Friday, August 15, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2447



রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ১০

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১০

লেখিকা: সুলতানা তমা

কাব্য: তিলো উঠো (কাব্য আমার চুলে হাত বুলাচ্ছে আর ডাকছে, ঘুম ঘুম চোখে ওর দিকে তাকালাম। কাব্য’র বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছি আর ও আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে দেখে ওকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম)
কাব্য: উঠো বলছি।
আমি: উঁহু পরে।
কাব্য: কাল তো দেখলাম পাঁচ ওয়াক্তই নামাজ পড়েছ আজ পড়বে না..?
আমি: কয়টা বাজে..?
কাব্য: একটু আগেই ফজরের আজান পড়েছে কয়টা বাজে দেখতে হবে না যাও নামাজ পড়ে এসো। (কাব্য’র বুকে তুতুনি রেখে ওর দিকে তাকালাম)
আমি: আপনি নামাজ পড়বেন না..?
কাব্য: আমার দ্বারা নামাজ পড়া হবে না।
আমি: আমি বললেও পড়বেন না..?
কাব্য: না মানে আসলে…
আমি: না মানে আসলে কিছুই বলতে হবে না উঠুন নাহলে কিন্তু… (কাব্য আমাকে জরিয়ে ধরে চোখের দিকে তাকালো)
কাব্য: রাতে আমার বাসর নষ্ট করে দিয়ে এখন আবার শাসানো হচ্ছে।
আমি: বাসর নষ্ট কিভাবে করলাম।
কাব্য: এখন তো কিছুই মনে পড়বে না ঘুম পাগলী কোথাকার (ঘুম পাগলী বলাতে মনে পড়লো রাতে কাব্য’র বুকে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তারপর তো আর কিছু মনে নেই)
আমি: রাতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তারপর…
কাব্য: তারপর আর কি আপনাকে কোলে করে বাসায় নিয়ে আসছি।
আমি: এতো দূর থেকে…
কাব্য: কোলে করে নিয়ে আসছি এজন্য তো কষ্ট হয়নি কিন্তু তুমি যে আমার বাসর রাত মাটি করে দিলে…
আমি: এজন্য কষ্ট হচ্ছে বুঝি ইশশ।
কাব্য: হাসো হাসো যতো খুশি হাসো, আজ রাতে কিন্তু অসম্পূর্ণ বাসর সম্পূর্ণ করবো (কাব্য আমার চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলো)
আমি: দ্যাত ফাজিল কোথাকার, উঠুন একসাথে নামাজ পড়বো।
কাব্য: উঁহু।
আমি: নামাজ না পড়লে কিন্তু শাস্তি দিবো, আর কি কি শাস্তি দিবো তা কি বলবো..?
কাব্য: বলতে হবেনা উঠে পড়েছি।

কাব্য আর আমি একসাথে নামাজ পড়ে নিলাম। রুম থেকে বেরুতে যাবো তখনি কাব্য আমার হাত ধরে টান দিয়ে ওর কাছে নিয়ে গেলো। কাব্য আমার দুগালে ধরে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে, ওর দুচোখে পানি ছলছল করছে।
কাব্য: জানো তিলো আজ তুমি যে ভাবে আমাকে শাসিয়ে নামাজ পড়ালে ঠিক এইভাবে দশ বছর আগে হুমায়রা চৌধুরী আমাকে শাসিয়ে নামাজ পড়াতো কিন্তু… (কাব্য আর কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। আমি অবাক হয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। মানুষটার ভিতরে এতো কষ্ট কিন্তু সবসময় কষ্টগুলো আড়াল করে রেখে হাসিখুশি থাকে)
ভাবি: তিলোত্তমা কি হয়েছেরে (ভাবি এসেছেন দেখে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম, কাব্য’কে কাঁদতে দেখে নিজেও যে কখন কেঁদে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি)
ভাবি: কি হলো।
আমি: কিছুনাতো।
ভাবি: কাব্য’কে দেখলাম কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে গেলো।
আমি: একসাথে নামাজ পড়েছিলাম হুট করে ওর আম্মুর কথা বললো তারপর কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে গেলো।
ভাবি: ওহ।
আমি: ভাবি তুমি আমাকে বলো প্লিজ কি এমন রহস্য আছে যার জন্য ডাক্তারবাবু নিজের বাবা মাকে নাম ধরে ডাকে..?
ভাবি: বেশি কিছু জানিনা এইটুকু বলতে পারবো, কাব্য ওর বাবা মায়ের উপর রেগে আছে কেন রেগে আছে তাও জানিনা। ওর তখন পনেরো বছর আর হিয়া সাত বছরের, বাবা মায়ের উপর রাগ করে বাসা থেকে বেড়িয়ে এসেছিল। আর কিছু জানিনারে, ওদের তিনভাই কে এসব নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলেই রেগে যায়।
আমি: হুম।
ভাবি: চল।

ভাবি কিচেনে নাশতা বানাচ্ছেন দেখে আমিও গেলাম।
আমি: ভাবি আমি হেল্প করবো..?
ভাবি: একটু পর বৌভাত আর এখন আগুনের কাছে আসবি পাগল হয়েছিস।
আমি: তাতে কি হয়েছে..?
ভাবি: আমার বোনের চেহারা…
আমি: হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না আমি তো এমনিতেই কালো।
ভাবি: কি বললি..? (ভাবির রাগি চোখ দেখে সাথে সাথে ভাবিকে জরিয়ে ধরলাম)
আমি: তোমরা সবাই খুব ভালো আমাকে এতো তাড়াতাড়ি আপন করে নিলে।
ভাবি: একটা কথা বলবো..?
আমি: হ্যাঁ বলো জিজ্ঞেস করার কি আছে।
ভাবি: এখন যে মানুষ গুলোকে ভালো ভাবছিস সে মানুষ গুলোর সম্পর্কে কখনো খারাপ কিছু শুনলে ভুল বুঝিস না।
আমি: খারাপ কিছু ভুল বুঝা কি বলছ এসব..?
ভাবি: কিছুনা।
তিশা: তমা চলতো আমার সাথে (তিশা এসেই আমার হাত ধরে টানতে টানতে ওর রুমে নিয়ে আসলো)
তিশা: কিরে বাসর রাত কেমন কাটলো (তিশা হাসছে কিন্তু ওর দিকে আমার কোনো নজর নেই, আমি শুধু ভাবছি ভাবি কিসের খারাপ কথা ভুল বুঝার কথা বললো)
তিশা: কিরে কি ভাবছিস..?
আমি: কিছু না।
তিশা: কি হয়েছে তোর..?
আমি: কিছু হয়নি।
আন্টি: তিশা দেখে যা।
তিশা: আসছি।
তিশা চলে যেতেই স্টোররুমের দিকে আস্তে আস্তে এগুলাম। এখন তো কাব্য বাসায় নেই দেখি কিছু পাই কিনা।

স্টোররুমের দরজায় তো তালা দেওয়া এখন কি করি, আমার কাছে যে চাবিগুলো আছে এগুলো তো এই তালার না আমি…
অয়ন: ছোট ভাবি এখানে কি করছ (হয়েছে একজন না একজন দেখে ফেলেই)
আমি: কিছু নাতো এমনি বাসাটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম।
অয়ন: আর দেখতে হবে না চলো নাশতা করবে।
আমি: হুম (আমার আর স্টোররুম দেখার সখ পূরণ হবে না)

ভাবি: তিশা একটু পর মেহমানরা আসতে শুরু করবে নাশতা করে তিলোত্তমাকে সাজিয়ে ফেলো।
তিশা: ওকে ভাবি। (সেই কখন থেকে লক্ষ করছি নাশতা খেতে খেতে আদনান ভাইয়া বার বার তিশার দিকে তাকাচ্ছে, তিশাও আড়চোখে তাকাচ্ছে তাহলে কি…)
ভাইয়া: তিলোত্তমা কাব্য কোথায় নাশতা করতে তো আসেনি..?
ভাবি: কাব্য একটু বাইরে গেছে চলে আসবে (তাই তো ডাক্তারবাবু তো বাসায় নেই, এতো বেলা হয়ে গেলো এখনো কিছু খায়নি। এই মানুষটার কষ্ট যে আমি কিভাবে দূর করবো)

আমি: এই সরি সরি সরি।
কাব্য: সরি বলার কি আছে..?
আমি: আপনি শার্ট পড়ে নিন আমি পরে আসছি (আনমনে হয়ে রুমে ঢুকে পড়েছিলাম, কাব্য কখন বাসায় আসলো দেখিই’নি, এসেছে তো আবার খালি গায়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে)
কাব্য: তিলো যেও না শুনো (কাব্য আমার হাত ধরে টেনে ওর একদম কাছে নিয়ে আসলো)
কাব্য: আজব মেয়ে তো তুমি, তিলো তুমি আমার বউ তোমার সামনে…
আমি: শার্ট পড়তে বলেছি পড়ে নিন।
কাব্য: পড়বো না দেখি তুমি কতোক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকতে পারো।
আমি: ডাক্তারবাবু…
কাব্য: আজ তো তোমার লজ্জা ভাঙাবো (কাব্য আমাকে ওর বুকের সাথে জরিয়ে ধরলো। ওর বুকের লোমগুলো আমার চোখেমুখে লাগছে)
কাব্য: কি হলো তুমি আমাকে জরিয়ে ধরবে না (একটা হাত কাব্য’র কোমরে রেখে আরেকটা হাত ওর বুকে রাখলাম। ওর হার্টবিট বাড়ছে আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম, কাব্য’র ফর্সা বুকে লোমগুলো খুব সুন্দর লাগছে)
তিশা: ইহহ সরি (দ্যাত এইটা কি হলো, তিশাকে দেখেই তাড়াতাড়ি সরে দাঁড়ালাম)
কাব্য: লজ্জা পেয়ো না বউ তিশাই আসছে অন্য কেউ না, আর এইযে মেম নবদম্পতির রুমে আসলে নক করে আসতে হয়।
তিশা: নবদম্পতি যদি দরজা খুলা রেখে রোমান্স করে তাহলে কি সেটা আমার দোষ..?
কাব্য: না সেটা আমার কপালের দোষ।
তিশা: হয়েছে যাও তোমার বউকে সাজাবো।
কাব্য: পরীর মতো সাজাবে বুঝেছ।

তিশা আমাকে সাজিয়ে দিচ্ছে আর আমি চুপচাপ বসে কাব্য’র কথা ভাবছি।
তিশা: হয়েছে তো পরীর মতো সাজানো।
আমি: হুম হয়েছে।
তিশা: এবার নিচে চল।
আমি: ওকে।
তিশা: এই শাড়ির কুচিগুলো তো এলোমেলো করে ফেলেছিস (আমি শাড়ি সামলে রাখতে পারি না আর আমাকে শাড়ি পড়িয়ে পরীর মতো সাজায়)
তিশা: হাসছিস আবার বাচ্চাই রয়ে গেলি।
আমি: ওই আমি বাচ্চা না আমার বিয়ে হয়ে গেছে হু।
তিশা: হ্যাঁ আপনি বড় হয়ে গেছেন, তো আপনার ডাক্তারবাবু কেমন..?
আমি: ডাক্তারবাবু তো সবদিকে সেরা, ভালো মানুষ সাথে হ্যান্ডসাম আর ওর ফর্সা চেহারা, গোল গোল চোখ দুটু, ফর্সা মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, এলোমেলো চুল সবকিছু আমাকে পাগল করে দেয়। আর ওর ফর্সা বুকের লো…(যাহ বাবা কিসব বলে দিলাম)
তিশা: সব তো বলেই ফেলেছিস এখন আর জিহ্বায় কামর দিয়ে কি হবে পাগলী কোথাকার।
শুভ্রা: ফর্সা বুকে লোমগুলো দেখতে খুব সুন্দর তাই না..? (আরে এই বজ্জাত মেয়ে কোথা থেকে আসলো, কাব্য ওকে ইনভাইট’ই বা করতে গেলো কেন)
শুভ্রা: কি হলো বললে না যে কাব্য’র ফর্সা বুকের লোমগুলো দেখতে কেমন..?
আমি: এইটা শুধু আমারই জানার অধিকার আছে বুঝেছেন..?
শুভ্রা: অধিকার হাহাহা আমিও দেখবো এই অধিকার কতোদিন টিকে থাকে।
তিশা: এই মেয়েটা কেরে..?
শুভ্রা: তিলোত্তমা এবং কাব্য’র শুভাকাঙ্ক্ষী।
আমি: এই যান তো এখান থেকে।
শুভ্রা: যাচ্ছি তবে এইটাও জানিয়ে যাচ্ছি কাব্য’র বুকের জমিনের অধিকারটা তোমার থেকে খুব তাড়াতাড়িই কেড়ে নিবো।
আমি: তোকে আমি খুন করবো।
তিশা: তমা শান্ত হ।
আমি: কি বলে গেলো শুনলি তো।
তিশা: বলুক না কাব্য তো শুধু তোরই।
আমি: যা তো ওকে গিয়ে বল রুমে আসতে।
তিশা: যাচ্ছি আজ মনে হয় ডাক্তার সাহেবের কপালে দুঃখ আছে।

রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে কতো বড় সাহস ওই বজ্জাত মেয়েটার।
কাব্য: তিলো কি হয়েছে..?
আমি: ওই কাকে জিজ্ঞেস করে বজ্জাত মেয়েটাকে ইনভাইট করেছেন..?
কাব্য: ওরে বাবারে আস্তে কিল দাও লাগছে, আমাদের দুজনের প্রেম দেখানোর জন্যই তো ওকে ইনভাইট করেছিলাম। তোমাকে হিংসে করে তো তা…
আমি: ও যে বলে গেলো…
কাব্য: তিশা আমাকে সব বলেছে, এতো সহজ নাকি আমি তো শুধু তোমারই।
আমি: হুম।
কাব্য: বাব্বাহ্ এই প্রথম আমার বউ আমাকে নিজের ইচ্ছায় জরিয়ে ধরলো।
আমি: হুহ।
কাব্য: তিলো দেখি তোমার কপালের টিপ তো…(আমি ওর দিকে তাকাতেই আমার ঠোঁটে ওর ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো, কি চালাক মানুষ। অনেক চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারলাম না কিছুক্ষণ পর নিজেই ছাড়লো)
কাব্য: ইহহ তিলো তোমার ঠোঁটের লিপস্টিক কোথায় গেলো..?
আমি: গেছে তো আপনার পেটে এখন তিশা জিজ্ঞেস করলে কি বলবো..?
কাব্য: তিশা এসব বুঝে ও তোমার মতো পিচ্ছি না (কাব্য হাসতে হাসতে চলে গেলো, পাগল একটা। শুভ্রা কেন কেউ আমার থেকে এই পাগলটাকে আলাদা করতে পারবে না)

বৌভাতের অনুষ্ঠানের জামেলায় সারাদিন কেটে গেলো। মেহমানরা একে একে সবাই চলে যাচ্ছে। কাব্য কোথায় গেলো খুঁজেই পাচ্ছি না, একা একা ভালো লাগছে না তাই বাগানের দিকটায় এসে দাঁড়ালাম।
তিশা: তমা তুই এখানে আর আমি তোকে খুঁজে মরছি।
আমি: কেন..?
তিশা: চলে যেতে হবে তো আব্বু আম্মুরা বসে আছেন।
আদনান: আজ না গেলে হয় না (হঠাৎ আদনান ভাইয়া কোথা থেকে আসলো তারমানে আমি যা ভাবছি তাই)
তিশা: না মানে…
শুভ্রা: তিলোত্তমা সরি (শুভ্রাকে দেখেতো আমার চোখ কপালে উঠে গেছে, এই মেয়ে আমাকে সরি বলছে)
কাব্য: তিলোত্তমা নয় ভাবি বলো।
শুভ্রা: হুম ভাবি আগের কথার জন্য সরি (বিষয়টা কি হলো কাব্য আর শুভ্রা একসাথে কোথা থেকে আসলো আবার সরি বলছে)
কাব্য: তিলো কিছু বলছ না কেন ও তো সরি বলছে।
আমি: সরি ও মুখে বলছে কিন্তু চোখে টিকি রাগ…
শুভ্রা: একদম ঠিক ধরেছ আমি শুধু মুখেই সরি বলছি। কাব্য তুমি কি মনে করেছ, তুমি আমাকে ভয় দেখাবে আর আমি ভয় পেয়ে তোমাকে ভুলে যাবো। আমি তোমাকে ভালোবাসি কাব্য।
আমি: ওই আস্তে, কিসের ভালোবাসা হ্যাঁ..? কাব্য আমাকে এবং আমি কাব্য’কে দুজন দুজনকে ভালোবাসি আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে ভুলে গিয়েছ নাকি..?
শুভ্রা: ভুলিনি তবে…
আমি: তবে কি..? আলাদা করবে আমাদের দুজনকে..? পারবে না, আগে কি যেন বলছিলে কাব্য’র বুকের জমিনের অধিকার কেড়ে নিবে, ভালো করে দেখে যাও কাব্য’র এই বুকটা না শুধু আমারই আর কাব্যও শুধু আমার (সবার সামনেই আমি কাব্য’কে জরিয়ে ধরলাম, কাব্য আমাকে জরিয়ে ধরে কপালে একটা চুমু দিলো। শুভ্রা এসব দেখে রাগে বেলুনের মতো ফুলছে)
কাব্য: শুভ্রা দেখেছ আমাদের দুজনের ভালোবাসা… (শুভ্রার হাতে জোসের গ্লাস ছিল রাগে সব জোস কাব্য আর আমার উপরে ছুড়ে মারলো তারপর গ্লাসটা আছাড় দিয়ে ভেঙে চলে গেলো)
আদনান: উচিত শিক্ষা পেয়েছে ভাবি।
তিশা: তমা শাড়িতে দাগ লেগে যাচ্ছে যা ফ্রেশ হয়ে নে, আর কাব্য তুমিও যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।
কাব্য: হ্যাঁ যাচ্ছি তোমরা প্রেম করো।
আদনান: কি বললি..? (কাব্য আমার হাত ধরে দৌড়ে চলে আসলো তারমানে আমি যা লক্ষ করছি তা ডাক্তারবাবুও লক্ষ করছে)

কাব্য রুমে এসে দফ করে বিছানায় বসে পড়লো।
কাব্য: আমার মনে হয় আদনান আর তিশা একে অপরকে পছন্দ করে কিন্তু কেউ তা বলতে পারছে না।
আমি: আমিও লক্ষ করেছি।
কাব্য: আরে কোথায় যাচ্ছ..?
আমি: কেন ফ্রেশ হবো।
কাব্য: আমি আগে ফ্রেশ হবো।
আমি: উঁহু আমি আগে (কাব্য কিছুক্ষণ কি যেন ভাবলো তারপর উঠে এসে আমাকে কোলে তুলে নিলো)
আমি: কি করছেন..?
কাব্য: একসাথে ফ্রেশ হবো।
আমি: মানে কি (কাব্য কিছু না বলে আমাকে কোলে করে এনে শাওয়ারের নিচে দাড় করালো তারপর শাওয়ার ছেড়ে দিলো)
আমি: এইটা কি হলো ভিজে যাচ্ছি তো।
কাব্য: ভিজার জন্যই তো শাওয়ার ছেড়ে দিলাম (কাব্য আস্তে আস্তে আমার একদম কাছে চলে আসলো, দুজনেই ভিজে যাচ্ছি। কিযে করে ও)
আমি: কি হলো এভাবে তাকাচ্ছেন কেন..?
কাব্য: শুভ্রা রাগের বসে জোস ছুড়ে দিয়ে ভালোই করেছে।
আমি: মানে..?
কাব্য: আমাদের অসম্পূর্ণ বাসর সম্পূর্ণ করার সুযোগ করে দিয়েছে।
কাব্য আমার একদম কাছে চলে এসেছে দেখে চোখ বন্ধ করে ফেললাম, ও এক হাত দিয়ে আমার কোমর জরিয়ে ধরলো অন্যহাত আমার ঘাড়ের কাছে নিয়ে আমার ডান চোখের পাতায় আলতো করে চুমু খেলো। কাব্য’র স্পর্শে কেঁপে উঠে ওর বুকের শার্ট খামছে ধরলাম। কাব্য আমার গালে একটা আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করছে, ওর চোখের দিকে তাকালাম কাব্যও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। শাওয়ার থেকে পানি আমার মাথায় পড়ছে আর মাথা থেকে বেয়ে বেয়ে গালে ঠোঁটে পড়ছে, কাব্য কিছুক্ষণ আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর পাগলের মতো ঠোঁট চুষতে শুরু করলো। কাব্য’র এমন নেশা ধরানো স্পর্শে থাকতে না পেরে ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম।

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ৯

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

ভাবি: তিলোত্তমা উঠো।
আমি: উহু পরে।
ভাবি: তুমি কি নামাজ পড়ো না..? (লাফ দিয়ে উঠে বসলাম, ভাবি পাশে বসা)
আমি: হ্যাঁ পড়ি তো এই দুদিন পড়া হয়নি পড়বো কিভাবে যা…
ভাবি: কাব্য আমাকে সব বলেছে ওসব ভুলে যাও, আজ থেকে তোমাদের নতুন জীবন শুরু হবে তাই সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করো।
আমি: হুম।
ভাবি: এসো একসাথে দুবোন নামাজ পড়ি, গাদা তিনটাকে তো আর নামাজ পড়াতে পারি না আমরা নাহয় একাই পড়ি।
আমি: কেন ওরা নামাজ পড়ে না..?
ভাবি: গিয়ে দেখো তিন ভাই নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে নামাজের কথা কতো করে বলি শুনেই না।
আমি: এখন থেকে পড়বে চিন্তা করো না।
ভাবি: পড়লে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হতাম।
আমি: দুজন মিলে এমন টাইট দিবো নামাজ না পড়ে যাবে কোথায়..?
ভাবি: ঠিক আছে এখন চলো নামাজের সময় চলে যাচ্ছে।
আমি: ওকে।

ভাবি আর আমি একসাথে নামাজ পড়ে নিলাম। ভাবির মধ্যে বার বার তিশাকে খুঁজে পাচ্ছি। তিশার কথা মনে পড়তেই মন খারাপ হয়ে গেলো, গতকাল সকালে কথা হয়েছিল আর কথা হয়নি ওর সাথে।
ভাবি: আমি নাশতা রেডি করছি তুমি কাব্য’কে ডেকে নিয়ে এসো
আমি: ঠিক আছে।

কাব্য’র রুমে আসলাম, এতো সকালে উঠবে কিনা কে জানে। কিন্তু এখন থেকে তো ওকে রোজ ভোরবেলা উঠতে হবেই নামাজ পড়তে হবে তো। কাব্য ঘুমিয়ে আছে, ওর ঘুমন্ত মায়াবী মুখটা দেখে আর ডাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না, উল্টো ইচ্ছে হচ্ছে বসে বসে ওর ঘুমন্ত মুখটা দেখি। কাব্য’র চুলে হাত দিতেই ও জেগে গেলো আর আমার হাতটা চেপে ধরলো।
কাব্য: রাতে জোর করে রুম থেকে আমাকে বের করে দিয়ে এখন আবার ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে (আমার হাতটা ওর বুকের কাছে নিয়ে চেপে ধরে চোখ দুটু বন্ধ রেখেই কথা বলছে। রাতের কথা মনে পড়তেই হাসি পেলো, রাতে তো ও আমার কাছে ঘুমানোর বায়না ধরেছিল আর আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দরজা লাগিয়ে দিয়েছিলাম)
কাব্য: এখন আবার হাসা হচ্ছে, বিয়েটা হয়ে যাক সবকিছুর শাস্তি দিবো তোমাকে।
আমি: আপনি আমাকে শাস্তি দিতে পারবেন..?
কাব্য: হ্যাঁ পারবো তো কারণ রোমান্টিক শাস্তি দিতে কারোরই কষ্ট হয়না।
আমি: এবার উঠুন তো ভাবি ডাকছেন আর হ্যাঁ কাল থেকে এভাবে ঘুমালে চলবে না নামাজ পড়তে হবে।
কাব্য: নামাজ..?
আমি: এতো অবাক হওয়ার কি আছে চলুন তো।
কাব্য’কে রেখেই নিচে চলে আসলাম।

ভাবি আর অয়ন নাশতা করছে, অয়ন নাশতা করছে বললে ভুল হবে ও তো বসে বসে ঘুমুচ্ছে হিহিহি।
ভাবি: হাসছ কেন..?
আমি: ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নাশতা খাওয়া দেখে।
ভাবি: দশটার আগে তো কখনো ঘুম থেকেই উঠে না তাই এমন করছে। অয়ন তো উঠেছে ফারাবীকে টেনেও তুলতে পারলাম না।
অয়ন: সব নতুন ভাবির দোষ, বিয়ে করবে উনারা আর শাস্তি পাচ্ছি আমরা।
ভাবি: আমি তো বলেছিলাম এতো তাড়াহুড়োর দরকার নেই কিন্তু কাব্য…
কাব্য: শুনিনি তাই তো..? ভাবি তুমি তো সব জানো তাও কেন এমন করছ..? (কাব্য নিচে নেমে আসতে আসতে বললো। ভাবির মুখটা কেমন যেন মলিন হয়ে গেলো, কি জানে ভাবি..? ওরা সবাই কি আমার থেকে কিছু লুকুচ্ছে..?)
কাব্য: ভাবি আমি তিলোকে হারাতে পারবো না তাই এতো তাড়াহুড়ো করছি।
ভাবি: ঠিক আছে যা চাইছ তাই হবে, সব শপিং করা শেষ শুধু বেনারসি কেনা বাকি।
কাব্য: তিলোকে নিয়ে তুমি চলে যাও।
ভাবি: না তুমি যাও দুজন মিলে পছন্দ করে আনলেই ভালো হবে।
কাব্য: ঠিক আছে।
আমি: আমাদের সাথে তিশাকে যদি নেই তাহলে কি…
কাব্য: আমি তিশাকে ফোন করে বলে দিচ্ছি ও আসলেই যাবো। (ইশশ এই কাব্য’টা কি আমি মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই সব বুঝে যায়)

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি আর ভাবছি হুট করে কতোকিছু হয়ে গেলো। হঠাৎ করে কাব্য আসলো আমার জীবনে আর আজ আমাদের বিয়ে। একটা মেয়ের বিয়ে অথচ তার পাশে কেউ নেই না বাবা মা না অন্য কোনো আত্মীয়স্বজন। অবশ্য আমার তো কেউই নেই আর আব্বু আম্মু…
কাব্য: তিলো রেডি হয়ে নাও তিশা আসছে।
আমি: হুম।
কাব্য: এই তুমি কাঁদছ (কাব্য এসে আমার কাধে ধরে ওর দিকে ফিরালো)
কাব্য: তিলো কাঁদছ কেন..?
আমি: এমনি।
কাব্য: পাগলী এভাবে কেউ কাঁদে আর তুমি যে কাঁদছ আমার কষ্ট হয় না হুম..? (কাব্য আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে জরিয়ে ধরলো)
আমি: আব্বু আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছে।
কাব্য: ওহ এই ব্যাপার, কান্না থামাও আমার কথা শুনো। সবাই তো আর চিরদিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকে না। তুমি চাইলে আমরা বিয়ের পর তোমার আব্বু আম্মুর কবর জিয়ারত করে আসবো।
আমি: সত্যি।
কাব্য: হ্যাঁ আর কেঁদো না যাও রেডি হয়ে নাও।
কাব্য আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো। আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি, একটা মানুষ এতোটা ভালো হতে পারে আর এতোটা ভালোবাসতে পারে…?

রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে আসলাম সবাই এখানে বসে আছে। তিশাটা যে কেন এখনো আসছে না।
–এইযে তিলোত্তমা (হঠাৎ কারো ডাকে থমথম খেয়ে গেলাম, কে উনি)
ভাবি: তিলোত্তমা ও ফারাবী।
আমি: ওহ ভাইয়া…
ভাইয়া: তুমিই বলে দাও তোমাকে বোন ডাকবো নাকি ভাবি..?
আমি: ভাবি কিভা…
ভাইয়া: কাব্য কিন্তু শুধু আমার ভাই না বন্ধু তাই বললাম হাহাহা।
আমি: ভাই বোনের সম্পর্কটাই ভালো কারণ আমার তো কেউ নেই।
ভাইয়া: আমরা সবাই আছি এখন।
অয়ন: বাব্বাহ্ এতো দেখছি নীরার ছোটবোন, ঠিক নীরার মতো নামাজ পর্দা সবকিছু…
ভাবি: এই চুপ করতো বোরকা পড়ে যাবে নাতো কি পরীর মতো সেজে যাবে।
আমি: ভাবি নীরা কে..?
ভাবি: আমি।
তিশা: এইযে মেডাম (হঠাৎ তিশার কন্ঠ শুনে যেন প্রাণ ফিরে পেলাম, দুদিন দেখা হয়নি অথচ মনে হচ্ছে কতো বছর হয়ে গেছে)
তিশা: আরে পাগলী এভাবে কাঁদছিস কেন চলে এসেছি এখন থেকে তোর কাছেই থাকবো।
আমি: সত্যি।
তিশা: হ্যাঁ রে বাবা।
কাব্য: যেতে হবে চলো।

একের পর এক বেনারসি দেখে যাচ্ছি কিন্তু আমার ডাক্তারবাবুর পছন্দ হচ্ছে না। বিরক্ত হয়ে সামনে তাকালাম তখনি সামনের একটি আয়নায় চোখ পড়লো, একটি মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। সাথে সাথে পিছনে তাকালাম কিন্তু মেয়েটি নেই। আশ্চর্য এখনি তো আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিল, মেয়েটির মুখ স্পষ্ট ভাবে দেখিনি। আচ্ছা আমি তো বোরকা পড়া তাহলে কি অন্য কাউকে দেখে হাসছিল..?
তিশা: এই তমা ওদিকে কি দেখছিস এই শাড়িটা দেখ তো।
আমি: ডাক্তারবাবু কে দেখা।
তিশা: আরে কোথায় যাচ্ছিস..?
তিশার কথার উত্তর না দিয়ে চলে আসলাম।

মেয়েটিকে খুঁজছি কিন্তু… ওই তো এই মেয়েটিই তো ছিল। মেয়েটির সামনে এসে দাঁড়াতেই অবাক হয়ে গেলাম, এইটা তো শুভ্রা।
শুভ্রা: আমি জানতাম তুমি আমাকে খুঁজতে খুঁজতে ঠিক এখানে চলে আসবে।
আমি: অসহ্য।
শুভ্রা: বিয়ের শপিং করতে এসেছ (চলে আসছিলাম ওর কথা শুনে দাঁড়ালাম)
আমি: তা জেনে আপনি কি করবেন..?
শুভ্রা: বিয়ে করে নিচ্ছ, কাব্য’র সম্পর্কে কতোটুকু জানো..?
আমি: মানে।
শুভ্রা: সময় হলেই বুঝতে পারবে। (মেয়েটা চলে গেলো, অদ্ভুত তো। কিসব বলে গেলো)
কাব্য: তিলো এখানে কি করছ..?
আমি: হুম কিছুনা।

বাসায় চলে আসলাম, শুভ্রার কথাগুলো ভুলতে পারছি না। কাব্য’র সম্পর্কে কি জানিনা বললো শুভ্রা..?
তিশা: তমা এখানে একা দাঁড়িয়ে আছিস কেন..?
আমি: এমনি।
তিশা: কি হয়েছে তোর বলতো, শপিংমলে কথা বলিসনি, নিজের বেনারসিটাও পছন্দ করলি না কি…
আমি: তিশা কাব্য আমার থেকে কি যেন লুকাচ্ছে।
তিশা: কি লুকাবে..?
আমি: জানিনা।
তিশা: কাব্য খুব ভালো ছেলে অযতা ভুল বুঝিস না (তিশার দিকে তাকালাম। কাব্য ভালো ছেলে আমিও জানি কিন্তু কাব্য কিছু একটা যে আমার থেকে লুকাচ্ছে এটাও সত্যি। কি লুকাচ্ছে..?)
তিশা: আমার উপর ভরসা রাখ আমি বলছি কাব্য ভালো ছেলে তোকে কখনো কষ্ট দিবে না তাছাড়া তুই তো কাব্য’কে ভালোবাসিস।
আমি: হুম।

আমি: তিশা আমাকে আর কতো সাজাবি বলতো..?
তিশা: উফফ আর একটু।
আমি: আর একটু আর একটু বলতে বলতে তো ময়দা কম লাগালি না।
তিশা: ওই একদম ময়দা বলবি না, দাঁড়া চুলগুলো ঠিক করে নেই তারপর শেষ।
আমি: চুল ছেড়ে রাখছিস কেন..?
তিশা: কাব্য বলেছে, একটু শান্ত হয়ে বস তো।
আমি: আন্টি আর আঙ্কেল এসেছেন..?
তিশা: হ্যাঁ (সবাই আসলো কিন্তু যে আমাকে তিনবছর ধরে দেখাশোনা করলো সেই মামিই আসলো না। আসবেই বা কি করে যা কান্ড করেছে)
তিশা: এবার নিজেকে আয়নায় দেখ তো, আমি নিশ্চিত আজ কাব্য তোর থেকে চোখ ফেরাতে পারবে না। (আয়নায় নিজেকে বউ সাজে দেখে কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে। প্রত্যেকটা মেয়েই তো এই দিনটা নিয়ে কতো স্বপ্ন দেখে আমিও দেখতাম তবে আব্বু আম্মু মারা যাওয়ার পর ওসব স্বপ্ন দেখা ভুলে গিয়েছিলাম কিন্তু হুট করে কাব্য আমার জীবনে এসে আবার সব ঠিক করে দিলো)
তিশা: কিরে বল সাজানো কেমন হয়েছে..?
আমি: পুরাই পেত্নী হিহিহি।
তিশা: কি বললি..?
ভাবি: তিশা তিলোত্তমাকে নিয়ে এসো সবাই অপেক্ষা করছে তো।
তিশা: আসছি।

তিশা আমাকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো…
তিশা: একটু পর তো তোর বিয়ে এখন কেমন অনুভূতি হচ্ছে একটু বল শুনি।
আমি: অন্য মেয়েদের চেয়ে একটু আলাদা অনুভূতিই হচ্ছে।
তিশা: ওমা কেন..?
আমি: সব মেয়ে তো বাবার বাড়ি থেকে সবাইকে ছেড়ে শশুড় বাড়ি যায় তাই কষ্ট হয় কিন্তু আমার কষ্টটা তো আলাদা, আমার যে আব্বু আম্মুই নেই।
তিশা: প্লিজ তমা কাঁদিস না আমরা আছি তো।
আমি: আজ আব্বু আম্মুকে অনেক বেশি মিসস করছি, যার আব্বু আম্মু নেই সেই বুঝে এই যন্ত্রণা কেমন।
ভাবি: উফফ অনেক দেরি হয়ে গেছে রাত তো কম হলো না চলো চলো।

ভাবি আমাকে এনে সোফায় বসালেন। এতোক্ষণ ঘোমটা দেওয়া ছিল, ভাবি ঘোমটা সরিয়ে দিতেই কাব্য’র দিকে তাকালাম। কাব্য হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, পাশে অয়ন আর আদনান ভাইয়া ওর চোখের সামনে হাত নেড়ে দুষ্টুমি করছে।
কাজী: আপনাদের শেষ তো আমি কি শুরু করবো..? এমনিতে অনেক রাত হয়ে গেলো আমাকে ফিরতে হবে তো।
ভাইয়া: হ্যাঁ হ্যাঁ আপনি শুরু করুন।
আন্টি: কিরে মা মন খারাপ কেন (আন্টি এসে আমার পাশে বসলেন)
আমি: সবাই এসেছ কিন্তু মামি…
আন্টি: কাঁদিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমি: হুম। (কাজী সাহেব কাব্য’কে কবুল বলতে বলছেন শুনে কাব্য’র দিকে তাকালাম, ও একদমে তিনবার কবুল বলে দিয়েছে। সবাই তো ওর কান্ড দেখে হাসছে। আমাকে কবুল বলতে বললেন, আমি চুপ হয়ে আছি দেখে সবাই কবুল বলতে বলছে। কাব্য’র দিকে তাকালাম ও ভয়ে চুপসে গেছে, হয়তো ভাবছে আমি বলবো না। আমার দিকে তাকিয়ে ভ্র কুঁচকিয়ে হাত নেড়ে জিজ্ঞেস করলো বলছি না কেন। কাব্য’র দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে কবুল বলে দিলাম। কাব্য’র মুখে আমি কখনো এতোটা হাসি দেখিনি, এই মুহূর্তে ও যতোটা খুশি হয়েছে মনে হচ্ছে ও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী মানুষ)

সব নিয়মকানুন শেষ করে ভাবি আর তিশা আমাকে কাব্য’র রুমে নিয়ে আসলো। দুজন মিলে আমার সাথে অনেক দুষ্টুমি করে চলে গেলো। উফফ বাসর রাত বাসর রাত বলে দুজনে আমার কানের বারোটা বাজাই দিছে। ওরা যেতেই রুমের চারপাশে চোখ বোলালাম, রুম দেখে তো আমার মন খারাপ হয়ে গেলো। বাসর রাত নিয়ে একটা মেয়ের কতো স্বপ্ন থাকে, আমারো ছিল। পুরো রুমটা ফুল দিয়ে সাজানো থাকবে ভেবেছিলাম কিন্তু এই রুমে তো ফুলের ছিটেফোঁটাও নেই। আমার রোমান্টিক ডাক্তারবাবু এইটা কি করলো..?
কাব্য: শুনেছি সব নতুন বউরা দশ হাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে বসে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে আর তুমি পুরো রুমে পায়চারী করছ। (কাব্য এসে মাথার পাগড়ী খুলে টেবিলে রাখতে রাখতে বললো। কথা বলতেই ইচ্ছে হচ্ছে না কিন্তু ভাবী বলেছে ও রুমে আসা মাত্রই সালাম করতে তাই সালাম করলাম। কতো গল্পে পড়েছি সিনেমায় দেখেছি নতুন বউরা যখন স্বামীর পায়ে ধরে সালাম করে স্বামী তখন বউকে বুকে নিয়ে জরিয়ে ধরে আর কাব্য আমাকে অবাক করে দিয়ে লাইট অফ করে দিয়ে ডিম লাইট জ্বালালো)
আমি: ডাক্তারবাবু কি করছেন লাইট অফ করলেন কেন..?
কাব্য: পাগলী বাসর ঘরে কেউ লাইট জ্বালিয়ে রাখে নাকি..?
আমি: এইটা বাসরঘর..? কোনো ফুলের ছিটেফোঁটাও নেই।
কাব্য: আমিই সাজাতে বারণ করেছি অযতা এই ফুলগুলো আমাদের ডিস্টার্ব করবে। ওসব বাদ দাও তুমি রেডি হয়ে নাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি (চোখ বড় বড় করে কাব্য’র দিকে তাকিয়ে আছি, ও ওয়াশরুমে চলে গেলো। কিন্তু কি বলে গেলো, রেডি হবো মানে কি তারমানে কাব্য’র চরিত্র এরকম)
কাব্য: কি হলো এখনো শাড়ি খুলোনি..?
আমি: ডাক্তারবাবু আপনি এসব কি বলছেন..?
কাব্য: আরে কান্না করছ কেন ভুলে গিয়েছ আজ আমাদের বাসর রাত।
আমি: আপনার চরিত্র এমন আর আমি বুঝতে পারিনি।
কাব্য: এখানে চরিত্র খারাপ এর কি দেখলে বাসর রাতে তো… (আর শুনতে পারলাম না ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে দিলাম। ছিঃ কাব্য এতো খারাপ আর আমি বুঝতেও পারিনি)
কাব্য: কাঁদছ কেন এভাবে (কাব্য এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো, পেট থেকে শাড়ি সরিয়ে ওর হাত দুটু আমার নাভির উপর রাখলো। ইচ্ছে হচ্ছে ওকে খুন করি)
কাব্য: কান্না থামাও।
আমি: ছাড়ুন আমাকে আমি আপনার কাছে থাকবো না আমি তিশার কাছে চলে যাবো।
কাব্য: হুহ বাসর রাতে উনি জামাই রেখে বান্ধবীর কাছে চলে যাবেন।
আমি: ছাড়ুন আমি কিন্তু চিৎকার করবো।
কাব্য: করো আমার তাতে কি, সকালে ভাবি তোমাকে খোঁচা দিবে ভাববে অন্যকিছুর জন্য চিৎকার করেছ।
আমি: ছিঃ আপনি এতো খারাপ।
কাব্য: হ্যাঁ আমি অনেক খারাপ এখন খারাপ মানুষটার সাথে চলো।
আমি: কোথায় যাবো..?
কাব্য: চলো না। (কাব্য আমার হাত ধরে টেনে পিছনের গেইট দিয়ে বাসার বাইরে নিয়ে আসলো। তারপর আমার চোখ দুটু বেঁধে দিলো)
আমি: কি করছেন।
কাব্য: এতো কথা বলোনা তো, আমরা এখন বাইরে আছি বেশি কথা বললে ভূতে ধরবে (ভূতের কথা শুনে ভয়ে চুপ হয়ে কাব্য’র হাতটা চেপে ধরলাম)

কিছুক্ষণ পর কাব্য আমার চোখের বাঁধন খুলে দিলো। সামনে তাকিয়ে আমি থ হয়ে গেলাম। আমরা নদীর পাড়ে আছি, ঘাটে ছোট একটি নৌকা বাধা। নৌকার দুপাশে রশিতে লন্ঠন ঝুলছে আর লন্ঠন গুলো মিটিমিটি জ্বলছে। চাদের আলোতে সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এই লন্ঠন গুলোর কোনো প্রয়জনই ছিল না। নৌকার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম, পুরো নৌকা জুড়ে শুধু গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। সবকিছু দেখে কাব্য’র দিকে অবাক হয়ে তাকালাম, ও এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো।
কাব্য: বাসরঘরে ঢুকেই কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে ফিজিক্যাল রিলেশনের কথা বলুক এইটা কোনো মেয়েই চায় না, যেমনটা চায়নি আমার তিলোত্তমা। আর তাই তো আমার তিলোর জন্য এতোকিছুর আয়োজন।
আমি: থ্যাংকইউ ডাক্তারবাবু (কাব্য’র দিকে ঘুরে খুশিতে ওর গালে চুমু দিয়ে দিলাম। কাব্য গালে হাত দিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওর তাকিয়ে থাকা দেখে বুঝতে পারলাম আমি আসলে খুশিতে কি করেছি, এই প্রথম কাব্য’কে আমি চুমু দিয়েছি ভাবতেই লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম। কাব্য এসে একটা আঙ্গুল দিয়ে আমার তুতুনী ধরে মুখটা উপরে তুললো, ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি আমি)
কাব্য: বউ সাজে তোমাকে দারুণ লাগছে তার উপর পূর্ণিমা চাঁদের এই স্নিগ্ধ আলো এসে তোমার উপর পড়ছে সাথে লজ্জা সবকিছু মিলে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে একদম মায়াবতী (কাব্য’র এই কথায় আরো বেশি লজ্জা পেয়ে ওকে জরিয়ে ধরে ওর বুকে মুখ লোকালাম। কাব্য আমাকে কোলে তুলে নিলো)
আমি: কি করছেন..?
কাব্য: একদম চুপ আজ কোনো কিছুতে আমাকে বাঁধা দিবে না বুঝেছ। (কিছু না বলে কাব্য’র বুকের পাঞ্জাবী খামছে ধরে ওর বুকের সাথে মিশে রইলাম)

কাব্য আমাকে কোলে করে এনে নৌকায় গোলাপের পাপড়ির উপর বসিয়ে দিলো। কাব্য নৌকার কিনারায় গিয়ে পানিতে হাত দিয়ে কি যেন দেখলো।
কাব্য: পানি কিছুটা ঠান্ডা সহ্য করতে পারবে তো নাকি আবার জ্বর বাধিয়ে ফেলবে..?
আমি: মানে পানিতে কি করবো..?
কাব্য: পানিতে পা ভিজিয়ে নৌকার কিনারায় বসবো।
আমি: ইহহ এতোরাতে তাও নদীতে আমার এমনি ভয় করছে।
কাব্য: কিসের ভয় পাগলী আমি আছি তো (কাব্য’র এই ছোট্র কথাটায় যেন অনেক ভরসা খুঁজে পাই আমি)

পানিতে পা দুটু ভিজিয়ে নৌকার কিনারায় বসে আছি, কাব্য আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বসে আছে।
আমি: পানি তো খুব ঠান্ডা আপনার ঠান্ডা লাগছে না..?
কাব্য: উঁহু পানিতে পা ভিজিয়ে বসার মজাই আলাদা আর আজ তো সাথে আমার তিলো আছে (কাব্য আমাকে এতো ভালোবাসে এতো সুখ সইবে তো আমার কপালে)
কাব্য: কি মেডাম ডাক্তারবাবুর চরিত্র খুব খারাপ তাই না (ইশশ এখন নিজের প্রতি নিজেরই লজ্জা লাগছে কিসব উল্টাপাল্টা ভেবেছি আমি, চরিত্র খারাপ ভেবেছি ছিঃ)
আমি: উঁহু আমার ডাক্তারবাবু অনেক ভালো।
কাব্য: তাই বুঝি..?
কাব্য আমার খোলা চুলে নাক ঘসছে, ওর গরম নিঃশ্বাস গুলো আমার ঘাড়ে গিয়ে পড়ছে আর আমি বার বার কেঁপে উঠছি। হঠাৎ কাব্য ওর হাত দুটু শাড়ির নিচ দিয়ে আমার খালি পেটে রাখলো, আমি শিউরে উঠে ওর হাতের উপর আমার হাত রাখলাম। কাব্য পাগলের মতো আমার চুলে নাক ঘসছে আর হাত দুটু দিয়ে আমার পেটের মধ্যে খেলা করছে। কাব্য’র প্রতিটি স্পর্শে যেন আমি বার বার কেঁপে উঠছি।

চলবে?

(গতকাল কারো কমেন্ট এর রিপ্লে দিতে পারিনি “সরি” অনেকে বলেছ গল্প দিতে এতো দেরি করেছি কেন “নেট প্রবলেম এর জন্য দিতে দেরি হইছে এখন থেকে আবার প্রতিদিন পাবে”
কয়েকজন বাদে বাকি সবাই বলেছ এই তিনদিন গল্প দেইনি তাই এখন যেন পুষিয়ে দেই “এই দুই পার্ট অনেক বড় করে দিয়েছি তোমাদের কথা রাখার জন্য, খুশি তো?)

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ৮

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে মৃদু রোদের আলো চোখেমুখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুম ঘুম চোখে রুমের চারপাশে চোখ বোলালাম কিন্তু কাব্য তো কোথাও নেই। হয়তো বারান্দায় আছে ভেবে বারান্দায় আসলাম কিন্তু বারান্দাতেও তো নেই গেলো কোথায়..? আমাকে ঘুমে রেখে এভাবে হুট করে কোথায় চলে গেলো…
কাব্য: আরে কান্না করো না আমি চলে এসেছি (পিছনে তাকিয়ে দেখি কাব্য হাসছে ইচ্ছে হচ্ছে এখন)
কাব্য: হাহাহা একটু সময় চোখের আড়াল হতেই কান্না করে দিচ্ছ।
আমি: কোথায় কান্না করলাম..?
কাব্য: এখনো কান্না করনি কিন্তু আর একটু হলেই তো চোখে ছলছল করা পানি গুলো টুপটুপ করে গাল বেয়ে পড়ে যেতো।
আমি: মোটেও না।
কাব্য: ওকে তাহলে আবার চলে যাই।
আমি: এই না না।
কাব্য: কি ব্যাপার এখন তো আমাকে চোখে হারাও (আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বললো)
আমি: আমাকে ঘুমে রেখে কোথায় গিয়েছিলেন..?
কাব্য: খাবার আনতে, ভেবেছিলাম তুমি ঘুমে থাকতেই চলে আসতে পারবো কিন্তু একটু দূর যেতে হয়েছিল তাই দেরি হয়েছে।
আমি: বাসায় যাবেন না..?
কাব্য: উঁহু ভাবছি বিয়ে করে এখানেই টুনাটুনির সংসার শুরু করবো।
আমি: টুনাটুনির সংসার হিহিহি।
কাব্য: হুম আপাতত টুনাটুনি একা সংসার শুরু করবে তারপর একটা বাচ্চা হবে, দুটু বাচ্চা হবে একসময় অনেক গুলো বাচ্চা হবে।
আমি: অনেক গুলো বাচ্চা..? (কাব্য’র এসব কথা শুনে তো আমি হাসি থামাতে পারছি না)
কাব্য: যখন তুমি হাসো তখন যেন পৃথিবীর সব সৌন্দর্য তোমার উপর এসে নিহিত হয়। (কাব্য আমার পেটে ওর হাত রেখে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো, আমি যেন কোনো এক সুখের রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছি। এতোটা ভালো কেউ বাসতে পারে ভাবতেই পারছি না)
কাব্য: কি টুনাটুনির সংসার শুরু করবে না..?
আমি: করবো কিন্তু এখানে না।
কাব্য: কেন..?
আমি: পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে থাকার যে আনন্দ সেটা কি একা একা সংসার করে পাবো..?
কাব্য: আমি এটাই শুনতে চেয়েছিলাম।
আমি: তাই বুঝি।
কাব্য: জ্বী, আমিও চাই সবাই একসাথে থাকবো আমরা। এখন চলো ফ্রেশ হয়ে খেতে এসো।
আমি: ওকে।

খাবার সামনে নিয়ে কাব্য বসে আছে কিন্তু খাচ্ছে না। আবার কিসের জন্য রেগে গেলো কে যানে, ওর রাগটাকে কেন যেন খুব ভয় পাই।
আমি: কি হলো খাচ্ছেন না কেন..?
কাব্য: খাবো না।
আমি: ওমা কেন..?
কাব্য: রাতে আমি তোমাকে খাইয়ে দিয়েছি কিন্তু তুমি তো দাওনি।
আমি: ওহ এই ব্যাপার ঠিক আছে আমি এখন খাইয়ে দিচ্ছি।
কাব্য: সত্যি..?
আমি: হ্যাঁ।
কাব্য বোধহয় একটু বেশিই ভালোবাসার কাঙ্গাল, একটুখানি ভালোবাসা পেলেই আনন্দে ওর দুচোখ দিয়ে পানি ঝরে। যেমনটা এখন ঝরছে, আমি খাইয়ে দিচ্ছি আর কাব্য এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর কাঁদছে। কাব্য’কে দেখে মনে হয় ওকে কখনো কেউ এতো ভালোবাসা দেয়নি তাই একটুখানি ভালোবাসা পেলেই ছোট্র বাচ্চাদের মতো কাঁদে। কাব্য’র এমন বাচ্চামি, আব্বু আম্মুর কথা জিজ্ঞেস করলে রেগে যাওয়া সবকিছুর পিছনে তো একটা রহস্য আছেই, কি রহস্য আছে সেটা আমি খুঁজে বের করবোই। কিন্তু এসব রহস্য খুঁজে বের করতে হলে তো আগে ওদের বাসায় যেতে হবে।
আমি: ডাক্তারবাবু আমরা বাসায় কবে যাচ্ছি।
কাব্য: এক্ষণি যাবো, তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমাকে হসপিটালে যেতে হবে।
আমি: শুভ্রার কাছে হিহিহি।
কাব্য: দেখো এই মেয়েটার নাম নিবা না অহংকারী মেয়ে একটা আ…
আমি: ওকে ওকে আর ওর নাম মুখে নিবো না।
কাব্য: আলমারিতে একটা শাড়ি রাখা আছে পড়ে রেডি হয়ে নাও।
আমি: আলমারিতে শাড়ি..?
কাব্য: এখন এনেছি তোমাকে এই শার্ট পড়া অবস্থায় বাসায় নিয়ে যাবো নাকি, সবাই তো হাসবে।
আমি: কিন্তু…
কাব্য: আবার কি..?
আমি: উঁহু কিছুনা। (কি করে বলি আমি যে শাড়ি পড়তে পারিনা। বললে হয়তো নিজেই চলে আসবে শাড়ি পড়াতে আর ও যা দুষ্টু ছেলে শাড়ি পড়াতে এসে আবার কিনা কি কান্ড করে বসে তারচেয়ে বরং নিজেই ট্রাই করি)

শাড়ি পড়ে এসে কাব্য’র সামনে দাঁড়ালাম, ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমি: কি হলো..?
কাব্য: ভাবছি আমার বউতো খুব গুণবতী, এতোটাই গুণবতী যে নিজের শাড়িটাও ঠিক করে পড়তে পারে না। (ওর কথা শুনে ইচ্ছে হচ্ছে শাড়িটাই খুলে ফেলে দেই, এতো কষ্ট করে পড়েছি কোথায় বলবে সুন্দর লাগছে তা না বদনাম গাইছে)
কাব্য: আমি ঠিক করে পড়িয়ে দেই..?
আমি: আপনি পড়িয়ে দেওয়ার জন্য বদনাম করছেন আমার।
কাব্য: আরে না তো, শাড়ির কুচি ছুটে যাচ্ছে নিজেই দেখো (সত্যিই তো শাড়ির কুচিগুলো এলোমেলো হয়ে ছুটে যাচ্ছে)
কাব্য: কি হেল্প করবো..?
আমি: হুহ লাগবে না আমি একাই ঠিক করতে পারবো।
কাব্য: আমি হেল্প করলে সমস্যা কোথায়..?
আমি: আপনি যা দুষ্টু ছেলে ভয় করে।
কাব্য: এই আস্তে আস্তে কি বলছ..?
আমি: কিছু নাতো।
তাড়াতাড়ি রুমে চলে আসলাম। কোনোভাবে শাড়িটা ঠিক করে নিলাম। কেন যে এতোদিন শাড়ি পড়া শিখিনী।

আমি: চলুন
কাব্য: (কিছুনা বলে আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে)
আমি: এখন তো আগের চেয়ে ভালো হয়েছে তাহলে হাসছেন কেন..?
কাব্য: কোথায় আমি হাসিনি তো চলো।
আমি: উহহ (একটু হাটতেই শাড়ির কুচির মধ্যে প্যাচ লেগে পায়ে হুচট খেলাম)
কাব্য: জানতাম এমন কিছুই হবে (কাব্য এসে আমাকে কোলে তুলে নিলো)
আমি: কি করছেন..?
কাব্য: একদম চুপ। (কাব্য আমাকে কোলে করে গাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছে, আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি দেখে ভ্রু কুঁচকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিলো)
কাব্য: শাড়ি পড়লে তোমাকে খুব সুন্দর লাগে, মনে হয় কোনো এক মায়াবতী আ…(কাব্য’র গলা জরিয়ে ধরে অন্যমনস্ক হয়ে ছিলাম, কাব্য’র এমন কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম। কাব্য আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে ও আমার চোখের ভাষাগুলো পড়ছে)

কাব্য: আমরা আগামীকাল বিয়ে করছি (কাব্য গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বললো, আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি)
কাব্য: অবাক হবার কিছু নেই আর দেরি করতে পারবো না।
আমি: তাই বলে কালকেই।
কাব্য: হ্যাঁ কাল সাধারণ ভাবে বিয়ে হবে পরশুদিন বড় করে বৌভাত এর অনুষ্ঠান হবে।
আমি: হুম।
কাব্য: রাগ করেছ..?
আমি: নাতো রাগ করবো কেন..?
কাব্য: তাহলে এরকম মুখ গোমড়া করে দূরে বসে আছ কেন..?
কাব্য’র পাশে এসে ওর কাধে মাথা রেখে একটা হাত দিয়ে ওকে জরিয়ে ধরে বসলাম। কাব্য যেন এটাই চাইছিল তাই ওর মুখে এতোক্ষণে হাসি ফুটেছে।

গাড়ি থেকে নেমে তো আমি অবাক। সবাই আমাদের জন্য দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে, পুরো বাসাটা সাজানো। মনে হচ্ছে কাব্য বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে এসেছে, আর সেই বউটা আমি।
–কাব্য চলে আসছ যে নতুন বউকে আনবে না (উনি মনে হয় কাব্য’র ভাবি কিন্তু নতুন বউ বলছে কেন আমাদের তো বিয়ে হয়নি)
কাব্য: তিলো এসো।
ভাবি: আসবে মানে যাও কোলে করে নিয়ে এসো।
কাব্য: হুহ এই মুটকি কে বার বার কোলে নিতে পারবো না।
আমি: কি বললেন আমি মুটকি।
অয়ন: আরে ভাবি কান্না করো না ভাইয়া তো ফাজলামো করে বলেছে, তোমার মতো শুকনিকে কোন পাগলে মুটকি বলবে হাহাহা।
ভাবি: থামবি তোরা। (কাব্য এসে আমাকে কোলে তুলে নিলো ইচ্ছে হচ্ছে বুকে কয়েকটা কিল দেই)
কাব্য: ভাবি আমাকে হসপিটালে যেতে হবে।
ভাবি: হ্যাঁ যাও তবে আজকেই শেষ, দু সপ্তাহের ছুটি নিয়ে নাও।
কাব্য: আগে কাজ তারপর অন্যকিছু তাই দু সপ্তাহের ছুটি নেওয়া সম্ভব না (ভাবি কাব্য’কে মুখ ভেংচি দিয়ে কিচেনের দিকে চলে গেলেন। আমি বসে বসে ওদের সবার কথা শুনছি)
কাব্য: আজকে বাসায় ফিরবো না (কাব্য আচমকা এসে আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো, ফিরবে না শুনেই তো ভয় পেয়ে গেলাম। এখানে নতুন এসেছি কাব্য না থাকলে আমি একা থাকবো কিভাবে)
আমি: কেন..?
কাব্য: এমনি আসি।
ভাবি: কাব্য দাড়াও মিষ্টি খেয়ে যাও।
কাব্য: কিসের মিষ্টি..?
ভাবি: বাসায় নতুন বউ এসেছে ভুলে গিয়েছ নাকি..?
কাব্য: তাড়াতাড়ি দাও। (কাব্য ভাবির হাত থেকে একটা মিষ্টি নিয়ে আমার দিকে একবার তাকিয়ে বেড়িয়ে গেলো)
ভাবি: এই কাব্য আর ফারাবী দুটুই একরকম, সারাদিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আজ ফারাবীকে কতো করে বললাম বাসায় নতুন বউ আসবে অফিসে যেও না, শুনলো না। বললো রাতে এসে তোমার সাথে কথা বলে নিবে। তুমি ওদের কাজে কষ্ট পেওনা, নাও মিষ্টি খাও। (ভাবি আমার মুখে একটুখানি মিষ্টি দিলেন, অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি উনার দিকে। ওরা সবাই এতো ভালো কেন। আমার তো মনে হচ্ছে এখানে এসে আমি আরেকটা তিশা পেয়ে গেছি)
অয়ন: ভাবি চিন্তা করোনা আমি সারাদিন বাসায় থাকি আমার কোনো কাজের ব্যস্ততা নেই সারাদিন আড্ডা দিতে পারবো।
ভাবি: আসছে পড়াচোর একটা, পড়াশোনায় মন নেই সারাদিন ঘুরে বেড়ানো।
অয়ন: আচ্ছা ছোট ভাবি তুমিই বলো বড় দুভাই যদি আমাকে সবকিছু দেয় তাহলে আমি পড়াশোনা কেন করবো।
আমি: হ্যাঁ তাই তো।
ভাবি: হলো দুজনের ভাবনা মিলে গেছে এখন দুজন মিলে আড্ডা দাও।
ভাবি কিচেনে চলে গেলেন।

অয়নের সাথে অনেক গল্প করলাম, খুব টায়ার্ড লাগছে ইচ্ছে হচ্ছে এখানেই শুয়ে পড়ি কিন্তু ড্রয়িংরুমে তো শুয়া সম্ভব না। আস্তে আস্তে ভাবির কাছে আসলাম।
ভাবি: কিছু বলবে..?
আমি: ফ্রেশ হবো কিন্তু…
ভাবি: কোন রুমে যাবে ভেবে পাচ্ছ না তাই তো। আজকে কষ্ট করে অন্য রুমে থাকো কাল থেকে তো আমার দেবরের বুকেই…
আমি: ভাবি…
ভাবি: আরে লজ্জা পেওনা ফাজলামো করলাম।
আমি: আপনি তো দেখছি ডাক্তারবাবুর মতোই লজ্জা নেই।
ভাবি: এখনো ডাক্তারবাবু ডাকো কাব্য তো তোমার মুখে ডাক্তারবাবু শুনেই পাগল হয়ে গেছে।
আমি: আপনাকে সব বলেছে..?
ভাবি: হ্যাঁ ও আমার কাছে সবকিছু বলে এই পরিবারে আমরা সবাই ফ্রি। আর শুনো আপনি করে বলোনা তো পর মনে হয়, তুমি করে বলবা তাহলে দুজন জা নয় বোন মনে হবে।
আমি: আপনারা সবাই এতো ভালো কেন..?
ভাবি: আবার আপনি..
আমি: না না তুমি (ভাবি রাগি চোখে তাকাতেই এসে জরিয়ে ধরলাম, আমি সত্যি ভাগ্যবতী নাহলে তিশার মতো বান্ধবী আর ভাবির মতো জা পাই)
ভাবি: এখন রুমে চলো।
আমি: ওকে।

ভাবি উপরের একটা রুমে আমাকে দিয়ে চলে যেতে চাইলেন।
আমি: ভাবি ডাক্তারবাবুর রুম কোনটা..?
ভাবি: ওইযে পাশের রুমটাই। অবশ্য এইটা ওর রুম বললে ভুল হবে, ও তো এখানে থাকেই না। একা একা শহরের বাইরে অদ্ভুত বাড়িটায় থাকে। আজকে বাসায় ফিরবে কিনা কে জানে..?
ভাবি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলেন। খুব টায়ার্ড লাগছে তাই ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়লাম।

ঘুম ভাঙতেই দেয়াল ঘড়িতে তাকালাম সন্ধ্যা সাতটা বাজে। সেই দুপুরবেলা ঘুমিয়ে ছিলাম আর কেউ ডাকলো না।
ভাবি: ঘুম ভেঙেছে তাহলে। দুপুরে খাওয়ার জন্য কতো ডাকলাম উঠনি।
আমি: খুব ক্লান্ত লাগছিল তাই।
ভাবি: ঠিক আছে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।
ভাবি চলে যেতেই এক দৌড়ে কাব্য’র রুমে চলে আসলাম। সবকিছুর রহস্য তো আমি খুঁজে বের করবোই।

কাব্য’র সারা রুম খুঁজলাম কিন্তু কিছুই তো পেলাম না। কাব্য’র মা বাবার কোনো ছবি বা কোনো ডায়েরি, কাব্য’র মায়ের কোনো স্মৃতি কিছুই পেলাম না। ওই বাসায় আলমারিতে যে ছবিটা পেয়েছিলাম সেটা তো সাদা সাদা দাগ পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে কাউকে চেনা যায় না, ভালো একটা ছবি প্রয়োজন। কিছু না পেয়ে চলে আসতে চাইলাম হঠাৎ টেবিলের ড্রয়ারে চোখ পড়লো, ড্রয়ারে তো খুঁজা হয়নি। ড্রয়ার খুঁজে শুধু দুটু চাবি পেলাম কিন্তু কিসের চাবি এগুলো…?
অয়ন: ছোট ভাবি নিচে এসো।
আমি: আসছি।

ড্রয়িংরুমে এসে দেখি অয়ন আর ভাবি বসে আছেন। উফফ এখন আবার ডাকতে গেলো কেন, চাবিটা কিসের সেটা তো খুঁজতে হবে।
ভাবি: তিলোত্তমা এসেছ। ফারাবী আসতে দেরি হবে আর কাব্য আসবে কিনা ঠিক নেই তো, তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো (বলে কি এতো তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বো)
ভাবি: আরে কাল তোমাদের বিয়ে অনেক জামেলা আছে তাই বলছি আজ তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ো।
আমি: ঠিক আছে।
অয়ন: আমার সুইট ভাবিরা আমি কবে বিয়ে করছি..?
ভাবি: পড়াশোনা শেষ কর তারপর।
অয়ন: আটকে দিলে তো, এই পড়াশোনাটাই তো আমার ভালো লাগে না।
আমি: তাহলে কাউকে পছন্দ করো তখন নাহয় বিয়েটা করিয়ে দিবো।
অয়ন: দেখেছ ভাবি ছোট ভাবির সাথে আমার সব ভাবনা মিলে যায় হাহাহা।
কিছুক্ষণ ওদের সাথে আড্ডা দিয়ে খাবার খেয়ে রুমে চলে আসলাম।

রুমের মধ্যে পায়চারী করছি আর চাবি দুটু দেখছি, কিসের চাবি হতে পারে..? আচ্ছা চাবি দুটু তো খুব পুরনো তাহলে কি এগুলো স্টোররুমের চাবি…?

বাসায় নতুন এসেছি স্টোররুম কোনদিকে সেটাই বুঝতে পারছি না তাও আন্দাজি হাটছি।
কাব্য: কোথায় যাচ্ছ তিলো (আচমকা কাব্য’র কন্ঠ শুনে চমকে উঠলাম, ও কোথা থেকে আসলো)
আমি: কোকোকোথাও নানানাততো।
কাব্য: তোতলাচ্ছ কেন..?
আমি: নাতো।
কাব্য: চলো আমার সাথে। (কাব্য আমার হাত ধরে টেনে ওর রুমে নিয়ে আসলো। কাব্য চাবিগুলো দেখে ফেলার আগেই লুকিয়ে ফেললাম)
কাব্য: আসবো না বলেও এসেছিলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো ভেবে কিন্তু এসে আমি নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেছি।
আমি: মানে।
কাব্য: এসেই গোয়েন্দাগিরি শুরু করে দিয়েছ..?
আমি: গোয়েন্দাগিরি তাও আমি কি বলছেন এসব..?
কাব্য: তোমার ডাক্তারবাবুর চোখকে ফাকি দেওয়া এতো সহজ না (কাব্য আমার হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে আমাকে ওর বুকের সাথে জরিয়ে ধরলো, খুব রেগে গেছে বুঝতে পারছি কিন্তু আমি যে রহস্য খুঁজছি সেটা ওকে বুঝতে দেওয়া যাবে না)
আমি: কিসব আবোলতাবোল বকছেন।
কাব্য: তিলো আমি তোমাকে ভালোবাসি এমন কোনো কাজ করোনা যেন তোমার প্রতি আমার এই ভালোবাসাটা ঘৃণায় পরিণত হয়ে যায়।
আমি: মানে..?
কাব্য: আর কখনো স্টোররুমে যাওয়ার দুঃসাহস করো না বুঝেছ (তারমানে আমি যেদিকে যাচ্ছিলাম সেদিকেই স্টোররুম…? কিন্তু কাব্য স্টোররুমে যেতে নিষেধ করছে কেন..? কি আছে ওই স্টোররুমে..?)
কাব্য: খেয়েছ..?
আমি: হুম।
কাব্য: যাও ঘুমিয়ে পড়ো আর হ্যাঁ যা বলেছি তা মাথায় রেখো।

রুমে এসেই চাবি দুটু লুকিয়ে রাখলাম। কাব্য নিষেধ করলে কি হবে, ওই স্টোররুমে কি আছে তা তো আমি দেখবোই আর সব রহস্যও আমি বের করবো।
কাব্য: কি করছ বউ (বিছানায় শুয়ে শুয়ে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ কাব্য’র কথা শুনে ভয়ে এক লাফে উঠে বসে পড়লাম)
কাব্য: আরে আমি ভয় পাচ্ছ কেন..?
আমি: লাইট অফ করা এমন অন্ধকার রুমে হুট করে ঢুকে কেউ কানের কাছে এসে কথা বলে..?
কাব্য: ওকে লাইট জ্বালিয়ে দিচ্ছি।
আমি: না থাকুক ডিম লাইটই ভালো।
কাব্য: আমার বউ কতোটা সাহসী আজ প্রমাণ হয়ে গেলো হাহাহা (কাব্য’র হাসি দেখে রাগ করবো নাকি অবাক হবো ভেবে পাচ্ছি না। একটু আগে যে এতো রেগে ছিলো সে এখন দিব্বি হাসছে)
কাব্য: সরি সোনা অনেক বকা দিয়েছি আর হবে না (যাক বাবা আমি তো কিছুই বললাম না নিজেই সরি বলছে, আসলে এই ডাক্তারবাবুর ভিতরে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে)
কাব্য: এই পাগলী কাল আমাদের বিয়ে মনে আছে..?
আমি: হুম মনে আছে তো..?
কাব্য: কাল যেহেতু বিয়ে তারমানে কালরাতে আমাদের বাসর (চুপচাপ আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো, ভাবকানা এমন যে বিয়ে অনেক আগেই হয়ে গেছে)
আমি: ডাক্তারবাবু কি করছেন..?
কাব্য: একদম চুপ।
কাব্য উঠে আমার সামনে বসে পড়লো তারপর আমার দুগালে আলতো করে ধরে আমার ঠোঁটের দিকে ওর ঠোঁট এগুতে শুরু করলো। কাব্য আমার এতো কাছে এসেছে যে আমাদের দুজনের নিঃশ্বাস ভারী খাচ্ছে। আমি কাব্য’কে দূরে সরিয়ে দিতে চাইলাম সাথে সাথে কাব্য আমার ঠোঁটের মধ্যে ওর ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ৭

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

চোখেমুখে পানির ছিটা পড়াতে জ্ঞান ফিরলো, আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম। ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখি কাব্য’র কোলে শুয়ে আছি। এক লাফ দিয়ে উঠে ওকে জরিয়ে ধরলাম।
কাব্য: শান্ত হও প্লিজ (কিছু না বলে শুধু কেঁদেই যাচ্ছি)
কাব্য: তিলো তাকাও আমার দিকে, আমাকে বলো কি হয়েছে। (আস্তে আস্তে কাব্য’র দিকে তাকালাম, কি হয়েছে সেটা কি ওকে বলা ঠিক হবে)
কাব্য: ভয় পেয়ো না আমি তো তোমার কাছেই আছি, বলো আমাকে কি হয়েছে।
আমি: যা হয়েছে সেটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যেতে চাই আর মনে করতে চাই না এসব (কাব্য’কে জরিয়ে ধরে বললাম। আজ মামি খারাপ কাজ করেছে কিন্তু এতোদিন তো আমাকে মামিই দেখাশোনা করেছে থাকনা মামির খারাপ চরিত্রটা লুকানো)
কাব্য: ঠিক আছে বলতে হবে না তুমি শান্ত হও। (চারদিকে চোখ বুলালাম, আমি তো একটা বাসায় আছি)
আমি: আপনি আমাকে পেলেন কোথায় আমি তো…
কাব্য: হুম রাস্তাতেই অজ্ঞান অবস্থায় পেয়েছি।
আমি: আপনি…
কাব্য: আমি তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম তোমার মামির সাথে বিয়ের কথা বলতে কিন্তু উনি বললেন সকালে যেন যাই কারণ তুমি এখন ঘুমে। সন্ধ্যায় তোমার কন্ঠ শুনে অসুস্থ মনে হচ্ছিল তাই আমি বিশ্বাস করে চলে আসি। মধ্যে তোমাকে অনেক বার ফোন দিয়েছি কিন্তু তুমি রিসিভ করনি তাই ভেবেছিলাম সত্যি তুমি অসুস্থ আর তাই ঘুমিয়ে আছ। কিন্তু বাসায় ফিরার পথে তোমাকে রাস্তার পাশে এভাবে পড়ে থাকতে দেখি, আর বাসায় নিয়ে আসি। ভাগ্যিস আমি ওই রাস্তা দিয়ে আসছিলাম নাহলে তো তোমাকে আমি হারিয়েই ফেলতাম।
আমি: আরে বাচ্চাদের মতো কাঁদছেন কেন..?
কাব্য: যদি সত্যি তোমাকে হারিয়ে ফেলতাম, জানো আমি কতোটা ভয় পেয়েছিলাম।
আমি: হ্যাঁ বুঝেছি অনেক ভয় পেয়েছিলেন এখন বাচ্চাদের মতো কান্না থামান।
কাব্য: আমার কান্না তোমার কাছে বাচ্চাদের মতো লাগে।
আমি: নাতো কে বললো, আপনি তো বুড়ো মানুষ।
কাব্য: কি আমি বুড়ো..?
আমি: আচ্ছা এই বাসায় কি কোনো মানুষ থাকে নাকি আপনি আমাকে ভুল করে এইটা বাসা ভেবে চিড়িয়াখানায় নিয়ে এসেছেন।
কাব্য: ইসস মানুষ এভাবে লজ্জা দেয়, আমার তো বউ নেই যে সবকিছু গুছিয়ে রাখবে তাই বাসার এই অবস্থা। কিন্তু এখন তো তুমি চলে এসেছ এখন সব গুছিয়ে রাখবে।
আমি: হুম বুঝেছি কিন্তু আপনি তো বলেছিলেন ভাই ভাবী সবাই আছে।
কাব্য: ওরা তো অন্য বাসায় আমি এখানে একা থাকি।
আমি: হ্যাঁ চিড়িয়াখানার…
কাব্য: আবার বলছ।
আমি: ওকে আর বলবো না।
কাব্য: তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি একটু আসছি।
আমি: কোথায় যাবেন..?
কাব্য: আমার এই বাসাটা শহর থেকে একটু দূরে এখানে তেমন কিছু পাওয়া যায় না একটা রেস্টুরেন্ট আছে সামনে ওখান থেকে কিছু খাবার নিয়ে আসি।
আমি: ঠিক আছে।

কাব্য চলে গেলো, আমি বাসাটা ঘুরে ঘুরে দেখছি অনেক বড় বাসা। রাতের বেলা তাই বাইরের কিছু বুঝা যাচ্ছে না কিন্তু কাব্য সবাইকে রেখে শহর থেকে দূরে এমন একটা অদ্ভুত বাড়িতে একা একা থাকে কেন বুঝতে পারছি না। বাসাটা সত্যি খুব অদ্ভুত ভিতরে তেমন কোনো জিনিসপত্র নেই, চারপাশ কেমন যেন খালি খালি লাগছে। হঠাৎ আমার শরীরের দিকে নজর পড়লো, সারা শরীরে ধুলো জামার মধ্যে কাদা কোথা থেকে লাগলো আবার। এক্ষণি গোসল করতে হবে কিন্তু কাপড়চোপড় পাবো কোথায়। রুমের এক কোণে আলমারির দিকে চোখ পড়লো হয়তো কিছু পাবো তাই আলমারি খুলে খুঁজতে শুরু করলাম। কিন্তু কাব্য’র কিছু শার্ট প্যান্ট ছাড়া কিছুই পেলাম না। একটা শার্ট আর একটা প্যান্ট হাতে নিয়ে আলমারি লাগাতে যাবো তখনি আলমারির কোণে পড়ে থাকা একটা ছবির দিকে চোখ পড়লো। হাতে এনে ভালোভাবে দেখলাম, ছবিটাতে কেমন যেন সাদা সাদা দাগ পড়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে উনারা কাব্য’র মা বাবা। কিন্তু নিজের আব্বু আম্মুর ছবি দেয়ালে না রেখে ও আলমারির এক কোণে এভাবে ফেলে রেখেছে কেন। ইসস ছবিটা কি অযত্ন করে ফেলে রেখেছে।

কাব্য: তিলো কোথায় তুমি..?
আমি: আসছি।
কাব্য: কি করছ তু…
আমি: এইতো। (গোসল করে বের হতেই দেখি কাব্য খাবারের প্যাকেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে তো কাব্য হা করে তাকিয়ে আছে, তাকাবেই তো ওর শার্ট পড়েছি যে। নিজেরই লজ্জা লাগছে কিন্তু কি করবো অন্য কিছু ছিল না তো)
কাব্য: আমি ঠিক দেখছি তো নাকি স্বপ্ন দেখছি (কাব্য’র কাছে গিয়ে ওর হাতে একটা চিমটি দিলাম)
কাব্য: উফফ।
আমি: এবার বুঝেছেন সত্যি যে।
কাব্য: তুমি পড়েছ আমার শার্ট…?
আমি: হ্যাঁ তো কি করবো আর কিছু ছিল নাকি..? আচ্ছা বাসাটা যেহেতু আপনার তাহলে ভবিষ্যৎ বউ এর কথা ভেবে তো কিছু কাপড়চোপড় কিনে রাখতে পারতেন।
কাব্য: যেখানে বিয়ে করার ইচ্ছেটাই মরে গিয়েছিল আবার ভবিষ্যৎ বউ এর কথা ভেবে এতোকিছু করবো (একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আস্তে আস্তে কথাটা বললো)
আমি: বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না মানে..?
কাব্য: বিয়ে জিনিসটা আর মেয়েদের আমি ঘৃণা করতাম কিন্তু সেদিন হসপিটালে তোমাকে দেখে সবকিছু কেমন যেন উলটপালট হয়ে গেলো। কিভাবে যে তোমাকে এতোটা ভালোবেসে ফেলেছি আর বিয়ে করার জন্য এমন পাগল হয়েছি নিজেই বুঝতে পারছি না।
আমি: একটা কথা জিজ্ঞেস করবো..?
কাব্য: করতে পারো কিন্তু রেজাউল চৌধুরী আর হুমায়রা চৌধুরীর প্রসঙ্গ বাদে।
আমি: উনারা কারা..?
কাব্য: হিয়ার বাবা মা।
আমি: হিয়া…
কাব্য: আমার ছোট বোন।
আমি: আশ্চর্য তো উনারা যদি হিয়ার বাবা মা হন তাহলে তো আপনারো…
কাব্য: না উনারা আমার বাবা মা না, কোনো সন্তানের বাবা মা হবার যোগ্যতা উনাদের নেই।
কাব্য বারান্দায় চলে গেলো। সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে। কাব্য নিজের বাবা মায়ের নাম ধরে ডাকছে, উনাদের নিজের বাবা মা বলে স্বীকার করছে না আবার বলছে বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল না মেয়েদের ও ঘৃণা করে। থাক এসব নিয়ে পড়ে ভাববো আগে কাব্য’র কাছে যাই, হয়তো কাঁদছে।

যা ভেবেছিলাম তাই, কাব্য বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে আর কাঁদতেছে। বুঝতে পারছি না আম্মু আব্বুর কথা বললেই ও কাঁদে কেন।
আমি: সরি (কাব্য’কে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম)
কাব্য: সরি।
আমি: আপনি কেন সরি বলছেন..?
কাব্য: তোমার সামনে সিগারেট খাচ্ছি তাই, আমি তো জানি তুমি সিগারেট অপছন্দ করো।
আমি: আমিও সরি আব্বু আম্মুর কথা মনে করিয়ে আপনাকে কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু আপনি বুঝলেন কিভাবে আমি যে আব্বু আম্মুর কথা জিজ্ঞেস করবো..?
কাব্য: আলমারি থেকে শার্ট খুলে পড়েছ তারমানে ছবিটা তুমি দেখেছ তাই মনে হলো এইটা নিয়েই কিছু জিজ্ঞেস করবে। (জিজ্ঞেস তো করার ছিল অনেক কিছু, আমার মনে যে একের পর এক প্রশ্ন জাগছে শুধু কিন্তু আপনার কান্না সহ্য করতে পারিনা তাই আর কিছু জিজ্ঞেসও করবো না)
আমি: চলুন খিদে লেগেছে আমার।
কাব্য: হুম চলো।

একটু আগে যে মানুষটা যন্ত্রণায় ছটফট করে কাঁদছিল সে এখন আমাকে খুব যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছে। কাব্য’কে দেখে বুঝার উপায় নেই যে ও একটু আগেই কেঁদেছে।
কাব্য: কি দেখছ এভাবে..?
আমি: উঁহু কিছুনা। (কাব্য আমাকে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে আর বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি একমনে ওকে দেখছি আর ভাবছি আমার মতো একটা মেয়ে যে কিনা দেখতে কালো, বাবা মা নেই আর এখন তো আমার কিছুই নেই, সেই আমাকে কিনা কেউ এতোটা ভালোবাসতে পারে তাও আবার কাব্য’র মতো একজন মানুষ। যে মানুষটা কিনা দেখতে সুন্দর, পেশায় একজন ডক্টর সেকিনা আমাকে এমন নিখুঁত ভাবে ভালোবাসে)
কাব্য: শার্ট পড়লে তোমাকে দারুণ লাগে আমার তো মাথা নষ…
আমি: এই একদম বাজে কথা বলবেন না।
কাব্য কিছু না বলে হাসছে শুধু, আর আমি মুগ্ধ হয়ে ওর হাসি দেখছি। একটা মানুষের হাসি এতো সুন্দর হয় কিভাবে…?

জানালার কাছে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, কাব্য এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো।
কাব্য: তোমার জন্য আর একটা খাবার আছে।
আমি: কি..?
কাব্য: পিছনে তাকাও (কাব্য’র কথা শুনে পিছনে তাকালাম)
আমি: এতোগুলো চিপস।
কাব্য: তিশা বলেছে তুমি চিপস পাগলী তাই নিয়ে এসেছি।
আমি: তাই বলে এতোগুলো..?
কাব্য: আমার বউকে আমি সবকিছু বেশি বেশি দিবো তাতে তোমার কি…?
আমি: কিন্তু ভালোবাসাটাই তো কম দিচ্ছেন।
কাব্য: তাই বুঝি।
আমি: এই কি করছেন কোলে নিচ্ছেন কেন আমি তো ফাজলামো করে বলেছি।
কাব্য কিছু না বলে আমাকে কোলে করে বারান্দার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কাব্য’র শার্ট খামচে ধরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে।

বারন্দায় একটা কাউচ রাখা, কাব্য আমাকে কাউচে শুয়ে দিলো। রুমে গিয়ে চিপস এনে আমার হাতে দিয়ে হেসে বললো…
কাব্য: চিপস পাগলী চিপস খাও (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, আমি তো এমন একজন জীবনসঙ্গীই চেয়েছিলাম। শুধু আমি কেন প্রত্যেকটা মেয়েই এমন একজন জীবনসঙ্গী চায়, যে কিনা মেয়েটির ছোট ছোট ইচ্ছে গুলোর মূল্য দিবে)
কাব্য: নাও তিশার সাথে কথা বলো (আমার দিকে ফোন এগিয়ে দিলো)
আমি: হ্যাঁ তিশা।
তিশা: আমাকে একবার বলে তো যাবি আমার টেনশন হয় না..?
আমি: আসলে আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম তাই তোর কাছে আর যাইনি।
তিশা: না এসে ভালোই করেছিস তোর মামি আমাদের বাসায় লোকজন নিয়ে এসে যা কান্ডটাই না করেছে। এখন কাব্য’র কাছে যেহেতু আছিস আমার আর কোনো চিন্তা নেই।
আমি: হুহ।
তিশা: শুন এখানে ফিরে আসার প্রয়োজন নেই কাব্য’র সাথে ওর বাসায় যাবি আর দু-তিন দিনের মধ্যেই তোর আর কাব্য’র বিয়ে হবে, আমি ওদের বাসায় আসবো চিন্তা করিস না।
আমি: ঠিক আছে।
তিশা: রাখছি।

তিশা ফোন রাখতেই কাব্য এসে আমার পাশে বসলো, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি: কি দেখছেন..?
কাব্য: আমার বউটাকে।
আমি: আপনি যে কি।
কাব্য: আমি একজন ভদ্র মানুষ তাই তো আজ নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোলে রাখছি।
আমি: মানে।
কাব্য: কিছুনা।
আমি: এই এভাবে হাসবেন নাতো। (কাব্য এসে আমার পাশে শুয়ে পড়লো তারপর আমার নাকে ওর নাক ঘষে হেসে বললো…)
কাব্য: আমার হাসি তোমার পছন্দ না বুঝি…?
আমি: উহু আপনার হাসি খুব সুন্দর তাই আপনি যখন হাসেন আমার নিজেরি নিজের প্রতি হিংসে হয়।
কাব্য: কেন কেন..?
আমি: এইযে আমার মতো মেয়ে আপনার মতো একজন মানুষকে পেয়েছে।
কাব্য: আর কখনো যদি নিজেকে ছোট ভেবেছ তাহলে কিন্তু… (কাব্য রেগে গেছে বুঝতে পারছি তাই চুপ হয়ে আছি। হঠাৎ কাব্য আমার বুকের উপর শুয়ে পড়লো)
আমি: ডাক্তারবাবু কি করছেন।
কাব্য: তিলো আমার এই জায়গাটায় না অনেক ব্যথা, অনেক প্রিয়জনদের হারানোর যন্ত্রণা জমা হয়ে আছে এই জায়গায়। সব কষ্ট ভুলে যেতে চাই আমি তোমার ভালোবাসা দিয়ে প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা (আমার ডান হাতটা কাব্য’র বুকের বাম পাশে নিয়ে রেখে কথা গুলো বললো। কাব্য আবারো কাঁদছে কিন্তু কাব্য’র কিসের এতো কষ্ট)
আমি: উহু কখনো যাবো না আমার ডাক্তারবাবুকে ছেড়ে।
কাব্য’কে আমার বুকের সাথে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম। কাব্য ছোট বাচ্চাদের মতো নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছে আর কাঁদছে। আর আমি ওর চুলগুলোর মাঝে হাত বুলিয়ে খেলা করছি।

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ৬

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

কাব্য ল্যাপটপে কি যেন কাজ করছে আর আমি ওর কাধে মাথা রেখে বসে আছি। আজ নিজেকে আর একা মনে হচ্ছে না, কাব্য’র উপর ভরসা করতে ইচ্ছে হচ্ছে। কাব্য’র কাধ থেকে মাথা তুলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে আর ভাবছি একটা মানুষ এতোটা ভালো কিভাবে বাসতে পারে।
কাব্য: এইযে মেম কি দেখছেন (আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কাব্য ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো)
আমি: ভাবছি আপনি আমাকে এতোটা ভালো কিভাবে বাসেন।
কাব্য: একদিন তুমিও আমাকে ঠিক এতোটাই ভালোবাসবে যতোটা ভালো আমি তোমাকে বাসি। (সে দিনটা বেশি দূরে নয় খুব কাছেই, আমি আপনাকে ভালোবাসি আর এই ভালোবাসা প্রতিটা মুহূর্তে বেড়ে চলেছে)
কাব্য: আবার কোথায় হারালে।
আমি: কোথাও না আমি তিশাকে দেখে আসছি।
কাব্য: কি দেখবে ও তো ঘুমিয়ে আছে।
আমি: আপনি তো কাজ করছেন আমি একবার দেখে আসি এখানে বসে থেকে কি করবো।
কাব্য: কাজ তো তোমার জন্যই করছি, এখন কাজ শেষ করে সারা রাত গল্প করবো তোমার সাথে।
আমি: হুহ সখ কতো।

তিশার কেবিনে এসে দেখি সেই সিস্টারটা কি যেন করছে, আমাকে দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিলো। আমি তিশার পাশে এসে বসলাম, ও ঘুমিয়ে আছে। দেখে তো আগের চেয়ে অনেক সুস্থ মনে হচ্ছে তারমানে সকালে বাসায় নিয়ে যেতে পারবো। তিশার একটা হাত আমার দুহাতের মুঠোয় এনে ধরে বসে আছি। কেন যে পাগলীটা বার বার আমার জন্য নিজেকে কষ্ট দিতে যায়।
সিস্টার: পেসেন্ট আপনার কি হয়…? (বাব্বাহ্ যে আমাকে দেখে রাগে মুখ ফিরিয়ে নেয় সে নিজের ইচ্ছায় কথা বলছে)
আমি: বোন।
সিস্টার: আর কাব্য স্যার..?
আমি: প্রশ্নটা নাহয় ওকেই করবেন।
সিস্টার: এতো ভাব কিসের হ্যাঁ জিজ্ঞেস করছি বলে দিলেই তো হয়।
আমি: আস্তে চেঁচামেচি করুন তিশার সমস্যা হবে। আর আগে তো কাব্য বলেই দিয়েছে আমি ওর বউ।
সিস্টার: হুহ বউ। স্যার আসার পর থেকে উনার পিছনে আঠার মতো লেগে আছি পাত্তাই দিচ্ছে না আর এদিকে এই মেয়েকে বউ বানিয়ে বসে আছে। কি আছে এই মেয়ের মধ্যে যা আমার মধ্যে নেই, আমি তো এই মেয়ের চেয়ে যথেষ্ট সুন্দরী। (কথাগুলো খুব আস্তে আস্তে বলছে, আমি শোনেও না শোনার ভান করে ওকে জিজ্ঞেস করলাম…)
আমি: কিছু বলছেন..?
সিস্টার: না।
কাব্য: শুভ্রা একটা কথা মনে রেখো শুধু সুন্দরী হলেই হয় না ভালোবাসা পেতে হলে আরো অনেক যোগ্যতা থাকতে হয়। আর কি যেন বলছিলে তিলোর মধ্যে কি এমন আছে যা তোমার মধ্যে নেই..? উত্তরটা আমিই দিচ্ছি, তোমার মধ্যে অনেক বেশি অহংকার আছে যা তিলোর মধ্যে নেই। আর অহংকারীদের আমি জাস্ট ঘৃণা করি। (কাব্য আবার চলে আসলো কেন, ও তো দেখছি খুব রেগে যাচ্ছে)
সিস্টার: এই মেয়ের সামনে আমাকে অপমান করছেন।
কাব্য: অপমান কোথায় করলাম তুমি ওকে প্রশ্ন করেছ উত্তরটা আমি দিলাম।
আমি: ডাক্তারবাবু ছাড়ুন না অজতা কথা বাড়াবেন না প্লিজ।
সিস্টার: এই অপমানের শাস্তি আপনি পাবেন।
মেয়েটা রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো। সামান্য বিষয় নিয়ে এতো রেগে যাওয়ার কি আছে, হ্যাঁ ও হয়তো কাব্য’কে ভালোবাসে তাই বলে কাব্য’কেও কি ওকে ভালোবাসতে হবে নাকি। মেয়েটি যদি কাব্য’কে পছন্দ করে তাহলে কাব্য’রও তো মেয়েটিকে পছন্দ হতে হবে তারপর নাহয় একটা সম্পর্ক তৈরি হবে। মেয়েটি তো দেখছি জোর করে কাব্য’কে পেতে চাইছে, জোর করে তো কখনো ভালোবাসা পাওয়া যায় না।
কাব্য: তমা চলো।
আমি: প্লিজ শান্ত হন এতো রেগে গেলে হয় নাকি..?
কাব্য: কি করবো গতকাল রাতে আসছি আর এই মেয়েটা পিছনে লেগে আছে, ভালো মেয়ে হলে কথা বলে বুঝানো যায় কিন্তু শুভ্রা তো খুব জেদি আর অহংকারী মেয়ে।
আমি: মেয়েটি আপনাকে ভালোবাসে তাই এমন করছে।
কাব্য: এই শোনো আমার শুধু তোমার ভালোবাসা চাই অন্য কারো ভালোবাসা লাগবে না।
আমি: সবসময় এতো রেগে যান কেন।
কাব্য: এই রুমে কথা বললে তিশার সমস্যা হবে চলো তুমি।

সোফায় বসে আছি আর কাব্য আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে ল্যাপটপ টিপছে। কাব্য’র চুলে একমনে হাত বুলিয়ে যাচ্ছি, কাব্য দেখতে ফর্সা স্মার্ট সবকিছু লক্ষ করলেও কাব্য’র চুলগুলো যে এতো সুন্দর আগে লক্ষ করিনি। ইসসস কাব্য সবদিকে সুন্দর আর আমি… মানায় নাকি আমাকে ওর সাথে।
কাব্য: যেভাবে চুলে হাত বুলাচ্ছ কখন জানি ঘুমিয়ে পড়ি (কাব্য’র কথায় লজ্জা পেয়ে হাত সরিয়ে নিলাম)
আমি: আচ্ছা আপনাকে তো আদনান ভাইয়া ডিউটির জন্য রেখে গেছে আপনি ডিউটি রেখে এখানে বসে আছেন কেন।
কাব্য: পাশে বউ থাকলে ডিউটিতে মন বসে নাকি (আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে বললো, কি দুষ্টুরে বাবা)
কাব্য: অনেক ডক্টর আছে প্রয়োজন হলে আমাকে ডেকে নিবে তুমি এসব নিয়ে ভেবো না। তুমি এখন বলো আমরা কত তারিখ বিয়ে করছি।
আমি: মানে।
কাব্য: ওমা বিয়ে করতে হবে না, নাকি এমনি আমার বউ হয়ে যাবে।
আমি: দ্যাত আপনি খুব দুষ্টু।
কাব্য: বিয়েটা হয়ে যাক আপনি আপনি ডাকা ছাড়াবো।
আমি: মামি যদি রাজি না হন।
কাব্য: আমি রাজি করাবো তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না তুমি শুধু ভাবো আমাদের বাচ্চা কয়টা হবে (ওর মুখে দেখছি কিছুই আটকায় না, এসব বলে আবার দিব্বি হাসছে)
কাব্য: লজ্জা পেলে তোমাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে।
আমি: আপনাকে তো আমি… (ওর চুলে জোরে জোরে কয়েকটা টান দিলাম)
কাব্য: উফফ লাগছে তো।
আমি: আর এসব বলবেন, বললে আরো দিবো।
কাব্য: কেন তুমি মা হতে চাও না (কাব্য’র এমন প্রশ্ন শুনে লজ্জা পেলাম সাথে কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে, মা হতে কে না চায়। প্রত্যেকটা মেয়েই তো মা হতে চায়)
কাব্য: আমরা কিন্তু এই সপ্তাহেই বিয়ে করছি। ফারাবী আর ভাবীকে ফোন করে সব বলে দিয়েছি আর অয়ন তো রীতিমতো সব আয়োজন করা শুরু করে দিয়েছে।
আমি: আপনার পরিবারে আর কে কে আছে…?
কাব্য: আমরা তিনভাই এক বোন সাথে ভাবী, বোন লন্ডনে পড়াশোনা করছে বিয়েতে আসতে পারবে না।
আমি: আর আপনার বাবা মা (কাব্য কেমন যেন চুপ হয়ে গেলো তাহলে কি ওর আব্বু আম্মু বেঁচে নেই)
কাব্য: আমিই তোমার সব তাই আর কখনো বাবা মা শব্দটা যেন তোমার মুখে না শুনি।
কাব্য ল্যাপটপ রেখে নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে আছে। কাব্য কাঁদছে সেটা আমি বুঝতে পারছি কিন্তু আব্বু আম্মুর কথা জিজ্ঞেস করাতে কাঁদছে কেন এইটা ভেবে পাচ্ছি না।
যদি কাব্য’র আব্বু আম্মু মারা গিয়ে থাকেন তাহলে তো ওর এতো রেগে যাওয়ার কথা না তাহলে কি ওর আব্বু আম্মু, রেগে যাওয়া এসবের পিছনে কোনো রহস্য আছে…? কিন্তু কি রহস্য…?
কাব্য’র দিকে তাকালাম আমার কোলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছে। ওর চোখের কোণে এখনো পানি জমে আছে, ওর ঘুমন্ত মুখটা কি মায়াবী লাগছে। কাব্য’র চোখের পানি আলতো করে মুছে দিলাম। “জানিনা আব্বু আম্মুর কথা জিজ্ঞেস করাতে আপনি এভাবে রেগে গেলেন কেন আর কাঁদলেনই বা কেন, যদি এসবের পিছনে সত্যি কোনো রহস্য থেকে থাকে তাহলে তা আমি খুঁজে বের করবো আর আপনাকে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করবো”

সকালে ঘুম ভাঙতেই তাকিয়ে দেখি কাব্য এখনো ঘুমিয়ে আছে। রাতে কখন যে সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝতেই পারিনি। তিশার কাছে যাওয়া দরকার, কাব্য’র মাথা আস্তে সরাতে চাইলাম কিন্তু ও আমার একটা হাত চেপে ধরে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। ওর চুল গুলো আবার আমাকে টানছে ইচ্ছে হচ্ছে চুলে একটা চুমু দেই কিন্তু… কাব্য তো ঘুমে দিলে তো আর দেখবে না। আস্তে করে কাব্য’র চুলে একটা চুমু দিলাম।
কাব্য: আমি কিন্তু ঘুমে না সব বুঝে গেছি (চোখ বন্ধ করে বলছে আর হাসছে। ইসস এইটা কি হলো)
কাব্য: লজ্জা পেলে তো তোমাকে সুন্দর লাগে তাহলে দুহাত দিয়ে মুখটা ডেকে রেখেছ কেন…? (কাব্য উঠে আমার পাশে বসলো তারপর আমার হাত দুটু মুখ থেকে সরিয়ে ওর কোমরে নিয়ে রাখলো)
কাব্য: এতো লজ্জা পাচ্ছ কেন আর তো মাত্র কটা দিন তারপর আমরা স্বামী স্ত্রী হয়ে যাবো আর বিয়ের পর প্রতিটা সকালে তোমার ভেজা চুলের পানি+মিষ্টি একটা চুমুতে আমার ঘুম ভাঙবে (কাব্য আমার একদম কাছে এসে আমার কপালে ওর কপাল ঠেকিয়ে কথা গুলো বললো আর এখন মিটমিটিয়ে হাসছে)
কাব্য: কি ম্যাডাম তোমার ভেজা চুলের পানিতে প্রতিদিন আমার ঘুম ভাঙাবে না…?
আমি: দ্যাত আপনার মুখে কিচ্ছু আটকায় না (লজ্জা পেয়ে কাব্য’র বুকে মুখ লুকালাম। কাব্য এক হাত দিয়ে আমার কোমর জরিয়ে ধরে আছে আরেক হাত দিয়ে আমার ঘাড়ের চুল সরাচ্ছে। চুলগুলো এক পাশে রেখে কাব্য আস্তে আস্তে আমার ঘাড়ে মায়া দেওয়ার জন্য এগুচ্ছে, ওর গরম নিঃশ্বাস আমার ঘাড়ে পড়ছে)
“স্যার আপনার পেসে…” (হঠাৎ কারো কন্ঠ শুনে কাব্য আমাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে গিয়ে বসলো, তাকিয়ে দেখলাম শুভ্রা মেয়েটা। বাহ্ কাব্য’র মুখটা এখন দেখার মতো হয়েছে)
কাব্য: শুভ্রা কারো রুমে আসলে যে নক করে আসতে হয় এই মিনিমাম সেন্স টুকু কি তোমার নেই…?
শুভ্রা: আমি তো আর জানতাম না আপনি যে আপনার চেম্বারটাকে নিজের বেডরুম ভাবেন।
কাব্য: জাস্ট সেটআপ, আমি আমার চেম্বার বেডরুম বানাবো নাকি ড্রয়িংরুম বানাবো সে কৈফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে…? বেড়িয়ে যাও এক্ষণি।
শুভ্রা: আপনি কিন্তু আবার আমাকে অপমান করছেন।
কাব্য: তো কি তোমাকে কোলে বসিয়ে আদর করবো (মেয়েটা রাগে কটমট করে আমার দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলো। কাব্য রাগে বেলুনের মতো ফুলছে দেখে খুব হাসি পাচ্ছে)
কাব্য: খুব মজা হচ্ছে তাই না।
আমি: নাতো।
কাব্য: আবার হাসছ।
আমি: ওকে আর হাসবো না।
কাব্য: উহু হাসো তোমার হাসি দেখলে আমার সব রাগ চলে যাবে।
আমি: তিশার কাছে যাচ্ছি।
কাব্য পিছন পিছন ডাকছে তাও তিশার কাছে চলে আসলাম।

তিশা এখনো ঘুমাচ্ছে, এই আদনান ওকে কতো ঘন্টার জন্য ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে আল্লাহ্‌ জানেন। তিশার পাশে বসে ওর মাথায় হাত দিতেই ও জেগে গেলো।
আমি: যাক বাবা অবশেষে তোর ঘুম ভাঙলো।
তিশা: বোন আমি সুস্থ হয়ে গেছি আমাকে এইখান থেকে নিয়ে যা।
আমি: হ্যাঁ একটু পরই চলে যাবো।

তিশাকে রিলিজ করে দিলো, ওকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। কাব্য আমাদের পৌঁছে দিয়ে গেলো। তিশাকে রুমে দিয়েই আমি বাসায় চলে আসলাম। জানিনা আজ কপালে কি আছে।

বাসায় ঢুকতেই মামি সামনে এসে দাঁড়ালো।
মামি: হয়েছে শান্তি ওরা বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে।
আমি: আমি তো এই বিয়েতে রাজি ছিলাম না ভেঙে গিয়েছে তো ভালো হয়েছে।
মামি: তোকে কি আমি সারাজীবন এভাবে…
আমি: ভালো লাগছে না পরে কথা বলবো।
রুমে চলে আসলাম, শরীর খুব দুর্বল লাগছে মনে হয় জ্বর হবে। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ক্লান্তিতে চোখ দুটু বুজে আসলো।

হঠাৎ ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো, কাব্য ফোন দিয়েছে। রিসিভ করতেই চেঁচিয়ে উঠলো।
কাব্য: সেই বিকেলবেলা থেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি সন্ধ্যা হয়ে গেছে আর এখন তুমি ফোন রিসিভ করলে।
আমি: আসলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
কাব্য: কেন শরীর খারাপ (জ্বর তো ভালোই এসেছে কিন্তু ওকে তো বলা যাবে না টেনশন করবে)
আমি: নাতো।
কাব্য: ওকে রাতে ফোন দিবো রাখছি এখন।
আমি: হুম।
ফোন রেখে তিশার কাছে চলে আসলাম, বসে বসে মোবাইল টিপছে।
আমি: এই তুই না অসুস্থ তাহলে শুয়ে না থেকে মোবাইল টিপছিস কেন…?
তিশা: আসছে ডাক্তারের বউ ডাক্তারনি।
আমি: কি বললি..?
তিশা: মিথ্যে কিছু বলেছি নাকি..?
আমি: জানিনারে কাব্য তো বললো মামির সাথে কথা বলতে আসবে।
তিশা: হুম সব ভালো ভাবে হবে দেখিস।
তিশার সাথে আরো কিছু সময় গল্প করে বাসায় চলে আসলাম।

দরজায় আসতেই ভিতরে মামির হাসির শব্দ পেলাম সাথে দুজন পুরুষ মানুষের কন্ঠ। রাত প্রায় নয়টা বাজে এতো রাতে আমাদের বাসায় কে আসবে। ভিতরে না গিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছি।
মামি: এই মেয়েকে নিয়ে আর পারছি না। ভেবেছিলাম কোথাও একটা বিয়ে দিয়ে আপদ বিদায় করবো কিন্তু বিয়েটা ভেঙে গেলো।
–এখন একদম ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাহাহা।
মামি: হ্যাঁ অনেক সহ্য করেছি আর না এই মেয়ের জায়গা পতিতালয়েই ভালো মানাবে (পতিতালয় শব্দটা শুনে যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো)
–আমরা কি আজকেই ওকে নিয়ে যেতে পারবো..?
মামি: হ্যাঁ তবে সাবধানে।
–ঠিক আছে।
আর শুনতে পারলাম না ওদের কথা। কোনোভাবে হাটতে হাটতে রাস্তায় চলে আসলাম। তিশার কাছে গেলেও ওরা আমাকে ধরে নিয়ে যাবে কারণ মামি আমাকে ওদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। কাব্য’র বাসা তো চিনি না ফোনটা বাসায় ফেলে এসেছি। আস্তে আস্তে হাটতে হাটতে অনেক দূর চলে আসলাম। এমনি গায়ে জ্বর তার উপর এভাবে হাটছি এখন আর পারছি না। রাস্তার পাশের একটা ল্যাম্পপোস্ট এর নিচে বসে পড়লাম। মামি আমার সাথে শেষ পর্যন্ত এমন জঘন্য কাজ করতে পারলো ভাবতেই মাথা ঘুরছে, চোখ দুটু অন্ধকার হয়ে আসছে, আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে ওখানেই পড়ে গেলাম।

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ৫

0

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি সবার সামনে। মাঝে মাঝে আড়চোখে সবার দিকে তাকাচ্ছি, তানভীর আর মামির হাসি দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে ইচ্ছে হচ্ছে পালিয়ে যাই কিন্তু মামি তো দিব্বি… হঠাৎ তিশাদের বাসা থেকে চেঁচামেচির শব্দ শুনা গেলো। আন্টি আঙ্কেল চেঁচামেচি করে কি যেন বলছেন কিন্তু তিশার কোনো শব্দ তো শুনা যাচ্ছে না।
মামি: হঠাৎ ওদের বাসায় আবার কি হলো।
আমি: আমি যাচ্ছি।
মামি: এই কোথায় যাচ্ছিস চুপ করে বসে থাক এখানে।
আমি: আরে কি হয়েছে দেখতে হবে তো।
মামি: আমি দেখে এসে বলছি তোকে।
আমি: হুম।
কিযে হলো ভেবে পাচ্ছি না। মামিও আসছে না, যেতেও পারছি না। আমি সবার সামনেই টেনশনে পায়চারী করছি দেখে মেহমানরা সব আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
মামি: তেমন কিছু হয়নি।
আমি: যা হয়েছে সেটাই বলো।
মামি: বলবো কিন্তু তুই যেতে পারবি না।
আমি: ঠিক আছে।
মামি: তিশা বাথরুমে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে।
আমি: কি…?
মামি: এই কোথায় যাচ্ছিস..?
আমি: মামি আমার হাত ছাড়ো।
মামি: একটু পর তোর বিয়ে কোথায় যাচ্ছিস, ওরা তিশাকে নিয়ে হসপিটালে চলে যাবে তোর যেতে হবে না।
আমি: তিশা অসুস্থ আর আমাকে বিয়ের জন্য তুমি আটকে রাখতে পারবে এইটা ভাবলে কিভাবে।
মামি: তমা একটু পর কিন্তু বিয়ে আমি বলছি যাস না।
আমি: তুমি কেন কারো ক্ষমতা নেই আমাকে আটকে রাখার। তানভীর আমাকে ক্ষমা করবেন আমি এই বিয়েতে রাজি না মামি আমাকে দিব্বি দিয়েছিল তাই রাজি হয়েছিলাম।
মামির হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে দিয়ে দৌড়ে তিশার কাছে চলে আসলাম।

তিশার মাথা থেকে প্রচুর রক্ত পড়ছে কপালটা একটু কেটে গেছে।
আমি: আন্টি এসব কিভাবে হলো…?
আন্টি: আমাদের সামনেই পায়চারী করছিল আর তোকে বকাবকি করছিল হঠাৎ করে রুমের দিকে চলে গেলো। একটু পর ওর চিৎকার শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখি বাথরুমে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে আর এই অবস্থা।
আমি: সব আমার জন্য হয়েছে, আমাকে নিয়ে টেনশন করেই ও…
আঙ্কেল: কাঁদছিস কেন আর এখন নিজেকে দোষে কি লাভ হবে, এম্বুলেন্স চলে এসেছে চল হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।
আমি: চলো।

হসপিটালে বসে আছি, তিশাকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে গেছে। খুব ভয় করছে খারাপ কিছু হবে নাতো অনেক রক্ত যে ঝরেছে তিশার মাথা থেকে।
সিস্টার: রক্ত লাগবে।
আমি: আমার আর তিশার রক্তের গ্রুপ এক আমি রক্ত দিবো।
সিস্টার: ঠিক আছে চলুন আমার সাথে।
তাড়াতাড়ি সিস্টারকে ফলো করে হাটতে শুরু করলাম। তিশার কথা ভাবতে ভাবতে হাটছিলাম হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে দেয়ালে গিয়ে পড়লাম।
আমি: ওই চোখে দেখেন না (রাগ দেখিয়ে সামনে তাকাতেই দেখি কাব্য, অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি কাব্যও আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
আমি: সরি (চলে আসতে চাইলাম কাব্য আমার হাত ধরে টান দিয়ে ওর কাছে নিয়ে গেলো, আমার দুগালে আলতো করে ধরে কপালে ফু দিতে শুরু করলো)
আমি: আরে কপালে ফু দিচ্ছেন কেন (বলতে বলতে কপালে হাত দিলাম অনেকটা জায়গা ফুলে গেছে হাত দিতেই ব্যথা করতে শুরু করলো)
কাব্য: এভাবে আনমনে হয়ে কেউ হাটে যদি খারাপ কিছু হয়ে যেতো।
আমি: আপনি এভাবে হাটছিলেন কেন চোখ নেই দিলেন তো আমার কপালটা ফাটিয়ে।
কাব্য: আসলে কিছু কাগজ দেখতে দেখতে হাটছিলাম আর হুট করে তুমি সামনে এসে পড়লে।
আমি: আপনি আমার সামনে এসেছেন আমি না।
সিস্টার: আপনি এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন চলুন তাড়াতাড়ি।
কাব্য: তিলো হসপিটালে এসেছ কেন কি হয়েছে..?
আমি: তিশা অসুস্থ।
তাড়াতাড়ি সিস্টারের সাথে চলে আসলাম।

রক্ত দেওয়ার জন্য বেডে শুতেই কাব্য এসে রুমে ঢুকলো।
কাব্য: কাকে রক্ত দিবে..?
আমি: কাকে আবার তিশাকে।
কাব্য: তুমি যা শুকনি রক্ত দিলে তোমাকে আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না হাহাহা।
আমি: তিশার জন্য রক্ত দিতে গিয়ে যদি মরেও যেতে হয় তাও আমি আমার শরীরের সব রক্ত দিয়ে দিবো।
কাব্য: হ্যাঁ মরে যাও তারপর আমিও মরে যাবো, তোমাকে ছাড়া তো আর বেঁচে থাকা সম্ভব না তাই মরে যাওয়াই ভালো।
আমি: (কিছু না বলে ওর দিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলাম। দুদিন সামনে ছিলাম তাই প্রেম দেখিয়েছিল চোখের আড়াল হতেই সব শেষ। আর আজ আবার চোখের সামনে আছি তাই প্রেম দেখাতে শুরু করলো)
কাব্য: সিস্টার আপনি যান আমি রক্ত নিচ্ছি।
সিস্টার: ওকে স্যার। (সিস্টার চলে যেতেই কাব্য এসে আমার হাতে সুচ ফুটিয়ে দিলো)
আমি: উফফ একবার বলে তো সুচ ফুটাবেন আমার ব্যথা লাগে না বুঝি।
কাব্য: সিস্টার ব্যথা দিবে ভেবে আমি আসলাম এতো আস্তে সুচ ফুটালাম তাও ব্যথা ফেলে।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: একটু আগে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসছিলে কেন আমি জানি।
আমি: কেন বলুন তো।
কাব্য: এই তিনদিন তোমার সাথে কোনো যোগাযোগ করিনি তাই অভিমান করেছ।
আমি: অভিমান মানুষ তার উপর করে যাকে সে ভালোবাসে। আমি আপনার উপর অভিমান করতে যাবো কেন।
কাব্য: কারণ তুমি আমাকে ভালোবাস।
আমি: মোটেও না।
কাব্য: ভালোবাস কিনা সেটা তো তোমার চোখই বলে দিচ্ছে। (নিশ্চুপ হয়ে আছি, সত্যি কি আমার চোখ বলে দিচ্ছে যে আমি কাব্য’কে ভালোবাসি। কিন্তু আমি তো কাব্য’কে ভালোবাসি না)
কাব্য: কি এবার ব্যথা পেয়েছ…? (কাব্য’র কথা শুনে হাতের দিকে তাকালাম সূচ খুলে ফেলেছে কিন্তু এখন তো কোনো ব্যথা পাইনি)
সিস্টার: স্যার রক্ত…
কাব্য: কিছু বলছিলে আটকে গেলে কেনো (অন্য একটা সিস্টার এসেছে, কিছু বলতে গিয়ে আমার দিকে চোখ পড়াতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
সিস্টার: এতো সিস্টার থাকতে আপনি রক্ত…
কাব্য: সিস্টাররা রক্ত নিলে ওকে ব্যথা দিতো বুঝেছ। এতো কথা বলো না রক্ত নিয়ে যাও আর ওর পেসেন্টকে কোন ডক্টর দেখছে…?
সিস্টার: আদনান স্যার।
কাব্য: ওকে গিয়ে বলো পেসেন্ট আমার বউ এর ফ্রেন্ড আ…
সিস্টার: মানে..?
কাব্য: যাও তো এতো প্রশ্ন ভালো লাগে না। (সিস্টার আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে চলে গেলো)
আমি: কি ব্যাপার ডাক্তারবাবু মনে হচ্ছে সামথিং সামথিং (আমি হাসছি দেখে কাব্য এসে আমার মাথায় দুহাত দিয়ে ধরে ঝাঁকি দিলো)
আমি: উফফ লাগছে।
কাব্য: লাগার জন্যই তো দিয়েছি, আচ্ছা মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে বুঝেও তোমার রাগ হচ্ছে না…?
আমি: একটা মানুষকে অন্য কারো পছন্দ হতেই পারে এতে রাগ করার কি আছে।
কাব্য: তারমানে তুমি সত্যি আমাকে ভালোবাস না।
আমি: এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না।
কাব্য: কোথায় যাচ্ছ..?
আমি: তিশার কাছে।

আঙ্কেল আর আন্টির কাছে এসে বসলাম, শরীর খুব দূর্বল লাগছে। জানিনা ওদিকে তিশার কি অবস্থা। হঠাৎ দেখলাম কাব্য তিশার কেবিনে ঢুকছে। আচ্ছা কাব্য তো কক্সবাজার ছিল ওখানের হসপিটালে ছিল তাহলে ও এই হসপিটালে কি করছে…?
কাব্য: তিলো তিশার অবস্থা এখন ভালো চিন্তা করার কোনো কারণ নেই চাইলে দেখা করতে পারো।
কাব্য’র কথা শুনে আঙ্কেল আন্টিকে নিয়ে তিশার কাছে আসলাম।

আমাকে দেখে তিশা মুখ ফিরিয়ে নিলো, নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।
আন্টি: কেমন আছিস মা
তিশা: ভালো
আঙ্কেল: মেয়েটার উপর রেগে থাকিস না এমনি কান্নাকাটি করে যা অবস্থা হয়েছে ওর তার উপর আবার তোকে রক্ত দিয়েছে।
তিশা: কি..? (যাক বাবা তিশার রাগটা বোধহয় কমে গেছে)
আমি: আরে রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না…
তিশা: তাই বলে তুই দিবি এখন যদি তুই অসুস্থ হয়ে পড়িস।
কাব্য: তিলোর ডাক্তারবাবু আছে তো ওকে অসুস্থ হতে দিবে না (এই কাব্যটা যে কি সবার সামনে চলে এসেছে)
তিশা: তোমার খবর আছে তোমার কোনো খুঁজ খবর নেই কেন ফোন বন্ধ করে রেখেছ কেন…?
কাব্য: কি আমার ফোন বন্ধ (তাড়াতাড়ি পকেটে ফোন খুঁজলো কিন্তু পেলো না)
কাব্য: ফোনটা বোধহয় আমার চেম্বারে আছে আর চার্জ নেই মনে হয়।
আঙ্কেল: তিশা এই ডাক্তারকে তুই চিনিস (এইরে সেরেছে তিশা তো এখন সব বলে দিবে)
তিশা: হ্যাঁ আব্বু ওইযে রাজকুমার।
আঙ্কেল: হাহাহা বুঝেছি বুঝেছি।
আমি: ঘোড়ার ডিম বুঝেছ।
তিশা: কাব্য আমি কি বাসায় চলে যেতে পারবো…?
“না অন্তত আজকের রাতটা আপনাকে হসপিটালে রেস্টে থাকতে হবে” (তিশাকে যে ডক্টর দেখছিল তিনি এসে বললেন)
কাব্য: তিলো ও আদনান আমার বন্ধু আর আদনান…
আদনান: বলতে হবে না বুঝে গেছি, উনি তিলোত্তমা আই মিন তোর তিলো।
কাব্য: হুম (বাহ্ ও দেখছি সবাইকে বলে দিয়েছে)
কাব্য: তিলো অনেক রাত হয়ে গেছে তুমি আঙ্কেল আন্টিকে নিয়ে বাসায় চলে যাও সকালে এসো এখানে তো আদনান আছে।
আমি: না আমি যাবো না।
আদনান: কাব্য আমাকে আজ চলে যেতে হবে প্লিজ রাতের ডিউটিটা তুই কর প্লিজ।
কাব্য: ঠিক আছে।
আমি: আঙ্কেল তুমি আন্টিকে নিয়ে বাসায় চলে যাও আমি তিশার কাছে আছি।
আঙ্কেল: ঠিক আছে।

আঙ্কেল আন্টি চলে গেলেন, আমি এসে তিশার পাশে বসলাম।
আমি: তিশা এসব কি করে হলো..?
তিশা: কপালটা কেটেছিলাম ইচ্ছে করে ভেবেছিলাম বাথরুমে গিয়ে চিৎকার দিবো যেন তুই শুনতে পেয়ে চলে আসিস কিন্তু পা পিছলে পড়ে গিয়ে সত্যি এতো ব্যথা পাবো ভাবিনি।
আমি: তুই কি পাগল।
তিশা: কি করবো তোর মামিকে আমার বিশ্বাস হয়না।
আদনান: এভাবে কথা বললে আপনার ক্ষতি হতে পারে আপনাকে বরং ঘুমের ইঞ্জেকশন দিচ্ছি রেস্ট নিন আপনি। (আদনান তিশাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে কাব্য’র সাথে একটু কথা বলে চলে গেলো)
কাব্য: তিশা ঘুমিয়ে আছে এখন আর ওর কাছে থাকতে হবে না তুমি আমার সাথে চলো।
আমি: আরে কি হলো..?
কাব্য আমার হাত ধরে টানতে টানতে ওর রুমে নিয়ে আসলো।

রুমে এনেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে সোফায় ফেলে দিলো তারপর দরজা বন্ধ করে দিলো। বুঝতে পারছি না ও এতো রেগে আছে কেন।
কাব্য: আগে তিশার জন্য টেনশনে ছিলে তাই কিছু জিজ্ঞেস করিনি এখন তো তিশা ঠিক আছে তা…
আমি: আমার হাত ছাড়ুন ব্যথা পাচ্ছি।
কাব্য: হাতের ব্যথার চেয়ে বুকের ব্যথা অনেক বেশি যন্ত্রণার বুঝেছ।
আমি: মানে।
কাব্য: তোমার এমন সাঝ দেখেই আমি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম এখন তো তিশার কথায় পুরোপুরি বুঝে গেছি।
আমি: কি বুঝেছেন…?
কাব্য: আজকে তোমাকে দেখতে আসছিল আ…
আমি: হ্যাঁ দেখতে এসেছিল শুধু তাই নয় আজকে আমার বিয়ে ছিল (ঠাস করে আমার গালে থাপ্পড় মেরে দিলো)
কাব্য: আমি তোমাকে ভালোবাসি এইটা জেনেও তুমি রাজি হয়েছিলে কেন…?
আমি: আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই। (কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রেখে নিজেকে শান্ত করলো)
কাব্য: তিলো আমি মানছি এই তিন দিন তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি তাই বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি না এইটা ধরে নিবে আর অন্য জায়গায় বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যাবে…?
আমি: (নিশ্চুপ হয়ে আছি আর একটা কথাও বলবো না, পেয়েছে কি আমাকে এতো জোড়ে থাপ্পড় মেরে দিলো)
কাব্য: সেদিন সকালে তোমাকে ফোনে আমি এতোগুলো কথা বলেছি কিন্তু তুমি একটা কথাও বলোনি তাই ভেবে নিয়েছিলাম ট্রান্সফার হয়ে এখানে চলে আসবো। ট্রান্সফার হয়ে আসবো বললেই তো আসা যায় না, এখানে আদনান ওখানে আমি দুজন অনেক দৌড়াদৌড়ি করে তিন দিনের মধ্যে ট্রান্সফার হয়ে গতকাত রাতে এখানে এসেছি। আমি এতোটাই বিজি ছিলাম যে ফোনে হাত দেয়ার সময় পাইনি তাই তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। সবকিছু তো তোমার জন্য করেছি, তোমার কাছে আসার জন্য করেছি কিন্তু তুমি বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলে।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: কি হলো এখন কথা না বলে শাস্তি দিবে (কি কথা বলবো ভেবে পাচ্ছি না, আমি কি ভেবেছিলাম আর হলো কি। আমি তো ভেবেছিলাম চোখের আড়াল হতেই কাব্য আমাকে ভুলে গেছে কিন্তু ও আমার কাছে আসার জন্য এতো দ্রুত ট্রান্সফার হয়ে এখানে চলে আসলো)
কাব্য: তিলো আমি সত্যি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি বিয়ে করতে চাই তোমাকে। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না। (আমার দুগালে আলতো করে ধরে কথাগুলো আস্তে আস্তে বললো। কিন্তু আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রেখেছি দেখে আবার রেগে গেলো)
কাব্য: বুঝেছি তুমি এভাবে মুখ খুলবে না (ওর কথা শুনে সামনে তাকালাম ও কি যেন খুঁজছে)
কাব্য: এবার বলো ভালোবাস কিনা নাহলে কিন্তু (ওর কান্ড দেখে তো আমার চোখ কপালে উঠে গেছে। হাতের শিরার মধ্যে চাকু ধরে রেখেছে)
আমি: একজন ডক্টর হয়ে সুইসাইড করার কথা ভাবছেন।
কাব্য: আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাস কিন্তু মুখে স্বীকার করতে চাইছ না কিন্তু আজ তোমাকে বলতে হবে নাহলে কিন্তু…(এখন কি করবো আমি ও যে পাগল যদি সত্যি সত্যি… না না ও সুইসাইড করলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবো না)
কাব্য: বলো নাহলে…
আমি: হ্যাঁ বাসি।
কাব্য: হয়নি সুন্দর করে বলো।
আমি: ভালোবাসি।
কাব্য: এখনো হয়নি কিছু একটা মিসিং (উফফ এতো জ্বালাচ্ছে কেন, কি মিসিং হতে পারে ভেবে পাচ্ছি না। আমি ভাবছি দেখে ও মিটিমিটি হাসছে ইচ্ছে হচ্ছে… হুম বুঝেছি কি মিসিং)
আমি: ভালোবাসি ডাক্তারবাবু।
কাব্য: এইতো হয়ে গেছে। (চাকু রেখে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো)
কাব্য: আমি কালই তোমার মামির কাছে যাবো বিয়ের কথা বলতে।
আমি: হুম। (যে গালে থাপ্পড় দিয়েছিল সে গালে আলতো করে একটা চুমু দিলো)
কাব্য: জানি অনেক ব্যথা পেয়েছ আসলে অনেক কষ্ট হচ্ছিল তাই… সরি সোনা।
আমি: হুম।
কাব্য: খোঁপা করা চুল আমার একদম ভালো লাগে না।
কাব্য আমার চুলগুলো ছেড়ে দিলো, আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে খোলা চুলে মুখ গুঁজে দিলো। কাব্য আমার খোলা চুলে নাক ঘসছে আর আমি ভাবছি সত্যি কি আমি কাব্য’কে ভালোবাসি…? কখন যে ওকে নিজের অজান্তে ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতেই পারলাম না আমি।

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ৪

0

 

রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ৪

লেখিকা: সুলতানা তমা


তিশা: তমা কোথায় গেলি
আমি: আসছি।
জানিনা কতোক্ষণ ধরে দুজন ফোনের দুপ্রান্তে নিশ্চুপ হয়ে একজন আরেক জনের নিঃশ্বাস শুনছিলাম। তিশা ডাক দেওয়াতে তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দিয়ে রুমের দিকে এগুলাম।

তিশা বিছানার উপর বসে ফোন টিপছে।
আমি: ডাকছিলি কেন
তিশা: তোর ফোন কোথায়
আমি: আমার হাতেই তো
তিশা: কাব্য’র সাথে কথা হয়েছে
আমি: হুম
তিশা: বাব্বাহ্ আমার অজান্তে এতো কিছু
আমি: তিশা তেলে আর জলে মিশ খায় না কখনো
তিশা: মানে
আমি: মানেটা খুব সহজ কাব্য’র সাথে আমাকে মানায় না।
তিশা: কেন তোর কোনদিকে কমতি আছে। আর তুই না সবসময় বলিস তোর আব্বু আম্মুর পর আমিই তোকে বোনের মতো সঠিক শিক্ষা দিয়েছি, নিজেকে অযোগ্য মনে করাটা তো আমার শিক্ষায় পরে না।
আমি: তিশা আমি নিজেকে অযোগ্য মনে করছি না বুঝার চেষ্টা কর…
তিশা: অযোগ্য মনে করছিস নাতো কি, কাব্য’র সাথে তোকে মানাবে না কেন।
আমি: তিশা বুঝার চেষ্টা কর
তিশা: তুই ভালো করে বুঝ আর হ্যাঁ কখনো নিজেকে অযোগ্য মনে করবি না। মনে রাখিস প্রত্যেকটা মানুষের ভিতরেই কিছুনা কিছু গুণ থাকে।
আমি: দ্যাত
তিশা: চলে যাচ্ছিস কেন।
তিশার কথার উত্তর না দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। খুব রাগ হচ্ছে, কাব্য নাহয় না বুঝে পাগলামি করছে কিন্তু তিশা কেন বুঝতে চাইছে না কাব্য আর আমাকে যে মানায় না। কাব্য দেখতে যেমন স্মার্ট তেমনি আবার ডাক্তার আর আমি, কি আছে আমার…? এসএসসি দেওয়ার পর আব্বু আম্মু মারা গেলেন পড়ালেখা বাদ হয়ে গেলো, কতো স্বপ্ন দেখতাম এই দুবছরে সব স্বপ্ন একে একে কবর দিয়ে দিয়েছি। তাছাড়া আমি দেখতে কালো কাব্য’র সাথে কোনো ভাবেই মানাবে না।

নিশ্চুপ হয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। প্রতিটা মুহূর্তে মনে হচ্ছে কাব্য ভুল করছে। পরক্ষণেই মনে হলো কাব্য নাহয় ভুল করছে কিন্তু আমি কি করছি, আমিও তো ভুল করছি। কাব্য’র কথা ভাবছি, ওর হাসিগুলো মনে করে নিজের অজান্তেই হাসছি কেন করছি এমন…? কাব্য মোহে আটকে আছে দুদিন গেলে মোহ কেটে যাবে তারপর আমি…? তখন তো আমায় কাঁদতে হবে। ফোন বেজে উঠলো, আবারো অচেনা নাম্বার। কিসের টানে যেন একটু তাড়াতাড়িই রিসিভ করলাম। কিন্তু এখন আর চেনা কন্ঠ ভেসে আসেনি একটা অপরিচিত কন্ঠ ভেসে আসলো।
–তিলোত্তমা বলছেন
আমি: হ্যাঁ আপনি কে
–তানভীর
আমি: কে তানভ…
তানভীর: আসলে আমার সাথে আপনার বিয়ের কথা চলছে (বাহ্ মামি তো দেখছি এক পা দু পা নয় একেবারে দশ পা এগিয়ে আছে, ছেলেকে আমার নাম্বারও দিয়ে দিলো)
তানভীর: কিছু বলছেন না যে
আমি: এমনি
তানভীর: আপনি দেখতে যেমন মিষ্টি তেমনি আপনার কন্ঠ…
আমি: আমাকে দেখলেন কোথায়
তানভীর: আপনার পিক দেখেছি আর নিজের অজান্তেই প্রথম দেখায় আপনার প্রেমে পড়ে গেছি (উফফ আবার সেই প্রথম দেখা। প্রথম দেখায় ভালোবাসার চৌদ্দ গোষ্ঠী কিলাই)
তানভীর: আপনার মনে হয় আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না
আমি: আসলে তা নয় (উফফ কিভাবে বুঝাই সত্যি ভালো লাগছে না)
তানভীর: আগে তো পিক দেখেছি তিনদিন পর দেখা হবে সামনাসামনি, হয়তো আবারো আপনার প্রেমে পরবো। রাখছি এখন।
আমি: হুম ঠিক আছে।
মামি আবারো ওদের আসার জন্য তারিখ দিয়ে দিলো, অবশ্য এখন মামির দোষ নেই আমি নিজেই তো বলছিলাম দুদিন পর যেন আসতে বলে।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার আকাশ দেখছি। নিজেকে বড্ড একা লাগছে। আচ্ছা আব্বু আম্মুর কাছে থাকলে কি আমার নিজেকে এমন একা মনে হতো…?
দূর থেকে আযানের শব্দ ভেসে আসছে শুনে নামাজ পড়তে রুমে চলে আসলাম।
নামাজ পড়ে জায়নামাজেই বসে আছি মন যেন খুব করে আল্লাহ্‌ কে একটা কথাই বলতে চাইছে “আমার জন্য যা ভালো তাই করো, আমাকে সঠিক পথ দেখাও আল্লাহ্‌)
মামি: তমা নামাজ শেষ হয়েছে কথা ছিল
আমি: হ্যাঁ এসো (মামি এসে আমার পাশে বসলেন, আজ মামিকে অন্যরকম লাগছে)
মামি: ওদেরকে আসতে বলেছি তুই আবার রাগ করবি নাতো
আমি: (নিশ্চুপ)
মামি: মানছি তোর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি কিন্তু তুই তো আমার মেয়ের মতো তাই আমি চাই তোর ভালো জায়গায় বিয়ে হউক।
আমি: তোমার যা ভালো মনে হয় তাই করো (কি আর বলার আছে আমার, বিয়ে করবো না বললেই তো মামি আবার শুরু করবে)

মামির দেওয়া লাল পাড়ের সাদা শাড়িটা পরনে, কানে ছোট ছোট লাল রঙের দুইটা দোল, চোখে গাড়ো করে কাজল টানা, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, চুলগুলো খোঁপা করা। আয়নার সামনে বসে নিজেকে দেখছি, আজ মামির পছন্দে সেজেছি কারণ আজ আমাকে দেখতে আসবে। মধ্যে যে কিভাবে তিনটা দিন কেটে গেলো বুঝতেই পারিনি। সেদিন সকালে ফোন কেটে দেওয়ার পর কাব্য আর আমাকে ফোন করেনি। অবশ্য না করারই তো কথা, মোহ কেটে গেছে হয়তো।
মামি: তমা তোর হলো
আমি: হ্যাঁ মামি এইতো শেষ।

জানালার কাছে দাঁড়িয়ে মামির জন্য অপেক্ষা করছি, হয়তো এখনি এসে ডাক দিবে মেহমানদের সামনে যাওয়ার জন্য। তিশা রেগে আছে কারণ আমি মামির কথাতে রাজি হয়েছি। তিশা, আন্টি বা আঙ্কেল কেউ আসেনি আজ আমার কাছে। সবাই আমার উপর রেগে আছে কিন্তু কেউ এইটা বুঝছে না যে আমি মামির কথা না শুনলে আবার অশান্তি হবে, মামি আমার সাথে খারাপ আচরণ করবে। তাছাড়া মামি আর তিশাদের ঘাড়ে চেপে আর কতোদিন থাকবো বিয়ে হয়ে গেলেই ভালো।
মামি: তমা
আমি: হ্যাঁ মামি
মামি: বাহ্ লাল পাড়ের সাদা শাড়িতে তো তোকে খুব সুন্দর লাগছে
আমি: শ্যামলা মেয়েদের কারো চোখে সুন্দর লাগে না গো মামি যেটুকু লাগে সেটা হলো ক্ষণিকের জন্য মোহ
মামি: উহু দেখিস ওরা তোকে দেখে খুব পছন্দ করবে
আমি: (খুব কষ্টে মুখে একটু হাসি আনার চেষ্টা করলাম)
মামি: কিছুক্ষণ পরই ওরা তোকে দেখতে চাইবে আমি এসে নিয়ে যাবো লক্ষী মেয়ের মতো থাকবি বুঝেছিস
আমি: হু।

মামি চলে গেলেন আবারো জানালার বাইরে চোখ রাখলাম। আকাশ দেখছি আর দুবছর আগের কথা ভাবছি। আম্মু আব্বু মারা যাওয়ার পর মামা আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিলেন আর সেদিন থেকে শুরু হয়েছিল মামির অত্যাচার। প্রথম প্রথম এসব শুনে শুধু কাঁদতাম একটা সময় নিজেকে খুব একা মনে হয়। সিদ্ধান্ত নেই এসব যন্ত্রণার চেয়ে আত্মহত্যা করা অনেক ভালো। হ্যাঁ সেদিন মাথার উপরে থাকা পাখাটায় ওড়নাও বেধে ফেলেছিলাম কিন্তু আত্মহত্যা করা হয়নি। বার বার একটা কথাই মাথায় আসছিল “আত্মহত্যা মহা পাপ” কষ্ট তো আর চিরস্থায়ী থাকবে না কষ্টের পরই তো সুখ আসে। ফোন বেজে উঠলো, হাতে নিয়ে দেখি তিশা।
আমি: হুম বল
তিশা: তুই কি সত্যি বিয়েটা করছিস
আমি: বিয়ে করছি মানে আজ তো শুধু দেখতে আসছে
তিশা: যদি বিয়ে ঠিক হয়ে যায়
আমি: তুই কি রাজি না
তিশা: না
আমি: ওকে দেখে যাক আমি মামিকে বলে দিবো ছেলে পছন্দ হয়নি
তিশা: ছেলে দেখতে কাব্য’র মতোই, পছন্দ হয়নি বললেই তোর মামি শুনবে নাকি।
আমি: সেটা আমার উপর ছেড়ে দে, তুই যেখানে রাজি না সেখানে আমি বিয়ে করবো না।
তিশা: কাব্য এসব শুনলে খুব কষ্ট পাবেরে
আমি: কাব্য কাব্য করিস না তো
তিশা: কাব্য’র ফোন অফ সকাল থেকে তাই যা খুশি করতে পারতেছিস
আমি: নাহলে কাব্য কি করতো
তিশা: তোকে এসে তোলে নিয়ে যেত
আমি: শুন তিশা ওর মোহ কেটে গেছে, আগে যে কান্নাকাটি করেছে এসব আবেগ ছিল আর এখন সবকিছু ও বুঝতে পেরেছে তা…
তিশা: তোকে আমার বুঝানোর ক্ষমতা নেই।
ফোন কেটে দিলো, শুধু কাব্য কাব্য করে উফফ ভাল্লাগেনা আর।

মামি: তমা চল মা
আমি: হুম।
মামির সাথে মেহমানদের সামনে আসলাম সত্যি এখন খুব কষ্ট হচ্ছে, কষ্টটা বোধহয় কাব্য’র জন্যই হচ্ছে। দুদিনের জন্য আবেগ দেখাতে এসেছিল আর আমি বোকার মতো ওকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে দিয়েছিলাম। এখন বোকামির ফল পাচ্ছি, প্রতিটা মুহূর্তে ওর কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছি।
ছেলের মা: আমরা তো আগেই দেখেছি তানভীর আলাদা কথা বলুক পছন্দ হলে আমরা রিং পড়িয়ে যাবো (রিং পড়িয়ে যাবে, কি বলছে এসব। তিশা শুনলে আমাকে আস্ত রাখবে না আর আমিও তো এভাবে হুট করে…)
মামি: তমা ওকে তোর রুমে নিয়ে যা
আমি: হুম।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি, পাশে তানভীর।
তানভীর: বলেছিলাম না সামনাসামনি দেখলে হয়তো আবারো আপনার প্রেমে পড়ে যাবো, সত্যি আবারো আপনার প্রেমে পড়ে গেছি আর আপনার নামটাও খুব সুন্দর ‘তিলোত্তমা’ (আসছে আরেকজন আবেগ+মোহ দেখাতে অসহ্য)
তানভীর: আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে আপনার কোনো আপত্তি না থাকলে…
আমি: এভাবে হুট করে আমি বি…
তানভীর: আমি সোজা কথা বলতেই পছন্দ করি, আপনার কি কোনো রিলেশন আছে, আই মিন কাউকে ভালোবাসেন।
আমি: (নিশ্চুপ হয়ে আছি শুধু একটা নামই বার বার মনে পড়ছে ‘কাব্য’ তাহলে কি আমি কাব্য’কে সত্যি ভালোবাসি। কিন্তু কাব্য তো আমাকে ভালোবাসে না দুদিনের মোহে আটকে ছিল ও আর এখন চলেও গেছে)
তানভীর: আর কিছু বলতে হবে না আপনার নিশ্চুপ হয়ে থাকাতেই আমি উত্তর পেয়ে গেছি। (অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে কি উত্তর পেলো তানভীর। আর তিশার কথাই তো সত্যি তানভীর দেখতে কাব্য’র মতোই, কোন অজুহাতে এখন আমি বিয়েটা ভাঙবো। পছন্দ হয়নি বললে মামি শুনবে না, তিশা আমাকে আস্ত রাখবে না আর এই বিয়েটা আমিও করতে চাই না এখন কি করবো)
তানিভীর: কিছু বলবেন নাকি আমি আমার সিদ্ধান্ত সবাইকে গিয়ে জানিয়ে দিবো।
আমি: এই বিয়েটা আমি করতে… (ফোন বেজে উঠলো তিশা ফোন দিয়েছে দেখে তাড়াতাড়ি রিসিভ করলাম)
তিশা: যদি এই বিয়েটা করিস তাহলে আমাকে হারাবি
আমি: তিশা আমার কথা শুন…
তিশা ফোন কেটে দিলো, পিছনে তাকিয়ে দেখি তানভীর নেই। তানভীর আবার গিয়ে ওর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিবে নাতো…? কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ও…? আমি এই বিয়ে করতে পারবো না। দৌড়ে ড্রয়িংরুমে আসলাম।

আসতে মনে হয় অনেক দেরি হয়ে গেছে, সবাই হাসছে আর মিষ্টি খাচ্ছে। তানভীর এর দিকে তাকালাম ও আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।
মামি: তমা উনারা আজকেই বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে চান
আমি: মানে
মামি: হ্যাঁ তোকে উনাদের খুব পছন্দ হয়েছে তাই আজকেই…
আমি: কিন্তু আমি আজকে বিয়েটা করতে পারবো না
তানভীর: কেন আপনার সাথে কথা বলে তো মনে হলো আপনি রাজি আছেন
আমি: একবারো কি আপনাকে বলেছি আমি রাজি
তানভীর: তা বলেননি কিন্তু রাজি না এইটাও তো বলেননি
আমি: রাজি না বলতে চাচ্চিলাম তখনি তো ফোন বেজে উঠলো আর আপনি চলে এসে বলে দিলেন আজকেই বিয়ে করতে চান।
তানভীর: আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে শুধু তাই নয় আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি তাই আজকেই বিয়েটা করতে চেয়েছি।
আমি: কিন্তু আমি…
মামি: তমা হচ্ছেটা কি।
মামি আমাকে টানতে টানতে রুমে নিয়ে আসলো।

মামি: তমা এমন করার তো কথা ছিল না
আমি: আজকেই যে বিয়ে হবে এইটাও তো কথা ছিল না। আমি শুধু তোমার ভয়ে রাজি হয়েছিলাম তাই বলে বিয়ে করতে হবে নাকি।
মামি: কেন করতে পারবি না ছেলেটার কোন দিকে কমতি আছে।
আমি: তা বলছি না মামি আমি বিয়েটা করতে পারবো না বুঝার চেষ্টা করো।
মামি: তুই বিয়েটা করবি আর আজকেই করবি তোর মামার দিব্বি। (মামির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি মামাকে দিয়ে দিব্বি দিতে পারলো, এখন আমি কি করবো। মামি আমাকে সবার সামনে নিয়ে আসলো)
মামি: তমা রাজি হয়েছে আসলে ছোট মেয়ে তো তাই…
ছেলের মা: কোন সমস্যা নেই আপনারা বিয়ের আয়োজন করুন সন্ধ্যা নেমে এসেছে তো রাতেই বিয়ে হবে
মামি: ঠিক আছে।
বোবার মতো দাঁড়িয়ে আছি, দুচোখ দিয়ে বৃষ্টির মতো পানি ঝরছে। মামি আমার সাথে এমন করতে পারলো। বিয়ে আটকানোর কোনো রাস্তা নেই মামি দিব্বি দিয়ে দিয়েছে তাও মামার, আজ বুঝি আমার বিয়েটা হয়েই যাবে। কাব্য’র হাসিটা বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে, আর বোধহয় ওর মিষ্টি হাসিটা কখনো দেখতে পারবো না।

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ৩

0
রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

নিজের বাবা মা’কে তো খেয়েছে অনেক আগেই এখন এসে আমার গাড়ে চেপে বসেছে। আর উনি মরার সময় আমার হাত ধরে বলে গেছেন “আমার ভাগ্নিটাকে দেখো” যত্তোসব জ্বালা আমার। নেহাত ওর নামে বাপ মায়ের দেওয়া কিছু সম্পত্তি আছে তাই এতো জ্বালা সহ্য করছি নাহলে তো কবেই….
আমি: নাহলে কবেই কি মামি, মেরে ফেলতে আমাকে…?
মামি: আপনি এসেছেন সময় হলো আপনার আসার
আমি: মতলবটা কি মামি বলবা
মামি: মানে
আমি: আমাকে সহ্যই তো করতে পারো না তাহলে আমি চোখের সামনে নেই বলে এতো তাড়া দিয়ে নিয়ে আসলে কেন
মামি: ও তুই বুঝবি না।
রুমে চলে আসলাম, কি যে চলছে এই মহিলার মাথায় আল্লাহ্‌ জানেন।

জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বিকেলের আকাশ দেখছি। মন যেন কাউকে খুব মিস করছে, কাকে মিস করছে…? কাব্য…? কিন্তু ও কে আমার ওর জন্য এতো মন খারাপ হচ্ছে কেন। আচ্ছা আমি যে কাব্য’কে এতো মিস করছি ও কি আমায় মিস করছে নাকি চোখের আড়াল হতেই ভুলে গিয়েছে আমাকে…?
হঠাৎ তিশা আর মামির চেঁচামেচি শুনে তাড়াতাড়ি বের হলাম।
তিশা: আপনার মতো খারাপ মহিলা আর একটাও দেখিনি
আমি: কি হইছেরে তিশা
মামি: কি আর হবে প্রতিদিনই তো তোর বান্ধবী আমাকে যাতা বলে
আমি: তোমার স্বভাবে শুনো
তিশা: আসছিলাম তোকে ডাকতে সেই সকাল বেলায় অল্প কিছু খেয়ে বের হইছিলাম বিকেল হয়ে গেছে এই বাসায় তো খাবার খাওয়ার কোনো টাইম নেই তাই তোকে নিতে আসছিলাম আর এই মহিলা তুই যাবি না বলে আমার সাথে ঝগড়া শুরু করে দিছে
আমি: ওহ বাদদে এসব আমার খিদে নেই একেবারে রাতে খাবো
তিশা: কি হইছে তোর চোখমুখ এমন লাগছে কেন
আমি: কিছুনা
তিশা: হুম বুঝেছি।
রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। কাব্য’র কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।

তিশা: তমা উঠ রাত হয়ে গেছে (তিশার ডাকে তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম। আশ্চর্য রাত হয়ে গেলো অথচ মামি আমাকে রান্না করার জন্য বকাবকি করলো না)
তিশা: কি ভাবছিস
আমি: মামি হঠাৎ পাল্টে গেলো কেন, আগে তো কাজের জন্য বকাবকি করতো। অন্যকিছু করবো দূরে থাক কাজের জন্য ঠিকমতো নামাজও পড়তে পারতাম না। আর আজ সেই বিকেল বেলা থেকে রাত অব্ধি ঘুমালাম বকাবকি করলো না।
তিশা: আমি সিউর এই মহিলা তোকে নিয়ে খারাপ কোনো মতলবে আছে
আমি: আর খারাপ কিবা করবে যা খারাপ আচরণ করে
তিশা: চল আম্মু আব্বু অপেক্ষা করছেন তোর জন্য
আমি: ঘুমের কারণে তো নামাজ পড়া হয়নি তুই যা নামাজ পড়ে আসছি
তিশা: ঠিক আছে।

নামাজ পড়ে তিশাদের বাসায় যাওয়ার জন্য বের হতেই মামি ডাক দিলেন।
আমি: কিছু বলবে
মামি: হ্যাঁ তোর সাথে কথা আছে
আমি: বলো
মামি: তোর জন্য ভালো একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছে ভাবছি তোকে বিয়ে দিয়ে আমার দায়িত্ব শেষ করবো
আমি: বাহ্ যে মামির চোখে আমি বিষ সে নাকি আমাকে ভালো জায়গায় বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে
মামি: শুন আমি এতোটাও খারাপ না
আমি: হ্যাঁ তুমি কতোটা ভালো আমি জানি তো
মামি: চলে যাচ্ছিস যে কিছু তো বলে যা।
মামির কথার উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে আসলাম। বিয়ে দিবে যত্তোসব।

সবাই একসাথে খেতে বসেছি তখন আঙ্কেল মানে তিশার আব্বু আবার বিয়ের কথা বললেন।
তিশা: আব্বু আমি ভাবছিলাম তোমাকে বলবো কিন্তু এখন মত পাল্টে নিয়েছি
আঙ্কেল: কেন তমাকে বিয়ে দিতে হবে না নাকি। তুই কি চাস ওর মামি হুট করে যার তার সাথে ওকে বিয়ে দিয়ে দিক।
তিশা: না আব্বু আমি তোমাকে পরে সব বলবো আপাতত বিয়ে নিয়ে কিছু ভেবো না
আন্টি: আমি আরো ভাবছিলাম আমার দুই মেয়ের বিয়ে একদিনে দিয়ে দিবো
আমি: সবাই বিয়ে বিয়ে করছ আমি তোমাদের ছেড়ে গেলে তো
তিশা: রাজকুমার এসে তুলে নিয়ে যাবে
আঙ্কেল: হাহাহা আছে নাকি কোনো রাজকুমার
তিশা: হ্যাঁ আব্বু আছে এজন্যই তো বললাম আপাতত বিয়ে নিয়ে কিছু ভেবো না
আমি: তিশা চুপ করবি
তিশা: হুম করলাম। শুন ওই মহিলার আচরণ আমার ভালো লাগছে না এখন থেকে রাতে তুই আমার সাথেই থাকবি।
আমি: হুম ঠিক আছে।

তিশার সাথে বসে গল্প করছি হঠাৎ মামি এসে ডাকতে শুরু করলো।
আমি: কি হইছে
মামি: বাসায় চল
তিশা: তমা এখন থেকে রাতে আমার কাছেই ঘুমাবে
মামি: কেন আমার বাসায় বুঝি জায়গার অভাব আছে
তিশা: না তবে ভালোবাসার যথেষ্ট অভাব আছে
মামি: দেখ তমা আমার কথা শুনে চলে আয়
আমি: পারবো না
মামি: কাল তোকে দেখতে আসবে, ওরা যদি এসে শুনে তুই রাতে অন্য বাসায় ঘুমাস তাহলে তো আমার মান সম্মান কিছুই থাকবে না
আমি: তোমার আবার মান সম্মান। আর তুমি আমাকে জিজ্ঞেস না করে আসতে বললে কেন।
মামি: তো কি হইছে
আমি: নিজেই দেখা করো আমি যাবো না ওদের সামনে
মামি: লক্ষী মা এমন করে না আমি আর তোর সাথে খারাপ আচরণ করবো না তুই শুধু ওদের সামনে যাস
আমি: ঠিক আছে তবে কাল না দুদিন পর আসতে বলো
মামি: ঠিক আছে
আমি: এখন যাও আমি তিশার কাছেই থাকবো। (মামি চলে যেতেই তিশা আমার হাত জোরে চেপে ধরলো, ওর চোখ দুটু রাগে লাল হয়ে আছে)
আমি: কি হইছে
তিশা: তুই ছেলে পক্ষকে আসতে বলে দিলি তারমানে তুই তোর মামির পছন্দে বিয়ে করবি
আমি: বিয়ে করবো বলেছি নাকি, মামির কথা না শুনলে আরো বেশি খারাপ আচরণ করবে তাই রাজি হয়েছি।
তিশা: কাব্য শুনলে খুব কষ্ট পাবেরে
আমি: মানে কি এখানে কাব্য আসলো কোথা থেকে আর ও জানবেই বা কিভাবে।
তিশা: জানবে জানবে
আমি: জানলেই বা কি, শুন এসব এক দেখায় ভালোবাসা হয়না শুধুমাত্র একটুখানি ভালোলাগা জন্মায় মনের মধ্যে, এইটা ক্ষণিকের জন্য মোহ ছাড়া আর কিছুই না। চোখের আড়াল হলে দুদিন যেতেই এই মোহ কেটে যায় বুঝেছিস।
তিশা: কাব্য তোর এই ধারণা পাল্টে দিবে দেখিস
আমি: তুই এতো জোর দিয়ে বলছিস কিভাবে…? এই কাব্য’র সাথে তোর যোগাযোগ নেই তো…?
তিশা: অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়।
তিশা চুপচাপ শুয়ে পড়লো কিন্তু আমার কথার উত্তর তো দিলো না। তারমানে কি তিশা কাব্য’র সাথে কথা বলে, যোগাযোগ আছে ওদের মধ্যে…? কি জানি থাকলে থাকুক ওদের মধ্যে যোগাযোগ তাতে আমার কি। ভাববো না আর কাব্য’র কথা। চুপচাপ শুয়ে পড়লাম।

সকালে তিশার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো তাড়াতাড়ি উঠে নামাজ পড়ে নিলাম। তিশা নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো কিন্তু আমার তো আর ঘুম আসবে না একা একা কি করবো, বাসায় থাকলে তো এখন রান্না করতাম। বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, চারপাশে ভোরের আলো ফুঁটতে শুরু করেছে। হঠাৎ বাগানের দিকে চোখ পড়লো, তিশা খুব যত্ন করে এই বাগান তৈরি করেছে। বাগানে অনেক ফুল ফুটেছে দেখে যেতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু এই ভোরবেলা একা একা বাগানে যাওয়া কি ঠিক হবে ভেবে পাচ্ছি না। দুর যাই কিছু হবে না, রুম থেকে মোবাইলটা এনে বাগানের দিকে পা বাড়ালাম।

খালি পায়ে বাগানের মধ্যে হাটছি। ভোরবেলা শিশিরে ভেজা ঘাসের উপর খালি পায়ে হাটার মজাই আলাদা, এতে মন শরীর দুটুই ভালো থাকে। আর ফজরের নামাজ পড়ে এসে একটু হাটাহাটি করলে তো মনে শান্তি বিরাজ করে, সাথে ভোরের আলো ফোটার সুন্দর দৃশ্য, পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ আর সূর্য উঠার অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করা যায়। ছোটবেলায় একদিন আব্বু বলেছিলেন “নামাজে যে শান্তি আছে সে শান্তি আর কোথাও খুঁজে পাবে না। তোমার মন খারাপ নামাজ পড়ো মন ভালো হয়ে যাবে, তোমার নিজেকে একা লাগছে তাহলে নামাজ পড়ো আর নিজেকে একা মনে হবে না কারণ নামাজে আল্লহকে কাছে পাওয়া যায়, তুমি কোনো বিপদে পড়েছ কি করবে ভেবে পাচ্ছ না তাহলে নামাজ পড়ো আল্লাহ্‌ তোমাকে সাহায্য করবেন, তুমি সবসময় আল্লাহর এবাদত করো আল্লাহ্‌ তোমাকে সবসময় সাহায্য করবেন” আব্বুর কথা গুলো সেদিন মুখস্থ করে ফেলেছিলাম সাথে সেদিন থেকে নামাজ পড়া শুরু করেছিলাম আজো পড়ছি। মধ্যে আব্বু আম্মুর হঠাৎ মৃত্যুতে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম নামাজও ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আল্লাহ্‌ আমাকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য আমার জীবনে তিশাকে পাঠালেন। তিশা সবসময় বুঝিয়েছে কখনো হতাশ হতে নেই সবসময় আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হয়। আব্বু আম্মুর মৃত্যুতে এতোটাই কষ্ট পেয়েছিলাম যে ভুলেই গিয়েছিলাম এই পৃথিবীতে কেউ চিরস্থায়ী নয়, সবাইকে একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে তাই আপনজনদের মৃত্যুতে আল্লাহকে ভুলে যেতে নেই।

আব্বু আম্মুর কথা মনে পড়াতে কখন যে দুচোখ দিয়ে পানি পড়ে গাল দুটু ভিজে গেছে বুঝতেই পারিনি। কয়টা বাজে দেখার জন্য মোবাইলে চাপ দিলাম কিন্তু মোবাইল তো অফ করা। তারমানে সারারাত মোবাইল অফ ছিল। মোবাইল অন করার সাথে সাথে ফোন আসলো, একটা অচেনা নাম্বার। এতো সকালে কে ফোন দিতে পারে তাও মোবাইল অন করার সাথে সাথে ভেবে পাচ্ছি না। সাধারণত অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসলে আমি রিসিভ করিনা কিন্তু এই ফোনটা রিসিভ করতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমার মন এই ফোনের জন্যই অপেক্ষা করছিল কিন্তু… রিসিভ করতেই একটা চেনা কন্ঠ ভেসে আসলো।
কাব্য: তিলো ও তিলো ফোন অফ করে রেখেছিলে কেন
আমি: (নিশ্চুপ হয়ে ওর কান্না শুনছি পাগলের মতো কাঁদছে)
কাব্য: কাল সন্ধ্যা থেকে ফোন দিচ্ছি সারারাত ফোন দিয়েই গেছি কিন্তু তোমার ফোন অফ আর এই তিশা গাদিটা তো ফোন রিসিভই করছে ন…. (কাব্য আটকে গেলো অর্ধেক কথা বলে, তারমানে তিশা আর কাব্য’র যোগাযোগ আছে আমার ধারনাই ঠিক। কিন্তু ওরা আমার থেকে লুকাচ্ছে কেন)
কাব্য: জানো আমি কতোটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তোমার ফোন অফ দেখে, আমার তো ইচ্ছে হচ্ছিল রাতেই ঢাকা চলে যাই তোমার কাছে। কিন্তু কোনো উপায় ছিল না তাই সারারাত ট্রাই করেছি তোমার ফোন সারারাত অফ ছিল। (নিশ্চুপ হয়ে শুধু ওর কথা শুনছি কারণ কিছু বলার নেই আমার)
কাব্য: সারারাত আমাকে টেনশন দিয়ে আমার ঘুম নষ্ট করে এখন চুপ হয়ে আছ (একটা মানুষ কাউকে প্রথম দেখায় এতোটা ভালোবাসতে পারে জানতাম না। আগে তিশাকে অনেক কথা শুনিয়েছি কিন্তু এখন কাব্য’র কান্না শুনে মনে হচ্ছে সত্যি ও আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু এইটাও কি সম্ভব, কেন এতো ভালোবাসে ও আমাকে…? কেন এতো কাঁদে আমার জন্য…?)
কাব্য: আমিও দেখবো তুমি কতোক্ষণ চুপ হয়ে থাকতে পারো (ও কাঁদছে আমি শুনছি কিন্তু দেখতে পারছি না তাও মনে হচ্ছে ওর চোখ থেকে টুপটুপ করে পড়া পানিগুলো আমার হৃদয় ভিজিয়ে দিচ্ছে। নিজের অজান্তেই আমার চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গাল বেয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়লো)
কাব্য: এই পাগলী একদম কাঁদবে না বলে দিচ্ছি। আমি কাঁদছি বলেই তো কাঁদছ আমি আর কাঁদবো না এইযে চোখের পানি মুছে নিলাম, প্লিজ তুমি কেঁদো না আমার কষ্ট হয়।
আমি নিশ্চুপ হয়ে আছি দেখে কাব্যও নিশ্চুপ হয়ে গেলো। ফোনের দুপ্রান্তে দুজন নিশ্চুপ হয়ে আছি আর একজন আরেকজনের নিঃশ্বাস শুনছি….

চলবে?

 

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ২

0

রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ২

লেখিকা: সুলতানা তমা

হসপিটাল থেকে হোটেল এ চলে আসলাম। রুমে এসেই বিছানায় শুয়ে পড়লাম। তিশার উপর খুব রাগ হচ্ছে এতোক্ষণ তো কাব্য’র কান্ড দেখে হাসছিল এখন আবার আমার সাথে আসেনি, কি যে করছে ওখানে। আর কাব্য কিসব করলো ভাবতেও পারিনি আজকের দিনটা এতো খারাপ ভাবে যাবে আমার। উফফস এখনো মনে হচ্ছে কাব্য আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, হাসছে আর বার বার কানের কাছে এসে একটাই কথা বলছে I Love U For A Thousand More.
কাব্য’র ভূত মাথা থেকে সরানোর জন্য মোবাইলটা হাতে নিয়ে গেইম খেলতে বসলাম।
তিশা: আসতে পারি ম্যাডাম (তিশা এসেছে ওর দিকে একবার তাকিয়ে আবার গেইম খেলায় মন দিলাম। কথা বলবো না আজ ওর সাথে)
তিশা: দোষ করলো ডাক্তার আর শাস্তি পাচ্ছি আমি
আমি: (নিশ্চুপ)
তিশা: কিরে কথা বলবি না আর এই সন্ধ্যা বেলায় একা একা চলে এসেছিলি কেন
আমি: তো কি করতাম তোর জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে কাব্য’র আরো পাগলামি দেখতাম
তিশা: বাব্বাহ্ ডাক্তারবাবু থেকে কাব্য (তিশা হাসছে ইচ্ছে হচ্ছে কয়েকটা দেই)
তিশা: যাই বল ছেলেটা কিন্তু দারুণ, এইটা তুই অস্বীকার করতে পারবি না। (আসলেই তো কাব্য দেখতে অনেক সুন্দর। ফর্সা লম্বা আর ফর্সা মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি দেখতে বেশ সুন্দর আর…)
তিশা: কিরে কোথায় হারালি
আমি: আমরা কাল চলে যাবো তাই না
তিশা: হ্যাঁ
আমি: আর কয়টা দিন থাকতে পারলে ভালো হতো
তিশা: কি ব্যাপার মনে হচ্ছে ডাক্তারবাবুর জন্য টান পড়েছে
আমি: তোকে তো এখন আমি মেরেই ফেলবো
তিশা: এই না না আর বলবো না
আমি: মামির কাছে ফিরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না তাই…
তিশা: হুম বুঝেছি কি করবো বল আব্বু তো অনেক চেষ্টা করেছেন তোকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু তোর মামি দিলো না। পাশাপাশি বাসায় থাকি আমরা তাও তোর মামির অত্যাচার থেকে তোকে রক্ষা করার উপায় নেই।
আমি: কখনো কখনো আপন মানুষ পর হয়ে যায় আবার কখনো পর মানুষ খুব বেশি আপন হয়ে যায়। আব্বু আম্মুর মৃত্যুর পর মামার কাছে চলে আসি প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে তোর সাথে পরিচয়, একটা সময় তুই তোর পরিবার আমাকে আপন করে নিলি। কিন্তু মামি আমার আপন হয়েও আমাকে পর করে দিলো। দুনিয়ার নিয়ম খুব অদ্ভুতরে।
তিশা: হ্যাঁ এবার কাব্য তোকে আপন করে নিলেই আমি নিশ্চিন্ত হতে পারি
আমি: কি বললি
তিশা: কিছু নাতো
আমি: এখনি তো আস্তে আস্তে কি যেন বললি
তিশা: আমার মনে হয় কাব্য তোকে সত্যি ভালোবাসে
আমি: ছাই ভালোবাসে এভাবে হুট করে ভালোবাসা যায় নাকি
তিশা: কতো মানুষ তো প্রথম দেখায় ভালোবাসে তাহলে কাব্য কেন পারবে না
আমি: প্রথম দেখা… আসলে দোষটা আমার, সবসময় তো আমি বোরকা পরেই চলাফেরা করি তাহলে কাল কেন এভাবে বের হই আর কাব্য’র চোখে পড়ি।
তিশা: কক্সবাজার এসে কেউ বোরকা পরে সমুদ্রের পাড়ে ঘুরতে যায় নাকি আর তুই কি জানতি যে এই অবস্থায় হসপিটাল যেতে হবে।
আমি: তাও বোরকা পড়লে কাব্য কেন কোনো ছেলেই তো আমার দিকে…
তিশা: যে সত্যি তোকে ভালোবাসবে সে তোকে বোরকা পড়া অবস্থাতেই চিনবে এবং ভালোবাসবে।
আমি: তাই বুঝি
তিশা: জ্বী এবার খেয়েদেয়ে ঘুমান সকালে চলে যেতে হবে।

বিছানায় শুয়ে আছি কিন্তু ঘুম আসছে না চোখে। গত দুদিন এখানে ছিলাম মনে হয়েছিল কোনো এক শান্তির রাজ্যে আছি কিন্তু এই শান্তি তো কালই শেষ হয়ে যাবে। আবার শুরু হবে মামির চেঁচামেচি, একটু কিছু হলেই আম্মু আব্বুকে নিয়ে গালাগালি, এসব অসহ্য লাগে। তিশা আর আঙ্কেল মামিকে কতো কিছু বুঝিয়ে কক্সবাজার আসার ব্যবস্থা করলো কিন্তু মামি শুধু দুদিনের সময় দিলো, তাও তিশা মেনে নিয়েছিল শুধুমাত্র আমাকে একটু খুশি দেখার জন্য। তিশার দিকে তাকালাম চুপচাপ ঘুমিয়ে আছে, ওর ঘুমন্ত মুখটা কি নিষ্পাপ লাগছে। সত্যি তিশার মতো মেয়ে আরেকটা আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে। যেখানে আজকের দিনে সবাই নিজের স্বার্থ নিয়ে পাগল সেখানে তিশা কিনা আমাকে এতো ভালোবাসে আমার জন্য এতোকিছু করে।

তিশা: তমা উঠ নামাজ পড়বি না
আমি: উহু পরে
তিশা: উঠ বলছি।
তিশা আমার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলো। চোখ ডলতে ডলতে ওর দিকে তাকালাম, নামাজ পড়ার জন্য রেডি হয়ে আছে। তিশার এই জিনিসটা আমার খুব ভালো লাগে যতোই ভালোবাসুক নামায না পড়লে তিশা খুব রেগে যায়।
তিশা: যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ওজু করে আয়
আমি: ওকে মহারাণী।

নামাজ পড়ে এসে দুজন বসে বসে চা খাচ্ছি তখনি আমার ফোন বেজে উঠলো। উফফফ আবার মামির ফোন।
আমি: হ্যালো
মামি: কখন আসছিস তোরা
আমি: আচ্ছা মামি তুমি তো আমাকে সহ্য করতে পারো না তাহলে আমি দুদিনের জন্য এখানে আসাতে এতোবার ফোন করছ কেন তাড়াতাড়ি যেতে বলছ কেন। না মানে আমি বাসায় না থাকলে তো তোমার খুশি হবার কথা।
মামি: এতো পাকামো করতে হবে না। প্রয়োজন আছে তাড়াতাড়ি চলে আসিস।
আমি: হুম। (ফোন রেখে দিয়ে তিশার দিকে তাকালাম, ও ভ্রু কুঁচকিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো)
তিশা: তোর মামির মাথায় কি প্ল্যান চলছে বলতো
আমি: প্ল্যান
তিশা: হ্যাঁ, তোকে তো এই মহিলা কখনোই সহ্য করতে পারেনি আর তোর মামা মারা যাওয়ার পর তো রীতিমতো তোর উপর অত্যাচার শুরু করে দিয়েছে। কক্সবাজার এসেছিস দুদিনের জন্য তাই এতোবার ফোন করছে নিশ্চয় কোনো খারাপ মতলব আছে এই মহিলার।
আমি: দূর কি বলছিস এসব
তিশা: আচ্ছা তমা কাব্য ছেলেটাকে তোর ভালো লেগেছে তো (কাব্য’র কথা তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম)
আমি: কেন ভালো লাগবে ও কি কোনো দেশের রাজকুমার
তিশা: না তবে কোনো একজনের রাজকুমার (ওর সাথে যতো কথা বাড়াবো ততোই কাব্য’র ভূত আমার মাথায় চেপে বসবে)
আমি: চল ব্যাগ গুলো গুছিয়ে নেই
তিশা: ঠিক আছে।

সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে এসে বসলাম একটু পর চলে যাবো। চলে যাবো ভাবতেই মনে হলো এখান থেকে চলে গেলে তো কাব্য’র সাথে আর কখনো দেখা হবে না। আচ্ছা কাব্য’র সাথে আর কখনো দেখা হবে না এইটা ভাবতেই আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেন।
তিশা: তমা আমি ভাবছিলাম যাওয়ার পথে হসপিটালে গিয়ে ছেলেটাকে একবার দেখে যাই
আমি: হসপিটাল
তিশা: হ্যাঁ শুধু একবার দেখেই আমরা চলে যাবো
আমি: উহু আমি যাবো না
তিশা: যার জীবন বাঁচিয়েছিস তাকে একবার দেখবি না
আমি: কিন্তু ওখানে তো কাব্য আছে
তিশা: তো কি হইছে আমরা তো আজ বোরকা পড়ে যাবো ও তো চিনতেই পারবে না
আমি: ঠিক আছে।

হোটেল থেকে বেড়িয়ে সোজা হসপিটাল চলে আসলাম। আজ কাব্য আমাকে চিনতেই পারবে না ওর সামনে দিয়ে চলে যাবো হিহিহি। গতকাল যদি বোরকা পড়ে বের হতাম তাহলে এতোকিছু হতো না। বোরকা ছাড়া বের হলে তো যেকোনো ছেলের নজরে পড়বো এটাই স্বাভাবিক, কাব্যকে দোষ দিয়ে তো লাভ নেই দোষ তো আমার বোরকা পড়িনি।
তিশা: তমা এদিকে চল ছেলেটির কেবিনে যেতে পারবো
আমি: হুম।

ছেলেটির কেবিনে এসে চুপি দিলাম ও ঘুমিয়ে আছে, দেখে তো মনে হচ্ছে মোটামুটি সুস্থ।
তিশা: তমা তুই এদিক দিয়েই বাইরে যা আমি একটু আসছি
আমি: কোথায় যাচ্ছিস
তিশা: আসছি দুমিনিট।
এই তিশা আবার কোথায় চলে গেলো। দ্রুত হাটছি যেন কাব্য’র সামনে না পড়ি, হঠাৎ দেখি সামনে কাব্য এদিকেই আসছে। আসুক আমাকে তো আর চিনতে পারবে না কারণ আমার চোখ দুটু ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কাব্য’র সামনে দিয়ে চলে আসলাম কিন্তু বেশি দূর আসতে পারলাম না কে যেন ডেকে উঠলো।
“তিলো ও তিলো” আশ্চর্য আমার নাম ধরে এভাবে কে ডাকছে, পিছন ফিরে তাকালাম কাব্য দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু ও তো অন্যদিকে ঘুরে কিসের যেন একটা রিপোর্ট পড়ছে। যে খুশি ডাকুক আমি আগে এখান থেকে বের হই। পা বাড়াতেই কাব্য আমার হাত ধরে ফেললো।
কাব্য: তিলো কি ভেবেছিলে বোরকা পড়লে আমি তোমাকে চিনতে পারবো না (এইরে এইটা কি হলো ও তো চিনে ফেলছে)
কাব্য: আমি তোমাকে ভালোবাসি তাই তুমি যে অবস্থাতেই থাকো আমি ঠিক চিনতে পারবো (হাত ধরে টান দিয়ে ওর সামনে এনে দাড় করালো)
কাব্য: চলে যাচ্ছ আজকে (ওর কন্ঠ কেমন যেন ধরে আসছে, ওর দিকে তাকালাম ওর চোখে তো পানি। আমি চলে যাচ্ছি বলে ও কাঁদছে)
কাব্য: আমার রুমে চলো (আমাকে টানতে টানতে ওর রুমে নিয়ে আসলো। আমি বোবার মতো দাঁড়িয়ে আছি, আমাকে যেন চিনতে না পারে বোরকা পড়লাম কিন্তু ও তো ঠিকি চিনে ফেললো)
কাব্য: তিলো (আমাকে টান দিয়ে ওর একদম কাছে নিয়ে গেলো। একটা হাত দিয়ে আমার কোমর জরিয়ে ধরে আছে। ওর বুকের সাথে যেন মিশে যাচ্ছি, ওর প্রতিটা হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছি। আমার কপালের সাথে ওর কপাল ঠেকিয়ে কেঁদে দিলো)
আমি: কাঁদছেন কেন (আমি জিজ্ঞেস করতেই আচমকা আমাকে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরলো)
কাব্য: চলে যাচ্ছ কেন আর দুইটা দিন এখানে থাকো প্লিজ। আমি তোমাকে না দেখে থাকবো কিভাবে। (ওর কান্না কেন যেন ভালো লাগছে না, বুকের ভিতর কোথাও যেন কষ্ট হচ্ছে খুব)
আমি: আপনি এভাবে কাঁদলে আমি এখনি চলে যাবো
কাব্য: কোথায় আমি কাঁদছি না তো (আমাকে ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। খুব অসস্থি হচ্ছে ওর এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে কিন্তু কিছু বলতে পারছি না। আবার আমার কাছে এসে দুহাত দিয়ে আলতো করে আমার দুগালে ধরলো)
কাব্য: বোরকা পড়লে তোমায় খুব মিষ্টি লাগে সবসময় বোরকা পড়ে বের হবে বুঝেছ। বোরকা পরে বের হলে আমার বউটার দিকে অন্য কোনো ছেলে নজর দিতে পারবে না (বউ শব্দটা শুনে ওর চোখের দিকে তাকালাম সাথে সাথে ও চোখ টিপ মেরে বসলো, কি অসভ্য)
আমি: অনেক হয়েছে এবার ছাড়ুন আমাকে তিশা খুঁজছে হয়তো
কাব্য: উহু তিশা খুঁজবে না। আর তো কখনো দেখা হবে না তাহলে এতো তাড়া দিচ্ছ কেন।
আমি: (নিশ্চুপ)
কাব্য: ও তিলো
আমি: তিলো কে
কাব্য: তুমি, তিলোত্তমা এতো বড় নামে আমি আমার বউকে ডাকতে পারবো না তাই ঠিক করেছি তিলো নামে ডাকবো।
আমি: আর কখনো দেখা হলে তো ডাকতেন একবার যাই এখান থেকে আর কখনো আপনার সামনে আসবো না
কাব্য: এই আস্তে আস্তে কি বলছ
আমি: যেতে হবে এবার আমাকে ছাড়ুন
কাব্য: ছাড়তে পারি এক শর্তে আমাকে Love U বলো ছেড়ে দিবো
আমি: হুহ সখ কতো (এক ঝটকা দিয়ে ওকে দূরে সরিয়ে দিয়ে চলে আসলাম, দরজায় আসতেই আবার ডাক দিলো)
কাব্য: তিলো ও তিলো “I Love U” (ওর দিকে একবার তাকিয়ে বাইরে চলে আসলাম)

তিশা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আমার জন্য ইসস কাব্য’র জন্য কতো দেরি হয়ে গেলো।
তিশা: আসার সময় হলো আপনার
আমি: দুর কাব্য…
তিশা: জানি
আমি: জানিস মানে
তিশা: তোকে কাব্য’র কাছে দেখেই তো বাইরে এসে তোর জন্য অপেক্ষা করছি
আমি: ওর কাছে দেখলি অথচ আমাকে আনলি না
তিশা: কেন আনবো আমি তো জানি তুই কাব্য’র কাছে থাকলে সেইফ থাকবি
আমি: রাগাস না চল
তিশা: ওকে ম্যাডাম।

বাসে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। কাব্য’র ভেজা চোখ দুটু বার বার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ছেলেরা নাকি খুব বেশি কষ্ট না ফেলে কাঁদে না তাহলে কি কাব্য সত্যি আমাকে ভালোবাসে…? এতোক্ষণ তো কাব্য কাঁদছিল এখন তো আমার চোখ দুটু বার বার ভিজে যাচ্ছে। কেন যেন যেতে ইচ্ছে করছে না খুব কষ্ট হচ্ছে, মনে হচ্ছে এখানে কিছু একটা ফেলে রেখে যাচ্ছি অনেক মূল্যবান কিছু….

চলবে?

রোমান্টিক ডাক্তার পার্ট: ১

0

রোমান্টিক_ডাক্তার

পার্ট: ১

লেখিকা: সুলতানা তমা

তিশা: ওরে বাবারে আর দৌড়াতে পারছি না তমা দাঁড়া প্লিজ
আমি: হিহিহি দাঁড়াবো না
তিশা: এভাবে দৌড়ালে পড়ে যাবি তো
আমি: উঁহু পড়বো না
তিশা: আমার জন্য অন্তত দাঁড়া আর পারছি না প্লিজ
আমি: ওকে দাঁড়ালাম (তিশা আমার কাছে এসেই বালুতে দফ করে বসে পড়লো)
আমি: হিহিহি
তিশা: হাসছিস কেন
আমি: তোর হাপানো দেখে
তিশা: এমন অচেনা জায়গায় এভাবে কেউ দৌড়য়
আমি: অচেনা জায়গা বলেই তো এমন স্বাধীনভাবে…
তিশা: প্লিজ মন খারাপ করিস না তোকে একটুখানি স্বাধীনতা দেওয়ার জন্যই তো এতো বাহানা দিয়ে কক্সবাজার নিয়ে আসলাম
আমি: হুম এজন্য আপনাকে এত্তোগুলো উম্মম্মম্মম্মাহ
তিশা: পাগলী একটা
আমি: ওই আমি মোটেও পাগলী না
তিশা: এই বালুচরে দৌড়ে তোর যা অবস্থা হয়েছে এখন সত্যি তোকে পাগলী লাগছে
আমি: হুহ
তিশা: এভাবে যে দৌড়াচ্ছিলি পড়ে গিয়ে যদি ব্যথা পেতিস
আমি: ব্যথা সাড়ানোর জন্য তো তুই আছিস
তিশা: আমি তো আর সবসময় থাকবো না তোর বিয়ে হলেই…
আমি: আমি বিয়ে করবো না তোকে কতোদিন বলবো
তিশা: ইসস যখন মনের মানুষের সাথে দেখা হবে তখন এই তিশাকে ভুলেই যাবি
আমি: নারে তোকে কখনো ভুলতে পারবো না তুই তো শুধু আমার বান্ধবী না আমার বোন। তাছাড়া আম্মু আব্বু মারা যাওয়ার পর তুই তো আমাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছিস নাহলে এতোদিনে মামির অত্যাচারে আমি হয়তো…
তিশা: তমা প্লিজ একটু আনন্দের জন্য এখানে এসেছি আমরা, এসব প্লিজ মনে করিস না
আমি: ঠিক আছে
তিশা: এখন রুমে চল
আমি: ওকে।

রুমে এসে গোসল করে নিলাম। বালুচরে দৌড়ে সত্যি যা অবস্থা হয়েছিল পুরো পাগলী হয়ে গিয়েছিলাম।
গোসল করে রুমে আসতেই ফোন বেজে উঠলো। ‘মামি’ শব্দটা স্কিনে ভেসে উঠেছে দেখেই রাগ উঠে গেলো, ফোনটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি রিসিভ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কিন্তু ফোনটা বার বার বেজেই চলেছে। মাত্র দুদিনের জন্য কক্সবাজার এসেছি তাও এই মহিলা আমাকে শান্তি দিচ্ছে না বার বার ফোন করেই যাচ্ছে।
আমি: হ্যাঁ মামি বলো
মামি: ফোন রিসিভ করতে এতো সময় লাগে
আমি: গোসলে ছিলাম
মামি: এই বিকেল বেলায় গোসল কিসের
আমি: সবকিছুর হিসেব তোমাকে দিতে হবে নাকি
মামি: বাব্বাহ্ দূরে গিয়ে তো দেখছি তোর সাহস অনেক বেড়ে গেছে
আমি: হ্যাঁ বেড়েছে দুইটা দিন অন্তত শান্তিতে থাকতে দাও প্লিজ
মামি: একবার বাসায় ফিরে আয় বুঝাবো
আমি: দ্যাত।
ফোনটা কেটে দিলাম, এই মহিলার বকবক আর ভালো লাগে না। আম্মু আব্বু নেই বলে সবসময় আমাকে বকাঝকা করে আর ভাল্লাগেনা। ফোনটা বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে দিলাম।
তিশা: তমা (হঠাৎ কাধে তিশার হাতের স্পর্শে পিছনে তাকালাম)
তিশা: রেগে যাচ্ছিস কেন মাথা ঠান্ডা কর
আমি: আর ভালো লাগে নারে
তিশা: অনেক বার বলেছি যেটুকু সম্পত্তি তোর নামে আছে তা দিয়ে তোর চলে যাবে দূরে কোথাও চলে যা, শুনিসনি আমার কথা তাহলে এখন…
আমি: মামা মৃত্যুর সময় কি বলে গেছেন ভুলে গেছিস
তিশা: ভুলিনি তবে দেখিস তোর মামার প্রতি এই ভালোবাসা একদিন তোকে কাঁদাবে। তোর এই ভালোবাসার সুযোগ নিচ্ছে তোর মামি আর….
আমি: থেমে গেলি কেন আর কে বল
তিশা: কেউ না
আমি: হুম
তিশা: মন খারাপ করিস না দেখিস একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে
আমি: হ্যাঁ হবে কিন্তু আমি মরার পর
তিশা: উহু তার আগেই হবে আর খুব শীঘ্রই
আমি: তাই বুঝি
তিশা: হ্যাঁ একটা রাজকুমার আসবে আর তোকে তার রাজ্যে নিয়ে যাবে তোর সব কষ্ট ভুলিয়ে দিবে তার ভালোবাসা দিয়ে আ…
আমি: হিহিহি রাজকুমার আসবে তাও আমার মতো পেত্নীর জন্য
তিশা: হুম আসবে
আমি: যখন আসে দেখা যাবে এখন চল ঘুরতে যাই
তিশা: এইমাত্র তো আসলাম
আমি: তো কি হইছে, তিশা আমরা এখানে ঘুরতে এসেছি রুমে বসে থাকার জন্য না
তিশা: ওকে বাবা চল।

রাস্তা দিয়ে আনমনে হয়ে হাটছি হঠাৎ পাশের দোকানে চিপস চোখে পড়লো।
আমি: তিশা চিপস চিপস চিপস
তিশা: ওরে বাবারে আস্তে মানুষ ভাববে তুই এ জন্মে কখনো চিপস খাসনি
আমি: হ্যাঁ খাইনি তো
তিশা: এ্যাঁ
আমি: অবাক হচ্ছিস কেন
তিশা: তাহলে রোজ আমি যে এনে দেই আব্বু যে এনে দেন এসব চিপস কে খায়
আমি: ওগুলো তো আমি খাই না তিলোত্তমা খায় হিহিহি
তিশা: পাগলী একটা, দাঁড়া আমি চিপস নিয়ে আসছি।

তিশা চিপস আনতে দোকানে গেলো আর আমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। আসলে আমি একটু চিপস পাগলী আরকি।
তিশা: তমা আমি একটা কথা ভাবছি (আমার হাতে চিপস দিতে দিতে বললো)
আমি: কি কথা
তিশা: কক্সবাজার থেকে ফিরে গিয়েই আব্বুকে বলবো তোর জন্য যেন ছেলে দেখেন
আমি: দাঁড়া আগে চিপস গুলো খেয়ে নেই তারপর তোর কথাটার উত্তর দিচ্ছি
তিশা: খা রাক্ষসী কোথাকার।
আমি: তিশা সামনে দেখতো এতো ভীড় কিসের
তিশা: হ্যাঁ তাই তো চল গিয়ে দেখি
আমি: চল।

ভীড়ের কাছে এসে দেখি একটি ছেলে এক্সিডেন্ট করে রাস্তায় পরে আছে প্রচুর রক্ত ঝরছে ওর মাথা থেকে। বাচ্চা একটা ছেলে এভাবে পরে আছে আর সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে এভাবে।
আমি: আচ্ছা আপনারা সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছেন ওকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছেন না কেন
–আরে ও টোকাই ছেলে কে নিবে ওর দায়িত্ব
–হসপিটালে নিয়ে গিয়ে আবার জামেলায় ঝরাবো নাকি
–এইটা এক্সিডেন্ট পুলিশ কেস হয়ে যাবে (এই মানুষগুলোর কথা শুনে তো ইচ্ছে হচ্ছে সব গুলোর মাথা ফাটিয়ে দেই। শুধুমাত্র ও একজন টোকাই বলে ওর কোনো চিকিৎসা হবে না, এভাবে রাস্তায় পড়ে মারা যাবে)
আমি: তিশা ওকে ধর এক্ষণি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে
তিশা: হুম তাড়াতাড়ি কর।
একটা সিএনজি ডেকে তাড়াতাড়ি ছেলেটাকে পাশের হসপিটালে নিয়ে আসলাম।

আজব দেশের আজব সব মানুষ, আজব হসপিটাল আর আজব সব ডাক্তার। এতোক্ষণ ধরে বসে আছি ছেলেটি অজ্ঞান হয়ে গেছে অথচ এখনো কোনো ডাক্তার এসে দেখছে না। হয়তো ডাক্তার আসবে কিন্তু ছেলেটি মারা যাওয়ার পর।
তিশা: আচ্ছা সিস্টার ডাক্তার কি ওকে দেখবে না
সিস্টার: আজ ছুটির দিন সব ডাক্তার ছুটিতে আছেন, একজন যিনি আছেন উনি অন্য একটা রোগীকে দেখছেন
আমি: উনাকে গিয়ে বলুন এখানে একটা ইমারজেন্সি আছে
সিস্টার: বলেছি স্যার বলেছেন একটু পর আসছেন
তিশা: কি আজব ছেলেটা মরে যাচ্ছে আর ডাক্তার সাধারণ রোগীদের নিয়ে পরে আছে
সিস্টার: আচ্ছা মানুষ তো আপনারা বললাম তো স্যার একটু পরে আসবেন
আমি: কখন আসবে হ্যাঁ ছেলেটা মারা যাওয়ার পর…? তখন কি জানাজা পড়তে আসবে ছেলেটির…?
তিশা: তমা কি করছিস ছাড় উনাকে
সিস্টার: আজব মেয়েতো আপনি আমার…
ডাক্তার: কি হচ্ছে এখানে (সিস্টারের গলায় চেপে ধরেছিলাম ডাক্তার আসাতে ছেড়ে দিলাম)
তিশা: আসলে ছেলেটির খুব খারাপ অবস্থা প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে এক্ষণি চিকিৎসা শুরু না করলে….
ডাক্তার: সিস্টার ওকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে যাও আর জানোই তো কি কি লাগবে (আরে আজব ডাক্তার তো নিজে না গিয়ে সিস্টারকে বলছে কি কি লাগবে জানেই তো, একজন ডাক্তার যা জানে তা একজন সিস্টার কি করে জানবে)
আমি: আজব ডাক্তা…
তিশা: তমা প্লিজ এখন আর মাথা গরম করিস না (হুম তিশা ঠিক বলেছে ডাক্তারের সাথে জামেলা করলে হয়তো আর ছেলেটির চিকিৎসা করাই হবে না)
আমি: আসলে ডাক্তারবাবু ছেলেটির অবস্থা খুব খারাপ তো তাই রেগে গিয়ে… (আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে দেখে আমার কথা আটকে গেলো)
ডাক্তার: বাহ্ এই প্রথম কারো মুখে ডাক্তারবাবু নামটা শুনতে এতো ভালো লাগলো
আমি: এ্যাঁ
ডাক্তার: অবাক হচ্ছ কেন আসলে এক বছর হলো ডাক্তারি করছি এর মধ্যে হাজার হাজার বার এই ডাক্তারবাবু ডাকটা শুনেছি। ডাক্তারবাবু শুনতে শুনতে কান পঁচে গেছে কিন্তু এই প্রথম তোমার মুখে ডাকটা শুনে এতো ভালো লাগলো (ডাক্তারের কথা শুনে তো আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম)
সিস্টার: স্যার O- রক্ত লাগবে কিন্তু এই গ্রুপের রক্ত আমাদের হসপিটালে এই মুহূর্তে নেই
ডাক্তার: ওকে বাকি সব চিকিৎসা শুরু করো
আমি: আজব ডাক্তার তো আপনি নার্সদের দিয়ে সব করাচ্ছেন রক্ত প্রয়োজন অথচ আপনি যাচ্ছেন না
ডাক্তার: আমি গেলে পর যদি তুমি চলে যাও তাহলে তো তোমাকে হারিয়ে ফেলবো আমি
আমি: মানে (নিশ্চুপ হয়ে আছে আর ফোন টিপছে। এখন তো রাগ উঠে যাচ্ছে, না রাগলে হবে না মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে)
আমি: ডাক্তারবাবু প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন আ…
ডাক্তার: উফফস আবার সেই ডাক্তারবাবু, বললাম তো তোমার মুখে এই ডাকটা শুনতে ভালো লাগে আর ডেকো না প্লিজ পাগল হয়ে যাবো (আর রাগ ধরে রাখতে পারছি না এখন ওকে কিছু বলা উচিত)
আমি: আপনি আর নতুন করে পাগল হবেন কি আপনি তো অলরেডি পাগল হয়ে গেছেন। আপনাকে দিয়ে চি…
ডাক্তার: হ্যাঁ পাগল তো হয়ে গেছি তোমাকে দেখার পর থেকে (নিশ্চুপ হয়ে ভাবছি কি বলছে এসব। একজন ডাক্তার এমন একটা ইমারজেন্সি রোগী রেখে এসব পাগলের মতো কথা বলছে তাহলে কি এই ডাক্তারের মাথায় আসলেই কোনো সমস্যা আছে)
ডাক্তার: কি ভাবছ আমার মাথার তার একটা ছিঁড়া
আমি: হ্যাঁ না মানে
“ভাইয়া হঠাৎ হসপিটালে আসার জন্য মেসেজ করলে যে” কথাটা শুনে ডাক্তারের পিছনে তাকালাম, একটি ছেলে এসেছে তারমানে আগে ফোন টিপছিল এই ছেলেকে মেসেজ দেওয়ার জন্য।
ডাক্তার: রক্ত দিতে হবে সিস্টারকে গিয়ে বল (ছেলেটি রক্ত দিতে চলে গেলো। নাহ যতোটা খারাপ ডাক্তার ভেবেছিলাম ততোটা খারাপ না)
ডাক্তার: কি এতোক্ষণ যা যা ভাবলে সব ধারনা পাল্টে গেলো তো (ওরে বাবা যা ভাবছি তাই তো বুজে ফেলছে, জ্যোতিষী নাকি)
“ভাইয়া যাও সিস্টার রক্ত নিয়েছে”
ডাক্তার: হুম এখানে থাক ও যেন কোথাও না যেতে পারে, এইটা তোর মিষ্টি ভাবি আর এইযে ও তোমার দেবর অয়ন (আমাকে দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলো। এইটা কি হলো আমি ভাবি হলাম কবে আর এই ছেলেই বা আমার দেবর হলো কিভাবে)
আমি: তিশা এসব কি হচ্ছে বলবি প্লিজ সবকিছু তো আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে
তিশা: আমি কিন্তু বুঝে ফেলেছি
আমি: তুই হাসছিস
অয়ন: ভাবি আমি বলবো বিষয়টা কি
আমি: এই একদম ভাবি ডাকবা না আমি তোমার কোন ভাইয়ের বউ হ্যাঁ যত্তোসব ফাজিল ছেলে
অয়ন: আরে রেগে যাচ্ছ কেন কাব্য ভাইয়া তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে তাই আমার ভাবি বলেছে (ডাক্তারের স্বভাবটা খারাপ হলেও নামটা খুব কিউট ‘কাব্য’)
আমি: একটু আগে দেখা হলো আর এখনি ভালোবেসে ফেলেছে
ডাক্তার: জ্বী ম্যাডাম আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি আর হ্যাঁ তোমার রোগী এখন বিপদমুক্ত আর চিন্তার কোনো কারণ নেই
আমি: ওকে আমি বিল দিয়ে যাচ্ছি ছেলেটি সুস্থ হলে রিলিজ করে দিবেন
ডাক্তার: মানে কি ছেলেটি তোমার আত্মীয় না নাকি
তিশা: নাতো ও একজন টোকাই রাস্তায় এক্সিডেন্ট করে পরে ছিল তাই তমা হসপিটালে নিয়ে এসেছে
ডাক্তার: বাব্বাহ্ আমার বউটা তো খুব লক্ষী রাস্তার ছেলেদেরও মানু…
আমি: ওই কে আপনার বউ তখন থেকে উউল্টাপাল্টা কথা বলেই যাচ্ছেন মাথায় সমস্যা আছে নাকি
ডাক্তার: আগে ছিল না কিন্তু তোমাকে দেখার পর থেকে মাথায় সমস্যা বুকে ব্যথা আরো অনেক কিছু হচ্ছে
আমি: তিশা চল তো এখান থেকে।

তিশার হাত ধরে চলে আসতে চাইলাম কিন্তু ছেলেটি আমার হাত ধরে টেনে ওর একদম কাছে নিয়ে গেলো কি আজব ডাক্তাররে বাবা। ও আস্তে আস্তে আমার দিকে এগুচ্ছে আর আমি পিছিয়ে যাচ্ছি, পিছাতে পিছাতে দেয়ালে গিয়ে ঠেকলাম। দুপাশে ওর দুইহাত সামনে ও পিছনে দেয়াল আমি এখন যাবো কোন দিকে, আমার তো কান্না করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।
ডাক্তার: তোমার চোখে পানি কেন আমি কি তোমাকে মারতেছি, দেখো তোমাকে আমি ভালোবাসি আ…
আমি: আমাকে যেতে দিন
ডাক্তার: তোমার চোখ থেকে যদি এক ফোটা পানি পড়েছে তো আমি কিন্তু রেগে যাবো আর এখানে সবার সামনে তোমাকে আদর করবো (দূর এইটা কেমন ডাক্তার আমার তো মনে হচ্ছে ওর মাথায় সমস্যা আছে নাহলে এতোগুলো মানুষের সামনে কেউ এমন কথা বলে। ইসসস কতোগুলো মানুষ তাকিয়ে আছে এদিকে)
আমি: দেখুন আপনি ডাক্তার আপনার লিমিট ক্রস করবেন না প্লিজ আমি কিন্তু… (আর কিছু বলতে দিলো না আমার মুখে আঙ্গুল দিয়ে আমাকে চুপ করিয়ে দিলো)
ডাক্তার: এসব ডাক্তার ফাক্তার বুঝি না তুমি আমাকে ডাক্তারবাবু অথবা কাব্য বলে ডাকবে বুঝেছ
আমি: ডাক্তারবাবু ডেকেই তো ফেঁসে গেছি
ডাক্তার: এই আস্তে আস্তে কি বলছ
আমি: কিছু নাতো (তিশার দিকে তাকালাম, কোথায় ও আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে উল্টো হাসছে। আর অয়ন এইটাও তো হাসছে দুই ভাই তো দেখি একরকম)
ডাক্তার: এখন ভালোয় ভালোয় তোমার পরিচয় দাও তো নাহলে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো কিভাবে (ডাইরেক্ট বিয়েতে চলে গেলো এ কেমন ছেলে)
ডাক্তার: বলো বলো তোমার নাম বলো নাহলে কিন্তু সবার সামনে কিস করবো (আমার কপালে এলোমেলো হয়ে থাকা চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিতে দিতে বললো)
আমি: আমি তিতিতিলো…
কাব্য: কি তিতিতি করছ তাড়াতাড়ি বলো
আমি: তিলোত্তমা আমি এখানে ঘুরতে এসেছি থাকি ঢাকায় মামির কাছে। (যেও ভেবেছিলাম মিথ্যে পরিচয় দিবো ওর ধমকে গড়গড় করে সব সত্যি বলে দিলাম। উফফ এই ধমক যে কেন এতো ভয় পাই আমি)
ডাক্তার: মামির কাছে থাকো কেন আব্বু আম্মু কোথায় (এতোক্ষণ তো কান্না আটকে রেখেছিলাম আব্বু আম্মুর কথা বলতেই কান্না চলে আসলো)
তিশা: আসলে ওর আব্বু আম্মু একটা এক্সিডেন্টে মারা গেছেন
ডাক্তার: উফফস সরি সোনা তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম। চিন্তা করো না আজ থেকে তোমার সব দায়িত্ব আমার (দুহাত দিয়ে আলতো করে আমার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো)
আমি: কেন এমন করছেন
ডাক্তার: কারণ আমি তোমাকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি যাকে বলে Love At First Sight মানে তোমাকে প্রথম দেখেই আমি ফিদা হয়ে গেছি (বুঝে গেছি এর সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই এখান থেকে তাড়াতাড়ি যাওয়াই মঙ্গল)
আমি: হুম এখন আমাকে যেতে দিন
ডাক্তার: যেতে পারো কিন্তু আমার থেকে ফালানোর চেষ্টা করো না এখন থেকে তোমার উপর আমি সবসময় নজর রাখবো।
হাসতে হাসতে আমার সামনে থেকে সরে গেলো।

তিশাকে রেখেই তাড়াতাড়ি হাটা দিলাম। কিছুতেই বুঝতে পারছি না এই ছেলে আমার মধ্যে দেখলোটা কি, কালো একটা মেয়ে আমি আর এই ডাক্তার তো দেখতে অনেক সুন্দর। ফর্সা লম্বা তাও আবার ডাক্তার এই ছেলে কিনা আমাকে দেখে ফিদা হয়ে গেছে, নির্ঘাত ওর মাথার তার একটা ছিঁড়া। এই ডাক্তার তো… দ্যাত ‘কাব্য’ এতো সুন্দর নাম রেখে ডাক্তার ডাক্তার বলতে ভালো লাগছে না। আনমনে হয়ে হাটছিলাম আর এসব
ভাবছিলাম হুট করে কাব্য এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। আমি তো ভয় পেয়ে গেছি আবার কেন আসলো।
কাব্য: আমার মাথায় কোনো সমস্যা নেই আমি সত্যি তোমাকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার শ্যামবর্ণ চেহারা নাকি তোমার মায়াবী চোখ জোড়া কোনটা দেখে ভালোবেসেছি সঠিক বলতে পারবো না। তবে এটাই সত্যি আমি তোমাকে ভালোবাসি আর খুব শীঘ্রই তুমিও আমাকে ভালোবাসবে।
আমি: দেখুন এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
আঙ্গুল তুলে কথা গুলো বলছিলাম কাব্য আমার আঙ্গুলটা আস্তে করে নামিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে আমার একদম কাছে চলে আসলো। আমি কিছু বলতে যাবো তখনি আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললো “I Love U For A Thousand More”
কাব্য আমার চোখের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো কিন্তু আমি যেন বরফের মতো জমে গেলাম। কানের কাছে কাব্য’র গরম নিঃশ্বাস যেন আমার নিঃশ্বাস নেওয়া আটকে দিলো। চোখ দুটু বন্ধ করে আছি এখনো মনে হচ্ছে কাব্য বার বার আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলছে I Love U For A Thousand More….

চলবে?