Friday, August 15, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2446



রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ২০

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ২০

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে ঘুম ভাঙতেই ঘুম ঘুম চোখে রুমের চারপাশে তাকালাম, কাব্য সোফায় বসে ল্যাপটপ টিপছে।
কাব্য: গুড মর্নিং তিলো পাগলী।
আমি: গুড মর্নি… (আশ্চর্য কাব্য এভাবে হাসছে কেন, আমার দিকে না তাকিয়েই ল্যাপটপ টিপছে আর মিটিমিটি হাসছে)
আমি: এই তুমি এভাবে হাসছ কেন? (কিছুনা বলে আরো বেশি হাসছে)
আমি: বলো বলছি কেন হাসছ।
কাব্য: কোথায় আমি হাসছি নাতো। (হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে হাসছে ইচ্ছে হচ্ছে ওকে… হঠাৎ রাতের কথা মনে পড়লো। আমার তো কাব্য’র আগে ঘুম থেকে উঠার কথা ছিল আর ডায়েরি… ডায়েরিটা আছে তো? তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম, কোথায় টেবিলে তো ডায়েরিটা নেই)
কাব্য: আরে এভাবে লাফ দিয়ে উঠে বসেছ কেন সমস্যা হবে তো।
আমি: আচ্ছা আমরা তো বারান্দায় ঘুমিয়েছিলাম তাহলে বিছানায় আসলাম কিভাবে?
কাব্য: এই ঠান্ডার মধ্যে তোমাকে বারান্দায় রাখবো আমি পাগল হয়েছি তো। তুমি ঘুমানোর পরই তোমাকে রুমে নিয়ে এসেছি। (তারমানে কাব্য রাতেই ডায়েরিটা সরিয়ে ফেলেছে। এখন কি করবো আমি, দ্যাত নিজের প্রতি নিজের রাগ হচ্ছে ইচ্ছে হচ্ছে নিজেকেই…)
কাব্য: তুমি আবার নিজের উপর রাগ করছ? আমি কিন্তু তোমার রাগে লাল হয়ে যাওয়া নাক দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবো না।
আমি: তুমি আবার হাসছ? (আচ্ছা কাব্য এভাবে হাসছে কেন তাহলে কি ও আমার চালাকি ধরে ফেলেছে। দ্যাত আমি চালাকি করতে পারলাম কোথায় কাব্য নিজেই তো আমার চেয়ে বড় চালাক)
কাব্য: তিলো তুমি অসুস্থ রেস্ট নাও প্লিজ, অন্য টেনশন মাথায় এনো না। (অবাক হয়ে তাকালাম কাব্য’র দিকে তারমানে কাব্য সব বুঝে ফেলেছে)
কাব্য: যেভাবে আছি ভালোই তো আছি কেন শুধু শুধু অশান্তি বাড়াচ্ছ?
আমি: অশান্তি আমি করছি না। আর টেনশনের কথা বলছ? আমার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই টেনশন আমি করেই যাবো।
কাব্য: হুম করো কিন্তু মনে রেখো কোনো লাভ হবে না। (কাব্য রুম থেকে বেরিয়ে গেলো)
ডাক্তারবাবু তুমি আমার সাথে যতোই চালাকি করো আমি যখন বলেছি আব্বু আম্মুকে ফিরিয়ে আনবো তাহলে আনবোই।

দুই সপ্তাহ পর…

এই দুই সপ্তাহের ভিতরে কাব্য’কে আর ডায়েরি লিখতে দেখিনি, ভেবেই পাচ্ছি না কিভাবে কি করবো। কাব্য যেহেতু ডায়েরিটা আমার থেকে লুকিয়ে রাখতে চাইছে তারমানে এই ডায়েরিতে কোনো না কোনো রহস্য তো আছেই।
ভাবি: হিয়া কি হয়েছে? (ড্রয়িংরুমে বসে বসে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ ভাবির কথা শুনে দরজার দিকে তাকালাম হিয়া ভয়ে দৌড়ে ভিতরে এসে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিলো)
ভাবি: কিরে হিয়া কি হয়েছে?
আমি: হিয়া কি হয়েছে তুমি এতো ভয় পেয়ে আছ কেন?
হিয়া: আমাকে পানি দাও। (ভাবি হিয়ার জন্য পানি আনতে গেলেন, হিয়া আমাকে জরিয়ে ধরে বসে আছে। আশ্চর্য হিয়া এতো ভয় পেলো কেন?)
ভাবি: এইনে পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করে বলতো কি হয়েছে। (হিয়া ঢকঢক করে পানি খেয়ে আবার আমাকে জরিয়ে ধরলো, কিছুই তো বুঝতে পারছি না)
ভাবি: হিয়া বল আমাদের কি হয়েছে?
হিয়া: শপিং করতে গিয়েছিলাম কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। যখন শপিংমল থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলাম তখন মনে হলো কেউ আমাকে ফলো করছে। গাড়িও নিয়ে যাইনি তাই তাড়াতাড়ি একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়ি। কিন্তু বার বার মনে হচ্ছিল কে যেন আমাকে ফলো করছে, ভয়ে আর পিছন ফিরে তাকানোর সাহস পাইনি। বাসার সামনে এসে যখন রিকশা থেকে নামলাম তখন দুইটা লোক আমার দুইপাশে এসে দাঁড়ালো। বিপদ হতে পারে বুঝতে পেরে একটা লোককে ধাক্কা দিয়ে আমি দৌড়ে চলে আসি আর আসার সময়…
আমি: আসার সময় কি?
হিয়া: একটা লোকের হাতে বোধহয় চাকু ছিল আমি দেখতে পাইনি আমার হাতে লেগে গেছে।
ভাবি: কোথায় দেখি?
আমি: অনেকটা জায়গা কেটে গেছে তো। (হঠাৎ পাশেই রাখা আমার ফোনটা বেজে উঠলো, কাব্য ফোন দিয়েছে)
ভাবি: তিলোত্তমা কে ফোন দিয়েছে দেখ আমি হিয়ার হাত ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।
আমি: হুম।

একটু দূর এসে ফোনটা রিসিভ করলাম।
আমি: হ্যালো।
কাব্য: তিলো আজকে ফিরতে পারবো না।
আমি: কেন?
কাব্য: একটু কাজ আছে। (কিসের কাজ এমন যে কাব্য বাসায় ফিরবে না। আচ্ছা ও তো বলেছিল আমি সুস্থ হলে কক্সবাজার যাবে এখন তো আমি পুরোপুরি সুস্থ তাহলে কি ও কক্সবাজার যাচ্ছে)
আমি: আমার থেকে কি লুকাচ্ছ বলো।
কাব্য: কি লুকাবো কিছুই নাতো, কাজ আছে তাই ফিরবো না। (কাব্য যদি সত্যি কক্সবাজার যেতে চায় তাহলে ওকে আটকাতে হবে। হিয়ার সাথে আজকে যা ঘটলো তা আমার কাছে ঠিক লাগছে না, আমি নিশ্চিত এসব ওই মেয়েটার কাজ)
আমি: ডাক্তারবাবু হিয়া হাত কেটে ফেলেছে।
কাব্য: মানে কিভাবে?
আমি: বাসায় আসো তারপর বলছি।
কাব্য: ঠিক আছে আমি আসছি। (ফোন রেখে হিয়ার কাছে আসলাম)
আমি: আচ্ছা হিয়া তুমি লোক দুইটাকে চিনতে পেরেছ?
হিয়া: না অন্ধকারে তো বুঝা যাচ্ছিল না আর মনে হলো দুজনের মুখই রোমাল দিয়ে বাধা ছিল। (আমাকে যারা মেরেছিল তারা নয়তো)
আমি: শপিং করতে গিয়েছিলে তো ছিনতাইকারী হবে, তুমি ভয় পেয়ো না রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।
হিয়া: ঠিক আছে।

বারান্দা আর রুমে পায়চারী করছি কিছুতেই শান্ত হয়ে বসতে পারছি না। মেয়েটা অনেক দূর এগিয়ে গেছে, আজ হয়তো হিয়ার তেমন ক্ষতি হয়নি কিন্তু পরে? পরে যে বেশি ক্ষতি করবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে? হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো হাতে নিয়ে দেখি অচেনা নাম্বার, এই অচেনা নাম্বার দেখলেই এখন আমার ভয় হয়। ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম।
আমি: হ্যালো।
–আমি আন্দাজ করতে পেরেছি সেদিন হসপিটালে আমার ফোন কাব্য নয় তুমি রিসিভ করেছিলে। আমি এতোকিছু বলার পরও কাব্য চুপ হয়ে থাকার ছেলে নয়। সেদিন কি কি বলেছিলাম মনে আছে তো? অবশ্য মনে না থাকলেও সমস্যা নেই আজ হিয়ার এই অবস্থা দেখে অবশ্যই মনে পরে গেছে।
আমি: তুমি কে বলতো।
–আমি কে শুনলে চমকে যাবে তারচেয়ে না জানাই ভালো।
আমি: কেন করছ এরকম?
–কাব্য আমার সাথে প্রতারণা করেছে তাই প্রতিশোধ নিচ্ছি ওকে আমি শান্তিতে থাকতে দিবো না।
আমি: কি করবে তুমি হ্যাঁ?
–যা যা করেছি তা থেকে কি আন্দাজ করতে পারছ না?
আমি: দেখো তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে ডাক্তারবাবু কারো সাথে প্রতারণা করতেই পারে না।
–করেছে তো আমার সাথে করেছে।
আমি: যেটুকু বুঝতে পেরেছি তুমি ডাক্তারবাবুর অতীত আ…
–তুমি খুব চালাক মেয়ে কিন্তু তুমি এইটা কেন বুঝতে পারছ না কাব্য আমার লোক গুলোকে খুঁজতে চাইছে আর তাই আমি হিয়ার ক্ষতি করছি। কাব্য’কে নিষেধ করো তাহ…
আমি: অন্যায় যখন করেছ শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।
–আমাকে খুঁজে পাবে না তো শাস্তি কিভাবে দিবে? বরং আমি তোমাদের একের পর এক ক্ষতি করেই যাবো।
আমি: ভীতুরা লুকিয়েই অন্যের ক্ষতি করে, সাহস থাকলে সামনে এসে ক্ষতি করো দেখি পারো কিনা।
–এই আমাকে একদম ভীতু বলবি না।
আমি: ভীতু কে তো ভীতুই বলতে হয়। তুমি তো ভয়ে আমার সামনেই আসছ না টাকা দিয়ে লোক কিনে আমাদের ক্ষতি করছ আ…
–খুব শীঘ্রই তোর সামনে আসবো। (ফোনটা কেটে দিলো যাক রাগিয়ে দিয়ে তো একটা কাজ হলো, ও আমার সামনে আসবে ওকে তো চিনতে পারবো)
হঠাৎ কাব্যদের চেঁচামেচি শুনে তাড়াতাড়ি নিচে আসলাম।

তিন ভাই একসাথে চলে এসেছে আর হিয়াকে একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।
হিয়া: আরে থামো তোমরা। (হিয়ার চিৎকারে সবাই শান্ত হলো)
হিয়া: এভাবে তিনজন একসাথে প্রশ্ন করলে আমি উত্তর দিবো কিভাবে?
ভাইয়া: ঠিক আছে এখন বল তোর হাত কেটেছে কিভাবে।
হিয়া: দুজন লো…
আমি: হিয়াকে রাস্তায় ছিনতাইকারী ফলো করেছিল আর ওদের কাছ থেকে পালিয়ে আসতে গিয়ে কেটে গেছে।
কাব্য: তোকে একা বাইরে যেতে বলেছিল কে অয়নকে বললে তো নিয়ে যেতো আর একা গিয়েছিস তো গাড়ি নিলি না কেন?
হিয়া: কখন থেকে সবাই আমাকে বকা দিয়েই যাচ্ছ, আমার তো তেমন কিছুই হয়নি সামান্য হাত কেটেছে মাত্র।
অয়ন: এক থাপ্পড় দিবো সামান্য কেটেছে বলছে আবার।
আমি: অয়ন কি করছ? যাও তোমরা তিন ভাই এই রুম থেকে বের হও। (সবাইকে জোর করে রুম থেকে বের করে দিলাম)
ভাবি: কেন যে একা একা গেলি।
হিয়া: আমি জানতাম নাকি ছিনতাইকারী ধরবে।
আমি: অয়নকে নিয়ে গেলেই পারতে, দেখছ তো সামান্য হাত কাটাতে তোমার ভাইরা কেমন পাগল পাগল হয়ে গেছে।
হিয়া: হু।
আমি: এখন চুপ করে ঘুমাও।
হিয়া: ঠিক আছে।

রুমে এসে দেখি কাব্য নেই গেলো কোথায়? বারান্দার দরজা খোলা তাহলে মনে হয় বারান্দায়। কাব্য বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে, হঠাৎ ও কাঁদছে কেন?
আমি: ডাক্তারবাবু।
কাব্য: হুম।
আমি: কি হয়েছে কাঁদছ কেন?
কাব্য: জানো তিলো আমি কখনো হিয়ার গায়ে এতটুকু আছর লাগতে দেইনি আর আজ হিয়ার হাত এতোটা কেটে গেছে।
আমি: এজন্য কাঁদতে হয় পাগল কোথাকার।
কাব্য: কি করবো খুব কষ্ট হচ্ছে যে, হিয়াটাই তো আমার সব।
আমি: হু বুঝতে পেরেছি। (সামান্য হাত কেটে গেছে তাতেই কাব্য কান্নাকাটি করছে এরচেয়ে বড় কোনো ক্ষতি হলে তো কাব্য…)
আমি: আচ্ছা তোমাকে একটা প্রশ্ন করি রাগ করবে নাতো?
কাব্য: উঁহু বলো।
আমি: আচ্ছা তুমি তো আমার প্রথম ভালোবাসা আমিও কি তোমার প্রথম ভালোবাসা? (কাব্য চমকে উঠে আমার দিকে তাকালো)
কাব্য: হঠাৎ এসব জানতে চাইছ কেন?
আমি: বলোনা প্লিজ। (কাব্য’কে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে ওর পিটে মাথা রাখলাম, কোনো ভাবে তো জানতে হবে আমাকে মেয়েটা কে)
কাব্য: তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা না, এর আগেও আমার একজনের সাথে রিলেশন ছিল।
আমি: তাহলে তাকে বিয়ে করলে না কেন?
কাব্য: ওকে বিয়ে করলে কি আমার তিলো পাগলীকে পেতাম?
আমি: তুমি কিন্তু আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছ, আচ্ছা মেয়েটির নাম কি ছিল?
কাব্য: ওই নোংরা নামটা আমি মুখে আনতে চাই না। (কাব্য আমাকে এক ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে রুমে চলে গেলো)

কিযে করি কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। কাব্য তখন রাগ করে বাসা থেকেই বেরিয়ে গেলো, মেয়েটির নাম জানতে চাওয়াতে কাব্য এতো রেগে গেলো কেন বুঝতে পারছি না। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম রাত এগারোটা বাজে, কাব্য এখনো বাসায় আসছে না কেন? হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, আদনান ভাইয়া এতো রাতে ফোন দিলো কেন?
আমি: হ্যালো।
আদনান: ভাবি কাব্য আমার কাছে আছে টেনশন করোনা।
আমি: ও বাসায় আসবে না?
আদনান: বলেছিলাম ও তো না করছে। আর তুমি হঠাৎ করে ওর অতীত জানতে চাইছ কেন বলতো?
আমি: ওহ এজন্য ও রাগ করেছে?
আদনান: রাগ না ঠিক তবে অতীত মনে পড়লে ও কষ্ট পায় প্লিজ আর কখনো জানতে চেয়ে ওকে কষ্ট দিও না।
আমি: ঠিক আছে ওকে সকালে পাঠিয়ে দিও।
আদনান: ওকে।
আশ্চর্য তো যে কাব্য আমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারে না সে কাব্য সামান্য অতীত জানতে চাওয়াতে রাগ করে বন্ধুর বাসায় চলে গেলো।

কাব্য যখন বাসায় নেই এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে হবে, এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু ডায়েরিটা পাবো কোথায়? এই রুমে কোথাও আছে বলে তো মনে হয় না।

কি খুঁজছি নিজেও জানিনা শুধু জানি ডায়েরিটা আমাকে পেতে হবে। আর খুঁজতে খুঁজতে নিচে চলে এসেছি। অন্যমনস্ক হয়ে হাটছিলাম হঠাৎ অয়নের সাথে ধাক্কা খেলাম, এতো রাতে অয়ন সজাগ কেনো?
অয়ন: ভাবি এতো রাতে এখানে কি করছ?
আমি: আমিও তো তোমাকে এই একি প্রশ্ন করতে পারি।
অয়ন: এইতো ঘুম আসছিল না তাই হাটছিলাম।
আমি: ওহ আমি পানি খেতে আসছিলাম।
অয়ন: মিথ্যে বলছ তুমি, আমি এর আগেও অনেক বার লক্ষ করেছি তুমি এই বাসায় কি যেন খুঁজো।
আমি: হ্যাঁ খুঁজি, তুমি আমাকে সাহায্য করবে?
অয়ন: বলে দেখো করলে তো করতেও পারি। (অয়নের দিকে তাকালাম সত্যি কি ওকে বলা উচিত হবে, ও কি সাহায্য করবে আমায়)
আমি: আসলে আমি তোমার ভাইয়ার ডায়েরি খুঁজছি।
অয়ন: হঠাৎ ডায়েরি কেন?
আমি: প্রয়োজন আছে।
অয়ন: আমাকে বললে সাহায্য করতে পারি।
আমি: আম্মু আব্বুকে খুঁজে বের করতে চাই আবার সবাইকে এক করতে চাই।
অয়ন: পারবে তুমি এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে?
আমি: পারবো কিনা জানিনা তবে চেষ্টা তো করতেই পারি।
অয়ন: চলো আমার সাথে।

অয়ন আমার হাত ধরে টেনে স্টোররুমে নিয়ে আসলো।
আমি: এই রুমে তো আমি আগেও এসেছি এখানে কিছু নেই। (অয়ন আমার দিকে একবার তাকিয়ে দেয়ালের সাথে লাগানো আলমারিটা সরিয়ে ফেললো। আলমারির পিছনে দরজা দেখে তো আমি অবাক)
অয়ন: এই দরজার কথা কেউ জানেনা একদিন আমি ভাইয়াকে ফলো করে এখানে এসেছিলাম আর তুমি ভাইয়ার আব্বু আম্মুকে ফিরিয়ে আনতে চাইছ বলেই তোমাকে দেখালাম।
আমি: এখানে আরেকটা রুম আছে?
অয়ন: লাইব্রেরী।

অয়ন আর আমি দুজন লাইব্রেরীতে ঢুকলাম। ছোট একটা রুম কিন্তু পুরো রুমে বই দিয়ে ঠাসা। টেবিলের উপর অনেক গুলো ডায়েরি রাখা আর টেবিলের পাশে গীটার রাখা। দেয়ালে তাকালাম পুরো দেয়াল জুড়ে শুধু আব্বু আম্মুর ছবি। সেদিন যে ডায়েরিটা দেখেছিলাম সে ডায়েরিটা টেবিলের উপর রাখা দেখে হাতে নিলাম। অবশেষে ডায়েরিটা পেয়ে গেলাম, কোনো না কোনো সূত্র তো পাবোই আব্বু আম্মুকে খুঁজে পাওয়ার। আস্তে আস্তে ডায়েরিটা খুললাম…

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১৯

0

রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

পুরো এক সপ্তাহ হসপিটালে থেকে তারপর বাসায় আসতে পারলাম। বাসার সামনে এসে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম, হসপিটালে এতো দিন থাকা যায়। কাব্য যে কিভাবে সারাটা দিন হসপিটালে কাটায়…
আমি: আরে কি করছ ডাক্তারবাবু?
কাব্য: দেখতেই তো পারছ কি করছি।
আমি: হ্যাঁ দেখছি কিন্তু আমি তো হেটে যেতে পারবো কোলে নিয়েছ কেন?
কাব্য: তুমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হওনি তাই।
আমি: তাই বলে এখান থেকে বাসার ভিতরে…
কাব্য: উফফফ তুমি না বড্ড বেশি কথা বলো। (কাব্য’র ধমক শুনে চুপ হয়ে গেলাম। গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভিতর চলে যাবো তাও এইটুকু জায়গা ও আমাকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছে)
হিয়া: এইতো ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে চলে এসেছে।
ভাবি: এখানে বসিয়ে দাও। (কাব্য আমাকে ড্রয়িংরুমে সোফায় এনে বসিয়ে দিলো)
অয়ন: ভাবি তুমি এতোদিন হসপিটালে ছিলে বাসাটা কেমন যেন ফাঁকাফাঁকা লাগছিল।
ভাবি: হ্যাঁ এখন ওর সামনে বেশি বকবক করোনা ও কিন্তু এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।
আমি: ভাবি আমি ঠিক আছি সুস্থ হয়ে গেছি তোমরা এতো চিন্তা করোনা।
কাব্য: হ্যাঁ তুমি এতোটাই সুস্থ হয়ে গেছ যে এখন তুমি দৌড়াতে পারবে। (কাব্য’র কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম, সত্যিই তো আমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হইনি)

হিয়ার কাধে মাথা রেখে বসে আছি আর সবাই গল্প করছে। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো।
কাব্য: ফারাবী এসেছে মনে হয় আমি দেখছি। (কাব্য দরজা খুলে দিতেই মামি এসে তাড়াহুড়ো করে ভিতরে ঢুকলেন)
মামি: তমা।
আমি: মামি তুমি এখা…
মামি: এতো অবাক হচ্ছিস কেন আমি তোকে দেখতে এসেছি।
আমি: বাহ্ এক সপ্তাহের উপর হসপিটালে থেকে আসলাম তখন দেখতে যাওনি আর আজ বাসায় আসা মাত্রই দেখতে চলে আসলে।
ভাবি: মামি আপনি বসে কথা বলুন না। (মামি এসে আমার পাশে বসলেন)
মামি: আসলে আমি জানতাম না তুই এতোটা অসুস্থ সেদিন তিশা বলছিল তুই অসুস্থ আমি এতোটা কানে নেইনি কিন্তু আজ তিশা ওর মায়ের সাথে কথা বলছিল তোর বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে এই ব্যাপারে, তাই তো ছুটে আসলাম তোকে দেখতে। (ব্যাপার কি মামি হঠাৎ এতো ভালো হয়ে গেলো, কোনো না কোনো কাহিনী তো নিশ্চয় আছে। আচ্ছা এসবের পিছনে মামির হাত নেইতো)
মামি: কিরে কথা বলছিস না যে?
কাব্য: মামি এই বিষয়ে তিলোকে কিছু না বলাই ভালো।
মামি: ঠিক আছে বাবা।
কাব্য: আপনি রেস্ট নিন আমি তিলোকে নিয়ে রুমে যাচ্ছি। (কাব্য আবার আমাকে কোলে তুলে নিলো, সবাই স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আছে কিন্তু মামি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। কাব্য’র বুকের শার্ট খামছে ধরে মাথাটা ওর বুকের মধ্যে এলিয়ে দিলাম। কাব্য সিঁড়ি দিয়ে উপড়ে উঠতে উঠতে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকিয়ে তাকালো)
আমি: এভাবে ভ্রু কুচকাচ্ছ কেন?
কাব্য: তুমি হাসছ কেন?
আমি: বউকে কোলে করে নিয়ে চলাফেরা করতে হয় তোমার কি কষ্ট এইটা ভেবেই হাসছি।
কাব্য: ওহ তাই তো আমার তো খুব কষ্ট হয় এখনো হচ্ছে, আমার তো এখন তোমাকে ঠাস করে ফেলে দেওয়া উচিত।
আমি: এই না না। (ভয়ে দুহাত দিয়ে কাব্য’র গলা জরিয়ে ধরলাম)

কাব্য আমাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে জানালা গুলো খুলে দিলো। কতোদিন পর নিজের রুমে আসতে পেরেছি।
আমি: কতোদিন পর বাসায় আসছি তাই না?
কাব্য: হ্যাঁ আমার লক্ষী আমার ঘরে ফিরে এসেছে।
আমি: লক্ষী কে?
কাব্য: আমার বউ।
আমি: তোমার বউ কে?
কাব্য: আমার তিলো পাগলী।
আমি: তোমার তিলো পাগলী কে?
কাব্য: তু… (কথা আটকে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো কাব্য। কতোদিন পর ওর মুখে এই পাগল করা হাসিটা দেখলাম)
কাব্য: তিলো সব ভুলে যাও আমরা আবার নতুন করে সব সাজাবো কেমন?
আমি: হু।
কাব্য: পেটের ব্যথা কমেছে? (কি বলি এখন ওকে, পেটের ব্যথাটা যে এখনো কমেনি। কাব্য’কে বললে তো ও টেনশন করবে)
কাব্য: আর বলতে হবে না আমি উত্তর পেয়ে গেছি। (কাব্য আমার পেটের শাড়ি সরাতে সরাতে বললো)
আমি: আরে ডাক্তারবাবু কি করছ?
কাব্য: ডাক্তারবাবু তার বউয়ের চিকিৎসা করছে। (কাব্য আমার পেটে আলতো করে একটা চুমু খেলো)
কাব্য: চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে। (কাব্য’র দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আজ কতোদিন পর কাব্য এমনভাবে স্বাভাবিক হয়ে কথা বলছে, হাসছে)
কাব্য: তখন ভয় পেয়ে আমার গলা জরিয়ে ধরেছিলে কেন, ভেবেছিলে সত্যি আমি তোমাকে ফেলে দিবো?
আমি: আস…
কাব্য: তোমার ডাক্তারবাবু তোমাকে কখনো কষ্ট দিবে না যদি কখনো পাও বুঝে নিও নিজের অজান্তে দিয়ে ফেলেছি। (আমার নাকের সাথে ওর নাক ঘসছে। দ্যাত নিজের প্রতি এখন রাগ হচ্ছে, আগে কেন ভয় পেতে গেলাম)
কাব্য: নিজের উপর রাগ করোনা বুঝেছ।
আমি: নিজের উপর রাগ করোনা বুঝেছ। আমি যে নিজের উপর রাগ করেছি তুমি বুঝলে কিভাবে?
কাব্য: আমাকে ভেঙাচ্ছ কেন আমি বুঝতে পেরেছি তাই বললাম। আসলে তুমি যখন নিজেই নিজের প্রতি রেগে যাও তখন তোমার নাকটা লাল হয়ে যায় আর আমার তখন… (কাব্য আমার ঠোঁটের কাছে ওর ঠোঁট দুটু এনে আমার চোখের দিকে তাকালো)
আমি: আর তোমার তখন কি?
কাব্য: তোমার লাল হয়ে যাওয়া নাকটায় কামড় বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করে (কাব্য আমার নাকে আলতো করে একটা কামড় দিলো)
আমি: ফাজিল কোথাকার অসুস্থ বউয়ের সাথে রোমান্স হচ্ছে।
কাব্য: অসুস্থ বউয়ের সাথে রোমান্স করা যাবে না এইটা কোন বইয়ে লিখা আছে হু?
আমি: কোনো বইয়ে লিখা নেই তবে আমার আইনে আছে।
কাব্য: যে আইন আমার থেকে আমার তিলো পাগলীকে আলাদা করে নিবে সে আইন আমি মানি না বুঝেছ?
আমি: হ্যাঁ বুঝেছি কিন্তু কি করছ এসব?
কাব্য: যা করছি তাতো দেখতেই পারছ। (কাব্য আমার পেট থেকে চুমু দিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে উপরে উঠছে। গলায় চুমু দিয়ে একটা হাত আমার গালে রাখলো তারপর আমার ঠোঁটের উপর ওর ঠোঁট রাখলো। একটা হাত দিয়ে কাব্য’র ঘাড়ের কাছের চুলগুলো মুষ্টি করে ধরলাম সাথে সাথে দরজায় টোকা পড়লো, ওর চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে ওকে সরাতে চাইলাম। কাব্য আমার ঠোঁট দুটু ওর ঠোঁটের মধ্যে রেখেই আমার চোখের দিকে তাকালো। রাগে কাব্য’র চোখ দুটু লাল হয়ে আছে দেখে খুব হাসি পাচ্ছে কিন্তু কাব্য তো আমাকে ছাড়ছেই না, ওদিকে কে যেন দরজায় টোকা দিয়েই যাচ্ছে)
কাব্য: নাও ছেড়ে দিলাম আর হাসি চেপে রাখতে হবে না মন খুলে হাসো। (হাসি আটকানোর জন্য একটা হাত দিয়ে মুখ ঢাকলাম, কাব্য দেখে আরো রেগে গেলো)
কাব্য: যে এসেছে তাকে তো এখন আমি…
আমি: আরে ডাক্তারবাবু… (কাব্য রাগ নিয়ে দরজা খুললেও হিয়াকে দেখে ওর সব রাগ ফুস)
হিয়া: কখন থেকে ডাকছি এতোক্ষণ লাগে দরজা খুলতে (কাব্য কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না তাই মাথা চুলকাচ্ছে)
হিয়া: নাও ভাবিকে খাবার খাইয়ে দিয়ে ওষুধ দাও।
কাব্য: ঠিক আছে রেখে যা। (হিয়া খাবার রেখে আমার দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ দিয়ে চলে গেলো। হিয়া চোখ টিপ দিলো কেন)
কাব্য: কি ভাবছ?
আমি: হিয়া চোখ টিপ দিলো কেন?
কাব্য: জানিন… (কাব্য অর্ধেক বলে আটকে গেছে, আমার পেটের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর এমন চাওয়া দেখে পেটের দিকে তাকালাম, ইহহ পেটে তো শাড়ি নেই তারমানে…)
কাব্য: আমার দিকে রাগি চোখে তাকাচ্ছ কেন আমি কিছু জানিনা।
আমি: নিজে সরিয়ে এখন জানেনা, ইসসস হিয়া বুঝে পেলেছে তুমি আমাকে…
কাব্য: আদর করছিলাম তাই তো, হিয়া বুঝলে কি হয়েছে আমি আমার বউকেই তো আদর করছিলাম।
আমি: হিয়া তো বোন তাই না?
কাব্য: আমার বোন হলেও তোমার তো ননদ সমস্যা নেই।
আমি: না হিয়া আমারো বোন।
কাব্য: আচ্ছা বাবা হিয়া তোমারই বোন এখন খেয়ে নাও।
আমি: হু।

ছোট বাচ্চাদের মানুষ যেভাবে যত্ন করে কাব্য সেভাবে আমার যত্ন করছে। নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিয়েছে, ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে আ…
কাব্য: কি হলো মিটিমিটি হাসছ যে?
আমি: ভাবছি হাজবেন্ড ডক্টর হলে ভালোই হয় অসুস্থ হলে বেশি বেশি সেবা পাওয়া যায়।
কাব্য: আর ওইটা বলো হাজবেন্ড রোমান্টিক হলেও ভালো হয় অসুস্থ হলেও আদর পাওয়া যায়।
আমি: দ্যাত তুমি না। (হঠাৎ কাব্য’র ফোন বেজে উঠলো। ফোন নিয়ে কাব্য জানালার কাছে চলে গেলো)

কাব্য: আরে লোক দুটু তো আর আকাশে উড়ে উড়ে ছাদে আসেনি এসেছে তো নিচ থেকেই তাহলে সিসি ক্যামেরায় দেখা যাবে না কেন? (ওপাশ থেকে কে কি বলছে শুনতে পাচ্ছি না তবে এইটা বুঝতে পারছি কাব্য লোক দুটুকে খুঁজছে)
কাব্য: বাইরের ক্যামেরা নাহয় নষ্ট করে দিয়েছিল কিন্তু হসপিটালে তো অনেক ক্যামেরা কোনো ক্যামেরায় কি ধরা পড়েনি? (কাব্য যে খুঁজছে ওদের ওই মেয়েটা আবার হিয়ার কোনো ক্ষতি করবে নাতো। আমি কি কাব্য’কে নিষেধ করবো)
কাব্য: দ্যাত ফোন রাখ তিলো সুস্থ হলেই আমি কক্সবাজার আসছি। (কাব্য ফোন কেটে দিয়ে আমার পাশে এসে বসলো)
কাব্য: তিলো এখন ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে।
আমি: ওকে।

কাব্য লোক দুইটাকে পাগলের মতো খুঁজছে বুঝতে পারছি কিন্তু ওই মেয়েটা যদি হিয়ার ক্ষতি করে তাই ভয় হচ্ছে। কাব্য’কে নিষেধ করলেও শুনবে না কারণ কাব্য আমাকে ভালোবাসে, যারা আমাকে এতো কষ্ট দিয়েছে কাব্য তাদের ছেড়ে দিবে না। কাব্য আমাকে এতোটাই ভালোবাসে যে এতো অসুস্থ ছিলাম আমি ওর একটু একটু ভালোবাসা সেবা দিয়ে আমাকে সুস্থ করে তুলেছে। একটা ছোট বাচ্চাকে যেভাবে যত্ন করা হয় কাব্য আমাকে সেভাবে যত্ন করছে। কতোটা ভালোবাসলে মানুষ এতো ধৈর্য নিয়ে দিনের পর দিন এভাবে যত্ন করে যেতে পারে কাব্য আমার জীবনে না আসলে বুঝতামই না।

মাঝরাতে হঠাৎ পেটের ব্যথায় ঘুম ভেঙে গেলো, কাব্য’কে ডাকার জন্য হাত বাড়ালাম কিন্তু কাব্য তো আমার পাশে নেই। তাকিয়ে দেখি কাব্য কি যেন লিখছে, আশ্চর্য এতো রাতে আর ডিম লাইটের আলোতে কাব্য কি লিখছে? আচ্ছা ডায়েরি নয় তো? কাব্য হঠাৎ ডায়েরিটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে পা বাড়ালো। কাব্য কোথায় যাবে আমি দেখতে পারবো না কারণ ওর পিছু পিছু যাওয়া সম্ভব না পেটে ব্যথা করছে। যেভাবেই হউক কাব্য’কে আটকাতে হবে যেন কাব্য ভুলে ডায়েরিটা এই রুমেই রেখে দেয়।
আমি: ডাক্তারবাবু… (আমার ডাক শুনে কাব্য থেমে গেলো, ডায়েরিটা টেবিলে ছুড়ে ফেলে দিয়ে তাড়াতাড়ি আমার কাছে আসলো)
কাব্য: কি হয়েছে তিলো কষ্ট হচ্ছে তোমার।
আমি: হুম পেটে ব্যথা করছে আর এই রুমে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
কাব্য: এই রুমে…
আমি: আমাকে বারান্দায় নিয়ে চলো প্লিজ।
কাব্য: এতো রাতে।
আমি: হু।
কাব্য: ঠিক আছে।

কাব্য আমাকে কোলে করে এনে বারান্দায় রাখা কাউছ’টায় শুয়ে দিলো।
আমি: তুমি কোথায় যাচ্ছ।
কাব্য: আসছি একটু।
আমি: কোথাও যাবে না আমার ভয় করে এখানে বস। (কাব্য চুপচাপ এসে আমার পাশে শুয়ে পড়লো, কাব্য’র বুকে মাথা রেখে ওকে জরিয়ে ধরলাম। সকালে ওর আগে আমাকে ঘুম থেকে উঠতে হবে যেন ডায়েরিটা পেয়ে যাই। রাতে কাব্য’র এখান থেকে যাওয়ার সুযোগ নেই ডায়েরি লুকাবে কিভাবে)
কাব্য: ঘুমিয়ে পড়ো তিলো পাগলী।
কাব্য এক হাত দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে রেখেছে আরেক হাত দিয়ে আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। কাব্য’কে জরিয়ে ধরে চুপচাপ শুয়ে রইলাম, সকালে শুরু হবে আব্বু আম্মুকে খুঁজে বের করার জন্য আমার প্রথম কাজ।

চলবে?

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১৮

0

রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

হঠাৎ কারো কান্নার শব্দে ঘুম ভাঙলো, আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি কাব্য একটু দূরে চেয়ারে মাথা নিচু করে বসে আছে আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কতোক্ষণ ঘুমিয়েছি জানিনা মনে তো হচ্ছে এখন গভীর রাত, দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকালাম রাত দুইটা বাজে। হুট করে বাচ্চার কথা মনে পড়ে গেলো, একটা হাত আস্তে আস্তে পেটের উপর নিয়ে রাখলাম। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু কাঁদতে পারছি না, আমি কাঁদলে যে কাব্য আরো ভেঙ্গে পড়বে।
আমি: ডাক্তারবাবু (আমার ডাক শুনে কাব্য তাড়াতাড়ি পিছন ফিরে চোখের পানি মুছে নিলো, আমাকে লুকাতে চাইছে হায়রে পাগল)
কাব্য: ঘুম ভেঙেছে?
আমি: হুম। (আমার পাশে বসে পেটের উপর রাখা আমার হাতটা ওর হাতের মুঠোয় পুরে নিলো তারপর আমার হাতে একটা চুমু খেলো)
কাব্য: এইতো তুমি সুস্থ হয়ে গেছ দেখো আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি: আচ্ছা তুমি এতো সুন্দর করে কষ্ট লুকাতে পারো কিভাবে (কাব্য মুখে হাসির রেখা টানার বৃথা চেষ্টা করে আমার বুকের উপর ওর মাথা রাখলো। একটা হাত ওর চুলের মধ্যে রাখলাম, জানিনা আর কতো কষ্ট পেতে হবে ওকে)
কাব্য: তিলো আমাকে ক্ষমা করে দিও প্লিজ।
আমি: কেন কি করেছ তুমি?
কাব্য: এইযে তুমি ভয় পাওয়ার পরও জেদ করে কক্সবাজার গেলাম, আর তোমাকে চোখে চোখে না রেখে সবার সাথে আনন্দ করছিলাম।
আমি: আমি ছোট বাচ্চা নাকি যে আমাকে চোখে চোখে রাখবে, এতে তো আমারো দোষ আছে। আমি কেন তোমার থেকে দুরে ছাদের অন্যপাশে গিয়েছিলাম, না গেলে তো এমন হতো না।
কাব্য: মানুষের জীবনে কখন কি ঘটে তা তো আগে থেকে বলা যায় না, যা হবার ছিল তা হয়ে গেছে। এখন তুমি নিজেকে শক্ত করো প্লিজ আর তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠো।
আমি: হুম। আচ্ছা কে করিয়েছে এসব জানতে পেরেছ?
কাব্য: না চিন্তা করো না খুব শীঘ্রই জানতে পারবো। আর যেই করুক ওকে এমন শাস্তি দিবো দেখো আর কখনো কারো ক্ষতি করার চেষ্টা করবে না।
আমি: হুম।
কাব্য: তিলো জানো হিয়া আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।
আমি: কেন?
কাব্য: আমি নাকি আমাদের সন্তানকে ইচ্ছে করে মেরে ফেলেছি। আচ্ছা তুমি বলো কোনো বাবা কি নিজের সন্তানকে খুন করতে পারে। আমি তো জানতাম না তুমি প্রেগন্যান্ট, বুঝতেই পারিনি, জানলে তো জেদ করতাম না আ…
আমি: আম্মু আব্বুর সাথে তুমি ঝগড়া করে ওকে নিয়ে বাসা থেকে চলে এসেছিলে এই ধারণা নিয়েই তো ও ছোট থেকে বড় হয়েছে, তাই তোমার প্রতি ওর মনে কিছুটা রাগ জমে আছে আর এখন এই ঘটনার পর ওর রাগটা আরো বেড়ে গেছে তুমি কেঁদো না দেখো হিয়া একদিন ঠিক তোমায় বুঝবে।
কাব্য: হুম তুমি এখন ঘুমাও।
আমি: তোমার চোখ দুটু লাল হয়ে আছে তুমি একটু ঘুমাও।
কাব্য: না ঘুমুতে ইচ্ছে করছে না।
আমি: ঠিক আছে ঘুমাতে হবে না এখানে শুয়ে আমার বুকে মাথা রাখো আমার ভালো লাগবে (কাব্য শুয়ে পড়লো তারপর আমার বুকে মাথা রাখলো। ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়লো। ওর মাথায় একটা চুমু দিয়ে বললাম)
আমি: চিন্তা করোনা ডাক্তারবাবু আমি তোমার সব কষ্ট দূর করে দিবো। সুস্থ হয়ে আমার প্রথম কাজ হবে আব্বু আম্মুকে খুঁজে বের করা। সবার রাগ অভিমান ভাঙিয়ে আমরা সবাই একসাথে থাকবো।

কাব্যর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বাচ্চাটার কথা ভাবছিলাম। এমন না হলে তো ও আস্তে আস্তে আমার মধ্যে বেড়ে উঠতো আর একদিন আমাদের ঘর আলো করে ও আমার কোলে আসতো। হঠাৎ কাব্য’র ফোন বেজে উঠলো, এতো রাতে আবার কে ফোন দিলো। একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে, কাব্য গভীর ঘুমে এখানে কথা বললে সমস্যা হবে না তাই ফোনটা রিসিভ করলাম। আমি কিছু বলার আগেই অপর পাশ থেকে কথা বলতে শুরু করলো।
–কি কাব্য তোমার বউয়ের এমন অবস্থা কে করলো এইটা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছ নাতো? ছাড়ো আমিই বলছি তাতে তোমার কষ্টটা অনেক গুণ বেড়ে যাবে আশা করছি। কাব্য মনে আছে তোমার অতীতের কথা? তুমি না বড্ড বোকা কাব্য তাই তো অতীতটা একেবারে ভুলে বসে আছ। এভাবে ভুলে গেলে হয় বল?
আমি: (নিশ্চুপ)
— কথা বলছ না যে? ওহ চমকে উঠেছ ভাবছ আমি কেন এসব করছি। যা করেছি আমার স্বার্থে করেছি এইটা নিয়ে আর ভেবো না ভুলে যাও। যদি আমাকে খুঁজার চেষ্টা করো তাহলে কিন্তু তোমার তিলো পাগলীর চেয়ে খারাপ অবস্থা হবে তোমার বোন হিয়ার (ওর কথা শুনে চমকে উঠলাম, কে এই মেয়ে? ও তো দেখছি আমাদের সম্পর্কে সবকিছু জানে)
— কি বিশ্বাস হচ্ছে না আমি যে হিয়ার ক্ষতি করবো? চলো আমিই বিশ্বাস করিয়ে দিচ্ছি, হিয়াকে একবার ফোন দিয়ে বলো ওর রুমের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতে তাহলেই ও দেখতে পাবে আমার দুজন লোক ওকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখছে। হিয়া যখন দেশে ফিরেছে মানে এয়ারপোর্ট থেকেই ওর পিছনে আমার লোক লাগিয়ে দিয়েছি সো কাব্য চৌধুরী বুঝতেই পারছ আমি যেকোনো সময় তোমার বোনের ক্ষতি করতে পারি। আগেই ওয়ার্নিং দিয়ে দিচ্ছি যা হয়েছে ভুলে যাও এক বাচ্চা নষ্ট হয়েছে আবার বাচ্চা হবে কিন্তু এই বাচ্চার কথা ভেবে বোনের জন্য বিপদ ডেকে এনো না কারণ বোন মারা গেলে আর বোন পাবে না আর আমি জানি হিয়ার কিছু হলে তুমি এমনিতেই শেষ হয়ে যাবে। (আর শুনতে পারলাম না ফোনটা কেটে দিলাম। মেয়েটার কথা শুনে ভয়ে আমার সারা শরীর ঘামছে। মেয়েটা কতোটা ভয়ঙ্কর সেটা ও একবার প্রমাণ করে দিয়েছে এখন যদি ও হিয়ার কোনো ক্ষতি করে… আমি হিয়ার কোনো ক্ষতি হতে দিবো না আমি ওকে আগলে রাখবো)

কাব্য’র ফোন থেকে নাম্বারটা ডিলিট করে ফেললাম, আমি চাই না কাব্য এই বিষয় নিয়ে আর খুঁজাখুঁজি করুক আর হিয়ার বিপদ ডেকে আনুক। কাব্য মেয়েটাকে শাস্তি দিতে গেলে যদি হিয়ার কোনো ক্ষতি করে বসে তখন? হিয়া তো কাব্য’র সব, হিয়ার কিছু হলে কাব্য শেষ হয়ে যাবে। আমি আমার জন্য ওদের ভাই বোনের কোনো ক্ষতি হতে দিবো না। কিন্তু মেয়েটি কে যেকিনা আমাদের সম্পর্কে সবকিছু জানে? শুভ্রা যে না সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত কারণ কন্ঠটা শুভ্রার ছিল না তাহলে মেয়েটি কে?

কাব্য: তিলো উঠো (কাব্য’র ডাকে সকালে ঘুম ভাঙলো)
কাব্য: কিছু খেয়ে ওষুধ খেয়ে নাও তারপর আবার ঘুমিয়ে যেও সমস্যা নেই।
আমি: বাসায় যেতে পারবো কবে?
কাব্য: এই অবস্থায় তুমি বাসায় চলে যেতে চাইছ?
আমি: এখানে তো তুমিই সেবা করছ তাহলে বাসায় এই সেবাটা করলে দোষ কোথায়?
কাব্য: তোমার সাথে কথায় পারবো না, আচ্ছা এক সপ্তাহ পর বাসায় নিয়ে যাবো।
আমি: আরো এক সপ্তাহ।
কাব্য: তুমি ভালো করে সুস্থ নাহলে হবে বলো, তোমার যদি কিছু হয়ে যায় আমি কি নিয়ে বাঁচবো (কাব্য আমার গালে একটা হাত রেখে বললো, ওর দুচোখ দিয়ে পানি ঝরছে। কতোটা ভয় পায় ও আমাকে নিয়ে)
আমি: বাসায় যাওয়ার কথা আর বলবো না একেবারে সুস্থ হয়েই বাসায় যাবো। (কাব্য’র হাতের উপর আমার একটা হাত রাখলাম ও মুচকি হেসে আমার মুখে খাবার তুলে দিলো)
আদনান: কাব্য আসবো?
কাব্য: হুম আয়।
আদনান: ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই রিপোর্ট ভালো এসেছে।
কাব্য: সত্যি?
আমি: কিসের রিপোর্ট? (আদনান কাব্য’র দিকে তাকিয়ে রিপোর্টটা রেখে বেড়িয়ে গেলো)
কাব্য: আমরা ভয় পেয়েছিলাম এতো বড় আঘাতের পর তুমি যদি মা হবার…
আমি: ওহ বুঝেছি (আমি আবার মা হতে পারবো এইটার রিপোর্ট ভালো এসেছে আমি তো ভেবেছিলাম আমার বাচ্চাটা বুঝি বেঁচে আছে)
কাব্য: তিলো আমি বুঝতে পারছি তুমি কি ভেবে খুশি হয়েছিলে, মন খারাপ করোনা দেখো আল্লাহ্‌ আবার আমাদের কোলজোড়ে সন্তান দিবেন।
আমি: হুম।

বালিশে হেলান দিয়ে চুপচাপ বসে আছি, কাব্য দূরে চেয়ারটায় মন খারাপ করে বসে আছে। কাব্য’টার উপর দিয়ে বার বার ঝর বয়ে যাচ্ছে কবে যে ও একটু সুখের দেখা পাবে।
হিয়া: ভাবি আসবো?
আমি: হ্যাঁ এসো। (হিয়া কাব্য’র দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আমার পাশে এসে বসলো)
হিয়া: ভাবি আ…
আমি: তোমার ভাইয়ার সাথে কথা বলোনা কেন?
হিয়া: কোনো জেদি লোকের সাথে কথা বলার ইচ্ছে আমার নেই (কথাটা শুনে কাব্য হিয়ার দিকে তাকালো তারপর চোখের পানি মুছতে মুছতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো)
আমি: ভুল করছ হিয়া, এসবে ওর কোনো দোষ নেই।
হিয়া: তোমার বেবিটা নষ্ট হয়ে গেছে তারপরও তুমি ভাইয়াকে দোষ দিচ্ছ না?
আমি: না দিচ্ছি না কারণ কোনো বাবা তার সন্তানকে মেরে ফেলতে চায় না। এসবে কাব্য’র কোনো দোষ নেই, হ্যাঁ ও একটু জেদ করেছিল কক্সবাজার যাওয়ার জন্য ব্যাস এইটুকুই।
হিয়া: তুমি ভাইয়াকে খুব ভালোবাস তাই না?
আমি: যে মানুষটা একটা অচেনা মেয়েকে প্রথম দেখায় এতোটা ভালোবাসতে পারে তাকে ভালো না বেসে কি থাকা যায়। আর হ্যাঁ একদিন তুমিও সব রাগ অভিমান ভুলে তোমার ভাইয়াকে ভালোবাসবে আমি জানি।
হিয়া: আমি তো ভাইয়াকে ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি কিন্তু…
আমি: এই কিন্তুটা আমি দূর করে দিবো। আমাকে সুস্থ হতে দাও আমি তোমাদের সবার রাগ অভিমান ভাঙিয়ে আবার সবাইকে এক করবো (হিয়া আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
হিয়া: সসসবাই মামামানে?
আমি: হুম আব্বু আম্মুকে খুঁজে বের করবো দেখো তুমি।
হিয়া: সত্যি বলছ?
আমি: হ্যাঁ, যদিও আমি জানিনা কিভাবে খুঁজা শুরু করবো তা…
হিয়া: আমি তোমাকে একটা সূত্র দিতে পারি, আমি আব্বু আম্মুকে চাই প্লিজ তুমি এনে দাও।
আমি: কি সূত্র?
হিয়া: ভাইয়া ডায়েরি লিখে, কখন লিখে আর ডায়েরিটা কোথায় রাখে সেটা বলতে পারবো না। মাঝে মাঝে দেখতাম রাতের বেলা ভাইয়া ডায়েরি লিখতো আর কাঁদতো কিন্তু ডায়েরিটা কোথায় রাখে সেটা কখনো দেখিনি। আমি সিওর না তুমি ডায়েরি থেকে কিছু পাবে কিনা কিন্তু আমার মন বলছে এই ডায়েরি থেকেই একটা সূত্র পেয়ে যাবে।
আমি: কোথায় আমি তো ওকে কখনো ডায়েরি লিখতে দেখিনি।
হিয়া: বাসায় ফিরে ভাইয়ার উপর নজর রেখো তাহলেই দেখতে পারবে।
আমি: ঠিক আছে।

চুপচাপ শুয়ে আছি কাব্য পাশে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। ভাবছি হিয়ার কথা কি সত্যি? কিন্তু আমি তো কাব্য’কে কখনো ডায়েরি লিখতে দেখিনি। আর যদি সত্যি লিখে তাহলে কি ডায়েরি থেকে কিছু পাবো?
কাব্য’র দিকে নজর পড়লো একমনে ল্যাপটপের স্কিনে তাকিয়ে আছে, এতো মনোযোগ দিয়ে কি এমন কাজ করছে কে জানে। হঠাৎ একজন সিস্টার তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকলো।
সিস্টার: স্যার ওই পেসেন্ট’টার অবস্থা খুব খারাপ (কাব্য ল্যাপটপ হাত থেকে রেখেই দৌড়ে চলে গেলো)
কাব্য এতো মনোযোগ দিয়ে কি এতো কাজ করছিল দেখার জন্য ল্যাপটপ এর দিকে তাকালাম, স্কিনে একটা ছোট্র বাবুর ছবি দেখে বুকটায় ব্যথা শুরু হয়ে গেলো। তারমানে কাব্য কোনো কাজ করছিল না বসে বসে এই বাবুটার ছবি দেখছিল। এতোক্ষণ তো কষ্টটা একটু কম হচ্ছিল এই ছবিটা দেখে বুকের বাম পাশে ব্যথা শুরু হয়ে গেলো। কাব্য আমাকে সাহস দেয়ার জন্য সব কষ্ট লুকিয়ে আমার সামনে দিব্বি হাসে কিন্তু আড়ালে ও কতোটা কষ্ট পাচ্ছে এই ছবি না দেখলে তো বুঝতেই পারতাম না। আবার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে আর বলতে ইচ্ছে হচ্ছে “কেন হলো আমাদের সাথে এরকম”

চলবে?

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১৭

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করছে, আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম। হসপিটালের ICU তে আছি আমি, মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো, হাতেও কিসব যেন লাগানো। রাতের কথা আস্তে আস্তে সব মনে পড়লো, এতো কিছুর পর আমি বেঁচে আছি ভাবতেই পারছি না। হঠাৎ কারো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ ভেসে আসলো, আস্তে আস্তে পাশ ফিরে তাকালাম, কাব্য সিজদায় পড়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ও এতো কাঁদছে কিন্তু আমি ওকে ডাকতে পারছি না, একটু নড়তেই পেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হলো। হঠাৎ রুমে একজন সিস্টার এসে ঢুকলো, ওকে দেখে হাত নাড়ার চেষ্টা করলাম।
সিস্টার: এইতো ম্যাডাম এর জ্ঞান ফিরেছে। (সিস্টারের কথা শুনে কাব্য তাড়াতাড়ি উঠে আমার কাছে আসলো)
কাব্য: তিলো তুমি ঠিক আছ তো (পাগলের মতো কাঁদছে ও কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারছি না খুব কষ্ট হচ্ছে)
সিস্টার: স্যার কি করছেন এভাবে কাঁদলে ম্যাডাম এর সমস্যা হবে (সিস্টার কাব্য’কে সরাতে আসলো কিন্তু কাব্য সিস্টারকে ধাক্কা মারলো, সিস্টার তাড়াতাড়ি বাইরে চলে গেলো)
কাব্য: পুরো দুদিন পর তোমার জ্ঞান ফিরেছে সবাই বলেছিল তুমি বাঁচবে না কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি, তুমিই বলো আমার তিলো পাগলী কি আমাকে একা রেখে চলে যেতে পারে। আমি নামাজ পড়েছি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি আর দেখো তোমার জ্ঞান ফিরে এসেছে আল্লাহ্‌ আমার কথা শুনেছেন (কাব্য’র কান্না দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি না ইচ্ছে হচ্ছে ওর চোখের পানি মুছে দেই কিন্তু আমি তো হাতই নাড়তে পারছি না)
আদনান: কাব্য কি করছিস পাগল হয়ে গেছিস (সিস্টারটা গিয়ে আদনানকে নিয়ে এসেছে। আদনান কাব্য’কে টেনে আমার থেকে দূরে নিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু কাব্য যাচ্ছে না)
আদনান: তুই একজন ডক্টর হয়ে এমন পাগলামি কেন করছিস? বুঝতে পারছিস না এভাবে কাঁদলে ভাবির সমস্যা হবে।
কাব্য: আমি আর কাঁদবো না প্লিজ ওর কাছে আমাকে থাকতে দে।
আদনান: দিয়েছিলাম তো কিন্তু এভাবে কাঁদলে…
কাব্য: আর কাঁদবো না। (কাব্য চোখের পানি মুছে নিয়ে আমার পাশে এসে বসলো। আদনান এসে কিছু চেকাপ করলো)
আদনান: এইতো ভাবি সুস্থ হয়ে গেছে তুই অযতা কান্নাকাটি করছিস।
কাব্য: তিলো তো সুস্থ হবে কিন্তু…
আদনান: কাব্য চুপ কর (কাব্য আবার ঢুকরে কেঁদে উঠলো, কি লুকুচ্ছে ওরা আমার থেকে)
আদনান: দেখ ভাবি সুস্থ হয়ে গেছে এবার যা তুই ফ্রেশ হয়ে নে (কাব্য’র দিকে তাকালাম সেই রাতের পাঞ্জাবীটা এখনো ওর পরনে, পুরো পাঞ্জাবীতে রক্তের চাপ লেগে আছে। কাব্য’কে দেখে কোনো সুস্থ মানুষ মনে হচ্ছে না, ওকে এখন পাগল পাগল লাগছে)
কাব্য: আমি কোথাও যাবো না।
আদনান: কিছু অন্তত খেয়ে নে প্লিজ।
কাব্য: আমার খিদে নেই (কাব্য এখনো কিছু খায়নি এভাবে না খেয়ে থাকলে তো ও অসুস্থ হয়ে পড়বে। আদনানকে ইশারা দিয়ে অক্সিজেন মাস্কটা খুলে দিতে বললাম। মাস্ক খুলে দিতেই আস্তে আস্তে কথা বলার চেষ্টা করলাম)
আমি: ডাক্তারবাবু…
কাব্য: তিলো তুমি কথা বলতে পারছ?
আদনান: কাব্য আস্তে কথা বল, একজন ডক্টর হয়ে এসব পাগলামি করছিস কিভাবে?
আমি: ওকে বকো না প্লিজ, ও আমার এই অবস্থা দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না তাই এমন পাগলামী করছে, প্লিজ ওকে বকো না।
আদনান: হুম।
আমি: ডাক্তারবাবু যাও কিছু খেয়ে নাও।
কাব্য: খিদে নেই।
আমি: যাও বলছি।
ভাবি: খাবার বাসা থেকে নিয়ে এসেছি কিন্তু ও তো খেতে চাইছে না।
আমি: ভাবি তুমি? (চারদিকে চোখ বোলালাম কোথায় আছি বুঝতে পারছি না)
কাব্য: তিলো তোমাকে ঢাকা নিয়ে এসেছি আমাদের হসপিটালে।
আদনান: এখানে ভীড় করো না প্লিজ, কাব্য যা খেয়ে আয়।
কাব্য: তিলোর কাছে বসে খাই (কাব্য’র বাচ্চামি কথাগুলো শুনে হাসি পাচ্ছে, পাগলটা কতো ভালোবাসে আমায়, চোখের আড়ালই করতে চাইছে না আমাকে)
আদনান: আগে ফ্রেশ হয়ে আয় যা।
আমি: তিশা কোথায়?
আদনান: একটা কাজে গেছে একটু পর চলে আসবে।

কাব্য পাশে বসে খাচ্ছে আমি চোখ দুটু বন্ধ করে শুয়ে আছি আর ভাবছি লোকটা ম্যাডাম ডাকলো কাকে। কার কথামতো ওরা আমাকে মেরে ফেলতে চাইছিল। আচ্ছা শুভ্রা নয় তো? হতে পারে সেদিনের থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল। কিন্তু এভাবে? এতোটা খারাপ কেউ হতে পারে?
তিশা: কাব্য এই নাও শুভ্রাকে নিয়ে এসেছি (তিশার কথা শুনে দরজায় তাকালাম, তারমানে তিশা শুভ্রাকে আনতে গিয়েছিল)
কাব্য: শুভ্রা কেন করলে এমন?
আমি: আরে খাবার রেখে কোথায় যাচ্ছ? (আমার কথার উত্তর না দিয়ে ও শুভ্রাকে টেনে এনে আমার পায়ের কাছে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো)
শুভ্রা: তোমরা আমার সাথে এমন করছ কেন কি করেছি আমি?
তিশা: মনে হচ্ছে ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না।
শুভ্রা: কি করেছি বলবে তো আর তিলোত্তমা ICU তে কেন? (শুভ্রা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে তাহলে কি ও সত্যি কিছু করেনি)
কাব্য: আমার তিলোকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে এখন কিছু না জানার ভান করছ।
শুভ্রা: কি? আমি তিলোত্তমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছি, কি বলছ এসব?
আদনান: তাহলে তুমি এই দুদিন হসপিটালে আসোনি কেন?
শুভ্রা: হসপিটালে আসিনি এজন্য আমি এখন অপরাধী? আমি তো ছুটি নিয়েছিলাম কারণ আম্মু অসুস্থ। তিশাকে জিজ্ঞেস করো ও দেখে এসেছে আম্মু অসুস্থ।
তিশা: হ্যাঁ দেখেছি কিন্তু তাই বলে তুমি কিছু করনি তা বিশ্বাস করবো কিভাবে? লোক দুটুকে তুমি টাকা দিয়েছ আর ওরা তোমার কথা মতো কাজ করেছে।
শুভ্রা: কোন লোক কি বলছ তোমরা, কতোবার বলবো আমি কিছু করিনি।
আদনান: আস্তে চেঁচামেচি করো আর বাইরে চলো সবাই ভাবির সমস্যা হবে।
আমি: দাঁড়াও আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই।
কাব্য: এখন কোনো কথা বলতে হবে না তুমি রেস্ট নাও।
আমি: না আমি শুভ্রার সাথে কথা বলতে চাই।
শুভ্রা: বিশ্বাস করো আমি কিছু করিনি তুমি হসপিটালে আছ সেটাও আমি জানতাম না। আম্মু অসুস্থ আমি দুদিন বাসাতেই ছিলাম। আমি কাব্য’কে ভালোবাসি তাই তোমার সাথে খারাপ আচরণ করি কিন্তু আমি এতোটা খারাপ না যে তোমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করবো। (শুভ্রাকে দেখে তো মনে হচ্ছে সত্যি ও কিছু জানেনা তাহলে কে করলো এই কাজ)
শুভ্র: নিজের আম্মুকে নিয়ে তো কেউ মিথ্যে বলে না বিশ্বাস করো আমি আম্মুর কাছে ছিলাম দুদিন তাই হসপিটালে আসতে পারিনি আর এসব ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা।
আমি: ঠিক আছে তুমি তোমার আম্মুর কাছে যাও।
কাব্য: কি বলছ এসব পাগল হয়ে গেছ?
আমি: ওকে যেতে দাও।

শুভ্রা চলে গেলো, সবাই চুপচাপ বসে আছে। বুঝতেই পারছি না শুভ্রা এমন না করলে করলো কে। শুভ্রা ছাড়া আমাদের নতুন কোনো শত্রু আছে আর সেটা কোনো মেয়ে কারণ লোকটা ফোনে ম্যাডাম বলে ডেকেছিল। এতো বড় শত্রু কে আমাদের যে কিনা আমাকে খুন করতে চেয়েছিল।
কাব্য: শুভ্রাকে যেতে দিলে কেন?
আমি: শুভ্রা কিছু করেনি ওর চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছি।
কাব্য: চোখ দেখে বুঝা যায়?
আমি: কেউ মিথ্যে বললে তার চোখ দেখলেই বুঝা যায়, শুভ্রা মিথ্যে বলেনি।
কাব্য: তাহলে কে করলো এমন?
— ভাইয়া ভাইয়া (হঠাৎ কে যেন জোরে জোরে চিৎকার করে রুমে এসে ঢুকলো সাথে অয়ন)
কাব্য: হিয়া আস্তে কথা বল।
অয়ন: হিয়া কি করছিস আস্তে চেঁচা।
হিয়া: কিসের আস্তে আজকে ভাবির এই অবস্থা হয়েছে শুধুমাত্র তোমার জন্য (হিয়া কাব্য’র শার্টের কলার ধরে ফেললো)
আদনান: হ্যাঁ কাব্য ভাবির এই অবস্থা করেছে আর তুই এখন চেঁচামেচি করে ভাবির অবস্থা আরো খারাপ করে দে (আদনান এর কথা শুনে হিয়া কাব্য’কে ছেড়ে দিয়ে আমার পাশে এসে বসলো)
হিয়া: সরি ভাবি ভাইয়ার জন্য তোমার এই অবস্থা হলো।
আমি: কেন ডাক্তারবাবু আবার কি করলো?
হিয়া: তুমি না করার পরও হানিমুনে গিয়েছিল, ছোট ভাইয়া আমাকে সব বলেছে। গতকাল রাতে ভাবি আমাকে জানিয়েছে তোমার এই অবস্থা তাই তো সকালের ফ্লাইটেই চলে আসলাম।
আমি: তোমার ভাইয়ার কোনো দোষ নেই আমরা জানতাম নাকি এতো খারাপ কিছু হবে।
হিয়া: সব দোষ ভাইয়ার, সবকিছুতে ও বাড়াবাড়ি করে আর তার ফল ভোগ করতে হয় আমাদের (হিয়া কাঁদছে কাব্য দূরে দাঁড়িয়ে চুপচাপ কাঁদছে। হিয়া এমনিতেই কাব্য’র উপর রেগে আছে এখন আবার এই অবস্থা, এখন তো হিয়া আরো রেগে যাবে)
আদনান: হয়েছে সবার দেখা এখন সবাই বাইরে যাও আর ভাবি তুমি ঘুমানোর চেষ্টা করো।

একে একে সবাই বাইরে চলে গেলো, আমি চুপচাপ শুয়ে আছি চোখ দুটু বন্ধ করে। কিছুক্ষণ পর মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেলাম, জানি কাব্য এসেছে। চোখ খুলে আর তাকালাম না মাথা আর পেটে অসহ্য যন্ত্রণা করছে তাই চোখ বোজে চুপচাপ শুয়ে রইলাম। কবে যে সুস্থ হবো আর কে এসবের পিছনে আছে তা জানতে পারবো আল্লাহ্‌ জানেন।
আদনান: কাব্য ভাবি ঘুমিয়েছে?
কাব্য: হুম। (কাব্য উঠে চলে গেলো, ওরা কথা বলছে তাও চোখ খুলে তাকালাম না। তাকাবো কিভাবে পেটে যে খুব বেশি ব্যথা হচ্ছে)
আদনান: এইনে রিপোর্ট, তোর কথা মতো আমি বার বার টেস্ট করেছি কিন্তু রিপোর্ট একটাই আসছে। বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে। (আদনান এর কথা শুনে চমকে উঠে ওদের দিকে তাকালাম, কার বাচ্চার কথা বলছে? কাব্য ফ্লোরে বসে পড়েছে খুব কাঁদছে ও তারমানে আমার বাচ্চা… হাতে লাগানো ছিল কিসব এগুলো টেনে সরিয়ে পেটে হাত রাখলাম, তারমানে আমি প্রেগন্যান্ট ছিলাম আর আমার বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে। চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম, আমার কান্না শুনে আদনান আর কাব্য একে অন্যের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে, ওরা তো ভেবেছিল আমি ঘুমে)
কাব্য: তিলো কি করছ পাগলামি করো না।
আমি: আমার বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে আর তোমরা আমাকে জানাও নি লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলে।
আদনান: কে বললো নষ্ট হয়েছে তুমি প্রেগন্যান্ট ছিলে নাকি? আমরা তো অন্য পেসেন্টের কথা…
আমি: আর মিথ্যে বলোনা প্লিজ। (আদনান কাব্য দুজনই চুপ হয়ে কাঁদছে, আমি উঠে বসতে চাইলাম কিন্তু পেটের ব্যথায় পারছি না)
কাব্য: তিলো পাগলামি করো না প্লিজ এভাবে কাঁদলে তুমি আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে।
আমি: আমার বাচ্চা মারা গেছে আমি বেঁচে থেকে কি করবো হ্যাঁ, আমার বাচ্চা এনে দাও। (আমার চিৎকার শুনে ভাবি হিয়া সবাই চলে আসলো)
ভাবি: তিলোত্তমা আমার কথা শুন।
আমি: আমার বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে আর তোমরা আমার থেকে এতো বড় কথাটা লোকাতে চেয়েছিলে।
হিয়া: তুমি এমন পাগলামি করবে এই ভয়েই তো আমরা বলতে চাইনি।
আদনান: সবাই বাইরে যাও আমি ভাবিকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি।
আমি: ঘুমাবো না আমি, আমার বাচ্চা এনে দাও।
কাব্য: প্লিজ এভাবে চিৎকার করোনা তোমার শরীর ভালো নেই।
আমি: ওরা নাহয় আমার থেকে লুকিয়েছে কিন্তু তুমি, তুমি কেন লুকিয়েছ? আমার বাচ্চা এনে দাও।
কাব্য: সব দোষ আমার আমি বুঝতে পারিনি তুমি যে প্রেগন্যান্ট, বুঝতে পারলে ওখানে তোমাকে নিয়ে যেতাম না সাবধানে রাখতাম তোমাকে।
আদনান: কাব্য কেন অযতা নিজেকে দোষী করছিস?
কাব্য: আমি একজন ডক্টর হয়েও আমার তিলোকে সাবধানে রাখতে পারিনি বাঁচাতে পারিনি আমার সন্তানকে।
আদনান: কাব্য তুই এমন পাগলামি করলে ভাবিকে সামলাবে কে, ভাবিকে শুয়ে দে। (কাব্য আমাকে শুয়ে দিতে আসলো, ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। কাব্য জোর করে আমাকে শুয়ে দিলো আর আদনান এসে ইনজেকশন দিয়ে দিলো)
কাব্য: আর কেঁদো না প্লিজ ঘুমাও, বিশ্বাস করো আমি বুঝতে পারিনি তুমি প্রেগন্যান্ট ছিলে, বুঝতে পারলে কি ওখানে নিয়ে যেতাম?
কাব্য আমার কপালে ওর কপাল ঠেকিয়ে পাগলের মতো কাঁদছে, ওর গলা জরিয়ে ধরে আমিও কাঁদছি। আমাদের সাথে এমন হবে কখনো ভাবতে পারিনি। মাথা ব্যথা আর পেটের যন্ত্রণার চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে এইটা ভেবে, আমাদের সন্তান পৃথিবীতে আসার আগেই ওকে খুন করে দিলো। আর ভাবতে পারছি না ঘুমে আস্তে আস্তে চোখ দুটু বোজে আসছে।

চলবে?

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১৬

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

কাব্য আমার চুলে হাত বুলাচ্ছে আর আমি পরম সুখে ওর বুকে শুয়ে আছি। কাব্য ভাবছে আমি ঘুমে কিন্তু আমি তো জেগে আছি আর ওর ছোঁয়া গুলো অনুভব করছি কাব্য সেটা বুঝতেই পারছে না হিহিহি। হঠাৎ রাতের কথা মনে পড়তেই নিমিষে মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো, কাব্য’কে এখনি বলা প্রয়োজন। লাফ দিয়ে উঠে বসলাম।
কাব্য: কি হলো?
আমি: কিছুনা।
কাব্য: এভাবে লাফ দিয়ে উঠলে যে।
আমি: আচ্ছা তুমি না আমাকে কি সারপ্রাইজ দিবে।
কাব্য: সারপ্রাইজ জানার জন্য মন পাগল হয়ে আছে দেখছি।
আমি: বলোনা।
কাব্য: আজ বিকেলে আমরা হানিমুনে যাচ্ছি। (তারমানে ওই লোকটার কথাই ঠিক)
আমি: ওহ কোথায় যাচ্ছি।
কাব্য: কক্সবাজার।
আমি: না গেলে হয় না?
কাব্য: জানতাম তুমি রাগ করবে, প্লিজ লক্ষীটি রাগ করোনা।
আমি: রাগ করবো কেন রাগ করিনি তো।
কাব্য: এইযে বিয়ের একমাস পর হানিমুনে যাচ্ছি তাও আবার কক্সবাজার। তুমি হয়তো অন্য কোথাও যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলে, কথা দিচ্ছি আবার যখনি সুযোগ পাবো তখন অন্য কোথাও নিয়ে যাবো, তুমি যেখানে বলবে সেখানেই যাবো, খুশি?
আমি: বলেছি নাকি আমি অন্য কোথাও যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছি আমি তো…
কাব্য: আসলে ওখানে এক বছর ছিলাম তো সেই হসপিটালের সবাই তোমাকে দেখতে চাইছে আর তোমার সাথে তো আমার প্রথম দেখাটা কক্সবাজারেই হয়েছিল তাই ওখানেই যেতে চাইছি। প্লিজ তুমি রাগ করে থেকো না।
আমি: কতোবার বলবো আমি রাগ করিনি, আসলে তো আমি হানিমুনেই যেতে চাচ্ছি না। (চিৎকার করে উঠলাম কাব্য অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
কাব্য: আশ্চর্য তুমি এতো রেগে যাচ্ছ কেন? (চুপচাপ বিছানায় বসে আছি, এভাবে রেগে যাওয়াটা বোধহয় ঠিক হয়নি আমার। কিন্তু আমি কি করবো লোকটা তো ভয় দেখিয়েই যাচ্ছে)
কাব্য: সবাই তো বিয়ের পর হানিমুনে যেতে চায় কিন্তু তুমি…
আমি: সরি। (কাব্য’র কাছে এসে ওকে জরিয়ে ধরলাম)
কাব্য: হু হয়েছে এবার বলতো রেগে আছ কেন?
আমি: আমি রাগ করিনি আসলে তো আমি ভয়ে আছি।
কাব্য: ভয়, কিসের ভয়?

লোকটার কথা সবকিছু কাব্য’কে খুলে বললাম। ফোন থেকে লোকটার নাম্বারও কাব্য’কে দেখালাম। কাব্য আমার মতো এতোটা ভয় পায়নি কিন্তু বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে ওকে।
কাব্য: এখন তুমি কি চাও।
আমি: আমরা হানিমুনে যাবো না প্লিজ।
কাব্য: এতো কষ্ট করে ছুটি নিলাম। সবকিছু ঠিকঠাক, হোটেলে রুমও বুক করে ফেলেছি আর এখন কোথাকার একটা লোকের ভয়ে আমরা হানিমুনে যাবো না।
আমি: মানে কি তোমার ভয় করছে না?
কাব্য: না করছে না। চিনি না জানিনা কোথাকার কোন লোক এসে ভয় দেখালো আর আমরা সেই ভয়ে হানিমুনে যাবো না, এইটা হয় নাকি তিলো?
আমি: লোকটা কে আমরা তা জানিনা বলেই তো ভয় বেশি হচ্ছে।
কাব্য: তিলো…
আমি: প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো আমার খুব ভয় করছে।
কাব্য: ঠিক আছে ভেবে দেখছি। (কাব্য মন খারাপ করে চলে গেলো। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না)

চুপচাপ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। কাব্য কিছু না খেয়ে কোথায় যেন চলে গেছে, ও যে খুব কষ্ট পেয়েছে তা আমি বুঝতে পেরেছি কিন্তু আমি কি করবো কক্সবাজার গিয়ে যদি ওর কোনো ক্ষতি হয়ে যায় তখন আমি কি করবো কাকে নিয়ে বাঁচবো। ফোনটা বেজে উঠলো, রুমে এসে ফোন রিসিভ করলাম তিশা ফোন দিয়েছে।
আমি: হুম বল।
তিশা: কিরে কবে বেরুচ্ছিস?
আমি: কবে বেরুচ্ছি মানে?
তিশা: কক্সবাজার যাবি না?
আমি: না।
তিশা: মানে কি? তুই জানিস কাব্য হানিমুনে যাওয়ার জন্য কতোটা এক্সাইটেড হয়ে আছে আ…
আমি: একটা সমস্যা হয়েছে তাই যাবো না।
তিশা: কোনো সমস্যা বুঝি না যেতে হবে।
আমি: কেন?
তিশা: কারণ তুই না গেলে আমাদের যাওয়া হবে না।
আমি: মানে?
তিশা: কাব্য বলেনি তোকে তোদের সাথে যে আমি আর আদনান যাচ্ছি?
আমি: নাতো। (কখন বলবে আমি ওকে বলার সুযোগ দিলে তো বলবে)
তিশা: প্লিজ না করিস না কাব্য অনেক কষ্ট পাবে (হঠাৎ ছাদ থেকে গীটারের টুংটাং শব্দ ভেসে আসলো, তারমানে কাব্য আবার গীটার বাজাচ্ছে আর কাঁদছে)
আমি: পরে তোকে জানাচ্ছি এখন রাখি।
তিশাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা কেটে দিয়ে ছাদের দিকে দৌড় দিলাম।

যা ভেবেছিলাম তাই কাব্য কাঁদছে আর গীটার বাজাচ্ছে। আমি ওর কাধে হাত রাখতেই গীটার বাজানো বন্ধ করে দিলো।
আমি: আবারো তুমি…
কাব্য: আমার কিছু ভালো লাগছে না একা থাকতে দাও আমাকে।
আমি: আদনান ভাইয়া আর তিশা যে যাবে আমাদের সাথে বলনি তো।
কাব্য: বলার মতো সুযোগ দিয়েছ নাকি?
আমি: ঠিক আছে আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি।
কাব্য: কি? (কাব্য অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
আমি: যাচ্ছি কিন্তু দুদিনের বেশি থাকা যাবে না আমার খুব ভয় করছে।
কাব্য: ঠিক আছে দুদিন পর চলে আসবো। যাও রেডি হয়ে নাও।

যেতে তো রাজি হলাম কিন্তু ভিতরের ভয়টা যে ক্রমশ বেড়েই চলেছে। যদি ওই লোকটা আমাদের কারো কোনো ক্ষতি করে।
কাব্য: কি হলো এখনো রেডি হওনি তিশারা তো চলে এসেছে।
আমি: এইতো শেষ।

ড্রয়িংরুমে এসে দেখি আদনান ভাইয়া আর তিশা বসে আছে। আচ্ছা ওদের সম্পর্কটা কি শুরু হয়েছে নাকি এখনো…
কাব্য: চলো সবাই।
ভাবি: সাবধানে যেও।
কাব্য: ঠিক আছে তুমি চিন্তা করোনা।
আমি: ভাবি অয়ন কোথায়?
ভাবি: সামনে পরীক্ষা তো তাই ঠেকায় পড়ে কলেজে গেছে।
আমি: ওকে বলো আসছি আমরা।

কাব্য: তিলো গাড়িতে উঠো (পিছনে তিশার কাছে বসতে গেলাম কাব্য নিষেধ করলো)
কাব্য: সামনে বসো আমার কাছে।
আমি: কিন্তু তিশার কাছে আদনান ভা…
কাব্য: ওরা দুজন একে অপরকে পছন্দ করে কিন্তু কেউ কাউকে এখনো বলতে পারেনি, এই লং ড্রাইভে যদি বলতে পারে তাই তো দুজনকে পিছনে দিলাম।
আমি: তা নাহয় বুঝলাম কিন্তু এতোটা রাস্তা কি তুমি ড্রাইভ করবে?
কাব্য: হ্যাঁ সমস্যা কি, ভয় পেয়ো না ড্রাইভটা আমি ভালোই পারি।

কাব্য ড্রাইভ করছে আর আমি ওর পাশে বসে ফোনটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছি। ভয় হচ্ছে খুব যদি…
কাব্য: মনে হচ্ছে তুমি কারো ফোনের অপেক্ষা করছ।
আমি: নাতো (কিসের জন্য ফোনটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছি নিজেও বুঝতে পারছি না। শুধু জানি লোকটা আবারো ফোন বা মেসেজ করবে, আবারো ভয় দেখাবে। কিন্তু লোকটা কি শুধু ভয় দেখিয়েই যাবে নাকি আমাদের কোনো ক্ষতি করবে। এসে কোনো ভুল করিনি তো)
কাব্য: ফোনটা হাত থেকে রাখো তো (কাব্য বড় বড় চোখ করে তাকাচ্ছে দেখে ফোনটা ব্যাগে রেখে দিলাম। কাব্য আমার একটা হাত চেপে ধরলো)
আমি: আরে এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছ কেন?
কাব্য: বললাম না ড্রাইভটা ভালোই করতে জানি, তুমি ভয় পেয়ো না। (সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে করতেই আমার হাতটা ওর মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে হাতে একটা চুমু খেলো)
কাব্য: সব ভালো হবে দেখো, ভয় পেয়ো না। তুমি এভাবে মুখ গোমরা করে তাকলে আমার ভালো লাগে বলো? প্লিজ একটু হাসো। (চলেই যখন এসেছি এখন আর মুখ গোমরা করে রেখে ওদের আনন্দ নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। কাব্য’র দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে ওর কাধে মাথা রাখলাম)
কাব্য: এইতো আমার লক্ষী বউ।

হঠাৎ কাব্য’র ডাকে চোখ খুলে চারপাশে তাকালাম, সন্ধ্যা নেমে এসেছে আর আমরাও চলে এসেছি। হোটেলের সামনে গাড়ি থামিয়েই কাব্য আমাকে ডাক দিয়েছে।
কাব্য: তিলো এভাবে কি দেখছ, ভাবছ আমরা কক্সবাজার চলে এসেছি কিনা?
আমি: হু।
কাব্য: এক ঘুমে ঢাকা থেকে কক্সবাজার, এমন ঘুম পাগলী আমার জীবনে আর একটাও দেখিনি।
আদনান: ভাবিকে যদি কেউ ঘুমের মধ্যে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় তাও তো ভাবি বুঝতেই পারবে না হাহাহা (আদনান ভাইয়ার হাসি শুনে পিছনে তাকালাম, আদনান ভাইয়া হাসছে আর তিশা এক দৃষ্টিতে সে হাসি দেখছে। বুঝেছি আমাদের দুজনেরই কিছু করতে হবে নাহলে এই দুইটা এভাবেই থেকে যাবে কেউ কাউকে মনের কথা বলতে পারবে না)
কাব্য: ঘুম পাগলী আমাদের বাসর রাতের কথা মনে আছে, তুমি নৌকাতে আমার বুকে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলে। (কাব্য ফিসফিস করে আমাকে কথাটা বলে হাসতে লাগলো, সেদিনের কথা মনে পড়তেই খুব লজ্জা পেলাম, আমি সত্যিই একটা ঘুম পাগলী)
কাব্য: এবার চলো রুমে গিয়ে সবাই ফ্রেশ হয়ে নাও।
তিশা: কাব্য তোমার সাথে একটু কথা ছিল খুব জরুরী।
কাব্য: হ্যাঁ বলো (তিশা আমার দিকে তাকাচ্ছে তারমানে ও কাব্য’কে কথাটা একা বলতে চায়, কিন্তু কি কথা)

আদনান ভাইয়া আর আমি আগে আগে হাটছি, তিশা আর কাব্য পিছনে কথা বলতে বলতে আসছে।
আমি: তিশাকে কি মনের কথাটা বলবেন নাকি এভাবেই দুজন সারাজীবন কাটিয়ে দিবেন..?
আদনান: বলতে পারছি নাতো।
আমি: কেন কিসের ভয় আমি যতোটুকু বুঝতে পেরেছি তিশা আপনাকে পছন্দ করে।
আদনান: সেটা আমিও বুঝতে পারছি।
আমি: আপনি আর আপনার বন্ধু তো পুরো আলাদা। ডাক্তারবাবু তো প্রথম দিনই আমাকে ভালোবাসে বলেছিল আর পরে হাতে চাকু নিয়ে বলেছিল আমি ওকে ভালোবাসি কিনা। আপনি ওর মতো হতে পারেন না?
আদনান: কাব্য’র মতো হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না তবে আজকে যেভাবেই হউক তিশাকে আমি বলে দিবো।
আমি: হ্যাঁ এ…
কাব্য: তুমি আমাকে আগে বলবে না, আগে বললে আজ এখানে আসতাম নাকি (কাব্য’র কথা শুনে থেমে গেলাম, ও তিশাকে কথাটা বলছে তারমানে কি ওরা ওই লোকটার ব্যাপারে কিছু জানতে পেরেছে)

রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম, কাব্য দরজা বন্ধ করে আমার পাশে এসে বসলো। ফোনটা দেখার সুযোগই পাচ্ছি না, একবার ফোনটা চেক করলে তো বুঝতে পারতাম লোকটা এখনো আমাদের ফলো করছে কিনা।
কাব্য: তিলো ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাও বেরুবো।
আমি: এই রাতে আবার কোথায় বেরুবো তাছাড়া এতোটা রাস্তা এসে…
কাব্য: তুমি তো আর টায়ার্ড নও সারা রাস্তা ঘুমিয়ে এসেছ তাহলে সমস্যা কোথায়? যাও রেডি হয়ে নাও।
আমি: হুম।

চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে নিলাম। কালো রঙের শাড়ি পড়েছি আর বরাবর এর মতো চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছি নাহলে যে আমার ডাক্তারবাবু রাগ করবে। কিন্তু এই রাতের বেলায় আমরা যাচ্ছি কোথায়?
কাব্য: বাহ্ আমার তিলো পাগলীকে তো দারুণ লাগছে। (কাব্য এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো। আমার হাতের উপর ওর হাত দুটু রেখে পেটে আলতো করে চাপ দিলো)
আমি: দুষ্টুমি শুরু হয়ে গেলো তো?
কাব্য: হ্যাঁ হানিমুনে এসেছি দুষ্টুমি না করে থাকি কিভাবে বলো (আমার একটা হাত চেপে ধরে টান দিয়ে আমাকে ঘুরিয়ে দিলো। আমার কোমর জরিয়ে ধরে টান দিয়ে আমাকে ওর কাছে নিয়ে আসলো। আমার ঠোঁটের কাছে ওর ঠোঁট দুটু আনতেই দরজায় টোকা পড়লো)
কাব্য: হাসো হাসো তুমি তো হাসবাই, হানিমুনে এসেও শান্তি নেই। (কাব্য আমাকে ছেড়ে দিয়ে গিয়ে দরজা খুললো)
আদনান: কিরে শেষ তো।
কাব্য: হ্যাঁ চল, তিলো এসো। (কোথায় যে নিয়ে যাচ্ছে কে জানে)

কাব্য আমাকে সেই হসপিটালে নিয়ে আসলো, যেখানে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। কিন্তু ও আমাকে হসপিটালের ছাদে নিয়ে যাচ্ছে কেন? কি যে করছে কা… ছাদে এসে তো আমি অবাক কতো সুন্দর করে সাজানো, মনে হচ্ছে কোনো পার্টী হবে। কাব্য আমাকে একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।
আদনান: বারোটা বাজতে তো আরো সময় আছে।
কাব্য: হ্যাঁ আর একটু, তুই এর মধ্যে তোর কাজটা সেরে ফেল।
আমি: কি কাজ।
কাব্য: তিশাকে প্রপোজ করবে।
আমি: সত্যি (সামনে তাকিয়ে দেখি আদনান তিশার সামনে হাটু গেড়ে বসে আছে হাতে রিং, তিশা বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে)
আমি: আরে বাবা কি এতো ভাবছিস হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে রিংটা পড়ে নে। (তিশা যেন আমার এই কথাটার জন্য অপেক্ষা করছিল, আমি বলতেই হাত বাড়িয়ে দিলো)
কাব্য: শুভ জন্মদিন তিলো পাগলী (কাব্য আচমকা আমাকে জরিয়ে ধরে বললো, আমি তো হা করে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। আমার জন্মদিন আর আমি নিজেই ভুলে বসে আছি)
কাব্য: সরি সোনা জানতাম না তো আজ যে তোমার জন্মদিন। জানলে এখানে আসতাম না বাসায় সবাইকে নিয়ে আরো বড় করে পার্টী দিতাম)
আমি: কেন এখানে কি কম বড় হয়েছে, অনেক সুন্দর করে পুরো ছাদটা সাজিয়েছ তো।
কাব্য: তিশা একটু আগে বলেছে তারপর এখানে ফোন করে সবকিছু করালাম, তুমি খুশি তো?
আমি: অনেক অনেক অনেক খুশী।

সবাই ডান্স করছে আর কাব্য আমার পাশে বসে আছে।
আমি: কি হলো যাও।
কাব্য: তুমি একা একা বসে থাকবে আর আমি সবার সাথে আনন্দ করবো?
আমি: তাতে কি হয়েছে যাও তুমি, আমার তো মিউজিক এর শব্দে মাথা ব্যথা করছে তাই বসে আছি।
কাব্য: উঁহু তোমাকে ছাড়া আমি ডান্স করবো না।
–এই চল তো (একজন এসে কাব্য’কে টেনে নিয়ে গেলো)
চুপচাপ বসে আছি এই মিউজিক এর শব্দে মাথা প্রচুর ব্যথা করছে।

হাটতে হাটতে ছাদের অন্যপাশে চলে আসলাম, এখানে মিউজিক এর শব্দটা একটু কম আসছে। নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ মনে হলো কে যেন পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে, কাব্য নয় তো? পিছনে তাকিয়ে আমার ধম আটকে গেলো, এইটা তো সেই লোক সাথে আরেকজন আছে। আমি দৌড় দিতে চাইলাম লোকটা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
–নিষেধ করেছিলাম তো কেন আসলি?
আমি: কেন আমাদের পিছনে লেগেছেন?
–টাকা পেয়েছি তাই (কাব্য’কে ডাকতে যাবো তখনি আমার মাথায় কি দিয়ে যেন আঘাত করলো)
–ডাক তোর ডাক্তারবাবুকে দেখি তোকে এসে বাঁচাতে পারে কিনা।
আমি: ডাক্তারবাবু (খুব জোরে ডাক দিলাম কিন্তু মিউজিক এর শব্দে তো আমার ডাক ওর কান অব্দি পৌঁছাচ্ছে না। মাথা থেকে প্রচুর রক্ত পড়ছে, লোকটা এসে আমার পেটে খুব ভারী কিছু দিয়ে বারী মারলো, আরেকবার দিতে যাবে তখনি লোকটার ফোন বেজে উঠলো)
“চিন্তা করবেন না ম্যাডাম যা অবস্থা করেছি ওর হসপিটালের ছাদ থেকে ইমারজেন্সীতে নিয়ে যাওয়ার আগেই ও মারা যাবে”
মাথা আর পেটের প্রচন্ড ব্যথায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম সাথে সাথে কারেন্ট চলে গেলো। খুব কষ্ট করে কাব্য’কে আরেকবার ডাক দিলাম, মিউজিক এর শব্দ নেই তাই কাব্য শুনতে পেয়েছে। সবাই এদিকে আসছে বুঝতে পেরে লোক দুটু চলে গেলো।

কাব্য: তিলো কি হয়েছে তোমার, এতো রক্ত।
তিশা: তমা কি হয়েছে কে করেছে এমন অবস্থা?
আমি: ওই লোকটা, কাব্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
আদনান: কাব্য কথা বলে সময় নষ্ট করছিস কেন তাড়াতাড়ি ইমারজেন্সীতে নিয়ে চল।
কাব্য আমাকে কোলে তুলে নিলো। পেটের প্রচন্ড ব্যথায় চোখ দুটু অন্ধকার হয়ে আসছে। কাব্য’র গলা জরিয়ে ধরে ওর মুখের দিকে তাকালাম, আস্তে আস্তে চোখ দুটু বোজে আসলো।

চলবে?

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১৫

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

কাব্য: তিলো আমার ঘড়ি কোথায়..?
আমি: টেবিলের উপর রাখা আছে।
কাব্য: তিলো আমার শার্ট পাচ্ছি না।
আমি: চোখ অন্ধ হয়ে গিয়েছে নাকি, বিছানার উপরই তো রাখা আছে।
ভাবি: রেগে যাচ্ছিস কেন..?
আমি: ভাবি তুমি হাসছ, ওর কান্ড দেখেছ প্রতিদিন হসপিটালে যাওয়ার সময় তিলো আমার এইটা পাই না ওইটা পাইনা বলে চেঁচামেচি করে। প্রতিদিন ভালো লাগে বলো, শান্তিতে কোনো কাজ করতে দিবে না।
কাব্য: তিলো রাতে যে ফাইলটা রেখেছিলাম ফাইলটা কোথায় পাচ্ছি নাতো।
আমি: আমার মাথায় (রান্নাঘরে কাজ করছি আর ও রুম থেকে সমানে চেঁচামেচি করেই যাচ্ছে)
কাব্য: রেগে যাচ্ছ কেন একটু খুঁজে দিয়ে যাওনা।
ভাবি: হিহিহি।
আমি: না হেসে আমার জন্য পাবনা হসপিটালে একটা সিট বুকিং করো তোমার দেবরের জ্বালায় আর পারছি না।
ভাবি: একবার রুমে যা ও সব খুঁজে পেয়ে যাবে চেঁচামেচিও বন্ধ হয়ে যাবে (ভাবি মিটিমিটি হাসছে, জানি তো ও এতো বেশি চেঁচামেচি করেই আমি যেন রুমে যাই)
কাব্য: তিলো আমার মোবাইল খুঁজে পাচ্ছি না।
আমি: একবার যদি রুমে আসি মোবাইলের সাথে তোমাকেও আছাড় দিয়ে ভাঙবো। (ধমক দিয়ে বললাম কাব্য’র চেঁচামেচিও বন্ধ হয়ে গেলো)
ভাবি: তোকে তো কাব্য পুরো জ্বালিয়ে ছাড়ছে।
আমি: এটাই…(আবার কাব্য’র ডাক শুনে থেমে গেলাম এখন তো ওকে আমি…)

রুমে এসে দেখি কাব্য হসপিটালে যাওয়ার জন্য পুরো রেডি। এতোক্ষণ অযতা চেঁচামেচি করেছে ইচ্ছে হচ্ছে এখন…
কাব্য: এতো চেঁচামেচি করতে হয় কেন হু আগেই রুমে চলে আসতে পারো না।
আমি: ঘড়ি, মোবাইল, ফাইল সবকিছু তো এখানে তাহলে এতো চেঁচামেচি করেছ কেন..?
কাব্য: ভাবির সামনে আদর করলে তো তুমি লজ্জা পাবে তাইতো চেঁচামেচি করি যেন তুমি বিরক্ত হয়ে রুমে চলে আসো। আসলে কি বলতো তোমাকে আদর না করে গেলে পুরো দিনটাই আমার খারাপ যায়।
আমি: তাই বুঝি।
কাব্য: বিয়ের এক মাস হয়ে গেলো আর এখনো এইটুকু বুঝতে পারনি (আমার কোমরে ধরে টান দিয়ে ওর একদম কাছে নিয়ে আসলো)
আমি: চেঁচামেচি শুনতে হবে বলে আগেই সব রেডি রাখি তাও এমন করো ভালো লাগে বুঝি।
কাব্য: কতোটুকু ভালো লাগে আর কতোটুকু খারাপ লাগে সেটা তো আমি জানি।
আমি: হয়েছে এবার যাও দেরি হয়ে যাচ্ছে।
কাব্য: হু যাচ্ছি (আমার কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো। এইটা ওর রোজকার রুটিন হয়ে গেছে, প্রতিদিন হসপিটালে যাওয়ার সময় আমাকে জরিয়ে ধরে কপালে চুমু খাওয়া)
কাব্য: তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে কিন্তু…
আমি: ওরে বাবারে।
কাব্য: আরে এভাবে ভয় পেয়েছ কেন..?
আমি: ভয় পাবো না আবার, অন্যমনস্ক হয়ে ছিলাম হুট করে সামনে এসে কথা বলে উঠলে। চলে গিয়েছিলে তো আবার এসেছ কেন..?
কাব্য: তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে এই কথাটা বলার জন্য।
আমি: কি সারপ্রাইজ?
কাব্য: বলবো না।
আমি: চলে যাচ্ছ যে বলে তো যাও।
কাব্য: আমি জানি রোজ সকালে আমার এমন চেঁচামেচিতে তুমি যতোটা বিরক্ত হও তারচেয়ে হাজারগুণ বেশি খুশি হও কারণ তুমি আমার এই পাগলামি গুলোকে ভালোবাস। (চলে যাচ্ছিল, দরজা থেকে ফিরে এসে আমার কানের কাছে ফিসফিস করে কথাটা বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো। পাগল একটা। সত্যিই তো ওর এসব পাগলামিই তো আমার ভালো লাগে। একদিন সকালে চেঁচামেচি না করলেই কেমন যেন সবকিছু ফাঁকাফাঁকা লাগে)

কে যে এতোক্ষণ ধরে ফোন দিয়ে যাচ্ছে। নামাজ পড়ছিলাম কিন্তু ফোনের রিংটোনে শান্তিতে নামাজ পড়তে পারছিলাম না। ফোন হাতে নিয়ে দেখি কাব্য অনেক গুলো ফোন দিয়েছিল, রিসিভ না করাতে মেসেজ করেছে “বাসায় আসছি দুপুরে একসাথে খাবো” যতোটা বিরক্তি লাগছিল তারচেয়ে বেশি খুশি হয়ে গেলো মন মেসেজটা পড়ে।

খাবার গুলো টেবিলে খুব সুন্দর করে সাজাচ্ছি। ভাবি এসে দেখে হা করে তাকিয়ে রইলো।
ভাবি: এতো খাবার কার জন্য বাসায় তো শুধু তুই আর আমি।
আমি: ডাক্তারবাবু আসছে সবাই একসাথে খাবো।
ভাবি: তাই তো বলি তিলোত্তমাকে এতো খুশি খুশি লাগছে কেন। কাব্য দুপুরে বাসায় খাবে আগে বললি না কেন তাহলে ওর পছন্দের খাবার গুলো রান্না করে রাখতাম।
আমি: জানতাম নাকি এখন মেসেজ দিয়ে বললো।
ভাবি: ওহ তাই বল।
আমি: আচ্ছা ভাবি ডাক্তারবাবুর পছন্দের খাবারগুলো কি কি বলতো, পরে নাহয় অন্য একদিন রান্না করে খাওয়াবো।
বুয়া: ওর পছন্দের খাবার কি কি শুনলে তো তুমি হাসবা।
আমি: কেন?
বুয়া: সব বড়লোক দেখি দামী দামী খাবার পছন্দ করে আর মেঝো সাহেব পছন্দ করে গরীবরা যা খায় তা।
আমি: মানে।
ভাবি: ছোটমাছ আর সব ধরনের ভর্তা ওর পছন্দ।
বুয়া: এগুলা তো আমরা রোজ খাই।
ভাবি: হ্যাঁ যাও পারলে কাব্য’র জন্য কিছু একটার ভর্তা করে নিয়ে এসো।
বুয়া: আইচ্ছা।
আমি: ভাবি ডাক্তারবাবুকে খুব ভালোবাস তাই না।
ভাবি: কাব্য আর অয়ন ওরা তো আমার দুভাই। আর কি বলতো কাব্য নিজের কষ্টটা নিজের ভিতরেই রাখে কখনো মুখ ফুটে কিছু বলে না তাই যতোটুকু পারি ওর জন্য নিজে থেকে করার চেষ্টা করি। (কলিংবেল বেজে উঠলো নিশ্চয় আমার ডাক্তারবাবু এসেছে। দৌড়ে এসে দরজা খুললাম, কাব্য আমাকে দেখে মুখে হাসির রেখা টেনে চোখ টিপ মারলো। কি দুষ্টুরে বাবা)

ভাবি, কাব্য আর আমি একসাথে বসে খাবার খাচ্ছি। কাব্য খাবার খাচ্ছে বললে ভুল হবে ও তো খাবার খাওয়ার নামে দুষ্টুমি করছে। ভাবির চোখের আড়ালে টেবিলের নিচে আমার পায়ের উপর ওর পা ঘসছে আর আমি কেঁপে উঠছি দেখে মিটিমিটি হাসছে।
ভাবি: এই তিলোত্তমা কোথায় যাচ্ছিস?
আমি: খাবো না আর।
কাব্য: খাবার রেখে যেতে নেই চুপচাপ বসে খেয়ে নাও।
ভাবি: তুমি কি ওকে চুপচাপ বসতে দিচ্ছ, দুষ্টুমি গুলো বন্ধ কর ও খাবে। (এইরে ভাবি সব লক্ষ করেছে, ওকে নিয়ে আর পারিনা সব জায়গায় শুধু দুষ্টুমি)
কাব্য: ভাবি তুমি সব জায়গায় লক্ষ কর কেন?
ভাবি: দেবর আর জা এর ব্যাপারে একটু লক্ষ করতে হয়।
কাব্য: হু যাও খেয়ে দুজনই রেডি হয়ে নাও শপিং করতে যাবো।
আমি: তারমানে এটাই তোমার সারপ্রাইজ।
কাব্য: জ্বী না সারপ্রাইজটা কাল দিবো। (কালই যখন দিবে তাহলে আজ বলার কি ছিল, সারপ্রাইজটা জানার জন্য মন অস্থির হয়ে আছে)
ভাবি: আমি যাচ্ছি না।
কাব্য: আমি বলেছি তাই যেতে হবে।
ভাবি: না অন্যদিন যাবো আজ ভালো লাগছে না।
কাব্য: ওকে।

রিকশায় দুজন পাশাপাশি বসে আছি। কাব্য’র ইচ্ছেতে গাড়ি রেখে রিকশা দিয়ে যেতে হচ্ছে। একটা হাত দিয়ে কাব্য আমাকে এমন ভাবে জরিয়ে ধরে রেখেছে মনে হচ্ছে আমি একটা ছোট বাচ্চা, ওর হাত সরিয়ে নিলেই আমি রিকশা থেকে পড়ে যাবো। বার বার ওর দিকে তাকাচ্ছি আর ভাবছি “তুমি আমার জীবনে না আসলে কখনো বুঝতেই পারতাম না কেউ যে কাউকে এতোটা ভালোবাসতে পারে এতোটা কেয়ার করতে পারে”
কাব্য: বার বার এভাবে তাকাচ্ছ কেন আমার বুঝি লজ্জা লাগে না। (ইশশ এমন দুষ্টু মানুষের আবার লজ্জা)
কাব্য: একমাস ধরে তো দেখছ আমাকে তাহলে আজ আবার নতুন করে দেখার কি হলো (কাব্য আমার কানের কাছে ফিসফিস করে কথাটা বলতে নিজেই এখন লজ্জা পেলাম। সত্যি আজ ওকে একটু বেশিই দেখছি)
কাব্য: ইসস লজ্জাবতীর লজ্জাময় মুখটা দেখতে পারছি না (বোরকা পড়া তাই ও আমার মুখ দেখতে পারছে না আর তাই এই কথা বলছে। হঠাৎ কাব্য আমার হাতের উপর ওর হাত রাখলো, আমার হাতটা ওর হাতের মুঠোয় পূরে নিলো)।
কাব্য: কি হলো তোমার হাত এভাবে ঘেমে যাচ্ছে কেন আর কাঁপছে কেন (কাব্য’র দিকে তাকালাম শান্তভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমার হাতটা এখনো ওর হাতের মুঠোয়। আমিও কাব্য’র দিকে তাকিয়ে আছি, কি উত্তর দিবো আমি নিজেই তো জানিনা আমার হাত এভাবে কাঁপছে কেন)
কাব্য: আজ সারা বিকেল তোমার সাথে এভাবে হাতে হাত রেখে রিকশা করে ঘুরে বেড়াবো বুঝেছ।
আমি: হু।

সবার জন্য অনেক কিছু কিনলাম শুধু আমার নিজের গুলাই রয়ে গেলো, ইচ্ছে হচ্ছে না কোনো কিছু কেনার। কাব্য নিজেই আমার জন্য শাড়ি দেখছে।
আমি: তোমার ফোন বাজছে।
কাব্য: হুম দেখছি কে, তুমি এই শাড়িটা দেখো ভালো লাগলে নিয়ে নাও (শাড়িটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে ফোন নিয়ে একটু দূরে চলে গেলো)
“হানিমুনে যাওয়ার জন্য শপিং করতে এসেছ” আনমনে হয়ে শাড়ি দেখছিলাম হঠাৎ কে যেন পিছনে এসে কথাটা বললো, সাথে সাথে পিছনে তাকালাম কিন্তু কেউ তো নেই। তাহলে কি ভুল শুনলাম, না না ভুল হবে কেন আমি স্পষ্ট শুনেছি কেউ একজন কথাটা বলেছে। কিন্তু কে?

কাব্য: তিলো কাকে খুঁজছ এইতো আমি।
আমি: হুম।
কাব্য: কি হয়ছে কোনো সমস্যা।
আমি: নাতো।
কাব্য: ঠিক আছে চলো।
আমি: হুম। (কাব্য শাড়ি দেখছে আর আমি চারপাশে চোখ বুলাচ্ছি, খুঁজছি কে বলেছে কথাটা কিন্তু পাবো কোথায়? কন্ঠটা তো কোনো পুরুষের ছিল তা..)
কাব্য: তিলো কি হয়েছে তোমার কিছুই তো কিনছ না।
আমি: অনেক তো কিনেছ আর লাগবে না। বাসায় চলো প্লিজ।
কাব্য: বাসায়, ঠিক আছে চলো।

রিকশায় বসে আছি আর ভাবছি কে ছিল লোকটা..? আচ্ছা কাব্য কি সত্যি হানিমুনে যাওয়ার জন্য শপিং করছে কিন্তু ও তো আমায় কিছু বলেনি। তাহলে কি এই হানিমুন নিয়েই কাব্য আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চাইছে। যদি এটাই হয় তাহলে ওই লোকটা জানলো কিভাবে আমরা যে হানিমুনে যাচ্ছি। হঠাৎ মনে হলো আমাদের রিকশাটা কেউ একজন ফলো করছে, তাড়াতাড়ি পিছনে তাকাতে চাইলাম কিন্তু রিকশার হুটে লেগে কপালে ব্যথা পেলাম।
কাব্য: পিছনে কি হ্যাঁ ব্যথাটা পেয়েছ তো। এভাবে জরিয়ে ধরে আছি তাও ব্যথা পেয়েছ যদি না ধরে রাখতাম তাহলে তো মনে হয় রিকশা থেকেই পরে যেতে।
আমি: ব্যথা পেয়েছি তার উপর আবার বকা দিচ্ছ (কিছুনা বলে রিকশা থামিয়ে পাশের দোকান থেকে পানি আনতে চলে গেলো)

কাব্য একটু দূরে যেতেই কে যেন রিকশার পাশে এসে দাঁড়ালো।
–হাই মেম।
আমি: কে আপনি?
–তোমার জম।
আমি: মানে।
–কাব্য হানিমুনে যাওয়ার কথা বলবে কিন্তু তুমি যাবে না যদি গিয়েছ…
কাব্য: তিলো পানি নাও (কাব্য’র কন্ঠ শুনে ভয়ে ওর দিকে তাকালাম)
কাব্য: কি হয়েছে? (আমাকে প্রশ্ন করছে তাহলে কি ও লোকটাকে দেখতে পারছে না। সাথে সাথে তাকালাম কিন্তু লোকটা তো নেই। লোকটার চোখ দুটু ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছিল না কারণ পুরো মুখ রুমাল দিয়ে বাধা ছিল)
কাব্য: কি হলো পানি নাও।
আমি: লাগবে না। (কাব্য রাগে পানির বোতলটা ছুড়ে ফেলে দিলো। আবার পিছনে তাকালাম ওই তো লোকটা, আমি তাকিয়েছি দেখেই একটা আঙ্গুল নেড়ে শাসিয়ে চলে গেলো)
কাব্য: আবার পিছনে তাকাচ্ছ ওখানে কে আছে? (ভয়ে কাব্য’র কাধে মাথা রেখে ওকে জরিয়ে ধরলাম, কাব্য হয়তো বুঝতে পেরেছে আমি ভয় পেয়েছি তাই ও আর কিছু না বলে আমার হাতটা শক্ত করে ধরলো)

চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছি। লোকটার লাল হয়ে থাকা বড় বড় চোখ দুটু আর আঙ্গুল নেড়ে শাসানো কোনোটাই ভুলতে পারছি না। হঠাৎ কাব্য এসে পাশে বসলো, বিছানাটা আমার গায়ে টেনে দিয়ে আমার মাথায় একটা হাত রাখলো।
কাব্য: সেই সন্ধ্যা বেলায় শুয়েছিলে এখন তো অনেক রাত হলো উঠো। (কিছু না বলে কাব্য’র হাতটা বুকের কাছে এনে জরিয়ে ধরলাম)
কাব্য: কি হয়েছে বলতো এর আগে তো কখনো তোমাকে এতোটা ভয় পেতে দেখিনি। আসার সময় অন্যমনস্ক হয়েছিলে, রিকশায় ছোট বাচ্চাদের মতো আমাকে জরিয়ে ধরে রেখেছিলে। কি হয়েছে আমাকে বলো প্লিজ, তুমি কি কোনো কারণে ভয় পেয়েছ।
আমি: না কিছু হয়নি।
কাব্য: ঠিক আছে উঠে খেয়ে নাও আমি ঘুমাবো খুব টায়ার্ড লাগছে প্লিজ।
আমি: হুম।

খেয়ে এসে দেখি কাব্য ঘুমিয়ে পড়েছে। সত্যি ওর ঘুমন্ত মুখটায় ক্লান্তির চাপ পরে আছে। কাব্য’র চুল গুলোয় আলতো করে হাত বুলিয়ে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

মাঝরাতে হঠাৎ ফোনের রিংটোন শুনে ঘুম ভেঙে গেলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখি একটা অচেনা নাম্বার রিসিভ করবো কি করবো না ভাবতে ভাবতেই কেটে গেলো। পরক্ষণেই আবার বেজে উঠলো, কাব্য’র ঘুম ভেঙে যাবে তাই ফোনটা নিয়ে জানালার কাছে চলে আসলাম।
আমি: হ্যালো
–হানিমুনে যাবি না এই কথাটা কাব্য’কে এখনো বলিস নি।
আমি: আপনি কে বলুন তো আমাদের হানিমুন নিয়ে আপনার এতো মাথা ব্যথা কেন?
–বলেছি না তোদের জম আমি। (ধমকের সুরে কথাটা বলতেই ফোন কেটে দিলাম)

শুভ্রা ছাড়াও অন্য কেউ আমাদের শত্রু আছে আমি তো ভাবতেই পারছি না। কে এই লোক আমাদের হানিমুন নিয়ে সে নিষেধ করছে কেন, আর লোকটা জানলো কিভাবে আমরা যে হানিমুনে যাচ্ছি? কাব্য’র দিকে তাকালাম ও গভীর ঘুমে, ভাবছি কাব্য’কে এসব বলবো কিনা। কাব্য আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল আমি যদি আগেই বলে দেই তাহলে ওর আনন্দটাই নষ্ট হয়ে যাবে, আমি ওর আনন্দ নষ্ট করতে পারবো না। আচ্ছা লোকটা আমাদের কোনো ক্ষতি করবে নাতো? আমার ডাক্তারবাবুর কোনো ক্ষতি করবে নাতো? আবারো ফোনের মেসেজটোন বেজে উঠলো, আঁতকে উঠলাম মেসেজটা দেখে। “কে বলতে পারে এই হানিমুনে গিয়েই হয়তো তোর বা তোর ডাক্তারবাবুর প্রাণটা চলে যেতে পারে”

চলবে?

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১৪

0

রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

জোহরের নামাজ পড়ে জায়নামাজ এই বসে ছিলাম হঠাৎ ভাবির চেঁচামেচি শুনে ড্রয়িংরুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। রুমের বাইরে আসতেই ভাবি সামনে এসে দাঁড়ালো, ভাবি খুব রেগে আছে বুঝতেই পারছি। আমার হাত ধরে টেনে ড্রয়িংরুমে নিয়ে আসলো। ভাইয়া, অয়ন, তিশা, কাব্য, মামি সবাই বসে আছে। বাহ্ কাব্য তো দেখছি সবাইকে ফোন করে এখানে নিয়ে এসেছে।
ভাবি: তিলোত্তমা এসব কি শুনছি..?
আমি: কি?
ভাবি: ডিভোর্স এর কথা আসছে কেন (কলিংবেল বাজছে, জানি শুভ্রা এসেছে)
মামি: তিশা দেখতো কে এসেছে।
আমি: শুভ্রা এসেছে আমি খুলছি দরজা।

দরজা খুলে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে আছি, শাড়ি পড়ে খুব সুন্দর করে সেজেছে পুরাই পরী।
আমি: ভিতরে এসো।
শুভ্রা: কাব্য কোথায়..?
আমি: ওইতো বসে আছে। (শুভ্রা গিয়ে কাব্য’র পাশে দাঁড়ালো, কাব্য উঠে আমার কাছে চলে আসলো)
শুভ্রা: তিলোত্তমা কাব্য’কে ডিভোর্স দিবে বলেছিলে সব রেডি তো।
কাব্য: আমি আমার তিলো পাগলীকে ছাড়া থাকতে পারবো না প্লিজ তুমি আমায় এতো বড় শাস্তি দিও না। আমি যা করেছি শুধুমাত্র তোমাকে আমার করে পাওয়ার জন্য করেছি। (কাব্য আমার হাত ধরে কাঁদতেছে দেখে শুভ্রা এসে ওর হাত ধরলো)
শুভ্রা: কাব্য তুমি আমার কাছে এসো ও তোমায় কাঁদাচ্ছে কিন্তু আমি তোমায় কখনো কাঁদাবো না (শুভ্রার হাত ধরে টান দিয়ে আমার সামনে এনে ওর দুগালে কয়েকটা থাপ্পড় দিলাম। ও গালে হাত দিয়ে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে)
তিশা: আমি জানতাম তুই আমার মেসেজটা পড়বি। হিহিহি দারুণ হয়েছে।
আমি: তোর মেসেজ পড়েই তো শুভ্রাকে এখানে ডাকলাম।
শুভ্রা: এসব কি করছ তিলোত্তমা, তুমি তো বলেছিলে কাব্য’কে ডিভোর্স… (আরো কয়েকটা থাপ্পড় দিলাম)
আমি: বিয়ে নামক সম্পর্কটার জোড় কতোটা বেশি তুই হয়তো সেটা জানিস না। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক এতো ঠোনকো না যে তোর মতো কোনো নষ্টা মেয়ে এসে একটা ঠোকা দিলেই সম্পর্কটা ভেঙে যাবে।
শুভ্রা: তুমি আমাকে ডেকে এনেছ এভাবে অপমান করার জন্য..?
আমি: তো তোর কি মনে হয় কাব্য’কে তোর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য ডেকে এনেছি..? বৌভাত এর দিন কি বলেছিলাম ভুলে গেছিস..? ভুলে গিয়ে থাকলে আবারো বলছি “কাব্য আমাকে আর আমি কাব্য’কে দুজন দুজনকে ভালোবাসি। কাব্য আমার আর শুধু আমারই থাকবে” তোর মতো কোনো নষ্টা মেয়ে আমাদের আলাদা করতে পারবে না।
শুভ্রা: ডিভোর্স এর কথা বলে তুমি আমার সাথে নাটক করেছ..?
আমি: তুই যেমন সবকিছু প্ল্যান করে করেছিস আমিও সবকিছু প্ল্যান করে তোর কাজের পাল্টা জবাব দিলাম।
শুভ্রা: তোকে তো আমি…(শুভ্রা আমাকে থাপ্পড় দিতে আসছিল, কাব্য শুভ্রার হাত ধরে ফেললো)
কাব্য: এতোদিন তোর সবকথা মুখ বোজে সহ্য করে গেছি কিন্তু আমার তিলোর গায়ে হাত দেওয়ার চেষ্টা করলে তোর হাত আমি ভেঙে ফেলবো।
আমি: তোর পাতানো ফাদে কাব্য আটকে গিয়েছিল তাই ভুল করে ফেলেছে, ও যদি নিজে থেকে এমন করতো তাও আমি ওকে ডিভোর্স দিতাম না কারণ ও আমাকে ভালোবাসে আর ও যা করবে আমার ভালোর জন্যই করবে।
শুভ্রা: আজ যতো গুলো থাপ্পড় দিয়েছিস আর যতোটুকু অপমান করেছিস সবকিছুর প্রতিশোধ আমি নিবো।
আমি: যা খুশি কর শুধু এইটুকু মনে রাখিস কোনো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ভাঙ্গা এতো সহজ না। (শুভ্রা রাগে গজগজ করতে করতে বেরিয়ে গেলো)
কাব্য: ডিভোর্স এর কথাটা শুনে অযতাই ভয় পেয়েছিলাম ভুলেই গিয়েছিলাম আমার তিলো পাগলী আমাকে ভালোবাসে তাই কখনো আমাকে ডিভোর্স দিবে না।
আমি: আমাকে জানিয়ে যদি সবকিছু করতেন তাহলে আজ দুজনকে এতো কষ্ট পেতে হতো না। নিজের বউয়ের থেকে কথা লুকানোর শাস্তি তো আপনি পাবেনই।
কাব্য: যা খুশি শাস্তি দাও শুধু ছেড়ে যাওয়ার কথা বলোনা মরে যাবো।
অয়ন: ভাবি বিষয়টা কি হলো বলতো।
ভাবি: কাব্য তো ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল তুই নাকি ওকে ডিভোর্স দিবি বলেছিস তাই তো আম্মুকে হসপিটালে রেখেই ছুটে আসলাম কিন্তু এখন তো সবকিছু উল্টো হলো।
ভাইয়া: আমি জানি তিলোত্তমা কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিতেই পারে না।
আমি: ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তো, তোমাদের সবাইকে ছেড়ে এই শহর ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু হঠাৎ ফোন হাতে নিয়ে তিশার মেসেজ দেখে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি।
অয়ন: একটা মেসেজে সবকিছু ঠিক হয়ে গেলো, তিশা আপু তুমি কি জাদু করে মেসেজ পাঠিয়েছিলে..?
তিশা: জাদু না সবকিছু খুলে বলেছিলাম। আসলে দোষটা আমারই তমাকে আগেই সব জানানো উচিত ছিল।
কাব্য: জানাইনি তো ভয়ে যদি আমাকে ভুল বুঝে।
ভাবি: আচ্ছা মেসেজে কি লিখা ছিল..?
আমি: বলছি “তমা আমি জানি তুই রেগে আছিস আর একবার রেগে গেলে যে তুই কারো কথা শুনিস না সেটাও আমি জানি তাই তো মেসেজে সব বলছি। এসবে কাব্য’র কোনো দোষ নেই, দোষতো তোর মামি আর শুভ্রার। কাব্য তোকে ভালোবাসে এইটা শুভ্রা মেনে নিতে পারেনি তাই দুজন লোককে ও তোর মামির কাছে পাঠিয়েছিল। আন্টি রাজি না হওয়াতে ভয় দেখিয়েছিল তখন আন্টি ভয় আর কিছুটা লোভে রাজি হয়ে যায়। তুই আমার কাছ থেকে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর কাব্য হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে আমার কাছে আসে আর বলে তোর মামি তোকে পতিতালয় এর দুজন লোকের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। আসলে আমার কাছে আসার আগে কাব্য তোদের বাসায় গিয়েছিল আর দরজা থেকে ওদের কথা শুনেই আমার কাছে চলে এসেছিল। তারপর আমরা তোদের বাসায় যাওয়ার পর অনেক কথা কাটাকাটি হয়, ওদের সাথে জামেলা করে লাভ হবে না বুঝতে পেরে কাব্য ওই দুজন লোকের থেকে তোকে কিনে নেয়। এছাড়া আর কোনো রাস্তা ছিল না আমাদের কাছে কারণ আমরা জামেলা করলে লোকগুলো তোর ক্ষতি করতো। কাব্য ওদের এক কোটি টাকার চেক দেওয়ার পর ওরা চলে গিয়েছিল। তারপর তোর রুমে গিয়ে আমরা তোকে পাইনি, কাব্য তোকে পাগলের মত খুঁজেছে পরে তো রাস্তায় তোকে অজ্ঞান অবস্থায় পেয়েছিল। লোক দুটু তোকে সাথে নিয়ে যায়নি বরং দ্বিগুণ টাকায় তোকে কাব্য’র কাছে বিক্রি করে শুভ্রার সাথে বেঈমানি করেছিল তাই শুভ্রা কিছু লোক ভাড়া করে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে জামেলা করেছিল। ওদিকে তোর জ্ঞান ফেরার পর যখন তুই আন্টির দোষ ঢাকার চেষ্টা করলি তখন কাব্য ভয়ে আর কিছু তোকে বলেনি। কাব্য তোকে ভালোবাসে তাই তোকে বাঁচানোর জন্য এমন করেছে আর তোর থেকে সবকিছু লুকিয়েছে শুধুমাত্র তোকে হারানোর ভয়ে। একটা মেয়েকে টাকা দিয়ে কেনাটা তো ভালো কাজ না। তুই এসব শুনে যদি কাব্য’কে ভুল বুঝিস তাই ও ভয়ে কিছু বলেনি, আমাকেও বলতে নিষেধ করেছিল। ভালোবাসার মানুষকে হারানোর ভয় পাওয়াটা তো স্বাভাবিক। কাব্য’কে আর ভুল বুঝিস না প্লিজ” এটাই ছিল তিশার মেসেজ।
অয়ন: এখন সব বুঝলাম, তাও আমি বলবো ভাইয়া ভুল করেছে। তখন যদি ভাইয়া ভাবিকে সব বলে দিতো তাহলে শুভ্রার কাছ থেকে ভাবিকে এসব শুনতে হতো না আর ভাবি এতো রাগ করতো না।
কাব্য: আমি তো ভয়েই বলিনি। (চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে)
মামি: সব ভুল আমার তমা আমাকে ক্ষমা করে দে মা।
আমি: ক্ষমা..(হাসলাম)
মামি: ওরা আমাকে ভয় দেখিয়েছিল আর কিছুটা লোভে পরে… কিন্তু তুই বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর আমি বুঝতে পেরেছি তোকে আমি কতোটুকু ভালোবাসি। শুভ্রাকে টাকা ফিরিয়ে দিয়েছি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে।
তিশা: তমা আন্টি তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন ক্ষমা করে দে।
আমি: হুম।
কাব্য: তিলো এবার বাসায় চলো।
মামি: তোমরা সবাই প্রথম এসেছ আমার বাসায়, খাওয়া দাওয়া করে রাতে যাবে।
ভাইয়া: ঠিক আছে।

জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছি আর বিকেলের প্রকৃতি দেখছি হঠাৎ তিশা এসে পাশে দাঁড়ালো।
আমি: ব্যাপার কি..?
তিশা: কিসের..?
আমি: আদনান ভাইয়ার সাথে মনে হচ্ছে সামথিং সামথিং।
তিশা: তেমন কিছু না এমনি একটুআধটু কথা বলি।
আমি: বিয়ের দাওয়াত কবে পাবো..?
তিশা: তমা তুই না…
কাব্য: তোমরা বললে আমি হেল্প করতে পারি (কাব্য এসে আমার অন্যপাশে দাঁড়ালো)
তিশা: কাব্য তুমিও…
কাব্য: বুঝেছি ব্যাপারটা আমাকেই দেখতে হবে তাই তো তিলো..?
আমি: আপনার ইচ্ছে।
কাব্য: এখনো আপনি..?
তিশা: আমি যাই এই সুযোগে রাগটা ভাঙিয়ে নাও। (তিশা চলে যেতেই কাব্য আমাকে টান দিয়ে ওর বুকের সাথে জরিয়ে ধরলো)
কাব্য: এতো অভিমান আমার তিলো পাগলীর জানতাম নাতো।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: সব তো মিটেই গেলো তাহলে এখনো রেগে আছ কেন..?
আমি: উঁহু মিটেনি, আপনি আমার থেকে কথা লুকিয়েছেন এইটার শাস্তি তো আপনাকে পেতেই হবে।
কাব্য: আমি তো ভয়ে বলিনি প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো।
আমি: শুভ্রা যে বাজে ভাবে বলেছে আপনি তো সেভাবে বলতেন না অবশ্যই বুঝিয়ে বলতেন। আগে বলে দিলে কি শুভ্রা আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করার সুযোগ পেতো আর আমি কি এতো কষ্ট পেতাম।
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: ভালোবাসেন অথচ সবকিছু শেয়ার করতে পারেন না, কেন?
মামি: তমা খেতে আয়।
আমি: আসছি।

খাওয়াদাওয়া করে সন্ধ্যার দিকে অয়ন, কাব্য আর আমি বাসায় চলে আসলাম। ভাইয়া আর ভাবি আবার হসপিটালে চলে গেলেন।

আজ তো ভাবি নেই তাই আমিই রাতের খাবার রান্না করছি, আর ভুয়া আমাকে হেল্প করছে। কাব্য বার বার ড্রয়িংরুম থেকে কিচেনে উকি দিচ্ছে দেখে খুব হাসি পাচ্ছে। হুট করে কাব্য কিচেনে চলে আসলো, মতলব কি ওর।
কাব্য: বুয়া রান্না কতোদূর।
বুয়া: এইতো আর কিছুক্ষণ।
কাব্য: বাকিটুকু তিলো করে নিতে পারবে তুমি সারাদিন একা একা কতো কাজ করেছ আর করতে হবে না বাসায় চলে যাও। (কাব্য’র দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালাম, ও মিটিমিটি হাসছে। বুঝলাম না ও হঠাৎ বুয়াকে পাম দিচ্ছে কেন)
বুয়া: তাইলে আমি যাই।
আমি: ঠিক আছে। (বুয়া চলে যেতেই কাব্য এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো)
কাব্য: খুব তো এতোক্ষণ আমার উকি মারা দেখে হাসছিলে এখন কি হবে, বুয়াকে তো পাঠিয়ে দিলাম।
আমি: কি হচ্ছে এসব, অয়ন বাসায় আছে।
কাব্য: থাকুক।
অয়ন: ভাবি (অয়নের কন্ঠ শুনে তাড়াতাড়ি দূরে সরে গেলো, ওর দিকে রাগি চোখে তাকালাম। কান ধরে আস্তে বললো সরি)
অয়ন: খিদে লেগেছে তো।
আমি: বসো।

খাওয়াদাওয়া করে রুমে আসতেই কাব্য পিছন পিছন আসলো।
কাব্য: তিলো নামাজ পড়বে না? (ওর প্রশ্ন শুনে কিছুটা না অনেক অবাক হলাম)
কাব্য: চলো দুজন একসাথে নামাজ পড়ি।
আমি: আপনি নামাজ পড়বেন?
কাব্য: সকালেও পড়েছি আর এখনো রেগে আছ, আপনি করে বলছ? (কাব্য’র কথার উত্তর না দিয়ে ওযু করতে চলে আসলাম। কাব্য’র উপর রেগে থাকলেও মনে মনে অনেক খুশিই হয়েছি কাব্য নিজে থেকে নামাজ পড়ার কথা বলেছে)

দুজন একসাথে নামাজ পড়ে নিলাম। আমি বিছানায় বসে আছি আর কাব্য জায়নামাজে বসে আড়চোখে আমাকে দেখছে।
কাব্য: ও আল্লাহ্‌ আমার তিলো পাগলীর রাগটা কমিয়ে দাও প্লিজ (কথাটা বলে কাব্য আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে, ওর কথা শুনে আর রাগ করে থাকতে পারলাম না ফিক করে হেসে দিলাম)
কাব্য: যাক বাবা শেষ পর্যন্ত রাগটা কমলো তাহলে।
আমি: হু কমেছে কিন্তু যদি আর কখনো আমার থেকে কিছু লুকিয়েছ তখন আর রাগ কমবে না। (নিশ্চুপ হয়ে কি যেন ভাবছে, তাহলে কি কাব্য এখনো
আমার থেকে কিছু লুকুচ্ছে)
আমি: হলো কি এতো কি ভাবছ?
কাব্য: ভাবছি তিলো পাগলীর রাগটা যখন কমেই গেছে এখন তাকে আদর করবো।
আমি: মানে কি? (কিছু না বলে আমার কাছে এসে আমাকে বসা থেকে শুয়ে দিলো। জোর করে ওকে সরাতে চাইলাম উল্টো আমাকে জরিয়ে ধরলো)
আমি: কি করছ ডাক্তারবাবু..?
কাব্য: উহ প্রাণ ফিরে পেয়েছি মনে হচ্ছে কতো বছর পর ডাক্তারবাবু বলে ডাকলে।
আমি: তাই বুঝি।
কিছুনা বলে ডান হাতটা আমার ঘাড়ের কাছে নিয়ে রাখলো, বাম হাত দিয়ে আমার একটা হাত ওর মুখের কাছে নিয়ে গিয়ে আমার হাতে আলতো করে চুমু খেলো, ওর ঠোঁটের স্পর্শে কেঁপে উঠে চোখ দুটু বন্ধ করে ফেললাম। ও হাত ঘুরিয়ে আমার পেটের উপর দিয়ে নিয়ে আমার হাতের উপর ওর হাত রাখলো। আমার হাতের আঙ্গুলের ভাজে ভাজে ওর হাতের আঙ্গুল গুলো আটকে দিলো।
আমি: ডাক্তারবাবু প্লিজ ছাড়ুন।
কাব্য: চুপ, কথা তো বলতে পারছ না ঠোঁট দুটু কাঁপছে তাও এতো কথা বলো কেন।
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওর ঠোঁট গুলো আমার ঠোঁটের উপর আলতো করে রাখলো।

চলবে?

 রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১৩

0
 রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

দরজায় সবাই ধাক্কাধাক্কি করছে শুনে হঠাৎ হুশ ফিরলো, এতোক্ষণ কি অজ্ঞান হয়ে ছিলাম নাকি বুঝতে পারছি না। সবাই দরজার অপর পাশ থেকে ডাকছে আর দরজায় ধাক্কাচ্ছে শুনে আস্তে আস্তে উঠে দরজা খুললাম। সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
ভাবি: নিজের কি অবস্থা করেছিস।
আমি: তোমরা যাও তো এখান থেকে আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
অয়ন: এতোক্ষণ তো একাই ছিলে প্রায় আধা ঘন্টা ধরে ডাকছি দরজা খুলোনি।
আমি: যাবে তোমরা।
পিছন ফিরে চলে আসতে চাইলাম তখনি মাথা ঘুরে গেলো, কাব্য এসে তাড়াতাড়ি আমাকে ধরলো। ও ধরেছে দেখে রাগ আরো বেড়ে গেলো, ধাক্কা দিয়ে ওকে ছাড়াতে চাইলাম, ও জোর করে কোলে তুলে এনে বিছানায় বসালো।

কাব্য’র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চুপচাপ বসে আছি। চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে।
অয়ন: ভাবি আর কতো কাঁদবে আমাদের বাসাটা তো সাগর বানিয়ে ফেলবে।
আমি: অয়ন ঠাট্টা ভালো লাগছে না।
অয়ন: ঠিক আছে কান্না থামাও আমরা ভাইয়ার বিচার করবো।
আমি: হুহ বিচার যার চরিত্র এমন তাকে আবার…
কাব্য: তিলো আ…
আমি: একদম চুপ আমার নাম তুমি মুখে নিবে না।
ভাবি: তোরা যা তো এই রুম থেকে আমি ওকে দেখছি। (কাব্য আর অয়ন বেড়িয়ে যেতেই ভাবি এসে আমার পাশে বসলেন। ভাবিকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলাম)
ভাবি: কাব্য এমনটা কেন করেছে আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। তুই কান্না থামা এভাবে কাঁদতে থাকলে অসুস্থ হয়ে পরবি তো।
আমি: ওকে তো আমি ভালোবেসেছিলাম ও বললে আমি ওর কাছে চলে আসতাম ও এই কাজ করতে গেলো কেন। আর করেছে তো একবারো আমাকে বলেনি সব লুকিয়ে রেখেছে।
ভাবি: তুই শুনলে কষ্ট পাবি তাই হয়তো লুকিয়ে রেখেছিল।
আমি: যে কাজে আমি কষ্ট পাবো সেই কাজ ও করলো কেন..?
ভাবি: সেটাই তো বুঝতে পারছি না, অনেক বার জিজ্ঞেস করেছি কিছু বলছেও না।
আমি: বলতে পারো আমার মামি আর কাব্য’র মধ্যে পার্থক্য কোথায়, একজন বিক্রি করেছে আর অন্যজন কিনেছে। আমি ওদের কাছে বাজারের পণ্য হয়ে গেছি ভাবি।
ভাবি: চুপ এসব বলবি না সব ঠিক হয়ে যাবে তুই একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর।
ভাবি আমাকে শুয়ে দিয়ে চলে গেলেন। চুপচাপ শুয়ে শুয়ে কাঁদছি। কাব্য এমন করেছে বিশ্বাসই করতে পারছি না, কেন করলো ও এমনটা। মামি না মানলে আমাকে বলতো আমি চলে আসতাম ওর কাছে আর যদি মামিকে টাকা দিতেই হতো আমাকে বলে দিলে কি হতো..?

হঠাৎ কপালে ঠান্ডা অনুভব হতেই ঘুম ভেঙে গেলো, চোখ মেলে তাকাতে পারছি না মাথা যন্ত্রণা করছে। চোখ বন্ধ রেখেই কপালে হাত দিলাম, কপালে তো জলপট্টি দেওয়া। আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম, পাশে কাব্য মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। আমি নড়াচড়া করছি বুঝতে পেরে আমার দিকে তাকালো।
কাব্য: তিলো এখন একটু ভালো লাগছে..? যা জ্বর উঠেছিল আমি তো… (কপাল থেকে জলপট্টি এনে ছুড়ে ফেলে দিলাম, সবকিছুর জন্য ও দায়ী আর এখন আসছে ডাক্তারি করতে)
কাব্য: ভুল তো আমি করেছি নিজেকে শাস্তি দিচ্ছ কেন।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: একটু বসো আমি খাবার আর ওষুধ নিয়ে আসছি
আমি: আমার কিছু প্রয়োজন হলে ভাবির থেকে নিয়ে নিবো, আমাকে নিয়ে আপনার এতো ভাবতে হবে না।
কাব্য: ভাবি বাসায় নেই আর আমি না ভাবলে কে ভাববে শুনি।
আমি: ভাবি কোথায়..?
কাব্য: হসপিটালে গেছে, ভাবির আম্মু অসুস্থ। (দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম সন্ধ্যা সাতটা বাজে তারমানে আজকে আর তিশার কাছে যাওয়া সম্ভব না)
কাব্য: চুপচাপ শুয়ে থাকো আমি আসছি।
আমি: বললাম তো আমাকে নিয়ে আপনার এতো চিন্তা করতে হবে না।
কাব্য: আবার আপনি করে বলছ।
আমি: হ্যাঁ কারণ আমি তো আপনার কেনা…
কাব্য: তিলো তুমি অসুস্থ এসব নিয়ে এখন কোনো কথা বলতে চাই না আগে সুস্থ হও সব ঠিক করে নিবো।
আমি: আর কিছুই ঠিক হবে না কাব্য চৌধুরী।
কাব্য: ডাক্তারবাবু থেকে কাব্য… বাদ দাও চলো।
আমি: কোথায় যাবো..?
কাব্য: তোমাকে রুমে একা রেখে যেতে পারবো না।
আমি: মানে..?
আমার কথার উত্তর না দিয়ে আমাকে কোলে তুলে নিলো, কি অদ্ভুত মানুষ।

কাব্য খাবার গরম করছে আর আমাকে ওর কাছে একটা চেয়ারে বসিয়ে রেখেছে, ও হয়তো ভাবছে আমি পালিয়ে যাবো। যাবো তো ঠিকি তবে পালিয়ে না ওকে ছেড়ে চলে যাবো আর সকালেই।
কাব্য: তিলো বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছে..?
আমি: আমার কষ্ট নিয়ে ভাবতে হবে না, খাবার কার জন্য গরম করছেন..?
কাব্য: তোমার জন্য।
আমি: খাবো না আমি।
কাব্য: তুমি অসুস্থ তাই ওষুধ খেতে হবে আর ওষুধ খেতে হলে আগে খাবার খেতে হবে (আসছে এখানে দরদ দেখাতে ইচ্ছে হচ্ছে ওকে…)
কাব্য: চলো।

টেবিলে মাথা রেখে বসে আছি, কাব্য খাবার নিয়ে বার বার খেতে বলছে। অসহ্য লাগছে ওর এসব ভালোবাসা।
কাব্য: তিলো মাথা তুলো তাকাও আমার দিকে।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: খেয়ে নাও প্লিজ।
আমি: বলেছি তো খাবো না।
কাব্য: খাইয়ে দিচ্ছি চুপচাপ খেয়ে নাও।
আমি: বললাম না খাবো না (খাবারের প্লেট ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলাম)
কাব্য: তিলো…(থাপ্পড় দেওয়ার জন্য হাত উপরে তুলে আবার নামিয়ে নিলো)
অয়ন: বাহ্ ভাইয়া বাহ্ এইটাও দেখতে হলো (অয়নের কথা শুনে দরজায় তাকালাম, রাগি চোখে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে)
অয়ন: একে মেয়েটা অসুস্থ তার উপর আবার তুমি এমন করছ।
কাব্য: কি করবো ও আমার কোনো কথাই শুনছে না।
অয়ন: যা করেছ তারপর কি ভাবির রাগ করাটা স্বাভাবিক না..?
কাব্য: (নিশ্চুপ)
অয়ন: আর ভাবি কি শুরু করেছ দুজনে..? একটা ভুল হয়ে গেছে দুজনে কথা বলে মিটিয়ে নাও। তা না করে এভাবে কান্নাকাটি করে নিজেকে শাস্তি দিচ্ছ কেন..? এই কয়েক ঘন্টায় জ্বর বাধিয়ে নিজের কি অবস্থা করেছ দেখেছ একবার..? ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে রুমে যাও, বড় ভাইয়া আর ভাবি আজকে বাসায় ফিরতে পারবে না (অয়ন নিজের রুমে চলে গেলো, কাব্য’র জন্য আজ এতো গুলো কথা শুনতে হলো আমাকে)
কাব্য: হয়েছে শান্তি ছোট ভাইয়ের থেকে আমাকে বকা শুনালে, চলো এবার।
আমি: একাই যেতে পারবো আমি।
কাব্য: হ্যাঁ যাও আর সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে…
আমি: মারা যাবো তাই তো।
কাব্য: তিলো প্লিজ আমি ভুল করেছি যা শাস্তি দিতে হয় দাও তবুও এসব কথা বলোনা, তোমাকে হারানোর কথা তো আমি ভাবতেও পারিনা। (ওর কথার কোনো জবাব না দিয়ে আস্তে আস্তে রুমে চলে আসলাম)

বিছানায় শুয়ে আছি আর কাব্য সোফায় বসে ল্যাপটপ টিপছে। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, তাকিয়ে দেখলাম আমার ফোন।
কাব্য: তোমার উঠতে হবে না আমি দেখছি। (কাব্য ফোন হাতে নিয়ে একবার আমার দিকে তাকালো তারপর ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। অনেকক্ষণ পর কাব্য রুমে আসলো)
আমি: কে ফোন দিয়েছিল..?
কাব্য: তিশা।
আমি: তো ফোন নিয়ে বারান্দায় যেতে হলো কেন..?
কাব্য: এমনি। (আর কিছু না বলে চুপচাপ শুয়ে রইলাম)

কাব্য: খাবার, ওষুধ কিছুই তো খাওনি রাতে যদি জ্বর বেড়ে যায় তখন বুঝবে আমি কতোটা খারাপ হতে পারি (আমার পাশে এসে শুয়ে পড়লো)
আমি: যে টাকা দিয়ে মেয়ে কিনে এনে বিয়ে করে সে কোতোটা ভালো তাতো বুঝতেই পারছি।
কাব্য: কতোবার বলবো এই বিষয়ে কথা বলতে চাই না তুমি সুস্থ হও আগে তারপর নাহয় ইচ্ছেমতো ঝগড়া করো। (কিছু না বলে বিছানার এক পাশে এসে শুয়ে রইলাম)

সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি কাব্য’র বুকে ঘুমিয়ে আছি আর ও আমাকে দুহাত দিয়ে জরিয়ে ধরে রেখেছে। ওর ঘুমন্ত মুখটা দেখতে কি মায়াবী কিন্তু ও…
কাব্য’র হাত দুটু সরিয়ে দিয়ে উঠে পড়লাম। একটু ফ্রেশ হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।

তিশার সামনে দাঁড়িয়ে আছি, ও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি: তোর আবার কি হলো..?
তিশা: তুই কান্নাকাটি বন্ধ কর বলছি।
আমি: ওহ ও তোকে সব বলে দিয়েছে।
তিশা: আসলে তমা আমি সবকিছু জানতাম।
আমি: কি..?
তিশা: প্লিজ রাগ করিস না পুরো কথাটা আগে শুন।
আমি: তিশা তুইও আমাকে ঠকালি।
তিশা: এইটাকে ঠকানো বলে না তুই…
আমি: থাক আর কিছু শুনতে চাই না।
তিশা: কোথায় যাচ্ছিস..? একটা কথা শুনে যা প্লিজ তোর ফোনটা একবার দেখিস (তিশার ডাকে সাড়া না দিয়ে দৌড়ে বাসায় চলে আসলাম। কলিংবেল চাপতেই মামি দরজা খুলে দিলো)
আমি: এমন হা করে তাকিয়ে আছ কেন, আশা করনি আমি যে আসবো।
মামি: না মানে…
আমি: সবাই তো ঠকালে আমাকে শান্তি পেয়েছ তো।
মামি: (নিশ্চুপ)
আমি: ওহ হ্যাঁ আমাকে বিক্রি করে কতো টাকা পেয়েছ মানে কাব্য চৌধুরী তোমাকে কতো টাকা দিয়েছে..?
মামি: (নিশ্চুপ)
আমি: বলছ না কেন, আমি শুনতে চাই কতো টাকার বিনিময়ে তোমরা আমাকে কেনাবেচা করেছ।
মামি: তমা…
আমি: বলো কতো টাকা…
মামি: এক কোটি (আমার ধমকে ভয়ে বলে দিলো। বাহ্ কাব্য’র কাছে আমার মূল্য এক কোটি টাকা)
আমি: মামি আর মায়ের মধ্যে পার্থক্য কি বলতো..? মা হয়ে মেয়েকে বিক্রি করতে পারলে তুমি..?
মামি: ভুল হয়ে গেছে মা মাফ করে দে।
আমি: আব্বুর রেখে যাওয়া সম্পত্তির দলিল গুলো দাও।
মামি: কেন..?
আমি: সবকিছু বিক্রি করে এই শহর ছেড়ে চলে যাবো, না তোমার কাছে থাকবো না কাব্য’র কাছে।
মামি: পাগলামি করিস না ঠান্ডা মাথায় আমার কথাটা শুন।
আমি: চুপচাপ আমার কথা শুনো নাহলে আমাকে কেনাবেচা করার কারণে তোমাকে আর ওই কাব্য চৌধুরীকে জেলে পাঠাবো।
মামি: তমা…
আমি: যাও দলিল গুলো নিয়ে এসো।

জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছি, কতোদিন পর নিজের রুমে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু আজ কোনো কিছুই নিজের মনে হচ্ছে না কারণ আমি যে…(হঠাৎ কাব্য এসে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো, ওর স্পর্শ যে খুব চেনা তাই না দেখেই বুঝতে পারি এখন। কিন্তু কাব্য কোথা থেকে আসলো)
আমি: ছাড়ুন।
কাব্য: না আগে বলো আমাকে না বলে চলে এসেছ কেন..?
আমি: ইচ্ছে হয়েছে তাই।
কাব্য: জানো তোমাকে না পেয়ে কতোটা ভয় পেয়েছিলাম, সারা বাসা খুঁজেছি কিন্তু পাইনি তারপর তিশা ফোন করে বললো তুমি এখানে।
আমি: তিশার সাথে দেখছি আপনার ভালোই যোগাযোগ আছে।
কাব্য: তিশার জন্যই তো তোমাকে আমার করে পেয়েছি।
আমি: হ্যাঁ দুজন মিলেই তো আমাকে মামির থেকে কিনলেন।
কাব্য: উফফ তিলো…
আমি: ছাড়ুন বলছি (ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে)
মামি: তমা এইযে দলিল।
কাব্য: দলিল দিয়ে কি করবে..?
মামি: ও বলছে সবকিছু বিক্রি করে এই শহর ছেড়ে চলে যাবে।
কাব্য: মানে, তিলো পাগল হয়ে গেছো তুমি।
আমি: পাগল তো এতোদিন ছিলাম তাই তো তোমাদের কাউকে চিনতে পারিনি।
কাব্য: তাই বলে এমন সিদ্ধান্ত নিবে..?
আমি: হুম। (কাব্য আর মামি চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো)

কিছু ভালো লাগছে না একবার বিছানায় বসছি তো আবার জানালার কাছে যাচ্ছি খুব অস্থির অস্থির লাগছে। ফোনটা হাতে নিয়ে শুভ্রাকে ফোন দিলাম।
শুভ্রা: কি ব্যাপার তিলোত্তমা আমাকে নিজে থেকে ফোন করেছে।
আমি: আমার নাম্বার তুমি চিনো..?
শুভ্রা: আমি জানবো না তোমার নাম্বার তা কি কখনো হয়।
আমি: ওহ আমার উপকার করেছ তো তাই তোমাকে কিছু গিফট করতে চাই।
শুভ্রা: আমার তো গিফট চাই না চাই শুধু কাব্য’কে।
আমি: কাব্য’কেই তো গিফট দিবো।
শুভ্রা: মানে?
আমি: কাব্য’কে আমি ডিভোর্স দিবো আর আজকেই। তুমি তো আমার এতো বড় উপকার করেছ তাই নিজের হাতে কাব্য’র হাতটা তোমার হাতে তুলে দিতে চাই।
শুভ্রা: সত্যি বলছ তুমি..?
আমি: হ্যাঁ আমাদের বাসায় চলে আসো, মামির বাসায় কিন্তু।
শুভ্রা: আমি এক্ষণি আসছি।

ফোন রেখে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখি কাব্য দাঁড়িয়ে আছে।
কাব্য: এই সিদ্ধান্ত তুমি নিতে পারলে তিলো (কাব্য কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়লো)
যতো খুশি কাঁদো কাব্য চৌধুরী আমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা তো করবোই। তোমাদের মতো মুখোশ পড়া আপন মানুষদের চেয়ে একা থাকা অনেক ভালো।

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১২

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১২

লেখিকা: সুলতানা তমা

হঠাৎ মাথায় কারো হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে চারদিকে তাকালাম, এখনো তো সকাল হয়নি মনে হয় মধ্যরাত। ডিম লাইটের আলোতে ঘড়িও দেখতে পারছি না। উঠে বসে পাশ ফিরে তাকালাম, কাব্য মাথা নিচু করে বসে আছে।
আমি: ডাক্তারবাবু কি হয়েছে তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন..?
কাব্য: কিছু হয়নি তুমি উঠেছ কেন..?
আমি: ঘুম ভেঙে গেলো।
কাব্য: ওহ, বেডে চলো (রাতে ছাদ থেকে এসে কাব্য ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে আমি এসে সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। যে ধমক গুলো দিয়েছিল খুব রাগ হচ্ছিল কিন্তু এখন ওকে এমন অবস্থায় দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে)
কাব্য: তিলো প্লিজ বেডে চলো।
আমি: হুম।
কাব্য: রাগ করেছ হুম (কাব্য আমার এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে ওর বুকের সাথে জরিয়ে ধরলো)
কাব্য: সরি পাগলী আর কখনো এভাবে বকা দিবো না প্লিজ আর রেগে থেকো না (আমি কিছু বলতে যাবো তখনি কাব্য আমার দুগালে আলতো করে ধরে কপালে একটা চুমু দিলো তারপর কোলে করে এনে বিছানায় শুয়ে দিলো)
আমি: ডাক্তারবাবু আ…
কাব্য: এখনো মুখ গোমড়া করে রেখেছ বললাম তো সরি প্লিজ একটু হাসো। (কাব্য একটা হাত দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে রেখেছে আরেকটা হাত দিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে)
আমি: সবসময় কি নিজের কষ্টগুলো আড়াল করে এভাবেই আমাকে হাসিয়ে যাবে..?
কাব্য: আমার তিলো পাগলী হাসলে আমার মনে আর কোনো কষ্ট থাকে না। (আমার নাকের সাথে ওর নাক ঘসে হাসতে হাসতে বললো। সত্যি আজব একটা মানুষ ও নিজের কষ্ট গুলো কতো সুন্দরভাবে আড়াল করে রাখে)
আমি: তিলো পাগলীর সামনে থাকলেই শুধু কষ্ট আড়াল করে হাসো পরে তো ঠিকি আবার কষ্ট পেয়ে কাঁদো।
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: ডাক্তারবাবু তুমি এইটা কেন বুঝতে চাও না, তুমি যেমন আমার মুখে হাসি দেখতে চাও তেমনি আমিও তোমার মুখে হাসি দেখতে চাই।
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: তুমি আমাকে ভালোবাস এর মানে তো এই নয় যে তুমি শুধু আমাকে হাসিয়ে যাবে আর আমি হেসে যাবো। আমিও তোমাকে ভালোবাসি, আমিও তোমার মুখে হাসি দেখতে চাই সবসময়। তুমি নিজের ভিতরে কষ্ট পুষে রেখে দিনের পর দিন এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদবে আর আমি তা দেখেও মুখ বুজে সহ্য করবো তা তো হতে পারে না।
কাব্য: তাহলে তুমি কি করতে চাও।
আমি: কিছুই করতে চাই না, আমাকে শুধু তোমার কষ্ট গুলো বলো। কষ্ট মনের মধ্যে পুষে রাখতে নেই শেয়ার করতে হয়, আমাকে বলো দেখবে নিজের মন হালকা লাগবে। (আমাকে ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লো, কাব্য’র গলায় জরিয়ে ধরে ওর ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু খেলাম)
আমি: বলো প্লিজ।
কাব্য: হুমায়রা চৌধুরী আর…(কাব্য’র ঠোঁটে একটা আঙ্গুল রেখে ওকে আটকে দিলাম)
আমি: নাম ধরে নয় আব্বু আম্মু বলো।
কাব্য: তিলো…
আমি: বলো বলছি।
কাব্য: আব্বু আম্মু হিয়া আর আমি, এটাই ছিল আমাদের ছোট্র পরিবার। প্রথম আমাদের পরিবারে সুখ শান্তি থাকলেও সেটা আস্তে আস্তে কমে যায়। আব্বু একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করতেন আর আম্মু ছিলেন ডক্টর। হিয়া আর আমি ছোটবেলা থেকেই একাকীত্বের মধ্যে বড় হয়েছি কারণ আব্বু আম্মুর আমাদের জন্য সময় ছিল না। মাঝে মাঝে কষ্ট হতো আব্বু আম্মুকে বললে উনারা বলতেন “এখন হয়তো সময় দিচ্ছি না তোমাদের কিন্তু সবকিছু তো তোমাদের দুজনের ভবিষ্যৎ এর জন্যই করছি” জানো তিলো খুব করে উনাদের বুঝাতে চাইতাম আমাদের এতোকিছু চাই না কম হলেও চলবে তাও যেন আমাদের একটু সময় দেন একটু ভালোবাসা দেন। কিন্তু আব্বু আম্মু তাদের কাজে এতোটাই ডুবে গিয়েছিলেন যে কিছুই বুঝতে চাইতেন না। বুঝেছেন কিন্তু অনেক দেরিতে, তখন আমার পনেরো বছর আর হিয়া সাত বছরের। বিয়ের ষোলো বছর পর আমার আব্বু আম্মু বুঝতে পারেন যে উনারা একে অন্যের জন্য পারফেক্ট না। কারণ কি জানো, উনারা একে অপরকে সময় দিতে পারেন না তাই নাকি একে অপরের জন্য পারফেক্ট না। শেষ পর্যন্ত উনারা আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মানে ডিভোর্স। হিয়া নাহয় তখন ছোট ছিল কিন্তু আমি তো অনেক কিছু বুঝতাম, কি করে উনাদের এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতাম। কিন্তু তাও উনারা আমাকে বুঝিয়েছেন যে এটাই আমাদের ভাই বোনকে মানতে হবে। আব্বু আম্মুকে ছাড়া থাকতে হবে এইটা মন বুঝতে চাইতো না তাও মন কে বুঝিয়ে ছিলাম যে যারা সম্পর্ক রাখতে চায় না তাদের সম্পর্ক তো জোর করে টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। যখন আমি নিজের মন কে শক্ত করে ফেলি তখন আব্বু আম্মুর মধ্যে আরেক জামেলা শুরু হয়, আমরা ভাই বোন কার কাছে যাবো। আব্বু বলেন আব্বুর কাছে আম্মু বলেন আম্মুর কাছে, রোজ রোজ এই অশান্তি দেখতে দেখতে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু আব্বু আম্মুকে কিছু বলিনি, এতোটুকু রাগ পর্যন্ত দেখাইনি। কিন্তু আব্বু আম্মু শেষ মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্ত নেন যে আর রাগ না দেখিয়ে থাকতে পারিনি। আমি আম্মুর কাছে আর হিয়া আব্বুর কাছে নাহয় আমি আব্বুর কাছে আর হিয়া আম্মুর কাছে থাকবে উনারা এই সিদ্ধান্ত নেন। যখন উনারা আমাদের এতোটুকু সময় দিতে পারতেন না তখন আমি হিয়ার দেখাশোনা করেছি, ওকে খাওয়ানো ঘুম পাড়ানো সব আমি করেছি। কি করে পারতাম আব্বু আম্মুর ভুলের জন্য ভাই বোন আলাদা হয়ে যেতে। হিয়া তো তখন কিছু বুঝতো না আব্বু আম্মু ঝগড়া করলে ও আমার হাতটা জরিয়ে ধরে ড্যাবড্যাব করে আব্বু আম্মুর দিকে তাকিয়ে থাকতো। আমার এসব ভালো লাগতো না, আব্বু আম্মুকে অনেক বুঝিয়েছিলাম যে আরো একবার ভাবো। ওরা শুনেনি আমার কথা উল্টো আমাদের ভাই বোন কে আলাদা করে দিতে চেয়েছিল। যারা বিয়ের ষোলো বছর পর বুঝতে পারে একে অন্যের জন্য পারফেক্ট না তারা আমাদের ভাই বোনের দায়িত্ব আবার কি নিবে। একদিন রাতে আব্বু আম্মুর মধ্যে অনেক ঝগড়া শুরু হয় এক পর্যায়ে আম্মু ঘুমন্ত হিয়াকে কোলে তুলে নেন বাসা থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য আর আব্বু তখন আম্মুর গালে কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দেন। এসব দেখতে আর ভালো লাগছিল না তাই বাধ্য হয়ে আম্মুর থেকে হিয়াকে কেড়ে এনে বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। আসার সময় আব্বু আম্মুকে দুটু কথা বলে এসেছিলাম “তোমরা কোনো সন্তানের বাবা মা হওয়ার যোগ্য না, তোমাদের আমি ঘৃণা করি।

কাব্য নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে আর আমি পাশে বোবার মতো বসে আছি। কি বলবো কি বলে শান্তনা দিবো ওকে ভেবে পাচ্ছি না।
কাব্য: তিলো হিয়াকে এসব বলোনা, ও জানে আমি আব্বু আম্মুর সাথে ঝগড়া করে ওকে নিয়ে বাসা থেকে চলে এসেছিলাম।
আমি: হিয়াকে সব কিছু বলোনি কেন..?
কাব্য: আমার মতো হিয়াও নিজের আব্বু আম্মুকে ঘৃণা করুক এইটা আমি চাইনি তাই মিথ্যে বলেছি এখনো বলি। হিয়া আব্বু আম্মুকে খুঁজে এইটা আমি জানতাম তাই ওকে পড়াশোনার জন্য বাহিরে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।
আমি: ফারাবী ভাইয়া আর অয়ন..?
কাব্য: ওদের সাথে আমার ভাগ্য আমাকে দেখা করিয়ে দিয়েছিল। সেদিন রাতে ঘুমন্ত হিয়াকে নিয়ে কোথায় যাবো ভেবে পাচ্ছিলাম না তখন ফারাবীর সাথে রাস্তায় দেখা হয় সেই থেকে একসাথে আছি। দুর্ভাগ্যক্রমে ওদেরও বাবা মা ছিল না, অয়ন তখন হিয়ার মতোই ছোট ছিল। ফারাবীর ছোট একটা চায়ের দোকান ছিল সেটা থেকে আজ আমাদের এতোকিছু। অনেক কষ্ট করেছি ফারাবী আর আমি। একদিকে অয়ন আর হিয়ার দেখাশোনা অন্যদিকে নিজেদের পড়াশোনা সাথে এই ছোট্র ব্যবসা। ফারাবী এখন যে ব্যবসা করছে এইটা সেই ছোট্র ব্যবসা থেকেই বড় করেছি। ফারাবী সবসময় আমাকে একটা কথা বলতো “সৎ পথে উপার্জন করলে আল্লাহ্‌ও সাহায্য করেন” সত্যি আল্লাহ্‌ আমাদের সাহায্য করেছেন নাহলে তো আমরা ভেসে যেতাম আজ এতোকিছু হতো না।
আমি: স্যালুট বস তোমাদের দুজনকে, তোমরা তো পেরেছ আমি হলে তো…
কাব্য: কোন কিছুতে ভয় পেতে নেই শুধু নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হয়। আমি ব্যবসা ছেড়ে ডক্টর কেন হয়েছি জানো..? জীবনে যদি কখনো আম্মুর সাথে দেখা হয় তাহলে যেন একটা কথা বলতে পারি “আমিও একজন ডক্টর আর আমি আমার পরিবারকে সময় দেই”
আমি: আচ্ছা আব্বু আম্মু এখন কোথায় আছেন জানো..?
কাব্য: না সেদিনের পর রাগে আর বাসায় যাইনি, এক বছর পর গিয়েছিলাম কিন্তু বাসায় কেউ ছিল না। আব্বু আম্মুর কি ডিভোর্স হয়েছে বা কোথায় আছেন কিচ্ছু জানিনা। (কাব্য’র এই কথাটা বলতে ওর গলাটা ধরে আসলো তারমানে ও মিথ্যে বলছে। তাহলে কি ও আব্বু আম্মু কোথায় আছেন সেটা জানে)
আমি: সত্যি জানোনা (কাব্য কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো)
কাব্য: বাদ দাওনা ঘুমিয়ে পড়ো ভোর হয়ে আসছে।
আমি শুয়ে পড়তেই কাব্য এসে আমার বুকে মাথা রাখলো। কাব্য কাঁদছে বুঝতে পারছি কিন্তু বাধা দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না, কাঁদুক কাঁদলে হয়তো কষ্টটা কিছু হলেও কমবে।

ঘর গুছাচ্ছিলাম হঠাৎ কাব্য কোথা থেকে তড়িঘড়ি করে আসলো। ফোনটা বিছানায় রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। ফোন দেখে মনে হলো তিশাকে একটা ফোন দেই। ফোন হাতে নিতেই কাব্য চেঁচিয়ে উঠলো।
কাব্য: ফোন দিয়ে কি করবে..?
আমি: তিশাকে ফোন দিবো (আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো)
কাব্য: তোমার ফোন থেকে দাও।
আমি: আশ্চর্য তোমার ফোন থেকে দিলে সমস্যা কোথায় আর তুমি ফোনটা এভাবে কেড়ে নিলে কেন..? (আমার কথার উত্তর না দিয়ে ফোনটা টেবিলের উপর রেখে দিলো। বিছানায় বসে বসে ওর কাজ দেখছি তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছে)
আমি: এই দুপুর বেলায় কোথায় যাওয়া হচ্ছে..?
কাব্য: হসপিটালে।
আমি: কিন্তু তুমি তো এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েছ।
কাব্য: ইমারজেন্সি পরে গেছে তাই যেতে হচ্ছে।
আমি: ডাক্তারবাবু… (আমার কথা না শুনেই তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলো)

কাব্য এমন করছে কেন ভেবে পাচ্ছি না, কখনো তো আমার থেকে ফোন কেড়ে নেয়নি কিন্তু আজ ওর কি হলো। জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, তাকিয়ে দেখি কাব্য’র ফোন। খুব হাসি পাচ্ছে যে ফোন আমার থেকে কেড়ে নিলো সে ফোনই ভুলে ফেলে গেছে। ফোন হাতে নিতেই চমকে উঠলাম শুভ্রা ফোন দিয়েছে। রিসিভ করতেই শুভ্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
শুভ্রা: কাব্য তুমি কি দেখা করতে আসবে না (তারমানে কাব্য হসপিটালে যায়নি শুভ্রার সাথে দেখা করতে গেছে। কাব্য আমাকে এতো বড় মিথ্যে কথা বলতে পারলো)
শুভ্রা: চুপ হয়ে আছ কেন, দেখো তুমি যদি আমার কথা না শুনো তাহলে আমি কিন্তু তোমার বউ কে সব সত্যি বলে দিবো (কোন সত্যির কথা বলছে শুভ্রা)
শুভ্রা: কাব্য কথা বলো নাহলে আমি তিলোত্তমাকে সব বলে দিবো।
আমি: কাব্য নয় আমি ফোন রিসিভ করেছি।
শুভ্রা: কাব্য’র ফোন তুমি রিসিভ করেছ কেন..?
আমি: বউ তার স্বামীর ফোন রিসিভ করেছে কেন সে কৈফিয়ত কি একটা বাইরের মেয়েকে দিতে হবে..?
শুভ্রা: কাব্য কোথায় ওকে ফোনটা দাও।
আমি: কাব্য আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে, গভীর ঘুমে আছে তো ডাকা যাবে না।
শুভ্রা: ছাড়াচ্ছি ওর গভীর ঘুম, তুমি একটা সত্যি কথা জানলে ওকে বুকে কেন পায়ের নিচেও জায়গা দিবে না (আমি তো চাইছিলাম তুমি রেগে গিয়ে সত্যিটা বলো তাই তো মিথ্যে কথা বললাম)
শুভ্রা: কি হলো তুমি সত্যিটা জানতে চাও না।
আমি: হুম বলো।
শুভ্রা: তুমি কি ভেবেছ কাব্য তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে..? তোমার মামি দুজন লোকের কাছে তোমাকে বিক্রি করে দিয়েছিল তারপর থেকে তুমি হাওয়া, তোমার মামি তোমাকে খুঁজেনি কেন..? এর আগে কখনো তোমাকে বিক্রি করার কথা ভেবেছে তোমার মামি..? আসলে সেই দুজন লোক কাব্য’র লোক ছিল। তোমাকে কাব্য টাকা দিয়ে কিনে এনেছে (মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে কি বলছে ও এসব)
শুভ্রা: বিশ্বাস নাহলে কাব্য’কে জিজ্ঞেস করে দেখো। কাব্য যদি সত্যি তোমাকে ভালোবাসতো তাহলে টাকা দিয়ে কিনে আনলো কেন আসলে কাব্য তোমাকে সেই মেয়েদের মতো দেখে যাদের টাকা দিয়ে কিনে এনে…
আমি: চুপ করো শুভ্রা চুপ করো।

ফোনটা আছাড় দিয়ে ভেঙে ফ্লোরে বসে পড়লাম। কখনো এমন একটা সত্যের মুখোমুখি হতে হবে ভাবিনি। কাব্য বলেছিল মামিকে রাজি করাবে কিন্তু ও রাজি করানোর চেষ্টা না করে উল্টো আমাকে টাকা দিয়ে কিনে আনলো। দরজা খুলার শব্দ শুনে সামনে তাকালাম, কাব্য ভাঙা ফোনটার দিকে তাকিয়েই ভয়ে দাঁড়িয়ে গেছে ওখানে।
কাব্য: তিলো ফ্লোরে বসে আছ কে…
আমি: তোমার ওই নোংরা মুখে আমার নাম শুনতে চাই না।
কাব্য: কেঁদো না প্লিজ আমার কথা শুনো।
আমি: তোমার থেকে তো আমার একটা কথাই শুধু শোনার আছে বলো কতো টাকা দিয়ে কিনে এনেছ আমাকে। আমি জানতে চাই তোমার কাছে আমার মূল্য কত টাকা।
কাব্য: কান্না থামাও প্লিজ।
আমি: সেদিন রাতে আমার জ্ঞান ফেরার পর এমন ভাব করেছিলে যে তুমি কিছুই জানোনা। আমি মামির চরিত্র ঢাকার জন্য তোমাকে এসব বলিনি আর তুমিই কিনা এমন…
কাব্য: আমার কথা তো শুনবে।
আমি: কি শুনবো হ্যাঁ, আমি তো তোমাকে ভালোবেসেছিলাম তাহলে কেন আমাকে কিনে এনেছ..? জানো শুভ্রা কি বলেছে, তুমি নাকি আমাকে ওইসব মেয়েদের মতো ভাবো তাই কিনে এনে… ছিঃ এসব ভাবতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।
কাব্য: সত্যিটা কি সেটা তো শুনবে।
আমি: সব সত্যি তো শুভ্রা আমাকে বলেই দিয়েছে, আর আমি সত্যিটা জেনে যাবো এই ভয়েই তো তুমি ফোন কেড়ে নিয়েছিলে।
কাব্য: তিলো…
আমি: একদম আমার কাছে আসবে না তোমার ওই নোংরা হাতে আমাকে টাচ করো আমি চাইনা।
কাব্য: প্লিজ আমার কথা শুনো।
আমি: কিচ্ছু শুনতে চাইনা বেড়িয়ে যাও তুমি এই রুম থেকে।
কাব্য: তিলো…
আমি: বেড়িয়ে যাও।
কাব্য বেড়িয়ে যেতেই দরজা লাগিয়ে দিলাম। হাটতে পারছি না মাথা খুব ঘুরছে দরজার পাশেই বসে পড়লাম। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে, আমি তো কাব্য’কে ভালোবেসেছিলাম আর ও আমার সাথে এমনটা করতে পারলো…

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১১

0

রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১১

লেখিকা: সুলতানা তমা

বারান্দায় দাঁড়িয়ে সকালের মৃদু বাতাস উপভোগ করছি আর ভাবছি কাব্য’র কষ্টগুলো কিভাবে দূর করা যায়। কিন্তু ভেবে কিছুই পাচ্ছি না, কেউ আমাকে হেল্প না করলে আমি তো কিছুই জানতে পারবো না।
কাব্য: তিলো এই নাও হিয়া কথা বলবে (কাব্য আমার দিকে ফোন এগিয়ে দিলো, আচ্ছা হিয়াকে যদি জিজ্ঞেস করি ও কি আমাকে কিছু বলবে..?)
আমি: হ্যালো।
হিয়া: সরি সরি ভাবি প্লিজ রাগ করোনা, তুমি বাসায় এসেছ তিন-চার দিন হয়ে গেলো তোমাদের বিয়ে পর্যন্ত হয়ে গেলো কিন্তু আমি একটা ফোন পর্যন্ত করতে পারিনি।
আমি: তো ফোন করতে পারনি কেন..?
হিয়া: একটু জামেলায় ছিলাম ভাইয়াকে তো বলেছিলাম।
আমি: ওহ।
হিয়া: ভাবি তোমার কি মন খারাপ..?
আমি: নাতো।
হিয়া: বলো আমাকে কি হয়েছে।
আমি: বললে আমার মন ভালো করে দিতে পারবে।
হিয়া: চেষ্টা তো করে দেখতে পারি তাই না..?
আমি: তুমি শুধু আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিলেই তো আমার মন ভালো হয়ে যায়।
হিয়া: তাই নাকি, তাহলে বলো কি প্রশ্ন তোমার।
আমি: হিয়া প্লিজ তুমি রেগে যেও না আমাকে শুধু এইটুকু বলো তোমরা দুজন আব্বু আম্মুর উপর রেগে আছ কেন আর উনারা এখন কোথায়..?
হিয়া: প্রশ্নটা তোমার স্বামীকে গিয়ে করো।
আমি: হ্যালো হিয়া। (হিয়া ফোনটা কেটে দিলো। কিন্তু ও কাব্য’র উপর রেগে গেলো কেন)
কাব্য: তিলো কথা শেষ হলে রুমে এসো।
আমি: আসছি।

রুমে এসে দেখি কাব্য রেডি হচ্ছে, কোথায় যাবে ও..?
আমি: কোথাও যাচ্ছেন..?
কাব্য: যাচ্ছি কিন্তু তোমাকে বলবো না।
আমি: রেগে আছেন কেন..?
কাব্য: তিলো আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে এখনো আপনি আপনি করে ডাকো, ভালো লাগে নাকি শুনতে..?
আমি: ওহ।
কাব্য: ওহ মানে, তুমি আবারো আপনি করেই ডাকবে..?
আমি: না মানে…
কাব্য: তুমি করে বলতে পারলে কথা বলো নাহলে বলোনা।
আমি: আরে কোথায় যাচ্ছেন বলে যান।
দ্যাত চলে গেলো। তাড়াতাড়ি ওর পিছু পিছু নিচে আসলাম।

ড্রয়িংরুমে তো দেখছি সবাই রেডি হয়ে বসে আছে।
আমি: সবাই কি কোথাও যাচ্ছ..?
ভাবি: সবাই না তিশা চলে যাচ্ছে সাথে আদনান।
আমি: তিশা তুই চলে যাচ্ছিস..?
তিশা: হ্যাঁ গতকাল তো আব্বু আম্মুর সাথে যাইনি কিন্তু আজ যেতেই হবে।
ভাইয়া: নীরা আমি আসছি। (ভাইয়া তো মনে হচ্ছে অফিসে চলে যাচ্ছেন, কাব্যও কোথায় যেন যাচ্ছে তারমানে অয়নকে বাসা থেকে বের করতে পারলেই বাসা একদম ফাকা)
আমি: ডাক্তারবাবু বলুন না কোথায় যাচ্ছেন।
কাব্য: তুমি করে বলো তাহলে বলবো।
আমি: ঠিক আছে বলো কোথায় যাচ্ছ..?
কাব্য: এইতো লক্ষী বউ, তোমার জন্য ফোন কিনতে যাচ্ছি (এটাই তো সুযোগ, এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে)
আমি: একা যাচ্ছ অয়নকে সাথে নিয়ে যাও।
কাব্য: কেন অয়নকে লাগবে কেন..?
অয়ন: আমি কোথাও যাচ্ছি না।
আমি: আমার জন্য একটা মোবাইল কিনতে যাচ্ছ সুন্দর না হলে হবে আর অয়ন ভাবির জন্য একটা মোবাইল পছন্দ করে দিবে না..?
অয়ন: ভাবি তোমার মতলবটা কি বলতো (এইরে ধরা পড়ে গেলাম মনে হয়)
কাব্য: ওই আমার বউ এর আবার মতলব কি থাকবে, চল বলছি। (কাব্য অয়নকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো, তিশা আর আদনানও বেড়িয়ে পড়লো। বাসায় শুধু আমি আর ভাবি এটাই সুযোগ)

ড্রয়িংরুমে পায়চারী করছি আর ভাবছি স্টোররুমের তালার চাবি তো লাগবে কিন্তু ভাবিকে বললে কি দিবে..? ভাবি এখন রুমে আছে ডাকবো কিনা ভাবছি তখনি বাসায় কে যেন ঢুকলো। তাকিয়ে দেখি একটি মহিলা।
আমি: আপনি কে..?
— আমি কাজের বুয়া গো ছুটিত আছিলাম।
আমি: ওহ।
বুয়া: আমারে ফোনে ওরা কইছে মেঝো সাহেব বিয়া করছে আপনিই তাহলে নতুন বউ।
আমি: হ্যাঁ আমি আপনার ছোট তাই তুমি করে বলবেন চাইলে তুইও বলতে পারেন।
বুয়া: যাক মেঝো সাহেব নিজের মতোই এক্কান ভালা বউ পাইছে। তোমার কিছু লাগলে আমারে বইলো।
আমি: আপনি এই বাসার সবকিছু জানেন..?
বুয়া: জানুম না কেন এইহানে তো আমি পাঁচবছর ধইরা কাম করি।
আমি: ঠিক আছে তাহলে আমাকে বলুন স্টোররুমের চাবিটা কোথায় আছে..?
বুয়া: বলতে পারি তয় শর্ত আছে।
আমি: কি..?
বুয়া: মেঝো সাহেবরে বলতে পারবা না।
আমি: আমি কাউকে বলবো না আপনিও কাউকে বলবেন না।
বুয়া: আইচ্ছা। ছোট সাহেবের রুমে টেবিলের ড্রয়ারে আছে। উনার রুমে তো কেউ যায় না তাই ওইহানে রাখা আছে। (তারমানে অয়নকে বের করাতে লাভই হলো)

চাবিটা এনে তালা খুলে স্টোররুমে ঢুকলাম। জানিনা কিসের জন্য এই রুমে এসেছি, এখানে আদৌ কিছু পাবো কিনা কে জানে। সারারুমে শুধু ভাঙাচোরা জিনিস আর ধুলো তো ফ্রি আছেই। হঠাৎ রুমের এক কোণে চোখ পড়লো, একটা ট্রাংক রাখা আছে ওখানে। আমার কাছে যে চাবিগুলো আছে ওগুলো এই ট্রাংক এর হবে।
ট্রাংক খুলে দেখলাম একটা প্যাকেট এর মধ্যে কি যেন খুব যত্ন করে রাখা। এইটা তো বিয়ের বেনারসি কিন্তু কার বেনারসি এইটা..? দুটু কানের দোল, আর কিছু ছবি ছাড়া আর কিছু নেই। এই ছবি গুলোতেও দাগ পড়ে গেছে তাও অনেকটা বুঝা যাচ্ছে কিন্তু ছবিতে তো মাত্র চারজন, মানে আব্বু আম্মু ডাক্তারবাবু আর হিয়া। কিন্তু ওরা তো তিন ভাই এক বোন তাহলে ভাইয়া আর অয়ন এর ছবি কোথায়..? একটা ছবি পেলাম আব্বু আম্মুর বিয়ের। তারমানে এই বেনারসি আম্মুর। একটা জিনিস তো স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, কাব্য মুখে যতোই আব্বু আম্মুকে ঘৃণা করুক না কেন মন থেকে খুব ভালোবাসে নাহলে কি এতো যত্ন করে সবকিছু আগলে রাখতো। কিন্তু আর কিছুই তো পেলাম না। এখন বুঝবো কিভাবে ওদের মধ্যে রাগ অভিমান কেন আর উনারা এখন আছেনই বা কোথায়…?

সারাদিন হতাশার মধ্যে কাটালাম, কোনো কিছুইতেই ভেবে পাচ্ছি না কিছু। কি যে করি…
কাব্য: তিলো (দরজায় তাকিয়ে দেখি কাব্য এসেছে, সেই সকালে বেড়িয়ে এই সন্ধ্যা বেলায় ফিরার সময় হলো)
কাব্য: জানি রেগে আছ সরি, আসলে অয়ন জোর করে ঘুরতে নিয়ে গেছিলো।
আমি: হুম।
কাব্য: সরি তো।
আমি: ঘুরতে সারাদিন লাগে বাসায় যে বউ আছে সেটা ভুলে…
কাব্য: ভুলিনি, আসলে ঘুরতে যাইনি একটা মেয়ের খুঁজ নিতে গিয়েছিলাম।
আমি: কি..?
কাব্য: এতো রেগে যাচ্ছ কেন আমি যাইনি অয়ন আমাকে নিয়ে গিয়েছিল।
আমি: বাহ্ ছোট ভাই প্রেম করার জন্য মেয়ের খুঁজ নিতে যায় আর বড় ভাই তাতে হেল্প করে।
কাব্য: আমার ভাই যদি মেয়েটাকে নিয়ে সুখে থাকতে পারে তাহলে হেল্প করবো না কেন..? অয়ন আর হিয়ার জন্যই তো এতোকিছু ওরা ভালো না থাকলে ফারাবী আর আমিও ভালো থাকতে পারবো না।
আমি: খুব ভালোবাসেন ওদের তাই না..?
কাব্য: হুম ওরাই তো আমার সব আর এখন তো আর একজন এসেছে।
আমি: কে..?
কাব্য: আমার তিলো পাগলী।
আমি: কি করছেন ছাড়ুন।
কাব্য: চুপ। (কাব্য আমাকে জরিয়ে ধরে আমার গলায় বুকে ওর নাক ঘসছে)
আমি: ডাক্তারবাবু দরজা কিন্তু খুলা যে কেউ চলে আসতে পারে।
কাব্য: আসুক তাতে আমার কি, আমি তো আমার বউ কে আদর করছি।
আমি: সত্যি আপনার কিছুনা।
কাব্য: আবার আপনি আপনি শুরু করেছ..?
আমি: আচ্ছা আর আপনি বলবো না এখন ছাড়ো।
কাব্য: না।
আমি: ভাবি তুমি (এমনভাবে বললাম যেন সত্যি ভাবি এসেছেন, কাব্য আমাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে চলে গেলো)
আমি: কি কেউ আসলে তো আপনার কিছু না তাহলে এখন ছাড়লেন কেন..?
কাব্য: দূরে গিয়ে কথা বলছ কেন, ফাজি মেয়ে আবার কাছে পাই তখন বুঝাবো। (দৌড়ে নিচে চলে আসলাম)

ভাবি আর বুয়া রান্না করছে আমারো ইচ্ছে হচ্ছে কাজ করি কিন্তু ওরা তো কোনো কাজই করতে দেয় না।
আমি: ভাবি আমি তোমাকে হেল্প করি।
ভাবি: হেল্প করার জন্য বুয়া আছে।
আমি: বুয়া কেন করবে আমি আছি তো।
বুয়া: কি যে কও আমি থাকতে তুমি নতুন বউ অইয়া কাম করবা কেন। (রাগে চলে আসতে চাইলাম দেখি ড্রয়িংরুমে কাব্য বসা। এই ফাজিল এর কাছে তো যাওয়া যাবে না তাই কিচেনেই দাঁড়িয়ে রইলাম)
কাব্য: বুয়া দেখে যাও। (বুয়া যেতেই কি যেন বলে উপরে পাঠিয়ে দিলো, আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি দেখেই চোখ টিপ দিলো, কি ফাজিল)
কাব্য: ভাবি ফারাবী তোমাকে সেই কখন থেকে ডাকছে তুমি এখনো যাওনি।
ভাবি: কি বলো..?
কাব্য: হ্যাঁ তাড়াতাড়ি যাও।
ভাবি: তিলোত্তমা এখানে একটু থাকিস তো।
আমি: আচ্ছা। (ভাবি রুমে চলে যেতেই কাব্য আমার কাছে এসে একটা হাসি দিলো)
কাব্য: কি মনে হয় চালাকি শুধু তুমি একা করতে পারো আমি পারিনা..?
আমি: কি করেছ..?
কাব্য: রুমে কিছু কাগজ ছিড়ে ফেলে এসেছি আর বুয়াকে সেটা পরিষ্কার করতে পাঠিয়েছি আর ভাবিকে মিথ্যে বলে রুমে পাঠালাম। (ও তো দেখছি আমার চেয়ে বড় চালাক)
কাব্য: এখন কি হবে তিলো পাগলী..?
আমি: ডাক্তারবাবু এইটা কিন্তু রান্নাঘর যে কেউ চলে আসবে।
কাব্য: বেডরুমে আদর করছিলাম ভালো লাগেনি চালাকি করে চলে এসেছ এখন…(কাব্য আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে ঘাড়ে চুমু দিচ্ছে আর পেটে দুহাত দিয়ে চাপ দিচ্ছে)
ভাবি: এইযে এইটা কিচেন।
আমি: ছাড়ো (কাব্য’কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম ও হাসতে হাসতে চলে গেলো। ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, দ্যাত কি যে করে পাগলটা)
ভাবি: ওর এসবে রাগ করিস না বড্ড পাগল ছেলেটা।
আমি: আসলেই একটা পাগল।

রাতের খাবার খেয়ে সবাই বসে গল্প করছি কাব্য অনেক আগেই রুমে চলে গেছে। জানিনা কি হলো ওর মন খারাপ করে আছে। হঠাৎ গীটার এর টুংটাং শব্দ শুনতে পেলাম, মনে তো হচ্ছে ছাদ থেকে শব্দটা ভেসে আসছে।
আমি: ভাবি গীটার…
ভাইয়া: কাব্য বাজাচ্ছে।
আমি: ও গীটারও…
ভাবি: হুম কাব্য গীটার বাজাতে পারে, কাব্য অনেক ভালো গানও নাকি গায় কিন্তু কখনো ওর কন্ঠে গান শুনিনি।
ভাইয়া: আগে মাঝে মাঝে গান গাইতো এখন এসব ছেড়ে দিয়েছে শুধু…
আমি: কি ভাইয়া থেমে গেলে কেন..?
অয়ন: ভাইয়ার আম্মু আব্বুর কথা খুব বেশি মনে পড়লে গীটার নিয়ে বসে যায় আর গীটারে টুংটাং শব্দ তুলে।
ভাবি: ওর গীটারে সবসময় বিষাদের সুরই বাজে কখনো…
আমি: চিন্তা করোনা একদিন বিষাদের সুর কেটে সুখের সুর বাজবে ওর গীটারে।
ভাবি: কোথায় যাচ্ছিস..?
ভাবির কথার উত্তর না দিয়ে ছাদে চলে আসলাম।

কাব্য’র পিছনে এসে দাঁড়াতেই গীটার বাজানো বন্ধ করে দিলো। আমি ওর কাধে হাত রাখতেই গীটার রেখে উঠে আমার মুখোমুখি দাঁড়ালো।
কাব্য: নিষেধ করেছিলাম তো কেন করলে এইটা (আমি আবার কি করলাম ও এতো রেগে আছে কেন)
কাব্য: কথা বলছ না কেন বল আমি নিষেধ করার পরও তুমি স্টোররুমে গিয়েছিলে কেন…?
আমি: আআমমমি…
কাব্য: নিষেধ করার পরও তোমার সাহস কি করে হয় ওই রুমে যাওয়ার আর আমার মায়ের জিনিসপত্রে হাত দেওয়ার (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, এই প্রথম ওর মুখে মা ডাকটা শুনলাম। হয়তো রাগের বসে বলে ফেলেছে কিন্তু এটা তো সত্যি ও মুখে যতোই আম্মুকে ঘৃণা করুক মন থেকে ঠিকি ভালোবাসে)
কাব্য: তোমাকে আমি ভালোবাসি তাই ক্ষমা করে দিলাম আর কখনো ওই রুমে যাবে না বুঝেছ।
কাব্য কাঁদতে কাঁদতে নিচে চলে গেলো।

আমি এখনো ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। কখনো কাব্য’কে এতোটা রাগ করতে দেখিনি, এতোটা কাঁদতেও দেখিনি। আজ তো ও কান্নার জন্য আমাকে ধমক দিতে পারছিল না।
ভাইয়া: তিলোত্তমা (ডাক শুনে পিছনে তাকালাম, ভাইয়া এসেছেন)
ভাইয়া: ওর কথায় কিছু মনে করো না আমি সব শুনেছি, নিষেধ যখন করেছিল কেন স্টোররুমে গিয়েছিলে..?
আমি: স্টোররুমে তো তেমন কিছুই নেই শুধু একটা বেনারসি আর কিছু ছবি পেয়েছি।
ভাইয়া: এগুলোই কাব্য’র সব। বেনারসিটা দেখেই কাব্য ওর মায়ের অভাব পূরণ করে।
আমি: ওর মায়ের মানে..? তোমার মা না..? নাকি সবাই এক রকমভাবে রেগে আছ..?
ভাইয়া: কাব্য আর আমরা আপন ভাই না এমনকি আমাদের মধ্যে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই।
আমি: মানে..?
ভাইয়া: তোমাকে আমি এসব বলছি শুনলে কাব্য রেগে যাবে। এসব শুনে কি করবে বাদ দাও।
আমি: না বাদ দিবো না আমি শুনতে চাই, আমি ওর কষ্ট দূর করতে চাই।
ভাইয়া: ওর কষ্ট দূর করতে হলে আগে ওর আব্বু আম্মুকে খুঁজে আনতে হবে, পারবে সেটা..? উনারা কোথায় আছেন বা বেঁচে আছেন কিনা আমরা কেউ জানিনা। আর বেচে থাকলে খুঁজে আনলেও কাব্য উনাদের কখনো ক্ষমা করবে না। তখন এই অশান্তির আগুনটা আরো বেড়ে যাবে। কাব্য তোমাকে নিয়ে অনেক ভালো আছে আর আমি চাই ও সবসময় এমন ভালো থাকুক তাই প্লিজ তুমি এসব নিয়ে আর কথা বলো না। কাব্য’কে ওর মতো করে থাকতে দাও।
ভাইয়া চলে গেলেন, আমি বোবার মতো দাঁড়িয়ে আছি। কোথায় খুঁজবো আমি আব্বু আম্মুকে আর কি করে খুঁজবো উনাদের তো আমি চিনিই না। যে আমাকে এতো ভালোবাসে যে আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে সেই ডাক্তারবাবুর কষ্ট কি তাহলে আমি দূর করতে পারবো না…?

চলবে?