Friday, June 20, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2440



প্রতিশোধ__2 পর্ব_18

0

প্রতিশোধ__2 পর্ব_18
#লিখাঃ জামিয়া_পারভীন

___ আজ তিথি প্রথম লন্ডনের মাটিতে পা রাখে। লন্ডন একটি চমৎকার শহর। একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভ্রমণের তালিকায় লন্ডন শহরের নাম অবশ্যই থাকবে। টেমস নদীর তীরে অবস্থিত লন্ডন ২০০০ বছর পুরাতন একটি শহর। এটি মাইনোরিটি মেজোরিটি শহর নামে পরিচিত। অর্থাৎ এই শহরের বেশিরভাগ মানুষ মাইনোরিটি অর্থাৎ সংখ্যালঘু অবস্থা থেকে উঠে এসেছে। এখন লন্ডন বিশ্বের নেতৃত্বদানকারী অর্থনৈতিক দেশ। চার চারটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান এখানে অবস্থিত। এছাড়াও রয়েছে অনেক আকর্ষণীয় স্থাপনা যার টানে প্রতি বছর হাজারো মানুষ লন্ডন ভ্রমণে আসেন।

__ তিথি এখানে ভ্রমণ করতে আসেনি। তিথির জব হয়েছে লন্ডন এ। তিথি সবসময় মুক্ত বিহঙ্গ এর মতো আকাশে উড়তে চেয়েছে। চেয়েছে ডানা মেলে উড়তে, পৃথিবীর কোথায় একটু সুখের ছোঁয়া পাবে সেটা খুঁজে বেড়িয়েছে। আজ সময় এসেছে তিথির, খুব বড় হতে না পারুক স্বাধীন ভাবে বাঁচাতে তো পারবে ।

____ তিথি একটা লজে উঠে, কারণ প্রথম দিন তো আর কোন ফ্লাট পাবেনা থাকার জন্য। রুম নাম্বার ৭৫৬, ষষ্ঠ ফ্লোরে উঠে ফ্রেশ হয়ে বিকেলে ঘুরতে বের হয়। আশেপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করছে, এই হোটেল টা অনেক সুন্দর করে সাজানো। সামনে বড় লেক আর মাঝে ফোয়ারা। মনের মাঝে আফসোস হচ্ছে, নিজের বাড়িতে ফোয়ারা থাকলেও এর সৌন্দর্য্য কখনোই উপভোগ করতে পারেনি। ফোয়ারা থেকে ঝিরিঝিরি পানি তিথির শরীরে পড়ছে আর সে শিহরিত হতে থাকে।

___ এই যাহহ! ফ্লাট তো খুঁজতে যাওয়া হলো না। এটা ভেবে নিজের মাথায় হালকা বাড়ি মেরে খুশি মনে বের হয়ে যায়। ফোন টা বের করে এক ফ্রেন্ড মণিকা কে কল দেয়। ফোন রিসিভ করে অপর পাশ থেকে শুনতে পায়

__ হ্যালো, মিস তিথি, হাও আর ইউ।

__ আই এম ফাইন এন্ড ইউ।

__ আই এম ফাইন অলসো। তা কখন এসেছিস তুই সেটা বল। সরি! আমি তোকে রিসিভ করতে যেতে পারিনি। ক্ষমা করে দিস রে। ( মণিকা) [ মণিকা তিথির ফেসবুকে পরিচয় হওয়া ফ্রেন্ড, ওর হেল্প এর জন্যই এই জব টা পেয়েছে তিথি। তিথির দুইটা কারণ এ মণিকা কে ফ্রেন্ড বানিয়েছে, এক. মণিকা বাংলাদেশী, দুই. সে এখন লন্ডনে থাকে। তিথির বরাবর ই লন্ডনে যাওয়ার শখ ছিলো তাই সে পূরন করেছে। ]

__ আরে তুই টেনশন নিস না, আমি এখন ফ্লাট খুঁজতে বের হয়েছি। মে বি পেয়ে যাবো।

__ তুই এতো সেল্ফিস কেনো বলতো?

__ কেনো কি করলাম?

__ তুই লন্ডনে এসে ফ্লাটে থাকবি? আরে শোন আমি একা থাকি, তুই আমার সাথেই থাকবি বুঝলি। আজকের দিন তুই লজেই থাক, কাল গিয়ে তোকে নিয়ে আদবো।

__ কিন্তু…

__ কোন কথা হবে না! তোকে যা বলছি তুই তাই শুনবি।

__ ওকে! থ্যাংকস দোস্ত।

__ আর একবার শুধু বন্ধুত্ব তে থ্যাংকস বলেছিস তো নাক টা ভোতা করে দিবো।

__ ওরেওরে! হয়েছে, এবার তো থাম। আমি তোর সাথেই থাকবো। খুশি এবার তুই।

__ খুশি না হয়ে পারি বল?

আরোও কিছু কথা বলে তিথি ফোন টা রেখে দেয়।

___ নুহাশ গ্রাজুয়েশন কম্পলিট করে, পিএইচডি ডিগ্রি নেয় ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে। এখন একটা মাল্টিন্যাশনাল অফিসের বস। নুহাশ এখন লন্ডনে থাকে কিন্তু অফিসের কাজে একটা লজে আসে। সবার সাথে মিটিং শেষ করতে রাত ১০ টা বেজে যায়। এক কলিগের অনুরোধ এ লজের বারে যায়। বারে একসাথে সবাই এনজয় শুরু করে আর বিয়ার খেতে শুরু করে। নুহাশের নেশা করার তেমন অভ্যাস নাই তাই অল্পতেই নেশা উঠে যায়। মাথা টা ঝিম ধরেছে নুহাশের। আজ আর ফ্লাটে না ফিরে লজে রুম বুকিং করে, রুম নং ৭৫৯। ড্রিংকস করে একে তো মাথা হ্যাং এর উপরে আবার ডোর লক হচ্ছিলো না তখন ডোরে কয়েকটা বাড়ি দেয়, ৭৫৯ এর স্ক্রু ঢিলা ছিলো বিধায় এখন নুহাশের রুম নাম্বার ৭৫৬ হয়ে যায়।

____ তিথির ড্রিংকস করার অভ্যাস আছে, সে একা একাই বেশ এনজয় করে। সব দুঃখ যন্ত্রণা দূর হয় ড্রিংকস করলে। কিন্তু নতুন পরিবেশ এ এসে খাওয়া টা একটু বেশি ই হয়ে গেছে। মাথা টা খুব যন্ত্রণা করছে তিথির, ফ্লোরে এসে রুম নাম্বার দেখে রুমে ঢুকে পড়ে। উফফ্ রুম খোলা কেনো? ধ্যাত ভালো লাগেনা বলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ( রুম টা অন্ধকার ছিলো তাই কেউ আছে কিনা সেটা না দেখেই শুয়ে গিয়েছিলো তিথি)

____ নেহা! তার একমাত্র বান্ধবী মোনালিসার বিয়েতে এসেছে। মোনালিসা হিন্দু এতে নেহার কোন মাথাব্যথা নাই। সব সময় দুটিতে পাড়া মাতিয়ে রাখতো। আজ মনু টা নেহা কে ছেড়ে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। হিন্দুদের বিয়ে সাধারণত রাতে হয় কিন্তু মনুর বিয়ের লগ্ন একেবারেই রাত্রে। খুব রাগ হচ্ছে নেহার, একমাত্র বান্ধবী তাও বিয়ে কিনা রাত্রে।

__ বান্ধবীর বিয়ে রাত্রে এটা প্রব্লেম না, প্রব্লেম হচ্ছে বরযাত্রী তে আসা একটা ছেলে। শুধুশুধু নেহার পিছু পিছু ঘুরছে। বার বার নেহার গাঁ ঘিষে দাড়াচ্ছে, দুষ্টামী করতে চাচ্ছে। কিন্তু নেহার কোন ছেলেকে ই পছন্দ না তাই এই ছেলেকেও বিরক্ত লাগা শুরু করে।

__ মনু যখন ওর বরের সাথে সাত পাক দেওয়ার জন্য হাটছিলো তখন ছেলেটা নেহা কে বলছে….

__ দেখছেন মেয়েরা ছেলের পিছুপিছু ঘুরছে অথচ আমি সারাদিন আপনার পিছু ঘুরেও আপনার মন পেলাম না। ব্যাপার টা কেমন যেন লাগছে তাই না বলুন। একটা সম্পর্ক আসে দুইজনের দিক থেকে যদি একজন চায় আরেকজন মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে কেমন হলো বলুন তো?

__ আপনার প্রব্লেম টা কি? আমার পিছু নিয়েছেন কেনো? আর কিসের সম্পর্কের কথা বলছেন? ( নেহা)

__ আমি মুরাদ, বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। গ্রাজুয়েশন কম্পলিট করে বাবার অফিসেই জয়েন করেছি।

__ তা দিয়ে আমি কি করতে পারি?

__ আপনার কাজল কালো চোখ,
করেছে আমায় পাগল,
হতে চাই খুব আপন।

__ থাক আর ন্যাকামি করতে হবেনা, ডিসগাস্টিং ( নেহা রাগ করে চলে যায়)

___ বিয়ে শেষ এ বাসর জাগে সবাই, মোনালিসার ইচ্ছে তেই নেহা কে মনুর সাথেই থাকতে হচ্ছে। আর বর‍যাত্রী থেকে আসা মুরাদ নামের ছেলেটা তো আছেই। বাসর ঘরে সবাই আনন্দ করতে করতে মুরাদ বলে উঠে একটা খেলা শুরু করা যাক। সবার নাম চিরকুট এ লিখা হোক। দুইটা করে চিরকুট একসাথে তোলা হবে, চিরকুট এ যা লিখা থাকবে সেটাই অভিনয় বা করে দেখাতে হবে।

___ নেহা কিছুতেই নাম দিতে চায় না কিন্তু সবার চাপে পড়ে নাম দিয়ে দেয়। চিরকুট তুলে তুলে দুইজন এর কবিতা আবৃত্তি হয়, গান হয়, অভিনয় হয় এরপর চিরকুট এ উঠে নেহার নাম লিখা আছে ড্যান্স, আর মুরাদ কারচুপি করে নিজের নাম দিয়ে দেয়।

__ নেহা এসব দেখে রাগী গলায় বলে সে খেলবেনা। তখন মুরাদ একটা গান গাইতে শুরু করে আর নেহাকে হাত ধরে টেনে ইচ্ছেমতো নাচায়। নেহা মুরাদের গান শেষ এ মুরাদ কে একটা চড় দিয়ে বলে

__ এ কেমন অসভ্যতা, সেই দুপুর থেকে বিরক্ত করছেন আর এখন?

বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

রুমে একটা গুমট পরিবেশ সৃষ্টি হয়, সবাই মুরাদের দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হাসছিলো। মুরাদের মাথা রাগে গজগজ করছে।

মুরাদ সবার সামনে অপমানিত হয়ে মনেমনে বলে এর প্রতিশোধ আমি নিয়েই ছাড়বো।

মুরাদ লোক লাগিয়ে নেহার সব তথ্য নেয়।

( জানিনা আপনাদের কেমন লাগছে নতুন অধ্যায়, নতুন কাহনী, জানাবেন আশা করি, খুব জোর ১০ পর্ব করেই প্রতিশোধ দ্যা এন্ড করার চেষ্টা করবো। অনেক ভেবে লিখতে হয় তাই সুন্দর করে লিখার চেষ্টায় গল্প যদি ছোট হয় তাহলে কিছু করার নাই আমার ?)

চলবে…..

প্রতিশোধ পার্ট17 & শেষপার্ট

0

প্রতিশোধ
পার্ট17 & শেষপার্ট
#জামিয়া_পারভীন

তৃণা কে সাইফ পার্কে দেখা করতে ডাকে, তখন সুযোগ বুঝে তৃণার ফোন অফ করে দেয়। এরপর ওরা অনেক ঘুরাঘুরি শেষ এ সাইফ বলে..

__ আজ আম্মি বলেছে তোমাকে খুব দেখার ইচ্ছা হচ্ছে তার। ( সাইফ)

__ ওহহ তাই তাহলে আজি দেখা করি চলুন ( তৃণা)

__ তুমি সত্যি যাবে? কি বলে যে তোমায় ধন্যবাদ জানাবো? ( মনে মনে শয়তানি হাসি হাসছে সাইফ )

__ আমার হবু শাশুড়ি মা দেখতে চেয়েছে আর আমি যাবোনা? ( তৃণা)

__ হুম, যাবেই তো, আমার লক্ষ্মী বউ বলে কথা। ( শুধু চলোই একবার, মনে মনে) (সাইফ)

__ এভাবে বলিয়েন না, লজ্জা লাগে। ( মুচকি হাসি দিয়ে তৃণা)

তৃণাকে সাইফ বিলাশবহুল একটা বাড়িতে এনে বসিয়ে রাখে। চারিদিকে বাগান করা, আশেপাশে তেমন বাড়িঘর নাই। বিশাল এলাকা জুড়ে বাড়িটা। তৃণা চারিদিকে দেখছে আধুনিকতার ছোঁয়া কোন অংশেই কম নয়। ড্রইং রুমের চারিদিকে দামী দামী সো পিচ আর ফুলদানি তে ভর্তি সব ই তাজা ফুল। ফুলের সুবাসে ঘর টা তে তৃণার থেকে যেতে ইচ্ছা করছে। তখন ই সাইফ এসে বলে সাইফের আম্মি উপরে আছে, পায়ে লেগেছে তাই হাটতে পারছে না। তোমাকে উপরে ডেকেছে। তৃণাকে একটা ঘরে নিয়ে যায় সাইফ সেখানে কেউ নেই দেখে তৃণা অবাক হয়ে সাইফের দিকে তাকায় ততোক্ষণে সাইফ ঘরের দরজা টা বন্ধ করে দেয়।

__ কি ব্যাপার দরজা লাগাচ্ছেন কেনো? ( তৃণা)

__ বুঝতে ই তো পারছো? কি চাইছি ? ( সাইফ)
সাইফ তৃণাকে জড়িয়ে ধরে কিস করতে থাকে তখন তৃণা সাইফের হাতে কাঁমড় দেয়। কিন্তু তাও কোন লাভ হয়না, সাইফ তৃণাকে বেডে ফেলে দেয়। এরপর সাইফ তৃণার উপর ঝাপিয়ে পড়ে, একটা মেয়ের শক্তি পরাজিত হয়, তৃণা কে রেপ করে বিছানায় ফেলে রেখে বাইরে গিয়ে বসে থাকে সাইফ।

তৃণা কোন রকম উঠে বসে কাপড় ঠিক করে কাঁদতে থাকে। সাইফ রুমে এসে বলে
__ একদম ন্যাকামি করবে না, এবার পাশে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। ( সাইফ রাগী গলায় )

__ তৃণা সাইফের দিকে থুতু দিয়ে বলে তুই একটা জানুয়ার, ছিঃ।

__ একদম ছিঃ ছিঃ করবা না জান ( তৃণার মুখ চেপে ধরে)

এখন থেকে আমি যা বলবো সেটাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে নইলে ( ফোনে রেকর্ড করা ভিডিও দেখালো তৃণা কে)

এসব দেখে তৃণা নিরবে কাঁদতে থাকে। তখন সাইফ আবার বলে শাওয়ার নিয়ে আসতে। তৃণা সাইফের কথা মানতে বাধ্য হয়। তৃণার মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব কিন্তু সে মরতে পারেনি বাবার কথা ভেবে।

বের হতেই সাইফ একটা লেহেঙ্গা আর গয়না দিয়ে রেডি হতে বলে।

__ এসব এর কি দরকার?

__ দরকার আছে ডার্লিং, আজ তো আমাদের বিয়ে।

__ যদি বিয়েই করার হয় তাহলে এমন করলেন কেনো? ( তৃণা)

__ প্রতিশোধ

__ আমি কি করেছি আপনার সাথে? কেন করলেন এমন?

__ আবির আমার বন্ধু এটা কি জানো?

__ না

__ আবিরের নামে রেপ কেস দিয়েছিলে মনে আছে?

__ ভুল করে ফেলেছিলাম, আবেগের বশে ( ক্ষমা ও চেয়েছি উনার কাছে)

__ এর জন্য কি কি ক্ষতি হয়েছে জানো?

__ ( শুধুই কান্না করছে)

__ এর জন্য তোমার বোন কে আবির রেপ করে, পরে ভুল বুঝে বিয়ে করে। আর এর জন্য আর কি ক্ষতি হয়েছে জানো? জানো না। আমার একমাত্র বোন অনন্যা এর বিয়ে হবার কথা ছিলো আবিরের সাথে, আবির বিয়েটা না করায় অনন্যার বিয়ে ভাঙ্গে। এতে অনন্যার বিয়ে হয় একটা মাতালের সাথে, আমার বোন এর চোখে এতো জলের মূলে ছিলে তুমি। তুমি কি ভেবেছিলে? তোমায় ভালোবাসি। ভালোবাসা মাই ফুট! আমার বোনের চোখের জলের শোধ নিতে প্রথমে সব সত্যি ঘটনা খোঁজ নিই। এই মহান ঘটনার সাক্ষী মিশির হাজবেন্ড কে বন্দী করে সব তথ্য কালেকশন করি এরপর শুরু হয় আসল খেলা । তোমার বাবা কে মারার উদ্দেশ্য সব প্লান সাজানো হয় কিন্তু লক্ষ্যে আসার আগেই তোমার বাবার এক্সিডেন্ট হয় কিভাবে তা বুঝতে পারিনি আজও নইলে পরপারে থাকতো এতোদিন।

__এরপর তুমি পাগল হয়ে গেলে আর নামকরা সাইকোলজিস্টের কাছে আসলে। আমার কাজ গুলি ক্লিয়ার, এখন তুমি আমার হাতের পুতুল। আমার বোন টা যেভাবে কষ্ট পাচ্ছে এখন বিয়ে করে সারাটা জীবন সেইই কষ্ট তুমি পাবে। আর নাটক না করে রেডি হয়ে এসো।

সাইফ জোর করে তৃণা কে বিয়ে করে প্রথমে নিয়ে যায় আবিরের কাছে। প্লান মাফিক আবিরের রেপ করে বিয়ের ঘটনা তৃণা ফাঁস করে সবার সামনে। ( সাইফের ভয়ে এসব করতে বাধ্য হয় তৃণা) এতে আবিরের সম্মান হানি হয় প্রচুর। লোকসমাজে আবিরের নামে ছিঃ ছিঃ পড়ে যায়। সব কিছু তেই অনন্যা খুব খুশি হয়। একটা শাস্তি সে আবির কে দিতে পেরেছে।

আবির বা নিরা কেউই সবার সামনে মুখ দেখাতে পারবেনা বলে চলে যায় বিদেশে কিন্তু কোন দেশে তা কেউ জানেনা আর। সেখানে গিয়েই নিরার সাথে আবির নতুন পরিচয়ে বাঁচতে শুরু করে। আবির সেখানে গিয়ে জব পেয়ে যায়
নিরাও সেইখানে তার পড়াশোনা কমপ্লিট করে জব শুরু করে। আবির আর নিরার কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক মেয়ে ।

সাইফ আর তৃণা অষ্ট্রেলিয়া চলে যায়, সেখানে গিয়ে সাইফ আরেকটা বিয়ে করে আর তৃণার কপালে জোটে সাইফের ঘৃণা। তৃণার এক মেয়ে হয়। বেচে থাকার একমাত্র সম্বল। তৃণার আর পড়াশোনা করা হয়ে উঠেনি, সাইফ তা চায় না কখনো তাই।

আর তুষার হুইলচেয়ার এ থাকতে থাকতে আদরের দুই মেয়ে কে হারিয়ে পাড়ি জমায় পরপারে। মৃত্যুর আগে কি মনে করে তুষার তৃণার সম্পত্তি ওর মেয়ের নামে লিখে দিয়ে যায়। তবে তৃণা বা নিরা কেউই এসব খোঁজ নেয়নি আর।
সব কিছুই এখন মাসুদের কাছে, সেইই সব দেখাশোনা করে। হেনা এখন ও মাঝরাতে কেঁদে উঠে নিরা আর তৃণার জন্য। মাসুদ ও আজকাল কেমন জানি হয়ে গেছে। মাকে একদম সহ্য ই করতে পারেনা। তাই মা কে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিয়েছে সেই কবেই। একমাত্র আদরের নাতির কাছ থেকে অনেক দূরে আজ হেনা। বাস্তবতা বড়ই নিষ্ঠুর, আমরা মেনে নিতে পারিনা তাও মেনে নিতে হয়।

শেষ

(আপনারা চাইলে সিজন ২ দিতে পারি আবিরের ছেলে কে নায়ক করে। তখন হয়তো বা হ্যাপি এন্ডিং আসবে। কিন্তু এই সিজনে হ্যাপি এন্ডিং দিতে পারলাম না বলে দুঃখিত )

প্রতিশোধ পার্ট_16

1

প্রতিশোধ
পার্ট_16
#জামিয়া_পারভীন

নিরা আর তৃণার বার্থডে তে তুষার এর বাড়িতে বড় অনুষ্ঠান এর আয়োজন করা হয়। সাইফ তৃণাকে কথা দেয় অনুষ্ঠানে তৃণার জন্য গিফট থাকছে। তবে গিফট টা হচ্ছে সারপ্রাইজ। নিরা আর তৃণা একই রকম টপস ড্রেস পড়ে আজ। এতে দুই বোন কে চিনাই যাচ্ছেনা। কে নিরা কে তৃণা এটা পার্থক্য করবে প্রেমিক রা। তৃণা মনে মনে প্লান করে সাইফ যদি তাকে না চিনতে পারে তাহলে সাইফের সাথে সম্পর্ক রাখবে না। আর নিরাও সেইম কথা ভাবে। ভালোবাসার পরীক্ষা নিবে আজ নিরা আর তৃণা। দুই বোন কে চিনার কোন পার্থক্য নাই কারণ দুইজনের গলার ভয়েস আকৃতি, সব সেইম।

এক মাত্র অনেকদিন থেকে যারা দেখেছে তারাই বুঝবে কে নিরা কে তৃণা। প্রথম দেখাতে কেউ বুঝবেনা কোন টা কে। আর এই জন্যই অল্প পরিচয় এর তৃণাকে চিনতে না পেরে আবির নিরাকে শাস্তি দিয়ে ফেলেছিলো। কিন্তু আবির যে ভালো ছেলে এটা তার সাথে থাকতে থাকতে নিরা বুঝেছে, এতো অবহেলা করার পরও আবির ওকে ছেড়ে যায়নি। শত অপমান সহ্য করেও আবির নিরার সাথে নত দৃষ্টি তে কথা বলেছে। এই বা কম কিসের নিরার কাছে।
আজ চুড়ান্ত পরীক্ষা করবে নিরা, দেখবে কেমন চিনতে পারে আবির।

,
,
,
সন্ধ্যায় বিশাল পার্টির আয়োজন করা হয়, সেখানে আবিরের কলিগ সহ নিরা তৃণার ক্লাস ফ্রেন্ড এন্ড সাইফের ফ্যামিলি সবাই আমন্ত্রিত ছিলো। সাইফের ফ্যামিলি কে ডাকা হয়েছে এটা আবির জানতো না। আবিরের ফ্যামিলির সবাই এসেছে, আবিরের ছেলে রোমানার কাছে আছে , আবির ওর বাবা মায়ের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। এরই মাঝে সাইফের ফ্যামিলি চলে আসে। আবির বেশ অবাক হয় সাইফ কে দেখে।

সাইফের ফ্যামিলি কে দেখে আবিরের পরিবার বেশ ইতস্তত বোধ করে। সাইফ ই আগে আবিরের সাথে কথা বলে

__ হাই ( সাইফ)

__ হ্যালো ( ভয় মিশ্রিত কণ্ঠে আবির)

__ তারপর কি অবস্থা, একদম আশা করিস নি তাই না। ( সাইফ)

__ কিছুটা হলে ও জানি আমার শ্যালিকা তোকে ভালোবাসে। হয়তো সেই জন্যেই তোর আগমন। যা হয়েছে ভুলে যা, নতুন করে শুরু কর, অভিনন্দন তোকে। ( আবির)

__ তাইইইই, এতো ই সহজ, আমি তো আর আগে জানতাম না তুই তৃণার বোনের হাজবেন্ড, তৃণার বোন আমার বোনের সুখ কেড়ে নিয়েছে তুই ভাবলি কিভাবে তৃণাকে আমি সুখে রাখবো। ( সাইফ)

__ তার মানে তুই রিভেঞ্জ নিতে এসেছিস। ( আবির)

__ হা হা হা ( তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে চলে যায় সাইফ)

,
,
যথাসময়ে নিরা আর তৃণা হাজির হয় টপ্স আর জিন্স পড়ে, দুই জন ই মডার্ণ সাজে সজ্জিত। দুই জনের বাম হাতে ব্রেসলেট, গলায় মুক্তোর মালা, কানে দুল, চুল গুলো ছাড়া আছে, ডান হাতে দুইটা আংটি পড়েছে, উঁচু হিল তাও সেইম সব কিছু। এভাবে দুই জন কে দেখতে পাবে তা কেউ কল্পনা করেনি।

এরই মাঝে এনাউন্স করা হয় আবির আর সাইফ যদি ওদের চিনতে না পারে তাহলে নিরা আর তৃণা কেউইই ওদের সাথে থাকবেনা। সাইফ মনে মনে ভাবছে যে করেই হোক চিনতেই হবে নইলে সব প্লান বৃথা যাবে।

আবির সাইফ দুইজন ই নিরা আর তৃণা কে চিনার চেষ্টা করে, আবির এক টা মেয়ের হাত ধরে একই সাথে সাইফ অন্য মেয়ের হাত ধরে নেয়। দুই জন একিই সাথে প্রেমিকা দের বাম হাত ধরে।

নিরা আবির কে জড়িয়ে ধরে বলে
__ কিভাবে চিনলে

__ এনগেজমেন্ট রিং তোমার বাম হাতে আর তৃণার নাই। এটাই পার্থক্য দুইজনের, তুমি এনগেজ তাই ( আবির)

আর সেইম প্রশ্ন তৃণা সাইফ কে বলে সাইফ ও বলে
__ তোমার রিং ফিংগারে রিং নাই তাই। বলে সাইফ একটা রিং বোনের হাত থেকে নিয়ে সবার সামনে পড়িয়ে দেয় তৃণাকে।

__ এই সময় আবির নিরা কে বলে
I just wanna hold you tight in my arm and wisher in your ear ” I Love U ” আবির নিরা কে জড়িয়ে ধরে সবার সামনে। নিরাও লজ্জা পেয়ে যায়।

__ সাইফও তৃণাকে বলে
পথিবীর কিছুই চাই না শুধু তোমার ভালোবাসা ছাড়া…. তৃনাও সাইফের বুকে নিজেকে সঁপে দেয়।

সবার হাত তালি তে মুখরিত হয়ে উঠে পরিবেশ। নিরা আর তৃণা এক সাথে কেক কাটে প্রথমবার, সবাইকে কেক খাওয়ায় দুই বোন। নিরা এতোক্ষণে সাইফের বোনের দিকে খেয়াল করে মুখ বিষন্ন হয়ে গেলো। এতো অনন্যা, মানে আবিরের যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।
,
,
,
রাত্রে আবির নিরা বাসায় আসার পর আবির কে নিরা জিজ্ঞেস করে…

__ তুমি কি মেয়েটাকে ভালোবাসতে?

__ ভালোবাসা কিনা জানিনা, বিয়ে টা শুধু ঠিক হয়েছিলো। হয়তো মায়া জন্মে গেছিলো, জানো! ওর জন্য প্রথম গিফট কিনি দুইটা শাড়ি। ওকে দিবো ভেবেছিলাম কিন্তু তার আগেই এক্সিডেন্ট এ তোমাকে দিয়ে দিই। তোমার কি মনে আছে তোমাকে প্রথম যে শাড়ি পড়িয়েছিলাম সেটা অনু কে উদ্দেশ্যে কেনা ছিলো।

__ হুম বুঝেছি, এর প্রতিশোধ নিতে চাই সাইফ তাইনা। এজন্যই তুমি আমাকে বলেছিলে, সাইফ তৃণাকে ভালোবাসে না।

__ সাইফ আর আমি এক সাথে পড়েছিলাম, এই সুবাদে অনু আমাকে পছন্দ করে আমার বাবা মায়ের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সাইফের চেয়ে ভালো সাইকোলজিস্ট ছিলো না বিধায় ওর কাছে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু আমি নিজে দেখা করিনি৷ কারণ চিনে ফেললে শত্রুতা করতো। ( আবির)

__ এখন কি হবে? ( নিরা)

__ একমাত্র অনু ই পারবে এই বিয়ে ঠিক করতে। অনুর সাথে কথা বলতে হবে। ( আবির)

__ ওকে তাইই বলো। ( নিরা)

,
,
,
অনন্যা কে দেখা করার জন্য অনেক কষ্ট করে রাজি করায় আবির। অনন্যা আসতে রাজি হয়, অনেক বার রিকুয়েস্ট করার পর অনন্যা রাজি হয়। একটা রেস্টুরেন্ট এ দেখা করে আবির আর অনন্যা।

__ হ্যাঁ কি সমস্যা, বলে ফেলো ( রাগী কণ্ঠে অনন্যা)

__ আমি নিরা কে ভালোবেসে বিয়ে করিনি, এটা করতে আমি বাধ্য হয়েছিলাম। আমার তোমাকে ব্যাপার টা জানানো উচিৎ ছিলো, কিন্তু আমি না জানিয়ে তোমাকে এড়িয়ে গিয়েছিলাম। আই এম সরি।, প্লিজ ফরগেভ মি। ( আবির)

__ এতদিন পর এইসব বলার জন্য ডাকোনি নিশ্চয়ই। কি বলতে চাও ক্লিয়ারলি বলো। ( অনন্যা)

__ নিরা মেয়েটা নির্দোষ ছিলো, একটা এক্সিডেন্ট হয় নিরার সাথে। যাতে সে কনসিভ করে, সব দোষ আমার ছিলো। আমার রাগের জন্য একটা মেয়েকে ভুল বুঝে খারাপ করে দিই। এরপর নিরা সুইসাইড করতে গিয়েছিলো। নিজের অপরাধ বোধের জন্য আমি বিয়ে করতে বাধ্য হই। আমি নিরুপায় ছিলাম অনু। ( আবির)

__ তার মানে তুমি একজন জঘন্য ব্যক্তি, ছিঃ মানুষ এতো নিচে নামে। বাই দ্যা ওয়ে, তোমার মতো নিচ মানুষের সাথে কথা বাড়িয়ে ই বা কি লাভ। তৃণার জন্য তুমি দোষী হয়েছো। আবার নিজেকে ছোট করছো, লজ্জা করেনা। যাই হোক তোমার জন্য আমার এতো ক্ষতি হয়েছে সেটার কি হবে শুনি। তোমার সাথে বিয়ে ভাঙার পর ড্যাড মান সম্মান এর কথা ভেবে ওই বিয়ের ডেট এ একটা মাতালের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। মাতাল এর অত্যাচার এ আমি দিন রাত কেঁদেছি আর তোমাকে অভিশাপ দিয়েছি। গত ২ মাস আগে মদ খেয়ে মাতলামি করে এক মেয়েকে রেপ করে এখন সে জেলে। আর আমাকে দিয়ে গেছে যন্ত্রণা ময় একটা স্মৃতি ( আমার ছেলে)। পারবে এইসব কষ্ট মুছে দিতে। জানি পারবেনা, তাই আমার রিভেঞ্জ আমি নিয়েই নিয়েছি অলরেডি। ( অনন্যা)

__ মানে? ( আবির)

__ তোমার শ্যালিকার ভুল অপবাদ এ তুমি নিরাকে শাস্তি দিয়েছিলে তাইনা। তোমার শ্যালিকার তো শাস্তি পাওয়া উচিৎ তাইনা ( অনন্যা)

__ কি করেছো তুমি, হ্যাঁ আমি ওর প্রতি বিরক্ত থাকলেও সে তার ভুল বুঝেছে তাই ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। ( আবির)

__ তুমি ক্ষমা করলেও আমি কিভাবে ক্ষমা করি বলো। ( অনন্যা)

__ কি করেছো তুমি ওর? ( আবির)

অনন্যা হাসতে থাকে আর আবির তৃনা কে ফোন দিতেই থাকে কিন্তু তৃনার ফোন সুইচড অফ বলছে।

( আগামীকাল লাস্ট পার্ট দিবো আর আপনারা চাইলে সিজন ২ করতে পারি, নিরার ছেলেকে নায়ক করে । আপনারা কি সিজন ২ চান? )

চলবে….

প্রতিশোধ পার্ট_15

0

প্রতিশোধ
পার্ট_15
জামিয়া_পারভীন

__ কেনো বিয়েটা হলে প্রব্লেম টা কি। সাইফ কে তো ভালো ই লেগেছে। তৃণা খুব হ্যাপি হবে বিয়েটা হলে। ( নিরা)

__ তুমি ভাবছো তৃণা হ্যাপি হবে কিন্তু আসলে সেটা হবার নয়। বাদ দাও এসব, তোমার এক্সাম খুব শীঘ্রই, কিছুদিন পড়াশোনা অন্তত করতে হবে, প্রেগন্যান্সির জন্য, বাবার জন্য, আরো অনেক কারণ এ তুমি একেবারে ভেঙে পড়েছো। এখন আবার সব কিছু ঠিক করতে হবে। আমি আছি তোমার পাশে সব সময়, সব ঠিক হয়ে যাবে।
( আবির)

__ দেখো আবির, আমি আমার কথা শুনতে চাচ্ছি না। আগে বলো সাইফের কি প্রব্লেম? ( নিরা)

__ হ্যাঁ বলবো, তার আগে তোমার এক্সাম টা শেষ হোক সব বলবো। এখন বলে তোমার পরীক্ষার খারাপ করতে চাইনা আমি। ( আবির)

__ ওকে, আমি পরে শুনতে চাই সব কিছু। ( নিরা)

,
,
,
২ মাস ভালো ভাবে পড়ে ওরা দুই বোনের এক্সাম শেষ হয়। নিরার ইচ্ছে করে আবির কে ভালোবাসতে কিন্তু ইগোর জন্য আবির কে ইগনোর করে। আবির অনেক হেল্প করেছে নিরা কে, সব সময় গাইড দিয়ে পড়াতো, আর আবির আর নিরার ছেলের জন্য একজন নার্স ঠিক করে রাখে। নিরার পরীক্ষার যেন কোন ক্ষতি না হয় তার সব ব্যবস্থা করেছিলো আবির।
,
সাইফ ও তৃণার পরীক্ষার জন্য সব রকম হেল্প করে। তৃণার সব এক্সাম ভালো হয়, তাই সাইফ কে ফোন করে তৃণা।

__ মিঃ ডক্টর, করছেন টা কি? ( তৃণা)

__ এইতো মিসেস ডক্টর, তোমার কথা ভাবছি। ( সাইফ)

__ কি যে বলেন না আপনি? যাই হোক অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমার সব এক্সাম ভালো হয়েছে আর সব কিছুই সম্ভব আপনার জন্য। ( তৃণা)

__ তা আমার গিফট টা কোথায় ম্যাডাম ( সাইফ)

__ কিসের গিফট ( তৃণা)

__ বাহ রে, আমি এতো কষ্ট করলাম, আমার গিফট থাকবেনা, এ হয় নাকি। ( সাইফ)

__ ওকে কি চায় আপনার বলেন, আমি অবশ্যই দিবো।

__ তোমাকে

__ মানে? ( তৃণা)

__ দেখা করতে চাই একবার । ( সাইফ)

__ ওকে ডান, কোথায় আসবো বলেন।

__ মুক্তমঞ্চ এর পাশে যে রেস্টুরেন্ট সেখানে আসো। ( সাইফ)

__ ওকে ডক্টর ( তৃণা)

সাইফ এই প্রথম তৃণাকে দেখা করতে ডাকে। তৃণা মায়ের সাহায্য নিয়ে প্রথম বারের মতো শাড়ি পড়েছে। লাল শাড়ি পড়ে তৃণা কে অপ্সরীর মতো সুন্দর লাগছে। চোখে গাড় কাজল দিয়েছে, হাত ভর্তি লাল চুড়ি, ম্যাচিং গহনা পড়েছে আজ। চুল গুলি খোপা করে বেঁধেছে আর তৃণা। সাইফ একভাবে তাকিয়ে আছে তৃণার দিকে।

__ এইভাবে তাকালে তো নজর লেগে যাবে, তাহলে তো আমি কালো হয়ে যাবো, তখন কিন্তু আর তাকাবেন না আমার দিকে। ( তৃণা)

__ সসসরি ( সাইফ)

__ কেনো, ওওওও বুঝেছি যে ডক্টর সবার চিকিৎসা করে আজ বুঝি তার চিকিৎসা আমাকেই করা লাগবে। ( তৃণা)

__ সাইফ তৃণাকে চমকিয়ে দিয়ে সবার সামনে প্রপোজ করে আর একটা ডায়মন্ডের রিং তৃণার হাতে পড়িয়ে দেয় সাইফ। তৃণা এতো খুশি হয় যে আনন্দে চোখে পানি চলে আসে।

__ সাইফ তৃণার চোখের কাজল নিয়ে গলায় মাখিয়ে বলে আর কারোও নজর লাগবেনা। এখন থেকে শুধু তুমি আমার তৃণা।

__ তৃণা সাইফের বুকে শান্তি খুঁজে নেয়।

,
,
,
মাসুদ বাবা হতে চলেছে সেইই খুশির খবরে আনন্দে আছে। এরই মাঝে তুষার কে হুইলচেয়ারে করে বাসায় আনে। তুষার এখন অনেকটাই সুস্থ আগের চেয়ে। এরই মাঝে তৃণা ফিরে এসে সবাইকে খুশির সংবাদ টা জানায়। তুষার ব্রেইন ড্যামেজ হলেও মেয়েকে চিনতে পেরেছে সে তাই মেয়ের খুশির খবরে তুষার ও খুশি হয়। নিরাকে ফোন দিয়ে তৃণা সব টা জানায়, নিরাও বেশ খুশি হয় গুড নিউজ টা শুনে।

,
,
,
__ জানো আজ কি হয়েছে? ( নিরা)

__ বলো ( আবির)

__ তৃণাকে সাইফ আংটি পরিয়েছে আজ। ( নিরা)

__ কিহহহহহ ( আবির)

__ এমন করছো যেনো এটা হতেই পারেনা। ( নিরা)

__ হতে পারেনা, এটা সাইফের চাল, তোমার বোনকে শাস্তি দিতে চায় তারা। ( আবির)

__ কিসের শাস্তি ( নিরা)

__ অপমান এর, আমি সিউর সাইফের মনে প্রতিশোধ এর আগুন জ্বলছে, আর না হয় ওর বোন করাচ্ছে এইসব। এই পরিবার টাকে ওরা ধ্বংস করে দিতে চায়। ( আবির)

__ কিসের প্রতিশোধ এর কথা বলছো আবির ( নিরা)

__ আচ্ছা কাল বলবো। ( আবির)

__ এখন কি সমস্যা ( নিরা)

__ এখন একটা প্রব্লেম আছে

__ কি?

__ তোমার পিছনে একটা আরশোলা ( আবির)

_ আআআআ আ বলে দৌড়ে আসে আবিরের সাথে ধাক্কা লেগে দুইজনে বিছানায় পড়ে যায়। আবিরের উপরে নিরা কিছুক্ষণ ধ্যানের মতো পড়ে থাকে।

__ কি দেখছো ? ( আবির)

__ কিছুনা ( বলে উঠতে গিয়ে আবির আবারো টান দেয় নিরাকে)

নিরার কপালে, গালে অনেকগুলি কিস করে, এতে নিরাও পাগলের মতো হয়ে যায়। আবির এর থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও পরে আর করে না। আবিরের আদর উপভোগ করতে থাকে। ক্লান্ত শরীরে নিরা কখন ঘুমিয়েছে জানেনা, সকালে উঠে দেখে আবিরের সাথে জড়িয়ে শুয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর মনে পড়ে আবিরের সাথে কাটানো মুহুর্তের কথা। আবিরের কাছ থেকে উঠতে গিয়ে আবির ধরে ফেলে।

__ এখনি চলে যাবে ( ঘুমের ঘোরে আবির বলে)

__ না যাবোনা, কাজ আছেনা, নিশান কাঁদছে। ( আবিরের ছেলে নিশান, নিরার সাথে মিলিয়ে নাম রেখেছে)

__ এই একটা ই দোহাই, ও তো সব সময় কাঁদে আর আমার কান্না টা কি দেখতে পাও না। শুধু বাবুর কান্না দেখলে, আর বাবুর বাবার কান্না আর দেখলে না। ( আবির)

__ ওলেএএ ঢং ( নিরা)

নিরা শাওয়ার শেষ করে এসেও দেখছে আবির ঘুমাচ্ছে তখন ইচ্ছে করে ভেজা চুলের পানি আবিরের মুখে ছিটাই নিরা। আবির ঘুমের চোখে নিরার দুষ্টুমি দেখে নিরার হাত ধরে টান দিয়ে নিরা কে আবিরের বুকের উপর ফেলে।

__ এবার কি হবে ( আবির)

__ কি আবার হবে। ( নিরা)

__ একটু কাছে আসো।

__ আসবো ই তো বলে আবিরের গলাতে চিমটি কেটে পালিয়ে যায় নিরা।
,
,
,
সাইফ বাসায় গিয়ে বাবা মা আর আদরের বোন কে জানায় মেয়ে পছন্দ হয়েছে, সে এবার বিয়ে করতে চায়।

__ বাব্বাহ, এতো দিনে গড মুখ তুলে চাইছে আমার ভাই টা দিকে, নইলে তো কোন মেয়েই পছন্দ হতো না। আজ আবার মেয়ে জুটলো কোথা থেকে। ( সাইফের বোন)

__ তুই সব সময় আমাকে হেয় করে কথা বলিস। আচ্ছা বাদ দে, তুই দেখলে তুই ও প্রশংসা করবি এতো সুন্দর মেয়েটা। ( সাইফ)

__ তাই বুঝি, নাম কি বল।

__ তৃণা চৌধুরী, বাবা তুষার চৌধুরী, দেশের সব চেয়ে বড় কম্পানি গ্রুপ TTN গ্রুপের মালিকের মেয়ে। TTN মানে তৃণা, তুষার আর এন এ কিযে।

__ থাক ওতো বলা লাগবে না। তা মেয়েকে কবে দেখাবি সেটা বল ( সাইফের বোন)

__ তুই চাইলে এখনি দেখাতে পারি ফোনে। ( সাইফ)

সাইফ বোন কে একটা ছবি দেখালো, ছবিটা দেখে সাইফের বোন সাইফ কে এক চড় দেয়।

__ তুই বিবাহিতা মেয়েকে বিয়ে করবি তাইনা ( সাইফের বোন)

__ আরে তুই ভুল বুঝছিস, এটা তৃণার, মিসেস নিরার জমজ বোন। ( সাইফ)

__ সাথে সাথে আরক্টা চড় মেরে দেয় সাইফের বোন। তুই এই মেয়েকে ভালোবাসিস সত্যিই। ( সাইফের বোন)

__ হ্যাঁ, মেয়েটা অনেক ভালো কিন্তু তুই আমাকে মারছিস কিসের জন্য ( সাইফ)

সাইফের মম ড্যাড কে সাইফের বোন সাফ জানিয়ে দেয় যদি এই মেয়েকে সাইফ ঘরে তোলে তাহলে সে সুইসাইড করবে। এতে সাইফ ওর বোন কে বলে আচ্ছা ঠিক আছে এ বিয়ে ক্যান্সেল। আমি তোকে হারাতে পারবোনা, কিন্তু বল এই মেয়ের কি সমস্যা।
,
,
,
তৃণা সকাল সকাল বোনের বাড়ি এসে বোন কে জড়িয়ে খুশির ডান্স দিতে থাকে। আবির এসে দাঁড়াতেই তৃণা চুপসে যায়।

__ কি ব্যাপার শালিকা, এতো খুশি কিসের। ( আবির)

__ তৃণা আংটি দেখিয়ে বলে সাইফ পড়িয়ে দিয়েছে। এটা দেখে আবির একটু থেমে যায়। হয়তো সাইফ সত্যিই ভালোবাসে তৃণাকে তাই আর কথা না বাড়িয়ে বউ আর শালিকা কে নিয়ে নাস্তা করে। আবিরের ক্লাস থাকায় তাড়াতাড়ি বের হয়ে যায়।
,
,
,
আজ আবির আর নিরার বিবাহ বার্ষিকী। নিরা সেটা বেমালুম ভুলে গেছে আর আবির বিয়ের করুন স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে চায় না তাও নিরার জন্য অনেক সুন্দর ব্যবস্থা করে। পুরো ছাদ এ ডেকোরেশন করে নিরাকে লুকিয়ে। নিরাকে ক্লাসে পাঠিয়ে লোক দিয়ে পুরো ছাদে বেলুন আর কার্ড দিয়ে ভর্তি করে। আর উপর থেকে ফুলের ব্যবস্থা করেছে নিরাকে সারপ্রাইজ দিবে তাই। এছাড়া গোটা ছাদে প্রচুর গোলাপ আর রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে ভরে ফেলে।

নিরা বাড়ি ফিরে এসে ফুলের সুবাস পায় কিন্তু এই সুবাস কোথা থেকে আসছে সেটা বুঝতে পারছে না। নিরাকে আবির একটা চিঠি লিখে বেড এ রেখেছে ফ্রেশ হয়ে আসো। নিরা চিঠির মানে না বুঝে ফ্রেশ হয়ে আসলো। নিরা ফ্রেশ হবার সময় নিরার বাবা মা বোন ভাই ভাবি সবাইকে ছাদে পাঠিয়ে দেয় আবির। আবির নিজেও নিরার সাথে আর দেখা করেনি। নিরা আবারো একটা চিঠি পেলো। নীল রঙ এর শাড়ি টা পড়বে আর সুন্দর করে সাজবে। নিরা এবার বেশ অবাক হলো তাও সুন্দর করে সাজলো আবিরের জন্য।

__ রেডি ( আবির)

__ হু, রেডি কিন্তু কেনো ( নিরা)

__ এসো বাইরে ( আবির)

আবির নিরার চোখ ধরে নিরাকে ছাদে নিয়ে গেলো। পুরো ছাদ আঁধার, নিরাকে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে চোখ ছেড়ে দেয়। নিরা চারিদিকে আঁধার কিন্তু অনেক সুবাস পায়। আবির কে জিজ্ঞেস করে কোথায় এনেছে তাকে।

__ আবির মুখে একটু শিস বাজাতেই চারিদিকে আলোকিত হয়ে যায় লাইটিং এ। আর একটা একটা করে মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয় নিরার পরিবার এর লোকজন। আবির সবার সামনে এক গুচ্ছ গোলাপ হাতে উইস করে…

Life is a journey, and nothing makes that adventure more thrilling than sharing it with the person you love most in life. Make your anniversary a memorable one.

__ নিরা আবিরের হাত থেকে ফুল গুলি নিয়ে আবির কে জড়িয়ে ধরে। এরপর আবির আর নিরা কেক কাটে আর সবাইকে খাইয়ে দেয়। সবাই চলে গেলে নিরা আর আবির একা আছে। আবির নিরাকে কোলে তুলে নিয়ে নিচে আসে।

নিরা কে বিছানায় শুইয়ে দেয়, নিরা দেখে পুরো বেড ফুল দিয়ে সাজানো।

__ এতো সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য আমি সত্যিই অনেক হ্যাপি হয়েছি। ( নিরা)

__ আমার ভালোবাসার জন্য আমি সব কিছুই করতে পারি ( আবির)

__ আই লাভ ইউ আবির।

__ লাভ ইউ টু। সেদিন এর ফুলশয্যা টা তাহলে আজ ই হয়ে যাক। ( আবির)

__ সব সময় ইয়ার্কি ( নিরা)

__ ইয়ার্কি করছি বুঝি, আবির নিরার কাছে যেতে থাকে। নিরাও আবিরের মাঝে সব সুখ খুঁজে নেয়।

,
,
,
সাইফের বোনের সাথে কিছু ডিল হয় তাই সাইফ এখনো তৃণাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে তৃণার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে।

সাইফ জানে আগামীকাল তৃণার বার্থডে। দুই বোনের বার্থডে এক সাথে পালিত হবে সেদিন ই সাইফ সবাইকে সারপ্রাইজ দিবে বলে প্লান করে। সাইফের বোনের জন্য সাইফের মনে ও ঘৃণা জন্মে গেছে তৃণার প্রতি। তাও সাইফ তৃণার সাথে অভিনয় করে চলেছে।

চলবে……

প্রতিশোধ পার্ট_14

0

প্রতিশোধ
পার্ট_14
জামিয়া_পারভীন

ডাক্তার সাইফ আহমেদ এর সামনে বসে আছে নিরা আর তৃণা। সাইফ প্রথমে দুই বোন কে দেখে নেয় কিছুক্ষণ । তৃণাকে বেশি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে সাইফ, তৃণা হালকা গোলাপি রঙের টপস পড়েছে আর চুলগুলো পিছনে বাধা, ঠোঁট এ তেমন কিছু দেয়নি সে এমনিতেই সুন্দরী, ড্রেসের জন্য তাকে বেশি সুন্দরী লাগছে। তারপর তৃণাকে জিজ্ঞেস করে

__ এখন কেমন আছেন?

__ জ্বী কিছুটা ভালো ( কণ্ঠে হালকা ভয় মিশানো)

__ আপনি আমাকে এতো ভয় পাবেন না।

__ না না! ভয় না, কথা বললেই এমন হয়ে যাচ্ছে। ( তৃণা)

__ মানুষের জীবনে কখনো কখনো অনেক কিছু ঘটে, আর সেটাকে মেনে নেয়াটাই সবচেয়ে উত্তম। আপনাকে আজ আমি একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। দেখবেন ভালো লাগবে, কি আপনি যাবেন তো ? ( সাইফ)

__ তৃণা মাথা ঝুকিয়ে না বলতে চায় তখন নিরা তৃণার হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে ডাক্তার কে বলে ওর একমাত্র বোনের ভালোর জন্য যেটা দরকার সেটাই যেন করেন। তৃণাও নিরার কথার সাথে একমত হয়ে গেলো। নিরাকে চেম্বার এ বসিয়ে রেখে তৃণাকে নিয়ে হাস্পাতালের ভিতরে গেলো।

তৃণাকে সাইফ সবার সাথে কথা বলতে বলে। তাদের মাঝে একেকজনএর একেক কষ্ট। তৃণা সবার সাথেই কথা বলা শুরু করে। প্রথমে এক বয়স্ক মহিলা এর সাথে কথা হয়, মহিলা বলে তার বাবা মা কেউ ছিলো না কিন্তু ভাগ্যক্রমে বড়লোক ছেলের সাথে বিয়ে হয়, সেখানে তার তিন টা ছেলে আছে। কিন্তু ছেলেরা তাকে অবহেলা করতে করতে পরে আর খোঁজ নেয়নি। তৃণা নিজের কষ্ট বলে ওই মহিলাকে, নিজের দুঃখ শেয়ার করে নিজেকে একটু হালকা লাগছে। পরে আরেকজনের কাছে যায়, মহিলার দুই পা নাই তাও সে হুইলচেয়ারে বসেই ফুটবল খেলছে। ছবি আঁকাতে পারে, সবার সাথে বেশ হাসিখুশি আছে। তৃণা উনার সাথে কথা বলে বেশ আনন্দিত হয়। মনে মনে ভাবে বাবা নাই তো কি হয়েছে আরোও তো আছে, মা আছে বোন আছে তাদের জন্য তো নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। বাবা বাবা করে মা বোন কে কতোইনা কষ্ট দিচ্ছে সে।

বেশ অনেকের কষ্ট দেখে নিজের কষ্ট খুব কম লাগছে তৃণার তখনি সাইফ এসে বললো
__ এখন কেমন লাগছে।

__ জ্বী, বাবার জন্য মা বোন কে এতো কষ্ট দেয়া উচিৎ হয়নি। ( তৃণা)

__ আপনি মেডিকেল স্টুডেন্ট, ভালো ছাত্রী, আপনার জন্য ভালো ক্যারিয়ার অপেক্ষা করছে। আপনার কি বিপদে ভেঙে পড়া সাজে। আপনি অন্যকে বুঝাবেন, কখনো নিজে ভেঙে পড়বেন না। ( সাইফ)

__ আমি এখন অনেকটাই বুঝতে পারছি, ক্লাস শুরু হবার পর তো আর মনোযোগ ই দেইনি। কিন্তু পড়াশোনা তো করতেই হবে। ( তৃণা)

সাইফ এতো বছর পড়াশোনা করেছে, বিদেশেও গেছে, তার কতো বড় বড় ডিগ্রি । কিন্তু কখনো কোন মেয়েকে তার ভালো লাগেনি অথচ এই মেয়েটাকে খুব ভালো লাগছে সাইফের। কথায় কথায় মেয়েটাকে সাইফ নিজের কার্ড দিয়ে দেয়। বলে যখনি ডিপ্রেশন এ থাকবেন ফোন করবেন। সাইফ প্রফেশনাল কার্ড না দিয়ে পারসোনাল কার্ড দিলো। সাধারণত সবাইকে এই নাম্বার দেয় না।

দুইজনে চেম্বারে ফিরে আসে, নিরা বোন কে হ্যাপি দেখে খুব আনন্দিত হয়। ডাক্তার এর কাছ থেকে বিদাই নিয়ে দুইজনে বাসায় ফিরে, তৃণাকে নামিয়ে দিয়ে মায়ের সাথে কিছু কথা বলে নিরা আবিরের বাসায় ফিরে যায়।

এতো পরিশ্রম করে নিরা খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে, বাসায় ফিরেই নিরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। রোমানা খালা এসে নিরার সেবা করে ঠিক করে। আবির সারাদিন পর বাসায় এসে নিরাকে বেডে দেখে চমকিয়ে যায়।

__ কি হয়েছে, খুব ক্লান্ত তাই না ( আবির)

__ আসলে, ,,, ( নিরা)

__ হ্যাঁ এই কয়দিন যা যাচ্ছে তোমার উপর দিয়ে। এভাবে চলতে থাকলে তুমি আরোও অসুস্থ হয়ে পড়বে। আমি যতক্ষণ থাকি তোমার কোন ক্ষতি হতে দিবোনা।

বিকালে বান্ধবী মিশির চেম্বারে গিয়ে দেখিয়ে আনে। নিরা খুব অবাক হয়, আবির এর কাছে কিছু চাওয়ার আগেই সব কিছুই পেয়ে যাচ্ছে। আর তৃণাও প্রায়ই সময় সাইফের সাথে কথা বলছে। তৃণার খুব ভালো লাগে সাইফ কে। ওর সাথে কথা বললে সব হতাশা দূর হয়ে যায় তৃণার।

তুষারের মাথায় আঘাত লাগার জন্য ব্রেইন অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছিলো তাও সবাই আশা নিয়ে ই চিকিৎসা চালিয়ে যায়। আরোও ৮ মাস পার হয়ে যায় আবিরের ভালোবাসায় নিরার জীবন খুব সুখের ছিলো আর তৃণাও সাইফের সাথে কথা বলেই বেশ হ্যাপি কেউ কাউকে ভালোবাসার কথা বলেনি কিন্তু ভালোবেসে ফেলেছে সেটা দুজনের মনের মাঝেই রাখে। তৃণা মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ এখন আর মাসুদ সব দেখাশোনা করছে। হেনা মাসুদের বিয়ে দিয়ে দেয় এক মেয়ের সাথে । মাসুদ আর ওর বউ মিতুর বেশ সুখের সংসার।

নিরার ডেলিভারির ডেট হয়ে যায়, আবির তাড়াতাড়ি করে মিশির হাসপাতালে ভর্তি করে নিরাকে। সেখানে নিরার কোলজুড়ে আসে পিচ্চি এক্টা ছেলে বাবু। নিরার জ্ঞান ফিরে সন্তানের মুখ দেখে বেশ হ্যাপি হয়। চোখ দিয়ে পানিও ঝড়ে। আনন্দের পানি কি যন্ত্রণার সে টা বুঝেনা নিরা।

নিরা বাসায় ফিরে, বোনের ছেলে কে দেখতে তৃণাও আসে। বাড়িতে আবিরের মা, বাবা, তৃণা, হেনা, মাসুদ, মিতু সবাই এসেছে ছোট্ট বাবুকে দেখতে। সবার মাঝেই আনন্দ, রুম টা একটু খালি হতেই হেনা নিরাকে বলে…

__ তৃণার যে কি হয়েছে? সব সময় ফোনে কথা বলছে।

__ হু মা, প্রেম করছে মনে হয়। ( নিরা)

__ কার সাথে?

__ সাইফ ( নিরা)

__ তোকে বলেছে তৃণা ( হেনা)

__ এগুলো বলা লাগবে কেনো? আমি কয়েকদিনের মাঝেই আবিরের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলবো। ( নিরা)

__ ওকে, তাই বলিস। ( হেনা)

আবির এর বাবা মা নাতিকে পেয়ে যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে আছে। সব সময় নাতির কেয়ার নেয়ার খবর নেয়, এতো দিন আবির কে যতটা সময় দেয়নি ব্যস্ততা র জন্য নাতিকে আর আবিরকে সে সময় টুকু দেয়ার চেষ্টা করছে।

রাত্রে
__ শোনো একটা কথা ছিলো ( নিরা)

__ বলে ফেলো, তোমার সব কথা শুনার জন্য বান্দা হাজির। ( আবির)

__ এভাবে বলছো কেনো? ( নিরা)

__ ভালোবেসে বলছি ( আবির)

বলেই নিরার কপালে আবির কিস করে। আবিরের বেশ ইচ্ছে করে নিরার সাথে খুনশুটি করতে কিন্তু নিরা এসব পছন্দ করেনা। এবার ও নিরা আবিরকে সরিয়ে দেয়।

__ তোমার প্রব্লেম টা কি, শুধু আমার সাথে ফাজলামি না করলে বুঝি তোমার চলেই না। ( নিরা)

__ এতো রাগ করছো কেনো? ওকে সরি আর হবেনা। কাজের কথা বলো? ( আবির)

__ কিছু না, যাও সামনে থেকে ( নিরা)

আবির কে নিরা কখনো মন থেকে মেনে নেয়নি তাই সহজে আপন করে নিতে পারেনা। প্রায়ই সময় অপমান করেছে আবিরকে শুধুমাত্র এক্টাই কারণ। আবির নিরার কথা তে অপমান বোধ করে তাও প্রকাশ করেনা কখনো। নিজের অপরাধ বোধে নিরা তাকে হেলা করে সেটা সে জানে। তাই ঘুরেঘুরে নিরার কাছে ই যায়। নিরা বাইরে সবার সাথে হ্যাপি কাপলের অভিনয় করলেও আবির যখন একা থাকে ভালো বিহেভ কখনো ই করেনা।

অনেকদিন পর তুষার চোখ খুলে দেখে, অনেক আঘাত সহ্য করে কেউ সাধারণত বাঁচতে পারেনা কিন্তু তুষার এর জ্ঞান ফিরেছে। এই খবরে সবাই হাস্পাতালে যায়।

_ আস্তে আস্তে মিঃ তুষার রিকভারি করছে ( ডাক্তার বলেন)

এই কথাতে সবাই খুব আনন্দিত হয়।

__ কিন্তু উনি সবাইকে হয়তো চিনতে পারবেন না ( ডাক্তার)

আনন্দের হাসি টা দমে গেলো। এতো দিনের আশা আর পুরণ হলোনা।

,
,
তৃণাকে সাইফ ফোন দেয়

__ এখন কি করছো ম্যাডাম, সকাল থেকে খোঁজ নাই কেনো। ( সাইফ)

__ কি ভাবে খোঁজ নিতাম, ( তৃণা)

__ বাহহ! ভুলেই গেছো ( সাইফ)

__ তা নয়, বাবার জ্ঞান ফিরেছিলো কিন্তু ডাক্তার সাহেব বলেছে কাউকে চিনতে পারবেনা। ?( তৃণা)

__ সে যে তোমাদের মাঝে আছে এটার জন্যই শুকরিয়া করা উচিৎ তাই না ( সাইফ)

__ জ্বী, আমি শুধুশুধু ওভার রিয়েক্ট করি। ( তৃণা)

__ তা ম্যাডাম সামনে তো এক্সাম পড়াশোনা তো করোনি নিশ্চয়ই। ( সাইফ)

__ এতোসব ঝামেলা তে ক্লাস ঠিকমতো করতে পারিনি। তাইই ( তৃণা)

__ আজ থেকে কথা কম শুধু পড়াশোনা হবে। ( সাইফ)

সাইফ তৃণা কে পড়াতে থাকে, এতে তৃণার জন্য বেশ ভালো হয়। সাইফ অনেক ভালো বুঝাতে পারে।

,
,
নিরা আবিরকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইলেও আবির সব সময় নিরার পাশে থাকার চেষ্টা করে। তাই নিরার পরীক্ষার জন্য আবির নিজ থেকে অনেক হেল্প করে। এতে নিরার ভালো লাগ্লেও মনের মাঝে পুষে রাখা রাগ থেকে আবির কে দূরে রাখে।

এতো কিছু না ভেবে নিরা আবির কে বলে দেয়

__ এবার সাইফের সাথে কথা বলা উচিৎ ( নিরা)

__ কোন সাইফ ( আবির)

__ কেনো ভুলে গেলে? তৃণার ডাক্তার ( নিরা)

__ কি ব্যাপারে কথা বলবো বলো? ( আবির)

__ তৃণার সাথে সাইফের বিয়ের ব্যাপারে। ( নিরা)

__ তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? ( আবির)

__ এখানে পাগল হবার কি হয়েছে শুনি। ( নিরা)

__ এ বিয়ে কিছুতেই সম্ভব নয়। কারণ……….. ( আবির)

চলবে…….

প্রতিশোধ পার্ট_13

0

প্রতিশোধ
পার্ট_13
জামিয়া_পারভীন

তুষার এর গাড়ির ব্রেক টা নষ্ট করে দেয় মাসুদ। তুষার গাড়িতে উঠার পরই ব্রেকের জন্য দুর্ঘটনা ঘটে। মাথায় প্রচুর আঘাত পায় তুষার, এছাড়া হাত এর দুইটা হাড় ফ্রাকচার, দুই পা ই ফ্রাকচার সাথে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি হয়েছে। এতো মারাত্মক ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তুষার মৃত্যুর সাথে লড়ছে।

নিরা বাবা থেকে দূরে থেকেছে বলে কষ্ট পেলেও তৃণার কষ্ট টাই ছিলো বেশি। বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে আর পাগলের মতো প্রলাপ বলছে। তৃণার হাহাকার মা বোন মিলে কেউই থামাতে পারছেনা। এদিকে মাসুদ এসে লুকিয়ে লুকিয়ে সবার আহাজারি দেখছে কিন্তু সামনে আসছেনা। আসলে কি বলবে এসে, এক্সিডেন্ট টা তো হয়েছেই তার জন্য। যে বাবা তাকে আর তার মা কে অত্যাচার ছাড়া কখনো ভালোবাসেনি তার জন্য প্রতিশোধ নিতে গিয়ে যে মানুষ তাদের ভরণপোষণ চালিয়েছে তাকেই খুন করার চেষ্টা। এটা মহা অন্যায় হয়ে গেছে, নিজের মাঝে প্রচুর অনুশোচনা জন্মেছে।

নিরা মাসুদ কে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসে ,
__ ভাই তুমি এসেছো, বাবা খুব অসুস্থ। আর রাগ করে থাকিও না প্লিজ।

__ (মাসুদ এর চোখ দিয়ে আজ পানি ঝরছে। যে বোনকে কখনো আদর দেয়নি তাকে জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদছে আর।) কান্না মুছে বলে, ” মাফ করে দিস। ”

__ কেনো কি করেছো তুমি? কেনো মাফ চাইছো? ( নিরা)

__ খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি রে। বাবার মতো ওই লোকটাকে আমি মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম। ( মাসুদ)

__ কি বলছো তুমি? আমি এগুলো বিশ্বাস করতে পারছিনা। বাবাকে তুমি? নাহ এটা হতে পারেনা। ( নিরা)

__ আমাকে পুলিশে দে তুই, আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। ( মাসুদ)

__ এই কথা আর কাউকে বলিও না, আমার ভাই এর ক্ষতি আমি কিভাবে চাই বলো। মা তোমাকে অনেক ভালোবাসে। এখন তোমার উচিৎ মা আর তোমার আরেক বোনের দিকে খেয়াল রাখা। তৃণা খুব ভেঙে পড়েছে। ( নিরা)

,
মাসুদ এগিয়ে যায়, সবার কাছে নিজের কষ্ট প্রকাশ করে। হেনা ও ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে খুব। আবির নিরার কাছে এসেছে, নিরা আবির কে দেখে, আবিরের কোলে গিয়ে কান্না শুরু করে।

__ এতো টেনশন করো না নিরা, দেখিও বাবা ঠিক হয়ে যাবে। ( আবির)

__ এতোদিন পর বাবাকে দেখলাম আর বাবা কিনা ( কথা বলতে পারেনা কান্নাতে) ( নিরা)

__ সব ঠিক হয়ে যাবে, চুপ করো, একটু ধৈর্য ধরো প্লিজ। ( আবির)

__ বোনের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা, বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে। আর এখন জ্ঞান গেছে ফিরছেনা, পাসের কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে। ( নিরা)

__ আমি সবাইকে বলে দিয়েছি, স্পেশাল কেয়ার নিবে সবাই। দেখিও সবাই সুস্থ হবে, এখন ভেঙে না পড়ে দোয়া করো। এটাই সবার জন্যই মঙ্গল জনক হবে। ( আবির)

এইভাবে ১০ দিন পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু অবস্থার উন্নতি কারোর ই হয়নি। তুষার আই সি ইউ তে অজ্ঞান হয়ে আছে, সব রকম চিকিৎসা তার চলছে। আর তৃণার জ্ঞান ফিরলেও কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে, শুধু সবার দিকে তাকিয়ে থাকছে, মাঝেমাঝে একা একাই কথা বলছে। আর হেনার কথা অনুযায়ী মাসুদ ই তুষার এর সব ব্যবসা দেখছে।

__ তৃণাকে নিয়ে কি করবে এখন ( নিরা)

__ ওকে একবার সাইকোলজিস্ট এর কাছে নিয়ে গেলে ওর জন্যই ভালো হতো। ( আবির)

__ কি বলছো? বোন কি পাগল নাকি। ( নিরা)

__ পাগল হয়নি, মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে। আর এর চিকিৎসা এখনি না করালে ওর আরোও ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ( আবির)

__ কার কাছে নিয়ে যাবে? ( নিরা)

__ সব চেয়ে বড় সাইকোলজিস্ট তো সাইফ আহমেদ। কিন্তু…. ( আবির)

__ কেনো উনার কাছে নিলে নিবে কিন্তু কেনো বলছো। ( নিরা)

__ নাহ কিছুনা, পরে একসময় বলবো। তৃণার জন্য উনার কাছে কাল ই এপোয়েন্টমেন্ট দিয়ে রাখি তাহলে। ( আবির)

মাসুদ কে এখন অনেক কাজ সামলাতে হচ্ছে। এতো বড় বিজনেস অন্য কারো হাতে দিলে শুধু লস ই খাবে। তাই নিজেই সব চালাবে ভাবে, বোনদের অংস তার অংশ সব কিছুই এখন তাকেই ম্যানেজ করতে হচ্ছে। আর হেনা একবার তুষার এর কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদে আবার তৃণার সামনে গিয়েও কাঁদে ?।

,
,
আবির নিরা এসেছে সাইকোলজিস্ট সাইফ আহমেদ এর কাছে। তৃণা অনেক ডিপ্রেশন আছে সেটা ডাঃ সাহেব বললেন।ভিতরে রোগীর সাথে একজন যাবে তাই আবির বাইরে বসে থাকে আর নিরা ভিতরে যায়। তৃণার হয়ে নিরাই সব কথা বলে ডাঃ কে। ডাক্তার সাহেব দুই বোনের দিকেই তাকিয়ে আছে, দুইজনে ই হুবহু দেখতে আর অসম্ভব সুন্দরী দুইজন।

ডাক্তার ১৫ দিনের ঔষধ দিয়েছে তৃণাকে। আর ১৫ দিন পর তৃণাকে আবার দেখতে চায়। আবির, নিরা,আর তৃণাকে নিয়ে তৃণাদের বাসায় যায়। ( আসলে তৃণাকে জানতে দিবেনা তাই তুষার বলেছিলো এটা ভাড়া বাসা, কিন্তু এটা তুষার এর ই বাসা। )

মাসুদ ও বিজনেস সামলানোর জন্য এই বাড়িতেই থাকছে। আর মাহমুদ কে দেখার জন্য তো নার্স থাকেই সেটা নিয়ে মাসুদের কোন মাথা ব্যথা আর নাই।

তুষারের অবস্থা ভালো হয়নি এখনো, লাইফ সাপোর্ট এ বেঁচে আছে ২৫ দিন হয়ে গেলো। তৃণা ঔষধ খেয়ে একটু কথা বলছে সবার সাথে কিন্তু কিছুক্ষণ পর পর ড্যাডি তুমি কোথায় বলে কান্না করে আবার চুপ হয়ে যায়। এখন একটু হলেও মা বোন কে চিনতে পারছে তৃণা। কিছুদিন তো নিরাকে ওর আয়না ভাবতো। নিরা সামনে গেলেই ভাবতো ওর আয়না এসেছে। তাই নিরা কে বলতো ” আয়না তুমি হাটতে পারো?” অনেকটা ছোট বাচ্চার মতো হয়ে গেছে তৃণা এখন।

নিরাও তৃণাকে নিয়ে খুব চিন্তিত, এতো দিন পর বাবা আর বোন কে পেয়ে বাবা হাসপাতালে আর বোন কিনা পাগল হয়ে যাচ্ছে।

এতো সব টেনশনে নিরা আবিরকে এতোটুকু সময় ও দিতে পারেনা। আজ আবিরের অনেক গুলি ক্লাস নিতে হবে তাই আবির নিরাকে সঙ্গ দিতে পারেনি। নিরা একাই তৃণাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়।
,
,
(#কাল ও ভাইবা আছে ???, আজ ভাইবা দিয়ে এসে ঘুমিয়ে গেছিলাম, আবার উঠে গল্প লিখে পোষ্ট দিলাম আপনাদের জন্য)

চলবে…..

প্রতিশোধ পার্ট_12

0

প্রতিশোধ
পার্ট_12
জামিয়া_পারভীন

মায়ের জীবনের গল্প শুনে দুই মেয়ের চোখে জল ছিলো। নিরা মায়ের কাছ থেকে উঠে গিয়ে বাবা বলে জড়িয়ে ধরে তুষার কে।

__ আমাকে ক্ষমা করে দিও, এতো দিন নিজের আরেক মেয়েকে আদর দিই নি তাই। ( তুষার নিরাকে বলে)

__ ড্যাডি, আমি যে আমার বাবা কে ফিরে পেয়েছি এটাই অনেক। ( নিরা)

__ আর আমার বাবা না বুঝি? ( তৃণা)

__ “তৃণা আমায় যখন তোমার কথা বলেছিলো তখনই বুঝেছিলাম তুমি জমজ বিধায় একই রকম হয়েছো। কিন্তু যখন তৃণা তোমার বর কে চায় তখন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম যে দুইটা মেয়ের সব পছন্দ একই কেনো হলো। এরপর আর দেরি না করেই চলে আসি তৃণার কাছে। আবির সম্পর্কে সব খোঁজ নিই, আগে আবিরের মম ড্যাডের সাথে দেখা করে তাদের সব খুলে বলি। এরপর তৃণাকে খুশি করতে আবির এর কাছে তৃণাকে জেতে দিলেও সব ঘটনা আবির কে খুলে বলি বিয়ের অনুষ্ঠান এর দিন রাত্রেই । তাই আবির খুব একটা টেনশন করেনি তোমাকে নিয়ে। ” নিরাকে এই কথা গুলি বলেই তৃণাকে বলে ” আমাকে ক্ষমা করিও, আমি চাইনি তুমি তোমার বোনের স্বামী কে ভালোবাসো। যাই হোক নিজের ভুল বুঝতে পেরেছো এটাই অনেক। ”

__ সরি বাবা, মাফ করে দিও বোন। ( তৃণা দুইজনকেই বলে)

অনেক রাত হওয়াতে দুই বোন গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে এক বেডে ই। আরেকটা বেডে তুষার আর হেনা বসে গল্প করতে করতে সকাল হয়ে আসে সেই খেয়াল নেই তাদের। পুরানো ভালোবাসা যেন ফিরে এসেছে, সব ভুল বুঝাবুঝি দূর হয়ে গেছে যেন। হেনা কথা বলতে বলতে তুষার এর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। আর তুষার ও পুরনো ভালোবাসার মানুষ এর মাথায় হাত রেখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো।৷

দরজা লক করা ছিলো না তখন ই মাসুদ এসে মা কে অন্যলোক এর কাঁধে মাথা রাখতে দেখে রাগান্বিত হয়ে যায়।

__ বাহবাহ! আহহ! কি প্রেম, আমি আগে জানতাম না আমার মা চরিত্রহীনা। ( হেনার ছেলে মাসুদ)

হেনার ঘুম ভেঙে যায়, নিরা তৃণাও এক সাথেই জেগে উঠে । সবাই শুনতে পায় মাসুদ এর জঘন্য কথা টা। এটা শুনেই হেনার চোখে পানি চলে আসে।

__ তুমি না জেনে মা কে দোষ দিতে পারোনা ভাই। ( নিরা)

মাসুদ কখনো নিরাকে সহ্য করতে পারতো না। আর আজ তো আরোই সহ্য হচ্ছেনা ।
__ তুই চুপ থাক, নিজের মাকে একটা লোকের পাশে দেখে তোর খারাপ না লাগতে পারে আমার ঘৃণা হচ্ছে। ( মাসুদ)

__ ওই লোকটাই আমার বাবা। আর আমার মা ও কোন দোষ করেনি। ( নিরা)

__ আরেহ বাহ! একটা অচেনা লোক এখন তোর বাপ হয়ে গেলো । কি ক্যারেক্টার তোদের মা মেয়ের ( মাসুদ)

__ তোমার চরিত্র দেখি তোমার বাবার মতো ই হয়েছে। না বুঝেই অন্যকে দোষারোপ করছো? ( নিরা)

__ এই চুপ করো তোমরা, এটা হাসপাতাল, এখানে এমন করতে নেই।
বাবা মাসুদ তোমার সাথে জরুরী কিছু কথা আছে। বাইরে এসো সব বুঝিয়ে বলছি। ( তুষার)

__ এই লোক আপনি চুপ থাকেন,
এরপর নিজের মা কে বলে, আর আপনার মতো মহান মা কে যেন আমাদের বাড়িতে আর না দেখি। ( মাসুদ)
এটা বলেই মাসুদ বের হয়ে চলে যায় ওদের কেবিন থেকে।

হেনা এইসব শুনে প্রচুর কান্না করে, এরপর তৃণা মাকে কে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদে। তৃণা খুব জেদী ছিলো আর এইসব দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেনা। একটু অস্বাভাবিক আচরণ বেড়েই চলেছে তৃণার।

তৃণা বাবার সাথে জেদ ধরে মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে, হাসপাতালে আর থাকবেনা সে। তাই তুষার সব বিল মিটিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আবির কেও জানিয়ে দেয় তুষার, দুই বোন আজকের দিন একসাথে থাকতে চেয়েছে। তাই আবির আর নিরাকে নিতে যায় না, শুধু ফোন করে নিরা কে।

__ হ্যালো, মাই ডিয়ার ওয়াইফ। বাবা মা আর বোন কে পেয়ে মনে হয় আমায় ভুলেই গেলে।

__ কি যে বলেন না আপনি, আপনাকে ভুলি কেমন করে। তবে ( কথা গুলি মন খারাপ করে বলে নিরা)

__ কি ব্যাপার এতো মন খারাপ কিসের জন্য? ( আবির)

__ আপনি কেনো যানি সব কিছুই আগে আগে বুঝে ফেলেন। ( নিরা)

__ তোমার মতো তো আর পঁচা নই, ভালোবাসি তোমাকে, বুঝতে হবে। যাই হোক কি হয়েছে বলো? ( আবির)

__ নিরা ভাইয়ের কথা খুলে বলে আবির কে। এরই মাঝে তৃণা এসে ফোনের কাছে মুখ নিয়ে বলে, সরি দুলাভাই, আপনার থেকে আপনার বউকে ছিনিয়ে আনা উচিৎ হয়নি। খুব মিস করছেন বুঝি বউকে?
তিন জনই হেসে উঠে এই কথাতে।

এদিকে বাসায় সবাইকে নামিয়ে দিয়েই তুষার কি যেনো কাজে গেছে। তাই হেনা দুই মেয়ে আর সাইরার সাথে গল্প করছেন। আর এদিকে মাসুদ মনে মনে খুবিই রেগে আছে। বাবার পাসে গিয়ে বলে প্রতিজ্ঞা করে, মায়ের এমন প্রতারণার প্রতিশোধ সে নিবেই।

তুষার নিজের ভুলের জন্য কিছু কাজ করে কোর্ট এ গিয়ে। বাসায় এসে একটা চিঠি লিখে মাসুদের নামে। সেটা আবার পাঠানোর ব্যবস্থা করে এসে খাওয়া শেষ এ ঘুমিয়ে পড়ে।

এক দিন নিরা মা আর বোনের কাছে থাকার পর আবির এসে নিরা কে নিয়ে যায়। তৃণা আর ওর মা থাকে আর সাইরা আছে। তিনজন বসে গল্প করছিলো এইসময় একটা খারাপ নিউজ আসে বাসায়। এতে তৃণা আর হেনা দুইজনেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যায় দুইজন, ঐদিকে নিরা আর আবির কেও ফোন দিয়ে জানায় খারাপ সংবাদ টার কথা। নিরা এটা শুনে খুব কষ্ট পায় আর তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ছুটে যায় আবির কে সহ।

মাসুদের কাছে চিঠি আসে, ঠিকানা নাই তাও সে সেটা খুলে পড়তে শুরু করে। তুষার মাসুদ কে সব কিছু জানিয়ে দেয় সেই চিঠি তে। এমনকি তুষার এর জন্য মাহমুদ এর যতটা সম্পত্তি লস হয়েছে সেগুলোর সম পরিমাণ সম্পত্তি মাসুদের নামে লিখে দেয় তুষার।

মাসুদ সব কিছু পড়ে নিজের ভুল বুঝতে পারে। কিন্তু ততোক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে তার, ক্ষমা চাওয়ার ও আর সুযোগ নেই মাসুদের। কি করবে বুঝতে না পেরে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে মাসুদ।

( রহস্য টা কালকের জন্যই রেখে দিলাম, কাল আরেকটা ভাইবা পরীক্ষা আছে। কাল সন্ধ্যায় বড় করে লিখে গল্প পোষ্ট দিবো। আগামী পার্টে গল্পে নতুন কিছু আসছে, তাই ধৈর্য ধরে কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন সবাই।)

চলবে…….

প্রতিশোধ পার্ট_11

0

প্রতিশোধ
পার্ট_11
#জামিয়া_পারভীন

হেনার সাথে তুষারের কয়েকবার দেখাদেখি হলেও কেউ কথা বলছে না কারোর সাথে। হেনা তার ছেলে মাসুদ কে বলে ঘরে তার বাবা মাহমুদ একা আছে। তাই মাসুদকে পাঠিয়ে দেয়।

হেনা আবির কেও বাড়ি পাঠিয়ে দেয়, আবির আর কিছু মনে না করে বাসায় চলে আসে। দুই মেয়ে এক কেবিনেই আছে, দুই মেয়ের মাঝে বসে আছে হেনা। আর এক পাশে বসে আছে তুষার।

__ জানিনা, দুই মেয়েকে কি এমন বলেছো? তাই তারা দুইজনে ই জ্ঞান হারিয়েছে। ( হেনা)

__ পুরো টাই তোমার উপর দোষ চাপিয়েছি হেনা। চিন্তাও করিও না তৃণা কখনো তোমার মুখ দেখতে চাইবেনা। ( তুষার)

__ আর কতো শাস্তি দিবে তুমি আমাকে? ( হেনা)

__ কখনো মন ভরবে না ( তুষার)

__ তুমি তোমার দুই মেয়েকে নিয়ে চলে যাও, আর পারছিনা সহ্য করতে আমি ( হেনা)

__ এমন করে বলতে নেই, ওরা তো তোমার ও মেয়ে। ( তুষার)

__ হ্যাঁ, আমার মেয়ে, শুধু জন্ম দিলেই মা হওয়া যায়না। যখন ওরা জানতে পারবে তখন কেউ আমার মুখ দেখতে পারবেনা। কিন্তু আর সব সহ্য করতেও পারছিনা। এবার সব বলে দিয়ে সবার জীবন থেকে চলে যাবো। ( হেনা)

__ ভুলেও এই কাজ করিও না, নিজের সাথে সাথে আমার মুখ টাও কালি করে দিতে তুমি পারোনা। ( তুষার)

নিরার জ্ঞান ফিরে আসে ওই মুহুর্তে, আর মাকে জিজ্ঞেস করে…

__ কিসের সত্য কথা মা, কি গোপন রেখেছিলে এতো দিন, আর কিছু লুকিয়ে রেখোনা, সব বলে দাও, দয়া করে। ( নিরা)

ওইদিকে তৃণার ও জ্ঞান ফিরে আসে, হেনাকে মা বলে ডেকে উঠে। দুই মেয়েকে দুইপাশে নিয়ে বসে আছে হেনা।

__ আমি জানি আমার মা খারাপ না। ( নিরা)

__ আমার ড্যাডিও খারাপ না, বিশ্বাস করিনা ( তৃণা)

__ কি হয়েছিলো সব খুলে বলোনা মা। ( তৃণা ও নিরা একসাথে বলে উঠে)

হেনা নিজের সব কষ্ট ভুলে বলতে শুরু করে দুই মেয়েকে আর পাশে তুষার মাথা নিচু করে বসে থাকে।

হেনা : আমি ক্লাস নাইন থেকে তুষার এর প্রেমে পড়ি। প্রেম এতো টাই গভীর ছিলো যে কেউ কাউকে ছেড়ে থাকার কল্পনাও করতাম না।

তুষার : দুজনে সংসার করার স্বপ্ন দেখতাম , এক সাথে ঘর বাধার স্বপ্নে সব সময় বিভোর থাকতাম। এভাবেই স্কুল শেষ করে কলেজে উঠি। সেখানে ও একসাথে ভর্তি হই। সব ক্লাস একসাথে করতাম, প্রাইভেট ও একই সাথে পড়তাম । এক সাথে ঘুরতে যেতাম , কতো রঙিন স্বপ্ন ছিলো দুইজনের চোখে।

হেনা: হ্যাঁ! ভালোবাসা এতো ই গভীর ছিলো, কখনো চিন্তা ও করিনি একে অন্যকে ছাড়া থাকতে হবে।

তুষার : এভাবেই আমরা অনার্স এ ভর্তি হই। দুইজন একসাথেই বিশ্ববিদ্যালয় এ চান্স পাই। বেশ খুশিই ছিলাম দুইজনে, কিন্তু সুখ বেশিদিন টিকলো না আর। হটাৎ ই হেনা মিসিং হয়ে যায়। আমি অনেক চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করতে পারিনি।

হেনা : সেদিন বাসায় জানতে পারে আমি তুষারের সাথে রিলেশন করি। সেদিন বাবা খুব মেরেছিলো, এখনকার মতো তো আর তখন ফোন ছিলো না। ঘরে দরজা লাগিয়ে বন্দী করে রাখে। অনেক কেঁদেছিলাম সেদিন, কেউ আসেনি চোখের পানি মুছে দিতে।

তুষার : এসব কথা তো আগে বলোনি।

হেনা: বলবো কিভাবে, জানতেই পারতাম না কখন সকাল আর কখন রাত হতো। সব সময় বন্দী থেকে থেকে অতিষ্ট হয়ে গেছিলাম। হটাৎ একদিন মা এসে বলে গেলেন আমার বিয়ে। আমি না দেখেছি বর না দেখেছি ঘর। তুষার কে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনা ও করতে পারতাম না তখন। আমার অনিচ্ছায় বিয়ে হয়ে যায় মাহমুদের সাথে। বিশাল ব্যবসায়ী সে, বাড়ি, গাড়ি , টাকা, ধন দৌলত সবিই ছিলো। কিন্তু আমি কখনো সুখী ছিলাম না। আমি শুধু তুষার কেই ভালোবাসতাম। বিয়ের রাতেই মাহমুদ এসে বলে, সে সব জেনে শুনেই বিয়ে করেছে। সে আমাদের প্রেমের কথা বাবাকে বলে দেয়৷ আর সে প্রেমের কথা সমাজে রটিয়ে দিবে এই ভয় দেখিয়ে বিয়ে করে আমাকে। বিয়ের পর থেকে শুরু হয় মানসিক, শারিরীক নির্যাতন। নির্যাতন সহ্য করতে করতেই একটা বছর পার হয়ে যায়। এক বছর পর আমি জানতে পারি আমি অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু নির্যাতনের মাত্রা কমেনি, কারণ আমার জীবনে অন্য ছেলে ছিলো । মাহমুদ কখনো ই বিশ্বাস করতো না আমাকে। মার খেয়ে খেয়েই মাসুদের জন্ম হয়, তাও আমাকে শুনতে হয়েছে মাসুদ নাকি আমার পাপের ফসল। মাসুদ কে কখনো মাহমুদ নিজের সন্তান হিসেবে মেনে নেয়নি। এতো ই যখন অত্যাচার করার ছিলো তাহলে আমার সুখের জীবন টা নষ্ট করার কারণ আমি আজও খুঁজে পাইনি।

তুষার : এতো কিছু আমাকে কখনো বলোনি কেনো হেনা। ( কান্না জড়িত কন্ঠে তুষার)

হেনা : অবহেলা অনাদরে মাসুদ এর বয়স তখন ৫ হয়। কখনো আমরা মা ছেলে সুখে ছিলাম না। সব সময় সংসার এর কাজ করাতো সে আর আমার একটু অসাবধানতা হলেই লাত্থি ঝাটা আমার যেন পাওনা হয়ে গিয়েছিলো। কিছুদিনের মাঝেই জানতে পারি মাহমুদ পর নারীতে আসক্ত। এই কথাটা আমাকে মোটেও অবাক করেনি কারণ যার নিজের চরিত্র খারাপ সেইই অন্যকে খারাপ ভাববে।

এভাবেই মাসুদ এর বয়স ৬ বছর হয়ে যায়, মাসুদ তখন আমার মার আর নিজে মার খেয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। একদিন সকাল বেলা জানতে পারি মাহমুদ এর গ্রামের সকল পুকুরের মাছ এক সাথে বিষ খেয়ে মারা গেছে। ৫ টা পুকুরে মাছ ছিলো, এক দিনে এতো লস খেয়ে মাহমুদ পাগলের মতো চিৎকার করতে থাকে। সেদিন জিজ্ঞেস করাতে আমাকে কুকুরের মতো পেটায়। বলে আমার জন্য তার লস হয়েছে।

মুখ বুজে মার সহ্য করে ছিলাম, এরপর সেদিন দুপুরবেলা খবর আসে মাহমুদ এর তিনটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি তে আগুন লাগে। একদিনে শত কোটি টাকা লস খাত মাহমুদ। এতো লস খেয়ে কিছু করতে না পেরে বাড়িটা বন্ধক রেখে লোন তুলে আবার বিজনেস শুরু করবে ভেবে। কিন্তু পার্টনার এবার ধোকা দেয়। সব টাকা মেরে নিয়ে পালিয়ে যায়। সেদিন লোনের টাকা দিতে না পেরে এক মাসের মাঝে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বাড়ির বাইরে আমি আর মাসুদ বসে ছিলাম তখন খবর আসে মাহমুদ অনেক ড্রিংক্স করে গাড়ি চালাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে।

তুষার : এই সব ক্ষতির পিছনে আমিই ছিলাম।

হেনা : কিহহহহ! ( বেশ অবাক হয়)

তুষার : তোমার ধোকা পেয়ে নিজেকে প্রতিশোধ এর আগুনে জ্বলিয়ে নিয়েছিলাম । তাই, কিন্তু জানতাম না তুমি কতো কষ্ট পেয়েছো। শুধু নিজের কষ্ট দেখেছিলাম, আর কিছুই দেখিনি।

হেনা: এরপর একটা লোক এসে চিঠি দিয়ে যায়। চিঠি তে একটা ঠিকানা ছিলো, উপশহর এর একটি বাড়ির ঠিকানা । সেখানে স্পষ্ট লিখা ছিলো আমি যেনো একা যায়। মাসুদ কে হাসপাতালে বাবার পাশে এক নার্সের দায়িত্বে রেখে সেই ঠিকানা তে যায়। যা দেখলাম বেশ অবাক হয়ে গেছিলাম আমি। এ যে আমার তুষার , এতো বছর পর সামনে দেখে হাসবো কি কাঁদবো না বুঝে হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

তুষার আমায় অবাক করে দিয়ে বলে “এখন তোমার অনেক বিপদ তাইনা হেনা

আমি কিছু না বলেই কেঁদে ফেলি। সে কিছুই না বলার সুযোগ দিয়ে বলে সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে একটু ত্যাগ করলে। তুষার সেদিন মাহমুদ এর সব চিকিৎসা খরচ দিতে চায়। বিনিময়ে একটা শর্ত আছে, মাহমুদ কে ডিভোর্স দিতে হবে। কিন্তু এই ডিভোর্স এর কথা কেউ জানবে না কখনো। আমি কথা বলতে পারিনি, ডিভোর্স পেপার রেডিই ছিলো। সেখানে অনেক ভেবে সাইন করে দিই। কয়েকটা সাইন করে দিয়ে চলে আসি সেখান থেকে। তুষার মাহমুদ এর চিকিৎসা আর আমাদের মা ছেলের থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। এভাবে আমি তুষারের পাঠানো টাকাতেই চলতে থাকি।

তুষার কখনো তার ঠিকানা আমায় বলতো না। ঠিক সময় মতো টাকা চলে আসতো। এরপর এভাবেই একটা বছর কেটে যায়, ডিভোর্স দেয়া পঙ্গু স্বামী, আর ছেলে কে নিয়ে। মাহমুদ সুস্থ হবার কোন আশাই ছিলো না। তাও তার সেবা করতাম , মাহমুদ কথাও বলতে পারেনা আর, সাথে হুইল চেয়ার ছাড়া চলতে পারেনা। তাই তুষার একজন কাজের লোক পাঠায়। সেই ছেলেই মাহমুদ এর সব সেবা যত্ন করতো।

এরপর একদিন তুষার আমাকে ডেকে পাঠায় এক ঠিকানা তে। আমি যেন পুতুল হয়ে গিয়েছিলাম। তুষার যা বলত তা শুধু করতাম কিন্তু তুষার কে কিছুই বলতাম না। সেদিন তুষার একটা কাগজে সাইন করতে বলে। আমি করে দিই, এরপর চলে আসার সময় আর আসতে পারিনি। তুষার আমায় কাছে টেনে নেয়, কিন্তু সকালবেলা আমাকে বের করে দেয় । এভাবে সে প্রায়ই আমাকে ডেকে পাঠাতো সেই ফ্লাটে। আমি যেতে বাধ্য ছিলাম কারণ আমি পড়াশোনা বেশি করিনি, না করি কোন চাকরি । এভাবে চলার কিছুদিন পর আমি জানতে পারি আমি মা হতে চলেছি। আমি কখনো তুষার কে এই খবর দিই নি । সে নিজেই জেনে নেয়, সব সময় খোঁজ রাখতো সেভাবেই হয়তো।

ডেলিভারি র ডেট এগিয়ে আসে, আত্মহত্যা করতে চেয়েও পারিনা। কারণ সন্তান পেটে নিয়ে মরলে পাপ হবে তাই। জীবন্ত প্রাণ মারতে চাইনি আমি কখনো ই। প্রায় দিনিই চিঠি আসতো যেনো নিজের খেয়াল রাখি। কখনো ই যেন মাহমুদ এর ঘরে না যায়। এরপর যেদিন পেইন উঠে, মাসুদ ই আসেপাশের মানুষ ডেকে হাসপাতালে নিয়ে যায় আমাকে। মাহমুদ অসুস্থ হলেও বেশ ভালো করেই বুঝে গেছিলো আমি আর তার নাই। আমিও তার ঘরে ভুলেও যেতাম না, তাই সে জানতো না আমার মা হবার খবর। নার্স আমায় এসে বলে আমার দুইটা মেয়ে হয়েছে। আনন্দিত হতে পারিনি সেদিন কারণ যাকে একদিন ভালোবাসতাম তার পাপের ফল এই সন্তান।

তুষার: না পাপের না, ওরা দুই বোন আমার বৈধ সন্তান ।

হেনা: কিভাবে?

তুষার : লাস্ট যেদিন একটা পেপার এ সাইন করায় সেটা তোমার আমার বিয়ের পেপার ছিলো। তোমাকে কখনো জানাতে চাইনি রাগের জন্য।

হেনা: এরপর তুষার নার্স দিয়ে একটা মেয়েকে নিয়ে চলে যায়। চিঠি লিখে যায় স্মৃতি হিসেবে নিয়ে গেলাম। ভেবেছিলাম আর কখনো হয়তো খোঁজ নিবেনা। কিন্তু আজ অব্দি আমার সব খরচ ই আসে তুষারের কাছ থেকে।

চলবে……

প্রতিশোধ পার্ট_10

0

প্রতিশোধ
পার্ট_10
#জামিয়া_পারভীন

রাত্রে বাসায় ফিরে তৃণার হাবভাব দেখেই পুরো ই বুঝে যায় এটা তার নিরা নয়। তাও নাটক করতে থাকে আবির।

__ নিরা, তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চাই। ( আবির)

__ জ্বী বলেন ( তৃণা)

__ আসলে কিভাবে যে বলবো বুঝছি না। ( আবির)

__ ন্যাকামি না করে বলে ফেলুন। ( তৃণা)

__ আসলে, সব দোষ ওই তৃণার, তাই ভুলবশত তোমাকে তৃণা ভেবে ওই কাজ করে ফেলি। টেস্ট এর রিপোর্ট পজিটিভ, মানে তুমি প্রেগন্যান্ট। ( আবির)

__ ( তৃণা খুব ভয় পেয়ে যায়, কি বলছে আবির এইসব, সে তো পুরাই সুস্থ, ধরা পড়ে যাবে সে, ভয়ে ভয়ে বলে) মানে কি?

__ এতো ভয় পাচ্ছো কেনো তুমি? কি হয়েছে?

__ না কিছুনা, সারাদিন অনেক ধকল গেছে এখন ঘুমাবো। ( তৃণা এতো দিন আবিরের কাছে আসার চেষ্টা করেছে আর আজ পালাচ্ছে। সে চেঞ্জ করেই শুয়ে পড়ে বিছানাতে) ( আবির তার পাশে ঘুমাতে গেলে বলে আপনি আমার কাছে আসবেন না দূরে থাকেন। )

আবির এইসব ব্যবহার এ পুরো টা ই বুঝে যায় এটা নিরা না। নিরা আর যাই হোক, নিরার রাগ করার স্টাইল টা আলাদা।
আবির কিছু না বলে পাশের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে।




নিরা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে তৃণার ড্রেস পড়ে নেয়। তৃণার বাবা নিচে আগে থেকেই উঠে বসে ছিলো।

__ হাই, ড্যাডি। [ নিরা ]

__ তৃণা তুমি! কখন এলে মামনি? আবির কে ছেড়ে আসা তোমার উচিৎ হয়নি। ( তৃণার বাবা)

__ আরে আরে কি বলছো ড্যাডি, আমি তো কাল রাত থেকেই এখানে আছি। নিজের মেয়ে কেও চিনতে পারো না। সত্যি করে বলো তো আমি কে? ( নিরা)

__ আয়ায়ায়ায়া আমি কিছু জানিনা ( তোতলিয়ে)

__ দেখো ড্যাডি, আমি আমার মা কেও সেইম কথা জিজ্ঞেস করেছি। সেও এড়িয়ে গিয়েছে, এখন তুমিও এড়িয়ে যাচ্ছো। কি সম্পর্ক আমাদের দুইজনের? আমরা একই রকম দেখতে কিভাবে?
( নিরা)

__ আ আ আ আমি সত্যিইইইই জানিইইই নায়ায়া ( তৃণার বাবা)

__ তার মানে আমি ধরে নিলাম তৃণা তোমার মেয়ে না। ( নিরা)

__ নাহহহ! তৃণা আমার ই মেয়ে।

__ তাহলে আমি কে? ( নিরা)

__ তুমি কে, আমি তা জানি। কিন্তু তুমি আমার মেয়ে নও, তৃণা…………. ।

__ তাহলে তৃণা কে? ( নিরা)

[ ঠিক এই সময় তৃণা আবিরের বাসা থেকে পালিয়ে আসে, কিন্তু নিরা আর ওর বাবার কথা শুনতে পেয়ে লুকিয়ে থাকে, কথা শুনতে থাকে লুকিয়ে লুকিয়ে ]

তৃণার বাবা বলতে শুরু করে

__ আমার ক্লাস নাইন এ থাকতে একটা মেয়ের সাথে প্রেম হয়ে যায়। কিন্তু মেয়েটা আমার সাথে ৫ বছর প্রেমের পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। জানিনা তার কি হয়েছিলো, অনেক খোঁজ করার পর জানতে পারি সে বিয়ে করেছে আমার ই বন্ধু কে। আমার প্রচুর কষ্ট হয়েছিলো সেইদিন কিন্তু সব কষ্ট মেনে নেয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিছুদিন পর শুনতে পাই তার ছেলে হয়েছে। যে স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম সেই স্বপ্ন আজ অন্য কারো সাথে পূরণ করেছে।

আমি আমার বন্ধুকে শত্রু হিসেবে গণ্য করি। প্রতিশোধ এর নেশা উঠে যায় আমার রক্তে। আমার পড়াশোনা শেষ করে বাবার বিজনেস এ হাত দিয়েই শুরু করি প্রতিশোধ এর খেলা। বন্ধু মাহমুদ আর প্রেমিকা হেনার সাথে ভালো ই প্রতিশোধ নিতে পেরেছিলাম আমি।

মাহমুদ এর ব্যবসায় লস করাতে শুরু করি। আস্তে আস্তে সে এতো লস খেয়ে যায় সে রাস্তার ফকির হবার দশা হয়ে যায়। তখন হেনা দ্বিতীয় বারের মতো প্রেগন্যান্ট ছিলো । হেনার জীবন মরণের রাত ছিলো সেইটা, হেনাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেদিন হেনার দুই টা মেয়ে হয়। হেনার জ্ঞান ফিরতে অনেক সময় লাগে। আর তখন ডাক্তার এর বিল যতো হয় সেটা শোধ করার ক্ষমতা ছিলো না মাহমুদ আর হেনার। সেই সুযোগ টাই কাজে লাগাই আমি।

নার্স কে টাকা দিয়ে মাহমুদ এর কাছে পাঠায়। নার্স মাহমুদ কে বলে

নার্স : মিঃ মাহমুদ , আপনার বিল তো অনেক বেশি ( ৫০০০০টাকা)। আর আপনি তা শোধ ও করতে পারবেন না। আর এদিকে একজন পেশেন্ট এর বাঁচামরা অবস্থা। সন্তানের মৃত্যু হয়েছে, আপনি যদি আপনার একটা সন্তান কে বিক্রি করে দিতেন তাহলে তারাও সন্তান পেতো আর আপনারাও টাকা পাবেন।
২ লাখ দিবে বলেছে তারা।

মাহমুদ খুব লোভী হয়ে উঠেছিল তখন তাই নার্স এর সাথে রাজি হয়ে যায়। বিক্রি করে দেয় তার এক মেয়েকে।

আসলে সেদিন আমার স্ত্রী মারা যায়নি, কারণ আমি তো বিয়েই করিনি। শুধু মাত্র প্রেমিকাকে পাপবোধে রাখবো বলেই এই সন্তান টা নিয়ে নিই। হেনা খুব কষ্ট পেয়েছিলো সেদিন। নিজ সন্তান কে মাহমুদ বিক্রি করে দেয় বলে আজও মাহমুদ কে ক্ষমা করেনি হেনা। আর তৃণা কে নিয়ে আমি চলে গিয়েছিলাম ঢাকা। কখনো এই শহরে আনতে চাইনি, কিন্তু তৃণার মেডিকেল এ পড়ার জেদের জন্য তাকে আনতে আমি বাধ্য হই।

__ আর আপনার সেই মেয়ের জন্যই আমাকে রেপ এর স্বীকার হতে হয় ( কান্নার কণ্ঠে নিরা) আপনাদের প্রতিশোধ এর আগুনে আমাদের জীবন টা জ্বলে গেলো। আজ এক বোন আরেক বোনের সংসার নষ্ট করতে গেছে। আর আপনিও তাতে সাই দিয়েছেন। আমি তো আবির স্যার কে বিয়ে করতে চাইনি। আপনার মেয়ের জন্য আবির আমার সাথে যে অন্যায় করেছে তার জন্য ক্ষমা আবির কে কখনো করবোনা। আর তৃণাকেও কখনো ক্ষমা করবোনা।

__ ( আড়াল থেকে তৃণা বের হয়ে আসে)
আমি সব শুনেছি ড্যাডি, আমি তোমার মেয়ে না। ( কান্না করে খুব)

__ নারে মা, তুমি আমার মেয়ে ছিলে থাকবে। ( তৃণার বাবা)

__ নাহ, তুমি আমার বাবা না, তাছাড়া তোমার জন্য আমি কাল নিজের মা কে অপমান করেছি। ( তৃণা)

নিরাকে তৃণা বলে

__ আমি ভেবেছিলাম জোর করে ভালোবাসা হয়। কিন্তু না, আমি জোর করে ভালোবাসা পেতে গিয়ে বুঝেছি সেটা আমার জন্য না। আবির স্যার তোমাকে খুব ভালোবাসে নিরা। আমি চলে এসেছি ওই বাসা থেকে। তোমার ভালবাসা তোমারি আছে, তুমি আর তোমার সন্তান মিলে স্যারের সাথে সুখেই থাকিও নিরা।

__ জানি আবির আমায় ভালোবাসে বোন। বলে তৃণাকে জড়িয়ে ধরে নিরা।

তৃণা এতো সত্যি কথা জানার পর পাগলের মতো আচরণ শুরু করে, এরপর অজ্ঞান হয়ে যায়। তৃণার বাবা খুব কান্নায় ভেঙে পড়ে। নিরা, তৃণার বাবা তুষার, সাইরা মিলে তৃণা কে হাসপাতালে নিয়ে যায়। নিরা আবিরকে ফোন দেয়, মা আর ভাইকেও ফোন দেয় নিরা। সবাইকেই সব খুলে বলে ফোনে।

আবির নিরার কাছে আসতেই আবির এর কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে শুরু করে নিরা।

__ নিরা, এতো ভেঙে পড়িও না সব ঠিক হয়ে যাবে। ( আবির)

__ এতো গুলো সত্য কথা আমি হজম করতে পারছিনা। ( নিরা)

__ আহহ সব মানলাম, তৃণার বাবা যা বলেছে তাতে তৃণা তোমার বোন। কিন্তু তোমার মায়ের কাছেও তো সব শুনা উচিৎ তাইনা। হয়তো উনি বানিয়ে বানিয়ে বলেছে। ( আবির)

__ হ্যাঁ হতে পারে আবির, আপনি ঠিক বলেছেন। আমি মায়ের কাছে এর জবাবদিহি চাইবো। ( নিরা)

__ এখন একটু চোখ টা মোছো। (আবির)

__ কাল আমি ছিলাম না আপনার পাশে ( নিরা)

__ জানতাম, সেটা তৃণা বুঝে ফেলে চলে আসে। ( আবির)

__ আমার জন্য টেনশন করেন নি, যদি বিপদ হয়ে যেতো। ( নিরা)

__ নাহ, কেনো জানি মনে হচ্ছিলো তুমি সেফ আছো। ( আবির)

__ হুম সেফ ই ছিলাম , উনি আমাকে নিজ মেয়ের মতো যত্ন করেই রেখেছিলো। ( নিরা)

__ আচ্ছা এসব বাদ দাও, তুমি কেমন আছো সেটা বলো। ( আবির)

__ আমি, আপনার সন্তান সবাই সেফ আছি। ( নিরা)

__ তুমি জানতে এই কথা ( আবির)

__ আপনি রিপোর্ট আলমারি তে লুকিয়ে রেখেছিলেন সেখানে দেখেছিলাম। কাউকে কিছুই বলিনি কারণ এটা গর্ব করার বিষয় নয়। ( নিরা)

__ ওভাবে বলিও না, এটা আমাদের ভালোবাসার সন্তান । সব ভুলে যাও নিরা, শুধু শুধু কষ্ট বাড়বে। ( আবির)

__ হু ( নিরা)

নিরা মা, ভাই আসে হাসপাতালে । নিরার কাছে সব কিছু শুনে, তৃণা তার বোন তখন নিরার মা মুখ লুকিয়ে ফেলে। নিরার মা এতো দিন পর তার পুরনো প্রেমিক কে দেখে অবাক হয়ে যায়।

__ তুমি ( হেনা)

__ চিনতে পেরেছো তাহলে ( তুষার)

__ না চিনার কি আছে ( হেনা)

__ প্রতারক তুমি, তোমার ভুলে যাওয়ার ই কথা। ( তুষার)

__ আমাকে প্রতারক বলার আগে উচিৎ ছিলো আমার সাথে কি হয়েছিলো সেটা জানা। ( হেনা)

__ আহহ মা ( নিরা) বাদ দাও তো , যা হবার হয়ে গেছে। পরে কথা বলিও, এখন এসব কিছুই ভালো লাগছেনা ।

নিরা সকাল থেকে না খেয়ে এসব টেনশন এ সেও জ্ঞান হারায়। আবির নিরাকে ভর্তি করিয়ে দেয় কেবিবে। দুই বোন দুই কেবিনে ভর্তি হয়ে আছে, আর বাইরে সবাই চিন্তিত ।

#বিঃ_দ্রঃ ( আরও অনেক গুলি পর্ব হবে গল্প টার অনেক প্রেম কাহিনী ও আছে। আমার ৫ তারিখ এক্সাম আছে । এর আগে আর লিখতে পারবোনা। ফেসবুকে ও আসবোনা এই তিন দিন। তাই বাকি পর্ব দিবো এক্সাম শেষ করে ৫ তারিখ সন্ধ্যায়। ভোট এর জন্য এক্সাম আটকিয়ে আছে। একটু ধৈর্য সবাইকে ধরতেই হবে )

চলবে……….

প্রতিশোধ পার্ট_9

0

প্রতিশোধ
পার্ট_9
#জামিয়া_পারভীন

__ আবির খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে নিরাকে ডাক দেয়, নিরা সাড়া দেয় না দেখে নিরার ঘুমন্ত কপালে কিস করে আবির আর তখনই নিরা টের পেয়ে যায়।

__ দেখুন, এইসব আমি পছন্দ করিনা তা কি জানেন না?

__ জানি তো , কি করবো বলো?

__ যান বাইরে যান, আর আসবেন না এখানে।

__ আচ্ছা একটা কথা তো বলো? তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?

__ আমাকে কি বাজারের মেয়ে মনে হয় যে আমি কাউকে ভালোবাসবো?

__ আমি এসব মিন করে বলিনি, ভুল বুঝছো।

__ আপনারা ছেলেরা ভাবেন কোন মেয়ে আপনাকে ইগনোর করলে তার প্রেম আছে। অথচ এটা ভাবেন না ইগনোর করার পিছনে দায়ী আপনারা নিজেরাই।

__ হ্যাঁ! তা জানি, আমার দোষ এর জন্যই তুমি হয়তো কখনো ক্ষমা করতেও পারবেনা।

__ জ্বী হ্যাঁ, সেটাই।

__ আজ একটু মিশির চেম্বার এ যেতে হবে তোমাকে ।

__ কেনো, আমি কি অসুস্থ?

__ হুম, সেদিন মিশি যেটা বলেছে সেটা টেস্ট করে দেখতে হবে।

__ কবে কি বলেছে

__ আরে, বাদ দাও৷
গেলেই সব জানতে পারবে।

__ ওকে দিলাম বাদ, কিন্তু পরে যদি উল্টো পাল্টা কিছু শুনি তো আপনাকে কখনো ক্ষমা করবোনা।

আবির মিশির চেম্বারে গিয়ে নিরা কে পরীক্ষা করায়। যেদিন রেপ হয়েছিলো নিরা, সেদিন ই প্রেগন্যান্সির টেস্ট টা করিয়ে নিতে বলেছিলো মিশি। তাই আবির এর খারাপ লাগ্লেও নিরাকে নিয়ে আসে আজ। রেজাল্ট যাই হোক মেনে নিতেই হবে। সেদিন সন্ধ্যায় রেজাল্ট আনতে আবির একা যায়। কারণ নিরাকে সে এটা বলতে পারবেনা খুব সহজে। আর টেস্ট এর রেজাল্ট পজিটিভ দেখে হাসবে কি কাঁদবে তা বুঝতে পারেনা আবির। নিরা এই কথা জানলে তার খবর খারাপ করে দিবে।
তাই আবির ডিসিশন নেয় বিয়ের অনুষ্ঠান এর পরই নিরাকে এই খবর দিবে।

রেজাল্ট নিয়ে আলমারি তে লুকিয়ে রাখে আবির। পরের দিন বিয়ের অনুষ্ঠান তাই আবিরের বাবা মা সবাই আসে আবারো। আত্মীয়রা একেবারেই কমিনিউটি সেন্টারে আসবে, আবিরের বউ দেখতে।

আবিরের বাবা মাও নিশ্চিত আছে, বিয়ের মূল নাটক দেখবে বলে। নিরাকে তাদের একদমই পছন্দ না। ক্ষেত মেয়ে, আবিরের মায়ের ভাষায়। সব সময় শাড়ি পরে নিরা, যা এই যুগের সাথে বেমানান। অথচ তৃণা কতো ই না আধুনিক। অনন্যাও বেশ ছিলো কিন্তু তৃণাকেই তাদের বেশি ভালো লেগেছে। তার থেকেও বড় কথা তৃণার বাবা বিজনেসম্যান। সমাজে তার স্ট্যাটাস ও অনেক বেশি।

তৃণা যে পার্লারে নিরাকে সাজানোর কথা সেখানে গিয়ে চুপ করে বসে থাকে। দুপুরের দিকেই নিরাকে পার্লারে নিয়ে যায় আবির। আবিরকেও রেডি হতে হবে তাই ড্রাইভার এর উপর নিরাকে আনার দায়িত্ব দিয়ে আবির চলে আসে।

পার্লারের ভিতরে তৃণাকে দেখে নিরা চমকিয়ে যায়।

__ কি ব্যাপার তুমি এইখানে কি করছো? ( নিরা)

__ এইখানে তো তোমার আসার কথা ছিলো না, আসার তো কথা ছিলো আমার, তা এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে। ( তৃণা)

__ মানে, কি বলছো এইসব?

__ আবির স্যার কে পাবার জন্য এতো নাটক করলাম, আর তার সুযোগ নিলে তুমি তাই না। এর প্রতিশোধ আমি নিয়েই ছাড়বো । তোমাকে ভালো ই ভালো ই বলছি আজ থেকে তুমি তৃণা হয়ে আমার বাবার সাথে থাকবে। আর আমি নিরা হয়ে আবিরের সাথে থাকবো। মেনে নিতে কি রাজি আছো?

__ তোমার জন্য মিঃ আবির আমার ক্ষতি করেছে। তোমার মিথ্যা নাটকের বাস্তবতা আমাকে দেখিয়েছে আবির। আর আমি আবিরকে ছেড়ে দিবো। তা স্বপ্নেও ভেবো না, আবিরকে প্রতি মুহুর্তে কষ্ট দেয়ার জন্য নিরাই যথেষ্ট।

__ তা ভুলে যাও, এখন তুমি আর টিকতে পারবে না।

পার্লারে সব ব্যবস্থা করেই রেখেছি। বলেই তৃণার বডি গার্ড রা নিরা কে মুখ বেধে তৃণার বাসায় নিয়ে যায়। আর তৃণা আবিরের বউ সেজে আবিরের গাড়িতে করে বিয়ের অনুষ্ঠান এ যায়।

তৃণা প্রথমে অনুষ্ঠানে ঢুকেই আবিরের বাবা কে আর মা কে আলাদা আলাদা ভাবে চোখ টিপ দেয় বুঝিয়ে দেয় সে তৃণা। আবির সেটা খেয়াল করে নেয় কিন্তু বুঝতে পারেনা কিছুই।

বছরের প্রথম দিন, সাথে আবিরের বিয়ে, সেই হৈচৈ চারিদিকে। একে একে সবাই তৃণাকে নিরা ভেবে অভিনন্দন জানাচ্ছে।

মিশি : হ্যালো নিরা, কেমন আছো? এই সময় শরীরের যত্ন নিও বেশি করে।

__ এই সময় মানে? ( তৃণা)

__ আরে আবির তোমাকে কিছুই বলেনি নাকি? ( মিশি)

__ তৃণা ভয় পেয়ে যায়, কি বলতে চাচ্ছেন উনি, ধরা পড়ে যাবে না তো, এইসব ভয় ভিতরে ঢুকে যায়।

আবির : আহ! মিশি , কি শুরু করলি তুই বলতো। এখনো সে কিছুই জানেনা, আজ বলবো।

( তৃণা একটু স্বস্তি পেলো)

মিশি : ওহহ তাই নাকি, ওকে বাবু ??

নিরার মা এসে তৃণার কে জড়িয়ে ধরে এতে তৃণা চিনতে না পেরে বলে

__ কে আপনি? আজব তো আমার সাজ নষ্ট হয়ে গেলো। ( তৃণা)

__ কি বলছিস মা তুই? নিজের মা কে তুই ভুলে গেলি?

__ সরি মা! আসলে তোমার মুখ দেখিনি, তাই ভুলভাল বলে ফেলেছে। ক্ষমা করে দিও ( মনে মনে উহহ! এই মহিলা যে এমন করবে কে জানতো । আমি তো ধরাই পড়ে যাচ্ছিলাম)

আবির এইসব ঘটনাতে বেশ সন্দেহ করে ফেলে তৃণাকে। কিন্তু কিছুই বলেনা, মনে মনে বলে, নিরা তো এমন ছিলো না। তাহলে কি এই মেয়ে নিরা নয়। অবশ্য নিরার চোখের ভাষা আমি বুঝি। এটা তো নিরার চোখ মনে হচ্ছেনা, নাকি সাজানোর জন্য এমন লাগছে। নাহ মাথা কাজ করছে না। পরে দেখা যাবে, আচ্ছা যদি এইটা নিরা না হয় তাহলে নিরা কোথায়? আর চিন্তা করতে ভালো লাগছে না আবিরের।

__ ( আবিরের মা) আবির ডার্লিং! এতো কিসের টেনশন করছো তুমি।

__ না তো মম! নিজের পছন্দ মতো সুন্দরী বউ পেয়েছি, কিসের টেনশন করবো আমি। [ আবির]

__ তাই তো কথা, এতো সুন্দর বউ থাকতে আর কিছু লাগে নাকি? ( আবিরের বাবা)

__ হ্যাঁ ড্যাড, ঠিকিই বলেছো।

সবাই অনেক রকমের গিফট এনেছে। খাচ্ছে, আবিরের নাম করছে। ফটোশুট, ভিডিও সব শেষ করে রাত ১২ টার দিকে তারা সবাই বাসায় চলে আসে।
,
,
,
তৃণার বাবা নিরাকে দেখে বেশ অবাক হয়। একেবারে তৃণার মতো দেখতে।

__ আচ্ছা এটা কিভাবে সম্ভব মিসেস আবির। তুমি তো পুরাই তৃণার মতো দেখতে।

__ এটাই তো আমার জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে মিঃ।

__ কিন্তু কিভাবে সম্ভব সেটা বলতো?

__ এটা আপনি ভালো করে জানবেন, আমার তো জানার কথা নয়।

__ আমি কি জানবো? ( তৃণার বাবা)

__ তা আমি জানিনা। যাই হোক আমাকে এখানে তুলে এনে কি আপনি ভালো কাজ করেছেন?

__ আমি আমার মেয়ের চোখের জল দেখতে পারিনা।

__ ওহহহ তাইনা, আবির আমায় ভালোবাসে, আর সে তৃণাকে খুব শীঘ্রই ধরে ফেলবে।

__ চিনতেই পারবে না, হা হা হা ( তৃণার বাবা)

__ তা কয়দিন পরেই বুঝতে পারবেন।

__ যাও উপরে তৃণার ঘরে গিয়ে থাকো। ( সাইরা সাইরা বলে সাইরা কে ডাকে)

__ জ্বী আংকেল ( সাইরা)

__ আজ থেকে নিরা কে তৃণা মনে করে তাকে নিয়ে থাকবে? আর বডিগার্ড তো আছেই পালাতে পারবেনা। ( তৃণার বাবা)

__ জ্বী, এসো বলেই নিরাকে ধরে নিয়ে যায়।

__ সাইরা ছাড়ো , খুব শীঘ্রই তোমাদের জেলে পাঠিয়ে ছাড়বো দেখে নিও। ( নিরা)

নিরা এতো দিন না বুঝলেও এখন বুঝতে পারছে সে আবির কে ভালোবেসে ফেলেছে। খুব কস্ট হচ্ছে নিরার কিন্তু এখান থেকে কিভাবে পালাবে তার প্লান করতে থাকে।

চলবে…..

( সব পাঠক পাঠিকাই চাই সব স্টোরি তে হ্যাপি এন্ডিং, এটাতেও হবে , রহস্য গুলি খোলার জন্য এটার দরকার ছিলো)