Friday, August 15, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2445



রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ৩০/অন্তিম পর্ব

0
রোমান্টিক_ডাক্তার
পার্ট: ৩০/অন্তিম পর্ব

লেখিকা: সুলতানা তমা

সন্ধ্যা নেমে এসেছে এখনো হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি, কি করবো কোথায় যাবো ভেবে পাচ্ছি না। তিশার কাছে ফিরে যাবো কিন্তু ও তো কাব্য’দের বাসায় আছে। বাসায় ফিরে যাওয়া তো সম্ভব না কাব্য তো আমার মুখও দেখতে চায় না, অন্য কোথাও নাহয় চলে যাবো কিন্তু এখানে আর না, যেকোনো সময় আম্মু চলে আসতে পারেন। আশেপাশে চোখ বোলালাম কোনো নার্স নেই দেখে আস্তে আস্তে উঠে বেরিয়ে পড়লাম।
আম্মু: কোথায় যাচ্ছ? (কেবিনের বাইরে আসতেই আম্মুর সামনে পড়ে গেলাম এখন কি বলবো)
আম্মু: কথা বলছ না কেন?
আমি: আম্মু চলে যাচ্ছি আমি।
আম্মু: চলো আমার সাথে।
আমি: আম্মু কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? (আম্মু আমার হাত ধরে টেনে এনে গাড়িতে বসালেন)

গাড়িতে আম্মুর পাশে চুপচাপ বসে আছি, কোথায় যাচ্ছি কিছুই বুঝতে পারছি না। আশেপাশের এলাকা দেখে তো মনে হচ্ছে শহর থেকে দূরে কোথাও আছি কিন্তু এখন যাচ্ছি কোথায় কাব্য’র কাছে নাতো?
আমি: আম্মু আমরা কোথায় যাচ্ছি?
আম্মু: (নিশ্চুপ)
আমি: আম্মু আমি কাব্য’র কাছে ফিরে যেতে চাই না।
আম্মু: সে সিদ্ধান্ত কিছুক্ষণ পর নিও এখন চুপ হয়ে বসো। (আর কথা বাড়ালাম না চুপচাপ বসে রইলাম)

গাড়ি এসে পুলিশ স্টেশনে থামলো, আম্মু আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন কেন?
আমি: আমরা এখানে এসেছি কেন?
আম্মু: চলো আমার সাথে (আম্মুর পিছন পিছন হাটতে শুরু করলাম)

অন্ধকার একটা রুম ছোট্ট একটা টেবিল আর টেবিলে আধোআধো করে জ্বলছে একটা মোমবাতি, টেবিলের একপাশে একটা খালি চেয়ার অপর পাশের চেয়ারে কেউ একজন বসে আছে। কাছে আসতেই দেখলাম আরশি বসে আছে। ভয়ে আতকে উঠলাম আরশিকে দেখে, ওর সারা শরীরে আঘাত এর চিহ্ন মনে হচ্ছে ওকে কেউ টর্চার করেছে। অবাক হয়ে তাকালাম আম্মুর দিকে, আম্মু ইশারা দিয়ে খালি চেয়ারটায় বসতে বললেন। চুপচাপ চেয়ারে বসে পড়লাম।
আম্মু: আরশির পাপ সীমা ছাড়িয়ে গেছে তো তাই ওকে এখানে আনতে হলো আর কোনো অপরাধী তো নিজে থেকে তার অপরাধ স্বীকার করে না তাই পুলিশকে একটু কষ্ট করতে হয়েছে। (কষ্ট হচ্ছে আপুকে এই অবস্থায় দেখতে কিন্তু কিছু করার নেই আপু যা পাপ করেছে তার শাস্তি ওকে পেতেই হবে)
আম্মু: কাব্য’কে ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরশির সাথে একবার কথা বলে নাও তারপর নাহয় সিদ্ধান্ত নিও।
আমি: (নিশ্চুপ)
আম্মু: আরশি সব সত্যি বলো।
আরশি: হুম।

টেবিলের একপাশের চেয়ারে আমি বসে আছি অন্যপাশে আরশি আর একটু দূরে আম্মু পায়চারী করছেন। অন্ধকার রুম আশেপাশে কেউ নেই, আরশি বলতে শুরু করলো।
আরশি…
কাব্য’র কোনো দোষ নেই সবকিছু আমি করেছি। কাব্য আমাকে সত্যি ভালোবাসতো কিন্তু আমি ওকে সবসময় ঠকিয়েছি। কাব্য’কে আমি যা বলতাম তাই ও শুনতো কারণ ও আমাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করতো। কিন্তু আমি অন্য কাউকে ভালোবাসতাম আর তাই কাব্য’র সমস্ত সম্পত্তি নিজের নামে করে নিতে চেয়েছিলাম। কাব্য’র মনে কিছুটা সন্দেহ ছিল আমি ওকে পরে বিয়ে করবো কিনা আর ওর এই সন্দেহ দূর করার জন্য আমি নিজে থেকেই ওর সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন গড়ে তুলি, কারণ কাব্য আমাকে সন্দেহ করলে ওর সম্পত্তি গুলো হাতছাড়া হয়ে যেতো। কাব্য চায়নি আমি জোড় করেছিলাম। সেসময় আমি কিছু পিক তুলে রেখে দেই কাব্য কখনো আমার কথা না শুনলে যেন ব্ল্যাকমেইল করতে পারি। আমাকে ওরা জেলে দেওয়ার পর যাকে আমি ভালোবাসতাম সে আমাকে ছেড়ে চলে যায়, একা হয়ে যাই আমি। জেল থেকে বেরিয়ে আমি কাব্য’র উপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলাম আর যখন প্রতিশোধ নিতে চাইলাম তখন জানতে পারি কাব্য’র বউ আর কেউ নয় তুই। দুজনের উপর একসাথে প্রতিশোধ নেওয়া যাবে ভেবে আমি তোকে মেরে ফেলার চেষ্টা করি কিন্তু তুই বেঁচে গেছিস মারা গেছে তোর বাচ্চাটা। প্রথমে কাব্য’র সম্পত্তির উপর আমার লোভ থাকলেও জেল থেকে ফিরে আসার পর আমি সিদ্ধান্ত পাল্টে নেই, ভেবে নেই তোকে সরিয়ে কাব্য’কে আমি বিয়ে করবো। কাব্য’র সাথে যোগাযোগ করি কিন্তু ও সবসময় বলেছে ও তোকে ভালোবাসে। অসহ্য লাগতো তোর প্রতি ওর ভালোবাসা দেখে আর তাই ওকে পিক গুলো দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করি। কাব্য তোকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে তোকে হারানোর ভয় ওকে সবসময় তাড়া করে বেড়ায়, দুর্বল ছিল কাব্য তোর প্রতি আর আমি ওর এই দুর্বলতাকে তোকে হারানোর ভয়টাকে কাজে লাগাই। আমার সাথে কাব্য’র ফিজিক্যাল রিলেশন ছিল জানার পর যদি তুই ওকে ছেড়ে চলে যাস তাই কাব্য ভয়ে আমার বিষয় তোর থেকে লুকিয়ে রাখতো। শুধুমাত্র পিক গুলোর ভয়ে কাব্য তোকে কিছু বলতে পারতো না। সেদিন ছাদে কাব্য আমার হাত ধরেনি আমিই ওর হাত ধরে ছিলাম আর তোকে দেখেই কাব্য’র বুকে মাথা রেখেছিলাম, এর কিছুক্ষণ আগেই আমি কাব্য’কে পিক গুলো দেখিয়েছিলাম তাই ও কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না।
রুমটা তোর ছিল তুই যেকোনো সময় রুমে চলে আসবি আমি জানতাম তাই ইচ্ছে করে জোড় করে কাব্য’কে কিস করেছিলাম আর ওর শার্টে লিপস্টিক এর দাগ লাগিয়েছিলাম যেন তুই দেখে ওকে ভুল বুঝিস। সবকিছু করেছিলাম তোদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি তৈরি করার জন্য কিন্তু তাতেও যখন কাজ হয়নি তখন আমি অন্যকিছু ভাবি, গতরাতে হসপিটালের ইমারজেন্সি থেকে নয় আমিই ওকে ফোন করেছিলাম। কাব্য বুঝতে পারেনি, হসপিটালে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠে আর গাড়িতে আমি আগে থেকেই বসে ছিলাম। কাব্য’র মাথার মধ্যে আঘাত করে ওকে অজ্ঞান করে দেই তারপর দুঘন্টার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দেই। তোকে ফোন করে কাব্য’র শহরের বাইরের বাসায় যেতে বলি। আর আমি কাব্য’কে সেই বাসায় নিয়ে গিয়ে ওর শার্ট খুলে ফেলি যেন তুই দেখে ওকে ভুল বুঝিস, রাগের বশে তুই লক্ষ করিসনি কাব্য যে অজ্ঞান ছিল আর কাব্য নয় আমি ওকে জরিয়ে ধরেছিলাম। সবকিছুই করেছিলাম তোকে দূরে সরিয়ে কাব্য’র বউ হওয়ার জন্য, কাব্য’র সমস্ত সম্পত্তির মালিক হওয়ার জন্য কিন্তু…

চুপ হয়ে গেলো আরশি, আমিও চুপচাপ বসে রইলাম, ওর মতো মেয়ের সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাধছে।
আরশি: কাব্য বাবা মায়ের ভালোবাসা পায়নি আমি ছিলাম ওর প্রথম ভালোবাসা আর আমাকে হারানোর পর ও মানুষিক ভাবে ভেঙে পড়েছিল। তোকে পেয়ে কাব্য নতুন করে বাঁচতে শিখেছিল, তোকে হারানোর কথা কাব্য ভাবতেও পারতো না আর তাই ও সবসময় কথা লুকাতো, মিথ্যে বলতো তোর কাছে। কাব্য তোকে সত্যি ভালোবাসে।
আমি: চুপ করো ভালোবাসার তুমি কি বুঝ নষ্টা মেয়ে একটা। তোমার ভিতরে তো ভালোবাসা বলতে কিছু ছিল না যা ছিল সব লোভ। লোভেরও একটা সীমা থাকে তুমি তো নারী জাতিরও কলঙ্গ যে কিনা সামান্য কিছু সম্পত্তির জন্য নিজের সর্বশ… ছিঃ
তুমি আমার বোন এইটা ভাবতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে তারচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে এইটা ভেবে যে তুমি একজন নারী। আরে একজন নারীর কাছে তো তার নিজের ইজ্জত সবার উপরে থাকে আর তুমি তো সামান্য সম্পত্তির কাছে নিজের ইজ্জত বিক্রি করে দিলে, এতো লোভ তোমার?
আম্মু: বৌমা ওর সাথে কথা না বাড়ানোটাই ভালো। সবকিছু তো শুনেছ কাব্য’র কোনো দোষ নেই, এখন ভেবে নাও কি করবে। আমি বাইরে অপেক্ষা করছি তোমার জন্য। (আম্মু চলে যেতেই উঠে আরশির কাছে এসে দাঁড়ালাম)
আমি: আমার এখন কি ইচ্ছে হচ্ছে জানো? তোমাকে মেরে ফেলি আর এতো কষ্ট দিয়ে মারি যে আমার সন্তানের খুনের প্রতিশোধ নেওয়া হবে। সবাইকে এতো কষ্ট দেওয়ার শাস্তি তোমাকে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে, আফসোস এইটা থানা। (আরশি আমার দিকে তাকালো এইটা থানা না হলে হয়তো ও এখন আমাকেই মেরে ফেলতো)
আমি: তোমার এই রাগি চোখদুটো দেখে ইচ্ছে হচ্ছে তোমাকে টাটিয়ে দুইটা থাপ্পড় দেই কিন্তু তোমার গায়ে হাত তুলতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে। সুযোগ পেয়েছ নিজেকে শুধরানোর শুধরে নাও নিজেকে এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যাও। (এখনো আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে দেখে আমার রাগ আরো বেড়ে গেলো। থানায় আছি নাহলে ওকে এখনি…)
আরশি: তিলোত্তমা আমি কিন্তু একদিন বেরুবো তখন কিন্তু…
আমি: থুঃ (থুথু চিটিয়ে দিলাম ওর মুখের উপর)
আমি: তুই যেন জেলেই বুড়ি হয়ে মারা যাস আমি আর কাব্য সেই ব্যবস্থাই করবো।

বেরিয়ে আম্মুর কাছে চলে আসলাম, আম্মু গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছেন আমার জন্য। কাব্য তো একেবারে নির্দোষ না যথেষ্ট অন্যায় করেছে ও তাহলে আমি ওর কাছে ফিরে যাবো কেন? যদি যেতেই হয় যাবো কিন্তু একেবারে না, ওকে ছেড়ে চলে আসার জন্য যাবো।
আম্মু: বৌমা এসো।
আমি: আসছি।

বাসায় এসে অবাক হয়ে গেলাম, হিয়ার বিয়ে এখনো হয়নি। সবাই বসে বসে কার জন্য যেন অপেক্ষা করছে। কাব্য’র দিকে চোখ পড়লো একপাশে দাঁড়িয়ে আছে মাথায় ব্যান্ডেজ। হিয়া আর আকাশকে বিয়ের সাজে বসে থাকতে দেখে ওদের কাছে চলে আসলাম। হিয়া আমাকে দেখেই উঠে এসে জরিয়ে ধরলো।
হিয়া: ভাবি তুমি ঠিক আছ তো তোমার মাথায় ব্যান্ডেজ কেন?
আমি: আগে বলো তোমরা এখনো এখানে কেন?
হিয়া: বিয়ে হয়নি তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
আমি: আরে পাগলী রাত হয়ে গেছে সে খেয়াল আছে?
হিয়া: হউক তাতে কি? যে আমার সবকিছু ফিরিয়ে দিলো সে আমার বিয়ের অনুষ্ঠানে থাকবে না তা কি করে হয়।
আমি: ঠিক আছে এখন অন্তত বিয়ের কাজ শুরু করো।
আব্বু: আমার বৌমা ফিরে এসেছে এখন তো শুরু হবেই। (হিয়ার দিকে আবার চোখ পড়তেই মনে পড়লো ও যে সুইসাইড করার চেষ্টা করেছিল। হিয়ার হাত ধরে টেনে সবার থেকে একটু দূরে নিয়ে আসলাম ওকে)

হিয়া: ভাবি কি হয়েছে?
আমি: তুমি সুইসাইড করতে চেয়েছিলে?
হিয়া: (নিশ্চুপ)
আমি: অন্যায় করলে তোমার ভাইয়া করেছে তার শাস্তি তুমি নিজেকে কেন দিতে চেয়েছিলে? যদি কিছু একটা হয়ে যেতো তোমার?
হিয়া: হয়নি তো, আমাকে রুমে যেতে অয়ন ভাইয়া দেখে ফেলেছিল তাই কিছু করতে পারিনি। করলে তো খুব বড় ভুল হতো কারণ ভাইয়া তো অন্যায় করেনি। আরশি সবকিছু এখানে বলে গেছে। হ্যাঁ ভাইয়া আগে খারাপ ছিল আর সেটা আরশির প্রেমে অন্ধ হয়ে কিন্তু এখন ভাইয়া তোমাকে পেয়ে অতীত ভুল গেছে ভালো হয়ে গেছে ভাইয়া।
আমি: হিয়া একটা কথা মনে রেখো সুইসাইড কখনো কোনো কিছুর সমাধান করে দিতে পারেনা।
হিয়া: সরি ভাবি আর কখনো এমন ভুল হবে না। তোমার কাছে অনুরোধ করছি প্লিজ ভাইয়াকে ছেড়ে যেও না ভাইয়া তোমাকে সত্যি ভালোবাসে। ভাইয়ার আগের ভুলগুলো সব ক্ষমা করে দাও নতুন করে শুরু করো সবকিছু।
আমি: চলো অনেক রাত হয়ে গেছে বিয়ের কাজ শেষ করতে হবে।

হিয়া আর আকাশের বিয়ে সম্পন্ন হলো, ওদের বিদায় দিয়ে কাব্য’র সাথে কথা বলার জন্য আসলাম। কিন্তু কাব্য তো ড্রয়িংরুমে নেই গেল কোথায়?
ভাবি: তিলোত্তমা কাকে খুঁজছিস?
অয়ন: কাকে আবার উনার ডাক্তারবাবুকে।
আম্মু: কাব্য ছাদে আছে তোমার সাথে কথা বলতে চায়। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভেবেচিন্তে নিও। (আব্বু আম্মু দুজন আলাদা বসে আছেন দেখে আব্বুর কাছে আসলাম)
আব্বু: আরে বৌমা আমাকে টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? (আব্বুকে এনে আম্মুর পাশে বসিয়ে দিলাম। আব্বুর হাতের মুঠোয় আম্মুর হাতটা পুরে দিলাম)
আমি: এখন দেখো তো কতো সুন্দর মানিয়েছে। সবসময় এভাবে থাকবে বুঝেছ? সব কষ্ট ভুলে নতুন করে আবার সবকিছু শুরু করো।
আব্বু: আমাদের মা বলেছে তাহলে তো শুনতেই হবে।
আম্মু: শুধু আমাদের নতুন করে শুরু করতে বলছ তুমি…
আমি: আসছি আম্মু।

কাব্য এক হাতে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে অন্যহাতে গীটার নিয়ে চুপচাপ দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
কাব্য: তিলো…
আমি: তুমি তো এদিকে তাকাওনি আমি এসেছি বুঝলে কিভাবে?
কাব্য: তুমি আমার আশেপাশে থাকলে আমি এমনিতেই বুঝতে পারি দেখতে হয়না তোমাকে।
আমি: উঁহু সত্যিটা হচ্ছে তুমি আমার মুখ দেখতে চাও না।
কাব্য: হিয়া এমন একটা কান্ড করেছিল তো মাথা ঠিক ছিল না রাগের বশে উল্টাপাল্টা কথা বলেছি মন থেকে বলিনি। আর সত্যিই তুমি আমার আশেপাশে থাকলে আমি বুঝতে পারি, এইটা কিসের জন্য হয় জানো? ভালোবাসার জোরে।
আমি: ভালোবাসা? ভালোবাসার কি বুঝ তুমি? শুধু মিথ্যে বলা ঠকানো এসব ছাড়া তো কিছুই জানোনা।
কাব্য: হ্যাঁ আমি মিথ্যে বলেছি কিন্তু ঠকাইনি তোমাকে। তোমাকে হারানোর ভয়ে মিথ্যে বলেছি আমি কারণ আমার একটা নোংরা অতীত ছিল, তুমি এসব জানলে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে।
আমি: যাবো তো আমি ঠিকি। (এতোক্ষণে কাব্য আমার দিকে তাকালো, অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
আমি: শুধু আমি না এসব শুনলে যেকোনো মেয়েই ছেড়ে চলে যাবে। একটা কথা জানো তো মেয়েরা সব কষ্ট সহ্য করতে পারে কিন্তু নিজের প্রিয় মানুষটিকে অন্যকারো সাথে ভাগ করার কষ্ট সহ্য করতে পারে না। হয়তো এইটা তোমার অতীত ছিল কিন্তু আমি তো তোমাকে আরশির সাথে পিকে দেখেছি, তুমি আরশির ছিলে এটাই তো সত্যি? এই সত্যিটা আমি কিভাবে মেনে নিবো বলতে পারো?
কাব্য: কথায় আছে পাপ কখনো পিছু ছাড়েনা আমার পাপও আমার পিছু ছাড়েনি। ভুল তো মানুষই করে আমিও করেছি প্লিজ ক্ষমা করে দাও।
আমি: এইটা ভুল না অন্যায় করেছ তুমি, পাপ করেছ আর জেনে শুনে পাপ করলে তার কোনো ক্ষমা হয়না। তুমি তো অবুঝ নও তাহলে আরশির কথামতো চলতে কেন? কি ছিল আরশির মধ্যে যে বিয়ের আগে ফিজিক্যাল রিলেশন পাপ জেনেও তোমাকে আরশির কথামতো পাপ কাজ করতে হলো? হ্যাঁ মানছি আম্মু আব্বু তোমার পাশে ছিলেন না তাই তুমি আরশির ভালোবাসায় অন্ধ ছিলে তাই বলে এতোটা? এতো জঘন্য কাজ করতে পারলে?
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: আরশি তো তোমাকে ভালোই বাসতো না মোহে আটকে ছিলে তুমি। যে সত্যি ভালোবাসে সে কখনো বিয়ের আগে এসব করে ভালোবাসার মানুষটিকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয় না। আরশি তো নিজেও পাপ করেছে তোমাকে দিয়েও করিয়েছে এইটা বুঝতে পারনি?
কাব্য: তখন আমি সত্যি বুঝতে পারিনি অন্ধ ছিলাম আরশির ভালোবাসায়, প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
আমি: ক্ষমা? একটা কথা বলতো তুমি যদি অন্য একটি ছেলের সাথে আমাকে এমন অবস্থায় দেখতে তাহলে কি আমাকে ক্ষমা করতে?
কাব্য: তিলো…
আমি: অবাক হচ্ছ কেন? তখন তুমি কষ্ট পেতে, আমি কি এখন কষ্ট পাচ্ছি না। আমারো কষ্ট হচ্ছে ডাক্তারবাবু খুব কষ্ট হচ্ছে। একটা মেয়ে পৃথিবীর সব কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা রাখে শুধু এই একটা কষ্ট ছাড়া।
কাব্য: প্লিজ এভাবে কেঁদো না তোমার যা শাস্তি দিতে হয় আমাকে দাও আমি তোমার সব কথা শুনবো।
আমি: নতুন করে আর কি বলবো তোমাকে যে তুমি আমার কথা শুনবে, শুনেছ কখনো আমার কথা? আরশির কথা যদি আমাকে আগেই বলে দিতে তাহলে আজ এতোকিছু হতো না। তোমাকে বারবার বুঝানোর পরও তুমি আমার থেকে কথা লুকিয়েছ মিথ্যে বলেছ আমাকে আ…
কাব্য: হ্যাঁ মিথ্যে বলেছি কথা লুকিয়েছি আর সবকিছু করেছি শুধুমাত্র তোমাকে হারানোর ভয়ে। খুব ভয় হতো এসব জানার পর যদি ছেড়ে চলে যাও। তুমিই বলো ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয় পাওয়াটা কি অস্বাভাবিক কিছু?
আমি: না ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক কিন্তু এতোটা ভয় ভালো না যে ভয় খারাপ হতে বাধ্য করে।
কাব্য: আমি খারাপ আমি অন্যায় করেছি এখন যা শাস্তি দেওয়ার দাও আমি রা…
আমি: তোমার শাস্তি একটাই আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি।
কাব্য: এমনটা করোনা প্লিজ আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। তুমি তো আমায় ভালোবাস তাহলে আমার অন্যায় গুলো ক্ষমা করতে পারছ না কেন? তিলো প্লিজ…
আমি: আসি।

কাব্য হাটু গেড়ে বসে পড়লো, আর পিছন ফিরে তাকালাম না চলে আসলাম। কাব্য’কে শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন অনেক অন্যায় করেছে অনেক কষ্ট দিয়েছে আমায়।
আম্মু: বৌমা কোথায় যাচ্ছ?
আমি: চলে যাচ্ছি।
তিশা: তমা পাগল হয়েছিস কি বলছিস এসব?
আমি: যে কথায় কথায় মিথ্যে বলে, নিজের স্ত্রীর থেকে কথা লুকায় তার সাথে থাকা সম্ভব না।
আব্বু: মারে কাব্য তো এসব তোমাকে হারানোর ভয়ে করেছে বড্ড ভালোবাসে যে তোমায়।
আম্মু: আচ্ছা বৌমা তুমি তো আমার ছেলেকে ভালোবাস তাহলে ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে না তোমার? কেন ওর অন্যায়টা ক্ষমা করতে পারছ না? ভালোবাসা তো ছেড়ে যেতে শিখায় না ক্ষমা করতে শিখায়।
আমি: ভালোবাসি না আমি ওকে, শুনতে পেয়েছেন আমি আপনার ছেলেকে ভালোবাসি না। খুব খারাপ ও আর আমি কোনো খারাপ মানুষকে ভালোবাসি না।
তিশা: তমা আস্তে প্লিজ, এভাবে কান্নাকাটি করলে কিন্তু তোর বাচ্চার ক্ষতি হবে। (তিশার কথা শুনে আম্মুর দিকে তাকালাম, তাহলে আম্মু সবাইকে বলে দিয়েছে আমি যে প্রেগন্যান্ট)
আম্মু: সবাইকে বলেছি শুধু কাব্য’কে ছাড়া, ভেবেছিলাম এতো বড় খুশির খবরটা তুমি নিজে কাব্য’কে দিলে কাব্য বেশি খুশি হবে কিন্তু…
আব্বু: বৌমা আমার অপদার্থ ছেলেটাকে ক্ষমা করে দাও অন্তত আমাদের বংশের নতুন মেহমানের জন্য।
আম্মু: আর ক্ষমা করতে হবে না। আসলে কাব্য ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওর মরে যাওয়াই উচিত।
আমি: মানে? মরে যাওয়া উচিত মানে?
আম্মু: তুমি তো আমার ছেলেকে ভালোবাস না তাহলে তুমি জেনে কি করবে?
আমি: কে বললো ভালোবাসি না খুব ভালোবাসি তো…
আম্মু: কাব্য ভেবে নিয়েছে তুমি ওকে ক্ষমা না করলে ও সুইসাইড করবে আর ওর পকেটে বিষের বোতলও দেখেছি আমি।
আমি: কি?
ভাবি: আরে তিলোত্তমা আস্তে যা পড়ে যাবি।

দৌড়ে ছাদে আসলাম কাব্য বসে বসে গীটার বাজাচ্ছে আর কাঁদছে। গীটার কেড়ে নিয়ে ওর শার্ট খামছে ধরে ওর শার্টের পকেটে হাত দিলাম।
কাব্য: আমি জানতাম তুমি ফিরে আসবে কিন্তু এসেই যে আমার পকেটে…
আমি: এইটা কি?
কাব্য: কি এইটা?
আমি: তোমার পকেটে বিষের বোতল কেন?
কাব্য: আমি তো জানিনা।
আমি: জানোনা? সুইসাইড করতে চাও আমাকে একা রেখে মরে যেতে চাও।
কাব্য: আরে মারছ কেন লাগছে তো।
আম্মু: আস্তে কিল দেরে মা আমার ছেলেটা ব্যথা পাচ্ছে। (আম্মুর কন্ঠ শুনে কাব্য’কে ছেড়ে দিলাম, সবাই ছাদে চলে এসেছে দেখে চুপচাপ দূরে দাঁড়িয়ে রইলাম)
আম্মু: এই বোতলের ব্যাপারে কাব্য কিছু জানেনা বোকা ছেলে তো বোতলটা কখন ওর পকেটে রেখেছি বুঝতেই পারেনি।
কাব্য: আম্মু তুমি?
আম্মু: ছেলে আর ছেলের বউকে এক করার জন্য এইটুকু করতে হলো আর বৌমা ভয় পেয়ো না বোতলে বিষের বদলে মধু রাখা আছে। (আম্মুর চালাকি দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম সবাই হাসতে হাসতে চলে গেলো)
কাব্য: তিলো পাগলী ক্ষমা করে দাও প্লিজ আর কখনো মিথ্যে বলবো না কথা লুকাবো না এইযে কান ধরছি।
আমি: উফফ লাগছে ছাড়ো আমার কান ধরেছ কেন?
কাব্য: কারণ তোমার কান মানে আমার কান আর আমা… (কাব্য’র একটা হাত এনে আমার পেটের উপর ধরলাম, ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
আমি: কি বিশ্বাস হচ্ছে না?
কাব্য: সত্যি বলছ আমি আব্বু হবো আর তুমি আম্মু হবে?
আমি: জ্বী সত্যি বলছি। (কাব্য খুশিতে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে কোলে তুলে নিলো)

কাব্য খুশিতে আমাকে কোলে করে নিয়ে ছাদের এপাশ থেকে ওপাশে হাটছে আর আমি দুহাতে ওর গলা জরিয়ে ধরে ওর দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ নয়নে ওর খুশি দেখছি।
আমি: অনেক হয়েছে এবার ছাড়ো।
কাব্য: দাঁড়াও। (কাব্য আমাকে দাড় করিয়ে দিয়ে হাটু গেড়ে বসে পড়লো)
আমি: কি করছ?
কাব্য: আমার আম্মুর সাথে কথা বলছি। (কাব্য আমার কোমর জরিয়ে ধরে আমার পেটের মধ্যে মুখ ঘষছে)
কাব্য: ও আম্মু তোমার মামুনিকে বলো তো আমাকে ক্ষমা করে দিতে। এইযে আমি তোমার কাছে প্রমিজ করছি তোমার মামুনিকে আর কখনো কষ্ট দিবো না। (কাব্য’র পাগলামি দেখে সব কষ্ট ভুলে গেলাম। কাব্য’র পাশে বসে ওর কাধে মাথা রাখলাম)
আমি: আচ্ছা তুমি জানো কিভাবে আমাদের মেয়ে হবে?
কাব্য: আমার মন বলেছে আর আমি তো আমার আম্মুর নামও ঠিক করে ফেলেছি।
আমি: তাই কি নাম শুনি।
কাব্য: নওমি।
আমি: কাব্য-তিলোত্তমা-নওমি খুব সুন্দর। (কাব্য আমার একটা হাত ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে আমার গলায় নাক ঘষতে শুরু করলো)
আমি: কি করছ ছাড়ো।
কাব্য: আদর করছি ছাড়া যাবে না।
আমি: এই তুমি রোমান্টিক ডাক্তার থেকে বলদ হইলা কবে? আমার পাঠক/পাঠিকারা তো তোমাকে বলদ ডাকে হিহিহি…
কাব্য: কি? (কাব্য আমাকে ছেড়ে দিলো, আমি গীটারের দিকে তাকিয়ে আছি দেখে ও উঠে গিয়ে গীটারটা নিয়ে আসলো)
আমি: কি ডাক্তারবাবু আপনার গীটারে কি এখন…
কাব্য: রোমান্টিক সুর বাজবে বুঝেছ, আমি যে রোমান্টিকই আছি প্রমাণ করে দিবো হু।
আমি: তাই?

কাব্য গীটার বাজাচ্ছে আমি ওর কাধে মাথা রেখে মুগ্ধ হয়ে শুনছি। কাব্য আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে গান ধরলো…

তুমি আমার এমনি একজন
যারে একজনমে ভালোবেসে
ভরবে না এ মন….

এক জনমের ভালোবাসা এক জনমের কাছে আসা
এক জনমের ভালোবাসা এক জনমের কাছে আসা
একটি চোখের পলক পড়তে লাগে যতক্ষণ।

তুমি আমার এমনি একজন
যারে এক জনমে ভালোবেসে
ভরবে না এ মন…

ভালোবাসার সাগর তুমি ভালোবাসার সাগর তুমি
বুকে অতৈ জল…
তবু পিপাসাতে আঁখি তবু পিপাসাতে আঁখি
হয়রে ছলছল হয়রে ছলছল।
তোমার মিলনে বুঝি গো জীবন বিরহে মরণ বিরহে মরণ।

তুমি আমার এমনি একজন
যারে একজনমে ভালোবেসে
ভরবে না এ মন….

সমাপ্ত???

(গল্পের পুরো কাহিনী, চরিত্র সবকিছু কাল্পনিক ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার সাথে থেকে আমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য। সবাই সবার মতো করে মন্তব্য করেছ আমাকে উৎসাহ জাগিয়েছ, আমার তো মনে হচ্ছিল এই গল্পের মাধ্যমে আমরা সবাই মিলে একটি পরিবার হয়ে গেছি। আশা করি আমার সব গল্পে এভাবেই সবাই পাশে থাকবে টাটা)

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ২৯

0

রোমান্টিক_ডাক্তার
পার্ট: ২৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকিয়ে চারপাশে চোখ বোলালাম, আমি তো হসপিটালে আছি। একটু দূরে একজন নার্সকে দেখে ডাক দিলাম।
নার্স: জ্বী বলুন।
আমি: আমাকে হসপিটালে কে নিয়ে আসলো?
নার্স: একটি মেয়ে।
আমি: ওহ, মেয়েটি কোথায়?
নার্স: পাশের কেবিনে, উনার আম্মু অসুস্থ সেখানেই আছেন।
আমি: হুম।
নার্স: দাঁড়ান আমি মেডামকে ডেকে দিচ্ছি।

নার্স বেরিয়ে গেলো। চুপচাপ শুয়ে আছি মেয়েটিকে ধন্যবাদ দিবো নাকি বকা দিবো বুঝতে পারছি না। মেয়েটি তো আমাকে বাঁচালো কিন্তু আমার তো বাঁচার ইচ্ছে ছিল না। কাব্য’কে অন্য মেয়ের সাথে দেখার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো ছিল। আমি কাব্য’কে আমার সবটুকু দিয়ে ভালোবেসেছি কিন্তু কাব্য আমাকে বারবার ঠকিয়েছে ওর এমন ভালোবাসার চেয়ে মৃত্যুই ভালো ছি…
নার্স: এইযে মেডাম পেসেন্ট এর জ্ঞান ফিরেছে। (নার্স এর কথা শুনে দরজার দিকে তাকালাম, ডাক্তারকে দেখে লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়লাম)
নার্স: আরে পাগল নাকি আপনি অসুস্থ আর লা…
আমি: আম্মু। (আমার মুখে আম্মু ডাক শুনে নার্স আর আম্মু দুজনই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি কাব্য’র আম্মুকে পেয়ে গেছি, আল্লাহ্‌ আমার হিয়াকে দেয়া কথা রাখার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাড়াতাড়ি ঘড়ির দিকে তাকালাম দুপুর দুইটা বাজে তারমানে হিয়ার বিয়েটা এখনো হয়ে যায়নি, আমার কথা রাখার সুযোগ সময় দুটোই আছে এখন)
আম্মু: মা তুমি ঠিক আছ তো? আম্মু কাকে ডাকছ? এখানে তো কেউ নেই। (উনি আমার কাছে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। উনার হাতটা আমার হাতের মুঠোয় এনে উনার চোখের দিকে তাকালাম)
আমি: আপনাকেই আমি আম্মু ডেকেছি।
আম্মু: কিন্তু কেন? (আমার দিকে বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন উনি)
আমি: কারণ আপনি কাব্য’র আম্মু আর আমার শাশুড়ি মা। (চমকে উঠলেন উনি, নিজের হাতটা এক ঝটকায় আমার হাতের মুঠো থেকে ছাড়িয়ে নিলেন)
আম্মু: কিকিকিকি ববললছ এসব?
আমি: আম্মু আমি সত্যি বলছি আমি আপনার ছেলের বউ আর আপনার হিয়ার আজ বিয়ে।
আম্মু: হিয়া বড় হয়ে গেছে? হ্যাঁ হবেই তো কতো বছর হলো ওদের দেখিনা।
আমি: আম্মু আপনি যাবেন হিয়ার বিয়েতে? (উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন তারপর বেশ কিছুটা রাগ নিয়েই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন…)
আম্মু: আজ হিয়ার বিয়ে অথচ তুমি এক্সিডেন্ট করে রাস্তায় পড়েছিলে কেন? (এখন কি বলবো আম্মুকে? কাব্য খারাপ এইটা জেনে বাসা থেকে চলে এসেছি? কিন্তু এসব বললে তো উনি কষ্ট পাবেন)
আম্মু: চুপ হয়ে আছ কেন? আর কাব্য কোথায়? বিয়ে করে ফেলেছে আর এইটা জানেনা এই সময় বউয়ের খেয়াল রাখতে হয়। রাস্তায় একা একা বেরুতে দিয়েছে কেন? (উনার কথা শুনে কেমন যেন লাগলো তাই আস্তে করে প্রশ্নটা করেই ফেললাম)
আমি: আম্মু এই সময় মানে?
আম্মু: বোকা মেয়ে এইটাও বুঝনা তুমি তো মা হবে। (কথাটা শুনে পাথরের মূর্তির মতো বসে আছি। আজকের এমন পরিস্থিতে এমন একটা খবর শুনতে হবে আমাকে কখনো ভাবিনি)
আম্মু: বৌমা কি হলো তুমি কি খুশি হওনি? (আম্মুর ধাক্কায় উনার দিকে তাকালাম উনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। ঝাপটে ধরলাম আম্মুকে)
আম্মু: আরে পাগলী মেয়ে কাঁদছ কেন? এইটা তো খুশির খবর আমি দাদি হবো।
আমি: আম্মু আমার আগের বাচ্চাটা পৃথিবীতে আসার আগেই মারা গিয়েছিল আর এখন এমন খুশির খবরটা শোনার জন্য আপনার ছেলেই আমার পাশে নেই।
আম্মু: পাশে নেই মানে?
আমি: এসব অনেক কথা পরে বলবো আপনি হিয়ার বিয়েতে যান প্লিজ। আমি হিয়াকে কথা দিয়েছিলাম আপনাকে আর আব্বুকে খুঁজে বের করবো আর ওর বিয়েতে আপনারা দুজনই থাকবেন, আল্লাহ্‌ যখন আমার দেয়া কথা রাখার সুযোগ করে দিয়েছেন তাহলে আপনি যান প্লিজ।
আম্মু: হ্যাঁ যাবো আমি অনেক খুঁজেছি ওদের কিন্তু তার আগে আমাকে জানতে হবে আমার বউমা এক্সিডেন্ট করে রাস্তায় পড়েছিল কেন।
আমি: আম্মু বললাম তো এসব অনেক কথা পরে বলবো সবকিছু আপনি এখন যান আমি বাসার ঠিকানা বলে দিচ্ছি।
আম্মু: এক মেয়ের ইচ্ছে পূরণ করার জন্য অন্য মেয়েকে আমি এখানে এই অবস্থায় ফেলে রেখে যেতে পারবো না। তুমি আমাকে সবকিছু বলো তারপর আমি যাবো।
আমি: ঠিক আছে।

আম্মুকে একের পর এক ঘটে যাওয়া সবগুলো ঘটনা বললাম। আম্মু সবকিছু শুনে চুপচাপ বসে আছেন, আমি আম্মুর কাধে মাথা রেখে বসে আছি।
আমি: আম্মু সব তো শুনলেন তারপরও কি আপনি চাইবেন আমি আপনার ছেলের কাছে ফিরে যাই?
আম্মু: তোমার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে কাব্য তোমাকে অনেক ভালোবাসে আর যে এতো ভালোবাসে সে কখনো এভাবে নিজের ভালোবাসার মানুষকে ঠকাতে পারে না, কিছু তো একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে তোমাদের মধ্যে।
আমি: আম্মু আমি নিজের চোখে ডাক্তারবাবু কে আরশির সাথে দেখেছি।
আম্মু: হয়তো তোমার চোখের দেখার মধ্যেও কোনো ভুল ছিল।
আমি: এইটা কিভাবে সম্ভব?
আম্মু: দুজনই তো দুজনকে ভালোবাস তাহলে কথা বলে সব ভুল বুঝাবুঝি মিটিয়ে নিচ্ছ না কেন? এভাবে একে অন্যের থেকে দূরে সরে যাচ্ছ কেন?
আমি: এতোকিছুর পর আর একসাথে থাকা সম্ভব না আম্মু। এখন আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়াটাই ঠিক হবে।
আম্মু: কথাটা বলা সহজ কিন্তু আলাদা হয়ে বেঁচে থাকাটা খুব কঠিন। খুব সহজেই প্রিয় মানুষদের ছেড়ে যাওয়ার কথাটা বলা যায় কিন্তু তাদের ছাড়া বেঁচে থাকাটা এতটুকুও সহজ না।
আমি: আম্মু আমি পারবো না ওর সাথে থাকতে।
আম্মু: কাব্য’র প্রতি অভিমান জমেছে তো তোমার মনে যখন অভিমান চলে যাবে তখন বুঝবে কি হারিয়েছ। জানো তো মা অভিমান জিনিসটা খুব অদ্ভুত, এইটা দুজন মানুষকে খুব কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে আবার এই অভিমানই দুজন মানুষকে আলাদা করে দিতে পারে। একজন অভিমান করলে অন্যজন সেটা যত্ন করে ভালোবাসা দিয়ে ভাঙিয়ে নিলে তবেই দুজন মানুষ কাছাকাছি আসতে পারে আর দুজন মানুষই যদি অভিমানটা মনের মধ্যে পুষে রাখে তাহলে দুজনকে আলাদা হয়ে যেতে হয়। এখন তুমি ভেবে নাও কি করবে।
আমি: (নিশ্চুপ)
আম্মু: মনে রেখো ছোট একটা ভুল সিদ্ধান্ত জীবনের সবকিছু উলটপালট করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাবা উচিত এই কাজটা ঠিক হবে কিনা বা এই কাজের পরিণতি পরবর্তীতে কি হবে। এই আমাকেই দেখো না নিজের কাজ কাজ বলে পরিবারের মানুষ গুলোকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম। কাব্য’র বাবাকে ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তখন অবশ্য বিষয়টা নিজের কাছে খুব তুচ্ছ মনে হয়েছিল কিন্তু সবকিছু হারানোর পর বুঝেছিলাম সামান্য একটা ভুল সিদ্ধান্ত যে আমার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। আর এই একটা ভুল সিদ্ধান্তের কষ্ট আমি আজো বয়ে বেড়াচ্ছি।
আমি: আর কষ্ট পেতে হবে না আম্মু। আব্বুকে তো পেয়েছি আপনি বাসায় যান সবাইকে পেয়ে যাবেন। আবার নাহয় নতুন করে আপনার সংসার সাজাবেন।
আম্মু: আমার ভাঙ্গা সংসারটা জুড়ে দিলি মা? (মৃদু হাসলাম)
আমি: আমার ডাক্তারবাবুকে দেখে রাখবেন আম্মু।
আম্মু: এখনো সময় আছে মা পরে কিন্তু দেরি হয়ে যাবে।
আমি: বাসার ঠিকানা দিচ্ছি আপনি চলে যান।
আম্মু: হুম যাচ্ছি কিন্তু একটা কথা মনে রেখো যে আমার ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়া সংসারটা জুড়ে দিয়েছে তার সংসার আমি কিছুতেই ভাঙতে দিবো না। (আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেলেন)

চোখ দুটু বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে আছি। মাথায় ভালোভাবেই আঘাত লেগেছে উঠে যে চলে যাবো এই শক্তি টুকু নেই তাছাড়া আম্মু একজন নার্সকে আমার কাছে রেখে গেছেন। কাব্য’র কাছে আর ফিরে যেতে চাই না একটু সুস্থ হলেই এখান থেকে আমাকে চলে যেতে হবে।
নার্স: এইতো উনি এসেছেন, এই মেয়েটিই আপনাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছিলেন। (নার্স এর কথা শুনে চোখ খুলে সামনে তাকালাম। চমকে উঠলাম শুভ্রাকে দেখে, শুভ্রা আমাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে কিন্তু…)
শুভ্রা: তিলোত্তমা উঠো না তুমি অসুস্থ।
আমি: তুমি?
শুভ্রা: অবাক তো হবারই কথা তোমার শত্রু তোমাকে বাঁচালো।
আমি: (নিশ্চুপ)
শুভ্রা: শেষ পর্যন্ত আরশির কাছে হেরেই গেলে, ওর কাছে তোমার ডাক্তারবাবুকে তুলে দিয়ে আসলে?
আমি: মানে?
শুভ্রা: আমি জানতাম তুমি খুব চালাক মেয়ে কিন্তু আরশির ছাল ধরার মতো এতোটা চালাক তুমি নও।
আমি: কি বলতে চাইছ?
শুভ্রা: বলতে চাইছি এটাই কাব্য তোমাকে ঠকায়নি ও তোমাকে সত্যি ভালোবাসে। তুমি যা দেখে কাব্য’কে ভুল বুঝেছ এসবকিছু আরশির ছাল ছিল।
আমি: তুমি জানো কিভাবে আর তুমি হঠাৎ আরশির বিপক্ষে কথা বলছ যে?
শুভ্রা: পাপ করেছিলাম তো তাই শাস্তি পেয়েছি, আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আর তাই আমি চাই না আরশির জন্য তোমার আর কাব্য’র সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাক। আরশি তোমাকে ভুল বুঝিয়েছে যেন তুমি কাব্য’কে ভুল বুঝে ডিভোর্স দিয়ে দাও।
আমি: আমি সবকিছু নিজের চোখে দেখেছি আর গতরাতে তো তুমিই পিক দিলে।
শুভ্রা: হ্যাঁ দিয়েছিলাম কিন্তু পিক গুলো দেওয়ার পর আর কিছু বলতে পারিনি তোমাকে, আরশির লোক এসে আমার ফোন কেড়ে নিয়েছিল আর আম্মুকে…
আমি: কি করেছে আন্টিকে?
শুভ্রা: মাথায় আঘাত করেছিল আম্মু পাশের কেবিনে আছেন। তিলোত্তমা প্রত্যেক মানুষেরই কিছু অতীত থাকে, কারো ভালো আবার কারো খারাপ। কাব্য’র অতীতটা খারাপ ছিল আর সেটা আরশির জন্য। যে ছেলে ছোটবেলা থেকে বাবা মায়ের মধ্যে জামেলা দেখেছে তাদের ভালোবাসা পায়নি সে ছেলে তো একটুখানি ভালোবাসা পেলে অন্ধ হবেই। আরশির ভালোবাসা কাব্য’কে অন্ধ করে দিয়েছিল তাই কাব্য আরশির কথামতো চলতো। এখন তুমি যদি কাব্য’র অতীত নিয়ে ভেবে ওকে ছেড়ে চলে যাও তাহলে কাব্য কার কাছে যাবে? কাব্য কিন্তু ওর নোংরা অতীত গুলো তোমাকে পেয়ে ভুলতে বসেছিল এখন তুমি ওকে ছেড়ে চলে গেলে তো ও আবারো খারাপ…
আমি: খারাপ তো ও হয়েই গেছে রাতে যা দেখেছি তারপর আর সম্ভ…
শুভ্রা: ভুল দেখেছ, তুমি রাতে যা দেখেছ সব মিথ্যে ছিল।
আমি: মানে?
শুভ্রা: আরশি গতরাতে আমাকে ফোন করে যা যা বলেছে সবকিছু আমি রেকর্ড করেছি তুমি একবার শুনো তাহলেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে তোমার কাছে। (শুভ্রার দিকে তাকালাম কি বলতে চাইছে ও)
শুভ্রা: তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না জানি কিন্তু অনুরোধ করছি প্লিজ একটা বার আমার কথা শুনো। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি আমি চাই না আরশির মতো খারাপ মেয়ের কাছে তোমাদের ভালোবাসা হেরে যাক।
আমি: আমি কাব্য’কে নিজের চোখে অনেক বার আরশির সাথে দেখেছি।
শুভ্রা: তুমি আগে ওকে কিভাবে দেখেছ সেটা তো আমি জানিনা তবে তুমি রাতে যা দেখেছ সব মিথ্যে ছিল। আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলতো, তুমি যখন ওদের একসাথে দেখেছিলে তখন কি কাব্য’র নড়াচড়া দেখেছ?
আমি: নাতো।
শুভ্রা: দেখবে কিভাবে কাব্য’কে তো আরশি অজ্ঞান করে দিয়েছিল। কাব্য এসব কিছুই জানতো না, ও হসপিটালের ফোন পেয়েই ছুটে গিয়েছিল। ইমারজেন্সি থেকে যখন ফোন আসে কোনো পেসেন্ট এর অবস্থা খারাপ তখন একজন ডক্টর কখনোই বসে থাকতে পারে না। কাব্য তো জানতো না ফোনটা আরশি করিয়েছিল তাই কাব্য না বুঝে আরশির ফাদে পা দিয়েছে। আর তুমি বোকার মতো ওকে আরশির কাছেই রেখে আসলে। (শুভ্রার কথা শুনে মাথা ঘুরছে, সত্যিই তো কাব্য’র হাতটা পর্যন্ত একবারের জন্য নড়েনি। আমি অয়নের সাথে ফোন নিয়ে এতো চেঁচামেচি করলাম তাও কাব্য কেন কোনো সাড়া দেয়নি এই প্রশ্নটা একবারো আমার মনে জাগলো না, আমি এতোটাই বোকা)
আমি: শুভ্রা তোমার ফোনটা দাও না কাব্য’কে ফোন করবো।
শুভ্রা: কিন্তু কাব্য তো এখন হিয়ার বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ফোন কি রিসিভ করবে?
আমি: তাহলে আমি বাসায় চলে যাই।
শুভ্রা: আরে শান্ত হও এই অবস্থায় বাসায় যেতে পারবে না, তুমি বরং ফোনই করো দেখো রিসিভ করে কিনা।
আমি: হুম।

কাব্য’কে বারবার ফোন করে যাচ্ছি কিন্তু রিসিভ করছেই না। আম্মু ঠিকি বলেছেন আমার চোখের দেখায়ও ভুল ছিল। আমি আমার কাব্য’কে এতো খারাপ ভাবলাম কিভাবে? এইতো কাব্য ফোন রিসিভ করেছে…
কাব্য: শুভ্রা কি হয়েছে তোমার এতোবার ফোন দিচ্ছ কেন?
আমি: ডাক্তারবাবু আমি।
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: আমাকে বাসায় নিয়ে যাও প্লিজ।
কাব্য: চলেই যখন গেছ তখন আর ফিরে আসতে চাইছ কেন?
আমি: মানে?
কাব্য: তোমাকে আমি একটা কথা বলেছিলাম চোখে সবসময় যা দেখা যায় তা সবসময় সত্যি হয় না কিন্তু তুমি আমার কথাটা শুননি বিশ্বাস করনি আমাকে, আমার ভালোবাসার প্রতি তোমার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই, থাকলে তুমি আমাকে এতোটা খারাপ ভাবতে না। হ্যাঁ আমি আগে খারাপ ছিলাম কিন্তু সেটা আমার অতীত ছিল, এখন আমি তোমাকে ভালোবাসি তিলো। তুমি ভাবলে কিভাবে আমি আরশির সাথে… ছিঃ
আমি: আমার কথাটা শুনো…
কাব্য: কিছু শুনার নেই তুমি আমাকে অবিশ্বাস করেছ এটাই সত্যি, তুমি চোখের দেখাটাকে সত্যি ভেবে আমাকে অজ্ঞান অবস্থায় আরশির কাছে ফেলে এসেছিলে, পিক তুলে অয়নকে দিয়েছ আর ও বাসায় সবাইকে এসব দেখিয়েছে। আমি অতীত ভুলে গিয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমার অতীত গুলো টেনে এনে আমার পরিবারের সামনে তুলে ধরেছ। পিক গুলো দেখে আমার মতো ভাইয়ের বোন হওয়াতে হিয়ার মনে ঘৃণা জন্মেছিল আর সে কারণে হিয়া সুইসাইড করতে গিয়েছিল। হিয়ার এই অবস্থার জন্য তুমি দায়ী।
আমি: কি? হিয়া ঠিক আছে তো?
কাব্য: আর আমাদের নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। তোমার ডাক্তারবাবু খারাপ খুব খারাপ এই ধারণা নিয়েই তুমি দূরে থাকো আমি তোমার মুখও দেখতে চাই না।
ফোনটা কেটে দিলো কাব্য। কাব্য তো আমায় ভুল বুঝেছে এখন আমি কি করবো?

শুভ্রা: সবকিছুর জন্য আমি দায়ী আমাকে ক্ষমা করে দিও।
আমি: তুমি তো সবকিছু করোনি করেছে আরশি।
শুভ্রা: আমি তো কিছুটা অন্যায় করেছি।
আমি: যে নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয় তাকে ক্ষমা করে আরেকবার সুযোগ দেওয়া উচিত, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।
শুভ্রা: হিয়ার এমন অবস্থা তো তাই কাব্য’র মাথা ঠিক নেই দেখো ও তোমার কাছে ছুটে আসবেই। কাব্য তোমাকে সত্যি ভালোবাসে।
আমি: আন্টির কাছে যাও খেয়াল রেখো আন্টির।
শুভ্রা: হুম।

বালিশে হেলান দিয়ে চুপচাপ বসে আছি কাব্য আমাকে ভুল বুঝেছে ভেবে খুব কান্না পাচ্ছে। কাব্য’কেও তো দোষ দিতে পারছি না, হিয়ার এমন অবস্থায় কাব্য’র মাথা ঠিক আছে নাকি? আমারই বা দোষ কোথায় চোখের সামনে যা যা দেখেছি তাতে তো কাব্য’কে খারাপ ভাবাটাই স্বাভাবিক। কাব্য আমাকে বারবার বলেছিল ও শুধু আমাকেই ভালোবাসে কিন্তু আমি ওকে শুধু ভুল বুঝে এসেছি আর আজ কাব্য আমার মুখও দেখতে চায় না। আমি তো আর কাব্য’র কাছে ফিরে যেতে পারবো না কাব্য আমাকে ফিরিয়ে নিবেও না। কাব্য’কে তো আমাদের বাচ্চার কথাটাও বলতে পারলাম না। প্রথম বাচ্চাটা নিজেদের ভুলে হারালাম আর এখন কাব্য পাশে নেই।
পেটে হাত রেখে ডুকরে কেঁদে উঠলাম, পৃথিবীতে আসার আগেই আমার সন্তানকে বাবার পরিচয় হারাতে হবে নাতো…

চলবে?

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ২৮

0
রোমান্টিক_ডাক্তার
পার্ট: ২৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

ঝাপসা চোখ দুটু মুছে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলাম কিন্তু কাব্য দরজায় দাঁড়িয়ে আছে বেরুতেই দিচ্ছে না। কাব্য’র দিকে রাগি চোখে তাকালাম ও আমার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো। ইচ্ছে হচ্ছে ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই কিন্তু তাল সামলাতে না পেরে যদি পরে গিয়ে ব্যথা পায়।
কাব্য: আমার ফোন ফ্লোরে কেন?
আমি: দরজা থেকে সরো।
কাব্য: আমি কিছু একটা জিজ্ঞেস করেছি।
আমি: ফোনটা হাতে নাও তাহলেই বুঝতে পারবে সরো এখন দরজা থেকে।
কাব্য: কোথায় যাবে তুমি?
আমি: যেখানে খুশি।
কাব্য: আমিও যাবো তোমার সাথে।
আমি: তুমি তোমার আরশির কাছে যাও।
কাব্য: আর যদি কখনো আমার আরশি বলেছ তাহলে কিন্তু…
আমি: কি করবে হ্যাঁ? আরশির হাত ধরে রাখতে পারো দোষ হয় না, আরশি তোমার বুকে মাথা রাখলে দোষ হয় না, আরশিকে লিপ কিস করো দোষ হয় না আর আমি তোমার আরশি বললেই দোষ?
কাব্য: একটা কথা মনে রেখো সবসময় চোখে যা দেখা যায় সেটা কিন্তু সবসময় সত্যি হয় না মাঝে মাঝে মিথ্যেও হয়।
আমি: তাই বুঝি? তাহলে কি পিক গুলোও মিথ্যে?
কাব্য: কোন পিক?
আমি: নিজের ফোনে গিয়ে দেখো। (ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম এসব আর সহ্য হচ্ছে না)

ভাবির রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ শুনে থমকে দাঁড়ালাম, কে কাঁদছে এভাবে ভাবি নয়তো? দরজা খুলাই ছিল রুমে এসে দেখি ভাবি বিছানায় শুয়ে কাঁদছে আর ভাইয়া মাথা নিচু করে সোফায় বসে আছে।
আমি: ভাইয়া কি হয়েছে?
ভাইয়া: কিছু নাতো।
আমি: ভাবি কাঁদছে কেন?
ভাইয়া: (নিশ্চুপ)
আমি: ভাবি কাঁদছ কেন? (ভাইয়া চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো তাহলে কি ভাবি আপু আসাতে ভয়ে কাঁদছে)
আমি: ভাবি…(জোরে ধাক্কা দেওয়াতে ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে আমার একটা হাত চেপে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো)
ভাবি: আমি তো সব কষ্ট ভুলে গিয়েছিলাম তাহলে আরশি কেন আবার ফিরে আসলো? কি চায় ও?
আমি: ওর পাপ গুলো ওকে এখানে টেনে নিয়ে এসেছে ভাবি। চিন্তা করোনা ওর করা পাপের শাস্তি ও পাবে। (ভাবি চুপচাপ কেঁদে যাচ্ছে)
আমি: ভাবি খাবে চলো। কাল হিয়ার বিয়ে এখন আমরা যদি এভাবে যে যার মতো মন খারাপ করে থাকি তাহলে তো হিয়া কষ্ট পাবে তাই না?
ভাবি: হ্যাঁ চল।
আমি: তুমি যাও আমি আসছি।

শুভ্রার সাথে কথা বলা প্রয়োজন, যেভাবেই হউক শুভ্রাকে এই বিয়ের অনুষ্ঠানে আনতে হবে।
কাব্য: উফফ দেখে চলতে পারো না? (আমি রুমে ঢুকছিলাম আর কাব্য বের হচ্ছিল কিভাবে যে ধাক্কা খেলাম দুজনে)
কাব্য: মন কোথায় থাকে চোখে দেখো না? (আশ্চর্য সামান্য বিষয় নিয়ে ও এতো রেগে যাচ্ছে কেন)
আমি: আমি নাহয় দেখিনি কিন্তু তুমি দেখোনি কেন? তোমার মন কোথায় থাকে আরশির কাছে?
কাব্য: হ্যাঁ আরশির কাছেই থাকে। (ও হঠাৎ এভাবে কথা বলছে কেন? চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে কি যেন এড়িয়ে যেতে চাইছে)
কাব্য: এভাবে তাকিয়ে আছ কেন সরো আমি বেরুবো।
আমি: দাড়াও। (কাব্য চলে যাচ্ছিল হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসলাম)
কাব্য: তিলো আমার হাত ছাড়ো।
আমি: কি লুকাচ্ছ আমার থেকে?
কাব্য: কি লুকা…
আমি: এই তুমি পিক গুলো দেখনি? পিক দেখার পর তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছ লজ্জা করছে না তোমার? নাকি পিক নিয়ে কথা বলতে চাও না বলেই আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছ?
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: এখনো তুমি আমার থেকে লুকিয়ে রাখবে? আমি তো সব জেনেই গেছি তারপরও…
কাব্য: তিলো আমার হাতটা ছাড়ো।
আমি: এতোকিছু জানার পরও যে আমি তোমার হাত ধরে আছি এটাই তো অনেক। (কাব্য অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে হয়তো বিশ্বাস করতে পারছে না আমি যে ওকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবছি)
আমি: ভালোবাসি তো তোমাকে তাই আর একটা সুযোগ দিতে চাই, আজ রাতটা তোমাকে সময় দিলাম ভাবো কি করবে তুমি। আমাকে সবকিছু বলে ওই আরশিকে নিজের জীবন থেকে বিদায় করবে নাকি আমাকে তোমার জীবন থেকে বিদায় করবে।
কাব্য: তোমাকে বিদায় করবো মানে?
আমি: দিনের পর দিন অন্য একটা মেয়ের সাথে নোংরামি করবে এসব দেখে তো আর আমি তোমার কাছে থাকতে পারবো না, হয় তুমি আরশিকে ছাড়ো নাহয় আমাকে ছাড়ো। আর হ্যাঁ আরশিকে ছাড়লেই শুধু হবে না ওকে তুমি নিজ হাতে পুলিশের কাছে তুলে দিবে নাহয় আমি তোমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবো। মনে রেখো সময় মাত্র আজ রাতটুকু। (কাব্য চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে দেখে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম)

কাব্য’কে আজ একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে নাহলে আমি ওকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবো, আর পারছি না এসব সহ্য করতে। একের পর এক কাহিনী ও আমার থেকে লুকিয়েই যাচ্ছে। এতো বুঝিয়েছি যে আমার থেকে কিছু লুকিয়ে রেখো না কিন্তু ও যেন অবুঝ আমার কথা বুঝেই না। আর পারছি না ইচ্ছে হচ্ছে ওই আরশিকে খুন করে নিজেই জেলে চলে যাই।
আরশি: কি ভাবছিস আমাকে খুন করবি। (সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিলাম হুট করে আপু সামনে এসে দাঁড়ালো, আমি যে ওকে খুন করবো ভাবছি ও বুঝলো কিভাবে)
আরশি: তোর চোখে তো এতো রাগ যে মনে হচ্ছে আমাকে এখনি কাঁচা চিবিয়ে খাবি। দেখ চাইলে তুই আমাকে খুন করতেই পারিস কিন্তু আমি মারা গেলে তো তোর কাব্য বাঁচবে না।
আমি: হু…
আরশি: অবাক হচ্ছিস কেন? কাব্য আমায় ভালোবাসে তো আমি মারা গেলে কাব্য কি নিয়ে বাঁচবে তুই বল।
আমি: (নিশ্চুপ)
আরশি: দেখ আমি তোর বড় বোন তাই একটা ভালো বুদ্ধি দিচ্ছি কাব্য’কে ডিভোর্স দিয়ে আমাদের জীবন থেকে চলে যা।
আমি: তোমাকে বোন বলতে এখন আমার ঘৃণা হয় বুঝেছ। কেন যে নষ্টা মেয়েদের মতো অন্য মেয়ের স্বামীকে নিয়ে টানাটানি করছ বুঝি না। আর কি যেন বললে কাব্য’কে যেন ডিভোর্স দিয়ে চলে যাই, হাসালে শুভ্রাও এই চেষ্টা করেছিল পারেনি কারণ স্বামী স্ত্রীর বন্ধন একটি পবিত্র বন্ধন, এ বন্ধন কোনো নষ্টা মেয়ে ছিঁড়তে পারবে না। আর রইলো কাব্য কাকে বেশি ভালোবাসে, প্রমান চাও কাব্য তোমাকে নাকি আমাকে বেশি ভালোবাসে?
আরশি: হুম প্রমান হয়ে যাক।
আমি: চলো আমার সাথে।

আপুর হাত ধরে টেনে রান্নাঘরে নিয়ে আসলাম। অনেক রাত হয়েছে বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে তাই প্রমাণ করাটা খুব একটা কঠিন হবে না।
আরশি: রান্নাঘরে কি করতে চাইছিস?
আমি: তুমি তোমার হাত কাটবে আমি আমার হাত কাটবো দেখবো কাব্য আমাদের চেঁচামেচি শুনে কার কাছে ছুটে আসে।
আরশি: হাহাহা এই কথা, কাব্য তো আমার কাছেই আসবে।
আমি: কাব্য তোমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে আমি তোমাদের জীবন থেকে চলে যাবো কথা দিচ্ছি আর…
আরশি: আর কাব্য তোকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে আমি তোদের জীবন থেকে চলে যাবো কথা দিচ্ছি। (মুচকি হাসলাম কারণ আমি জানি আপু নিজের কথা রাখবে না)

আমি হাত কাটার আগেই আপু হাত কেটে কাব্য কাব্য বলে চেঁচাতে শুরু করলো। ওর নাটক দেখে আমি হাত কাটবো কি আমার তো হাসি পাচ্ছে।
আরশি: হাত কাটছিস না কেন নাকি হেরে যাবি বলে ভয় পেয়েছিস? (ফল কাটার চাকুটা নিয়ে হাতের তালুতে আস্তে একটা টান দিলাম, হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে যন্ত্রণায় চোখ দুটু বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলাম)
কাব্য: আরশি কি হয়েছে এভাবে চেঁচাচ্ছ কেন?
আরশি: দেখো না আমার হাত কেটে গেছে। (ওদের থেকে একটু দূরে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ আমার হাতে কাব্য’র হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকালাম)
কাব্য: তিলো তোমার হাত কেটেছে কিভাবে?
আমি: সামান্য কেটেছে কিছু হবে না ছাড়ো।
আরশি: কাব্য আমারো তো হাত কেটে গেছে তুমি আমাকে রেখে…
কাব্য: ব্যান্ডেজ করে নাও নাহয় আদনানকে ডেকে দিচ্ছি ও তো ডক্টর তো…
আরশি: লাগবে না আমি চাই তুমি আমার হাত ব্যান্ডেজ করে দাও। (কাব্য কিছু না বলে আমাকে কোলে তুলে নিলো। এক হাত দিয়ে কাব্য’র গলা জরিয়ে ধরে আরশির দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ দিলাম। রাগে গজগজ করা আরশির মুখটা এখন দেখার মতো হয়েছে)

কাব্য যত্ন করে আমার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে আর আমি বসে বসে ওকে এক দৃষ্টিতে দেখছি। কাব্য আমাকে এতো ভালোবাসে তারপরও কেন যে আমার কথা শুনে না…
কাব্য: এখন বলতো হাত কাটলো কিভাবে?
আমি: কাটেনি তো আমি কেটেছি।
কাব্য: মানে?
আমি: আরশি বলেছিল তুমি নাকি ওকে বেশি ভালোবাস তাই প্রমাণ করে দিলাম তুমি যে আরশিকে নয় আমাকে বেশি ভালোবাস। (কাব্য রেগে গিয়ে আমাকে থাপ্পড় দিতে চাইলো কিন্তু হাতটা আবার নামিয়ে নিলো। আমার দুগালে ওর হাত দিয়ে চেপে ধরে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
কাব্য: আমি তোকে কতোটা ভালোবাসি এইটা তোর হাত কেটে রক্ত ঝরিয়ে প্রমাণ করতে হয় নাকি আমি তো তোকে আমার নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি। শুধুমাত্র তোকে হারানোর ভয়ে আমি এতো মিথ্যে বলি আরশির কথামতো চলি। (কাব্য’র হাত দুটু জোড় করে আমার গাল থেকে সরিয়ে দিলাম। এতো শক্ত করে ধরেছিল যে এখন কথা বলতে পারছি না)
আমি: আরশির কথামতো চলো মানে? (কাব্য আমার হাপানো দেখে পানি এনে দিলো)
আমি: খাবো না পানি আগে বলো আরশির কথা মতো চ…
কাব্য: তোমার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে পানিটা খেয়ে নাও। (পানি না খেলে কিছু বলবে না তাই গ্লাসটা ওর হাত থেকে এনে পানি খেয়ে নিলাম। বিছানা থেকে উঠে কাব্য’র সামনে এসে দাঁড়ালাম)
আমি: এখন বলো তুমি আরশির কথা মতো চলো কেন? আরশি কি তোমাকে কোনো কিছু নিয়ে ভয় দেখায়?
কাব্য: না এমনি বলেছি তুমি বসো এখানে। (কাব্য আমাকে এনে বিছানায় বসিয়ে দিলো, ও ফ্লোরে বসে আমার কোলে মাথা রাখলো। আমার কাটা হাতটা ধরে ব্যান্ডেজ এর উপর একের পর এক চুমু খাচ্ছে)
আমি: বলবে নাতো তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।
কাব্য: বলবো না কখন বললাম? সকালে বলবো এখন ঘুমিয়ে পড়ো দেখো রাত দুইটা বাজে, সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে তো।
আমি: আবার এড়িয়ে যাচ্ছ?
কাব্য: কি শুনতে চাও আমি কাকে ভালোবাসি তোমাকে নাকি আরশিকে? আমার সবটুকু ভালোবাসা শুধু তোমার জন্য আর আরশির জন্য আমার মনে শুধু ঘৃণা আছে। ছাদে আমি আরশির হাত ধরিনি আরশিই আমার হাত ধরেছিল, আমি ওকে কিস করিনি ও জোর করে কিস করেছিল আর ইচ্ছে করেই আমার শার্টে লিপস্টিক লাগিয়েছিল যেন তুমি আমাকে ভুল বুঝো।
আমি: তাহলে ও যখন তোমার বুকে মাথা রেখেছিল তখন ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দাওনি কেন?
কাব্য: কারণ আরশি…(কাব্য’র ফোন বেজে উঠলো নিশ্চয় আরশি নাহয় শুভ্রা)
আমি: ফোন রিসিভ করো না আমার কাছে দাও।
কাব্য: জরুরি ফোন হতে পারে।
আমি: রিসিভ করোনা। (কাব্য আমার কথা না শুনে একটু দূরে গিয়ে ফোন রিসিভ করলো। মনে তো হচ্ছে কোনো সমস্যা হয়েছে)
কাব্য: তিলো আমাকে হসপিটালে যেতে হবে।
আমি: মানে কি তুমি তো ছুটিতে আছ।
কাব্য: ডক্টরদের কোনো ছুটি নেই বুঝেছ? ইমারজেন্সি থেকে ফোন এসেছে যেতেই হবে।
আমি: আদনানকে পাঠিয়ে দাও। (কাব্য আমার কথা না শুনেই চলে গেলো, সত্যি কি হসপিটাল থেকে ফোন এসেছিল নাকি অন্য কেউ ফোন করেছিল)

এতো রাতে কাব্য বেরিয়ে গেলো খুব টেনশন হচ্ছে, ফোন করছি ফোনটাও তো রিসিভ করছে না। আচ্ছা একবার কি শুভ্রাকে ফোন করে দেখবো হয়তো এইটা ওর কোনো ছাল। ফোনটা হাতে নিতেই দেখি আরশি ফোন করেছে, ও তো বাসায় আছে তাহলে ফোন করছে কেন?
আমি: হ্যালো।
আরশি: শুভ্রাকে ফোন করে লাভ নেই মেয়েটা নিজের মাকে হারানোর ভয়ে ভালো হয়ে গেছে।
আমি: মানে কি করেছ তুমি শুভ্রার আম্মুর সাথে?
আরশি: তেমন কিছুনা শুধু ভয় দেখিয়েছি আশা করি শুভ্রা ভয় পেয়ে কাব্য’কে ভুলে গেছে।
আমি: আর কতো নিচে নামবে তুমি?
আরশি: এখনো তো অনেক কিছু বাকি। শহরের বাইরে কাব্য’র যে বাড়িটা আছে ওখানে চলে আয় তাহলে বুঝতে পারবি কাব্য কার ফোন পেয়ে ছুটে এসেছে।
আমি: কাব্য তো হসপিটালে…
আরশি: বোকা মেয়ে কাব্য তো আমার কাছে আছে। তোর সামনে কাব্য আমাকে আদর করতে পারছে না আমি হাত কেটে ফেলেছি তাও আমার সেবা করতে পারছে না তাইতো তোকে মিথ্যে বলে এই বাসায় চলে এসেছে বিশ্বাস নাহলে আমার রুমে গিয়ে দেখ আমি নেই।
আমি: বিশ্বাস করিনা আমি।
আরশি: তুই চেঁচালেই তো আর আমার প্রতি কাব্য’র ভালোবাসা মিথ্যে হয়ে যাবে না। (ফোনটা আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেললাম। দৌড়ে আপুর রুমের দিকে আসলাম)

আপু তো রুমে নেই তাহলে কি সত্যি ওরা ওই বাসায় আছে? এতো রাতে আমি যাবো কিভাবে? অয়নের রুমে এসে ওকে ডেকে তুললাম আমাকে ওই বাসায় যেতেই হবে।

গাড়িতে বসে আছি অয়ন ঘুম ঘুম চোখে গাড়ি চালাচ্ছে।
আমি: একটু তাড়াতাড়ি চালাও না।
অয়ন: কোথায় যাবো সেটাই তো বলনি।
আমি: শহরের বাইরে যে তোমাদের বাড়িটা আছে ওখানে।
অয়ন: এতো রাতে ওই বাসায় যাবে কেন?
আমি: চুপচাপ চলো তো।
অয়ন: ঠিক আছে।

বাসার মেইন দরজা তো খুলা তাহলে কি সত্যি… কাব্য’র রুমটা তো আমি চিনি এই বাসায়ই তো আমি প্রথম এসেছিলাম, কাব্য’র রুমের দিকে দৌড়ে আসলাম। রুমের দরজাটা খুলাই ছিল ভিতরে একনজর তাকিয়ে অয়নের দিকে তাকালাম, ও লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলেছে।
আরশি মিথ্যে বলেনি কাব্য’ই আমাকে মিথ্যে বলে এখানে এসেছে আর আরশির সাথে আবারো নোংরামিতে মেতে উঠেছে।
আমি: অয়ন তোমার ফোনটা দাও।
অয়ন: এখান থেকে চলো ভাবি।
আমি: কেন নিজের ভাইকে অন্য মেয়ের সাথে বিছানায় দেখতে লজ্জা লাগছে? আগেও তো ওদের সম্পর্ক এমন ছিল আর সেটা তোমরা জানতে কিন্তু আমার থেকে সবাই লুকিয়ে রেখেছ।
অয়ন: আমরা ভেবেছিলাম ভাইয়া তোমাকে পেয়ে ভালো হয়ে গেছে কিন্তু…
আমি: ফোনটা দাও।
অয়ন: ফোন দিয়ে কি করবে?
আমি: ফোনটা দাও বলছি। (আমি চেঁচিয়ে উঠাতে অয়ন মাথা নিচু করে ফোনটা আমার হাতে দিলো। কিছু পিক তুলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম)

গাড়িতে বসে আছি, দূরের মসজিদ থেকে আযানের সূর ভেসে আসছে। এখন আর কান্নাও পাচ্ছে না, কাব্য’র একের পর এক মিথ্যে আমাকে পাথর বানিয়ে দিয়েছে। অয়ন অপরাধীর মতো চুপচাপ গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে।
আমি: অয়ন এর পরও কি তুমি চাইবে আমি এই বাসায় থাকি?
অয়ন: ভাবি আমাদের ক্ষমা করে দিও, আমরা ভেবেছিলাম ভাইয়া ভালো হয়ে গেছে তাই সবকিছু লুকিয়ে রেখেছিলাম।
আমি: ছোট ভাই হিসেবে একটা হেল্প করবে বোনকে?
অয়ন: বলো কি করতে হবে।
আমি: বাসায় আর ফিরে যেতে চাই না আমাকে এখানেই নামিয়ে দাও।
অয়ন: ভাবি সকাল হলে চলে যেও আটকাবো না প্লিজ এখন পাগলামি করো না।
আমি: ভোরের আলো ফুটতে বেশি সময় নেই আমি ঠিক চলে যেতে পারবো।
অয়ন: কিন্তু তুমি যাবে কোথায়?
আমি: তাতো জানিনা কিন্তু ওই বাসায় আর ফিরে যেতে চাই না।
অয়ন: আমিও চাই না ভাইয়ার মতো মানুষের সাথে তুমি আর থাকো কিন্তু তাই বলে…
আমি: বাসায় সবাই তোমাকে অনেক প্রশ্ন করবে কিন্তু তোমার কোনো উত্তর দিতে হবে না শুধু ফোনে থাকা পিক গুলো ওদের দেখিয়ে দিও। গাড়ি থামাও এখন।
অয়ন: হুম কিন্তু আমিও যাবো তোমার সাথে।
আমি: না আজ হিয়ার বিয়ে আমি চাই বিয়েটা ভালোভাবে মিটে যাক আর সে দায়িত্ব আমি তোমাকে দিলাম।
অয়ন: কিন্তু ভাবি…
আমি: তোমার সাথে আমি যোগাযোগ করবো চলি। (অয়নকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে হাটা শুরু করলাম। জানিনা কোথায় যাবো কিন্তু পিছন ফিরে আর তাকাতে চাই না)

চারদিকে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে, হাটতে হাটতে কোথায় চলে এসেছি জানিনা। কাব্য আমাকে এভাবে ঠকালো ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। রাতেও তো ও আমাকেই শুধু ভালোবাসে বললো আর কিছুক্ষণ পর আরশির সাথে ছিঃ… যদি নিজেকে শেষ করে দিতে পারতাম তাহলেই হয়তো ভালো হতো।

রাস্তার মাঝখান দিয়ে এলোমেলো পায়ে হাটছিলাম হঠাৎ কোথা থেকে একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো আমাকে। নিজেকে শেষ করে দেয়ার ইচ্ছাটা হয়তো পূরণ হওয়ার সময় হয়ে গেছে। চারপাশে রক্তের ছড়াছড়ি দেখে মাথা ঘুরতে শুরু করলো। চোখে সবকিছু অন্ধকার দেখছি, কাব্য’র মুখটা বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে সাথে ভেসে উঠছে আরশির অর্ধনগ্ন চেহারাটা…

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ২৭

0
রোমান্টিক_ডাক্তার
পার্ট: ২৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

হিয়া: ভাবি কি হয়েছে? (বিছানায় শুয়ে কাঁদছিলাম হঠাৎ হিয়ার কন্ঠ শুনে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম। অয়ন আর হিয়া এসেছে)
আমি: তোমরা?
অয়ন: তোমার সাথে আমাদের কথা আছে। ভাইয়া কোথায়? (কাব্য কোথায় জিজ্ঞেস করতেই আবারো চোখ দুটু ভিজে গেলো, কাব্য যে এখন আরশিকে নিয়ে ব্যস্ত)
আমি: কি বলবে বলো।
হিয়া: ও তোমার মামাতো বোন?
আমি: হুম তিন্নি।
অয়ন: কিন্তু ও তো আরশি।
আমি: হুম জানি।
হিয়া: তুমি জানতে এই কথা?
আমি: একটু আগে জেনেছি।
হিয়া: তোমার বোন হয়ে তোমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল এইটা কিভাবে সম্ভব? নাকি ও তখন জানতো না?
আমি: জেনেশুনেই করেছে প্রতিশোধ নিয়েছে।
হিয়া: তোমার প্রতি ওর কিসের রাগ?
আমি: আব্বু আম্মু মারা যাওয়ার পর তো আমি মামার কাছে চলে এসেছিলাম। আপু আর মামি আমাকে সহ্য করতে পারতো না, আমাকে নানাভাবে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতো। তবে মামি কখনো খারাপ কিছু করেনি। একদিন মামা মামি কি কাজে যেন বাইরে গিয়েছিল তখন আপু ওর এক ছেলে বন্ধুকে নিয়ে বাসায় আসে। আমি নামাজ পড়ে জায়নামাজে বসে কাঁদছিলাম কারণ তখনো আব্বু আম্মুকে হারানোর কষ্টটা সয়ে উঠতে পারিনি। আপুর বন্ধু আপুর ইশারায় আমার রুমে এসেছিল, আমি বুঝতে পেরে হাতের কাছে ফুলদানি ছিল সেটা দিয়ে ওর মাথায় আঘাত করি তখনি মামা মামি চলে আসেন। আপু মামা মামিকে ভুল বুঝায় যে আমি নাকি ওই ছেলেকে বাসায় এনেছিলাম আর আপু দেখে ফেলাতে মিথ্যে বলে ছেলেটার মাথায় আঘাত করেছি। সেদিন মামা মামি আপুর কথা বিশ্বাস করেননি আপুকে মামা কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছিলেন। আপু সেদিন বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল আর বাসায় ফিরে যায়নি পরে অবশ্য আমরা আপুকে অনেক খুঁজেছি। সেদিনের প্রতিশোধ আপু আমার বাচ্চাটাকে খুন করে নিলো। (অয়ন আর হিয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আর আমি বিছানায় বসে নিশ্চুপে কাঁদছি। এতো কষ্টের পর কাব্য’কে পেয়েছিলাম আর এখন কাব্য’ই কিনা আরশির)
হিয়া: তারমানে সেদিন আরশি রাগ করে ভাইয়ার কাছে চলে এসেছিল।
অয়ন: হ্যাঁ আরশি তো এসে আমাদের বলেছিল ওর বোন নাকি ওকে মিথ্যে কলঙ্ক দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।
হিয়া: জানো ভাবি ওর কথা গুলো সেদিন ভাইয়া বিশ্বাস করলেও আমরা বিশ্বাস করিনি। আরশিকে প্রথম থেকেই আমাদের ভালো লাগতো না আর বড় ভাবি তো ওকে সহ্যই করতে পারতো না তাইতো…
আমি: তাইতো কি থেমে গেলে কেন?
হিয়া: তখন আমি ছুটিতে দেশে এসেছিলাম। ভাবি একদিন আরশিকে অন্য ছেলের সাথে দেখেছিল, আরশি ভাবিকে নিষেধ করেছিল ভাইয়াকে যেন না বলে কিন্তু ভাবি ভাইয়ার ভালোর জন্য বলে দেয়। তারপর আরশি ভাইয়ার কাছে ক্ষমা চায় ভাবির কাছেও ক্ষমা চেয়েছিল। আরশির তখনকার ভালো মানুষী আচরণ গুলো আমার ভালো লাগতো না আবার ভাইয়াকে কিছু বলতেও পারছিলাম না তাই আমি আবার বাহিরে চলে যেতে চাই। সেদিন আমাকে নিয়ে ভাইয়ারা এয়ারপোর্ট গিয়েছিল তাই বাসায় কেউ ছিল না আর এই সুযোগে আরশি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ভাবির পানির গ্লাসে ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল যার ফল ভাবি কখনো মা হতে পারবে না। (কথাটা শুনে ভয়ে বুক কেঁপে উঠলো, এতোটা খারাপ কোনো মানুষ হতে পারে)
আমি: এজন্যই ভাবি আপুকে দেখে ভয়ে দৌড়ে রুমে চলে গিয়েছিল?
হিয়া: হুম।
অয়ন: অনেক জ্বালিয়েছে ও আমাদের, আবার বাসায় ঢুকেছে কিনা কি করে বসে প্লিজ ভাবি ওকে পুলিশে দাও।
আমি: হিয়ার বিয়েটা হয়ে যাক এখন এসব জামেলা করা যাবে না।
অয়ন: আরশি কিন্তু খুব ডেঞ্জারাস মেয়ে কখন কার কি ক্ষতি করে বসে ঠিক নেই। (মুচকি হাসলাম, আর কি ক্ষতি করবে আমার সবচেয়ে বড় দুইটা ক্ষতি তো ও অলরেডি করে ফেলেছে। প্রথম তো আমার বাচ্চাটাকে খুন করালো আর এখন কাব্য’কে কেড়ে নিলো)
আমি: হিয়া আগামীকাল তোমার বিয়ে প্লিজ তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করোনা।
হিয়া: হুম।

হিয়া আর অয়ন চলে যাচ্ছিল আবারো ডাক দিলাম হিয়াকে, জানতে হবে তো ও প্রথমে আপুকে না চেনার ভান করেছিল কেন।
হিয়া: ভাবি কিছু বলবে?
আমি: তখন তুমি আপুকে না চেনার ভান করেছিলে কেন?
হিয়া: আসলে…
আম: সব তো আস্তে আস্তে জেনেই যাচ্ছি এখন আর চুপ থেকে কি লাভ বলতো?
হিয়া: আর চুপ থাকা ঠিক হবে না ভেবেই তো তোমাকে জানাতে এসেছি। আসলে তখন ভাইয়া ইশারা দিয়ে তোমাকে বলতে নিষেধ করেছিল।
মৃদু হাসলাম কারণ কিছু তো বলার নেই। অয়ন আর হিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলো।

কাব্য’কে বার বার বুঝানোর পরও কাব্য আমার থেকে কথা লুকাচ্ছে ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। আপুই যে আরশি এইটা আমাকে বললে কি হতো আমি তো জেনেই গেছি, সত্যি তো কখনো লোকানো যায় না। তাহলে কি আমার ভালোবাসায় কোনো কমতি ছিল যে আমি কাব্য’কে বুঝাতে ব্যর্থ হলাম? আচ্ছা আরশি কি আমার থেকেও কাব্য’কে বেশি ভালোবাসে? আমি তো কাব্য’কে অনেক ভালোবাসি ওকে ছাড়া তো আমি…
তিশা: তমা।
আমি: হুম। (তিশা আসাতে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম)
তিশা: লাভ নেই বৃথা চেষ্টা করে।
আমি: (নিশ্চুপ)
তিশা: বাড়িতে একটা বিয়ে অথচ যে যার মতো…
আমি: তিশা ভালো লাগছে নারে। (তিশাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলাম, কোনো ভাবেই কাব্য আর আপুকে একসাথে দেখার দৃশ্যটা ভুলতে পারছি না)
তিশা: এভাবে বারান্দায় দাঁড়িয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদলেই তো সব ঠিক হয়ে যাবে না। আরশি কে? কোথায় আছে খুঁজে বের কর, তোকে মারার চেষ্টা করেছিল সেজন্য ওকে জেলে পাঠিয়ে দে তাহলেই তো হয়।
আমি: জানিই তো আরশি কে আর কোথায় আছে কিন্তু…
তিশা: জানিস?
আমি: হুম তিন্নি আপুই আরশি আর এখন ও কাব্য’র বুকে মাথা রেখে প্রেম করছে।
তিশা: মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর পাগলের মতো কিসব বলছিস? কাব্য তো সেই কখন আদনান কে নিয়ে বাইরে গেছে আর তিন্নি যাকে তুই আরশি বলছিস সে তো দেখেছি রুমে পায়চারী করছে আর রাগে পুষছে।
আমি: কিন্তু আমি তো ওদের একসাথে ছাদে দেখে আসলাম।
তিশা: একসাথে দেখেছিস আর তাই নিজের মনের মতো করে ভেবে নিয়েছিস কাব্য আরশিকেই এখনো ভালোবাসে।
আমি: হ্যাঁ বাসেই তো।
তিশা: এভাবে কাঁদবি না বলে দিলাম। আর কাব্য তোকেই শুধু ভালোবাসে বুঝেছিস?
আমি: (নিশ্চুপ)
তিশা: এই তিন্নি না আরশি ও তো সবসময় তোর ক্ষতই চেয়ে এসেছে এবার ওকে শাস্তি দে প্লিজ তাহলে একটু শান্তিতে থাকতে পারবি।
আমি: কোথায় যাচ্ছিস?
তিশা আমার কথার জবাব না দিয়ে রেগে বেরিয়ে গেলো।
কি করবো এখন আমি? কিভাবে শাস্তি দিবো আপু আর শুভ্রাকে?

আপু: দেখ শুভ্রা তোকে আমি বারবার বলছি কাব্য’কে পাওয়ার আশা ছেড়ে দে। হ্যাঁ মানছি আমি তোকে কথা দিয়েছিলাম কাব্য তোর হবে আর ওর সম্পত্তি হবে আমার কিন্তু এখন আমি আমার মত পাল্টে পেলেছি কাব্য আমার ছিল আর আমারই থাকবে। (আপুর রুমের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ আপু কারো সাথে ফোনে কথা বলছে শুনে থেমে গেলাম। আপুর কথা গুলো তো শুনলাম কিন্তু শুভ্রা কি বলছে সেটা তো শুনতে পাচ্ছি না)
আপু: শুভ্রা বেশি বাড়াবাড়ি করলে কিন্তু এর ফল ভালো হবে না। (সবকিছু নীরব হয়ে গেলো, তারমানে আপু আর শুভ্রার মধ্যে কাব্য’কে নিয়ে জামেলা হচ্ছে। আচ্ছা আমি যদি ছোট্ট একটা ঠোকা দিয়ে ওদের মধ্যে এই জামেলা আরো বাড়িয়ে দেই তাহলে কেমন হবে? আরশি আর শুভ্রা নিজেদের মধ্যে জামেলা করে নিজেরাই মরবে আর আমার ডাক্তারবাবু আমারই থাকবে। হিহিহি তিলোত্তমা কি বুদ্ধিরে তোর)
মামি: কিরে তমা হাসছিস কেন আর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? (খুশিতে কখন যে নিজের অজান্তেই শব্দ করে হেসে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি)
আমি: তুমি কোথায় দেখছিলাম, আপু রুমে তো তাই ভয়ে…
মামি: ভয় কিসের আরে তিন্নি তো এখন ভালো হয়ে গেছে, ও তো এখন আর তোকে শত্রু ভাবে না।
আমি: (মাথা নিচু করে মৃদু হাসলাম)
মামি: কিরে হাসছিস কেন?
আপু: আম্মু আমি একটু আসছি।
মামি: আরে এই সন্ধ্যাবেলায় কোথায় যাচ্ছিস? (আপু মামির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল কিন্তু কোথায় গেল? নতুন করে কোনো প্ল্যান করছে নাতো)
মামি: এই মেয়েটা যে কি হুট করে এই সন্ধ্যাবেলায় কোথায় চলে গেলো।
আমি: একটু আগে বলছিলে না আপু ভালো হয়ে গেছে? আসলে তো ভালো হয়নি। আপু আবারো আমার ক্ষতি করার জন্য কোনো একটা প্ল্যান করেছে আর সে প্ল্যান সাকসেস করার জন্যই কোনো একটা কাজে বাইরে গিয়েছে।
মামি: কি বলছিস এসব তিন্নি কেন তোর ক্ষতি করতে যাবে? হ্যাঁ আগে তুই আমাদের বাসায় থাকতি তোকে তোর মামা বেশি ভালোবাসতো তাই তিন্নি এমন করতো কিন্তু এখন…
আমি: এখন যে আমি ওর ভালোবাসার মানুষের স্ত্রী।
মামি: মানে?
আমি: কাব্য’কে আপু ভালোবাসতো, অবশ্য আপু কাব্য’কে ঠকিয়েছিল যার কারণে কাব্য আপুকে জেলে দিয়েছিল। আপু এতোদিন বাহিরে নয় জেলে ছিল। আর জেল থেকে বেরিয়ে এসে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল যার কারণে আমার বাচ্চাটা…
মামি: কি বলছিস এসব?(মামি বিছানায় দফ করে বসে পড়লো, মামি যেন এসব বিশ্বাসই করতে পারছে না)
আমি: শুধু এসব না বড় ভাবিকে ওষুধ খাইয়ে ভাবির বাচ্চা ধারণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে।
মামি: আমার মেয়ে এতো খারাপ? ওকে তো এখন আমার মেয়ে বলতেও ঘৃণা হচ্ছে।
আমি: মা যেমন মেয়ে তো তেমন হবেই।
মামি: এভাবে বলিস না মা, হ্যাঁ আমি তোর সাথে খারাপ আচরণ করেছিলাম কিন্তু এখন তো আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আর এখন আমিই তোকে বলছি তিন্নি আমার মেয়ে না ওকে তুই পুলিশে দে।
আমি: পুলিশে তো আমি দিবই।
কাব্য: তিলো একটু রুমে এসো তো। (কাব্য’র কন্ঠ শুনে পিছন ফিরে তাকালাম, দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। ইচ্ছে হচ্ছে না ওর কাছে যেতে)

রুমে এসে দেখি কাব্য চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে হয়তো কারো জন্য অপেক্ষা করছে।
আমি: যার জন্য অপেক্ষা করছ সেতো বাসায় নেই।
কাব্য: মানে?
আমি: কিছুনা। (মুচকি হেসে বিছানায় বসতে চাইলাম, কাব্য আমার হাত ধরে টান দিয়ে ওর বুকের কাছে নিয়ে গেলো)
কাব্য: আমার থেকে এতো দূরে দূরে থাকো কেন? (শব্দ করে হেসে দিলাম। আমি নাকি ওর থেকে দূরে থাকি)
কাব্য: আমাকে কষ্ট দিয়ে হাসছ আবার?
আমি: তো কি করবো? তুমি অন্য কারো হয়ে যাচ্ছ দেখে হাউমাউ করে কাঁদবো?
কাব্য: অন্য কারো হয়ে যাচ্ছি মানে? (কাব্য’র হাতের দিকে চোখ পড়তেই মনে পড়লো ঠিক এভাবেই তো কিছুক্ষণ আগে আরশির হাত ধরে ছিল। এক ঝটকায় ওকে দূরে সরিয়ে দিলাম)
কাব্য: তিলো কোথায় যাচ্ছ? কেন এমন করছ আমার সাথে?
আমি: প্রশ্নটা নিজেকে করো।

রুমের বাইরে চলে এসেছিলাম কাব্য পিছন পিছন এসে আমার হাত ধরে হেছকা টান দিয়ে দেয়ালের সাথে আমাকে চেপে ধরলো। কাব্য আমার কপালের সাথে ওর কপাল ঠেকিয়ে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি: সবাই নিচে আছে দেখবে কেউ ছাড়ো।
কাব্য: কেন করছ এমন কি করেছি আমি কিসের শাস্তি দিচ্ছ?
আমি: কিছুক্ষণ আগে ঠিক এভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলে আর আরশি তোমার বুকে মাথা রেখেছিল তাই না? একসাথে দুই মেয়েকে…
কাব্য: চুপ করো প্লিজ।
আমি: আরশির কথা আমার থেকে কেন লুকিয়েছিলে? আপুই যে আরশি সেটা আমাকে যেন না বলে হিয়াকে নিষেধ কেন করেছিলে? ছাদের মধ্যে আরশির হাত ধরে…
কাব্য: প্লিজ এভাবে কেঁদো না আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
আমি: ছাড়ো আমাকে।
কাব্য’কে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ে নিচে চলে আসলাম। অয়নের সাথে কথা বলতে হবে আমাকে, ওর হেল্প প্রয়োজন আমার।

অয়নের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম, দরজা লাগানোর শব্দ শুনে অয়ন পিছন ফিরে তাকিয়ে আমাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
অয়ন: ভাবি দরজা বন…
আমি: চুপ বারান্দায় চলো। (অয়নের হাত ধরে টেনে ওকে বারান্দায় নিয়ে আসলাম)
আমি: আরশি আমাদের কথা শুনে ফেলতে পারে তাই…
অয়ন: কি করতে চাইছ?
আমি: আগামীকাল হিয়ার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর এ বাসায় পুলিশ আসবে আর শুভ্রা আরশিকে… (অয়ন আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে দেখে থেমে গেলাম)
আমি: অয়ন কি হলো?
অয়ন: পুলিশ?
আমি: হ্যাঁ আর তুমি সেই ব্যবস্থা করবে।
অয়ন: ওকে। (অয়নের রুম থেকে বেরিয়ে আসছিলাম আবারো পিছন ফিরে তাকালাম। আমি তাকিয়ে আছি দেখে অয়ন ভ্রু কুঁচকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি)
আমি: এ বাসায় যদি আমি না থাকি তাহলেও যেন আগামীকাল শুভ্রা আর আরশিকে পুলিশে দেওয়া হয়।
অয়ন: মানে? ভাবি শুনো।

অয়নের ডাকে না দাঁড়িয়ে চলে আসলাম। সত্যি এ বাসা থেকে চলে যাবো আর পারছি না। রুমের দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো ভিতরে তাকিয়ে যা দেখলাম আমার মাথা ঘুরে গেলো, কোনো রকমে দরজাটা চেপে ধরে নিজেকে সামলে নিলাম। আমাকে দেখে আরশি কাব্য দুজনই আলাদা হয়ে গেলো।
আমি: আলাদা হওয়ার তো প্রয়োজন ছিল না দুজনকে একে অপরের বুকে দেখতে ভালোই তো লাগছিল।
কাব্য: তিলো আমার কথা শুনো। (কাব্য এগিয়ে আসছে দেখে কাব্য’র পিছনে তাকালাম আরশি হাতের তালু দিয়ে তাড়াতাড়ি ওর ঠোঁট দুটু মুছে নিচ্ছে)
আমি: আপু ওহ সরি আরশি, হাতের তালু দিয়ে মুছলে হয়তো ঠোঁটের চারপাশে ছড়িয়ে যাওয়া লিপস্টিক মুছে যাবে কিন্তু…
কাব্য: তিলো তুমি যা ভাবছ তা কিন্তু নয়।
আমি: ওহ তাই বুঝি? কিন্তু আমি তো কিছু ভাবিনি সবকিছু তো আমার চোখের সামনেই হলো আর তোমার শার্টে লেগে থাকা লিপস্টিকই তো প্রমাণ। (কাব্য নিজের শার্টের দিকে অবাক হয়ে তাকালো যেন ও কিছু জানেই না)
আমি: তোমার তিলোর ঠোঁটে আজ গোলাপি লিপস্টিক অথচ তোমার শার্টে লাল লিপস্টিক লেগে আছে খুব অদ্ভুত তাই না? আর দেখো আশ্চর্যজনক ভাবে আরশির ঠোঁটে আজ লাল লিপস্টিক…
আরশি: কাব্য আমি আসছি। (আপু রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই কাব্য আমার কাছে আসলো)
কাব্য: তিলো তুমি যা ভাবছ তেমন কিছু…(ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিলাম কাব্য’র গালে, ও গালে হাত দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে)
আমি: তোমার সাহস হয় কি করে আরশিকে আমার রুমে নিয়ে এসে এসব নোংরামি করতে? (কাব্য আমার কথার কোনো জবাব না দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো)

বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাঁদছি আর বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি কাব্য এখনো রুমে আসছে না। রাতের খাবারও খেলো না। বাসায় এতো মেহমান সবাই তো ওকে খুঁজছে মনে হয়। এভাবে থাপ্পড় দেওয়াতে হয়তো রাগ করে বাসায় আসছে না কিন্তু আমি কি করবো, আমি তো একটা মানুষ এসব সহ্য করবো কিভাবে? কাব্য’কে যে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি ওকে অন্যকারো সাথে আমি ভাগ করতে পারবো না। হঠাৎ কাব্য’র ফোন বেজে উঠলো, রাগের বশে ফোনটা ফেলে চলে গেলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখি শুভ্রা, রিসিভ করে আমি কথা বলার আগেই ও বলে উঠলো…
শুভ্রা: হোয়াটস এ্যাপস অন করে পিক গুলো দেখে নাও।

শুভ্রা ফোন কেটে দিলো আশ্চর্য তো, কিন্তু ও হোয়াটস এ্যাপসে কি পিক দেখতে বললো? তাড়াতাড়ি হোয়াটস এ্যাপসে ঢুকে পিক গুলো দেখতে লাগলাম। পিকগুলো দেখে আমার মাথা ঘুরতে শুরু করলো হাত কাঁপছে আমার। একটু আগে আমার চোখের সামনে যা ঘটলো তাতো এই পিকের তুলনায় তুচ্ছ। লিপ কিস করাটা তো সামান্য ছিল পিকে তো কাব্য’র বুকে আরশি অর্ধনগ্ন হয়ে ঘুমিয়ে আছে। প্রতিটা পিকে আরশি কাব্য দুজনই অর্ধনগ্ন হয়ে… ছিঃ কাব্য আর আরশির সম্পর্ক এমন ছিল। তাহলে এজন্যই ওরা আমার থেকে আরশির কথা লুকিয়ে রেখেছিল। শুধু কাব্য না সবাই আমাকে এভাবে ঠকালো? হাতটা খুব কাঁপছে চোখ দুটু ঝাপসা হয়ে গেলো, ফোনটা হাত থেকে ফ্লোরে পড়ে গেল। দরজা খুলার শব্দ শুনে সামনে তাকালাম কাব্য ফ্লোরে পরে থাকা ফোনটার দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি ঝাপসা চোখে এক দৃষ্টিতে কাব্য’র দিকে তাকিয়ে আছি।

চলবে?

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ২৬

0
রোমান্টিক_ডাক্তার
পার্ট: ২৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

কাব্য: তিলো তিলো কোথায় তুমি? (বারান্দায় বসে নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছিলাম হঠাৎ কাব্য’র ডাক শুনে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে রুমে আসলাম)
কাব্য: তিলো তুমি এই সময় বারান্দায় কি করছিলে?
আমি: কিছুনা।
কাব্য: তোমার কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেন আর তোমার চোখ এতো লাল কেন? (কাব্য আমার দুগালে আলতো করে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, ওর কথার কোনো জবাব না দিয়ে ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম, খুব কষ্ট হচ্ছে)
কাব্য: এভাবে কাঁদছ কেন কি হয়েছে?
আমি: কিছু হয়নি। (কাব্য’কে ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলাম, ওকে স্বপ্নের কথা বলা যাবে না। এমনিতেই আম্মুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে কাব্য অনেক ভেঙে পড়েছে এখন আবার বাচ্চার জন্য আমি কষ্ট পাচ্ছি শুনলে ও আরো ভেঙে পড়বে)
আমি: চলো আমার সাথে।
কাব্য: কোথায়?
আমি: নামাজ পড়বে আমার সাথে। (কাব্য’র হাত ধরে টেনে ওযু করতে নিয়ে আসলাম। একদিন নামাজ পড়লে দুদিন পড়তে চায় না এতো ফাজিল)

নামাজ শেষে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলাম তখনি কাব্য আমার হাত ধরে ফেললো।
আমি: কি?
কাব্য: কি লুকুচ্ছ আমার থেকে?
আমি: যা বললে তুমি কষ্ট পাবে সেটাই লুকিয়েছি আমি চাইনা তুমি আরো কষ্ট পাও।
কাব্য: তাই বলে একা কষ্ট সহ্য করবে? (কাব্য’র দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম)

আম্মুকে পাওয়া যাচ্ছে না তাই কাব্য কেমন যেন হয়ে গেছে আগের মতো হাসে না, আমার সাথে দুষ্টুমি করে না, সবসময় চুপচাপ হয়ে থাকে। কাব্য ভাবছে আম্মুকে কখনো পাবো না তাই ও ভেঙে পড়েছে। চিন্তা করোনা ডাক্তারবাবু একবার যখন জানতে পেরেছি আম্মু বেঁচে আছেন তাহলে তোমার তিলো পাগলী আম্মুকে ফিরিয়ে এনে তোমার মুখে আবারো হাসি ফুটাবে।

দু সপ্তাহ পর….

আগামীকাল হিয়ার বিয়ে, কিন্তু এখনো আম্মুর কোনো খুঁজ পাইনি আমি। সেই হসপিটালে আরো অনেক বার গিয়েছি কিন্তু কোনো খুঁজ পাইনি। খুব ভয় করছে হিয়া যদি বিয়েটা না করে তাহলে তো কাব্য খুব কষ্ট পাবে, তাছাড়া সব মেহমানরা আসতে শুরু করেছে এখন হিয়া রাজি না হলে মান সম্মান সব যাবে। আকাশের পরিবার কাব্য আর ভাইয়াকে কথা শুনাতে ছাড়বে না, কিযে করি এখন।
কাব্য: তিলো একা একা দাঁড়িয়ে কি ভাবছ?
আমি: আমি তো হিয়াকে কথা দিয়েছিলাম ওর বিয়েতে আব্বু আম্মু উপস্থিত থাকবেন কিন্তু আম্মুকে তো খুঁজে পাচ্ছি না, খুব ভয় করছে হিয়া বিয়েটা করবে তো?
কাব্য: হিয়ার সাথে কথা বলো, আগামীকাল বিয়ে এখন বিয়ে করবে না বললে হবে নাকি?
আমি: প্লিজ তুমি আবার রেগে যেও না আমি দেখছি।
কাব্য: হুম।

হিয়ার সাথে কথা বলা প্রয়োজন তাই হিয়ার রুমে আসলাম। হিয়া ফোনে কথা বলছে এখন কি ডাকবো কিন্তু না ডাকলে তো হবে না সময় খুব কম।
আমি: হিয়া আসবো?
হিয়া: হ্যাঁ ভাবি এসো। (হিয়া ফোন কেটে দিলো আমাকে দেখে)
আমি: কি ব্যাপার কার সাথে কথা বলছিলে?
হিয়া: আসলে ভাবি আ…
আমি: কি বলো। (হিয়া কি তাহলে আকাশের সাথে কথা বলছিল)
হিয়া: ভাবি…
আমি: আকাশের সাথে কথা বলছিলে নাকি? (হিয়া হেসে দিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো)
আমি: কাল তোমাদের বিয়ে তারপর তোমরা এক হয়ে যাবে আর এখন তুমি লজ্জা পাচ্ছ। কথা বলেছ এইটা তো ভালো, বিয়ের আগে কথা বলে একে অপরকে জেনে নিয়েছ।
হিয়া: ভাবি আকাশ খুব ভালো ছেলে তোমরা আমার জন্য একদম ঠিক পাত্র পছন্দ করেছ। (যাক বাবা আকাশকে তাহলে হিয়া ভালোবাসতে শুরু করেছে তারমানে হিয়া এখন বিয়েটা ভেঙে দিবে না)
আমি: ভাগ্য করে এমন তিনজন ভাই পেয়েছ।
হিয়া: হুম সাথে মিষ্টি দুইটা ভাবি।
আমি: হিয়া একটা কথা বলার ছিল।
হিয়া: হ্যাঁ বলো এমন আমতাআমতা করছ কেন?
আমি: আসলে আম্মুকে তো খুঁজে পাইনি বিয়েও তো আগামীকাল, এর মধ্যে আম্মুকে খুঁজে পাবো কিনা জানিনা। বাসায় এতো মেহমান রেখে খুঁজতে যেতেও পারছি না, তুমি প্লিজ…
হিয়া: হুম বুঝতে পেরেছি। কম তো খুঁজনি এই দু সপ্তাহের ভিতরে অনেক বার ওই হসপিটালে গিয়েছ, না খুঁজে পেলে তোমারই বা কি করার আছে। চিন্তা করোনা আমি তীরে এসে তরী ডুবাবো না তবে তোমার কাছে আমার অনুরোধ থাকবে চেষ্টা করে যেও প্লিজ। জানো তো আমি তোমার উপর অনেক ভরসা করি আমার মন বলে তুমিই পারবে আমাদের পরিবারটাকে আবার এক করতে।
আমি: থ্যাংকস। (হিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে আসলাম। মেয়েটা আমার উপর এতো ভরসা করে আর আমি কিনা আম্মুকে খুঁজে এনে দিতে পারছি না। বিয়েটা হিয়া করবে শুধু ওর ভাইদের আর আব্বুর সম্মানের কথা ভেবে কিন্তু আম্মু নেই এইটা ভেবে ওর মনে একটা কষ্ট থেকেই যাবে। কি করে আমি ওর এই কষ্ট দূর করবো? আল্লাহ্‌ একটা রাস্তা দেখাও আমাকে প্লিজ)

ভাইয়া: নীরা আজ কি খাবার পাবো না সকাল নয়টা বাজে এখনো নাশতা তৈরি হয়নি?
ভাবি: বিয়ে বাড়ির জামেলা বুঝার চেষ্টা করো একটু তো দেরি হবেই।
অয়ন: আর জামেলা এইটাকে বিয়ে বলে। (টেবিলে খাবার এনে রাখছিলাম, অয়ন কথাটা আস্তে বললেও আমার কান অব্দি এসে পৌঁছে গেছে। সবকিছুর জন্য আমি দায়ী)
আব্বু: আমি বুড়ো মানুষ হয়ে অপেক্ষা করছি আর তোরা পারছিস না?
তিশা: তমা। (একমনে কাজ করছিলাম হঠাৎ তিশা এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো)
আমি: ওরে বাবারে তোর অভ্যাসটা ছাড়িসনি আর একটু হলেই তো পরে যেতাম।
তিশা: এই অভ্যাস ছাড়া যাবে না যতোদিন বেঁচে আছি তোকে এভাবেই জ্বালাবো।
আমি: আর আমি মারা গেলে তখন কাকে জ্বালাবি?
কাব্য: তিলো এসব কি ধরনের কথা? (কাব্য’র ধমক শুনে কেঁপে উঠে সামনে তাকালাম, সবাই আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। আনমনে কিযে বলে ফেলছি)
আমি: আসলে আগে তো তিশাকে এসব বলতাম তাই বলে ফেলছি।
আদনান: আগের দিনগুলো কি এখনো আছে ভাবি? (আদনান এসেছে দেখে তিশার দিকে তাকিয়ে হাসলাম)
আমি: বাব্বাহ্ দুজন একসাথে।
ভাবি: সবাই বসে পড়ো।
অয়ন: বসেই আছি খিদায় পেটের মধ্যে ইঁদুর দৌড়োচ্ছে। (অয়ন এর কথা শুনে সবাই একসাথে হেসে দিল)
তিশা: তমা এদিকে দেখে যা।

তিশা আমার হাত ধরে সবার থেকে দূরে নিয়ে আসলো।
আমি: কি হয়েছে?
তিশা: আচ্ছা এইটা কি বিয়ে বাড়ি নাকি…
আমি: আস্তে ওরা শুনবে।
তিশা: দ্যাত এইটাকে বিয়ে বলে বাইরে থেকে বিয়ে বাড়ি মনে হয় কিন্তু ভিতরে সবকিছু কেমন যেন নীরব এমনকি মানুষগুলোও। আর কাব্য তো আগে এমন ছিল না সবসময় হাসি খুশি থাকতো।
আমি: আম্মুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তো তাই সবার মন খারাপ। আমি হিয়াকে কথা দিয়েছিলাম আম্মুকে খুঁজে আনবো কিন্তু কথা রাখতে পারিনি। হিয়ার ইচ্ছেতেই এমন সাদামাটা বিয়ে হচ্ছে।
তিশা: ওহ বুঝলাম। (কলিংবেল বাজছে শুনে আমি যেতে চাইলাম তিশা আমাকে আটকে দিয়ে ও গেলো। ভাবি একা সবাইকে খাবার ভেড়ে দিচ্ছেন দেখে আমি এগুলাম তখনি তিশা ডাক দিলো)
তিশা: তমা। (তিশার ডাক শুনে সবাই দরজার দিকে তাকালো। মামি সাথে তিন্নি আপুকে দেখে চমকে উঠলাম, কেন এসেছে ও আবার কোন অশান্তি চায়? কিছু পরে যাওয়ার শব্দ শুনে পাশে তাকালাম, ভাবির হাতে গ্লাস ছিল সেটা পরে গেছে। আশ্চর্য ভাবি আপুর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন আর ভাবির হাত পা এভাবে কাঁপছে কেন, মনে হচ্ছে ভাবি আপুকে দেখে খুব ভয় পেয়েছে। বাকি সবার দিকে তাকালাম ভাবির মতো কাব্য অয়ন ভাইয়া আদনান ওরা সবাইও আপুর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে)
মামি: তমা কেমন আছিস?
আমি: ভালো তুমি এখানে?
ভাইয়া: মামিকে আমি ইনভাইট করেছিলাম।
আমি: কিন্তু মামি তোমার সাথে তিন্নি আপু…
মামি: তমা তিন্নি ওর ভুল বুঝতে পেরে ফিরে এসেছে আমি তো মা বল আবার কিভাবে ফিরিয়ে দেই।
আমি: হুম কিন্তু এখানে নিয়ে এসেছ কেন জানোনা ও…
তিশা: তমা চুপ কর। (তিশার কথায় চুপ হয়ে গেলাম কিন্তু তিন্নি আপুকে একদম সহ্য করতে পারছি না ইচ্ছে হচ্ছে ওকে…)
হিয়া: একি তুমি আবার এখানে? (হিয়ার কথা শুনে পিছনে তাকালাম, হিয়া নিচে আসছিল আপুকে দেখে সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে গেছে। তাহলে কি ওরা সবাই আপুকে চিনে)
আমি: হিয়া তুমি আপুকে চিনো? (হিয়া কাব্য’র দিকে তাকালো তারপর মাথা নেড়ে না বললো)
আমি: মামি তোমরা রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।
আব্বু: আরে রেস্ট পরে নিবে খাবার সামনে যেহেতু রাখা আছে তাহলে আগে খাবার খাবে। (আব্বুর কথার উপরে আর কোনো কথা বললাম না। মামি এসে চেয়ার টেনে বসতেই আপুও বসতে আসলো, আপু ভাবির পাশ দিয়ে যেতেই ভাবি এক দৌড়ে রুমে চলে গেলো। হিয়া আর নিচেই আসেনি আবার রুমে চলে গেছে, একে একে ভাইয়া কাব্য অয়ন আদনান সবাই উঠে রুমে চলে যাচ্ছে। কি হচ্ছে এসব আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না, সবাই আপুকে দেখে এতো ভয় পেলো কেন)

মামি আর আপুকে একটা রুমে দিয়ে কাব্য’কে খুঁজতে আসলাম, কোথায় যে গেলো। পুরো বাসা খুঁজলাম কিন্তু কাব্য কোথাও নেই।
অয়ন: ভাইয়া বাগানে আছে। (হঠাৎ পিছন থেকে অয়ন কথাটা বলে উঠলো, অয়নের দিকে তাকালাম এখনো ওর চোখে মুখে ভয়ের চাপ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। সবাই এতো ভয়ে আছে কেন সেটাই তো বুঝতে পারছি না)

বাগানে এসে দেখি কাব্য চুপচাপ বসে আছে আর কি যেন ভাবছে। আমি কাব্য’র কাধে হাত রাখতেই ও কেঁপে উঠলো।
আমি: আরে আমি এসেছি এতো ভয় পাচ্ছ কেন?
কাব্য: কোথায় নাতো।
আমি: সবাই আমার থেকে কি যেন লুকানোর চেষ্টা করছ।
কাব্য: তিলো আমাকে একটু একা থাকতে দাও প্লিজ। (কাব্য’র এমন আচরণে বেশ অবাক হলাম, কাব্য তো কখনো আমার সাথে এমন আচরণ করে না। সবাই আপুকে দেখে এতো ভয় পাচ্ছে কেন? আচ্ছা তাহলে কি আপুই…)

দৌড়ে মামির রুমে আসলাম, আপু রুমে নেই মামি কাপড়চোপড় গুচাচ্ছেন।
আমি: মামি।
মামি: কিরে তমা কি হয়েছে তোর এমন হাপাচ্ছিস কেন?
আমি: মামি আপুর কি অন্য কোনো নাম আছে?
মামি: হ্যাঁ আছে তো কিন্তু তুই হঠাৎ…
আমি: প্লিজ মামি বলো আপুর আরেকটা নাম কি।
মাই: আরশি। (নামটা শুনে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো, তারমানে আমি এতোক্ষণ যা সন্দেহ করেছিলাম তাই সত্যি। আপুই আরশি আর তাই সবাই আপুকে দেখে এমন ভয় পাচ্ছে)

আপুর সাথে ফোনে আমার এতোবার কথা হয়েছে কিন্তু একবারের জন্যও আমি আপুর কন্ঠ বুঝতে পারিনি। আপু আমার ক্ষতি চায় জানতাম কিন্তু এতোটা… আনমনে হাটছিলাম আর এসব ভাবছিলাম হঠাৎ কে যেন আমার হাত ধরে টেনে আমাকে একটা রুমে নিয়ে গেলো, তাকিয়ে দেখি আপু।
আমি: তুমি?
আপু: বেশ অবাক হচ্ছিস তাই না? আপুই কিভাবে আরশি হলো সেটাই তো ভাবছিস?
আমি: তুমি জানতে কাব্য’র স্ত্রী যে আর কেউ নয় আমি?
আপু: উঁহু প্রথম জানতাম না শপিংমলে তোকে একটা লোক ফলো করেছিল মনে আছে? সে আমাকে তোর পিক দিয়েছিল আর সেদিন জানতে পারি তুই কাব্য’র তিলো পাগলী।
আমি: তোমার বোন কাব্য’র স্ত্রী জেনেও তুমি প্রতিশোধ নিতে গিয়ে জেনে বুঝে আমার বাচ্চাটাকে মেরে ফেললে?
আপু: কথায় আছে না এক ঢিলে দুই পাখি মারা, আমিও সেটাই করেছিলাম। তোকে মেরে ফেললে তোর প্রতিও প্রতিশোধ নেওয়া হতো কাব্য’র প্রতিও প্রতিশোধ নেওয়া হতো।
আমি: আমার উপর এতো রাগ তোমার?
আপু: ভুলে গিয়েছিস সেদিনের কথা? শুধু তোর জন্য আব্বু আমাকে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার কথা বলেছিল।
আমি: কারণ তুমি আর তোমার বন্ধু অন্যায় করেছিলে।
আপু: রাখ তোর অন্যায় সবকিছুর প্রতিশোধ নিয়েছি আরো নিবো বুঝেছিস?
আমি: আমার বাচ্চাটাকে মেরে ফেলেছ আর প্রতিশোধ নেওয়ার মতো কিছু বাকি আছে নাকি?
আপু: আছে তো এখন কাব্য’কেও কেড়ে নিবো। (কথাটা শুনে আঁতকে উঠলাম, সত্যি কি ও কাব্য’কে আমার থেকে কেড়ে নিবে)
আরে আপু কোথায় চলে গেলো হুট করে?

সারা বাড়ি খুঁজলাম কিন্তু আপুকে তো কোথাও দেখতে পারছি না, ও কি আবার কোনো কিছু করার প্ল্যান করছে?
মামি: তমা তোর কি হয়েছে বলতো।
আমি: কিছু নাতো।
মামি: এমন দেখাচ্ছে কেন তোকে?
আমি: মামি আপু এতোদিন কোথায় ছিল?
মামি: বললো তো দেশের বাইরে ছিল। (কিন্তু কাব্য তো বললো আরশিকে ওরা জেলে দিয়েছিল)
মামি: কি ভাবছিস?
আমি: আপু কোথায় দেখেছ?
মামি: বলেছিল ছাদে যাচ্ছে।
আমি: হুম।

কাব্য: আরশি প্লিজ আমার কথা বুঝার চেষ্টা করো।
আপু: আমি কিছু বুঝতে চাইনা আমি যা বলি তুমি তাই শুনবে নাহলে আগের চেয়ে ভয়ানক কিছু ঘটাবো এখন।
কাব্য: অনেক করেছ আরশি প্লিজ এবার আমাদের শান্তিতে থাকতে দাও, আমি তিলোকে নিয়ে অনেক ভালো আছি প্লিজ আমাদের ভালো থাকতে দাও।
আপু: কিন্তু আমি যে তোমাকে নিয়ে ভালো থাকতে চাই। (ছাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছিলাম, আপুর এই কথাটা শুনে একটু এগিয়ে আসলাম। এমন কিছু দেখতে হবে আমি তো ভাবতেও পারিনি। কাব্য দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সামনে আপু দাঁড়ানো। কাব্য’র এক হাতের আঙ্গুল গুলোতে আপুর এক হাতের আঙ্গুল গুলো আটকানো, আপুর আরেকটা হাত কাব্য’র বুকে রাখা। এই দৃশ্যটাও আমাকে দেখতে হলো)
কাব্য: আরশি তুমি আমার সব সম্পত্তি চাইছ তো দিয়ে দিবো প্লিজ আমাদের শান্তিতে থাকতে দাও। দেখো আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি তুমি যেহেতু তিলোর মামাতো বোন তোমাকে আমরা জেলে দিবো না প্লিজ তুমি আমাদের থেকে দূরে চলে যাও।
আপু: এসব পুলিশ জেল আমি ভয় পাই না আর সম্পত্তি আগে চাইতাম এখন আর চাই না এখন তো তোমাকে চাই। আর আমি জানি তুমি আমাকে এখনো ভালোবাস তাইতো আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছ না উল্টো আমার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় ধরে রেখেছ। (আপু কাব্য’র বুকে মাথা রাখলো আর কাব্য ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে না দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এসব দৃশ্য আর সহ্য করতে পারবো না দৌড়ে নিচে চলে আসলাম)

বার বার এই দৃশ্যটাই মনে পড়ছে আপু কাব্য’র বুকে মাথা রেখেছে আর কাব্য চোখ দুটু বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইদানীং কাব্য’র আচরণ গুলো আমাকে বেশ অবাক করে দিচ্ছে। কাব্য আপুকে সরিয়ে না দিয়ে উল্টো নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তাহলে কি আপুর কথাটাই সত্যি? কাব্য আরশি নামের মেয়েটাকে এখনো ভালোবাসে? আপু যে বললো আমার থেকে কাব্য’কে কেড়ে নিবে সত্যিই কি কেড়ে নিবে তাহলে আমি বাঁচবো কিভাবে? কাব্য ছাড়া যে তিলোত্তমা বাঁচবে না সেটা তো কাব্য জানে…

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ২৫

0
রোমান্টিক_ডাক্তার
পার্ট: ২৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

কাব্য আব্বুর কাঁধে মাথা রেখে আব্বুকে একটা হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে বসে আছে। আব্বু ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, মনে হচ্ছে কাব্য একটা ছোট বাচ্চা। সত্যি বাবা মায়ের কাছে সন্তান কখনো বড় হয় না, সেই ছোট্ট শিশুই থেকে যায়। আমার যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে আজকের এই দৃশ্যটাকে এই সময়টাকে এখানেই আটকে রাখতাম।
আব্বু: বৌমা তোমার চোখে পানি কেন? (আব্বুর কথা শুনে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম। ওদের ভালোবাসা দেখে আব্বু আম্মুর কথা মনে পড়ে গেলো, সেদিনের এক্সিডেন্ট যদি আব্বু আম্মুকে আমার থেকে কেড়ে না নিতো তাহলে তো আমিও এমন ভালোবাসা পেতাম)
কাব্য: তিলো কি হয়েছে?
আমি: কিছু নাতো।
কাব্য: হুম বুঝেছি, আব্বু তিলোর বাবা মা তো মারা গেছেন তাই হয়তো ও কাঁদছে।
আব্বু: এক বাবা মারা গেছে তো কি হয়েছে আর এক বাবা তো বেঁচে আছে। (উনার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকালাম, প্রথম দেখায় কেউ এতোটা আপন করে নিতে পারে)
আব্বু: এদিকে এসো মা। (আব্বু হাত বাড়িয়ে আমাকে ডাকছেন দেখে উনার পাশে গিয়ে বসলাম)
আব্বু: আজ থেকে তুমিও আমার মেয়ে।
আমি: আপনার আরেক মেয়ে যে আপনার জন্য অপেক্ষায় আছে তার কাছে যাবেন না?
আব্বু: যাবো তো।
কাব্য: আব্বু হিয়ার বিয়ে ঠিক করেছি দুই সপ্তাহ পর বিয়ে, তুমি বাসায় চলো হিয়া খুব খুশি হবে।
আব্বু: এতো বছর পর আমার ছেলে মেয়েকে খুঁজে পেয়েছি তাদের কাছে না গিয়ে থাকবো কিভাবে? সে রাতের পর তোদের অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলাম কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। আচ্ছা তুই আমাকে খুঁজে পেলি কিভাবে?
কাব্য: এক বছর আগে ফারাবীর ব্যবসার একটা কাজে এদিকে এসেছিলাম, তখন তোমাকে রাস্তায় দেখতে পাই। তারপর তোমাকে ফলো করে বাসা অব্দি আসি।
আমি: তারপর থেকে মাঝে মাঝেই এখানে লুকিয়ে এসে আব্বুকে দেখে যাও তাইতো? (কাব্য মাথা নিচু করে বসে আছে)
আব্বু: চল বাবা পুরনো কথা গুলো সব ভুলে যাই নতুন করে আবার সবকিছু শুরু করি।
কাব্য: হুম।
আব্বু: এবার আমাকে আমার হিয়ার কাছে নিয়ে চল।
কাব্য: চলো।

বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই হিয়া দরজা খুলে দিলো, মনে হচ্ছে ও এতোক্ষণ অপেক্ষা করছিল কখন কলিংবেল বেজে উঠবে।
হিয়া: ভাবি আমার সারপ্রাইজ কোথা…(আব্বুকে দেখে হিয়া থেমে গেলো, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আব্বুর দিকে)
কাব্য: আব্বু ও তোমার সেই ছোট্ট হিয়া।
আব্বু: আমার মা তো অনেক বড় হয়ে গেছে। (হিয়া ছোট বাচ্চার মতো দুহাত দিয়ে আব্বুর গলা জরিয়ে ধরলো। আব্বু দুহাত দিয়ে কাব্য আর হিয়াকে জরিয়ে ধরলেন)
ভাবি: তিলোত্তমা কে উনি?
আমি: শশুড় মশাই, বলেছিলাম না ফিরিয়ে আনবো। (ভাবিকে চোখ টিপ দিলাম)
ভাবি: তুই না পারিসও বটে। (ভাবি গিয়ে আব্বুকে সালাম করলো)
আব্বু: ও…
কাব্য: তোমার আর একটা বৌমা। তোমাদের ছেড়ে চলে আসার পর ফারাবী আমাকে আপন করে নিয়েছিল, ও ফারাবীর স্ত্রী। ফারাবী তো এখন অফিসে রাতে আলাপ করিয়ে দিবো।
আব্বু: ঠিক আছে।
আমি: আব্বু এখন যান তো ফ্রেশ হয়ে নিন দুপুরে সবাই একসাথে খাবো।
আব্বু: ঠিক আছে মা।
হিয়া: আজকে আমি আব্বুর জন্য রান্না করবো। (হিয়ার কথা শুনে তো সবাই অবাক)
ভাবি: তোর জীবনে কখনো রান্নাঘরে গিয়েছিস?
অয়ন: আরে ওকে শিখতে দাও আকাশ কি ওকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে নাকি, কাজের বুয়ার মতো সবসময় কাজ করাবে।
হিয়া: ছোট ভাইয়া ভালো হবে না কিন্তু।
আমি: অয়ন দেখে নিও আকাশ হিয়াকে একদম রানীর মতো করে রাখবে যেমনটা এতোদিন তোমরা তিনভাই ওকে রাজকন্যার মতো রেখেছ।
কাব্য: আব্বু ও অয়ন ফারাবীর ছোট ভাই।
অয়ন: কি বললে?
কাব্য: না না ফারাবী আর আমার ভাই।
হিয়া: আর আমার শত্রু।
অয়ন: দাঁড়া। (অয়ন হিয়াকে দৌড়িয়ে নিয়ে গেলো, এতোদিনে পরিবারটা সম্পূর্ণ লাগছে। এখন শুধু আম্মুকে খুঁজতে হবে কিন্তু কোথায় খুঁজবো সেটাই তো বুঝতে পারছি না। আব্বুর ঠিকানা কাব্য জানতো তাই সহজেই আব্বুকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি কিন্তু আম্মু…)
কাব্য: তিলো রুমে চলো।
আমি: হুম।

রুমে আসতেই কাব্য আমাকে জরিয়ে ধরলো।
আমি: এইযে হঠাৎ কি হলো?
কাব্য: তোমার কাছে আমি ঋণী হয়ে গেলাম, এই ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না।
আমি: মানে?
কাব্য: তুমি না চাইলে আব্বুকে কখনো আমি ফিরে পেতাম না, সারাজীবন নিজের মনের মধ্যে আব্বু আম্মুর প্রতি ঘৃণাটাই জমিয়ে রাখতাম।
আমি: শুধু কি তোমাদের জন্য আব্বুকে ফিরিয়ে এনেছি নাকি? আমার আব্বুকে তো আর ফিরে পাওয়া সম্ভব না, আমারও তো আব্বুর ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে হয় তা…
কাব্য: অনেক ভাগ্য করে তোমার মতো জীবনসঙ্গিনী পেয়েছি। (কাব্য আমার কপালে ওর কপাল ঠেকিয়ে খুব কাঁদছে)
আমি: দূর পাগল এভাবে কেঁদো না এখন আম্মুকে খুঁজে বের করার উপায় বের করো।
কাব্য: কোথায় পাবো বুঝতে পারছি না কিছু।
আমি: হতাশ হচ্ছ কেন, আমরা আম্মুকে ঠিক খুঁজে পাবো দেখো।
কাব্য: তোমার কথাটাই যেন সত্যি হয়।
আমি: হুম এখন যাই রান্না করতে হবে।

খাওয়াদাওয়া করে সবাই একসাথে বসে গল্প করছে কিন্তু কাব্য কোথায় গেলো? কখন যে এখান থেকে চলে গেলো দেখতেই পাইনি। রুমে হয়তো আছে, তাড়াতাড়ি রুমে আসলাম।

যা ভেবেছিলাম তাই কাব্য রুমেই আছে, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। কিন্তু ওকে হঠাৎ এতো নিশ্চুপ লাগছে কেন?
আমি: ডাক্তারবাবু। (আমার ডাক শুনে যেন চমকে উঠলো ও)
কাব্য: হুম।
আমি: কি হয়েছে, সবাই আড্ডা দিচ্ছে আর তুমি একা একা রুমে আর এখানে এভাবে নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছ কেন?
কাব্য: কিছু হয়নি।
আমি: তুমি আবার আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছ।
কাব্য: আরে না কি লোকাবো? আসলে আমি শুভ্রা আর আরশির কথা ভাবছিলাম। ওরা দুজন অনেক দূর এগিয়ে গেছে এবার ওদের শাস্তি প্রয়োজন। ওদের পুলিশে না দিলে ওরা আমাদের আরো ক্ষতি করবে।
আমি: এখন জামেলা করার প্রয়োজন নেই আগে হিয়ার বিয়েটা হয়ে যাক তারপর ওদের ব্যবস্থা করবো। আমার সব চিন্তাই তো হিয়াকে নিয়ে।
কাব্য: হিয়াকে নিয়ে কি চিন্তা আরশি হিয়ার ক্ষতি করবে নাকি, ওর রাগ তো আমার উপর।
আমি: একবার তো ক্ষতি করেই ফেলেছে, সেদিন ছিনতাইকারী হিয়ার হাত কাটেনি ওরা আরশির লোক ছিল।
কাব্য: কি বলছ এসব, আগে বলনি কেন?
আমি: হিয়া শুনলে ভয় পেয়ে যেতো তাছাড়া তোমার প্রতি হিয়া এমনিতে রেগে আছে, তোমার জন্য ও বিপদে আছে এইটা জানতে পারলে ও তোমাকে আরো বেশি ভুল বুঝতো।
কাব্য: সব দোষ আমার আসলে আমি একটা…
আমি: নিজেকে কেন অযতা দোষ দিচ্ছ, আরশি ওর পাপের শাস্তি হিসেবে জেলে গিয়েছিল। এখন যদি ও এসবের প্রতিশোধ নেয় সেটা কি তোমার দোষ?
কাব্য: আমি তো…
আমি: হয়েছে আর নিজেকে দোষ দিতে হবে না। তুমি থাকো আমি দেখে আসি আব্বু কি করছেন কিছু লাগবে কিনা।
কাব্য: শুনো। (চলে আসছিলাম কাব্য হাত ধরে টান দিয়ে ওর একদম কাছে নিয়ে গেলো। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে)
আমি: কি?
কাব্য: ভালোবাসি।
আমি: জানি তো।
কাব্য: উঁহু ভুল জানো।
আমি: মানে?
কাব্য: মানে আমি তোমাকে ভালোবাসি এইটা তুমি ভুল জানো কারণ আমিতো তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
আমি: পাগল কোথাকার ছাড়ো। (কাব্য’কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম)

আব্বু: এসব তোকে কে বলেছে, এসবে তো কাব্য’র কোনো দোষ ছিল না।
হিয়া: মানে?
আব্বু: আমি আর তোর আম্মু একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা আলাদা হয়ে যাবো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর তুই আমার কাছে কাব্য তোর মায়ের কাছে থাকবে এই সিদ্ধান্তও আমরা নিয়েছিলাম। কিন্তু কাব্য আমাদের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি, আমাদের ভুলের জন্য ও তোকে ছাড়তে পারবে না এই কথা আমাদের জানিয়ে দেয়। আর শেষমেশ কাব্য তোকে ওর থেকে দূরে সরাতে চায়না বলে তোকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে। (এতোক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে ওদের বাবা মেয়ের কথা শুনছিলাম। হিয়ার কান্না দেখে ভিতরে এসে হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম)
হিয়া: এসব তুমি কি বলছ আব্বু, ভাইয়া আমাকে এতো ভালোবাসে আর আমি কিনা এই ভাইয়াকে…
আমি: তোমার ভাইয়া এই মিথ্যেটা বলেছিল শুধুমাত্র তোমার মনে যেন আব্বু আম্মুর প্রতি কোনো ঘৃণা জন্ম না নেয় এজন্য।
আব্বু: সব দোষ আমাদের।
আমি: আব্বু যা হবার তাতো হয়েই গেছে এখন এসব ভুলে যান। এখন আম্মুকে খুঁজে বের করতে হবে তবেই আমাদের পরিবার সম্পূর্ণ হবে।
আব্বু: আমি জানি বৌমা তোমার শাশুড়ি মা কোথায়। (আব্বুর মুখে এই কথা শুনে হিয়া আমি দুজনই চমকে উঠলাম। কিভাবে কোথায় আম্মুকে খুঁজবো সেটা আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না আর আব্বু কিনা জানেন আম্মু কোথায়)
আব্বু: কয়েকদিন আগে ওকে আমি একটা হসপিটালে দেখতে পাই, বাসা কোথায় জানিনা। সেদিন ওকে অনেক বুঝিয়েছিলাম কিন্তু ওর একটাই কথা ছিল, নিজেদের ভুলের জন্য যখন সন্তানদের হারিয়ে ফেলেছি তখন আর এক হবো না, নিজের ভুলের শাস্তি এভাবে দূরে থেকেই পাবো।
আমি: আপনি জানেন সেটা আগে বলবেন না?
আব্বু: আমি তো ওর বাসার ঠিকানা জানিনা শুধু হসপিটালে একবার দেখা হয়েছিল, পরে অবশ্য আর একদিন ওর সাথে দেখা করতে সেই হসপিটালে গিয়েছিলাম কিন্তু সে ইচ্ছে করেই আমার সাথে দেখা করেনি।
আমি: আপনি হসপিটালের নামটা বলুন। (আব্বু হসপিটালের নাম বলতেই দৌড়ে চলে আসছিলাম তখন পিছন থেকে আব্বু আবার ডাক দিলেন)
আব্বু: সে কি আসবে? (আব্বু মুখটা মলিন করে প্রশ্নটা করলেন, এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই তাই মৃদু হেসে বেরিয়ে আসলাম)

কাব্য বিছানায় বসে ফোন টিপছে, ওর হাত ধরে টেনে বাসার বাইরে নিয়ে আসলাম।
কাব্য: আরে তিলো আমরা কোথায় যাচ্ছি?
আমি: গাড়িতে উঠো, গাড়ি স্টার্ট দাও আগে তারপর বলছি।
কাব্য: কোথায় যাবো সেটা না বললে গাড়ি স্ট…
আমি: হসপিটালে যাবো।
কাব্য: কোন হসপিটালে? (কাব্য’কে হসপিটালের নাম বলতেই ও গাড়ি স্টার্ট দিলো। জানিনা আম্মুকে ওখানে পাবো কিনা)
কাব্য: তিলো আমরা ওই হসপিটালে কেন যাচ্ছি?
আমি: আম্মু আছেন ওখানে।
কাব্য: কি? (কাব্য চমকে উঠে তাকালো আমার দিকে)
আমি: আব্বু বলেছেন আম্মু ওই হসপিটালে চাকরি করেন। হসপিটালে যদি না পাই তাহলে অবশ্যই হসপিটাল থেকে উনার বাসার ঠিকানা পাবো।
কাব্য: যদি না পাই?
আমি: দ্যাত সবসময় এতো নেগেটিভ ভাবো কেন চুপচাপ গাড়ি চালাও।
কাব্য: হুম।

হসপিটালে পৌঁছে কিছুক্ষণ এদিকওদিক আম্মুকে খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। তাহলে কি আম্মু আজ আসেননি? একজন নার্সকে দেখে তাকে ডাক দিলাম।
নার্স: জ্বী বলুন।
আমি: এখানে তো হুমায়রা চৌধুরী নামে একজন ডক্টর আছেন উনি কি আজ আসেননি?
নার্স: উনি তো এক সপ্তাহ আগে এখান থেকে ট্রান্সপার হয়ে গেছেন।
আমি: এখন কোন হসপিটালে আছেন একটু বলতে পারবেন।
নার্স: তাতো জানিনা। (নার্স এর কথা শুনে কাব্য পাশে রাখা চেয়ারটায় দফ করে বসে পড়লো। এখন কি করবো)
কাব্য: আর আম্মুকে খুঁজে পাবো না।
আমি: পাবো তো দেখো আমরা ঠিক আম্মুকে খুঁজে পাবো, তুমি কেঁদো না প্লিজ।
কাব্য: তুমি এখনো…
আমি: হুম বলছি কারণ আল্লাহর উপর ভরসা রাখলে সব সম্ভব হয়, উনি কোনো না কোনো উচিলায় বান্ধার মনের আশা পূরন করেন। দেখো একদিন আমরা ঠিক আম্মুকে খুঁজে পাবো, শুধু আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।
কাব্য: হুম বাসায় চলো।

বাসায় এসে দেখি দরজা খোলা, আব্বু আর হিয়া ড্রয়িংরুমে বসে আছেন। হিয়া আমাদের দেখেই দৌড়ে আসলো কিন্তু শুধু আমাদের দুজনকে দেখে ওর মুখটা মলিন হয়ে গেলো।
হিয়া: আম্মুকে পাওনি তাই না?
আমি: চিন্তা করোনা পেয়ে যাবো। (হিয়া চুপচাপ রুমে চলে গেলো। আব্বুও উঠে রুমে চলে গেলেন। কাব্য’র দিকে তাকালাম ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কি যে করবো এখন ভেবে পাচ্ছি না)

রান্নাঘরে কাজ করছিলাম হঠাৎ কাব্য’র ডাক শুনে তাড়াতাড়ি রুমে চলে আসলাম।
আমি: কি?
কাব্য: আরশি ফোন করেছে কথা বলো।
আমি: ওর সাথে আবার কিসের কথা? (কাব্য ফোনটা এগিয়ে দিয়েছে দেখে ফোনটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে আসলাম)
আমি: আরশি কেন আমাদের পিছনে পরে আছ? আমাদের একটু শান্তিতে থাকতে দাও প্লিজ।
আরশি: বাব্বাহ্ কাব্য’র বউ দেখি আজ শান্তভাবে কথা বলছে।
আমি: আমাদের কারো মন ভালো নেই প্লিজ ফোনটা রাখো।
আরশি: আমি তোমাদের শান্তিতে থাকতে দিবো তবে একটা শর্ত আছে।
আমি: কি শর্ত?
আরশি: কাব্য’র নামের সমস্ত সম্পত্তি আমার নামে দানপত্র করে দিতে হবে। অবশ্য ফারাবীর যা যা আছে তা দিয়ে তোমরা সবাই খুব ভালো থাকতে পারবে।
আমি: আর যদি না দেই?
আরশি: ওইযে আবারো অশান্তি হবে।
আমি: তোর যা মন চায় করেনে খুব তাড়াতাড়ি আমি তোকে আর শুভ্রাকে পুলিশে দিবো।
আরশি: আমি কোথায় আছি সেটা আগে জানার চেষ্টা কর তারপর নাহয় পুলিশে… (ফোন কেটে দিলাম, ওর এসব বকবকানি আর ভালো লাগছে না)

রুমে এসে দেখি কাব্য ঘুমিয়ে পড়েছে। মাত্র আটটা বাজে এখনি ঘুমিয়ে পড়লো। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে কিছুক্ষণ ডাকলাম কিন্তু উঠলো না। কাব্য উঠছে না দেখে আমিও চুপচাপ ওর পাশে শুয়ে পড়লাম।

মনে হচ্ছে আমি কোনো ফুলের বাগানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি। চারপাশে নানানরকম এর ফুল। কিন্তু আমি এখানে কেন এইটা কোন জায়গা? চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখছি হঠাৎ একটা বাচ্চার দিকে চোখ পড়লো। বাচ্চাটা বাগানের মধ্যে একা একা কি করছে আর ও আমার দিকে তাকিয়ে এভাবে হাসছে কেন? ছোট্ট একটি বাচ্চা কিন্তু কতো সুন্দর একটা হাত দিয়ে আমাকে ওর কাছে ডাকছে মনে হচ্ছে ও সবকিছু বুঝে আর আমি যেন ওর মা। দৌড়ে বাচ্চাটার কাছে আসলাম কিন্তু বাচ্চাটা কোথায় চলে গেলো, এমন হুট করে কোথায় হারিয়ে গেলো ও? বাগানের চারপাশে ওকে পাগলের মতো খুঁজছি কিন্তু কোথাও তো নেই, কোথায় হারিয়ে গেলো ও?
হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো, তারমানে আমি এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম। এই শীতের রাতেও আমার শরীর প্রচুর ঘামছে, কাব্য’র দিকে তাকালাম ও ঘুমে বিভোর। তাড়াতাড়ি উঠে বারান্দায় চলে আসলাম।

দূর থেকে ফজরের আযান ভেসে আসছে, জানিনা এই ভোরবেলা এমন স্বপ্ন কেন দেখেছি। খুব কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে চিৎকার করে আল্লাহ্‌ কে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে “কেন দেখালে এমন স্বপ্ন? আমি তো সব ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম তাহলে হঠাৎ কেন এই স্বপ্ন দেখালে”

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ২৪

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ২৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

হুট করে ঘুম ভেঙে গেলো, মনে পড়লো আমি যে রাগ করে এসে বারান্দায় ঘুমিয়েছি। চোখ খুলে তাকাতেই নিজেকে বিছানায় দেখে বেশ অবাক হলাম। কিন্তু কাব্য তো পাশে নেই ও কোথায় গেলো। আচ্ছা আমাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ও বারান্দায় গিয়ে ঘুমায়নি তো? তাড়াতাড়ি উঠে বারান্দার দিকে পা বাড়ালাম, কিন্তু বারান্দার দরজাটা তো ভিতর থেকে বন্ধ তাহলে ও গেলো কোথায়?
কাব্য: আমি এখানে। (কাব্য’র কন্ঠ শুনে পিছনে তাকালাম, রুমের ভিতর এসে ঢুকলো হাতে খাবারের প্লেট। মাঝরাতে খিদে তাহলে লেগেছে ভালো ভাবেই)
কাব্য: এসো খাবে।
আমি: তোমাকে কি আমি বলেছি আমার খিদে লেগেছে?
কাব্য: সবকিছু বলতে হয় না।
আমি: ওহ তাই?
কাব্য: জ্বী তাই, ভালোবাসি তো তাই এইটুকু বুঝি। (প্লেট টেবিলে রেখে আমার কাছে এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো। বাহ্ সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলো)
কাব্য: ও তিলো খাবে চলো খুব খিদে লেগেছে।
আমি: তোমার খিদে লেগেছে তুমি গিয়ে খাও আমাকে ছাড়ো ঘুমাবো।
কাব্য: হু এখন তো আমাকে রেখে ঘুমাবেই আমি যে এতোক্ষণ বারান্দায় বসে ছিলাম তোমার পাশে এসব তো আর দেখনি।
আমি: বলেছিলাম নাকি যে আমার পাশে এসে বসো আমার ভয় লাগে।
কাব্য: আমার তিলো পাগলী ভয় পায় না আমি জানি সেটা, ভয় পেলে কি আর এতো গোয়েন্দাগিরি করতো।
আমি: ছাড়ো বলছি।
কাব্য: প্লিজ খাবে চলো। আমি জানি তোমার খুব খিদে লেগেছে।
আমি: ভালো হবে না কিন্তু…
কাব্য: ভালো তো হচ্ছেই না, আমি খিদে সহ্য করতে পারিনা পেটে ব্যথা করছে। (দ্যাত রাগ করে থাকারও উপায় নেই)
আমি: চলো।
কাব্য: হুহুহুহু রাগ শেষ।
আমি: এই মাঝরাতে পাগলের মতো হেসো না ভূতেরা ভয় পাবে।
কাব্য: আমার হাসি এতোটাই খারাপ যদি হয় তাহলে আমি যখন হাসি তখন আমার তিলো পাগলী মুগ্ধ নয়নে দেখে কেনো?
আমি: তিলো পাগলীর বয়েই গেছে এমন বানরমার্কা হাসি মুগ্ধ নয়নে দেখার জন্য।
কাব্য: হু।
আমি: হাতে ঠান্ডা লাগে হাত দিয়ে খেতে পারবো না খাইয়ে দাও।
কাব্য: রাগ করে নিজেকে কষ্ট দাও কেন বলতো, খেয়ে নিলেই পারতে।
আমি: তুমি পারবে আমাকে ছাড়া খেয়ে নিতে? (কাব্য কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ খাচ্ছে সাথে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে)
আমি: এতো রাতে খাবার গরম…
কাব্য: গরম করে এনেছি।
আমি: হু?
কাব্য: অবাক হচ্ছ কেন এই শীতের মধ্যে আমার বউ ঠান্ডা খাবার খাবে নাকি? (এখন বউ সন্দেহ করার সময় মনে ছিল না এসব। আর কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নিলাম)

খাওয়া শেষে কাব্য প্লেট রাখতে গেলো, আমি এসে চুপচাপ বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়লাম।
কাব্য: এতো দূরে শুয়ে আছ কেন?
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: তিলো ও তিলো প্লিজ আমার বুকে আসো।
আমি: একদম চিল্লাবা না ঘুমুতে দাও।
কাব্য: রেগে থাকাটা স্বাভাবিক কিন্তু আমি তো আমার ভুল বুঝতে পেরেছি ক্ষমা করা যায় না?
আমি: তোমার সবচেয়ে বড় ভুল তুমি আমার থেকে আবারো কথা লুকিয়েছ আর এর জন্য তুমি কখনো ক্ষমা পাবে না।
কাব্য: যখন আব্বু আম্মুর থেকে দূরে চলে এসেছিলাম তখন তো পুরো একা ছিলাম, হ্যাঁ ফারাবী অয়ন হিয়া ওরা ছিল কিন্তু আব্বু আম্মুর ভালোবাসাটা তো ছিল না। সব কষ্ট সয়ে নিয়ে বড় হয়েছি হিয়াকে আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছি। সব কিছুর মাঝে সম্পর্ক নামক জিনিসটার প্রতি ঘৃণা চলে এসেছিল কিন্তু তিনবছর আগে হুট করে আরশি আমার জীবনে আসে। জানো আরশির প্রতি খুব দূর্বল হয়ে পড়েছিলাম খুব ভালোবাসতাম ওকে আর আরশি আমার এই দূর্বলতার সুযোগ নেয়। দুই বছর সম্পর্ক ছিল, এই দুই বছরে আরশি আমার থেকে কতো কোটি টাকা নিয়েছে তুমি ভাবতেও পারবে না। কয়েকদিন পর বিয়ে করবো, নেক্সট মাসে বিয়ে করবো এসব বলে ও টাকা নিতো আমি ওকে বিশ্বাস করে দিতাম কিন্তু পরে জানতে পারি আরশির অন্য ছেলের সাথে রিলেশন আছে। তারপর একদিন আরশি আমাকে প্রচুর ড্রিংক করায় কিছু বুঝার মতো অবস্থায় ছিলাম না আমি, এই সুযোগে আরশি আমার সিগনেচার নিয়ে সবকিছু ওর নামে নিতে চেয়েছিল কিন্তু ফারাবী চলে আসাতে পারেনি। সেদিন আরশিকে পুলিশে দিয়েছিলাম আর সাথে ভালোবাসা সম্পর্ক এসবের প্রতি ঘৃণা জন্মেছিল মনে। কিন্তু এক বছর পর আবারো তুমি আসলে আমার জীবনে। বিশ্বাস করো তোমাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি আর তাই তোমাকে হারানোর ভয় সবসময় আমাকে তাড়া করতো এখনো করে, তাইতো আরশির কথাটা লুকিয়ে রেখেছিলাম ভয় হতো যদি ভুল বুঝে ছেড়ে চলে যাও। (কাব্য মাথা নিচু করে খুব কাঁদছে, নাহ আর রাগ করে থাকতে পারবো না। ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে জরিয়ে ধরলাম)
আমি: কেঁদো না আমি তোমাকে ছেড়ে কখনো যাবো না, শুধু প্লিজ আমার কাছে কিছু লুকিয়ে রেখো না। জানো তো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা খুব শক্ত একটা বাঁধন, কিন্তু এই বাঁধনটাও ছিঁড়ার ক্ষমতা রাখে সন্দেহ, রাগ, অভিমান। হ্যাঁ প্রত্যেকটা সম্পর্কে রাগ অভিমান থাকা প্রয়োজন কিন্তু সেটা দীর্ঘ সময়ের জন্য না, একজন রাগ করলে অন্য জন সেটা ভাঙিয়ে নিলে তবেই সম্পর্ক সুন্দর হয়। আর দুজনই যদি মনের মধ্যে রাগ অভিমান সন্দেহ এসব পুষে রাখে তাহলে সম্পর্কটা আস্তে আস্তে ভাঙতে শুরু করে। আর একটা কথা মনে রেখো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা একটা পবিত্র সম্পর্ক আর এই পবিত্রতা দিয়ে দুজন মিলে সব বিপদের মোকাবিলা করা যায় তাই কখনো ভালোবাসার মানুষের থেকে কিছু লুকাতে যেও না।
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: কি হলো এভাবে তাকিয়ে কি দেখছ?
কাব্য: আমি আমাদেরই শত্রুর কথায় তোমাকে সন্দেহ করেছি তাও ছোট ভাইকে নিয়ে এইটা তো অনেক বড় অন্যায়, তুমি আমার এতো বড় অন্যায়টা ক্ষমা করে দিলে?
আমি: হ্যাঁ দিলাম কারণ ভালোবাসা এমন এক জিনিস যা ক্ষমা করতে শিখায়। যদি তোমাকে ক্ষমা নাই করতে পারলাম তাহলে তোমাকে আমি আবার ভালোবাসি কিভাবে। আচ্ছা তুমিই বলো আমি যদি তোমাকে ক্ষমা না করে রাগটা মনের মধ্যে পুষে রাখতাম তাহলে কি আমাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতো না?
কাব্য: ক্ষমা করে দাও আমাকে।
আমি: হুম করে তো দিয়েছি তবে আমার একটা কথা রাখতে হবে তোমাকে।
কাব্য: কি?
আমি: আগামীকাল আব্বুকে আনতে যাবো তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে।
কাব্য: কিন্তু…
আমি: প্লিজ আর না অনেক হয়েছে। তুমি তো ভালোবাস আব্বু আম্মুকে তাহলে?
কাব্য: আচ্ছা তুমি আব্বুকে ফেলে কিভাবে?
আমি: তুমি যদি লুকিয়ে লুকিয়ে গিয়ে আব্বুকে দেখতে পারো তাহলে আমি আব্বুর সামান্য ঠিকানাটা জানতে পারবো না?
কাব্য: আব্বুর ঠিকানা তো শুধু আমিই জা…
আমি: তোমার ডায়েরি থেকে পেয়েছি। (কথাটা বলেই চোখ বন্ধ করে ফেললাম, ওর লাইব্রেরিতে ঢুকেছি না জানি কতোটা রেগে যাবে এখন। সত্যি কথাটা তো লুকিয়ে রাখা ঠিক না তাই বলে দিলাম কিন্তু কাব্য কোনো রাগ দেখাচ্ছে না কেন? এক চোখ দিয়ে ওর দিকে তাকালাম, ও তো হাসছে)
আমি: এই তুমি হাসছ কেন?
কাব্য: তিলো তাহলে ডাক্তারবাবুকে ভয় পায়।
আমি: হুহ মুটেও না।
কাব্য: দেখলাম তো। আচ্ছা ডায়েরি কোথায় পেয়েছ।
আমি: যেখানে রাখো সেখানে পেয়েছি।
কাব্য: যেহেতু আব্বুকে ফিরিয়ে আনতে চাইছ তাই আর কোনো প্রশ্ন করবো না কিন্তু আব্বু আসবেন তো?
আমি: অপরাধ উনারা করেছিলেন তাই আমার বিশ্বাস আসবেন।
কাব্য: ঠিক আছে আমি যাব কিন্তু আম্মু?
আমি: আম্মুকেও খুঁজে বের করবো।
কাব্য: আমিও তো জানিনা আম্মু কোথায় আছেন বা বেচ…
আমি: প্লিজ এসব বলো না আমি আম্মুকে ঠিক খুঁজে বের করবো।
কাব্য: হুম।
আমি: এবার ঘুমুতে দাও প্লিজ।

বিছানায় এসে শুতেই কাব্য’র ফোন বেজে উঠলো, এতো রাতে কে ফোন করলো?
আমি: কে ফোন দিয়েছে?
কাব্য: শুভ্রা।
আমি: আমার হাতে দাও। (কাব্য’র থেকে ফোন এনে আমি রিসিভ করলাম)
শুভ্রা: কাব্য শুননা আ…
আমি: মাঝরাতে ফোন দিয়ে ন্যাকামি হচ্ছে।
শুভ্রা: এই তুমি ফোন রিসিভ করেছ কেন আর তুমি কাব্য’র কাছে নাকি? তোমাদের তো একসাথে থাকার কথা না।
আমি: ওমা তাই বুঝি, তাহলে কাব্য’র বুকে কি আমার আত্মা ঘুমাচ্ছে?
শুভ্রা: আমি তো তোমাদের আলাদা করার জন্য পি…
আমি: আমাদের আলাদা করা এতো সহজ না।
শুভ্রা: শুনো আমি কাব্য’কে ভালোবাসি আর তোমাদের ডিভোর্সটা খুব তাড়াতাড়ি করাবো এখন ওর বুক থেকে সরো বলছি।
আমি: ডাক্তারবাবু আমাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরো তো।
শুভ্রা: তিলোত্তমা আমি কিন্তু তোকে খুন করবো। (আরে কাব্য দেখি সত্যি সত্যি দুষ্টুমি শুরু করে দিছে আমি তো শুভ্রাকে রাগানোর জন্য বলেছি। কাব্য’কে সরিয়ে দিতে চাইলাম ও উল্টো আমাকে জরিয়ে ধরে আমার গলায় নাক ঘষতে শুরু করেছে)
শুভ্রা: কিরে কথা বলছিস না কেন ভয় পেয়েছিস খুন এর কথা শুনে?
আমি: স্বামী যদি বুকে জরিয়ে ধরে এভাবে আদর করে তাহলে কি মুখ দিয়ে কথা আসবে তুমিই বলো তো?
শুভ্রা: আমি যখন বলেছি তোদের আলাদা করবো তাহলে করবোই প্রয়োজন হলে আবারো আরশির সাহায্য নিবো।
আমি: তোমাদের হাতে বেশি সময় নেই যা করার করে নাও কারণ খুব তাড়াতাড়ি আমি তোমাদের পুলিশে দিবো।
কাব্য: তিলো ফোনটা রাখো তো তোমাকে একটু ভালোভাবে আদর করতে দাও।
শুভ্রা: কাব্য কি বলছ এসব আমি তোমাকে ভালোবাসি।
কাব্য: তুই কিরে শুভ্রা মাঝরাতে ফোন করে দুজন দম্পতির মিলন নষ্ট করছিস ফোন রাখ বলছি। (কথাটা বলেই কাব্য আমার গলার কাছে কামর বসিয়ে দিলো)
আমি: ডাক্তারবাবু আস্তে…
শুভ্রা: উফফফ অসহ্য।
কাব্য: কি ফোন রেখে দিয়েছে?
আমি: বেচারা ফোন এতোক্ষণে আছাড় খেয়ে নিহত হয়ে গেছে।
কাব্য: আর ভুলেও শুভ্রা মাঝরাতে ফোন করবে না হাহাহা।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: এইতো তুমি আবারো আমার হাসি দেখছ।
আমি: কচু দেখছি এই তুমি এতো সুন্দর কেন? সব মেয়েরা তোমার জন্য পাগল কেন? কালো হতে পারলে না তাহলেই তো আমাকে আর এতো জামেলায় পড়তে হতো না। (কাব্য আমার একটা হাত চেপে ধরে আমার বুকের উপর ওর তুতুনি রেখে আমার চোখের দিকে তাকালো)
কাব্য: আমি কালো হলে বুঝি তুমি আমাকে ভালোবাসতে?
আমি: ভালোবাসা সুন্দর চেহারা দেখে হয় না, সুন্দর মন দেখে হয়। তুমি প্রথম যেদিন হসপিটালে আমাকে ভালোবাসার কথা বলেছিলে তখন আমার বিশ্বাস হয়নি কিন্তু পরে তোমার পাগলামি কান্না সব কিছু দেখে বুঝতে পেরেছিলাম তুমি আমাকে সত্যি ভালোবাস আর তাই আমিও ভালোবেসেছি বুঝেছ ডাক্তারবাবু? (কাব্য’র নাকটা ধরে টেনে দিলাম)
কাব্য: হু বুঝেছি এবার আদর করতে দাও।
আমি: এই না প্লি…(আমাকে বলার সুযোগ না দিয়েই ওর ঠোঁট দুটু আমার ঠোঁটে ডুবিয়ে দিলো)

জানিনা আব্বুর অভিমান কিভাবে ভাঙাবো, আব্বু আসবেন কিনা সেটাও জানিনা কিন্তু আব্বুকে তো ফিরিয়ে আনতেই হবে। খুব ভয় হচ্ছে আমি পারবো তো? তার উপর আরশির লোকদের ভয়, সেদিনের মতো যদি আজ আবার…
কাব্য: উফফফ তোমার ভেজা চুলের গন্ধ আমাকে একেবারে মাতাল করে দেয়। (আয়নার সামনে বসে চুল আছড়াচ্ছিলাম আর এসব ভাবছিলাম হঠাৎ কাব্য কোথা থেকে এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে চুলে নাক ডুবিয়ে দিলো)
আমি: আরে কি হচ্ছে রেডি হতে হবে তো ছাড়ো।
কাব্য: তিলো আব্বু যদি না আসেন? (কাব্য আমাকে ছেড়ে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
আমি: আসবেন দেখো আমরা ঠিক আব্বুকে ফিরিয়ে আনতে পারবো।
কাব্য: হুম।

কাব্য আর আমি রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম। ড্রয়িংরুমে আসতেই হিয়ার সামনে পরে গেলাম।
হিয়া: এতো সকালে তোমরা কোথায় যাচ্ছ?
কাব্য: আ…
আমি: এখন বলা যাবে না সারপ্রাইজ…
হিয়া: সারপ্রাইজ?
আমি: হুম বিশেষ করে তোমার জন্য। আসি? (হিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হয়তো ভাবছে কিসের সারপ্রাইজ, ও তো আর জানেনা এতো বছর পর নিজের আব্বুকে ও কাছে পাবে)
আমি: ডাক্তারবাবু চলো।

কাব্য’কে গাড়িতে রেখে আমি একা আসলাম, কলিংবেল চাপতেই আব্বু এসে দরজা খুলে দিলেন। এই প্রথম উনাকে সামনাসামনি দেখছি এর আগে তো শুধু পুরনো পিক গুলো দেখেছি। আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, উনার পায়ে ধরে সালাম করলাম।
আব্বু: তুমি কে মা, এভাবে আমাকে সালাম করছ?
আমি: ভিতরে গিয়ে কথা বলি?
আব্বু: হুম আসো।

ড্রয়িংরুমে এসে বসতেই উনি আবার প্রশ্ন করলেন।
আব্বু: বললে নাতো তুমি কে?
আমি: আচ্ছা এই বাসায় আর কেউ থাকে না? না মানে অন্য কাউকে তো দেখতে পাচ্ছি না তাই জিজ্ঞেস করলাম। (আম্মু এখানে থাকলে তো উনি অবশ্যই বলবেন)
আব্বু: না মা আমি একাই থাকি আমার কেউ নেই।
আমি: সত্যি আপনার কেউ নেই? (আব্বুর মুখটা মলিন হয়ে গেলো, পরিবারের সবাই থেকেও নেই এইটার কষ্ট তো আর কম না)
আব্বু: কিন্তু তুমি কে?
আমি: আপনার কাব্য’র…
আব্বু: আমার কাব্য? (চমকে উঠলেন উনি)
আব্বু: তারমানে তুমি আমার বৌমা? (দূরের সোফাটায় বসে ছিলেন উনি, উঠে এসে আমার মাথায় হাত রাখলেন। উনার চোখ দুটু ভিজে গেছে)
আমি: আব্বু আমি আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি যাবেন না আপনার ছেলে মেয়ের কাছে?
আব্বু: আমার কাব্য আর হিয়া কেমন আছে?
আমি: বাবা মা ছাড়া সন্তান যেমন থাকে তেমনি আছে। (উনি মাথা নিচু করে চুপচাপ কেঁদে যাচ্ছেন)
আমি: আব্বু আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে কিন্তু আপনার ছেলেও এসেছে। (অবাক হয়ে তাকালেন উনি)
আব্বু: সত্যি বলছ মা?
আমি: হুম।
কাব্য’কে একটা মিসডকল দিতেই কলিংবেল বেজে উঠলো। আব্বু পাগলের মতো গিয়ে দরজা খুললেন। কাব্য আব্বুকে সালাম করতে যাবে তখনি আব্বু ওকে টেনে বুকে নিলেন। দুজনেই কাঁদছে আর আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে ওদের মিলন দেখছি। বাবা ছেলের ভালোবাসার কাছে আজ সব রাগ অভিমান হেরে গেলো।

চলবে?

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ২৩

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ২৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

চুপচাপ অয়নের পিছনে দাঁড়িয়ে আছি, আগের কথা গুলো ভেবে গাঁ শিউরে উঠছে আমার।
অয়ন: ভাবি প্লিজ ভয় পেয়ো না।
আমি: এখন কি হবে?
–কিছুই হবে না আমাদের কাজ হয়ে গেছে চলে যাচ্ছি। (লোকটার কথা শুনে অয়নের দিকে অবাক হয়ে তাকালাম)
অয়ন: মানে?
–মানে আমাদের কাজ হয়ে গেছে। (লোক দুটু চলে যাচ্ছে আমরা দুজন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কি হলো এইটা?)
অয়ন: ভাবি তোমার মাথায় কিছু ঢুকেছে আমার মাথায় কিন্তু কিছুই ঢুকেনি।
আমি: এই সময়ে তুমি আবার হাসছ, চলো সন্ধ্যা নেমে এসেছে এখানে থাকা ঠিক হবে না।
অয়ন: লোক দুইটার সাথে হাত মিলানো দরকার ছিল।
আমি: অয়ন ঠাট্টা রাখো চলো এখন।
অয়ন: ওকে চলো।

গাড়িতে বসে বসে ভাবছি বিষয়টা কি হলো, লোক দুইটা আমাদের কোনো ক্ষতি করলো না কেন? উল্টো বললো ওদের কাজ হয়ে গেছে কি কাজ হয়েছে ওদের?
অয়ন: ভাবি আমি কিন্তু এখন ঠাট্টা করছি না সিরিয়াসলি বলছি বিষয়টা কি হলো বলতো।
আমি: জানিনা বুঝতে পারছি না।
অয়ন: আচ্ছা লোক দুইটা কে?
আমি: ওরাই তো কক্সবাজার আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল।
অয়ন: ওরা তোমাকে মারতে চায় কেন?
আমি: আরশি টাকা দিয়ে করাচ্ছে এসব।
অয়ন: আআআররশি…(অয়ন হঠাৎ করে গাড়ি থামিয়ে দিলো, কি ব্যাপার ও আরশির নাম শুনে কেঁপে উঠলো কেন)
আমি: কি হলো অয়ন?
অয়ন: হুম কিছুনা।
আমি: আরশির নাম শুনে তুমি এমন কেঁপে উঠলে কেন?
অয়ন: কোথায় নাতো।
আমি: হুম চলো। (অয়ন এখনো কি যেন ভাবছে, আচ্ছা এমন নয় তো ওরা সবাই আরশির বিষয়ে আমার থেকে কিছু লুকুচ্ছে)
অয়ন: ভাবি তোমার এখানে আসাটা কিন্তু সার্থক হয়েছে।
আমি: কিভাবে?
অয়ন: ওই ঠিকানায় রেজাউল চৌধুরী মানে ভাইয়ার আব্বু থাকেন।
আমি: সত্যি বলছ?
অয়ন: হ্যাঁ আমি ওখানকার একজন লোককে জিজ্ঞেস করেছিলাম।
আমি: তারমানে আব্বুকে আমি পেয়ে গেছি এখন শুধু ওদের ভুল বুঝাবুঝি মিটিয়ে বাসায় নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা।
অয়ন: হুম।
আমি: কিন্তু আম্মু?
অয়ন: পেয়ে যাবে দেখো।
আমি: হুম।

বাসায় ফিরতে আটটা বেজে গেলো, কাব্য হয়তো চলে এসেছে। কলিংবেল বাজাতেই কাব্য এসে দরজা খুললো। ড্রয়িংরুমে ভাইয়া আর ভাবি বসা।
ভাইয়া: তিলোত্তমা কোথায় গিয়েছিলে?
আমি: একটু কাজ ছিল।
কাব্য: রাত আটটার সময় বাসায় ফিরেছ তা কি এমন কাজ ছিল জানতে পারি?
আমি: এভাবে কথা বলছ কেন?
কাব্য: তো কিভাবে বলবো? (বাহ্ শুভ্রার পাতানো জালে তো কাব্য আটকে গেছে)
অয়ন: ভাইয়া আমি বল…
আমি: অয়ন চুপ করো কিছু বলতে হবে না যাও রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।
কাব্য: তুমি কোথায় যাচ্ছ?
আমি: রুমে যাচ্ছি ফ্রেশ হবো।
কাব্য: আমার প্রশ্নের উত্তর পাইনি।
হিয়া: আমি দিচ্ছি তোমার প্রশ্নের উত্তর। (হিয়া নিচে নেমে আসছে, কি বলবে ও। হিয়া তো জানেইনা)
হিয়া: ভাবিকে আমি একটা কাজে পাঠিয়েছিলাম।
কাব্য: আর অয়ন?
হিয়া: ভাবিকে একা পাঠাবো নাকি তাইতো ছোট ভাইয়াকে সাথে পাঠিয়েছিলাম।
কাব্য: কিন্তু তু…
হিয়া: উত্তর তো পেয়ে গেছ তাহলে আর কথা কিসের। (কাব্য চুপচাপ রুমে চলে গেলো, আমিও চলে আসলাম)

ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি কাব্য মাথা নিচু করে বিছানায় বসে আছে। কাব্য কি সত্যি শুভ্রার পাতানো জালে পা দিলো নাকি?
আমি: হিয়ার বিয়ের কি হলো?
কাব্য: কাল ওরা আসবে তারিখ ঠিক করে যাবে।
আমি: রেগে আছ?
কাব্য: আমি রাগ করার কে?
আমি: বাব্বাহ্ আমার ডাক্তারবাবুটা একটু বেশিই রাগ করে ফেলেছে দেখছি।
কাব্য: তিলো ভালো লাগছে না একা থাকতে দাও। (কাব্য চুপচাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো)
আমি: খাবে না?
কাব্য: খিদে নেই।
আমি: ওকে আমিও খাবো না।
কাব্য কোনো উত্তর দিচ্ছে না দেখে ফোনটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে আসলাম। তিশাকে ফোন দিলাম।
তিশা: আমাকে তো ভুলেই গেছিস।
আমি: যা রহস্যের জালে আটকা পড়েছি আমি ভুলবোই তো।
তিশা: কি হয়েছে?
আমি: আমাকে মারার চেষ্টা করেছিল কাব্য’র এক্স জিএফ আর ও এখনো সবার ক্ষতি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
তিশা: কাব্য তো কখনো আমাকে ওর জিএফ সম্পর্কে কিছু বলেনি।
আমি: জানিস ওরা সবাই আমার থেকে কি যেন লুকিয়ে রাখছে।
তিশা: কি লুকুবে?
আমি: জানিনা।
তিশা: কাব্য’কে বলে মেয়েটার একটা ব্যবস্থা কর আর এসব নিয়ে ভাবিস না।
আমি: হুম। তোরা বিয়ে করছিস কবে?
তিশা: আমার পড়াশোনা শেষ হলে এখন তো… (হঠাৎ শুনতে পেলাম কাব্য কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে অনেকটা রেগে)
আমি: তিশা এখন রাখছি।
তিশা: ওকে।

ফোন রেখে রুমে আসলাম, আমাকে দেখে কাব্য ফোন কেটে দিলো। রাগে ওর চোখ দুটু লাল হয়ে আছে।
আমি: কি হয়েছে?
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: কি হলো আমার সাথে কথা বলছ না কেন?
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: দেখি তোমার ফোনটা দাও। (হাত বাড়াতেই কাব্য ফোনটা সরিয়ে ফেললো, তারমানে কাব্য শুভ্রার কথা বিশ্বাস করেছে। এখন ও রেগে আছে যাই বলি আরো রেগে যাবে পরে বুঝিয়ে বলতে হবে)
আমি: আপনজনদের উপর বিশ্বাস হারানো ঠিক না পরে পস্তাতে হয়। (কথাটা শুনে কাব্য আমার দিকে তাকালো। চুপচাপ এসে শুয়ে পড়লাম)

আমার তো বিশ্বাই হচ্ছে না যে কাব্য আমাকে আর অয়নকে সন্দেহ করছে সামান্য শুভ্রা মেয়েটার কথায়। অয়ন তো আমার ছোট ভাইয়ের মতো আর কাব্য কিনা ছিঃ।

সকালে ঘুম ভাঙতেই পাশ ফিরে তাকালাম, কাব্য তো পাশে নেই। কাব্য এতোটা চেঞ্জ হয়ে গেলো যে আজ আমাকে ডেকে তুললো না। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি আটটা বাজে, ইসস অনেক বেলা হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলাম।

কাব্য তো ড্রয়িংরুমেও নেই গেলো কোথায়?
ভাবি: চলে আসবে চিন্তা করিস না। (ভাবির কথা শুনে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেলাম)
ভাবি: কিছু খেয়ে নে রাতেও তো কিছুই…
আমি: ডাক্তারবাবু খেয়েছে?
ভাবি: তোকে ছাড়া কখনো খায়?
আমি: বাদ দাও তো।
ভাবি: না খেলে কিচেন থেকে চলে যা আমাকে হেল্প করতে হবে না।
আমি: এতো মেহমানের রান্না তুমি একা করবে?
ভাবি: হুম পারবো।
আমি: ডাক্তারবাবু আসলে খেয়ে নিবো।
ভাবি: ঠিক আছে।

ভাবিকে রান্নায় হেল্প করছি আর বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছি কাব্য তো এখনো আসলো না অনেক বেলা হয়ে গেছে তো। এই শুভ্রা আর আরশির ব্যবস্থা এখন করতেই হবে নাহলে শান্তিতে থাকতে পারবো না।
হিয়া: ভাবি বার বার ওদিকে কি দেখছ ভাইয়াকে ছাড়া বুঝি ভালো লাগছে না। (হিয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলাম। সত্যিই তো ভালো লাগছে না, ওকে ছাড়া সবকিছু কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগে)
হিয়া: চিন্তা করো না এখন না আসলে একটু পর তো বাসায় আসতেই হবে মেহমান আসবে না?
আমি: আচ্ছা হিয়া গতকাল তুমি মিথ্যে বললে কেন?
হিয়া: এইটা না বললে ভাইয়া তোমাকে বকা দিতো আরো অনেক প্রশ্ন করতো। আমি জানি তুমি আমাকে যে কথা দিয়েছ সে কথা রাখতেই কোথাও গিয়েছিলে।
আমি: হুম।
হিয়া: কথাটা কিন্তু রেখো ভাবি।
আমি: কথা যখন দিয়েছি রাখবো। তোমরা আমাকে একটা হেল্প করো।
হিয়া: কি?
আমি: আরশির বিষয়ে আমাকে সবকিছু বলো।
ভাবি: আআররশি ওর কথা তুই জানলি কিভাবে?
আমি: আচ্ছা এই নামটা শুনলে তোমরা সবাই এতো ভয় পাও কেন?
হিয়া: ভয় তো পাবোই ও যা…
কাব্য: তিলো রুমে এসো। (কাব্য চলে এসেছে দেখে চুপচাপ রুমে চলে আসলাম)

কাব্য দাঁড়িয়ে আছে জানি আজ অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, কিন্তু আরশির কথা সবকিছু না বললে আমিও কোনো প্রশ্নের উত্তর দিবো না।
কাব্য: গতকাল কোথায় গিয়েছিলে?
আমি: তার আগে তোমার ফোনটা আমার হাতে দাও সব প্রশ্নের উত্তর দিবো। (কাব্য ফোনটা আমার হাতে দিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। যা সন্দেহ করেছিলাম তাই, শুভ্রা কাব্য’কে মেসেজ তো করেছেই সাথে অয়ন আর আমার পিক দিয়েছে। ভয় পেয়ে অয়নের হাত চেপে ধরেছিলাম, আমাদের দুজনের এই হাতের পিক। এখন বুঝলাম লোক দুটু কাজ হয়ে গেছে বলেছিল কেন)
আমি: আব্বুকে খুঁজতে গিয়েছিলাম এর বেশি কিছু এখন জানতে চেয়ো না। পিক নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে অনেক কথা বলতে হবে, বাড়িতে মেহমান আসছে কোনো অশান্তি চাই না।
কাব্য: মনে রেখো মেহমান চলে যাওয়ার পর আমি আবারো প্রশ্ন করবো তখন কিন্তু এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে না।
আমি: কখোনোই এড়িয়ে যাইনি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত আছি। আর হ্যাঁ তুমিও প্রস্তুত থেকো কারণ আমাকে প্রশ্ন করলে আগে তোমার অতীত গুলো সামনে আনতে হবে। (কাব্য’কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম)

হিয়াকে সাজাচ্ছি কিন্তু কোনো কিছুতে মন বসছে না সবকিছু অসহ্য লাগছে, কাব্য আমাকে সন্দেহ করেছে তাও একটা বাইরের মেয়ের কথায় এইটা ভেবেই কান্না পাচ্ছে। যদি একটু কাঁদতে পারতাম তাহলে হয়তো কিছুটা হালকা লাগতো নিজেকে।
হিয়া: ভাবি কি হয়েছে?
আমি: আচ্ছা হিয়া প্রিয় মানুষ সন্দেহ করলে এতো কষ্ট হয় কেন?
হিয়া: হঠাৎ এই প্রশ্ন করছ কেন কিছু হয়েছে কি (আনমনে কি বলে ফেললাম, ওরা এসব জানলে তো কষ্ট পাবে)
আমি: এমনি বলেছি চলো।

হিয়া মেহমানের সামনে বসে আছে আর আমি ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছি, ইচ্ছে হচ্ছে রুমে চলে যাই কোনো কিছুতে মন বসাতে পারছি না। শুভ্রা যা বলেছে সব তো মিথ্যে কিন্তু কাব্য আমাকে সন্দেহ করলো কিভাবে, ও না আমায় ভালোবাসে, এই ওর ভালোবাসা এই ওর আমার প্রতি বিশ্বাস।
ভাইয়া: হিয়া তোর মতামত কি (হঠাৎ ভাইয়ার কথায় ভাবনায় ছ্যাদ পড়লো)
অয়ন: ভাবি হিয়াকে জিজ্ঞেস করো আকাশকে পছন্দ হয়েছে কিনা।
আমি: ওকে বরং রুমে নিয়ে যাই তারপর ওর মতামত জেনে জানিয়ে দিবো।
ছেলের বাবা: ঠিক আছে মা।

হিয়াকে নিয়ে রুমে আসলাম পিছু পিছু ভাবিও আসলেন।
ভাবি: হিয়া কি বলবো ওদের আকাশকে পছন্দ হয়েছে?
হিয়া: পছন্দ তো হয়েছে কিন্তু ছোট ভাবি…
আমি: চিন্তা করোনা আমার কথা আমি রাখবো।
হিয়া: ওকে ভাইয়াদের গিয়ে বলো আমি রাজি।
ভাবি: তিলোত্তমা চল।
আমি: তুমি যাও আমার শরীর ভালো লাগছে না রুমে যাচ্ছি।

দৌড়ে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম। আর পারছি না খুব কষ্ট হচ্ছে। কাব্য আমাকে এতোটাই সন্দেহ করেছে যে আজ একবারো আমার দিকে তাকায়নি অথচ অন্যদিন…

হঠাৎ দরজায় ধাক্কার শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেলো, কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। দরজা খুলে কাব্য’কে দেখে আবার বিছানায় এসে বসে পড়লাম।
কাব্য: কি হয়েছে তোমার নিচে যাওনি কেন, আকাশের মা তোমাকে খুঁজেছে।
আমি: চলে গেছে ওরা?
কাব্য: কয়টা বাজে দেখো তাহলেই বুঝতে পারবে। (ওর কথা শুনে ঘড়ির দিকে তাকালাম রাত নয়টা বাজে, এতোক্ষণ ঘুমিয়েছি আমি)
কাব্য: তোমার চোখ লাল হয়ে আছে কেন, এতো সময় কান্না করেছ তাইনা?
আমি: প্রিয় মানুষ যখন সন্দেহ করে তখন তো কান্না পাবেই।
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: তোমার প্রশ্ন গুলো করবে না? অয়নের সাথে আমার কিসের সম্পর্ক জিজ্ঞেস করবে না? অয়নের সাথে কোথায় লং ড্রাইভে গিয়েছিলাম জিজ্ঞেস করবে না? অয়নের হাত চেপে ধরেছিলাম কেন জিজ্ঞেস করবে না?
কাব্য: হুম বলো।
আমি: তার আগে তুমি আমাকে বলো, তুমি কাকে বেশি বিশ্বাস করো আমাকে নাকি আরশি আর শুভ্রাকে? (সবাই যেমন আরশি নাম শুনে কেঁপে উঠে কাব্যও তেমনি কেঁপে উঠলো)
কাব্য: আরশির ব্যাপারে তুমি জানলে কিভাবে?
আমি: সামান্য নাম জানতে চেয়েছিলাম তাতেই রাগ করে আমার থেকে একরাত একদিন দূরে থেকেছ আর আজ এই আরশির জন্যই আবার আমাকে সন্দেহ করছ।
কাব্য: সন্দেহ করার জন্য যথেষ্ট কারণ আছে তাই করেছি।
আমি: হুম তোমার এক্স জিএফ তোমাকে পিক দিয়েছে যেহেতু তাহলে তো তুমি নিজের বউকে বিশ্বাস না করে এক্স জিএফ কেই বিশ্বাস করবে।
কাব্য: তিলো ত…
আমি: আমি কিন্তু তোমাকে আগেই বলেছিলাম আমার থেকে কিছু লুকাবে না কিন্তু তুমি লুকিয়েছ। আরশির কথা আমাকে বললে কি হতো আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যেতাম? একটা মানুষের কিছু অতীত থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক এইটা লোকানোর কি আছে।
কাব্য: আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
আমি: আব্বুকে খুঁজতে গিয়েছিলাম একা এতো দূর যাওয়া সম্ভব ছিল না তাই অয়নকে সাথে নিয়েছিলাম, সেখানে তোমার আরশির লোক আমাদে…
কাব্য: আমার আরশি মানে?
আমি: হ্যাঁ তোমারই আরশি আমি তোমার কেউ না কারণ তুমি আমাকে নয় আরশিকে বিশ্বাস করেছ। লোক দুটুকে দেখে আমি ভয় পেয়ে অয়নের হাত চেপে ধরেছিলাম। অয়নকে আমি অন্য কিছু ভেবে ওর হাত চেপে ধরিনি ছোট দেবর ভেবেই ধরেছিলাম আর ছোট দেবর কেমন হয় জানো? ছোট ভাইয়ের মতো হয়। এতো ভয় পেয়েছিলাম কেন জানো কারণ ওরাই আগে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল আমার বাচ্চাটাকে খুন করেছিল। আর আরশি এই সময়টার সুযোগ নিয়েছে, পাত পেতেছে ওরা আর তুমি বোকার মতো ওদের পাতানো ফাদে পা দিয়েছ আমাকে অবিশ্বাস করেছ নিজের ছোট ভাইকে অবিশ্বাস করেছ। ছিঃ অয়ন একবার এসব শুনলে তো তোমার প্রতি ওর শ্রদ্ধাটাই চলে যাবে।
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: এখন চুপ হয়ে আছ কেন আর প্রশ্ন করবে না? তুমি অতীতে কি করেছ না করেছ এসবের হিসাব এখন আমাদের দিতে হচ্ছে কেন? তুমি আরশির সাথে প্রতারণা করেছ আর সেটার ফল ভোগ করতে হয়েছে আমার সন্তানকে, পৃথিবীতে আসার আগেই ওকে জীবন দিতে হয়েছে শুধু তোমার জন্য।
কাব্য: তিলো।
আমি: এভাবে তাকাচ্ছ কেন ভুল কিছু বলেছি নাকি? আরশির সাথে কি প্রতারণা করেছ বলো?
কাব্য: সবাই জানে আমি আরশির সাথে কোনো প্রতারণা করিনি বরং ও করেছিল, আমাকে মদ খাইয়ে মাতাল করে সবকিছু ওর নামে লিখে নিতে চেয়েছিল। আমি সিগনেচার করার আগ মুহূর্তে ফারাবী চলে এসেছিল তারপর ওকে জেলেও দেয়েছিলাম। আমি তো জানিই না আরশি জেল থেকে কবে ছাড়া পেয়েছে।
আমি: হুম এবার পারলে তোমার আরশিকে সামলাও, ও যদি আর কখনো আমাদের কারো কোনো ক্ষতি করেছে তাহলে ওকে আবার জেলে যেতে হবে।
কাব্য: বার বার আমার আরশি বলছ কেন?
আমি: কারণ আরশিই তোমার ভালোবাসা আমি তোমার কেউ না। আর শুনো তোমার হয়তো আব্বু আম্মুকে প্রয়োজন নেই কিন্তু হিয়ার আছে তাই আমি উনাদের খুঁজে আনবো। অবশ্য আব্বুকে পেয়ে গেছি এখন আম্মুকে খুঁজা বাকি শুধু।
কাব্য: কোথায় যাচ্ছ?
আমি: যে আমাকে বিশ্বাস করে না তার সাথে কথা বলার ইচ্ছা বা এক রুমে থাকার ইচ্ছা কোনটাই আমার নেই। (রুম থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলাম পরক্ষণেই মনে হলো অয়ন যদি কিছু বুঝতে পারে তাহলে তো কষ্ট পাবে। কাব্য যতোই ভুল বুঝুক আমি তো জানি অয়ন আমাকে শুধু ভাবি নয় বোনও ভাবে। রুমের বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না যে কেউ সন্দেহ করবে তাই বারান্দায় চলে আসলাম)

বারান্দায় রাখা কাউচে এসে শুয়ে পড়লাম, এখানেই ঘুমাবো আজ। কাব্য’কে শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন, বউকে বিশ্বাস না করে এক্স জিএফ কে বিশ্বাস করার শাস্তি আজ ও পাবে। আর ওর আরশিকে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থাটাও খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে, অন্য কিছুর জন্য না হউক আমার সন্তানকে খুন করেছে এইটার শাস্তি তো ওকে আমি দিবোই।

চলবে?

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ২২

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ২২

লেখিকা: সুলতানা তমা

আয়নার সামনে বসে চুল আছড়াচ্ছি আর বার বার কাব্য’র দিকে নজর পড়ছে। আয়নাতে ওকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে খুব মায়াবী লাগছে কিন্তু ওর ঘুম দেখে হিংসেও হচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছে ঘুমটা ভাঙিয়ে দেই। কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখতে নেই তাই কাব্য’র পাশে এসে দাঁড়ালাম, ভেজা চুলগুলো মুঠো করে ওর মুখের উপর ধরলাম। চুল থেকে টুপটুপ করে পানি ওর চোখে মুখে পড়তেই এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ঘুম ঘুম চোখে তাকালো।
কাব্য: তিলো কি হচ্ছে?
আমি: যা হবার তাই হচ্ছে।
কাব্য: ঘুমুতে দাও প্লিজ।
আমি: উঁহু হবে না উঠে পড়ো।
কাব্য: তুমি কিন্তু বলেছিলে নামাজ পড়লে ঘুমুতে দিবে, তোমার সাথে তো নামাজ পড়েছি তাহলে এ…
আমি: রাতে আমাকে ঘুমুতে দাওনি এখন তুমি নাক ডেকে ঘুমাবে তা কি করে হয় উঠো বলছি।
কাব্য: প্লিজ লক্ষীটি। (নাহ ওর ঘুম এভাবে ভাঙানো যাবে না অন্য কিছু ভাবতে হবে। আচমকা দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলাম)
আমি: এই দশটা বাজে তুমি হসপিটালে যাবে না। (হিহিহি কাজ হয়ে গেছে কাব্য এক লাফে উঠে বসে গেছে)
কাব্য: মাত্র সাতটা বাজে আর আজ তো শুক্রবার ফাজি মেয়ে। (ঘড়ি দেখে আবার শুয়ে পড়লো দ্যাত)
আমি: রাতে আমাকে ঘুমুতে দিবে না শুধু দুষ্টুমি করবে আর সকালে উনি নাক ডেকে ঘুমুবে আমার ঘুমাবার উপায় নেই। আজ কে দুষ্টুমি করে দেখবো। (ইচ্ছে করেই হাতের চিরুনিটা কাব্য’র উপর ছুড়ে ফেলে দিলাম। চলে আসতে চাইলাম আচমকা কাব্য আমার হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে আমাকে ওর বুকে শুয়ে দিলো)
আমি: উফফ কোমরটা বোধহয় ভেঙেই গেছে।
কাব্য: পড়েছ তো আমার উপর তোমার কোমর ভাঙবে কিভাবে। ভেঙেছে তো আমার কোমর যা মুটকি তুমি।
আমি: আমি মুটকি হ্যাঁ, আর আমি পড়েছি নাকি তুমিই তো হাত ধরে টান দিয়েছ।
কাব্য: আস্তে কিল দাও লাগছে তো।
আমি: আর আমাকে মুটকি বলবে? (আরো কতোগুলো কিল দিলাম ওর বুকে)
কাব্য: এমন চিকনিকে মুটকি বলতে আমার বয়েই গেছে।
আমি: হুহ।
কাব্য: ভেজা চুলে তোমাকে খুব স্নিগ্ধ লাগছে ইচ্ছে হচ্ছে…
আমি: আবার দুষ্টুমি শুরু করেছ ছাড়ো বলছি।
কাব্য: প্লিজ। (কাব্য আমার গলায় চুমু দেওয়ার জন্য ওর মুখ এগুতে শুরু করলো, একটা হাত দিয়ে আটকে দিলাম। কাব্য এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
আমি: কি হলো রাগ করেছ?
কাব্য: আমাকে ছেড়ে চলে যাবে নাতো কখনো? (আমার চোখের সামনে চলে আসা চুলগুলো কানের কাছে গুঁজে দিয়ে আবার আমার চোখের দিকে তাকালো, ওর চোখে পানি ছলছল করছে)
আমি: হঠাৎ এসব বলছ কেন আর আমি তোমাকে ছেড়ে যাবোই বা কেন?
কাব্য: জানিনা খুব ভয় হয় যদি তোমাকে হারিয়ে ফেলি। (আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো, ওর বুকে মাথা রেখে চুপচাপ শুয়ে আছি)
কাব্য: গতকাল এতোটা সময় তোমার থেকে দূরে থাকতে চাইনি, হঠাৎ হসপিটাল থেকে ফোন এসেছিল আমার ফোনটা আদনান এর বাসায় রেখেই চলে গিয়েছিলাম তারপর আর সুযোগই হয়নি। জানো তুমি কতোটা কষ্ট হয়েছিল আমার, তুমি কখনো চলে গেলে আমি মরেই যাবো।
আমি: পাগলের মতো কি বলছ এসব আর কখনো যেন এসব না শুনি।
কাব্য: হু। (কাব্য’র চোখের পানি মুছে দিয়ে ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু দিলাম)
কাব্য: তিলো তোমার সাথে কিছু কথা ছিল হিয়াকে নিয়ে এখন বলবো?
আমি: বলো।
কাব্য: হিয়াকে এর আগেও অনেক বার বিয়ের কথা বলেছি ও সোজা না করে দিয়েছে এখন তো ও দেশে এসেছে ভাবছিলাম বিয়েটা দিয়ে দিলে…
আমি: হিয়া রাজি না কেন?
কাব্য: ওইযে আমার উপর রেগে আছে।
আমি: ভাইয়া অয়ন ওরা জানে?
কাব্য: না আজ বলবো সবাইকে।
আমি: ছেলে দেখেছ?
কাব্য: হুম ছেলের পরিবার ব্যাংকক থাকে, বিয়ের পর হিয়াকেও নিয়ে যাবে।
আমি: তোমরা কথা বলো আমি হিয়াকে রাজি করাবো।
কাব্য: প্লিজ তুমি চেষ্টা করে দেখো, হিয়াকে ভালো ছেলে দেখে ভালো পরিবার দেখে বিয়ে দেওয়াটাই এখন আমার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
আমি: তুমি চিন্তা করোনা আমি ওকে ঠিক রাজি করাবো। এখন উঠে ফ্রেশ হয়ে নাশতা খেতে আসো।
কাব্য: ওকে।

টেবিলে নাশতা আনছি আর আরশির বলা কথা গুলো ভাবছি, সত্যি ও হিয়ার কোনো ক্ষতি করবে নাতো? একবার হাত কেটেছে পরে আবার কি করে বসবে কে জানে। হিয়ার বিয়েটা হয়ে গেলে ওকে তো ব্যাংকক নিয়ে যাবে তখন আরশি আর হিয়ার খুঁজ পাবে না, আমিও এই চিন্তা থেকে মুক্তি পেতাম। কিন্তু হিয়া কি রাজি হবে?
ভাবি: তিলোত্তমা কি হয়েছে তোর অন্যমনস্ক হয়ে আছিস।
আমি: হুম কিছু হয়নি।

সবাই নাশতা খাচ্ছে কাব্য বার বার হিয়ার দিকে তাকাচ্ছে, বলতে ভয় পাচ্ছে ও। আমাকেই শুরু করতে হবে।
আমি: ডাক্তারবাবু তুমি না আজ কি যেন বলবে বলছিলে সবাইকে।
ভাইয়া: কিরে কাব্য কি বলবি?
কাব্য: আসলে…(আবার হিয়ার দিকে তাকাচ্ছে, কোনো ভাই ছোট বোনকে এতোটা ভয় পায় এই প্রথম দেখলাম)
ভাইয়া: হ্যাঁ বল।
কাব্য: আমি হিয়ার জন্য ছেলে দেখেছি ওর বিয়ে দিতে চাই। (একদমে বলেই হিয়ার দিকে তাকালো, হিয়া তো খুব রেগে গেছে। সবাই হিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে)
হিয়া: আগের কথা গুলো ভুলে গেছ? ভুলে গেলে আবারো বলছি আমি বিয়ে করবো না। (হিয়া উঠে রুমে চলে গেলো। কাব্য হাতের খাবারটা রেখে দিয়ে চুপচাপ বসে আছে)
আমি: তোমরা খাও আমি হিয়াকে দেখছি।

হিয়া চুপচাপ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওর পাশে এসে দাঁড়ালাম।
আমি: হিয়া একটা প্রশ্ন করবো?
হিয়া: হুম।
আমি: তুমি কি কাউকে ভালোবাস?
হিয়া: এই ভালোবাসা সম্পর্ক এসব তো আমি ঘৃণা করি।
আমি: কেন?
হিয়া: কারণ ওই…(আমার দিকে তাকিয়ে হিয়া থেমে গেলো। আব্বু আম্মুর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তো হিয়া জানে না তাহলে ও কিসের জন্য ভালোবাসা সম্পর্ক এসব ঘৃণা করে? আর হিয়া কি বলতে গিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো?)
আমি: বিয়ে করতে চাও না কেন?
হিয়া: যে বিয়েতে আমার আব্বু আম্মু থাকবে না সে বিয়ের কোনো মানে হয় না।
আমি: আর যদি আব্বু আম্মু থাকেন তাহলে বিয়ে করবে? (হিয়া অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে)
হিয়া: কি বলছ এসব?
আমি: যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও।
হিয়া: ভাইয়ার জন্য সম্পর্ক ভালোবাসা এসবে ঘৃণা জন্মেছিল কিন্তু তোমাকে দেখে এসবে কিছুটা হলেও বিশ্বাস জন্মেছে আর তাই আব্বু আম্মু উপস্থিত থাকলে আমি আজই বিয়ে করবো। ভাইয়া আমার চোখে অপরাধী কিন্তু সমাজের চোখে তো না। ভাইয়াকে আমি সমাজের কাছে ছোট করতে চাই না কিন্তু আব্বু আম্মু…
আমি: বললাম তো আব্বু আম্মু বিয়ের দিন উপস্থিত থাকবেন।
হিয়া: সত্যি?
আমি: হুম। হয়তো এতো তাড়াতাড়ি খুঁজে পাবো না কিন্তু কথা দিচ্ছি তুমি কবুল বলার ঠিক আগের মুহূর্তে হলেও আমি আব্বু আম্মুকে বিয়ের আসরে উপস্থিত করবো।
হিয়া: আব্বু আম্মু না আসা পর্যন্ত আমিও কবুল বলবো না। যাও ভাইয়াকে বিয়ে ঠিক করতে বলো।
আমি: হুম।

হিয়াকে তো কথা দিলাম ঠিকি কিন্তু পারবো তো আমি? খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে সবকিছু, বিয়েটা খুব তাড়াতাড়ি দিয়ে দিতে হবে। আরশির নজর থেকে হিয়াকে দূরে সরাতে হবেই।
কাব্য: তিলো রাজি হয়েছে হিয়া?
আমি: হুম তুমি বিয়ের তারিখ ঠিক করো।
কাব্য: তুমি পারলে কিভাবে ওকে রাজি করাতে?
আমি: (মৃদু হাসলাম। কতো বড় রিস্ক নিয়েছি সেটা তো একমাত্র আমি জানি)
আমি: ছেলে দেখতে কেমন ভালো তো?
কাব্য: হিয়া আমার কলিজার টোকরা ওকে আমি ভালো ছেলের হাতেই তুলে দিবো বিশ্বাস রাখো আমার উপর।
আমি: ঠিক আছে।

ভাবির সাথে রান্নায় হেল্প করছি হঠাৎ দেখি কাব্য আর ভাইয়া রেডি হয়ে এদিকে আসছে। কোথায় যাবে ওরা?
ভাইয়া: নিরা আমরা আসছি।
আমি: কোথায় যাচ্ছ দুজন।
কাব্য: হিয়ার বিয়ে ঠিক করতে।
আমি: আসবে কখন?
কাব্য: রাত হয়ে যাবে।
আমি: ঠিক আছে। (ভাইয়া আর কাব্য বেরিয়ে যেতেই ভাবির হাত ধরে ভাবির মুখের দিকে তাকালাম)
ভাবি: কিছু বলবি?
আমি: হুম একটা হেল্প করো প্লিজ।
ভাবি: কি?
আমি: একটু বাইরে যাবো আসতে অনেক দেরি হবে এর মধ্যে কাব্য চলে আসলে তুমি অন্যকিছু বলো।
ভাবি: কিন্তু যাবি কোথায়?
আমি: পরে বলবো শুধু এই টুকু জেনে রাখো সবার ভালোর জন্যই যাচ্ছি আর অয়নকে সাথে নিয়ে যাচ্ছি তুমি চিন্তা করোনা।
ভাবি: ঠিক আছে সাবধানে যাস।
আমি: ওকে।

অয়নকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম জানিনা ওই ঠিকানায় গিয়ে আদৌ কিছু পাবো কিনা।
অয়ন: ভাবি গাড়ি নিলেই ভালো হবে তাড়াতাড়ি চলে আসতে পারবো।
আমি: ড্রাইভ করতে পারো তো?
অয়ন: এইটা আমরা তিন ভাই ভালোই পারি।
আমি: ঠিক আছে চলো।

অয়ন খুব স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে কিন্তু তাও যেন রাস্তা শেষ হচ্ছে না। ভয়ে আমার শরীর ঘামছে, কাব্য এসব জানতে পারলে আমাকে আস্ত রাখবে না। আর ওই আরশির লোক গুলো তো সবসময় আমাদের উপর নজর রাখছে কখন কি করে বসে ঠিক নেই। আচ্ছা আরশি আমাদের ক্ষতি করবে এটাই শুধু ভাবছি একবারো তো এইটা ভাবছি না আরশি কাব্য’র উপর এতো ক্ষেপে আছে কেন? কাব্য তো কারো সাথে প্রতারণা করার মতো মানুষ নয়, তাহলে আরশি কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছে?
অয়ন: ভাবি গাড়ি এখানে রেখে কিছুটা জায়গা হেটে যেতে হবে।
আমি: ঠিক আছে চলো।
অয়ন: ভাবি আমরা কোনো ভুল করছি নাতো?
আমি: ভুল হবে কেন আমরা তো আব্বু আম্মুকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি আর আমার বিশ্বাস আব্বু আম্মুও নিজের ছেলে মেয়ের কাছে ফিরে যেতে চান।
অয়ন: চলো দেখি কি হয়।

এতোকিছুর পর আসতে পারলাম, কিন্তু বাসা তো…
অয়ন: ভাবি বাসা তো তালা দেয়া।
আমি: তাইতো দেখছি।
অয়ন: এখন কি করবে।
আমি: কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখি।
অয়ন: কার জন্য অপেক্ষা করবে আমরা তো জানিই না এই বাসায় কে থাকে।
আমি: কাউকে একটু জিজ্ঞেস করো প্লিজ।
অয়ন: দাঁড়াও আমি দেখছি।

বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, অয়ন একটু দূর যেতেই আমার ফোন বেজে উঠলো। এইটা তো শুভ্রার নাম্বার তাহলে কি ওরা আমাদের ফলো করছে। চারপাশে একবার চোখ বোলালাম সন্দেহজনক তো কাউকে দেখছি না। ফোন রিসিভ করলাম, আমি কিছু বলার আগেই শুভ্রা বলে উঠলো…
শুভ্রা: হাই মিস তিলোত্তমা সরি মিসেস কাব্য।
আমি: কেন ফোন করেছ?
শুভ্রা: একটা গুড নিউজ দেওয়ার জন্য।
আমি: মানে?
শুভ্রা: একটু আগে কাব্য’র ফোনে একটা মেসেজ গেছে “তুমি বোনের বিয়ে ঠিক করতে ব্যস্ত আর তোমার তিলো পাগলী তোমারই ছোট ভাইয়ের হাত ধরে ঘুরতে ব্যস্ত তাও কাছে কোথাও নয় একেবারে লং ড্রাইভে”
আমি: এতো গুলো থাপ্পড় খেয়েও শোধরাওনি দেখছি।
শুভ্রা: থাপ্পড় গুলোর প্রতিশোধ নিতে হবে না?
আমি: এসব নোংরা কথা বলে প্রতিশোধ নিতে পারবে না কারণ কাব্য তোমার এসব নোংরা কথায় কান দিবে না।
শুভ্রা: সেটা নাহয় পরেই বুঝতে পারবে এখন সামনে যে বিপদ এসেছে সেটা সামলাও তো দেখি।
আমি: মানে। (হঠাৎ পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পিছনে তাকালাম। ভয়ে আমার শরীর শিউরে উঠলো, ওরা তো সেই দুজন লোক। আজকেও রোমাল দিয়ে মুখ ঢাকা)
শুভ্রা: আরশির বুদ্ধির প্রশংসা করতে হয়। সেদিন তো মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছিলে কিন্তু আজ… (ফোনটা কেটে দিলাম। কি করবো এখন আমি)
অয়ন: ভাবি তুমি যা…(অয়ন লোক দুইটাকে দেখে থেমে গেলো, আমার পাশে এসে দাঁড়ালো)
অয়ন: কে তোমরা?
–ভয় নেই তোর ভাবিকে বেশি কষ্ট দিয়ে মারবো না। সেদিন তো বেঁচে গেছে কিন্তু আজ আর সুযোগ নেই।

লোক দুটু আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। আমি তো ভাবতেও পারিনি এমন কিছু হবে। এই আরশি আর শুভ্রা তো আমাকে মারার জন্য পাগল হয়ে গেছে। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে, অয়নের পিছনে গিয়ে ভয়ে ওর হাত চেপে ধরলাম।

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ২১

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ২১

লেখিকা: সুলতানা তমা

এই ডায়েরি খুলে আমার পুরো মাথাটাই নষ্ট হয়ে গেলো, পুরোটা জুড়ে শুধু আমার কথাই লিখা।
“ভেবেছিলাম আর কখনো কোনো মেয়েকে ভালোবাসবো না, ঘৃণা জন্মে গিয়েছিল মেয়েদের প্রতি। কিন্তু আজ হসপিটালে তিলোত্তমাকে দেখে নতুন করে ভালোবাসা জন্মেছে আমার মনে, ইচ্ছে হচ্ছে এই তিলো পাগলীকে সহস্র শতাব্দী ভালোবাসি। জানিনা তিলো পাগলীর মধ্যে কি আছে মন শুধু ওকেই ভালোবাসতে চায়”

“আমার তিলো পাগলী দেখতে খুব মায়াবী, ওর চোখ দুটু এতো গভীর যে এই চোখের গভীরতায় ডুব দিয়ে অনায়াসে কাটিয়ে দেয়া যাবে হাজারটা শতাব্দী। তিলো পাগলীর চুলগুলো সবসময় আমাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো ওর কাছে টানে। তিলো পাগলী রেগে গেলে ওর নাকটা লাল হয়ে যায় ইচ্ছে হয় তখন নাকে কামড় বসিয়ে দেই হিহিহি”

“আজ তিলো পাগলীর সাথে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি, শুধুমাত্র ওর মামির ভুলের জন্য ওকে টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে আমার। জানিনা এসব কতোদিন লুকিয়ে রাখতে পারবো, তিলো জানলে খুব কষ্ট পাবে”

“অবশেষে বিয়ে করে ফেললাম তিলো পাগলীকে। এখন আর কোনো ভয় নেই ওকে হারানোর, তিলো শুধু আমার এখন”

“আমার তিলো পাগলী এতোটাই ঘুম পাগলী যে আজ আমাদের বাসর রাত জেনেও তিলো দিব্বি ঘুমুচ্ছে। আমার বাসর পুরাই মাটি হয়ে গেলো”

দ্যাত আর পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না। শুধু আমাকে নিয়েই লিখা কেন, মেয়েটিকে নিয়ে তো কিছুই পাচ্ছি না আর আব্বু আম্মুকে নিয়ে তো কিছুই লিখা নেই। রাগে ডায়েরির পাতা গুলো উল্টাচ্ছিলাম হঠাৎ শেষ লিখাটায় চোখ আটকে গেল। কি যেন লেখা সাথে ছোট একটি বাবুর ছবি। ছবিটা সরিয়ে লেখা গুলো দেখলাম।
“আমি আসলেই খারাপ, হিয়া ঠিকি বলে আমি কখনো ভালো হতে পারবো না। তিলো ভয় পাওয়ার পরও কক্সবাজার যাওয়ার কি প্রয়োজন ছিল। জোর করে তিলোকে নিয়ে গেলাম আর এখন কিসব হয়ে গেলো। আমাদের বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেলো। আমারই তো খুব কষ্ট হচ্ছে তিলোর তো কষ্ট হবেই। তিলো নাহয় মুখে আমাকে কোনো দোষ দিচ্ছে না কিন্তু তিলো নিজেও তো জানে আমার জোর করার কারণেই আজ আমাদের এই শাস্তি পেতে হলো। তিলো পাগলী আমাকে ক্ষমা করে দিও সোনা বিশ্বাস করো আমি বুঝতে পারিনি এমন কিছু হবে আর তুমি প্রেগন্যান্ট সেটাই তো আমি বুঝতে পারিনি। কোনো বাবা কি তার সন্তানকে মেরে ফেলতে চায় তুমিই বলো। তোমাদের কাউকে আমার কষ্ট বুঝতে দেই না কিন্তু আমারো তো কষ্ট হয় কারণ আমি যে বাবা”
আর পড়তে পারলাম না চোখ দুটু থেকে বৃষ্টির মতো পানি পরে ডায়েরিটা ভিজিয়ে দিচ্ছে। এতো কষ্ট পেয়েছে কাব্য কিন্তু আমার সামনে দিব্বি হেসেছে শুধুমাত্র আমি যেন সাহস পাই মনে এজন্য।

ডায়েরিটা রেখে বাকি ডায়েরি গুলোতে খুঁজছি, কোথাও মেয়েটি বা আব্বু আম্মুদের নিয়ে কিছু লিখা নেই। একটা ডায়েরি উল্টাতে উল্টাতে হঠাৎ ডায়েরির মাঝখানে চোখ পড়লো। ডায়েরির প্রথম দিকে বা শেষ দিকে কিছু লিখা নেই শুধু মাঝখানে একটা পৃষ্ঠায় লিখা…
“তোমার জন্য লিখা ডায়েরিটা পুরিয়ে ফেলেছি আরশি, কি হবে এই নোংরা অতীত গুলো জমিয়ে রেখে। আগে কষ্ট হতো তোমাকে মনে পড়তো কিন্তু এখন তোমাকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে হয় কারণ তুমি আমার জীবন থেকে চলে না গেলে আমি আমার তিলো পাগলীকে পেতাম না। তুমি ছিলে নোংরা মেয়ে আর তুমি চলে যাওয়াতে আমি পেয়েছি তিলোত্তমার মতো একটি পবিত্র মেয়ে”

আর কিছু লিখা নেই, তারমানে মেয়েটির নাম আরশি। এতোকিছু এই আরশি মেয়েটাই করছে।
অয়ন: ভাবি শেষ হয়েছে ভাইয়া কিন্তু যেকোনো সময় চলে আসতে পারে।
আমি: ডাক্তারবাবু বাসায় নেই চুপ করে বসে থাকো।
অয়ন: বাসায় নেই মানে এতো রাতে ভাইয়া কোথায় গেলো।
আমি: আমার উপর রাগ করে আদনান ভাইয়ার বাসায় চলে গেছে। এতো কথা বলোনা তো।
অয়ন: এতো মনোযোগ দিয়ে কিযে খুঁজছ তুমি।
আমি: একটা সূত্র চাই শুধু, যে সূত্র ধরে আমি আব্বু আম্মুর কাছে পৌঁছাতে পারবো।
অয়ন: কি বলছ এতো আস্তে আস্তে?
আমি: উফফ অয়ন চুপ করে বসো তো।
অয়ন: ঠিক আছে কি আর করার আমি বসে থাকি আর তুমি গোয়েন্দাগিরি করো। তবে হ্যাঁ আমি তোমাকে সাহায্য করছি এইটা যেন ভাইয়া না জানে, জানলে আমার বারোটা বাজিয়ে দিবে। (অয়নের কথার কোনো উত্তর দিলাম না। একমনে একে একে সব গুলো ডায়েরি খুঁজে চলেছি। একটা মানুষের কাছে এতোগুলো ডায়েরি থাকতে পারে ভাবতেই পারছি না)

হঠাৎ একটা ডায়েরিতে কিছু লিখা পেলাম কিন্তু অনেক কম।
“তোমাদের আব্বু আম্মু ডাকতে আমার ঘৃণা হয় তাই তোমাদের নিয়ে কিছু লিখতে চাই না, ইচ্ছে নেই লিখার। কিছু লিখতে আসলে মনে পড়ে যায় তোমরা কোনো সন্তানের বাবা মা হবার যোগ্যই না”

আর কিছু লিখা নেই। সারা ডায়েরি খুঁজে শেষ দিকটায় একটা ছোট লিখা পেলাম। দেখে তো মনে হচ্ছে কোনো বাসার ঠিকানা, তাহলে কি আমি যা খুঁজছিলাম তা পেয়ে গেছি? কিন্তু এই জায়গাটা তো ঢাকা থেকে অনেক দূরে যাবো কিভাবে আমি। কাব্য’কে তো বলে যাওয়া যাবে না আর এতো দূর লুকিয়ে যাওয়া তো সম্ভব না। যা করার সুযোগ বুঝে করবো, ঠিকানাটা একটা কাগজে লিখে নিলাম। ডায়েরি গুলো সব গুছিয়ে রাখলাম ঠিক আগের মতো, কাব্য যেন বুঝতে না পারে যে এই রুমে কেউ এসেছিল। কাব্য যদি একবার বুঝতে পারে তাহলে প্রথমেই আমাকে সন্দেহ করবে আর অশান্তি করবে।
অয়ন: ভাবি শেষ?
আমি: হুম চলো।
অয়ন: পেয়েছ কিছু?
আমি: মেয়েটার নাম জানতে পেরেছি আর একটা বাসার ঠিকানা পেয়েছি।
অয়ন: বাসার ঠিকানা…
আমি: হুম, জানিনা ওই বাসায় কে থাকেন তবে আমার সন্দেহ হচ্ছে। আমার ধারণা যদি ঠিক হয় তাহলে ওই বাসায় আব্বু বা আম্মু থাকেন অথবা দুজনই থাকেন।
অয়ন: যদি তাই হয় তাহলে ভাইয়া জানবে কিভাবে?
আমি: তোমার ভাইয়া মুখে যতোই বলুক আব্বু আম্মুকে ঘৃণা করে সত্যি তো এটাই ও আব্বু আম্মুকে খুব ভালোবাসে। আর একজন সন্তান বাবা মায়ের খুঁজ নিবে কোথায় থাকে সেটা জানবে এটাই তো স্বাভাবিক।
অয়ন: হুম বুঝলাম কিন্তু তুমি জানবে কিভাবে ওই বাসায় কে থাকে।
আমি: যাবো আমি ওই বাসায়, আমাকে জানতে হবেই।
অয়ন: ঠিক আছে।

এতো রাত হয়েছে কিন্তু ঘুম আসছে না। বিয়ের পর কাব্য’কে ছাড়া কখনো একা থাকিনি আর আজ কাব্য এমন করলো। ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবছি ওকে ফোন করবো কিনা। ভাবতে ভাবতে ফোনটা করেই ফেললাম কিন্তু ফোন তো সুইচড অফ বলছে। আশ্চর্য সামান্য একটা নাম জানতে চাইছি বলে কাব্য আমাকে এতো বড় শাস্তি দিচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছে কাব্য’র কাছে ছুটে চলে যাই কিছুই ভালো লাগছে না ওকে ছাড়া। আজ বুঝতে পারছি আমি কাব্য’কে কতোটা ভালোবাসি।

দরজায় কে যেন ধাক্কাচ্ছে তাড়াতাড়ি উঠে এসে দরজা খুললাম। ভেবেছিলাম কাব্য চলে এসেছে কিন্তু না ভাবি আমাকে ডাকতে এসেছে।
ভাবি: কিরে কি হয়েছে তোর এতো বেলা হয়ে গেলো এখনো উঠছিস না। আর তোর চোখ মুখের এই অবস্থা কেন? (ভাবির কথা শোনে ঘড়ির দিকে তাকালাম সকাল নয়টা বাজে)
আমি: নয়টা বাজে তো ডাক্তারবাবু আসেনি?
ভাবি: মানে কি কাব্য বাসায় নেই?
আমি: না কালকে আমার উপর রাগ করে আদনান ভাইয়ার বাসায় চলে গিয়েছিল।
ভাবি: চিন্তা করিস না চলে আসবে। ফ্রেশ হয়ে নাশতা করতে আয়।
আমি: হুম।

কিসের ফ্রেশ হওয়া আগে ফোনটা হাতে নিয়ে কাব্য’কে ফোন দিলাম, এখও সুইচড অফ বলছে। আর ভালো লাগছে না আমার এবার কান্না করে দিবো।
অয়ন: ছোট ভাবি নিচে এসো। (অয়নের ডাক শুনে ফোনটা রেখে নিচে চলে আসলাম)

হিয়া: ভাবি কি হয়েছে তোমার রাতে ঘুমাওনি?
আমি: ঘুমাবো না কেন, তোমার হাতের অবস্থা কি?
হিয়া: এইতো ভালো।
অয়ন: ভাবি রাতে ভাইয়ার চিন্তায় ঘুমাতে পারেনি।
ভাবি: অয়ন এইটা নিয়ে কেউ ঠাট্টা করে। (সত্যিই তো রাতে ঘুম হয়নি। ডায়েরি খুঁজে আর পরে কাব্য’র চিন্তায় ঘুমই হয়নি তেমন)
অয়ন: ভাবি কিছুই তো খাচ্ছ না।
আমি: আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। (চুপচাপ রুমে চলে আসলাম)

সবকিছু অসহ্য লাগছে, কাব্য’কে ছাড়া সবকিছু কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগছে। আচ্ছা কাব্য’রও কি এমন লাগছে?
অয়ন: ভাবি আসবো?
আমি: হ্যাঁ এসো।
অয়ন: একটা কথা বলি যদি রাগ না করো।
আমি: বলো।
অয়ন: ভাইয়া তো বাসায় নেই তুমি চাইলেই এই ফাকে ওই ঠিকানায় যেতে পারো (অয়নের দিকে তাকালাম, ও তো ঠিকি বলছে। কিন্তু কাব্য যদি বাসায় ফিরে আসে তখন কি হবে)
আমি: না না এই রিস্ক নেওয়া যাবে না এমনিতে ডাক্তারবাবু আমার উপর রেগে আছে আর হুট বাসায় এসে যদি দেখে আমি বাসায় নেই তখন আরো রেগে যাবে।
অয়ন: তাও ঠিক বলেছ।
আমি: তুমি চিন্তা করোনা আমি সুযোগ বুঝে ওই বাসায় যাবো।
অয়ন: ঠিক আছে।

অয়ন চলে যেতেই ফোনটা নিয়ে আদনান ভাইয়াকে ফোন দিলাম।
আদনান: ভাবি আমরা হসপিটালে জামেলায় আছি পরে কথা হবে। (ফোনটা কেটে দিলো কিসের জামেলায় আছে কে জানে)

সারাটা দিন কেটে গেলো কিন্তু কাব্য আসলো না। সারাটা দিন অপেক্ষা করা যে কতো কষ্টের আজ ভালো ভাবেই বুঝেছি। কাব্য তো ফোনটাও অফ করে রেখেছে আর পারছি না ইচ্ছে হচ্ছে… ফোন বেজে উঠলো বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম দৌড়ে রুমে গেলাম, হয়তো কাব্য ফোন করেছে। নাহ তিশা ফোন করেছে।
আমি: হুম তিশা।
তিশা: কি হয়েছে কাঁদছিস কেন?
আমি: ডাক্তারবাবু আমার উপর রাগ করে চলে গেছে বাসায় আসছে না।
তিশা: কান্না থামা আর ফোন কর।
আমি: ফোন অফ।
তিশা: দাঁড়া আমি আদনানকে ফোন করছি। (তিশা ফোন কেটে দিলো)

রাত দশটা বাজে এখনো ওর আশার নাম নেই। হঠাৎ মেসেজটোন বেজে উঠলো, তিশা মেসেজ করেছে।
“কাব্য বাসায় চলে গেছে একটু অপেক্ষা কর”

কিছুক্ষণ পর দরজায় টোকা পড়লো, দৌড়ে এসে দরজা খুললাম। কাব্য দাঁড়িয়ে আছে দেখেই ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। কাব্য আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো, ও নিঃশব্দে কাঁদছে আমি বুঝতে পারছি, ওর চোখের পানি আমার ঘাড় বেয়ে পিটে গিয়ে পড়ছে।
কাব্য: হুম হয়েছে অনেক কেঁদেছ এবার থামো।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: তিলো এভাবে কাঁদলে কিন্তু আমি আবার চলে যাবো। (কাব্য’র কথা শুনে ওকে ছেড়ে দিয়ে দূরে এসে দাঁড়ালাম। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, কাব্য আবার চলে যাবে এই কথাটা বলতে পারলো ও)

চুপচাপ বিছানায় বসে আছি আর নিঃশব্দে কাঁদছি। কাব্য দরজা বন্ধ করে এসে আমার পায়ের কাছে ফ্লোরে বসে পড়লো। কাব্য আমার কোলে মাথা রেখে দুহাত দিয়ে আমার কোমর জরিয়ে ধরলো।
কাব্য: কি হলো চুলে হাত বুলিয়ে দিবে না? (ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বিছানার এক পাশে এসে শুয়ে পড়লাম। এতো কষ্ট দিয়ে আজ আবার চলে যাওয়ার কথা বলছে তারমানে ওর কোনো কষ্ট হয়নি)
কাব্য: আমার তিলো পাগলী খুব রাগ করেছে আর ওর নাকটা লাল হয়ে গেছে ইচ্ছে হচ্ছে…
আমি: একদম আমার কাছে আসবে না।
কাব্য: সরি ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করে দাও। আসলে ফোনটা ভুলে আদনানের বাসায় ফেলে রেখে গিয়েছিলাম আর হসপিটালে আজ একটু জামেলা ছিল তাই বাসায় আসতে পারিনি।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: এইযে কান ধরছি আর এমন হবে না।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: মানছি ভুল করেছি তাই বলে এখন কথা বলবে না। আচ্ছা তুমি কি একা কষ্ট পেয়েছ আমি পাইনি?
আমি: কষ্ট পেলে আজ আবার চলে যাওয়ার কথা বলতে না।
কাব্য: এইটা তো তোমাকে রাগানোর জন্য বলেছি। আবার যাবো পাগল হয়েছি এমনিতেই যা কষ্ট পেয়েছি। জানো কাল রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি। (কাব্য আমার পাশে শুয়ে এক হাত দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরলো,আমার গালে ওর গাল ঘষছে)
কাব্য: আর কখনো এমন হবে না আসলে…
আমি: হয়েছে আর বলতে হবে না।
কাব্য: হুম একটু হাসো প্লিজ। (কাব্য’র চোখের দিকে তাকালাম, ও পারে কিভাবে এতো সহজ ভাবে কথা বলতে)
কাব্য: যদিও রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম, এইটা হওয়া উচিত ছিল।
আমি: মানে?
কাব্য: এইযে এই রাগের জন্য দুজন একদিন আলাদা থেকেছি আর কে কাকে কতোটা ভালোবাসি সেটা বুঝতে পেরেছি।
আমি: ভালোবাসা বুঝার জন্য দূরে যেতে হয় না, ভালোবাসা দিয়েই ভালোবাসা বুঝা যায়।
কাব্য: হুম তাইতো এখন ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা বুঝবো।
আমি: কি করছ।
কাব্য: চুপ।
কাব্য একটা আঙ্গুল আমার মুখে রেখে কথা বলতে নিষেধ করলো। আমার হাত বিছানায় চেপে ধরে আমার হাতের আঙ্গুলের ভাজে ভাজে ওর আঙ্গুল গুলো আটকে দিলো। চোখ দুটু বন্ধ করে আছি কাব্য মাতালের মতো আমার সারা শরীরে চুমু খাচ্ছে, ওকে আটকানোর চেষ্টা করতেই আমার ঠোঁটের মধ্যে ওর ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। আমার ঠোঁট দুটু ওর ঠোঁটের মাঝে রেখে আমার চোখের দিকে ও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কাব্য’র নেশা ধরানো চাহনি আর মাতাল করা স্পর্শে শিউরে উঠে কাব্য’কে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম।

চলবে?