Friday, August 15, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2443



প্রতিশোধ পার্ট_4

0

প্রতিশোধ
পার্ট_4

__ আবির মেয়েটি কে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজেও তার পাসেই বসে ড্রাইভার কে গাড়ি চালাতে বলে। ইশারায় ড্রাইভার কে এক যায়গায় যেতে বলে, হয়তো আবির আগেই লোকেশন বলে রেখেছে।

__ তা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে মিঃ স্যার।

__ গেলেই দেখতে পাবে মিস নিরা।

__ নাম কিভাবে জানলেন? কিছুক্ষণ আগেও তো নাম জিজ্ঞেস করছিলেন?

__ কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারবে সেটা।

__ হুহ, আপনি সব পারেন, তুলে নিয়ে আসতে যখন পেরেছেন, অন্য কাজ ও কোন ব্যাপার না।

__ একদম চুপ, বেশি কথা বলা পছন্দ করিনা আমি। ( জোরে করে বলে) নিজের অসম্মানের কথা ড্রাইভার এর সামনে বলা লাগবে নাকি। ( নিরার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে)

__ নিরাও আর কিছু বলেনা, অন্যায় করে এখন ভালো মানুষ সাজা হচ্ছে। আর কতো ন্যাকামি দেখতে হবে আল্লাহ ই জানে। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। প্রকৃতি দেখতে তার ছোট বেলা থেকেই খুব ভালো লাগে। আজ সব অসহ্য লাগছে তাও নিজেকে মনে মনে দোষারোপ করছে, কিসের পাপের শাস্তি সে পাচ্ছে।

__ গাড়ি এসে থামে একটা পার্লারের সামনে। আবির নিজে নেমে নিরা কে বের হতে বলে। নিরা নামতেই মিশি বলে, এইতো চলে এসেছো, তাড়াতাড়ি আসো, একটু না সাজলে হয় বলো। এক ঘন্টায় খুব সিম্পল সাজে সাজিয়ে বাইরে আনে মিশি। শপিং সেইই করেছে, একমাত্র ফ্রেন্ড এর বিয়ে বলে কথা।

__ নিরাকে এতো ই সুন্দর লাগছে যে আবির হা করে তাকিয়ে আছে নিরার দিকে। লাল শাড়ির সাথে খোলা চুলে লাল গোলাপ, চোখের কাজল, ঠোঁট এ লাল লিপিস্টক। অল্প সাজেই যেন নিরাকে লাল পরীর মতো লাগছে।

মিশিঃ এই যে মিঃ আবির, দেখার সময় আরোও আছে এখন তো চোখ সরান।

__ আবির লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। কিন্তু আড় চোখে বার বার নিরার চোখের দিকে তাকাচ্ছে, যেন বার বার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে।

__ আবির কে নিজের গাড়িতে যেতে বলেআর বলে নিরা আমার গাড়িতে যাবে। দিয়ে নিরাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে মিশি। গাড়ি চলতে শুরু করে কোর্টের উদ্দেশ্য। সেখানেই বিয়েটা হবে( আবির + নিরা)

মিশি _ আবির আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড, সেই ক্লাস নাইন থেকে একসাথে পড়েছি। কখনো কোন মেয়ের দিকে খারাপ চোখে দেখেনি। মেয়ে বন্ধু বলতে আমিই ছিলাম তার জীবনে । কখনো ভুলেও আমার সাথে পড়াশোনা এর বাইরে কথা বলতো না। একটু বড় হবার পরও সে পারসোনাল টুকিটাকি কথা বল্লেও কোন মেয়ের সাথে তার রিলেশন ছিলো না। কাল রাত্রে চেম্বার থেকে ফেরার পথে তোমায় দেখে যায়। আবিরের মুখ থেকে ঘটনা শুনি, খুব বকি তাকে। এতো টা রাগ করা তার উচিৎ হয়নি, তাই ভুল করে ফেলেছে। ক্ষমা করে দিও নিরা, জীবনে সুখী হবার চেষ্টা করিও। আবির খুবইই ভালো ছেলে, তোমার সব চেয়ে কাছের মানুষ হবে , মিলিয়ে নিও।

নিরা__ জ্বী ম্যাম, মনে থাকবে ( মনে মনে বলে কখনো ক্ষমা করবোনা আপনাকে স্যার, আজীবন অভিশাপ দিয়ে যাবো, যতই আপনি ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করেন, শাস্তি আপনাকে আমিই দিবো )

মিশি _ গুড গার্ল, কিন্তু ম্যাম নয় আপু বলবে।

নিরা _ জ্বী আপু।

_ গাড়িটা কোর্ট এ চলে আসে। নিরা নেমে দেখে আবির একটা ছেলের সাথে কথা বলছে।

মিশি _ আরে তন্ময় কখন এলে।

তন্ময় _ এইতো আসলাম, এইমাত্র! তোমার ভাই বলো, বন্ধুই বলো তার বিয়েতে না এসে পারি।

মিশি _ তলে তলে প্রেম করেছে আবির, জানতাম ই না। তাইই তো লুকিয়ে বিয়েটা আজ সেরেই নিতে চায়।

তন্ময় _ তা লাজুক ছেলের প্রেম কেমন চললো এতোদিন।

আবির _ মিশি একটু বেশিই বলে ভাইয়া।

__ ” নিরা এদিকে এসো, পরিচয় করিয়ে দিই উনি তন্ময়, আমার হাজবেন্ড। ” মিশি বলে নিরা কে।

__ পরিচয় পর্ব শেষ এ সবাই একটা রুমে যায়। নিরা পুরাই সারপ্রাইজড হয় নিরার বাবা মা কে দেখে । অস্ফুট স্বরে মা বলে ডেকে উঠে নিরা।

__ নিরার মা বলে ” এখন কেমন আছিস রে, তোর এক্সিডেন্ট এর পর একদিন তোর জ্ঞান ছিলো না, আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি, সকালে জামাই এর আত্মীয় গিয়ে তোর খোঁজ দেয়, আর বলে তুই এখন সুস্থ, এরপর তোকে জামাইয়ের এতো পছন্দ হয়েছে, তাই বিয়ের প্রস্তাব দেয়, আমরা গরীব মানুষ, এতো ভালো প্রস্তাব হাত ছাড়া না করে রাজি হয়ে যায়, তুই তো ডাক্তার হবি, জামাই ও ডাক্তার, দুইজনে খুব সুখী হবি রে মা । ” ( একদম এ কথা গুলো বলে নিরার মা)

নিরা_ হুম, উনি খুব ভালো মানুষ, উনি না থাকলে তো আমি মরেই যেতাম।
(মনে মনে বলে মিঃ স্যার আপনি অনেক মিথ্যা বলাই ওস্তাদ, প্রতিশোধ আমি নিয়েই ছাড়বো। আপনার টাকা থাকতে পারে কিন্তু নিরা কে কেনা এতো সহজ না)

সেখানে কাজীর সামনে বিয়েটা করে নেয়। এরপর সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে যায় , লাঞ্চ করে সবাই। নিরা সবার সামনে খেতে না পারায় তেমন খায়নি সেটা আবির খেয়াল করে। খাওয়া শেষ, এর পর মা বাবার কাছে বিদায় নেয়ার সময় কেঁদে ফেলে নিরা। মা বাবা কে বলে ভালো থেকো মা, বাবা। নিরা গাড়িতে উঠে বসে আবির ও সবাইকে সালাম দিয়ে বিদাই জানায়।

__ তৃণা শান্তিতে নাই, খুব হতাশ, তার উপর আজ আবির স্যার আসেনি, ক্লাস ও নেয়নি। মানুষ টা কি উধাও হয়ে গেলো নাকি।

__ ” কিরে কিছুই বুঝলাম না, আবির স্যারের কেশ তো তুলে নিছিস। তাও কেনো সার আজ এলোনা? ” সাইরা বলে।

__ আমি কি জানি, আমি কি সবজান্তা যে বলে দিবো স্যার কোথায় গেছে। ( তৃণা)

__ আবির স্যার তো তোকে পুরাই পাগলি বানিয়ে ফেলবে। ( সাইরা)

__ বেশি বকিস না, এমনিতেই বাবা আমাকে রাজশাহী আসতে দিচ্ছিলো না। যদি জানতে পারে আমি এসব করেছি তাহলে নির্ঘাত নিয়ে যাবে। আমি তো আবির স্যার ছাড়া থাকতেই পারবোনা।
( তৃণা)

__ স্বপ্ন দেখিস না, তুই কি জানিস স্যার ম্যারিড কিনা। ( সাইরা)

__ বাজে বকিস না, উনি আমার প্রথম প্রেম। যে কোন মূল্য তে উনাকে আমার চাই ই চাই। ( তৃণা)

__” ( মন খারাপ করে) হুম, দেখ “সাইরা বলে।

তৃণার বাবা রাজশাহী শহর টাকে এক প্রকার ঘৃণা ই করে। কখনো চায়নি তার একমাত্র মেয়ে এই শহরে আসুক। অথচ তৃণার সেই ছোট বেলার শখ সে ডাক্তার হবে। আর চান্স ও পেলো নাকি রাজশাহী তে। তাও চায়নি তৃণা আসুক এই অভিশপ্ত শহরে। তৃণার ইচ্ছে আর জেদের কাছে হেরে গিয়েই আজ তৃণা রাজশাহী তে। আর এসেই ঘটিয়ে ফেলেছে গন্ডগোল।

__ আবির আর নিরা বাসায় আসে, সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আবির কফি বানিয়ে আনে দুই মগ, নিরা কে এগিয়ে দেয় একটা।

__ ” থাক থাক, আর নাটক করতে হবেনা, এখন আর কেউ নাই। ” নিরা

__ ” হয়তো ভালোবেসে বিয়েটা করিনি, কিন্তু শুধু তুমিই জানো কি হয়েছে আর গোটা দুনিয়া জানবে অন্য কিছু। রক্ষা করতে পেরেছি আমি তোমার সম্মান। খুশি হওয়া অনেক পরের ব্যাপার, মেনে নাও। ভুল তো মানুষের ই হয়, ক্ষমা কি করা যায় না?

__ ” কক্ষনো না, আই হেট ইউ মিঃ আবির স্যার। আপনি সব ছাত্রীর ক্রাশ হতে পারেন কিন্তু আমার কাছে ঘৃণার পাত্র আপনি কথা টা মনে রাখবেন। ” নিরা ঘৃণার নিয়ে বলে কথা গুলো।

আবির কথা গুলি শুনে খুব কষ্ট পেয়ে বেলকনিতে গিয়ে চেয়ারে বসে। মন টা খুব খারাপ করছে, মনে পড়ে নিরা কিছুই খায়নি তেমন। আবার কিচেন এ গিয়ে নিরার জন্য স্যুপ বানায়। এরপর ট্রে তে করে কিছু ফলমূল আর স্যুপ আনে। ঘরে এসে দেখে নিরা উল্টো দিকে ঘুরে শুয়ে আছে। মাথার ফুল গুলি ঘরে ছুড়ে ফেলেছে। বিছানায় চুল গুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে আর ঘাড়ের নিচে একটু খানি জায়গাতে শাড়ি টা সরে গিয়েছে। খুব আকর্ষণীয় লাগছে এই অবস্থায়। আবির নিরার পাশের টেবিলে খাবার রেখে নিরার পাশে বসে নিরার পিঠে হাত দেয়। নিরাও রাগান্বিত হয়ে ঘুরে ই আবির কে চড় মেরে বসে।

__ ” লজ্জ্বা করেনা, আবার এসেছেন ” নিরা

__ ” বাইরে তেমন খাওনি তাই খাবার নিয়ে এসেছিলাম, তার পুরষ্কার পেলাম। ” ( আবিরের চোখে পানি )

( ছেলে মানুষ খুব শক্ত হয়। কখনো ই কাঁদে না তাও আবিরের চোখে জল আসছে, নিজের কৃতকর্মের জন্য।)

__ ” খাবোনা আপনার কুকর্মের টাকার খাবার “। নিরা

চলবে……

প্রতিশোধ পার্ট_3

0

প্রতিশোধ
পার্ট_3

জামিয়া_পারভীন

__আবিরের মনে পড়ে মেয়েটি ঘরে একা তাই দরজা লাগিয়েই সোজা উপরে যায় আবির। রুমানা ( আবিরের বাসায় কাজ করে ঘর গোছায়, রান্না করে) কে সকালেই ছুটি দিয়েছে তাই আজ সে একা। আবির মেয়েটির পাশের টুলে বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কি নিষ্পাপ মেয়েটি, ঘুমন্ত অবস্থায় মেয়েটিকে খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। নিজের প্রতি ঘৃণা তে ভিতর টা তিলে তিলে জ্বলছে। না পারছে কাউকে বলতে না পারছে সহ্য করতে।

__ তৃণা বাসাতে বসে বসে ভাবছে, এমন টা তো হবার প্লান ছিলো না। কিভাবে কি হয়ে গেলো কিছুই তো বুঝলাম না।

__ কিরে কি ভাবছিস এতো? সেই বিকেল থেকেই তুই চুপচাপ আছিস? তোকে খুব টেন্স লাগছে? খুলে বল সব কিছু? ( সাইরা, তৃণার বান্ধবী)

__ প্লান ভেস্তে গেছে, বুঝছিনা কিভাবে কি হলো! (তৃণা)

__ কি বলিস, তোর জন্য এতো কষ্ট করে প্লান করলাম আর তুই বলিস ভেস্তে গেছে। কিভাবে কি হলো খুলে বল, আমার টেনশনে হাত পা কাঁপছে। (সাইরা)

__ আবির স্যারের হাত খুব লম্বা, যতটা দুর্বল ভেবেছিলাম তার কিছুই না। আজ আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো স্যারের বাসায়। ( তৃণা)

__ কি বলিস, স্যার তোর কোন ক্ষতি করেনি তো? (সাইরা)

__ নাহ! আমি তো ভেবেছিলাম আজ আমি মার্ডার হয়ে যাবো। কিন্তু স্যার অবাক করে একটা চড় মেরেই ছেড়ে দিলেন। এটাই আমাকে ভাবাচ্ছে বেশি, আমি যা করেছি তার শাস্তি মাত্র এটুকু।
স্যারের সম্মান মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছি, তাও স্যার কিছু বললোনা রে। আমি তো আবারো স্যারের প্রেমে পড়ে গেলাম। ( তৃণা)

__ তুই যা বলেছিস, স্যার যা হ্যান্ডসাম না আমারও প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে। ( সাইরা)

__ আর একবারও এই কথা বলবি না, মেরে তোর মুখ ভেঙে দিবো। (তৃণা)

তৃণা বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে, যা চায় সব কিছু নিজের করেই ছাড়ে। সেটা যে কোন মূল্যের বিনিময়ে হোক না কেনো। সাইরা কে শুনিয়ে দেয় তৃণা।

__ তৃণা মেডিকেল এ চান্স পেয়েছে এবার কিন্তু মেসে থাকতে চায় না বলেই ফ্লাট টা ভাড়া করা। সাইরা কে তৃণাই এনেছে এই ভাড়া করা ফ্লাটে। দুই বান্ধবী এক সাথে থাকবে তাই। তাছাড়া শহরে একা থাকার চেয়ে কেউ থাকা বেশি ভালো, যদিও তৃণার বডি গার্ড হিসেবে দুইজন থাকে বাসায়, আর কাজের জন্য একটা মেয়ে, রান্নার জন্য আরেকজন মেয়ে। তৃণার বাবা সব সময় মেয়েকে চোখে চোখে রাখেন, আর মেয়ের মাথা নষ্ট হবার পিছনে এই একটা কারণ। মেয়ের সব আবদার পূরণ করার জন্যই বাবা যেন সর্বদা প্রস্তুত। কিন্তু এবার তৃণা লুকিয়ে কিছু কাজ করে তাও ধরা খেয়ে নিজেই টেনশন এ পড়ে গেছে।

__ আবির মেয়েটির মাথার কাছে গিয়ে বসে চিন্তা করতে করতে ওভাবে ই ঘুমিয়ে পড়ে, মেয়েটির মাথার পাশে মাথা রেখে টুলে বসে ঘুমিয়ে আছে আবির।

__ সকালে জ্ঞান ফিরে মেয়েটির, পাশে আবির কে দেখে সরে আসে। নিজেকে শাড়িতে দেখে বুঝে ফেলে আবির ই তাকে শাড়ি পড়িয়েছে । ঘৃণা তে মুখ ঘুরিয়ে নেয় মেয়েটা, অস্ফুট স্বরে বলে ছিঃ মানুষ এতো জঘন্য হয় কেনো। আল্লাহ বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে মেয়েটা।

__ কান্নার শব্দে আবিরের ঘুম ভেঙে যায়।
এখন কেমন আছো? আবির বলে মেয়েটি কে।

__ সাড়া নেই মেয়ের , নিঃশব্দে কাঁদছে সে।

__ আমি জানি আমি অনেক বড় পাপ করে ফেলেছি। আমি আসলে জানতাম না তুমি আর তৃণা দেখতে একই রকম। তৃণা আমাকে মিথ্যা রেপ কেশে ফাঁসিয়ে আমার সম্মানহানি করেছে। তাই আমি রাগে ওকে তুলে আনতে বলি। কিন্তু আসাদ তোমাকে তৃণা ভেবে তুলে আনে। আর তুমি দেখতে হুবহু তৃণার মতো। মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো তুমি স্বীকার না করায়। আমি খুব ভুল করে ফেলেছি, ক্ষমাও করতে পারবেনা জানি। তুমি যা শাস্তি দিবে মাথা পেতে নিবো। প্লিজ কথা বলো, আমাকে আর কষ্ট দিওনা। তোমার সাথে করা অপরাধ বোধ আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। প্লিজ কথা বলো, চুপ করে থেকোনা আর। প্লিজ মেয়ে, তোমার তো নাম টাও জানিনা, প্লিজ কিছু তো বলো। ( কান্না জড়িত কণ্ঠে আবির)

__ নাটক বন্ধ করেন, আর শাস্তির কথা বলছেন স্যার। আপনি পারবেন আমার সম্মান, ইজ্জত ফিরিয়ে দিতে। পারবেন না, এই যে আমি একদিন ধরে নিখোঁজ। পারবেন আমার গরীব দুখী মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে। পারবেন আমার বাবাকে বলতে আপনার নিষ্পাপ মেয়েকে ফিরিয়ে নিন। পারবেন সমাজ কে বলতে, আমি সতী। কি হলো, কথা কেন বলছেন না, জানি পারবেন না। তাই এখুনি আমি চলে যাবো এখান থেকে।

__ পারবোনা সব ফিরিয়ে দিতে, কিন্তু তোমাকে একাও ছাড়তে পারবোনা। কোথায় যাবে? আগে বলো নাম কি তোমার?

__ হুহ, নাম দিয়ে কি করবেন। নিজের ভোগ তো মিটিয়েই নিয়েছেন। (মেয়েটি)

__ বিশ্বাস করো! আমি ওমন না।

আবিরের কোন কথা না শুনেই মেয়েটি হাতের স্যালাইন চ্যানেল টান দিয়ে খুলে ফেলে, এতে বের হয়ে আসে রক্ত। মেয়েটির কোন চিৎকার না আসলেও যেন এ ব্যথা আবির পাচ্ছে। তাড়াতাড়ি হাত টা ধরে ফেলে, যেন তার ই হাত কেটেছে।

__ হাত টা ছাড়ুন ( মেয়েটি বলে)

__ দেখছোনা রক্ত বের হচ্ছে,থামো একটু। বলে পাশের বক্স থেকে এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে ব্যান্ডেজ দিয়ে হাতে বেধে দেয়।

__ থাক আর নাটক করতে হবেনা, এবার হাত ছাড়িয়ে নিলো মেয়েটি।

বিছানা থেকে তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে ব্যথা তে আর দুর্বলতা তে পড়ে যেতে শুরু করে। আবির ধরে নেয় মেয়েটিকে। খুব কাছে দুইজন দুজনের, ঘোর কাটিয়ে মেয়েটি বলে….

__ স্বাদ মিটেনি তাইনা, ছাড়ুন আমাকে।

এমন একটা কথাতে রাগ আসে আবিরের। তাও ভালো করে বলে…

__ তুমি এখনো অসুস্থ, রেস্ট নাও। নাস্তা নিয়ে আসি খেয়ে নিবে। বলেই বের হয়ে যায় আবির। যাবার সময় দরজা টা বাইরে থেকে লাগিয়ে যায়।

নিজেকে খুব ছোট লাগছে আজ নিরার।
কিভাবে সমাজের কাছে মুখ দেখাবে, কিভাবে বাবা মার মুখের সামনে দাঁড়াবে। কিভাবে বড় ভাইয়ের সামনে দাঁড়াবে, কিভাবে ক্লাসে যাবে। ভাবতে ভাবতে ফুঁপিয়ে কাঁদে অনেক্ষণ। নাহ! এজীবন আর রেখে কি হবে। আমাকে ক্ষমা করে দিও আল্লাহ বলে বিছানার চাদর কে কয়েক ভাগ করে কেটে ফেলে নিরা পাশে বক্সে থাকা কেচিঁ দিয়ে। সেগুলো কে বেঁধে প্যাচিয়ে নেয় আর ফ্যানের সাথে ফাঁস রেডি করে তাতে ঝুলে পড়ে নিরা। আবির খাবার নিয়ে এসে দরজা খুলেই চিৎকার করে খাটে উঠে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে। ফাঁস থেকে মুক্ত করে মেয়েটিকে বিছানায় শোয়ায়ে দেয়। মেয়েটার মাথায় মাথা দিয়ে বলে প্লিজ মাফ করে দাও। আর এমন করবেনা কখনো। আবিরের চোখের পানি মেয়েটার মুখে পড়ছে।

__আবির উঠে বসে বলে খাবার এনেছি, প্লিজ খাবে।

__ আপনার হাতে খাবার খাওয়ার চেয়ে বিষ খাওয়া ভালো।

এরই মাঝে মিশি ফোন দেয় আবিরকে।

__ হ্যালো, মিশি বল।

__ কেমন আছে মেয়েটি।

__ যেমন দেখে গিয়েছিলি, শুধু জ্ঞান ফিরেছে। আর একটু আগে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলো।

__ তা তো করবেই, যে কোন মেয়েই করবে। এখন কি করবি তুই সেটা বল?

__ কি করতে বলছিস সেটা বল?

__ বিয়ে করে নে।

__ কি বলছিস এসব। তাহলে সে…

__ চুপ কর! ভুলে যা ওসব। বিয়ে করে নে কখন আসবি সেটা বল।

__ ১১ টাই ফাঁকা আছিস।

__ নাহ! ১২ টাই আই।

__ ওকে, রাখ তাহলে।

আবির খাবার নিয়ে মেয়েটির সামনে বসে খেতে বলে। খাবার গুলি ফেলে দেয় মেয়েটা। খাবার নষ্ট করা আবির একদম সহ্য করতে পারেনা। রাগ করে বলে উঠে…

__কতো মানুষ একবেলা খেতে পায়না তুমি জানো? বলেই নিচ থেকে কুড়িয়ে খাবার নিজের মুখে দিলো। এরপর মেয়েটাকে খাইয়ে দিলো, মেয়েটি ও আর কিছু না বলে খেয়ে নিলো।

__ তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে।
কাজ আছে, চলো।
নিরার কথা শুনার অপেক্ষা না করেই কোলে তুলে নেয় আবির। কারণ জানেই মেয়েটার হাটার শক্তিও নাই।

চলবে…..

প্রতিশোধ পার্ট_2

0

প্রতিশোধ
পার্ট_2

জামিয়া_পারভীন

__হটাৎ ই আবিরের ঘুম ভেঙে যায়, মেয়েটির অস্ফুট গোঙানির শব্দে। তাকিয়ে দেখে অচেতন অবস্থাতে মেয়ে টা কাতরাচ্ছে। আবির তাড়াতাড়ি করে বাটিতে পানি এনে মেয়েটার মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে।

__ জ্বর কিছুটা কমেছে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে আবির। কি হতে কি হয়ে গেলো, দুই দিন আগেও যে ছিলো সব চেয়ে চরিত্রবান ছেলে সে আজ রেপিস্ট।

__ ভাবতে ভাবতে কান্না আসছে তার, কে এই তৃণা? কে এই মেয়েটি? দুজনের চেহেরার মিল কিভাবে? দুজনে কি জমজ বোন। নাহ আর কিছু ভাবতে পারছে না। উফফ আল্লাহ! একিসের শাস্তি দিচ্ছো তুমি।

__ মেয়েটির জ্ঞান ফিরছে না দেখে বেষ্ট ফ্রেন্ড মিশি কে কল দেয় আবির। রিসিভ করেই

__ ” কিরে কি খবর, আজকাল তোর তো কোন খবর ই নাই, তা কেমন আছিস বল।” একদমে কথা গুলো বলে মিশি।

__ একটা প্রব্লেম হয়ে গেছে, বাসায় আসতে পারবি? ইমার্জেন্সি, প্লিজ আই না। ( আবির)

__ ” হুম, পারবো, এখন তো রাত হয়ে এসেছে, এখুনি বাসায় চলে যেতাম। ওকে আসছি ” বলে মিশি।

__মিশি আবিরের এক মাত্র মেয়ে বান্ধবী, সদ্য পাশ করা গাইনী ডাঃ। আবির কেনো জানি এই মেয়েটাকে নিঃসন্দেহে সব কথা বলে দিতে পারে। মিশির সাথে সেই ক্লাস নাইন থেকে একসাথে পড়েছে আবির। দুজনেই একসাথে MBBS পাশ করে মিশি গাইনী তে FCPS করে, বিসিএস দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী ডাঃ হিসেবে নিয়োগ পায় আর পারসোনাল চেম্বার আছে তার। আর আবির এনাটমি নিয়ে পোষ্ট গ্রাজুয়েশন করে মেডিকেল ভার্সিটি এর প্রফেসর হয় একই সাথে বিসিএস এ টিকে আউটডোরে বসে। পারসোনাল চেম্বার এখনো দেয়নি আবির। বড়লোক বাবার একমাত্র সন্তান আবির তাই তার এতো মাথা ব্যথা ছিলো না কখনোই।

__ কলিংবেল বেজে ওঠায় আবিরের ধ্যান ভাঙে। দৌড়ে নিচে গিয়ে দেখে মিশি, মিশির পায়ের কাছে বসে পড়ে আবির ” দোস্ত আমি পাপী, আমার জন্য একজনের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে, সে কেমন আছে প্লিজ দেখ” কান্নায় ভেঙে পড়ে আবির।

__ কি হয়েছে বলবি তো? এমন করছিস কেন তুই?

__ ঘরে চল, দরজা লাগিয়ে উপরে নিয়ে যায় মিশি কে। মিশি মেয়েটিকে দেখে আবির কে জিজ্ঞেস করে ” কে ও? “। আবির মাথা নামিয়ে বলে ” জানিনা কে মেয়েটি, আমি ওর সাথে চরম অন্যায় করেছি। এরপর থেকেই সে অজ্ঞান, এখনো জ্ঞান ফিরে আসেনি। তুই প্লিজ দেখ। ”

__ তুই কি করেছিস ওর সাথে সেটা বল (মিশি)।

__ রেপ ( কান্নার স্বরে আবির)

__ তুই এতো নিচে নেমে গেলি কখন আবির বলতো। লজ্জা করলো না তোর তাও এখন বিপদে পড়ে আমায় ডেকেছিস। (মিশি)

__ তোকে সব খুলে বলবো, প্লিজ আমায় ভুল বুঝিস না। আগে ওকে বাঁচা প্লিজ। ( আবির)

__ তুইই আমার সামনে থেকে এখন যা, ঘৃণা আসছে তোর প্রতি আমার। (মিশি)

__ মিশি দেখে প্রচুর ব্লাড গেছে মেয়েটির, জ্বর এসেছে বলে আবির কম্বল দিয়ে রেখেছিলো আর খেয়াল করেনি।

__ মিশি তাড়াতাড়ি মেয়েটির হাতে I/V চ্যানেল ওপেন করে আবিরের ঘরে থাকা স্যালাইন সেট করে দেয়। ব্লাড বন্ধ করার ব্যবস্থা করে। জ্বরের ওষুধ দিয়ে দেয় স্যালাইন এর মাধ্যমেই। বেরিয়ে আসে আবিরের রুম থেকে।

__ আবির এর কাছে পরে মিশি সব শুনে বলে ” তুই রাগী ছিলি জানতাম কিন্তু তাই বলে এতোটা নিচে নেমে যাবি জানা ছিলো না।” বলেই আবিরের বাসা থেকে বের হয়ে যায় মিশি।

চলবে……..

প্রতিশোধ পার্ট_১

0

প্রতিশোধ
পার্ট_১

জামিয়া_পারভীন

__স্যার, অনেক কস্ট করে খুঁজে পেয়েছি বলেই আবিরের সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় মেয়েটি কে। ভার্সিটি থেকে বাসা যাওয়ার পথে মেয়েটাকে কে কিডন্যাপ করে আনে আবিরের পাঠানো গুন্ডারা। আবিরের ইশারা তে সবাই চলে যায়, আর মেয়েটা ততোক্ষণে চিল্লিয়ে বলে ” কলেজে সবার সামনে ভদ্রতার মুখোশ পড়ে থাকা মানুষ টাই কি আপনি স্যার, কিসের জন্য আমাকে এখানে তুলে এনেছেন, কি দোষ করেছি আমি, কি করতে চান আপনি ” এক দমে কথা গুলি বলে মেয়েটা ।

__ ” আমি কি বলবো, যা বলার সব টাই বলবে তুমি, আমি রেকর্ড অন করে রেখেছি, যা যা অন্যায় আমার সাথে করেছো তার সব টাই স্বীকার করো, স্বসম্মানে তোমাকে এখান থেকে মুক্তি দিবো, আর যদি না শুনো, সব স্বীকার না করো তো তোমার কি হাল করবো তা ভাবতেই পারবেনা তুমি। ” আবির মেয়েটাকে কে বলে।

__ মেয়েটা অবাক হয়ে কথা গুলো শুনে বলে ” এক্সিউজ মি স্যার, আমি আমার সজ্ঞানে আপনার সাথে কোন অন্যায় করিনি “।

__ “এতো বড় মিথ্যা কথা ” বলেই মেয়েটার গলা টিপে ধরে আবির। “ভালোই ভালোই সব স্বীকার করে নাও, নইলে নিজ মুখ আর সমাজে দেখাতে পারবেনা তুমি “।

__ “আমি কোন অন্যায় করিনি স্যার, আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে, আপনার দুটি পায়ে পড়ি আমার ক্ষতি করবেন না, দয়া করুন আমার উপর ” কাঁদতে থাকে মেয়েটা।

__ মেয়েটার কান্না আবিরের মন ভেদ করেনা, কারণ মেয়েটা যে অন্যায় তার সাথে করেছে সে শাস্তি মেয়েটি কে পেতেই হবে ভেবেই মেয়েটা কে টানতে টানতে দোতলায় নিয়ে যায়। ফুল ভলিউম এ ঘরে গান ছেড়ে দেয় আবির যাতে মেয়ের চিৎকার কারো কানে না যায়।

__” কি করছেন কি, ছাড়ুন বলছি। আমার এমন কোন ক্ষতি করবেন না যাতে আপনাকে সারাটা জীবন পশতাতে হয় ”

__ ” কি বললে তুমি, আমি পশতাবো না, সব স্বীকার না করে এবার তুমি পশতাবে ”
বলেই মেয়েটাকে বিছানায় ফেলে দেয়, আবির তার শার্ট খোলে ।

__ ” দেখেন আমি কিছু করিনি, প্লিজ ছেড়ে দিন। আমাকে প্লিজ ছাড়ুন, আমি যা করিনি তা কিভাবে স্বীকার করবো। প্লিজ ছাড়ুন, আল্লাহ একি পরীক্ষা নিচ্ছেন আমার। এই বিপদ থেকে রক্ষা করুন আল্লাহ, দয়া করুন। ” কিছুক্ষণ পরে জ্ঞান হারায় মেয়েটি।

মেয়েটার চিৎকার আবিরের কান ভেদ করেনি। এই মেয়ে আবিরের নামে মিথ্যা মামলা করে, ধর্ষণের। অথচ আবির ওকে চিনতোই না, কখনো দেখিনি। অথচ এই মেয়ে গতকাল আবিরের নামে কোর্টে মিথ্যা বলে, আবির নাকি তাকে রেপ করেছে। কথাগুলো ভাবতেই ঘৃণা আসে আবিরের, “বেশ করেছি যা করেছি, মিথ্যা মামলা তে আমার যা মানহানী করেছে সেটাই সত্য করে দিলাম। ”

__ গান বন্ধ করে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার শেষ এ নিচে আসে। এসেই প্রায়ই ১০০ টি মিসকল দেখে ফোনে।
কল ব্যাক করতে যাবে তখন আবারো আসাদের ফোন আসে। রিসিভ করতেই….

__ “স্যার বড় ভুল হয়ে গেছে স্যার, মাফ করে দেন স্যার। ” আসাদ বলে (আবিরের পোষা গুন্ডার নাম আসাদ)

__ ” কি যা তা বলছো, যা বলার সোজাসুজি ভাবে বলো ” আবির।

__ “স্যার আসলে ওই মেয়েটা, মিস তৃণা আমার সাথে দাঁড়িয়ে আছে গেট টা একটু খুলবেন স্যার সব বুঝিয়ে বলছি “।

__ আবির তাড়াতাড়ি গেট খুলে অবাক হয়ে যায়। এ যেন মেয়েটার কার্বন কপি, যাকে সে রেপ করেছে। আবির কিছু বুঝার আগেই তৃণা আবিরের পায়ে ধরে
” স্যার আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমি আসলে বান্ধবী দের সাথে বেট ধরে আপনার নামে মিথ্যা মামলা করেছি, আমার কোন দোষ নেই স্যার, ওদের জন্য রাগান্বিত হয়ে ভুল করেছি, স্যার মাফ করে দেন ” বলেই কান্না করতে থাকে।

__ আবির তৃণা কে জোর করে উঠিয়ে সজোরে এক টা থাপ্পড় দেয় আর বলে, ‘লজ্জা থাকলে কেশ টা তুলে নিবে । নইলে এমন জঘন্য অপরাধের জন্য টিসি দেয়ার ব্যবস্থা করবো, জীবনেও কোথাও পড়ার সুযোগ পাবেনা “।

__ ” স্যার আমি কেশ তুলে নিয়েছি, স্যার আমায় ছেড়ে দেন প্লিজ ” তৃণা

__ “দূর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে, কখনো আমার সামনে আসলে খুন করে ফেলবো। ” আবির

__ এরপর আবির আসাদ কে বলে, তুই ওকে কিভাবে পেলি তাহলে আগে যাকে তুলে এনেছিস সে কে?

__ জানিনা স্যার, ওই মেয়েটা আসলে কে? দুজনে একিই রকম হলো কিভাবে, কিছুই বুঝতে পারছিনা স্যার, ক্ষমা করে দেন স্যার।

__ “দূর হয়ে যা সামনে থেকে, তোকেও কখনো সামনে পেলে তোকেও খুন করে ফেলবো। ”

__আসাদ কোন ক্রমে পালিয়ে আসে, সে জানে মিঃ আবির চৌধুরী কতোটা ভালো মানুষ আবার কতো টা ভয়ংকর রাগী।

__আবির পাপ বোধ এ জ্বলছে, তাও সে উপরে গেলো। দেখে মেয়েটার জ্ঞান এখনও আসেনি, নিজেই নিজেকে দোষারপ করছে। এতোটা জঘন্য কাজ সে কখনো করবে বলে ভাবেনি।

__ আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে আবির, এরপর মেয়েটাকে কোলে তুলে নেয়। দেখে মেয়েটার শরীরে অনেক যায়গা ই ছিলে গিয়ে রক্ত বের হয়েছে। নিজের অজান্তেই একটা নির্দোষ কে এতো বড় শাস্তি দিয়ে সে নিজেই কস্ট পাচ্ছে। ওয়াশরুমে নিয়ে শাওয়ার করিয়ে নিজেই মাথা মুছিয়ে দিয়ে শাড়িটা পড়িয়ে দেয়। এরপর কাটা অংশ গুলো তে এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে দেয়।

__ মেয়েটার পাশে বসে থাকে আবির, নিজের অপরাধে ভুগতে ভুগতে মেয়েটার পাশে বসা অবস্থাতেই ঘুমিয়ে যায় আবির।

চলবে…..

#জামিয়া_পারভীন

ছায়া_পার্ট_6 (শেষ)

0

ছায়া_পার্ট_6 (শেষ)

জামিয়া_পারভীন

নয়ন আর মিরা গোরস্তানের দিকে যাচ্ছে, মাসুদের ছায়া ও পাশে আছে নইলে মিরা ভয় পাবে এটা জানতো মাসুদ। আর নয়ন ও অনেক টা ভয় পাই, শুধুমাত্র মিরার জন্য এই ঝুকি নিতে বাধ্য হয়েছে সে। মাসুদ নিজেই দেখিয়ে দিলো তার কবর কোনটা। এই গোরস্থানটা অনেক পাহারা দেয়া থাকে তাই খুব সাবধানে কবর খুড়ছে নয়ন। অমাবস্যা রাত হওয়াতে কিছুই দেখা যায়না, চারিদিকে আধার। কবরের মাটি সরিয়ে, বাশ গুলি সরিয়ে লাশ টা দেখলো মিরা আর নয়ন। কথা মতো মিরাকেই তাবিজ টা খুলতে হবে, কিন্তু মিরা খুব ভয় পাচ্ছে, তাও সে লাশের কাফন সরায়। মাসুদের মুখ টা দেখতে পায় মিরা তখন খেয়াল করে মাসুদ এর ছায়া আর পাশে নাই। তাবিজে হাত দিতেই লাশ টা মিরার হাত ধরে ফেলে আর চোখ খুলে তাকায়। মিরা তাও তাবিজ ছাড়েনা, শক্ত করে ধরে থাকে। হটাৎ মিরার মাথায় খুব জোরে আঘাত লাগে, মিরা বুঝতে পারে তান্ত্রিক এর জ্বীন মাথায় আঘাত করেছে এতে মিরা নয়নের গায়ে পড়ে গেলেও তাবিজ থেকে হাত সরায় না।

“এই তাবিজ খোলা কি এতো ই সহজ, কি ভাবছিলি আমরা তোকে খেয়াল করছিনা ” তান্ত্রিক বলে।
আমরা তোকে ভয় পাইনা বলেই নয়ন দোয়া পড়তে শুরু করে এতে তান্ত্রিক এর যাদু অনেক টা দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন মিরার হাত দিয়ে ধরেই নয়ন তাবিজ টা টেনে খুলে নেয়। ততোক্ষণে আসগরের বুকে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে, সেও এসেছিলো তান্ত্রিক এর সাথে। তান্ত্রিক বলে এবার আর তোমার রক্ষা হবেনা আসগর যদি না তুমি ওই তাবিজ নিতে পারো। ততোক্ষণে এলাকাতে বেশ সাড়া পড়ে গেছে, অনেক মানুষ জড় হয়ে গেছে। আসগর বুঝে নেয় এবার তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। নয়ন মিরার হাত দিয়েই তাবিজ টা তুলে এনে সাথে থাকা গ্যাস লাইট দিয়ে তাবিজে আগুন দেয়। তখন মিরার জ্ঞান ফিরে আসে, মিরা আকাশের দিকে তাকাতেই মাসুদের ছায়া কে দেখে। ছায়া টা যেন অনেক হাসছে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য, মিরাও একটু হাসে, ছায়া টা বিলীন হয়ে যায়।

তখন খেয়াল করে আসগর মাটিতে পড়ে আছে, বুঝতে বাকি নাই যে আসগর মারা গেছে। এলাকাবাসী তান্ত্রিক কে বেধে ফেলে তখন পুলিশ কেও ডাকে তারা। মিরা, নয়ন আর কবিরাজ তিনজনে মিলে তান্ত্রিক এর সব অপকর্ম এর কথা বলে। মাসুদের লাশ দেখেই সবাই বুঝে ফেলে আসল অপরাধী কে। সেই অপরাধে আলতাফ হোসেন কে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় আর আসগরের লাশ ও মর্গে নিয়ে যায়।

রাত কাটতে বেশি বাকি নেয়, মিরার বিয়ে না হলে মিরাও মারা যাবে। নয়ন আগেই মিরার বাবা, মা কে ফোনে ডেকে নেয়। তারাও চলে আসে গোরস্থানে, মিরাকে আজ রাতেই বিয়ে দিতে হবে এটা কবিরাজ বলে সময় মাত্র ১৫ মিনিট আছে ফজরের আজানের আগেই বিয়ে দিতে হবে। কবিরাজ মশাই আগেই কাজী ডেকে রেখেছিলেন, তার মাধ্যমেই নয়ন আর মিরার বিয়েটা হয়ে যায়।
বিয়ের পর সব বিপদ কেটে গেলেও মাথা টা মাঝে মাঝে ঘোরে। তার নিজেকেই দোষী ভাবে মাসুদের জন্যে, অল্প সময়ের পরিচিত হওয়া ছায়া কে খুব মিস করে সে। তিন বছর পর মিরা আর নয়নের এক ছেলে হয়, নাম রাখে মাসুদ। মাসুদ এখনো বেচে আছে মিরার কল্পনায়।

ছায়া_পার্ট_5

0

ছায়া_পার্ট_5

জামিয়া_পারভীন

মানুষের জীবনে কখন কি হয় তা কেউ ই জানেনা, এটা মেনে নিয়েই নয়ন আর মিরা ঠিক করে আজ রাত্রেই মাসুদের কবর খুড়বে । মিরা আমি আর নয়ন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, যে আমার দায়িত্ব নিতে চেয়েছে। তবে কবিরাজ খুব সাবধানে কাজ করতে বলেছে আর সেই জন্যই মাসুদ কে সকালে মনে মনে ডাকতে শুরু করি কিন্তু মাসুদ তো এখন আসতে পারবে না। কিন্তু মাসুদ কে যে ডাকতেই হবে যেভাবেই হোক যানা প্রয়োজন কিভাবে মাসুদ মারা গেছে। এটা ভাবতে ভাবতেই তন্দ্রা আসে, স্বপ্ন আসে মাসুদ সন্ধ্যায় দেখা করবে বলে জানায়। ঘুম টা ছুটে যায়, একটু আশ্বস্ত হই।

মায়ের ডাকে ঘোর কাটে, খেয়ে নিই, মা বলে কিরে এতো কিসের টেনশন বল আমাকে। আমি বলি তেমন কিছুই না মা, আজ একটা কাজে বিকেলে বাইরে যেতে হবে ফিরতে রাত হতে পারে। মায়ের টেনশন রাত হবে শুনে, বলে রাত না করলে হয় না। আমি বলি কাজ টা শেষ করেই চলে আসবো, বলেই বিকেলে বের হয়ে যায়। নয়ন আসবে সন্ধ্যায়, কেননা সন্ধ্যায় আসতে বলেছি আর কাজ শুরু হবে রাত ১০ টা তে। আগে ভাগেই গোরস্তানের দিকে যেতে হবে তার আগে যেতে হবে মাসুদ এর কাছে।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে, চারিদিকে আধার ছড়িয়ে পড়ছে এরই মাঝে মাসুদ এসে হাজির হয় বুঝতেই পারলাম না মাসুদ আসলো কখন। মাসুদ এসেই বলে ডাকছিলে যখন তাই তাড়াতাড়ি ই চলে আসলাম বলেই আমার গলা টিপে ধরে, আর বলতে শুরু করে কিরে তোর এতো সাহস আমাকে দুনিয়া থেকে মুক্ত করতে এসেছিস তুই। তোকে আজ মেরে ফেলবো, আর আমার করে রাখবো সব সময়ের জন্য। আমি চিৎকার করার চেস্টা করেও পারিনা। তখনই নয়ন এসে আমাকে ঝাকি দেয়, কি হয়েছে, এমন করছিস কেন, বলে নয়ন।

না তেমন কিছুই না, শোন তুই রিস্ক নিস না, বাসায় চলে যা। আমাকে একেলা ছেড়ে দে, আমি একাই সব কিছু পারবো।
না তা হয়না, কথা দিয়েছি তোকে রক্ষা করবো, কথা রাখবো আমি আমার। কিছুক্ষণের মাঝে মাসুদ আবার আসে, বলে আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো, সরি।

মানে কি বলছো তাহলে একটু আগে কে এসে আমার গলা টিপে ধরেছিলো। বুঝেছি তারা টের পেয়ে গিয়েছে, তোমার সাথে আমি শেষ মুহুর্ত ছায়ার মতো থাকবো। তোমার আর ক্ষতি হতে দিবোনা। শুনতে চাও না আমি কিভাবে মারা গেছি? হ্যাঁ বলো, সেই অপেক্ষা তেই বসে আছি এখানে।

তোমাকে তোমার স্বামী আসগর আর শ্বশুর আলতাফ হোসেন মিলে খুন করার নীল নকশা করে। কিভাবে , আহ এতো অধৈর্য হচ্ছো কেনো ? সরি, বলো…..
সেইদিন বাসাতে এক তান্ত্রিক ডাকে, আমি দেখে খুব অবাক হই আর সব টা জানার জন্য ওই ঘরে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকি, কি হয় না হয় সব জানতে খুব ইচ্ছে করছিলো।

তান্ত্রিক অনেক্ষণ মন্ত্র পড়ে, পাশে বসে আছে আসগর ভাই, আর আলতাফ হোসেন। মন্ত্রের এক পর্যায়ে তোমার নাম কানে আসে, বেশ অবাক হই। বুঝতে বাকি রইলো না, হয় তোমাকে খুন করবে না হয় তোমাকে পাগল বানিয়ে দিবে।

এবার তান্ত্রিক কথা বলা শুরু করে, বল, মেয়ের নাম বল। আসগর বলে, মিরা ওর নাম। সব কাজ হয়ে যাবে শুধু একটা লাশ লাগবে, এখুনি মৃত এমন লাশ। আসগর ভয় পেয়ে বলে, লাশ কোথায় পাবো তান্ত্রিক মহাশয়। কেনো এই ঘরের খাটের নিচেই লুকিয়ে আছে যেই জন তাকে হত্যা কর। তাহলেই ওই পুরুষের গলায় তাবিজ বেধে দিবো, আর তোর বউ মিরা কে ওই লাশের আত্মাই মেরে ফেলবে। এবার বেশ ভয়ে পেয়ে যায় আমি ( মাসুদ)। বুঝেছিলাম সেদিনই আমার শেষ দিন, আসগর ভাই এতোটুকুও মায়া করেনি আমার উপর, পশুর মতো আমার গলায় ফাস দিয়ে হত্যা করে। এরপর বুকের উপর তিনটা ছিদ্র করে, খুব কস্ট হচ্ছিলো যানো সেদিন। পরে সেই ছিদ্র দিয়ে তাবিজ গলায় বাধে, আর বলে দেয় এই তাবিজ যদি কেউ খুলে তো আসগরের মৃত্যু হবে , সাথে থাকা সেই জ্বীন টাও মারা যাবে, আর রাতের আধারেই দাফন করে দেয় আমায় । যাদের বাবা, ভাই বলে ডাকতাম, তাদের কাছে কতো টা নিষ্ঠুর মৃত্যু হয়েছে আমার বলতে পারো।

মিরা আর নয়নের চোখ দিয়ে জল পড়ছে। কিই বা করবে, একজন নিষ্পাপ মানুষের লাশ তার সামনে নিজের মৃত্যুর বর্ননা দিচ্ছে ???

চলবে…..

ছায়া_পার্ট_৪

0

ছায়া_পার্ট_৪

জামিয়া_পারভীন

মাসুদ নিজের কথা বলতে শুরু করে…
মাসুদের জন্ম কোথায় তা সে জানে না। ছোট বেলা থেকেই এতিমখানা তে বড় হয়। ব্রিলিয়ান্ট হওয়াতে এতিমখানা এর মালিক তাকে নিজ দায়িত্ব তে নিয়ে নেয় আর হাফিজিয়া মাদ্রাসা তে ভর্তি করে। সে সেখানে ই হাফেজ হয় পরে তাকে আর পড়াশোনা না করিয়ে হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে রেখে দেয় মালিক আলতাফ হোসেন।

মানে কোন আলতাফ হোসেন, আমার শ্বশুর মশাই। ঠিক বলেছো তুমি, আমিই সেই ছেলে যাকে তোমার শ্বশুর মশাই নিজ ছেলের মতো করে বড় করেছেন।

এরপর কি হলো, আমি কিছুই ভাবতে পারছিনা। মাসুদ সব দুশ্চিন্তা কমিয়ে দিতে বলে আমাকে আর বলতে শুরু করে যে মালিক অনেক ভালোবাসতেন তাকে, একেবারে নিজ সন্তানের চেয়েও বেশি যত্ন করতেন। নিজ সন্তান দের থেকে কখনো আলাদা চোখে দেখেন নি তিনি। যেদিন মেজো ভাই, মানে উনার সব সন্তাদের ছোট ছিলাম আমি তাই তাদের ভাই বলেই ডাকতাম, মেজো ভাইয়ের বিয়ের দিন আমি ছিলাম না। খুব কাজ এর জন্য আসতে পারিনি তাই তোমায় আর দেখা হয়নি আসলে। তুমিইই সেই ভাগ্যবতী মেয়ে যাকে ভাবি হিসেবে পাই। কিন্তু মেজো ভাই এর চরিত্র খারাপ ছিলো ছোট থেকেই। আসগর ভাই ছোট থেকেই নারীর নেশা ছিলো। সে কথা আমি জেনেও কাউকে বলিনি কখনো, ভাই বলে সম্মান করে গিয়েছি সব সময়।
ছিঃ মানুষ না আসলেই জানোয়ার এর পর্যায়ে তোমার ভাই। হুম হয়তোবা ঠিকই বলেছো, সেই জন্যই হয়ত বিয়ের দিন আমায় ডাকেনি বা আমাকে ব্যস্ত করে রাখা হয়েছিলো। জানলে হয়তো একটা মেয়ের জীবন নস্ট হতে দিতাম না।

হয়তো আল্লাহ আমার বড় পরীক্ষা নিচ্ছেন তাই আমি এই বিয়েতে বাধ্য হই। নইলে হয়তো অন্য রকম হতে পারতো আমার জীবন টা। হুম তোমায় প্রথম দেখি তোমার বিয়ের ৩ দিন পর। কি অত্যাচার টাই না করছিলো তোমার উপর, কিন্তু সেদিন কিছুই বলার সাহস হয়নি। তুমি আসলেই অনেক সাহসি তাই সংসার ত্যাগ করতে পেরেছো।

সাহসী কিনা জানিনা, তবে অন্যায় কখনো মেনে নিতে পারিনি আর কখনো মেনে নিবোও না। তার মুখোশ আমি খুলেই ছাড়বো, প্রয়োজন এ তাকে খুন করে নিজে জেলে যাবো।

না তার প্রয়োজন হবেনা, কবিরাজ যা বলেছে তাই করো তাহলেই হবে। কিন্তু তোমাকে হত্যা করলো কেনো সেটা না শুনে আমি তোমার আত্মা কে মুক্ত করতে পারিনা। আমার আত্মা কে একটা জ্বীনের শরীর এ প্রবেশ করানো হয়েছে আর সেই জ্বীন তোমার যেকোনো মুহুর্তে ক্ষতি করতে পারে। এবার মিরা খুব ভয় পেয়ে যায়। আমার নাম মিরা, বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে ছিলাম, ভাইয়ের আদরের বোন। কিন্তু আজ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।
চলবে……

 

ছায়া_পার্ট_৩

0

ছায়া_পার্ট_৩

জামিয়া_পারভীন

ডাঃ তখন আমাকে মানসিক চিকিৎসা নিতে বলে আর ইলেক্ট্রিক শক দিতে বলে। কিন্তু আমি জানি আমার এসব কিছুই লাগবেনা। আমাকে ফাসানো হচ্ছে , সুযোগ বুঝে মা কে ব্যাপার টা খুলে বলি। আমার সাথে যা যা হয়েছে সব টাই জানাই মা কে। মা বলে ঠিক আছে বলে ডাঃ কে বলে শক বা ট্রিটমেন্ট নিবোনা বলে আমাকে বাচিয়ে নিয়ে আনে। শক দিয়ে আমাকে পাগল করার চেস্টা করা হয় তা জানতে পারি সেদিন রাত্রে মাসুদ আবার এসে বলে গেছে আর আমাকে সাবধান করে গেছে। পরের দিন আমি কলেজ গিয়ে আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড কে বলি এই সব কথা। সে আমাকে হেল্প করবে বলে।

আমার ফ্রেন্ড এক কবিরাজের সাথে কথা বলে। আমাকে নিয়ে যায় উনার কাছে, উনি আমাকে অনেক্ষণ দেখে বলে আমি অনেক বিপদে আছি। যে ভাবেই হোক আমাকে রক্ষা পেতেই হবে। মুক্তি পাওয়ার জন্য আমি সব কিছু করতে রাজি হই।

কবিরাজ আমার ফ্রেন্ড সাগর কে বলে আমার নামে কিছু তাবিজ পুতে রেখেছে গোরস্তানের পাশেই। সেখানে কিছুদিন আগে প্রায়ই মাস খানেক আগে মাসুদ নামের এক ছেলে মারা গেছে। তারই লাশের গলাতে আমার ক্ষতি করার তাবিজ দিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি আরোও অবাক হলাম এই সেই ছেলে মাসুদ যে আমাকে দেখা দেয়, সাবধানে থাকতে বলে, কিন্তু বুঝতে পারছিনা কি বলবো, কি হচ্ছে আমার সাথে। আমি কবিরাজ কে সব বলি, তখন কবিরাজ আমাকে আর সাগরকে বলে গোরস্তানে গিয়ে মাসুদের গলা থেকে তাবিজ টা খুলতে হবে তাহলেই আমি সব অশরীরী ছায়া থেকে মুক্ত হতে পারবো। আর এই তাবিজ খুলতে পারলেই আমার সেই কাল্পিট স্বামীর মৃত্যু ঘটবে আর তাবিজ খুলার পরপরই আমাকে নতুন করে বিয়ে করতে হবে। এই কথা শুনে সাগর বিয়েতে রাজি হয়ে যায়, কেননা সে আমাকে সব সময় হ্যাপি দেখতে চায়। খুব ভালোবাসতো ছেলেটা আমায় কিন্তু আমি নিজের সুখ ত্যাগ করে অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে আজ নিজেই বিপদে আছি।

এখন আমাদের দুইজনকেই সেই তাবিজ উদ্ধারের কাজে যেতে হবে এতে আমাদের দুইজনের ও ক্ষতি হতে পারে। আর এইসব কথা যেন কেউইই না যানতে পারে সেই দিকে খেয়াল রাখতে বলে।

আমরা বাসায় চলে আসি, সেদিন রাত্রে মাসুদ এসে বলে তুমি আর যাই করোনা কেনো আমাকে তোমার থেকে আলাদা করিও না প্লিজ। আমি বলি তুমি কিভাবে জানলে, সে বলে আমি সব সময় তোমার আশেপাশে থাকি। হ্যাঁ আমি মৃত কিন্তু তোমার ক্ষতি হতে দিবোনা। আমার ছায়া সব সময় তোমাকে সাহায্য করতে পারবে। আমাকে সরিয়ে দিওনা, আর যদি সরিয়েই দাও তাহলে আমার খুনীর শাস্তি দিতে হবে এই ওয়াদা করো।

কে তোমাকে খুন করেছে মাসুদ, তুমিই বা কে সব খুলে বলো আমাকে আমি যতটুকু পারি সব করবো তোমার জন্য।
চলবে…………

 

ছায়া পার্ট2

0

ছায়া পার্ট2

#জামিয়া_পারভীন
রাতে বাসায় আসলাম, খাওয়া দাওয়া করে আবারো গল্প পড়ার নেশা থেকে গল্প পড়া শুরু করি। খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ি আমি। হটাৎ সামনে খেয়াল করি মাসুদ দাঁড়িয়ে আছে। আমি চিৎকার করার আগেই মাসুদ আমার মুখ চেপে ধরে আর বলে চুপ ভয় পেয়ো না, আমি তোমার ক্ষতি করবোনা। একটু সাহস নিয়ে বলি কে আপনি, সে বলে আমি মানুষ না জ্বীন। আমাকে প্রথমে পাঠানো হয়েছে তোমাকে হত্যা করতে কিন্তু তোমার এতো সুন্দর নিষ্পাপ চেহেরা দেখার পর আমি আর তা পারিনি। আমাকে হত্যা করতে চান কেনো? কে ই বা আপনাকে পাঠালো আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা একটু বুঝিয়ে বলবেন কি? এতো ভয় পাচ্ছো কেনো? বলে মাসুদ, সে পরে হবে আগে বলো তো তুমি কি কারোও ক্ষতি করেছো কখনো।

নিজ স্মৃতি মনে করতে থাকি কি ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে আমার জীবনে। মাসুদ আমাকে চুপ থাকতে দেখে বলে কি হলো সাড়া দাও আমি তোমার কথা শুনতে চাই। আমি বলতে শুরু করি….

আমি স্বেচ্ছায় কারোও কোন ক্ষতি করিনি করলেও সেটা নিজ অজান্তে হয়ে গেছে তাই হয়তো বিপদ আমার পিছু ছাড়ছে না।
হুম তুমি ভুল করেছো বিয়ে করে, যদি বিয়ে টা না করতে তাহলে কেউউইই তোমার ক্ষতি করতো না। কিভাবে আটকাটাম বিয়েটা, আমি তো মেয়ে, সবার কথা শুনতেই বাধ্য, আমার নাই কোন স্বাধীনতা, নাই বা আছে কোন ডিসিশন নেয়ার অধিকার, সবাই যে যার মতো আমার উপর বোঝা চাপিয়ে দেয় সেটা মানতে পারলে আমি ভালো নইলেই আমি যে খুব খারাপ।
আমি সেদিন ই তোমার সামনে আসিনি জানো, আমি তোমার পাশে আছি প্রায়ই এক মাস থেকে, বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখিয়ে তোমাকে বশে আনার কথা ছিলো আমার, এরপর তোমাকে হত্যা করার কথা ছিলো কিন্তু পারিনি কেনো জানো। তোমার কষ্ট আমাকে খুব ব্যথিত করেছে। তুমি প্রথম থেকেই সব কিছুই বলো আমি তোমাকে সাহায্য করতেও পারি।

আমি আবার ও বলা শুরু করি…
আমি একজন কে খুব ভালোবাসতাম, নিজের চেয়েও বেশি কিন্তু সব ভালোবাসা বুঝি কপালে থাকে না। হটাৎ বিয়েটা ঠিক হয় এক দিনের মাঝেই, আমি বাসা থেকে পালাতে চেয়েও পালাইনি শুধু মা বাবার সম্মানের কথা ভেবে কিন্তু এ বিয়ের পরিণাম যে এতো খারাপ হবে তা জানলে বিয়ে করতাম না। বিয়ে টা হয়েই যায়, এক বুক কষ্ট বুকে পাথর চাপা দিয়ে স্বামীর সংসার এ যায়। সেখানে স্বামীর ভালোবাসা না পেয়ে পাই অপমান আমি মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়ে বলে।

এরপর শুরু হয় শারীরিক, মানসিক নির্যাতন। সবটা সহ্য করতে না পেরে কিছুদিন সংসার করে চলে আসি বাসায়।
কিন্তু আমি গরীব ঘরের তো কি হয়েছে আমি শিক্ষিত সেই জন্য বলে আসি নিজের পেটের খাবার নিজেই করে নিতে পারবো আমি কারো অপমান নিতে পারবোনা। এই কথা টাই হয়ে যায় কাল, এরপর থেকেই একের পর এক প্রব্লেম এ পড়েছি আমি আর সব শেষ এ আপনি এলেন সামনাসামনি আমাকে হত্যা করতে কি দোষ আমার, আমি মেয়ে বলে আজ আমাকে হত্যা করবে শুধু তারা ধনী বলে। টাকা আছে বলে টাকা দিয়ে কবিরাজ পুষে সেই কবিরাজ থেকে জ্বীন দিয়ে আমায় মেরে তাদের কি লাভ। আমি তো আর আমার আগের ভালোবাসার কাছে ফিরে যায় নি, শুধু শান্তি মতো বাচতেই চেয়েছিলাম।

এবার মাসুদ বলে হয়েছে থাক আর আজ কথা বলা সম্ভব না। আমাকে আজ যেতেই হবে, আর তুমি সাবধান এ থাকবে দুই টা দিন। এই দুইদিনের মাঝে বড় কিছু ঘটে যেতে পারে।

এতোক্ষণ বাসার সবাই আমাকে একা একা কথা বলতে দেখে আর মাসুদ কে তারা দেখতে না পেয়ে ভাবে আমি পাগল হয়ে গেছি। পরদিন আমাকে আমার পরিবার এর লোক জোর করে সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে নিয়ে যায়। কিন্তু আমি তো জানি আমার কিছু হয়নি আর সেখানে গিয়েই ঘটে গেলো আরোও বিপদ।

চলবে…..

ছায়া_পার্ট_১

0

ছায়া_পার্ট_১
জামিয়া_পারভীন

আমি বরাবর ই ভুতের গল্প এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি, কিন্তু গল্প পড়তে খুব পছন্দ করি। সেই সুবাদে গল্প পড়া শুরু করলে একের পর এক গল্প পড়তেই থাকি। কিন্তু কখন নিজেই অজান্তেই ভুতের গল্প পড়া শুরু করে দিই বুঝতেই পারিনি। কিন্তু গল্প পড়া শুরু হয়ে গেলে তার শেষ কি হবে সেটা না জানা পর্যন্ত থামি না। এমনি একদিন রাত ১:৩০ মিনিটে একটা গল্প খুব আগ্রহ নিয়ে পড়া শুরু করি। কিন্তু অর্ধেক পড়ার পরই বুঝতে পারি ভুল করে ভুতের গল্পে হাত দিয়ে ফেলেছে। একে তো রাত এর উপর আবার ভুতের গল্প কিন্তু নেশার জন্য শেষ জানতে গিয়ে পুরো গল্প পড়ে শেষ করতে বাজে রাত ২ :৩০। একে তো রাত গোটা বাড়ি আধার শুধু আমি জেগে ছিলাম ভুতের গল্পের জন্য। এমনি আমি প্রচুর ভয় পাই, গল্প পড়ে ভয় টা যেন বেড়েই চলেছে। এরপরই মনে হতে শুরু করলো আমার পিছে কি যেন হাটছে বারবার মাথা ঘুরিয়ে দেখতে লাগলাম কিছুই বুঝলাম না।

এরমাঝে টয়লেট যাবার প্রয়োজন হলো আমার আর পা নড়ে না যদি কিছু থাকে সেইই ভয়ে। এরই মাঝে মনে হলো রান্নাঘর ঘর থেকে কোন শব্দ আসছে। ভাবলাম কেউ জেগে আছে অন্তত কাজ টা সেরেই আসি। কিন্তু রান্নাঘর এর পাশ দিয়ে যেতে হয় টয়লেটে। যেতে গিয়ে হটাৎ রান্নাঘর এ চোখ পড়ে একটা কালো ছায়া আস্তে আস্তে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। ছায়া টা দেখেই খুব জোরে চিৎকার দিয়ে রুমে যায় কিন্তু কি আজব আমার চিৎকার নাকি বাসার কেউইই শুনতে পেলোনা।

খুব ভয় পেতে শুরু করলাম এবার আর মা মা বলে চিৎকার করি কিন্তু একিই গলা দিয়ে আমার ভয়েস বের হয় না। তারপর দেখি আবার সেই কালো ছায়া টা স্পষ্ট হতে থাকে আর তার ভয়ংকর রূপ প্রকাশ পেতে থাকে। কোন মানুষ এর অবয়ব নয় সেটা কেমন যেন বিদঘুটে দেখতে, ধোঁয়া এর মতো শরীর আর চোখ গুলি আগুনের ফু ল্ কি এর মতো। আগুনের চোখের মনি আবার মাঝে মাঝে লাল হয়ে যাচ্ছে আবার রক্তের মতো দাগ ও দেখা যাচ্ছে। অবয়ব টা আমার দিকে আসতে থাকে আর আমি চিৎকার করার চেষ্টা করেও পারিনা। অবয়ব টা খুব কাছে চলে আসলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

জ্ঞান ফিরে দেখি অনেকেই আমার সামনে বসা, নিজেকে আবিষ্কার করি হাসপাতালে, আমার চোখ খোলা তে অনেকেই খুব খুশি। পরে জানতে পারি মায়ের মুখে আমার তিন দিন জ্ঞান ছিলো না, আমি কিছু না বলেই চুপ ছিলাম কেননা তখনও অনেক জ্বর ছিলো আমার গায়ে। সেই ভয়ংকর মুহুর্তের কথা হটাৎ মনে পড়ে গেলো আর ভয়ে কাপতে থাকি।

আমাকে মা জিজ্ঞেস করে এখন এমন করছি কেনো কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারিনা। ভয়ের জন্যই কাউকে কিছু না বলে চুপ থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। পরে বলবো এমন টা ই ঠিক মনে করলাম। দুইদিন পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাসায় আসলাম। কিন্তু আমি আর আমার ঘরে যেতে চাচ্ছিনা। মা কে বললাম তোমার সাথে থাকবো, সেই রাতে মায়ের সাথেই ঘুমাতে গেলাম কিন্তু মাঝরাতে স্বপ্নে আবার সেইই ছায়া টা সামনে আসে।

ঘুমাতে পারছিলাম না তবে বুঝলাম আমার সাথে কোন খারাপ কিছু হতে চলেছে। পরদিন কলেজ এ গিয়ে আমার সব চেয়ে কাছের বন্ধুকে সব খুলে বললাম সেও কিছুটা অবাক হয়ে যায়।
পরে সে বন্ধু বলে নামাজ পড়তে, দোয়া পড়ে ফু দিতে আর সব সময় দোয়ার সাথেই থাকতে। আমি তার কথা শুনে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ি। বাসায় এসে নিজেকে নামাজ আর দোয়ার মাঝেই রাখলাম সারাদিন।

সেদিন আর কোন প্রব্লেম হয়নি কিন্তু বিপত্তি দেখা দিলো পরের দিন কলেজে গিয়ে। কলেজ থেকে কাজ শেষ এ ফিরতে একটু রাত হয়ে গেলো তখন মনে হলো আমার সাথে কিছু একটা আসছে সেটার একটু শব্দ হচ্ছে। পিছনে ঘুরলাম না দোয়া পড়া শুরু করলাম কিন্তু এবার সেই ছায়া আর পিছু ছাড়ে না। ভয় পেয়ে গেলাম কি করবো আর রাস্তাটাও বেশ নিরিবিলি মানুষ তো নাই যে কেউ হেল্প করবে।

এবার পিছনে ঘুরে দেখি একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে, কিছু না বলতেই এগিয়ে এসে বলে কোন হেল্প লাগবে নাকি। আমি তার দিকে তাকিয়ে অবাক হই একে তো আমি চিনিনা কে সে, আর দেখতেও অনেক সুন্দর যেন রাজকুমার। আর সে জানলোই বা কিভাবে যে আমি ভয় পাচ্ছি। আমার ঘোর কাটিয়ে সে বলে আমি মাসুদ, এই এলাকা তে নতুন আপনার ভয় লাগছে মনে হয় একা যেতে আমি কি আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসবো। আমি মনে সাহস নিয়ে বলি ওকে চলুন সে হাটতে লাগলো আমার সাথে। কিছুক্ষণ ভালোই কথা বললাম এরপর খেয়াল করি আমার ছায়া আছে রাস্তায় কিন্তু মাসুদের ছায়া নাই। এটা দেখে যেই পাশে ঘুরি কাউকেই আর দেখতে পাইনা। আমার ভয় আরোও বেড়ে গেলো, কোন রকম দোয়া পড়ে বাসায় আসি।

চলবে………