Friday, June 20, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2438



রোমান্টিক_অত্যাচার-২ পর্ব-১৬

0
রোমান্টিক_অত্যাচার-২
পর্ব-১৬
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
-“মেহেরুনকে বিছানার উপর থেকে তুলে আমার সামনে দাড় করালাম। সত্যি বলতে ওর আকর্ষণীয় শরীরের উপর আমার নজর গেলেও তার থেকে বেশি আকৃষ্ট হয়েছি আমি ওর রূপে।শারীরিক গঠন,ওর সৌন্দর্য ওর কণ্ঠস্বর সব মিলিয়ে আমি সত্যি ওর মোহে পড়ে যাচ্ছি। ওর প্রতি আমার উন্মাত্ততা শুধু বেড়েই চলছে।তা থেকে আমি কোনোভাবেই নিজেকে নিজের বশে আনতে পারছিনা। ও পবিত্র, ও দীপ্তিময়ী, মায়াবিনী। ঠিক যেন সদ্য ফোটা লাল গোলাপের মত পবিত্র সে। ওকে যে এভাবে আমার অপবিত্র করতে বিবেকে বাঁধা দিচ্ছে।মনে হচ্ছে ওকে শুধু এক রাতের সঙ্গিনী হিসেবে নয় আমার জীবনের শেষ রাত পর্যন্ত ওকে আমার সঙ্গিনী হিসেবে চায়।
ফালাক মেহেরুনের দুই বাহু চেপে ধরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে এমন চিন্তাভাবনা করছে।আর মেহেরুন ফালাকের কাছ থেকে ছুটে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।মেহেরুন যতই অস্ত্রচালনা জানুক কিন্তু একজন যোয়ান পুরুষের শক্তিবলের কাছে একজন নারীর শক্তিবল সর্বদাই তুচ্ছ হয়।মেহেরুন তার শরীরের সমস্ত শক্তি খরচ করেও ফালাকের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারছেনা।কাঁদতে কাঁদতে মেহেরুন ফালাককে বলল,
-“দয়া করে আমাকে আপনার স্পর্শ থেকে মুক্তি দিন।আমি আপনার মত ঘৃণ্য মানুষের অপবিত্র স্পর্শ সহ্য করতে পারছিনা।
পারছিনা আমি আপনার নারী দেহের প্রতি লোভী দৃষ্টি সহ্য করতে।এর থেকে আমাকে হত্যা করুন।আমি কোনোদিনও কোনো পর পুরুষের সামনে যাইনি।
কোনো পর পুরুষ আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি।
সেখানে আপনার মত নিকৃষ্ট মানবের স্পর্শে আমার পুরো দেহে আগুন জ্বলে উঠছে।ঘৃণা হচ্ছে আমার। দয়া করে আমাকে আপনার মত পাপিষ্ঠের হাত থেকে মুক্তি দিন।জীবিত থাকতে আমি দেখতে পারবোনা একজন পাপিষ্ঠ পর পুরুষ আমার শরীর ভোগ করছে। এর থেকে আমার মৃত দেহকে আপনি আপনার ভোগের সামগ্রী রূপে গ্রহণ করুন।আপনার কাছে এটা একটা মৃত্যু পথযাত্রীর শেষ চাওয়া।
মেহেরুনের এমন ধরনের কথা শুনে ফালাক তার চাহিদার কথা ভুলে গেল। মেহেরুনের কথাগুলো এতটাই বিষাক্ত ছিল যে তার মত দয়া মায়াহীন এক হিংস্র পশুর সমতুল্য মানুষ হয়েও তার হৃদয়ে কথাগুলো আঘাত করেছে।সে বুঝতে পেরেছে যে সে কতটা ঘৃণ্যতম ব্যক্তি হলে কেউ তাকে এমন কথা বলতে পারে যে মৃতদেহ কে তার ভোগের সামগ্রী রূপে গ্রহণ করতে।কথাগুলো শুনে হিংস্র চাহনিতে মেহেরুনের দিকে তাকাল ফালাক। তারপর আপনা আপনি ই মেহেরুনের বাহুদ্বয় সে নিজের অজান্তে ছেড়ে দিল। কিছুসময় মেহেরুনের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে রইল।এই প্রথম সে কোনো নারীর থেকে তার প্রতি এমন ধরনের বাক্য(কথা) শুনলো।যা শোনার পর তার মনে হচ্ছে, আল্লাহর সৃষ্টি পৃথিবীর সবথেকে নিকৃষ্টতম জীব শূকরের থেকেও সে বেশি নিকৃষ্ট জীব।ফালাকের মনে হচ্ছে সে তার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে।মেহেরুনের কথার উত্তর সে কি দিবে ভেবে পাচ্ছেনা বা এখন তার কি করা উচিত তাও ভেবে পাচ্ছেনা।কিছুসময় এভাবে চুপ থাকার পর ফালাক কথা বলল,
-“নিজের কক্ষে চলে যাও।
মেহেরুন ফালাকের কথা শুনে বেশ অবাক হল।সে যা জানে ফালাকের সম্পর্কে তাতে ফালাক এতক্ষণ চুপ না থেকে তার উপর আক্রমণ করার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে মেহেরুনকে নিজের কক্ষে চলে যেতে বলছে।তাই অবাক চোখে মেহেরুনের ফালাকের দিকে তাকিয়ে রইল।এদিকে ফালাক সেটা খেয়াল করল যে মেহেরুন এখনো তার স্থান ত্যাগ করেনি।তাই সে আবার বলল,
-“আমি যা বলেছি তোমার কি তা বোধগম্য হয়নি?
আমি এক কথা পুনরায় ব্যক্ত করা অপছন্দ করি।
ফালাকের কথা শুনে মেহেরুন আর এক মুহূর্ত সময় অতিবাহিত না করে দৌড়ে তার নিজের কক্ষে চলে গেল এবং খুব দ্রুত কক্ষে দরজা বন্ধ করে দিল। মেহেরুন ভাবছে ফালাক এখন তাকে ছেড়ে দিলেও পরে যদি আবার তার উপর আক্রমণ করে তাই সে কক্ষের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানার এক কোণায় বসে রইলো।আজ রাতে মেহেরুন ঘুমাবেনা এমনটাই ভেবে নিয়েছে সে। এদিকে মেহেরুন যখন ফালাকের কক্ষ থেকে দৌড়ে চলে এল ফালাক সেই দৃশ্য খুব ভালো করে অবলোকন করলো।ওর কাছে ঐ দৃশ্য দেখে এটাই মনে হল যে সে একজন মানুষ হয়ে কতটা ভয়ংকর হলে তার থেকে কেউ এভাবে পালিয়ে যেতে পারে।কাঠের আরামদায়ক কেদারায় বসে ফালাক মেহেরুনের বলা কথা ভাবতে লাগলো।বারবার ওর কানে মেহেরুনের একটা কথাই বাজছে,” এর থেকে আমার মৃত দেহকে আপনি আপনার ভোগের সামগ্রী রূপে গ্রহণ করুন”।এই বাক্যটি ফালাককে অবাক করেছে।নিজের চরিত্রের ইতিহাস নিয়ে সে এখন নিজেই ভাবছে।এতকাল সে এটা ভেবে গর্বিত হতো যে বাঘের থেকেও সবাই তাকে বেশি ভয় পায়।আর আজকে তার এই চরত্রটাই বেশি ভাবাচ্ছে।কিছুসময় পর ফালাক তার কিছু দাসীকে ডেকে পাঠালো।
-“রাজকন্যা মেহেরুন শুধু এই রাজমহলের অতিথি নয়।তার থেকেও বেশি কিছু।
ফালাকের এই কথাগুলো শুনে দাসীগুলো একে অন্যের মুখের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে।প্রথমত তারা অবাক হয়েছে রাজকন্যা মেহেরুনকে তখন রাজা ফালাকের কক্ষ থেকে ঐ ভাবে বেরিয়ে আসতে দেখে যে রাজা ফালাক তার কোনো ক্ষতিই করেনি।আর দ্বিতীয়ত তারা অবাক হল এই মুহূর্তে ফালাকের বলা কথাগুলো শুনে।তারপর ফালাক আবার বলা শুরু করলো,
-“তোমরা এভাবে একে অন্যকে দেখছো কেনো? আমি তোমাদের যে কথাগুলো বলার জন্য ডেকে পাঠিয়েছি সেগুলো মনযোগ দিয়ে শোনো।তোমাদের মধ্যে কয়েকজন রাজকন্যা মেহেরুনের খাস দাসী হবে। সর্বদাই তার সাথে থাকবে। সামান্য পরিমাণ কষ্টও তার হতে দিবেনা।আর প্রতিটা মুহূর্তে সে কি করছে না করছে তার প্রত্যেকটা সঠিক তথ্য আমাকে জানাবে।বুঝতে পেরেছো তোমরা?
-“জ্বী মহারাজ।বুঝতে পেরেছি।
-“হুম।এখন তোমরা রাজকন্যার কাছে যাও। দেখো সে কি করছে,তার কি প্রয়োজন।
-“ঠিকআছে মজারাজ, আসছি।
-“ও হ্যা,আর একটা বিষয়। তার কক্ষে যতরকম ধারালো অস্ত্র বা বস্তু আছে সবকিছু সেখান থেকে সরিয়ে ফেলবে।এমন কোনো বস্তু তার কক্ষে রাখবেনা যা দ্বারা তার মৃত্যু ঘটতে পারে বা তার শরীরের কোনো ক্ষতি আর আঘাত হতে পারে।
তারপর কিছু দাসী মেহেরুনের কক্ষের সামনে গেল।বেশ কিছুক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কাচ্ছে কিন্তু মেহেরুন কোনোভাবেই দরজা খুলছেনা।দাসীগুলো বাধ্য হয়ে ফালাককে এই খবর জানালো।ফালাক কক্ষের সামনে এসে বেশ কয়েকবার মেহেরুনকে ডাক দিল কিন্তু মেহেরুন তাতে কোনো সাড়া দিলনা। ফালাক রাগে যখন দরজা ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত তাকে জানালো তখন মেহেরুন ভয় পেয়ে দ্রুত দরজা খুলে দিল।তখন মেহেরুনের মুখসহ পুরো শরীর কাপড়ে ঢাকা।মেহেরুনের এমন ব্যবহারের জন্য ফালাক রাগে ফেটে পড়লেও মেহেরুনের কান্না মাখা চোখ দুটো দেখে আর কিছু বলতে পারলোনা।শুধু ভয়ানক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর সেখান থেকে ফালাক তার নিজের কক্ষে চলে এল দাসীদের মেহেরুনের সঙ্গে থাকতে বলে।দাসীগুলো মেহেরুনকে বলছিল,
-“রাজকন্যা!আল্লাহ্ পাক হয়তো আপনার দিকে দয়ার দৃষ্টিতে দেখেছে। আপনিই প্রথম নারী যে রাজা ফালাকের কাছ থেকে নিজের সম্মানসহ অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসতে পেরেছেন।
-“হাহ্…….কতখন আল্লাহর এই দয়ার দৃষ্টি থাকবে আমার প্রতি?
-“জানিনা।তবে মনে হচ্ছে সম্রাট ফালাকের মাথায় অন্য কোনো পরিকল্পনা আছে।না হলে এতক্ষণে আপনার পরিণতি ভয়াবহ হওয়ার কথা ছিল।কারণ সে একবার কারোর প্রতি রেগে গেলে তাকে অক্ষত রাখেনা।সেখানে আপনার উপর বিন্দুমাত্র শব্দ সে উচ্চারণ করলোনা। আচ্ছা রাজকন্য আপনি কি আবার গোসল করেছেন?
-“হ্যা।আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছে।তার মত নিকৃষ্ট,পাপিষ্ঠ আর ঘৃণ্য মানুষের স্পর্শ আমার পুরো শরীরকে অপিবত্র করে ফেলেছে।আমার মনে হচ্ছে এখনো আমার শরীর ঘৃণাতে খসে পড়ছে।আমার পিতামাতা কি হালে আছে কি হচ্ছে তাদের সাথে আমি কিচ্ছু জানতে পারছিনা।
পিতামাতার কথাগুলো বলতে গিয়ে মেহেরুন চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। দাসীগুলো কথা বলা শুরু করলো,
-“রাজকন্যা!আপনার ভাগ্য ঐ সব রাজকন্যার থেকে সহস্য ভাগ ভালো। কারণ আপনি এখনো জানতে পারছেন তারা জীবিত আছে।আর এর পূর্বে যেসব রাজ্য দখল করেছে সম্রাট ফালাক সেইসব রাজ্যের রাজকন্যা বা রাজপুত্রদের সামনে তাদের পিতামাতাদের সে হত্যা করেছে আবার পিতামাতার সামনে তার সন্তানদের হত্যা করেছে।যখন পিতামাতার সামনে তার সন্তানদের নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে তখন ঐ সব পিতামাতার আহাজাড়ি দেখলে আমাদের নিজেদের প্রাণ বেরিয়ে আসার উপক্রম হত।
-“কতটা নিষ্ঠুর,কতটা হদয়হীন সে।একদিন সে ও পিতা হবে তার সন্তান জন্ম নিবে।আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে বলছি,সে ও একদিন সন্তানহারা হবে।সে ও বুঝবে সন্তানহারানোর কষ্ট কতটা তীব্রতর।
-“রাজকন্যা থামুন।এসব কথা বাহিরের কারো কানে গেলে সোজা সম্রাটের কানে পৌঁছে যাবে।
-“যাক।গেলে কি হবে?মৃত্যু নিশ্চিত করবে এই তো? আমিও তাই চাইছি।
সেদিন সারারাত কাটলো মেহেরুনের চোখের পানি ফেলে।এদিকে ফালাকের রাত কাটলো বিভিন্নরকম চিন্তাভাবনা করে।চিন্তার মূল বিষয়বস্তু ছিল মেহেরুনকে কেন্দ্র করে। অতঃপর সকালবেলা আলোচনাসভাতে বসলো রাজা ফালাক।
-“আমি সবসময় স্পষ্টভাবে কথা বলা পছন্দ করি।আর সেভাবেই নিজেকে গড়ে তুলেছি।তাই যা বলার সরাসরি স্পষ্টভাবেই বলে দিতে চাই আপনাদের সবাইকে।আজকে আলোচনাসভার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে আমার বিবাহ।
রাজা ফালাকের মন্তব্য শুনে আলোচনা সভায় উপস্থিত সকল ব্যক্তিবর্গ হতভম্ব হলো।একে অন্যের সাথে কানাকানি শুরু হলো। যে রাজা আজীবন অন্যায়ভাবে নারীদের অসম্মান করে।আর তার চিন্তাচেতনা ছিল সে আজীবন এমনভাবেই নারীদের নারীত্ব স্বাদ গ্রহণ করবে সে কিনা আজ বিবাহ করতে চাইছে?আর সেটা কাকে?রাজা ফালাক আবার কথা বলতে শুরু করলো।
-“আপনারা আমার সিদ্ধান্তে কি খুশি হয়েছেন নাকি তার থেকে বেশি অবাক হয়েছেন?
সেনাপতি এবার কথা বলে উঠলো,
-“সম্রাট আপনি যে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা তো আমাদের জানাননি?
-“কি বলতে চাইছো তুমি? আমার সকল সিদ্ধান্ত তোমার থেকে শুনে নিতে হবে?
-“না সম্রাট।আমি তা বলতে চাইনি।আসলে আপনি কখন কাকে আপনার সহধর্মিণী রূপে বেছে নিয়েছেন তা তো আমরা জানতে পারলাম না।তাই আর কি প্রশ্নটা করে ফেলেছি।
-“হুম জানতে পারবে এখন। আমি আপনাদের সবাইকে এই মুহূর্তে জানাচ্ছি যে শেরপুর রাজ্যের রাজা জাভেদ খানের একমাত্র রাজকন্যা মেহেরুনকে আমি আমার সহধর্মিণী রূপে তাকে পছন্দ করেছি।এবং অতি শীঘ্রই আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছি।যদিও শেরপুর রাজ্যের রাজা এখন আমি তবুও আপনাদের চেনার খাতিরে এভাবেই রাজকন্যার পরিচয়টা দিলাম।
আলোচনাসভায় উপস্থিত একজন সদস্য প্রশ্ন করলো,
-“সম্রাট বিবাহের দিন তারিখ কবে?তা কি ধার্য হয়েছে?
-“না।বিবাহের দিন তারিখ ধার্য হবে আমার পালকপিতার সাথে আলোচনা করে।
মন্ত্রীসাহেব?
-“জ্বী মহারাজ।
-“আমার পিতাকে খবর জানান যে আমি তার কাছে আসছি।
-“ঠিকআছে মহারাজ। এক্ষণি জানাচ্ছি।
[ #Violent_Fancy_Topic_Off ]
আজকের মত মাহি এই পর্যন্তই গল্পটা পড়লো।
-“আশফি?তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?প্লিজ গান টা নামাও।যে কোনো সময় গুলি বেরিয়ে যেতে পারে। নিজেকে সামলাও।
-“নিজেকে সামলানোর মত অবস্থাতে রাখোনি তুমি।আমি সহ্য করতে পারছিনা ঐ দৃশ্য।তোমার শরীরে অন্য কোনো পুরুষের ছোঁয়া পড়েছে। তা আমি মেনে নিতে পারছিনা।তুমি যতক্ষণ আমার সামনে থাকবে ততক্ষণ আমার ঐ দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভাসবে।আর তা আমার পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব।
তার থেকে তোমাকে আমি মেরে ফেলবো।তাতে আমার শান্তি হবে।
-“না আশফি!!!তুমি ভুল করছো।আশফি??
রাতে ঘুমের মধ্যে মাহি স্বপ্ন দেখে চমকে উঠলো।
-“হায় আল্লাহ্।আমি এ কেমন ধরনের স্বপ্ন দেখলাম।এমন স্বপ্ন আমি কোনোদিনও দেখিনি। কতটা ভয়ংকর ছিল স্বপ্নটা। আশফি আমাকে শুট করলো?যা আমি মনের ভুলেও কখনো ভাবিনা।
মাহি শুয়া থেকে উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিল। মাহির উঠে যাওয়ার শব্দ পেয়ে আশফি চোখ মেলে তাকালো।
-“মাহি?কি হয়েছে?
মাহি তখনও বসে হাপাচ্ছিল।কোনো কথার উত্তর দিতে পারছিলনা। আশফি তা লক্ষ করে মাহির কাছে উঠে গেল।
-“কি হয়েছে ডিয়ার? তুমি এভাবে হাপাচ্ছ কেন? তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?
-“উহহ্…..কি ভয়ংকর ছিল স্বপ্নটা।
মাহি কথাটা বলে আশফির মুখের দিকে তাকাল। স্বপ্নে আশফির যে ভয়ংকর রূপটা দেখেছিল মাহি। সেই মানুষটাই আশফি কিনা তা ও বোঝার চেষ্টা করছিল ওর মুখের দিকে তাকিয়ে।কিন্তু এই আশফির মুখটা দেখে বোঝা যাচ্ছে যে ও কতটা সিরিয়াস মাহির প্রতি। মাহির মুখে সামান্য ঘাম আর ওর হাঁপানো দেখে যে আশফি এতটা আতংকিত হয়েছে সে কি করে পারবে মাহিকে কোনদিন শুট করতে?এই আশফির ভেতরে যে মাহিকে হারানোর প্রবল আতংক কাজ করে।সে কখনোই মাহিকে মেরে ফেলতে পারেনা।এগুলোই ভাবছিল মাহি।এর মাঝে আশফি কথা বলল,
-“স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছো?
-“হুম।
-“আহারে।আমার কাছে এসো।
আশফি মাহিকে কাছে টেনে ওর বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলো।তারপর বলল,
-“ইশ…..তোমার সারা শরীর তো ঘেমে ভিজে গেছে।নাইটিটা ও ভিজে হয়ে আছে ঘেমে। কি এমন স্বপ্ন দেখেছ বলো তো? এভাবে ঘেমে একাকার হয়ে গেছ।
-“আশফি!স্বপ্নটা এতোটাই বাজে ছিল যা আমি মুখেও আনতে পারছিনা।প্লিজ আমাকে ফোর্স করোনা ওটা বলার জন্য।
-“ওকে। ফোর্স করছিনা। আমার মাহির যে কাজে কষ্ট হতে পারে সেইরকম কোনো কাজ করতে পারি? পানি খেয়েছ?
-“হুম।আশফি?তুমি আমাকে নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসো?
-“গাধার মত এমন একটা প্রশ্ন করলে যে প্রশ্নের উত্তর একটা বাচ্চাও বলে দিতে পারবে।
-“উফ বলো না?
-“তোমার কি মনে হয়?
-“প্লিজ?
-“ওকে ওকে,বলছি। নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি কিনা বলতে পারছিনা তবে তোমার মাঝেই আশফির প্রাণটা রয়েছে।তোমার মাঝেই আশফির আত্মাটা বসবাস করছে।তুমি যতদিন এই আশফির বুকে থাকবে ঠিক ততদিন আশফি জীবিত থাকবে।
মাহি আশফির মুখটা চেপে ধরলো।তারপর বলল,
-“প্লিজ এমন ধরনের কথা বলোনা।আমি বেঁচে থাকতে আমার চোখের সামনে তোমার কোনো ক্ষতি আমি সহ্য করতে পারবোনা। মরেই যাব আমি।
-“এখন তুমি কেন এমন ধরনের কথা বলছো?
-“সরি।
-“ইটস ওকে।তাহলে আমার জায়গায় তোমাকে বসিয়ে একবার ভেবে দেখো তো আমার ব্যাপারটা।
আমার কেমন লাগতে পারে এমন হলে?
-“হুম।
-“হুম কি হ্যা।এমন উদ্ভট কথাবার্তা হুটহাট কেন বলো?এগুলোই চিন্তা করো নাকি সারাদিন?
-“না।এসব চিন্তা কেন করবো?
-“না করলে এসব কথাবার্তা কেনো বলো?এখন উঠো এই নাইটি টা চেঞ্জ করে এসো।এটা একদম ভিজে গেছে।কি পরিমাণ ঘেমেছে মেয়েটা!
মাহি উঠে সাদা রঙের ওয়ারড্রপটা থেকে একটা নাইটি নিল।তারপর আশফির সামনেই নাইটিটা খুলে ফেলল।সেই মুহূর্তে আশফির চোখ দুটো আটকে গেলো মাহির উপর।আগে থেকেই আশফি মাহির দিকে চেয়ে ছিল।হঠাৎ করে মাহি এমনভাবে নাইটি খুলে ফেলাতে আশফি কিছুটা বেঘোরেই চলে গেল। তখন ও আশফি বিছানাতে বসে ছিল।মাহি যখন নাইটি পড়তে লাগলো তখন আশফি উঠে গিয়ে মাহির পেছনে দাড়ালো।মাহি তখন বলল,
-“কি হয়েছে?কিছু বলবে?
-“হুম।বেশি গরম লাগলে ওটা পড়তে হবেনা।
মাহি বোঝার চেষ্টা করলো আশফি কেন ওকে বারণ করছে।মাহি কিছু বলবে বুঝতে পেরে আশফি আগে কথা বলল,
-“না,আসলে নিচে তো কর্সেট টা আছেই।
-“তো?নাইটি পড়লে কি সমস্যা?আমার এতোটা ও গরম লাগছেনা।
-“আমার লাগছে খুব।
আশফির কথা শুনে মাহি আশফির চোখের দিকে তাকিয়ে রইল।আশফি মাহির খুব কাছে গিয়ে দাড়ালো।তারপর কিছুক্ষণ দুজনে তাদের চোখে ভালোবাসা বিনিময় করলো।চোখে ভালোবাসা বিনিময় শেষে আশফি আচমকা মাহি কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিল। মাহির আর বুঝতে বাকি নেই আশফি এখন কি চাইছে।তাই আশফির ভালোবাসার ডাকে মাহি ও সাড়া না দিয়ে থাকতে পারলোনা।দুজনের শত ভালোবাসার মাঝেও হঠাৎ করে মাহির চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।সেই মুহূর্তে আশফি মাহির শরীরের সর্বাঙ্গে জড়িয়ে ছিল। আশফির ঠোঁটের স্পর্শে মাহির সারা শরীর ভরে যাচ্ছিল।আশফি দেখতে পাইনি তখন মাহির চোখের পানিটুকু। এতো ভালোবাসা পাওয়ার পরও মাহি কেন এমন ধরনের স্বপ্ন দেখলো সেই কথাটাই মাহির বারবার মনে পড়ছিল ঠিক যতবার আশফি মাহিকে ভালোবাসছিল।
চলবে……..

 

রোমান্টিক_অত্যাচার -২ পর্ব-১৫

0
রোমান্টিক_অত্যাচার -২
পর্ব-১৫
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
-“কি ব্যাপার বল তো চান্দু?
তোর বাবার কি এখনো ফেরার সময় হয়নি?আজ কাল বড্ড লেট করে বাসায় ফিরতে।আর এই নাকি ওনার মেয়ে কে উনিই দেখাশোনা করবে।কত কথা বলেছিল!
হুহ।রাত ৮ টা বাজতে চলল।এরকমই হয়।এখন তো বউ পুরানো হয়ে গেছে। এক মুখ দেখতে দেখতে বোরিং সে।কিন্তু তোর মুখ তো আর পুরানো হয়নি। তাহলে সেই খাতিরেও তো অফিস ছেড়ে জলদি বাড়ি ফিরতে পারে।
মাহি চান্দুকে কোলে নিয়ে বেলকনিতে দাড়িয়ে কথাগুলো বলছে।এর মাঝে আশফি গাড়িতে করে বাসার ভেতর ঢুকলো।মাহি আশফির গাড়ি দেখে ড্রয়িংরুম এ চলে গেল। আশফি ড্রয়িংরুম এ ঢুকে চান্দু আর মাহিকে দেখে তার ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মুখটা হাসিতে ভরে উঠলো। আশফির হাসি দেখে মাহি বলল,
-“এতো হাসছেন যে? অফিস থেকে ফেরার সময় কি এখন হল?আজ রাতে না ফিরলেও পারতেন।
আশফি মাহির কাছে এসে দাড়ালো তারপর বলল,
-“হুমম।আগে আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিই। হাসছিলাম এটা দেখে, একটা বাচ্চার কোলে আর একটা বাচ্চা।দৃশ্যটা দেখার মত।আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরটা অনেক দীর্ঘ তাই ওটা পরে বিস্তারিত ভাবে বলবো।
-“বুঝলাম।তো আমাকে কি আপনার এখনো বাচ্চা মনে হয়?আমি এখন আপনার চান্দুর মা হয়ে গেছি।ঠিকআছে?তাই আমি মোটেও বাচ্চা নই এখন।
-“আসলে বিষয়টা হচ্ছে প্রত্যেক মেয়েরা মা হওয়ার পর নিজেদের বড় বড় ভাবে।আর তুমিও সেটাই ভাবছো।কিন্তু তুমি মোটেও বড় হওনি।বড় হলে তো চান্দুর প্যান্টটা উল্টো করে পড়াতে না।
আশফির কথা শুনে মাহি চান্দুর প্যান্টের দিকে তাকালো।মাহি প্যান্টটা আসলেই উল্টো করে পড়িয়েছে।সেটা দেখে মাহি বলল,
-“আরে আমি তো খেয়াল ই করিনি।সব তোমার জন্য।
-“আমার জন্য মানে? আমি কি তোমাকে প্যান্ট উল্টো করে পড়াতে বলেছি?
-“না।কিন্তু তোমার কথা ভাবতে ভাবতেই তো এমনটা হয়েছে।
-“হ্যা,তাইতো।নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা।
-“তাই নাকি।ঠিক আছে কাল তো হলিডে।সারাদিন তুমি তোমার চান্দুর দেখাশোনা করবে।আমি কিচ্ছু করবোনা।
-“সেটা তোমাকে আর বলতে হবেনা।আমি নিজেই সব করবো।আর তোমার দেখাশোনাটা ও করবো খুব ভালোভাবেই।
মাহি চান্দুকে একটা সার্ভেন্টের কাছে দিয়ে গেলো।তারপর আশফির কাছে গিয়ে আশফিকে কিছুটা টেক কেয়ার করতে শুরু করলো।
-“বাহ্!বাচ্চাটা দেখছি বড় হয়ে যাচ্ছে সত্যি সত্যি। কত সুন্দর করে আমার যত্ন নিচ্ছে।
-“এর সাথে বড় হওয়ার কি সম্পর্ক হলো?আমি কি আগে তোমার যত্ন নিইনি।
-“নিয়েছো।কিন্তু আজকে যেনো তোমাকে সত্যিই অন্যরকম লাগছে।
-“কারণ এখন আমি একজন মা।
-“হুম।এর জন্যই,তাইনা?
-“হুম।নাও পুরো শরীর মুছে দিয়েছি।এখন চলো ডিনার করে নিবে।
মাহির কথা শুনে আশফি ওর মুখটা টায়ার্ডনেস এর মত করে রাখলো। মাহি বুঝতে পেরেছে আশফি ওকে খাবার রুমে এনে খাইয়ে দিতে বলছে। মাহি সেটা বুঝতে পেরে আশফিকে কিছু না বলে মুখে একটা মৃদু হাসি টেনে খাবার আনতে চলে গেল। খাবার খাইয়ে দেওয়ার সময় আশফি মাহিকে বলল,
-“আমি আগে তোমার চুমু খাবো।তারপর খাবার। আজকে সারাদিন এটা খুব মিস করেছি।
-“মিষ্টিটা সবসময় খাবার খাওয়ার পরে খেতে হয়। আগে নয়।
-“আমি আগেও খাবো আর খাবার খাওয়ার পরেও খাবো।
-“উফফ!তুমি না….
তারপর মাহি আশফির কাছে গিয়ে আশফির কপালে আগে একটা চুমু খেলো তারপর আশফির ঠোঁটে।চুমু খাওয়া শেষ হলে আশফি বলল,
-“উম এতো মিষ্টি কেনো তোমার চুমু?আমার তো আরো খেতে ইচ্ছা করছে।
-“পাঁজি আগে খাবারটা খাও।
-“ওকে।এরপর শুধু মিষ্টি আর মিষ্টি।
এরই মাঝে সার্ভেন্ট এসে চান্দুকে রুমে শুইয়ে দিয়ে গেল।চান্দু ঘুমিয়ে পড়েছে। সেটা দেখে আশফি বলল,
-“দেখেছো আমার মামনি কত বুঝে।ও জানে আজকে রাতে বাবা ওর মামনির থেকে অনেক অনেক মিষ্টি খাবে।সেটা ওর দেখা ঠিক হবেনা।তাই আগে ভাগে ঘুমিয়ে পড়েছে।
-“হুম তাইতো।তখন আর কোনো টায়ার্ডনেস কাজ করবেনা তাইনা?
-“আরে ওটা কাটানোর জন্যই তো তোমাকে প্রয়োজন।ওগুলো নেওয়ার সময় কি আর এসব টায়ার্ডনেস কাজ করে?
-“সেটাইতো দেখছি। আচ্ছা আজ কাল অফিসে কি প্রচন্ড চাপ?বাসায় ফিরতেও লেট করছো আর ফোন দেওয়াটা ও কমিয়ে দিয়েছো।
-“নেগেটিভলি নিও না ডিয়ার।তুমি যেমন ভাবছো তেমন কিছুই নয়।
তোমাদের দুজনের উপর আমার এটেন্টিভ সব সময় একশো।কিন্তু আজ কাল কোম্পানির অর্ডারগুলো নিয়ে একটু বেশি কেয়ারফুল থাকতে হয়।আমাদের কোম্পানিটা তো এখন ১০ নাম্বার rangking এ আছে। তাই আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যাটাও বেশি হয়ে গেছে।গত কয়েকমাস ধরে একটা কোম্পানি আমাদের সাথে ডিলে আসার জন্য মড়িহা হয়ে আছে একদম। কিন্তু তাদের ম্যাটেরিয়ালস এর মান আমার পছন্দ না হলে আমি কি করে তাদের সাথে ডিল করি।
-“আচ্ছা বুঝলাম।অনেক কথা হয়েছে এখন তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করো তো।
-“না আমি আর খাবোনা। ভালো লাগছেনা।বাকিটুকু তুমি খেয়ে নাও প্লিজ।
-“সারাদিন পর বাসার খাবার খাবে তাও এতো অনীহা?
-“ভালো লাগছেনা বিশ্বাস করো।আর আমি তো খালি পেটে থাকবোনা।তোমার থেকে তো আজকে অনেক মিষ্টি খাবো।পুরো পেট পুরে খাবো।
-“আহা….কি ভাবের কথা। এখন আর কোনো কথা না বাড়িয়ে রেস্ট নিন।
-“রেস্ট তো নিবই।তুমি ডিনার সেড়ে জলদি এসো না।
-“এই ঘুমিয়ে পড়লে নাকি? -“উহুম।চোখ বন্ধ করে আছি।
-“মাত্র ৯:৩০ টা বাজে। এত জলদি ঘুম আসবেনা তো।
-“তাহলে ঘুম না আসা পর্যন্ত আমাকে আদর করতে থাকো।
-“ধুর তোমার খালি যতসব দুষ্টুমি মার্কা কথাবার্তা।
-“তো এখন আপনার ঘুমের জন্য আমি কি করবো?ঐ সেই রাজা রানীর গল্প আবার শোনাবো?
-“ওহহো তুমি তো সেই গল্পটা শেষ করোনি।
-“হুম।আজ ও তো শেষ করতে পারবোনা বলা শুরু করলে।
-“হুম।প্রতিদিন একটু একটু করে শুনলে তো ভালো লাগেনা।
-“আচ্ছা তাহলে কিভাবে পুরোটা শুনাবো তোমাকে?
-“কিভাবে পুরোটা শোনাবে?আচ্ছা তুমি একটা কাজ করতে পারো। কাল তো হলিডে।
-“তো?
-“কাল তুমি সারাদিন আমাকে গল্পটা শোনাবে।
-“এ্যাহ্।আমার যেনো আর কোনো কাজ নেই।আমি ওনাকে সারাদিন শুধু গল্পই শোনাবো।
মাহি আশফির কাছে গিয়ে আশফিকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“অনেক আদর করবো।
মাহির কথা শুনে আশফি মাহির দিকে তাকাল। তারপর বলল,
-“লোভ দেখানো হচ্ছে?
-“একটু।
-“সে তুমি আমাকে আদর করতে না চাইলেও আমি এমনিতেই আদর নিতাম।
-“কিভাবে?আমি যদি না করি?
-“সেটা তো তুমি ভালো করেই জানো আমি কিভাবে আদর নিই।মাঝে মধ্যে ভুলে যাও নাকি?
-“আমি জানিনা। গল্পটা তোমাকে শোনাতেই হবে। সে যেভাবেই হোক।
-“ওকে ওকে।ভেবে দেখছি কি করা যায়।এখন আমার মিষ্টিগুলো দাও। না হলে খালি পেটে ঘুম আসবেনা।
-“ওর বুকের উপর মাথা পেতে শুয়ে ছিলাম।মাথা উঁচু করে ওর সারা মুখে আমার ঠোঁটের ছোঁয়া দিলাম। এরপর ও নিজেই আমাকে জড়িয়ে ধরে ওর খুব কাছে নিয়ে ইচ্ছামত আমাকে আদর করতে থাকল।
এরপর বেশকিছুদিন কেটে গেল চান্দুকে নিয়ে আশফি আর মাহির দৈনন্দিন জীবন আর তার মাঝে নিঃশেষ ভালোবাসা। একদিন সকালের ঘটনা। আশফি আর মাহি বসে ব্রেকফাস্ট করছিল এমন সময় একটা ইনভাইটেশন কার্ড আসলো আশফির কাছে।
-“কিসের কার্ড এটা?(মাহি)
-“ইনভাইটেশন কার্ড।(আশফি)
-“কিসের ইনভাইটেশন? কে পাঠালো?
-“হুয়াং চ্যাং।গত ৯ মাস ধরে যে কোম্পানিটা আমাদের কাছে তার কোম্পানির ম্যাটেরিয়ালগুলো সাপ্লাই করতে চাইছে সেই কোম্পানির ওউনার। আগামী সপ্তাহে সন্ধ্যাই তার বাসায় একটা পার্টির অরগানাইজড করেছে।
-“হঠাৎ তোমাকে ইনভাইট করলো যে?
-“শুধু আমাকে নয় তোমাকেও।
-“আমাকে ও?
-“হুম।কাপলদের জন্য পার্টিটা।
-“ওহ্ আচ্ছা।
-“লোকটার কাজগুলো কেমন অদ্ভুত ধরনের। মানে সে ডিলটা করার জন্য যে কোনো পন্থা অবলম্বন করছে।যেচে ইনভাইট করছে আবার।
-“আরে তুমি এতো ডিপলি ভাবছো কেনো? ব্যাপারটা তো এমন নাও হতে পারে। তুমি একজন বিজনেসম্যান সেও একজন বিজনেসম্যান।তাই হয়তো তোমাকে ইনভাইট করেছে।
-“হতে পারে?
-“তো সেটা কবে?
-“আমি যেদিন গার্ডেন সিটিতে যাবো।
-“তাহলে তো আর তুমি পার্টিতে আর জয়েন করতে পারছোনা।
-“হুম।সে দেখা যাবে পরে। আচ্ছা আমি তাহলে অফিস চলে যাচ্ছি।আমার চান্দু আর চান্দুর মায়ের খেয়াল রেখো।ওকে?
-“অবশ্যই।
-“তো যাওয়ার আগে আমাকে কিছু দেওয়ার ছিল তোমার?
-“দেওয়ার ছিল বুঝি? কই আমার তো মনে পড়ছেনা।
আশফি এদিক ওদিক তাকিয়ে মাহির কোমড় টেনে ধরে ওর ঠোঁটে ৩ মিনিটের একটা চুমু দিল। তারপর বলল,
-“তোমার মনে পড়ার অপেক্ষায় আমি আর থাকলাম না।
-“পাঁজি একটা।
-“আসছি।বাই।
-“বাই।
আশফি কিছুদূর গিয়ে আবার থেমে গেল।
-“ওহ্ আর একটা কথা। এই শোনো?
মাহি আশফির ডাক শুনে পিছু ফিরে তাকাল।
-“কি হয়েছে?
-“বেডরুমে একটা গিফ্ট আছে আপনার জন্য।
-“গিফ্ট?
-“হুম।দেখে নিয়েন।
তারপর মাহি বেডরুমে গিয়ে বালিশের উপর একটা বই দেখলো।বইটির নাম “Violent Fancy”.
-“Violent Fancy. Writer Ashfi Chowdhury. বাব্বাহ্!আমার বরটা রাইটার হল কবে থেকে?
মাহি বইটা খুলতেই একটা ছোট্ট চিরকুট পেলো। চিরকুটটা খুলে মাহি পড়লো।চিরকুটে লিখা ছিল,”রাইটার তো আপনার জন্যই হলাম।আর Violent fancy টা ও শুধু আপনাকেই ডেডিকেট করলাম।”চিরকুটটা পড়ে মাহি হাসলো।
-“গল্পের নামটাই তো অদ্ভুত।না জানি গল্পটা কতটা অদ্ভুত।
বইটা খুলেই মাহি প্রথম কিছু লাইন পড়ে বুঝতে পারলো এটা সম্রাট ফালাক আর রাজকন্যা মেহেরুন এর গল্প।
-“ও আচ্ছা।তাহলে গল্পটা ও আমাকে বুক করে দিয়েছে। যাতে আমি সম্পূর্ন গল্পটা পড়তে পারি।ইশ আশফি আমাকে এত ভালোবাসে কিভাবে?আমার ছোট বড় সবরকম চাওয়া পাওয়ার দিকে খেয়াল রাখে ও। কিন্তু একটা জিনিস তো খুব মিস করবো।ওর মুখ থেকে গল্প শোনা আর বলার সময় ওর অঙ্গ ভঙ্গী গুলো।আর তার মাঝে মাঝে তারপর বলা আর তার সাথে একটা করে পাপ্পি দেওয়া। কতরকম দুষ্টুমি যে ও করতে পারে!
মাহি নিজের সাথে কথাগুলো বলছিল তার ভেতর আশফি মাহির ফোনে কল করলো।ফোনটা মাহি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল,
-“গল্পের মাঝে যে চুমুগুলো আমার পাওনা ছিল সেগুলো গুণে রেখো। কোনো স্যাক্রিফাইজিং হবেনা।একবারে এসে নিয়ে নিব কিন্তু।
-“নগদ তো আর পাচ্ছেন না।পরে এসে নিলে কি মজা পাবেন?
-“বউ এর চুমুতে সবসময়ই মজা থাকে।সে যে সময়ই নিই না কেন?তো গল্পটা কি পড়া শুরু করেছ?আমি আসার পর কিন্তু আর পড়ার সুযোগ পাবেনা।
-“হুম সে তো জানি।
এখনো শুরু করিনি করবো।
-“গল্প পড়ো আর যাই করো।আমার চান্দুর আর তার মায়ের যত্নের প্রতি যেন কোনো ত্রুটি না হয়।না হলে কিন্তু…………
-“থাক আর বলতে হচ্ছেনা।অফিস পৌঁছে গেছো?
-“না।কিছুসময়ের ভেতরেই পৌঁছে যাব।ওকে রাখছি এখন।
-“হুম।এই শোনো।
-“হ্যা বলো।
-“তোমার গল্পের নামটা কিন্তু খুবই ইউনিক।
-“তার থেকেও ইউনিক গল্পটা।আমার বউটা যেহেতু ইউনিক।তার জন্য গল্পটাও তো ইউনিক হতে হবে।
মাহি চান্দুকে খাইয়ে কিছুসময় নিজের কাছে ওকে রেখে তারপর একটা সার্ভেন্টের কাছে চান্দুকে দিয়ে দিল।গল্পের বইটা হাতে নিল গল্পটা পড়ার জন্য।প্রথম কিছু পৃষ্ঠা গ্যাপ রেখে পরের পৃষ্ঠা থেকে গল্পটা পড়া শুরু করলো মাহি।যেখানে গল্পটা থেমে ছিল সেখান থেকে পড়া শুরু করলো।
[#Violent_Fancy ]
সম্রাট ফালাক তাজ যে মুহূর্তে রাজকন্যা মেহেরুনের শরীরে জড়িয়ে থাকা চাদরটাকে টেনে ফেলে দিল সেই মুহূর্তে মেহেরুন নিজের তড়োযার এর দিকে লক্ষ্য না রেখে তার অর্ধনগ্ন শরীর দুহাত দিয়ে ঢাকতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।আর রাজা ফালাক সেই সুযোগটি ই কাজে লাগালো।তখন চিন্তা ভাবনা ছিল রাজকন্যা মেহেরুনকে তুলে নিয়ে যাওয়া।সে ঠিক তারই পরিকল্পনা করছিল কিভাবে সে রাজকন্যা মেহেরুন কে তার সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারবে।রাজা ফালাক আস্তে আস্তে রাজকন্যা মেহেরুনের দিকে এগোচ্ছে।কিন্তু তার পরিকল্পনা কার্যকারী হওয়ার আগেই রাজকন্যা মেহেরুন এর পিতা জাভেদ খান এসে উপস্থিত হল মেহেরুনের কক্ষে।মেহেরুন কারো উপস্থিতি টের পেয়ে রাজা ফালাকের কাছ থেকে ছুটে পালাতে চাইল তার কাছে। কিন্তু ফালাক তার আগেই মেহেরুনকে ধরে তার গলার কাছে তড়োযার ঠেঁকিয়ে স্নানাগার থেকে শয়নকক্ষে প্রবেশ করলো।মেহেরুনের পিতা সেই দৃশ্য দেখে ক্রোধান্বিত কন্ঠে চিৎকার করে বলল,
-“সম্রাট ফালাক! আল্লাহর কসম আমার কন্যার শরীরে এক চুল পরিমাণ আঘাত লাগলে তোর শিরচ্ছেদ করবো আমি।
-“এ কাজ তো আমি মনের ভুলেও কখনো করবোনা সম্রাট জাভেদ।আপনার কন্যার সৌন্দর্যে আমার চেতনা হারানোর পরিক্রম হয়েছিল।ওকে আমার এখন চাই সে যেভাবেই হোক।
আমি ওকে আমার সঙ্গে করে নিজের রাজ্যে নিয়ে যাব।
-“আমার প্রাণ থাকতে আমি কখনোই তা হতে দিবনা।
-“এর জন্যই তো আপনার প্রাণ থাকবেনা সম্রাট জাভেদ।
সম্রাট ফালাকের কথা শুনে মেহেরুন খব ভয় পেয়ে গেল। ও কখনোই পারবেনা ওর চোখের সামনে নিজের পিতার রক্তাক্ত মৃত দেহ দেখতে।ও কিছুসময় চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিল যে রাজা ফালাকের সাথে যেতে ও রাজি হয়ে যাবে এখন। কারণ ওর পিতা আর তার রাজ্য যদি সে বাঁচাতে পারে তাহলে রাজকন্যা মেহেরুন তার জীবন বিপন্ন করে দিতে প্রস্তুত।এখন আপাতত ও রাজি হবে রাজা ফালাকের সঙ্গে যাওয়ার জন্য।পরে সুযোগ বুঝে ওখান পালিয়ে আসবে।এটাই ছিল রাজকন্যা মেহেরুনের পরিকল্পনা।তাই সে তার পিতাকে বলল,
-“পিতা আমি কখনোই সহ্য করতে পারবোনা ঐ মর্মান্তিক দৃশ্য তখনই আমার মৃত্যু ঘটবে।তার থেকে বরং আমি রাজা ফালাকের সঙ্গে তার রাজ্যে যাব।রাজা ফালাক আপনার কাছে আমি আমার পিতার প্রাণ ভিক্ষা চাইছি।দয়া করে তার কোনো ক্ষতি করবেন না।
-“আমি জানতাম রাজকন্যা মেহেরুন খুবই সাহসী আর বুদ্ধমতী।একটু আগেও আমি তার যে সাহসী রূপ দেখলাম এখন আমি তার যে রূপ দেখছি তার সাথে আমি তার সেই রূপের কোনো মিল পাচ্ছিনা।এত সহজে সে আত্মসমর্পণ করবে তা আমার চিন্তার বাহিরে ছিল। তার মানে তার পরিকল্পনা ভিন্ন কিছু।সে আমাকে বোকা বানাতে চাইছে।
কন্যার এমন ধারা কথা শুনে রাজা জাভেদ খান অবাক হল।মেহেরুনকে সে বলল,
-“মেহেরুন!মা তুই ভাবলি কি করে এই নরপিশাচের হাতে আমি তোকে তুলে দিব?আমি বেঁচে থাকতে তা কখনোই পারবোনা।তার থেকে আমার মৃত্যু অনেক শ্রেয়।
-“থামুন সম্রাট জাভেদ। আপনার কন্যা নিজেই আমার সামনে আত্মসমর্পণ করেছে।সেখানে আপনি আর বাঁধা দিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না। রাজকন্যা মেহেরুন আপনি আপনার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন যা অতুলনীয়।
চলুন তাহলে আমার সাথে। আর আপনার পিতা মাতার ব্যবস্থাও আমি করছি।
এর মাঝে ফালাকের সৈন্যরা গোটা রাজমহল দখল করে নিয়েছে রাজা জাভেদ খানের সৈন্যদের পরাজিত করে।সম্রাট ফালাক মেহেরুনের পিতামাতা কে ও আটক করে ফেলেছে।রাজা জাভেদ খানের সিংহাসনে বসেছে সম্রাট ফালাক তাজ।রাজকন্যা মেহেরুনের অনুরোধে তার পিতামাতার প্রাণ ভিক্ষা দিয়েছে রাজা ফালাক।এদিকে ফালাক মেহেরুনের চাচা আরব খান কে যে কথা দিয়েছিল সে কথাও সে রাখেনি। তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকেও আটক করেছে। মেহেরুনকে সে নিজের রাজ্যে তুলে নিয়ে যায়। আর মেহেরুনের পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে সে কারাগারে নিক্ষেপ করে। মেহেরুন বুঝতে পেরেছে যে শুধু যুদ্ধের মাধ্যমে রাজা ফালাককে পরাজিত করা যাবেনা।তীক্ষ্ণ বুদ্ধির প্রয়োজন।তাই সে চুপচাপ সহ্য করে নিল রাজা ফালাকের সব অন্যায়। কিন্তু এখন সে ভাবছে কিভাবে রাজা ফালাকের থেকে তার সম্মান রক্ষা করবে।
★রাতের ঘটনা★
-“মন্ত্রিসাহেব আমি বড়ই ক্লান্ত।শেরপুর রাজ্য দখলের খবরটি আপনি রাজসভায় গিয়ে ঘোষণা করে দিন। আর ঘোষক কে বলে দিন রাজ্যে সব অঞ্চলে খবরটি পৌঁছে দিতে।(ফালাক)
-“আপনার ইচ্ছা মহারাজ। আসছি।
-“মহারাজ আপনার রাতের খাবার প্রস্তুত। (দাসীবৃন্দ)
-“এই মহলে আজকে একজন নতুন অতিথি এসেছে সেটা তোমরা নিশ্চই জানো?
-“জ্বী মহারাজ।
-“তার খাবারের ব্যবস্থা কি হয়েছে?
-“আজ্ঞে না মহারাজ।
সম্রাট ফালাক দাসীবৃন্দর না বোধক উত্তরে প্রচন্ড আকারে রেগে গেল। বিছানা থেকে বসা অবস্থা থেকে উঠে দাড়িয়ে দাসীদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলল,
-“চাবুকাঘাতে তোমাদের শরীর জর্জরিত করে ফেলব।অনেকদিন পিঠে চাবুক পড়েনা তোমাদের। রাজমহলে অতিথি আসলে তাদের সেবাযত্ন,দেখভাল করতে হয় তা কি তোমরা ভুলে গেছ?
-“মহারাজ আমাদের মাফ করুন।এমন ভুল আর কক্ষনো হবেনা। আসলে এর আগে যাদের আপনি এভাবে নিয়ে এসেছেন কখনো তাদের দেখভালের কথা বলেননি।তাই আমরা……..
দাসী তার কথা আর শেষ করলোনা।দাসীর কথা শুনে রাজা ফালাক ও কিছুটা বিস্মিত হলো।
-“সত্যিই তো।এর আগে আমি যেসব রাজকন্যাদের তুলে নিয়ে এসেছি তাদের খেয়াল রাখার কথা আমার একবারও মনে পড়েনি। তাদেরকে শয্যাসঙ্গী বানানোর পর দ্বিতীয়বার তাদের কথা আর মনে পড়েনি।এখন তারা আমার রাজমহলে কি অবস্থাতে আছে সেই খবরটুকু আমি নিইনা।দাসীবৃন্দ, প্রহরী, সেনাপতি তাদের উপর ওদের ছেড়ে দিয়েছি।তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখন আমার দাসীতে পরিণত হয়েছে।কিন্তু রাজকন্যা মেহেরুনকে দেখার পর থেকে তার চিন্তা আমি আমার মাথা থেকে এক মুহূর্তের জন্য ও সড়াতে পারছিনা।আর এখন নিজের খাওয়ার কথা শুনে তার খাওয়ার কথা আমার মনে পড়লো।কি আছে রাজকন্যা মেহেরুনের ভেতর?কেনো তার প্রতি আমি এত আকৃষ্ট হচ্ছি? শুধু কি তার সৌন্দর্যের জন্যই?
-“মহারাজ?আমরা তাহলে রাজকন্যা মেহেরুনের জন্য কি খাবারের ব্যবস্থা করবো?
দাসীদের কথা শুনে সম্রাট ফালাক তার ভাবনার জগত থেকে বেড়িয়ে এল।
-“আমার জন্য যা ব্যবস্থা করেছ তার জন্য ও তাই ব্যবস্থা করো।খাওয়া শেষে তার বিশ্রাম পর্ব শেষ হলে তাকে আমার কক্ষে নিয়ে আসবে।
-“ঠিক আছে মজারাজ।
-“আর হ্যা।রাতের খাবার খাওয়ার পূর্বে তাকে নিশ্চই গোসল করে পবিত্র হতে বলবে।
দাসীগুলো রাজা ফালাকের কক্ষ থেকে বিদায় নিয়ে রাজকন্যা মেহেরুনেকে যে কক্ষে থাকতে দেওয়া হয়েছে সেই কক্ষে চলে গেল খাবার নিয়ে।রাজকন্যা মেহেরুন তখন বসে ভাবছিল কি করে রাজা সম্রাটের থেকে তার পরিবার আর তার রাজ্যকে রক্ষা করবে। আসলে রাজকন্যা মেহেরুন ঠান্ডা মস্তিষ্কের অধিকারী ছিল।সে খুব সহজে ভেঙ্গে পড়ার মত মেয়ে নয়।
বিপদে মস্তিষ্ক ঠান্ডা রেখে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে হয় সে সেই শিক্ষায় গ্রহণ করেছে তার পিতার থেকে। মেহেরুন ভাবছে সে যেহেতু এখনো অক্ষত আছে তাহলে এত সহজে তার কোনো ক্ষতি করবেনা রাজা ফালাক।তাই যা করার অতি শীঘ্রই করতে হবে।দাসীদের প্রবেশে মেহেরুন ভাবনার জগত থেকে বাস্তব জগতে ফিরে এল।রাজা ফালাকের আদেশ মোতাবেক গোসল করলেও দাসীর আনা খাবার সে গ্রহণ করলোনা। এতক্ষণ মেহেরুনের মনে সাহস সঞ্চারিত হলেও দাসীদের কথা শুনে সেই সব সাহস এক নিমিষে ভয়ে পরিণত হল।রাজা ফালাক তার কক্ষে মেহেরুনকে নিয়ে যেতে বলেছে।মেহেরুন ভাবছে এখন নিশ্চই রাজা ফালাক তার ভয়ানক হিংস্র রূপ বের করবে মেহেরুনের সামনে।হিংস্র পশুর ন্যায় মেহেরুনের দেহ ছিড়ে খাবে সে।ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিবে তার শরীরকে।দাসীবৃন্দ মেহেরুনকে ফালাকের কক্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছে।
-“রাজকন্যা!সম্রাট আমাদের আদেশ করেছেন তার কক্ষে আপনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
-“না।আমি যাবোনা। তোমাদের সম্রাট কে গিয়ে বলো সে যদি আমার সম্মানের দিকে হাত বাড়ায় তাহলে আমি নিজেই আত্মহননের পথ বেছে নিব।
-“রাজকন্যা আপনি সম্রাট ফালাকের অন্দরমহলে আছেন।সে না চাইলে আপনি মড়তেও পারবেন না।
-“মৃত্যু ঘটানোর মালিক। তোমাদের সম্রাট নয়। সে দেখতে চাই আমি নিজেকে শেষ করতে পারি কিনা?
-“মৃত্যু ঘটানোর মালিক যেমন আমাদের সম্রাট নয় তেমন আপনিও নন।
মাঝখানে শুধু শুধু আপনি নিজেকে কষ্ট দিবেন।
-“তোমরা কি নারী? কিভাবে সহ্য করতে পারো আর এক নারীর প্রতি এত অনাচার?তোমাদের শরীরের লোম শিউড়ে উঠেনা?
-“বোন!তোমাকে বোন বলেই ডাকলাম। আমি শ্যামনগর রাজ্যের ছোট রাজকন্যা ছিলাম।চোখের সামনে নিজের বুবুর মৃতদেহ দেখেছি। আর কিছু বলতে পারছিনা।
দাসীটি কথাগুলো বলতে গিয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলো।তারপর আবার বলতে শুরু করলো,
-“আমরা চাইলেও আপনার কোনো সাহায্য করতে পারবোনা।শুধু এটুকু বলতে পারি বেঁচে থাকতে চাইলে নিজেকে স্ব ইচ্ছায় তুলে দিতে হবে সম্রাট ফালাকের কাছে।
-“পতন ঘটবে।এতো অনাচার এতো অত্যাচার উপরওয়ালা বেশিদিন সহ্য করবেনা।তোমাদের সম্রাটের পতন ঘটবে।
এরপর রাজকন্যা মেহেরুন দাসীদের সঙ্গে ফালাকের কক্ষে প্রবেশ করলো।এই প্রথম রাজকন্যা নিজেকে অনেক অসহায় মনে করছে।নিজেকে রক্ষা করার মত কোনো উপায় সে খুঁজে পাচ্ছেনা।দাসীবৃন্দ মেহেরুনকে ফালাকের কক্ষে প্রবেশ করিয়ে তারা বাহিরে চলে গেল।
-“কাঠ দ্বারা নির্মিত একটি ছোট আসবাবের উপর কিছু ফল রয়েছে একটি পাত্রে। তার ভেতর একটি ছুড়ি।হ্যা ওটাকেই আমি আমার কাজে লাগাবো।হয় নিজেকে শেষ করে দিব আর না হয় রাজা ফালাককে।ছুড়িটা যখন নিতে যাব তখনই রাজা ফালাক কক্ষে প্রবেশ করলো।
-“কক্ষে প্রবেশ করতেই দেখলাম মেহেরুন ফল কাটার ছুরিটির দিকে হাত বাড়িয়েছে।আমাকে দেখে সে থেমে গেল।সে যখন আমার দিকে ঘুরে দাড়ালো আমি তখন তার স্নিগ্ধ শীতল মুখটি দেখে আরো একবান সম্মোহিত হলাম। ভিজে থাকা চুলগুলো ছেড়ে আছে সে।কোনো সাজগোজ নেই।তারপরেও ওকে এতো আকর্ষণীয়
(আবেদনময়ী বোঝাতে) লাগছে যে পলক ফেলতে পারছিনা।হঠাৎ করে মেহেরুন ছুরিটি হাতে নিয়ে নিল।আমি সত্যি চমকে গেলাম।ও নিজের কোনো ক্ষতি করে ফেলবে না তো? আমি আমার নিজের স্থানেই দাড়িয়ে আছি ওর কাছে যাচ্ছিনা।এদিকে ও নিজেও আমার উপর আক্রমণ করছেনা। আমি ওকে অভয় দেওয়ার চেষ্টা করছি।রাজকন্যা মেহেরুনের দিকে অগ্রসর হলাম আমি। কারণ যে কোনো মুহূর্তে ও নিজের শরীরে আঘাত করতে পারে।
-“সম্রাট ফালাক আপনি আমাকে খুব অসহায় ভাবছেন তাইনা?আর সেই অসহায়ত্বের সুযোগ নিতে চাইছেন।আত্মঘাতী করবো তবু আপনার মত নরপিশাচের কাছে নিজেকে সমর্পণ করবোনা।ক্ষত বিক্ষত করে ফেলব নিজের শরীরকে। এই ক্ষত বিক্ষত শরীর ভোগ করতে পারবেন তো আপনি?
-“তুমি ভুলে যাচ্ছ যে তোমার পিতা মাতা এখনো জীবিত আছে।তোমার একটামাত্র ভুলের জন্য তাদের জান বিপন্ন হয়ে যাবে।
-“ঐ অন্ধকার কারাগারে তাদের বেঁচে থাকা সেই মরে যাওয়ার সমতুল্য।আমি বেঁচে থাকতে তাদের ঐ মরনাপন্ন অবস্থা দেখতে চাইনা।এর থেকে নিজের মৃত্যু হাজার গুণ উত্তম।
কথাগুলো বলেই মেহেরুন নিজেকে ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করলো।সেই মুহূর্তে রাজা ফালাক তাকে আটকানোর চেষ্টা করলো। একরকম ধস্তাধস্তি শুরু হলো ওদের মাঝে।এক সময় রাজা ফালাক মেহেরুনের নিকট থেকে ছুরিটা কেড়ে নিয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। মেহেরুন নিজের ঝোক সামলাতে না পেরে বিছানার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো।তাতে মেহেরুনের বুকের উপর থেকে পাতলা চাদর(ওড়না) সরে নিচে পড়ে গেল। তখন মেহেরুনের নিজের প্রতি নিজের খেয়াল না হলেও রাজা ফালাকের খেয়াল ঠিকই গেল তার উপর। তারপর রাজা ফালাক ছুরিটি নিচে ফেলে দিয়ে মেহেরুনের দিকে এগিয়ে গেল।মেহেরুনের চোখ দিয়ে তখন অনবড়ত পানি পড়ছিল।সে ধরেই নিয়েছে আজ বোধহয় তার নারীত্বটুকু এক হিংস্র নরপিশাচ ছিনিয়ে নিবে।
চলবে……

 

রোমান্টিক_অত্যাচার -২ পর্ব-১৪

0
রোমান্টিক_অত্যাচার -২
পর্ব-১৪
লেখিকা- #Israt_Jahan
ধারনা- #Kashnir_Mahi
★৭ দিন পর★
-“এই ও এতো ভদ্র কেনো বলো তো?দিনভর শুধু ঘুম আর ঘুম।একটুও জালাচ্ছে না তোমাকে।
(আশফি)
-“তো তুমি কি চাইছো ও সারাক্ষণ জেগে থাকবে আর আমাকে খালি জালাবে? ও একদম ঠিক আছে।খাচ্ছে-দাচ্ছে আর ইচ্ছামত ঘুম দিচ্ছে।
-“এটা আমার একদমই পছন্দ হচ্ছেনা।আমি তো এরকমটা চাইনি।আমি চেয়েছি ও আমার সাথে হাত মিলিয়ে দুজন একসাথে দিনভর তোমাকে জালাবো। কিন্তু ও তো দেখছি একটু বেশিই শান্ত।
-“হুম।ও তোমার চান্দু না। চান্দু হলে ঠিকই বেশি বেশি দুষ্টুমি করতো।মেয়েরা সবসময় শান্তই হয়।ওরা মায়ের দরদ বুঝে।
-“ও আচ্ছা।তুমি কি ভেবেছো ও ছেলে হয়নি বলে আমি ওর নাম পাল্টে দিবো?আর ও দুষ্টুমি করবে না?কক্ষনো না।ওর নাম চান্দুই থাকবে।আর এখন তো মাত্র বয়স ৭ দিন।
কয়েকমাস যেতে দাও ও তোমাকে বুঝিয়ে দিবে যে কতটুকু দুষ্টু।
-“হুহ।বললেই হলো? তুমি দেখো ও সত্যি অনেক শান্ত হবে একদম আমার মত।
-“এই তোমার কি চোখ নেই?
-“চোখ নেই মানে?চোখ না থাকার কি দেখলে?
-“তুমি কি দেখতে পাচ্ছোনা ও দেখতে একদম আমার মত হয়েছে।আর ওর সবকিছু আমার মতই হবে।তুমি আমার বাচ্চাবেলার ছবিগুলো বের করো।তারপর মিলিয়ে দেখো।
-“প্রথমদিন তো ওকে একদম জাপানিজদের মতই লাগছিল।এখন দেখো চেহানার ভাব অনেকটা পাল্টে যাচ্ছে ওর।মনে হচ্ছে আমাদের মতই হবে। তোমাদের মত হবে না।
শুধু চোখদুটো একদম হুবহু তোমার মত হয়েছে।
-“কচু।ওর সবকিছুই আমার মত হয়েছে।তুমি আর কি করে বুঝবে।এখানে তো আর ওর নানিবু,দাদিবু নেই।তারা দেখলে এভাবে বলতো,ও একদম ওর বাবার মত হয়েছে,ওর বাবা ছোটোবেলায় একদম এমন ছিল আরো কতকিছু। কিন্তু আফসোস তারা কেউ ই আজ নেই।
-“হুম।ওর আর কপালে নানিবুর, দাদিবুর আদর-সোহাগ জুটলোনা।
-“আচ্ছা তুমি এখন মন খারাপ করতে বসোনা তো। তোমাকে কি বললাম,যাও আমার ছবিগুলো নিয়েসো।
-“হ্যা যাচ্ছি।
ড্রয়ার থেকে মাহি একটা মোটা ছবির এলবাম বের করে নিয়ে আসলো।
এলবামটাতে শুধু আশফির বাচ্চাবেলার ছবিই আছে তা এলাবামটার কভার পেইজ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।কারণ এলবামের কভার পেইজটাতে আশফির ছোটোবেলার ছবি লাগানো।
-“তুমি এলবাম টা ড্রয়ারে রেখেছিলে?এটা তো আলমারিতে তোলা ছিল। (আশফি)
-“হুম।কারণ এটা আমি প্রায় প্রায় দেখতাম তাই আর আলমারিতে রাখিনি। হাতের কাছে রেখে দিয়েছিলাম।
-“কোন ছবিগুলো দেখতে বলো তো?যেগুলোতে আমি বিবস্ত্র? সেইগুলোই দেখতে নিশ্চই?
-“আরে না,ধুর!তুমি যে কি সব বলো?শুধু ঐ ছবিগুলোই দেখবো কেনো? সবছবিই দেখতাম।ভালো লাগতো দেখতে।
-“হুম।অনেক কিউট ছিলাম না?
-“হ্যা।তোমার গালগুলো অনেক সুন্দর ছিল।কেমন নাদুস নুদুস।দেখলে মন হয় গালগুলো টিপে দিই শুধু।
-“আচ্ছা?তো দাও না!
-“এ্যাহহ…..এখন তোমার গালগুলো তখনকার মত না। আর এখন তোমার গালই টিপবো নাকি তোমার চান্দুর গালই টিপবো?
আশফি মাহিকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“দুজনেরই।কারণ এখন তো তোমার পালা। এতদিন আমি তোমাকে খেয়াল করেছি,যত্ন করেছি,অনেক অনেক আদর করেছি সবকিছু আমিই করেছি।আর এখন তুমি করবে এগুলো তাও আমাদের দুজনকেই। এখন আমার আর আমার চান্দুর সব দায়িত্ব তোমার।
-“হা হা হা হা।
-“হাসছো যে?হাসার মত কথা বলেছি আমি?
-“তোমার চান্দু নামটা কিন্তু ওর সাথে যাচ্ছে না। তাই হাসি পেলো।
-“যাবেনা কেনো?
যাওয়ালেই যাবে।তুমি ওকে চান্দু বলেই ডাকবে।
অন্যকোনো নামে ডাকবেনা।ও কিন্তু একদম আমার মতই হবে।
-“সিওর?
-“একদম।তুমি ছবিগুলোর সাথে ওকে মিলিয়ে দেখো।
-“হুম।তাই তো দেখছি। দেখতে তো তোমার মতই হয়েছো।কিন্তু ওর স্বভাব চরিত্র কিন্তু আমার মতই হবে।
-“একদমই না।ওগুলো আমার মত হবে।
-“তুমি এতো কনফিডেন্টলি কিভাবে বলছো?
-“ধৈর্য রাখো ডিয়ার। দেখতে পাবে।আর হ্যা,
আজকে থেকে কিন্তু তোমার সাথে অনেক কিছুই ঘটবে।যার কোনো বিরতি থাকবেনা।
-“কিহ্?
-“হুম।বিরতিহীন ভালোবাসা চলবে।এবার আর আদর করার সময় কোনো বাঁধা থাকবেনা মাঝে।কোনো সাবধানতা থাকবেনা।শুধু সোহাগ চলবে।
মাহি আশফির দিকে ঘুরে বসলো।তারপর আশফির কলার চেপে ধরে বলল,
-“এই শুনো একদম আমার কাছে আসবেনা কিন্তু। একবার যা কষ্ট দিয়েছো তুমি আমাকে,দ্বিতীয়বা
র আমি আর সেই কষ্ট নিতে চাইনা।
-“মানে কি?আমি কি তোমাকে সারাবছরই প্রেগন্যান্ট করে দিবো নাকি?
-“ধুর।ফাজিল কোথাকার?
-“ফাজিলের কি করলাম? তুমি যা ভাবছো সেটা আমি ডিরেক্টলি বললাম। তুমি এই ভয়ে আমাকে আদর করতে দিবেনা? আমি এতোটা কেয়ারলেস নই।তখন তুমি চেয়েছিলে আর তাই আমি তোমাকে দিয়েছিলাম।এখন যদি তুমি না চাও তাহলে আর দিবোনা।আর যদি প্রতিবছরই এক একটা করে চাও তাহলে প্রতিবছরই দিবো।
-“কি?অসভ্য ছেলে। কোনো লাজ লজ্জা নেই তোমার।দুষ্টু একটা।
মাহি আর আশফির মাঝে খুনসুটিময় ভালোবাসা চলছে এখন।মাহি আশফিকে দুষ্টুমির ছলে কিল ঘুষি দিচ্ছে। আশফি ও মাহিকে নানারকম দুষ্টুমিকর কথাবার্তা বলে মাহির সাথে দুষ্টুমি করছে। এভাবেই ওদের চান্দুকে নিয়ে ওদের মাঝে আনন্দ, প্রেম-ভালোবাসা,
দুষ্টুমি দিয়ে কেটে গেলো পাঁচটা মাস।চান্দুর একটা ফরমাল নেম ও আছে কিন্তু আশফি ওকে সবসময় চান্দু বলেই ডাকে।
-“মাহি প্লিজ জলদি এসো। আমার গোসল এর সময় হয়ে গেছে।তাড়াতাড়ি আমাকে গোসল করিয়ে দাও।অফিস যেতে হবে তো।
-“আসছি।আশফিটা যা জালাচ্ছে দিন দিন। এমন করলে আমি দুজনকে কিভাবে সামলাবো?বুঝে ও সবসময় অবুঝের মত থাকে। শোধ নেওয়া হচ্ছে আমার থেকে এখন। প্রেগন্যান্সির ঐ কয়টা মাস ওকে খুব জালিয়েছি তো তাই তারই শোধ নিচ্ছে। আর তার সাথে তো আমার সুকন্যা আছেই।আশফি ঠিকই বলেছে।ও একদম ওর বাবার মতই হয়েছে।কি যে শেয়ানা মেয়ে।বাবার সব কথা যে কিভাবে বুঝে কে জানে?বাবা যখনই ঘুমাতে বলবে ঠিক তখনই ঘুমাবে। অথচ আমি তাকে সারাদিন সারারাত ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করলেও সে ঘুমাবেনা। ভ্যা ভ্যা করতেই থাকবে। দিনের বেলা এক ফোটা ঘুমাবেনা। বড়দের মত শুধু রাত হলেই ঘুমাবে তাও যদি সেটা বাবা এসে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ায় তবেই ঘুমাবে।
-“চান্দু মাই ডিয়ার,তুমি দেখছো তোমার মামনিকে আমি কিভাবে জালাচ্ছি? আর আমার সাথে তো তুমি আছোই।তুমি জানো তুমি যখন তোমার মামনির ভেতর ছিলে তখন সে আমাকে কত্ত জালিয়েছে? সারাটা রাত আমাকে ঠিক মত ঘুমাতে দেইনি। আমাকে দিয়ে তার বমি পর্যন্ত পরিষ্কার করিয়েছে এমনকি আমার গায়ে পর্যন্ত বমি করেছে।তার সবকিছু আমাকে দিয়ে করিয়েছে। তাই আমিও এখন তার শোধ নিচ্ছি।বলো,ঠিক করছি না মামনি?
-“হুম।একদম ঠিক করছেন।(মাহি)
আশফির কোলে ছিল চান্দু। বাবার কথা শুনে চান্দু হেসে দিল।তাই দেখে আশফি বলল,
-“দেখেছো আমার মামনি ও হেসে আমার কথায় সায় দিচ্ছে।
-“হুম।মেয়ে তো একদম বাবা ভক্ত।বাবার মত দুষ্টু হয়েছে।পাক্কা শেয়ানা।
-“এই তুমি চুপ করো। একদম আমার মেয়েকে বকবেনা কিন্তু।
-“ঠিক আছে।বকবোনা। এখন চলুন আপনার দেরী হয়ে যাচ্ছে তো।
-“হুম চলো। মামনি তুমি একটু শোও তো এখানে। বাবাকে তো অফিস যেতে হবে।তোমার মামনির কাছে এখন আমি গোসল দিব আর সাথে………
-“আর সাথে কি?
-“একটু পরেই সেটা টের পাবে।
-“গোসল করার সময় কিন্তু একদম কোনো দুষ্টুমি করবেনা।
-“সে দেখা যাবে।
-“দেখা যাবে মানে?
-“এতো কথা বলো না তো। আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
-“হুম চলুন।
মাহি একটা সার্ভেন্টকে ডেকে তার কাছে চান্দুকে দিল।এরপর মাহি আশফির সাথে বাথরুমে ঢুকলো।
আশফি তারপর মাহির সামনেই ট্রাওজার খুলে টাওয়াল পড়ে নিল।আর টি শার্টটা ও খুলে ফেললো। এটা দেখে মাহি বলল,
-“এই তুমি এটা কি করলে?
-“চেঞ্জ করলাম।
-“এটা কি ধরনের চেঞ্জ? একদম সামনের উপর খুলে ফেললে?
-“তো কি হয়েছে?তুমি কি আমাকে নতুন দেখছো?
-“তুমি না আবার সেই আগের মত দুষ্টু হয়ে গেছো।
-“আমি তো এমনই ডিয়ার।শুধু মাঝখানে একটু ভদ্র হয়ে গেছিলাম আমার চান্দুর জন্য।
-“হ্যা।তাই তো দেখছি।
-“তাই তো দেখবে।আর কিছুদিন আগেও যে আমার প্যান্ট খোলার জন্য যা অস্থির হয়ে গেছিলে তখন লজ্জার কথা মনে ছিল না? এখন আমি নিজে যখন তোমার মনের আশা পূরণ করছি তখন সেটা পছন্দ হচ্ছে না।
-“আমার মনে মোটেও এমন কোনো আশা ছিলনা।
-“হুম।সে তো বুঝিই। আমি তো তোমার কাজের হেল্প ও করছি।আমার হাত পা পরিষ্কার করতে যাতে তোমার সুবিধা হয় সেই ব্যবস্থায় তো করলাম। নাও তো,তাড়াতাড়ি আমাকে আদর করা শুরু করো।
-“কি?
-“না মানে তাড়াতাড়ি গোসল করিয়ে দাও।দেরী হয়ে যাচ্ছে তো।
-“হুম।
মাহি নিচু হয়ে বসে আশফির পা পরিষ্কার করতে গেলো।তখন আশফি বাঁধা দিল।
-“আরে আগে পা পরিষ্কার করতে হবেনা।
-“তো?
-“আগে আমার এই সুন্দর বডিটাতে সাবান মাখাও।
-“ওকে।আমি ওর কথামত ওর শরীরে আগে সাবান মাখতে শুরু করলাম।
-“হয়েছে।এখন তোমার হাত দিয়ে আমার পুরো বডিটা মালিশ করো।
-“হাত দিয়ে কেনো? বডি ক্লিনার…….
মাহির কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই আশফি কথা বলল,
-“যা বলছি তাই করো।
এতো কথা বলবেনা।
-“কি যে চাই ও তা শুধু ঐ জানে।আমি ওনার পুরো শরীরে হাত দিয়ে মালিশ করে দিচ্ছি।আর উনি সুখের আবেশে চোখ বন্ধ করে আরাম উপভোগ করছে।
-“এই তুমি এতো সুন্দর করে মালিশ করো কিভাবে?
-“কিভাবে তা দেখতে পাচ্ছোনা?
-“হুম পাচ্ছি তো।আমার তো এখন আরো অনেক কিছু পেতে ইচ্ছা করছে।
-“তাই?কি কি পেতে ইচ্ছা করছে?
-“তোমার পুরোটাকেই পেতে ইচ্ছা করছে।
-“আচ্ছা?
-“হুম।
-“এভাবে কি তোমার শরীর পরিষ্কার হচ্ছে?
-“হুম।খুব পরিষ্কার হচ্ছে। একটুও জীবাণু থাকবেনা।
-“ও আচ্ছা….তো এখন তোমার অফিসের দেরী হচ্ছেনা?
আশফি মাহির কোমড় ধরে মাহিকে কাছে টেনে নিলো।
-“কি করছো কি?আমার গায়ে সাবান লেগে যাবে তো?আমিও ভিজে যাবো।
-“সুখের জোয়ারে আমি ভিজবো আর তুমি ভিজবে না?
-“মানে?
-“মানে এখন আমি তোমার পুরো শরীরে সাবান মাখবো।
-“এই একদম না।ওদিকে তোমার মেয়ে একা আছে যে।সেদিকে খেয়াল আছে?
-“একা নেই ও।সার্ভেন্ট এর কাছে আছে।
-“আশফি প্লিজ ছাড়োনা। আমি এখন ভিজবোনা।
-“তো কখন ভিজবে, রাতে?
-“হ্যা রাতেই ভিজবো। তখন তো চান্দু ঘুমাবে। তখন আর তোমাকে বারণ করবোনা।
-“আচ্ছা ঠিক আছে। রাতে ও ভিজাবো।আর এখনো ভিজবে।সমস্যা কি?
-“কি?
-“হুম।আমি ওকে শাওয়ার এর নিচে দাড় করিয়ে শাওয়ার ছেড়ে ওকে ভিজিয়ে দিলাম আর আমিও ভিজলাম।
-“কি করলে এটা?
-“এখনো কিছুটা বাকি আছে।
আমি মাহির গা থেকে ওর জামাটা খুলতে গেলাম কিন্তু মাহি আমার থেকে ছুটে গেলো।
-“মাহি এটা কি হচ্ছে? আমার কাছে এসো বলছি।
-“উহুম।
-“আমি কিন্তু এখন রেগে যাবো।
-“রেগে গেলে যাবে।
-“তাও তুমি আমার কাছে আসবেনা?
-“একদমই না।
-“মাহি আমি কিন্তু সত্যি বলছি।আমি যদি রেগে যায় তাহলে তোমার সাথে যে কি করবো তা তুমি বুঝতেই পারছো।
-“শুরু করেছে ব্ল্যাকমেইল করা।এখন যদি আমি ওনার কাছে না আসি তাহলে হয়তো টানা সাতদিন আমার কাছেও আসবেনা। আমি চুপচাপ ওর কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। কিন্তু ও তো অলরেডি রেগে গেছে।আমাকে জড়িয়ে ধরছেনা।আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-“সরি।আমি তোমাকে একটু রাগাতে চেয়েছিলাম।
আশফি রাগ করে মুখটা অন্যপাশে ঘুরিয়ে নিলো। তারপর মাহি আবার বলল,
-“সরি ডিয়ার।আর এমন করবোনা।প্লিজ আমাকে আদর করো।
আশফি কোনো কথা বলছেনা।মাহি আশফির গাল ধরে আশফির ঠোঁটে চুমু খেতে শুরু করলো। কিন্ত তাতে আশফির কোনো রেসপন্স নেই।মাহি ওকে ছেড়ে দিল।তখন আশফি মাহির দিকে তাকালো। মাহি কথা না বলে হঠাৎ করেই গা জামাটা খুলে ফেললো।তখন আশফি পলকহীন চোখে তাকিয়ে রইলো।মাহির এই কাজ দেখে ওর একটু হাসি পেয়ে গেলো।তবুও হাসলোনা।
মুখ চেঁপে রইলো।এরপরেও আশফির থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে আশফিকে মাহি বাথরুমের দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে ধরলো।তারপর বলল,
-“এই ছেলে তুই আমাকে আদর দিবিনা?কথা বল?
-“এটা কি ধরনের আচরণ?
-“জোড়।জোড় করে আদর নেওয়ার পদ্ধতি।
-“আচ্ছা?জোড় করে কিভাবে আদর নেয়?
-“জানোনা বুঝি?
-“নাহ্।জানিনা তো।
আশফির এমন উত্তর পেয়ে মাহি বুঝতে পেরেছে আশফি আসলে চাইছে মাহি নিজে ওকে আদর করা শুরু করুক আর আশফিকে ফোর্স করুক আদর করতে।মাহি সেটাই করলো।আশফিকে মাহি জড়িয়ে ধরলো।আর আশফির হাতদুটো মাহি নিজেই নিজের কোমড়ের উপর রাখলো।আশফি বুঝতে পেরেছে মাহি ওকে জড়িয়ে ধরতে বলেছে।
আশফি ওকে জড়িয়ে ধরলো।এরপর দুজনেই দুজনকে অসম্ভব ভালোবাসতে শুরু করলো। দুজনের গোসল করা শেষ হলে যখন বাথরুম থেকে বের হলো ওরা তখন মাহি খেয়াল করলো আশফির গলার কিছু জায়গায় রক্ত জমে দাগ হয়ে গেছে।আর আশফিও সেটা খেয়াল করলো ড্রেসিংটেবিল এর সামনে দাড়িয়ে আয়নাতে দেখে।তারপর আশফি মাহিকে বলল,
-“মাহি তুমি এগুলো কি করেছো?
-“আমি ওগুলো ইচ্ছে করে করিনি।
-“হুম।যখন আদর করতে যায় তখন তো দৌড়ে পালাতে চাও।আবার এদিকে যখন নিজে কাছে এসে আদর করা শুরু করো তখন তো কোনো হুঁশ থাকেনা।
-“তুমি আমাকে এভাবে বলছো কেনো?আমি সত্যিই খেয়াল করিনি।
-“সেটাই তো বলছি।যখন আমার কাছে আসেন তখন তো আপনার খেয়াল থাকে শুধু আমাকে আদর করার দিকে।
-“এই তুমি অফিস যাও তো। আর কোনো কথা বলোনা।
-“লজ্জা পাওয়া হচ্ছে?আর আমি কি না খেয়ে অফিস যাবো?আমাকে খাইয়ে দিবে কে?
-“তুমি যেভাবে বলছো তাতে যেকোনো মেয়েই লজ্জা পেয়ে যাবে।
-“ঠিক আছে আর লজ্জা দিচ্ছিনা।এখন আমি এগুলো নিয়ে কিভাবে অফিস যাবো?সবাই এগুলো দেখলে কি ভাববে?
-“সেটা কি আমি জানি? তোমার জিনিস তুমি কিভাবে সামলাবে তা তুমিই জানো।
-“ওহ্।নিজে দাগ বানিয়ে দিয়ে নিজেই কিছু জানোনা।ঠিক আছে,রাতে দেখছি তোমাকে। আজ রাতে তোমার যে কি হাল করবো!একটা জায়গাও ফাঁকা রাখবো না।দেখে নিও।রাতের জন্য তৈরি থেকো।
-“হুহ।
চলবে……….

রোমান্টিক_অত্যাচার -২ পর্ব-১৩

0
রোমান্টিক_অত্যাচার -২
পর্ব-১৩
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
-“আলিশা কেঁদেই চলেছে কথাগুলো শেষ করে।
শান্তনা ব্যাপারটা ও এখন ওকে দেওয়া ঠিক হবেনা। কিন্তু এই ব্যাপারটা এখন ওকে কি করে বোঝায় যে কেউ যদি মন থেকে না চায় কাউকে ভালোবাসতে তাহলে সেটা জোড় করে ভালোবাসানো সম্ভব না।কি করে যে বোঝাবো ওকে? আচ্ছা এখন আপাতত একটু একা থাকুক।বিষয়টা নিয়ে আমি একটু ভাবনা চিন্তা করে দেখি কি করা যায়। মাহিকে নিয়ে বরং এখন রুমে চলে যায়।পাশে ফিরে তাকাতেই দেখলাম মাহি পাশে নেই।ও কখন উঠে চলে গেছে টেরই তো পেলাম না।আমি আলিশা কে বললাম,
-“আলিশা সিস?
-“হুম বলো।
-“প্লিজ এভাবে আর কেঁদোনা।সমস্যা থাকলে তার সমাধান ও নিশ্চই আছে।তুমি এখন কান্নাকাটি বন্ধ করো।আর একটু রেস্ট নাও।আমরা তোমার সাথে পরে এই ব্যাপারে কথা বলছি।
হতাশাগ্রস্ত চেহারায় আলিশা একটা হাসি দিয়ে কথা বলল,
-“আর কি কথা বলবে?
-“তুমি এতো ভেঙ্গে পড়ছো কেনো?তুমি তো এমন ছিলেনা।আমি তো জানতাম তোমার মাঝে অনেক কনফিডেন্স আছে। তুমি কারো উপর ডিপেনডেন্ট নও। তাহলে এগুলো কি আলিশা?আমি সত্যি তোমার থেকে এটা আশা করিনি।
আলিশা প্লিজ নিজেকে সামলাও।
-“আশফি আমি নিজেকে সত্যি সামলাতে পারতাম যদি ও আমাকে বেসামাল পরিস্থিতিতে না ফেলতো। তুমি বিশ্বাস করো ওর কোনো কিছু দেখে আমার একবার ও মনে হয়নি যে ও আমাকে ভালোবাসেনা।
-“হুম।বিষয়টা যা দাড়াচ্ছে তাতে এখন ওর সাথেই কথা বলতে হবে মনে হচ্ছে।আচ্ছা ওর ডিটেইলটা আমাকে দাও তো।
-“ওয়েট।
আলিশা নিজের পার্স থেকে একটা ভিজিটিং কার্ড বের করলো।তারপর আশফিকে বলল,
-“এটা ওর ভিজিটিং কার্ড এখানে ওর কাজের সব ডিটেইল দেওয়া আছে আর ওর ইমেইল এড্রেস টা দেওয়া আছে ওখানে ঢুকলেই ওর সব ইনফরমেশন পেয়ে যাবে।
-“ওকে,তুমি টেনশন নিও না।একটু রেস্ট নাও।
আলিশার সাথে কথা শেষ করে রুমে চলে এলাম।রুমে এসে দেখি মাহি বিছানার এক কোণে বসে আছে পিসি সামনে করে।কি কাজ করছে ও পিসিতে?আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
-“কি করছো ডিয়ার?
-“একজনকে খুঁজছি।
-“কাকে খুঁজছো?আর কোথায় খুঁজছো?
-“সেটা তো খুঁজে পাওয়ার পর বলতে পারবো।
মাহি আসলে যাকে সন্দেহ করছে তার নামটা দিয়ে ভার্চুয়াল সাইটগুলোতে তাকে সার্চ করছে।
-“আচ্ছা আলিশার ব্যাপারটা নিয়ে একটু কথা বলতে চাইছিলাম। আলিশার থেকে ছেলেটার ভিসিটিং কার্ড নিয়েছি। আশফি ভিসিটিং কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখতেই ওর চোখ আটকে গেলো কার্ডটার উপর।ও ভাবছে ভিসিটিং কার্ডে যার ডিটেইল দেওয়া আছে গত তিন বছর আগেও এমনই একটা কার্ড ওর কাছে ছিলো।কেউ ওকে দিয়েছিল।আর সেটা ওর খুব ভালো করে মনে আছে। সেইদিন ঐ কার্ডটা ওকে কে দিয়েছিল।কারণ ও তার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে। তার নামটা ও ওর স্পষ্ট মনে আছে।তার নামটা ছিল ড. দুপুর হাসান। আর এখন ওর হাতে যে কার্ডটা আছে সেখানেও ঐ একই নাম।
-“তার মানে দুজনই একই ব্যক্তি?
-“কি বলছো?কারা একই ব্যক্তি?
-“মাহি তোমার কাছে একটা ঘটনা বলাই হয়নি আমার।দেশে থাকতে লাস্ট যে এক্সিডেন্টটা তোমার সাথে হয়েছিল সেদিন তোমার একজন পরিচিত তোমার অপারেশন টা করেছিল।তোমার জন্য তখন সে ও অনেক চিন্তিত ছিল।তারপর উপরওয়ালার অশেষ ক্রিপাতে আর তার চেষ্টাতে তুমি সুস্থ হও।
-“কে সে?
-“ড. দুপুর হাসান।
মাহি নামটা শুনে কিছুটা বিস্মিত হলেও তারপর নিজেকে সামলে নিল।আশফি আবার কথা বলা শুরু করলো,
-“সেদিন আমাকে সে বলেছিল তোমার সাথে তার কিভাবে পরিচয়।
-“ও আচ্ছা,তোমার পরিচয় জানতে চাইনি?
-“হুম।চেয়েছিল তো। আমি তখন আমার পরিচয় দিয়েছিলাম আমি তোমার উডবি হাজবেন্ড।আচ্ছা সে কথা বাদ দিই।এখন আমি তার কথা তোমাকে কেনো বলছি সেটা জানতে চাইবেনা?আলিশা যাকে পছন্দ করে সে এই দুপুর হাসান।
-“হুম।বুঝলাম।
-“বুঝলাম মানে? এমন ভাবে বললে শুনে মনে হলো তুমি অনেক আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলে।
-“আন্দাজ তো আগেই করতে পেরেছি।দুপুর যে এখনো সেদিনকার ঐ কথা ধরে রেখে সত্যি সত্যি সারাজীবন নিজেকে একা রাখার সিদ্ধান্ত নিবে তা আমি ভাবতেও পারিনি। আর ঘুরে ফিরে দুপুরের বিষয়টা যে আবার আমার জীবনে আসবে সেটা ও ভাবিনি।কিন্তু এখন তো দেখছি আলিশা আর দুপুরের সম্পর্কটা না হওয়ার পেছনে আমার ভূমিকাটাই বেশি।হয়তো সেটা অনিচ্ছাকৃতভাবে।কিন্তু দায়ী তো আমিই হচ্ছি। এখন তো ব্যাপারটা আশফির সাথে শেয়ার না করলেই হচ্ছেনা।
-“আশফি?আরে লোকটা কোথায় গেলো?
বেলকোনিতে চোখ পড়তেই দেখলাম ও ফোনে কথা বলছে।
-“উফ কি যে যন্ত্রণা!
-“কি হয়েছে?
-“ঐ যে সেদিন বললাম না একটা কোম্পানি আমাদের কোম্পানির সাথে ডিলে আসতে চাইছে।যেভাবে রিকোয়েস্ট করছে তাতে তো আমার সন্দেহ হচ্ছে।
-“সন্দেহ করার কি আছে? তার হয়তো সত্যি বেনিফিট হবে আমাদের কোম্পানির সাথে ডিল করলে।
-“সে তো হবেই।কিন্তু আমি আরো কিছুদিন ভেবে দেখতে চাইছি।আচ্ছা কয়টা বাজে এখন?
-“রাত ৯.০০ টা বাজতে চললো প্রায়।
-“আপনার যে ডিনারের সময় হয়ে গেছে তা কি ভুলে গেছেন?
-“ও হ্যা আলিশাকে ও তো খেতে দিতে হবে।চলো ওকো নিয়ে ডিনার সেড়ে নিই।
-“হুম চলো।
ওরা তিনজন একসাথে রাতের ডিনার করলো। ডিনার করে রুমে এসে মাহি আশফির সাথে কথা বলছে,
-“তোমাকে একটা বিষয় জানানোর আছে।
-“জানিয়ে ফেলো।
-“প্লিজ ফোনটা রাখো।
কথাটা মন দিয়ে শুনে।
-“তোমার সব কথায় আমি মন দিয়ে শুনি সে চোখ আমার যেদিকেই থাক।
-“দুপুর…….
বলতে গিয়েও মাহির গলায় কথাটা আটকে আসছে।
কেমন একটা আতংক কাজ করছে ওর মাঝে।আসলে এটা ভেবেই ওর মাঝে আতংক কাজ করছে যে দুপুর আর ওর ব্যাপারটা জানার পর আশফির রিয়্যাকশানটা কেমন হবে। যদিও আশফি অনেক ঠান্ডা মাথার মানুষ কিন্তু রেগে গেলে তো ওকে সত্যিই অনেক ভয়ংকর দেখায়। মাহির ভাবনা চিন্তার মাঝে আশফি কথা বলে ওর চিন্তা ভাবনার ছেদ ঘটালো।
-“দুপুর কি?বলতে গিয়ে থেমে গেলে যে?
-“দুপুরের সাথে একসময় আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো অনেক ভালো বন্ধুর মত।তারপর ও একদিন আমাকে প্রপোজ করে আমি সেটা এক্সেপ্ট করতে পারিনি।এক্সেপ্ট না করার কারণ ও ওকে আমি বলেছিলাম।সেদিন দুপুর আমাকে কিছু কথা বলেছিল।কথাগুলো ছিল………
মাহির গুলো কথাগুলো আশফি শেষ হতে দিলোনা।মাহি বলার আগেই আশফি মাহির মুখ থেকে কথাগুলো কেড়ে নিয়ে নিজে বলা শুরু করলো।
-“কথা গুলো ছিল তুমি যদি ওকে ভালো না বাসো ওকে বিয়ে না করো তবে ও নিজেও কোনোদিন তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবেনা। রাইট?
আশফির কথাগুলো শুনে মাহি বিস্মিত চোখে আশফির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।হয়তো কিছুটা ভয় ও কাজ করছে ভেতোরে।আশফি হঠাৎ মাহির দুই কাঁধ ধরে ঝাঁকি দিলো।তারপর বলল,
-“এই মেয়ে কোথায় হারিয়ে গেছো বলো তো?
মাহি চিন্তার জগত থেতে বেরিয়ে এলো।
-“তুমি?
-“আমি কি?
-“না মানে তুমি ব্যাপারটা সিম্পলি নিয়েছো তো?
-“সিম্পলি না নেওয়ার তো কিছু দেখছিনা।
-“আসলে এই বিষয়টা কখনো তোমার কাছে বলার প্রয়োজন মনে করিনি।মানে এটা যে বলার মত বিষয় সেটা মনে করিনি।
-“ওহ্ আচ্ছা তুমি ভেবেছিলে আমি তোমার থেকে এগুলো জানার পর ওভার রিয়্যাক্ট করবো? হুম করতাম যদি এগুলো আমার আর তোমার দেখা হওয়ার পরে ঘটতো।তবে ওভার রিয়্যাক্ট করতাম না তোমাকে বারণ করে দিতাম যাতে ওর সাথে আর কথা না বলো।এমনি বন্ধুত্ব আমি মেনে নিতে পারি কিন্তু সে যদি তার থেকে বেশি কিছু ভাবে তোমাকে বা বন্ধু হয়েছে বলে বারবার তোমার হাত ধরে,তোমাকে টাচ্ করে এসব কায়দায় তোমার সাথে কথা বলে সেটাও আমি মেনে নিতে পারবোনা।আর তোমার আর দুপুরের ব্যাপারটা যেহেতু আমি তোমার জীবনে আসার আগে ঘটে গেছে তাই সেটা আমি একদম সহজ ভাবেই দেখছি।
-“হুম।
-“হুম কি হ্যা?তুমি এই তিনটা বছরেও আমাকে পুরোটা চিনতে পারলেনা।
-“স্যরি।
-“স্যরি বলার কিছু দেখছিনা।সেটা আমার ব্যার্থতা।
-“আরে ধুর তোমার ব্যার্থতা হতে যাবো কেনো?
-“থাক হয়েছে অনেক। এখন প্লিজ ঘুমিয়ে আমাকে শান্তি দিন।
-“তার মানে কি?আমি জেগে থাকলে তুমি অশান্তিতে থাকো? এরকমটা তুমি বলতে পারলে?
-“আরে বাবা কেনো অশান্তিতে থাকি সেটা তো শুনবে।
-“অশান্তিতেই তো থাকো। সে যে জন্যই হোক।
আশফি মাহির হাত ধরে টেনে আনলো ওর বুকের কাছে।তারপর বলল,
-“তুমি জেগে থাকলে যে তোমার কাছে না আসা পর্যন্ত যে আমার শান্তি লাগেনা।কিন্তু বাঁধা তো একটা জায়গায়।
-“এর জন্যই বুঝি?
-“ইয়েস ডিয়ার।আচ্ছা তোমার তো কিছু দেওয়ার কথা ছিল আমাকে।
-“কি দেওয়ার কথা ছিল?
-“ভুলে গেছো নাকি ভুলে যাওয়ার ভান করছো?
-“না আমার কিছুই মনে পড়ছেনা আমার ঘুম পাচ্ছে। সরো আমারকে শুতে দাও।
-“এখন হঠাৎ করে ঘুম আসলে কোথা থেকে?
-“তুমিই তো ঘুমাতে বললে।
-“তুমি যে দিন দিন কত বড় ফাঁকিবাজ হচ্ছো!
-“আমি কোনো ফাঁকিবাজ টাকিবাজ নই।সরো না শুতে দাও।
মাহি আশফি ঠেলে সরিয়ে শোয়ার চেষ্টা করছে।
তারপর বালিশটা নিয়ে শুতে গিয়েই আশফি মাহিকে বাঁধা দিল।
-“খবরদার একদম শুবে না।বালিশটা রাখো।
জোড় গলায় বলছে আশফি।
-“কেনো?কি সমস্যা?
-“আমাকে আদর না করে ঘুমাতে পারবেনা।
-“তোমার হয়টা কি মাঝেমাঝে?একটু আগে নিজেই বললে আমি জেগে থাকলে আমার কাছে আসতে ইচ্ছা করে তোমার। তাই তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করো আমাকে।এখন আবার আদর নেওয়ার জন্য কত তালবাহানা।
-“তার জন্য তুমি দায়ী।
-“কিভাবে?
-“তুমি আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছো।
-“কখন?কিভাবে?
-“এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবোনা।আদর দিতে বলছি আদর দাও।
-“আর যদি না দিই?
-“চরম ভোগ আছে তোমার কপালে। সারারাত তো ঘুমাতে পারবেনা।
-“কি করবে যে ঘুমাতে পারবোনা?
-“জামাকাপড় খুলে ফেলবো।
-“কার?
-“তোমার।
-“তুমি না সত্যি অনেক বড় মাপের একটা ফাজিল।
-“আর তুমি অনেক বড় মাপের একটা ফাঁকিবাজ। তখন বললে যে রাতে হাফ পেমেন্ট সহ আবার ডাবল পেমেন্ট দিবে এখন সেটা ভুলে যাওয়ার ভান করছো?
-“হি হি হি।
-“এরবম শয়তানি হাসির দেওয়ার কি হলো?
-“কিছুনা।তোমাকে না মাঝেমাঝে এই একটা ব্যাপারের মাধ্যমে কাবু করা যায়।
-“হুম।তার মানে তখন আমার থেকে রেহায় পাওয়ার জন্য মিথ্যা বলা হয়েছিল?
মাহি মিটিমিটি হাসছে।
-“তো এখন কিভাবে রেহায় পাবে ডিয়ার? এখন তো তুমি আমার বাহুডোরে আটকে আছো।
মাহিকে জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বললো আশফি।
-“আচ্ছা ঠিক আছে বাঁধা দিবোনা।লাইটটা অফ করে দিয়ে এসো।
-“ওকে।
উঠে গিয়ে লাইটটা অফ করে ওর কাছে এলাম। ওকো শুইয়ে দিয়ে ওর কপালে আলতো করে চুমু খেলাম।
-“আশফি?
-“হুম।
-“আই লাভ ইউ।
মাহির এই কথাটা শুনে আশফি অবাক হয়ে মাহির দিকে তাকালো।কারণ এই এতোগুলো বছরে আশফি মাহিকে কখনো এভাবে লাভ ইউ কথাটা বলেনি আর মাহি ও বলেনি।এই প্রথম মাহিই বললো।
-“কি হলো?এভাবে চেয়ে আছো কেনো?
-“আমাদের মাঝে আজই এই বাক্যটা প্রথম ব্যবহৃত হলো।
-“আই লাভ ইউ। দ্বিতীয়বার হলো। কিন্তু উত্তরটা এখনো পেলাম না।
-“প্রপোজটা যেহেতু আজই করলে তাই উত্তরটা ও সময় বুঝেই দিবো।
মাহি একটু রাগ করে গালটা ফুলিয়ে রাখলো।
-“রিফিউজড করবে নাকি?
-“উমমম…..জানিনা। ভেবে দেখার জন্য তো সময় নিলাম।
মাহি আশফির বুকে আস্তে করে একটা ঘুষি দিলো। তারপর বলল,
-“পাঁজি ছেলে। দাম বেড়ে গেছে তাইনা,মেয়ে হয়ে আগে প্রপোজ করেছি বলে?
-“হুম তা তো একটু বেড়ে গেলোই।একটা বিষয় জানো মাহি এর আগে আমি যতবার রিলেশন করার প্রপোজাল পেয়েছি আর তারা যতবার আমাকে লাভ ইউ বলেছি তার একবার ও তারা আমার থেকে তার উত্তরটা পাইনি।
-“তো তুমি আমাকে তাদের কাতারেই ফেললে বুঝি?
-“আজ্ঞে না মহারানী। কারণ ঐ উত্তরটা একজনের জন্য তোলা ছিল।
-“কার জন্য?
-“আমার চান্দুর মামনির জন্য।তবে ভাবিনি চান্দুর মামনি নিজেই আমাকে আগে প্রপোজ করবে। ভেবেছিলাম আমি তাকে আগে বলবো।কিন্তু সেরকম ভাবে কথাটা বলা হয়ে উঠেনি।তবে আপনি যেহেতু আজকে বলেই ফেললেন উত্তরটা ও অবশ্যই পাবেন শুধু একটু সময় সাপেক্ষের ব্যাপার।
-“হাহ্।আমি সত্যিই ধন্য এমন ইউনিক চরিত্রের একটা বর পেয়ে।
আশফি মাহির নাকে চুমু দিয়ে বলল,
-“আর আমিও।
বলার পরই আশফি মাহিকে আদর করতে শুরু করলো। এরপর মাহি আর আশফি আলিশাকে প্রতিদিন মেইন্টালিভাবে সাপোর্ট দিতে শুরু করল যাতে আলিশা দুপুরের বিষয়টা নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা না করে। কিন্তু আলিশার কাছে মাহি আর দুপুরের ব্যাপারটা হাইড রাখলো ওরা।ওরা দুজন যে প্ল্যান করেছে দুপুরকে রাজি করানোর জন্য সেটা আর আলিশাকে ওরা বললোনা। তবে যে প্ল্যানটা ওরা করেছে সেই প্ল্যান টার কার্যক্রম শুরু হবে মাহির বেবি হয়ে যাওয়ার পর। তার আগে তেমন কিছুই ওরা করতে পারছেনা। আর আলিশাকে ও ধৈর্য রাখতে বলেছে।তারপর আলিশা ওদের সাথে সময় কাটানো শেষ হলে দেশে ফিরে গেলো।তার ২ মাস পরের ঘটনা।
-“আআআআ……. আর পারছিনা। এতো পেইন কেনো?
-“একটু কষ্ট করো ডিয়ার আমরা চলে এসেছি তো।
আশফি মাহিকে নিয়ে হসপিটাল এসেছে। হুইলচেয়ারে বসে মাহি চিল্লাচ্ছিল।তখন মাহিকে কেবিনে শিফট করতে নিয়ে যাচ্ছিল আশফি।
-“উহ্ মাগো আর পারছিনা। হায় আল্লাহ্ কেনো এতো কষ্ট দিচ্ছ?
-“ধৈর্য রাখো ডিয়ার। কষ্ট তো একটু হবেই। তবে বেশিক্ষণ কষ্ট পেতে হবে না,দেখো।
-“একদম চুপ।কোনো কথা বলবে না তুমি। তোমার জন্য এতো কষ্ট হচ্ছে। তোমাকে আমি ছাড়বোনাআআআআ।
-“ওকে তুমি ছেড়োনা ডিয়ার।আমরা চলে এসেছি।
নার্স এসে মাহিকে কেবিনে(ডেলিভারি রুম) নিয়ে গেলো। আর আশফি বাইরে দাড়িয়ে থাকলো। বাইরে থেকেই মাহির চিৎকার শোনা যাচ্ছে।
-“ওহ্ গড কি যে ভুল করেছি ওকে বাবু দিয়ে। এর জন্য যে আমাকে কতকিছু শুনতে হলো তা তো তুমি দেখলেই।এই কয়টা মাস আমার উপর দিয়ে যা গেছে নেক্সট টাইম আমি আর এমন ভুল করছিনা।আর আমি ওকে প্রেগন্যান্ট করছিনা।
কিছুক্ষণ পর একজন নার্স কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো। তারপর আশফিকে বলল,
-“স্যার আপনার মিসেস আপনাকে ছাড়া ডেলিভারী কাজ করতে দিবেনা। উনি আমাদের কোনো কিছুই করতে দিচ্ছেন না। বলছে এটা নাকি আপনাকেই করতে হবে।এমনকি ড. কে ও পর্যন্ত কাছে আসতে দিচ্ছে না।
-“কি?কি করছে মেয়েটা? ও হ্যা ও তো আমাকে বলেছিল যে ওর ডেলভারীটা ও আমাকে করতে হবে কারণ কাজটা আমিই করেছি তাই। মাহিটা আসলেই একটা পাগলী।এটা কি আমি কখনো করতে পারি?
-“স্যার প্লিজ আপনি ভেতোরে আসুন।কারণ টাইম ওয়েস্ট হচ্ছে আবার এদিকে বেশি দেরী হলে ওনার প্রবলেম হবে।
-“হ্যা তাইতো।চলুন।
আশফি ভেতোরে যাওয়ার পর মাহি ঠান্ডা হলো। কিন্তু আশফির দিকে চোখগুলো গোল গোল করে তাকিয়ে রইলো।কারণ আশফি ওর কথা রাখেনি।
-“ডিয়ার তুমি কি ভয় পাচ্ছো?
-“তোমার মাথা। তুমি বাইরে দাড়িয়ে ছিলে কেনো?
মাহি ব্যাথায় কাতরাচ্ছিল আর আশফিকে বকছিল।
-“ওকে ওকে। আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে আর এরকম হবেনা। এবারের মত আমাকে মাফ করে দাও?
-“পরের বার তোমাকে আর সুযোগ দিলে তো? উহ্…ঐ ড. কে আমার কাছে আসতে বারণ করো। এই কাজটা তুমিই করবে। তোমার করার কথা ছিল।
মাহি রাগী কন্ঠে আশফিকে বলছিলো।আর মাহির কথাগুলো শুনে নার্স আর ড. সবাই হা করে তাকিয়ে ছিল।কথাগুলো মাহি জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজে বলছিল।
-“ডিয়ার এগুলোতে আমি অভ্যস্ত নই।আর অভ্যস্ত হওয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসছেনা কারণ আমি ড. নই।আর একজন ড. ছাড়া এ ধরনের কাজ আমরা কিভাবে করবো?
-“আমরা নই বলো আমি।
-“ও স্যরি।হ্যা আমি। তো তুমি ব্যাপারটা বুঝতে পারছো নিশ্চই।কিন্তু আমি তোমার পাশে আছি।আর আমাদের এসব কথার জন্য কিন্তু সময় নষ্ট হচ্ছে।এতো তোমার আর আমাদের চান্দুর দুজনের ক্ষতি
হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।বুঝেছো?
-“হুম।তাহলে আমার হাতটা ধরে আমার পাশে দাড়িয়ে থাকো।একদম নড়বেনা।ওকে?
-“ওকে ডিয়ার।
আশফি মাহির হাতটা ধরে মাহির পাশে দাড়িয়ে আছে। আর মাহিকে শান্ত করার চেষ্টা করছে,মাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বেশকিছুক্ষণ পর জাপানিজ দের মত দেখতে একটা ধবধবে ফর্সা গায়ের রঙের ফুটফুটে একটা কন্যা জন্ম নিলো।চোখ দুটো একদম ছোট ছোট, ঠোঁটটা একদম রক্তের মত লাল আর মাথা ভর্তি কালো চুল।হাত পায়ের আঙ্গুল গুলো কিছুটা লম্বা লম্বা হয়েছে।যাকে দেখতে হূর দের থেকে কম সুন্দর লাগছেনা। মাহির চোখ দিয়ে তখনও পানি ঝরছিলো।কিন্তু বেবিটাকে দেখার পর শান্তিতে যেনো সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গেছিলো। সেই সাথে আশফির ও শান্তি আর খুশিতে চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। আশফি আর মাহি দুজন দুজনের দিকে তাকালো। তারপর আশফি মাহির কপালে চুমু খেয়ে বলল,
-“আই লাভ ইউ টু ডিয়ার।
আম্পটিন লাভ ফর ইউ।
চলবে……

রোমান্টিক_অত্যাচার -২ পর্ব-১২

0
রোমান্টিক_অত্যাচার -২
পর্ব-১২
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
আশফিঃ মাহি? সোনা একটু উঠো।
মাহিঃ না।প্লিজ ডিস্টার্ব করো না আমাকে।রেগে যাবো কিন্তু।
আহ্লাদ ভরা কন্ঠে মাহি কথাগুলো বলছে আশফিকে।
-“রাগ করো না জাদু। দেখো ফোনটা বাজছে তখন থেকে।জরুরি ফোন ও তো হতে পারে,তাইনা?
-“এই সন্ধ্যাই কার এমন জরুরি হতে পারে?তার কি ঘরে বউ নেই নাকি স্বামী নেই?
আশফির কাছ থেকে রাগ করে উঠে গেলো মাহি। আশফি উঠে মাহিকে কাছে টেনে কোলের ভেতোর জড়িয়ে ধরে বসলো।
-“ঠিকই বলেছো।তার ঘরে নিশ্চই বউ অথবা স্বামী নেই।না হলে সে ঠিকই বুঝতো আশফিকে এখন তার লাভলী বউটা আদর করছে।আর এমন সময় তো বউ কাছে থাকলে যেকোনো পুরুষের ইচ্ছে করবে তার বউ এর আদর নেওয়ার।
-“হুহ। হয়েছে আর পাম্প করতে হচ্ছেনা।ফোনটা রিসিভ করো।
-“হাহাহাহা। ওহ, ফোনটা তো কেটে গেলো।আননোন নাম্বার দেখছি।কে এটা?
ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে বললো আশফি।
-“কল ব্যাক করে দেখো কে ফোন করেছে?
-“হুম।ফোন বাজছে ফোন তুলছে না কেনো?মাত্রই তো ফোন আসলো।হ্যা রিসিভ করেছে। হ্যালো?
-“হ্যালো আপনি কি আশফি চৌধুরী বলছেন?
-“জ্বী আপনি কে?
-” আমি চ্যাং ওক বলছি।আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে নাম্বার পেলাম।আপনার গাড়িতে যে ভদ্র মহিলা ড্রাইভিং করছিলো তিনি একটা এক্সিডেন্ট করেছে।ওনাকে আমরা হসপিটাল নিয়েসেছি।
-“কি বলছেন?আলিশা এক্সিডেন্ট করেছে?আচ্ছা ঠিক আছে আপনি আমাকে হসপিটালের এ্যাড্রেসটা দিন।আমি এক্ষণি আসছি। আর অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
-“না না ঠিক আছে।আপনি জলদি আসুন।
-“এই কি হয়েছে বলোনা? আলিশা কোথায়?
এক্সিডেন্ট করেছে কিভাবে?
-“মাহি এতোকিছু বলার সময় নেই।রেডি হও হসপিটাল যেতে হবে।
চাচ্চুকে কি জবাব দিবো বুঝতে পারছিনা।
-“আচ্ছা ঠিক আছে তুমি এতো টেনশন নিওনা। চলো আমি রেডি।
মাহি আর আশফি দ্রুত গাড়ি চালিয়ে হসপিটালের ঠিকানা নিয়ে হসপিটাল গেলো। আলিশার কেবিনের খোঁজ করে ওর কেবিনে ঢুকলো।
-“আচ্ছা মিস আলিশা আপনি ভয় পাবেন না। আঘাতটা গুরুতর নয়। কপালে খানিকটা ইনজুরি হয়েছে।চিন্তার কিছু নেই আমি এন্টিবায়োটিক দিয়ে দিচ্ছি যাতে পেইনটা কম হয় আর ঘা টা দ্রুত শুকিয়ে যায়।(ডক্টর)
আশফি আর মাহি কেবিনে ঢুকে ডক্টরের কথা শুনছিলো।তারপর আলিশার সাথে কথা বললো।
-“আলিশা?তুমি ঠিক আছো তো?আমি সত্যি খুব স্যরি।কিভাবে যে আমি তোমার কথা ভুলে গিয়েছিলাম।
-“আরে এতো চাপ নিচ্ছো কেনো?আমি একদম ঠিক আছি।জাস্ট টাইম মত ব্রেকটা হ্যান্ডেল করতে না পারলে বড় কিছু হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো।
-“আচ্ছা ডক্টর ওর কি সিরিয়াস কোনো ইনজুরি হয়েছে?(আশফি)
-“তেমন সিরিয়াস নয়।২ টা দিন রেস্ট নিলে একদম সুস্থ হয়ে যাবে।
-“কি করে হলো এসব বলো তো?(মাহি)
-“মাহি এগুলো এখন থাক। পরে আমরা শুনছি এই বিষয়টা। ডক্টর ওকে কি আমরা বাসায় নিয়ে যেতে পারবো?নাকি এখানে থাকতে হবে ওকে?
-“বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।প্রবলেম নেই। মেডিসিন দিয়ে দিয়েছি। ওগুলো নিলেই ঠিক হয়ে যাবেন উনি।
-“ওকে ডক্টর থ্যাঙ্কস। তাহলে আমরা ওকে নিয়ে যাচ্ছি।(আশফি)
আশফি হসপিটালের সব ফরমালিটিস মেইনটেইন করে আলিশাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলো।
-“মাহি তুমি আলিশার খাবারের ব্যবস্থা করো তো আগে।আমি আঙ্কেলের সাথে কথা বলে আসছি।
-“এই না না।তুমি কি বাবাকে এগুলো বলতে চাচ্ছো নাকি?
-“হ্যা।জানানোটা তো উচিত।যত যাই হোক ব্লান্ডারটা তো আমার জন্যই হয়েছে।স্যরিটা তো বলতেই হবে।
-“তুমি কি এখন স্যরি বলতে গিয়ে তাদের এক্সট্রা টেনশন দিবে?
-“হুম আলিশা ঠিক ই বলেছে।ব্যাপারটা জানার পর আঙ্কেল আন্টি অনেক টেনশন করতে শুরু করবে। তুমি বরং ঘটনাটা অন্য একদিন বলো।আজ থাক।
-“অন্য একদিন ও বলতে হবেনা।এটা তাদের জানার কোনো প্রয়োজন ই দেখছিনা।
-“আচ্ছা ঠিক আছে সে দেখা যাবে পরে। মাহি তুমি যাও ওর খাবার নিয়েসো। ওকে খাইয়ে দাও।
-“এখন কিন্তু আমার খুব অস্বস্তিকর লাগছে। আমি যতটা অসুস্থ না হয়েছি তোমরা তার থেকে বেশি অসুস্থ করে ফেলছো তোমাদের ওভার টেক কেয়ারের মাধ্যমে। আমার মোটেও খিদে পাইনি। তোমরা যাও ঘরে গিয়ে রেস্ট নাও। শুধু শুধু আমাকে নিয়ে বেশি ভাবছো।
-“এই তুমি একদম কোনো কথা বলবেনা। এখন আমাকে এটা বলতো এক্সিডেন্ট টা হলো কি করে? আমার জানামতে তুমি কখনো বেখেয়ালি ভাবে ড্রাইভ করোনা। খুব কেয়ারফুল থাকো।(মাহি)
-“না আসলে আমি নিজেও বুঝতে পারিনি কি করে কি হলো?
-“এটা কোনো যুক্তিসম্মত কথা হলো না আলিশা। ব্যাপারটা আমাদের কে বলো। Exactly কি হয়েছিলো?(আশফি)
আলিশা চুপ করে রইলো। ও কি বলবে ঠিক ভেবে পাচ্ছেনা।ড্রাইভিংটা ও আনমনে হয়ে করছিলো। এখন এই কথাটা বললে ওরা জানতে চাইবে হঠাৎ আনমনে হয়ে ড্রাইভিং করার কারণটা কি? কি এমন ভাবছিলো ও? এসব প্রশ্নের উত্তর কি দিবে ও সেটাই ভাবছে।ওর এমন ভাবে চুপ করে থাকতে দেখে মাহি আর আশফি বুঝতে পারলো আলিশা একটা বাড়তি টেনশনে আছে।
-“আলিশা তুমি তো একদিন বলেছিলে যে তুমি আমাদেরকে বন্ধু ভাবো। ভাইয়া ভাবী নয়। তাহলে এতো প্রাইভেসি কেনো রাখছো?হ্যা মানছি কিছু বিষয় আছে যা সবার সাথে শেয়ার করার মত নয়।কিন্তু যেগুলোর জন্য তুমি ডিপ্রেশনে ভুগছো সেগুলো অন্তত তোমার শেয়ার করা উচিত কাছের মানুষের সাথে। আমরা তো তোমার দূরের কেউ নই বলো।তুমি নিশ্চই আমাদের দূরের কেউ ভাবোনা?(মাহি)
-“না না,ছি ছি দূরের কেউ ভাবতে যাবো কেনো?
-“তাহলে তুমি কি এটা ভাবছো যে আমাদের সাথে তোমার প্রবলেম শেয়ার করলে আমরা তার সলিউশন দিতে পারবোনা তাই শেয়ার করার কোনো প্রয়োজন নেই? আচ্ছা এরকমটা যদি ভেবেও থাকো আমরা যদি তার সলিউশন করতে নাও পারি এটলিস্ট তোমার মনটা হালকা হতে পারে আমাদের সাথে শেয়ার করলে।(আশফি)
-“আরে তেমন কিছুই নয়।প্রবলেম থাকলে তো শেয়ার করবো বলো?
তোমরা মিছিমিছি টেনশন নিচ্ছো।
-“আচ্ছা বেশ তোমার যদি বলতে ইচ্ছা না হয় বলোনা।আমরা আর জোড়াজোড়ি করবো না। কিন্তু যে প্রবলেমই থাকো সেটাকে নিজের মত করে সল্ভ করতে না পারলে বাসার মানুষের হেল্প নিও। কারণ তাদের মত করে হেল্প তোমাকে কেউ করতে পারবেনা।খামখা দুশ্চিন্তা করে নিজের এতো সুন্দর ফিটনেস বডি নষ্ট করোনা। আর চেহারার কথা বললাম না।(আশফি)
-“হা হা হা। কি যে বলোনা তুমি?
-“আচ্ছা তোমরা গল্প করতে থাকো।আমি আলিশার খাবার নিয়ে আসি।
মাহি আলিশাকে খাইয়ে-দাইয়ে কিছুক্ষণ আলিশার সাথে সময় কাটিয়ে ওরা রুমে চলে এলো।
-“তখন কি বলছিলে আলিশাকে?(মাহি)
-“কখন?কি বলছিলাম?(আশফি)
জ্যাকেটটা খুলতে খুলতে আশফি কথা বললো।
-“ঐ যে বললে ওর ফিটনেস বডি?
-“হ্যা।ওর বডি কি ফিটনেস নয়?
-“হুম।আমি কখন বললাম ফিটনেস নয়?
-“তাহলে এভাবে প্রশ্ন করছো যে?
মাহি কোনো উত্তর দিলোনা।চুপ করে মুখটা কালো করে রইলো। আশফি সেটা খেয়াল করলো। ও বুঝতে পেরেছে মাহি কি কারণে রাগ করেছে।এভাবে রিয়্যাক্ট করার কারণে আশফির ইচ্ছা হলো মাহিকে আরো একটু রাগাতে।
-“আসলে সামনে সুন্দর জিনিস থাকলে সেটাকে সুন্দর না বলে থাকা যায় না।
-“হ্যা তো বলো না।নিষেধ করছে কে?
-“নিষেধ কেনো করবে? নিষেধ করার কথায় বা আসছে কোথা থেকে? কিন্তু তুমি এভাবে রিয়্যাক্ট করছো কেনো বলো তো?
-“আমি কোথায় রিয়্যাক্ট করলাম?সুন্দর জিনিসের প্রশংসা করো গিয়ে। যাও।
আশফি ভাবছে, মেয়ে মানুষের এই একটা সমস্যা,এদের সামনে অন্য মেয়ে মানুষের প্রশংসা করলে অনেক বড় ঝামেলা বেঁধে যায়।সে তার সাথে যতই ভালো সম্পর্ক থাক। এমনিতে নিজে যখন আলিশার প্রশংসা করে তখন কোনো দোষ হবে না আর আমি বলতে গেলেই আমার ঘাড়ে যে কয়টা মাথা থাকবে সবকয়টা কেটে ফেলবে।যদিও ঘাড়ে একটা মাথায় আছে সেই একটার কথায় বললাম।নাহ্ আর বেশি রাগানো যাবেনা।পরে দেখা গেলো আমার আর আজ বেডে জায়গা হবেনা।
-“আচ্ছা ডিয়ার এদিকে এসো।
-“না।কোথাও আসবো না।
-“ওকে কাছে টেনে নিয়েলাম।তারপর পেছন থেকে ওর কোমড় জড়িয়ে পেটের উপর হাত রেখে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়ালাম।
মাহি তুমি কি কিছু দেখতে পাচ্ছো?
-“কি দেখবো?
-“কিছুই দেখতে পাচ্ছোনা?
-“শুধু তোমাকে আর আমাকেই তো দেখছি।
-“আমাকে দেখতে হবেনা। তোমাকে দেখো।আমার চান্দুর মা হওয়ার পর থেকে তোমার সৌন্দর্যটা কতোটা পাল্টে গেছে’না?এক অন্যরকম মাহি লাগছে তোমাকে।যাকে দেখলেই মনে হয় সর্বক্ষণ আষ্টপৃষ্ঠে বেঁধে রাখি।
-“সেটা তো তোমার চান্দুর খেয়াল রাখার জন্য।
-“শুধু সেজন্যই নয়। তোমার মাঝে এক অন্যরকম সৌন্দর্য বিরাজ করছে।যা তুমি দেখতে পাচ্ছোনা।সেই সৌন্দর্যই আমাকে সর্বদা টানে। শুধু চেহারার সৌন্দর্যই নয় তোমার শরীরের সৌন্দর্য ও।যা এখন অন্যসব সুন্দরী মেয়েদের মাঝেও নেই। কারণ তারা এখন কেউ হবু মা নয়।আর আমি তো তখন আলিশার টেনশন রিলিজ করার জন্য কথাটা বললাম।কারণ মেয়েদের তার ফ্যামিলির কসম দিয়ে বা অন্যকিছুর কসম দিয়ে যতই বুঝাও সে মাথাতেই নিবেনা মানে কাজে দিবেনা।কিন্তু যখনই তার ফিটনেস,চেহারার কথা বলবে সে দ্রুত সেটাকে ঠিক রাখার জন্য ব্যাস্ত হয়ে যাবে।
-“হুম।সেটা ঠিক।কিন্তু বিষয়টা যদি ভালোবাসা রোগ হয় তাহলে যত যার দোহাই কিচ্ছু কাজে দিবেনা।
-“তার মানে তুমি বলতে চাচ্ছো বয়ফ্রেন্ড সংক্রান্ত ব্যাপার?
-“হুম।আমার তাই মনে হচ্ছে।বেশ কিছু দিন খেয়াল করছি ও কারো সাথে ফোনে কথা বলার পরই কেমন যেনো বিষন্ন দেখাই ওকে।দেখো চাচ্চু বা চাচিমায়ের সাথে যখন কথা বলে তখন বেশিরভাগ সময় আমি সামনে থাকি আমিও কথা বলি।তাদের সাথে কোনো প্রবলেম না। প্রবলেমটা অন্য কাউকে নিয়ে। আর ওর শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশ ভালো।
ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো টেনশন ই হওয়ার কথা না ওর।তাহলে বাকি থাকলো বয়ফ্রেন্ড। যদি সেটা থেকে থাকে।কিন্তু আমার মনে হচ্ছে সেটা আছে ওর।
-“হুম বুঝলাম।কিন্তু ওর মত মেয়েকে রিফিউজড করবে সে কি এমন ছেলে? কোনো ইংল্যান্ডার নাকি?
-“সেটা তো ওর সাথে কথা বললেই বুঝতে পারতাম। সে যাই হোক ও যদি এখন নিজে থেকে কিছু না বলে তাহলে আর কি করার।
হঠাৎ ধুম করেই মাহির কথার মাঝে মাহিকে কোলে তুলে নিলো আশফি।
-“এটা কি হলো?এভাবে কোলে তোলার মানে কি?
-“মানে তো থাকতে পারে অনেক কিছুই।কিন্তু আমি কি আমার বউকে কোনো মানে ছাড়া কোলে তুলতে পারিনা?হুম?
-“সে তো পারোই।কিন্তু কোনো কারণ তো অবশ্যই আছে তাই তো জিজ্ঞেস করলাম।
-“হুম তা আছে। কারনটা হলো তখন আমি তোমার থেকে ফুল পেমেন্টটা পাইনি হাফ পেয়েছি।এখন যেটুকু ডিউ আছে সেটা রিপেমেন্ট করো।
-“ও আচ্ছা।কিন্তু বাকি তো বাকিই।সেটা তো ফাঁকিতেই পড়ে গেছে। ওটা আর পাচ্ছোনা।
-“তোমার তাই মনে হলো?তুমি এখনো অলরেডি আশফির কোলেই আছো।আর আশফি তার হাফ পেমেন্টটা না পেয়েই তোমাকে রেহাই দিবে মনে হচ্ছে? সুদে আসলে মিটিয়ে নিবো কিন্তু।
-“সুদে আসলে মিটিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ ই নেই।
-“উহহু।তুমি না আমার চান্দুর দোহাই দিয়ে দিয়ে পাড় পেয়ে যাচ্ছো।কিন্তু সেটা আর কতোদিন? তারপর যে তোমার কি হাল করবো!
-“আচ্ছা? দেখে নিবো।
-“সে দেখে নিও তুমি। কিন্তু এখন যেটা করতে বললাম সেটা করো। না হলে কিন্তু কোল থেকে নামাবোনা।আর যদি নামায় ও তাহলে তোমার উপর যা সব টর্চার হবে তা তুমি নিশ্চই বুঝতে পারছো?
-“তোমার কি মনে হয় আমি তোমার টর্চারকে ভয় পাই?
-“ও।তাহলে দেখা যাক। চলো তাহলে শুরু করি।
ওকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।তারপর গা থেকে টি শার্টটা খুলে ফেললাম।
-“এই তুমি কি করতে চাইছো বলো তো?
-“সেটা তো দেখতেই পাবে।
ওর কাছে গিয়ে বললাম।
-“তুমি না পাগল একটা। ভুলে গেলে নাকি এখানে কে আছে?
মাহি নিজের পেটে হাত রেখে বললো।
-“একদম না।এখানে আমার আর তোমার ভালোবাসার এক বিশেষ অংশ বেড়ে উঠছে।আর আমি তো তোমার উপর এমন কোনো টর্চার করবো না যেটাতে আমার চান্দুর কষ্ট বা ক্ষতি হতে পারে। তো এখন আমাকে আর বাঁধা দিওনা।আমি সেই বাঁধা মানবোনা।
-“এক মিনিট।তোমার হাফ পেমেন্ট সহ যদি আবার এক্সট্রা পেমেন্ট করি তোমাকে তাহলে কি হবে?
-“দৌড়াবে।তাহলে আর এতো দেরী কিসের?আমি প্রস্তুত।
-“কিন্তু আমি প্রস্তুত নই। কারণ খালি পেটে বউ এর প্রেম হজম করতে পারবেনা। পরে সেটা বদহজম হয়ে যাবে।
-“বউ এর প্রেমে যদি বদহজম হয় তবে সেই বদহজমকেই আমি হজম করে নিবো।তবু কোনো ছাড়াছাড়ি নেই।বুঝেছি তোমাকে দিয়ে এখন কিচ্ছু হবেনা।ওটা আমাকেই করতে হবে।তুমি বর্তমানে প্রচুর ফাঁকি দেওয়া শিখে গেছো।তোমার ফাঁকি দেওয়া আমি ছোটাচ্ছি।
কথাগুলো বলেই আমি মাহির ঠোঁটে চুমু দিয়ে বসলাম।ঠোঁট থেকে গলার কাছে নামতেই ও আমাকে থামিয়ে দিলো।
-“প্লিজ আমার একটা কথা শুনো।
-“উফফো।কি কথা বলো।
আমি ওর গলায় তখন নাক আর ঠোঁট দিয়ে ঘষছিলাম।
-“বলছি আমাদের আর এক বার…….উফ থামো না একটু।সুড়সুড়ি লাগছে তো।
-“লাগুক।থামতে পারবোনা।
এবার ওর গলায় জিহ্বা লাগিয়ে সুড়সুড়ি দিতে থাকলাম।
-“প্লিজ থামো না। আমার কথাগুলো শুনো একটু।
-“তো বলোনা।আমি কি বাঁধা দিচ্ছি?
-“দিচ্ছোই তো।এভাবে বলা যায়?কেমন যেনো লাগে?কথা আটকে যায়।
আমার কথাটা শুনে আশফি মিটিমিটি হাসছে।
-“কি হলো?এভাবে মিটিমিটি হাসছো কেনো?(মাহি)
-“এমনি।আচ্ছা বলো। থেমেছি তো এবার।
-“অসংখ্য ধন্যবাদ জনাব। বলছি আলিশার কাছে তো আর একবার যাওয়া উচিত।
-“হুম যাবো তো। মাত্রই তো এলাম।
-“কোথায় মাত্র এলাম। ২০/৩০ মিনিটের মত তো হয়েই গেছে।
-“সত্যি?এতক্ষণ হয়ে গেছে?
-“আজ্ঞে হ্যা।
-” তোমার কাছে থাকলে না আমার পৃথিবীর আর কোনো কিছুই মাথায় থাকেনা।
-“সেইজন্যই তো থামতে বলছি।কারণ এখন তুমি আমার সাথে দুষ্টুমি শুরু করলে তখনকার মত আবার মেয়েটার কথা ভুলে যাবে।আর তোমার সাথে আমিও।
-“তাহলে দোষটা তো আর আমার একার হলো না। তোমার ও।
-“তো আমি তো সেটা স্বীকার করলাম ই। আর তাছাড়া এখন রাত প্রায় ৮ টা বেজে গেছে। আমাদের ও ডিনার করার সময় হয়ে গেছে।
-“ওকে।আগে যাও ওকে দেখে আসো।আমি একটু ফ্রেশ হয়ে তারপর ডিনার করতে আসছি।আসার পর তো তোমার জন্য ফ্রেশ ও হতে পারলাম না।
মাহির কাছ থেকে উঠে ওয়াশরুমে যাচ্ছিলাম।
-“কি?আমি কি করলাম শুনি?আমি কি তোমাকে বেঁধে রেখেছিলাম?
-“রাখোনি, আবার ধরে বেঁধেই রাখো।
-“হুহ।যতসব ফালতু কথা।
-“কি বললে?ফালতু কথা! দাড়াও তোমাকে দেখছি। মুভ ভেংচি দেওয়া হচ্ছে তাইনা?আমি ফালতু কথা বলি?
ওয়াশরুমে না ঢুকে ওকে ধরার জন্য ওর কাছে দৌড়ে গেলাম।ও তখন বিছানা থেকে উঠে দৌড়াতে যাচ্ছিল। ওর দৌড়ানো দেখে আমার কেমন যেনো ভয় করলো।আমি ওকে বারণ করছিলাম না দৌড়ানোর জন্য।
-“মাহি দাড়াও।দৌড়াবেনা প্লিজ।
পেছন থেকে গিয়েই ওকে ধরে ফেললাম।
-“তোমাকে না বলেছি তুমি একদম ছোটাছোটি করবেনা।আবার আমার কথা অগ্রাহ্য করছো?
আশফির চোখে মুখে তখন অজানা এক ভয় কাজ করছিলো।ভয়টা নিশ্চই ছিলো মাহির কোনো ক্ষতি হয়ে যাওয়ার ভয়।
-“আশফি?তুমি এতো ভয় পাও কেনো?আমি তো বাচ্চা নই।আমার ও খেয়াল আছে যে আমি এখন আমার আশফির চান্দুর মা।
-“জানিনা কিসের এতো ভয় করে আমার।শুধু মনে হয় আমার থেকে এক্সট্রা কেয়ার তোমাকে কেউ করতে পারবেনা।এমনকি তুমি নিজেও না।
-“অনেক বেশি দুর্বল তুমি আমার প্রতি।এর জন্যই এমন মনে হয় তোমার। কিন্তু এতো বেশি দুর্বলতা ভালো নয় আশফি।
-“রাগাচ্ছো আমাকে?
-“উহুম।সত্যি বলছি।
-“ওহ্ আচ্ছা। কেনো ভালো না বলো?
-“এখন হয়তো তোমার বিশ্বাস হচ্ছেনা।কিন্তু আল্লাহ্ না করুক এমন কোনো দিন যদি আসে যেদিন আমি অনেক দূরে থাকবো তোমার থেকে সেদিন তুমি নিজেকে সামলাতে পারবেনা।বা তুমি নিজেই যদি আমার উপর অভিমান বা রাগ করে দূরে সরিয়ে রাখো আমাকে সেদিন তোমার এই দুর্বলতা তোমাকে অনেক কষ্ট দিবে। তখন তুমি না পারবে আমার থেকে দূরে থাকতে আর না পারবে কাছে আসতে।
-“এইসব উল্টা পাল্টা চিন্তা ভাবনা তোমার মাথায় আসে কোথা থেকে বলো তো।যা আমি স্বপ্নেও ভাবিনা তাই তুমি আমার সামনে ঝেড়ে দিলে তাও কি অনায়াসে।তুমি বোধহয় এসব ই ভাবো,তাইনা?
-“একদমই না। কিন্তু মাঝেমাঝে তোমার এতো ভালোবাসা দেখে অনেক ভয় হয়।কারণ সুখ যে আমার কপালে সয়না। না হলে তো আজ আমার বাবা-মা,শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি নিয়ে সুখে শান্তিতে ঘর করার কথা ছিলো।অথচ দেখো কি অসময়ে তাদেরকে আমি হারিয়েছি।
-“তোমাকে আর কত বুঝাবো বলো তো।মৃত্যুর কোনো সময় অসময় নেই। এটা সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে। তার ইচ্ছা হয়েছে তার বান্দাদের সে নিজের কাছে নিয়ে গেছে।
-“এটা যদি পুরোটাই আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয় তাহলে ওনাদের মৃত্যুটা ঐ শয়তানদের হাতে হলো কেনো?
-“মাহি আমি কিন্তু এখন সত্যি বিরক্ত হচ্ছি।
তোমাকে আমি লাস্টবার বলছি এমন ধরনের টপিক উঠালে আমি কিন্তু তোমার সাথে টানা তিন দিন কথা বলবোনা,তোমার দিকে তাকাবোনা,তোমাকে টাচ্ করবোনা এমনকি তোমার রুমেই থাকবো না।
-“ওকে স্যরি বাবা। আর বলবো না।হয়েছে এতো রাগ করোনা।রাগ করলে তোমাকে এ্যানাকন্ডার থেকেও ভয়ংকর লাগে।
-“পাঁজি মেয়ে!কি বললে?
ওর কোমড় ধরে ওকে কাছে টেনে নিয়ে এলাম।
-“এই ছাড়ো প্লিজ। এখন কোনো কিস টিস করবে না কিন্তু।
-“হ্যা।সেটাই করবো। কিন্তু অনেক অত্যাচারিত ভাবে।
ওকে জোড় করে ধরে ওর ঠোঁটে একটা কামড় বসিয়ে দিলাম।
-“উফ,কেটে গেছে নিশ্চই।
ব্যাথা পেয়েছি অনেক।
-“ব্যাথা পাওয়ার জন্যই তো দিলাম।
-“ঠিক আছে।ওয়েট করো শোধ দিবো আমিও।
-“আই এম ওপেন।
আশফির কথা শুনে মাহি আশফির নাকে ছোট্ট করে একটা ঘুষি মেরে চলে গেলো আলিশার রুমে।
-“আলিশা? দরজাটা একটু খুলো।ঘুমিয়ে পড়েছো নাকি?(মাহি)
মাহির ডাক শুনে আলিশা জলদি চোখ মুখ মুছে দরজাটা খুললো।
-“না গো ঘুমাইনি।এই ফোনে গেম খেলছিলাম। ভেতোরে এসো।
-“আলিশা কি কান্না করছিলো?ওর চোখ মুখ দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। চোখদুটো ফুলে লাল হয়ে আছে।আমি রুমে ঢুকে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
-“কি দেখছো এভাবে? মনে হচ্ছে আজ নতুন করে দেখছো?(আলিশা)
-“নতুন করেই তো দেখছি। এখানে(বিছানায়)বসো আগে।যদি আমাকে সত্যি তোমার নিজের কেউ মনে করো তাহলে যা ভেবে কষ্ট পাচ্ছো তার সবটা আমাকে বলো।কথাটা সরাসরি বললাম।কারণ এখন আমি যেটা দেখছি তাতে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি তোমার সাথে খুব খারাপ কিছু হচ্ছে।এখন তুমি যদি আমাকে এর কারণটা না বলো তাহলে আমি বুঝে নিবো তুমি আমাকে আপন কেউ ভাবোনা।
-“না মাহি।এসব তুমি কি বলছো?আমার কোনো ভাই নেই।আমি বড় হওয়ার
পর আশফির সাথে আমার এটা প্রথম সাক্ষাৎ হলেও কিন্তু সেই ছোটো থেকে আমি শুনে এসেছি আর শুধু শুনেছি বলবো কেনো বিশ্বাস ও করেছি ও আমার ভাইয়া, নিজের ভাইয়া। তারপর ওর সাথে যোগাযোগ হওয়ার পর থেকে ওকে ভাইয়ের থেকে বন্ধু বলে বেশি মনে করেছি। আর তুমি তার বউ।তোমাকে কেনো আমি পর ভাবতে যাবো,বলো?
-“তাহলে মাহি যা প্রশ্ন করছে তার উত্তর দাও।আমি রুম থেকে আসার সময় তোমাদের কথাগুলো শুনছিলাম।
(আশফি)
-“কি বলবো বলো তো? আমার কথা বলার শক্তিটুকুই হারিয়ে গেছে।
-“কথা বলার শক্তি হারিয়ে গেছে নাকি তোমার নিজের উপর নিজের আত্মবিশ্বাসটুকু হারিয়ে গেছে?(আশফি)
-“জানিনা আমি।(কান্না করে)
-“আলিশা প্লিজ কান্না থামাও।এতো কান্না করোনা।আশফি দেখোনা
ও তো আমার কোনো কথায় শুনছেনা।
-“মাহি ওকে আর কিছুক্ষণ কাঁদতে দাও।আমরা ওয়েট করবো।চলো,বাইরে এসো।
মাহিকে নিয়ে বাইরে চলে আসছিলাম।
-“না প্লিজ।দাড়াও তোমরা।যেওনা।
-“আমরা তো যেতে চাইছিই না। কান্না থামাও।এখন বলো তো কি হয়েছে?(মাহি)
-“সেমিস্টারের মাঝামাঝি সময়।হসপিটালে ব্লাড ডোনার হিসেবে গিয়েছিলাম একজন রোগীর জন্য সেইদিন ঐ রোগীর জন্য আরো একজন এসেছিলো। ঐ দিনই ওর সাথে আমার প্রথম আলাপ হয়।
-“ও” টা কে সেটা জানার জন্য আলিশাকে প্রশ্ন করতে চাইলাম।আশফি হয়তো বুঝতে পেরেছে সেটা।তাই ও আমাকে ইশারার মাধ্যমে থামিয়ে দিলো। থামিয়ে দেওয়ার কারণ এটা ছিলো ওকে আগে বলার সুযোগ দেওয়া হোক।তাই আমি থেমে গেলাম।
-“সেদিন ওর সাথে তেমন বিশেষ কোনো কথা বার্তা হয়নি।জাস্ট সিম্পলি পরিচয় আদান-প্রদান। তার কিছুদিনের ভেতোরই আমি ওকে আমার ভার্সিটির ক্যাম্পাসে দেখতে পেলাম।সেদিন ওর সাথে কথা বলে জানতে পারলাম ও এই ভার্সিটির মেডিকেল স্টুডেন্টস এর প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের টিচার।শুনে একটু অবাক হলাম সেই সাথে অনেকটা খুশি ও হলাম। তারপর মাঝেমাঝে ওর সাথে আমার ক্লাসের ফাঁকে বা ওর ক্লাস নেওয়ার ফাঁকে কথা হতো, দেখা হতো। একসময় হোয়াটসআপ নাম্বার আদান প্রদান হলো। তারপর ফোনে হোয়াটসআপে কথা বলতাম।বাইরে ও দেখা করতাম।এভাবেই আমার আর ওর মাঝে একটা গুড রিলেশন তৈরি হয়।যদি মাঝে কিছুদিন যোগাযোগ না হতো ও নিজে ফোন করে আমার খোঁজ নিতো। এটা আমার কাছে কেনো যেনো খুব ভালো লাগতো। মাঝেমাঝে এক্সট্রা কেয়ার ও নিতো।এই জিনিসগুলোই ওর প্রতি আমার দুর্বলতা বাড়িয়ে দিতে থাকে। ওর ফোন বা খোঁজ-খবর না পেলে আমি প্রায়ই ওর বাসায় ছুটে যেতাম।অসুস্থ থাকলে রান্না করে দিতাম, যতদূর পারতাম ওর সেবা করতাম। আমার এই কেয়ারনেস গুলো ওর নাকি খুব পছন্দ হতো।একদিন তো বলেই ফেললো আমি নাকি বউ এর মত করে সেবা করি।ঐ দিন ওর ঐ কথাটা শোনার পর এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করলো ভেতোরে। বোকার মত ভেবে নিলাম ও হয়তো আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে।আর আমি তো বেসেই ফেলেছি।ভাবলাম প্রপোজ করার কি প্রয়োজন?দুজনের মনের কথা দুজন তো বুঝতেই পারছি।এভাবেই চলুক।তারপর একদিন সময় সুযোগ বুঝে ওকে সরাসরি বিয়ের প্রপোজাল দিবো।সেমিস্টার শেষ করলাম।এখানে আসার আগে ওর সাথে একদিন মিট করে বলে দিলাম নিজের মনের বাসনা। সেদিন যে আমি একদম সরাসরি রিফিউজড হবো তা আমি কল্পনাতে ও ভাবিনি।ও আমাকে বলেছিলো আমাকে নাকি ওর খুব ভালো লাগে একজন ওয়েল-উইশার এর মত,ভাল বন্ধুর মত।কিন্তু প্রেমীকার মত না।হাহ্…. ততদিনে তো আমি ওকে আমার সর্বস্ব দিয়ে আঁকড়ে ধরেছি।কখনো বুঝতেই পারিনি ও আমার ছিলোইনা।কেনো যেনো অটোমেটিক্যালি আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়েছিল।
-“সে কেনো তোমাকে রিফিউজড করেছিলো? তার থেকে তুমি কোথায় কম ছিলে?(মাহি)
-“রিফিউজড এর কারণ কম থাকা বা বেশি থাকার জন্য ছিলোনা।ছিলো একটা অদ্ভুত কারণ যা আমি আজ ও মেনে নিতে পারিনি বলে ওর কাছে নির্লজ্জের মত বারবার ফোন করি।
-“যাই হোক।তুমি সেদিনের ঘটনাটা বলো। তারপর কি হয়েছিলো?(আশফি)
-“তখন আমার চোখের পানি দেখে সে অবাক হয়ে তাকিয়েছিলো।হয়তো সে ভাবেনি আমি তাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবেসে আসছি।আমি কোনো কথা বলতে পারছিলাম না।তবুও প্রশ্ন করলাম,আমি কি তার যোগ্য নই?সে উত্তর দিলো পৃথিবীর কোনো নারীর ভালোবাসা নেওয়ার যোগ্যই সে নয়।কয়েকবছর আগে ও যখন কলেজে পড়ে মানে দেশে থাকতে একটা মেয়েকে ভালোবেসেছিলো।কিন্তু ওর ভালোবাসা গ্রহণ করেনি।সে নাকি বলেছিল ও এই ভালোবাসা বিয়ে এগুলোতে বিশ্বাসী না। ও কোনোদিন কাউকে বিয়ে করবেনা ভালোবাসবেনা।
ঐ দিন ও নিজেও ওর সামনে প্রতিজ্ঞা করেছিলো সে যদি ওকে ভালো ননা বাসে বিয়ে না করে তবে ও নিজেও কোনোদিন ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবেনা ভালোবাসবে না। তারপরেও অনেকদিন ওয়েট করেছিলো মেয়েটির জন্য।একদিন জানতে পারলো মেয়েটি অন্য কাউকে বিয়ে করেছে। সেদিন ও শুনে অবাক হয়েছিলো।ও ভেবে নিলো ঐ মেয়ে তার প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গলেও ও ওর প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গবেনা। আরো বেশি দৃঢ় হলো ওর প্রতিজ্ঞা। তোমরাই বলো এমন ধরনের ইসু দেখিয়ে ও যদি আমাকে প্রত্যাখ্যান করে তাহলে সেটা আমি কিভাবে মেনে নিবো?আমি ওকে অনেক বুঝিয়েছি যাতে ও ওর অতীত ভুলে যায়। নতুন করে সবকিছু শুরু করে।প্রতিনিয়ত তা বুঝিয়ে চলেছি।আজকে যখন সুপারশপে একা ছিলাম সময় কাটছিলো না।তাই ওকে ফোন করলাম।ও আমার ভালোবাসা জানার পর থেকে আমার ফোন সহজে রিসিভ করতে চাইনা।অনেকবার ট্রাই করার পর রিসিভ করে। কিন্তু সেভাবে কথা বলতে চাইনা।আজকে যখন আমি ওকে বারবার ফোন করছিলাম কথা বলার জন্য ও ফোনটা রিসিভ করে আমার সাথে অনেক মিস বিহেভ করলো।তখন আমার ও প্রচন্ড রাগ হয়ে গিয়েছিলো তাই আমি ওকে সহ ও যাকে ভালোবাসতো তাকে নিয়ে কিছু রাফ কথা বলেছিলাম।যেটা ও সহ্য করতে না পেরে আমাকে বললো আমার লাশ ও যদি ওর সামনে যায় তাও ও আমাকে কোনোদিন বিয়ে করবেনা।
-“আলিশা……(আশফি)
-“আশফি প্লিজ আমাকে কোনো শান্তনা দিওনা। আমি এটা খুব অপছন্দ করি।তোমরা তো এটাই বলবে যে ভালোবাসাটা একতরফা।তাহলে ও কেনো আমার সাথে এতোগুলো বছর এতো ক্লোজলি মিশলো?
-“ক্লোজলি বলতে?(আশফি)
-“ক্লোজলি বলতে তোমরা যেটা ভাবছো সেটা নয়।
-“হুম বুঝেছি।আচ্ছা ছেলেটা তাহলে বাঙ্গালী?
-“হুম।না হলে ওকে চোখ বন্ধ করে নিজের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে দিতাম না।
মাহি আলিশার মাঝের কিছু কথা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।ও এটাই ভাবছে ১০ বছর আগে যার সাথে ওর এরকম ধরনের কিছু কথা হয়েছিলো ও সেই নয়তো?কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব?আলিশা যার কথা বলছে সে তো ইংল্যান্ড থাকে।তার মানে ও কি ইংল্যান্ড চলে গিয়েছে? এমন হাজার ধরনের চিন্তা ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে এখন।
(আগে গল্পগুলো রেগুলার পোস্ট করতাম কারণ তখন এক পর্ব লেখার মাঝেই পরের পর্বের ধারনা মাথায় চলে আসতো।কিন্তু আজ কাল মনেই কিছু আসেনা দুই তিন দিন চলে যাওয়ার পরও।লেখার মন নষ্ট হয়ে গেছে।যাই হোক এতো আবেগ ঝাড়বোনা। কিছু কথা বলি আপনাদের। আমার গল্পে রোমান্টিকতা আছে।অনেকটাই আছে।গল্পের সাথে তাল মিলিয়ে সেগুলো দিই।১/২ লাইন পর পর ই রোমান্স ঢেলে দিইনা।গল্প উপন্যাসে দুটো নায়ক নায়িকার মনের অনুভূতি ভালোবাসা বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ করা হয়ে থাকে।রোমান্স দিয়ে,আবেগ দিয়ে,কথা দিয়ে বিভিন্নরকম উপায়ে। তো আমিও তার সবটাই প্রয়োগ করছি গল্পে। আপনারা যদি এই রোমান্সগুলো উপন্যাসে মেনে নিতে পারেন তাহলে গল্পে কেনো পারেন না বলেন তো?আপনারা কি কখনো হূমায়ন আহমেদের লিখা পড়েন নি?হয়তো পড়েন নি। আমি কিন্তু আমার লিখা তার সাথে তুলনা করছিনা। বাদ দিই হূমায়ন স্যারের সাবজেক্ট। আচ্ছা আমি বুঝেছি, উপন্যাস গুলো বই হয়ে ছাপা হয়ে বেরিয়েছে তাই উপন্যাসের রোমান্স গুলো রোমান্স।আর আমি ফেসবুকে লিখালিখি করি বলে সেগুলো রোমান্স না সেগুলো বাংলা চ* তাইনা?আপনাদের যদি তাই মনে হয় তাহলে আপনাদের কোন প্রধানমন্ত্রী এসে বলেছে আমার গল্প পড়তে?দূরে থাকুন’ না?১০০ গজ দূরে থাকুন।কিন্তু গল্প পড়বেন ও আবার বাজে কথা ও বলবেন?আপনাদের জন্য গল্প লিখি বলে কি আমার মাথা বেঁচে দিয়েছি আপনাদের কাছে?যে আপনাদের সবকিছু মেনে নিবো?সমালোচনা সহ্য করতে রাজি আছি কিন্তু বাজে কথা শুনতে আমি রাজি নই।কত বাজে কথা সহ্য করা যায়?সহ্যের একটা লিমিটেশন থাকে।
জানি আপনাদের এসব বলে লাভ নেই।সেই আমাদের মত রাইটারাই পঁচবো। তাই ভেবে নিয়েছি ফেসবুকে লিখালিখির পর্ব শেষ করে দিবো চিরতরে।উপন্যাস সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করে উপন্যাস বই লিখবো যদি কোনোদিন এমন কোনো যোগ্যতা অর্জন করতে পারি। কিন্তু ফেসবুকে আর লিখবোনা। এই গল্পটি ও খুব দ্রুত শেষ করে দিচ্ছি।)

রোমান্টিক_অত্যাচার -২ পর্ব-১১

0

রোমান্টিক_অত্যাচার -২
পর্ব-১১
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
মাহিঃ ওর বাহিরটা যতোটাই কঠোর হোক তার থেকেও হাজার গুণ বেশি কোমল ওর ভেতোরটা। আজকের কাজটার জন্য হয়তো এর থেকেও বেশি পরিমাণ শাস্তি প্রযোয্য ছিলো আমার জন্য।কিন্তু তা তো পেলামই না তার বিপরীতে অজস্র অজস্র প্রেম সোহাগ পেলাম।প্রতিদিন ওর আদর সোহাগের প্রতি আমার ঝোকটা যেনো বেড়েই চলেছে।মনে হয় সবকিছু যেনো প্রথম দিনের মত নতুন করেই পাচ্ছি ওর থেকে। ওর ছোঁয়াতে আমার শরীরের কম্পন যেনো সেই প্রথম দিনের মত করেই বেড়ে উঠে। এইতো এই ভর সন্ধ্যাবেলাতেও ওকে জাপটে ধরে ওর বুকে মাথা পেতে ওর মুখের দিকে চেয়ে শুয়ে আছি।ওকে সর্বক্ষণ দেখতে থাকলেও আমার নয়নদুটো যেনো তুষ্ট হতে চাইনা। এতো নিঁখুত করে মায়া লাগিয়ে কি করে সৃষ্টি করেছে বিধাতা? এই মায়া টা যেনো আরো বেশি জেগে উঠে ও যখন চোখদুটো বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে থাকে। বাইরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, জানালা খোলা,সাদা মসৃণ কাপড়ের পর্দাটা উড়তেই আছে।বিদ্যুতের আলোটা ওর মুখের মাঝে এসে পড়ছে।লাইটা অফ রেখেছি।বাইরের ঝুম বৃষ্টির আওয়াজটা স্পষ্টভাবে কানে না আসলেও বৃষ্টি ঝরার গতি দেখে বুঝতে পারছি পুরো সন্ধ্যাটা এখন লাগামহীন বর্ষণমুখর।যা এক অনন্যময় রোমাঞ্চকর মুহূর্ত সৃষ্টি করছে।বিয়ের পর আজই এই প্রথম মনোমুগ্ধকর সন্ধ্যা পেলাম আমি আমার সোহাগরাজের সাথে। কিন্তু এমন সময়ই পেলাম যখন বিদ্যুতগতিতে শরীরের শিহরণ প্রসারিত হচ্ছে কিন্তু নিজেকে ওর কাছে সঁপে দিতে পারছিনা।এ যে খুবই সহ্যাতীত এক জালা।ওর মুখে বিদ্যুতের দ্যুতি যতবারই এসে পড়ছে ততবারই ওকে দেখতে আলোকরাজের মত মনে হচ্ছে।অন্ধকার রাজ্যের মাঝে সোহাগরাজের মুখে পড়া বিদ্যুতের দ্যুতি তাকে কতোটা আকর্ষিত করছে আমাকে তা কি সে জানে?ওর সোহাগ পাওয়ার মাতাল উন্মাদনা জেগেছে আমার মাঝে।
আশফিঃএই যে মহারানী? সেই তখন আমার মুখের উপর পড়ে আমাকে কি দেখা হচ্ছে? হুম?
-“কি করে বুঝলে?তুমি তো চোখ বন্ধ করে আছো।
-“তুমি আমার কতোটা কাছে আছো দেখেছো? কতোটুকু দুরত্ব আছে তোমার আর আমার মুখের মাঝে?তুমি আমার দিকে একনজরে তাকিয়ে আছো তা তো আমার মুখের উপর ঝু্কে থাকা দেখেই বুঝতে পারছি।
-“তাহলে কথা না বলে চোখ বন্ধ করে ছিলে কেনো?
-“কিছু পাওয়ার আশায় ছিলাম।যেভাবে তাকিয়ে দেখছিলে তাতে তো মনে হচ্ছে……..!!
-“কি মনে হচ্ছে?
-“মনে হচ্ছে এই বুঝি আমার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করে দিবে।
-“ও আচ্ছা।তো তুমি সেই অপেক্ষাতে ছিলে?
-“হুম।নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছিলাম।ভেবেছিলাম এই বুঝি বর্ষণের ন্যায় আমার বুকে চুমুর বর্ষণ বয়ে যাবে।কিন্তু সেই অপক্ষার অবসান তো আর ঘটালেনা।তাই চোখ খুলতে বাধ্য হলাম।
-“কিন্তু তারপর তো সেই থেমেই যেতে হবে। আমি যে মনে মনে কাতর হয়ে পড়ছিলাম তোমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য। খুব কষ্ট হয় জানো যখন মনে সোহাগ পাওয়ার কাতরতা জাগে কিন্তু সেই সোহাগ পাওয়ার কাতরতা মেটাতে পারিনা।
-“দুজনের পরিপূর্ণ মিলনই যে সোহাগ তা তোমাকে কে বলেছে।সোহাগ কি তা কিভাবে কিভাবে উপভোগ করা যায় তা তুমি আজও বুঝতে পারলেনা? যখন তোমার ইচ্ছা হলো আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ার তখন ঝাপিযে পড়তে।নিজেকে থামিয়ে সেই কাতরতা মাটি চাপা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এগুলো যে প্রাকৃতিক তৃষ্ণা।সেই তৃষ্ণা কতক্ষণ না মিটিয়ে থাকতে পারবে বলো?তাই যখন যেমন ইচ্ছা হবে ঠিক তখনই সেই ইচ্ছাটাকে পূরণ করে নিবে।
-“তাতে যদি তৃষ্ণা আরো বেশি বেড়ে যায়?
-“তাহলে আমার কাছে থাকা বন্ধ করে দাও।
-“রাগ করছো কেনো? আমি তো আমার মনের চাহিদা ব্যক্ত করলাম।
-“যে চাহিদা ব্যক্ত করে তা পূরণ করতে পারবেনা সেই চাহিদা ব্যক্ত করার কোনো দরকার আমি দেখিনা।
-“আচ্ছা আমি বুঝেছি।
-“কি বুঝেছো?আমি যা বোঝাই তুমি তার মাঝ থেকে হাজারটা এক্সকিউজ বের করো এটাই আমার ভালো লাগেনা।
-“আচ্ছা আর করবোনা। সরি।আমি তো বুঝতে পেরেছি তুমি আমাকে যা বোছাতে চেয়েছো।
-“কি বোঝাতে চেয়েছি বলো তো?
-“যখন যা মন চাইবে তখন তাই করবো। না মানে সেটা শুধু তোমার বিষয়ে।
-“হুম।তো শুরু করো। এখন যা মন চাইছিলো।
-“ইশ এভাবে বলে কয়ে এসব জিনিস করা যায়?তুমি যখন চোখ বন্ধ করে ছিলে তখন তো তুমি আর জানতেনা যে আমার মন কি চাইছিলো তখন না হয় করতে পারতাম। এখন তো কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে।
-“কে বলেছিলো আমি জানতাম না?আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম তোমার মন এখন আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য ডাকছে আর আমি সেই ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য সেই তখন থেকে প্রস্তুত হয়ে আছি। আর এখন তুমি এসে উল্টা পাল্টা এক্সকিউজ দেখালে আমি সেটা মেনে নিবো?
-“না প্লিজ।আমার ভীষণ লজ্জা লাগবে।
-“আমি বুঝিনা।থেকে থেকে তোমার এই লজ্জাটা আসে কোন দেশ থেকে?
কিছু সময় আমার প্যান্ট খোলার জন্য ও রেডি থাকো আবার কিছু সময় বাসর ঘরের নতুন বৌ এর মত ভাব করো।এগুলোর মানেটা কি হ্যা?
-“আমি জানিনা তো। যখন আমার যেমন লাগে তখন আমি তেমনই তো বলবো।
-“তার মানে এখন তোমার লজ্জা করছে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়তে, তাইতো?
-“ওর বুকের উপর থেকে মাথা তুলে উঠে বসলাম।
আর শুধু মাথা ঝাকিয়ে ওর প্রশ্নের উত্তর দিলাম।
-“হুমম।আমাকে তো এটা ভুললে চলবেনা,লজ্জাই নারীর ভূষণ।সেটা যখন তখন আসতে পারে তাদের মাঝে।আর সেই লজ্জার বাঁধ ভেঙ্গে দেওয়ার গুরু দায়িত্বটাও আমাদেরই নিতে হয়।
আমি বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ওকে কোলে তুলে জানালার কাছে এসে দাড়ালাম।তারপর আস্তে করে ওকে নামিয়ে জানালার একদম সামনে দাড় করালাম।বৃষ্টির ঝাপটা এসে ওর মুখটা ভিজিয়ে দিচ্ছে।
-“বৃষ্টির ঝাপটা যে আমার মুখের এসে লাগছে।
-“লাগুক।এটুকুতে কিছু হবেনা।সেটা মুছে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।তখন রুমে এসে তোমাকে যখন দেখলাম বৃষ্টির ঝাপটা তোমার মুখে এসে তোমার মুখ আর মুখের উপর পড়ে থাকা চুল গুলোকে ভিজিয়ে দিয়েছে তখন তোমাকে দেখতে সেই বর্ষণমুখর প্রকৃতির মত সতেজ আর উজ্জল লাগছিলো।দেখোনা, বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর সবুজ প্রকৃতিকে কেমন প্রাণবন্ত আর সতেজ লাগে।পুরো প্রকৃতিটাকে ধুয়ে দিয়ে যায়। ঠিক তেমন দেখাচ্ছিলো তখন তোমাকে।
-“তাহলে পুরা নিজেকে বৃষ্টিতে ভিজালে আরো সতেজ আরো উজ্জল লাগবে আমাকে?
-“হুম।কিন্তু তাই বলে এখন বৃষ্টিতে ভিজার আবদার করোনা।সেটা কিন্তু আমি একদম মানবোনা।
-“আমি জানতাম তুমি এটাই বলবে।এতোটা নিষ্ঠুর হইয়োনা প্লিজ।কতদিন বৃষ্টিতে ভিজিনা বলো।কবে ভিজেছি সেটাও মনে নেই। চলোনা এখন একটু ভিজি। কিচ্ছু হবেনা।সত্যি বলছি।
-“তুমি জানো বৃষ্টির পানি এখন কতো ঠান্ডা।আজকে সারাদিন স্নো পড়েছে।এই সময়ের বৃষ্টিটা একদম ভালো নয়।অসুখের কারণ হতে পারে।
কথাগুলো শুনে মুখটা ফুলিয়ে পুরা টমেটো করে রাখলো।রাগ করে চলেই যাচ্ছিলো পেছোন থেকে ওর কোমড়টা জড়িয়ে ধরে ওকে আমার বুকের সাথে লাগিয়ে ধরলাম।তারপর বললাম,
-“তুমি বৃষ্টিতে ভিজতে পারছোনা বলে এভাবে আমার উপর রাগ করে চলে যাচ্ছিলে?আমি যদি আমার ভালোবাসার বৃষ্টিতে তোমাকে ভিজিয়ে দিই, তাহলে তুমি ভিজবেনা?
-“বুঝতে পারছিলামনা ওর কথার উত্তরটা কিভাবে দিবো।এতো আমার কাছে স্বর্গীয় সুখের থেকে কম কিছু নয়।সেখানে এই প্রাকৃতিক বর্ষণ ও হার মানবে।
-“কি হলো,উত্তরটা দিলেনা?তার মানে তুমি চাওনা।ঠিক আছে।
-“না না।আমি কি একবার ও বলেছি?আমি চাইনা?
-“হ্যা ও তো বলোনি।
-“তুমি কি বুঝোনা, এসব বিষয়ে মেয়েরা সরাসরি কখনো সম্মতি দিতে পারেনা।
-“জানি তো।কিন্তু তাও শুনতে ইচ্ছা হচ্ছিলো।
কথা চলছিলো তার মাঝখানে হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে উঠলো। আজকে যেনো বৃষ্টি থামতেই চাইছেনা।বৃষ্টির মাঝে ও যেনো এক উন্মাদনা কাজ করছে। বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজে মাহি চমকে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার বুকে মুখ গুজে রইলো।আমি ওর মুখটা তুলে ধরলাম।আবার ও সেই জানারার সামনে গিয়ে দুজনে দাড়ালাম।ও আমার দিকে উল্টোপাশ করে ঘুরে আমার বুকের সাথে মিশে দাড়িয়ে আছে।আমি ওর কোমড় জড়িয়ে পেটের উপর হাত রেখে দাড়িয়ে আছি।বৃষ্টির ঝাপটা এসে দুজনের মুখই ভিজিয়ে দিচ্ছে।মাহি চোখদুটো বন্ধ করে আছে।আমি আগে থেকেই জামা ছাড়া ছিলাম।গা পুরা খালি। ওর গায়ে থাকা পাতলা কোটিটা খুলে ফেললাম।নিচে স্লিভলেস একটা টপস পড়া ছিলো।পিঠটা অনেকটাই ফাঁকা দেখা যাচ্ছে।আমি পিঠের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে কাঁধের একপাশে রেখে ঘাড়ে চুমু দিতে শুরু করলাম।তাতে ও অনেকটা শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরলো।ওর পেটের উপর আমার হাত দুটো ছিলো।আমার হাতের উপর হাত হাত রেখে ছিলো।তারপর ওর পিঠে সামান্য নিচে চুমু দিচ্ছিলাম।চুমুর দেওয়ার পরিমাণ আস্তে আস্তে বেড়েই চলছিলো। আর তার সাথে আমার অস্থিরতাও বাড়ছিলো।আমার চুমুতে হালকা ভিজে যাচ্ছিলো ওর পিঠ আর ঘাড়।ওকে ঘুড়িয়ে ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁট বসিয়ে চুমু দিতে শুরু করলাম।সাথে মাহিও আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার ঠোঁটে চুমু দিচ্ছিলো।ওর চোখ দুটো বন্ধ ছিলো।যতবারই ওর কাছে এসেছি বা ও নিজেও আমার কাছে এসেছে, ভালোবাসা বিনিময়ের সময় ততবারই ওর চোখ দুটো বন্ধ থাকে। আজ ও তাই।ঠোঁট ছেড়ে যখন ওর গলাতে নামবো তখনই ফোনটা বেজে উঠলো। মাহি তো আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। আরো অনেক কিছু চাইছে আমার থেকে।এর মাঝে বিরতি ঘটাতে আমার খুব খারাপ লাগছে।কিন্তু ফোনটা বেজেই চলেছে। ফোনের রিংটা মাহির কানে পৌঁছেছে কিনা জানিনা তবে আমাকে ছাড়ার কোনো নাম গন্ধই নেই। ফোনটা রিসিভ করতে পারলাম না।আচমকাই মাহি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। আমার কাছে এসে আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমার শরীরের উপর উঠে শুয়ে পড়লো।মাথাটা উচুঁ করে রেখেছিলো।কেমন যেনো এক অদ্ভুদ মায়াবী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার চোখের দিকে।আমি ওর চুলের ফাঁক দিয়ে ঘাড়ে হাত দিলাম।ওর মুখটা আমার মুখের কাছে এগিয়ে নিতেই ও আমার ঠোঁটে চুমু দেওয়া শুরু করলো।তারপর গালটাও ভিজিয়ে দিলো। কানে চুমু দিয়ে আমার গলার কাছে নেমে এলো। মাতালের মত চুমু দিয়ে যাচ্ছে গলাতে।আমি ওর পিঠ চেপে ধরে আছি। আবার ও ফোনের রিংটা বেজে উঠলো।এবার মনে হচ্ছে ফোনটা রিসিভ করা প্রয়োজন।দরকারি ফোন বলেই মনে হচ্ছে।না হলে কেউ এতোবার ফোন করে। কিন্তু মাহির তো এদিকে কোনো হুশ নেই।চুমু দিতে দিতে আমার গলা,বুক সব ভিজিয়ে দিচ্ছে।কিভাবে ওকে থামতে বলবো বুঝতে পারছিনা।
চলবে।

রোমান্টিক_অত্যাচার-২ পর্ব-১০

3

রোমান্টিক_অত্যাচার-২
পর্ব-১০
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
মাহিঃ সামনে এটা কে দাড়িয়ে আছে? ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।ব্রেকটা না কষলেই তো ধাক্কা লাগিয়ে দিতাম।
আলিশাঃ গাড়ি থেকে নেমে মাহির গাড়ির কাছে গেলাম।সামনে যাকে দেখলাম তাকে দেখে আমারই তো কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে।যেভাবে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আছে যখন তখন ব্লাস্ট হতে পারে।
মাহিঃ আমি তো শুধু গাড়ির ভেতোর বসে আছি। আজকে আর আমি গাড়ি থেকে নামছিনা। সামনে আমার যে বিশাল দেহের এক হিংস্রমানব দাড়িয়ে আছে।সে আর কেউ নয় সে আশফি চৌধুরী। আমি জানতাম গার্ডগুলো ওকে জানিয়ে দিবে।যেভাবে তাকিয়ে আছে তা দেখে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও ভয়ে দৌড়াবে।
★২০ মিনিট পর★
মাহিঃ এটা কি ধরনের শাসন আমি বুঝতে পারছিনা।ঘরের দরজা আটকে সেই তখন থেকে শুধু তাকিয়েই আছে। যেভাবে তাকিয়ে আছে তাতে তো মনে হচ্ছে যখন তখন আমার পিঠে তাল পড়বে।
আমি তো রুমের এক কোণে গুটিসুটি মেরে দাড়িয়ে আছি।কখন হাঁক তুলবে সেই অপেক্ষায়।দরজাটা ও বন্ধ করে রেখেছে যাতে পালাতে না পারি। এইতো…. এগিয়ে আসছে আমার দিকে।আমার একদম কাছে চলে এসেছে।
-আশফি তুমি আমাকে মারবে নাকি?
কথাটি শেষ করার আগেই আমার হাতটা ধরে বিছানার উপর বসিয়ে দিলো।
আশফিঃ সবকিছুর একটা লিমিটেশন থাকে। আর সেটা যদি কেউ জেনে বুঝে ক্রস করে তাহলে তার সাথে আমি কতোটা খারাপ করতে পারি তা তুমি ভালোই করেই জানো। অনেক সহ্য করেছি। আজকে আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়েছো। ভালোবেসে যেহেতু তোমাকে আমি কিছু বোঝাতে পারলামনা তাই খারাপ পথটাই আমাকে অবলম্বন করতে হবে।
মাহিঃ কি করতে চাইছো তুমি? আমার কথার উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো।কিন্তু দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে গেলো মনে হচ্ছে।আমি দৌড়ে দরজার কাছে গেলাম সেটা দেখার জন্য যে সত্যি দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে গেছে নাকি।হ্যা ও তাই ই করে গেছে। এ কেমন ধরনের শাস্তি দিচ্ছে ও এভাবে ঘরের ভেতোর আটকে রেখে?কতক্ষণ এভাবে ঘরে বন্দী হয়ে বসে থাকতে পারবো? আমার তো দম আটকে আসবে। এটা কি ধরনের শাস্তি দিচ্ছে আশফি?
আশফিঃজি ড.। আপনি যদি একটু কষ্ট করে আসতেন তাহলে ভালো হতো।ওর একটু চেকআপটা করানোর প্রয়োজন ছিলো। ওকে তাহলে আপনি চলে আসুন।
আলিশাঃআশফি তুমি পুরো ব্যাপারটা আসলে জানোনা।আমিই আসলে……..।
আশফিঃআমি জানতেও চাইনা।ওকে নিয়ে কোনো সুপারিশ করো না আলিশা।আমি সেগুলো শোনার মুডে নেই।
আলিশাঃতুমি আমার কথাটা শুনো আগে।
আশফিঃ কি শুনবো? এগুলোই তো বলবে যে তুমি ওকে বলেছিলে এসব করতে? তাও তো আমি ব্যাপারটা মেনে নিবোনা।কারণ ও কি এডাল্ট নয়?ওর কি অজানা আছে যে এসময় জার্নি বা ড্রাইভিং থেকে দূরে থাকতে হয়?
ডক্টরঃ আশফি?
আশফিঃএসে গেছেন? প্লিজ চলুন ওর চেকআপটা করানো খুবই জরুরি।
মাহিঃ ড. এসে আমার চেকআপ করা শুরু করলো। বুঝতে পারলাম না।হঠাৎ করে ড.কে খবর দেওয়ার কি হলো?কিন্তু ও তো রুমে আসলোনা।ও বুঝি বাইরেই দাড়িয়ে আছে।ড. চেকআপ করে আমাকে কিছু না বলে বাইরে বেরিয়ে গেলো।একটু টেনশনে পড়ে গেলাম।কি করবো বাইরে গিয়ে শুনবো ড.কি বলছে?না থাক তাতে যদি ও আবার রেগে যায়?
আশফিঃকেমন দেখলেন ড.?
ডক্টরঃ চিন্তা করার মত কোনো বিষয় হয়নি মি. আশফি।তবে সাবধানের তো মার নেই।প্রথম প্রেগন্যান্সি তো অনেক কেয়ারফুল থাকতে হবে। আর ওর বোধহয় ঘুমটা এখনো ঠিক হচ্ছেনা। কড়া ডোজের ঘুমের মেডিসিন দিয়েছি।সেটা খাইয়ে দিবেন দুপুরের খাবারের পর।আর আগের যে মেডিসিনগুলো দিয়েছি সেগুলো যেনো একটা বেলাও মিস না যায়।
আশফিঃওকে।থ্যাংকস ড.।
ডক্টরঃ এটা আমার কর্তব্য। এখন তাহলে আমি আসি।
আশফিঃজি চলুন আপনাকে এগিয়ে দিই।
মাহিঃ চুপটি করে বিছানার উপর বসে আছি।না জানি কি বলেছে ড.। সব ঠিক আছে তো?কিছুক্ষণ বাদে আশফি রুমে ঢুকলো। কিন্তু আমার দিকে একবারও তাকালোনা।অফিসের জন্য বের হবে বোধহয়।বেচারা আমার জন্য সেই অফিস থেকে আবার ব্যাক করেছে। আমি তো বেশিক্ষণ ড্রাইভিংটা করতাম না। একটু বেশি বেশি করে ছেলেটা।ওর যা করে তাতে মনে হয় আমিই যেনো পৃথিবীর সর্বপ্রথম গর্ভবতী।
আশফিঃআমি না আসা পর্যন্ত এই ঘর থেকে এক পা বাইরে বের হবেনা।তোমার যা প্রয়োজন হবে সব ওরা(সার্ভেন্টস)এসে করে দিয়ে যাবে।আর মেডিসিনটা ও ওরা এসে দিয়ে যাবে।
মাহিঃ তুমি কি বেশিই করছোনা?
-ও চলে যাচ্ছিলো।আমার কথাটা শুনে দাড়িয়ে গেলো।
আশফিঃওর এই একটা বাক্য শুনে আমার ঠান্ডা মস্তিষ্ক আবার বিগড়ে গেলো।ওর কাছে এসে ওকে ধাক্কা দিয়ে ঠাস করে বিছানায় বসিয়ে দিলাম।
-তোমার কাছে যদি আমার এই বিষয়গুলো বেশি মনে হয় তাহলে তুমি যা করছো সেগুলো কি?খুব কম? ফাইন।আমি বেশি বেশি করছি।তোমার কাছে ব্যাপারটা এমনই মনে হচ্ছে।তাহলে সেই বেশি বেশিটাই আজ থেকে শুরু করবো।
ওকে রেখে বাইরে চলে এলাম।তবে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম বাহির থেকে। কারণ আমি জানি ও ঘরে বসে থাকা মেয়ে নয়।আর ও বাইরে থাকা মানেই আমার টেনশন।ওর কাছে ওর বিষয়টা খুব ইজি মনে হচ্ছে।কিন্তু আমার কাছে সেটা ইজি নয়।ওর সামান্য কোনো ভুলের জন্য যদি বড় কোনো কিছু ত্যাগ করা লাগে তবে সেটা আমি মেনে নিতে পারবোনা। সেটা আমার সহ্য সীমার বাইরে চলে যাবে।ওকে এভাবেই রেখে চলে গেলাম দরজাটা লক করে।ভেতোর থেকে অনেকবার ডাকাডাকি করছে আমাকে।কিন্তু কোনো সাড়া দিলাম না। এতো পরিমাণ রাগ হচ্ছে ওর কথা আর ওর কার্যকলাপে যা বলার মত নয়।সবথেকে বেশি রাগ হচ্ছে এটা দেখে যে বিষয় নিয়ে আমি যতোটা চিন্তিত তার এক অংশও মাহি চিন্তিত নয়। ওখান থেকে সোজা অফিসে চলে এলাম।
মাহিঃ ও কি এটা ঠিক করলো?এভাবে আমি কতক্ষণ ঘরে বসে থাকবো। ২ ঘন্টা পার হয়ে গেলো। এর মাঝে আলিশা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে দরজাটা খোলার। কিন্তু সেটা তো আর আশফি ছাড়া খুলতে পারবেনা। চাবিটা তো ওর কাছেই। রাগ যা হচ্ছে ওর উপর। ও না আসা পর্যন্ত এভাবে থাকতে হবে আমাকে? জানালার কাছে এসে চুপচাপ দাড়িয়ে আছি। আকাশের অবস্থা ভালো নয়।যে কোনো সময় ঝপ করে বৃষ্টি নামবে।ভালোই হবে।আজকে মনটা আমার ও খারাপ।আকাশের মনও হয়তো খারাপ।দুজনে সন্ধি করবো আজ।
আলিশাঃআশফিটা কি বুঝতে পারলাম না।এভাবে মেয়েটাকে আটকে রাখার কোনো মানে হয়?না খেয়ে আছে মাহি।খেতে দিবোই বা কি করে?কতক্ষণ না খেয়ে থাকবে ও?ফোন করছি তখন থেকে ফোনটাও তুলছেনা। আশফিটা একটু বেশিই কড়াকড়ি করছে।নাহ্ এভাবে বসে থেকে সময় নষ্ট হচ্ছে।তার চেয়ে বরং ওর অফিসেই যাই।না হলে তো ওকে আর জানাতে পারছিনা।সোজা ওর অফিসে চলে এলাম।ওর সেক্রেটারির সাথে কথা হলো।মাত্রই নাকি কনফারেন্স রুমে চলে গেছে। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এতো কষ্ট করে যখন এসেছি তখন একটু না হয় অপেক্ষা করি। উফ অপেক্ষা করতে করতে আমি টায়ার্ড।আর পারছিনা এভাবে বসে থাকতে।এদিকে মাহি ও ঘরে বন্দী হয়ে আছে।
আশফিটা কি পাগল হয়ে গেলো বুঝতে পারছিনা। ওকে না পেয়ে চলে যাচ্ছিলাম পেছন থেকে ওর গলার আওয়াজ পেয়ে থেমে গেলাম।হ্যা ও বেরিয়েছে মিটিং শেষ করে।আমাকে দেখে ও আমার কাছে এগিয়ে এলো।
আশফিঃআলিশা তুমি?
আলিশাঃহ্যা আমি। কি আর করবো।তুমি মাহিকে ওভাবে আটকে রেখে এসেছো ঘরে।ওর কি……
আশফিঃতো তুমি এখানে ওর জন্য সুপারিশ করতে এসেছো?
আলিশাঃআশফি…??
আশফিঃএসেই যখন পড়েছো তাহলে আর একটু ওয়েট করো আমি এক্ষনি বাসায় ফিরবো।
আলিশাঃওকে।পুরো এ্যাংগ্রি বার্ড একটা।১০ মিনিট পর আমাকে নিয়ে আশফি বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলো।বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ওয়েদার এর অবস্থা খুবই খারাপ।স্নো পড়ছে বৃষ্টির সঙ্গে।
-একি তুমি সুপারশপের সামনে এলে যে?
আশফিঃভেতোরে গেলেই বুঝতে পারবে।
আলিশাঃআশফি নানানরকম খাবার কিনছে।
-এতো খাবার কিনছো যে? বাসায় তো রান্না হয়েছে।
আশফিঃএগুলো আমার মহারানীর জন্য।
আলিশাঃযাক তাহলে মাহির খাওয়ার কথা তোমার মনে পড়লো। বেচারি সেই সকাল ১০ টার পর থেকে না খেয়ে রুমের মধ্যে একা বসে আছে। ওকে যে গিয়ে একটু দেখবো সেই উপায়টা ও রেখে যাওনি।কি হলো তুমি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আমি আবার কি করলাম?
আশফিঃআমি আসার পর থেকে ওকে খেতে দাওনি?
আলিশাঃদেবো কি করে তুমি তো চাবিটা তোমার সাথে করেই নিয়ে গেছো।
আশফিঃএরকম একটা ভুল আমি কি করে করতে পারলাম?তখন রাগের মাথায় ওদের কাছে চাবিটাও দিয়ে আসিনি। দুপুরের পর যে ওর কিছু মেডিসিন ছিলো সেগুলো ও নিশ্চই খাওয়া হয়নি।ও ঠিক আছে তো?যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে?ওকে কন্ট্রোল করতে গিয়ে আমি ওর কোনো ক্ষতি করে ফেললাম না তো।
আলিশাঃকি ভাবছো? দেখো বাইরের অবস্থা কি খারাপ।বাসায় যাবো কি করে বুঝতে পারছিনা।
আশফিঃএক্ষণি বেরোতে হবে আমাদের।তাড়াতাড়ি চলো।
-আরে ভাই কোথায় যাচ্ছেন?দেখছেন না বাইরের কি অবস্থা? ঐ দিকের রাস্তা তো পুরো ব্লক হয়ে গেছে বরফে।
আশফিঃআপনি কি দেখে এসেছেন সেটা?
-আরে অদ্ভুত তো।দেখে আসবো কেনো?নিউজ চ্যানেলে বলছে শুনতে পারছেন না? আজব মানুষগুলো।এদের সাহায্য করাও সমস্যা।যত্তসব।
আলিশাঃআশফি তুমি এরকম মাথা গরম করছো কেনো?উনি তো ঠিকই বলছে।তুমি দেখো নিউজ চ্যানেলে এখনো দেখাচ্ছে রাস্তাগুলো কিভাবে ব্লক হয়েছে বরফ পড়ে।আর বাইরের অবস্থাও ভীষণ খারাপ।
আশফিঃনা আলিশা আমার এক সেকেন্ডও এখন দেরি করা সম্ভব না।মাহির কিছু মেডিসিন ছিলো যা এক বেলা ও মিস না করার কথা বলেছে ড.।আর তার উপর এতক্ষণ ও না খেয়ে আছে।আমি আর ভাবতে পারছিনা।আলিশা তুমি গাড়ির চাবিটা রাখো।
ওয়েদার ঠিক হলে তারপর তুমি চলে এসো।
আলিশাঃকি বলছো তুমি এসব?আচ্ছা ঠিক আছে। আমার গাড়ি লাগবেনা। গাড়িটা তোমার প্রয়োজন।
তুমি নিয়ে যাও।আমি পরে ট্যাক্সি করে চলে আসবো।
আশফিঃনা না।এই ওয়েদারে ট্যাক্সি পেতে কষ্ট হবে তোমার।তুমি চাবি রাখো আমাকে নিয়ে ভেবোনা আমি ঠিক চলে যেতে পারবো।ওকে বাই টেক কেয়ার।
আলিশাঃআরে আরে দাড়াও।আশফি?ছেলেটা কি পাগল হয়ে গেলো। এই অবস্থাতে ও যাবে কি করে? টেনশন তো আরো একটা চাপিয়ে দিয়ে চলে গেলো। এদের ছেলেমানুষি আর নিতে পারছিনা।দুটোই মাঝে মাঝে বাচ্চা হয়ে যায়।
আশফিঃজানিনা মাহির এখন কি অবস্থা?ফোন করছি ফোনটাও তুলছেনা। ইচ্ছে করেই তুলছেনা নাকি?কিছুই বুঝতে পারছিনা।বাসায় না পৌঁছানো পর্যন্ত আমার শান্তি লাগছেনা।কি করে পারলাম আমি ওর সাথে এরকমটা করতে?কতোটা কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটা।
(বৃষ্টিতে ভিজে দৌড়ে যাচ্ছে আশফি মাহির কাছে। অবশেষে আধা ঘন্টার রাস্তা আশফি দৌড়ে ১ ঘন্টায় পৌঁছালো। গাড়িতে এলে আশফি আধা ঘন্টার মাঝে পৌঁছে যেতো।)
আশফিঃভেজা অবস্থাতেই আমি দৌড়ে রুমের দরজা খুললাম।আমাকে এভাবে আসা দেখে গার্ডস সার্ভেন্টস সবাই অবাক হয়েছে। রুমের দরজা খুলে দেখলাম মাহি জানালার সামনে দাড়িয়ে আছে।দরজা খোলার শব্দ শুনে আমার দিকে তাকালো।ওর মুখটা পুরো ভিজে আছে। জানালার সামনে দাড়িয়ে থাকার কারণে বৃষ্টিজল জানালা দিয়ে প্রবেশ করে ওর মুখটা ভিজিয়ে দিয়েছে। হয়তো ইচ্ছে করেই জানালার ভেতোরে মুখটা এগিয়ে দিয়ে রেখেছিলো ভিজতে ইচ্ছা হয়েছিলো হয়তো। আমাকে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিছানার কোনায় গিয়ে বসে পড়লো।
মাহিঃ ও এমনভাবে ভিজে এসেছে কেনো?আর আমাকে এভাবে ভিজতে দেখে না জানি এখন কি রিয়্যাক্ট করবে।আজকাল তো ওর পারমিশন ছাড়া টয়লেটে যেতেও ভয় লাগে। একি?ও দৌড়ে এসে আমার কোলের কাছে বসে পড়লো(নিচে)।আমার কোলের উপর মাথা রেখে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো। হায় আল্লাহ্ ও এমন করছে কেনো কি হয়েছে ওর?
-আশফি?কি হয়েছে তোমার?এমন কেনো করছো তুমি?আর এভাবে ভিজে আছো কেনো? প্লিজ কান্না থামাও আমার খুব ভয় করছে।
আশফিঃওর কথা শুনে আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম।আমার কান্না করা দেখে ও নিজেও কান্না শুরু করে দিয়েছে।
-তুমি ঠিক আছো তো?
মাহিঃ আমি ঠিক আছি মানে?তোমার কি হয়েছে আগে সেটা বলো।আমার খুব…..।
-ওর কার্য দেখে আমার কথা থেমে গেলো।আমার হাত দুটো আগে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে কান্না করে তারপর হাতে চুমু দেওয়া শুরু করলো।
আশফিঃআমি তোমাকে প্রমিস করেছিলাম কখনো তোমাকে কষ্ট দিবোনা। কিন্তু সেই কথা আমি রাখতে পারিনি।মাহি তুমি কি জানো আমার জীবনটা তোমার মধ্যে বিদ্যমান। আল্লাহ্ না করুক তোমার কিছু হয়ে গেলে সেদিন আশফির ও পৃথিবীতে কোনো অস্তিত্ব থাকবেনা। আল্লাহ্ পাকের পর আমার বেঁচে থাকার ভরসা তুমি। আমার দেহটা আমার কাছে থাকলেও আমার আত্মাটা তোমার কাছে পড়ে থাকে। তোমার চিন্তায় আমি যে কতোটা ব্যাকুল তা যদি তোমাকে একবার দেখাতে পারতাম তাহলে হয়তো তুমি আমাকে বুঝতে। আমার কথার অমান্য করতে না।তোমাকে শাস্তি দিতে গিয়ে আমি যে কতোটা শাস্তি পাই সেটা যদি তোমাকে দেখাতে পারতাম তাহলে হয়তো তুমি আমার শাস্তির কথা চিন্তা করে নিজের প্রতি খেয়াল রাখতে।
(মাহি বিছানায় বসে আছে। আর আশফি নিচে মাহির কোলের কাছে বসে ওর হাতদুটো বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বলছে।আর চোখ দিয়ে অনর্গল বৃষ্টি বয়ে যাচ্ছে)
মাহিঃ আমি মাফ করে দাও।আর কখনো আমি তোমাকে কষ্ট দিবোনা। আমি সত্যি বুঝতে পারিনি আমার কার্যকলাপের জন্য তুমি এতোটা কষ্ট পাও। আমিও যে তোমার কষ্ট সহ্য করতে পারিনা।আমি সত্যিই খুব খারাপ।সেই শুরু থেকে তোমাকে কষ্ট দিয়ে আসছি।এমনকি তোমার জীবনে যা সব দুর্ঘটনা তা সবই আমার জন্য।
আশফিঃমাহি প্লিজ এসব কথা বন্ধ করো।আমি তোমাকে নিষেধ করেছি না এগুলো তুমি কখনোই বলবেনা। আমার আর তোমার সাথে যা হয়েছে সেগুলো আমাদের ডেসটিনি।
মাহিঃ এখন বলো তুমি এভাবে কাঁদছিলে কেনো? আর তোমার এ অবস্থা কেনো?
আশফিঃসেসব পরে বলছি। আগে তোমার খাওয়ার ব্যবস্থা করি।
মাহিঃ এই দাড়াও। কোথায় যাচ্ছো তুমি?তোমার কি অবস্থা হয়েছে সেটা তুমি দেখতে পাচ্ছোনা?আমার কাছে এসো আমি মাথা শরীর সব মুছে দিচ্ছি। এই না,একদম আমার কথা অমান্য করবেনা।১০ মিনিট দেরি করে খেলে আমার কিছু হবেনা কিন্তু তুমি ১০ মিনিট দেরি করলে আজকে আর তোমাকে দেখতে হবেনা।ভেজা জামা কাপড় খুলো আগে।
আশফিঃশাসন করা হচ্ছে আমাকে?
মাহিঃ শাসন+টেক কেয়ার।
আশফিঃআচ্ছা? তাহলে আমার জামা-কাপড়টা তুমিই খুলো।
মাহিঃ কি ভেবেছো আমি সেটা পারবোনা।দাড়াও।
-ওর কাছে গিয়ে স্যুট টাই শার্ট সব খুললাম।যখনই প্যান্টে হাত দিতে গেলাম তখনই আমার হাতটা ধরে থামিয়ে দিলো।
আশফিঃএটা থাক।আমিই খুলতে পারবো।
মাহিঃ না তা কেনো? আমিও তো খুলতে পারবো।তুমি ছাড়ো আমি খুলছি।
আশফিঃনা না সবাই দেখে ফেলবে।
মাহিঃসবাই কারা দেখে ফেলবে?
আশফিঃঐ যে ওরা?
-সামনের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখালাম।ও তখন সেদিকে দেখার জন্য ঘুরলো।সেই ফাঁকে আমি পালিয়ে এলাম ওয়াশরুমে। না হলে আজকে সত্যি সত্যি সবার সামনে ফ্লাশ করে ফেলতো।
মাহিঃ ও, আমাকে বোকা বানানো হলো?ঠিক আছে পরে দেখে নিবো।
আশফিঃওকে ডিয়ার রেডি থাকবো।
মাহিঃ পাঁজি একটা।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আগে গেলো আমার জন্য খাবার আনতে। আমি হয়তো পৃথিবীর সব থেকে বেশি ভাগ্যবতী ওর মত স্বামীকে পেয়ে।কেউ কাউকে এতোটা ভালোবাসতে পারে ওর ভালোবাসা না পেলে হয়তো তা জানতে পারতামনা। খাবার এনে আমাকে খাওয়াতে শুরু করলো।খাওয়া শেষে ও উঠে চলে যাচ্ছিলো আমি ওর হাতটা টেনে ধরলাম।
-কোথায় যাচ্ছো?আমার খাওয়া শেষ হয়নি তো।
আশফিঃখাওয়া তো শেষ। আর তো কিছু নেই।আর একটু খাবার আনবো?
মাহিঃ তার কোনো প্রয়োজন নেই।এখানেই যথেষ্ট খাবার আছে।
-আমি ওর আঙ্গুলে জড়িয়ে থাকা খাবার গুলো চেটে খেলাম ওর আঙ্গুল গুলো মুখের মধ্যে নিয়ে।
আশফিঃতো হয়েছে খাওয়া?
মাহিঃউমম…..নাহ্। আর একটু বাকি আছে।
আশফিঃআর কি বাকি আছে?
মাহিঃমিষ্টি।
-আমি ওর সামনে দাড়িয়ে ওর কলারটা ধরে ওকে কাছে টেনে ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া দিলাম।opps…..শুধু দিলাম নয় নিলামও।মিষ্টি?। তাও সেটা ১/২ মিনিট নয়। এরপর(…….)
চলবে।

রোমান্টিক অত্যাচার-২ পর্ব-০৯

0

রোমান্টিক অত্যাচার-২
পর্ব-০৯
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi

মেহেরুনঃতারপর থেকেই তার প্রতি আমার সন্দেহ দ্বিগুণ হয়েছে।

পিতাঃসন্দেহ করার আর কোনো অবকাশ নেই মেহেরুন।যে কোনো সময় রাজ্য আক্রমণ হতে পারে। আমি কিভাবে আমার রাজ্য, রাজত্যকে রক্ষা করবো?আমি যে দিশেহারা হয়ে পড়ছি।

মেহেরুনঃভেঙ্গে পড়বেন না পিতা।আপনি ভেঙ্গে পড়লে রাজ্যের বাকিসবার কি হবে। তারা তো আপনার থেকেই শক্তিসঞ্চার করে।

পিতাঃ এতদিনে ঐ গুপ্তচর আমার রাজমহলের আর রাজ্যের সকল তথ্য জেনে গেছে।

মেহেরঃতাতে কি হয়েছে? আপনি রাজ্যে সমস্ত স্থানে খবর পৌঁছে দিন। রাজ্য যে কোনো সময় হামলা হতে পারে।কোন রাজ্যের রাজা বা কারা এসব কিচ্ছু জানা নেই।সবাইকে প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে বলুন।আর হ্যা রাজ্যে যদি কোনো অচেনা বা অপরিচিত কোনো ব্যক্তিকে দেখা যায় তাহলে তাকে যেনো খুব দ্রুত রাজদরবারে উপস্থিত করা হয়।

পিতাঃ হ্যা।আর সময় অতিবাহিত করা যাবেনা।

ফালাকঃহা হা হা। এতক্ষণে রাজা জাভেদ খানের কিরূপ অবস্থা হয়েছে তা আমার দেখার ভীষণ সাধ ছিলো।

ইকরামঃআগামীতে যে আরো কত ভয়াবহ অবস্থা হবে তা যদি জানতে পারতো রাজা জাভেদ খান!

ফালাকঃআর কতোদিনই বা রাজ্য চালাতে পারবে রাজা জাভেদ।শেষ কিছুদিন না হয় একটু রাজত্য করুক নিজের রাজ্যে।তারপর তার অবস্থান কোথায় হবে শুধু তিনিই জানেন।(উপরে ইশারা করে দেখিয়ে)।

মন্ত্রীঃ সম্রাট আপনি ঠিক কোন ক্ষণে রাজ্য শেরপুর আক্রমণ করতে চাচ্ছেন আর তা কিভাবে?

ফালাকঃতা আমি আপনাদের সঠিক সময়ে জানিয়ে দিবো মন্ত্রী সাহেব।

মন্ত্রীঃ যথাইচ্ছা মহারাজ।

(এরপর রাজা ফালাক মাঝখানে ৭ দিন অতিবাহিত করলো।এদিকে রাজা জাভেদ ও তার কন্যা মেহেরুন সহ সবাই প্রস্তুতি গ্রহণ করছে যুদ্ধে মোকাবিলা করার জন্য। এরই মাঝে রাজা জাভেদ খানের ছোটো ভাইয়ের একমাত্র পুত্র জন্মগ্রহণ করলো।সেই খুশিতে রাজমহলে বড় করে উৎসবের আয়োজন করলো রাজা জাভেদ খান। ঐ ছোট্ট শিশুটির মুখটা দেখে রাজা জাভেদ খানের কেমন যেনো সব দুশ্চিন্তা উধাও হয়ে গেলো।শিশু বাচ্চাকে তিনি বড্ড ভালোবাসেন আর তার রাজকন্যা মেহেরুন ও। রাজা জাভেদ খানের আফসোস ছিলো যে তার কোনো পুত্র সন্তান নেই সেই সাথে মেহেরুনের ও।
এই খুশিতে তারা ভুলে গেলো তাদের পরিকল্পনা কি ছিলো।যেদিন উৎসব হবে সেদিন সকালে………..)

পিতাঃ মেহেরুন মা?

মেহেরুনঃজি পিতা? আদেশ করুন।

পিতাঃআরে না না আদেশ করবো কেনো?সেই সূর্যোদয়ের পর থেকে তুমি উৎসবের সব আয়োজন নিজে হাতে একাই সামলাচ্ছো।তো তুমি কখন তৈরি হবে শুনি? আর একটু পর যে বাইরে থেকে সব অতিথি চলে আসবে যে।

মেহেরুনঃপিতা আমার একমাত্র ভ্রাতার জন্ম উপলক্ষে উৎসব।সেই উৎসবে আমি কোনো ত্রুটি রাখতে চাইনা।

পিতাঃঅনেক সাধ ছিলো তোমার তাইনা? তোমার একটা ছোট্ট ভাইজান থাকবে?

মেহেরুনঃছিলো তো। তাতে কি হয়েছে? চাচাজানের পুত্র কি আমার নিজের ভাই নয়? আপনি অনেক দুঃখ পান তাইনা? আপনার রাজ্যের উত্তরাধিকারী নেই বলে।এখন তো আর দুঃখ হওয়ার কথা নয়।এ রাজ্যের ভাবিরাজা যে জন্মেছে।

পিতাঃআমার উত্তরাধিকারীনি তো অনেক আগেই জন্মেছে।সে আর কেউ নয় আমার রাজকন্যা মেহেরুন।

মেহেরুনঃবি বলছেন এসব পিতা?আমি কেনো হবো?

পিতাঃতুমি আর কোনো কথা বাড়িয়োনা তো মেহেরুন।যাও নিজের কক্ষে গিয়ে অতি শিঘ্রই তৈরি হও।

মেহেরুনঃজি পিতা।

(পেছন থেকে মেহেরুনের চাচা আরব খান তাদের পিতা কন্যার কথা সব শুনলেন আর রাগে ফুসতে থাকলেন।তিনি বড় আশাই আছেন এ রাজ্যের রাজা তিনি হতে না পারলেও তার পুত্র আজগার খান(শিশু) ভবিষ্যত উত্তরাধিকারী হবে।কিন্তু রাজা জাভেদ খানের কথা শুনে তার ক্রোধ যেনো অত্যাধিক হয়ে গেলো।সে ঐ স্থান থেকে অন্দরমহলের বাইরে চলে আসতে লাগলেন। হঠাৎ করে তার সাথে একজন মালির ধাক্কা লাগলো।সে ফুলগুলো এনেছে অন্দরমহল সাজানোর উপলক্ষ্যে। মালিটি ক্ষমা ভিক্ষা চাইলো আরব খানের কাছে। আরব খানের ক্রোধ তখন সীমাহীন ছিলো তাই সে মালিকে স্বজোড়ে থাপ্পড় মেড়ে দিলো। মালিটি তার দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঐ স্থান ত্যাগ করে চলে আসছিলো।তখন আরব খানের কেমন যেনো অদ্ভুত লাগছিলো মালিটির চেহারা।মাথায় পাগড়ি আর মুখে দাড়ি গোফের জন্য লোকটির চেহারায় বোঝা যাচ্ছিলোনা। আরব খানের কেমন যেনো সন্দেহ হলো। এ রাজ্যে বা রাজমহলে তাকে কখনো দেখা যাইনি। আরব খান খুব সচেতনভাবে মালিটিকে ধরলো এবং রাজমহলের বাগান কিনারায তাকে টানতে টানতে নিয়ে এলো। মালিটিকে বিভিন্নরকম জেরা করছিলো কিন্তু মালি কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলোনা।তখন আরব খান সিদ্ধান্ত নিলো রাজা জাভেদ খানের সামনে তাকে হাজির করবে।এ কথা শুনে মালি তার মুখ খুললো এবং সে যে ছদ্মবেশী ছিলো তা আরব খানের সামনে তার ছদ্মবেশী রূপ উপস্থাপন করলো। এই রূপ দেখে আরব খান কিছু বলার আগেই মালিটি তার পরিচয় দিলো সে মোহননগর রাজ্যে রাজা ফালাক তাজ। ফালাক তাজের অসম্ভব উপস্থিত বুদ্ধি ছিলো। সে আরব খানকে বিভিন্নরকম কথার জালে ফাঁসানোর চেষ্টা করছিলো।তাকে সাম্রাজ্যের অধিপতি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলো।রাজা ফালাক এমন তথ্য অনেক আগেই সংগ্রহ করেছিলো যে রাজা জাভেদ খানের কোনো পুত্র নেই তাই আরব খান চাই শেরপুর রাজ্যের সিংহাসনে তার পুত্রকে সে দেখতে। আরব খান প্রথম অবস্থায় রাজা ফালাকের প্রতিশ্রুতি মানতে চাইছিলোনা। কারণ সে ভাবছিলো এতে তার কি স্বার্থ?)
[#উভয়ের_কথোপকথন]

ফালাকঃআমার কি স্বার্থ তা কি আপনার জানা খুবই প্রয়োজন?

আরবঃঅবশ্যই। তুমি আমাকে ধোঁকা দিবে তা আমি পুরোপুরি নিশ্চিত। এক্ষণি আমি তোমাকে মহারাজের সামনে উপস্থিত করবো।চলো আমার সাথে।

(ফালাকের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছিলো)

ফালাকঃদাড়ান আরব সাহেব। আমার উদ্দেশ্য আপনাকে জানাতে চাই।

আরবঃকি উদ্দেশ্য?

ফালাকঃএ রাজ্যের রাজকন্যা মেহেরুনের রূপে আমি মুগ্ধ। তাকে আমি আমার রাজ্যের রানী করতে চাই। কিন্তু আপনাদের মহারাজ তাতে রাজি নন।তিনি চান তার কন্যাকে এ রাজ্যের রাজসিংহাসনে বসাতে। তার কন্যার হাতে এই সাম্রাজ্য তুলে দিতে চাই।

(কথাগুলো সম্পূর্ন বানিয়ে বললো ফালাক)

আরবঃ হ্যা। ভাইজান যে মেহেরুনকেই রাজসিংহাসনে বসাতে চাই ইহা সত্য। মেহেরুনের যে বিবাহের প্রস্তাব এসেছিলো তা তো ভাইজান আমাকে বলেনি।এতো গোপনীয়তা? তার মানে ভাইজান আমার সাথে………….। কিন্তু একটা বিষয় কি করে সম্ভব।মেহেরুনকে তার পিতামাতা আর আমরা ছাড়া বাহিরের অন্য কেউ কখনো দেখেনি।তাহলে রাজা ফালাক কি করে দেখলো?তার মানে সে আমাকে মিথ্যা কথায় ভোলাতে চাইছে।
-তুমি মিথ্যুক।রাজকন্যা মেহেরুনকে আমরা আর তার দাসী ছাড়া পৃথিবীর কেউ তার রূপ দেখেনি।তাহলে তুমি কিভাবে তাকে দেখেছো? বলো?উত্তর দাও?

ফালাকঃ অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।এই বিষয়টা আমার মাথাতে একটুও আসেনি।কথাটা অন্যদিকে ঘোরাতে হবে।
-আপনার কাছে আর কোনো কিছুই গোপন রাখতে চাইনা।কিছুদিন আগে আপনাদের রাজমহলের কর্মী সেজে রাজমহলে প্রবেশ করেছিলাম।একদিন বাগানে কাজ করছিলাম তখন রাজকন্যা মেহেরুন তার দাসীদের সঙ্গে করে বাগানে এসেছিলো ঘুরতে।অনিচ্ছাকৃতভাবে তার মুখের উপর থেকে পর্দা সরে যায় আর তখনই আমি তার রূপ দর্শন করি।আর তার পূর্বেই অন্দরমহলের ভেতরের মানুষের কাছ থেকেই আমি খবর পেয়েছি সে অনেক রূপবতী।কার নিকট থেকে পেয়েছি তা আমি বলতে ইচ্ছুক নই। কি? এখন আমাকে বিশ্বাস হয়েছে আরব খান? আমি যদি রাজকন্যা মেহেরুনকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারি তাহলে তাতে কিন্তু আপনারই সবথেকে বেশি ফায়দা। এখন আপনি ভেবে দেখুন।

(আরব খান কিছুক্ষণ ভেবে রাজা ফালাকের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করলো। এরপর ফালাক আরব খানের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করলো কিভাবে কি করে রাজা জাভেদ খানকে আটক করবে। আসলে আরব খান ছোটো থেকেই সিংহাসনে বড় ভাইকে দেখে সবসময় ঈর্ষান্বিত হতো।সে সবমসয় চাইতো রাজসিংহাসনে তাদের পিতা তাকে বসাক। কিন্তু তা হয়নি আর তা হওয়া কোনো যুক্তি ও নেই। সে ভেবে নিয়েছিলো জাভেদ খানের যেহেতু কোনো পুত্র সন্তান নেই তাই তার পুত্র সন্তান হলে তাকেই সে রাজসিংহাসনে বসানোর চিন্তা করবে।আর রাজা জাভেদ খান তা মেনে নিতে বাধ্য। কিন্তু তার সেই আশা ভরসা বিফলে গেলো যখন সে নিজে কানে শুনলো যে রাজা জাভেদ খান তার কন্যাকে রাজসিংহাসনে বসাবেন।
যা কখনোই মেনে নেওয়ার যোগ্য নয়।একজন নারীকে রাজা জাভেদ খান বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন যেখানে তারই ভাইয়ের পুত্র সন্তান রয়েছে।তাকে উপেক্ষা করে সে তার নিজের কন্যাকে সিংহাসনের অধিকার দিবের।আরব খান রাজা জাভেদ খান কে কেবল স্বার্থবাদী হিসেবে বিবেচনা করেছে।আর তাই রাজা ফালাকের সাথে সে হাত মিলিয়েছে। তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক চারিদিকে রাজা ফালাকের সৈন্যসামন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। রাজমহলের রক্ষী প্রহরী অন্যান্য লোকেরা তা বুঝতে পেরেছে যে রাজমহলে বাহিরের লোক ঢুকে পড়েছে।কিন্তু আরব খানের নিষেধাজ্ঞার কারণে কেউ কিছু করতে পারছেনা আর রাজা জাভেদ খান কে ও কিছু জানাতে পারছেনা। আরব খান তাদের ভুল বুঝিয়েছে যে এসব বাহিরের লোকদের সে আমন্ত্রণ করে এনেছে।)

ফালাকঃ মূর্খ আরব খান। রাজ্য দখলে আসার পর তোমার হাল কি হবে তা তোমার চিন্তাশক্তির বাহিরে।এতক্ষণে আমার সব সৈন্যবাহিনী রাজমহল ঘিরে ফেলেছে। সবাই বুঝতে পেরেও কিচ্ছু করতে পারছেনা।কারণ তারা অপ্রস্তুত ছিলো যে।আস্তে আস্তে সবকিছু জাভেদ খানের আয়ত্তের বাহিরে চলে আসছে।তার আর আমাদের আটকানোর ক্ষমতা থাকবেনা। সবাই আক্রমণ করা শুরু করে দিয়েছে।রাজা জাভেদ খানের সৈন্যরা যে যেমনভাবে পারছে লড়াই করছে কিন্তু তাতে কোনো সুবিধা করতে পারছেনা। মুখ থুবড়ে পড়ে পড়ে যাচ্ছে। আমি কিছু সৈন্যের সাথে লড়াই করে অন্দরমহলে প্রবেশ করলাম। উদ্দেশ্য রাজা জাভেদ খানকে বন্দি করা। সে কোন কক্ষে আছে তা আমার জানা নেই। এতক্ষণে নিশ্চই তার কানে পৌঁছে গেছে রাজা ফালাক তার দুয়ারে দাড়িয়ে তার সাথে যুদ্ধের আহ্বান করতে এসেছে। আমি রাজ্যের পেছন দিক থেকে প্রবেশ করে সামনের দিকে আসছি। একদম মাঝের যে কক্ষটি দেখলাম সেটাতেই প্রবেশ করলাম।কিন্তু একি কক্ষ যে ফাঁকা।তার মানে রাজা জাভেদ খান কি পালিয়েছে? হা হা হা। নির্বোধ পালিয়ে কতদূর যেতে পারবে।সব জায়গায় যে আমার সৈন্যরা বিস্তার করছে।কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসবো হঠাৎ মনে হলো স্নানাগার থেকে কিছু যুবতী নারীর আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আমি তো নিজেই নির্বোধ হয়ে গিয়েছি। স্নানাগার না খুঁজেই আমি বেরিয়ে যাচ্ছিলাম।

জাভেদ খানঃ আমাকে বাঁধা দিওনা।আমাকে যেতে দাও আরব। আমার কন্যা যে তার কক্ষে রয়েছে। সে ওখানে নিরাপদ নয়। তার কাছে যে এখন পর্যন্ত খবর যাইনি যে রাজমহল আক্রামণ হয়েছে। আর তুমি আমাকে এখানে লুকিয়ে রাখছো?

আরবঃভাইজান আপনাকে কি করে ওখানে যেতে দিই? আপনি ওখানে গেলে যে রাজা ফালাক তার কার্যসিদ্ধি করতে পারবেনা। আর তার কার্যসিদ্ধি করতে না পারলে আমার উদ্দেশ্য সফল হবেনা।
-ভাইজান আপনি আর ভাবীসাহেবা ঐ রাজার সামনে পড়লে যে আপনাদের হত্যা করে ফেলবে।

রানীঃআরব তুমি কি বুঝতে পারছোনা আমরা ওখানে না গেলে যে আমার একমাত্র কন্যার সর্বনাশ করে দিবে ঐ পশুতুল্য রাজা।

আরবঃভাবীসাহেবা! আপনি তো জানেন আমাদের মেহেরুন কতোটা আত্মবিশ্বাসী আর কতোটা বুদ্ধমতী সে। আর সাথে তার অস্ত শিক্ষা তো আছেই। আপনারা কেনো এতো ভাবছেন? একটু ধৈর্যধারণ করুন। মেহেরুন যদি না ফিরে আসে তাহলে আমি নিজে যাবো। তবু আপনাদের যেতে দিবোনা।

জাভেদঃ আরব?? তুমি আমাদের হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে বলছো?

ফালাকঃ আমি ধীর পায়ে স্নানাগারের দিকে এগোতে থাকলাম। স্নানাগারের পর্দা সরিয়ে যা দেখলাম তা দেখে আমার চক্ষুদ্বয় ও বিশ্বাস করতে পারছিলোনা। অর্ধনগ্ন শরীরে একজন অপরূপ সুন্দরী…. না না এ যে কম বলা হয়ে গেলো। তার যা সৌন্দর্য যাকে বলে বিশ্রি সুন্দরী।সুন্দরীশ্রেষ্ঠা সে। কিছু দাসী তাকে স্নান করাচ্ছিলো গোলাপের পাপড়ি আর দুধ মিশ্রিত পানিতে। এর আগে অনেক সুন্দরী নারীকে আমি কাছে পেয়েছি। কিন্তু এমন নারী আমি জীবনে কখনো দেখিনি। আমাকে দেখে ফেললো তার কিছু দাসী। চিৎকার দিয়েই সেই স্থান থেকে তারা পলায়ন করলো। আসলে আমার সারা শরীরে এমনকি মুখমন্ডলে রক্ত বেয়ে বেয়ে পড়ছে।অন্য মানুষের রক্ত ছিলো সেগুলো। এ নারী নিশ্চই রাজা জাভেদ খানের কন্যা মেহেরুন। এতে আর ভুল নেই। আমাকে দেখা মাত্রই সে তার অর্ধনগ্ন শরীর মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলো। কিন্তু তাতেও যে তার রূপ উপচে পড়ছিলো। আমি তার দিকে এমন মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি। মনের অজান্তেই তার অনেক নিকটে এসে দাড়িয়েছি আমি।তার গালের কোণে লাল গোলাপের একটি পাপড়ি লেগে আছে।যা তার সৌন্দর্যকে ঢেকে দিচ্ছে। আমি হাত বাড়ালাম পাপড়িটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য। আমি তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে এতোটাই মগ্ন ছিলাম যে তার হাতে একটা তড়োযার লুকায়িত ছিল তা আমি খেয়াল করিনি।হাতটা বাড়ানোর সাথে সাথেই সে তোড়ায়ারি বের করে আমার হাতে আঘাত করলো।হাতের পিছা কিছুটা কেটে গিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করলো। তখন আমার চেতনা(ঘোর) ফিরলো। আমি শুধু একবার আমার হাতে রক্তের দিকে দৃষ্টিপাত করলাম।কেনো যেনো এই আঘাতটা আমার কাছে আঘাত মনে হচ্ছিলোনা। আবারো সেই তার দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলাম।কিন্তু এবার চেতনা হারিয়ে নয়।সে আমার দিকে তড়োয়ার হাতে করে যখন আমাকে আঘাত করার জন্য এগিয়ে এলো আমি তখন তোড়ায়ারির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে দূরে সরে এলাম। আমি যে তার বিপরীতে অস্ত্র তুলতে পারছিনা। তার সুন্দর শরীরটাতে আঘাত লাগলে সে যে কষ্ট পাবে আর তার শরীরের সৌন্দর্য ও নষ্ট হবে। আমি কেবল নিজেকে তার থেকে রক্ষা করে চলেছি।তারপর তাকে আটকানোর একটা বুদ্ধি এলো মাথায়।সে যখনই আবার আমাকে আঘাত করতে এলো তখন তার হাতটা ধরে ফেললাম। সে আমার থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে এবং সেই চেষ্টা যখন সফল হলো আমি তখন তার শরীর থেকে কাপড়টা টেনে ফেলে দিলাম।সে তখন নিজের শরীর ঢাকতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।আর আমিও এটাই চাইছিলাম যাতে তার ধ্যান তার শরীর ঢাকার দিকে থাকে। সে দুহাত দিয়ে অর্ধ শরীর ঢেকে রেখেছে। আমি তার দিকে আস্তে আস্তে এগোচ্ছি। তারপর………..

[#বিষয়বস্তুঃআশফি_মাহি]

মাহিঃএই?

আশফিঃ কি হলো?

মাহিঃএবার থামো না? ঘুম আসছে খুব।

আশফিঃউফ অবশেষে তাহলে তোমার ঘুম আসলো।তারপর
ওকে আমার বুকের মধ্যে টেনে এনে জড়িয়ে ধরে দুজনে ঘুমিয়ে পড়লাম।

★সকালে নাস্তার টেবিলে★

মাহিঃ এই শুনোনা। আলিশা তো বেশ কিছুদিন হলো এসেছে।ওকে নিয়ে আমরা কোথাও তো একটু ঘুরতে ও বের হলাম না। বেচারি ঘরে বসে বোর হয়ে যাচ্ছে।

আশফিঃ হুম বিষয়টা আমিও ভেবেছি। আজকে তো একটা জরুরি মিটিং আছে বিকাল ৪ টায়। তাই আজ আর সম্ভব না। কাল আমরা একদম সকাল সকাল বেরিয়ে পড়বো। কেমন?

আলিশাঃ এই শোনো। তোমরা না একটু বেশিই ভাবছো।আমি মোটেও বোর হচ্ছিনা।মাহির সাথে আমার সময় বেশ যাচ্ছে। আমার জন্য তোমাদের এতো চাপ নিতে হবেনা।

মাহিঃ আরে এতে চাপ নেওয়ার কি আছে। আমাকে নিয়েও ও গত তিন মাস কোথাও বের হয়না। আমিও খুব বোর হচ্ছি।

আশফিঃআমিও খুব বোর হচ্ছি ডিয়ার তোমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারিনা বলে। কিন্তু কিছু তো করার নেই। এটুকু sacrifice তোমাকে করতেই হতো যে। তবে আলিশার ওসিলায় একটা সুযোগ পেয়েছো তুমি।

মাহিঃ হুহ।??

আশফিঃ মুখ ভেংচি দেওয়া হচ্ছে তাইনা।অফিস থেকে ফিরি তারপর তোমাকে দেখছি। ওকে গাইস তাহলে আমি আসি।বাই দাও আমাকে।

আলিশাঃবাই। ??

আশফিঃ কি ব্যাপার তুমি বাই বলছো না যে?

মাহিঃ কি করে বলি বলো তো। আমার তো তোমাকে কখনো চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে করেনা।

আশফিঃ এতো পাম্প করোনা ফেটে যাবো।

মাহিঃ হা হা হা। ওকে বাই। নিজের খেয়াল রেখো।

আশফিঃহুম। তা তো অবশ্যই। না হলে তোমাকে দেখবে কে? আচ্ছা বাই।

আলিশাঃ হ্যালো ডার্লিং! মনে আছে তো?

মাহিঃ কি বিষয়ে বলো তো?

আলিশাঃ ভুলে গেছো?

মাহিঃ হুমম। ও হ্যা মনে পড়েছে। ড্রাইভিং চ্যালেঞ্জ?

আলিশাঃইয়াপ। মনে পড়েছে তাহলে? ভয় পাচ্ছো নাকি?

মাহিঃ কিসের ভয়?

আলিশাঃ হেরে যাওয়ার ভয়?

মাহিঃতোমার এমন মনে হওয়ার কারন কি ডার্লিং?

আলিশাঃ না হলে তুমি ভুলে গেলে কি করে?

মাহিঃ আসলে এই ব্যাপারটা আমার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি। তাই ভুলে গেছি। কিন্তু তুমি আমার দিকে যেভাবে চ্যালেঞ্জটা ছুড়লে তাতে বিষয়টা গুরুত্ব দিতে হচ্ছে।

আলিশাঃতাহলে বেরিয়ে পড়ি?

মাহিঃ এখনি?১১ টার দিকে বেরোনোর কথা ছিলো তো।

আলিশাঃ লেট করে লাভ কি? চলো এখনি বেরিয়ে পড়ি।

মাহিঃ ওকে।তাহলে তুমি রেডি হয়ে এসো। আমিও যাচ্ছি।
-তারপর দুটো গাড়ি নিলাম। ঝামেলা হলো বের হওয়ার সময়। আসলে আশফির পারমিশন ছাড়া আমাকে বের হতে দিবেনা কেউ।আমি তো রেগে পুরো আগুন। তারপর আলিশা আধা ঘন্টা যাবত ওদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তারপর বাইরে বের হওয়ার পারমিশন নিলো। কিন্তু আমি ভাবছি বিষয়টা ওরা আশফির কানে না দিয়ে দেয়।

আলিশাঃতো মাহি? স্টার্ট?

মাহিঃ উমমম…ওকে। নাও স্টার্ট।
-দুজনে সেই গতিতে ড্রাইভিং করতে লাগলাম। কখনো ও আমাকে ওভার করছে আবার কখনো আমি ওকে ওভার করছি। আমাদের একটা টার্গেট আছে ঠিক কোথায় আমাদের প্রতিযোগিতা শেষ হবে। দারুণ লাগছে আমার।আলিশা ও অনেক এনজয় করছে বিষয়টা।

আলিশাঃ মাহি আমার সামনে চলে এসেছে। মেয়েটা ড্রাইভিং খারাপ জানেনা। ও মাই গড। মাহি কি দেখতে পাচ্ছেনা সামনে? মাহি?????

মাহিঃ হায় আল্লাহ্। আউ…..(চিৎকার দিয়ে উঠলো)

চলবে।

রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২ পর্ব-৮

0

রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২
পর্ব-৮
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi

মাহিঃকি?সেটা আবার কিভাবে?
আশফিঃএইযে গোসল করার সময় তোমার সাথে যে রোমান্সটা হবে সেটা তো গোসল করার রোমান্স।তারপর রান্না করার সময় তোমার সাথে রোমান্সটা করবো সেটা রান্না করার রোমান্স।আবার ঘুমোনোর আগে তোমার সাথে যে রোমান্সটা করি সেটা ঘুমোনোর রোমান্স। আরো আছে……..
মাহিঃথাক বুঝেছি।আর বলতে হবেনা
আশফিঃবোঝার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।তাহলে এবার শুরু করি?
-ওকে জাপটে ধরে আমার সাবান মাখা পিচ্ছিল গাল ওর দু গালের সাথে মিশিয়ে ওর গালটাও পিচ্ছিল করে দিলাম।আস্তে আস্তে ওর ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে গেলাম।তারপর ওর ঘাড়ে যখন চুমু দিতে শুরু করলাম তখন ও আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার পিঠ দু হাত দিয়ে চেপে ধরলো।আমাকে এভাবে চেপে ধরার কারণে ওকে আরো বেশি করে আদর করার ইচ্ছা হলো।ওর ঘাড় থেকে শুরু করে গলা পর্যন্ত আদর করে যাচ্ছিলাম হঠাৎ করে এর মাঝেই ও হাঁচি দিয়ে উঠলো।
রোমান্সটা আর বেশিক্ষণ হলোনা।
কি হলো?তুমি হাঁচি দিলে কেনো?
মাহিঃ কি বলবো এখন ওকে?ও যদি জানতে পারে যে আইসক্রিম খেয়ে আমার ঠান্ডা লেগে গেছে তাহলে আজকে আর রক্ষা নেই।
-আসলে তুমি যেভাবে আমাকে আদর করছিলে আমার কেমন যেনো শুরশুরি লাগছিলো তাই হাঁচি চলে এসেছে।
আশফিঃকিন্তু এটা তো নতুন নয়।আমি তো তোমাকে এভাবেই আদর করি।
মাহিঃ তাইতো?এখন কি বলবো ওকে?
-আরে তুমি ভিজে গায়ে এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিলেনা তাই ঠান্ডা লেগে গেছে।আমার যদি সর্দিকাশি লেগে যায় না তোমার খুব খারাপ অবস্থা হবে বলে দিলাম।কিভাবে তোমাকে নাজেহাল করবো তুমি ভাবতেও পারবেনা। যাও সরো নিজের মত নিজে গোসল করে এসো।
ওকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলাম।হাসি পাচ্ছে খুব।কেমন বোকা বানিয়ে দিলাম।
আশফিঃ যাহ্ বাবা আমি কি করলাম?পুরোটা ভেজাতেও পারলাম না আর ঠান্ডা লেগে গেলো?
আলিশাঃ মাহি সেই কখন থেকে বসে আছি টেবিলে এখন পর্যন্ত আশফির আসার খবর নেই। কি করছে বলো তো ও?
মাহিঃ আমি ও তো সেটাই ভাবছি।মেয়েদের মত সময় নেওয়া শুরু করেছে দেখছি।
আলিশাঃতুমি গিয়ে দেখো তো কি করছে?
মাহিঃ হুম।
আশফি?? আআআ…..ছিঃ।(চোখ বন্দ করে ফেললো)
আশফিঃWhat happened?
মাহিঃ তুমি এটা কি করছো?তোমার লজ্জা বলে কোনো জিনিস নেই নাকি?
আশফিঃলজ্জা? লজ্জা করার মত কি কাজ করলাম আমি?কিছুই তো বুঝলাম না।
মাহিঃ কিছুই বুঝতে পারছোনা? তুমি….. ও গড দরজাটা আটকে দিই না হলে কেউ দেখে ফেলবে।
আশফিঃআরে আরে দরজা আটকাচ্ছো কেনো?
মাহিঃলুচু কোথাকার? তুমি এইভাবে আইডলটার জামাকাপড় সব খুলে ফেলোছো কেনো?খুলে ফেলে কি দেখছো তুমি?
আশফিঃ কৈ কি দেখছি আমি?আমি তো ওর……
মাহিঃ চুপ বজ্জাত ছেলে। কিরকম দেখা যাচ্ছে ওটাকে। ছি, আমি নিজেই লজ্জা পাচ্ছি আর তোমার একটু ও লজ্জা লাগছেনা?
আশফিঃআরে পাগল আমি তো ওর ড্রেস পাল্টাবো। অনেকদিন হলো সেই একই ড্রেস পরিয়ে রেখেছি। ভাবছু নতুন কিছু পরাবো ওকে।
মাহিঃ নতুন কিছু মানে? সে যাই হোক।তুমি ড্রেস চেঞ্জ করতে চাও আমাকে বলতে পারতে আমি চেঞ্জ করে দিতাম।তাই বলে তুমি?
আশফিঃ তো কি হয়েছে? আমি চেঞ্জ করলে সমস্যা কি?আর আমিই তো এতোকাল ধরে ওর ড্রেস চেঞ্জ করে আসছি।
মাহিঃ তুমি?আমি তো ভেবেছি এটা সার্ভেন্টরা(মেয়ে)করতো।
আশফিঃডিয়ার তুমি লজ্জা পাচ্ছো কেনো?আমি তো ভাবছি এখন থেকে তোমার ড্রেস চেঞ্জ করার দায়িত্বটা ও আমি নিবো।??
মাহিঃ ইয়ারকি হচ্ছে? কি বিশ্রি লাগছে দেখতে ওকে।
আশফিঃআমার কাছে ওকে সবভাবেই সুন্দর লাগে।
মাহিঃএই একদম তুমি ওটার দিকে তাকাবেনা। পাঁজি ছেলে।
আশফিঃতাকাবো হাজার বার তাকাবো।এখন এসো তো আমাকে হেল্প করো। ওকে কোন ড্রেসটা পড়াবো বলো?
মাহিঃ আমি জানিনা।?
আশফিঃএতো রাগ করছো কেনো?আমিই তো দেখছি আর তো কেউ দেখছে না। আচ্ছা ওকে একটা ব্ল্যাক কালারের ড্রেস পরাই।
মাহিঃ ব্ল্যাক এঞ্জেল?
আশফিঃহুম।ব্ল্যাক এঞ্জেল। আইডলটাকে পুরো ব্ল্যাক ড্রেস পড়িয়ে দিলাম।অসম্ভব
সুন্দর লাগছে আইডলটাকে।আমি আইডলটার দিকে তাকিয়ে আছি আর মাহি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আইডলটার থেকে চোখ ফিরিয়ে ওর দিকে তাকালাম।
-কি দেখছো?
মাহিঃ তোমাকে।
আশফিঃআমাকে কেনো?
মাহিঃ আল্লাহ্ পাকের অপরূপ সৃষ্টির কাছে এসব যে একদমই তুচ্ছ। আয়নার দিকে তাকাও। আমার কথা শুনে ও আয়নার দিকে তাকালো।আমি ওর হাতটা জড়িয়ে ধরে কাঁধের ওপর মাথা রাখলাম।
-দেখছো কতোটা সুন্দর তুমি?কতোটা নিখুঁতভাবে সৃষ্টি করেছে তোমাকে?
আশফিঃ তোমার মাঝে বুঝি খুঁত আছে?
মাহিঃ হয়তো।
আশফিঃএকটু ও না। আমার সামনে তুমি যেমন ভাবেই উপস্থাপন হউনা কেনো তুমি আমার কাছে নিখুঁত ই থাকবে।
মাহিঃ সারাজীবন এভাবেই ভালোবাসতে পারবে তো আমাকে?
আশফিঃকোনো সন্দেহ আছে?
মাহিঃ ভয় আছে।
আশফিঃকিসের ভয়?
মাহিঃ তুমি যদি কখনো আমার থেকে দূরে সরে যাও?
আশফিঃওর খুব কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।
-এভাবে তোমাকে ধরে রাখবো যতদিন বেঁচে থাকবো।
মাহিঃ আমিও ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
আলিশাঃআশফি? মাহি? তোমরা কি দিনে দুপুরে রোমান্সে ডুবে গেলে?আজকে কি আর দুপুরের খাওয়া হবে না আমাদের?
আশফিঃতুমি ডাকতে এসেছিলে।আর এসে নিজেই রোমান্স শুরু করে দিয়েছো?
মাহিঃ আমি?
আশফিঃহয়েছে হয়েছে। সবসময় খালি কাছে আসার ধান্দা।যাও দরজাটা খুলো গিয়ে।
মাহিঃ পরে দেখছি তোমাকে। গিয়ে দরজাটা খুললাম।আলিশা আইডলটাকে দেখে ওটার প্রশংসায় ডুবে গেলো। তারপর ওদের ডেকে নিয়ে তিনজন একসাথে দুপুরের খাবার খেলাম।বিকাল হলে তিনজনে একসাথে বসে অনেক্ষণ আড্ডা দিলাম।
★রাতে★
আশফিঃআজকাল দেখছি যখনই সময় পাচ্ছে তখনই আলিশার সাথে গল্পে মেতে থাকছে।আমাকে ভুলেই যাচ্ছে।আমি সেই কখন এসে ঘরে বসে আছি একা একা সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই? ডাকতে গেলে তো আবার আলিশা অন্যকিছু ভাববে।ধুর অসহ্য লাগছে।কি পরিমাণ যে রাগ হচ্ছে ওর উপর।ডাকবোনা দেখি কখন আসেন তিনি। পাক্কা আধা ঘন্টা পর রুমে এলেন তাও আবার হাঁচতে হাঁচতে রুমে ঢুকলেন। নাখ ও শিটকোচ্ছে সর্দি লেগে গেলো নাকি?
-এতো তাড়াতাড়ি চলে এলে?গল্প শেষ?
মাহিঃ না।ওর একটা ফোন আসলো কথা বলতে বলতে দূরে চলে গেলো।
বেশকিছুক্ষণ বসে ছিলাম। আলিশার কথা শুনে মনে হলো কিছুটা ইমোশোনালি কথা বলছে তার সাথে।
আশফিঃইমোশোনালি বলতে?
মাহিঃ মনে হলো ফোনের ওপাশে কোনো ছেলে হবে। আলিশা তাকে ওর ফিলিং বা উইকনেস এরকম কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে।
আশফিঃহবে হয়তো। সবার ই তো নিজস্ব জগত বলে একটা জায়গা আছে।
মাহিঃ উহ…মাথাটা ভীষণ যন্ত্রণা করছে।শুতে দাও আমাকে।
আশফিঃআমি একটা বিষয় বুঝতে পারছিনা তখন ওতোটুকু ভিজে যাওয়ার কারণে তোমার ঠান্ডা লেগে গেলো?এই তুমি সত্যি কথা বলো তো কিভাবে ঠান্ডা লাগিয়েছো?
মাহিঃ এইরে ধরা পড়ে যাবো নাকি?যে করেই হোক ওকে ভুলভাল বোঝাতে হবে।
-সেটা কি আমি জানি? তুমি জানো।
আশফিঃআমি কিভাবে জানবো?
মাহিঃ তুমিই তো আমাকে কতক্ষণ ভিজা শরীরে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলে। এই কারণেই তো আমার ঠান্ডা লেগে গেলো। আমার যে মাথা চোখ আর নাখের ভেতর কি পরিমাণ খারাপ লাগছে তা যদি তুমি বুঝতে তাহলে এতো কৈফিয়ত চাইতেনা। এমনিতেই রাত্রে ঘুম হতে চাইনা আমার তার উপর সর্দিকাশি লেগে গেলো।
আশফিঃআচ্ছা স্যরি।আর এমন করবোনা।তুমি বসো আমি ওষুধ আনছি খেয়ে দাও।
মাহিঃ তার কোনো প্রয়োজন নেই।আমি খেয়েছি।এখন আমার মাথাটা একটু টিপে দাও। ভালো লাগছেনা।
আশফিঃআচ্ছা ঠিক আছে। -ওর গায়ে কাঁথাটা টেনে দিয়ে মাথা টিপে দিচ্ছিলাম।তার মাঝখানে আমাকে বললো কাঁথাটা নামিয়ে দিয়ে এসিটা বাড়িয়ে দিতে। তাই ই করলাম।আবার বললো শীত করছে কাঁথাটা গায়ে দিয়ে দাও।সেটাই করলাম। মহারাণী অসুস্থ হয়ে পড়লে তো সে দোষটা ও আমার ঘাড়ে আসে এখন।তাই তার সব হুকুম তামিল করতে আমি বাধ্য।কি পাপটা যে করেছিলাম আমার চান্দুকে আনতে গিয়ে।কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি ওর মাথার কাছে। আমি বুঝতেই পারিনি ওর ডাকে আমার ঘুম ভাঙ্গলো।
মাহিঃ এই শুনছো তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছো?
আশফিঃহুম? না কৈ? ঘুমোনোর চেষ্টা করছিলাম আর কি।
মাহিঃ আর চেষ্টা করতে হবেনা।আমার নাখ থেকে এটা একটু ফেলে দাও তো।
আশফিঃকোনটা ফেলে দিবো জাদু?
মাহিঃ আরে এইযে একদম নাখের সামনে এসে রয়েছে।কেমন যেনো অসহ্য লাগছে একটু ফেলে দাও।আমার উঠতে ইচ্ছা করছেনা।
আশফিঃও নাখ শিটকিয়ে আমাকে দেখালো নাখের ঐ বিজলা পদার্থ টা।
-ডিয়ার তুমি আমাকে এটা ফেলে দিতে বলছো?
মাহিঃ আশেপাশে তো আর কাউকেই দেখতে পাচ্ছিনা।তাহলে তোমাকেই বলেছি।
আশফিঃহায় আল্লাহ্ আর কি বাকি আছে? কোনো কথা না বলে টিসু পেপাড় এনে ওর নাখ থেকে ওটা মুছে ফেলে দিলাম।
মাহিঃ অনেক ধন্যবাদ।
আশফিঃতোমাকেও অনেক ধন্যবাদ।
মাহিঃ আমাকে ধন্যবাদ কেনো?
আশফিঃএইযে আমাকে অভ্যাস করাচ্ছো।এখন না হয় তোমার নাখের ইয়েটা পরিষ্কার করে দিলাম কিছুদিন পর তো আমার চান্দুর ঠান্ডা লাগলে তাকেও পরিষ্কার করে দিতে হবে।
মাহিঃ ও।হ্যা তা করতেই হবে।
-ও হাত ধুয়ে আমার পাশে এসে শুয়ে পড়লো।
এই তুমি ঘুমাচ্ছো?
আশফিঃকেনো?আবারো করতে হবে?
মাহিঃ না।আমার ঘুম আসছেনা।
আশফিঃআমার বুকের মাথা রাখো।আমি তোমার চুলের মাঝে বিলি কেটে দিই তাহলে ঘুম চলে আসবে।
মাহিঃ ওর বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে রইলাম।আর ও আমার চুলের মাঝে বিলি কেটে দিচ্ছে।হঠাৎ একটা জিনিস মনে পড়লো।
-এই আশফি?
আশফিঃহুম।
মাহিঃ তুমি না কাল একটা গল্প শোনাচ্ছিলে আমাকে? সেটা তো আমাকে পুরোপুরি শোনাওনি।
আশফিঃকি করে শুনাবো? তুমি তো তার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলে।
মাহিঃ তাহলে আজকে শোনাও।
আশফিঃআজ না।কাল শোনাবো।এখন তুমি ঘুমাউ।
মাহিঃ না প্লিজ।একটু শোনাও না।বেশি শুনবোনা ঘুমিয়ে পড়বো তাড়াতাড়ি। সত্যি বলছি।
আশফিঃঅনেক দেরি জয়ে যাবে তো।
মাহিঃদেরি হবেনা। প্রতিদিন রাতে একটু একটু করে শোনাবে।গল্পটা শুনেই আমি ঘুমিয়ে পড়বো।
আশফিঃ ঠিক আছে তাহলে শুনো। যতটুকু বলেছিলাম তার পর থেকেই শুরু করি।
মাহিঃ ওকে।
আশফিঃরাজা ফালাক তাজ পরিকল্পনা করলো সে প্রথমে শেরপুর রাজ্যে ছদ্মবেশে যাবে। তারপর রাজা জাভেদ খানের কাছে গিয়ে একটা কাজ চাইবে। সে ঠিক তাই করলো।রাজা জাভেদ খানের কাছে গিয়ে আকুতি মিনতি করে একটা কাজ চাইলো।আর রাজা জাভেদ খান একটু দয়ালু প্রকৃতির ছিলো।তাই সে বিশ্বাস করে রাজা ফালাক কে কাজ দিয়ে দিলো। কিছুদিন পর রাজা জাভেদ খানের হাতিশালে সব হাতি আর ঘোড়াশালে সব ঘোড়া আস্তে আস্তে মারা যেতে লাগলো।রাজা জাভেদ খান
ভেবে পাইনা এর রহস্যটা কি?একদিন রাজকন্যা মেহেরুন তার পিতার সাথে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য তার পিতার কক্ষে প্রবেশ করে।
[#বিষয়বস্তুঃফালাকা_মেহের]
মেহেরুনঃঅনুমতি পেলে ভেতোরে আসবো পিতা?
জাবেদ খানঃআরে মেহেরুন মা যে এসে।
মেহেরুনঃআপনাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে পিতা।
পিতাঃঅনেক বড় চিন্তার মাঝে আছি মা।আমার হাতিশাল ঘোড়াশাল সব যে শূণ্য হয়ে গেলো।এখন আমি আমার শত্রুদের মোকাবেলা করবো কি করে? আমার প্রজাদের বিপদে আপদে তাদের নিকট ছুটে যাবে কি করে?
মেহেরুনঃআমি এই বিষয়ে কথা বলতে এসেছি পিতা। আমাদের হাতি আর ঘোড়া গুলো যেভাবে মারা গেলো তাতে আমার মনে হচ্ছেনা যে শুধু মাত্র কোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে এগুলো মারা গেছে। এসবের পেছনে আমি রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।
পিতাঃকি বলছো তুমি মা? রহস্য?
মেহেরুনঃহ্যা পিতা। আমি খবর নিয়েছি রাজমহলে আপনি একজন নতুন কর্মী নিয়োগ করেছেন সেটা বেশিদিন হয়নি।
পিতাঃহ্যা।কিন্তু তার সাথে এগুলোর কি সম্পর্ক?
মেহেরুনঃসম্পর্ক আছে পিতা।আপনি অতি দয়া দেখাতে গিয়ে বোকামির পরিচয় দিয়েছেন পিতা। মাফ করবেন কথা বলার জন্য। কিন্তু আমি বলতে বাধ্য হলাম।
পিতাঃতুমি কি বলতে চাইছো আমাকে পরিষ্কার করে বলো মেহেরুন।
মেহেরুনঃপিতা আপনি একবার ভেবে দেখলেন না ঐ লোক কোনো ভীনদেশী চর ও হতে পারে।কারণ সে আমাদের রাজমহলে প্রবেশ করার পর দিন থেকে এই করুণ ঘটনাগুলো ঘটেছে।
আপনি এতক্ষণে নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন?
পিতাঃহ্যা আমি বুঝতে পেরেছি।সেদিন তার মায়াভরা মুখ দেখে তার প্রতি আমার দয়া হয়েছিলো। কিন্তু একবারও তাকে যাচাই করে দেখার প্রয়োজন বোধ করলাম না।কি করে এতো বড় ভুল করলাম? তাকে এক্ষণি হাজির হতে বলো।
মেহেরুনঃআপনি বলার আরো অনেক আগে আমি তাকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু তিনি আসেননি। অন্যসব কর্মীরা বললো তাকে কাল রাত থেকে আর কোথাও দেখা যাইনি।
চলবে।

রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২ পর্ব-৭

0

রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২
পর্ব-৭
লেখিকা-Israt Jahan
ধারণা-Kashnir Mahi
ইকরামঃযথা আজ্ঞা সম্রাট।
“””””””””””””””””””
মাহিঃ কি হলো থেমে গেলে যে?
আশফিঃকি শর্ত ছিলো?
মাহিঃপাঁজি ছেলে।দাড়াও। -ওর ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বললাম “তারপর”।ও দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে আবার বলতে শুরু করলো।
[#বিষয়বস্তুঃসম্রাট_ফালাক]
★রাজসভা★
ফালাকঃতো মন্ত্রিসাহেব রাজ্য শেরপুর ও শেরপুরের রাজা স্পর্কিত কি কি তথ্য সংগ্রহ করেছেন সেগুলো উপস্থাপন করুন।
মন্ত্রীঃ মহারাজ! শেরপুর রাজ্যের রাজা জাভেদ খান তিনি এতজন নিষ্ঠাবান মুসলমান।নুন্যতম নামাজ বা পঞ্চোপাসনার তিনি অবহেলা করেন না।তার বৃদ্ধিমত্তা,বীরত্ব,বিচার ক্ষমতা,দানশীলতা,ধৈর্য এসবকিছুর গুণেই তিনি গুনান্বিত।এবং তার সৈন্যসামন্ত সবাই অশিচালনায় খুবই দক্ষ।তার হাতিশালে সহস্রের থেকেউ অধিক হাতি ঘোড়াশালে অজস্র ঘোড়া আছে। তার তুলনায় আমাদের সেগুলি খুবই সীমিত।তার রাজ্যে অভাব অনটন দরিদ্রতা খুবই কম।মাঠে ঘাটে ধান ফসলে কোনো অভাব নেই। সে রাজ্যের প্রজারা খুব সন্তুষ্ট রাজা জাভেদ খানের উপর।তার রাজমহলের নারী-পুরুষ উভয় অশিচালনা জানেন এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন প্রতিনিয়ত।এতবছরে রাজা জাভেদ খান তার বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধেই পরাজিত হননি।
ইব্রাহীমঃসম্রাট এর আগে আপনি যে কয়টি রাজ্য দখল করেছেন তা সে ছলেবলে কৌশলেই হোক বা আপনার যুদ্ধের মাধ্যমেই হোক তাদের আপনি খুব সহজেই পরাজিত করতে পেরেছেন কিন্তু রাজা জাভেদ খানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হওয়া একটু দুসাধ্য হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।তার মত ক্ষমতাধর আমরা নই।( রাজদরবারের পদে অধীনস্থ ব্যক্তি)
ফালাকঃহাহাহা(তাচ্ছিল্যের হাসি)।আপনি কি আমাকে এতো বছরে এইটুকু চিনেননি?আমি শুধু যুদ্ধের মাধ্যমেই নই কূটনৈতিক চিন্তাভাবনার দ্বারাও আমি যে কোনো জিনিস হাসিল করতে পারি। সে যাই হোক তো মন্ত্রী আয়্যুব রাজা জাভেদ খানের পুত্র-কন্যা কতজন আর সবথেকে বিশ্বস্ত ও নির্ভরশীল ব্যক্তি কে?
মন্ত্রীঃ মহারাজ!রাজা জাভেদ খানের একজনই মাত্র কন্যা।রাজকন্যা মেহেরুন।আর সবথেকে বিশ্বস্ত ও নির্ভরশীল ব্যক্তি তার কন্যা স্বয়ং নিজে। তিনি পুত্রের থেকেও অধিক কিছু মনে করেন রাজকন্যা মেহেরুনকে। কারণ তিনি অশিচালনা থেকে শুরু করে ধনুকচালনা রাজ্যচালনা সবকিছুতেই পারদর্শী।রাজনৈতিক কূটনৈতিক সব বিষয়ে রাজা জাভেদ খান তার কন্যার পরামর্শ গ্রহণ করেন।এবং তাতে রাজা জাভেদ খান কখনোই বিফল হননি।
ফালাকঃএ আমাকে কি শোনালেন মন্ত্রীসাহেব?এ কেমন নারী তাকে যে দেখার জন্য আমার মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে।তাহলে তো আর দেরী করা যাবেনা।রাজ্য শেরপুর দখল ও রাজকন্যা মেহেরুন নাহ্ মেহেরুন নয় আমি তাকে মেহের বলেই ডাকবো এই দুটো জিনিসকে নিজের দখলে আনার জন্য আমি আর বেশি সময় অতিবাহিত করতে চাইনা।গোটা ভারতবর্ষে আমি রাজ করতে চাই।প্রতিটি রাজ্যে আমার রাজত্ব চলবে।আচ্ছা রাজকন্যা মেহের এর রূপের বর্ণনা যে দিলেন না আপনি?
মন্ত্রীঃ রাজকন্যা মেহেরকে আজও পর্যন্ত কোনো পরপুরুষ দেখেননি।
ফালাকঃআচ্ছা? না জানি তার নামখানার মত সে কতোটা অপরূপ।
(রাজা ফালাক রাজসভায় উপস্থিত সকলের সাথে আলোচনা পর্ব শেষ করলেন।আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো রাজ্য শেরপুর কবে কখন কিভাবে আক্রমণ করবেন)
“””””””””””””””””””
আশফিঃ এদিকে রাজকন্যা মেহের……….। মাহি? ঘুমিয়েছে তাহলে মেয়েটা।কাঁধের উপর মাথা রেখে আমার হাত জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে।খুব আস্তে করে ওকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে ওর মুখে একটু আদর করে আমিও শুয়ে পড়লাম।
আলিশাঃবাব্বাহ্ এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমাই নাকি ওরা?সকাল ৯ টা বেজে গেছে।
আশফিঃগুড মর্নিং আলিশা।
আলিশাঃগুড মর্নিং।তাহলে ঘুম ভাঙ্গলো তোমাদের? আমি সেই কখন থেকে ওয়েট করে আছি তোমাদের জন্য।
আশফিঃ সো স্যরি।তুমি এখনো ব্রেকফাস্ট করোনি তাইনা?রাতে ঘুম কেমন হয়েছে?
আলিশাঃ ঘুম তো ভালোই হয়েছে কিন্তু তোমার মহারাণী কোথায়?সে কি ঘুম থেকে উঠেনি?
আশফিঃআসলে রাতে অনেক দেরি করে ঘুমিয়েছে তো তাই আর ডাকিনি।
আলিশাঃহুম ওর তো এখন পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন।
আশফিঃআচ্ছা তুমি নাস্তা করে নাও।আমাদের জন্য আর কতক্ষণ ওয়েট করবে?
আলিশাঃ মানে কি?আমি কি তোমাদের ছাড়া একা বসে নাস্তা করবো?কখনোই না।এসো তুমিও করবে।
আশফিঃনা।আসলে আজকে অফিসে যেতেই হবে।নাস্তা করার সময় নেই।ওখানে গিয়ে দেখতে হবে কি অবস্থা?সেক্রেটারির উপরে সব দায়িত্ব দিয়ে এসেছি।
আলিশাঃএইযে CEO সাহেব আপনার অফিস দেখার জন্য অনেকেই আছে কিন্তু এখানে আমাকে দেখার জন্য আপনি ছাড়া কেউ নেই।আমার দেখাশোনাটা করবে কে শুনি?
মাহিঃ কেনো আমি আছি না? আমাকে ভরসা করতে পারো।
আলিশাঃগুড মর্নিং মাহি।
মাহিঃ মর্নিং।আমি কিন্তু তোমার অনেক ভালো খেয়াল রাখতে পারবো।
আলিশাঃআচ্ছা।আমি তো দেখছি তোমাকেই এখনো দেখাশোনা করতে হয় আশফিকে।তাহলে আশফির বোনকে তুমি কিভাবে দেখাশোনা করবে?হুম?
মাহিঃ সেটা তুমি দেখলেই বুঝতে পারবে আমি তোমার কেমন খেয়াল রাখতে পারি?
আলিশাঃ ও আচ্ছা।
আশফি মাহি কিন্তু ভয় পাচ্ছে।
মাহিঃ একদম না।আশফি চাইলেও তোমাকে টেক কেয়ার করতে পারবেনা।
আলিশাঃকেনো? নিষেধ করে রেখেছো নাকি?
মাহিঃ উহুম।তুমি নিজেই দেখে নিতে পারো।
আশফিঃ এটা মাহি ঠিকই বলেছে।
আলিশাঃ কিরকম? বুঝিয়ে বলো আমাকে?
মাহিঃ আলিশা সেটা তুমি ও অফিসে যাওয়ার পরই বুঝতে পারবে।
আলিশাঃওকে ওকে এখন এসো নাস্তা করে নিই।প্রচন্ড খিদে পেয়েছে।আশফি তুমি তো অফিসে গিয়ে নাস্তা করবে তাইনা?তাহলে আমি আর মাহি দুজনে মিলেই নাস্তা করি।
আশফিঃহুম তাই করো।
আলিশাঃমাহি তোমার খাওয়া-দাওয়া দেখছি একদম ঠিক নেই।
মাহিঃ ওহ্ গড।ভাই নেই ভাই এর বোন তো আছে। আমার খাওয়া-দাওয়ার উপর খবরদারি করার জন্য।
আলিশাঃএরকম ভাবে বলছো কেনো?আশফি তো ঠিকই করে।জোড় করে তোমাকে খাইয়ে দেয়।না হলে তোমার যা খাওয়ার ভাব-সাব দেখছি তাতে তোমাকে আর বেশিদিন চোখে দেখা যাবেনা। মাহি খাওয়ার দিকে নজর দাও। ওকে?প্রয়োজন হলে আমিও তোমাকে জোড় করে খাইয়ে দিবো।
বুঝেছো?
মাহিঃনা প্লিজ।তুমি অন্তত আমার সাথে এমন করোনা।যতটুকু খেতে পারি ততটুকুই তো খাবো।
আলিশাঃহুমমম।
মাহিঃ আলিশা তোমাকে কিভাবে স্যরি বলি।এখন পর্যন্ত তোমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারলামনা। নিশ্চই অনেক বোরিং হচ্ছো?
আলিশাঃ মিথ্যা বলবোনা। একটু হচ্ছি।তবে একদম খারাপ ও লাগছেনা।আর তুমি কিভাবেই বা আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবে।
আশফির কড়া নিষেধ তাকে ছাড়া বাইরে কোথাও বের হতে পারবেনা।
মাহিঃ এটাই তো সমস্যা।
লোকটা সবসময় খালি বেশি বেশি করে সবকিছুতে।ও তো অফিসে পড়ে থাকে আর আমি সারাটাদিন বাড়িতে বসে থেকে থেকে একদম নিরামিষ হয়ে যায়।
আলিশাঃমাহি তোমার ফোন বাঁজছে।
মাহিঃ ও।আমি তো শুনতেই পাইনি।
-কি হয়েছে??(ফোনে)
আশফিঃকিছুনা।আমি গাড়িতে।
মাহিঃ ও আচ্ছা আমি এখনো নাস্তার টেবিলে।
আশফিঃও আলিশা আছে বুঝি সাথে?
মাহিঃ কেনো তুমি দেখে যাওনি?
আশফিঃহুম দেখলাম তো। নাস্তা করা শেষ হয়নি?
মাহিঃ এই তো বসলাম।
আমি কি রোবট?
আশফিঃকিন্তু ডিয়ার রোবটেরা তো খাইনা ওরা চার্জ নেয়।
মাহিঃ ধুর।আমাকেও চার্জ দিও।তাহ। লে আর খেতে হবেনা কিছু।
আশফিঃঅবশ্যই।অফিস থেকে ফিরে তোমার চার্জের ব্যবস্থা করবো।ঠিকআছেে? মাহিঃ ধ্যাত।কি সব কথাবার্তা বলে।
আশফিঃ?? ওকে রাখছি।অফিস পৌঁছে গেছি।
মাহিঃ পাঁজি একটা।(ফোন কেটে)
আলিশাঃহাহাহাহাহা। এটা কি ছিলো মাহি?
মাহিঃশুনেছো নিশ্চই? এটা তো শুরু যেদিন থেকে অফিস যাবে সেদিন থেকে শুরু হবে ওর এসব পাগলামী।
আলিশাঃহুম স্পিকার লাউড করে রেখেছো তো শুনবোনা?ঘর থেকে বের হতে পারলোনা সাথে সাথে গাড়িতে উঠেই ফোন? এটা সত্যিই একটা দারুণ বিষয়। আর তুমি সেটাকে পাগলামী বলছো?
মাহিঃ এগুলোকে পাগলামী ছাড়া কি বলে?
আলিশাঃভালোবাসা,দুর্বলতা,দুশ্চিন্তা যা খুশি বলতে পারো।একটা মানুষকে কতোটা ভালোবাসলে তাকে এভাবে মিস করে কেউ।
মাহিঃ হুমম।জানি। মানুষ বলে বিয়ের পর নাকি আস্তে আস্তে বৌ এর প্রতি স্বামীর টান ভালোবাসা এসব নাকি কমে যায়।শুধু থাকে দায়িত্ব-কর্তব্য।কিন্তু আশফি পুরোটাই তার ভিন্ন। দিন দিন ওর ভালোবাসার পরিমাণ শুধু বেড়েই চলেছে আর দায়িত্ব কর্তব্যের কথা তো বলবোইনা।
আলিশাঃআচ্ছা চলোনা আজকে আমরা দুজনে lunch রেডি করি? আশফিকে চমকে দিবো।
মাহিঃ সেটা তো আমি রোজই করতে চাই।কিন্তু কে শুনে কার কথা। আমাকে খাঁচা বন্দি পাখির মত করে রেখেছে।
মাঝেমাঝে মনে হয় ওকে লুকিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসি।কারণ আমি প্রেগন্যান্ট হয়েছি পর্যন্ত আমাকে নিয়ে কখনো ও জার্নিই করতে চাইনা আর সেখানে তো লং ড্রাইভ দূরে থাক।
আলিশাঃতুমি ওকে অনেক ভয় ও পাও তাইনা মাহি?
মাহিঃ হুম।ভীষণ।আবার একদমই না
আলিশাঃবুঝলাম না। মানে?
মাহিঃ ও তুমি বুঝবেনা।
আলিশাঃআমি বুঝতেও চাইছিনা।
আচ্ছা তাহলে আমরা কিচেনে যাই দুপুরের খাবার তৈরি করে ফেলি?
মাহিঃ এতো তাড়াতাড়ি? আর কিছুক্ষণ পরে যাইনা?চলো বাগান থেকে ঘুরে আসি।
আলিশাঃওকে চলো।
মাহিঃ আমি আর আলিশা দুজনে পাশাপাশি একসাথে বাগানে হাঁটছি।কিন্তু হঠাৎ করেই মেয়েটা কেমন চুপচাপ হয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ আগে কাকে যেনো ফোন করছিলো ও কিন্তু সে ফোনটা হয়তো রিসিভ করেনি।তারপর থেকেই ওর মনটা খারাপ দেখছি।
-আলিশা?
আলিশাঃহুম বলো।
মাহিঃ তুমি কত বছর হলো ইংল্যান্ড ছিলে?
আলিশাঃএইচ.এস.সি পাস করেই ইংল্যান্ড চলে গিয়েছিলাম।
মাহিঃ তাহলে তো অনেক বছর ইংল্যান্ড ছিলে।
আলিশাঃহুম।ওখানে আমার খালামণি থাকেন।ওনাদের সাথেই থাকতাম।
মাহিঃ হুম।নিজের দেশ ছেড়ে ওখানে থাকতে তোমার ভালো লাগতো? মিস করতে না ফ্যামিল ফ্রেন্ডস এসব?
আলিশাঃহুম।খুব মিস করতাম প্রথম ২ বছর।তারপর আস্তে আস্তে যখন অনেক ফ্রেন্ডস হলো সারাদিন ওদের সাথে সময় কাটাতাম। ওদের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতাম। একসময় নিজেকে একদম পুরোপুরি ইংল্যান্ড বাসীদের মত করে নিজেকে তৈরি করে ফেললাম। ওদের কালচারের এমর কোনো জিনিস নেই যা আমি পারিনা বা জানিনা।
মাহিঃ আচ্ছা কি কি জানো তুমি?
আলিশাঃআমি খেলাধুলা থেকে শুরু করে সে যে কোনো ধরনের খেলা হোক সব পারি।তারপর পপ ড্যান্স, হিপহপ, ব্যান্ড মিউজিক,র্যাপার সবকিছুই আমার মাঝে আছে।
মাহিঃ শুধু এগুলোই?আর কিছুনা?
আলিশাঃআর কি? ও বুঝতে পেরেছি।রান্নাটা ও মোটামোটি পারি,ড্রাইভিং করতে পারি তারপর প্রেম করতে পারি…..??
মাহিঃ হাহাহাহা। তুমি তো দেখছি অলরাউন্ডার।
আলিশাঃহুম সত্যি অলরাউন্ডার।শুধু একটা জায়গায় ছাড়া।
মাহিঃ কিছু বললে?
আলিশা না কিছুনা। এখন বলো তুমি কি কি পারো?
মাহিঃ আমি তোমার মত এতোকিছু জানিনা। তবে আমি যেটুকু সেটুকু ও কম নয়।
আলিশাঃআচ্ছা?তো শুনি সেগুলো কি কি?
মাহিঃ প্রথমত আমি সংসারের যাবতীয় কাজ জানি।আর সংসারের বাইরে যেগুলো আছে সেগুলো হলো বিজনেস করতে জানি আমি,ড্রাইভিং করতে জানি,নাচ-গান মোটামোটি পারি তবে তোমার মত সবধরনের নয়।আর…….
আলিশাঃ আর কি? মনে পড়ছেনা? তুমি কিন্তু অলরাউন্ডার হতে পারলেনা।
মাহিঃ তাই?কিন্তু আমি যেগুলো জানি তুমি কিন্তু সেগুলো জানোনা।
আলিশাঃরিয়েলি?কি সেই জিনিসগুলো?যা আমি জানিনা?
মাহিঃ আমি প্রেম করতে না পারলেও আমি আমার হাজবেন্ডকে ভালোবাসতে জানি যেটা তুমি জানোনা। কারণ তোমার তো বিয়েই হয়নি তো স্বামীকে কিভাবে ভালোবাসবে?
আলিশাঃস্বামী না হলে বুঝি ভালোবাসা যাইনা?
মাহিঃ হুম যাই।কিন্তু আলিশা ম্যাম এর তো কোনো লাভার ই নেই। তাহলে?
আলিশাঃহুম তা ঠিক। আচ্ছা বলো আর কি কি জানো?
মাহিঃআমি ঘোড়া চালাতে জানি,কুংফু জানি,গান চালাতে জানি।
আলিশাঃওয়াও।এগুলো তো আমি জানিইনা।তুমি নিশ্চই এগুলো আশফির থেকে শিখেছো?
মাহিঃ তাছাড়া কি? এগুলো ও ছাড়া আর কে ই বা শেখাবে আমাকে।
আলিশাঃআশফি যে অনেক ভালো ক্যারাটে জানে সেটা আমিও জানি। মাহি তুমি কখনো ফুল স্পীডে গাড়ি চালিয়েছো?
মাহিঃ পাগল নাকি? এমনিতেই আমাকে কখনো ড্রাইভ করতে দেইনা আর ফুল স্পীড তো দূরে থাক।
আলিশাঃতার মানে তুমি এটা পারোনা।কিন্তু আমি অনেকবার বাজি রেখে ফুল স্পীডে গাড়ি চালিয়েছি। কেউ আমাকে কখনো হাড়াতে পারেনি।
মাহিঃ আমি পারিনা এটা ভুল।কখনো চালাইনি এই আর কি।
আলিশাঃতাহলে আসবে নাকি আমার সাথে বাজিতে?
মাহিঃ তুমি কি সিরিয়াস?
আলিশাঃএকদম।
মাহিঃ ওকে তাহলে আমরা কাল ঠিক ১১ টার দিকে বাসা থেকে বের হবো।আর হ্যা এই বিষয়টা যদি আশফি জানতে পারে তাহলে কিন্তু সব বানচাল হয়ে যাবে।
আলিশাঃ Don’t worry darling. আমি আছি না?
মাহি আমার না খুব আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে।চলোনা বাইরে থেকে ঘুরে আসি।আর আইসক্রিম ও খেয়ে আসবো।
মাহিঃ বাইরে যেতে হবে কেনো? ফ্রিজেই তো আইসক্রিম………..।
ও আমার প্রাণপ্রিয় পতি তো আমার জন্য এখন ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম গুলো ও সরিয়ে ফেলেছে। অদ্ভুত মানুষ একটা। বাসায় যে আমি ছাড়া অন্য কেউ আছে সেটা তিনি ভুলেই গেছেন।
আলিশাঃওর কি দোষ? তুমি যদি লুকিয়ে খাও???
মাহিঃ হ্যা।এর জন্যই রাখেনি।আচ্ছা দাড়াও আমি কাউকে গিয়ে আনতে বলি।
আলিশাঃআরে অন্য কেউ যাবে কেনো? আমরাই তো যেতে পারি।তুমি চলো আমি আর তুমিই যাবো।
মাহিঃ কিন্তু আশফি যদি………( কথা শেষ না হওয়ার আগেই মাহির ফোনে আশফির কল এলো)
এই বলতে বলতেই চলে এসেছে আশফি সাহেব।
আলিশাঃকোথায়?
মাহিঃ আরে ওদিকে কোথায় দেখছো?ফোনে দেখো।তাও আবার ভিডিও কল।
আলিশাঃতাই বলো। আচ্ছা রিসিভ করো।
মাহিঃহুমম।কেমন আছেন?(ফোনে)
আশফিঃকেমন আছেন মানে কি?ফোন রিসিভ করতে এতো সময় লাগে কেনো?
মাহিঃ উফফ।বাসায় থাকলেও angry face ফোনের ভেতোরেও angry face. আচ্ছা তুমি বাসায় যাই করো কিন্তু বাইরে গেলে কি একটু লাভারদের মত করে কথা বলা যাইনা?
আশফিঃও হ্যা আপনি তো আমার সাথে প্রেম করতে চেয়েছেন তাইনা?তো আপনি কি পারবেন আমার সাথে প্রেম করতে?
মাহিঃ না পারার কি আছে? এগুলো ও কি শিখে পড়ে করার জিনিস নাকি?
আশফিঃশিখে পড়ে করতে হয়না বাট…..
মাহিঃ বাট?
আশফিঃএই তুমি কোথায়? তুমি তো বাসার ভেতোরে না।
মাহিঃএই হাদারাম নিজের বাগানটা ও কি চিনতে পারছোনা?
আশফিঃও তাই বলো।না আসলে ফোনের ভেতোর দেখছি তো তাই কেমন যেনো একটু অচেনা অচেনা লাগলো।
মাহিঃ তুমি আমাকে খাঁচার ভেতোর আটকে রাখো।
আশফিঃআরে নাহ্।তাহলে তো আবার সমস্যা। আচ্ছা তাহলে ঘুরো পরে ফোন করছি আবার।
মাহিঃ হুম।
আলিশাঃবাব্বাহ্! ১০ মিনিট পর পর বৌকে বুঝি মনে পড়ে?
মাহিঃ১০ মিনিট পর পর নয়।তার সবসময়ই আমার কথা মনে পড়ে শুধু ফোনটাই আসে ১০ মিনিট পর পর।আচ্ছা তুমি তো আইসক্রিম খাবে তাইনা?
আলিশাঃহুম।
মাহিঃ বাইরে তো এখন যেতে পারছিনা।অন্য কাউকে পাঠায় আনতে?
আলিশাঃওকে।
মাহিঃএকটা গার্ডকে পাঠালাম কিছু আইসক্রিম আনতে।আইসক্রিম আনার পর আমি আর আলিশা বসে একসাথে সবগুলো আইসক্রিম খেয়ে নিলাম।যদিও আমাকে খেতে নিষেধ করেছিলো আলিশা।কিন্তু সামনে রেখে কি আর নিজের লোভ সামলানো যাই? তারপর আমি আর আলিশা দুজনে মিলে দুপুরের খাবার রেডি করলাম।এর মাঝে আমাদের ভেতোর অনেক রকম গল্প হলো।দুজনে অপেক্ষায় আছি কখন আশফি আসবে।
আলিশাঃএই এতো বড় বাড়িতে তুমি কি করে যে সময় পার করো কে জানে।
মাহিঃ হুমম?। এর জন্যই তো বলেছিলাম ওকে আর একটা বিয়ে করতে।
আলিশাঃকি? সময় কাটানোর জন্য তুমি ওকে বিয়ে করতে বলেছো?
হাহাহা।এটা কোনোদিন সম্ভব।আর বিয়ে করার পর ঐ মেয়ে যদি আশফির কাছে থাকতো তুমি কি সেটা মেনে নিতে পারতে?
মাহিঃ একদম না।এর জন্যই তো ওকে আর বিয়ে করার কথা বলিনি।
আলিশাঃআর কখনো বলবে ও না।যে মেয়ের সংসারে অন্য একটা মেয়ে এসে কতৃত্ব ফলায় তাহলে সেই মেয়ের কপাল সারাজীবনের জন্য পুড়ে যায়।বুঝেছো? আচ্ছা মাহি আমি তো তোমাদের জুনিয়র কিন্তু আমি যে তোমাকে আর আশফিকে তোমাদের নাম ধরে ডাকি এটা কি তোমাদের খুব খারাপ লাগে?
মাহিঃ আরে কি বলো এসব? খারাপ লাগবে কেনো?তোমাকে তো আমি বন্ধুই মনে করি।আর বন্ধুদের মাঝে কোনো সম্বন্ধ করে ডাকতে হবে নাকি?
আলিশাঃআসলে আমিও তোমাদের একদম ফ্রেন্ডদের মতই মনে করি তাই নাম ধরেই ডাকি।আর এটাই আসলে অভ্যাস হয়ে গেছে ওখানে থাকতে থাকতে।
মাহিঃ সেটা আমরা বুঝি।
-কথা বলার মাঝে হঠাৎ করে মাহি হাঁচি দিয়ে উঠলো।
আলিশাঃএই যাহ্ ঠান্ডা লেগে গেলো নাকি তোমার? তাহলেই তো সর্বনাশ। কে বলেছিলো তোমাকে একসাথে ওতোগুলো খেতে?
মাহিঃ কি করবো? সামনে পেয়ে যে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলামনা।
আশফিঃGood noon everyone.
আলিশাঃ গুড নুন আশফি। তো তোমার অফিস শেষ হয়ে গেলো?
আশফিঃআসলে এখন একটু তাড়াতাড়িই চলে আসি।বাসায় একটা বাচ্চাকে রেখে যায় তো তাই টেনশন হয় আর কি।
মাহিঃ হ্যা।এরপর যখন বাচ্চার বাচ্চা হবে।তখন অফিস ই বন্ধ করে দিবে।
আলিশাঃতাই তো মনে হচ্ছে।
আশফিঃতখন তো আমার টেনশন কমে যাবে। কারণ বাচ্চাটা যে বড় হয়ে যাবে তখন।সে বুঝতে পারবে এখন আমি বড় না হলে আমার বাচ্চাকে কে দেখাশোনা করবে।এখন না হয় আমি তোমাকে দেখছি আর যখন আমার চান্দু আসবে তখন চান্দুকে তো দেখতেই হবে সাথে চান্দুর বাবাকে ও।
মাহিঃ হয়েছে।এবার যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।
আশফিঃহুম যাচ্ছি।
আলিশাঃতুমি কি জানো মাহি আশফি বাড়িতে থাকলে সব একঘেয়েমিতা দূর হয়ে যায়?
মাহিঃ হ্যা জানি তো।এর জন্যই তো সবসময় আমার কাছে থাকার চেষ্টা করে।
আলিশাঃএতক্ষণে দুজনেই বোরিং ফিল করছিলাম। ও আসার পর সেটা আর মনে হচ্ছেনা।
মাহিঃতাই?
আশফিঃমাহি একটু এখানে এসো তো।
মাহিঃ আসছি।হুম বলুন কি হয়েছে?
আশফিঃহয়েছে তো অনেক কিছুই।
মাহিঃ কি হয়েছে? কোনো সমস্যা নয় তো। ওর স্যুটটা খুলে দিচ্ছিলাম আর কথা বলছিলাম।
আশফিঃআসলে ব্যাপারটা সমস্যা মনে করলে সমস্যা।আর সমস্যা না মনে করলে সমস্যা না।
মাহিঃ ধ্যাত। কি সব বলছো কিছুই বুঝতে পারছিনা।ক্লিয়ার করে বলো। কোম্পানিতে কোনো প্রবলেম হয়েছে?
আশফিঃহুম। আসলে একটা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি।তাই তোমার সাথে একটু আলোচনা করতে চাইলাম।
মাহিঃ হ্যা বলো কি সমস্যা?
আশফিঃ একটা মার্কেটিং কোম্পানি যারা আমাদের কোম্পানির সাথে ডিল করতে চাইছে।
মাহিঃ কিসের ডিল?
আশফিঃডিল টা হচ্ছে আমাদের নিউ ডিজাইনের যে প্রোডাক্টগুলো এ বছর থেকেই তৈরি করা শুরু হবে সেগুলোর জন্য আমাদের যে ম্যাটেরিয়াল প্রয়োজন সেগুলো আমরা অন্য একটা কোম্পানির থেকে নিতে চেয়েছিলাম আর বহু আগে থেকে তাদের থেকেই আমি ম্যাটেরিয়াল গুলো নিয়ে আসছি।তাতে কখনো খারাপ কিছু পাইনি।কিন্তু কথা হচ্ছে এই নতুন যে কোম্পানিটা আমাদের সাথে ডিলে আসতে চাইছে তার কোম্পানির ম্যাটেরিয়াল কতোটা মানসম্মত হবে সেটাই ভাবছি।কারণ তারা খুবই কম মূল্যে ম্যাটেরিয়ালগুলো আমাকে দিতে চাইছে।আমাদের সাথে তার কোম্পানির ডিলটা হলে তার কোম্পানির রেপুটেশনটা বাড়বে কিন্তু তাতে আমার কোম্পানির রেপুটেশন কি হবে সেটাই ভাবছি।
মাহিঃ কেনো তুমি তার ম্যাটেরিয়াল গুলো দেখোনি?সেটা খারাপ নাকি ভালো?
আশফিঃআমি দেখিনি। আমার নিউ ডিজাইনার
যে মেয়েটা আছে সে দেখেছে।
মাহিঃ অদ্ভুত।তুমি নিজে দেখবেনা সেটা কেমন? ডিজাইনারের উপর ভরসা করলেই হবে?আর তাছাড়া নিউ ডিজাইনার এটা কতোদিন হলো জয়েন করেছে?
আশফিঃ মাসখানেক হবে। আর এসব ম্যাটেরিয়াল চুজ করে প্রডাক্টস তৈরির দায়িত্ব ডিজাইনারই নিয়ে থাকে। কিন্তু এতোদিন যাদের সাথে বিজনেস করে এলাম এখন তাদের বাদ দিয়ে অন্য কোম্পানির সাথে কিভাবে ডিল করবো বুঝতে পারছিনা।যেহেতু প্রোডাক্টস গুলো ভালোই হবে ডিজাইনার বললো আবার মূল্য ও কম নিবে তাই ভাবছি ডিলটা করে ফেলবো নাকি।
মাহিঃ আমার মনে হয় তোমার আরো ভালো করে চিন্তা করা উচিত।
আশফিঃকিন্তু এদিকে ওরা অনেক চাপ দিচ্ছে।
মাহিঃ আচ্ছা পরে ভাবা যাবে এসব নিয়ে।আগে যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।তারপর খেতে আসবে।
আশফিঃবলছি শুনোনা?
মাহিঃ আবার কি হলো?
আশফিঃআজকে না ভীষণ ক্লান্ত লাগছে তুমি আমাকে একটু হেল্প করোনা।
মাহিঃ হেল্প?কি কাজে?
আশফিঃএকটু change করিয়ে গোসল করিয়ে দাও আমাকে।
মাহিঃ ফাজলামি তাই না? change করিয়ে দিতে হবে কি সুন্দর কথা?
আশফিঃদিবেনা?
মাহিঃ পারবোনা আমি এসব করতে।
আশফিঃআমি তোমাকে গোসল করিয়ে দিইনা?
মাহিঃ সে তো জোড় করে। আমি কি করিয়ে দিতে বলি?
আশফিঃআচ্ছা সে জোড় করে করিয়ে দিই নাকি জোড় না করিয়ে দিই সেটা কথা না। কথা হলো আমি এখন করিয়ে দিতে বলেছি করিয়ে দিবে।
মাহিঃ ঠিক আছে তাহলে চলো।ভালো করে গোসল করিয়ে দিবো তোমাকে আজকে।
আশফিঃপ্লিজ।
-ও আমার জামা কাপড় খুলে দিয়ে আমাকে গোসল করানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে।
মাহিঃ দেখো আমি কিন্তু বারবার তোমাকে গোসল করাতে পারবোনা।
আশফিঃ তো আমি ক’বার গোসল করতে চাই তোমার কাছে?
মাহিঃ তোমার তো পছন্দ হয়না।তারপর আবার বলবে ভালো করে গোসল করিয়ে দাও।গোসল করা হয়নি আমার। এরজন্যই তো বললাম আমি বারবার করাতে পারবোনা কিন্তু।
আশফিঃআমার যদি মনে হয় যে আমার গোসল হয়নি তাহলে আমি বলবোনা যে আমাকে আবার গোসল করিয়ে দিতে?আচ্ছা এতো কথা বলার সময় নেই।নাও তাড়াতাড়ি এসো বাথরুমে।
মাহিঃ পাঁজি একটা ওকে গোসল করাতে এসে নিজেই গোসল করে ফেলি।পুরো গায়ে সাবান মেখে আবার আমাকে জড়িয়ে ধরে দুষ্টুমি শুরু করে দিয়েছে।
-আচ্ছা আমি তো ভিজে যাচ্ছি। এরকম করলে আমাকে তো আবার গোসল করতে হবে।ছাড়ো আমাকে।এসব করার জন্যই বুঝি আমাকে গোসল করিয়ে দিতে বলো?
আশফিঃহুম। এক এক সময় এক এক রকম ফিলিংস কাজ করানোর জন্য এক এক রকম জায়গা প্রয়োজন।