তুমিময় প্রাপ্তি পর্ব-৩২+৩৩

0
192

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৩২
#মেহরিন_রিম
দ্বিতীয় ক্লাস করার কথা থাকলেও মোহনার আর আজকে কলেজে যেতে ইচ্ছে করেনি। সায়ান কে বলেছে আজকে সে ঘুড়তে যাবে। সায়ানও আর মানা করেনি, এই কদিনে মোহনার সঙ্গে কথা না বলতে পারায় সে নিজেও অস্থির হয়্ব উঠেছিল। তাই আজ তাড়া ঘুরবে ফিরবে মজা করবে। মোহনার একটু চিন্তা হচ্ছিল,যদি পরিবারের কেউ দেখে ফেলে? পড়ে ভাবলো তার বাবা অফিসের কাজে বাইরে গিয়েছেন,আর মা বাসা ফাকা রেখে কোথাও বের হবেনা। তাই চিন্তার তেমন কোনো কারণ নেই।
অত:পর যেই ভাবা সেই কাজ,দুজনে মিলে কলেজ শেষ হওয়ার সময় পর্যন্ত ঘুরবে।

ইশা মোহনারকে ইচ্ছে করেই বলেছিল সে আজ কলেজে যাবেনা। তবে এমন কিছুই নয়, ইশা দিব্যি সুস্থ এবং নাচতে নাচতে কলেজে এসেছে। রাতে অনেক চিন্তা ভাবনার পড়ে সায়ান কে ফোন দেওয়ার চিন্তা করেছিল ইশা। কিন্তু সায়ান এর নম্বর না থাকায় বহু কষ্টে আদৃত এর নম্বর খুজে বের করে তাকে কল দেয়,আর তার কাছ থেকে সায়ান এর নম্বর কালেক্ট করে।
সায়ানের সাথে কথা বলার পর ইশা বুঝতে পারে তার ধারণাই ঠিক ছিলো। মোহনা পুড়ো কথা না শুনেই সায়ান কে ভুল বুঝেছে। তখন ই ইশা প্ল্যান করে আজকে মোহনাকে একা একা কলেজে পাঠাবে,আর তখনই সায়ান এসে ওকে নিয়ে গিয়ে সব সত্যিটা খুলে বলবে।

একদিক থেকে খুশি হলেও একা একা ক্লাস করতে মোটেই ভালো লাগছে না ইশার। সে যথেষ্ট মিশুক হলেও মোহনা ছাড়া কারোর সাথেই খুব বেশি কথা বলেনা। ক্লাসমেট হিসেবে যতটা বলার ততটাই বলে, আর কলেজে তো আগের ফ্রেন্ডদের ও পাচ্ছেনা। তাই পুড়ো ক্লাস চুপচাপ বসে ক্লাস করতে হয়েছে ইশাকে।

ছুটির পরও ভালো লাগছে না ইশার,আজকে আর কোনো ব্যাচ নেই। তাই এখান থেকেই বাসায় যাবে,মোহনা যেহেতু আসেনি তাই তাকে একা একাই যেতে হবে ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ইশা। কলেজের বাইরে বের হতেই বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো আদৃত কে। ইশা ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললো,
_এই লোকের কি কোনো কাজ নেই?

_তোমার চেয়ে বেশি কাজ আছে আমার।

ইশা পাশ ফিরতেই দেখতে পেলো আদৃত বুকে হাত গুজে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এত আস্তে বললো কথাটা তাও আদৃত শুনে ফেললো! আর উনি তো এখন ই বাইকের পাশে ছিলো,এখানে এলো কি করে?
হা করে তাকিয়ে এসব ভাবতে লাগলো ইশা। আদৃত মনে মনে হেসে ইশার মুখের সামনে তুড়ি বাজাতেই তার চিন্তা ভঙ্গ হলো। সঙ্গে সঙ্গে ইশা চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো।

আদৃত চোখে থাকা সানগ্লাস টা খুলে বললো,
_এবার বলো, রাত বারোটার সময় আমার ঘুম নষ্ট করলে কেন?

ইশা কপাল কুঁচকে বলে,
_এই যুগে রাগ বারোটার সময় কোন ব্যাক্তি ঘুমায়?

_সায়ান এর নম্বর নিয়েছিলে কেন?

_আপনার বন্ধুকেই জিজ্ঞেস করে নেবেন।

কথাটা বলেই পায়ের কদম ফেলে সামনে এগোতে থাকে ইশা। আদৃত তার সঙ্গে যেতে যেতে বলে,
_তোমার কি মনে হয় আমি না জেনে এসেছি?

_সব জানতে আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন?

_ঘটকালি করা আবার কবে থেকে শুরু করলে তুমি?

ইশা হাঁটা থামিয়ে আদৃতের দিকে তাকিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
_ঘটকালি কোথায় করলাম আমি?

_এইযে মিলিয়ে দিলে দুজনকে,ঘটকালি ই তো করলে।

_মোটেই না। ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে, একটা ভুল ধারণার জন্য ওরা আলাদা হয়ে যাবে এটা তো হতে পারেনা তাইনা!

_তুমি এতো সিওর হচ্ছো কি করে যে ওরা আসলেই একে অপরকে ভালোবাসে?

_মোহনা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড,তাই ওর দিকটা তো আমি বুঝতে পারবোই। আর সায়ান ভাইয়াকে দেখেও আমার তেমনটাই মনে হয়েছে।

_দেখেই বুঝে গেলে ও মোহনাকে ভালোবাসে?

_এগুলো বোঝা যায়,কিন্তু আপনি বুঝবেন না।

মুখ ঘুরিয়ে মুচকি হাসলো আদৃত। তার হাসি দেখে ইশা সন্দিহান চোখে তাকালো। আদৃত ইশার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন ই তার পিছন থেকে একটা ছেলে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
_ইশা না?

ইশা ঘাড় বাঁকিয়ে আদৃত এর পিছনে তাকিয়ে দেখতে পেলো সেখানে হাস্যজ্জল মুখে দাঁড়িয়ে আছে রিফাত। ইশা তাকে দেখে অবাক হয়ে তাকালো। আদৃত ও ইশার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো রিফাতের দিকে। রিফাত এতক্ষনে ইশার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
_কিরে? চিনতে পারিসনি আমাকে?

ইশা এবার হেসে বলে,
_আরে কি বলো! চিনবোনা কেনো? কিন্তু তুমি না ক্যানাডা ছিলে,দেশে কবে আসলে?

_এসেছি দুদিন হলো, আমার কাজিন এই কলেজেই পড়ে। ওকেই নিতে এসেছিলাম, কিন্তু তোর সাথেও দেখা হয়ে গেলো। কেমন আছিস বল..

_আমি তো অলওয়েজ ভালোই থাকি ভাইয়া।

_বাসায় আসিস না কেনো? আগে তো আমাদের বাসায় এসেই বসে থাকতি।

_সময় হয়না আসলে,পড়াশোনা নিয়্র একটু ব্যাস্ত থাকি তো তাই।

আদৃত বিস্ফোরিত চোখে ইশার দিকে তাকালো, এই মেয়ে কিনা পড়াশোনা নিয়ে ব্যাস্ত থাকে! এটাও বিশ্বাস করতে হবে? ইশা একবার আড়চোখে আদৃত এর দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। রিফাত এখনো আদৃত কে তেমনভাবে খেয়াল ই করেনি। রিফাত তার হাসি চওড়া করে বলল,
_আমিতো তোকে দেখে প্রথমে চিনতেই পারিনি, কত বড় হয়ে গেছিস। তবে হ্যা,এখন কিন্তু তুই আগের চেয়েও বেশি সুন্দর হয়ে গেছিস।

_আগে অসুন্দর ছিলাম বুঝি?

_তা কখন বললাম,তুইতো ছোট থেকেই অনেক কিউট।

ইশা নিজের বিনুনি ঝাপটা মেড়ে ভাব নিয়ে বললো,
_আই নো আই এম সো কিউট..

আদৃত ছোটছোট চোখে রিফাত এর দিকে তাকিয়ে আছে, তার কথাবার্তা আদৃত এর কাছে কেমন যেনো অসহ্য লাগছে। এত প্রশংসা করার কি আছে আজব!

রিফাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
_ছুটি হয়ে গেছে তাইনা? আচ্ছা আমি যাই হ্যা, বাসায় আসিস কিন্তু।

_তুমিও এসো,আম্মু খুশি হবে।

রিফাত বিরবির করে বললো,
_মনে হচ্ছে যেতেই হবে।

_কিছু বললে?

_নাহ তো,আচ্ছা যাবো।

রিফাত ইশার দিকে তাকিয়ে সামান্য হেসে চলে গেলো কলেজের ভিতরে। রিফাত এর বলা কথাটা ইশার কর্ণগোচর না হলেও আদৃত তা স্পষ্টভাবেই শুনতে পেরেছে। রিফাত চলে যেতেই আদৃত ইশার দিকে তাকিয়ে বললো,
_কে ও?

_আমাদের প্রতিবেশী,ভাইয়া অনেকদিন পর ক্যানাডা থেকে ফিরেছে। ওয়েট,আপনি জিজ্ঞেস করছেন কেন?

আদৃত কোনো উত্তর দেওয়ার আগেই ইশা কথা ঘুরিয়ে বললো,
_আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন এখানে?

_রাস্তাটা তোমার কেনা নয়।

ইশা মুখ ফুলিয়ে বললো,
_আচ্ছা থাকুন আপনি এখানে দাঁড়িয়ে।

কথাটা বলেই ইশা ভেঙচি কেটে চলে গেলো সেখান থেকে। আদৃত মাথা চেপে ধরে বিরক্তিসূচক ‘চ’ উচ্চারণ করলো। বেশ ভালো মেজাজে এসেছিল, আর এখন মেজাজ টা একদমই বিগড়ে গেলো। আর দাঁড়িয়ে রইলো না আদৃত, বাইকে উঠে নিজের ফ্লাটে চলে এলো।

____
অনেকদিন পড়ে কাজ থেকে একটু ছুটি পেয়েছে পূর্ণ। নিজের ফ্লাটে বসে সেদিনের সেই বইটা উল্টেপাল্টে দেখছে সে,তবে পড়াটা ঠিক হয়ে উঠছে না।
ফোনটা বেজে উঠতে পাশ ফিরে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকায় পুর্ন। আননোন নম্বর দেখে কিছুক্ষন সেদিকে তাকিয়ে থেকে ফোনটা রিসিভ করলো সে।
অপর পাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠে কেউ বলে উঠলো,
_হ্যালো..

_জি কে বলছেন?

_আমি.. ফাইজা।

পূর্ণ ফোনটা আবার সামনে এনে চেক করলো। না এটাতো ফাইজার নম্বর নয়। পূর্ন ফোনটা কানে ধরতেই ফাইজা বললো,
_এটা আগের নম্বর নয়,নতুন নম্বর। ভাবলাম আগের নম্বর ব্লক করে রেখেছো কিনা।

_কোনো দরকার?

ফাইজা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
_ঐ বইটা দিতে পারবে আমাকে? অনেক খুজেছি,কিন্তু পাইনি কোথাও।

_কোথা থেকে নেবে বলো।

_তুমি বলো,আমি গিয়ে নিয়ে আসবো। কখন ফ্রি টাইম পাবে..

_আজকে আমি ফ্রি ই আছি। আমি লোকেশন সেন্ড করে দেবো,বিকেলে চলে এসো সেই জায়গায়। এমনিতে আমারো তোমার সঙ্গে কিছু কথা আছে।

_ঠিক আছে।

ফোনটা কেটে দিলো ফাইজা। পুর্ন বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। ফাইজার সঙ্গে কথা বলাটা আসলেই প্রয়োজন,ভীষণ প্রয়োজন।

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_৩৩
#মেহরিন_রিম
_সরি সরি একটু দেড়ি হয়ে গেলো। অনেক্ষন ধরে ওয়েট করছো তাইনা?

মুখে হাসি নিয়ে হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো ফাইজা। নদীর পাশেই একটা বেঞ্চে চোখ বন্ধ করে বসে ছিলো পূর্ন। ফাইজার কণ্ঠ শুনে চোখ খুলল সে,ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতেই তার হৃদয়ে এক শীতল বাতাস বয়ে গেলো।
ফাইজা কখনোই সেভাবে সাজগোজ করেনা,আজও করেনি। আকাশি রঙের সেলোয়ার কামিজ এর সঙ্গে হালকা লিপস্টিক আর কপালে ছোট্ট একটা টিপ। এই সাধারণ রূপেও যেন ফাইজাকে আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে পূর্ণর কাছে।
পূর্ণ তার দৃষ্টি সরিয়ে সৌজন্যমূলক হেসে বলল,
_তেমন দেড়ি হয়নি, বসো।

ফাইজা মুখের উপর চলে আসা চুলগুলো কানের পিছনে গুজে পূর্ণর পাশে এসে বসলো। তবুও তাদের মাঝে অনেক দূরত্ব,দুজনে বেঞ্চের দুই প্রান্তে বসে আছে। পূর্ণ আবারো একনজর তাকালো ফাইজার দিকে,ঠোঁটের কোণে তার মিষ্টি হাসি লেগেই আছে। প্রফুল্ল মনে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে সে। চোখ সরিয়ে নিলো পূর্ণ,আজকেই ফাইজাকে কেন এত খুশি থাকতে হবে? তাকে এমন আনন্দিত দেখে ভেবে আসা সব কথাগুলো গলায় আটকে যাচ্ছে পূর্ণর। তবে কঠিন হতেই হবে,ফাইজা তার প্রতি আরো দূর্বল হয়ে যাওয়ার আগে তাকে আটকাতে হবে। যেই স্বপ্নের কোনো ভবিষ্যৎ নেই,সেই স্বপ্ন বুনে কষ্ট পেতে দেওয়া যাবেনা ফাইজাকে।

বড় নিঃশ্বাস নিয়ে পূর্ণ ফাইজার দিকে তাকিয়ে বললো,
_চা খাবে?

ফাইজা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
_হুম..কি?

_চা…চা খাবে?

_কিন্তু তুমিতো চা খাওনা..

পূর্ণ স্মিত হেসে বললো,
_খেলাম একদিন।

ফাইজা মুচকি হেসে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। পূর্ণ উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
_বসো তুমি,আমি নিয়ে আসছি।

কিছুটা দূড়ে একটা গাছের নিচে ফ্লাক্স নিয়ে বসে চা বিক্রি করছিলো একজন বৃদ্ধ লোক। তার কাছ থেকেই দু’কাপ লালচা নিয়ে বেঞ্চে এসে বসলো পূর্ণ। একটা কাপ ফাইজার দিকে বারিয়ে দিতেই সে কাপটা নিয়ে “থ্যাংক ইউ” বললো।
অতঃপর আবারো নিরবতা। যায়গাটা বেশ নির্জন,কোনো শব্দ নেই চারপাশে। মাঝেমধ্যে কয়েকজন বাচ্চা এসে ছোটাছুটি করছে। নিরবতার মাঝেই তাদের চায়ের কাপটা খালি হলো। ফাইজা ওয়ান টাইম কাপটা ছুড়ে ফেলে দিয়ে পূর্ণর দিকে তাকালো। তার হাতে বা বেঞ্চে কোনো বই বা ব্যাগ না দেখে বললো,
_বইটা আনোনি?

হাতে থাকা কাপটা ফেলে দিয়ে ফাইজার দিকে তাকালো পূর্ণ। ছোট করে উত্তর দিনো,
_উম হু..

ফাইজা অবাক হয়ে বললো,
_কেন?

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো পূর্ণ। উঠে দাড়িয়ে ফাইজার সামনে এসে প্যান্টের পকেটে হাত গুজে থমথমে গলায় বললো,
_কারণ আমি তোমাকে এখন যেই কথাগুলো বলবো,তা শোনার পর তুমি আমার থেকে বইটা নেবেনা।

ঠোঁটে লেগে থাকা হাসিটা ধীরেধীরে অদৃশ্য হয়ে যেতে লাগলো ফাইজার। পূর্ণ জীভ দিয়ে নিজের ঠোট ভিজিয়ে বললো,
_ফাইজা আমি জানি তুমি কেনো হুট করে এতটা বদলে গেছো,তবে আমি তোমার মাঝে এই বদল টা চাইনা। তাই তোমাকে কিছু কথা বলা খুব প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

কিছুটা থামলো পুর্ণ। ফাইজার দিকে তাকিয়ে কথা বলাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে তার জন্য। তাই উল্টো ঘুড়ে নদীর দিকে মুখ করে দাড়ালো পূর্ন। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে আবারো বললো,
_সেদিন আমার কপাল কি করে কেটেছিল যানো?

উত্তর দিলোনা ফাইজা। পূর্ণ ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে একনজর তাকিয়ে আবারো সামনে তাকিয়ে বললো,
_ঐ এলাকাটা খুব একটা ভালো নয়। দিনের আলো সরে গেলেই রাতের আধারে ওখানে শুরু হয় অনৈতিক কাজ। মাদকদ্রব্য সাপ্লাই এর একটা গ্যাং ছিলো ওরা, অনেকদিন ধরে খোজ চালিয়ে ফাইনালি তাদের গোডাউন এর খোজ পেয়েছিলাম। সেদিন ওদের ধরার কোনো প্ল্যান ছিলোনা, আমি জাস্ট লাস্ট বারের মতো সিওর হতে গিয়েছিলাম। ব্যাস, কোনভাবে খবর পেয়ে আমার উপর অ্যাটাক করার প্ল্যান করে তারা। আমার পরিচয় জানতে পেরে যায়, আর সেই অনুযায়ী কাজ করে। লোকজন থাকেনা সেখানে খুব একটা,কিন্তু দলের কোনো লোক তোমাকে ঐদিকে আসতে দেখে নিয়েছিল। তাই আমার দিকে পাথর ছুড়ে মেরে পালিয়ে যায় সেখান থেকে। ওরা ধরাও পরেছে, তবে তাদের মধ্যে এক দুজন তখনো বাইরে ছিল। ওদের আমার উপর অনেক রাগ,এর আগেও একবার ওদের ব্যাবসা নষ্ট করেছিলাম। তাই প্রতিশোধ নিতে আমার উপর যেকোনো সময় হামলা করতে পারতো। সেইজন্যই দু’তিনদিন আমাকে পালিয়েও থাকতে হয়েছিল। ভাগ্য ভালো,তারাও খুব জলদিই ধরা পড়ে যায়।

ফাইজা এতক্ষন মনোযোগ দিয়ে পূর্ণর কথা শুনছিল। পুর্ন এবার তার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে মৃদু হেসে বলে,
_ভাবছো তো,তোমাকে কেন বলছি এসব?

ফাইজার দিকে তাকিয়ে পূর্ণ আবারো বলতে লাগলো,
_জাস্ট একটা ছোট্ট উদাহরণ দিলাম আমার লাইফ এর। এটা কিছুই না, এরচেয়ে অনেক বেশি রিস্ক নিয়েও আমায় চলতে হয় মাঝেমধ্যে। আমার পরিচয়, আমার কাজ সম্পর্কে কেউ খুব বেশি অবগত নয়। তবে যারা জানতে পেরে যায়,তারা প্রতিনিয়ত ই আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করে।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো পূর্ণ,তারপর আবারো বললো,
_আদৃত তোমাকে কথাগুলো অন্যভাবে বলেছে আমি সেটাও জানি। আর তাই তোমাকে কথাগুলো জানানো দরকার ছিলো।

ফাইজা এবার উঠে দাঁড়ালো। পূর্ণর চোখে চোখ রেখে বললো,
_এখন সবটা স্পষ্টভাবেই শুনলাম। তো,আর কিছু বলবে?

_আর কিছু বলবো মানে? ফাইজা তুমি আমার কথাগুলো এখনো বুঝতে পারছো না। দিনের অর্ধেক সময় রিভলভার নিয়ে থাকতে হয় আমাকে। লাইফ রিস্ক নিয়ে লুকিয়ে থাকতে হয়। আমার জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই ফাইজা, তুমি বুঝতে পারছো এগুলো?

_হুম বুঝতে পারছি,তো?

_যেখানে আমার নিজের ই লাইফের কোনো গ্যারিন্টি নেই, সেখানে আমি অন্য কারোর জীবনের সাথে নিজেকে কি করে জড়াবো বলতে পারো?

_কি চাও তুমি?

পূর্ণ অবাক হয়ে তাকালো ফাইজার দিকে। এরপর থমথমে গলায় বললো,
_ফাইজা তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে, তুমি অনেক ভালো ছেলে পাবে জীবনে। আমার কথা ভেবে নিজের জীবনটা নষ্ট করোনা, তুমি যা চাও তা কখনো সম্ভব হবে না।

_হয়ে গেছে তোমার কথা বলা?

পুর্ন কোনো উত্তর দিলোনা। ফাইজা তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে বললো,
_একটা কথা জানো কি? মুখে না বললেও,তুই আমায় বড্ড বেশি ভালোবাসো।

পুর্ণ অবাক চোখে তাকালো ফাইজার দিকে। ফাইজা পূর্ণর চোখে চোখ রেখে বললো,
_হ্যা, ভালোবাসো তুমি আমায়। অনেক অনেক বেশি ভালোবাসো। নাহলে আজকে এখানে দাঁড়িয়ে যে কথাগুলো বলছো,সেগুলো কখনো বলতে পারতে না। তোমার সব কথাই বুঝলাম আমি, কিন্তু আমায় একটা কথা বলতো। তোমার প্রফেশন এ যে বাকি লোকগুলো আছে,তাদের কি কোনো লাইফ রিস্ক নেই? অবশ্যই আছে, কিন্তু এর কারণে কি তারা সারাজীবন একা থেকেছে? থাকেনি,কিন্তু তুমি একা থাকতে চাইছো। কারণ এটাই যে তুমি আমাকে ভালোবাসো, আমি জীবনে কষ্ট পাই এটা তুমি চাওনা।

কথাগুলো ঠিক ই বলেছে ফাইজা। পূর্ণ তার কথায় বারে বারে শুধু অবাকই হচ্ছে,ফাইজা কি করে এতকিছু বুঝে ফেললো?

_কিন্তু তুমি এটা বুঝতেই পারলে না যে, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মেয়ে হবো যদি তুমি আমার সঙ্গে থাকো। সেদিন অতো মানুষের সামনে আমাকে অপমান করলে, যানো আমার ভীষণ কষ্ট হয়েছিল। তোমাকে ঘৃণা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি। তারপরেও আমি তোমাকেই ভালোবেসে গেছি, তোমায় কখনো পাবোনা জেনেই ভালোবেসেছি। আর আদৃত ভাইয়া যখন আমাকে তোমার ওভাবে চলে যাওয়ার কারণ বললো, তারপর থেকে ভালোবাসাটা আরো বেড়ে গেছে। নতুন করে তোমায় পাওয়ার স্বপ্ন দেখছিলাম আমি,আর তুমি কতো সহজে বলে দিলে নতুন করে জীবন গুছিয়ে নিতে!

কঠিন গলায় কথাগুলো বলা শুরু করলেও এখন গলা আটকে আসছে ফাইজার। থেমে গিয়ে নিজের কান্না নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করে বললো,
_তবে তুমি যা চাও তাই হবে, আমি আর কখনো তোমায় নিজের করে পাওয়ার আশা করবোনা পুর্ণ। কিন্তু আমার ভালোবাসাকে অপমান করার অধিকার তোমার নেই। আমি তোমায় গোপনেই ভালোবাসবো,বাধা দিতে পারবেনা তুমি।

তাচ্ছিল্যের সুরে হাসলো ফাইজা। পুর্ণর দিকে তাকিয়ে বললো,
_গোপনেও মন উজাড় করে ভালোবাসা যায়, তবে সেটা প্রকাশের জন্য সময় প্রয়োজন। কি ভাগ্য আমার, সেই সময় সুযোগ কোনোটাই পেলাম না।

_ফাইজা আমি..

ফাইজা হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো পূর্ণকে। মুচকি হেসে বললো,
_থাক আর কিছু বলতে হবেনা। চিন্তা নেই,আমি নিজে থেকে আর তোমার সামনে আসবোনা। ভালো থেকো..

পিছনে ফিরে তাকালোনা ফাইজা,হাতের উল্টোপিঠে চোখ মুছে দ্রুতপায়ে স্থান ত্যাগ করলো সে। আর পূর্ন? সে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো একই স্থানে। কানের কাছে একটা কথাই বাজছে,”আমি নিজে থেকে আর তোমার সামনে আসবোনা”। এটাই তো চেয়েছিল পূর্ণ,তবে কেন এতটা কষ্ট হচ্ছে তার! কিছুই করার নেই, এই কষ্ট সে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে