Wednesday, June 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2446



রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ৪

0

 

রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ৪

লেখিকা: সুলতানা তমা


তিশা: তমা কোথায় গেলি
আমি: আসছি।
জানিনা কতোক্ষণ ধরে দুজন ফোনের দুপ্রান্তে নিশ্চুপ হয়ে একজন আরেক জনের নিঃশ্বাস শুনছিলাম। তিশা ডাক দেওয়াতে তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দিয়ে রুমের দিকে এগুলাম।

তিশা বিছানার উপর বসে ফোন টিপছে।
আমি: ডাকছিলি কেন
তিশা: তোর ফোন কোথায়
আমি: আমার হাতেই তো
তিশা: কাব্য’র সাথে কথা হয়েছে
আমি: হুম
তিশা: বাব্বাহ্ আমার অজান্তে এতো কিছু
আমি: তিশা তেলে আর জলে মিশ খায় না কখনো
তিশা: মানে
আমি: মানেটা খুব সহজ কাব্য’র সাথে আমাকে মানায় না।
তিশা: কেন তোর কোনদিকে কমতি আছে। আর তুই না সবসময় বলিস তোর আব্বু আম্মুর পর আমিই তোকে বোনের মতো সঠিক শিক্ষা দিয়েছি, নিজেকে অযোগ্য মনে করাটা তো আমার শিক্ষায় পরে না।
আমি: তিশা আমি নিজেকে অযোগ্য মনে করছি না বুঝার চেষ্টা কর…
তিশা: অযোগ্য মনে করছিস নাতো কি, কাব্য’র সাথে তোকে মানাবে না কেন।
আমি: তিশা বুঝার চেষ্টা কর
তিশা: তুই ভালো করে বুঝ আর হ্যাঁ কখনো নিজেকে অযোগ্য মনে করবি না। মনে রাখিস প্রত্যেকটা মানুষের ভিতরেই কিছুনা কিছু গুণ থাকে।
আমি: দ্যাত
তিশা: চলে যাচ্ছিস কেন।
তিশার কথার উত্তর না দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। খুব রাগ হচ্ছে, কাব্য নাহয় না বুঝে পাগলামি করছে কিন্তু তিশা কেন বুঝতে চাইছে না কাব্য আর আমাকে যে মানায় না। কাব্য দেখতে যেমন স্মার্ট তেমনি আবার ডাক্তার আর আমি, কি আছে আমার…? এসএসসি দেওয়ার পর আব্বু আম্মু মারা গেলেন পড়ালেখা বাদ হয়ে গেলো, কতো স্বপ্ন দেখতাম এই দুবছরে সব স্বপ্ন একে একে কবর দিয়ে দিয়েছি। তাছাড়া আমি দেখতে কালো কাব্য’র সাথে কোনো ভাবেই মানাবে না।

নিশ্চুপ হয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। প্রতিটা মুহূর্তে মনে হচ্ছে কাব্য ভুল করছে। পরক্ষণেই মনে হলো কাব্য নাহয় ভুল করছে কিন্তু আমি কি করছি, আমিও তো ভুল করছি। কাব্য’র কথা ভাবছি, ওর হাসিগুলো মনে করে নিজের অজান্তেই হাসছি কেন করছি এমন…? কাব্য মোহে আটকে আছে দুদিন গেলে মোহ কেটে যাবে তারপর আমি…? তখন তো আমায় কাঁদতে হবে। ফোন বেজে উঠলো, আবারো অচেনা নাম্বার। কিসের টানে যেন একটু তাড়াতাড়িই রিসিভ করলাম। কিন্তু এখন আর চেনা কন্ঠ ভেসে আসেনি একটা অপরিচিত কন্ঠ ভেসে আসলো।
–তিলোত্তমা বলছেন
আমি: হ্যাঁ আপনি কে
–তানভীর
আমি: কে তানভ…
তানভীর: আসলে আমার সাথে আপনার বিয়ের কথা চলছে (বাহ্ মামি তো দেখছি এক পা দু পা নয় একেবারে দশ পা এগিয়ে আছে, ছেলেকে আমার নাম্বারও দিয়ে দিলো)
তানভীর: কিছু বলছেন না যে
আমি: এমনি
তানভীর: আপনি দেখতে যেমন মিষ্টি তেমনি আপনার কন্ঠ…
আমি: আমাকে দেখলেন কোথায়
তানভীর: আপনার পিক দেখেছি আর নিজের অজান্তেই প্রথম দেখায় আপনার প্রেমে পড়ে গেছি (উফফ আবার সেই প্রথম দেখা। প্রথম দেখায় ভালোবাসার চৌদ্দ গোষ্ঠী কিলাই)
তানভীর: আপনার মনে হয় আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না
আমি: আসলে তা নয় (উফফ কিভাবে বুঝাই সত্যি ভালো লাগছে না)
তানভীর: আগে তো পিক দেখেছি তিনদিন পর দেখা হবে সামনাসামনি, হয়তো আবারো আপনার প্রেমে পরবো। রাখছি এখন।
আমি: হুম ঠিক আছে।
মামি আবারো ওদের আসার জন্য তারিখ দিয়ে দিলো, অবশ্য এখন মামির দোষ নেই আমি নিজেই তো বলছিলাম দুদিন পর যেন আসতে বলে।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার আকাশ দেখছি। নিজেকে বড্ড একা লাগছে। আচ্ছা আব্বু আম্মুর কাছে থাকলে কি আমার নিজেকে এমন একা মনে হতো…?
দূর থেকে আযানের শব্দ ভেসে আসছে শুনে নামাজ পড়তে রুমে চলে আসলাম।
নামাজ পড়ে জায়নামাজেই বসে আছি মন যেন খুব করে আল্লাহ্‌ কে একটা কথাই বলতে চাইছে “আমার জন্য যা ভালো তাই করো, আমাকে সঠিক পথ দেখাও আল্লাহ্‌)
মামি: তমা নামাজ শেষ হয়েছে কথা ছিল
আমি: হ্যাঁ এসো (মামি এসে আমার পাশে বসলেন, আজ মামিকে অন্যরকম লাগছে)
মামি: ওদেরকে আসতে বলেছি তুই আবার রাগ করবি নাতো
আমি: (নিশ্চুপ)
মামি: মানছি তোর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি কিন্তু তুই তো আমার মেয়ের মতো তাই আমি চাই তোর ভালো জায়গায় বিয়ে হউক।
আমি: তোমার যা ভালো মনে হয় তাই করো (কি আর বলার আছে আমার, বিয়ে করবো না বললেই তো মামি আবার শুরু করবে)

মামির দেওয়া লাল পাড়ের সাদা শাড়িটা পরনে, কানে ছোট ছোট লাল রঙের দুইটা দোল, চোখে গাড়ো করে কাজল টানা, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, চুলগুলো খোঁপা করা। আয়নার সামনে বসে নিজেকে দেখছি, আজ মামির পছন্দে সেজেছি কারণ আজ আমাকে দেখতে আসবে। মধ্যে যে কিভাবে তিনটা দিন কেটে গেলো বুঝতেই পারিনি। সেদিন সকালে ফোন কেটে দেওয়ার পর কাব্য আর আমাকে ফোন করেনি। অবশ্য না করারই তো কথা, মোহ কেটে গেছে হয়তো।
মামি: তমা তোর হলো
আমি: হ্যাঁ মামি এইতো শেষ।

জানালার কাছে দাঁড়িয়ে মামির জন্য অপেক্ষা করছি, হয়তো এখনি এসে ডাক দিবে মেহমানদের সামনে যাওয়ার জন্য। তিশা রেগে আছে কারণ আমি মামির কথাতে রাজি হয়েছি। তিশা, আন্টি বা আঙ্কেল কেউ আসেনি আজ আমার কাছে। সবাই আমার উপর রেগে আছে কিন্তু কেউ এইটা বুঝছে না যে আমি মামির কথা না শুনলে আবার অশান্তি হবে, মামি আমার সাথে খারাপ আচরণ করবে। তাছাড়া মামি আর তিশাদের ঘাড়ে চেপে আর কতোদিন থাকবো বিয়ে হয়ে গেলেই ভালো।
মামি: তমা
আমি: হ্যাঁ মামি
মামি: বাহ্ লাল পাড়ের সাদা শাড়িতে তো তোকে খুব সুন্দর লাগছে
আমি: শ্যামলা মেয়েদের কারো চোখে সুন্দর লাগে না গো মামি যেটুকু লাগে সেটা হলো ক্ষণিকের জন্য মোহ
মামি: উহু দেখিস ওরা তোকে দেখে খুব পছন্দ করবে
আমি: (খুব কষ্টে মুখে একটু হাসি আনার চেষ্টা করলাম)
মামি: কিছুক্ষণ পরই ওরা তোকে দেখতে চাইবে আমি এসে নিয়ে যাবো লক্ষী মেয়ের মতো থাকবি বুঝেছিস
আমি: হু।

মামি চলে গেলেন আবারো জানালার বাইরে চোখ রাখলাম। আকাশ দেখছি আর দুবছর আগের কথা ভাবছি। আম্মু আব্বু মারা যাওয়ার পর মামা আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিলেন আর সেদিন থেকে শুরু হয়েছিল মামির অত্যাচার। প্রথম প্রথম এসব শুনে শুধু কাঁদতাম একটা সময় নিজেকে খুব একা মনে হয়। সিদ্ধান্ত নেই এসব যন্ত্রণার চেয়ে আত্মহত্যা করা অনেক ভালো। হ্যাঁ সেদিন মাথার উপরে থাকা পাখাটায় ওড়নাও বেধে ফেলেছিলাম কিন্তু আত্মহত্যা করা হয়নি। বার বার একটা কথাই মাথায় আসছিল “আত্মহত্যা মহা পাপ” কষ্ট তো আর চিরস্থায়ী থাকবে না কষ্টের পরই তো সুখ আসে। ফোন বেজে উঠলো, হাতে নিয়ে দেখি তিশা।
আমি: হুম বল
তিশা: তুই কি সত্যি বিয়েটা করছিস
আমি: বিয়ে করছি মানে আজ তো শুধু দেখতে আসছে
তিশা: যদি বিয়ে ঠিক হয়ে যায়
আমি: তুই কি রাজি না
তিশা: না
আমি: ওকে দেখে যাক আমি মামিকে বলে দিবো ছেলে পছন্দ হয়নি
তিশা: ছেলে দেখতে কাব্য’র মতোই, পছন্দ হয়নি বললেই তোর মামি শুনবে নাকি।
আমি: সেটা আমার উপর ছেড়ে দে, তুই যেখানে রাজি না সেখানে আমি বিয়ে করবো না।
তিশা: কাব্য এসব শুনলে খুব কষ্ট পাবেরে
আমি: কাব্য কাব্য করিস না তো
তিশা: কাব্য’র ফোন অফ সকাল থেকে তাই যা খুশি করতে পারতেছিস
আমি: নাহলে কাব্য কি করতো
তিশা: তোকে এসে তোলে নিয়ে যেত
আমি: শুন তিশা ওর মোহ কেটে গেছে, আগে যে কান্নাকাটি করেছে এসব আবেগ ছিল আর এখন সবকিছু ও বুঝতে পেরেছে তা…
তিশা: তোকে আমার বুঝানোর ক্ষমতা নেই।
ফোন কেটে দিলো, শুধু কাব্য কাব্য করে উফফ ভাল্লাগেনা আর।

মামি: তমা চল মা
আমি: হুম।
মামির সাথে মেহমানদের সামনে আসলাম সত্যি এখন খুব কষ্ট হচ্ছে, কষ্টটা বোধহয় কাব্য’র জন্যই হচ্ছে। দুদিনের জন্য আবেগ দেখাতে এসেছিল আর আমি বোকার মতো ওকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে দিয়েছিলাম। এখন বোকামির ফল পাচ্ছি, প্রতিটা মুহূর্তে ওর কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছি।
ছেলের মা: আমরা তো আগেই দেখেছি তানভীর আলাদা কথা বলুক পছন্দ হলে আমরা রিং পড়িয়ে যাবো (রিং পড়িয়ে যাবে, কি বলছে এসব। তিশা শুনলে আমাকে আস্ত রাখবে না আর আমিও তো এভাবে হুট করে…)
মামি: তমা ওকে তোর রুমে নিয়ে যা
আমি: হুম।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি, পাশে তানভীর।
তানভীর: বলেছিলাম না সামনাসামনি দেখলে হয়তো আবারো আপনার প্রেমে পড়ে যাবো, সত্যি আবারো আপনার প্রেমে পড়ে গেছি আর আপনার নামটাও খুব সুন্দর ‘তিলোত্তমা’ (আসছে আরেকজন আবেগ+মোহ দেখাতে অসহ্য)
তানভীর: আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে আপনার কোনো আপত্তি না থাকলে…
আমি: এভাবে হুট করে আমি বি…
তানভীর: আমি সোজা কথা বলতেই পছন্দ করি, আপনার কি কোনো রিলেশন আছে, আই মিন কাউকে ভালোবাসেন।
আমি: (নিশ্চুপ হয়ে আছি শুধু একটা নামই বার বার মনে পড়ছে ‘কাব্য’ তাহলে কি আমি কাব্য’কে সত্যি ভালোবাসি। কিন্তু কাব্য তো আমাকে ভালোবাসে না দুদিনের মোহে আটকে ছিল ও আর এখন চলেও গেছে)
তানভীর: আর কিছু বলতে হবে না আপনার নিশ্চুপ হয়ে থাকাতেই আমি উত্তর পেয়ে গেছি। (অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে কি উত্তর পেলো তানভীর। আর তিশার কথাই তো সত্যি তানভীর দেখতে কাব্য’র মতোই, কোন অজুহাতে এখন আমি বিয়েটা ভাঙবো। পছন্দ হয়নি বললে মামি শুনবে না, তিশা আমাকে আস্ত রাখবে না আর এই বিয়েটা আমিও করতে চাই না এখন কি করবো)
তানিভীর: কিছু বলবেন নাকি আমি আমার সিদ্ধান্ত সবাইকে গিয়ে জানিয়ে দিবো।
আমি: এই বিয়েটা আমি করতে… (ফোন বেজে উঠলো তিশা ফোন দিয়েছে দেখে তাড়াতাড়ি রিসিভ করলাম)
তিশা: যদি এই বিয়েটা করিস তাহলে আমাকে হারাবি
আমি: তিশা আমার কথা শুন…
তিশা ফোন কেটে দিলো, পিছনে তাকিয়ে দেখি তানভীর নেই। তানভীর আবার গিয়ে ওর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিবে নাতো…? কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও…? আমি এই বিয়ে করতে পারবো না। দৌড়ে ড্রয়িংরুমে আসলাম।

আসতে মনে হয় অনেক দেরি হয়ে গেছে, সবাই হাসছে আর মিষ্টি খাচ্ছে। তানভীর এর দিকে তাকালাম ও আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।
মামি: তমা উনারা আজকেই বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে চান
আমি: মানে
মামি: হ্যাঁ তোকে উনাদের খুব পছন্দ হয়েছে তাই আজকেই…
আমি: কিন্তু আমি আজকে বিয়েটা করতে পারবো না
তানভীর: কেন আপনার সাথে কথা বলে তো মনে হলো আপনি রাজি আছেন
আমি: একবারো কি আপনাকে বলেছি আমি রাজি
তানভীর: তা বলেননি কিন্তু রাজি না এইটাও তো বলেননি
আমি: রাজি না বলতে চাচ্চিলাম তখনি তো ফোন বেজে উঠলো আর আপনি চলে এসে বলে দিলেন আজকেই বিয়ে করতে চান।
তানভীর: আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে শুধু তাই নয় আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি তাই আজকেই বিয়েটা করতে চেয়েছি।
আমি: কিন্তু আমি…
মামি: তমা হচ্ছেটা কি।
মামি আমাকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে আসলো।

মামি: তমা এমন করার তো কথা ছিল না
আমি: আজকেই যে বিয়ে হবে এইটাও তো কথা ছিল না। আমি শুধু তোমার ভয়ে রাজি হয়েছিলাম তাই বলে বিয়ে করতে হবে নাকি।
মামি: কেন করতে পারবি না ছেলেটার কোন দিকে কমতি আছে।
আমি: তা বলছি না মামি আমি বিয়েটা করতে পারবো না বুঝার চেষ্টা করো।
মামি: তুই বিয়েটা করবি আর আজকেই করবি তোর মামার দিব্বি। (মামির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি মামাকে দিয়ে দিব্বি দিতে পারলো, এখন আমি কি করবো। মামি আমাকে সবার সামনে নিয়ে আসলো)
মামি: তমা রাজি হয়েছে আসলে ছোট মেয়ে তো তাই…
ছেলের মা: কোন সমস্যা নেই আপনারা বিয়ের আয়োজন করুন সন্ধ্যা নেমে এসেছে তো রাতেই বিয়ে হবে
মামি: ঠিক আছে।
বোবার মতো দাঁড়িয়ে আছি, দুচোখ দিয়ে বৃষ্টির মতো পানি ঝরছে। মামি আমার সাথে এমন করতে পারলো। বিয়ে আটকানোর কোনো রাস্তা নেই মামি দিব্বি দিয়ে দিয়েছে তাও মামার, আজ বুঝি আমার বিয়েটা হয়েই যাবে। কাব্য’র হাসিটা বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে, আর বোধহয় ওর মিষ্টি হাসিটা কখনো দেখতে পারবো না।

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ৩

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

নিজের বাবা মা’কে তো খেয়েছে অনেক আগেই এখন এসে আমার গাড়ে চেপে বসেছে। আর উনি মরার সময় আমার হাত ধরে বলে গেছেন “আমার ভাগ্নিটাকে দেখো” যত্তোসব জ্বালা আমার। নেহাত ওর নামে বাপ মায়ের দেওয়া কিছু সম্পত্তি আছে তাই এতো জ্বালা সহ্য করছি নাহলে তো কবেই….
আমি: নাহলে কবেই কি মামি, মেরে ফেলতে আমাকে…?
মামি: আপনি এসেছেন সময় হলো আপনার আসার
আমি: মতলবটা কি মামি বলবা
মামি: মানে
আমি: আমাকে সহ্যই তো করতে পারো না তাহলে আমি চোখের সামনে নেই বলে এতো তাড়া দিয়ে নিয়ে আসলে কেন
মামি: ও তুই বুঝবি না।
রুমে চলে আসলাম, কি যে চলছে এই মহিলার মাথায় আল্লাহ্‌ জানেন।

জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বিকেলের আকাশ দেখছি। মন যেন কাউকে খুব মিস করছে, কাকে মিস করছে…? কাব্য…? কিন্তু ও কে আমার ওর জন্য এতো মন খারাপ হচ্ছে কেন। আচ্ছা আমি যে কাব্য’কে এতো মিস করছি ও কি আমায় মিস করছে নাকি চোখের আড়াল হতেই ভুলে গিয়েছে আমাকে…?
হঠাৎ তিশা আর মামির চেঁচামেচি শুনে তাড়াতাড়ি বের হলাম।
তিশা: আপনার মতো খারাপ মহিলা আর একটাও দেখিনি
আমি: কি হইছেরে তিশা
মামি: কি আর হবে প্রতিদিনই তো তোর বান্ধবী আমাকে যাতা বলে
আমি: তোমার স্বভাবে শুনো
তিশা: আসছিলাম তোকে ডাকতে সেই সকাল বেলায় অল্প কিছু খেয়ে বের হইছিলাম বিকেল হয়ে গেছে এই বাসায় তো খাবার খাওয়ার কোনো টাইম নেই তাই তোকে নিতে আসছিলাম আর এই মহিলা তুই যাবি না বলে আমার সাথে ঝগড়া শুরু করে দিছে
আমি: ওহ বাদদে এসব আমার খিদে নেই একেবারে রাতে খাবো
তিশা: কি হইছে তোর চোখমুখ এমন লাগছে কেন
আমি: কিছুনা
তিশা: হুম বুঝেছি।
রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। কাব্য’র কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।

তিশা: তমা উঠ রাত হয়ে গেছে (তিশার ডাকে তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম। আশ্চর্য রাত হয়ে গেলো অথচ মামি আমাকে রান্না করার জন্য বকাবকি করলো না)
তিশা: কি ভাবছিস
আমি: মামি হঠাৎ পাল্টে গেলো কেন, আগে তো কাজের জন্য বকাবকি করতো। অন্যকিছু করবো দূরে থাক কাজের জন্য ঠিকমতো নামাজও পড়তে পারতাম না। আর আজ সেই বিকেল বেলা থেকে রাত অব্ধি ঘুমালাম বকাবকি করলো না।
তিশা: আমি সিউর এই মহিলা তোকে নিয়ে খারাপ কোনো মতলবে আছে
আমি: আর খারাপ কিবা করবে যা খারাপ আচরণ করে
তিশা: চল আম্মু আব্বু অপেক্ষা করছেন তোর জন্য
আমি: ঘুমের কারণে তো নামাজ পড়া হয়নি তুই যা নামাজ পড়ে আসছি
তিশা: ঠিক আছে।

নামাজ পড়ে তিশাদের বাসায় যাওয়ার জন্য বের হতেই মামি ডাক দিলেন।
আমি: কিছু বলবে
মামি: হ্যাঁ তোর সাথে কথা আছে
আমি: বলো
মামি: তোর জন্য ভালো একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে ভাবছি তোকে বিয়ে দিয়ে আমার দায়িত্ব শেষ করবো
আমি: বাহ্ যে মামির চোখে আমি বিষ সে নাকি আমাকে ভালো জায়গায় বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে
মামি: শুন আমি এতোটাও খারাপ না
আমি: হ্যাঁ তুমি কতোটা ভালো আমি জানি তো
মামি: চলে যাচ্ছিস যে কিছু তো বলে যা।
মামির কথার উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে আসলাম। বিয়ে দিবে যত্তোসব।

সবাই একসাথে খেতে বসেছি তখন আঙ্কেল মানে তিশার আব্বু আবার বিয়ের কথা বললেন।
তিশা: আব্বু আমি ভাবছিলাম তোমাকে বলবো কিন্তু এখন মত পাল্টে নিয়েছি
আঙ্কেল: কেন তমাকে বিয়ে দিতে হবে না নাকি। তুই কি চাস ওর মামি হুট করে যার তার সাথে ওকে বিয়ে দিয়ে দিক।
তিশা: না আব্বু আমি তোমাকে পরে সব বলবো আপাতত বিয়ে নিয়ে কিছু ভেবো না
আন্টি: আমি আরো ভাবছিলাম আমার দুই মেয়ের বিয়ে একদিনে দিয়ে দিবো
আমি: সবাই বিয়ে বিয়ে করছ আমি তোমাদের ছেড়ে গেলে তো
তিশা: রাজকুমার এসে তুলে নিয়ে যাবে
আঙ্কেল: হাহাহা আছে নাকি কোনো রাজকুমার
তিশা: হ্যাঁ আব্বু আছে এজন্যই তো বললাম আপাতত বিয়ে নিয়ে কিছু ভেবো না
আমি: তিশা চুপ করবি
তিশা: হুম করলাম। শুন ওই মহিলার আচরণ আমার ভালো লাগছে না এখন থেকে রাতে তুই আমার সাথেই থাকবি।
আমি: হুম ঠিক আছে।

তিশার সাথে বসে গল্প করছি হঠাৎ মামি এসে ডাকতে শুরু করলো।
আমি: কি হইছে
মামি: বাসায় চল
তিশা: তমা এখন থেকে রাতে আমার কাছেই ঘুমাবে
মামি: কেন আমার বাসায় বুঝি জায়গার অভাব আছে
তিশা: না তবে ভালোবাসার যথেষ্ট অভাব আছে
মামি: দেখ তমা আমার কথা শুনে চলে আয়
আমি: পারবো না
মামি: কাল তোকে দেখতে আসবে, ওরা যদি এসে শুনে তুই রাতে অন্য বাসায় ঘুমাস তাহলে তো আমার মান সম্মান কিছুই থাকবে না
আমি: তোমার আবার মান সম্মান। আর তুমি আমাকে জিজ্ঞেস না করে আসতে বললে কেন।
মামি: তো কি হইছে
আমি: নিজেই দেখা করো আমি যাবো না ওদের সামনে
মামি: লক্ষী মা এমন করে না আমি আর তোর সাথে খারাপ আচরণ করবো না তুই শুধু ওদের সামনে যাস
আমি: ঠিক আছে তবে কাল না দুদিন পর আসতে বলো
মামি: ঠিক আছে
আমি: এখন যাও আমি তিশার কাছেই থাকবো। (মামি চলে যেতেই তিশা আমার হাত জোরে চেপে ধরলো, ওর চোখ দুটু রাগে লাল হয়ে আছে)
আমি: কি হইছে
তিশা: তুই ছেলে পক্ষকে আসতে বলে দিলি তারমানে তুই তোর মামির পছন্দে বিয়ে করবি
আমি: বিয়ে করবো বলেছি নাকি, মামির কথা না শুনলে আরো বেশি খারাপ আচরণ করবে তাই রাজি হয়েছি।
তিশা: কাব্য শুনলে খুব কষ্ট পাবেরে
আমি: মানে কি এখানে কাব্য আসলো কোথা থেকে আর ও জানবেই বা কিভাবে।
তিশা: জানবে জানবে
আমি: জানলেই বা কি, শুন এসব এক দেখায় ভালোবাসা হয়না শুধুমাত্র একটুখানি ভালোলাগা জন্মায় মনের মধ্যে, এইটা ক্ষণিকের জন্য মোহ ছাড়া আর কিছুই না। চোখের আড়াল হলে দুদিন যেতেই এই মোহ কেটে যায় বুঝেছিস।
তিশা: কাব্য তোর এই ধারণা পাল্টে দিবে দেখিস
আমি: তুই এতো জোর দিয়ে বলছিস কিভাবে…? এই কাব্য’র সাথে তোর যোগাযোগ নেই তো…?
তিশা: অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়।
তিশা চুপচাপ শুয়ে পড়লো কিন্তু আমার কথার উত্তর তো দিলো না। তারমানে কি তিশা কাব্য’র সাথে কথা বলে, যোগাযোগ আছে ওদের মধ্যে…? কি জানি থাকলে থাকুক ওদের মধ্যে যোগাযোগ তাতে আমার কি। ভাববো না আর কাব্য’র কথা। চুপচাপ শুয়ে পড়লাম।

সকালে তিশার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো তাড়াতাড়ি উঠে নামাজ পড়ে নিলাম। তিশা নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো কিন্তু আমার তো আর ঘুম আসবে না একা একা কি করবো, বাসায় থাকলে তো এখন রান্না করতাম। বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, চারপাশে ভোরের আলো ফুঁটতে শুরু করেছে। হঠাৎ বাগানের দিকে চোখ পড়লো, তিশা খুব যত্ন করে এই বাগান তৈরি করেছে। বাগানে অনেক ফুল ফুটেছে দেখে যেতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু এই ভোরবেলা একা একা বাগানে যাওয়া কি ঠিক হবে ভেবে পাচ্ছি না। দুর যাই কিছু হবে না, রুম থেকে মোবাইলটা এনে বাগানের দিকে পা বাড়ালাম।

খালি পায়ে বাগানের মধ্যে হাটছি। ভোরবেলা শিশিরে ভেজা ঘাসের উপর খালি পায়ে হাটার মজাই আলাদা, এতে মন শরীর দুটুই ভালো থাকে। আর ফজরের নামাজ পড়ে এসে একটু হাটাহাটি করলে তো মনে শান্তি বিরাজ করে, সাথে ভোরের আলো ফোটার সুন্দর দৃশ্য, পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ আর সূর্য উঠার অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করা যায়। ছোটবেলায় একদিন আব্বু বলেছিলেন “নামাজে যে শান্তি আছে সে শান্তি আর কোথাও খুঁজে পাবে না। তোমার মন খারাপ নামাজ পড়ো মন ভালো হয়ে যাবে, তোমার নিজেকে একা লাগছে তাহলে নামাজ পড়ো আর নিজেকে একা মনে হবে না কারণ নামাজে আল্লহকে কাছে পাওয়া যায়, তুমি কোনো বিপদে পড়েছ কি করবে ভেবে পাচ্ছ না তাহলে নামাজ পড়ো আল্লাহ্‌ তোমাকে সাহায্য করবেন, তুমি সবসময় আল্লাহর এবাদত করো আল্লাহ্‌ তোমাকে সবসময় সাহায্য করবেন” আব্বুর কথা গুলো সেদিন মুখস্থ করে ফেলেছিলাম সাথে সেদিন থেকে নামাজ পড়া শুরু করেছিলাম আজো পড়ছি। মধ্যে আব্বু আম্মুর হঠাৎ মৃত্যুতে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম নামাজও ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আল্লাহ্‌ আমাকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য আমার জীবনে তিশাকে পাঠালেন। তিশা সবসময় বুঝিয়েছে কখনো হতাশ হতে নেই সবসময় আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হয়। আব্বু আম্মুর মৃত্যুতে এতোটাই কষ্ট পেয়েছিলাম যে ভুলেই গিয়েছিলাম এই পৃথিবীতে কেউ চিরস্থায়ী নয়, সবাইকে একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে তাই আপনজনদের মৃত্যুতে আল্লাহকে ভুলে যেতে নেই।

আব্বু আম্মুর কথা মনে পড়াতে কখন যে দুচোখ দিয়ে পানি পড়ে গাল দুটু ভিজে গেছে বুঝতেই পারিনি। কয়টা বাজে দেখার জন্য মোবাইলে চাপ দিলাম কিন্তু মোবাইল তো অফ করা। তারমানে সারারাত মোবাইল অফ ছিল। মোবাইল অন করার সাথে সাথে ফোন আসলো, একটা অচেনা নাম্বার। এতো সকালে কে ফোন দিতে পারে তাও মোবাইল অন করার সাথে সাথে ভেবে পাচ্ছি না। সাধারণত অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসলে আমি রিসিভ করিনা কিন্তু এই ফোনটা রিসিভ করতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমার মন এই ফোনের জন্যই অপেক্ষা করছিল কিন্তু… রিসিভ করতেই একটা চেনা কন্ঠ ভেসে আসলো।
কাব্য: তিলো ও তিলো ফোন অফ করে রেখেছিলে কেন
আমি: (নিশ্চুপ হয়ে ওর কান্না শুনছি পাগলের মতো কাঁদছে)
কাব্য: কাল সন্ধ্যা থেকে ফোন দিচ্ছি সারারাত ফোন দিয়েই গেছি কিন্তু তোমার ফোন অফ আর এই তিশা গাদিটা তো ফোন রিসিভই করছে ন…. (কাব্য আটকে গেলো অর্ধেক কথা বলে, তারমানে তিশা আর কাব্য’র যোগাযোগ আছে আমার ধারনাই ঠিক। কিন্তু ওরা আমার থেকে লুকাচ্ছে কেন)
কাব্য: জানো আমি কতোটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তোমার ফোন অফ দেখে, আমার তো ইচ্ছে হচ্ছিল রাতেই ঢাকা চলে যাই তোমার কাছে। কিন্তু কোনো উপায় ছিল না তাই সারারাত ট্রাই করেছি তোমার ফোন সারারাত অফ ছিল। (নিশ্চুপ হয়ে শুধু ওর কথা শুনছি কারণ কিছু বলার নেই আমার)
কাব্য: সারারাত আমাকে টেনশন দিয়ে আমার ঘুম নষ্ট করে এখন চুপ হয়ে আছ (একটা মানুষ কাউকে প্রথম দেখায় এতোটা ভালোবাসতে পারে জানতাম না। আগে তিশাকে অনেক কথা শুনিয়েছি কিন্তু এখন কাব্য’র কান্না শুনে মনে হচ্ছে সত্যি ও আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু এইটাও কি সম্ভব, কেন এতো ভালোবাসে ও আমাকে…? কেন এতো কাঁদে আমার জন্য…?)
কাব্য: আমিও দেখবো তুমি কতোক্ষণ চুপ হয়ে থাকতে পারো (ও কাঁদছে আমি শুনছি কিন্তু দেখতে পারছি না তাও মনে হচ্ছে ওর চোখ থেকে টুপটুপ করে পড়া পানিগুলো আমার হৃদয় ভিজিয়ে দিচ্ছে। নিজের অজান্তেই আমার চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গাল বেয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়লো)
কাব্য: এই পাগলী একদম কাঁদবে না বলে দিচ্ছি। আমি কাঁদছি বলেই তো কাঁদছ আমি আর কাঁদবো না এইযে চোখের পানি মুছে নিলাম, প্লিজ তুমি কেঁদো না আমার কষ্ট হয়।
আমি নিশ্চুপ হয়ে আছি দেখে কাব্যও নিশ্চুপ হয়ে গেলো। ফোনের দুপ্রান্তে দুজন নিশ্চুপ হয়ে আছি আর একজন আরেকজনের নিঃশ্বাস শুনছি….

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ২

0

রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ২

লেখিকা: সুলতানা তমা

হসপিটাল থেকে হোটেল এ চলে আসলাম। রুমে এসেই বিছানায় শুয়ে পড়লাম। তিশার উপর খুব রাগ হচ্ছে এতোক্ষণ তো কাব্য’র কান্ড দেখে হাসছিল এখন আবার আমার সাথে আসেনি, কি যে করছে ওখানে। আর কাব্য কিসব করলো ভাবতেও পারিনি আজকের দিনটা এতো খারাপ ভাবে যাবে আমার। উফফস এখনো মনে হচ্ছে কাব্য আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, হাসছে আর বার বার কানের কাছে এসে একটাই কথা বলছে I Love U For A Thousand More.
কাব্য’র ভূত মাথা থেকে সরানোর জন্য মোবাইলটা হাতে নিয়ে গেইম খেলতে বসলাম।
তিশা: আসতে পারি ম্যাডাম (তিশা এসেছে ওর দিকে একবার তাকিয়ে আবার গেইম খেলায় মন দিলাম। কথা বলবো না আজ ওর সাথে)
তিশা: দোষ করলো ডাক্তার আর শাস্তি পাচ্ছি আমি
আমি: (নিশ্চুপ)
তিশা: কিরে কথা বলবি না আর এই সন্ধ্যা বেলায় একা একা চলে এসেছিলি কেন
আমি: তো কি করতাম তোর জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে কাব্য’র আরো পাগলামি দেখতাম
তিশা: বাব্বাহ্ ডাক্তারবাবু থেকে কাব্য (তিশা হাসছে ইচ্ছে হচ্ছে কয়েকটা দেই)
তিশা: যাই বল ছেলেটা কিন্তু দারুণ, এইটা তুই অস্বীকার করতে পারবি না। (আসলেই তো কাব্য দেখতে অনেক সুন্দর। ফর্সা লম্বা আর ফর্সা মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি দেখতে বেশ সুন্দর আর…)
তিশা: কিরে কোথায় হারালি
আমি: আমরা কাল চলে যাবো তাই না
তিশা: হ্যাঁ
আমি: আর কয়টা দিন থাকতে পারলে ভালো হতো
তিশা: কি ব্যাপার মনে হচ্ছে ডাক্তারবাবুর জন্য টান পড়েছে
আমি: তোকে তো এখন আমি মেরেই ফেলবো
তিশা: এই না না আর বলবো না
আমি: মামির কাছে ফিরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না তাই…
তিশা: হুম বুঝেছি কি করবো বল আব্বু তো অনেক চেষ্টা করেছেন তোকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু তোর মামি দিলো না। পাশাপাশি বাসায় থাকি আমরা তাও তোর মামির অত্যাচার থেকে তোকে রক্ষা করার উপায় নেই।
আমি: কখনো কখনো আপন মানুষ পর হয়ে যায় আবার কখনো পর মানুষ খুব বেশি আপন হয়ে যায়। আব্বু আম্মুর মৃত্যুর পর মামার কাছে চলে আসি প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে তোর সাথে পরিচয়, একটা সময় তুই তোর পরিবার আমাকে আপন করে নিলি। কিন্তু মামি আমার আপন হয়েও আমাকে পর করে দিলো। দুনিয়ার নিয়ম খুব অদ্ভুতরে।
তিশা: হ্যাঁ এবার কাব্য তোকে আপন করে নিলেই আমি নিশ্চিন্ত হতে পারি
আমি: কি বললি
তিশা: কিছু নাতো
আমি: এখনি তো আস্তে আস্তে কি যেন বললি
তিশা: আমার মনে হয় কাব্য তোকে সত্যি ভালোবাসে
আমি: ছাই ভালোবাসে এভাবে হুট করে ভালোবাসা যায় নাকি
তিশা: কতো মানুষ তো প্রথম দেখায় ভালোবাসে তাহলে কাব্য কেন পারবে না
আমি: প্রথম দেখা… আসলে দোষটা আমার, সবসময় তো আমি বোরকা পরেই চলাফেরা করি তাহলে কাল কেন এভাবে বের হই আর কাব্য’র চোখে পড়ি।
তিশা: কক্সবাজার এসে কেউ বোরকা পরে সমুদ্রের পাড়ে ঘুরতে যায় নাকি আর তুই কি জানতি যে এই অবস্থায় হসপিটাল যেতে হবে।
আমি: তাও বোরকা পড়লে কাব্য কেন কোনো ছেলেই তো আমার দিকে…
তিশা: যে সত্যি তোকে ভালোবাসবে সে তোকে বোরকা পড়া অবস্থাতেই চিনবে এবং ভালোবাসবে।
আমি: তাই বুঝি
তিশা: জ্বী এবার খেয়েদেয়ে ঘুমান সকালে চলে যেতে হবে।

বিছানায় শুয়ে আছি কিন্তু ঘুম আসছে না চোখে। গত দুদিন এখানে ছিলাম মনে হয়েছিল কোনো এক শান্তির রাজ্যে আছি কিন্তু এই শান্তি তো কালই শেষ হয়ে যাবে। আবার শুরু হবে মামির চেঁচামেচি, একটু কিছু হলেই আম্মু আব্বুকে নিয়ে গালাগালি, এসব অসহ্য লাগে। তিশা আর আঙ্কেল মামিকে কতো কিছু বুঝিয়ে কক্সবাজার আসার ব্যবস্থা করলো কিন্তু মামি শুধু দুদিনের সময় দিলো, তাও তিশা মেনে নিয়েছিল শুধুমাত্র আমাকে একটু খুশি দেখার জন্য। তিশার দিকে তাকালাম চুপচাপ ঘুমিয়ে আছে, ওর ঘুমন্ত মুখটা কি নিষ্পাপ লাগছে। সত্যি তিশার মতো মেয়ে আরেকটা আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে। যেখানে আজকের দিনে সবাই নিজের স্বার্থ নিয়ে পাগল সেখানে তিশা কিনা আমাকে এতো ভালোবাসে আমার জন্য এতোকিছু করে।

তিশা: তমা উঠ নামাজ পড়বি না
আমি: উহু পরে
তিশা: উঠ বলছি।
তিশা আমার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলো। চোখ ডলতে ডলতে ওর দিকে তাকালাম, নামাজ পড়ার জন্য রেডি হয়ে আছে। তিশার এই জিনিসটা আমার খুব ভালো লাগে যতোই ভালোবাসুক নামায না পড়লে তিশা খুব রেগে যায়।
তিশা: যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ওজু করে আয়
আমি: ওকে মহারাণী।

নামাজ পড়ে এসে দুজন বসে বসে চা খাচ্ছি তখনি আমার ফোন বেজে উঠলো। উফফফ আবার মামির ফোন।
আমি: হ্যালো
মামি: কখন আসছিস তোরা
আমি: আচ্ছা মামি তুমি তো আমাকে সহ্য করতে পারো না তাহলে আমি দুদিনের জন্য এখানে আসাতে এতোবার ফোন করছ কেন তাড়াতাড়ি যেতে বলছ কেন। না মানে আমি বাসায় না থাকলে তো তোমার খুশি হবার কথা।
মামি: এতো পাকামো করতে হবে না। প্রয়োজন আছে তাড়াতাড়ি চলে আসিস।
আমি: হুম। (ফোন রেখে দিয়ে তিশার দিকে তাকালাম, ও ভ্রু কুঁচকিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো)
তিশা: তোর মামির মাথায় কি প্ল্যান চলছে বলতো
আমি: প্ল্যান
তিশা: হ্যাঁ, তোকে তো এই মহিলা কখনোই সহ্য করতে পারেনি আর তোর মামা মারা যাওয়ার পর তো রীতিমতো তোর উপর অত্যাচার শুরু করে দিয়েছে। কক্সবাজার এসেছিস দুদিনের জন্য তাই এতোবার ফোন করছে নিশ্চয় কোনো খারাপ মতলব আছে এই মহিলার।
আমি: দূর কি বলছিস এসব
তিশা: আচ্ছা তমা কাব্য ছেলেটাকে তোর ভালো লেগেছে তো (কাব্য’র কথা তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম)
আমি: কেন ভালো লাগবে ও কি কোনো দেশের রাজকুমার
তিশা: না তবে কোনো একজনের রাজকুমার (ওর সাথে যতো কথা বাড়াবো ততোই কাব্য’র ভূত আমার মাথায় চেপে বসবে)
আমি: চল ব্যাগ গুলো গুছিয়ে নেই
তিশা: ঠিক আছে।

সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে এসে বসলাম একটু পর চলে যাবো। চলে যাবো ভাবতেই মনে হলো এখান থেকে চলে গেলে তো কাব্য’র সাথে আর কখনো দেখা হবে না। আচ্ছা কাব্য’র সাথে আর কখনো দেখা হবে না এইটা ভাবতেই আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেন।
তিশা: তমা আমি ভাবছিলাম যাওয়ার পথে হসপিটালে গিয়ে ছেলেটাকে একবার দেখে যাই
আমি: হসপিটাল
তিশা: হ্যাঁ শুধু একবার দেখেই আমরা চলে যাবো
আমি: উহু আমি যাবো না
তিশা: যার জীবন বাঁচিয়েছিস তাকে একবার দেখবি না
আমি: কিন্তু ওখানে তো কাব্য আছে
তিশা: তো কি হইছে আমরা তো আজ বোরকা পড়ে যাবো ও তো চিনতেই পারবে না
আমি: ঠিক আছে।

হোটেল থেকে বেড়িয়ে সোজা হসপিটাল চলে আসলাম। আজ কাব্য আমাকে চিনতেই পারবে না ওর সামনে দিয়ে চলে যাবো হিহিহি। গতকাল যদি বোরকা পড়ে বের হতাম তাহলে এতোকিছু হতো না। বোরকা ছাড়া বের হলে তো যেকোনো ছেলের নজরে পড়বো এটাই স্বাভাবিক, কাব্যকে দোষ দিয়ে তো লাভ নেই দোষ তো আমার বোরকা পড়িনি।
তিশা: তমা এদিকে চল ছেলেটির কেবিনে যেতে পারবো
আমি: হুম।

ছেলেটির কেবিনে এসে চুপি দিলাম ও ঘুমিয়ে আছে, দেখে তো মনে হচ্ছে মোটামুটি সুস্থ।
তিশা: তমা তুই এদিক দিয়েই বাইরে যা আমি একটু আসছি
আমি: কোথায় যাচ্ছিস
তিশা: আসছি দুমিনিট।
এই তিশা আবার কোথায় চলে গেলো। দ্রুত হাটছি যেন কাব্য’র সামনে না পড়ি, হঠাৎ দেখি সামনে কাব্য এদিকেই আসছে। আসুক আমাকে তো আর চিনতে পারবে না কারণ আমার চোখ দুটু ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কাব্য’র সামনে দিয়ে চলে আসলাম কিন্তু বেশি দূর আসতে পারলাম না কে যেন ডেকে উঠলো।
“তিলো ও তিলো” আশ্চর্য আমার নাম ধরে এভাবে কে ডাকছে, পিছন ফিরে তাকালাম কাব্য দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু ও তো অন্যদিকে ঘুরে কিসের যেন একটা রিপোর্ট পড়ছে। যে খুশি ডাকুক আমি আগে এখান থেকে বের হই। পা বাড়াতেই কাব্য আমার হাত ধরে ফেললো।
কাব্য: তিলো কি ভেবেছিলে বোরকা পড়লে আমি তোমাকে চিনতে পারবো না (এইরে এইটা কি হলো ও তো চিনে ফেলছে)
কাব্য: আমি তোমাকে ভালোবাসি তাই তুমি যে অবস্থাতেই থাকো আমি ঠিক চিনতে পারবো (হাত ধরে টান দিয়ে ওর সামনে এনে দাড় করালো)
কাব্য: চলে যাচ্ছ আজকে (ওর কন্ঠ কেমন যেন ধরে আসছে, ওর দিকে তাকালাম ওর চোখে তো পানি। আমি চলে যাচ্ছি বলে ও কাঁদছে)
কাব্য: আমার রুমে চলো (আমাকে টানতে টানতে ওর রুমে নিয়ে আসলো। আমি বোবার মতো দাঁড়িয়ে আছি, আমাকে যেন চিনতে না পারে বোরকা পড়লাম কিন্তু ও তো ঠিকি চিনে ফেললো)
কাব্য: তিলো (আমাকে টান দিয়ে ওর একদম কাছে নিয়ে গেলো। একটা হাত দিয়ে আমার কোমর জরিয়ে ধরে আছে। ওর বুকের সাথে যেন মিশে যাচ্ছি, ওর প্রতিটা হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছি। আমার কপালের সাথে ওর কপাল ঠেকিয়ে কেঁদে দিলো)
আমি: কাঁদছেন কেন (আমি জিজ্ঞেস করতেই আচমকা আমাকে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরলো)
কাব্য: চলে যাচ্ছ কেন আর দুইটা দিন এখানে থাকো প্লিজ। আমি তোমাকে না দেখে থাকবো কিভাবে। (ওর কান্না কেন যেন ভালো লাগছে না, বুকের ভিতর কোথাও যেন কষ্ট হচ্ছে খুব)
আমি: আপনি এভাবে কাঁদলে আমি এখনি চলে যাবো
কাব্য: কোথায় আমি কাঁদছি না তো (আমাকে ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। খুব অসস্থি হচ্ছে ওর এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে কিন্তু কিছু বলতে পারছি না। আবার আমার কাছে এসে দুহাত দিয়ে আলতো করে আমার দুগালে ধরলো)
কাব্য: বোরকা পড়লে তোমায় খুব মিষ্টি লাগে সবসময় বোরকা পড়ে বের হবে বুঝেছ। বোরকা পরে বের হলে আমার বউটার দিকে অন্য কোনো ছেলে নজর দিতে পারবে না (বউ শব্দটা শুনে ওর চোখের দিকে তাকালাম সাথে সাথে ও চোখ টিপ মেরে বসলো, কি অসভ্য)
আমি: অনেক হয়েছে এবার ছাড়ুন আমাকে তিশা খুঁজছে হয়তো
কাব্য: উহু তিশা খুঁজবে না। আর তো কখনো দেখা হবে না তাহলে এতো তাড়া দিচ্ছ কেন।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: ও তিলো
আমি: তিলো কে
কাব্য: তুমি, তিলোত্তমা এতো বড় নামে আমি আমার বউকে ডাকতে পারবো না তাই ঠিক করেছি তিলো নামে ডাকবো।
আমি: আর কখনো দেখা হলে তো ডাকতেন একবার যাই এখান থেকে আর কখনো আপনার সামনে আসবো না
কাব্য: এই আস্তে আস্তে কি বলছ
আমি: যেতে হবে এবার আমাকে ছাড়ুন
কাব্য: ছাড়তে পারি এক শর্তে আমাকে Love U বলো ছেড়ে দিবো
আমি: হুহ সখ কতো (এক ঝটকা দিয়ে ওকে দূরে সরিয়ে দিয়ে চলে আসলাম, দরজায় আসতেই আবার ডাক দিলো)
কাব্য: তিলো ও তিলো “I Love U” (ওর দিকে একবার তাকিয়ে বাইরে চলে আসলাম)

তিশা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আমার জন্য ইসস কাব্য’র জন্য কতো দেরি হয়ে গেলো।
তিশা: আসার সময় হলো আপনার
আমি: দুর কাব্য…
তিশা: জানি
আমি: জানিস মানে
তিশা: তোকে কাব্য’র কাছে দেখেই তো বাইরে এসে তোর জন্য অপেক্ষা করছি
আমি: ওর কাছে দেখলি অথচ আমাকে আনলি না
তিশা: কেন আনবো আমি তো জানি তুই কাব্য’র কাছে থাকলে সেইফ থাকবি
আমি: রাগাস না চল
তিশা: ওকে ম্যাডাম।

বাসে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। কাব্য’র ভেজা চোখ দুটু বার বার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ছেলেরা নাকি খুব বেশি কষ্ট না ফেলে কাঁদে না তাহলে কি কাব্য সত্যি আমাকে ভালোবাসে…? এতোক্ষণ তো কাব্য কাঁদছিল এখন তো আমার চোখ দুটু বার বার ভিজে যাচ্ছে। কেন যেন যেতে ইচ্ছে করছে না খুব কষ্ট হচ্ছে, মনে হচ্ছে এখানে কিছু একটা ফেলে রেখে যাচ্ছি অনেক মূল্যবান কিছু….

চলবে?

রোমান্টিক ডাক্তার পার্ট: ১

0

রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১

লেখিকা: সুলতানা তমা

তিশা: ওরে বাবারে আর দৌড়াতে পারছি না তমা দাঁড়া প্লিজ
আমি: হিহিহি দাঁড়াবো না
তিশা: এভাবে দৌড়ালে পড়ে যাবি তো
আমি: উঁহু পড়বো না
তিশা: আমার জন্য অন্তত দাঁড়া আর পারছি না প্লিজ
আমি: ওকে দাঁড়ালাম (তিশা আমার কাছে এসেই বালুতে দফ করে বসে পড়লো)
আমি: হিহিহি
তিশা: হাসছিস কেন
আমি: তোর হাপানো দেখে
তিশা: এমন অচেনা জায়গায় এভাবে কেউ দৌড়য়
আমি: অচেনা জায়গা বলেই তো এমন স্বাধীনভাবে…
তিশা: প্লিজ মন খারাপ করিস না তোকে একটুখানি স্বাধীনতা দেওয়ার জন্যই তো এতো বাহানা দিয়ে কক্সবাজার নিয়ে আসলাম
আমি: হুম এজন্য আপনাকে এত্তোগুলো উম্মম্মম্মম্মাহ
তিশা: পাগলী একটা
আমি: ওই আমি মোটেও পাগলী না
তিশা: এই বালুচরে দৌড়ে তোর যা অবস্থা হয়েছে এখন সত্যি তোকে পাগলী লাগছে
আমি: হুহ
তিশা: এভাবে যে দৌড়াচ্ছিলি পড়ে গিয়ে যদি ব্যথা পেতিস
আমি: ব্যথা সাড়ানোর জন্য তো তুই আছিস
তিশা: আমি তো আর সবসময় থাকবো না তোর বিয়ে হলেই…
আমি: আমি বিয়ে করবো না তোকে কতোদিন বলবো
তিশা: ইসস যখন মনের মানুষের সাথে দেখা হবে তখন এই তিশাকে ভুলেই যাবি
আমি: নারে তোকে কখনো ভুলতে পারবো না তুই তো শুধু আমার বান্ধবী না আমার বোন। তাছাড়া আম্মু আব্বু মারা যাওয়ার পর তুই তো আমাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছিস নাহলে এতোদিনে মামির অত্যাচারে আমি হয়তো…
তিশা: তমা প্লিজ একটু আনন্দের জন্য এখানে এসেছি আমরা, এসব প্লিজ মনে করিস না
আমি: ঠিক আছে
তিশা: এখন রুমে চল
আমি: ওকে।

রুমে এসে গোসল করে নিলাম। বালুচরে দৌড়ে সত্যি যা অবস্থা হয়েছিল পুরো পাগলী হয়ে গিয়েছিলাম।
গোসল করে রুমে আসতেই ফোন বেজে উঠলো। ‘মামি’ শব্দটা স্কিনে ভেসে উঠেছে দেখেই রাগ উঠে গেলো, ফোনটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি রিসিভ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কিন্তু ফোনটা বার বার বেজেই চলেছে। মাত্র দুদিনের জন্য কক্সবাজার এসেছি তাও এই মহিলা আমাকে শান্তি দিচ্ছে না বার বার ফোন করেই যাচ্ছে।
আমি: হ্যাঁ মামি বলো
মামি: ফোন রিসিভ করতে এতো সময় লাগে
আমি: গোসলে ছিলাম
মামি: এই বিকেল বেলায় গোসল কিসের
আমি: সবকিছুর হিসেব তোমাকে দিতে হবে নাকি
মামি: বাব্বাহ্ দূরে গিয়ে তো দেখছি তোর সাহস অনেক বেড়ে গেছে
আমি: হ্যাঁ বেড়েছে দুইটা দিন অন্তত শান্তিতে থাকতে দাও প্লিজ
মামি: একবার বাসায় ফিরে আয় বুঝাবো
আমি: দ্যাত।
ফোনটা কেটে দিলাম, এই মহিলার বকবক আর ভালো লাগে না। আম্মু আব্বু নেই বলে সবসময় আমাকে বকাঝকা করে আর ভাল্লাগেনা। ফোনটা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে দিলাম।
তিশা: তমা (হঠাৎ কাধে তিশার হাতের স্পর্শে পিছনে তাকালাম)
তিশা: রেগে যাচ্ছিস কেন মাথা ঠান্ডা কর
আমি: আর ভালো লাগে নারে
তিশা: অনেক বার বলেছি যেটুকু সম্পত্তি তোর নামে আছে তা দিয়ে তোর চলে যাবে দূরে কোথাও চলে যা, শুনিসনি আমার কথা তাহলে এখন…
আমি: মামা মৃত্যুর সময় কি বলে গেছেন ভুলে গেছিস
তিশা: ভুলিনি তবে দেখিস তোর মামার প্রতি এই ভালোবাসা একদিন তোকে কাঁদাবে। তোর এই ভালোবাসার সুযোগ নিচ্ছে তোর মামি আর….
আমি: থেমে গেলি কেন আর কে বল
তিশা: কেউ না
আমি: হুম
তিশা: মন খারাপ করিস না দেখিস একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে
আমি: হ্যাঁ হবে কিন্তু আমি মরার পর
তিশা: উহু তার আগেই হবে আর খুব শীঘ্রই
আমি: তাই বুঝি
তিশা: হ্যাঁ একটা রাজকুমার আসবে আর তোকে তার রাজ্যে নিয়ে যাবে তোর সব কষ্ট ভুলিয়ে দিবে তার ভালোবাসা দিয়ে আ…
আমি: হিহিহি রাজকুমার আসবে তাও আমার মতো পেত্নীর জন্য
তিশা: হুম আসবে
আমি: যখন আসে দেখা যাবে এখন চল ঘুরতে যাই
তিশা: এইমাত্র তো আসলাম
আমি: তো কি হইছে, তিশা আমরা এখানে ঘুরতে এসেছি রুমে বসে থাকার জন্য না
তিশা: ওকে বাবা চল।

রাস্তা দিয়ে আনমনে হয়ে হাটছি হঠাৎ পাশের দোকানে চিপস চোখে পড়লো।
আমি: তিশা চিপস চিপস চিপস
তিশা: ওরে বাবারে আস্তে মানুষ ভাববে তুই এ জন্মে কখনো চিপস খাসনি
আমি: হ্যাঁ খাইনি তো
তিশা: এ্যাঁ
আমি: অবাক হচ্ছিস কেন
তিশা: তাহলে রোজ আমি যে এনে দেই আব্বু যে এনে দেন এসব চিপস কে খায়
আমি: ওগুলো তো আমি খাই না তিলোত্তমা খায় হিহিহি
তিশা: পাগলী একটা, দাঁড়া আমি চিপস নিয়ে আসছি।

তিশা চিপস আনতে দোকানে গেলো আর আমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। আসলে আমি একটু চিপস পাগলী আরকি।
তিশা: তমা আমি একটা কথা ভাবছি (আমার হাতে চিপস দিতে দিতে বললো)
আমি: কি কথা
তিশা: কক্সবাজার থেকে ফিরে গিয়েই আব্বুকে বলবো তোর জন্য যেন ছেলে দেখেন
আমি: দাঁড়া আগে চিপস গুলো খেয়ে নেই তারপর তোর কথাটার উত্তর দিচ্ছি
তিশা: খা রাক্ষসী কোথাকার।
আমি: তিশা সামনে দেখতো এতো ভীড় কিসের
তিশা: হ্যাঁ তাই তো চল গিয়ে দেখি
আমি: চল।

ভীড়ের কাছে এসে দেখি একটি ছেলে এক্সিডেন্ট করে রাস্তায় পরে আছে প্রচুর রক্ত ঝরছে ওর মাথা থেকে। বাচ্চা একটা ছেলে এভাবে পরে আছে আর সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে এভাবে।
আমি: আচ্ছা আপনারা সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছেন ওকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছেন না কেন
–আরে ও টোকাই ছেলে কে নিবে ওর দায়িত্ব
–হসপিটালে নিয়ে গিয়ে আবার জামেলায় ঝরাবো নাকি
–এইটা এক্সিডেন্ট পুলিশ কেস হয়ে যাবে (এই মানুষগুলোর কথা শুনে তো ইচ্ছে হচ্ছে সব গুলোর মাথা ফাটিয়ে দেই। শুধুমাত্র ও একজন টোকাই বলে ওর কোনো চিকিৎসা হবে না, এভাবে রাস্তায় পড়ে মারা যাবে)
আমি: তিশা ওকে ধর এক্ষণি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে
তিশা: হুম তাড়াতাড়ি কর।
একটা সিএনজি ডেকে তাড়াতাড়ি ছেলেটাকে পাশের হসপিটালে নিয়ে আসলাম।

আজব দেশের আজব সব মানুষ, আজব হসপিটাল আর আজব সব ডাক্তার। এতোক্ষণ ধরে বসে আছি ছেলেটি অজ্ঞান হয়ে গেছে অথচ এখনো কোনো ডাক্তার এসে দেখছে না। হয়তো ডাক্তার আসবে কিন্তু ছেলেটি মারা যাওয়ার পর।
তিশা: আচ্ছা সিস্টার ডাক্তার কি ওকে দেখবে না
সিস্টার: আজ ছুটির দিন সব ডাক্তার ছুটিতে আছেন, একজন যিনি আছেন উনি অন্য একটা রোগীকে দেখছেন
আমি: উনাকে গিয়ে বলুন এখানে একটা ইমারজেন্সি আছে
সিস্টার: বলেছি স্যার বলেছেন একটু পর আসছেন
তিশা: কি আজব ছেলেটা মরে যাচ্ছে আর ডাক্তার সাধারণ রোগীদের নিয়ে পরে আছে
সিস্টার: আচ্ছা মানুষ তো আপনারা বললাম তো স্যার একটু পরে আসবেন
আমি: কখন আসবে হ্যাঁ ছেলেটা মারা যাওয়ার পর…? তখন কি জানাজা পড়তে আসবে ছেলেটির…?
তিশা: তমা কি করছিস ছাড় উনাকে
সিস্টার: আজব মেয়েতো আপনি আমার…
ডাক্তার: কি হচ্ছে এখানে (সিস্টারের গলায় চেপে ধরেছিলাম ডাক্তার আসাতে ছেড়ে দিলাম)
তিশা: আসলে ছেলেটির খুব খারাপ অবস্থা প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে এক্ষণি চিকিৎসা শুরু না করলে….
ডাক্তার: সিস্টার ওকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে যাও আর জানোই তো কি কি লাগবে (আরে আজব ডাক্তার তো নিজে না গিয়ে সিস্টারকে বলছে কি কি লাগবে জানেই তো, একজন ডাক্তার যা জানে তা একজন সিস্টার কি করে জানবে)
আমি: আজব ডাক্তা…
তিশা: তমা প্লিজ এখন আর মাথা গরম করিস না (হুম তিশা ঠিক বলেছে ডাক্তারের সাথে জামেলা করলে হয়তো আর ছেলেটির চিকিৎসা করাই হবে না)
আমি: আসলে ডাক্তারবাবু ছেলেটির অবস্থা খুব খারাপ তো তাই রেগে গিয়ে… (আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে দেখে আমার কথা আটকে গেলো)
ডাক্তার: বাহ্ এই প্রথম কারো মুখে ডাক্তারবাবু নামটা শুনতে এতো ভালো লাগলো
আমি: এ্যাঁ
ডাক্তার: অবাক হচ্ছ কেন আসলে এক বছর হলো ডাক্তারি করছি এর মধ্যে হাজার হাজার বার এই ডাক্তারবাবু ডাকটা শুনেছি। ডাক্তারবাবু শুনতে শুনতে কান পঁচে গেছে কিন্তু এই প্রথম তোমার মুখে ডাকটা শুনে এতো ভালো লাগলো (ডাক্তারের কথা শুনে তো আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম)
সিস্টার: স্যার O- রক্ত লাগবে কিন্তু এই গ্রুপের রক্ত আমাদের হসপিটালে এই মুহূর্তে নেই
ডাক্তার: ওকে বাকি সব চিকিৎসা শুরু করো
আমি: আজব ডাক্তার তো আপনি নার্সদের দিয়ে সব করাচ্ছেন রক্ত প্রয়োজন অথচ আপনি যাচ্ছেন না
ডাক্তার: আমি গেলে পর যদি তুমি চলে যাও তাহলে তো তোমাকে হারিয়ে ফেলবো আমি
আমি: মানে (নিশ্চুপ হয়ে আছে আর ফোন টিপছে। এখন তো রাগ উঠে যাচ্ছে, না রাগলে হবে না মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে)
আমি: ডাক্তারবাবু প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন আ…
ডাক্তার: উফফস আবার সেই ডাক্তারবাবু, বললাম তো তোমার মুখে এই ডাকটা শুনতে ভালো লাগে আর ডেকো না প্লিজ পাগল হয়ে যাবো (আর রাগ ধরে রাখতে পারছি না এখন ওকে কিছু বলা উচিত)
আমি: আপনি আর নতুন করে পাগল হবেন কি আপনি তো অলরেডি পাগল হয়ে গেছেন। আপনাকে দিয়ে চি…
ডাক্তার: হ্যাঁ পাগল তো হয়ে গেছি তোমাকে দেখার পর থেকে (নিশ্চুপ হয়ে ভাবছি কি বলছে এসব। একজন ডাক্তার এমন একটা ইমারজেন্সি রোগী রেখে এসব পাগলের মতো কথা বলছে তাহলে কি এই ডাক্তারের মাথায় আসলেই কোনো সমস্যা আছে)
ডাক্তার: কি ভাবছ আমার মাথার তার একটা ছিঁড়া
আমি: হ্যাঁ না মানে
“ভাইয়া হঠাৎ হসপিটালে আসার জন্য মেসেজ করলে যে” কথাটা শুনে ডাক্তারের পিছনে তাকালাম, একটি ছেলে এসেছে তারমানে আগে ফোন টিপছিল এই ছেলেকে মেসেজ দেওয়ার জন্য।
ডাক্তার: রক্ত দিতে হবে সিস্টারকে গিয়ে বল (ছেলেটি রক্ত দিতে চলে গেলো। নাহ যতোটা খারাপ ডাক্তার ভেবেছিলাম ততোটা খারাপ না)
ডাক্তার: কি এতোক্ষণ যা যা ভাবলে সব ধারনা পাল্টে গেলো তো (ওরে বাবা যা ভাবছি তাই তো বুজে ফেলছে, জ্যোতিষী নাকি)
“ভাইয়া যাও সিস্টার রক্ত নিয়েছে”
ডাক্তার: হুম এখানে থাক ও যেন কোথাও না যেতে পারে, এইটা তোর মিষ্টি ভাবি আর এইযে ও তোমার দেবর অয়ন (আমাকে দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলো। এইটা কি হলো আমি ভাবি হলাম কবে আর এই ছেলেই বা আমার দেবর হলো কিভাবে)
আমি: তিশা এসব কি হচ্ছে বলবি প্লিজ সবকিছু তো আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে
তিশা: আমি কিন্তু বুঝে ফেলেছি
আমি: তুই হাসছিস
অয়ন: ভাবি আমি বলবো বিষয়টা কি
আমি: এই একদম ভাবি ডাকবা না আমি তোমার কোন ভাইয়ের বউ হ্যাঁ যত্তোসব ফাজিল ছেলে
অয়ন: আরে রেগে যাচ্ছ কেন কাব্য ভাইয়া তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে তাই আমার ভাবি বলেছে (ডাক্তারের স্বভাবটা খারাপ হলেও নামটা খুব কিউট ‘কাব্য’)
আমি: একটু আগে দেখা হলো আর এখনি ভালোবেসে ফেলেছে
ডাক্তার: জ্বী ম্যাডাম আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি আর হ্যাঁ তোমার রোগী এখন বিপদমুক্ত আর চিন্তার কোনো কারণ নেই
আমি: ওকে আমি বিল দিয়ে যাচ্ছি ছেলেটি সুস্থ হলে রিলিজ করে দিবেন
ডাক্তার: মানে কি ছেলেটি তোমার আত্মীয় না নাকি
তিশা: নাতো ও একজন টোকাই রাস্তায় এক্সিডেন্ট করে পরে ছিল তাই তমা হসপিটালে নিয়ে এসেছে
ডাক্তার: বাব্বাহ্ আমার বউটা তো খুব লক্ষী রাস্তার ছেলেদেরও মানু…
আমি: ওই কে আপনার বউ তখন থেকে উউল্টাপাল্টা কথা বলেই যাচ্ছেন মাথায় সমস্যা আছে নাকি
ডাক্তার: আগে ছিল না কিন্তু তোমাকে দেখার পর থেকে মাথায় সমস্যা বুকে ব্যথা আরো অনেক কিছু হচ্ছে
আমি: তিশা চল তো এখান থেকে।

তিশার হাত ধরে চলে আসতে চাইলাম কিন্তু ছেলেটি আমার হাত ধরে টেনে ওর একদম কাছে নিয়ে গেলো কি আজব ডাক্তাররে বাবা। ও আস্তে আস্তে আমার দিকে এগুচ্ছে আর আমি পিছিয়ে যাচ্ছি, পিছাতে পিছাতে দেয়ালে গিয়ে ঠেকলাম। দুপাশে ওর দুইহাত সামনে ও পিছনে দেয়াল আমি এখন যাবো কোন দিকে, আমার তো কান্না করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।
ডাক্তার: তোমার চোখে পানি কেন আমি কি তোমাকে মারতেছি, দেখো তোমাকে আমি ভালোবাসি আ…
আমি: আমাকে যেতে দিন
ডাক্তার: তোমার চোখ থেকে যদি এক ফোটা পানি পড়েছে তো আমি কিন্তু রেগে যাবো আর এখানে সবার সামনে তোমাকে আদর করবো (দূর এইটা কেমন ডাক্তার আমার তো মনে হচ্ছে ওর মাথায় সমস্যা আছে নাহলে এতোগুলো মানুষের সামনে কেউ এমন কথা বলে। ইসসস কতোগুলো মানুষ তাকিয়ে আছে এদিকে)
আমি: দেখুন আপনি ডাক্তার আপনার লিমিট ক্রস করবেন না প্লিজ আমি কিন্তু… (আর কিছু বলতে দিলো না আমার মুখে আঙ্গুল দিয়ে আমাকে চুপ করিয়ে দিলো)
ডাক্তার: এসব ডাক্তার ফাক্তার বুঝি না তুমি আমাকে ডাক্তারবাবু অথবা কাব্য বলে ডাকবে বুঝেছ
আমি: ডাক্তারবাবু ডেকেই তো ফেঁসে গেছি
ডাক্তার: এই আস্তে আস্তে কি বলছ
আমি: কিছু নাতো (তিশার দিকে তাকালাম, কোথায় ও আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে উল্টো হাসছে। আর অয়ন এইটাও তো হাসছে দুই ভাই তো দেখি একরকম)
ডাক্তার: এখন ভালোয় ভালোয় তোমার পরিচয় দাও তো নাহলে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো কিভাবে (ডাইরেক্ট বিয়েতে চলে গেলো এ কেমন ছেলে)
ডাক্তার: বলো বলো তোমার নাম বলো নাহলে কিন্তু সবার সামনে কিস করবো (আমার কপালে এলোমেলো হয়ে থাকা চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিতে দিতে বললো)
আমি: আমি তিতিতিলো…
কাব্য: কি তিতিতি করছ তাড়াতাড়ি বলো
আমি: তিলোত্তমা আমি এখানে ঘুরতে এসেছি থাকি ঢাকায় মামির কাছে। (যেও ভেবেছিলাম মিথ্যে পরিচয় দিবো ওর ধমকে গড়গড় করে সব সত্যি বলে দিলাম। উফফ এই ধমক যে কেন এতো ভয় পাই আমি)
ডাক্তার: মামির কাছে থাকো কেন আব্বু আম্মু কোথায় (এতোক্ষণ তো কান্না আটকে রেখেছিলাম আব্বু আম্মুর কথা বলতেই কান্না চলে আসলো)
তিশা: আসলে ওর আব্বু আম্মু একটা এক্সিডেন্টে মারা গেছেন
ডাক্তার: উফফস সরি সোনা তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম। চিন্তা করো না আজ থেকে তোমার সব দায়িত্ব আমার (দুহাত দিয়ে আলতো করে আমার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো)
আমি: কেন এমন করছেন
ডাক্তার: কারণ আমি তোমাকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি যাকে বলে Love At First Sight মানে তোমাকে প্রথম দেখেই আমি ফিদা হয়ে গেছি (বুঝে গেছি এর সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই এখান থেকে তাড়াতাড়ি যাওয়াই মঙ্গল)
আমি: হুম এখন আমাকে যেতে দিন
ডাক্তার: যেতে পারো কিন্তু আমার থেকে ফালানোর চেষ্টা করো না এখন থেকে তোমার উপর আমি সবসময় নজর রাখবো।
হাসতে হাসতে আমার সামনে থেকে সরে গেলো।

তিশাকে রেখেই তাড়াতাড়ি হাটা দিলাম। কিছুতেই বুঝতে পারছি না এই ছেলে আমার মধ্যে দেখলোটা কি, কালো একটা মেয়ে আমি আর এই ডাক্তার তো দেখতে অনেক সুন্দর। ফর্সা লম্বা তাও আবার ডাক্তার এই ছেলে কিনা আমাকে দেখে ফিদা হয়ে গেছে, নির্ঘাত ওর মাথার তার একটা ছিঁড়া। এই ডাক্তার তো… দ্যাত ‘কাব্য’ এতো সুন্দর নাম রেখে ডাক্তার ডাক্তার বলতে ভালো লাগছে না। আনমনে হয়ে হাটছিলাম আর এসব
ভাবছিলাম হুট করে কাব্য এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। আমি তো ভয় পেয়ে গেছি আবার কেন আসলো।
কাব্য: আমার মাথায় কোনো সমস্যা নেই আমি সত্যি তোমাকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার শ্যামবর্ণ চেহারা নাকি তোমার মায়াবী চোখ জোড়া কোনটা দেখে ভালোবেসেছি সঠিক বলতে পারবো না। তবে এটাই সত্যি আমি তোমাকে ভালোবাসি আর খুব শীঘ্রই তুমিও আমাকে ভালোবাসবে।
আমি: দেখুন এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
আঙ্গুল তুলে কথা গুলো বলছিলাম কাব্য আমার আঙ্গুলটা আস্তে করে নামিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে আমার একদম কাছে চলে আসলো। আমি কিছু বলতে যাবো তখনি আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললো “I Love U For A Thousand More”
কাব্য আমার চোখের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো কিন্তু আমি যেন বরফের মতো জমে গেলাম। কানের কাছে কাব্য’র গরম নিঃশ্বাস যেন আমার নিঃশ্বাস নেওয়া আটকে দিলো। চোখ দুটু বন্ধ করে আছি এখনো মনে হচ্ছে কাব্য বার বার আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলছে I Love U For A Thousand More….

চলবে?

রোমান্টিক_অত্যাচার_১৮_অন্তিম_পর্ব

1
রোমান্টিক_অত্যাচার_১৮_অন্তিম_পর্ব লেখিকাঃ #Israt_Jahan ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
আশফিঃ মাহি?মাহি? কোথায় তুমি? আশ্চর্য এই সন্ধ্যার সময় মেয়েটা কোথায় গেলো?ডাকছি কোনো সাড়া শব্দ নেই। মাহি? এই মাহি? মাহিঃ কি হয়েছে? এত খোঁজ কেনো? আশফিঃ খোঁজ নেবো না মানে? তার আগে বলো তুমি কোথায় ছিলে এতক্ষণ? আমি তোমাকে কখন থেকে ডাকছি। তুমি শুনতে পাওনি?? মাহিঃ না শুনতে পাইনি। বাগানের ঐ দিক টা তে ছিলাম। আশফিঃ এই সময়ে তুমি বাগানের ঐ দিক টাতে কি করছিলে? মাহিঃ (নিশ্চুপ)?? আশফিঃ মাহি?? কি হয়েছে? বলো আমাকে? এদিকে এসো, আমার কাছে এসো। এখন বলো কি হয়েছে? মন খারাপ কেনো? মাহিঃ তুমি ভুলে গেছো। আশফিঃ না আমি ভুলিনি। কাল তোমার জন্মদিন। তো এতে মন খারাপের কি আছে? মাহিঃ আশফি মা এখানে নেই। মাকে খুব মনে পড়ছে দেখতে ইচ্ছে করছে মাকে। এটাই কি স্বাভাবিক না? আশফিঃ ও এই ব্যাপার? তাই বলো। তো ফোনে কথা বললেই তো হয়, ভিডিও কল করো। মাহিঃ আশফি?? আমি মাঝে মাঝে সত্যি তোমাকে চিনতে পারিনা। আশফিঃ রাগ করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। এই মাহি উঠো না। তোমার সাথে কত গল্প করতে চাইলাম আমি। কি হলো উঠবেনা? ঠিক আছে। তাহলে আমি ও একটু রেস্ট নিই। ১১:৪৮ বাজে। না খেয়েই ঘুমিয়ে পরলো মেয়েটা। একটু বেশিই আবেগি। মাহিঃ উফফ এভাবে মাঝরাতে এলার্ম বাজার কোনো মানে হয়? এই শুনতে পাচ্ছো এলার্ম টা অফ করো? কি হলো? ধুর বাবা আর ভালো লাগেনা। আশফি? আরে ও কোথায়? এ কি সারা ঘরে মোমবাতি জ্বালানো কেনো? ওহ্ মনে পড়েছে সারপ্রাইজ!! আমি সত্যিই সারপ্রাইজড।?এভাবে মাঝরাতে ঘুম ভাঙ্গিয়ে কে বলেছিল ওকে সারপ্রাইজ দিতে? আমি বিছানা থেকে উঠে ওকে খুঁজতে গেলাম। হঠাৎ কেউ আমার সামনে এসে দাড়ালো। আমি জানি এটা আশফি ছাড়া কেউ হতে পারেনা। আমি ঘরের লাইট টা জ্বালিয়ে দিলাম। হুম উনিই আমার সামনে দাড়িয়ে আছেন। মুখ চিপে হাসছেন। কি হয়েছে? এভাবে অন্ধকারে চুরেলের মত দাড়িয়ে হাসছো কেনো? আরে…..আজব হেসেই যাচ্ছে তো হেসেই যাচ্ছে। এই?হাসি বন্ধ কর(ধমকের সুরে)। কি হয়েছে?? মাঃ মাহি???? মাহিঃ? মা?? তুমি? মাকে জড়িয়ে ধরলাম। মা তুমিও ওর মত শিখে গেছো তাইনা? মাঃ হ্যা। খানিকটা। সব ওর ই প্ল্যান ছিল। আশফিঃ হুহ?কত রাগ ই না দেখালো আমাকে? না খেয়েই শুয়ে পড়লো। আবার বলে কিনা আমি চুরেল।?? মাঃ আচ্ছা এখন থাম। আমি খাবার রেডি করছি। আজকে তোদের দুজনকেই আমি খাইয়ে দিব। মাহিঃ অনেক খুশি লাগছে আমার। তাহলে এই সারপ্রাইজ ছিল আমার জন্য! কি হয়েছে ওভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আশফিঃ হুহ? তাকাচ্ছিনা আর। আমি মুখটা ঘুরিয়ে বেরিয়ে আসতে গেলাম ও তখন আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। মাহিঃ এই তুমি এতো কিউট কেনো? আশফিঃ না তো। আমি তো চুরেল। মাহিঃ উহুম। তুমি তো আমার Little heart. ? আশফিঃ তাই? তাহলে লিটিল করে একটা পাপ্পি দাও। মাহিঃ হুম???
আশফিঃ হুম। ও একটু উঁচু হয়ে আমার ঠোঁটে চুমু দেওয়ার জন্য এগিয়ে এলো তখন মামনি পেছন থেকে ডাক দিল খেতে আসার জন্য। তাই আর পাপ্পিটা নেওয়া হলোনা। রাতে খেয়ে দেয়ে আমরা সবাই একসাথে বেডরুমে বসে গল্প করছি। মাহি মামনির কাঁধের ওপর মাথা রেখে গল্প শুনছে আর আমি মামনির কোলের ওপর মাথা রেখে শুয়ে আছি। মামনি তুমি কিন্তু আজকে ওর কাছে থাকবেনা আমার কাছে থাকবে। মাঃ আচ্ছা সে দেখা যাবে তোরা ঘুমোবি কখন? মাহিঃ মা আর একটু গল্প করিনা। আজকের এই রাতটা আমার জীবনের সব থেকে শ্রেষ্ঠ্য রাত। মাঃ কথা বলতে বলতে অনেক সময় পার হয়ে গেছে। দুটোই ঘুমিয়ে পরেছে। মাহি কে শুইয়ে দিলাম আর আশফির মাথার নিচে বালিশ দিয়ে আমি রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। ★সকালবেলা★ আশফিঃ রাতে এভাবেই ঘুমিয়ে পরেছিলাম? ওটা কোথায় গেলো? বাহ্ কি সুন্দরভাবে ঘুমিয়ে আছে। আর একটু ওপাশ ঘুরলেই তো নিচে ঠাস। সকাল সকাল একটু মজা নেওয়াই যায় ওর সাথে। ওর কাছে গিয়ে ওর কানে জিহ্বা দিয়ে হালকা ভাবে শুরশুরি দিলাম। আর তখনই ওপাশ ঘুরেই নিচে পরে গেলো। মাহিঃ আহ্। আশফি?? তুমি আসলেই একটা গন্ডার। না হলে এরকম কেউ করে? আশফিঃ গন্ডার আমি না তুমি। যেভাবে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছিলে।? এখন উঠো। উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও। আজকে আমরা সারাদিন বাইরে সময় কাটাবো। মাহিঃ সত্যি???ঠিক আছে আমি এক্ষনি যাচ্ছি। তারপর আমি আশফি আর মা সবাই একসাথে বাইরে ঘুরতে এলাম। অনেক এনজয় করছি। এতো খুশি হয়তো আমি কোনোদিনও হয়নি। আশফি মায়ের ছবি তুলছে আর আমি ওর পাশে দাড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছি। ওর সাথে একটু দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে হলো। তাই ঠোঁটে একটু আইসক্রিম জড়িয়ে ঠোঁট টা কিসের স্টাইল করে নাক শিটকোচ্ছি ওর দিকে তাকিয়ে। ও তখন আমার দিকে ঘুরে আমার ঠোঁট থেকে আইসক্রিম টুকু চেটে খেলো। আমি তখন ছোট্ট করে একটা স্মাইল দিলাম। আর আশফি তাকিয়ে হেসে দিল। আশফিঃ মাহি আমাদের এখন আর একটা জায়গায় যাওয়ার আছে। মাহিঃ কোথায়? আশফিঃ তোমার বাবার কবর জিয়ারত করতে। তারপর ওদের নিয়ে বাবার কবর জিয়ারত করছি আমরা। মামনি খুব কাঁদছে ওনার কবরের সামনে দাড়িয়ে। আমি আর মাহি ওনার জন্য দোয়া করে এক পাশে এসে দাড়িয়ে আছি। মামনি ওনার কবরের সামনে দাড়িয়ে ওনার জন্য দোয়া করছেন। হঠাৎ দুজন লোক মামনির পেছনে এসে দাড়ালো। ওরা কিছু করার আগেই আমার গার্ড ওদের শুট করে দিল। আমি তখন মামনি কে ওখান থেকে তাড়াতাড়ি সরিয়ে আনার জন্য এগিয়ে গেলাম তখন মাহি পেছন থেকে চিৎকার দিয়ে উঠলো। ওরা শুধু দুজন ছিলনা। চারপাশ ঘিরে ফেলেছে আমাদের। আর দুটো ছেলে মাহির মাথায় গান ধরে রেখেছে। আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলামনা। আমার গার্ডের সংখ্যা বেশি ছিলনা। আমি কোনো কিছু না ভেবেই মামনির কাছে না গিয়ে মাহির কাছে যে দুজন ছিল তাদের শুট করে দিলাম। কিন্তু আমার গার্ডের সংখ্যা মাত্র চারজন থাকায় ওরা ওদের সাথে পারছিলনা। আমি মাহির কাছে দৌড়ে যাওয়ার আগেই মাহি মা বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো। আমি একবার পেছনে তাকালাম। কিন্তু ঐ দৃশ্য আমি আর সহ্য করতে পারলামনা। ওরা যখন মাহিকে টার্গেট করে শুট করতে যাবে আমি তখন সেখান থেকে ওকে সরিয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি দৌড়ে এসে সোজা গাড়িতে উঠে বাসায় চলে এলাম। ওরা অনেক্ষন আমাদের গাড়ির পিছু নিয়েছিল।মাহিকে বাঁচানোর জন্য সেখান থেকে পালিয়ে আসা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিলনা । মাহি সেন্স হারিয়েছে। ওকে গাড়ি থেকে কোলে তুলে নামিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। বেশকিছুক্ষণ পর ওর সেন্স ফিরলো। সেন্স ফেরার পর ও শুধু একবার মা বলে চিৎকার করে ডেকে স্তব্ধ হয়ে গেলো। অনেক বার মাহিকে ডাকছি ও কোনো সাড়া দিচ্ছেনা। ওর এ অবস্থা দেখে ডঃ ওকে ঘুমের মেডিসিন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল। আমি ওর এই অবস্থা তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছিনা। আর তার ওপর আজকে চোখের সামনে যা ঘটে গেলো আমি নিজেই নিজেকে সামলাতে পারছিনা আর ও কিভাবে সেটা সহ্য করবে। চোখের সামনে ওরা মামনির গলা ছুরি দিয়ে কেটে দিল। আর আমি মামনিকে বাঁচাতে পারলামনা।কাল সকালে মামনির দাফন। আরও একজন আপন মানুষ আমার চোখের সামনে মারা গেলো আমি কিচ্ছু করতে পারলামনা। আমি কিভাবে মামনির দাফন কার্য সম্পূর্ণ করবো?( কেঁদে বলছিল)। সারা রাত মাহির পাশে বসে আছি আর চোখের পানি ফেলছি। ঠিক সেই দিনটার মত আজকে আবারও নিজেকে অসহায় লাগছে। আর পারছিনা এসব সহ্য করতে। আমি এবার সত্যি মরে যাবো। না আমি এসব কি ভাবছি আমাকে তো মাহির জন্য বাঁচতে হবে। ওকে সামলাতে হবে। আমি এভাবে ভেঙ্গে পরলে ওর কি হবে। নিজেকে বহু কষ্টে সামলে নিলাম। ভোর হয়ে গেছে মাহি কে কড়া ডোজের ঘুমের মেডিসিন দিয়েছে তাই এখনো ঘুমাচ্ছে। আমি মামনির জানাযার ব্যবস্থা করছি। মাহি ঘুম থেকে উঠেছে কখন আমি খেয়াল করিনি। মামনির লাশের পাশে বসে মামনির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে নিরবে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে শুধু কাঁদছি। এর মাঝে পুলিশ এসে আমাকে বললো এবার ও কোনো এভিডেন্স কালেক্ট করতে পারেনি। আমি শুনে শুধু চুপ করে দাড়িয়ে আছি আর চোখের পানি ফেলছি। কিছুক্ষণ পর মামনির দাফনের ব্যবস্থা করে বাসায় ফিরলাম। মাহি ঠিক আগের স্থানেই পাথরের মত হয়ে বসে আছে যেখানে বসে ছিল মামনির কাছে। ওর এরকম অবস্থা দেখে আমার মাথা কাজ করছেনা। এত বড় ধাক্কা পেয়েছে ও। এতে ওর আবার বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যাবেনা তো। আমি তাড়াতাড়ি ওর কাছে গেলাম। মাহি? এই মাহি? তুমি কোনো কথা বলছোনা কেনো? তুমি কি খুব অসুস্থ বোধ করছো? দাড়াও আমি এক্ষনি ডঃ কে ফোন করছি। মাহিঃ আশফি, আমি একদম ঠিক আছি। (স্বাভাবিক কন্ঠে) আশফিঃ কথাটা বলে ও উঠে রুমে চলে চলে গেলো। ও কি আমার ওপর অভিমান করেছে? আমি মামনি কে বাঁচাতে পারিনি বলে? হ্যাঁ এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু ও আমার থেকে এভাবে দূরে চলে গেলে আমি কিভাবে বাঁচবো? আমি রুমে গেলাম। দেখলাম ও বসে মামনির ছবির দিকে তাকিয়ে কি যেনো ভাবছে। কিন্তু ওর চোখে কোনো পানি নেই। ওর এই স্বাভাবিক থাকাটাই আমার কেমন যেনো অস্বাভাবিক লাগছে। আমার চোখ থেকে এখনো অঝরে পানি পরেই যাচ্ছে কিন্তু ও কিভাবে এতো স্বাভাবিক আছে? আমাকে ওর সাথে কথা বলতে হবে। আমি ওর কাছে গিয়ে বসলাম। আমি ওকে কিছু বলার আগেই ও কথা বললো। মাহিঃ আশফি? মায়ের বডি কি পোস্টমর্টেম করা হয়েছে?? আশফিঃ আমি ওর এই কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলামনা। না, আমি করতে দেইনি। আমি চাইনি মামনির শরীর ক্ষত বিক্ষত করুক ওরা। মাহিঃ হুম। অনেক ধন্যবাদ। আশফিঃ দিন পেরিয়ে রাত হয়ে গেলো। মাহি সবকিছু কেমন স্বাভাবিক ভাবে যেনো মেনে নিচ্ছে।সব কজ করছে স্বাভাবিকভাবে। কিন্তু মুখে কোনো হাসি নেই। রাতে ডিনার করে ও এসে শুয়ে পরলো। ওকে দেখে আমার খুব টেনশন হচ্ছে। আমি পাশে গিয়ে শুয়ে পরলাম। ও কোনো কথা বলছেনা। ঘুমিয়ে পরেছে হয়তো। রাত ২:৩০ টা বাজে আমার চোখে এখনো ঘুম নেই। আমি উঠে বেলকোনি তে গিয়ে দাড়ালাম।মামনির সাথে কাটানো সময় গুলোর কথা ভাবছি আর চোখের পানি ফেলছি। নাহ্ এভাবে আর চোখের পানি ফেলে সময় নষ্ট করবোনা। এক এক করে সবাইকে ওরা কেড়ে নিচ্ছে। মাহির কোনো ক্ষতি হওয়ার আগে আমাকে ওদের মোকাবেলা করতে হবে তাতে যা হওয়ার হবে। পুলিশের ওপর আর ডিপেন্ড করা যাবেনা। মাহির কথা মনে পড়ে ঘরে এলাম। এ কি মাহি কোথায়? নিচ থেকে(ড্রয়িংরুম)গুলির শব্দ এলো আমি দৌড়ে নিচে নেমে গেলাম। দেখলাম ও একটা শ্যাম্পেইনের বোতলের মিড পয়েন্টে গুলি করার চেষ্টা করছে কিন্তু বার বার মিস হচ্ছে। আমি পেছন থেকে ওর দুহাত বোতলের মিড পয়েন্টে তাক করে ধরে শুট করলাম। এবার গুলিটা বোতলের মাঝে লেগে ভেঙ্গে গেলো। তারপর ও হাত দুটো নিচে নামালো। নিঃশব্দে দাড়িয়ে কাঁদছে আমি ওকে বাঁধা দিচ্ছিনা। ও সামনে ঘুরে আমাকে জড়িয়ে ধরে একবার মা বলে ডেকে কেঁদে উঠলো। আমিও নিজেকে সামলাতে পারলামনা। ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছি। তারপর ওকে ঘরে নিয়েলাম। মাহিঃ আশফি আমি নিজেকে বদলাতে চাই। আশফিঃ আমি বুঝতে পেরেছি ও কি বলতে চাচ্ছে। ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে ওকে ঘুমাতে বললাম। খুব ভোরে মাহি আমাকে ডেকে তুললো। আজ থেকে মাহি নিজেকে নতুন করে প্রস্তুত করবে। মাহির এই উদ্যম তেজ ই আমাকে নতুন করে শক্তি দিচ্ছে। মাহিঃ আশফি? শুরু করা যাক। আশফিঃ হুম। এসো। আমি মাহিকে শুট করা থেকে শুরু করে কুংফুর প্রতিটা স্টেপ শেখালাম। বেশি সময় লাগেনি। ৩ মাসের ভেতর মাহি নিজেকে যথেষ্ট পারফেক্ট ভাবে গড়ে তুলেছে। মাহিঃ আশফি, আমি ভেবে নিয়েছি আমার সব প্রপাটি বেসরকারি যে প্রতিবন্ধী দের হেল্প ফান্ড রয়েছে সেখানে দিয়ে দিব। আর তুমি এটা আজই নিউজপেপারে হেডলাইন করে দাও। আশফিঃ ওকে ডিয়ার।(মুচকি হেসে) মাহিঃ আজকে সন্ধ্যাই আমি আর আশফি গাড়িতে করে কোর্টের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলাম কোনো বডিগার্ড ছাড়াই। তারপর যেটা হলো আমাদের দুপাশে দুটো গাড়ি এসে আমাদের গাড়িটা আটকে ধরলো। আমরা সারেন্ডার করলাম ওদের সামনে। ওরা কিছুটা অবাক হয়ে আমাদের কিছু না করে ওদের বসের কাছে নিয়ে গেলো। আমাকে একটা রুমে আটকানো হলো। আর আশফিকে আমার কাছ থেকে নিয়ে গেলো। আমি তো চুপচাপ বসে আছি আমি জানি আমার আশফি এখন কি করছে। এখন শুধু চারপাশ থেকে গুলির আওয়াজ আসছে। শুধুমাত্র ওদের কাছে পৌঁছানোর জন্য এতো প্ল্যান। এখন সব গার্ড এখানে পৌঁছে গেছে। চাইলে পুলিশ কে ইনফর্ম করতে পারতাম। কিন্তু আমি নিজে চোখে ওদের মৃত্যু দেখতে চাই। হঠাৎ ২ টা রোবট ভেতরে ঢুকে আমাকে বের করে নিয়ে ঐ শয়তান টার সামনে নিয়ে গেলো। তার মানে কি? আশফি কিছুই করতে পারেনি। গিয়ে দেখলাম ওরা সত্যি আশফি কে ধরে রেখেছে। তবে এরা কেউ মানুষ নয়। সবাই রোবট। এই শয়তানটার এতো ক্ষমতা তবুও এই প্রপাটির জন্য এত কিছু করেছে শুধুমাত্র সমাজের সামনে ছদ্মবেশে থাকার জন্য। আমাকে আশফির পাশে নিয়ে দাড় করালো। আশফি? এখন কি হবে? মানুষ গুলোকে shoot করা গেলেও এদের কি করবে? আশফিঃ ডিয়ার এতো টেনশন নিওনা। একটু পরেই এই রোবট গুলো একাই থেমে যাবে। মাহিঃ কিভাবে?? আশফিঃ হুম। আমি জানতাম ওর অনেক পাওয়ার তাই সে ব্যবস্থা আমি এখানে ঢুকেই করেছি। আমার গার্ড দের ইনফর্ম করে দিয়েছি। ওরা সমস্ত জায়গায় ছড়িয়ে গিয়েছে। এই রোবট গুলোর প্রত্যেকটা র মেইন সফটওয়্যারে একই কোড দেওয়া। আমার একটা গার্ড অলরেডি ঐ সফটওয়্যার এর কোড হ্যাক করে রেড বাটনে ক্লিক করে দিয়েছে। প্রসেসিং চলছে। আস্তে আস্তে সবগুলোই মাটিতে পরে যাবে। মাহিঃ ওয়াও ইউ আর সো ব্রিলিয়ান্ট। অলরেডি রোবট গুলোর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এদিকে জ্যাক কং(মাফিয়ার leader) চিল্লা চিল্লি করছে আর আমাদের জাপানিজ language এ গালাগাল দিচ্ছে। তারপর ওর ছেলে কে ইশারায় আমাদের মেরে দেওয়ার কথা বললো। তখন পেছন থেকে জ্যাক কং এর ছেলে আশফির মাথায় গানের পেছন দিয়ে আঘাত করলো। ও মাথা ধরে নিচে বসে পরলো। আশফির মাথার রক্ত দেখে নিজেকে আর কনট্রোল করতে পারিনি। সোজা ওর তল পেটে গায়ের সমস্ত জোড় দিয়ে লাথি মেরে দিয়েছি। আমাকে শুট করার আগে ওর হাত থেকে গান টা কেড়ে নিয়ে সোজা ওর কপালে শুট করে দিয়েছি। এবার জ্যাক কং আমাকে মারার জন্য এগিয়ে এলো। আশফি উঠেই ওকে মেরে নিচে ফেলে দিল। কিন্তু তারপরেও নিজেকে সারেন্ডার করছেনা। একবার মনে হলো আমি নিজেই ওর গলা কেটে নামিয়ে দিব। কিন্তু আমার হাত কাঁপছিল। সাহস পাচ্ছিলামরা। আমি আশফিকেই এই কাজ টা করতে বললাম। আমি পেছন ঘুরে আছি। আশফি ছুরি দিয়ে ওর গলা কেটে নামিয়ে দিল। আমি চোখ বন্ধ করে আছি। আর ঐ শয়তানটার আতর্নাদ শুনতে পাচ্ছি।
আশফিঃ Dear.Let’s go. মাহিঃ আমি আশফির ডাক শুনে ওর দিকে তাকালাম। বিজয়ের হাসি দেখতে পাচ্ছি ওর ঠোঁটের কোণে। আশফিঃ ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বুঝতে পারছি ও কতোটা খুশি। আমি ওর কাছে গিয়ে ওর ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে ওকে নিয়ে বেরিয়ে এলাম। ★★Marriage anniversary ★★ এক বছর পূর্ণ হলো ওদের বিয়ের। আশফিঃ মাহি জলদি উঠো। আজকের দিনেও এভাবে ঘুমোবে? আমাদের তো বেরোতে হবে? কি ঘুম!! আমি ডেকেই যাচ্ছি আর ও শুধু হুম হুম করছে। আমি ওর কাছে গিয়ে ওর নাকের মাথায় ছোট্ট করে কামড় দিলাম। মাহিঃ উহহহ। আশফি?? কি করছো বলো তো? এভাবে কেউ ঘুম ভাঙ্গাই? আশফিঃ আমি তোমাকে ডাকছি কখন থেকে? তুমি কি ভুলে গেছো আজকে কি? মাহিঃ একদম না। আশফিঃ তাহলে তাড়াতাড়ি উঠো। যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। ও ফ্রেশ হয়ে বাইরে এলো। ওকে নিয়ে আমাদের দুজনের বাবা মায়ের কবর জিয়ারত করে বাসায় ফিরলাম। ও এসে আবার শুয়ে পরলো। মাহি এসব কি? মাহিঃ কি? আশফিঃ আজকে আমাদের বিবাহ বার্ষিকী। বাসায় পার্টির arrangement করতে হবে। কত guests আসবে জানো তুমি?? মাহিঃ খবরদার। বাসায় একদম পার্টির কোনো arrangement করবেনা। আজকের দিন আর রাত টা শুধু আমি আর তুমি একা উপভোগ করবো। আশফিঃ Really?? মাহিঃ ওর হাতটা ধরে এক টানে আমার কাছে নিয়ে এলাম। হুম… Really. তারপর আমি ওর গালে চুমু দিতে শুরু করলাম। আশফিঃ মাহি কি করছো? সবাই তাকিয়ে দেখছে তো। মাহিঃ উফফ সবাই এখানে কোথা থেকে এলো? আশফিঃ আরে সামনে তাকিয়ে দেখো পাবলিকেরা তাকিয়ে আছে। মাহিঃ তাই নাকি?? ওহহো তাই তো। প্লিজ প্লিজ আপনারা অনেক দেখেছেন এবার থামুন। আর দেখতে হবেনা। আশফিঃআমরাও আর দেখতে দেবোনা। তারপর মাহি আশফি কে নিয়ে কম্বলের নিচে ঢুকে পরলো। এরপর বাকিটা ওদের মাঝেই থাক। ———–সমাপ্ত———– (অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার গল্পটাকে আপনারা এভাবে সাপোর্ট করেছেন। এটাই আমার ১ম লেখা ছিল। ভাবিনি এত পরিমাণ সাপোর্ট পাবো আপনাদের। জানি গল্পের কথাগুলো সেভাবে সুন্দর করে সাজিয়ে লিখতে পারিনি। তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আর গল্পটাকে একটু ফিল্মি স্টাইলেই লিখলাম শুধুমাত্র একঘেয়েমিতা দূর করার জন্য। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)
 

রোমান্টিক_অত্যাচার_১৭

1
রোমান্টিক_অত্যাচার_১৭
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
————————–
আশফিঃ হয়েছে হয়েছে আর কিছু করতে হবেনা। আশে পাশে গার্ডরা ঘোরাফেরা করছে। ওরা দেখে ফেলতে পারে।
মাহিঃ এই তুমি কি? হ্যা? তুমি এখানেও ওদেরকে নিয়ে এসেছো? আমরা কি কোথাও গিয়েও একাকিত্ব ভাবে সময় কাটাতে পারবোনা?
আশফিঃ মাহি তুমি তো জানোই সবকিছু। তারপরেও কেনো এমন করো? এখন ঐ মাফিয়ার বাচ্চা তো আরও বেশি ক্ষেপে আছে। এই প্রপাটি ভোগ করেই ও এতদূর পর্যন্ত এসেছে। এখন সেটা ওর হাতছাড়া হয়ে গেলো। ও মাফিয়া সবার আড়ালে আর সবার সমানে ও একজন বিজনেসম্যান। ওর বিরুদ্ধে পুলিশ পর্যন্ত তেমন এভিডেন্স জোগাড় করতে পারেনি।
মাহিঃ থাক আমি এসব শুনতে চাচ্ছিনা। তুমি বাসায় চলো। আর ভালো লাগছেনা থাকতে।
আশফিঃ ডিয়ার এভাবে রাগ করলে চলে? আমাদের তো আরও কত প্লান ছিল। আমরা বাইরে থেকে ডিনার করে যাবো।
মাহিঃ না আমি এখনি যাবো। তুমি না গেলে আমি চলে যাচ্ছি থাকো তুমি।
আশফিঃ এই মাহি? আরে… দাড়াও। কি রাগ মেয়েটার?
তুমি এভাবে রাগ করে বাসায় চলে আসলে আজকে কতো প্লান ছিল আমাদের। এই তুমি আমার সাথে কথা বলবেনা??খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
মাহিঃ আমার এমন ধরনের জীবন ভালো লাগছেনা। কি বোরিংফুল লাইফ আমার। কান্না করতে ইচ্ছা করছে।
আশফিঃ ঠিক আছে কান্না করো।
মাহিঃ কি ধরনের এগুলো? তুমি দেখছো আমার মন খারাপ। তাহলে তুমি কেনো ল্যাপটপ নিয়ে বসলে?
আশফিঃ কাজ আছে তাই।?
মাহিঃ তাহলে আমি কি করবো? আমার খুব বোরিং লাগছে।
আশফিঃ এর জন্যই তো বলেছিলাম বাইরে কিছু সময় কাটাতে। এখন আর কি করবে dance করো।
মাহিঃ না তুমি আমার সাথে গল্প করবে। ওটা রাখো। কি হলো আমার কথা কানে যাচ্ছেনা? আমি কিন্তু এখন সত্যিই গান ছেড়ে নাচা শুরু করবো।
আশফিঃ sure..
মাহিঃ অসভ্য ছেলে?দাড়াও……
আশফিঃ মাহি একদম এই কাজটা করবেনা। তুমি ল্যাপটপ টা বন্ধ করলে আমি কি আর এটা খুলতে পারবোনা? হুহ বেচারি। এখন দেখো কেমন লাগে। বেশি রাগ করলে বেশি লস।(মনে মনে)
মাহিঃ আমি রাগ করে চলে এসে গানের সাউন্ড ফুল স্পীডে দিয়ে উড়োধারা dance শুরু করলাম।
আশফিঃ ভালোই পারে। কিছুক্ষণ পর আমি গিয়ে নাচের মাঝেই ওকে কোলে তুলে বেডরুমে নিয়ে এলাম।
মাহিঃ এই আমাকে নামাও। নামাও বলছি। তারপর ঠাস করে বিছানার ওপর ফেলে দিল। তুমি দেখতে পাচ্ছিলেনা আমি নাচ করছিলাম তাহলে কি কারণে তুমি আমাকে রুমে নিয়ে এলে??
আশফিঃ さて、ハニーでお会いしたい ( Sate, hanī de o ai shitai)
মাহিঃ কি? কি বলো এসব? কিছুই তো বুঝিনা।
আশফিঃ মানে এখন আমি তোমার সাথে মধুর মিলনে যেতে চাই।
মাহিঃ How cheap!! একদম আমার কাছে আসবেনা কিন্তু।
আশফিঃএকদম চুপ। কোনো কথা বলবেনা। এমনি সময় তো রোমান্স করার জন্য পাগল হয়ে যাও আর আমি যখন কাছে আসতে চাই তখনই আবার সেই আগের মাহি হয়ে যাও। ঠিক আছে যাও আর কাছেই আসবোনা তোমার। তারপর আর কোনো কথা না বলে ওর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
মাহিঃ ভালো হয়েছে। রাগ করেই থাকেন। সকালে ব্রেকফাস্ট করে আশফি বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে কিন্তু অফিস যাওয়ার জন্য নয়। তাহলে কোথায় যাবে ও? আশফি তুমি কোথায় যাচ্ছ?
আশফিঃ অনেক দিন প্রাকটিস হয়না। আজকে একটু কুংফু প্রাকটিস করে আসি। চলো তোমাকে ও নিয়ে যায়।
মাহিঃ না। আমি গিয়ে কি করবো?
আশফিঃ শিখিয়ে দিব। চলো।
মাহিঃ ওগুলো তোমার কাজে আসবে আমার না। ওসব জিনিস আমি শিখবোনা।
আশফিঃ আগে চলো। তারপর দেখা যাবে। ওকে নিয়ে কুংফু মাস্টারের কাছে গেলাম। ওর সাথে মাস্টারের পরিচয় করিয়ে দিয়ে একটা ফাঁকা জায়গায় এসে আমি প্রাকটিস করছি। আর ও শুধু ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তারপর উঠে আমার কাছে এলো। কি হয়েছে? শিখবে?
মাহিঃ হুম।
আশফিঃ ভেরি গুড। তাহলে চলো 1st step থেকে শুরু করি।
মাহিঃ না আমি এই স্টেপ থেকেই শিখবো।
আশফিঃএটা থেকে তো তুমি শুরু করতে পারবেনা। কুংফুর এক একটা ধাপ আছে। হুট করেই মাঝ থেকে শেখা যায়না।
মাহিঃ না না না। আমি এটাই শিখবো। তুমি এটাই শেখাবে আমাকে।
আশফিঃ আ…। আচ্ছা ঠিক আছে। দেখো পারো কিনা। আমাকে পেছনে থেকে ধরে কিভাবে শিখবে? ? এখানে এসো সামনে।
মাহিঃ তুমি করো না। আমি তোমাকে ফলো করছি। তুমি হাত পা যেভাবে মুভ করবে আমি সেভাবেই মুভ করবো।
আশফিঃ ওকে।
মাহি তুমি কি করছো? তুমি কি কুংফু শিখছো নাকি রোমান্স করছো? কোনটা? মাহি তুমি শুনতে পাচ্ছো আমি কি বলছি সবাই দেখছো কিন্তু। তোমার যত রোমান্স কি বাইরে আসলে শুরু হয়ে যায়?
মাহিঃ চুপ করোনা। কেউ দেখছেনা।
আশফিঃ সামনে একবার তাকিয়ে দেখো।
মাহিঃ ওর কথা শুনে সামনে তাকিয়ে দেখলাম। সবাই সত্যি কিভাবে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে ফ্রি তেই রোমান্টিক ফিল্ম দেখছে। আমি লজ্জা পেয়ে সেখানে থেকে সরে আসলাম।
আশফিঃ এখন লজ্জা পেয়ে সরে গেলো। এই মেয়েটা মনে হয় এখনও পাগল আছে। সবাই এখনও দাড়িয়ে তাকিয়েই আছে। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম, কি হয়েছে? শেষ তো। এবার আমার কথা শুনে সবাই একটু লজ্জা পেয়ে চলে গেলো। ওকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। আচ্ছা তোমার কি সবার সামনে গেলে রোমান্স করতে ইচ্ছে হয়? আর কিছুই তো শিখলেনা।
মাহিঃ না আসলে তুমি যখন প্রাকটিস করছিলে। তোমাকে দেখে কেমন যেনো একটা আকর্ষণ কাজ করছিল আমার ভেতর।
আশফিঃ হ্যা। আমি বাইরে থাকলেই তোমার ভেতর আকর্ষণ কাজ করে। বাসায় থাকলে একদম আমিষ less হয়ে থাকো। আর এটা শিখলে কখনো কাজে ও আসতে পারতো? এটাও শিখলেনা(কুংফু)।
মাহিঃ ওগুলো কোনো কাজে আসবেনা আমার।আর কি বললে তুমি? বাসায় থাকলে আমি তোমাকে একদম আদর করিনা??
আশফিঃ হুম। খুব করো।
মাহিঃ আমি ওর কাছে গিয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে বিছানার ওপর ফেলে দিলাম।
((“১৮+ অংশ”))
আশফিঃ ওহ….মাই….গড। এই প্রথম আমি মাহিকে নতুন ভাবে দেখছি। ও গা থেকে টপ টা খুলে ফেলে আমার কাছে চলে এলো অনেকটা ঝাঁপিয়ে পড়ার মত। মাহি তুমি ঠিক আছো?
মাহিঃ উন্মাদ মনে হচ্ছে?? যেটা ভাবতে পারো। I don’t care. ওকে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। তারপর…………..?
আশফিঃ মাহি আমার বুকের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। আর মাত্র ২ দিন বাকি আছে ওর জন্মদিনের। অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ ওয়েট করছে ওর জন্য। ও চিন্তাও করতে পারবেনা ওর জন্য কি সারপ্রাইজ রেখেছি আমি।
চলবে………

রোমান্টিক_অত্যাচার_১৬

0
রোমান্টিক_অত্যাচার_১৬ লেখিকাঃ #Israt_Jahan ধারনাঃ #Kashnir_Mahi —————– -আমি বাইরে যতটুকু সময় থাকবো ততটুকু সময় তুমি অনেক সাবধানে থাকবে। যতই সিকিউরিটির ব্যবস্থা থাকুক নিজের সাবধনতা নিজের কাছে। আর আমি খুব তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার চেষ্টা করবো। হুম? -ঠিক আছে। কিন্তু আমার সময় কাটবে কি করে আমি শুধু সেটা ভাবছি। তুমি চলে গেলে এই এত বড় বাড়িটা আমার কাছে শুধু কারাগার মনে হয়। আর থাকলো শুধু সার্ভেন্টস ওদের একজনের ভাষা ও তো আমার বোধগম্য হয়না। তাই ওরা থাকা ও যা না থাকা তাই। মা আসলে কি এমন ক্ষতি হতো? -এই একদম মন খারাপ করবেনা। আর মামনি কে ও আমি খুব শিঘ্রই এখানে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি। একটু কষ্ট করো। আর আমি তো প্রতি সেকেন্ডে আমার বৌ এর মুখ দেখবোই। এখন আমার কাছে এসো একটু। ওকে আমার কাছে এনে কপালে ছোট্ট করে একটু খানি ভালোবাসা দিয়ে বেরিয়ে এলাম। -আশফি গান টা এখানে রেখে গেছে কেনো? নিশ্চই আমার জন্য। কিন্তু আমার কাছে এটা থাকা ও যা না থাকা ও তো তাই। আমি তো এটা ব্যবহার ই করতে পারবোনা। পাগল একটা। লাস্ট ফোন করেছিল ১২ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড আগে। আমাকে বলা হলো খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো। এতক্ষণে ও কোনো খবর নেই। ধুর এরকম ভাবে কখনও সময় কাটে। বেলকোনি তে দাড়িয়ে আছি। মনে হচ্ছে রুমের মাঝে কেউ হাটাচলা করছে। বেলকোনি থেকে রুমে এলাম। আশফি? ও কখন আসলো? আর এসে এভাবে দাড়িয়ে আছে কেনো গম্ভীরভাবে? এই তুমি কখন এলে আর দেখলে যে আমি বেলকোনিতে দাড়িয়ে আছি তাহলে আমাকে ডাকলেনা কেনো? আর ফ্রেশ না হয়ে এভাবে রোবটের মত দাড়িয়ে আছো কেনো? যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি যখন কথাগুলো বলছিলাম ও তখন নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল।আর আমার কথার উত্তরে ও শুধু মাথাটাই নাড়ালো। কোনো কথা বলছেনা। মুখের ভাব দেখে মনে হলো এই প্রথম বাংলা কথা শুনলো। আমি শুধু ওর হাটাচলা লক্ষ করছি। কেমন অদ্ভুত লাগছে। ওয়াশরুমে গেছে। কিন্তু এত সময় নিচ্ছে কেনো? আশফি? এই আশফি? কি করছো বলো তো এতক্ষণ? মেয়েদের মত এত সময় কবে থেকে নেওয়া শুরু করলে? ওহ্ বের হয়েছো তাহলে! আশফি তুমি কি সত্যিই ফ্রেশ হয়েছো তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছেনা। কি হল? কথা না বলে এভাবে আমার দিকে আগাচ্ছো কেনো? এতক্ষণে ওর চোখের দিকে আমার নজর গেলো। এই চোখ তো আমার আশফির নয়। ওর চোখে আমি কখনোই এতো হিংস্রতা দেখিনি। এ আমার আশফি হতেই পারেনা। কিন্তু কে এ? ও আমার অনেক কাছে চলে এসেছে। আমি ভয়ে চোখ টা যখনই বন্ধ করলাম ঠিক তখনই আমার কানে গুলির শব্দ এলো। চোখ খুলে দেখলাম আশফির হাতে গান আর নিচে ঐ নকল আশফি সেজে আসা ছেলেটা পড়ে আছে। মাথার পেছন থেকে রক্ত বের হচ্ছে। – সিকিউরিটি? (আশফি) -ইয়েস স্যার। -এটাকে নিয়ে আমার ডগি দের ডিনার এর ব্যবস্থা করো। -ওকে স্যার। মাফ করবেন স্যার ওকে আমাদের একদম চোখে পড়েনি। বাসার ভেতর ক্ষুদ্র কোনো প্রাণী ঢুকতে পারেনি। কিন্তু ও কিভাবে ঢুকলো বুঝতে পারছিনা স্যার। – ঠিক আছে। সেটা দেখার ব্যবস্থা কাল সকালে করছি। এখন এটা কে নিয়ে যাও। -এটা কি করে সম্ভব বলো তো। কত বড় ভুল করে ফেলছিলাম আমি। আমি তো ধরেই নিয়েছিলাম এটা তুমি। ও একদম দেখতে তোমার মত কি করে হতে পারে? -এটা কোনো ব্যাপার না এখানে। ওদের মত বড় ধরনের মাফিয়ারা যে কোনো রাস্তা অবলম্বন করতে পারে। False Face ব্যবহার করেছে ও । সেক্ষত্রে চেনার উপায় ও আছে। সেটা হল চোখ। একমাত্র চোখ দেখেই বোঝা যায় তার ফেস টা আদৌ রিয়েল কিনা। আর তুমি তোমার আশফির চোখ টা ও চেনোনা? -কেনো চিনবোনা। যখন চিনেছি তখন তো ও আমার একদম কাছে চলে এসেছিল। আর তারপরেই তো তুমি চলে এলে। -আর তোমার কাছে না আমি একটা গান রেখে গেছিলাম। সেটা কোথায়? -ঐ তো ওখানেই আছে। ওটা থেকেই বা কি হতো? আমি তো ওটা ব্যবহার করতে পারিনা। -ব্যবহার করতে পারোনা তাই বলে কি কারো সামনে ও সেটা ধরতে পারবেনা? আচ্ছা যাই হোক ও তোমাকে টাচ্ করেনি তো? -হ্যা শুধু টাচ্ কেনো? সাথে চুম্মা ও ফ্রি পেয়েছি। ওভাবে তাকিয়ে হাসছো কেনো? -আমি ওর কাছে গেলাম। শোনো এটা আমার জিনিস। এটা কেউ চাইলেও ছুতে পারবেনা। এইটুকু ভরসা আমি উপরওয়ালার ওপর রাখি।
-জিনিস?? ঐ আমি কি বস্তু? বুঝে শুনে কথা বলতে পারোনা? -তুমি তো বস্তুই। নিজেকে প্রটেক্ট করার মত ক্ষমতা রাখেনা সে তো বস্তই। -তুমি ওয়াশরুম থেকে বের হও তারপর দেখছি।রাতের খাবার শেষ করে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। তুমি সারাদিন থাকো বাইরে। বাসায় আসার পর আবার পিসির সামনে বসলে। আমাকে কি তোমার চোখে বাঁধেনা? -আচ্ছা আমি কাজ অফ করছি। আমার কাছে এসে বসো আজকে আমরা কিছু রোমান্টিক জাপানিজ মুভি দেখি। আরে এসো না এত রাগ করো কেনো? ওকে কাছে টেনে এনে এক সাথে বসে মুভি দেখছি। মাহি? ঘুমিয়ে পড়েছো? আমার কাঁধের ওপর মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছে। ওকে শুইয়ে দিতে গেলাম তখন ও চোখ খুললো। তুমি না ঘুমিয়ে পড়েছিলে? -হুম। তোমার কাঁধের ওপর থেকে মাথা নামিয়ে দিলে কেনো? -তোমার ঘুমাতে কষ্ট হতো তাই। -আমি এভাবেই ঘুমাবো। না থাক। তুমি শুয়ে পড়ো আমি তোমার বুকের ওপর মাথা রেখে ঘুমাবো। তারপর ওকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকের ওপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম।আর ও আমার মাথায় চুলের মাঝে চুমু দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো। ★সকালবেলা★ -হায় আল্লাহ্ সকাল সকাল গুলির আওয়াজ কেনো? ভয়ে একদম লাফিয়ে উঠেছি। আশফি কোথায়? ও আমাকে না বলে কোথায় চলে গেলো। আজকে ওর খবর আছে ও ওর রুলস ব্রেক করেছে। উঠে সামনে বাগানের দিকে গেলাম। ওখান থেকেই গুলির শব্দ টা আসছে। ঐ তো আশফি ওখানে দাড়িয়ে আছে। এই ছেলে তুমি এখানে কি করছো? সকালে আমাকে তোমার………… -Relax dear তুমি একটু ওয়েট করো। আমি এদের ব্যবস্থা করে তারপর তোমার সাথে Romance করছি। -মানে কি???? এই তুমি এভাবে এই ছেলেটাকে শুইয়ে রেখেছো কেনো? আর ওদেরকে এভাবে এই রোদের ভেতর দাড় করিয়ে রেখেছো কেনো? – ও কে শুইয়ে রাখিনি। shoot করে দিয়েছি। এরপর আরও ক’টা কে shoot করবো? -তুমি কি মানুষ? এভাবে ঐ নিরীহ ছেলে গুলোকে মারছো কেনো? -ওহ্, তুমি না একদম বুঝোনা। এখানে দাড়িয়ে দেখো তাহলে বুঝতে পারবে। -ও সব গুলো গার্ড, সার্ভেন্টস দের এই সিরিয়ালে দাড় করিয়ে রেখেছে। তারপর সবার পেছনে গিয়ে ওদের ঘাড়ের পেছনে কি যেনো দেখে তারপর হঠাৎ কাউকে পেছন থেকেই shoot করে দিচ্ছে। কিছুই বুঝতে পারছিনা। আর ওদের এভাবে মারা দেখে আমার খুব খারাপ লাগছিল তাই রুমে চলে আসলাম। কিছুক্ষনের ভেতরেই ও রুমে আসলো। এসে আমার কোলের ওপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। কি? অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছেন Shoot করতে করতে?? – না গো। shoot করতে আমার খুব ভালোই লাগে এখন। এনজয় করি। -তুমি ওদের কে কেনো মারলে শুনি? -ওরা ঐ মাফিয়ার লোক ছিল। -কি? তুমি কিভাবে বুঝলে? -সেদিন যে ছেলেটা তোমাকে মারতে এসেছিল ও আমার গার্ড হয়ে মিশে ছিল আমার গার্ডদের সাথে। আর ও এখানে আমরা আসার আগেই ঢুকে পড়েছিল। আমার ই ভুল ছিল। আসার পর সবকিছু একবার ভালো করে চেক করে দেখা দরকার ছিল। আর আমি ওদের চিনলাম কি করে এখন সেটা শুনো। আমার সবগুলো গার্ডের ঘাড়ের পেছনে একটি নির্দিষ্ট ট্যাটু আঁকা রয়েছে। তবে সেটা সাধারণ কোনো ট্যাটু নয়। ঐ ট্যাটু টা আঁকার সময় এমন একটা শুকনা পদার্থ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে যেটা শুধু মাত্র রোদে পড়লেই গোল্ড এর মত গ্লেস দেই। এই গ্লেসটা খালি চোখে দেখা যায়না এই চশমা টা পড়তে হয়। তাহলেই দেখা সম্ভব। আর ওরা শুধু আমার ট্যাটু টাই নকল করেছে। তার ভেতরের কোনো রহস্যই ওরা জানেনা। বোঝাতে পেরেছি? -Genius. বুঝলাম। আচ্ছা আশফি তোমার কি এই মানুষ গুলো খুন করার সময় একটু ও হাত কাঁপেনা? -না কাঁপেনা। বাবা মা কে নিজের চোখের সামনে মরে যেতে দেখেছি। তোমাকে ওরা আঘাত করেছিল তোমার সেই আঘাত পাওয়ার কষ্ট দেখেছি। তাই আর হাত কাঁপেনা। এখন শুধুমাত্র তুমিই আছো আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে। তাই তোমার কোনো ক্ষতি আমি হতে দেবোনা। যদি এর থেকেও কঠোর হতে হয় আমাকে তাহলে তাই হবো। -কথাগুলো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে এক নিঃশ্বাসে বলছিল। এখন নিশ্চুপ হয়ে আমার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। এখন এই চোখে রাগ নেই। ভালোবাসা পাওয়ার আকুলতা কাছের মানুষকে হারানোর ভয় ওর চোখে ফুটে উঠেছে। ও আমার কাছে এগিয়ে এলো। -আমি জানি মাহি তুমি এগুলো সহ্য করতে পারোনা।কিন্তু তোমাকে safe রাখার জন্য আমাকে আরও কঠোর হতে হবে। বুঝেছো? তারপর ওর গালে হাত রেখে ওর ঠোঁটে অনেক্ষন ভালাবাসা পরশ দিলাম। -আশফি আজকে চলোনা একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি। -না মাহি। আজকে সব থেকে important একটা কাজ আছে তোমাকে ও সাথে যেতে হবে। -কোথায়? -কোর্টে। বিকালে ওকে নিয়ে কোর্টে গেলাম। তারপর ওর সমস্ত প্রপাটির উইল শো করে আইনী ব্যবস্থায় ওকে ফিরিয়ে দিলাম। এরপর থেকে ঐ মহিলা চাইলেও আর কোনো দাবি করতে পারবেনা। এমন কি কোনো পাওয়ার অফ এটোনির উইল ও কাজে আসবেনা। -আশফি, এর কিছুই আমার প্রয়োজনে আসবেনা। আমি চাই ওদের শাস্তি হোক। -তার জন্য যোগ্য প্রমাণ দরকার। আমার কাছে সেরকম কোনো প্রমাণ নেই।আমাকে আরও অনেক যুক্তিযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। আমি পুলিশ অফিসার এর সাথে যোগাযোগ রেখেছি। উনি আমাকে সহযোগিতা করবেন।
-ঠিক আছে বুঝলাম। কিন্তু আমি এতসব দায়িত্ব নিতে পারবোনা। এগুলো তুমি ই দেখাশোনা করবে। আর একটা কথা আমাদের বাবা বেঁচে থাকতে যখন এই কোম্পানি দুটো একসাথে ছিল ঠিক তেমনভাবেই আবার ও তুমি এই কোম্পানি দুটোকে একসাথে করবে। ঠিক আছে? -হুম। আর হ্যা কাল তোমাকে নিশ্চই ঘুরতে নিয়ে যাবো। এটা নিয়ে আর মন খারাপ করবেনা। যদি চাও বাইরের কান্ট্রিতে ও নিয়ে যেতে পারি। বলো কোথায় যাবে? -তাহলে চলো Anaconda দেখে আসি। -কি? এত কিছু রেখে তোমার এনাকন্ডা দেখার শখ হলো? -হ্যা। তো এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে? Anaconda মুভি দেখে আসলে ওর ওপর ক্রাশ খেয়েছি তো তাই ওকে সামনাসামনি দেখার শখ হয়েছে। -আমি পারবোনা। অন্য কোথাও বলো নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ওর সামনে আমি যেতে পারবোনা। -কেনো? এতো বীরপুরুষ আর এনাকন্ডার সামনে যেতে চাইছোনা? আর ও কি আমাদের খেয়ে ফেলবে নাকি? ও তো ওর জায়গায় থাকবে। আর যদি কিছু করতে ও আসে তোমার গান টা তো আছেই।?? -হিহিহি। কি সুন্দর কথা!! এই শোনো ওসব দেখতে আমি যেতে পারবোনা। পৃথিবী তে এই সাপ জিনিসটাকেই আমি বেশি ভয় পাই। আর ওর সামনে গিয়ে শুধু শুধু নিজেন বিপদ ডেকে আনবো কেনো? আর ঐ বেচারাকেই বা shoot করতে যাবো কেনো? এর থেকে চলো তোমাকে সমুদ্রে নিয়ে যায় ship এ ঘুরবো। অনেক ভালো লাগবে। -না।? -তাহলে আকাশে? প্লেনে ঘুরবো? -না। -গাড়িতে? লং ড্রাইভে যাবো? -না বললাম তো। -তাহলে কোথায়? প্লিজ একটা তো বলো? -ঘোড়ায়। ঘোড়ার পিঠে চড়বো। -ঘোড়া? কি অদ্ভুত তোমার চয়েস। না ঠিক আছে। তাহলে কাল নিয়ে যাবো। এখন ঘুমাতে আসো অনেক রাত হয়ে গেছে। -হুম আসছি। আজ দুপুরের পর আশফি আমাকে নিয়ে বের হলো। একটা জায়গায় এসেছি যেখানে একটা লোক অনেক গুলো ঘোড়া দেখাশোনা করে। ওনার থেকে আশফি একটা সাদা ঘোড়া নিয়ে এলো। এই তুমি একটা ঘোড়া নিয়ে এসেছো কেনো? আর একটা কৈ? -আর একটা কৈ মানে? তুমি একা ঘোড়ার পিঠে চড়তে পারবে? কোনোদিন চড়েছো? চড়োনি তো। তাহলে বেশি কথা না বলে এসো আমার পেছোনে উঠে বসো। -পেছনে মানে? আমি তোমার সামনে বসবো। -আরে সামনে বসে যদি নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পারো? -আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা। -ওকে। তারপর মাহি কে উঠিয়ে ঘোড়ায় চড়াচ্ছি। -আশফি আমি বোধহয় ঘুমিয়েই পড়বো। ঘোড়াটা যেভাবে দৌড়াচ্ছে। -ও আচ্ছা। ও আস্তে দৌড়াচ্ছে? তোমার তাই মনে হলো? ঠিক আছে অনেক শক্ত করে চেপে বসো। -অনেক্ষন ঘোড়ায় চড়ে দুজনেই অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছি। একটা গাছের নিচে গিয়ে ও বসে পড়লো। আমি ওর কোলে আমি মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম। -কি আরাম!! ঘোড়া দাবড়িয়ে আমি ঘেমে গোসল করে ফেললাম আর উনি এসে আরাম করে শুয়ে পড়লো। -আমি উঠে ওর মুখের দিকে তাকালাম। আসলেই ঘেমে গেছে অনেক। ঠিক আছে আমরা দুজনেই শুই। তুমি শুয়ে পরো আমি তোমার হাতের ওপর মাথা রেখে শুবো। -হুম। -ও চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আমি ওর মুখটা দেখছি। মুখের চার পাশ দিয়ে ঘাম ঝড়ছে। আমি মাথা উচুঁ করে ওর মুখের সামনে গিয়ে ফুঁ দিতে থাকলাম। ও চোখ খুলে তাকিয়ে আছে। জানো আমি এখন কিছুটা রোমান্টিক মুডে আছি। এই রোমান্টিক পরিবেশ টা আমার মন টা কে আরও অনেক বেশি রোমাঞ্চকর করে তুলছে। খুব আদর করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু…. -কিন্তু আমি অনেক ঘেমে আছি তাই পারছোনা। তাই তো? -আমি ওর মুখটা মুছে দিয়ে ওর কপালে, দু চোখের পাতায়, নাকে, গালে, থুতনি তে, ঠোঁটে ভালোবাসার ছোঁয়া দিলাম। চলবে………..

রোমান্টিক_অত্যাচার_১৫

0
রোমান্টিক_অত্যাচার_১৫ #লেখিকাঃ Israt Jahan Sobrin #ধারণাঃ Kashnir Mahi #আশফিঃ গেলেই দেখতে পাবে। ওকে কোলে তুলে বেডরুমে চলে এলাম। #মাহিঃ আরে এবার তো নামাও, এভাবে তাকিয়ে থাকবে নাকি কোলে করে। -কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জনাব আমাকে নিচে নামালেন। #আশফিঃ এবার একটু ডানে ঘুরুন ম্যাম। #মাহিঃ ওকে। আমি ডানে ঘুরে দেখলাম একটা মেয়ের আইডল। মুখটা ঢাকা আছে। আর আইডল টা কে একটা হোয়াইট গাউন পড়িয়ে রেখেছে। গাউন টা অনেক সুন্দর। কিন্তু আইডল টা কার হতে পারে? আশফি আমার হাত ধরে আইডল টার কাছে নিয়ে গেলো। তারপর মুখের ওপর থেকে পাতলা সাদা কাপড় টা সরিয়ে দিল। আমি আইডল টার মুখটা দেখে শুধু তাকিয়েই আছি। কারণ আইডল টা কে এতোটাই সুন্দর ভাবে তৈরি করেছে যে আমি নিজেও এতোটা সুন্দর না। #আশফিঃ এটা আমার White Angel. একে দেখেই আমার দিন টা শুরু হতো আর শেষ হতো। #মাহিঃ আমি কি আপনার White angel টা কে ছুঁয়ে দেখতে পারি?? -ও আমার কথাটা শুনে শুধু একটা হাসি দিল। আইডল টার ঠোঁটের নিচের তিল টাকে দেখে মনে হচ্ছে নতুন করে দেওয়া হয়েছে। আশফি তোমার এই আইডল টা দেখছি তোমার মাহির থেকেও অনেক সুন্দর। কথা গুলো বলার সময় আমি যখন ওর দিকে ঘুরে দাড়ালাম ও তখন আমার কপাল সোজা Gun তাক করে আছে। ওর মুখটা দেখে আমি ভীষণ ভয় পাচ্ছি অনেক ভয় করছে। ওকে দেখে আমি বুঝতে পারছিনা ও ঠিক কি করতে চাইছে। ওর এরকম চেহারা দেখে আমার মুখ থেকে কথা বের হচ্ছেনা। শুধু চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। গলা কাঁপা অবস্থায় অনেক আস্তে করে ওর নাম টা উচ্চারণ করলাম -আশফি? ও তখন gun টা একদম আমার কপালের সাথে ঠেঁকিয়ে ধরলো। আমি ভয়ে চোখ টা বন্ধ করে ফেললাম। আমি ওকে চিনতে পারছিনা। ও কি সত্যিই আমার আশফি? (মনে মনে) ও এমন করছে কেনো? ২ মিনিট হয়ে গেলো আমি চোখ বন্ধ করে আছি। সামনে থেকে কোনো সাড়া শব্দ পাচ্ছিনা। আমি চোখটা খুললাম। দেখলাম ও দাত বের করে নিঃশব্দে হাসছে।
#আশফিঃ এতোটা করুণ অবস্থা হবে তোমার? কেউ যদি তোমার সামনে এভাবে তোমার কপালে গান ধরে তুমি একদম silently তার সামনে surrender করবে? আরও একটা বিষয় আমাকে খুব hurt করেছে। এখন পর্যন্ত তুমি আশফি কে বিশ্বাস করোনা। আমি তোমার সামনে গান ধরলাম আর তুমি ভয়ে চোখ টা বন্ধ করে ফেললে? এটা ভেবে নিলে যে আমি তোমাকে মেরে ফেলবো? মাহি তুমি যেদিন আমার গলায় ছুরি ধরেছিলে সেদিন কিন্তু আমি একটু ও ভয় পাইনি। কারণ আমি জানি তুমি আমার সাথে আর যাই করো আমাকে কখনো মারতে পারবেনা। সেটাই ছিল বিশ্বাস। #মাহিঃ ওর এই ফাজলামি টা আমার একটুও ভালো লাগেনি। ও আমাকে অন্যভাবে বোঝাতে পারতো এই বিষয় গুলো। আমি তো সত্যি ভয় পেয়েছি। রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। আমি ওর হাত থেকে গান টা কেড়ে নিয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে দিলাম। তারপর ওর বুকে গান টা ঠেঁকিয়ে ধরলাম। -সেদিন ভয় পাওনি তো কি হয়েছে? আজকে ভয় পাবে। এভাবে আমাকে ভয় দেখানোর মজা তুমি এখন টের পাবে। এটা বলেই আমি ওর বুকের সামনে থেকে গান টা সরিয়ে চোখ টা বন্ধ করে অন্য পাশে এক নাগাড়ে গুলি চালাতে থাকলাম। কি ব্যাপার গুলির শব্দ হয়না কেনো? তার মানে এটা খেলনা ছিল? এই তুমি আমাকে এই খেলনা গান দিয়ে ভয় দেখাতে এসেছো? কি হলো ওভাবে হাসছো কেনো? #আশফিঃ হাসবোনা তো কি করবো? তুমি যা করছো । আমি ওর হাতটা ধরে আমার বুকের কাছে টেনে নিয়েলাম। তারপর ওর কাছ থেকে গান টা নিয়ে ওটাকে লোড করে দেখালাম। -এবার বুঝেছেন এটা খেলনা নাকি সত্যি? #মাহিঃ ও তার মানে এখন নিশ্চই গুলি চালালে গুলি বের হবে? #আশফিঃ Yes.My white angel. তাই বলে আপনি এখন এটাকে নিয়ে খেলনার মত করে খেলবেন না। না হলে যখন তখন murder হতে পারি। #মাহিঃ আরে ধুর এটাকে নিয়ে আমি খেলবো কেনো? এটা নিয়ে তো এখন আমার নাচতে ইচ্ছা করছে। আচ্ছা ঐ song টা প্লে করো তো “Dil kiye goli chali nyano ki banduk se”( Raamleela movie’s song). আমি এখন ঐ গানটা তেই নাচবো। #আশফিঃ আমার কাছে ঐ গান নেই। তুমি সিরিয়াসলি নাচবে? #মাহিঃ ইয়েস মাই ডিয়ার। ঠিক আছে আমি আমার ফোনেই বাজাচ্ছি। তারপর গান প্লে হলো…. Dil kiye goli chali nyano ki banduk se, bum bhi girenge aab pyar ki sanduk se………… Dil kiye goli chali nyano ki banduk se, bum bhi girenge aab pyar ki sanduk se…… Haaa dil kiye goli chali nayno ki banduk se bum bhi girenge aab pyar ki sanduk se…. ishqiye tera mera ishqyaunge dhishqiyaoun ke dhishqiyaoun……. yaah ishqyaun waha dhishqiyaoun…. #আশফিঃ গান টার সাথে ওর নাচ টা ভালোই দেখাচ্ছে। নাচার মাঝেই বার বার ও আমার কাছে আসছে আর নাচছে। ভালোই এনজয় করছি। কিন্তু যেভাবে গান টা নিয়ে নাচছে তাতে তো যখন তখন…… আরে মাহি সাবধানে। ওর কাছে গিয়ে বলতে গেলাম। কিন্তু ও আমার কোনো কথাই শুনছেনা। পাগলের মতো নেচেই যাচ্ছে। -মাহি??? #মাহিঃ আআআ( চিৎকার করে) ইসসস আর একটু হলেই তো আশফির গায়ে গিয়ে লাগছিল। ভাগ্যিস মাথা নিচু করেছিল। নাচতে নাচতে চাপ লেগে গুলি বেরিয়ে গেছে। এর জন্যই অতিরিক্ত কিছু ভালোনা। ও আমার আমার সামনে চোখ রাঙিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি মাথা নিচু করে sorry বলে গান টা ওর কাছে দিয়ে দিলাম। #আশফিঃ গান টা ওর হাত থেকে নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। ও ভয় ভয় চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। কিছু বললাম না। কারণ ভয় টা আমার থেকে বেশি ও পেয়েছে। আর এদিকে গার্ড গুলো গুলির শব্দ পেয়ে দৌঁড়ে এসেছে। তাদেরকে ইশারা করে চলে যেতে বললাম।তারপর ওর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে দিয়ে গান টা ড্রয়ারে রেখে দিলাম। অবশ্য আমার হাসিটা ও দেখেনি। মাথা নিচু করেই আছে। আমি ওর সাথে কোনো কথা না বলে মামনি কে ফোন দিলাম। পৌছানোর কথা জানালাম। ওর সাথে ও কথা বলিয়ে দিলাম। তারপর ওকে বললাম, – এইযে এখন যান গোসল করে আসুন অনেক Dhishqiyaoun করেছেন। আর একটু হলেই তো……. #মাহিঃ sorry sorry sorry সোনা আমি সত্যি একদম বুঝতে পারিনি। আর তোমার কিছু হলে আমি নিজেকেও shoot করে দিতাম। ওকে জড়িয়ে ধরে কথা গুলো বললাম #আশফিঃ হুম আমি বুঝেছি। এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো ডিনার এর সময় হয়ে গেছে। #মাহিঃ ওকে জানু……উমমমম মমমমমম্মাহহহ। ওর গালে একটা লম্বা চুমু দিয়ে গোসলে গেলাম। তারপর আশফি ও ফ্রেশ হয়ে দুজন ডিনার করে নিলাম। -আচ্ছা আশফি বেডরুমে আমার যে ছবি গুলো তুমি টাঙিয়ে রেখেছো সেগুলো তো মে বি ৩ বছর আগের ছবি আমার। আর এই ছবি গুলো তো আমাদের এলবাম এ ছিলোনা তাহলে তুমি পেলে কি করে? #আশফিঃ এতক্ষণ ধরে এই গুলোই ভাবছিলে বুঝি। #মাহিঃ হুম।বলোনা। আমার এই বিষয় টা একদমই মাথায় কাজ করছেনা। তখন তুমি দেশে আসোনি তাই না? আর একটা প্রশ্ন জানিনা তুমি ঠিক কিভাবে নিবে তবুও জানতে ইচ্ছা করছে। #আশফিঃ বলো সমস্যা নেই। #মাহিঃ তোমার আর আমার মাঝে তো অনেক বছরের distance ছিল। আমাদের দেখাও হয়নি এত গুলো বছরের ভেতর। তাহলে তুমি কিভাবে আমাকে এতো ভালোবাসতে পারলে? #আশফিঃ অনেক দারুণ একটা প্রশ্ন করেছো। লাখ টাকার প্রশ্ন। তাহলে আপনাকে বলেই ফেলি। তোমাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার পরেও বাবা তোমাদের খোঁজ খবর সবসময় রাখতো। এমনকি ২ জন বডি গার্ড তোমাদের জন্য ওখানে রেখেছিল। যারা তোমাদের সব সময় আড়ালে থেকে তোমাদের সিকিউরিটি দিতো। আর বাবা তো এমন কোনো দিন নেই যে তোমাদের কথা আমার কাছে গল্প করতোনা। সবসময় আমাকে বলতো যে ভাবেই হোক তোমাকেই যেনো আমি তার পুত্রবধূ করে আনি। আমি বাবা কে বলতাম যে তোমাকেই আমি আমার বৌ করে আনবো আর সেটা তুমি না চাইলেও। বাবার কাছে বাইনা করতাম তোমার ছবি দেখার জন্য। ওরা যেনো তোমার ছবি তুলে পাঠাই।এমন কি তুমি রেগুলার কি করো সেটাও দেখার জন্য বাইনা করতাম বাচ্চাদের মতো। বাবা ওদের বলে দিয়েছিল। ওরা তোমার ছবি তুলে দিতে পারলেও ভিডিও টা করতে পারতোনা। তারপর ওরা একদিন তোমাদের বাড়িতে যাই ইলেকট্রিক এর লোক হয়ে। সেখানে তোমার বেডরুম ছাড়া সব জায়গায় ক্যামেরা ফিট করে রেখে আসে। তারপর থেকেই তোমাকে প্রতিদিন আমি ভিডিও তে দেখতে পেতাম। সব থেকে মজার ব্যাপার কি জানো প্রতিদিন তোমাকে দেখতে দেখতে তোমার সম্পর্কে এতো কিছু জেনে গেছিলাম যা তুমি নিজেও তোমার সম্পর্কে জানোনা। #মাহিঃ Haaa এতদূর? তো কি কি জানো আমার সম্পর্কে যা আমি নিজেও জানিনা। #আশফিঃ আচ্ছা তুমি বলো তো তুমি সব থেকে কোন টিভি শো গুলো বেশি পছন্দ করো? #মাহিঃ আমি তো টিভির সামনে গেলে শুধু চ্যানেল ঘুরাই। বুঝতেই পারিনা কি দেখবো। #আশফিঃ তুমি এ্যাকশন মুভি বেশি লাইক করো। #মাহিঃ আরে হ্যা। এরকম মুভি পেলে তো আমার কিছুই লাগেনা। #আশফিঃ আরও বলছি। তুমি তোমার নিজের চয়েস নিয়ে সবসময় কনফিউজড থাকো। কোথাও যেতে গেলে কি ড্রেস পরবে কিভাবে যাবে সেটা নিয়ে তুমি সবসময় মামনি কে জ্বালাতে। রাইট? আর তুমি তো অনেক বোকা। তুমি যে কোল্ড কফি খাও সেটা আমি জেনেছি আরও ৩ বছর আগে। আমি আসার পর তুমি কাজ নিয়ে এতোটাই বিজি থাকতে যে কফি খাওয়ার সময় টুকু ও তুমি পাওনি। আর সেটা তোমার মাথায় একদম কাজ করেনি। আমি তোমাকে যেভাবে বলেছিলাম তুমি সেটাই বিশ্বাস করেছিলে। #মাহিঃ তাইতো? তার মানে তুমি সত্যি আমাকে প্রতিদিন দেখতে? আর হ্যা আমাদের মনে হতো যে সবসময় কেউ আমাদের ফলো করে। ওরা তোমাদেরই লোক ছিল? #আশফিঃ না। ওরা আমার লোক ছিলোনা। আমি দেশে যাওয়ার পর ওদের কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আমি থাকতে ওদের আর কোনো প্রয়োজন হবেনা। কিন্তু সেটাই ছিল আমার বড় ভুল। ওরা ওদের লোক ছিল। ঐ ভুল টা না করলে সেদিন তোমার এত বড় ক্ষতি হতোনা। #মাহিঃ আচ্ছা বাদ দাও তো। তার মানে আমার আশফি আমাকে প্রতিদিন দেখতো অথচ আমি ই তাকে দেখতে পাইনি কতগুলো বছর।
#আশফিঃ তো এখন দেখো। এখন তো সামনেই আছি। #মাহিঃ আমি তো আপনাকে দেখিই। আপনিই তো আজকাল আমাকে সেভাবে লক্ষ করেন না। তাই আজকে আমি আপনাকে কিছু রুলস দিবো। যেটা প্রতিদিন আপনাকে মেনে চলতে হবে। তারপর আমি আমার রুলস গুলো বলা শুরু করলাম। #আশফিঃ বাবা……… এই রুলস গুলো তো দেখি আমার রুলস গুলোর থেকেও বেশি কড়া। ওর রুলস গুলোর মাঝে এরকম কিছু রুলস আছে যেমন ঘুম থেকে সকালে ওঠার আগে ওকে আমার আদর করে তারপর উঠতে হবে। বাইরে যতুটুকু সময় আমি থাকবো প্রতিটা সেকেন্ড আমি যেনো ওনার মুখ দেখি(ভিডিও কল) যাতে অন্য কোনো মেয়ে আমার চোখে না পড়ে। যাই হোক এই রুলস গুলো আমি খুবই এনজয় করবো। আর এখন যে রুলস টা মানতে হবে সেটা আর নিশ্চই আমাকে বলে বোঝাতে হবেনা। #মাহিঃ এখানে আমি আর তুমি ছাড়া কেউ নেই তাই তোমাকে আমি এখন যা খুশি তাই করতে পারবো। নাও শুরু করো আমাকে আদর করা। #আশফিঃ তারপর আর কি আমি আমার বৌ এর আদেশ মাথা পেতে নিলাম। চলবে…..

রোমান্টিক_অত্যাচার_১৪

0
রোমান্টিক_অত্যাচার_১৪ লেখিকাঃ #Israt_Jahan ধারণাঃ #Kashnir_Mahi আশফিঃ চুপ করো তুমি। তুমি কতটুকু জানো তার সম্পর্কে? আমি যা জানি তুমি তার ১ ভাগ ও জানোনা। মাহিঃ কি বলছো তুমি এসব আশফি?? আশফিঃ আমি এখন যা বলবো তা তুমি শুনলে তোমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাবে। আমার এই কথাটা শুনে মামনি ও অবাক হয়ে তাকালো। তার চোখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে অনেক প্রশ্ন করতে চাই আমাকে। তাই আমি বলা শুরু করলাম। – হ্যা এটা একদম সত্য যে তোমার বাবা তার অফিসের এক প্রবাসী মহিলা কর্মকর্তার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যায় এবং তাকে বিয়ে ও করে। আর তা জানার পর আমার বাবা তোমার বাবার সাথে সব হিসাব নিকাশ বুঝিয়ে দিয়ে তাকে বিজনেস থেকে বের করে দেয়। তারপর তোমার বাবা একাই বিজনেস শুরু করে। তবে তোমার আর মামনির সাথে কোনো যোগাযোগ রাখেনি। একরকম আমার বাবা তোমার সাথে ওনাকে যোগাযোগ করতে দেইনি। সেই থেকে আমার বাবাই তোমাদের দেখাশোনার দায়িত্ব নেয়। এদিকে মামনির অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। সে বিশ্বাস করতে পারছিলনা তোমার বাবা তাকে এভাবে কোনোদিন ঠকাতে পারে। অনেক ভেঙ্গে পড়েছিল মামনি। তবে তোমার বাবাও যে খুব ভালো ছিল সেটা নয়। সে তার ভুল বুঝতে পেরেছিল যখন সে জানতে পারলো ঐ মহিলার আগেও একজন স্বামি আছে। আর সে ছিল আমাদের কোম্পানির অর্থ্যাৎ তোমার আর আমার বাবার কোম্পানির একজন সাধারণ কর্মকর্তা(জাপানিজ)। আর ওরা প্ল্যান করেই তোমার বাবাকে ওদের জালে ফাঁসিয়েছিল শুধুমাত্র ওনার প্রপাটি নেওয়ার জন্য। আর এগুলো জানার পর উনি অনেক চেষ্টা করেছিল তোমাদের কাছে ফিরে আসার জন্য। কিন্তু ওরা ওনাকে আসতে দেইনি।কারণ তোমাকে আর মামনি কে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। তোমার বাবা কে অনেক টর্চার করেছিল ওরা।শুধুমাত্র প্রপাটি তাদের নামে লিখে দেওয়া জন্য কিন্তু সেটা করেনি বলে তাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। একদিন বাবা প্ল্যান করেছিল যে আমার জন্মদিনে বাইরে কোথাও ঘুরে আসবে। আমিও অনেক জেদ ধরেছিলাম বাইরে( জাপানের বাইরে) ঘুরতে যাওয়ার জন্য। বাবা ভেবেছিল এতে মামনির মন টাও একটু ভালো হবে। মামনি কে যেতে বলেছিল কিন্তু মামনি যেতে রাজি হইনি। সেদিন তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছিল শুধু। কিন্তু তোমাকে বাবা নেইনি কারণ মামনি সারাদিন ঘরে বন্দি হয়ে থাকতো তার ওপর তোমাকে নিয়ে গেলে আরও একা হয়ে যাবে তাই তোমাকে রেখে গেছিল। আমরা যখন আমাদের গন্তব্যে পৌঁছালাম। তার কিছুক্ষণ পর বাবার ফোনে একটা কল আসলো। কলটা করেছিল তোমার বাবা। সেদিন বাবাকে এই কথাগুলো বলেছিল যা সে জানতে পারে ওদের সম্পর্কে।তোমার বাবা ওদের গোপনে তার সব প্রপাটি যা কিছু ছিল তোমার নামে লিখে সেই কাগজ গুলো একটা ব্যাংকের লকারে রেখে দেয়। আর ওরা সেটা জানতে পারে যে তার সব সম্পত্তি সে তোমার নামে লিখে দিয়েছে। তাই ওরা তোমাদের খুন করার পরিকল্পনা করে। যে কোনো সময় তোমাদের ওপর ওরা এ্যাটাক করতে পারে সেটাই বাবাকে জানায়। আর এটাও বলে দেয় যে ঐ কাগজ গুলো কোন ব্যাংকে আছে। বাবা সেদিনই তোমাদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে। আমাদের ওখানে রেখেই বাবা চলে যায় জাপান। পৌছাতে প্রায় ২ দিন সময় লেগে গেছিল। বাবা ভাবছিল ওখানে গিয়ে তোমাদের সে দেখতে পাবে তো? বাবা রাতে গিয়ে পৌঁছাই। বাইরে থেকেই বাবা শুনতে পাই ভেতরে অনেক গুলির শব্দ হচ্ছে। বাবা পেছন দিকের সিড়ি দিয়ে উঠে রুমে ভেতর ঢুকে। মামনি তখন তোমাকে নিয়ে বাথরুমে লুকিয়ে ছিল। সেদিন রাতে অনেক কষ্টে ওদের মোকাবেলা করে তোমাদের কে নিয়ে বেরিয়ে আসে। কিন্তু সব থেকে কষ্টের বিষয় কি জানো মাহি? ঐ দিন রাতেই তোমার বাবাকে ওরা মেরে ফেলে।
মাঃ অভি??(মাহির বাবা) (অভি বলে চিৎকার করে সোফায় বসে পড়ে) আশফিঃ মামনি আমি এই কথাগুলো কোনোদিন বলতে চাইনি। কারণ আমি জানি তুমি এখনো ওনাকে খুব ভালোবাসো। শুধুমাত্র মাহিকে ভুল ধারণা থেকে বের করার জন্য আমি বলতে বাদ্ধ হয়েছি।বাবা ও আমাকে বলতে নিষেধ করেছিল। আমি মাহির দিকে তাকালাম। ওর চোখ দিয়ে অজস্র ধারায় পানি পড়ছে। একদম পুতুলের মত দাড়িয়ে আছে। আমি ওর কাছে গেলাম। ওকে আজকে সব জানতে হবে। -মাহি তোমাকে অনেক শক্ত হতে হবে। সামনে যে অনেক বিপদ ওত পেতে আছে। সেগুলো তোমাকে মোকাবেলা করতে হবে। মাহিঃ আশফি আমি তাকে ঘৃণা করলেও কোনোদিনও তার মৃত্যু কামনা করিনি। আশফিঃ আমি জানি মাহি। তুমি নিজেকে সামলাও। মামনির বেঁচে থাকার একমাত্র উৎস তুমি। তোমাকে ভেঙ্গে পড়লে হবেনা। কারণ ওরা থেমে নেই। তোমাকে মারার জন্য ওরা এখানে লোক পাঠিয়েছে। ঐ মহিলার স্বামি আগে থেকেই মাফিয়া দলের সাথে যুক্ত ছিল। এখন সে ঐ দলের leader. তোমাকে খুন করতে পারলে ঐ প্রপাটি ওরা এমনিতেই পেয়ে যাবে। কারণ ওদের একটা ছেলে আছে। সেখানে তোমার বাবাকেই ওর বাবা বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। মাঃ আশফি? আশফিঃ বলো মামনি? মাঃ আমি একবার আশরাফ ভাইয়ের সাথে কথা বলতে চাই। তার কাছ থেকে আমি শুনতে চাই। আশফিঃ মামনি আমি জানি তোমার বিশ্বাস হচ্ছেনা। কিন্তু আমি কি করে তোমাকে বিশ্বাস করাবো? বাবা মা কেউ ই যে বেঁচে নেই।(কেঁদে বলছিল) এটা শোনার পর মামনি আরও একবার চমকে উঠলো। মাঃ কি বলছিস তুই এসব? আশফিঃ হ্যা। ওরা বাঁচতে দেইনি। ২ বছর আগের কথা। ওরা জাল পাওয়ার অফ এটোনির উইল বানিয়ে মাহির প্রপাটি ভোগ করছিল। বাবা সেটা জানতে পেরে আইনি ব্যবস্থা নেই। আর ওরা এটাও জেনে যাই যে মাহির প্রপাটির সমস্ত উইল বাবার কাছে। বাবাকে অনেক ভাবে থ্রেট করে ওগুলো তাদের দিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বাবা দেইনি। বাবা রাজি না হওয়াই বাবাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করে। কার এক্সিডেন্টের মাধ্যমে মারার চেষ্টা করে। ঐ accident স্পটেই মা মারা যায় বাবাকে তাড়াতাড়ি hospital নিয়ে যায়। Hospital এ অনেক গার্ডের ব্যবস্থা করি। কিছুদিন পর বাবার sense ফিরে। বাবা আমাকে ডেকে অনেক কিছু বলে যার কিছুই আমি জানতাম না। বাবা এভাবে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছিল যার জন্য অসুস্থ পরছিল। আমি সেদিন রাতে বাবাকে থামিয়ে দিয়ে রেস্ট নিতে বলি পরে সব কথা শুনবো বলে। কিন্তু ঐ দিন ই যে বাবার শেষ রাত ছিল সেটা আমি জানতামনা। ওরা Doctor কে টাকা দিয়ে বাবাকে মারতে পাঠায় তার আগে এটা জানতে চাই ঐ উইল গুলো কোথায়। বাবা বলেনি তখনই বাবাকে বিষের ইনজেকশন push করে মেরে দেয়। পরে অবশ্য সে ধরা পড়েছিল। কিন্তু ওরা ধরা পড়েনি। ওরা কিছুদিন আগেও জনতো যে মাহি সেদিন রাতেই হয়তো মারা গেছে। ওর লোকেরা ওদের সেইরকম খবর ই দিয়েছিল। কিন্তু কিভাবে যেনো ওরা জানতে পেরে যায় যে মাহি এখনও বেঁচে আছে। ওকে আবার মারতে ওরা এখানে পর্যন্ত লোক পাঠিয়ে দেয়। আমি দেশে আসার আগে চাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করে সব জানাই। তারপর দেশে ফিরি। অনেকবার মাহির সামনে গিয়েছি মাহি আমাকে চিনতে পারিনি।খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম আমি। সবকিছু হারিয়ে ওকে পাওয়ার জন্য দেশে ফিরলাম আর সেই মাহি আমাকে চিনতে পারলোনা। তারপর মাহি কোথায় কি করে সব খোঁজ খবর নিলাম। ও যে কোম্পানি তে চাকরি করে সেই কোম্পানির ওউনার এর সাথে কথা বলে ওনার কোম্পানির 75% শেয়ার অনেক চড়া দামে কিনে ঐ কোম্পানির এম.ডি. হয়ে ওখানে গেলাম। এতকিছু শোনার পর ওদের মুখে কোনা ভাষা ছিলনা। এর মধ্যে চাচ্চু চলে এলো। চাচ্চুঃ আশফি? কি বলার জন্য আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিস?? -ভাবি আপনাকে এমন লাগছে কেনো? কি হয়েছে? আশফি ভাবির কি হয়েছে এরকম দেখাচ্ছে কেনো ভাবিকে?(মাহির মায়ের দিকে তাকিয়ে) আশফিঃ চাচ্চু আমি ওদের সবকিছু বলে দিয়েছি। ওদের ভুল ধারনা থেকে মুক্ত করার জন্য। আমি মামনির কাছে গেলাম। -মামনি? তুমি এভাবে চুপ করে থেকোনা। প্লিজ কথা বলো তুমি। চাচ্চুঃ আশফি? ওদেরকে একা থাকতে দে। আশফিঃ না চাচ্চু এভাবে ওদের একা রাখার জন্য আসিনি। ওদেরকে অনেক কঠোর হতে হবে। মাহিকে ওখানে যেতে হবে, ওকে ওর প্রাপ্য বুঝে নিতে হবে। মাঃ না। আমি মাহি কে ওখানে যেতে দেবোনা। ওরা আমার মাহির যদি কোনো ক্ষতি করে আবার? যে প্রপাটির জন্য আমার এতো কাছের মানুষ গুলোকে হারিয়েছি সেই প্রপাটির কোনো দরকার নেই। চাচ্চুঃ ভাবি মাহি কেনো ওর অধিকার ছেড়ে দিবে। ওরা অবৈধ ভাবে ওগুলো ভোগ করছে। মাহি কেনো ওদের কেনো শাস্তি দিবেনা? মাহিঃ মা। চাচ্চু একদম ঠিক বলেছে। আমি ওখানে যাবো কিন্তু প্রপাটিই মেইন নয়। ওদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য। ওদের কাছে আমরা কেনো হেরে যাবো? তুমি এখন আমার সাথে ঘরে চলো। একটু রেস্ট নেবে। আশফিঃ মাহি মামনি কে নিয়ে ঘরে চলে গেলো। আমি চাচ্চুর সাথে কিছু কথা বললাম। -চাচ্চু আমাদের ফিরে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। এখানে যা কিছু আছে সবকিছু তুমিই দেখাশোনা করবে। আর সেটা কাল থেকেই। তারপর মামনির ঘরে গেলাম। মাঃ আশফি তোরা আমাকে একটু একা থাকতে দিবি বাবা? আমি একটু একা থাকতে চাই। আশফিঃ ঠিক আছে মামনি। আমি মাহি কে নিয়ে আমাদের রুমে চলে এলাম।আজকে রাতে কারোর ই ডিনার হয়নি। ওকে অনেক কিছু বুঝিয়ে তারপর ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। কাল অনেক কাজ আছে।আমাদের জাপান ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আমিও তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। ★সোমাবার সন্ধা ৬:৪৫ ফ্লাইট টাইম★ মাহিঃ মা আমি তোমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো ওখানে? আমি পারবোনা থাকতে।তুমি প্লিজ চলো আমাদের সাথে। আশফিঃ মামনি আমি শুধু মাহিকে নিতে আসিনি। আমি তোমাকেও নিতে এসেছি। আমার মামনি কে আবার ফিরে পাবো বলে এখানে এসেছি। মাঃ আশফি তোরা আমাকে এই বিষয়ে কোনো জোড় করিসনা। কারণ আমি ওখানে গিয়ে থাকতে পারবোনা। প্রত্যেকটা মূহুর্ত আমার ওর স্মৃতিগুলো মনে পড়বে। তোরা তোদের খেয়াল রাখিস ভালোভাবে। তোদের কোনো ক্ষতি হয়ে গেলে আমি আর বাঁচবোনা। আশফিঃ মামনি আমার আর মাহির কপালে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো। তারপর আমরা বিদায় নিলাম। চলে এলাম জাপান। ★জাপান★ আশফিঃ আমাদের দুজনের নতুন জীবন শুরু হলো জাপান। মাহি এখানে এসে আমাদের বাড়ি কিছু সময় ঘুরে দেখলো।
মাহিঃ বাসার ভেতর ঢুকে সব থেকে বেশি আকর্ষিত করলো দেওয়ালে টাঙ্গানো কিছু ছবি। ছবি গুলো ছিল আমাদের সবার এক সাথে থাকা সময়ের কিছু ছবি। কোনো ছবিতে আমরা সবাই একসাথে, কোথাও আমি আর মা, কোথাও আবার আমার আর আশফির ছবি। একটা ছবিতে আমি একটা গাড়ি নিয়ে খেলছি আর ও আমার পেছন থেকে এসে কান কামড়ে ধরেছে। মনে হচ্ছিলনা যে ও ওটা দুষ্টুমি করে করছে। ওর মুখের ভাব দেখে মনে হচ্ছে খুব রেগে ছিল আমার ওপর। একটা ছবিতে আমার চোখ আটকে গেলো। বাবা আর মায়ের ছবি। আমি এই প্রথম বাবার ছবি এতো সামনে দাড়িয়ে কাছ থেকে দেখছি। মনের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। হঠাৎ পেছন থেকে আশফি আমার কোমোর জড়িয়ে ধরে আমার পিঠ ওর বুকের সাথে মিশিয়ে দাড়িয়ে রইলো। -আশফি আমরা কি এর থেকে সুন্দর জীবন যাপন করতে পারতামনা?(ছবির দিকে তাকিয়ে) আশফিঃ মাহি আমি এই ছবি গুলো এখানে টাঙ্গিয়েছি শুধুমাত্র আমাদের সুন্দর স্মৃতি গুলো তোমাকে মনে করানোর জন্য। কষ্ট পাওয়ার জন্য নয়। তাই এখন থেকে আর কোনো কষ্ট পাবেনা। মাহিঃ কিন্তু আমার যে কিছুই মনে নেই এই দিন গুলোর কথা। মনে পড়ছেও না। আশফিঃ তোমাকে মনে করতে হবেনা। তুমি শুধু উপলব্ধি করবে। ঠিক আছে? কথাটা বলে ওর মাথার এক পাশে চুমু দিলাম। এখন ঘরে চলো মামনিকে ও তো ফোন করতে হবে। আর অনেক্ষণ আমাকে আদর করোনা। এবার চলো তো আমাকে একটু আদর করবে। তোমার জন্য স্পেশাল বেডরুম ওয়েট করছে। মাহিঃ স্পেশাল বেডরুম মানে? আশফিঃ গেলেই দেখতে পাবে। তারপর ওকে কোলে তুলে বেডরুমে চলে গেলাম। চলবে………..

রোমান্টিক_অত্যাচার_১৩

0
রোমান্টিক_অত্যাচার_১৩
লেখিকাঃ #Isrst_Jahan
ধারণাঃ #Kashnir_Mahi
মাহিঃ আর একটু দেরি হলে এই পাগলটার ভালোবাসা, পাগলামী রোমান্স গুলো হারিয়ে ফেলতাম। তারপর আমিও ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ওর ডাকেই আমার ঘুম ভাঙ্গলো।
আশফিঃ এই তুমি এখনও এতো ঘুমাচ্ছো কি করে। যাও উঠো। আমার সেবাযত্ন করা শুরু করো। নার্স দুটোকে বিদায় করে দিয়েছি।
মাহিঃ কি??
আশফিঃ কি মানে?
মাহিঃ না না কিছুনা। অনেক ভালো করেছো। আমি থাকতে অন্য কেউ কেনো তোমার সেবা করবে? তুমি বসো আমি এক্ষণি কফি নিয়াসছি।
আশফিঃ এতো তাড়াহুড়ো করতে হবেনা। আগে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন,যান।
মাহিঃ হুম। ফ্রেশ হয়ে ওকে কফি দিয়ে রান্না করতে চলে গেলাম। দেখলাম মা রান্না করছে।
-মা তুমি আমাকে দাও আমি রান্না করছি।
মাঃ না তার কোনো প্রয়োজন নেই। রান্না অলরেডি শেষ। তুই ওর কাছে যা গিয়ে দেখ ওর কি লাগবে না লাগবে। ওকে গিয়ে দেখাশোনা কর।
মাহিঃ হুম যাচ্ছি। মাকে অনেক খুশি খুশি লাগছে।
এখন তো আমার সবসময় শুধু ওর কাছেই থাকতে ইচ্ছা করে। আগে যার থেকে শুধু পালিয়ে বেড়াতাম। এখন তার মুখটা দেখার জন্য মনটা খালি খালি উড়ু উড়ু করে। এভাবেই সবসময় ওর কাছাকাছি থাকি। এখন আমিই ওকে দেখাশোনা করি ওর খেয়াল রাখি। আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ হয়ে গেছে ও কিন্তু মাঝে মাঝে শরীরে জ্বর আসে। আর ওর ঐ দুষ্টু মিষ্টি আদর নেওয়ার জন্য নানা রকম বাহানায় ওর কাছে যাই। একদিন সকালবেলা………..
আশফিঃ এই মেয়ে মানুষ গুলো এত পরিমাণ স্বার্থপর হয় এদের সাথে না থাকলে সেটা জানা সম্ভব হতোনা।
(নিউজপেপাড় পড়ছিল আর কথাগুলো বলছিল)
মাহিঃ তার মানে কি? তুমি কতগুলো মেয়ের সাথে থেকেছো। আর স্বার্থপরের কি দেখলে?
আশফিঃ না আমি একজন মেয়ের কথায় বলছি আর কি যে আমার সাথে থাকে।
মাহিঃ মানে কি আমি স্বার্থপর? স্বার্থপর হওয়ার মত কি করলাম আমি তোমার সাথে?
আশফিঃ স্বার্থপর ই তো। সবসময় শুধু এক এক রকম বাহানায় আমার কাছে আসো আমার আদর নেওয়ার জন্য। নিজে তো কখনও করোনা।
মাহিঃ যাহ্ ও বুঝতে পেরে গেলো!
-এই শোনো আমি যদি দুষ্টুমি শুরু করিনা তাহলে তুমি একদম অতিষ্ট হয়ে যাবে।
আশফিঃ তার জন্য আমি সর্বদাই প্রস্তুত।
মাহিঃ ঠিক বলছো তো? তাহলে ঠিক আছে, এখন থেকে আমি তাই তাই করবো যা যা তুমি আমার সাথে করতে বরং তার থেকে আরও বেশি কিছু করবো। মানে এখন থেকে তুমি অত্যাচারীত হবে।
আশফিঃ আহ্। (বুকের বাম পাশে হাত রেখে) এত বড় একটা কথা আমার heart টা নিতে পারেনি। খুব জোড়ে ধাক্কা খেলো।
মাহিঃ ইয়ারকি হচ্ছে। আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছেনা তাইনা?
আশফিঃ মাথা নাড়িয়ে না বোধক উত্তর বোঝালো।
মাহিঃ ঠিক আছে বিশ্বাস করাচ্ছি। ওর গাল দুটো ধরে ওর ঠোঁটে কিস করে বসলাম। ও যতুটুকু সময় নিত তার থেকে বেশি সময় আমি নিলাম।
আশফিঃ ও এভাবে আমাকে চুমু দিয়ে বসবে সেটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। আমার চোখ দুটো পুরো রসোগোল্লার মত হয়ে গেলো। ও যেভাবে কিস করছে তাতে আমার নাক টাও আটকে গেছে। এদিকে আমার শ্বাষ বন্ধ হয়ে আসছে তাও ওর ছাড়ার কোনো খবর নেই।
মাহিঃ অনেক্ষন ওকে কিস করে তারপর ছাড়লাম।
– কি? হয়েছে বিশ্বাস। ও পুরো হাপিয়ে শুথু মাথা ঝাকালো। তোমার রেকর্ড আমি ভেঙ্গে দিয়েছি।
আশফিঃ হুম। কতক্ষন করেছো?
মাহিঃ উমমমম ৭/৮ মিনিট তো হবেই।
আশফিঃ হা । my god!!
মাহিঃ হুম। এখন থেকে এগুলোর জন্য always ready থাকবে। গট ইট? তারপর রুম থেকে বেরিয়ে এলাম
আশফিঃ Thank god. তাহলে পেরেছি আমি এই নিরামিষ টাকে আমিষে পরিণত করতে।
মাহিঃ আজকে বিকালে ও বাগানে দাড়িয়ে গার্ডদের কি যেনো বোঝাচ্ছিল। আমি ওর পাশে গিয়ে দাড়ালাম। ওর দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছি। কথা বলার মাঝে ও আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জানতে চাইলো কি বলতে এসেছি আমি। আমি ওর দিকে তাকিয়ে ঠোঁটটা কিস এর স্টাইল করে কিস দেখালাম। এটা দেখে ও তো লজ্জা পেয়েছেই সামনের গার্ডগুলো ও লজ্জা পেয়ে মুখ চিপে হাসছিল। তারপর ও চোখ ফিরিয়ে নিয়ে ওদের সাথে কথা বলা শুরু করলো। কিন্তু কথা বলতে পারছিলনা কথা বলার মাঝে বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিল আর কথা থেমে যাচ্ছিল। এটার কারণ হলো আমি তখন ওর দিকে এক নজরে তাকিয়েই আছি।at last কথা বলতে না পেরে গার্ডগুলোকে চলে যেতে বললো পরে কথা বলবে বলে।
আশফিঃ মাহি তুমি কি করছিলে ওদের সামনে?
মাহিঃ কৈ কি করছিলাম আমি তো তোমার সাথে romance করবো বলে আসলাম। তাই বলে এখানে ওদের সামনে?
মাহি তুমি ঠিক আছো তো? ওর কপালে হাত দিয়ে বললাম
মাহিঃ ধ্যাত।
আশফিঃ ও রেগে চলে গেলো।
মাহিঃ কিছুটা দূরে গিয়ে পেছনে তাকালাম,দেখলাম দাড়িয়ে দাড়িয়ে হাসছে। দেখে আরো রাগ হয়ে গেলো তাই তাই হনহন করে হেঁটে বাসার ভেতর চলে আসলাম। রাতে সবাই একসাথে ডিনার করে মায়ের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে রুমে এলাম। ও তখন শুয়ে পড়েছে। ও যেদিকে মুখ ঘুরে শুয়ে আছে সেদিকে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। তারপর ওর হাতটা টেনে আমার পেটের ওপর রাখলাম। ও তখন চোখ খুলে অবাক হয়ে মাথা উঁচু করে তাকালো। আমি পেছন ফেরা অবস্থাই বললাম। এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। তারপর ও আবার মাথা বালিশে রেখে শুয়ে পড়লো। কিন্তু এটা কি হলো? ওর ভেতর একটুও রোমান্স কাজ করলোনা?
ব্যাপারটা কেমন কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে। ok. দেখছি কতক্ষন নিজেকে কনট্রোল করতে পারো। আমি বেশি ভালোবাসছি বলে তুমি আনরোমান্টিক হয়ে যাবে এটা তো হতে দেওয়া যায়না। রাত ২:০০ টা বাজে,
-আশফি? এই আশফি? একটু উঠে দেখোনা পিঠের মাঝে কিছু একটা বাঁধছে মনে হচ্ছে। ঘুমাতে পারছিনা। কি হলো?? দেখোনা।
আশফিঃ হুমম (ঘুম চোখে। কি হলো এতো রাতে তোমার? কি হয়েছে পিঠে।ওভাবে পিঠ চুলকাচ্ছো কেনো?
মাহিঃ চুলকাতে পারছি কৈ? পিঠের মাঝে কিছু একটা বাঁধছে একটু দেখো।
আশফিঃ হুম। দেখছি। কিন্তু কিভাবে দেখবো নাইটির ওপরে। তাহলে তো নাইটি টা খুলতে হবে।
মাহিঃ খুলতে হবে তো খোলো।
আশফিঃ কি ব্যাপার? ও এতো ইজিলি নিলো নাইটি খোলার বিষয় টা?? একটু বেশিই অদ্ভুত লাগছে ব্যাপারটা। তার মানে ও কি ইচ্ছে করে করছে শুধু আমাকে exited করার জন্য?? হ্যা, তাই হবে।
মাহিঃ কি হলো? কি ভাবছো বসে। খুলে দেখো কি ঢুকলো?
আশফিঃ হুম দেখছি। তারপর আমি একদম সোজা ওর নাইটির পেছন দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিলাম ওর পিঠের মাঝে।
মাহিঃ এটা কি করলো ও? নাইটি না খুলে পেছন দিক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিল?
আশফিঃ তারপর একটা চেইন বের করে ওর সামনে ধরলাম।
– গলা থেকে চেইন টা ছিড়ে পিঠের মাঝে ঢুকেছিল। তাই বাঁধছিল।
ও আমার ওপর রাগে কটমট করছে। তারপর চেইন টা আমার হাত থেকে থাবা দিয়ে নিয়ে ঠাস করে শুয়ে পড়লো। আমার তখন প্রচুর হাসি পাচ্ছিল।হাহাহা এখন দেখো কেমন লাগে?(মনে মনে)
তারপর আমিও শুয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভেঙ্গে চোখ খুলতেই যা দেখলাম। আর একটু হলেই মাহি বলে চিৎকার দিতে যাচ্ছিলাম। তাড়াতাড়ি আমি ওর গায়ে কম্বলটা দিয়ে দিলাম। না হলে যে কেউ ঘরে ঢুকে ওর এই অবস্থা দেখে ফেলতো। কারণ কাল রাতে ও দরজা লক করে ঘুমাইনি।তারপর আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে ফোনে গেম খেলছিলাম।
মাহিঃ এই? একটু দেখোনা আমার নাইটি টা কোথায়? একটু খুঁজে দাও। (চোখ বন্ধ করেই)
আশফিঃ আমি ওর ডাক শুনে ওর কাছে গিয়ে বললাম,
-এই তুমি কাল রাতে এভাবে নাইটি খুলে ঘুমিয়েছো কেনো? (অবশ্য নিচে একটা ছোটো আস্তর পরা ছিল) যদি কেউ রুমে ঢুকে দেখে ফেলতো?
মাহিঃ আরে কাল রাতে এসিটা অফ ছিল আর অন করিনি তোমার শরীরে জ্বর ছিল বলে। এদিকে গরমে পুরো অস্থির হয়ে পড়ছিলাম। তাই খুলে ঘুমিয়েছিলাম।
আশফিঃ গরমে? নাকি আমাকে exited করার জন্য? কথাটা শুনে ও এবার পুরো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।
মাহিঃ যে জন্যই করি তাতে তোমার কি? তুমি কি exited হয়েছো? হউনি তো? তাহলে এতো কথা বলছো কেনো? যাও আমার নাইটি টা খুঁজে দাও।
আশফিঃ আমি বিছানায় চারপাশ খুঁজলাম পেলামনা। তারপর ওর গা থেকে কম্বল টা ফেলে দিলাম। কম্বলের নিচে পরে ছিল। ওকে ধরিয়ে দিলাম। ও সেটা পরে আমার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে উঠে চলে গেলো। এবারও নিজের হাসিটাকে কন্ট্রোল করলাম।
মাহিঃ রুমে এসে দেখলাম ও নিচে থেকে কিছু একটা তুলতে যাচ্ছে কিন্তু ওর অনেক কষ্ট হচ্ছে তাই তাড়াতাড়ি গিয়ে তুলে দিলাম।রেজার ছিল।
– তুমি কি shave করবে? দাও আমি করে দিচ্ছি।
আশফিঃ কাউকে কোনোদিন করে দিয়েছো?
মাহিঃ না। আজকেই 1st time করবো।
আশফিঃ তাহলে আর দরকার নেই। 1st time যেহেতু তাই করতে পারবেনা।
মাহিঃ 1st time তো কি হয়েছে? ট্রাই তো করেই দেখতে পারি।
আশফিঃ থাক। কোনো দরকার নেই। না হলে আমার ফেস এর ১২টা বেজে যাবে। তুমি দেখো আজকে কিভাবে করতে হয় তারপর পরে ট্রাই করো। আর আমাকে অফিস যেতে হবে। তাই দ্রুত করতে হবে।
মাহিঃ অফিস??? হ্যা অফিস তো যেতে হবে। ঠিক আছে আমিও যাবো।
আশফিঃ তুমি গিয়ে আর কি করবে। যেতে হবে না।
মাহিঃ না। আমি যাবো। তবে তোমার পি.এ. হয়ে না। তোমার এম.ডি. হয়ে যাবো। আর তুমি আমার পি.এ. হবে।
আশফিঃ আর ইউ ক্রেজি?
মাহিঃ I’m not crazy. যেটা বলছি সেটাই করবে।
আশফিঃ ok…
মাহিঃ তারপর আমরা রেডি হয়ে অফিসে চলে এলাম। সবাই আমাদের মর্নিং জানালো। কেউ কেউ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল। আমি সরাসরি ওর চেম্বারে গেলাম আশফি ও ঢুকলো।
আশফিঃ কি ম্যাডাম আপনি কি আমার চেয়ারেই বসবেন?
মাহিঃ Of course dear.
আশফিঃ ঠিক আছে বসো। আর ওখানে কিছু প্রজেক্টের ফাইল আছে ওগুলো আমাকে দাও।
মাহিঃ কেনো? ওগুলো আমি দেখবো। এখন যেহেতু আমি এম.ডি. তাই সেগুলো দেখার দায়িত্ব ও আমার। তুমি যাও আমার চেম্বারে গিয়ে আমার কাজ গুলো দেখো।
আশফিঃ আরে………..আচ্ছা ঠিক আছে। যদি আমার ল্যাপটপ টা দিতেন তাহলে একটু ভালো হতো।
মাহিঃ ওকে। নাও। তারপর ও ল্যাপটপ টা নিয়ে আমার চেম্বারে চলে গেলো। বসে কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। ওর চোখ যখন আমার দিকে পরলো তখন আমি ওকে চোখ মেরে দিলাম। ও একটা মুচকি হাসি দিয়ে কাজ শুরু করলো। এর মধ্যে ম্যানেজার সাহেব চেম্বারে আসলো। আমাকে স্যার ভেবে কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলো আমাকে দেখে। (অবাক হয়ে)
– মাহি তুমি? না মানে ম্যাম স্যার কোথায়?
মাহিঃ আপনি মাহি বলেই ডাকবেন সমস্যা নেই। এখন বলুন কি প্রয়োজন।
– আসলে নতুন যে প্রজেক্ট এর কাজ শুরু হয়েছে সেগুলো নিয়ে কিছু কথা বলার ছিল।
মাহিঃ আমাকে দেখান।
– এই যে এগুলো।
মাহিঃ ও মাই গড এই প্রজেক্টের বিষয়ে তো আমি কিছুই জানিনা। আমি তখন ছিলাম না। ওকে এখানে আসতে বলি। ফোন করে ওকে আসতে বললাম। ও চেম্বারে আসলো। ওরা দুজন সামনের চেয়ারে বসে কথা বলছিল। আর আমি শুধু ওকেই দেখছি। কথা বলা শেষ করে ম্যানেজার চলে গেলো। আশফি ও বেরিয়ে যাচ্ছিল।
মাহিঃ এই কোথায় যাও। আমি তোমাকে যেতে বলেছি?
আশফিঃ ow…sorry mam. বলুন কি প্রয়োজন?
মাহিঃ হুম। আমার কাছে এসো।তারপর ও কাছে এসে দাড়ালো।
-এই হট কফিটা খাও। এটা তোমাকে ভেবে দিয়ে গেছে।
আশফিঃ ওকে। তারপর কফিটা খেলাম।
মাহিঃ এখন তোমার হট লিপে আমাকে একটা হট কিস করো। ও নিচু হয়ে আমাকে কিস করার জন্য এগিয়ে এলো।
-উহুম এভাবে নয়। ওয়েট।
আমি চেয়ার থেকে উঠে টেবিলের ওপর পা নামিয়ে দিয়ে বসলাম। তারপর ওর স্যুট টেনে ধরে ওকে কাছে নিয়েলাম। হুম এখন করো।
আশফিঃ ওর এসব দেখে আমি সত্যিই exited হয়ে যাচ্ছিলাম।ওর কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে কিস করছিলাম।এমন সময় মনে হলো দরজায় নক পরলো। তাড়াতাড়ি ওকে ছেড়ে দিয়ে ওকে নিচে নামালাম। কিন্তু দুজনেই অনেকটা অপ্রস্তুত অবস্থায় দাড়িয়ে ছিলাম। আমি ভেতরে আসতে বললাম তাকে। নীলা এসেছে। কিন্তু নীলা ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো?
আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম। দেখলাম ওর ঠোঁটের চারপাশে ভিজে হয়ে আছে। আমি যে ওকে কিস করেছি সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আর সে জন্যই নীলা ওভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
মাহিঃ আরে নীলা কেমন আছো? এসো বসো।
নীলাঃ হ্যা ভালো। তুমি কেমন আছো? স্যার আপনি কেমন আছেন?
আশফিঃ হুম। খুবই ভালো। ও গড এই মেয়েটা কি বুঝতে পারছেনা ওর ঠোঁটটা ভিজে হয়ে আছে। ঠোঁটটা না মুছেই ওর সাথে বকবক করছে। কিভাবে বলি? আমি ওর একটু কাছে গিয়ে নীলার দিকে তাকিয়ে ওকে আস্তে করে বললাম,
-মাহি ঠোঁটটা মুছো।
মাহিঃ কি মুছবো?(জোড়ে বলে উঠলো)
আশফিঃ তারপর ওর দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে ইশারায় বোঝালাম। ও তাড়াতাড়ি করে ঠোঁট মুছলো। মেয়েটা আসলেই একটা গাধা।
নীলাঃ স্যার এই ফাইল গুলো আপনাকে দেওয়ার ছিল।
আশফিঃ হুম রেখে যাও। নীলা চলে গেলো। তারপর ওর সাথে কথা শুরু করলাম।
-তুমি কি একটুও বুঝতে পারছিলেনা? ও কি ভাবলো বলো তো?
মাহিঃ ভাবুক। হাজবেন্ড ওয়াইফ হতেই পারে। এ্যাহ নিজে যেনো কতো ভাবতো। কি হয়েছে? ওভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?
আশফিঃ দেখছি আমার নতুন মাহি কে।
মাহিঃ হুম দেখো ভালো করে দেখো। সামনে আরও অনেক কিছু দেখতে পাবে।
আশফিঃ হুম??? তাই?
মাহিঃ হুম তাই।
আশফিঃ ওর সাথে দুষ্টুমি ফাজলামি করেই সময় কাটছিল। কখনও আমার কোলে বসে নিজেই কিস করছে আদর করে দিচ্ছে, আবার কখনো বিভিন্নরকম কথা বার্তা বলে হাসি ঠাট্টা করছে। আর আমি শুধু আমার মাহিকেই দেখছিলাম। এখন ওর হাসিটাই যেনো আমাকে সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়ে নতুন করে বাঁচিয়ে তুলছে। এই হাসিটা না থাকলে আশফির জীবন টা থেমে যাবে।
-মাহি lunch এর টাইম হয়ে গেছে চলো বাইরে থেকে lunch করে আসি। আজকে তো আর lunch নিয়ে আসিনি।
মাহিঃ হ্যা ঠিক আছে চলো। আমরা lunch করার জন্য একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। lunch শেষে আমাকে নিয়ে কিছুক্ষণ ও গাড়িতে ঘুরলো।
আশফিঃ মাহি চলো অনেক সময় হয়ে গেছে অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতে হবে।
মাহিঃ ওকে। চলো। তারপর অফিসে গিয়ে সব কাজ শেষ করে বাসায় ফিরলাম।
★সন্ধ্যার পর★
আশফিঃ আচ্ছা মামনি তুমি দেখতে এতো সুন্দর কিন্তু তোমার মেয়েটা এমন দেখতে হয়েছে কেনো?
মামনিঃ কেমন দেখতে? ও তো দেখতে আমার থেকেও সুন্দর হয়েছে একদম ওর বাবার মত। ওর বাবা তো দেখতে অনেক সুন্দর ছিল।
মাহিঃ মা!!! তুমি আবার ঐ লোকটার কথা বলছো? আর আমি কোনোদিও ওনার মত দেখতে না। ওনার মত নিকৃষ্ট ব্যক্তির সাথে আমার কোনো মিল থাকতে পারেনা।
আশফিঃ মাহি!! তুমি কার সম্পর্কে কি বলছো? উনি তোমার বাবা হন। আর তুমি এমন ধরনের ব্যবহার কবে থেকে শিখলে?
মাহিঃ আশফি তুমি জানো না ঐ লোক টার জন্য আজও আমার মা চোখের পানি ফেলছে। পুরো জীবন টা শেষ করে দিয়েছে মায়ের।
আশফিঃ চুপ করো তুমি। তুমি কতটুকু জানো তার সম্পর্কে? আমি যা জানি তুমি তার ১ ভাগ ও জানোনা।
চলবে…………