রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২
পর্ব-৬
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
আশফিঃ কি উঠবেন না?
মাহিঃ (নিশ্চুপ)।মুখ বাঁকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো।
আশফিঃ আচ্ছা চলো আজকে না হয় আমরা এখানেই ঘুমিয়ে পড়ি। কি বলো?
মাহিঃ কোনো প্রয়োজন নেই।আপনি রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ুন।
আশফিঃএতো কথা বলে কাজ নেই।ওকে কোলে তুলে সোজা বেডরুমে চলে এলাম।
মাহিঃ কোলে করে তুলে এনে আমাকে বেডে শুইয়ে দিলো।আমি গালটা ফুলিয়ে বসে আছি।
আশফিঃলাইটটা অফ করাই ছিলো।দরজা টা লক করে আমি এসে ওর পাশে শুয়ে পড়লাম।
-কি হলো?ঘুমাবেন না? তখন তো আমাকে রুমে নিয়ে আসার জন্য কতকিছুই না করলেন।
এখন তো এলাম।তো এভাবে বসে আছেন কেনো?শুয়ে পড়ুন।
মাহিঃ আমি ওর দিকে একটু রাগ চোখে তাকিয়ে কাঁথাটা গায়ে নিয়ে ওর দিকে উল্টো পাশ করে শুয়ে পড়লাম মাঝে কিছুটা দুরত্ব রেখে।
আশফিঃ মাহি???
মাহিঃ ওর ডাক শুনে ওর দিকে তাকালাম।কেমন রেগে গেছে মনে হলো?
-কি হয়েছে?
আশফিঃসেই শুরু থেকে তোমাকে বলে আসছি তোমার সাথে আমার যতই রাগারাগি হোক ঝগড়াঝাঁটি হোক মাঝখানে ফাঁকা রেখে তুমি শুইবেনা। সেটা কি ভুলে গেছো?
মাহিঃ রাগ করলে কি মানুষ গায়ের সাথে গা লাগিয়ে মিশে ঘুমায়?তাহলে কি আর সেটা রাগ দেখানো হলো?এই লোকটার জন্য রাগের মত করে রাগটা করতে পারিনা।সেই মিশে গিয়েই শুইতে হবে ওনার সাথে।আমি ওর কিছুটা কাছে এসে শুইলাম। তবুও কেমন জল্লাদের মত করে তাকিয়ে আছে।
আশফিঃ ওর হাতটা ধরে টেনে এনে একদম আমার বুকের মাঝে নিয়ে এলাম।
-আজকেই লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি এই ভুলটা যেনো না হয়।রাগ হলেও এভাবেই আমার সাথে মিশে শুয়ে থাকবে।
মাহিঃ কেনো?কি হয় মাঝখানে ফাঁকা রেখে শুইলে???
আশফিঃ কি হবে আবার? শয়তান বাসা বাঁধে মাঝখানে।তাতে দুরত্বটা আরো বেশি সৃষ্টি হয়।
মাহিঃ ওরা কথাটা শুনে আর না হেসে পারলাম না। ফিক করে হেসে দিলাম। হাসার সময় ওর দিকে চোখ পড়লো। আমার হাসি দেখে এখন ওর রাগ হয়ে গেছে।
আশফিঃ এটা কি কোনো হাসির কথা যে হাসছো এভাবে?
মাহিঃ মানে? তুমি কি এটা সিরিয়াসলি বলেছো?
-আমার প্রশ্নটা শুনে ছেলেটা রেগে গিয়ে আমার দিকে উল্টোপাশ করে শুয়ে থাকলো।তবে মাঝে ফাঁকা রেখে নয়।একদম মিশেই আছে আমার সাথে। কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো মুরব্বিরা বলে থাকে সেগুলো এখনকার মানুষ অনেকেই বিশ্বাস করেনা। আশফি ও করেনা তবে যদি সেটা বৌ সংক্রান্ত বা আমাদের সম্পর্ক সংক্রান্ত কোনো বিষয় হয় তবে সেটা ও Definitely মানবেই।
আশফিঃ অনেক্ষণ হয়ে গেছে মেয়েটা তখন থেকে খালি নড়চড় করছে আবার এপাশ ওপাশ ও করছে। আর ওর জন্য আমার ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে বারবার।
-এই কি সমস্যা?এতো নড়াচড়া করলে পাশে অন্য কেউ ঘুমোতে পারে?
মাহিঃ স্যরি।
-ওর পাশ থেকে উঠে ওয়াশরুমে গেলাম। একে তো ঘুম আসছেনা তার উপর কেমন অস্থির অস্থির লাগছে শুয়ে শান্তি পাচ্ছিনা।অনেকটা বমি বমি ও পাচ্ছে তাই চোখে মুখে পানি দিলাম। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সোফায় গিয়ে হেলান দিয়ে চোখটা বন্ধ করে বসলাম।
আশফিঃ প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে মেয়েটা একটা রাত ও ঠিকমত ঘুমোতে পারছেনা।এরকম অবস্থা হবে আগে জানলে এতো তাড়াতাড়ি কিছু করতাম না।কিন্তু ড. ও তো বললো প্রথম প্রেগন্যান্সিতে এমনটা অনেকেরই হয় আস্তে আস্তে সেটা ঠিক হয়ে যায়। তিনটা মাস পার হয়ে গেলো ওর তো। এখনো কোনো ইমপ্রুভমেন্ট ই দেখছিনা। ওর এরকম অবস্থা দেখতে আমার নিজের কাছেই খারাপ লাগে। যদি পারতাম সত্যি সত্যিই ওর কষ্টটা আমি নিয়ে নিতাম।বিছানা থেকে উঠে ওর কাছে সোফায় গিয়ে বসলাম।তারপর চোখটা খুলে আমার দিকে তাকালো।
-আমি এখানে বসে আছি তুমি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ো।আমি তোমার কপাল টিপে দিচ্ছি।
মাহিঃ আশফি ওর কোলে বালিশ রাখলো।আমি বালিশের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম।আর ও আমার কপালটা আস্তে আস্তে অনেক সুন্দর করে টিপে দিচ্ছে আমি ওর দিকে চেয়ে আছি।
আশফিঃ ভালো লাগছে?
মাথাটা ঝাঁকিয়ে হ্যাসূচক উত্তর দিলো মাহি।
মাহিঃ বেশকিছুক্ষণ হয়ে গেছে আশফি আমার কপালটা টিপেই চলেছে কিন্তু কিছুতেই ঘুমটা আসছেনা।
আশফিঃমাহি ঘুম কি আসছেনা?খারাপ লাগছে খুব?
মাহিঃ একটুও খারাপ লাগছেনা কিন্তু তাও ঘুমোতে পারছিনা।ঘুমটা যেনো আজকে আমার থেকে ছুটি নিয়েছে।তুমি চলো বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ি। আমার যখন ঘুম আসবে তখন আমি ঘুমিয়ে পড়বো।উঠে বসে ওকে বললাম।
আশফিঃতুমি আমার ঘুমের কথা চিন্তা করছো? মাহির দুটি চোখে যখন ঘুম নেমে আসে ঠিক তখনই আশফি ঘুমোতে পারে। তাহলে তোমার ঘুমকে ডেকে আনার জন্য কি করা যায়?
মাহিঃ কিচ্ছু করতে হবেনা। আমি তোমাকে দেখি তারপর যখন ঘুম আসবে তখন তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়বো।
আশফিঃআচ্ছা?কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছেনা এভাবে তোমার ঘুমটা আসবে।
মাহিঃ শিওর?
আশফিঃট্রাই করে দেখতে পারো।
মাহিঃ ওকে। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।কিন্তু কেমন যেনো আনইজি আনইজি লাগছে।এভাবে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বসে থাকা যায়?
-এই তুমি তাকিয়ে আছো কেনো?তাকাবো তো আমি শুধু একা।
আশফিঃতো আমি কি করবো?আমাকে ও তো কিছু একটা করতে হবে।
মাহিঃ হুম বুঝেছি এভাবে হবেনা।
আশফিঃআচ্ছা আমরা একটা গেইম খেলি।গেইম টা হলো আমি যতক্ষণ পারবো তোমাকে চুমু দিবো আর তুমি যতক্ষণ পারবে আমাকে চুমু দিবে।তারপর দুজনে tired হয়ে পড়লে ঘুমিয়ে পড়বো।
মাহিঃ খালি দুষ্টুমি করার বাহানা তাইনা? ফাজিল একটা।
আশফিঃউমমমমম আচ্ছা তাহলে তোমাকে একটা গল্প শোনায়।গল্পটা শুনতে শুনতে তুমি ঘুমিয়ে পড়বে
মাহিঃবাচ্চাদের মত করে ঘুম পাড়াতে চাইছো?ঘুম আসবে আমার?
আশফিঃগল্পটা কিন্তু বাচ্চাদের ছিলোনা।
মাহিঃ তাই?তাহলে কেমন গল্প সেটা?
আশফিঃনা শুনলে বুঝবে কি করে?
মাহিঃ ঠিক আছে তাহলে শুরু করো।
আশফিঃশুরু তো করতেই পারি কিন্তু তার আগে আমার একটা শর্ত আছে।
মাহিঃ শর্ত মেনে গল্প শুনতে হবে আমাকে?
আশফিঃঠিক আছে না চাইলে শুনতে হবেনা।
মাহিঃ না না ঠিক আছে।
বলো কি শর্ত?
আশফিঃগল্পের মাঝে মাঝে আমি যখন থেমে যাবো তখন আমাকে তোমার এক একটা করে পাপ্পি দিতে হবে আর তারপর তারপর বলতে হবে।এখন শুরু করার আগে একটা দাও?
মাহিঃ দুষ্টু একটা।ওর কাছে গিয়ে ওর গালে লম্বা একটা পাপ্পি দিলাম।
-নিন এখন শুরু করুন।
আশফিঃ আমার কাছে এসো।আমার কাঁধে মাথা দাও।
মাহিঃ ওর কাঁধে গিয়ে মাথা রাখলাম।ও আমার ঘাড়ের উপর হাত রেখে ডানবাহু জড়িয়ে ধরে গল্প বলা শুরু করলো।
আশফিঃহুম এখন বলি। গল্পটা হচ্ছে একজন অত্যাচারী এবং চরিত্রহীন রাজার ভালোবাসার গল্প।
মাহিঃ অত্যাচারী রাজা? সে আবার কাউকে ভালোবাসে?
আশফিঃহুম।কতটা অত্যাচারী ছিলো সে আর কতোটা ভালোবেসেছিলো একজন রাজকন্যাকে তা তুমি শুনলে অবাক হয়ে যাবে।
মাহিঃ আমি খুব এক্সাইটেড এমন একজন রাজার ভালোবাসার গল্প শোনার জন্য।
আশফিঃআমিও যে খুব এক্সাইটেড তোমাকে ভালোবাসার জন্য। ওর ঠোঁটে কিস করতে গিয়ে বললাম।
মাহিঃ আহহা।আগে শুরু করোনা তারপর যতখুশি ভালোবেসো।পাগলটা আমার ঠোঁটে চুমু দিতে আসছিলো।হাত দিয়ে বাঁধা দিলাম আর কথাগুলো বললাম।
আশফিঃ ওকে ডার্লিং। তাহলে শুনো। রাজা ফালাক তাজ। যিনি ছিলেন মোহননগর রাজ্যের সম্রাট।অবিবাহিত ছিলেন তিনি আর তার বয়সটা আমার থেকে কম ছাড়া বেশি হবেনা।খুব অল্প বয়সে তিনি রাজ সিংহাসনে বসেন।দেখতে সুদর্শন হলেও তার মনটা ছিলো খুবি কুৎসিত।তার রাজ্যের প্রজাদের নিকট তিনি কেবল একজন অত্যাচারী, চরিত্রহীন,নিষ্ঠুর আর নরপিশাচ রাজা বলেই পরিচিত ছিলেন।সবসময় সবাই তার মৃত্যু কামনা করতো। সে রাজ্যে কোনো নারীর নিরাপত্তা বলে কোনোকিছু ছিলোনা। আর সেখানে যদি কোনো সুন্দরী মেয়ে তার চোখে পড়ে তাহলে তাকে তুলে নিয়ে এসে রাজা ফালাক তার শয্যায় ভোগের সামগ্রীর মত করে তাকে গ্রহণ করতো।আর নারীদেরকে তার ভোগের সামগ্রী বলে সম্বোধন করতো।
মাহিঃ ছিঃ। এরকম ধরনের রাজা ছিলো সে?
আশফিঃএর থেকেও আরো বেশি নোংরা ছিলেন তিনি। যে নারীকে তিনি একবার গ্রহণ করতেন তাকে দ্বিতীয়বার তিনি স্পর্শ করতেন না। হয় তাকে নিজের রাজমহলের দাসী করে রাখতেন আর না হলে তার সেনাপতি অথবা রাজমহলের অন্যকোনো পুরুষ তাকে kept woman করে রাখতো। একদিন সম্রাট ফালাক এবং সেনাপতি ইকরাম শেখ তাদের মাঝে কথোপকথন চলছে।
মাহিঃ তারপর?
আশফিঃতারপর……
[#বিষয়_বস্তুঃ সম্রাট ফালাক।]
ফালাকঃসেনাপতি ইকরাম?
ইকরামঃবলুন সম্রাট।
ফালাকঃ আমার রাজ্যটাকে অনেক ছোটো মনে হচ্ছে কেনো আমার কাছে? (রাজমহলের ছাদে দাড়িয়ে দূর দৃশ্য দেখার যন্ত্র দিয়ে দেখছিলেন আর কথাগুলো বলছিলেন)
ইকরামঃকি বলছেন সম্রাট! এই ১ বছরের মাঝে আপনি কতগুলো রাজ্য দখল করেছেন তা কি হিসেব করেছেন?আপনার রাজ্যের পার্শ্ববর্তী যত রাজ্য ছিলো তা সব আপনি কৌশলে এবং যুদ্ধের মাধ্যমে তা দখলে এনেছেন।
ফালাকঃ তুমি কি নিশ্চিত? আমার পার্শ্ববর্তী আর এমন কোনো রাজ্য কি আছে যা আমি নিজের দখলে আনতে পারিনি?যেখানে আমি আমার রাজত্য বহাল করতে পারিনি?
ইকরামঃ সম্রাট এটা আমি আপনাকে নিশ্চিতভাবে বলতে পারছিনা।মাফ করবেন।তবে আমাকে দিনের কিছু ভাগ সময় দিন আমি আপনাকে সঠিক খবর এনে দিচ্ছি।
এর মাঝে মন্ত্রী উপস্থিত হলেন।
মন্ত্রীঃ সালাম সম্রাট।
ফালাকঃ আরে মন্ত্রী সাহেব যে। এতো শিঘ্রই চলে আসলেন?
মন্ত্রীঃ আপনি যে কাজে আমাকে পাঠিয়েছিলেন তা সম্পূর্ন করে তবেই আপনাকে খবর দিতে এসেছি। আমাদের রাজ্যের দক্ষিণ পার্শ্বে ঈষাণ দিকে একটি রাজ্য আছে রাজ্যটির নাম শেরপুর।সেটা এখনো আমাদের দখলকৃত হয়নি। আমি সেই রাজ্যের মানচিত্র সংগ্রহ করে নিয়েসেছি।
ফালাকঃ সাবাস মন্ত্রী আয়্যুব।আপনি সবসময় আমার আশা থেকে বেশিকিছু দিয়েছেন আমাকে। কি সেনাপতি সাহেব?? হাহাহা। লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আমি সর্বদা অগ্রিম চিন্তার মাঝে থাকি এবং আমার পরিকল্পনাটা ও অগ্রীম। তুমি আমাকে কবে খবর এনে দিবে সেইদিন পর্যন্ত আমি অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকবো? সে যাই হোক। মন্ত্রী আমি আপনার সাথে এই বিষয় নিয়ে কিছুসময় বাদে আলোচনা করছি।আপনি এখন আসতে পারেন।
ইকরামঃ ক্ষমা করুন সম্রাট।আমার ভুল হয়ে গেছে।
ফালাকঃসেনাপতি ইকরাম এতো লজ্জিত হওয়ার কি আছে?সব কাজ কি সবার জন্য? তোমার কাজ তো অন্যকিছু।
ইকরামঃআদেশ করুন সম্রাট।আমি এক্ষণি তা পরিপূর্ণ করবো।
ফালাকঃহাহাহাহা। তুমি তো কিছুদিন আমাকে অনাহারে রেখেছো।
কথাটা শুনে সেনাপতি কিছুটা অবাক হলেন।
ইকরামঃ আমার বোধগম্য হয়নি সম্রাট। আপনি কি বোঝাতে চেয়েছেন?
ফালাকঃনাহ্ তোমার তো দেখছি মস্তিষ্কে মরিচা ধরে যাচ্ছে। মন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে কথাটা বললেন।
-তুমি কি সত্যি বুঝতে পারছোনা আমি কোন কারণে অনাহারে আছি?
ইকরামঃবুঝতে পেরেছি সম্রাট।মাফ করবেন বেশি সময় অতিবাহিত করে ফেলেছি বোঝার জন্য। কিন্তু সম্রাট আপনার রাজ্যের এমন কোনো সুন্দরি নেই যাকে আপনি গ্রহণ করেননি।এমনকি আপনার দখলকৃত রাজ্যের রাজাদের রাজকন্যা ও আপনার থেকে রেহাই পায়নি।
সেনাপতির শেষের কথাটি শুনে রাজা ফালাক রাগান্বিত হয়ে সেনাপতির দিকে তাকালেন।সেনাপতি কাচুমাচু মুখ করে ক্ষমা ভিক্ষা চাইলেন।কথাটি তার মুখ ফোঁসকে বেরিয়ে গেছে।
ইকরামঃ সম্রাট! মন্ত্রীর আনা তথ্যে যে রাজ্যের কথা উল্লেখ হয়েছে শুধুমাত্র সেই রাজ্যের কন্যাই বাকি আছে আপনার…….
কথা থামিয়ে দিলেন রাজা।
ফালাকঃহুম বুঝেছি। রাজসভায় সবাইকে উপস্থিত হতে বলো।রাজ্য শেরপুর সম্পর্কে আমার আরো সুস্পষ্ট তথ্য চাই। আজকে ঐ রাজ্য দখলের বিষয়ে আলোচনা সভা বসবে।
চলবে।
(এভাবেই রাজা ফালাকের গল্পটি কিছুদিন চলবে আর এর মাঝেমাঝে আশফি আর মাহির সাংসারিক গল্পও চলবে।একদম অন্যভাবে গল্পটি সাজাতে চাইছি।যেখানে রাজা ফালাক এবং রাজকন্যা মেহের আর এদিকে আশফি এবং মাহির উভয়ের কাহিনীই চলতে থাকবে। রাজা ফালাক আর রাজকন্যা মেহের এর কাহিনীটা খুব বেশিদিন যাবেনা।কেমন লাগছে জানাবেন।এটাই ছিল গল্পের ধারা পরিবর্তন।আলিশা কে তৃতীয়পক্ষ হিসেবে আনা আমার গল্পের কাহিনী নয়। আমি সবসময় ভিন্নকিছু লেখার চেষ্টা করি)
রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২ পর্ব-৬
রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২ পর্ব-৫
রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২
পর্ব-৫
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
আলিশাঃআরে আস্তে।
এক্ষণি তো পড়ে যেতে। এতো দ্রুত হাঁটছিলে কেনো?
আশফিঃ মাহি? তুমি ঠিক আছো? দেখি
কোথাও লাগেনি তো?
মাহিঃ আরে ঠিক আছি আমি। সমস্যা নেই।এতো ব্যাস্ত হতে হবেনা।
আশফিঃ তোমার তো কোনো কিছুতেই সমস্যা নেই।সব সমস্যা তো আমার। তুমি কি কারণে এতো কেয়ারলেস বলো তো। তোমাকে আমি কতবার বলেছি যে একটু সাবধানে চলাফেরা করবে। তুমি তো দেখছি কোনো কথায় শুনছোনা আমার। সমস্যা কি তোমার?
আলিশাঃআচ্ছা ঠিক আছে। এতো বকছো কেনো? ও খেয়াল করেনি। ও যতুটুকু ব্যাথা না পেয়েছে তোমার বকুনি খেয়ে তার থেকে বেশি ব্যাথা পাচ্ছে বেচারি। সবসময় এতো কেয়ারফুলি থাকা যায় না।
আশফিঃকেনো থাকা যাবে না?আমি তো দেখছি ও সবকিছুতেই কেয়ারলেস। এখনো এতো কেয়ারলেস কি করে হয় ও?
-আমার কথাগুলো শুনে আমার দিকে চোখ বড়বড় করে একবার তাকিয়ে রাগ করে ভেতোরে চলে গেলো। এই মেয়েটা দেখছি যতটা বোকা ততোটাই অবুঝ।
মাহিঃ আমার সাথে এতো বড় মিথ্যাচার করে এখন আবার আমাকেই মেজাজ দেখাচ্ছে।ধার ধারিনা তোমার মেজাজের। হুহ।
আশফিঃ সত্যিই ধার ধারোনা?
মাহিঃতুমি আমার রুমে আসবেনা। তোমার সাথে কোনো কথা বলবোনা আমি।
আশফিঃপ্রথম তো এটা আমারও রুম।আর দ্বিতীয়ত আপনি কথা না বললেও আমি কথা বলবো। ও রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল। আমি দ্রুত গিয়ে দরজা টা আটকে দিলাম।বেশি আদর দেখানোর কারণে এই অবস্থা। এখন থেকে বেশি রাগ দেখালে তাহলে মেয়েটা কথা শুনবে।তাই আপাতত এখন মেজাজের ওপরেই রাখতে হবে ওকে। যাতে আমার সব কথা শুনে চলে।
-কোথায় যাচ্ছো? এক পা ও ঘরের বাইরে রাখবেনা।
মাহিঃ কি? আমি কি ঘরবন্দি হয়ে থাকবো নাকি।আমার যখন ইচ্ছা হবে আমি তখনই বাইরে যাবো। সরে দাড়াও।
-ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে যেতে গেছি তখন ও আমার হাত ধরলো।
আশফিঃ এই মেয়ে তোমাকে একবার বলেছিনা যে ঘরের বাইরে পা রাখবে না।দ্বিতীয়বার আর বলবোনা যাও বিছানায় গিয়ে বসো। এতো বড় সাহস আমার কথা অমান্য করো?
-আমার দিকে অবাক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর বিছানায় গিয়ে বসে পড়লো। অবাক তো হয়েছেই আবার কষ্ট ও পেয়েছে একটু।
মাহিঃ রাক্ষস একটা। দিন দিন ওর ব্যবহারটা শুধু রুড ই হচ্ছে।
আশফিঃ ওদিকে সরে বসো।
মাহিঃ পারবোনা।
আশফিঃ সরে বসবেনা আমি জানি।তাই কোলে তুলে ওকে বিছানার মাঝে বসিয়ে দিলাম।
মাহিঃএই কি করছো।ছাড়ো আমাকে। এভাবে কোলে তোলার মানে কি?এতো রোমান্স আসে কোথা থেকে হ্যা?
আশফিঃওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়েছি।
-কোথা থেকে আসে জানোনা?তোমাকে তো সরে বসতে বলেছিলাম তুমি তো সরলেনা তাই আমাকেই সরানোর দায়িত্ব নিতে হলো। এই একদম উঠবেনা।আমার মাথা যদি বিছানায় রাখো তাহলে আজকে তোমার কপালে দুঃখ আছে।
মাহিঃএটা কি হচ্ছে হ্যা? কি পেয়েছো তুমি আমাকে? যখন খুশি তখন যা খুশি তাই করবে আমার সাথে? এতো বড় মিথ্যা বলে এসেছো এতোদিন আমার সাথে এতোদিন।এখন সোহাগ দেখানো হচ্ছে তাইনা?
আশফিঃওহহ মেয়েটা আমার মাথা শেষ করে দিলো।আমি ওর কোলের উপর মাথা তুলে উঠে বসলাম।
-তোমার সাথে আগে এই বিষয়টা ক্লিয়ার করি। বলো কি সমস্যা? আমি না তখন তোমাকে বললাম যে আমি কাউকে কখনো আমার স্বাভাবিক থাকা অবস্থায় নিজে থেকে জড়িয়ে ও ধরিনি।
মাহিঃ কি বললে স্বাভাবিক থাকা অবস্থায় করোনি।অস্বাভাবিক অবস্থায় করেছো? তুমি আমার থেকে কিছু লুকোচ্ছো।সেটা তোমার কথার মাঝেই প্রকাশ পাচ্ছে।
আশফিঃআচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে। বলেই দিচ্ছি।একটা বিষয় তোমার থেকে হাইড করেছি।
মাহিঃ কি বিষয়?বলো।
আশফিঃ একদিন ক্লাবে কিছু ফ্রেন্ডদের সাথে বসে মজা করছিলাম।সেদিন আমাদের সকলেরই ড্রিংকস করার পরিমাণটা বেশি হয়ে গেছিলো। তারপর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি কোনো হোটেলের রুমে শুয়ে আছি।
মাহিঃ রুমে মানে? আর সকাল হয়ে গেলো কিভাবে?মাঝখানের রাতটুকু কোথায় গেলো?
আশফিঃআমার কথা তো শেষ করতে দেবে। কিছুক্ষণ পর একজন মাঝ বয়সী মহিলা রুমে আসলো।আমাকে গুড মর্নিং বললো।তার উত্তরে আমি কিছু না বলে ওনাকে দেখছিলাম।আমার দিকে তাকিয়ে সে মৃদু একটা হাসি দিলো।ওনাকে দেখে তো আমার মাথায় বাজ পড়লো।তারপর তো আমি উঠে গিয়ে কিছু বলার আগেই উনি আমার ওয়ালেট আর ফোন আমার হাতে ধরিয়ে দিলো।আমি ওনাকে ঐ মুহূর্তে অনেক কিছু বলতে চাইলাম কিন্তু কিছুই যেনো বলতে পারলামনা।বিছানায় উপর বসে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলাম।উনি আমার…….কথাগুলো বলছিলাম এর মাঝে মাহির দিকে চোখ পড়লো।চোখে ইতিমধ্যে পানি টলমল করছে ওর।আমি ওকে কিছু বলতে যাবো ও আমাকে ধমক(কান্নার সুরে)দিয়ে থামিয়ে দিলো।
মাহিঃকোনো কথা না। যেটা বলছিলে সেটা শেষ করো।আর একটাও বাড়তি কথা না।
আশফিঃওকে ওকে।তারপর আমি তো মাথায় দিয়ে বসে ছিলাম।কারণ গতরাতের কোনোকিছুই আমার মনে পড়ছিলোনা আমি কি করে ওনার রুমে এলাম।উনি আমার পাশে বসে আমার কাঁধে হাত রেখে বললো,
– Anata no yōna monode wa arimasen(তুমি যেমন ভাবছো তেমন কিছুই নয়।আমি শুধু তোমাকে নিরাপত্তা দিয়েছি)
আশফিঃ আমি তখন ওনার কাছে জানতে চাইলাম। এটা কি সত্যি?উনি আমার গালটা টিপে দিয়ে হেসে বললো, তুমি এখন আসতে পারো।আমার বয়ফ্রেন্ড চলে আসবে।ব্যাস এটাই ছিলো আমার লাইফের একটা বিশ্রি ঘটনা।এছাড়া আর কিচ্ছু হয়নি আমার সাথে।
আমি পুরোটাই ভার্জিন আছি তুমি বিশ্বাস করো।
মাহিঃকি?এখনো ভার্জিন আছো?
আশফিঃআই মিন বিয়ের আগে তোমাকে স্পর্শ করার আগে পর্যন্ত ছিলাম। এখনো মুখটা ফুলিয়ে রাখবে? তুমি কি এখনো বিশ্বাস করতে পারছোনা??
মাহিঃকোনো কিছু গোপন করোনি তো?(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
আশফিঃ তুমি যদি এখন সত্যি সিঙ্গেল থাকতেনা তোমার যে কি হাল করতাম। আমি তোমাকে আমার লাইফের গোপন সত্য বলে দিলাম এরপরেও তোমার ডাউট থেকেই যাচ্ছে।এখন তোমাকে আমার কি করা উচিত???
মাহিঃ তার মানে তুমি ফার্স্ট আমাকেই কিস করেছিলে?
আশফিঃ কথাটা শুনে আমার যা পরিমাণ রাগ হলো।এতো বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার পরও বিশ্বাস করতে চাইছেনা।আমি ওর মুখের দিকে রেগে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম।তারপর ওর দুগাল চেপে ধরে ওর ঠোঁটে অনেক্ষণ চুমু দিয়ে বললাম, আপনার ঠোঁটেই ফার্স্ট করেছিলাম আর এখনো করেই যাচ্ছি। কথাগুলো বলে রাগ করে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। মেয়ে মানুষের মন এতো সন্দেহ প্রবণ কেনো? সবসময় খালি মেজাজ দেখায়।আজকে উল্টোটা হবে। রাতে আমরা একত্রে ডিনার শেষ করে আমি রুমে চলে এলাম।ও তখন আলিশার সাথে বসে গল্প করছিলো। আমি লাইট অফ করে শুয়ে পড়েছি। আসলে যতটা রাগ দেখাবো এতোটা রাগ নেই আমার মাঝে। তবুও দেখাবো একটু এ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য। সবসময় খালি মেজাজ আর রাগ দেখানো তাইনা?
মাহিঃ একি এতো তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লে যে লাইট অফ করে?কাজ নেই বুঝি আজকে?
আশফিঃ( নিশ্চুপ)?
মাহিঃ আরে কি হলো কথা বলছি শুনতে পাচ্ছোনা নাকি ঘুমিয়ে পড়লে? অদ্ভুত এইতো এলো।এতো শিঘ্রই ঘুমিয়ে পড়লো?আমি আর কোনো কথা না বলে ওর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। ওর গায়ে চাদরটা টেনে দিলাম। এটা কি হলো? আমি চাদরটা টেনে দিলাম আর ও গা থেকে সেটা ফেলে দিলো। এই তুমি ঘুমোওনি? কি হয়েছে গরম লাগছে খুব?
আশফিঃ??(নিশ্চুপ)
মাহিঃ কি ব্যাপার কথা বলছোনা কেনো?আমি এতক্ষণে কতগুলো কথা বললাম আর তুমি একটা কথার উত্তর দিচ্ছোনা? কেনো? আরে সেই তখন থেকে চুপ করে আছে কোনো কথার উত্তর দিচ্ছেনা।
আশফিঃচুপ করে আছি তাও কি বুঝতে পারছেনা আমি রেগে আছি? মাথামোটা মেয়ে একটা।
মাহিঃ এই তুমি আমার সাথে কথা বলছোনা কেনো?তুমি কি রেগে আছো আমার উপর?
আশফিঃ না তো রেগে থাকবো কেনো?(ঢং বুঝতেও পারছেনা)।
মাহিঃ কথাগুলো কিরকম যেনো শুনালো। মনে হচ্ছে কথার মাঝে রাগ রাগ ভাব। ও আচ্ছা তাহলে বিকালে আমার ঐ ব্যবহারের কারণে উনি আমার উপর গোসা করে আছেন। তাহলে তো সেটা ভাঙ্গানোর প্রয়োজন। এই শুনছো একটা জরুরি কথা ছিলো।
আশফিঃহুম।
মাহিঃ বলছি হাতুড়ি আনবো নাকি পাথর আনবো? কথাগুলো বলে আমি মুখচিপে হাসছিলাম। আমার কথার মানে ও প্রথম দিকে বুঝতে পারেনি পরে আমার দিকে তাকিয়ে আমার হাসি দেখে বুঝতে পেরেছে যে হাতুড়ি দিয়ে ওর রাগ ভাঙ্গতে চেয়েছি। তাতে জনাব যে আরো রেগে গেলেন।রেগে গিয়ে বিছানা থেকে উঠে ঘরের বাইরে চলে গেলেন।
আশফিঃ পাঁজি বদমাইশ মেয়ে বলে কিনা হাতুড়ি দিয়ে রাগ ভাঙ্গাবে?আমি বুঝি ওনার হাতুড়ি দিয়ে রাগ ভাঙ্গাতাম।আজকে যাবোনা ঘরে।দেখি কি করে থাকে। যতক্ষণ না আমাকে সেধে ডাকতে আসবে আদর করে ঘরে ডেকে নিয়ে না যাবে ততক্ষণ আমি আজ বাইরেই থাকবো।
মাহিঃ নাহ্।এভাবে হবেনা। ওনাকে জাদুসোনা লক্ষীসোনা বলে আদর করে তারপর ঘরে নিয়ে আসতে হবে।না হলে তো রাগ করে সারারাত বাইরেই বসে থাকবে।আমি উঠে ওর কাছে গেলাম।দেখলাম ফ্রিজ খুলে ড্রিংকসের বোতল বের করছে।
আশফিঃ ওর আসার শব্দ শুনে আমি ফ্রিজের কাছে গিয়ে ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে ড্রিংকসের বোতল বের করছি।আমি জানি এটা দেখলে ও এখন আমাকে আটকানোর জন্য আমার মান ভাঙ্গানোর জন্য ওর সমস্ত অনুভূতি আদর সোহাগ যা কিছু আছে সবকিছু আমার উপর এপ্লাই করবে। আর আমিও তো সেটাই চাইছি।
মাহিঃ ডিয়ার নো। তুমি এটা কি করছো?তুমি না চান্দুর বাবা হবে? তোমার তো এখন থেকে এগুলো এভোয়েড করতে হবে।তার বদলে তুমি এটা ট্রাই করছো? তুমি কি চান্দুর মেইন্টালিটির কথা একবারও চিন্তা করবেনা?
আশফিঃ হুহ কতো ভাবওয়ালা কথা বলবে এখন?চলতে থাক দেখতে অবশ্য ভালোই লাগে ওর এই এটেনশন। ওভার এ্যাটেনশন।☺?
মাহিঃ আমি ওর কাছে গিয়ে বোতল টা নিয়ে নেওয়ার ট্রাই করলাম কিন্তু পারলামনা।এখন তো দেখছি ওভার কেয়ার না দেখালেই হচ্ছেনা।ও বোতল আর গ্লাসটা নিয়ে সোফায় না বসে ফ্লোরে গিয়ে বসলো।গ্লাসে ড্রিংক ঢালার আগেই ঠাস করে ওর কোলের উপর গিয়ে বসে পড়লাম।আমার পেছন ওর বুকের সাথে লাগিয়ে বসে আছি।
আশফিঃ আমি কোনো কথা বলছিনা।শুধু ওর কাহিনী দেখে যাচ্ছি।দেখি আর কি কি করতে পারে। ওকে ওভার করে গ্লাসটা নেওয়া সম্ভব ছিলোনা। তাই বোতলে মুখ বাঁধিয়ে খেতে শুরু করলাম।যদিও এ্যালকোহলের পরিমাণ বেশি ছিলোনা।তবুও বেশি খেলে একটু নেশা হয়েই যায়।ও আমার কোলে চেপে বসেই আছে।পেছন থেকে সামনে ঘুরে আমার বোতলটা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
মাহিঃ উহহু আশফি এটা কি হচ্ছে বোতলটা দিচ্ছোনা কেনো?ঘরে যাবেনা?
আশফিঃনা।
মাহিঃ ঠিক হচ্ছেনা কিন্তু। আমি একা কি করে ঘুমোবো?
আশফিঃলাইট জালিয়ে ঘুমোও।
মাহিঃ আচ্ছা। তুমি কি করবে?
আশফিঃ(নিশ্চুপ)
মাহিঃ বুঝেছি।এখন আমাকে কি করতে হবে? আমি ওর কাঁধ জড়িয়ে ধরে ওকে চুমু দিতে গেলাম ও মুখটা ডানে সরিয়ে নিলো।
আবার দিতে গেলাম আবারো মুখটা বামে সরিয়ে নিলো।ওর চোখের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলাম। চোখদুটোর ভাষা বোঝার চেষ্টা করছি।অনেক আবেগ দেখতে পাচ্ছি ওর চোখে।আশফিও আমার চোখের দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে।আমিও চোখের পলক সরাচ্ছিনা বলে ও নিজেই পলক সরিয়ে নিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রইলো। বোতলে চুমুক দিতে যাবে তখন আমি ওর ঠোঁটে আমার হাত দিয়ে চেপে ধরলাম আর বোতলটা আমি নিয়ে নিলাম।তারপর আমি ওর কোলের উপর পিছু ঘুরে বসে আমার চুলগুলো ঘাড়ের উপর থেকে সরিয়ে একপাশে নিয়ে রেখেছি।আর ওর হাতদুটো আমার পেটের উপর ধরে রাখলাম।
আশফিঃ কি হয়েছে??
মাহিঃ ওর প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলামনা।আমি ওর বুকের সাথে হেলান দিয়ে ওর হাতদুটোর উপর আমার হাত রেখে একদম ওর সাথে মিশে রয়েছি।
আশফিঃ আমার হাতের উপর ওর হাতদুটো রেখে আমার বাহুডোরে নিজেকে আটকে রাখলো। আমি বুঝতে পেরেছি ও আমাকে কি বোঝাতে চেয়েছে।
মাহিঃ কি হলো? তুমি কি বুঝতে পারছোনা আমি কি চাইছি?
আশফিঃ হাসি পাচ্ছে ওর এসব কান্ডকারখানা দেখে।যদিও আমার মনের ভেতোরে ও অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে ওর কাছে যাওয়ার জন্য।আর কিছু বললামনা তাতে আবার অনুভূতি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।ও চুলগুলো ঘাড়ের একপাশে সরিয়ে রেখেছে।আমি ওর ঘাড়ে আর কানে আদর করছিলাম বেশ কিছুক্ষণ।ও চোখ দুটো বন্ধ করে আছে। আমি থেমে গেলাম নিজেকে সামলে।ও তখন চোখ দুটো খুলে তাকালো আমার দিকে।ওকে কোলের উপর থেকে নামিয়ে আমি উঠে রুমে চলে যেতে লাগলাম।কিন্তু মহারাণী তো দেখি রাগ করে নিচে বসে থাকলো।আমি ভেবেছি আমি উঠে আসলে ও নিজেও উঠে চলে আসবে। আমি ওর কাছে এগিয়ে আমার হাতটা বাড়িয়ে দিলাম আমার হাত ধরে উঠার জন্য।সে রাগ করে মুখটা ঘুরিয়ে রাখলো।বুঝেছি কোলে তুলে নিয়ে যাওয়া ছাড়া উনি এখান থেকে উঠবেন না।
চলবে।
রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২ পর্ব_৪
রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২
পর্ব_৪
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
মাহিঃ ও আমার……না থাক এতো কিছু বলা যাবেনা।লজ্জা লাগে।
আশফিঃ ওকে গোসল করিয়ে দিয়ে ওর চুল গুলো মুছে দিচ্ছি। আর ও ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আমার দিকে তাকিয়ে মুখটা গোমড়া করে আছে। কি হয়েছে ওভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?আজকের পর তোমার আর আমার সামনে গোসল করতে লজ্জা থাকবেনা আশা করি।
মাহিঃ হুম।তুমি যা করলে তার পর থেকে লজ্জা কেনো রাগ হচ্ছে আমার।
হয়েছে তোমার চুল মোছা?তখন থেকে মুছেই যাচ্ছে মুছেই যাচ্ছে।
আশফিঃচুলটা ভালো করে মুছতে দাও।না হলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে।আর তুমি যেভাবে চুল মুছো তাতে তো দেখি চুলের আগা থেকে টপ টপ করে পানি পড়তেই থাকে।চুলগুলো ও তো ঠিকভাবে মুছতে জানোনা।
আলিশাঃopps sorry….
একদম ভুল হয়ে গেছে। আমি আসলে বুঝতে পারিনি তোমাদের দিনে দুপুরে রোমান্স চলে।এক্ষনি বেরিয়ে যাচ্ছি।
মাহিঃ বেরিয়ে যাবে কেনো?এসোনা।এই তুমি সরো তো।তখন থেকে ঘাড়ের কাছে দাড়িয়ে আছে।
আশফিঃ কি বললে?
আলিশাঃ হাহাহাহা।
আশফিঃ এইজন্যই না যেচে কারো ভালো করতে নেই।
মাহিঃ লাগবেনা এতো ভালো আমার।সবসময় খালি আদেশ উপদেশ।
নিজের মত করে এখন কিছু করতে ও পারিনা।
আশফিঃ করতাম না এতো আদেশ উপদেশ যদি না আমার চান্দু টা আপনার কাছে থাকতো।একবার আমার চান্দু আমার কোলে চলে আসুক তারপর আপনার ছুটি দিয়ে দিবো। তখন আপনি ভলিবল ফুটবল যা খুশি খেলে বেরিয়েন।
আলিশাঃএই আশফি এটা কেমন ধরনের কথা?ছুটি দিয়ে দিবে মানে কি?তুমি কি ওকে ছুটি দেওয়ার জন্য বিয়ে করেছো নাকি?আর একটা কথা এই চান্দুটা কে?
মাহিঃ ওনার ছেলে?তাকে উনি চান্দু বলে ডাকবেন।
আলিশাঃচান্দু!!!এটা আবার কেমন নাম।এটা কোনো নাম হলো?আর যদি মেয়ে হয় তাহলে কি বলে ডাকবে?
আশফিঃতোমাদের কাউকে ডাকতে হবেনা।আমি একাই ডাকবো।আর মেয়ে হবেনা তো।আমাদের একটা ছেলেই হবে।
আলিশাঃউহুম।আমার মনে হচ্ছেনা কিন্তু।কারণ তোমার বৌ আগের থেকেও আরো বেশি সুন্দর হয়ে গেছে।আমার মনে হচ্ছে তোমাদের কোলে একটা স্নো হোয়াইট আসবে।কারণ মাহি তো তোমার হোয়াইট এঞ্জেল।তাই ওর কোলে স্নো হোয়াইটের মতই সুন্দর একটা অস্পরী আসবে।
মাহিঃWhite angel না ছাই।
আশফিঃহুম আপনার কাছে তো শুধু ছাই।তাহলে আজ থেকে আপনি আমার চুরেল বৌ।ঠিক আছে না?
মাহিঃ ধুর।
আলিশাঃ হাহাহাহা।
আশফিঃআচ্ছা চলো lunch করে আসা যাক।তারপর একসাথে বসে তিনজন আড্ডা দিবো।দুপুরের খাবার শেষ করে তিনজন বসলাম একসাথে গল্প করার জন্য।তো আলিশা এখন তোমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি বলো।ওখানেই সেটেল হয়ে যাবে নাকি একদম বরাবরের মত দেশে ব্যাক করছো।
আলিশাঃযদি বলি দুটোর এক জায়গাতে ও থাকার ইচ্ছা নেই।
মাহিঃ মানে?তো কোথায় থাকার ইচ্ছা?কোনো বয়ফ্রেন্ড ঘটিত ব্যাপার আছে নাকি?
আলিশাঃঠিক বয়ফ্রেন্ড বলা চলে না আবার তার থেকে কম কিছু ও না।
আশফিঃতুমি কিন্তু রহস্য করে রাখছো বিষয়টা।
আলিশাঃকিছু কিছু বিষয় রহস্য হয়ে থাকাই ভালো।
আশফিঃতাই নাকি।ঠিক আছে তাহলে রহস্য হয়ে থাক।
মাহিঃ আমি কিন্তু রহস্য উদঘাটনে এক্সপার্ট।আলিশাঃআচ্ছা।তাহলে তো দেখছি আমাকে খুব সাবধানে থাকতে হবে।
মাহিঃ আরে না মজা করলাম।তো তুমি আমাদের কাছে এখোনি সবকিছু বলতে চাইছোনা তাইতো?
আলিশাঃসারপ্রাইজ দিবো বলে।
আশফিঃ ওয়াও।সারপ্রাইজ জিনিসটা আমি সত্যি খুব পছন্দ করি।
আলিশাঃ কি? নিতে পছন্দ করো?
আশফিঃ নিতে ও পছন্দ করি আর দিতেও পছন্দ করি।
মাহিঃ হুমমমম।
সারপ্রাইজে সারপ্রাইজে আমার জীবনটা মুখোরিত।
আশফিঃহাহাহা।ভাগ্য করে পেয়েছো আমাকে বুঝলে!!
আলিশাঃআশফি ঠিকই বলেছে মাহি।অনেক ভাগ্য করেই এমন ছেলেকে বর হিসেবে পাওয়া যায়।এই কিন্তু তোমার বরের দিকে নজর দিচ্ছিনা।
মাহিঃ নজর দিলেও সমস্যা নেই। নজর কাটিয়ে দিবো।
আলিশাঃহাহাহা।দারুণ বলো তোমরা দুজনে।আমার না খুব দেখার ইচ্ছা কিভাবে নজর কাটা হয়।
মাহিঃ হুম।দেখাবো সমস্যা নেই।
অনেক্ষণ একসাথে বসে আড্ডা দিয়েছি।এখন আমার অতি কেয়ারিং বর আমাকে নিয়ে বাগানে হাঁটতে বেরিয়েছে।ছেলেটা এতো খেয়াল কিভাবে রাখে আমার বুঝিনা। আশফি?
আশফিঃবলে ফেলুন।
মাহিঃ আমি না থাকলে……না থাক কিছুনা।কথাটা বলতে গিয়েও থেমে গেলাম কারণ কথাটি পুরোপুরি বলার আগে ও আমার মুখের দিকে অগ্নিময় দৃষ্টিতে তাকালো।আমি ভয়ে চুপ হয়ে আছি।
আশফিঃআমি বুঝিনা তুমি এই কয়টা বছরে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে শুধু এই প্রশ্নটাই কেনো করো?তোমার এইসব ব্যবহার গুলোর জন্য আমি মাঝেমাঝে বোরিং হয়ে যায়।
মাহিঃ এতো বেশি ভালোবাসো মাঝেমাঝে ভয় হয়।কারণ সুখের সময়টা সারাজীবন থাকেনা।আর তোমার থেকে কোনো আঘাত পেলে আমি সেদিন মরেই যাবো।
আশফিঃতোমার কেনো এমন মনে হয় যে আমি তোমাকে আঘাত দিতে পারি?আর সুখের সময় থাকবেনা কেনো?আমি বেঁচে থাকতে আমার সাধ্যের ভেতোর কখনোই তোমাকে কষ্ট পেতে দেবোনা।আচ্ছা
তুমি কি বিয়ের আগের ঘটনাগুলো এখনো ভাবো?যদি তাই ভেবে এই কথাগুলো বলো তাহলে আমি বলছি সেগুলো করেছিলাম তোমাকে অর্জন করার জন্য।আর বিয়ের পরে যে কাজগুলো করেছিলাম তা তোমার ভালোবাসা অর্জন করার জন্য।কিন্তু এখন আমি তোমাকে সহ তোমার ভালোবাসা অর্জন করে ফেলেছি।তাই এখন তোমাকে আঘাত দেওয়ার কোনো কথায় আসেনা।
তবে হ্যা যদি কখনো আমার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করো তাহলে তো অনেক বড় সমস্যা আছে।তোমাকে কি করবো তা আমি নিজেও জানিনা।কারণ তোমাকে পেতে আমার অর্ধক জীবন প্রায় চলেই গেছিলো।আর সেই তুমি এখন আমার থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করলে……যাই হোক আমি জানি এই কাজটা তুমি কখনোই করবেনা।কারণ তুমি আমাকে আমার থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসো।আর সবথেকে বড় বিষয় আশফির জীবনে মাহি ছাড়া অন্য কোনো নারীর ছায়াও পড়বেনা কোনোদিন।বুঝেছো?
মাহিঃ হুম।
আশফিঃহুম কি?কথা বলো।
মাহিঃ কি বলবো?
আশফিঃগল্প করো আমার সাথে।
মাহিঃ তুমি বলো আমি শুনছি।
আশফিঃহ্যা আমি শুধু বলি আর আপনি শুধু শুনেন।
আচ্ছা আমি যখন কথা বলি তুমি তখন আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকো কেনো?
মনে হয় যেনো নতুন করে দেখো আমাকে।
মাহিঃ তোমার কথা বলা দেখি।কথা বলার সময় তোমার মুখের ভঙ্গি হাত নাড়িয়ে কথা বলা এগুলো দেখতে আমার খুব ভালো লাগে।যতই দেখি ততই মুগ্ধ হই।আচ্ছা আমরা কি প্রেম করতে পারি?
আশফিঃহাহাহা।প্রেম করার শখ হলো কেনো?
মাহিঃআমি তো কোনোদিন প্রেম করিনি। শুধু সবার প্রেমের গল্পই শুনেছি।বয়ফ্রেন্ড খুব রোমান্টিক হয় রোমান্টিক রোমান্টিক কথা বলে। ডেটে যায় অনেক গিফট দেই গার্লফ্রেন্ডদের।
আশফিঃতারপর?
মাহিঃ তারপর বিয়ের আগেই কেমন বরের মত করে টেককেয়ার করে শাসন করে।সেগুলো তখন শুনলে মনে হতো সব মিথ্যাকথা আর সব ওদের নাটক।কিন্তু এখন…..
আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলতে গিয়ে থেমে গেলাম।(লজ্জাতে)
আশফিঃকিন্তু এখন কি? কি হলো বলো?লজ্জা পাচ্ছো নাকি বলতে?
মাহিঃ হুম।
আশফিঃহাহাহা তোমার মাঝে মাঝে হঠাৎ করে এই লজ্জা পাওয়ার বিষয়টা কিন্তু আমার দারুণ লাগে।তো কি এমন বিষয় যা আমাকে বলতে তোমার লজ্জা করছে?এতো লজ্জা না করে বলে ফেলো।
মাহিঃ এখন মনে হয় ওরা যা বলতো সব সত্যি।সবাই এক না।আর আমার এই ধারণাটা বদলে গেছে তোমার ভালোবাসা পেয়ে।
আশফিঃতাই?কিভাবে শুনি?
মাহিঃ এইযে তুমি বিয়ের পর থেকে আমাকে যেভাবে ভালোবাসো।যেমন তুমি বাইরে থাকলে সবসময় আমার সাথে কথা বলো আমাকে দেখো।ফ্রি টাইমে আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হও লং ড্রাইভে যাও।
আশফিঃশুধু এইটুকুই?আর কিছু করিনা?বাসায় থাকলে কি কি করি?
মাহিঃহুম আরো অনেক কিছু করো তো।বাসায় থাকলে সবসময় আমার……
আশফিঃকি? বলো?বাসায় থাকলে কি?
মাহিঃ ভুলে গেছি।
আশফিঃ পাঁজি মেয়ে।ভুলে গেছো?বলো না হলে কিন্তু প্রেম করবোনা।
মাহিঃ আচ্ছা বলবো আগে আমার সাথে প্রেম করো।প্রেম করার সময় যা যা করবে তাই তাই তোমার কাছে গল্প করবো।বলবো আমার বয়ফ্রেন্ড+হাজবেন্ড আমার সাথে এভাবে এভাবে প্রেম করে।
আশফিঃবয়ফ্রেন্ড+হাজবেন্ড মানে?
মাহিঃশুধু বয়ফ্রেন্ডের মত করে প্রেম করলে হবেনা তো।বয়ফ্রেন্ড+হাজবেন্ডদের মত করে প্রেম করতে হবে।
আশফিঃসেটা আবার কিভাবে?আমি তো শুধু বয়ফ্রেন্ডদের মত করেই প্রেম করেছি।এই যাহ্ কি বলে ফেললাম।ও তো আমার এ কথাগুলো শুনেই ৪৪০ ভোল্টে চলে গেছে মনে হয়।ওর দিকে তাকালাম এখন ও কি রিয়্যাক্ট দিবে সেটাই ভাবছি।
মাহিঃ ছেলে মানুষ এত্তো চাপাবাজ হতে পারে জানতামনা।ঐ তুমি বিয়ের পর আমাকে কি বলেছিলে?
আশফিঃ কি বলেছিলাম???
মাহিঃ ইয়ারকি হচ্ছে?তুমি বলেছিলে যে তুমি সারাদিন শুধু আমাকেই দেখতে।
আশফিঃতো সেটা কি মিথ্যে বলেছি।তোমাকেই তো সারাদিন দেখতাম তোমার আইডলটাকে।ঘুম থেকে উঠেও তোমাকে দেখতাম ঘুমোতে যাওয়ার আগেও তোমাকে দেখতাম।
মাহিঃচুপ করো ফ্রড কোথাকার।তুমি আরো বলেছিলে আমাকে ছাড়া তুমি কোনোদিনও কোনো মেয়েকে টাচ্ করোনি।
আশফিঃহ্যা!!?এই কথাও বলেছিলাম নাকি?এটা একটু বেশিই বলেছিলাম মনে হয়।
মাহিঃ কি?তার মানে তুমি আমার আগে অন্য মেয়েদের সাথেও…….(কান্না করে দিলো)তুমি অন্য মেয়েদের সাথে প্রেম করেছো ওদের সাথে ডেটে গিয়েছো। ওদেরকে টাচ্ করেছো?তার মানে ওদের সাথে তোমার কিস?? এই তুমি ওদের সাথে আর কি কি করেছো বলো।আর কি কি হয়েছে ওদের সাথে তোমার?
কতগুলোর সাথে করেছো বলোওওওও….???
ওর পলো শার্টের কলার চেপে ধরে বলছিলাম।
আশফিঃনা জাদু তুমি ভুল বুঝছো আমি প্রেম করেছি কতগুলো তা ঠিক মনে নেই তবে ওদেরকে আমি কখনোই টাচ্ করিনি।
মাহিঃ আবার মিথ্যে বলছো?এক্ষনি তুমি নিজে স্বীকার করেছো তুমি ওদের টাচ্ করেছো।
আশফিঃও তাই স্বীকার করে ফেলেছি তাইনা।কি মুসিবতে পরলাম।
মাহিঃ একদম পালানোর চেষ্টা করবেনা।তুমি ঘরে আমার আইডল রেখে বাইরে অন্য মেয়েদের ছোঁয়া নিয়েছো?
বেঈমান,বিশ্বাসঘাতক।
আশফিঃএই না তুমি কিন্তু এখন বেশি বেশিই বলছো।উহহহ মাহি কলারটা ছাড়োনা দম আটকে আসছে আমার। আমি এতো তাড়াতাড়ি মরতে চাইনা।আমার চান্দুকে কোলে নিতে চাই।
মাহিঃ চুপ একদম কোনো কথা বলবেনা।আমাকে বলো ওদের সাথে তুমি কি কি করেছো?আমাকে এভাবে তুমি ঠঁকালে???।কেনো ঠঁকালে আমাকে বলো?
আশফিঃওহ মাহি থামো বলছি। আমি ওদের সাথে তেমন কিছুই করিনি।মাহি ছাড়ো প্লিজ।হে আল্লাহ আমাকে রক্ষা করো আমি এ কি বিপদে পড়লাম।
মেযেটা পুরো চোটে গেছে। মাহিইই…..আমার কথা শুনো।কথাটা ঝাড়ি দিয়েই বললাম ওকে।না হলে তো আমার কলার ছাড়ছিলোনা।
মাহিঃ এতো বড় অপরাধ করে এখন আমাকেই ঝাড়ি দেওয়া হচ্ছে।
আশফিঃআমি ওর হাতদুটো আমার কাঁধের দুপাশে রেখে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরলাম যাতে রাগ করে ছুটে চলে না যায়। আচ্ছা আমি তোমাকে সব সত্যি কথা বলছি।হ্যা আমি অন্যসব মেয়েদের সাথে প্রেম করেছি কিন্তু ওদের সাথে আমার রিলেশনটা বেশি ডিপলি যাইনি।আর আমি কখনোই কোনো মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফাঁসাইনি।ওরা নিজেরা যেচে এসেছে আর আমার ইচ্ছাতে ওরা চলে গিয়েছে। কিন্তু ওদের সাথে আমার কখনো অন্তরঙ্গতা হয়নি। আমি যাইনি।বাইরে চলাফেরা করতে গেলে অনেক সময় অনেক কিছুতে জড়িয়ে গেছি কিন্তু তার মানে এটা না যে আমি ওদের আমার শয্যাসঙ্গী করেছি।বিশ্বাস করো তুমি। আমি সবসময় এটা ভেবে এসেছি ওদের সাথে যাই করি কিন্তু আমার কাছে তোমার জায়গাটা যেখানে সেটা ওদের কখনোই দেবোনা।আমি আমার মনের গহীনে তোমাকে রেখেছি।যখন আমি তোমার আইডলটার সামনে থাকতাম তখন কোনো মেয়ের সাথে আমি ফোনে পর্যন্ত কথা বলতামনা।কারণ আমার মাথায় অন্য কোনো মেয়ের চিন্তাই আসতোনা। তোমার মুখটা দেখতে দেখতেই আমার সময় কেটে যেতো।
মাহিঃ তুমি সব বানিয়ে বলছো।তুমি এখানকার মেয়েদের সাথে প্রেম করেছো আর তাদের সাথে তোমার কোনো টাচ্ কিস এসব কিচ্ছু হয়নি সেটা তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে বলছো?আমার এখন চোখের সামনে ভাসছে যে তুমি ওদের সাথে……
আমার সহ্য হচ্ছেনা।মনে হচ্ছে সত্যি তোমাকে খুন করে ফেলি।
আশফিঃআমি তোমাকে কিভাবে বিশ্বাস করাবো বলো?কি করলে তুমি বিশ্বাস করবে যে ওদের সাথে আমার কিচ্ছু হয়নি।
মাহিঃ kiss ও করোনি?
আশফিঃহায় আল্লাহ(কপালে হাত রেখে)।নো ডিয়ার কিস ও হয়নি।সত্যি বলছি।তবে…. না কিছুনা।
মাহিঃ তবে কি হ্যা বলো?থেমে গেলে কেনো?
আশফিঃনা ঐ বিষয় নিয়ে ওকে তো কিছু বলাই যাবেনা। না হলে আজকে কেনো আগামী এক মাসের ভেতোর ওর কাছে থাকতে পারবো কিনা সন্দেহ। তবে হচ্ছে তোমার সন্দেহ দূর করার জন্য আমি তোমাকে এখন অনেক গুলো পাপ্পি দিবো।ওর কোমড় টেনে আরো কাছে এনে আমার বুকের সাথে মিশিয়ে ওর ঠোঁটে জোড় করে পাপ্পি দিতে শুরু করেছি আর ও আমার মুখ সরিয়ে আমার ঠোঁট চেপে ধরে রাখলো।তারপর যা বললো তা শুনে আমি আমার বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
মাহিঃ একদম আমাকে কিস করবেনা।এই ঠোঁটে অন্য মেয়েদের ঠোঁটের ছোঁয়া লেগে আছে।ছাড়ো আমাকে।
আশফিঃআমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ও হনহন করে হেঁটে চলে যেতে লাগলো
আর আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ওর বলা কথা গুলো ভাবছি।এই তিন চারটা বছর ধরে যার ঠোঁটের স্পর্শ নিলাম সে কিনা বলে আমার ঠোঁটে অন্য মেয়েদের ঠোঁটের ছোঁয়া?এই কারণেই মেয়ে মানুষের কাছে কিছু বিষয় সারাজীবন গোপন রেখে যেতে হয়।কারণ এদের প্রথম রোগ হলো সন্দেহ করা আর যেটা সন্দেহ করে সেটা যদি নাও করে থাকি তবুও জোড় করে স্বীকার করাতে চাই যে আমি ঐটাই করেছি।ঢের শিক্ষা হয়ে গেছে আমার। মাহিইইই….. ও মাই হড ওর কিছু হয়ে গেলোনা তো?আমি দৌড়ে ওর কাছে ছুটে গেলাম।
চলবে…….
(রমজান মাসে এই গল্পটি লেখা অফ রাখছি।নামাজ রোজা করে গল্প লিখতে বসা খুবই কষ্টকর হয়ে যায়।
রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২ পর্ব_৩
রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২
পর্ব_৩
#লেখিকাঃIsrat_Jahan_Sobrin
#ধারণাঃKashnir_Mahi
আলিশাঃ আশফি তুমি এতো টেনশন নিচ্ছো কেনো? বাসার ভেতোরেই আছে কোথাও হয়তো
আশফিঃবাসার ভেতোরে থাকলে আমি এতোবার ডাকছি তাহলে সাড়া দিচ্ছেনা কেনো?ও নিশ্চই বাইরে কোথাও গেছে।
সার্ভেন্ট মেইন গেটের গার্ডগুলোকে ডাকো।
সার্ভেন্টঃ ওকে স্যার।
গার্ডঃইয়েস স্যার।
আশফিঃ ম্যাম কখন বেরিয়েছে?কথা বলছোনা কেনো?কি হলো চুপ করে আছো কেনো? ম্যাম কি তোমাদের কথা বলতে নিষেধ করে গেছে?
গার্ডঃ নো স্যার।
আশফিঃতাহলে?উত্তর দিচ্ছোনা কেনো?আমি তোমাদের কি বলেছিলাম যে ও যদি কখনো কোথাও একা বের হতে চাই তাহলে তোমরা বেরোতে দিবেনা। তোমরা আটকাওনি কেনো ওকে?আনসার মি ড্যামিড।
গার্ডঃস্যার আমি চেষ্টা করেছিলাম আটকানোর। কিন্তু ম্যাম আমাদের কোনো কথা শুনেনি।
আশফিঃ ভেরি ফাইন।তাহলে তোমাদের আমার কাজে রেখে কি হবে?আটকাতে যখন পারোনি তখন তোমাদের ও এখানে থাকার প্রয়োজন নেই।যাও এখান থেকে। গেট লস্ট।গার্ডগুলোকে যখন তাড়িয়ে দিচ্ছিলাম তখন মাহি চলে এসেছে। ও আমার চোখ মুখ দেখে বুঝতে পেরেছে যে আমি কতটা ক্ষেপে আছি ওর উপর।
মাহিঃ হ্যালো গাইস।
actually আমি….
আশফিঃতোমার কাছে কেউ কোনো কৈফিয়ত চাইনি।আলিশা মিট মাই ওয়াইফ মাহি।
আলিশাঃআরে তোমাকে নাম ধরে চেনাতে হবেনা। আমি তো ওকে দেখেই চিনতে পেরেছি।How are you ashfi’s queen?
মাহিঃঅবশ্যই অনেক ভালো তোমাকে দেখার পর আরো অনেক বেশি ভালো হয়ে গেছি।প্লিজ কাম একটা জাপ্পি হয়ে যাক।
আলিশাঃওহ শিওর। তো উডবি মাদার এই অবস্থায় কোথায় গিয়েছিলে শুনি? আশফির কলিজাটা তো মনে হয় টেনশনে শুকিয়ে যাচ্ছিলো।
মাহিঃ তোমার জন্য একটা গিফট আনতে গেছিলাম।
তুমি আজ আমাদের এখানে প্রথম এসেছো তোমাকে কিছু না দিয়ে বরণ করি কিভাবে?
আলিশাঃদেখেছো আশফি তোমার থেকেও অনেক বেশি যত্নবান ও।কি সুন্দর আমার জন্য একটা গিফট কিনে নিয়েসেছে।
মাহিঃ আরে আগে খুলে তো দেখো। তারপর বলো সুন্দর হয়েছে নাকি।
আলিশাঃ তুমি আমাকে যাই দাও সেটা আমার কাছে অনেক বেশি সুন্দর হবে।তুমি যে আমার জন্য এনেছো সেটাই অনেক বেশি।
আশফিঃআচ্ছা আলিশা তুমি আগে একটু রেস্ট নাও অনেক ক্লান্ত তুমি বিশ্রাম প্রয়োজন তোমার।তারপর একসাথে আড্ডা দেওয়া যাবে।
আলিশাঃ ওকে ডিয়ার। মাহি তুমি ও রেস্ট নাও ডার্লিং।
মাহিঃ হুম।সার্ভেন্টের দেখানো রুমে আলিশা চলে গেলে। এদিকে আশফির ভাবমূর্তি এখন কি হবে সেটাই ভাবছি।আমি তো ভেবেছিলাম ওরা আসার আগেই আমি চলে আসতে পারবো।কিন্তু এতো দেরি হয়ে যাবে কে জানে। আশফি আমার সাথে কোনো কথা বলছেনা।
আমার তো এখন ওর সামনে দাড়িয়ে থাকতেই ভয় করছে।ও শার্ট টা খুলে টি শার্ট টা পড়তে যাবে তখন আমি ওকে পেছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।
আশফিঃ মাহি আমাকে ছাড়ো।
মাহিঃ না।ছাড়বো না। আগে আদর করো আমাকে।
আশফিঃ মাহি আমাকে কনভেন্স করার চেষ্টা করোনা।তাতে ফল কিন্তু আরো বিপরীত হবে। আমাকে একা ছেড়ে দাও।
মাহিঃ আমি জানি তুমি অভিমান করে আছো।আর আমিই তোমার অভিমান ভাঙ্গাবো।একা থাকতে দিবোনা। কথাগুলো বলে আমি ওর পিঠে চুমু দিচ্ছিলাম।তখন ও আমার হাত ধরে পেছন থেকে সামনে এনে আমার দুইবাহু চেপে ধরলো।আমি তো ভয়ে ওর চোখের দিকে তাকাতে পারছিনা।
আশফিঃ How dare you?
তুমি কি মনে করেছো তোমাকে আমি খুব বেশি ভালোবাসি বলে তোমাকে যা খুশি করার স্বাধীনতা দিবো?তুমি কি কারণে আমার কথা অমান্য করলে?তুমি কি আমার খারাপ রূপ টা দেখতে চাও? তুমি কি ভুলে গেছো যে তুমি এখন একা নও তোমার মাঝে এখন আরো একজন বড় হচ্ছে আর সে তোমার আমার ভালোবাসার প্রথম ফসল।তোমার অসাবধানতার কারণে ওর যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যায়?তখন পারবে তুমি আমার সামনে মুখ দেখাতে? বলো, চুপ করে আছো কেনো?তোমাকে আমি বলিনি তোমার এই অবস্থায় কখন কিভাবে থাকা উচিত?তাহলে তুমি কোন সাহসে বাইরে গিয়েছিলে তাও আবার নিজে ড্রাইভ করে? আমি ওকে ধরে এতো বকাছকা করছি আর ও আমার দিকে কেমন ভয়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখদুটোতে পানি চলে এসেছে ওর।বুঝতে পারলাম এই মুহূর্তে অনেক প্রেসার যাচ্ছে ওর উপর দিয়ে।তাই মেজাজ নিজের নিয়ন্ত্রণে এনে ওর হাত ছেড়ে দিলাম। যথেষ্ট বকা হয়েছে ওকে। এর থেকে বেশি বলা ঠিক হবেনা। ওর হাত ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে গেলাম তখন পেছন থেকে ওর কয়েকটা কথা শুনে থেমে গেলাম।
মাহিঃআশফি আমি তোমার এই রূপটা দেখতে খুব ভয় পাই।
আশফিঃ ওর কথা গুলো শুনে ওর কাছে এগিয়ে ওর চোখের দিকে তাকালাম। আসলেই ওর চোখদুটোতে অনেক ভয় কাজ করছে। কথাগুলো বলেই ও চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ওর। আমি ওকে জড়িয়ে ধরার আগেই ও আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার বুকে মাথা রাখলো। মাহিঃ তুমি যখন খুব রেগে যাও তখন আমি এতোটাই ভয় পাই যতোটা বিয়ের প্রথমে তোমাকে ভয় পেতাম।তখন তোমার ভয়ে আমার মাঝে যে ফিলিংটা কাজ করতো এখনও ঠিক সেই ফিলিংটা কাজ করে যখন তুমি খুব বেশি রেগে যাও।
আশফিঃ আমি বুঝেছি ও কেনো এতোটা ভয় পেয়ে যায় যখন আমি রেগে যাই। কারণ আমি যখন ওর চোখের সামনে নির্দয়ালুভাবে একের পর এক খুন করেছি তখন আমার চোখে মুখে হিংস্রতা ভেসে উঠতো।আর আমার সেই হিংস্ররূপ ও নিজের চোখে দেখেছে।আর এখনো আমি রেগে গেলে সেই ভয়ানক রূপ ফুটে উঠে আর সেটা দেখেই ও এতো ভয়।
মাহি আমি চাইনা তুমি আমার এই ভয়ানক রাগি রূপটা দেখো।কারণ সবসময় রাগ নিজের আয়ত্তে রাখা সম্ভব নয়। আর আমি তোমাকে আর আমাদের বেবিকে নিয়ে খুবই কেয়ারফুল।সেখানে তুমি যদি কেয়ারলেসের মত কাজ করো যেটাতে তোমার আর আমাদের বেবিটার ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে তাহলে সেখানে তো আমার রাগ হওয়ার ই কথা।তুমি তো জানোই অনেক ভালোবাসার আর কাছের মানুষকে হারানোর কষ্টগুলো কতোটা কঠিন সেটা আমি বারবার অনুভব করতে চাইরা।আল্লাহ না করুক তোমার যদি এমন কোনো ক্ষতি হয়ে যায় তখন কি আমি বেঁচে থাকতে পারবো বলো?সেটা কি আমার পক্ষে সম্ভব?
মাহিঃ আশফি আমি জানি সেটা তোমার পক্ষে কেনো আমার পক্ষে ও সম্ভব নয়। কিন্তু মৃত্যু তো অনিবার্য। আজ না হয় কাল মরতে তো হবেই।তাই আমাদের উচিত এই কাছের মানুষকে হারানোর ভয় না পেয়ে মৃত্যু কে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়া।
আশফিঃ মাহি স্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নেওয়া সম্ভব।কিন্তু যাকে হারানোর কথা ছিলোনা সে যদি অস্বাভাবিক ভাবে আমার থেকে হারিয়ে যায় তাহলে সেটা আমি কিভাবে মেনে নিতে পারবো?এই পৃথিবীতে এক আল্লাহ ছাড়া আমাদের কেউ নেই।তাই তোমার সবকিছু আমাকেই খেয়াল করতে হবে আর আমার সবকিছু তোমাকেই খেয়াল করতে হবে।যতদিন পর্যন্ত ও এই পৃথিবীতে সুস্থভাবে না আসছে ততদিন তোমাকে অনেক ধৈর্যসহকারে খুবই সাবধানে থাকতে হবে।আমাদের দুজনের বেঁচে থাকার উৎস এখন শুধু আমরা দুজনই নই যে আসবে এখন সে ও আমাদের দুজনের বেঁচে থাকার উৎস হবে।
মাহিঃ চেষ্টা করবো ওর সবথেকে ভালো খেয়াল রাখার।
আশফিঃশুধু চেষ্টা করলেই হবেনা।তোমাকে পারতেই হবে। কারণ একজন মা তার সন্তানের ভালোর জন্য এমন কোনো কাজ নেই যা পারেনা। Ok অনেক জ্ঞান নিয়েছো এখন তোমার গোসল করার সময় হয়ে গেছে।বাইরের জামা কাপড় ছেড়ে আসো যাও।আমি আসছি তারপর তুমি বাথরুমে যাবে।
মাহিঃমানে কি? তুমি এভাবে বাচ্চাদের মত করে টেক কেয়ার করো কেনো? আমি কি নিজে গোসল করতে পারবো না নাকি তোমার বাচ্চা ক্যারি করছি বলে একা গোসল করার স্বাধীনতা ও আমার নেই?
আশফিঃযেটা মনে করো। তোমাকে এই সময়গুলোতে এখন কোনোকিছুতেই ভরসা করতে পারছিনা।
তুমি চেন্জ হও আমি দেখে আসি আলিশা কি করছে?
মাহিঃ হুম যাও। আমি যখন চেন্জ হচ্ছিলাম তখন আমার পেটের দিকে নজর গেলো।কয়েকমাস আগের কথা মনে পড়ে গেলো……..
মাহিঃ আশফি তুমি কি করছো বলো তো?সবসময় এতো দুষ্টুমি কেনো করো? ছাড়ো তো আমাকে।আমি কি সারাদিনই তোমার আদর নেওয়ার জন্য বসে থাকবো আর কোনো কাজ নেই?
আশফিঃওহ নিজের ইচ্ছাই আদর করি তো তাই দাম দিতে ইচ্ছা করেনা।
কিছুদিন পর যখন এইখানে(পেটে)আমারই অংশবিশেষ অবস্থান করবে আর তারপর যখন তোমার আমার মাঝে শুয়ে তোমার জায়গা দখল করে আমাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকবে তখন তো হাত পা ছুড়ে কাঁদলেও তো আমার আদর পাবেনা মানে দিতে পারবেনা।তাই যা নেওয়ার এখন সব নিয়ে নাও।
মাহিঃ এ্যাহ্ বললেই হলো। আমার বেবি কি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোবেনা?
আর ও তো মাঝে ঘুমোবেনা।মাঝে আমি থাকবো।আমি ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোবো আর তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোবে।
আশফিঃআচ্ছা?কিন্তু ওর সামনে তুমি আমার আদর নিবে কিভাবে?
মাহিঃ উমমমমমম…… তা তো জানিনা।
আশফিঃ এর জন্যই তো বলছি এখন যতপারো আমার কাছে থাকো।না হলে পরে আর সুযোগ পাবেনা।
মাহিঃহুহ।
আশফিঃহুহ কি? শুধু তো পারো মুখ ভেংচি দেওয়া।
মাহিঃ কেনো আর কিছু পারিনা?
আশফিঃহুম পারো তো।
আর পারো খালি আমার মুখে শরীরে দাগ বানিয়ে দেওয়া।
মাহিঃ কি?
আশফিঃ তো কি। যখনই আদর করতে আসো তখনই তার কিছু চিহ্ন রেখেই যাও।
মাহিঃ যাবোই তো।আমি যে তোমাকে আদর করেছি তার চিহ্ন রাখতে হবেনা?
আশফিঃ তাই বলে মুখে? শরীরে থাকলে সেটা ঢেকে রাখা যায়।কিন্তু মুখে থাকলে কিভাবে ঢাকা যায়? তোমার জন্য অফিসে একদিন কতোটা লজ্জাকর অবস্থায় পড়তে হয়েছিলো আমায় জানো? কানের নিচে লাল দাগ দেখে সবাই মুখচিপে হাসছিলো।
মাহিঃহা হা হা। তারপর?
আশফিঃ তারপর আর কি আমার সেক্রেটারি আমাকে বললো। তখন তো আর জেনে ও কিছু করার নেই।
মাহিঃহিহিহিহি।বেশ হয়েছিলো।
আশফিঃহিহিহিহি বেশ হয়েছিলো তাইনা?তাহলে আমিও তোমার মুখে এখন দাগ বানিয়ে দিই?এসো আমার কাছে এসো।
মাহিঃ এই খবরদার একদম এটা করবেনা তাহলে আমি বাইরে সবার সামনে যাবো কি করে?
আশফিঃ এখন কেনো?তাহলে আমার কেমন লেগেছিলো সেটা বুঝো।আমি তো আজকে তোমার গালে দাগ করেই ছাড়বো।
মাহিঃ আশফি না প্লিজ একদম না।আশফি……
এসব ভাবছি আর হাসছি কখন যে রুমে আশফি চলে এসেছে আমি বুঝতে পারিনি।ও আমার পেটের উপর হাত রেখে পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার মাথার একপাশে চুমু দিলো।
আশফিঃ কি ভাবছো?আর এভাবে একা একা হাসছো কেনো?
মাহিঃ ভাবছিলাম আমার দুষ্টু মিষ্টি বরটার কথা আর আমাদের বেবিটার কথা।
আশফিঃআচ্ছা? কি ভাবছিলে? ও আমার মত দেখতে হবে নাকি এটা? এ বিষয় নিয়ে তুমি একদম নিশ্চিত থাকতে পারো যে ও ওর দাদিমায়ের মত দেখতে হবে।
মাহিঃ মানে জাপানিজদের মত?
আশফিঃ হ্যা।আরে আমিও তো ছোটোবেলাই সেরকমই দেখতে ছিলাম ছবিতে দেখোনি?তারপর বড় হয়ে যাওয়ার পর বাবার মত আরকি বাঙ্গালিদের মত আমার লুকটা হয়ে গেছে।অবশ্য সেটা পুরোপুরি না।
মাহিঃ হুম।তোমাকে তো এখনো অনেকটা জাপানিজদের মত দেখতে লাগে।
আশফিঃ হ্যা।তাই আমার বেবিটাও আমাদের মতই দেখতে হবে।বাচ্চারা বেশিরভাগ বাবার পরিবারের মত দেখতে হয়।
মাহিঃ তোমার মত দেখতে হলে তো অনেক সুন্দর হবে। কারণ আমার আশফি বাঙ্গালি আর জাপানাজ দুই জাতির মিশ্রণে দেখতে হয়েছে বলে এতো সুন্দর।
আশফিঃআচ্ছা বুঝলাম।এখন চলুন গোসলে যেতে হবে।
মাহিঃ আশফি প্লিজ আমি একা যাইনা?
আশফিঃ কেনো আমি থাকলে কি সমস্যা?
মাহিঃ আমার কেমন যেনো লজ্জা লাগে।
আশফিঃএটা একটু বেশিই বললেনা তুমি?তুমি এখনো আমার সামনে লজ্জা পাও সেটা তুমি বলবে আর আমি বিশ্বাস করবো?
মাহিঃ সত্যি বলছি।কিছু কিছু সময় সত্যি অনেক লজ্জা করে।
আশফিঃতাই নাকি?
তাহলে চলুন নতুন করে আজকে আপনার লজ্জা ভাঙ্গাই তাও আবার বাথরুমে নিয়ে গিয়ে।ওকে কোলে তুলে বাথরুমে নিয়ে দরজা আটকে দিলাম। তারপর……..।
মাহিঃ আশফি না। তুমি এটা কি করলে?ছিঃ।
লজ্জাতে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললাম।ও আমার……
চলবে…..
রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২ পর্ব_২
রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২
পর্ব_২
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারণাঃ #kashnir_Mahi
মাহিঃ তুমি কি কারণে আমার কাছে ওকে পাঠালে?আমি বলেছি আমার সমস্ত কাজ আমাকে দেখাশোনা তোমাকেই করতে হবে।কারণ আমার এই অবস্থার জন্য তুমি দায়ী।তাই তুমি ছাড়া অন্য কেউ আমাকে দেখাশোনা করতে আসলে তাকে কিন্তু আমি চাকরি থেকে বের করে দিবো।দরকার হলে সবকয়টা সার্ভেন্টকে বের করে দেবো।তখন বুঝবে মজা।
আশফিঃআচ্ছা আর এমন হবেনা।তুমি প্লিজ একটু শান্ত হও।এতো চিল্লাচিল্লি করলে তোমার প্রবলেম হতে পারে।আমি আর তোমার কাছে অন্য কাউকে পাঠাবোনা।আমি নিজে এসে তোমার যা প্রয়োজন সেটা আমি দেখবো আর আমিই করবো।
মাহিঃ তাহলে তুমি কেনো ওকে পাঠালে?নিজে কেনো আসলেনা?
আশফিঃআমি আসলে আমার কিছু ক্লাইন্টদের সাথে কথা বলছিলাম।
মাহিঃ আমি কোনো অজুহাত শুনতে চাইনা।আমি তোমার কাছে খাবোনা তুমি যাও।আমি নিজেই খেয়ে নিবো।আর এখন তুমি আমার রুম থেকে বের হও।আজ তোমার আমার বেডে কোনো জায়গা নেই।
আশফিঃএটা কি বলছো তুমি?তাহলে আমি কোথায় থাকবো? আর তোমাকে ছাড়া তো আমার ঘুম ই আসতে চাইনা।
মাহিঃ জানিনা কিছু।এক্ষণি তুমি আমার রুম থেকে বের হও।না হলে কিন্তু আগামি ১ সপ্তাহের ভেতোরেও আমার মুখ দেখতে পারবেনা।
আশফিঃনাআআআ…. তাহলে তো আমি মরেই যাবো
এমন কোরোরা ডিয়ার প্লিজ।
মাহিঃ এই এসব আলতু ফালতু কথা বলবে না কিন্তু বলে দিলাম।না হলে এর থেকেও খুব খারাপ হবে।
আশফিঃ মাহি মাই নাইট কুইন প্লিজ মাফ করো আমাকে।আমি রাতে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারিনা।
মাহিঃ তুমি যাবে নাকি আমি চলে যাবো?
আশফিঃ না না কোনো প্রয়োজন নেই।আমিই যাচ্ছি।তার আগে তোমাকে খাইয়ে দিই?
মাহিঃ না।কোনো দরকার নেই।আমি একাই খেতে পারবো।যাও তুমি।
আশফিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।এই শোনো না যাওয়ার আগে একটা পাপ্পি দাও আমাকে।এখানে?
-“ডান গাল দেখিয়ে বললো।তারপর মাহি মুখটা গোমড়া করে রেখে ঠাস করে একটা চুমু দিয়ে মুখটা ঘুরিয়ে অন্য পাশে তাকিয়ে থাকলো।(অভিমানে)”
আশফিঃআর একটা দাও না জাদু।এখানে?
-“ঠোঁট দেখিয়ে বললো।”তখন মাহি চোখ বড় বড় করে চিৎকার করে বললো”।
মাহিঃ যাও বলছিইইই…।
আশফিঃ যাচ্ছি।এই মেয়েটা দিন দিন খিটখিটে বুড়ি হয়ে যাচ্ছে।সবসময় চিল্লাচিল্লি করে।বাসায় থাকলে ৫ টা মিনিট ওর চোখের সামনে না থাকলে চিল্লিয়ে ফাটিয়ে পুরো বাড়ি আর বাড়ির সার্ভেন্ট গুলোকে মাথায় তুলে ফেলে।আমার জন্য ওর এই অবস্থা বলে তাই ওর সবকিছু আমাকেই করতে হবে এমনটাই ওর নির্দেশ।সেদিন ফ্লোরে বমা করে ফেলেছে সেটাও আমাকে পরিষ্কার করতে হয়েছে।কোনো সার্ভেন্টকে পরিষ্কার করতে দেইনি।কিন্তু কথা তো এটা না।কথা হচ্ছে আমার কলিজাটা যে ওখানে রেখে এসেছি তো এখানে কি করে ঘুমাবো সেটাই ভাবছি।এই তিন বছরে ওকে ছাড়া একটা রাত ও একা ঘুমাইনি।আজকে কি করে ঘুমাবো?হুম, ও ঘুমিয়ে পড়লে চুপিচুপি ওর পাশে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়বো।মেয়েটা আজকাল বড্ড পাগলামি করে
মাঝেমাঝে মনে হয় কোনো ছোটো বাচ্চা মেয়েকে আমি আদর করে তার অভিমান ভাঙ্গাচ্ছি।আমার ও খুব ভালো লাগে যখন ও বাচ্চাদের মত আহ্লাদ করে আর মুখটাও বাচ্চাদের মত করে ফুলিয়ে রাখে।আমি তো ওকে এভাবেই রাখতে চেয়েছি।ওকে আমার জীবনে পেতে যে কতোটা কষ্ট হয়েছে সেই কষ্টের বিনিময়ে ওকে আমি পেয়েছি।আর মামনি চলে যাওয়ার পর থেকে প্রমিস করেছি ওকে আমি কোনোদিনও দুঃখের ছোঁয়া পেতে দেবোনা।ওকে এতো ভালোবাসা দিবো যাতে ও ভুলে যায় ওর জীবনের কখনো কষ্টের ছায়া ছিলো।সেটা আমি কতোটা করতে পেরেছি জানিনা।ওকে যতই ভালোবাসি মনে হয় সেটা ওর জন্য কম।ও তার থেকেও অনেক বেশি ডিসার্ভ করে।তবে এতোগুলো দিনে ওকে কখনো কাঁদতে দেখিনি আমি।ওর এক ফোটা চোখের পানি যে আমার কাছে অনেক দামি।দিন শেষে ঘরে ফিরে ওবে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা গুজে থাকার সুখটাই যে আমার কাছে পৃথিবীর সবথেকে বড় সুখ সেটা ওকে কাছে না পেলে জানতামনা। পৃথিবীর সমস্ত মায়া যে ওর মুখটার মাঝেই পাই আমি।কথাগুলো একপাশ হয়ে শুয়ে ভাবছিলাম হঠাৎ পেছন থেকে কেউ এসে জড়িয়ে ধরে আমার কাছে এসে শুয়ে পড়লো। কেউ টা আর কে ই বা হবে ওটা যে আমার খিটখিটে বুড়ি মাহি।আমি ওর স্পর্শ ওর নিঃশ্বাস নিঃশ্বাসের গন্ধ এখন চোখ বন্ধ করে থাকলেও বুঝতে পারি এটা আমার মাহি।ও ভেবেছে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি।কিন্তু আমি বুঝতে পারছি ও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।আমার চুলগুলোতে বিলি কাটাচ্ছে। আমার সারা মুখে চুমু দিচ্ছে। আমার মুখের সাথে ওর মুখটা লাগিয়ে ঘষছে।ও যেভাবে আমাকে আদর করছে আমার ইচ্ছে করছে ওকে জড়িয়ে ধরে আদর শুরু করে দিই।এখন তো সেটা সম্ভব না। আমাকে ধৈর্য রাখতে হবে নিজের প্রতি নিজের নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।
মাহিঃ ধুর। মুখে শুধু খোচা খোচা দাড়ি। মুখটা লাগাতেই পারিনে ওর মুখের সাথে। মুখে খোচা লাগে শুধু। কে যে বলে ওকে খোচা দাড়ি রাখতে?
আশফিঃ কে বলে মানে? তুমিই তো বলো। আমাকে ক্লিন শেভে ভালো লাগেনা। এর জন্যই হালকাভাবে শেভ করি।
মাহিঃ বদমাইশ ছেলে তুমি এখনো ঘুমাওনি?
-“মাথা নাড়িয়ে না সূচক উত্তর দিলো।”
মাহিঃ তাহলে আমার কাছে আসোনি কেনো?তুমি তো জানো যে আমি তোমাকে ছাড়া এখন একা থাকতে পারিনা।তাহলে এখানে শুয়ে পড়লে কেনো?
আশফিঃ শুয়ে পড়েছি কিন্তু ঘুমিয়ে তো পড়িনি।আমি ভেবেছিলাম আমার নাইট কুইনটা আমার ওপর রেগে আছে তাই সে ঘুমিয়ে পড়লে চুপিচুপি গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে তার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়বো।
মাহিঃ নাইট কুইন কে?আচ্ছা তুমি আমাকে হোয়াইট এন্জেল বলো সেটা বলার না হয় কারণ বুঝলাম কিন্তু নাইট কুইন বলো কেনো?
আশফিঃ এটার পেছনে অনেক বড় একটা গল্প আছে সেটা না হয় অন্য একদিন শোনাবো। এখন একটু এসোনা তোমাকে আদর করি।
মাহিঃ একদম না। এমনিতেই আমার ঘুম আসছে না তার ওপর তুমি আদর করলে যেটুকু আসতে চাইবে সেটাও দৌড়ে পালাবে।
আশফিঃ কিচ্ছু হবেনা। একটু করবো বেশিনা। ওকে কাছে টেনে এনে বললাম।
মাহিঃ না আমি ঘুমাবো।
কিভাবে আমার ঘুম আসবে আগে সেই ব্যবস্থা করো।
আশফিঃ হুম।তার জন্যই তো বলছি।আমার কাছে আসলে আমার আদর নিলে এমনিতেই ঘুম চলে আসবে।
মাহিঃ দুষ্টুমি করছো না তো? সত্যি বলছো?
আশফিঃ একদম।
মাহিঃ পাগল একটা।ও আমার কাছে এসে আমাকে খুব করে আদর করে দিলো।আমি চোখ বন্ধ করে অনুভব করছিলাম আমার শরীরে ওর ঠোঁটের স্পর্শ গুলো।ওর ভালোবাসাটা আমার কাছে এমনই একটা জিনিস যা সারাজীবন গ্রহণ করলেও আমার মন ভরবেনা।
আশফিঃ ডিয়ার তুমি কৈ? আমি তোমাকে খুঁজছি তো। মেয়েটা ১টা মিনিটের জন্য ও কোথাও বসে থাকতে চাইনা।সবসময় শুধু ঘুরঘুর আর ঘুরঘুর। আমি যে বাইরে যাওয়ার আগে ওর ঠোঁটের ইয়াম্মি পাপ্পিটা না নিয়ে বের হইনা সেই জিনিসটা মেয়েটা এখনো মাঝে মাঝে ভুলে যায়।মনে হচ্ছে ওর ওপর আগের সেই অত্যাচার গুলো শুরু করতে হবে।একবার ডাবল থেকে সিঙ্গেল হও তারপর নতুন করে নতুন পদ্ধতিতে শুরু করছি সবকিছু।
মাহিঃ একা একা কি বকছো?আর এখন সেজেগুজে কোথায় বের হওয়া হচ্ছে শুনি?
আশফিঃভাগ্যিস কিছু শোনোনি।
মাহিঃ কি শুনিনি?কি বলছিলে আমাকে?
আশফিঃ আরে কিছুনা। আমি তো এখন বাইরে বের হবো তাইনা?তো আমার একটা দরকারি জিনিস নেওয়ার আছে কিন্তু সেটা খুঁজে পাচ্ছিনা তাই তোমাকে স্মরন করছিলাম।
মাহিঃ কি খুঁজে পাচ্ছোনা?
আশফিঃ আমার কাছে না আসলে কিভাবে বলবো?
মাহিঃ ও তাহলে এই ব্যাপার?তো সেটা কি খুব দরকারি জিনিস?
আশফিঃহুম খুব। ওকে কাছে টেনে ওর ঠোঁটে চুমু দিলাম।আর এতো জোড়ে ওর ঠোঁটটা চেপে ধরেছি যে বেচারির ঠোঁট দুটো লাল মরিচের মত লাল হয়ে গেছে।
মাহিঃ তুমি আজকে এভাবে দিলে কেনো?আমি কত ব্যাথা পেয়েছি ঠোঁটে।
আশফিঃ তো কি করবো? তুমি রোজ ভুলে যাও কেনো এই বিষয়টা?আমার কিন্তু আগের মত আবার রাগ চেপে গেলে তোমার অবস্থা কিন্তু দেখার মত হবেনা।
মাহিঃহাআআআ?তুমি আমার এই অবস্থাতেও টর্চার করতে চাও?এতো নিষ্ঠুর তুমি?
আশফিঃ মহারাণী??
মাহিঃ বলুন সম্রাট?
আশফিঃআমি আপনাকে এখন তেমন কিছুই করছিনা। জাস্ট ওয়ার্নিং দিলাম। মনে থাকে যেনো।আমি এখন আসছি।আলিশাকে রিসিভ করতে যাবো।তুমি রেডি হয়ে থেকো।
মাহিঃ ওকে সাবধানে যেও।
“এয়ারপোর্টে আলিশাকে রিসিভ করতে এসে আশফি তো ওকে খুঁজেই মরছে। সামনে এতো সুন্দরি মেয়ে যার ভীড়ের মাঝে ওকে চোখেই পড়ছেনা ওর।হুট করেই সামনে থেকে একটা মেয়ে দৌড়ে এসে আশফির সাথে জাপ্পি শুরু করে দিলো।আশফির রিয়্যাকশান যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।তারপর মেয়েটার জাপ্পির পালা শেষ হলে আশফি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ফোনে ছবির সাথে ভালো করে মিলিয়ে দেখলো।হ্যা এটাই আলিশা।”
আশফিঃতুমি এতো স্লিম হয়ে গেছো যে তোমাকে আমি চিনতেই পারিনি।আমার কাছে তোমার যে ফটোগুলো ছিলো সেগুলোতে তুমি বেশ ভালোই healthy ছিলে।
আলিশাঃ হুম ঐ ফটোগুলো তো আমার ৩ থেকে ৪ বছর আগের ছবি।এর জন্যই চিনতে পারোনি।কিন্তু আমি কি দেখতে আগের থেকে খুব খারাপ হয়ে গেছি?
আশফিঃএকদম না।আরো বেশি কিউট হয়ে গেছো।
আলিশাঃআমি কিন্তু তোমাকে একবার দেখেই চিনতে পেরেছি।কারণ তুমি সেই আগের মতই আছো।একদম dangerous handsome.
আশফিঃ Dangerous handsome?? হা হা হা।
-“গাড়িতে আসতে আসতে ওরা কথাগুলো বলছিলো।”
আলিশাঃ আরে আমি তো ভাবলাম তোমার হোয়াইট এন্জেল এর মুখটা দেখে ঘরে প্রবেশ করবো কিন্তু সে কোথায়?তাকে তো কোথাও দেখছিইনা।আমি যে তাকে দেখার জন্য ব্যাপক exited.
আশফিঃ হুম।আমার হোয়াইট এন্জেলকে দেখার জন্য তোমার যে উত্তেজনা সেটা বৃথা যাবেনা।এসো আমার রুমে এসো তাহলেই দেখতে পারবে।
“আলিশা রুমে ঢোকার পর মাহির আইডলটার দিকে চোখ পড়লো”।
আলিশাঃ এটা কি?
আশফিঃ আহহা ছুঁইয়োনা।আমি দেখাচ্ছি। আমি মাহির আইডলটার মুখের ওপর থেকে হোয়াইট নেট ক্লোথটা সরিয়ে দিলাম।
আলিশা, Just look.This is my white angel.
-“মাহির আইডলটা দেখার পর আলিশা সেটা থেকে চোখ ফেরাতে পারছেনা।অন্তত তিন মিনিটের মত নিরব দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।”
আলিশাঃ Its really a amazing idol. যে মেয়ে এতোটা সুন্দর হতে পারে সে সত্যি একজন এন্জেলের থেকে কম কিছুনা। আমি সত্যি মুগ্ধ। এতোটা নিখুঁত সুন্দর করে ওকে কিভাবে তৈরি করেছো?
আশফিঃ অসম্ভব ভালোবাসা থাকলে সবই সম্ভব।
আলিশাঃ সত্যি।কতোটা ভালোবাসলে একজন কে এতো সুন্দর করে তৈরি করা যায়।না জানি বাস্তবে গড তাকে কতোটা সুন্দর করে তৈরি করেছে।
আশফিঃবলেছিলাম না তুমি নজর ফেরাতে পারবেনা।এর জন্যই বলেছিলাম নজর লেগে যাবে।
আলিশাঃ ওকে। তোমার বৌ কে সামনাসামনি উপস্থিত করো।তাহলে এটার দিকে আর নজর দিবোনা।
আশফিঃ মাহি? মাহি? মাহি তুমি কোথায়?আলিশা ইজ কামিং। ডিয়ার জলদি এসো।
অদ্ভুত মেয়েটা কোথায় গেলো?
এতোবার ডাকছি তবুও সাড়া দিচ্ছেনা?সার্ভেন্ট?
সার্ভেন্টঃ ইয়েস স্যার?
আশফিঃ Where is your mam?
সার্ভেন্টঃ স্যার আমি তো ম্যাম কে লাস্ট ৩০ মিনিট আগে রুমে দেখেছি তারপর আমি আমার কাজে ছিলাম।
আশফিঃ হোয়াট? তার মানে ৩০ মিনিট পর ওকে তোমরা খেয়াল করোনি????
সার্ভেন্টঃ নো স্যার।?
চলবে।
রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২ পর্ব-১
রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২
পর্ব-১
লেখিকা: #Israt_Jahan
ধারনা: #Kashnir_Mahi
মাহিঃ উহহ এতো অশান্তি আর ভালো লাগেনা।খিদে পেয়েছে অথচ কিচ্ছু খেতে পারছিনা।আশফিইইই…….তোমাকে আমি ছাড়বোনা।
অভদ্র অসভ্য শয়তান গন্ডার তোমার জন্য আমার এই অবস্থা।আমার খুব খিদে পেয়েছে।আমি কি খাবো???
-“চিৎকার করে মাহি কথাগুলো বলছে।”
সার্ভেন্টঃস্যার!! ম্যাম কিচ্ছু খাচ্ছেনা।খাবার এর গন্ধ শুকেই বমি করে দিচ্ছে।খিদে পেয়েছে খেতে চাইছে। কিন্তু খাবার মুখের সামনে নিলেই সরিয়ে দিচ্ছে।কি করবো এখন?
আশফিঃআচ্ছা ঠিক আছে আমি আসছি। তুমি ফোন রাখো।ওর কাছে যাও আর সবসময় ওকে চোখে চোখে রাখবে।এই মেয়েটাকে নিয়ে এখন আমি কি করবো?ফোন করলেও শুধু বকাবকি করে।আর বলে আমার জন্য নাকি ওর এই অবস্থা।আমি ওকে ইচ্ছে করে কষ্ট দিচ্ছি।এটা কেমন কথা।আমি কিভাবে ওকে কষ্ট দিচ্ছি সেটাই তো বুঝলাম না।একে নিয়ে আমি এখন কি করবো।৩টা মাস হলো আমাকে পুরো পাগল করে দিচ্ছে।এখানে বসে থেকে দেরি না করে বাসায় যায়।দেখি গিয়ে কিছু খাওয়াতে পারি নাকি।আজকে আর অফিস করা হলোনা।এই তিনটা বছরে মাহি আমার ওপর এমন কোনো অত্যাচার নেই যা ও করেনি।আর এখন যে অত্যাচারটা ও শুরু করেছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। ২৪ ঘন্টার ২৪ ঘন্টাই ওর মুখে বকা শুনতে শুনতে আমার দিন শুরু হয় আর রাত শেষ হয়।কতগুলো দিন যে রাতে ঘুমোতে পারিনা।বাসায় পৌঁছে গেলাম।মাহি তুমি কাঁদছো কেনো জাদু।কি হয়েছে?
গেলো,এই প্রশ্নটাই আমাকে করতে হলো?কানটা বন্ধ করার ও উপায় নেই।আমার প্রশ্ন টা শুনেই ওর কান্না বন্ধ হয়ে গেলো।
মাহিঃতুমি এখনো কোন মুখে এই প্রশ্ন করছো?তুমি দেখতে পাচ্ছোনা কি হয়েছে?তুমি কি মানুষ,তুমি জানো আমার কত কষ্ট হচ্ছে?
আশফিঃআচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে।আমি বুঝতে পারছি জাদু।দেখো এমন সময় তো সকলেরই একটু কষ্ট হয়।এটা সহ্য করেই তো সবাই…..
মাহিঃ সহ্য করেই তো মানে? তুমি সহ্য করতে তাহলে।
আমাকে কেনো সহ্য করতে হবে?
আশফিঃআমি?আমি কি করে সহ্য করবো??ছি ছি তুমি এসব কি বলোনা।এটা কোনোদিন সম্ভব নাকি।দেখো তুমি তো আমার থেকেও অনেক বেশি ইন্টেলিজেন্ট।
তুমি যদি না খেয়ে থাকো তাহলে ওর তো কষ্ট হবে।তাইনা?তুমি কি সেটা চাও?
মাহিঃ আমি তো খেতেই পারছিনা।
আশফিঃ ড. আঙ্কেল তো বললো কিছুদিন পর এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।তখন তুমি সবকিছু খেতে পারবে।এখন একটু কষ্ট হবেই।তুমি এই খাবারটুকু কষ্ট করে একটু খেয়ে নাও প্লিজ সোনা।আর কোনো কথা বলোনা।এখন হা করো।
মাহিঃ আমি আর খেতে পারবোনা।না হলে কিন্তু বমি করে দিবো।
আশফিঃ ওকে ওকে আর খাওয়াচ্ছিনা।এখন ওকটু ঘুমানোর চেষ্টা করো।কারণ রাতে তুমি একদমই ঘুমাতে পারোনা।ওকে শুইয়ে দিয়ে ওর
গায়ে চাদর টা টেনে দিলাম। ঠিক চার মাস আগের কথা…….
মাহিঃ এই আশফি তুমি আর একটা বাঙ্গালি বিয়ে করো তো।
আশফিঃকি?কেনো?তুমি কি আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাইছো না কি?
মাহিঃ আরে না।ধুর।কি সব বলোনা।আমি কেনো বিয়ে করতে চাইবো।তুমি তো আমাকে ঘরবন্দি পুতুলের মত করে রেখেছো।আমার সাথে গল্প করার মত ও একটা মানুষ নেই।সারাদিন শুয়ে বসে দিন কাটতে চাইনা।তোমার অফিসে ও আর আমাকে যেতে দাওনা।তাহলে আমি কি সারা জীবন এভাবে একা সময় কাটাবো।আর তোমাকে তো শুধু রাতটুকুই কাছে পাই।
আশফিঃ তো এর জন্য তুমি আমাকে আর একটা বিয়ে করতে বলছো।তোমার সাথে গল্প করার জন্য?
মাহিঃ হ্যা।তো কি সমস্যা?
আশফিঃতুমি সিরিয়াসলি বলছো তো।মানে তুমি আমাকে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করতে বলছো তার সাথে থাকতে বলছো।
মাহিঃ তার সাথে থাকতে বলছি মানে?আমি কখন বললাম তুমি তার সাথে থাকবে।
আশফিঃতো সে কি আমাকে বিয়ের পরে তোমার কাছে রেখে দিবে রোমান্স করার জন্য?সে আমার বৌ হলে তখন তো তোমাকেই আমার কাছে আসতে দিবেনা।
মাহিঃ একদম গলা কেটে নামিয়ে দিবো সে যদি এমন কিছু করে।আর সে এসব করবেই বা কেনো?ওকে দরকার হলে প্রতি মাসে তুমি সেলারি দিয়ে দিবে।আর বলবে সারাদিন আমার সাথে সময় কাটাতে।
আশফিঃতুমি না সত্যিই একটা অদ্ভুত প্রাণী।
মাহিঃ কি বললে?
আশফিঃআমার কাছে এসো।তো তোমার একা একা আর ভালো লাগছেনা তাই তো?
মাহিঃ হুম।?
আশফিঃ ঠিক আছে তো তার জন্য বিয়ে করতে হবে কেনো। আমাদের মাঝে নতুন কাউকে নিয়ে আসলেই তো হয়।
মাহিঃ নতুন কাউকে মানে? তুমি কি দেশ থেকে কাউকে এখানে নিয়ে আসতে চাইছো?
আশফিঃ দেশ থেকে নয় আল্লাহর কাছ থেকে।বুঝতে চেষ্টা করছো?এসো আমার কাছে এসো বুঝিয়ে দিচ্ছি।ওকে কাছে টেনে আমি আদর করতে গেলাম।
মাহিঃ আশফি সবসময় এমন দুষ্টুমি ভালো লাগেনা।আমি সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলছি।
আশফিঃআমিও তো সিরিয়াস।আচ্ছা তুমি তো একা থাকতে চাওনা?নতুন কাউকে চাও তোমার সাথে সময় কাটানোর জন্য?
মাহিঃহুম।
আশফিঃতাহলে আমি যা বলবো তাই করতে হবে।এখন আমার কাছে আসো বলছি।
তারপর মাহি আমার কাছে আসার পর ওকে খুব ভালোবাসা দিলাম।ব্যাস তার ১ মাস পর থেকেই আমাকে অত্যাচারে অত্যাচারে জর্জরিত করে ফেলছে।কেনো যে ওর একাকিত্ব দূর করতে চাইলাম তার পরিণামে আমাকে এভাবে ভুগতে হচ্ছে।নিজেও সারারাত ঘুমোইনা আর আমি চোখ বন্ধ করলে আমার অবস্থা শেষ করে ফেলে।ওর মুখটা দেখতে দেখতে কখন যে ওর পাশে বসে ঘুমিয়ে পড়েছি।বুঝতেই পারিনি।ঘুম ভাঙ্গতেই দেখলাম আমার সামনে মুখটা গোমড়া করে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।কি হয়েছে ডিয়ার তোমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে খিদে পেয়েছে?
মাহিঃ না।তুমি এভাবে অফিসের পোশাকে এখানে আমার পাশে বসে ঘুমাচ্ছো কেনো?আমি কি তোমাকে আমার পাশে শুতে বারণ করেছি?
আশফিঃ না আসলে সেটা না।তোমার যদি ঘুমোতে কষ্ট হয়?তাই আর কি…..
মাহিঃ থাক এতো কথা বলতে হবেনা।এই পোশাক ছাড়ো তারপর যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।
আশফি তো সেই কখন ফ্রেশ হতে গেছে এখনও বের হচ্ছেনা।এদিকে আমার তো অবস্থা খারাপ।মনে হচ্ছে এখনি বমি করে ফেলবো।কেমন অস্বস্তি লাগছে।উঠে গিয়ে ওয়াশরুমের দরজায় নক করছি। আশফি তাড়াতাড়ি বের হও।
আশফিঃ কেনো?আমি তো টয়লেটে আছি।
মাহিঃ এই তুমি তাড়াতাড়ি বের হও না হলে কিন্তু এখানেই করে দিবো তখন কিন্তু তোমাকেই ক্লিন করতে হবে।
আশফিঃ হ্যা??এই না না আমি এখনই বের হচ্ছি।উফ এই মেয়েটার জন্য টয়লেট ও করতে পারব না।দরজাটা খুলতেই ভর ভর করে আমার গায়ে ঢেলে দিলো।মাহিইইই…
তুমি এটা কি করলে??
মাহিঃ কি করবো?সেই কখন থেকে বলছি দরজা খুলো।তারপর আর সামলাতে না পেরে……..
আশফিঃআমার শুধু কান্না করাটাই বাকি আছে।ইচ্ছে করছে গলা ছেড়ে চিৎকার করে কান্না করি।মুখে কৃত্তিম হাসি টেনে ওকে বললাম।কোনো সমস্যা নেই এসো তোমাকে পরিষ্কার করে দিই।তারপর ওকে পরিষ্কার আমি গোসল করে নিলাম।তারপর বহু কষ্টে ওকে কিছু খাওয়ালাম।ওকে এখন খাওয়াতে যতটা কষ্ট হয় এতোটা কষ্ট হয়তো আমার পিচ্চিটাকে খাওয়ানোর সময়ও হবেনা।পরেরদিন খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো।ঘুম থেকে উঠে দেখলাম ও পাশে নেই।তাড়াতাড়ি করে উঠলাম ও কোথায় সেটা দেখার জন্য।
মাহি তুমি এতো ভোরে বাগানে কি করছো?ভোরে একটু ঠান্ডা পড়ে আর তাতে যদি তোমার ঠান্ডা লেগে যায়?
মাহিঃআমার ঠান্ডা করছেনা। ঘুম ভেঙ্গে গেছে তাই উঠে এসেছি।
আশফিঃ তো আমাকে ডাকলেনা কেনো?আচ্ছা অনেকক্ষণ হাটাহাটি করেছো এখন ঘরে এসো।
মাহিঃ সেই তখন থেকে দেখছি কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছে।কে ফোন করেছে?মনে হলো বাংলাদেশ থেকে কেউ?
আশফিঃআমাদের দেশের মানুষই।কিন্তু দেশে থাকেনা।ইংল্যান্ড থাকে। আমাদের এখানে বেড়াতে আসতে চাইছে।
মাহিঃ ওয়াও।শুনে খুব খুশি লাগছে।কতদিন পর নিজের দেশের কাউকে দেখবো।তো সে কে?
আশফিঃচাচ্চুর বড় মেয়ে আলিশা।ইংল্যান্ড থেকে পড়াশোনা করেছে।এ বছরেই স্টাডি শেষ হলো।তাই এখানে ঘুরতে আসতে চাইছে তারপর এখান থেকে দেশে ফিরে যাবে।
বলছে তোমার সাথে আর আমার সাথে মিট করবে।আমাদের বিয়ের সময় তো ছিলোনা।ওর সাথে আমার কখনো দেখা হয়নি। শুধু ফোন আর ভাইবারেই যতটুকু কথা হয়েছে।এই ফার্স্ট আমাদের দেখা হচ্ছে।
মাহিঃ আচ্ছা তো কবে আসছে?
আশফিঃসামনের উইকেই। যাক অন্তত ২ মাসের জন্য কাউকে কাছে পাচ্ছো।ভিষণ কথা বলতে পারে মেয়েটা।
মাহিঃআচ্ছা ও দেখতে কেমন? আমাকে ওর ছবি দেখাও।
আশফিঃসেটা সারপ্রাইজ থাক। তোমার ছবি ও দেখতে চেয়েছিলো আমি দিইনি।বলেছি ছবি দিলে যদি নজর দাও?তাই সামনে এসে দেখো।নজর দিলেও আমি সেই নজর কাটিয়ে দিবো।এই কথার উত্তরে আমাকে কি বলো জানো?আমাকে বলে তোমার বৌ কি দেখতে আমার থেকেও সুন্দর?
মাহিঃ তো তুমি কি বললে?
আশফিঃআমি বলেছি আমার কথা কতোটা সত্য সেটা সামনে এসে দেখলেই বুঝতে পারবে।ও বললো ও দেখতে চাই তুমি কতোটা সুন্দর যে কিনা আশফিকে বিয়ের বাঁধনে বেঁধে ফেলতে পেরেছে।
মাহিঃহুহহ?। আমি তো ওকে বলবো যে আমি আশফিকে বিয়ের বাঁধনে বেঁধেছি নাকি আশফি আমাকে বেঁধেছে।
আশফিঃআমি মাহির কোলের ওপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম।তোমাকে বলতে হবেনা জাদু।আমি নিজেই বলেছি আমার এই মাহিকে বিয়ের বাঁধনে বাঁধতে কত কষ্ট হয়েছে।কতকিছু করে আমার মাহিকে পেতে হয়েছে তার সবকিছুই আমি ওকে বলেছি।
মাহিঃসব?
আশফিঃসব।
চলবে।
প্রতিশোধ__2পার্ট_22 (শেষ)
প্রতিশোধ__2
জামিয়া_পারভীন
#পার্ট_22 (শেষ)
__ অনুষ্ঠান এর মাঝে অভি আর অনন্যার ভাড়া করা কিছু গুন্ডা চারিদিকে ঘিরে ফেলে। অনন্যা আবিরের কাছে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বলে ” মাই ডিয়ার ডার্লিং! অনেক তো হলো লুকোচুরি, আমার ছেলের বউ তিথিকে তো নিজের ছেলের বউ করেই ফেললে, কোন আফসোস নাই এতে, তোমার মেয়েটা আরোও বেশি সুন্দর, ওকেই এখন ছেলের বউ করে চাই। নইলে তোমার কুকর্মের কথা তোমার ছেলেমেয়ের সামনে ফাঁস করে দিবো। সাথে সাথে তোমার মান সম্মান তো হারাবেই, ছেলেমেয়ের সামনে মুখ দেখাতে পর্যন্ত পারবেনা। ” বলেই জোরে জোরে হাসতে শুরু করে।
__ অনন্যার কথায় আবির বলে ” প্লিজ এমন করোনা অনু, সারাটা জীবন পাপের শাস্তি বয়ে বেড়িয়েছি। আর পাপের বোঝা মাথায় নিতে চাইনা। আমার মেয়েটা তো কোন দোষ করেনি, তাছাড়া ওর বিয়ে ঠিক করে রেখেছি আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড এর ছেলের সাথে। একজন কে ভালোবেসে আরেকজনের ঘর কিভাবে করবে বলো? ”
__ এতে অনন্যা আরোও রেগে বলে ” আমি কিভাবে একজন কে ভালোবেসে আরেকজনের ঘর করেছি। ভালোবাসা পাইনি তো কি হয়েছে, প্রতিশোধের আগুনে তো সবাইকে জ্বলিয়েছি। এখন আমার সুখ শুধু তোমার মেয়ের দিকে। ” মনে হচ্ছে অনন্যার আগুনে সব কিছু পুড়ে ছাড়খার করে দিবে।
,
,
__ মনিকা ভেবেছিলো অভি তিথিকে বিয়ে করে পথের কাঁটা সরিয়ে দিবে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি উল্টো দেখে অভির ঘাড়ে হাত দিয়ে বলে ” এই অভি! এইসব কেনো বলছো, তোমার তো তিথিকে বিয়ে করার কথা। ”
__ অভি মনিকার ঘাড় থেকে হাত নামিয়ে নিয়ে বলে ” অন্যের খাওয়া মালের উপর আমার লোভ নেই। আমার লোভ খাঁটি জিনিসের উপর। ”
__ মনিকা নুহাশকে ভালোবাসে তাই ওর ফ্যামিলির ক্ষতি চায়না তাই বলে ” আমি ও কারো সাথে প্রেম করিনি। তাহলে তো আমাকেই বিয়ে করতে পারো। ”
__ মনিকাকে সরিয়ে দেয় অভি, মনে মনে ভাবছে মনিকাও কম সুন্দরী নয়। কিন্তু নেহা তার চেয়ে বেশি সুন্দরী।
,
,
এতো বিপদের মাঝে নেহা তিথির হাত চেপে বসে আছে। আর নুহাশ বুঝতে পারছেনা কি বলবে। হটাৎ নুহাশের মাথায় বুদ্ধি আসে। নেহার সাথে যার বিয়ে ওদের বাবা ঠিক করেছে তাদের কে বাসার ঠিকানা আর পুলিশের নাম্বার দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আসতে বলে। আবির আসলে নেহার বিয়ে ঠিক করেছে আবিরের বান্ধবী মিশির একমাত্র ছেলে মুরাদের সাথে। এটা নেহা কে সারপ্রাইজ দিতে চাইলেও নুহাশ কে আবির জানিয়ে রেখেছিলো। আর কাজের সময় নুহাশ এই বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে ভালো ই করেছে।
,
,
মুরাদ নুহাশের বিয়ে উপলক্ষে ওদের বাসার দিকেই আসছিলো।
হটাৎ মুরাদের ফোনে মেসেজ আসতেই ওর বাবা মা কে দেখায়। আর কুইক লন্ডন পুলিশে ফোন করে জানিয়ে দিয়ে ওদের বাসায় প্রবেশ করে। যেহুতু নুহাশ জানিয়ে দিয়েছে ওদের কাছে পিস্তল আছে তাই সাবধানে গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকে। শুধু পুলিশ আসার অপেক্ষায়।
,
,
অভি নেহার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওকে জোর করে টেনে আনে। নুহাশ কিছু বলতে পারছেনা কারণ ওর মাথাতেও এখন পিস্তল ঠেকানো আছে। নুহাশের বিয়ে উপলক্ষে ম্যারেজ রেজিস্টার আর কাজী দুইজনেই ছিলো। তাই অভির কাজ টা সহজ হয়ে গেছে। বার বার নেহাকে রেজিস্ট্রি পেপার এ সাইন দিতে বলছে। সবাই জীবনের মায়া ত্যাগ করে নেহাকে বিয়ে করতে নিষেধ করছে।
তবুও বাবা আর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে সাইন করতে যায়। তখন পুলিশ চলে আসে। পুলিশ কায়দা করে সবাই কে এরেস্ট করে। অভি আর অনন্যার খেলা শেষ হয়ে যায়।
,
,
মিশি, তন্ময় আর মুরাদ ভিতরে আসে। নেহা বেশ অবাক হয় মুরাদ কে দেখে। মুরাদ মুচকি হাসি দিয়ে নেহার দিকে এগিয়ে যায়।
__ ” কি ম্যাম, ভয় পেয়েছিলেন বুঝি। আমি থাকতে আপনাকে বিয়ে করবে এমন কেউ আছে নাকি? ” মুরাদ নেহার মাথায় টোকা দিয়ে বলে।
__ “হুম, খুব ভয় পেয়েছিলাম, কিন্তু এখন বিরক্ত লাগছে আপনাকে দেখে। ” মুখ বাঁকিয়ে বলে নেহা।
__ মুরাদ নেহার দুই ঘাড়ে দুই হাত রেখে বলে ” এখন বিরক্ত লাগছে তাতে কি হয়েছে, পরে বিরক্ত টাকেই ভালবাসায় রুপান্তরিত করে নিবো। ”
__ নেহা কিছুটা লজ্জায় দূরে সরে যায়।
নিরা মিশির গলা জড়িয়ে ধরে বলে
__ ” মেয়ের সাথে আপনার ছেলের বিয়ে দিতে পারি তবে শর্ত আছে। দেশে ফিরে আমাদের বাসায় বড় অনুষ্ঠান করে বিয়ে দিবো। ”
নিরার এই কথায় সবাই মত দেয়। অনেকদিন তৃণা সাইফ ও দেশে যায়নি। আবার নিরা আবিরের ও দেশের কথা মনে পড়ে। আর নুহাশ, নেহা, তিথি কেউ ই দেশ দেখেইনি। সবাই এক সাথেই রাজি হয়ে যায়, দেশের বাড়ি ফিরার আনন্দে বিভোর সবাই।
__ মনিকা নুহাশ কে বলে ” তাহলে স্যার, আমাদের বাসাতেও যেতে হবে। ”
__ নুহাশ মনিকার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। ” ওকে যাবো ”
সবাই মিলে সব ঠিকঠাক করে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
আবিরদের বাসায় উঠে সবাই। বাড়ি টা অযত্নে কেমন যেন হয়ে গেছে। তাও এখানেই আসে মায়ার টানে।
নিরা আর তৃণা প্রথমে নিজেদের বাড়ি যায়। মানে ওদের বাবার বাড়ি, মাসুদ বা ওর বৌ মিলি কেউ ছিলো না তখন। ওরা অপেক্ষা করতে থাকে তখন মনিকা কে দেখতে পায়। মনিকা ওদের ভাইয়ের মেয়ে কখনো বুঝতে পারেনি কেউ। এয়ারপোর্টে নেমে মনিকা বাসায় চলে আসে। আর ওরাও ওদের উদ্দেশ্যে যায়।
মনিকা এগিয়ে এসে বলে
__ ” আরে আন্টি, আপনারা এসেছেন খুব খুশি হয়েছি। কিন্তু বাসা চিনলেন কিভাবে? ”
নিরা বলে
__ ” বাসা না চিনার কি আছে এটা আমার বাবার বাড়ি। যাই হোক তুমি কি মাসুদের মেয়ে নাকি। ”
__ ” জ্বী হ্যাঁ, আমার বাবার নাম মাসুদ। ” মনিকার কথা শেষ না হতেই নিরা জড়িয়ে ধরে মনিকাকে আর বলে
__ ” তোমার জন্মের আগেই দেশ ছেড়ে চলে গেছিলাম। তাই খবর পাইনি আর।
আচ্ছা তোমার দাদা দাদী রা কোথায়? আর বাবা মা? ”
__ ” দাদা তো আমার জন্মের কিছুদিন পরই মারা গেছিলো শুনেছিলাম আর দাদী তো……. ” বলেই থেমে যায় মনিকা।
__ দুই বোনের বাবার জন্য চোখে জল আসে। সামলিয়ে নিয়ে মায়ের কথা জানতে চায় ওরা। কিন্তু মনিকা কিছু বলার আগেই মাসুদ আর মিলি একসাথে প্রবেশ করে। হয়ত কোন অনুষ্ঠান এ গিয়েছিলো, খুব গর্জিয়াস ড্রেসে মিলি আর মাসুদ কোর্ট প্যান্ট পড়ে আছে। মাসুদ দুই বোন কে দেখে একটু চমকে গেলেও বলে
__” কিরে, তোরা এই অবেলায়! তোদের বাবার সম্পত্তির ভাগ নিতে এসেছিস বুঝি। ”
__ তৃণা রেগে গিয়ে বলে ” বাবা টা আমাদের ছিলো, সম্পত্তি যদি বলিস তাহলে তোমার কোন অধিকার নেই আমাদের বাবার সম্পত্তি তে। যাই হোক সেই জন্যে আমরা আসিনি। এসেছিলাম আমাদের বাবা মায়ের খোঁজ এ। বাবা তো মারাই গেছে, আমাদের মা কোথায় সেটা বলো? তাকেও কি মেরে ফেলেছো নাকি? ”
__ ” নাহ! আছে আছে, মরেনি, বুড়ির রক্তে অনেক তেজ। কোন এক বৃদ্ধাশ্রম এ আছে হয়তো। ” হাসতে হাসতে বলে মাসুদ।
__ তৃণা রাগ করে মাসুদ কে চড় মেরে দেয়। ” আজ তুমি আমার মায়ের পেটের সৎ ভাই বলে ক্ষমা করে দিলাম। যেই মা জন্মের পর স্বামীর অত্যাচারেও তোমাকে ফেলে পালিয়ে যায়নি। সেই মাকে অবহেলা করে জাহান্নামে ও যায়গা পাবেনা। ”
__ নিরা বলে ” জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছি, এখন যদি মা কে সুস্থ না পাই তোমাকে জেলে পাঠাবো মনে রাখিও। ”
__ মনিকা নিরাকে ডেকে বলে ” ফুপি, আমি জানি দাদী কোথায় আছে, মাঝে মাঝে দেখতে যেতাম যখন দেশে থাকতাম। ”
__ “ক্ষমা করে দে বোন, তোদের ভাবি চায়নি মা থাকুক, তাই না চাইতেও সরিয়ে দিয়েছিলাম। যাদের জন্য আমাদের এতো উন্নতি তাদের কেই আমরা সরিয়ে দিয়েছি। ” বলে কাঁদতে শুরু করে মাসুদ
নিরা, তৃণা ওই বাসাতে এক মুহুর্ত না থেকে মনিকার সাথে সেই বৃদ্ধাশ্রমে যায়। অনেক খোঁজ নিয়ে মায়ের খবর পায় নিরা আর তৃণা। অনেক দিন পর মা কে দেখে দুই বোনের ই খুব কষ্ট হচ্ছে। মায়ের বয়স অনেক হয়েছে চোখেও ভালো দেখেনা। বিনা চিকিৎসা তে অবহেলায় কংকাল সার শরীর হয়ে আছে। দুই বোন হেনাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদে আর ক্ষমা চায়। এরপর বৃদ্ধাশ্রম থেকে মা কে মুক্ত করিয়ে আবিরের বাসায় নিয়ে আসে। ফিরে এসেই মায়ের সব চিকিৎসা ব্যবস্থা করে নিরা, কয়েকজন নার্স রাখে বাসায়।
,
,
বড় অনুষ্ঠান করে নেহা আর মুরাদের বিয়ে দেয় আবির আর নিরা। নেহা কে বিদায় জানিয়ে আবির কে জড়িয়ে ধরে নিরা। তৃণা সাইফ মেয়ে আর মেয়ে জামাইকে নিয়ে নিজেদের বাড়িতে যায়।
,
,
নেহাকে নিয়ে যাওয়া হয় ওর শ্বশুরবাড়ি। বড় একটা ঘরের মাঝখানে খাট রাখা আছে। ফুল দিয়ে সাজানো খাট সাথে পুরো ঘরেই আছে গোলাপ আর রজনী গন্ধা ফুল। ঘর টা তাকিয়ে দেখছে নেহা, যতটা সুন্দর তার চেয়েও আকর্ষণীয় চারিদিকে ফুলের টবের জন্য। ঘরের মাঝে খাট একপাশে ড্রেসিং টেবিল, পাশে আলমিরা, অন্যপাশে সোফা, সোফার পাশে টি টেবিল, আর এক পাশে একুরিয়াম। সুন্দর সুন্দর মাছ ঘুরে বেড়াচ্ছে একুরিয়াম এ। ঘরের উপরে রেখেছে ঝাড়বাতি, এতে গোটা ঘরে আলো ছড়িয়ে পড়ছে। মুরাদ রুমে প্রবেশ করে নেহার দিকে এগিয়ে যায়। নেহা চোখ নামিয়ে নিলেও মুরাদ তাকিয়ে থাকে। বৌ সেজে নেহাকে খুব সুন্দর লাগছিলো।
__” প্রথম যেদিন তোমাকে দেখি তখনই আমি ঠিক করে নিই তোমাকে বিয়ে করবো। পরে সব খোঁজ নিতেই জেনে গেলাম তোমার আব্বু আমার আমার আম্মু ফ্রেন্ডস। কাজ টা খুব সহজ হয়ে যায়, তাই আজ তোমাকে পেয়ে গেলাম। ” মুরাদ নেহাকে বলে।
__ নেহা কোন কথা বলেনা। মুরাদ নেহার গালে স্পর্শ দেয় এতে নেহার লাজুকতা আরোও বেড়ে যায়। নেহা কিছু বলার আগেই নেহাকে কোলে তুলে নেয়। বারান্দায় নিয়ে গিয়ে সোফাতে বসিয়ে দেয়। চাঁদের আলো নেহার মুখে পড়তে সৌন্দর্য আরোও বেড়ে যায়। মুরাদ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নেহার দিকে।
__ ” সরি, সেদিন ওমন করে চড় দেয়া ঠিক হয়নি। মাফ করে দিয়েন। ” নেহা আস্তে আস্তে বলে।
__ “মাফ করতে পারি এক শর্তে, যদি তুমি তোমার ঠোঁটের ছোঁয়ায় আমার জীবন রাঙিয়ে দাও। ”
__ নেহা লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকায়। কি বলবে বুঝতে পারছেনা আসলে। সব বোঝা বুঝি অতিক্রম করে মুরাদ নেহার ঘাড়ে কিস দেয়। নেহা শিহরিত হয়ে উঠে দাঁড়াতে গেলে মুরাদ হাত ধরে টান দেয়, এতে নেহা মুরাদের উপরে গিয়ে পড়ে। মুরাদ নেহার মাথার পিছনে হাত দিয়ে টেনে ধরে নিজের কাছে। বাকিটা বাকিই থাক, ওদের রোমান্স দেখে আমরা কি করবো।
?
,
,
আজ তিথি লাল শাড়ি পড়েছে
__ ” কি ব্যাপার তিথি পরি কাছে কি আসবে না। সেদিন থেকেই শুধু না না করছো? ” নুহাশ তিথিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে।
__ ” আসবোই তো” বলে তিথি নুহাশের ঠোঁট এ কামড় দিয়ে পালিয়ে আসে।
__ নুহাশ তিথির আঁচল ধরে টান দেয়। তিথির পিঠে আলতো ছোঁয়া দিয়ে তিথিকে পাগল করে দেয়। তিথি ঘুরে এসে নুহাশের বুকে জড়িয়ে ধরে। নুহাশ তিথির ঘাড়ের কাছে ফিতে টা টান দেয়। শিহরণ এ আরোও বেশি করে নুহাশ কে জড়িয়ে ধরে।
সমাপ্ত
প্রতিশোধ__2 পার্ট_21
প্রতিশোধ__2
পার্ট_21
জামিয়া_পারভীন
__” ওহহহহহহহহ! তাইনা, সে পছন্দ করে তুমি কিভাবে বুঝলে। ” একটু শয়তানি করে বলে নুহাশ। আর গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে তিথির দিকে।
__ “করতেই পারে! বুঝাই যাচ্ছে, কিন্তু আপনি এদিকে আসছেন কেনো? ” ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে তিথি।
__ ” ভয় কেনো পাচ্ছো তুমি! আমি ই তো , কিন্তু তোমার ওই বাঁকা দুটি ঠোঁট শুধু আমায় কাছে টানে। ” দুষ্টুমি করতে করতে কাছে আসে নুহাশ। তিথি কে কাছে টেনে নিয়ে প্রায়ই ১০ মিনিট লিপ কিস করে নুহাশ। প্রথমে তিথি ছাড়িয়ে নিতে চাইলেও পরে আর কিছুই বলে না।
মনিকা এসে হাত তালি দেয়াতে দুইজন একে অপরের থেকে সরে আসে।
__ ” কনগ্রেচুলেশন স্যার! বিয়ের দাওয়াত নিশ্চিত পাচ্ছি। “নুহাশের দিকে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে মনিকা।
__ ” মা মা মা নে কি? একসাথে থাকলে ই বিয়ের কথা আসছে কেনো। কেবল তো চেনাজানা হলো। প্রেম করতে হবেনা। তাছাড়া বিয়ে করেই কি লাভ, যদি আগেই মিষ্টি পাওয়া যায়। ” বলেই তিথির দিকে শয়তানি হাসি দেয় নুহাশ। আর তিথিও বাড়িময় নুহাশ কে মারার জন্য তেড়ে নিয়ে বেড়াতে শুরু করে।
,
,
পরদিন তিথি নুহাশের অফিসে জয়েন করে। সারাদিন কাজ শেষ এ একসাথেই মনিকার ফ্লাটে ফিরে আসে। এসে দু’জনে ই অবাক হয়ে যায়। তিথির বাবা, মা, ফুপি আর অভি এসে বসে আছে। ওদেরকে দেখে তিথি নুহাশকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ভয়ে। আর নুহাশ অবাক হয় তিথির মা কে নিজের মা নিরা ভেবে। নুহাশ ভাবে নিরা অন্যের সাথে কি করছে?
তিথি কিছু বলার আগেই নুহাশ বলে
__ ” আম্মি! তুমি এখানে? ” খুব বিস্ময় নুহাশের কথাতে। বলে তৃণাকে জড়িয়ে ধরে নুহাশ।
__ বাবা! তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে? আমার তো কোন ছেলে নাই। তিথি আমার একমাত্র মেয়ে। তিথি কি তোমার ওয়াইফ নাকি। বিয়ের কথাতো আগে বলেনি তিথি। ” এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে তৃণা।
নুহাশকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই
__ “হ্যাঁ আম্মু, বলাই হয়নি, আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। গতকাল ই বিয়ে করেছি। ” নুহাশ কে চিমটি দিয়ে বলে প্লিজ না বলবেন না।
__তিথির কথাতে অভি চিৎকার করে বলে “এ বিয়ে আমি মানি না, পারলে ডিভোর্স করিয়ে বিয়ে করবো আমি “।
__মনিকাও সুযোগ বুঝে বলে ফেলে
” ওরা তো হাজবেন্ড ওয়াইফ নয়। জাস্ট বস আর অফিস সহকারী। ”
__ এবার তৃণা জোর গলায় বলে ” আমি নুহাশ কে বিয়ে করেছি ” আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। আমাদের অনেক দিনের প্রেম বলেই বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি। ” আর নুহাশের কানেকানে বলে ” প্লিজ বাঁচান আমাকে? ”
__ নুহাশ একের পর এক সারপ্রাইজ এ দিশেহারা। আর নতুন কিছু না ভেবেই তিথিকে টানতে টানতে নিজের ফ্লাটে নিয়ে তোলে। তিথির মা বাবা ও তিথির সাথে নুহাশের ফ্লাটে যায়। অভি আর অনন্যা থেকে যায় মনিকার ফ্লাটে।
__ ফ্লাটে এসে নুহাশ তিথিকে বলে ” হচ্ছে টা কি? আমার মাথা তো হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। ” এরপর তৃণাকে বলে ” আপনি আমার মায়ের মতো দেখতে কিভাবে? দুইটা মানুষ এর এতো মিল হয় কিভাবে? বলুন প্লিজ! ”
__ তৃণা নুহাশ কে জিজ্ঞেস করে “তোমার নাম কি আগে নিশান ছিলো? ”
__ নুহাশ অবাক হয়ে জবাব দেয় ” হ্যাঁ ”
__ তৃণা নুহাশ কে এবার জড়িয়ে ধরে বলে ” তোমার মায়ের নাম কি নিরা? আর বাবা কি আবির?
__” আপনি কিভাবে জানলেন এসব ” বিস্ময় নুহাশের চোখে।
__ ” বাবা নিরা আমার জমজ বোন! আমার ভুলে আমি আমার বোন কে হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি জানি তোমাকে তোমার মা আমাদের ব্যাপারে কিছুই বলেনি। না জানা চাপা অভিমান এ আমাদের পর করে দিয়েছে। আমাদের ই দোষ ছিলো অবশ্য। সেটা ভুল বুঝাবুঝি ই বেশি ছিলো। বোন তোমাকে আর দুলাভাই কে নিয়ে কোথায় হারিয়ে যায় জানতাম না। ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ টাও পাইনি ” কান্নায় ভেঙে পড়ে তৃণা।
__ ” আন্টি আপনি কাঁদবেন না প্লিজ। আম্মির আসার কথা আছে এখানে। আপনারা এখন খাওয়া দাওয়াকরে রেস্ট নিন। অনেক দূর থেকে এসেছেন। কাল সকালে কথা হবে। ”
__ নুহাশ সবার জন্য ডিনারের অর্ডার দেয়। সবাই মিলে একসাথে খাওয়া দাওয়া করে গল্প করে তিথির মা বাবা কে একটা ঘর দেখিয়ে দিয়ে নুহাশ নিজের ঘরে আসে।
__তিথিও পিছনে পিছনে আসে নুহাশের ঘরে। ” আমি এখন কোথায় থাকবো? ” অভিমানের সুরে বলে তিথি।
__ “কোথায় আবার থাকবে? আমার বউ আমার বেডে ই থাকবে ” মুচকি হেসে বলে নুহাশ।
__ “আমার বয়েই গেছে আপনার বউ হতে । এখন যে কোথায় যাবো? ধুর কিছুই ভালো লাগে না। ” তিথি রাগ করে বলে কথাগুলো
__ ” আরে বাবা! সবাইকে চিল্লিয়ে বললে আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। আর এখন কেনো পালাচ্ছো? ” নুহাশের কথায় তিথি বলে ” অভির হাত থেকে বাঁচতে। আমি ওকে ঘৃণা করি কিন্তু ও আমার জীবন টা নষ্ট করে দিচ্ছে তাই পালিয়ে এসেছিলাম অস্ট্রেলিয়া থেকে লন্ডন। ”
__ ” তোমার তো দেখছি শত্রুর অভাব নেই। আচ্ছা যাই হোক তোমার ড্রেস মে বি মনিকার ফ্লাটে আছে। সেখানে যাবার আর দরকার নাই আজকের মতো আমার ড্রেস পড়েই থাকো।” ( তিথির হাতে একটা নাইট ড্রেস ধরিয়ে দেয় নুহাশ। )
__ তিথি চেঞ্জ করার জন্য ওয়াশরুমে গেলে নুহাশ বলে ” আমার সামনেই চেঞ্জ করলেও বা কি! সবিই তো দেখেছি। ” বলেই হাসি দেয় নুহাশ।
__ তিথিও রাগ করে তেড়ে আসে নুহাশের দিকে। নুহাশ পিছনের দিকে ঘুরতে গিয়ে পায়ে বাধা পেয়ে পড়ে যায় পাশে থাকা আলমিরা তে লেগে কপালে কিছুটা কেটে যায়। তিথি এবার ভয় পেয়ে যায়, এমন তো চায়নি সে তাহলে এখন কি করবে। তাড়াতাড়ি করে নুহাশের কপাল হাত দিয়ে চেপে ধরে। নুহাশের ঘরে থাকা কটন এ এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে নুহাশের কপালে বেধে দেয় তিথি। নুহাশ ব্যথায় উঁহু উঁহু করছে। তিথি নুহাশ কে কথা বলতে নিষেধ করে। বিছানায় শুইয়ে দেয় আর একটা পেইনকিলার খাইয়ে দেয় নুহাশ কে। তিথি ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে এসে নুহাশের ঘরে থাকা সোফা তে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকাল সকাল নুহাশের মা, বাবা আর বোন চলে আসে নুহাশের ফ্লাটে। নুহাশ ঘুমিয়ে আছে আর তিথিও ঘুমে তাই দরজা খুলে দেয় তৃণা। অনেকদিন পর বোন কে দেখে নিরা কে জড়িয়ে ধরে তৃণা।
__ ” প্লিজ ক্ষমা করে দে বোন ” আর কিছু বলতে পারেনা। তৃণা কেঁদেই চলেছে।
অনেকদিন পর বোন আর বোনের ফ্যামিলি এক সাথে হয়েছে। সাইফ ও আবিরের কাছে গিয়ে ক্ষমা চায়। আবির, নিরা সবাইকে ছেলে আর মেয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তৃণাও তিথির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সবাই মিলে সব মান অভিমান ভুলে ব্রেকফাস্ট করে গল্পের আসরে বসে। তিথি নেহা আর নুহাশ এক ঘরে আর গল্পে মেতে উঠেছে। নেহা আর তিথি প্রায়ই সমবয়সী। নেহা দুই তিন মাসের ছোট তিথির চেয়ে। তাও বুঝে ফেলেছে তিথি আর নুহাশের মাঝে কিছু চলছে দেখে কারণ তিথি নুহাশের একটা শার্ট আর জিন্স কোন রকমে পড়ে আছে। নেহাকে তিথি সব খুলে বলে তখন নেহা নিজের একটা ড্রেস তিথি কে পড়তে দেয়।
,
,
এদিকে অভি আর অনন্যা মনিকার ফ্লাট থেকে সব কিছু দেখতে পায়। আবির আর নিরা এসেছে । আর অভির এবার নজর পড়েছে আবিরের মেয়ে নেহার উপর।
__অভি ওর মা কে বলে ” দেখছো মম! কতো সুন্দরী ওই মেয়েটা। তিথি ওর তুলনায় কিছুই না। ”
__ অনন্যা বলে, হুম দেখেছি! ওকেই তোর সাথে বিয়ে দিয়ে আমার না পাওয়া অধিকার ফিরে পেতে চাই। ”
__ অভি খুশি হয়ে বলে ” কি অধিকার মম? ”
__অনন্যা রেগে বলে ” সময় হলেই বুঝতে পারবে। ”
,
,
নেহার ড্রেস সালোয়ার কামিজ তিথি এই প্রথম পড়ে। তিথি সব সময় মডার্ণ হয়ে বড় হয়েছে কিন্তু কখনো সালোয়ার কামিজ পড়েনি তাই একটু আনইজি ফিল করছে তিথি।
__ নুহাশ এসে তিথিকে এই অবস্থায় দেখে বলে ” ওয়াও! জাস্ট অসাধারণ লাগছে। তোমার মতো সুন্দরী কে তো চোখ বন্ধ করে বিয়ে করা যায়। আগে এতো সুন্দর না লাগলেও এখন তো চোখ ফিরানো দায়। ”
__ তিথি লজ্জা পেয়ে যায় ” কি যে বলেন আপনি? ”
__ তিথির লজ্জা পাবার ভঙ্গী টা নুহাশের কাছে মারাত্মক লাগে। তিথিকে কাছে টেনে নেয় নুহাশ। দুজনের নিঃশ্বাস একে অপরের উপর পড়ছে। দু’জনে চুপচাপ, একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই সময় নেহা এসে সবাইকে ডেকে বলে দু’জনের বিয়ে দিয়ে দিতে। দু’জনে লজ্জা পেয়ে সরে আসে।
সবার ই তিথি আর নুহাশ কে ভালো লেগেছে আবার অভির অত্যাচার থেকে বাঁচতে নুহাশ কে তৃণা বলে ” দেখো বাবা! অনন্যা এর জন্য আমরা দুই বোন আলাদা হয়ে গেছিলাম। আজ আবার মিলিতো হয়েছি। এবার অনন্যার ছেলের হাত থেকে তুমি বাঁচাও আমার মেয়েটাকে। তিথিকে বিয়ে করো, নইলে অভি ওর ক্ষতি করে দিবে। ” কথা গুলো বলে তৃণার চোখে পানি চলে আসে।
নুহাশ বলে
__ ” দেখুন আন্টি! আমি জানিনা তিথিকে ভালোবাসি কিনা, যেদিন প্রথম দেখেছিলাম তখনই বুঝে গিয়েছি তিথিকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। আপনারা রাজি থাকলে অবশ্যই বিয়ে করবো তিথিকে খুব শীঘ্রই। ”
সবার সম্মতি তে নুহাশ আর তিথির বিয়ের আয়োজন করে দুই ফ্যামিলি মিলে। খুব ছোট করে অনুষ্ঠান করে লুকিয়ে বিয়ে করে নেয় নুহাশ আর তিথি। আর এর পরই নেমে আসে দুর্যোগ।
চলবে…..
প্রতিশোধ__2 পার্ট__20
প্রতিশোধ__2
পার্ট__20
জামিয়া_পারভীন
___ নিরা বেশ চিন্তিত নুহাশের ব্যপারে, ঠিক তখনি মনে পড়লো নুহাশ চায় সবাই মিলে ছেলের কাছে লন্ডনে থাকুক আর আবির যেতে চাচ্ছেনা। এই জন্যই নুহাশ হয়তো বাবা মায়ের সাথে কথা বলছে না। এ ব্যাপারে কথা বলা লাগবে তখনি নেহা আর আবির ঘরে আসে।
__ কি নিয়ে এতো চিন্তিত, আম্মি। ( নেহা)
__ নুহাশ চাচ্ছে আমরা ওর কাছে গিয়ে থাকি। তোর বাবা চাচ্ছে এখানেই থাকতে, কি যে করি। সেই জন্যেই হয়তো ছেলে আর খোঁজ নিচ্ছে না। ( নিরা)
নেহা এই সুযোগ এ আবির কে বলে
__ চলো না আব্বু, জানোই তো আমার ওই একটাই ভাই। আমরা ওখানেই চলে যায়। ( নেহা)
__ আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু নুহাশ কে না জানিয়েই যাবো, সারপ্রাইজ দিতে হবে তো । ( মুচকি হেসে আবির বলে)
এই কথা শুনে নেহা নিরা দুজনে ই প্রচুর খুশি হয়।
__ আমার লক্ষ্মী আব্বু, সোনা আব্বু, আমি যে কতো খুশি হয়েছি বলার মতো না। ( নেহা)
__ তোরা দুটো ই তো আমার সব, তোদের মুখের দিকে তাকিয়ে করতে পারি সব। ( আনন্দের অশ্রু আবিরের চোখে)
__ নিরা আবিরের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে আবিরের কাঁধে মাথা রাখে। আবির নেহা কে একপাশে আর নিরাকে একপাশে রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
,
,
,
তিথি মনিকার সাথে ফ্লাটে আসে, মনিকা রুম খুলছে আর তিথি পিছনে ঘুরেই দেখে নুহাশ। নুহাশ তিথি কে চোখ টিপ দেয়।
__ আ আ আ আ আপনি এএএখানে কেএএনো? ( তিথি)
__ এতো তোতলাচ্ছো কেনো? ( নুহাশ)
__ মা মা মা নে ভুউউ ত দেখলাম তাই। ( তিথি)
__ কোথায় ভুত, স্বয়ং আমি সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ( নুহাশ)
দু’জন এর কীর্তি দেখে মনিকা চুপচাপ দাঁড়িয়ে গেছে।
__ কি ব্যপার মনিকা, ভিতরে কি ঢুকা নিষেধ নাকি? ( নুহাশ)
__ না না, মানে হ্যাঁ, আসুন স্যার। ( মনিকা)
___নুহাশ ভিতরে ঢুকার সময় তিথি কে আরেকবার চোখ টিপ দিয়ে গেলো। আসলে নুহাশ আর মনিকা একই ফ্লোরের পাশাপাশি দুইটা ফ্লাটে থাকে । যেহুতু নুহাশ এর আজ অফ ডে তাই মনিকা আর তিথির সাথে আড্ডা দিতে চলে এসেছে। তিথিকে মনিকা একটা রুম দেখিয়ে দেয়। তিথি রুম লাগানো ওয়াশরুমে গিয়ে আগে ফ্রেশ হয় এরপর একটা টাওয়েল পড়ে ই বের হয়ে আসে। এরপর কোন দিকে খেয়াল না করেই ফোন হাতে নিয়ে মা কে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয় সে সেফ আছে। মায়ের সাথে টুকিটাকি কথা শেষ হতেই খেয়াল করে সোফায় নুহাশ বসে আছে।
____এক পলকে তিথির দিকেই তাকিয়ে আছে। তিথি যে এমন পোশাক এ বের হয়ে আসবে তা নুহাশ কল্পনা করেনি। তিথিকে এতো আকর্ষণীয় লাগছে সেটা বলার মতো না। ভেজা চুল গুলো উপরে খোঁপা করে বাধা, গায়ে শুধু সাদা একটা টাওয়েল। এতে তিথিকে স্বর্গীয় পরির মতো লাগছিলো।
____আবার নুহাশ ও যে তিথির ঘরে আসবে সেটা তিথি ভাবেনি। নুহাশ কে দেখে তিথি জোরে করে চিৎকার দিতে যাবে তখনই নুহাশ তিথির মুখ চেপে ধরতে গিয়ে বেকায়দায় তিথির উপরে নুহাশ পড়ে যায়।
_____বিছানায় পড়ে যাওয়া টা কিছু মনে না করলেও এরপর যা হয়েছে তিথির জন্য মোটেও সেটা ভালো নয়। যখন নুহাশ তিথির মুখ চাপতে যায় তখন নুহাশের পায়ে বেধে তিথির টাওয়েল টা খুলে যায়। নুহাশ তিথিকে এইভাবে দেখে কিছুটা উন্মাদ হয়ে ওঠে। তিথির ঠোঁট এ কিস করে অনেক্ষণ, তিথির ধাক্কায় হুশ আসে নুহাশের। তিথি তাড়াতাড়ি করে উঠে টাওয়েল টা ঠিক করে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে আসে।
বাইরে আসে মুখ নিচু করে, লজ্জা লাগছে খুব, কারণ এমন ফিলিংস কখনো হয়নি এর আগে।
নুহাশ তিথিকে গিয়ে বলে
__ আসলে এমন হবে, বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম তুমি রুমে আছো তাই আসলাম দুষ্টুমি করতে কিন্তু তুমি নেই দেখে ওয়েট করছিলাম। তুমি এই পোশাকে বের হবে বুঝতেই পারিনি। এরপর যা হয়েছে সব অনিচ্ছাকৃত, প্লিজ মাফ করে দাও। তিথির সামনে হাটু গেড়ে বসে মাথা নিচু করে কথা গুলো বলে নুহাশ।
__ তিথির চোখে পানি চলে আসে, অতীত এর স্মৃতি ভেবে, অভি এতো বিরক্ত করেছে একসময়, কিন্তু কখনো ক্ষমা চায়নি অভি। নুহাশের প্রতি কি তাহলে দুর্বলতা তৈরি হয়েছে তার মনে, এটা কি প্রেম, এমন অস্থির লাগছে কেনো, তিথি কিছুই বুঝছে না। তিথির সম্বিত ফিরে পায়! নুহাশ ওর চোখের পানি মুছে দিচ্ছে। তিথি আর কিছুই না ভেবে নুহাশের বুকে মাথা লুকিয়ে কাঁদতে থাকে।
,
,
,
তৃণার কাছে ফোন আশায় সাইফ একটু সন্দেহ করে তৃণাকে। তাই রুমের দরজা লাগিয়ে তৃণাকে জিজ্ঞাসা করা শুরু করে।
__ দেখো তৃণা, হাজার হোক ওই একটাই তো মেয়ে আমার। ওর সমন্ধে যদি কিছু জেনে থাকো লুকিও না আমাকে। [ সাইফ]
__ তুমি এমন করে ভাবছো কেনো? তিথি কোথায় আছে জানলে কি বলবো না বলো? ( তৃণা)
__ তোমার চোখ বলছে তুমি জানো। ওই চোখের ভাষা আমি পড়তে পারি। ভয় পেয়োনা আমায় সব কিছু শেয়ার করতে পারো। ( সাইফ)
__ অনন্যা আপা হাজার হোক তোমার বোন জানি। কিন্তু আপা আমাদের সাথে কি করেছে তা হয়তো ভুলে যাওনি। ( তৃণা)
__ কি করে ভুলি বলো, সে এতো চালাকি করবে আমার সাথে আমি কি বুঝেছিলাম। অষ্ট্রেলিয়া আসার পর এক অষ্ট্রেলিয়ান মেয়েকে বিয়ে করার চাপ দেয়। তোমার উপর তখন রাগ করে বিয়েতে মত দিই। কিন্তু সেটা অনন্যার চালাকি তা কি বুঝতে পেরেছিলাম। বিয়েএ রেজিস্ট্রেশন পেপার এর নামে আমার নামের সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নেয়। এইসব যখন জানতে পারলাম তখন আমার পাশে শুধু তুমিই ছিলে। এরপর আমার এতো দূর আশা আমার যোগ্যতার জন্য। চেম্বার থেকে যা আসে সেটা দিয়েই তোমার আমার সংসার চলেই যাচ্ছে। যে বোনের জন্য তোমার সাথে জঘন্য কাজ করেছিলাম সেই বোনের বেইমানী আমি সত্যিই মেনে নিতে পারিনি। এরপর তোমার বেবি হবার সময় তোমাকে আঘাত করে যার জন্য তোমার জীবন মরণ সংকট হয়েছিলো । ডক্টর তো বলেই দিয়েছিলেন তুমি বাঁঁচবে না। সেইসব দিন গুলি এতো করুণ ভাবে পার করেছি এখনো মনে পড়লে গায়ে কাঁটা আসে। ( সাইফ)
__ তখন দেখেছিলাম তুমি আমায় কতো টা ভালোবাসো। আমাকে OT তে ঢুকানোর সময় তুমি খুব কেঁদেছিলে। এরপর তোমার দোয়া আর আল্লাহর রহমত এ আমি, আমার মেয়ে দুজনেই সুস্থ হই কিন্তু পরবর্তী মা হবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি। তুমি তাও সব সময় আমাকে সাপোর্ট দিয়েছো। সব সময় হেল্প করেছো। আমাদের একমাত্র আশার আলো তিথি কে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি দুইজনে। কিন্তু এতো কিছু করার পর ও তুমি তোমার বোন আর বোনের ছেলেকে রেখে দিলে। আর সেই অভি আমার স্বপ্ন আমার মেয়ে তিথিকে উত্তক্ত করেছে। মা হয়ে মেয়ের কষ্ট কিভাবে সহ্য করি বলো? মেয়েটা অভি কে চায় না, অভির খারাপ নেশা আছে। প্রতিশোধ এর আগুনে জ্বলতে জ্বলতে আমাদের দুই বোনের জীবন টা ছারখার হয়ে গেছে। বাবা, মা, বোন কোথায় আছে কিছুই জানিনা, বেঁচে কি মরে গেছে কিছু ই জানিনা। আমি চাইনি আমার মেয়ের জীবন এমন নরক করতে। তাই সে লন্ডন যাবার সব ব্যবস্থা করেছিলো। আমি ওকে পাঠিয়ে দিয়েছি। খুব ভালো আছে তিথি, ফোন দিয়ে জানালো মাত্র। ( তৃণা)
সাইফ আর তৃণা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে এমন সময় অনন্যা আর অভি এসে হাজির।
__ আরে মামু, তিথি কোথায় গেছে সব জেনে গেছি। এখুনি এয়ারপোর্ট থেকে খবর পেয়েছি, আর এখন দেখছি তোমাদের ই চাল এইসব। ( অভি)
__ মেয়েকে পাঠিয়ে দিয়েছিস ভালো কথা, আমরা কি তুলে আনতে পারিনা নাকি। ( অভিকে অনন্যা বলে)
__ কেনো নয়, টিকিট তো কেটেই এসেছি এখন শুধু ফ্লাইট এর অপেক্ষায়। ( অভি)
বলেই পিশাচ হাসি দিয়ে বের হয়ে গেলো অভি আর অনন্যা।
__ এখন কি হবে সাইফ? ( তৃণা)
__ আমরাও যাচ্ছি, এক্ষুনি টিকিট কনফার্ম করছি ওয়েট। ( সাইফ)
,
,
,
নেহা আর বৌভাত এ এটেন্ড করেনি মুরাদ নামক ওই ছেলেটা র ভয়ে। নেহা লন্ডনে যাবার খুশিতে মাতোয়ারা হয়ে আছে। মুরাদ সব খোঁজ খবর নিয়ে নেয়। নেহা কোথায় যাচ্ছে, কি করছে সব কিছুই। খোঁজ নিয়ে মুরাদ নিজের জন্যও টিকিট নিয়ে নেয় আর ওর মা বাবাকেও আসতে বলে।
,
,
,
মনিকা দরজায় টোকা দিতেই নুহাশ আর তিথি একে অপরের থেকে সরে আসে। কতোক্ষন যে এভাবে জড়িয়ে ধরে ছিলো দুজনের ই অজানা। তিথি দরজা খুলে দিতেই মনিকা বলে
__ একদিনেই এতো ভাব দুজনের, আমাকে তো ভুলেই গেলেন সবাই ( ভিতরে ভিতরে জ্বলছে)
__ আসলে গল্প করছিলাম তাই। নতুন মানুষের সাথে কথা তো হতেই পারে তাইনা ? ( তিথিকে চুপ থাকতে দেখে নুহাশ বলে)
__ ওহহহহ! তাহলে সরি, ডিস্টার্ব করে ফেললাম, মাফ করবেন। ( আর কথা বলার সুযোগ না দিয়েই বের হয়ে আসে মনিকা)
__ আরেএএএ, মনি, যাহ চলেই গেলো, আরে এতে রাগ করার কি আছে বুঝলাম না তো? ( নুহাশ)
__ ও হয়তো আপনাকে চয়েস করে কিন্তু আপনি অন্যের সাথে, তাই জেলাস ফিল করছে। ( তিথি)
চলবে………
প্রতিশোধ__2 পার্ট__19
প্রতিশোধ__2
পার্ট__19
#জামিয়া_পারভীন
__ সকালে নুহাশের আগে ঘুম ভাঙ্গে, জেগেই দেখে একটা মেয়েকে কোলবালিশের মতো জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।
__ আ আ আ আ আ আ ( নুহাশ)
__ তিথির ঘুম ভেঙ্গে তিথিও নুহাশ কে পাশে দেখে চিৎকার দেয়।
__ আরে থামুন, আপনি আমার কামড়ায় আসলেন কিভাবে। ( নুহাশ)
__ আপনার রুম কেনো হতে যাবে এটা আমার রুম। ( তিথি)
__ আরে এটা আমার রুম, আপনি আসলেন কিভাবে? ( নুহাশ)
__ আপনি ভালো করে দেখে আসুন এটা আমার রুম, রুম নাম্বার ৭৫৬, নইলে আমি এখানে আসলাম কিভাবে? ( তিথি)
__ আরে এটা ৭৫৯ নং রুম আপনার ভুল হচ্ছে।
__ আপনি গিয়ে চেক করে আসুন..
নুহাশ তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে উঠে তিথির হাত ধরে দরজা দেখাতে গেলো। দরজায় রুম নং ৭৫৬ দেখে নুহাশের মাথা গরম হয়ে গেলো। আরোও মেজাজ খারাপ হলো সামনের রুম নাম্বার ও ৭৫৬ দেখে।
__ তিথি ও দুইটা রুমের একই নাম্বার দেখে রেগে যায়। দুইজন ই হোটেল বয় কে চিল্লিয়ে ডাকতে থাকে। হোটেল বয় বলে নাম্বার প্লেট এর স্ক্রু ঢিলা ছিলো তাই ৯ টা ৬ হয়ে গেছে। দুইজনেই চোখ কটমট করে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে। রাত্রে কিভাবে একই রুমে এসেছে কারোর ই মনে নাই।
__ আসলে সরি, ( তিথি)
__ হুম সরি, আসলে কিভাবে যে কি হয়েছে কিছু মনে নাই। আ আ আ আপনি বাঙ্গালী নাকি? ( নুহাশ)
__ ও হ্যাঁ তাইতো , বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে দেশের মানুষ। বেশ ইন্টারেস্টিং তো। ( তিথি)
__ আমরা তো ভিতরে গিয়ে কথা বলতে পারি। ( নুহাশ)
__ আমাদের আগে উচিৎ ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট আগে করা। ( তিথি)
__ দাঁড়ান দাঁড়ান, আপনাকে যেন চিনা চিনা লাগছে, কোথায় যেন দেখেছি? ( নুহাশ)
__ মজা করছেন? আপনাকে তো ফার্স্ট টাইম দেখলাম। ( তিথি)
__ মজা করছি না, হুম দেখেছি না, মানে আপনার চোখ, মুখের আকৃতি সেম আমার আম্মুর মতো শুধু চুলগুলো আপনার কোকড়ানো, এই জন্য চিনা যাচ্ছেনা । কিভাবে সম্ভব এটা বলেন তো?
__ এটা তো সম্ভব ই না ( তিথি)
নুহাশ ফোন থেকে মায়ের ছবি দেখায় আগে।
__ এই যে দেখুন আমার আম্মু ( নুহাশ)
__ আশাকরি আপনি মজা করছেন? এটা আপনার আম্মু হতেই পারেনা। ( তিথি)
__ আমার আম্মু কে কি আপনি চিনেন নাকি যে বলছেন এটা আমার আম্মু না। ( নুহাশ)
__ আরে এটা তো
( তিথি ফোন থেকে একটা ছবি বের করে নুহাশ কে দেখাতে যাবে তখনি মনিকা চলে আসে)
__ হাই তিথি,
( নুহাশের দিকে তাকিয়ে) আরে স্যার আপনি এখানে কিভাবে?
__ তুই উনাকে চিনিস নাকি? ( তিথি মনিকা কে বলে)
__ হ্যাঁ উনি তো আমাদের অফিসের বস, যেখানে তোর কাল জয়েন করার কথা। ( মনিকা)
__ তিথি মুখ হা করে নুহাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
__ এই আপনার মুখ বন্ধ করুন, মাছি ঢুকবে হা হা হা ( নুহাশ)
ওকে গাইস আগে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে করতে কথা বলি।
__ হুহহহহহ! ( তিথি নুহাশের দিকে তাকিয়ে মুখে ভেংচি কাটে) এরপর চলে আসে নিজের রুমে মনিকার সাথে।
__ নুহাশ ও মনে মনে হেসে নিজের রুমে চলে আসে। ফ্রেশ হতে গিয়ে শুধু মেয়েটার কথাই ভাবছে, ইসসস এতো কথা বললাম মেয়েটার নাম ই তো জানা হলোনা। হুম মনে পড়েছে কাল যে মেয়ে জয়েন করবে সে তিথি তার মানে এটাই তিথি। এলেমেলো চিন্তা তিথি কে ঘিরে আসতে থাকে নুহাশের মাথায়।
___ তিথি ও নুহাশের কথা চিন্তা করছে, কে সে, একদিনের পরিচয় এ এতো আপন মনে হয় কিভাবে?
,
,
,
__ সকালে নেহা ওর মায়ের কোলে শুয়ে শুয়ে কান্না করছে। কিন্তু কোনই কারণ বলছে না কেনো কাঁদছে।
__ আরে কি হয়েছে বলবি তো , না বললে বুঝবো কেমন করে ( নিরা)
__ কা আ আ ল বিয়ের অনুষ্ঠান এ এ এ ( কান্না করছে নেহা)
__ আরে কি হয়েছে লক্ষ্মী মেয়ে আমার বল তো ? ( নিরা)
__ কাল বরযাত্রী তে আসা একজন আমাকে নিয়ে জোর করে ডান্স করেছে। ( ভ্যা করে কান্না শুরু করে দেয়)
__ আরে বাবু এই জন্যে এতো কান্না করতে হবে না। মোনালিসার বাড়ি আর যেতে হবেনা কেমন সোনা টা। ( নিরা)
__ না আম্মু, মোনালিসা ওর বৌভাতে আমি না গেলে খুব রাগ করবে। ( নেহা)
__ তাহলে যাবি, ওকে আমার সাথে যাস , আর কান্না করে না লক্ষ্মিটি। ( নিরা)
__ নেহা বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারেনা তাই মা কে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে থাকে।
,
,
নিরা এখন দিল্লীর একটা হসপিটালে আছে। সেখানে নিরা গরীবদের ফ্রি চিকিৎসা দিয়ে থাকে। আবির ও নিরাকে সব সময় হেল্প করে ফ্রি চিকিৎসা দিতে। আবির মেডিকেল কলেজের প্রফেসর হয়েছে এখানে কিন্তু কখনো এক্সট্রা আয় করতে চায় না। খুব সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে আবির আর নিরা। একমাত্র মেয়ে নেহা কেই নিজের মনের মতো করে গড়ে তুলতে পেরেছে। কিন্তু নুহাশ এর উচ্চাকাঙ্খার জন্য নুহাশ ৮ বছর আগে স্কলারশিপ পেয়ে লন্ডনে যায়। সেখানেই সেটেল হয়ে গেছে। বিয়ে এখনো করেনি, তাই হয়তো রোজ মা বাবা আর বোনের সাথে রাত্রে বেলা একবার হলেও ভিডিওকলে কথা হয় নুহাশের।
কিন্তু গতরাত থেকে নুহাশের খোঁজ পায়নি আবির বা নিরা কেউ ই। অনেক বার ফোন করেছে কিন্তু বারংবার সুইচড অফ বলছে।
,
,
,
___ দুই দিন থেকে একমাত্র মেয়ে তিথি নিখোঁজ এটা এখনও মেনে নিতে পারছেনা সাইফ। চিল্লিয়ে বাড়ি মাতিয়ে রেখেছে।
__ আচ্ছা একটা মেয়ে তো হঠাৎ করেই হাওয়া হয়ে যাবেনা তাইনা। তাহলে গেলো টা কোথায়? ( সাইফ)
__ টেনশনে আমার মাথাটা ধরে আসছে, কোথায় যে গেলো মেয়েটা। ( তৃণা)
__ আর তোমার মাথা ধরে কাজ নেই। একটা মেয়ে জন্ম দিয়েই তো আর মা হবার সুখ পাওনি। ওই একটা মেয়েকেই তো লাই দিয়ে মাথাই তুলেছো? এখন বোঝ কি করেছো? ( অনন্যা)
__ আহহহ! অনন্যা তুই তৃণাকে খবরদার বকাবকি করবি না। আমি খুঁজে দেখছি কোথায় গেলো মেয়েটা । ( সাইফ)
__ কোথায় আর যাবে তোমার মেয়ে মামু, সেতো পালিয়েছে। বিয়েটা করবেনা তাইইইইই, এখন যদি না পাই তিথি কে তাহলে গোটা বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিবো বলে দিলাম ( অভি, অনন্যার ছেলে)
___ [ একটা সাইকো অভি , যখন যা চায় সব আদায় করে নেয়, সাইফের অমতে তিথি কে বিয়ে করতে চেয়েছিলো কিন্তু তৃণা সুযোগ বুঝে মেয়েকে সরিয়ে দিয়েছে। কারণ তৃণা জানে এই বাজে ছেলেটার ঘরে তিথি কখনো সুখে থাকবে না ]
____ তৃণা সাইফ কে এই কথাটা বলতে ভয় পাচ্ছে কারণ অনন্যা কোন ভাবে যদি জানে তিথি লন্ডন গেছে তাহলে তিথিকে তুলে আনিয়ে অভির সাথে বিয়ে দিবে অনন্যা।
___ নুহাশ ব্রেকফাস্ট করতে এসে তিথি আর মনিকা কে একসাথে পেয়ে তাদের সাথেই বসে পড়ে একদম তিথির কাছ ঘিষে ।
__ হাইইইই, চলে আসলাম, ডোন্ট মাইন্ড। ( নুহাশ)
__ কি যে বলেন স্যার, আপনি আমাদের বস। ( মনিকার মুখের কথা কেড়ে নেয়ে নুহাশ বলে)
__ তুমি খুশি হলেও আরেকজন তো মোটেও খুশি হয়নি। ( নুহাশ)
__ আরে আমি কখন বললাম যে আমি খুশি হইনি??? ( মন চাচ্ছে একটা ঘুষি দিয়ে নাকটা ফাটিয়ে দিতে।) ( তিথি)
__ এইতো মনে মনে বলছো, এই আপদ টা কোথা থেকে আসলো? ( নুহাশ)
__ মোটেও না, মনে মনে আপনার নাকে ঘুষি দিতে ইচ্ছে করছে, দিবো কি? ( তিথি)
__ এইইই নানা, নিজের নাক এক হাত দিয়ে প্রটেক্ট করে। বিশ্বাস নেই তোমার, দিয়েও দিতে পারোওওওও। ( নুহাশ)
একসাথে সবাই হেসে উঠলো ।
_ বাই দ্যা ওয়ে আপনার নাম টা যেনো কি? ( তিথি)
_ সর্বনাশ, আপনি আমার নাম জানেন না?
( হাই, আই অ্যাম নুহাশ এন্ড ইউ? হ্যান্ডসেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে)
__ আই অ্যাম তিথি, ফ্রম অস্ট্রেলিয়া, নাও ইন লন্ডন, নাইস টু মিট ইউ, থ্যাংক ইউ। ( হ্যান্ডসেক করে নুহাশের সাথে)
নুহাশের মনে দুষ্টু বুদ্ধি আসে
__ জানো মনিকা আজ আমি আর তিথি একসাথে রাত্রি যাপন করেছি। ( নুহাশ)
__ এইই একদম মিথ্যে বলবেন না। রা রা রাত্রি যাপন করেছি মানে টা কি? ( তিথি)
__ এই যে! আমি কি মিথ্যে বলছি নাকি? সকালে আমায় জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিলে আর মাত্র এক ঘন্টা তে ভুলে গেলে? ( দুষ্টু হাসি হেসে)
[ এদিকে মনিকা জ্বলে যাচ্ছে, কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। মনে মনে নুহাশ কে পছন্দ করে কিন্তু বস বলে কখনো সেইরকম কিছুই বলেনি। ]
__ মোটেও নয়, এমন কিছুই হয়নি আমাদের মাঝে। ( তিথি)
__ রাত্রে কি হয়েছে দু’জনের ই মনে নাই, হলে হতেও পারে। ( নুহাশ) ( বলেই বাম হাত দিয়ে তিথির হাতে চিমটি কাটে। )
__ উঁউউউউউ, কখনো এমন হয়নি। ( মনে মনে খুব রাগ উঠে)
__ আরেএ হয়েছে তো ( নুহাশ)
( এবার তিথির রাগ উঠে নুহাশে দুই কান মলে দেয়। )
__ এইটা হইছে। ( হিহিহি, বেশ হইছে)
__ নুহাশ সবার সামনে বেশ লজ্জায় পড়ে যায়। এই সিচুয়েশান কাটানোর জন্য তিথির চুল ধরে টান দেয়।
বেশ হইছে এবার ( নুহাশ)
__ মনিকা চল তো এখানে আর ভালো লাগছে না ( তিথি)
__ তুই বাইরে যা আমি আসছি। ( মনেমনে খুব রাগান্বিত হয়ে আছে? )
____ তিথি মনে মনে নুহাশের সাথে একা কিভাবে কথা বলবে সেটা ভাবছে কিন্তু মনিকার জন্য কিছুই পারছে না। নিজের মায়ের ছবি নুহাশের কাছে কিভাবে গেলো? থাক পরে একসময় বলবো ভেবে নুহাশের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে।
চলবে………