-“মাহিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর কাছে গিয়ে ওর ঠোঁটে আমি কিস করতে গেলাম কিন্তু তখন মাহি আমার আর ওর ঠোঁটের মাঝে ওর হাত দিয়ে বাঁধা সৃষ্টি করলো।তারপর মাহি আমাকে বলল,
-“মনের দূরত্বটা খুব বড় একটা দেওয়াল।যে দেওয়ালটা ভাঙ্গতে খুব সময় লাগে আবার কখনো কখনো সেটা ভাঙ্গাও যাইনা।
কথাগুলো শেষ করে মাহি আশফিকে সরিযে দিয়ে উঠে চলে গেল।আর আশফি ও কোনো কথা বললো না।শুধু ভাবলো,
-“ঠিকই বলেছে মাহি।যখন আমার মনে দূরত্বের দেওয়ালটা সৃষ্টি হয়েছিল সেটা ভাঙ্গতে আমার ও একটু সময় লেগেছিল।হয়তো মাহি সেটা ভাঙ্গবার চেষ্টে করেছিল কিন্তু পারেনি। কিন্তু আমাকে পারতে হবে।এভাবে পর পর আমাদের দুজনের মাঝে মান অভিমানের পালা চলতে থাকলে একদিন হয়তো সত্যি আর আমাদের মাঝের সৃষ্ট দেওয়ালটা আর ভাঙ্গা সম্ভব হবেনা।
আমাকে ধৈর্য রাখতে হবে,ধৈর্যহারা হলে চলবে না।বিয়ের আগে মাহির মনকে অর্জন করাটা সব থেকে বেশি কষ্টের ছিল।আর এখন সেই অর্জনকৃত মনকে আবার অর্জন করাটা খুব বেশি কঠিক হবে না।সো……চালিয়ে যেতে হবে।
মাহি ড্রেস চেঞ্জ করে চান্দুর কাছে গেল।চান্দু তখন ঘুমিয়ে ছিল।ঘুমন্ত মুখেই মাহি চান্দুকে আদর করছে,চুমু খাচ্ছে।আশফি বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখতে পেল মাহি চান্দুর কপালে চুমু দিচ্ছে।তখন আশফি মাহির পাশে গিয়ে মাহির কপালের এক পাশে চুমু খেল।মাহি ঘুরে তাকালো আশফির দিকে। আশফি মাহিকে বলল,
-“তুমি ওকে আদর করবে আর আমি তোমাকে আদর করবো।আর আমি যখন ওকে আদর করবো তখন তুমি আমাকে আদর করবে। তাহলে আমরা তিনজনেই ভালোবাসাতে পরিপূর্ণ হয়ে থাকবো।
মাহি শুধু আশফির কথাগুলো শুনলো কিন্তু কিছু বললোনা।তারপর ওরা দুজনে মিলে ডিনার করে নিল।ডিনারের সময় আশফি আজকে মাহিকে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছে তবে সেটা জোড় করে।মাহি আশফির হাতে একদম ই খেতে চাইছিল না।মাহি খাওয়া শেষে উঠে চলে গেল।তারপর শোয়ার জন্য মাহি অন্য রুমের সামনে গেল।কিন্তু রুমটা লক করা ছিল।বাড়ির ভেতরে যতগুলো ফাঁকা রুম আছে তার সবগুলোই লক করা রয়েছে।তখন মাহি আশফিকে ডাকল এবং বলল,
-“রুমগুলো সব লক করা কেনো?
আশফি মাহির সামনে দাড়িয়ে মাহির পেছনে দরজার দিকে উঁকি দিয়ে দেখল।আর মুখে দুষ্টুমিকর মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
-“ঐ যে আমার বাড়িতে আমার বউ আসার কথা ছিল না?আর কি এসেছে…..তো সে তো এসেই আমার রুম ছেড়ে টপাত করে অন্য রুমে ঢুকে যেতো।তাই আমি একটু আমার মেধা খরচ করে আমার বুদ্ধিবল দিয়ে রুমগুলো লক করে রাখলাম।যাতে আমার অতী শেয়ানা বউটা এসে বাধ্য হয়ে আমার রুমেই থাকে। আর হ্যা,কাঁথা বালিশ নিয়ে আবার ড্রয়িংরুমে সোফায় শুতে এসোনা।এমনিতে ওরা কিছু বাজে ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে আছে।দরকার হলে রুমেই ফ্লোরে বিছানা পেতে শোয়ার ব্যবস্থা করো।
আশফি চলে গেলো রুমে।আর মাহি ভাবছে,
-“কত বড় ফাজিল।অন্যরুমে থাকতে দিবেনা আবার এদিকে ফ্লোরে বিছানা পেতে শুতে বলে।ঠিক আছে তাই শুইবো।
মাহি রুমে গিয়ে মোটা কম্বল বিছিয়ে ফ্লোরিং করে শুয়ে পড়লো।আর আশফি বিছানায় এক কাত হয়ে শুয়ে মাহির কান্ড কারখানা দেখছিল।রাত ২:০৫ মিনিট বাজে।মাহি ঘুমিয়ে বিভোর।হুট করে আশফি মাহির কাছে গিয়ে মাহিকে ঘুমের ভেতরেই জড়িয়ে ধরলো। এভাবে আচমকা জড়িয়ে ধরাতে মাহি ভয়ে আশফি বলে চিল্লিয়ে উঠলো।
-“ও মাগো……আআআআ আশফিইইই…..
আশফি মাহির মুখ চেপে ধরে বলল,
-“এই মেয়ে ভয়েস নিচে নামাও।স্বামীর স্পর্শ ও চিনতে পারোনা?কেমন বউ তুমি?
-“ঘুমের মধ্যে এভাবে হঠাৎ করে চেপে ধরলে ভয় পাবোনা?
-“ভয় পাওয়ার কি আছে?এই রুমে কি আমি ছাড়া অন্য কেউ আছে?যে সে তোমাকে এসে এতো সুন্দর করে জড়িয়ে ধরবে?
-“এ্যাহ্…. কি সুন্দর করে উনি আমাকে জড়িয়ে ধরেছে?হার্ট ফেইল হওয়ার মত অবস্থা হয়েছিল আমার।এই সরো তো আমার কাছ থেকে। তুমি বিছানা ছেড়ে নিচে এসেছো কি করতে? আমার ঘুম নষ্ট করার জন্য?
-“হুম।আমি ঘুমাতে পারছিনা আর আমার বউ আমাকে একা উপরে ফেলে কি আরামে কত সুন্দর ঘুম দিচ্ছে।আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে তারপর নিজে ঘুমাতে।তা না করে আমাকে ফেলে নিজের ঘুম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে।
-“আমার তো খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই অন্য কারোর ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিব আমি।
-“আচ্ছা ঘুম পাড়ানোর দায়িত্ব না নিতে পারো। কিন্তু তোমার স্বামী উত্তেজনা আর অস্থিরতাই যে তার অসুস্থ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা সেটাও কি তুমি দেখবেনা?অন্তত তার অস্থিরতা কাটানোর ব্যবস্থা করো।
-“কি?কিসের অস্থিরতা?
-“মনের অস্থিরতা।মনটা অস্থির হয়ে আছে বউ এর সীমাহিন প্রেম নেওয়ার জন্য।
-“উফ মাঝরাতে ঘুম নষ্ট করে দিয়ে প্রেম নেওয়ার গল্প শোনানো হচ্ছে আমাকে?তুমি যাবে নাকি আমি সত্যি সত্যি ড্রয়িংরুমে গিয়ে শুয়ে পড়বো।
-“যাওয়ার উপায় নেই।প্রেম না দেওয়া পর্যন্ত রাতে কোনো ঘুম নেই।আমাকে প্রেম দিতেই হবে।তাও এত্তো প্রেম দিতে হবে।
আশফি হাতদুটো দু প্রান্তে নিয়ে গিয়ে পরিমাণ দেখিয়ে কথাটা বলল।
-“তোমাকে যেতে হচ্ছে না। আমি নিজেই যাচ্ছি।
মাহি উঠে যেতে গেলো তখন আশফি মাহিকে হ্যাচকা টানে ফেলে দিল।মাহি তার ঝোঁক সামলাতে না পেরে আশফির শরীরের উপর গিয়েই পড়লো।আশফি মাহিকে জড়িয়ে ধরে আদর করার চেষ্টা করছে এর মাঝে আশফির ফোনে একটা কল আসলো।আশফি মাহিকে ধরে রেখেই বিছানার পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিল।ফোন হাতে নিয়ে আশফি দেখতে পেল ইংল্যান্ডের নাম্বার। রিসিভ করে বুঝতে পারলো ওর চাচ্চু ফোন করেছে।
-“হ্যালো চাচ্চু কেমন আছো?
-“তেমন ভালো নেই।
আশফি শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসলো। তারপর ওর চাচ্চুকে বলল,
-“কি হয়েছে চাচ্চু?কোনো সমস্যা?
-“আলিশা সুইসাইড অ্যাটেম্পট করেছে।
আশফি মাহির কোনো বাঁধা নিষেধ না শুনে মাহির কাছে এগিয়ে গেলো।ও জোড় করে হলেও মাহির মুখ আর গাল থেকে খাবারগুলো চেটে খাবেই।কিন্তু মাহি আশফিকে ওর কাছে আসতে দিবেনা।তাই ও ওর কাছ থেকে আশফিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।আর আশফি তখন মাহির দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে রইলো।মাহি বলল,
-“এগুলো তুমি আমার সাথে কেনো করছো? তোমার সাথে আমার কি সম্পর্ক এখন? কিসের জোড়ে তুমি আমার কাছে আসতে চাও বলো?আমি এখন মি.আশফি চৌধুরীর খাই ও না পড়িও না এখন আমি তার কাছেই থাকিনা। গত ১৬ টা দিন সে আমার সাথে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে।এমনকি আমার নিজের মেয়েকে ও সে আমার থেকে দূরে রেখেছে।একরকম ভাঙ্গা সম্পর্কই বলা চলে এটাকে।তাহলে সেখানে তুমি কোন অধিকারবোধ নিয়ে আমার কাছে আসতে চাও?
আশফি মাহির কথা গুলো শুনে একদম থমকে গেলো।বলার মত কিছু খুঁজে পাচ্ছেনা ও।শুধু তাকিয়ে আছে মাহির চোখের দিকে।আর কানে বাজছে মাহির ঝাঝালো কন্ঠ সুর,মাহির জটিল বাক্য গুলো।মাহি প্রশ্নের উত্তরগুলো আশফি দিতে পারছেনা এ কারণেই, মাহির বলা কথাগুলো পুরোপুরি যুক্তিসংগত আর তা সত্য।মাহি কিছুক্ষণ দাড়িয়ে ছিল আশফির উত্তরের আশায়।উত্তরগুলো না পেয়ে মাহি চলে গেল আশফির চেম্বার থেকে।আশফি ও আর মাহিকে আটকালো না।চুপচাপ বসে কিছু ভাবতে থাকলো আশফি।কি ভাবছে তা শুধু ও নিজেই জানে।অফিস টাইম ওভার হওয়ার পর আশফি আর এক সেকেন্ড টাইম ও দেরী করলোনা বাসায় ফিরতে।মাহির কোল থেকে আশনূহাকে নিয়ে চলে গেল বাসার উদ্দেশ্যে। মাহি তাকিয়ে রইলো আশফির চলে যাওয়ার দিকে।আর ভাবতে থাকলো,
-“আমার আশফিটার মাঝে কতোটা পরিবর্তন এসেছে।আগে যে আশফি মাহিকে ছেড়ে একা থাকার কথা শুনলে নিজের মৃত্যু হয়ে যাওয়ার কথা ভাবতো।আর এখন সেই আশফি কতো দিব্বি আছে একা একা।এখন আর মাহির কথা মনে পড়েনা হয়তো।সন্তানটা নিজের রক্তের পরিচয় বহন করে বলে সন্তানের উপর অনেক টান।কিন্তু আমি তো তা নই।একটা পাতানো সম্পর্ক আমাদের।পৃথিবীতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা এভাবে সৃষ্টি হয় বলে একজন পুরুষ পারে দ্বিতীয় কোনো নারীকে গ্রহণ করতে আর একজন নারী পারে দ্বিতীয় কোনো পুরুষকে গ্রহণ করতে।যাই হোক,ও ভালো থাকতে পারলে আমার সমস্যাটা কোথায়?আমি কোনো ওর ভালো থাকার মাঝে বাঁধা দিব? কোনো প্রয়োজন নেই ওর কাছে নিজের দাবি চাওয়ার।
-“রাত ৯ টা বাজে।আধা ঘণ্টা আগে সেক্রেটারিকে ফোন করেছি।তখন ও মাহি অফিসে।এতো সময় ও কিভাবে দিতে পারে অফিসে?বোরিং হয়না নাকি?তবে ভালোই আমার আর অফিসের দায়িত্ব না নিলেও চলে। ওর হাতে অফিসের দায়িত্ব তুলে দিয়ে আমি আমাদের মেয়েকে সামলাবো সারাদিন আর ও অফিস সামলাবে সারাদিন।কিন্তু নাহ্…… অফিসটা ছেড়ে দিলে ওর সাথে অফিসিয়াল রোমান্সটা হবে কিভাবে?যা রাগ পুষে রেখেছে মনের ভেতর,তাতে কতদিন সময় লাগবে সেই রাগ ভাঙ্গাতে তা শুধু উপরওয়ালা জানে। রাগটা তো আর তার বরের থেকে কম না।
আধা ঘণ্টা পর মাহি অফিস থেকে বেরিয়ে গেল।বাসায় যাবে কিন্তু কোনো ট্যাক্সি খালি পাচ্ছেনা।বাইপাসের রোড ধরে হাঁটতে শুরু করলো মাহি।হঠাৎ করে ওর মনে হল কেউ ওর পিছু পিছু হাঁটছে।পিছু ঘুরে তাকাতে দেখতে পেল কয়েকটা ছেলেকে।কিন্তু দেখে মনে হলোনা এরা ওকে ফলো করছে।মাহি এটা ওর ভুল ধারণা ভেবে আবার হাঁটতে শুরু করলো। অনেকক্ষণ হাঁটার পর একটা ফাঁকার রাস্তাতে চলে এলো।হঠাৎ সামনে আশফি এসে মাহির পথ আটকে দাড়ালো।মাহি আশফিকে দেখে কিছু না বলে ওকে সাইড করে চলে আসছিল। আশফি মাহির হাত টেনে ধরলো তারপর ওকে বলল,
-“বাসায় চলো।
মাহি কোনো কথার উত্তর দিল না।আশফির হাত ছাড়িয়ে মাহি আবার হাঁটতে শুরু করলো। আশফি ওকে আটকিয়ে আবার বলল,
-“মাহি,প্লিজ বাসায় ফিরে চলো।অনেক হয়েছে।এবার এই নোংরা কাহিনীগুলো শেষ করতে হবে আমাদের দুজনের।তুমি তো জানো আমরা কেউই কাউকে ছাড়া বেশিদিন দূরে থাকতে পারবোনা।মাঝখানে মান অভিমানের পাল্লা ভারী হচ্ছে।
-“তুমি এই মিথ্যা নাটক গুলো না করলেও পারো।তুমি বেশ পারবে আমাকে ছাড়া থাকতে অলমোস্ট থাকছো ও।
-“আচ্ছা তোমার যা বলার বাসায় ফিরে বলো আমাকে।এখন এখানে সিনক্রিয়েট না করাই ভালো।
-“একদম তাই।সিনক্রিয়েট করাটা আমার ও অপছন্দ।তাই আমাকে আমার বাসায় যেতে দাও আর তুমিও তোমার বাসায় ফিরে যাও। শুধু শুধু এই অসম্ভব বিষয়গুলো নিয়ে সিনক্রিয়েট টা না করাই ভালো।
-“অসম্ভব?কোনটা অসম্ভব বিষয়?ওকে ফাইন, আমি তো বলছি আমাদের মাঝে যা হয়েছে তার মধ্যে আমার যা যা ভুল আছে সেগুলো তুমি আমাকে বলো এন্ড তার জন্য আমাকে শাস্তি দিও কিন্তু সেটা বাসায় ফিরে।চলো,
অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে।এখানে থাকাটা সেফলি হবেনা।
-“এই তুমি যাওনা।তোমাকে কি আমি ধরে রেখেছি? আমাকে আমার গন্তব্যে যেতে দাও দয়া করে।আর আমার পিছু নেওয়াটা বন্ধ করো।এভাবে রাস্তা ঘাটে অন্য কোনো মেয়েকে ডিসট্রাব করাটা তোমার শোভা পায়না।সো প্লিজ লিভ মাই ওয়ে এন্ড লেট মি গো।
কথাগুলো শেষ করে মাহি উল্টো পথে চলে আসছিল।তখন আশফি দ্রুত মাহির কাছে গিয়ে মাহিকে ধরে ওর কাঁধে তুলে নিল।আর তখন মাহি আশফিকে বিভিন্নরকম বকাবকি করছিল কাঁধ থেকে নামিয়ে দেওয়ার জন্য। আশফি সেইসব কথার কোনো গুরুত্ব না দিয়ে মাহিকে সোজা গাড়িতে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিয়ে সিটবেল্টটা লাগিয়ে দিল।তারপর আশফি ও ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে ড্রাইভ শুরু করলো।আর সারা রাস্তা মাহি আশফিকে রাগারাগি,বকাছকা করতে করতে বাসায় আসলো।বাসার সামনে এসে আশফি গাড়ি থামালো।
-“ওহ্ আজ আমার বাড়িটা ধন্য হয়ে গেল। নেমে আসুন মহারাণী।আপনাকে অভিনন্দন করার জন্য রাজমহলের দাসীগণ ফুল আর বরণডালা হাতে দাড়িয়ে আছে।
মাহি গাড়ির ভেতর বসেই দেখতে পাচ্ছে পুরো বাড়ি সাদা রঙের আলোকসজ্জায় সজ্জিত আর বাসার সামনে সার্ভেন্ট গুলো হাতে বরণডালা নিয়ে দাড়িয়ে আছে।মাহি মনে মনে বলছে,
-“এতোগুলো দিন যে বউ এর খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি সেই বউকে ঘরে তোলার জন্য কত্ত রং ঢং….হুহ।
-“কি হলো মহারাণী?আপনি আজকে গাড়ি থেকে নামবেন না ঠিক করেছেন?আচ্ছা আচ্ছা থাক আপনাকে কষ্ট করে নামতে হচ্ছেনা। আমিই আপনাকে কোলে তুলে নামিয়ে আনছি।
-“এই আমার ধারের কাছেও আসবেনা বলে দিলাম।আমি ঢুকবোনা তোমার বাসায়।
কিন্তু আশফি মাহির কোনো কথাই কানে নিল না।গাড়ির ভেতর থেকে মাহিকে নামিয়ে কোলে তুলে নিল।তখন মাহি আশফিকে বলল,
-“এতো নির্লজ্জ কেনো তুমি?
মাহির কথা শুনে আশফি জাস্ট কয়েক সেকেন্ডের জন্য ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো কিন্তু কিছু বললোনা।মাহি আবার বলল,
-“এতো ভাব কোথা থেকে শিখ তুমি?এভাবে সবার সামনে কোলে করে নিয়ে দাড়িয়ে আছো লজ্জা লাগছেনা তোমার?
-“একটু ওয়েট করো।বাসার ভেতর ঢুকি তারপর তোমার সব কথার উত্তর মুখে নয় প্র্যাকটিক্যালে দিব।
-“কি?
আশফি আর মাহির সাথে কোনো কথা বললোনা।সার্ভেন্টগুলোকে আগে থেকে আশফি শিখিয়ে দিয়েছিল কি করতে হবে ওদের।আশফির শিখানো মোতাবেক ওরা আশফি আর মাহিকে বরণ করলে।তখনও মাহি আশফির কোলেই ছিল।আশফি বাসার ভেতর ঢুকে মাহিকে কোলে করেই বেডরুমে নিয়ে গেল।
-“উহ্…… কি ভারী হয়ে গেছো তুমি জাস্ট এ কয়দিনেই।আমার কাছে না থাকলে তুমি একদম কন্ট্রোলের বাইরে চলে যাও।
আশফি মাহিকে বিছানায় বসিয়ে দিল।আর মাহির আশফির কথাগুলো শুনে রাগে ফুলকে থাকলো।এই কয়দিনে মাহির ওয়েট বাড়ার কথা তো দূরে থাক এই ১৬ দিনে হয়তো ১৬ কেজি ওয়েট লস হয়ে গেছে ওর।মাহি আশফির কথার উত্তর না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে গেল।আশফি মাহিকে ধরে ফেলল তারপর ওকে বলল,
-“আরে কোথায় যাচ্ছো? আগে আমার সাথে তোমার হিসাব নিকাশ মিটিয়ে নাও।বাইরে থাকতে কি কি যেন বললে?আমি এতো নির্লজ্জ কেনো,তাইনা?আর তুমি অন্য কোনো মেয়ে? অফিসে থাকতেও কি যেন বলেছিলে?তোমার সাথে আমার কি সম্পর্ক, কিসের জোড়ে আমি তোমার কাছে আসতে চাই ইটিসি ইটিসি….তো এগুলোর উত্তর তোমার চাইনা?
-“তোমার থেকে আমার কোনো উত্তর চাওয়ার নেই।কোনো কিছু শোনারও নেই।আমি জাস্ট এখানে থাকতে চাইনা।
-“আমার থেকে তোমার কোনোকিছু শোনার নাই থাকতে পারে কিন্তু তোমার প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমাকে শুনতেই হবে।আর এখান থেকে তুমি কোথায় যাবে আর কিভাবে যাবে? যদি আমি না ছাড়ি তোমাকে?যেতে পারবে তুমি?হুম?
হঠাৎ করে আশফি ড্রেস চেঞ্জ করতে শুরু করলো।শার্ট খুলে ফেললো আশফি মাহির সামনে।আর সেটা দেখে মাহি বলল,
-“কি হয়েছে তুমি এভাবে জামা প্যান্ট খুলছো কেনো?
-“আরে এতো ভয় পাচ্ছো কেনো?এতো জলদি কিছু করছিনা।পুরো ঘেমে গেছি ওতোগুলো সিড়ি ভেঙ্গে তোমাকে নিয়ে আসতে গিয়ে।
এখন তোমাকে নিয়ে অনেক সুন্দর করে একটা গোসল দিব। তারপর এসে তোমার প্রশ্নের উত্তরগুলো দিব।
-“আমি তোমার সাথে গোসল দিবনা।
-“একা একা করবে?
-“না।আমি গোসল ই করবোনা।
-“না না….গোসল তো করতেই হবে। সারাদিন অফিস করেছো।গোসল না করলে হয়? চলো আমিই তোমাকে করিয়ে দিচ্ছি।
-“থাক….কোনো প্রয়োজন নেই।আমি নিজেই করতে পারবো।
-“ঠিকআছে।তাহলে তুমি আগে করো গিয়ে। যাও।
-“না।তুমি চেঞ্জ করে ফেলেছো তুমি করো আগে। আমি পরে করছি।
-“আর সেই সুযোগে তুমি অন্য রুমে গিয়ে দরজা আটকে বসে থাকবে।কি সুন্দর… না? যদি এমন কিছু করো ও তাহলে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকবো।গতকাল রাতের মত ফিরে চলে আসবোনা।নেহাৎ অন্যের বাড়ি ছিল ওটা।না হলে কাল তোমাকে যে কি করতাম!বউ বলে স্যাক্রিফাইজ করতাম না।যাই হোক এগুলো খুলে চেঞ্জ করে নাও।পাঁচ মিনিট সময় দিলাম।ওদিকে(বাথরুম) কোথায় যাচ্ছ?আমার সামনেই চেঞ্জ করবে।
-“ধুরর….।
মাহি আশফির সামনে চেঞ্জ করে মুখটা ব্যাঙের মত করে ফুলিয়ে বসে আছে।আর আশফি ওর দিকে কিছুটা হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে।হাসিটা অবশ্য সরাসরি দেখা যাচ্ছেনা।তবে ওর মুখের মাঝে হাসিটা লুকিয়ে আছে সেটা বোঝা যাচ্ছে।এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে মাহি বলল,
-“ওভাবে লম্পটদের মত করে তাকিয়ে আছো কেনো?জীবনে কোনোদিন এভাবে দেখোনি আমাকে?
-“অনেকদিন পর দেখছি তো তাই।
-“একটা কথা শুনো।তুমি এই ব্যাপারগুলোকে যতটা ইজিলি দেখছোনা?ওতোটা ইজি হবেনা।কারণ ইজি হওয়ার মত ব্যাপার আমার সাথে ঘটেনি।
মাহি আশফির উত্তর পাওয়ার অপেক্ষা না করে কথাগুলো শেষ করে বাথরুমে ঢুকে গেল। তখন আশফি মনে মনে বলল,
-“আমি জানি,আমাদের মাঝে যা ঘটেছে আর আমি তোমার সাথে যা ব্যবহার করেছি তারপর তোমাকে ইজি করা খুব সহজ ব্যাপার নয়।কিন্তু যে মাহিকে আমি একবার নিজের করে ফেলেছি তাকে কখনো কোনো উপায়ে দূরে সরে যেতে দিবনা।এবং খুব জলদি তোমাকে আমার আগের মাহি করে নিব।
১৫ মিনিট পর মাহি বাথরুমের দরজা খুললো কিন্তু পুরোটা না।ও এটা দেখার চেষ্টা করছে আশফি ঘরে আছে কিনা।কারণ মাহি টাওয়ালটা নিতে ভুলে গেছে। এখন ও ভেজা অবস্থাতে কিভাবে বাথরুম থেকে রুমে আসবে সেটা ভাবছে।আশফিকে না পেয়ে মাহি রুমে চলে আসলো টাওয়াল নিতে।তখন আশফি ও রুমে চলে এসেছে।ওকে এভাবে দেখে আশফি বলল,
-“ডিয়ার তুমি ভেজা শরীরে রুমে ঢুকেছো কেনো?ফ্লোর তো ভিজে যাচ্ছে।
-“আরে ভাই ইচ্ছা করে ঢুকেছি নাকি? টাওয়ালটা নিতে ভুলে গেছি।ওটা নিতে…….
-“কি বললে তুমি?
-“কি বললাম?
-“আমি তোমার কোন জন্মমের ভাই হই? হ্যা?
-“ও….এখন তো আপনার আর আমার মাঝে এমন ধরনের সম্বোধন থাকা উচিত।
-“হোয়াট?এটা কোন ধরনের ফাজলামি?
-“ফাজলামি না রে ভাই আমি সত্যিই বলেছি।
-“আবারও ভাই?পাঁজি মেয়ে….. দাড়াও।
আশফির হাতে ফোন ছিল ওটা বিছানার উপর চেলে রেখে মাহিকে ধরার জন্য ওর দিকে ছুটে গেল।মাহি বাথরুমের দরজার সামনেই ছিল ও খুব দ্রুত বাথরুমে ঢুকে গেল।আশফি দরজার সামনে দাড়িয়ে বলল,
-“বাথরুম থেকে বের হবেনা না আপুমণি? শুধু বের হোন তারপর আমার আর আপনার ভাইবোন হওয়ার সম্পর্কটা সেলিব্রেট করবো। ফাজিল মেয়ে!
কিছুক্ষণ পর মাহি শরীরে টাওয়াল পেঁচিয়ে বের হলো।তখন আশফি রুমে ছিলনা কিন্তু রুমের দরজা খোলা ছিল।মাহি ড্রেস চেঞ্জ করার জন্য রুমের দরজাটা যেইনা আটকাতে গেল তখনই আশফি রুমের মধ্যে ঢুকে পড়লো।মাহিকে টাওয়াল পেঁচানো অবস্থা দেখে আশফি সেখানেই থেমে গেল।মাহির দিকে পলকহীন চোখে তাকিয়ে থেকেই আশফি পিছনে হাত দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল।মাহিকে এমন রূপে দেখে আশফির শরীরে যেনো শিহরণ জেগে উঠলো।কোনো কিছু না বলেই মাহিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় চলে গেল।
রোমান্টিক_অত্যাচার-২
পর্ব-২০
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
আশফি এভাবে মাহিকে খাইয়ে দেওয়াতে মাহি কিছুক্ষণ আশফির চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো।মাহি ওর চোখদুটোতে দেখতে পাচ্ছে মাহির প্রতি আশফির সেই আগের একটা অধিকারবোধ,সেই ভালোবাসা,সেই জোড়। এগুলো দেখে মাহির সত্যিই খুব শান্তি লাগছে কিন্তু সেই সাথে রাগ ও হচ্ছে।
-“এমনধরনের অধিকারবোধ দেখানোর কি প্রয়োজন।যেখানে ভালোবাসার পরিমাণ এতোটা থাকা সত্তেও দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে আমাকে।কোনো প্রয়োজন নেই আমার এতো খেয়াল রাখার।ওকে কোনো কথাই বললাম না।ওর চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসতে লাগলাম।
পেছন থেকে ও আমাকে ডেকে বলল,
-“কোথায় যাওয়া হচ্ছে লাঞ্চটা না করে?
-“ওর কোনো কথার উত্তর দিলাম না।সোজা বেরিয়ে এলাম ওর চেম্বার থেকে।সেক্রেটারিকে আমার চেম্বারে আসতে বললাম।
-“ম্যাম?বলুন কি প্রয়োজন?
-“আপনার স্যার এর কাছ থেকে কোম্পানির সবরকম লাভ ক্ষতি হিসাবের ফাইল যাবতীয় ইনফরমেশন নিয়ে আসুন।ওগুলো আপনি আমাকে সব বুঝিয়ে দিবেন।
-“ওকে ম্যাম।বাট আজকেই সব হিসাব নিকাশ গুলো দেখাতে হলে অফিস আওয়ার ওভার হয়ে যাবে।
-“হুম।আমার তো কোনো প্রবলেম নেই। আপনার যদি কোনো প্রবলেম না থাকে তাহলে আমাকে সময় দিলে খুশি হবো।
-“আমার কোনো প্রবলেম নেই ম্যাম।
-“ওকে থ্যাংকস।
তারপর সেক্রেটারি আশফির চেম্বারে গিয়ে আশফিকে মাহির বলা কথা বলে ফাইল আর ইনফরমেশন গুলো চাইল।আশফির ব্যাপারটা ভালো না লাগলেও ওগুলো দিতে বাধ্য হলো।কারণ সেক্রেটারির সামনে ও কোনো সিনক্রিয়েট করতে পারবেনা।মাহি সেক্রেটারির সাথে বসেছে হিসাব নিকাশ দেখার জন্য।অফিস টাইম শেষ।অফিস টাইম শেষ হয়ে যাওয়ার পর ও কিছু সময় আশফি অফিসে থাকতো।কিন্তু আজ কাল আশনূহার জন্য অফিস টাইম শেষ হলেই বাসায় ফিরে যায়।আজকে যাওয়ার সময় আশফি দেখে গেল মাহি সেক্রেটারির সাথে বসে কাজ করছে।
তারপর ও আশনূহাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেল।বাড়িতে গেলেও মনটা পড়ে রইলো অফিসেই।মনটা খুব অশান্ত হয়ে রয়েছে ওর। আশনূহাকে খাইয়ে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে অনেকটা সময় পার হয়ে গেল।রাত প্রায় ৮:৩০ টা বাজে।আশফি ভাবছে,
-“মাহি কি এখনো অফিসেই আছে?
কোম্পানির যা লাভ ক্ষতির হিসাব তা তো আজকে রাতে দেখেও শেষ করতে পারবেনা ও। সেক্রেটারিকে একটা ফোন করে দেখি।
তারপর আশফি সেক্রেটারির ফোনে কল করলো।কল করতেই আশফি বলল,
-“তোমাের ম্যাম যদি সামনে থাকে তাহলে ফোনটা নিয়ে বাইরে চলে এসো।
-“ওকে স্যার।
-“তার মানে ও এখনো অফিসেই আছে?
-“জ্বী স্যার।আমি এতো সময় ম্যামের সাথেই ছিলাম।
-“কাজ কি কমপ্লিট?
-“না স্যার।এখনো অনেক বাকি।
-“তো তোমার ম্যাম কি সারা রাত ধরে হিসাব নিকাশ দেখবে নাকি?
-“না স্যার।উনি রাত ১০ টার সময় বাসায় যাবেন।ততসময় পর্যন্ত উনি আমাকে থাকতে বলেছেন।
-“ঠিকা আছে রাখো।
রেগে গিয়ে আশফি ফোনটা কেটে দিল।
তারপর নিজে নিজেই কথা বলতে থাকলো।
-“রাত ১০ টা পর্যন্ত উনি অফিসে বসে কাজ করবেন।কাজ তো যেনো আমি কোনোদিন করিনি।উনি নিজেই কাজের মর্ম বুঝেন।
মাহিও বুঝতে পেরেছিল তখন যে ফোনটা আশফি করেছে।আর কেনো করেছে সেটাও বুঝতে পেরেছে।কিন্তু তারপরেও সেক্রেটারির সাথে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।আর এদিকে আশফি রাত ১০ টা বাজার অপেক্ষায় রয়েছে। তারপর সেক্রেটারির কাছে ফোন করে জানবে মাহি অফিস থেকে বেরিয়েছে কিনা।যখনই রাত ১০ টা বাজল তখনই আশফি আবার সেক্রেটারির কাছে ফোন করলো।
-“জ্বী স্যার বলুন।
-“ও বেরিয়েছে?
-“না এখনো বেরোননি।তবে বেরোনোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
-“আচ্ছা ওকে তোমার গাড়িতে করে পৌঁছে দাও।
-“ওকে স্যার।
-“হুম।আর তোমার সাথে যেতে না চাইলে আমাকে ফোন অথবা মেসেজ করে জানাবে।
-“ঠিকআছে।
মাহি অফিস থেকে বেরোতে গেল তখন সেক্রেটারি মাহিকে বলল,
-“ম্যাম!
-“হুম বলুন।
-“যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি আপনাকে পৌঁছে দিতে পারি।
মাহি বেশ বুঝতে পেরেছে যে আশফি ওকে বলেছে ওকে পৌঁছে দিতে।মাহি সেক্রেটারিকে বলল,
-“ধন্যবাদ।কোনো প্রয়োজন নেই।
-“ম্যাম এখন তো আপনার কাছে গাড়ি নেই। যেতে কষ্ট হবে।আপনি প্লিজ চলুন।আমি আপনাকে পৌঁছে দিব।
-“আমার কোনো কষ্ট হবেনা যেতে।আপনি যান।
সেক্রেটারি ফোন করছিল আশফিকে বিষয়টা জানানোর জন্য।মাহি কথাগুলো বলেই বেরিয়ে আসছিল হঠাৎ করেই ফিরে এসে সেক্রেটারিকে বলল,
-“আমার সম্পর্কিত তো কোনো নিউজ দিবেন না ফোন বা মেসেজ করে আপনার স্যারকে। মনে থাকবে তো?
-“ইয়েস ম্যাম।
ঐ মুহূর্তে আশফি ফোনটা রিসিভ করে ফেলেছিল।তাই ও মাহির কথাগুলো শুনতে পেয়েছিল।আশফি সেক্রেটারিকে আর কিছু বললোনা।গাড়িটা নিয়ে আশফি বেরিয়ে গেল। কিন্তু তার আগেই মাহি ট্যাক্সিতে উঠে গিয়েছে।অফিসের সামনে গিয়ে মাহিকে না পেয়ে মাহির বাসার সামনে গেল।গিয়ে দেখতে পেল মাত্রই মাহি ট্যাক্সি থেকে নামছে। তারপর মাহি গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভেতরে ঢুকে গেল।আশফি ভাবলো,
-“নাহ্। অনেক হয়েছে ওকে শাস্তি দেওয়া। আজকেই নিয়ে যাব বাসায়।জোড় করেই তুলে নিয়ে যাব যদি যেতে না চাই।গাড়ি থেকে নেমে ওর বাসার সামনে দাড়িয়ে কলিংবেলে চাপ দিলাম।
-“বাসায় এসে দাড়াতে পারিনা এর মাঝে আবার কে ডাকতে এলো? দরজাটা খুলতেই ওকে দেখলাম।আমার মুখটা ভালো করে দেখার আগেই ঠাস করে ওর মুখের উপর দরজাটা লাগিয়ে দিয়েছি।আজ প্রায় পনেরো টা দিন আমার থেকে ও দূরে।চারদিন চলছে আমি ওর বাসার বাইরে।এর মাঝে ও একবার ও ফোন করে আমার খোঁজ নেইনি।আর আজকে এসেছে আমার সাথে দেখা করতে? এভাবেই থাকবো আমি।আমাকে ও প্রয়োজন নেই কিন্তু ওর মেয়েকে তার মাকে ছাড়া কতকাল আলাদা করে রাখতে পারে সেটাই আমি দেখবো।আমি এটাই বা কেনো ভাবছি যে আমাকে ওর একদিন প্রয়োজন হবে? ওর মেয়ের মায়ের প্রয়োজন হলে অন্য একজন মেয়েকে মা বানিয়ে নিয়ে আসবে ওর মেয়ের। কতটা খারাপ অবস্থায় রেখেছে ও আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে। অসভ্য মানুষ একটা।
ওদিকে দরজার ওপারে দাড়িয়ে রাগে গর্জন করতে শুরু করলো আশফি।
-“কত্ত বড় সাহস! আমাকে দেখে আমার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো?কথা বলার সুযোগ পর্যন্ত পেলাম না।ইচ্ছা করছে দরজাটা ভেঙ্গে ওকে টানতে টানতে নিয়ে আসি।
আফসোস এটা আমার বাড়ি নয়।কি আর করার বাধ্য হয়ে বাসায় ফিরতে হবে।কাল অফিসে আসুন তারপর আপনাকে দেখছি।
আশফি সেদিন রাতে বাধ্য হয়ে বাসায় ফিরে গেল।পরেরদিন সকালে আশফি অফিসে গিয়ে দেখতে পেল মাহি ওর আগেই অফিসে চলে এসেছে।ঐ দিন আশফি আশনূহার গভরনেসকে বলল,
-“আশনূহাকে নিয়ে আপনি বাগানের ঐ সাইডটাতে গিয়ে থাকবেন।দশ মিনিট পর আমি ওখানে আসছি।
-“ওকে স্যার।
আশফি গভরনেস বাগানের ডান পাশে গিয়ে দাড়াতে বলল।যেখানে মাহির চেম্বারটা থেকে সরাসরি বাগান টা দেখা যায়।তারপর গভরনেস আশনূহাকে নিয়ে ওখানেই গিয়ে ঘুড়তে থাকলো।চেম্বারে বসে ছিল মাহি। বাগানের চোখ পড়তেই দেখতে পেল আশনূহাকে।সেখানে কি আর এক মিনিট দেরী করতে পারে মাহি?দৌড়ে চলে গেল বাগানে। মাহিকে দেখে গভরনেস চিনতে পেরেছে। তাই ও মাহির সাথে হ্যাই হ্যালো করলো।মাহি গভরনেসের সাথে বেশি সময় কথা না বলেই আশনূহাকে ওর কোল থেকে নিয়ে নিল। চারদিন পর মাকে কাছে পেয়েছে। কিন্তু আশনূহার চিনতে একটুও কষ্ট হলোনা ওর মাকে।আশফি পেছনে দাড়িয়ে সেটা দেখছে। ও জানতো মাহি আশনূহাকে দেখে আর বসে থাকতে পারবেনা।ওকে কোলে নিতে ঠিকই আসবে।গভরনেসকে আশফি ইশারা করে চলে যেতে বলল।মাহি আশনূহাকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে একসময় আশফির দিকে চোখ পড়লো।ওমনি মাহির হাসি মুখটা রাগে দুঃখে চুপসে গেল।মাহি আশফিকে দেখে বলল,
-“একদম কিন্তু আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে নিতে আসবেনা।না হলে কিন্তু খুব খারাপ কিছু হবে।
আশফি মাহির কথা শুনে কিছু বলল না।চুপ করে দাড়িয়ে রইলো।তারপর মাহির সামনে এসে দাড়াল।আর মাহিকে বলল,
-“অফিসে এসেছেন অফিস সামলাতে,
অফিসের কাজ করতে।সেখানে এসে মেয়েকে নিয়ে বসে থাকলে কি চলবে?
-“অফিসে এসে আমি কি করবো না করবো সেটা আমাকেই বুঝতে দিন।আপনার কথা শুনে চলবো নাকি?
আশফি রেগে গিয়ে মাহির আরো কাছে এগিয়ে বলল,
-” কি বললে তুমি?
মাহি কিছুটা পিছু সরে গেল ভয়ে।তারপর বলল,
-“যা বলার বলে দিয়েছি।আর বলতে পারবোনা।
-“ওকে।আমার মেয়েকে নিয়ে বসে থাকতে হলে আমার চেম্বারে আমার চোখের সামনে বসে থাকতে হবে।
-“কেনো?আমার চেম্বার নেই?আর আমার মেয়েকে নিয়ে আমি যেখানে খুশি বসে থাকতে পারি।তাতে তোমার কি?
-“ওতো সতো জানিনা।যা বললাম তাই করতে হবে।বলা যায় না, আমার মেয়েকে নিয়ে ভেগে যেতে পারো।
-“হ্যা?কি বললে তুমি?আমার মেয়েকে নিয়ে আমি ভেগে যাব?আমি কি বাচ্চা চোর? আমার মেয়েকে নিয়ে আমার ভেগে যেতে হবে কেনো? ইচ্ছা করলে ওকে আমার নিজের কাছে নিয়ে যেতে পারি।চুরি করে নিয়ে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসেনা।
-“তুমি খুব ভালো করেই জানো আমার সামনে থেকে আমার মেয়েকে তুমি কখনোই নিয়ে যেতে পারবেনা।তাই ওকে অফিসের সময়টুকু কাছে রাখতে চাইলে আমার চেম্বারেই তোমাকে থাকতে হবে।
মাহি আর কিছু বলল না।নিচের তাকিয়ে কথাগুলো শুনলো।আশফির এই ব্যবহারগুলো মাহির মনে সত্যি অনেক বড় আঘাত দিল। নিজের সন্তানকে কাছে রাখতে হলেও ওকে নজরবন্দী হয়ে থাকতে হবে।ও চলে সোজা আশফির চেম্বারে।এদিকে আশফি মনে মনে বলতে থাকলো,
-“আমার সামনে রাখার জন্য এর থেকে ভালো উপায় আর পেলাম না।আজকে তুমি কি করে বাড়ি ফিরে না আসো সেটা আমিও দেখবো।
চেম্বারে গিয়ে বসলাম আমি।আর আমার বউ তার মেয়েকে নিয়ে সোফার উপর বসে তাকে আদর করছে তার সাথে কথা বলছে আর মাঝেমাঝে বাকা চোখে আমার দিকে একটু তাকাচ্ছে।আর আমিও পিসিটা সামনে রেখে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
-“অসহ্যকর বিষয়।কাজ না করে ইঁদুরের মত চোখদুটো করে তাকিয়ে আছে সেই তখন থেকে।
কথাগুলো মাহি একটু জোড়ে জোড়েই বলল। আশফি মাহির কথা শুনে রেগে গিয়ে বলল,
-“কি বললে তুমি?ইঁদুরের মত চোখ আমার?
-“তার থেকেও খারাপ।
-“কি?এভাবে অপমান করছো আমাকে? ওয়েট। দেখছি আমি কার চোখ ইঁদুরের মত।
আশফি উঠে মাহির কাছে এসে দাড়াতেই চেম্বারে গভরনেস চলে এলো।
-“স্যার বাবুর খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।ওকে এখন খাওয়াতে হবে।
মাহি উঠে দাড়িয়ে গভরনেস কে বলল,
-“তো?আমি তো আছিই।আমি ওকে আমার……
কথাটা বলতে গিয়ে মাহির মনে পড়ে গেল আশনূহা এখন পাওডার মিল্ক খাই।মায়ের থেকে দুধ খাওয়ার অভ্যাস আশনূহার এখন আর নেই।নেই বলতে আশফি বাধ্য করেছে অভ্যাস ত্যাগ করতে।মাহি একবার ভীষণ রাগী আর দুঃখকাতর চোখে আশফির দিকে তাকালো।আশফি ও তখন মাহির দিকে তাকিয়ে ছিল।ব্যাপারটা আশফির কাছে খুব খারাপ লেগেছে।ও বুঝতে পারছে যে মাহি ওকে মনে মনে ঠিক কি বলছে, কতোটা কষ্ট লাগছে ওর।কিন্তু তখন রাগ আর জিদের বশে বাধ্য হয়েছিল আশনূহাকে মাহির থেকে কেড়ে নিয়ে আসতে।যেটা করা ওর একদম উচিত হয়নি। মাহিকে শাস্তির সাথে অনেকটা কষ্ট ও দিয়ে দিয়েছে আশফি।তা ও এখন খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে।ও এখন চাইছে যে করেই হোক মাহিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।ওদের দুজনের চোখে কথা বিনিময়ের মাঝেই হঠাৎ করে গভরনেস মাহির কোল থেকে আশনূহাকে নিয়ে নিল।আশফি গভরনেসকে বলল,
-“চান্দুকে ম্যামের চেম্বারে নিয়ে যাও।ওখানে ওকে নিয়ে গিয়ে খাইয়ে দাও।
গভরনেস আশনূহাকে নিয়ে চলে গেল।তখন মাহি ও চলে যাচ্ছিল চেম্বার থেকে।আশফি পিছু থেকে মাহির হাত টেনে ধরলো।তারপর বলল,
-“কোথায় যাচ্ছো?
-“চেম্বারে।
-“এখানেই থাকো।চেম্বারে যেতে হবেনা।
মাহি আশফির দিকে না তাকিয়ে আশফির কথা না শুনে ওর হাতটা ঝাড়ি দিয়ে ফেলে দিল।তারপর আবারও বেরিয়ে যেতে গেল। আশফি দ্রুত গিয়ে মাহির সামনে পথ আটকে দাড়ালো।ওকে বলল,
-“কি হলো?বারণ করছি না যেতে? আর একটু পর লাঞ্চ টাইম।লাঞ্চটা এখানেই করবে।
-“সামনে থেকে সরো।যেতে দাও আমাকে।
-“আমার মাথা গরম করোনা।চলো ওখানে গিয়ে বসো।
-“ধ্যাত!সরে যাও তো।
মাহি আশফিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। এতে আশফির ভীষণ রাগ হয়ে গেল।কোনো কথা না বলে মাহিকে টেনে ধরে নিয়ে এসে জোড় করে ধরে ধাক্কা দিয়ে সোফার উপর বসিয়ে দিল।মাহি চিৎকার করে বলল,
-“আশফি?এটা কি ধরনের অসভ্যতা?
-“অসভ্যতা? এই তুমি কি বললে?আমি অসভ্যতামি করেছি?
-“তো এটাকে কি বলে?
আশফি মাথা ঠান্ডা করে মাহির কাছে গিয়ে বসে বলল,
-“আমি তোমার কি হই?
-“কিচ্ছুনা।
-“আচ্ছা?তো চান্দুটা কোথ থেকে আসলো?
-“আকাশ থেকে।
-“তাই?ও আচ্ছা বুঝতে পেরেছি।আল্লাহ্ আকাশ থেকে ঝপ করে চান্দুকে ফেলে দিয়েছে আর তুমি টপ করে ধরে ফেলেছো।
-“ধুর!যতসব অদ্ভুত কথা বার্তা।যেতে দাও তো আমাকে।না হলে আমি কিন্তু চিৎকার করবো।
-“করো।
-“সত্যি বলছি কিন্তু।
আশফি অন্য দিকে ঘুরে বলল,
-“হুম।আমিও তো করতে বলছি।
-“আআআ…….
মাহির সাউন্ডটা চেম্বারের বাইরে যাওয়ার আগেই আশফি মাহির মুখ চেপে ধরে মাহির ঠোঁটে ওর ঠোঁট চেপে ধরলো।সেদিন রাতের মত আজকে আশফি মাহির ঠোঁটে ঠিক মাহির মত করে চুমু দিচ্ছে যে মাহিও আজ ঠোঁটে ভীষণ ব্যাথা পাচ্ছে।মাহিকে ছেড়ে দেওয়ার পর মাহি আশফিকে বলল,
-“এটাকে চুমু খাওয়া বলে নাকি পাথর দিয়ে ঠোঁট থেতলে দেওয়া বলে?
-“আমার ঠোঁট পাথরের মত?
-“সেভাবেই তো চেপে ধরেছো।
-“আর সেদিন রাতে আপনি কি করেছিলেন? লোহা দিয়ে ঠোঁট থেতলে দিয়েছিলেন।
সেদিন রাতের কথা আশফি বলতেই মাহির মনে পড়ে গেল আশফি সেদিন কি ব্যবহার করেছিল মাহির সাথে।মাহির মুখটা কালো হয়ে গেলো।আশফি ওর মুখটা দেখে বুঝতে পারলো।মাহি চুপ করে রইলো আর কোনো কথা বললোনা।লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। আশফি খুব জোড় করেই মাহিকে খাইয়ে দিল। জোড় করে খাইয়ে দিতে গিয়ে মাহির গালে মুখে খাবার পুরো জড়িয়ে গেছে।মাহি রেগে গিয়ে আশফিকে বলল,
-“এগুলো কি করলে তুমি?এটা তো অফিস তোমার বাড়ি তো না।
-“তাতে কি? অফিসটাও আমার,বাড়িটাও আমার আর বউটাও আমার।
-“হুহ।বউ!!
-“টেনশন নিওনা।ওগুলো আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি।
আশফি মাহির মুখে লেগে থাকা খাবার গুলো চেটে খেতে গেলো।মাহি বলল,
-“খবরদার।একদম এটা করবেনা।আমার কাছে আসবেনা তুমি।
এইসব ব্যাপারে আশফি কখনোই মাহির বাঁধা শুনেনা।
আশফি রেগে গিয়ে মাহিকে খুব জোড়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল।মাহি ছিটকে বিছানার উপরেই পড়লো।আর আশফি বিছানা থেকে উঠে দাড়িয়ে মাহিকে বিছানার উপর থেকে নামিয়ে ওকে রুমের বাইরে বের করে দিল। মাহি ভালো খারাপ কিছু বলার আগেই আশফি দরজাটা বন্ধ করে দিল।মাহির পৃথিবীটা যেন ওখানেই থমকে গেল,এমন একটা অবস্থা।নিরব হয়ে দরজার সামনে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ চোখের পানি ফেলল।ও ভাবছে,
-“এই কি আমার সেই আশফিটা?যার হৃদয় এতোটা কঠোর ছিলনা আমার প্রতি,যে কখনোই তার মাহিকে চোখের আড়াল হতে দিতনা।মাত্র ১০ দিনে সেদিনকার আশফি আর আজকের আশফির আকাশ পাতাল ব্যবধান।আমি বেঁচে থাকতে ওর থেকে এতোটা অবহেলা সহ্য করতে পারবোনা।কিন্তু মরে গেলে যে ওর আর আমার মেয়েটার মুখটাও কখনো দেখতে পাবোনা।
এইসব ভাবতে ভাবতে মাহি ওর বেডরুমে চলে গেল।অন্ধকার রুমে বিছানার উপরে চুপটি করে বসে পড়লো।আর ওদিকে আশফির কিছুটা সংযত হওয়ার পর ও এখন টের পেল যে রাগের বশে মাহির সাথে ও কি করেছে?
-“আমার দ্বারা আজকে এটাও সম্ভব হলো? কুকুরের মত ট্রিট করলাম ওকে আজ।যার স্থান আমার মনের সবথেকে গভীরে ছিল।যাকে ছাড়া আমার একটা দিনও বেঁচে থাকা অসম্ভব।
আর আজ এতোগুলো দিন আমি তার থেকে আলাদা ঘরে বাস করছি।যার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তাকে কাছে পাওয়ার জন্য আমি নোংরা কাজ করতেও বাধ্য হয়েছি আর আজ সে আমার এতো কাছে আছে আমাকে এতো ভালোবাসছে তবুও তাকে আমি দূরে সরিয়ে দিচ্ছি,বহুদূরে।আবার নিজেও তার কাছে যেতে পারছিনা।মানতে পারছিনা আমি সেদিনকার পরিস্থিতি গুলো।উফ এতোটা যন্ত্রণাদায়ক এই সময়গুলো।কি করছি আমি? না পারছি ওকে দূরে সরিয়ে দিতে আর না পারছি কাছে টানতে।ওকে নিয়ে এতোটা সংকটময় অবস্থাতে আমাকে পড়তে হবে তা আমার চিন্তার বাইরে ছিল।যেকোনো একটা সিদ্ধান্তে আমাকে পৌঁছাতে হবে।দূরে চলে যাব ওর থেকে।না না,অসম্ভব।এটা আমি কি ভাবছি।পারবোনা,আমি বেঁচে থাকতে সেটা কোনোদিনও পারবোনা।কিন্তু আমার মনের শান্তির প্রয়োজন।আমি আর পারছিনা ওর সাথে এভাবে চলতে।ও কতোটা কষ্টে আছে জানিনা তবে তার থেকেও শতগুণ বেশি কষ্ট পাচ্ছি আমি।সবথেকে আপন মানুষটিকে দূরে সরিয়ে রাখা কি যে কষ্টের!
তারপর আশফি ভেবেচিন্তে একটা সিদ্ধান্তে আসলো।সিদ্ধান্তটা হল আশফি কিছুদিন মাহির থেকে আর এই বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে থাকবে।কিছুদিন মাহির থেকে দূরে থাকলে মাহির প্রতি টান অনুভব করবে।মনের
ভেতরে একটা শূণ্যতার সৃষ্টি হবে ওর।তখন আর পারবেনা মাহির থেকে দূরে সরে থাকতে।কিন্তু ও এটাও ভাবছে চান্দুকে না দেখে ও কতদিন থাকতে পারবে?পরেরদিন সকালবেলা আশফি নাস্তার টেবিলে,
-“তুমি সার্ভ করছো যে?তোমার ম্যাম কি করছে?
সার্ভেন্টকে উদ্দেশ্য করে আশফি কথা বলল। সার্ভেন্ট তার উত্তরে বলল,
-“ম্যাম আজ সকালে রুমের বাইরে বের হয়নি।
আশফি সকালের নাস্তা না করেই অফিসে চলে গেল।আসলে ভালোবাসা জিনিসটাই একটা অভ্যাস।সেখানে ভালোবাসার মানুষটার কেয়ারনেস,তার কথা, তার সাথে উঠাবসা,প্রতিদিন তার মুখটা দেখা এগুলোও একটা মানুষের অভ্যাসে রূপ নেয়।আর এগুলোর একদিন তার ব্যতিক্রম হলে সেই দুটো মানুষের মাঝেই একটা দূরত্বের সৃষ্টি হয়ে যায়।অফিসে যাওয়ার ঘন্টা দুই পর বাসা থেকে আশফির ফোনে কল গেল।
-“হ্যালো,স্যার?
-“হুম বলো।কি হয়েছে?
-“স্যার! ম্যাম বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে।
-“কোথায় বেরিয়ে গেছে?আর কখন?
-“মাত্রই সে বাবুসোনাকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।সাথে কোনো গাড়ি নেইনি।
-“গাড়ি নেইনি মানে?গার্ড কোথায়?ওরা ওর সাথে যাইনি?
-“না স্যার।উনি কাউকে ওনার সাথে যেতে দেইনি।মনে হচ্ছে উনি এ বাসা ছেড়ে চলে গেল।
ব্যাপারটা আশফির ও বুঝতে বাকি নেই যে মাহি বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।আশফির এই ব্যাপারগুলো খুবই অপছন্দনীয়।ও ভাবে স্বামী-স্ত্রীর দুজনের মাঝে যাই হোক কিন্তু তাতে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া বা তার সাথে না থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া এমনধরনের জিনিসগুলো একদমই অযৌক্তিক।সেটা খুবই বাজে আর চিপ মাইন্ডের বিষয় বলে মনে হয় ওর কাছে।মাহির এই কাজে আশফি চিন্তিত না হয়ে উল্টে আরো রেগে গেলো।আশফি গার্ডগুলোকে ফোন করে বলে দিল মাহিকে খুঁজতে করতে।মাহি ঠিক কোথায় গিয়ে থাকে সেটা ওকে জানাতে বলল গার্ডগুলোকে। কিছুক্ষণ পর গার্ডগুলো আশফিকে জানালো এই শহরেই একটা এ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করেছে মাহি। সেখানেই আশনূহাকে নিয়ে থাকবে।
আশফি শুনে ফোনটা আছাড় মেড়ে দিল।
-“ছিহ্ এতোটা ন্যারো মাইন্ডেড তুমি? তোমার সাথে যে ঠিক কি করা উচিত সেটা আমি ভেবে পাচ্ছিনা।
অফিস থেকে বেরিয়ে আশফি সোজা মাহির কাছে গেল।তখন মাহি আশনূহাকে ঘুম পাড়াচ্ছিল আর আশনূহা শুধু একানাগাড়ে কেঁদেই চলেছিল। প্রতিরাতে বাবার কোলে চড়ে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস।বাবার মুখটা খুব ভালোভাবেই চিনে নিয়েছে আশনূহা।আশফি যখন ঘরে ঢুকলো মাহি তো কিছুটা আশার আলো দেখলো।হয়তো আজকে আশফি মাহিকে আগের মত কাছে টেনে নিবে।কিন্তু আশফি যে রেগে আছে তা মাহি খুব ভালোভাবেই বুঝলো ওর চোখ দেখে।
তারপরেও মাহির মনটা খুশি খুশি লাগছে যে আশফি ওকে নিতে এসেছে। আশফি মাহির কাছে গিয়ে দাড়ালো।ওকে বলল,
-“তোমাকে বলা বা করার মত আমার আর কিছুই নেই।তবে আমার মেয়েকে নিয়ে আমার অনেক কিছু করার আছে।
-“কি করতে চাইছ তুমি?আর কেনো এসেছো?
-“কেনো এসেছি তা তো এখন দেখতেই পাবে।
আশফি মাহিকে আর একটা কথাও না বলে মাহির কোল থেকে আশনূহাকে(চান্দু) নিয়ে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে গেল।
-“আশফি?এটা কি করছো তুমি?দাড়াও বলছি।
-“দাড়িয়ে থাকার মত সময় আমার নেই। আর আমার মেয়ে নিঃশ্ব বা এতিম নয় যে তাকে বাসা ভাড়া করে থাকতে হবে।তোমার থাকার হলে তুমি থাকতে পারো।
-“স্টপ ইট আশফি।তুমি কি ম্যাড হয়ে গেছো?ও আমাকে ছাড়া কি করে থাকতে পারবে?ওর এখন বাবাকে নয় মাকে প্রয়োজন।
-“আল্লাহ্ পাক সহায় থাকলে মায়ের প্রয়োজনটাও মিটিয়ে নিব।
-“তোমার বোধবুদ্ধি সত্যি লোপ পেয়েছে।তুমি কি জেনে শুনে ইচ্ছা করে আমার মেয়ের ক্ষতি করতে চাইছো?ওর এখন মাকে প্রয়োজন মায়ের থেকে খাবার প্রয়োজন।সেটা তুমি কিভাবে দিবে?কিভাবে থাকবে ও আমাকে ছাড়া?
-“যেভাবে ছিল ঐ রাত।
-“মানে?
-“ঐ রাত ও ওর মায়ের সংস্পর্শ ছাড়াই ছিল। ঠিক সেভাবেই ও থাকবে আমার কাছে।
কথাগুলো বলেই আশফি ওর মেয়েকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।পিছু থেকে মাহি ওকে অনেকবার ডাকলো ওকে আটকানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলোনা।মাহি যেন এবার সত্যি মরে যাবে এমন অবস্থা ওর।মাহি একবার ভাবছে ও ফিরে যাবে ওর বাড়িতে আবার ভাবছে না, ও কেনো যাবে?ওকে তো আশফি চাইনা।আশফি শুধু ওর মেয়েকে চাই। তাইতো শুধু ও এসে ওর মেয়েকে নিয়ে চলে গেল।একবার ও মাহিকে ওর সাথে যাওয়ার কথা বললোনা। বললোনা “মাহি আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।তোমাকে আমার প্রয়োজন।তুমি ফিরে চল আমার সাথে।”এইভাবেই মাহি চিন্তা করছিল। মাঝখানে তিনটাদিন অতিক্রান্ত হয়ে গেল। এর মাঝে আশফি মাহিকে একটা ফোন ও করেনি। কিন্তু আশফি মাহির খোঁজটা হয়তো ওর গার্ডগুলোকে দিয়ে সংগ্রহ করে।আশফি দেখতে চাই ঠিক কতদিন মাহি ওদেরকে ছেড়ে একা থাকতে পারে।আর আশনূহাকে আশফি সবসময় নিজের কাছে নিজের চোখের সামনে রাখে।বাসায় যতটুকু টাইম থাকে ততটুকু টাইম আশফি আশনূহার টেক কেয়ার করে। আর অফিসে গেলেও আশনূহাকে সাথে নিয়েই ও অফিসে যায়।সাথে একজন গভরনেস রাখে।অফিসের সময়টুকু গভরনেস হেল্প করে আশনূহাকে সামলাতে।আশফি কনফারেন্স রুমে যাবে মিটিং এ বসার জন্য। কনফারেন্স রুমে গিয়ে মিটিং শুরু করবে এমন সময় সেক্রেটারি এসে বলল,
-“স্যার মিটিং টা একটু পরে শুরু করুন।
-“কেনো?পরে শুরু হবে কেনো? মিটিং তো এই টাইমেই শুরু হওয়ার কথা ছিল।আর সবাই তো এখানে এ্যাটেন্ড আছে।
-“স্যার সবাই এ্যাটেন্ড নেই।আজকে আমাদের কোম্পানির চেয়ারম্যান আসবে।
-“চেয়ারম্যান?
-“গতকাল আপনি অফিস থেকে বাসায় চলে যাওয়ার ওনার ফোন এসেছিল আমার কাছে। আজ থেকে উনি রেগুলার অফিস জয়েন করবে।
আশফি আর কোনো কথা বললোনা।ও বুঝতে পেরেছে আজ থেকে অফিসে কে জয়েন করছে। চেয়ারম্যান এর সিট ছেড়ে ও তার পাশের সিটে গিয়ে বসলো।পাঁচ মিনিট পরই রুমে চেয়ারম্যান প্রবেশ করলো।সেক্রেটারি সহ সকর কর্মকর্তা তাকে অভিবাদন জানালো।
-“গুড মর্নিং চেয়ারম্যান।
-গুড মর্নিং এভরিবডি।আপনারা আপনার আসন গ্রহণ করুন।
চেয়ারম্যান তার সিট গ্রহণ করতে গিয়ে আশফির দিকে তাকালো।আশফি চেয়ারম্যান কে কোনো স্বাগতম জানাইনি। তার দিকে একবার তাকাইওনি।সামনে রাখা পিসির দিকে চেয়ে বসে আছে।মিটিং শেষ করে আশফি আশফির চেম্বারে গিয়ে বসলো। আশনূহাকে নিয়ে গভরনেস ওর চেম্বারেই ছিল।আশফি ওর মেয়েকে কোলে করে অফিসের বাইরের দৃশ্য দেখাচ্ছে জানালার কাছে দাড়িয়ে।এমন সময় চেম্বারে চেয়ারম্যান ঢুকল।আশফি পিছু ঘুরে তাকে দেখে গভরনেস এর কাছে আশনূহাকে দিয়ে বলল,
-“আপনি ওকে নিয়ে অফিসের বাগান থেকে ঘুরে আসুন।
-“ওকে স্যার।
-“প্লিজ টেক ইয়োর সিট মাহি চৌধুরী।সরি চেয়ারম্যান।
-“ইটস অলরাইট।ভালোই লাগছে চেম্বারটাকেও নিজের বাড়ি করে তুলেছেন।
-“হুম।একজন বাবা হওয়া মানে শুধু অর্থ উপার্জন করা নয়।তার সন্তানকে যথাযথ সময় দেওয়া,তাকে দেখাশোনা করা।
-“সুন্দর।খুবই ভালো লাগলো।
মাহি গিয়ে চেম্বারে রাখা সোফার উপর বসলো।আশফি টেবিলের সাথে হালকা বসা অবস্থার মত হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রইলো। মাহির দিকে চেয়ে আছে।
-“ফরমাল ড্রেসআপে মাহিকে বেশ অন্যরকম সুন্দর লাগছে।ভালোই মানিয়েছে ওকে। তো চেয়ারম্যান কি খাবেন আপনি?
-“অলরেডি কফি রাখা আছে এখানে।
-“ওটা হট কফি।
-“সো হোয়াট?আমি এটাই খাবো।
-“ওয়াও গ্রেট।মাত্র তিনদিনেই অভ্যাসের পরিবর্তন।ড্রেসআপ,চাইনিজ হেয়ার কাটিং,লুক অল আর এক্সেলেন্ট।
-“খুবই খুশি হলাম আপনার প্রশংসায়।
-“আমি আনন্দিত।
-“অফিসের লাভ ক্ষতির হিসাব নিকাশটা আগে আমাকে বুঝিয়ে দিন।
-“সে তো অবশ্যই।
আশফি একগাদা ফাইল নিয়ে এসে মাহির সামনে বসলো।আশফির কাছে মাহির এভাবে আগমনটা প্রথমদিকে অবাক লাগলেও এখন ও বিষয়টাকে স্বাভাবিক করেই নিয়েছে। কিন্তু এভাবে মাহির ব্যাক করার উদ্দেশ্যটা আশফি এখনো বুঝে উঠতে পারেনি।
-“এখন এটুকু পর্যন্তই থাক।বাকি হিসাবগুলো আবার পরে বুঝিয়ে দিব।
-“কেনো?এখন কি প্রবলেম।
-“আমাকে আমার মেয়ের কাছে একবার যেতে হবে।অনেকক্ষণ ও গভরনেসের কাছে রয়েছে।
-“মায়ের থেকে আলাদা করে গভরনেসের দায়িত্বে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
-“কি বললে?
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে কথাগুলো কিছুটা আস্তে করেই বলল মাহি।কিন্তু কথাগুলো খুব স্পষ্টভাবেই আশফির কানে পৌঁছালো।
-“নাথিং।ইউ হ্যাভ টু গো।বাট অনলি ফর ফিফটিন মিনিটস।
-“হোয়াট?
-“ইয়াহ্।আমার হিসাবগুলো আজকেই চাই। অফিস আওয়ার ওভার হয়ে গেলেও।
আশফি মাহিকে কিছু বলতে গিয়েও পারলোনা বলতে।কারণ এটা তো অফিস।আর তাছাড়া মাহির আবদারগুলো আশফি খুব সহজে ফেলে দিতে পারেনা।কিন্তু এখন ওদের মাঝে সম্পর্কটা যেভাবে বিস্তার করছে তাতে কে কতক্ষণ কার আবদারগুলো রাখতে পারবে তা ওরা নিজেরাও জানেনা।তবে আশফির উপর এখনো মাহির আত্মবিশ্বাসটা একটু বেশি। এখনো ও আশফিকে আগের আশফি বলেই মনে করে।আর তা যদি নাও হয়ে থাকে ওকে ও সাবেক আশফিতে পরিণত করবে।আশফি ওর মেয়েকে মাহির ধারের কাছেও নিয়ে আসছেনা।কারণ ও চাই মাহি ব্যাকুল হোক আশনূহাকে একবার কাছে নেওয়ার জন্য। ব্যাকুল হয়ে ও নিজে ফিরে আসুক ওর কাছে। আশফি লাঞ্চ টাইমে ওর চেম্বারে বসে মাহির সাথে কথা বলছে,
-“এখন তো লাঞ্চ টাইম।
-“আপনি আপনার লাঞ্চটা করে নিন।আমি ওয়েট করছি।
মাহি কথাটা বলে ফোন টিপতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।
-“আমি আপনার লাঞ্চের কথা জিজ্ঞেস করছি।
-“আমার লাঞ্চ নিয়ে আপনাকে চিন্তিত হতে হবেনা।আপনারটা আপনি করুন।
ফোন টিপতে টিপতে মাহি উ্রঠে জানালার কাছে গিয়ে দাড়ালো।মাহি মনে মনে আসলেই ব্যাকুল হয়ে পড়েছে আশনূহাকে একবার নিজের কাছে নেওয়ার জন্য।কিন্তু আশফির সামনে সেটা প্রকাশ করছেনা। আশফি মনে মনে বলছে,
-“পরিস্থিতিটা আগের মত হলে কে কার চিন্তা করবে সেটা বুঝিয়ে দিতাম।শুধুমাত্র তোমার দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য তোমাকে এমন একটা শাস্তি দেওয়া।কিন্তু তুমি যে দিনে দিনে কতোটা জেদী হয়ে উঠছো তা আমি দেখে একটু অবাকই হচ্ছি।তোমার সমস্যাটা একটা জায়গায়।যেখানে যা করা উচিত তুমি সেখানে তা না করে তার উল্টোটা করো।সবকিছু স্বাভাবিক করে নিতে হয়তো আমার একটু সময় লাগছিল।তুমি সেই ব্যাপারটা না বুঝেই একটা বিশ্রি লো মাইন্ডের কাজ করে বসলে। বাড়ি ছেড়ে একটা ভাড়া বাড়িতে গিয়ে উঠলে।
-“পিছু ঘুরে দেখি আশফি খাবারটা না খেয়ে আমার দিকে চেয়ে আছে।আমি তাকানোর পরও চোখটা সরাচ্ছেনা।ও যে কিছু বলতে চাইছে তা আমি বুঝতে পারছি।আমি ওকে বললাম,
-“কিছু বলতে চাইছেন?
-“হুম।এখানে বসুন লাঞ্চটা করে নিন।
মাহি আশফির সামনে গিয়ে নিচু স্বরে বলল,
-“এটা অফিস।নিজের গন্ডির মাঝে থাকুন।
এমন একটা কথা মাহি বলবে সেটা ও ভাবতে পারেনি।চোখে অলরেডি রাগের ছায়া দেখা দিয়েছে।আশফি উঠে চেম্বারের দরজাটা লক করে দিল।তারপর খাবারটা খুলে সেখান কিছুটা খাবার নিয়ে মাহির কাছে গিয়ে এক হাত দিয়ে ওর কোমড় টেনে ধরলো।মাহি কিছু বলতে যাওয়ার আগেই ওর মুখের মধ্যে খাবারটা পুড়ে দিল।আর তারপর মাহির মুখে ওর মুখ লাগিয়ে মাহির মুখের ভেতর থেকেই কিছু অংশ খাবার খেয়ে নিল।মুখটা মুছে আশফি মাহিকে বলল,
-“আমার গন্ডিটা কতদূর পর্যন্ত এবার দেখতে পেয়েছো?তোমার ব্যাপারে আমার গন্ডিটা যে কোনো জায়গায় ডিসার্ভ করে।হোক সেটা অফিস।
রোমান্টিক_অত্যাচার-২
পর্ব-১৮
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
-“আই জাস্ট কিল……
আশফি পুরো বাক্যটা শেষ করতে পারলোনা মাহির চোখের দিকে তাকিয়ে।মাহির চোখ বেয়ে পানি পড়ছে ব্যাথা পেয়ে।সেটা দেখে আশফি থেমে গেল।মাহির চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর মাহির গাল থেকে হাত সরিয়ে নিল।মাহির দিকে এক নজর না তাকিয়ে আশফি ড্রেসআপ পরে ড্রয়িংরুমে চলে এল।আর মাহি আশফির এমন বিহেভে এতোটা ভয় পেলো আর অবাক হলো যে ওর সামনে যদি কেউ হঠাৎ করে মার্ডার ও হতো তাহলেও হয়তো এতো পরিমাণ ভয় পেতোনা বা অবাক হতোনা।আশফি ওভাবে মাহিকে ধাক্কা দেওয়াতে মাথার পেছনে সব থেকে বেশি জোড়ে আঘাত পেয়েছে।মাথার পেছনে হাত দিয়ে চেপে ধরে রাখলো।মাহি একদম পাথরের মূর্তির মত দাড়িয়ে রইলো মাথা নিচু করে। আর চোখ থেকে শত পরিমাণ পানি পড়তে থাকলো ফ্লোরে।আশফি ওর সাথে কেন এমন করলো?কি করেছে ও যার জন্য আশফি ওর সাথে এতো খারাপ ব্যবহার করলো?এসব চিন্তাভাবনাই ঘুরছে ওর মাথায়।নিজের সাথে মাহি কথা বলতে থাকলো,
-“এমন বিহেভ আশফি আমার সাথে লাস্ট করেছে আমাদের বিয়ের প্রথমদিকে। আর আজ করলো।কিন্তু আজকে আমার কি অপরাধ ছিল,কি ভুল করেছি আমি?আমি জানতে চাই।
মাহি দৌড়ে ড্রয়িংরুমে চলে গেল।সেখানে গিয়ে দেখতে পেল আশফি সোফায় বসে টিভি দেখছে।যেটা ছিল অবিশ্বাস্য।কারণ আশফি এমন সময় কখনোই টিভি দেখেনা।মাহির কাছে সবকিছু অস্পষ্ট লাগছে।এমন কিছু ও করেছে যার জন্য আশফি এতো পরিমাণ রেগে আছে। মাহি ওর প্রশ্নগুলো করার জন্য যখন আশফির কাছে গেল ঠিক সেই মুহূর্তে টিভিতে নিউজ চ্যানেলে এমন কিছু নিউজ দেখালো যা দেখে মাহির মাথা ঘুরে যাওয়ার মত অবস্থা।মাহি দেখতে পাচ্ছে হুয়াং চ্যাং এর সাথে ওর বেশকিছু ছবি যেখানে হুয়াং ওর সাথে কিছুটা ক্লোজ হয়ে বসে আছে।আর মাহি হুয়াং চ্যাং এর কোম্পানির সাথে একটা ডিল কমপ্লিট করেছে যেখানে মাহি নিজে ঐ ডিলের পেপাড়ে সাইন করছে।আর সব শেষে দেখতে পেল গতকাল রাত থেকে হুয়াং নিখোঁজ।
এগুলো দেখে মাহি পুরো হতভম্ব হয়ে সোফার উপর বসে পড়লো।গতকাল ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো মাহি মনে করার চেষ্টা করলো।কিছুটা মনে পড়লেও পুরো ঘটনাটা মাহি মনে করতে পারলোনা।ওর শুধু এটুকুই মনে আছে কাল বিকালে হুয়াং এর সাথে তার পার্টিতে গিয়েছিল তারপর ডিনার শেষে একটা মেয়ে তাকে ড্রিংকস খেতে দিয়েছিল যেটা খাওয়ার পর থেকে মাহির মাথা ঝিম ধরে গেছিল।এরপর ওর সাথে কি হয়েছে ও আর কিছুই মনে নেই। নিউজ দেখার পর আশফি ওর দিকে একবারও না তাকিয়ে উঠে বেডরুমে চলে গেল।
-“এর জন্যই আশফি আমার উপর এতোটা রেগে আছে?
হঠাৎ একটা সার্ভেন্ট আসলো চান্দুকে কোলে করে।
-“ম্যাম!বাবুসোনা তো ঘুম থেকে উঠে গেছে। খুব কান্না করছে।আসলে কাল বিকালের পর থেকে আপনার থেকে ও খাবার পাইনি।রাতে স্যার বহু কষ্টে ওকে পাওডার মিল্ক বানিয়ে খাইয়েছে একটু।এখন ওর আপনার থেকে খাবার প্রয়োজন।না হলে ও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।
মাহি সার্ভেন্টের কথা শুনে এতোটা চমকে গেলো যে মনে হল আকাশ থেকে পড়লো ও।
-“কি বলছো তুমি?কাল রাতে ও পাওডার মিল্ক খেয়েছে?কেনো আমি কোথায় ছিলাম তখন?
-“ম্যাম কাল রাতে তো আপনি…..
সার্ভেন্ট কথাটা বলতে গিয়ে থেমে গেলো।তখন মাহি বলল,
-“কাল রাতে আমি কি?চুপ করে গেলে কেনো?
বলো?
-“কাল রাতে আপনি পুরো ড্রাংক অবস্থায় ছিলেন।
-“ড্রাংক অবস্থায় ছিলাম?আচ্ছা কাল আমি কখন বাসায় ফিরেছি, কি অবস্থায় ফিরেছি তুমি তো সবকিছু জানো।তোমার স্যার কখন ফিরেছে কাল?কাল রাতের ঘটনাগুলো আমাকে একটু বলো তো।
তারপর সার্ভেন্টটি মাহিকে কাল রাতে ঘটে যাওয়া সবকিছু বলল।মাহি শুনে কি করবে কিচ্ছু বুঝে উঠতে পারছেনা।শুধু একনাগাড়ে কান্না করে চলেছে।
-“এখন বুঝতে পারছি আশফি কেনো এতোটা রেগে গেছে।আমি ওকে কতোটা কষ্ট দিয়েছি।যে কখনোই আমার কষ্ট সহ্য করতে পারেনা সে আজ আমাকে নিজে আঘাত করেছে।কোনো বাইরের পুরুষ আমার হাতটা সামান্য ধরলে যে পরিমাণ রেগে যায় সেখানে কাল রাতে আমাকে অন্য এক পুরুষের সাথে একই বিছানায়….ছিঃ।আমার তো এখন মরে যেতে ইচ্ছা করছে।মরলেও হয়তো আমার শান্তি হবেনা।
-“ম্যাম বাবুসোনাকে এখন একটু তাড়াতাড়ি খাইয়ে দিন।কাল থেকে খুদাতে খুব কষ্ট পাচ্ছে।
মাহি জলদি সার্ভেন্টটার থেকে চান্দুকে নিয়ে ফিডিং করালো।এরপর অনেকক্ষণ চান্দুকে নিজের কাছে রাখলো ওকে আদর করলো।
-“মামনি, আমি তোকে কাল খুব কষ্ট দিয়েছি। তুই আমাকে মাফ করে দে সোনা।আমি আর কোনোদিনও এমন ভুল করবোনা।এতো বড় পাপ করেছি আমি জানিনা স্বয়ং আল্লাহ্ আমাকে ক্ষমা করবে কিনা।তোর বাবাকে ও আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি।ওর সামনে দাড়াতেই আমার বিবেকে বাঁধছে।কোনোদিন আমি ওকে এমন একটা ব্যাপারে কষ্ট দিব তা আমি জীবনেও ভাবিনি।ওর সাথে আমার কথা বলতে হবে।ওর থেকে যেভাবেই হোক আমার ক্ষমা চাইতে হবে।ওর রাগ ভাঙ্গাতে হবে।
মাহি চান্দুকে সার্ভেন্টের কাছে দিয়ে আশফির কাছে গেল।বেডরুমে ঢুকে দেখতে পেল আশফি বেলকনিতে দাড়িয়ে কিছু একটা করছে।ওর কাছে গিয়ে মাহি দেখলো গানটাতে গুলি লোড করছে।সেটা দেখে মাহির প্রাণটা উড়ে যাওয়ার মত অবস্থা।মাহি দৌড়ে গিয়ে ওর হাত থেকে গানটা নিয়ে নিল।
-“আশফি তুমি এটা নিয়ে কি করতে চাচ্ছ?
আশফি মাহির দিকে চোখগুলো বড় বড় করে রাগী চোখে তাকালো।মাহির কিছুটা কাছে গিয়ে দাড়ালো আশফি।মাহির দিকে তাকিয়ে মাহির হাত থেকে এমনভাবে গানটা কেড়ে নিল যে মনে হলো আশফির কোনো জিনিস ধরার মত অধিকারই মাহির নেই।গানটা নিয়ে আশফি বেলকোনি থেকে চলে এলো।মাহি পিছু থেকে ওকে ডাক দিল তখন।
-“আশফি?আমার সাথে প্লিজ কথা বলো।
আশফি গিয়ে বিছানার একপাশে বসলো পিসিটা হাতে করে।আর পাশে গানটা রেখে দিল।মাহি গিয়ে আশফির পায়ের কাছে বসে পড়লো।তারপর আশফির কোলের উপর মাথা রাখলো।মাথা রেখে কান্না করে দিল।হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো।কাঁদতে কাঁদতে আশফিকে বলল,
-“আশফি প্লিজ আমার সাথে কথা বলো। আমাকে পারলে আরো বেশি করে আঘাত করো।কিন্তু এভাবে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখোনা,আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিওনা।আমি থাকতে পারবোনা এভাবে।মরে যেতে ইচ্ছা করছে আমার।আমি ভাবিনি এভাবে তোমাকে আমি কষ্ট দিব।বিশ্বাস করো আমি জানতাম না ও আমাকে মিথ্যা বলেছে।
আশফি মাহির একটা কথার ও উত্তর দিলনা। গানটা হাতে করে মাহির কাছ থেকে উঠে চলে আসছিল। মাহি উঠে দৌড়ে গিয়ে আশফিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
-“আশফি প্লিজ আমার সাথে এমন করোনা। আমাকে মাফ করে দাও।তুমি তো জানো আমি জেনে বুঝে কখোনই এমন ভুল করবোনা। আমি জানি তোমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।তোমার যত রাগ আছে সব আমার উপর ঝেড়ে ফেলো। আমাকে আরো আঘাত করো আমাকে অনেক মাড়ো।তবু আমার সাথে কথা বলো।এবার আশফি সামনে ঘুরে মাহিকে টেনে কাছে নিয়ে ওর ঘাড় চেপে ধরে ওর কপালে গানটা ঠেঁকিয়ে ধরলো।মাহি খুব চমকে গেল আর প্রচন্ড ভয় পেল।ও শুধু আশফির দিকে তাকিয়ে থাকলো কোনো কথা বলতে পারলোনা।আশফি বলল,
-“আমি যদি সত্যি পারতাম তাহলে এতক্ষণে তোমার শরীরটা আগে গুলি করে ঝাঝরা করে ফেলতাম।সেটাও করতে পারছিনা আবার নিজেকেও শেষ করতে পারছিনা।শুধু তখন থেকে চেষ্টায় করে যাচ্ছি।গানটা কাল রাতে ফাঁকা করে ফেলেছি।আবার লোড করেছি নিজেকে শেষ করবো বলে।
-“তোমার যদি আমাকে এতো ঘৃণা হয় তাহলে আমাকে শেষ করে দাও।কিন্তু নিজের কোনো ক্ষতি করবেনা তুমি।তোমার মেয়ের কসম করে বলছি।
আশফি মাহির কপাল থেকে গানটা সরিয়ে নিয়ে রুমের বাইরে চলে যাচ্ছিল।মাহি দৌড়ে গিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দিল।মাহির এখন ভীষণ ভয় করছে যদি আশফি নিজের কোনো ক্ষতি করে বসে?দরজা বন্ধ করা দেখে আশফি বলল,
-“আমাকে যেতে দাও।না হলে সত্যি কোনো অঘটন ঘটে যাবে।
-“ঘটে যাক।আমার সাথে সেটা ঘটুক।তোমাকে আমি একা ছাড়বোনা।তোমার কোনো ক্ষতি আমি হতে দিবনা।
-“হাহ্….আমার জীবনের সব থেকে বড় ক্ষতি তো কাল রাতেই হয়ে গেছে।
-“কি বলছো তুমি এগুলো?কি ক্ষতি হয়েছে তোমার?ও তো আমার কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।হ্যা হয়তো চেষ্টা করেছিল কিন্তু সেটা তো আমার মাতাল অবস্থায়।আমি সুস্থ থাকলে এমন কিছু হতোনা আশফি।বুঝতে চেষ্টা করো আমি তখন আমার নিয়ন্ত্রনে ছিলাম না।আমি যদি জানতাম কাল ও আমাকে মিথ্যা বলেছে তাহলে আমি কি ওর সাথে যেতাম?ও ওর স্বার্থ হাসিলের জন্য এমন একটা কাজ করেছে।তুমি আমাকে ভুল বুঝছো আশফি।আমি ইচ্ছাকৃত ভাবে ওর সাথে পার্টিতে যাইনি।আমি বুঝতে পারেনি যে…..
-“এই?তুমি কি বুঝতে পারোনি?হ্যা?কোনটা বুঝতে পারোনি?স্বামীকে রেখে, স্বামীর পারমিশন না নিয়ে, তাকে না জানিয়ে একটা অপরিচিত লোকের সাথে একটা অচেনা জায়গায় চলে যেতে হয়না সেটা বুঝতে পারোনি?
-“আমি তোমাকে বহুবার কল করেছি কিন্তু তুমি ফোনটা রিসিভ করোনি।আর ও আমাকে বলেছিল যে তুমি আমাকে যেতে বলেছো ওর সাথে। সেটা তুমি ওকে ফোনে জানিয়েছো ২:১০ এ।আর আমার সাথে তোমার কথা হয়েছিল ঠিক দুটোর সময়।তারপর থেকে তোমার ফোন সুইচড অফ।আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছিলাম ওর কথাগুলো।
-“কেমন বিশ্বাস তোমার?যে যাকে তুমি কোনোদিন চেনোনা,যাকে কোনোদিন দেখোনি তার সাথে কোনোদিন কথা বলোনি আর তার বলা কয়েকটা কথা তুমি এতো ইজিলি বিশ্বাস করে নিলে?কেমন সেন্স তোমার?পার্টিতে যাওয়ার পর ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটিয়ে দিলে।একবারো তোমার মনে পড়লোনা যে বাড়িতে তুমি চান্দুকে একা রেখে গেছো। ও কতটুকু সময় না খেয়ে থাকতে পারবে সেটা তোমার খেয়ালে আসলোনা।তুমি কিনা একজন সার্ভেন্টের উপর দায়িত্ব দিয়ে গেছো ওর।
-“আশফি আমি ওখানে যাওয়ার পর থেকে সবাই আমাকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছিল যে আমি সুযোগ পাইনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসার।তারপর যখন ওদের থেকে ফ্রি হতে পেরেছি তখন গার্ডগুলোকে খুঁজে পাইনি।
-“শাট আপ ব্লাডি ফুল।তোমার যদি সত্যি দায়িত্ব জ্ঞান থাকতো তুমি শত ভীড়ের মাঝেও সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারতে।এসব অযৌক্তিক কথা আমাকে বলতে আসবেনা। আর কি বললে,তুমি আমাকে বহুবার ফোন করেছো তা আমি রিসিভ করতে পারিনি। আমি যখন রিসিভ করতে পারিনি তখন তোমার উচিত ছিল আমার সেক্রেটারির কাছে ফোন করা বা মেসেজ করা।সেক্রেটারি ফোন রিসিভ না করলে আমি যে ওখানকার অফিসে গিয়েছিলাম সেখানকার অফিসিয়াল নাম্বারে ফোন করা।এটলিস্ট আমাকে মেসেজ করে রাখতে পারতে।পরে দেখলেও আমি সেই মোতাবেক কোনো স্টেপ নিতে পারতাম। তার কোনোকিছুই তুমি করোনি।তুমি কি টিনেজার?তোমার কি বোধবুদ্ধি হয়নি? তুমি কি একদমই অবুঝ?তুমি তোমার বোধবুদ্ধির যে পরিচয় দিয়েছো তা কি আদৌ গ্রহণযোগ্য?তোমার থেকে সেগুলো আশা করার মত?কি বলবে তুমি আমাকে?কি বোঝাবে তুমি আমাকে? তুমি যা করেছো আর যা দেখিয়েছো আমাকে তা যদি আমার জায়গায় তুমি দেখতে, বুঝতে পারতে আমার ভেতরটা তুমি কিভাবে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছো।মামনি মারা যাওয়ার পর এটাই আমার ৪র্থ তম আঘাত।মামনি,বাবা-মা মারা যাওয়াতে যতটা আঘাত পেয়েছি এটা তার থেকে কোনো অংশে কম নয়।
আশফির চোখে পানি চলে এসেছে।তবে সেটাকে চোখ বেয়ে গড়াতে দেইনি।আশফি মাহিকে বিছানার দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখালো। তারপর বলল,
-“এই বিছানায় ঠিক এই জায়গাটাতে তুমি শুয়ে ছিলে আর তোমার শরীরে উপর ঐ জানুয়ারের বা** তোমার শরীরকে……
-“আশফি থামো,আমি শুনতে পারছিনা। আমার শরীর শিউড়ে উঠছে।
মাহি কান চেপে ধরে বলল কথাগুলো।
-“আমার কেমন লাগছে তাহলে?আমি কিভাবে সহ্য করবো মাহি?
আশফি এবার মাহির সামনে দাড়িয়ে ওর মিকে চেয়ে কথাগুলো বলতে শুরু করলো।
-“ও যদি জোড় করে ঢুকে তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করতে চাইতো তাহলে আমি আমার মনকে বুঝ দিতে পারতাম।কিন্তু ও তো সুযোগ বুঝে তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে।সেই সুযোগ করে দিয়েছো তুমি তোমার কিছু ভুল পদক্ষেপের মাধ্যমে।যা তোমার থেকে আনএক্সেপটেবল ছিল।
মাহি কিছু বলার মত ভাষা খুঁজে পাচ্ছেনা।কি বলে বোঝাবে মাহি আশফিকে?বোঝানোর মত কোনো উপায় বা ফাঁক ও রাখেনি।
-“এতোটা কেয়ারলেস,এতোটা ইররেসপন্সেবল,
এতোটা সিলিনেস এর পরিচয় দিয়েছি আমি যা আমার থেকে সত্যিই আশা করার মত নয়।
কিন্তু ঐ মুহূর্তে সত্যি আমার মাথায় এতোসব আইডিয়া কাজ করেনি।অনেক বড় ভুল করেছি আমি।আমাকে তার শাস্তি দাও,আশফি।কিন্তু আমাকে তোমার দূরে সরিয়ে দিওনা।আমি মরে যাবো।
আশফি কোনো কথা বলছেনা।মাহির চোখের দিকেও তাকাচ্ছেনা।আশফি মেনে নিতে পারছেনা মাহি এমন একটা ভুল কিভাবে করতে পারলো।এতোগুলো বছরে কাল মাহি সব থেকে বেশি আঘাত করেছে আশফিকে।যা একজন স্বামীর কাছে তা খুব যন্ত্রণাদায়ক।এমন ভুলের জন্য আশফি মাহিকে কি শাস্তি দিবে তা ও জানেনা।তবে মাহির ভুলের বিনিময়ে আশফি অনেক বেশি শাস্তি পাচ্ছে অন্তরে।আশফি বরাবর ই মাহিকে নিয়ে সব থেকে বেশি possessive. মাহির হাজার হাজার ভুলত্রুটি আশফি ক্ষমা করে দিতে পারলেও কিন্তু গতকাল রাতে করা মাহির ভুল তা ও কখনো ক্ষমা করতে পারবে কিনা সেটা ও জানেনা। কারণ ভাগ্যবশত আশফি ওখানে না পৌঁছালে মাহির সত্যি অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতো।আর আশফি শুধু এটাই ভাবছে।আরো সব থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছে কাল সারাটা রাত চান্দু খুদাতে কষ্টা পাওয়া দৃশ্য দেখে।ওর জীবনে এই দুইজন ব্যক্তিই আছে যাদের জন্য ও নিজের কলিজাটাও ছিড়ে দিতে পারবে।ও ভুলতে পারছেনা কাল রাতের ঐসব দৃশ্যগুলো।আজ আশফি অফিসে গেছে ঠিকই।কিন্তু অফিসের কোনো কাজই সে করতে পারেনি।সারারাত জেগে থাকা আর কাল রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনার স্ট্রেস এসব মিলিয়ে আশফির শরীর একটু দুর্বল হয়ে পড়েছে।চেয়ারে বসে হেলান দিয়ে আশফি চোখ দুটো বন্ধ করে আছে।ঘুমেও চোখ দুটো আবৃত হয়ে গেছে।সেক্রেটারি রুমে ঢুকে আশফিকে এমন অবস্থায় দেখে কিছু না বলেই চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেল।কিছুসময় বাদে একটা ফোন এসে আশফির ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিল। জেগে উঠে আশফি আজকে বহু কষ্টে অফিসিয়াল শেষ করে বাসায় ফিরে এল।আর মাহি এদিকে সারাদিন আশফির কথা চিন্তা করে দিন পার করে দিল।ড্রয়িংরুমে বসেছিল মাহি সন্ধ্যার সময়।তখন আশফি বাসায় ঢুকলো।মাহি উঠে দৌড়ে আশফির সামনে গেল।কিন্তু আশফি মাহিকে এড়িয়ে বেডরুমে চলে গেল।
-“আজকে ওর চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে কাল সারাটা রাত আর আজ সারাটাদিন ওর শরীর আর মনের উপর দিয়ে কি গেছে।কিন্তু ও আমাকে যতই এড়িয়ে চলুক আমি ওকে কখনোই একা থাকতে দিবনা।আমি বেডরুমে গেলাম ওর শরীর মুছে দেওয়ার জন্য।কিন্তু ও তো আমাকে যেভাবে এড়িয়ে চলছে তাতে আমি ওর ধারের কাছেই ঘেষতে পারছিনা। ড্রেস চেঞ্জ করে বাথরুমে চলে গেল শাওয়ার নিবে বলে।আধা ঘন্টার মত হয়ে গেছে বাথরুম থেকে বেরোনোর খবর নেই।এতো সময় লাগেনা ওর গোসল করতে।হয়তো আমার সামনে থাকতে ইচ্ছা করছেনা বলেই এভাবে আমাকে এভোয়েড করছে।আলমারী থেকে ওর টি শার্ট আর ট্রাওজারটা বের করে রাখলাম।ও বাথরুম থেকে বেরিয়ে বিছানার উপর থেকে ওগুলো নিয়ে পড়ে নিল।তারপর ওর পিসি আর মোবাইল ফোনটা নিয়ে অন্য রুমে চলে গেলো। আমি ওর পিছু পিছু গেলাম কিন্তু আমি রুমে ঢোকার আগেই ও দরজা বন্ধ করে দিল।আমি বহুবার দরজা নক করলাম।
-“আশফি?দরজাটা বন্ধ করলে কেনো?প্লিজ দরজাটা খুলো।তুমি আমাকে ছাড়া রাতে ঘুমাতে পারবেনা আমি সেটা জানি।তোমার মেয়েও তোমাকে ছাড়া ঘুমাতে পারবেনা। তুমি ঘুম পাড়িয়ে না দেওয়া পর্যন্ত ও কিন্তু ঘুমাবেনা।
আশফি একটা কথাও বলল না।ও এতোটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে যে শুয়ে পড়ার কিছুক্ষণের ভেতরেই ও ঘুমে তলিয়ে গেল।আর মাহি রুমের সামনে বসেই কাঁদতে শুরু করলো।
-“এতোটা খারাপ পরিস্থিতি আমার জীবনে কখনো আসবে তা আমি ভাবতে পারিনি।
আমার জীবনের এমন সর্বনাশ যে করেছে তাকে আমি রক্ষা পেতে দেবোনা।ওর জন্য আমার আশফি আমার থেকে এতো দূরে সরে যাচ্ছে,ওকে তো ছেড়ে দেওয়ার কোনো মানেই আসেনা।
মাহি চোখ মুখ থেকে পানি মুছে সোজা ওদের বেডরুমে চলে গেল। ড্রয়ার থেকে আশফির গান টা বের করলো। আজকে যেনো মাহির রাগটা আশফির মতই দেখাচ্ছে।গান টা হাতে নিয়ে গাড়িতে উঠে মাহি বেরিয়ে গেল।কিন্তু সেটা জোরপূর্বক। সিকিউরিটি ওকে যেতে দিতে চাইছিলনা।ওরা দেখতে পেয়েছে মাহি অস্বাভাবিক অবস্থায় বের হচ্ছে।এদিকে সার্ভেন্ট গুলো ও মাহিকে এভাবে বেরিয়ে যাওয়া দেখে আশফিকে ডাকতে শুরু করলো।ওদের ডাক আশফির কান পর্যন্ত না পৌছালেও সিকিউরিটির ফোন পেয়ে ওদের কাছ থেকে সবকিছু শুনে আশফি বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠলো।যেমন অবস্থাতে ছিল ঠিক তেমন অবস্থাতেই আশফি গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে গেল।মাহি যে গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিল তার থেকে দ্বিগুণ গতিতে আশফি গাড়ি চালিয়ে একটা ফাঁকা ব্রিজের উপর থেকে মাহিকে আটকালো।আশফি গাড়ি থেকে নেমে মাহির গাড়ির কাছো গিয়ে গাড়ির দরজা খুলল।
-“গাড়ি থেকে নামো।মাহি আমি খুব আস্তে করে বলছি গাড়ি থেকে নামো।
মাহি আশফির কথা শুনছিলনা।আশফি মাহিকে জোড় করে গাড়ি থেকে নামিয়ে ওকে টেনে ধরে কিছুদূর গেলো।সমুদ্রের সামনে গিয়ে একটা Boat ভাড়া করে মাহিকে সেখানে উঠিয়ে সমুদ্রের মাঝে গেল।এগুলো দেখে মাহি খুব অবাক হচ্ছিল।কিন্তু কিছু বলছিলনা।এবার আশফি কথা বলল,
-“ঠিক এখানে দাড়িয়ে ঐ কুকুরের বুকে আমার গানের ছয়টা গুলি গেঁথে দিয়েছি।তারপর সমুদ্রর মাঝে ওকে ফেলে দিয়েছি।ইচ্ছা ছিল কুকুরকে দিয়ে ওর বডিটা খাওয়াবো।কিন্তু সেটা করতে গেলে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যেতে হতো।আর এখন তুমি এটা(গান) নিয়ে যেভাবে ওর বাড়িতে ছুটে যাচ্ছিলে তাতে খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে পুলিশের হেফাজতে যেতে হতো কিংবা আমাকে যেতে হতো।সেটা চাইছিলে তুমি?
মাহি শুধু আশফির বলা কথাগুলো শুনছে আর চোখদুটোতে পানি ছলছল করছে ওর।কাল রাতে ও কতোটা ক্ষিপ্ত হয়ে গেছিল যে এক মুহূর্ত সময় ও দেরী করেনি হুয়াংকে মাড়তে।ওর রাগ সম্পর্কে মাহি জানে।হয়তো রাগের বশে ঐ মুহূর্তে মাহিকে ও আশফি কিছু করে ফেলতে পারতো। কিন্তু আশফির রাগের বশে নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললেও মাহির কোনো ক্ষতি ও কোনোদিন করতে পারবেনা।সেটা মাহি ও খুব ভালো করে জানে আর আশফি ও।
বেশ কিছু সময় ওরা কেউ কোনো কথা বলল না।আশফি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে থাকলো আর মাহি আশফির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো।সমুদ্রের মাঝে যে পরিমাণ বাতাস তাতে দুজনের শরীরে শীতে কাঁপুনি ধরার মত অবস্থা।মাহি হঠাৎ করে আশফিকে জড়িয়ে ধরলো।আর বলল,
-“আমার খুব শীত করছে।আমাকে একটু জড়িয়ে ধরো না।
-“ওর গরম নিঃশ্বাস আমার গলায় লাগছে।ওর ছোঁয়া আমার শরীরে শীতের তীব্র অনুভুতির থেকেও বেশি তীব্র অনুভূতি জাগাচ্ছে। ইচ্ছে করছে ওকে জড়িয়ে ধরতে।কিন্তু পারছিনা। স্পর্শ করতে পারছিনা ওকে আমি।
আশফি মাহিকে একটুও জড়িয়ে ধরলোনা। সামনে দূর সমুদ্রের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকলো।সমুদ্র সৈকতের নিকটবর্তী শহরটা ও আর দেখা যাচ্ছেনা এখন।মাঝে মাঝে কিছু জাহাজ আর বোটের লাইটের আলো এসে পড়ছে সমুদ্রের মাঝে।অনেক দূরে চলে এসেছে ওরা।মাহি এভাবেই বেশ কিছুক্ষণ আশফিকে জড়িয়ে ধরে থাকলো।হঠাৎ করেই আশফি মাহিকে ছাড়িয়ে দিল।তারপর ওবে বলতে শুরু করলো,
-“শরীরের কোনো জায়গা পুড়ে গেলে সেখানে একটা ক্ষত সৃষ্টি হয়ে যায়।খুব ব্যাথা অনুভব হয়।সেই জায়গাটাতে আজীবন একটা পোড়া দাগ থেকে যায়।কিন্তু সেখানে ব্যাথা থাকেনা। তখন সেই পুড়ে যাওয়ার স্মৃতিটা ভুলে যাওয়া যায়।ব্যাথার কথা ভুলে যাওয়া যায়।আমার অন্তরে কাল রাত থেকে আগুন লেগে গেছে। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে গেছিল।
অনেক চেষ্টা করে সেই আগুন থামিয়েছি।কিন্তু সেখানে ক্ষত সৃষ্টি হয়ে গেছে।ব্যাথা অনুভব করছি এখনো।জানিনা কবে এই ব্যাথা কমবে। যেদিন এই ব্যাথা কমবে সেদিন ই পুড়ে যাওয়ার কথা ভুলতে পারবো।
-“জানি তোমার অন্তর পুড়ে যাওয়া ব্যাথার ভাগ আমি নিতে পারবোনা।কিন্তু তুমি চেষ্টা করলে এই পুড়ে যাওয়া অন্তরটাকে আবার ভালো করতে পারো।পারো আমাকে ক্ষমা করে দিতে।
-“চেষ্টা করেও যে কিছু হচ্ছেনা।মনে পড়ে যাচ্ছে তোমার মুখটা দেখে, বেডরুমের ঐ বিছানাটা দেখে।মাহি আমাকে প্লিজ নিজের মাঝে কিছুদিন থাকতে দাও।বারবার এভাবে সিনক্রিয়েট করে আমার ভেতরটাকে আর অশান্ত করে দিওনা।তুমি শত সহানুভূতি, শত আবেগ, শত ভালোবাসা দেখালেও আমার মনকে স্থির করতে পারবেনা।কারণ আমি নিজে যদি কোনোকিছু ভুলতে না পারি।
এগুলো শুনে মাহি আর একটা কথাও বলল না। মাহি জানে আশফির হৃদয়টা এমনই।একবার সেখানে ওর নিজের মানুষের থেকে বড় কোনো আঘাত পেলে তা থেকে ও নিজেকে খুব সহজে বের করতে পারেনা।ভুলতে পারেনা সেই আঘাত।কিছু কিছু মানুষকে বিধাতা এভাবেই সৃষ্টি করেছে হয়তো।মাহির মনে পড়ছে বিয়ের আগের কথা।আশফি তখন কতোটা রাগী আর জেদী থাকলে মাহিকে বদনাম করে ওর সাথে বিয়েতে রাজী করাতে পারে।যেদিন মাহি আসিফের সাথে প্ল্যান করে আশফির থেকে দূরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেদিন রাতে দেখেছিল আশফির ভয়ানক রাগ।কি অবস্থা করেছিল মাহির সেদিন রাতে।সেই আশফির ধৈর্যক্ষমতা তখন খুব কম ছিল।মাহির ভালোবাসা অর্জন করার পর সেই ক্ষমতা বহুগুণ বেড়েছে।কিন্তু সেই আশফির তখন যা রাগ, জেদ আর অভিমান ছিল এখনো তা ওর মাঝে আছে ঠিক আগের মতই।একটুও পরিবর্তন হয়নি সেগুলো।সমুদ্র থেকে মাহিকে নিয়ে আশফি বাসায় ফিরল।কিন্তু মাহির বেডরুমে গেলনা।মাহি এখন ভাবছে,
-“আমার এখন কি করা উচিত? কি করলে আমি ওর সবকিছু ঠিক করতে পারবো?
এগুলো ভেবেই মাহি সারাটা রাত কাটিয়ে দিল।একটুও ঘুমালোনা।তারপরের দিন থেকে ওদের মাঝে দূরত্বের পরিমাণটা যেন বেড়েই চলছিল।শত চেষ্টা করেও মাহি আশফির কাছে যেতে পারছিলনা।সেদিনের পর থেকে আশফি আর আগের আশফি নেই।চেহারায় বিষণ্নতার ভাব সবসময় থাকেই।অফিস থেকে বাসায় ফিরে চান্দুর সাথে সময় কাটিয়ে অফিসের কাজ সেড়ে অন্য রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।ঘুমিয়ে পড়ে বললে ভুল হবে।ঘুমানোর চেষ্টা করে।কোনো কোনো দিন ব্যার্থ হয় আবার কোনোদিন জয়ী হয় সেই চেষ্টায়।মাহির অবস্থাও ঠিক একইরকম।আজ ৮ টা দিন আশফি মাহির মুখের দিকেও তাকাইনা।
এগুলো মাহি সহ্য করতে পারছিলনা।তাই ও ভাবল এখন আগের থেকেও আরো বেশি জোড় জুলুম শুরু করবে আশফির উপর।হোক সেটা লিমিট ক্রস। একদিন রাতের ঘটনা।তখন রাত প্রায় ১২:৩০ টা বাজে।মাহি চান্দুর পাশে একটা সার্ভেন্টকে থাকতে বলে চলে গেল আশফির বেডরুমে।
-“ওর রুমে ঢুকে দেখলাম ও কপালের উপর হাত রেখে চোখটা বন্ধ করে শুয়ে আছে।রুমের লাইটাও অফ করেনি।আমি রুমের লাইটটা অফ করে দিলাম আর জানালা খুলে দিলাম। সেদিন রাতে চাঁদের আলোর তেজটা একটু বেশি ছিল।স্পষ্ট ওর মুখটা দেখা যাচ্ছিল।কিন্তু ও চুপচাপ শুয়ে রয়েছে।চোখটাও খুলছেনা।এমন বিভোরে ঘুমাচ্ছে ও?আমি আর কিছু না ভেবে সোজা ওর বুকের উপর গিয়ে শুয়ে পড়লাম।
আশফি ঘুমের মধ্যে কিছুটা চমকে উঠলো।বুকের উপর ওর স্পর্শ পেতেই আশফির ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।জেগে উঠে আশফি মাহিকে বলল,
-“মাহি?আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।উঠো।
-“না।তুমি তো কতোই আমাকে বুকের মধ্যে নিয়ে জড়িযে ধরে ঘুমিয়েছো। আজও ঘুমাবে।
-“আজ আমার এভাবে ঘুম আসবেনা।
-“তাহলে ঘুমাতে হবেনা।
-“বাচ্চাদের মত কি শুরু করেছো? উঠো আমি ঘুমাবো।
-“স্বামীর আদর সোহাগ পাওয়ার জন্য যদি আমার ব্যবহার তোমার কাছে বাচ্চাদের মত মনে হয় তাহলেও আমার কিছু যায় আসেনা।
-“মাহি?কাল সকালে আমার অফিস আছে।আমাকে ঘুমাতে হবে।আমার সত্যি খুব ঘুম পাচ্ছে।
-“এভাবে রেগে বললে তো আমি শুনবোই না। আর তোমার খুব ঘুম পাচ্ছে?ওয়েট তোমার ঘুম কাটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।
কথাগুলো শেষ করেই মাহি ঝাপিয়ে পড়লো আশফির উপরে।পাগলের মত আশফির মুখে চুমু খেতে শুরু করলো।আশফির ঠোঁটজোড়াতে ও জোড় করে চুমু খেতে শুরু করলো মাহি।এদিকে আশফি ঠোঁটে যে ব্যাথা পাচ্ছে মাহি তা বুঝতে পারছে তবু ছাড়াছাড়ির কোনো খবর নেই। এক পর্যায় মাহি পুরো পাগলের মতই শুরু করলো আশফির সাথে।আশফি যতবারই মাহিকে হাত দিয়ে দূরে সরানোর চেষ্টা করছে মাহি ঠিক ততবারই আশফির হাত চেপে ধরছে।কিন্তু এমন অবস্থাতে সেখানে যদি কোনো ছেলের ইচ্ছা না থাকে তাহলে একটা মেয়ে হাজার চেষ্টা করলেও তার থেকে কোনো এডভান্টেজ নিতে পারেনা।আশফির ভেতর কোনো প্রকার কোনো ফিলিং কাজ করছিলনা তাই ও বারবার মাহিকে দূরে সরানোর চেষ্টা করছিল।কিন্তু মাহিকে ও থামাতে পারছিল না।মাহির এসব কাজে আশফির আরো রাগ হচ্ছিল।তারপর এক সময় আশফি মাহির সাথে যা করলো তা মাহি কখনো ভাবতেও পারেনি।
রোমান্টিক_অত্যাচার -২
পর্ব-১৭
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
-“ঠিক কখন ফিরবেন জানতে পারি?
-“সত্যি কথা বলবো?
-“মিথ্যা শুনতে চাচ্ছিনা নিশ্চই?
-“ওকে তাহলে সত্যিটাই বলি।আজকে ফিরতে পারব কিনা সঠিক বলতে পারছিনা।আর যদি পারি ও তাহলে অনেক রাত হবে।
গার্ডেন সিটিতে যাওয়ার জন্য আশফি রেডি হচ্ছে আর মাহির সাথে কথা বলছে।
-“ভালোই তো।এভাবেই সময়গুলো চলুক।কাজের ব্যস্ততায় বউ মেয়েকে ফেলে রেখে শুরু হল আপনার বিজনেস।
-“মাহি?ডিয়ার এরকম বাচ্চা মানুষের মত করো না।তুমি তো জানো আর বুঝো ও। আমি তো আর তোমার থেকে কিছু লুকচ্ছিনা বা তোমাকে মিথ্যা বলে বাইরে সময় কাটাচ্ছিনা।আর প্রতিদিন ই তো বাড়ির বাইরে থাকিনা আমি।আমার কি খুব ভালো লাগে তোমাদের ছেড়ে বাড়ির বাইরে থাকতে?আচ্ছা একটা কথা তোমাকে দিয়ে যাচ্ছি।কাজ শেষ করতে যত সময়ই লাগুক আজকে রাতেই বাসায় ফিরব।প্লিজ আর মনটা খারাপ করে থেকোনা।আমি তো আর তোমাকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে চলে যাচ্ছিনা।
-“যতসব ফালতু কথা তোমাকেই বলতেই হবে? আচ্ছা সাবধানে যেও।আর বেশি রাত হলে বাসায় ফেরার জন্য তাড়াহুড়ো করতে হবেনা।
-“সিওর?
-“হুম।
-“এরকম মুখ গোমড়া করে বললে কিভাবে মানব?
-“হি হি হি……হেসে বললাম।এখন মানা যাবে?
-“হা হা হা। আমি নিজেও তোমাদের ছাড়া একটা রাত ও বাড়ির বাইরে থাকতে পারবোনা।তাড়াতাড়ি চলে আসবো, ওকে?
যাওয়ার সময় আশফি মাহি আর চান্দুকে আদর করে তারপর বাসা থেকে বের হল সকাল ৯ টার সময়।তারপর বিকাল ৫ টার সময় বাসায় একজন ভদ্র লোক আসলো। আশফির সাথে দেখা করতে চাইছে কিন্তু আশফি বাসায় নেই বলে মাহির সাথে দেখা করার জন্য সার্ভেন্টদের বলল।এদিকে সারাটা বিকাল আশফির ফোন সুইচড অফ পাচ্ছে মাহি।তাই মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে। এমনিতে বাইরে থাকলে ঘন্টায় মিনিমাম তিন বার ফোন করা হয়ে যায়।আর এখন আশফি যাওয়ার পর লাস্ট কথা হয়েছে দুপুর দুটোই।বসে বসে মাহি আশফির ফোনে সমানে কল করেই যাচ্ছে। তারপর সার্ভেন্ট এসে মাহিকে বলল তার সাথে একজন লোক দেখা করতে এসেছে। মাহি কিছুটা অবাক হল।কারণ এ পর্যন্ত যারা এসেছে সবাই আশফির সাথে দেখা করতে এসেছে।মাহির এখানে কোনো বন্ধু বান্ধব ও তৈরি হয়নি।এসব ভাবার মাঝেই সার্ভেন্ট মাহিকে আবার ডাকল,
-“ম্যাম!উনি ড্রয়িংরুমে বসে আছেন।স্যার বাসায় না থাকায় আপনার সাথে কথা বলতে চাইছেন।
-“ওকে।তুমি যাও আমি আসছি।আমি উঠে ড্রয়িংরুমে গেলাম।একজন জাপানিজ লোক এসেছে আমার সাথে দেখা করতে। কিন্তু আমি তো একে চিনিনা।আমাকে দেখে বসা থেকে উঠে দাড়াল তারপর মুখে একটা হাসি টেনে গুড আফটারনুন জানালো। আমিও তাকে উত্তরে গুড আফটারনুন জানালাম।
-“মিসেস আশফি চৌধুরী! আমি হুয়াং চ্যাং। ইন্ড্রাস্ট্রি অব লোটাস এর ওউনার।
-“ও আচ্ছা।চিনতে পেরেছি। আপনি নিশ্চই আশফির সাথে দেখা করতে এসেছেন?কিন্তু ও তো বাসায় নেই।
-“হুম জানি।
-“জানেন?তাহলে……..
-“আসলে আমি সন্ধ্যার সময় আমার বাসায় একটা পার্টির এ্যারেঞ্জমেন্ট করেছি।তো সেখানে আপনাকে আর মি.আশফি চৌধুরী কে চিফ গেস্ট হিসেবে রেখেছিলাম।
অলমোস্ট ইনভাইটেশন কার্ড ও পাঠিয়েছিলাম।
-“হ্যা কার্ডটা পেয়েছি। কিন্তু প্রবলেম হচ্ছে ও তো অফিসের কাজের জন্য বাইরের শহরে গেছে।
আজকে ফিরতে পারবে কিনা বলতে পারছিনা।
-“আপনি তো আছেন।
-“হ্যা আমি আছি।কিন্তু ওকে ছাড়া আমার তো একার পক্ষে পার্টিতে এ্যাটেন্ড করা পসিবল না।
-“এরকম ভাবে বলবেন না প্লিজ।আপনাদের জন্য পার্টিতে সবাই ওয়েট করছে। কারণ আপনারা ওখানে চিফ গেস্ট হিসেবে আসবেন সেটা সবাই জানে।মি.আশফি না থাকলেও আপনি থাকলেই চলবে।এতে আমার সম্মানটা রক্ষা হবে ওখানে।
-“সেটা তো বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি তো বললাম ও ছাড়া আমি যেতে পারবোনা।প্লিজ কষ্ট পাবেন না।
-“মিসেস আশফি আপনি যদি এই প্রবলেমের জন্য পার্টিতে এ্যাটেন্ড করতে না চান তাহলে এই প্রবলেমটার সলিউশন আমার কাছে আছে।
-“সলিউশন?কি সলিউশন?
-“মি.আশফির সাথে আমার কথা হয়েছে। উনি নিজেই আমাকে বলেছে যে আপনি গিয়ে পার্টি এ্যাটেন্ড করবেন।কিন্তু আপনার আসতে লেট হচ্ছে বলে আমি নিজেই আপনাকে নিতে চলে এসেছি।
-“কি বলছেন আপনি? আপনাকে ও জানিয়েছে আমি যাব অথচ আমাকে জানাইনি?
-“সেটা তো বলতে পারবোনা উনি আপনাকে কেন জানাইনি।
-“আপনার সাথে ওর কখন কথা হয়েছে?
-“দুপুরে।২:১০ মিনিটে।
-“আমার সাথে ওর কথা হয়েছে ঠিক দুপুর ২ টায়। তারপর বিকাল ৪:৩০ টা থেকে এক নাগাড়ে ফোন করছি কিন্তু ওর ফোন সুইচড অফ বলছে।
-“হয়তো আমার সাথে কথা বলার পরই ওনার ফোন অফ হয়ে গেছে বা জরুরি কোনো কাজে আছে বলে ফোন অফ করে রেখেছে।আর তাই হয়তো আপনাকে জানাতে পারেনি।
-“কিন্তু আমি……..
-“মিসেস আশফি?প্লিজ আমাকে এভাবে সবার সামনে ছোট করবেন না। আমি ওয়ান উইক ধরে অনেক এক্সাইটেড হয়ে আছি আপনারা আমার পার্টিতে এ্যাটেন্ড করবেন বলে।
-“আমার ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করুন।ওর সাথে এই বিষয়ে আমার কোনো কথা হয়নি।তাহলে আমি কিভাবে আপনার সাথে যেতে পারি?
-“পার্টিতে আপনি এবং মি.আশফি দুজনেই আমার চিফ গেস্ট।তাই দুজনের একজন আমার পার্টিতে এটেন্ড করলেই হবে। সেখানে আপনারা কেউই ওখানে না আসলে সকলের সামনে আমাকে কতটা ছোট হতে হবে আপনি নিশ্চই বুঝতে পারছেন? প্লিজ আমার অনুরোধ টুকু রাখুন।হাতজোড় আপনার কাছে।
-“আরে কি করছেন আপনি?আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি বসুন আমি রেডি হয়ে আসছি। লোকটার সাথে কথা বলে আমি ভেতরে চলে এলাম। আশফিটা যে কি?এমন একটা বিষয় আমাকে জানালোনা।কি একটা অপ্রস্তুতকর অবস্থার ভেতরে পড়েছি।
মাহি আবার ফোনটা হাতে নিয়ে আশফিকে বেশ কয়েকবার কল করলো। এবার কল ঢুকেছে ফোনে কিন্তু ফোন রিসিভ হচ্ছেনা।তাই মাহি রাগ করে ফোনটা বিছানার উপর চেলে রাখল।তারপর ও রেডি হয়ে সাথে দুজন গার্ড নিয়ে হুয়াং চ্যাং এর সাথে তার পার্টিতে চলে গেল।আর চান্দুকে একজন সার্ভেন্টের দায়িত্বে রেখে গেল।এদিকে আশফির ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়াতে তার সেক্রেটারি ফোনটা চার্জে বসিয়ে রেখেছে বলে আশফি মাহির কলগুলো দেখলোনা।মাহির পার্টিতে যেতে যেতে সন্ধ্যা লেগে গেল।পার্টিতে পৌঁছানোর পর হুয়াং সবার সাথে মাহির পরিচয় করিয়ে দিল। পার্টি শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাহি বেরোতেও পারছেনা। কারণ সবাই মাহিকে ঘিরে রেখেছে মাহির সাথে সবাই কথা বলছে।খুব ব্যস্ত রেখেছে মাহিকে।মাহির গার্ড দুটোকেও কোথাও দেখা যাচ্ছেনা।মাহি ডিনার সেড়ে সেই কখন থেকে বসে আছে গার্ডগুলোর কোনো পাত্তাই নেই।কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে এসে মাহির সাথে গল্প করতে বসে গেল। গল্পের মাঝে মাহিকে একটা ড্রিংকস নিতে অনুরোধ করলো মেয়েটি।মাহির অবশ্য তখন ড্রিংকস করার মত কোনো মন মানসিকতাই ছিলনা। আবার ড্রিংকস টা না নিলেও মেয়েটিকে ছোট করা হয়ে যাবে যার জন্য বাধ্য হয়ে ড্রিংকস করলো মাহি।মাত্র পাঁচ মিনিটের মাঝেই মাহি ওর প্রতি ওর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। আর সেই সুযোগটি হুয়াং চ্যাং গ্রহণ করে।ডিলের পেপাড়ে মাহিকে দিয়ে সাইন করিয়ে নেই।পেপাড়টা ছিল আশফির কোম্পানির প্রডাক্টস তৈরির জন্য ম্যাটেরিয়ালগুলো ওর কোম্পানি থেকে সাপ্লাই হবে।হুয়াং চ্যাং জানে কোম্পানির ৫৫% শেয়ার মাহির নামে আছে আর ৪৫% শেয়ার আশফির নামে।সে হিসেবে মাহির সাইন ই যথেষ্ট ডিলটার জন্য।এই ডিলটার মাধ্যমে হুয়াং এর কোম্পানি লস থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।হুয়াং এর কোম্পানিটা এত বেশি লসে রান করছিল যে সে এমন একটা কাজ করতে বাধ্য হয়েছে।
এরপর হুয়াং মাহির সাথে কিছুটা ক্লোজ হয়ে কয়েকটা ফটো তুলল।
যেগুলো কাল সকালের মধ্যেই মিডিয়াতে টেলিকাস্ট হবে যে ওর কোম্পানির সাথে আশফিদের কোম্পানির এই ডিলটা কমপ্লিট হয়েছে।এর মধ্যেই হুয়াং মাহির গার্ডগুলোকে ও সেন্সলেস করে ফেলেছে ড্রিংকস এ অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়ে।রাত প্রায় ১১ টা বাজতে চলেছে।পার্টিটা যখন একদম শেষ হল তখন হুয়াং মাহিকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য বের হল।মাহি তখন প্রায় সেন্সলেসের মতই।সেন্স থেকেও না থাকার মতই কাজ করছে ওর। এদিকে আশফি অনেক দ্রুত ওখানকার কাজ শেষ করেছে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবে বলে।ওখানের ফ্যাক্টরি থেকে বের হওয়ার পর সেক্রেটারির থেকে যখন ফোনটা নিল তখন মাহির কল গুলো দেখে আশফি কল ব্যাক করলো প্লেনে ওঠার আগে।মাহিকে ফোনে পেলনা আশফি।ও ভাবছে মাহি হয়তো রাগ করে ওর ফোন রিসিভ করছেনা।
আশফি আর কোনো কল করলোনা। কারণ ও একদম বাসায় ফিরেই মাহিকে সারপ্রাইজ দিবে।প্লেনে উঠে গেল আশফি।প্লেনে করে আসার জন্য সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিটের মত লাগবে ওখান থেকে আসতে।আর হুয়াং এর বাসা থেকে গাড়ি করে আসতে মিনিমাম এক ঘন্টা সময় লাগবে মাহির বাসায় ফিরতে।তার মধ্যে ২০ মিনিটের রাস্তা ওরা চলেই এসেছে।হুয়াং আশফির বাসার সামনে যখন পৌঁছাল তখন তার ঠিক কিছুটা দূরে আশফির গাড়ি ছিল।সেই গাড়িটি অবশ্য হুয়াং খেয়াল করেনি। তাই মাহিকে গাড়ি থেকে নামানোর সময় মাহিকে দাড়ানো অবস্থা থেকে কোলে তুলে নিল। মাহি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না।তাই হুয়াং কোলে তুলে নিয়েছে। বাসার সামনে অন্য একটা গাড়ি দেখে আশফি কিছুটা চমকে গেল।ওখানেই আশফি গাড়ি থামাতে বলল ড্রাইভারকে।তখন রাত ১২:০৫ বাজে। এত রাতে বাসার সামনে অন্য গাড়ি দেখে আশফির ভেতরে আতংক কাজ করছিল।আশফি গাড়ির ভেতর বসেই দেখতে পেল হুয়াং চ্যাং মাহিকে কোলে তুলে বাসার ভেতর ঢুকছে। এমন দৃশ্য দেখে রাগে আশফির চোখ দুটো কোটর থেকে বের হয়ে আসতে চাইছিল।ড্রাইভার আশফিকে বলল,
-“স্যার গাড়ি কি বাসার ভেতরে নিব?
আশফি কথার কোনো উত্তর দিল না। ড্রাইভার আশফিকে ডাক দিল।
-“স্যার?গাড়ি কি……..
-“একদম চুপ ব্লাডি বা**। কোনো কথা বলবেনা। এখানেই দাড়িয়ে থাকো।
আশফি হাতে থাকা ফোনটা অন করলো। বাসার ভেতরে সি সি ক্যামেরার সাথে আশফির ফোন কানেক্ট করা। তাই বাসার ভেতরে কি হচ্ছে ও সবটাই দেখতে পাবে। হুয়াং মাহিকে কোলে করে আশফির বেডরুমে ঢুকে গেল।
-“মিসেস আশফি আপনার বেডরুম পর্যন্ত চলে এসেছি যে।এবার কোল থেকে নামুন।
মাহি তখন পুরোটাই নেশার ঘোরে।হুয়াং মাহিকে বিছানায় শুইয়ে দিচ্ছিল।তখন একটা সার্ভেন্ট চান্দুকে কোলে করে বেডরুমে চলে আসলো।চান্দুর তখন খিদে পেয়েছে খুব আর সার্ভেন্ট ও চমকে গেছে মাহিকে হুয়াং এর সাথে এই অবস্থাতে দেখে। সার্ভেন্টকে দেখে হুয়াং তাকে ধমক দিয়ে রুম থেকে চলে যেতে বলল।সার্ভেন্টটা কিছু না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল।তারপর হুয়াং মাহিকে বেডে শুইয়ে দিল। হঠাৎ মাহি হুয়াং এর কলার টেনে ধরলো চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেই।হুয়াং এর কলার চেপে বলল,
-“এভাবে আমাকে ফেলে কোথায় চলে যাচ্ছো?
-“বাহ্।মিসেস আশফি আমাকে কাছে টেনে নিতে চাইছে নাকি?
হয়তো মি. আশফিকে ভাবছে আমাকে।
-“এই।একদম আমার কাছ থেকে সরবেনা।এখানে,
আমার কাছে থাকো।
-“কাছে তো থাকতেই পারি ম্যাম।মি.আশফির বেডে তার অনুপস্থিতিতে তারই বউ এর সাথে একটা রাত… ব্যাপারটা ভালোই হয়।
হুয়াং চ্যাং জানতো আজকে আশফি শহরের বাইরে যাবে।আশফি যাওয়ার পর দুপুর তিনটার সময় আশফিকে ফোন করে সে।কিন্তু ফোনটা সুইচড অফ পায় তখন।আর সেই সুযোগে সে মাহিকে মিথ্যা বলে তার পার্টিতে নিয়ে যায়।গাড়িতে বসে আশফি সবকিছু দেখছে আর রাগে ওর সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে। পায়ের রক্ত যেন মাথায় উঠে আসার মত অবস্থা হয়েছে ওর। যখন দেখলো হুয়াং ঘরের দরজা বন্ধ করে দিল এমনকি লাইটা ও অফ করে দিল সেই মুহূর্তে আশফি আর এক সেকেন্ডও গাড়িতে বসে থাকতে পারেনি।ছুটে গেল বাসার ভেতর।ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখতে পেল চান্দু একটা সার্ভেন্টের কোলে আছে।আর খুদাতে খুব কান্না করছে।এই দৃশ্য দেখার পর আশফি যেন একটা হিংস্র দানবের মত হয়ে গেল।সেখানে আর এক মুহূর্ত দাড়ালনা।সোজা উপরে চলে গেল।
সার্ভেন্টগুলো আশফিকে এভাবে দৌড়ে যেতে দেখে আর ওর চোখ মুখ দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। ওরা বুঝতে পেরেছে যে আশফি সব দেখতে পেয়েছে। দরজার সামনে গিয়ে দাড়াল আশফি।অসম্ভব রাগে ওর যা অবস্থা হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে ওর শরীরে সত্যি কোনো দানব ভর করেছে।গায়ের সব শক্তি দিয়ে এমন ভাবে দরজাটাকে লাথি মাড়লো যে দরজাটা পুরোপুরি না ভাঙ্গলেও দরজার লক ভেঙ্গে গেছে।দরজা ঠেলে ঢুকতেই ও দেখতে পেল হুয়াং মাহির শরীরের উপর ঝুকে আছে। আর মাহিও হুয়াংকে জড়িয়ে ধরে আছে।তখন হুয়াং এর গায়ে কোনো পোশাক নেই।হুয়াং আশফিকে দেখে কিছু বলতে যাবে বা কিছু করতে যাবে তার আগেই আশফি বলল,
-“চুপ।নো সাউন্ড।
কথাটি বলেই আশফি হুয়াং কে টেনে ধরে এনে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।পাক্কা ২ ঘন্টা পর আশফি বাসায় ফিরল। কোনো সার্ভেন্ট আশফির সাথে কথা বলার কোনো সাহস পেলনা।আশফি সোজা রুমে ঢুকে গেল। রুমে ঢুকে দেখতে পেল চান্দু তখনো কান্না করছে।আর মাহি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। চান্দুকে কোলে তুলে একটা সার্ভেন্টকে ডাক দিল।
তারপর বলল,
-“পাওডার মিল্কটা বানিয়ে দাও।আমি ওকে খাইয়ে দিব।
-“কিন্তু স্যার বাবুর জন্য তো ওটা স্বাস্থ্যসম্মত হবেনা। আর তাছাড়া ও তো এটা খেতেও পারবেনা। ম্যামের বুকের…………..
আশফি রাগী চোখে সার্ভেন্টের দিকে তাকাল। ভয়ে সার্ভেন্টটা আর কোনো কথা বললোনা। তারপর আশফি বলল,
-“এখন থেকে ওকে এগুলো খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে।যাও আর দেরী না করে ওর জন্য দুধটা বানিয়ে নিয়ে এসো।
-“ওকে স্যার।
সার্ভেন্ট দুধ বানিয়ে ফিডাড়ে ভরে আশফির কাছে দিল।প্রথমদিকে চান্দু সেটা খেতে না চাইলেও আশফি অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পর কিছুটা খাওয়াতে পারলো।তার কিছুক্ষণের ভেতরেই আশফি ওর মেয়েকে কোলে করে ঘুরে বেড়িয়ে আদর করে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিল।আর আশফি যে পোশাকে ছিল সেই পোশাকেই মাহির মুখের সামনে গিয়ে বসে রইল।ওর মুখের দিকে চেয়ে নিজে নিজে বলতে থাকলো,
-“ও জানেনা ও আমার কোথায় হাত দিয়েছে। আমার কলিজাটা ছিড়ে নিয়েছে ও।ছিঃ আমি তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছিনা। মনে পড়ে যাচ্ছে ঐ দৃশ্যগুলো।তুমি আমার বুকের ভেতরটা ভেঙ্গেচুরে দিয়েছো।মনে হচ্ছে হাজারটা তীড় বসিয়ে দিয়েছো পুরোটা বুক জুড়ে।
মাহির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কথাগুলো বলছিল আশফি।আবারও আশফি মাহির মুখের দিকে তাকাল।
-“এই বিছানাতে তোমার শরীরের উপর অন্য একজন পুরুষ ছিল।তোমার শরীর স্পর্শ করেছে সে। তোমার খুব কাছে যেতে চেয়েছিল সে।তুমি তাকে জড়িয়ে ধরে ছিলে।আমার জায়গায় অন্য একজন পুরুষকে জড়িয়ে ধরেছিলে তুমি? মাহিইইইই?
চিৎকার করে মাহিকে ডেকে ওকে ঘুমন্ত অবস্থাতেই উঠিয়ে বসালো আশফি। তখন ও মাহি নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।চোখ বন্ধ অবস্থাতেই ঢুলে পড়লো আশফির বুকের উপর। আশফির ডাক হয়তো কিছুটা কানে গেছে মাহির। তাই ওর বুকে মাথা রেখে মাহি ঘুমন্ত কন্ঠে উত্তর নিল আর কথা বলল,
-“হুম?এই পাঁজি এভাবে ধমকাচ্ছ কেনো আমাকে? আমি কিন্তু কেঁদে দিব।
মাহি আশফির বুকের উপর ঝুকে পড়লেও আশফি মাহিকে জড়িয়ে ধরলোনা। মাহির কোনো কথার উত্তর ও দিল না।আশফির চোখ ফেটে যেন আগুন বের হচ্ছে আর সেই আগুন নিভানোর জন্য সেই সাথে অনর্গল অশ্রু ও ঝরছে।কিন্তু সেই অশ্রু হয়তো ব্যর্থ হচ্ছে আশফির চোখের আগুনকে নিভাতে। মাহি ঘুম মাখা কন্ঠে কথা বলছে,
-“এই আমার না খুব আদর নিতে ইচ্ছা করছে তোমার থেকে। আমাকে একটু আদর দাও না।
-“ওর এই কথা শোনার সাথে সাথে আমার ইচ্ছা করছিল ওকে সহ নিজের শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিই।সহ্য হচ্ছিলনা ওর স্পর্শ।ধাক্কা দিয়ে ওকে ফেলে দিলাম বিছানার উপর। অনেকটা ব্যাথা পেয়ে কুকড়ে উঠেছে ও। আমি ওর কাছ থেকে উঠে যাব তখন ও আমার হাত টেনে ধরে আমাকে ওর কাছে টেনে নিল।ব্যাথা পেয়ে প্রায় কান্না করে দিয়েছে ও।
হালকাভাবে চোখদুটো খুলে কান্না জড়ানো কন্ঠে আমাকে বলল,
-“তুমি আমাকে এভাবে ব্যাথা দিতে পারলে? আমি কতোটা ব্যাথা পেয়েছি। তুমি তো আমাকে কখনো মাড়োনা।কেনো আমাকে এভাবে মাড়লে?
এইভাবে ওর কান্না করে দেওয়া দেখে আমি যেন কোনো কথা বলতে পারছিলামনা।কোনোদিনও আমার থেকে কোনো আঘাত পাইনি ও।আজ প্রথম ওকে এভাবে আঘাত করলাম।
-“কথা বলছোনা কেনো? আদর করতে বলেছি বলে এভাবে আমাকে মাড়লে? ঠিক আছে তাহলে আমি তোমার থেকে জোড় করেই আদর নিব।দেখবে তুমি?
-“মাহি আমার কলার চেপে ধরে ওর একদম কাছে টেনে নিল।তারপর আমার এক গালে হাত রেখে অন্য পাশের গালে চুমু খেল। আমার ঠোঁটে চুমু দেওয়ার সময় আমি ওর থেকে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে চলে এলাম।ও আর উঠে আসতে পারলোনা।হয়তো সেই এ্যানার্জিটুকু ওর শরীরে নেই।ওর কাছ থেকে এভাবে উঠে আসাতে ও রেগে গিয়ে অনেক বকাবকি করতে থাকলো আমাকে। তারপর কখন যেন নিজেই ঘুমিয়ে পড়েছে।গা থেকে স্যুটটা খুলে ফেললাম। বেলকনিতে গিয়ে দাড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ।আমার সবকিছু কেমন যেন উল্টা পাল্টা লাগছে।না চাইতেই চোখের সামনে তখনকার দৃশ্যগুলো ভেসে উঠছে।
কোনোভাবেই নিজেকে শান্ত করতে পারছিনা। মাহির সামনেও আমার থাকতে ইচ্ছা করছেনা। একবার মনে হচ্ছে নিজের মাথায় নিজেই শুট করি। আবার মনে হচ্ছে ওকে ঘুমের ভেতরেই শুট করে দিই।ও আমার চোখের সামনে থাকলেই আরো বেশি খারাপ লাগছে। ওর কাছে গেলেই বারবার মনে হচ্ছে এখনো ওর শরীরে ঐ জানুয়ারের বা** ছোঁয়া লেগে আছে। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিনা।আমি কোনোদিন ও সহ্য করতে পারিনি ওকে আমি ছাড়া বাইরের কোনো পুরুষ মানুষ টাচ্ করলে।সেখানে আজকে ওর শরীরের উপর………
আশফি পুরো কথাটাও বলতে পারলোনা।
-“কখন যেন নিজের অজান্তেই মাহির কাছে গিয়ে বসে পড়েছি।
আশফি সারারাত এভাবেই মাহির কাছে বসে ছিল। মাহির ঘুম ভাঙ্গলো।চোখ মেলে তাকাতেই দেখল আশফি ওর পাশে দুহাত দিয়ে মুখ চেপে হাঁটুর উপর ভর করে বসে আছে।
আশফি খেয়াল করেনি মাহি জেগে গেছে। মাহি ওকে এভাবে বসে থাকা দেখে কথা বলে উঠল,
-“আশফি?তুমি কখন এসেছো?
-“ওর কথা শুনে আমি মাথা উঁচু করে ওর দিকে তাকালাম।
-“আশফির চোখদুটো রক্তের মত লাল হয়ে আছে। আর ওর চোখ মুখের অবস্থা যেন কেমন অস্বাভাবিক লাগছে।চোখে মুখে অসম্ভব রাগ দেখতে পাচ্ছি মনে হচ্ছে।
-“আমি ওর পাশ থেকে উঠে চলে এলাম।
-“এই তুমি কখন এসেছ? আর এসে আমাকে ডাকোনি কেন? উফফ।
মাহি উঠে দাড়াতে গিয়ে মাথায় যন্ত্রণা অনুভব করলো।মাথাটা ধরে উঠে দাড়ালো তারপর আশফির কাছে গেল।
-“এতো মাথা যন্ত্রণা কেনো করছে?এই আশফি এভাবে চুপ করে আছো কেনো বলো তো?আর তোমার এ অবস্থা কেনো?মনে হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে এসেছো। অদ্ভুত!কোনো কথা বলছেনা।স্টিল হয়ে দাড়িয়ে আছে।এই তুমি আমার কাছে এসো তো। আসার পর বোধ হয় আমার ঘুম থেকে ওঠার অপেক্ষায় বসে ছিলে?শার্টটা ও খুলোনি এর জন্য।আমি খুলে দিচ্ছি তুমি যাও গোসল করে এসো। কিরকম যে দেখা যাচ্ছে তোমাকে!
মাহি আশফির কাছে গিয়ে শার্টের বোতাম খুলতে গেল।মাহি টাচ্ করার আগেই আশফি পিছু সরে গেল।মাহি বলল,
-“এটা কি হল?এভাবে দূরে সরে গেলে কেনো? তুমি রাগ করেছো আমার উপর তাইনা?আমি এভাবে কুম্ভকর্ণের মত ঘুমিয়েছি বলে?আচ্ছা সরি।এবারের মত মাফ করে দাও।এদিকে এসো আমি তোমার শার্টটা খুলে দিচ্ছি।তারপর অনেকগুলো পাপ্পি দিব।
মাহি আবারও আশফির কাছে গেল শার্টটা খোলার জন্য।আশফি তখন মাহিকে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিল।তারপর মাহির সামনেই আশফি শার্টের বোতামগুলোর স্থানে ধরে টেনে ছিড়ে ফেলল শার্টটা। ছিড়ে ফেলা শার্টটা আশফি ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। মাহি অবাক হয়ে এগুলো দেখলো। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলোনা।প্রায় ঘন্টাখানিক পর আশফি বাথরুম থেকে গোসল করে বের হলো।তখনও আশফির ফর্সা মুখটা রাগে লাল হয়ে আছে।আর অনেকক্ষণ পানিতে ভেজার কারণে চোখদুটো অসম্ভব পরিমাণ লাল হয়ে আছে।এমন ব্যবহারের কারণ জানতে চাওয়ার জন্য মাহি আশফির পথ আটকে ওর সামনে দাড়ালো ।
-“আশফি আমার দিকে তাকাও।কি হয়েছে তোমার? কেনো এমন করছো?
মাহির কথার উত্তর না দিয়ে আশফি চলে যাচ্ছিল। মাহি এবার রেগে গিয়ে আশফির হাত টেনে ধরলো।
-“কি সমস্যা তোমার? এভাবে এভোয়েড করছো কেনো আমাকে?আর কথা বলছোনা কেনো?
মাহি এভাবে চিৎকার করে কথা বলা দেখে আশফির গরম মাথা যেন আরো বেশি গরম হয়ে গেল। ও নিজের হাত ছাড়িয়ে মাহিকে ধাক্কা দিয়ে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে ধরলো।মাহির মাথায় আর পিঠে প্রচন্ড ব্যথা পেয়ে চোখ থেকে আপনা আপনি পানি বের হয়ে এলো। আশফি প্রচন্ড জোড়ে ওর গাল চিপে ধরলো।তারপর বলল,
চলবে……..(গল্পে আপনাদের আশানুরূপ লাইক পেলেও তেমন কোনো মন্তব্য পাইনা।গঠনমূলক কিছু মন্তব্য করে আপনারা আমাদের উৎসাহ দিতে পারেন বা গল্প সম্পর্কে আপনাদের অনুভুতি প্রকাশ করতে পারেন।এতে আমাদের ও ভালো লাগে।তাই শুধু লাইক না করে গঠনমূলক কিছু মন্তব্য ও করবেন আশা করছি।)
রোমান্টিক_অত্যাচার-২
পর্ব-১৬
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
-“মেহেরুনকে বিছানার উপর থেকে তুলে আমার সামনে দাড় করালাম। সত্যি বলতে ওর আকর্ষণীয় শরীরের উপর আমার নজর গেলেও তার থেকে বেশি আকৃষ্ট হয়েছি আমি ওর রূপে।শারীরিক গঠন,ওর সৌন্দর্য ওর কণ্ঠস্বর সব মিলিয়ে আমি সত্যি ওর মোহে পড়ে যাচ্ছি। ওর প্রতি আমার উন্মাত্ততা শুধু বেড়েই চলছে।তা থেকে আমি কোনোভাবেই নিজেকে নিজের বশে আনতে পারছিনা। ও পবিত্র, ও দীপ্তিময়ী, মায়াবিনী। ঠিক যেন সদ্য ফোটা লাল গোলাপের মত পবিত্র সে। ওকে যে এভাবে আমার অপবিত্র করতে বিবেকে বাঁধা দিচ্ছে।মনে হচ্ছে ওকে শুধু এক রাতের সঙ্গিনী হিসেবে নয় আমার জীবনের শেষ রাত পর্যন্ত ওকে আমার সঙ্গিনী হিসেবে চায়।
ফালাক মেহেরুনের দুই বাহু চেপে ধরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে এমন চিন্তাভাবনা করছে।আর মেহেরুন ফালাকের কাছ থেকে ছুটে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।মেহেরুন যতই অস্ত্রচালনা জানুক কিন্তু একজন যোয়ান পুরুষের শক্তিবলের কাছে একজন নারীর শক্তিবল সর্বদাই তুচ্ছ হয়।মেহেরুন তার শরীরের সমস্ত শক্তি খরচ করেও ফালাকের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারছেনা।কাঁদতে কাঁদতে মেহেরুন ফালাককে বলল,
-“দয়া করে আমাকে আপনার স্পর্শ থেকে মুক্তি দিন।আমি আপনার মত ঘৃণ্য মানুষের অপবিত্র স্পর্শ সহ্য করতে পারছিনা।
পারছিনা আমি আপনার নারী দেহের প্রতি লোভী দৃষ্টি সহ্য করতে।এর থেকে আমাকে হত্যা করুন।আমি কোনোদিনও কোনো পর পুরুষের সামনে যাইনি।
কোনো পর পুরুষ আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি।
সেখানে আপনার মত নিকৃষ্ট মানবের স্পর্শে আমার পুরো দেহে আগুন জ্বলে উঠছে।ঘৃণা হচ্ছে আমার। দয়া করে আমাকে আপনার মত পাপিষ্ঠের হাত থেকে মুক্তি দিন।জীবিত থাকতে আমি দেখতে পারবোনা একজন পাপিষ্ঠ পর পুরুষ আমার শরীর ভোগ করছে। এর থেকে আমার মৃত দেহকে আপনি আপনার ভোগের সামগ্রী রূপে গ্রহণ করুন।আপনার কাছে এটা একটা মৃত্যু পথযাত্রীর শেষ চাওয়া।
মেহেরুনের এমন ধরনের কথা শুনে ফালাক তার চাহিদার কথা ভুলে গেল। মেহেরুনের কথাগুলো এতটাই বিষাক্ত ছিল যে তার মত দয়া মায়াহীন এক হিংস্র পশুর সমতুল্য মানুষ হয়েও তার হৃদয়ে কথাগুলো আঘাত করেছে।সে বুঝতে পেরেছে যে সে কতটা ঘৃণ্যতম ব্যক্তি হলে কেউ তাকে এমন কথা বলতে পারে যে মৃতদেহ কে তার ভোগের সামগ্রী রূপে গ্রহণ করতে।কথাগুলো শুনে হিংস্র চাহনিতে মেহেরুনের দিকে তাকাল ফালাক। তারপর আপনা আপনি ই মেহেরুনের বাহুদ্বয় সে নিজের অজান্তে ছেড়ে দিল। কিছুসময় মেহেরুনের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে রইল।এই প্রথম সে কোনো নারীর থেকে তার প্রতি এমন ধরনের বাক্য(কথা) শুনলো।যা শোনার পর তার মনে হচ্ছে, আল্লাহর সৃষ্টি পৃথিবীর সবথেকে নিকৃষ্টতম জীব শূকরের থেকেও সে বেশি নিকৃষ্ট জীব।ফালাকের মনে হচ্ছে সে তার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে।মেহেরুনের কথার উত্তর সে কি দিবে ভেবে পাচ্ছেনা বা এখন তার কি করা উচিত তাও ভেবে পাচ্ছেনা।কিছুসময় এভাবে চুপ থাকার পর ফালাক কথা বলল,
-“নিজের কক্ষে চলে যাও।
মেহেরুন ফালাকের কথা শুনে বেশ অবাক হল।সে যা জানে ফালাকের সম্পর্কে তাতে ফালাক এতক্ষণ চুপ না থেকে তার উপর আক্রমণ করার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে মেহেরুনকে নিজের কক্ষে চলে যেতে বলছে।তাই অবাক চোখে মেহেরুনের ফালাকের দিকে তাকিয়ে রইল।এদিকে ফালাক সেটা খেয়াল করল যে মেহেরুন এখনো তার স্থান ত্যাগ করেনি।তাই সে আবার বলল,
-“আমি যা বলেছি তোমার কি তা বোধগম্য হয়নি?
আমি এক কথা পুনরায় ব্যক্ত করা অপছন্দ করি।
ফালাকের কথা শুনে মেহেরুন আর এক মুহূর্ত সময় অতিবাহিত না করে দৌড়ে তার নিজের কক্ষে চলে গেল এবং খুব দ্রুত কক্ষে দরজা বন্ধ করে দিল। মেহেরুন ভাবছে ফালাক এখন তাকে ছেড়ে দিলেও পরে যদি আবার তার উপর আক্রমণ করে তাই সে কক্ষের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানার এক কোণায় বসে রইলো।আজ রাতে মেহেরুন ঘুমাবেনা এমনটাই ভেবে নিয়েছে সে। এদিকে মেহেরুন যখন ফালাকের কক্ষ থেকে দৌড়ে চলে এল ফালাক সেই দৃশ্য খুব ভালো করে অবলোকন করলো।ওর কাছে ঐ দৃশ্য দেখে এটাই মনে হল যে সে একজন মানুষ হয়ে কতটা ভয়ংকর হলে তার থেকে কেউ এভাবে পালিয়ে যেতে পারে।কাঠের আরামদায়ক কেদারায় বসে ফালাক মেহেরুনের বলা কথা ভাবতে লাগলো।বারবার ওর কানে মেহেরুনের একটা কথাই বাজছে,” এর থেকে আমার মৃত দেহকে আপনি আপনার ভোগের সামগ্রী রূপে গ্রহণ করুন”।এই বাক্যটি ফালাককে অবাক করেছে।নিজের চরিত্রের ইতিহাস নিয়ে সে এখন নিজেই ভাবছে।এতকাল সে এটা ভেবে গর্বিত হতো যে বাঘের থেকেও সবাই তাকে বেশি ভয় পায়।আর আজকে তার এই চরত্রটাই বেশি ভাবাচ্ছে।কিছুসময় পর ফালাক তার কিছু দাসীকে ডেকে পাঠালো।
-“রাজকন্যা মেহেরুন শুধু এই রাজমহলের অতিথি নয়।তার থেকেও বেশি কিছু।
ফালাকের এই কথাগুলো শুনে দাসীগুলো একে অন্যের মুখের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে।প্রথমত তারা অবাক হয়েছে রাজকন্যা মেহেরুনকে তখন রাজা ফালাকের কক্ষ থেকে ঐ ভাবে বেরিয়ে আসতে দেখে যে রাজা ফালাক তার কোনো ক্ষতিই করেনি।আর দ্বিতীয়ত তারা অবাক হল এই মুহূর্তে ফালাকের বলা কথাগুলো শুনে।তারপর ফালাক আবার বলা শুরু করলো,
-“তোমরা এভাবে একে অন্যকে দেখছো কেনো? আমি তোমাদের যে কথাগুলো বলার জন্য ডেকে পাঠিয়েছি সেগুলো মনযোগ দিয়ে শোনো।তোমাদের মধ্যে কয়েকজন রাজকন্যা মেহেরুনের খাস দাসী হবে। সর্বদাই তার সাথে থাকবে। সামান্য পরিমাণ কষ্টও তার হতে দিবেনা।আর প্রতিটা মুহূর্তে সে কি করছে না করছে তার প্রত্যেকটা সঠিক তথ্য আমাকে জানাবে।বুঝতে পেরেছো তোমরা?
-“জ্বী মহারাজ।বুঝতে পেরেছি।
-“হুম।এখন তোমরা রাজকন্যার কাছে যাও। দেখো সে কি করছে,তার কি প্রয়োজন।
-“ঠিকআছে মজারাজ, আসছি।
-“ও হ্যা,আর একটা বিষয়। তার কক্ষে যতরকম ধারালো অস্ত্র বা বস্তু আছে সবকিছু সেখান থেকে সরিয়ে ফেলবে।এমন কোনো বস্তু তার কক্ষে রাখবেনা যা দ্বারা তার মৃত্যু ঘটতে পারে বা তার শরীরের কোনো ক্ষতি আর আঘাত হতে পারে।
তারপর কিছু দাসী মেহেরুনের কক্ষের সামনে গেল।বেশ কিছুক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কাচ্ছে কিন্তু মেহেরুন কোনোভাবেই দরজা খুলছেনা।দাসীগুলো বাধ্য হয়ে ফালাককে এই খবর জানালো।ফালাক কক্ষের সামনে এসে বেশ কয়েকবার মেহেরুনকে ডাক দিল কিন্তু মেহেরুন তাতে কোনো সাড়া দিলনা। ফালাক রাগে যখন দরজা ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত তাকে জানালো তখন মেহেরুন ভয় পেয়ে দ্রুত দরজা খুলে দিল।তখন মেহেরুনের মুখসহ পুরো শরীর কাপড়ে ঢাকা।মেহেরুনের এমন ব্যবহারের জন্য ফালাক রাগে ফেটে পড়লেও মেহেরুনের কান্না মাখা চোখ দুটো দেখে আর কিছু বলতে পারলোনা।শুধু ভয়ানক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর সেখান থেকে ফালাক তার নিজের কক্ষে চলে এল দাসীদের মেহেরুনের সঙ্গে থাকতে বলে।দাসীগুলো মেহেরুনকে বলছিল,
-“রাজকন্যা!আল্লাহ্ পাক হয়তো আপনার দিকে দয়ার দৃষ্টিতে দেখেছে। আপনিই প্রথম নারী যে রাজা ফালাকের কাছ থেকে নিজের সম্মানসহ অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসতে পেরেছেন।
-“হাহ্…….কতখন আল্লাহর এই দয়ার দৃষ্টি থাকবে আমার প্রতি?
-“জানিনা।তবে মনে হচ্ছে সম্রাট ফালাকের মাথায় অন্য কোনো পরিকল্পনা আছে।না হলে এতক্ষণে আপনার পরিণতি ভয়াবহ হওয়ার কথা ছিল।কারণ সে একবার কারোর প্রতি রেগে গেলে তাকে অক্ষত রাখেনা।সেখানে আপনার উপর বিন্দুমাত্র শব্দ সে উচ্চারণ করলোনা। আচ্ছা রাজকন্য আপনি কি আবার গোসল করেছেন?
-“হ্যা।আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছে।তার মত নিকৃষ্ট,পাপিষ্ঠ আর ঘৃণ্য মানুষের স্পর্শ আমার পুরো শরীরকে অপিবত্র করে ফেলেছে।আমার মনে হচ্ছে এখনো আমার শরীর ঘৃণাতে খসে পড়ছে।আমার পিতামাতা কি হালে আছে কি হচ্ছে তাদের সাথে আমি কিচ্ছু জানতে পারছিনা।
পিতামাতার কথাগুলো বলতে গিয়ে মেহেরুন চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। দাসীগুলো কথা বলা শুরু করলো,
-“রাজকন্যা!আপনার ভাগ্য ঐ সব রাজকন্যার থেকে সহস্য ভাগ ভালো। কারণ আপনি এখনো জানতে পারছেন তারা জীবিত আছে।আর এর পূর্বে যেসব রাজ্য দখল করেছে সম্রাট ফালাক সেইসব রাজ্যের রাজকন্যা বা রাজপুত্রদের সামনে তাদের পিতামাতাদের সে হত্যা করেছে আবার পিতামাতার সামনে তার সন্তানদের হত্যা করেছে।যখন পিতামাতার সামনে তার সন্তানদের নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে তখন ঐ সব পিতামাতার আহাজাড়ি দেখলে আমাদের নিজেদের প্রাণ বেরিয়ে আসার উপক্রম হত।
-“কতটা নিষ্ঠুর,কতটা হদয়হীন সে।একদিন সে ও পিতা হবে তার সন্তান জন্ম নিবে।আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে বলছি,সে ও একদিন সন্তানহারা হবে।সে ও বুঝবে সন্তানহারানোর কষ্ট কতটা তীব্রতর।
-“রাজকন্যা থামুন।এসব কথা বাহিরের কারো কানে গেলে সোজা সম্রাটের কানে পৌঁছে যাবে।
-“যাক।গেলে কি হবে?মৃত্যু নিশ্চিত করবে এই তো? আমিও তাই চাইছি।
সেদিন সারারাত কাটলো মেহেরুনের চোখের পানি ফেলে।এদিকে ফালাকের রাত কাটলো বিভিন্নরকম চিন্তাভাবনা করে।চিন্তার মূল বিষয়বস্তু ছিল মেহেরুনকে কেন্দ্র করে। অতঃপর সকালবেলা আলোচনাসভাতে বসলো রাজা ফালাক।
-“আমি সবসময় স্পষ্টভাবে কথা বলা পছন্দ করি।আর সেভাবেই নিজেকে গড়ে তুলেছি।তাই যা বলার সরাসরি স্পষ্টভাবেই বলে দিতে চাই আপনাদের সবাইকে।আজকে আলোচনাসভার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে আমার বিবাহ।
রাজা ফালাকের মন্তব্য শুনে আলোচনা সভায় উপস্থিত সকল ব্যক্তিবর্গ হতভম্ব হলো।একে অন্যের সাথে কানাকানি শুরু হলো। যে রাজা আজীবন অন্যায়ভাবে নারীদের অসম্মান করে।আর তার চিন্তাচেতনা ছিল সে আজীবন এমনভাবেই নারীদের নারীত্ব স্বাদ গ্রহণ করবে সে কিনা আজ বিবাহ করতে চাইছে?আর সেটা কাকে?রাজা ফালাক আবার কথা বলতে শুরু করলো।
-“আপনারা আমার সিদ্ধান্তে কি খুশি হয়েছেন নাকি তার থেকে বেশি অবাক হয়েছেন?
সেনাপতি এবার কথা বলে উঠলো,
-“সম্রাট আপনি যে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা তো আমাদের জানাননি?
-“কি বলতে চাইছো তুমি? আমার সকল সিদ্ধান্ত তোমার থেকে শুনে নিতে হবে?
-“না সম্রাট।আমি তা বলতে চাইনি।আসলে আপনি কখন কাকে আপনার সহধর্মিণী রূপে বেছে নিয়েছেন তা তো আমরা জানতে পারলাম না।তাই আর কি প্রশ্নটা করে ফেলেছি।
-“হুম জানতে পারবে এখন। আমি আপনাদের সবাইকে এই মুহূর্তে জানাচ্ছি যে শেরপুর রাজ্যের রাজা জাভেদ খানের একমাত্র রাজকন্যা মেহেরুনকে আমি আমার সহধর্মিণী রূপে তাকে পছন্দ করেছি।এবং অতি শীঘ্রই আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছি।যদিও শেরপুর রাজ্যের রাজা এখন আমি তবুও আপনাদের চেনার খাতিরে এভাবেই রাজকন্যার পরিচয়টা দিলাম।
আলোচনাসভায় উপস্থিত একজন সদস্য প্রশ্ন করলো,
-“সম্রাট বিবাহের দিন তারিখ কবে?তা কি ধার্য হয়েছে?
-“না।বিবাহের দিন তারিখ ধার্য হবে আমার পালকপিতার সাথে আলোচনা করে।
মন্ত্রীসাহেব?
-“জ্বী মহারাজ।
-“আমার পিতাকে খবর জানান যে আমি তার কাছে আসছি।
-“ঠিকআছে মহারাজ। এক্ষণি জানাচ্ছি।
[ #Violent_Fancy_Topic_Off ]
আজকের মত মাহি এই পর্যন্তই গল্পটা পড়লো।
-“আশফি?তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?প্লিজ গান টা নামাও।যে কোনো সময় গুলি বেরিয়ে যেতে পারে। নিজেকে সামলাও।
-“নিজেকে সামলানোর মত অবস্থাতে রাখোনি তুমি।আমি সহ্য করতে পারছিনা ঐ দৃশ্য।তোমার শরীরে অন্য কোনো পুরুষের ছোঁয়া পড়েছে। তা আমি মেনে নিতে পারছিনা।তুমি যতক্ষণ আমার সামনে থাকবে ততক্ষণ আমার ঐ দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভাসবে।আর তা আমার পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব।
তার থেকে তোমাকে আমি মেরে ফেলবো।তাতে আমার শান্তি হবে।
-“না আশফি!!!তুমি ভুল করছো।আশফি??
রাতে ঘুমের মধ্যে মাহি স্বপ্ন দেখে চমকে উঠলো।
-“হায় আল্লাহ্।আমি এ কেমন ধরনের স্বপ্ন দেখলাম।এমন স্বপ্ন আমি কোনোদিনও দেখিনি। কতটা ভয়ংকর ছিল স্বপ্নটা। আশফি আমাকে শুট করলো?যা আমি মনের ভুলেও কখনো ভাবিনা।
মাহি শুয়া থেকে উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিল। মাহির উঠে যাওয়ার শব্দ পেয়ে আশফি চোখ মেলে তাকালো।
-“মাহি?কি হয়েছে?
মাহি তখনও বসে হাপাচ্ছিল।কোনো কথার উত্তর দিতে পারছিলনা। আশফি তা লক্ষ করে মাহির কাছে উঠে গেল।
-“কি হয়েছে ডিয়ার? তুমি এভাবে হাপাচ্ছ কেন? তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?
-“উহহ্…..কি ভয়ংকর ছিল স্বপ্নটা।
মাহি কথাটা বলে আশফির মুখের দিকে তাকাল। স্বপ্নে আশফির যে ভয়ংকর রূপটা দেখেছিল মাহি। সেই মানুষটাই আশফি কিনা তা ও বোঝার চেষ্টা করছিল ওর মুখের দিকে তাকিয়ে।কিন্তু এই আশফির মুখটা দেখে বোঝা যাচ্ছে যে ও কতটা সিরিয়াস মাহির প্রতি। মাহির মুখে সামান্য ঘাম আর ওর হাঁপানো দেখে যে আশফি এতটা আতংকিত হয়েছে সে কি করে পারবে মাহিকে কোনদিন শুট করতে?এই আশফির ভেতরে যে মাহিকে হারানোর প্রবল আতংক কাজ করে।সে কখনোই মাহিকে মেরে ফেলতে পারেনা।এগুলোই ভাবছিল মাহি।এর মাঝে আশফি কথা বলল,
-“স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছো?
-“হুম।
-“আহারে।আমার কাছে এসো।
আশফি মাহিকে কাছে টেনে ওর বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলো।তারপর বলল,
-“ইশ…..তোমার সারা শরীর তো ঘেমে ভিজে গেছে।নাইটিটা ও ভিজে হয়ে আছে ঘেমে। কি এমন স্বপ্ন দেখেছ বলো তো? এভাবে ঘেমে একাকার হয়ে গেছ।
-“আশফি!স্বপ্নটা এতোটাই বাজে ছিল যা আমি মুখেও আনতে পারছিনা।প্লিজ আমাকে ফোর্স করোনা ওটা বলার জন্য।
-“ওকে। ফোর্স করছিনা। আমার মাহির যে কাজে কষ্ট হতে পারে সেইরকম কোনো কাজ করতে পারি? পানি খেয়েছ?
-“হুম।আশফি?তুমি আমাকে নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসো?
-“গাধার মত এমন একটা প্রশ্ন করলে যে প্রশ্নের উত্তর একটা বাচ্চাও বলে দিতে পারবে।
-“উফ বলো না?
-“তোমার কি মনে হয়?
-“প্লিজ?
-“ওকে ওকে,বলছি। নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি কিনা বলতে পারছিনা তবে তোমার মাঝেই আশফির প্রাণটা রয়েছে।তোমার মাঝেই আশফির আত্মাটা বসবাস করছে।তুমি যতদিন এই আশফির বুকে থাকবে ঠিক ততদিন আশফি জীবিত থাকবে।
মাহি আশফির মুখটা চেপে ধরলো।তারপর বলল,
-“প্লিজ এমন ধরনের কথা বলোনা।আমি বেঁচে থাকতে আমার চোখের সামনে তোমার কোনো ক্ষতি আমি সহ্য করতে পারবোনা। মরেই যাব আমি।
-“এখন তুমি কেন এমন ধরনের কথা বলছো?
-“সরি।
-“ইটস ওকে।তাহলে আমার জায়গায় তোমাকে বসিয়ে একবার ভেবে দেখো তো আমার ব্যাপারটা।
আমার কেমন লাগতে পারে এমন হলে?
-“হুম।
-“হুম কি হ্যা।এমন উদ্ভট কথাবার্তা হুটহাট কেন বলো?এগুলোই চিন্তা করো নাকি সারাদিন?
-“না।এসব চিন্তা কেন করবো?
-“না করলে এসব কথাবার্তা কেনো বলো?এখন উঠো এই নাইটি টা চেঞ্জ করে এসো।এটা একদম ভিজে গেছে।কি পরিমাণ ঘেমেছে মেয়েটা!
মাহি উঠে সাদা রঙের ওয়ারড্রপটা থেকে একটা নাইটি নিল।তারপর আশফির সামনেই নাইটিটা খুলে ফেলল।সেই মুহূর্তে আশফির চোখ দুটো আটকে গেলো মাহির উপর।আগে থেকেই আশফি মাহির দিকে চেয়ে ছিল।হঠাৎ করে মাহি এমনভাবে নাইটি খুলে ফেলাতে আশফি কিছুটা বেঘোরেই চলে গেল। তখন ও আশফি বিছানাতে বসে ছিল।মাহি যখন নাইটি পড়তে লাগলো তখন আশফি উঠে গিয়ে মাহির পেছনে দাড়ালো।মাহি তখন বলল,
-“কি হয়েছে?কিছু বলবে?
-“হুম।বেশি গরম লাগলে ওটা পড়তে হবেনা।
মাহি বোঝার চেষ্টা করলো আশফি কেন ওকে বারণ করছে।মাহি কিছু বলবে বুঝতে পেরে আশফি আগে কথা বলল,
-“না,আসলে নিচে তো কর্সেট টা আছেই।
-“তো?নাইটি পড়লে কি সমস্যা?আমার এতোটা ও গরম লাগছেনা।
-“আমার লাগছে খুব।
আশফির কথা শুনে মাহি আশফির চোখের দিকে তাকিয়ে রইল।আশফি মাহির খুব কাছে গিয়ে দাড়ালো।তারপর কিছুক্ষণ দুজনে তাদের চোখে ভালোবাসা বিনিময় করলো।চোখে ভালোবাসা বিনিময় শেষে আশফি আচমকা মাহি কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিল। মাহির আর বুঝতে বাকি নেই আশফি এখন কি চাইছে।তাই আশফির ভালোবাসার ডাকে মাহি ও সাড়া না দিয়ে থাকতে পারলোনা।দুজনের শত ভালোবাসার মাঝেও হঠাৎ করে মাহির চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।সেই মুহূর্তে আশফি মাহির শরীরের সর্বাঙ্গে জড়িয়ে ছিল। আশফির ঠোঁটের স্পর্শে মাহির সারা শরীর ভরে যাচ্ছিল।আশফি দেখতে পাইনি তখন মাহির চোখের পানিটুকু। এতো ভালোবাসা পাওয়ার পরও মাহি কেন এমন ধরনের স্বপ্ন দেখলো সেই কথাটাই মাহির বারবার মনে পড়ছিল ঠিক যতবার আশফি মাহিকে ভালোবাসছিল।
চলবে……..
রোমান্টিক_অত্যাচার -২
পর্ব-১৫
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
-“কি ব্যাপার বল তো চান্দু?
তোর বাবার কি এখনো ফেরার সময় হয়নি?আজ কাল বড্ড লেট করে বাসায় ফিরতে।আর এই নাকি ওনার মেয়ে কে উনিই দেখাশোনা করবে।কত কথা বলেছিল!
হুহ।রাত ৮ টা বাজতে চলল।এরকমই হয়।এখন তো বউ পুরানো হয়ে গেছে। এক মুখ দেখতে দেখতে বোরিং সে।কিন্তু তোর মুখ তো আর পুরানো হয়নি। তাহলে সেই খাতিরেও তো অফিস ছেড়ে জলদি বাড়ি ফিরতে পারে।
মাহি চান্দুকে কোলে নিয়ে বেলকনিতে দাড়িয়ে কথাগুলো বলছে।এর মাঝে আশফি গাড়িতে করে বাসার ভেতর ঢুকলো।মাহি আশফির গাড়ি দেখে ড্রয়িংরুম এ চলে গেল। আশফি ড্রয়িংরুম এ ঢুকে চান্দু আর মাহিকে দেখে তার ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মুখটা হাসিতে ভরে উঠলো। আশফির হাসি দেখে মাহি বলল,
-“এতো হাসছেন যে? অফিস থেকে ফেরার সময় কি এখন হল?আজ রাতে না ফিরলেও পারতেন।
আশফি মাহির কাছে এসে দাড়ালো তারপর বলল,
-“হুমম।আগে আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিই। হাসছিলাম এটা দেখে, একটা বাচ্চার কোলে আর একটা বাচ্চা।দৃশ্যটা দেখার মত।আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরটা অনেক দীর্ঘ তাই ওটা পরে বিস্তারিত ভাবে বলবো।
-“বুঝলাম।তো আমাকে কি আপনার এখনো বাচ্চা মনে হয়?আমি এখন আপনার চান্দুর মা হয়ে গেছি।ঠিকআছে?তাই আমি মোটেও বাচ্চা নই এখন।
-“আসলে বিষয়টা হচ্ছে প্রত্যেক মেয়েরা মা হওয়ার পর নিজেদের বড় বড় ভাবে।আর তুমিও সেটাই ভাবছো।কিন্তু তুমি মোটেও বড় হওনি।বড় হলে তো চান্দুর প্যান্টটা উল্টো করে পড়াতে না।
আশফির কথা শুনে মাহি চান্দুর প্যান্টের দিকে তাকালো।মাহি প্যান্টটা আসলেই উল্টো করে পড়িয়েছে।সেটা দেখে মাহি বলল,
-“আরে আমি তো খেয়াল ই করিনি।সব তোমার জন্য।
-“আমার জন্য মানে? আমি কি তোমাকে প্যান্ট উল্টো করে পড়াতে বলেছি?
-“না।কিন্তু তোমার কথা ভাবতে ভাবতেই তো এমনটা হয়েছে।
-“হ্যা,তাইতো।নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা।
-“তাই নাকি।ঠিক আছে কাল তো হলিডে।সারাদিন তুমি তোমার চান্দুর দেখাশোনা করবে।আমি কিচ্ছু করবোনা।
-“সেটা তোমাকে আর বলতে হবেনা।আমি নিজেই সব করবো।আর তোমার দেখাশোনাটা ও করবো খুব ভালোভাবেই।
মাহি চান্দুকে একটা সার্ভেন্টের কাছে দিয়ে গেলো।তারপর আশফির কাছে গিয়ে আশফিকে কিছুটা টেক কেয়ার করতে শুরু করলো।
-“বাহ্!বাচ্চাটা দেখছি বড় হয়ে যাচ্ছে সত্যি সত্যি। কত সুন্দর করে আমার যত্ন নিচ্ছে।
-“এর সাথে বড় হওয়ার কি সম্পর্ক হলো?আমি কি আগে তোমার যত্ন নিইনি।
-“নিয়েছো।কিন্তু আজকে যেনো তোমাকে সত্যিই অন্যরকম লাগছে।
-“কারণ এখন আমি একজন মা।
-“হুম।এর জন্যই,তাইনা?
-“হুম।নাও পুরো শরীর মুছে দিয়েছি।এখন চলো ডিনার করে নিবে।
মাহির কথা শুনে আশফি ওর মুখটা টায়ার্ডনেস এর মত করে রাখলো। মাহি বুঝতে পেরেছে আশফি ওকে খাবার রুমে এনে খাইয়ে দিতে বলছে। মাহি সেটা বুঝতে পেরে আশফিকে কিছু না বলে মুখে একটা মৃদু হাসি টেনে খাবার আনতে চলে গেল। খাবার খাইয়ে দেওয়ার সময় আশফি মাহিকে বলল,
-“আমি আগে তোমার চুমু খাবো।তারপর খাবার। আজকে সারাদিন এটা খুব মিস করেছি।
-“মিষ্টিটা সবসময় খাবার খাওয়ার পরে খেতে হয়। আগে নয়।
-“আমি আগেও খাবো আর খাবার খাওয়ার পরেও খাবো।
-“উফফ!তুমি না….
তারপর মাহি আশফির কাছে গিয়ে আশফির কপালে আগে একটা চুমু খেলো তারপর আশফির ঠোঁটে।চুমু খাওয়া শেষ হলে আশফি বলল,
-“উম এতো মিষ্টি কেনো তোমার চুমু?আমার তো আরো খেতে ইচ্ছা করছে।
-“পাঁজি আগে খাবারটা খাও।
-“ওকে।এরপর শুধু মিষ্টি আর মিষ্টি।
এরই মাঝে সার্ভেন্ট এসে চান্দুকে রুমে শুইয়ে দিয়ে গেল।চান্দু ঘুমিয়ে পড়েছে। সেটা দেখে আশফি বলল,
-“দেখেছো আমার মামনি কত বুঝে।ও জানে আজকে রাতে বাবা ওর মামনির থেকে অনেক অনেক মিষ্টি খাবে।সেটা ওর দেখা ঠিক হবেনা।তাই আগে ভাগে ঘুমিয়ে পড়েছে।
-“হুম তাইতো।তখন আর কোনো টায়ার্ডনেস কাজ করবেনা তাইনা?
-“আরে ওটা কাটানোর জন্যই তো তোমাকে প্রয়োজন।ওগুলো নেওয়ার সময় কি আর এসব টায়ার্ডনেস কাজ করে?
-“সেটাইতো দেখছি। আচ্ছা আজ কাল অফিসে কি প্রচন্ড চাপ?বাসায় ফিরতেও লেট করছো আর ফোন দেওয়াটা ও কমিয়ে দিয়েছো।
-“নেগেটিভলি নিও না ডিয়ার।তুমি যেমন ভাবছো তেমন কিছুই নয়।
তোমাদের দুজনের উপর আমার এটেন্টিভ সব সময় একশো।কিন্তু আজ কাল কোম্পানির অর্ডারগুলো নিয়ে একটু বেশি কেয়ারফুল থাকতে হয়।আমাদের কোম্পানিটা তো এখন ১০ নাম্বার rangking এ আছে। তাই আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যাটাও বেশি হয়ে গেছে।গত কয়েকমাস ধরে একটা কোম্পানি আমাদের সাথে ডিলে আসার জন্য মড়িহা হয়ে আছে একদম। কিন্তু তাদের ম্যাটেরিয়ালস এর মান আমার পছন্দ না হলে আমি কি করে তাদের সাথে ডিল করি।
-“আচ্ছা বুঝলাম।অনেক কথা হয়েছে এখন তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করো তো।
-“না আমি আর খাবোনা। ভালো লাগছেনা।বাকিটুকু তুমি খেয়ে নাও প্লিজ।
-“সারাদিন পর বাসার খাবার খাবে তাও এতো অনীহা?
-“ভালো লাগছেনা বিশ্বাস করো।আর আমি তো খালি পেটে থাকবোনা।তোমার থেকে তো আজকে অনেক মিষ্টি খাবো।পুরো পেট পুরে খাবো।
-“আহা….কি ভাবের কথা। এখন আর কোনো কথা না বাড়িয়ে রেস্ট নিন।
-“রেস্ট তো নিবই।তুমি ডিনার সেড়ে জলদি এসো না।
-“এই ঘুমিয়ে পড়লে নাকি? -“উহুম।চোখ বন্ধ করে আছি।
-“মাত্র ৯:৩০ টা বাজে। এত জলদি ঘুম আসবেনা তো।
-“তাহলে ঘুম না আসা পর্যন্ত আমাকে আদর করতে থাকো।
-“ধুর তোমার খালি যতসব দুষ্টুমি মার্কা কথাবার্তা।
-“তো এখন আপনার ঘুমের জন্য আমি কি করবো?ঐ সেই রাজা রানীর গল্প আবার শোনাবো?
-“ওহহো তুমি তো সেই গল্পটা শেষ করোনি।
-“হুম।আজ ও তো শেষ করতে পারবোনা বলা শুরু করলে।
-“হুম।প্রতিদিন একটু একটু করে শুনলে তো ভালো লাগেনা।
-“আচ্ছা তাহলে কিভাবে পুরোটা শুনাবো তোমাকে?
-“কিভাবে পুরোটা শোনাবে?আচ্ছা তুমি একটা কাজ করতে পারো। কাল তো হলিডে।
-“তো?
-“কাল তুমি সারাদিন আমাকে গল্পটা শোনাবে।
-“এ্যাহ্।আমার যেনো আর কোনো কাজ নেই।আমি ওনাকে সারাদিন শুধু গল্পই শোনাবো।
মাহি আশফির কাছে গিয়ে আশফিকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“অনেক আদর করবো।
মাহির কথা শুনে আশফি মাহির দিকে তাকাল। তারপর বলল,
-“লোভ দেখানো হচ্ছে?
-“একটু।
-“সে তুমি আমাকে আদর করতে না চাইলেও আমি এমনিতেই আদর নিতাম।
-“কিভাবে?আমি যদি না করি?
-“সেটা তো তুমি ভালো করেই জানো আমি কিভাবে আদর নিই।মাঝে মধ্যে ভুলে যাও নাকি?
-“আমি জানিনা। গল্পটা তোমাকে শোনাতেই হবে। সে যেভাবেই হোক।
-“ওকে ওকে।ভেবে দেখছি কি করা যায়।এখন আমার মিষ্টিগুলো দাও। না হলে খালি পেটে ঘুম আসবেনা।
-“ওর বুকের উপর মাথা পেতে শুয়ে ছিলাম।মাথা উঁচু করে ওর সারা মুখে আমার ঠোঁটের ছোঁয়া দিলাম। এরপর ও নিজেই আমাকে জড়িয়ে ধরে ওর খুব কাছে নিয়ে ইচ্ছামত আমাকে আদর করতে থাকল।
এরপর বেশকিছুদিন কেটে গেল চান্দুকে নিয়ে আশফি আর মাহির দৈনন্দিন জীবন আর তার মাঝে নিঃশেষ ভালোবাসা। একদিন সকালের ঘটনা। আশফি আর মাহি বসে ব্রেকফাস্ট করছিল এমন সময় একটা ইনভাইটেশন কার্ড আসলো আশফির কাছে।
-“কিসের কার্ড এটা?(মাহি)
-“ইনভাইটেশন কার্ড।(আশফি)
-“কিসের ইনভাইটেশন? কে পাঠালো?
-“হুয়াং চ্যাং।গত ৯ মাস ধরে যে কোম্পানিটা আমাদের কাছে তার কোম্পানির ম্যাটেরিয়ালগুলো সাপ্লাই করতে চাইছে সেই কোম্পানির ওউনার। আগামী সপ্তাহে সন্ধ্যাই তার বাসায় একটা পার্টির অরগানাইজড করেছে।
-“হঠাৎ তোমাকে ইনভাইট করলো যে?
-“শুধু আমাকে নয় তোমাকেও।
-“আমাকে ও?
-“হুম।কাপলদের জন্য পার্টিটা।
-“ওহ্ আচ্ছা।
-“লোকটার কাজগুলো কেমন অদ্ভুত ধরনের। মানে সে ডিলটা করার জন্য যে কোনো পন্থা অবলম্বন করছে।যেচে ইনভাইট করছে আবার।
-“আরে তুমি এতো ডিপলি ভাবছো কেনো? ব্যাপারটা তো এমন নাও হতে পারে। তুমি একজন বিজনেসম্যান সেও একজন বিজনেসম্যান।তাই হয়তো তোমাকে ইনভাইট করেছে।
-“হতে পারে?
-“তো সেটা কবে?
-“আমি যেদিন গার্ডেন সিটিতে যাবো।
-“তাহলে তো আর তুমি পার্টিতে আর জয়েন করতে পারছোনা।
-“হুম।সে দেখা যাবে পরে। আচ্ছা আমি তাহলে অফিস চলে যাচ্ছি।আমার চান্দু আর চান্দুর মায়ের খেয়াল রেখো।ওকে?
-“অবশ্যই।
-“তো যাওয়ার আগে আমাকে কিছু দেওয়ার ছিল তোমার?
-“দেওয়ার ছিল বুঝি? কই আমার তো মনে পড়ছেনা।
আশফি এদিক ওদিক তাকিয়ে মাহির কোমড় টেনে ধরে ওর ঠোঁটে ৩ মিনিটের একটা চুমু দিল। তারপর বলল,
-“তোমার মনে পড়ার অপেক্ষায় আমি আর থাকলাম না।
-“পাঁজি একটা।
-“আসছি।বাই।
-“বাই।
আশফি কিছুদূর গিয়ে আবার থেমে গেল।
-“ওহ্ আর একটা কথা। এই শোনো?
মাহি আশফির ডাক শুনে পিছু ফিরে তাকাল।
-“কি হয়েছে?
-“বেডরুমে একটা গিফ্ট আছে আপনার জন্য।
-“গিফ্ট?
-“হুম।দেখে নিয়েন।
তারপর মাহি বেডরুমে গিয়ে বালিশের উপর একটা বই দেখলো।বইটির নাম “Violent Fancy”.
-“Violent Fancy. Writer Ashfi Chowdhury. বাব্বাহ্!আমার বরটা রাইটার হল কবে থেকে?
মাহি বইটা খুলতেই একটা ছোট্ট চিরকুট পেলো। চিরকুটটা খুলে মাহি পড়লো।চিরকুটে লিখা ছিল,”রাইটার তো আপনার জন্যই হলাম।আর Violent fancy টা ও শুধু আপনাকেই ডেডিকেট করলাম।”চিরকুটটা পড়ে মাহি হাসলো।
-“গল্পের নামটাই তো অদ্ভুত।না জানি গল্পটা কতটা অদ্ভুত।
বইটা খুলেই মাহি প্রথম কিছু লাইন পড়ে বুঝতে পারলো এটা সম্রাট ফালাক আর রাজকন্যা মেহেরুন এর গল্প।
-“ও আচ্ছা।তাহলে গল্পটা ও আমাকে বুক করে দিয়েছে। যাতে আমি সম্পূর্ন গল্পটা পড়তে পারি।ইশ আশফি আমাকে এত ভালোবাসে কিভাবে?আমার ছোট বড় সবরকম চাওয়া পাওয়ার দিকে খেয়াল রাখে ও। কিন্তু একটা জিনিস তো খুব মিস করবো।ওর মুখ থেকে গল্প শোনা আর বলার সময় ওর অঙ্গ ভঙ্গী গুলো।আর তার মাঝে মাঝে তারপর বলা আর তার সাথে একটা করে পাপ্পি দেওয়া। কতরকম দুষ্টুমি যে ও করতে পারে!
মাহি নিজের সাথে কথাগুলো বলছিল তার ভেতর আশফি মাহির ফোনে কল করলো।ফোনটা মাহি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল,
-“গল্পের মাঝে যে চুমুগুলো আমার পাওনা ছিল সেগুলো গুণে রেখো। কোনো স্যাক্রিফাইজিং হবেনা।একবারে এসে নিয়ে নিব কিন্তু।
-“নগদ তো আর পাচ্ছেন না।পরে এসে নিলে কি মজা পাবেন?
-“বউ এর চুমুতে সবসময়ই মজা থাকে।সে যে সময়ই নিই না কেন?তো গল্পটা কি পড়া শুরু করেছ?আমি আসার পর কিন্তু আর পড়ার সুযোগ পাবেনা।
-“হুম সে তো জানি।
এখনো শুরু করিনি করবো।
-“গল্প পড়ো আর যাই করো।আমার চান্দুর আর তার মায়ের যত্নের প্রতি যেন কোনো ত্রুটি না হয়।না হলে কিন্তু…………
-“থাক আর বলতে হচ্ছেনা।অফিস পৌঁছে গেছো?
-“না।কিছুসময়ের ভেতরেই পৌঁছে যাব।ওকে রাখছি এখন।
-“হুম।এই শোনো।
-“হ্যা বলো।
-“তোমার গল্পের নামটা কিন্তু খুবই ইউনিক।
-“তার থেকেও ইউনিক গল্পটা।আমার বউটা যেহেতু ইউনিক।তার জন্য গল্পটাও তো ইউনিক হতে হবে।
মাহি চান্দুকে খাইয়ে কিছুসময় নিজের কাছে ওকে রেখে তারপর একটা সার্ভেন্টের কাছে চান্দুকে দিয়ে দিল।গল্পের বইটা হাতে নিল গল্পটা পড়ার জন্য।প্রথম কিছু পৃষ্ঠা গ্যাপ রেখে পরের পৃষ্ঠা থেকে গল্পটা পড়া শুরু করলো মাহি।যেখানে গল্পটা থেমে ছিল সেখান থেকে পড়া শুরু করলো।
[#Violent_Fancy ]
সম্রাট ফালাক তাজ যে মুহূর্তে রাজকন্যা মেহেরুনের শরীরে জড়িয়ে থাকা চাদরটাকে টেনে ফেলে দিল সেই মুহূর্তে মেহেরুন নিজের তড়োযার এর দিকে লক্ষ্য না রেখে তার অর্ধনগ্ন শরীর দুহাত দিয়ে ঢাকতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।আর রাজা ফালাক সেই সুযোগটি ই কাজে লাগালো।তখন চিন্তা ভাবনা ছিল রাজকন্যা মেহেরুনকে তুলে নিয়ে যাওয়া।সে ঠিক তারই পরিকল্পনা করছিল কিভাবে সে রাজকন্যা মেহেরুন কে তার সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারবে।রাজা ফালাক আস্তে আস্তে রাজকন্যা মেহেরুনের দিকে এগোচ্ছে।কিন্তু তার পরিকল্পনা কার্যকারী হওয়ার আগেই রাজকন্যা মেহেরুন এর পিতা জাভেদ খান এসে উপস্থিত হল মেহেরুনের কক্ষে।মেহেরুন কারো উপস্থিতি টের পেয়ে রাজা ফালাকের কাছ থেকে ছুটে পালাতে চাইল তার কাছে। কিন্তু ফালাক তার আগেই মেহেরুনকে ধরে তার গলার কাছে তড়োযার ঠেঁকিয়ে স্নানাগার থেকে শয়নকক্ষে প্রবেশ করলো।মেহেরুনের পিতা সেই দৃশ্য দেখে ক্রোধান্বিত কন্ঠে চিৎকার করে বলল,
-“সম্রাট ফালাক! আল্লাহর কসম আমার কন্যার শরীরে এক চুল পরিমাণ আঘাত লাগলে তোর শিরচ্ছেদ করবো আমি।
-“এ কাজ তো আমি মনের ভুলেও কখনো করবোনা সম্রাট জাভেদ।আপনার কন্যার সৌন্দর্যে আমার চেতনা হারানোর পরিক্রম হয়েছিল।ওকে আমার এখন চাই সে যেভাবেই হোক।
আমি ওকে আমার সঙ্গে করে নিজের রাজ্যে নিয়ে যাব।
-“আমার প্রাণ থাকতে আমি কখনোই তা হতে দিবনা।
-“এর জন্যই তো আপনার প্রাণ থাকবেনা সম্রাট জাভেদ।
সম্রাট ফালাকের কথা শুনে মেহেরুন খব ভয় পেয়ে গেল। ও কখনোই পারবেনা ওর চোখের সামনে নিজের পিতার রক্তাক্ত মৃত দেহ দেখতে।ও কিছুসময় চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিল যে রাজা ফালাকের সাথে যেতে ও রাজি হয়ে যাবে এখন। কারণ ওর পিতা আর তার রাজ্য যদি সে বাঁচাতে পারে তাহলে রাজকন্যা মেহেরুন তার জীবন বিপন্ন করে দিতে প্রস্তুত।এখন আপাতত ও রাজি হবে রাজা ফালাকের সঙ্গে যাওয়ার জন্য।পরে সুযোগ বুঝে ওখান পালিয়ে আসবে।এটাই ছিল রাজকন্যা মেহেরুনের পরিকল্পনা।তাই সে তার পিতাকে বলল,
-“পিতা আমি কখনোই সহ্য করতে পারবোনা ঐ মর্মান্তিক দৃশ্য তখনই আমার মৃত্যু ঘটবে।তার থেকে বরং আমি রাজা ফালাকের সঙ্গে তার রাজ্যে যাব।রাজা ফালাক আপনার কাছে আমি আমার পিতার প্রাণ ভিক্ষা চাইছি।দয়া করে তার কোনো ক্ষতি করবেন না।
-“আমি জানতাম রাজকন্যা মেহেরুন খুবই সাহসী আর বুদ্ধমতী।একটু আগেও আমি তার যে সাহসী রূপ দেখলাম এখন আমি তার যে রূপ দেখছি তার সাথে আমি তার সেই রূপের কোনো মিল পাচ্ছিনা।এত সহজে সে আত্মসমর্পণ করবে তা আমার চিন্তার বাহিরে ছিল। তার মানে তার পরিকল্পনা ভিন্ন কিছু।সে আমাকে বোকা বানাতে চাইছে।
কন্যার এমন ধারা কথা শুনে রাজা জাভেদ খান অবাক হল।মেহেরুনকে সে বলল,
-“মেহেরুন!মা তুই ভাবলি কি করে এই নরপিশাচের হাতে আমি তোকে তুলে দিব?আমি বেঁচে থাকতে তা কখনোই পারবোনা।তার থেকে আমার মৃত্যু অনেক শ্রেয়।
-“থামুন সম্রাট জাভেদ। আপনার কন্যা নিজেই আমার সামনে আত্মসমর্পণ করেছে।সেখানে আপনি আর বাঁধা দিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না। রাজকন্যা মেহেরুন আপনি আপনার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন যা অতুলনীয়।
চলুন তাহলে আমার সাথে। আর আপনার পিতা মাতার ব্যবস্থাও আমি করছি।
এর মাঝে ফালাকের সৈন্যরা গোটা রাজমহল দখল করে নিয়েছে রাজা জাভেদ খানের সৈন্যদের পরাজিত করে।সম্রাট ফালাক মেহেরুনের পিতামাতা কে ও আটক করে ফেলেছে।রাজা জাভেদ খানের সিংহাসনে বসেছে সম্রাট ফালাক তাজ।রাজকন্যা মেহেরুনের অনুরোধে তার পিতামাতার প্রাণ ভিক্ষা দিয়েছে রাজা ফালাক।এদিকে ফালাক মেহেরুনের চাচা আরব খান কে যে কথা দিয়েছিল সে কথাও সে রাখেনি। তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকেও আটক করেছে। মেহেরুনকে সে নিজের রাজ্যে তুলে নিয়ে যায়। আর মেহেরুনের পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে সে কারাগারে নিক্ষেপ করে। মেহেরুন বুঝতে পেরেছে যে শুধু যুদ্ধের মাধ্যমে রাজা ফালাককে পরাজিত করা যাবেনা।তীক্ষ্ণ বুদ্ধির প্রয়োজন।তাই সে চুপচাপ সহ্য করে নিল রাজা ফালাকের সব অন্যায়। কিন্তু এখন সে ভাবছে কিভাবে রাজা ফালাকের থেকে তার সম্মান রক্ষা করবে।
★রাতের ঘটনা★
-“মন্ত্রিসাহেব আমি বড়ই ক্লান্ত।শেরপুর রাজ্য দখলের খবরটি আপনি রাজসভায় গিয়ে ঘোষণা করে দিন। আর ঘোষক কে বলে দিন রাজ্যে সব অঞ্চলে খবরটি পৌঁছে দিতে।(ফালাক)
-“আপনার ইচ্ছা মহারাজ। আসছি।
-“মহারাজ আপনার রাতের খাবার প্রস্তুত। (দাসীবৃন্দ)
-“এই মহলে আজকে একজন নতুন অতিথি এসেছে সেটা তোমরা নিশ্চই জানো?
-“জ্বী মহারাজ।
-“তার খাবারের ব্যবস্থা কি হয়েছে?
-“আজ্ঞে না মহারাজ।
সম্রাট ফালাক দাসীবৃন্দর না বোধক উত্তরে প্রচন্ড আকারে রেগে গেল। বিছানা থেকে বসা অবস্থা থেকে উঠে দাড়িয়ে দাসীদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলল,
-“চাবুকাঘাতে তোমাদের শরীর জর্জরিত করে ফেলব।অনেকদিন পিঠে চাবুক পড়েনা তোমাদের। রাজমহলে অতিথি আসলে তাদের সেবাযত্ন,দেখভাল করতে হয় তা কি তোমরা ভুলে গেছ?
-“মহারাজ আমাদের মাফ করুন।এমন ভুল আর কক্ষনো হবেনা। আসলে এর আগে যাদের আপনি এভাবে নিয়ে এসেছেন কখনো তাদের দেখভালের কথা বলেননি।তাই আমরা……..
দাসী তার কথা আর শেষ করলোনা।দাসীর কথা শুনে রাজা ফালাক ও কিছুটা বিস্মিত হলো।
-“সত্যিই তো।এর আগে আমি যেসব রাজকন্যাদের তুলে নিয়ে এসেছি তাদের খেয়াল রাখার কথা আমার একবারও মনে পড়েনি। তাদেরকে শয্যাসঙ্গী বানানোর পর দ্বিতীয়বার তাদের কথা আর মনে পড়েনি।এখন তারা আমার রাজমহলে কি অবস্থাতে আছে সেই খবরটুকু আমি নিইনা।দাসীবৃন্দ, প্রহরী, সেনাপতি তাদের উপর ওদের ছেড়ে দিয়েছি।তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখন আমার দাসীতে পরিণত হয়েছে।কিন্তু রাজকন্যা মেহেরুনকে দেখার পর থেকে তার চিন্তা আমি আমার মাথা থেকে এক মুহূর্তের জন্য ও সড়াতে পারছিনা।আর এখন নিজের খাওয়ার কথা শুনে তার খাওয়ার কথা আমার মনে পড়লো।কি আছে রাজকন্যা মেহেরুনের ভেতর?কেনো তার প্রতি আমি এত আকৃষ্ট হচ্ছি? শুধু কি তার সৌন্দর্যের জন্যই?
-“মহারাজ?আমরা তাহলে রাজকন্যা মেহেরুনের জন্য কি খাবারের ব্যবস্থা করবো?
দাসীদের কথা শুনে সম্রাট ফালাক তার ভাবনার জগত থেকে বেড়িয়ে এল।
-“আমার জন্য যা ব্যবস্থা করেছ তার জন্য ও তাই ব্যবস্থা করো।খাওয়া শেষে তার বিশ্রাম পর্ব শেষ হলে তাকে আমার কক্ষে নিয়ে আসবে।
-“ঠিক আছে মজারাজ।
-“আর হ্যা।রাতের খাবার খাওয়ার পূর্বে তাকে নিশ্চই গোসল করে পবিত্র হতে বলবে।
দাসীগুলো রাজা ফালাকের কক্ষ থেকে বিদায় নিয়ে রাজকন্যা মেহেরুনেকে যে কক্ষে থাকতে দেওয়া হয়েছে সেই কক্ষে চলে গেল খাবার নিয়ে।রাজকন্যা মেহেরুন তখন বসে ভাবছিল কি করে রাজা সম্রাটের থেকে তার পরিবার আর তার রাজ্যকে রক্ষা করবে। আসলে রাজকন্যা মেহেরুন ঠান্ডা মস্তিষ্কের অধিকারী ছিল।সে খুব সহজে ভেঙ্গে পড়ার মত মেয়ে নয়।
বিপদে মস্তিষ্ক ঠান্ডা রেখে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে হয় সে সেই শিক্ষায় গ্রহণ করেছে তার পিতার থেকে। মেহেরুন ভাবছে সে যেহেতু এখনো অক্ষত আছে তাহলে এত সহজে তার কোনো ক্ষতি করবেনা রাজা ফালাক।তাই যা করার অতি শীঘ্রই করতে হবে।দাসীদের প্রবেশে মেহেরুন ভাবনার জগত থেকে বাস্তব জগতে ফিরে এল।রাজা ফালাকের আদেশ মোতাবেক গোসল করলেও দাসীর আনা খাবার সে গ্রহণ করলোনা। এতক্ষণ মেহেরুনের মনে সাহস সঞ্চারিত হলেও দাসীদের কথা শুনে সেই সব সাহস এক নিমিষে ভয়ে পরিণত হল।রাজা ফালাক তার কক্ষে মেহেরুনকে নিয়ে যেতে বলেছে।মেহেরুন ভাবছে এখন নিশ্চই রাজা ফালাক তার ভয়ানক হিংস্র রূপ বের করবে মেহেরুনের সামনে।হিংস্র পশুর ন্যায় মেহেরুনের দেহ ছিড়ে খাবে সে।ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিবে তার শরীরকে।দাসীবৃন্দ মেহেরুনকে ফালাকের কক্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছে।
-“রাজকন্যা!সম্রাট আমাদের আদেশ করেছেন তার কক্ষে আপনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
-“না।আমি যাবোনা। তোমাদের সম্রাট কে গিয়ে বলো সে যদি আমার সম্মানের দিকে হাত বাড়ায় তাহলে আমি নিজেই আত্মহননের পথ বেছে নিব।
-“রাজকন্যা আপনি সম্রাট ফালাকের অন্দরমহলে আছেন।সে না চাইলে আপনি মড়তেও পারবেন না।
-“মৃত্যু ঘটানোর মালিক। তোমাদের সম্রাট নয়। সে দেখতে চাই আমি নিজেকে শেষ করতে পারি কিনা?
-“মৃত্যু ঘটানোর মালিক যেমন আমাদের সম্রাট নয় তেমন আপনিও নন।
মাঝখানে শুধু শুধু আপনি নিজেকে কষ্ট দিবেন।
-“তোমরা কি নারী? কিভাবে সহ্য করতে পারো আর এক নারীর প্রতি এত অনাচার?তোমাদের শরীরের লোম শিউড়ে উঠেনা?
-“বোন!তোমাকে বোন বলেই ডাকলাম। আমি শ্যামনগর রাজ্যের ছোট রাজকন্যা ছিলাম।চোখের সামনে নিজের বুবুর মৃতদেহ দেখেছি। আর কিছু বলতে পারছিনা।
দাসীটি কথাগুলো বলতে গিয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলো।তারপর আবার বলতে শুরু করলো,
-“আমরা চাইলেও আপনার কোনো সাহায্য করতে পারবোনা।শুধু এটুকু বলতে পারি বেঁচে থাকতে চাইলে নিজেকে স্ব ইচ্ছায় তুলে দিতে হবে সম্রাট ফালাকের কাছে।
-“পতন ঘটবে।এতো অনাচার এতো অত্যাচার উপরওয়ালা বেশিদিন সহ্য করবেনা।তোমাদের সম্রাটের পতন ঘটবে।
এরপর রাজকন্যা মেহেরুন দাসীদের সঙ্গে ফালাকের কক্ষে প্রবেশ করলো।এই প্রথম রাজকন্যা নিজেকে অনেক অসহায় মনে করছে।নিজেকে রক্ষা করার মত কোনো উপায় সে খুঁজে পাচ্ছেনা।দাসীবৃন্দ মেহেরুনকে ফালাকের কক্ষে প্রবেশ করিয়ে তারা বাহিরে চলে গেল।
-“কাঠ দ্বারা নির্মিত একটি ছোট আসবাবের উপর কিছু ফল রয়েছে একটি পাত্রে। তার ভেতর একটি ছুড়ি।হ্যা ওটাকেই আমি আমার কাজে লাগাবো।হয় নিজেকে শেষ করে দিব আর না হয় রাজা ফালাককে।ছুড়িটা যখন নিতে যাব তখনই রাজা ফালাক কক্ষে প্রবেশ করলো।
-“কক্ষে প্রবেশ করতেই দেখলাম মেহেরুন ফল কাটার ছুরিটির দিকে হাত বাড়িয়েছে।আমাকে দেখে সে থেমে গেল।সে যখন আমার দিকে ঘুরে দাড়ালো আমি তখন তার স্নিগ্ধ শীতল মুখটি দেখে আরো একবান সম্মোহিত হলাম। ভিজে থাকা চুলগুলো ছেড়ে আছে সে।কোনো সাজগোজ নেই।তারপরেও ওকে এতো আকর্ষণীয়
(আবেদনময়ী বোঝাতে) লাগছে যে পলক ফেলতে পারছিনা।হঠাৎ করে মেহেরুন ছুরিটি হাতে নিয়ে নিল।আমি সত্যি চমকে গেলাম।ও নিজের কোনো ক্ষতি করে ফেলবে না তো? আমি আমার নিজের স্থানেই দাড়িয়ে আছি ওর কাছে যাচ্ছিনা।এদিকে ও নিজেও আমার উপর আক্রমণ করছেনা। আমি ওকে অভয় দেওয়ার চেষ্টা করছি।রাজকন্যা মেহেরুনের দিকে অগ্রসর হলাম আমি। কারণ যে কোনো মুহূর্তে ও নিজের শরীরে আঘাত করতে পারে।
-“সম্রাট ফালাক আপনি আমাকে খুব অসহায় ভাবছেন তাইনা?আর সেই অসহায়ত্বের সুযোগ নিতে চাইছেন।আত্মঘাতী করবো তবু আপনার মত নরপিশাচের কাছে নিজেকে সমর্পণ করবোনা।ক্ষত বিক্ষত করে ফেলব নিজের শরীরকে। এই ক্ষত বিক্ষত শরীর ভোগ করতে পারবেন তো আপনি?
-“তুমি ভুলে যাচ্ছ যে তোমার পিতা মাতা এখনো জীবিত আছে।তোমার একটামাত্র ভুলের জন্য তাদের জান বিপন্ন হয়ে যাবে।
-“ঐ অন্ধকার কারাগারে তাদের বেঁচে থাকা সেই মরে যাওয়ার সমতুল্য।আমি বেঁচে থাকতে তাদের ঐ মরনাপন্ন অবস্থা দেখতে চাইনা।এর থেকে নিজের মৃত্যু হাজার গুণ উত্তম।
কথাগুলো বলেই মেহেরুন নিজেকে ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করলো।সেই মুহূর্তে রাজা ফালাক তাকে আটকানোর চেষ্টা করলো। একরকম ধস্তাধস্তি শুরু হলো ওদের মাঝে।এক সময় রাজা ফালাক মেহেরুনের নিকট থেকে ছুরিটা কেড়ে নিয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। মেহেরুন নিজের ঝোক সামলাতে না পেরে বিছানার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো।তাতে মেহেরুনের বুকের উপর থেকে পাতলা চাদর(ওড়না) সরে নিচে পড়ে গেল। তখন মেহেরুনের নিজের প্রতি নিজের খেয়াল না হলেও রাজা ফালাকের খেয়াল ঠিকই গেল তার উপর। তারপর রাজা ফালাক ছুরিটি নিচে ফেলে দিয়ে মেহেরুনের দিকে এগিয়ে গেল।মেহেরুনের চোখ দিয়ে তখন অনবড়ত পানি পড়ছিল।সে ধরেই নিয়েছে আজ বোধহয় তার নারীত্বটুকু এক হিংস্র নরপিশাচ ছিনিয়ে নিবে।
চলবে……
রোমান্টিক_অত্যাচার -২
পর্ব-১৪
লেখিকা- #Israt_Jahan
ধারনা- #Kashnir_Mahi
★৭ দিন পর★
-“এই ও এতো ভদ্র কেনো বলো তো?দিনভর শুধু ঘুম আর ঘুম।একটুও জালাচ্ছে না তোমাকে।
(আশফি)
-“তো তুমি কি চাইছো ও সারাক্ষণ জেগে থাকবে আর আমাকে খালি জালাবে? ও একদম ঠিক আছে।খাচ্ছে-দাচ্ছে আর ইচ্ছামত ঘুম দিচ্ছে।
-“এটা আমার একদমই পছন্দ হচ্ছেনা।আমি তো এরকমটা চাইনি।আমি চেয়েছি ও আমার সাথে হাত মিলিয়ে দুজন একসাথে দিনভর তোমাকে জালাবো। কিন্তু ও তো দেখছি একটু বেশিই শান্ত।
-“হুম।ও তোমার চান্দু না। চান্দু হলে ঠিকই বেশি বেশি দুষ্টুমি করতো।মেয়েরা সবসময় শান্তই হয়।ওরা মায়ের দরদ বুঝে।
-“ও আচ্ছা।তুমি কি ভেবেছো ও ছেলে হয়নি বলে আমি ওর নাম পাল্টে দিবো?আর ও দুষ্টুমি করবে না?কক্ষনো না।ওর নাম চান্দুই থাকবে।আর এখন তো মাত্র বয়স ৭ দিন।
কয়েকমাস যেতে দাও ও তোমাকে বুঝিয়ে দিবে যে কতটুকু দুষ্টু।
-“হুহ।বললেই হলো? তুমি দেখো ও সত্যি অনেক শান্ত হবে একদম আমার মত।
-“এই তোমার কি চোখ নেই?
-“চোখ নেই মানে?চোখ না থাকার কি দেখলে?
-“তুমি কি দেখতে পাচ্ছোনা ও দেখতে একদম আমার মত হয়েছে।আর ওর সবকিছু আমার মতই হবে।তুমি আমার বাচ্চাবেলার ছবিগুলো বের করো।তারপর মিলিয়ে দেখো।
-“প্রথমদিন তো ওকে একদম জাপানিজদের মতই লাগছিল।এখন দেখো চেহানার ভাব অনেকটা পাল্টে যাচ্ছে ওর।মনে হচ্ছে আমাদের মতই হবে। তোমাদের মত হবে না।
শুধু চোখদুটো একদম হুবহু তোমার মত হয়েছে।
-“কচু।ওর সবকিছুই আমার মত হয়েছে।তুমি আর কি করে বুঝবে।এখানে তো আর ওর নানিবু,দাদিবু নেই।তারা দেখলে এভাবে বলতো,ও একদম ওর বাবার মত হয়েছে,ওর বাবা ছোটোবেলায় একদম এমন ছিল আরো কতকিছু। কিন্তু আফসোস তারা কেউ ই আজ নেই।
-“হুম।ওর আর কপালে নানিবুর, দাদিবুর আদর-সোহাগ জুটলোনা।
-“আচ্ছা তুমি এখন মন খারাপ করতে বসোনা তো। তোমাকে কি বললাম,যাও আমার ছবিগুলো নিয়েসো।
-“হ্যা যাচ্ছি।
ড্রয়ার থেকে মাহি একটা মোটা ছবির এলবাম বের করে নিয়ে আসলো।
এলবামটাতে শুধু আশফির বাচ্চাবেলার ছবিই আছে তা এলাবামটার কভার পেইজ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।কারণ এলবামের কভার পেইজটাতে আশফির ছোটোবেলার ছবি লাগানো।
-“তুমি এলবাম টা ড্রয়ারে রেখেছিলে?এটা তো আলমারিতে তোলা ছিল। (আশফি)
-“হুম।কারণ এটা আমি প্রায় প্রায় দেখতাম তাই আর আলমারিতে রাখিনি। হাতের কাছে রেখে দিয়েছিলাম।
-“কোন ছবিগুলো দেখতে বলো তো?যেগুলোতে আমি বিবস্ত্র? সেইগুলোই দেখতে নিশ্চই?
-“আরে না,ধুর!তুমি যে কি সব বলো?শুধু ঐ ছবিগুলোই দেখবো কেনো? সবছবিই দেখতাম।ভালো লাগতো দেখতে।
-“হুম।অনেক কিউট ছিলাম না?
-“হ্যা।তোমার গালগুলো অনেক সুন্দর ছিল।কেমন নাদুস নুদুস।দেখলে মন হয় গালগুলো টিপে দিই শুধু।
-“আচ্ছা?তো দাও না!
-“এ্যাহহ…..এখন তোমার গালগুলো তখনকার মত না। আর এখন তোমার গালই টিপবো নাকি তোমার চান্দুর গালই টিপবো?
আশফি মাহিকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“দুজনেরই।কারণ এখন তো তোমার পালা। এতদিন আমি তোমাকে খেয়াল করেছি,যত্ন করেছি,অনেক অনেক আদর করেছি সবকিছু আমিই করেছি।আর এখন তুমি করবে এগুলো তাও আমাদের দুজনকেই। এখন আমার আর আমার চান্দুর সব দায়িত্ব তোমার।
-“হা হা হা হা।
-“হাসছো যে?হাসার মত কথা বলেছি আমি?
-“তোমার চান্দু নামটা কিন্তু ওর সাথে যাচ্ছে না। তাই হাসি পেলো।
-“যাবেনা কেনো?
যাওয়ালেই যাবে।তুমি ওকে চান্দু বলেই ডাকবে।
অন্যকোনো নামে ডাকবেনা।ও কিন্তু একদম আমার মতই হবে।
-“সিওর?
-“একদম।তুমি ছবিগুলোর সাথে ওকে মিলিয়ে দেখো।
-“হুম।তাই তো দেখছি। দেখতে তো তোমার মতই হয়েছো।কিন্তু ওর স্বভাব চরিত্র কিন্তু আমার মতই হবে।
-“একদমই না।ওগুলো আমার মত হবে।
-“তুমি এতো কনফিডেন্টলি কিভাবে বলছো?
-“ধৈর্য রাখো ডিয়ার। দেখতে পাবে।আর হ্যা,
আজকে থেকে কিন্তু তোমার সাথে অনেক কিছুই ঘটবে।যার কোনো বিরতি থাকবেনা।
-“কিহ্?
-“হুম।বিরতিহীন ভালোবাসা চলবে।এবার আর আদর করার সময় কোনো বাঁধা থাকবেনা মাঝে।কোনো সাবধানতা থাকবেনা।শুধু সোহাগ চলবে।
মাহি আশফির দিকে ঘুরে বসলো।তারপর আশফির কলার চেপে ধরে বলল,
-“এই শুনো একদম আমার কাছে আসবেনা কিন্তু। একবার যা কষ্ট দিয়েছো তুমি আমাকে,দ্বিতীয়বা
র আমি আর সেই কষ্ট নিতে চাইনা।
-“মানে কি?আমি কি তোমাকে সারাবছরই প্রেগন্যান্ট করে দিবো নাকি?
-“ধুর।ফাজিল কোথাকার?
-“ফাজিলের কি করলাম? তুমি যা ভাবছো সেটা আমি ডিরেক্টলি বললাম। তুমি এই ভয়ে আমাকে আদর করতে দিবেনা? আমি এতোটা কেয়ারলেস নই।তখন তুমি চেয়েছিলে আর তাই আমি তোমাকে দিয়েছিলাম।এখন যদি তুমি না চাও তাহলে আর দিবোনা।আর যদি প্রতিবছরই এক একটা করে চাও তাহলে প্রতিবছরই দিবো।
-“কি?অসভ্য ছেলে। কোনো লাজ লজ্জা নেই তোমার।দুষ্টু একটা।
মাহি আর আশফির মাঝে খুনসুটিময় ভালোবাসা চলছে এখন।মাহি আশফিকে দুষ্টুমির ছলে কিল ঘুষি দিচ্ছে। আশফি ও মাহিকে নানারকম দুষ্টুমিকর কথাবার্তা বলে মাহির সাথে দুষ্টুমি করছে। এভাবেই ওদের চান্দুকে নিয়ে ওদের মাঝে আনন্দ, প্রেম-ভালোবাসা,
দুষ্টুমি দিয়ে কেটে গেলো পাঁচটা মাস।চান্দুর একটা ফরমাল নেম ও আছে কিন্তু আশফি ওকে সবসময় চান্দু বলেই ডাকে।
-“মাহি প্লিজ জলদি এসো। আমার গোসল এর সময় হয়ে গেছে।তাড়াতাড়ি আমাকে গোসল করিয়ে দাও।অফিস যেতে হবে তো।
-“আসছি।আশফিটা যা জালাচ্ছে দিন দিন। এমন করলে আমি দুজনকে কিভাবে সামলাবো?বুঝে ও সবসময় অবুঝের মত থাকে। শোধ নেওয়া হচ্ছে আমার থেকে এখন। প্রেগন্যান্সির ঐ কয়টা মাস ওকে খুব জালিয়েছি তো তাই তারই শোধ নিচ্ছে। আর তার সাথে তো আমার সুকন্যা আছেই।আশফি ঠিকই বলেছে।ও একদম ওর বাবার মতই হয়েছে।কি যে শেয়ানা মেয়ে।বাবার সব কথা যে কিভাবে বুঝে কে জানে?বাবা যখনই ঘুমাতে বলবে ঠিক তখনই ঘুমাবে। অথচ আমি তাকে সারাদিন সারারাত ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করলেও সে ঘুমাবেনা। ভ্যা ভ্যা করতেই থাকবে। দিনের বেলা এক ফোটা ঘুমাবেনা। বড়দের মত শুধু রাত হলেই ঘুমাবে তাও যদি সেটা বাবা এসে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ায় তবেই ঘুমাবে।
-“চান্দু মাই ডিয়ার,তুমি দেখছো তোমার মামনিকে আমি কিভাবে জালাচ্ছি? আর আমার সাথে তো তুমি আছোই।তুমি জানো তুমি যখন তোমার মামনির ভেতর ছিলে তখন সে আমাকে কত্ত জালিয়েছে? সারাটা রাত আমাকে ঠিক মত ঘুমাতে দেইনি। আমাকে দিয়ে তার বমি পর্যন্ত পরিষ্কার করিয়েছে এমনকি আমার গায়ে পর্যন্ত বমি করেছে।তার সবকিছু আমাকে দিয়ে করিয়েছে। তাই আমিও এখন তার শোধ নিচ্ছি।বলো,ঠিক করছি না মামনি?
-“হুম।একদম ঠিক করছেন।(মাহি)
আশফির কোলে ছিল চান্দু। বাবার কথা শুনে চান্দু হেসে দিল।তাই দেখে আশফি বলল,
-“দেখেছো আমার মামনি ও হেসে আমার কথায় সায় দিচ্ছে।
-“হুম।মেয়ে তো একদম বাবা ভক্ত।বাবার মত দুষ্টু হয়েছে।পাক্কা শেয়ানা।
-“এই তুমি চুপ করো। একদম আমার মেয়েকে বকবেনা কিন্তু।
-“ঠিক আছে।বকবোনা। এখন চলুন আপনার দেরী হয়ে যাচ্ছে তো।
-“হুম চলো। মামনি তুমি একটু শোও তো এখানে। বাবাকে তো অফিস যেতে হবে।তোমার মামনির কাছে এখন আমি গোসল দিব আর সাথে………
-“আর সাথে কি?
-“একটু পরেই সেটা টের পাবে।
-“গোসল করার সময় কিন্তু একদম কোনো দুষ্টুমি করবেনা।
-“সে দেখা যাবে।
-“দেখা যাবে মানে?
-“এতো কথা বলো না তো। আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
-“হুম চলুন।
মাহি একটা সার্ভেন্টকে ডেকে তার কাছে চান্দুকে দিল।এরপর মাহি আশফির সাথে বাথরুমে ঢুকলো।
আশফি তারপর মাহির সামনেই ট্রাওজার খুলে টাওয়াল পড়ে নিল।আর টি শার্টটা ও খুলে ফেললো। এটা দেখে মাহি বলল,
-“এই তুমি এটা কি করলে?
-“চেঞ্জ করলাম।
-“এটা কি ধরনের চেঞ্জ? একদম সামনের উপর খুলে ফেললে?
-“তো কি হয়েছে?তুমি কি আমাকে নতুন দেখছো?
-“তুমি না আবার সেই আগের মত দুষ্টু হয়ে গেছো।
-“আমি তো এমনই ডিয়ার।শুধু মাঝখানে একটু ভদ্র হয়ে গেছিলাম আমার চান্দুর জন্য।
-“হ্যা।তাই তো দেখছি।
-“তাই তো দেখবে।আর কিছুদিন আগেও যে আমার প্যান্ট খোলার জন্য যা অস্থির হয়ে গেছিলে তখন লজ্জার কথা মনে ছিল না? এখন আমি নিজে যখন তোমার মনের আশা পূরণ করছি তখন সেটা পছন্দ হচ্ছে না।
-“আমার মনে মোটেও এমন কোনো আশা ছিলনা।
-“হুম।সে তো বুঝিই। আমি তো তোমার কাজের হেল্প ও করছি।আমার হাত পা পরিষ্কার করতে যাতে তোমার সুবিধা হয় সেই ব্যবস্থায় তো করলাম। নাও তো,তাড়াতাড়ি আমাকে আদর করা শুরু করো।
-“কি?
-“না মানে তাড়াতাড়ি গোসল করিয়ে দাও।দেরী হয়ে যাচ্ছে তো।
-“হুম।
মাহি নিচু হয়ে বসে আশফির পা পরিষ্কার করতে গেলো।তখন আশফি বাঁধা দিল।
-“আরে আগে পা পরিষ্কার করতে হবেনা।
-“তো?
-“আগে আমার এই সুন্দর বডিটাতে সাবান মাখাও।
-“ওকে।আমি ওর কথামত ওর শরীরে আগে সাবান মাখতে শুরু করলাম।
-“হয়েছে।এখন তোমার হাত দিয়ে আমার পুরো বডিটা মালিশ করো।
-“হাত দিয়ে কেনো? বডি ক্লিনার…….
মাহির কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই আশফি কথা বলল,
-“যা বলছি তাই করো।
এতো কথা বলবেনা।
-“কি যে চাই ও তা শুধু ঐ জানে।আমি ওনার পুরো শরীরে হাত দিয়ে মালিশ করে দিচ্ছি।আর উনি সুখের আবেশে চোখ বন্ধ করে আরাম উপভোগ করছে।
-“এই তুমি এতো সুন্দর করে মালিশ করো কিভাবে?
-“কিভাবে তা দেখতে পাচ্ছোনা?
-“হুম পাচ্ছি তো।আমার তো এখন আরো অনেক কিছু পেতে ইচ্ছা করছে।
-“তাই?কি কি পেতে ইচ্ছা করছে?
-“তোমার পুরোটাকেই পেতে ইচ্ছা করছে।
-“আচ্ছা?
-“হুম।
-“এভাবে কি তোমার শরীর পরিষ্কার হচ্ছে?
-“হুম।খুব পরিষ্কার হচ্ছে। একটুও জীবাণু থাকবেনা।
-“ও আচ্ছা….তো এখন তোমার অফিসের দেরী হচ্ছেনা?
আশফি মাহির কোমড় ধরে মাহিকে কাছে টেনে নিলো।
-“কি করছো কি?আমার গায়ে সাবান লেগে যাবে তো?আমিও ভিজে যাবো।
-“সুখের জোয়ারে আমি ভিজবো আর তুমি ভিজবে না?
-“মানে?
-“মানে এখন আমি তোমার পুরো শরীরে সাবান মাখবো।
-“এই একদম না।ওদিকে তোমার মেয়ে একা আছে যে।সেদিকে খেয়াল আছে?
-“একা নেই ও।সার্ভেন্ট এর কাছে আছে।
-“আশফি প্লিজ ছাড়োনা। আমি এখন ভিজবোনা।
-“তো কখন ভিজবে, রাতে?
-“হ্যা রাতেই ভিজবো। তখন তো চান্দু ঘুমাবে। তখন আর তোমাকে বারণ করবোনা।
-“আচ্ছা ঠিক আছে। রাতে ও ভিজাবো।আর এখনো ভিজবে।সমস্যা কি?
-“কি?
-“হুম।আমি ওকে শাওয়ার এর নিচে দাড় করিয়ে শাওয়ার ছেড়ে ওকে ভিজিয়ে দিলাম আর আমিও ভিজলাম।
-“কি করলে এটা?
-“এখনো কিছুটা বাকি আছে।
আমি মাহির গা থেকে ওর জামাটা খুলতে গেলাম কিন্তু মাহি আমার থেকে ছুটে গেলো।
-“মাহি এটা কি হচ্ছে? আমার কাছে এসো বলছি।
-“উহুম।
-“আমি কিন্তু এখন রেগে যাবো।
-“রেগে গেলে যাবে।
-“তাও তুমি আমার কাছে আসবেনা?
-“একদমই না।
-“মাহি আমি কিন্তু সত্যি বলছি।আমি যদি রেগে যায় তাহলে তোমার সাথে যে কি করবো তা তুমি বুঝতেই পারছো।
-“শুরু করেছে ব্ল্যাকমেইল করা।এখন যদি আমি ওনার কাছে না আসি তাহলে হয়তো টানা সাতদিন আমার কাছেও আসবেনা। আমি চুপচাপ ওর কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। কিন্তু ও তো অলরেডি রেগে গেছে।আমাকে জড়িয়ে ধরছেনা।আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-“সরি।আমি তোমাকে একটু রাগাতে চেয়েছিলাম।
আশফি রাগ করে মুখটা অন্যপাশে ঘুরিয়ে নিলো। তারপর মাহি আবার বলল,
-“সরি ডিয়ার।আর এমন করবোনা।প্লিজ আমাকে আদর করো।
আশফি কোনো কথা বলছেনা।মাহি আশফির গাল ধরে আশফির ঠোঁটে চুমু খেতে শুরু করলো। কিন্ত তাতে আশফির কোনো রেসপন্স নেই।মাহি ওকে ছেড়ে দিল।তখন আশফি মাহির দিকে তাকালো। মাহি কথা না বলে হঠাৎ করেই গা জামাটা খুলে ফেললো।তখন আশফি পলকহীন চোখে তাকিয়ে রইলো।মাহির এই কাজ দেখে ওর একটু হাসি পেয়ে গেলো।তবুও হাসলোনা।
মুখ চেঁপে রইলো।এরপরেও আশফির থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে আশফিকে মাহি বাথরুমের দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে ধরলো।তারপর বলল,
-“এই ছেলে তুই আমাকে আদর দিবিনা?কথা বল?
-“এটা কি ধরনের আচরণ?
-“জোড়।জোড় করে আদর নেওয়ার পদ্ধতি।
-“আচ্ছা?জোড় করে কিভাবে আদর নেয়?
-“জানোনা বুঝি?
-“নাহ্।জানিনা তো।
আশফির এমন উত্তর পেয়ে মাহি বুঝতে পেরেছে আশফি আসলে চাইছে মাহি নিজে ওকে আদর করা শুরু করুক আর আশফিকে ফোর্স করুক আদর করতে।মাহি সেটাই করলো।আশফিকে মাহি জড়িয়ে ধরলো।আর আশফির হাতদুটো মাহি নিজেই নিজের কোমড়ের উপর রাখলো।আশফি বুঝতে পেরেছে মাহি ওকে জড়িয়ে ধরতে বলেছে।
আশফি ওকে জড়িয়ে ধরলো।এরপর দুজনেই দুজনকে অসম্ভব ভালোবাসতে শুরু করলো। দুজনের গোসল করা শেষ হলে যখন বাথরুম থেকে বের হলো ওরা তখন মাহি খেয়াল করলো আশফির গলার কিছু জায়গায় রক্ত জমে দাগ হয়ে গেছে।আর আশফিও সেটা খেয়াল করলো ড্রেসিংটেবিল এর সামনে দাড়িয়ে আয়নাতে দেখে।তারপর আশফি মাহিকে বলল,
-“মাহি তুমি এগুলো কি করেছো?
-“আমি ওগুলো ইচ্ছে করে করিনি।
-“হুম।যখন আদর করতে যায় তখন তো দৌড়ে পালাতে চাও।আবার এদিকে যখন নিজে কাছে এসে আদর করা শুরু করো তখন তো কোনো হুঁশ থাকেনা।
-“তুমি আমাকে এভাবে বলছো কেনো?আমি সত্যিই খেয়াল করিনি।
-“সেটাই তো বলছি।যখন আমার কাছে আসেন তখন তো আপনার খেয়াল থাকে শুধু আমাকে আদর করার দিকে।
-“এই তুমি অফিস যাও তো। আর কোনো কথা বলোনা।
-“লজ্জা পাওয়া হচ্ছে?আর আমি কি না খেয়ে অফিস যাবো?আমাকে খাইয়ে দিবে কে?
-“তুমি যেভাবে বলছো তাতে যেকোনো মেয়েই লজ্জা পেয়ে যাবে।
-“ঠিক আছে আর লজ্জা দিচ্ছিনা।এখন আমি এগুলো নিয়ে কিভাবে অফিস যাবো?সবাই এগুলো দেখলে কি ভাববে?
-“সেটা কি আমি জানি? তোমার জিনিস তুমি কিভাবে সামলাবে তা তুমিই জানো।
-“ওহ্।নিজে দাগ বানিয়ে দিয়ে নিজেই কিছু জানোনা।ঠিক আছে,রাতে দেখছি তোমাকে। আজ রাতে তোমার যে কি হাল করবো!একটা জায়গাও ফাঁকা রাখবো না।দেখে নিও।রাতের জন্য তৈরি থেকো।
-“হুহ।
চলবে……….
রোমান্টিক_অত্যাচার -২
পর্ব-১৩
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
-“আলিশা কেঁদেই চলেছে কথাগুলো শেষ করে।
শান্তনা ব্যাপারটা ও এখন ওকে দেওয়া ঠিক হবেনা। কিন্তু এই ব্যাপারটা এখন ওকে কি করে বোঝায় যে কেউ যদি মন থেকে না চায় কাউকে ভালোবাসতে তাহলে সেটা জোড় করে ভালোবাসানো সম্ভব না।কি করে যে বোঝাবো ওকে? আচ্ছা এখন আপাতত একটু একা থাকুক।বিষয়টা নিয়ে আমি একটু ভাবনা চিন্তা করে দেখি কি করা যায়। মাহিকে নিয়ে বরং এখন রুমে চলে যায়।পাশে ফিরে তাকাতেই দেখলাম মাহি পাশে নেই।ও কখন উঠে চলে গেছে টেরই তো পেলাম না।আমি আলিশা কে বললাম,
-“আলিশা সিস?
-“হুম বলো।
-“প্লিজ এভাবে আর কেঁদোনা।সমস্যা থাকলে তার সমাধান ও নিশ্চই আছে।তুমি এখন কান্নাকাটি বন্ধ করো।আর একটু রেস্ট নাও।আমরা তোমার সাথে পরে এই ব্যাপারে কথা বলছি।
হতাশাগ্রস্ত চেহারায় আলিশা একটা হাসি দিয়ে কথা বলল,
-“আর কি কথা বলবে?
-“তুমি এতো ভেঙ্গে পড়ছো কেনো?তুমি তো এমন ছিলেনা।আমি তো জানতাম তোমার মাঝে অনেক কনফিডেন্স আছে। তুমি কারো উপর ডিপেনডেন্ট নও। তাহলে এগুলো কি আলিশা?আমি সত্যি তোমার থেকে এটা আশা করিনি।
আলিশা প্লিজ নিজেকে সামলাও।
-“আশফি আমি নিজেকে সত্যি সামলাতে পারতাম যদি ও আমাকে বেসামাল পরিস্থিতিতে না ফেলতো। তুমি বিশ্বাস করো ওর কোনো কিছু দেখে আমার একবার ও মনে হয়নি যে ও আমাকে ভালোবাসেনা।
-“হুম।বিষয়টা যা দাড়াচ্ছে তাতে এখন ওর সাথেই কথা বলতে হবে মনে হচ্ছে।আচ্ছা ওর ডিটেইলটা আমাকে দাও তো।
-“ওয়েট।
আলিশা নিজের পার্স থেকে একটা ভিজিটিং কার্ড বের করলো।তারপর আশফিকে বলল,
-“এটা ওর ভিজিটিং কার্ড এখানে ওর কাজের সব ডিটেইল দেওয়া আছে আর ওর ইমেইল এড্রেস টা দেওয়া আছে ওখানে ঢুকলেই ওর সব ইনফরমেশন পেয়ে যাবে।
-“ওকে,তুমি টেনশন নিও না।একটু রেস্ট নাও।
আলিশার সাথে কথা শেষ করে রুমে চলে এলাম।রুমে এসে দেখি মাহি বিছানার এক কোণে বসে আছে পিসি সামনে করে।কি কাজ করছে ও পিসিতে?আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
-“কি করছো ডিয়ার?
-“একজনকে খুঁজছি।
-“কাকে খুঁজছো?আর কোথায় খুঁজছো?
-“সেটা তো খুঁজে পাওয়ার পর বলতে পারবো।
মাহি আসলে যাকে সন্দেহ করছে তার নামটা দিয়ে ভার্চুয়াল সাইটগুলোতে তাকে সার্চ করছে।
-“আচ্ছা আলিশার ব্যাপারটা নিয়ে একটু কথা বলতে চাইছিলাম। আলিশার থেকে ছেলেটার ভিসিটিং কার্ড নিয়েছি। আশফি ভিসিটিং কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখতেই ওর চোখ আটকে গেলো কার্ডটার উপর।ও ভাবছে ভিসিটিং কার্ডে যার ডিটেইল দেওয়া আছে গত তিন বছর আগেও এমনই একটা কার্ড ওর কাছে ছিলো।কেউ ওকে দিয়েছিল।আর সেটা ওর খুব ভালো করে মনে আছে। সেইদিন ঐ কার্ডটা ওকে কে দিয়েছিল।কারণ ও তার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে। তার নামটা ও ওর স্পষ্ট মনে আছে।তার নামটা ছিল ড. দুপুর হাসান। আর এখন ওর হাতে যে কার্ডটা আছে সেখানেও ঐ একই নাম।
-“তার মানে দুজনই একই ব্যক্তি?
-“কি বলছো?কারা একই ব্যক্তি?
-“মাহি তোমার কাছে একটা ঘটনা বলাই হয়নি আমার।দেশে থাকতে লাস্ট যে এক্সিডেন্টটা তোমার সাথে হয়েছিল সেদিন তোমার একজন পরিচিত তোমার অপারেশন টা করেছিল।তোমার জন্য তখন সে ও অনেক চিন্তিত ছিল।তারপর উপরওয়ালার অশেষ ক্রিপাতে আর তার চেষ্টাতে তুমি সুস্থ হও।
-“কে সে?
-“ড. দুপুর হাসান।
মাহি নামটা শুনে কিছুটা বিস্মিত হলেও তারপর নিজেকে সামলে নিল।আশফি আবার কথা বলা শুরু করলো,
-“সেদিন আমাকে সে বলেছিল তোমার সাথে তার কিভাবে পরিচয়।
-“ও আচ্ছা,তোমার পরিচয় জানতে চাইনি?
-“হুম।চেয়েছিল তো। আমি তখন আমার পরিচয় দিয়েছিলাম আমি তোমার উডবি হাজবেন্ড।আচ্ছা সে কথা বাদ দিই।এখন আমি তার কথা তোমাকে কেনো বলছি সেটা জানতে চাইবেনা?আলিশা যাকে পছন্দ করে সে এই দুপুর হাসান।
-“হুম।বুঝলাম।
-“বুঝলাম মানে? এমন ভাবে বললে শুনে মনে হলো তুমি অনেক আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলে।
-“আন্দাজ তো আগেই করতে পেরেছি।দুপুর যে এখনো সেদিনকার ঐ কথা ধরে রেখে সত্যি সত্যি সারাজীবন নিজেকে একা রাখার সিদ্ধান্ত নিবে তা আমি ভাবতেও পারিনি। আর ঘুরে ফিরে দুপুরের বিষয়টা যে আবার আমার জীবনে আসবে সেটা ও ভাবিনি।কিন্তু এখন তো দেখছি আলিশা আর দুপুরের সম্পর্কটা না হওয়ার পেছনে আমার ভূমিকাটাই বেশি।হয়তো সেটা অনিচ্ছাকৃতভাবে।কিন্তু দায়ী তো আমিই হচ্ছি। এখন তো ব্যাপারটা আশফির সাথে শেয়ার না করলেই হচ্ছেনা।
-“আশফি?আরে লোকটা কোথায় গেলো?
বেলকোনিতে চোখ পড়তেই দেখলাম ও ফোনে কথা বলছে।
-“উফ কি যে যন্ত্রণা!
-“কি হয়েছে?
-“ঐ যে সেদিন বললাম না একটা কোম্পানি আমাদের কোম্পানির সাথে ডিলে আসতে চাইছে।যেভাবে রিকোয়েস্ট করছে তাতে তো আমার সন্দেহ হচ্ছে।
-“সন্দেহ করার কি আছে? তার হয়তো সত্যি বেনিফিট হবে আমাদের কোম্পানির সাথে ডিল করলে।
-“সে তো হবেই।কিন্তু আমি আরো কিছুদিন ভেবে দেখতে চাইছি।আচ্ছা কয়টা বাজে এখন?
-“রাত ৯.০০ টা বাজতে চললো প্রায়।
-“আপনার যে ডিনারের সময় হয়ে গেছে তা কি ভুলে গেছেন?
-“ও হ্যা আলিশাকে ও তো খেতে দিতে হবে।চলো ওকো নিয়ে ডিনার সেড়ে নিই।
-“হুম চলো।
ওরা তিনজন একসাথে রাতের ডিনার করলো। ডিনার করে রুমে এসে মাহি আশফির সাথে কথা বলছে,
-“তোমাকে একটা বিষয় জানানোর আছে।
-“জানিয়ে ফেলো।
-“প্লিজ ফোনটা রাখো।
কথাটা মন দিয়ে শুনে।
-“তোমার সব কথায় আমি মন দিয়ে শুনি সে চোখ আমার যেদিকেই থাক।
-“দুপুর…….
বলতে গিয়েও মাহির গলায় কথাটা আটকে আসছে।
কেমন একটা আতংক কাজ করছে ওর মাঝে।আসলে এটা ভেবেই ওর মাঝে আতংক কাজ করছে যে দুপুর আর ওর ব্যাপারটা জানার পর আশফির রিয়্যাকশানটা কেমন হবে। যদিও আশফি অনেক ঠান্ডা মাথার মানুষ কিন্তু রেগে গেলে তো ওকে সত্যিই অনেক ভয়ংকর দেখায়। মাহির ভাবনা চিন্তার মাঝে আশফি কথা বলে ওর চিন্তা ভাবনার ছেদ ঘটালো।
-“দুপুর কি?বলতে গিয়ে থেমে গেলে যে?
-“দুপুরের সাথে একসময় আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো অনেক ভালো বন্ধুর মত।তারপর ও একদিন আমাকে প্রপোজ করে আমি সেটা এক্সেপ্ট করতে পারিনি।এক্সেপ্ট না করার কারণ ও ওকে আমি বলেছিলাম।সেদিন দুপুর আমাকে কিছু কথা বলেছিল।কথাগুলো ছিল………
মাহির গুলো কথাগুলো আশফি শেষ হতে দিলোনা।মাহি বলার আগেই আশফি মাহির মুখ থেকে কথাগুলো কেড়ে নিয়ে নিজে বলা শুরু করলো।
-“কথা গুলো ছিল তুমি যদি ওকে ভালো না বাসো ওকে বিয়ে না করো তবে ও নিজেও কোনোদিন তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবেনা। রাইট?
আশফির কথাগুলো শুনে মাহি বিস্মিত চোখে আশফির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।হয়তো কিছুটা ভয় ও কাজ করছে ভেতোরে।আশফি হঠাৎ মাহির দুই কাঁধ ধরে ঝাঁকি দিলো।তারপর বলল,
-“এই মেয়ে কোথায় হারিয়ে গেছো বলো তো?
মাহি চিন্তার জগত থেতে বেরিয়ে এলো।
-“তুমি?
-“আমি কি?
-“না মানে তুমি ব্যাপারটা সিম্পলি নিয়েছো তো?
-“সিম্পলি না নেওয়ার তো কিছু দেখছিনা।
-“আসলে এই বিষয়টা কখনো তোমার কাছে বলার প্রয়োজন মনে করিনি।মানে এটা যে বলার মত বিষয় সেটা মনে করিনি।
-“ওহ্ আচ্ছা তুমি ভেবেছিলে আমি তোমার থেকে এগুলো জানার পর ওভার রিয়্যাক্ট করবো? হুম করতাম যদি এগুলো আমার আর তোমার দেখা হওয়ার পরে ঘটতো।তবে ওভার রিয়্যাক্ট করতাম না তোমাকে বারণ করে দিতাম যাতে ওর সাথে আর কথা না বলো।এমনি বন্ধুত্ব আমি মেনে নিতে পারি কিন্তু সে যদি তার থেকে বেশি কিছু ভাবে তোমাকে বা বন্ধু হয়েছে বলে বারবার তোমার হাত ধরে,তোমাকে টাচ্ করে এসব কায়দায় তোমার সাথে কথা বলে সেটাও আমি মেনে নিতে পারবোনা।আর তোমার আর দুপুরের ব্যাপারটা যেহেতু আমি তোমার জীবনে আসার আগে ঘটে গেছে তাই সেটা আমি একদম সহজ ভাবেই দেখছি।
-“হুম।
-“হুম কি হ্যা?তুমি এই তিনটা বছরেও আমাকে পুরোটা চিনতে পারলেনা।
-“স্যরি।
-“স্যরি বলার কিছু দেখছিনা।সেটা আমার ব্যার্থতা।
-“আরে ধুর তোমার ব্যার্থতা হতে যাবো কেনো?
-“থাক হয়েছে অনেক। এখন প্লিজ ঘুমিয়ে আমাকে শান্তি দিন।
-“তার মানে কি?আমি জেগে থাকলে তুমি অশান্তিতে থাকো? এরকমটা তুমি বলতে পারলে?
-“আরে বাবা কেনো অশান্তিতে থাকি সেটা তো শুনবে।
-“অশান্তিতেই তো থাকো। সে যে জন্যই হোক।
আশফি মাহির হাত ধরে টেনে আনলো ওর বুকের কাছে।তারপর বলল,
-“তুমি জেগে থাকলে যে তোমার কাছে না আসা পর্যন্ত যে আমার শান্তি লাগেনা।কিন্তু বাঁধা তো একটা জায়গায়।
-“এর জন্যই বুঝি?
-“ইয়েস ডিয়ার।আচ্ছা তোমার তো কিছু দেওয়ার কথা ছিল আমাকে।
-“কি দেওয়ার কথা ছিল?
-“ভুলে গেছো নাকি ভুলে যাওয়ার ভান করছো?
-“না আমার কিছুই মনে পড়ছেনা আমার ঘুম পাচ্ছে। সরো আমারকে শুতে দাও।
-“এখন হঠাৎ করে ঘুম আসলে কোথা থেকে?
-“তুমিই তো ঘুমাতে বললে।
-“তুমি যে দিন দিন কত বড় ফাঁকিবাজ হচ্ছো!
-“আমি কোনো ফাঁকিবাজ টাকিবাজ নই।সরো না শুতে দাও।
মাহি আশফি ঠেলে সরিয়ে শোয়ার চেষ্টা করছে।
তারপর বালিশটা নিয়ে শুতে গিয়েই আশফি মাহিকে বাঁধা দিল।
-“খবরদার একদম শুবে না।বালিশটা রাখো।
জোড় গলায় বলছে আশফি।
-“কেনো?কি সমস্যা?
-“আমাকে আদর না করে ঘুমাতে পারবেনা।
-“তোমার হয়টা কি মাঝেমাঝে?একটু আগে নিজেই বললে আমি জেগে থাকলে আমার কাছে আসতে ইচ্ছা করে তোমার। তাই তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করো আমাকে।এখন আবার আদর নেওয়ার জন্য কত তালবাহানা।
-“তার জন্য তুমি দায়ী।
-“কিভাবে?
-“তুমি আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছো।
-“কখন?কিভাবে?
-“এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবোনা।আদর দিতে বলছি আদর দাও।
-“আর যদি না দিই?
-“চরম ভোগ আছে তোমার কপালে। সারারাত তো ঘুমাতে পারবেনা।
-“কি করবে যে ঘুমাতে পারবোনা?
-“জামাকাপড় খুলে ফেলবো।
-“কার?
-“তোমার।
-“তুমি না সত্যি অনেক বড় মাপের একটা ফাজিল।
-“আর তুমি অনেক বড় মাপের একটা ফাঁকিবাজ। তখন বললে যে রাতে হাফ পেমেন্ট সহ আবার ডাবল পেমেন্ট দিবে এখন সেটা ভুলে যাওয়ার ভান করছো?
-“হি হি হি।
-“এরবম শয়তানি হাসির দেওয়ার কি হলো?
-“কিছুনা।তোমাকে না মাঝেমাঝে এই একটা ব্যাপারের মাধ্যমে কাবু করা যায়।
-“হুম।তার মানে তখন আমার থেকে রেহায় পাওয়ার জন্য মিথ্যা বলা হয়েছিল?
মাহি মিটিমিটি হাসছে।
-“তো এখন কিভাবে রেহায় পাবে ডিয়ার? এখন তো তুমি আমার বাহুডোরে আটকে আছো।
মাহিকে জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বললো আশফি।
-“আচ্ছা ঠিক আছে বাঁধা দিবোনা।লাইটটা অফ করে দিয়ে এসো।
-“ওকে।
উঠে গিয়ে লাইটটা অফ করে ওর কাছে এলাম। ওকো শুইয়ে দিয়ে ওর কপালে আলতো করে চুমু খেলাম।
-“আশফি?
-“হুম।
-“আই লাভ ইউ।
মাহির এই কথাটা শুনে আশফি অবাক হয়ে মাহির দিকে তাকালো।কারণ এই এতোগুলো বছরে আশফি মাহিকে কখনো এভাবে লাভ ইউ কথাটা বলেনি আর মাহি ও বলেনি।এই প্রথম মাহিই বললো।
-“কি হলো?এভাবে চেয়ে আছো কেনো?
-“আমাদের মাঝে আজই এই বাক্যটা প্রথম ব্যবহৃত হলো।
-“আই লাভ ইউ। দ্বিতীয়বার হলো। কিন্তু উত্তরটা এখনো পেলাম না।
-“প্রপোজটা যেহেতু আজই করলে তাই উত্তরটা ও সময় বুঝেই দিবো।
মাহি একটু রাগ করে গালটা ফুলিয়ে রাখলো।
-“রিফিউজড করবে নাকি?
-“উমমম…..জানিনা। ভেবে দেখার জন্য তো সময় নিলাম।
মাহি আশফির বুকে আস্তে করে একটা ঘুষি দিলো। তারপর বলল,
-“পাঁজি ছেলে। দাম বেড়ে গেছে তাইনা,মেয়ে হয়ে আগে প্রপোজ করেছি বলে?
-“হুম তা তো একটু বেড়ে গেলোই।একটা বিষয় জানো মাহি এর আগে আমি যতবার রিলেশন করার প্রপোজাল পেয়েছি আর তারা যতবার আমাকে লাভ ইউ বলেছি তার একবার ও তারা আমার থেকে তার উত্তরটা পাইনি।
-“তো তুমি আমাকে তাদের কাতারেই ফেললে বুঝি?
-“আজ্ঞে না মহারানী। কারণ ঐ উত্তরটা একজনের জন্য তোলা ছিল।
-“কার জন্য?
-“আমার চান্দুর মামনির জন্য।তবে ভাবিনি চান্দুর মামনি নিজেই আমাকে আগে প্রপোজ করবে। ভেবেছিলাম আমি তাকে আগে বলবো।কিন্তু সেরকম ভাবে কথাটা বলা হয়ে উঠেনি।তবে আপনি যেহেতু আজকে বলেই ফেললেন উত্তরটা ও অবশ্যই পাবেন শুধু একটু সময় সাপেক্ষের ব্যাপার।
-“হাহ্।আমি সত্যিই ধন্য এমন ইউনিক চরিত্রের একটা বর পেয়ে।
আশফি মাহির নাকে চুমু দিয়ে বলল,
-“আর আমিও।
বলার পরই আশফি মাহিকে আদর করতে শুরু করলো। এরপর মাহি আর আশফি আলিশাকে প্রতিদিন মেইন্টালিভাবে সাপোর্ট দিতে শুরু করল যাতে আলিশা দুপুরের বিষয়টা নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা না করে। কিন্তু আলিশার কাছে মাহি আর দুপুরের ব্যাপারটা হাইড রাখলো ওরা।ওরা দুজন যে প্ল্যান করেছে দুপুরকে রাজি করানোর জন্য সেটা আর আলিশাকে ওরা বললোনা। তবে যে প্ল্যানটা ওরা করেছে সেই প্ল্যান টার কার্যক্রম শুরু হবে মাহির বেবি হয়ে যাওয়ার পর। তার আগে তেমন কিছুই ওরা করতে পারছেনা। আর আলিশাকে ও ধৈর্য রাখতে বলেছে।তারপর আলিশা ওদের সাথে সময় কাটানো শেষ হলে দেশে ফিরে গেলো।তার ২ মাস পরের ঘটনা।
-“আআআআ……. আর পারছিনা। এতো পেইন কেনো?
-“একটু কষ্ট করো ডিয়ার আমরা চলে এসেছি তো।
আশফি মাহিকে নিয়ে হসপিটাল এসেছে। হুইলচেয়ারে বসে মাহি চিল্লাচ্ছিল।তখন মাহিকে কেবিনে শিফট করতে নিয়ে যাচ্ছিল আশফি।
-“উহ্ মাগো আর পারছিনা। হায় আল্লাহ্ কেনো এতো কষ্ট দিচ্ছ?
-“ধৈর্য রাখো ডিয়ার। কষ্ট তো একটু হবেই। তবে বেশিক্ষণ কষ্ট পেতে হবে না,দেখো।
-“একদম চুপ।কোনো কথা বলবে না তুমি। তোমার জন্য এতো কষ্ট হচ্ছে। তোমাকে আমি ছাড়বোনাআআআআ।
-“ওকে তুমি ছেড়োনা ডিয়ার।আমরা চলে এসেছি।
নার্স এসে মাহিকে কেবিনে(ডেলিভারি রুম) নিয়ে গেলো। আর আশফি বাইরে দাড়িয়ে থাকলো। বাইরে থেকেই মাহির চিৎকার শোনা যাচ্ছে।
-“ওহ্ গড কি যে ভুল করেছি ওকে বাবু দিয়ে। এর জন্য যে আমাকে কতকিছু শুনতে হলো তা তো তুমি দেখলেই।এই কয়টা মাস আমার উপর দিয়ে যা গেছে নেক্সট টাইম আমি আর এমন ভুল করছিনা।আর আমি ওকে প্রেগন্যান্ট করছিনা।
কিছুক্ষণ পর একজন নার্স কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো। তারপর আশফিকে বলল,
-“স্যার আপনার মিসেস আপনাকে ছাড়া ডেলিভারী কাজ করতে দিবেনা। উনি আমাদের কোনো কিছুই করতে দিচ্ছেন না। বলছে এটা নাকি আপনাকেই করতে হবে।এমনকি ড. কে ও পর্যন্ত কাছে আসতে দিচ্ছে না।
-“কি?কি করছে মেয়েটা? ও হ্যা ও তো আমাকে বলেছিল যে ওর ডেলভারীটা ও আমাকে করতে হবে কারণ কাজটা আমিই করেছি তাই। মাহিটা আসলেই একটা পাগলী।এটা কি আমি কখনো করতে পারি?
-“স্যার প্লিজ আপনি ভেতোরে আসুন।কারণ টাইম ওয়েস্ট হচ্ছে আবার এদিকে বেশি দেরী হলে ওনার প্রবলেম হবে।
-“হ্যা তাইতো।চলুন।
আশফি ভেতোরে যাওয়ার পর মাহি ঠান্ডা হলো। কিন্তু আশফির দিকে চোখগুলো গোল গোল করে তাকিয়ে রইলো।কারণ আশফি ওর কথা রাখেনি।
-“ডিয়ার তুমি কি ভয় পাচ্ছো?
-“তোমার মাথা। তুমি বাইরে দাড়িয়ে ছিলে কেনো?
মাহি ব্যাথায় কাতরাচ্ছিল আর আশফিকে বকছিল।
-“ওকে ওকে। আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে আর এরকম হবেনা। এবারের মত আমাকে মাফ করে দাও?
-“পরের বার তোমাকে আর সুযোগ দিলে তো? উহ্…ঐ ড. কে আমার কাছে আসতে বারণ করো। এই কাজটা তুমিই করবে। তোমার করার কথা ছিল।
মাহি রাগী কন্ঠে আশফিকে বলছিলো।আর মাহির কথাগুলো শুনে নার্স আর ড. সবাই হা করে তাকিয়ে ছিল।কথাগুলো মাহি জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজে বলছিল।
-“ডিয়ার এগুলোতে আমি অভ্যস্ত নই।আর অভ্যস্ত হওয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসছেনা কারণ আমি ড. নই।আর একজন ড. ছাড়া এ ধরনের কাজ আমরা কিভাবে করবো?
-“আমরা নই বলো আমি।
-“ও স্যরি।হ্যা আমি। তো তুমি ব্যাপারটা বুঝতে পারছো নিশ্চই।কিন্তু আমি তোমার পাশে আছি।আর আমাদের এসব কথার জন্য কিন্তু সময় নষ্ট হচ্ছে।এতো তোমার আর আমাদের চান্দুর দুজনের ক্ষতি
হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।বুঝেছো?
-“হুম।তাহলে আমার হাতটা ধরে আমার পাশে দাড়িয়ে থাকো।একদম নড়বেনা।ওকে?
-“ওকে ডিয়ার।
আশফি মাহির হাতটা ধরে মাহির পাশে দাড়িয়ে আছে। আর মাহিকে শান্ত করার চেষ্টা করছে,মাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বেশকিছুক্ষণ পর জাপানিজ দের মত দেখতে একটা ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙের ফুটফুটে একটা কন্যা জন্ম নিলো।চোখ দুটো একদম ছোট ছোট, ঠোঁটটা একদম রক্তের মত লাল আর মাথা ভর্তি কালো চুল।হাত পায়ের আঙ্গুল গুলো কিছুটা লম্বা লম্বা হয়েছে।যাকে দেখতে হূর দের থেকে কম সুন্দর লাগছেনা। মাহির চোখ দিয়ে তখনও পানি ঝরছিলো।কিন্তু বেবিটাকে দেখার পর শান্তিতে যেনো সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গেছিলো। সেই সাথে আশফির ও শান্তি আর খুশিতে চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। আশফি আর মাহি দুজন দুজনের দিকে তাকালো। তারপর আশফি মাহির কপালে চুমু খেয়ে বলল,
-“আই লাভ ইউ টু ডিয়ার।
আম্পটিন লাভ ফর ইউ।
চলবে……