Thursday, June 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2441



প্রতিশোধ পার্ট_8

0

প্রতিশোধ
পার্ট_8
জামিয়া_পারভীন

__ “আবির তুমি এসব বলছো টা কি, তুমি অন্য কারোর জন্য আমাকে অপমান করছো? ” মেয়েটি বলে আবিরকে।

__ “দেখো আমার কাছে তোমার কোনই ভ্যালু নাই। হয়তো ছিলো কোন একদিন এখন কিছুই নাই। তুমি চলে যেতে পারো, আর আনার সাথে কন্টাক্ট করার চেষ্টা ও করিও না।। “আবির বলে মেয়েটাকে।

__ ( মেয়েটা আবিরের কলার ধরে বলে ) ” এতো বড় কথা তুমি আমায় বলতে পারোনা আবির। আমি তো তোমায় ভালোবাসি, তার চেয়েও বড় কথা দুই দিন পর আমাদের বিয়ে। সব কিছু ঠিক ছিলো কিন্তু তুমি মাঝখানে এমন কথা কেনো বলছো আবির। ”

__ ( মেয়েটাকে সরিয়ে দিয়ে) দেখো অনু ( মেয়েটার নাম অনন্যা, আবির অনু বলে ডাকে ) , তোমাকে আমার বিয়ে করা সম্ভব না। কারণ আমার বিয়ে হয়ে গেছে নিরার সাথে। ( নিরার কাঁধে হাত রেখে বলে আবির)

__ ” তুমি আমার সাথে ফাজলামি করছো তাই না আবির, কতো টা ভালোবাসি তার পরীক্ষা নিচ্ছো তাই না। ” (অনু)

__ ” ফাজলামি করার কোন মুডে আমি নাই মিস অনু ” ( আবির)

__ ” এটা বিশ্বাস করিনা, বিয়ের দুই দিন আগে এসব কি বলছো তুমি “। ( অনু)

__ ” দেখো অনু, তোমাকে আমি মন থেকে কখনো ই ভালোবাসিনি। বাবা বিয়েটা ঠিক করেছিলেন বলে মত দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি বিয়ে করেছি আমার প্রেমিকা নিরা কে। তার সাথেই সংসার করবো, সেটা তোমার বাবা কে জানিয়ে দিয়েছি, তাও কেনো তুমি এখানে এসেছো? আমি চাই তুমি আমাকে কখনো বিরক্ত করবেনা। ” ( আবির বলে অনুকে)

__ ( নিরা আবিরের কাছ থেকে সরে এসে বলে) বিয়ে যখন ঠিকই করা ছিলো, তাহলে বিয়ে করতে কি প্রব্লেম। আর আমি আপনার প্রেমিকা ছিলাম ও না হবোও না কখনো। বিয়ে করে সুখী হয়েন, আমি চলে যাবো এই বাসা থেকে। ( বলেই নিরা উপরে চলে যায়)

__ নিরা ভুল বুঝোনা ( আবিরের কথা নিরা শোনেও না)

__ বাহ আবির বাহ, তুমি একটা অমানুষ, নইলে আমার সাথে এমন করতে না তুমি। বিয়ের সব কিছু ঠিকঠাক, কার্ড ছাপানো হয়ে গেছে আর তুমি অন্য কে নিয়ে সংসার করছো। বেশ ভালো, তোমাকে সুখে থাকতে দিবোনা। বিয়ে তোমাকে করতেই হবে ওই দিনেই, ওই সময়ের, পারলে আমি কেশ করে আসবো। ( বলে অনন্যা চলে যায় আবিরের বাসা থেকে)

__ ( দরজা খোলাই ছিলো , তাই রোমানা কখন এসেছে আবির খেয়াল করেনি। রোমানা আবির কে এসে বলে) ” কি হয়েছে আবির বাবা? ” অনু মা এতো রাগ করে চলে গেলো ক্যান ? ”

__ ” খালা তুমি এসেছো ভালো করেছো, দুপুরের খাবার ব্যবস্থা করো ” (আর কিছু না বলে আবির উপরে যায়)

__ উপরে গিয়ে দেখে নিরা বিছানায় বসে আছে। নিরার পাশে গিয়ে বসতেই আবিরকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় নিরা।

__ ” দেখুন! আমি আপনাকে ভালোবাসি না, বাসবো ও না কখনো। আর আমার কাছে আসার চেষ্টা ও করবেন না “।

__ দেখো! এতো রাগ করতে হয়না, তুমি খুব রাগী। রাগ টা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করো।

__ জ্ঞান দিয়েন না, আপনার জ্ঞান শুনার জন্য আমি বসে নাই। ( নিরা)

__ ” রাগ তোমার হওয়া টা স্বাভাবিক, আমি তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করিনি সেটা ঠিক। কিন্তু এখন ভালোবাসি, তোমাকে সত্যিই খুব ভালোবেসে ফেলেছি নিরা। ”

__ এসব ফালতু কথা কখনো ই বলবেন না। ( নিরা)

__ ওকে কাজের কথাতে ই আসি তাহলে, রোমানা চলে এসেছে সে রান্না করছে। আর তার চেয়েও বড় কথা পরশু আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান। কেনাকাটা হবে তোমার পছন্দের, রেডি হয়ে থেকো।

__ কিসের অনুষ্ঠান? আমি এর মাঝে নাই।

__ দেখো, সব সময় জেদ ভালো না। ২ ঘন্টার মাঝে যেন তোমাকে রেডি দেখি।

__ আপনার কথা অনুযায়ী আমি চলতে পারবোনা।

__ আবির একটু রাগ করে নিরাকে হটাৎ ই কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ভিজিয়ে দেয়। নিরা আবির কে মারতে থাকে খুব কিন্তু তাও ছাড়ে না। আবির আর নিরা দুজনেই ভিজে গেছে তখন নিরা বাধ্য হয়ে শাওয়ার শেষ করে। আবির ততোক্ষণে বের হয়ে গেছিলো। নিযে পরিষ্কার হয়ে নিরার জন্য ড্রেস রেডি করে দেয়, গয়না সহ। নিরা রাগ করে থাকলেও রেডি হয়৷

__আবির ডাইনিং টেবিলে বসে আছে আর রোমানা খাবার দিচ্ছিলো। তখন নিরা নিচে নামে, নিরাকে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিতে বলে। নিরাও কথা না বাড়িয়ে খেয়ে নেয়, কারণ জানেই ঝগড়া করে লাভ নাই। আবির নিরাকে রোমানার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। রোমানাও বউ মা বলে খুব সুন্দর করেই মেনে নেয়।

__ এরপর দুইজনে শপিং এ যায়। বিয়ের ড্রেস কিনে আবির, নিরার পছন্দেই। আবিরের গুলা আগে থেকেই কেনা ছিলো । গয়না কিছু কিনে সন্ধ্যার পর রেস্টুরেন্টে ঢুকে। সেখানে ডিনার করে রোমানার জন্য এক প্যাকেট নিয়ে বাসায় আসে।

__ বাসায় এসে দেখে আবিরের বাবা মা এসেছে, নিরার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় আবির।

__ নিরা সবাইকে সালাম দেয়, কিন্তু নিরাকে যে আবিরের বাবা মা মানতে পারেনি সেটা বুঝতে পারে আবির। এতে আবিরের তেমন কিছুই যায় আসে না কারণ আবির সারাটা জীবন একা একা ই বড় হয়েছে। আবিরের বাবা মা শুধু টাকার পিছনে দৌড়িয়েছে। আবিরের জন্য কোন স্পেশাল সময় ছিলো না তাদের। আবিরের কাছের মানুষ বলতে ছিলো এক রোমানা আর একমাত্র ফ্রেন্ড মিশি। আবিরের বাবা মা দুইজনেই ডাক্তার, তারা সব সময়ই ব্যস্ত থাকতো । আর এখন বেশির ভাগ সময় ই বিদেশে থাকে। যেখানে টাকা বেশি তারা সেটাকেই বেছে নিয়েছে। । কিন্তু আবিরের জন্য কোন আদর ভালোবাসা ছিলো না কোনদিনই। আবিরের ইচ্ছে ছিলো শিক্ষক হবার কিন্তু বাবা মায়ের ইগোর কাছে হেরে গিয়ে মেডিকেলে ভর্তি হতে হয়। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে প্রফেসর হয়ে শিক্ষক হবার ইচ্ছেটাই শুধু পূরণ করতে পারে।

__ তৃণার বাবা আসে সেদিন রাত্রে, তৃণা তার বাবার গলা জড়িয়ে কি যে কান্না করে তা বলার মতো না। তৃণার বাবাও একটু আবেগী, তাই মেয়ের জন্য সব কিছুই করতে চায়। তৃণার বাবা প্লান করে নিরার যায়গাতে তৃণা করে দিয়ে নিরাকে সরিয়ে দিবে। তৃণার জন্মের সময় ওর মা মারা গেছে তাই এতো আদরের মেয়েকে কখনো কষ্ট দিতে পারবেনা তৃণার বাবা।

__ আচ্ছা ড্যাডি, ওই মেয়েটা আমার মতো দেখতে হলো কিভাবে। ( তৃণা)

__ নারে তেমন কিছুই না। তুই এতো ভাবিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে।

__ তুমি নিরাকে কি করবে?

__ আমার বাসায় নিয়ে গিয়ে বন্দী করে রাখবো।

__ নাহ এতে ধরা পড়ে যেতে পারো।

__ তো কি করতে বলছিস?

__ আমি বরং নিরা হয়ে যায়, আর ওকে তৃণা বানিয়ে দাও।

__ নাহ এটা সম্ভব না।

__ কেনো ড্যাডি, আমার জন্য এটুকুও পারবে না।

__ আচ্ছা দেখছি, কি করা যায়।

__ ওকে ড্যাডি, খুব আনন্দে জড়িয়ে ধরে তার বাবা কে।

তৃণার বাবা খুব টেনশন এ পড়ে যায়। যদি তৃণাকে নিরা বানিয়ে পাঠায় তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে। তাহলে কি করে কি হবে কিছুই বুঝতে পারেনা তৃণার বাবা।

একমাত্র মেয়ের সুখের জন্য সব কিছুই করতে পারবে কিন্তু কিভাবে সম্ভব। তৃণাকে উনি হারাতে চায় না, তার থেকে আবিরের বাবা মায়ের সাথে কথা বলবে ভাবে তৃণার বাবা। এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে তৃণার বাবা।

__ তৃণাও মহা খুশি যে তার একটা চাওয়া আবারো পূর্ন হবে। সাইরাও খুব খুশি তৃণার সুখে।

_ ___

আবিরের মা আর বাবা আবিরের সাথে মিটিংয়ে বসে। নিরা তখন উপরে ছিলো সেই সুযোগে বলে

__ আবিরের বাবা আবির কে বলে ” দেখো আবির, তুমি এমন একটা কাজ করেছো , সেটা আমাদের স্টাটাস এর সাথে সত্যিই যায় না। কোথায় আমাদের অবস্থা আর কোথায় একটা নিম্নঘরের মেয়ের স্টাটাস। ” ( খুব গম্ভীরমুখে বললেন)

__ আচ্ছা ড্যাড, তোমরা সারা জীবন এতো এতো আয় করেছো কার জন্য।

__ এটা কেমন কথা, আমাদের আর কেই বা আছে তুমি ছাড়া ( আবিরের মা)

__ আচ্ছা মম, এতো বাড়ি, গাড়ি সম্পত্তি দিয়ে আমি কি করবো যদি আমি কখনো মন থেকে সুখী নাই হতে পারি।

__ তাহলে অনন্যাকে বিয়েতে মত দিয়েছিলে কেনো? ( আবিরের বাবা)

__ কারণ তুমি পছন্দ করেছিলে তাই।

__ তাহলে এখন কি হলো, অন্য মেয়েকে তুমি কিভাবে বিয়ে করতে পারো।

__ এটা একটা এক্সিডেন্ট ছিলো, কিন্তু বিয়ের পর আমি নিরাকেই ভালো বেসে ফেলেছি।

__ কিসের এক্সিডেন্ট ? ( আবিরের মা)

__ আমি তোমাদের এতো কিছুর জবাব দিতে পারবোনা মম। প্লিজ আমার ভালোবাসা কে তোমরা মেনে নাও। নইলে তোমরা তোমাদের বাসায় গিয়ে তোমাদের মতো ব্যস্ত লাইফ লিড করো। নিরার সাথে আমাকে সুখী থাকতে দাও প্লিজ।

__ তার মানে আমরা তোমার কেউ না তাইতো আবির ( মা)

__ তোমরা আমার বাবা মা, আমি যদি তোমাদের পছন্দ অনুযায়ী চলি। তাহলে আমার সুখের দিক টাও তোমাদের দেখা উচিৎ।

__ তোমার সাথে কথা বলেই বা কি লাভ, আমরা এখন পর হয়ে গেছি।

নিরা উপরে দাঁড়িয়ে সব শুনেও কিছু না বলে ঘরে গিয়ে কাঁদে। আসলে তো নিরা চায়নি এমন তার সংসার হোক। এরা এতো ই ধনী যে মানুষকে শুধু কস্ট দিতেই জানে। আমি তো নিম্নঘরের মেয়ে, এই বাড়িতে থাকা আমার সত্যিই অনুচিত। কাল সকালে ই চলে যাবে এমন টা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে।

মিটিং শেষ করে আবিরের মন ও খারাপ, ঘরে এসেই দেখে নিরা ঘুমিয়ে গেছে তাই নিরা কে আর জাগায় না। বিছানার এক পাশে সেও শুয়ে পড়ে।

,
,
,
আবিরের বাবা মা একটু রাগারাগি করেই নিজের বাসায় চলে আসেন। সকাল সকাল আবিরের বাবার ফোনে একটা নাম্বার থেকে ফোন আসে। জরুরি ভিত্তিতে আবিরের বাবাও দেখা করতে রাজি হয়ে যায়। আবিরের বাবা আর তৃণার বাবা একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করে।

,
,
তৃণাকে দেখার পর আবিরের বাবা যেন অবাক ই হয়। পুরোই নিরার মতো দেখতে কিন্তু পোশাক গুলো ই শুধু শর্টকাট। তৃণা বেশ মধুর কন্ঠে বলে

__ আংকেল , আমি আবির স্যার কে খুব বেশি ভালোবাসি। তাই তাকে একটু কস্ট দিই, কিন্তু আবির স্যার আমায় ভুল বুঝে। তারপর কিভাবে যে ওই মেয়েটা কে পেলো তা জানিনা।

শুধু একটা রিকুয়েস্ট, নিরাকে সরিয়ে দিয়ে আমাকে নিরার যায়গায় দিবেন। তাহলে আপনার সামাজিক স্টাটাস ও ঠিক থাকে। আর আমিও আবিরের বউ হয়ে গেলাম।

__ নিরার বাবা মনে মনে খুবিই খুশি হয়। ( কিন্তু হতাশা নিয়ে বলে) আবির অনেক চালাক, সব বুঝে নিবে। কিন্তু ওদের বিয়েও হয়ে গেছে৷ বিয়ে ছাড়া তুমি ওর সাথে থাকতেও পারবেনা।

__ আবার কায়দা করে বিয়ে করে নিবো।

__ আবির বুঝে ফেলবে, এমনিতেই আমাদের সাথে ওর ঝগড়া হয়, সে আরোও রেগে যাবে।

__ প্লিজ আংকেল, কিছু হতে দিবোনা।
আমরাই সব সামলিয়ে নিবো।

__ ওকে ওকে, তাহলে অনন্যার ফ্যামিলি কে ম্যানেজ করো।

__ অনন্যা কে আংকেল?

__ ওর সাথে আজ আবিরের বিয়ে হবার কথা ছিলো । কিন্তু আবির আগেই বিয়ে করে নেয় তাই খুব রেগে আছে।

__ আপনি শুধু ঠিকানা দেন, আমি সব ম্যানেজ করে নিবো আংকেল।

__ ওকে ভরসা করলাম, তোমার উপর।

চলবে……

প্রতিশোধ পার্ট_7

0

প্রতিশোধ
পার্ট_7
#জামিয়া_পারভীন

__আবির কিছু বলার আগেই নিরা জ্বলে উঠে
আপনাকে না বলেছি আমার আসেপাশে আসবেন না তাও কেন আসেন?

__তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে তাই।

__কি যা তা বলেন, আর এসব কথা ভুলেও বলবেন না।

__কেন, এমন কেন করো তুমি?

__চুপ! একদম চুপ! এক্ষুনি বেরিয়ে যান কিচেন থেকে।

__ওকে যাচ্ছি। আর আসবো না।

__হুহহ!

নিরা কাজ শেষ করে বেরিয়ে এসে আবির কে দেখতে পায়না। তাই ভাবে আবির উপরে গেছে, খেতে ডাকার জন্য উপরে গিয়েও না দেখে মন খারাপ করে বেরিয়ে আসে। কোথায় উধাও হয়ে গেলো , মেজাজ খারাপ করে শুধু। যেখানে খুশি সেখানে যাক আমার কি ? অন্যমনস্ক হয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে আবিরের সাথে ধাক্কা লাগে

__কি ব্যাপার, একটু না দেখেই মন খারাপ হয়ে আমাকে খুঁজতে গেছিলে।

__মোটেও না।

__আমি তো বুঝি, তুমি মিথ্যা বলছো কেনো?

__সরে দাঁড়ান।

__এতো রাগ দেখাও কেনো? মনে মনে তো ঠিকিই খোঁজ করো।

__বয়েই গেছে আপনাকে খুঁজতে।

আবির নিরার হাত ধরে নিজের দিকে টান দেয়। এতে নিরা আবিরের খুব কাছে চলে আসে, আবির শক্ত করে নিরাকে জড়িয়ে ধরে। নিরা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, তখন আবির নিরার কানের কাছে গিয়ে বলে ” আমি তোমাকে ভালোবাসি নিরা “। নিরা কোনরকম নিরাকে সরিয়ে দিয়েই থাপ্পড় মেরে বসে।

__আই হেট ইউ মিঃ

__এমন করে বলিও না প্লিজ।

__আর কখনো এমন করলে আমি আপনার অনুপস্থিতিতে সুইসাইড করবো।

__তুমি এভাবে বলতে পারলে। তাহলে তোমার উপস্থিতি তেই আমি মরি।

__মানে! কি বলছেন? ( ভয় পেয়ে)

__আবির কথা না বাড়িয়ে কিচেন থেকে চাকু এনে নিজের হাত এ অনেক গুলি যায়গা কেটে দেয়। একসাথে প্রচুর রক্ত পড়তে থাকে আবিরের হাত থেকে। নিরা আবির কে বলতে থাকে

__এসব বন্ধ করেন, আমার ভয় করে।

__(কোন উত্তর নাই)

__প্লিজ, এমন করেন কেনো।

__( হাত টা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে)

__ হাত টা বাঁধুন, প্রচুর রক্ত পড়ছে।

__ তাতে তোমার কি।

__এমন করিয়েন না প্লিজ।

__ দূরে যাও, আমার কথা তোমার না চিন্তা করলেও হবে।

__ নিরা আবির কে জড়িয়ে ধরে বলে ” প্লিজ এমন করবেন না, বন্ধ করুন এসব” ( বলে খুব কাঁদতে থাকে)।

__ আমি মরলে তুমি তো খুশিই হবে, তাহলে কাঁদছো কেনো?

__ আপনি কি বলছেন এসব, আপনি আমার স্বামী। ভালো হোন মন্দ হোন আমি আপনার সাথেই মানিয়ে নিতে চাই। কথা দিচ্ছি আর খারাপ ব্যবহার করবোনা, প্লিজ তাও এসব বন্ধ করুন।

__ এসব বলে লাভ নাই।

__ আপনি যা বলবেন সেটাই করবো। আপনাকে ভালোবাসি বলে আবিরের পা ধরে নিরা।

__ আরে কি করছো এসব, তোমার স্থান আমার পায়ে নয় হৃদয়ে।

__ যদি ভালোবাসি তাহলে এসব বন্ধ করবেন, হ্যাঁ ভালোবাসি তাও বন্ধ করেন।

__ আবির যাই হোক নিরাকে কাঁদাতে চায় না তাই উপরে গিয়ে নিজের হাত ব্যান্ডেজ করে নিচে নেমে আসে। ততোক্ষণে দেখে নিরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। নিরাকে হাসানোর জন্য বলে..

__ তোমার কোমল হাতের তৈরি খাবার খাইয়ে দিবেনা।

__ হু দিবো, বলেই রেডি করে দেয়।

__ নিরা আগে আবিরকে খাইয়ে নিজেও খায়। নিরা বলে

__ হাত কেটেছেন, ইনফেকশন হতে পারে৷ এন্টিবায়োটিক আছেনা বাসায়।

__ হুম ঘরে আছে।

__ওকে ঘরে যান, পানি নিয়ে আসছি।

__ হুম। (বলে আবির চলে যায়)

নিরা নিচে সব ঠিকঠাক করে পানি নিয়ে উপরে গিয়ে আবির কে ওষুধ খাইয়ে দেয়।

নিজের দুঃখ কে মাটিচাপা দিয়ে আরেকজনের সেবা করা লাগছে ( মনে মনে বলে নিরা )।

আবির বিছানায় শুয়ে পড়ে, নিরাও একপাশে শুয়ে কষ্ট গুলোর কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যায়। সকালে নিরা ঘুম ভেঙে দেখে আবির তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। যেন নিষ্পাপ চেহেরা আবিরের, ঘুমন্ত অবস্থায় খুব মায়াবী লাগছে। বেশি কিছু না ভেবে আবিরকে সরিয়ে দিলো নিরা। উঠে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গিয়ে খাবার বানিয়ে এসে আবির কে ডাক দেয়। আবির উঠে না দেখে আবিরের কপালে হাত দিয়ে দেখে আবিরের জ্বর এসেছে। তাও আবির কে ডেকে তুলে ফ্রেশ হতে বলে। আবির নিরার কথা শুনে ফ্রেশ হয়ে নিরার কথা মতো খাবার খেয়ে ওষুধ খেয়ে নেয়।

__ চুপচাপ শুয়ে না থেকে গোসল করে আসেন, এতে জ্বর কমবে।

__ হুম জানি! কিন্তু ঠান্ডা লাগে তো ।

__ তাড়াতাড়ি করবেন।

__ আবির ওয়াশরুমে গিয়ে ৫ মিনিটে শাওয়ার শেষ করে এসে ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে নিরা কে জড়িয়ে ধরে।

__ আমি কি কম্বল নাকি?

__ হুম

__ কম্বলের নিচে যান কাজ আছে কিছু।

__ আমার থেকেও বড় কি কাজ শুনি।

__ ঘর টা এলোমেলো হয়ে আছে গোছাতে হবে।

__ ও নিয়ে তোমার টেনশন করতে হবেনা।

__ কেনো?

__ রোমানা আজ আসবে।

__ কে সে?

__ এই বাসার সব দায়িত্ব তার। চাচী হয়, দুঃসম্পর্কের আত্মীয়। কিন্তু আমি ছোট থেকেই রোমানা বলেই ডাকি।

__ ওহহ! কখন আসবে?

__ একটু পরেই

__ কে বললো?

__ সেইই ফোন দিয়েছিলো কাল।

__ এতো দিন কোথায় ছিলো?

__ বাড়ি গিয়েছিলো।

__ ছুটি দিয়েছিলেন তাইনা।

__ হুম, কেনো বলোতো।

__ কিছুনা ( বুঝলাম অন্যায় করার জন্যই বাড়ি ফাঁকা করেছিলেন)।

__ যা ভাবছো, তাই ঠিক।

__ কি ভাবলাম?

__ কিচ্ছুনা ?

কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বাজে, নিরা দরজা খুলতে যায়।

মেয়েটা প্রবেশ করেই নিরাকে জিজ্ঞেস করে

__ কে তুমি? এখানে কি করছো?

__ আপনি কে?

__ তার আগে বলো তুমি কে?
যাইহোক আবির কোথায়।

__ সে তো বাসায় আছে।

__ সরো আমার সামনে থেকে বলেই নিরাকে সরিয়ে ভিতরে ঢুকে সে।

__ আরে কোথায় যাচ্ছেন? কে আপনি?

__ তা তোমার জেনে লাভ কি? তোমাকে কি এই বাড়িতে নতুন কাজে দিছে নাকি? রোমানা কোথায়?

__ কি যা তা বলছেন?

__ আবির রুমে আছে তাই না।

__ আমি কাজের লোক না, আবিরের বউ আমি।

__ What?

__ জ্বী হ্যাঁ।

__ আবির বিয়ে কবে করলো, মজা নাও। ( দিয়েই উপরে যেতে থাকে)

__ আপনি পরিচয় না দিয়ে ভিতরে যেতে পারেন না।

__ এই ফকিন্নির মেয়ে তুই কে রে আমাকে আটকানোর।

__ ” তুমিও কাউকে অপমান করতে পারোনা। ” আবির বলে
( চিল্লাচিল্লি শুনে আবির নিচে নামতে গিয়েই এই কথা শুনে ফেলে তাই )

চলবে…….

প্রতিশোধ পার্ট__6

0

প্রতিশোধ
পার্ট__6
#জামিয়া_পারভীন

__ আবির নিরা কে বলে নদীর ধারে ঘুরতে যাবে। কিন্তু নিরা যেতে চায়না তাই তারা বাধ্য হয়ে বাসায় ফিরে আসে।

__ তৃণা সকালে নিরাকে দেখার পর থেকে খুব টেনশন এ আছে। এ ও কি সম্ভব, তার মতো দেখতে হুবহু আরেকজন মেয়ে। তার উপর যাকে পাবার জন্য এতো কিছু করলো আজ সেই মেয়ে তারই বউ। অতীতের কথা চিন্তা শুরু করে। তৃণা দের প্রথম ক্লাস টা ই ছিলো আবির স্যারের। প্রথম দেখায় ক্রাশিত হয় তৃণা। এরপর আবির যখন বোর্ডে কিছু লিখার জন্য ঘুরে তখন দুষ্টুমি করে মার্বেল ছুড়ে আবিরের দিকে। কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয় আর কি। আবির ওই মুহুর্তে তৃণার দিকে ঘুরে তাকায় আর দেখেও ফেলে তৃণা কে মার্বেল ছুড়তে আর হটাৎ করে মার্বেল লাগে আবিরের কপালে। ব্যথা যতটা না পেয়েছে রাগ টা বেশি হয়ে গেছিলো। সাথে সাথে তৃণা কে ক্লাস থেকে বের করে দেয় আবির। তৃণাও রাগ করে খুব ক্লাসের বাইরে দরজার আড়ালেই দাঁড়িয়ে থাকে তৃণা। এরপর স্যার যখন ক্লাস থেকে বের হয় তখন স্যারের পায়ে তৃণা নিজ পা দিয়ে বাধা দেয় আর স্যার তৃণার উপর পড়ে যায়। আর এই দৃশ্য সব স্টুডেন্ট দেখে, নিজের কাছেই ছোট লাগে আবিরের। সব স্টুডেন্ট আবির কেই ভুল বুঝে, কিন্তু তৃণার ফাজলামি শুধু আবির টের পায়। তৃণার কাছ থেকে অপমান পেয়ে ডিপার্টমেন্ট এ যায়। সবাইকে খুলে বলে এই মেয়ের এই রকম অত্যাচার এর কথা। কিন্তু তৃণাও থেমে থাকার না কারণ সে খোঁজ নিয়ে ফেলেছে আবির স্যারের কিছুদিনের মাঝেই বিয়ে। তাই সুযোগ বুঝে আবিরের বাসায় গিয়ে দোতলার বারান্দায় লুকিয়ে থাকে। বারান্দায় রেলিং দেয়া ছিলো না এই সুযোগ কাজে লাগায় সে। আগে থেকেই পুলিশ কে ঘুষ দিয়ে রেখেছিলো সাইরা। সকালে আবির ঘুম থেকে উঠে বারান্দার দরজা খুলতেই তৃণার তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। আবির মুখ দেখতে পায় না মেয়েটা কে। চুল গুলো এলেমেলো করে রেখেছিলো তৃণা। আবির ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ভয়ে আর তখনই সাইরা বাসায় পুলিশ নিয়ে আসে। আর কাজের মেয়ে না বুঝেই দরজা খুলে দেয়। বাড়ি সার্চ করে মেয়েটি সহ আবির কে এক রুমে পেয়ে সাথে সাথে এরেস্ট করে আবিরকে। আর সাইরা তৃণাকে নিয়ে মামলা করায় ধর্ষণ মামলা। এতে কোর্টে গিয়ে মিথ্যা সাক্ষী দেয় সাইরা আর তৃণা। কিন্তু আবির প্রমাণ পাচ্ছেনা নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার। আবির উকিলের মাধ্যমে জামিন নেয় সব প্রমাণ করে দিবে বলে। আর তৃণাও কিছু বুঝে উঠার আগেই আবিরের গুন্ডাদের দের পাঠায় তৃণাকে তুলে আনতে কিন্তু তারা ভুল করে নিরা কে তুলে আনে।

__তৃণা এতোক্ষণে বুঝতে পারে সেদিন কেন তৃণাকে সহজে মুক্তি দেয় আবির।
সাইরা কে জিজ্ঞেস করে কি করবে এখন, কিন্তু সাইরাও সমাধান দিতে পারেনা। এবার তৃণা তার বাবাকে ফোন লাগায়।

__ হ্যালো, ড্যাডি তুমি কেমন আছো? ( কান্নার নাটক করে)

__ কিরে মামনি, কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে বলো?

__ তৃণা আবিরের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা কথা বলে। কারণ জানে তার বাবাই তাকে সঠিক সমাধান দিবে।

__ তৃণার বাবা মেয়ের কান্ডে অবাক হয়ে বলে ” আবিরের থেকেও ভালো ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দিবো। চিন্তা করিওনা মামনি আমার। ”

__ না আমি আবিরকেই চাই, আমি আবিরকে না পেলে বাঁঁচবোনা।

__ এসব কি বলছো তুমি, এমন পাগলামো করেনা সোনামনি।

__ তুমি এটা বলো, ওই মেয়ে মানে আবিরের বউ যাকে দেখলাম সে আমার মতো দেখতে হলো কিভাবে?

__ তৃণার বাবা একটু চিন্তিত গলায় বলে কিভাবে সম্ভব। তুমি তো আমার একমাত্র মেয়ে।

__ জমজ না হলে দুইজন কি হুবহু হয়। তাছাড়া আর যাই হোক আমি ওই নিরা কে মেরে ফেলবো। তাও ভালো আবিরের বউ আমি হতে চাই।

__ তৃণার বাবার মহা টেনশন শুরু, মেয়ে তার পাগল হয়ে গেছে। তাই মেয়ে কে বলে খুব শীঘ্রই ফিরে আসছে রাজশাহী তে মেয়ের কাছে। তৃণাও খুশি হয় ড্যাডি কে অনেক দিন পর দেখতে পাবে তাই।

.
.
__আবির নিরা কে ভালোবেসে বিয়ে না করলেও ভালোবেসে ফেলেছে দুইদিনে। মেয়েটার সৌন্দর্য, ঝগড়া করার স্টাইল, রাগ করা, নিরা যাই করুক না কেন নিরা কে পছন্দ করে ফেলেছে জীবন সাথী হিসেবে। নিরা ঘরে মুখ উল্টো দিক ঘুরিয়ে শুয়ে আছে। আবির পাশে গিয়ে বসতেই নিরা চিৎকার করে..

__ এক্ষুনি ঘর থেকে বের হন। বিয়ে করেছেন বলে কিনে নেন নি যে যা ইচ্ছা তাই করবেন।

__ কি করলাম, এতো রাগ কিসের নিরু।

__ আমার নাম নিরা, নিরু না।

__ আমি তো ভালোবেসে নিরু ডাকলাম।

__ ভালোবাসা, মাই ফুট, আমি আপনাকে ঘৃণা করি।

__ এমন করছো কেনো, কিছুই তো করিনি এখন।
ওকে যাই রাত্রের খাবারের ব্যবস্থা করি।

__ কি ছাই পাশ খেয়ে থাকেন, ওগুলো আমার সামনে আর আনবেন না।

__ আমি কি করবো রুমানা কে তো ছুটি দিয়েছি। সে থাকলে রান্না করে ভালো। এখন যদি তুমি ইই রান্না করো তাহলে।

__ কিহহ

__ সরি, ভুল হয়ে গেছে।

__ নিরা কিছু না বলেই নিচে নামে, রান্নাঘর খুঁজে ( কারণ চিনতোনা) , সেখানে গিয়ে কিছু খুঁজে পাচ্ছেনা। আবির পিছন থেকে কানের কাছে গিয়ে বলে কি খুঁজছো। নিরাও চমকিয়ে উঠে, পিছন ঘুরেই আবির কে দেখে দুইটা কিল বসিয়ে দেয় আবিরের বুকে । আবির নিরার হাত ধরে ফেলে..

__ হাত ধরবেন না।

__মারলে কেন

__ বেশ করেছি, ভয় দেখানোর শাস্তি।

__ কি খুঁজছো?

__ আটা, সারাদিন ছাইপাঁশ খেয়েছি, এখন রুটি খেতে ইচ্ছে করছে।

__ আবির আটা, লবণ, পাতিল, তাওয়া সব দেখিয়ে দেয়। রুটির সাথে কি করবে?

__ ডিম আছে??

__ সব দেখিয়ে দেয়ার পর আবিরকে বাইরে যেতে বলে নিরা। আবির লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলো নিরা কি করছে। শয়তানি বুদ্ধি মাথায় আসে আবিরের।
নিরা যখন ডিম ফেঁটিয়ে রাখে আবির লুকিয়ে এসে ডিম অল্প একটু নিরার গালে মাখিয়ে দেয়। ডিমে মরিচ দেয়া ছিলো এটা দেখেনি আবির, নিরার মুখ জ্বলে গেছে, উফফ বলে চিৎকার দেয়।

আটা মাখা হাত দিয়েই আবিরের গাল খামচিয়ে দেয়।

চলবে…

প্রতিশোধ পার্ট_5

0

প্রতিশোধ
পার্ট_5

জামিয়া_পারভীন

__ এমন করে বলতে হয়না, লক্ষী মেয়ের মতো খেয়ে নাও বলে আবির খাইয়ে দেয় নিরাকে। ( নিরা মনে মনে ক্ষেপা হলেও বেশি জেদ দেখাতে পারেনা, তাই চুপচাপ খেয়ে নেয়) খাওয়ার পর উল্টো দিক ঘুরে শুয়ে পড়ে, এমনিতেই অসুস্থ, এরউপর সারা দিন বাইরে থাকায় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। আবির সব রেখে এসে নিরার গায়ে কম্বল ঠিক করে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়ে।

__ আবিরের বাসা টা তার বাবার ছিলো, এখন তার নামে। দোতলা বাসায় পুরোটা ই যেন আধুনিকতার ছোঁয়া। দামী দামী ফার্নিচার, আর ঘর সাজানোর সোপিচ আর কৃত্তিম ফুল চারিদিকে। বাসাতে একটা অনুষ্ঠান এর পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে সাজানো হয়েছিলো বাসাটা। first January ছিলো আবিরের বাসায় অনুষ্ঠান। তার আগেই সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়।

__ নিরা ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখে তার চারিদিকে অনেক গুলি শাড়ি, থ্রিপিচ, গাউন, টপস, মেকআপ বক্স, ম্যাচিং অলংকার সব কিছুই রাখা। নিরার চোখ দুটি আবির কে খুঁজছে কিন্তু আবির কে না দেখে সব কিছু সরিয়ে নিচে নামতেই মাথার উপর ফুলের পাপড়ি পড়া শুরু করে। নিরা বেশ উপভোগ করে এই ব্যাপার টা। এরপর আবির এসে হাততালি দিয়ে বলে শুভ জন্মদিন ম্যাডাম। ( নিরা ভুলেই গেছিলো আজ তার জন্মদিন, কিন্তু আবির কে দেখেই চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়)।

__” আমার জন্মদিন আপনি জানলেন কিভাবে? ” ( নিরা)

__ সারপ্রাইজ ( আবির)

__ হ্যাঁ! তাইতো , এসব না করে গলা টিপে মেরে ফেললেও তো পারতেন মিঃ আবির স্যার। ( নিরা)

__ এসব কি বলছো, আর এভাবে কখনো বলবেনা। (আবির)

__ আপনাকে আমি ঘৃণা করি, এসব করলেই ভাববেন না ভালোবাসবো। ( নিরা)

__ বাদ দাও, নাস্তা করো, আর এগুলোর মাঝে এক সেট পরে রেডি হয়ে থাকিও। দাওয়াত দিয়েছে তোমার ফ্যামিলি, যেতে হবে। ( আবির)

__ নাস্তাতে পাউরুটি, কলা, ফল আর চা দেখে নিরার খুব রাগ হয়। ইচ্ছে করেই ঘরের মাঝে কলার খোসা ফেলে দেয়। খায় আর মনে মনে বলে এগুলো কি মানুষ খায়। ( সে এসব খেয়ে অভ্যস্ত না তাই)

__ আবির বাইরে থেকে এসেই কলার খোসা না দেখেই পা দেয় আর স্লিপ খেয়ে নিরার উপর পড়ে যায়। নিরা আবিরকে সরিয়ে দিয়ে বলে ” লজ্জা করে না, আর এমন যেন না হয়। ” আবির উঠে দেখে কলার খোসা, একটু রাগী স্বরে বলে ” এটা এখানে কোথেকে আসলো “। নিরা কলার খোসা দেখে মিটিমিটি হেসে বলল ” সরি, আসলে, মাফ করবেন “।

নিরার হাসিমুখ দেখে আবির বেশ খুশিই হয়। হাসলে যেন নিরাকে অপ্সরীর মতো লাগছে। এতোটা সুন্দর সে দেখতে যেন সারাজীবন এভাবেই চেয়ে থাকা যায়।

__ ” কি দেখেন এতো, বেশিক্ষণ কেউ চেয়ে থাকলে আমার লজ্জা লাগে। এখন যান, আমি রেডি হবো।” ( নিরা বলে)

আবির চলে যায়, নিরা শাওয়ার শেষ এ হালকা পিংক কালার একটা শাড়ি বেছে নেয়। শাড়ি টা পরে চোখে কাজল দেয় গাড় করে কিন্তু মেকআপ সে করেনা। পিংক কালার চুরি, গহনা পড়ে নেয়। চুল গুলো খোলা রেখে পাশের ফুলদানি থেকে পিংক গোলাপ নেয় ( তাঁজা গোলাপ, আবির ই আনিয়ে রেখে ছে হয়তো) মাথার একপাশে ফুল গুজে দেয়।

বাইরে বের হয় নিরা, নিচে আবির সোফায় বসে আছে। নিরাকে দেখে এক ভাবে তাকিয়ে আছে আবির, এতো সুন্দর একটা মানুষ হয় কিভাবে। নিরা আবিরের ধ্যান ভাঙিয়ে বলে ” এইযে আপনার জন্য সাজিনি, যে এইভাবে দেখবেন। ”

__ তো কার জন্য সেজেছো? (আবির)

__ ” সবাইকে বলেছেন আপনি ভালোবেসে বিয়ে করেছেন, নিজেকে সুখী না দেখালে তো আবার আপনার অপমান। তাই বাইরের মানুষের সামনে সুখী হয়েই থাকতে চাই। ” ( নিরা)

__ আজ হয়তো ভালোবাসোনা কিন্তু পরে একদিন বাসবে, বলে দিলাম (আবির)

__ বয়েই গেছে আমার, একজন রেপিস্ট কে ভালোবাসতে। (নিরা)

আবির আর কিছু না বলে নিরা কে নিয়ে প্রথমে মেডিকেল ভার্সিটি যায়। সেখানে কলিগ দের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় ওয়াইফ বলে। নিরাও বেশ অবাক হয় আবিরের ব্যবহার এ। এটাও বলে দেয় নিরা ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী। কলিগ রা মজা করে বলে তাহলে প্রথম দিন ক্লাস টা যেন নিয়েই যায়। ছাত্রী হাজবেন্ড এর ক্লাস করবে, সবাই বেশ উতসাহী। তাই আবির ও গেলো নিরাকে নিয়ে ক্লাসে।

__ তৃণা আবির কে দেখে যতই না খুশি হয়, সাথে নিরা কে দেখে যেন আকাশ থেকে পড়ে। এই মেয়ে যে একেবারেই তার মতো দেখতে। কিন্তু কিভাবে সম্ভব আর এই আবির স্যারের সাথে কি করছে। তৃণার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায় শুভ্র স্যারের কথাতে। শুভ্র স্যার ক্লাসে ঘোষণা দেন আবির স্যার নতুন বিয়ে করেছেন তোমাদের ক্লাসের ছাত্রী কে। এতে সবাই খুশি হলেও তৃণা আর সাইরা একে অপরের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। সবাই অবশ্য নিরা আর তৃণাকে একই রকম দেখে অবাক ও হয়। দুইটা মেয়ে একইরকম আবার তাদের বাবা মা ও আলাদা। এই প্রথম দুইজন কে সবাই একসাথে দেখছে। এর আগে বেশি ক্লাস ও হয়নি, আর দুইজন একসাথে কখনো ক্লাসে আসেনি।

__ নিরাও বেশ অবাক হয় তৃণাকে দেখে, কেউ বলতে পারবেনা সে আর তৃণার চেহেরাতে কোন তফাৎ নেই ।

__ সবাই ক্লাস থেকে বের হয়ে আসে নিরা কে নিয়ে আবির নিরার বাবার বাসায় যায়। এই প্রথম আবির গাড়ি ছাড়া হাটছে কারণ নিরার বাসাটা একটু গলিতে, সেখানে গাড়ি ঢুকে না। নিরার সাথে আবির ওদের বাসায় গিয়ে বেশ কথা বার্তা বলে নিরার পরিবারের সাথে, নিরাও বেশ হাসিখুশি ছিলো সবার সাথে।

কিন্তু নিরার মনে এক্টাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, কে এই তৃণা।

নিরা রান্নাঘর এ মা কে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করেই বসে ” আচ্ছা মা, জমজ ছাড়া কি দুইটা মানুষ একই হয়? ” এমন প্রশ্নে যেন নিরার মা একটু ঘাবড়িয়ে যায়। সেটা না দেখেই নিরা আবারোও বলে ” আজ একটা মেয়েকে দেখলাম হুবহু আমার মতো দেখতে, আমার সাথেই পড়ে। কিভাবে সম্ভব মা! ”

__ নিরার মা এবার রাগান্বিত হয়ে বলে “আমি কি জানি? হতেও পারে! ”

__ নিরার মায়ের ব্যবহার ও নিরাকে অবাক করে দেয়। কিছুই না বলে চলে আসে সে। খাওয়া দাওয়া করে বিকেলে বের হয়ে যায় আবির আর নিরা।

চলবে……

#জামিয়া_পারভীন

প্রতিশোধ পার্ট_4

0

প্রতিশোধ
পার্ট_4

__ আবির মেয়েটি কে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজেও তার পাসেই বসে ড্রাইভার কে গাড়ি চালাতে বলে। ইশারায় ড্রাইভার কে এক যায়গায় যেতে বলে, হয়তো আবির আগেই লোকেশন বলে রেখেছে।

__ তা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে মিঃ স্যার।

__ গেলেই দেখতে পাবে মিস নিরা।

__ নাম কিভাবে জানলেন? কিছুক্ষণ আগেও তো নাম জিজ্ঞেস করছিলেন?

__ কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারবে সেটা।

__ হুহ, আপনি সব পারেন, তুলে নিয়ে আসতে যখন পেরেছেন, অন্য কাজ ও কোন ব্যাপার না।

__ একদম চুপ, বেশি কথা বলা পছন্দ করিনা আমি। ( জোরে করে বলে) নিজের অসম্মানের কথা ড্রাইভার এর সামনে বলা লাগবে নাকি। ( নিরার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে)

__ নিরাও আর কিছু বলেনা, অন্যায় করে এখন ভালো মানুষ সাজা হচ্ছে। আর কতো ন্যাকামি দেখতে হবে আল্লাহ ই জানে। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। প্রকৃতি দেখতে তার ছোট বেলা থেকেই খুব ভালো লাগে। আজ সব অসহ্য লাগছে তাও নিজেকে মনে মনে দোষারোপ করছে, কিসের পাপের শাস্তি সে পাচ্ছে।

__ গাড়ি এসে থামে একটা পার্লারের সামনে। আবির নিজে নেমে নিরা কে বের হতে বলে। নিরা নামতেই মিশি বলে, এইতো চলে এসেছো, তাড়াতাড়ি আসো, একটু না সাজলে হয় বলো। এক ঘন্টায় খুব সিম্পল সাজে সাজিয়ে বাইরে আনে মিশি। শপিং সেইই করেছে, একমাত্র ফ্রেন্ড এর বিয়ে বলে কথা।

__ নিরাকে এতো ই সুন্দর লাগছে যে আবির হা করে তাকিয়ে আছে নিরার দিকে। লাল শাড়ির সাথে খোলা চুলে লাল গোলাপ, চোখের কাজল, ঠোঁট এ লাল লিপিস্টক। অল্প সাজেই যেন নিরাকে লাল পরীর মতো লাগছে।

মিশিঃ এই যে মিঃ আবির, দেখার সময় আরোও আছে এখন তো চোখ সরান।

__ আবির লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। কিন্তু আড় চোখে বার বার নিরার চোখের দিকে তাকাচ্ছে, যেন বার বার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে।

__ আবির কে নিজের গাড়িতে যেতে বলেআর বলে নিরা আমার গাড়িতে যাবে। দিয়ে নিরাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে মিশি। গাড়ি চলতে শুরু করে কোর্টের উদ্দেশ্য। সেখানেই বিয়েটা হবে( আবির + নিরা)

মিশি _ আবির আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড, সেই ক্লাস নাইন থেকে একসাথে পড়েছি। কখনো কোন মেয়ের দিকে খারাপ চোখে দেখেনি। মেয়ে বন্ধু বলতে আমিই ছিলাম তার জীবনে । কখনো ভুলেও আমার সাথে পড়াশোনা এর বাইরে কথা বলতো না। একটু বড় হবার পরও সে পারসোনাল টুকিটাকি কথা বল্লেও কোন মেয়ের সাথে তার রিলেশন ছিলো না। কাল রাত্রে চেম্বার থেকে ফেরার পথে তোমায় দেখে যায়। আবিরের মুখ থেকে ঘটনা শুনি, খুব বকি তাকে। এতো টা রাগ করা তার উচিৎ হয়নি, তাই ভুল করে ফেলেছে। ক্ষমা করে দিও নিরা, জীবনে সুখী হবার চেষ্টা করিও। আবির খুবইই ভালো ছেলে, তোমার সব চেয়ে কাছের মানুষ হবে , মিলিয়ে নিও।

নিরা__ জ্বী ম্যাম, মনে থাকবে ( মনে মনে বলে কখনো ক্ষমা করবোনা আপনাকে স্যার, আজীবন অভিশাপ দিয়ে যাবো, যতই আপনি ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করেন, শাস্তি আপনাকে আমিই দিবো )

মিশি _ গুড গার্ল, কিন্তু ম্যাম নয় আপু বলবে।

নিরা _ জ্বী আপু।

_ গাড়িটা কোর্ট এ চলে আসে। নিরা নেমে দেখে আবির একটা ছেলের সাথে কথা বলছে।

মিশি _ আরে তন্ময় কখন এলে।

তন্ময় _ এইতো আসলাম, এইমাত্র! তোমার ভাই বলো, বন্ধুই বলো তার বিয়েতে না এসে পারি।

মিশি _ তলে তলে প্রেম করেছে আবির, জানতাম ই না। তাইই তো লুকিয়ে বিয়েটা আজ সেরেই নিতে চায়।

তন্ময় _ তা লাজুক ছেলের প্রেম কেমন চললো এতোদিন।

আবির _ মিশি একটু বেশিই বলে ভাইয়া।

__ ” নিরা এদিকে এসো, পরিচয় করিয়ে দিই উনি তন্ময়, আমার হাজবেন্ড। ” মিশি বলে নিরা কে।

__ পরিচয় পর্ব শেষ এ সবাই একটা রুমে যায়। নিরা পুরাই সারপ্রাইজড হয় নিরার বাবা মা কে দেখে । অস্ফুট স্বরে মা বলে ডেকে উঠে নিরা।

__ নিরার মা বলে ” এখন কেমন আছিস রে, তোর এক্সিডেন্ট এর পর একদিন তোর জ্ঞান ছিলো না, আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি, সকালে জামাই এর আত্মীয় গিয়ে তোর খোঁজ দেয়, আর বলে তুই এখন সুস্থ, এরপর তোকে জামাইয়ের এতো পছন্দ হয়েছে, তাই বিয়ের প্রস্তাব দেয়, আমরা গরীব মানুষ, এতো ভালো প্রস্তাব হাত ছাড়া না করে রাজি হয়ে যায়, তুই তো ডাক্তার হবি, জামাই ও ডাক্তার, দুইজনে খুব সুখী হবি রে মা । ” ( একদম এ কথা গুলো বলে নিরার মা)

নিরা_ হুম, উনি খুব ভালো মানুষ, উনি না থাকলে তো আমি মরেই যেতাম।
(মনে মনে বলে মিঃ স্যার আপনি অনেক মিথ্যা বলাই ওস্তাদ, প্রতিশোধ আমি নিয়েই ছাড়বো। আপনার টাকা থাকতে পারে কিন্তু নিরা কে কেনা এতো সহজ না)

সেখানে কাজীর সামনে বিয়েটা করে নেয়। এরপর সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে যায় , লাঞ্চ করে সবাই। নিরা সবার সামনে খেতে না পারায় তেমন খায়নি সেটা আবির খেয়াল করে। খাওয়া শেষ, এর পর মা বাবার কাছে বিদায় নেয়ার সময় কেঁদে ফেলে নিরা। মা বাবা কে বলে ভালো থেকো মা, বাবা। নিরা গাড়িতে উঠে বসে আবির ও সবাইকে সালাম দিয়ে বিদাই জানায়।

__ তৃণা শান্তিতে নাই, খুব হতাশ, তার উপর আজ আবির স্যার আসেনি, ক্লাস ও নেয়নি। মানুষ টা কি উধাও হয়ে গেলো নাকি।

__ ” কিরে কিছুই বুঝলাম না, আবির স্যারের কেশ তো তুলে নিছিস। তাও কেনো সার আজ এলোনা? ” সাইরা বলে।

__ আমি কি জানি, আমি কি সবজান্তা যে বলে দিবো স্যার কোথায় গেছে। ( তৃণা)

__ আবির স্যার তো তোকে পুরাই পাগলি বানিয়ে ফেলবে। ( সাইরা)

__ বেশি বকিস না, এমনিতেই বাবা আমাকে রাজশাহী আসতে দিচ্ছিলো না। যদি জানতে পারে আমি এসব করেছি তাহলে নির্ঘাত নিয়ে যাবে। আমি তো আবির স্যার ছাড়া থাকতেই পারবোনা।
( তৃণা)

__ স্বপ্ন দেখিস না, তুই কি জানিস স্যার ম্যারিড কিনা। ( সাইরা)

__ বাজে বকিস না, উনি আমার প্রথম প্রেম। যে কোন মূল্য তে উনাকে আমার চাই ই চাই। ( তৃণা)

__” ( মন খারাপ করে) হুম, দেখ “সাইরা বলে।

তৃণার বাবা রাজশাহী শহর টাকে এক প্রকার ঘৃণা ই করে। কখনো চায়নি তার একমাত্র মেয়ে এই শহরে আসুক। অথচ তৃণার সেই ছোট বেলার শখ সে ডাক্তার হবে। আর চান্স ও পেলো নাকি রাজশাহী তে। তাও চায়নি তৃণা আসুক এই অভিশপ্ত শহরে। তৃণার ইচ্ছে আর জেদের কাছে হেরে গিয়েই আজ তৃণা রাজশাহী তে। আর এসেই ঘটিয়ে ফেলেছে গন্ডগোল।

__ আবির আর নিরা বাসায় আসে, সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আবির কফি বানিয়ে আনে দুই মগ, নিরা কে এগিয়ে দেয় একটা।

__ ” থাক থাক, আর নাটক করতে হবেনা, এখন আর কেউ নাই। ” নিরা

__ ” হয়তো ভালোবেসে বিয়েটা করিনি, কিন্তু শুধু তুমিই জানো কি হয়েছে আর গোটা দুনিয়া জানবে অন্য কিছু। রক্ষা করতে পেরেছি আমি তোমার সম্মান। খুশি হওয়া অনেক পরের ব্যাপার, মেনে নাও। ভুল তো মানুষের ই হয়, ক্ষমা কি করা যায় না?

__ ” কক্ষনো না, আই হেট ইউ মিঃ আবির স্যার। আপনি সব ছাত্রীর ক্রাশ হতে পারেন কিন্তু আমার কাছে ঘৃণার পাত্র আপনি কথা টা মনে রাখবেন। ” নিরা ঘৃণার নিয়ে বলে কথা গুলো।

আবির কথা গুলি শুনে খুব কষ্ট পেয়ে বেলকনিতে গিয়ে চেয়ারে বসে। মন টা খুব খারাপ করছে, মনে পড়ে নিরা কিছুই খায়নি তেমন। আবার কিচেন এ গিয়ে নিরার জন্য স্যুপ বানায়। এরপর ট্রে তে করে কিছু ফলমূল আর স্যুপ আনে। ঘরে এসে দেখে নিরা উল্টো দিকে ঘুরে শুয়ে আছে। মাথার ফুল গুলি ঘরে ছুড়ে ফেলেছে। বিছানায় চুল গুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে আর ঘাড়ের নিচে একটু খানি জায়গাতে শাড়ি টা সরে গিয়েছে। খুব আকর্ষণীয় লাগছে এই অবস্থায়। আবির নিরার পাশের টেবিলে খাবার রেখে নিরার পাশে বসে নিরার পিঠে হাত দেয়। নিরাও রাগান্বিত হয়ে ঘুরে ই আবির কে চড় মেরে বসে।

__ ” লজ্জ্বা করেনা, আবার এসেছেন ” নিরা

__ ” বাইরে তেমন খাওনি তাই খাবার নিয়ে এসেছিলাম, তার পুরষ্কার পেলাম। ” ( আবিরের চোখে পানি )

( ছেলে মানুষ খুব শক্ত হয়। কখনো ই কাঁদে না তাও আবিরের চোখে জল আসছে, নিজের কৃতকর্মের জন্য।)

__ ” খাবোনা আপনার কুকর্মের টাকার খাবার “। নিরা

চলবে……

প্রতিশোধ পার্ট_3

0

প্রতিশোধ
পার্ট_3

জামিয়া_পারভীন

__আবিরের মনে পড়ে মেয়েটি ঘরে একা তাই দরজা লাগিয়েই সোজা উপরে যায় আবির। রুমানা ( আবিরের বাসায় কাজ করে ঘর গোছায়, রান্না করে) কে সকালেই ছুটি দিয়েছে তাই আজ সে একা। আবির মেয়েটির পাশের টুলে বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কি নিষ্পাপ মেয়েটি, ঘুমন্ত অবস্থায় মেয়েটিকে খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। নিজের প্রতি ঘৃণা তে ভিতর টা তিলে তিলে জ্বলছে। না পারছে কাউকে বলতে না পারছে সহ্য করতে।

__ তৃণা বাসাতে বসে বসে ভাবছে, এমন টা তো হবার প্লান ছিলো না। কিভাবে কি হয়ে গেলো কিছুই তো বুঝলাম না।

__ কিরে কি ভাবছিস এতো? সেই বিকেল থেকেই তুই চুপচাপ আছিস? তোকে খুব টেন্স লাগছে? খুলে বল সব কিছু? ( সাইরা, তৃণার বান্ধবী)

__ প্লান ভেস্তে গেছে, বুঝছিনা কিভাবে কি হলো! (তৃণা)

__ কি বলিস, তোর জন্য এতো কষ্ট করে প্লান করলাম আর তুই বলিস ভেস্তে গেছে। কিভাবে কি হলো খুলে বল, আমার টেনশনে হাত পা কাঁপছে। (সাইরা)

__ আবির স্যারের হাত খুব লম্বা, যতটা দুর্বল ভেবেছিলাম তার কিছুই না। আজ আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো স্যারের বাসায়। ( তৃণা)

__ কি বলিস, স্যার তোর কোন ক্ষতি করেনি তো? (সাইরা)

__ নাহ! আমি তো ভেবেছিলাম আজ আমি মার্ডার হয়ে যাবো। কিন্তু স্যার অবাক করে একটা চড় মেরেই ছেড়ে দিলেন। এটাই আমাকে ভাবাচ্ছে বেশি, আমি যা করেছি তার শাস্তি মাত্র এটুকু।
স্যারের সম্মান মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছি, তাও স্যার কিছু বললোনা রে। আমি তো আবারো স্যারের প্রেমে পড়ে গেলাম। ( তৃণা)

__ তুই যা বলেছিস, স্যার যা হ্যান্ডসাম না আমারও প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে। ( সাইরা)

__ আর একবারও এই কথা বলবি না, মেরে তোর মুখ ভেঙে দিবো। (তৃণা)

তৃণা বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে, যা চায় সব কিছু নিজের করেই ছাড়ে। সেটা যে কোন মূল্যের বিনিময়ে হোক না কেনো। সাইরা কে শুনিয়ে দেয় তৃণা।

__ তৃণা মেডিকেল এ চান্স পেয়েছে এবার কিন্তু মেসে থাকতে চায় না বলেই ফ্লাট টা ভাড়া করা। সাইরা কে তৃণাই এনেছে এই ভাড়া করা ফ্লাটে। দুই বান্ধবী এক সাথে থাকবে তাই। তাছাড়া শহরে একা থাকার চেয়ে কেউ থাকা বেশি ভালো, যদিও তৃণার বডি গার্ড হিসেবে দুইজন থাকে বাসায়, আর কাজের জন্য একটা মেয়ে, রান্নার জন্য আরেকজন মেয়ে। তৃণার বাবা সব সময় মেয়েকে চোখে চোখে রাখেন, আর মেয়ের মাথা নষ্ট হবার পিছনে এই একটা কারণ। মেয়ের সব আবদার পূরণ করার জন্যই বাবা যেন সর্বদা প্রস্তুত। কিন্তু এবার তৃণা লুকিয়ে কিছু কাজ করে তাও ধরা খেয়ে নিজেই টেনশন এ পড়ে গেছে।

__ আবির মেয়েটির মাথার কাছে গিয়ে বসে চিন্তা করতে করতে ওভাবে ই ঘুমিয়ে পড়ে, মেয়েটির মাথার পাশে মাথা রেখে টুলে বসে ঘুমিয়ে আছে আবির।

__ সকালে জ্ঞান ফিরে মেয়েটির, পাশে আবির কে দেখে সরে আসে। নিজেকে শাড়িতে দেখে বুঝে ফেলে আবির ই তাকে শাড়ি পড়িয়েছে । ঘৃণা তে মুখ ঘুরিয়ে নেয় মেয়েটা, অস্ফুট স্বরে বলে ছিঃ মানুষ এতো জঘন্য হয় কেনো। আল্লাহ বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে মেয়েটা।

__ কান্নার শব্দে আবিরের ঘুম ভেঙে যায়।
এখন কেমন আছো? আবির বলে মেয়েটি কে।

__ সাড়া নেই মেয়ের , নিঃশব্দে কাঁদছে সে।

__ আমি জানি আমি অনেক বড় পাপ করে ফেলেছি। আমি আসলে জানতাম না তুমি আর তৃণা দেখতে একই রকম। তৃণা আমাকে মিথ্যা রেপ কেশে ফাঁসিয়ে আমার সম্মানহানি করেছে। তাই আমি রাগে ওকে তুলে আনতে বলি। কিন্তু আসাদ তোমাকে তৃণা ভেবে তুলে আনে। আর তুমি দেখতে হুবহু তৃণার মতো। মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো তুমি স্বীকার না করায়। আমি খুব ভুল করে ফেলেছি, ক্ষমাও করতে পারবেনা জানি। তুমি যা শাস্তি দিবে মাথা পেতে নিবো। প্লিজ কথা বলো, আমাকে আর কষ্ট দিওনা। তোমার সাথে করা অপরাধ বোধ আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। প্লিজ কথা বলো, চুপ করে থেকোনা আর। প্লিজ মেয়ে, তোমার তো নাম টাও জানিনা, প্লিজ কিছু তো বলো। ( কান্না জড়িত কণ্ঠে আবির)

__ নাটক বন্ধ করেন, আর শাস্তির কথা বলছেন স্যার। আপনি পারবেন আমার সম্মান, ইজ্জত ফিরিয়ে দিতে। পারবেন না, এই যে আমি একদিন ধরে নিখোঁজ। পারবেন আমার গরীব দুখী মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে। পারবেন আমার বাবাকে বলতে আপনার নিষ্পাপ মেয়েকে ফিরিয়ে নিন। পারবেন সমাজ কে বলতে, আমি সতী। কি হলো, কথা কেন বলছেন না, জানি পারবেন না। তাই এখুনি আমি চলে যাবো এখান থেকে।

__ পারবোনা সব ফিরিয়ে দিতে, কিন্তু তোমাকে একাও ছাড়তে পারবোনা। কোথায় যাবে? আগে বলো নাম কি তোমার?

__ হুহ, নাম দিয়ে কি করবেন। নিজের ভোগ তো মিটিয়েই নিয়েছেন। (মেয়েটি)

__ বিশ্বাস করো! আমি ওমন না।

আবিরের কোন কথা না শুনেই মেয়েটি হাতের স্যালাইন চ্যানেল টান দিয়ে খুলে ফেলে, এতে বের হয়ে আসে রক্ত। মেয়েটির কোন চিৎকার না আসলেও যেন এ ব্যথা আবির পাচ্ছে। তাড়াতাড়ি হাত টা ধরে ফেলে, যেন তার ই হাত কেটেছে।

__ হাত টা ছাড়ুন ( মেয়েটি বলে)

__ দেখছোনা রক্ত বের হচ্ছে,থামো একটু। বলে পাশের বক্স থেকে এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে ব্যান্ডেজ দিয়ে হাতে বেধে দেয়।

__ থাক আর নাটক করতে হবেনা, এবার হাত ছাড়িয়ে নিলো মেয়েটি।

বিছানা থেকে তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে ব্যথা তে আর দুর্বলতা তে পড়ে যেতে শুরু করে। আবির ধরে নেয় মেয়েটিকে। খুব কাছে দুইজন দুজনের, ঘোর কাটিয়ে মেয়েটি বলে….

__ স্বাদ মিটেনি তাইনা, ছাড়ুন আমাকে।

এমন একটা কথাতে রাগ আসে আবিরের। তাও ভালো করে বলে…

__ তুমি এখনো অসুস্থ, রেস্ট নাও। নাস্তা নিয়ে আসি খেয়ে নিবে। বলেই বের হয়ে যায় আবির। যাবার সময় দরজা টা বাইরে থেকে লাগিয়ে যায়।

নিজেকে খুব ছোট লাগছে আজ নিরার।
কিভাবে সমাজের কাছে মুখ দেখাবে, কিভাবে বাবা মার মুখের সামনে দাঁড়াবে। কিভাবে বড় ভাইয়ের সামনে দাঁড়াবে, কিভাবে ক্লাসে যাবে। ভাবতে ভাবতে ফুঁপিয়ে কাঁদে অনেক্ষণ। নাহ! এজীবন আর রেখে কি হবে। আমাকে ক্ষমা করে দিও আল্লাহ বলে বিছানার চাদর কে কয়েক ভাগ করে কেটে ফেলে নিরা পাশে বক্সে থাকা কেচিঁ দিয়ে। সেগুলো কে বেঁধে প্যাচিয়ে নেয় আর ফ্যানের সাথে ফাঁস রেডি করে তাতে ঝুলে পড়ে নিরা। আবির খাবার নিয়ে এসে দরজা খুলেই চিৎকার করে খাটে উঠে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে। ফাঁস থেকে মুক্ত করে মেয়েটিকে বিছানায় শোয়ায়ে দেয়। মেয়েটার মাথায় মাথা দিয়ে বলে প্লিজ মাফ করে দাও। আর এমন করবেনা কখনো। আবিরের চোখের পানি মেয়েটার মুখে পড়ছে।

__আবির উঠে বসে বলে খাবার এনেছি, প্লিজ খাবে।

__ আপনার হাতে খাবার খাওয়ার চেয়ে বিষ খাওয়া ভালো।

এরই মাঝে মিশি ফোন দেয় আবিরকে।

__ হ্যালো, মিশি বল।

__ কেমন আছে মেয়েটি।

__ যেমন দেখে গিয়েছিলি, শুধু জ্ঞান ফিরেছে। আর একটু আগে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলো।

__ তা তো করবেই, যে কোন মেয়েই করবে। এখন কি করবি তুই সেটা বল?

__ কি করতে বলছিস সেটা বল?

__ বিয়ে করে নে।

__ কি বলছিস এসব। তাহলে সে…

__ চুপ কর! ভুলে যা ওসব। বিয়ে করে নে কখন আসবি সেটা বল।

__ ১১ টাই ফাঁকা আছিস।

__ নাহ! ১২ টাই আই।

__ ওকে, রাখ তাহলে।

আবির খাবার নিয়ে মেয়েটির সামনে বসে খেতে বলে। খাবার গুলি ফেলে দেয় মেয়েটা। খাবার নষ্ট করা আবির একদম সহ্য করতে পারেনা। রাগ করে বলে উঠে…

__কতো মানুষ একবেলা খেতে পায়না তুমি জানো? বলেই নিচ থেকে কুড়িয়ে খাবার নিজের মুখে দিলো। এরপর মেয়েটাকে খাইয়ে দিলো, মেয়েটি ও আর কিছু না বলে খেয়ে নিলো।

__ তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে।
কাজ আছে, চলো।
নিরার কথা শুনার অপেক্ষা না করেই কোলে তুলে নেয় আবির। কারণ জানেই মেয়েটার হাটার শক্তিও নাই।

চলবে…..

প্রতিশোধ পার্ট_2

0

প্রতিশোধ
পার্ট_2

জামিয়া_পারভীন

__হটাৎ ই আবিরের ঘুম ভেঙে যায়, মেয়েটির অস্ফুট গোঙানির শব্দে। তাকিয়ে দেখে অচেতন অবস্থাতে মেয়ে টা কাতরাচ্ছে। আবির তাড়াতাড়ি করে বাটিতে পানি এনে মেয়েটার মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে।

__ জ্বর কিছুটা কমেছে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে আবির। কি হতে কি হয়ে গেলো, দুই দিন আগেও যে ছিলো সব চেয়ে চরিত্রবান ছেলে সে আজ রেপিস্ট।

__ ভাবতে ভাবতে কান্না আসছে তার, কে এই তৃণা? কে এই মেয়েটি? দুজনের চেহেরার মিল কিভাবে? দুজনে কি জমজ বোন। নাহ আর কিছু ভাবতে পারছে না। উফফ আল্লাহ! একিসের শাস্তি দিচ্ছো তুমি।

__ মেয়েটির জ্ঞান ফিরছে না দেখে বেষ্ট ফ্রেন্ড মিশি কে কল দেয় আবির। রিসিভ করেই

__ ” কিরে কি খবর, আজকাল তোর তো কোন খবর ই নাই, তা কেমন আছিস বল।” একদমে কথা গুলো বলে মিশি।

__ একটা প্রব্লেম হয়ে গেছে, বাসায় আসতে পারবি? ইমার্জেন্সি, প্লিজ আই না। ( আবির)

__ ” হুম, পারবো, এখন তো রাত হয়ে এসেছে, এখুনি বাসায় চলে যেতাম। ওকে আসছি ” বলে মিশি।

__মিশি আবিরের এক মাত্র মেয়ে বান্ধবী, সদ্য পাশ করা গাইনী ডাঃ। আবির কেনো জানি এই মেয়েটাকে নিঃসন্দেহে সব কথা বলে দিতে পারে। মিশির সাথে সেই ক্লাস নাইন থেকে একসাথে পড়েছে আবির। দুজনেই একসাথে MBBS পাশ করে মিশি গাইনী তে FCPS করে, বিসিএস দিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী ডাঃ হিসেবে নিয়োগ পায় আর পারসোনাল চেম্বার আছে তার। আর আবির এনাটমি নিয়ে পোষ্ট গ্রাজুয়েশন করে মেডিকেল ভার্সিটি এর প্রফেসর হয় একই সাথে বিসিএস এ টিকে আউটডোরে বসে। পারসোনাল চেম্বার এখনো দেয়নি আবির। বড়লোক বাবার একমাত্র সন্তান আবির তাই তার এতো মাথা ব্যথা ছিলো না কখনোই।

__ কলিংবেল বেজে ওঠায় আবিরের ধ্যান ভাঙে। দৌড়ে নিচে গিয়ে দেখে মিশি, মিশির পায়ের কাছে বসে পড়ে আবির ” দোস্ত আমি পাপী, আমার জন্য একজনের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে, সে কেমন আছে প্লিজ দেখ” কান্নায় ভেঙে পড়ে আবির।

__ কি হয়েছে বলবি তো? এমন করছিস কেন তুই?

__ ঘরে চল, দরজা লাগিয়ে উপরে নিয়ে যায় মিশি কে। মিশি মেয়েটিকে দেখে আবির কে জিজ্ঞেস করে ” কে ও? “। আবির মাথা নামিয়ে বলে ” জানিনা কে মেয়েটি, আমি ওর সাথে চরম অন্যায় করেছি। এরপর থেকেই সে অজ্ঞান, এখনো জ্ঞান ফিরে আসেনি। তুই প্লিজ দেখ। ”

__ তুই কি করেছিস ওর সাথে সেটা বল (মিশি)।

__ রেপ ( কান্নার স্বরে আবির)

__ তুই এতো নিচে নেমে গেলি কখন আবির বলতো। লজ্জা করলো না তোর তাও এখন বিপদে পড়ে আমায় ডেকেছিস। (মিশি)

__ তোকে সব খুলে বলবো, প্লিজ আমায় ভুল বুঝিস না। আগে ওকে বাঁচা প্লিজ। ( আবির)

__ তুইই আমার সামনে থেকে এখন যা, ঘৃণা আসছে তোর প্রতি আমার। (মিশি)

__ মিশি দেখে প্রচুর ব্লাড গেছে মেয়েটির, জ্বর এসেছে বলে আবির কম্বল দিয়ে রেখেছিলো আর খেয়াল করেনি।

__ মিশি তাড়াতাড়ি মেয়েটির হাতে I/V চ্যানেল ওপেন করে আবিরের ঘরে থাকা স্যালাইন সেট করে দেয়। ব্লাড বন্ধ করার ব্যবস্থা করে। জ্বরের ওষুধ দিয়ে দেয় স্যালাইন এর মাধ্যমেই। বেরিয়ে আসে আবিরের রুম থেকে।

__ আবির এর কাছে পরে মিশি সব শুনে বলে ” তুই রাগী ছিলি জানতাম কিন্তু তাই বলে এতোটা নিচে নেমে যাবি জানা ছিলো না।” বলেই আবিরের বাসা থেকে বের হয়ে যায় মিশি।

চলবে……..

প্রতিশোধ পার্ট_১

0

প্রতিশোধ
পার্ট_১

জামিয়া_পারভীন

__স্যার, অনেক কস্ট করে খুঁজে পেয়েছি বলেই আবিরের সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় মেয়েটি কে। ভার্সিটি থেকে বাসা যাওয়ার পথে মেয়েটাকে কে কিডন্যাপ করে আনে আবিরের পাঠানো গুন্ডারা। আবিরের ইশারা তে সবাই চলে যায়, আর মেয়েটা ততোক্ষণে চিল্লিয়ে বলে ” কলেজে সবার সামনে ভদ্রতার মুখোশ পড়ে থাকা মানুষ টাই কি আপনি স্যার, কিসের জন্য আমাকে এখানে তুলে এনেছেন, কি দোষ করেছি আমি, কি করতে চান আপনি ” এক দমে কথা গুলি বলে মেয়েটা ।

__ ” আমি কি বলবো, যা বলার সব টাই বলবে তুমি, আমি রেকর্ড অন করে রেখেছি, যা যা অন্যায় আমার সাথে করেছো তার সব টাই স্বীকার করো, স্বসম্মানে তোমাকে এখান থেকে মুক্তি দিবো, আর যদি না শুনো, সব স্বীকার না করো তো তোমার কি হাল করবো তা ভাবতেই পারবেনা তুমি। ” আবির মেয়েটাকে কে বলে।

__ মেয়েটা অবাক হয়ে কথা গুলো শুনে বলে ” এক্সিউজ মি স্যার, আমি আমার সজ্ঞানে আপনার সাথে কোন অন্যায় করিনি “।

__ “এতো বড় মিথ্যা কথা ” বলেই মেয়েটার গলা টিপে ধরে আবির। “ভালোই ভালোই সব স্বীকার করে নাও, নইলে নিজ মুখ আর সমাজে দেখাতে পারবেনা তুমি “।

__ “আমি কোন অন্যায় করিনি স্যার, আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে, আপনার দুটি পায়ে পড়ি আমার ক্ষতি করবেন না, দয়া করুন আমার উপর ” কাঁদতে থাকে মেয়েটা।

__ মেয়েটার কান্না আবিরের মন ভেদ করেনা, কারণ মেয়েটা যে অন্যায় তার সাথে করেছে সে শাস্তি মেয়েটি কে পেতেই হবে ভেবেই মেয়েটা কে টানতে টানতে দোতলায় নিয়ে যায়। ফুল ভলিউম এ ঘরে গান ছেড়ে দেয় আবির যাতে মেয়ের চিৎকার কারো কানে না যায়।

__” কি করছেন কি, ছাড়ুন বলছি। আমার এমন কোন ক্ষতি করবেন না যাতে আপনাকে সারাটা জীবন পশতাতে হয় ”

__ ” কি বললে তুমি, আমি পশতাবো না, সব স্বীকার না করে এবার তুমি পশতাবে ”
বলেই মেয়েটাকে বিছানায় ফেলে দেয়, আবির তার শার্ট খোলে ।

__ ” দেখেন আমি কিছু করিনি, প্লিজ ছেড়ে দিন। আমাকে প্লিজ ছাড়ুন, আমি যা করিনি তা কিভাবে স্বীকার করবো। প্লিজ ছাড়ুন, আল্লাহ একি পরীক্ষা নিচ্ছেন আমার। এই বিপদ থেকে রক্ষা করুন আল্লাহ, দয়া করুন। ” কিছুক্ষণ পরে জ্ঞান হারায় মেয়েটি।

মেয়েটার চিৎকার আবিরের কান ভেদ করেনি। এই মেয়ে আবিরের নামে মিথ্যা মামলা করে, ধর্ষণের। অথচ আবির ওকে চিনতোই না, কখনো দেখিনি। অথচ এই মেয়ে গতকাল আবিরের নামে কোর্টে মিথ্যা বলে, আবির নাকি তাকে রেপ করেছে। কথাগুলো ভাবতেই ঘৃণা আসে আবিরের, “বেশ করেছি যা করেছি, মিথ্যা মামলা তে আমার যা মানহানী করেছে সেটাই সত্য করে দিলাম। ”

__ গান বন্ধ করে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার শেষ এ নিচে আসে। এসেই প্রায়ই ১০০ টি মিসকল দেখে ফোনে।
কল ব্যাক করতে যাবে তখন আবারো আসাদের ফোন আসে। রিসিভ করতেই….

__ “স্যার বড় ভুল হয়ে গেছে স্যার, মাফ করে দেন স্যার। ” আসাদ বলে (আবিরের পোষা গুন্ডার নাম আসাদ)

__ ” কি যা তা বলছো, যা বলার সোজাসুজি ভাবে বলো ” আবির।

__ “স্যার আসলে ওই মেয়েটা, মিস তৃণা আমার সাথে দাঁড়িয়ে আছে গেট টা একটু খুলবেন স্যার সব বুঝিয়ে বলছি “।

__ আবির তাড়াতাড়ি গেট খুলে অবাক হয়ে যায়। এ যেন মেয়েটার কার্বন কপি, যাকে সে রেপ করেছে। আবির কিছু বুঝার আগেই তৃণা আবিরের পায়ে ধরে
” স্যার আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমি আসলে বান্ধবী দের সাথে বেট ধরে আপনার নামে মিথ্যা মামলা করেছি, আমার কোন দোষ নেই স্যার, ওদের জন্য রাগান্বিত হয়ে ভুল করেছি, স্যার মাফ করে দেন ” বলেই কান্না করতে থাকে।

__ আবির তৃণা কে জোর করে উঠিয়ে সজোরে এক টা থাপ্পড় দেয় আর বলে, ‘লজ্জা থাকলে কেশ টা তুলে নিবে । নইলে এমন জঘন্য অপরাধের জন্য টিসি দেয়ার ব্যবস্থা করবো, জীবনেও কোথাও পড়ার সুযোগ পাবেনা “।

__ ” স্যার আমি কেশ তুলে নিয়েছি, স্যার আমায় ছেড়ে দেন প্লিজ ” তৃণা

__ “দূর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে, কখনো আমার সামনে আসলে খুন করে ফেলবো। ” আবির

__ এরপর আবির আসাদ কে বলে, তুই ওকে কিভাবে পেলি তাহলে আগে যাকে তুলে এনেছিস সে কে?

__ জানিনা স্যার, ওই মেয়েটা আসলে কে? দুজনে একিই রকম হলো কিভাবে, কিছুই বুঝতে পারছিনা স্যার, ক্ষমা করে দেন স্যার।

__ “দূর হয়ে যা সামনে থেকে, তোকেও কখনো সামনে পেলে তোকেও খুন করে ফেলবো। ”

__আসাদ কোন ক্রমে পালিয়ে আসে, সে জানে মিঃ আবির চৌধুরী কতোটা ভালো মানুষ আবার কতো টা ভয়ংকর রাগী।

__আবির পাপ বোধ এ জ্বলছে, তাও সে উপরে গেলো। দেখে মেয়েটার জ্ঞান এখনও আসেনি, নিজেই নিজেকে দোষারপ করছে। এতোটা জঘন্য কাজ সে কখনো করবে বলে ভাবেনি।

__ আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে আবির, এরপর মেয়েটাকে কোলে তুলে নেয়। দেখে মেয়েটার শরীরে অনেক যায়গা ই ছিলে গিয়ে রক্ত বের হয়েছে। নিজের অজান্তেই একটা নির্দোষ কে এতো বড় শাস্তি দিয়ে সে নিজেই কস্ট পাচ্ছে। ওয়াশরুমে নিয়ে শাওয়ার করিয়ে নিজেই মাথা মুছিয়ে দিয়ে শাড়িটা পড়িয়ে দেয়। এরপর কাটা অংশ গুলো তে এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে দেয়।

__ মেয়েটার পাশে বসে থাকে আবির, নিজের অপরাধে ভুগতে ভুগতে মেয়েটার পাশে বসা অবস্থাতেই ঘুমিয়ে যায় আবির।

চলবে…..

#জামিয়া_পারভীন

ছায়া_পার্ট_6 (শেষ)

0

ছায়া_পার্ট_6 (শেষ)

জামিয়া_পারভীন

নয়ন আর মিরা গোরস্তানের দিকে যাচ্ছে, মাসুদের ছায়া ও পাশে আছে নইলে মিরা ভয় পাবে এটা জানতো মাসুদ। আর নয়ন ও অনেক টা ভয় পাই, শুধুমাত্র মিরার জন্য এই ঝুকি নিতে বাধ্য হয়েছে সে। মাসুদ নিজেই দেখিয়ে দিলো তার কবর কোনটা। এই গোরস্থানটা অনেক পাহারা দেয়া থাকে তাই খুব সাবধানে কবর খুড়ছে নয়ন। অমাবস্যা রাত হওয়াতে কিছুই দেখা যায়না, চারিদিকে আধার। কবরের মাটি সরিয়ে, বাশ গুলি সরিয়ে লাশ টা দেখলো মিরা আর নয়ন। কথা মতো মিরাকেই তাবিজ টা খুলতে হবে, কিন্তু মিরা খুব ভয় পাচ্ছে, তাও সে লাশের কাফন সরায়। মাসুদের মুখ টা দেখতে পায় মিরা তখন খেয়াল করে মাসুদ এর ছায়া আর পাশে নাই। তাবিজে হাত দিতেই লাশ টা মিরার হাত ধরে ফেলে আর চোখ খুলে তাকায়। মিরা তাও তাবিজ ছাড়েনা, শক্ত করে ধরে থাকে। হটাৎ মিরার মাথায় খুব জোরে আঘাত লাগে, মিরা বুঝতে পারে তান্ত্রিক এর জ্বীন মাথায় আঘাত করেছে এতে মিরা নয়নের গায়ে পড়ে গেলেও তাবিজ থেকে হাত সরায় না।

“এই তাবিজ খোলা কি এতো ই সহজ, কি ভাবছিলি আমরা তোকে খেয়াল করছিনা ” তান্ত্রিক বলে।
আমরা তোকে ভয় পাইনা বলেই নয়ন দোয়া পড়তে শুরু করে এতে তান্ত্রিক এর যাদু অনেক টা দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন মিরার হাত দিয়ে ধরেই নয়ন তাবিজ টা টেনে খুলে নেয়। ততোক্ষণে আসগরের বুকে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে, সেও এসেছিলো তান্ত্রিক এর সাথে। তান্ত্রিক বলে এবার আর তোমার রক্ষা হবেনা আসগর যদি না তুমি ওই তাবিজ নিতে পারো। ততোক্ষণে এলাকাতে বেশ সাড়া পড়ে গেছে, অনেক মানুষ জড় হয়ে গেছে। আসগর বুঝে নেয় এবার তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। নয়ন মিরার হাত দিয়েই তাবিজ টা তুলে এনে সাথে থাকা গ্যাস লাইট দিয়ে তাবিজে আগুন দেয়। তখন মিরার জ্ঞান ফিরে আসে, মিরা আকাশের দিকে তাকাতেই মাসুদের ছায়া কে দেখে। ছায়া টা যেন অনেক হাসছে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য, মিরাও একটু হাসে, ছায়া টা বিলীন হয়ে যায়।

তখন খেয়াল করে আসগর মাটিতে পড়ে আছে, বুঝতে বাকি নাই যে আসগর মারা গেছে। এলাকাবাসী তান্ত্রিক কে বেধে ফেলে তখন পুলিশ কেও ডাকে তারা। মিরা, নয়ন আর কবিরাজ তিনজনে মিলে তান্ত্রিক এর সব অপকর্ম এর কথা বলে। মাসুদের লাশ দেখেই সবাই বুঝে ফেলে আসল অপরাধী কে। সেই অপরাধে আলতাফ হোসেন কে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় আর আসগরের লাশ ও মর্গে নিয়ে যায়।

রাত কাটতে বেশি বাকি নেয়, মিরার বিয়ে না হলে মিরাও মারা যাবে। নয়ন আগেই মিরার বাবা, মা কে ফোনে ডেকে নেয়। তারাও চলে আসে গোরস্থানে, মিরাকে আজ রাতেই বিয়ে দিতে হবে এটা কবিরাজ বলে সময় মাত্র ১৫ মিনিট আছে ফজরের আজানের আগেই বিয়ে দিতে হবে। কবিরাজ মশাই আগেই কাজী ডেকে রেখেছিলেন, তার মাধ্যমেই নয়ন আর মিরার বিয়েটা হয়ে যায়।
বিয়ের পর সব বিপদ কেটে গেলেও মাথা টা মাঝে মাঝে ঘোরে। তার নিজেকেই দোষী ভাবে মাসুদের জন্যে, অল্প সময়ের পরিচিত হওয়া ছায়া কে খুব মিস করে সে। তিন বছর পর মিরা আর নয়নের এক ছেলে হয়, নাম রাখে মাসুদ। মাসুদ এখনো বেচে আছে মিরার কল্পনায়।

ছায়া_পার্ট_5

0

ছায়া_পার্ট_5

জামিয়া_পারভীন

মানুষের জীবনে কখন কি হয় তা কেউ ই জানেনা, এটা মেনে নিয়েই নয়ন আর মিরা ঠিক করে আজ রাত্রেই মাসুদের কবর খুড়বে । মিরা আমি আর নয়ন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, যে আমার দায়িত্ব নিতে চেয়েছে। তবে কবিরাজ খুব সাবধানে কাজ করতে বলেছে আর সেই জন্যই মাসুদ কে সকালে মনে মনে ডাকতে শুরু করি কিন্তু মাসুদ তো এখন আসতে পারবে না। কিন্তু মাসুদ কে যে ডাকতেই হবে যেভাবেই হোক যানা প্রয়োজন কিভাবে মাসুদ মারা গেছে। এটা ভাবতে ভাবতেই তন্দ্রা আসে, স্বপ্ন আসে মাসুদ সন্ধ্যায় দেখা করবে বলে জানায়। ঘুম টা ছুটে যায়, একটু আশ্বস্ত হই।

মায়ের ডাকে ঘোর কাটে, খেয়ে নিই, মা বলে কিরে এতো কিসের টেনশন বল আমাকে। আমি বলি তেমন কিছুই না মা, আজ একটা কাজে বিকেলে বাইরে যেতে হবে ফিরতে রাত হতে পারে। মায়ের টেনশন রাত হবে শুনে, বলে রাত না করলে হয় না। আমি বলি কাজ টা শেষ করেই চলে আসবো, বলেই বিকেলে বের হয়ে যায়। নয়ন আসবে সন্ধ্যায়, কেননা সন্ধ্যায় আসতে বলেছি আর কাজ শুরু হবে রাত ১০ টা তে। আগে ভাগেই গোরস্তানের দিকে যেতে হবে তার আগে যেতে হবে মাসুদ এর কাছে।

সন্ধ্যা নেমে এসেছে, চারিদিকে আধার ছড়িয়ে পড়ছে এরই মাঝে মাসুদ এসে হাজির হয় বুঝতেই পারলাম না মাসুদ আসলো কখন। মাসুদ এসেই বলে ডাকছিলে যখন তাই তাড়াতাড়ি ই চলে আসলাম বলেই আমার গলা টিপে ধরে, আর বলতে শুরু করে কিরে তোর এতো সাহস আমাকে দুনিয়া থেকে মুক্ত করতে এসেছিস তুই। তোকে আজ মেরে ফেলবো, আর আমার করে রাখবো সব সময়ের জন্য। আমি চিৎকার করার চেস্টা করেও পারিনা। তখনই নয়ন এসে আমাকে ঝাকি দেয়, কি হয়েছে, এমন করছিস কেন, বলে নয়ন।

না তেমন কিছুই না, শোন তুই রিস্ক নিস না, বাসায় চলে যা। আমাকে একেলা ছেড়ে দে, আমি একাই সব কিছু পারবো।
না তা হয়না, কথা দিয়েছি তোকে রক্ষা করবো, কথা রাখবো আমি আমার। কিছুক্ষণের মাঝে মাসুদ আবার আসে, বলে আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো, সরি।

মানে কি বলছো তাহলে একটু আগে কে এসে আমার গলা টিপে ধরেছিলো। বুঝেছি তারা টের পেয়ে গিয়েছে, তোমার সাথে আমি শেষ মুহুর্ত ছায়ার মতো থাকবো। তোমার আর ক্ষতি হতে দিবোনা। শুনতে চাও না আমি কিভাবে মারা গেছি? হ্যাঁ বলো, সেই অপেক্ষা তেই বসে আছি এখানে।

তোমাকে তোমার স্বামী আসগর আর শ্বশুর আলতাফ হোসেন মিলে খুন করার নীল নকশা করে। কিভাবে , আহ এতো অধৈর্য হচ্ছো কেনো ? সরি, বলো…..
সেইদিন বাসাতে এক তান্ত্রিক ডাকে, আমি দেখে খুব অবাক হই আর সব টা জানার জন্য ওই ঘরে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকি, কি হয় না হয় সব জানতে খুব ইচ্ছে করছিলো।

তান্ত্রিক অনেক্ষণ মন্ত্র পড়ে, পাশে বসে আছে আসগর ভাই, আর আলতাফ হোসেন। মন্ত্রের এক পর্যায়ে তোমার নাম কানে আসে, বেশ অবাক হই। বুঝতে বাকি রইলো না, হয় তোমাকে খুন করবে না হয় তোমাকে পাগল বানিয়ে দিবে।

এবার তান্ত্রিক কথা বলা শুরু করে, বল, মেয়ের নাম বল। আসগর বলে, মিরা ওর নাম। সব কাজ হয়ে যাবে শুধু একটা লাশ লাগবে, এখুনি মৃত এমন লাশ। আসগর ভয় পেয়ে বলে, লাশ কোথায় পাবো তান্ত্রিক মহাশয়। কেনো এই ঘরের খাটের নিচেই লুকিয়ে আছে যেই জন তাকে হত্যা কর। তাহলেই ওই পুরুষের গলায় তাবিজ বেধে দিবো, আর তোর বউ মিরা কে ওই লাশের আত্মাই মেরে ফেলবে। এবার বেশ ভয়ে পেয়ে যায় আমি ( মাসুদ)। বুঝেছিলাম সেদিনই আমার শেষ দিন, আসগর ভাই এতোটুকুও মায়া করেনি আমার উপর, পশুর মতো আমার গলায় ফাস দিয়ে হত্যা করে। এরপর বুকের উপর তিনটা ছিদ্র করে, খুব কস্ট হচ্ছিলো যানো সেদিন। পরে সেই ছিদ্র দিয়ে তাবিজ গলায় বাধে, আর বলে দেয় এই তাবিজ যদি কেউ খুলে তো আসগরের মৃত্যু হবে , সাথে থাকা সেই জ্বীন টাও মারা যাবে, আর রাতের আধারেই দাফন করে দেয় আমায় । যাদের বাবা, ভাই বলে ডাকতাম, তাদের কাছে কতো টা নিষ্ঠুর মৃত্যু হয়েছে আমার বলতে পারো।

মিরা আর নয়নের চোখ দিয়ে জল পড়ছে। কিই বা করবে, একজন নিষ্পাপ মানুষের লাশ তার সামনে নিজের মৃত্যুর বর্ননা দিচ্ছে ???

চলবে…..