Thursday, June 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2444



রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ২৪

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ২৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

হুট করে ঘুম ভেঙে গেলো, মনে পড়লো আমি যে রাগ করে এসে বারান্দায় ঘুমিয়েছি। চোখ খুলে তাকাতেই নিজেকে বিছানায় দেখে বেশ অবাক হলাম। কিন্তু কাব্য তো পাশে নেই ও কোথায় গেলো। আচ্ছা আমাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ও বারান্দায় গিয়ে ঘুমায়নি তো? তাড়াতাড়ি উঠে বারান্দার দিকে পা বাড়ালাম, কিন্তু বারান্দার দরজাটা তো ভিতর থেকে বন্ধ তাহলে ও গেলো কোথায়?
কাব্য: আমি এখানে। (কাব্য’র কন্ঠ শুনে পিছনে তাকালাম, রুমের ভিতর এসে ঢুকলো হাতে খাবারের প্লেট। মাঝরাতে খিদে তাহলে লেগেছে ভালো ভাবেই)
কাব্য: এসো খাবে।
আমি: তোমাকে কি আমি বলেছি আমার খিদে লেগেছে?
কাব্য: সবকিছু বলতে হয় না।
আমি: ওহ তাই?
কাব্য: জ্বী তাই, ভালোবাসি তো তাই এইটুকু বুঝি। (প্লেট টেবিলে রেখে আমার কাছে এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো। বাহ্ সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলো)
কাব্য: ও তিলো খাবে চলো খুব খিদে লেগেছে।
আমি: তোমার খিদে লেগেছে তুমি গিয়ে খাও আমাকে ছাড়ো ঘুমাবো।
কাব্য: হু এখন তো আমাকে রেখে ঘুমাবেই আমি যে এতোক্ষণ বারান্দায় বসে ছিলাম তোমার পাশে এসব তো আর দেখনি।
আমি: বলেছিলাম নাকি যে আমার পাশে এসে বসো আমার ভয় লাগে।
কাব্য: আমার তিলো পাগলী ভয় পায় না আমি জানি সেটা, ভয় পেলে কি আর এতো গোয়েন্দাগিরি করতো।
আমি: ছাড়ো বলছি।
কাব্য: প্লিজ খাবে চলো। আমি জানি তোমার খুব খিদে লেগেছে।
আমি: ভালো হবে না কিন্তু…
কাব্য: ভালো তো হচ্ছেই না, আমি খিদে সহ্য করতে পারিনা পেটে ব্যথা করছে। (দ্যাত রাগ করে থাকারও উপায় নেই)
আমি: চলো।
কাব্য: হুহুহুহু রাগ শেষ।
আমি: এই মাঝরাতে পাগলের মতো হেসো না ভূতেরা ভয় পাবে।
কাব্য: আমার হাসি এতোটাই খারাপ যদি হয় তাহলে আমি যখন হাসি তখন আমার তিলো পাগলী মুগ্ধ নয়নে দেখে কেনো?
আমি: তিলো পাগলীর বয়েই গেছে এমন বানরমার্কা হাসি মুগ্ধ নয়নে দেখার জন্য।
কাব্য: হু।
আমি: হাতে ঠান্ডা লাগে হাত দিয়ে খেতে পারবো না খাইয়ে দাও।
কাব্য: রাগ করে নিজেকে কষ্ট দাও কেন বলতো, খেয়ে নিলেই পারতে।
আমি: তুমি পারবে আমাকে ছাড়া খেয়ে নিতে? (কাব্য কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ খাচ্ছে সাথে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে)
আমি: এতো রাতে খাবার গরম…
কাব্য: গরম করে এনেছি।
আমি: হু?
কাব্য: অবাক হচ্ছ কেন এই শীতের মধ্যে আমার বউ ঠান্ডা খাবার খাবে নাকি? (এখন বউ সন্দেহ করার সময় মনে ছিল না এসব। আর কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নিলাম)

খাওয়া শেষে কাব্য প্লেট রাখতে গেলো, আমি এসে চুপচাপ বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়লাম।
কাব্য: এতো দূরে শুয়ে আছ কেন?
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: তিলো ও তিলো প্লিজ আমার বুকে আসো।
আমি: একদম চিল্লাবা না ঘুমুতে দাও।
কাব্য: রেগে থাকাটা স্বাভাবিক কিন্তু আমি তো আমার ভুল বুঝতে পেরেছি ক্ষমা করা যায় না?
আমি: তোমার সবচেয়ে বড় ভুল তুমি আমার থেকে আবারো কথা লুকিয়েছ আর এর জন্য তুমি কখনো ক্ষমা পাবে না।
কাব্য: যখন আব্বু আম্মুর থেকে দূরে চলে এসেছিলাম তখন তো পুরো একা ছিলাম, হ্যাঁ ফারাবী অয়ন হিয়া ওরা ছিল কিন্তু আব্বু আম্মুর ভালোবাসাটা তো ছিল না। সব কষ্ট সয়ে নিয়ে বড় হয়েছি হিয়াকে আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছি। সব কিছুর মাঝে সম্পর্ক নামক জিনিসটার প্রতি ঘৃণা চলে এসেছিল কিন্তু তিনবছর আগে হুট করে আরশি আমার জীবনে আসে। জানো আরশির প্রতি খুব দূর্বল হয়ে পড়েছিলাম খুব ভালোবাসতাম ওকে আর আরশি আমার এই দূর্বলতার সুযোগ নেয়। দুই বছর সম্পর্ক ছিল, এই দুই বছরে আরশি আমার থেকে কতো কোটি টাকা নিয়েছে তুমি ভাবতেও পারবে না। কয়েকদিন পর বিয়ে করবো, নেক্সট মাসে বিয়ে করবো এসব বলে ও টাকা নিতো আমি ওকে বিশ্বাস করে দিতাম কিন্তু পরে জানতে পারি আরশির অন্য ছেলের সাথে রিলেশন আছে। তারপর একদিন আরশি আমাকে প্রচুর ড্রিংক করায় কিছু বুঝার মতো অবস্থায় ছিলাম না আমি, এই সুযোগে আরশি আমার সিগনেচার নিয়ে সবকিছু ওর নামে নিতে চেয়েছিল কিন্তু ফারাবী চলে আসাতে পারেনি। সেদিন আরশিকে পুলিশে দিয়েছিলাম আর সাথে ভালোবাসা সম্পর্ক এসবের প্রতি ঘৃণা জন্মেছিল মনে। কিন্তু এক বছর পর আবারো তুমি আসলে আমার জীবনে। বিশ্বাস করো তোমাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি আর তাই তোমাকে হারানোর ভয় সবসময় আমাকে তাড়া করতো এখনো করে, তাইতো আরশির কথাটা লুকিয়ে রেখেছিলাম ভয় হতো যদি ভুল বুঝে ছেড়ে চলে যাও। (কাব্য মাথা নিচু করে খুব কাঁদছে, নাহ আর রাগ করে থাকতে পারবো না। ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে জরিয়ে ধরলাম)
আমি: কেঁদো না আমি তোমাকে ছেড়ে কখনো যাবো না, শুধু প্লিজ আমার কাছে কিছু লুকিয়ে রেখো না। জানো তো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা খুব শক্ত একটা বাঁধন, কিন্তু এই বাঁধনটাও ছিঁড়ার ক্ষমতা রাখে সন্দেহ, রাগ, অভিমান। হ্যাঁ প্রত্যেকটা সম্পর্কে রাগ অভিমান থাকা প্রয়োজন কিন্তু সেটা দীর্ঘ সময়ের জন্য না, একজন রাগ করলে অন্য জন সেটা ভাঙিয়ে নিলে তবেই সম্পর্ক সুন্দর হয়। আর দুজনই যদি মনের মধ্যে রাগ অভিমান সন্দেহ এসব পুষে রাখে তাহলে সম্পর্কটা আস্তে আস্তে ভাঙতে শুরু করে। আর একটা কথা মনে রেখো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা একটা পবিত্র সম্পর্ক আর এই পবিত্রতা দিয়ে দুজন মিলে সব বিপদের মোকাবিলা করা যায় তাই কখনো ভালোবাসার মানুষের থেকে কিছু লুকাতে যেও না।
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: কি হলো এভাবে তাকিয়ে কি দেখছ?
কাব্য: আমি আমাদেরই শত্রুর কথায় তোমাকে সন্দেহ করেছি তাও ছোট ভাইকে নিয়ে এইটা তো অনেক বড় অন্যায়, তুমি আমার এতো বড় অন্যায়টা ক্ষমা করে দিলে?
আমি: হ্যাঁ দিলাম কারণ ভালোবাসা এমন এক জিনিস যা ক্ষমা করতে শিখায়। যদি তোমাকে ক্ষমা নাই করতে পারলাম তাহলে তোমাকে আমি আবার ভালোবাসি কিভাবে। আচ্ছা তুমিই বলো আমি যদি তোমাকে ক্ষমা না করে রাগটা মনের মধ্যে পুষে রাখতাম তাহলে কি আমাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতো না?
কাব্য: ক্ষমা করে দাও আমাকে।
আমি: হুম করে তো দিয়েছি তবে আমার একটা কথা রাখতে হবে তোমাকে।
কাব্য: কি?
আমি: আগামীকাল আব্বুকে আনতে যাবো তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে।
কাব্য: কিন্তু…
আমি: প্লিজ আর না অনেক হয়েছে। তুমি তো ভালোবাস আব্বু আম্মুকে তাহলে?
কাব্য: আচ্ছা তুমি আব্বুকে ফেলে কিভাবে?
আমি: তুমি যদি লুকিয়ে লুকিয়ে গিয়ে আব্বুকে দেখতে পারো তাহলে আমি আব্বুর সামান্য ঠিকানাটা জানতে পারবো না?
কাব্য: আব্বুর ঠিকানা তো শুধু আমিই জা…
আমি: তোমার ডায়েরি থেকে পেয়েছি। (কথাটা বলেই চোখ বন্ধ করে ফেললাম, ওর লাইব্রেরিতে ঢুকেছি না জানি কতোটা রেগে যাবে এখন। সত্যি কথাটা তো লুকিয়ে রাখা ঠিক না তাই বলে দিলাম কিন্তু কাব্য কোনো রাগ দেখাচ্ছে না কেন? এক চোখ দিয়ে ওর দিকে তাকালাম, ও তো হাসছে)
আমি: এই তুমি হাসছ কেন?
কাব্য: তিলো তাহলে ডাক্তারবাবুকে ভয় পায়।
আমি: হুহ মুটেও না।
কাব্য: দেখলাম তো। আচ্ছা ডায়েরি কোথায় পেয়েছ।
আমি: যেখানে রাখো সেখানে পেয়েছি।
কাব্য: যেহেতু আব্বুকে ফিরিয়ে আনতে চাইছ তাই আর কোনো প্রশ্ন করবো না কিন্তু আব্বু আসবেন তো?
আমি: অপরাধ উনারা করেছিলেন তাই আমার বিশ্বাস আসবেন।
কাব্য: ঠিক আছে আমি যাব কিন্তু আম্মু?
আমি: আম্মুকেও খুঁজে বের করবো।
কাব্য: আমিও তো জানিনা আম্মু কোথায় আছেন বা বেচ…
আমি: প্লিজ এসব বলো না আমি আম্মুকে ঠিক খুঁজে বের করবো।
কাব্য: হুম।
আমি: এবার ঘুমুতে দাও প্লিজ।

বিছানায় এসে শুতেই কাব্য’র ফোন বেজে উঠলো, এতো রাতে কে ফোন করলো?
আমি: কে ফোন দিয়েছে?
কাব্য: শুভ্রা।
আমি: আমার হাতে দাও। (কাব্য’র থেকে ফোন এনে আমি রিসিভ করলাম)
শুভ্রা: কাব্য শুননা আ…
আমি: মাঝরাতে ফোন দিয়ে ন্যাকামি হচ্ছে।
শুভ্রা: এই তুমি ফোন রিসিভ করেছ কেন আর তুমি কাব্য’র কাছে নাকি? তোমাদের তো একসাথে থাকার কথা না।
আমি: ওমা তাই বুঝি, তাহলে কাব্য’র বুকে কি আমার আত্মা ঘুমাচ্ছে?
শুভ্রা: আমি তো তোমাদের আলাদা করার জন্য পি…
আমি: আমাদের আলাদা করা এতো সহজ না।
শুভ্রা: শুনো আমি কাব্য’কে ভালোবাসি আর তোমাদের ডিভোর্সটা খুব তাড়াতাড়ি করাবো এখন ওর বুক থেকে সরো বলছি।
আমি: ডাক্তারবাবু আমাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরো তো।
শুভ্রা: তিলোত্তমা আমি কিন্তু তোকে খুন করবো। (আরে কাব্য দেখি সত্যি সত্যি দুষ্টুমি শুরু করে দিছে আমি তো শুভ্রাকে রাগানোর জন্য বলেছি। কাব্য’কে সরিয়ে দিতে চাইলাম ও উল্টো আমাকে জরিয়ে ধরে আমার গলায় নাক ঘষতে শুরু করেছে)
শুভ্রা: কিরে কথা বলছিস না কেন ভয় পেয়েছিস খুন এর কথা শুনে?
আমি: স্বামী যদি বুকে জরিয়ে ধরে এভাবে আদর করে তাহলে কি মুখ দিয়ে কথা আসবে তুমিই বলো তো?
শুভ্রা: আমি যখন বলেছি তোদের আলাদা করবো তাহলে করবোই প্রয়োজন হলে আবারো আরশির সাহায্য নিবো।
আমি: তোমাদের হাতে বেশি সময় নেই যা করার করে নাও কারণ খুব তাড়াতাড়ি আমি তোমাদের পুলিশে দিবো।
কাব্য: তিলো ফোনটা রাখো তো তোমাকে একটু ভালোভাবে আদর করতে দাও।
শুভ্রা: কাব্য কি বলছ এসব আমি তোমাকে ভালোবাসি।
কাব্য: তুই কিরে শুভ্রা মাঝরাতে ফোন করে দুজন দম্পতির মিলন নষ্ট করছিস ফোন রাখ বলছি। (কথাটা বলেই কাব্য আমার গলার কাছে কামর বসিয়ে দিলো)
আমি: ডাক্তারবাবু আস্তে…
শুভ্রা: উফফফ অসহ্য।
কাব্য: কি ফোন রেখে দিয়েছে?
আমি: বেচারা ফোন এতোক্ষণে আছাড় খেয়ে নিহত হয়ে গেছে।
কাব্য: আর ভুলেও শুভ্রা মাঝরাতে ফোন করবে না হাহাহা।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: এইতো তুমি আবারো আমার হাসি দেখছ।
আমি: কচু দেখছি এই তুমি এতো সুন্দর কেন? সব মেয়েরা তোমার জন্য পাগল কেন? কালো হতে পারলে না তাহলেই তো আমাকে আর এতো জামেলায় পড়তে হতো না। (কাব্য আমার একটা হাত চেপে ধরে আমার বুকের উপর ওর তুতুনি রেখে আমার চোখের দিকে তাকালো)
কাব্য: আমি কালো হলে বুঝি তুমি আমাকে ভালোবাসতে?
আমি: ভালোবাসা সুন্দর চেহারা দেখে হয় না, সুন্দর মন দেখে হয়। তুমি প্রথম যেদিন হসপিটালে আমাকে ভালোবাসার কথা বলেছিলে তখন আমার বিশ্বাস হয়নি কিন্তু পরে তোমার পাগলামি কান্না সব কিছু দেখে বুঝতে পেরেছিলাম তুমি আমাকে সত্যি ভালোবাস আর তাই আমিও ভালোবেসেছি বুঝেছ ডাক্তারবাবু? (কাব্য’র নাকটা ধরে টেনে দিলাম)
কাব্য: হু বুঝেছি এবার আদর করতে দাও।
আমি: এই না প্লি…(আমাকে বলার সুযোগ না দিয়েই ওর ঠোঁট দুটু আমার ঠোঁটে ডুবিয়ে দিলো)

জানিনা আব্বুর অভিমান কিভাবে ভাঙাবো, আব্বু আসবেন কিনা সেটাও জানিনা কিন্তু আব্বুকে তো ফিরিয়ে আনতেই হবে। খুব ভয় হচ্ছে আমি পারবো তো? তার উপর আরশির লোকদের ভয়, সেদিনের মতো যদি আজ আবার…
কাব্য: উফফফ তোমার ভেজা চুলের গন্ধ আমাকে একেবারে মাতাল করে দেয়। (আয়নার সামনে বসে চুল আছড়াচ্ছিলাম আর এসব ভাবছিলাম হঠাৎ কাব্য কোথা থেকে এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে চুলে নাক ডুবিয়ে দিলো)
আমি: আরে কি হচ্ছে রেডি হতে হবে তো ছাড়ো।
কাব্য: তিলো আব্বু যদি না আসেন? (কাব্য আমাকে ছেড়ে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
আমি: আসবেন দেখো আমরা ঠিক আব্বুকে ফিরিয়ে আনতে পারবো।
কাব্য: হুম।

কাব্য আর আমি রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম। ড্রয়িংরুমে আসতেই হিয়ার সামনে পরে গেলাম।
হিয়া: এতো সকালে তোমরা কোথায় যাচ্ছ?
কাব্য: আ…
আমি: এখন বলা যাবে না সারপ্রাইজ…
হিয়া: সারপ্রাইজ?
আমি: হুম বিশেষ করে তোমার জন্য। আসি? (হিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হয়তো ভাবছে কিসের সারপ্রাইজ, ও তো আর জানেনা এতো বছর পর নিজের আব্বুকে ও কাছে পাবে)
আমি: ডাক্তারবাবু চলো।

কাব্য’কে গাড়িতে রেখে আমি একা আসলাম, কলিংবেল চাপতেই আব্বু এসে দরজা খুলে দিলেন। এই প্রথম উনাকে সামনাসামনি দেখছি এর আগে তো শুধু পুরনো পিক গুলো দেখেছি। আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, উনার পায়ে ধরে সালাম করলাম।
আব্বু: তুমি কে মা, এভাবে আমাকে সালাম করছ?
আমি: ভিতরে গিয়ে কথা বলি?
আব্বু: হুম আসো।

ড্রয়িংরুমে এসে বসতেই উনি আবার প্রশ্ন করলেন।
আব্বু: বললে নাতো তুমি কে?
আমি: আচ্ছা এই বাসায় আর কেউ থাকে না? না মানে অন্য কাউকে তো দেখতে পাচ্ছি না তাই জিজ্ঞেস করলাম। (আম্মু এখানে থাকলে তো উনি অবশ্যই বলবেন)
আব্বু: না মা আমি একাই থাকি আমার কেউ নেই।
আমি: সত্যি আপনার কেউ নেই? (আব্বুর মুখটা মলিন হয়ে গেলো, পরিবারের সবাই থেকেও নেই এইটার কষ্ট তো আর কম না)
আব্বু: কিন্তু তুমি কে?
আমি: আপনার কাব্য’র…
আব্বু: আমার কাব্য? (চমকে উঠলেন উনি)
আব্বু: তারমানে তুমি আমার বৌমা? (দূরের সোফাটায় বসে ছিলেন উনি, উঠে এসে আমার মাথায় হাত রাখলেন। উনার চোখ দুটু ভিজে গেছে)
আমি: আব্বু আমি আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি যাবেন না আপনার ছেলে মেয়ের কাছে?
আব্বু: আমার কাব্য আর হিয়া কেমন আছে?
আমি: বাবা মা ছাড়া সন্তান যেমন থাকে তেমনি আছে। (উনি মাথা নিচু করে চুপচাপ কেঁদে যাচ্ছেন)
আমি: আব্বু আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে কিন্তু আপনার ছেলেও এসেছে। (অবাক হয়ে তাকালেন উনি)
আব্বু: সত্যি বলছ মা?
আমি: হুম।
কাব্য’কে একটা মিসডকল দিতেই কলিংবেল বেজে উঠলো। আব্বু পাগলের মতো গিয়ে দরজা খুললেন। কাব্য আব্বুকে সালাম করতে যাবে তখনি আব্বু ওকে টেনে বুকে নিলেন। দুজনেই কাঁদছে আর আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে ওদের মিলন দেখছি। বাবা ছেলের ভালোবাসার কাছে আজ সব রাগ অভিমান হেরে গেলো।

চলবে?

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ২৩

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ২৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

চুপচাপ অয়নের পিছনে দাঁড়িয়ে আছি, আগের কথা গুলো ভেবে গাঁ শিউরে উঠছে আমার।
অয়ন: ভাবি প্লিজ ভয় পেয়ো না।
আমি: এখন কি হবে?
–কিছুই হবে না আমাদের কাজ হয়ে গেছে চলে যাচ্ছি। (লোকটার কথা শুনে অয়নের দিকে অবাক হয়ে তাকালাম)
অয়ন: মানে?
–মানে আমাদের কাজ হয়ে গেছে। (লোক দুটু চলে যাচ্ছে আমরা দুজন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কি হলো এইটা?)
অয়ন: ভাবি তোমার মাথায় কিছু ঢুকেছে আমার মাথায় কিন্তু কিছুই ঢুকেনি।
আমি: এই সময়ে তুমি আবার হাসছ, চলো সন্ধ্যা নেমে এসেছে এখানে থাকা ঠিক হবে না।
অয়ন: লোক দুইটার সাথে হাত মিলানো দরকার ছিল।
আমি: অয়ন ঠাট্টা রাখো চলো এখন।
অয়ন: ওকে চলো।

গাড়িতে বসে বসে ভাবছি বিষয়টা কি হলো, লোক দুইটা আমাদের কোনো ক্ষতি করলো না কেন? উল্টো বললো ওদের কাজ হয়ে গেছে কি কাজ হয়েছে ওদের?
অয়ন: ভাবি আমি কিন্তু এখন ঠাট্টা করছি না সিরিয়াসলি বলছি বিষয়টা কি হলো বলতো।
আমি: জানিনা বুঝতে পারছি না।
অয়ন: আচ্ছা লোক দুইটা কে?
আমি: ওরাই তো কক্সবাজার আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল।
অয়ন: ওরা তোমাকে মারতে চায় কেন?
আমি: আরশি টাকা দিয়ে করাচ্ছে এসব।
অয়ন: আআআররশি…(অয়ন হঠাৎ করে গাড়ি থামিয়ে দিলো, কি ব্যাপার ও আরশির নাম শুনে কেঁপে উঠলো কেন)
আমি: কি হলো অয়ন?
অয়ন: হুম কিছুনা।
আমি: আরশির নাম শুনে তুমি এমন কেঁপে উঠলে কেন?
অয়ন: কোথায় নাতো।
আমি: হুম চলো। (অয়ন এখনো কি যেন ভাবছে, আচ্ছা এমন নয় তো ওরা সবাই আরশির বিষয়ে আমার থেকে কিছু লুকুচ্ছে)
অয়ন: ভাবি তোমার এখানে আসাটা কিন্তু সার্থক হয়েছে।
আমি: কিভাবে?
অয়ন: ওই ঠিকানায় রেজাউল চৌধুরী মানে ভাইয়ার আব্বু থাকেন।
আমি: সত্যি বলছ?
অয়ন: হ্যাঁ আমি ওখানকার একজন লোককে জিজ্ঞেস করেছিলাম।
আমি: তারমানে আব্বুকে আমি পেয়ে গেছি এখন শুধু ওদের ভুল বুঝাবুঝি মিটিয়ে বাসায় নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা।
অয়ন: হুম।
আমি: কিন্তু আম্মু?
অয়ন: পেয়ে যাবে দেখো।
আমি: হুম।

বাসায় ফিরতে আটটা বেজে গেলো, কাব্য হয়তো চলে এসেছে। কলিংবেল বাজাতেই কাব্য এসে দরজা খুললো। ড্রয়িংরুমে ভাইয়া আর ভাবি বসা।
ভাইয়া: তিলোত্তমা কোথায় গিয়েছিলে?
আমি: একটু কাজ ছিল।
কাব্য: রাত আটটার সময় বাসায় ফিরেছ তা কি এমন কাজ ছিল জানতে পারি?
আমি: এভাবে কথা বলছ কেন?
কাব্য: তো কিভাবে বলবো? (বাহ্ শুভ্রার পাতানো জালে তো কাব্য আটকে গেছে)
অয়ন: ভাইয়া আমি বল…
আমি: অয়ন চুপ করো কিছু বলতে হবে না যাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
কাব্য: তুমি কোথায় যাচ্ছ?
আমি: রুমে যাচ্ছি ফ্রেশ হবো।
কাব্য: আমার প্রশ্নের উত্তর পাইনি।
হিয়া: আমি দিচ্ছি তোমার প্রশ্নের উত্তর। (হিয়া নিচে নেমে আসছে, কি বলবে ও। হিয়া তো জানেইনা)
হিয়া: ভাবিকে আমি একটা কাজে পাঠিয়েছিলাম।
কাব্য: আর অয়ন?
হিয়া: ভাবিকে একা পাঠাবো নাকি তাইতো ছোট ভাইয়াকে সাথে পাঠিয়েছিলাম।
কাব্য: কিন্তু তু…
হিয়া: উত্তর তো পেয়ে গেছ তাহলে আর কথা কিসের। (কাব্য চুপচাপ রুমে চলে গেলো, আমিও চলে আসলাম)

ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি কাব্য মাথা নিচু করে বিছানায় বসে আছে। কাব্য কি সত্যি শুভ্রার পাতানো জালে পা দিলো নাকি?
আমি: হিয়ার বিয়ের কি হলো?
কাব্য: কাল ওরা আসবে তারিখ ঠিক করে যাবে।
আমি: রেগে আছ?
কাব্য: আমি রাগ করার কে?
আমি: বাব্বাহ্ আমার ডাক্তারবাবুটা একটু বেশিই রাগ করে ফেলেছে দেখছি।
কাব্য: তিলো ভালো লাগছে না একা থাকতে দাও। (কাব্য চুপচাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো)
আমি: খাবে না?
কাব্য: খিদে নেই।
আমি: ওকে আমিও খাবো না।
কাব্য কোনো উত্তর দিচ্ছে না দেখে ফোনটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে আসলাম। তিশাকে ফোন দিলাম।
তিশা: আমাকে তো ভুলেই গেছিস।
আমি: যা রহস্যের জালে আটকা পড়েছি আমি ভুলবোই তো।
তিশা: কি হয়েছে?
আমি: আমাকে মারার চেষ্টা করেছিল কাব্য’র এক্স জিএফ আর ও এখনো সবার ক্ষতি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
তিশা: কাব্য তো কখনো আমাকে ওর জিএফ সম্পর্কে কিছু বলেনি।
আমি: জানিস ওরা সবাই আমার থেকে কি যেন লুকিয়ে রাখছে।
তিশা: কি লুকুবে?
আমি: জানিনা।
তিশা: কাব্য’কে বলে মেয়েটার একটা ব্যবস্থা কর আর এসব নিয়ে ভাবিস না।
আমি: হুম। তোরা বিয়ে করছিস কবে?
তিশা: আমার পড়াশোনা শেষ হলে এখন তো… (হঠাৎ শুনতে পেলাম কাব্য কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে অনেকটা রেগে)
আমি: তিশা এখন রাখছি।
তিশা: ওকে।

ফোন রেখে রুমে আসলাম, আমাকে দেখে কাব্য ফোন কেটে দিলো। রাগে ওর চোখ দুটু লাল হয়ে আছে।
আমি: কি হয়েছে?
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: কি হলো আমার সাথে কথা বলছ না কেন?
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: দেখি তোমার ফোনটা দাও। (হাত বাড়াতেই কাব্য ফোনটা সরিয়ে ফেললো, তারমানে কাব্য শুভ্রার কথা বিশ্বাস করেছে। এখন ও রেগে আছে যাই বলি আরো রেগে যাবে পরে বুঝিয়ে বলতে হবে)
আমি: আপনজনদের উপর বিশ্বাস হারানো ঠিক না পরে পস্তাতে হয়। (কথাটা শুনে কাব্য আমার দিকে তাকালো। চুপচাপ এসে শুয়ে পড়লাম)

আমার তো বিশ্বাই হচ্ছে না যে কাব্য আমাকে আর অয়নকে সন্দেহ করছে সামান্য শুভ্রা মেয়েটার কথায়। অয়ন তো আমার ছোট ভাইয়ের মতো আর কাব্য কিনা ছিঃ।

সকালে ঘুম ভাঙতেই পাশ ফিরে তাকালাম, কাব্য তো পাশে নেই। কাব্য এতোটা চেঞ্জ হয়ে গেলো যে আজ আমাকে ডেকে তুললো না। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি আটটা বাজে, ইসস অনেক বেলা হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলাম।

কাব্য তো ড্রয়িংরুমেও নেই গেলো কোথায়?
ভাবি: চলে আসবে চিন্তা করিস না। (ভাবির কথা শুনে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেলাম)
ভাবি: কিছু খেয়ে নে রাতেও তো কিছুই…
আমি: ডাক্তারবাবু খেয়েছে?
ভাবি: তোকে ছাড়া কখনো খায়?
আমি: বাদ দাও তো।
ভাবি: না খেলে কিচেন থেকে চলে যা আমাকে হেল্প করতে হবে না।
আমি: এতো মেহমানের রান্না তুমি একা করবে?
ভাবি: হুম পারবো।
আমি: ডাক্তারবাবু আসলে খেয়ে নিবো।
ভাবি: ঠিক আছে।

ভাবিকে রান্নায় হেল্প করছি আর বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছি কাব্য তো এখনো আসলো না অনেক বেলা হয়ে গেছে তো। এই শুভ্রা আর আরশির ব্যবস্থা এখন করতেই হবে নাহলে শান্তিতে থাকতে পারবো না।
হিয়া: ভাবি বার বার ওদিকে কি দেখছ ভাইয়াকে ছাড়া বুঝি ভালো লাগছে না। (হিয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলাম। সত্যিই তো ভালো লাগছে না, ওকে ছাড়া সবকিছু কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগে)
হিয়া: চিন্তা করো না এখন না আসলে একটু পর তো বাসায় আসতেই হবে মেহমান আসবে না?
আমি: আচ্ছা হিয়া গতকাল তুমি মিথ্যে বললে কেন?
হিয়া: এইটা না বললে ভাইয়া তোমাকে বকা দিতো আরো অনেক প্রশ্ন করতো। আমি জানি তুমি আমাকে যে কথা দিয়েছ সে কথা রাখতেই কোথাও গিয়েছিলে।
আমি: হুম।
হিয়া: কথাটা কিন্তু রেখো ভাবি।
আমি: কথা যখন দিয়েছি রাখবো। তোমরা আমাকে একটা হেল্প করো।
হিয়া: কি?
আমি: আরশির বিষয়ে আমাকে সবকিছু বলো।
ভাবি: আআররশি ওর কথা তুই জানলি কিভাবে?
আমি: আচ্ছা এই নামটা শুনলে তোমরা সবাই এতো ভয় পাও কেন?
হিয়া: ভয় তো পাবোই ও যা…
কাব্য: তিলো রুমে এসো। (কাব্য চলে এসেছে দেখে চুপচাপ রুমে চলে আসলাম)

কাব্য দাঁড়িয়ে আছে জানি আজ অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, কিন্তু আরশির কথা সবকিছু না বললে আমিও কোনো প্রশ্নের উত্তর দিবো না।
কাব্য: গতকাল কোথায় গিয়েছিলে?
আমি: তার আগে তোমার ফোনটা আমার হাতে দাও সব প্রশ্নের উত্তর দিবো। (কাব্য ফোনটা আমার হাতে দিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। যা সন্দেহ করেছিলাম তাই, শুভ্রা কাব্য’কে মেসেজ তো করেছেই সাথে অয়ন আর আমার পিক দিয়েছে। ভয় পেয়ে অয়নের হাত চেপে ধরেছিলাম, আমাদের দুজনের এই হাতের পিক। এখন বুঝলাম লোক দুটু কাজ হয়ে গেছে বলেছিল কেন)
আমি: আব্বুকে খুঁজতে গিয়েছিলাম এর বেশি কিছু এখন জানতে চেয়ো না। পিক নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে অনেক কথা বলতে হবে, বাড়িতে মেহমান আসছে কোনো অশান্তি চাই না।
কাব্য: মনে রেখো মেহমান চলে যাওয়ার পর আমি আবারো প্রশ্ন করবো তখন কিন্তু এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে না।
আমি: কখোনোই এড়িয়ে যাইনি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত আছি। আর হ্যাঁ তুমিও প্রস্তুত থেকো কারণ আমাকে প্রশ্ন করলে আগে তোমার অতীত গুলো সামনে আনতে হবে। (কাব্য’কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম)

হিয়াকে সাজাচ্ছি কিন্তু কোনো কিছুতে মন বসছে না সবকিছু অসহ্য লাগছে, কাব্য আমাকে সন্দেহ করেছে তাও একটা বাইরের মেয়ের কথায় এইটা ভেবেই কান্না পাচ্ছে। যদি একটু কাঁদতে পারতাম তাহলে হয়তো কিছুটা হালকা লাগতো নিজেকে।
হিয়া: ভাবি কি হয়েছে?
আমি: আচ্ছা হিয়া প্রিয় মানুষ সন্দেহ করলে এতো কষ্ট হয় কেন?
হিয়া: হঠাৎ এই প্রশ্ন করছ কেন কিছু হয়েছে কি (আনমনে কি বলে ফেললাম, ওরা এসব জানলে তো কষ্ট পাবে)
আমি: এমনি বলেছি চলো।

হিয়া মেহমানের সামনে বসে আছে আর আমি ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছি, ইচ্ছে হচ্ছে রুমে চলে যাই কোনো কিছুতে মন বসাতে পারছি না। শুভ্রা যা বলেছে সব তো মিথ্যে কিন্তু কাব্য আমাকে সন্দেহ করলো কিভাবে, ও না আমায় ভালোবাসে, এই ওর ভালোবাসা এই ওর আমার প্রতি বিশ্বাস।
ভাইয়া: হিয়া তোর মতামত কি (হঠাৎ ভাইয়ার কথায় ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো)
অয়ন: ভাবি হিয়াকে জিজ্ঞেস করো আকাশকে পছন্দ হয়েছে কিনা।
আমি: ওকে বরং রুমে নিয়ে যাই তারপর ওর মতামত জেনে জানিয়ে দিবো।
ছেলের বাবা: ঠিক আছে মা।

হিয়াকে নিয়ে রুমে আসলাম পিছু পিছু ভাবিও আসলেন।
ভাবি: হিয়া কি বলবো ওদের আকাশকে পছন্দ হয়েছে?
হিয়া: পছন্দ তো হয়েছে কিন্তু ছোট ভাবি…
আমি: চিন্তা করোনা আমার কথা আমি রাখবো।
হিয়া: ওকে ভাইয়াদের গিয়ে বলো আমি রাজি।
ভাবি: তিলোত্তমা চল।
আমি: তুমি যাও আমার শরীর ভালো লাগছে না রুমে যাচ্ছি।

দৌড়ে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম। আর পারছি না খুব কষ্ট হচ্ছে। কাব্য আমাকে এতোটাই সন্দেহ করেছে যে আজ একবারো আমার দিকে তাকায়নি অথচ অন্যদিন…

হঠাৎ দরজায় ধাক্কার শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেলো, কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। দরজা খুলে কাব্য’কে দেখে আবার বিছানায় এসে বসে পড়লাম।
কাব্য: কি হয়েছে তোমার নিচে যাওনি কেন, আকাশের মা তোমাকে খুঁজেছে।
আমি: চলে গেছে ওরা?
কাব্য: কয়টা বাজে দেখো তাহলেই বুঝতে পারবে। (ওর কথা শুনে ঘড়ির দিকে তাকালাম রাত নয়টা বাজে, এতোক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি)
কাব্য: তোমার চোখ লাল হয়ে আছে কেন, এতো সময় কান্না করেছ তাইনা?
আমি: প্রিয় মানুষ যখন সন্দেহ করে তখন তো কান্না পাবেই।
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: তোমার প্রশ্ন গুলো করবে না? অয়নের সাথে আমার কিসের সম্পর্ক জিজ্ঞেস করবে না? অয়নের সাথে কোথায় লং ড্রাইভে গিয়েছিলাম জিজ্ঞেস করবে না? অয়নের হাত চেপে ধরেছিলাম কেন জিজ্ঞেস করবে না?
কাব্য: হুম বলো।
আমি: তার আগে তুমি আমাকে বলো, তুমি কাকে বেশি বিশ্বাস করো আমাকে নাকি আরশি আর শুভ্রাকে? (সবাই যেমন আরশি নাম শুনে কেঁপে উঠে কাব্যও তেমনি কেঁপে উঠলো)
কাব্য: আরশির ব্যাপারে তুমি জানলে কিভাবে?
আমি: সামান্য নাম জানতে চেয়েছিলাম তাতেই রাগ করে আমার থেকে একরাত একদিন দূরে থেকেছ আর আজ এই আরশির জন্যই আবার আমাকে সন্দেহ করছ।
কাব্য: সন্দেহ করার জন্য যথেষ্ট কারণ আছে তাই করেছি।
আমি: হুম তোমার এক্স জিএফ তোমাকে পিক দিয়েছে যেহেতু তাহলে তো তুমি নিজের বউকে বিশ্বাস না করে এক্স জিএফ কেই বিশ্বাস করবে।
কাব্য: তিলো ত…
আমি: আমি কিন্তু তোমাকে আগেই বলেছিলাম আমার থেকে কিছু লুকাবে না কিন্তু তুমি লুকিয়েছ। আরশির কথা আমাকে বললে কি হতো আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যেতাম? একটা মানুষের কিছু অতীত থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক এইটা লোকানোর কি আছে।
কাব্য: আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
আমি: আব্বুকে খুঁজতে গিয়েছিলাম একা এতো দূর যাওয়া সম্ভব ছিল না তাই অয়নকে সাথে নিয়েছিলাম, সেখানে তোমার আরশির লোক আমাদে…
কাব্য: আমার আরশি মানে?
আমি: হ্যাঁ তোমারই আরশি আমি তোমার কেউ না কারণ তুমি আমাকে নয় আরশিকে বিশ্বাস করেছ। লোক দুটুকে দেখে আমি ভয় পেয়ে অয়নের হাত চেপে ধরেছিলাম। অয়নকে আমি অন্য কিছু ভেবে ওর হাত চেপে ধরিনি ছোট দেবর ভেবেই ধরেছিলাম আর ছোট দেবর কেমন হয় জানো? ছোট ভাইয়ের মতো হয়। এতো ভয় পেয়েছিলাম কেন জানো কারণ ওরাই আগে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল আমার বাচ্চাটাকে খুন করেছিল। আর আরশি এই সময়টার সুযোগ নিয়েছে, পাত পেতেছে ওরা আর তুমি বোকার মতো ওদের পাতানো ফাদে পা দিয়েছ আমাকে অবিশ্বাস করেছ নিজের ছোট ভাইকে অবিশ্বাস করেছ। ছিঃ অয়ন একবার এসব শুনলে তো তোমার প্রতি ওর শ্রদ্ধাটাই চলে যাবে।
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: এখন চুপ হয়ে আছ কেন আর প্রশ্ন করবে না? তুমি অতীতে কি করেছ না করেছ এসবের হিসাব এখন আমাদের দিতে হচ্ছে কেন? তুমি আরশির সাথে প্রতারণা করেছ আর সেটার ফল ভোগ করতে হয়েছে আমার সন্তানকে, পৃথিবীতে আসার আগেই ওকে জীবন দিতে হয়েছে শুধু তোমার জন্য।
কাব্য: তিলো।
আমি: এভাবে তাকাচ্ছ কেন ভুল কিছু বলেছি নাকি? আরশির সাথে কি প্রতারণা করেছ বলো?
কাব্য: সবাই জানে আমি আরশির সাথে কোনো প্রতারণা করিনি বরং ও করেছিল, আমাকে মদ খাইয়ে মাতাল করে সবকিছু ওর নামে লিখে নিতে চেয়েছিল। আমি সিগনেচার করার আগ মুহূর্তে ফারাবী চলে এসেছিল তারপর ওকে জেলেও দেয়েছিলাম। আমি তো জানিই না আরশি জেল থেকে কবে ছাড়া পেয়েছে।
আমি: হুম এবার পারলে তোমার আরশিকে সামলাও, ও যদি আর কখনো আমাদের কারো কোনো ক্ষতি করেছে তাহলে ওকে আবার জেলে যেতে হবে।
কাব্য: বার বার আমার আরশি বলছ কেন?
আমি: কারণ আরশিই তোমার ভালোবাসা আমি তোমার কেউ না। আর শুনো তোমার হয়তো আব্বু আম্মুকে প্রয়োজন নেই কিন্তু হিয়ার আছে তাই আমি উনাদের খুঁজে আনবো। অবশ্য আব্বুকে পেয়ে গেছি এখন আম্মুকে খুঁজা বাকি শুধু।
কাব্য: কোথায় যাচ্ছ?
আমি: যে আমাকে বিশ্বাস করে না তার সাথে কথা বলার ইচ্ছা বা এক রুমে থাকার ইচ্ছা কোনটাই আমার নেই। (রুম থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলাম পরক্ষণেই মনে হলো অয়ন যদি কিছু বুঝতে পারে তাহলে তো কষ্ট পাবে। কাব্য যতোই ভুল বুঝুক আমি তো জানি অয়ন আমাকে শুধু ভাবি নয় বোনও ভাবে। রুমের বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না যে কেউ সন্দেহ করবে তাই বারান্দায় চলে আসলাম)

বারান্দায় রাখা কাউচে এসে শুয়ে পড়লাম, এখানেই ঘুমাবো আজ। কাব্য’কে শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন, বউকে বিশ্বাস না করে এক্স জিএফ কে বিশ্বাস করার শাস্তি আজ ও পাবে। আর ওর আরশিকে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থাটাও খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে, অন্য কিছুর জন্য না হউক আমার সন্তানকে খুন করেছে এইটার শাস্তি তো ওকে আমি দিবোই।

চলবে?

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ২২

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ২২

লেখিকা: সুলতানা তমা

আয়নার সামনে বসে চুল আছড়াচ্ছি আর বার বার কাব্য’র দিকে নজর পড়ছে। আয়নাতে ওকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে খুব মায়াবী লাগছে কিন্তু ওর ঘুম দেখে হিংসেও হচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছে ঘুমটা ভাঙিয়ে দেই। কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখতে নেই তাই কাব্য’র পাশে এসে দাঁড়ালাম, ভেজা চুলগুলো মুঠো করে ওর মুখের উপর ধরলাম। চুল থেকে টুপটুপ করে পানি ওর চোখে মুখে পড়তেই এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ঘুম ঘুম চোখে তাকালো।
কাব্য: তিলো কি হচ্ছে?
আমি: যা হবার তাই হচ্ছে।
কাব্য: ঘুমুতে দাও প্লিজ।
আমি: উঁহু হবে না উঠে পড়ো।
কাব্য: তুমি কিন্তু বলেছিলে নামাজ পড়লে ঘুমুতে দিবে, তোমার সাথে তো নামাজ পড়েছি তাহলে এ…
আমি: রাতে আমাকে ঘুমুতে দাওনি এখন তুমি নাক ডেকে ঘুমাবে তা কি করে হয় উঠো বলছি।
কাব্য: প্লিজ লক্ষীটি। (নাহ ওর ঘুম এভাবে ভাঙানো যাবে না অন্য কিছু ভাবতে হবে। আচমকা দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলাম)
আমি: এই দশটা বাজে তুমি হসপিটালে যাবে না। (হিহিহি কাজ হয়ে গেছে কাব্য এক লাফে উঠে বসে গেছে)
কাব্য: মাত্র সাতটা বাজে আর আজ তো শুক্রবার ফাজি মেয়ে। (ঘড়ি দেখে আবার শুয়ে পড়লো দ্যাত)
আমি: রাতে আমাকে ঘুমুতে দিবে না শুধু দুষ্টুমি করবে আর সকালে উনি নাক ডেকে ঘুমুবে আমার ঘুমাবার উপায় নেই। আজ কে দুষ্টুমি করে দেখবো। (ইচ্ছে করেই হাতের চিরুনিটা কাব্য’র উপর ছুড়ে ফেলে দিলাম। চলে আসতে চাইলাম আচমকা কাব্য আমার হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে আমাকে ওর বুকে শুয়ে দিলো)
আমি: উফফ কোমরটা বোধহয় ভেঙেই গেছে।
কাব্য: পড়েছ তো আমার উপর তোমার কোমর ভাঙবে কিভাবে। ভেঙেছে তো আমার কোমর যা মুটকি তুমি।
আমি: আমি মুটকি হ্যাঁ, আর আমি পড়েছি নাকি তুমিই তো হাত ধরে টান দিয়েছ।
কাব্য: আস্তে কিল দাও লাগছে তো।
আমি: আর আমাকে মুটকি বলবে? (আরো কতোগুলো কিল দিলাম ওর বুকে)
কাব্য: এমন চিকনিকে মুটকি বলতে আমার বয়েই গেছে।
আমি: হুহ।
কাব্য: ভেজা চুলে তোমাকে খুব স্নিগ্ধ লাগছে ইচ্ছে হচ্ছে…
আমি: আবার দুষ্টুমি শুরু করেছ ছাড়ো বলছি।
কাব্য: প্লিজ। (কাব্য আমার গলায় চুমু দেওয়ার জন্য ওর মুখ এগুতে শুরু করলো, একটা হাত দিয়ে আটকে দিলাম। কাব্য এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
আমি: কি হলো রাগ করেছ?
কাব্য: আমাকে ছেড়ে চলে যাবে নাতো কখনো? (আমার চোখের সামনে চলে আসা চুলগুলো কানের কাছে গুঁজে দিয়ে আবার আমার চোখের দিকে তাকালো, ওর চোখে পানি ছলছল করছে)
আমি: হঠাৎ এসব বলছ কেন আর আমি তোমাকে ছেড়ে যাবোই বা কেন?
কাব্য: জানিনা খুব ভয় হয় যদি তোমাকে হারিয়ে ফেলি। (আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো, ওর বুকে মাথা রেখে চুপচাপ শুয়ে আছি)
কাব্য: গতকাল এতোটা সময় তোমার থেকে দূরে থাকতে চাইনি, হঠাৎ হসপিটাল থেকে ফোন এসেছিল আমার ফোনটা আদনান এর বাসায় রেখেই চলে গিয়েছিলাম তারপর আর সুযোগই হয়নি। জানো তুমি কতোটা কষ্ট হয়েছিল আমার, তুমি কখনো চলে গেলে আমি মরেই যাবো।
আমি: পাগলের মতো কি বলছ এসব আর কখনো যেন এসব না শুনি।
কাব্য: হু। (কাব্য’র চোখের পানি মুছে দিয়ে ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু দিলাম)
কাব্য: তিলো তোমার সাথে কিছু কথা ছিল হিয়াকে নিয়ে এখন বলবো?
আমি: বলো।
কাব্য: হিয়াকে এর আগেও অনেক বার বিয়ের কথা বলেছি ও সোজা না করে দিয়েছে এখন তো ও দেশে এসেছে ভাবছিলাম বিয়েটা দিয়ে দিলে…
আমি: হিয়া রাজি না কেন?
কাব্য: ওইযে আমার উপর রেগে আছে।
আমি: ভাইয়া অয়ন ওরা জানে?
কাব্য: না আজ বলবো সবাইকে।
আমি: ছেলে দেখেছ?
কাব্য: হুম ছেলের পরিবার ব্যাংকক থাকে, বিয়ের পর হিয়াকেও নিয়ে যাবে।
আমি: তোমরা কথা বলো আমি হিয়াকে রাজি করাবো।
কাব্য: প্লিজ তুমি চেষ্টা করে দেখো, হিয়াকে ভালো ছেলে দেখে ভালো পরিবার দেখে বিয়ে দেওয়াটাই এখন আমার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
আমি: তুমি চিন্তা করোনা আমি ওকে ঠিক রাজি করাবো। এখন উঠে ফ্রেশ হয়ে নাশতা খেতে আসো।
কাব্য: ওকে।

টেবিলে নাশতা আনছি আর আরশির বলা কথা গুলো ভাবছি, সত্যি ও হিয়ার কোনো ক্ষতি করবে নাতো? একবার হাত কেটেছে পরে আবার কি করে বসবে কে জানে। হিয়ার বিয়েটা হয়ে গেলে ওকে তো ব্যাংকক নিয়ে যাবে তখন আরশি আর হিয়ার খুঁজ পাবে না, আমিও এই চিন্তা থেকে মুক্তি পেতাম। কিন্তু হিয়া কি রাজি হবে?
ভাবি: তিলোত্তমা কি হয়েছে তোর অন্যমনস্ক হয়ে আছিস।
আমি: হুম কিছু হয়নি।

সবাই নাশতা খাচ্ছে কাব্য বার বার হিয়ার দিকে তাকাচ্ছে, বলতে ভয় পাচ্ছে ও। আমাকেই শুরু করতে হবে।
আমি: ডাক্তারবাবু তুমি না আজ কি যেন বলবে বলছিলে সবাইকে।
ভাইয়া: কিরে কাব্য কি বলবি?
কাব্য: আসলে…(আবার হিয়ার দিকে তাকাচ্ছে, কোনো ভাই ছোট বোনকে এতোটা ভয় পায় এই প্রথম দেখলাম)
ভাইয়া: হ্যাঁ বল।
কাব্য: আমি হিয়ার জন্য ছেলে দেখেছি ওর বিয়ে দিতে চাই। (একদমে বলেই হিয়ার দিকে তাকালো, হিয়া তো খুব রেগে গেছে। সবাই হিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে)
হিয়া: আগের কথা গুলো ভুলে গেছ? ভুলে গেলে আবারো বলছি আমি বিয়ে করবো না। (হিয়া উঠে রুমে চলে গেলো। কাব্য হাতের খাবারটা রেখে দিয়ে চুপচাপ বসে আছে)
আমি: তোমরা খাও আমি হিয়াকে দেখছি।

হিয়া চুপচাপ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওর পাশে এসে দাঁড়ালাম।
আমি: হিয়া একটা প্রশ্ন করবো?
হিয়া: হুম।
আমি: তুমি কি কাউকে ভালোবাস?
হিয়া: এই ভালোবাসা সম্পর্ক এসব তো আমি ঘৃণা করি।
আমি: কেন?
হিয়া: কারণ ওই…(আমার দিকে তাকিয়ে হিয়া থেমে গেলো। আব্বু আম্মুর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তো হিয়া জানে না তাহলে ও কিসের জন্য ভালোবাসা সম্পর্ক এসব ঘৃণা করে? আর হিয়া কি বলতে গিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো?)
আমি: বিয়ে করতে চাও না কেন?
হিয়া: যে বিয়েতে আমার আব্বু আম্মু থাকবে না সে বিয়ের কোনো মানে হয় না।
আমি: আর যদি আব্বু আম্মু থাকেন তাহলে বিয়ে করবে? (হিয়া অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে)
হিয়া: কি বলছ এসব?
আমি: যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও।
হিয়া: ভাইয়ার জন্য সম্পর্ক ভালোবাসা এসবে ঘৃণা জন্মেছিল কিন্তু তোমাকে দেখে এসবে কিছুটা হলেও বিশ্বাস জন্মেছে আর তাই আব্বু আম্মু উপস্থিত থাকলে আমি আজই বিয়ে করবো। ভাইয়া আমার চোখে অপরাধী কিন্তু সমাজের চোখে তো না। ভাইয়াকে আমি সমাজের কাছে ছোট করতে চাই না কিন্তু আব্বু আম্মু…
আমি: বললাম তো আব্বু আম্মু বিয়ের দিন উপস্থিত থাকবেন।
হিয়া: সত্যি?
আমি: হুম। হয়তো এতো তাড়াতাড়ি খুঁজে পাবো না কিন্তু কথা দিচ্ছি তুমি কবুল বলার ঠিক আগের মুহূর্তে হলেও আমি আব্বু আম্মুকে বিয়ের আসরে উপস্থিত করবো।
হিয়া: আব্বু আম্মু না আসা পর্যন্ত আমিও কবুল বলবো না। যাও ভাইয়াকে বিয়ে ঠিক করতে বলো।
আমি: হুম।

হিয়াকে তো কথা দিলাম ঠিকি কিন্তু পারবো তো আমি? খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে সবকিছু, বিয়েটা খুব তাড়াতাড়ি দিয়ে দিতে হবে। আরশির নজর থেকে হিয়াকে দূরে সরাতে হবেই।
কাব্য: তিলো রাজি হয়েছে হিয়া?
আমি: হুম তুমি বিয়ের তারিখ ঠিক করো।
কাব্য: তুমি পারলে কিভাবে ওকে রাজি করাতে?
আমি: (মৃদু হাসলাম। কতো বড় রিস্ক নিয়েছি সেটা তো একমাত্র আমি জানি)
আমি: ছেলে দেখতে কেমন ভালো তো?
কাব্য: হিয়া আমার কলিজার টোকরা ওকে আমি ভালো ছেলের হাতেই তুলে দিবো বিশ্বাস রাখো আমার উপর।
আমি: ঠিক আছে।

ভাবির সাথে রান্নায় হেল্প করছি হঠাৎ দেখি কাব্য আর ভাইয়া রেডি হয়ে এদিকে আসছে। কোথায় যাবে ওরা?
ভাইয়া: নিরা আমরা আসছি।
আমি: কোথায় যাচ্ছ দুজন।
কাব্য: হিয়ার বিয়ে ঠিক করতে।
আমি: আসবে কখন?
কাব্য: রাত হয়ে যাবে।
আমি: ঠিক আছে। (ভাইয়া আর কাব্য বেরিয়ে যেতেই ভাবির হাত ধরে ভাবির মুখের দিকে তাকালাম)
ভাবি: কিছু বলবি?
আমি: হুম একটা হেল্প করো প্লিজ।
ভাবি: কি?
আমি: একটু বাইরে যাবো আসতে অনেক দেরি হবে এর মধ্যে কাব্য চলে আসলে তুমি অন্যকিছু বলো।
ভাবি: কিন্তু যাবি কোথায়?
আমি: পরে বলবো শুধু এই টুকু জেনে রাখো সবার ভালোর জন্যই যাচ্ছি আর অয়নকে সাথে নিয়ে যাচ্ছি তুমি চিন্তা করোনা।
ভাবি: ঠিক আছে সাবধানে যাস।
আমি: ওকে।

অয়নকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম জানিনা ওই ঠিকানায় গিয়ে আদৌ কিছু পাবো কিনা।
অয়ন: ভাবি গাড়ি নিলেই ভালো হবে তাড়াতাড়ি চলে আসতে পারবো।
আমি: ড্রাইভ করতে পারো তো?
অয়ন: এইটা আমরা তিন ভাই ভালোই পারি।
আমি: ঠিক আছে চলো।

অয়ন খুব স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে কিন্তু তাও যেন রাস্তা শেষ হচ্ছে না। ভয়ে আমার শরীর ঘামছে, কাব্য এসব জানতে পারলে আমাকে আস্ত রাখবে না। আর ওই আরশির লোক গুলো তো সবসময় আমাদের উপর নজর রাখছে কখন কি করে বসে ঠিক নেই। আচ্ছা আরশি আমাদের ক্ষতি করবে এটাই শুধু ভাবছি একবারো তো এইটা ভাবছি না আরশি কাব্য’র উপর এতো ক্ষেপে আছে কেন? কাব্য তো কারো সাথে প্রতারণা করার মতো মানুষ নয়, তাহলে আরশি কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছে?
অয়ন: ভাবি গাড়ি এখানে রেখে কিছুটা জায়গা হেটে যেতে হবে।
আমি: ঠিক আছে চলো।
অয়ন: ভাবি আমরা কোনো ভুল করছি নাতো?
আমি: ভুল হবে কেন আমরা তো আব্বু আম্মুকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি আর আমার বিশ্বাস আব্বু আম্মুও নিজের ছেলে মেয়ের কাছে ফিরে যেতে চান।
অয়ন: চলো দেখি কি হয়।

এতোকিছুর পর আসতে পারলাম, কিন্তু বাসা তো…
অয়ন: ভাবি বাসা তো তালা দেয়া।
আমি: তাইতো দেখছি।
অয়ন: এখন কি করবে।
আমি: কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখি।
অয়ন: কার জন্য অপেক্ষা করবে আমরা তো জানিই না এই বাসায় কে থাকে।
আমি: কাউকে একটু জিজ্ঞেস করো প্লিজ।
অয়ন: দাঁড়াও আমি দেখছি।

বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, অয়ন একটু দূর যেতেই আমার ফোন বেজে উঠলো। এইটা তো শুভ্রার নাম্বার তাহলে কি ওরা আমাদের ফলো করছে। চারপাশে একবার চোখ বোলালাম সন্দেহজনক তো কাউকে দেখছি না। ফোন রিসিভ করলাম, আমি কিছু বলার আগেই শুভ্রা বলে উঠলো…
শুভ্রা: হাই মিস তিলোত্তমা সরি মিসেস কাব্য।
আমি: কেন ফোন করেছ?
শুভ্রা: একটা গুড নিউজ দেওয়ার জন্য।
আমি: মানে?
শুভ্রা: একটু আগে কাব্য’র ফোনে একটা মেসেজ গেছে “তুমি বোনের বিয়ে ঠিক করতে ব্যস্ত আর তোমার তিলো পাগলী তোমারই ছোট ভাইয়ের হাত ধরে ঘুরতে ব্যস্ত তাও কাছে কোথাও নয় একেবারে লং ড্রাইভে”
আমি: এতো গুলো থাপ্পড় খেয়েও শোধরাওনি দেখছি।
শুভ্রা: থাপ্পড় গুলোর প্রতিশোধ নিতে হবে না?
আমি: এসব নোংরা কথা বলে প্রতিশোধ নিতে পারবে না কারণ কাব্য তোমার এসব নোংরা কথায় কান দিবে না।
শুভ্রা: সেটা নাহয় পরেই বুঝতে পারবে এখন সামনে যে বিপদ এসেছে সেটা সামলাও তো দেখি।
আমি: মানে। (হঠাৎ পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পিছনে তাকালাম। ভয়ে আমার শরীর শিউরে উঠলো, ওরা তো সেই দুজন লোক। আজকেও রোমাল দিয়ে মুখ ঢাকা)
শুভ্রা: আরশির বুদ্ধির প্রশংসা করতে হয়। সেদিন তো মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছিলে কিন্তু আজ… (ফোনটা কেটে দিলাম। কি করবো এখন আমি)
অয়ন: ভাবি তুমি যা…(অয়ন লোক দুইটাকে দেখে থেমে গেলো, আমার পাশে এসে দাঁড়ালো)
অয়ন: কে তোমরা?
–ভয় নেই তোর ভাবিকে বেশি কষ্ট দিয়ে মারবো না। সেদিন তো বেঁচে গেছে কিন্তু আজ আর সুযোগ নেই।

লোক দুটু আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। আমি তো ভাবতেও পারিনি এমন কিছু হবে। এই আরশি আর শুভ্রা তো আমাকে মারার জন্য পাগল হয়ে গেছে। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে, অয়নের পিছনে গিয়ে ভয়ে ওর হাত চেপে ধরলাম।

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ২১

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ২১

লেখিকা: সুলতানা তমা

এই ডায়েরি খুলে আমার পুরো মাথাটাই নষ্ট হয়ে গেলো, পুরোটা জুড়ে শুধু আমার কথাই লিখা।
“ভেবেছিলাম আর কখনো কোনো মেয়েকে ভালোবাসবো না, ঘৃণা জন্মে গিয়েছিল মেয়েদের প্রতি। কিন্তু আজ হসপিটালে তিলোত্তমাকে দেখে নতুন করে ভালোবাসা জন্মেছে আমার মনে, ইচ্ছে হচ্ছে এই তিলো পাগলীকে সহস্র শতাব্দী ভালোবাসি। জানিনা তিলো পাগলীর মধ্যে কি আছে মন শুধু ওকেই ভালোবাসতে চায়”

“আমার তিলো পাগলী দেখতে খুব মায়াবী, ওর চোখ দুটু এতো গভীর যে এই চোখের গভীরতায় ডুব দিয়ে অনায়াসে কাটিয়ে দেয়া যাবে হাজারটা শতাব্দী। তিলো পাগলীর চুলগুলো সবসময় আমাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো ওর কাছে টানে। তিলো পাগলী রেগে গেলে ওর নাকটা লাল হয়ে যায় ইচ্ছে হয় তখন নাকে কামড় বসিয়ে দেই হিহিহি”

“আজ তিলো পাগলীর সাথে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি, শুধুমাত্র ওর মামির ভুলের জন্য ওকে টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে আমার। জানিনা এসব কতোদিন লুকিয়ে রাখতে পারবো, তিলো জানলে খুব কষ্ট পাবে”

“অবশেষে বিয়ে করে ফেললাম তিলো পাগলীকে। এখন আর কোনো ভয় নেই ওকে হারানোর, তিলো শুধু আমার এখন”

“আমার তিলো পাগলী এতোটাই ঘুম পাগলী যে আজ আমাদের বাসর রাত জেনেও তিলো দিব্বি ঘুমুচ্ছে। আমার বাসর পুরাই মাটি হয়ে গেলো”

দ্যাত আর পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না। শুধু আমাকে নিয়েই লিখা কেন, মেয়েটিকে নিয়ে তো কিছুই পাচ্ছি না আর আব্বু আম্মুকে নিয়ে তো কিছুই লিখা নেই। রাগে ডায়েরির পাতা গুলো উল্টাচ্ছিলাম হঠাৎ শেষ লিখাটায় চোখ আটকে গেল। কি যেন লেখা সাথে ছোট একটি বাবুর ছবি। ছবিটা সরিয়ে লেখা গুলো দেখলাম।
“আমি আসলেই খারাপ, হিয়া ঠিকি বলে আমি কখনো ভালো হতে পারবো না। তিলো ভয় পাওয়ার পরও কক্সবাজার যাওয়ার কি প্রয়োজন ছিল। জোর করে তিলোকে নিয়ে গেলাম আর এখন কিসব হয়ে গেলো। আমাদের বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেলো। আমারই তো খুব কষ্ট হচ্ছে তিলোর তো কষ্ট হবেই। তিলো নাহয় মুখে আমাকে কোনো দোষ দিচ্ছে না কিন্তু তিলো নিজেও তো জানে আমার জোর করার কারণেই আজ আমাদের এই শাস্তি পেতে হলো। তিলো পাগলী আমাকে ক্ষমা করে দিও সোনা বিশ্বাস করো আমি বুঝতে পারিনি এমন কিছু হবে আর তুমি প্রেগন্যান্ট সেটাই তো আমি বুঝতে পারিনি। কোনো বাবা কি তার সন্তানকে মেরে ফেলতে চায় তুমিই বলো। তোমাদের কাউকে আমার কষ্ট বুঝতে দেই না কিন্তু আমারো তো কষ্ট হয় কারণ আমি যে বাবা”
আর পড়তে পারলাম না চোখ দুটু থেকে বৃষ্টির মতো পানি পরে ডায়েরিটা ভিজিয়ে দিচ্ছে। এতো কষ্ট পেয়েছে কাব্য কিন্তু আমার সামনে দিব্বি হেসেছে শুধুমাত্র আমি যেন সাহস পাই মনে এজন্য।

ডায়েরিটা রেখে বাকি ডায়েরি গুলোতে খুঁজছি, কোথাও মেয়েটি বা আব্বু আম্মুদের নিয়ে কিছু লিখা নেই। একটা ডায়েরি উল্টাতে উল্টাতে হঠাৎ ডায়েরির মাঝখানে চোখ পড়লো। ডায়েরির প্রথম দিকে বা শেষ দিকে কিছু লিখা নেই শুধু মাঝখানে একটা পৃষ্ঠায় লিখা…
“তোমার জন্য লিখা ডায়েরিটা পুরিয়ে ফেলেছি আরশি, কি হবে এই নোংরা অতীত গুলো জমিয়ে রেখে। আগে কষ্ট হতো তোমাকে মনে পড়তো কিন্তু এখন তোমাকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে হয় কারণ তুমি আমার জীবন থেকে চলে না গেলে আমি আমার তিলো পাগলীকে পেতাম না। তুমি ছিলে নোংরা মেয়ে আর তুমি চলে যাওয়াতে আমি পেয়েছি তিলোত্তমার মতো একটি পবিত্র মেয়ে”

আর কিছু লিখা নেই, তারমানে মেয়েটির নাম আরশি। এতোকিছু এই আরশি মেয়েটাই করছে।
অয়ন: ভাবি শেষ হয়েছে ভাইয়া কিন্তু যেকোনো সময় চলে আসতে পারে।
আমি: ডাক্তারবাবু বাসায় নেই চুপ করে বসে থাকো।
অয়ন: বাসায় নেই মানে এতো রাতে ভাইয়া কোথায় গেলো।
আমি: আমার উপর রাগ করে আদনান ভাইয়ার বাসায় চলে গেছে। এতো কথা বলোনা তো।
অয়ন: এতো মনোযোগ দিয়ে কিযে খুঁজছ তুমি।
আমি: একটা সূত্র চাই শুধু, যে সূত্র ধরে আমি আব্বু আম্মুর কাছে পৌঁছাতে পারবো।
অয়ন: কি বলছ এতো আস্তে আস্তে?
আমি: উফফ অয়ন চুপ করে বসো তো।
অয়ন: ঠিক আছে কি আর করার আমি বসে থাকি আর তুমি গোয়েন্দাগিরি করো। তবে হ্যাঁ আমি তোমাকে সাহায্য করছি এইটা যেন ভাইয়া না জানে, জানলে আমার বারোটা বাজিয়ে দিবে। (অয়নের কথার কোনো উত্তর দিলাম না। একমনে একে একে সব গুলো ডায়েরি খুঁজে চলেছি। একটা মানুষের কাছে এতোগুলো ডায়েরি থাকতে পারে ভাবতেই পারছি না)

হঠাৎ একটা ডায়েরিতে কিছু লিখা পেলাম কিন্তু অনেক কম।
“তোমাদের আব্বু আম্মু ডাকতে আমার ঘৃণা হয় তাই তোমাদের নিয়ে কিছু লিখতে চাই না, ইচ্ছে নেই লিখার। কিছু লিখতে আসলে মনে পড়ে যায় তোমরা কোনো সন্তানের বাবা মা হবার যোগ্যই না”

আর কিছু লিখা নেই। সারা ডায়েরি খুঁজে শেষ দিকটায় একটা ছোট লিখা পেলাম। দেখে তো মনে হচ্ছে কোনো বাসার ঠিকানা, তাহলে কি আমি যা খুঁজছিলাম তা পেয়ে গেছি? কিন্তু এই জায়গাটা তো ঢাকা থেকে অনেক দূরে যাবো কিভাবে আমি। কাব্য’কে তো বলে যাওয়া যাবে না আর এতো দূর লুকিয়ে যাওয়া তো সম্ভব না। যা করার সুযোগ বুঝে করবো, ঠিকানাটা একটা কাগজে লিখে নিলাম। ডায়েরি গুলো সব গুছিয়ে রাখলাম ঠিক আগের মতো, কাব্য যেন বুঝতে না পারে যে এই রুমে কেউ এসেছিল। কাব্য যদি একবার বুঝতে পারে তাহলে প্রথমেই আমাকে সন্দেহ করবে আর অশান্তি করবে।
অয়ন: ভাবি শেষ?
আমি: হুম চলো।
অয়ন: পেয়েছ কিছু?
আমি: মেয়েটার নাম জানতে পেরেছি আর একটা বাসার ঠিকানা পেয়েছি।
অয়ন: বাসার ঠিকানা…
আমি: হুম, জানিনা ওই বাসায় কে থাকেন তবে আমার সন্দেহ হচ্ছে। আমার ধারণা যদি ঠিক হয় তাহলে ওই বাসায় আব্বু বা আম্মু থাকেন অথবা দুজনই থাকেন।
অয়ন: যদি তাই হয় তাহলে ভাইয়া জানবে কিভাবে?
আমি: তোমার ভাইয়া মুখে যতোই বলুক আব্বু আম্মুকে ঘৃণা করে সত্যি তো এটাই ও আব্বু আম্মুকে খুব ভালোবাসে। আর একজন সন্তান বাবা মায়ের খুঁজ নিবে কোথায় থাকে সেটা জানবে এটাই তো স্বাভাবিক।
অয়ন: হুম বুঝলাম কিন্তু তুমি জানবে কিভাবে ওই বাসায় কে থাকে।
আমি: যাবো আমি ওই বাসায়, আমাকে জানতে হবেই।
অয়ন: ঠিক আছে।

এতো রাত হয়েছে কিন্তু ঘুম আসছে না। বিয়ের পর কাব্য’কে ছাড়া কখনো একা থাকিনি আর আজ কাব্য এমন করলো। ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবছি ওকে ফোন করবো কিনা। ভাবতে ভাবতে ফোনটা করেই ফেললাম কিন্তু ফোন তো সুইচড অফ বলছে। আশ্চর্য সামান্য একটা নাম জানতে চাইছি বলে কাব্য আমাকে এতো বড় শাস্তি দিচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছে কাব্য’র কাছে ছুটে চলে যাই কিছুই ভালো লাগছে না ওকে ছাড়া। আজ বুঝতে পারছি আমি কাব্য’কে কতোটা ভালোবাসি।

দরজায় কে যেন ধাক্কাচ্ছে তাড়াতাড়ি উঠে এসে দরজা খুললাম। ভেবেছিলাম কাব্য চলে এসেছে কিন্তু না ভাবি আমাকে ডাকতে এসেছে।
ভাবি: কিরে কি হয়েছে তোর এতো বেলা হয়ে গেলো এখনো উঠছিস না। আর তোর চোখ মুখের এই অবস্থা কেন? (ভাবির কথা শোনে ঘড়ির দিকে তাকালাম সকাল নয়টা বাজে)
আমি: নয়টা বাজে তো ডাক্তারবাবু আসেনি?
ভাবি: মানে কি কাব্য বাসায় নেই?
আমি: না কালকে আমার উপর রাগ করে আদনান ভাইয়ার বাসায় চলে গিয়েছিল।
ভাবি: চিন্তা করিস না চলে আসবে। ফ্রেশ হয়ে নাশতা করতে আয়।
আমি: হুম।

কিসের ফ্রেশ হওয়া আগে ফোনটা হাতে নিয়ে কাব্য’কে ফোন দিলাম, এখও সুইচড অফ বলছে। আর ভালো লাগছে না আমার এবার কান্না করে দিবো।
অয়ন: ছোট ভাবি নিচে এসো। (অয়নের ডাক শুনে ফোনটা রেখে নিচে চলে আসলাম)

হিয়া: ভাবি কি হয়েছে তোমার রাতে ঘুমাওনি?
আমি: ঘুমাবো না কেন, তোমার হাতের অবস্থা কি?
হিয়া: এইতো ভালো।
অয়ন: ভাবি রাতে ভাইয়ার চিন্তায় ঘুমাতে পারেনি।
ভাবি: অয়ন এইটা নিয়ে কেউ ঠাট্টা করে। (সত্যিই তো রাতে ঘুম হয়নি। ডায়েরি খুঁজে আর পরে কাব্য’র চিন্তায় ঘুমই হয়নি তেমন)
অয়ন: ভাবি কিছুই তো খাচ্ছ না।
আমি: আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। (চুপচাপ রুমে চলে আসলাম)

সবকিছু অসহ্য লাগছে, কাব্য’কে ছাড়া সবকিছু কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগছে। আচ্ছা কাব্য’রও কি এমন লাগছে?
অয়ন: ভাবি আসবো?
আমি: হ্যাঁ এসো।
অয়ন: একটা কথা বলি যদি রাগ না করো।
আমি: বলো।
অয়ন: ভাইয়া তো বাসায় নেই তুমি চাইলেই এই ফাকে ওই ঠিকানায় যেতে পারো (অয়নের দিকে তাকালাম, ও তো ঠিকি বলছে। কিন্তু কাব্য যদি বাসায় ফিরে আসে তখন কি হবে)
আমি: না না এই রিস্ক নেওয়া যাবে না এমনিতে ডাক্তারবাবু আমার উপর রেগে আছে আর হুট বাসায় এসে যদি দেখে আমি বাসায় নেই তখন আরো রেগে যাবে।
অয়ন: তাও ঠিক বলেছ।
আমি: তুমি চিন্তা করোনা আমি সুযোগ বুঝে ওই বাসায় যাবো।
অয়ন: ঠিক আছে।

অয়ন চলে যেতেই ফোনটা নিয়ে আদনান ভাইয়াকে ফোন দিলাম।
আদনান: ভাবি আমরা হসপিটালে জামেলায় আছি পরে কথা হবে। (ফোনটা কেটে দিলো কিসের জামেলায় আছে কে জানে)

সারাটা দিন কেটে গেলো কিন্তু কাব্য আসলো না। সারাটা দিন অপেক্ষা করা যে কতো কষ্টের আজ ভালো ভাবেই বুঝেছি। কাব্য তো ফোনটাও অফ করে রেখেছে আর পারছি না ইচ্ছে হচ্ছে… ফোন বেজে উঠলো বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম দৌড়ে রুমে গেলাম, হয়তো কাব্য ফোন করেছে। নাহ তিশা ফোন করেছে।
আমি: হুম তিশা।
তিশা: কি হয়েছে কাঁদছিস কেন?
আমি: ডাক্তারবাবু আমার উপর রাগ করে চলে গেছে বাসায় আসছে না।
তিশা: কান্না থামা আর ফোন কর।
আমি: ফোন অফ।
তিশা: দাঁড়া আমি আদনানকে ফোন করছি। (তিশা ফোন কেটে দিলো)

রাত দশটা বাজে এখনো ওর আশার নাম নেই। হঠাৎ মেসেজটোন বেজে উঠলো, তিশা মেসেজ করেছে।
“কাব্য বাসায় চলে গেছে একটু অপেক্ষা কর”

কিছুক্ষণ পর দরজায় টোকা পড়লো, দৌড়ে এসে দরজা খুললাম। কাব্য দাঁড়িয়ে আছে দেখেই ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। কাব্য আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো, ও নিঃশব্দে কাঁদছে আমি বুঝতে পারছি, ওর চোখের পানি আমার ঘাড় বেয়ে পিটে গিয়ে পড়ছে।
কাব্য: হুম হয়েছে অনেক কেঁদেছ এবার থামো।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: তিলো এভাবে কাঁদলে কিন্তু আমি আবার চলে যাবো। (কাব্য’র কথা শুনে ওকে ছেড়ে দিয়ে দূরে এসে দাঁড়ালাম। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, কাব্য আবার চলে যাবে এই কথাটা বলতে পারলো ও)

চুপচাপ বিছানায় বসে আছি আর নিঃশব্দে কাঁদছি। কাব্য দরজা বন্ধ করে এসে আমার পায়ের কাছে ফ্লোরে বসে পড়লো। কাব্য আমার কোলে মাথা রেখে দুহাত দিয়ে আমার কোমর জরিয়ে ধরলো।
কাব্য: কি হলো চুলে হাত বুলিয়ে দিবে না? (ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বিছানার এক পাশে এসে শুয়ে পড়লাম। এতো কষ্ট দিয়ে আজ আবার চলে যাওয়ার কথা বলছে তারমানে ওর কোনো কষ্ট হয়নি)
কাব্য: আমার তিলো পাগলী খুব রাগ করেছে আর ওর নাকটা লাল হয়ে গেছে ইচ্ছে হচ্ছে…
আমি: একদম আমার কাছে আসবে না।
কাব্য: সরি ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করে দাও। আসলে ফোনটা ভুলে আদনানের বাসায় ফেলে রেখে গিয়েছিলাম আর হসপিটালে আজ একটু জামেলা ছিল তাই বাসায় আসতে পারিনি।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: এইযে কান ধরছি আর এমন হবে না।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: মানছি ভুল করেছি তাই বলে এখন কথা বলবে না। আচ্ছা তুমি কি একা কষ্ট পেয়েছ আমি পাইনি?
আমি: কষ্ট পেলে আজ আবার চলে যাওয়ার কথা বলতে না।
কাব্য: এইটা তো তোমাকে রাগানোর জন্য বলেছি। আবার যাবো পাগল হয়েছি এমনিতেই যা কষ্ট পেয়েছি। জানো কাল রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি। (কাব্য আমার পাশে শুয়ে এক হাত দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরলো,আমার গালে ওর গাল ঘষছে)
কাব্য: আর কখনো এমন হবে না আসলে…
আমি: হয়েছে আর বলতে হবে না।
কাব্য: হুম একটু হাসো প্লিজ। (কাব্য’র চোখের দিকে তাকালাম, ও পারে কিভাবে এতো সহজ ভাবে কথা বলতে)
কাব্য: যদিও রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম, এইটা হওয়া উচিত ছিল।
আমি: মানে?
কাব্য: এইযে এই রাগের জন্য দুজন একদিন আলাদা থেকেছি আর কে কাকে কতোটা ভালোবাসি সেটা বুঝতে পেরেছি।
আমি: ভালোবাসা বুঝার জন্য দূরে যেতে হয় না, ভালোবাসা দিয়েই ভালোবাসা বুঝা যায়।
কাব্য: হুম তাইতো এখন ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা বুঝবো।
আমি: কি করছ।
কাব্য: চুপ।
কাব্য একটা আঙ্গুল আমার মুখে রেখে কথা বলতে নিষেধ করলো। আমার হাত বিছানায় চেপে ধরে আমার হাতের আঙ্গুলের ভাজে ভাজে ওর আঙ্গুল গুলো আটকে দিলো। চোখ দুটু বন্ধ করে আছি কাব্য মাতালের মতো আমার সারা শরীরে চুমু খাচ্ছে, ওকে আটকানোর চেষ্টা করতেই আমার ঠোঁটের মধ্যে ওর ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। আমার ঠোঁট দুটু ওর ঠোঁটের মাঝে রেখে আমার চোখের দিকে ও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কাব্য’র নেশা ধরানো চাহনি আর মাতাল করা স্পর্শে শিউরে উঠে কাব্য’কে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম।

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ২০

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ২০

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে ঘুম ভাঙতেই ঘুম ঘুম চোখে রুমের চারপাশে তাকালাম, কাব্য সোফায় বসে ল্যাপটপ টিপছে।
কাব্য: গুড মর্নিং তিলো পাগলী।
আমি: গুড মর্নি… (আশ্চর্য কাব্য এভাবে হাসছে কেন, আমার দিকে না তাকিয়েই ল্যাপটপ টিপছে আর মিটিমিটি হাসছে)
আমি: এই তুমি এভাবে হাসছ কেন? (কিছুনা বলে আরো বেশি হাসছে)
আমি: বলো বলছি কেন হাসছ।
কাব্য: কোথায় আমি হাসছি নাতো। (হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে হাসছে ইচ্ছে হচ্ছে ওকে… হঠাৎ রাতের কথা মনে পড়লো। আমার তো কাব্য’র আগে ঘুম থেকে উঠার কথা ছিল আর ডায়েরি… ডায়েরিটা আছে তো? তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম, কোথায় টেবিলে তো ডায়েরিটা নেই)
কাব্য: আরে এভাবে লাফ দিয়ে উঠে বসেছ কেন সমস্যা হবে তো।
আমি: আচ্ছা আমরা তো বারান্দায় ঘুমিয়েছিলাম তাহলে বিছানায় আসলাম কিভাবে?
কাব্য: এই ঠান্ডার মধ্যে তোমাকে বারান্দায় রাখবো আমি পাগল হয়েছি তো। তুমি ঘুমানোর পরই তোমাকে রুমে নিয়ে এসেছি। (তারমানে কাব্য রাতেই ডায়েরিটা সরিয়ে ফেলেছে। এখন কি করবো আমি, দ্যাত নিজের প্রতি নিজের রাগ হচ্ছে ইচ্ছে হচ্ছে নিজেকেই…)
কাব্য: তুমি আবার নিজের উপর রাগ করছ? আমি কিন্তু তোমার রাগে লাল হয়ে যাওয়া নাক দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবো না।
আমি: তুমি আবার হাসছ? (আচ্ছা কাব্য এভাবে হাসছে কেন তাহলে কি ও আমার চালাকি ধরে ফেলেছে। দ্যাত আমি চালাকি করতে পারলাম কোথায় কাব্য নিজেই তো আমার চেয়ে বড় চালাক)
কাব্য: তিলো তুমি অসুস্থ রেস্ট নাও প্লিজ, অন্য টেনশন মাথায় এনো না। (অবাক হয়ে তাকালাম কাব্য’র দিকে তারমানে কাব্য সব বুঝে ফেলেছে)
কাব্য: যেভাবে আছি ভালোই তো আছি কেন শুধু শুধু অশান্তি বাড়াচ্ছ?
আমি: অশান্তি আমি করছি না। আর টেনশনের কথা বলছ? আমার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই টেনশন আমি করেই যাবো।
কাব্য: হুম করো কিন্তু মনে রেখো কোনো লাভ হবে না। (কাব্য রুম থেকে বেরিয়ে গেলো)
ডাক্তারবাবু তুমি আমার সাথে যতোই চালাকি করো আমি যখন বলেছি আব্বু আম্মুকে ফিরিয়ে আনবো তাহলে আনবোই।

দুই সপ্তাহ পর…

এই দুই সপ্তাহের ভিতরে কাব্য’কে আর ডায়েরি লিখতে দেখিনি, ভেবেই পাচ্ছি না কিভাবে কি করবো। কাব্য যেহেতু ডায়েরিটা আমার থেকে লুকিয়ে রাখতে চাইছে তারমানে এই ডায়েরিতে কোনো না কোনো রহস্য তো আছেই।
ভাবি: হিয়া কি হয়েছে? (ড্রয়িংরুমে বসে বসে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ ভাবির কথা শুনে দরজার দিকে তাকালাম হিয়া ভয়ে দৌড়ে ভিতরে এসে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিলো)
ভাবি: কিরে হিয়া কি হয়েছে?
আমি: হিয়া কি হয়েছে তুমি এতো ভয় পেয়ে আছ কেন?
হিয়া: আমাকে পানি দাও। (ভাবি হিয়ার জন্য পানি আনতে গেলেন, হিয়া আমাকে জরিয়ে ধরে বসে আছে। আশ্চর্য হিয়া এতো ভয় পেলো কেন?)
ভাবি: এইনে পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করে বলতো কি হয়েছে। (হিয়া ঢকঢক করে পানি খেয়ে আবার আমাকে জরিয়ে ধরলো, কিছুই তো বুঝতে পারছি না)
ভাবি: হিয়া বল আমাদের কি হয়েছে?
হিয়া: শপিং করতে গিয়েছিলাম কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। যখন শপিংমল থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলাম তখন মনে হলো কেউ আমাকে ফলো করছে। গাড়িও নিয়ে যাইনি তাই তাড়াতাড়ি একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়ি। কিন্তু বার বার মনে হচ্ছিল কে যেন আমাকে ফলো করছে, ভয়ে আর পিছন ফিরে তাকানোর সাহস পাইনি। বাসার সামনে এসে যখন রিকশা থেকে নামলাম তখন দুইটা লোক আমার দুইপাশে এসে দাঁড়ালো। বিপদ হতে পারে বুঝতে পেরে একটা লোককে ধাক্কা দিয়ে আমি দৌড়ে চলে আসি আর আসার সময়…
আমি: আসার সময় কি?
হিয়া: একটা লোকের হাতে বোধহয় চাকু ছিল আমি দেখতে পাইনি আমার হাতে লেগে গেছে।
ভাবি: কোথায় দেখি?
আমি: অনেকটা জায়গা কেটে গেছে তো। (হঠাৎ পাশেই রাখা আমার ফোনটা বেজে উঠলো, কাব্য ফোন দিয়েছে)
ভাবি: তিলোত্তমা কে ফোন দিয়েছে দেখ আমি হিয়ার হাত ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।
আমি: হুম।

একটু দূর এসে ফোনটা রিসিভ করলাম।
আমি: হ্যালো।
কাব্য: তিলো আজকে ফিরতে পারবো না।
আমি: কেন?
কাব্য: একটু কাজ আছে। (কিসের কাজ এমন যে কাব্য বাসায় ফিরবে না। আচ্ছা ও তো বলেছিল আমি সুস্থ হলে কক্সবাজার যাবে এখন তো আমি পুরোপুরি সুস্থ তাহলে কি ও কক্সবাজার যাচ্ছে)
আমি: আমার থেকে কি লুকাচ্ছ বলো।
কাব্য: কি লুকাবো কিছুই নাতো, কাজ আছে তাই ফিরবো না। (কাব্য যদি সত্যি কক্সবাজার যেতে চায় তাহলে ওকে আটকাতে হবে। হিয়ার সাথে আজকে যা ঘটলো তা আমার কাছে ঠিক লাগছে না, আমি নিশ্চিত এসব ওই মেয়েটার কাজ)
আমি: ডাক্তারবাবু হিয়া হাত কেটে ফেলেছে।
কাব্য: মানে কিভাবে?
আমি: বাসায় আসো তারপর বলছি।
কাব্য: ঠিক আছে আমি আসছি। (ফোন রেখে হিয়ার কাছে আসলাম)
আমি: আচ্ছা হিয়া তুমি লোক দুইটাকে চিনতে পেরেছ?
হিয়া: না অন্ধকারে তো বুঝা যাচ্ছিল না আর মনে হলো দুজনের মুখই রোমাল দিয়ে বাধা ছিল। (আমাকে যারা মেরেছিল তারা নয়তো)
আমি: শপিং করতে গিয়েছিলে তো ছিনতাইকারী হবে, তুমি ভয় পেয়ো না রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।
হিয়া: ঠিক আছে।

বারান্দা আর রুমে পায়চারী করছি কিছুতেই শান্ত হয়ে বসতে পারছি না। মেয়েটা অনেক দূর এগিয়ে গেছে, আজ হয়তো হিয়ার তেমন ক্ষতি হয়নি কিন্তু পরে? পরে যে বেশি ক্ষতি করবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে? হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো হাতে নিয়ে দেখি অচেনা নাম্বার, এই অচেনা নাম্বার দেখলেই এখন আমার ভয় হয়। ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম।
আমি: হ্যালো।
–আমি আন্দাজ করতে পেরেছি সেদিন হসপিটালে আমার ফোন কাব্য নয় তুমি রিসিভ করেছিলে। আমি এতোকিছু বলার পরও কাব্য চুপ হয়ে থাকার ছেলে নয়। সেদিন কি কি বলেছিলাম মনে আছে তো? অবশ্য মনে না থাকলেও সমস্যা নেই আজ হিয়ার এই অবস্থা দেখে অবশ্যই মনে পরে গেছে।
আমি: তুমি কে বলতো।
–আমি কে শুনলে চমকে যাবে তারচেয়ে না জানাই ভালো।
আমি: কেন করছ এরকম?
–কাব্য আমার সাথে প্রতারণা করেছে তাই প্রতিশোধ নিচ্ছি ওকে আমি শান্তিতে থাকতে দিবো না।
আমি: কি করবে তুমি হ্যাঁ?
–যা যা করেছি তা থেকে কি আন্দাজ করতে পারছ না?
আমি: দেখো তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে ডাক্তারবাবু কারো সাথে প্রতারণা করতেই পারে না।
–করেছে তো আমার সাথে করেছে।
আমি: যেটুকু বুঝতে পেরেছি তুমি ডাক্তারবাবুর অতীত আ…
–তুমি খুব চালাক মেয়ে কিন্তু তুমি এইটা কেন বুঝতে পারছ না কাব্য আমার লোক গুলোকে খুঁজতে চাইছে আর তাই আমি হিয়ার ক্ষতি করছি। কাব্য’কে নিষেধ করো তাহ…
আমি: অন্যায় যখন করেছ শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।
–আমাকে খুঁজে পাবে না তো শাস্তি কিভাবে দিবে? বরং আমি তোমাদের একের পর এক ক্ষতি করেই যাবো।
আমি: ভীতুরা লুকিয়েই অন্যের ক্ষতি করে, সাহস থাকলে সামনে এসে ক্ষতি করো দেখি পারো কিনা।
–এই আমাকে একদম ভীতু বলবি না।
আমি: ভীতু কে তো ভীতুই বলতে হয়। তুমি তো ভয়ে আমার সামনেই আসছ না টাকা দিয়ে লোক কিনে আমাদের ক্ষতি করছ আ…
–খুব শীঘ্রই তোর সামনে আসবো। (ফোনটা কেটে দিলো যাক রাগিয়ে দিয়ে তো একটা কাজ হলো, ও আমার সামনে আসবে ওকে তো চিনতে পারবো)
হঠাৎ কাব্যদের চেঁচামেচি শুনে তাড়াতাড়ি নিচে আসলাম।

তিন ভাই একসাথে চলে এসেছে আর হিয়াকে একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।
হিয়া: আরে থামো তোমরা। (হিয়ার চিৎকারে সবাই শান্ত হলো)
হিয়া: এভাবে তিনজন একসাথে প্রশ্ন করলে আমি উত্তর দিবো কিভাবে?
ভাইয়া: ঠিক আছে এখন বল তোর হাত কেটেছে কিভাবে।
হিয়া: দুজন লো…
আমি: হিয়াকে রাস্তায় ছিনতাইকারী ফলো করেছিল আর ওদের কাছ থেকে পালিয়ে আসতে গিয়ে কেটে গেছে।
কাব্য: তোকে একা বাইরে যেতে বলেছিল কে অয়নকে বললে তো নিয়ে যেতো আর একা গিয়েছিস তো গাড়ি নিলি না কেন?
হিয়া: কখন থেকে সবাই আমাকে বকা দিয়েই যাচ্ছ, আমার তো তেমন কিছুই হয়নি সামান্য হাত কেটেছে মাত্র।
অয়ন: এক থাপ্পড় দিবো সামান্য কেটেছে বলছে আবার।
আমি: অয়ন কি করছ? যাও তোমরা তিন ভাই এই রুম থেকে বের হও। (সবাইকে জোর করে রুম থেকে বের করে দিলাম)
ভাবি: কেন যে একা একা গেলি।
হিয়া: আমি জানতাম নাকি ছিনতাইকারী ধরবে।
আমি: অয়নকে নিয়ে গেলেই পারতে, দেখছ তো সামান্য হাত কাটাতে তোমার ভাইরা কেমন পাগল পাগল হয়ে গেছে।
হিয়া: হু।
আমি: এখন চুপ করে ঘুমাও।
হিয়া: ঠিক আছে।

রুমে এসে দেখি কাব্য নেই গেলো কোথায়? বারান্দার দরজা খোলা তাহলে মনে হয় বারান্দায়। কাব্য বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে, হঠাৎ ও কাঁদছে কেন?
আমি: ডাক্তারবাবু।
কাব্য: হুম।
আমি: কি হয়েছে কাঁদছ কেন?
কাব্য: জানো তিলো আমি কখনো হিয়ার গায়ে এতটুকু আছর লাগতে দেইনি আর আজ হিয়ার হাত এতোটা কেটে গেছে।
আমি: এজন্য কাঁদতে হয় পাগল কোথাকার।
কাব্য: কি করবো খুব কষ্ট হচ্ছে যে, হিয়াটাই তো আমার সব।
আমি: হু বুঝতে পেরেছি। (সামান্য হাত কেটে গেছে তাতেই কাব্য কান্নাকাটি করছে এরচেয়ে বড় কোনো ক্ষতি হলে তো কাব্য…)
আমি: আচ্ছা তোমাকে একটা প্রশ্ন করি রাগ করবে নাতো?
কাব্য: উঁহু বলো।
আমি: আচ্ছা তুমি তো আমার প্রথম ভালোবাসা আমিও কি তোমার প্রথম ভালোবাসা? (কাব্য চমকে উঠে আমার দিকে তাকালো)
কাব্য: হঠাৎ এসব জানতে চাইছ কেন?
আমি: বলোনা প্লিজ। (কাব্য’কে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে ওর পিটে মাথা রাখলাম, কোনো ভাবে তো জানতে হবে আমাকে মেয়েটা কে)
কাব্য: তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা না, এর আগেও আমার একজনের সাথে রিলেশন ছিল।
আমি: তাহলে তাকে বিয়ে করলে না কেন?
কাব্য: ওকে বিয়ে করলে কি আমার তিলো পাগলীকে পেতাম?
আমি: তুমি কিন্তু আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছ, আচ্ছা মেয়েটির নাম কি ছিল?
কাব্য: ওই নোংরা নামটা আমি মুখে আনতে চাই না। (কাব্য আমাকে এক ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে রুমে চলে গেলো)

কিযে করি কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। কাব্য তখন রাগ করে বাসা থেকেই বেরিয়ে গেলো, মেয়েটির নাম জানতে চাওয়াতে কাব্য এতো রেগে গেলো কেন বুঝতে পারছি না। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম রাত এগারোটা বাজে, কাব্য এখনো বাসায় আসছে না কেন? হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, আদনান ভাইয়া এতো রাতে ফোন দিলো কেন?
আমি: হ্যালো।
আদনান: ভাবি কাব্য আমার কাছে আছে টেনশন করোনা।
আমি: ও বাসায় আসবে না?
আদনান: বলেছিলাম ও তো না করছে। আর তুমি হঠাৎ করে ওর অতীত জানতে চাইছ কেন বলতো?
আমি: ওহ এজন্য ও রাগ করেছে?
আদনান: রাগ না ঠিক তবে অতীত মনে পড়লে ও কষ্ট পায় প্লিজ আর কখনো জানতে চেয়ে ওকে কষ্ট দিও না।
আমি: ঠিক আছে ওকে সকালে পাঠিয়ে দিও।
আদনান: ওকে।
আশ্চর্য তো যে কাব্য আমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারে না সে কাব্য সামান্য অতীত জানতে চাওয়াতে রাগ করে বন্ধুর বাসায় চলে গেলো।

কাব্য যখন বাসায় নেই এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে হবে, এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু ডায়েরিটা পাবো কোথায়? এই রুমে কোথাও আছে বলে তো মনে হয় না।

কি খুঁজছি নিজেও জানিনা শুধু জানি ডায়েরিটা আমাকে পেতে হবে। আর খুঁজতে খুঁজতে নিচে চলে এসেছি। অন্যমনস্ক হয়ে হাটছিলাম হঠাৎ অয়নের সাথে ধাক্কা খেলাম, এতো রাতে অয়ন সজাগ কেনো?
অয়ন: ভাবি এতো রাতে এখানে কি করছ?
আমি: আমিও তো তোমাকে এই একি প্রশ্ন করতে পারি।
অয়ন: এইতো ঘুম আসছিল না তাই হাটছিলাম।
আমি: ওহ আমি পানি খেতে আসছিলাম।
অয়ন: মিথ্যে বলছ তুমি, আমি এর আগেও অনেক বার লক্ষ করেছি তুমি এই বাসায় কি যেন খুঁজো।
আমি: হ্যাঁ খুঁজি, তুমি আমাকে সাহায্য করবে?
অয়ন: বলে দেখো করলে তো করতেও পারি। (অয়নের দিকে তাকালাম সত্যি কি ওকে বলা উচিত হবে, ও কি সাহায্য করবে আমায়)
আমি: আসলে আমি তোমার ভাইয়ার ডায়েরি খুঁজছি।
অয়ন: হঠাৎ ডায়েরি কেন?
আমি: প্রয়োজন আছে।
অয়ন: আমাকে বললে সাহায্য করতে পারি।
আমি: আম্মু আব্বুকে খুঁজে বের করতে চাই আবার সবাইকে এক করতে চাই।
অয়ন: পারবে তুমি এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে?
আমি: পারবো কিনা জানিনা তবে চেষ্টা তো করতেই পারি।
অয়ন: চলো আমার সাথে।

অয়ন আমার হাত ধরে টেনে স্টোররুমে নিয়ে আসলো।
আমি: এই রুমে তো আমি আগেও এসেছি এখানে কিছু নেই। (অয়ন আমার দিকে একবার তাকিয়ে দেয়ালের সাথে লাগানো আলমারিটা সরিয়ে ফেললো। আলমারির পিছনে দরজা দেখে তো আমি অবাক)
অয়ন: এই দরজার কথা কেউ জানেনা একদিন আমি ভাইয়াকে ফলো করে এখানে এসেছিলাম আর তুমি ভাইয়ার আব্বু আম্মুকে ফিরিয়ে আনতে চাইছ বলেই তোমাকে দেখালাম।
আমি: এখানে আরেকটা রুম আছে?
অয়ন: লাইব্রেরী।

অয়ন আর আমি দুজন লাইব্রেরীতে ঢুকলাম। ছোট একটা রুম কিন্তু পুরো রুমে বই দিয়ে ঠাসা। টেবিলের উপর অনেক গুলো ডায়েরি রাখা আর টেবিলের পাশে গীটার রাখা। দেয়ালে তাকালাম পুরো দেয়াল জুড়ে শুধু আব্বু আম্মুর ছবি। সেদিন যে ডায়েরিটা দেখেছিলাম সে ডায়েরিটা টেবিলের উপর রাখা দেখে হাতে নিলাম। অবশেষে ডায়েরিটা পেয়ে গেলাম, কোনো না কোনো সূত্র তো পাবোই আব্বু আম্মুকে খুঁজে পাওয়ার। আস্তে আস্তে ডায়েরিটা খুললাম…

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১৯

0

রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

পুরো এক সপ্তাহ হসপিটালে থেকে তারপর বাসায় আসতে পারলাম। বাসার সামনে এসে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম, হসপিটালে এতো দিন থাকা যায়। কাব্য যে কিভাবে সারাটা দিন হসপিটালে কাটায়…
আমি: আরে কি করছ ডাক্তারবাবু?
কাব্য: দেখতেই তো পারছ কি করছি।
আমি: হ্যাঁ দেখছি কিন্তু আমি তো হেটে যেতে পারবো কোলে নিয়েছ কেন?
কাব্য: তুমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হওনি তাই।
আমি: তাই বলে এখান থেকে বাসার ভিতরে…
কাব্য: উফফফ তুমি না বড্ড বেশি কথা বলো। (কাব্য’র ধমক শুনে চুপ হয়ে গেলাম। গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভিতর চলে যাবো তাও এইটুকু জায়গা ও আমাকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে)
হিয়া: এইতো ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে চলে এসেছে।
ভাবি: এখানে বসিয়ে দাও। (কাব্য আমাকে ড্রয়িংরুমে সোফায় এনে বসিয়ে দিলো)
অয়ন: ভাবি তুমি এতোদিন হসপিটালে ছিলে বাসাটা কেমন যেন ফাঁকাফাঁকা লাগছিল।
ভাবি: হ্যাঁ এখন ওর সামনে বেশি বকবক করোনা ও কিন্তু এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।
আমি: ভাবি আমি ঠিক আছি সুস্থ হয়ে গেছি তোমরা এতো চিন্তা করোনা।
কাব্য: হ্যাঁ তুমি এতোটাই সুস্থ হয়ে গেছ যে এখন তুমি দৌড়াতে পারবে। (কাব্য’র কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম, সত্যিই তো আমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হইনি)

হিয়ার কাধে মাথা রেখে বসে আছি আর সবাই গল্প করছে। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো।
কাব্য: ফারাবী এসেছে মনে হয় আমি দেখছি। (কাব্য দরজা খুলে দিতেই মামি এসে তাড়াহুড়ো করে ভিতরে ঢুকলেন)
মামি: তমা।
আমি: মামি তুমি এখা…
মামি: এতো অবাক হচ্ছিস কেন আমি তোকে দেখতে এসেছি।
আমি: বাহ্ এক সপ্তাহের উপর হসপিটালে থেকে আসলাম তখন দেখতে যাওনি আর আজ বাসায় আসা মাত্রই দেখতে চলে আসলে।
ভাবি: মামি আপনি বসে কথা বলুন না। (মামি এসে আমার পাশে বসলেন)
মামি: আসলে আমি জানতাম না তুই এতোটা অসুস্থ সেদিন তিশা বলছিল তুই অসুস্থ আমি এতোটা কানে নেইনি কিন্তু আজ তিশা ওর মায়ের সাথে কথা বলছিল তোর বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে এই ব্যাপারে, তাই তো ছুটে আসলাম তোকে দেখতে। (ব্যাপার কি মামি হঠাৎ এতো ভালো হয়ে গেলো, কোনো না কোনো কাহিনী তো নিশ্চয় আছে। আচ্ছা এসবের পিছনে মামির হাত নেইতো)
মামি: কিরে কথা বলছিস না যে?
কাব্য: মামি এই বিষয়ে তিলোকে কিছু না বলাই ভালো।
মামি: ঠিক আছে বাবা।
কাব্য: আপনি রেস্ট নিন আমি তিলোকে নিয়ে রুমে যাচ্ছি। (কাব্য আবার আমাকে কোলে তুলে নিলো, সবাই স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আছে কিন্তু মামি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। কাব্য’র বুকের শার্ট খামছে ধরে মাথাটা ওর বুকের মধ্যে এলিয়ে দিলাম। কাব্য সিঁড়ি দিয়ে উপড়ে উঠতে উঠতে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকিয়ে তাকালো)
আমি: এভাবে ভ্রু কুচকাচ্ছ কেন?
কাব্য: তুমি হাসছ কেন?
আমি: বউকে কোলে করে নিয়ে চলাফেরা করতে হয় তোমার কি কষ্ট এইটা ভেবেই হাসছি।
কাব্য: ওহ তাই তো আমার তো খুব কষ্ট হয় এখনো হচ্ছে, আমার তো এখন তোমাকে ঠাস করে ফেলে দেওয়া উচিত।
আমি: এই না না। (ভয়ে দুহাত দিয়ে কাব্য’র গলা জরিয়ে ধরলাম)

কাব্য আমাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে জানালা গুলো খুলে দিলো। কতোদিন পর নিজের রুমে আসতে পেরেছি।
আমি: কতোদিন পর বাসায় আসছি তাই না?
কাব্য: হ্যাঁ আমার লক্ষী আমার ঘরে ফিরে এসেছে।
আমি: লক্ষী কে?
কাব্য: আমার বউ।
আমি: তোমার বউ কে?
কাব্য: আমার তিলো পাগলী।
আমি: তোমার তিলো পাগলী কে?
কাব্য: তু… (কথা আটকে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো কাব্য। কতোদিন পর ওর মুখে এই পাগল করা হাসিটা দেখলাম)
কাব্য: তিলো সব ভুলে যাও আমরা আবার নতুন করে সব সাজাবো কেমন?
আমি: হু।
কাব্য: পেটের ব্যথা কমেছে? (কি বলি এখন ওকে, পেটের ব্যথাটা যে এখনো কমেনি। কাব্য’কে বললে তো ও টেনশন করবে)
কাব্য: আর বলতে হবে না আমি উত্তর পেয়ে গেছি। (কাব্য আমার পেটের শাড়ি সরাতে সরাতে বললো)
আমি: আরে ডাক্তারবাবু কি করছ?
কাব্য: ডাক্তারবাবু তার বউয়ের চিকিৎসা করছে। (কাব্য আমার পেটে আলতো করে একটা চুমু খেলো)
কাব্য: চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে। (কাব্য’র দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আজ কতোদিন পর কাব্য এমনভাবে স্বাভাবিক হয়ে কথা বলছে, হাসছে)
কাব্য: তখন ভয় পেয়ে আমার গলা জরিয়ে ধরেছিলে কেন, ভেবেছিলে সত্যি আমি তোমাকে ফেলে দিবো?
আমি: আস…
কাব্য: তোমার ডাক্তারবাবু তোমাকে কখনো কষ্ট দিবে না যদি কখনো পাও বুঝে নিও নিজের অজান্তে দিয়ে ফেলেছি। (আমার নাকের সাথে ওর নাক ঘসছে। দ্যাত নিজের প্রতি এখন রাগ হচ্ছে, আগে কেন ভয় পেতে গেলাম)
কাব্য: নিজের উপর রাগ করোনা বুঝেছ।
আমি: নিজের উপর রাগ করোনা বুঝেছ। আমি যে নিজের উপর রাগ করেছি তুমি বুঝলে কিভাবে?
কাব্য: আমাকে ভেঙাচ্ছ কেন আমি বুঝতে পেরেছি তাই বললাম। আসলে তুমি যখন নিজেই নিজের প্রতি রেগে যাও তখন তোমার নাকটা লাল হয়ে যায় আর আমার তখন… (কাব্য আমার ঠোঁটের কাছে ওর ঠোঁট দুটু এনে আমার চোখের দিকে তাকালো)
আমি: আর তোমার তখন কি?
কাব্য: তোমার লাল হয়ে যাওয়া নাকটায় কামড় বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করে (কাব্য আমার নাকে আলতো করে একটা কামড় দিলো)
আমি: ফাজিল কোথাকার অসুস্থ বউয়ের সাথে রোমান্স হচ্ছে।
কাব্য: অসুস্থ বউয়ের সাথে রোমান্স করা যাবে না এইটা কোন বইয়ে লিখা আছে হু?
আমি: কোনো বইয়ে লিখা নেই তবে আমার আইনে আছে।
কাব্য: যে আইন আমার থেকে আমার তিলো পাগলীকে আলাদা করে নিবে সে আইন আমি মানি না বুঝেছ?
আমি: হ্যাঁ বুঝেছি কিন্তু কি করছ এসব?
কাব্য: যা করছি তাতো দেখতেই পারছ। (কাব্য আমার পেট থেকে চুমু দিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে উপরে উঠছে। গলায় চুমু দিয়ে একটা হাত আমার গালে রাখলো তারপর আমার ঠোঁটের উপর ওর ঠোঁট রাখলো। একটা হাত দিয়ে কাব্য’র ঘাড়ের কাছের চুলগুলো মুষ্টি করে ধরলাম সাথে সাথে দরজায় টোকা পড়লো, ওর চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে ওকে সরাতে চাইলাম। কাব্য আমার ঠোঁট দুটু ওর ঠোঁটের মধ্যে রেখেই আমার চোখের দিকে তাকালো। রাগে কাব্য’র চোখ দুটু লাল হয়ে আছে দেখে খুব হাসি পাচ্ছে কিন্তু কাব্য তো আমাকে ছাড়ছেই না, ওদিকে কে যেন দরজায় টোকা দিয়েই যাচ্ছে)
কাব্য: নাও ছেড়ে দিলাম আর হাসি চেপে রাখতে হবে না মন খুলে হাসো। (হাসি আটকানোর জন্য একটা হাত দিয়ে মুখ ঢাকলাম, কাব্য দেখে আরো রেগে গেলো)
কাব্য: যে এসেছে তাকে তো এখন আমি…
আমি: আরে ডাক্তারবাবু… (কাব্য রাগ নিয়ে দরজা খুললেও হিয়াকে দেখে ওর সব রাগ ফুস)
হিয়া: কখন থেকে ডাকছি এতোক্ষণ লাগে দরজা খুলতে (কাব্য কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না তাই মাথা চুলকাচ্ছে)
হিয়া: নাও ভাবিকে খাবার খাইয়ে দিয়ে ওষুধ দাও।
কাব্য: ঠিক আছে রেখে যা। (হিয়া খাবার রেখে আমার দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ দিয়ে চলে গেলো। হিয়া চোখ টিপ দিলো কেন)
কাব্য: কি ভাবছ?
আমি: হিয়া চোখ টিপ দিলো কেন?
কাব্য: জানিন… (কাব্য অর্ধেক বলে আটকে গেছে, আমার পেটের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর এমন চাওয়া দেখে পেটের দিকে তাকালাম, ইহহ পেটে তো শাড়ি নেই তারমানে…)
কাব্য: আমার দিকে রাগি চোখে তাকাচ্ছ কেন আমি কিছু জানিনা।
আমি: নিজে সরিয়ে এখন জানেনা, ইসসস হিয়া বুঝে পেলেছে তুমি আমাকে…
কাব্য: আদর করছিলাম তাই তো, হিয়া বুঝলে কি হয়েছে আমি আমার বউকেই তো আদর করছিলাম।
আমি: হিয়া তো বোন তাই না?
কাব্য: আমার বোন হলেও তোমার তো ননদ সমস্যা নেই।
আমি: না হিয়া আমারো বোন।
কাব্য: আচ্ছা বাবা হিয়া তোমারই বোন এখন খেয়ে নাও।
আমি: হু।

ছোট বাচ্চাদের মানুষ যেভাবে যত্ন করে কাব্য সেভাবে আমার যত্ন করছে। নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিয়েছে, ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে আ…
কাব্য: কি হলো মিটিমিটি হাসছ যে?
আমি: ভাবছি হাজবেন্ড ডক্টর হলে ভালোই হয় অসুস্থ হলে বেশি বেশি সেবা পাওয়া যায়।
কাব্য: আর ওইটা বলো হাজবেন্ড রোমান্টিক হলেও ভালো হয় অসুস্থ হলেও আদর পাওয়া যায়।
আমি: দ্যাত তুমি না। (হঠাৎ কাব্য’র ফোন বেজে উঠলো। ফোন নিয়ে কাব্য জানালার কাছে চলে গেলো)

কাব্য: আরে লোক দুটু তো আর আকাশে উড়ে উড়ে ছাদে আসেনি এসেছে তো নিচ থেকেই তাহলে সিসি ক্যামেরায় দেখা যাবে না কেন? (ওপাশ থেকে কে কি বলছে শুনতে পাচ্ছি না তবে এইটা বুঝতে পারছি কাব্য লোক দুটুকে খুঁজছে)
কাব্য: বাইরের ক্যামেরা নাহয় নষ্ট করে দিয়েছিল কিন্তু হসপিটালে তো অনেক ক্যামেরা কোনো ক্যামেরায় কি ধরা পড়েনি? (কাব্য যে খুঁজছে ওদের ওই মেয়েটা আবার হিয়ার কোনো ক্ষতি করবে নাতো। আমি কি কাব্য’কে নিষেধ করবো)
কাব্য: দ্যাত ফোন রাখ তিলো সুস্থ হলেই আমি কক্সবাজার আসছি। (কাব্য ফোন কেটে দিয়ে আমার পাশে এসে বসলো)
কাব্য: তিলো এখন ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে।
আমি: ওকে।

কাব্য লোক দুইটাকে পাগলের মতো খুঁজছে বুঝতে পারছি কিন্তু ওই মেয়েটা যদি হিয়ার ক্ষতি করে তাই ভয় হচ্ছে। কাব্য’কে নিষেধ করলেও শুনবে না কারণ কাব্য আমাকে ভালোবাসে, যারা আমাকে এতো কষ্ট দিয়েছে কাব্য তাদের ছেড়ে দিবে না। কাব্য আমাকে এতোটাই ভালোবাসে যে এতো অসুস্থ ছিলাম আমি ওর একটু একটু ভালোবাসা সেবা দিয়ে আমাকে সুস্থ করে তুলেছে। একটা ছোট বাচ্চাকে যেভাবে যত্ন করা হয় কাব্য আমাকে সেভাবে যত্ন করছে। কতোটা ভালোবাসলে মানুষ এতো ধৈর্য নিয়ে দিনের পর দিন এভাবে যত্ন করে যেতে পারে কাব্য আমার জীবনে না আসলে বুঝতামই না।

মাঝরাতে হঠাৎ পেটের ব্যথায় ঘুম ভেঙে গেলো, কাব্য’কে ডাকার জন্য হাত বাড়ালাম কিন্তু কাব্য তো আমার পাশে নেই। তাকিয়ে দেখি কাব্য কি যেন লিখছে, আশ্চর্য এতো রাতে আর ডিম লাইটের আলোতে কাব্য কি লিখছে? আচ্ছা ডায়েরি নয় তো? কাব্য হঠাৎ ডায়েরিটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে পা বাড়ালো। কাব্য কোথায় যাবে আমি দেখতে পারবো না কারণ ওর পিছু পিছু যাওয়া সম্ভব না পেটে ব্যথা করছে। যেভাবেই হউক কাব্য’কে আটকাতে হবে যেন কাব্য ভুলে ডায়েরিটা এই রুমেই রেখে দেয়।
আমি: ডাক্তারবাবু… (আমার ডাক শুনে কাব্য থেমে গেলো, ডায়েরিটা টেবিলে ছুড়ে ফেলে দিয়ে তাড়াতাড়ি আমার কাছে আসলো)
কাব্য: কি হয়েছে তিলো কষ্ট হচ্ছে তোমার।
আমি: হুম পেটে ব্যথা করছে আর এই রুমে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
কাব্য: এই রুমে…
আমি: আমাকে বারান্দায় নিয়ে চলো প্লিজ।
কাব্য: এতো রাতে।
আমি: হু।
কাব্য: ঠিক আছে।

কাব্য আমাকে কোলে করে এনে বারান্দায় রাখা কাউছ’টায় শুয়ে দিলো।
আমি: তুমি কোথায় যাচ্ছ।
কাব্য: আসছি একটু।
আমি: কোথাও যাবে না আমার ভয় করে এখানে বস। (কাব্য চুপচাপ এসে আমার পাশে শুয়ে পড়লো, কাব্য’র বুকে মাথা রেখে ওকে জরিয়ে ধরলাম। সকালে ওর আগে আমাকে ঘুম থেকে উঠতে হবে যেন ডায়েরিটা পেয়ে যাই। রাতে কাব্য’র এখান থেকে যাওয়ার সুযোগ নেই ডায়েরি লুকাবে কিভাবে)
কাব্য: ঘুমিয়ে পড়ো তিলো পাগলী।
কাব্য এক হাত দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে রেখেছে আরেক হাত দিয়ে আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। কাব্য’কে জরিয়ে ধরে চুপচাপ শুয়ে রইলাম, সকালে শুরু হবে আব্বু আম্মুকে খুঁজে বের করার জন্য আমার প্রথম কাজ।

চলবে?

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১৮

0

রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

হঠাৎ কারো কান্নার শব্দে ঘুম ভাঙলো, আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি কাব্য একটু দূরে চেয়ারে মাথা নিচু করে বসে আছে আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কতোক্ষণ ঘুমিয়েছি জানিনা মনে তো হচ্ছে এখন গভীর রাত, দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালাম রাত দুইটা বাজে। হুট করে বাচ্চার কথা মনে পড়ে গেলো, একটা হাত আস্তে আস্তে পেটের উপর নিয়ে রাখলাম। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু কাঁদতে পারছি না, আমি কাঁদলে যে কাব্য আরো ভেঙ্গে পড়বে।
আমি: ডাক্তারবাবু (আমার ডাক শুনে কাব্য তাড়াতাড়ি পিছন ফিরে চোখের পানি মুছে নিলো, আমাকে লুকাতে চাইছে হায়রে পাগল)
কাব্য: ঘুম ভেঙেছে?
আমি: হুম। (আমার পাশে বসে পেটের উপর রাখা আমার হাতটা ওর হাতের মুঠোয় পুরে নিলো তারপর আমার হাতে একটা চুমু খেলো)
কাব্য: এইতো তুমি সুস্থ হয়ে গেছ দেখো আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি: আচ্ছা তুমি এতো সুন্দর করে কষ্ট লুকাতে পারো কিভাবে (কাব্য মুখে হাসির রেখা টানার বৃথা চেষ্টা করে আমার বুকের উপর ওর মাথা রাখলো। একটা হাত ওর চুলের মধ্যে রাখলাম, জানিনা আর কতো কষ্ট পেতে হবে ওকে)
কাব্য: তিলো আমাকে ক্ষমা করে দিও প্লিজ।
আমি: কেন কি করেছ তুমি?
কাব্য: এইযে তুমি ভয় পাওয়ার পরও জেদ করে কক্সবাজার গেলাম, আর তোমাকে চোখে চোখে না রেখে সবার সাথে আনন্দ করছিলাম।
আমি: আমি ছোট বাচ্চা নাকি যে আমাকে চোখে চোখে রাখবে, এতে তো আমারো দোষ আছে। আমি কেন তোমার থেকে দুরে ছাদের অন্যপাশে গিয়েছিলাম, না গেলে তো এমন হতো না।
কাব্য: মানুষের জীবনে কখন কি ঘটে তা তো আগে থেকে বলা যায় না, যা হবার ছিল তা হয়ে গেছে। এখন তুমি নিজেকে শক্ত করো প্লিজ আর তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠো।
আমি: হুম। আচ্ছা কে করিয়েছে এসব জানতে পেরেছ?
কাব্য: না চিন্তা করো না খুব শীঘ্রই জানতে পারবো। আর যেই করুক ওকে এমন শাস্তি দিবো দেখো আর কখনো কারো ক্ষতি করার চেষ্টা করবে না।
আমি: হুম।
কাব্য: তিলো জানো হিয়া আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।
আমি: কেন?
কাব্য: আমি নাকি আমাদের সন্তানকে ইচ্ছে করে মেরে ফেলেছি। আচ্ছা তুমি বলো কোনো বাবা কি নিজের সন্তানকে খুন করতে পারে। আমি তো জানতাম না তুমি প্রেগন্যান্ট, বুঝতেই পারিনি, জানলে তো জেদ করতাম না আ…
আমি: আম্মু আব্বুর সাথে তুমি ঝগড়া করে ওকে নিয়ে বাসা থেকে চলে এসেছিলে এই ধারণা নিয়েই তো ও ছোট থেকে বড় হয়েছে, তাই তোমার প্রতি ওর মনে কিছুটা রাগ জমে আছে আর এখন এই ঘটনার পর ওর রাগটা আরো বেড়ে গেছে তুমি কেঁদো না দেখো হিয়া একদিন ঠিক তোমায় বুঝবে।
কাব্য: হুম তুমি এখন ঘুমাও।
আমি: তোমার চোখ দুটু লাল হয়ে আছে তুমি একটু ঘুমাও।
কাব্য: না ঘুমুতে ইচ্ছে করছে না।
আমি: ঠিক আছে ঘুমাতে হবে না এখানে শুয়ে আমার বুকে মাথা রাখো আমার ভালো লাগবে (কাব্য শুয়ে পড়লো তারপর আমার বুকে মাথা রাখলো। ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়লো। ওর মাথায় একটা চুমু দিয়ে বললাম)
আমি: চিন্তা করোনা ডাক্তারবাবু আমি তোমার সব কষ্ট দূর করে দিবো। সুস্থ হয়ে আমার প্রথম কাজ হবে আব্বু আম্মুকে খুঁজে বের করা। সবার রাগ অভিমান ভাঙিয়ে আমরা সবাই একসাথে থাকবো।

কাব্যর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বাচ্চাটার কথা ভাবছিলাম। এমন না হলে তো ও আস্তে আস্তে আমার মধ্যে বেড়ে উঠতো আর একদিন আমাদের ঘর আলো করে ও আমার কোলে আসতো। হঠাৎ কাব্য’র ফোন বেজে উঠলো, এতো রাতে আবার কে ফোন দিলো। একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে, কাব্য গভীর ঘুমে এখানে কথা বললে সমস্যা হবে না তাই ফোনটা রিসিভ করলাম। আমি কিছু বলার আগেই অপর পাশ থেকে কথা বলতে শুরু করলো।
–কি কাব্য তোমার বউয়ের এমন অবস্থা কে করলো এইটা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছ নাতো? ছাড়ো আমিই বলছি তাতে তোমার কষ্টটা অনেক গুণ বেড়ে যাবে আশা করছি। কাব্য মনে আছে তোমার অতীতের কথা? তুমি না বড্ড বোকা কাব্য তাই তো অতীতটা একেবারে ভুলে বসে আছ। এভাবে ভুলে গেলে হয় বল?
আমি: (নিশ্চুপ)
— কথা বলছ না যে? ওহ চমকে উঠেছ ভাবছ আমি কেন এসব করছি। যা করেছি আমার স্বার্থে করেছি এইটা নিয়ে আর ভেবো না ভুলে যাও। যদি আমাকে খুঁজার চেষ্টা করো তাহলে কিন্তু তোমার তিলো পাগলীর চেয়ে খারাপ অবস্থা হবে তোমার বোন হিয়ার (ওর কথা শুনে চমকে উঠলাম, কে এই মেয়ে? ও তো দেখছি আমাদের সম্পর্কে সবকিছু জানে)
— কি বিশ্বাস হচ্ছে না আমি যে হিয়ার ক্ষতি করবো? চলো আমিই বিশ্বাস করিয়ে দিচ্ছি, হিয়াকে একবার ফোন দিয়ে বলো ওর রুমের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতে তাহলেই ও দেখতে পাবে আমার দুজন লোক ওকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখছে। হিয়া যখন দেশে ফিরেছে মানে এয়ারপোর্ট থেকেই ওর পিছনে আমার লোক লাগিয়ে দিয়েছি সো কাব্য চৌধুরী বুঝতেই পারছ আমি যেকোনো সময় তোমার বোনের ক্ষতি করতে পারি। আগেই ওয়ার্নিং দিয়ে দিচ্ছি যা হয়েছে ভুলে যাও এক বাচ্চা নষ্ট হয়েছে আবার বাচ্চা হবে কিন্তু এই বাচ্চার কথা ভেবে বোনের জন্য বিপদ ডেকে এনো না কারণ বোন মারা গেলে আর বোন পাবে না আর আমি জানি হিয়ার কিছু হলে তুমি এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে। (আর শুনতে পারলাম না ফোনটা কেটে দিলাম। মেয়েটার কথা শুনে ভয়ে আমার সারা শরীর ঘামছে। মেয়েটা কতোটা ভয়ঙ্কর সেটা ও একবার প্রমাণ করে দিয়েছে এখন যদি ও হিয়ার কোনো ক্ষতি করে… আমি হিয়ার কোনো ক্ষতি হতে দিবো না আমি ওকে আগলে রাখবো)

কাব্য’র ফোন থেকে নাম্বারটা ডিলিট করে ফেললাম, আমি চাই না কাব্য এই বিষয় নিয়ে আর খুঁজাখুঁজি করুক আর হিয়ার বিপদ ডেকে আনুক। কাব্য মেয়েটাকে শাস্তি দিতে গেলে যদি হিয়ার কোনো ক্ষতি করে বসে তখন? হিয়া তো কাব্য’র সব, হিয়ার কিছু হলে কাব্য শেষ হয়ে যাবে। আমি আমার জন্য ওদের ভাই বোনের কোনো ক্ষতি হতে দিবো না। কিন্তু মেয়েটি কে যেকিনা আমাদের সম্পর্কে সবকিছু জানে? শুভ্রা যে না সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত কারণ কন্ঠটা শুভ্রার ছিল না তাহলে মেয়েটি কে?

কাব্য: তিলো উঠো (কাব্য’র ডাকে সকালে ঘুম ভাঙলো)
কাব্য: কিছু খেয়ে ওষুধ খেয়ে নাও তারপর আবার ঘুমিয়ে যেও সমস্যা নেই।
আমি: বাসায় যেতে পারবো কবে?
কাব্য: এই অবস্থায় তুমি বাসায় চলে যেতে চাইছ?
আমি: এখানে তো তুমিই সেবা করছ তাহলে বাসায় এই সেবাটা করলে দোষ কোথায়?
কাব্য: তোমার সাথে কথায় পারবো না, আচ্ছা এক সপ্তাহ পর বাসায় নিয়ে যাবো।
আমি: আরো এক সপ্তাহ।
কাব্য: তুমি ভালো করে সুস্থ নাহলে হবে বলো, তোমার যদি কিছু হয়ে যায় আমি কি নিয়ে বাঁচবো (কাব্য আমার গালে একটা হাত রেখে বললো, ওর দুচোখ দিয়ে পানি ঝরছে। কতোটা ভয় পায় ও আমাকে নিয়ে)
আমি: বাসায় যাওয়ার কথা আর বলবো না একেবারে সুস্থ হয়েই বাসায় যাবো। (কাব্য’র হাতের উপর আমার একটা হাত রাখলাম ও মুচকি হেসে আমার মুখে খাবার তুলে দিলো)
আদনান: কাব্য আসবো?
কাব্য: হুম আয়।
আদনান: ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই রিপোর্ট ভালো এসেছে।
কাব্য: সত্যি?
আমি: কিসের রিপোর্ট? (আদনান কাব্য’র দিকে তাকিয়ে রিপোর্টটা রেখে বেড়িয়ে গেলো)
কাব্য: আমরা ভয় পেয়েছিলাম এতো বড় আঘাতের পর তুমি যদি মা হবার…
আমি: ওহ বুঝেছি (আমি আবার মা হতে পারবো এইটার রিপোর্ট ভালো এসেছে আমি তো ভেবেছিলাম আমার বাচ্চাটা বুঝি বেঁচে আছে)
কাব্য: তিলো আমি বুঝতে পারছি তুমি কি ভেবে খুশি হয়েছিলে, মন খারাপ করোনা দেখো আল্লাহ্‌ আবার আমাদের কোলজোড়ে সন্তান দিবেন।
আমি: হুম।

বালিশে হেলান দিয়ে চুপচাপ বসে আছি, কাব্য দূরে চেয়ারটায় মন খারাপ করে বসে আছে। কাব্য’টার উপর দিয়ে বার বার ঝর বয়ে যাচ্ছে কবে যে ও একটু সুখের দেখা পাবে।
হিয়া: ভাবি আসবো?
আমি: হ্যাঁ এসো। (হিয়া কাব্য’র দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আমার পাশে এসে বসলো)
হিয়া: ভাবি আ…
আমি: তোমার ভাইয়ার সাথে কথা বলোনা কেন?
হিয়া: কোনো জেদি লোকের সাথে কথা বলার ইচ্ছে আমার নেই (কথাটা শুনে কাব্য হিয়ার দিকে তাকালো তারপর চোখের পানি মুছতে মুছতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো)
আমি: ভুল করছ হিয়া, এসবে ওর কোনো দোষ নেই।
হিয়া: তোমার বেবিটা নষ্ট হয়ে গেছে তারপরও তুমি ভাইয়াকে দোষ দিচ্ছ না?
আমি: না দিচ্ছি না কারণ কোনো বাবা তার সন্তানকে মেরে ফেলতে চায় না। এসবে কাব্য’র কোনো দোষ নেই, হ্যাঁ ও একটু জেদ করেছিল কক্সবাজার যাওয়ার জন্য ব্যাস এইটুকুই।
হিয়া: তুমি ভাইয়াকে খুব ভালোবাস তাই না?
আমি: যে মানুষটা একটা অচেনা মেয়েকে প্রথম দেখায় এতোটা ভালোবাসতে পারে তাকে ভালো না বেসে কি থাকা যায়। আর হ্যাঁ একদিন তুমিও সব রাগ অভিমান ভুলে তোমার ভাইয়াকে ভালোবাসবে আমি জানি।
হিয়া: আমি তো ভাইয়াকে ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি কিন্তু…
আমি: এই কিন্তুটা আমি দূর করে দিবো। আমাকে সুস্থ হতে দাও আমি তোমাদের সবার রাগ অভিমান ভাঙিয়ে আবার সবাইকে এক করবো (হিয়া আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
হিয়া: সসসবাই মামামানে?
আমি: হুম আব্বু আম্মুকে খুঁজে বের করবো দেখো তুমি।
হিয়া: সত্যি বলছ?
আমি: হ্যাঁ, যদিও আমি জানিনা কিভাবে খুঁজা শুরু করবো তা…
হিয়া: আমি তোমাকে একটা সূত্র দিতে পারি, আমি আব্বু আম্মুকে চাই প্লিজ তুমি এনে দাও।
আমি: কি সূত্র?
হিয়া: ভাইয়া ডায়েরি লিখে, কখন লিখে আর ডায়েরিটা কোথায় রাখে সেটা বলতে পারবো না। মাঝে মাঝে দেখতাম রাতের বেলা ভাইয়া ডায়েরি লিখতো আর কাঁদতো কিন্তু ডায়েরিটা কোথায় রাখে সেটা কখনো দেখিনি। আমি সিওর না তুমি ডায়েরি থেকে কিছু পাবে কিনা কিন্তু আমার মন বলছে এই ডায়েরি থেকেই একটা সূত্র পেয়ে যাবে।
আমি: কোথায় আমি তো ওকে কখনো ডায়েরি লিখতে দেখিনি।
হিয়া: বাসায় ফিরে ভাইয়ার উপর নজর রেখো তাহলেই দেখতে পারবে।
আমি: ঠিক আছে।

চুপচাপ শুয়ে আছি কাব্য পাশে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। ভাবছি হিয়ার কথা কি সত্যি? কিন্তু আমি তো কাব্য’কে কখনো ডায়েরি লিখতে দেখিনি। আর যদি সত্যি লিখে তাহলে কি ডায়েরি থেকে কিছু পাবো?
কাব্য’র দিকে নজর পড়লো একমনে ল্যাপটপের স্কিনে তাকিয়ে আছে, এতো মনোযোগ দিয়ে কি এমন কাজ করছে কে জানে। হঠাৎ একজন সিস্টার তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকলো।
সিস্টার: স্যার ওই পেসেন্ট’টার অবস্থা খুব খারাপ (কাব্য ল্যাপটপ হাত থেকে রেখেই দৌড়ে চলে গেলো)
কাব্য এতো মনোযোগ দিয়ে কি এতো কাজ করছিল দেখার জন্য ল্যাপটপ এর দিকে তাকালাম, স্কিনে একটা ছোট্র বাবুর ছবি দেখে বুকটায় ব্যথা শুরু হয়ে গেলো। তারমানে কাব্য কোনো কাজ করছিল না বসে বসে এই বাবুটার ছবি দেখছিল। এতোক্ষণ তো কষ্টটা একটু কম হচ্ছিল এই ছবিটা দেখে বুকের বাম পাশে ব্যথা শুরু হয়ে গেলো। কাব্য আমাকে সাহস দেয়ার জন্য সব কষ্ট লুকিয়ে আমার সামনে দিব্বি হাসে কিন্তু আড়ালে ও কতোটা কষ্ট পাচ্ছে এই ছবি না দেখলে তো বুঝতেই পারতাম না। আবার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে আর বলতে ইচ্ছে হচ্ছে “কেন হলো আমাদের সাথে এরকম”

চলবে?

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১৭

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করছে, আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম। হসপিটালের ICU তে আছি আমি, মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো, হাতেও কিসব যেন লাগানো। রাতের কথা আস্তে আস্তে সব মনে পড়লো, এতো কিছুর পর আমি বেঁচে আছি ভাবতেই পারছি না। হঠাৎ কারো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ ভেসে আসলো, আস্তে আস্তে পাশ ফিরে তাকালাম, কাব্য সিজদায় পড়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ও এতো কাঁদছে কিন্তু আমি ওকে ডাকতে পারছি না, একটু নড়তেই পেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হলো। হঠাৎ রুমে একজন সিস্টার এসে ঢুকলো, ওকে দেখে হাত নাড়ার চেষ্টা করলাম।
সিস্টার: এইতো ম্যাডাম এর জ্ঞান ফিরেছে। (সিস্টারের কথা শুনে কাব্য তাড়াতাড়ি উঠে আমার কাছে আসলো)
কাব্য: তিলো তুমি ঠিক আছ তো (পাগলের মতো কাঁদছে ও কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারছি না খুব কষ্ট হচ্ছে)
সিস্টার: স্যার কি করছেন এভাবে কাঁদলে ম্যাডাম এর সমস্যা হবে (সিস্টার কাব্য’কে সরাতে আসলো কিন্তু কাব্য সিস্টারকে ধাক্কা মারলো, সিস্টার তাড়াতাড়ি বাইরে চলে গেলো)
কাব্য: পুরো দুদিন পর তোমার জ্ঞান ফিরেছে সবাই বলেছিল তুমি বাঁচবে না কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি, তুমিই বলো আমার তিলো পাগলী কি আমাকে একা রেখে চলে যেতে পারে। আমি নামাজ পড়েছি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি আর দেখো তোমার জ্ঞান ফিরে এসেছে আল্লাহ্‌ আমার কথা শুনেছেন (কাব্য’র কান্না দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি না ইচ্ছে হচ্ছে ওর চোখের পানি মুছে দেই কিন্তু আমি তো হাতই নাড়তে পারছি না)
আদনান: কাব্য কি করছিস পাগল হয়ে গেছিস (সিস্টারটা গিয়ে আদনানকে নিয়ে এসেছে। আদনান কাব্য’কে টেনে আমার থেকে দূরে নিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু কাব্য যাচ্ছে না)
আদনান: তুই একজন ডক্টর হয়ে এমন পাগলামি কেন করছিস? বুঝতে পারছিস না এভাবে কাঁদলে ভাবির সমস্যা হবে।
কাব্য: আমি আর কাঁদবো না প্লিজ ওর কাছে আমাকে থাকতে দে।
আদনান: দিয়েছিলাম তো কিন্তু এভাবে কাঁদলে…
কাব্য: আর কাঁদবো না। (কাব্য চোখের পানি মুছে নিয়ে আমার পাশে এসে বসলো। আদনান এসে কিছু চেকাপ করলো)
আদনান: এইতো ভাবি সুস্থ হয়ে গেছে তুই অযতা কান্নাকাটি করছিস।
কাব্য: তিলো তো সুস্থ হবে কিন্তু…
আদনান: কাব্য চুপ কর (কাব্য আবার ঢুকরে কেঁদে উঠলো, কি লুকুচ্ছে ওরা আমার থেকে)
আদনান: দেখ ভাবি সুস্থ হয়ে গেছে এবার যা তুই ফ্রেশ হয়ে নে (কাব্য’র দিকে তাকালাম সেই রাতের পাঞ্জাবীটা এখনো ওর পরনে, পুরো পাঞ্জাবীতে রক্তের চাপ লেগে আছে। কাব্য’কে দেখে কোনো সুস্থ মানুষ মনে হচ্ছে না, ওকে এখন পাগল পাগল লাগছে)
কাব্য: আমি কোথাও যাবো না।
আদনান: কিছু অন্তত খেয়ে নে প্লিজ।
কাব্য: আমার খিদে নেই (কাব্য এখনো কিছু খায়নি এভাবে না খেয়ে থাকলে তো ও অসুস্থ হয়ে পড়বে। আদনানকে ইশারা দিয়ে অক্সিজেন মাস্কটা খুলে দিতে বললাম। মাস্ক খুলে দিতেই আস্তে আস্তে কথা বলার চেষ্টা করলাম)
আমি: ডাক্তারবাবু…
কাব্য: তিলো তুমি কথা বলতে পারছ?
আদনান: কাব্য আস্তে কথা বল, একজন ডক্টর হয়ে এসব পাগলামি করছিস কিভাবে?
আমি: ওকে বকো না প্লিজ, ও আমার এই অবস্থা দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না তাই এমন পাগলামী করছে, প্লিজ ওকে বকো না।
আদনান: হুম।
আমি: ডাক্তারবাবু যাও কিছু খেয়ে নাও।
কাব্য: খিদে নেই।
আমি: যাও বলছি।
ভাবি: খাবার বাসা থেকে নিয়ে এসেছি কিন্তু ও তো খেতে চাইছে না।
আমি: ভাবি তুমি? (চারদিকে চোখ বোলালাম কোথায় আছি বুঝতে পারছি না)
কাব্য: তিলো তোমাকে ঢাকা নিয়ে এসেছি আমাদের হসপিটালে।
আদনান: এখানে ভীড় করো না প্লিজ, কাব্য যা খেয়ে আয়।
কাব্য: তিলোর কাছে বসে খাই (কাব্য’র বাচ্চামি কথাগুলো শুনে হাসি পাচ্ছে, পাগলটা কতো ভালোবাসে আমায়, চোখের আড়ালই করতে চাইছে না আমাকে)
আদনান: আগে ফ্রেশ হয়ে আয় যা।
আমি: তিশা কোথায়?
আদনান: একটা কাজে গেছে একটু পর চলে আসবে।

কাব্য পাশে বসে খাচ্ছে আমি চোখ দুটু বন্ধ করে শুয়ে আছি আর ভাবছি লোকটা ম্যাডাম ডাকলো কাকে। কার কথামতো ওরা আমাকে মেরে ফেলতে চাইছিল। আচ্ছা শুভ্রা নয় তো? হতে পারে সেদিনের থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল। কিন্তু এভাবে? এতোটা খারাপ কেউ হতে পারে?
তিশা: কাব্য এই নাও শুভ্রাকে নিয়ে এসেছি (তিশার কথা শুনে দরজায় তাকালাম, তারমানে তিশা শুভ্রাকে আনতে গিয়েছিল)
কাব্য: শুভ্রা কেন করলে এমন?
আমি: আরে খাবার রেখে কোথায় যাচ্ছ? (আমার কথার উত্তর না দিয়ে ও শুভ্রাকে টেনে এনে আমার পায়ের কাছে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো)
শুভ্রা: তোমরা আমার সাথে এমন করছ কেন কি করেছি আমি?
তিশা: মনে হচ্ছে ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না।
শুভ্রা: কি করেছি বলবে তো আর তিলোত্তমা ICU তে কেন? (শুভ্রা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে তাহলে কি ও সত্যি কিছু করেনি)
কাব্য: আমার তিলোকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে এখন কিছু না জানার ভান করছ।
শুভ্রা: কি? আমি তিলোত্তমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছি, কি বলছ এসব?
আদনান: তাহলে তুমি এই দুদিন হসপিটালে আসোনি কেন?
শুভ্রা: হসপিটালে আসিনি এজন্য আমি এখন অপরাধী? আমি তো ছুটি নিয়েছিলাম কারণ আম্মু অসুস্থ। তিশাকে জিজ্ঞেস করো ও দেখে এসেছে আম্মু অসুস্থ।
তিশা: হ্যাঁ দেখেছি কিন্তু তাই বলে তুমি কিছু করনি তা বিশ্বাস করবো কিভাবে? লোক দুটুকে তুমি টাকা দিয়েছ আর ওরা তোমার কথা মতো কাজ করেছে।
শুভ্রা: কোন লোক কি বলছ তোমরা, কতোবার বলবো আমি কিছু করিনি।
আদনান: আস্তে চেঁচামেচি করো আর বাইরে চলো সবাই ভাবির সমস্যা হবে।
আমি: দাঁড়াও আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই।
কাব্য: এখন কোনো কথা বলতে হবে না তুমি রেস্ট নাও।
আমি: না আমি শুভ্রার সাথে কথা বলতে চাই।
শুভ্রা: বিশ্বাস করো আমি কিছু করিনি তুমি হসপিটালে আছ সেটাও আমি জানতাম না। আম্মু অসুস্থ আমি দুদিন বাসাতেই ছিলাম। আমি কাব্য’কে ভালোবাসি তাই তোমার সাথে খারাপ আচরণ করি কিন্তু আমি এতোটা খারাপ না যে তোমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করবো। (শুভ্রাকে দেখে তো মনে হচ্ছে সত্যি ও কিছু জানেনা তাহলে কে করলো এই কাজ)
শুভ্র: নিজের আম্মুকে নিয়ে তো কেউ মিথ্যে বলে না বিশ্বাস করো আমি আম্মুর কাছে ছিলাম দুদিন তাই হসপিটালে আসতে পারিনি আর এসব ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা।
আমি: ঠিক আছে তুমি তোমার আম্মুর কাছে যাও।
কাব্য: কি বলছ এসব পাগল হয়ে গেছ?
আমি: ওকে যেতে দাও।

শুভ্রা চলে গেলো, সবাই চুপচাপ বসে আছে। বুঝতেই পারছি না শুভ্রা এমন না করলে করলো কে। শুভ্রা ছাড়া আমাদের নতুন কোনো শত্রু আছে আর সেটা কোনো মেয়ে কারণ লোকটা ফোনে ম্যাডাম বলে ডেকেছিল। এতো বড় শত্রু কে আমাদের যে কিনা আমাকে খুন করতে চেয়েছিল।
কাব্য: শুভ্রাকে যেতে দিলে কেন?
আমি: শুভ্রা কিছু করেনি ওর চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছি।
কাব্য: চোখ দেখে বুঝা যায়?
আমি: কেউ মিথ্যে বললে তার চোখ দেখলেই বুঝা যায়, শুভ্রা মিথ্যে বলেনি।
কাব্য: তাহলে কে করলো এমন?
— ভাইয়া ভাইয়া (হঠাৎ কে যেন জোরে জোরে চিৎকার করে রুমে এসে ঢুকলো সাথে অয়ন)
কাব্য: হিয়া আস্তে কথা বল।
অয়ন: হিয়া কি করছিস আস্তে চেঁচা।
হিয়া: কিসের আস্তে আজকে ভাবির এই অবস্থা হয়েছে শুধুমাত্র তোমার জন্য (হিয়া কাব্য’র শার্টের কলার ধরে ফেললো)
আদনান: হ্যাঁ কাব্য ভাবির এই অবস্থা করেছে আর তুই এখন চেঁচামেচি করে ভাবির অবস্থা আরো খারাপ করে দে (আদনান এর কথা শুনে হিয়া কাব্য’কে ছেড়ে দিয়ে আমার পাশে এসে বসলো)
হিয়া: সরি ভাবি ভাইয়ার জন্য তোমার এই অবস্থা হলো।
আমি: কেন ডাক্তারবাবু আবার কি করলো?
হিয়া: তুমি না করার পরও হানিমুনে গিয়েছিল, ছোট ভাইয়া আমাকে সব বলেছে। গতকাল রাতে ভাবি আমাকে জানিয়েছে তোমার এই অবস্থা তাই তো সকালের ফ্লাইটেই চলে আসলাম।
আমি: তোমার ভাইয়ার কোনো দোষ নেই আমরা জানতাম নাকি এতো খারাপ কিছু হবে।
হিয়া: সব দোষ ভাইয়ার, সবকিছুতে ও বাড়াবাড়ি করে আর তার ফল ভোগ করতে হয় আমাদের (হিয়া কাঁদছে কাব্য দূরে দাঁড়িয়ে চুপচাপ কাঁদছে। হিয়া এমনিতেই কাব্য’র উপর রেগে আছে এখন আবার এই অবস্থা, এখন তো হিয়া আরো রেগে যাবে)
আদনান: হয়েছে সবার দেখা এখন সবাই বাইরে যাও আর ভাবি তুমি ঘুমানোর চেষ্টা করো।

একে একে সবাই বাইরে চলে গেলো, আমি চুপচাপ শুয়ে আছি চোখ দুটু বন্ধ করে। কিছুক্ষণ পর মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেলাম, জানি কাব্য এসেছে। চোখ খুলে আর তাকালাম না মাথা আর পেটে অসহ্য যন্ত্রণা করছে তাই চোখ বোজে চুপচাপ শুয়ে রইলাম। কবে যে সুস্থ হবো আর কে এসবের পিছনে আছে তা জানতে পারবো আল্লাহ্‌ জানেন।
আদনান: কাব্য ভাবি ঘুমিয়েছে?
কাব্য: হুম। (কাব্য উঠে চলে গেলো, ওরা কথা বলছে তাও চোখ খুলে তাকালাম না। তাকাবো কিভাবে পেটে যে খুব বেশি ব্যথা হচ্ছে)
আদনান: এইনে রিপোর্ট, তোর কথা মতো আমি বার বার টেস্ট করেছি কিন্তু রিপোর্ট একটাই আসছে। বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে। (আদনান এর কথা শুনে চমকে উঠে ওদের দিকে তাকালাম, কার বাচ্চার কথা বলছে? কাব্য ফ্লোরে বসে পড়েছে খুব কাঁদছে ও তারমানে আমার বাচ্চা… হাতে লাগানো ছিল কিসব এগুলো টেনে সরিয়ে পেটে হাত রাখলাম, তারমানে আমি প্রেগন্যান্ট ছিলাম আর আমার বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে। চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম, আমার কান্না শুনে আদনান আর কাব্য একে অন্যের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে, ওরা তো ভেবেছিল আমি ঘুমে)
কাব্য: তিলো কি করছ পাগলামি করো না।
আমি: আমার বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে আর তোমরা আমাকে জানাও নি লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলে।
আদনান: কে বললো নষ্ট হয়েছে তুমি প্রেগন্যান্ট ছিলে নাকি? আমরা তো অন্য পেসেন্টের কথা…
আমি: আর মিথ্যে বলোনা প্লিজ। (আদনান কাব্য দুজনই চুপ হয়ে কাঁদছে, আমি উঠে বসতে চাইলাম কিন্তু পেটের ব্যথায় পারছি না)
কাব্য: তিলো পাগলামি করো না প্লিজ এভাবে কাঁদলে তুমি আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে।
আমি: আমার বাচ্চা মারা গেছে আমি বেঁচে থেকে কি করবো হ্যাঁ, আমার বাচ্চা এনে দাও। (আমার চিৎকার শুনে ভাবি হিয়া সবাই চলে আসলো)
ভাবি: তিলোত্তমা আমার কথা শুন।
আমি: আমার বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে আর তোমরা আমার থেকে এতো বড় কথাটা লোকাতে চেয়েছিলে।
হিয়া: তুমি এমন পাগলামি করবে এই ভয়েই তো আমরা বলতে চাইনি।
আদনান: সবাই বাইরে যাও আমি ভাবিকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি।
আমি: ঘুমাবো না আমি, আমার বাচ্চা এনে দাও।
কাব্য: প্লিজ এভাবে চিৎকার করোনা তোমার শরীর ভালো নেই।
আমি: ওরা নাহয় আমার থেকে লুকিয়েছে কিন্তু তুমি, তুমি কেন লুকিয়েছ? আমার বাচ্চা এনে দাও।
কাব্য: সব দোষ আমার আমি বুঝতে পারিনি তুমি যে প্রেগন্যান্ট, বুঝতে পারলে ওখানে তোমাকে নিয়ে যেতাম না সাবধানে রাখতাম তোমাকে।
আদনান: কাব্য কেন অযতা নিজেকে দোষী করছিস?
কাব্য: আমি একজন ডক্টর হয়েও আমার তিলোকে সাবধানে রাখতে পারিনি বাঁচাতে পারিনি আমার সন্তানকে।
আদনান: কাব্য তুই এমন পাগলামি করলে ভাবিকে সামলাবে কে, ভাবিকে শুয়ে দে। (কাব্য আমাকে শুয়ে দিতে আসলো, ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। কাব্য জোর করে আমাকে শুয়ে দিলো আর আদনান এসে ইনজেকশন দিয়ে দিলো)
কাব্য: আর কেঁদো না প্লিজ ঘুমাও, বিশ্বাস করো আমি বুঝতে পারিনি তুমি প্রেগন্যান্ট ছিলে, বুঝতে পারলে কি ওখানে নিয়ে যেতাম?
কাব্য আমার কপালে ওর কপাল ঠেকিয়ে পাগলের মতো কাঁদছে, ওর গলা জরিয়ে ধরে আমিও কাঁদছি। আমাদের সাথে এমন হবে কখনো ভাবতে পারিনি। মাথা ব্যথা আর পেটের যন্ত্রণার চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে এইটা ভেবে, আমাদের সন্তান পৃথিবীতে আসার আগেই ওকে খুন করে দিলো। আর ভাবতে পারছি না ঘুমে আস্তে আস্তে চোখ দুটু বোজে আসছে।

চলবে?

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১৬

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

কাব্য আমার চুলে হাত বুলাচ্ছে আর আমি পরম সুখে ওর বুকে শুয়ে আছি। কাব্য ভাবছে আমি ঘুমে কিন্তু আমি তো জেগে আছি আর ওর ছোঁয়া গুলো অনুভব করছি কাব্য সেটা বুঝতেই পারছে না হিহিহি। হঠাৎ রাতের কথা মনে পড়তেই নিমিষে মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো, কাব্য’কে এখনি বলা প্রয়োজন। লাফ দিয়ে উঠে বসলাম।
কাব্য: কি হলো?
আমি: কিছুনা।
কাব্য: এভাবে লাফ দিয়ে উঠলে যে।
আমি: আচ্ছা তুমি না আমাকে কি সারপ্রাইজ দিবে।
কাব্য: সারপ্রাইজ জানার জন্য মন পাগল হয়ে আছে দেখছি।
আমি: বলোনা।
কাব্য: আজ বিকেলে আমরা হানিমুনে যাচ্ছি। (তারমানে ওই লোকটার কথাই ঠিক)
আমি: ওহ কোথায় যাচ্ছি।
কাব্য: কক্সবাজার।
আমি: না গেলে হয় না?
কাব্য: জানতাম তুমি রাগ করবে, প্লিজ লক্ষীটি রাগ করোনা।
আমি: রাগ করবো কেন রাগ করিনি তো।
কাব্য: এইযে বিয়ের একমাস পর হানিমুনে যাচ্ছি তাও আবার কক্সবাজার। তুমি হয়তো অন্য কোথাও যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলে, কথা দিচ্ছি আবার যখনি সুযোগ পাবো তখন অন্য কোথাও নিয়ে যাবো, তুমি যেখানে বলবে সেখানেই যাবো, খুশি?
আমি: বলেছি নাকি আমি অন্য কোথাও যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছি আমি তো…
কাব্য: আসলে ওখানে এক বছর ছিলাম তো সেই হসপিটালের সবাই তোমাকে দেখতে চাইছে আর তোমার সাথে তো আমার প্রথম দেখাটা কক্সবাজারেই হয়েছিল তাই ওখানেই যেতে চাইছি। প্লিজ তুমি রাগ করে থেকো না।
আমি: কতোবার বলবো আমি রাগ করিনি, আসলে তো আমি হানিমুনেই যেতে চাচ্ছি না। (চিৎকার করে উঠলাম কাব্য অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
কাব্য: আশ্চর্য তুমি এতো রেগে যাচ্ছ কেন? (চুপচাপ বিছানায় বসে আছি, এভাবে রেগে যাওয়াটা বোধহয় ঠিক হয়নি আমার। কিন্তু আমি কি করবো লোকটা তো ভয় দেখিয়েই যাচ্ছে)
কাব্য: সবাই তো বিয়ের পর হানিমুনে যেতে চায় কিন্তু তুমি…
আমি: সরি। (কাব্য’র কাছে এসে ওকে জরিয়ে ধরলাম)
কাব্য: হু হয়েছে এবার বলতো রেগে আছ কেন?
আমি: আমি রাগ করিনি আসলে তো আমি ভয়ে আছি।
কাব্য: ভয়, কিসের ভয়?

লোকটার কথা সবকিছু কাব্য’কে খুলে বললাম। ফোন থেকে লোকটার নাম্বারও কাব্য’কে দেখালাম। কাব্য আমার মতো এতোটা ভয় পায়নি কিন্তু বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে ওকে।
কাব্য: এখন তুমি কি চাও।
আমি: আমরা হানিমুনে যাবো না প্লিজ।
কাব্য: এতো কষ্ট করে ছুটি নিলাম। সবকিছু ঠিকঠাক, হোটেলে রুমও বুক করে ফেলেছি আর এখন কোথাকার একটা লোকের ভয়ে আমরা হানিমুনে যাবো না।
আমি: মানে কি তোমার ভয় করছে না?
কাব্য: না করছে না। চিনি না জানিনা কোথাকার কোন লোক এসে ভয় দেখালো আর আমরা সেই ভয়ে হানিমুনে যাবো না, এইটা হয় নাকি তিলো?
আমি: লোকটা কে আমরা তা জানিনা বলেই তো ভয় বেশি হচ্ছে।
কাব্য: তিলো…
আমি: প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো আমার খুব ভয় করছে।
কাব্য: ঠিক আছে ভেবে দেখছি। (কাব্য মন খারাপ করে চলে গেলো। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না)

চুপচাপ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। কাব্য কিছু না খেয়ে কোথায় যেন চলে গেছে, ও যে খুব কষ্ট পেয়েছে তা আমি বুঝতে পেরেছি কিন্তু আমি কি করবো কক্সবাজার গিয়ে যদি ওর কোনো ক্ষতি হয়ে যায় তখন আমি কি করবো কাকে নিয়ে বাঁচবো। ফোনটা বেজে উঠলো, রুমে এসে ফোন রিসিভ করলাম তিশা ফোন দিয়েছে।
আমি: হুম বল।
তিশা: কিরে কবে বেরুচ্ছিস?
আমি: কবে বেরুচ্ছি মানে?
তিশা: কক্সবাজার যাবি না?
আমি: না।
তিশা: মানে কি? তুই জানিস কাব্য হানিমুনে যাওয়ার জন্য কতোটা এক্সাইটেড হয়ে আছে আ…
আমি: একটা সমস্যা হয়েছে তাই যাবো না।
তিশা: কোনো সমস্যা বুঝি না যেতে হবে।
আমি: কেন?
তিশা: কারণ তুই না গেলে আমাদের যাওয়া হবে না।
আমি: মানে?
তিশা: কাব্য বলেনি তোকে তোদের সাথে যে আমি আর আদনান যাচ্ছি?
আমি: নাতো। (কখন বলবে আমি ওকে বলার সুযোগ দিলে তো বলবে)
তিশা: প্লিজ না করিস না কাব্য অনেক কষ্ট পাবে (হঠাৎ ছাদ থেকে গীটারের টুংটাং শব্দ ভেসে আসলো, তারমানে কাব্য আবার গীটার বাজাচ্ছে আর কাঁদছে)
আমি: পরে তোকে জানাচ্ছি এখন রাখি।
তিশাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা কেটে দিয়ে ছাদের দিকে দৌড় দিলাম।

যা ভেবেছিলাম তাই কাব্য কাঁদছে আর গীটার বাজাচ্ছে। আমি ওর কাধে হাত রাখতেই গীটার বাজানো বন্ধ করে দিলো।
আমি: আবারো তুমি…
কাব্য: আমার কিছু ভালো লাগছে না একা থাকতে দাও আমাকে।
আমি: আদনান ভাইয়া আর তিশা যে যাবে আমাদের সাথে বলনি তো।
কাব্য: বলার মতো সুযোগ দিয়েছ নাকি?
আমি: ঠিক আছে আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি।
কাব্য: কি? (কাব্য অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
আমি: যাচ্ছি কিন্তু দুদিনের বেশি থাকা যাবে না আমার খুব ভয় করছে।
কাব্য: ঠিক আছে দুদিন পর চলে আসবো। যাও রেডি হয়ে নাও।

যেতে তো রাজি হলাম কিন্তু ভিতরের ভয়টা যে ক্রমশ বেড়েই চলেছে। যদি ওই লোকটা আমাদের কারো কোনো ক্ষতি করে।
কাব্য: কি হলো এখনো রেডি হওনি তিশারা তো চলে এসেছে।
আমি: এইতো শেষ।

ড্রয়িংরুমে এসে দেখি আদনান ভাইয়া আর তিশা বসে আছে। আচ্ছা ওদের সম্পর্কটা কি শুরু হয়েছে নাকি এখনো…
কাব্য: চলো সবাই।
ভাবি: সাবধানে যেও।
কাব্য: ঠিক আছে তুমি চিন্তা করোনা।
আমি: ভাবি অয়ন কোথায়?
ভাবি: সামনে পরীক্ষা তো তাই ঠেকায় পড়ে কলেজে গেছে।
আমি: ওকে বলো আসছি আমরা।

কাব্য: তিলো গাড়িতে উঠো (পিছনে তিশার কাছে বসতে গেলাম কাব্য নিষেধ করলো)
কাব্য: সামনে বসো আমার কাছে।
আমি: কিন্তু তিশার কাছে আদনান ভা…
কাব্য: ওরা দুজন একে অপরকে পছন্দ করে কিন্তু কেউ কাউকে এখনো বলতে পারেনি, এই লং ড্রাইভে যদি বলতে পারে তাই তো দুজনকে পিছনে দিলাম।
আমি: তা নাহয় বুঝলাম কিন্তু এতোটা রাস্তা কি তুমি ড্রাইভ করবে?
কাব্য: হ্যাঁ সমস্যা কি, ভয় পেয়ো না ড্রাইভটা আমি ভালোই পারি।

কাব্য ড্রাইভ করছে আর আমি ওর পাশে বসে ফোনটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছি। ভয় হচ্ছে খুব যদি…
কাব্য: মনে হচ্ছে তুমি কারো ফোনের অপেক্ষা করছ।
আমি: নাতো (কিসের জন্য ফোনটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছি নিজেও বুঝতে পারছি না। শুধু জানি লোকটা আবারো ফোন বা মেসেজ করবে, আবারো ভয় দেখাবে। কিন্তু লোকটা কি শুধু ভয় দেখিয়েই যাবে নাকি আমাদের কোনো ক্ষতি করবে। এসে কোনো ভুল করিনি তো)
কাব্য: ফোনটা হাত থেকে রাখো তো (কাব্য বড় বড় চোখ করে তাকাচ্ছে দেখে ফোনটা ব্যাগে রেখে দিলাম। কাব্য আমার একটা হাত চেপে ধরলো)
আমি: আরে এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছ কেন?
কাব্য: বললাম না ড্রাইভটা ভালোই করতে জানি, তুমি ভয় পেয়ো না। (সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে করতেই আমার হাতটা ওর মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে হাতে একটা চুমু খেলো)
কাব্য: সব ভালো হবে দেখো, ভয় পেয়ো না। তুমি এভাবে মুখ গোমরা করে তাকলে আমার ভালো লাগে বলো? প্লিজ একটু হাসো। (চলেই যখন এসেছি এখন আর মুখ গোমরা করে রেখে ওদের আনন্দ নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। কাব্য’র দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে ওর কাধে মাথা রাখলাম)
কাব্য: এইতো আমার লক্ষী বউ।

হঠাৎ কাব্য’র ডাকে চোখ খুলে চারপাশে তাকালাম, সন্ধ্যা নেমে এসেছে আর আমরাও চলে এসেছি। হোটেলের সামনে গাড়ি থামিয়েই কাব্য আমাকে ডাক দিয়েছে।
কাব্য: তিলো এভাবে কি দেখছ, ভাবছ আমরা কক্সবাজার চলে এসেছি কিনা?
আমি: হু।
কাব্য: এক ঘুমে ঢাকা থেকে কক্সবাজার, এমন ঘুম পাগলী আমার জীবনে আর একটাও দেখিনি।
আদনান: ভাবিকে যদি কেউ ঘুমের মধ্যে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় তাও তো ভাবি বুঝতেই পারবে না হাহাহা (আদনান ভাইয়ার হাসি শুনে পিছনে তাকালাম, আদনান ভাইয়া হাসছে আর তিশা এক দৃষ্টিতে সে হাসি দেখছে। বুঝেছি আমাদের দুজনেরই কিছু করতে হবে নাহলে এই দুইটা এভাবেই থেকে যাবে কেউ কাউকে মনের কথা বলতে পারবে না)
কাব্য: ঘুম পাগলী আমাদের বাসর রাতের কথা মনে আছে, তুমি নৌকাতে আমার বুকে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলে। (কাব্য ফিসফিস করে আমাকে কথাটা বলে হাসতে লাগলো, সেদিনের কথা মনে পড়তেই খুব লজ্জা পেলাম, আমি সত্যিই একটা ঘুম পাগলী)
কাব্য: এবার চলো রুমে গিয়ে সবাই ফ্রেশ হয়ে নাও।
তিশা: কাব্য তোমার সাথে একটু কথা ছিল খুব জরুরী।
কাব্য: হ্যাঁ বলো (তিশা আমার দিকে তাকাচ্ছে তারমানে ও কাব্য’কে কথাটা একা বলতে চায়, কিন্তু কি কথা)

আদনান ভাইয়া আর আমি আগে আগে হাটছি, তিশা আর কাব্য পিছনে কথা বলতে বলতে আসছে।
আমি: তিশাকে কি মনের কথাটা বলবেন নাকি এভাবেই দুজন সারাজীবন কাটিয়ে দিবেন..?
আদনান: বলতে পারছি নাতো।
আমি: কেন কিসের ভয় আমি যতোটুকু বুঝতে পেরেছি তিশা আপনাকে পছন্দ করে।
আদনান: সেটা আমিও বুঝতে পারছি।
আমি: আপনি আর আপনার বন্ধু তো পুরো আলাদা। ডাক্তারবাবু তো প্রথম দিনই আমাকে ভালোবাসে বলেছিল আর পরে হাতে চাকু নিয়ে বলেছিল আমি ওকে ভালোবাসি কিনা। আপনি ওর মতো হতে পারেন না?
আদনান: কাব্য’র মতো হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না তবে আজকে যেভাবেই হউক তিশাকে আমি বলে দিবো।
আমি: হ্যাঁ এ…
কাব্য: তুমি আমাকে আগে বলবে না, আগে বললে আজ এখানে আসতাম নাকি (কাব্য’র কথা শুনে থেমে গেলাম, ও তিশাকে কথাটা বলছে তারমানে কি ওরা ওই লোকটার ব্যাপারে কিছু জানতে পেরেছে)

রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম, কাব্য দরজা বন্ধ করে আমার পাশে এসে বসলো। ফোনটা দেখার সুযোগই পাচ্ছি না, একবার ফোনটা চেক করলে তো বুঝতে পারতাম লোকটা এখনো আমাদের ফলো করছে কিনা।
কাব্য: তিলো ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাও বেরুবো।
আমি: এই রাতে আবার কোথায় বেরুবো তাছাড়া এতোটা রাস্তা এসে…
কাব্য: তুমি তো আর টায়ার্ড নও সারা রাস্তা ঘুমিয়ে এসেছ তাহলে সমস্যা কোথায়? যাও রেডি হয়ে নাও।
আমি: হুম।

চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে নিলাম। কালো রঙের শাড়ি পড়েছি আর বরাবর এর মতো চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছি নাহলে যে আমার ডাক্তারবাবু রাগ করবে। কিন্তু এই রাতের বেলায় আমরা যাচ্ছি কোথায়?
কাব্য: বাহ্ আমার তিলো পাগলীকে তো দারুণ লাগছে। (কাব্য এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো। আমার হাতের উপর ওর হাত দুটু রেখে পেটে আলতো করে চাপ দিলো)
আমি: দুষ্টুমি শুরু হয়ে গেলো তো?
কাব্য: হ্যাঁ হানিমুনে এসেছি দুষ্টুমি না করে থাকি কিভাবে বলো (আমার একটা হাত চেপে ধরে টান দিয়ে আমাকে ঘুরিয়ে দিলো। আমার কোমর জরিয়ে ধরে টান দিয়ে আমাকে ওর কাছে নিয়ে আসলো। আমার ঠোঁটের কাছে ওর ঠোঁট দুটু আনতেই দরজায় টোকা পড়লো)
কাব্য: হাসো হাসো তুমি তো হাসবাই, হানিমুনে এসেও শান্তি নেই। (কাব্য আমাকে ছেড়ে দিয়ে গিয়ে দরজা খুললো)
আদনান: কিরে শেষ তো।
কাব্য: হ্যাঁ চল, তিলো এসো। (কোথায় যে নিয়ে যাচ্ছে কে জানে)

কাব্য আমাকে সেই হসপিটালে নিয়ে আসলো, যেখানে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। কিন্তু ও আমাকে হসপিটালের ছাদে নিয়ে যাচ্ছে কেন? কি যে করছে কা… ছাদে এসে তো আমি অবাক কতো সুন্দর করে সাজানো, মনে হচ্ছে কোনো পার্টী হবে। কাব্য আমাকে একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।
আদনান: বারোটা বাজতে তো আরো সময় আছে।
কাব্য: হ্যাঁ আর একটু, তুই এর মধ্যে তোর কাজটা সেরে ফেল।
আমি: কি কাজ।
কাব্য: তিশাকে প্রপোজ করবে।
আমি: সত্যি (সামনে তাকিয়ে দেখি আদনান তিশার সামনে হাটু গেড়ে বসে আছে হাতে রিং, তিশা বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে)
আমি: আরে বাবা কি এতো ভাবছিস হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে রিংটা পড়ে নে। (তিশা যেন আমার এই কথাটার জন্য অপেক্ষা করছিল, আমি বলতেই হাত বাড়িয়ে দিলো)
কাব্য: শুভ জন্মদিন তিলো পাগলী (কাব্য আচমকা আমাকে জরিয়ে ধরে বললো, আমি তো হা করে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। আমার জন্মদিন আর আমি নিজেই ভুলে বসে আছি)
কাব্য: সরি সোনা জানতাম না তো আজ যে তোমার জন্মদিন। জানলে এখানে আসতাম না বাসায় সবাইকে নিয়ে আরো বড় করে পার্টী দিতাম)
আমি: কেন এখানে কি কম বড় হয়েছে, অনেক সুন্দর করে পুরো ছাদটা সাজিয়েছ তো।
কাব্য: তিশা একটু আগে বলেছে তারপর এখানে ফোন করে সবকিছু করালাম, তুমি খুশি তো?
আমি: অনেক অনেক অনেক খুশী।

সবাই ডান্স করছে আর কাব্য আমার পাশে বসে আছে।
আমি: কি হলো যাও।
কাব্য: তুমি একা একা বসে থাকবে আর আমি সবার সাথে আনন্দ করবো?
আমি: তাতে কি হয়েছে যাও তুমি, আমার তো মিউজিক এর শব্দে মাথা ব্যথা করছে তাই বসে আছি।
কাব্য: উঁহু তোমাকে ছাড়া আমি ডান্স করবো না।
–এই চল তো (একজন এসে কাব্য’কে টেনে নিয়ে গেলো)
চুপচাপ বসে আছি এই মিউজিক এর শব্দে মাথা প্রচুর ব্যথা করছে।

হাটতে হাটতে ছাদের অন্যপাশে চলে আসলাম, এখানে মিউজিক এর শব্দটা একটু কম আসছে। নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ মনে হলো কে যেন পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে, কাব্য নয় তো? পিছনে তাকিয়ে আমার ধম আটকে গেলো, এইটা তো সেই লোক সাথে আরেকজন আছে। আমি দৌড় দিতে চাইলাম লোকটা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
–নিষেধ করেছিলাম তো কেন আসলি?
আমি: কেন আমাদের পিছনে লেগেছেন?
–টাকা পেয়েছি তাই (কাব্য’কে ডাকতে যাবো তখনি আমার মাথায় কি দিয়ে যেন আঘাত করলো)
–ডাক তোর ডাক্তারবাবুকে দেখি তোকে এসে বাঁচাতে পারে কিনা।
আমি: ডাক্তারবাবু (খুব জোরে ডাক দিলাম কিন্তু মিউজিক এর শব্দে তো আমার ডাক ওর কান অব্দি পৌঁছাচ্ছে না। মাথা থেকে প্রচুর রক্ত পড়ছে, লোকটা এসে আমার পেটে খুব ভারী কিছু দিয়ে বারী মারলো, আরেকবার দিতে যাবে তখনি লোকটার ফোন বেজে উঠলো)
“চিন্তা করবেন না ম্যাডাম যা অবস্থা করেছি ওর হসপিটালের ছাদ থেকে ইমারজেন্সীতে নিয়ে যাওয়ার আগেই ও মারা যাবে”
মাথা আর পেটের প্রচন্ড ব্যথায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম সাথে সাথে কারেন্ট চলে গেলো। খুব কষ্ট করে কাব্য’কে আরেকবার ডাক দিলাম, মিউজিক এর শব্দ নেই তাই কাব্য শুনতে পেয়েছে। সবাই এদিকে আসছে বুঝতে পেরে লোক দুটু চলে গেলো।

কাব্য: তিলো কি হয়েছে তোমার, এতো রক্ত।
তিশা: তমা কি হয়েছে কে করেছে এমন অবস্থা?
আমি: ওই লোকটা, কাব্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
আদনান: কাব্য কথা বলে সময় নষ্ট করছিস কেন তাড়াতাড়ি ইমারজেন্সীতে নিয়ে চল।
কাব্য আমাকে কোলে তুলে নিলো। পেটের প্রচন্ড ব্যথায় চোখ দুটু অন্ধকার হয়ে আসছে। কাব্য’র গলা জরিয়ে ধরে ওর মুখের দিকে তাকালাম, আস্তে আস্তে চোখ দুটু বোজে আসলো।

চলবে?

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১৫

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

কাব্য: তিলো আমার ঘড়ি কোথায়..?
আমি: টেবিলের উপর রাখা আছে।
কাব্য: তিলো আমার শার্ট পাচ্ছি না।
আমি: চোখ অন্ধ হয়ে গিয়েছে নাকি, বিছানার উপরই তো রাখা আছে।
ভাবি: রেগে যাচ্ছিস কেন..?
আমি: ভাবি তুমি হাসছ, ওর কান্ড দেখেছ প্রতিদিন হসপিটালে যাওয়ার সময় তিলো আমার এইটা পাই না ওইটা পাইনা বলে চেঁচামেচি করে। প্রতিদিন ভালো লাগে বলো, শান্তিতে কোনো কাজ করতে দিবে না।
কাব্য: তিলো রাতে যে ফাইলটা রেখেছিলাম ফাইলটা কোথায় পাচ্ছি নাতো।
আমি: আমার মাথায় (রান্নাঘরে কাজ করছি আর ও রুম থেকে সমানে চেঁচামেচি করেই যাচ্ছে)
কাব্য: রেগে যাচ্ছ কেন একটু খুঁজে দিয়ে যাওনা।
ভাবি: হিহিহি।
আমি: না হেসে আমার জন্য পাবনা হসপিটালে একটা সিট বুকিং করো তোমার দেবরের জ্বালায় আর পারছি না।
ভাবি: একবার রুমে যা ও সব খুঁজে পেয়ে যাবে চেঁচামেচিও বন্ধ হয়ে যাবে (ভাবি মিটিমিটি হাসছে, জানি তো ও এতো বেশি চেঁচামেচি করেই আমি যেন রুমে যাই)
কাব্য: তিলো আমার মোবাইল খুঁজে পাচ্ছি না।
আমি: একবার যদি রুমে আসি মোবাইলের সাথে তোমাকেও আছাড় দিয়ে ভাঙবো। (ধমক দিয়ে বললাম কাব্য’র চেঁচামেচিও বন্ধ হয়ে গেলো)
ভাবি: তোকে তো কাব্য পুরো জ্বালিয়ে ছাড়ছে।
আমি: এটাই…(আবার কাব্য’র ডাক শুনে থেমে গেলাম এখন তো ওকে আমি…)

রুমে এসে দেখি কাব্য হসপিটালে যাওয়ার জন্য পুরো রেডি। এতোক্ষণ অযতা চেঁচামেচি করেছে ইচ্ছে হচ্ছে এখন…
কাব্য: এতো চেঁচামেচি করতে হয় কেন হু আগেই রুমে চলে আসতে পারো না।
আমি: ঘড়ি, মোবাইল, ফাইল সবকিছু তো এখানে তাহলে এতো চেঁচামেচি করেছ কেন..?
কাব্য: ভাবির সামনে আদর করলে তো তুমি লজ্জা পাবে তাইতো চেঁচামেচি করি যেন তুমি বিরক্ত হয়ে রুমে চলে আসো। আসলে কি বলতো তোমাকে আদর না করে গেলে পুরো দিনটাই আমার খারাপ যায়।
আমি: তাই বুঝি।
কাব্য: বিয়ের এক মাস হয়ে গেলো আর এখনো এইটুকু বুঝতে পারনি (আমার কোমরে ধরে টান দিয়ে ওর একদম কাছে নিয়ে আসলো)
আমি: চেঁচামেচি শুনতে হবে বলে আগেই সব রেডি রাখি তাও এমন করো ভালো লাগে বুঝি।
কাব্য: কতোটুকু ভালো লাগে আর কতোটুকু খারাপ লাগে সেটা তো আমি জানি।
আমি: হয়েছে এবার যাও দেরি হয়ে যাচ্ছে।
কাব্য: হু যাচ্ছি (আমার কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো। এইটা ওর রোজকার রুটিন হয়ে গেছে, প্রতিদিন হসপিটালে যাওয়ার সময় আমাকে জরিয়ে ধরে কপালে চুমু খাওয়া)
কাব্য: তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে কিন্তু…
আমি: ওরে বাবারে।
কাব্য: আরে এভাবে ভয় পেয়েছ কেন..?
আমি: ভয় পাবো না আবার, অন্যমনস্ক হয়ে ছিলাম হুট করে সামনে এসে কথা বলে উঠলে। চলে গিয়েছিলে তো আবার এসেছ কেন..?
কাব্য: তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে এই কথাটা বলার জন্য।
আমি: কি সারপ্রাইজ?
কাব্য: বলবো না।
আমি: চলে যাচ্ছ যে বলে তো যাও।
কাব্য: আমি জানি রোজ সকালে আমার এমন চেঁচামেচিতে তুমি যতোটা বিরক্ত হও তারচেয়ে হাজারগুণ বেশি খুশি হও কারণ তুমি আমার এই পাগলামি গুলোকে ভালোবাস। (চলে যাচ্ছিল, দরজা থেকে ফিরে এসে আমার কানের কাছে ফিসফিস করে কথাটা বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো। পাগল একটা। সত্যিই তো ওর এসব পাগলামিই তো আমার ভালো লাগে। একদিন সকালে চেঁচামেচি না করলেই কেমন যেন সবকিছু ফাঁকাফাঁকা লাগে)

কে যে এতোক্ষণ ধরে ফোন দিয়ে যাচ্ছে। নামাজ পড়ছিলাম কিন্তু ফোনের রিংটোনে শান্তিতে নামাজ পড়তে পারছিলাম না। ফোন হাতে নিয়ে দেখি কাব্য অনেক গুলো ফোন দিয়েছিল, রিসিভ না করাতে মেসেজ করেছে “বাসায় আসছি দুপুরে একসাথে খাবো” যতোটা বিরক্তি লাগছিল তারচেয়ে বেশি খুশি হয়ে গেলো মন মেসেজটা পড়ে।

খাবার গুলো টেবিলে খুব সুন্দর করে সাজাচ্ছি। ভাবি এসে দেখে হা করে তাকিয়ে রইলো।
ভাবি: এতো খাবার কার জন্য বাসায় তো শুধু তুই আর আমি।
আমি: ডাক্তারবাবু আসছে সবাই একসাথে খাবো।
ভাবি: তাই তো বলি তিলোত্তমাকে এতো খুশি খুশি লাগছে কেন। কাব্য দুপুরে বাসায় খাবে আগে বললি না কেন তাহলে ওর পছন্দের খাবার গুলো রান্না করে রাখতাম।
আমি: জানতাম নাকি এখন মেসেজ দিয়ে বললো।
ভাবি: ওহ তাই বল।
আমি: আচ্ছা ভাবি ডাক্তারবাবুর পছন্দের খাবারগুলো কি কি বলতো, পরে নাহয় অন্য একদিন রান্না করে খাওয়াবো।
বুয়া: ওর পছন্দের খাবার কি কি শুনলে তো তুমি হাসবা।
আমি: কেন?
বুয়া: সব বড়লোক দেখি দামী দামী খাবার পছন্দ করে আর মেঝো সাহেব পছন্দ করে গরীবরা যা খায় তা।
আমি: মানে।
ভাবি: ছোটমাছ আর সব ধরনের ভর্তা ওর পছন্দ।
বুয়া: এগুলা তো আমরা রোজ খাই।
ভাবি: হ্যাঁ যাও পারলে কাব্য’র জন্য কিছু একটার ভর্তা করে নিয়ে এসো।
বুয়া: আইচ্ছা।
আমি: ভাবি ডাক্তারবাবুকে খুব ভালোবাস তাই না।
ভাবি: কাব্য আর অয়ন ওরা তো আমার দুভাই। আর কি বলতো কাব্য নিজের কষ্টটা নিজের ভিতরেই রাখে কখনো মুখ ফুটে কিছু বলে না তাই যতোটুকু পারি ওর জন্য নিজে থেকে করার চেষ্টা করি। (কলিংবেল বেজে উঠলো নিশ্চয় আমার ডাক্তারবাবু এসেছে। দৌড়ে এসে দরজা খুললাম, কাব্য আমাকে দেখে মুখে হাসির রেখা টেনে চোখ টিপ মারলো। কি দুষ্টুরে বাবা)

ভাবি, কাব্য আর আমি একসাথে বসে খাবার খাচ্ছি। কাব্য খাবার খাচ্ছে বললে ভুল হবে ও তো খাবার খাওয়ার নামে দুষ্টুমি করছে। ভাবির চোখের আড়ালে টেবিলের নিচে আমার পায়ের উপর ওর পা ঘসছে আর আমি কেঁপে উঠছি দেখে মিটিমিটি হাসছে।
ভাবি: এই তিলোত্তমা কোথায় যাচ্ছিস?
আমি: খাবো না আর।
কাব্য: খাবার রেখে যেতে নেই চুপচাপ বসে খেয়ে নাও।
ভাবি: তুমি কি ওকে চুপচাপ বসতে দিচ্ছ, দুষ্টুমি গুলো বন্ধ কর ও খাবে। (এইরে ভাবি সব লক্ষ করেছে, ওকে নিয়ে আর পারিনা সব জায়গায় শুধু দুষ্টুমি)
কাব্য: ভাবি তুমি সব জায়গায় লক্ষ কর কেন?
ভাবি: দেবর আর জা এর ব্যাপারে একটু লক্ষ করতে হয়।
কাব্য: হু যাও খেয়ে দুজনই রেডি হয়ে নাও শপিং করতে যাবো।
আমি: তারমানে এটাই তোমার সারপ্রাইজ।
কাব্য: জ্বী না সারপ্রাইজটা কাল দিবো। (কালই যখন দিবে তাহলে আজ বলার কি ছিল, সারপ্রাইজটা জানার জন্য মন অস্থির হয়ে আছে)
ভাবি: আমি যাচ্ছি না।
কাব্য: আমি বলেছি তাই যেতে হবে।
ভাবি: না অন্যদিন যাবো আজ ভালো লাগছে না।
কাব্য: ওকে।

রিকশায় দুজন পাশাপাশি বসে আছি। কাব্য’র ইচ্ছেতে গাড়ি রেখে রিকশা দিয়ে যেতে হচ্ছে। একটা হাত দিয়ে কাব্য আমাকে এমন ভাবে জরিয়ে ধরে রেখেছে মনে হচ্ছে আমি একটা ছোট বাচ্চা, ওর হাত সরিয়ে নিলেই আমি রিকশা থেকে পড়ে যাবো। বার বার ওর দিকে তাকাচ্ছি আর ভাবছি “তুমি আমার জীবনে না আসলে কখনো বুঝতেই পারতাম না কেউ যে কাউকে এতোটা ভালোবাসতে পারে এতোটা কেয়ার করতে পারে”
কাব্য: বার বার এভাবে তাকাচ্ছ কেন আমার বুঝি লজ্জা লাগে না। (ইশশ এমন দুষ্টু মানুষের আবার লজ্জা)
কাব্য: একমাস ধরে তো দেখছ আমাকে তাহলে আজ আবার নতুন করে দেখার কি হলো (কাব্য আমার কানের কাছে ফিসফিস করে কথাটা বলতে নিজেই এখন লজ্জা পেলাম। সত্যি আজ ওকে একটু বেশিই দেখছি)
কাব্য: ইসস লজ্জাবতীর লজ্জাময় মুখটা দেখতে পারছি না (বোরকা পড়া তাই ও আমার মুখ দেখতে পারছে না আর তাই এই কথা বলছে। হঠাৎ কাব্য আমার হাতের উপর ওর হাত রাখলো, আমার হাতটা ওর হাতের মুঠোয় পূরে নিলো)।
কাব্য: কি হলো তোমার হাত এভাবে ঘেমে যাচ্ছে কেন আর কাঁপছে কেন (কাব্য’র দিকে তাকালাম শান্তভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমার হাতটা এখনো ওর হাতের মুঠোয়। আমিও কাব্য’র দিকে তাকিয়ে আছি, কি উত্তর দিবো আমি নিজেই তো জানিনা আমার হাত এভাবে কাঁপছে কেন)
কাব্য: আজ সারা বিকেল তোমার সাথে এভাবে হাতে হাত রেখে রিকশা করে ঘুরে বেড়াবো বুঝেছ।
আমি: হু।

সবার জন্য অনেক কিছু কিনলাম শুধু আমার নিজের গুলাই রয়ে গেলো, ইচ্ছে হচ্ছে না কোনো কিছু কেনার। কাব্য নিজেই আমার জন্য শাড়ি দেখছে।
আমি: তোমার ফোন বাজছে।
কাব্য: হুম দেখছি কে, তুমি এই শাড়িটা দেখো ভালো লাগলে নিয়ে নাও (শাড়িটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে ফোন নিয়ে একটু দূরে চলে গেলো)
“হানিমুনে যাওয়ার জন্য শপিং করতে এসেছ” আনমনে হয়ে শাড়ি দেখছিলাম হঠাৎ কে যেন পিছনে এসে কথাটা বললো, সাথে সাথে পিছনে তাকালাম কিন্তু কেউ তো নেই। তাহলে কি ভুল শুনলাম, না না ভুল হবে কেন আমি স্পষ্ট শুনেছি কেউ একজন কথাটা বলেছে। কিন্তু কে?

কাব্য: তিলো কাকে খুঁজছ এইতো আমি।
আমি: হুম।
কাব্য: কি হয়ছে কোনো সমস্যা।
আমি: নাতো।
কাব্য: ঠিক আছে চলো।
আমি: হুম। (কাব্য শাড়ি দেখছে আর আমি চারপাশে চোখ বুলাচ্ছি, খুঁজছি কে বলেছে কথাটা কিন্তু পাবো কোথায়? কন্ঠটা তো কোনো পুরুষের ছিল তা..)
কাব্য: তিলো কি হয়েছে তোমার কিছুই তো কিনছ না।
আমি: অনেক তো কিনেছ আর লাগবে না। বাসায় চলো প্লিজ।
কাব্য: বাসায়, ঠিক আছে চলো।

রিকশায় বসে আছি আর ভাবছি কে ছিল লোকটা..? আচ্ছা কাব্য কি সত্যি হানিমুনে যাওয়ার জন্য শপিং করছে কিন্তু ও তো আমায় কিছু বলেনি। তাহলে কি এই হানিমুন নিয়েই কাব্য আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছে। যদি এটাই হয় তাহলে ওই লোকটা জানলো কিভাবে আমরা যে হানিমুনে যাচ্ছি। হঠাৎ মনে হলো আমাদের রিকশাটা কেউ একজন ফলো করছে, তাড়াতাড়ি পিছনে তাকাতে চাইলাম কিন্তু রিকশার হুটে লেগে কপালে ব্যথা পেলাম।
কাব্য: পিছনে কি হ্যাঁ ব্যথাটা পেয়েছ তো। এভাবে জরিয়ে ধরে আছি তাও ব্যথা পেয়েছ যদি না ধরে রাখতাম তাহলে তো মনে হয় রিকশা থেকেই পরে যেতে।
আমি: ব্যথা পেয়েছি তার উপর আবার বকা দিচ্ছ (কিছুনা বলে রিকশা থামিয়ে পাশের দোকান থেকে পানি আনতে চলে গেলো)

কাব্য একটু দূরে যেতেই কে যেন রিকশার পাশে এসে দাঁড়ালো।
–হাই মেম।
আমি: কে আপনি?
–তোমার জম।
আমি: মানে।
–কাব্য হানিমুনে যাওয়ার কথা বলবে কিন্তু তুমি যাবে না যদি গিয়েছ…
কাব্য: তিলো পানি নাও (কাব্য’র কন্ঠ শুনে ভয়ে ওর দিকে তাকালাম)
কাব্য: কি হয়েছে? (আমাকে প্রশ্ন করছে তাহলে কি ও লোকটাকে দেখতে পারছে না। সাথে সাথে তাকালাম কিন্তু লোকটা তো নেই। লোকটার চোখ দুটু ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছিল না কারণ পুরো মুখ রুমাল দিয়ে বাধা ছিল)
কাব্য: কি হলো পানি নাও।
আমি: লাগবে না। (কাব্য রাগে পানির বোতলটা ছুড়ে ফেলে দিলো। আবার পিছনে তাকালাম ওই তো লোকটা, আমি তাকিয়েছি দেখেই একটা আঙ্গুল নেড়ে শাসিয়ে চলে গেলো)
কাব্য: আবার পিছনে তাকাচ্ছ ওখানে কে আছে? (ভয়ে কাব্য’র কাধে মাথা রেখে ওকে জরিয়ে ধরলাম, কাব্য হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি ভয় পেয়েছি তাই ও আর কিছু না বলে আমার হাতটা শক্ত করে ধরলো)

চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছি। লোকটার লাল হয়ে থাকা বড় বড় চোখ দুটু আর আঙ্গুল নেড়ে শাসানো কোনোটাই ভুলতে পারছি না। হঠাৎ কাব্য এসে পাশে বসলো, বিছানাটা আমার গায়ে টেনে দিয়ে আমার মাথায় একটা হাত রাখলো।
কাব্য: সেই সন্ধ্যা বেলায় শুয়েছিলে এখন তো অনেক রাত হলো উঠো। (কিছু না বলে কাব্য’র হাতটা বুকের কাছে এনে জরিয়ে ধরলাম)
কাব্য: কি হয়েছে বলতো এর আগে তো কখনো তোমাকে এতোটা ভয় পেতে দেখিনি। আসার সময় অন্যমনস্ক হয়েছিলে, রিকশায় ছোট বাচ্চাদের মতো আমাকে জরিয়ে ধরে রেখেছিলে। কি হয়েছে আমাকে বলো প্লিজ, তুমি কি কোনো কারণে ভয় পেয়েছ।
আমি: না কিছু হয়নি।
কাব্য: ঠিক আছে উঠে খেয়ে নাও আমি ঘুমাবো খুব টায়ার্ড লাগছে প্লিজ।
আমি: হুম।

খেয়ে এসে দেখি কাব্য ঘুমিয়ে পড়েছে। সত্যি ওর ঘুমন্ত মুখটায় ক্লান্তির চাপ পরে আছে। কাব্য’র চুল গুলোয় আলতো করে হাত বুলিয়ে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

মাঝরাতে হঠাৎ ফোনের রিংটোন শুনে ঘুম ভেঙে গেলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখি একটা অচেনা নাম্বার রিসিভ করবো কি করবো না ভাবতে ভাবতেই কেটে গেলো। পরক্ষণেই আবার বেজে উঠলো, কাব্য’র ঘুম ভেঙে যাবে তাই ফোনটা নিয়ে জানালার কাছে চলে আসলাম।
আমি: হ্যালো
–হানিমুনে যাবি না এই কথাটা কাব্য’কে এখনো বলিস নি।
আমি: আপনি কে বলুন তো আমাদের হানিমুন নিয়ে আপনার এতো মাথা ব্যথা কেন?
–বলেছি না তোদের জম আমি। (ধমকের সুরে কথাটা বলতেই ফোন কেটে দিলাম)

শুভ্রা ছাড়াও অন্য কেউ আমাদের শত্রু আছে আমি তো ভাবতেই পারছি না। কে এই লোক আমাদের হানিমুন নিয়ে সে নিষেধ করছে কেন, আর লোকটা জানলো কিভাবে আমরা যে হানিমুনে যাচ্ছি? কাব্য’র দিকে তাকালাম ও গভীর ঘুমে, ভাবছি কাব্য’কে এসব বলবো কিনা। কাব্য আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল আমি যদি আগেই বলে দেই তাহলে ওর আনন্দটাই নষ্ট হয়ে যাবে, আমি ওর আনন্দ নষ্ট করতে পারবো না। আচ্ছা লোকটা আমাদের কোনো ক্ষতি করবে নাতো? আমার ডাক্তারবাবুর কোনো ক্ষতি করবে নাতো? আবারো ফোনের মেসেজটোন বেজে উঠলো, আঁতকে উঠলাম মেসেজটা দেখে। “কে বলতে পারে এই হানিমুনে গিয়েই হয়তো তোর বা তোর ডাক্তারবাবুর প্রাণটা চলে যেতে পারে”

চলবে?