Wednesday, June 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2445



রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১৪

0

রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

জোহরের নামাজ পড়ে জায়নামাজ এই বসে ছিলাম হঠাৎ ভাবির চেঁচামেচি শুনে ড্রয়িংরুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। রুমের বাইরে আসতেই ভাবি সামনে এসে দাঁড়ালো, ভাবি খুব রেগে আছে বুঝতেই পারছি। আমার হাত ধরে টেনে ড্রয়িংরুমে নিয়ে আসলো। ভাইয়া, অয়ন, তিশা, কাব্য, মামি সবাই বসে আছে। বাহ্ কাব্য তো দেখছি সবাইকে ফোন করে এখানে নিয়ে এসেছে।
ভাবি: তিলোত্তমা এসব কি শুনছি..?
আমি: কি?
ভাবি: ডিভোর্স এর কথা আসছে কেন (কলিংবেল বাজছে, জানি শুভ্রা এসেছে)
মামি: তিশা দেখতো কে এসেছে।
আমি: শুভ্রা এসেছে আমি খুলছি দরজা।

দরজা খুলে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে আছি, শাড়ি পড়ে খুব সুন্দর করে সেজেছে পুরাই পরী।
আমি: ভিতরে এসো।
শুভ্রা: কাব্য কোথায়..?
আমি: ওইতো বসে আছে। (শুভ্রা গিয়ে কাব্য’র পাশে দাঁড়ালো, কাব্য উঠে আমার কাছে চলে আসলো)
শুভ্রা: তিলোত্তমা কাব্য’কে ডিভোর্স দিবে বলেছিলে সব রেডি তো।
কাব্য: আমি আমার তিলো পাগলীকে ছাড়া থাকতে পারবো না প্লিজ তুমি আমায় এতো বড় শাস্তি দিও না। আমি যা করেছি শুধুমাত্র তোমাকে আমার করে পাওয়ার জন্য করেছি। (কাব্য আমার হাত ধরে কাঁদতেছে দেখে শুভ্রা এসে ওর হাত ধরলো)
শুভ্রা: কাব্য তুমি আমার কাছে এসো ও তোমায় কাঁদাচ্ছে কিন্তু আমি তোমায় কখনো কাঁদাবো না (শুভ্রার হাত ধরে টান দিয়ে আমার সামনে এনে ওর দুগালে কয়েকটা থাপ্পড় দিলাম। ও গালে হাত দিয়ে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে)
তিশা: আমি জানতাম তুই আমার মেসেজটা পড়বি। হিহিহি দারুণ হয়েছে।
আমি: তোর মেসেজ পড়েই তো শুভ্রাকে এখানে ডাকলাম।
শুভ্রা: এসব কি করছ তিলোত্তমা, তুমি তো বলেছিলে কাব্য’কে ডিভোর্স… (আরো কয়েকটা থাপ্পড় দিলাম)
আমি: বিয়ে নামক সম্পর্কটার জোড় কতোটা বেশি তুই হয়তো সেটা জানিস না। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক এতো ঠোনকো না যে তোর মতো কোনো নষ্টা মেয়ে এসে একটা ঠোকা দিলেই সম্পর্কটা ভেঙে যাবে।
শুভ্রা: তুমি আমাকে ডেকে এনেছ এভাবে অপমান করার জন্য..?
আমি: তো তোর কি মনে হয় কাব্য’কে তোর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য ডেকে এনেছি..? বৌভাত এর দিন কি বলেছিলাম ভুলে গেছিস..? ভুলে গিয়ে থাকলে আবারো বলছি “কাব্য আমাকে আর আমি কাব্য’কে দুজন দুজনকে ভালোবাসি। কাব্য আমার আর শুধু আমারই থাকবে” তোর মতো কোনো নষ্টা মেয়ে আমাদের আলাদা করতে পারবে না।
শুভ্রা: ডিভোর্স এর কথা বলে তুমি আমার সাথে নাটক করেছ..?
আমি: তুই যেমন সবকিছু প্ল্যান করে করেছিস আমিও সবকিছু প্ল্যান করে তোর কাজের পাল্টা জবাব দিলাম।
শুভ্রা: তোকে তো আমি…(শুভ্রা আমাকে থাপ্পড় দিতে আসছিল, কাব্য শুভ্রার হাত ধরে ফেললো)
কাব্য: এতোদিন তোর সবকথা মুখ বোজে সহ্য করে গেছি কিন্তু আমার তিলোর গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করলে তোর হাত আমি ভেঙে ফেলবো।
আমি: তোর পাতানো ফাদে কাব্য আটকে গিয়েছিল তাই ভুল করে ফেলেছে, ও যদি নিজে থেকে এমন করতো তাও আমি ওকে ডিভোর্স দিতাম না কারণ ও আমাকে ভালোবাসে আর ও যা করবে আমার ভালোর জন্যই করবে।
শুভ্রা: আজ যতো গুলো থাপ্পড় দিয়েছিস আর যতোটুকু অপমান করেছিস সবকিছুর প্রতিশোধ আমি নিবো।
আমি: যা খুশি কর শুধু এইটুকু মনে রাখিস কোনো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ভাঙ্গা এতো সহজ না। (শুভ্রা রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেলো)
কাব্য: ডিভোর্স এর কথাটা শুনে অযতাই ভয় পেয়েছিলাম ভুলেই গিয়েছিলাম আমার তিলো পাগলী আমাকে ভালোবাসে তাই কখনো আমাকে ডিভোর্স দিবে না।
আমি: আমাকে জানিয়ে যদি সবকিছু করতেন তাহলে আজ দুজনকে এতো কষ্ট পেতে হতো না। নিজের বউয়ের থেকে কথা লুকানোর শাস্তি তো আপনি পাবেনই।
কাব্য: যা খুশি শাস্তি দাও শুধু ছেড়ে যাওয়ার কথা বলোনা মরে যাবো।
অয়ন: ভাবি বিষয়টা কি হলো বলতো।
ভাবি: কাব্য তো ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল তুই নাকি ওকে ডিভোর্স দিবি বলেছিস তাই তো আম্মুকে হসপিটালে রেখেই ছুটে আসলাম কিন্তু এখন তো সবকিছু উল্টো হলো।
ভাইয়া: আমি জানি তিলোত্তমা কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিতেই পারে না।
আমি: ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তো, তোমাদের সবাইকে ছেড়ে এই শহর ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু হঠাৎ ফোন হাতে নিয়ে তিশার মেসেজ দেখে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি।
অয়ন: একটা মেসেজে সবকিছু ঠিক হয়ে গেলো, তিশা আপু তুমি কি জাদু করে মেসেজ পাঠিয়েছিলে..?
তিশা: জাদু না সবকিছু খুলে বলেছিলাম। আসলে দোষটা আমারই তমাকে আগেই সব জানানো উচিত ছিল।
কাব্য: জানাইনি তো ভয়ে যদি আমাকে ভুল বুঝে।
ভাবি: আচ্ছা মেসেজে কি লিখা ছিল..?
আমি: বলছি “তমা আমি জানি তুই রেগে আছিস আর একবার রেগে গেলে যে তুই কারো কথা শুনিস না সেটাও আমি জানি তাই তো মেসেজে সব বলছি। এসবে কাব্য’র কোনো দোষ নেই, দোষতো তোর মামি আর শুভ্রার। কাব্য তোকে ভালোবাসে এইটা শুভ্রা মেনে নিতে পারেনি তাই দুজন লোককে ও তোর মামির কাছে পাঠিয়েছিল। আন্টি রাজি না হওয়াতে ভয় দেখিয়েছিল তখন আন্টি ভয় আর কিছুটা লোভে রাজি হয়ে যায়। তুই আমার কাছ থেকে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর কাব্য হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে আমার কাছে আসে আর বলে তোর মামি তোকে পতিতালয় এর দুজন লোকের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। আসলে আমার কাছে আসার আগে কাব্য তোদের বাসায় গিয়েছিল আর দরজা থেকে ওদের কথা শুনেই আমার কাছে চলে এসেছিল। তারপর আমরা তোদের বাসায় যাওয়ার পর অনেক কথা কাটাকাটি হয়, ওদের সাথে জামেলা করে লাভ হবে না বুঝতে পেরে কাব্য ওই দুজন লোকের থেকে তোকে কিনে নেয়। এছাড়া আর কোনো রাস্তা ছিল না আমাদের কাছে কারণ আমরা জামেলা করলে লোকগুলো তোর ক্ষতি করতো। কাব্য ওদের এক কোটি টাকার চেক দেওয়ার পর ওরা চলে গিয়েছিল। তারপর তোর রুমে গিয়ে আমরা তোকে পাইনি, কাব্য তোকে পাগলের মত খুঁজেছে পরে তো রাস্তায় তোকে অজ্ঞান অবস্থায় পেয়েছিল। লোক দুটু তোকে সাথে নিয়ে যায়নি বরং দ্বিগুণ টাকায় তোকে কাব্য’র কাছে বিক্রি করে শুভ্রার সাথে বেঈমানি করেছিল তাই শুভ্রা কিছু লোক ভাড়া করে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে জামেলা করেছিল। ওদিকে তোর জ্ঞান ফেরার পর যখন তুই আন্টির দোষ ঢাকার চেষ্টা করলি তখন কাব্য ভয়ে আর কিছু তোকে বলেনি। কাব্য তোকে ভালোবাসে তাই তোকে বাঁচানোর জন্য এমন করেছে আর তোর থেকে সবকিছু লুকিয়েছে শুধুমাত্র তোকে হারানোর ভয়ে। একটা মেয়েকে টাকা দিয়ে কেনাটা তো ভালো কাজ না। তুই এসব শুনে যদি কাব্য’কে ভুল বুঝিস তাই ও ভয়ে কিছু বলেনি, আমাকেও বলতে নিষেধ করেছিল। ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয় পাওয়াটা তো স্বাভাবিক। কাব্য’কে আর ভুল বুঝিস না প্লিজ” এটাই ছিল তিশার মেসেজ।
অয়ন: এখন সব বুঝলাম, তাও আমি বলবো ভাইয়া ভুল করেছে। তখন যদি ভাইয়া ভাবিকে সব বলে দিতো তাহলে শুভ্রার কাছ থেকে ভাবিকে এসব শুনতে হতো না আর ভাবি এতো রাগ করতো না।
কাব্য: আমি তো ভয়েই বলিনি। (চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে)
মামি: সব ভুল আমার তমা আমাকে ক্ষমা করে দে মা।
আমি: ক্ষমা..(হাসলাম)
মামি: ওরা আমাকে ভয় দেখিয়েছিল আর কিছুটা লোভে পরে… কিন্তু তুই বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর আমি বুঝতে পেরেছি তোকে আমি কতোটুকু ভালোবাসি। শুভ্রাকে টাকা ফিরিয়ে দিয়েছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে।
তিশা: তমা আন্টি তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন ক্ষমা করে দে।
আমি: হুম।
কাব্য: তিলো এবার বাসায় চলো।
মামি: তোমরা সবাই প্রথম এসেছ আমার বাসায়, খাওয়া দাওয়া করে রাতে যাবে।
ভাইয়া: ঠিক আছে।

জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছি আর বিকেলের প্রকৃতি দেখছি হঠাৎ তিশা এসে পাশে দাঁড়ালো।
আমি: ব্যাপার কি..?
তিশা: কিসের..?
আমি: আদনান ভাইয়ার সাথে মনে হচ্ছে সামথিং সামথিং।
তিশা: তেমন কিছু না এমনি একটুআধটু কথা বলি।
আমি: বিয়ের দাওয়াত কবে পাবো..?
তিশা: তমা তুই না…
কাব্য: তোমরা বললে আমি হেল্প করতে পারি (কাব্য এসে আমার অন্যপাশে দাঁড়ালো)
তিশা: কাব্য তুমিও…
কাব্য: বুঝেছি ব্যাপারটা আমাকেই দেখতে হবে তাই তো তিলো..?
আমি: আপনার ইচ্ছে।
কাব্য: এখনো আপনি..?
তিশা: আমি যাই এই সুযোগে রাগটা ভাঙিয়ে নাও। (তিশা চলে যেতেই কাব্য আমাকে টান দিয়ে ওর বুকের সাথে জরিয়ে ধরলো)
কাব্য: এতো অভিমান আমার তিলো পাগলীর জানতাম নাতো।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: সব তো মিটেই গেলো তাহলে এখনো রেগে আছ কেন..?
আমি: উঁহু মিটেনি, আপনি আমার থেকে কথা লুকিয়েছেন এইটার শাস্তি তো আপনাকে পেতেই হবে।
কাব্য: আমি তো ভয়ে বলিনি প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো।
আমি: শুভ্রা যে বাজে ভাবে বলেছে আপনি তো সেভাবে বলতেন না অবশ্যই বুঝিয়ে বলতেন। আগে বলে দিলে কি শুভ্রা আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করার সুযোগ পেতো আর আমি কি এতো কষ্ট পেতাম।
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: ভালোবাসেন অথচ সবকিছু শেয়ার করতে পারেন না, কেন?
মামি: তমা খেতে আয়।
আমি: আসছি।

খাওয়াদাওয়া করে সন্ধ্যার দিকে অয়ন, কাব্য আর আমি বাসায় চলে আসলাম। ভাইয়া আর ভাবি আবার হসপিটালে চলে গেলেন।

আজ তো ভাবি নেই তাই আমিই রাতের খাবার রান্না করছি, আর ভুয়া আমাকে হেল্প করছে। কাব্য বার বার ড্রয়িংরুম থেকে কিচেনে উকি দিচ্ছে দেখে খুব হাসি পাচ্ছে। হুট করে কাব্য কিচেনে চলে আসলো, মতলব কি ওর।
কাব্য: বুয়া রান্না কতোদূর।
বুয়া: এইতো আর কিছুক্ষণ।
কাব্য: বাকিটুকু তিলো করে নিতে পারবে তুমি সারাদিন একা একা কতো কাজ করেছ আর করতে হবে না বাসায় চলে যাও। (কাব্য’র দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালাম, ও মিটিমিটি হাসছে। বুঝলাম না ও হঠাৎ বুয়াকে পাম দিচ্ছে কেন)
বুয়া: তাইলে আমি যাই।
আমি: ঠিক আছে। (বুয়া চলে যেতেই কাব্য এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো)
কাব্য: খুব তো এতোক্ষণ আমার উকি মারা দেখে হাসছিলে এখন কি হবে, বুয়াকে তো পাঠিয়ে দিলাম।
আমি: কি হচ্ছে এসব, অয়ন বাসায় আছে।
কাব্য: থাকুক।
অয়ন: ভাবি (অয়নের কন্ঠ শুনে তাড়াতাড়ি দূরে সরে গেলো, ওর দিকে রাগি চোখে তাকালাম। কান ধরে আস্তে বললো সরি)
অয়ন: খিদে লেগেছে তো।
আমি: বসো।

খাওয়াদাওয়া করে রুমে আসতেই কাব্য পিছন পিছন আসলো।
কাব্য: তিলো নামাজ পড়বে না? (ওর প্রশ্ন শুনে কিছুটা না অনেক অবাক হলাম)
কাব্য: চলো দুজন একসাথে নামাজ পড়ি।
আমি: আপনি নামাজ পড়বেন?
কাব্য: সকালেও পড়েছি আর এখনো রেগে আছ, আপনি করে বলছ? (কাব্য’র কথার উত্তর না দিয়ে ওযু করতে চলে আসলাম। কাব্য’র উপর রেগে থাকলেও মনে মনে অনেক খুশিই হয়েছি কাব্য নিজে থেকে নামাজ পড়ার কথা বলেছে)

দুজন একসাথে নামাজ পড়ে নিলাম। আমি বিছানায় বসে আছি আর কাব্য জায়নামাজে বসে আড়চোখে আমাকে দেখছে।
কাব্য: ও আল্লাহ্‌ আমার তিলো পাগলীর রাগটা কমিয়ে দাও প্লিজ (কথাটা বলে কাব্য আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে, ওর কথা শুনে আর রাগ করে থাকতে পারলাম না ফিক করে হেসে দিলাম)
কাব্য: যাক বাবা শেষ পর্যন্ত রাগটা কমলো তাহলে।
আমি: হু কমেছে কিন্তু যদি আর কখনো আমার থেকে কিছু লুকিয়েছ তখন আর রাগ কমবে না। (নিশ্চুপ হয়ে কি যেন ভাবছে, তাহলে কি কাব্য এখনো
আমার থেকে কিছু লুকুচ্ছে)
আমি: হলো কি এতো কি ভাবছ?
কাব্য: ভাবছি তিলো পাগলীর রাগটা যখন কমেই গেছে এখন তাকে আদর করবো।
আমি: মানে কি? (কিছু না বলে আমার কাছে এসে আমাকে বসা থেকে শুয়ে দিলো। জোর করে ওকে সরাতে চাইলাম উল্টো আমাকে জরিয়ে ধরলো)
আমি: কি করছ ডাক্তারবাবু..?
কাব্য: উহ প্রাণ ফিরে পেয়েছি মনে হচ্ছে কতো বছর পর ডাক্তারবাবু বলে ডাকলে।
আমি: তাই বুঝি।
কিছুনা বলে ডান হাতটা আমার ঘাড়ের কাছে নিয়ে রাখলো, বাম হাত দিয়ে আমার একটা হাত ওর মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে আমার হাতে আলতো করে চুমু খেলো, ওর ঠোঁটের স্পর্শে কেঁপে উঠে চোখ দুটু বন্ধ করে ফেললাম। ও হাত ঘুরিয়ে আমার পেটের উপর দিয়ে নিয়ে আমার হাতের উপর ওর হাত রাখলো। আমার হাতের আঙ্গুলের ভাজে ভাজে ওর হাতের আঙ্গুল গুলো আটকে দিলো।
আমি: ডাক্তারবাবু প্লিজ ছাড়ুন।
কাব্য: চুপ, কথা তো বলতে পারছ না ঠোঁট দুটু কাঁপছে তাও এতো কথা বলো কেন।
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওর ঠোঁট গুলো আমার ঠোঁটের উপর আলতো করে রাখলো।

চলবে?

 রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১৩

0
 রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

দরজায় সবাই ধাক্কাধাক্কি করছে শুনে হঠাৎ হুশ ফিরলো, এতোক্ষণ কি অজ্ঞান হয়ে ছিলাম নাকি বুঝতে পারছি না। সবাই দরজার অপর পাশ থেকে ডাকছে আর দরজায় ধাক্কাচ্ছে শুনে আস্তে আস্তে উঠে দরজা খুললাম। সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
ভাবি: নিজের কি অবস্থা করেছিস।
আমি: তোমরা যাও তো এখান থেকে আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
অয়ন: এতোক্ষণ তো একাই ছিলে প্রায় আধা ঘন্টা ধরে ডাকছি দরজা খুলোনি।
আমি: যাবে তোমরা।
পিছন ফিরে চলে আসতে চাইলাম তখনি মাথা ঘুরে গেলো, কাব্য এসে তাড়াতাড়ি আমাকে ধরলো। ও ধরেছে দেখে রাগ আরো বেড়ে গেলো, ধাক্কা দিয়ে ওকে ছাড়াতে চাইলাম, ও জোর করে কোলে তুলে এনে বিছানায় বসালো।

কাব্য’র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চুপচাপ বসে আছি। চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে।
অয়ন: ভাবি আর কতো কাঁদবে আমাদের বাসাটা তো সাগর বানিয়ে ফেলবে।
আমি: অয়ন ঠাট্টা ভালো লাগছে না।
অয়ন: ঠিক আছে কান্না থামাও আমরা ভাইয়ার বিচার করবো।
আমি: হুহ বিচার যার চরিত্র এমন তাকে আবার…
কাব্য: তিলো আ…
আমি: একদম চুপ আমার নাম তুমি মুখে নিবে না।
ভাবি: তোরা যা তো এই রুম থেকে আমি ওকে দেখছি। (কাব্য আর অয়ন বেড়িয়ে যেতেই ভাবি এসে আমার পাশে বসলেন। ভাবিকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলাম)
ভাবি: কাব্য এমনটা কেন করেছে আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। তুই কান্না থামা এভাবে কাঁদতে থাকলে অসুস্থ হয়ে পরবি তো।
আমি: ওকে তো আমি ভালোবেসেছিলাম ও বললে আমি ওর কাছে চলে আসতাম ও এই কাজ করতে গেলো কেন। আর করেছে তো একবারো আমাকে বলেনি সব লুকিয়ে রেখেছে।
ভাবি: তুই শুনলে কষ্ট পাবি তাই হয়তো লুকিয়ে রেখেছিল।
আমি: যে কাজে আমি কষ্ট পাবো সেই কাজ ও করলো কেন..?
ভাবি: সেটাই তো বুঝতে পারছি না, অনেক বার জিজ্ঞেস করেছি কিছু বলছেও না।
আমি: বলতে পারো আমার মামি আর কাব্য’র মধ্যে পার্থক্য কোথায়, একজন বিক্রি করেছে আর অন্যজন কিনেছে। আমি ওদের কাছে বাজারের পণ্য হয়ে গেছি ভাবি।
ভাবি: চুপ এসব বলবি না সব ঠিক হয়ে যাবে তুই একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর।
ভাবি আমাকে শুয়ে দিয়ে চলে গেলেন। চুপচাপ শুয়ে শুয়ে কাঁদছি। কাব্য এমন করেছে বিশ্বাসই করতে পারছি না, কেন করলো ও এমনটা। মামি না মানলে আমাকে বলতো আমি চলে আসতাম ওর কাছে আর যদি মামিকে টাকা দিতেই হতো আমাকে বলে দিলে কি হতো..?

হঠাৎ কপালে ঠান্ডা অনুভব হতেই ঘুম ভেঙে গেলো, চোখ মেলে তাকাতে পারছি না মাথা যন্ত্রণা করছে। চোখ বন্ধ রেখেই কপালে হাত দিলাম, কপালে তো জলপট্টি দেওয়া। আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম, পাশে কাব্য মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। আমি নড়াচড়া করছি বুঝতে পেরে আমার দিকে তাকালো।
কাব্য: তিলো এখন একটু ভালো লাগছে..? যা জ্বর উঠেছিল আমি তো… (কপাল থেকে জলপট্টি এনে ছুড়ে ফেলে দিলাম, সবকিছুর জন্য ও দায়ী আর এখন আসছে ডাক্তারি করতে)
কাব্য: ভুল তো আমি করেছি নিজেকে শাস্তি দিচ্ছ কেন।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: একটু বসো আমি খাবার আর ওষুধ নিয়ে আসছি
আমি: আমার কিছু প্রয়োজন হলে ভাবির থেকে নিয়ে নিবো, আমাকে নিয়ে আপনার এতো ভাবতে হবে না।
কাব্য: ভাবি বাসায় নেই আর আমি না ভাবলে কে ভাববে শুনি।
আমি: ভাবি কোথায়..?
কাব্য: হসপিটালে গেছে, ভাবির আম্মু অসুস্থ। (দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম সন্ধ্যা সাতটা বাজে তারমানে আজকে আর তিশার কাছে যাওয়া সম্ভব না)
কাব্য: চুপচাপ শুয়ে থাকো আমি আসছি।
আমি: বললাম তো আমাকে নিয়ে আপনার এতো চিন্তা করতে হবে না।
কাব্য: আবার আপনি করে বলছ।
আমি: হ্যাঁ কারণ আমি তো আপনার কেনা…
কাব্য: তিলো তুমি অসুস্থ এসব নিয়ে এখন কোনো কথা বলতে চাই না আগে সুস্থ হও সব ঠিক করে নিবো।
আমি: আর কিছুই ঠিক হবে না কাব্য চৌধুরী।
কাব্য: ডাক্তারবাবু থেকে কাব্য… বাদ দাও চলো।
আমি: কোথায় যাবো..?
কাব্য: তোমাকে রুমে একা রেখে যেতে পারবো না।
আমি: মানে..?
আমার কথার উত্তর না দিয়ে আমাকে কোলে তুলে নিলো, কি অদ্ভুত মানুষ।

কাব্য খাবার গরম করছে আর আমাকে ওর কাছে একটা চেয়ারে বসিয়ে রেখেছে, ও হয়তো ভাবছে আমি পালিয়ে যাবো। যাবো তো ঠিকি তবে পালিয়ে না ওকে ছেড়ে চলে যাবো আর সকালেই।
কাব্য: তিলো বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছে..?
আমি: আমার কষ্ট নিয়ে ভাবতে হবে না, খাবার কার জন্য গরম করছেন..?
কাব্য: তোমার জন্য।
আমি: খাবো না আমি।
কাব্য: তুমি অসুস্থ তাই ওষুধ খেতে হবে আর ওষুধ খেতে হলে আগে খাবার খেতে হবে (আসছে এখানে দরদ দেখাতে ইচ্ছে হচ্ছে ওকে…)
কাব্য: চলো।

টেবিলে মাথা রেখে বসে আছি, কাব্য খাবার নিয়ে বার বার খেতে বলছে। অসহ্য লাগছে ওর এসব ভালোবাসা।
কাব্য: তিলো মাথা তুলো তাকাও আমার দিকে।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: খেয়ে নাও প্লিজ।
আমি: বলেছি তো খাবো না।
কাব্য: খাইয়ে দিচ্ছি চুপচাপ খেয়ে নাও।
আমি: বললাম না খাবো না (খাবারের প্লেট ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলাম)
কাব্য: তিলো…(থাপ্পড় দেওয়ার জন্য হাত উপরে তুলে আবার নামিয়ে নিলো)
অয়ন: বাহ্ ভাইয়া বাহ্ এইটাও দেখতে হলো (অয়নের কথা শুনে দরজায় তাকালাম, রাগি চোখে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে)
অয়ন: একে মেয়েটা অসুস্থ তার উপর আবার তুমি এমন করছ।
কাব্য: কি করবো ও আমার কোনো কথাই শুনছে না।
অয়ন: যা করেছ তারপর কি ভাবির রাগ করাটা স্বাভাবিক না..?
কাব্য: (নিশ্চুপ)
অয়ন: আর ভাবি কি শুরু করেছ দুজনে..? একটা ভুল হয়ে গেছে দুজনে কথা বলে মিটিয়ে নাও। তা না করে এভাবে কান্নাকাটি করে নিজেকে শাস্তি দিচ্ছ কেন..? এই কয়েক ঘন্টায় জ্বর বাধিয়ে নিজের কি অবস্থা করেছ দেখেছ একবার..? ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে রুমে যাও, বড় ভাইয়া আর ভাবি আজকে বাসায় ফিরতে পারবে না (অয়ন নিজের রুমে চলে গেলো, কাব্য’র জন্য আজ এতো গুলো কথা শুনতে হলো আমাকে)
কাব্য: হয়েছে শান্তি ছোট ভাইয়ের থেকে আমাকে বকা শুনালে, চলো এবার।
আমি: একাই যেতে পারবো আমি।
কাব্য: হ্যাঁ যাও আর সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে…
আমি: মারা যাবো তাই তো।
কাব্য: তিলো প্লিজ আমি ভুল করেছি যা শাস্তি দিতে হয় দাও তবুও এসব কথা বলোনা, তোমাকে হারানোর কথা তো আমি ভাবতেও পারিনা। (ওর কথার কোনো জবাব না দিয়ে আস্তে আস্তে রুমে চলে আসলাম)

বিছানায় শুয়ে আছি আর কাব্য সোফায় বসে ল্যাপটপ টিপছে। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, তাকিয়ে দেখলাম আমার ফোন।
কাব্য: তোমার উঠতে হবে না আমি দেখছি। (কাব্য ফোন হাতে নিয়ে একবার আমার দিকে তাকালো তারপর ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। অনেকক্ষণ পর কাব্য রুমে আসলো)
আমি: কে ফোন দিয়েছিল..?
কাব্য: তিশা।
আমি: তো ফোন নিয়ে বারান্দায় যেতে হলো কেন..?
কাব্য: এমনি। (আর কিছু না বলে চুপচাপ শুয়ে রইলাম)

কাব্য: খাবার, ওষুধ কিছুই তো খাওনি রাতে যদি জ্বর বেড়ে যায় তখন বুঝবে আমি কতোটা খারাপ হতে পারি (আমার পাশে এসে শুয়ে পড়লো)
আমি: যে টাকা দিয়ে মেয়ে কিনে এনে বিয়ে করে সে কোতোটা ভালো তাতো বুঝতেই পারছি।
কাব্য: কতোবার বলবো এই বিষয়ে কথা বলতে চাই না তুমি সুস্থ হও আগে তারপর নাহয় ইচ্ছেমতো ঝগড়া করো। (কিছু না বলে বিছানার এক পাশে এসে শুয়ে রইলাম)

সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি কাব্য’র বুকে ঘুমিয়ে আছি আর ও আমাকে দুহাত দিয়ে জরিয়ে ধরে রেখেছে। ওর ঘুমন্ত মুখটা দেখতে কি মায়াবী কিন্তু ও…
কাব্য’র হাত দুটু সরিয়ে দিয়ে উঠে পড়লাম। একটু ফ্রেশ হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।

তিশার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, ও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি: তোর আবার কি হলো..?
তিশা: তুই কান্নাকাটি বন্ধ কর বলছি।
আমি: ওহ ও তোকে সব বলে দিয়েছে।
তিশা: আসলে তমা আমি সবকিছু জানতাম।
আমি: কি..?
তিশা: প্লিজ রাগ করিস না পুরো কথাটা আগে শুন।
আমি: তিশা তুইও আমাকে ঠকালি।
তিশা: এইটাকে ঠকানো বলে না তুই…
আমি: থাক আর কিছু শুনতে চাই না।
তিশা: কোথায় যাচ্ছিস..? একটা কথা শুনে যা প্লিজ তোর ফোনটা একবার দেখিস (তিশার ডাকে সাড়া না দিয়ে দৌড়ে বাসায় চলে আসলাম। কলিংবেল চাপতেই মামি দরজা খুলে দিলো)
আমি: এমন হা করে তাকিয়ে আছ কেন, আশা করনি আমি যে আসবো।
মামি: না মানে…
আমি: সবাই তো ঠকালে আমাকে শান্তি পেয়েছ তো।
মামি: (নিশ্চুপ)
আমি: ওহ হ্যাঁ আমাকে বিক্রি করে কতো টাকা পেয়েছ মানে কাব্য চৌধুরী তোমাকে কতো টাকা দিয়েছে..?
মামি: (নিশ্চুপ)
আমি: বলছ না কেন, আমি শুনতে চাই কতো টাকার বিনিময়ে তোমরা আমাকে কেনাবেচা করেছ।
মামি: তমা…
আমি: বলো কতো টাকা…
মামি: এক কোটি (আমার ধমকে ভয়ে বলে দিলো। বাহ্ কাব্য’র কাছে আমার মূল্য এক কোটি টাকা)
আমি: মামি আর মায়ের মধ্যে পার্থক্য কি বলতো..? মা হয়ে মেয়েকে বিক্রি করতে পারলে তুমি..?
মামি: ভুল হয়ে গেছে মা মাফ করে দে।
আমি: আব্বুর রেখে যাওয়া সম্পত্তির দলিল গুলো দাও।
মামি: কেন..?
আমি: সবকিছু বিক্রি করে এই শহর ছেড়ে চলে যাবো, না তোমার কাছে থাকবো না কাব্য’র কাছে।
মামি: পাগলামি করিস না ঠান্ডা মাথায় আমার কথাটা শুন।
আমি: চুপচাপ আমার কথা শুনো নাহলে আমাকে কেনাবেচা করার কারণে তোমাকে আর ওই কাব্য চৌধুরীকে জেলে পাঠাবো।
মামি: তমা…
আমি: যাও দলিল গুলো নিয়ে এসো।

জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছি, কতোদিন পর নিজের রুমে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু আজ কোনো কিছুই নিজের মনে হচ্ছে না কারণ আমি যে…(হঠাৎ কাব্য এসে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো, ওর স্পর্শ যে খুব চেনা তাই না দেখেই বুঝতে পারি এখন। কিন্তু কাব্য কোথা থেকে আসলো)
আমি: ছাড়ুন।
কাব্য: না আগে বলো আমাকে না বলে চলে এসেছ কেন..?
আমি: ইচ্ছে হয়েছে তাই।
কাব্য: জানো তোমাকে না পেয়ে কতোটা ভয় পেয়েছিলাম, সারা বাসা খুঁজেছি কিন্তু পাইনি তারপর তিশা ফোন করে বললো তুমি এখানে।
আমি: তিশার সাথে দেখছি আপনার ভালোই যোগাযোগ আছে।
কাব্য: তিশার জন্যই তো তোমাকে আমার করে পেয়েছি।
আমি: হ্যাঁ দুজন মিলেই তো আমাকে মামির থেকে কিনলেন।
কাব্য: উফফ তিলো…
আমি: ছাড়ুন বলছি (ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে)
মামি: তমা এইযে দলিল।
কাব্য: দলিল দিয়ে কি করবে..?
মামি: ও বলছে সবকিছু বিক্রি করে এই শহর ছেড়ে চলে যাবে।
কাব্য: মানে, তিলো পাগল হয়ে গেছো তুমি।
আমি: পাগল তো এতোদিন ছিলাম তাই তো তোমাদের কাউকে চিনতে পারিনি।
কাব্য: তাই বলে এমন সিদ্ধান্ত নিবে..?
আমি: হুম। (কাব্য আর মামি চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো)

কিছু ভালো লাগছে না একবার বিছানায় বসছি তো আবার জানালার কাছে যাচ্ছি খুব অস্থির অস্থির লাগছে। ফোনটা হাতে নিয়ে শুভ্রাকে ফোন দিলাম।
শুভ্রা: কি ব্যাপার তিলোত্তমা আমাকে নিজে থেকে ফোন করেছে।
আমি: আমার নাম্বার তুমি চিনো..?
শুভ্রা: আমি জানবো না তোমার নাম্বার তা কি কখনো হয়।
আমি: ওহ আমার উপকার করেছ তো তাই তোমাকে কিছু গিফট করতে চাই।
শুভ্রা: আমার তো গিফট চাই না চাই শুধু কাব্য’কে।
আমি: কাব্য’কেই তো গিফট দিবো।
শুভ্রা: মানে?
আমি: কাব্য’কে আমি ডিভোর্স দিবো আর আজকেই। তুমি তো আমার এতো বড় উপকার করেছ তাই নিজের হাতে কাব্য’র হাতটা তোমার হাতে তুলে দিতে চাই।
শুভ্রা: সত্যি বলছ তুমি..?
আমি: হ্যাঁ আমাদের বাসায় চলে আসো, মামির বাসায় কিন্তু।
শুভ্রা: আমি এক্ষণি আসছি।

ফোন রেখে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখি কাব্য দাঁড়িয়ে আছে।
কাব্য: এই সিদ্ধান্ত তুমি নিতে পারলে তিলো (কাব্য কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়লো)
যতো খুশি কাঁদো কাব্য চৌধুরী আমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা তো করবোই। তোমাদের মতো মুখোশ পড়া আপন মানুষদের চেয়ে একা থাকা অনেক ভালো।

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১২

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১২

লেখিকা: সুলতানা তমা

হঠাৎ মাথায় কারো হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকালাম, এখনো তো সকাল হয়নি মনে হয় মধ্যরাত। ডিম লাইটের আলোতে ঘড়িও দেখতে পারছি না। উঠে বসে পাশ ফিরে তাকালাম, কাব্য মাথা নিচু করে বসে আছে।
আমি: ডাক্তারবাবু কি হয়েছে তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন..?
কাব্য: কিছু হয়নি তুমি উঠেছ কেন..?
আমি: ঘুম ভেঙে গেলো।
কাব্য: ওহ, বেডে চলো (রাতে ছাদ থেকে এসে কাব্য ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে আমি এসে সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। যে ধমক গুলো দিয়েছিল খুব রাগ হচ্ছিল কিন্তু এখন ওকে এমন অবস্থায় দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে)
কাব্য: তিলো প্লিজ বেডে চলো।
আমি: হুম।
কাব্য: রাগ করেছ হুম (কাব্য আমার এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে ওর বুকের সাথে জরিয়ে ধরলো)
কাব্য: সরি পাগলী আর কখনো এভাবে বকা দিবো না প্লিজ আর রেগে থেকো না (আমি কিছু বলতে যাবো তখনি কাব্য আমার দুগালে আলতো করে ধরে কপালে একটা চুমু দিলো তারপর কোলে করে এনে বিছানায় শুয়ে দিলো)
আমি: ডাক্তারবাবু আ…
কাব্য: এখনো মুখ গোমড়া করে রেখেছ বললাম তো সরি প্লিজ একটু হাসো। (কাব্য একটা হাত দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে রেখেছে আরেকটা হাত দিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে)
আমি: সবসময় কি নিজের কষ্টগুলো আড়াল করে এভাবেই আমাকে হাসিয়ে যাবে..?
কাব্য: আমার তিলো পাগলী হাসলে আমার মনে আর কোনো কষ্ট থাকে না। (আমার নাকের সাথে ওর নাক ঘসে হাসতে হাসতে বললো। সত্যি আজব একটা মানুষ ও নিজের কষ্ট গুলো কতো সুন্দরভাবে আড়াল করে রাখে)
আমি: তিলো পাগলীর সামনে থাকলেই শুধু কষ্ট আড়াল করে হাসো পরে তো ঠিকি আবার কষ্ট পেয়ে কাঁদো।
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: ডাক্তারবাবু তুমি এইটা কেন বুঝতে চাও না, তুমি যেমন আমার মুখে হাসি দেখতে চাও তেমনি আমিও তোমার মুখে হাসি দেখতে চাই।
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: তুমি আমাকে ভালোবাস এর মানে তো এই নয় যে তুমি শুধু আমাকে হাসিয়ে যাবে আর আমি হেসে যাবো। আমিও তোমাকে ভালোবাসি, আমিও তোমার মুখে হাসি দেখতে চাই সবসময়। তুমি নিজের ভিতরে কষ্ট পুষে রেখে দিনের পর দিন এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদবে আর আমি তা দেখেও মুখ বুজে সহ্য করবো তা তো হতে পারে না।
কাব্য: তাহলে তুমি কি করতে চাও।
আমি: কিছুই করতে চাই না, আমাকে শুধু তোমার কষ্ট গুলো বলো। কষ্ট মনের মধ্যে পুষে রাখতে নেই শেয়ার করতে হয়, আমাকে বলো দেখবে নিজের মন হালকা লাগবে। (আমাকে ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লো, কাব্য’র গলায় জরিয়ে ধরে ওর ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু খেলাম)
আমি: বলো প্লিজ।
কাব্য: হুমায়রা চৌধুরী আর…(কাব্য’র ঠোঁটে একটা আঙ্গুল রেখে ওকে আটকে দিলাম)
আমি: নাম ধরে নয় আব্বু আম্মু বলো।
কাব্য: তিলো…
আমি: বলো বলছি।
কাব্য: আব্বু আম্মু হিয়া আর আমি, এটাই ছিল আমাদের ছোট্র পরিবার। প্রথম আমাদের পরিবারে সুখ শান্তি থাকলেও সেটা আস্তে আস্তে কমে যায়। আব্বু একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করতেন আর আম্মু ছিলেন ডক্টর। হিয়া আর আমি ছোটবেলা থেকেই একাকীত্বের মধ্যে বড় হয়েছি কারণ আব্বু আম্মুর আমাদের জন্য সময় ছিল না। মাঝে মাঝে কষ্ট হতো আব্বু আম্মুকে বললে উনারা বলতেন “এখন হয়তো সময় দিচ্ছি না তোমাদের কিন্তু সবকিছু তো তোমাদের দুজনের ভবিষ্যৎ এর জন্যই করছি” জানো তিলো খুব করে উনাদের বুঝাতে চাইতাম আমাদের এতোকিছু চাই না কম হলেও চলবে তাও যেন আমাদের একটু সময় দেন একটু ভালোবাসা দেন। কিন্তু আব্বু আম্মু তাদের কাজে এতোটাই ডুবে গিয়েছিলেন যে কিছুই বুঝতে চাইতেন না। বুঝেছেন কিন্তু অনেক দেরিতে, তখন আমার পনেরো বছর আর হিয়া সাত বছরের। বিয়ের ষোলো বছর পর আমার আব্বু আম্মু বুঝতে পারেন যে উনারা একে অন্যের জন্য পারফেক্ট না। কারণ কি জানো, উনারা একে অপরকে সময় দিতে পারেন না তাই নাকি একে অপরের জন্য পারফেক্ট না। শেষ পর্যন্ত উনারা আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মানে ডিভোর্স। হিয়া নাহয় তখন ছোট ছিল কিন্তু আমি তো অনেক কিছু বুঝতাম, কি করে উনাদের এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতাম। কিন্তু তাও উনারা আমাকে বুঝিয়েছেন যে এটাই আমাদের ভাই বোনকে মানতে হবে। আব্বু আম্মুকে ছাড়া থাকতে হবে এইটা মন বুঝতে চাইতো না তাও মন কে বুঝিয়ে ছিলাম যে যারা সম্পর্ক রাখতে চায় না তাদের সম্পর্ক তো জোর করে টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। যখন আমি নিজের মন কে শক্ত করে ফেলি তখন আব্বু আম্মুর মধ্যে আরেক জামেলা শুরু হয়, আমরা ভাই বোন কার কাছে যাবো। আব্বু বলেন আব্বুর কাছে আম্মু বলেন আম্মুর কাছে, রোজ রোজ এই অশান্তি দেখতে দেখতে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু আব্বু আম্মুকে কিছু বলিনি, এতোটুকু রাগ পর্যন্ত দেখাইনি। কিন্তু আব্বু আম্মু শেষ মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্ত নেন যে আর রাগ না দেখিয়ে থাকতে পারিনি। আমি আম্মুর কাছে আর হিয়া আব্বুর কাছে নাহয় আমি আব্বুর কাছে আর হিয়া আম্মুর কাছে থাকবে উনারা এই সিদ্ধান্ত নেন। যখন উনারা আমাদের এতোটুকু সময় দিতে পারতেন না তখন আমি হিয়ার দেখাশোনা করেছি, ওকে খাওয়ানো ঘুম পাড়ানো সব আমি করেছি। কি করে পারতাম আব্বু আম্মুর ভুলের জন্য ভাই বোন আলাদা হয়ে যেতে। হিয়া তো তখন কিছু বুঝতো না আব্বু আম্মু ঝগড়া করলে ও আমার হাতটা জরিয়ে ধরে ড্যাবড্যাব করে আব্বু আম্মুর দিকে তাকিয়ে থাকতো। আমার এসব ভালো লাগতো না, আব্বু আম্মুকে অনেক বুঝিয়েছিলাম যে আরো একবার ভাবো। ওরা শুনেনি আমার কথা উল্টো আমাদের ভাই বোন কে আলাদা করে দিতে চেয়েছিল। যারা বিয়ের ষোলো বছর পর বুঝতে পারে একে অন্যের জন্য পারফেক্ট না তারা আমাদের ভাই বোনের দায়িত্ব আবার কি নিবে। একদিন রাতে আব্বু আম্মুর মধ্যে অনেক ঝগড়া শুরু হয় এক পর্যায়ে আম্মু ঘুমন্ত হিয়াকে কোলে তুলে নেন বাসা থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য আর আব্বু তখন আম্মুর গালে কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দেন। এসব দেখতে আর ভালো লাগছিল না তাই বাধ্য হয়ে আম্মুর থেকে হিয়াকে কেড়ে এনে বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। আসার সময় আব্বু আম্মুকে দুটু কথা বলে এসেছিলাম “তোমরা কোনো সন্তানের বাবা মা হওয়ার যোগ্য না, তোমাদের আমি ঘৃণা করি।

কাব্য নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে আর আমি পাশে বোবার মতো বসে আছি। কি বলবো কি বলে শান্তনা দিবো ওকে ভেবে পাচ্ছি না।
কাব্য: তিলো হিয়াকে এসব বলোনা, ও জানে আমি আব্বু আম্মুর সাথে ঝগড়া করে ওকে নিয়ে বাসা থেকে চলে এসেছিলাম।
আমি: হিয়াকে সব কিছু বলোনি কেন..?
কাব্য: আমার মতো হিয়াও নিজের আব্বু আম্মুকে ঘৃণা করুক এইটা আমি চাইনি তাই মিথ্যে বলেছি এখনো বলি। হিয়া আব্বু আম্মুকে খুঁজে এইটা আমি জানতাম তাই ওকে পড়াশোনার জন্য বাহিরে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।
আমি: ফারাবী ভাইয়া আর অয়ন..?
কাব্য: ওদের সাথে আমার ভাগ্য আমাকে দেখা করিয়ে দিয়েছিল। সেদিন রাতে ঘুমন্ত হিয়াকে নিয়ে কোথায় যাবো ভেবে পাচ্ছিলাম না তখন ফারাবীর সাথে রাস্তায় দেখা হয় সেই থেকে একসাথে আছি। দুর্ভাগ্যক্রমে ওদেরও বাবা মা ছিল না, অয়ন তখন হিয়ার মতোই ছোট ছিল। ফারাবীর ছোট একটা চায়ের দোকান ছিল সেটা থেকে আজ আমাদের এতোকিছু। অনেক কষ্ট করেছি ফারাবী আর আমি। একদিকে অয়ন আর হিয়ার দেখাশোনা অন্যদিকে নিজেদের পড়াশোনা সাথে এই ছোট্র ব্যবসা। ফারাবী এখন যে ব্যবসা করছে এইটা সেই ছোট্র ব্যবসা থেকেই বড় করেছি। ফারাবী সবসময় আমাকে একটা কথা বলতো “সৎ পথে উপার্জন করলে আল্লাহ্‌ও সাহায্য করেন” সত্যি আল্লাহ্‌ আমাদের সাহায্য করেছেন নাহলে তো আমরা ভেসে যেতাম আজ এতোকিছু হতো না।
আমি: স্যালুট বস তোমাদের দুজনকে, তোমরা তো পেরেছ আমি হলে তো…
কাব্য: কোন কিছুতে ভয় পেতে নেই শুধু নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হয়। আমি ব্যবসা ছেড়ে ডক্টর কেন হয়েছি জানো..? জীবনে যদি কখনো আম্মুর সাথে দেখা হয় তাহলে যেন একটা কথা বলতে পারি “আমিও একজন ডক্টর আর আমি আমার পরিবারকে সময় দেই”
আমি: আচ্ছা আব্বু আম্মু এখন কোথায় আছেন জানো..?
কাব্য: না সেদিনের পর রাগে আর বাসায় যাইনি, এক বছর পর গিয়েছিলাম কিন্তু বাসায় কেউ ছিল না। আব্বু আম্মুর কি ডিভোর্স হয়েছে বা কোথায় আছেন কিচ্ছু জানিনা। (কাব্য’র এই কথাটা বলতে ওর গলাটা ধরে আসলো তারমানে ও মিথ্যে বলছে। তাহলে কি ও আব্বু আম্মু কোথায় আছেন সেটা জানে)
আমি: সত্যি জানোনা (কাব্য কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো)
কাব্য: বাদ দাওনা ঘুমিয়ে পড়ো ভোর হয়ে আসছে।
আমি শুয়ে পড়তেই কাব্য এসে আমার বুকে মাথা রাখলো। কাব্য কাঁদছে বুঝতে পারছি কিন্তু বাধা দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না, কাঁদুক কাঁদলে হয়তো কষ্টটা কিছু হলেও কমবে।

ঘর গুছাচ্ছিলাম হঠাৎ কাব্য কোথা থেকে তড়িঘড়ি করে আসলো। ফোনটা বিছানায় রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফোন দেখে মনে হলো তিশাকে একটা ফোন দেই। ফোন হাতে নিতেই কাব্য চেঁচিয়ে উঠলো।
কাব্য: ফোন দিয়ে কি করবে..?
আমি: তিশাকে ফোন দিবো (আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো)
কাব্য: তোমার ফোন থেকে দাও।
আমি: আশ্চর্য তোমার ফোন থেকে দিলে সমস্যা কোথায় আর তুমি ফোনটা এভাবে কেড়ে নিলে কেন..? (আমার কথার উত্তর না দিয়ে ফোনটা টেবিলের উপর রেখে দিলো। বিছানায় বসে বসে ওর কাজ দেখছি তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছে)
আমি: এই দুপুর বেলায় কোথায় যাওয়া হচ্ছে..?
কাব্য: হসপিটালে।
আমি: কিন্তু তুমি তো এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েছ।
কাব্য: ইমারজেন্সি পরে গেছে তাই যেতে হচ্ছে।
আমি: ডাক্তারবাবু… (আমার কথা না শুনেই তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলো)

কাব্য এমন করছে কেন ভেবে পাচ্ছি না, কখনো তো আমার থেকে ফোন কেড়ে নেয়নি কিন্তু আজ ওর কি হলো। জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, তাকিয়ে দেখি কাব্য’র ফোন। খুব হাসি পাচ্ছে যে ফোন আমার থেকে কেড়ে নিলো সে ফোনই ভুলে ফেলে গেছে। ফোন হাতে নিতেই চমকে উঠলাম শুভ্রা ফোন দিয়েছে। রিসিভ করতেই শুভ্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
শুভ্রা: কাব্য তুমি কি দেখা করতে আসবে না (তারমানে কাব্য হসপিটালে যায়নি শুভ্রার সাথে দেখা করতে গেছে। কাব্য আমাকে এতো বড় মিথ্যে কথা বলতে পারলো)
শুভ্রা: চুপ হয়ে আছ কেন, দেখো তুমি যদি আমার কথা না শুনো তাহলে আমি কিন্তু তোমার বউ কে সব সত্যি বলে দিবো (কোন সত্যির কথা বলছে শুভ্রা)
শুভ্রা: কাব্য কথা বলো নাহলে আমি তিলোত্তমাকে সব বলে দিবো।
আমি: কাব্য নয় আমি ফোন রিসিভ করেছি।
শুভ্রা: কাব্য’র ফোন তুমি রিসিভ করেছ কেন..?
আমি: বউ তার স্বামীর ফোন রিসিভ করেছে কেন সে কৈফিয়ত কি একটা বাইরের মেয়েকে দিতে হবে..?
শুভ্রা: কাব্য কোথায় ওকে ফোনটা দাও।
আমি: কাব্য আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে, গভীর ঘুমে আছে তো ডাকা যাবে না।
শুভ্রা: ছাড়াচ্ছি ওর গভীর ঘুম, তুমি একটা সত্যি কথা জানলে ওকে বুকে কেন পায়ের নিচেও জায়গা দিবে না (আমি তো চাইছিলাম তুমি রেগে গিয়ে সত্যিটা বলো তাই তো মিথ্যে কথা বললাম)
শুভ্রা: কি হলো তুমি সত্যিটা জানতে চাও না।
আমি: হুম বলো।
শুভ্রা: তুমি কি ভেবেছ কাব্য তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে..? তোমার মামি দুজন লোকের কাছে তোমাকে বিক্রি করে দিয়েছিল তারপর থেকে তুমি হাওয়া, তোমার মামি তোমাকে খুঁজেনি কেন..? এর আগে কখনো তোমাকে বিক্রি করার কথা ভেবেছে তোমার মামি..? আসলে সেই দুজন লোক কাব্য’র লোক ছিল। তোমাকে কাব্য টাকা দিয়ে কিনে এনেছে (মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে কি বলছে ও এসব)
শুভ্রা: বিশ্বাস নাহলে কাব্য’কে জিজ্ঞেস করে দেখো। কাব্য যদি সত্যি তোমাকে ভালোবাসতো তাহলে টাকা দিয়ে কিনে আনলো কেন আসলে কাব্য তোমাকে সেই মেয়েদের মতো দেখে যাদের টাকা দিয়ে কিনে এনে…
আমি: চুপ করো শুভ্রা চুপ করো।

ফোনটা আছাড় দিয়ে ভেঙে ফ্লোরে বসে পড়লাম। কখনো এমন একটা সত্যের মুখোমুখি হতে হবে ভাবিনি। কাব্য বলেছিল মামিকে রাজি করাবে কিন্তু ও রাজি করানোর চেষ্টা না করে উল্টো আমাকে টাকা দিয়ে কিনে আনলো। দরজা খুলার শব্দ শুনে সামনে তাকালাম, কাব্য ভাঙা ফোনটার দিকে তাকিয়েই ভয়ে দাঁড়িয়ে গেছে ওখানে।
কাব্য: তিলো ফ্লোরে বসে আছ কে…
আমি: তোমার ওই নোংরা মুখে আমার নাম শুনতে চাই না।
কাব্য: কেঁদো না প্লিজ আমার কথা শুনো।
আমি: তোমার থেকে তো আমার একটা কথাই শুধু শোনার আছে বলো কতো টাকা দিয়ে কিনে এনেছ আমাকে। আমি জানতে চাই তোমার কাছে আমার মূল্য কত টাকা।
কাব্য: কান্না থামাও প্লিজ।
আমি: সেদিন রাতে আমার জ্ঞান ফেরার পর এমন ভাব করেছিলে যে তুমি কিছুই জানোনা। আমি মামির চরিত্র ঢাকার জন্য তোমাকে এসব বলিনি আর তুমিই কিনা এমন…
কাব্য: আমার কথা তো শুনবে।
আমি: কি শুনবো হ্যাঁ, আমি তো তোমাকে ভালোবেসেছিলাম তাহলে কেন আমাকে কিনে এনেছ..? জানো শুভ্রা কি বলেছে, তুমি নাকি আমাকে ওইসব মেয়েদের মতো ভাবো তাই কিনে এনে… ছিঃ এসব ভাবতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।
কাব্য: সত্যিটা কি সেটা তো শুনবে।
আমি: সব সত্যি তো শুভ্রা আমাকে বলেই দিয়েছে, আর আমি সত্যিটা জেনে যাবো এই ভয়েই তো তুমি ফোন কেড়ে নিয়েছিলে।
কাব্য: তিলো…
আমি: একদম আমার কাছে আসবে না তোমার ওই নোংরা হাতে আমাকে টাচ করো আমি চাইনা।
কাব্য: প্লিজ আমার কথা শুনো।
আমি: কিচ্ছু শুনতে চাইনা বেড়িয়ে যাও তুমি এই রুম থেকে।
কাব্য: তিলো…
আমি: বেড়িয়ে যাও।
কাব্য বেড়িয়ে যেতেই দরজা লাগিয়ে দিলাম। হাটতে পারছি না মাথা খুব ঘুরছে দরজার পাশেই বসে পড়লাম। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে, আমি তো কাব্য’কে ভালোবেসেছিলাম আর ও আমার সাথে এমনটা করতে পারলো…

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১১

0

রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১১

লেখিকা: সুলতানা তমা

বারান্দায় দাঁড়িয়ে সকালের মৃদু বাতাস উপভোগ করছি আর ভাবছি কাব্য’র কষ্টগুলো কিভাবে দূর করা যায়। কিন্তু ভেবে কিছুই পাচ্ছি না, কেউ আমাকে হেল্প না করলে আমি তো কিছুই জানতে পারবো না।
কাব্য: তিলো এই নাও হিয়া কথা বলবে (কাব্য আমার দিকে ফোন এগিয়ে দিলো, আচ্ছা হিয়াকে যদি জিজ্ঞেস করি ও কি আমাকে কিছু বলবে..?)
আমি: হ্যালো।
হিয়া: সরি সরি ভাবি প্লিজ রাগ করোনা, তুমি বাসায় এসেছ তিন-চার দিন হয়ে গেলো তোমাদের বিয়ে পর্যন্ত হয়ে গেলো কিন্তু আমি একটা ফোন পর্যন্ত করতে পারিনি।
আমি: তো ফোন করতে পারনি কেন..?
হিয়া: একটু জামেলায় ছিলাম ভাইয়াকে তো বলেছিলাম।
আমি: ওহ।
হিয়া: ভাবি তোমার কি মন খারাপ..?
আমি: নাতো।
হিয়া: বলো আমাকে কি হয়েছে।
আমি: বললে আমার মন ভালো করে দিতে পারবে।
হিয়া: চেষ্টা তো করে দেখতে পারি তাই না..?
আমি: তুমি শুধু আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিলেই তো আমার মন ভালো হয়ে যায়।
হিয়া: তাই নাকি, তাহলে বলো কি প্রশ্ন তোমার।
আমি: হিয়া প্লিজ তুমি রেগে যেও না আমাকে শুধু এইটুকু বলো তোমরা দুজন আব্বু আম্মুর উপর রেগে আছ কেন আর উনারা এখন কোথায়..?
হিয়া: প্রশ্নটা তোমার স্বামীকে গিয়ে করো।
আমি: হ্যালো হিয়া। (হিয়া ফোনটা কেটে দিলো। কিন্তু ও কাব্য’র উপর রেগে গেলো কেন)
কাব্য: তিলো কথা শেষ হলে রুমে এসো।
আমি: আসছি।

রুমে এসে দেখি কাব্য রেডি হচ্ছে, কোথায় যাবে ও..?
আমি: কোথাও যাচ্ছেন..?
কাব্য: যাচ্ছি কিন্তু তোমাকে বলবো না।
আমি: রেগে আছেন কেন..?
কাব্য: তিলো আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে এখনো আপনি আপনি করে ডাকো, ভালো লাগে নাকি শুনতে..?
আমি: ওহ।
কাব্য: ওহ মানে, তুমি আবারো আপনি করেই ডাকবে..?
আমি: না মানে…
কাব্য: তুমি করে বলতে পারলে কথা বলো নাহলে বলোনা।
আমি: আরে কোথায় যাচ্ছেন বলে যান।
দ্যাত চলে গেলো। তাড়াতাড়ি ওর পিছু পিছু নিচে আসলাম।

ড্রয়িংরুমে তো দেখছি সবাই রেডি হয়ে বসে আছে।
আমি: সবাই কি কোথাও যাচ্ছ..?
ভাবি: সবাই না তিশা চলে যাচ্ছে সাথে আদনান।
আমি: তিশা তুই চলে যাচ্ছিস..?
তিশা: হ্যাঁ গতকাল তো আব্বু আম্মুর সাথে যাইনি কিন্তু আজ যেতেই হবে।
ভাইয়া: নীরা আমি আসছি। (ভাইয়া তো মনে হচ্ছে অফিসে চলে যাচ্ছেন, কাব্যও কোথায় যেন যাচ্ছে তারমানে অয়নকে বাসা থেকে বের করতে পারলেই বাসা একদম ফাকা)
আমি: ডাক্তারবাবু বলুন না কোথায় যাচ্ছেন।
কাব্য: তুমি করে বলো তাহলে বলবো।
আমি: ঠিক আছে বলো কোথায় যাচ্ছ..?
কাব্য: এইতো লক্ষী বউ, তোমার জন্য ফোন কিনতে যাচ্ছি (এটাই তো সুযোগ, এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে)
আমি: একা যাচ্ছ অয়নকে সাথে নিয়ে যাও।
কাব্য: কেন অয়নকে লাগবে কেন..?
অয়ন: আমি কোথাও যাচ্ছি না।
আমি: আমার জন্য একটা মোবাইল কিনতে যাচ্ছ সুন্দর না হলে হবে আর অয়ন ভাবির জন্য একটা মোবাইল পছন্দ করে দিবে না..?
অয়ন: ভাবি তোমার মতলবটা কি বলতো (এইরে ধরা পড়ে গেলাম মনে হয়)
কাব্য: ওই আমার বউ এর আবার মতলব কি থাকবে, চল বলছি। (কাব্য অয়নকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো, তিশা আর আদনানও বেড়িয়ে পড়লো। বাসায় শুধু আমি আর ভাবি এটাই সুযোগ)

ড্রয়িংরুমে পায়চারী করছি আর ভাবছি স্টোররুমের তালার চাবি তো লাগবে কিন্তু ভাবিকে বললে কি দিবে..? ভাবি এখন রুমে আছে ডাকবো কিনা ভাবছি তখনি বাসায় কে যেন ঢুকলো। তাকিয়ে দেখি একটি মহিলা।
আমি: আপনি কে..?
— আমি কাজের বুয়া গো ছুটিত আছিলাম।
আমি: ওহ।
বুয়া: আমারে ফোনে ওরা কইছে মেঝো সাহেব বিয়া করছে আপনিই তাহলে নতুন বউ।
আমি: হ্যাঁ আমি আপনার ছোট তাই তুমি করে বলবেন চাইলে তুইও বলতে পারেন।
বুয়া: যাক মেঝো সাহেব নিজের মতোই এক্কান ভালা বউ পাইছে। তোমার কিছু লাগলে আমারে বইলো।
আমি: আপনি এই বাসার সবকিছু জানেন..?
বুয়া: জানুম না কেন এইহানে তো আমি পাঁচবছর ধইরা কাম করি।
আমি: ঠিক আছে তাহলে আমাকে বলুন স্টোররুমের চাবিটা কোথায় আছে..?
বুয়া: বলতে পারি তয় শর্ত আছে।
আমি: কি..?
বুয়া: মেঝো সাহেবরে বলতে পারবা না।
আমি: আমি কাউকে বলবো না আপনিও কাউকে বলবেন না।
বুয়া: আইচ্ছা। ছোট সাহেবের রুমে টেবিলের ড্রয়ারে আছে। উনার রুমে তো কেউ যায় না তাই ওইহানে রাখা আছে। (তারমানে অয়নকে বের করাতে লাভই হলো)

চাবিটা এনে তালা খুলে স্টোররুমে ঢুকলাম। জানিনা কিসের জন্য এই রুমে এসেছি, এখানে আদৌ কিছু পাবো কিনা কে জানে। সারারুমে শুধু ভাঙাচোরা জিনিস আর ধুলো তো ফ্রি আছেই। হঠাৎ রুমের এক কোণে চোখ পড়লো, একটা ট্রাংক রাখা আছে ওখানে। আমার কাছে যে চাবিগুলো আছে ওগুলো এই ট্রাংক এর হবে।
ট্রাংক খুলে দেখলাম একটা প্যাকেট এর মধ্যে কি যেন খুব যত্ন করে রাখা। এইটা তো বিয়ের বেনারসি কিন্তু কার বেনারসি এইটা..? দুটু কানের দোল, আর কিছু ছবি ছাড়া আর কিছু নেই। এই ছবি গুলোতেও দাগ পড়ে গেছে তাও অনেকটা বুঝা যাচ্ছে কিন্তু ছবিতে তো মাত্র চারজন, মানে আব্বু আম্মু ডাক্তারবাবু আর হিয়া। কিন্তু ওরা তো তিন ভাই এক বোন তাহলে ভাইয়া আর অয়ন এর ছবি কোথায়..? একটা ছবি পেলাম আব্বু আম্মুর বিয়ের। তারমানে এই বেনারসি আম্মুর। একটা জিনিস তো স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, কাব্য মুখে যতোই আব্বু আম্মুকে ঘৃণা করুক না কেন মন থেকে খুব ভালোবাসে নাহলে কি এতো যত্ন করে সবকিছু আগলে রাখতো। কিন্তু আর কিছুই তো পেলাম না। এখন বুঝবো কিভাবে ওদের মধ্যে রাগ অভিমান কেন আর উনারা এখন আছেনই বা কোথায়…?

সারাদিন হতাশার মধ্যে কাটালাম, কোনো কিছুইতেই ভেবে পাচ্ছি না কিছু। কি যে করি…
কাব্য: তিলো (দরজায় তাকিয়ে দেখি কাব্য এসেছে, সেই সকালে বেড়িয়ে এই সন্ধ্যা বেলায় ফিরার সময় হলো)
কাব্য: জানি রেগে আছ সরি, আসলে অয়ন জোর করে ঘুরতে নিয়ে গেছিলো।
আমি: হুম।
কাব্য: সরি তো।
আমি: ঘুরতে সারাদিন লাগে বাসায় যে বউ আছে সেটা ভুলে…
কাব্য: ভুলিনি, আসলে ঘুরতে যাইনি একটা মেয়ের খুঁজ নিতে গিয়েছিলাম।
আমি: কি..?
কাব্য: এতো রেগে যাচ্ছ কেন আমি যাইনি অয়ন আমাকে নিয়ে গিয়েছিল।
আমি: বাহ্ ছোট ভাই প্রেম করার জন্য মেয়ের খুঁজ নিতে যায় আর বড় ভাই তাতে হেল্প করে।
কাব্য: আমার ভাই যদি মেয়েটাকে নিয়ে সুখে থাকতে পারে তাহলে হেল্প করবো না কেন..? অয়ন আর হিয়ার জন্যই তো এতোকিছু ওরা ভালো না থাকলে ফারাবী আর আমিও ভালো থাকতে পারবো না।
আমি: খুব ভালোবাসেন ওদের তাই না..?
কাব্য: হুম ওরাই তো আমার সব আর এখন তো আর একজন এসেছে।
আমি: কে..?
কাব্য: আমার তিলো পাগলী।
আমি: কি করছেন ছাড়ুন।
কাব্য: চুপ। (কাব্য আমাকে জরিয়ে ধরে আমার গলায় বুকে ওর নাক ঘসছে)
আমি: ডাক্তারবাবু দরজা কিন্তু খুলা যে কেউ চলে আসতে পারে।
কাব্য: আসুক তাতে আমার কি, আমি তো আমার বউ কে আদর করছি।
আমি: সত্যি আপনার কিছুনা।
কাব্য: আবার আপনি আপনি শুরু করেছ..?
আমি: আচ্ছা আর আপনি বলবো না এখন ছাড়ো।
কাব্য: না।
আমি: ভাবি তুমি (এমনভাবে বললাম যেন সত্যি ভাবি এসেছেন, কাব্য আমাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে চলে গেলো)
আমি: কি কেউ আসলে তো আপনার কিছু না তাহলে এখন ছাড়লেন কেন..?
কাব্য: দূরে গিয়ে কথা বলছ কেন, ফাজি মেয়ে আবার কাছে পাই তখন বুঝাবো। (দৌড়ে নিচে চলে আসলাম)

ভাবি আর বুয়া রান্না করছে আমারো ইচ্ছে হচ্ছে কাজ করি কিন্তু ওরা তো কোনো কাজই করতে দেয় না।
আমি: ভাবি আমি তোমাকে হেল্প করি।
ভাবি: হেল্প করার জন্য বুয়া আছে।
আমি: বুয়া কেন করবে আমি আছি তো।
বুয়া: কি যে কও আমি থাকতে তুমি নতুন বউ অইয়া কাম করবা কেন। (রাগে চলে আসতে চাইলাম দেখি ড্রয়িংরুমে কাব্য বসা। এই ফাজিল এর কাছে তো যাওয়া যাবে না তাই কিচেনেই দাঁড়িয়ে রইলাম)
কাব্য: বুয়া দেখে যাও। (বুয়া যেতেই কি যেন বলে উপরে পাঠিয়ে দিলো, আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি দেখেই চোখ টিপ দিলো, কি ফাজিল)
কাব্য: ভাবি ফারাবী তোমাকে সেই কখন থেকে ডাকছে তুমি এখনো যাওনি।
ভাবি: কি বলো..?
কাব্য: হ্যাঁ তাড়াতাড়ি যাও।
ভাবি: তিলোত্তমা এখানে একটু থাকিস তো।
আমি: আচ্ছা। (ভাবি রুমে চলে যেতেই কাব্য আমার কাছে এসে একটা হাসি দিলো)
কাব্য: কি মনে হয় চালাকি শুধু তুমি একা করতে পারো আমি পারিনা..?
আমি: কি করেছ..?
কাব্য: রুমে কিছু কাগজ ছিড়ে ফেলে এসেছি আর বুয়াকে সেটা পরিষ্কার করতে পাঠিয়েছি আর ভাবিকে মিথ্যে বলে রুমে পাঠালাম। (ও তো দেখছি আমার চেয়ে বড় চালাক)
কাব্য: এখন কি হবে তিলো পাগলী..?
আমি: ডাক্তারবাবু এইটা কিন্তু রান্নাঘর যে কেউ চলে আসবে।
কাব্য: বেডরুমে আদর করছিলাম ভালো লাগেনি চালাকি করে চলে এসেছ এখন…(কাব্য আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে ঘাড়ে চুমু দিচ্ছে আর পেটে দুহাত দিয়ে চাপ দিচ্ছে)
ভাবি: এইযে এইটা কিচেন।
আমি: ছাড়ো (কাব্য’কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম ও হাসতে হাসতে চলে গেলো। ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, দ্যাত কি যে করে পাগলটা)
ভাবি: ওর এসবে রাগ করিস না বড্ড পাগল ছেলেটা।
আমি: আসলেই একটা পাগল।

রাতের খাবার খেয়ে সবাই বসে গল্প করছি কাব্য অনেক আগেই রুমে চলে গেছে। জানিনা কি হলো ওর মন খারাপ করে আছে। হঠাৎ গীটার এর টুংটাং শব্দ শুনতে পেলাম, মনে তো হচ্ছে ছাদ থেকে শব্দটা ভেসে আসছে।
আমি: ভাবি গীটার…
ভাইয়া: কাব্য বাজাচ্ছে।
আমি: ও গীটারও…
ভাবি: হুম কাব্য গীটার বাজাতে পারে, কাব্য অনেক ভালো গানও নাকি গায় কিন্তু কখনো ওর কন্ঠে গান শুনিনি।
ভাইয়া: আগে মাঝে মাঝে গান গাইতো এখন এসব ছেড়ে দিয়েছে শুধু…
আমি: কি ভাইয়া থেমে গেলে কেন..?
অয়ন: ভাইয়ার আম্মু আব্বুর কথা খুব বেশি মনে পড়লে গীটার নিয়ে বসে যায় আর গীটারে টুংটাং শব্দ তুলে।
ভাবি: ওর গীটারে সবসময় বিষাদের সুরই বাজে কখনো…
আমি: চিন্তা করোনা একদিন বিষাদের সুর কেটে সুখের সুর বাজবে ওর গীটারে।
ভাবি: কোথায় যাচ্ছিস..?
ভাবির কথার উত্তর না দিয়ে ছাদে চলে আসলাম।

কাব্য’র পিছনে এসে দাঁড়াতেই গীটার বাজানো বন্ধ করে দিলো। আমি ওর কাধে হাত রাখতেই গীটার রেখে উঠে আমার মুখোমুখি দাঁড়ালো।
কাব্য: নিষেধ করেছিলাম তো কেন করলে এইটা (আমি আবার কি করলাম ও এতো রেগে আছে কেন)
কাব্য: কথা বলছ না কেন বল আমি নিষেধ করার পরও তুমি স্টোররুমে গিয়েছিলে কেন…?
আমি: আআমমমি…
কাব্য: নিষেধ করার পরও তোমার সাহস কি করে হয় ওই রুমে যাওয়ার আর আমার মায়ের জিনিসপত্রে হাত দেওয়ার (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, এই প্রথম ওর মুখে মা ডাকটা শুনলাম। হয়তো রাগের বসে বলে ফেলেছে কিন্তু এটা তো সত্যি ও মুখে যতোই আম্মুকে ঘৃণা করুক মন থেকে ঠিকি ভালোবাসে)
কাব্য: তোমাকে আমি ভালোবাসি তাই ক্ষমা করে দিলাম আর কখনো ওই রুমে যাবে না বুঝেছ।
কাব্য কাঁদতে কাঁদতে নিচে চলে গেলো।

আমি এখনো ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। কখনো কাব্য’কে এতোটা রাগ করতে দেখিনি, এতোটা কাঁদতেও দেখিনি। আজ তো ও কান্নার জন্য আমাকে ধমক দিতে পারছিল না।
ভাইয়া: তিলোত্তমা (ডাক শুনে পিছনে তাকালাম, ভাইয়া এসেছেন)
ভাইয়া: ওর কথায় কিছু মনে করো না আমি সব শুনেছি, নিষেধ যখন করেছিল কেন স্টোররুমে গিয়েছিলে..?
আমি: স্টোররুমে তো তেমন কিছুই নেই শুধু একটা বেনারসি আর কিছু ছবি পেয়েছি।
ভাইয়া: এগুলোই কাব্য’র সব। বেনারসিটা দেখেই কাব্য ওর মায়ের অভাব পূরণ করে।
আমি: ওর মায়ের মানে..? তোমার মা না..? নাকি সবাই এক রকমভাবে রেগে আছ..?
ভাইয়া: কাব্য আর আমরা আপন ভাই না এমনকি আমাদের মধ্যে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই।
আমি: মানে..?
ভাইয়া: তোমাকে আমি এসব বলছি শুনলে কাব্য রেগে যাবে। এসব শুনে কি করবে বাদ দাও।
আমি: না বাদ দিবো না আমি শুনতে চাই, আমি ওর কষ্ট দূর করতে চাই।
ভাইয়া: ওর কষ্ট দূর করতে হলে আগে ওর আব্বু আম্মুকে খুঁজে আনতে হবে, পারবে সেটা..? উনারা কোথায় আছেন বা বেঁচে আছেন কিনা আমরা কেউ জানিনা। আর বেচে থাকলে খুঁজে আনলেও কাব্য উনাদের কখনো ক্ষমা করবে না। তখন এই অশান্তির আগুনটা আরো বেড়ে যাবে। কাব্য তোমাকে নিয়ে অনেক ভালো আছে আর আমি চাই ও সবসময় এমন ভালো থাকুক তাই প্লিজ তুমি এসব নিয়ে আর কথা বলো না। কাব্য’কে ওর মতো করে থাকতে দাও।
ভাইয়া চলে গেলেন, আমি বোবার মতো দাঁড়িয়ে আছি। কোথায় খুঁজবো আমি আব্বু আম্মুকে আর কি করে খুঁজবো উনাদের তো আমি চিনিই না। যে আমাকে এতো ভালোবাসে যে আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে সেই ডাক্তারবাবুর কষ্ট কি তাহলে আমি দূর করতে পারবো না…?

চলবে?

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১০

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১০

লেখিকা: সুলতানা তমা

কাব্য: তিলো উঠো (কাব্য আমার চুলে হাত বুলাচ্ছে আর ডাকছে, ঘুম ঘুম চোখে ওর দিকে তাকালাম। কাব্য’র বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছি আর ও আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে দেখে ওকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম)
কাব্য: উঠো বলছি।
আমি: উঁহু পরে।
কাব্য: কাল তো দেখলাম পাঁচ ওয়াক্তই নামাজ পড়েছ আজ পড়বে না..?
আমি: কয়টা বাজে..?
কাব্য: একটু আগেই ফজরের আজান পড়েছে কয়টা বাজে দেখতে হবে না যাও নামাজ পড়ে এসো। (কাব্য’র বুকে তুতুনি রেখে ওর দিকে তাকালাম)
আমি: আপনি নামাজ পড়বেন না..?
কাব্য: আমার দ্বারা নামাজ পড়া হবে না।
আমি: আমি বললেও পড়বেন না..?
কাব্য: না মানে আসলে…
আমি: না মানে আসলে কিছুই বলতে হবে না উঠুন নাহলে কিন্তু… (কাব্য আমাকে জরিয়ে ধরে চোখের দিকে তাকালো)
কাব্য: রাতে আমার বাসর নষ্ট করে দিয়ে এখন আবার শাসানো হচ্ছে।
আমি: বাসর নষ্ট কিভাবে করলাম।
কাব্য: এখন তো কিছুই মনে পড়বে না ঘুম পাগলী কোথাকার (ঘুম পাগলী বলাতে মনে পড়লো রাতে কাব্য’র বুকে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তারপর তো আর কিছু মনে নেই)
আমি: রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তারপর…
কাব্য: তারপর আর কি আপনাকে কোলে করে বাসায় নিয়ে আসছি।
আমি: এতো দূর থেকে…
কাব্য: কোলে করে নিয়ে আসছি এজন্য তো কষ্ট হয়নি কিন্তু তুমি যে আমার বাসর রাত মাটি করে দিলে…
আমি: এজন্য কষ্ট হচ্ছে বুঝি ইশশ।
কাব্য: হাসো হাসো যতো খুশি হাসো, আজ রাতে কিন্তু অসম্পূর্ণ বাসর সম্পূর্ণ করবো (কাব্য আমার চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলো)
আমি: দ্যাত ফাজিল কোথাকার, উঠুন একসাথে নামাজ পড়বো।
কাব্য: উঁহু।
আমি: নামাজ না পড়লে কিন্তু শাস্তি দিবো, আর কি কি শাস্তি দিবো তা কি বলবো..?
কাব্য: বলতে হবেনা উঠে পড়েছি।

কাব্য আর আমি একসাথে নামাজ পড়ে নিলাম। রুম থেকে বেরুতে যাবো তখনি কাব্য আমার হাত ধরে টান দিয়ে ওর কাছে নিয়ে গেলো। কাব্য আমার দুগালে ধরে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে, ওর দুচোখে পানি ছলছল করছে।
কাব্য: জানো তিলো আজ তুমি যে ভাবে আমাকে শাসিয়ে নামাজ পড়ালে ঠিক এইভাবে দশ বছর আগে হুমায়রা চৌধুরী আমাকে শাসিয়ে নামাজ পড়াতো কিন্তু… (কাব্য আর কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। আমি অবাক হয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। মানুষটার ভিতরে এতো কষ্ট কিন্তু সবসময় কষ্টগুলো আড়াল করে রেখে হাসিখুশি থাকে)
ভাবি: তিলোত্তমা কি হয়েছেরে (ভাবি এসেছেন দেখে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম, কাব্য’কে কাঁদতে দেখে নিজেও যে কখন কেঁদে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি)
ভাবি: কি হলো।
আমি: কিছুনাতো।
ভাবি: কাব্য’কে দেখলাম কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে গেলো।
আমি: একসাথে নামাজ পড়েছিলাম হুট করে ওর আম্মুর কথা বললো তারপর কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে গেলো।
ভাবি: ওহ।
আমি: ভাবি তুমি আমাকে বলো প্লিজ কি এমন রহস্য আছে যার জন্য ডাক্তারবাবু নিজের বাবা মাকে নাম ধরে ডাকে..?
ভাবি: বেশি কিছু জানিনা এইটুকু বলতে পারবো, কাব্য ওর বাবা মায়ের উপর রেগে আছে কেন রেগে আছে তাও জানিনা। ওর তখন পনেরো বছর আর হিয়া সাত বছরের, বাবা মায়ের উপর রাগ করে বাসা থেকে বেড়িয়ে এসেছিল। আর কিছু জানিনারে, ওদের তিনভাই কে এসব নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলেই রেগে যায়।
আমি: হুম।
ভাবি: চল।

ভাবি কিচেনে নাশতা বানাচ্ছেন দেখে আমিও গেলাম।
আমি: ভাবি আমি হেল্প করবো..?
ভাবি: একটু পর বৌভাত আর এখন আগুনের কাছে আসবি পাগল হয়েছিস।
আমি: তাতে কি হয়েছে..?
ভাবি: আমার বোনের চেহারা…
আমি: হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না আমি তো এমনিতেই কালো।
ভাবি: কি বললি..? (ভাবির রাগি চোখ দেখে সাথে সাথে ভাবিকে জরিয়ে ধরলাম)
আমি: তোমরা সবাই খুব ভালো আমাকে এতো তাড়াতাড়ি আপন করে নিলে।
ভাবি: একটা কথা বলবো..?
আমি: হ্যাঁ বলো জিজ্ঞেস করার কি আছে।
ভাবি: এখন যে মানুষ গুলোকে ভালো ভাবছিস সে মানুষ গুলোর সম্পর্কে কখনো খারাপ কিছু শুনলে ভুল বুঝিস না।
আমি: খারাপ কিছু ভুল বুঝা কি বলছ এসব..?
ভাবি: কিছুনা।
তিশা: তমা চলতো আমার সাথে (তিশা এসেই আমার হাত ধরে টানতে টানতে ওর রুমে নিয়ে আসলো)
তিশা: কিরে বাসর রাত কেমন কাটলো (তিশা হাসছে কিন্তু ওর দিকে আমার কোনো নজর নেই, আমি শুধু ভাবছি ভাবি কিসের খারাপ কথা ভুল বুঝার কথা বললো)
তিশা: কিরে কি ভাবছিস..?
আমি: কিছু না।
তিশা: কি হয়েছে তোর..?
আমি: কিছু হয়নি।
আন্টি: তিশা দেখে যা।
তিশা: আসছি।
তিশা চলে যেতেই স্টোররুমের দিকে আস্তে আস্তে এগুলাম। এখন তো কাব্য বাসায় নেই দেখি কিছু পাই কিনা।

স্টোররুমের দরজায় তো তালা দেওয়া এখন কি করি, আমার কাছে যে চাবিগুলো আছে এগুলো তো এই তালার না আমি…
অয়ন: ছোট ভাবি এখানে কি করছ (হয়েছে একজন না একজন দেখে ফেলেই)
আমি: কিছু নাতো এমনি বাসাটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম।
অয়ন: আর দেখতে হবে না চলো নাশতা করবে।
আমি: হুম (আমার আর স্টোররুম দেখার সখ পূরণ হবে না)

ভাবি: তিশা একটু পর মেহমানরা আসতে শুরু করবে নাশতা করে তিলোত্তমাকে সাজিয়ে ফেলো।
তিশা: ওকে ভাবি। (সেই কখন থেকে লক্ষ করছি নাশতা খেতে খেতে আদনান ভাইয়া বার বার তিশার দিকে তাকাচ্ছে, তিশাও আড়চোখে তাকাচ্ছে তাহলে কি…)
ভাইয়া: তিলোত্তমা কাব্য কোথায় নাশতা করতে তো আসেনি..?
ভাবি: কাব্য একটু বাইরে গেছে চলে আসবে (তাই তো ডাক্তারবাবু তো বাসায় নেই, এতো বেলা হয়ে গেলো এখনো কিছু খায়নি। এই মানুষটার কষ্ট যে আমি কিভাবে দূর করবো)

আমি: এই সরি সরি সরি।
কাব্য: সরি বলার কি আছে..?
আমি: আপনি শার্ট পড়ে নিন আমি পরে আসছি (আনমনে হয়ে রুমে ঢুকে পড়েছিলাম, কাব্য কখন বাসায় আসলো দেখিই’নি, এসেছে তো আবার খালি গায়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে)
কাব্য: তিলো যেও না শুনো (কাব্য আমার হাত ধরে টেনে ওর একদম কাছে নিয়ে আসলো)
কাব্য: আজব মেয়ে তো তুমি, তিলো তুমি আমার বউ তোমার সামনে…
আমি: শার্ট পড়তে বলেছি পড়ে নিন।
কাব্য: পড়বো না দেখি তুমি কতোক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকতে পারো।
আমি: ডাক্তারবাবু…
কাব্য: আজ তো তোমার লজ্জা ভাঙাবো (কাব্য আমাকে ওর বুকের সাথে জরিয়ে ধরলো। ওর বুকের লোমগুলো আমার চোখেমুখে লাগছে)
কাব্য: কি হলো তুমি আমাকে জরিয়ে ধরবে না (একটা হাত কাব্য’র কোমরে রেখে আরেকটা হাত ওর বুকে রাখলাম। ওর হার্টবিট বাড়ছে আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম, কাব্য’র ফর্সা বুকে লোমগুলো খুব সুন্দর লাগছে)
তিশা: ইহহ সরি (দ্যাত এইটা কি হলো, তিশাকে দেখেই তাড়াতাড়ি সরে দাঁড়ালাম)
কাব্য: লজ্জা পেয়ো না বউ তিশাই আসছে অন্য কেউ না, আর এইযে মেম নবদম্পতির রুমে আসলে নক করে আসতে হয়।
তিশা: নবদম্পতি যদি দরজা খুলা রেখে রোমান্স করে তাহলে কি সেটা আমার দোষ..?
কাব্য: না সেটা আমার কপালের দোষ।
তিশা: হয়েছে যাও তোমার বউকে সাজাবো।
কাব্য: পরীর মতো সাজাবে বুঝেছ।

তিশা আমাকে সাজিয়ে দিচ্ছে আর আমি চুপচাপ বসে কাব্য’র কথা ভাবছি।
তিশা: হয়েছে তো পরীর মতো সাজানো।
আমি: হুম হয়েছে।
তিশা: এবার নিচে চল।
আমি: ওকে।
তিশা: এই শাড়ির কুচিগুলো তো এলোমেলো করে ফেলেছিস (আমি শাড়ি সামলে রাখতে পারি না আর আমাকে শাড়ি পড়িয়ে পরীর মতো সাজায়)
তিশা: হাসছিস আবার বাচ্চাই রয়ে গেলি।
আমি: ওই আমি বাচ্চা না আমার বিয়ে হয়ে গেছে হু।
তিশা: হ্যাঁ আপনি বড় হয়ে গেছেন, তো আপনার ডাক্তারবাবু কেমন..?
আমি: ডাক্তারবাবু তো সবদিকে সেরা, ভালো মানুষ সাথে হ্যান্ডসাম আর ওর ফর্সা চেহারা, গোল গোল চোখ দুটু, ফর্সা মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, এলোমেলো চুল সবকিছু আমাকে পাগল করে দেয়। আর ওর ফর্সা বুকের লো…(যাহ বাবা কিসব বলে দিলাম)
তিশা: সব তো বলেই ফেলেছিস এখন আর জিহ্বায় কামর দিয়ে কি হবে পাগলী কোথাকার।
শুভ্রা: ফর্সা বুকে লোমগুলো দেখতে খুব সুন্দর তাই না..? (আরে এই বজ্জাত মেয়ে কোথা থেকে আসলো, কাব্য ওকে ইনভাইট’ই বা করতে গেলো কেন)
শুভ্রা: কি হলো বললে না যে কাব্য’র ফর্সা বুকের লোমগুলো দেখতে কেমন..?
আমি: এইটা শুধু আমারই জানার অধিকার আছে বুঝেছেন..?
শুভ্রা: অধিকার হাহাহা আমিও দেখবো এই অধিকার কতোদিন টিকে থাকে।
তিশা: এই মেয়েটা কেরে..?
শুভ্রা: তিলোত্তমা এবং কাব্য’র শুভাকাঙ্ক্ষী।
আমি: এই যান তো এখান থেকে।
শুভ্রা: যাচ্ছি তবে এইটাও জানিয়ে যাচ্ছি কাব্য’র বুকের জমিনের অধিকারটা তোমার থেকে খুব তাড়াতাড়িই কেড়ে নিবো।
আমি: তোকে আমি খুন করবো।
তিশা: তমা শান্ত হ।
আমি: কি বলে গেলো শুনলি তো।
তিশা: বলুক না কাব্য তো শুধু তোরই।
আমি: যা তো ওকে গিয়ে বল রুমে আসতে।
তিশা: যাচ্ছি আজ মনে হয় ডাক্তার সাহেবের কপালে দুঃখ আছে।

রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে কতো বড় সাহস ওই বজ্জাত মেয়েটার।
কাব্য: তিলো কি হয়েছে..?
আমি: ওই কাকে জিজ্ঞেস করে বজ্জাত মেয়েটাকে ইনভাইট করেছেন..?
কাব্য: ওরে বাবারে আস্তে কিল দাও লাগছে, আমাদের দুজনের প্রেম দেখানোর জন্যই তো ওকে ইনভাইট করেছিলাম। তোমাকে হিংসে করে তো তা…
আমি: ও যে বলে গেলো…
কাব্য: তিশা আমাকে সব বলেছে, এতো সহজ নাকি আমি তো শুধু তোমারই।
আমি: হুম।
কাব্য: বাব্বাহ্ এই প্রথম আমার বউ আমাকে নিজের ইচ্ছায় জরিয়ে ধরলো।
আমি: হুহ।
কাব্য: তিলো দেখি তোমার কপালের টিপ তো…(আমি ওর দিকে তাকাতেই আমার ঠোঁটে ওর ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো, কি চালাক মানুষ। অনেক চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারলাম না কিছুক্ষণ পর নিজেই ছাড়লো)
কাব্য: ইহহ তিলো তোমার ঠোঁটের লিপস্টিক কোথায় গেলো..?
আমি: গেছে তো আপনার পেটে এখন তিশা জিজ্ঞেস করলে কি বলবো..?
কাব্য: তিশা এসব বুঝে ও তোমার মতো পিচ্ছি না (কাব্য হাসতে হাসতে চলে গেলো, পাগল একটা। শুভ্রা কেন কেউ আমার থেকে এই পাগলটাকে আলাদা করতে পারবে না)

বৌভাতের অনুষ্ঠানের জামেলায় সারাদিন কেটে গেলো। মেহমানরা একে একে সবাই চলে যাচ্ছে। কাব্য কোথায় গেলো খুঁজেই পাচ্ছি না, একা একা ভালো লাগছে না তাই বাগানের দিকটায় এসে দাঁড়ালাম।
তিশা: তমা তুই এখানে আর আমি তোকে খুঁজে মরছি।
আমি: কেন..?
তিশা: চলে যেতে হবে তো আব্বু আম্মুরা বসে আছেন।
আদনান: আজ না গেলে হয় না (হঠাৎ আদনান ভাইয়া কোথা থেকে আসলো তারমানে আমি যা ভাবছি তাই)
তিশা: না মানে…
শুভ্রা: তিলোত্তমা সরি (শুভ্রাকে দেখেতো আমার চোখ কপালে উঠে গেছে, এই মেয়ে আমাকে সরি বলছে)
কাব্য: তিলোত্তমা নয় ভাবি বলো।
শুভ্রা: হুম ভাবি আগের কথার জন্য সরি (বিষয়টা কি হলো কাব্য আর শুভ্রা একসাথে কোথা থেকে আসলো আবার সরি বলছে)
কাব্য: তিলো কিছু বলছ না কেন ও তো সরি বলছে।
আমি: সরি ও মুখে বলছে কিন্তু চোখে টিকি রাগ…
শুভ্রা: একদম ঠিক ধরেছ আমি শুধু মুখেই সরি বলছি। কাব্য তুমি কি মনে করেছ, তুমি আমাকে ভয় দেখাবে আর আমি ভয় পেয়ে তোমাকে ভুলে যাবো। আমি তোমাকে ভালোবাসি কাব্য।
আমি: ওই আস্তে, কিসের ভালোবাসা হ্যাঁ..? কাব্য আমাকে এবং আমি কাব্য’কে দুজন দুজনকে ভালোবাসি আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে ভুলে গিয়েছ নাকি..?
শুভ্রা: ভুলিনি তবে…
আমি: তবে কি..? আলাদা করবে আমাদের দুজনকে..? পারবে না, আগে কি যেন বলছিলে কাব্য’র বুকের জমিনের অধিকার কেড়ে নিবে, ভালো করে দেখে যাও কাব্য’র এই বুকটা না শুধু আমারই আর কাব্যও শুধু আমার (সবার সামনেই আমি কাব্য’কে জরিয়ে ধরলাম, কাব্য আমাকে জরিয়ে ধরে কপালে একটা চুমু দিলো। শুভ্রা এসব দেখে রাগে বেলুনের মতো ফুলছে)
কাব্য: শুভ্রা দেখেছ আমাদের দুজনের ভালোবাসা… (শুভ্রার হাতে জোসের গ্লাস ছিল রাগে সব জোস কাব্য আর আমার উপরে ছুড়ে মারলো তারপর গ্লাসটা আছাড় দিয়ে ভেঙে চলে গেলো)
আদনান: উচিত শিক্ষা পেয়েছে ভাবি।
তিশা: তমা শাড়িতে দাগ লেগে যাচ্ছে যা ফ্রেশ হয়ে নে, আর কাব্য তুমিও যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।
কাব্য: হ্যাঁ যাচ্ছি তোমরা প্রেম করো।
আদনান: কি বললি..? (কাব্য আমার হাত ধরে দৌড়ে চলে আসলো তারমানে আমি যা লক্ষ করছি তা ডাক্তারবাবুও লক্ষ করছে)

কাব্য রুমে এসে দফ করে বিছানায় বসে পড়লো।
কাব্য: আমার মনে হয় আদনান আর তিশা একে অপরকে পছন্দ করে কিন্তু কেউ তা বলতে পারছে না।
আমি: আমিও লক্ষ করেছি।
কাব্য: আরে কোথায় যাচ্ছ..?
আমি: কেন ফ্রেশ হবো।
কাব্য: আমি আগে ফ্রেশ হবো।
আমি: উঁহু আমি আগে (কাব্য কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো তারপর উঠে এসে আমাকে কোলে তুলে নিলো)
আমি: কি করছেন..?
কাব্য: একসাথে ফ্রেশ হবো।
আমি: মানে কি (কাব্য কিছু না বলে আমাকে কোলে করে এনে শাওয়ারের নিচে দাড় করালো তারপর শাওয়ার ছেড়ে দিলো)
আমি: এইটা কি হলো ভিজে যাচ্ছি তো।
কাব্য: ভিজার জন্যই তো শাওয়ার ছেড়ে দিলাম (কাব্য আস্তে আস্তে আমার একদম কাছে চলে আসলো, দুজনেই ভিজে যাচ্ছি। কিযে করে ও)
আমি: কি হলো এভাবে তাকাচ্ছেন কেন..?
কাব্য: শুভ্রা রাগের বসে জোস ছুড়ে দিয়ে ভালোই করেছে।
আমি: মানে..?
কাব্য: আমাদের অসম্পূর্ণ বাসর সম্পূর্ণ করার সুযোগ করে দিয়েছে।
কাব্য আমার একদম কাছে চলে এসেছে দেখে চোখ বন্ধ করে ফেললাম, ও এক হাত দিয়ে আমার কোমর জরিয়ে ধরলো অন্যহাত আমার ঘাড়ের কাছে নিয়ে আমার ডান চোখের পাতায় আলতো করে চুমু খেলো। কাব্য’র স্পর্শে কেঁপে উঠে ওর বুকের শার্ট খামছে ধরলাম। কাব্য আমার গালে একটা আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করছে, ওর চোখের দিকে তাকালাম কাব্যও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। শাওয়ার থেকে পানি আমার মাথায় পড়ছে আর মাথা থেকে বেয়ে বেয়ে গালে ঠোঁটে পড়ছে, কাব্য কিছুক্ষণ আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর পাগলের মতো ঠোঁট চুষতে শুরু করলো। কাব্য’র এমন নেশা ধরানো স্পর্শে থাকতে না পেরে ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম।

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ৯

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

ভাবি: তিলোত্তমা উঠো।
আমি: উহু পরে।
ভাবি: তুমি কি নামাজ পড়ো না..? (লাফ দিয়ে উঠে বসলাম, ভাবি পাশে বসা)
আমি: হ্যাঁ পড়ি তো এই দুদিন পড়া হয়নি পড়বো কিভাবে যা…
ভাবি: কাব্য আমাকে সব বলেছে ওসব ভুলে যাও, আজ থেকে তোমাদের নতুন জীবন শুরু হবে তাই সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করো।
আমি: হুম।
ভাবি: এসো একসাথে দুবোন নামাজ পড়ি, গাদা তিনটাকে তো আর নামাজ পড়াতে পারি না আমরা নাহয় একাই পড়ি।
আমি: কেন ওরা নামাজ পড়ে না..?
ভাবি: গিয়ে দেখো তিন ভাই নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে নামাজের কথা কতো করে বলি শুনেই না।
আমি: এখন থেকে পড়বে চিন্তা করো না।
ভাবি: পড়লে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম।
আমি: দুজন মিলে এমন টাইট দিবো নামাজ না পড়ে যাবে কোথায়..?
ভাবি: ঠিক আছে এখন চলো নামাজের সময় চলে যাচ্ছে।
আমি: ওকে।

ভাবি আর আমি একসাথে নামাজ পড়ে নিলাম। ভাবির মধ্যে বার বার তিশাকে খুঁজে পাচ্ছি। তিশার কথা মনে পড়তেই মন খারাপ হয়ে গেলো, গতকাল সকালে কথা হয়েছিল আর কথা হয়নি ওর সাথে।
ভাবি: আমি নাশতা রেডি করছি তুমি কাব্য’কে ডেকে নিয়ে এসো
আমি: ঠিক আছে।

কাব্য’র রুমে আসলাম, এতো সকালে উঠবে কিনা কে জানে। কিন্তু এখন থেকে তো ওকে রোজ ভোরবেলা উঠতে হবেই নামাজ পড়তে হবে তো। কাব্য ঘুমিয়ে আছে, ওর ঘুমন্ত মায়াবী মুখটা দেখে আর ডাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না, উল্টো ইচ্ছে হচ্ছে বসে বসে ওর ঘুমন্ত মুখটা দেখি। কাব্য’র চুলে হাত দিতেই ও জেগে গেলো আর আমার হাতটা চেপে ধরলো।
কাব্য: রাতে জোর করে রুম থেকে আমাকে বের করে দিয়ে এখন আবার ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে (আমার হাতটা ওর বুকের কাছে নিয়ে চেপে ধরে চোখ দুটু বন্ধ রেখেই কথা বলছে। রাতের কথা মনে পড়তেই হাসি পেলো, রাতে তো ও আমার কাছে ঘুমানোর বায়না ধরেছিল আর আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দরজা লাগিয়ে দিয়েছিলাম)
কাব্য: এখন আবার হাসা হচ্ছে, বিয়েটা হয়ে যাক সবকিছুর শাস্তি দিবো তোমাকে।
আমি: আপনি আমাকে শাস্তি দিতে পারবেন..?
কাব্য: হ্যাঁ পারবো তো কারণ রোমান্টিক শাস্তি দিতে কারোরই কষ্ট হয়না।
আমি: এবার উঠুন তো ভাবি ডাকছেন আর হ্যাঁ কাল থেকে এভাবে ঘুমালে চলবে না নামাজ পড়তে হবে।
কাব্য: নামাজ..?
আমি: এতো অবাক হওয়ার কি আছে চলুন তো।
কাব্য’কে রেখেই নিচে চলে আসলাম।

ভাবি আর অয়ন নাশতা করছে, অয়ন নাশতা করছে বললে ভুল হবে ও তো বসে বসে ঘুমুচ্ছে হিহিহি।
ভাবি: হাসছ কেন..?
আমি: ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নাশতা খাওয়া দেখে।
ভাবি: দশটার আগে তো কখনো ঘুম থেকেই উঠে না তাই এমন করছে। অয়ন তো উঠেছে ফারাবীকে টেনেও তুলতে পারলাম না।
অয়ন: সব নতুন ভাবির দোষ, বিয়ে করবে উনারা আর শাস্তি পাচ্ছি আমরা।
ভাবি: আমি তো বলেছিলাম এতো তাড়াহুড়োর দরকার নেই কিন্তু কাব্য…
কাব্য: শুনিনি তাই তো..? ভাবি তুমি তো সব জানো তাও কেন এমন করছ..? (কাব্য নিচে নেমে আসতে আসতে বললো। ভাবির মুখটা কেমন যেন মলিন হয়ে গেলো, কি জানে ভাবি..? ওরা সবাই কি আমার থেকে কিছু লুকুচ্ছে..?)
কাব্য: ভাবি আমি তিলোকে হারাতে পারবো না তাই এতো তাড়াহুড়ো করছি।
ভাবি: ঠিক আছে যা চাইছ তাই হবে, সব শপিং করা শেষ শুধু বেনারসি কেনা বাকি।
কাব্য: তিলোকে নিয়ে তুমি চলে যাও।
ভাবি: না তুমি যাও দুজন মিলে পছন্দ করে আনলেই ভালো হবে।
কাব্য: ঠিক আছে।
আমি: আমাদের সাথে তিশাকে যদি নেই তাহলে কি…
কাব্য: আমি তিশাকে ফোন করে বলে দিচ্ছি ও আসলেই যাবো। (ইশশ এই কাব্য’টা কি আমি মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই সব বুঝে যায়)

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি আর ভাবছি হুট করে কতোকিছু হয়ে গেলো। হঠাৎ করে কাব্য আসলো আমার জীবনে আর আজ আমাদের বিয়ে। একটা মেয়ের বিয়ে অথচ তার পাশে কেউ নেই না বাবা মা না অন্য কোনো আত্মীয়স্বজন। অবশ্য আমার তো কেউই নেই আর আব্বু আম্মু…
কাব্য: তিলো রেডি হয়ে নাও তিশা আসছে।
আমি: হুম।
কাব্য: এই তুমি কাঁদছ (কাব্য এসে আমার কাধে ধরে ওর দিকে ফিরালো)
কাব্য: তিলো কাঁদছ কেন..?
আমি: এমনি।
কাব্য: পাগলী এভাবে কেউ কাঁদে আর তুমি যে কাঁদছ আমার কষ্ট হয় না হুম..? (কাব্য আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে জরিয়ে ধরলো)
আমি: আব্বু আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছে।
কাব্য: ওহ এই ব্যাপার, কান্না থামাও আমার কথা শুনো। সবাই তো আর চিরদিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকে না। তুমি চাইলে আমরা বিয়ের পর তোমার আব্বু আম্মুর কবর জিয়ারত করে আসবো।
আমি: সত্যি।
কাব্য: হ্যাঁ আর কেঁদো না যাও রেডি হয়ে নাও।
কাব্য আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো। আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি, একটা মানুষ এতোটা ভালো হতে পারে আর এতোটা ভালোবাসতে পারে…?

রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে আসলাম সবাই এখানে বসে আছে। তিশাটা যে কেন এখনো আসছে না।
–এইযে তিলোত্তমা (হঠাৎ কারো ডাকে থমথম খেয়ে গেলাম, কে উনি)
ভাবি: তিলোত্তমা ও ফারাবী।
আমি: ওহ ভাইয়া…
ভাইয়া: তুমিই বলে দাও তোমাকে বোন ডাকবো নাকি ভাবি..?
আমি: ভাবি কিভা…
ভাইয়া: কাব্য কিন্তু শুধু আমার ভাই না বন্ধু তাই বললাম হাহাহা।
আমি: ভাই বোনের সম্পর্কটাই ভালো কারণ আমার তো কেউ নেই।
ভাইয়া: আমরা সবাই আছি এখন।
অয়ন: বাব্বাহ্ এতো দেখছি নীরার ছোটবোন, ঠিক নীরার মতো নামাজ পর্দা সবকিছু…
ভাবি: এই চুপ করতো বোরকা পড়ে যাবে নাতো কি পরীর মতো সেজে যাবে।
আমি: ভাবি নীরা কে..?
ভাবি: আমি।
তিশা: এইযে মেডাম (হঠাৎ তিশার কন্ঠ শুনে যেন প্রাণ ফিরে পেলাম, দুদিন দেখা হয়নি অথচ মনে হচ্ছে কতো বছর হয়ে গেছে)
তিশা: আরে পাগলী এভাবে কাঁদছিস কেন চলে এসেছি এখন থেকে তোর কাছেই থাকবো।
আমি: সত্যি।
তিশা: হ্যাঁ রে বাবা।
কাব্য: যেতে হবে চলো।

একের পর এক বেনারসি দেখে যাচ্ছি কিন্তু আমার ডাক্তারবাবুর পছন্দ হচ্ছে না। বিরক্ত হয়ে সামনে তাকালাম তখনি সামনের একটি আয়নায় চোখ পড়লো, একটি মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। সাথে সাথে পিছনে তাকালাম কিন্তু মেয়েটি নেই। আশ্চর্য এখনি তো আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিল, মেয়েটির মুখ স্পষ্ট ভাবে দেখিনি। আচ্ছা আমি তো বোরকা পড়া তাহলে কি অন্য কাউকে দেখে হাসছিল..?
তিশা: এই তমা ওদিকে কি দেখছিস এই শাড়িটা দেখ তো।
আমি: ডাক্তারবাবু কে দেখা।
তিশা: আরে কোথায় যাচ্ছিস..?
তিশার কথার উত্তর না দিয়ে চলে আসলাম।

মেয়েটিকে খুঁজছি কিন্তু… ওই তো এই মেয়েটিই তো ছিল। মেয়েটির সামনে এসে দাঁড়াতেই অবাক হয়ে গেলাম, এইটা তো শুভ্রা।
শুভ্রা: আমি জানতাম তুমি আমাকে খুঁজতে খুঁজতে ঠিক এখানে চলে আসবে।
আমি: অসহ্য।
শুভ্রা: বিয়ের শপিং করতে এসেছ (চলে আসছিলাম ওর কথা শুনে দাঁড়ালাম)
আমি: তা জেনে আপনি কি করবেন..?
শুভ্রা: বিয়ে করে নিচ্ছ, কাব্য’র সম্পর্কে কতোটুকু জানো..?
আমি: মানে।
শুভ্রা: সময় হলেই বুঝতে পারবে। (মেয়েটা চলে গেলো, অদ্ভুত তো। কিসব বলে গেলো)
কাব্য: তিলো এখানে কি করছ..?
আমি: হুম কিছুনা।

বাসায় চলে আসলাম, শুভ্রার কথাগুলো ভুলতে পারছি না। কাব্য’র সম্পর্কে কি জানিনা বললো শুভ্রা..?
তিশা: তমা এখানে একা দাঁড়িয়ে আছিস কেন..?
আমি: এমনি।
তিশা: কি হয়েছে তোর বলতো, শপিংমলে কথা বলিসনি, নিজের বেনারসিটাও পছন্দ করলি না কি…
আমি: তিশা কাব্য আমার থেকে কি যেন লুকাচ্ছে।
তিশা: কি লুকাবে..?
আমি: জানিনা।
তিশা: কাব্য খুব ভালো ছেলে অযতা ভুল বুঝিস না (তিশার দিকে তাকালাম। কাব্য ভালো ছেলে আমিও জানি কিন্তু কাব্য কিছু একটা যে আমার থেকে লুকাচ্ছে এটাও সত্যি। কি লুকাচ্ছে..?)
তিশা: আমার উপর ভরসা রাখ আমি বলছি কাব্য ভালো ছেলে তোকে কখনো কষ্ট দিবে না তাছাড়া তুই তো কাব্য’কে ভালোবাসিস।
আমি: হুম।

আমি: তিশা আমাকে আর কতো সাজাবি বলতো..?
তিশা: উফফ আর একটু।
আমি: আর একটু আর একটু বলতে বলতে তো ময়দা কম লাগালি না।
তিশা: ওই একদম ময়দা বলবি না, দাঁড়া চুলগুলো ঠিক করে নেই তারপর শেষ।
আমি: চুল ছেড়ে রাখছিস কেন..?
তিশা: কাব্য বলেছে, একটু শান্ত হয়ে বস তো।
আমি: আন্টি আর আঙ্কেল এসেছেন..?
তিশা: হ্যাঁ (সবাই আসলো কিন্তু যে আমাকে তিনবছর ধরে দেখাশোনা করলো সেই মামিই আসলো না। আসবেই বা কি করে যা কান্ড করেছে)
তিশা: এবার নিজেকে আয়নায় দেখ তো, আমি নিশ্চিত আজ কাব্য তোর থেকে চোখ ফেরাতে পারবে না। (আয়নায় নিজেকে বউ সাজে দেখে কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে। প্রত্যেকটা মেয়েই তো এই দিনটা নিয়ে কতো স্বপ্ন দেখে আমিও দেখতাম তবে আব্বু আম্মু মারা যাওয়ার পর ওসব স্বপ্ন দেখা ভুলে গিয়েছিলাম কিন্তু হুট করে কাব্য আমার জীবনে এসে আবার সব ঠিক করে দিলো)
তিশা: কিরে বল সাজানো কেমন হয়েছে..?
আমি: পুরাই পেত্নী হিহিহি।
তিশা: কি বললি..?
ভাবি: তিশা তিলোত্তমাকে নিয়ে এসো সবাই অপেক্ষা করছে তো।
তিশা: আসছি।

তিশা আমাকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো…
তিশা: একটু পর তো তোর বিয়ে এখন কেমন অনুভূতি হচ্ছে একটু বল শুনি।
আমি: অন্য মেয়েদের চেয়ে একটু আলাদা অনুভূতিই হচ্ছে।
তিশা: ওমা কেন..?
আমি: সব মেয়ে তো বাবার বাড়ি থেকে সবাইকে ছেড়ে শশুড় বাড়ি যায় তাই কষ্ট হয় কিন্তু আমার কষ্টটা তো আলাদা, আমার যে আব্বু আম্মুই নেই।
তিশা: প্লিজ তমা কাঁদিস না আমরা আছি তো।
আমি: আজ আব্বু আম্মুকে অনেক বেশি মিসস করছি, যার আব্বু আম্মু নেই সেই বুঝে এই যন্ত্রণা কেমন।
ভাবি: উফফ অনেক দেরি হয়ে গেছে রাত তো কম হলো না চলো চলো।

ভাবি আমাকে এনে সোফায় বসালেন। এতোক্ষণ ঘোমটা দেওয়া ছিল, ভাবি ঘোমটা সরিয়ে দিতেই কাব্য’র দিকে তাকালাম। কাব্য হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, পাশে অয়ন আর আদনান ভাইয়া ওর চোখের সামনে হাত নেড়ে দুষ্টুমি করছে।
কাজী: আপনাদের শেষ তো আমি কি শুরু করবো..? এমনিতে অনেক রাত হয়ে গেলো আমাকে ফিরতে হবে তো।
ভাইয়া: হ্যাঁ হ্যাঁ আপনি শুরু করুন।
আন্টি: কিরে মা মন খারাপ কেন (আন্টি এসে আমার পাশে বসলেন)
আমি: সবাই এসেছ কিন্তু মামি…
আন্টি: কাঁদিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি: হুম। (কাজী সাহেব কাব্য’কে কবুল বলতে বলছেন শুনে কাব্য’র দিকে তাকালাম, ও একদমে তিনবার কবুল বলে দিয়েছে। সবাই তো ওর কান্ড দেখে হাসছে। আমাকে কবুল বলতে বললেন, আমি চুপ হয়ে আছি দেখে সবাই কবুল বলতে বলছে। কাব্য’র দিকে তাকালাম ও ভয়ে চুপসে গেছে, হয়তো ভাবছে আমি বলবো না। আমার দিকে তাকিয়ে ভ্র কুঁচকিয়ে হাত নেড়ে জিজ্ঞেস করলো বলছি না কেন। কাব্য’র দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে কবুল বলে দিলাম। কাব্য’র মুখে আমি কখনো এতোটা হাসি দেখিনি, এই মুহূর্তে ও যতোটা খুশি হয়েছে মনে হচ্ছে ও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ)

সব নিয়মকানুন শেষ করে ভাবি আর তিশা আমাকে কাব্য’র রুমে নিয়ে আসলো। দুজন মিলে আমার সাথে অনেক দুষ্টুমি করে চলে গেলো। উফফ বাসর রাত বাসর রাত বলে দুজনে আমার কানের বারোটা বাজাই দিছে। ওরা যেতেই রুমের চারপাশে চোখ বোলালাম, রুম দেখে তো আমার মন খারাপ হয়ে গেলো। বাসর রাত নিয়ে একটা মেয়ের কতো স্বপ্ন থাকে, আমারো ছিল। পুরো রুমটা ফুল দিয়ে সাজানো থাকবে ভেবেছিলাম কিন্তু এই রুমে তো ফুলের ছিটেফোঁটাও নেই। আমার রোমান্টিক ডাক্তারবাবু এইটা কি করলো..?
কাব্য: শুনেছি সব নতুন বউরা দশ হাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে বসে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে আর তুমি পুরো রুমে পায়চারী করছ। (কাব্য এসে মাথার পাগড়ী খুলে টেবিলে রাখতে রাখতে বললো। কথা বলতেই ইচ্ছে হচ্ছে না কিন্তু ভাবী বলেছে ও রুমে আসা মাত্রই সালাম করতে তাই সালাম করলাম। কতো গল্পে পড়েছি সিনেমায় দেখেছি নতুন বউরা যখন স্বামীর পায়ে ধরে সালাম করে স্বামী তখন বউকে বুকে নিয়ে জরিয়ে ধরে আর কাব্য আমাকে অবাক করে দিয়ে লাইট অফ করে দিয়ে ডিম লাইট জ্বালালো)
আমি: ডাক্তারবাবু কি করছেন লাইট অফ করলেন কেন..?
কাব্য: পাগলী বাসর ঘরে কেউ লাইট জ্বালিয়ে রাখে নাকি..?
আমি: এইটা বাসরঘর..? কোনো ফুলের ছিটেফোঁটাও নেই।
কাব্য: আমিই সাজাতে বারণ করেছি অযতা এই ফুলগুলো আমাদের ডিস্টার্ব করবে। ওসব বাদ দাও তুমি রেডি হয়ে নাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি (চোখ বড় বড় করে কাব্য’র দিকে তাকিয়ে আছি, ও ওয়াশরুমে চলে গেলো। কিন্তু কি বলে গেলো, রেডি হবো মানে কি তারমানে কাব্য’র চরিত্র এরকম)
কাব্য: কি হলো এখনো শাড়ি খুলোনি..?
আমি: ডাক্তারবাবু আপনি এসব কি বলছেন..?
কাব্য: আরে কান্না করছ কেন ভুলে গিয়েছ আজ আমাদের বাসর রাত।
আমি: আপনার চরিত্র এমন আর আমি বুঝতে পারিনি।
কাব্য: এখানে চরিত্র খারাপ এর কি দেখলে বাসর রাতে তো… (আর শুনতে পারলাম না ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে দিলাম। ছিঃ কাব্য এতো খারাপ আর আমি বুঝতেও পারিনি)
কাব্য: কাঁদছ কেন এভাবে (কাব্য এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো, পেট থেকে শাড়ি সরিয়ে ওর হাত দুটু আমার নাভির উপর রাখলো। ইচ্ছে হচ্ছে ওকে খুন করি)
কাব্য: কান্না থামাও।
আমি: ছাড়ুন আমাকে আমি আপনার কাছে থাকবো না আমি তিশার কাছে চলে যাবো।
কাব্য: হুহ বাসর রাতে উনি জামাই রেখে বান্ধবীর কাছে চলে যাবেন।
আমি: ছাড়ুন আমি কিন্তু চিৎকার করবো।
কাব্য: করো আমার তাতে কি, সকালে ভাবি তোমাকে খোঁচা দিবে ভাববে অন্যকিছুর জন্য চিৎকার করেছ।
আমি: ছিঃ আপনি এতো খারাপ।
কাব্য: হ্যাঁ আমি অনেক খারাপ এখন খারাপ মানুষটার সাথে চলো।
আমি: কোথায় যাবো..?
কাব্য: চলো না। (কাব্য আমার হাত ধরে টেনে পিছনের গেইট দিয়ে বাসার বাইরে নিয়ে আসলো। তারপর আমার চোখ দুটু বেঁধে দিলো)
আমি: কি করছেন।
কাব্য: এতো কথা বলোনা তো, আমরা এখন বাইরে আছি বেশি কথা বললে ভূতে ধরবে (ভূতের কথা শুনে ভয়ে চুপ হয়ে কাব্য’র হাতটা চেপে ধরলাম)

কিছুক্ষণ পর কাব্য আমার চোখের বাঁধন খুলে দিলো। সামনে তাকিয়ে আমি থ হয়ে গেলাম। আমরা নদীর পাড়ে আছি, ঘাটে ছোট একটি নৌকা বাধা। নৌকার দুপাশে রশিতে লন্ঠন ঝুলছে আর লন্ঠন গুলো মিটিমিটি জ্বলছে। চাদের আলোতে সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এই লন্ঠন গুলোর কোনো প্রয়জনই ছিল না। নৌকার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম, পুরো নৌকা জুড়ে শুধু গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। সবকিছু দেখে কাব্য’র দিকে অবাক হয়ে তাকালাম, ও এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো।
কাব্য: বাসরঘরে ঢুকেই কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে ফিজিক্যাল রিলেশনের কথা বলুক এইটা কোনো মেয়েই চায় না, যেমনটা চায়নি আমার তিলোত্তমা। আর তাই তো আমার তিলোর জন্য এতোকিছুর আয়োজন।
আমি: থ্যাংকইউ ডাক্তারবাবু (কাব্য’র দিকে ঘুরে খুশিতে ওর গালে চুমু দিয়ে দিলাম। কাব্য গালে হাত দিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওর তাকিয়ে থাকা দেখে বুঝতে পারলাম আমি আসলে খুশিতে কি করেছি, এই প্রথম কাব্য’কে আমি চুমু দিয়েছি ভাবতেই লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম। কাব্য এসে একটা আঙ্গুল দিয়ে আমার তুতুনী ধরে মুখটা উপরে তুললো, ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি আমি)
কাব্য: বউ সাজে তোমাকে দারুণ লাগছে তার উপর পূর্ণিমা চাঁদের এই স্নিগ্ধ আলো এসে তোমার উপর পড়ছে সাথে লজ্জা সবকিছু মিলে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে একদম মায়াবতী (কাব্য’র এই কথায় আরো বেশি লজ্জা পেয়ে ওকে জরিয়ে ধরে ওর বুকে মুখ লোকালাম। কাব্য আমাকে কোলে তুলে নিলো)
আমি: কি করছেন..?
কাব্য: একদম চুপ আজ কোনো কিছুতে আমাকে বাঁধা দিবে না বুঝেছ। (কিছু না বলে কাব্য’র বুকের পাঞ্জাবী খামছে ধরে ওর বুকের সাথে মিশে রইলাম)

কাব্য আমাকে কোলে করে এনে নৌকায় গোলাপের পাপড়ির উপর বসিয়ে দিলো। কাব্য নৌকার কিনারায় গিয়ে পানিতে হাত দিয়ে কি যেন দেখলো।
কাব্য: পানি কিছুটা ঠান্ডা সহ্য করতে পারবে তো নাকি আবার জ্বর বাধিয়ে ফেলবে..?
আমি: মানে পানিতে কি করবো..?
কাব্য: পানিতে পা ভিজিয়ে নৌকার কিনারায় বসবো।
আমি: ইহহ এতোরাতে তাও নদীতে আমার এমনি ভয় করছে।
কাব্য: কিসের ভয় পাগলী আমি আছি তো (কাব্য’র এই ছোট্র কথাটায় যেন অনেক ভরসা খুঁজে পাই আমি)

পানিতে পা দুটু ভিজিয়ে নৌকার কিনারায় বসে আছি, কাব্য আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বসে আছে।
আমি: পানি তো খুব ঠান্ডা আপনার ঠান্ডা লাগছে না..?
কাব্য: উঁহু পানিতে পা ভিজিয়ে বসার মজাই আলাদা আর আজ তো সাথে আমার তিলো আছে (কাব্য আমাকে এতো ভালোবাসে এতো সুখ সইবে তো আমার কপালে)
কাব্য: কি মেডাম ডাক্তারবাবুর চরিত্র খুব খারাপ তাই না (ইশশ এখন নিজের প্রতি নিজেরই লজ্জা লাগছে কিসব উল্টাপাল্টা ভেবেছি আমি, চরিত্র খারাপ ভেবেছি ছিঃ)
আমি: উঁহু আমার ডাক্তারবাবু অনেক ভালো।
কাব্য: তাই বুঝি..?
কাব্য আমার খোলা চুলে নাক ঘসছে, ওর গরম নিঃশ্বাস গুলো আমার ঘাড়ে গিয়ে পড়ছে আর আমি বার বার কেঁপে উঠছি। হঠাৎ কাব্য ওর হাত দুটু শাড়ির নিচ দিয়ে আমার খালি পেটে রাখলো, আমি শিউরে উঠে ওর হাতের উপর আমার হাত রাখলাম। কাব্য পাগলের মতো আমার চুলে নাক ঘসছে আর হাত দুটু দিয়ে আমার পেটের মধ্যে খেলা করছে। কাব্য’র প্রতিটি স্পর্শে যেন আমি বার বার কেঁপে উঠছি।

চলবে?

(গতকাল কারো কমেন্ট এর রিপ্লে দিতে পারিনি “সরি” অনেকে বলেছ গল্প দিতে এতো দেরি করেছি কেন “নেট প্রবলেম এর জন্য দিতে দেরি হইছে এখন থেকে আবার প্রতিদিন পাবে”
কয়েকজন বাদে বাকি সবাই বলেছ এই তিনদিন গল্প দেইনি তাই এখন যেন পুষিয়ে দেই “এই দুই পার্ট অনেক বড় করে দিয়েছি তোমাদের কথা রাখার জন্য, খুশি তো?)

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ৮

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে মৃদু রোদের আলো চোখেমুখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে রুমের চারপাশে চোখ বোলালাম কিন্তু কাব্য তো কোথাও নেই। হয়তো বারান্দায় আছে ভেবে বারান্দায় আসলাম কিন্তু বারান্দাতেও তো নেই গেলো কোথায়..? আমাকে ঘুমে রেখে এভাবে হুট করে কোথায় চলে গেলো…
কাব্য: আরে কান্না করো না আমি চলে এসেছি (পিছনে তাকিয়ে দেখি কাব্য হাসছে ইচ্ছে হচ্ছে এখন)
কাব্য: হাহাহা একটু সময় চোখের আড়াল হতেই কান্না করে দিচ্ছ।
আমি: কোথায় কান্না করলাম..?
কাব্য: এখনো কান্না করনি কিন্তু আর একটু হলেই তো চোখে ছলছল করা পানি গুলো টুপটুপ করে গাল বেয়ে পড়ে যেতো।
আমি: মোটেও না।
কাব্য: ওকে তাহলে আবার চলে যাই।
আমি: এই না না।
কাব্য: কি ব্যাপার এখন তো আমাকে চোখে হারাও (আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বললো)
আমি: আমাকে ঘুমে রেখে কোথায় গিয়েছিলেন..?
কাব্য: খাবার আনতে, ভেবেছিলাম তুমি ঘুমে থাকতেই চলে আসতে পারবো কিন্তু একটু দূর যেতে হয়েছিল তাই দেরি হয়েছে।
আমি: বাসায় যাবেন না..?
কাব্য: উঁহু ভাবছি বিয়ে করে এখানেই টুনাটুনির সংসার শুরু করবো।
আমি: টুনাটুনির সংসার হিহিহি।
কাব্য: হুম আপাতত টুনাটুনি একা সংসার শুরু করবে তারপর একটা বাচ্চা হবে, দুটু বাচ্চা হবে একসময় অনেক গুলো বাচ্চা হবে।
আমি: অনেক গুলো বাচ্চা..? (কাব্য’র এসব কথা শুনে তো আমি হাসি থামাতে পারছি না)
কাব্য: যখন তুমি হাসো তখন যেন পৃথিবীর সব সৌন্দর্য তোমার উপর এসে নিহিত হয়। (কাব্য আমার পেটে ওর হাত রেখে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো, আমি যেন কোনো এক সুখের রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছি। এতোটা ভালো কেউ বাসতে পারে ভাবতেই পারছি না)
কাব্য: কি টুনাটুনির সংসার শুরু করবে না..?
আমি: করবো কিন্তু এখানে না।
কাব্য: কেন..?
আমি: পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে থাকার যে আনন্দ সেটা কি একা একা সংসার করে পাবো..?
কাব্য: আমি এটাই শুনতে চেয়েছিলাম।
আমি: তাই বুঝি।
কাব্য: জ্বী, আমিও চাই সবাই একসাথে থাকবো আমরা। এখন চলো ফ্রেশ হয়ে খেতে এসো।
আমি: ওকে।

খাবার সামনে নিয়ে কাব্য বসে আছে কিন্তু খাচ্ছে না। আবার কিসের জন্য রেগে গেলো কে যানে, ওর রাগটাকে কেন যেন খুব ভয় পাই।
আমি: কি হলো খাচ্ছেন না কেন..?
কাব্য: খাবো না।
আমি: ওমা কেন..?
কাব্য: রাতে আমি তোমাকে খাইয়ে দিয়েছি কিন্তু তুমি তো দাওনি।
আমি: ওহ এই ব্যাপার ঠিক আছে আমি এখন খাইয়ে দিচ্ছি।
কাব্য: সত্যি..?
আমি: হ্যাঁ।
কাব্য বোধহয় একটু বেশিই ভালোবাসার কাঙ্গাল, একটুখানি ভালোবাসা পেলেই আনন্দে ওর দুচোখ দিয়ে পানি ঝরে। যেমনটা এখন ঝরছে, আমি খাইয়ে দিচ্ছি আর কাব্য এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর কাঁদছে। কাব্য’কে দেখে মনে হয় ওকে কখনো কেউ এতো ভালোবাসা দেয়নি তাই একটুখানি ভালোবাসা পেলেই ছোট্র বাচ্চাদের মতো কাঁদে। কাব্য’র এমন বাচ্চামি, আব্বু আম্মুর কথা জিজ্ঞেস করলে রেগে যাওয়া সবকিছুর পিছনে তো একটা রহস্য আছেই, কি রহস্য আছে সেটা আমি খুঁজে বের করবোই। কিন্তু এসব রহস্য খুঁজে বের করতে হলে তো আগে ওদের বাসায় যেতে হবে।
আমি: ডাক্তারবাবু আমরা বাসায় কবে যাচ্ছি।
কাব্য: এক্ষণি যাবো, তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমাকে হসপিটালে যেতে হবে।
আমি: শুভ্রার কাছে হিহিহি।
কাব্য: দেখো এই মেয়েটার নাম নিবা না অহংকারী মেয়ে একটা আ…
আমি: ওকে ওকে আর ওর নাম মুখে নিবো না।
কাব্য: আলমারিতে একটা শাড়ি রাখা আছে পড়ে রেডি হয়ে নাও।
আমি: আলমারিতে শাড়ি..?
কাব্য: এখন এনেছি তোমাকে এই শার্ট পড়া অবস্থায় বাসায় নিয়ে যাবো নাকি, সবাই তো হাসবে।
আমি: কিন্তু…
কাব্য: আবার কি..?
আমি: উঁহু কিছুনা। (কি করে বলি আমি যে শাড়ি পড়তে পারিনা। বললে হয়তো নিজেই চলে আসবে শাড়ি পড়াতে আর ও যা দুষ্টু ছেলে শাড়ি পড়াতে এসে আবার কিনা কি কান্ড করে বসে তারচেয়ে বরং নিজেই ট্রাই করি)

শাড়ি পড়ে এসে কাব্য’র সামনে দাঁড়ালাম, ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমি: কি হলো..?
কাব্য: ভাবছি আমার বউতো খুব গুণবতী, এতোটাই গুণবতী যে নিজের শাড়িটাও ঠিক করে পড়তে পারে না। (ওর কথা শুনে ইচ্ছে হচ্ছে শাড়িটাই খুলে ফেলে দেই, এতো কষ্ট করে পড়েছি কোথায় বলবে সুন্দর লাগছে তা না বদনাম গাইছে)
কাব্য: আমি ঠিক করে পড়িয়ে দেই..?
আমি: আপনি পড়িয়ে দেওয়ার জন্য বদনাম করছেন আমার।
কাব্য: আরে না তো, শাড়ির কুচি ছুটে যাচ্ছে নিজেই দেখো (সত্যিই তো শাড়ির কুচিগুলো এলোমেলো হয়ে ছুটে যাচ্ছে)
কাব্য: কি হেল্প করবো..?
আমি: হুহ লাগবে না আমি একাই ঠিক করতে পারবো।
কাব্য: আমি হেল্প করলে সমস্যা কোথায়..?
আমি: আপনি যা দুষ্টু ছেলে ভয় করে।
কাব্য: এই আস্তে আস্তে কি বলছ..?
আমি: কিছু নাতো।
তাড়াতাড়ি রুমে চলে আসলাম। কোনোভাবে শাড়িটা ঠিক করে নিলাম। কেন যে এতোদিন শাড়ি পড়া শিখিনী।

আমি: চলুন
কাব্য: (কিছুনা বলে আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে)
আমি: এখন তো আগের চেয়ে ভালো হয়েছে তাহলে হাসছেন কেন..?
কাব্য: কোথায় আমি হাসিনি তো চলো।
আমি: উহহ (একটু হাটতেই শাড়ির কুচির মধ্যে প্যাচ লেগে পায়ে হুচট খেলাম)
কাব্য: জানতাম এমন কিছুই হবে (কাব্য এসে আমাকে কোলে তুলে নিলো)
আমি: কি করছেন..?
কাব্য: একদম চুপ। (কাব্য আমাকে কোলে করে গাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছে, আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি দেখে ভ্রু কুঁচকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিলো)
কাব্য: শাড়ি পড়লে তোমাকে খুব সুন্দর লাগে, মনে হয় কোনো এক মায়াবতী আ…(কাব্য’র গলা জরিয়ে ধরে অন্যমনস্ক হয়ে ছিলাম, কাব্য’র এমন কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম। কাব্য আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে ও আমার চোখের ভাষাগুলো পড়ছে)

কাব্য: আমরা আগামীকাল বিয়ে করছি (কাব্য গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বললো, আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি)
কাব্য: অবাক হবার কিছু নেই আর দেরি করতে পারবো না।
আমি: তাই বলে কালকেই।
কাব্য: হ্যাঁ কাল সাধারণ ভাবে বিয়ে হবে পরশুদিন বড় করে বৌভাত এর অনুষ্ঠান হবে।
আমি: হুম।
কাব্য: রাগ করেছ..?
আমি: নাতো রাগ করবো কেন..?
কাব্য: তাহলে এরকম মুখ গোমড়া করে দূরে বসে আছ কেন..?
কাব্য’র পাশে এসে ওর কাধে মাথা রেখে একটা হাত দিয়ে ওকে জরিয়ে ধরে বসলাম। কাব্য যেন এটাই চাইছিল তাই ওর মুখে এতোক্ষণে হাসি ফুটেছে।

গাড়ি থেকে নেমে তো আমি অবাক। সবাই আমাদের জন্য দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে, পুরো বাসাটা সাজানো। মনে হচ্ছে কাব্য বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে এসেছে, আর সেই বউটা আমি।
–কাব্য চলে আসছ যে নতুন বউকে আনবে না (উনি মনে হয় কাব্য’র ভাবি কিন্তু নতুন বউ বলছে কেন আমাদের তো বিয়ে হয়নি)
কাব্য: তিলো এসো।
ভাবি: আসবে মানে যাও কোলে করে নিয়ে এসো।
কাব্য: হুহ এই মুটকি কে বার বার কোলে নিতে পারবো না।
আমি: কি বললেন আমি মুটকি।
অয়ন: আরে ভাবি কান্না করো না ভাইয়া তো ফাজলামো করে বলেছে, তোমার মতো শুকনিকে কোন পাগলে মুটকি বলবে হাহাহা।
ভাবি: থামবি তোরা। (কাব্য এসে আমাকে কোলে তুলে নিলো ইচ্ছে হচ্ছে বুকে কয়েকটা কিল দেই)
কাব্য: ভাবি আমাকে হসপিটালে যেতে হবে।
ভাবি: হ্যাঁ যাও তবে আজকেই শেষ, দু সপ্তাহের ছুটি নিয়ে নাও।
কাব্য: আগে কাজ তারপর অন্যকিছু তাই দু সপ্তাহের ছুটি নেওয়া সম্ভব না (ভাবি কাব্য’কে মুখ ভেংচি দিয়ে কিচেনের দিকে চলে গেলেন। আমি বসে বসে ওদের সবার কথা শুনছি)
কাব্য: আজকে বাসায় ফিরবো না (কাব্য আচমকা এসে আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো, ফিরবে না শুনেই তো ভয় পেয়ে গেলাম। এখানে নতুন এসেছি কাব্য না থাকলে আমি একা থাকবো কিভাবে)
আমি: কেন..?
কাব্য: এমনি আসি।
ভাবি: কাব্য দাড়াও মিষ্টি খেয়ে যাও।
কাব্য: কিসের মিষ্টি..?
ভাবি: বাসায় নতুন বউ এসেছে ভুলে গিয়েছ নাকি..?
কাব্য: তাড়াতাড়ি দাও। (কাব্য ভাবির হাত থেকে একটা মিষ্টি নিয়ে আমার দিকে একবার তাকিয়ে বেড়িয়ে গেলো)
ভাবি: এই কাব্য আর ফারাবী দুটুই একরকম, সারাদিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আজ ফারাবীকে কতো করে বললাম বাসায় নতুন বউ আসবে অফিসে যেও না, শুনলো না। বললো রাতে এসে তোমার সাথে কথা বলে নিবে। তুমি ওদের কাজে কষ্ট পেওনা, নাও মিষ্টি খাও। (ভাবি আমার মুখে একটুখানি মিষ্টি দিলেন, অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি উনার দিকে। ওরা সবাই এতো ভালো কেন। আমার তো মনে হচ্ছে এখানে এসে আমি আরেকটা তিশা পেয়ে গেছি)
অয়ন: ভাবি চিন্তা করোনা আমি সারাদিন বাসায় থাকি আমার কোনো কাজের ব্যস্ততা নেই সারাদিন আড্ডা দিতে পারবো।
ভাবি: আসছে পড়াচোর একটা, পড়াশোনায় মন নেই সারাদিন ঘুরে বেড়ানো।
অয়ন: আচ্ছা ছোট ভাবি তুমিই বলো বড় দুভাই যদি আমাকে সবকিছু দেয় তাহলে আমি পড়াশোনা কেন করবো।
আমি: হ্যাঁ তাই তো।
ভাবি: হলো দুজনের ভাবনা মিলে গেছে এখন দুজন মিলে আড্ডা দাও।
ভাবি কিচেনে চলে গেলেন।

অয়নের সাথে অনেক গল্প করলাম, খুব টায়ার্ড লাগছে ইচ্ছে হচ্ছে এখানেই শুয়ে পড়ি কিন্তু ড্রয়িংরুমে তো শুয়া সম্ভব না। আস্তে আস্তে ভাবির কাছে আসলাম।
ভাবি: কিছু বলবে..?
আমি: ফ্রেশ হবো কিন্তু…
ভাবি: কোন রুমে যাবে ভেবে পাচ্ছ না তাই তো। আজকে কষ্ট করে অন্য রুমে থাকো কাল থেকে তো আমার দেবরের বুকেই…
আমি: ভাবি…
ভাবি: আরে লজ্জা পেওনা ফাজলামো করলাম।
আমি: আপনি তো দেখছি ডাক্তারবাবুর মতোই লজ্জা নেই।
ভাবি: এখনো ডাক্তারবাবু ডাকো কাব্য তো তোমার মুখে ডাক্তারবাবু শুনেই পাগল হয়ে গেছে।
আমি: আপনাকে সব বলেছে..?
ভাবি: হ্যাঁ ও আমার কাছে সবকিছু বলে এই পরিবারে আমরা সবাই ফ্রি। আর শুনো আপনি করে বলোনা তো পর মনে হয়, তুমি করে বলবা তাহলে দুজন জা নয় বোন মনে হবে।
আমি: আপনারা সবাই এতো ভালো কেন..?
ভাবি: আবার আপনি..
আমি: না না তুমি (ভাবি রাগি চোখে তাকাতেই এসে জরিয়ে ধরলাম, আমি সত্যি ভাগ্যবতী নাহলে তিশার মতো বান্ধবী আর ভাবির মতো জা পাই)
ভাবি: এখন রুমে চলো।
আমি: ওকে।

ভাবি উপরের একটা রুমে আমাকে দিয়ে চলে যেতে চাইলেন।
আমি: ভাবি ডাক্তারবাবুর রুম কোনটা..?
ভাবি: ওইযে পাশের রুমটাই। অবশ্য এইটা ওর রুম বললে ভুল হবে, ও তো এখানে থাকেই না। একা একা শহরের বাইরে অদ্ভুত বাড়িটায় থাকে। আজকে বাসায় ফিরবে কিনা কে জানে..?
ভাবি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলেন। খুব টায়ার্ড লাগছে তাই ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়লাম।

ঘুম ভাঙতেই দেয়াল ঘড়িতে তাকালাম সন্ধ্যা সাতটা বাজে। সেই দুপুরবেলা ঘুমিয়ে ছিলাম আর কেউ ডাকলো না।
ভাবি: ঘুম ভেঙেছে তাহলে। দুপুরে খাওয়ার জন্য কতো ডাকলাম উঠনি।
আমি: খুব ক্লান্ত লাগছিল তাই।
ভাবি: ঠিক আছে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।
ভাবি চলে যেতেই এক দৌড়ে কাব্য’র রুমে চলে আসলাম। সবকিছুর রহস্য তো আমি খুঁজে বের করবোই।

কাব্য’র সারা রুম খুঁজলাম কিন্তু কিছুই তো পেলাম না। কাব্য’র মা বাবার কোনো ছবি বা কোনো ডায়েরি, কাব্য’র মায়ের কোনো স্মৃতি কিছুই পেলাম না। ওই বাসায় আলমারিতে যে ছবিটা পেয়েছিলাম সেটা তো সাদা সাদা দাগ পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে কাউকে চেনা যায় না, ভালো একটা ছবি প্রয়োজন। কিছু না পেয়ে চলে আসতে চাইলাম হঠাৎ টেবিলের ড্রয়ারে চোখ পড়লো, ড্রয়ারে তো খুঁজা হয়নি। ড্রয়ার খুঁজে শুধু দুটু চাবি পেলাম কিন্তু কিসের চাবি এগুলো…?
অয়ন: ছোট ভাবি নিচে এসো।
আমি: আসছি।

ড্রয়িংরুমে এসে দেখি অয়ন আর ভাবি বসে আছেন। উফফ এখন আবার ডাকতে গেলো কেন, চাবিটা কিসের সেটা তো খুঁজতে হবে।
ভাবি: তিলোত্তমা এসেছ। ফারাবী আসতে দেরি হবে আর কাব্য আসবে কিনা ঠিক নেই তো, তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো (বলে কি এতো তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বো)
ভাবি: আরে কাল তোমাদের বিয়ে অনেক জামেলা আছে তাই বলছি আজ তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ো।
আমি: ঠিক আছে।
অয়ন: আমার সুইট ভাবিরা আমি কবে বিয়ে করছি..?
ভাবি: পড়াশোনা শেষ কর তারপর।
অয়ন: আটকে দিলে তো, এই পড়াশোনাটাই তো আমার ভালো লাগে না।
আমি: তাহলে কাউকে পছন্দ করো তখন নাহয় বিয়েটা করিয়ে দিবো।
অয়ন: দেখেছ ভাবি ছোট ভাবির সাথে আমার সব ভাবনা মিলে যায় হাহাহা।
কিছুক্ষণ ওদের সাথে আড্ডা দিয়ে খাবার খেয়ে রুমে চলে আসলাম।

রুমের মধ্যে পায়চারী করছি আর চাবি দুটু দেখছি, কিসের চাবি হতে পারে..? আচ্ছা চাবি দুটু তো খুব পুরনো তাহলে কি এগুলো স্টোররুমের চাবি…?

বাসায় নতুন এসেছি স্টোররুম কোনদিকে সেটাই বুঝতে পারছি না তাও আন্দাজি হাটছি।
কাব্য: কোথায় যাচ্ছ তিলো (আচমকা কাব্য’র কন্ঠ শুনে চমকে উঠলাম, ও কোথা থেকে আসলো)
আমি: কোকোকোথাও নানানাততো।
কাব্য: তোতলাচ্ছ কেন..?
আমি: নাতো।
কাব্য: চলো আমার সাথে। (কাব্য আমার হাত ধরে টেনে ওর রুমে নিয়ে আসলো। কাব্য চাবিগুলো দেখে ফেলার আগেই লুকিয়ে ফেললাম)
কাব্য: আসবো না বলেও এসেছিলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো ভেবে কিন্তু এসে আমি নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেছি।
আমি: মানে।
কাব্য: এসেই গোয়েন্দাগিরি শুরু করে দিয়েছ..?
আমি: গোয়েন্দাগিরি তাও আমি কি বলছেন এসব..?
কাব্য: তোমার ডাক্তারবাবুর চোখকে ফাকি দেওয়া এতো সহজ না (কাব্য আমার হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে আমাকে ওর বুকের সাথে জরিয়ে ধরলো, খুব রেগে গেছে বুঝতে পারছি কিন্তু আমি যে রহস্য খুঁজছি সেটা ওকে বুঝতে দেওয়া যাবে না)
আমি: কিসব আবোলতাবোল বকছেন।
কাব্য: তিলো আমি তোমাকে ভালোবাসি এমন কোনো কাজ করোনা যেন তোমার প্রতি আমার এই ভালোবাসাটা ঘৃণায় পরিণত হয়ে যায়।
আমি: মানে..?
কাব্য: আর কখনো স্টোররুমে যাওয়ার দুঃসাহস করো না বুঝেছ (তারমানে আমি যেদিকে যাচ্ছিলাম সেদিকেই স্টোররুম…? কিন্তু কাব্য স্টোররুমে যেতে নিষেধ করছে কেন..? কি আছে ওই স্টোররুমে..?)
কাব্য: খেয়েছ..?
আমি: হুম।
কাব্য: যাও ঘুমিয়ে পড়ো আর হ্যাঁ যা বলেছি তা মাথায় রেখো।

রুমে এসেই চাবি দুটু লুকিয়ে রাখলাম। কাব্য নিষেধ করলে কি হবে, ওই স্টোররুমে কি আছে তা তো আমি দেখবোই আর সব রহস্যও আমি বের করবো।
কাব্য: কি করছ বউ (বিছানায় শুয়ে শুয়ে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ কাব্য’র কথা শুনে ভয়ে এক লাফে উঠে বসে পড়লাম)
কাব্য: আরে আমি ভয় পাচ্ছ কেন..?
আমি: লাইট অফ করা এমন অন্ধকার রুমে হুট করে ঢুকে কেউ কানের কাছে এসে কথা বলে..?
কাব্য: ওকে লাইট জ্বালিয়ে দিচ্ছি।
আমি: না থাকুক ডিম লাইটই ভালো।
কাব্য: আমার বউ কতোটা সাহসী আজ প্রমাণ হয়ে গেলো হাহাহা (কাব্য’র হাসি দেখে রাগ করবো নাকি অবাক হবো ভেবে পাচ্ছি না। একটু আগে যে এতো রেগে ছিলো সে এখন দিব্বি হাসছে)
কাব্য: সরি সোনা অনেক বকা দিয়েছি আর হবে না (যাক বাবা আমি তো কিছুই বললাম না নিজেই সরি বলছে, আসলে এই ডাক্তারবাবুর ভিতরে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে)
কাব্য: এই পাগলী কাল আমাদের বিয়ে মনে আছে..?
আমি: হুম মনে আছে তো..?
কাব্য: কাল যেহেতু বিয়ে তারমানে কালরাতে আমাদের বাসর (চুপচাপ আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো, ভাবকানা এমন যে বিয়ে অনেক আগেই হয়ে গেছে)
আমি: ডাক্তারবাবু কি করছেন..?
কাব্য: একদম চুপ।
কাব্য উঠে আমার সামনে বসে পড়লো তারপর আমার দুগালে আলতো করে ধরে আমার ঠোঁটের দিকে ওর ঠোঁট এগুতে শুরু করলো। কাব্য আমার এতো কাছে এসেছে যে আমাদের দুজনের নিঃশ্বাস ভারী খাচ্ছে। আমি কাব্য’কে দূরে সরিয়ে দিতে চাইলাম সাথে সাথে কাব্য আমার ঠোঁটের মধ্যে ওর ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ৭

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

চোখেমুখে পানির ছিটা পড়াতে জ্ঞান ফিরলো, আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম। ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখি কাব্য’র কোলে শুয়ে আছি। এক লাফ দিয়ে উঠে ওকে জরিয়ে ধরলাম।
কাব্য: শান্ত হও প্লিজ (কিছু না বলে শুধু কেঁদেই যাচ্ছি)
কাব্য: তিলো তাকাও আমার দিকে, আমাকে বলো কি হয়েছে। (আস্তে আস্তে কাব্য’র দিকে তাকালাম, কি হয়েছে সেটা কি ওকে বলা ঠিক হবে)
কাব্য: ভয় পেয়ো না আমি তো তোমার কাছেই আছি, বলো আমাকে কি হয়েছে।
আমি: যা হয়েছে সেটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যেতে চাই আর মনে করতে চাই না এসব (কাব্য’কে জরিয়ে ধরে বললাম। আজ মামি খারাপ কাজ করেছে কিন্তু এতোদিন তো আমাকে মামিই দেখাশোনা করেছে থাকনা মামির খারাপ চরিত্রটা লুকানো)
কাব্য: ঠিক আছে বলতে হবে না তুমি শান্ত হও। (চারদিকে চোখ বুলালাম, আমি তো একটা বাসায় আছি)
আমি: আপনি আমাকে পেলেন কোথায় আমি তো…
কাব্য: হুম রাস্তাতেই অজ্ঞান অবস্থায় পেয়েছি।
আমি: আপনি…
কাব্য: আমি তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম তোমার মামির সাথে বিয়ের কথা বলতে কিন্তু উনি বললেন সকালে যেন যাই কারণ তুমি এখন ঘুমে। সন্ধ্যায় তোমার কন্ঠ শুনে অসুস্থ মনে হচ্ছিল তাই আমি বিশ্বাস করে চলে আসি। মধ্যে তোমাকে অনেক বার ফোন দিয়েছি কিন্তু তুমি রিসিভ করনি তাই ভেবেছিলাম সত্যি তুমি অসুস্থ আর তাই ঘুমিয়ে আছ। কিন্তু বাসায় ফিরার পথে তোমাকে রাস্তার পাশে এভাবে পড়ে থাকতে দেখি, আর বাসায় নিয়ে আসি। ভাগ্যিস আমি ওই রাস্তা দিয়ে আসছিলাম নাহলে তো তোমাকে আমি হারিয়েই ফেলতাম।
আমি: আরে বাচ্চাদের মতো কাঁদছেন কেন..?
কাব্য: যদি সত্যি তোমাকে হারিয়ে ফেলতাম, জানো আমি কতোটা ভয় পেয়েছিলাম।
আমি: হ্যাঁ বুঝেছি অনেক ভয় পেয়েছিলেন এখন বাচ্চাদের মতো কান্না থামান।
কাব্য: আমার কান্না তোমার কাছে বাচ্চাদের মতো লাগে।
আমি: নাতো কে বললো, আপনি তো বুড়ো মানুষ।
কাব্য: কি আমি বুড়ো..?
আমি: আচ্ছা এই বাসায় কি কোনো মানুষ থাকে নাকি আপনি আমাকে ভুল করে এইটা বাসা ভেবে চিড়িয়াখানায় নিয়ে এসেছেন।
কাব্য: ইসস মানুষ এভাবে লজ্জা দেয়, আমার তো বউ নেই যে সবকিছু গুছিয়ে রাখবে তাই বাসার এই অবস্থা। কিন্তু এখন তো তুমি চলে এসেছ এখন সব গুছিয়ে রাখবে।
আমি: হুম বুঝেছি কিন্তু আপনি তো বলেছিলেন ভাই ভাবী সবাই আছে।
কাব্য: ওরা তো অন্য বাসায় আমি এখানে একা থাকি।
আমি: হ্যাঁ চিড়িয়াখানার…
কাব্য: আবার বলছ।
আমি: ওকে আর বলবো না।
কাব্য: তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি একটু আসছি।
আমি: কোথায় যাবেন..?
কাব্য: আমার এই বাসাটা শহর থেকে একটু দূরে এখানে তেমন কিছু পাওয়া যায় না একটা রেস্টুরেন্ট আছে সামনে ওখান থেকে কিছু খাবার নিয়ে আসি।
আমি: ঠিক আছে।

কাব্য চলে গেলো, আমি বাসাটা ঘুরে ঘুরে দেখছি অনেক বড় বাসা। রাতের বেলা তাই বাইরের কিছু বুঝা যাচ্ছে না কিন্তু কাব্য সবাইকে রেখে শহর থেকে দূরে এমন একটা অদ্ভুত বাড়িতে একা একা থাকে কেন বুঝতে পারছি না। বাসাটা সত্যি খুব অদ্ভুত ভিতরে তেমন কোনো জিনিসপত্র নেই, চারপাশ কেমন যেন খালি খালি লাগছে। হঠাৎ আমার শরীরের দিকে নজর পড়লো, সারা শরীরে ধুলো জামার মধ্যে কাদা কোথা থেকে লাগলো আবার। এক্ষণি গোসল করতে হবে কিন্তু কাপড়চোপড় পাবো কোথায়। রুমের এক কোণে আলমারির দিকে চোখ পড়লো হয়তো কিছু পাবো তাই আলমারি খুলে খুঁজতে শুরু করলাম। কিন্তু কাব্য’র কিছু শার্ট প্যান্ট ছাড়া কিছুই পেলাম না। একটা শার্ট আর একটা প্যান্ট হাতে নিয়ে আলমারি লাগাতে যাবো তখনি আলমারির কোণে পড়ে থাকা একটা ছবির দিকে চোখ পড়লো। হাতে এনে ভালোভাবে দেখলাম, ছবিটাতে কেমন যেন সাদা সাদা দাগ পড়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে উনারা কাব্য’র মা বাবা। কিন্তু নিজের আব্বু আম্মুর ছবি দেয়ালে না রেখে ও আলমারির এক কোণে এভাবে ফেলে রেখেছে কেন। ইসস ছবিটা কি অযত্ন করে ফেলে রেখেছে।

কাব্য: তিলো কোথায় তুমি..?
আমি: আসছি।
কাব্য: কি করছ তু…
আমি: এইতো। (গোসল করে বের হতেই দেখি কাব্য খাবারের প্যাকেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে তো কাব্য হা করে তাকিয়ে আছে, তাকাবেই তো ওর শার্ট পড়েছি যে। নিজেরই লজ্জা লাগছে কিন্তু কি করবো অন্য কিছু ছিল না তো)
কাব্য: আমি ঠিক দেখছি তো নাকি স্বপ্ন দেখছি (কাব্য’র কাছে গিয়ে ওর হাতে একটা চিমটি দিলাম)
কাব্য: উফফ।
আমি: এবার বুঝেছেন সত্যি যে।
কাব্য: তুমি পড়েছ আমার শার্ট…?
আমি: হ্যাঁ তো কি করবো আর কিছু ছিল নাকি..? আচ্ছা বাসাটা যেহেতু আপনার তাহলে ভবিষ্যৎ বউ এর কথা ভেবে তো কিছু কাপড়চোপড় কিনে রাখতে পারতেন।
কাব্য: যেখানে বিয়ে করার ইচ্ছেটাই মরে গিয়েছিল আবার ভবিষ্যৎ বউ এর কথা ভেবে এতোকিছু করবো (একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আস্তে আস্তে কথাটা বললো)
আমি: বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না মানে..?
কাব্য: বিয়ে জিনিসটা আর মেয়েদের আমি ঘৃণা করতাম কিন্তু সেদিন হসপিটালে তোমাকে দেখে সবকিছু কেমন যেন উলটপালট হয়ে গেলো। কিভাবে যে তোমাকে এতোটা ভালোবেসে ফেলেছি আর বিয়ে করার জন্য এমন পাগল হয়েছি নিজেই বুঝতে পারছি না।
আমি: একটা কথা জিজ্ঞেস করবো..?
কাব্য: করতে পারো কিন্তু রেজাউল চৌধুরী আর হুমায়রা চৌধুরীর প্রসঙ্গ বাদে।
আমি: উনারা কারা..?
কাব্য: হিয়ার বাবা মা।
আমি: হিয়া…
কাব্য: আমার ছোট বোন।
আমি: আশ্চর্য তো উনারা যদি হিয়ার বাবা মা হন তাহলে তো আপনারো…
কাব্য: না উনারা আমার বাবা মা না, কোনো সন্তানের বাবা মা হবার যোগ্যতা উনাদের নেই।
কাব্য বারান্দায় চলে গেলো। সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। কাব্য নিজের বাবা মায়ের নাম ধরে ডাকছে, উনাদের নিজের বাবা মা বলে স্বীকার করছে না আবার বলছে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল না মেয়েদের ও ঘৃণা করে। থাক এসব নিয়ে পড়ে ভাববো আগে কাব্য’র কাছে যাই, হয়তো কাঁদছে।

যা ভেবেছিলাম তাই, কাব্য বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে আর কাঁদতেছে। বুঝতে পারছি না আম্মু আব্বুর কথা বললেই ও কাঁদে কেন।
আমি: সরি (কাব্য’কে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম)
কাব্য: সরি।
আমি: আপনি কেন সরি বলছেন..?
কাব্য: তোমার সামনে সিগারেট খাচ্ছি তাই, আমি তো জানি তুমি সিগারেট অপছন্দ করো।
আমি: আমিও সরি আব্বু আম্মুর কথা মনে করিয়ে আপনাকে কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু আপনি বুঝলেন কিভাবে আমি যে আব্বু আম্মুর কথা জিজ্ঞেস করবো..?
কাব্য: আলমারি থেকে শার্ট খুলে পড়েছ তারমানে ছবিটা তুমি দেখেছ তাই মনে হলো এইটা নিয়েই কিছু জিজ্ঞেস করবে। (জিজ্ঞেস তো করার ছিল অনেক কিছু, আমার মনে যে একের পর এক প্রশ্ন জাগছে শুধু কিন্তু আপনার কান্না সহ্য করতে পারিনা তাই আর কিছু জিজ্ঞেসও করবো না)
আমি: চলুন খিদে লেগেছে আমার।
কাব্য: হুম চলো।

একটু আগে যে মানুষটা যন্ত্রণায় ছটফট করে কাঁদছিল সে এখন আমাকে খুব যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছে। কাব্য’কে দেখে বুঝার উপায় নেই যে ও একটু আগেই কেঁদেছে।
কাব্য: কি দেখছ এভাবে..?
আমি: উঁহু কিছুনা। (কাব্য আমাকে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে আর বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি একমনে ওকে দেখছি আর ভাবছি আমার মতো একটা মেয়ে যে কিনা দেখতে কালো, বাবা মা নেই আর এখন তো আমার কিছুই নেই, সেই আমাকে কিনা কেউ এতোটা ভালোবাসতে পারে তাও আবার কাব্য’র মতো একজন মানুষ। যে মানুষটা কিনা দেখতে সুন্দর, পেশায় একজন ডক্টর সেকিনা আমাকে এমন নিখুঁত ভাবে ভালোবাসে)
কাব্য: শার্ট পড়লে তোমাকে দারুণ লাগে আমার তো মাথা নষ…
আমি: এই একদম বাজে কথা বলবেন না।
কাব্য কিছু না বলে হাসছে শুধু, আর আমি মুগ্ধ হয়ে ওর হাসি দেখছি। একটা মানুষের হাসি এতো সুন্দর হয় কিভাবে…?

জানালার কাছে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, কাব্য এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো।
কাব্য: তোমার জন্য আর একটা খাবার আছে।
আমি: কি..?
কাব্য: পিছনে তাকাও (কাব্য’র কথা শুনে পিছনে তাকালাম)
আমি: এতোগুলো চিপস।
কাব্য: তিশা বলেছে তুমি চিপস পাগলী তাই নিয়ে এসেছি।
আমি: তাই বলে এতোগুলো..?
কাব্য: আমার বউকে আমি সবকিছু বেশি বেশি দিবো তাতে তোমার কি…?
আমি: কিন্তু ভালোবাসাটাই তো কম দিচ্ছেন।
কাব্য: তাই বুঝি।
আমি: এই কি করছেন কোলে নিচ্ছেন কেন আমি তো ফাজলামো করে বলেছি।
কাব্য কিছু না বলে আমাকে কোলে করে বারান্দার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কাব্য’র শার্ট খামচে ধরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে।

বারন্দায় একটা কাউচ রাখা, কাব্য আমাকে কাউচে শুয়ে দিলো। রুমে গিয়ে চিপস এনে আমার হাতে দিয়ে হেসে বললো…
কাব্য: চিপস পাগলী চিপস খাও (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, আমি তো এমন একজন জীবনসঙ্গীই চেয়েছিলাম। শুধু আমি কেন প্রত্যেকটা মেয়েই এমন একজন জীবনসঙ্গী চায়, যে কিনা মেয়েটির ছোট ছোট ইচ্ছে গুলোর মূল্য দিবে)
কাব্য: নাও তিশার সাথে কথা বলো (আমার দিকে ফোন এগিয়ে দিলো)
আমি: হ্যাঁ তিশা।
তিশা: আমাকে একবার বলে তো যাবি আমার টেনশন হয় না..?
আমি: আসলে আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম তাই তোর কাছে আর যাইনি।
তিশা: না এসে ভালোই করেছিস তোর মামি আমাদের বাসায় লোকজন নিয়ে এসে যা কান্ডটাই না করেছে। এখন কাব্য’র কাছে যেহেতু আছিস আমার আর কোনো চিন্তা নেই।
আমি: হুহ।
তিশা: শুন এখানে ফিরে আসার প্রয়োজন নেই কাব্য’র সাথে ওর বাসায় যাবি আর দু-তিন দিনের মধ্যেই তোর আর কাব্য’র বিয়ে হবে, আমি ওদের বাসায় আসবো চিন্তা করিস না।
আমি: ঠিক আছে।
তিশা: রাখছি।

তিশা ফোন রাখতেই কাব্য এসে আমার পাশে বসলো, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি: কি দেখছেন..?
কাব্য: আমার বউটাকে।
আমি: আপনি যে কি।
কাব্য: আমি একজন ভদ্র মানুষ তাই তো আজ নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোলে রাখছি।
আমি: মানে।
কাব্য: কিছুনা।
আমি: এই এভাবে হাসবেন নাতো। (কাব্য এসে আমার পাশে শুয়ে পড়লো তারপর আমার নাকে ওর নাক ঘষে হেসে বললো…)
কাব্য: আমার হাসি তোমার পছন্দ না বুঝি…?
আমি: উহু আপনার হাসি খুব সুন্দর তাই আপনি যখন হাসেন আমার নিজেরি নিজের প্রতি হিংসে হয়।
কাব্য: কেন কেন..?
আমি: এইযে আমার মতো মেয়ে আপনার মতো একজন মানুষকে পেয়েছে।
কাব্য: আর কখনো যদি নিজেকে ছোট ভেবেছ তাহলে কিন্তু… (কাব্য রেগে গেছে বুঝতে পারছি তাই চুপ হয়ে আছি। হঠাৎ কাব্য আমার বুকের উপর শুয়ে পড়লো)
আমি: ডাক্তারবাবু কি করছেন।
কাব্য: তিলো আমার এই জায়গাটায় না অনেক ব্যথা, অনেক প্রিয়জনদের হারানোর যন্ত্রণা জমা হয়ে আছে এই জায়গায়। সব কষ্ট ভুলে যেতে চাই আমি তোমার ভালোবাসা দিয়ে প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা (আমার ডান হাতটা কাব্য’র বুকের বাম পাশে নিয়ে রেখে কথা গুলো বললো। কাব্য আবারো কাঁদছে কিন্তু কাব্য’র কিসের এতো কষ্ট)
আমি: উহু কখনো যাবো না আমার ডাক্তারবাবুকে ছেড়ে।
কাব্য’কে আমার বুকের সাথে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম। কাব্য ছোট বাচ্চাদের মতো নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছে আর কাঁদছে। আর আমি ওর চুলগুলোর মাঝে হাত বুলিয়ে খেলা করছি।

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ৬

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

কাব্য ল্যাপটপে কি যেন কাজ করছে আর আমি ওর কাধে মাথা রেখে বসে আছি। আজ নিজেকে আর একা মনে হচ্ছে না, কাব্য’র উপর ভরসা করতে ইচ্ছে হচ্ছে। কাব্য’র কাধ থেকে মাথা তুলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে আর ভাবছি একটা মানুষ এতোটা ভালো কিভাবে বাসতে পারে।
কাব্য: এইযে মেম কি দেখছেন (আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কাব্য ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো)
আমি: ভাবছি আপনি আমাকে এতোটা ভালো কিভাবে বাসেন।
কাব্য: একদিন তুমিও আমাকে ঠিক এতোটাই ভালোবাসবে যতোটা ভালো আমি তোমাকে বাসি। (সে দিনটা বেশি দূরে নয় খুব কাছেই, আমি আপনাকে ভালোবাসি আর এই ভালোবাসা প্রতিটা মুহূর্তে বেড়ে চলেছে)
কাব্য: আবার কোথায় হারালে।
আমি: কোথাও না আমি তিশাকে দেখে আসছি।
কাব্য: কি দেখবে ও তো ঘুমিয়ে আছে।
আমি: আপনি তো কাজ করছেন আমি একবার দেখে আসি এখানে বসে থেকে কি করবো।
কাব্য: কাজ তো তোমার জন্যই করছি, এখন কাজ শেষ করে সারা রাত গল্প করবো তোমার সাথে।
আমি: হুহ সখ কতো।

তিশার কেবিনে এসে দেখি সেই সিস্টারটা কি যেন করছে, আমাকে দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিলো। আমি তিশার পাশে এসে বসলাম, ও ঘুমিয়ে আছে। দেখে তো আগের চেয়ে অনেক সুস্থ মনে হচ্ছে তারমানে সকালে বাসায় নিয়ে যেতে পারবো। তিশার একটা হাত আমার দুহাতের মুঠোয় এনে ধরে বসে আছি। কেন যে পাগলীটা বার বার আমার জন্য নিজেকে কষ্ট দিতে যায়।
সিস্টার: পেসেন্ট আপনার কি হয়…? (বাব্বাহ্ যে আমাকে দেখে রাগে মুখ ফিরিয়ে নেয় সে নিজের ইচ্ছায় কথা বলছে)
আমি: বোন।
সিস্টার: আর কাব্য স্যার..?
আমি: প্রশ্নটা নাহয় ওকেই করবেন।
সিস্টার: এতো ভাব কিসের হ্যাঁ জিজ্ঞেস করছি বলে দিলেই তো হয়।
আমি: আস্তে চেঁচামেচি করুন তিশার সমস্যা হবে। আর আগে তো কাব্য বলেই দিয়েছে আমি ওর বউ।
সিস্টার: হুহ বউ। স্যার আসার পর থেকে উনার পিছনে আঠার মতো লেগে আছি পাত্তাই দিচ্ছে না আর এদিকে এই মেয়েকে বউ বানিয়ে বসে আছে। কি আছে এই মেয়ের মধ্যে যা আমার মধ্যে নেই, আমি তো এই মেয়ের চেয়ে যথেষ্ট সুন্দরী। (কথাগুলো খুব আস্তে আস্তে বলছে, আমি শোনেও না শোনার ভান করে ওকে জিজ্ঞেস করলাম…)
আমি: কিছু বলছেন..?
সিস্টার: না।
কাব্য: শুভ্রা একটা কথা মনে রেখো শুধু সুন্দরী হলেই হয় না ভালোবাসা পেতে হলে আরো অনেক যোগ্যতা থাকতে হয়। আর কি যেন বলছিলে তিলোর মধ্যে কি এমন আছে যা তোমার মধ্যে নেই..? উত্তরটা আমিই দিচ্ছি, তোমার মধ্যে অনেক বেশি অহংকার আছে যা তিলোর মধ্যে নেই। আর অহংকারীদের আমি জাস্ট ঘৃণা করি। (কাব্য আবার চলে আসলো কেন, ও তো দেখছি খুব রেগে যাচ্ছে)
সিস্টার: এই মেয়ের সামনে আমাকে অপমান করছেন।
কাব্য: অপমান কোথায় করলাম তুমি ওকে প্রশ্ন করেছ উত্তরটা আমি দিলাম।
আমি: ডাক্তারবাবু ছাড়ুন না অজতা কথা বাড়াবেন না প্লিজ।
সিস্টার: এই অপমানের শাস্তি আপনি পাবেন।
মেয়েটা রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো। সামান্য বিষয় নিয়ে এতো রেগে যাওয়ার কি আছে, হ্যাঁ ও হয়তো কাব্য’কে ভালোবাসে তাই বলে কাব্য’কেও কি ওকে ভালোবাসতে হবে নাকি। মেয়েটি যদি কাব্য’কে পছন্দ করে তাহলে কাব্য’রও তো মেয়েটিকে পছন্দ হতে হবে তারপর নাহয় একটা সম্পর্ক তৈরি হবে। মেয়েটি তো দেখছি জোর করে কাব্য’কে পেতে চাইছে, জোর করে তো কখনো ভালোবাসা পাওয়া যায় না।
কাব্য: তমা চলো।
আমি: প্লিজ শান্ত হন এতো রেগে গেলে হয় নাকি..?
কাব্য: কি করবো গতকাল রাতে আসছি আর এই মেয়েটা পিছনে লেগে আছে, ভালো মেয়ে হলে কথা বলে বুঝানো যায় কিন্তু শুভ্রা তো খুব জেদি আর অহংকারী মেয়ে।
আমি: মেয়েটি আপনাকে ভালোবাসে তাই এমন করছে।
কাব্য: এই শোনো আমার শুধু তোমার ভালোবাসা চাই অন্য কারো ভালোবাসা লাগবে না।
আমি: সবসময় এতো রেগে যান কেন।
কাব্য: এই রুমে কথা বললে তিশার সমস্যা হবে চলো তুমি।

সোফায় বসে আছি আর কাব্য আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে ল্যাপটপ টিপছে। কাব্য’র চুলে একমনে হাত বুলিয়ে যাচ্ছি, কাব্য দেখতে ফর্সা স্মার্ট সবকিছু লক্ষ করলেও কাব্য’র চুলগুলো যে এতো সুন্দর আগে লক্ষ করিনি। ইসসস কাব্য সবদিকে সুন্দর আর আমি… মানায় নাকি আমাকে ওর সাথে।
কাব্য: যেভাবে চুলে হাত বুলাচ্ছ কখন জানি ঘুমিয়ে পড়ি (কাব্য’র কথায় লজ্জা পেয়ে হাত সরিয়ে নিলাম)
আমি: আচ্ছা আপনাকে তো আদনান ভাইয়া ডিউটির জন্য রেখে গেছে আপনি ডিউটি রেখে এখানে বসে আছেন কেন।
কাব্য: পাশে বউ থাকলে ডিউটিতে মন বসে নাকি (আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে বললো, কি দুষ্টুরে বাবা)
কাব্য: অনেক ডক্টর আছে প্রয়োজন হলে আমাকে ডেকে নিবে তুমি এসব নিয়ে ভেবো না। তুমি এখন বলো আমরা কত তারিখ বিয়ে করছি।
আমি: মানে।
কাব্য: ওমা বিয়ে করতে হবে না, নাকি এমনি আমার বউ হয়ে যাবে।
আমি: দ্যাত আপনি খুব দুষ্টু।
কাব্য: বিয়েটা হয়ে যাক আপনি আপনি ডাকা ছাড়াবো।
আমি: মামি যদি রাজি না হন।
কাব্য: আমি রাজি করাবো তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না তুমি শুধু ভাবো আমাদের বাচ্চা কয়টা হবে (ওর মুখে দেখছি কিছুই আটকায় না, এসব বলে আবার দিব্বি হাসছে)
কাব্য: লজ্জা পেলে তোমাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে।
আমি: আপনাকে তো আমি… (ওর চুলে জোরে জোরে কয়েকটা টান দিলাম)
কাব্য: উফফ লাগছে তো।
আমি: আর এসব বলবেন, বললে আরো দিবো।
কাব্য: কেন তুমি মা হতে চাও না (কাব্য’র এমন প্রশ্ন শুনে লজ্জা পেলাম সাথে কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে, মা হতে কে না চায়। প্রত্যেকটা মেয়েই তো মা হতে চায়)
কাব্য: আমরা কিন্তু এই সপ্তাহেই বিয়ে করছি। ফারাবী আর ভাবীকে ফোন করে সব বলে দিয়েছি আর অয়ন তো রীতিমতো সব আয়োজন করা শুরু করে দিয়েছে।
আমি: আপনার পরিবারে আর কে কে আছে…?
কাব্য: আমরা তিনভাই এক বোন সাথে ভাবী, বোন লন্ডনে পড়াশোনা করছে বিয়েতে আসতে পারবে না।
আমি: আর আপনার বাবা মা (কাব্য কেমন যেন চুপ হয়ে গেলো তাহলে কি ওর আব্বু আম্মু বেঁচে নেই)
কাব্য: আমিই তোমার সব তাই আর কখনো বাবা মা শব্দটা যেন তোমার মুখে না শুনি।
কাব্য ল্যাপটপ রেখে নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছে। কাব্য কাঁদছে সেটা আমি বুঝতে পারছি কিন্তু আব্বু আম্মুর কথা জিজ্ঞেস করাতে কাঁদছে কেন এইটা ভেবে পাচ্ছি না।
যদি কাব্য’র আব্বু আম্মু মারা গিয়ে থাকেন তাহলে তো ওর এতো রেগে যাওয়ার কথা না তাহলে কি ওর আব্বু আম্মু, রেগে যাওয়া এসবের পিছনে কোনো রহস্য আছে…? কিন্তু কি রহস্য…?
কাব্য’র দিকে তাকালাম আমার কোলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছে। ওর চোখের কোণে এখনো পানি জমে আছে, ওর ঘুমন্ত মুখটা কি মায়াবী লাগছে। কাব্য’র চোখের পানি আলতো করে মুছে দিলাম। “জানিনা আব্বু আম্মুর কথা জিজ্ঞেস করাতে আপনি এভাবে রেগে গেলেন কেন আর কাঁদলেনই বা কেন, যদি এসবের পিছনে সত্যি কোনো রহস্য থেকে থাকে তাহলে তা আমি খুঁজে বের করবো আর আপনাকে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করবো”

সকালে ঘুম ভাঙতেই তাকিয়ে দেখি কাব্য এখনো ঘুমিয়ে আছে। রাতে কখন যে সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। তিশার কাছে যাওয়া দরকার, কাব্য’র মাথা আস্তে সরাতে চাইলাম কিন্তু ও আমার একটা হাত চেপে ধরে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। ওর চুল গুলো আবার আমাকে টানছে ইচ্ছে হচ্ছে চুলে একটা চুমু দেই কিন্তু… কাব্য তো ঘুমে দিলে তো আর দেখবে না। আস্তে করে কাব্য’র চুলে একটা চুমু দিলাম।
কাব্য: আমি কিন্তু ঘুমে না সব বুঝে গেছি (চোখ বন্ধ করে বলছে আর হাসছে। ইসস এইটা কি হলো)
কাব্য: লজ্জা পেলে তো তোমাকে সুন্দর লাগে তাহলে দুহাত দিয়ে মুখটা ডেকে রেখেছ কেন…? (কাব্য উঠে আমার পাশে বসলো তারপর আমার হাত দুটু মুখ থেকে সরিয়ে ওর কোমরে নিয়ে রাখলো)
কাব্য: এতো লজ্জা পাচ্ছ কেন আর তো মাত্র কটা দিন তারপর আমরা স্বামী স্ত্রী হয়ে যাবো আর বিয়ের পর প্রতিটা সকালে তোমার ভেজা চুলের পানি+মিষ্টি একটা চুমুতে আমার ঘুম ভাঙবে (কাব্য আমার একদম কাছে এসে আমার কপালে ওর কপাল ঠেকিয়ে কথা গুলো বললো আর এখন মিটমিটিয়ে হাসছে)
কাব্য: কি ম্যাডাম তোমার ভেজা চুলের পানিতে প্রতিদিন আমার ঘুম ভাঙাবে না…?
আমি: দ্যাত আপনার মুখে কিচ্ছু আটকায় না (লজ্জা পেয়ে কাব্য’র বুকে মুখ লুকালাম। কাব্য এক হাত দিয়ে আমার কোমর জরিয়ে ধরে আছে আরেক হাত দিয়ে আমার ঘাড়ের চুল সরাচ্ছে। চুলগুলো এক পাশে রেখে কাব্য আস্তে আস্তে আমার ঘাড়ে মায়া দেওয়ার জন্য এগুচ্ছে, ওর গরম নিঃশ্বাস আমার ঘাড়ে পড়ছে)
“স্যার আপনার পেসে…” (হঠাৎ কারো কন্ঠ শুনে কাব্য আমাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে গিয়ে বসলো, তাকিয়ে দেখলাম শুভ্রা মেয়েটা। বাহ্ কাব্য’র মুখটা এখন দেখার মতো হয়েছে)
কাব্য: শুভ্রা কারো রুমে আসলে যে নক করে আসতে হয় এই মিনিমাম সেন্স টুকু কি তোমার নেই…?
শুভ্রা: আমি তো আর জানতাম না আপনি যে আপনার চেম্বারটাকে নিজের বেডরুম ভাবেন।
কাব্য: জাস্ট সেটআপ, আমি আমার চেম্বার বেডরুম বানাবো নাকি ড্রয়িংরুম বানাবো সে কৈফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে…? বেড়িয়ে যাও এক্ষণি।
শুভ্রা: আপনি কিন্তু আবার আমাকে অপমান করছেন।
কাব্য: তো কি তোমাকে কোলে বসিয়ে আদর করবো (মেয়েটা রাগে কটমট করে আমার দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলো। কাব্য রাগে বেলুনের মতো ফুলছে দেখে খুব হাসি পাচ্ছে)
কাব্য: খুব মজা হচ্ছে তাই না।
আমি: নাতো।
কাব্য: আবার হাসছ।
আমি: ওকে আর হাসবো না।
কাব্য: উহু হাসো তোমার হাসি দেখলে আমার সব রাগ চলে যাবে।
আমি: তিশার কাছে যাচ্ছি।
কাব্য পিছন পিছন ডাকছে তাও তিশার কাছে চলে আসলাম।

তিশা এখনো ঘুমাচ্ছে, এই আদনান ওকে কতো ঘন্টার জন্য ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে আল্লাহ্‌ জানেন। তিশার পাশে বসে ওর মাথায় হাত দিতেই ও জেগে গেলো।
আমি: যাক বাবা অবশেষে তোর ঘুম ভাঙলো।
তিশা: বোন আমি সুস্থ হয়ে গেছি আমাকে এইখান থেকে নিয়ে যা।
আমি: হ্যাঁ একটু পরই চলে যাবো।

তিশাকে রিলিজ করে দিলো, ওকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। কাব্য আমাদের পৌঁছে দিয়ে গেলো। তিশাকে রুমে দিয়েই আমি বাসায় চলে আসলাম। জানিনা আজ কপালে কি আছে।

বাসায় ঢুকতেই মামি সামনে এসে দাঁড়ালো।
মামি: হয়েছে শান্তি ওরা বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে।
আমি: আমি তো এই বিয়েতে রাজি ছিলাম না ভেঙে গিয়েছে তো ভালো হয়েছে।
মামি: তোকে কি আমি সারাজীবন এভাবে…
আমি: ভালো লাগছে না পরে কথা বলবো।
রুমে চলে আসলাম, শরীর খুব দুর্বল লাগছে মনে হয় জ্বর হবে। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ক্লান্তিতে চোখ দুটু বুজে আসলো।

হঠাৎ ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো, কাব্য ফোন দিয়েছে। রিসিভ করতেই চেঁচিয়ে উঠলো।
কাব্য: সেই বিকেলবেলা থেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি সন্ধ্যা হয়ে গেছে আর এখন তুমি ফোন রিসিভ করলে।
আমি: আসলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
কাব্য: কেন শরীর খারাপ (জ্বর তো ভালোই এসেছে কিন্তু ওকে তো বলা যাবে না টেনশন করবে)
আমি: নাতো।
কাব্য: ওকে রাতে ফোন দিবো রাখছি এখন।
আমি: হুম।
ফোন রেখে তিশার কাছে চলে আসলাম, বসে বসে মোবাইল টিপছে।
আমি: এই তুই না অসুস্থ তাহলে শুয়ে না থেকে মোবাইল টিপছিস কেন…?
তিশা: আসছে ডাক্তারের বউ ডাক্তারনি।
আমি: কি বললি..?
তিশা: মিথ্যে কিছু বলেছি নাকি..?
আমি: জানিনারে কাব্য তো বললো মামির সাথে কথা বলতে আসবে।
তিশা: হুম সব ভালো ভাবে হবে দেখিস।
তিশার সাথে আরো কিছু সময় গল্প করে বাসায় চলে আসলাম।

দরজায় আসতেই ভিতরে মামির হাসির শব্দ পেলাম সাথে দুজন পুরুষ মানুষের কন্ঠ। রাত প্রায় নয়টা বাজে এতো রাতে আমাদের বাসায় কে আসবে। ভিতরে না গিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছি।
মামি: এই মেয়েকে নিয়ে আর পারছি না। ভেবেছিলাম কোথাও একটা বিয়ে দিয়ে আপদ বিদায় করবো কিন্তু বিয়েটা ভেঙে গেলো।
–এখন একদম ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাহাহা।
মামি: হ্যাঁ অনেক সহ্য করেছি আর না এই মেয়ের জায়গা পতিতালয়েই ভালো মানাবে (পতিতালয় শব্দটা শুনে যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো)
–আমরা কি আজকেই ওকে নিয়ে যেতে পারবো..?
মামি: হ্যাঁ তবে সাবধানে।
–ঠিক আছে।
আর শুনতে পারলাম না ওদের কথা। কোনোভাবে হাটতে হাটতে রাস্তায় চলে আসলাম। তিশার কাছে গেলেও ওরা আমাকে ধরে নিয়ে যাবে কারণ মামি আমাকে ওদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। কাব্য’র বাসা তো চিনি না ফোনটা বাসায় ফেলে এসেছি। আস্তে আস্তে হাটতে হাটতে অনেক দূর চলে আসলাম। এমনি গায়ে জ্বর তার উপর এভাবে হাটছি এখন আর পারছি না। রাস্তার পাশের একটা ল্যাম্পপোস্ট এর নিচে বসে পড়লাম। মামি আমার সাথে শেষ পর্যন্ত এমন জঘন্য কাজ করতে পারলো ভাবতেই মাথা ঘুরছে, চোখ দুটু অন্ধকার হয়ে আসছে, আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে ওখানেই পড়ে গেলাম।

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ৫

0

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি সবার সামনে। মাঝে মাঝে আড়চোখে সবার দিকে তাকাচ্ছি, তানভীর আর মামির হাসি দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে ইচ্ছে হচ্ছে পালিয়ে যাই কিন্তু মামি তো দিব্বি… হঠাৎ তিশাদের বাসা থেকে চেঁচামেচির শব্দ শুনা গেলো। আন্টি আঙ্কেল চেঁচামেচি করে কি যেন বলছেন কিন্তু তিশার কোনো শব্দ তো শুনা যাচ্ছে না।
মামি: হঠাৎ ওদের বাসায় আবার কি হলো।
আমি: আমি যাচ্ছি।
মামি: এই কোথায় যাচ্ছিস চুপ করে বসে থাক এখানে।
আমি: আরে কি হয়েছে দেখতে হবে তো।
মামি: আমি দেখে এসে বলছি তোকে।
আমি: হুম।
কিযে হলো ভেবে পাচ্ছি না। মামিও আসছে না, যেতেও পারছি না। আমি সবার সামনেই টেনশনে পায়চারী করছি দেখে মেহমানরা সব আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
মামি: তেমন কিছু হয়নি।
আমি: যা হয়েছে সেটাই বলো।
মামি: বলবো কিন্তু তুই যেতে পারবি না।
আমি: ঠিক আছে।
মামি: তিশা বাথরুমে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে।
আমি: কি…?
মামি: এই কোথায় যাচ্ছিস..?
আমি: মামি আমার হাত ছাড়ো।
মামি: একটু পর তোর বিয়ে কোথায় যাচ্ছিস, ওরা তিশাকে নিয়ে হসপিটালে চলে যাবে তোর যেতে হবে না।
আমি: তিশা অসুস্থ আর আমাকে বিয়ের জন্য তুমি আটকে রাখতে পারবে এইটা ভাবলে কিভাবে।
মামি: তমা একটু পর কিন্তু বিয়ে আমি বলছি যাস না।
আমি: তুমি কেন কারো ক্ষমতা নেই আমাকে আটকে রাখার। তানভীর আমাকে ক্ষমা করবেন আমি এই বিয়েতে রাজি না মামি আমাকে দিব্বি দিয়েছিল তাই রাজি হয়েছিলাম।
মামির হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে দিয়ে দৌড়ে তিশার কাছে চলে আসলাম।

তিশার মাথা থেকে প্রচুর রক্ত পড়ছে কপালটা একটু কেটে গেছে।
আমি: আন্টি এসব কিভাবে হলো…?
আন্টি: আমাদের সামনেই পায়চারী করছিল আর তোকে বকাবকি করছিল হঠাৎ করে রুমের দিকে চলে গেলো। একটু পর ওর চিৎকার শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখি বাথরুমে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে আর এই অবস্থা।
আমি: সব আমার জন্য হয়েছে, আমাকে নিয়ে টেনশন করেই ও…
আঙ্কেল: কাঁদছিস কেন আর এখন নিজেকে দোষে কি লাভ হবে, এম্বুলেন্স চলে এসেছে চল হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।
আমি: চলো।

হসপিটালে বসে আছি, তিশাকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে গেছে। খুব ভয় করছে খারাপ কিছু হবে নাতো অনেক রক্ত যে ঝরেছে তিশার মাথা থেকে।
সিস্টার: রক্ত লাগবে।
আমি: আমার আর তিশার রক্তের গ্রুপ এক আমি রক্ত দিবো।
সিস্টার: ঠিক আছে চলুন আমার সাথে।
তাড়াতাড়ি সিস্টারকে ফলো করে হাটতে শুরু করলাম। তিশার কথা ভাবতে ভাবতে হাটছিলাম হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে দেয়ালে গিয়ে পড়লাম।
আমি: ওই চোখে দেখেন না (রাগ দেখিয়ে সামনে তাকাতেই দেখি কাব্য, অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি কাব্যও আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
আমি: সরি (চলে আসতে চাইলাম কাব্য আমার হাত ধরে টান দিয়ে ওর কাছে নিয়ে গেলো, আমার দুগালে আলতো করে ধরে কপালে ফু দিতে শুরু করলো)
আমি: আরে কপালে ফু দিচ্ছেন কেন (বলতে বলতে কপালে হাত দিলাম অনেকটা জায়গা ফুলে গেছে হাত দিতেই ব্যথা করতে শুরু করলো)
কাব্য: এভাবে আনমনে হয়ে কেউ হাটে যদি খারাপ কিছু হয়ে যেতো।
আমি: আপনি এভাবে হাটছিলেন কেন চোখ নেই দিলেন তো আমার কপালটা ফাটিয়ে।
কাব্য: আসলে কিছু কাগজ দেখতে দেখতে হাটছিলাম আর হুট করে তুমি সামনে এসে পড়লে।
আমি: আপনি আমার সামনে এসেছেন আমি না।
সিস্টার: আপনি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন চলুন তাড়াতাড়ি।
কাব্য: তিলো হসপিটালে এসেছ কেন কি হয়েছে..?
আমি: তিশা অসুস্থ।
তাড়াতাড়ি সিস্টারের সাথে চলে আসলাম।

রক্ত দেওয়ার জন্য বেডে শুতেই কাব্য এসে রুমে ঢুকলো।
কাব্য: কাকে রক্ত দিবে..?
আমি: কাকে আবার তিশাকে।
কাব্য: তুমি যা শুকনি রক্ত দিলে তোমাকে আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না হাহাহা।
আমি: তিশার জন্য রক্ত দিতে গিয়ে যদি মরেও যেতে হয় তাও আমি আমার শরীরের সব রক্ত দিয়ে দিবো।
কাব্য: হ্যাঁ মরে যাও তারপর আমিও মরে যাবো, তোমাকে ছাড়া তো আর বেঁচে থাকা সম্ভব না তাই মরে যাওয়াই ভালো।
আমি: (কিছু না বলে ওর দিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলাম। দুদিন সামনে ছিলাম তাই প্রেম দেখিয়েছিল চোখের আড়াল হতেই সব শেষ। আর আজ আবার চোখের সামনে আছি তাই প্রেম দেখাতে শুরু করলো)
কাব্য: সিস্টার আপনি যান আমি রক্ত নিচ্ছি।
সিস্টার: ওকে স্যার। (সিস্টার চলে যেতেই কাব্য এসে আমার হাতে সুচ ফুটিয়ে দিলো)
আমি: উফফ একবার বলে তো সুচ ফুটাবেন আমার ব্যথা লাগে না বুঝি।
কাব্য: সিস্টার ব্যথা দিবে ভেবে আমি আসলাম এতো আস্তে সুচ ফুটালাম তাও ব্যথা ফেলে।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: একটু আগে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসছিলে কেন আমি জানি।
আমি: কেন বলুন তো।
কাব্য: এই তিনদিন তোমার সাথে কোনো যোগাযোগ করিনি তাই অভিমান করেছ।
আমি: অভিমান মানুষ তার উপর করে যাকে সে ভালোবাসে। আমি আপনার উপর অভিমান করতে যাবো কেন।
কাব্য: কারণ তুমি আমাকে ভালোবাস।
আমি: মোটেও না।
কাব্য: ভালোবাস কিনা সেটা তো তোমার চোখই বলে দিচ্ছে। (নিশ্চুপ হয়ে আছি, সত্যি কি আমার চোখ বলে দিচ্ছে যে আমি কাব্য’কে ভালোবাসি। কিন্তু আমি তো কাব্য’কে ভালোবাসি না)
কাব্য: কি এবার ব্যথা পেয়েছ…? (কাব্য’র কথা শুনে হাতের দিকে তাকালাম সূচ খুলে ফেলেছে কিন্তু এখন তো কোনো ব্যথা পাইনি)
সিস্টার: স্যার রক্ত…
কাব্য: কিছু বলছিলে আটকে গেলে কেনো (অন্য একটা সিস্টার এসেছে, কিছু বলতে গিয়ে আমার দিকে চোখ পড়াতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
সিস্টার: এতো সিস্টার থাকতে আপনি রক্ত…
কাব্য: সিস্টাররা রক্ত নিলে ওকে ব্যথা দিতো বুঝেছ। এতো কথা বলো না রক্ত নিয়ে যাও আর ওর পেসেন্টকে কোন ডক্টর দেখছে…?
সিস্টার: আদনান স্যার।
কাব্য: ওকে গিয়ে বলো পেসেন্ট আমার বউ এর ফ্রেন্ড আ…
সিস্টার: মানে..?
কাব্য: যাও তো এতো প্রশ্ন ভালো লাগে না। (সিস্টার আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে চলে গেলো)
আমি: কি ব্যাপার ডাক্তারবাবু মনে হচ্ছে সামথিং সামথিং (আমি হাসছি দেখে কাব্য এসে আমার মাথায় দুহাত দিয়ে ধরে ঝাঁকি দিলো)
আমি: উফফ লাগছে।
কাব্য: লাগার জন্যই তো দিয়েছি, আচ্ছা মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে বুঝেও তোমার রাগ হচ্ছে না…?
আমি: একটা মানুষকে অন্য কারো পছন্দ হতেই পারে এতে রাগ করার কি আছে।
কাব্য: তারমানে তুমি সত্যি আমাকে ভালোবাস না।
আমি: এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না।
কাব্য: কোথায় যাচ্ছ..?
আমি: তিশার কাছে।

আঙ্কেল আর আন্টির কাছে এসে বসলাম, শরীর খুব দূর্বল লাগছে। জানিনা ওদিকে তিশার কি অবস্থা। হঠাৎ দেখলাম কাব্য তিশার কেবিনে ঢুকছে। আচ্ছা কাব্য তো কক্সবাজার ছিল ওখানের হসপিটালে ছিল তাহলে ও এই হসপিটালে কি করছে…?
কাব্য: তিলো তিশার অবস্থা এখন ভালো চিন্তা করার কোনো কারণ নেই চাইলে দেখা করতে পারো।
কাব্য’র কথা শুনে আঙ্কেল আন্টিকে নিয়ে তিশার কাছে আসলাম।

আমাকে দেখে তিশা মুখ ফিরিয়ে নিলো, নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।
আন্টি: কেমন আছিস মা
তিশা: ভালো
আঙ্কেল: মেয়েটার উপর রেগে থাকিস না এমনি কান্নাকাটি করে যা অবস্থা হয়েছে ওর তার উপর আবার তোকে রক্ত দিয়েছে।
তিশা: কি..? (যাক বাবা তিশার রাগটা বোধহয় কমে গেছে)
আমি: আরে রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না…
তিশা: তাই বলে তুই দিবি এখন যদি তুই অসুস্থ হয়ে পড়িস।
কাব্য: তিলোর ডাক্তারবাবু আছে তো ওকে অসুস্থ হতে দিবে না (এই কাব্যটা যে কি সবার সামনে চলে এসেছে)
তিশা: তোমার খবর আছে তোমার কোনো খুঁজ খবর নেই কেন ফোন বন্ধ করে রেখেছ কেন…?
কাব্য: কি আমার ফোন বন্ধ (তাড়াতাড়ি পকেটে ফোন খুঁজলো কিন্তু পেলো না)
কাব্য: ফোনটা বোধহয় আমার চেম্বারে আছে আর চার্জ নেই মনে হয়।
আঙ্কেল: তিশা এই ডাক্তারকে তুই চিনিস (এইরে সেরেছে তিশা তো এখন সব বলে দিবে)
তিশা: হ্যাঁ আব্বু ওইযে রাজকুমার।
আঙ্কেল: হাহাহা বুঝেছি বুঝেছি।
আমি: ঘোড়ার ডিম বুঝেছ।
তিশা: কাব্য আমি কি বাসায় চলে যেতে পারবো…?
“না অন্তত আজকের রাতটা আপনাকে হসপিটালে রেস্টে থাকতে হবে” (তিশাকে যে ডক্টর দেখছিল তিনি এসে বললেন)
কাব্য: তিলো ও আদনান আমার বন্ধু আর আদনান…
আদনান: বলতে হবে না বুঝে গেছি, উনি তিলোত্তমা আই মিন তোর তিলো।
কাব্য: হুম (বাহ্ ও দেখছি সবাইকে বলে দিয়েছে)
কাব্য: তিলো অনেক রাত হয়ে গেছে তুমি আঙ্কেল আন্টিকে নিয়ে বাসায় চলে যাও সকালে এসো এখানে তো আদনান আছে।
আমি: না আমি যাবো না।
আদনান: কাব্য আমাকে আজ চলে যেতে হবে প্লিজ রাতের ডিউটিটা তুই কর প্লিজ।
কাব্য: ঠিক আছে।
আমি: আঙ্কেল তুমি আন্টিকে নিয়ে বাসায় চলে যাও আমি তিশার কাছে আছি।
আঙ্কেল: ঠিক আছে।

আঙ্কেল আন্টি চলে গেলেন, আমি এসে তিশার পাশে বসলাম।
আমি: তিশা এসব কি করে হলো..?
তিশা: কপালটা কেটেছিলাম ইচ্ছে করে ভেবেছিলাম বাথরুমে গিয়ে চিৎকার দিবো যেন তুই শুনতে পেয়ে চলে আসিস কিন্তু পা পিছলে পড়ে গিয়ে সত্যি এতো ব্যথা পাবো ভাবিনি।
আমি: তুই কি পাগল।
তিশা: কি করবো তোর মামিকে আমার বিশ্বাস হয়না।
আদনান: এভাবে কথা বললে আপনার ক্ষতি হতে পারে আপনাকে বরং ঘুমের ইঞ্জেকশন দিচ্ছি রেস্ট নিন আপনি। (আদনান তিশাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে কাব্য’র সাথে একটু কথা বলে চলে গেলো)
কাব্য: তিশা ঘুমিয়ে আছে এখন আর ওর কাছে থাকতে হবে না তুমি আমার সাথে চলো।
আমি: আরে কি হলো..?
কাব্য আমার হাত ধরে টানতে টানতে ওর রুমে নিয়ে আসলো।

রুমে এনেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে সোফায় ফেলে দিলো তারপর দরজা বন্ধ করে দিলো। বুঝতে পারছি না ও এতো রেগে আছে কেন।
কাব্য: আগে তিশার জন্য টেনশনে ছিলে তাই কিছু জিজ্ঞেস করিনি এখন তো তিশা ঠিক আছে তা…
আমি: আমার হাত ছাড়ুন ব্যথা পাচ্ছি।
কাব্য: হাতের ব্যথার চেয়ে বুকের ব্যথা অনেক বেশি যন্ত্রণার বুঝেছ।
আমি: মানে।
কাব্য: তোমার এমন সাঝ দেখেই আমি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম এখন তো তিশার কথায় পুরোপুরি বুঝে গেছি।
আমি: কি বুঝেছেন…?
কাব্য: আজকে তোমাকে দেখতে আসছিল আ…
আমি: হ্যাঁ দেখতে এসেছিল শুধু তাই নয় আজকে আমার বিয়ে ছিল (ঠাস করে আমার গালে থাপ্পড় মেরে দিলো)
কাব্য: আমি তোমাকে ভালোবাসি এইটা জেনেও তুমি রাজি হয়েছিলে কেন…?
আমি: আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই। (কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রেখে নিজেকে শান্ত করলো)
কাব্য: তিলো আমি মানছি এই তিন দিন তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি তাই বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি না এইটা ধরে নিবে আর অন্য জায়গায় বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যাবে…?
আমি: (নিশ্চুপ হয়ে আছি আর একটা কথাও বলবো না, পেয়েছে কি আমাকে এতো জোড়ে থাপ্পড় মেরে দিলো)
কাব্য: সেদিন সকালে তোমাকে ফোনে আমি এতোগুলো কথা বলেছি কিন্তু তুমি একটা কথাও বলোনি তাই ভেবে নিয়েছিলাম ট্রান্সফার হয়ে এখানে চলে আসবো। ট্রান্সফার হয়ে আসবো বললেই তো আসা যায় না, এখানে আদনান ওখানে আমি দুজন অনেক দৌড়াদৌড়ি করে তিন দিনের মধ্যে ট্রান্সফার হয়ে গতকাত রাতে এখানে এসেছি। আমি এতোটাই বিজি ছিলাম যে ফোনে হাত দেয়ার সময় পাইনি তাই তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। সবকিছু তো তোমার জন্য করেছি, তোমার কাছে আসার জন্য করেছি কিন্তু তুমি বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলে।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: কি হলো এখন কথা না বলে শাস্তি দিবে (কি কথা বলবো ভেবে পাচ্ছি না, আমি কি ভেবেছিলাম আর হলো কি। আমি তো ভেবেছিলাম চোখের আড়াল হতেই কাব্য আমাকে ভুলে গেছে কিন্তু ও আমার কাছে আসার জন্য এতো দ্রুত ট্রান্সফার হয়ে এখানে চলে আসলো)
কাব্য: তিলো আমি সত্যি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি বিয়ে করতে চাই তোমাকে। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না। (আমার দুগালে আলতো করে ধরে কথাগুলো আস্তে আস্তে বললো। কিন্তু আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রেখেছি দেখে আবার রেগে গেলো)
কাব্য: বুঝেছি তুমি এভাবে মুখ খুলবে না (ওর কথা শুনে সামনে তাকালাম ও কি যেন খুঁজছে)
কাব্য: এবার বলো ভালোবাস কিনা নাহলে কিন্তু (ওর কান্ড দেখে তো আমার চোখ কপালে উঠে গেছে। হাতের শিরার মধ্যে চাকু ধরে রেখেছে)
আমি: একজন ডক্টর হয়ে সুইসাইড করার কথা ভাবছেন।
কাব্য: আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাস কিন্তু মুখে স্বীকার করতে চাইছ না কিন্তু আজ তোমাকে বলতে হবে নাহলে কিন্তু…(এখন কি করবো আমি ও যে পাগল যদি সত্যি সত্যি… না না ও সুইসাইড করলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না)
কাব্য: বলো নাহলে…
আমি: হ্যাঁ বাসি।
কাব্য: হয়নি সুন্দর করে বলো।
আমি: ভালোবাসি।
কাব্য: এখনো হয়নি কিছু একটা মিসিং (উফফ এতো জ্বালাচ্ছে কেন, কি মিসিং হতে পারে ভেবে পাচ্ছি না। আমি ভাবছি দেখে ও মিটিমিটি হাসছে ইচ্ছে হচ্ছে… হুম বুঝেছি কি মিসিং)
আমি: ভালোবাসি ডাক্তারবাবু।
কাব্য: এইতো হয়ে গেছে। (চাকু রেখে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো)
কাব্য: আমি কালই তোমার মামির কাছে যাবো বিয়ের কথা বলতে।
আমি: হুম। (যে গালে থাপ্পড় দিয়েছিল সে গালে আলতো করে একটা চুমু দিলো)
কাব্য: জানি অনেক ব্যথা পেয়েছ আসলে অনেক কষ্ট হচ্ছিল তাই… সরি সোনা।
আমি: হুম।
কাব্য: খোঁপা করা চুল আমার একদম ভালো লাগে না।
কাব্য আমার চুলগুলো ছেড়ে দিলো, আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে খোলা চুলে মুখ গুঁজে দিলো। কাব্য আমার খোলা চুলে নাক ঘসছে আর আমি ভাবছি সত্যি কি আমি কাব্য’কে ভালোবাসি…? কখন যে ওকে নিজের অজান্তে ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতেই পারলাম না আমি।

চলবে?