Thursday, August 14, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2442



প্রতিশোধ পার্ট_14

0

প্রতিশোধ
পার্ট_14
জামিয়া_পারভীন

ডাক্তার সাইফ আহমেদ এর সামনে বসে আছে নিরা আর তৃণা। সাইফ প্রথমে দুই বোন কে দেখে নেয় কিছুক্ষণ । তৃণাকে বেশি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে সাইফ, তৃণা হালকা গোলাপি রঙের টপস পড়েছে আর চুলগুলো পিছনে বাধা, ঠোঁট এ তেমন কিছু দেয়নি সে এমনিতেই সুন্দরী, ড্রেসের জন্য তাকে বেশি সুন্দরী লাগছে। তারপর তৃণাকে জিজ্ঞেস করে

__ এখন কেমন আছেন?

__ জ্বী কিছুটা ভালো ( কণ্ঠে হালকা ভয় মিশানো)

__ আপনি আমাকে এতো ভয় পাবেন না।

__ না না! ভয় না, কথা বললেই এমন হয়ে যাচ্ছে। ( তৃণা)

__ মানুষের জীবনে কখনো কখনো অনেক কিছু ঘটে, আর সেটাকে মেনে নেয়াটাই সবচেয়ে উত্তম। আপনাকে আজ আমি একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। দেখবেন ভালো লাগবে, কি আপনি যাবেন তো ? ( সাইফ)

__ তৃণা মাথা ঝুকিয়ে না বলতে চায় তখন নিরা তৃণার হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে ডাক্তার কে বলে ওর একমাত্র বোনের ভালোর জন্য যেটা দরকার সেটাই যেন করেন। তৃণাও নিরার কথার সাথে একমত হয়ে গেলো। নিরাকে চেম্বার এ বসিয়ে রেখে তৃণাকে নিয়ে হাস্পাতালের ভিতরে গেলো।

তৃণাকে সাইফ সবার সাথে কথা বলতে বলে। তাদের মাঝে একেকজনএর একেক কষ্ট। তৃণা সবার সাথেই কথা বলা শুরু করে। প্রথমে এক বয়স্ক মহিলা এর সাথে কথা হয়, মহিলা বলে তার বাবা মা কেউ ছিলো না কিন্তু ভাগ্যক্রমে বড়লোক ছেলের সাথে বিয়ে হয়, সেখানে তার তিন টা ছেলে আছে। কিন্তু ছেলেরা তাকে অবহেলা করতে করতে পরে আর খোঁজ নেয়নি। তৃণা নিজের কষ্ট বলে ওই মহিলাকে, নিজের দুঃখ শেয়ার করে নিজেকে একটু হালকা লাগছে। পরে আরেকজনের কাছে যায়, মহিলার দুই পা নাই তাও সে হুইলচেয়ারে বসেই ফুটবল খেলছে। ছবি আঁকাতে পারে, সবার সাথে বেশ হাসিখুশি আছে। তৃণা উনার সাথে কথা বলে বেশ আনন্দিত হয়। মনে মনে ভাবে বাবা নাই তো কি হয়েছে আরোও তো আছে, মা আছে বোন আছে তাদের জন্য তো নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। বাবা বাবা করে মা বোন কে কতোইনা কষ্ট দিচ্ছে সে।

বেশ অনেকের কষ্ট দেখে নিজের কষ্ট খুব কম লাগছে তৃণার তখনি সাইফ এসে বললো
__ এখন কেমন লাগছে।

__ জ্বী, বাবার জন্য মা বোন কে এতো কষ্ট দেয়া উচিৎ হয়নি। ( তৃণা)

__ আপনি মেডিকেল স্টুডেন্ট, ভালো ছাত্রী, আপনার জন্য ভালো ক্যারিয়ার অপেক্ষা করছে। আপনার কি বিপদে ভেঙে পড়া সাজে। আপনি অন্যকে বুঝাবেন, কখনো নিজে ভেঙে পড়বেন না। ( সাইফ)

__ আমি এখন অনেকটাই বুঝতে পারছি, ক্লাস শুরু হবার পর তো আর মনোযোগ ই দেইনি। কিন্তু পড়াশোনা তো করতেই হবে। ( তৃণা)

সাইফ এতো বছর পড়াশোনা করেছে, বিদেশেও গেছে, তার কতো বড় বড় ডিগ্রি । কিন্তু কখনো কোন মেয়েকে তার ভালো লাগেনি অথচ এই মেয়েটাকে খুব ভালো লাগছে সাইফের। কথায় কথায় মেয়েটাকে সাইফ নিজের কার্ড দিয়ে দেয়। বলে যখনি ডিপ্রেশন এ থাকবেন ফোন করবেন। সাইফ প্রফেশনাল কার্ড না দিয়ে পারসোনাল কার্ড দিলো। সাধারণত সবাইকে এই নাম্বার দেয় না।

দুইজনে চেম্বারে ফিরে আসে, নিরা বোন কে হ্যাপি দেখে খুব আনন্দিত হয়। ডাক্তার এর কাছ থেকে বিদাই নিয়ে দুইজনে বাসায় ফিরে, তৃণাকে নামিয়ে দিয়ে মায়ের সাথে কিছু কথা বলে নিরা আবিরের বাসায় ফিরে যায়।

এতো পরিশ্রম করে নিরা খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে, বাসায় ফিরেই নিরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। রোমানা খালা এসে নিরার সেবা করে ঠিক করে। আবির সারাদিন পর বাসায় এসে নিরাকে বেডে দেখে চমকিয়ে যায়।

__ কি হয়েছে, খুব ক্লান্ত তাই না ( আবির)

__ আসলে, ,,, ( নিরা)

__ হ্যাঁ এই কয়দিন যা যাচ্ছে তোমার উপর দিয়ে। এভাবে চলতে থাকলে তুমি আরোও অসুস্থ হয়ে পড়বে। আমি যতক্ষণ থাকি তোমার কোন ক্ষতি হতে দিবোনা।

বিকালে বান্ধবী মিশির চেম্বারে গিয়ে দেখিয়ে আনে। নিরা খুব অবাক হয়, আবির এর কাছে কিছু চাওয়ার আগেই সব কিছুই পেয়ে যাচ্ছে। আর তৃণাও প্রায়ই সময় সাইফের সাথে কথা বলছে। তৃণার খুব ভালো লাগে সাইফ কে। ওর সাথে কথা বললে সব হতাশা দূর হয়ে যায় তৃণার।

তুষারের মাথায় আঘাত লাগার জন্য ব্রেইন অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছিলো তাও সবাই আশা নিয়ে ই চিকিৎসা চালিয়ে যায়। আরোও ৮ মাস পার হয়ে যায় আবিরের ভালোবাসায় নিরার জীবন খুব সুখের ছিলো আর তৃণাও সাইফের সাথে কথা বলেই বেশ হ্যাপি কেউ কাউকে ভালোবাসার কথা বলেনি কিন্তু ভালোবেসে ফেলেছে সেটা দুজনের মনের মাঝেই রাখে। তৃণা মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ এখন আর মাসুদ সব দেখাশোনা করছে। হেনা মাসুদের বিয়ে দিয়ে দেয় এক মেয়ের সাথে । মাসুদ আর ওর বউ মিতুর বেশ সুখের সংসার।

নিরার ডেলিভারির ডেট হয়ে যায়, আবির তাড়াতাড়ি করে মিশির হাসপাতালে ভর্তি করে নিরাকে। সেখানে নিরার কোলজুড়ে আসে পিচ্চি এক্টা ছেলে বাবু। নিরার জ্ঞান ফিরে সন্তানের মুখ দেখে বেশ হ্যাপি হয়। চোখ দিয়ে পানিও ঝড়ে। আনন্দের পানি কি যন্ত্রণার সে টা বুঝেনা নিরা।

নিরা বাসায় ফিরে, বোনের ছেলে কে দেখতে তৃণাও আসে। বাড়িতে আবিরের মা, বাবা, তৃণা, হেনা, মাসুদ, মিতু সবাই এসেছে ছোট্ট বাবুকে দেখতে। সবার মাঝেই আনন্দ, রুম টা একটু খালি হতেই হেনা নিরাকে বলে…

__ তৃণার যে কি হয়েছে? সব সময় ফোনে কথা বলছে।

__ হু মা, প্রেম করছে মনে হয়। ( নিরা)

__ কার সাথে?

__ সাইফ ( নিরা)

__ তোকে বলেছে তৃণা ( হেনা)

__ এগুলো বলা লাগবে কেনো? আমি কয়েকদিনের মাঝেই আবিরের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলবো। ( নিরা)

__ ওকে, তাই বলিস। ( হেনা)

আবির এর বাবা মা নাতিকে পেয়ে যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে আছে। সব সময় নাতির কেয়ার নেয়ার খবর নেয়, এতো দিন আবির কে যতটা সময় দেয়নি ব্যস্ততা র জন্য নাতিকে আর আবিরকে সে সময় টুকু দেয়ার চেষ্টা করছে।

রাত্রে
__ শোনো একটা কথা ছিলো ( নিরা)

__ বলে ফেলো, তোমার সব কথা শুনার জন্য বান্দা হাজির। ( আবির)

__ এভাবে বলছো কেনো? ( নিরা)

__ ভালোবেসে বলছি ( আবির)

বলেই নিরার কপালে আবির কিস করে। আবিরের বেশ ইচ্ছে করে নিরার সাথে খুনশুটি করতে কিন্তু নিরা এসব পছন্দ করেনা। এবার ও নিরা আবিরকে সরিয়ে দেয়।

__ তোমার প্রব্লেম টা কি, শুধু আমার সাথে ফাজলামি না করলে বুঝি তোমার চলেই না। ( নিরা)

__ এতো রাগ করছো কেনো? ওকে সরি আর হবেনা। কাজের কথা বলো? ( আবির)

__ কিছু না, যাও সামনে থেকে ( নিরা)

আবির কে নিরা কখনো মন থেকে মেনে নেয়নি তাই সহজে আপন করে নিতে পারেনা। প্রায়ই সময় অপমান করেছে আবিরকে শুধুমাত্র এক্টাই কারণ। আবির নিরার কথা তে অপমান বোধ করে তাও প্রকাশ করেনা কখনো। নিজের অপরাধ বোধে নিরা তাকে হেলা করে সেটা সে জানে। তাই ঘুরেঘুরে নিরার কাছে ই যায়। নিরা বাইরে সবার সাথে হ্যাপি কাপলের অভিনয় করলেও আবির যখন একা থাকে ভালো বিহেভ কখনো ই করেনা।

অনেকদিন পর তুষার চোখ খুলে দেখে, অনেক আঘাত সহ্য করে কেউ সাধারণত বাঁচতে পারেনা কিন্তু তুষার এর জ্ঞান ফিরেছে। এই খবরে সবাই হাস্পাতালে যায়।

_ আস্তে আস্তে মিঃ তুষার রিকভারি করছে ( ডাক্তার বলেন)

এই কথাতে সবাই খুব আনন্দিত হয়।

__ কিন্তু উনি সবাইকে হয়তো চিনতে পারবেন না ( ডাক্তার)

আনন্দের হাসি টা দমে গেলো। এতো দিনের আশা আর পুরণ হলোনা।

,
,
তৃণাকে সাইফ ফোন দেয়

__ এখন কি করছো ম্যাডাম, সকাল থেকে খোঁজ নাই কেনো। ( সাইফ)

__ কি ভাবে খোঁজ নিতাম, ( তৃণা)

__ বাহহ! ভুলেই গেছো ( সাইফ)

__ তা নয়, বাবার জ্ঞান ফিরেছিলো কিন্তু ডাক্তার সাহেব বলেছে কাউকে চিনতে পারবেনা। ?( তৃণা)

__ সে যে তোমাদের মাঝে আছে এটার জন্যই শুকরিয়া করা উচিৎ তাই না ( সাইফ)

__ জ্বী, আমি শুধুশুধু ওভার রিয়েক্ট করি। ( তৃণা)

__ তা ম্যাডাম সামনে তো এক্সাম পড়াশোনা তো করোনি নিশ্চয়ই। ( সাইফ)

__ এতোসব ঝামেলা তে ক্লাস ঠিকমতো করতে পারিনি। তাইই ( তৃণা)

__ আজ থেকে কথা কম শুধু পড়াশোনা হবে। ( সাইফ)

সাইফ তৃণা কে পড়াতে থাকে, এতে তৃণার জন্য বেশ ভালো হয়। সাইফ অনেক ভালো বুঝাতে পারে।

,
,
নিরা আবিরকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইলেও আবির সব সময় নিরার পাশে থাকার চেষ্টা করে। তাই নিরার পরীক্ষার জন্য আবির নিজ থেকে অনেক হেল্প করে। এতে নিরার ভালো লাগ্লেও মনের মাঝে পুষে রাখা রাগ থেকে আবির কে দূরে রাখে।

এতো কিছু না ভেবে নিরা আবির কে বলে দেয়

__ এবার সাইফের সাথে কথা বলা উচিৎ ( নিরা)

__ কোন সাইফ ( আবির)

__ কেনো ভুলে গেলে? তৃণার ডাক্তার ( নিরা)

__ কি ব্যাপারে কথা বলবো বলো? ( আবির)

__ তৃণার সাথে সাইফের বিয়ের ব্যাপারে। ( নিরা)

__ তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? ( আবির)

__ এখানে পাগল হবার কি হয়েছে শুনি। ( নিরা)

__ এ বিয়ে কিছুতেই সম্ভব নয়। কারণ……….. ( আবির)

চলবে…….

প্রতিশোধ পার্ট_13

0

প্রতিশোধ
পার্ট_13
জামিয়া_পারভীন

তুষার এর গাড়ির ব্রেক টা নষ্ট করে দেয় মাসুদ। তুষার গাড়িতে উঠার পরই ব্রেকের জন্য দুর্ঘটনা ঘটে। মাথায় প্রচুর আঘাত পায় তুষার, এছাড়া হাত এর দুইটা হাড় ফ্রাকচার, দুই পা ই ফ্রাকচার সাথে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি হয়েছে। এতো মারাত্মক ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তুষার মৃত্যুর সাথে লড়ছে।

নিরা বাবা থেকে দূরে থেকেছে বলে কষ্ট পেলেও তৃণার কষ্ট টাই ছিলো বেশি। বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে আর পাগলের মতো প্রলাপ বলছে। তৃণার হাহাকার মা বোন মিলে কেউই থামাতে পারছেনা। এদিকে মাসুদ এসে লুকিয়ে লুকিয়ে সবার আহাজারি দেখছে কিন্তু সামনে আসছেনা। আসলে কি বলবে এসে, এক্সিডেন্ট টা তো হয়েছেই তার জন্য। যে বাবা তাকে আর তার মা কে অত্যাচার ছাড়া কখনো ভালোবাসেনি তার জন্য প্রতিশোধ নিতে গিয়ে যে মানুষ তাদের ভরণপোষণ চালিয়েছে তাকেই খুন করার চেষ্টা। এটা মহা অন্যায় হয়ে গেছে, নিজের মাঝে প্রচুর অনুশোচনা জন্মেছে।

নিরা মাসুদ কে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসে ,
__ ভাই তুমি এসেছো, বাবা খুব অসুস্থ। আর রাগ করে থাকিও না প্লিজ।

__ (মাসুদ এর চোখ দিয়ে আজ পানি ঝরছে। যে বোনকে কখনো আদর দেয়নি তাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদছে আর।) কান্না মুছে বলে, ” মাফ করে দিস। ”

__ কেনো কি করেছো তুমি? কেনো মাফ চাইছো? ( নিরা)

__ খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি রে। বাবার মতো ওই লোকটাকে আমি মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম। ( মাসুদ)

__ কি বলছো তুমি? আমি এগুলো বিশ্বাস করতে পারছিনা। বাবাকে তুমি? নাহ এটা হতে পারেনা। ( নিরা)

__ আমাকে পুলিশে দে তুই, আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। ( মাসুদ)

__ এই কথা আর কাউকে বলিও না, আমার ভাই এর ক্ষতি আমি কিভাবে চাই বলো। মা তোমাকে অনেক ভালোবাসে। এখন তোমার উচিৎ মা আর তোমার আরেক বোনের দিকে খেয়াল রাখা। তৃণা খুব ভেঙে পড়েছে। ( নিরা)

,
মাসুদ এগিয়ে যায়, সবার কাছে নিজের কষ্ট প্রকাশ করে। হেনা ও ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে খুব। আবির নিরার কাছে এসেছে, নিরা আবির কে দেখে, আবিরের কোলে গিয়ে কান্না শুরু করে।

__ এতো টেনশন করো না নিরা, দেখিও বাবা ঠিক হয়ে যাবে। ( আবির)

__ এতোদিন পর বাবাকে দেখলাম আর বাবা কিনা ( কথা বলতে পারেনা কান্নাতে) ( নিরা)

__ সব ঠিক হয়ে যাবে, চুপ করো, একটু ধৈর্য ধরো প্লিজ। ( আবির)

__ বোনের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা, বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে। আর এখন জ্ঞান গেছে ফিরছেনা, পাসের কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে। ( নিরা)

__ আমি সবাইকে বলে দিয়েছি, স্পেশাল কেয়ার নিবে সবাই। দেখিও সবাই সুস্থ হবে, এখন ভেঙে না পড়ে দোয়া করো। এটাই সবার জন্যই মঙ্গল জনক হবে। ( আবির)

এইভাবে ১০ দিন পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু অবস্থার উন্নতি কারোর ই হয়নি। তুষার আই সি ইউ তে অজ্ঞান হয়ে আছে, সব রকম চিকিৎসা তার চলছে। আর তৃণার জ্ঞান ফিরলেও কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে, শুধু সবার দিকে তাকিয়ে থাকছে, মাঝেমাঝে একা একাই কথা বলছে। আর হেনার কথা অনুযায়ী মাসুদ ই তুষার এর সব ব্যবসা দেখছে।

__ তৃণাকে নিয়ে কি করবে এখন ( নিরা)

__ ওকে একবার সাইকোলজিস্ট এর কাছে নিয়ে গেলে ওর জন্যই ভালো হতো। ( আবির)

__ কি বলছো? বোন কি পাগল নাকি। ( নিরা)

__ পাগল হয়নি, মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে। আর এর চিকিৎসা এখনি না করালে ওর আরোও ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ( আবির)

__ কার কাছে নিয়ে যাবে? ( নিরা)

__ সব চেয়ে বড় সাইকোলজিস্ট তো সাইফ আহমেদ। কিন্তু…. ( আবির)

__ কেনো উনার কাছে নিলে নিবে কিন্তু কেনো বলছো। ( নিরা)

__ নাহ কিছুনা, পরে একসময় বলবো। তৃণার জন্য উনার কাছে কাল ই এপোয়েন্টমেন্ট দিয়ে রাখি তাহলে। ( আবির)

মাসুদ কে এখন অনেক কাজ সামলাতে হচ্ছে। এতো বড় বিজনেস অন্য কারো হাতে দিলে শুধু লস ই খাবে। তাই নিজেই সব চালাবে ভাবে, বোনদের অংস তার অংশ সব কিছুই এখন তাকেই ম্যানেজ করতে হচ্ছে। আর হেনা একবার তুষার এর কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদে আবার তৃণার সামনে গিয়েও কাঁদে ?।

,
,
আবির নিরা এসেছে সাইকোলজিস্ট সাইফ আহমেদ এর কাছে। তৃণা অনেক ডিপ্রেশন আছে সেটা ডাঃ সাহেব বললেন।ভিতরে রোগীর সাথে একজন যাবে তাই আবির বাইরে বসে থাকে আর নিরা ভিতরে যায়। তৃণার হয়ে নিরাই সব কথা বলে ডাঃ কে। ডাক্তার সাহেব দুই বোনের দিকেই তাকিয়ে আছে, দুইজনে ই হুবহু দেখতে আর অসম্ভব সুন্দরী দুইজন।

ডাক্তার ১৫ দিনের ঔষধ দিয়েছে তৃণাকে। আর ১৫ দিন পর তৃণাকে আবার দেখতে চায়। আবির, নিরা,আর তৃণাকে নিয়ে তৃণাদের বাসায় যায়। ( আসলে তৃণাকে জানতে দিবেনা তাই তুষার বলেছিলো এটা ভাড়া বাসা, কিন্তু এটা তুষার এর ই বাসা। )

মাসুদ ও বিজনেস সামলানোর জন্য এই বাড়িতেই থাকছে। আর মাহমুদ কে দেখার জন্য তো নার্স থাকেই সেটা নিয়ে মাসুদের কোন মাথা ব্যথা আর নাই।

তুষারের অবস্থা ভালো হয়নি এখনো, লাইফ সাপোর্ট এ বেঁচে আছে ২৫ দিন হয়ে গেলো। তৃণা ঔষধ খেয়ে একটু কথা বলছে সবার সাথে কিন্তু কিছুক্ষণ পর পর ড্যাডি তুমি কোথায় বলে কান্না করে আবার চুপ হয়ে যায়। এখন একটু হলেও মা বোন কে চিনতে পারছে তৃণা। কিছুদিন তো নিরাকে ওর আয়না ভাবতো। নিরা সামনে গেলেই ভাবতো ওর আয়না এসেছে। তাই নিরা কে বলতো ” আয়না তুমি হাটতে পারো?” অনেকটা ছোট বাচ্চার মতো হয়ে গেছে তৃণা এখন।

নিরাও তৃণাকে নিয়ে খুব চিন্তিত, এতো দিন পর বাবা আর বোন কে পেয়ে বাবা হাসপাতালে আর বোন কিনা পাগল হয়ে যাচ্ছে।

এতো সব টেনশনে নিরা আবিরকে এতোটুকু সময় ও দিতে পারেনা। আজ আবিরের অনেক গুলি ক্লাস নিতে হবে তাই আবির নিরাকে সঙ্গ দিতে পারেনি। নিরা একাই তৃণাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়।
,
,
(#কাল ও ভাইবা আছে ???, আজ ভাইবা দিয়ে এসে ঘুমিয়ে গেছিলাম, আবার উঠে গল্প লিখে পোষ্ট দিলাম আপনাদের জন্য)

চলবে…..

প্রতিশোধ পার্ট_12

0

প্রতিশোধ
পার্ট_12
জামিয়া_পারভীন

মায়ের জীবনের গল্প শুনে দুই মেয়ের চোখে জল ছিলো। নিরা মায়ের কাছ থেকে উঠে গিয়ে বাবা বলে জড়িয়ে ধরে তুষার কে।

__ আমাকে ক্ষমা করে দিও, এতো দিন নিজের আরেক মেয়েকে আদর দিই নি তাই। ( তুষার নিরাকে বলে)

__ ড্যাডি, আমি যে আমার বাবা কে ফিরে পেয়েছি এটাই অনেক। ( নিরা)

__ আর আমার বাবা না বুঝি? ( তৃণা)

__ “তৃণা আমায় যখন তোমার কথা বলেছিলো তখনই বুঝেছিলাম তুমি জমজ বিধায় একই রকম হয়েছো। কিন্তু যখন তৃণা তোমার বর কে চায় তখন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম যে দুইটা মেয়ের সব পছন্দ একই কেনো হলো। এরপর আর দেরি না করেই চলে আসি তৃণার কাছে। আবির সম্পর্কে সব খোঁজ নিই, আগে আবিরের মম ড্যাডের সাথে দেখা করে তাদের সব খুলে বলি। এরপর তৃণাকে খুশি করতে আবির এর কাছে তৃণাকে জেতে দিলেও সব ঘটনা আবির কে খুলে বলি বিয়ের অনুষ্ঠান এর দিন রাত্রেই । তাই আবির খুব একটা টেনশন করেনি তোমাকে নিয়ে। ” নিরাকে এই কথা গুলি বলেই তৃণাকে বলে ” আমাকে ক্ষমা করিও, আমি চাইনি তুমি তোমার বোনের স্বামী কে ভালোবাসো। যাই হোক নিজের ভুল বুঝতে পেরেছো এটাই অনেক। ”

__ সরি বাবা, মাফ করে দিও বোন। ( তৃণা দুইজনকেই বলে)

অনেক রাত হওয়াতে দুই বোন গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে এক বেডে ই। আরেকটা বেডে তুষার আর হেনা বসে গল্প করতে করতে সকাল হয়ে আসে সেই খেয়াল নেই তাদের। পুরানো ভালোবাসা যেন ফিরে এসেছে, সব ভুল বুঝাবুঝি দূর হয়ে গেছে যেন। হেনা কথা বলতে বলতে তুষার এর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। আর তুষার ও পুরনো ভালোবাসার মানুষ এর মাথায় হাত রেখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো।৷

দরজা লক করা ছিলো না তখন ই মাসুদ এসে মা কে অন্যলোক এর কাঁধে মাথা রাখতে দেখে রাগান্বিত হয়ে যায়।

__ বাহবাহ! আহহ! কি প্রেম, আমি আগে জানতাম না আমার মা চরিত্রহীনা। ( হেনার ছেলে মাসুদ)

হেনার ঘুম ভেঙে যায়, নিরা তৃণাও এক সাথেই জেগে উঠে । সবাই শুনতে পায় মাসুদ এর জঘন্য কথা টা। এটা শুনেই হেনার চোখে পানি চলে আসে।

__ তুমি না জেনে মা কে দোষ দিতে পারোনা ভাই। ( নিরা)

মাসুদ কখনো নিরাকে সহ্য করতে পারতো না। আর আজ তো আরোই সহ্য হচ্ছেনা ।
__ তুই চুপ থাক, নিজের মাকে একটা লোকের পাশে দেখে তোর খারাপ না লাগতে পারে আমার ঘৃণা হচ্ছে। ( মাসুদ)

__ ওই লোকটাই আমার বাবা। আর আমার মা ও কোন দোষ করেনি। ( নিরা)

__ আরেহ বাহ! একটা অচেনা লোক এখন তোর বাপ হয়ে গেলো । কি ক্যারেক্টার তোদের মা মেয়ের ( মাসুদ)

__ তোমার চরিত্র দেখি তোমার বাবার মতো ই হয়েছে। না বুঝেই অন্যকে দোষারোপ করছো? ( নিরা)

__ এই চুপ করো তোমরা, এটা হাসপাতাল, এখানে এমন করতে নেই।
বাবা মাসুদ তোমার সাথে জরুরী কিছু কথা আছে। বাইরে এসো সব বুঝিয়ে বলছি। ( তুষার)

__ এই লোক আপনি চুপ থাকেন,
এরপর নিজের মা কে বলে, আর আপনার মতো মহান মা কে যেন আমাদের বাড়িতে আর না দেখি। ( মাসুদ)
এটা বলেই মাসুদ বের হয়ে চলে যায় ওদের কেবিন থেকে।

হেনা এইসব শুনে প্রচুর কান্না করে, এরপর তৃণা মাকে কে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদে। তৃণা খুব জেদী ছিলো আর এইসব দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেনা। একটু অস্বাভাবিক আচরণ বেড়েই চলেছে তৃণার।

তৃণা বাবার সাথে জেদ ধরে মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে, হাসপাতালে আর থাকবেনা সে। তাই তুষার সব বিল মিটিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আবির কেও জানিয়ে দেয় তুষার, দুই বোন আজকের দিন একসাথে থাকতে চেয়েছে। তাই আবির আর নিরাকে নিতে যায় না, শুধু ফোন করে নিরা কে।

__ হ্যালো, মাই ডিয়ার ওয়াইফ। বাবা মা আর বোন কে পেয়ে মনে হয় আমায় ভুলেই গেলে।

__ কি যে বলেন না আপনি, আপনাকে ভুলি কেমন করে। তবে ( কথা গুলি মন খারাপ করে বলে নিরা)

__ কি ব্যাপার এতো মন খারাপ কিসের জন্য? ( আবির)

__ আপনি কেনো যানি সব কিছুই আগে আগে বুঝে ফেলেন। ( নিরা)

__ তোমার মতো তো আর পঁচা নই, ভালোবাসি তোমাকে, বুঝতে হবে। যাই হোক কি হয়েছে বলো? ( আবির)

__ নিরা ভাইয়ের কথা খুলে বলে আবির কে। এরই মাঝে তৃণা এসে ফোনের কাছে মুখ নিয়ে বলে, সরি দুলাভাই, আপনার থেকে আপনার বউকে ছিনিয়ে আনা উচিৎ হয়নি। খুব মিস করছেন বুঝি বউকে?
তিন জনই হেসে উঠে এই কথাতে।

এদিকে বাসায় সবাইকে নামিয়ে দিয়েই তুষার কি যেনো কাজে গেছে। তাই হেনা দুই মেয়ে আর সাইরার সাথে গল্প করছেন। আর এদিকে মাসুদ মনে মনে খুবিই রেগে আছে। বাবার পাসে গিয়ে বলে প্রতিজ্ঞা করে, মায়ের এমন প্রতারণার প্রতিশোধ সে নিবেই।

তুষার নিজের ভুলের জন্য কিছু কাজ করে কোর্ট এ গিয়ে। বাসায় এসে একটা চিঠি লিখে মাসুদের নামে। সেটা আবার পাঠানোর ব্যবস্থা করে এসে খাওয়া শেষ এ ঘুমিয়ে পড়ে।

এক দিন নিরা মা আর বোনের কাছে থাকার পর আবির এসে নিরা কে নিয়ে যায়। তৃণা আর ওর মা থাকে আর সাইরা আছে। তিনজন বসে গল্প করছিলো এইসময় একটা খারাপ নিউজ আসে বাসায়। এতে তৃণা আর হেনা দুইজনেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যায় দুইজন, ঐদিকে নিরা আর আবির কেও ফোন দিয়ে জানায় খারাপ সংবাদ টার কথা। নিরা এটা শুনে খুব কষ্ট পায় আর তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ছুটে যায় আবির কে সহ।

মাসুদের কাছে চিঠি আসে, ঠিকানা নাই তাও সে সেটা খুলে পড়তে শুরু করে। তুষার মাসুদ কে সব কিছু জানিয়ে দেয় সেই চিঠি তে। এমনকি তুষার এর জন্য মাহমুদ এর যতটা সম্পত্তি লস হয়েছে সেগুলোর সম পরিমাণ সম্পত্তি মাসুদের নামে লিখে দেয় তুষার।

মাসুদ সব কিছু পড়ে নিজের ভুল বুঝতে পারে। কিন্তু ততোক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে তার, ক্ষমা চাওয়ার ও আর সুযোগ নেই মাসুদের। কি করবে বুঝতে না পেরে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে মাসুদ।

( রহস্য টা কালকের জন্যই রেখে দিলাম, কাল আরেকটা ভাইবা পরীক্ষা আছে। কাল সন্ধ্যায় বড় করে লিখে গল্প পোষ্ট দিবো। আগামী পার্টে গল্পে নতুন কিছু আসছে, তাই ধৈর্য ধরে কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন সবাই।)

চলবে…….

প্রতিশোধ পার্ট_11

0

প্রতিশোধ
পার্ট_11
#জামিয়া_পারভীন

হেনার সাথে তুষারের কয়েকবার দেখাদেখি হলেও কেউ কথা বলছে না কারোর সাথে। হেনা তার ছেলে মাসুদ কে বলে ঘরে তার বাবা মাহমুদ একা আছে। তাই মাসুদকে পাঠিয়ে দেয়।

হেনা আবির কেও বাড়ি পাঠিয়ে দেয়, আবির আর কিছু মনে না করে বাসায় চলে আসে। দুই মেয়ে এক কেবিনেই আছে, দুই মেয়ের মাঝে বসে আছে হেনা। আর এক পাশে বসে আছে তুষার।

__ জানিনা, দুই মেয়েকে কি এমন বলেছো? তাই তারা দুইজনে ই জ্ঞান হারিয়েছে। ( হেনা)

__ পুরো টাই তোমার উপর দোষ চাপিয়েছি হেনা। চিন্তাও করিও না তৃণা কখনো তোমার মুখ দেখতে চাইবেনা। ( তুষার)

__ আর কতো শাস্তি দিবে তুমি আমাকে? ( হেনা)

__ কখনো মন ভরবে না ( তুষার)

__ তুমি তোমার দুই মেয়েকে নিয়ে চলে যাও, আর পারছিনা সহ্য করতে আমি ( হেনা)

__ এমন করে বলতে নেই, ওরা তো তোমার ও মেয়ে। ( তুষার)

__ হ্যাঁ, আমার মেয়ে, শুধু জন্ম দিলেই মা হওয়া যায়না। যখন ওরা জানতে পারবে তখন কেউ আমার মুখ দেখতে পারবেনা। কিন্তু আর সব সহ্য করতেও পারছিনা। এবার সব বলে দিয়ে সবার জীবন থেকে চলে যাবো। ( হেনা)

__ ভুলেও এই কাজ করিও না, নিজের সাথে সাথে আমার মুখ টাও কালি করে দিতে তুমি পারোনা। ( তুষার)

নিরার জ্ঞান ফিরে আসে ওই মুহুর্তে, আর মাকে জিজ্ঞেস করে…

__ কিসের সত্য কথা মা, কি গোপন রেখেছিলে এতো দিন, আর কিছু লুকিয়ে রেখোনা, সব বলে দাও, দয়া করে। ( নিরা)

ওইদিকে তৃণার ও জ্ঞান ফিরে আসে, হেনাকে মা বলে ডেকে উঠে। দুই মেয়েকে দুইপাশে নিয়ে বসে আছে হেনা।

__ আমি জানি আমার মা খারাপ না। ( নিরা)

__ আমার ড্যাডিও খারাপ না, বিশ্বাস করিনা ( তৃণা)

__ কি হয়েছিলো সব খুলে বলোনা মা। ( তৃণা ও নিরা একসাথে বলে উঠে)

হেনা নিজের সব কষ্ট ভুলে বলতে শুরু করে দুই মেয়েকে আর পাশে তুষার মাথা নিচু করে বসে থাকে।

হেনা : আমি ক্লাস নাইন থেকে তুষার এর প্রেমে পড়ি। প্রেম এতো টাই গভীর ছিলো যে কেউ কাউকে ছেড়ে থাকার কল্পনাও করতাম না।

তুষার : দুজনে সংসার করার স্বপ্ন দেখতাম , এক সাথে ঘর বাধার স্বপ্নে সব সময় বিভোর থাকতাম। এভাবেই স্কুল শেষ করে কলেজে উঠি। সেখানে ও একসাথে ভর্তি হই। সব ক্লাস একসাথে করতাম, প্রাইভেট ও একই সাথে পড়তাম । এক সাথে ঘুরতে যেতাম , কতো রঙিন স্বপ্ন ছিলো দুইজনের চোখে।

হেনা: হ্যাঁ! ভালোবাসা এতো ই গভীর ছিলো, কখনো চিন্তা ও করিনি একে অন্যকে ছাড়া থাকতে হবে।

তুষার : এভাবেই আমরা অনার্স এ ভর্তি হই। দুইজন একসাথেই বিশ্ববিদ্যালয় এ চান্স পাই। বেশ খুশিই ছিলাম দুইজনে, কিন্তু সুখ বেশিদিন টিকলো না আর। হটাৎ ই হেনা মিসিং হয়ে যায়। আমি অনেক চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করতে পারিনি।

হেনা : সেদিন বাসায় জানতে পারে আমি তুষারের সাথে রিলেশন করি। সেদিন বাবা খুব মেরেছিলো, এখনকার মতো তো আর তখন ফোন ছিলো না। ঘরে দরজা লাগিয়ে বন্দী করে রাখে। অনেক কেঁদেছিলাম সেদিন, কেউ আসেনি চোখের পানি মুছে দিতে।

তুষার : এসব কথা তো আগে বলোনি।

হেনা: বলবো কিভাবে, জানতেই পারতাম না কখন সকাল আর কখন রাত হতো। সব সময় বন্দী থেকে থেকে অতিষ্ট হয়ে গেছিলাম। হটাৎ একদিন মা এসে বলে গেলেন আমার বিয়ে। আমি না দেখেছি বর না দেখেছি ঘর। তুষার কে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনা ও করতে পারতাম না তখন। আমার অনিচ্ছায় বিয়ে হয়ে যায় মাহমুদের সাথে। বিশাল ব্যবসায়ী সে, বাড়ি, গাড়ি , টাকা, ধন দৌলত সবিই ছিলো। কিন্তু আমি কখনো সুখী ছিলাম না। আমি শুধু তুষার কেই ভালোবাসতাম। বিয়ের রাতেই মাহমুদ এসে বলে, সে সব জেনে শুনেই বিয়ে করেছে। সে আমাদের প্রেমের কথা বাবাকে বলে দেয়৷ আর সে প্রেমের কথা সমাজে রটিয়ে দিবে এই ভয় দেখিয়ে বিয়ে করে আমাকে। বিয়ের পর থেকে শুরু হয় মানসিক, শারিরীক নির্যাতন। নির্যাতন সহ্য করতে করতেই একটা বছর পার হয়ে যায়। এক বছর পর আমি জানতে পারি আমি অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু নির্যাতনের মাত্রা কমেনি, কারণ আমার জীবনে অন্য ছেলে ছিলো । মাহমুদ কখনো ই বিশ্বাস করতো না আমাকে। মার খেয়ে খেয়েই মাসুদের জন্ম হয়, তাও আমাকে শুনতে হয়েছে মাসুদ নাকি আমার পাপের ফসল। মাসুদ কে কখনো মাহমুদ নিজের সন্তান হিসেবে মেনে নেয়নি। এতো ই যখন অত্যাচার করার ছিলো তাহলে আমার সুখের জীবন টা নষ্ট করার কারণ আমি আজও খুঁজে পাইনি।

তুষার : এতো কিছু আমাকে কখনো বলোনি কেনো হেনা। ( কান্না জড়িত কন্ঠে তুষার)

হেনা : অবহেলা অনাদরে মাসুদ এর বয়স তখন ৫ হয়। কখনো আমরা মা ছেলে সুখে ছিলাম না। সব সময় সংসার এর কাজ করাতো সে আর আমার একটু অসাবধানতা হলেই লাত্থি ঝাটা আমার যেন পাওনা হয়ে গিয়েছিলো। কিছুদিনের মাঝেই জানতে পারি মাহমুদ পর নারীতে আসক্ত। এই কথাটা আমাকে মোটেও অবাক করেনি কারণ যার নিজের চরিত্র খারাপ সেইই অন্যকে খারাপ ভাববে।

এভাবেই মাসুদ এর বয়স ৬ বছর হয়ে যায়, মাসুদ তখন আমার মার আর নিজে মার খেয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। একদিন সকাল বেলা জানতে পারি মাহমুদ এর গ্রামের সকল পুকুরের মাছ এক সাথে বিষ খেয়ে মারা গেছে। ৫ টা পুকুরে মাছ ছিলো, এক দিনে এতো লস খেয়ে মাহমুদ পাগলের মতো চিৎকার করতে থাকে। সেদিন জিজ্ঞেস করাতে আমাকে কুকুরের মতো পেটায়। বলে আমার জন্য তার লস হয়েছে।

মুখ বুজে মার সহ্য করে ছিলাম, এরপর সেদিন দুপুরবেলা খবর আসে মাহমুদ এর তিনটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি তে আগুন লাগে। একদিনে শত কোটি টাকা লস খাত মাহমুদ। এতো লস খেয়ে কিছু করতে না পেরে বাড়িটা বন্ধক রেখে লোন তুলে আবার বিজনেস শুরু করবে ভেবে। কিন্তু পার্টনার এবার ধোকা দেয়। সব টাকা মেরে নিয়ে পালিয়ে যায়। সেদিন লোনের টাকা দিতে না পেরে এক মাসের মাঝে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বাড়ির বাইরে আমি আর মাসুদ বসে ছিলাম তখন খবর আসে মাহমুদ অনেক ড্রিংক্স করে গাড়ি চালাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে।

তুষার : এই সব ক্ষতির পিছনে আমিই ছিলাম।

হেনা : কিহহহহ! ( বেশ অবাক হয়)

তুষার : তোমার ধোকা পেয়ে নিজেকে প্রতিশোধ এর আগুনে জ্বলিয়ে নিয়েছিলাম । তাই, কিন্তু জানতাম না তুমি কতো কষ্ট পেয়েছো। শুধু নিজের কষ্ট দেখেছিলাম, আর কিছুই দেখিনি।

হেনা: এরপর একটা লোক এসে চিঠি দিয়ে যায়। চিঠি তে একটা ঠিকানা ছিলো, উপশহর এর একটি বাড়ির ঠিকানা । সেখানে স্পষ্ট লিখা ছিলো আমি যেনো একা যায়। মাসুদ কে হাসপাতালে বাবার পাশে এক নার্সের দায়িত্বে রেখে সেই ঠিকানা তে যায়। যা দেখলাম বেশ অবাক হয়ে গেছিলাম আমি। এ যে আমার তুষার , এতো বছর পর সামনে দেখে হাসবো কি কাঁদবো না বুঝে হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

তুষার আমায় অবাক করে দিয়ে বলে “এখন তোমার অনেক বিপদ তাইনা হেনা

আমি কিছু না বলেই কেঁদে ফেলি। সে কিছুই না বলার সুযোগ দিয়ে বলে সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে একটু ত্যাগ করলে। তুষার সেদিন মাহমুদ এর সব চিকিৎসা খরচ দিতে চায়। বিনিময়ে একটা শর্ত আছে, মাহমুদ কে ডিভোর্স দিতে হবে। কিন্তু এই ডিভোর্স এর কথা কেউ জানবে না কখনো। আমি কথা বলতে পারিনি, ডিভোর্স পেপার রেডিই ছিলো। সেখানে অনেক ভেবে সাইন করে দিই। কয়েকটা সাইন করে দিয়ে চলে আসি সেখান থেকে। তুষার মাহমুদ এর চিকিৎসা আর আমাদের মা ছেলের থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। এভাবে আমি তুষারের পাঠানো টাকাতেই চলতে থাকি।

তুষার কখনো তার ঠিকানা আমায় বলতো না। ঠিক সময় মতো টাকা চলে আসতো। এরপর এভাবেই একটা বছর কেটে যায়, ডিভোর্স দেয়া পঙ্গু স্বামী, আর ছেলে কে নিয়ে। মাহমুদ সুস্থ হবার কোন আশাই ছিলো না। তাও তার সেবা করতাম , মাহমুদ কথাও বলতে পারেনা আর, সাথে হুইল চেয়ার ছাড়া চলতে পারেনা। তাই তুষার একজন কাজের লোক পাঠায়। সেই ছেলেই মাহমুদ এর সব সেবা যত্ন করতো।

এরপর একদিন তুষার আমাকে ডেকে পাঠায় এক ঠিকানা তে। আমি যেন পুতুল হয়ে গিয়েছিলাম। তুষার যা বলত তা শুধু করতাম কিন্তু তুষার কে কিছুই বলতাম না। সেদিন তুষার একটা কাগজে সাইন করতে বলে। আমি করে দিই, এরপর চলে আসার সময় আর আসতে পারিনি। তুষার আমায় কাছে টেনে নেয়, কিন্তু সকালবেলা আমাকে বের করে দেয় । এভাবে সে প্রায়ই আমাকে ডেকে পাঠাতো সেই ফ্লাটে। আমি যেতে বাধ্য ছিলাম কারণ আমি পড়াশোনা বেশি করিনি, না করি কোন চাকরি । এভাবে চলার কিছুদিন পর আমি জানতে পারি আমি মা হতে চলেছি। আমি কখনো তুষার কে এই খবর দিই নি । সে নিজেই জেনে নেয়, সব সময় খোঁজ রাখতো সেভাবেই হয়তো।

ডেলিভারি র ডেট এগিয়ে আসে, আত্মহত্যা করতে চেয়েও পারিনা। কারণ সন্তান পেটে নিয়ে মরলে পাপ হবে তাই। জীবন্ত প্রাণ মারতে চাইনি আমি কখনো ই। প্রায় দিনিই চিঠি আসতো যেনো নিজের খেয়াল রাখি। কখনো ই যেন মাহমুদ এর ঘরে না যায়। এরপর যেদিন পেইন উঠে, মাসুদ ই আসেপাশের মানুষ ডেকে হাসপাতালে নিয়ে যায় আমাকে। মাহমুদ অসুস্থ হলেও বেশ ভালো করেই বুঝে গেছিলো আমি আর তার নাই। আমিও তার ঘরে ভুলেও যেতাম না, তাই সে জানতো না আমার মা হবার খবর। নার্স আমায় এসে বলে আমার দুইটা মেয়ে হয়েছে। আনন্দিত হতে পারিনি সেদিন কারণ যাকে একদিন ভালোবাসতাম তার পাপের ফল এই সন্তান।

তুষার: না পাপের না, ওরা দুই বোন আমার বৈধ সন্তান ।

হেনা: কিভাবে?

তুষার : লাস্ট যেদিন একটা পেপার এ সাইন করায় সেটা তোমার আমার বিয়ের পেপার ছিলো। তোমাকে কখনো জানাতে চাইনি রাগের জন্য।

হেনা: এরপর তুষার নার্স দিয়ে একটা মেয়েকে নিয়ে চলে যায়। চিঠি লিখে যায় স্মৃতি হিসেবে নিয়ে গেলাম। ভেবেছিলাম আর কখনো হয়তো খোঁজ নিবেনা। কিন্তু আজ অব্দি আমার সব খরচ ই আসে তুষারের কাছ থেকে।

চলবে……

প্রতিশোধ পার্ট_10

0

প্রতিশোধ
পার্ট_10
#জামিয়া_পারভীন

রাত্রে বাসায় ফিরে তৃণার হাবভাব দেখেই পুরো ই বুঝে যায় এটা তার নিরা নয়। তাও নাটক করতে থাকে আবির।

__ নিরা, তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চাই। ( আবির)

__ জ্বী বলেন ( তৃণা)

__ আসলে কিভাবে যে বলবো বুঝছি না। ( আবির)

__ ন্যাকামি না করে বলে ফেলুন। ( তৃণা)

__ আসলে, সব দোষ ওই তৃণার, তাই ভুলবশত তোমাকে তৃণা ভেবে ওই কাজ করে ফেলি। টেস্ট এর রিপোর্ট পজিটিভ, মানে তুমি প্রেগন্যান্ট। ( আবির)

__ ( তৃণা খুব ভয় পেয়ে যায়, কি বলছে আবির এইসব, সে তো পুরাই সুস্থ, ধরা পড়ে যাবে সে, ভয়ে ভয়ে বলে) মানে কি?

__ এতো ভয় পাচ্ছো কেনো তুমি? কি হয়েছে?

__ না কিছুনা, সারাদিন অনেক ধকল গেছে এখন ঘুমাবো। ( তৃণা এতো দিন আবিরের কাছে আসার চেষ্টা করেছে আর আজ পালাচ্ছে। সে চেঞ্জ করেই শুয়ে পড়ে বিছানাতে) ( আবির তার পাশে ঘুমাতে গেলে বলে আপনি আমার কাছে আসবেন না দূরে থাকেন। )

আবির এইসব ব্যবহার এ পুরো টা ই বুঝে যায় এটা নিরা না। নিরা আর যাই হোক, নিরার রাগ করার স্টাইল টা আলাদা।
আবির কিছু না বলে পাশের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে।




নিরা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে তৃণার ড্রেস পড়ে নেয়। তৃণার বাবা নিচে আগে থেকেই উঠে বসে ছিলো।

__ হাই, ড্যাডি। [ নিরা ]

__ তৃণা তুমি! কখন এলে মামনি? আবির কে ছেড়ে আসা তোমার উচিৎ হয়নি। ( তৃণার বাবা)

__ আরে আরে কি বলছো ড্যাডি, আমি তো কাল রাত থেকেই এখানে আছি। নিজের মেয়ে কেও চিনতে পারো না। সত্যি করে বলো তো আমি কে? ( নিরা)

__ আয়ায়ায়ায়া আমি কিছু জানিনা ( তোতলিয়ে)

__ দেখো ড্যাডি, আমি আমার মা কেও সেইম কথা জিজ্ঞেস করেছি। সেও এড়িয়ে গিয়েছে, এখন তুমিও এড়িয়ে যাচ্ছো। কি সম্পর্ক আমাদের দুইজনের? আমরা একই রকম দেখতে কিভাবে?
( নিরা)

__ আ আ আ আমি সত্যিইইইই জানিইইই নায়ায়া ( তৃণার বাবা)

__ তার মানে আমি ধরে নিলাম তৃণা তোমার মেয়ে না। ( নিরা)

__ নাহহহ! তৃণা আমার ই মেয়ে।

__ তাহলে আমি কে? ( নিরা)

__ তুমি কে, আমি তা জানি। কিন্তু তুমি আমার মেয়ে নও, তৃণা…………. ।

__ তাহলে তৃণা কে? ( নিরা)

[ ঠিক এই সময় তৃণা আবিরের বাসা থেকে পালিয়ে আসে, কিন্তু নিরা আর ওর বাবার কথা শুনতে পেয়ে লুকিয়ে থাকে, কথা শুনতে থাকে লুকিয়ে লুকিয়ে ]

তৃণার বাবা বলতে শুরু করে

__ আমার ক্লাস নাইন এ থাকতে একটা মেয়ের সাথে প্রেম হয়ে যায়। কিন্তু মেয়েটা আমার সাথে ৫ বছর প্রেমের পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। জানিনা তার কি হয়েছিলো, অনেক খোঁজ করার পর জানতে পারি সে বিয়ে করেছে আমার ই বন্ধু কে। আমার প্রচুর কষ্ট হয়েছিলো সেইদিন কিন্তু সব কষ্ট মেনে নেয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিছুদিন পর শুনতে পাই তার ছেলে হয়েছে। যে স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম সেই স্বপ্ন আজ অন্য কারো সাথে পূরণ করেছে।

আমি আমার বন্ধুকে শত্রু হিসেবে গণ্য করি। প্রতিশোধ এর নেশা উঠে যায় আমার রক্তে। আমার পড়াশোনা শেষ করে বাবার বিজনেস এ হাত দিয়েই শুরু করি প্রতিশোধ এর খেলা। বন্ধু মাহমুদ আর প্রেমিকা হেনার সাথে ভালো ই প্রতিশোধ নিতে পেরেছিলাম আমি।

মাহমুদ এর ব্যবসায় লস করাতে শুরু করি। আস্তে আস্তে সে এতো লস খেয়ে যায় সে রাস্তার ফকির হবার দশা হয়ে যায়। তখন হেনা দ্বিতীয় বারের মতো প্রেগন্যান্ট ছিলো । হেনার জীবন মরণের রাত ছিলো সেইটা, হেনাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেদিন হেনার দুই টা মেয়ে হয়। হেনার জ্ঞান ফিরতে অনেক সময় লাগে। আর তখন ডাক্তার এর বিল যতো হয় সেটা শোধ করার ক্ষমতা ছিলো না মাহমুদ আর হেনার। সেই সুযোগ টাই কাজে লাগাই আমি।

নার্স কে টাকা দিয়ে মাহমুদ এর কাছে পাঠায়। নার্স মাহমুদ কে বলে

নার্স : মিঃ মাহমুদ , আপনার বিল তো অনেক বেশি ( ৫০০০০টাকা)। আর আপনি তা শোধ ও করতে পারবেন না। আর এদিকে একজন পেশেন্ট এর বাঁচামরা অবস্থা। সন্তানের মৃত্যু হয়েছে, আপনি যদি আপনার একটা সন্তান কে বিক্রি করে দিতেন তাহলে তারাও সন্তান পেতো আর আপনারাও টাকা পাবেন।
২ লাখ দিবে বলেছে তারা।

মাহমুদ খুব লোভী হয়ে উঠেছিল তখন তাই নার্স এর সাথে রাজি হয়ে যায়। বিক্রি করে দেয় তার এক মেয়েকে।

আসলে সেদিন আমার স্ত্রী মারা যায়নি, কারণ আমি তো বিয়েই করিনি। শুধু মাত্র প্রেমিকাকে পাপবোধে রাখবো বলেই এই সন্তান টা নিয়ে নিই। হেনা খুব কষ্ট পেয়েছিলো সেদিন। নিজ সন্তান কে মাহমুদ বিক্রি করে দেয় বলে আজও মাহমুদ কে ক্ষমা করেনি হেনা। আর তৃণা কে নিয়ে আমি চলে গিয়েছিলাম ঢাকা। কখনো এই শহরে আনতে চাইনি, কিন্তু তৃণার মেডিকেল এ পড়ার জেদের জন্য তাকে আনতে আমি বাধ্য হই।

__ আর আপনার সেই মেয়ের জন্যই আমাকে রেপ এর স্বীকার হতে হয় ( কান্নার কণ্ঠে নিরা) আপনাদের প্রতিশোধ এর আগুনে আমাদের জীবন টা জ্বলে গেলো। আজ এক বোন আরেক বোনের সংসার নষ্ট করতে গেছে। আর আপনিও তাতে সাই দিয়েছেন। আমি তো আবির স্যার কে বিয়ে করতে চাইনি। আপনার মেয়ের জন্য আবির আমার সাথে যে অন্যায় করেছে তার জন্য ক্ষমা আবির কে কখনো করবোনা। আর তৃণাকেও কখনো ক্ষমা করবোনা।

__ ( আড়াল থেকে তৃণা বের হয়ে আসে)
আমি সব শুনেছি ড্যাডি, আমি তোমার মেয়ে না। ( কান্না করে খুব)

__ নারে মা, তুমি আমার মেয়ে ছিলে থাকবে। ( তৃণার বাবা)

__ নাহ, তুমি আমার বাবা না, তাছাড়া তোমার জন্য আমি কাল নিজের মা কে অপমান করেছি। ( তৃণা)

নিরাকে তৃণা বলে

__ আমি ভেবেছিলাম জোর করে ভালোবাসা হয়। কিন্তু না, আমি জোর করে ভালোবাসা পেতে গিয়ে বুঝেছি সেটা আমার জন্য না। আবির স্যার তোমাকে খুব ভালোবাসে নিরা। আমি চলে এসেছি ওই বাসা থেকে। তোমার ভালবাসা তোমারি আছে, তুমি আর তোমার সন্তান মিলে স্যারের সাথে সুখেই থাকিও নিরা।

__ জানি আবির আমায় ভালোবাসে বোন। বলে তৃণাকে জড়িয়ে ধরে নিরা।

তৃণা এতো সত্যি কথা জানার পর পাগলের মতো আচরণ শুরু করে, এরপর অজ্ঞান হয়ে যায়। তৃণার বাবা খুব কান্নায় ভেঙে পড়ে। নিরা, তৃণার বাবা তুষার, সাইরা মিলে তৃণা কে হাসপাতালে নিয়ে যায়। নিরা আবিরকে ফোন দেয়, মা আর ভাইকেও ফোন দেয় নিরা। সবাইকেই সব খুলে বলে ফোনে।

আবির নিরার কাছে আসতেই আবির এর কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে শুরু করে নিরা।

__ নিরা, এতো ভেঙে পড়িও না সব ঠিক হয়ে যাবে। ( আবির)

__ এতো গুলো সত্য কথা আমি হজম করতে পারছিনা। ( নিরা)

__ আহহ সব মানলাম, তৃণার বাবা যা বলেছে তাতে তৃণা তোমার বোন। কিন্তু তোমার মায়ের কাছেও তো সব শুনা উচিৎ তাইনা। হয়তো উনি বানিয়ে বানিয়ে বলেছে। ( আবির)

__ হ্যাঁ হতে পারে আবির, আপনি ঠিক বলেছেন। আমি মায়ের কাছে এর জবাবদিহি চাইবো। ( নিরা)

__ এখন একটু চোখ টা মোছো। (আবির)

__ কাল আমি ছিলাম না আপনার পাশে ( নিরা)

__ জানতাম, সেটা তৃণা বুঝে ফেলে চলে আসে। ( আবির)

__ আমার জন্য টেনশন করেন নি, যদি বিপদ হয়ে যেতো। ( নিরা)

__ নাহ, কেনো জানি মনে হচ্ছিলো তুমি সেফ আছো। ( আবির)

__ হুম সেফ ই ছিলাম , উনি আমাকে নিজ মেয়ের মতো যত্ন করেই রেখেছিলো। ( নিরা)

__ আচ্ছা এসব বাদ দাও, তুমি কেমন আছো সেটা বলো। ( আবির)

__ আমি, আপনার সন্তান সবাই সেফ আছি। ( নিরা)

__ তুমি জানতে এই কথা ( আবির)

__ আপনি রিপোর্ট আলমারি তে লুকিয়ে রেখেছিলেন সেখানে দেখেছিলাম। কাউকে কিছুই বলিনি কারণ এটা গর্ব করার বিষয় নয়। ( নিরা)

__ ওভাবে বলিও না, এটা আমাদের ভালোবাসার সন্তান । সব ভুলে যাও নিরা, শুধু শুধু কষ্ট বাড়বে। ( আবির)

__ হু ( নিরা)

নিরা মা, ভাই আসে হাসপাতালে । নিরার কাছে সব কিছু শুনে, তৃণা তার বোন তখন নিরার মা মুখ লুকিয়ে ফেলে। নিরার মা এতো দিন পর তার পুরনো প্রেমিক কে দেখে অবাক হয়ে যায়।

__ তুমি ( হেনা)

__ চিনতে পেরেছো তাহলে ( তুষার)

__ না চিনার কি আছে ( হেনা)

__ প্রতারক তুমি, তোমার ভুলে যাওয়ার ই কথা। ( তুষার)

__ আমাকে প্রতারক বলার আগে উচিৎ ছিলো আমার সাথে কি হয়েছিলো সেটা জানা। ( হেনা)

__ আহহ মা ( নিরা) বাদ দাও তো , যা হবার হয়ে গেছে। পরে কথা বলিও, এখন এসব কিছুই ভালো লাগছেনা ।

নিরা সকাল থেকে না খেয়ে এসব টেনশন এ সেও জ্ঞান হারায়। আবির নিরাকে ভর্তি করিয়ে দেয় কেবিবে। দুই বোন দুই কেবিনে ভর্তি হয়ে আছে, আর বাইরে সবাই চিন্তিত ।

#বিঃ_দ্রঃ ( আরও অনেক গুলি পর্ব হবে গল্প টার অনেক প্রেম কাহিনী ও আছে। আমার ৫ তারিখ এক্সাম আছে । এর আগে আর লিখতে পারবোনা। ফেসবুকে ও আসবোনা এই তিন দিন। তাই বাকি পর্ব দিবো এক্সাম শেষ করে ৫ তারিখ সন্ধ্যায়। ভোট এর জন্য এক্সাম আটকিয়ে আছে। একটু ধৈর্য সবাইকে ধরতেই হবে )

চলবে……….

প্রতিশোধ পার্ট_9

0

প্রতিশোধ
পার্ট_9
#জামিয়া_পারভীন

__ আবির খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে নিরাকে ডাক দেয়, নিরা সাড়া দেয় না দেখে নিরার ঘুমন্ত কপালে কিস করে আবির আর তখনই নিরা টের পেয়ে যায়।

__ দেখুন, এইসব আমি পছন্দ করিনা তা কি জানেন না?

__ জানি তো , কি করবো বলো?

__ যান বাইরে যান, আর আসবেন না এখানে।

__ আচ্ছা একটা কথা তো বলো? তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?

__ আমাকে কি বাজারের মেয়ে মনে হয় যে আমি কাউকে ভালোবাসবো?

__ আমি এসব মিন করে বলিনি, ভুল বুঝছো।

__ আপনারা ছেলেরা ভাবেন কোন মেয়ে আপনাকে ইগনোর করলে তার প্রেম আছে। অথচ এটা ভাবেন না ইগনোর করার পিছনে দায়ী আপনারা নিজেরাই।

__ হ্যাঁ! তা জানি, আমার দোষ এর জন্যই তুমি হয়তো কখনো ক্ষমা করতেও পারবেনা।

__ জ্বী হ্যাঁ, সেটাই।

__ আজ একটু মিশির চেম্বার এ যেতে হবে তোমাকে ।

__ কেনো, আমি কি অসুস্থ?

__ হুম, সেদিন মিশি যেটা বলেছে সেটা টেস্ট করে দেখতে হবে।

__ কবে কি বলেছে

__ আরে, বাদ দাও৷
গেলেই সব জানতে পারবে।

__ ওকে দিলাম বাদ, কিন্তু পরে যদি উল্টো পাল্টা কিছু শুনি তো আপনাকে কখনো ক্ষমা করবোনা।

আবির মিশির চেম্বারে গিয়ে নিরা কে পরীক্ষা করায়। যেদিন রেপ হয়েছিলো নিরা, সেদিন ই প্রেগন্যান্সির টেস্ট টা করিয়ে নিতে বলেছিলো মিশি। তাই আবির এর খারাপ লাগ্লেও নিরাকে নিয়ে আসে আজ। রেজাল্ট যাই হোক মেনে নিতেই হবে। সেদিন সন্ধ্যায় রেজাল্ট আনতে আবির একা যায়। কারণ নিরাকে সে এটা বলতে পারবেনা খুব সহজে। আর টেস্ট এর রেজাল্ট পজিটিভ দেখে হাসবে কি কাঁদবে তা বুঝতে পারেনা আবির। নিরা এই কথা জানলে তার খবর খারাপ করে দিবে।
তাই আবির ডিসিশন নেয় বিয়ের অনুষ্ঠান এর পরই নিরাকে এই খবর দিবে।

রেজাল্ট নিয়ে আলমারি তে লুকিয়ে রাখে আবির। পরের দিন বিয়ের অনুষ্ঠান তাই আবিরের বাবা মা সবাই আসে আবারো। আত্মীয়রা একেবারেই কমিনিউটি সেন্টারে আসবে, আবিরের বউ দেখতে।

আবিরের বাবা মাও নিশ্চিত আছে, বিয়ের মূল নাটক দেখবে বলে। নিরাকে তাদের একদমই পছন্দ না। ক্ষেত মেয়ে, আবিরের মায়ের ভাষায়। সব সময় শাড়ি পরে নিরা, যা এই যুগের সাথে বেমানান। অথচ তৃণা কতো ই না আধুনিক। অনন্যাও বেশ ছিলো কিন্তু তৃণাকেই তাদের বেশি ভালো লেগেছে। তার থেকেও বড় কথা তৃণার বাবা বিজনেসম্যান। সমাজে তার স্ট্যাটাস ও অনেক বেশি।

তৃণা যে পার্লারে নিরাকে সাজানোর কথা সেখানে গিয়ে চুপ করে বসে থাকে। দুপুরের দিকেই নিরাকে পার্লারে নিয়ে যায় আবির। আবিরকেও রেডি হতে হবে তাই ড্রাইভার এর উপর নিরাকে আনার দায়িত্ব দিয়ে আবির চলে আসে।

পার্লারের ভিতরে তৃণাকে দেখে নিরা চমকিয়ে যায়।

__ কি ব্যাপার তুমি এইখানে কি করছো? ( নিরা)

__ এইখানে তো তোমার আসার কথা ছিলো না, আসার তো কথা ছিলো আমার, তা এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে। ( তৃণা)

__ মানে, কি বলছো এইসব?

__ আবির স্যার কে পাবার জন্য এতো নাটক করলাম, আর তার সুযোগ নিলে তুমি তাই না। এর প্রতিশোধ আমি নিয়েই ছাড়বো । তোমাকে ভালো ই ভালো ই বলছি আজ থেকে তুমি তৃণা হয়ে আমার বাবার সাথে থাকবে। আর আমি নিরা হয়ে আবিরের সাথে থাকবো। মেনে নিতে কি রাজি আছো?

__ তোমার জন্য মিঃ আবির আমার ক্ষতি করেছে। তোমার মিথ্যা নাটকের বাস্তবতা আমাকে দেখিয়েছে আবির। আর আমি আবিরকে ছেড়ে দিবো। তা স্বপ্নেও ভেবো না, আবিরকে প্রতি মুহুর্তে কষ্ট দেয়ার জন্য নিরাই যথেষ্ট।

__ তা ভুলে যাও, এখন তুমি আর টিকতে পারবে না।

পার্লারে সব ব্যবস্থা করেই রেখেছি। বলেই তৃণার বডি গার্ড রা নিরা কে মুখ বেধে তৃণার বাসায় নিয়ে যায়। আর তৃণা আবিরের বউ সেজে আবিরের গাড়িতে করে বিয়ের অনুষ্ঠান এ যায়।

তৃণা প্রথমে অনুষ্ঠানে ঢুকেই আবিরের বাবা কে আর মা কে আলাদা আলাদা ভাবে চোখ টিপ দেয় বুঝিয়ে দেয় সে তৃণা। আবির সেটা খেয়াল করে নেয় কিন্তু বুঝতে পারেনা কিছুই।

বছরের প্রথম দিন, সাথে আবিরের বিয়ে, সেই হৈচৈ চারিদিকে। একে একে সবাই তৃণাকে নিরা ভেবে অভিনন্দন জানাচ্ছে।

মিশি : হ্যালো নিরা, কেমন আছো? এই সময় শরীরের যত্ন নিও বেশি করে।

__ এই সময় মানে? ( তৃণা)

__ আরে আবির তোমাকে কিছুই বলেনি নাকি? ( মিশি)

__ তৃণা ভয় পেয়ে যায়, কি বলতে চাচ্ছেন উনি, ধরা পড়ে যাবে না তো, এইসব ভয় ভিতরে ঢুকে যায়।

আবির : আহ! মিশি , কি শুরু করলি তুই বলতো। এখনো সে কিছুই জানেনা, আজ বলবো।

( তৃণা একটু স্বস্তি পেলো)

মিশি : ওহহ তাই নাকি, ওকে বাবু ??

নিরার মা এসে তৃণার কে জড়িয়ে ধরে এতে তৃণা চিনতে না পেরে বলে

__ কে আপনি? আজব তো আমার সাজ নষ্ট হয়ে গেলো। ( তৃণা)

__ কি বলছিস মা তুই? নিজের মা কে তুই ভুলে গেলি?

__ সরি মা! আসলে তোমার মুখ দেখিনি, তাই ভুলভাল বলে ফেলেছে। ক্ষমা করে দিও ( মনে মনে উহহ! এই মহিলা যে এমন করবে কে জানতো । আমি তো ধরাই পড়ে যাচ্ছিলাম)

আবির এইসব ঘটনাতে বেশ সন্দেহ করে ফেলে তৃণাকে। কিন্তু কিছুই বলেনা, মনে মনে বলে, নিরা তো এমন ছিলো না। তাহলে কি এই মেয়ে নিরা নয়। অবশ্য নিরার চোখের ভাষা আমি বুঝি। এটা তো নিরার চোখ মনে হচ্ছেনা, নাকি সাজানোর জন্য এমন লাগছে। নাহ মাথা কাজ করছে না। পরে দেখা যাবে, আচ্ছা যদি এইটা নিরা না হয় তাহলে নিরা কোথায়? আর চিন্তা করতে ভালো লাগছে না আবিরের।

__ ( আবিরের মা) আবির ডার্লিং! এতো কিসের টেনশন করছো তুমি।

__ না তো মম! নিজের পছন্দ মতো সুন্দরী বউ পেয়েছি, কিসের টেনশন করবো আমি। [ আবির]

__ তাই তো কথা, এতো সুন্দর বউ থাকতে আর কিছু লাগে নাকি? ( আবিরের বাবা)

__ হ্যাঁ ড্যাড, ঠিকিই বলেছো।

সবাই অনেক রকমের গিফট এনেছে। খাচ্ছে, আবিরের নাম করছে। ফটোশুট, ভিডিও সব শেষ করে রাত ১২ টার দিকে তারা সবাই বাসায় চলে আসে।
,
,
,
তৃণার বাবা নিরাকে দেখে বেশ অবাক হয়। একেবারে তৃণার মতো দেখতে।

__ আচ্ছা এটা কিভাবে সম্ভব মিসেস আবির। তুমি তো পুরাই তৃণার মতো দেখতে।

__ এটাই তো আমার জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে মিঃ।

__ কিন্তু কিভাবে সম্ভব সেটা বলতো?

__ এটা আপনি ভালো করে জানবেন, আমার তো জানার কথা নয়।

__ আমি কি জানবো? ( তৃণার বাবা)

__ তা আমি জানিনা। যাই হোক আমাকে এখানে তুলে এনে কি আপনি ভালো কাজ করেছেন?

__ আমি আমার মেয়ের চোখের জল দেখতে পারিনা।

__ ওহহহ তাইনা, আবির আমায় ভালোবাসে, আর সে তৃণাকে খুব শীঘ্রই ধরে ফেলবে।

__ চিনতেই পারবে না, হা হা হা ( তৃণার বাবা)

__ তা কয়দিন পরেই বুঝতে পারবেন।

__ যাও উপরে তৃণার ঘরে গিয়ে থাকো। ( সাইরা সাইরা বলে সাইরা কে ডাকে)

__ জ্বী আংকেল ( সাইরা)

__ আজ থেকে নিরা কে তৃণা মনে করে তাকে নিয়ে থাকবে? আর বডিগার্ড তো আছেই পালাতে পারবেনা। ( তৃণার বাবা)

__ জ্বী, এসো বলেই নিরাকে ধরে নিয়ে যায়।

__ সাইরা ছাড়ো , খুব শীঘ্রই তোমাদের জেলে পাঠিয়ে ছাড়বো দেখে নিও। ( নিরা)

নিরা এতো দিন না বুঝলেও এখন বুঝতে পারছে সে আবির কে ভালোবেসে ফেলেছে। খুব কস্ট হচ্ছে নিরার কিন্তু এখান থেকে কিভাবে পালাবে তার প্লান করতে থাকে।

চলবে…..

( সব পাঠক পাঠিকাই চাই সব স্টোরি তে হ্যাপি এন্ডিং, এটাতেও হবে , রহস্য গুলি খোলার জন্য এটার দরকার ছিলো)

প্রতিশোধ পার্ট_8

0

প্রতিশোধ
পার্ট_8
জামিয়া_পারভীন

__ “আবির তুমি এসব বলছো টা কি, তুমি অন্য কারোর জন্য আমাকে অপমান করছো? ” মেয়েটি বলে আবিরকে।

__ “দেখো আমার কাছে তোমার কোনই ভ্যালু নাই। হয়তো ছিলো কোন একদিন এখন কিছুই নাই। তুমি চলে যেতে পারো, আর আনার সাথে কন্টাক্ট করার চেষ্টা ও করিও না।। “আবির বলে মেয়েটাকে।

__ ( মেয়েটা আবিরের কলার ধরে বলে ) ” এতো বড় কথা তুমি আমায় বলতে পারোনা আবির। আমি তো তোমায় ভালোবাসি, তার চেয়েও বড় কথা দুই দিন পর আমাদের বিয়ে। সব কিছু ঠিক ছিলো কিন্তু তুমি মাঝখানে এমন কথা কেনো বলছো আবির। ”

__ ( মেয়েটাকে সরিয়ে দিয়ে) দেখো অনু ( মেয়েটার নাম অনন্যা, আবির অনু বলে ডাকে ) , তোমাকে আমার বিয়ে করা সম্ভব না। কারণ আমার বিয়ে হয়ে গেছে নিরার সাথে। ( নিরার কাঁধে হাত রেখে বলে আবির)

__ ” তুমি আমার সাথে ফাজলামি করছো তাই না আবির, কতো টা ভালোবাসি তার পরীক্ষা নিচ্ছো তাই না। ” (অনু)

__ ” ফাজলামি করার কোন মুডে আমি নাই মিস অনু ” ( আবির)

__ ” এটা বিশ্বাস করিনা, বিয়ের দুই দিন আগে এসব কি বলছো তুমি “। ( অনু)

__ ” দেখো অনু, তোমাকে আমি মন থেকে কখনো ই ভালোবাসিনি। বাবা বিয়েটা ঠিক করেছিলেন বলে মত দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি বিয়ে করেছি আমার প্রেমিকা নিরা কে। তার সাথেই সংসার করবো, সেটা তোমার বাবা কে জানিয়ে দিয়েছি, তাও কেনো তুমি এখানে এসেছো? আমি চাই তুমি আমাকে কখনো বিরক্ত করবেনা। ” ( আবির বলে অনুকে)

__ ( নিরা আবিরের কাছ থেকে সরে এসে বলে) বিয়ে যখন ঠিকই করা ছিলো, তাহলে বিয়ে করতে কি প্রব্লেম। আর আমি আপনার প্রেমিকা ছিলাম ও না হবোও না কখনো। বিয়ে করে সুখী হয়েন, আমি চলে যাবো এই বাসা থেকে। ( বলেই নিরা উপরে চলে যায়)

__ নিরা ভুল বুঝোনা ( আবিরের কথা নিরা শোনেও না)

__ বাহ আবির বাহ, তুমি একটা অমানুষ, নইলে আমার সাথে এমন করতে না তুমি। বিয়ের সব কিছু ঠিকঠাক, কার্ড ছাপানো হয়ে গেছে আর তুমি অন্য কে নিয়ে সংসার করছো। বেশ ভালো, তোমাকে সুখে থাকতে দিবোনা। বিয়ে তোমাকে করতেই হবে ওই দিনেই, ওই সময়ের, পারলে আমি কেশ করে আসবো। ( বলে অনন্যা চলে যায় আবিরের বাসা থেকে)

__ ( দরজা খোলাই ছিলো , তাই রোমানা কখন এসেছে আবির খেয়াল করেনি। রোমানা আবির কে এসে বলে) ” কি হয়েছে আবির বাবা? ” অনু মা এতো রাগ করে চলে গেলো ক্যান ? ”

__ ” খালা তুমি এসেছো ভালো করেছো, দুপুরের খাবার ব্যবস্থা করো ” (আর কিছু না বলে আবির উপরে যায়)

__ উপরে গিয়ে দেখে নিরা বিছানায় বসে আছে। নিরার পাশে গিয়ে বসতেই আবিরকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় নিরা।

__ ” দেখুন! আমি আপনাকে ভালোবাসি না, বাসবো ও না কখনো। আর আমার কাছে আসার চেষ্টা ও করবেন না “।

__ দেখো! এতো রাগ করতে হয়না, তুমি খুব রাগী। রাগ টা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করো।

__ জ্ঞান দিয়েন না, আপনার জ্ঞান শুনার জন্য আমি বসে নাই। ( নিরা)

__ ” রাগ তোমার হওয়া টা স্বাভাবিক, আমি তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করিনি সেটা ঠিক। কিন্তু এখন ভালোবাসি, তোমাকে সত্যিই খুব ভালোবেসে ফেলেছি নিরা। ”

__ এসব ফালতু কথা কখনো ই বলবেন না। ( নিরা)

__ ওকে কাজের কথাতে ই আসি তাহলে, রোমানা চলে এসেছে সে রান্না করছে। আর তার চেয়েও বড় কথা পরশু আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান। কেনাকাটা হবে তোমার পছন্দের, রেডি হয়ে থেকো।

__ কিসের অনুষ্ঠান? আমি এর মাঝে নাই।

__ দেখো, সব সময় জেদ ভালো না। ২ ঘন্টার মাঝে যেন তোমাকে রেডি দেখি।

__ আপনার কথা অনুযায়ী আমি চলতে পারবোনা।

__ আবির একটু রাগ করে নিরাকে হটাৎ ই কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ভিজিয়ে দেয়। নিরা আবির কে মারতে থাকে খুব কিন্তু তাও ছাড়ে না। আবির আর নিরা দুজনেই ভিজে গেছে তখন নিরা বাধ্য হয়ে শাওয়ার শেষ করে। আবির ততোক্ষণে বের হয়ে গেছিলো। নিযে পরিষ্কার হয়ে নিরার জন্য ড্রেস রেডি করে দেয়, গয়না সহ। নিরা রাগ করে থাকলেও রেডি হয়৷

__আবির ডাইনিং টেবিলে বসে আছে আর রোমানা খাবার দিচ্ছিলো। তখন নিরা নিচে নামে, নিরাকে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিতে বলে। নিরাও কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নেয়, কারণ জানেই ঝগড়া করে লাভ নাই। আবির নিরাকে রোমানার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। রোমানাও বউ মা বলে খুব সুন্দর করেই মেনে নেয়।

__ এরপর দুইজনে শপিং এ যায়। বিয়ের ড্রেস কিনে আবির, নিরার পছন্দেই। আবিরের গুলা আগে থেকেই কেনা ছিলো । গয়না কিছু কিনে সন্ধ্যার পর রেস্টুরেন্টে ঢুকে। সেখানে ডিনার করে রোমানার জন্য এক প্যাকেট নিয়ে বাসায় আসে।

__ বাসায় এসে দেখে আবিরের বাবা মা এসেছে, নিরার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় আবির।

__ নিরা সবাইকে সালাম দেয়, কিন্তু নিরাকে যে আবিরের বাবা মা মানতে পারেনি সেটা বুঝতে পারে আবির। এতে আবিরের তেমন কিছুই যায় আসে না কারণ আবির সারাটা জীবন একা একা ই বড় হয়েছে। আবিরের বাবা মা শুধু টাকার পিছনে দৌড়িয়েছে। আবিরের জন্য কোন স্পেশাল সময় ছিলো না তাদের। আবিরের কাছের মানুষ বলতে ছিলো এক রোমানা আর একমাত্র ফ্রেন্ড মিশি। আবিরের বাবা মা দুইজনেই ডাক্তার, তারা সব সময়ই ব্যস্ত থাকতো । আর এখন বেশির ভাগ সময় ই বিদেশে থাকে। যেখানে টাকা বেশি তারা সেটাকেই বেছে নিয়েছে। । কিন্তু আবিরের জন্য কোন আদর ভালোবাসা ছিলো না কোনদিনই। আবিরের ইচ্ছে ছিলো শিক্ষক হবার কিন্তু বাবা মায়ের ইগোর কাছে হেরে গিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হতে হয়। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে প্রফেসর হয়ে শিক্ষক হবার ইচ্ছেটাই শুধু পূরণ করতে পারে।

__ তৃণার বাবা আসে সেদিন রাত্রে, তৃণা তার বাবার গলা জড়িয়ে কি যে কান্না করে তা বলার মতো না। তৃণার বাবাও একটু আবেগী, তাই মেয়ের জন্য সব কিছুই করতে চায়। তৃণার বাবা প্লান করে নিরার যায়গাতে তৃণা করে দিয়ে নিরাকে সরিয়ে দিবে। তৃণার জন্মের সময় ওর মা মারা গেছে তাই এতো আদরের মেয়েকে কখনো কষ্ট দিতে পারবেনা তৃণার বাবা।

__ আচ্ছা ড্যাডি, ওই মেয়েটা আমার মতো দেখতে হলো কিভাবে। ( তৃণা)

__ নারে তেমন কিছুই না। তুই এতো ভাবিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে।

__ তুমি নিরাকে কি করবে?

__ আমার বাসায় নিয়ে গিয়ে বন্দী করে রাখবো।

__ নাহ এতে ধরা পড়ে যেতে পারো।

__ তো কি করতে বলছিস?

__ আমি বরং নিরা হয়ে যায়, আর ওকে তৃণা বানিয়ে দাও।

__ নাহ এটা সম্ভব না।

__ কেনো ড্যাডি, আমার জন্য এটুকুও পারবে না।

__ আচ্ছা দেখছি, কি করা যায়।

__ ওকে ড্যাডি, খুব আনন্দে জড়িয়ে ধরে তার বাবা কে।

তৃণার বাবা খুব টেনশন এ পড়ে যায়। যদি তৃণাকে নিরা বানিয়ে পাঠায় তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে। তাহলে কি করে কি হবে কিছুই বুঝতে পারেনা তৃণার বাবা।

একমাত্র মেয়ের সুখের জন্য সব কিছুই করতে পারবে কিন্তু কিভাবে সম্ভব। তৃণাকে উনি হারাতে চায় না, তার থেকে আবিরের বাবা মায়ের সাথে কথা বলবে ভাবে তৃণার বাবা। এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে তৃণার বাবা।

__ তৃণাও মহা খুশি যে তার একটা চাওয়া আবারো পূর্ন হবে। সাইরাও খুব খুশি তৃণার সুখে।

_ ___

আবিরের মা আর বাবা আবিরের সাথে মিটিংয়ে বসে। নিরা তখন উপরে ছিলো সেই সুযোগে বলে

__ আবিরের বাবা আবির কে বলে ” দেখো আবির, তুমি এমন একটা কাজ করেছো , সেটা আমাদের স্টাটাস এর সাথে সত্যিই যায় না। কোথায় আমাদের অবস্থা আর কোথায় একটা নিম্নঘরের মেয়ের স্টাটাস। ” ( খুব গম্ভীরমুখে বললেন)

__ আচ্ছা ড্যাড, তোমরা সারা জীবন এতো এতো আয় করেছো কার জন্য।

__ এটা কেমন কথা, আমাদের আর কেই বা আছে তুমি ছাড়া ( আবিরের মা)

__ আচ্ছা মম, এতো বাড়ি, গাড়ি সম্পত্তি দিয়ে আমি কি করবো যদি আমি কখনো মন থেকে সুখী নাই হতে পারি।

__ তাহলে অনন্যাকে বিয়েতে মত দিয়েছিলে কেনো? ( আবিরের বাবা)

__ কারণ তুমি পছন্দ করেছিলে তাই।

__ তাহলে এখন কি হলো, অন্য মেয়েকে তুমি কিভাবে বিয়ে করতে পারো।

__ এটা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো, কিন্তু বিয়ের পর আমি নিরাকেই ভালো বেসে ফেলেছি।

__ কিসের এক্সিডেন্ট ? ( আবিরের মা)

__ আমি তোমাদের এতো কিছুর জবাব দিতে পারবোনা মম। প্লিজ আমার ভালোবাসা কে তোমরা মেনে নাও। নইলে তোমরা তোমাদের বাসায় গিয়ে তোমাদের মতো ব্যস্ত লাইফ লিড করো। নিরার সাথে আমাকে সুখী থাকতে দাও প্লিজ।

__ তার মানে আমরা তোমার কেউ না তাইতো আবির ( মা)

__ তোমরা আমার বাবা মা, আমি যদি তোমাদের পছন্দ অনুযায়ী চলি। তাহলে আমার সুখের দিক টাও তোমাদের দেখা উচিৎ।

__ তোমার সাথে কথা বলেই বা কি লাভ, আমরা এখন পর হয়ে গেছি।

নিরা উপরে দাঁড়িয়ে সব শুনেও কিছু না বলে ঘরে গিয়ে কাঁদে। আসলে তো নিরা চায়নি এমন তার সংসার হোক। এরা এতো ই ধনী যে মানুষকে শুধু কস্ট দিতেই জানে। আমি তো নিম্নঘরের মেয়ে, এই বাড়িতে থাকা আমার সত্যিই অনুচিত। কাল সকালে ই চলে যাবে এমন টা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে।

মিটিং শেষ করে আবিরের মন ও খারাপ, ঘরে এসেই দেখে নিরা ঘুমিয়ে গেছে তাই নিরা কে আর জাগায় না। বিছানার এক পাশে সেও শুয়ে পড়ে।

,
,
,
আবিরের বাবা মা একটু রাগারাগি করেই নিজের বাসায় চলে আসেন। সকাল সকাল আবিরের বাবার ফোনে একটা নাম্বার থেকে ফোন আসে। জরুরি ভিত্তিতে আবিরের বাবাও দেখা করতে রাজি হয়ে যায়। আবিরের বাবা আর তৃণার বাবা একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করে।

,
,
তৃণাকে দেখার পর আবিরের বাবা যেন অবাক ই হয়। পুরোই নিরার মতো দেখতে কিন্তু পোশাক গুলো ই শুধু শর্টকাট। তৃণা বেশ মধুর কন্ঠে বলে

__ আংকেল , আমি আবির স্যার কে খুব বেশি ভালোবাসি। তাই তাকে একটু কস্ট দিই, কিন্তু আবির স্যার আমায় ভুল বুঝে। তারপর কিভাবে যে ওই মেয়েটা কে পেলো তা জানিনা।

শুধু একটা রিকুয়েস্ট, নিরাকে সরিয়ে দিয়ে আমাকে নিরার যায়গায় দিবেন। তাহলে আপনার সামাজিক স্টাটাস ও ঠিক থাকে। আর আমিও আবিরের বউ হয়ে গেলাম।

__ নিরার বাবা মনে মনে খুবিই খুশি হয়। ( কিন্তু হতাশা নিয়ে বলে) আবির অনেক চালাক, সব বুঝে নিবে। কিন্তু ওদের বিয়েও হয়ে গেছে৷ বিয়ে ছাড়া তুমি ওর সাথে থাকতেও পারবেনা।

__ আবার কায়দা করে বিয়ে করে নিবো।

__ আবির বুঝে ফেলবে, এমনিতেই আমাদের সাথে ওর ঝগড়া হয়, সে আরোও রেগে যাবে।

__ প্লিজ আংকেল, কিছু হতে দিবোনা।
আমরাই সব সামলিয়ে নিবো।

__ ওকে ওকে, তাহলে অনন্যার ফ্যামিলি কে ম্যানেজ করো।

__ অনন্যা কে আংকেল?

__ ওর সাথে আজ আবিরের বিয়ে হবার কথা ছিলো । কিন্তু আবির আগেই বিয়ে করে নেয় তাই খুব রেগে আছে।

__ আপনি শুধু ঠিকানা দেন, আমি সব ম্যানেজ করে নিবো আংকেল।

__ ওকে ভরসা করলাম, তোমার উপর।

চলবে……

প্রতিশোধ পার্ট_7

0

প্রতিশোধ
পার্ট_7
#জামিয়া_পারভীন

__আবির কিছু বলার আগেই নিরা জ্বলে উঠে
আপনাকে না বলেছি আমার আসেপাশে আসবেন না তাও কেন আসেন?

__তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে তাই।

__কি যা তা বলেন, আর এসব কথা ভুলেও বলবেন না।

__কেন, এমন কেন করো তুমি?

__চুপ! একদম চুপ! এক্ষুনি বেরিয়ে যান কিচেন থেকে।

__ওকে যাচ্ছি। আর আসবো না।

__হুহহ!

নিরা কাজ শেষ করে বেরিয়ে এসে আবির কে দেখতে পায়না। তাই ভাবে আবির উপরে গেছে, খেতে ডাকার জন্য উপরে গিয়েও না দেখে মন খারাপ করে বেরিয়ে আসে। কোথায় উধাও হয়ে গেলো , মেজাজ খারাপ করে শুধু। যেখানে খুশি সেখানে যাক আমার কি ? অন্যমনস্ক হয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে আবিরের সাথে ধাক্কা লাগে

__কি ব্যাপার, একটু না দেখেই মন খারাপ হয়ে আমাকে খুঁজতে গেছিলে।

__মোটেও না।

__আমি তো বুঝি, তুমি মিথ্যা বলছো কেনো?

__সরে দাঁড়ান।

__এতো রাগ দেখাও কেনো? মনে মনে তো ঠিকিই খোঁজ করো।

__বয়েই গেছে আপনাকে খুঁজতে।

আবির নিরার হাত ধরে নিজের দিকে টান দেয়। এতে নিরা আবিরের খুব কাছে চলে আসে, আবির শক্ত করে নিরাকে জড়িয়ে ধরে। নিরা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, তখন আবির নিরার কানের কাছে গিয়ে বলে ” আমি তোমাকে ভালোবাসি নিরা “। নিরা কোনরকম নিরাকে সরিয়ে দিয়েই থাপ্পড় মেরে বসে।

__আই হেট ইউ মিঃ

__এমন করে বলিও না প্লিজ।

__আর কখনো এমন করলে আমি আপনার অনুপস্থিতিতে সুইসাইড করবো।

__তুমি এভাবে বলতে পারলে। তাহলে তোমার উপস্থিতি তেই আমি মরি।

__মানে! কি বলছেন? ( ভয় পেয়ে)

__আবির কথা না বাড়িয়ে কিচেন থেকে চাকু এনে নিজের হাত এ অনেক গুলি যায়গা কেটে দেয়। একসাথে প্রচুর রক্ত পড়তে থাকে আবিরের হাত থেকে। নিরা আবির কে বলতে থাকে

__এসব বন্ধ করেন, আমার ভয় করে।

__(কোন উত্তর নাই)

__প্লিজ, এমন করেন কেনো।

__( হাত টা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে)

__ হাত টা বাঁধুন, প্রচুর রক্ত পড়ছে।

__ তাতে তোমার কি।

__এমন করিয়েন না প্লিজ।

__ দূরে যাও, আমার কথা তোমার না চিন্তা করলেও হবে।

__ নিরা আবির কে জড়িয়ে ধরে বলে ” প্লিজ এমন করবেন না, বন্ধ করুন এসব” ( বলে খুব কাঁদতে থাকে)।

__ আমি মরলে তুমি তো খুশিই হবে, তাহলে কাঁদছো কেনো?

__ আপনি কি বলছেন এসব, আপনি আমার স্বামী। ভালো হোন মন্দ হোন আমি আপনার সাথেই মানিয়ে নিতে চাই। কথা দিচ্ছি আর খারাপ ব্যবহার করবোনা, প্লিজ তাও এসব বন্ধ করুন।

__ এসব বলে লাভ নাই।

__ আপনি যা বলবেন সেটাই করবো। আপনাকে ভালোবাসি বলে আবিরের পা ধরে নিরা।

__ আরে কি করছো এসব, তোমার স্থান আমার পায়ে নয় হৃদয়ে।

__ যদি ভালোবাসি তাহলে এসব বন্ধ করবেন, হ্যাঁ ভালোবাসি তাও বন্ধ করেন।

__ আবির যাই হোক নিরাকে কাঁদাতে চায় না তাই উপরে গিয়ে নিজের হাত ব্যান্ডেজ করে নিচে নেমে আসে। ততোক্ষণে দেখে নিরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। নিরাকে হাসানোর জন্য বলে..

__ তোমার কোমল হাতের তৈরি খাবার খাইয়ে দিবেনা।

__ হু দিবো, বলেই রেডি করে দেয়।

__ নিরা আগে আবিরকে খাইয়ে নিজেও খায়। নিরা বলে

__ হাত কেটেছেন, ইনফেকশন হতে পারে৷ এন্টিবায়োটিক আছেনা বাসায়।

__ হুম ঘরে আছে।

__ওকে ঘরে যান, পানি নিয়ে আসছি।

__ হুম। (বলে আবির চলে যায়)

নিরা নিচে সব ঠিকঠাক করে পানি নিয়ে উপরে গিয়ে আবির কে ওষুধ খাইয়ে দেয়।

নিজের দুঃখ কে মাটিচাপা দিয়ে আরেকজনের সেবা করা লাগছে ( মনে মনে বলে নিরা )।

আবির বিছানায় শুয়ে পড়ে, নিরাও একপাশে শুয়ে কষ্ট গুলোর কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যায়। সকালে নিরা ঘুম ভেঙে দেখে আবির তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। যেন নিষ্পাপ চেহেরা আবিরের, ঘুমন্ত অবস্থায় খুব মায়াবী লাগছে। বেশি কিছু না ভেবে আবিরকে সরিয়ে দিলো নিরা। উঠে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গিয়ে খাবার বানিয়ে এসে আবির কে ডাক দেয়। আবির উঠে না দেখে আবিরের কপালে হাত দিয়ে দেখে আবিরের জ্বর এসেছে। তাও আবির কে ডেকে তুলে ফ্রেশ হতে বলে। আবির নিরার কথা শুনে ফ্রেশ হয়ে নিরার কথা মতো খাবার খেয়ে ওষুধ খেয়ে নেয়।

__ চুপচাপ শুয়ে না থেকে গোসল করে আসেন, এতে জ্বর কমবে।

__ হুম জানি! কিন্তু ঠান্ডা লাগে তো ।

__ তাড়াতাড়ি করবেন।

__ আবির ওয়াশরুমে গিয়ে ৫ মিনিটে শাওয়ার শেষ করে এসে ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে নিরা কে জড়িয়ে ধরে।

__ আমি কি কম্বল নাকি?

__ হুম

__ কম্বলের নিচে যান কাজ আছে কিছু।

__ আমার থেকেও বড় কি কাজ শুনি।

__ ঘর টা এলোমেলো হয়ে আছে গোছাতে হবে।

__ ও নিয়ে তোমার টেনশন করতে হবেনা।

__ কেনো?

__ রোমানা আজ আসবে।

__ কে সে?

__ এই বাসার সব দায়িত্ব তার। চাচী হয়, দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। কিন্তু আমি ছোট থেকেই রোমানা বলেই ডাকি।

__ ওহহ! কখন আসবে?

__ একটু পরেই

__ কে বললো?

__ সেইই ফোন দিয়েছিলো কাল।

__ এতো দিন কোথায় ছিলো?

__ বাড়ি গিয়েছিলো।

__ ছুটি দিয়েছিলেন তাইনা।

__ হুম, কেনো বলোতো।

__ কিছুনা ( বুঝলাম অন্যায় করার জন্যই বাড়ি ফাঁকা করেছিলেন)।

__ যা ভাবছো, তাই ঠিক।

__ কি ভাবলাম?

__ কিচ্ছুনা ?

কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বাজে, নিরা দরজা খুলতে যায়।

মেয়েটা প্রবেশ করেই নিরাকে জিজ্ঞেস করে

__ কে তুমি? এখানে কি করছো?

__ আপনি কে?

__ তার আগে বলো তুমি কে?
যাইহোক আবির কোথায়।

__ সে তো বাসায় আছে।

__ সরো আমার সামনে থেকে বলেই নিরাকে সরিয়ে ভিতরে ঢুকে সে।

__ আরে কোথায় যাচ্ছেন? কে আপনি?

__ তা তোমার জেনে লাভ কি? তোমাকে কি এই বাড়িতে নতুন কাজে দিছে নাকি? রোমানা কোথায়?

__ কি যা তা বলছেন?

__ আবির রুমে আছে তাই না।

__ আমি কাজের লোক না, আবিরের বউ আমি।

__ What?

__ জ্বী হ্যাঁ।

__ আবির বিয়ে কবে করলো, মজা নাও। ( দিয়েই উপরে যেতে থাকে)

__ আপনি পরিচয় না দিয়ে ভিতরে যেতে পারেন না।

__ এই ফকিন্নির মেয়ে তুই কে রে আমাকে আটকানোর।

__ ” তুমিও কাউকে অপমান করতে পারোনা। ” আবির বলে
( চিল্লাচিল্লি শুনে আবির নিচে নামতে গিয়েই এই কথা শুনে ফেলে তাই )

চলবে…….

প্রতিশোধ পার্ট__6

0

প্রতিশোধ
পার্ট__6
#জামিয়া_পারভীন

__ আবির নিরা কে বলে নদীর ধারে ঘুরতে যাবে। কিন্তু নিরা যেতে চায়না তাই তারা বাধ্য হয়ে বাসায় ফিরে আসে।

__ তৃণা সকালে নিরাকে দেখার পর থেকে খুব টেনশন এ আছে। এ ও কি সম্ভব, তার মতো দেখতে হুবহু আরেকজন মেয়ে। তার উপর যাকে পাবার জন্য এতো কিছু করলো আজ সেই মেয়ে তারই বউ। অতীতের কথা চিন্তা শুরু করে। তৃণা দের প্রথম ক্লাস টা ই ছিলো আবির স্যারের। প্রথম দেখায় ক্রাশিত হয় তৃণা। এরপর আবির যখন বোর্ডে কিছু লিখার জন্য ঘুরে তখন দুষ্টুমি করে মার্বেল ছুড়ে আবিরের দিকে। কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয় আর কি। আবির ওই মুহুর্তে তৃণার দিকে ঘুরে তাকায় আর দেখেও ফেলে তৃণা কে মার্বেল ছুড়তে আর হটাৎ করে মার্বেল লাগে আবিরের কপালে। ব্যথা যতটা না পেয়েছে রাগ টা বেশি হয়ে গেছিলো। সাথে সাথে তৃণা কে ক্লাস থেকে বের করে দেয় আবির। তৃণাও রাগ করে খুব ক্লাসের বাইরে দরজার আড়ালেই দাঁড়িয়ে থাকে তৃণা। এরপর স্যার যখন ক্লাস থেকে বের হয় তখন স্যারের পায়ে তৃণা নিজ পা দিয়ে বাধা দেয় আর স্যার তৃণার উপর পড়ে যায়। আর এই দৃশ্য সব স্টুডেন্ট দেখে, নিজের কাছেই ছোট লাগে আবিরের। সব স্টুডেন্ট আবির কেই ভুল বুঝে, কিন্তু তৃণার ফাজলামি শুধু আবির টের পায়। তৃণার কাছ থেকে অপমান পেয়ে ডিপার্টমেন্ট এ যায়। সবাইকে খুলে বলে এই মেয়ের এই রকম অত্যাচার এর কথা। কিন্তু তৃণাও থেমে থাকার না কারণ সে খোঁজ নিয়ে ফেলেছে আবির স্যারের কিছুদিনের মাঝেই বিয়ে। তাই সুযোগ বুঝে আবিরের বাসায় গিয়ে দোতলার বারান্দায় লুকিয়ে থাকে। বারান্দায় রেলিং দেয়া ছিলো না এই সুযোগ কাজে লাগায় সে। আগে থেকেই পুলিশ কে ঘুষ দিয়ে রেখেছিলো সাইরা। সকালে আবির ঘুম থেকে উঠে বারান্দার দরজা খুলতেই তৃণার তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। আবির মুখ দেখতে পায় না মেয়েটা কে। চুল গুলো এলেমেলো করে রেখেছিলো তৃণা। আবির ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ভয়ে আর তখনই সাইরা বাসায় পুলিশ নিয়ে আসে। আর কাজের মেয়ে না বুঝেই দরজা খুলে দেয়। বাড়ি সার্চ করে মেয়েটি সহ আবির কে এক রুমে পেয়ে সাথে সাথে এরেস্ট করে আবিরকে। আর সাইরা তৃণাকে নিয়ে মামলা করায় ধর্ষণ মামলা। এতে কোর্টে গিয়ে মিথ্যা সাক্ষী দেয় সাইরা আর তৃণা। কিন্তু আবির প্রমাণ পাচ্ছেনা নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার। আবির উকিলের মাধ্যমে জামিন নেয় সব প্রমাণ করে দিবে বলে। আর তৃণাও কিছু বুঝে উঠার আগেই আবিরের গুন্ডাদের দের পাঠায় তৃণাকে তুলে আনতে কিন্তু তারা ভুল করে নিরা কে তুলে আনে।

__তৃণা এতোক্ষণে বুঝতে পারে সেদিন কেন তৃণাকে সহজে মুক্তি দেয় আবির।
সাইরা কে জিজ্ঞেস করে কি করবে এখন, কিন্তু সাইরাও সমাধান দিতে পারেনা। এবার তৃণা তার বাবাকে ফোন লাগায়।

__ হ্যালো, ড্যাডি তুমি কেমন আছো? ( কান্নার নাটক করে)

__ কিরে মামনি, কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে বলো?

__ তৃণা আবিরের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা কথা বলে। কারণ জানে তার বাবাই তাকে সঠিক সমাধান দিবে।

__ তৃণার বাবা মেয়ের কান্ডে অবাক হয়ে বলে ” আবিরের থেকেও ভালো ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দিবো। চিন্তা করিওনা মামনি আমার। ”

__ না আমি আবিরকেই চাই, আমি আবিরকে না পেলে বাঁঁচবোনা।

__ এসব কি বলছো তুমি, এমন পাগলামো করেনা সোনামনি।

__ তুমি এটা বলো, ওই মেয়ে মানে আবিরের বউ যাকে দেখলাম সে আমার মতো দেখতে হলো কিভাবে?

__ তৃণার বাবা একটু চিন্তিত গলায় বলে কিভাবে সম্ভব। তুমি তো আমার একমাত্র মেয়ে।

__ জমজ না হলে দুইজন কি হুবহু হয়। তাছাড়া আর যাই হোক আমি ওই নিরা কে মেরে ফেলবো। তাও ভালো আবিরের বউ আমি হতে চাই।

__ তৃণার বাবার মহা টেনশন শুরু, মেয়ে তার পাগল হয়ে গেছে। তাই মেয়ে কে বলে খুব শীঘ্রই ফিরে আসছে রাজশাহী তে মেয়ের কাছে। তৃণাও খুশি হয় ড্যাডি কে অনেক দিন পর দেখতে পাবে তাই।

.
.
__আবির নিরা কে ভালোবেসে বিয়ে না করলেও ভালোবেসে ফেলেছে দুইদিনে। মেয়েটার সৌন্দর্য, ঝগড়া করার স্টাইল, রাগ করা, নিরা যাই করুক না কেন নিরা কে পছন্দ করে ফেলেছে জীবন সাথী হিসেবে। নিরা ঘরে মুখ উল্টো দিক ঘুরিয়ে শুয়ে আছে। আবির পাশে গিয়ে বসতেই নিরা চিৎকার করে..

__ এক্ষুনি ঘর থেকে বের হন। বিয়ে করেছেন বলে কিনে নেন নি যে যা ইচ্ছা তাই করবেন।

__ কি করলাম, এতো রাগ কিসের নিরু।

__ আমার নাম নিরা, নিরু না।

__ আমি তো ভালোবেসে নিরু ডাকলাম।

__ ভালোবাসা, মাই ফুট, আমি আপনাকে ঘৃণা করি।

__ এমন করছো কেনো, কিছুই তো করিনি এখন।
ওকে যাই রাত্রের খাবারের ব্যবস্থা করি।

__ কি ছাই পাশ খেয়ে থাকেন, ওগুলো আমার সামনে আর আনবেন না।

__ আমি কি করবো রুমানা কে তো ছুটি দিয়েছি। সে থাকলে রান্না করে ভালো। এখন যদি তুমি ইই রান্না করো তাহলে।

__ কিহহ

__ সরি, ভুল হয়ে গেছে।

__ নিরা কিছু না বলেই নিচে নামে, রান্নাঘর খুঁজে ( কারণ চিনতোনা) , সেখানে গিয়ে কিছু খুঁজে পাচ্ছেনা। আবির পিছন থেকে কানের কাছে গিয়ে বলে কি খুঁজছো। নিরাও চমকিয়ে উঠে, পিছন ঘুরেই আবির কে দেখে দুইটা কিল বসিয়ে দেয় আবিরের বুকে । আবির নিরার হাত ধরে ফেলে..

__ হাত ধরবেন না।

__মারলে কেন

__ বেশ করেছি, ভয় দেখানোর শাস্তি।

__ কি খুঁজছো?

__ আটা, সারাদিন ছাইপাঁশ খেয়েছি, এখন রুটি খেতে ইচ্ছে করছে।

__ আবির আটা, লবণ, পাতিল, তাওয়া সব দেখিয়ে দেয়। রুটির সাথে কি করবে?

__ ডিম আছে??

__ সব দেখিয়ে দেয়ার পর আবিরকে বাইরে যেতে বলে নিরা। আবির লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলো নিরা কি করছে। শয়তানি বুদ্ধি মাথায় আসে আবিরের।
নিরা যখন ডিম ফেঁটিয়ে রাখে আবির লুকিয়ে এসে ডিম অল্প একটু নিরার গালে মাখিয়ে দেয়। ডিমে মরিচ দেয়া ছিলো এটা দেখেনি আবির, নিরার মুখ জ্বলে গেছে, উফফ বলে চিৎকার দেয়।

আটা মাখা হাত দিয়েই আবিরের গাল খামচিয়ে দেয়।

চলবে…

প্রতিশোধ পার্ট_5

0

প্রতিশোধ
পার্ট_5

জামিয়া_পারভীন

__ এমন করে বলতে হয়না, লক্ষী মেয়ের মতো খেয়ে নাও বলে আবির খাইয়ে দেয় নিরাকে। ( নিরা মনে মনে ক্ষেপা হলেও বেশি জেদ দেখাতে পারেনা, তাই চুপচাপ খেয়ে নেয়) খাওয়ার পর উল্টো দিক ঘুরে শুয়ে পড়ে, এমনিতেই অসুস্থ, এরউপর সারা দিন বাইরে থাকায় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আবির সব রেখে এসে নিরার গায়ে কম্বল ঠিক করে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়ে।

__ আবিরের বাসা টা তার বাবার ছিলো, এখন তার নামে। দোতলা বাসায় পুরোটা ই যেন আধুনিকতার ছোঁয়া। দামী দামী ফার্নিচার, আর ঘর সাজানোর সোপিচ আর কৃত্তিম ফুল চারিদিকে। বাসাতে একটা অনুষ্ঠান এর পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে সাজানো হয়েছিলো বাসাটা। first January ছিলো আবিরের বাসায় অনুষ্ঠান। তার আগেই সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়।

__ নিরা ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখে তার চারিদিকে অনেক গুলি শাড়ি, থ্রিপিচ, গাউন, টপস, মেকআপ বক্স, ম্যাচিং অলংকার সব কিছুই রাখা। নিরার চোখ দুটি আবির কে খুঁজছে কিন্তু আবির কে না দেখে সব কিছু সরিয়ে নিচে নামতেই মাথার উপর ফুলের পাপড়ি পড়া শুরু করে। নিরা বেশ উপভোগ করে এই ব্যাপার টা। এরপর আবির এসে হাততালি দিয়ে বলে শুভ জন্মদিন ম্যাডাম। ( নিরা ভুলেই গেছিলো আজ তার জন্মদিন, কিন্তু আবির কে দেখেই চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়)।

__” আমার জন্মদিন আপনি জানলেন কিভাবে? ” ( নিরা)

__ সারপ্রাইজ ( আবির)

__ হ্যাঁ! তাইতো , এসব না করে গলা টিপে মেরে ফেললেও তো পারতেন মিঃ আবির স্যার। ( নিরা)

__ এসব কি বলছো, আর এভাবে কখনো বলবেনা। (আবির)

__ আপনাকে আমি ঘৃণা করি, এসব করলেই ভাববেন না ভালোবাসবো। ( নিরা)

__ বাদ দাও, নাস্তা করো, আর এগুলোর মাঝে এক সেট পরে রেডি হয়ে থাকিও। দাওয়াত দিয়েছে তোমার ফ্যামিলি, যেতে হবে। ( আবির)

__ নাস্তাতে পাউরুটি, কলা, ফল আর চা দেখে নিরার খুব রাগ হয়। ইচ্ছে করেই ঘরের মাঝে কলার খোসা ফেলে দেয়। খায় আর মনে মনে বলে এগুলো কি মানুষ খায়। ( সে এসব খেয়ে অভ্যস্ত না তাই)

__ আবির বাইরে থেকে এসেই কলার খোসা না দেখেই পা দেয় আর স্লিপ খেয়ে নিরার উপর পড়ে যায়। নিরা আবিরকে সরিয়ে দিয়ে বলে ” লজ্জা করে না, আর এমন যেন না হয়। ” আবির উঠে দেখে কলার খোসা, একটু রাগী স্বরে বলে ” এটা এখানে কোথেকে আসলো “। নিরা কলার খোসা দেখে মিটিমিটি হেসে বলল ” সরি, আসলে, মাফ করবেন “।

নিরার হাসিমুখ দেখে আবির বেশ খুশিই হয়। হাসলে যেন নিরাকে অপ্সরীর মতো লাগছে। এতোটা সুন্দর সে দেখতে যেন সারাজীবন এভাবেই চেয়ে থাকা যায়।

__ ” কি দেখেন এতো, বেশিক্ষণ কেউ চেয়ে থাকলে আমার লজ্জা লাগে। এখন যান, আমি রেডি হবো।” ( নিরা বলে)

আবির চলে যায়, নিরা শাওয়ার শেষ এ হালকা পিংক কালার একটা শাড়ি বেছে নেয়। শাড়ি টা পরে চোখে কাজল দেয় গাড় করে কিন্তু মেকআপ সে করেনা। পিংক কালার চুরি, গহনা পড়ে নেয়। চুল গুলো খোলা রেখে পাশের ফুলদানি থেকে পিংক গোলাপ নেয় ( তাঁজা গোলাপ, আবির ই আনিয়ে রেখে ছে হয়তো) মাথার একপাশে ফুল গুজে দেয়।

বাইরে বের হয় নিরা, নিচে আবির সোফায় বসে আছে। নিরাকে দেখে এক ভাবে তাকিয়ে আছে আবির, এতো সুন্দর একটা মানুষ হয় কিভাবে। নিরা আবিরের ধ্যান ভাঙিয়ে বলে ” এইযে আপনার জন্য সাজিনি, যে এইভাবে দেখবেন। ”

__ তো কার জন্য সেজেছো? (আবির)

__ ” সবাইকে বলেছেন আপনি ভালোবেসে বিয়ে করেছেন, নিজেকে সুখী না দেখালে তো আবার আপনার অপমান। তাই বাইরের মানুষের সামনে সুখী হয়েই থাকতে চাই। ” ( নিরা)

__ আজ হয়তো ভালোবাসোনা কিন্তু পরে একদিন বাসবে, বলে দিলাম (আবির)

__ বয়েই গেছে আমার, একজন রেপিস্ট কে ভালোবাসতে। (নিরা)

আবির আর কিছু না বলে নিরা কে নিয়ে প্রথমে মেডিকেল ভার্সিটি যায়। সেখানে কলিগ দের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় ওয়াইফ বলে। নিরাও বেশ অবাক হয় আবিরের ব্যবহার এ। এটাও বলে দেয় নিরা ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী। কলিগ রা মজা করে বলে তাহলে প্রথম দিন ক্লাস টা যেন নিয়েই যায়। ছাত্রী হাজবেন্ড এর ক্লাস করবে, সবাই বেশ উতসাহী। তাই আবির ও গেলো নিরাকে নিয়ে ক্লাসে।

__ তৃণা আবির কে দেখে যতই না খুশি হয়, সাথে নিরা কে দেখে যেন আকাশ থেকে পড়ে। এই মেয়ে যে একেবারেই তার মতো দেখতে। কিন্তু কিভাবে সম্ভব আর এই আবির স্যারের সাথে কি করছে। তৃণার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায় শুভ্র স্যারের কথাতে। শুভ্র স্যার ক্লাসে ঘোষণা দেন আবির স্যার নতুন বিয়ে করেছেন তোমাদের ক্লাসের ছাত্রী কে। এতে সবাই খুশি হলেও তৃণা আর সাইরা একে অপরের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। সবাই অবশ্য নিরা আর তৃণাকে একই রকম দেখে অবাক ও হয়। দুইটা মেয়ে একইরকম আবার তাদের বাবা মা ও আলাদা। এই প্রথম দুইজন কে সবাই একসাথে দেখছে। এর আগে বেশি ক্লাস ও হয়নি, আর দুইজন একসাথে কখনো ক্লাসে আসেনি।

__ নিরাও বেশ অবাক হয় তৃণাকে দেখে, কেউ বলতে পারবেনা সে আর তৃণার চেহেরাতে কোন তফাৎ নেই ।

__ সবাই ক্লাস থেকে বের হয়ে আসে নিরা কে নিয়ে আবির নিরার বাবার বাসায় যায়। এই প্রথম আবির গাড়ি ছাড়া হাটছে কারণ নিরার বাসাটা একটু গলিতে, সেখানে গাড়ি ঢুকে না। নিরার সাথে আবির ওদের বাসায় গিয়ে বেশ কথা বার্তা বলে নিরার পরিবারের সাথে, নিরাও বেশ হাসিখুশি ছিলো সবার সাথে।

কিন্তু নিরার মনে এক্টাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, কে এই তৃণা।

নিরা রান্নাঘর এ মা কে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করেই বসে ” আচ্ছা মা, জমজ ছাড়া কি দুইটা মানুষ একই হয়? ” এমন প্রশ্নে যেন নিরার মা একটু ঘাবড়িয়ে যায়। সেটা না দেখেই নিরা আবারোও বলে ” আজ একটা মেয়েকে দেখলাম হুবহু আমার মতো দেখতে, আমার সাথেই পড়ে। কিভাবে সম্ভব মা! ”

__ নিরার মা এবার রাগান্বিত হয়ে বলে “আমি কি জানি? হতেও পারে! ”

__ নিরার মায়ের ব্যবহার ও নিরাকে অবাক করে দেয়। কিছুই না বলে চলে আসে সে। খাওয়া দাওয়া করে বিকেলে বের হয়ে যায় আবির আর নিরা।

চলবে……

#জামিয়া_পারভীন