Thursday, August 14, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2440



রোমান্টিক_অত্যাচার -২ পর্ব-১২

0
রোমান্টিক_অত্যাচার -২
পর্ব-১২
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
আশফিঃ মাহি? সোনা একটু উঠো।
মাহিঃ না।প্লিজ ডিস্টার্ব করো না আমাকে।রেগে যাবো কিন্তু।
আহ্লাদ ভরা কন্ঠে মাহি কথাগুলো বলছে আশফিকে।
-“রাগ করো না জাদু। দেখো ফোনটা বাজছে তখন থেকে।জরুরি ফোন ও তো হতে পারে,তাইনা?
-“এই সন্ধ্যাই কার এমন জরুরি হতে পারে?তার কি ঘরে বউ নেই নাকি স্বামী নেই?
আশফির কাছ থেকে রাগ করে উঠে গেলো মাহি। আশফি উঠে মাহিকে কাছে টেনে কোলের ভেতোর জড়িয়ে ধরে বসলো।
-“ঠিকই বলেছো।তার ঘরে নিশ্চই বউ অথবা স্বামী নেই।না হলে সে ঠিকই বুঝতো আশফিকে এখন তার লাভলী বউটা আদর করছে।আর এমন সময় তো বউ কাছে থাকলে যেকোনো পুরুষের ইচ্ছে করবে তার বউ এর আদর নেওয়ার।
-“হুহ। হয়েছে আর পাম্প করতে হচ্ছেনা।ফোনটা রিসিভ করো।
-“হাহাহাহা। ওহ, ফোনটা তো কেটে গেলো।আননোন নাম্বার দেখছি।কে এটা?
ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে বললো আশফি।
-“কল ব্যাক করে দেখো কে ফোন করেছে?
-“হুম।ফোন বাজছে ফোন তুলছে না কেনো?মাত্রই তো ফোন আসলো।হ্যা রিসিভ করেছে। হ্যালো?
-“হ্যালো আপনি কি আশফি চৌধুরী বলছেন?
-“জ্বী আপনি কে?
-” আমি চ্যাং ওক বলছি।আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে নাম্বার পেলাম।আপনার গাড়িতে যে ভদ্র মহিলা ড্রাইভিং করছিলো তিনি একটা এক্সিডেন্ট করেছে।ওনাকে আমরা হসপিটাল নিয়েসেছি।
-“কি বলছেন?আলিশা এক্সিডেন্ট করেছে?আচ্ছা ঠিক আছে আপনি আমাকে হসপিটালের এ্যাড্রেসটা দিন।আমি এক্ষণি আসছি। আর অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
-“না না ঠিক আছে।আপনি জলদি আসুন।
-“এই কি হয়েছে বলোনা? আলিশা কোথায়?
এক্সিডেন্ট করেছে কিভাবে?
-“মাহি এতোকিছু বলার সময় নেই।রেডি হও হসপিটাল যেতে হবে।
চাচ্চুকে কি জবাব দিবো বুঝতে পারছিনা।
-“আচ্ছা ঠিক আছে তুমি এতো টেনশন নিওনা। চলো আমি রেডি।
মাহি আর আশফি দ্রুত গাড়ি চালিয়ে হসপিটালের ঠিকানা নিয়ে হসপিটাল গেলো। আলিশার কেবিনের খোঁজ করে ওর কেবিনে ঢুকলো।
-“আচ্ছা মিস আলিশা আপনি ভয় পাবেন না। আঘাতটা গুরুতর নয়। কপালে খানিকটা ইনজুরি হয়েছে।চিন্তার কিছু নেই আমি এন্টিবায়োটিক দিয়ে দিচ্ছি যাতে পেইনটা কম হয় আর ঘা টা দ্রুত শুকিয়ে যায়।(ডক্টর)
আশফি আর মাহি কেবিনে ঢুকে ডক্টরের কথা শুনছিলো।তারপর আলিশার সাথে কথা বললো।
-“আলিশা?তুমি ঠিক আছো তো?আমি সত্যি খুব স্যরি।কিভাবে যে আমি তোমার কথা ভুলে গিয়েছিলাম।
-“আরে এতো চাপ নিচ্ছো কেনো?আমি একদম ঠিক আছি।জাস্ট টাইম মত ব্রেকটা হ্যান্ডেল করতে না পারলে বড় কিছু হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো।
-“আচ্ছা ডক্টর ওর কি সিরিয়াস কোনো ইনজুরি হয়েছে?(আশফি)
-“তেমন সিরিয়াস নয়।২ টা দিন রেস্ট নিলে একদম সুস্থ হয়ে যাবে।
-“কি করে হলো এসব বলো তো?(মাহি)
-“মাহি এগুলো এখন থাক। পরে আমরা শুনছি এই বিষয়টা। ডক্টর ওকে কি আমরা বাসায় নিয়ে যেতে পারবো?নাকি এখানে থাকতে হবে ওকে?
-“বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।প্রবলেম নেই। মেডিসিন দিয়ে দিয়েছি। ওগুলো নিলেই ঠিক হয়ে যাবেন উনি।
-“ওকে ডক্টর থ্যাঙ্কস। তাহলে আমরা ওকে নিয়ে যাচ্ছি।(আশফি)
আশফি হসপিটালের সব ফরমালিটিস মেইনটেইন করে আলিশাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলো।
-“মাহি তুমি আলিশার খাবারের ব্যবস্থা করো তো আগে।আমি আঙ্কেলের সাথে কথা বলে আসছি।
-“এই না না।তুমি কি বাবাকে এগুলো বলতে চাচ্ছো নাকি?
-“হ্যা।জানানোটা তো উচিত।যত যাই হোক ব্লান্ডারটা তো আমার জন্যই হয়েছে।স্যরিটা তো বলতেই হবে।
-“তুমি কি এখন স্যরি বলতে গিয়ে তাদের এক্সট্রা টেনশন দিবে?
-“হুম আলিশা ঠিক ই বলেছে।ব্যাপারটা জানার পর আঙ্কেল আন্টি অনেক টেনশন করতে শুরু করবে। তুমি বরং ঘটনাটা অন্য একদিন বলো।আজ থাক।
-“অন্য একদিন ও বলতে হবেনা।এটা তাদের জানার কোনো প্রয়োজন ই দেখছিনা।
-“আচ্ছা ঠিক আছে সে দেখা যাবে পরে। মাহি তুমি যাও ওর খাবার নিয়েসো। ওকে খাইয়ে দাও।
-“এখন কিন্তু আমার খুব অস্বস্তিকর লাগছে। আমি যতটা অসুস্থ না হয়েছি তোমরা তার থেকে বেশি অসুস্থ করে ফেলছো তোমাদের ওভার টেক কেয়ারের মাধ্যমে। আমার মোটেও খিদে পাইনি। তোমরা যাও ঘরে গিয়ে রেস্ট নাও। শুধু শুধু আমাকে নিয়ে বেশি ভাবছো।
-“এই তুমি একদম কোনো কথা বলবেনা। এখন আমাকে এটা বলতো এক্সিডেন্ট টা হলো কি করে? আমার জানামতে তুমি কখনো বেখেয়ালি ভাবে ড্রাইভ করোনা। খুব কেয়ারফুল থাকো।(মাহি)
-“না আসলে আমি নিজেও বুঝতে পারিনি কি করে কি হলো?
-“এটা কোনো যুক্তিসম্মত কথা হলো না আলিশা। ব্যাপারটা আমাদের কে বলো। Exactly কি হয়েছিলো?(আশফি)
আলিশা চুপ করে রইলো। ও কি বলবে ঠিক ভেবে পাচ্ছেনা।ড্রাইভিংটা ও আনমনে হয়ে করছিলো। এখন এই কথাটা বললে ওরা জানতে চাইবে হঠাৎ আনমনে হয়ে ড্রাইভিং করার কারণটা কি? কি এমন ভাবছিলো ও? এসব প্রশ্নের উত্তর কি দিবে ও সেটাই ভাবছে।ওর এমন ভাবে চুপ করে থাকতে দেখে মাহি আর আশফি বুঝতে পারলো আলিশা একটা বাড়তি টেনশনে আছে।
-“আলিশা তুমি তো একদিন বলেছিলে যে তুমি আমাদেরকে বন্ধু ভাবো। ভাইয়া ভাবী নয়। তাহলে এতো প্রাইভেসি কেনো রাখছো?হ্যা মানছি কিছু বিষয় আছে যা সবার সাথে শেয়ার করার মত নয়।কিন্তু যেগুলোর জন্য তুমি ডিপ্রেশনে ভুগছো সেগুলো অন্তত তোমার শেয়ার করা উচিত কাছের মানুষের সাথে। আমরা তো তোমার দূরের কেউ নই বলো।তুমি নিশ্চই আমাদের দূরের কেউ ভাবোনা?(মাহি)
-“না না,ছি ছি দূরের কেউ ভাবতে যাবো কেনো?
-“তাহলে তুমি কি এটা ভাবছো যে আমাদের সাথে তোমার প্রবলেম শেয়ার করলে আমরা তার সলিউশন দিতে পারবোনা তাই শেয়ার করার কোনো প্রয়োজন নেই? আচ্ছা এরকমটা যদি ভেবেও থাকো আমরা যদি তার সলিউশন করতে নাও পারি এটলিস্ট তোমার মনটা হালকা হতে পারে আমাদের সাথে শেয়ার করলে।(আশফি)
-“আরে তেমন কিছুই নয়।প্রবলেম থাকলে তো শেয়ার করবো বলো?
তোমরা মিছিমিছি টেনশন নিচ্ছো।
-“আচ্ছা বেশ তোমার যদি বলতে ইচ্ছা না হয় বলোনা।আমরা আর জোড়াজোড়ি করবো না। কিন্তু যে প্রবলেমই থাকো সেটাকে নিজের মত করে সল্ভ করতে না পারলে বাসার মানুষের হেল্প নিও। কারণ তাদের মত করে হেল্প তোমাকে কেউ করতে পারবেনা।খামখা দুশ্চিন্তা করে নিজের এতো সুন্দর ফিটনেস বডি নষ্ট করোনা। আর চেহারার কথা বললাম না।(আশফি)
-“হা হা হা। কি যে বলোনা তুমি?
-“আচ্ছা তোমরা গল্প করতে থাকো।আমি আলিশার খাবার নিয়ে আসি।
মাহি আলিশাকে খাইয়ে-দাইয়ে কিছুক্ষণ আলিশার সাথে সময় কাটিয়ে ওরা রুমে চলে এলো।
-“তখন কি বলছিলে আলিশাকে?(মাহি)
-“কখন?কি বলছিলাম?(আশফি)
জ্যাকেটটা খুলতে খুলতে আশফি কথা বললো।
-“ঐ যে বললে ওর ফিটনেস বডি?
-“হ্যা।ওর বডি কি ফিটনেস নয়?
-“হুম।আমি কখন বললাম ফিটনেস নয়?
-“তাহলে এভাবে প্রশ্ন করছো যে?
মাহি কোনো উত্তর দিলোনা।চুপ করে মুখটা কালো করে রইলো। আশফি সেটা খেয়াল করলো। ও বুঝতে পেরেছে মাহি কি কারণে রাগ করেছে।এভাবে রিয়্যাক্ট করার কারণে আশফির ইচ্ছা হলো মাহিকে আরো একটু রাগাতে।
-“আসলে সামনে সুন্দর জিনিস থাকলে সেটাকে সুন্দর না বলে থাকা যায় না।
-“হ্যা তো বলো না।নিষেধ করছে কে?
-“নিষেধ কেনো করবে? নিষেধ করার কথায় বা আসছে কোথা থেকে? কিন্তু তুমি এভাবে রিয়্যাক্ট করছো কেনো বলো তো?
-“আমি কোথায় রিয়্যাক্ট করলাম?সুন্দর জিনিসের প্রশংসা করো গিয়ে। যাও।
আশফি ভাবছে, মেয়ে মানুষের এই একটা সমস্যা,এদের সামনে অন্য মেয়ে মানুষের প্রশংসা করলে অনেক বড় ঝামেলা বেঁধে যায়।সে তার সাথে যতই ভালো সম্পর্ক থাক। এমনিতে নিজে যখন আলিশার প্রশংসা করে তখন কোনো দোষ হবে না আর আমি বলতে গেলেই আমার ঘাড়ে যে কয়টা মাথা থাকবে সবকয়টা কেটে ফেলবে।যদিও ঘাড়ে একটা মাথায় আছে সেই একটার কথায় বললাম।নাহ্ আর বেশি রাগানো যাবেনা।পরে দেখা গেলো আমার আর আজ বেডে জায়গা হবেনা।
-“আচ্ছা ডিয়ার এদিকে এসো।
-“না।কোথাও আসবো না।
-“ওকে কাছে টেনে নিয়েলাম।তারপর পেছন থেকে ওর কোমড় জড়িয়ে পেটের উপর হাত রেখে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়ালাম।
মাহি তুমি কি কিছু দেখতে পাচ্ছো?
-“কি দেখবো?
-“কিছুই দেখতে পাচ্ছোনা?
-“শুধু তোমাকে আর আমাকেই তো দেখছি।
-“আমাকে দেখতে হবেনা। তোমাকে দেখো।আমার চান্দুর মা হওয়ার পর থেকে তোমার সৌন্দর্যটা কতোটা পাল্টে গেছে’না?এক অন্যরকম মাহি লাগছে তোমাকে।যাকে দেখলেই মনে হয় সর্বক্ষণ আষ্টপৃষ্ঠে বেঁধে রাখি।
-“সেটা তো তোমার চান্দুর খেয়াল রাখার জন্য।
-“শুধু সেজন্যই নয়। তোমার মাঝে এক অন্যরকম সৌন্দর্য বিরাজ করছে।যা তুমি দেখতে পাচ্ছোনা।সেই সৌন্দর্যই আমাকে সর্বদা টানে। শুধু চেহারার সৌন্দর্যই নয় তোমার শরীরের সৌন্দর্য ও।যা এখন অন্যসব সুন্দরী মেয়েদের মাঝেও নেই। কারণ তারা এখন কেউ হবু মা নয়।আর আমি তো তখন আলিশার টেনশন রিলিজ করার জন্য কথাটা বললাম।কারণ মেয়েদের তার ফ্যামিলির কসম দিয়ে বা অন্যকিছুর কসম দিয়ে যতই বুঝাও সে মাথাতেই নিবেনা মানে কাজে দিবেনা।কিন্তু যখনই তার ফিটনেস,চেহারার কথা বলবে সে দ্রুত সেটাকে ঠিক রাখার জন্য ব্যাস্ত হয়ে যাবে।
-“হুম।সেটা ঠিক।কিন্তু বিষয়টা যদি ভালোবাসা রোগ হয় তাহলে যত যার দোহাই কিচ্ছু কাজে দিবেনা।
-“তার মানে তুমি বলতে চাচ্ছো বয়ফ্রেন্ড সংক্রান্ত ব্যাপার?
-“হুম।আমার তাই মনে হচ্ছে।বেশ কিছু দিন খেয়াল করছি ও কারো সাথে ফোনে কথা বলার পরই কেমন যেনো বিষন্ন দেখাই ওকে।দেখো চাচ্চু বা চাচিমায়ের সাথে যখন কথা বলে তখন বেশিরভাগ সময় আমি সামনে থাকি আমিও কথা বলি।তাদের সাথে কোনো প্রবলেম না। প্রবলেমটা অন্য কাউকে নিয়ে। আর ওর শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশ ভালো।
ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো টেনশন ই হওয়ার কথা না ওর।তাহলে বাকি থাকলো বয়ফ্রেন্ড। যদি সেটা থেকে থাকে।কিন্তু আমার মনে হচ্ছে সেটা আছে ওর।
-“হুম বুঝলাম।কিন্তু ওর মত মেয়েকে রিফিউজড করবে সে কি এমন ছেলে? কোনো ইংল্যান্ডার নাকি?
-“সেটা তো ওর সাথে কথা বললেই বুঝতে পারতাম। সে যাই হোক ও যদি এখন নিজে থেকে কিছু না বলে তাহলে আর কি করার।
হঠাৎ ধুম করেই মাহির কথার মাঝে মাহিকে কোলে তুলে নিলো আশফি।
-“এটা কি হলো?এভাবে কোলে তোলার মানে কি?
-“মানে তো থাকতে পারে অনেক কিছুই।কিন্তু আমি কি আমার বউকে কোনো মানে ছাড়া কোলে তুলতে পারিনা?হুম?
-“সে তো পারোই।কিন্তু কোনো কারণ তো অবশ্যই আছে তাই তো জিজ্ঞেস করলাম।
-“হুম তা আছে। কারনটা হলো তখন আমি তোমার থেকে ফুল পেমেন্টটা পাইনি হাফ পেয়েছি।এখন যেটুকু ডিউ আছে সেটা রিপেমেন্ট করো।
-“ও আচ্ছা।কিন্তু বাকি তো বাকিই।সেটা তো ফাঁকিতেই পড়ে গেছে। ওটা আর পাচ্ছোনা।
-“তোমার তাই মনে হলো?তুমি এখনো অলরেডি আশফির কোলেই আছো।আর আশফি তার হাফ পেমেন্টটা না পেয়েই তোমাকে রেহাই দিবে মনে হচ্ছে? সুদে আসলে মিটিয়ে নিবো কিন্তু।
-“সুদে আসলে মিটিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ ই নেই।
-“উহহু।তুমি না আমার চান্দুর দোহাই দিয়ে দিয়ে পাড় পেয়ে যাচ্ছো।কিন্তু সেটা আর কতোদিন? তারপর যে তোমার কি হাল করবো!
-“আচ্ছা? দেখে নিবো।
-“সে দেখে নিও তুমি। কিন্তু এখন যেটা করতে বললাম সেটা করো। না হলে কিন্তু কোল থেকে নামাবোনা।আর যদি নামায় ও তাহলে তোমার উপর যা সব টর্চার হবে তা তুমি নিশ্চই বুঝতে পারছো?
-“তোমার কি মনে হয় আমি তোমার টর্চারকে ভয় পাই?
-“ও।তাহলে দেখা যাক। চলো তাহলে শুরু করি।
ওকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।তারপর গা থেকে টি শার্টটা খুলে ফেললাম।
-“এই তুমি কি করতে চাইছো বলো তো?
-“সেটা তো দেখতেই পাবে।
ওর কাছে গিয়ে বললাম।
-“তুমি না পাগল একটা। ভুলে গেলে নাকি এখানে কে আছে?
মাহি নিজের পেটে হাত রেখে বললো।
-“একদম না।এখানে আমার আর তোমার ভালোবাসার এক বিশেষ অংশ বেড়ে উঠছে।আর আমি তো তোমার উপর এমন কোনো টর্চার করবো না যেটাতে আমার চান্দুর কষ্ট বা ক্ষতি হতে পারে। তো এখন আমাকে আর বাঁধা দিওনা।আমি সেই বাঁধা মানবোনা।
-“এক মিনিট।তোমার হাফ পেমেন্ট সহ যদি আবার এক্সট্রা পেমেন্ট করি তোমাকে তাহলে কি হবে?
-“দৌড়াবে।তাহলে আর এতো দেরী কিসের?আমি প্রস্তুত।
-“কিন্তু আমি প্রস্তুত নই। কারণ খালি পেটে বউ এর প্রেম হজম করতে পারবেনা। পরে সেটা বদহজম হয়ে যাবে।
-“বউ এর প্রেমে যদি বদহজম হয় তবে সেই বদহজমকেই আমি হজম করে নিবো।তবু কোনো ছাড়াছাড়ি নেই।বুঝেছি তোমাকে দিয়ে এখন কিচ্ছু হবেনা।ওটা আমাকেই করতে হবে।তুমি বর্তমানে প্রচুর ফাঁকি দেওয়া শিখে গেছো।তোমার ফাঁকি দেওয়া আমি ছোটাচ্ছি।
কথাগুলো বলেই আমি মাহির ঠোঁটে চুমু দিয়ে বসলাম।ঠোঁট থেকে গলার কাছে নামতেই ও আমাকে থামিয়ে দিলো।
-“প্লিজ আমার একটা কথা শুনো।
-“উফফো।কি কথা বলো।
আমি ওর গলায় তখন নাক আর ঠোঁট দিয়ে ঘষছিলাম।
-“বলছি আমাদের আর এক বার…….উফ থামো না একটু।সুড়সুড়ি লাগছে তো।
-“লাগুক।থামতে পারবোনা।
এবার ওর গলায় জিহ্বা লাগিয়ে সুড়সুড়ি দিতে থাকলাম।
-“প্লিজ থামো না। আমার কথাগুলো শুনো একটু।
-“তো বলোনা।আমি কি বাঁধা দিচ্ছি?
-“দিচ্ছোই তো।এভাবে বলা যায়?কেমন যেনো লাগে?কথা আটকে যায়।
আমার কথাটা শুনে আশফি মিটিমিটি হাসছে।
-“কি হলো?এভাবে মিটিমিটি হাসছো কেনো?(মাহি)
-“এমনি।আচ্ছা বলো। থেমেছি তো এবার।
-“অসংখ্য ধন্যবাদ জনাব। বলছি আলিশার কাছে তো আর একবার যাওয়া উচিত।
-“হুম যাবো তো। মাত্রই তো এলাম।
-“কোথায় মাত্র এলাম। ২০/৩০ মিনিটের মত তো হয়েই গেছে।
-“সত্যি?এতক্ষণ হয়ে গেছে?
-“আজ্ঞে হ্যা।
-” তোমার কাছে থাকলে না আমার পৃথিবীর আর কোনো কিছুই মাথায় থাকেনা।
-“সেইজন্যই তো থামতে বলছি।কারণ এখন তুমি আমার সাথে দুষ্টুমি শুরু করলে তখনকার মত আবার মেয়েটার কথা ভুলে যাবে।আর তোমার সাথে আমিও।
-“তাহলে দোষটা তো আর আমার একার হলো না। তোমার ও।
-“তো আমি তো সেটা স্বীকার করলাম ই। আর তাছাড়া এখন রাত প্রায় ৮ টা বেজে গেছে। আমাদের ও ডিনার করার সময় হয়ে গেছে।
-“ওকে।আগে যাও ওকে দেখে আসো।আমি একটু ফ্রেশ হয়ে তারপর ডিনার করতে আসছি।আসার পর তো তোমার জন্য ফ্রেশ ও হতে পারলাম না।
মাহির কাছ থেকে উঠে ওয়াশরুমে যাচ্ছিলাম।
-“কি?আমি কি করলাম শুনি?আমি কি তোমাকে বেঁধে রেখেছিলাম?
-“রাখোনি, আবার ধরে বেঁধেই রাখো।
-“হুহ।যতসব ফালতু কথা।
-“কি বললে?ফালতু কথা! দাড়াও তোমাকে দেখছি। মুভ ভেংচি দেওয়া হচ্ছে তাইনা?আমি ফালতু কথা বলি?
ওয়াশরুমে না ঢুকে ওকে ধরার জন্য ওর কাছে দৌড়ে গেলাম।ও তখন বিছানা থেকে উঠে দৌড়াতে যাচ্ছিল। ওর দৌড়ানো দেখে আমার কেমন যেনো ভয় করলো।আমি ওকে বারণ করছিলাম না দৌড়ানোর জন্য।
-“মাহি দাড়াও।দৌড়াবেনা প্লিজ।
পেছন থেকে গিয়েই ওকে ধরে ফেললাম।
-“তোমাকে না বলেছি তুমি একদম ছোটাছোটি করবেনা।আবার আমার কথা অগ্রাহ্য করছো?
আশফির চোখে মুখে তখন অজানা এক ভয় কাজ করছিলো।ভয়টা নিশ্চই ছিলো মাহির কোনো ক্ষতি হয়ে যাওয়ার ভয়।
-“আশফি?তুমি এতো ভয় পাও কেনো?আমি তো বাচ্চা নই।আমার ও খেয়াল আছে যে আমি এখন আমার আশফির চান্দুর মা।
-“জানিনা কিসের এতো ভয় করে আমার।শুধু মনে হয় আমার থেকে এক্সট্রা কেয়ার তোমাকে কেউ করতে পারবেনা।এমনকি তুমি নিজেও না।
-“অনেক বেশি দুর্বল তুমি আমার প্রতি।এর জন্যই এমন মনে হয় তোমার। কিন্তু এতো বেশি দুর্বলতা ভালো নয় আশফি।
-“রাগাচ্ছো আমাকে?
-“উহুম।সত্যি বলছি।
-“ওহ্ আচ্ছা। কেনো ভালো না বলো?
-“এখন হয়তো তোমার বিশ্বাস হচ্ছেনা।কিন্তু আল্লাহ্ না করুক এমন কোনো দিন যদি আসে যেদিন আমি অনেক দূরে থাকবো তোমার থেকে সেদিন তুমি নিজেকে সামলাতে পারবেনা।বা তুমি নিজেই যদি আমার উপর অভিমান বা রাগ করে দূরে সরিয়ে রাখো আমাকে সেদিন তোমার এই দুর্বলতা তোমাকে অনেক কষ্ট দিবে। তখন তুমি না পারবে আমার থেকে দূরে থাকতে আর না পারবে কাছে আসতে।
-“এইসব উল্টা পাল্টা চিন্তা ভাবনা তোমার মাথায় আসে কোথা থেকে বলো তো।যা আমি স্বপ্নেও ভাবিনা তাই তুমি আমার সামনে ঝেড়ে দিলে তাও কি অনায়াসে।তুমি বোধহয় এসব ই ভাবো,তাইনা?
-“একদমই না। কিন্তু মাঝেমাঝে তোমার এতো ভালোবাসা দেখে অনেক ভয় হয়।কারণ সুখ যে আমার কপালে সয়না। না হলে তো আজ আমার বাবা-মা,শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি নিয়ে সুখে শান্তিতে ঘর করার কথা ছিলো।অথচ দেখো কি অসময়ে তাদেরকে আমি হারিয়েছি।
-“তোমাকে আর কত বুঝাবো বলো তো।মৃত্যুর কোনো সময় অসময় নেই। এটা সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে। তার ইচ্ছা হয়েছে তার বান্দাদের সে নিজের কাছে নিয়ে গেছে।
-“এটা যদি পুরোটাই আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয় তাহলে ওনাদের মৃত্যুটা ঐ শয়তানদের হাতে হলো কেনো?
-“মাহি আমি কিন্তু এখন সত্যি বিরক্ত হচ্ছি।
তোমাকে আমি লাস্টবার বলছি এমন ধরনের টপিক উঠালে আমি কিন্তু তোমার সাথে টানা তিন দিন কথা বলবোনা,তোমার দিকে তাকাবোনা,তোমাকে টাচ্ করবোনা এমনকি তোমার রুমেই থাকবো না।
-“ওকে স্যরি বাবা। আর বলবো না।হয়েছে এতো রাগ করোনা।রাগ করলে তোমাকে এ্যানাকন্ডার থেকেও ভয়ংকর লাগে।
-“পাঁজি মেয়ে!কি বললে?
ওর কোমড় ধরে ওকে কাছে টেনে নিয়ে এলাম।
-“এই ছাড়ো প্লিজ। এখন কোনো কিস টিস করবে না কিন্তু।
-“হ্যা।সেটাই করবো। কিন্তু অনেক অত্যাচারিত ভাবে।
ওকে জোড় করে ধরে ওর ঠোঁটে একটা কামড় বসিয়ে দিলাম।
-“উফ,কেটে গেছে নিশ্চই।
ব্যাথা পেয়েছি অনেক।
-“ব্যাথা পাওয়ার জন্যই তো দিলাম।
-“ঠিক আছে।ওয়েট করো শোধ দিবো আমিও।
-“আই এম ওপেন।
আশফির কথা শুনে মাহি আশফির নাকে ছোট্ট করে একটা ঘুষি মেরে চলে গেলো আলিশার রুমে।
-“আলিশা? দরজাটা একটু খুলো।ঘুমিয়ে পড়েছো নাকি?(মাহি)
মাহির ডাক শুনে আলিশা জলদি চোখ মুখ মুছে দরজাটা খুললো।
-“না গো ঘুমাইনি।এই ফোনে গেম খেলছিলাম। ভেতোরে এসো।
-“আলিশা কি কান্না করছিলো?ওর চোখ মুখ দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। চোখদুটো ফুলে লাল হয়ে আছে।আমি রুমে ঢুকে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
-“কি দেখছো এভাবে? মনে হচ্ছে আজ নতুন করে দেখছো?(আলিশা)
-“নতুন করেই তো দেখছি। এখানে(বিছানায়)বসো আগে।যদি আমাকে সত্যি তোমার নিজের কেউ মনে করো তাহলে যা ভেবে কষ্ট পাচ্ছো তার সবটা আমাকে বলো।কথাটা সরাসরি বললাম।কারণ এখন আমি যেটা দেখছি তাতে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি তোমার সাথে খুব খারাপ কিছু হচ্ছে।এখন তুমি যদি আমাকে এর কারণটা না বলো তাহলে আমি বুঝে নিবো তুমি আমাকে আপন কেউ ভাবোনা।
-“না মাহি।এসব তুমি কি বলছো?আমার কোনো ভাই নেই।আমি বড় হওয়ার
পর আশফির সাথে আমার এটা প্রথম সাক্ষাৎ হলেও কিন্তু সেই ছোটো থেকে আমি শুনে এসেছি আর শুধু শুনেছি বলবো কেনো বিশ্বাস ও করেছি ও আমার ভাইয়া, নিজের ভাইয়া। তারপর ওর সাথে যোগাযোগ হওয়ার পর থেকে ওকে ভাইয়ের থেকে বন্ধু বলে বেশি মনে করেছি। আর তুমি তার বউ।তোমাকে কেনো আমি পর ভাবতে যাবো,বলো?
-“তাহলে মাহি যা প্রশ্ন করছে তার উত্তর দাও।আমি রুম থেকে আসার সময় তোমাদের কথাগুলো শুনছিলাম।
(আশফি)
-“কি বলবো বলো তো? আমার কথা বলার শক্তিটুকুই হারিয়ে গেছে।
-“কথা বলার শক্তি হারিয়ে গেছে নাকি তোমার নিজের উপর নিজের আত্মবিশ্বাসটুকু হারিয়ে গেছে?(আশফি)
-“জানিনা আমি।(কান্না করে)
-“আলিশা প্লিজ কান্না থামাও।এতো কান্না করোনা।আশফি দেখোনা
ও তো আমার কোনো কথায় শুনছেনা।
-“মাহি ওকে আর কিছুক্ষণ কাঁদতে দাও।আমরা ওয়েট করবো।চলো,বাইরে এসো।
মাহিকে নিয়ে বাইরে চলে আসছিলাম।
-“না প্লিজ।দাড়াও তোমরা।যেওনা।
-“আমরা তো যেতে চাইছিই না। কান্না থামাও।এখন বলো তো কি হয়েছে?(মাহি)
-“সেমিস্টারের মাঝামাঝি সময়।হসপিটালে ব্লাড ডোনার হিসেবে গিয়েছিলাম একজন রোগীর জন্য সেইদিন ঐ রোগীর জন্য আরো একজন এসেছিলো। ঐ দিনই ওর সাথে আমার প্রথম আলাপ হয়।
-“ও” টা কে সেটা জানার জন্য আলিশাকে প্রশ্ন করতে চাইলাম।আশফি হয়তো বুঝতে পেরেছে সেটা।তাই ও আমাকে ইশারার মাধ্যমে থামিয়ে দিলো। থামিয়ে দেওয়ার কারণ এটা ছিলো ওকে আগে বলার সুযোগ দেওয়া হোক।তাই আমি থেমে গেলাম।
-“সেদিন ওর সাথে তেমন বিশেষ কোনো কথা বার্তা হয়নি।জাস্ট সিম্পলি পরিচয় আদান-প্রদান। তার কিছুদিনের ভেতোরই আমি ওকে আমার ভার্সিটির ক্যাম্পাসে দেখতে পেলাম।সেদিন ওর সাথে কথা বলে জানতে পারলাম ও এই ভার্সিটির মেডিকেল স্টুডেন্টস এর প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের টিচার।শুনে একটু অবাক হলাম সেই সাথে অনেকটা খুশি ও হলাম। তারপর মাঝেমাঝে ওর সাথে আমার ক্লাসের ফাঁকে বা ওর ক্লাস নেওয়ার ফাঁকে কথা হতো, দেখা হতো। একসময় হোয়াটসআপ নাম্বার আদান প্রদান হলো। তারপর ফোনে হোয়াটসআপে কথা বলতাম।বাইরে ও দেখা করতাম।এভাবেই আমার আর ওর মাঝে একটা গুড রিলেশন তৈরি হয়।যদি মাঝে কিছুদিন যোগাযোগ না হতো ও নিজে ফোন করে আমার খোঁজ নিতো। এটা আমার কাছে কেনো যেনো খুব ভালো লাগতো। মাঝেমাঝে এক্সট্রা কেয়ার ও নিতো।এই জিনিসগুলোই ওর প্রতি আমার দুর্বলতা বাড়িয়ে দিতে থাকে। ওর ফোন বা খোঁজ-খবর না পেলে আমি প্রায়ই ওর বাসায় ছুটে যেতাম।অসুস্থ থাকলে রান্না করে দিতাম, যতদূর পারতাম ওর সেবা করতাম। আমার এই কেয়ারনেস গুলো ওর নাকি খুব পছন্দ হতো।একদিন তো বলেই ফেললো আমি নাকি বউ এর মত করে সেবা করি।ঐ দিন ওর ঐ কথাটা শোনার পর এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করলো ভেতোরে। বোকার মত ভেবে নিলাম ও হয়তো আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে।আর আমি তো বেসেই ফেলেছি।ভাবলাম প্রপোজ করার কি প্রয়োজন?দুজনের মনের কথা দুজন তো বুঝতেই পারছি।এভাবেই চলুক।তারপর একদিন সময় সুযোগ বুঝে ওকে সরাসরি বিয়ের প্রপোজাল দিবো।সেমিস্টার শেষ করলাম।এখানে আসার আগে ওর সাথে একদিন মিট করে বলে দিলাম নিজের মনের বাসনা। সেদিন যে আমি একদম সরাসরি রিফিউজড হবো তা আমি কল্পনাতে ও ভাবিনি।ও আমাকে বলেছিলো আমাকে নাকি ওর খুব ভালো লাগে একজন ওয়েল-উইশার এর মত,ভাল বন্ধুর মত।কিন্তু প্রেমীকার মত না।হাহ্…. ততদিনে তো আমি ওকে আমার সর্বস্ব দিয়ে আঁকড়ে ধরেছি।কখনো বুঝতেই পারিনি ও আমার ছিলোইনা।কেনো যেনো অটোমেটিক্যালি আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়েছিল।
-“সে কেনো তোমাকে রিফিউজড করেছিলো? তার থেকে তুমি কোথায় কম ছিলে?(মাহি)
-“রিফিউজড এর কারণ কম থাকা বা বেশি থাকার জন্য ছিলোনা।ছিলো একটা অদ্ভুত কারণ যা আমি আজ ও মেনে নিতে পারিনি বলে ওর কাছে নির্লজ্জের মত বারবার ফোন করি।
-“যাই হোক।তুমি সেদিনের ঘটনাটা বলো। তারপর কি হয়েছিলো?(আশফি)
-“তখন আমার চোখের পানি দেখে সে অবাক হয়ে তাকিয়েছিলো।হয়তো সে ভাবেনি আমি তাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবেসে আসছি।আমি কোনো কথা বলতে পারছিলাম না।তবুও প্রশ্ন করলাম,আমি কি তার যোগ্য নই?সে উত্তর দিলো পৃথিবীর কোনো নারীর ভালোবাসা নেওয়ার যোগ্যই সে নয়।কয়েকবছর আগে ও যখন কলেজে পড়ে মানে দেশে থাকতে একটা মেয়েকে ভালোবেসেছিলো।কিন্তু ওর ভালোবাসা গ্রহণ করেনি।সে নাকি বলেছিল ও এই ভালোবাসা বিয়ে এগুলোতে বিশ্বাসী না। ও কোনোদিন কাউকে বিয়ে করবেনা ভালোবাসবেনা।
ঐ দিন ও নিজেও ওর সামনে প্রতিজ্ঞা করেছিলো সে যদি ওকে ভালো ননা বাসে বিয়ে না করে তবে ও নিজেও কোনোদিন ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবেনা ভালোবাসবে না। তারপরেও অনেকদিন ওয়েট করেছিলো মেয়েটির জন্য।একদিন জানতে পারলো মেয়েটি অন্য কাউকে বিয়ে করেছে। সেদিন ও শুনে অবাক হয়েছিলো।ও ভেবে নিলো ঐ মেয়ে তার প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গলেও ও ওর প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গবেনা। আরো বেশি দৃঢ় হলো ওর প্রতিজ্ঞা। তোমরাই বলো এমন ধরনের ইসু দেখিয়ে ও যদি আমাকে প্রত্যাখ্যান করে তাহলে সেটা আমি কিভাবে মেনে নিবো?আমি ওকে অনেক বুঝিয়েছি যাতে ও ওর অতীত ভুলে যায়। নতুন করে সবকিছু শুরু করে।প্রতিনিয়ত তা বুঝিয়ে চলেছি।আজকে যখন সুপারশপে একা ছিলাম সময় কাটছিলো না।তাই ওকে ফোন করলাম।ও আমার ভালোবাসা জানার পর থেকে আমার ফোন সহজে রিসিভ করতে চাইনা।অনেকবার ট্রাই করার পর রিসিভ করে। কিন্তু সেভাবে কথা বলতে চাইনা।আজকে যখন আমি ওকে বারবার ফোন করছিলাম কথা বলার জন্য ও ফোনটা রিসিভ করে আমার সাথে অনেক মিস বিহেভ করলো।তখন আমার ও প্রচন্ড রাগ হয়ে গিয়েছিলো তাই আমি ওকে সহ ও যাকে ভালোবাসতো তাকে নিয়ে কিছু রাফ কথা বলেছিলাম।যেটা ও সহ্য করতে না পেরে আমাকে বললো আমার লাশ ও যদি ওর সামনে যায় তাও ও আমাকে কোনোদিন বিয়ে করবেনা।
-“আলিশা……(আশফি)
-“আশফি প্লিজ আমাকে কোনো শান্তনা দিওনা। আমি এটা খুব অপছন্দ করি।তোমরা তো এটাই বলবে যে ভালোবাসাটা একতরফা।তাহলে ও কেনো আমার সাথে এতোগুলো বছর এতো ক্লোজলি মিশলো?
-“ক্লোজলি বলতে?(আশফি)
-“ক্লোজলি বলতে তোমরা যেটা ভাবছো সেটা নয়।
-“হুম বুঝেছি।আচ্ছা ছেলেটা তাহলে বাঙ্গালী?
-“হুম।না হলে ওকে চোখ বন্ধ করে নিজের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে দিতাম না।
মাহি আলিশার মাঝের কিছু কথা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।ও এটাই ভাবছে ১০ বছর আগে যার সাথে ওর এরকম ধরনের কিছু কথা হয়েছিলো ও সেই নয়তো?কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব?আলিশা যার কথা বলছে সে তো ইংল্যান্ড থাকে।তার মানে ও কি ইংল্যান্ড চলে গিয়েছে? এমন হাজার ধরনের চিন্তা ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে এখন।
(আগে গল্পগুলো রেগুলার পোস্ট করতাম কারণ তখন এক পর্ব লেখার মাঝেই পরের পর্বের ধারনা মাথায় চলে আসতো।কিন্তু আজ কাল মনেই কিছু আসেনা দুই তিন দিন চলে যাওয়ার পরও।লেখার মন নষ্ট হয়ে গেছে।যাই হোক এতো আবেগ ঝাড়বোনা। কিছু কথা বলি আপনাদের। আমার গল্পে রোমান্টিকতা আছে।অনেকটাই আছে।গল্পের সাথে তাল মিলিয়ে সেগুলো দিই।১/২ লাইন পর পর ই রোমান্স ঢেলে দিইনা।গল্প উপন্যাসে দুটো নায়ক নায়িকার মনের অনুভূতি ভালোবাসা বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ করা হয়ে থাকে।রোমান্স দিয়ে,আবেগ দিয়ে,কথা দিয়ে বিভিন্নরকম উপায়ে। তো আমিও তার সবটাই প্রয়োগ করছি গল্পে। আপনারা যদি এই রোমান্সগুলো উপন্যাসে মেনে নিতে পারেন তাহলে গল্পে কেনো পারেন না বলেন তো?আপনারা কি কখনো হূমায়ন আহমেদের লিখা পড়েন নি?হয়তো পড়েন নি। আমি কিন্তু আমার লিখা তার সাথে তুলনা করছিনা। বাদ দিই হূমায়ন স্যারের সাবজেক্ট। আচ্ছা আমি বুঝেছি, উপন্যাস গুলো বই হয়ে ছাপা হয়ে বেরিয়েছে তাই উপন্যাসের রোমান্স গুলো রোমান্স।আর আমি ফেসবুকে লিখালিখি করি বলে সেগুলো রোমান্স না সেগুলো বাংলা চ* তাইনা?আপনাদের যদি তাই মনে হয় তাহলে আপনাদের কোন প্রধানমন্ত্রী এসে বলেছে আমার গল্প পড়তে?দূরে থাকুন’ না?১০০ গজ দূরে থাকুন।কিন্তু গল্প পড়বেন ও আবার বাজে কথা ও বলবেন?আপনাদের জন্য গল্প লিখি বলে কি আমার মাথা বেঁচে দিয়েছি আপনাদের কাছে?যে আপনাদের সবকিছু মেনে নিবো?সমালোচনা সহ্য করতে রাজি আছি কিন্তু বাজে কথা শুনতে আমি রাজি নই।কত বাজে কথা সহ্য করা যায়?সহ্যের একটা লিমিটেশন থাকে।
জানি আপনাদের এসব বলে লাভ নেই।সেই আমাদের মত রাইটারাই পঁচবো। তাই ভেবে নিয়েছি ফেসবুকে লিখালিখির পর্ব শেষ করে দিবো চিরতরে।উপন্যাস সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করে উপন্যাস বই লিখবো যদি কোনোদিন এমন কোনো যোগ্যতা অর্জন করতে পারি। কিন্তু ফেসবুকে আর লিখবোনা। এই গল্পটি ও খুব দ্রুত শেষ করে দিচ্ছি।)

রোমান্টিক_অত্যাচার -২ পর্ব-১১

0

রোমান্টিক_অত্যাচার -২
পর্ব-১১
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
মাহিঃ ওর বাহিরটা যতোটাই কঠোর হোক তার থেকেও হাজার গুণ বেশি কোমল ওর ভেতোরটা। আজকের কাজটার জন্য হয়তো এর থেকেও বেশি পরিমাণ শাস্তি প্রযোয্য ছিলো আমার জন্য।কিন্তু তা তো পেলামই না তার বিপরীতে অজস্র অজস্র প্রেম সোহাগ পেলাম।প্রতিদিন ওর আদর সোহাগের প্রতি আমার ঝোকটা যেনো বেড়েই চলেছে।মনে হয় সবকিছু যেনো প্রথম দিনের মত নতুন করেই পাচ্ছি ওর থেকে। ওর ছোঁয়াতে আমার শরীরের কম্পন যেনো সেই প্রথম দিনের মত করেই বেড়ে উঠে। এইতো এই ভর সন্ধ্যাবেলাতেও ওকে জাপটে ধরে ওর বুকে মাথা পেতে ওর মুখের দিকে চেয়ে শুয়ে আছি।ওকে সর্বক্ষণ দেখতে থাকলেও আমার নয়নদুটো যেনো তুষ্ট হতে চাইনা। এতো নিঁখুত করে মায়া লাগিয়ে কি করে সৃষ্টি করেছে বিধাতা? এই মায়া টা যেনো আরো বেশি জেগে উঠে ও যখন চোখদুটো বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে থাকে। বাইরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, জানালা খোলা,সাদা মসৃণ কাপড়ের পর্দাটা উড়তেই আছে।বিদ্যুতের আলোটা ওর মুখের মাঝে এসে পড়ছে।লাইটা অফ রেখেছি।বাইরের ঝুম বৃষ্টির আওয়াজটা স্পষ্টভাবে কানে না আসলেও বৃষ্টি ঝরার গতি দেখে বুঝতে পারছি পুরো সন্ধ্যাটা এখন লাগামহীন বর্ষণমুখর।যা এক অনন্যময় রোমাঞ্চকর মুহূর্ত সৃষ্টি করছে।বিয়ের পর আজই এই প্রথম মনোমুগ্ধকর সন্ধ্যা পেলাম আমি আমার সোহাগরাজের সাথে। কিন্তু এমন সময়ই পেলাম যখন বিদ্যুতগতিতে শরীরের শিহরণ প্রসারিত হচ্ছে কিন্তু নিজেকে ওর কাছে সঁপে দিতে পারছিনা।এ যে খুবই সহ্যাতীত এক জালা।ওর মুখে বিদ্যুতের দ্যুতি যতবারই এসে পড়ছে ততবারই ওকে দেখতে আলোকরাজের মত মনে হচ্ছে।অন্ধকার রাজ্যের মাঝে সোহাগরাজের মুখে পড়া বিদ্যুতের দ্যুতি তাকে কতোটা আকর্ষিত করছে আমাকে তা কি সে জানে?ওর সোহাগ পাওয়ার মাতাল উন্মাদনা জেগেছে আমার মাঝে।
আশফিঃএই যে মহারানী? সেই তখন আমার মুখের উপর পড়ে আমাকে কি দেখা হচ্ছে? হুম?
-“কি করে বুঝলে?তুমি তো চোখ বন্ধ করে আছো।
-“তুমি আমার কতোটা কাছে আছো দেখেছো? কতোটুকু দুরত্ব আছে তোমার আর আমার মুখের মাঝে?তুমি আমার দিকে একনজরে তাকিয়ে আছো তা তো আমার মুখের উপর ঝু্কে থাকা দেখেই বুঝতে পারছি।
-“তাহলে কথা না বলে চোখ বন্ধ করে ছিলে কেনো?
-“কিছু পাওয়ার আশায় ছিলাম।যেভাবে তাকিয়ে দেখছিলে তাতে তো মনে হচ্ছে……..!!
-“কি মনে হচ্ছে?
-“মনে হচ্ছে এই বুঝি আমার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করে দিবে।
-“ও আচ্ছা।তো তুমি সেই অপেক্ষাতে ছিলে?
-“হুম।নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছিলাম।ভেবেছিলাম এই বুঝি বর্ষণের ন্যায় আমার বুকে চুমুর বর্ষণ বয়ে যাবে।কিন্তু সেই অপক্ষার অবসান তো আর ঘটালেনা।তাই চোখ খুলতে বাধ্য হলাম।
-“কিন্তু তারপর তো সেই থেমেই যেতে হবে। আমি যে মনে মনে কাতর হয়ে পড়ছিলাম তোমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য। খুব কষ্ট হয় জানো যখন মনে সোহাগ পাওয়ার কাতরতা জাগে কিন্তু সেই সোহাগ পাওয়ার কাতরতা মেটাতে পারিনা।
-“দুজনের পরিপূর্ণ মিলনই যে সোহাগ তা তোমাকে কে বলেছে।সোহাগ কি তা কিভাবে কিভাবে উপভোগ করা যায় তা তুমি আজও বুঝতে পারলেনা? যখন তোমার ইচ্ছা হলো আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ার তখন ঝাপিযে পড়তে।নিজেকে থামিয়ে সেই কাতরতা মাটি চাপা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এগুলো যে প্রাকৃতিক তৃষ্ণা।সেই তৃষ্ণা কতক্ষণ না মিটিয়ে থাকতে পারবে বলো?তাই যখন যেমন ইচ্ছা হবে ঠিক তখনই সেই ইচ্ছাটাকে পূরণ করে নিবে।
-“তাতে যদি তৃষ্ণা আরো বেশি বেড়ে যায়?
-“তাহলে আমার কাছে থাকা বন্ধ করে দাও।
-“রাগ করছো কেনো? আমি তো আমার মনের চাহিদা ব্যক্ত করলাম।
-“যে চাহিদা ব্যক্ত করে তা পূরণ করতে পারবেনা সেই চাহিদা ব্যক্ত করার কোনো দরকার আমি দেখিনা।
-“আচ্ছা আমি বুঝেছি।
-“কি বুঝেছো?আমি যা বোঝাই তুমি তার মাঝ থেকে হাজারটা এক্সকিউজ বের করো এটাই আমার ভালো লাগেনা।
-“আচ্ছা আর করবোনা। সরি।আমি তো বুঝতে পেরেছি তুমি আমাকে যা বোছাতে চেয়েছো।
-“কি বোঝাতে চেয়েছি বলো তো?
-“যখন যা মন চাইবে তখন তাই করবো। না মানে সেটা শুধু তোমার বিষয়ে।
-“হুম।তো শুরু করো। এখন যা মন চাইছিলো।
-“ইশ এভাবে বলে কয়ে এসব জিনিস করা যায়?তুমি যখন চোখ বন্ধ করে ছিলে তখন তো তুমি আর জানতেনা যে আমার মন কি চাইছিলো তখন না হয় করতে পারতাম। এখন তো কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে।
-“কে বলেছিলো আমি জানতাম না?আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম তোমার মন এখন আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য ডাকছে আর আমি সেই ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য সেই তখন থেকে প্রস্তুত হয়ে আছি। আর এখন তুমি এসে উল্টা পাল্টা এক্সকিউজ দেখালে আমি সেটা মেনে নিবো?
-“না প্লিজ।আমার ভীষণ লজ্জা লাগবে।
-“আমি বুঝিনা।থেকে থেকে তোমার এই লজ্জাটা আসে কোন দেশ থেকে?
কিছু সময় আমার প্যান্ট খোলার জন্য ও রেডি থাকো আবার কিছু সময় বাসর ঘরের নতুন বৌ এর মত ভাব করো।এগুলোর মানেটা কি হ্যা?
-“আমি জানিনা তো। যখন আমার যেমন লাগে তখন আমি তেমনই তো বলবো।
-“তার মানে এখন তোমার লজ্জা করছে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়তে, তাইতো?
-“ওর বুকের উপর থেকে মাথা তুলে উঠে বসলাম।
আর শুধু মাথা ঝাকিয়ে ওর প্রশ্নের উত্তর দিলাম।
-“হুমম।আমাকে তো এটা ভুললে চলবেনা,লজ্জাই নারীর ভূষণ।সেটা যখন তখন আসতে পারে তাদের মাঝে।আর সেই লজ্জার বাঁধ ভেঙ্গে দেওয়ার গুরু দায়িত্বটাও আমাদেরই নিতে হয়।
আমি বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ওকে কোলে তুলে জানালার কাছে এসে দাড়ালাম।তারপর আস্তে করে ওকে নামিয়ে জানালার একদম সামনে দাড় করালাম।বৃষ্টির ঝাপটা এসে ওর মুখটা ভিজিয়ে দিচ্ছে।
-“বৃষ্টির ঝাপটা যে আমার মুখের এসে লাগছে।
-“লাগুক।এটুকুতে কিছু হবেনা।সেটা মুছে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।তখন রুমে এসে তোমাকে যখন দেখলাম বৃষ্টির ঝাপটা তোমার মুখে এসে তোমার মুখ আর মুখের উপর পড়ে থাকা চুল গুলোকে ভিজিয়ে দিয়েছে তখন তোমাকে দেখতে সেই বর্ষণমুখর প্রকৃতির মত সতেজ আর উজ্জল লাগছিলো।দেখোনা, বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর সবুজ প্রকৃতিকে কেমন প্রাণবন্ত আর সতেজ লাগে।পুরো প্রকৃতিটাকে ধুয়ে দিয়ে যায়। ঠিক তেমন দেখাচ্ছিলো তখন তোমাকে।
-“তাহলে পুরা নিজেকে বৃষ্টিতে ভিজালে আরো সতেজ আরো উজ্জল লাগবে আমাকে?
-“হুম।কিন্তু তাই বলে এখন বৃষ্টিতে ভিজার আবদার করোনা।সেটা কিন্তু আমি একদম মানবোনা।
-“আমি জানতাম তুমি এটাই বলবে।এতোটা নিষ্ঠুর হইয়োনা প্লিজ।কতদিন বৃষ্টিতে ভিজিনা বলো।কবে ভিজেছি সেটাও মনে নেই। চলোনা এখন একটু ভিজি। কিচ্ছু হবেনা।সত্যি বলছি।
-“তুমি জানো বৃষ্টির পানি এখন কতো ঠান্ডা।আজকে সারাদিন স্নো পড়েছে।এই সময়ের বৃষ্টিটা একদম ভালো নয়।অসুখের কারণ হতে পারে।
কথাগুলো শুনে মুখটা ফুলিয়ে পুরা টমেটো করে রাখলো।রাগ করে চলেই যাচ্ছিলো পেছোন থেকে ওর কোমড়টা জড়িয়ে ধরে ওকে আমার বুকের সাথে লাগিয়ে ধরলাম।তারপর বললাম,
-“তুমি বৃষ্টিতে ভিজতে পারছোনা বলে এভাবে আমার উপর রাগ করে চলে যাচ্ছিলে?আমি যদি আমার ভালোবাসার বৃষ্টিতে তোমাকে ভিজিয়ে দিই, তাহলে তুমি ভিজবেনা?
-“বুঝতে পারছিলামনা ওর কথার উত্তরটা কিভাবে দিবো।এতো আমার কাছে স্বর্গীয় সুখের থেকে কম কিছু নয়।সেখানে এই প্রাকৃতিক বর্ষণ ও হার মানবে।
-“কি হলো,উত্তরটা দিলেনা?তার মানে তুমি চাওনা।ঠিক আছে।
-“না না।আমি কি একবার ও বলেছি?আমি চাইনা?
-“হ্যা ও তো বলোনি।
-“তুমি কি বুঝোনা, এসব বিষয়ে মেয়েরা সরাসরি কখনো সম্মতি দিতে পারেনা।
-“জানি তো।কিন্তু তাও শুনতে ইচ্ছা হচ্ছিলো।
কথা চলছিলো তার মাঝখানে হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে উঠলো। আজকে যেনো বৃষ্টি থামতেই চাইছেনা।বৃষ্টির মাঝে ও যেনো এক উন্মাদনা কাজ করছে। বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজে মাহি চমকে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার বুকে মুখ গুজে রইলো।আমি ওর মুখটা তুলে ধরলাম।আবার ও সেই জানারার সামনে গিয়ে দুজনে দাড়ালাম।ও আমার দিকে উল্টোপাশ করে ঘুরে আমার বুকের সাথে মিশে দাড়িয়ে আছে।আমি ওর কোমড় জড়িয়ে পেটের উপর হাত রেখে দাড়িয়ে আছি।বৃষ্টির ঝাপটা এসে দুজনের মুখই ভিজিয়ে দিচ্ছে।মাহি চোখদুটো বন্ধ করে আছে।আমি আগে থেকেই জামা ছাড়া ছিলাম।গা পুরা খালি। ওর গায়ে থাকা পাতলা কোটিটা খুলে ফেললাম।নিচে স্লিভলেস একটা টপস পড়া ছিলো।পিঠটা অনেকটাই ফাঁকা দেখা যাচ্ছে।আমি পিঠের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে কাঁধের একপাশে রেখে ঘাড়ে চুমু দিতে শুরু করলাম।তাতে ও অনেকটা শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরলো।ওর পেটের উপর আমার হাত দুটো ছিলো।আমার হাতের উপর হাত হাত রেখে ছিলো।তারপর ওর পিঠে সামান্য নিচে চুমু দিচ্ছিলাম।চুমুর দেওয়ার পরিমাণ আস্তে আস্তে বেড়েই চলছিলো। আর তার সাথে আমার অস্থিরতাও বাড়ছিলো।আমার চুমুতে হালকা ভিজে যাচ্ছিলো ওর পিঠ আর ঘাড়।ওকে ঘুড়িয়ে ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁট বসিয়ে চুমু দিতে শুরু করলাম।সাথে মাহিও আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার ঠোঁটে চুমু দিচ্ছিলো।ওর চোখ দুটো বন্ধ ছিলো।যতবারই ওর কাছে এসেছি বা ও নিজেও আমার কাছে এসেছে, ভালোবাসা বিনিময়ের সময় ততবারই ওর চোখ দুটো বন্ধ থাকে। আজ ও তাই।ঠোঁট ছেড়ে যখন ওর গলাতে নামবো তখনই ফোনটা বেজে উঠলো। মাহি তো আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। আরো অনেক কিছু চাইছে আমার থেকে।এর মাঝে বিরতি ঘটাতে আমার খুব খারাপ লাগছে।কিন্তু ফোনটা বেজেই চলেছে। ফোনের রিংটা মাহির কানে পৌঁছেছে কিনা জানিনা তবে আমাকে ছাড়ার কোনো নাম গন্ধই নেই। ফোনটা রিসিভ করতে পারলাম না।আচমকাই মাহি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। আমার কাছে এসে আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমার শরীরের উপর উঠে শুয়ে পড়লো।মাথাটা উচুঁ করে রেখেছিলো।কেমন যেনো এক অদ্ভুদ মায়াবী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার চোখের দিকে।আমি ওর চুলের ফাঁক দিয়ে ঘাড়ে হাত দিলাম।ওর মুখটা আমার মুখের কাছে এগিয়ে নিতেই ও আমার ঠোঁটে চুমু দেওয়া শুরু করলো।তারপর গালটাও ভিজিয়ে দিলো। কানে চুমু দিয়ে আমার গলার কাছে নেমে এলো। মাতালের মত চুমু দিয়ে যাচ্ছে গলাতে।আমি ওর পিঠ চেপে ধরে আছি। আবার ও ফোনের রিংটা বেজে উঠলো।এবার মনে হচ্ছে ফোনটা রিসিভ করা প্রয়োজন।দরকারি ফোন বলেই মনে হচ্ছে।না হলে কেউ এতোবার ফোন করে। কিন্তু মাহির তো এদিকে কোনো হুশ নেই।চুমু দিতে দিতে আমার গলা,বুক সব ভিজিয়ে দিচ্ছে।কিভাবে ওকে থামতে বলবো বুঝতে পারছিনা।
চলবে।

রোমান্টিক_অত্যাচার-২ পর্ব-১০

3

রোমান্টিক_অত্যাচার-২
পর্ব-১০
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
মাহিঃ সামনে এটা কে দাড়িয়ে আছে? ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।ব্রেকটা না কষলেই তো ধাক্কা লাগিয়ে দিতাম।
আলিশাঃ গাড়ি থেকে নেমে মাহির গাড়ির কাছে গেলাম।সামনে যাকে দেখলাম তাকে দেখে আমারই তো কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে।যেভাবে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আছে যখন তখন ব্লাস্ট হতে পারে।
মাহিঃ আমি তো শুধু গাড়ির ভেতোর বসে আছি। আজকে আর আমি গাড়ি থেকে নামছিনা। সামনে আমার যে বিশাল দেহের এক হিংস্রমানব দাড়িয়ে আছে।সে আর কেউ নয় সে আশফি চৌধুরী। আমি জানতাম গার্ডগুলো ওকে জানিয়ে দিবে।যেভাবে তাকিয়ে আছে তা দেখে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও ভয়ে দৌড়াবে।
★২০ মিনিট পর★
মাহিঃ এটা কি ধরনের শাসন আমি বুঝতে পারছিনা।ঘরের দরজা আটকে সেই তখন থেকে শুধু তাকিয়েই আছে। যেভাবে তাকিয়ে আছে তাতে তো মনে হচ্ছে যখন তখন আমার পিঠে তাল পড়বে।
আমি তো রুমের এক কোণে গুটিসুটি মেরে দাড়িয়ে আছি।কখন হাঁক তুলবে সেই অপেক্ষায়।দরজাটা ও বন্ধ করে রেখেছে যাতে পালাতে না পারি। এইতো…. এগিয়ে আসছে আমার দিকে।আমার একদম কাছে চলে এসেছে।
-আশফি তুমি আমাকে মারবে নাকি?
কথাটি শেষ করার আগেই আমার হাতটা ধরে বিছানার উপর বসিয়ে দিলো।
আশফিঃ সবকিছুর একটা লিমিটেশন থাকে। আর সেটা যদি কেউ জেনে বুঝে ক্রস করে তাহলে তার সাথে আমি কতোটা খারাপ করতে পারি তা তুমি ভালোই করেই জানো। অনেক সহ্য করেছি। আজকে আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়েছো। ভালোবেসে যেহেতু তোমাকে আমি কিছু বোঝাতে পারলামনা তাই খারাপ পথটাই আমাকে অবলম্বন করতে হবে।
মাহিঃ কি করতে চাইছো তুমি? আমার কথার উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো।কিন্তু দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে গেলো মনে হচ্ছে।আমি দৌড়ে দরজার কাছে গেলাম সেটা দেখার জন্য যে সত্যি দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে গেছে নাকি।হ্যা ও তাই ই করে গেছে। এ কেমন ধরনের শাস্তি দিচ্ছে ও এভাবে ঘরের ভেতোর আটকে রেখে?কতক্ষণ এভাবে ঘরে বন্দী হয়ে বসে থাকতে পারবো? আমার তো দম আটকে আসবে। এটা কি ধরনের শাস্তি দিচ্ছে আশফি?
আশফিঃজি ড.। আপনি যদি একটু কষ্ট করে আসতেন তাহলে ভালো হতো।ওর একটু চেকআপটা করানোর প্রয়োজন ছিলো। ওকে তাহলে আপনি চলে আসুন।
আলিশাঃআশফি তুমি পুরো ব্যাপারটা আসলে জানোনা।আমিই আসলে……..।
আশফিঃআমি জানতেও চাইনা।ওকে নিয়ে কোনো সুপারিশ করো না আলিশা।আমি সেগুলো শোনার মুডে নেই।
আলিশাঃতুমি আমার কথাটা শুনো আগে।
আশফিঃ কি শুনবো? এগুলোই তো বলবে যে তুমি ওকে বলেছিলে এসব করতে? তাও তো আমি ব্যাপারটা মেনে নিবোনা।কারণ ও কি এডাল্ট নয়?ওর কি অজানা আছে যে এসময় জার্নি বা ড্রাইভিং থেকে দূরে থাকতে হয়?
ডক্টরঃ আশফি?
আশফিঃএসে গেছেন? প্লিজ চলুন ওর চেকআপটা করানো খুবই জরুরি।
মাহিঃ ড. এসে আমার চেকআপ করা শুরু করলো। বুঝতে পারলাম না।হঠাৎ করে ড.কে খবর দেওয়ার কি হলো?কিন্তু ও তো রুমে আসলোনা।ও বুঝি বাইরেই দাড়িয়ে আছে।ড. চেকআপ করে আমাকে কিছু না বলে বাইরে বেরিয়ে গেলো।একটু টেনশনে পড়ে গেলাম।কি করবো বাইরে গিয়ে শুনবো ড.কি বলছে?না থাক তাতে যদি ও আবার রেগে যায়?
আশফিঃকেমন দেখলেন ড.?
ডক্টরঃ চিন্তা করার মত কোনো বিষয় হয়নি মি. আশফি।তবে সাবধানের তো মার নেই।প্রথম প্রেগন্যান্সি তো অনেক কেয়ারফুল থাকতে হবে। আর ওর বোধহয় ঘুমটা এখনো ঠিক হচ্ছেনা। কড়া ডোজের ঘুমের মেডিসিন দিয়েছি।সেটা খাইয়ে দিবেন দুপুরের খাবারের পর।আর আগের যে মেডিসিনগুলো দিয়েছি সেগুলো যেনো একটা বেলাও মিস না যায়।
আশফিঃওকে।থ্যাংকস ড.।
ডক্টরঃ এটা আমার কর্তব্য। এখন তাহলে আমি আসি।
আশফিঃজি চলুন আপনাকে এগিয়ে দিই।
মাহিঃ চুপটি করে বিছানার উপর বসে আছি।না জানি কি বলেছে ড.। সব ঠিক আছে তো?কিছুক্ষণ বাদে আশফি রুমে ঢুকলো। কিন্তু আমার দিকে একবারও তাকালোনা।অফিসের জন্য বের হবে বোধহয়।বেচারা আমার জন্য সেই অফিস থেকে আবার ব্যাক করেছে। আমি তো বেশিক্ষণ ড্রাইভিংটা করতাম না। একটু বেশি বেশি করে ছেলেটা।ওর যা করে তাতে মনে হয় আমিই যেনো পৃথিবীর সর্বপ্রথম গর্ভবতী।
আশফিঃআমি না আসা পর্যন্ত এই ঘর থেকে এক পা বাইরে বের হবেনা।তোমার যা প্রয়োজন হবে সব ওরা(সার্ভেন্টস)এসে করে দিয়ে যাবে।আর মেডিসিনটা ও ওরা এসে দিয়ে যাবে।
মাহিঃ তুমি কি বেশিই করছোনা?
-ও চলে যাচ্ছিলো।আমার কথাটা শুনে দাড়িয়ে গেলো।
আশফিঃওর এই একটা বাক্য শুনে আমার ঠান্ডা মস্তিষ্ক আবার বিগড়ে গেলো।ওর কাছে এসে ওকে ধাক্কা দিয়ে ঠাস করে বিছানায় বসিয়ে দিলাম।
-তোমার কাছে যদি আমার এই বিষয়গুলো বেশি মনে হয় তাহলে তুমি যা করছো সেগুলো কি?খুব কম? ফাইন।আমি বেশি বেশি করছি।তোমার কাছে ব্যাপারটা এমনই মনে হচ্ছে।তাহলে সেই বেশি বেশিটাই আজ থেকে শুরু করবো।
ওকে রেখে বাইরে চলে এলাম।তবে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম বাহির থেকে। কারণ আমি জানি ও ঘরে বসে থাকা মেয়ে নয়।আর ও বাইরে থাকা মানেই আমার টেনশন।ওর কাছে ওর বিষয়টা খুব ইজি মনে হচ্ছে।কিন্তু আমার কাছে সেটা ইজি নয়।ওর সামান্য কোনো ভুলের জন্য যদি বড় কোনো কিছু ত্যাগ করা লাগে তবে সেটা আমি মেনে নিতে পারবোনা। সেটা আমার সহ্য সীমার বাইরে চলে যাবে।ওকে এভাবেই রেখে চলে গেলাম দরজাটা লক করে।ভেতোর থেকে অনেকবার ডাকাডাকি করছে আমাকে।কিন্তু কোনো সাড়া দিলাম না। এতো পরিমাণ রাগ হচ্ছে ওর কথা আর ওর কার্যকলাপে যা বলার মত নয়।সবথেকে বেশি রাগ হচ্ছে এটা দেখে যে বিষয় নিয়ে আমি যতোটা চিন্তিত তার এক অংশও মাহি চিন্তিত নয়। ওখান থেকে সোজা অফিসে চলে এলাম।
মাহিঃ ও কি এটা ঠিক করলো?এভাবে আমি কতক্ষণ ঘরে বসে থাকবো। ২ ঘন্টা পার হয়ে গেলো। এর মাঝে আলিশা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে দরজাটা খোলার। কিন্তু সেটা তো আর আশফি ছাড়া খুলতে পারবেনা। চাবিটা তো ওর কাছেই। রাগ যা হচ্ছে ওর উপর। ও না আসা পর্যন্ত এভাবে থাকতে হবে আমাকে? জানালার কাছে এসে চুপচাপ দাড়িয়ে আছি। আকাশের অবস্থা ভালো নয়।যে কোনো সময় ঝপ করে বৃষ্টি নামবে।ভালোই হবে।আজকে মনটা আমার ও খারাপ।আকাশের মনও হয়তো খারাপ।দুজনে সন্ধি করবো আজ।
আলিশাঃআশফিটা কি বুঝতে পারলাম না।এভাবে মেয়েটাকে আটকে রাখার কোনো মানে হয়?না খেয়ে আছে মাহি।খেতে দিবোই বা কি করে?কতক্ষণ না খেয়ে থাকবে ও?ফোন করছি তখন থেকে ফোনটাও তুলছেনা। আশফিটা একটু বেশিই কড়াকড়ি করছে।নাহ্ এভাবে বসে থেকে সময় নষ্ট হচ্ছে।তার চেয়ে বরং ওর অফিসেই যাই।না হলে তো ওকে আর জানাতে পারছিনা।সোজা ওর অফিসে চলে এলাম।ওর সেক্রেটারির সাথে কথা হলো।মাত্রই নাকি কনফারেন্স রুমে চলে গেছে। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এতো কষ্ট করে যখন এসেছি তখন একটু না হয় অপেক্ষা করি। উফ অপেক্ষা করতে করতে আমি টায়ার্ড।আর পারছিনা এভাবে বসে থাকতে।এদিকে মাহি ও ঘরে বন্দী হয়ে আছে।
আশফিটা কি পাগল হয়ে গেলো বুঝতে পারছিনা। ওকে না পেয়ে চলে যাচ্ছিলাম পেছন থেকে ওর গলার আওয়াজ পেয়ে থেমে গেলাম।হ্যা ও বেরিয়েছে মিটিং শেষ করে।আমাকে দেখে ও আমার কাছে এগিয়ে এলো।
আশফিঃআলিশা তুমি?
আলিশাঃহ্যা আমি। কি আর করবো।তুমি মাহিকে ওভাবে আটকে রেখে এসেছো ঘরে।ওর কি……
আশফিঃতো তুমি এখানে ওর জন্য সুপারিশ করতে এসেছো?
আলিশাঃআশফি…??
আশফিঃএসেই যখন পড়েছো তাহলে আর একটু ওয়েট করো আমি এক্ষনি বাসায় ফিরবো।
আলিশাঃওকে।পুরো এ্যাংগ্রি বার্ড একটা।১০ মিনিট পর আমাকে নিয়ে আশফি বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলো।বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ওয়েদার এর অবস্থা খুবই খারাপ।স্নো পড়ছে বৃষ্টির সঙ্গে।
-একি তুমি সুপারশপের সামনে এলে যে?
আশফিঃভেতোরে গেলেই বুঝতে পারবে।
আলিশাঃআশফি নানানরকম খাবার কিনছে।
-এতো খাবার কিনছো যে? বাসায় তো রান্না হয়েছে।
আশফিঃএগুলো আমার মহারানীর জন্য।
আলিশাঃযাক তাহলে মাহির খাওয়ার কথা তোমার মনে পড়লো। বেচারি সেই সকাল ১০ টার পর থেকে না খেয়ে রুমের মধ্যে একা বসে আছে। ওকে যে গিয়ে একটু দেখবো সেই উপায়টা ও রেখে যাওনি।কি হলো তুমি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আমি আবার কি করলাম?
আশফিঃআমি আসার পর থেকে ওকে খেতে দাওনি?
আলিশাঃদেবো কি করে তুমি তো চাবিটা তোমার সাথে করেই নিয়ে গেছো।
আশফিঃএরকম একটা ভুল আমি কি করে করতে পারলাম?তখন রাগের মাথায় ওদের কাছে চাবিটাও দিয়ে আসিনি। দুপুরের পর যে ওর কিছু মেডিসিন ছিলো সেগুলো ও নিশ্চই খাওয়া হয়নি।ও ঠিক আছে তো?যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে?ওকে কন্ট্রোল করতে গিয়ে আমি ওর কোনো ক্ষতি করে ফেললাম না তো।
আলিশাঃকি ভাবছো? দেখো বাইরের অবস্থা কি খারাপ।বাসায় যাবো কি করে বুঝতে পারছিনা।
আশফিঃএক্ষণি বেরোতে হবে আমাদের।তাড়াতাড়ি চলো।
-আরে ভাই কোথায় যাচ্ছেন?দেখছেন না বাইরের কি অবস্থা? ঐ দিকের রাস্তা তো পুরো ব্লক হয়ে গেছে বরফে।
আশফিঃআপনি কি দেখে এসেছেন সেটা?
-আরে অদ্ভুত তো।দেখে আসবো কেনো?নিউজ চ্যানেলে বলছে শুনতে পারছেন না? আজব মানুষগুলো।এদের সাহায্য করাও সমস্যা।যত্তসব।
আলিশাঃআশফি তুমি এরকম মাথা গরম করছো কেনো?উনি তো ঠিকই বলছে।তুমি দেখো নিউজ চ্যানেলে এখনো দেখাচ্ছে রাস্তাগুলো কিভাবে ব্লক হয়েছে বরফ পড়ে।আর বাইরের অবস্থাও ভীষণ খারাপ।
আশফিঃনা আলিশা আমার এক সেকেন্ডও এখন দেরি করা সম্ভব না।মাহির কিছু মেডিসিন ছিলো যা এক বেলা ও মিস না করার কথা বলেছে ড.।আর তার উপর এতক্ষণ ও না খেয়ে আছে।আমি আর ভাবতে পারছিনা।আলিশা তুমি গাড়ির চাবিটা রাখো।
ওয়েদার ঠিক হলে তারপর তুমি চলে এসো।
আলিশাঃকি বলছো তুমি এসব?আচ্ছা ঠিক আছে। আমার গাড়ি লাগবেনা। গাড়িটা তোমার প্রয়োজন।
তুমি নিয়ে যাও।আমি পরে ট্যাক্সি করে চলে আসবো।
আশফিঃনা না।এই ওয়েদারে ট্যাক্সি পেতে কষ্ট হবে তোমার।তুমি চাবি রাখো আমাকে নিয়ে ভেবোনা আমি ঠিক চলে যেতে পারবো।ওকে বাই টেক কেয়ার।
আলিশাঃআরে আরে দাড়াও।আশফি?ছেলেটা কি পাগল হয়ে গেলো। এই অবস্থাতে ও যাবে কি করে? টেনশন তো আরো একটা চাপিয়ে দিয়ে চলে গেলো। এদের ছেলেমানুষি আর নিতে পারছিনা।দুটোই মাঝে মাঝে বাচ্চা হয়ে যায়।
আশফিঃজানিনা মাহির এখন কি অবস্থা?ফোন করছি ফোনটাও তুলছেনা। ইচ্ছে করেই তুলছেনা নাকি?কিছুই বুঝতে পারছিনা।বাসায় না পৌঁছানো পর্যন্ত আমার শান্তি লাগছেনা।কি করে পারলাম আমি ওর সাথে এরকমটা করতে?কতোটা কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটা।
(বৃষ্টিতে ভিজে দৌড়ে যাচ্ছে আশফি মাহির কাছে। অবশেষে আধা ঘন্টার রাস্তা আশফি দৌড়ে ১ ঘন্টায় পৌঁছালো। গাড়িতে এলে আশফি আধা ঘন্টার মাঝে পৌঁছে যেতো।)
আশফিঃভেজা অবস্থাতেই আমি দৌড়ে রুমের দরজা খুললাম।আমাকে এভাবে আসা দেখে গার্ডস সার্ভেন্টস সবাই অবাক হয়েছে। রুমের দরজা খুলে দেখলাম মাহি জানালার সামনে দাড়িয়ে আছে।দরজা খোলার শব্দ শুনে আমার দিকে তাকালো।ওর মুখটা পুরো ভিজে আছে। জানালার সামনে দাড়িয়ে থাকার কারণে বৃষ্টিজল জানালা দিয়ে প্রবেশ করে ওর মুখটা ভিজিয়ে দিয়েছে। হয়তো ইচ্ছে করেই জানালার ভেতোরে মুখটা এগিয়ে দিয়ে রেখেছিলো ভিজতে ইচ্ছা হয়েছিলো হয়তো। আমাকে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিছানার কোনায় গিয়ে বসে পড়লো।
মাহিঃ ও এমনভাবে ভিজে এসেছে কেনো?আর আমাকে এভাবে ভিজতে দেখে না জানি এখন কি রিয়্যাক্ট করবে।আজকাল তো ওর পারমিশন ছাড়া টয়লেটে যেতেও ভয় লাগে। একি?ও দৌড়ে এসে আমার কোলের কাছে বসে পড়লো(নিচে)।আমার কোলের উপর মাথা রেখে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো। হায় আল্লাহ্ ও এমন করছে কেনো কি হয়েছে ওর?
-আশফি?কি হয়েছে তোমার?এমন কেনো করছো তুমি?আর এভাবে ভিজে আছো কেনো? প্লিজ কান্না থামাও আমার খুব ভয় করছে।
আশফিঃওর কথা শুনে আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম।আমার কান্না করা দেখে ও নিজেও কান্না শুরু করে দিয়েছে।
-তুমি ঠিক আছো তো?
মাহিঃ আমি ঠিক আছি মানে?তোমার কি হয়েছে আগে সেটা বলো।আমার খুব…..।
-ওর কার্য দেখে আমার কথা থেমে গেলো।আমার হাত দুটো আগে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে কান্না করে তারপর হাতে চুমু দেওয়া শুরু করলো।
আশফিঃআমি তোমাকে প্রমিস করেছিলাম কখনো তোমাকে কষ্ট দিবোনা। কিন্তু সেই কথা আমি রাখতে পারিনি।মাহি তুমি কি জানো আমার জীবনটা তোমার মধ্যে বিদ্যমান। আল্লাহ্ না করুক তোমার কিছু হয়ে গেলে সেদিন আশফির ও পৃথিবীতে কোনো অস্তিত্ব থাকবেনা। আল্লাহ্ পাকের পর আমার বেঁচে থাকার ভরসা তুমি। আমার দেহটা আমার কাছে থাকলেও আমার আত্মাটা তোমার কাছে পড়ে থাকে। তোমার চিন্তায় আমি যে কতোটা ব্যাকুল তা যদি তোমাকে একবার দেখাতে পারতাম তাহলে হয়তো তুমি আমাকে বুঝতে। আমার কথার অমান্য করতে না।তোমাকে শাস্তি দিতে গিয়ে আমি যে কতোটা শাস্তি পাই সেটা যদি তোমাকে দেখাতে পারতাম তাহলে হয়তো তুমি আমার শাস্তির কথা চিন্তা করে নিজের প্রতি খেয়াল রাখতে।
(মাহি বিছানায় বসে আছে। আর আশফি নিচে মাহির কোলের কাছে বসে ওর হাতদুটো বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বলছে।আর চোখ দিয়ে অনর্গল বৃষ্টি বয়ে যাচ্ছে)
মাহিঃ আমি মাফ করে দাও।আর কখনো আমি তোমাকে কষ্ট দিবোনা। আমি সত্যি বুঝতে পারিনি আমার কার্যকলাপের জন্য তুমি এতোটা কষ্ট পাও। আমিও যে তোমার কষ্ট সহ্য করতে পারিনা।আমি সত্যিই খুব খারাপ।সেই শুরু থেকে তোমাকে কষ্ট দিয়ে আসছি।এমনকি তোমার জীবনে যা সব দুর্ঘটনা তা সবই আমার জন্য।
আশফিঃমাহি প্লিজ এসব কথা বন্ধ করো।আমি তোমাকে নিষেধ করেছি না এগুলো তুমি কখনোই বলবেনা। আমার আর তোমার সাথে যা হয়েছে সেগুলো আমাদের ডেসটিনি।
মাহিঃ এখন বলো তুমি এভাবে কাঁদছিলে কেনো? আর তোমার এ অবস্থা কেনো?
আশফিঃসেসব পরে বলছি। আগে তোমার খাওয়ার ব্যবস্থা করি।
মাহিঃ এই দাড়াও। কোথায় যাচ্ছো তুমি?তোমার কি অবস্থা হয়েছে সেটা তুমি দেখতে পাচ্ছোনা?আমার কাছে এসো আমি মাথা শরীর সব মুছে দিচ্ছি। এই না,একদম আমার কথা অমান্য করবেনা।১০ মিনিট দেরি করে খেলে আমার কিছু হবেনা কিন্তু তুমি ১০ মিনিট দেরি করলে আজকে আর তোমাকে দেখতে হবেনা।ভেজা জামা কাপড় খুলো আগে।
আশফিঃশাসন করা হচ্ছে আমাকে?
মাহিঃ শাসন+টেক কেয়ার।
আশফিঃআচ্ছা? তাহলে আমার জামা-কাপড়টা তুমিই খুলো।
মাহিঃ কি ভেবেছো আমি সেটা পারবোনা।দাড়াও।
-ওর কাছে গিয়ে স্যুট টাই শার্ট সব খুললাম।যখনই প্যান্টে হাত দিতে গেলাম তখনই আমার হাতটা ধরে থামিয়ে দিলো।
আশফিঃএটা থাক।আমিই খুলতে পারবো।
মাহিঃ না তা কেনো? আমিও তো খুলতে পারবো।তুমি ছাড়ো আমি খুলছি।
আশফিঃনা না সবাই দেখে ফেলবে।
মাহিঃসবাই কারা দেখে ফেলবে?
আশফিঃঐ যে ওরা?
-সামনের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখালাম।ও তখন সেদিকে দেখার জন্য ঘুরলো।সেই ফাঁকে আমি পালিয়ে এলাম ওয়াশরুমে। না হলে আজকে সত্যি সত্যি সবার সামনে ফ্লাশ করে ফেলতো।
মাহিঃ ও, আমাকে বোকা বানানো হলো?ঠিক আছে পরে দেখে নিবো।
আশফিঃওকে ডিয়ার রেডি থাকবো।
মাহিঃ পাঁজি একটা।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আগে গেলো আমার জন্য খাবার আনতে। আমি হয়তো পৃথিবীর সব থেকে বেশি ভাগ্যবতী ওর মত স্বামীকে পেয়ে।কেউ কাউকে এতোটা ভালোবাসতে পারে ওর ভালোবাসা না পেলে হয়তো তা জানতে পারতামনা। খাবার এনে আমাকে খাওয়াতে শুরু করলো।খাওয়া শেষে ও উঠে চলে যাচ্ছিলো আমি ওর হাতটা টেনে ধরলাম।
-কোথায় যাচ্ছো?আমার খাওয়া শেষ হয়নি তো।
আশফিঃখাওয়া তো শেষ। আর তো কিছু নেই।আর একটু খাবার আনবো?
মাহিঃ তার কোনো প্রয়োজন নেই।এখানেই যথেষ্ট খাবার আছে।
-আমি ওর আঙ্গুলে জড়িয়ে থাকা খাবার গুলো চেটে খেলাম ওর আঙ্গুল গুলো মুখের মধ্যে নিয়ে।
আশফিঃতো হয়েছে খাওয়া?
মাহিঃউমম…..নাহ্। আর একটু বাকি আছে।
আশফিঃআর কি বাকি আছে?
মাহিঃমিষ্টি।
-আমি ওর সামনে দাড়িয়ে ওর কলারটা ধরে ওকে কাছে টেনে ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া দিলাম।opps…..শুধু দিলাম নয় নিলামও।মিষ্টি?। তাও সেটা ১/২ মিনিট নয়। এরপর(…….)
চলবে।

রোমান্টিক অত্যাচার-২ পর্ব-০৯

0

রোমান্টিক অত্যাচার-২
পর্ব-০৯
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi

মেহেরুনঃতারপর থেকেই তার প্রতি আমার সন্দেহ দ্বিগুণ হয়েছে।

পিতাঃসন্দেহ করার আর কোনো অবকাশ নেই মেহেরুন।যে কোনো সময় রাজ্য আক্রমণ হতে পারে। আমি কিভাবে আমার রাজ্য, রাজত্যকে রক্ষা করবো?আমি যে দিশেহারা হয়ে পড়ছি।

মেহেরুনঃভেঙ্গে পড়বেন না পিতা।আপনি ভেঙ্গে পড়লে রাজ্যের বাকিসবার কি হবে। তারা তো আপনার থেকেই শক্তিসঞ্চার করে।

পিতাঃ এতদিনে ঐ গুপ্তচর আমার রাজমহলের আর রাজ্যের সকল তথ্য জেনে গেছে।

মেহেরঃতাতে কি হয়েছে? আপনি রাজ্যে সমস্ত স্থানে খবর পৌঁছে দিন। রাজ্য যে কোনো সময় হামলা হতে পারে।কোন রাজ্যের রাজা বা কারা এসব কিচ্ছু জানা নেই।সবাইকে প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে বলুন।আর হ্যা রাজ্যে যদি কোনো অচেনা বা অপরিচিত কোনো ব্যক্তিকে দেখা যায় তাহলে তাকে যেনো খুব দ্রুত রাজদরবারে উপস্থিত করা হয়।

পিতাঃ হ্যা।আর সময় অতিবাহিত করা যাবেনা।

ফালাকঃহা হা হা। এতক্ষণে রাজা জাভেদ খানের কিরূপ অবস্থা হয়েছে তা আমার দেখার ভীষণ সাধ ছিলো।

ইকরামঃআগামীতে যে আরো কত ভয়াবহ অবস্থা হবে তা যদি জানতে পারতো রাজা জাভেদ খান!

ফালাকঃআর কতোদিনই বা রাজ্য চালাতে পারবে রাজা জাভেদ।শেষ কিছুদিন না হয় একটু রাজত্য করুক নিজের রাজ্যে।তারপর তার অবস্থান কোথায় হবে শুধু তিনিই জানেন।(উপরে ইশারা করে দেখিয়ে)।

মন্ত্রীঃ সম্রাট আপনি ঠিক কোন ক্ষণে রাজ্য শেরপুর আক্রমণ করতে চাচ্ছেন আর তা কিভাবে?

ফালাকঃতা আমি আপনাদের সঠিক সময়ে জানিয়ে দিবো মন্ত্রী সাহেব।

মন্ত্রীঃ যথাইচ্ছা মহারাজ।

(এরপর রাজা ফালাক মাঝখানে ৭ দিন অতিবাহিত করলো।এদিকে রাজা জাভেদ ও তার কন্যা মেহেরুন সহ সবাই প্রস্তুতি গ্রহণ করছে যুদ্ধে মোকাবিলা করার জন্য। এরই মাঝে রাজা জাভেদ খানের ছোটো ভাইয়ের একমাত্র পুত্র জন্মগ্রহণ করলো।সেই খুশিতে রাজমহলে বড় করে উৎসবের আয়োজন করলো রাজা জাভেদ খান। ঐ ছোট্ট শিশুটির মুখটা দেখে রাজা জাভেদ খানের কেমন যেনো সব দুশ্চিন্তা উধাও হয়ে গেলো।শিশু বাচ্চাকে তিনি বড্ড ভালোবাসেন আর তার রাজকন্যা মেহেরুন ও। রাজা জাভেদ খানের আফসোস ছিলো যে তার কোনো পুত্র সন্তান নেই সেই সাথে মেহেরুনের ও।
এই খুশিতে তারা ভুলে গেলো তাদের পরিকল্পনা কি ছিলো।যেদিন উৎসব হবে সেদিন সকালে………..)

পিতাঃ মেহেরুন মা?

মেহেরুনঃজি পিতা? আদেশ করুন।

পিতাঃআরে না না আদেশ করবো কেনো?সেই সূর্যোদয়ের পর থেকে তুমি উৎসবের সব আয়োজন নিজে হাতে একাই সামলাচ্ছো।তো তুমি কখন তৈরি হবে শুনি? আর একটু পর যে বাইরে থেকে সব অতিথি চলে আসবে যে।

মেহেরুনঃপিতা আমার একমাত্র ভ্রাতার জন্ম উপলক্ষে উৎসব।সেই উৎসবে আমি কোনো ত্রুটি রাখতে চাইনা।

পিতাঃঅনেক সাধ ছিলো তোমার তাইনা? তোমার একটা ছোট্ট ভাইজান থাকবে?

মেহেরুনঃছিলো তো। তাতে কি হয়েছে? চাচাজানের পুত্র কি আমার নিজের ভাই নয়? আপনি অনেক দুঃখ পান তাইনা? আপনার রাজ্যের উত্তরাধিকারী নেই বলে।এখন তো আর দুঃখ হওয়ার কথা নয়।এ রাজ্যের ভাবিরাজা যে জন্মেছে।

পিতাঃআমার উত্তরাধিকারীনি তো অনেক আগেই জন্মেছে।সে আর কেউ নয় আমার রাজকন্যা মেহেরুন।

মেহেরুনঃবি বলছেন এসব পিতা?আমি কেনো হবো?

পিতাঃতুমি আর কোনো কথা বাড়িয়োনা তো মেহেরুন।যাও নিজের কক্ষে গিয়ে অতি শিঘ্রই তৈরি হও।

মেহেরুনঃজি পিতা।

(পেছন থেকে মেহেরুনের চাচা আরব খান তাদের পিতা কন্যার কথা সব শুনলেন আর রাগে ফুসতে থাকলেন।তিনি বড় আশাই আছেন এ রাজ্যের রাজা তিনি হতে না পারলেও তার পুত্র আজগার খান(শিশু) ভবিষ্যত উত্তরাধিকারী হবে।কিন্তু রাজা জাভেদ খানের কথা শুনে তার ক্রোধ যেনো অত্যাধিক হয়ে গেলো।সে ঐ স্থান থেকে অন্দরমহলের বাইরে চলে আসতে লাগলেন। হঠাৎ করে তার সাথে একজন মালির ধাক্কা লাগলো।সে ফুলগুলো এনেছে অন্দরমহল সাজানোর উপলক্ষ্যে। মালিটি ক্ষমা ভিক্ষা চাইলো আরব খানের কাছে। আরব খানের ক্রোধ তখন সীমাহীন ছিলো তাই সে মালিকে স্বজোড়ে থাপ্পড় মেড়ে দিলো। মালিটি তার দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঐ স্থান ত্যাগ করে চলে আসছিলো।তখন আরব খানের কেমন যেনো অদ্ভুত লাগছিলো মালিটির চেহারা।মাথায় পাগড়ি আর মুখে দাড়ি গোফের জন্য লোকটির চেহারায় বোঝা যাচ্ছিলোনা। আরব খানের কেমন যেনো সন্দেহ হলো। এ রাজ্যে বা রাজমহলে তাকে কখনো দেখা যাইনি। আরব খান খুব সচেতনভাবে মালিটিকে ধরলো এবং রাজমহলের বাগান কিনারায তাকে টানতে টানতে নিয়ে এলো। মালিটিকে বিভিন্নরকম জেরা করছিলো কিন্তু মালি কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলোনা।তখন আরব খান সিদ্ধান্ত নিলো রাজা জাভেদ খানের সামনে তাকে হাজির করবে।এ কথা শুনে মালি তার মুখ খুললো এবং সে যে ছদ্মবেশী ছিলো তা আরব খানের সামনে তার ছদ্মবেশী রূপ উপস্থাপন করলো। এই রূপ দেখে আরব খান কিছু বলার আগেই মালিটি তার পরিচয় দিলো সে মোহননগর রাজ্যে রাজা ফালাক তাজ। ফালাক তাজের অসম্ভব উপস্থিত বুদ্ধি ছিলো। সে আরব খানকে বিভিন্নরকম কথার জালে ফাঁসানোর চেষ্টা করছিলো।তাকে সাম্রাজ্যের অধিপতি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলো।রাজা ফালাক এমন তথ্য অনেক আগেই সংগ্রহ করেছিলো যে রাজা জাভেদ খানের কোনো পুত্র নেই তাই আরব খান চাই শেরপুর রাজ্যের সিংহাসনে তার পুত্রকে সে দেখতে। আরব খান প্রথম অবস্থায় রাজা ফালাকের প্রতিশ্রুতি মানতে চাইছিলোনা। কারণ সে ভাবছিলো এতে তার কি স্বার্থ?)
[#উভয়ের_কথোপকথন]

ফালাকঃআমার কি স্বার্থ তা কি আপনার জানা খুবই প্রয়োজন?

আরবঃঅবশ্যই। তুমি আমাকে ধোঁকা দিবে তা আমি পুরোপুরি নিশ্চিত। এক্ষণি আমি তোমাকে মহারাজের সামনে উপস্থিত করবো।চলো আমার সাথে।

(ফালাকের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছিলো)

ফালাকঃদাড়ান আরব সাহেব। আমার উদ্দেশ্য আপনাকে জানাতে চাই।

আরবঃকি উদ্দেশ্য?

ফালাকঃএ রাজ্যের রাজকন্যা মেহেরুনের রূপে আমি মুগ্ধ। তাকে আমি আমার রাজ্যের রানী করতে চাই। কিন্তু আপনাদের মহারাজ তাতে রাজি নন।তিনি চান তার কন্যাকে এ রাজ্যের রাজসিংহাসনে বসাতে। তার কন্যার হাতে এই সাম্রাজ্য তুলে দিতে চাই।

(কথাগুলো সম্পূর্ন বানিয়ে বললো ফালাক)

আরবঃ হ্যা। ভাইজান যে মেহেরুনকেই রাজসিংহাসনে বসাতে চাই ইহা সত্য। মেহেরুনের যে বিবাহের প্রস্তাব এসেছিলো তা তো ভাইজান আমাকে বলেনি।এতো গোপনীয়তা? তার মানে ভাইজান আমার সাথে………….। কিন্তু একটা বিষয় কি করে সম্ভব।মেহেরুনকে তার পিতামাতা আর আমরা ছাড়া বাহিরের অন্য কেউ কখনো দেখেনি।তাহলে রাজা ফালাক কি করে দেখলো?তার মানে সে আমাকে মিথ্যা কথায় ভোলাতে চাইছে।
-তুমি মিথ্যুক।রাজকন্যা মেহেরুনকে আমরা আর তার দাসী ছাড়া পৃথিবীর কেউ তার রূপ দেখেনি।তাহলে তুমি কিভাবে তাকে দেখেছো? বলো?উত্তর দাও?

ফালাকঃ অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।এই বিষয়টা আমার মাথাতে একটুও আসেনি।কথাটা অন্যদিকে ঘোরাতে হবে।
-আপনার কাছে আর কোনো কিছুই গোপন রাখতে চাইনা।কিছুদিন আগে আপনাদের রাজমহলের কর্মী সেজে রাজমহলে প্রবেশ করেছিলাম।একদিন বাগানে কাজ করছিলাম তখন রাজকন্যা মেহেরুন তার দাসীদের সঙ্গে করে বাগানে এসেছিলো ঘুরতে।অনিচ্ছাকৃতভাবে তার মুখের উপর থেকে পর্দা সরে যায় আর তখনই আমি তার রূপ দর্শন করি।আর তার পূর্বেই অন্দরমহলের ভেতরের মানুষের কাছ থেকেই আমি খবর পেয়েছি সে অনেক রূপবতী।কার নিকট থেকে পেয়েছি তা আমি বলতে ইচ্ছুক নই। কি? এখন আমাকে বিশ্বাস হয়েছে আরব খান? আমি যদি রাজকন্যা মেহেরুনকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারি তাহলে তাতে কিন্তু আপনারই সবথেকে বেশি ফায়দা। এখন আপনি ভেবে দেখুন।

(আরব খান কিছুক্ষণ ভেবে রাজা ফালাকের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করলো। এরপর ফালাক আরব খানের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করলো কিভাবে কি করে রাজা জাভেদ খানকে আটক করবে। আসলে আরব খান ছোটো থেকেই সিংহাসনে বড় ভাইকে দেখে সবসময় ঈর্ষান্বিত হতো।সে সবমসয় চাইতো রাজসিংহাসনে তাদের পিতা তাকে বসাক। কিন্তু তা হয়নি আর তা হওয়া কোনো যুক্তি ও নেই। সে ভেবে নিয়েছিলো জাভেদ খানের যেহেতু কোনো পুত্র সন্তান নেই তাই তার পুত্র সন্তান হলে তাকেই সে রাজসিংহাসনে বসানোর চিন্তা করবে।আর রাজা জাভেদ খান তা মেনে নিতে বাধ্য। কিন্তু তার সেই আশা ভরসা বিফলে গেলো যখন সে নিজে কানে শুনলো যে রাজা জাভেদ খান তার কন্যাকে রাজসিংহাসনে বসাবেন।
যা কখনোই মেনে নেওয়ার যোগ্য নয়।একজন নারীকে রাজা জাভেদ খান বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন যেখানে তারই ভাইয়ের পুত্র সন্তান রয়েছে।তাকে উপেক্ষা করে সে তার নিজের কন্যাকে সিংহাসনের অধিকার দিবের।আরব খান রাজা জাভেদ খান কে কেবল স্বার্থবাদী হিসেবে বিবেচনা করেছে।আর তাই রাজা ফালাকের সাথে সে হাত মিলিয়েছে। তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক চারিদিকে রাজা ফালাকের সৈন্যসামন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। রাজমহলের রক্ষী প্রহরী অন্যান্য লোকেরা তা বুঝতে পেরেছে যে রাজমহলে বাহিরের লোক ঢুকে পড়েছে।কিন্তু আরব খানের নিষেধাজ্ঞার কারণে কেউ কিছু করতে পারছেনা আর রাজা জাভেদ খান কে ও কিছু জানাতে পারছেনা। আরব খান তাদের ভুল বুঝিয়েছে যে এসব বাহিরের লোকদের সে আমন্ত্রণ করে এনেছে।)

ফালাকঃ মূর্খ আরব খান। রাজ্য দখলে আসার পর তোমার হাল কি হবে তা তোমার চিন্তাশক্তির বাহিরে।এতক্ষণে আমার সব সৈন্যবাহিনী রাজমহল ঘিরে ফেলেছে। সবাই বুঝতে পেরেও কিচ্ছু করতে পারছেনা।কারণ তারা অপ্রস্তুত ছিলো যে।আস্তে আস্তে সবকিছু জাভেদ খানের আয়ত্তের বাহিরে চলে আসছে।তার আর আমাদের আটকানোর ক্ষমতা থাকবেনা। সবাই আক্রমণ করা শুরু করে দিয়েছে।রাজা জাভেদ খানের সৈন্যরা যে যেমনভাবে পারছে লড়াই করছে কিন্তু তাতে কোনো সুবিধা করতে পারছেনা। মুখ থুবড়ে পড়ে পড়ে যাচ্ছে। আমি কিছু সৈন্যের সাথে লড়াই করে অন্দরমহলে প্রবেশ করলাম। উদ্দেশ্য রাজা জাভেদ খানকে বন্দি করা। সে কোন কক্ষে আছে তা আমার জানা নেই। এতক্ষণে নিশ্চই তার কানে পৌঁছে গেছে রাজা ফালাক তার দুয়ারে দাড়িয়ে তার সাথে যুদ্ধের আহ্বান করতে এসেছে। আমি রাজ্যের পেছন দিক থেকে প্রবেশ করে সামনের দিকে আসছি। একদম মাঝের যে কক্ষটি দেখলাম সেটাতেই প্রবেশ করলাম।কিন্তু একি কক্ষ যে ফাঁকা।তার মানে রাজা জাভেদ খান কি পালিয়েছে? হা হা হা। নির্বোধ পালিয়ে কতদূর যেতে পারবে।সব জায়গায় যে আমার সৈন্যরা বিস্তার করছে।কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসবো হঠাৎ মনে হলো স্নানাগার থেকে কিছু যুবতী নারীর আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আমি তো নিজেই নির্বোধ হয়ে গিয়েছি। স্নানাগার না খুঁজেই আমি বেরিয়ে যাচ্ছিলাম।

জাভেদ খানঃ আমাকে বাঁধা দিওনা।আমাকে যেতে দাও আরব। আমার কন্যা যে তার কক্ষে রয়েছে। সে ওখানে নিরাপদ নয়। তার কাছে যে এখন পর্যন্ত খবর যাইনি যে রাজমহল আক্রামণ হয়েছে। আর তুমি আমাকে এখানে লুকিয়ে রাখছো?

আরবঃভাইজান আপনাকে কি করে ওখানে যেতে দিই? আপনি ওখানে গেলে যে রাজা ফালাক তার কার্যসিদ্ধি করতে পারবেনা। আর তার কার্যসিদ্ধি করতে না পারলে আমার উদ্দেশ্য সফল হবেনা।
-ভাইজান আপনি আর ভাবীসাহেবা ঐ রাজার সামনে পড়লে যে আপনাদের হত্যা করে ফেলবে।

রানীঃআরব তুমি কি বুঝতে পারছোনা আমরা ওখানে না গেলে যে আমার একমাত্র কন্যার সর্বনাশ করে দিবে ঐ পশুতুল্য রাজা।

আরবঃভাবীসাহেবা! আপনি তো জানেন আমাদের মেহেরুন কতোটা আত্মবিশ্বাসী আর কতোটা বুদ্ধমতী সে। আর সাথে তার অস্ত শিক্ষা তো আছেই। আপনারা কেনো এতো ভাবছেন? একটু ধৈর্যধারণ করুন। মেহেরুন যদি না ফিরে আসে তাহলে আমি নিজে যাবো। তবু আপনাদের যেতে দিবোনা।

জাভেদঃ আরব?? তুমি আমাদের হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে বলছো?

ফালাকঃ আমি ধীর পায়ে স্নানাগারের দিকে এগোতে থাকলাম। স্নানাগারের পর্দা সরিয়ে যা দেখলাম তা দেখে আমার চক্ষুদ্বয় ও বিশ্বাস করতে পারছিলোনা। অর্ধনগ্ন শরীরে একজন অপরূপ সুন্দরী…. না না এ যে কম বলা হয়ে গেলো। তার যা সৌন্দর্য যাকে বলে বিশ্রি সুন্দরী।সুন্দরীশ্রেষ্ঠা সে। কিছু দাসী তাকে স্নান করাচ্ছিলো গোলাপের পাপড়ি আর দুধ মিশ্রিত পানিতে। এর আগে অনেক সুন্দরী নারীকে আমি কাছে পেয়েছি। কিন্তু এমন নারী আমি জীবনে কখনো দেখিনি। আমাকে দেখে ফেললো তার কিছু দাসী। চিৎকার দিয়েই সেই স্থান থেকে তারা পলায়ন করলো। আসলে আমার সারা শরীরে এমনকি মুখমন্ডলে রক্ত বেয়ে বেয়ে পড়ছে।অন্য মানুষের রক্ত ছিলো সেগুলো। এ নারী নিশ্চই রাজা জাভেদ খানের কন্যা মেহেরুন। এতে আর ভুল নেই। আমাকে দেখা মাত্রই সে তার অর্ধনগ্ন শরীর মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলো। কিন্তু তাতেও যে তার রূপ উপচে পড়ছিলো। আমি তার দিকে এমন মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি। মনের অজান্তেই তার অনেক নিকটে এসে দাড়িয়েছি আমি।তার গালের কোণে লাল গোলাপের একটি পাপড়ি লেগে আছে।যা তার সৌন্দর্যকে ঢেকে দিচ্ছে। আমি হাত বাড়ালাম পাপড়িটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য। আমি তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে এতোটাই মগ্ন ছিলাম যে তার হাতে একটা তড়োযার লুকায়িত ছিল তা আমি খেয়াল করিনি।হাতটা বাড়ানোর সাথে সাথেই সে তোড়ায়ারি বের করে আমার হাতে আঘাত করলো।হাতের পিছা কিছুটা কেটে গিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করলো। তখন আমার চেতনা(ঘোর) ফিরলো। আমি শুধু একবার আমার হাতে রক্তের দিকে দৃষ্টিপাত করলাম।কেনো যেনো এই আঘাতটা আমার কাছে আঘাত মনে হচ্ছিলোনা। আবারো সেই তার দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলাম।কিন্তু এবার চেতনা হারিয়ে নয়।সে আমার দিকে তড়োয়ার হাতে করে যখন আমাকে আঘাত করার জন্য এগিয়ে এলো আমি তখন তোড়ায়ারির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে দূরে সরে এলাম। আমি যে তার বিপরীতে অস্ত্র তুলতে পারছিনা। তার সুন্দর শরীরটাতে আঘাত লাগলে সে যে কষ্ট পাবে আর তার শরীরের সৌন্দর্য ও নষ্ট হবে। আমি কেবল নিজেকে তার থেকে রক্ষা করে চলেছি।তারপর তাকে আটকানোর একটা বুদ্ধি এলো মাথায়।সে যখনই আবার আমাকে আঘাত করতে এলো তখন তার হাতটা ধরে ফেললাম। সে আমার থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে এবং সেই চেষ্টা যখন সফল হলো আমি তখন তার শরীর থেকে কাপড়টা টেনে ফেলে দিলাম।সে তখন নিজের শরীর ঢাকতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।আর আমিও এটাই চাইছিলাম যাতে তার ধ্যান তার শরীর ঢাকার দিকে থাকে। সে দুহাত দিয়ে অর্ধ শরীর ঢেকে রেখেছে। আমি তার দিকে আস্তে আস্তে এগোচ্ছি। তারপর………..

[#বিষয়বস্তুঃআশফি_মাহি]

মাহিঃএই?

আশফিঃ কি হলো?

মাহিঃএবার থামো না? ঘুম আসছে খুব।

আশফিঃউফ অবশেষে তাহলে তোমার ঘুম আসলো।তারপর
ওকে আমার বুকের মধ্যে টেনে এনে জড়িয়ে ধরে দুজনে ঘুমিয়ে পড়লাম।

★সকালে নাস্তার টেবিলে★

মাহিঃ এই শুনোনা। আলিশা তো বেশ কিছুদিন হলো এসেছে।ওকে নিয়ে আমরা কোথাও তো একটু ঘুরতে ও বের হলাম না। বেচারি ঘরে বসে বোর হয়ে যাচ্ছে।

আশফিঃ হুম বিষয়টা আমিও ভেবেছি। আজকে তো একটা জরুরি মিটিং আছে বিকাল ৪ টায়। তাই আজ আর সম্ভব না। কাল আমরা একদম সকাল সকাল বেরিয়ে পড়বো। কেমন?

আলিশাঃ এই শোনো। তোমরা না একটু বেশিই ভাবছো।আমি মোটেও বোর হচ্ছিনা।মাহির সাথে আমার সময় বেশ যাচ্ছে। আমার জন্য তোমাদের এতো চাপ নিতে হবেনা।

মাহিঃ আরে এতে চাপ নেওয়ার কি আছে। আমাকে নিয়েও ও গত তিন মাস কোথাও বের হয়না। আমিও খুব বোর হচ্ছি।

আশফিঃআমিও খুব বোর হচ্ছি ডিয়ার তোমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারিনা বলে। কিন্তু কিছু তো করার নেই। এটুকু sacrifice তোমাকে করতেই হতো যে। তবে আলিশার ওসিলায় একটা সুযোগ পেয়েছো তুমি।

মাহিঃ হুহ।??

আশফিঃ মুখ ভেংচি দেওয়া হচ্ছে তাইনা।অফিস থেকে ফিরি তারপর তোমাকে দেখছি। ওকে গাইস তাহলে আমি আসি।বাই দাও আমাকে।

আলিশাঃবাই। ??

আশফিঃ কি ব্যাপার তুমি বাই বলছো না যে?

মাহিঃ কি করে বলি বলো তো। আমার তো তোমাকে কখনো চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে করেনা।

আশফিঃ এতো পাম্প করোনা ফেটে যাবো।

মাহিঃ হা হা হা। ওকে বাই। নিজের খেয়াল রেখো।

আশফিঃহুম। তা তো অবশ্যই। না হলে তোমাকে দেখবে কে? আচ্ছা বাই।

আলিশাঃ হ্যালো ডার্লিং! মনে আছে তো?

মাহিঃ কি বিষয়ে বলো তো?

আলিশাঃ ভুলে গেছো?

মাহিঃ হুমম। ও হ্যা মনে পড়েছে। ড্রাইভিং চ্যালেঞ্জ?

আলিশাঃইয়াপ। মনে পড়েছে তাহলে? ভয় পাচ্ছো নাকি?

মাহিঃ কিসের ভয়?

আলিশাঃ হেরে যাওয়ার ভয়?

মাহিঃতোমার এমন মনে হওয়ার কারন কি ডার্লিং?

আলিশাঃ না হলে তুমি ভুলে গেলে কি করে?

মাহিঃ আসলে এই ব্যাপারটা আমার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি। তাই ভুলে গেছি। কিন্তু তুমি আমার দিকে যেভাবে চ্যালেঞ্জটা ছুড়লে তাতে বিষয়টা গুরুত্ব দিতে হচ্ছে।

আলিশাঃতাহলে বেরিয়ে পড়ি?

মাহিঃ এখনি?১১ টার দিকে বেরোনোর কথা ছিলো তো।

আলিশাঃ লেট করে লাভ কি? চলো এখনি বেরিয়ে পড়ি।

মাহিঃ ওকে।তাহলে তুমি রেডি হয়ে এসো। আমিও যাচ্ছি।
-তারপর দুটো গাড়ি নিলাম। ঝামেলা হলো বের হওয়ার সময়। আসলে আশফির পারমিশন ছাড়া আমাকে বের হতে দিবেনা কেউ।আমি তো রেগে পুরো আগুন। তারপর আলিশা আধা ঘন্টা যাবত ওদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তারপর বাইরে বের হওয়ার পারমিশন নিলো। কিন্তু আমি ভাবছি বিষয়টা ওরা আশফির কানে না দিয়ে দেয়।

আলিশাঃতো মাহি? স্টার্ট?

মাহিঃ উমমম…ওকে। নাও স্টার্ট।
-দুজনে সেই গতিতে ড্রাইভিং করতে লাগলাম। কখনো ও আমাকে ওভার করছে আবার কখনো আমি ওকে ওভার করছি। আমাদের একটা টার্গেট আছে ঠিক কোথায় আমাদের প্রতিযোগিতা শেষ হবে। দারুণ লাগছে আমার।আলিশা ও অনেক এনজয় করছে বিষয়টা।

আলিশাঃ মাহি আমার সামনে চলে এসেছে। মেয়েটা ড্রাইভিং খারাপ জানেনা। ও মাই গড। মাহি কি দেখতে পাচ্ছেনা সামনে? মাহি?????

মাহিঃ হায় আল্লাহ্। আউ…..(চিৎকার দিয়ে উঠলো)

চলবে।

রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২ পর্ব-৮

0

রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২
পর্ব-৮
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi

মাহিঃকি?সেটা আবার কিভাবে?
আশফিঃএইযে গোসল করার সময় তোমার সাথে যে রোমান্সটা হবে সেটা তো গোসল করার রোমান্স।তারপর রান্না করার সময় তোমার সাথে রোমান্সটা করবো সেটা রান্না করার রোমান্স।আবার ঘুমোনোর আগে তোমার সাথে যে রোমান্সটা করি সেটা ঘুমোনোর রোমান্স। আরো আছে……..
মাহিঃথাক বুঝেছি।আর বলতে হবেনা
আশফিঃবোঝার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।তাহলে এবার শুরু করি?
-ওকে জাপটে ধরে আমার সাবান মাখা পিচ্ছিল গাল ওর দু গালের সাথে মিশিয়ে ওর গালটাও পিচ্ছিল করে দিলাম।আস্তে আস্তে ওর ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে গেলাম।তারপর ওর ঘাড়ে যখন চুমু দিতে শুরু করলাম তখন ও আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার পিঠ দু হাত দিয়ে চেপে ধরলো।আমাকে এভাবে চেপে ধরার কারণে ওকে আরো বেশি করে আদর করার ইচ্ছা হলো।ওর ঘাড় থেকে শুরু করে গলা পর্যন্ত আদর করে যাচ্ছিলাম হঠাৎ করে এর মাঝেই ও হাঁচি দিয়ে উঠলো।
রোমান্সটা আর বেশিক্ষণ হলোনা।
কি হলো?তুমি হাঁচি দিলে কেনো?
মাহিঃ কি বলবো এখন ওকে?ও যদি জানতে পারে যে আইসক্রিম খেয়ে আমার ঠান্ডা লেগে গেছে তাহলে আজকে আর রক্ষা নেই।
-আসলে তুমি যেভাবে আমাকে আদর করছিলে আমার কেমন যেনো শুরশুরি লাগছিলো তাই হাঁচি চলে এসেছে।
আশফিঃকিন্তু এটা তো নতুন নয়।আমি তো তোমাকে এভাবেই আদর করি।
মাহিঃ তাইতো?এখন কি বলবো ওকে?
-আরে তুমি ভিজে গায়ে এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিলেনা তাই ঠান্ডা লেগে গেছে।আমার যদি সর্দিকাশি লেগে যায় না তোমার খুব খারাপ অবস্থা হবে বলে দিলাম।কিভাবে তোমাকে নাজেহাল করবো তুমি ভাবতেও পারবেনা। যাও সরো নিজের মত নিজে গোসল করে এসো।
ওকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলাম।হাসি পাচ্ছে খুব।কেমন বোকা বানিয়ে দিলাম।
আশফিঃ যাহ্ বাবা আমি কি করলাম?পুরোটা ভেজাতেও পারলাম না আর ঠান্ডা লেগে গেলো?
আলিশাঃ মাহি সেই কখন থেকে বসে আছি টেবিলে এখন পর্যন্ত আশফির আসার খবর নেই। কি করছে বলো তো ও?
মাহিঃ আমি ও তো সেটাই ভাবছি।মেয়েদের মত সময় নেওয়া শুরু করেছে দেখছি।
আলিশাঃতুমি গিয়ে দেখো তো কি করছে?
মাহিঃ হুম।
আশফি?? আআআ…..ছিঃ।(চোখ বন্দ করে ফেললো)
আশফিঃWhat happened?
মাহিঃ তুমি এটা কি করছো?তোমার লজ্জা বলে কোনো জিনিস নেই নাকি?
আশফিঃলজ্জা? লজ্জা করার মত কি কাজ করলাম আমি?কিছুই তো বুঝলাম না।
মাহিঃ কিছুই বুঝতে পারছোনা? তুমি….. ও গড দরজাটা আটকে দিই না হলে কেউ দেখে ফেলবে।
আশফিঃআরে আরে দরজা আটকাচ্ছো কেনো?
মাহিঃলুচু কোথাকার? তুমি এইভাবে আইডলটার জামাকাপড় সব খুলে ফেলোছো কেনো?খুলে ফেলে কি দেখছো তুমি?
আশফিঃ কৈ কি দেখছি আমি?আমি তো ওর……
মাহিঃ চুপ বজ্জাত ছেলে। কিরকম দেখা যাচ্ছে ওটাকে। ছি, আমি নিজেই লজ্জা পাচ্ছি আর তোমার একটু ও লজ্জা লাগছেনা?
আশফিঃআরে পাগল আমি তো ওর ড্রেস পাল্টাবো। অনেকদিন হলো সেই একই ড্রেস পরিয়ে রেখেছি। ভাবছু নতুন কিছু পরাবো ওকে।
মাহিঃ নতুন কিছু মানে? সে যাই হোক।তুমি ড্রেস চেঞ্জ করতে চাও আমাকে বলতে পারতে আমি চেঞ্জ করে দিতাম।তাই বলে তুমি?
আশফিঃ তো কি হয়েছে? আমি চেঞ্জ করলে সমস্যা কি?আর আমিই তো এতোকাল ধরে ওর ড্রেস চেঞ্জ করে আসছি।
মাহিঃ তুমি?আমি তো ভেবেছি এটা সার্ভেন্টরা(মেয়ে)করতো।
আশফিঃডিয়ার তুমি লজ্জা পাচ্ছো কেনো?আমি তো ভাবছি এখন থেকে তোমার ড্রেস চেঞ্জ করার দায়িত্বটা ও আমি নিবো।??
মাহিঃ ইয়ারকি হচ্ছে? কি বিশ্রি লাগছে দেখতে ওকে।
আশফিঃআমার কাছে ওকে সবভাবেই সুন্দর লাগে।
মাহিঃএই একদম তুমি ওটার দিকে তাকাবেনা। পাঁজি ছেলে।
আশফিঃতাকাবো হাজার বার তাকাবো।এখন এসো তো আমাকে হেল্প করো। ওকে কোন ড্রেসটা পড়াবো বলো?
মাহিঃ আমি জানিনা।?
আশফিঃএতো রাগ করছো কেনো?আমিই তো দেখছি আর তো কেউ দেখছে না। আচ্ছা ওকে একটা ব্ল্যাক কালারের ড্রেস পরাই।
মাহিঃ ব্ল্যাক এঞ্জেল?
আশফিঃহুম।ব্ল্যাক এঞ্জেল। আইডলটাকে পুরো ব্ল্যাক ড্রেস পড়িয়ে দিলাম।অসম্ভব
সুন্দর লাগছে আইডলটাকে।আমি আইডলটার দিকে তাকিয়ে আছি আর মাহি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আইডলটার থেকে চোখ ফিরিয়ে ওর দিকে তাকালাম।
-কি দেখছো?
মাহিঃ তোমাকে।
আশফিঃআমাকে কেনো?
মাহিঃ আল্লাহ্ পাকের অপরূপ সৃষ্টির কাছে এসব যে একদমই তুচ্ছ। আয়নার দিকে তাকাও। আমার কথা শুনে ও আয়নার দিকে তাকালো।আমি ওর হাতটা জড়িয়ে ধরে কাঁধের ওপর মাথা রাখলাম।
-দেখছো কতোটা সুন্দর তুমি?কতোটা নিখুঁতভাবে সৃষ্টি করেছে তোমাকে?
আশফিঃ তোমার মাঝে বুঝি খুঁত আছে?
মাহিঃ হয়তো।
আশফিঃএকটু ও না। আমার সামনে তুমি যেমন ভাবেই উপস্থাপন হউনা কেনো তুমি আমার কাছে নিখুঁত ই থাকবে।
মাহিঃ সারাজীবন এভাবেই ভালোবাসতে পারবে তো আমাকে?
আশফিঃকোনো সন্দেহ আছে?
মাহিঃ ভয় আছে।
আশফিঃকিসের ভয়?
মাহিঃ তুমি যদি কখনো আমার থেকে দূরে সরে যাও?
আশফিঃওর খুব কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।
-এভাবে তোমাকে ধরে রাখবো যতদিন বেঁচে থাকবো।
মাহিঃ আমিও ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
আলিশাঃআশফি? মাহি? তোমরা কি দিনে দুপুরে রোমান্সে ডুবে গেলে?আজকে কি আর দুপুরের খাওয়া হবে না আমাদের?
আশফিঃতুমি ডাকতে এসেছিলে।আর এসে নিজেই রোমান্স শুরু করে দিয়েছো?
মাহিঃ আমি?
আশফিঃহয়েছে হয়েছে। সবসময় খালি কাছে আসার ধান্দা।যাও দরজাটা খুলো গিয়ে।
মাহিঃ পরে দেখছি তোমাকে। গিয়ে দরজাটা খুললাম।আলিশা আইডলটাকে দেখে ওটার প্রশংসায় ডুবে গেলো। তারপর ওদের ডেকে নিয়ে তিনজন একসাথে দুপুরের খাবার খেলাম।বিকাল হলে তিনজনে একসাথে বসে অনেক্ষণ আড্ডা দিলাম।
★রাতে★
আশফিঃআজকাল দেখছি যখনই সময় পাচ্ছে তখনই আলিশার সাথে গল্পে মেতে থাকছে।আমাকে ভুলেই যাচ্ছে।আমি সেই কখন এসে ঘরে বসে আছি একা একা সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই? ডাকতে গেলে তো আবার আলিশা অন্যকিছু ভাববে।ধুর অসহ্য লাগছে।কি পরিমাণ যে রাগ হচ্ছে ওর উপর।ডাকবোনা দেখি কখন আসেন তিনি। পাক্কা আধা ঘন্টা পর রুমে এলেন তাও আবার হাঁচতে হাঁচতে রুমে ঢুকলেন। নাখ ও শিটকোচ্ছে সর্দি লেগে গেলো নাকি?
-এতো তাড়াতাড়ি চলে এলে?গল্প শেষ?
মাহিঃ না।ওর একটা ফোন আসলো কথা বলতে বলতে দূরে চলে গেলো।
বেশকিছুক্ষণ বসে ছিলাম। আলিশার কথা শুনে মনে হলো কিছুটা ইমোশোনালি কথা বলছে তার সাথে।
আশফিঃইমোশোনালি বলতে?
মাহিঃ মনে হলো ফোনের ওপাশে কোনো ছেলে হবে। আলিশা তাকে ওর ফিলিং বা উইকনেস এরকম কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে।
আশফিঃহবে হয়তো। সবার ই তো নিজস্ব জগত বলে একটা জায়গা আছে।
মাহিঃ উহ…মাথাটা ভীষণ যন্ত্রণা করছে।শুতে দাও আমাকে।
আশফিঃআমি একটা বিষয় বুঝতে পারছিনা তখন ওতোটুকু ভিজে যাওয়ার কারণে তোমার ঠান্ডা লেগে গেলো?এই তুমি সত্যি কথা বলো তো কিভাবে ঠান্ডা লাগিয়েছো?
মাহিঃ এইরে ধরা পড়ে যাবো নাকি?যে করেই হোক ওকে ভুলভাল বোঝাতে হবে।
-সেটা কি আমি জানি? তুমি জানো।
আশফিঃআমি কিভাবে জানবো?
মাহিঃ তুমিই তো আমাকে কতক্ষণ ভিজা শরীরে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলে। এই কারণেই তো আমার ঠান্ডা লেগে গেলো। আমার যে মাথা চোখ আর নাখের ভেতর কি পরিমাণ খারাপ লাগছে তা যদি তুমি বুঝতে তাহলে এতো কৈফিয়ত চাইতেনা। এমনিতেই রাত্রে ঘুম হতে চাইনা আমার তার উপর সর্দিকাশি লেগে গেলো।
আশফিঃআচ্ছা স্যরি।আর এমন করবোনা।তুমি বসো আমি ওষুধ আনছি খেয়ে দাও।
মাহিঃ তার কোনো প্রয়োজন নেই।আমি খেয়েছি।এখন আমার মাথাটা একটু টিপে দাও। ভালো লাগছেনা।
আশফিঃআচ্ছা ঠিক আছে। -ওর গায়ে কাঁথাটা টেনে দিয়ে মাথা টিপে দিচ্ছিলাম।তার মাঝখানে আমাকে বললো কাঁথাটা নামিয়ে দিয়ে এসিটা বাড়িয়ে দিতে। তাই ই করলাম।আবার বললো শীত করছে কাঁথাটা গায়ে দিয়ে দাও।সেটাই করলাম। মহারাণী অসুস্থ হয়ে পড়লে তো সে দোষটা ও আমার ঘাড়ে আসে এখন।তাই তার সব হুকুম তামিল করতে আমি বাধ্য।কি পাপটা যে করেছিলাম আমার চান্দুকে আনতে গিয়ে।কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি ওর মাথার কাছে। আমি বুঝতেই পারিনি ওর ডাকে আমার ঘুম ভাঙ্গলো।
মাহিঃ এই শুনছো তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছো?
আশফিঃহুম? না কৈ? ঘুমোনোর চেষ্টা করছিলাম আর কি।
মাহিঃ আর চেষ্টা করতে হবেনা।আমার নাখ থেকে এটা একটু ফেলে দাও তো।
আশফিঃকোনটা ফেলে দিবো জাদু?
মাহিঃ আরে এইযে একদম নাখের সামনে এসে রয়েছে।কেমন যেনো অসহ্য লাগছে একটু ফেলে দাও।আমার উঠতে ইচ্ছা করছেনা।
আশফিঃও নাখ শিটকিয়ে আমাকে দেখালো নাখের ঐ বিজলা পদার্থ টা।
-ডিয়ার তুমি আমাকে এটা ফেলে দিতে বলছো?
মাহিঃ আশেপাশে তো আর কাউকেই দেখতে পাচ্ছিনা।তাহলে তোমাকেই বলেছি।
আশফিঃহায় আল্লাহ্ আর কি বাকি আছে? কোনো কথা না বলে টিসু পেপাড় এনে ওর নাখ থেকে ওটা মুছে ফেলে দিলাম।
মাহিঃ অনেক ধন্যবাদ।
আশফিঃতোমাকেও অনেক ধন্যবাদ।
মাহিঃ আমাকে ধন্যবাদ কেনো?
আশফিঃএইযে আমাকে অভ্যাস করাচ্ছো।এখন না হয় তোমার নাখের ইয়েটা পরিষ্কার করে দিলাম কিছুদিন পর তো আমার চান্দুর ঠান্ডা লাগলে তাকেও পরিষ্কার করে দিতে হবে।
মাহিঃ ও।হ্যা তা করতেই হবে।
-ও হাত ধুয়ে আমার পাশে এসে শুয়ে পড়লো।
এই তুমি ঘুমাচ্ছো?
আশফিঃকেনো?আবারো করতে হবে?
মাহিঃ না।আমার ঘুম আসছেনা।
আশফিঃআমার বুকের মাথা রাখো।আমি তোমার চুলের মাঝে বিলি কেটে দিই তাহলে ঘুম চলে আসবে।
মাহিঃ ওর বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে রইলাম।আর ও আমার চুলের মাঝে বিলি কেটে দিচ্ছে।হঠাৎ একটা জিনিস মনে পড়লো।
-এই আশফি?
আশফিঃহুম।
মাহিঃ তুমি না কাল একটা গল্প শোনাচ্ছিলে আমাকে? সেটা তো আমাকে পুরোপুরি শোনাওনি।
আশফিঃকি করে শুনাবো? তুমি তো তার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলে।
মাহিঃ তাহলে আজকে শোনাও।
আশফিঃআজ না।কাল শোনাবো।এখন তুমি ঘুমাউ।
মাহিঃ না প্লিজ।একটু শোনাও না।বেশি শুনবোনা ঘুমিয়ে পড়বো তাড়াতাড়ি। সত্যি বলছি।
আশফিঃঅনেক দেরি জয়ে যাবে তো।
মাহিঃদেরি হবেনা। প্রতিদিন রাতে একটু একটু করে শোনাবে।গল্পটা শুনেই আমি ঘুমিয়ে পড়বো।
আশফিঃ ঠিক আছে তাহলে শুনো। যতটুকু বলেছিলাম তার পর থেকেই শুরু করি।
মাহিঃ ওকে।
আশফিঃরাজা ফালাক তাজ পরিকল্পনা করলো সে প্রথমে শেরপুর রাজ্যে ছদ্মবেশে যাবে। তারপর রাজা জাভেদ খানের কাছে গিয়ে একটা কাজ চাইবে। সে ঠিক তাই করলো।রাজা জাভেদ খানের কাছে গিয়ে আকুতি মিনতি করে একটা কাজ চাইলো।আর রাজা জাভেদ খান একটু দয়ালু প্রকৃতির ছিলো।তাই সে বিশ্বাস করে রাজা ফালাক কে কাজ দিয়ে দিলো। কিছুদিন পর রাজা জাভেদ খানের হাতিশালে সব হাতি আর ঘোড়াশালে সব ঘোড়া আস্তে আস্তে মারা যেতে লাগলো।রাজা জাভেদ খান
ভেবে পাইনা এর রহস্যটা কি?একদিন রাজকন্যা মেহেরুন তার পিতার সাথে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য তার পিতার কক্ষে প্রবেশ করে।
[#বিষয়বস্তুঃফালাকা_মেহের]
মেহেরুনঃঅনুমতি পেলে ভেতোরে আসবো পিতা?
জাবেদ খানঃআরে মেহেরুন মা যে এসে।
মেহেরুনঃআপনাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে পিতা।
পিতাঃঅনেক বড় চিন্তার মাঝে আছি মা।আমার হাতিশাল ঘোড়াশাল সব যে শূণ্য হয়ে গেলো।এখন আমি আমার শত্রুদের মোকাবেলা করবো কি করে? আমার প্রজাদের বিপদে আপদে তাদের নিকট ছুটে যাবে কি করে?
মেহেরুনঃআমি এই বিষয়ে কথা বলতে এসেছি পিতা। আমাদের হাতি আর ঘোড়া গুলো যেভাবে মারা গেলো তাতে আমার মনে হচ্ছেনা যে শুধু মাত্র কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে এগুলো মারা গেছে। এসবের পেছনে আমি রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।
পিতাঃকি বলছো তুমি মা? রহস্য?
মেহেরুনঃহ্যা পিতা। আমি খবর নিয়েছি রাজমহলে আপনি একজন নতুন কর্মী নিয়োগ করেছেন সেটা বেশিদিন হয়নি।
পিতাঃহ্যা।কিন্তু তার সাথে এগুলোর কি সম্পর্ক?
মেহেরুনঃসম্পর্ক আছে পিতা।আপনি অতি দয়া দেখাতে গিয়ে বোকামির পরিচয় দিয়েছেন পিতা। মাফ করবেন কথা বলার জন্য। কিন্তু আমি বলতে বাধ্য হলাম।
পিতাঃতুমি কি বলতে চাইছো আমাকে পরিষ্কার করে বলো মেহেরুন।
মেহেরুনঃপিতা আপনি একবার ভেবে দেখলেন না ঐ লোক কোনো ভীনদেশী চর ও হতে পারে।কারণ সে আমাদের রাজমহলে প্রবেশ করার পর দিন থেকে এই করুণ ঘটনাগুলো ঘটেছে।
আপনি এতক্ষণে নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন?
পিতাঃহ্যা আমি বুঝতে পেরেছি।সেদিন তার মায়াভরা মুখ দেখে তার প্রতি আমার দয়া হয়েছিলো। কিন্তু একবারও তাকে যাচাই করে দেখার প্রয়োজন বোধ করলাম না।কি করে এতো বড় ভুল করলাম? তাকে এক্ষণি হাজির হতে বলো।
মেহেরুনঃআপনি বলার আরো অনেক আগে আমি তাকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু তিনি আসেননি। অন্যসব কর্মীরা বললো তাকে কাল রাত থেকে আর কোথাও দেখা যাইনি।
চলবে।

রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২ পর্ব-৭

0

রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২
পর্ব-৭
লেখিকা-Israt Jahan
ধারণা-Kashnir Mahi
ইকরামঃযথা আজ্ঞা সম্রাট।
“””””””””””””””””””
মাহিঃ কি হলো থেমে গেলে যে?
আশফিঃকি শর্ত ছিলো?
মাহিঃপাঁজি ছেলে।দাড়াও। -ওর ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বললাম “তারপর”।ও দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে আবার বলতে শুরু করলো।
[#বিষয়বস্তুঃসম্রাট_ফালাক]
★রাজসভা★
ফালাকঃতো মন্ত্রিসাহেব রাজ্য শেরপুর ও শেরপুরের রাজা স্পর্কিত কি কি তথ্য সংগ্রহ করেছেন সেগুলো উপস্থাপন করুন।
মন্ত্রীঃ মহারাজ! শেরপুর রাজ্যের রাজা জাভেদ খান তিনি এতজন নিষ্ঠাবান মুসলমান।নুন্যতম নামাজ বা পঞ্চোপাসনার তিনি অবহেলা করেন না।তার বৃদ্ধিমত্তা,বীরত্ব,বিচার ক্ষমতা,দানশীলতা,ধৈর্য এসবকিছুর গুণেই তিনি গুনান্বিত।এবং তার সৈন্যসামন্ত সবাই অশিচালনায় খুবই দক্ষ।তার হাতিশালে সহস্রের থেকেউ অধিক হাতি ঘোড়াশালে অজস্র ঘোড়া আছে। তার তুলনায় আমাদের সেগুলি খুবই সীমিত।তার রাজ্যে অভাব অনটন দরিদ্রতা খুবই কম।মাঠে ঘাটে ধান ফসলে কোনো অভাব নেই। সে রাজ্যের প্রজারা খুব সন্তুষ্ট রাজা জাভেদ খানের উপর।তার রাজমহলের নারী-পুরুষ উভয় অশিচালনা জানেন এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন প্রতিনিয়ত।এতবছরে রাজা জাভেদ খান তার বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধেই পরাজিত হননি।
ইব্রাহীমঃসম্রাট এর আগে আপনি যে কয়টি রাজ্য দখল করেছেন তা সে ছলেবলে কৌশলেই হোক বা আপনার যুদ্ধের মাধ্যমেই হোক তাদের আপনি খুব সহজেই পরাজিত করতে পেরেছেন কিন্তু রাজা জাভেদ খানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হওয়া একটু দুসাধ্য হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।তার মত ক্ষমতাধর আমরা নই।( রাজদরবারের পদে অধীনস্থ ব্যক্তি)
ফালাকঃহাহাহা(তাচ্ছিল্যের হাসি)।আপনি কি আমাকে এতো বছরে এইটুকু চিনেননি?আমি শুধু যুদ্ধের মাধ্যমেই নই কূটনৈতিক চিন্তাভাবনার দ্বারাও আমি যে কোনো জিনিস হাসিল করতে পারি। সে যাই হোক তো মন্ত্রী আয়্যুব রাজা জাভেদ খানের পুত্র-কন্যা কতজন আর সবথেকে বিশ্বস্ত ও নির্ভরশীল ব্যক্তি কে?
মন্ত্রীঃ মহারাজ!রাজা জাভেদ খানের একজনই মাত্র কন্যা।রাজকন্যা মেহেরুন।আর সবথেকে বিশ্বস্ত ও নির্ভরশীল ব্যক্তি তার কন্যা স্বয়ং নিজে। তিনি পুত্রের থেকেও অধিক কিছু মনে করেন রাজকন্যা মেহেরুনকে। কারণ তিনি অশিচালনা থেকে শুরু করে ধনুকচালনা রাজ্যচালনা সবকিছুতেই পারদর্শী।রাজনৈতিক কূটনৈতিক সব বিষয়ে রাজা জাভেদ খান তার কন্যার পরামর্শ গ্রহণ করেন।এবং তাতে রাজা জাভেদ খান কখনোই বিফল হননি।
ফালাকঃএ আমাকে কি শোনালেন মন্ত্রীসাহেব?এ কেমন নারী তাকে যে দেখার জন্য আমার মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে।তাহলে তো আর দেরী করা যাবেনা।রাজ্য শেরপুর দখল ও রাজকন্যা মেহেরুন নাহ্ মেহেরুন নয় আমি তাকে মেহের বলেই ডাকবো এই দুটো জিনিসকে নিজের দখলে আনার জন্য আমি আর বেশি সময় অতিবাহিত করতে চাইনা।গোটা ভারতবর্ষে আমি রাজ করতে চাই।প্রতিটি রাজ্যে আমার রাজত্ব চলবে।আচ্ছা রাজকন্যা মেহের এর রূপের বর্ণনা যে দিলেন না আপনি?
মন্ত্রীঃ রাজকন্যা মেহেরকে আজও পর্যন্ত কোনো পরপুরুষ দেখেননি।
ফালাকঃআচ্ছা? না জানি তার নামখানার মত সে কতোটা অপরূপ।
(রাজা ফালাক রাজসভায় উপস্থিত সকলের সাথে আলোচনা পর্ব শেষ করলেন।আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো রাজ্য শেরপুর কবে কখন কিভাবে আক্রমণ করবেন)
“””””””””””””””””””
আশফিঃ এদিকে রাজকন্যা মেহের……….। মাহি? ঘুমিয়েছে তাহলে মেয়েটা।কাঁধের উপর মাথা রেখে আমার হাত জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে।খুব আস্তে করে ওকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে ওর মুখে একটু আদর করে আমিও শুয়ে পড়লাম।
আলিশাঃবাব্বাহ্ এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমাই নাকি ওরা?সকাল ৯ টা বেজে গেছে।
আশফিঃগুড মর্নিং আলিশা।
আলিশাঃগুড মর্নিং।তাহলে ঘুম ভাঙ্গলো তোমাদের? আমি সেই কখন থেকে ওয়েট করে আছি তোমাদের জন্য।
আশফিঃ সো স্যরি।তুমি এখনো ব্রেকফাস্ট করোনি তাইনা?রাতে ঘুম কেমন হয়েছে?
আলিশাঃ ঘুম তো ভালোই হয়েছে কিন্তু তোমার মহারাণী কোথায়?সে কি ঘুম থেকে উঠেনি?
আশফিঃআসলে রাতে অনেক দেরি করে ঘুমিয়েছে তো তাই আর ডাকিনি।
আলিশাঃহুম ওর তো এখন পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন।
আশফিঃআচ্ছা তুমি নাস্তা করে নাও।আমাদের জন্য আর কতক্ষণ ওয়েট করবে?
আলিশাঃ মানে কি?আমি কি তোমাদের ছাড়া একা বসে নাস্তা করবো?কখনোই না।এসো তুমিও করবে।
আশফিঃনা।আসলে আজকে অফিসে যেতেই হবে।নাস্তা করার সময় নেই।ওখানে গিয়ে দেখতে হবে কি অবস্থা?সেক্রেটারির উপরে সব দায়িত্ব দিয়ে এসেছি।
আলিশাঃএইযে CEO সাহেব আপনার অফিস দেখার জন্য অনেকেই আছে কিন্তু এখানে আমাকে দেখার জন্য আপনি ছাড়া কেউ নেই।আমার দেখাশোনাটা করবে কে শুনি?
মাহিঃ কেনো আমি আছি না? আমাকে ভরসা করতে পারো।
আলিশাঃগুড মর্নিং মাহি।
মাহিঃ মর্নিং।আমি কিন্তু তোমার অনেক ভালো খেয়াল রাখতে পারবো।
আলিশাঃআচ্ছা।আমি তো দেখছি তোমাকেই এখনো দেখাশোনা করতে হয় আশফিকে।তাহলে আশফির বোনকে তুমি কিভাবে দেখাশোনা করবে?হুম?
মাহিঃ সেটা তুমি দেখলেই বুঝতে পারবে আমি তোমার কেমন খেয়াল রাখতে পারি?
আলিশাঃ ও আচ্ছা।
আশফি মাহি কিন্তু ভয় পাচ্ছে।
মাহিঃ একদম না।আশফি চাইলেও তোমাকে টেক কেয়ার করতে পারবেনা।
আলিশাঃকেনো? নিষেধ করে রেখেছো নাকি?
মাহিঃ উহুম।তুমি নিজেই দেখে নিতে পারো।
আশফিঃ এটা মাহি ঠিকই বলেছে।
আলিশাঃ কিরকম? বুঝিয়ে বলো আমাকে?
মাহিঃ আলিশা সেটা তুমি ও অফিসে যাওয়ার পরই বুঝতে পারবে।
আলিশাঃওকে ওকে এখন এসো নাস্তা করে নিই।প্রচন্ড খিদে পেয়েছে।আশফি তুমি তো অফিসে গিয়ে নাস্তা করবে তাইনা?তাহলে আমি আর মাহি দুজনে মিলেই নাস্তা করি।
আশফিঃহুম তাই করো।
আলিশাঃমাহি তোমার খাওয়া-দাওয়া দেখছি একদম ঠিক নেই।
মাহিঃ ওহ্ গড।ভাই নেই ভাই এর বোন তো আছে। আমার খাওয়া-দাওয়ার উপর খবরদারি করার জন্য।
আলিশাঃএরকম ভাবে বলছো কেনো?আশফি তো ঠিকই করে।জোড় করে তোমাকে খাইয়ে দেয়।না হলে তোমার যা খাওয়ার ভাব-সাব দেখছি তাতে তোমাকে আর বেশিদিন চোখে দেখা যাবেনা। মাহি খাওয়ার দিকে নজর দাও। ওকে?প্রয়োজন হলে আমিও তোমাকে জোড় করে খাইয়ে দিবো।
বুঝেছো?
মাহিঃনা প্লিজ।তুমি অন্তত আমার সাথে এমন করোনা।যতটুকু খেতে পারি ততটুকুই তো খাবো।
আলিশাঃহুমমম।
মাহিঃ আলিশা তোমাকে কিভাবে স্যরি বলি।এখন পর্যন্ত তোমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারলামনা। নিশ্চই অনেক বোরিং হচ্ছো?
আলিশাঃ মিথ্যা বলবোনা। একটু হচ্ছি।তবে একদম খারাপ ও লাগছেনা।আর তুমি কিভাবেই বা আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবে।
আশফির কড়া নিষেধ তাকে ছাড়া বাইরে কোথাও বের হতে পারবেনা।
মাহিঃ এটাই তো সমস্যা।
লোকটা সবসময় খালি বেশি বেশি করে সবকিছুতে।ও তো অফিসে পড়ে থাকে আর আমি সারাটাদিন বাড়িতে বসে থেকে থেকে একদম নিরামিষ হয়ে যায়।
আলিশাঃমাহি তোমার ফোন বাঁজছে।
মাহিঃ ও।আমি তো শুনতেই পাইনি।
-কি হয়েছে??(ফোনে)
আশফিঃকিছুনা।আমি গাড়িতে।
মাহিঃ ও আচ্ছা আমি এখনো নাস্তার টেবিলে।
আশফিঃও আলিশা আছে বুঝি সাথে?
মাহিঃ কেনো তুমি দেখে যাওনি?
আশফিঃহুম দেখলাম তো। নাস্তা করা শেষ হয়নি?
মাহিঃ এই তো বসলাম।
আমি কি রোবট?
আশফিঃকিন্তু ডিয়ার রোবটেরা তো খাইনা ওরা চার্জ নেয়।
মাহিঃ ধুর।আমাকেও চার্জ দিও।তাহ। লে আর খেতে হবেনা কিছু।
আশফিঃঅবশ্যই।অফিস থেকে ফিরে তোমার চার্জের ব্যবস্থা করবো।ঠিকআছেে? মাহিঃ ধ্যাত।কি সব কথাবার্তা বলে।
আশফিঃ?? ওকে রাখছি।অফিস পৌঁছে গেছি।
মাহিঃ পাঁজি একটা।(ফোন কেটে)
আলিশাঃহাহাহাহাহা। এটা কি ছিলো মাহি?
মাহিঃশুনেছো নিশ্চই? এটা তো শুরু যেদিন থেকে অফিস যাবে সেদিন থেকে শুরু হবে ওর এসব পাগলামী।
আলিশাঃহুম স্পিকার লাউড করে রেখেছো তো শুনবোনা?ঘর থেকে বের হতে পারলোনা সাথে সাথে গাড়িতে উঠেই ফোন? এটা সত্যিই একটা দারুণ বিষয়। আর তুমি সেটাকে পাগলামী বলছো?
মাহিঃ এগুলোকে পাগলামী ছাড়া কি বলে?
আলিশাঃভালোবাসা,দুর্বলতা,দুশ্চিন্তা যা খুশি বলতে পারো।একটা মানুষকে কতোটা ভালোবাসলে তাকে এভাবে মিস করে কেউ।
মাহিঃ হুমম।জানি। মানুষ বলে বিয়ের পর নাকি আস্তে আস্তে বৌ এর প্রতি স্বামীর টান ভালোবাসা এসব নাকি কমে যায়।শুধু থাকে দায়িত্ব-কর্তব্য।কিন্তু আশফি পুরোটাই তার ভিন্ন। দিন দিন ওর ভালোবাসার পরিমাণ শুধু বেড়েই চলেছে আর দায়িত্ব কর্তব্যের কথা তো বলবোইনা।
আলিশাঃআচ্ছা চলোনা আজকে আমরা দুজনে lunch রেডি করি? আশফিকে চমকে দিবো।
মাহিঃ সেটা তো আমি রোজই করতে চাই।কিন্তু কে শুনে কার কথা। আমাকে খাঁচা বন্দি পাখির মত করে রেখেছে।
মাঝেমাঝে মনে হয় ওকে লুকিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসি।কারণ আমি প্রেগন্যান্ট হয়েছি পর্যন্ত আমাকে নিয়ে কখনো ও জার্নিই করতে চাইনা আর সেখানে তো লং ড্রাইভ দূরে থাক।
আলিশাঃতুমি ওকে অনেক ভয় ও পাও তাইনা মাহি?
মাহিঃ হুম।ভীষণ।আবার একদমই না
আলিশাঃবুঝলাম না। মানে?
মাহিঃ ও তুমি বুঝবেনা।
আলিশাঃআমি বুঝতেও চাইছিনা।
আচ্ছা তাহলে আমরা কিচেনে যাই দুপুরের খাবার তৈরি করে ফেলি?
মাহিঃ এতো তাড়াতাড়ি? আর কিছুক্ষণ পরে যাইনা?চলো বাগান থেকে ঘুরে আসি।
আলিশাঃওকে চলো।
মাহিঃ আমি আর আলিশা দুজনে পাশাপাশি একসাথে বাগানে হাঁটছি।কিন্তু হঠাৎ করেই মেয়েটা কেমন চুপচাপ হয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ আগে কাকে যেনো ফোন করছিলো ও কিন্তু সে ফোনটা হয়তো রিসিভ করেনি।তারপর থেকেই ওর মনটা খারাপ দেখছি।
-আলিশা?
আলিশাঃহুম বলো।
মাহিঃ তুমি কত বছর হলো ইংল্যান্ড ছিলে?
আলিশাঃএইচ.এস.সি পাস করেই ইংল্যান্ড চলে গিয়েছিলাম।
মাহিঃ তাহলে তো অনেক বছর ইংল্যান্ড ছিলে।
আলিশাঃহুম।ওখানে আমার খালামণি থাকেন।ওনাদের সাথেই থাকতাম।
মাহিঃ হুম।নিজের দেশ ছেড়ে ওখানে থাকতে তোমার ভালো লাগতো? মিস করতে না ফ্যামিল ফ্রেন্ডস এসব?
আলিশাঃহুম।খুব মিস করতাম প্রথম ২ বছর।তারপর আস্তে আস্তে যখন অনেক ফ্রেন্ডস হলো সারাদিন ওদের সাথে সময় কাটাতাম। ওদের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতাম। একসময় নিজেকে একদম পুরোপুরি ইংল্যান্ড বাসীদের মত করে নিজেকে তৈরি করে ফেললাম। ওদের কালচারের এমর কোনো জিনিস নেই যা আমি পারিনা বা জানিনা।
মাহিঃ আচ্ছা কি কি জানো তুমি?
আলিশাঃআমি খেলাধুলা থেকে শুরু করে সে যে কোনো ধরনের খেলা হোক সব পারি।তারপর পপ ড্যান্স, হিপহপ, ব্যান্ড মিউজিক,র্যাপার সবকিছুই আমার মাঝে আছে।
মাহিঃ শুধু এগুলোই?আর কিছুনা?
আলিশাঃআর কি? ও বুঝতে পেরেছি।রান্নাটা ও মোটামোটি পারি,ড্রাইভিং করতে পারি তারপর প্রেম করতে পারি…..??
মাহিঃ হাহাহাহা। তুমি তো দেখছি অলরাউন্ডার।
আলিশাঃহুম সত্যি অলরাউন্ডার।শুধু একটা জায়গায় ছাড়া।
মাহিঃ কিছু বললে?
আলিশা না কিছুনা। এখন বলো তুমি কি কি পারো?
মাহিঃ আমি তোমার মত এতোকিছু জানিনা। তবে আমি যেটুকু সেটুকু ও কম নয়।
আলিশাঃআচ্ছা?তো শুনি সেগুলো কি কি?
মাহিঃ প্রথমত আমি সংসারের যাবতীয় কাজ জানি।আর সংসারের বাইরে যেগুলো আছে সেগুলো হলো বিজনেস করতে জানি আমি,ড্রাইভিং করতে জানি,নাচ-গান মোটামোটি পারি তবে তোমার মত সবধরনের নয়।আর…….
আলিশাঃ আর কি? মনে পড়ছেনা? তুমি কিন্তু অলরাউন্ডার হতে পারলেনা।
মাহিঃ তাই?কিন্তু আমি যেগুলো জানি তুমি কিন্তু সেগুলো জানোনা।
আলিশাঃরিয়েলি?কি সেই জিনিসগুলো?যা আমি জানিনা?
মাহিঃ আমি প্রেম করতে না পারলেও আমি আমার হাজবেন্ডকে ভালোবাসতে জানি যেটা তুমি জানোনা। কারণ তোমার তো বিয়েই হয়নি তো স্বামীকে কিভাবে ভালোবাসবে?
আলিশাঃস্বামী না হলে বুঝি ভালোবাসা যাইনা?
মাহিঃ হুম যাই।কিন্তু আলিশা ম্যাম এর তো কোনো লাভার ই নেই। তাহলে?
আলিশাঃহুম তা ঠিক। আচ্ছা বলো আর কি কি জানো?
মাহিঃআমি ঘোড়া চালাতে জানি,কুংফু জানি,গান চালাতে জানি।
আলিশাঃওয়াও।এগুলো তো আমি জানিইনা।তুমি নিশ্চই এগুলো আশফির থেকে শিখেছো?
মাহিঃ তাছাড়া কি? এগুলো ও ছাড়া আর কে ই বা শেখাবে আমাকে।
আলিশাঃআশফি যে অনেক ভালো ক্যারাটে জানে সেটা আমিও জানি। মাহি তুমি কখনো ফুল স্পীডে গাড়ি চালিয়েছো?
মাহিঃ পাগল নাকি? এমনিতেই আমাকে কখনো ড্রাইভ করতে দেইনা আর ফুল স্পীড তো দূরে থাক।
আলিশাঃতার মানে তুমি এটা পারোনা।কিন্তু আমি অনেকবার বাজি রেখে ফুল স্পীডে গাড়ি চালিয়েছি। কেউ আমাকে কখনো হাড়াতে পারেনি।
মাহিঃ আমি পারিনা এটা ভুল।কখনো চালাইনি এই আর কি।
আলিশাঃতাহলে আসবে নাকি আমার সাথে বাজিতে?
মাহিঃ তুমি কি সিরিয়াস?
আলিশাঃএকদম।
মাহিঃ ওকে তাহলে আমরা কাল ঠিক ১১ টার দিকে বাসা থেকে বের হবো।আর হ্যা এই বিষয়টা যদি আশফি জানতে পারে তাহলে কিন্তু সব বানচাল হয়ে যাবে।
আলিশাঃ Don’t worry darling. আমি আছি না?
মাহি আমার না খুব আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে।চলোনা বাইরে থেকে ঘুরে আসি।আর আইসক্রিম ও খেয়ে আসবো।
মাহিঃ বাইরে যেতে হবে কেনো? ফ্রিজেই তো আইসক্রিম………..।
ও আমার প্রাণপ্রিয় পতি তো আমার জন্য এখন ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম গুলো ও সরিয়ে ফেলেছে। অদ্ভুত মানুষ একটা। বাসায় যে আমি ছাড়া অন্য কেউ আছে সেটা তিনি ভুলেই গেছেন।
আলিশাঃওর কি দোষ? তুমি যদি লুকিয়ে খাও???
মাহিঃ হ্যা।এর জন্যই রাখেনি।আচ্ছা দাড়াও আমি কাউকে গিয়ে আনতে বলি।
আলিশাঃআরে অন্য কেউ যাবে কেনো? আমরাই তো যেতে পারি।তুমি চলো আমি আর তুমিই যাবো।
মাহিঃ কিন্তু আশফি যদি………( কথা শেষ না হওয়ার আগেই মাহির ফোনে আশফির কল এলো)
এই বলতে বলতেই চলে এসেছে আশফি সাহেব।
আলিশাঃকোথায়?
মাহিঃ আরে ওদিকে কোথায় দেখছো?ফোনে দেখো।তাও আবার ভিডিও কল।
আলিশাঃতাই বলো। আচ্ছা রিসিভ করো।
মাহিঃহুমম।কেমন আছেন?(ফোনে)
আশফিঃকেমন আছেন মানে কি?ফোন রিসিভ করতে এতো সময় লাগে কেনো?
মাহিঃ উফফ।বাসায় থাকলেও angry face ফোনের ভেতোরেও angry face. আচ্ছা তুমি বাসায় যাই করো কিন্তু বাইরে গেলে কি একটু লাভারদের মত করে কথা বলা যাইনা?
আশফিঃও হ্যা আপনি তো আমার সাথে প্রেম করতে চেয়েছেন তাইনা?তো আপনি কি পারবেন আমার সাথে প্রেম করতে?
মাহিঃ না পারার কি আছে? এগুলো ও কি শিখে পড়ে করার জিনিস নাকি?
আশফিঃশিখে পড়ে করতে হয়না বাট…..
মাহিঃ বাট?
আশফিঃএই তুমি কোথায়? তুমি তো বাসার ভেতোরে না।
মাহিঃএই হাদারাম নিজের বাগানটা ও কি চিনতে পারছোনা?
আশফিঃও তাই বলো।না আসলে ফোনের ভেতোর দেখছি তো তাই কেমন যেনো একটু অচেনা অচেনা লাগলো।
মাহিঃ তুমি আমাকে খাঁচার ভেতোর আটকে রাখো।
আশফিঃআরে নাহ্।তাহলে তো আবার সমস্যা। আচ্ছা তাহলে ঘুরো পরে ফোন করছি আবার।
মাহিঃ হুম।
আলিশাঃবাব্বাহ্! ১০ মিনিট পর পর বৌকে বুঝি মনে পড়ে?
মাহিঃ১০ মিনিট পর পর নয়।তার সবসময়ই আমার কথা মনে পড়ে শুধু ফোনটাই আসে ১০ মিনিট পর পর।আচ্ছা তুমি তো আইসক্রিম খাবে তাইনা?
আলিশাঃহুম।
মাহিঃ বাইরে তো এখন যেতে পারছিনা।অন্য কাউকে পাঠায় আনতে?
আলিশাঃওকে।
মাহিঃএকটা গার্ডকে পাঠালাম কিছু আইসক্রিম আনতে।আইসক্রিম আনার পর আমি আর আলিশা বসে একসাথে সবগুলো আইসক্রিম খেয়ে নিলাম।যদিও আমাকে খেতে নিষেধ করেছিলো আলিশা।কিন্তু সামনে রেখে কি আর নিজের লোভ সামলানো যাই? তারপর আমি আর আলিশা দুজনে মিলে দুপুরের খাবার রেডি করলাম।এর মাঝে আমাদের ভেতোর অনেক রকম গল্প হলো।দুজনে অপেক্ষায় আছি কখন আশফি আসবে।
আলিশাঃএই এতো বড় বাড়িতে তুমি কি করে যে সময় পার করো কে জানে।
মাহিঃ হুমম?। এর জন্যই তো বলেছিলাম ওকে আর একটা বিয়ে করতে।
আলিশাঃকি? সময় কাটানোর জন্য তুমি ওকে বিয়ে করতে বলেছো?
হাহাহা।এটা কোনোদিন সম্ভব।আর বিয়ে করার পর ঐ মেয়ে যদি আশফির কাছে থাকতো তুমি কি সেটা মেনে নিতে পারতে?
মাহিঃ একদম না।এর জন্যই তো ওকে আর বিয়ে করার কথা বলিনি।
আলিশাঃআর কখনো বলবে ও না।যে মেয়ের সংসারে অন্য একটা মেয়ে এসে কতৃত্ব ফলায় তাহলে সেই মেয়ের কপাল সারাজীবনের জন্য পুড়ে যায়।বুঝেছো? আচ্ছা মাহি আমি তো তোমাদের জুনিয়র কিন্তু আমি যে তোমাকে আর আশফিকে তোমাদের নাম ধরে ডাকি এটা কি তোমাদের খুব খারাপ লাগে?
মাহিঃ আরে কি বলো এসব? খারাপ লাগবে কেনো?তোমাকে তো আমি বন্ধুই মনে করি।আর বন্ধুদের মাঝে কোনো সম্বন্ধ করে ডাকতে হবে নাকি?
আলিশাঃআসলে আমিও তোমাদের একদম ফ্রেন্ডদের মতই মনে করি তাই নাম ধরেই ডাকি।আর এটাই আসলে অভ্যাস হয়ে গেছে ওখানে থাকতে থাকতে।
মাহিঃ সেটা আমরা বুঝি।
-কথা বলার মাঝে হঠাৎ করে মাহি হাঁচি দিয়ে উঠলো।
আলিশাঃএই যাহ্ ঠান্ডা লেগে গেলো নাকি তোমার? তাহলেই তো সর্বনাশ। কে বলেছিলো তোমাকে একসাথে ওতোগুলো খেতে?
মাহিঃ কি করবো? সামনে পেয়ে যে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলামনা।
আশফিঃGood noon everyone.
আলিশাঃ গুড নুন আশফি। তো তোমার অফিস শেষ হয়ে গেলো?
আশফিঃআসলে এখন একটু তাড়াতাড়িই চলে আসি।বাসায় একটা বাচ্চাকে রেখে যায় তো তাই টেনশন হয় আর কি।
মাহিঃ হ্যা।এরপর যখন বাচ্চার বাচ্চা হবে।তখন অফিস ই বন্ধ করে দিবে।
আলিশাঃতাই তো মনে হচ্ছে।
আশফিঃতখন তো আমার টেনশন কমে যাবে। কারণ বাচ্চাটা যে বড় হয়ে যাবে তখন।সে বুঝতে পারবে এখন আমি বড় না হলে আমার বাচ্চাকে কে দেখাশোনা করবে।এখন না হয় আমি তোমাকে দেখছি আর যখন আমার চান্দু আসবে তখন চান্দুকে তো দেখতেই হবে সাথে চান্দুর বাবাকে ও।
মাহিঃ হয়েছে।এবার যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।
আশফিঃহুম যাচ্ছি।
আলিশাঃতুমি কি জানো মাহি আশফি বাড়িতে থাকলে সব একঘেয়েমিতা দূর হয়ে যায়?
মাহিঃ হ্যা জানি তো।এর জন্যই তো সবসময় আমার কাছে থাকার চেষ্টা করে।
আলিশাঃএতক্ষণে দুজনেই বোরিং ফিল করছিলাম। ও আসার পর সেটা আর মনে হচ্ছেনা।
মাহিঃতাই?
আশফিঃমাহি একটু এখানে এসো তো।
মাহিঃ আসছি।হুম বলুন কি হয়েছে?
আশফিঃহয়েছে তো অনেক কিছুই।
মাহিঃ কি হয়েছে? কোনো সমস্যা নয় তো। ওর স্যুটটা খুলে দিচ্ছিলাম আর কথা বলছিলাম।
আশফিঃআসলে ব্যাপারটা সমস্যা মনে করলে সমস্যা।আর সমস্যা না মনে করলে সমস্যা না।
মাহিঃ ধ্যাত। কি সব বলছো কিছুই বুঝতে পারছিনা।ক্লিয়ার করে বলো। কোম্পানিতে কোনো প্রবলেম হয়েছে?
আশফিঃহুম। আসলে একটা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি।তাই তোমার সাথে একটু আলোচনা করতে চাইলাম।
মাহিঃ হ্যা বলো কি সমস্যা?
আশফিঃ একটা মার্কেটিং কোম্পানি যারা আমাদের কোম্পানির সাথে ডিল করতে চাইছে।
মাহিঃ কিসের ডিল?
আশফিঃডিল টা হচ্ছে আমাদের নিউ ডিজাইনের যে প্রোডাক্টগুলো এ বছর থেকেই তৈরি করা শুরু হবে সেগুলোর জন্য আমাদের যে ম্যাটেরিয়াল প্রয়োজন সেগুলো আমরা অন্য একটা কোম্পানির থেকে নিতে চেয়েছিলাম আর বহু আগে থেকে তাদের থেকেই আমি ম্যাটেরিয়াল গুলো নিয়ে আসছি।তাতে কখনো খারাপ কিছু পাইনি।কিন্তু কথা হচ্ছে এই নতুন যে কোম্পানিটা আমাদের সাথে ডিলে আসতে চাইছে তার কোম্পানির ম্যাটেরিয়াল কতোটা মানসম্মত হবে সেটাই ভাবছি।কারণ তারা খুবই কম মূল্যে ম্যাটেরিয়ালগুলো আমাকে দিতে চাইছে।আমাদের সাথে তার কোম্পানির ডিলটা হলে তার কোম্পানির রেপুটেশনটা বাড়বে কিন্তু তাতে আমার কোম্পানির রেপুটেশন কি হবে সেটাই ভাবছি।
মাহিঃ কেনো তুমি তার ম্যাটেরিয়াল গুলো দেখোনি?সেটা খারাপ নাকি ভালো?
আশফিঃআমি দেখিনি। আমার নিউ ডিজাইনার
যে মেয়েটা আছে সে দেখেছে।
মাহিঃ অদ্ভুত।তুমি নিজে দেখবেনা সেটা কেমন? ডিজাইনারের উপর ভরসা করলেই হবে?আর তাছাড়া নিউ ডিজাইনার এটা কতোদিন হলো জয়েন করেছে?
আশফিঃ মাসখানেক হবে। আর এসব ম্যাটেরিয়াল চুজ করে প্রডাক্টস তৈরির দায়িত্ব ডিজাইনারই নিয়ে থাকে। কিন্তু এতোদিন যাদের সাথে বিজনেস করে এলাম এখন তাদের বাদ দিয়ে অন্য কোম্পানির সাথে কিভাবে ডিল করবো বুঝতে পারছিনা।যেহেতু প্রোডাক্টস গুলো ভালোই হবে ডিজাইনার বললো আবার মূল্য ও কম নিবে তাই ভাবছি ডিলটা করে ফেলবো নাকি।
মাহিঃ আমার মনে হয় তোমার আরো ভালো করে চিন্তা করা উচিত।
আশফিঃকিন্তু এদিকে ওরা অনেক চাপ দিচ্ছে।
মাহিঃ আচ্ছা পরে ভাবা যাবে এসব নিয়ে।আগে যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।তারপর খেতে আসবে।
আশফিঃবলছি শুনোনা?
মাহিঃ আবার কি হলো?
আশফিঃআজকে না ভীষণ ক্লান্ত লাগছে তুমি আমাকে একটু হেল্প করোনা।
মাহিঃ হেল্প?কি কাজে?
আশফিঃএকটু change করিয়ে গোসল করিয়ে দাও আমাকে।
মাহিঃ ফাজলামি তাই না? change করিয়ে দিতে হবে কি সুন্দর কথা?
আশফিঃদিবেনা?
মাহিঃ পারবোনা আমি এসব করতে।
আশফিঃআমি তোমাকে গোসল করিয়ে দিইনা?
মাহিঃ সে তো জোড় করে। আমি কি করিয়ে দিতে বলি?
আশফিঃআচ্ছা সে জোড় করে করিয়ে দিই নাকি জোড় না করিয়ে দিই সেটা কথা না। কথা হলো আমি এখন করিয়ে দিতে বলেছি করিয়ে দিবে।
মাহিঃ ঠিক আছে তাহলে চলো।ভালো করে গোসল করিয়ে দিবো তোমাকে আজকে।
আশফিঃপ্লিজ।
-ও আমার জামা কাপড় খুলে দিয়ে আমাকে গোসল করানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে।
মাহিঃ দেখো আমি কিন্তু বারবার তোমাকে গোসল করাতে পারবোনা।
আশফিঃ তো আমি ক’বার গোসল করতে চাই তোমার কাছে?
মাহিঃ তোমার তো পছন্দ হয়না।তারপর আবার বলবে ভালো করে গোসল করিয়ে দাও।গোসল করা হয়নি আমার। এরজন্যই তো বললাম আমি বারবার করাতে পারবোনা কিন্তু।
আশফিঃআমার যদি মনে হয় যে আমার গোসল হয়নি তাহলে আমি বলবোনা যে আমাকে আবার গোসল করিয়ে দিতে?আচ্ছা এতো কথা বলার সময় নেই।নাও তাড়াতাড়ি এসো বাথরুমে।
মাহিঃ পাঁজি একটা ওকে গোসল করাতে এসে নিজেই গোসল করে ফেলি।পুরো গায়ে সাবান মেখে আবার আমাকে জড়িয়ে ধরে দুষ্টুমি শুরু করে দিয়েছে।
-আচ্ছা আমি তো ভিজে যাচ্ছি। এরকম করলে আমাকে তো আবার গোসল করতে হবে।ছাড়ো আমাকে।এসব করার জন্যই বুঝি আমাকে গোসল করিয়ে দিতে বলো?
আশফিঃহুম। এক এক সময় এক এক রকম ফিলিংস কাজ করানোর জন্য এক এক রকম জায়গা প্রয়োজন।

রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২ পর্ব-৬

0

রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২
পর্ব-৬
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
আশফিঃ কি উঠবেন না?
মাহিঃ (নিশ্চুপ)।মুখ বাঁকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো।
আশফিঃ আচ্ছা চলো আজকে না হয় আমরা এখানেই ঘুমিয়ে পড়ি। কি বলো?
মাহিঃ কোনো প্রয়োজন নেই।আপনি রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ুন।
আশফিঃএতো কথা বলে কাজ নেই।ওকে কোলে তুলে সোজা বেডরুমে চলে এলাম।
মাহিঃ কোলে করে তুলে এনে আমাকে বেডে শুইয়ে দিলো।আমি গালটা ফুলিয়ে বসে আছি।
আশফিঃলাইটটা অফ করাই ছিলো।দরজা টা লক করে আমি এসে ওর পাশে শুয়ে পড়লাম।
-কি হলো?ঘুমাবেন না? তখন তো আমাকে রুমে নিয়ে আসার জন্য কতকিছুই না করলেন।
এখন তো এলাম।তো এভাবে বসে আছেন কেনো?শুয়ে পড়ুন।
মাহিঃ আমি ওর দিকে একটু রাগ চোখে তাকিয়ে কাঁথাটা গায়ে নিয়ে ওর দিকে উল্টো পাশ করে শুয়ে পড়লাম মাঝে কিছুটা দুরত্ব রেখে।
আশফিঃ মাহি???
মাহিঃ ওর ডাক শুনে ওর দিকে তাকালাম।কেমন রেগে গেছে মনে হলো?
-কি হয়েছে?
আশফিঃসেই শুরু থেকে তোমাকে বলে আসছি তোমার সাথে আমার যতই রাগারাগি হোক ঝগড়াঝাঁটি হোক মাঝখানে ফাঁকা রেখে তুমি শুইবেনা। সেটা কি ভুলে গেছো?
মাহিঃ রাগ করলে কি মানুষ গায়ের সাথে গা লাগিয়ে মিশে ঘুমায়?তাহলে কি আর সেটা রাগ দেখানো হলো?এই লোকটার জন্য রাগের মত করে রাগটা করতে পারিনা।সেই মিশে গিয়েই শুইতে হবে ওনার সাথে।আমি ওর কিছুটা কাছে এসে শুইলাম। তবুও কেমন জল্লাদের মত করে তাকিয়ে আছে।
আশফিঃ ওর হাতটা ধরে টেনে এনে একদম আমার বুকের মাঝে নিয়ে এলাম।
-আজকেই লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি এই ভুলটা যেনো না হয়।রাগ হলেও এভাবেই আমার সাথে মিশে শুয়ে থাকবে।
মাহিঃ কেনো?কি হয় মাঝখানে ফাঁকা রেখে শুইলে???
আশফিঃ কি হবে আবার? শয়তান বাসা বাঁধে মাঝখানে।তাতে দুরত্বটা আরো বেশি সৃষ্টি হয়।
মাহিঃ ওরা কথাটা শুনে আর না হেসে পারলাম না। ফিক করে হেসে দিলাম। হাসার সময় ওর দিকে চোখ পড়লো। আমার হাসি দেখে এখন ওর রাগ হয়ে গেছে।
আশফিঃ এটা কি কোনো হাসির কথা যে হাসছো এভাবে?
মাহিঃ মানে? তুমি কি এটা সিরিয়াসলি বলেছো?
-আমার প্রশ্নটা শুনে ছেলেটা রেগে গিয়ে আমার দিকে উল্টোপাশ করে শুয়ে থাকলো।তবে মাঝে ফাঁকা রেখে নয়।একদম মিশেই আছে আমার সাথে। কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো মুরব্বিরা বলে থাকে সেগুলো এখনকার মানুষ অনেকেই বিশ্বাস করেনা। আশফি ও করেনা তবে যদি সেটা বৌ সংক্রান্ত বা আমাদের সম্পর্ক সংক্রান্ত কোনো বিষয় হয় তবে সেটা ও Definitely মানবেই।
আশফিঃ অনেক্ষণ হয়ে গেছে মেয়েটা তখন থেকে খালি নড়চড় করছে আবার এপাশ ওপাশ ও করছে। আর ওর জন্য আমার ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে বারবার।
-এই কি সমস্যা?এতো নড়াচড়া করলে পাশে অন্য কেউ ঘুমোতে পারে?
মাহিঃ স্যরি।
-ওর পাশ থেকে উঠে ওয়াশরুমে গেলাম। একে তো ঘুম আসছেনা তার উপর কেমন অস্থির অস্থির লাগছে শুয়ে শান্তি পাচ্ছিনা।অনেকটা বমি বমি ও পাচ্ছে তাই চোখে মুখে পানি দিলাম। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সোফায় গিয়ে হেলান দিয়ে চোখটা বন্ধ করে বসলাম।
আশফিঃ প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে মেয়েটা একটা রাত ও ঠিকমত ঘুমোতে পারছেনা।এরকম অবস্থা হবে আগে জানলে এতো তাড়াতাড়ি কিছু করতাম না।কিন্তু ড. ও তো বললো প্রথম প্রেগন্যান্সিতে এমনটা অনেকেরই হয় আস্তে আস্তে সেটা ঠিক হয়ে যায়। তিনটা মাস পার হয়ে গেলো ওর তো। এখনো কোনো ইমপ্রুভমেন্ট ই দেখছিনা। ওর এরকম অবস্থা দেখতে আমার নিজের কাছেই খারাপ লাগে। যদি পারতাম সত্যি সত্যিই ওর কষ্টটা আমি নিয়ে নিতাম।বিছানা থেকে উঠে ওর কাছে সোফায় গিয়ে বসলাম।তারপর চোখটা খুলে আমার দিকে তাকালো।
-আমি এখানে বসে আছি তুমি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ো।আমি তোমার কপাল টিপে দিচ্ছি।
মাহিঃ আশফি ওর কোলে বালিশ রাখলো।আমি বালিশের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম।আর ও আমার কপালটা আস্তে আস্তে অনেক সুন্দর করে টিপে দিচ্ছে আমি ওর দিকে চেয়ে আছি।
আশফিঃ ভালো লাগছে?
মাথাটা ঝাঁকিয়ে হ্যাসূচক উত্তর দিলো মাহি।
মাহিঃ বেশকিছুক্ষণ হয়ে গেছে আশফি আমার কপালটা টিপেই চলেছে কিন্তু কিছুতেই ঘুমটা আসছেনা।
আশফিঃমাহি ঘুম কি আসছেনা?খারাপ লাগছে খুব?
মাহিঃ একটুও খারাপ লাগছেনা কিন্তু তাও ঘুমোতে পারছিনা।ঘুমটা যেনো আজকে আমার থেকে ছুটি নিয়েছে।তুমি চলো বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ি। আমার যখন ঘুম আসবে তখন আমি ঘুমিয়ে পড়বো।উঠে বসে ওকে বললাম।
আশফিঃতুমি আমার ঘুমের কথা চিন্তা করছো? মাহির দুটি চোখে যখন ঘুম নেমে আসে ঠিক তখনই আশফি ঘুমোতে পারে। তাহলে তোমার ঘুমকে ডেকে আনার জন্য কি করা যায়?
মাহিঃ কিচ্ছু করতে হবেনা। আমি তোমাকে দেখি তারপর যখন ঘুম আসবে তখন তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়বো।
আশফিঃআচ্ছা?কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছেনা এভাবে তোমার ঘুমটা আসবে।
মাহিঃ শিওর?
আশফিঃট্রাই করে দেখতে পারো।
মাহিঃ ওকে। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।কিন্তু কেমন যেনো আনইজি আনইজি লাগছে।এভাবে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বসে থাকা যায়?
-এই তুমি তাকিয়ে আছো কেনো?তাকাবো তো আমি শুধু একা।
আশফিঃতো আমি কি করবো?আমাকে ও তো কিছু একটা করতে হবে।
মাহিঃ হুম বুঝেছি এভাবে হবেনা।
আশফিঃআচ্ছা আমরা একটা গেইম খেলি।গেইম টা হলো আমি যতক্ষণ পারবো তোমাকে চুমু দিবো আর তুমি যতক্ষণ পারবে আমাকে চুমু দিবে।তারপর দুজনে tired হয়ে পড়লে ঘুমিয়ে পড়বো।
মাহিঃ খালি দুষ্টুমি করার বাহানা তাইনা? ফাজিল একটা।
আশফিঃউমমমমম আচ্ছা তাহলে তোমাকে একটা গল্প শোনায়।গল্পটা শুনতে শুনতে তুমি ঘুমিয়ে পড়বে
মাহিঃবাচ্চাদের মত করে ঘুম পাড়াতে চাইছো?ঘুম আসবে আমার?
আশফিঃগল্পটা কিন্তু বাচ্চাদের ছিলোনা।
মাহিঃ তাই?তাহলে কেমন গল্প সেটা?
আশফিঃনা শুনলে বুঝবে কি করে?
মাহিঃ ঠিক আছে তাহলে শুরু করো।
আশফিঃশুরু তো করতেই পারি কিন্তু তার আগে আমার একটা শর্ত আছে।
মাহিঃ শর্ত মেনে গল্প শুনতে হবে আমাকে?
আশফিঃঠিক আছে না চাইলে শুনতে হবেনা।
মাহিঃ না না ঠিক আছে।
বলো কি শর্ত?
আশফিঃগল্পের মাঝে মাঝে আমি যখন থেমে যাবো তখন আমাকে তোমার এক একটা করে পাপ্পি দিতে হবে আর তারপর তারপর বলতে হবে।এখন শুরু করার আগে একটা দাও?
মাহিঃ দুষ্টু একটা।ওর কাছে গিয়ে ওর গালে লম্বা একটা পাপ্পি দিলাম।
-নিন এখন শুরু করুন।
আশফিঃ আমার কাছে এসো।আমার কাঁধে মাথা দাও।
মাহিঃ ওর কাঁধে গিয়ে মাথা রাখলাম।ও আমার ঘাড়ের উপর হাত রেখে ডানবাহু জড়িয়ে ধরে গল্প বলা শুরু করলো।
আশফিঃহুম এখন বলি। গল্পটা হচ্ছে একজন অত্যাচারী এবং চরিত্রহীন রাজার ভালোবাসার গল্প।
মাহিঃ অত্যাচারী রাজা? সে আবার কাউকে ভালোবাসে?
আশফিঃহুম।কতটা অত্যাচারী ছিলো সে আর কতোটা ভালোবেসেছিলো একজন রাজকন্যাকে তা তুমি শুনলে অবাক হয়ে যাবে।
মাহিঃ আমি খুব এক্সাইটেড এমন একজন রাজার ভালোবাসার গল্প শোনার জন্য।
আশফিঃআমিও যে খুব এক্সাইটেড তোমাকে ভালোবাসার জন্য। ওর ঠোঁটে কিস করতে গিয়ে বললাম।
মাহিঃ আহহা।আগে শুরু করোনা তারপর যতখুশি ভালোবেসো।পাগলটা আমার ঠোঁটে চুমু দিতে আসছিলো।হাত দিয়ে বাঁধা দিলাম আর কথাগুলো বললাম।
আশফিঃ ওকে ডার্লিং। তাহলে শুনো। রাজা ফালাক তাজ। যিনি ছিলেন মোহননগর রাজ্যের সম্রাট।অবিবাহিত ছিলেন তিনি আর তার বয়সটা আমার থেকে কম ছাড়া বেশি হবেনা।খুব অল্প বয়সে তিনি রাজ সিংহাসনে বসেন।দেখতে সুদর্শন হলেও তার মনটা ছিলো খুবি কুৎসিত।তার রাজ্যের প্রজাদের নিকট তিনি কেবল একজন অত্যাচারী, চরিত্রহীন,নিষ্ঠুর আর নরপিশাচ রাজা বলেই পরিচিত ছিলেন।সবসময় সবাই তার মৃত্যু কামনা করতো। সে রাজ্যে কোনো নারীর নিরাপত্তা বলে কোনোকিছু ছিলোনা। আর সেখানে যদি কোনো সুন্দরী মেয়ে তার চোখে পড়ে তাহলে তাকে তুলে নিয়ে এসে রাজা ফালাক তার শয্যায় ভোগের সামগ্রীর মত করে তাকে গ্রহণ করতো।আর নারীদেরকে তার ভোগের সামগ্রী বলে সম্বোধন করতো।
মাহিঃ ছিঃ। এরকম ধরনের রাজা ছিলো সে?
আশফিঃএর থেকেও আরো বেশি নোংরা ছিলেন তিনি। যে নারীকে তিনি একবার গ্রহণ করতেন তাকে দ্বিতীয়বার তিনি স্পর্শ করতেন না। হয় তাকে নিজের রাজমহলের দাসী করে রাখতেন আর না হলে তার সেনাপতি অথবা রাজমহলের অন্যকোনো পুরুষ তাকে kept woman করে রাখতো। একদিন সম্রাট ফালাক এবং সেনাপতি ইকরাম শেখ তাদের মাঝে কথোপকথন চলছে।
মাহিঃ তারপর?
আশফিঃতারপর……
[#বিষয়_বস্তুঃ সম্রাট ফালাক।]
ফালাকঃসেনাপতি ইকরাম?
ইকরামঃবলুন সম্রাট।
ফালাকঃ আমার রাজ্যটাকে অনেক ছোটো মনে হচ্ছে কেনো আমার কাছে? (রাজমহলের ছাদে দাড়িয়ে দূর দৃশ্য দেখার যন্ত্র দিয়ে দেখছিলেন আর কথাগুলো বলছিলেন)
ইকরামঃকি বলছেন সম্রাট! এই ১ বছরের মাঝে আপনি কতগুলো রাজ্য দখল করেছেন তা কি হিসেব করেছেন?আপনার রাজ্যের পার্শ্ববর্তী যত রাজ্য ছিলো তা সব আপনি কৌশলে এবং যুদ্ধের মাধ্যমে তা দখলে এনেছেন।
ফালাকঃ তুমি কি নিশ্চিত? আমার পার্শ্ববর্তী আর এমন কোনো রাজ্য কি আছে যা আমি নিজের দখলে আনতে পারিনি?যেখানে আমি আমার রাজত্য বহাল করতে পারিনি?
ইকরামঃ সম্রাট এটা আমি আপনাকে নিশ্চিতভাবে বলতে পারছিনা।মাফ করবেন।তবে আমাকে দিনের কিছু ভাগ সময় দিন আমি আপনাকে সঠিক খবর এনে দিচ্ছি।
এর মাঝে মন্ত্রী উপস্থিত হলেন।
মন্ত্রীঃ সালাম সম্রাট।
ফালাকঃ আরে মন্ত্রী সাহেব যে। এতো শিঘ্রই চলে আসলেন?
মন্ত্রীঃ আপনি যে কাজে আমাকে পাঠিয়েছিলেন তা সম্পূর্ন করে তবেই আপনাকে খবর দিতে এসেছি। আমাদের রাজ্যের দক্ষিণ পার্শ্বে ঈষাণ দিকে একটি রাজ্য আছে রাজ্যটির নাম শেরপুর।সেটা এখনো আমাদের দখলকৃত হয়নি। আমি সেই রাজ্যের মানচিত্র সংগ্রহ করে নিয়েসেছি।
ফালাকঃ সাবাস মন্ত্রী আয়্যুব।আপনি সবসময় আমার আশা থেকে বেশিকিছু দিয়েছেন আমাকে। কি সেনাপতি সাহেব?? হাহাহা। লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আমি সর্বদা অগ্রিম চিন্তার মাঝে থাকি এবং আমার পরিকল্পনাটা ও অগ্রীম। তুমি আমাকে কবে খবর এনে দিবে সেইদিন পর্যন্ত আমি অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকবো? সে যাই হোক। মন্ত্রী আমি আপনার সাথে এই বিষয় নিয়ে কিছুসময় বাদে আলোচনা করছি।আপনি এখন আসতে পারেন।
ইকরামঃ ক্ষমা করুন সম্রাট।আমার ভুল হয়ে গেছে।
ফালাকঃসেনাপতি ইকরাম এতো লজ্জিত হওয়ার কি আছে?সব কাজ কি সবার জন্য? তোমার কাজ তো অন্যকিছু।
ইকরামঃআদেশ করুন সম্রাট।আমি এক্ষণি তা পরিপূর্ণ করবো।
ফালাকঃহাহাহাহা। তুমি তো কিছুদিন আমাকে অনাহারে রেখেছো।
কথাটা শুনে সেনাপতি কিছুটা অবাক হলেন।
ইকরামঃ আমার বোধগম্য হয়নি সম্রাট। আপনি কি বোঝাতে চেয়েছেন?
ফালাকঃনাহ্ তোমার তো দেখছি মস্তিষ্কে মরিচা ধরে যাচ্ছে। মন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে কথাটা বললেন।
-তুমি কি সত্যি বুঝতে পারছোনা আমি কোন কারণে অনাহারে আছি?
ইকরামঃবুঝতে পেরেছি সম্রাট।মাফ করবেন বেশি সময় অতিবাহিত করে ফেলেছি বোঝার জন্য। কিন্তু সম্রাট আপনার রাজ্যের এমন কোনো সুন্দরি নেই যাকে আপনি গ্রহণ করেননি।এমনকি আপনার দখলকৃত রাজ্যের রাজাদের রাজকন্যা ও আপনার থেকে রেহাই পায়নি।
সেনাপতির শেষের কথাটি শুনে রাজা ফালাক রাগান্বিত হয়ে সেনাপতির দিকে তাকালেন।সেনাপতি কাচুমাচু মুখ করে ক্ষমা ভিক্ষা চাইলেন।কথাটি তার মুখ ফোঁসকে বেরিয়ে গেছে।
ইকরামঃ সম্রাট! মন্ত্রীর আনা তথ্যে যে রাজ্যের কথা উল্লেখ হয়েছে শুধুমাত্র সেই রাজ্যের কন্যাই বাকি আছে আপনার…….
কথা থামিয়ে দিলেন রাজা।
ফালাকঃহুম বুঝেছি। রাজসভায় সবাইকে উপস্থিত হতে বলো।রাজ্য শেরপুর সম্পর্কে আমার আরো সুস্পষ্ট তথ্য চাই। আজকে ঐ রাজ্য দখলের বিষয়ে আলোচনা সভা বসবে।
চলবে।
(এভাবেই রাজা ফালাকের গল্পটি কিছুদিন চলবে আর এর মাঝেমাঝে আশফি আর মাহির সাংসারিক গল্পও চলবে।একদম অন্যভাবে গল্পটি সাজাতে চাইছি।যেখানে রাজা ফালাক এবং রাজকন্যা মেহের আর এদিকে আশফি এবং মাহির উভয়ের কাহিনীই চলতে থাকবে। রাজা ফালাক আর রাজকন্যা মেহের এর কাহিনীটা খুব বেশিদিন যাবেনা।কেমন লাগছে জানাবেন।এটাই ছিল গল্পের ধারা পরিবর্তন।আলিশা কে তৃতীয়পক্ষ হিসেবে আনা আমার গল্পের কাহিনী নয়। আমি সবসময় ভিন্নকিছু লেখার চেষ্টা করি)

রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২ পর্ব-৫

0

রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২
পর্ব-৫
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi

আলিশাঃআরে আস্তে।
এক্ষণি তো পড়ে যেতে। এতো দ্রুত হাঁটছিলে কেনো?
আশফিঃ মাহি? তুমি ঠিক আছো? দেখি
কোথাও লাগেনি তো?
মাহিঃ আরে ঠিক আছি আমি। সমস্যা নেই।এতো ব্যাস্ত হতে হবেনা।
আশফিঃ তোমার তো কোনো কিছুতেই সমস্যা নেই।সব সমস্যা তো আমার। তুমি কি কারণে এতো কেয়ারলেস বলো তো। তোমাকে আমি কতবার বলেছি যে একটু সাবধানে চলাফেরা করবে। তুমি তো দেখছি কোনো কথায় শুনছোনা আমার। সমস্যা কি তোমার?
আলিশাঃআচ্ছা ঠিক আছে। এতো বকছো কেনো? ও খেয়াল করেনি। ও যতুটুকু ব্যাথা না পেয়েছে তোমার বকুনি খেয়ে তার থেকে বেশি ব্যাথা পাচ্ছে বেচারি। সবসময় এতো কেয়ারফুলি থাকা যায় না।
আশফিঃকেনো থাকা যাবে না?আমি তো দেখছি ও সবকিছুতেই কেয়ারলেস। এখনো এতো কেয়ারলেস কি করে হয় ও?
-আমার কথাগুলো শুনে আমার দিকে চোখ বড়বড় করে একবার তাকিয়ে রাগ করে ভেতোরে চলে গেলো। এই মেয়েটা দেখছি যতটা বোকা ততোটাই অবুঝ।
মাহিঃ আমার সাথে এতো বড় মিথ্যাচার করে এখন আবার আমাকেই মেজাজ দেখাচ্ছে।ধার ধারিনা তোমার মেজাজের। হুহ।
আশফিঃ সত্যিই ধার ধারোনা?
মাহিঃতুমি আমার রুমে আসবেনা। তোমার সাথে কোনো কথা বলবোনা আমি।
আশফিঃপ্রথম তো এটা আমারও রুম।আর দ্বিতীয়ত আপনি কথা না বললেও আমি কথা বলবো। ও রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল। আমি দ্রুত গিয়ে দরজা টা আটকে দিলাম।বেশি আদর দেখানোর কারণে এই অবস্থা। এখন থেকে বেশি রাগ দেখালে তাহলে মেয়েটা কথা শুনবে।তাই আপাতত এখন মেজাজের ওপরেই রাখতে হবে ওকে। যাতে আমার সব কথা শুনে চলে।
-কোথায় যাচ্ছো? এক পা ও ঘরের বাইরে রাখবেনা।
মাহিঃ কি? আমি কি ঘরবন্দি হয়ে থাকবো নাকি।আমার যখন ইচ্ছা হবে আমি তখনই বাইরে যাবো। সরে দাড়াও।
-ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে যেতে গেছি তখন ও আমার হাত ধরলো।
আশফিঃ এই মেয়ে তোমাকে একবার বলেছিনা যে ঘরের বাইরে পা রাখবে না।দ্বিতীয়বার আর বলবোনা যাও বিছানায় গিয়ে বসো। এতো বড় সাহস আমার কথা অমান্য করো?
-আমার দিকে অবাক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর বিছানায় গিয়ে বসে পড়লো। অবাক তো হয়েছেই আবার কষ্ট ও পেয়েছে একটু।
মাহিঃ রাক্ষস একটা। দিন দিন ওর ব্যবহারটা শুধু রুড ই হচ্ছে।
আশফিঃ ওদিকে সরে বসো।
মাহিঃ পারবোনা।
আশফিঃ সরে বসবেনা আমি জানি।তাই কোলে তুলে ওকে বিছানার মাঝে বসিয়ে দিলাম।
মাহিঃএই কি করছো।ছাড়ো আমাকে। এভাবে কোলে তোলার মানে কি?এতো রোমান্স আসে কোথা থেকে হ্যা?
আশফিঃওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়েছি।
-কোথা থেকে আসে জানোনা?তোমাকে তো সরে বসতে বলেছিলাম তুমি তো সরলেনা তাই আমাকেই সরানোর দায়িত্ব নিতে হলো। এই একদম উঠবেনা।আমার মাথা যদি বিছানায় রাখো তাহলে আজকে তোমার কপালে দুঃখ আছে।
মাহিঃএটা কি হচ্ছে হ্যা? কি পেয়েছো তুমি আমাকে? যখন খুশি তখন যা খুশি তাই করবে আমার সাথে? এতো বড় মিথ্যা বলে এসেছো এতোদিন আমার সাথে এতোদিন।এখন সোহাগ দেখানো হচ্ছে তাইনা?
আশফিঃওহহ মেয়েটা আমার মাথা শেষ করে দিলো।আমি ওর কোলের উপর মাথা তুলে উঠে বসলাম।
-তোমার সাথে আগে এই বিষয়টা ক্লিয়ার করি। বলো কি সমস্যা? আমি না তখন তোমাকে বললাম যে আমি কাউকে কখনো আমার স্বাভাবিক থাকা অবস্থায় নিজে থেকে জড়িয়ে ও ধরিনি।
মাহিঃ কি বললে স্বাভাবিক থাকা অবস্থায় করোনি।অস্বাভাবিক অবস্থায় করেছো? তুমি আমার থেকে কিছু লুকোচ্ছো।সেটা তোমার কথার মাঝেই প্রকাশ পাচ্ছে।
আশফিঃআচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে। বলেই দিচ্ছি।একটা বিষয় তোমার থেকে হাইড করেছি।
মাহিঃ কি বিষয়?বলো।
আশফিঃ একদিন ক্লাবে কিছু ফ্রেন্ডদের সাথে বসে মজা করছিলাম।সেদিন আমাদের সকলেরই ড্রিংকস করার পরিমাণটা বেশি হয়ে গেছিলো। তারপর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি কোনো হোটেলের রুমে শুয়ে আছি।
মাহিঃ রুমে মানে? আর সকাল হয়ে গেলো কিভাবে?মাঝখানের রাতটুকু কোথায় গেলো?
আশফিঃআমার কথা তো শেষ করতে দেবে। কিছুক্ষণ পর একজন মাঝ বয়সী মহিলা রুমে আসলো।আমাকে গুড মর্নিং বললো।তার উত্তরে আমি কিছু না বলে ওনাকে দেখছিলাম।আমার দিকে তাকিয়ে সে মৃদু একটা হাসি দিলো।ওনাকে দেখে তো আমার মাথায় বাজ পড়লো।তারপর তো আমি উঠে গিয়ে কিছু বলার আগেই উনি আমার ওয়ালেট আর ফোন আমার হাতে ধরিয়ে দিলো।আমি ওনাকে ঐ মুহূর্তে অনেক কিছু বলতে চাইলাম কিন্তু কিছুই যেনো বলতে পারলামনা।বিছানায় উপর বসে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলাম।উনি আমার…….কথাগুলো বলছিলাম এর মাঝে মাহির দিকে চোখ পড়লো।চোখে ইতিমধ্যে পানি টলমল করছে ওর।আমি ওকে কিছু বলতে যাবো ও আমাকে ধমক(কান্নার সুরে)দিয়ে থামিয়ে দিলো।
মাহিঃকোনো কথা না। যেটা বলছিলে সেটা শেষ করো।আর একটাও বাড়তি কথা না।
আশফিঃওকে ওকে।তারপর আমি তো মাথায় দিয়ে বসে ছিলাম।কারণ গতরাতের কোনোকিছুই আমার মনে পড়ছিলোনা আমি কি করে ওনার রুমে এলাম।উনি আমার পাশে বসে আমার কাঁধে হাত রেখে বললো,
– Anata no yōna monode wa arimasen(তুমি যেমন ভাবছো তেমন কিছুই নয়।আমি শুধু তোমাকে নিরাপত্তা দিয়েছি)
আশফিঃ আমি তখন ওনার কাছে জানতে চাইলাম। এটা কি সত্যি?উনি আমার গালটা টিপে দিয়ে হেসে বললো, তুমি এখন আসতে পারো।আমার বয়ফ্রেন্ড চলে আসবে।ব্যাস এটাই ছিলো আমার লাইফের একটা বিশ্রি ঘটনা।এছাড়া আর কিচ্ছু হয়নি আমার সাথে।
আমি পুরোটাই ভার্জিন আছি তুমি বিশ্বাস করো।
মাহিঃকি?এখনো ভার্জিন আছো?
আশফিঃআই মিন বিয়ের আগে তোমাকে স্পর্শ করার আগে পর্যন্ত ছিলাম। এখনো মুখটা ফুলিয়ে রাখবে? তুমি কি এখনো বিশ্বাস করতে পারছোনা??
মাহিঃকোনো কিছু গোপন করোনি তো?(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
আশফিঃ তুমি যদি এখন সত্যি সিঙ্গেল থাকতেনা তোমার যে কি হাল করতাম। আমি তোমাকে আমার লাইফের গোপন সত্য বলে দিলাম এরপরেও তোমার ডাউট থেকেই যাচ্ছে।এখন তোমাকে আমার কি করা উচিত???
মাহিঃ তার মানে তুমি ফার্স্ট আমাকেই কিস করেছিলে?
আশফিঃ কথাটা শুনে আমার যা পরিমাণ রাগ হলো।এতো বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার পরও বিশ্বাস করতে চাইছেনা।আমি ওর মুখের দিকে রেগে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম।তারপর ওর দুগাল চেপে ধরে ওর ঠোঁটে অনেক্ষণ চুমু দিয়ে বললাম, আপনার ঠোঁটেই ফার্স্ট করেছিলাম আর এখনো করেই যাচ্ছি। কথাগুলো বলে রাগ করে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। মেয়ে মানুষের মন এতো সন্দেহ প্রবণ কেনো? সবসময় খালি মেজাজ দেখায়।আজকে উল্টোটা হবে। রাতে আমরা একত্রে ডিনার শেষ করে আমি রুমে চলে এলাম।ও তখন আলিশার সাথে বসে গল্প করছিলো। আমি লাইট অফ করে শুয়ে পড়েছি। আসলে যতটা রাগ দেখাবো এতোটা রাগ নেই আমার মাঝে। তবুও দেখাবো একটু এ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য। সবসময় খালি মেজাজ আর রাগ দেখানো তাইনা?
মাহিঃ একি এতো তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লে যে লাইট অফ করে?কাজ নেই বুঝি আজকে?
আশফিঃ( নিশ্চুপ)?
মাহিঃ আরে কি হলো কথা বলছি শুনতে পাচ্ছোনা নাকি ঘুমিয়ে পড়লে? অদ্ভুত এইতো এলো।এতো শিঘ্রই ঘুমিয়ে পড়লো?আমি আর কোনো কথা না বলে ওর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। ওর গায়ে চাদরটা টেনে দিলাম। এটা কি হলো? আমি চাদরটা টেনে দিলাম আর ও গা থেকে সেটা ফেলে দিলো। এই তুমি ঘুমোওনি? কি হয়েছে গরম লাগছে খুব?
আশফিঃ??(নিশ্চুপ)
মাহিঃ কি ব্যাপার কথা বলছোনা কেনো?আমি এতক্ষণে কতগুলো কথা বললাম আর তুমি একটা কথার উত্তর দিচ্ছোনা? কেনো? আরে সেই তখন থেকে চুপ করে আছে কোনো কথার উত্তর দিচ্ছেনা।
আশফিঃচুপ করে আছি তাও কি বুঝতে পারছেনা আমি রেগে আছি? মাথামোটা মেয়ে একটা।
মাহিঃ এই তুমি আমার সাথে কথা বলছোনা কেনো?তুমি কি রেগে আছো আমার উপর?
আশফিঃ না তো রেগে থাকবো কেনো?(ঢং বুঝতেও পারছেনা)।
মাহিঃ কথাগুলো কিরকম যেনো শুনালো। মনে হচ্ছে কথার মাঝে রাগ রাগ ভাব। ও আচ্ছা তাহলে বিকালে আমার ঐ ব্যবহারের কারণে উনি আমার উপর গোসা করে আছেন। তাহলে তো সেটা ভাঙ্গানোর প্রয়োজন। এই শুনছো একটা জরুরি কথা ছিলো।
আশফিঃহুম।
মাহিঃ বলছি হাতুড়ি আনবো নাকি পাথর আনবো? কথাগুলো বলে আমি মুখচিপে হাসছিলাম। আমার কথার মানে ও প্রথম দিকে বুঝতে পারেনি পরে আমার দিকে তাকিয়ে আমার হাসি দেখে বুঝতে পেরেছে যে হাতুড়ি দিয়ে ওর রাগ ভাঙ্গতে চেয়েছি। তাতে জনাব যে আরো রেগে গেলেন।রেগে গিয়ে বিছানা থেকে উঠে ঘরের বাইরে চলে গেলেন।
আশফিঃ পাঁজি বদমাইশ মেয়ে বলে কিনা হাতুড়ি দিয়ে রাগ ভাঙ্গাবে?আমি বুঝি ওনার হাতুড়ি দিয়ে রাগ ভাঙ্গাতাম।আজকে যাবোনা ঘরে।দেখি কি করে থাকে। যতক্ষণ না আমাকে সেধে ডাকতে আসবে আদর করে ঘরে ডেকে নিয়ে না যাবে ততক্ষণ আমি আজ বাইরেই থাকবো।
মাহিঃ নাহ্।এভাবে হবেনা। ওনাকে জাদুসোনা লক্ষীসোনা বলে আদর করে তারপর ঘরে নিয়ে আসতে হবে।না হলে তো রাগ করে সারারাত বাইরেই বসে থাকবে।আমি উঠে ওর কাছে গেলাম।দেখলাম ফ্রিজ খুলে ড্রিংকসের বোতল বের করছে।
আশফিঃ ওর আসার শব্দ শুনে আমি ফ্রিজের কাছে গিয়ে ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে ড্রিংকসের বোতল বের করছি।আমি জানি এটা দেখলে ও এখন আমাকে আটকানোর জন্য আমার মান ভাঙ্গানোর জন্য ওর সমস্ত অনুভূতি আদর সোহাগ যা কিছু আছে সবকিছু আমার উপর এপ্লাই করবে। আর আমিও তো সেটাই চাইছি।
মাহিঃ ডিয়ার নো। তুমি এটা কি করছো?তুমি না চান্দুর বাবা হবে? তোমার তো এখন থেকে এগুলো এভোয়েড করতে হবে।তার বদলে তুমি এটা ট্রাই করছো? তুমি কি চান্দুর মেইন্টালিটির কথা একবারও চিন্তা করবেনা?
আশফিঃ হুহ কতো ভাবওয়ালা কথা বলবে এখন?চলতে থাক দেখতে অবশ্য ভালোই লাগে ওর এই এটেনশন। ওভার এ্যাটেনশন।?
মাহিঃ আমি ওর কাছে গিয়ে বোতল টা নিয়ে নেওয়ার ট্রাই করলাম কিন্তু পারলামনা।এখন তো দেখছি ওভার কেয়ার না দেখালেই হচ্ছেনা।ও বোতল আর গ্লাসটা নিয়ে সোফায় না বসে ফ্লোরে গিয়ে বসলো।গ্লাসে ড্রিংক ঢালার আগেই ঠাস করে ওর কোলের উপর গিয়ে বসে পড়লাম।আমার পেছন ওর বুকের সাথে লাগিয়ে বসে আছি।
আশফিঃ আমি কোনো কথা বলছিনা।শুধু ওর কাহিনী দেখে যাচ্ছি।দেখি আর কি কি করতে পারে। ওকে ওভার করে গ্লাসটা নেওয়া সম্ভব ছিলোনা। তাই বোতলে মুখ বাঁধিয়ে খেতে শুরু করলাম।যদিও এ্যালকোহলের পরিমাণ বেশি ছিলোনা।তবুও বেশি খেলে একটু নেশা হয়েই যায়।ও আমার কোলে চেপে বসেই আছে।পেছন থেকে সামনে ঘুরে আমার বোতলটা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
মাহিঃ উহহু আশফি এটা কি হচ্ছে বোতলটা দিচ্ছোনা কেনো?ঘরে যাবেনা?
আশফিঃনা।
মাহিঃ ঠিক হচ্ছেনা কিন্তু। আমি একা কি করে ঘুমোবো?
আশফিঃলাইট জালিয়ে ঘুমোও।
মাহিঃ আচ্ছা। তুমি কি করবে?
আশফিঃ(নিশ্চুপ)
মাহিঃ বুঝেছি।এখন আমাকে কি করতে হবে? আমি ওর কাঁধ জড়িয়ে ধরে ওকে চুমু দিতে গেলাম ও মুখটা ডানে সরিয়ে নিলো।
আবার দিতে গেলাম আবারো মুখটা বামে সরিয়ে নিলো।ওর চোখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলাম। চোখদুটোর ভাষা বোঝার চেষ্টা করছি।অনেক আবেগ দেখতে পাচ্ছি ওর চোখে।আশফিও আমার চোখের দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে।আমিও চোখের পলক সরাচ্ছিনা বলে ও নিজেই পলক সরিয়ে নিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রইলো। বোতলে চুমুক দিতে যাবে তখন আমি ওর ঠোঁটে আমার হাত দিয়ে চেপে ধরলাম আর বোতলটা আমি নিয়ে নিলাম।তারপর আমি ওর কোলের উপর পিছু ঘুরে বসে আমার চুলগুলো ঘাড়ের উপর থেকে সরিয়ে একপাশে নিয়ে রেখেছি।আর ওর হাতদুটো আমার পেটের উপর ধরে রাখলাম।
আশফিঃ কি হয়েছে??
মাহিঃ ওর প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলামনা।আমি ওর বুকের সাথে হেলান দিয়ে ওর হাতদুটোর উপর আমার হাত রেখে একদম ওর সাথে মিশে রয়েছি।
আশফিঃ আমার হাতের উপর ওর হাতদুটো রেখে আমার বাহুডোরে নিজেকে আটকে রাখলো। আমি বুঝতে পেরেছি ও আমাকে কি বোঝাতে চেয়েছে।
মাহিঃ কি হলো? তুমি কি বুঝতে পারছোনা আমি কি চাইছি?
আশফিঃ হাসি পাচ্ছে ওর এসব কান্ডকারখানা দেখে।যদিও আমার মনের ভেতোরে ও অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে ওর কাছে যাওয়ার জন্য।আর কিছু বললামনা তাতে আবার অনুভূতি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।ও চুলগুলো ঘাড়ের একপাশে সরিয়ে রেখেছে।আমি ওর ঘাড়ে আর কানে আদর করছিলাম বেশ কিছুক্ষণ।ও চোখ দুটো বন্ধ করে আছে। আমি থেমে গেলাম নিজেকে সামলে।ও তখন চোখ দুটো খুলে তাকালো আমার দিকে।ওকে কোলের উপর থেকে নামিয়ে আমি উঠে রুমে চলে যেতে লাগলাম।কিন্তু মহারাণী তো দেখি রাগ করে নিচে বসে থাকলো।আমি ভেবেছি আমি উঠে আসলে ও নিজেও উঠে চলে আসবে। আমি ওর কাছে এগিয়ে আমার হাতটা বাড়িয়ে দিলাম আমার হাত ধরে উঠার জন্য।সে রাগ করে মুখটা ঘুরিয়ে রাখলো।বুঝেছি কোলে তুলে নিয়ে যাওয়া ছাড়া উনি এখান থেকে উঠবেন না।
চলবে।

রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২ পর্ব_৪

0

রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২
পর্ব_৪
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
মাহিঃ ও আমার……না থাক এতো কিছু বলা যাবেনা।লজ্জা লাগে।
আশফিঃ ওকে গোসল করিয়ে দিয়ে ওর চুল গুলো মুছে দিচ্ছি। আর ও ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আমার দিকে তাকিয়ে মুখটা গোমড়া করে আছে। কি হয়েছে ওভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?আজকের পর তোমার আর আমার সামনে গোসল করতে লজ্জা থাকবেনা আশা করি।
মাহিঃ হুম।তুমি যা করলে তার পর থেকে লজ্জা কেনো রাগ হচ্ছে আমার।
হয়েছে তোমার চুল মোছা?তখন থেকে মুছেই যাচ্ছে মুছেই যাচ্ছে।
আশফিঃচুলটা ভালো করে মুছতে দাও।না হলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে।আর তুমি যেভাবে চুল মুছো তাতে তো দেখি চুলের আগা থেকে টপ টপ করে পানি পড়তেই থাকে।চুলগুলো ও তো ঠিকভাবে মুছতে জানোনা।
আলিশাঃopps sorry….
একদম ভুল হয়ে গেছে। আমি আসলে বুঝতে পারিনি তোমাদের দিনে দুপুরে রোমান্স চলে।এক্ষনি বেরিয়ে যাচ্ছি।
মাহিঃ বেরিয়ে যাবে কেনো?এসোনা।এই তুমি সরো তো।তখন থেকে ঘাড়ের কাছে দাড়িয়ে আছে।
আশফিঃ কি বললে?
আলিশাঃ হাহাহাহা।
আশফিঃ এইজন্যই না যেচে কারো ভালো করতে নেই।
মাহিঃ লাগবেনা এতো ভালো আমার।সবসময় খালি আদেশ উপদেশ।
নিজের মত করে এখন কিছু করতে ও পারিনা।
আশফিঃ করতাম না এতো আদেশ উপদেশ যদি না আমার চান্দু টা আপনার কাছে থাকতো।একবার আমার চান্দু আমার কোলে চলে আসুক তারপর আপনার ছুটি দিয়ে দিবো। তখন আপনি ভলিবল ফুটবল যা খুশি খেলে বেরিয়েন।
আলিশাঃএই আশফি এটা কেমন ধরনের কথা?ছুটি দিয়ে দিবে মানে কি?তুমি কি ওকে ছুটি দেওয়ার জন্য বিয়ে করেছো নাকি?আর একটা কথা এই চান্দুটা কে?
মাহিঃ ওনার ছেলে?তাকে উনি চান্দু বলে ডাকবেন।
আলিশাঃচান্দু!!!এটা আবার কেমন নাম।এটা কোনো নাম হলো?আর যদি মেয়ে হয় তাহলে কি বলে ডাকবে?
আশফিঃতোমাদের কাউকে ডাকতে হবেনা।আমি একাই ডাকবো।আর মেয়ে হবেনা তো।আমাদের একটা ছেলেই হবে।
আলিশাঃউহুম।আমার মনে হচ্ছেনা কিন্তু।কারণ তোমার বৌ আগের থেকেও আরো বেশি সুন্দর হয়ে গেছে।আমার মনে হচ্ছে তোমাদের কোলে একটা স্নো হোয়াইট আসবে।কারণ মাহি তো তোমার হোয়াইট এঞ্জেল।তাই ওর কোলে স্নো হোয়াইটের মতই সুন্দর একটা অস্পরী আসবে।
মাহিঃWhite angel না ছাই।
আশফিঃহুম আপনার কাছে তো শুধু ছাই।তাহলে আজ থেকে আপনি আমার চুরেল বৌ।ঠিক আছে না?
মাহিঃ ধুর।
আলিশাঃ হাহাহাহা।
আশফিঃআচ্ছা চলো lunch করে আসা যাক।তারপর একসাথে বসে তিনজন আড্ডা দিবো।দুপুরের খাবার শেষ করে তিনজন বসলাম একসাথে গল্প করার জন্য।তো আলিশা এখন তোমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি বলো।ওখানেই সেটেল হয়ে যাবে নাকি একদম বরাবরের মত দেশে ব্যাক করছো।
আলিশাঃযদি বলি দুটোর এক জায়গাতে ও থাকার ইচ্ছা নেই।
মাহিঃ মানে?তো কোথায় থাকার ইচ্ছা?কোনো বয়ফ্রেন্ড ঘটিত ব্যাপার আছে নাকি?
আলিশাঃঠিক বয়ফ্রেন্ড বলা চলে না আবার তার থেকে কম কিছু ও না।
আশফিঃতুমি কিন্তু রহস্য করে রাখছো বিষয়টা।
আলিশাঃকিছু কিছু বিষয় রহস্য হয়ে থাকাই ভালো।
আশফিঃতাই নাকি।ঠিক আছে তাহলে রহস্য হয়ে থাক।
মাহিঃ আমি কিন্তু রহস্য উদঘাটনে এক্সপার্ট।আলিশাঃআচ্ছা।তাহলে তো দেখছি আমাকে খুব সাবধানে থাকতে হবে।
মাহিঃ আরে না মজা করলাম।তো তুমি আমাদের কাছে এখোনি সবকিছু বলতে চাইছোনা তাইতো?
আলিশাঃসারপ্রাইজ দিবো বলে।
আশফিঃ ওয়াও।সারপ্রাইজ জিনিসটা আমি সত্যি খুব পছন্দ করি।
আলিশাঃ কি? নিতে পছন্দ করো?
আশফিঃ নিতে ও পছন্দ করি আর দিতেও পছন্দ করি।
মাহিঃ হুমমমম।
সারপ্রাইজে সারপ্রাইজে আমার জীবনটা মুখোরিত।
আশফিঃহাহাহা।ভাগ্য করে পেয়েছো আমাকে বুঝলে!!
আলিশাঃআশফি ঠিকই বলেছে মাহি।অনেক ভাগ্য করেই এমন ছেলেকে বর হিসেবে পাওয়া যায়।এই কিন্তু তোমার বরের দিকে নজর দিচ্ছিনা।
মাহিঃ নজর দিলেও সমস্যা নেই। নজর কাটিয়ে দিবো।
আলিশাঃহাহাহা।দারুণ বলো তোমরা দুজনে।আমার না খুব দেখার ইচ্ছা কিভাবে নজর কাটা হয়।
মাহিঃ হুম।দেখাবো সমস্যা নেই।
অনেক্ষণ একসাথে বসে আড্ডা দিয়েছি।এখন আমার অতি কেয়ারিং বর আমাকে নিয়ে বাগানে হাঁটতে বেরিয়েছে।ছেলেটা এতো খেয়াল কিভাবে রাখে আমার বুঝিনা। আশফি?
আশফিঃবলে ফেলুন।
মাহিঃ আমি না থাকলে……না থাক কিছুনা।কথাটা বলতে গিয়েও থেমে গেলাম কারণ কথাটি পুরোপুরি বলার আগে ও আমার মুখের দিকে অগ্নিময় দৃষ্টিতে তাকালো।আমি ভয়ে চুপ হয়ে আছি।
আশফিঃআমি বুঝিনা তুমি এই কয়টা বছরে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শুধু এই প্রশ্নটাই কেনো করো?তোমার এইসব ব্যবহার গুলোর জন্য আমি মাঝেমাঝে বোরিং হয়ে যায়।
মাহিঃ এতো বেশি ভালোবাসো মাঝেমাঝে ভয় হয়।কারণ সুখের সময়টা সারাজীবন থাকেনা।আর তোমার থেকে কোনো আঘাত পেলে আমি সেদিন মরেই যাবো।
আশফিঃতোমার কেনো এমন মনে হয় যে আমি তোমাকে আঘাত দিতে পারি?আর সুখের সময় থাকবেনা কেনো?আমি বেঁচে থাকতে আমার সাধ্যের ভেতোর কখনোই তোমাকে কষ্ট পেতে দেবোনা।আচ্ছা
তুমি কি বিয়ের আগের ঘটনাগুলো এখনো ভাবো?যদি তাই ভেবে এই কথাগুলো বলো তাহলে আমি বলছি সেগুলো করেছিলাম তোমাকে অর্জন করার জন্য।আর বিয়ের পরে যে কাজগুলো করেছিলাম তা তোমার ভালোবাসা অর্জন করার জন্য।কিন্তু এখন আমি তোমাকে সহ তোমার ভালোবাসা অর্জন করে ফেলেছি।তাই এখন তোমাকে আঘাত দেওয়ার কোনো কথায় আসেনা।
তবে হ্যা যদি কখনো আমার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করো তাহলে তো অনেক বড় সমস্যা আছে।তোমাকে কি করবো তা আমি নিজেও জানিনা।কারণ তোমাকে পেতে আমার অর্ধক জীবন প্রায় চলেই গেছিলো।আর সেই তুমি এখন আমার থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করলে……যাই হোক আমি জানি এই কাজটা তুমি কখনোই করবেনা।কারণ তুমি আমাকে আমার থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসো।আর সবথেকে বড় বিষয় আশফির জীবনে মাহি ছাড়া অন্য কোনো নারীর ছায়াও পড়বেনা কোনোদিন।বুঝেছো?
মাহিঃ হুম।
আশফিঃহুম কি?কথা বলো।
মাহিঃ কি বলবো?
আশফিঃগল্প করো আমার সাথে।
মাহিঃ তুমি বলো আমি শুনছি।
আশফিঃহ্যা আমি শুধু বলি আর আপনি শুধু শুনেন।
আচ্ছা আমি যখন কথা বলি তুমি তখন আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকো কেনো?
মনে হয় যেনো নতুন করে দেখো আমাকে।
মাহিঃ তোমার কথা বলা দেখি।কথা বলার সময় তোমার মুখের ভঙ্গি হাত নাড়িয়ে কথা বলা এগুলো দেখতে আমার খুব ভালো লাগে।যতই দেখি ততই মুগ্ধ হই।আচ্ছা আমরা কি প্রেম করতে পারি?
আশফিঃহাহাহা।প্রেম করার শখ হলো কেনো?
মাহিঃআমি তো কোনোদিন প্রেম করিনি। শুধু সবার প্রেমের গল্পই শুনেছি।বয়ফ্রেন্ড খুব রোমান্টিক হয় রোমান্টিক রোমান্টিক কথা বলে। ডেটে যায় অনেক গিফট দেই গার্লফ্রেন্ডদের।
আশফিঃতারপর?
মাহিঃ তারপর বিয়ের আগেই কেমন বরের মত করে টেককেয়ার করে শাসন করে।সেগুলো তখন শুনলে মনে হতো সব মিথ্যাকথা আর সব ওদের নাটক।কিন্তু এখন…..
আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলতে গিয়ে থেমে গেলাম।(লজ্জাতে)
আশফিঃকিন্তু এখন কি? কি হলো বলো?লজ্জা পাচ্ছো নাকি বলতে?
মাহিঃ হুম।
আশফিঃহাহাহা তোমার মাঝে মাঝে হঠাৎ করে এই লজ্জা পাওয়ার বিষয়টা কিন্তু আমার দারুণ লাগে।তো কি এমন বিষয় যা আমাকে বলতে তোমার লজ্জা করছে?এতো লজ্জা না করে বলে ফেলো।
মাহিঃ এখন মনে হয় ওরা যা বলতো সব সত্যি।সবাই এক না।আর আমার এই ধারণাটা বদলে গেছে তোমার ভালোবাসা পেয়ে।
আশফিঃতাই?কিভাবে শুনি?
মাহিঃ এইযে তুমি বিয়ের পর থেকে আমাকে যেভাবে ভালোবাসো।যেমন তুমি বাইরে থাকলে সবসময় আমার সাথে কথা বলো আমাকে দেখো।ফ্রি টাইমে আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হও লং ড্রাইভে যাও।
আশফিঃশুধু এইটুকুই?আর কিছু করিনা?বাসায় থাকলে কি কি করি?
মাহিঃহুম আরো অনেক কিছু করো তো।বাসায় থাকলে সবসময় আমার……
আশফিঃকি? বলো?বাসায় থাকলে কি?
মাহিঃ ভুলে গেছি।
আশফিঃ পাঁজি মেয়ে।ভুলে গেছো?বলো না হলে কিন্তু প্রেম করবোনা।
মাহিঃ আচ্ছা বলবো আগে আমার সাথে প্রেম করো।প্রেম করার সময় যা যা করবে তাই তাই তোমার কাছে গল্প করবো।বলবো আমার বয়ফ্রেন্ড+হাজবেন্ড আমার সাথে এভাবে এভাবে প্রেম করে।
আশফিঃবয়ফ্রেন্ড+হাজবেন্ড মানে?
মাহিঃশুধু বয়ফ্রেন্ডের মত করে প্রেম করলে হবেনা তো।বয়ফ্রেন্ড+হাজবেন্ডদের মত করে প্রেম করতে হবে।
আশফিঃসেটা আবার কিভাবে?আমি তো শুধু বয়ফ্রেন্ডদের মত করেই প্রেম করেছি।এই যাহ্ কি বলে ফেললাম।ও তো আমার এ কথাগুলো শুনেই ৪৪০ ভোল্টে চলে গেছে মনে হয়।ওর দিকে তাকালাম এখন ও কি রিয়্যাক্ট দিবে সেটাই ভাবছি।
মাহিঃ ছেলে মানুষ এত্তো চাপাবাজ হতে পারে জানতামনা।ঐ তুমি বিয়ের পর আমাকে কি বলেছিলে?
আশফিঃ কি বলেছিলাম???
মাহিঃ ইয়ারকি হচ্ছে?তুমি বলেছিলে যে তুমি সারাদিন শুধু আমাকেই দেখতে।
আশফিঃতো সেটা কি মিথ্যে বলেছি।তোমাকেই তো সারাদিন দেখতাম তোমার আইডলটাকে।ঘুম থেকে উঠেও তোমাকে দেখতাম ঘুমোতে যাওয়ার আগেও তোমাকে দেখতাম।
মাহিঃচুপ করো ফ্রড কোথাকার।তুমি আরো বলেছিলে আমাকে ছাড়া তুমি কোনোদিনও কোনো মেয়েকে টাচ্ করোনি।
আশফিঃহ্যা!!?এই কথাও বলেছিলাম নাকি?এটা একটু বেশিই বলেছিলাম মনে হয়।
মাহিঃ কি?তার মানে তুমি আমার আগে অন্য মেয়েদের সাথেও…….(কান্না করে দিলো)তুমি অন্য মেয়েদের সাথে প্রেম করেছো ওদের সাথে ডেটে গিয়েছো। ওদেরকে টাচ্ করেছো?তার মানে ওদের সাথে তোমার কিস?? এই তুমি ওদের সাথে আর কি কি করেছো বলো।আর কি কি হয়েছে ওদের সাথে তোমার?
কতগুলোর সাথে করেছো বলোওওওও….???
ওর পলো শার্টের কলার চেপে ধরে বলছিলাম।
আশফিঃনা জাদু তুমি ভুল বুঝছো আমি প্রেম করেছি কতগুলো তা ঠিক মনে নেই তবে ওদেরকে আমি কখনোই টাচ্ করিনি।
মাহিঃ আবার মিথ্যে বলছো?এক্ষনি তুমি নিজে স্বীকার করেছো তুমি ওদের টাচ্ করেছো।
আশফিঃও তাই স্বীকার করে ফেলেছি তাইনা।কি মুসিবতে পরলাম।
মাহিঃ একদম পালানোর চেষ্টা করবেনা।তুমি ঘরে আমার আইডল রেখে বাইরে অন্য মেয়েদের ছোঁয়া নিয়েছো?
বেঈমান,বিশ্বাসঘাতক।
আশফিঃএই না তুমি কিন্তু এখন বেশি বেশিই বলছো।উহহহ মাহি কলারটা ছাড়োনা দম আটকে আসছে আমার। আমি এতো তাড়াতাড়ি মরতে চাইনা।আমার চান্দুকে কোলে নিতে চাই।
মাহিঃ চুপ একদম কোনো কথা বলবেনা।আমাকে বলো ওদের সাথে তুমি কি কি করেছো?আমাকে এভাবে তুমি ঠঁকালে???।কেনো ঠঁকালে আমাকে বলো?
আশফিঃওহ মাহি থামো বলছি। আমি ওদের সাথে তেমন কিছুই করিনি।মাহি ছাড়ো প্লিজ।হে আল্লাহ আমাকে রক্ষা করো আমি এ কি বিপদে পড়লাম।
মেযেটা পুরো চোটে গেছে। মাহিইই…..আমার কথা শুনো।কথাটা ঝাড়ি দিয়েই বললাম ওকে।না হলে তো আমার কলার ছাড়ছিলোনা।
মাহিঃ এতো বড় অপরাধ করে এখন আমাকেই ঝাড়ি দেওয়া হচ্ছে।
আশফিঃআমি ওর হাতদুটো আমার কাঁধের দুপাশে রেখে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরলাম যাতে রাগ করে ছুটে চলে না যায়। আচ্ছা আমি তোমাকে সব সত্যি কথা বলছি।হ্যা আমি অন্যসব মেয়েদের সাথে প্রেম করেছি কিন্তু ওদের সাথে আমার রিলেশনটা বেশি ডিপলি যাইনি।আর আমি কখনোই কোনো মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফাঁসাইনি।ওরা নিজেরা যেচে এসেছে আর আমার ইচ্ছাতে ওরা চলে গিয়েছে। কিন্তু ওদের সাথে আমার কখনো অন্তরঙ্গতা হয়নি। আমি যাইনি।বাইরে চলাফেরা করতে গেলে অনেক সময় অনেক কিছুতে জড়িয়ে গেছি কিন্তু তার মানে এটা না যে আমি ওদের আমার শয্যাসঙ্গী করেছি।বিশ্বাস করো তুমি। আমি সবসময় এটা ভেবে এসেছি ওদের সাথে যাই করি কিন্তু আমার কাছে তোমার জায়গাটা যেখানে সেটা ওদের কখনোই দেবোনা।আমি আমার মনের গহীনে তোমাকে রেখেছি।যখন আমি তোমার আইডলটার সামনে থাকতাম তখন কোনো মেয়ের সাথে আমি ফোনে পর্যন্ত কথা বলতামনা।কারণ আমার মাথায় অন্য কোনো মেয়ের চিন্তাই আসতোনা। তোমার মুখটা দেখতে দেখতেই আমার সময় কেটে যেতো।
মাহিঃ তুমি সব বানিয়ে বলছো।তুমি এখানকার মেয়েদের সাথে প্রেম করেছো আর তাদের সাথে তোমার কোনো টাচ্ কিস এসব কিচ্ছু হয়নি সেটা তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে বলছো?আমার এখন চোখের সামনে ভাসছে যে তুমি ওদের সাথে……
আমার সহ্য হচ্ছেনা।মনে হচ্ছে সত্যি তোমাকে খুন করে ফেলি।
আশফিঃআমি তোমাকে কিভাবে বিশ্বাস করাবো বলো?কি করলে তুমি বিশ্বাস করবে যে ওদের সাথে আমার কিচ্ছু হয়নি।
মাহিঃ kiss ও করোনি?
আশফিঃহায় আল্লাহ(কপালে হাত রেখে)।নো ডিয়ার কিস ও হয়নি।সত্যি বলছি।তবে…. না কিছুনা।
মাহিঃ তবে কি হ্যা বলো?থেমে গেলে কেনো?
আশফিঃনা ঐ বিষয় নিয়ে ওকে তো কিছু বলাই যাবেনা। না হলে আজকে কেনো আগামী এক মাসের ভেতোর ওর কাছে থাকতে পারবো কিনা সন্দেহ। তবে হচ্ছে তোমার সন্দেহ দূর করার জন্য আমি তোমাকে এখন অনেক গুলো পাপ্পি দিবো।ওর কোমড় টেনে আরো কাছে এনে আমার বুকের সাথে মিশিয়ে ওর ঠোঁটে জোড় করে পাপ্পি দিতে শুরু করেছি আর ও আমার মুখ সরিয়ে আমার ঠোঁট চেপে ধরে রাখলো।তারপর যা বললো তা শুনে আমি আমার বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
মাহিঃ একদম আমাকে কিস করবেনা।এই ঠোঁটে অন্য মেয়েদের ঠোঁটের ছোঁয়া লেগে আছে।ছাড়ো আমাকে।
আশফিঃআমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ও হনহন করে হেঁটে চলে যেতে লাগলো
আর আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ওর বলা কথা গুলো ভাবছি।এই তিন চারটা বছর ধরে যার ঠোঁটের স্পর্শ নিলাম সে কিনা বলে আমার ঠোঁটে অন্য মেয়েদের ঠোঁটের ছোঁয়া?এই কারণেই মেয়ে মানুষের কাছে কিছু বিষয় সারাজীবন গোপন রেখে যেতে হয়।কারণ এদের প্রথম রোগ হলো সন্দেহ করা আর যেটা সন্দেহ করে সেটা যদি নাও করে থাকি তবুও জোড় করে স্বীকার করাতে চাই যে আমি ঐটাই করেছি।ঢের শিক্ষা হয়ে গেছে আমার। মাহিইইই….. ও মাই হড ওর কিছু হয়ে গেলোনা তো?আমি দৌড়ে ওর কাছে ছুটে গেলাম।
চলবে…….
(রমজান মাসে এই গল্পটি লেখা অফ রাখছি।নামাজ রোজা করে গল্প লিখতে বসা খুবই কষ্টকর হয়ে যায়।

রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২ পর্ব_৩

0

রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২
পর্ব_৩
#লেখিকাঃIsrat_Jahan_Sobrin
#ধারণাঃKashnir_Mahi
আলিশাঃ আশফি তুমি এতো টেনশন নিচ্ছো কেনো? বাসার ভেতোরেই আছে কোথাও হয়তো
আশফিঃবাসার ভেতোরে থাকলে আমি এতোবার ডাকছি তাহলে সাড়া দিচ্ছেনা কেনো?ও নিশ্চই বাইরে কোথাও গেছে।
সার্ভেন্ট মেইন গেটের গার্ডগুলোকে ডাকো।
সার্ভেন্টঃ ওকে স্যার।
গার্ডঃইয়েস স্যার।
আশফিঃ ম্যাম কখন বেরিয়েছে?কথা বলছোনা কেনো?কি হলো চুপ করে আছো কেনো? ম্যাম কি তোমাদের কথা বলতে নিষেধ করে গেছে?
গার্ডঃ নো স্যার।
আশফিঃতাহলে?উত্তর দিচ্ছোনা কেনো?আমি তোমাদের কি বলেছিলাম যে ও যদি কখনো কোথাও একা বের হতে চাই তাহলে তোমরা বেরোতে দিবেনা। তোমরা আটকাওনি কেনো ওকে?আনসার মি ড্যামিড।
গার্ডঃস্যার আমি চেষ্টা করেছিলাম আটকানোর। কিন্তু ম্যাম আমাদের কোনো কথা শুনেনি।
আশফিঃ ভেরি ফাইন।তাহলে তোমাদের আমার কাজে রেখে কি হবে?আটকাতে যখন পারোনি তখন তোমাদের ও এখানে থাকার প্রয়োজন নেই।যাও এখান থেকে। গেট লস্ট।গার্ডগুলোকে যখন তাড়িয়ে দিচ্ছিলাম তখন মাহি চলে এসেছে। ও আমার চোখ মুখ দেখে বুঝতে পেরেছে যে আমি কতটা ক্ষেপে আছি ওর উপর।
মাহিঃ হ্যালো গাইস।
actually আমি….
আশফিঃতোমার কাছে কেউ কোনো কৈফিয়ত চাইনি।আলিশা মিট মাই ওয়াইফ মাহি।
আলিশাঃআরে তোমাকে নাম ধরে চেনাতে হবেনা। আমি তো ওকে দেখেই চিনতে পেরেছি।How are you ashfi’s queen?
মাহিঃঅবশ্যই অনেক ভালো তোমাকে দেখার পর আরো অনেক বেশি ভালো হয়ে গেছি।প্লিজ কাম একটা জাপ্পি হয়ে যাক।
আলিশাঃওহ শিওর। তো উডবি মাদার এই অবস্থায় কোথায় গিয়েছিলে শুনি? আশফির কলিজাটা তো মনে হয় টেনশনে শুকিয়ে যাচ্ছিলো।
মাহিঃ তোমার জন্য একটা গিফট আনতে গেছিলাম।
তুমি আজ আমাদের এখানে প্রথম এসেছো তোমাকে কিছু না দিয়ে বরণ করি কিভাবে?
আলিশাঃদেখেছো আশফি তোমার থেকেও অনেক বেশি যত্নবান ও।কি সুন্দর আমার জন্য একটা গিফট কিনে নিয়েসেছে।
মাহিঃ আরে আগে খুলে তো দেখো। তারপর বলো সুন্দর হয়েছে নাকি।
আলিশাঃ তুমি আমাকে যাই দাও সেটা আমার কাছে অনেক বেশি সুন্দর হবে।তুমি যে আমার জন্য এনেছো সেটাই অনেক বেশি।
আশফিঃআচ্ছা আলিশা তুমি আগে একটু রেস্ট নাও অনেক ক্লান্ত তুমি বিশ্রাম প্রয়োজন তোমার।তারপর একসাথে আড্ডা দেওয়া যাবে।
আলিশাঃ ওকে ডিয়ার। মাহি তুমি ও রেস্ট নাও ডার্লিং।
মাহিঃ হুম।সার্ভেন্টের দেখানো রুমে আলিশা চলে গেলে। এদিকে আশফির ভাবমূর্তি এখন কি হবে সেটাই ভাবছি।আমি তো ভেবেছিলাম ওরা আসার আগেই আমি চলে আসতে পারবো।কিন্তু এতো দেরি হয়ে যাবে কে জানে। আশফি আমার সাথে কোনো কথা বলছেনা।
আমার তো এখন ওর সামনে দাড়িয়ে থাকতেই ভয় করছে।ও শার্ট টা খুলে টি শার্ট টা পড়তে যাবে তখন আমি ওকে পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।
আশফিঃ মাহি আমাকে ছাড়ো।
মাহিঃ না।ছাড়বো না। আগে আদর করো আমাকে।
আশফিঃ মাহি আমাকে কনভেন্স করার চেষ্টা করোনা।তাতে ফল কিন্তু আরো বিপরীত হবে। আমাকে একা ছেড়ে দাও।
মাহিঃ আমি জানি তুমি অভিমান করে আছো।আর আমিই তোমার অভিমান ভাঙ্গাবো।একা থাকতে দিবোনা। কথাগুলো বলে আমি ওর পিঠে চুমু দিচ্ছিলাম।তখন ও আমার হাত ধরে পেছন থেকে সামনে এনে আমার দুইবাহু চেপে ধরলো।আমি তো ভয়ে ওর চোখের দিকে তাকাতে পারছিনা।
আশফিঃ How dare you?
তুমি কি মনে করেছো তোমাকে আমি খুব বেশি ভালোবাসি বলে তোমাকে যা খুশি করার স্বাধীনতা দিবো?তুমি কি কারণে আমার কথা অমান্য করলে?তুমি কি আমার খারাপ রূপ টা দেখতে চাও? তুমি কি ভুলে গেছো যে তুমি এখন একা নও তোমার মাঝে এখন আরো একজন বড় হচ্ছে আর সে তোমার আমার ভালোবাসার প্রথম ফসল।তোমার অসাবধানতার কারণে ওর যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যায়?তখন পারবে তুমি আমার সামনে মুখ দেখাতে? বলো, চুপ করে আছো কেনো?তোমাকে আমি বলিনি তোমার এই অবস্থায় কখন কিভাবে থাকা উচিত?তাহলে তুমি কোন সাহসে বাইরে গিয়েছিলে তাও আবার নিজে ড্রাইভ করে? আমি ওকে ধরে এতো বকাছকা করছি আর ও আমার দিকে কেমন ভয়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখদুটোতে পানি চলে এসেছে ওর।বুঝতে পারলাম এই মুহূর্তে অনেক প্রেসার যাচ্ছে ওর উপর দিয়ে।তাই মেজাজ নিজের নিয়ন্ত্রণে এনে ওর হাত ছেড়ে দিলাম। যথেষ্ট বকা হয়েছে ওকে। এর থেকে বেশি বলা ঠিক হবেনা। ওর হাত ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে গেলাম তখন পেছন থেকে ওর কয়েকটা কথা শুনে থেমে গেলাম।
মাহিঃআশফি আমি তোমার এই রূপটা দেখতে খুব ভয় পাই।
আশফিঃ ওর কথা গুলো শুনে ওর কাছে এগিয়ে ওর চোখের দিকে তাকালাম। আসলেই ওর চোখদুটোতে অনেক ভয় কাজ করছে। কথাগুলো বলেই ও চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ওর। আমি ওকে জড়িয়ে ধরার আগেই ও আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার বুকে মাথা রাখলো। মাহিঃ তুমি যখন খুব রেগে যাও তখন আমি এতোটাই ভয় পাই যতোটা বিয়ের প্রথমে তোমাকে ভয় পেতাম।তখন তোমার ভয়ে আমার মাঝে যে ফিলিংটা কাজ করতো এখনও ঠিক সেই ফিলিংটা কাজ করে যখন তুমি খুব বেশি রেগে যাও।
আশফিঃ আমি বুঝেছি ও কেনো এতোটা ভয় পেয়ে যায় যখন আমি রেগে যাই। কারণ আমি যখন ওর চোখের সামনে নির্দয়ালুভাবে একের পর এক খুন করেছি তখন আমার চোখে মুখে হিংস্রতা ভেসে উঠতো।আর আমার সেই হিংস্ররূপ ও নিজের চোখে দেখেছে।আর এখনো আমি রেগে গেলে সেই ভয়ানক রূপ ফুটে উঠে আর সেটা দেখেই ও এতো ভয়।
মাহি আমি চাইনা তুমি আমার এই ভয়ানক রাগি রূপটা দেখো।কারণ সবসময় রাগ নিজের আয়ত্তে রাখা সম্ভব নয়। আর আমি তোমাকে আর আমাদের বেবিকে নিয়ে খুবই কেয়ারফুল।সেখানে তুমি যদি কেয়ারলেসের মত কাজ করো যেটাতে তোমার আর আমাদের বেবিটার ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে তাহলে সেখানে তো আমার রাগ হওয়ার ই কথা।তুমি তো জানোই অনেক ভালোবাসার আর কাছের মানুষকে হারানোর কষ্টগুলো কতোটা কঠিন সেটা আমি বারবার অনুভব করতে চাইরা।আল্লাহ না করুক তোমার যদি এমন কোনো ক্ষতি হয়ে যায় তখন কি আমি বেঁচে থাকতে পারবো বলো?সেটা কি আমার পক্ষে সম্ভব?
মাহিঃ আশফি আমি জানি সেটা তোমার পক্ষে কেনো আমার পক্ষে ও সম্ভব নয়। কিন্তু মৃত্যু তো অনিবার্য। আজ না হয় কাল মরতে তো হবেই।তাই আমাদের উচিত এই কাছের মানুষকে হারানোর ভয় না পেয়ে মৃত্যু কে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়া।
আশফিঃ মাহি স্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নেওয়া সম্ভব।কিন্তু যাকে হারানোর কথা ছিলোনা সে যদি অস্বাভাবিক ভাবে আমার থেকে হারিয়ে যায় তাহলে সেটা আমি কিভাবে মেনে নিতে পারবো?এই পৃথিবীতে এক আল্লাহ ছাড়া আমাদের কেউ নেই।তাই তোমার সবকিছু আমাকেই খেয়াল করতে হবে আর আমার সবকিছু তোমাকেই খেয়াল করতে হবে।যতদিন পর্যন্ত ও এই পৃথিবীতে সুস্থভাবে না আসছে ততদিন তোমাকে অনেক ধৈর্যসহকারে খুবই সাবধানে থাকতে হবে।আমাদের দুজনের বেঁচে থাকার উৎস এখন শুধু আমরা দুজনই নই যে আসবে এখন সে ও আমাদের দুজনের বেঁচে থাকার উৎস হবে।
মাহিঃ চেষ্টা করবো ওর সবথেকে ভালো খেয়াল রাখার।
আশফিঃশুধু চেষ্টা করলেই হবেনা।তোমাকে পারতেই হবে। কারণ একজন মা তার সন্তানের ভালোর জন্য এমন কোনো কাজ নেই যা পারেনা। Ok অনেক জ্ঞান নিয়েছো এখন তোমার গোসল করার সময় হয়ে গেছে।বাইরের জামা কাপড় ছেড়ে আসো যাও।আমি আসছি তারপর তুমি বাথরুমে যাবে।
মাহিঃমানে কি? তুমি এভাবে বাচ্চাদের মত করে টেক কেয়ার করো কেনো? আমি কি নিজে গোসল করতে পারবো না নাকি তোমার বাচ্চা ক্যারি করছি বলে একা গোসল করার স্বাধীনতা ও আমার নেই?
আশফিঃযেটা মনে করো। তোমাকে এই সময়গুলোতে এখন কোনোকিছুতেই ভরসা করতে পারছিনা।
তুমি চেন্জ হও আমি দেখে আসি আলিশা কি করছে?
মাহিঃ হুম যাও। আমি যখন চেন্জ হচ্ছিলাম তখন আমার পেটের দিকে নজর গেলো।কয়েকমাস আগের কথা মনে পড়ে গেলো……..
মাহিঃ আশফি তুমি কি করছো বলো তো?সবসময় এতো দুষ্টুমি কেনো করো? ছাড়ো তো আমাকে।আমি কি সারাদিনই তোমার আদর নেওয়ার জন্য বসে থাকবো আর কোনো কাজ নেই?
আশফিঃওহ নিজের ইচ্ছাই আদর করি তো তাই দাম দিতে ইচ্ছা করেনা।
কিছুদিন পর যখন এইখানে(পেটে)আমারই অংশবিশেষ অবস্থান করবে আর তারপর যখন তোমার আমার মাঝে শুয়ে তোমার জায়গা দখল করে আমাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকবে তখন তো হাত পা ছুড়ে কাঁদলেও তো আমার আদর পাবেনা মানে দিতে পারবেনা।তাই যা নেওয়ার এখন সব নিয়ে নাও।
মাহিঃ এ্যাহ্ বললেই হলো। আমার বেবি কি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোবেনা?
আর ও তো মাঝে ঘুমোবেনা।মাঝে আমি থাকবো।আমি ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোবো আর তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোবে।
আশফিঃআচ্ছা?কিন্তু ওর সামনে তুমি আমার আদর নিবে কিভাবে?
মাহিঃ উমমমমমম…… তা তো জানিনা।
আশফিঃ এর জন্যই তো বলছি এখন যতপারো আমার কাছে থাকো।না হলে পরে আর সুযোগ পাবেনা।
মাহিঃহুহ।
আশফিঃহুহ কি? শুধু তো পারো মুখ ভেংচি দেওয়া।
মাহিঃ কেনো আর কিছু পারিনা?
আশফিঃহুম পারো তো।
আর পারো খালি আমার মুখে শরীরে দাগ বানিয়ে দেওয়া।
মাহিঃ কি?
আশফিঃ তো কি। যখনই আদর করতে আসো তখনই তার কিছু চিহ্ন রেখেই যাও।
মাহিঃ যাবোই তো।আমি যে তোমাকে আদর করেছি তার চিহ্ন রাখতে হবেনা?
আশফিঃ তাই বলে মুখে? শরীরে থাকলে সেটা ঢেকে রাখা যায়।কিন্তু মুখে থাকলে কিভাবে ঢাকা যায়? তোমার জন্য অফিসে একদিন কতোটা লজ্জাকর অবস্থায় পড়তে হয়েছিলো আমায় জানো? কানের নিচে লাল দাগ দেখে সবাই মুখচিপে হাসছিলো।
মাহিঃহা হা হা। তারপর?
আশফিঃ তারপর আর কি আমার সেক্রেটারি আমাকে বললো। তখন তো আর জেনে ও কিছু করার নেই।
মাহিঃহিহিহিহি।বেশ হয়েছিলো।
আশফিঃহিহিহিহি বেশ হয়েছিলো তাইনা?তাহলে আমিও তোমার মুখে এখন দাগ বানিয়ে দিই?এসো আমার কাছে এসো।
মাহিঃ এই খবরদার একদম এটা করবেনা তাহলে আমি বাইরে সবার সামনে যাবো কি করে?
আশফিঃ এখন কেনো?তাহলে আমার কেমন লেগেছিলো সেটা বুঝো।আমি তো আজকে তোমার গালে দাগ করেই ছাড়বো।
মাহিঃ আশফি না প্লিজ একদম না।আশফি……
এসব ভাবছি আর হাসছি কখন যে রুমে আশফি চলে এসেছে আমি বুঝতে পারিনি।ও আমার পেটের উপর হাত রেখে পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার মাথার একপাশে চুমু দিলো।
আশফিঃ কি ভাবছো?আর এভাবে একা একা হাসছো কেনো?
মাহিঃ ভাবছিলাম আমার দুষ্টু মিষ্টি বরটার কথা আর আমাদের বেবিটার কথা।
আশফিঃআচ্ছা? কি ভাবছিলে? ও আমার মত দেখতে হবে নাকি এটা? এ বিষয় নিয়ে তুমি একদম নিশ্চিত থাকতে পারো যে ও ওর দাদিমায়ের মত দেখতে হবে।
মাহিঃ মানে জাপানিজদের মত?
আশফিঃ হ্যা।আরে আমিও তো ছোটোবেলাই সেরকমই দেখতে ছিলাম ছবিতে দেখোনি?তারপর বড় হয়ে যাওয়ার পর বাবার মত আরকি বাঙ্গালিদের মত আমার লুকটা হয়ে গেছে।অবশ্য সেটা পুরোপুরি না।
মাহিঃ হুম।তোমাকে তো এখনো অনেকটা জাপানিজদের মত দেখতে লাগে।
আশফিঃ হ্যা।তাই আমার বেবিটাও আমাদের মতই দেখতে হবে।বাচ্চারা বেশিরভাগ বাবার পরিবারের মত দেখতে হয়।
মাহিঃ তোমার মত দেখতে হলে তো অনেক সুন্দর হবে। কারণ আমার আশফি বাঙ্গালি আর জাপানাজ দুই জাতির মিশ্রণে দেখতে হয়েছে বলে এতো সুন্দর।
আশফিঃআচ্ছা বুঝলাম।এখন চলুন গোসলে যেতে হবে।
মাহিঃ আশফি প্লিজ আমি একা যাইনা?
আশফিঃ কেনো আমি থাকলে কি সমস্যা?
মাহিঃ আমার কেমন যেনো লজ্জা লাগে।
আশফিঃএটা একটু বেশিই বললেনা তুমি?তুমি এখনো আমার সামনে লজ্জা পাও সেটা তুমি বলবে আর আমি বিশ্বাস করবো?
মাহিঃ সত্যি বলছি।কিছু কিছু সময় সত্যি অনেক লজ্জা করে।
আশফিঃতাই নাকি?
তাহলে চলুন নতুন করে আজকে আপনার লজ্জা ভাঙ্গাই তাও আবার বাথরুমে নিয়ে গিয়ে।ওকে কোলে তুলে বাথরুমে নিয়ে দরজা আটকে দিলাম। তারপর……..।
মাহিঃ আশফি না। তুমি এটা কি করলে?ছিঃ।
লজ্জাতে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললাম।ও আমার……
চলবে…..