলে আসবে, তারপর তোমাকে চশমা পড়তে হবে। আর চশমা পড়লে মানুষ তোমাকে কানা বলে ক্ষ্যাপাবে। তারপর…

_হ্যা হ্যা বুঝেছি বুঝেছি,আর বলতে হবেনা।

_হ্যা তো বুঝে থাকলে ফোনটা রেখে প্রাকটিস করতে চলো।

_আরে বাবা এখন আবার প্রাকটিস করার কি দরকার?

_এখন একবার রিহার্সাল না করছে যখন স্টেজ এ উঠে গান গাইতে নেবো তখন মাঝখানে আটকে যাবো। তুমি একলাইন গাইবে আর আমি ভুল করে অন্য লাইন গেয়ে ফেললে…

_আর বলতে হবেনা, চল…

____
_তুই আবার ফেয়ারওয়েল প্রোগ্রাম এ কবে থেকে গান গাওয়া শুরু করলি?

আদৃত একটা জলপাই রঙের পাঞ্জাবী পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করছিল। পূর্নর প্রশ্নে বিরক্তির সুরে বলে ওঠে,
_আমাদের কলেজ এরই প্রোগ্রাম। জয়নাল স্যার এর মুখের উপর আমি আর আপত্তি জানাতে পারিনি বুঝলি।

_হুম বুঝলাম।

আদৃত চিরুনিটা ড্রেসিং টেবিল এ রেখে পূর্নর দিকে তাকিয়ে বলল,
_বাই দা ওয়ে, তুই যাচ্ছিস তো আমাদের সাথে?

_যদিও একটা ইম্পর্টেন্ট কাজ ছিল আমার। বাট অনেকদিন হলো কলেজ এ যাওয়া হয়না।

_আমরা কি প্রোগ্রাম শেষ হওয়া পর্যন্ত বসে থাকবো নাকি? কিছুক্ষন থেকেই চলে আসবো।

_ঠিক আছে,তাহলে আমিও যাচ্ছি। আর সায়ান?

আদৃত হাতে ঘড়ি পরতে পরতে বললো,
_ও তো বললো বাসা থেকেই চলে যাবে। দেখ গিয়ে এতক্ষনে হয়তো চলেও গেছে।

___
এতদিন ধরে কান্নার প্রাকটিস করলেও আজ মোহনার একটুও কাঁদতে ইচ্ছে করছেনা। এত সুন্দর করে সাজলো, যদি কেঁদেকেটে সব মেকআপ নষ্টই করে ফেলে তাহলে আর লাভ কি হলো সাজার।
ক্যামেরাম্যানকে সাথে নিয়েই পুরো মাঠে ঘুরে বেরাচ্ছে মোহনা। কখনো গাছের সাথে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে আবার কখনো স্টেজ এর আসেপাশে গিয়ে ছবি তুলছে।

_আপু আপনি এখন পর্যন্ত কম করে হলেও ১০০ টা ছবি তুলেছেন। এবার অন্তত অন্যদের ছবি তুলতে দিন।

_আরে ভাইয়া আপনি তুলুন তো ছবি। বাকিদের টা অন্য কেউ তুলে নেবে। অন্তত ৫০০ ছবি তো তুলতেই হবে। এর মধ্য থেকে ৫০ টা ছবি যদি আমার পছন্দ হয় তাহলে সেগুলো আগামী ৫ মাস যাবৎ একটা দুটো করে আপলোড দিতে হবে,আবার স্টোরি ও দিতে হবে। আপনি তুলুন তো।

কথাটা বলেই আরো বিভিন্ন পোজে ছবি তুলতে লাগলো মোহনা। সায়ান মাত্রই পিঠে গিটার ঝুলিয়ে চোখে সানগ্লাস দিয়ে খানিকটা হিরো হিরো ভাব নিয়ে প্রবেশ করলো কলেজে। আজকে অন্তত একটা মেয়েকে তো ইম্প্রেস করতেই হবে তার।
দূর থেকে মোহনাকে দেখতে পেয়েই সায়ানের সেদিনের ঘটনা মনে পড়ে যায়। মনে মনে ভাবে,
_এই মেয়ের জন্য আমাকে পুরো দুদিন কোমড় ব্যাথায় ভুগতে হয়েছে। এত সহজে তো ওকে ছেড়ে দেওয়া উচিৎ নয়।
সায়ান মোহনাকে বিরক্ত করার উদ্দেশ্যে তার পাশে গিয়ে দাড়ালো। তারপর ফোন্টা কানে ধরে জোড়ে জোড়ে বলল,
_বুঝলি আদি,আমি বোধহয় ভুল যায়গায় চলে এসেছি। কলেজ এ আসার বদলে কোনো পার্টিতে চলে এসেছি মনে হচ্ছে। কেন? আরে আমার আশেপাশে কিছু মানুষ মুখের উপর প্রায় কয়েকশো স্তুপ ময়দা মেখে এসেছে। হ্যা হ্যা জোকারের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

মোহনা সেলফি তোলা বাদ দিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো সায়ান এর দিকে। এসব কথা শুনে বেশ ভালোই বুঝতে পারলো যেয়ে সায়ান তাকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলছে।
মোহনা মুখ ফুলিয়ে সায়ান এর সামনে তুড়ি বাজালো। সায়ান তবুও না দেখার ভান করে আপন মনে কথা বলতে লাগলো। মোহনা আবারো তুড়ি বাজিয়ে বলল,
_এইযে, হ্যালো..

সায়ান মোহনার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বোঝালো,
“আমাকে বলছো?”

_হ্যা হ্যা আপনাকেই বলছি।

_আচ্ছা আদি কোন এক জোকার আমাকে ডাকছে বুঝলি, আমি একটু পড়ে কল করছি তোকে।

_এই এই আপনি জোকার কাকে বললেন হ্যা?

সায়ান গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলল,
_যাকে বলেছি সে ঠিকই বুঝেছে।

_সাহস তো কম নয় আপনার। কতক্ষন ধরে আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে কিসব কথা বলে চলেছেন। সমস্যা কি আপনার?

_আমার আবার কি সমস্যা হবে? আমি তো যা দেখেছি তাই বলেছি।

_মানে টা কি? আপনি আমাকে জোকার বলছেন?

_শুধু জোকার নয় সঙ্গে পাগল ও মনে হচ্ছে। নাহলে স্কুলে কেউ এভাবে ময়দা মেখে আসেনা।

_আপনি নিজে একটা পাগল,শুধু পাগল নয় মস্ত বড় পাগল।

কথাটা বলেই মোহনা রেগে হনহন করে চলে গেলো সেখান থেকে। মোহনাকে এমন রাগতে দেখে পিছনে দাঁড়িয়ে হাসতে লাগলো সায়ান। মোহনাকে বিরক্ত করতে পেরে বেশ মজাই লাগছে তার।

___
গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে ফাইজার জন্য অপেক্ষা করছে ইশা। নিজে তাড়াতাড়ি চলে আসায় সাজগোজ কিছুই করেনি সে। নিজের সাজ তার খুব বেশি পছন্দ হয়না,তাই ফাইজাকেই বলেছে সাজিয়ে দিতে।

_সরি সরি,একটু দেড়ি হয়ে গেলো।
ইশার সামনে এসে কথাটা বলল ফাইজা। ইশা বেশ তড়িঘড়ি করে বলল,
_একটু না অনেক দেড়ি করেছো। একটু পড়েই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে। এখন জলদি চলো আমাকে সাজিয়ে দেবে।

_হ্যা হ্যা চল।

বাইকের হর্ন এর আওয়াজে পিছনে ফিরে তাকালো ইশা। আদৃত নিজের বাইক নিয়েই এসেছে। পূর্নর একটা ইমার্জেন্সি কল আসায় ও বাইরে দাঁড়িয়েই পিছনে ফিরে ফোনে কথা বলছে।
বাইক থেকে নেমে নিজের হেলমেটটা খুললো আদৃত। আদৃত কে দেখেই খানিকটা ভয় পেলো ইশা,ফাইজা এতক্ষনে কিছুটা দূরেও চলে গেছে। ইশাও সেদিকে যেতে নিবে তখন ই পিছন থেকে আদৃত তাকে আদৃতের ডাকে থেকে যায় সে। আদৃত তার পিছনে এসে বলে,
_এই মেয়ে আমি তোমাকে দাঁড়াতে বললাম না,তারপর ও..

_কিরে ইশা থেমে গেলি কেন চল…
পিছন থেকে ফাইজা এসে ইশার হাত ধরে বলল কথাটা। আদৃত এর এবার চোখ পড়ে ফাইজার উপর, তাকে চিনতে খুব বেশি সময় লাগেনি আদৃত এর। অস্ফূটস্বরে তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,
_ফাইজা!

ঠিক সেই মুহূর্তেই পূর্নও সেখানে উপস্থিত হয়। ফাইজার দিকে না তাকিয়েই বলে,
_হ্যা আদি চল এবার..
কথাটা বলতেই তার নজর যায় ফাইজার দিকে।

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১০
#মেহরিন_রিম
একদৃষ্টিতে পূর্নর দিকে তাকিয়ে আছে ফাইজা। এতগুলো দিন পড়ে যে আবারো পূর্নর সাথে দেখা হয়ে যাবে এটা কখনো ভাবতেও পারেনি সে, আগে জানলে হয়তো এখানে আসতোই না। সবকিছু থেকে তো দূড়ে সরে গিয়েছিল ফাইজা, ভুলতে না পারলেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে পূর্নকে ভুলে থাকার।

চোখে অশ্রুরা এসে ভিড় জমাতে লাগলো,তবে ফাইজা সেটা কাউকে বুঝতে দিতে চাইলো না। অন্যদিকে ঘুড়ে কাপাকাপা গলায় বলল,
_ই ইশা তুই আয়,আমি যাচ্ছি।

কথাটা বলেই সেখান থেকে পালিয়ে গেলো ফাইজা। এমন আকষ্মিক ঘটনার ঘটনার জন্য পূর্নও প্রস্তুত ছিলোনা। এখানে আসার জন্য মনে মনে নিজেকেই দুষতে লাগলো সে, তবে পূর্নই বা কি করে জানবে এখানে ফাইজার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে।

পূর্ন একনজর আদৃতের দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে নেবে তখন ই সেখানে সায়ান উপস্থিত হয়। আদৃত আর পূর্নকে দেখে বলে,
_তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন এখানে? ভিতরে চল।

আদৃত ইশার দিকে একবার তাকিয়ে আবার সায়ান এর দিকে তাকিয়ে বলল,
_হ হ্যা আসছি আমি,তোরা যা।

_আচ্ছা আয়, পূর্ন তুইতো চল।

পূর্ন আমতা আমতা করে বলল,
_না আসলে আমার কিছু কাজ…

_কাজ পড়ে করবি এখন চলতো।

কথাটা বলেই পূর্নকে নিয়ে ভিতরে চলে যায় সায়ান।

_ডাকলেন কেন আমাকে? কিছু বলবেন? দেখুন আমার অনেক কাজ আছে যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন।

ইশার ডাকে ধ্যান ভাঙলো আদৃত এর। আসলে যে কেন ইশাকে ডেকেছিল তা সে নিজেই জানে না। আদৃত কে চুপ থাকতে দেখে ইশা বিরক্ত হয়ে বলল,
_কিছু না বলার হলে আমি গেলাম।

কথাটা বলেই সেখান থেকে চলে যেতে নেয় ইশা। আদৃত তখনি পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলে,
_এই মেয়ে দাড়াও..

ইশা কোমড়ে হাত দিয়ে পিছনে তাকিয়ে বিরক্তির সুরে বললো,
_আবার কি হলো? আর শুনুন,আমার একটা সুইট নাম আছে।

_আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু একটা কথা বলতো, একটু আগে যেই মেয়েটা তোমার সাথে ছিল ও তোমার কি হয়?

_ওহ ফাইজা আপু? আমার চাচাতো বোন হয়। কিন্তু আপনি জিজ্ঞেস করছেন কেন?

আদৃত কিছুটা আমতা আমতা করে বলে,
_তেমন কিছুনা, আচ্ছা তুই যাও।

ইশা ভেংচি কেটে চলে গেলো সেখান থেকে। ফাইজা আদৃত কে না চিনলেও আদৃত ফাইজা কে খুব ভালো করেই চেনে। এভাবে হুট করে ফাইজা কে দেখে আদৃত নিজেও বেশ অবাক হয়েছে।

_আদৃত,তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? অনুষ্ঠান একটু পড়েই শুরু হয়ে যাবে,তুমি ভিতরে চলো।

স্যার এর ডাকে নিজের চিন্তা থেকে বেড়িয়ে আসে আদৃত। সামান্য হেসে স্যার এর সাথে ভিতরে যায় সে। মনে মনে ভাবে,
_প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার আগে পূর্নর সাথে একবার কথা বলতেই হবে।

____
_আপু,কিছু হয়েছে? তুমি এভাবে চলে এলে যে।

ইশার ডাকে চমকে ওঠে ফাইজা। হাত দিয়ে চোখ মুছে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে সে। ইশার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলে,
_আরে না,আমার আবার কি হবে।

_কিন্তু তোমার চোখমুখ এমন লাগছে কেন? কেমন লাল হয়ে আছে চোখদুটো।

_কোথায়? আমিতো ঠিক ই আছি। তুইতো জানিস ই আমার কেমন এলার্জির প্রবলেন,তাই হয়তো এমন লাগছে। বাদ দে এসব,তোর না দেড়ি হয়ে যাচ্ছে? আয় তোকে সাজিয়ে দেই।

ফাইজা কথাবার্তা অন্যরকম মনে হলেও ইশা তার কথাই বিশ্বাস করে নিলো। এমনিতেও অনেক দেড়ি হয়ে গেছে, তাই ভদ্র মেয়ের মতো বসে পড়লো ইশা। আর ফাইজাও নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে ইশাকে সাজিয়ে দিতে লাগলো।

___
_এমন কাজ করলি কেন যার জন্য এখন পালিয়ে যেতে হচ্ছে?

স্টেজ এর পাশে এসে টিচার দের সাথে দেখা করেই কলেজ থেকে বেরিয়ে যেতে নিয়েছিল পূর্ন। ঠিক সেই মুহূর্তেই আদৃত তাকে আটকে দিয়ে এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেয় তার দিকে। পূর্ন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
_আমি পালিয়ে যাচ্ছিনা আদি। আমি শুধু একটা অস্বস্তিকর সিচুয়েশন এ পড়তে চাইছিনা। ফাইজার সামনে আসাটা আমার এবং ওর দুজনের জন্যই অস্বস্তিজনক। আর আমি কি করেছি আর কেন করেছি সবটা তুই খুব ভালো করেই জানিস। তারপর ও…

_হ্যা আমি জানি,কিন্তু এই বিষয়ে আমি কখনই তোকে সাপোর্ট করিনি আর করবো ও না। যেই ব্যাবহার টা তুই ফাইজার সাথে করেছিস,এটা ও কোনোভাবেই ডিজার্ভ করেনা।

_দেখ আদি, যা হয়ে গেছে সবটাই পাস্ট। ওর লাইফ ও এতদিনে অনেকটা বদলে গেছে নিশ্চই।

_বাট আই থিংক, তোর ওকে অন্তত একবার সরি বলা উচিৎ।

_আদি তুই কি দাঁড়িয়েই থাকবি নাকি স্টেজ এও যাবি? সবাই ওয়েট করছে তোর জন্য।

পূর্ন কিছু বলতে যাবে তার আগেই সায়ান এসে পড়ায় আর কিছু বলতে পারেনা সে। আদৃত যেতে যেতে আরো একবার পূর্নর কাছে এসে বলে,
_ইটস মাই ওপিনিয়ন, বাকিটা তোর ইচ্ছে।

পূর্ণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো আদৃত এর কথাগুলো। আদৃত ভুল কথা বলেনি, ফাইজার সাথে করা ব্যাবহারের জন্য পূর্ন নিজেও অনুতপ্ত। তবে এছাড়া যে ফাইজার থেকে দূড়ে সরে যাওয়ার আর কোনো উপায় ছিলোনা তার কাছে। সত্যি ই একবার সরি বলা উচিৎ?

____
_ভারি মিষ্টি লাগছে আমার বোনটাকে,কারোর নজর না লাগে যেন।

ইশার সামনে নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে কথাটা বলল ফাইজা। ইশা কিছু বলবে তখন ই আরেকজন মেয়ে এসে বলে,
_আর কতক্ষন লাগবে তোর ইশা?

_এইতো এক্ষুনি আসছি তুই যা।
ইশা তাড়াতাড়ি যেতে নেবে তখন ই ফাইজা বলে ওঠে,
_শোন ইশা,আমার না শরীরটা ভালো লাগছে না। আমি বরং বাসায় চলে যাই,তুই প্রোগ্রাম শেষ করে আসিস।

_ওমা এ কেমন কথা,আমি পারফর্ম করবো আর তুমি বলছো আগেই চলে যাবে! একদম না।

ফাইজা বুঝতে পারলো ইশাকে বলে কোনো লাভ নেই। তাই বাধ্য হয়ে মুচকি হেসে বলল,
_আচ্ছা ঠিক আছে। তোর না দেড়ি হয়ে যাচ্ছে, তুই যা জলদি। আমি আসছি।

_ওকে..
কথাটা বলেই স্টেজ এর পিছনের দিকে যেতে লাগলো ইশা। ফাইজা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখেমুখে পানি দেওয়ার জন্য ওয়াশরুম এর দিকে চলে গেলো।

____
গান গাওয়া শেষে স্টেজ থেকে নামার পড়েই অনেকজন মিলে ঘিরে ধরেছিল আদৃত কে। বহু কষ্টে তাদের মাঝ থেকে বেড়িয়েছে আদৃত।
এখানে থাকার আর কোনো ইচ্ছেও নেই আদৃত এর। তাই বড়বড় পা ফেলে চলে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলো আদৃত। তবে হঠাৎ করেই পা দুটো থেমে গেলো আদৃতের। কানে বাজতে লাগলো মেয়ের কণ্ঠে গান,

“আমার চোখে তো সকলই শোভন
সকলই নবীন, সকলই বিমল
আমার চোখে তো সকলই শোভন
সকলই নবীন, সকলই বিমল
সুনীল আকাশ, শ্যামল কানন
বিশদ জোছনা, কুসুম কোমল
সকলই আমার মতো

তারা কেবলই হাসে, কেবলই গায়
হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়
কেবলই হাসে, কেবলই গায়
হাসিয়া খেলিয়া মরিতে চায়
না জানে বেদন, না জানে রোদন
না জানে সাধের যাতনা যত”

এতক্ষনে সেই কণ্ঠের খোজ করতে স্টেজ এর সামনে চলে এসেছে আদৃত। তবে সেখানে ইশাকে গান গাইতে দেখে আরো বেশি অবাক হয় সে।

_আরে আদৃত তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো এখানে।

নিজের অজান্তেই চেয়ারে বসলো আদৃত। এই কণ্ঠ যেন তাকে আটকে রাখছে। কেন হচ্ছে এমন? নিজেকে প্রশ্ন করতে চাইলো আদৃত, তবে আপাতত সেই উত্তর খুজতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লোনা । একদৃষ্টিতে ইশার কাজল কলো চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো সে।

#চলবে

তুমিময় প্রাপ্তি পর্ব-৭+৮

0

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৭
#মেহরিন_রিম
_তুই সিওর পূর্ণ আসবে? দেখ ও কিন্তু আমার সঙ্গে কোন যোগাযোগ করেনি।

ড্রাইভ করার মাঝেই সামনের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল আদৃত। সায়ান ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আদৃত এর দিকে তাকিয়ে বলল,
_১১০% সিওর, ও যখন একবার বলেছে আসবে তখন আসবেই।

আদৃত আর কিছু না বলে ড্রাইভ করায় মনোযোগ দিলো। আদৃত,সায়ান,পূর্ণ তিনজনই কলেজ ফ্রেন্ড। পূর্ণ ওদের থেকে এক বছরের সিনিয়র হলেও তাদের আচরণে কেউ সেটা বুঝতে পারবে না।
আদৃত ভার্সিটি লাইফ থেকেই গানবাজনা করছে,অনার্স শেষ করার পর বাবার বিজনেস এও জয়েন্ট করে। সায়ানের চাকড়ি করাটা কখনই পছন্দ ছিল না তাই সে বাড়িতে থেকেই ফ্রিল্যান্সিং করে।
ছোটবেলা থেকে পূর্নর ইচ্ছে ডিটেকটিভ হওয়ার, সেই কাজই করছে সে। নিজের পরিচয় লুকিয়ে রাখার জন্যই মাঝে মধ্যে তাকে বিভিন্ন জায়গায় চলে যেতে হয়, যা সে এবং তার এসিস্টেন্টরা ছাড়া আর কেউ জানেনা বললেই চলে। এমনই আজ সে কোন দেশ থেকে আসছে সেটাও জানা নেই কারো।

এয়ারপোর্ট এ এসে অপেক্ষা করছে আদৃত,সায়ান। আদৃত এর একটা কল আসায় সে উল্টো দিকে ঘুড়ে ফোনে কথা বলতে লাগলো। আর সায়ান বরাবরের মতোই ফোনের মাঝে ডুবে রইলো। ইদানিং তাকে একটু বেশি ই ফোনের সাথে দেখা যাচ্ছে, বিষয়টা নিয়ে খুব বেশি ভাবেনি আদৃত।

_মুঝে ওয়েলকাম নেহি কারোগে কেয়া?

পূর্ণর কণ্ঠস্বর শুনে সায়ান দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। আদৃত ফোন কেটে দিয়ে পূর্নর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। পূর্ন ও সায়ানকে জড়িয়ে ধরে আদৃত এর দিকে তাকায়। তারপর নিজে থেকে গিয়ে আদৃত কে জড়িয়ে ধরে বলে,
_হোয়াটস আপ ব্রো?

_তুই বল।

পূর্ন আদৃত এর কাধে হাত রেখে বলে,
_চলছে বেশ ভালোই।

সায়ান এবার পূর্নর সামনে এসে ভ্রু নাচিয়ে বলে,
_তা মামা, কোন কোন দেশে ঘুরলা? নিশ্চই অনেক ধরনের মেয়ে দেখছোস, বল এবার তোর বিয়া খাইতাছি কবে?

পূর্ন একনজর আদৃত এর দিকে তাকিয়ে দেখলো সেও তার দিকে তাকিয়ে আছে। পূর্ন কিছু বললো না, আদৃত দুজনের উদ্দেশ্যে বললো,
_কথা পড়ে হবে,আগে বাসায় চল।
পূর্নর দিকে তাকিয়ে বলল,
_কী?তুই আমার সাথে যাবি তো?

_হ্যা আজকে এখানেই থাকবো, কাল একবার বাড়িতে গিয়ে আব্বু আম্মুর সাথে দেখা করে আসবো।

সবাই এবার গাড়িতে গিয়ে বসলো। সায়ান মনের আনন্দে একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো,এতদিন পর বন্ধুকে পেয়েছে।
সায়ান বরাবরেই অনেক হাসিখুশি মানুষ,বন্ধুমহল সে একাই মাতিয়ে রাখতে পারে। তবে পূর্ন আর আদৃত এর মধ্যে কিছুটা মিল রয়েছে, কেউই খুব বেশি কথা বলেনা।

____
_এই শাড়ি পড়ে নাচতে গিয়ে যদি আমি পড়ে যাই? পড়ে গিয়ে যদি আমার পা ভেঙে যায়? তারপর যদি আমাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়? আমি যদি কোনো পড়াশোনা না করতে পারি? তখন কিভাবে পরীক্ষা দিবো বলতো!

অতি চিন্তিত সুরে কথাটা বললো ইশা। ফাইজা মুচকি হেসে তার সামনে বসে বললো,
_এমনভাবে বলছিস যেন আগে কখনো শাড়ি পড়ে নাচ করিস নি তুই?

_ব্যাপার টা তেমন না। আসলে আমি অলওয়েজ একটু অ্যাডভানস চিন্তা করি তো তাই আরকি।

ইশার কথায় সে নিজে এবং ফাইজা দুজনেই হাসতে লাগলো। এমন সময় নিচ থেকে রুকসানা পারভিন রাগী সুরে বললেন,
_তোরা কী সারাদিন ছাঁদেই থাকবি? তাহলে আমি আর কাল থেকে নাস্তাই বানাবো না।

_এইরে ইশা,ছোট আম্মু সেই খেপেছে।

_চলো চলো নিচে যাই।

কথাটা বলেই ফাইজা আর ইশা দ্রুত নিচে চলে যায়। ফাইজা রুকসানার এমন আকস্মিক রাগের কারণ বুঝতে না পেরে তার কাছে গিয়ে বলে,
_কি হলো বলতো ছোট আম্মু? ছোট আব্বু কি আবারো আসার ডেট পিছিয়েছে নাকি?

রুকসানা হাতের চামচ টা ঠাস করে টেবিলে রেখে বললেন,
_ওনার কথা একদম বলবিনা আমার সামনে। সারাজীবন খালি কাজই করে গেলেন উনি,পরিবার বলতে যে কিছু আছে ওনার এটা তো উনি ভুলেই গেছেন।

ফাইজা পিছন রুকসানার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
_আহারে,খুব মিস করছো বুঝি ছোট আব্বুকে? থাক আর করোনা,ছোট আব্বুও নিশ্চই সবাইকে মিস করছে কিন্তু কাজের প্রেশারে আসতে পারছে না। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি বরং ছোট আব্বুকে ফোন করে বলবো যতই কাজ থাকুক না কেন খুব তাড়াতাড়ি চলে আসতে। এবার খুশি?

_আর খুশি, যাক বাদ দে। তুই বল, তোর আম্মু আব্বু যএ তোর বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজছে জানিস?

ফাইজা রুকসানার গলা ছেড়ে দিয়ে অবাক চোখে তার দিকে তাকালো। রুকসানা নিজের কাজ করতে করতে বললেন,
_আমি যদিই বলেছি,এখনকার ছেলেমেয়েদের জন্য আবার পাত্র দেখতে হয় নাকি? তারা নিজেরাই পছন্দ করে আনবে, তোর তেমন কোনো পছন্দ থাকলে বলতে পারিস আমাকে। আমি তোর আম্মুকে ঠিক বুঝিয়ে নিতে পারবো।

ফাইজা এদিক ওদিক তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো,
_ন না,আমার তেমন কিছুই নেই। কিন্তু তুমি প্লিজ আম্মু আব্বুকে বলো,আমি এখন ই বিয়ে করতে চাইনা।

_আচ্ছা আচ্ছা তা নাহয় বলবো। কিন্তু…

আর কিছু বলতে পারলেন না রুকসানা,তার আগেই ফাইজা দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। রুকসানাও আর মাথা ঘামালেন না, ভাবলেন হয়তোবা লজ্জা পেয়েছে তাই পালিয়ে গেলো।

___
_ওই তুই সারাদিন ফোনের মধ্যে ঢুকে কি করছিস বল তো? দেখি তোর ফোনটা দে।
কথাটা বলে সায়ান এর হাত থেকে টান দিয়ে ফোনটা নিয়ে নিলো আদৃত। তারপর ফোনটা দেখে হা করে সায়ান এর দিকে তাকিয়ে রইলো,আদৃত কে চুপ করে থাকতে দেখে পূর্ন ওর হাত থেকে ফোনটা নিলো। এবার দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো,
_এঞ্জেল মিম..

কথাটা বলে দুজন একসঙ্গে হাসতে লাগলো। সায়ান কিছুটা লজ্জা পেয়ে ফোনটা এক টানে নিয়ে নিলো। পূর্ন হাসতে হাসতে বলল,
_তুই আর ঠিক হলিনা সায়ান। এই দিনে এসেও সেই আদিকালের জাতীয় আইডির সাথে চ্যাট করছিস? এই ব্যাটা,তুই জানোস এটা ছেলে নাকি মেয়ে?

_যাই হোক না কেনো,দুইটা মিষ্টি মিষ্টি কথা যে বলে এটাই অনেক। একটা তো গার্লফ্রেন্ড জোগাড় করে দিতে পারলিনা, বন্ধু নামের কলঙ্ক হয়ে আবার মজা নিতে আসছে হাহ।

আদৃত ব্যালকনির দিকে যেতে যেতে বলল,
_তুই থাক তোর এঞ্জেল মিম কে নিয়ে, দুই দিন পর আবার ম*রা কান্না কাঁদতে আসিস না তাহলেই হবে।

আদৃত ব্যালকনি তে যাওয়ার পর পূর্ন দু হাতে দুটো কফির মগ নিয়ে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আদৃত মগটা হাতে নিতেই পূর্ন জিজ্ঞেস করে,
_তা মিস্টার আদৃত মেহরাজ, বিয়ে করছেন না কেন? এত মেয়ে যে আপনার অপেক্ষায় বসে আছে।

আদৃত বিরক্তিসূচক চোখে তাকিয়ে কফিতে সিপ দিয়ে বললো,
_তুই আবার কবে থেকে সায়ান এর মতো প্রশ্ন করা শুরু করলি?

পূর্ন সামান্য হাসলো। আদৃত পূর্নর দিকে তাকিয়ে বললো,
_তুই বিয়ে করছিস না কেন?

_উম,পছন্দ হচ্ছে না।

আদৃত পূর্নর দিকে ঘুরে বলল,
_পছন্দ হচ্ছে না নাকি পছন্দ করতে চাচ্ছিস না?

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৮
#মেহরিন_রিম

_জানি উত্তর দিবিনা। সত্যি করে একটা কথা বল তো, ফাইজা কে তুই ভালোবাসিস না?

পূর্ন কেবলই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আদৃত তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পূর্ন বলে উঠলো,
_বাস্তবতা এত সহজ নয় আদি।

_কিন্তু তুইতো আরো বেশি কঠিন বানিয়েছিস। মেয়েটা তো কোন ভুল করেনি, তুই ওকে এতটা কষ্ট না দিলেও পারতি।

পূর্ন আদৃত এর দিকে তাকিয়ে ওর কাধে হাত দিয়ে সামান্য হেসে বলল,
_ভালোর জন্য হলেও মাঝেমধ্যে কাউকে কষ্ট দিতে হয়। নিজে কখনো কাউকে মন থেকে ভালোবাসলে ব্যাপারটা বুঝতে পারবি।

কথাটা বলেই পূর্ন ঘরে চলে গেল। আদৃত পূর্নর বলা কথাগুলো নিয়ে ভাবতে লাগলো। হঠাৎ করেই যেন সকালের সেই মেয়েটার কথা মাথায় এলো আদৃত এর। নিজের উপর বিরক্ত হয়ে মনে মনে বলল,
_কি হচ্ছে আমার সঙ্গে এসব? কেন বারবার সেই মেয়েটার কথা মনে পড়ছে আমার?

কফির মগটা পাশে রেখে পকেট থেকে সিগারেট এর প্যাকেট টা বের করলো আদৃত। সিগারেট এর ধোঁয়া ছাড়তেই তার অবাধ্য মনে আবারো চিন্তা এলো,
_মেয়েটা কি রোজ ছাঁদে আসে?

____
দীর্ঘ ত্রিশ মিনিট যাবৎ দুরবিন নিয়ে ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে আদৃত। কোন বাড়ির ছাঁদে যে মেয়েটাকে দেখেছিল তাও ঠিক মনে করতে পারছেনা। তাই একই দিকে নজর রাখছে, যদি সেই মেয়েটি আসে। নিজের এরূপ কাজে আদৃত ভীষণ বিরক্ত হচ্ছে, একটা মেয়েকে দেখার জন্য তার মন এতটা উতলা হয়ে উঠছে কেন? বারবার নিজেকে আটকানো চেষ্টা করেও পারছে না, যেখানে মেয়েটার মুখ অবধি দেখেনি সে।

আরো দশ মিনিট পার হয়ে যাওয়ার পর আদৃত বুঝতে পারে হয়তোবা আজ আর মেয়েটি আসবেনা ছাঁদে। অত:পর মেয়েটির দেখা না পেয়েই নিজের ফ্লাটে চলে আসে সে।

পূর্ন সকাল সকাল ই গ্রামে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেছে,আর সায়ান ও নিজের বাড়িতে চলে গেছে। আদৃত এর বাসায় যে মহিলা কাজ করে তিনিও চলে এসেছেন, আদৃত ঢাকাতে আসার পর থেকেই তিনি এখানে কাজ করছেন। আদৃত তার কাছে ফ্লাটের চাবিও দিয়ে রেখেছে, কেননা অনেক সময়ই আদৃত বাসায় থাকে না। আন্টি নিজের মতো এসে সব কাজ করে দিয়ে যায়।

আদৃত ফ্লাটে এসে আগে শাওয়ার নিয়ে নেয়। তারপর রেডি হয়ে অফিস এ যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।

___
_কতবার বলবো আম্মু, আমার ডিম খেতে ভালো লাগেনা।
ডাইনিং টেবিলে বসে মুখ ফুলিয়ে কথাটা বলল ইশা। রুকসানা পারভিন খুন্তি হাতে নিয়ে তার সামনে এসে বললেন,
_একদম বাচ্চাদের মতো খাওয়া নিয়ে টালবাহানা করবিনা ইশা।

ইশা ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,
_তুমি কি চাও আমি ডিম খেয়ে পরীক্ষায় ও ডিম নিয়ে আসি?

_পড়াশোনা না করলে এমনিতেও ডিম ই পাবি। এখন চুপচাপ খেয়ে নে,নাহলে…

_রাগ করো কেন,খাচ্ছি তো আমি…

কথাটা বলেই মুখ গোমড়া করে খেতে লাগলো ইশা। খাওয়া শেষে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
_আম্মু,ফাইজা আপু চলে গেছে?

_হ্যা,ওর নাকি ভার্সিটি তে কাজ আছে তাই চলে গেলো।

_আচ্ছা ঠিক আছে।
কথাটা বলে নিজের ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে কোচিং এ যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো ইশা।

দুপুর ১২ টা বাজে-
ইশা পড়া শেষ করে একা একাই বাড়ি ফিরছে। মোহনার একটু শরীর খারাপ থাকায় সে আসতে পারেনি আজকে, তাই একা একাই যেতে হচ্ছে ইশাকে। বাড়ির কাছাকাছি রাস্তা দিয়ে যেতে যেতেই ইশার চোখ পড়লো পাশের আশ্রমের দিকে। আশ্রমের দিকে তাকাতেই সেদিনের সেই মহিলাকে দেখতে পেলো সে। ইশা ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা টেনে সেদিকে পা বাড়ালো।

_হাই আন্টিমনি,কেমন আছো?

আশ্রমের উঠোন ঝাড়ু দিচ্ছিলেন আয়শা। ইশার ডাকে তার দিকে তাকালেন তিনি, কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর চিনতে পাড়লেন ইশাকে। ঝাড়ুটা পাশে রেখে মুচকি হেসে ইশার কাছে গিয়ে বললেন,
_আরে মা তুমি? আমি ভালো আছি,তুমি কেমন আছো?

_আমি অলওয়েজ ভালো থাকি। বসতে বলবে না?

আয়শা ইশার দিকে একটা চেয়ার টেনে দিলেন। নিজেও একটা চেয়ার এনে বসলেন তার পাশে।

ইশা চেয়ারে বসে চারদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। তারপর আয়শার দিকে তাকিয়ে বলল,
_এখানে তো অনেক বয়স্ক লোকজন থাকে, তাহলে তুমি এখানে থাকছো কেন?

আয়শা নিজের চশমাটা টেনে বললেন,
_আমি এখানে টুকটাক কাজ করি,সেই সূত্রেই থাকতে পারি এখানে।

_তোমার বাড়ির লোকজন?

_আমার বাড়ি? হাসালে মা, বাড়ি থাকলে বুঝি এখানে থাকতাম আমি!

_তোমার কোনো ছেলে মেয়েও নেই বুঝি?

আয়শা খানিকটা হকচকিয়ে উঠলেন। আশেপাশে তাকিয়ে নজর লুকিয়ে ধীর কণ্ঠে বললেন,
_ন না নেই।

ইশার খুব খারাপ লাগলো আয়শার জন্য। আয়শা ইশার দিকে তাকিয়ে বললেন,
_তোমার নামটাই তো জানা হলোনা মা।

_হ্যা তাইতো, আমার নাম ইসরাত আনজুম ইশা। সবাই ইশা বলেই ডাকে।

_ভারি মিষ্টি নাম তোমার।

হঠাৎ কেউ একজন আয়শাকে ডাক দিতেই আয়শা ইশার দিকে তাকিয়ে বলল,
_আমার আজ একটু কাজ আছে মা, অন্য একদিন এসো তুমি হ্যা।

_ঠিক আছে আন্টিমনি,অবশ্যই আসবো।

আয়শা ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ভিতরে চলে গেলো। ইশাও নিজের ব্যাগ নিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।

____

টেবিলের উপর হাত রেখে মাথা চেপে ধরে বসে আছে আদৃত। তার সামনে অনেকগুলো ফাইল এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা আছে। কিছুতেই কাজে কনসেন্ট্রেট করতে পারছে না আদৃত,বারবার সেই মেয়েটার নাচের দৃশ্যই চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ফোনে কল আসতেই চিন্তা ভঙ্গ হয় আদৃত এর,ফোনটা সবসময় ভাইব্রেশন এই রাখে সে।

ফোনটা হাতে নিতেই স্ক্রিনে ভেসে ওঠে, “মিস্টার শাহাদাত” নামটা। চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে ওঠে আদৃত এর। অনিচ্ছাকৃত ভাবেই ফোনটা রিসিভ করে সে।

_কেমন আছিস বাবা?

_হুম ভালো।

_একবার তো ফোন করে আমার খবরটাও নিতে পারিস।

_তেমন সম্পর্ক আপনার সঙ্গে আমার নেই। আপনার কিছু দরকার হলে বলুন।

_কিছু দরকার নেই আদি। তুই শুধু একবার বাড়িতে আয়। এবার ঈদে আসছিস তো তুই?

_ইচ্ছে নেই।

_এভাবে বলিস না আদি…

_একটু ব্যাস্ত আছি আমি। আর কিছু বলার আছে আপনার?

_নাহ..

হতাশ সুরে কথাটা বলে ফোনটা কেটে দিলেন শাহাদাত সাহেব। সোফায় বসে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি। নিজের অপরাধ এর শাস্তিই পাচ্ছেন তিনি, নিজের ছেলে তাকে বাবা বলে ডাকে না। এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে! নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত তিনি, অনেকবার ক্ষমাও চেয়েছেন আদৃত এর কাছে। কিন্তু আদৃত যে ছোটবেলা থেকে নিজের মায়ের মৃ*ত্যুর জন্য তাকেই দায়ী করে আসছে। শত চেষ্টা করার পরও আদৃত তাকে ক্ষমা করেনি।

চশমাটা খুলে চোখে জমে থাকা জলটুকু মুছলেন শাহাদাত সাহেব,আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার নেই তার।

#চলবে

তুমিময় প্রাপ্তি পর্ব-৪+৫+৬

0

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৪
#মেহরিন_রিম
_কি হলো? ডাকবেনা পুলিশ?
শুকনো ঢোক গিললো ইশা। এতক্ষনে সে আদৃত কে চিনতে পেড়েছে। তবুও কপট সাহস দেখিয়ে বললো,
_ক কে আপনি?

এবার হেলমেট টা খুললো আদৃত। শেষ সাহসটুকুও মিলিয়ে গেলো ইশার,সামান্য হেসে বলল,
_আ আরে আপনি!

আদৃত শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
_তোমার মতো পিচ্চি মেয়ের এতো তেজ থাকে কি করে হ্যা?

ভয়টা যেন মুহূর্তেই কেটে গেল ইশার,তার জায়গায় একরাশ রাগ এসে ভিড় জমালো। কোমড়ে হাত রেখে রাগী গলায় বলতে লাগলো,
_আপনি পিচ্চি বললেন কেন আমাকে হ্যা? আমি মোটেই পিচ্চি নই, যথেষ্ট বড় হয়েছি আমি। আর বেশি হলে সাত-আট বছরের মধ্যেই আমার পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে, তখন আমাকে আর কেউ পিচ্চি বলতে পারবেন না বুঝেছেন!

ইশার এমন কথায় বোকা বোনে চলে গেলো আদৃত। যেকোনো মেয়ে হলে হয়তো অন্য কিছু বলতো কিন্তু ইশা একেবারে সাত-আট বছর পরের কথায় চলে গেলো!
আদৃত তার এসব কথা উপেক্ষা করে বলল,
_এই মেয়ে,এত সাহস কোথা থেকে পাও তুমি? যাই হোক, মেইন কথায় আসি।

ইশা ছোটছোট চোখে তাকিয়ে বলল,
_কি কথা?

_আদৃত মেহরাজ কে অপমান করেছো তুমি, এত সহজে কি তোমায় ছেড়ে দেওয়া যায়? এর শাস্তি তো তোমায় পেতেই হবে।

ইশা শুকনো ঢোক গিলে ভীতু চোখে তাকিয়ে বলল,
_ক কী শাস্তি?

আদৃত কিছুক্ষন চিন্তা করে আবারো ইশার উদ্দেশ্যে বলল,
_তুমিই বলো,কি শাস্তি দেওয়া যায় তোমাকে?

ইশা একবার আদৃত এর মাথা থেকে পা পর্যন্ত পরখ করলো,তারপর তার হাতের দিকে তাকালো। এই হাতের একটা চ*ড় তার গালে পরলে কি হবে ভাবতে লাগলো, আবার ঐ হাত দিয়ে যদি তার হাতে একটা মোচড় দেয় তাহলে তো হাতটাই ভেঙে যাবে।

_কী হলো বলো।

আদৃত এর কথায় ধ্যান ভাঙলো ইশার। তারপর সে যা করলো তার জন্য আদৃত মোটেই প্রস্তুত ছিল না।
ইশা আচমকা চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিজের মুখের উপর দু হাত দ্বারা বাধা দেওয়ার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে দ্রুতগতিতে বলতে লাগলো,
_আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ প্লিজ প্লিজ। অপমান তো দূড়ে থাক আর কখনো মান ও করবো না আপনাকে। দেখুন আর কদিন পড়েই তো আমার পরীক্ষা, এখন যদি আপনি আমার হাতটা ভেঙে দেন তাহলে আমি কি করে পরীক্ষা দিবো বলুন। যদিও তাতে আমার কোন সমস্যা নেই,কিন্তু আমার মা-বাবার কথা তো ভাবা উচিৎ তাই না। এবারের মতো মাফ করে দিন, আমি আর কখনো আপনার ত্রিসীমানা তেও আসবোনা প্রমিস প্রমিস প্রমিস..

ইশার কাণ্ড দেখে অতি কষ্টে ঠোঁট কামড়ে নিজের হাসি আটকালো আদৃত। সে তো ভেবেছিল শুধু একটু ভয় দেখাবে,কিন্তু ইশা যে এতকিছু ভেবে নেবে সেটা আশা করেনি।
আদৃত কিছুটা গম্ভীর সূরে বলল,
_হাত সরাও..

ইশা চট করে নিজের হাতটা সরিয়ে নিলো কিন্তু চোখ এখনো বন্ধ করে রেখেছে। আদৃত কিছুটা ধমকের সুরে বলল,
_চোখ খোলার জন্য কি আলাদা ইনভিটেশন কার্ড দিতে হবে?

আদৃত এর ধমকে সাথে সাথেই চোখ খুলল ইশা। এতক্ষন নিজের হাসি আটকে রাখলেও ইশার এই ভীতু লুক দেখে এবার আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলোনা আদৃত। বেশ উচ্চস্বরেই হাসতে লাগলো সে।

আদৃতের মুখে এই হাসিটা বেশ মানিয়েছে, ইশা প্রথমবারের মতো আদৃতের দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলো। মেয়েরা যে তার উপর ক্রাশ খায়,তার জন্য পাগল হয়ে যায় এর যথেষ্ট কারণ আছে। হেয়ার স্টাইল থেকে শুরু করে গালে থাকা চাপদাড়িতে এককথায় দারুণ লাগছে তাকে। ইশা মনে মনে ভাবলো,
_লোকটা দেখতে এত্ত হ্যান্ডসাম এন্ড কিউট। কিন্তু কথাগুলো এমন করলার মতো কেন? আমাকে ভয় দেখিয়ে এখন আবার নিজেই হাসছেন। আচ্ছা আমি ওনার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছি কেন? আমিও কি ক্রাশ ট্রাশ খেয়ে গেলাম নাকি। না না এমন লোকের উপর আমি ক্রাশ খেতেই পারিনা,নো ওয়ে। ধুর,আমি কিসব ভাবছি এগুলো!
নিজের ভাবনা বাদ দিয়ে ইশা ভ্রু কুঁচকে ছোটছোট চোখে তাকিয়ে বলল,
_আপনি হাসছেন কেন?

আদৃত নিজের হাসি কিছুটা থামিয়ে বলল,
_এই তাহলে তোমার সাহস! সাহসিকতার তো স ও নেই তোমার মধ্যে।

ইশা এবার কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। আদৃত এবার কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বলল,
_কিন্তু হ্যা, প্রচুর ইন্টারটেইনমেন্ট পেলাম তোমার কাজে। সো..ফার্স্ট এন্ড লাস্ট বারের মতো তোমাকে মাফ করে দিলাম।

____
ফিল্টার থেকে পানি নিয়ে বেরিয়ে এলো মোহনা। পানি খেতে খেতেই উপরের দিকে তাকিয়ে হাটছিল সে।
সায়ানও অনেক দিন পর কলেজে আশায় হাটতে হাটতে আশপাশটা তাকিয়ে দেখছিল। মোহনাও যে উপরের দিকে তাকিয়ে হাটছিল সেটা সে খেয়াল ই করেনি।
অত:পর যা হওয়ার তাই হলো। দুজনে ধাক্কা খেয়ে একই সাথে পড়ে গেলো,সায়ান নিচে আর মোহনা তার উপরে। পানির বোতলটা খোলা থাকায় কিছুটা পানি ছিটকে সায়ান এর চুলে আর বাকিটা নিচেই পড়ে গেছে।
মোহনা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সায়ান এর দিকে। এমন একটা ফিল্মি সিন তার সঙ্গে ঘটলো,এটা তো তার ড্রিম ছিল।
অন্যদিকে সায়ান বেচারা নড়তেও পারছে না। চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো,
_ও মা গো,আমার কোমড়টা গেলো। কোন হাতির বাচ্চা আমার উপর পড়লো রে?
এতক্ষন সায়ান এর দিকে তাকিয়ে থাকলেও তার কথাটা শুনে তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালো সে। তারপর রাগী গলায় বলল,
_এই এই,আপনি কাকে হাতির বাচ্চা বললেন হ্যা?

সায়ান ধীরেধীরে কোমড় ধরে উঠে দাঁড়ালো। তারপর নিজের চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,
_তোমায় ছাড়া কাকে বলব? মানলাম আমি একটু বেশি ই হ্যান্ডসাম, তার জন্য এভাবে হুমরি খেয়ে পড়ার কি আছে?

_আইছে বড় হ্যান্ডসাম। আর আমি আপনার উপর কেন পড়তে যাবো শুনি? নিজেই তো চোখ কপালে তুলে হাটছিলেন,তার বেলায় কিছুই না!

_আচ্ছা! আমি চোখ কপালে তুলে হাটছিলাম, আর তুমি তো চোখটাই ফেলে দিয়ে হাটছিলে। আমার কোমড় টা ভেঙে গেলে কি হতো, আমায় কে বিয়ে করতো তখন।

মোহনা নিজের জামা ঝেড়ে নিয়ে পড়ে থাকা বোতল টা তুলল। তারপর বলতে লাগলো,
_আপনার মতো ছেলেকে না এমনিতেও কেও বিয়ে করবে না। আর বিয়ে হলেও যেন আমার চেয়ে তিন গুণ বেশি মোটা মেয়ের সাথে বিয়ে হয় আপনার,হুহ..

_এই মেয়ে তুমি কি অভিশাপ দিচ্ছো আমাকে!

_হ্যা হ্যা তাই দিচ্ছি,অবশ্য আপনার সাথে ফালতু কথা বলছি কেন আমি!

কথাটা বলেই সেখান থেকে পা বাড়ালো। সায়ান ওর পিছনে যেতে নিলেই কোমড়ের ব্যাথায় আর যেতে পারেনা। কোমড়ে হাত দিয়ে পাশে বলে মনে মনে বলে,
_কি ডেঞ্জারাস মেয়েরে বাবা..

___
আদৃতের কথা শুনে হাফ ছেড়ে বাঁচলো ইশা। প্রেস্টিজ গেছে তো যাক, তবুও এবারের মতো রক্ষা তো পেয়েছে। মনে মনে বলছে,
_হুহ, এমনভাবে বলছেন যেন বিরাট দয়া দেখিয়েছেন আমার উপর। যা খুশি করুক,তুই যে বেঁচে গেছিস এটাই বড় ইশা। একবার এই লোক সরে যাক এখান থেকে, আর জীবনেও ওনার সামনেই আসবোনা আমি।

_তবে হ্যা,নেক্সট টাইম এমন কিছু করলে…

আদৃতের কথার মাঝেই ইশা বাধা দিয়ে বলল,
_প্রশ্নই আসে না। আপনার সামনে আসলেই না আমি কিছু করবো। আমি তো আপনার সামনেই আসবো না তাহলে কোন ভুল করার তো সম্ভাবনাই নেই।

_আরে আদৃত, হুয়াট আ প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ!
কন্ঠ অনুসরণ করে দুজনেই পাশে তাকালো…

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৬
#মেহরিন_রিম
_কি এমন সারপ্রাইজ দেবে তুমি যা আমাদের কাউকে বলা যায়না,হুম?
ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ইশার দিকে তাকালো নিরব। তারপর মুচকি হেসে বলল,
_সারপ্রাইজ যখন দেবো তখন ঠিক ই দেখতে পাবি।

ভেংচি কেটে বেঞ্চে বসে পড়ে ইশা। পড়ের সপ্তাহে তাদের বিদায় অনুষ্ঠান,তার জন্যই সবাই নাচ,গান,অভিনয় এর প্রাকটিস করছে। ইশা বরাবরেই নাচে পারদর্শী,তবে গানের দিক থেকেও পিছিয়ে নয় সে। যেকোন প্রোগ্রাম এ তাকে গান নাচ দুটোই করতে হয়,এবারেও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে তার ইচ্ছে নিরবের সাথে একসঙ্গে গান গাইবে। এটা ইশার কাছে অনেক বড় ব্যাপার হলেও নিরব এবং বাকিদের কাছে তেমন একটা বড় ব্যাপার নয়।

ইশার অতি চেষ্টা করেও নিরব এর ফোনটা দেখতে পারছে না,অবশেষে একটু পিছনে গিয়ে দেখতে নেবে তখনি নিরব ফোনটা সরিয়ে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
_তুই আবার জাসুসি করা কবে থেকে শুরু করলি রে ইশা? অনেক্ষন ধরে দেখছি আমার ফোনের উপর নজর তোর, চুরি টুরি করার প্লান করছিস নাকি?

_আমার বয়েই গেছে তোমার ফোন চুড়ি করতে। তোমার ফোন কি সোনা নাকি যে আমি চুড়ি করতে যাবো? আর সোনা হলেই বা কি,আমার তো ওসব গয়নার উপর কোন আকর্ষণ ই নেই। আমার জামাই না অনেক ভাগ্যবতী, না মানে ভাগ্যবান যে আমার মতো একটা বউ পাবে। কোনো সোনা গয়না কিনে দিতে হবেনা, ওর টাকাও বেঁচে যাবে। আর…

_থাম ভাই,মাফ চাই দোয়াও চাই। তোর এই স্পিকার দয়া করে অফ কর। আমি বুঝেছি তুই আমার ফোনের কিচ্ছু করবিনা।

ইশা এবার চুপ করে আবার বেঞ্চে গিয়ে বসলো। অমনি সেখানে বিভিন্ন স্টাইল এ কাঁদতে কাঁদতে মোহনা হাজির হলো। একবার টিস্যু দিয়ে চোখ মোছার প্রাকটিস করছে আবার হাত পা ছড়িয়ে কাঁদার প্রাকটিস করছে। ইশাকে ধরে কাঁদতে কাঁদতে যেই ওর গায়ের উপর পড়তে নিবে তখন ই ইশা ওকে সোজা করে দাড় করিয়ে ধমক দিয়ে বলে,
_তোর সমস্যা টা কি হ্যা,কখন থেকে দেখতেছি ম*রা কান্না
কাঁদতাছোস। এমন একটা ভাব করতেছিস যেন তোর জামাই ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে।

মোহনা নিজের নাটক বাদ দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
_তুই বুঝতে পারতেছিস না,কান্নার ও না অনেকগুলো ভ্যারিয়েশন আছে। আর আমাকে এমনভাবে কাঁদতে হবে যেন আমার উপর ছেলেরা ক্রাশ খেয়ে যায়, আর আমার কাছে এসে চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে,”প্লিজ মেহু,ডোন্ট ক্রাই”।

মোহনার কথা শুনে রুমে থাকা সবাই হো হো করে হাসতে লাগলো। মোহনা আর ইশা থাকা মানে সেই জায়গাটা কমেডি দিয়েই ভর্তি থাকবে। ইশা একবার নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
_আমি এখন আসি হ্যা,আম্মু আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে বলেছে। মোহনা তুইতো তোর আন্টির বাসায় যাবি তাই না, তাহলে আমি একাই গেলাম টাটা গাইস…

কথাটা বলেই ইশা বেরিয়ে এলো ক্লাসরুম থেকে। তার বাসা এখান থেকে বেশি দূড়ে না,তাই একা যেতে কোনো সমস্যা হয়না তার।

ইশা বেশ খানিকটা রাস্তা পার করে এসেছে,আর কিছুদূর গেলেই তার বাড়ি। ইশা রাস্তার একপাশ দিয়ে হাটতে হাটতে অপর পাশে চোখ পড়তেই দেখলো একজন মহিলা রাস্তা পাড় হওয়ার চেষ্টা করছেন, প্রায় অর্ধেক এর বেশি পথ চলেও এসেছেন তিনি। এমন সময় পাশ থেকে দ্রুতগতিতে একটি বাইক আসতে দেখে সেই মহিলা খানিকটা ঘাবড়ে গিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে পরে। ইশা তার অবস্থা বুঝতে পেরে তার হাত ধরে টান দিয়ে রাস্তার পাশে নিয়ে আসে। বাইকটা সেই জায়গায় আসার পড়েই বাইকে থাকা লোকটা খানিকটা ধমকের সুরে বলে,
_দেখে রাস্তা পাড় হতে পারেননা? এখন কিছু একটা হয়ে গেলে তো দোষ আমার ই হতো।

কথাটা বলেই লোকটা বাইক নিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। ইশা বুঝতে পারে সেই মহিলা বেশ ভয় পেয়ে আছে। তাই সে খানিকটা নরম সুরে বলে,
_একটু দেখে চলবে তো,এখনি কত বড় দূর্ঘটনা ঘটে যেতো বলো তো।

সেই মহিলা ইশার দিকে এক নজর তাকায় তবে কিছু বলতে পারেনা। ইশা নিজের ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে তার সামনে দিয়ে বলে,
_পানিটা খাও, এত অস্থির হচ্ছো কেন হুম? কিছু হয়নি তো নাকি,এটাই অনেক। নাও খাও..

মহিলাটি ইশার হাত থেকে বোতলটা নিয়ে কিছুটা পানি খেলো, এবার সে কিছুটা শান্ত হলো। ইশার দিকে বোতলটা এগিয়ে দিয়ে তার মাথায় হাত দিয়ে বলল,
_তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেই মা, আমার জীবন বাঁচালে তুমি।
সে এবার খানিকটা হতাশ হয়ে বলল,
_অবশ্য না বাঁচলেই বা কি হতো।

ইশা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
_এমন কথা বলছো যে? আচ্ছা বাদ দাও,তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তোমার শরীর ঠিক। তোমার বাড়ি কি এদিকেই? তাহলে বলো,আমি পৌঁছে দিচ্ছি তোমাকে।

মহিলা তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে বলল,
_আমার আবার বাড়ি,হাহ.. আমার যে কোনো বাড়ি নেই মা।

_তাহলে? তুমি থাকো কোথায়?

সেই মহিলা কিছুটা সামনে একটা আশ্রমের দিকে ইশারা করে বললে,
_ঐযে আশ্রম টা দেখছো, আপাতত ওটাই আমার বাড়ি।

ইশা মহিলার দিকে লক্ষ্য করে দেখলো তার বয়স খুব একটা বেশি নয়। ইশা কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে যাবে তখন ই তার মনে পড়ে বাড়ি যেতে অনেকটা দেড়ি হয়ে যাচ্ছে,আরো দেড়ি করলে নিশ্চই একগাদা বকা শুনতে হবে।
ইশা মহিলার দু কাঁধে হাত রেখে বলল,
_তোমার সাথে আমি অন্য একদিন কথা বলতে আসবো হ্যা। বড্ড দেড়ি হয়ে গেছে,আজ বরং আমি আসি আন্টিমনি টাটা টাটা।

কথাটা বলেই বড় বড় পা ফেলে বাড়ির দিকে চলে গেলো ইশা।

____
সকাল বেলা জিম থেকে ফিরে এসে নিজের ব্রেকফাস্ট সেরে নিলো আদৃত। বেডরুম এ এসে বারান্দার দিকে তাকাতেই বাহিরের মিষ্টি রোদ চোখে এসে পড়লো তার। অত:পর নিজের ফোন আর দুরবিন টা নিয়ে ছাদে চলে এলো সে। ছাদের উপর থেকে আশেপাশের অনেক সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যায়। বারোতলা ছাঁদের উপর থেকে অনেক দূড়ের এলাকাও দেখা যায়। আর ছাঁদে এলে দুরবিন দিয়ে আশেপাশের ভিউ দেখা আদৃত এর অভ্যাস।

আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। রেলিং এর পাশে দাঁড়িয়ে দুরবিন এর মাধ্যমে আকাশে উড়তে থাকা পাখিগুলোকে দেখতে লাগলো সে। এভাবেই একটা পাখিকে মার্ক করতে করতে ধীরে ধীরে একটা বাড়ির ছাঁদে চোখ পড়লো তার। খুবই সূক্ষ্মভাবে একটি মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। যদিও তার মুখ দেখা যাচ্ছে না, সম্ভবত অন্যদিকে তাকিয়ে নাচ করছে সে,পড়নে তার লাল রঙের শাড়ি। চুলগুলো উঁচু করে খোপা করা।
আদৃত একদৃষ্টিতে তাকিয়ে মেয়েটার নাচ দেখতে লাগলো, নিজের অজান্তেই মেয়েটার মুখ দেখার ভীষণ ইচ্ছে হলো তার।

_তোকে খুঁজতে খুঁজতে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি,আর তুই কিনা এখানে দাঁড়িয়ে আছিস!
ছাঁদে এসে হাপাতে হাপাতে কোমড়ে হাত দিয়ে কথাটা বলল সায়ান। সায়ান এর কথা শুনে আদৃত চোখ থেকে দুরবিন টা সরিয়ে একনজর সায়ান এর দিকে তাকালো। আবারো সেই ছাঁদের দিকে নজর দিলো সে,তবে কাউকেই দেখতে পেলো না। মুখ থেকে বিরক্তিসূচক “শিট” আওয়াজ বেড়িয়ে এলো আদৃত এর। পরক্ষণেই নিজের কাজে অবাক হলো সে। মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করলো,
_হুয়াট’স রং উইথ মি? এভাবে একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম আমি!

আদৃতকে নিজের ভাবনায় মগ্ন থাকতে দেখে সায়ান তার কাছে এসে বলল,
_কিরে ভাই, কোন দুনিয়ায় হারিয়ে গেলি?

আদৃত নিজের ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এসে দুই আঙুল দিয়ে কপালে স্লাইড করে বলল,
_তেমন কিছু না। তুই বল,সকাল সকাল এখানে? কিছু হয়েছে?

সায়ান কপালে হাত দিয়ে বলল,
_তোর কি স্মৃতিশক্তি ও কমতে শুরু করলো ভাই? আমি না তোরে কাল রাতেই বললাম পূর্নকে এয়ারপোর্ট এ রিসিভ করতে যাবো, এর মধ্যেই ভুইলা গেলি?

_আসলে হাফ ঘুমের মধ্যে দেখেছিলাম তো,তাই মনে ছিলোনা। আচ্ছা তুই নিচে গিয়ে দাঁড়া,আমি জাস্ট পাঁচ মিনিট এ আসছি।

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৬
#মেহরিন_রিম
_কি এমন সারপ্রাইজ দেবে তুমি যা আমাদের কাউকে বলা যায়না,হুম?
ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ইশার দিকে তাকালো নিরব। তারপর মুচকি হেসে বলল,
_সারপ্রাইজ যখন দেবো তখন ঠিক ই দেখতে পাবি।

ভেংচি কেটে বেঞ্চে বসে পড়ে ইশা। পড়ের সপ্তাহে তাদের বিদায় অনুষ্ঠান,তার জন্যই সবাই নাচ,গান,অভিনয় এর প্রাকটিস করছে। ইশা বরাবরেই নাচে পারদর্শী,তবে গানের দিক থেকেও পিছিয়ে নয় সে। যেকোন প্রোগ্রাম এ তাকে গান নাচ দুটোই করতে হয়,এবারেও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে তার ইচ্ছে নিরবের সাথে একসঙ্গে গান গাইবে। এটা ইশার কাছে অনেক বড় ব্যাপার হলেও নিরব এবং বাকিদের কাছে তেমন একটা বড় ব্যাপার নয়।

ইশার অতি চেষ্টা করেও নিরব এর ফোনটা দেখতে পারছে না,অবশেষে একটু পিছনে গিয়ে দেখতে নেবে তখনি নিরব ফোনটা সরিয়ে নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
_তুই আবার জাসুসি করা কবে থেকে শুরু করলি রে ইশা? অনেক্ষন ধরে দেখছি আমার ফোনের উপর নজর তোর, চুরি টুরি করার প্লান করছিস নাকি?

_আমার বয়েই গেছে তোমার ফোন চুড়ি করতে। তোমার ফোন কি সোনা নাকি যে আমি চুড়ি করতে যাবো? আর সোনা হলেই বা কি,আমার তো ওসব গয়নার উপর কোন আকর্ষণ ই নেই। আমার জামাই না অনেক ভাগ্যবতী, না মানে ভাগ্যবান যে আমার মতো একটা বউ পাবে। কোনো সোনা গয়না কিনে দিতে হবেনা, ওর টাকাও বেঁচে যাবে। আর…

_থাম ভাই,মাফ চাই দোয়াও চাই। তোর এই স্পিকার দয়া করে অফ কর। আমি বুঝেছি তুই আমার ফোনের কিচ্ছু করবিনা।

ইশা এবার চুপ করে আবার বেঞ্চে গিয়ে বসলো। অমনি সেখানে বিভিন্ন স্টাইল এ কাঁদতে কাঁদতে মোহনা হাজির হলো। একবার টিস্যু দিয়ে চোখ মোছার প্রাকটিস করছে আবার হাত পা ছড়িয়ে কাঁদার প্রাকটিস করছে। ইশাকে ধরে কাঁদতে কাঁদতে যেই ওর গায়ের উপর পড়তে নিবে তখন ই ইশা ওকে সোজা করে দাড় করিয়ে ধমক দিয়ে বলে,
_তোর সমস্যা টা কি হ্যা,কখন থেকে দেখতেছি ম*রা কান্না
কাঁদতাছোস। এমন একটা ভাব করতেছিস যেন তোর জামাই ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে।

মোহনা নিজের নাটক বাদ দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
_তুই বুঝতে পারতেছিস না,কান্নার ও না অনেকগুলো ভ্যারিয়েশন আছে। আর আমাকে এমনভাবে কাঁদতে হবে যেন আমার উপর ছেলেরা ক্রাশ খেয়ে যায়, আর আমার কাছে এসে চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে,”প্লিজ মেহু,ডোন্ট ক্রাই”।

মোহনার কথা শুনে রুমে থাকা সবাই হো হো করে হাসতে লাগলো। মোহনা আর ইশা থাকা মানে সেই জায়গাটা কমেডি দিয়েই ভর্তি থাকবে। ইশা একবার নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
_আমি এখন আসি হ্যা,আম্মু আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে বলেছে। মোহনা তুইতো তোর আন্টির বাসায় যাবি তাই না, তাহলে আমি একাই গেলাম টাটা গাইস…

কথাটা বলেই ইশা বেরিয়ে এলো ক্লাসরুম থেকে। তার বাসা এখান থেকে বেশি দূড়ে না,তাই একা যেতে কোনো সমস্যা হয়না তার।

ইশা বেশ খানিকটা রাস্তা পার করে এসেছে,আর কিছুদূর গেলেই তার বাড়ি। ইশা রাস্তার একপাশ দিয়ে হাটতে হাটতে অপর পাশে চোখ পড়তেই দেখলো একজন মহিলা রাস্তা পাড় হওয়ার চেষ্টা করছেন, প্রায় অর্ধেক এর বেশি পথ চলেও এসেছেন তিনি। এমন সময় পাশ থেকে দ্রুতগতিতে একটি বাইক আসতে দেখে সেই মহিলা খানিকটা ঘাবড়ে গিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে পরে। ইশা তার অবস্থা বুঝতে পেরে তার হাত ধরে টান দিয়ে রাস্তার পাশে নিয়ে আসে। বাইকটা সেই জায়গায় আসার পড়েই বাইকে থাকা লোকটা খানিকটা ধমকের সুরে বলে,
_দেখে রাস্তা পাড় হতে পারেননা? এখন কিছু একটা হয়ে গেলে তো দোষ আমার ই হতো।

কথাটা বলেই লোকটা বাইক নিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। ইশা বুঝতে পারে সেই মহিলা বেশ ভয় পেয়ে আছে। তাই সে খানিকটা নরম সুরে বলে,
_একটু দেখে চলবে তো,এখনি কত বড় দূর্ঘটনা ঘটে যেতো বলো তো।

সেই মহিলা ইশার দিকে এক নজর তাকায় তবে কিছু বলতে পারেনা। ইশা নিজের ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে তার সামনে দিয়ে বলে,
_পানিটা খাও, এত অস্থির হচ্ছো কেন হুম? কিছু হয়নি তো নাকি,এটাই অনেক। নাও খাও..

মহিলাটি ইশার হাত থেকে বোতলটা নিয়ে কিছুটা পানি খেলো, এবার সে কিছুটা শান্ত হলো। ইশার দিকে বোতলটা এগিয়ে দিয়ে তার মাথায় হাত দিয়ে বলল,
_তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেই মা, আমার জীবন বাঁচালে তুমি।
সে এবার খানিকটা হতাশ হয়ে বলল,
_অবশ্য না বাঁচলেই বা কি হতো।

ইশা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
_এমন কথা বলছো যে? আচ্ছা বাদ দাও,তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তোমার শরীর ঠিক। তোমার বাড়ি কি এদিকেই? তাহলে বলো,আমি পৌঁছে দিচ্ছি তোমাকে।

মহিলা তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে বলল,
_আমার আবার বাড়ি,হাহ.. আমার যে কোনো বাড়ি নেই মা।

_তাহলে? তুমি থাকো কোথায়?

সেই মহিলা কিছুটা সামনে একটা আশ্রমের দিকে ইশারা করে বললে,
_ঐযে আশ্রম টা দেখছো, আপাতত ওটাই আমার বাড়ি।

ইশা মহিলার দিকে লক্ষ্য করে দেখলো তার বয়স খুব একটা বেশি নয়। ইশা কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে যাবে তখন ই তার মনে পড়ে বাড়ি যেতে অনেকটা দেড়ি হয়ে যাচ্ছে,আরো দেড়ি করলে নিশ্চই একগাদা বকা শুনতে হবে।
ইশা মহিলার দু কাঁধে হাত রেখে বলল,
_তোমার সাথে আমি অন্য একদিন কথা বলতে আসবো হ্যা। বড্ড দেড়ি হয়ে গেছে,আজ বরং আমি আসি আন্টিমনি টাটা টাটা।

কথাটা বলেই বড় বড় পা ফেলে বাড়ির দিকে চলে গেলো ইশা।

____
সকাল বেলা জিম থেকে ফিরে এসে নিজের ব্রেকফাস্ট সেরে নিলো আদৃত। বেডরুম এ এসে বারান্দার দিকে তাকাতেই বাহিরের মিষ্টি রোদ চোখে এসে পড়লো তার। অত:পর নিজের ফোন আর দুরবিন টা নিয়ে ছাদে চলে এলো সে। ছাদের উপর থেকে আশেপাশের অনেক সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যায়। বারোতলা ছাঁদের উপর থেকে অনেক দূড়ের এলাকাও দেখা যায়। আর ছাঁদে এলে দুরবিন দিয়ে আশেপাশের ভিউ দেখা আদৃত এর অভ্যাস।

আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। রেলিং এর পাশে দাঁড়িয়ে দুরবিন এর মাধ্যমে আকাশে উড়তে থাকা পাখিগুলোকে দেখতে লাগলো সে। এভাবেই একটা পাখিকে মার্ক করতে করতে ধীরে ধীরে একটা বাড়ির ছাঁদে চোখ পড়লো তার। খুবই সূক্ষ্মভাবে একটি মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। যদিও তার মুখ দেখা যাচ্ছে না, সম্ভবত অন্যদিকে তাকিয়ে নাচ করছে সে,পড়নে তার লাল রঙের শাড়ি। চুলগুলো উঁচু করে খোপা করা।
আদৃত একদৃষ্টিতে তাকিয়ে মেয়েটার নাচ দেখতে লাগলো, নিজের অজান্তেই মেয়েটার মুখ দেখার ভীষণ ইচ্ছে হলো তার।

_তোকে খুঁজতে খুঁজতে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি,আর তুই কিনা এখানে দাঁড়িয়ে আছিস!
ছাঁদে এসে হাপাতে হাপাতে কোমড়ে হাত দিয়ে কথাটা বলল সায়ান। সায়ান এর কথা শুনে আদৃত চোখ থেকে দুরবিন টা সরিয়ে একনজর সায়ান এর দিকে তাকালো। আবারো সেই ছাঁদের দিকে নজর দিলো সে,তবে কাউকেই দেখতে পেলো না। মুখ থেকে বিরক্তিসূচক “শিট” আওয়াজ বেড়িয়ে এলো আদৃত এর। পরক্ষণেই নিজের কাজে অবাক হলো সে। মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করলো,
_হুয়াট’স রং উইথ মি? এভাবে একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম আমি!

আদৃতকে নিজের ভাবনায় মগ্ন থাকতে দেখে সায়ান তার কাছে এসে বলল,
_কিরে ভাই, কোন দুনিয়ায় হারিয়ে গেলি?

আদৃত নিজের ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এসে দুই আঙুল দিয়ে কপালে স্লাইড করে বলল,
_তেমন কিছু না। তুই বল,সকাল সকাল এখানে? কিছু হয়েছে?

সায়ান কপালে হাত দিয়ে বলল,
_তোর কি স্মৃতিশক্তি ও কমতে শুরু করলো ভাই? আমি না তোরে কাল রাতেই বললাম পূর্নকে এয়ারপোর্ট এ রিসিভ করতে যাবো, এর মধ্যেই ভুইলা গেলি?

_আসলে হাফ ঘুমের মধ্যে দেখেছিলাম তো,তাই মনে ছিলোনা। আচ্ছা তুই নিচে গিয়ে দাঁড়া,আমি জাস্ট পাঁচ মিনিট এ আসছি।

#চলবে

তুমিময় প্রাপ্তি পর্ব-২+৩

0

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২
#মেহরিন_রিম
“পনেরো বছরের বড় একজন লোকের সঙ্গে যখন বাবা জোড় করে আমার বিয়ে দিয়েছিল, সেদিন অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। তবে তার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট হয়েছিল যেদিন সেই মানুষটা বাড়িতে সতীন নিয়ে আসে। তখন আমি ছয় মাসের গর্ভবতী। বাঁচার ইচ্ছে না থাকলেও সন্তানের কথা ভেবে আমি বেঁচে ছিলাম। আমার আদি, যেদিন তুই জন্মেছিলি,তোর মুখের দিকে তাকানোর পর আমার সব কষ্ট দূর হয়ে গিয়েছিল। বেঁচে থাকার নতুন উদ্দেশ্য খুজে পেয়েছিলাম আমি। ভেবেছিলাম,আমার আর কাউকে দরকার নেই। তোকে নিয়েই আমি বাঁকি জীবনটা পার করে দিতে পারবো। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস,আমি চেয়েও তোর সঙ্গে থাকতে পারছিনা বাবা। বুঝতে পারছি, আমার হাতে আর বেশিদিন সময় নেই। তোর বাবা তোকে খুব ভালোবাসে আদি,আমি জানি উনি তোর খেয়াল রাখবে। তুই হয়তো বড় হয়ে লেখাটা পড়বি। একটা কথা মনে রাখিস,মা সবসময় তোর সাথে আছে।”

চোখ বন্ধ করে নিলো আদৃত, এই লেখা সে আগেও বহুবার পড়েছে। হাতে থাকা ডায়েরীটা খুব যত্নসহকারে ড্রয়ারে রেখে দিলো আদৃত। ডায়েরীর লেখাগুলো পড়লেই মনে হয় মা তার সামনে বসে কথাগুলো বলছে।

রুমের দিকে তাকালো আদৃত, সায়ান সোফায় বসে গেইমস খেলছে। এই ফ্লাটে যদিও আদৃত একাই থাকে, সায়ান মাঝেমধ্যে তাকে কম্পানি দিতে চলে আসে এখানে।
আদৃত আবারো আকাশের দিকে তাকালো। গান করাটা মূলত তার মায়ের জন্যই। তার মায়ের ইচ্ছে ছিলো আদৃত গান করবে, তার ইচ্ছে পূরন হলেও নিজের চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। গান বাজনা ছাড়াও আদৃত বাবার বিজনেস এর দেখাশোনা করে। লোকটার উপর তার অনেক রাগ । যদিও শাহাদাত সাহেব তার নিজের কাজের শাস্তিও পেয়েছেন। দ্বিতীয় বউ বিয়ের কয়েকবছর পর ই তাকে ছেড়ে চলে যায়, আদৃত ও আর তার সঙ্গে থাকতে চায়নি। কলেজ এ উঠেই ঢাকাতে চলে আসে সে। নিজের কাজের জন্য শাহাদাত সাহেব প্রতিনিয়ত অনুশোচনায় ভোগেন,তবে আদৃত তার সঙ্গে প্রয়োজন ব্যাতীত খুব একটা কথাও বলতে চায়না। মায়ের চলে যাওয়ার পিছনে যদিও তার বাবার হাত নেই, তবুও আদৃত এর কাছে তার বাবাকে দোষি ই মনে হয়।
বিজনেস এর কাজ সামলালেও সোশাল মিডিয়ায় এবং মানুষের কাছে সে সিঙ্গার হিসেবেই বেশি পপুলার। মেয়েরা তো একবার ওকে দেখার ড্রিম নিয়ে বসে আছে।

_আদি…জলদি আয় এদিকে
সায়ান এর কথায় ধ্যান ভাঙলো আদৃত এর। ভ্রু কুঁচকে রুমের দিকে অগ্রসর হলো সে।

____
দশ মিনিট যাবৎ দাঁত দিয়ে নখ কামড়াতে কামড়াতে ঘরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পায়চারী করে চলেছে ইশা। ফাইজা গালে হাত দিয়ে তার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছে। অবশেষে আর ধৈর্য ধরতে না পেরে নিরবতা ভাঙলো ফাইজা। বিরক্তির সুরে বলল,
_তুই কি সারারাত যাবৎ চিন্তাই করে যাবি?

ইশা নখ কামড়ানো বাদ দিয়ে এক লাফে খাটে উঠে বলল,
_একটু আইডিয়া দাওনা আপু, কিভাবে প্রপোজ করবো?

_এখন আইডিয়া দাও আপু তাইনা। একটু আগে না বললি, তুমি শুধু দেখো আমি কি করি ব্লা ব্লা..

ইশা দাঁত কেলিয়ে হেসে ফাইজার গাল টেনে দিয়ে বলল,
_আমার কথা এতো মনে রাখার কি দরকার বলতো? আমার সোনা আপু, একটু তো টিপস দাও..

ফাইজা ইশার হাত সরিয়ে দিয়ে তার মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
_সবচেয়ে বেস্ট আইডিয়া, মাথা থেকে ঐ নিরবের ভূত নামিয়ে ফেল।

ইশা মুখ ফুলিয়ে বলল,
_কেন নামাবো শুনি! ভালোবাসা কি ভুল নাকি?

ফাইজা ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
_ভুল নারে পাগলি। তোর এই বয়স আমি অনেক আগেই পার করে এসেছি, তুই যেটা কে ভালোবাসা ভাবছিস সেটা আসলে মোহ ছাড়া আর কিছুই না।

ইশা কপাল ভাজ করে বুকে হাত গুজে রাগী গলায় বলল,
_হ্যা হ্যা তুমিতো তাই বলবে। নিজে কখনো কাউকে ভালোবাসো নি তো তাই এমন কথা বলছো।

চুপ করে রইলো ফাইজা,ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসিটা নিমিষেই মিলিয়ে গেলো। প্রসঙ্গ বদলাতে জিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বলল,
_এসব কথা থাক। তবে তোর কিন্তু লোকটাকে সরি বলা উচিৎ ছিল,শুধু শুধুই তাকে কথা শোনালি।

_রাখো তো তোমার সরি, ভেবেছিলাম ওনার সঙ্গে সেলফি তুলে একটু ভাব নিবো। তা আর হলো কই, জানো কয়েকটা মেয়েকে দেখেই দৌড়ে পালালো। আই মিন বাইকে করে চলে গেলো।

_এতগুলো কথা শোনানোর পড়ে আবার তুই সেলফি ও তুলতে চেয়েছিলি? লাইক সিরিয়াসলি!

_ডোন্ট ওরি..নেক্সট টাইম দেখা হলে সরি ও বলে দেবো,আর সেলফি ও তুলে নেবো।

_হাহ,সেই স্বপ্ন নিয়েই ঘুমোও তুমি। মানুষ ওনার সাথে একবার দেখা করার জন্য কত কিছু করে। সেখানে উনি তো তোর সাথে এসে দেখা করবে তাইনা!

ইশা হামি দিয়ে বিছানা থেকে নেমে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
_কথায় লজিক আছে। কিন্তু আমার এখন প্রচুর ঘুম পেয়েছে, গুড নাইট।

কথাটা বলেই নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো ইশা। ইশার কান্ড দেখে ফাইজা মুচকি হাসলো। এইতো ফুল এনার্জি নিয়ে কথা বলছিল,আবার হঠাৎ করেই তার ঘুম পেয়ে গেল। ফাইজা মনে মনেই বলল,
_মেয়েটা আসলেই পাগল।

___
_কলেজে গিয়েছিলি নাকি আজ?

সায়ান এর প্রশ্ন শুনে খানিকটা অবাক হলো আদৃত। ভ্রু কুচকে উত্তর দিলো,
_কই না তো। কেন বল তো?

সায়ান ফোনের দিকে চোখ রেখে বললো,
_না আসলে আমাদের কলেজ এর মেয়ের সঙ্গে তোর ছবি দেখলাম তো তাই।

_আমাদের কলেজের মেয়ে মানে? দেখ যা বলবি ক্লিয়ারলি বল।

সায়ান এবার ফোনটা আদৃত এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
_তোর পাশের মেয়েটার গলায় থাকা আইডি কার্ড টা দেখ।

আদৃত ফোনটা হাতে নিতেই দেখতে পেলো মোহনার সঙ্গে আজকে তোলা ছবিটা। সে ছবিটা পোস্ট দিয়ে আদৃত কে ট্যাগ করে ক্যাপশন এ লিখেছে, “উইথ মাই ক্রাশ”
মোহনা সিভিল ড্রেস এ থাকলেও গলায় আইডি কার্ড ছিল। আদৃত সায়ান এর কথা অনুযায়ী আইডি কার্ডটা জুম করতেই বুঝতে পারলো এটা তাদেরই কলেজের আইডি কার্ড, ইন্টারে এই কলেজেই পরেছিল তারা। আদৃত আরেকটু খেয়াল করে দেখতে পেলো এটা ক্লাস টেন এর আইডি কার্ড। আদৃত ফোনটা সায়ান এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
_রাস্তায় তুলেছিল পিক। আর মেয়েটা কলেজের নয় স্কুল এর।

সায়ান ফোনটা হাতে নিয়ে আবারো গেইমস খেলায় মনোযোগ দিও। আদৃত বেড এ শুয়ে ফোনটা হাতে নিতেই তার সামনেও একই ছবি এলো। আদৃত সেটা স্ক্রোল করে নিচে যেতেই হঠাৎ তার তখনকার ঘটনা মনে পড়লো। মনে মনে ভাবলো,
_এই মেয়েটা ক্লাস টেন এ পড়ে মানে ওর বান্ধবী টাও টেন এ পড়ে। কি যেনো নাম,হুম ইশা। এইটুকু পিচ্চি মেয়ের এত তেজ! আমাকে কিনা পুলিশের ভয় দেখায়? উম হু, একে তো এত সহজে ছেড়ে দিলে চলবে না। কিন্তু ঐ মেয়েও কি একই সাথে পড়ে? কথা শুনে তো তাই মনে হলো।

আদৃতের হঠাৎ কিছু একটা মাথায় আসতেই সে উঠে বসে সায়ানকে বলে,
_এই শোন, তোর কোন কাজিন যেন এবার ক্লাস টেন এ পড়ে?

_হ্যা পড়ে,তো?

_ওকে ফোন করে জিজ্ঞেস কর, ইশা নামের কোনো মেয়ে ওদের সাথে পড়ে কিনা।

সায়ান বড়বড় চোখে আদৃতের মাথা থেকে পা পর্যন্ত একবার দেখে নিলো। তারপর অবাক হয়ে বলল,
_কেন বল তো? তুই আবার মেয়ের খোঁজ করছিস কেন?

_আরে…তোকে যা বললাম সেটা কর।

সায়ান এবার ওর কাজিন কে ফোন করে জিজ্ঞেস করলো। তারপর কলটা কেটে বলল,
_হ্যা পড়ে, কিন্তু ইশা নামের তো কত মেয়েই হতে পারে।

_বাট আই থিংক,আমি যার কথা বলেছি এটা সেই হবে।

আদৃত কিছুক্ষন চুপ থেকে বাঁকা হেসে বলল,
_কাল একবার কলেজে যেতে হবে বুঝলি।

কথাটা বলেই মনে মনে বলল,
_মিস ইশা, আদৃত মেহরাজ কে অপমান করার ফল তো তুমি পাবেই। তোমার কত তেজ এবার আমিও দেখবো।

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৩
#মেহরিন_রিম
_প্রেম জেগেছে আমার মনে বলছি আমি তাই, তোমায় আমি ভালোবাসি তোমায় আমি চাইইই…
আয়নার সামনে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে নখ কামড়াতে কামড়াতে প্রপোজ করার প্রাকটিস করছে ইশা। এবার লজ্জা পাওয়া বাদ দিয়ে ইমোশনাল লুক নিয়ে আয়নার সামনে হাটু গেড়ে বসে ড্রেসিং টেবিলে থাকা লোসন এর বোতলটা সামনে ধরে বলল,
_এই হৃদয়ে কলম দিয়ে লিখেছি এক চিঠি,
সেই চিঠিটি বলছে আজ,আমি তোমায় ভালোবাসি।..

এবার উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা ভাব নিয়ে বলল,
_আমি তোমাকে আমার জীবনে প্রবেশ করার প্রস্তাব দিচ্ছি। তুমি কি তা সাদরে গ্রহণ করবে?

না এটাও পছন্দ হলো না ইশার। মুখ ফুলিয়ে খাটে বসে একা একাই বলল,
_ধুর,একটাও ভালো হচ্ছে না। এভাবে প্রপোজ করলে তো তোর প্রেম শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে ইশা। কিন্তু আমি করবো টা কি!

কিছুক্ষন ভেবে উৎসাহিত হয়ে তুড়ি বাজিয়ে বলল,
_আইডিয়া, চিঠি লিখলেই তো হয়। তাহলে আমার মুখেও বলতে হবে না,আবার প্রপোজ ও করা হয়ে যাবে। বাহ বাহ, কি বুদ্ধি আমার। আই এম প্রাউড অফ মি ইশা..

কথাটা বলেই টেবিল থেকে নিজের সবচেয়ে পছন্দের ডায়েরী টা নিয়ে এলো ইশা। তারপর গুগল থেকে সার্চ করে একটা লাইন লিখতেই তার খুশি গায়েব হয়ে যায়। পৃষ্ঠা টা উঁচু করে চোখের সামনে ধরে বলে,
_আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম,আমার যে এত সুন্দর হাতের লেখা। এই বিশ্বসেরা হাতের লেখা দেখে তো নিরব ভাইয়া কিছু না পড়েই রিজেক্ট করে দেবে। না না, চিঠির আইডিয়া বাদ।

শেষপর্যন্ত নিজের একটাও প্ল্যান পছন্দ না হওয়ায় বিছানার উপর মনমরা হয়ে বসে পড়ে ইশা। নিরব তার থেকে প্রায় ৩ বছরের বড়,এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার এ পড়ে সে। একই কলেজে পড়ে তাড়া, সিনিয়র এর সাথে এমনিতে বেশ সখ্যতা রয়েছে ইশার। একই কলেজে পড়ায় ইশা অনেক আগে থেকেই চেনে নিরব কে। আর সেই থেকেই নিজের মনে নিরবকে নিয়ে এক অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে তার। যদিও ফাইজা বলে এগুলো মোহ,কদিন পড়েই কেটে যাবে। তবে ইশা তা মানতে নারায,তার মতে এটা একদম সত্যিকারের ভালোবাসা। ইশার ভাষায় “টুরু লাভ”।

ইশা ভীষণ মিশুক হওয়ায় সকলের মতো নিরবও তার সাথে বেশ ভালো ব্যবহার করে,তবে তার মাঝে বাড়তি কিছুই নেই। এতদিন কিছু না বললেও এখন ইশা উতলা হয়ে উঠেছে নিরব কে প্রপোজ করার জন্য, কিন্তু কিভাবে বলবে সেটাই বুঝতে পারছে না। সিরিয়াস মোমেন্ট এ হেসে ফেলার স্বভাব তার আগে থেকেই আছে, যদি প্রপোজ করতে গিয়ে হেসে ফেলে তাহলে কি হবে? এসব ভেবে বাড়বার এগোতে গিয়েও পারছে না ইশা।

_শেষ হলো আপনার প্রাকটিস?
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে প্রশ্নটা করলো ফাইজা। ইশা এক নজর ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলল,
_কেউ তো আর আমাকে হেল্প করবে না,তাহলে জিজ্ঞেস করার কি প্রয়োজন?

ফাইজা মুচকি হেসে বলল,
_আচ্ছা এখন আমার দোষ তাইনা? কাল যে চ্যালেঞ্জ করলি,তার কি হবে?

ইশা ফাইজার সামনে দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করে বলল,
_হ্যা হ্যা মনে আছে। বলেছি যখন তা আমি করেই ছাড়বো। আজ না হোক কাল,কাল না হলে পরশু..

ফাইজা দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলল,
_করিয়েন আম্মা, কিন্তু বর্তমানে ঘড়ির দিকে তাকালে ভালো হতো। স্কুলে কি যাওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি আমি চলে যাবো?

ইশা একনজর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
_আয়হায়, এত দেড়ি হয়ে গেছে। জাস্ট দশ মিনিট ওয়েট করো,আমি পনেরো মিনিট এ রেডি হয়ে আসছি।

কথাটা বলেই নিজের ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুম এ চলে গেলো ইশা। ফাইজা পিছন থেকে চেঁচিয়ে বলল,
_টাইম নেই ইশা,জলদি আসিস।

_হুম হুম…

____
_বুঝলাম তুই মেয়েটাকে শাস্তি দেওয়ার প্ল্যান করছিস। কিন্তু কি শাস্তি দিবি তুই ওকে? পিচ্চি একটা মেয়ে,একটু ভুল ই নাহয় করেছে।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজের চুল সেট করছে আদৃত। সায়ান এর কথা শুনে একবার তার দিকে তাকিয়ে হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলে,
_জানিনা..

_জানিস না মানে? দেখ আদি শুধু শুধুই ঝামেলা করিস না, ছেড়ে দে ওকে।

_এত দরদ দেখাতে হবেনা,নাহয় তোর কপালেও দুঃখ আছে।

সায়ান আর কিছু না বলে সোফায় বসে তার ফোনটা হাতে নিলো। হঠাৎ তার চোখেমুখে খুশির আভা ফুটে উঠলো। উচ্চস্বরে বলল,
_আদিইইই…

আদৃত বিরক্তিসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
_এমন মেয়েদের মতো চেঁচাচ্ছিস কেন?

_আরে মেরে ভাই, ব্যাপারটাই তো এমন।

_কি এমন ব্যাপার শুনি..

_পূর্ণ ফিরে আসছে।

আদৃত সামান্য হেসে বলল,
_হুয়াট? সিরিয়াসলি!

_ও নিজেই তো মেসেজ করেছে ” আই এম কামিং”

_আমিতো ভেবেছিলাম ও ওখানেই সেটেল হয়ে যায় কিনা। কোথায় কোথায় যে থাকে তাই তো জানা যায় না।

সায়ান উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
_কেন থাকে সেটাও তো জানিস তুই।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আদৃত। অত:পর খাটের উপর থেকে নিজের জ্যাকেটটা তুলে গায়ে জড়িয়ে নিলো সে। নিজের টেবিল থেকে নিজের সানগ্লাস টা পড়ে চাবি ঘোড়াতে ঘোড়াতে বেড়িয়ে গেলো। সায়ান ও গেইট লক করে লিফট এ উঠে পরলো।

____
স্কুল ছুটি হয়েছে কিছুক্ষন আগে। একঘণ্টা পর ব্যাচ থাকায় ইশা,মোহনা আর বাড়িতে ফেরে না। একঘণ্টা স্কুলেই থেকে গল্প করে,তারপর ব্যাচ শেষ করে একেবারে বাড়িতে যায়। ইশা,মোহনা মর্নিং শিফট এ পড়ায় তাদের ছুটি হওয়ার পর ই ডে শিফট এ কলেজ এর ক্লাস শুরু হয়। তাই এই সময়টাতে সিনিয়রদের সাথেও আড্ডা দিতে পারে।

তবে আজকে নিরব কে না দেখতে পেয়ে ইশা হাটতে হাটতে বলল,
_নিরব ভাইয়া কোথায় বল তো? আজ দেখলাম না একবারো।

মোহনা চিপস খেতে খেতে বললো,
_জুথি আপু বলছিল আজকে নাকি নিরব ভাইয়া আসবেনা কলেজে।

_কেন?

_কোনো একটা ইম্পরট্যান্ট কাজে যাবে শুনলাম।

_ওহ..

_পানি দে না দোস্ত।

ইশা নিজের ব্যাগ থেকে বোতল টা বের করে দেখলো একটুও পানি নেই তাতে। মোহনার দিকে বোতলটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
_ফিল্টার থেকে নিয়ে আয় পানি যাহ।

_আচ্ছা তুই দাঁড়া আমি আসছি।
কথাটা বলেই মোহনা পানি আনতে চলে গেলো। ইশা সেখানেই দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটতে শুরু করলো।

____
কলেজ এর সামনে বাইক পার্ক করে নেমে দাঁড়ায় সায়ান আর আদৃত। আদৃত আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো ওর দিকে অনেকেই তাকিয়ে আছে,হেলমেট টা এখনো খোলেনি সে। আদৃত বুঝতে পারলো এখানে হেলমেট খুললে তার আর ভিতরে যাওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। তাই বাইক থেকে চাবিটা খুলে হেলমেট পড়েই সে ভিতরে যেতে লাগলো।
লাকটাও হয়তো আদৃতের পক্ষেই ছিলো। গেইট দিয়ে ঢুকতেই নজর পড়ে ইশার দিকে, তার সম্পূর্ন খেয়াল ফোনের দিকে। গতকাল সিভিল ড্রেস এ যতটা পিচ্চি লাগছিল আজ স্কুল ড্রেস এ তার চেয়েও বেশি ছোট মনে হচ্ছে ইশাকে। আদৃত হেলমেট এর ভিতরেই বাঁকা হেসে পা বাড়ায় সেদিকে।

ইশা ফোনের দিকে তাকিয়ে কিছুটা সামনে এগোতে যাবে তখন ই আদৃত তার সামনে এসে দাঁড়ায়। ইশা সামনের দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে পাশ থেকে যেতে নিলে আদৃত আবারো তার সামনে চলে আসে। ইশা এবার ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকায়,তবে হেলমেট পড়া থাকায় চিনতে পারে না। ইশা এবারো কিছু না বলে পাশ থেকে যেতে নিলে আদৃত হাত বাড়িয়ে দিয়ে তার পথ আটকে দেয়।

মেজাজ টা বিগড়ে যায় ইশার। রেগে গিয়ে আদৃতের সামনে এসে কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
_কী সমস্যা ভাই? বারবার পথ আটকাচ্ছেন কেন আমার? আমি কিন্তু…

_পুলিশ ডাকবে? ডাকো…

#চলবে

তুমিময় প্রাপ্তি পর্ব-০১

0

#তুমিময়_প্রাপ্তি
#পর্ব_১ (সূচনা পর্ব)
#মেহরিন_রিম

_মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা মেয়ের গায়ে হাত তোলার সাহস কি করে হয় আপনার? আপনি জানেন,আমি চাইলে এক্ষুনি এখানে পুলিশ ডাকতে পারি।
পিঠে গিটার ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে একনাগাড়ে কথাগুলো বললো সদ্য সতেরো তে পা দেওয়া ইশা।
আদৃত সরু চোখে তাকিয়ে তার কথাগুলো শুনছিল। একবার ইশার মাথা থেকে পা পর্যন্ত পরখ করে তার দিকে কিছুটা এগোতে লাগলো।
ইশার সামনে এসে স্বাভাবিকভাবে বললো,
_ডাকো।

ইশা এতক্ষন উপরে উপরে নিজের সাহসিকতা বজায় রাখলেও এবার যেন কিছুটা ভয় পেলো। একটা শুকনো ঢোক গিললো সে, তবে এই ভয়টা প্রকাশ করলে চলবে না। ইশাকে চুপ থাকতে দেখে আদৃত আবারো বললো,
_কি হলো,ডাকো কাকে ডাকবে। আমিও দেখি তোমার কত ক্ষমতা।

ইশা এবার আদৃত এর সামনে আঙুল নাচিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা ছেলে ‘জা…ন’ বলে চিৎকার করে দৌড়ে আসে সেখানে। ইশার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার সামনে গিয়ে কাঁদোকাঁদো ভাব নিয়ে বলে,
_জান তুমি ঠিক আছো তো! জানো আমি কত ভয় পেয়ে গেছিলাম। একটু ঝগড়াই নাহয় করেছি, কিন্তু তার জন্য তুমি এমন একটা কাজ করতে যাবে!

ওদের দুজনের কথা যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে ইশার। আদৃত এর দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো সে বুকে হাত গুজে গম্ভীর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইশা এবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল,
_এই মেয়ে,এসব কি বলছো তোমরা?

মেয়েটা মাথা নিচু করে পাশে থাকা ছেলেটাকে দেখিয়ে বলল,
_আসলে ও আমার বয়ফ্রেন্ড। ওর সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল বলেই আমি রাগ করে আশেপাশের না দেখেই রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাটছিলাম। আরেকটু হলে তো গাড়িটা আমার উপর দিয়েই চলে যেতো। এই ভাইয়াই (আদৃত এর দিকে দেখিয়ে) তো আমাকে বাঁচালো। তাইতো রেগে গিয়ে একটা চ*ড় মে*রে*ছিলো। কিন্তু তুমিতো আমার কথা না শুনিয়ে ভাইয়াকে এতকিছু বলতে লাগলে।

ছেলেটা এবার আদৃত এর দিকে গিয়ে তাকে ধন্যবাদ জানালো,অত:পর মেয়েটিকে নিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। এদিকে ইশার তো মন চাচ্ছে ছুটে পালিয়ে যেতে, কেন যে নিজের সাহসিকতার পরিচয় দিতে এসেছিল। মনেমনে নিজেকেই কয়েকশত গা*লি দিচ্ছে সে। আদৃত একইভাবে দাঁড়িয়ে থেকে বলল,
_কী? ডাকবে না পুলিশ?

ইশা একটা মেকি হাসি দিয়ে আদৃত এর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
_আসলে আমি না বুঝতে পারিনি, কিছু মনে করবেন না হ্যা।
ইশা কথাটা বলতেই তার পাশে মোহনা উপস্থিত হয়। ইশার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,
_কিরে,তুই এখানে কি করছিস? আমিতো তোকে ওদিকে…
আদৃত এর দিকে চোখ পড়তেই থেমে যায় মোহনা। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে ওঠে,
_আদৃত মেহরাজ!

আদৃত অনিচ্ছাকৃত মুচকি হাসি দেয়। মোহনা এবার ভীষণ খুশি হয়ে আদৃত এর সাথে হাত মেলাতে মেলাতে বলে,
_আমি আপনার অনেক বড় ফ্যান ভাইয়া, আপনার গান যে আমার এত্ত ভালোলাগে। একটা সেলফি,প্লিজ ভাইয়া..

কথাটা বলেই আদৃত এর সাথে সেলফি তুলতে লাগল মোহনা। অন্যদিকে তাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ইশা। মনে মনে বলল,
_ইনি সেই আদৃত! তুই এনাকে চিনতে পারলি না ইশা? না না, যে করেই হোক এনার সাথে একটা সেলফি তুলতেই হবে। একটু ভাব, এই ছবি পোস্ট দিতে পারলে কত্তগুলো লাইক পড়বে…

মোহনার সেলফি তোলা শেষ হতেই ইশা আদৃত এর কাছে গিয়ে হালকা হেসে বলে,
_সো সরি, আসলে আমি না প্রচুর গান শুনি কিন্তু সিঙ্গার দের দেখা হয়না। এখন আপনি চাইলে আমি আপনার সাথে একটা সেলফি তুলতে পারি।

আদৃত ইশার কথা শুনে বোকা বোনে চলে গেলো। ভ্রু কুচকে বলল,
_হোয়াট?

ইশা এবার জিভে কামড় দিয়ে বলল,
_সরি সরি, মানে আপনার আপত্তি না থাকলে আমি কি আপনার সাথে একটা সেলফি তুলতে পারি?

কোনো উত্তর দেওয়ার আগেই আদৃত এর চোখ যায় সামনের দিকে। সেখান থেকে একদল মেয়ে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। কপালে হাত চলে যায় আদৃত এর। মুখ থেকে “শিট” উচ্চারণ করে দ্রুত নিজের হেলমেট পড়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যায় আদৃত।
ইশা পিছনে তাকাতেই দেখতে পেলো মেয়েগুলো হতাশ হয়ে আবারো ফিরে যাচ্ছে। মোহনা নিজের মাথায় হাত দিয়ে বলতে লাগলো,
_যাহ,চলে গেলো! ফোন নম্বরটাও তো নিতে পারলাম না।

_তুই ওনার ফোন নম্বর দিয়ে কি করবি!

_আরে ধুর,তুই কি কিছুই বুঝিস না নাকি? ফোন করে একটু পটাতাম ওনাকে।

_হ্যা,তোর জন্য তো উনি অঢেল সময় নিয়ে বসে আছে।

মোহনা ভেংচি কেটে বলল,
_সে নাহয় বাদ দিলাম। কিন্তু তোর ওনার সঙ্গে কি করে দেখা হলো?

ইশা নিজের হাতে থাকা ঘড়ির দিকে একনজর তাকিয়ে বলল,
_এইরে, ভীষণ দেড়ি হয়ে গেলো। চল যেতে যেতে বলছি।
কথাটা বলে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো দুজন। মোহনার বাসা ইশার বাসার কাছে হওয়ায় তারা একসাথেই যায়।

____
সবেমাত্র প্রোগ্রাম এর ভেনু তে এসে পৌঁছেছে আদৃত। তাকে দূর থেকে দেখতে পেয়েই সায়ান তার সামনে এসে বলে,
_কটা বাজে দেখেছিস? তোর মতো পাংচুয়াল মানুষের তো এত দেড়ি হওয়ার কথা নয়। কিছু হয়েছে নাকি?

আদৃত নিজের হেলমেট টা খুলতে খুলতে মুখে বিরক্তির আভা ফুটিয়ে বলল,
_আর বলিস না, একটা ইডিয়ট..
থেমে গেলো আদৃত, এখন ঐ মেয়ের কথা বললে যে বন্ধুরা তাকে ঘিরে ধরবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
_কি হলো বল।

আদৃত সায়ান এর দিকে তাকিয়ে তাড়া দিয়ে বলল,
_পড়ে বলব,এমনিতেই অনেক লেইট হয়ে গেছে।
কথাটা বলেই আদৃত ভিতরে যেতে লাগল,সায়ান ও তার পিছন পিছন স্টেজ এর দিকে গেলো।

___
বাড়ির সদর দরজা সামান্য খুলে ভিতরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করছে ইশা। দেখতে পেলো তার মা রুকসানা পারভিন রান্নাঘরে কাজ করছেন। ইশা বুকে হাত দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোরের মতো ভিতরে প্রবেশ করলো যেন তার মা টের না পায়।
কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না। রুকসানা পারভিন ইশাকে ঢুকতে দেখেই রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে বলতে লাগলেন,
_মহারাণীর এখন আসার সময় হলো? আর একটু দেড়ি করতেন। এই মেয়ের নাকি কদিন বাদে এসএসসি পরীক্ষা।

ইশা এবার রুকসানার কাছে এসে পিছন থেকে তার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
_আরে আম্মু, এত রাগ করোনা তো। বেশি রাগলে তোমার চুলগুলো এই কম বয়সেই পেকে যাবে বুঝেছো?

_আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করতে হবেনা তোর। এমনিতেও দুদিন পর তোর বিয়ে দিলে শাশুড়ি হয়ে যাবো আমি।
ইশা ফিক করে হেসে বলল,
_আমাকে তুমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতেই পারবে না।

তাদের কথার মাঝেই বাড়িতে প্রবেশ করলো ফাইজা। ইশার চাচাতো বোন সে, নিজের বাড়ি থেকে ভার্সিটি অনেক দূড়ে হওয়ায় সে এখানেই থাকে।
ফাইজা ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
_কি ব্যাপার,কার বিয়ের কথা হচ্ছে শুনি।

রুকসানা কিছু বলার আগেই ইশা গিয়ে ফাইজার হাত ধরে বলে,
_আপু ঘরে চলো তো। জানো আজকে অনেক কিছু হয়েছে।

_আরে যাবো তো..একটু দাড়া।

কোনো কথাই শুনলো না ইশা। হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে গেলো ফাইজা কে। তারপর সব ঘটনা তাকে বলতে লাগলো। সবটা শুনে ফাইজা বলল,
_হুম বুঝলাম। কিন্তু তুই ওনাকে সরি বলিস নি?

_না তো। আচ্ছা ওনার কথা বাদ দাও,এবার অন্য কথা শোনো।

_জি বলেন আম্মা..

ইশা কিছুটা সাহসিকতার প্রকাশ ঘটিয়ে বলল,
_আমি ভেবেছি,কালকে নিরব ভাইয়াকে প্রপোজটা করেই দেবো।

ফাইজা কিছুক্ষন চুপ থেকে হঠাৎ হেসে দিলো। হাসতে হাসতে বললো,
_সে তো তুই আরো কতদিন আগে থেকেই করছিস।

_হেসোনা তো আপু,আমি এবার সিরিয়াস।

_তুই মেয়ে হয়ে একটা ছেলেকে প্রপোজ করবি?

_হ্যা অবশ্যই। তুমি শুধু দেখতে থাকো,এই ইশা কি করে..

#চলবে

একগুচ্ছ ভালোবাসা পর্ব-১৫ এবং শেষ পর্ব

0

#একগুচ্ছ_ভালোবাসা
#অরনিশা_সাথী

|অন্তিম পর্ব|

টকটকে লাল এবং সাদা গোলাপের সংমিশ্রণে আঁধারের পুরো ঘরটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। সুন্দর ভাবে সাজানো সেই কক্ষটি’র বিছানার ঠিক মাঝ খানটায় বসে আছে জোনাকি। আজ থেকে আরো একজন মানুষের আনাগোনা বাড়বে এই ঘরে। যে ঘর শুধুমাত্র আঁধার রেজওয়ান এর অধীনে ছিলো, যার অনুমতি ছাড়া এই ঘরে কেউ উপস্থিত হতো না, সেই ঘরের আরো একজন মালিক আজ থেকে জোনাকি।

ঘন্টা খানেক ধরে একা এই ঘরে বসে আছে জোনাকি। সেই যে সবাই বসিয়ে রেখেছে আর কারো আসার নাম নেই। বসে থাকতে থাকতে যেন কোমড় ধরে যাচ্ছে। এদিক সেদিক তাকিয়ে দেয়াল ঘড়ি খুঁজলো। সময় দেখলো রাতের সাড়ে বারোটা বাজে। বড্ড ঘুম পাচ্ছে। চেঞ্জ করা’ও দরকার। জোনাকি উঠে দাঁড়ায়। পুরো ঘরে কোথাও ওর লাগেজটা দেখতে পাচ্ছে না। ঘরের মাঝখানে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেই মূহুর্তে খট করে দরজা খোলার শব্দ হয়। পরমূহুর্তে দরজা লাগানোর শব্দ’টাও কানে আসে। পায়ের শব্দ যতটা নিকটে এগিয়ে আসছে জোনাকির বুকের ধুকপুকানির শব্দটা ক্রমশ বাড়ছে। শাড়ি খামচে ধরলো। খুব কাছে এসে দাঁড়ায় আঁধার। জোনাকির বুকের ভেতর কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে। থমথমে গলায় প্রশ্ন আঁধারের,
–“রুমের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কি করছো?”

চকিত আঁধারের দিকে তাকায় জোনাকি। মানুষটা তুমি করে বললো ওকে? এটা কি ভুল শুনলো? উঁহু ভুল শোনেনি তো, ঠিকই তো শুনেছে মনে হলো। আঁধার ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করে,
–“ওভাবে তাকাচ্ছো কেন? ঠিকই শুনেছো, তুমি করেই বলেছি।”

জোনাকি দ্রুত দৃষ্টি সরালো। আঁধার আর একটু কাছে গিয়ে বললো,
–“আগে থেকেই ইচ্ছে ছিলো, নিজের বিয়ে করা বউ ব্যাতিত অন্য কোনো মেয়েকে তুমি করে বলবো না। আর এখন তো তুমি আমার বিয়ে করা বউ।”

–“আপুই আমার লাগেজ আনেনি? চেঞ্জ করবো আমি।”

আঁধার জোনাকির দুই বাহু ধরে বিছানায় বসিয়ে বললো,
–“তার আগে তোমাকে ভালোভাবে বউ সাজে একটু দেখি আমি?”

গলা শুকিয়ে আসছে জোনাকির। লোকটার এরকম কথাবার্তায় অভ্যস্ত না ও তাই কেমন কেমন লাগছে। তার উপর আবার লোকটা এখন ওর স্বামী। আজকে ওদের ফার্স্ট নাইট আরো নার্ভাস হয়ে আছে ও। চুপচাপ অন্যদিকে মুখ করে বসে রইলো জোনাকি। আঁধার দুই আঙুলের সাহায্যে জোনাকির থুতনি ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,
–“আঁধারের জীবনে জোনাকি হয়ে আসার তোমাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা, উঁহু #একগুচ্ছ_ভালোবাসা। এক আকাশ সম পরিমান ভালোবাসা, আমার জীবনের যত ভালোবাসা আছে সেসকল ভালোবাসা তোমার।”

লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায় জোনাকি। চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। বুক ঢিপঢিপ করছে। লোকটা এরকম কথা’ও কি বলতে পারে? আঁধার বুঝলো মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে। তাই প্রসঙ্গ পালটে বললো,
–“আলমারির ডান পাশের ডোর খুললেই ওখানে তোমার সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পেয়ে যাবে।”

জোনাকি দু দন্ড বসলো না। দ্রুত উঠে গেলো আলমারি খুলতে। আলমারি খুলেই হা হয়ে গেলো ও। আলমারির এই পার্ট মেয়েদের শাড়ি জামা দিয়ে ভর্তি। কিন্তু একটাও জোনাকির আগের জামা না। জোনাকি সরু চোখে তাকালো আঁধারের দিকে। আঁধার মুচকি হেসে উঠে আসে। বেছে বেছে কালো রঙের একটা শাড়ি জোনাকির হাতে দিয়ে বললো,
–“আজকে সন্ধ্যায়’ই সব কিনে আলমারি লোড করেছি।”

–“চুড়িদারও আছে দেখছি, মাপ জানলেন কি করে?”

আঁধার আগাগোড়া জোনাকিকে দেখে বললো,
–“তোমার যা বডি, মাপ জানা এতটাও টাফ ছিলো না আমার জন্য। চোখের অনুমান___”

জোনাকি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
–“কি?”

আঁধার মুচকি হাসলো। বললো,
–“রিল্যাক্স ম্যাডাম, জলের থেকে জেনেছি আমি।”

জোনাকি শান্ত হলো। তারপর দ্রুত চলে গেলো ফ্রেস হতে। ফ্রেস হয়ে দুজনে একসাথে নামায আদায় করে। আঁধার দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করে, সোনার লকেট সহ চেন পড়িয়ে দিয়ে বলে,
–“ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ারে একটা বক্সে গোল্ডের চিকন চুড়ি, দুটো রিং, আর সিম্পল একজোড়া দুল আছে সবসময় পড়ে থাকার জন্য। সকালে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পড়ে বের হবা।”

জোনাকি বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ে। জোনাকি আঙুলে শাড়ির আঁচল পেচাচ্ছে বারবার। ওর কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে। গভীর রাত, পুরো ঘরে ওরা দুজন ব্যাতীত অন্যকেউ নেই। তাছাড়া সম্পর্ক বদলেছে দুজনের। বস পিএ, বেয়াই বেয়ান থেকে এখন স্বামী স্ত্রী দুজনে। জোনাকি বিছানায় উঠে বসলো। খাটের যে পাশ দেয়ালের সাথে লাগানো সে পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। আঁধার ভ্রু কুঁচকে বললো,
–“শুয়ে পড়লে?”

–“আ্ আমি, না, আসলে কি করবো তাহলে? ঘুম আ্ আসছে আমার।”

আঁধার জোনাকির দিকে ঝুঁকে গিয়ে বললো,
–“তোমার কি আইডিয়া? আজকে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ার জন্য ঘরটা এভাবে সাজিয়েছে সবাই? আজকের রাতটা কি ঘুমানোর?”

জোনাকি সারা ঘরে চোখ বুলালো। গোলাপের সুঘ্রাণ এখনো নাকে এসে বারি খাচ্ছে। জোনাকি সব দিক থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে সরাসরি আঁধারের দিকে তাকালো। আঁধারের চোখ দেখেই বুক ধক করে উঠে জোনাকির। চোখের মধ্যে ব্যাকুলতা স্পষ্ট। তবুও জোনাকি আমতা আমতা করে বললো,
–“তাহলে কিসের?”

আঁধার জোনাকির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
–“জোনাকি’কে আঁধারের সম্পূর্ণ রুপে নিজের করে নেওয়ার রাত, ভালোবাসাকে ভালোবাসার রাত।”

কথাগুলো বলেই জোনাকির কপালের একপাশে গাঢ় চুমু খায় আঁধার। পবিত্র স্নিগ্ধ ভালোবাসাময় স্পর্শ পেয়ে জোনাকির হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে যায়। চোখ খুলে রাখা যেন দায় হয়ে পড়ে।

খুব ভোরবেলা নিজেকে আঁধারের বাহুডোরে ক্ষানিকটা এলোমেলো অবস্থায় দেখে লজ্জায় হাঁসফাঁস করে জোনাকি। রাতের কথা মাথায় আসতে লজ্জা যেন আরো বেড়ে যায়। দূর থেকে আজানের ধ্বনি কানে আসছে। জোনাকি আঁধারের থেকে নিজেকে ছাঁড়ালো বহু কষ্টে। গোসল সেরে একেবারে পরিপাটি হয়ে এসে আঁধারকে ডাকতে লাগলো। কয়েক ডাকেই ঘুম ভাঙে আঁধারের। জোনাকিকে একটানে নিজের বুকের উপর ফেলে কপালে চুমু খায়। তারপর গালে চুমু দিয়ে বলে,
–“এত সকালে ডাকছো কেন? আদর লাগবে?”

আঁধারের কথা শুনে লজ্জায় জোনাকির গলা দিয়ে যেন শব্দ বের হচ্ছে না কোনো। আঁধার ফের ভ্রু নাচালো। জোনাকি আমতা আমতা করে বললো,
–“জ্বি না, উঠুন। ফজরের আজান দিচ্ছে নামাজ পড়বো একসাথে।”

আঁধার আর কোনো কথা ব্যয় না করে উঠে দাঁড়ালো। জোনাকির ঠোঁটে আলতো চুমু এঁকে এগিয়ে গেলো শাওয়ার নেওয়ার জন্য। ওয়াশরুমেই ফ্রেস হওয়ার পর পড়ার জন্য টি-শার্ট টাওজার আগেই দিয়ে রেখেছে জোনাকি।

নামায আদায় করে আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে আঁধার। ডাকে জোনাকি’কেও। জোনাকি কাছে যায় না আর। বলে,
–“আপনি ঘুমান, আমি কিচেনে যাচ্ছি।”

কথাটা বলে দ্রুত দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। আঁধার সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। মেয়েটা পালালো ওর থেকে। মিহাদের সাথে একদিন দেখা করতে হবে, লোকটা না চাইলে জোনাকি ওর হতো না।

কিচেনে এসে একা একাই রান্নার জোগাড় করতে শুরু করে জোনাকি। এ বাড়ির মোটামুটি সবার পছন্দের খাবার সম্পর্কে ধারণা আছে ওর। তাই সুবিধা’ই হলো সকালের নাস্তা বানাতে। নাস্তা বানানোর শেষ পর্যায়ে রেহানা রান্নাঘরে এসে বললো,
–“আয় হায় বড় ভাবী আপনে রান্না ঘরে ক্যান আইছেন? দাদীজান আর নিশি আপা আমারে দেখলে কথা হুনাইবো। সরেন দেহি আমারে নাস্তা বানাইতে দ্যান।”

–“আর একটু বাকী আছে তাহলেই তো শেষ, আপনি বরং এঁটো বাসনগুলো একটু ধুয়ে দিন, অনেক কিছু নোংরা করে ফেলেছি আমি নাস্তা বানাতে এসে।”

রেহানা সম্মতি জানিয়ে বাসন ধোয়ায় মনোযোগ দেয়। আমিনা বেগম রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে বলে,
–“বড় নাতবউ? তুমি এখানে কেন? রেহানা? নাতবউ রান্না করতেছে কেন?”

জোনাকি চুলো বন্ধ করে আমিনা বেগমের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
–“আমিই এসেছি দাদু, রেহানা আপা আমাকে বারণ করেছিলো বারবার।”

–“ঘরে যাও তুমি, নতুন বিয়ে হইছে এখন আমার দাদুভাইকে সময় দিবে বেশি বেশি রান্নাঘরে আসার প্রয়োজন নেই। রান্না করার সময় অনেক পড়ে আছে, বিয়ের পর এই যে নতুন এই সময়টা যাচ্ছে এটা আর আসবে না ফিরে।”

–“টেবিলে নাস্তা দিয়ে তারপর___”

–“কাল সবাই অনেক রাত করে ঘুমিয়েছে নয়টার আগে তো কেউ উঠবেই না, বাড়ির ছেলেদের অফিস বন্ধ আজ। কোনো চিন্তা নাই, যে যখন উঠবে নাস্তা করে নিবে। তুমি গিয়ে ঘুমাও কেউ ডাকবে না তোমাদের। রাত্রে তো ঘুম হয় নাই ভালো করে, আঁধার দাদু ভাই ঘুমাতে দেয় নাই নিশ্চয়ই?”

শেষ কথাগুলো আমিনা বেগম নিচু স্বরে রসিকতা করেই বললো। জোনাকি লজ্জা পেয়ে মাথা নামায়। দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় ঘরের দিকে।

ঘরের দরজা আটকে আবার বিছানায় গিয়ে আঁধারের পাশে শুয়ে পড়লো জোনাকি। আঁধার ঘুমিয়েছে ভেবে জোনাকি কাঁপা হাতে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আঁধারকে। সেই মূহুতেই আঁধার জোনাকির দিকে ঘুরে শক্ত করে বুকে আগলে নেয়। নাকে নাক ঘঁষে বললো,
–“এতক্ষণে আসলে? অপেক্ষা করছিলাম।”

–“অপেক্ষা কেন? আমি তো না’ও আসতে পারতাম।”

–“আমি জানতাম বাসার যে-ই তোমাকে দেখবে সেই ধমক দিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দিবে। তাই তো অপেক্ষা করছিলাম।”

জোনাকি কিছু বললো না। আঁধার বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
–“মিহাদকে বিয়ে করার তো খুব ইচ্ছে ছিলো, তাহলে সেই ছেলে বিয়ে ভাঙলো যে?”

জোনাকি গোমড়ামুখে সবটা বলে আঁধারকে। সব শুনে আঁধার বলে,
–“কিছু কথা বলবো, রেগে যাবে না তো?”

জোনাকি সরাসরি আঁধারের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“কি কথা?”

–“মিহাদের সাথে দেখা করেছিলাম আমি।”

জোনাকি সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
–“কি বলেছেন ওকে?”

–“বেশি কিছু না, শুধু বলেছিলাম তুমি আমাকে ভালোবাসো, এখন আমার উপর রাগ করেই ওর সাথে বিয়েতে হ্যাঁ বলেছো। আমারও তোমাকে ছাড়া একদমই চলবে না, তাই মিহাদ যেন এই বিয়েটা না করে।”

–“আপনিইই____”

আঁধার আর কিছু বলতে না দিয়ে জোনাকি’কে নিজের সাথে জাপ্টে নিয়ে বললো,
–“সব কথা পরে হবে। রাতে ঘুমাইনি ভালো ভাবে, এখন ঘুমাবো। তুমিও ঘুমাবে, চোখ বন্ধ করো।”

মনে মনে মৃদু হেসে চোখ বন্ধ করলো জোনাকি। লোকটা আসলেই পাগল। বড্ড বেশিই ভালোবাসে ওকে। শেষমেশ একটা গোমড়ামুখোকে ভালোবেসেছিলো ও। জোনাকি নিজেও তো চাইতো এই গোমড়ামুখো মানুষটাই যেন ওকে ভালোবাসে, ওর হয়। উপরওয়ালা ওদের দুজনের মনের কথা’ই শুনেছে। ওদের ভালোবাসাকে কবুল করেছে। এখন বাকীটা জীবন এভাবেই কাটিয়ে দিতে চায় দুজনে একসাথে। ব্যাস! আর কি লাগে এক জীবনে?

|সমাপ্ত|