স্যার যখন স্বামী
পার্ট_৫
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
অবশেষে কয়েকঘন্টার লং জার্নির পর স্যারের বাসায় আসলাম।ইতিমধ্যে বাসাটাও সুন্দর করে সাজিয়ে ফেলা হয়েছে।আমি জিজ্ঞাসুদৃষ্টিতে স্যারের দিকে তাকিয়ে আছি।স্যার আমার এই দৃষ্টির মানে বুঝলেন।তিনি নিজের থেকেই বলতে লাগলেন,আসলে এখানে আসার আগে পাশের বাসার প্রতিবেশীকে বলে রেখেছি যাতে তারা সুন্দর করে বাসাটাকে সাজিয়ে রাখে। আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি এইসব করার মানেটা কি?সুন্দর করে বাসাটাকে সাজিয়ে উনি কি প্রমাণ করতে চাচ্ছে আমাদের যে বিয়েটা হয়েছে সেটা স্বাভাবিক বিয়ে।আমি এই বিয়ে মানি না,শুধু নিজের আর পরিবারের মানসম্মান বাঁচানোর জন্য আমি উনাকে বিয়ে করেছি।এই বিষয় নিয়ে আজকেই উনাকে কিছু বলতেই হবে,,সম্পর্কটা বেশিদূর গড়াক তা আমি চাইনা। সাগরের কাছ থেকে যেভাবে আমি প্রতারিত হয়েছি আর কোন ছেলেকে বিশ্বাস করতে পারব না।
“মেঘ কি ভাবছ? কতক্ষণ ধরে ডাকছি।”
“হ্যা…”
“বলছি রুমে যাবে চল।”
“হ্যা…,রুমে গিয়ে দেখি বিছানাটা সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। বিছানাটা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে কেন?”
“দেখ আমি এইসবের কিছু জানি না।আমিতো শুধু বাসাটা ফুল দিয়ে সাজাতে বলেছি কিন্তু এরা এতকিছু করবে সেটা আমার জানা ছিল না। প্লিজ কিছু মনে কর না।আচ্ছা তুমি বরং ফ্রেস হয়ে এসো।সারাদিন তোমার উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে।”
“জ্বী…আচ্ছা,,”
“তুমি যাও আমি একটু পর আসছি।”
“কোথায় যাচ্ছেন?”
“আরে,,এইখানেইই আছি,,,ভয় পাওয়ার দরকার নেই।যাও,,”
.
.
উনার আলমারি খুলতে গিয়ে দেখি আলমারির অর্ধেক অংশ জুড়ে মেয়েদের কাপড় রাখা আছে। সেখানে শাড়ীসহ থ্রিপীস রাখা আছে।ওনিতো ব্যাচেলর থাকেন তাহলে ওনার আলমারিতে মেয়েদের কাপড় কেন?তারমানে ওনি কাউকে পছন্দ করতেন।তার জন্য আলমারি ভর্তি মেয়েদের কাপড় কিনে এনে তা সাজিয়েছেন।আমিই ওনার আর ওনার পছন্দ করা মেয়ের মাঝখানে এসে পড়েছি।আমার জন্যই ওনি সমস্যায় ফেসে গেলেন। নিজের থেকেই খারাপ লাগছে। আমার জন্য এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে এখন আমিই এই সমস্যার সমাধান করে দিব। শাড়ী বাদ দিয়ে হাল্কা বেগুনী রঙের থ্রিপীচ পড়ে নিলাম। বাসার পাশে খুব সুন্দর একটা বারান্দা আছে।দেখলাম সেখানে অনেকগুলে টব ভর্তি ফুলের গাছ। এইগুলোতো সব আমার পছন্দের ফুলের গাছ। বারান্দার পাশে দোলনা ঝোলানো আছে। বাইরে থেকে খুব সুন্দর বাতাস বইছে। বারান্দা পাশে ফুলের টব,আর এই ঝোলানো দোলনা দেখে আমার সাগরের কথা আবার মনে পড়ে গেল।সাগরকেও আমি বলেছিলাম আমরা যে রুমে থাকবো সে রুমটার বারান্দাতে যেন আমার পছন্দের ফুলগুলো লাগানো হয়,আর সেখানে যাতে একটা দোলনা ঝোলানো থাকে যেন অবসর সময়ে আমরা সেই দোলনাতে বসে আমাদের সারাদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো,জমে থাকা কথাগুলো একে অপরকে বলে সময় কাটাতে পারি। কিন্তু আমার সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল।
.
.
“এই যে মিস সরি মিসেস,,”
“হ্যা…”
“আচ্ছা মেঘ তোমার কি কোন রোগ আছে? ”
“নাতো…স্যার…কেন কি হয়েছে,,হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন করলেন?”
“এই যে মেয়ে শোন একতো আমি এখন থেকে তোমার স্যার না,,তোমার হাজবেন্ড। তাই আমাকে আর কখনো স্যার বলে ডাকবে না। আর দ্বিতীয়ত তোমার বয়সতো এত বেশি না তাহলে কথা বলতে বলতে বা একলা থাকলে তুমি কিসব ফালতো কথা ভেবে কোথায় জানি হারিয়ে যাও,অনেকবার ডাকার পরও তোমার কোন হুশ থাকে না,,তাহলে এটাতো একটা রোগের মধ্যে পড়ে তাই নয় কি?”
….
“শোন মেঘ এইসব ফালতো চিন্তা ভাবা প্লিজ বাদ দিয়ে দাও।যেসব কথা ভাবলে তোমার কষ্ট হয় অযথা সেসব ভেবে নিজেকে কষ্ট দেওয়ার মানেটা কি আমাকে সেটা বলতে পারো।এখন থেকে এইসব ফালতু কথা ভাববে না আর,সামনে তোমার অনেক রঙিন দিন আসবে,তাকে বরণ করে নিয়ে নিজের স্বপ্নগুলোকে পূরণ কর,,অতীতের খারাপ দিনগুলোর কথা ভুলে গিয়ে নিজেকে ভালবাস,,নিজের আপন মানুষ যারা তোমাকে ভালবাসে তাদের জন্য নিজেকে শক্ত কর,,তাদের ভালবাসাকে আপন করে নাও,দেখবে তোমার ভিতরে আর কোন কষ্ট বাসা বাঁধবে না,,তখন নিজেকে পরিপূর্ণ হবে।একটা খারাপ মানুষের জন্য জীবনটা কখনো থেমে থাকে না। জীবন ঠিকই তার গতিতে চলবে। আশা করি আজকের পর থেকে তুমি সাগরের কথা ভেবে আর আনমনা হবে না,অযথা নিজের চোখের জল ফেলবে না।যে তোমাকে বুঝে না শুধু শুধু তার জন্য নিজের চোখের জল ফেলার মানেটা কি?”
আমি কাদঁছি,,আশ্চর্য আর আমি সেটাই টের পেলামনা।গালে হাত দিয়ে দেখি আমার গাল বেয়ে চোখ থেকে নোনা জল পড়ছে আমার অজান্তে।
স্যার এবার আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার চোখের জল মুছে দিলেন। আজকের পর থেকে তোমার চোখ দিয়ে যাতে আর কোন অশ্রু পড়তে না দেখি আমি।এই চোখের জল দেখে আমার খুব কষ্ট হয়।এরপর তিনি আমার মাথাটা এনে তার বুকে রাখলেন।জানি না কেন ওনার বুকে মাথা রেখে কান্নার পরিমাণটা আগের থেকে আরও বেড়ে গেল।ওনি আমার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছেন।
“কিছুক্ষণ পর মেঘ,,,”
….
“এই মেঘ,,, ”
“হুম (ফুঁপিয়ে)”
“চল খাবার খাবে…অনেক আগে খাবার গরম করে রেখেছি,,,দেরি করলে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।চল,,”
“এখন কোন কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা, এই প্রথম কোন পুরুষের এত কাছে এলাম।ওনার বুকে এই প্রথম মাথা রেখে কান্নাকাটি করার পর এখন খুব হালকা লাগছে।একটু আগে কোন শান্তি খুঁজে পাচ্ছিলাম না,,কিন্তু এখন আপনাআপনি আমার মনে শান্তি চলে এসেছে উনার বুকে মাথা রেখে। এই শান্তিটা এখন হারাতে চাচ্ছি না।”
“মেঘ প্লিজ,,চল নাহলে তোমার শরীর খারাপ করবে।”
….
“এরপর উনি উনার বুক থেকে আমার মাথাটা উঠিয়ে আমাকে কোলে তুলে নিলেন।আর তাতে আমার হুশ এল।”
“আরে কি করছেন..”
“তুমি যে কি অলস মেয়ে,,, এতবার ডেকেই চলেছি অথচ তোমার কোন পাত্তা নেই।এইদিকে খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে কোলে নিলাম।চুপ করে থাক।”
“আরে,,নামান,,আমি হেঁটে যেতে পারবো”(চিল্লিয়ে)
“চিল্লিয়ে লাভ কোন লাভ হবে না,যা করছি করতে দাও,,,”
“কিন্তু….”
“বললাম না চুপ” (ধমক দিয়ে)
….
“এরপর উনি আমাকে বিছানায় বসিয়ে টেবিল থেকে খাবারের প্লেট তুলে নিলেন।মেঘ হা কর..আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।”
“দরকার নেই,আমি খেয়ে নিতে পারবো।”
“হ্যা আমি সেটা জানি,,তুমি নিজ হাতে খেতে পারবে,,,কিন্তু আজকে আমি তোমাকে খাইয়ে দিব। নাও হা কর।”
“বললাম তো এইসবের কিছু লাগবে না,,,”
“এত বকরবকর কর কেন বলত,,,হা করতে বলছি হা কর,,”(ধমক দিয়ে)
“ধমক খেয়ে বাধ্য হয়েই হা করলাম।নিজ হাতেই শেষ পর্যন্ত আমাকে খাইয়ে দিলেন। তাই বলে বকা দিয়ে,,খুব খারাপ উনি,,আবার কান্না পাচ্ছে,,স্যার বলে কিছু বলতে পারছি না,,সইতেও পারছি না,,”
“এখনতো ঠিকই খেলে মেঘ,আমার হাত দিয়ে,,কেন শুধুশুধু বকাটা খেলে,,আসলে তুমি যতক্ষণ না পর্যন্ত বকা খাও ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার শান্তি লাগে না,,বকা খাওয়ার পর ফটাফট কাজটা করে ফেল,,ভাল করে বললে জীবনেও সেটা করবা না।এখন থেকে আমার কথা না শুনলেই এরকম বকা খেতে হবে।
.
.
“ও…আল্লাহ উনি এমন কেন?(কেঁদে),,উনিতো ক্লাসে আমাকে প্রতিদিন পড়ার জন্য যেভাবে বকা দিতেন আজকে ও ঠিক সেইভাবে বকা দিচ্ছে উনার হাতে খাবার না খাওয়ার জন্য।ক্লাসে সবসময় সবার প্রথমে আমাকে দাঁড় করিয়ে পড়া প্রশ্ন করতেন আর না পারলে খুব বকা দিতেন।জানি না কেন আমাকে দিয়েই তিনি প্রশ্ন ধরার কাজটা শুরু করতেন।কেন অন্য স্টুডেন্টকে আগে প্রশ্ন করলে কি দুনিয়াটা উল্টে যেত,,আজকে আবারও ঠিক একিভাবে খাবার খাইয়ে দিতে গিয়ে বকা দিলেন,,মনে হয় যেন খাবার খাওয়াচ্ছেন না,, আমার ক্লাস নিচ্ছেন,,পড়া পাড়ছি না দেখে আমাকে বকা দিচ্ছে।”
“মেঘ,,, ও আল্লাহ এই মেয়েটাকে নিয়ে আমি কোথায় যাব,,, কি ভাবছ?”
“হ্যা… হ্যা কিছু বলছেন,,,”
“না বাবু কিছু বলেনি,,,বলছি যে ভাবনার দুনিয়া থেকে বেরিয়ে আস,,,আর লক্ষ্মী মেয়ের মতন ঘুমিয়ে যাও,,”
“বাবু,,,, আমি এখন ছোট নাই,,,আমি বড় হয়ে গেছি,,”(কেঁদে)
“আচ্ছা,,আচ্ছা তুমি বড় হয়ে গেছ প্লিজ এখন ঘুমিয়ে যাও,,”(আদুরে কণ্ঠে)
“হুম,,”
.
.
“উনি সবকিছু গুছিয়ে এলেন।রুমে এসে,,মেঘ এখনো ঘুমাও নি।”
“না।”
“কেন?”
“কিছু কথা ছিল,,”
“এখন কোন কথা না,,ঘুমিয়ে যাও।কালকে বলিও”
প্লিজ খুব সিরিয়াস কথা,,”
“বললাম না যা বলার কালকে বলবে,,,
(মন খারাপ করে),,আপনি খুব খারাপ স্যার,, আমাকে শুধু বকা দেন”(কেঁদে)
“এই কি স্যার..কখন থেকেই স্যার কথাটা বলা লাগিয়ে রাখছ হ্যা..আমাকে স্যার ডাকতে নিষেধ করছি না?হয় আমাকে তুমি বলে ডাকবা,,নাহলে আমার নাম ধরে।একটু আগে তোমাকে আমি কি বলছি,,বলছি না আর কাঁদবা না তাহলে আবার কাঁদছ কেন?”
…
“আচ্ছা বল কি বলবে?”(শান্ত হয়ে)
“আপনি আমাকে ডির্ভোস দিচ্ছেন কবে?”
“মানে? মেঘ তুমি ঠিক আছোতো”
“হ্যা আমি ঠিক আছি”
“আমার কাছে এসে,,আমার হাত শক্ত করে ধরে,,না তুমি ঠিক নেই।কিচ্ছু ঠিক নেই।ঠিক থাকলে এইসব কথা বলার মানেটা কি?ডির্ভোস দেওয়ার জন্য আমি তোমাকে বিয়ে করেছি?”(চিল্লিয়ে)
“স্যার,,”
“আবারও..স্যার”
“…মানে স্যার বলছি যে…”
“আমার দিকে গরম চোখে তাকিয়ে,,”
“ওনি যেভাবে আমার হাত ধরে আছেন,,হাতে খুব ব্যাথা পাচ্ছিলাম,,আবারও আগের থেকে বেশি পানি চোখ দিয়ে নেমে পড়ছে।আমার চোখের পানি দেখে ওনার হুশ আসলো।হাত ছেড়ে দিলেন।”
“মেঘ ঘুমাও গিয়ে যাও,,
“না,,ঘুমাবো না,,আগে বলেন,ডির্ভোসটা কবে দিচ্ছেন?”
“মেঘ তুমি বারবার একি কথা কেন টেনে আনছো?”ডির্ভোসের কথা এখন কেন আসছে।”
“কারণ আমাদের বিয়েটা স্বাভাবিক ছিলনা,,তাছাড়া যেখানে ভালবাসা নেই,শুধুশুধু মিথ্যা ভালবাসার নাটক করে শুধু বিয়ের দোহাই দিয়ে সংসার করলে সে সংসার টিকে থাকতে পারে না।আমি সাগরকে বিশ্বাস করে ভালবেসে ঠকেছি আর দ্বিতীয়বার আমি নিজের সাথে এইভুল হতে দিবো না।”
“মেঘ,তুমি সাগরের সাথে আমার তুলনা করছ?”
“স্যার,আমি,”
“আবারও স্যার,”
“আসলে,,আমি কারও সাথে কারও তুলনা করছি না,আমি বলছি আর কাউকে আমি বিশ্বাস করতে আর ভালবাসতে পারবোনা,,আর আপনাকেতো নাই,,কারণ আমি আপনাকে স্যারের চোখে দেখি।তাছাড়া আমি জেনে গেছি,,”
….
“(স্যারের দিকে তাকিয়ে) আপনি অন্য কাউকে পছন্দ করেন।আমার জন্য আপনি তাকে বিয়ে করতে পারেন নি।আমি আপনাদের দুজনের মাঝখানে এসে পড়েছি।”
স্যার যখন স্বামী পার্ট_৫
স্যার যখন স্বামী পার্ট_৪
স্যার যখন স্বামী
পার্ট_৪
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
“অতিরিক্ত কান্নাকাটি করার কারণে ঠিকভাবে দাঁড়াতেও পারছি না।অনেকটা দুর্বল হয়ে গেছি। হাঁটতে গিয়ে যেই পড়ে যাব ওমনি স্যার আমাকে ধরে ফেললেন।তিনি আমার সমস্যাটা বুঝতে পেরেছেন।তাই আমাকে কোলে তুলে নিলেন।”
“স্যার একি করছেন?”
“দেখতেই তো পারছো কি করছি।”
“হ্যা… পারছি,, আমাকে কোলে নিতে হবে না।আমি হেঁটে যেতে পারবো।”
“হুম সেটা আমি দেখতে আর বুঝতে পেরেছি।তাই কোলে নিয়েছি।আর কোন কথা বল না।বোকা মেয়ের মতন কান্নাকাটি করে শরীরের কি হাল করেছ সেটা বুঝতে আমার বাকি নেই।চুপ করে থাক।যা করছি আমাকে করতে দাও।”
“আমিও আর বাড়াবাড়ি করলাম না।আসলেই কান্নাকাটি করে এমন অবস্থা হয়েছে আমাকে এখন কোল থেকে নামিয়ে দিলে বাকিপথটুকু হেঁটে যাওয়ার অবস্থা থাকবে না।সাথেসাথে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাব। তাই চুপটি মেরে রইলাম।”
.
.
মেহমান ভর্তি বাড়িতে,,নিচে গিয়ে পৌঁছালে স্যার আমাকে তার কোল থেকে নামালেন। আমাকে দেখে মা পাগলের মতন কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন।মেঘ এ কি হল রে?মা আমরা বুঝতে পারি নি সাগর এরকম হবে।বিয়ে যদি করবেই না সেটা আমাদের কালকে হলেও বলতে পারত।তাহলে আমাদের মানসম্মানটা বেঁচে যেত। আজ যখন বিয়ে করতে আসার কথা ছিল ঠিক তখনি বিয়ে করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। কেন ঘরভর্তি আত্মীয় আর মেহমানদের সামনে ওই শয়তানটা আমাদের নাক কাটালো?
মায়ের এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতন ভাষা আমার কাছে নেই।কি করে বলবো এইসব কিছুর মূলে দায়ী আমি নিজেই।
বাবাকে দেখলাম চুপটি করে বসে আছে।এতক্ষণ ধরে যে কান্নাকাটি করছিল তা উনাকে দেখলে বুঝাই যাবে না।কি সান্তনা দিবো ওদের? এটাই বলব তোমরা টেনশন কর না।যা হওয়ার তাতো হয়ে গেছে।এখন আর কান্নাকাটি করে কি হবে? কিন্তু এইসব বললেই কি সব ঠিক হয়ে যাবে।আমাদের হারিয়ে যাওয়া মানসম্মানতো আর ফিরে আসবে না।ঘরে আর বাইরের বয়স্ক গুরুজনরা বলেই চলছে, বিয়ে না করে বর পালিয়ে গেল,, নিশ্চয় মেয়ের চরিত্রে কোন দোষ আছে। বর ভালো মানুষ তাই হয়ত মেয়ের সবদোষ জেনেই বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল, পরে হয়ত ছেলে ভেবে দেখেছে মেয়ের দোষ মেনে নিয়ে বিয়ে করে নিজের জীবন নষ্ট করার মানেই হয় না।তাই হয়ত মেয়ের দোষ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য ছেলে বাধ্য হয়ে পালিয়ে গেছে। এই গ্রামের বয়স্ক লোকেরা কিছু একটা হলেই মেয়েদের চরিত্রের দোষ তুলে ধরে।ছেলে পালিয়ে গেল আর দোষ হল মেয়ের। মেয়ের চরিত্র দোষের কারণে ছেলে পালিয়ে গেছে, ছেলে পালিয়ে যাওয়ার কারণ এতক্ষণ পরে তারা নিজেরা নিজে গবেষণা করে উদ্ধার করল।আর সব দোষ আমার উপরে চাপাল।সাগর পালিয়ে যাওয়ায় একদিকে মার কান্নাকাটি, বাবার চুপচাপ হয়ে বসে থাকা আমাকে অস্থির করে তুলছে আর অন্যদিকে বয়স্ক লোকেরা আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলছে। কোন দিশা পাচ্ছি না, কি করব? আমি হচ্ছি ঘরকোনো মেয়ে,, কোন ঝগড়া বিবাদ হলে আমি সেখান থেকে কেটে পড়ি,, তাদের সাথে তাল মিলিয়ে ঝগড়া বা প্রতিবাদ করার ক্ষমতা আমার কোনকালেই ছিল না।এই পরিস্থিতিতে আমার কিছু বলা উচিত, বলা উচিত আমার চরিত্রে কোন দোষ নেই,নিজেকে বেকসুর প্রমাণ করতে ইচ্ছে করছিল,মুখ খুলে কিছু বলতে ইচ্ছে করছিল,কিন্তু আমার মুখের কথা মুখে আটকে রইল,কোন টুশব্দ ও বাইরে আসলো না। আশেপাশে সবাই যারা আমাকে চিনে তারা চুপ করে আছে কারণ গুরুজনদের মুখের উপর দিয়ে কথা বললে তাদের অপমান করা হয়।তাছাড়া যে প্রতিবাদ করতে যাবে বয়স্কলোকেরা তারও দোষত্রুটি তুলে ধরবে সাথেসাথে।তাই এই মূহুর্তে তাদের এই অপবাদ হজম করা ছাড়া উপায় নেই।আমি নির্বিকারভাবে দাঁড়িয়ে আছি আর তাদের কথা শুনছি,, না চাইতেও চোখের পানি ঝরে পড়ছে। অন্যদিকে ঘরে আমার মা পাগলের মতন প্রলাপ বকে যাচ্ছে এখন আমার মেয়েটার কি হবে?ওর জীবনটা শেষ হয়ে গেল।আমার মেয়েটাকে এখন কে বিয়ে করবে?
.
.
এতক্ষণ ধরে তন্ময় স্যার সবকিছু দেখছিল আর শুনছিল। কিন্তু এইবার তিনি আর চুপ করে থাকতে পারলেন না,তিনি বলে উঠলেন,মেয়ের চরিত্রে কোন দোষ নেই, চরিত্রে যদি কারো দোষ থেকে থাকে তাহলে সেটা ছেলের চরিত্রে ছিল। ছেলের অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল।কিন্তু বিয়ের আগে সেটা ছেলে বা ছেলেপক্ষের পরিবার মেয়েপক্ষকে জানায় নি।বিয়ের দিনে ছেলের মাথায় আক্কেল হয়েছে এখন বিয়ে করলে আগের মতন অন্য মেয়েদের সাথে প্রেমলীলায় মজে থাকতে পারবে না। তাই বিয়ের দিনে বর কনেকে বিয়ে না করে পালিয়েছে।এরপর তিনি প্রমাণস্বরুপ কয়েকটা ছবি দেখালেন।সাগরের সাথে অনেক মেয়ের ছবি ঘনিষ্ঠভাবে তুলা।আমি নিজেও অবাক।হ্যা আমি জানতাম সাগরের পিছনে মেয়েরা ঘুরত,,কিন্তু সেসইব মেয়েদের সাথে সাগরের এরকমভাবে তুলা ছবি!!তার মানে আমার অজান্তে আরও অনেক মেয়ের সাথে ওর রিলেশন ছিল।মাথাটা ব্যাথা করছে স্যারের কাছ থেকে এইসব কথা শুনে। আমি দাঁড়ানো থেকে সোজা মাটিতে বসে গেলাম। পুরোপুরো নিস্তব্ধ হয়ে গেলাম। একটা শকড কাটতে না কাটতে আরকটা!! কানে আর কোন কথা ঢুকছে না।
.
.
আপনারা পুরো ঘটনাটা না জেনে ছেলের দোষ না দিয়ে মেয়ের চরিত্র নিয়ে আঙ্গুল তুলেছেন।নিজের চোখে তো দেখলেন কার চরিত্রে দোষ। আর কিছু বলবেন আপনারা। কোনকিছু না বুঝে শুনে বিচার না করে কিছু একটা হলেই সব দোষ মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেন।সবসময় আপনারা শুধু মেয়েদের চরিত্রে দোষেই দেখেন। আমি নিজে একজন ছেলে হয়ে বলছি, কেন ছেলেরা কি দোষ করে না? নাকি ওরা ধোয়া তুলসী পাতা যে ওরা কোন দোষ করতে পারে না বা জানে না। দেখেন ছেলে হোক বা মেয়ে, দোষ যে কারো হতে পারে।আমরা আল্লাহর সৃষ্টি সেরা জীব। দোষ যারই হোক না কেন আমরা নিজেরা তা ভালোভাবে না বুঝে নিজের বিবেকবুদ্ধি দিয়ে তা ভালভাবে বিচার বিবেচনা না করে শুধুশুধু মেয়ের চরিত্রে দোষ লাগিয়ে তাকে কথা শুনাবো সেটা কেমন বিচার?নিজের বিবেকবুদ্ধি কাজে না লাগিয়ে যদি শুধু মেয়ের চরিত্রে দোষারোপ করা হয় আর ছেলের দোষ থাকলে ও তাকে সে কটুক্তি কথা থেকে বিরত রাখা হয় তাহলে সেটা আল্লাহর সৃষ্টিকেসহ নিজেদেরকে অবমাননা করা হয়। আপনারা মেয়ের চরিত্র সম্পর্কে না জেনে কতকিছু বলে ফেললেন কয় মেয়েপক্ষতো একবার ও তো এখন ছেলের চরিত্র সম্পর্কে জানার পর তাকে নিয়ে কিছু বলে নি।বিয়ের দিন ছেলে পালিয়ে গেছে কেউ কিছু বলছে না কারণ সে ছেলে।ছেলে পালিয়ে গেল এতে ছেলের দোষ আছে কিনা তা যাচাই করলেন না কিন্তু বিয়ের দিন মেয়ে পালিয়ে গেলে পুরো সমাজ সে মেয়েকে নিয়ে কত কথা শুনায় আর রটাই।একবারও আপনাদের মনে হয় না এর সত্যতা যাচাই করে দেখি আসলে সমস্যাটি কার? এবার আর কেউ কথা বলছে না।চুপ হয়ে গেছে সবাই।
.
.
স্যার এবার আমার মা বাবাকে বলেলন, প্লিজ অযথা এভাবে আর চোখের পানি ঝরাবেন না।আপনারা যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি কিছু বলতে চাই।আমার মা বাবা স্যারের দিকে নির্বিকারভাবে তাকিয়ে আছে।
“আমি মেঘকে বিয়ে করতে চাই যদি আপনাদের কোন আপত্তি না থাকে।”
“এই কথা শুনে আমার মা সাথেসাথে বলে উঠলেন, বাবা সত্যি বলছ।”
হ্যা আমি সত্যি বলছি আমি মেঘকে বিয়ে করতে চাই। বাবার চোখে এবার সুখের অশ্রু নেমে এল। স্যারের কথা শুনে মনে হল তারা দুইজনেই আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন।তারা আর কোন দ্বিমত করেন নি।স্যারের সাথে আমার বিয়ে দিতে রাজি হল। অবশেষে স্যারের সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেল।কিন্তু বিয়েতে আমার শরীরটা উপস্থিত ছিল মাত্র কিন্তু মনটা আমার সাথে ছিল না।কি হল না হল কিছু বলতে পারবো না।একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম।বিদায়ের সময় আর কান্নাকাটি করলাম না।অনেক কেঁদেছি। বিদায়ের জন্য জমানো পানিও ফুরিয়ে গেছে।কাঁদতে কাঁদতে এখন চোখ দুইটা অসম্ভব জ্বালাপোড়া করছে।
.
.
ইতিমধ্যে স্যার এত কম সময়ে বিয়ের গাড়ি ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখার ব্যবস্থা করে ফেলেছেন।সবাইকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে বসলাম। আমার বর্তমান আর ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বুঝতে পারছি না। স্যারের মুখের দিকে তাকালাম দেখি মুখটাই একটা বিষাদ নেমে পড়েছে। বেচারা!!আমার জন্য কত কি না করল। এসেছিলেন বিয়ে খেতে কিন্তু বিয়ে খেতে এসে তিনি নিজে ফেঁসে গেলেন। যে সম্পর্কে কোন ভালবাসা নেই সে সম্পর্কে এত সহজে টিকে না। ওনিতো আমাকে কখনো ভালবাসার চোখে দেখেননি,, সবসময় স্টুডেন্টের চোখে দেখতেন।
স্যার আমার কাঁধ ঝাকিয়ে বললেন,, মেঘ,,
“হ্যা,,”
“শুন আলতোফালতো চিন্তা মাথা থেকে বাদ দাও।আমাদের সম্পর্ক কোথায় দাঁড়াবে সেসব নিয়ে এতকিছু ভেবো না।সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
“উনি কেমন করে জানলেন আমি এইসব ভাবছি। উনার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম।”
“মেঘ শুন,,”
“জ্বী,, ”
“আরও ৩ ঘন্টার রাস্তা বাকি আছে।তুমি চাইলে গাড়িতে ঘুমাতে পারো।খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে তোমাকে।”
“না,, আমি ঠিক আছি।”
এরপর আর কেউ কোন কথা বলে নি গাড়িতে।চুপচাপ ছিলাম উভয়ে।
স্যার যখন স্বামী পার্ট_৩
স্যার যখন স্বামী
পার্ট_৩
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
আলমারি থেকে বিষের বোতলটা নিলাম। বিয়ের কয়েকদিন আগে সাগরের সাথে দেখা করেছিলাম। সেদিন কথা বলের ছলে ও আমাকে ১টা বিষের বোতল দিয়েছিলো।
আমাকে এই বিষের বোতল দিচ্ছ কেন?
মেঘ তোমাকে আমি এখন যে বিষের বোতল দিলাম সেটা মাঝেমাঝে খুব কাজে লাগে।
মানে?এই জিনিস আবার কাজে লাগে?কেমন করে?(অবাক হয়ে)
সবাই ভাবে এই বিষ শুধু মানুষের জীবন কেড়ে নিতে জানে,কিন্তু একটু ভাল করে ভিতর থেকে ভাবলেই দেখবে এটা শুধু জীবন কেড়ে নেয় না,বিষাদ কষ্ট থেকে মুক্তি ও দেয়।
তাই নাকি?তা আমাকে এইটা দেওয়ার মানেটা কি?আমার মনেতো কোন কষ্ট নেই।কয়েকদিন পর তোমাকে আপন করে পাব,আমার সব স্বপ্ন পূরণ হবে,,আমার মনে কোন কষ্ট নেই।
মানুষের ভাগ্য মূহুর্তের মধ্যে পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।কখন কি ঘটে তা তো আর বলা যায় না।রেখে দাও এটা।প্রয়োজনে কাজে লাগবে।
মাঝেমাঝে তুমি কি যে বল না,, কিছুই বুঝতে পারি না আমি।আমার এইসবের প্রয়োজন পড়বে না।
আররে…তারপরও রেখে দাও,,, দেখবে দেখবে এখন না লাগলেও সঠিক সময়ে এটা কাজ দিবে,,,রেখে দাও নিজের কাছে।
তখন সাগরের এই কথার মানেটা বুঝি নিই।কিন্তু আজকে বুঝতে পারছি ও সেদিন কি বুঝাতে চেয়েছিলো।এরকম পরিস্থিতিতে সাগরের দেওয়া এই জিনিসটা আমার কাজে লাগবে সেটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল।আজকে সত্যিই এই জিনিসটা আমার কাজে লাগবে।
___**___
দেখুন,, আপনারা যদি এরকমভাবে ভেঙ্গে পড়েন তাহলে মেঘের কি হবে? এই পরিস্থিতিতে ওকে সামাল দেওয়ার জন্য আগে আপনাদের শক্ত হতে হবে।প্লিজ আপনারা এরকমভাবে কাঁদবেন না।
বাবা কি করব তাহলে,,ওই ছেলেটাকে আমার মেয়েটা এত্ত ভালবাসলো আর সে ওর বিনিময়ে কি দিল ধোকা!! এত্তবড় প্রতারণা!! এরকম করার আগে একটাবার আমার মেয়েটার কথা ভাবলো না,,,ওই ছেলের কারণে লোকসমাজে আমাদের মাথা কাটা গেল।কি করে আমার মেয়েটাকে সান্তনা দিব। আমার মেয়েটা এইসব শুনলেই মারা যাবে।
প্লিজ এরকম করে বলবেন না আপনারা,, মেঘের কিছু হবে না,,আমার বিশ্বাস আপনারা ওকে সব বুঝিয়ে বললে ও ঠিকইই বুঝবে।একজনের পাপের শাস্তি আরেকজন পাবে সেটা আমি কিছুতেই হতে দিব না।(হঠাৎ মনে হল বাইরে লোকজনের এত সরগোল ভিতর পর্যন্ত যাওয়ার কথা।এত কান্নাকাটি চিল্লানির আওয়াজ মেঘ শুনে নি তা কেমন করে হয়?ওকে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। এতক্ষণ ধরে এই পরিস্থিতিতে ও ঘরে বসে আছে!! ব্যাপারটা সুবিধার মনে হচ্ছে না।এবার বুকের মধ্যে কুহু ডাকা শুরু হয়ে গেছে ,,ও ঘরে থেকে নিজের কোন ক্ষতি করে বসে নিতো!!??)
মেঘের কয়েকজন আত্মীয় -স্বজনকে ডেকে বললাম ওর মা বাবাকে সান্তনা দেওয়ার জন্য,আমার একটু কাজ আছে। এই কথা বলে,,,আমি মেঘের ঘরের দিকে দৌড় দিলাম।
মেঘ,,মেঘ,,,ঘরে একা একা কি করছ?দরজা খুল,, মেঘ,,শুনতে পাচ্ছ আমার কথা,,, দরজা খুল বলছি,,,দেখ এখন যদি তুমি দরজা না খুল তাহলে কিন্তু আমি দরজা ভাঙ্গতে বাধ্য হবে।এতকিছু বললাম,,জোরে জোরে চিল্লিয়ে ওকে ডাকছি কিন্তু ওর কোন সাড়াশব্দ নেই।তার মানে ও…. আর কিছুই ভাবতে পারছি না,,আমি ওকে কিছু হতে দিবো না,,জানালাটা খুলা ছিল সেখানে উকি দিয়ে দেখি ওর হাতে বিষের বোতল। একদৃষ্টিতে সেখানে তাকিয়ে আছে।এই দৃশ্য দেখে ভয়ে আমার শরীর কেঁপে উঠল। তাড়াতাড়ি করে কয়েকজনকে ডেকে এনে দরজা ভাঙ্গতে শুরু করলাম।দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে তাড়াতাড়ি করে ওর হাত থেকে বিষের বোতলটা কেড়ে নিলাম।
পাগল হয়ে গেছ কি করতে যাচ্ছিলে তুমি মেঘ??
বিষের বোতল দিয়ে কি করে মানুষ? আমি মরতে চাচ্ছি,, বেঁচে থাকার কোন অধিকার আমার নেই।
কে বলেছে তোমাকে এইসব? পাগলের মতন আবোলতাবোল কি বলে যাচ্ছ কতক্ষণ ধরে?
হ্যা আমি পাগল,,পাগলের মতন একজনকে ভালবেসেছি যার মূল্য আমিসহ আমার গোটা ফ্যামিলি পাচ্ছ।ওদের সামনে কি করে এইমুখ দেখাবো। দেন আমাকে বিষের বোতলটা দেন।এটা খেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
কি ঠিক হবে শুনি,,কি ঠিক হবে?কিচ্ছু ঠিক হবে না।তুমি যে কাজ করতে যাচ্ছ তুমি জানো তোমার ফ্যামিলি যদি জানতে পারে তাদের মেয়ে এমন একটা কাজ করতে যাচ্ছে তাহলে তারা কি পরিমাণ কষ্ট পাবে।বুঝতে পারছ আমার কথা (মেঘের কাধ ঝাঁকিয়ে)।কোন মা বাবা চায় না তাদের সন্তান কোন ভুল পদক্ষেপ নিয়ে নিজেকে কষ্ট দেক। সন্তানের কষ্ট মা বাবার কলিজায় গিয়ে লাগে। তোমার এই ভুলের মাশুল তোমার মা বাবাকে দিতে হবে। তুমি তো এটা খেয়ে মুক্তি পেয়ে যাবে কিন্তু তুমি ওদের কথা কি একবারও ভেবে দেখেছ যারা তোমাকে অনেক ভালবাসে,, তুমি ছাড়া ওদের কি হবে?তুমি ছাড়া ওদের আছেই বা কে।আর আমাকে বলতো এই বিষ খেলে কি ঠিক হবে,বল(ধমক দিয়ে),,
___
কথা বলছ না কেন? মান সম্মান বেঁচে যাবে,তোমার মা বাবার সামনে মুখ দেখাতে হবে না,, এই জন্য না? তাহলে তুমি এটা একা বসে খাচ্ছ কেন?একটা কাজ করি,, এই বিষের বোতল তোমার মা বাবাকেও দিয়ে আসি আমি।কি বল? তুমিসহ তোমার ফ্যামিলি এই কষ্ট অপমান থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে।
আপনি পাগল হয়ে গেছেন কি বলছেন এইসব? আমারা মা বাবাকে আপনি এই মৃত্যুর জিনিস দিবেন!!আপনি মানুষ!!
ও নিজের বেলায় তো ভালো বুঝ। সেল্ফিস মেয়ে একটা।নিজেকে মুক্তি দিবে, মা বাবাকে দিবে না।এই মেয়ে তোমার সাথে সাথে তারাও অনেক কষ্ট পেয়েছে কয় তারাতো ভুলেও এই কাজ করে নি।তুমি এই কাজ করে নিজেকে মুক্তি দিচ্ছ না,একসাথে দুইটা ভুল কাজ করছ। নিজেকে নিজে শেষ করে পাপ করছ যার ক্ষমা আল্লাহর দরবারে নেই আর নিজের মা বাবার কলিজায় আঘাত দিতে যাচ্ছ ।তুমি এই যুগের শিক্ষিত মেয়ে,, কোথায় এইসময়ে নিজের মা বাবাকে গিয়ে সান্তনা দিবে,মা বাবাকে বুঝাবে কিচ্ছু হয় নি,তোমরা শান্ত হও,, তা না ওনি ঘরে বসে নিজের মুক্তির পথ বেছে নিয়েছেন। সেল্ফিস কোথাকার।
আপনি আমাকে সেল্ফিস বললেন!!(কেঁদেকেঁদে)
হ্যা বলেছি।তুমি একটা সেল্ফিস মেয়ে।
আমি সেল্ফিস না।আমি ভেবেছিলাম এই পদ বেছে নিলে সবঠিক হয়ে যাবে।আসলে মাথা ঠিক ছিল না।কি করব না করব মাথায় কাজ করছিল না।ওদের সামনে কেমন করে দাঁড়াবো বলতে পারেন?
কেন দাঁড়াতে পারবে না? কি করছ তুমি। কিচ্ছু করনি। তুমি একজন ভুল মানুষকে ভালবেসেছ যে তোমাকে ধোকা দিয়ে চলে গেছে।ওর পাপের শাস্তি ও পাবে।তুৃমি এইকাজ করলে ওই শয়তানটা জিতে যেত আর তুমি কোন পাপ না করেই হেরে যেতে। দেখ যা হবার তা হয়ে গেছে এইসব ভেবে নিজেকে আর কষ্ট দিয়ো না।(মেঘকে আরও নিজের কাছে টেনে) মেঘ নিজেকে সামলাও। আমি আছি কি করতে? আমি সবকিছু ঠিক করে দিব। প্লিজ এইসব ভেবে নিজেকে আর কষ্ট দিয়ো না,,মেঘের চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে দিয়ে। মেঘ,,চল নিচে চল,,তোমার মা বাবার এখন তোমাকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
চলবে….
স্যার যখন স্বামী পার্ট_০২
স্যারযখনস্বামী
পার্ট_০২
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
ওর এই মেসেজ পড়ে আমার মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। মেসেজে এই লিখা ছিল।
আজকে তো অনেক সুন্দর করে সেজেছ।আমাকে বিয়ে করবে বলে তোমার এই সাজ।যে দিনটার প্রতীক্ষায় এতদিন তুমি ছিলে আজকে সে দিনের অবসান ঘটিয়ে তোমার সে স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। জানোতো মেঘ ছোটবেলা থেকে আমার একটা বদঅভ্যাস ছিল কারও চোখেমুখে হাসির ঝলক ফুটে উঠলে যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার এই হাসিখুশি মুখে মেঘের শ্রাবণ নামাতে না পারি ততক্ষণ পর্যন্ত আমার হাত পা নিষপিষ করে।তাকে কাঁদানোর আগ পর্যন্ত আমি শান্তি পায় না। তাকে আমি আগে হোক বা পিছে হোক কাঁদিয়েই ছাড়ি। আচ্ছা ভাবো তো মেঘ বরপক্ষ আজকে বিয়েতে আসল না,তোমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে,তোমার মা বাবা সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না, সবার চোখে মুখে কান্নার অশ্রু। পরিস্থিতিটা কেমন হবে বলতো?দারুণ হবে তাই না? এতক্ষণে হয়ত তোমার ব্রিলিয়ান্ট মাথায় এটা ঢুকে গেছে আমি কি বলতে চাচ্ছি। হ্যা তুমি ঠিকই ভাবছো তোমার ভালবাসার সাগর, যাকে তুমি অনেক ভালবাসো সে আজকে তোমাকে বিয়ে করতে আসছে না।আজকে খুব খুশি লাগছে আমার। এতদিন ধরে আমি যে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছিলাম আজকে তোমাকে কাঁদিয়ে,পুরো সমাজের সামনে তোমার মুখে চুনকালি মাখিয়ে আজকে আমার এই প্রতিশোধের সমাপ্তি করাবো। আজকে তোমাকে কাঁদিয়ে আমি শান্তির নিদ্রাতে ডুব দিব। ভালো থেক মেঘ, পরবর্তী সীন দেখার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করিও হাহাহা।
সাগর কেন এইসব করছে?কিসের প্রতিশোধের কথা বলছে। বুঝতে পারছি না।ও হয়ত আমার সাথে ফাজলামি করছে। প্রথমদিকে ওর এই ধরণের মেসেজ দেখে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,ভেবেছি সত্যি সত্যি ও বিয়েতে আসবে না। কিন্তু পরক্ষণেই আমার মনে হল,ও তো সবসময় যে কোন মূহুর্তে আমার সাথে ফাজলামি করে বসে। আমাদের রিলেশন চলাকালীন ও এরকমভাবে আমাকে ভয় দেখিয়ে প্রথমে আমাকে কাঁদাত, তারপর আমার কান্না দেখে ও অট্টহাসিতে ফেটে পড়ত।বলত আরে বোকা মেয়ে ফাজলামি করেছিলাম এতক্ষণ ধরে। আসলে দেখতে চাচ্ছিলাম কাঁদলে তোমাকে কেমন লাগে?
কিন্তু সেদিনের সে কথাগুলো মেনে নিলেও আজকে মেনে নিতে পারছি না।সেসময়ের পরিস্থিতি একরকম ছিল আর আজকের পরিস্থিতি আরেকরকম। এমন দিনেও কেউ এভাবে ভয় দেখিয়ে ফাজলামি করে। এরকম ফাজলামির মানে কি?এখন কল দিয়ে ওকে ইচ্ছামত বকা দিব, আজকে ও আমাকে যতই কাঁদাতে চাক না কেন আমি কিছুতেই কাঁদবো না,ওর এই ফাজলামি আমি এখনি বের করছি।
ওকে কল দিলাম,সাথেসাথে কল রিসিভ করল।সাগর এইরকম ফাজলামির মানে কি?প্লিজ আজকের দিনেতো এইসব বাদ দাও।আমাদের বিয়ের পর আমার সাথে যতখুশি ফাজলামি করো কিন্তু এখন এইসব ফাজলামি বন্ধ কর।তুমি জান প্রথমে তোমার এই মেসেজ পেয়ে আমি কত ভয় পেয়ে গেছি।ভেবেছি তুমি সত্যি সত্যি আমার সাথে এরকম করবে। কিন্তু পরে মনে হল তুমি আমার সাথে ফাজলামি করছ। আমি তো জানি তুমি আমার সাথে কখনো এরকম করবেনা।আমি আমার সাগরকে চিনি।সাগর তোমার মুখ দিয়ে একটাবার শুধু একটাবার বল তুমি আমার সাথে এতক্ষণ ধরে ফাজলামি করছিলে, আমাকে মেসেজে তুমি যা জানিয়েছ সব মিথ্যা।শুধু একটাবার আমি তোমার মুখ থেকে এই কথা শুনতে চাই,প্লিজ… তাহলে আমি মনে খুব শান্তি পাব।আমার এখনো মনের ভয় কাটেনি।সাগর…. কিছু বলছ না কেন?কিছু বল?
এই মেয়ে তুমি কি এক কথায় বুঝ না।মেসেজে তোমাকে যা বলেছি সব সত্যি। আমি মিথ্যা কিছু বলি নি।তোমাকে আমি বিয়ে করতে আসছি না।
সাগর এইসবের মানে কি?এই মূহুর্তে তুমি এইসব কি বলছ?তুমি বুঝতে পারছ তুমি কি বলছ?দেখ আমার উপর যদি তোমার কোন রাগ থাকে বিয়ের পর আমরা দুইজন এই বিষয় নিয়ে কথা বলে সমস্যার সমাধান করতে পারি।কিন্তু প্লিজ এইসব ফাজলামি এখন বাদ দাও। বিয়েতে তাড়াতাড়ি চলে আস।আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
এই তোর সমস্যা কি?তোর কোন কারণে মনে হচ্ছে আমি তোর সাথে ফাজলামি করছে।আমাকে কি তোর জোকার মনে হয় যে আমি তোর সাথে ফাজলামি করব।
সাগর তুমি আমার সাথে এইরকম ব্যবহার কেন করছ?তোমার এই ধরণের কথায় আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।প্লিজ সাগর তোমার এইসব কথা আমার ভালো লাগছে না।তুমি চলে আস বিয়েতে সবাই তোমার জন্য বসে আছে।
তুই সহ তোর মা বাবা বসে থাক আমার তাতে কিছু যায় আসে না।আমি আসছি না। তোর সাথে আমি এতদিন ভালবাসার নাটক করেছি,আর তুই কি বোকা মেয়ে আমার এই ভালবাসাকে সত্যি ভেবে বসেছিস। আবার আমাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেছিস।আসলেই তুই একটা বোকা।
ভালবাসার নাটক!!সাগর এইসব তুমি কি বলছ?আমি তোমার কি এমন ক্ষতি করেছি যার জন্য তুমি আমার সাথে এই জঘণ্য খেলা খেলছ।আমার অপরাধটা কি?
অপরাধ হাহাহা….তোর মেমোরী এমন কেন বলতো?আগের সব কথা ভুলে গেছিস।দাঁড়া আমি তোকে মনে করিয়ে দিচ্ছি… মনে আছে ৪ বছর আগে তুই আমাকে পাব্লিক প্লেসে আমার বন্ধুদের সামনে আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলি। তুই এই কথা এত তাড়াতাড়ি কেমন করে ভুলে গেলি?আমি তো এইসবের কিছুই ভুলে নি।বারবার আমার কানে সেই থাপ্পড়ের আওয়াজ বাজে।ওইদিন থেকে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি তোর উপর আমি প্রতিশোধ নিব। প্রথমে তো ভেবেছিলাম তোর সর্বনাশ করব।কিন্তু তোর সর্বনাশ করলে তুই হয়ত নিজের জীবন শেষ করে দিতি,নাহলে ঘটনাটা ধামাচাপা দিয়ে রাখতি।তাহলে আমার প্রতিশোধটা ও পূরণ হত না।আমাকে যেমন করে পাব্লিক প্লেসে,আমার বন্ধুদের সামনে অপমানিত করেছিস,আমিও তোকে ঠিক একিভাবে অপমান করতে চেয়েছি।তাইতো তোর সাথে ভালবাসার মিথ্যা অভিনয় করে গেছি এতদিন।আমি এতদিন এই দিনটার আশায় ছিলাম।আজকে তোর মতন আমার ও সেই স্বপ্নের দিন হাজির হয়েছে। আজকে বিয়েতে আমি যখন আসবো না তখন সবার সামনে তুই, তোর মা বাবা অপমানিত হবি।তোর সে থাপ্পড়ের অপমান আমার ইগোকে হার্ট করেছিল সেদিন। আজকে তুইসহ তোর ফ্যামিলি অপমানিত হলে আমার কলিজা ঠাণ্ডা হবে।তোর সেই ভুলের শাস্তি আজকে তুইসহ তোর ফ্যামিলি ভোগ করবে।
সাগর আমি সেইদিনের সে ঘটনার জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি।আর তুমি!!এত্ত ইগো তোমার!! তোমার মনে এই ছিল এতদিন?তোমার মতন একটা অমানুষকে আমি ভালবেসেছি….আজ তোমার এই ইগোর জন্য আমাকে অপমানিত হতে হবে….অপমানিত হতে হবে আমার মা বাবাকে। যে দোষ আমার মা বাবা করেনি সে দোষের শাস্তি তাদের পেতে হবে। সাগর তুমি এতদিন আমার সাথে ভালবাসার মিথ্যা অভিনয় করে আমাকে ঠকিয়েছ….. আমাকে আজকে যে পরিমাণ কষ্ট দিয়েছ আল্লাহ যদি এইসব দেখে থাকে তাহলে আমি বলছি আমার সাথে যেমন তুমি ভালবাসার মিথ্যা অভিনয় করেছ তোমার সাথে ও এরকমভাবে কেউ ভালবাসার মিথ্যা অভিনয় করবে….একটুকরো ভালবাসার পরশ পাওয়ার জন্য তুমি কেঁদে কেঁদে বেড়াবে কিন্তু তোমার কপালে কখনো কারও ভালবাসা জুটবে না।আই হেইট ইউ সাগর।
আরে…যা যা… এই সাগর ভালবাসার জন্য কারো পিছনে দৌঁড়ায় না,সাগরের পিছনে মেয়েদের ভালবাসা দৌঁড়ায়।তোর এইসব ফালতু কথার ঝুড়ি তোর কাছে রাখ।আর কয়েক মিনিট পর তামাশার খেলা দেখতে নিজেকে তৈরী কর। Best of luck. এই বলে কল কেটে দিল।
সাগর আমার সাথে এইরকম করতে পারল?আমি এখন এই মুখ কেমন করে দেখাবো… আমার মা বাবা ওদের কি হবে?যে বিশ্বাস আমার উপর তারা করেছিল সে বিশ্বাসের কি হবে?এর থেকে যদি ওরা আমাকে ওদের পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিত তাহলে হয়ত আজকে এইদিন দেখতে হত না।আমার মা বাবাকে অপমানিত হত না। বাইরে থেকে চিল্লাচিল্লি কান্নাকাটির আওয়াজ শুনলাম। জানালা দিয়ে দেখছি সাগরের মা বাবা আসছে কিন্তু সাগর আসে নি। সাগর নাকি পালিয়ে গেছে।সাগরের মা বাবার কথাবার্তা শুনে আমার মা বাবা পাগলের মতন কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। বিয়ের বাড়িতে আমন্ত্রিত মেহমানরা নিজেদের মধ্যে কানাঘুষা লাগিয়ে দিয়েছে।মা বাবাকে সান্তনা দেওয়ার জন্য তন্ময় স্যার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের কান্নাকাটি কিছুতেই থামছে না। তারা তো জোরে জোরে কান্নাকাটি করতে পারছে কিন্ত আমি… আমিতো সেটাই পারছি না।খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। মা বাবার মতন কেঁদে এই কষ্টের ব্যথা কমাতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার হাত পা বাঁধা। মেয়েদের এত জোরে কাঁদার কোন অধিকার নেই।আমার জন্য শুধু আমার জন্য তাদের আজকে এই অবস্থা।আমার পছন্দের উপর অগাধ বিশ্বাস ছিল তাদের, তাই আমার পছন্দ অনুযায়ী তারা আমার বিয়ে দিতে রাজি হয়েছে সাগরের সাথে।কিন্তু সাগর….ও কি করল? ও আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে দিয়েছে। আমার জন্য আজকে আমার মা বাবাকে লোকের কথা শুনতে হচ্ছে। আমি কাঁদছি,মা বাবা কাঁদছে।এটাই তো তুমি চেয়েছিলে!! তুমি না আসাতে হাসি খুশিতে ভরা বিয়ে ঘরে আজ শশ্মানঘাটের মরা কান্নাতে পরিণত হয়েছে।এটাই তো তুমি দেখতে চেয়েছিলে। কোথায় তুমি?তোমার প্রতিশোধ নেওয়া সফল হয়েছে। কাপুরুষের মতন কেন পালিয়ে গেলে? সাহস করে একটাবার এসে দেখে যেতে কি অবস্থা করে গিয়েছ তুমি? (কেঁদেকেঁদে) আজ শুধু আমি ঠকি না আমার সাথে আমার মা বাবাও ঠকেছে। ওদের সামনে আমি এই মুখ কি করে দেখাবো। আমি পারবো না এই মুখ নিয়ে তাদের সামনে যেতে। তাই এই জীবন শেষ করে দিব।আমি জানি আত্মহত্যা করা মহাপাপ।কিন্তু আমার কিছু করার নেই। আমি ওদের এই কষ্ট এই কান্না আর দেখতে পারছি না।আমাকে মাফ করে দিও মা বাবা।তোমাদের মেয়ের জন্য আজকে তোমাদের এই অবস্থা,আমার উপর তোমাদের যে বিশ্বাস ছিল সে বিশ্বাসের মর্যাদা আমি রাখতে পারি নি।
চলবে…
স্যারযখনস্বামী পার্ট_০১
স্যারযখনস্বামী
পার্ট_০১
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
আজ আমার বিয়ে। খুব খুশি লাগছে।এই দিনটার জন্য আমি কতকাল প্রতীক্ষায় ছিলাম। কারণ আমার দীর্ঘ ৩ বছরের প্রেমের পূর্ণতা পাবে এই বিয়ের মাধ্যমে।আমার আর সাগরের দীর্ঘ ৩ বছর ধরে প্রেম। আমি যখন অনার্স ২য় বর্ষে উঠি তখন থেকেই আমার মা বাবা আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। মা বাবা জিজ্ঞেস করেছিল আমি কাউকে পছন্দ করি কিনা?যদি করে থাকি তাহলে তা যেন আমি তাদের নির্ভয়ে বলি।আমার পছন্দের কোন ছেলে থাকলে তারা আমাকে তার সাথে বিয়ে দিতে রাজি আছে।আমি সেদিন মা বাবাকে আমার আর সাগরের রিলেশনের কথা বলে দিলাম।তারা ও আমাদের প্রেম মেনে নিল।আমি খুব সৌভাগ্যবতী এমন মা বাবা পেয়ে যারা আমার উপর তাদের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার জন্য কোনপ্রকার চাপ না দিয়ে আমার পছন্দকে গুরুত্ব দিয়েছে। অন্য ছেলের সাথে কেন রিলেশন করছি,রিলেশন কত বছর ধরে চলছে সেসব জিজ্ঞাসা না করে তারা শুধু এতটুকুই জানতে চাইল ছেলের নাম কি? ভাবাও যায় এমন মা বাবা আজও আছে। ইচ্ছে করলেই তারা আমাকে অনেক বকাঝকা দিতে পারত,কথা শুনাতে পারত কিন্তু না তারা সেটা করে নি। আমি জানি তারা কেন সেটা করে নি কারণ তারা আমাকে অনেক বিশ্বাস করত আর যাই হোক তাদের মেয়ে তাদের বিশ্বাস নিয়ে খেলবে না আর ভুল পথে পা বাড়াবে না। আমার সুখেই তাদের সুখ। তাই তারা আমার সুখের জন্য সাগরকে মেনে নিয়েছে।আমিও আজীবন সেই চেষ্টা করে গেছি যাতে আমার জন্য তাদের সম্মানহানি না হয়। সেজন্য আমি আমার রিলেশনে সবসময় সতর্কতা অবলম্বন করেছি। আমার আর সাগরের পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক করা হল। আমার আর সাগরের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে । ওর আর আমার টুনাটুনির সংসার হবে।ভাবতেই খুব ভাল লাগছে। আমার বিয়েটা গ্রামের বাড়িতে হবে।মা বাবার খুব ইচ্ছা বিয়েটা যাতে আমাদের নিজের গ্রামের বাড়িতে হয়।আমার ইচ্ছা তারা কোন প্রশ্ন ছাড়াই পূরণ করতে যাচ্ছে আমি তাদের এই সামান্য আবদার রাখতে পারব না তা কেমন করে হয়। তাদের ইচ্ছায় বিয়েটা গ্রামে অনুষ্ঠিত হবে।ভার্সিটিতে আমার সবচেয়ে বেস্ট ফ্রেন্ড তাসপিয়াকে বিয়ের দাওয়াত দিলাম।বাকি আর কাউকে এই খবর বলে নি। বান্ধবীকে বিয়ের দাওয়াত দেওয়ার পর ক্লাস থেকে যখন বের হতে যাব তখনি আমাদের ভার্সিটির সবচেয়ে হ্যান্ডসাম, গুড লুকিং তন্ময় স্যারের সামনে পড়লাম। উনি হচ্ছেন আমাদের ভার্সিটির সব মেয়েদের ক্রাশ। পড়ালেখায় খুব ভালো হওয়ায় আর তাড়াতাড়ি গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করায় অল্প বয়সেই ভার্সিটিতে শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়ে যান। উনি আমার কাছে এসে আমাকে দাঁড়াতে বললেন। মেঘ দাঁড়াও।
জ্বী স্যার।
শুনলাম তোমার নাকি ৩ দিন পরে বিয়ে।কথাটা কি সত্যি?
জ্বী স্যার।
আমার মুখ থেকে হ্যা শব্দ শুনায় মনে হল উনার চিন্তাগ্রস্ত মুখে মেঘের ছায়া নেমেছে। প্রতিদিন যাকে হাস্যউজ্জ্বলভাবে থাকতে দেখি আজ তার মুখটা কেমন যেন বিষাদে ছেয়ে গেছে।মুখটা শুকিয়ে কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।উনি গম্ভীর মুখে বললেন তোমার বান্ধবীকে বিয়ের দাওয়াত দিলে অথচ আমাকে দাওয়াত দিলে না?আমাকে কি তোমার বিয়ের দাওয়াত দেওয়া যেত না!!
স্যারের কথায় কিছুটা অবাক হলাম।স্যার আমার বিয়ের কথা কেমন করে জানল? আমিতো শুধু তাসপিয়াকে আমার বিয়ের দাওয়াত দিছি।আমার বিয়ের কথাতো একমাত্র ওই জানে।বুঝছি শয়তানীরটা পেটে কিচ্ছু থাকেনা।স্যারের সাথে ওর বন্ধুসুলভ সম্পর্ক তাই হয়ত স্যারকে গড়গড় করে সব বলে দিছে।
মেঘ কি ভাবছ?আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না যে?
না স্যার… আসলে আমার বিয়েটা আমাদের গ্রামের বাড়িতে হচ্ছে।আপনাকে দাওয়াত দিতাম কিন্তু আবার ভাবলাম আপনি ওতদূরে যাবেন না তাই আর কি?
তোমার গ্রামের বাড়িতে বিয়ে হোক বা যেখানে বিয়ে হোক অন্তত দাওয়াততো দিতে পারতে?সম্ভব হলে যেতেও পারি।বিয়েতো আর বাংলাদেশের বাইরে হচ্ছে না।এইখানেই হচ্ছে। তোমার বিয়েতে আমি যেতে চাই। আমাকে আমন্ত্রণ করা যাবে?
খুব লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলাম সেদিন।আসলেই তো দাওয়াত দিলে বা কি এমন হত?কমপক্ষে এরকম লজ্জায় তো আর পড়তাম না।খুব ভুল করে ফেলেছি।
মেঘ কোথায় হারিয়ে যাও একটু পর পর।দেখ তুমি দাওয়াত না দিলেও কিন্তু আমি তোমার বিয়েতে আসছি। মেঘ তোমার বিবাহিত জীবন সুন্দর আর সুখের হোক এই দুয়া করি কথাটা বলতে গিয়ে উনার গলাটা কেঁপে উঠল।
জ্বী স্যার আপনি আমার বিয়েতে আসলে আমিও খুব খুশি হব। এই কথাটা বলতে গিয়ে স্যারের চোখে তাকালাম।অসম্ভব লাল হয়ে গেছে ইতিমধ্যে উনার চোখ। চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।
আমি আবার চোখ সরিয়ে নিলাম।আজকে স্যারের ব্যবহার খুব আজব ছিল। যাইহোক এইসব ভেবে কাজ নেই।আজকে বাড়িতে যাব। বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। সবাই খুব হাসিখুশি।আত্মীয়স্বজন ও চলে এসেছে।পুরো বাড়িতে হৈ-হুল্লড় অবস্থা। সবার সাথে হাসিখুশিতে কেমন করে যে দিনগুলো পাড় হয়ে গেল টের পেলাম না। অবশেষে সে প্রতীক্ষিত দিন হাজির হল।তাসপিয়া বিয়েতে আসতে পারেনি। ওর মা নাকি খুব অসুস্থ তাই আর ওর আসা হল না।মনটাই খারাপ হয়ে গেল।কিন্তু বিয়েতে স্যার এসেছে।মা বাবা খুব খুশি হয়েছে আমার বিয়েতে স্যার আসায়।স্যার আমার বিয়েতে আসবে সেটা আমার ভাবনার বাইরে ছিল।বিয়েতে আসতে না আসতে আমার মা বাবার সাথে উনি গল্প জুড়িয়ে দিয়েছেন।আর আমার মা বাবাও স্যারের সাথে অনেক ফ্রী হয়ে গেছে। কিন্তু আমার জানি কেমন লাগছে।ক্লাসেও স্যারের সামনে থাকতে আনইজি লাগে।আর স্যার এখন আমার বিয়েতে উপস্থিত এখন আরও বেশি অস্বস্তিকর লাগছে।
পার্লার থেকে লোক আনা হয়েছে আমাকে সাজানোর জন্য। সবাই এখন আমাকে সাজাতে ব্যস্ত। এত্ত বিরক্তিকর লাগছে।সাজগোছ জিনিসটা আমার বরাবরই অপছন্দের।পুরো ২ ঘন্টা পার্লারের লোকেরা আমাকে তাদের মনমতন সার্কাসের জোকারের মতন সাজিয়ে দেওয়ার পর ক্ষান্ত হল।আর আমিও এদের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেলাম।বিয়ে বাড়িতে সবাই এখন ব্যস্ত। আমি রুমে একা বসে আছি। হঠাৎ আমার মোবাইলে একটা মেসেজ আসল।সাগরের পাঠানো মেসেজ।এই মেসেজ দেখে আমার পুরো দুনিয়া উল্টিয়ে গেল।আমার সাগর আমার সাথে এমন করবে আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।এ কিছুতেই আমার সাগর হতে পারে না।
চলবে….
রোমান্টিক_অত্যাচার (২) শেষ_পর্ব
রোমান্টিক_অত্যাচার (২)
শেষ_পর্ব
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
চাচ্চু দ্রুত আশফিকে ধরে ফেললো।চাচ্চু আর আলিশা আশফিকে ধরে বিছানার উপর বসালো।চাচিমা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে আশফিকে ধরে একটু খাইয়ে দিল। আশফি কিছুক্ষণ বসে থাকে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।চোখে মুখে পানি দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো।চাচ্চুকে বলল,
-“চাচ্চু ঘরে বসে টিভিতে নিউজ দেখার সময় নেই।বের হতে হবে আমাদের।
-“সে তো অবশ্যই যাবো।কিন্তু বাবা তুই আর একটু বিশ্রাম নে।তোর চোখ মুখের অবস্থা এখনো ভালো লাগছেনা।
-“আরে আমার সবকিছুই ঠিকআছে। তুমি চলো তো।বিমান কতৃপক্ষের সাথে কথা বলতে হবে।
আশফি ওর চাচ্চুর সাথে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।ওখানে গিয়ে জানতে পারলো যে ঐ প্লেইনে যে কয়জন যাত্রী ছিল তার ভেতর মাত্র সাতজন বেঁচে আছে তাও গুরুতরভাবে আহত হয়ে।আর বাকি সবাই মারা গিয়েছে। আশফি আর ওর চাচ্চু নিহত আর আহত যাত্রীদের কাগজের লিস্ট দেখলো। লিস্ট দেখার পর জানতে পারলো আহত এবং নিহত যাত্রীদের কোনো লিস্টেই মাহি আর আশনূহার নাম নেই।কিন্তু চিন্তাটা কমে যাওয়ার বদলে আরো বেড়ে গেলো।আশফি মাহি আর আশনূহার ডিটেইলস বলল বিমান কতৃপক্ষকে।
তারপর জানতে চাইলো,
-“এই দুইজন যাত্রী কালকের ফ্লাইটে ছিল?
-“হ্যা,ওনারা ছিল।
-“তাহলে লিস্টের কোথাও তো ওদের নাম দেখতে পেলাম না।
-“আচ্ছা আপনারা আমাকে একটু সময় দিন।আমি ভালো করে তথ্যটা জেনে নিই।
কম্পিউটারে মাহি আর আশনূহার তথ্যগুলো সার্চ করে বিমান কতৃপক্ষ আশফিকে জানালো,
-“নুসরাত জাহান মাহি এবং ওনার বেবি আশনূহা চৌধুরী দুজনকে থাইল্যান্ড নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
-“থাইল্যান্ড কেনো?ওরা তো জাপানের টিকেট কেটেছিল।
-“হ্যা তবে নুসরাত জাহান মাহি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে।হঠাৎ করেই উনি মিনি স্ট্রোক করে যার জন্য থাইল্যান্ডের সিটি হসপিটালে ওনাকে শিফট করা হয়। এখন উনি ওখানেই আছেন।
চাচ্চু আর আশফি অনেকটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।চাচ্চু বলল,
-“থ্যাংকগড।মাহি আর আশনূহা বেঁচে আছে।
বিমান কতৃপক্ষ বলল,
-“হ্যা….উনি থাইল্যান্ড নেমে গিয়েছিলেন আর তারপরেই প্লেইন ক্রাশ করে।
আশফিকে দেখে মনে হচ্ছে নতুন করে প্রাণটা ফিরে পেলো।ওরা দুজন বাসায় গিয়ে সবাইকে খবরটা জানালো।এরপর আশফি থাইল্যান্ড যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল।থাইল্যান্ডে সিটি হসপিটালে আশফি কথা বলে নিল।ওদেরকে জানিয়ে দিল যে আশফি না যাওয়া পর্যন্ত ওদেরকে যেনো রিলিজ করা না হয়।দুদিন পর আশফি সবার থেকে বিদায় নিয়ে থাইল্যান্ড চলে গেলো।
ওখানে পৌঁছানোর পর আশফি হসপিটালে গিয়ে দেখলো মাহি এখনো ট্রিটমেন্টে আছে।ডক্টরের সাথে কথা বলে জানতে পারলো অতিরীক্ত টেনশনের আর রক্তচাপের পরিমাণ বেরে যাওয়ার কারণে মিনি স্ট্রোক করেছে।মেডিসিন চালু রেখেছে ওরা।আশফি চাইলে আজই রিলিজ করে দিবে মাহিকে।আর আশনূহাকে দেখাশোনা করার জন্য একজন নার্সকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আশফি একদিন থাইল্যান্ড থেকে মাহি আর আশনূহাকে নিয়ে জাপান চলে এলো।স্ট্রোক করার পর থেকে আশফি সবসময় মাহির কাছে থাকতো।এমনকি অফিসে পর্যন্ত যেতোনা।মাহি প্রেগন্যান্ট থাকাকালীন যতোটা যত্ন করতো ওকে তার থেকে দ্বিগুণ পরিমাণ যত্ন করে আশফি মাহিকে।আশনূহারও সম্পূর্ন খেয়াল আশফিই রাখে শুধু খাওয়ার দায়িত্বটুকু মাহি পালন করে।মাহি এখন পুরোপুরি সুস্থ তবুও আশফি মাহিকে কখনো একা থাকতে দেয়না।কিন্তু মাহিকে ঘরে শুয়ে বসে ও থাকতে দেয়না।প্রতিদিন সকাল এক্সারসাইজ থেকে শুরু করে মাহির টাইম মেইনটেইন করে খাওয়া-দাওয়া সবকিছুতে খেয়াল রাখতো আশফি তবে আগের থেকে একটু বেশি।এভাবে প্রায় এক মাস কেটে গেলো।একদিন সন্ধ্যাই মাহি আর আশফি বাইরে ঘুরতে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিলো।তখন দরজা খুলতেই দরজার সামনে আলিশাকে দেখতে পেল আশফি।আশফি পুরো অবাক হয়ে গেছে।আলিশাকে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই আলিশা আশফি আর মাহিকে বলল,
-“আমি কলিংবেলে চাপ দেওয়ার আগেই তোমরা বুঝে ফেলেছো আমি এসেছি?
মাহি আলিশাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“এতো সুন্দর একটা সারপ্রাইজ!আমরা সত্যিই একদম আশা করিনি।
আশফিও কিছুটা খুশি হয়ে আলিশাকে বলল,
-“আচ্ছা ভেতোরে এসো।তারপর সবকিছু শুনি হঠাৎ করে সারপ্রাইজ দেওয়ার কারণটা কি?
আলিশা আশফিকে বলল,
-“কিন্তু আমি তো একা আসিনি।
মাহি আর আশফি আলিশার পেছনে তাকালো কিন্তু কাউকে দেখতে পেলোনা। মাহি আলিশাকে জিজ্ঞেস করলো,
-“একা আসোনি?আর কে এসেছে? কাউকে তো দেখতে পাচ্ছিনা।
-“সে লজ্জা পাচ্ছে।যদিও আমিই তাকে লজ্জা পেতে বলেছি।
-“মানে?
-“তোমাদের বাড়ির গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে সে।
আশফি আলিশার দিকে বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে গেটের সামনে গেলো।সেখানে দুপুরকে দেখতে পেয়ে আশফি পুরোই অবাক।ওর আর বুঝতে বাকি নেই ওরা দুজন একসাথে এসেছে।দুপুরের সাথে আশফি হ্যান্ডশেক করলো পরষ্পরকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর দুপুরকে আশফি ভেতোরে নিয়ে এলো।মাহিও দেখে অনেক চমকে গেলো।ওদের বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে দুপুর আর আলিশাকে নিয়ে মাহি আর আশফি ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।আলিশা বলল,
-“আশফি তুমি জানতে চাইবেনা মি.দুপুর সাহেবের পাথর হৃদয় কিভাবে গলে জল হলো?
আলিশা আর দুপুর দুজনে মাহির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিল।আশফি বলল,
-“সেটা শোনার জন্য আমি দৃঢ় আগ্রহ নিয়ে বসে আছি।
আলিশা বলল,
-“তোমার বউ এর মাধ্যমে।হ্যা…… সে সত্যিই আমার জন্য অনেক বড় একটা কাজ করেছে।আর দুপুরের ভুল সিদ্ধান্ত থেকে বের হতে সাহায্য করেছে। যেদিন মাহি জাপান চলে আসার জন্য বের হয়েছিল সেদিন আগে মাহি দুপুরের কাছে আগে গিয়েছিল।এই তুমি বলো তারপর কি হয়েছিল।
দুপুরকে উদ্দেশ্য করে আলিশা বলল।
তারপর দুপুর বলতে শুরু করলো,
-“সেদিন মাহি আমাকে আলিশাকে ভালোবাসার জন্য চাপ দেয়নি।
ভালোবাসা বুঝতে আর ভালোবাসা শিখতে চাপ দিয়েছিল।ও আশফি আর মাহির ভালোবাসার গল্প শুনিয়েছিল আমাকে।আশফি কিভাবে মাহির ভালোবাসা অর্জন করেছে,মাহি এখন আশফিকে কতোটা ভালোবাসে।আর ওদের দুজনের মাঝে ভালোবাসার সাগর কতোটা গভীর সেটা বলেছে আমাকে। সেই সাগরের প্রতিটা ঢেউয়ে যে কতো পরিমাণ সুখ বয়ে নিয়ে আসে সেই সুখের পরিমাণ জানিয়েছে আমাকে। পরিমাণটা হয়তো অগণিত ছিল।তবুও আমি সেই পরিমাণটা বুঝতে পেরেছি।ও এতো নিখুঁতভাবে তোমাদের সুখে থাকা তোমাদের ভালোবাসার গল্পটা বর্ণনা করেছে যে আমার কাছে মনে হচ্ছিলো আমি যেনো আমার চোখেন সামনে সবকিছু দেখতে পাচ্ছি।সেই সুখ সেই ভালোবাসা আমিও অনুভব করতে পারছি।একটানা তিনদিন আমি শুধু মাহির বলা কথাগুলোই ভেবেছি।আমার মনে হচ্ছিলো আমিও এমন সুখ পেতে পারি,এমনকরেই কারোর ভালোবাসা পেতে পারি,তাকে এমনকরেই হয়তো ভালোবাসতে পারি।আর সেই এমন কেউটা আলিশা ছাড়া আর কেউ হতে পারেনা।তারপর আর একটাদিন ও দেরী না করে আমি সরাসরি আলিশার বাবার কাছে গিয়ে আলিশাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছি।
-“হ্যা।আমিই বাবাকে খবরটা দিতে বারণ করেছিলাম।ভেবেছিলাম আমি আর দুপুর এসে সরাসরি তোমাদের সারপ্রাইজ দিবো।আর আজকে দিয়েই ফেললাম সারপ্রাইজটা।
আশফি মনেমনে খুবই খুশি হলো।কিন্তু খুশিটা মাহির সামনে প্রকাশ করলনা। হয়তো অন্যভাবে অন্যকোনো সময় মাহিকে ওর খুশিটা দেখাবে।আলিশা আশফি আর মাহিকে বলল,
-“তোমরা বুঝি কোথাও ঘুরতে বের হচ্ছিলে?চলো,আমরাও যাবো তোমাদের সাথে।সেলিব্রেট করবো আমাদের খুশিটা তোমাদের সাথে।
আশফি বলল,
-“আরে সেটা তো অবশ্যই করা যাবে। কিন্তু এইতো এলে।আগে ফ্রেশ হও,রেস্ট নাও।তারপর না হয় কাল বের হওয়া যাবে।
-“আরে না।এক্ষণি যাবো আমরা।দুপুর তুমি যাবে তো নাকি রেস্ট নিতে চাইছো?
-“না না রেস্ট নিতে হবেনা।লেটস এনজয়।
আশফি মাহি আর দুপুর আলিশা একসাথে বের হলো।আশনূহা ছিল গভরনেসের কাছে।তবে আশনূহাকে ওরা বাসায় রেখে যায়নি।গভরনেসকে সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওরা সঙ্গে দুটো গাড়ি নিলো।একটা গাড়িতে আশফি মাহি আর আশনূহাকে নিয়ে গভরনেস। আর অন্য গাড়িটাতে দুপুর আর আলিশা।গাড়িতে উঠার আগে দুপুর আশফিকে বলল,
-“মি.আশফি আমি কি আপনার গাড়িটা নিজে ড্রাইভ করতে পারি?
-“অবশ্যই।আজকে না হয় আমরা নিজেরাই ড্রাইভ করি।কি বলো ডিয়ার?
মাহি আশফির হাতটা জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে ছিল।মুখে মৃদু হাসি টেনে ঘাড়টা বাঁকা করে হ্যা সূচক উত্তর দিলো।তারপর ওরা টকিওর সিটিতে ঢুকে গেলো।পুরো সিটি ওরা ঘুরে বেড়াতে লাগলো।বাইরের রেস্তোরাঁই বসে হালকা খাবার খাচ্ছে ওরা।খেতে বসে গল্প করছে।গল্পের মাঝে দুপুর আশফিকে বলল,
-“ভাইয়া আপনার বোন কিন্তু দুর্দান্ত ড্রাইভিং করতে পারে।
-“হুম তা তো জানি।কিন্তু কথা হচ্ছে আমরা একে অপরকে আপনি করে না বলে তুমি করে বললে হয়না?
মাহি আশফির কথার সাথে সাঁয় দিয়ে বলল,
-“হ্যা সেটাই।এই আপনি সম্বন্ধটা একদমই মানাচ্ছে না তোমাদের মাঝে।
দুপুর বলল,
-“ওকে ওকে।তুমিটাই চালু হলো।
এবার আলিশা কথা বলল,
-“তো মি.দুপুর আপনি যেনো কি বলছিলেন আমাকে নিয়ে?
-“ও হ্যা।যে ঘটনাটা বলতে চাইছিলাম। আলিশার ড্রাইভিং হিস্ট্রি।
মাহি বলল,
-“ড্রাইভিং হিস্ট্রি?কোনো স্মরণীয় ঘটনা নাকি?
-“স্মরণীয় বলতে শুধু স্মরণীয় নাকি? গাড়িতে ফুল সাউন্ডে গান চালিয়ে ফুল স্পীডে ড্রাইভিং করে আমাকে যা ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল আর যা হয়েছিল ঐদিন রাতে।পুরো একটা রাত জেলে কাটাতে হয়েছে।
আশফি বলল,
-“কি হয়েছিল সেদিন?
-“কি আর হবে?একটা ব্যাপার নিয়ে সে আমার উপর রেগে ছিল।গাড়িতে উঠানোর আগে আমার সাথে খুব নরমালি কথা বলল।গাড়িতে উঠানোর পর তার রাগ কাকে বলে সেটা দেখলাম।আর সেই রাগটা সে আমাকে দেখালো তার ঐ ভয়ানক ড্রাইভিং এর মাধ্যমে।রাস্তায় রুলস ব্রেক করেছিলো। তাই ওর বদলে আমি জেলে গেলাম।
মাহি বলল,
-“তার মানে আলিশার দোষটা তুমি ঘাড়ে নিয়েছিলে,তাইতো?
-“হুম।আজকে গাড়িতে বসে আবদার করছিলো ড্রাইভটা নিজে করার জন্য। আমি কি আর সেই কাঁচা ভুল।মনে থাকতে আমি তো আর ওকে কখনো ড্রাইভ করতে দিবোনা।
আলিশা দুপুরকে বলল,
-“এই শোনো,সেদিন আমার খুব রাগ হচ্ছিলো তাই ওভাবে ড্রাইভ করেছিলাম। তাছাড়া আমি ড্রাইভিং এ খুব পারফেক্ট। মাহি তুমিই বলো,তুমি তো আমার সাথে ড্রাইভিং চ্যালেঞ্জ করেছিলে।সেদিন তো দেখেছিলে আমার ড্রাইভ করা। আফসোস সেদিন আশফি না এসে পড়লে আমিই চ্যাম্পিয়ন হতাম।
-“আচ্ছা?তখন কিন্তু আমি তোমার সামনে ছিলাম।আশফি আমার গাড়ির সামনে এসে না দাড়ালে আমিই চ্যাম্পিয়ন হতাম।
আশফি ওদের দুজনের কথা থামিয়ে দিয়ে বলল,
-“এবার আপনারা থামুন।আমি কিছু বলি।মেয়েদের এসব ব্যাপারে কতদূর দৌড় সে আমরা ভালো করেই জানি। আর মাহির ব্যাপারটা একটু বিশ্বাস করা যায় যে মাহি ড্রাইভিং এ চ্যাম্পিয়ন হতে পারতো সেদিন।কারণ ওকে ড্রাইভিংটা আমি শিখিয়েছি।আমার থেকে ওটা তুমি নিশ্চই ভালো জানোনা,আলিশা?
-“নিজের বউ এর সাপোর্ট নেওয়া হচ্ছে,তাইনা?মেয়ে বলে কি ছেলেদের সাথে প্রতিযোগিতায় পারবোনা?তুমি আমার ড্রাইভিং দেখোনি বলে এমনটা বলছো।
দুপুর আলিশাকে বলল,
-“তৃমি মন খারাপ করছো কেনো?আমি তো তোমার ড্রাইভিং দেখেছি।ভাইয়া যেমন তার বউ এর সাপোর্ট নিচ্ছে আমিও আমার বউ এর সাপোর্ট নিচ্ছি।
মাহি আর আশফি হেসে দিল।দুপুরের কথা শুনে আলিশা একটু লজ্জা পেলো। আশফি বলল,
-“আচ্ছা ওটা ব্যাপার না।আমাদের দুজনের বউ ই চ্যাম্পিয়ন।
দুপুর বলল,
-“চ্যাম্পিয়ন তো যে কোনো একজন হয়।
-“হুম তা ঠিক।
-“আচ্ছা আজকে আর একটা প্রতিযোগিতা হলে কেমন হয়,কাপলদের মাঝে?
আলিশা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল। মাহি আলিশার কথা শুনে বলল,
-“এখন?আজকে থাক অন্য কোনোদিন না হয় কার রেসটা হবে?এখন চলোনা সমুদ্রের পারে যায়।বোটে ঘুরবো।রাতে সমুদ্রের বুকে ঘুরতে খুব ভালো লাগে। অন্যরকম একটা রোমান্স কাজ করে।
মাহির কথা শুনে আশফি বলল,
-“তাই?কই আমাকে তো কখনো বলোনি?
-“বলার আগেই তো তুমি বুঝে যেতে তো বলবো কি?
আলিশা আর দুপুর হেসে ওদের বলল,
-“তোমাদের চোখে চোখে ও যে এতো রোমান্স কাজ করে যা দেখলে সত্যিই খুব ভালো লাগে।বুঝলে দুপুর,আমাদের কিন্তু ওদের থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
আলিশা কথাগুলো বলল।আলিশার কথা বলার পর দুপুর বলল,
-“সত্যিই তাই।ভালোবাসার প্রতীকী তোমরা।
মাহি আর আশফিকে বলল দুপুর। আশফি বলল,
-“শেখার কোনো শেষ নেই।শিখবে সমস্যা নেই।এখনো চলো যাওয়া যাক, সমুদ্রে।
গাড়িতে উঠার আগে আলিশা বলল মাহিকে,
-“মাহি শোনোনা,আশনূহাকে আমাদের কাছে রাখিনা?দুপুর ওকে আমাদের গাড়িতে নিতে বলছে।ওকে আমি আমার কোলে রাখবো।
-“আচ্ছা ঠিকআছে।সমস্যা নেই।
মাহি গভরনেসকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“মিস ইয়ান আপনি বরং ওদের গাড়িতে যান।
-“ওকে ম্যাম।
ওরা সবাই যার যার গাড়িতে উঠলো। আশফি আর মাহি গাড়িতে বসে কথা বলছে।আশফি মাহিকে বলছিল,
-“আচ্ছা তুমি তোমার ফিলিংস সবসময় লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করো কেনো?
-“কই,কখন লুকিয়ে রাখলাম?
-“এইযে,সমুদ্রের মাঝে রাতের বেলা ঘুরতে তোমার খুব ভালো লাগে।তখন তোমার মাঝে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে।ওটা তো কখনো আমার সাথে শেয়ার করোনি?
-“যতোবার তোমার সাথে ঘুরতে বেরিয়েছি ততোবারই তো তুমি আমার কিছু বলার আগেই আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রাখতে।শুধু ঐ রাতটা বাদে।সেদিন তুমি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে ছিলে।ইচ্ছা করছিলো তোমাকে আর ছাড়বোনা।ওভাবেই জড়িয়ে ধরে রাখবো।কিন্তু তুমি সেদিন আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলে।
-“হুম।আচ্ছা,আজকে তোমাকে খুব ভালোবাসবো বোটে উঠে সমুদ্রের মাঝে গিয়ে।সেদিনের রাতে যতোটুকু বাকি ছিলো আজ তা পূরণ করে দিবো।
সারাটাক্ষণ তোমাকে জড়িয়ে থাকবো। আর তাছাড়া তোমার তো আমার থেকে ডাবল পেমেন্ট পাওনা আছে।
-“ডাবল কেনো?
-“দুপুরকে বোঝানোর জন্য।
-“ওহ্,আচ্ছা।তাহলে অর্ধেকটা এখনই দাও।
-“এখন?গাড়িতে রোমান্স করার শখ হলো নাকি?
-“হুম,কখনো তো করিনি।আজ না হয় লাভ বার্ডসদের(লাভারস)মত গাড়িতেই কিছুটা রোমান্স করবো।
-“তা তো আমি করতেই পারি।সেটা গাড়িতে হোক আর বাড়িতে হোক।ওটার প্রতি আমার রুচি সারাজীবন একইরকম থাকবে কখনো কমবেনা।
-“তাহলে ওয়েট করছো কেনো?
কথাটা বলেই মাহি আশফির কাছে গিয়ে আশফির গলার একপাশে চুমু খেতে শুরু করলো।মাহির ঠোঁটের ছোঁয়াই আর ওর গরম নিঃশ্বাসে আশফির শরীরটা কেঁপে উঠলো।হঠাৎ করেই আশফি গাড়িটার ব্রেক কষে ধরলো।
দুজনেই খুব জোড়ে ঝাঁকি খেলো।ঝাঁকি খেয়ে মাহি থেমে গেলো।দুজনেই আবেগ ভরপুর চোখে দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো।আস্তে আস্তে করে আশফি মাহির খুব কাছে চলে এলো। মাহির চুলের ফাঁক দিয়ে ঘাড়ে হাত দিয়ে মাহির মুখটা এগিয়ে এনে ওর গালে চুমু খেলো।তারপর মাহির ঠোঁটে দীর্ঘসময়ের চুমু খেলো।মাহিও আশফির মাথার পেছনের চুল হাতের মুঠোই চেপে ধরে দুজন দুজনের ঠোঁটে চুমু খাচ্ছিলো। আশফি গাড়িটা এমন জায়গায় দাড় করিয়েছিল যে ও বুঝতেই পারেনি ওটা রং(wrong)সাইড ছিলো।রাস্তাটা ও নিড়িবিলি ছিলো।গাড়িগুলো খুব কমই চলে এই রাস্তা দিয়ে।কিন্তু বিপদ ভাগ্যে থাকলে সেটা যে কোনোভাবে সম্পূর্ণ হয়ে যায়।আশফি মাহি দুজনেই একে অপরের মাঝে হারিয়ে গেছিলো।দূর থেকে কোনো এক ব্যক্তি ওদের সতর্ক করছিলো কিন্তু সেটা ওরা শুনতে পাচ্ছিলোনা।কারণ সামনে আর একটা গাড়ি আসছিলো।লোকটা দৌড়ে আসছে ওদের কাছে আর চিল্লিয়ে বলছে গাড়িটা রাস্তার ডানপাশ থেকে সরাতে।লোকটার কথাগুলো যখন আশফির কানে পৌঁছালো তখন সেই মুহূর্তে খুব দেরী হয়ে গিয়েছিল।আশফি সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়িটা সাইড করার চেষ্টা করছিল।কিন্তু পুরোপুরি সাইড করতে পারেনি।ঐ গাড়িটাতেও একজোড়া লাভ বার্ড ছিলো।দুজনের মাঝে কথোপকথন চলছিলো।আর রাস্তাটাও নির্জন থাকাতে সামনের দিকে ভালোভাবে না খেয়াল করেই আশফির গাড়িতে ধাক্কা লাগিয়ে দেয়।গুরুতরভাবে আঘাতটা লাগে ওদের। আশফির কালো স্যুট আর তার নিচে পড়া হোয়াইট টি-শার্ট রক্তে পুরো ভিজে যায়।আশফি ওখানেই জ্ঞান হারায় যে গাড়িটা ধাক্কা দিয়েছে ওদের সেই দুজন ছেলে মেয়ে আর যে লোকটা আশফি মাহিকে সতর্ক করছিলো তারা তিনজনে মিলে ওদের হসপিটাল নিয়ে যায়।আলিশা আর দুপুর ও ফোনের মাধ্যমে খবর পেয়ে হসপিটাল ছুটে আসে।।কিছুক্ষণ পর ডক্টর ও.টি.(O.T)থেকে বেরিয়ে দুপুর আর আলিশাকে খবর জানায়,
-“মিসেস চৌধুরী বিপদমুক্ত।আঘাতটা তেমনভাবে ওনার লাগেনি।উনি সুস্থ আছেন।
গাড়িটা যখন আশফির গাড়ির একদম কাছে এসেছিলো তখন আশফি গাড়ি সাইড করার বৃথা চেষ্টা না করে ধুম করে ড্রাইভিং স্টিয়ারিং ছেড়ে দিয়ে মাহিকে জাপটে ধরে।ওকে আড়াল করার চেষ্টা করে।যাতে আঘাতটা সম্পূর্ণ আশফির গায়ে এসে লাগে।মাহির যেনো কোনো ক্ষতি না হয়।
দুপুর আর আলিশা ডক্টরের কাছে আশফির খবর শুনে,
-“আশফির কি অবস্থা ডক্টর?ও কেমন আছে?
-“ওনার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল।পুরো আঘাতটা ওনার মাথায় এসে লেগেছে।
ওনার অপারেশনটা অনেক জটিল।
আমরা চেষ্টা করছি।প্রচুর পরিমাণ রক্ত ক্ষরণ হয়েছে ওনার।জানিনা গড ওনার কি অবস্থা করবে।
আলিশা কেঁদে ফেললো।ডক্টরকে বলল,
-“প্লিজ ডক্টর ওর যেনো কোনো ক্ষতি না হয়।ওকে সুস্থ করার জন্য যা যা প্রয়োজন তাই তাই করুন।কিন্তু ওর যেনো কোনো ক্ষতি না হয়।
ডক্টর ওদের শুধু আল্লাহকে স্মরণ করতে বলে চলে গেলো।সেদিন আশফির জ্ঞান ফিরেনি।এক বছর পর….মাহি আশফির চাচ্চুর বাড়িতে।বাগানে দাড়িয়ে বাগানে থাকা গাছ,ফুল এগুলো দেখাচ্ছে আর আশনূহাকে খাবার খাওয়াচ্ছে।হঠাৎ করে বাগানে দুপুর এলো,
-“এইযে ভাবীজি,আপনি এখানে আমার মামনিকে নিয়ে আর আমি সারা বাড়িতে আপনাকে খুঁজছি।
মাহি পিছু ফিরে তাকালো।দুপুরকে দেখে গাল ভর্তি হাসি দিল।তারপর ওকে বলল,
-“আর বর সাহেব যে?সকাল সকাল নিজের গায়ে হলুদ রেখে বউ এর গায়ে হলুদ দেখতে চলে এলে নাকি?
-“হুম।সেরকম কিছুই।
-“তার মানে?
-“মানে,আমার আর আপনার একমাত্র ননদিনীর ইচ্ছা আমাদের গায়ে হলুদটা একই জায়গায় আর এক সাথেই হবে। তাই আর কি আমরা সবাই চলে এলাম আপনাদের বাড়িতে।ওউ স্যরি আমার শ্বশুড় বাড়িতে।
-“ওয়াও গ্রেট।আইডিয়াটা অনেক সুন্দর তো।
-“সে তো হতেই হবে।ট্রেনিংটা কার থেকে নিয়েছি তা তো দেখতে হবে?তা সে ট্রেনিং মাস্টারটি কোথায়?
-“ঘরে,ঘুমাচ্ছে।
আশফি ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসে
আড়মোড়া ভাঙ্গছে আর রুমের চারপাশ তাকিয়ে দেখছে।হঠাৎ করেই সামনে রাখা মনিটরে একটা ভিডিও প্লে হলো।
ভিডিওটা ছিল,
-“গুড মর্নিং ডিয়ার।তোমার অভ্যাসটা দেখছি অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগে আমার আগে তুমি ঘুম থেকে উঠতে।তারপর আমার সারা মুখে আদর করে আমাকে ঘুম থেকে জাগাতে।আর এখন সেটা উল্টো।আমি তোমার আগে ঘুম থেকে উঠে তোমার সারা মুখে আলতো করে চুমু খাই।কিন্তু তোমাকে ঘুম থেকে তুলিনা এই মোমেন্টার জন্য। ও হ্যা,আমার পরিচয়টা দিই।আমি মাহি,নুসরাত জাহান মাহি।চার বছর আগে চৌধুরী অব ইন্ডাস্ট্রির এম.ডি আশফি চৌধুরীর একমাত্র পি.এ ছিলাম। আর আশফি চৌধুরী কে জানো তো? অবশ্যই তুমি।এছাড়াও আমার আর একটা পরিচয় ছিলো আমি আপনার ছোটকাল থেকে ফিক্সড করা ফিক্সড বউ ছিলাম।যদিও সেটা আমি জানতাম না।ওটা তুমি জানতে।তাই সুদূর জাপান থেকে বাংলাদেশে চলে এসেছিলে সেই ফিক্সড করা বউটিকে নিজের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।একসময় তুমি আমাকে আমার মনের বিরুদ্ধে বিয়ে করেও নিলে।তুমি জানো বিয়ের পর তুমি আমাকে কিভাবে কিভাবে অত্যাচার করতে আর কিভাবে কিভাবে ভালোবাসতে?আমি বলছি শুনো…..
এভাবেই মাহি আশফির সাথে প্রথম আলাপ থেকে শুরে করে ওদের অতীত বর্তমান সবকিছু আশফির সামনে বর্ণনা দিতে থাকলো ভিডিওতে।যেটা আশফি প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠার পরই দেখতে পায় আর শুনতে পায়।সেদিন এক্সিডেন্টের পর আশফি দীর্ঘ ছয় মাস কমায় চলে গিয়েছিলো।যখন জ্ঞান ফিরে তখন আশফির টেম্পোরারিলি মেমোরি লস হয়।এটা এমন ছিলো যে যেকোনো মুহূর্তে ওর সব অতীত বর্তমান ভুলে ও ভুলে যাবে আবার সবকিছু পুনরায় সেই অতীত আর বর্তমানগুলোর কথা বা প্রতিচ্ছবি আশফির সামনে তুলে ধরতে হবে।তাহলে সবকিছু আবার আস্তে আস্তে ও মনে করতে পারবে।হয়তো সারাটাজীবনই আশফিকে এমন একটা পরিস্থিতির ভেতরে থাকতে হবে।ডক্টরের কথাগুলো এমনই ছিল।সেইদিন থেকে মাহি প্রতিটাদিন ওর সামনে নতুন করে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেয়।ওর সাথে কাটানো সবগুলো দিনের বর্ণনা মাহি এভাবে আশফিকে বলে থাকে।একটা ভিডিও তৈরি করে রেখেছে মাহি আশফির জন্য।যেটা দেখে আশফি আবার পুরোনো আশফি হয়ে ফিরে আসতে পারে মাহির কাছে।ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসে আশফি এভাবে মাহির তৈরী করা ভিডিওটা দেখে বসে বসে মিটিমিটি হাসছে।তারপর বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আশফি বাগানে গেলো।দুপুর আশফিকে দেখে বলল,
-“আরে ঐ তো আমার ট্রেনিং মাস্টার চলে এসেছে।গুড মর্নিং মাই মাস্টার।
-“ব্যাড মর্নিং।
-“হোয়াই?
-“তোমার মাস্টারের বউ আমাকে ঘুম থেকে না ডেকে চলে এসেছে।
মাহি আশফির দিকে তাকিয়ে একটু একটু হাসছিল।তখন ওদের চোখে চোখে খুনসুটি আদান প্রদান হচ্ছিলো।দুপুর ওদের স্পেস দিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো।আশফি মাহির কাছে গিয়ে আশনূহাকে কোলে নিল।আর মাহিকে বলল,
-“আমি যখন তোমার মুখে চুমু খেতাম তখন তোমার ঘুম ভেঙ্গে যেতো।কিন্তু তুমি আমার মুখে কিভাবে চুমু খাও যে আমার ঘুম ভাঙ্গেনা?
-“কেনো?যেভাবে চুমু খেতে হয় সেভাবেই তো খাই।
-“কিভাবে খাও?প্র্যাকটিক্যালে দেখাও আমাকে।আমি দেখতে চাই যে তুমি চুমুটা ঠিকমত দিতে শিখেছো নাকি?
মাহি মুখে একটু মুচকি হাসি রেখে আশফির গালে আলতো করে চুমু খেলো।তখন আশফি বলল,
-“আমি জানতাম তোমার চুমুটা এমনই হবে।আমি তো এখনই বুঝতে পারিনি যে তুমি আমাকে চুমু খেয়েছো নাকি জাস্ট ছুঁয়ে দিয়েছো।এখন তো দেখছি চুমু দেওয়ার পদ্ধতিটা আমাকে শেখাতে হবে।
-“আচ্ছা?যদি শেখাতে হয় তাহলে শেখাবে।
-“হুম।
আশফি মাহির কাছে এগিয়ে মাহির কপালে লম্বা একটা চুমু খেলো।বাবার চুমু খাওয়া দেখে কোলে থাকা ছোট্ট আশনূহাটা বাবার গালে চুমু খেয়ে বসলো।এমন একটা দৃশ্য আলিশা ক্যামেরা বন্দি করে ফেললো।আশফি মাহিকে চুমু খাচ্ছে আর আশনূহা তার বাবাকে চুমু খাচ্ছে।আলিশা আর দুপুরের হাসির শব্দ শুনে মাহি আর আশফি ওদের দিকে তাকালো।ওরা এসে মাহি আর আশফির সাথে একটু মজা করলো। তারপর ছবিটা ওদের দেখালো।ছবিটা সকলেরই খুব পছন্দ হয়েছে।ওটা ক্যামেরা থেকে আলিশা আর দুপুর বের করে ফ্রেমে বন্দি করে ওদের বাড়িতে দেওয়ালে একটা টাঙ্গিয়ে রাখলো।আর একটা আশফি আর মাহিকে দিলো।দুপুর আর আলিশার রিসিপশনের দিন সন্ধ্যাই,
-“ম্যাম আমি দুপুরের ফ্রেন্ড।আমি আপনার সাথে ড্যান্স করতে পারি? আমি জানি আপনি দুপুরের সম্পর্কে ভাবী হন।তবুও যদি….
-“আচ্ছা ঠিক আছে,সমস্যা নেই।
রিসিপশন পার্টিতে মিউজিক অন করে সবাই ড্যান্স করছিলো।এমন সময় একজন ছেলে এসে মাহির সাথে ড্যান্স করার অফার করে।তখন মাহি ছেলেটার সাথে ড্যান্স করছিল আর আশফি মাহিকে পার্টিতে খুঁজে বেরাচ্ছিল।দূর থেকে মাহিকে কারো সাথে ড্যান্স করতে দেখে ওর মাথা গরম হয়ে গেলো।মাহির সামনে গিয়ে দাড়ালো আশফি।
আশফিকে দেখে মাহি দাড়িয়ে গেলো। তারপর মাহির হাতটা ধরে টেনে আশফি রুমে নিয়ে গেলো মাহিকে। মাহি অনেকটা ভয় পেয়ে গেছে।কারণ আশফি এটা কখনোই পছন্দ করেনা। কিন্তু পার্টিতে এভাবে কাউকে এভোয়েড করলে তাকে যে ডিরেক্ট ইনসাল্ট করা হয়ে যায়।তাই মাহি বাধ্য হয়ে ছেলেটার সাথে ড্যান্স করছিল।আশফি মাহিকে বলল,
-“ছেলেটা তোমার কোমরে হাত দিয়েছিল কেনো?
-“ও তো জাস্ট সিম্পল ড্যান্স করছিল আশফি।এছাড়া বেশিকিছু নয়।
-“তুমি কি মনে করেছো আমার মেমোরি লস হয়েছে বলে আমার অভ্যাস,পছন্দ,রুচি এগুলো ও পরিবর্তন হয়ে গেছে?
মাহি কোনো উত্তর দিলোনা আশফির কথার।চোখে ভয় নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়েছিল মাহি।আশফি রুমের দরজাটা বন্ধ করে দিল।মাহির পেছনে দাড়িয়ে মাহির বাহু ধরে মাহিকে সামনে ঘুরিয়ে দাড় করালো আশফি।ওর কোমড়টা ধরে ওকে কাছে টেনে নিয়ে এলো।কোমড়টা জড়িয়ে ধরে আশফি মাহির চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“আমি আশফি মাহিকে বা সবকিছুকে ভুলে গেলেও মাহির প্রতি আমার যে যে জায়গায় দুর্বলতা,কঠোরতা,অভ্যাস এই জিনিসগুলো কোনোদিনও ভুলবোনা। এগুলো আমার রক্তে মিশে গেছে।হ্যা মাহি নামটা আমার রক্তে মিশে গেছে। মাহিকে ঘিরে আমার যা রুলস,অভ্যাস আছে তা সারাজীবনেও আমার ভেতর থেকে মুছে যাবেনা।তোমার কি আমার এই জিনিসগুলোতে খুব সমস্যা হবে? তুমি কি চাও আমি এগুলো ভুলে যায়?
মাহি আশফির একদম কাছে এসে ওর বুকে মাথা রেখে বলল,
-“যদি কোনোদিন এই জিনিসগুলো তোমার মাঝে না পাই তাহলে আমার তৈরি ভিডিওতে এগুলো এড করে দিব। আমার আশফির মাঝে আমি সারা জীবন এগুলো দেখতে চাই।তুমি আমাকে যতবারই ভুলে যাবে আমি তোমাকে ঠিক ততোবারই আমাকে স্মরণ করিয়ে দিবো।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।আমি যে পারবোনা তোমার ভালোবাসা ছাড়া বাঁচতে।
আশফি মাহিকে ওর বুকের কাছ থেকে সরিয়ে মাহির দুবাহু ধরে বলল,
-“আমাকে ভুলে যেতে দিওনা কখনো মাহি।আমি মাহিকে ভুলে বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারবোনা।মরে যাবো।
আশফির মুখে মৃত্যুর কথা শুনে মাহি আশফির ঠোঁটে হাত দিয়ে ঠোঁপ চেপে ধরে ধরলো।আশফি মাহির হাতটা সরিয়ে হাতের আঙ্গুলের মুখে চুমু খেয়ে কিছুটা নিচু হয়ে মাহির ঠোঁটে চুমু খেলো।তারপর মাহিকে জড়িয়ে ধরে মাহির মুখের সাথে ওর মুখটা মিশিয়ে দিয়ে মাহিকে বলল,
-“মাহি সারাজীবন আশফির অন্তরে আশফির প্রতিটা অঙ্গে অঙ্গে এভাবে জড়িয়ে থাকবে।এভাবেই মিশে থাকবে। মাহি শুধু আশফির মাঝেই বিদ্যমান।
ভালোবাসার মাঝেই ওদের ভালোবাসার গল্পটা পরিসমাপ্তি ঘটলো।কেউ কাউকে কখনো ভুলে যেতে দিবেনা এমন প্রতিজ্ঞায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে ওরা দুজন। ভালোবাসাটা এমনই।একজন আর একজনের মাঝে বিস্তার করে।ভালোবাসার মানুষটা যেমনই হোক তাকে যে ভালোবেসেছি অন্তরের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে।কি করে তাকে ভুলে যেতে দিই আমাকে?তার মাঝেই যে আমি বেঁচে আছি।সে আমাকে ভুলে গেলে আমি কি করে বাঁচবো……
অনেক অনেক ধন্যবাদ সবাইকে আমার গল্পটাকে ভালোবাসার জন্য।শুভকামনা রইলো প্রত্যেকের জন্য।
রোমান্টিক_অত্যাচার (২) পর্ব-২৬
রোমান্টিক_অত্যাচার (২)
পর্ব-২৬
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
-” থাক,আমার এখন কোনো রোমান্স লাগবেনা।এখন বাসায় চলুন।মেয়েটা অনেক্ষণ একা আছে।খিদে পেয়ে গেছে হয়তো এতক্ষণে।
-” হুম।বাবা-মা এর রোমান্সে বর্তমান আমার চান্দুটাই ব্যাঘাদ ঘটাচ্ছে।কবে যে বড় হবে…..?
-” ও বড় হতে হতে তো তুমি বুড়া হয়ে যাবে।তখন এসব রোমান্স করার বয়স থাকবে তোমার?
-” রোমান্স করার জন্য কোনো বয়স লাগেনা।বুড়া হই আর যাই হই।রোমান্স চলছে চলবে।
-” হা হা হা।আচ্ছা ঠিক আছে।চলো এখন দেরী হয়ে যাচ্ছে।
আশফি মাহি দুজনে ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে চাচ্চুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।আশফি ড্রাইভিং করছে আর মাহির সাথে কথা বলছে।
-” ও হ্যা….তুমি তো দুপুরের পর নানুর বাড়িতে যাবে,তাইনা?
-” হুম।মামু আসতে চেয়েছিল আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য।আমি নিষেধ করে দিয়েছি।
-” ভালো করেছো।এতো কষ্ট করে এতদূর আসতে হবেনা।আমরা চলে যেতে পারবো।
কথা বলার পর কিছুক্ষণ মাহি চুপ করে রইলো।আশফি ওকে জিজ্ঞেস করলো,
-” হঠাৎ চুপ করে গেলে যে?
-” (নিশ্চুপ)
মাহির চুপ করে থাকা দেখে আশফি মাহির মুখের দিকে তাকালো।মাহির চোখদুটো ভিজে এসেছে প্রায়।আশফি বুঝতে পারলো মাহির ওর মায়ের কথা মনে পড়ছে হয়তো।আশফি মাহিকে বলল,
-” নানুবাড়িতে যাওয়ার আগেই এভাবে মন মুড খারাপ করে ফেলছো?
-” মা মারা যাওয়ার ঠিক মাসখানেক পরই নানুভাই মারা গেলো।শুধু ফোনেই শুনতে পেলাম।একনজর দেখার ভাগ্য আমার আর হলোনা।এমনিতেই অসুস্থ ছিল তার উপর সন্তানের মৃত্যুর খবর শুনে নিজের শেষ কিছুদিন সময়গুলো চোখের পানি ফেলেই পার করলো। আমার মা টাও বড় অভাগী।মৃত্যুর আগে কলমা টা কানে শুনতে পেলোনা,
পানিটুকু মুখে দিতে পারলোনা।মা তো সারাজীবন মানুষের ভুল ক্ষমা করে এসেছে কখনো সে মনের ভুলেও কাউকে কষ্ট দিয়েছে কিনা সন্দেহ।তাহলে এতো নির্মমভাবে তার মৃত্যু দিলো কেনো আল্লাহ্?
-” তা তো উনিই ভালো জানেন।
শুনেছি ভালো মানুষগুলোকে আল্লাহ্ পাক বেশিদিন এই জঘন্যতম পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখেননা।
-“জানিনা এটা সত্য কিনা।কিন্তু তাই বলে এতো কষ্ট দিয়ে সেই ভালো মানুষকে তুলে নেওয়ার কি মানে?
-“চুপ করো।এসব কথা আর বলোনা। ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে।এছাড়া আর কিছুই ভাবিনা আমি।
সারা রাস্তা মাহি চুপচাপ ছিল।বাড়িতে আসার পর দুজনে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আশনূহাকে নিয়ে রামপুরার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।মাহির নানুবাড়ির উদ্দেশ্যে।ওখানে যাওয়ার পর মাহিকে দেখে মাহির মামু মামিমা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো।আশফি আর আশনূহা দুজনেই এই বাড়িতে নতুন অতিথি।ওদের তিনজনকে আবার বরণ করে ঘরে তুললো মাহির মামিমা।মাহি আশফি আর আশনূহাকে নিয়ে ওর নানিবু এর কাছে গেলো।তিনি এখন পুরো শয্যাশায়ী।সন্ধ্যা পর্যন্ত ওরা ওখানে সময় দিলো।আশফি আজকের রাতটা মাহিকে এখানে থেকে যেতে বলেছিল কিন্তু মাহি থাকলোনা।তার কারণ একটাই।এখানে সব জায়গায় ওর মায়ের স্মৃতি।যতটুকু সময় ছিল ওখানে ততটুকু সময় মাহির নানিবু শুধু ওর মায়ের কথা বলে কেঁদেছে মাহির কাছে।মাহি সেগুলো আর সহ্য করতে পারছিলোনা। মাহির সর্বক্ষণ এমন মনে হচ্ছে যদি কোনো কিছুর বিনিময়ে হলেও মাহি ওর মাকে ফিরিয়ে আনতে পারতো।নিজেকে আর সামলাতে না পেরে মাহি ওর নানুবাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলো চাচ্চুর বাড়িতে।রাত ২ টার সময় আলিশা আর আলিশার বাবা বাড়িতে এসে পৌঁছালো।আলিশা তখনো পুরোপুরি সুস্থ নয়।মাহি আর চাচিমা আলিশাকে ঘরে নিয়ে গেলো।আর আশফি ওর চাচ্চুর সাথে কথা বলছিল,
-” চাচ্চু!দুপুর তোমাদের সাথে এসেছো তো?নাকি পরে আসবে বলেছে?
-” না,ও আমাদের সাথেই এসেছে। এমনিতে আলিশাকে অনেক মেইন্টালি সাপোর্ট দিচ্ছে।কিন্তু ওর ঐ সাপোর্টে আলিশা আরো কষ্ট পাচ্ছে কারণ এতোকিছুর পরও দুপুর ওকে ভালোবাসতে পারবেনা বলে।আমি তো আমার মেয়ের চিন্তা ভাবনা দেখে পুরো অবাক হয়ে যাচ্ছি। এখনকার মেয়ে হয়ে ও এতোটা আবেগপূর্ণ হলো কিভাবে?
বুঝলাম দুপুর ছেলে হিসেবে অনেক ভালো কিন্তু দুপুর ছাড়া কি ওর আর কোনো ভালো ছেলে পাবেনা?যে ছেলে ওকে ভালোইবাসতে রাজি না যেটা ও সরাসরি বারবার তার মুখ থেকে শুনছে তারপরও ও কি কারণে ওর জন্য এতো দুর্বল হচ্ছে?
-” চাচ্চু!তুমি যা বলছো তা যদি ও বুঝতো তাহলে তো এতোবড় দুর্ঘটনা ঘটাতোনা।আচ্ছা তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও।পরে কথা বলবো।
-” হুম।আর শোন,কাল সকাল ১০ টায় দুপুর আসবে এখানে।
-” ওহ্,তাই নাকি।তাহলে তো ভালোই হলো।আচ্ছা ঠিক আছে।
আশফিও রুমে চলে গেলো।রুমে এসে মাহির জন্য অপেক্ষা করছিলো।মাহি আলিশার কাছে বসে ওর সাথে কথা বলছিল।কথা বলা শেষ করে মাহি রুমে এলো।আশফিকে বসে থাকতে দেখে মাহি বলল,
-” চাচ্চুর সাথে কি কথা হলো তোমার?
-” কাল সকাল ১০ টায় দুপুর আসছে এখানে।
-” ও আচ্ছা।তো তুমি আর চাচ্চু ওকে কিভাবে কি বলবে ভেবে রেখেছো?
-” না।তার জন্য তোমার সাথে কথা বলা দরকার।ও আসার পর আমি আর তুমি নিজে ওর সাথে এ বিষয়ে কথা বলবো।তারপর ওর যা মন্তব্য তা তো ও বলবেই।
আশফি আর মাহি কিছুসময় দুপুর আর আলিশার বিষয় নিয়ে আলোচনা করে ঘুমিয়ে পড়লো।পরেরদিন সকালে আশফি আর মাহি নাস্তা শেষ করে আলিশাকে নিয়ে বাগানে গেলো।মাহি আলিশাকে বলল,
-” আলিশা তোমাকে আমি তোমার কাজের জন্য কিছু বলবোনা।কারণ তোমার মনটা এখন পুরোটাই টিনেজার এর মত হয়ে গেছে।তোমাকে যাই বুঝায় তুমি কোনো কিছুই বুঝবেনা।তবে এসব কাজের মাধ্যমে তুমি তোমার নিজের দাম নিজেই কমিয়ে ফেলছো।শুধু এইটুকুই বললাম।
-” আচ্ছা বাদ দাও এসব,মাহি।আলিশা তুমি বলো তো আজকে কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়?ভাবছি আজকে সবাই মিলে বাইরে কোথাও যাবো।
-” তোমরা যেখানে যাবে আমি সেখানেই যাবো।
-” আচ্ছা দুপুরকে ও সঙ্গে করে নিয়ে যাবো আজ।
আশফির কথাটা শুনে আলিশা একবার আশফির মুখের দিকে তাকালো।কিছু বলার চেষ্টা করলো আশফিকে।তখনই বাড়ির ভেতরে একটা কালো রঙের গাড়ি ঢুকলো।আলিশা বুঝেছে যে গাড়িতে দুপুর এসেছে তাই আর আলিশা বাগানে থাকলোনা।ওখান থেকে বাসার ভেতর ঢুকে গেলো।আসলে যতবারই দুপুরের মুখটা আলিশা দেখে ততবারই ওর কাছে মনে হয় এই জীবনে হয়তো দুপুরকে কখনো নিজের করে পাবেনা। মাহি গাড়িটার দিকে তাকিয়ে ছিল এটা দেখার জন্য যে গাড়ির ভেতরে কে আছে।আশফি মাহিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর কোমরটা ধরে টেনে কিছুটা নিজের কাছে নিয়ে নিল তারপর ওকে বলল,
-” ওভাবে গাড়ি দেখার কি আছে?মনে হচ্ছে যে প্রথম দেখছো গাড়ি।
-” আরে নাহ্।কি যে বলো।আমি তো দেখতে চেষ্টা করছি গাড়িটার ভেতর কে আছে।
-” সেটা তো নামলেই দেখতে পাবে।
-” আচ্ছা ঠিকআছে দেখছিনা ওভাবে। কিন্তু তুমি আমাকে এভাবে ধরে আছে কেনো?ছাড়ো,কেউ আমাদের এভাবে দেখলে কি ভাববে?
গাড়িতে করে দুপুর এসেছে।বাগান ক্রস করে ঢুকতেই ও চোখ পড়ে গেলো মাহি আর আশফির দেখে।আসলে আশফির চাচ্চু দুপুরকে শুধু আলিশার সুস্থ হওয়ার জন্য একটু ওর পাশে থেকে মেইন্টালি সাপোর্ট দিতে বলেছে।আর দুপুর ও ভেবেছে যে আর যাই হোক একটা মেয়েকে ওর জন্য মরে যেতে দেখতে পারবেনা।তাই ও চাচ্চুর কথাই রাজি হয়েছিল আলিশাকে কিছুদিন সঙ্গ দিতে। কিন্তু এখানে এসে যা দেখলো তাতে মনে হচ্ছে ও এখনই এই স্থান ত্যাগ করে চলে যাবে।দুপুরের চোখটা যেন সরছেইনা ওদের উপর থেকে।মাহি আর আশফিও এইটুকু সময়ের মধ্যেই নিজেদের সাথে গল্প করতে ব্যাস্ত হয়ে গেছে।ওরা খেয়াল করছেনা যে দুপুর ওদের কিছুদূর থেকেই লক্ষ করছে। এর মাঝেই আলিশার বাবা আসলো দুপুরের সামনে।আলিশা বাসায় ঢুকে ওর বাবাকে বলেছে দুপুরের আসার কথা।তাই দুপুরকে নিতে বাসার নিচে চলে এসেছে।
-” আরে দুপুর যে,এখানে দাড়িয়ে কেনো?চলো ভেতোরে এসো।খুব খুশি হলাম তুমি আমার বাড়িতে এসেছো বলে।
আলিশার বাবার কথার আওয়াজ শুনে দুপুর ওদের থেকে চোখ ফিরালো। তারপর মনের বিরুদ্ধেই আলিশার বাবার সাথে কিছু কুশলাদি বিনিময় করে বাসার ভেতরে ঢুকলো।আর ওদিকে আশফি আর মাহি চাচ্চু আর দুপুরের কথা শুনে বাগান থেকে ওদের পিছু পিছু বাসার ভেতরে ঢুকলো।আশফির চাচ্চু দুপুরকে বসতে দিয়ে মাহি আর আশফিকে ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।যদিও এটা সম্পূর্ণ ফরমালিটি ছিল। আশফি মাহিকে নিয়ে বসে দুপুরের সাথে কথা বলতে শুরু করলো।
-” মি.দুপুর হাসান।আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন?ওহ্ স্যরি,আগে বলুন আপনি কেমন আছেন?
-” নো,ইটস অলরাইট।আল্লাহ্ পাকের ইচ্ছায় অনেক ভালো আছি।আপনারা কেমন আছেন?আর হ্যা,আমার মেমোরি খুব ফ্রেশ আছে।এতো সহজে কাউকে ভুলে যাইনা।
-” হুম।সেটাই তো প্রবলেম।
-” স্যরি?
-” না মানে ভালো মানুষ,ভালো মুহূর্ত এগুলো যত মনে রাখবেন ততই আপনার জীবন সুখে সমৃদ্ধ হবে।আর খারাপ মানুষ,খারাপ স্মৃতি এগুলো মনে রাখাটা মন বা শরীরের জন্য কোনোটাই ভালো নয়।সেটাই মিন করলাম আর কি।
দুপুর আশফির কথা কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে।আশফির কথার উত্তরে দুপুর শুধু একটা হাসি দিল।তারপর কথার মোড় ঘুরিয়ে দুপুর মাহির সাথে কথা বলা শুরু করলো।
-” কেমন আছো মাহি?সময়ের সাথে সাথে কি আমাকেও ভুলে গেছো?
-” দুপুর ভাইয়া আপনার মেমোরি যতটা ফ্রেশ আমার মেমোরি তার থেকে বেশি না হলেও খুব কম ফ্রেশ ও নয়।
-” শুনে খুশি হলাম।মি.আশফি আপনাদের দুজনের জুড়ি মাশাল্লাহ্ খুবই সুন্দর।দেখে চোখদুটো জুড়িয়ে যাওয়ার মত।
আশফি দুপুরের উত্তরে বলল,
-” অজস্র ভালোবাসা রইলো।এতো সুন্দর প্রশংসার জন্য।
এতোদিন মাহির জন্য দুপুরের মনে যে ইমোশোনটা কাজ করতো মাহি আর আশফিকে আজ সামনাসামনি একসাথে দেখে ইমোশোনটা যেনো ধীরে ধীরে কমতে আছে।কিছুক্ষণ পর আশফির চাচিমা আশনূহাকে কোলে করে আসলো দুপুরের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য। সেই সাথে দুপুর মাহি আর আশফির একমাত্র মেয়ে আশনূহাকে দেখে কারো পারমিশন ছাড়াই ওকে কোলে তুলে নিলো।তারপর দুপুর আশনূহাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-” মামনি,তোমাকে দেখে তো আমার পুরো প্রাণটাই জুড়িয়ে গেলো।মাশাল্লাহ্ পৃথিবীরর সব সৌন্দর্য যেনো তোমার মাঝে।
এভাবে কিছুক্ষণ ওদের মাঝে সময় কেটে গেলো।তারপর আশফি আর ওর চাচ্চু দুজনে দুপুরের সাথে বসে কিছু কথা বলল।আর আশফি সন্ধ্যার পরে ওকে ওদের সাথে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার প্রপোজাল দিল। তাতে দুপুর আলিশার কথা ভেবে রাজি হয়ে গেলো।আশফি মাহি আর আশনূহাকে নিয়ে গাড়ির পেছন সিটে বসলো।দুপুর ড্রাইভ করছে আর আলিশা দুপুরের পাশের সিটে।
মধুবাগের উদ্দেশ্যে ওরা রওনা হলো। আজকে মাহি আর আশফি দুপুরের সাথে খোলামেলা সব কথা বলবে। তারপর ওরা চারজন ব্রিজের উপর এসে দাড়ালো।আশনূহা তখন আলিশার কোলে ছিল।সবাই সবার সাথে টুকটাক কথাবার্তা বলছিল।এসব কথার মাঝেই মাহি দুপুরকে বলল,
-“দুপুর ভাইয়া?তোমার সাথে কিছু কথা আছে আমাদের?মানে আমার আর আশফির।
-“হ্যা বলো,কি কথা?
আশফি দুপুরের কিছুটা দূরে দাড়িয়ে ছিল।দুপুরের সামনে এসে বলল,
-“কথাগুলো অবশ্যই তোমাকে যুক্তি দিয়ে বুঝতে হবে।আর সেটা আলিশার ব্যাপারেই।জানি তুমি হয়তো আনইজি ফিল করছো তবুও যদি আমাদের কথাগুলো একটু শুনতে?
-” না না।আনইজি ফিল করার কি আছে।বলুন কোনো সমস্যা নেই।
-” মাহি আমি আশনূহাকে নিয়ে একটু সামনে থেকে হেঁটে আসি।
আলিশা আসলে ওদের কথাগুলো এভাবে দাড়িয়ে শুনতে চাচ্ছিলনা।নিজের কাছে নিজেকে কেমন যেনো ছোট ছোট লাগছিল ওর।তারপর আশফি আর মাহি দুপুরের সাথে অনেক কথা বলল।ওকে বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলো। সবশেষে আশফি দুপুরকে বলল,
-” পেছনে ফেলে আসা স্মৃতিগুলো আকড়ে ধরে কোনোদিন ভালো থাকা যায়না। হয়তো যেকোনোভাবে সামনের সময়গুলো পার করে দেওয়া যায় কিন্তু আপনাকে ঘিরে কিছুসংখ্যক মানুষ আছে যারা ভালো থাকার চেষ্টা করছে।
আপনার সাথে সুখী জীবন কাটানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু আপনার এই একা থাকার সিদ্ধান্তটা আপনার মনের থেকেও তাদের মনে বেশি কষ্ট জমা হচ্ছে। ধরুন না আপনার বাবা-মায়ের কথা।তাদের একমাত্র ছেলে আপনি। তারা নিশ্চই আপনার কাছে বাইনা করে ঘরে একটা মিষ্টি বউ নিয়ে আসার জন্য।আপনার ছেলেমেয়ে অর্থাৎ তাদের নাতি-নাতনিদের আদর-সোহাগ করে তাদের ভালোবেসে জীবনের শেষ সময়গুলো কাটাতে।সবশেষে না হয় আলিশার কথা বললাম।ও হয়তো আপনার জীবনের সিদ্ধান্ত না জেনেই আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছে।আপনার এমন সিদ্ধান্তের কারণে আজকে কতগুলো মানুষ কষ্ট ভোগ করছে।একবার ভেবে দেখুন।
আলিশা আমার বোন বলে তার হয়ে সুপারিশ করছিনা।ওর জায়গায় আজকে অন্য মেয়েও এভাবে ভালোবাসতে পারতো।জীবনটা আপনার কিন্তু আপনার আশেপাশের লোকগুলোকে ঘিরে তাদের ভালো থাকার কথা চিন্তা করে কিছু সিদ্ধান্ত ভেবর নেওয়া উচিত।যে তারা আপনার এই সিদ্ধান্তে আপনার সাথে তারাও ভালো থাকতে পারছে কিনা।
কারণ তারা আপনার ছায়াই বসবাস করছে এবং সারাজীবন করতে চাই।দুপুর আপনি কি আমার কথা বুঝতে পেরেছেন?
-” আসলে কি বলবো আমি?জীবনের অর্ধেক অংশ এমন চিন্তাভাবনা মনের ভেতর গেঁথে পার করে দিয়েছি।বাবা-মা চাই যে তার ছেলে একটা মিষ্টি বউ ঘরে নিয়ে আসুক।কিন্তু তারা এটা নিশ্চই চাইবেনা যে আমি ঐ মিষ্টি বউটাকে কখনো কষ্ট দিই।কারণ কোনো স্ত্রী কোনোদিন এটা সহ্য করতে পারবেনা যে তার স্বামীর অন্তরস্থলে সে কোনোদিনও জায়গা পাবেনা।হয়তো সারাজীবন একই ছাদের নিচে দায়িত্ব-কর্তব্যের খাতিরে দিনগুলো পার করে দিতে পারবো।কিন্তু মনের তৃপ্তিটা কোনোদিনও পাবোনা। মানুষ মারা গেলে তাকে যেমন কোনোদিনও ফেরত আনা সম্ভব নয় তেমনই মনের মৃত্যুটাও।মনের মৃত্যু ঘটলে তাকে যে জীবিত করা অসম্ভব।
এবার মাহি কথা বলল,
-“কেনো অসম্ভব?মনটা তো আর দেহ ছেড়ে যাইনি।ওটা তো তোমার দেহের মাঝেই আছে।
-“হুম আছে।মৃত অবস্থায়।
-“দুপুর ভাইয়া তুমি কেনো বুঝতে চেষ্টা করছোনা?যে…..
-“মাহি?তোমরা যেহেতু কথাগুলো সামনাসামনি ই বলেছো আমিও আর চেঁপে রেখে কিছু বলতে চাইনা।যে রোগের জন্য যে ওষুধ তৈরি হয়েছে সেই রোগের জন্য ঠিক সেই ওষুধটাই প্রয়োজন।মি.আশফি?আপনার শরীরে ঘা হয়েছে।আপনি তার ব্যাথা অনুভব করতে পারবেন,আমি বা মাহি না। আপনার ঘায়ের জন্য যে ওষুধ প্রয়োজন সেই ওষুধের বদলে ভুল ওষুধ পড়লে আপনি কি সুস্থ হবেন?
দুপুরের কথা শুনে আশফি কিছু বললোনা।শুধু মাহির দিকে রাগী দৃষ্টিতে সেখান থেকে চলে গেলো।মাহি আশফির চলে যাওয়ার কারণ বুঝতে পেরেছে সেই সাথে দুপুরও।দুপুর মাহির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে পিছনের দিকে তাকলো।তখন আলিশা পেছনে দাড়িয়ে ছিল।আলিশা ও সবকথা শুনতে পেয়েছে।দুপুর আলিশার কাছে এগিয়ে গেলো।আলিশাকে কিছু বলার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছু বললোনা।দুপুর চলে গেলো ওখান থেকে।আশফি মাহি আর আলিশাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসলো। আশফি ওর চাচ্চুকে কোনো কিছু না বলে সোজা উপরে চলে গেলো।তাই মাহি চাচ্চুকে সবকিছু বলল।আলিশা ও আশফির পিছুপিছু আশফির রুমে গেলো।আশফি আলিশাকে দেখে ওকে শান্তনা দেওয়ার মত কোনো বাক্য উচ্চারণ করলোনা।আলিশা কথা বলা শুরু করলো,
-“আশফি তুমি তো মাহিকে অনেক ভালোবাসো তাইনা?
আলিশার এমন প্রশ্নে আশফি কোনো উত্তর দিলনা।আলিশা আবার বলল,
-“আমি জানি তুমি মাহিকে তোমার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসো। ওকে তোমার জীবনে পাওয়ার জন্য কতোকিছুই না করেছো।আল্লাহর দয়ায় শেষ অবদি তুমি ওকে তোমার নিজের করেই পেয়েছো।তাহলে তুমি একসময় নিশ্চই বুঝতে পেরেছিলে যে মাহিকে ছাড়া তুমি কোনোদিন থাকতে পারবেনা। আশফি দুপুর ও যে আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
-“আলিশা,তুমি কি চাইছো?
-“স্পষ্টভাবেই বলি।একমাত্র মাহিই পারবে দুপুরকে আমার কাছে এনে দিতে।
আশফি রাগে প্রচুর উত্তেজিত হয়ে গেল। আলিশাকে একরকম ধমকে বলল,
-“আলিশা আবেগে তোমার মাথা কি একেবারেই গেছে?
-“আশফি প্লিজ আমার পুরো কথা না শুনে আগেই রিয়্যাক্ট করোনা।আগে তুমি একটু তোমার রাগ কন্ট্রোল করো।
-“আমি ঠিক আছি।তুমি বলো।
-“মাহি দুপুরকে আলাদাভাবে কিছু সময় দিবে।কিছুদিন ওর সাথে ঠিক আগের মত বন্ধুর মত মিশবে।আর তার মাঝেই মাহি ওকে আমার বিষয়গুলো বোঝাবে। এভাবে একদিনে ওকে কিছু বোঝানো যাবেনা।ব্যাথাটা যেহেতু মাহির থেকেই পেয়েছে তাই মাহিই ওকে বোঝাতে পারবে।কথাগুলো একটু ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো আশফি।তুমি হয়তো রাজি নাও হতে পারো।কিন্তু আমাকে তোমার নিজের বোন ভাবলে তুমি নিশ্চই রাজি হতে।
-“এটা সম্ভব না আলিশা।মাহি ওকে সময় দিলে ও তো মাহির প্রতি আরো দুর্বল হবে।
-“তোমাদের একসাথে দেখে ওর রিয়্যাকশনটা কি এতোটাই নেগেটিভ ছিল আশফি?ও এখন জানে যে মাহি এখন দুজন মানুষের।তোমার আর আশনূহার।
আর এতোটা বিবেকহীন নয় যে ও এখন আবার মাহিকে পাওয়ার চিন্তা করবে।
-“তুমি ওর শেষের কথাগুলো শুনেছিলে?ও কি বোঝাতে চেয়েছিল?
-“হুম শুনেছি।কিন্তু তার মানে এই না যে ও মাহিকে তোমার থেকে ফেরত চাইছে।হ্যা ও যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয় তাহলে ওর কাছে গিয়ে ওর ভালোবাসা অর্জন করতে বেশি সময় লাগবেনা।
আশফি আলিশার কথাগুলো কিছুসময় বসে ভাবলো।তারপর চাচ্চু আর চাচিমার কথা ভেবে এমন সিদ্ধান্তে রাজি হলো আশফি।আশফির বাবা মায়ের মৃত্যুর পর আশফির চাচ্চু আর চাচিমা ওকে সবরকম ভাবে অনেক সাপোর্ট করেছে। আর আজ তার মেয়ে ওকে নিজের ভাই দাবি করে কিছু আবদার করেছে তা ও ফেলে দিতে পারবেনা।তাই মাহিকে ও এই ব্যাপারে রাজি করানোর দায়িত্ব নিলো।কিন্তু সম্পূর্ণ ওর মনের বিরুদ্ধে। যে আশফি মাহিকে কখনো কোনো ছেলের সাথে একসাথে বসে কথা বলা দেখলে তা সহ্য করতে পারেনা আর আজকে ও নিজে মাহিকে রিকোয়েস্ট করবে দুপুরের সাথে কিছুদিন মিশতে। আশফি আলিশার সামনেই মাহিকে কথাগুলো বলল।মাহি আশফির মুখে এমন কথা শুনে একদম আকাশ থেকে পড়লো মনে হলো।মাহি আশফিকে জিজ্ঞেস করলো,
-“আশফি তুমি কি সুস্থ মস্তিষ্কে কথাগুলো বলছো?
আশফির মাথা এমনিতেই গরম হয়ে আছে এই ব্যাপারে।তার উপর মাহির এই কথা শুনে কেনো যেনো রেগে গেলো।মাহিকে উচ্চস্বরে বলল,
-“তোমার কি মনে হচ্ছে?আমি পাগলের সংলাপ গাইছি?
-“পাগলের সংলাপ না গাইলে তুমি এমন কথা কিভাবে বলছো?
আশফি আলিশার দিকে তাকিয়ে মাথা ঠান্ডা করলো।তারপর মাহিকে কথাগুলো বোঝানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু মাহি তো কোনোমতেই রাজি হচ্ছেনা।আলিশা মাহির এমন ব্যবহার দেখে কিছুটা হতাশ হলো।প্রায় কান্না করে দেওয়ার মত অবস্থা।তারপর আলিশা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আশফির খারাপ লাগলো আলিশার মুখটা দেখে।আশফি মাহিকে বিছানার উপর বসালো তারপর ওকে বলল,
-“মাহি?এই চাচ্চু একদিন আমাকে বুকে চেঁপে ধরেছিল।বাবা মায়ের মৃত্যুর পর চাচ্চু আর চাচিমা আমাকে শক্ত হতে সাহায্য করেছিল।আজকে তারই মেয়ে আমার কাছে সাহায্য চাইছে।তাও আবার ভাই দাবি করে।আমি তো সত্যি ওর ভাই।আজকে আমার নিজের বোন হলে আমি তো সত্যিই ওর জন্য কিছু না কিছু করতাম।
-“নিজের বউকে অন্য পুরুষকে সময় দিতে বলতে?
-“বিষয়টা খারাপ ভাবে নিওনা।তুমি আর ওর সাথে কোনো সম্পর্কে জড়াচ্ছোনা।আগে যেমন বন্ধু ভাবতে ঠিক তেমনই বন্ধু ভাববে।
-“কিন্তু ও তো আমাকে বন্ধু ভাববেনা।
-“প্রেমীকাও ভাববেনা।
-“আশফি তুমি বুঝতে পারছোনা।
-“আমি সব বুঝতে পারছি।তাও তোমাকে এগুলো করতে হবে।
-“আমি পারবোনা।
-“মাহি তুমি এভাবে আমার মুখের উপর কিভাবে পারবোনা শব্দটা উচ্চারণ করতে পারলে?
-“তুমি কি সত্যি এটা মন থেকে চাইছো?
-“হুম।
-“এতো ইজিলি কিভাবে মেনে নিতে পারলে?আমি তো পারছিনা।
এই কথাগুলোর পরই ওদের রুমে চাচ্চু আর চাচিমা প্রবেশ করলো।আলিশা ওর কথাগুলো চাচ্চু আর চাচিমাকে বলেছে। আসলে একমাত্র মেয়ে তার বলা কথাগুলো ওনারা ফেলে দিতে পারছেনা। আবার এদিকে কিছু বোঝাতেও পারছেনা ওকে।সব থেকে খারাপ অবস্থার ভেতর আছে ওনারা দুজন।শেষ পর্যন্ত মেয়ের ভালো থাকার জন্য মাহির কাছে ছোট হতে বাধ্য হলো ওনারা।ওনারাও মাহিকে বোঝাতে শুরু করলো।আর মাহি শুধু বারবার আশফির মুখের দিকে তাকাচ্ছে। একবারও মাহির মনটা বুঝতে চেষ্টা করছেনা আশফি।মাহি যে দুপুরের সাথে কিছুদিন কেনো একটা ঘন্টাও আলাদাভাবে সময় দিতে পারবেনা। আবার এদিকে মাহিও এটা বুঝতে পারছেনা যে আশফিও সহ্য করতে পারছেনা এই ব্যাপারগুলো।কিন্তু তার পরও আশফি বাধ্য হচ্ছে শুধুমাত্র ওর চাচা-চাচির জন্য।মাহির সিদ্ধান্তের কাছে যেনো সবাই ব্যার্থ হলো মাহিকে বোঝাতে।মাহি শুধু আশফিকে এটুকুই বলল চাচ্চু আর চাচিমায়ের সামনে,
-“আমি আমার মৃত্যুর শেষ সময়টুকু পর্যন্ত আমার স্বামী সন্তানকে দিতে চাই। আর সেই সময়ের কিছু অংশ আমি কোনো পর পুরু্ষের খাতে ব্যায় করতে পারবোনা।
আশফির চাচ্চু আর চাচিমা আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আশফি ও আর মাহির সাথে কথা বললোনা।রাতটা দুজনের এভাবে কেটে গেলো কথা না বলে।আশফি ভেবেছিল চাচ্চু আর চাচিমা বলার পর হয়তো মাহি বিষয়টা বুঝবে।কিন্তু মাহির কথাগুলো শুনে আশফির খুব রাগ হলো।আশফি ভাবছে,
-“আমি জানি মাহির এই কাজটা করতে একটু কষ্ট হবে।কষ্টটা আমারও হবে।কিন্তু একবার ওদের কথা চিন্তা করে ওদেরকে মাহির হেল্প করা উচিত ছিল। সামান্য বন্ধুর মতই কিছুদিন সময় দিবে দুপুরকে আলিশার ব্যাপারগুলো বোঝানোর জন্য।তাতে এতো রিয়্যাক্ট ও না করলেও পারতো।এরপরেও যদি দুপুর আলিশাকে বিয়ে করতে রাজি না হয় তাহলে তো আর কিছু করতে হবেনা ওকে।আর কিই বা করার থাকতে পারে। কিন্তু আলিশা,চাচ্চু,চাচিমা এটুকু তো বুঝবে যে মাহি ওদের কথামত ওদের হেল্প করার চেষ্টা করেছিল।
এগুলো ভেবেই আশফি মাহির উপর রাগ করে রইলো কিছুদিন।মাহির সাথে কথা বলতোনা,ওর কাছে আসতোনা।আর আলিশাও আর রুম থেকে বের হতোনা। চাচ্চু-চাচিমা ও খুব ভেঙ্গে পড়ছিল আলিশার ফিউচারের কথা ভেবে।আশফি দেশে আসার আগে চাচ্চুকে আশা দিয়েছিল যে ও আর মাহি এসে সব ঠিক করে দিবে কিন্তু তাদের কোনো হেল্পই করতে পারলোনা ও।ওনাদের সামনে যেতেও আশফির এখন খুব খারাপ লাগে।একদিন সন্ধ্যাই রুমে বসে আছে।সারাদিন আশফি তেমন রুম থেকে বের হয়নি।মাহি রুমে ঢুকে আশফির কাছে গিয়ে বসলো।আশফি মাহিকে দেখেও কোনো কথা বললোনা। আসলে মাহির ও খুব খারাপ লাগছে এভাবে সবাইকে বিষন্নভাবে দেখতে।কিন্তু এরপরেও মাহি পারবেনা দুপুরের সাথে নতুন করে কোনো নতুন সম্পর্ক করতে।
হোক সেটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।মাহি আশফির হাতটার উপর হাত রাখলো। তারপর ওকে বলল,
-“আশফি,তোমরা কি আমাকে ভুল বুঝছো?মানে তোমাদের এটাই কেনো মনে হচ্ছে যে আমিই দুপুরকে সব বোঝাতে পারবো?তার বিপরীত কিছু ও তো হতে পারে?
-“বিপরীত কিছু কি হবে?তোমাকে কি আমার থেকে কেড়ে নিয়ে যাবে….হ্যা? যাবেনা তো।তাহলে তোমার এতো আপত্তি কিসে?
মাহি এবার রেগে গিয়ে বসা অবস্থা থেকে উঠে দাড়ালো।তারপর আশফিকে বলল,
-“আপত্তি আছে।আমি একজন মেয়ে,কোনো পুরুষ নই।আমি যদি কোনো পু্রুষ মানুষের সাথে ঢলাঢলি করি বা তার সাথে শুধু বন্ধু ভেবেই সময় কাটাই তাহলেও গোটা সমাজ যেমন আমাকে তার ঘনিষ্ঠ কিছু মনে করবে তেমন যে দুপুর ও আমাকে তেমন কিছু ভাববেনা তার শিওরিটি তুমি কিভাবে দিচ্ছো?ও কি ভাববেনা যে শুধুমাত্র আলিশাকে মেনে নেওয়ার জন্য আমি ওর সাথে এসে বন্ধুত্ব করছি? আমার পার্সোনালিটিটা ওর কাছে কতোটা নিচে নেমে যাবে সেটা তুমি একবারও ভাবলেনা?
আশফি মাহির আর কোনো উত্তর না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আশফি এখন কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছেনা। কিছুসময় পর আশফি রুমে আসলো আবার।তখন মাহি আশনূহাকে ঘুম পাড়াচ্ছিল।আশফি এসে মাহিকে বলল,
-“মাহি?সবকিছু নেগেটিভলি না ভেবে একবার পসেটিভ করে ভাবলে পারতে। এতোটা স্বার্থপরতার পরিচয় তুমি দিবে তা আমি কখনো তোমার থেকে আশা করিনি।অন্তত আলিশার মনের শান্তনাটুকুর জন্য কাজটা করতে পারতে। ওর মনটা একবার বুঝতে চাইলেনা।আমি তোমাকে পাওয়ার জন্য খারাপ ভালো সবরকম পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলাম। শুধুমাত্র তোমাকে পাওয়ার জন্য।ঠিক তেমনি আলিশাও দুপুরকে সেভাবেই পেতে চাই।কিন্তু ও তো কোনো খারাপ পদ্ধতি ব্যবহার করছেনা।কতোটা ভালোবাসলে নিজের প্রাণটাও শেষ করে দিতে চাই ও।
-“এতোকিছুর পরও দুপুর ওকে ভালোবাসতে পারবেনা।সেখানে আমি বোঝালেই ও বুঝে যাবে?
-“তোমাকে বোঝানোটাই বৃথা।তুমি আসলে সুখের মুখ দেখছো তো তাই অন্যের কষ্টটা অনুভব করতে পারছোনা। মস্ত বড় স্বার্থপর তুমি।
কথাগুলো বলে আশফি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।সেদিন রাতে মাহি আশফি কেউই খাইনি।মাহি আশফির বলা কথাগুলো বারবার ভাবছে আর মনেমনে বলছে,
-“এমন ধরনের কথা আশফি আমাকে বলতে পারলো?এতোগুলো দিনে আমার এতো রকম অন্যায়ের পরেও আশফি আমাকে এমনধরনের কথা বলেনি।আর আজকে এমন একটা বিষয়ে ও আমাকে এই কথা বলবে তা তো আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছিনা।
মাহি আশফির এই ব্যবহারে যতটা কষ্ট পেলো ঠিক ততোটা রাগ ও হলো।
★দুই দিন পর★
আশফি বিকালে বাইরে গেছিলো।সন্ধ্যা ৭:৪০ এ বাসায় ফিরলো।বাড়িতে এসে মাহিকে কোথাও না পেয়ে মাহিকে ফোন করলো।কিন্তু মাহির ফোনটা বন্ধ।বাড়িতে ওর চাচিমার কাছে মাহির কথা জিজ্ঞেস করাতে উনি বলল,
-“মাহি তো তুই বের হওয়ার পরই আশনূহাকে নিয়ে বের হয়ে গেলো।
-“তুমি শুনোনি ও কোথায় যাচ্ছে?
-“হুম।বললো বাইরে কি কাজ আছে। কিন্তু যাওয়ার সময় ওর মুখটা দেখলাম পুরো লাল হয়ে আছে। চোখ,মুখ ফোলা।মনে হলো খুব কান্না করেছে। তুই ওর সাথে আর কোনো মিসবিহেভ করিসনা।শুধু শুধু নিজেদের মাঝে ঝামেলা সৃষ্টি করার কোনো মানে আছে?আলিশার ভাগ্যে আল্লাহ্ যা লিখে রেখেছে তাই হবে।যা অসম্ভব তা চাইলে সেই আবদার তো আর রাখা যাবেনা। ওকে বুঝতে হবে যে সম্পর্ক,ভালোবাসা এগুলো কখনো জোড় করে হয়না।
আশফি চাচিমার কথা শুনে রুমে চলে গেলো।বিছানায় বসতে বালিশের উপরে একটা চিঠি পেলো।চিঠিটা মাহির ছিল। চিঠিতে লিখা,
-“আশফি আমি এই কয়দিনে একদম হাঁপিয়ে গেছি।তোমার এই আমার সাথে কথা না বলা,খারাপ ব্যবহার করা এগুলো আমি সহ্য করতে পারিনা। আজ পুরো এক সপ্তাহ তুমি আমার সাথে কথা বলোনা।কথা বললেও উচ্চকন্ঠে বলো।এই বিষয়গুলোর জন্য তুমি আমার সাথে এমন ব্যবহার করবে তা আসি ভাবতে পারিনি।মানলাম চাচ্চু আর চাচিমার জন্য তুমি আমাকে দুপুরের সাথে বন্ধুত্ব করতে বলেছিলে।কিন্তু সেটা আমার জন্য কেনো অসম্ভব তা তুমি কি একটু ও বুঝতে পারলেনা?তোমাকে ছাড়া আমি এই পৃথিবীতে আর কাউকে একফোটা সময় ও দিতে পারবোনা।তুমি আমার স্বামী,তুমি আমার বন্ধু আর তুমিই আমার প্রেমীক।নাটক ও করতে পারবোনা আমি দুপুরের সাথে।আমি আজকে সন্ধ্যা সাতটার ফ্লাইটে আমি জাপান চলে যাচ্ছি।আমি আর পারছিলাম না এগুলো সহ্য করতে।চাচ্চু আর চাচিমাকে বলো আমাকে যেনো তারা মাফ করে দেন।আর পারলে তুমি ও আমাকে মাফ করে দিও।
চিঠিটা পড়ে আশফির খুব রাগ হলো। এভাবে মাহির চলে যাওয়াটা ও আশা করেনি।আশফি দ্রুত এয়ারপোর্টে গেল। ওখানে গিয়ে জানতে পারলো মাত্র দশ মিনিট আগেই জাপানের প্লেনটা ফ্লাই করেছে।আশফি বাসায় এসে ড্রয়িংরুমে বসলো।খুব বিষণ্ন দেখাচ্ছে ওকে।চাচ্চু জিজ্ঞাস করলো,
-“মাহি কোথায় গেছে আশফি?ও ঠিক আছে তো?
-“সাতটার ফ্লাইটে ও জাপান এর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।
-“মাহি এভাবে চলে যেতে পারলো আমাদেরকে না জানিয়ে?অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি হয়তো মেয়েটাকে।
আশফি কোনো কথা বললোনা।রুমে চলে গেলো।রাতটা আর ঘুমাতে পারলোনা।কাল ও চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।রাত ৩:৩০ টার দিকে আশফি ঘুমালো।কিন্তু আর বেশিক্ষণ ঘুমাতে পারলোনা।চাচ্চু উপরে গিয়ে আশফির রুমের দরজা ধাক্কাতে থাকলো আর আশফিকে ডাকতে থাকলো।চাচ্চুকে এভাবে ডাকতে শুনে আশফি ভয় পেয়ে গেলো।আশফি ভাবছে,
-“আলিশা আবার কিছু করে বসলো না তো?
আশফি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললো।
-“কি হয়েছে চাচ্চু?তুমি কাঁদছো কেনো?
-“আশফি…..?
-“কি হয়েছে বলো?আলিশা কিছু করে ফেলেছে?
কথাটা বলতেই আলিশা ও ছুটে আসলো আশফির কাছে।আলিশা আর চাচিমা ও কান্না করছে।আশফি আবার জিজ্ঞেস করলো,
-“আরে কি হয়েছে বলো না তোমরা?
চাচ্চু জবাব দিলো।
-“কাল সন্ধ্যা সাতটায় জাপানের উদ্দেশ্যে যে প্লেনটা রওনা দিয়েছিল সেটা গতকাল রাতে ক্রাশ করেছে।মাত্র টিভিতে নিউজ চ্যানেলে দেখালো।
চাচ্চুর কথা শুনে আশফি আর নিজেকে সামলাতে পারলোনা।দরজার কাছে দাড়িয়ে ছিল।মাথা ঘুরে পড়ে যেতে লাগলো আশফি।
(কিছু পাঠকদের রিকোয়েস্টের জন্য আর একটা পার্ট বাড়িয়ে দিবো ভেবেছি।)
রোমান্টিক_অত্যাচার (২) পর্ব-২৫
রোমান্টিক_অত্যাচার (২)
পর্ব-২৫
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
-“ডিয়ার?তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছো?
আশফি মাহিকে জড়িয়ে ধরেছিল।মাহির কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে আশফি বুঝতে পারলো মাহি এটুকু সময়ের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছে।আশফি শোয়া থেকে একটু উঠে মাহির মুখটার দিকে চেয়ে রইলো।আর মনে মনে বলল,
-“আমি বুঝতে পারি মাহি।তুমি এই আশফির বুকের মাঝে থাকলে পৃথিবীর সব দুশ্চিন্তা তোমার মাঝে থেকে দূর হয়ে যায়।আর যখন তুমি আশফির বুকের মাঝে থাকো তখন সেই আশফির কি অবস্থা হয় জানো? যেনো পৃথিবীর সমস্ত সুখটাই আশফির বুকের মাঝে।কতোটা কষ্টই না দিয়েছি আমার এই সুখ পাখিটাকে।মাফ করে দিও আমাকে প্লিজ। কষ্টটা আমিও কম পাইনি তো।সেইসব কষ্ট আমি এখন ভুলে গেছি আর তোমাকেও ভুলতে হবে,বুঝেছো?
আশফি মাহির নাখটার মুখ ধরে হালকা ভাবে একটু টেনে দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।ফ্লাইট সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে,
-“আশফি!আমাদের সিটটা এভাবে পড়েছে কেনো?তুমি টিকিট কেনার সময় দেখে কেনোনি?
-“স্যরি ডিয়ার।টিকিটটা সিরিয়াল মাফিক কিনতে পারিনি।
-“মানে কি?এখন এতোগুলো ঘন্টা এভাবে দুজন আলাদাভাবে যাবো?
-“আলাদা কোথায়?আমরা একই প্লেনে আছি।তুমি জানালার পাশের সিটে আর আমি মিডল সিটে আছি।শুধু মাঝে দু,হাত ফাঁক বিশিষ্ট জায়গা আছে।
-“তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তোমার খুব ভালোই লাগছে ব্যাপারটা।পাশে সাদা সুন্দরী পেয়েছো খুব ভালোই এনজয় করছো,তাইনা?ঠিক আছে করো।
মাহি রাগ করে মুখটা ভাড় করে বসে রইলো।আকাশপথে যখন রাত নেমে এলো প্রায় সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।আশফি ও ঘুমাচ্ছে।শুধু ঘুমাচ্ছেনা মাহি।ও ভাবছে ঘুমের মধ্যে আশফি যদি আশফির পাশে বসা ঐ মেয়েটার কাঁধের উপর মাথা রাখে অথবা মেয়েটি যদি আশফির কাঁধের উপর মাথা রাখে তাহলে মাহি উঠে গিয়ে আশফির কলার ধরে ওখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসবে। কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ জেগে থাকা যায়?আশনূহাকে মাঝের সিটে সাবধানে শুইয়ে রেখেছে মাহি।কিছুক্ষণ পর মাহি ও ঘুমিয়ে পড়লো।ঘুম ভাঙ্গার পর মাহি দেখতে পেলো আশফির কাঁধে মাথা ওর।আর আশনূহা ওর কোলে আশফির সাথে খেলা করছে।আর মাহির পাশে যে বৃদ্ধা ছিল সে আশফির সিটে ঘুমিয়ে আছে।মাহির ঘুম ভেঙ্গেছে দেখে আশফি মাহিকে বলল,
-“বাব্বাহ্ তুমি এতোসময় ঘুমালে কি করে বলো তো?প্লেনের সিটে বসে ও বাড়ির বেডে ঘুমিয়েছো মনে হলো।যে এক ঘুমে সকাল হয়ে গেলো।অবশ্য বেডেই ঘুমিয়েছিলে মনে হচ্ছিল।আমার কাঁধটাকে যেভাবে বালিশ বানিয়েছিলে বেচারি ঐ বৃদ্ধা নানু আমার জায়গায় থাকলে না জানি কতো কষ্ট পেতো।
-“তুমি কেনো এসেছো এখানে?আর আমার মাথা ওনার কাঁধে যেতো কিভাবে?মাঝের সিটে তো আশনূহা ছিলো।সবসময় খালি ক্ষেপিয়ে তোলার ধান্দা।
-“না এসে তো পারলাম না।ঘুমের মধ্যে যেভাবে আমার বউটা কষ্ট পাচ্ছিলো তাই সেটা আর সহ্য করতে না পেরে সিট চেঞ্জ করে চলে এলাম।
তারপর দুজনে কয়েক ঘন্টা আকাশপথ পারি দিয়ে চলে এলো বাংলাদেশ(সকালবেলা)।ওদের রিসিভ করার জন্য আশফির চাচিমা নিজে এসেছে।আশফির চাচ্চু আর আলিশা এখনো পৌঁছেনি দেশে।তারা আশফিদের রওনা হওয়ার দুদিন পরে ওদের ফ্লাইট ছিল।কিন্তু কথা ছিলো একই দিনে ওরা দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।দুপুরের জন্য প্লেনের টিকিট দুদিন পরে কিনেছে ওরা।আশফির চাচিমা আশনূহাকে কোলে নিয়ে ওকে আদর করছিলো।আদর করা শেষ হলে চাচিমা আশফি আর মাহিকে বলল,
-“তোরা কিন্তু আমাদের বাড়িতে গিয়েই থাকবি।আমি তোদের আলাদাভাবে থাকতে দিবোনা।বুঝলি?এখন চল গাড়ি দাড়িয়ে আছে।
আশফি মাহিকে আস্তে করে বলল,
-“তোমার কি ইচ্ছা?চাচ্চুর বাড়িতে গিয়ে থাকবে নাকি আমাদের বাড়িতে যাবে?
-“আগে আমরা আমাদের বাড়িতে যাইনা?তারপর না হয় আলিশা আর চাচ্চু এলে ওদের ওখানে গিয়ে থাকবো?
-“ওকে।তাহলে চাচিমাকে বিষয়টা বলি।
তারপর আশফি ওর চাচিমাকে বলল,
-“চাচিমা?তোমার বউমা তো আগে একটু তার নিজের বাসায় যেতে চাইছে। তারপর চাচ্চু ফিরলে আমরা না হয় চলে আসবো তোমাদের ওখানে?
-“দেখ মাহি,এটা কিন্তু আমি একদম ভালোভাবে দেখলাম না।ওখানে তোদের দেখাশোনা,যত্নআত্তি কে করবে শুনি? কাজের লোকের যত্ন নেওয়ার কথা ভাবছিস?কেনো দেশে বুঝি তোদের আপনমানুষ নেই,সব মরে গেছে?
-“চাচিমা?তুমি কষ্ট নিওনা প্লিজ।আসলে ওটাও তো একসময় আমার সংসার ছিলো।তাই সেই সংসারটাকে এক নজর দেখার জন্য মনটা খুব আনচান করছে। কিন্তু থাক,তুমি কষ্ট পেলে আমরা ওখানে না হয় পরে একসময় গিয়ে ঘুরে আসবো।এখন চলো,তোমাদের বাসাতেই যাবো।
-“তোমাদের বাসা মানে কি?কিরে আশফি তুই তোর বউকে বলিসনি যে ওটা তোর ও বাড়ি?
-“নাহ্,আমি বলিনি।তুমি বাসায় গিয়ে ওকে ভালো করে বুঝিয়ে বলো।এখন অন্তত তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলো।খুব খিদে পেয়েছে।তোমার নাতনিটার ও একটু রেস্ট প্রয়োজন।তাই আর দেরী করো না।
-“হ্যা চল চল।আমিও বোকার মত এখানে দাড়িয়ে কথা বলছি।
আধা ঘন্টা গাড়ি জার্নির পর ওরা ওদের গন্তব্যে পৌঁছালো।আশফির চাচ্চুর বাড়িটাও কেমন একটু নিড়িবিলি।
মানুষজন তেমন নেই বললেই চলে। শুধু দুটো কাজের লোক ছাড়া এখন বাড়িতে শুধু ওর চাচিমা একাই থাকছে। আশনূহাকে মাহি আগে খাইয়ে দিল বাসায় আসার পর।তারপর চাচিমা নিয়ে আশনূহাকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার জন্য নিয়ে নিল।তারপর ওদেরকে ফ্রেশ হতে বলল,
-“তোরা দুজন রুমে গিয়ে আগে ফ্রেশ হয়ে নে।সুমি(কাজের মেয়ে)তোদের রুম দেখিয়ে দিবে।
তারপর সুমি গিয়ে ওদের রুমে লাগেজ নিয়ে দিলো আর কিছুক্ষণ পর এসে ওদের রুমে ঠান্ডা জুস দিয়ে গেলো। আশফি আর মাহি গোসল করে নিল। মাহি আশফিকে জুস খেতে খেতে বলছে,
-“চাচিমা কিন্তু অনেক শক্ত মনের মানুষ।এরকম টেনশনের ভেতরেও কিভাবে আমাদের খেয়াল রাখছে দেখছো?
-“হুম।চাচিমা বরাবরই খুব সহজে ভেঙ্গে পড়েনা।চাচ্চুর থেকেও মনে সে অনেক হার্ডি।অনেক আগে চাচ্চু ব্যবসায়ে অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল।চাচ্চু স্ট্রোক করে প্রায় ১ মাস বেডরেস্টে ছিল।ঐ সময় চাচিমা নিজে ঐ ১ মাস ব্যবসায় সামলেছে।ইনফ্যাক্ট ব্যবসাকে দাড় করিয়ে রাখতে পেরেছে।চাচিমা কিন্তু খুব ইন্টেলিজেন্ট ব্যবসায়ী।ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন দুজনের প্রেম আর তারপর বিয়ে।চাচ্চুর ব্যবসায়ের অর্ধেক হেল্প চাচিমা করতো।
-“হুম।খুব ভালো লাগলো।আচ্ছা নিচে চলো ব্রেকফাস্ট এর জন্য চাচিমা ডাকতে এসেছিল।
-“হ্যা চলো।
আজকের দিনটা ওদের চাচিমার সাথে গল্প করেই কেটে গেলো।পরেরদিন সকালে আশফি মাহিকে সকাল ৭ টায় ঘুম থেকে ডেকে তুললো।
-“মাহি?এই মাহি?জলদি উঠোনা।
অফিসে যেতে দেরী হয়ে যাবে তো।
মাহি ঘুম জড়ানো কন্ঠে চোখ বন্ধ করে আশফিকে বলল,
-“এই গাধা তুমি কি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কথা বলছো নাকি?আমরা এখন কোথায় তুমি জানো?
-“জ্বী,জানি।আমরা এখন আপনার চাচাশ্বশুর এর বাড়িতে।
-“সেটা আবার কোথায়?
-“ধ্যাত!উঠো তো।আমরা আজকে আমাদের এখানের অফিস থেকে একটু ঘুরে আসবো।তারপর সেখান থেকে আমাদের বাড়িতে।
-“এতো জায়গা রেখে তোমার অফিসে ঘুরতে যাওয়ার শখ হলো?
-“কারণ আছে।জলদি উঠো,উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।
মাহি আর আশফি সকালে ব্রেকফাস্ট করে চাচিমার কাছে কিছুসময়ের জন্য আশনূহাকে রেখে ওরা অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।গাড়িতে বসে মাহি আশফিকে বলল,
-“কতোদিন পর সেই চিরচেনা রাস্তা আর শহরটা দেখছি।অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেছে শহরের,তাইনা?
-“হুম।শুধু আমরা বদলাইনি।
কিছুসময় পর ওরা অফিসে পৌঁছালো। অফিসের সবাই ওদেরকে বরণ করে নেওয়ার মত করে শুভেচ্ছা জানালো। সবার সাথে কথাবার্তা বলে আশফি মাহিকে ওর চেম্বারে ঢুকে গেলো।যেখানে আশফি আগে বসতো।আশফি চেম্বারে ঢুকে চেয়ারে গিয়ে বসলো।চেয়ার বসেই হঠাৎ করে ওর চোখ গেলো মাহি আগে যে চেম্বারে বসতো সেই চেম্বারের দিকে। কিন্তু এখন সেখানে পর্দা টাঙ্গানো।মাহি যখন ওখানে বসতো তখন আশফি ইচ্ছা করেই পর্দা টাঙ্গাতো না মাহিকে দেখার জন্য।মাহি চেম্বারের দরজা লক করে এসে আশফির সামনে টেবিলে উপর উঠে বসলো পা ঝুলিয়ে।আর আশফি চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে বসে মাহির দিকে রোমান্টিক চাহনিতে তাকিয়েছিল আর মাহিও আশফির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছিলো।দুজনে কিছুক্ষণ এভাবে তাকিয়ে থাকলো দুজনের দিকে।তারপর আশফি কথা বলা শুরু করলো।
-“নুসরাত জাহান মাহি!আপনি কিছু জানেন আপনাকে কেনো আমি এখানে নিয়েসেছি?
-“হুম জানি।
-“কি জানেন?
-“আশফি চৌধুরির সাথে নুসরাত জাহান মাহির সর্বপ্রথম সাক্ষাতটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য এবং এখানে তাদের ঝগড়া,ভালোবাসার কিছু স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে এক গ্লাস পরিমাণ ভালোবাসা দেওয়া হলো।
আশফি মাহির কথা শুনে একটু হেসে দিল।তারপর চেয়ারে বসেই মাহির কাছে এগিয়ে এলো।ওকে বলল,
-“মাত্র এক গ্লাস?
-“হুম।আপাতত এক গ্লাস ই থাক।
-“আচ্ছা।তো……?
-“তো……?
-“তো আমি কি সেই সাবেক মাহির সাবেক স্টাইলে দেওয়া ভালোবাসা পুনরায় পেতে পারি?
-“তাহলে তো আমাকে সেই পূর্বের জায়গায় ফিরে যেতে হবে।
-“উহুম।শুধু মনটাকে পূর্বের জায়গায় নিয়ে যাও।
-“আচ্ছা?
-“হুম।
-“কিন্তু আমার তো মনে পড়ছেনা।ঠিক কিভাবে তোমাকে ভালোবেসেছিলাম?
-“ওহহো….আমি তো ভুলেই গেছি। আগে তো আমার বউ অনেক স্বার্থপর ছিল।সবসময় খালি বরের থেকে আদর নেওয়ার সুয়োগে থাকতো।কিন্তু নিজে কখনো সেধে আদর করতে আসতো না।
ঠিকআছে,তাহলে মনে করিয়ে দেওয়ার দায়িত্বটা আমিই নিচ্ছি।
-“প্লিজ।
আশফি চেয়ার থেকে উঠে মাহির কাছে গিয়ে দাড়ালো।তারপর মাহির গালটা ধরে মাহির ঠোঁটে দীর্ঘ সময়ের একটি চুমু গিফ্ট করলো।ঠিক সেদিনের মত করেই।যেদিন আশফির ঠোঁটের চুমুতে মাহির ঠোঁটের চারপাশ ভিজা হয়েছিল।
তারপর আশফি মাহিকে বলল,
-“চুমুটাকি আগের মতই ছিলো?
-“আমার ঠোঁট আর ঠোঁটের চারপাশ কি ভিজে হয়ে আছে?
-“তুমি বুঝতে পারছোনা?
-“তুমি বলোনা?
-“হুম।
-“তাহলে চুমুটা আগের মতই হয়েছে।
আশফি মাহিকে টেবিলের উপর থেকে নামিয়ে ওকে বলল,
-“আচ্ছা এবার অফিস থেকে বেরোনো যাক।এরপর আমরা আমাদের বাড়িতে যাবো।
-“ওকে চলো।
ওরা দুজন অফিস থেকে সকলের থেকে বিদায় নিয়ে ওদের বাড়িতে চলে এলো। বাড়িতে ঢোকার পর মাহি ড্রয়িংরুমে থমকে দাড়িয়ে গেলো।ওখানে দাড়িয়েই বিয়ের পরের প্রথমদিন গুলোর খারাপ ভালো সব স্মৃতিগুলো ওর মনের ডায়েরির পৃষ্ঠাগুলোকে উল্টাতে থাকলো।ড্রয়িংরুম থেকে কিচেনে গেলো,ডাইনিং প্লেসে গেলো,ঘরের প্রতিটা জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকলো।আর আশফি মাহির পিছু পিছু থাকছিলো আর মাহির মুখটা দেখছিলো দাড়িয়ে।বিয়ের পর সেই প্রথম দিনগুলোর মাঝে মাহি হারিয়ে গেছে সেটা মাহির চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।আর আশফি সেটাই দেখছিলো।
মাহি স্মৃতিররাজ্যে ঘুরে বেড়ানোর মাঝেই আশফি গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো।কোলে তুলে মাহিকে বলল,
-“শুধু এখানে ঘুরে বেড়ালেই হবে? বেডরুমেও তো যেতে হবে।ওখানে ও অনেক স্মৃতি অপেক্ষা করছে আমাদের স্বাগতম জানানোর জন্য।
মাহি আশফির কথার উত্তরটা দিল একগাল মৃদু হাসি দিয়ে।আশফি মাহিকে নিয়ে উপরে উঠে গেলো।রুমে গিয়ে মাহিকে বিছানায় শুইয়ে দিল।তারপর মাহির কাছে গিয়ে বলল,
-“মনে পড়ে তোমার প্রথম কাছে যাওয়ার কথা?
-“সেই রাতের কথা তো আমি মরে যাওয়ার পরেও ভুলতে পারবোনা।
-“মানে?ঐ রাতটাই তো আমাদের বাসররাত ছিলো।যদিও আমাদের রুম,বিছানা কিছুই ফুল দিয়ে সাজানো ছিলোনা।তাই বলে কি ওটা আমাদের বাসররাত নয়?
-“ওটা আমার কাছে আর যাই হোক বাসররাত মনে হয়নি।কি ভয়ানক ছিলে তুমি?সেদিন মনে হয়েছিল তুমি আমাকে শেষই করে ফেলবে।কোনো স্বামী যে তার বউকে ওভাবে অত্যাচার করতে পারে তা তোমার থেকে অত্যাচারিত না হলে জানতে পারতাম না।ঐ মুহূর্তগুলো আমার কাছে যে কতোটা কষ্টের ছিলো তা যদি তুমি জানতে তাহলে হয়তো ওভাবে কষ্ট দিতেনা আমাকে।
-“আমি জানি ঐ সময়টুকু তুমি কতোটা কষ্ট পেয়েছিলে।তুমি যে আমার থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলে তার শাস্তিস্বরূপ তোমাকে ঐ রাতটা ডেডিকেট করেছিলাম।
-“ডেডিকেট,না?
-“হুম।চাইলে এখনো করতে পারি।তবে রাত নয় দিন।
চলবে…..
রোমান্টিক_অত্যাচার (২) পর্ব-২৪
রোমান্টিক_অত্যাচার (২)
পর্ব-২৪
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
আশফি অফিসে পৌঁছালো।চেম্বারে বসে সেক্রেটারিকে ফোন করলো।
-“আমার চেম্বারে এসো।
-“ওকে স্যার।
২ মিনিট পরই সেক্রেটারি চেম্বারে আসলো। আশফি সেক্রেটারি কে বলল,
-“সবাইকে ঠিক ১০ টার ভেতরে কনফারেন্সরুমে আসতে বলো।আজকে কিছু জরুরি কথা বলবো।আর চেয়ারম্যান কে ও জানিয়ে দাও ব্যাপারটা।
-“ঠিক আছি।এখনই সবাইকে জানাচ্ছি।
কিছুসময় পরই সবাই কনফারেন্স রুমে উপস্থিত হলো।মাহি ও চলে এসেছে,আশফি সবার পরে এলো।তারপর সবার উদ্দেশ্যে বলল,
-“আমি একটা অনেক বড় ডিসিশনস নিয়েছি।প্রায় ১৫ দিনের ভ্যাকেশনে আমি দেশের বাইরে যাচ্ছি।আপনাদের চেয়ারম্যান ও আমার সাথে যাবে।তো সে হিসেবে আমরা কেউ ই থাকছিনা।আপাতত সব ম্যানেজার এর উপরে দায়ভার দিয়ে যাচ্ছি।তবুও আপনাদের সকলের একতা ও সমঝোতা আশা করছি।এর আগেও লং টাইম ভ্যাকেশনে দেশের বাইরে ছিলাম।তো তখন আপনারা সবাই মিলে মিশে আমাদের কোম্পানিটাকে আগলে রেখেছিলেন। আশা রাখছি আগামী ১৫ টা দিনও সেভাবেই সবকিছু দেখে শুনে রাখবেন।
আশফির সিদ্ধান্ত শুনে মাহি ভাবলো,
-“এতো দ্রুত ইংল্যান্ড যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল আশফি?আমাকে তো একবার বললো ও না।
আশফি আবার বলা শুরু করলো,
-“চেয়ারম্যান! আপনি কিছু বলতে চান?
-“আমি আর কি বলবো।যা বলার তো আপনি বলে দিয়েছেন।তারপরেও সবার উদ্দেশ্যে এটুকুই বলবো,কোম্পানিটা শুধু আমাদের একার নয় এটা আপনাদের ও।তাই কোম্পানিটাকে এবং কোম্পানির সব কাজকর্মগুলো নিজেদের ব্যক্তিগত কাজের মতই গুরুত্ব দিবেন।আর আজকে কোম্পানির কিছু ইম্পর্টেন্ট কাজ আপনাদের সাথে আলোচনা করবো যাতে আমাদের অনুপস্থিতিতেও সমস্যা না হয়।
মাহি সেক্রেটারিকে বলল কাজগুলো সবার সামনে আলোচনা করতে।সেক্রেটারি সকলের সামনে দাড়িয়ে কাজের বিষয়গুলো আলোচনা করছিল।মাহির মনযোগ সেক্রেটারির দিকে ছিল।কিন্তু মাহির মনে হলো আশফি ওর দিকে তাকিয়ে আছে।ও পাশ ফিরে তাকালো। সত্যিই আশফি ওর দিকে কেমন শীতল চোখে তাকিয়ে আছে।মাহি কিছু বুঝেও না বুঝার অভিনয় করে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো আশফিকে যে আশফি কিছু বলতে চাই কিনা ওকে।আশফি কিছু না বলে চোখ ফিরিয়ে নিল মাহির থেকে।কনফারেন্স শেষ হলে যে যার চেম্বারে চলে গেলো।আশফির চেম্বারে আসলো মাহি।এসে আশফিকে বলল,
-“একটু টাইম হবে?
আশফি কাজ করছিল বসে।মাহির কথার আওয়াজ শুনে ওর মুখের দিকে তাকালো। তারপর ওর প্রশ্নের উত্তর দিল,
-“হুম।
উত্তরটা দিয়ে আশফি মাহির দিকে তাকিয়ে রইলো।আশফির তাকানোর ভাবটা এমন ছিল যে যেকোনো মুহূর্তে আশফি মাহির উপর সিংহের মত এট্যাক করে বসবে।মাহিও কিছুটা বুঝতে পেরে আশফিকে বলল,
-“এমন হিংস্র প্রাণীর মত চোখ করে তাকিয়ে আছো কেনো?
মাহির কথার কোনো উত্তর দিলোনা আশফি। মাহিকে বলল,
-“কি বলার জন্য এসেছো?
-“তুমি ইংল্যান্ড যাওয়ার ব্যবস্থা কখন করেছো?
-“করিনি।
-“তাহলে….?
-“ইংল্যান্ড যাচ্ছিনা।বাংলাদেশ যাবো আমরা।
মাহি কিছুটা অবাক আর অনেকটা খুশি হয়ে আশফিকে প্রশ্ন করলো,
-“বাংলাদেশ?সত্যি যাচ্ছি?
মাহির উত্তেজিত কন্ঠ শুনে আশফি একটু মাহির মুখের দিকে তাকালো তারপর আবার চোখ ফিরিয়ে নিল।মাহির প্রশ্নের উত্তর দিল আশফি,
-“মিথ্যার কি হলো?অফিসে আসার আগে চাচ্চুর সাথে কথা হয়েছে।আলিশাকে নিয়ে পরশু দেশে ফিরছে।
-“কিন্তু দুপুর তো আর দেশে ফিরছেনা।
তাহলে ওর সাথে কিভাবে কথা হবে? তুমি চাচ্চুকে বলোনি?
-“বলেছি।
-“চাচ্চু কি বললো? আচ্ছা তুমি পুরো ব্যাপারটা ক্লিয়ার করে বলছোনা কেনো আমাকে?মুখের মধ্যে কথা রেখে দিচ্ছো কেনো?
আশফি মাহির কথার কোনো গুরুত্ব দিলোনা। নিজের মত কাজ করে যাচ্ছে।এটা মাহির একদম ভালো লাগলোনা।এভাবে মাহিকে ইগনোর করার জন্য মাহি অপমানবোধ করছে।ওর রাগ উঠে গেলো মাহির আশফির এমন ব্যবহারের কারণে।মাহি আবার জিজ্ঞেস করলো আশফিকে,
-“তোমাকে আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি।তুমি তার উত্তর দিচ্ছোনা কেনো?
এবার ও আশফি কোনো কথা বললোনা।মাহি আশফির পাশে গিয়ে দাড়ালো,আশফিকে বলল,
-“সমস্যা কি তোমার?এতো মুড নেওয়ার মানে কি?
কথাটা শেষ হতেই আশফি মাহিকে টেনে এনে নিজের কোলের উপরে বসালো।আর খুব শক্ত করে ধরে রাখলো ওকে।তারপর আশফি মাহিকে বলল,
-“সমস্যা কি তুমি বুঝোনা?তোমাকে তো এখন আমার আস্ত গিলে খেতে ইচ্ছে করছে। বদমাইশ মেয়ে!
-“কি বলো এসব?এই তুমি আমাকে ছাড়ো তো।আমাকে যেতে দাও।তোমার কাছে আসাটাই আমার ভুল হয়ে গেছে।
-“একদম মেড়ে ফেলে দিব।যখনই কাছে আসি তখনই পালিয়ে যাওয়ার জন্য লাফালাফি করো।আর তোমার পা টাও বেশ বেড়েছে। নিজের খেয়াল খুশিমত চলাফেরা করছো। আমি তোমাকে ওয়েট করতে বলেছিলাম তারপরে ও তুমি আমাকে রেখে নিজে নিজে অফিসে চলে এসেছো।তুমি জানো আমি এখন তোমার কি অবস্থা করবো?
-“হুম জানি।টর্চার করতে পারা ছাড়া আর কি করতে পারো তুমি?
-“এতো বড় কথা?এই,আমি তোমাকে কিভাবে টর্চার করি?
-“শারীরিক,মানসিক সবভাবেই টর্চার করো। এইযে এখন কি করছো তুমি?
-“এখন কি করছি?
-“কি করছো তুমি দেখতে পাচ্ছোনা?
-“কিছুই তো করা শুুরু করলাম না। আর আমি তোমাকে শারীরিক ঠিক কিভাবে টর্চার করলাম?
-“এই আমি জানিনা।তুমি আমাকে ছাড়ো তো।যে কেউ রুমে চলে আসতে পারে।
-“আসলে আসবে।তাতে আমার কি?
-“লজ্জা জিনিসটা তোমার মাঝ থেকে দিন দিন চলে যাচ্ছে নাকি?
-“থাকলে যাওয়ার কথা আসে।না থাকলে যাবে কিভাবে?
-“সেটাই।নির্লজ্জ পুরুষমানুষ।
-“এর জন্যই তো অফিসে বসেই তোমার সাথে রোমান্স করা শুরু করবো।
-“ছি…….কি নোংরা মানুষ তুমি?
-“তাহলে তো তুমিও নোংরা।একসময় অফিসে তুমি নিজেই আমার কোলের উপর বসে আমাকে আদর করা শুরু করে দিতে। তাহলে তুমিও লুচ্চানী।
-“অসভ্য।কি ধরনের কথা এসব?
-“ও……আমি বললেই অসভ্য?এখানেই বসে থাকবে তুমি,আমার কোলের উপর চড়ে।
মাহি আশফির কোলের উপর থেকে উঠে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করছে।আর আশফি খুব শক্ত করে ওকে চেপে ধরে রেখেছে।মাহি উঠে যাওয়ার চেষ্টা করছে বলে আশফি মাহিকে বলল,
-“খামোখা তুমি তোমার এন্যার্জি লস করছো।তুমি পারবে আমার থেকে নিজেকে ছাড়াতে?এই জানো,তোমাকে এভাবে আমার কোলের উপর বসে থাকতে দেখে অনেক আগের একটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো।আমি তুমি এখনো আছি।তাহলে সেইদিনের সেই ঘটনাটাও আমাদের মাঝে আবার ঘটতে পারে।
-“কোন দিনের, কোন ঘটনা?
-“এখনি দেখতে পাবে।
মাহি অফিসের জন্য ফরমাল ড্রেসে এসেছে। শার্ট পড়া অবস্থায় ছিল ও।আশফি হঠাৎ করেই মাহির শার্টের বোতামের দিকে হাত বাড়ালো।এটা দেখে মাহির বুঝতে দেরী হলোনা আশফি কোন ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে চাইছে।মাহি আশফির হাত ধরে আশফিকে বাঁধা দিল।তারপর আশফিকে বলল,
-“তুমি কিন্তু এটা একদম করবেনা।সেদিন কিছু বলিনি বলে আজও তোমাকে বাঁধা দিবনা সেটা কিন্তু না।
-“ঐ তুমি আমার বউ।বাইরের মেয়ে না।আমি তোমার সাথে যেমন খুশি তেমনভাবেই রোমান্স করতে পারি।তাতে তুমি বাঁধা দেওয়ার কে?আমি কিন্তু ইচ্ছা করলে এখন জোড় করেও এটা করতে পারি।আর জোড় করে করলে সেটা তোমার জন্য খুব খারাপ হবে।
-“তুমি কেমন,হ্যা?অফিসে বসে অফিসের কাজ ফেলে বউ এর সাথে যতসব ফাজলামি শুরু করেছো।
-“আমি মোটেও ফাজলামির মুডে নেই। আমাকে ঠিকমত আদর করতে দাও আর নাহলে নিজে করো তাহলে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিব।
-“আমি আশফির চোখের দিকে রেগে তাকিয়ে রইলাম।তারপর কিছু না বলেই আশফির গালে চুমুর বদলে কামড় বসিয়ে দিলাম। গালের পাশটা পুরো দাঁতের দাগ বসে লাল হয়ে গেছে।আশফি ব্যাথা পেয়ে আমাকে বলল,
-“মাহিইইইই……তুমি পাগলের মত এটা কি করলে?ধুরর…..নামো তো কোল থেকে।
আশফি মাহিকে কোল থেকে নামিয়ে গ্লাসে দেখলো ওর গালটা।গালে দাগ হয়ে গেছে দেখে মাহিকে বলল,
-“আমার এখন তোমাকে যে করতে ইচ্ছা করছে।অফিসের ভেতর এভাবে আমি কতক্ষণ গালে হাত দিয়ে বসে থাকবো?অফিসের সবাই দেখলে কি ভাববে?
-“তুমি যে আদর করতে বললে।এটা আমার আদর করার একটা ধরন।আর কিই বা ভাববে।তোমার তো কারোর ভাবাতে যায় আসেনা।অনেক ইজি ভাবেই তুমি সবার সামনে যাবে।
মাহি কথাগুলো বলছিলো আর মিটমিট করে হাসছিলো।
-“হুম।তাই তো।আমার তো কারো ভাবাতে যায় আসেনা।
আশফি মাহির কাছে গিয়েই মাহিকে ধরে ওর গালে ও আশফি অনেক জোড়ে কামড় বসিয়ে দিল।মাহি কিছু বলতে যাবে আবার আশফি ওর ঠোঁটে চুমু খেয়ে বসলো।মাহি ধাক্কা দিয়ে আশফিকে সরিয়ে দিল।মাহির গালেও আশফির মত সেম দাগ হয়ে গেছে।মাহি কিছু বলতে গিয়ে বলতে পারলোনা।সারাটা দিন দুজনে গালে হাত দিয়ে ঢেকে অফিসে কাজ করলো।অফিস শেষে দুজনে একসাথে বের হওয়ার সময় অফিসের প্রতিটা স্টাফ ওদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।কারণ দুজনেই তাদের নিজেদের একপাশের গালে হাত দিয়ে ঢেকে অফিস থেকে বের হচ্ছিল।
অবশেষে দুজনে বাসায় ফিরলো।দুজনে ফ্রেশ হয়ে রুমেই যে যার মত কাজ করছিল। আশফি কথা বলল প্রথমে,
-“পরশুদিন আমাদের ফ্লাইট।যা গোছগাছ করার আছে করে ফেলো জলদি।
-“আমি বুঝলাম না।এতো জলদি সব ব্যবস্থা করলে সেটা ঠিক আছে।কিন্তু বাংলাদেশ কেনো?
-“চাচ্চু আলিশাকে দেশে নিয়ে আসছে। আর দুপুরের সাথে চাচ্চু খোলামেলা কিছু কথা বলেছে।সেগুলো শুনে দুপুর ও দেশে আসতে রাজি হয়েছে।অনেকটা অনুরোধ করেই রাজি করানো হয়েছে ওকে।কিন্তু সব কথার মাঝেই ওর একটা কথা।আলিশাকে সুস্থ করার জন্য ও দেশে যেতেই পারে কারণ ও একজন ডাক্তার।
কিন্তু তার বিনিময়ে আলিশাকে ও ভালোবাসতে পারবেনা।
-“ইচ্ছে করছে দুপুরের কান টেনে ছিড়ে ফেলি।
-“এমন ইচ্ছে হচ্ছে কেনো তোমার?
-“ও যে এমন একটা ব্যাপারকে ঘিরে নিজের জীবনটাকে থামিয়ে রাখছে সেটা কি ও বুঝতে পারছেনা?
-“ও….এর জন্য তোমার রাগ হচ্ছে?আমি তো ভাবলাম আলিশাকে রিফিউজড করছে বলে। আমি তোমার দুপুরের লাইফ নিয়ে একটুও ভাবছিনা।আমি ভাবছি শুধুমাত্র আলিশাকে নিয়ে।যার জন্য এতোকিছু করা।না হলে দুপুর সারা জীবন একা থাকলো না দোকা থাকলো সেটা নিয়ে কে ভাববে?
-“এই তুমি কি বললে?আমার দুপুর মানে?
-“ঐ হলো আর কি।
-“ঐ হলো আর কি মানে কি?কথাবার্তা কিন্তু ঠিক করে বলো।
-“তো তুমি দুপুরের না,আশফির ও নও।তাহলে তুমি কার?
মাহি আশফির বলা কথাটা শুনে আশফির কাছে এগিয়ে গেলো।তারপর ওকে বলল,
-“তুমি কি বললে?আমি আশফির নই মানে?
-“তুমি কি আমার?
-“অবশ্যই।কোনো ডাউট আছে?
-“হুমম।
-“কিহ্?
-“আমার বউ হলে আমি অফিস থেকে আসার পর সে নিজে আমার জামা কাপড় খুলে আমার সারা শরীর মুছে দিয়ে আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিত।আর রাত হলে আমার সারা শরীরে তার ঠোঁটের ছোঁয়াই আমাকে ভরিয়ে ফেলতো।আর সকালে ঘুম ভেঙ্গে বিছানা থেকে উঠার আগে তাকে আদর না করে সে আমাকে উঠতেই দিতোনা।এগুলো তার রুলসের ভেতর পড়তো।কিন্তু তুমি কি সেগুলো করো?
-“করবো ও না কোনোদিন।
-“মনে থাকবে তো?
-“কাজেই বুঝতে পারবে।
-“ঠিক আছে।নিজের স্বামীর দায়িত্ব যে স্ত্রী নিজেই ছেড়ে দেয় তাহলে সেই স্বামীর আর কিই বা করার থাকতে পারে শুধু আর একটা বিয়ে করা ছাড়া।দেখি,দেশে গিয়ে এবার ভালো আদর করতে পারে,যত্ন করতে পারে এমন একটা মেয়েকে দেখে বিয়ে করে আনবো।
আশফির কথা শুনে মাহি চোখগুলো বড় বড় করে আশফির দিকে তাকালো।সেটা দেখে আশফি বলল,
-“আরে তাই বলে তোমাকে ছেড়ে দিবনা তো। তুমি তোমার জায়গাতেই থাকবে।আমি তো শুধু আমার যত্নআত্তি আর মাঝেমাঝে একটু প্রেম সোহাগ নেওয়ার জন্য ওর কাছে যাবো। তাছাড়া রাতে তোমার সামনে তো আর এসব করতে পারবোনা। তাই তুমি তোমার রুমেই থাকবো।টিভি সিনেমার মত তোমাকে ঘর থেকে বের করে দিবনা।আমরাই অন্য ঘরে চলে যাব।আর ওকে বলবো ও যেনো তোমার সব কথা মেনে চলে।
আশফি মাহির দিকে তাকিয়েছিল।আশফির এসব কথা শুনে মাহি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আর আশফি হা হা করে হাসতে থাকলো।রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে মাহি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।আশফি রুমে এসে মাহিকে বিছানায় শুতে দেখে একটু চমকে গেলো।আর মনে মনে বলল,
-“হঠাৎ করেই পরিবর্তন?তারমানে তখনকার কথাগুলো মনে হচ্ছে কাজে দিয়েছে।হা হা হা এই না হলে মেয়ে মানুষ।এরা আর যা কিছু ছাড় দিক কিন্তু স্বামীকে অন্য মেয়ে মানুষের কাছে একটুও ছাড় দিবেনা।
আশফি আশনূহাকে ঘুম পাড়িয়ে ওকে শুইয়ে দিল।তারপর রুমের লাইট অফ করে মাহির পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।মাহি ভাবছে,
-“এখন নিশ্চই গায়ে গা লাগিয়ে এসে শুইবে। তারপর শুরু করবে ওর দুষ্টুমি।ভাবলাম আরো কিছুদিন রাগ করে দূরে সরে থাকবো।তা আর হলোনা।এমন সব কথা বললো যা শুনে আর মাথা ঠিক থাকলোনা।ছেলেমানুষের বলে কোনো বিশ্বাস নেই।যতই বউকে ভালোবাসুক কিন্তু বউ এর আদর যত্ন না পেলে তখন এমনিতেই অন্য মেয়েদের দিকে চোখ যায়।
অনেকক্ষণ হয়ে গেলো আশফি মাহির কাছে এসে শুচ্ছেনা।অন্যদিকে মুখ ঘুরে শুয়ে আছে। ব্যাপারটা মাহির ভালো লাগছেনা।আবার নিজেও ওকে ডাকতে পারছেনা।মাহি শুধু এপাশ ওপাশ করছে।কিছুতেই ঘুমাতে পারছেনা।তখন আশফির বলা কথা গুলো ভেবে চলেছে।
-“আচ্ছা ও কি ঐ কথাগুলো সিরিয়াসলি বললো নাকি?
মাহি আর কিছুক্ষণ বিছানায় থেকে পরে বিছানা থেকে উঠে গেলো।আশফি বুঝতে পারছে মাহি কেনো এতো ছটফট করছে।কিন্তু তাও কোনো কথা বলছেনা আশফি।
-“অনেকক্ষণ হয়ে গেলো মাহি রুমের বাইরে। কি করছে ও?আমার কথাগুলো সিরিয়াসলি ভেবে বসলোনা তো আবার?তাহলে তো আবার বাড়ি ছেড়ে দৌড়াবে।আমি উঠে গিয়ে ব্যাল্কুনিতে গেলাম।ওখানেই বেতের চেয়ারে বসে ঘুমিয়ে পড়েছে মেয়েটা।বেচারি টেনশনে থাকলে কিছুতেই তার বিছানায় ঘুম আসেনা।আমি ওর কাছে গিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে খুব আস্তে করে ডাকলাম।দুই ডাকেই চোখ মেলে তাকালো।কোনো কথা বলছেনা।আমি ওকে বললাম,
-“বিছানা ছেড়ে এখানে ঘুমাচ্ছো যে?
-“বিছানায় ঘুম আসছিল না, তাই।
-“আমি ঘুম পাড়িয়ে দিব,চলো।
-“দরকার নেই।
মাহি উঠে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। আশফিও ওর পিছু পিছু গিয়ে ওর পাশে শুয়ে পড়লো।মাহি এক কাত হয়ে শুয়েছিল।
আশফি মাহিকে পিছু থেকে জড়িয়ে ধরলো। মাহি তখন কোনো বাঁধা দিলনা।
চলবে……
রোমান্টিক_অত্যাচার (২) পর্ব-২৩
রোমান্টিক_অত্যাচার (২)
পর্ব-২৩
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
কথাটা বলেই চাচ্চু কান্না করে দিল।আশফি বলল,
-“চাচ্চু কান্না বন্ধ করো প্লিজ।আমাকে পুরো ঘটনাটা বলো?আর তার আগে বলো ও এখন ঠিক আছে তো?
-“হুম।অবজারভেশনে আছে এখনো। আজ রাতে আমি ইংল্যান্ড এসেছি।
-“ওর মত মেয়ে এটা কিভাবে করতে পারলো?
-“এখানে আসার পর অনেক কিছু জানতে পারলাম। ও একটা ছেলেকে ভালোবাসে খুব। কিন্তু ছেলেটা ওর সাথে কোনো সম্পর্কে আসতে চাইছেনা।ও তার কাছে বার বার গিয়েছে তাকে বোঝানোর জন্য।কিন্তু ঐ ছেলে ওকে বার বার ফিরিয়ে দিয়েছে।শেষবারের মত যেদিন ওকে ফিরিয়ে দিয়েছিল ঠিক সেদিন রাতেই ও রাস্তার মাঝখানে গিয়ে গাড়ির সামনে ঝাপিয়ে পড়েছিল।আর এইসব কথাগুলো সেই ছেলেটা নিজেই আমাকে সব বলেছে।এমনকি আমি আসার আগে পর্যন্ত ঐ ছেলেটিই হসপিটালে ওর পাশে ছিল। ছেলেটাকে গালমন্দ করবো কি তার বদলে আরো ঋণী হয়ে গেলাম।
-“না না চাচ্চু।ছেলেটা এই বিষয়ে একদমই নির্দোষ।ভুলটা আমাদের আলিশাই করেছে। ওর বন্ধুত্বটাকে ও তার বেশি কিছু ভেবে বসেছিল।
-“তুই জানতি এই ব্যাপারগুলো?
-“হ্যা।আমি মাহি দুজনেই জানতাম।কিন্তু আমরা ওর থেকে কিছু সময় চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আশনূহা একটু বড় হলে আমরা সবাই মিলে দেশে যাব।তারপর ওর এই ব্যাপারটা নিয়ে দুপুরের সাথে সামনাসামনি বসে কথা বলবো।এর মাঝে এমন একটা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে যার জন্য আমার আর মাহির দুজনেরই ওর সাথে কথা বলা দরকার ছিল।তাহলে ব্যাপরটা হয়তো পুরোটা ক্লিয়ার হয়ে যেতো।আর ওদের সম্পর্কটা ও তৈরি করা যেতো।
-“বুঝতে পারলাম না। তুই ঠিক কি বোঝাতে চাইছিস?
-“ফোনে এতোকিছু ক্লিয়ার করতে পারবোনা চাচ্চু।আমি কিছুদিন পরই ইংল্যান্ড আসছি।
-“আরে না তার কোনো দরকার নেই।আমি তো আছিই।আমি সব দেখে শুনে নিব।তুই এতো টেনশন নিস না।মাহি আর দাদীবু এর খেয়াল রাখিস।
-“না চাচ্চু আসাটা খুব ইম্পর্টেন্ট আলিশা আর দুপুরের জন্য।দেখি,মাহিকে নিয়েই আমি আসছি।আসার পর সব জানতে পারবে।
-“আচ্ছা কবে আসতে পারছিস আমাকে জানাস।
-“ঠিক আছে চাচ্চু।
-“হুম।রাখছি।
আশফির কথা বলা শেষ হলে মাহি আশফির সাথে কথা বলল,
-“কি হয়েছে আলিশার?কি হয়েছে ওর?
-“সুইসাইড করার চেষ্টা করেছিল।এখন একটু ভালো আছে।হসপিটালে ড: দের অভজারভেশনে আছে।
-“আলিশা কি আমাদের উপর একটু ভরসা করতে পারলো না?
-“সেই ধৈর্য টুকু নেই ওর।আমাদের কিছুদিনের ভেতর ওখানে যেতে হবে এই সমস্যার একটা সমাধান করতে।
-“হুম।
হঠাৎ করে আশফি মাহির মুখের দিকে তাকালো।আশফি মাহির দিকে তাকিয়ে আছে সেটা মাহি বুঝতে পেরে আশফিকে বলল,
-“কি হয়েছে?কি দেখছো এভাবে?
আশফি একটু হেসে দিয়ে বলল,
-“কিছুনা।মনে হচ্ছে তুমি…..
-“কি?আমি যেমন ছিলাম তেমনই আছি। এখন এখান থেকে উঠো নইলে উঠে রুমের বাইরে চলে যাবো।
-“ধুর উঠেই গেলাম।থাকলাম না তোমার কাছে।খালি সরো সরো সরো…..অসহ্য। সরেই থাকবো সারাজীবন।হুহ।
আশফি উঠে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। কিছুসময় পরই চান্দুর ঘুম ভেঙ্গে গেল।মাহি উঠে ওকে খাইয়ে আবার ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু চান্দুর তো অভ্যাস হয়ে গেছে ওর বাবার কোলে চড়ে ঘুমানোর।মাহি আশফিকে ডাকল,
-“এই?একটু উঠো।
-“কেনো?
-“কেনো আবার? দেখতে পাচ্ছো না ও ঘুমাচ্ছেনা।ওকে ঘুম পাড়িয়ে দাও।
-“আমার ঘুম আসছে।তুমি ঘুম পাড়াও।
-“আরে ভাই আমার কাছে তো ঘুমাচ্ছেনা।শুধু কাঁদছে।
আশফি মাহির কথা শুনে ঠাস করে উঠে বসে পড়লো।তারপর মাহির দিকে রেগে তাকিয়ে ওকে বলল,
-“ঐ মেয়ে তুমি আমাকে কি বললে,আবার বলো?থাপ্পর মেড়ে গাল লাল করে দিব। ভাই বলা ছুটিয়ে দিব একদম।কিছু বলছিনা শুধু তোমাকে।যখন ধরবো না,একদম ছাই দিয়ে ধরবো।
তারপর আশফি উঠে মাহির কাছে গেল।আর মাহিকে ঝাড়ি মেরে বলল,
-“দাও আমার কাছে।ফাজিল মেয়ে একটা।
মাহি চান্দুকে আশফির কোলে তুলে দিল। তারপর মনে মনে বলল,
-“ভালো একটা জিনিস তো ওকে রাগানোর! ভাই বললে মেজাজ ৪৪০ ভোল্টে নেমে আসে। যাক কাজে তো দিয়েছে।পায়ে ধরেও এখন ওকে উঠানো যেতোনা।
মাহি গিয়ে নিচে ওর বিছানায় শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর আশফি ওর মেয়েকে এসে শুইয়ে দিল,ঘুমিয়ে পড়েছে।আশফি দেখলো মাহি এইটুকু সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে।মাহির সামনে বসে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ও ভাবছে,
-“কতগুলো দিন পর মেয়েটা শান্তির ঘুম দিচ্ছে। কিছুদিন আগেও যাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে হতো।এই ক’দিনেই সে নিজে নিজে ঘুমানোর অভ্যাস করে ফেলেছে।হয়তো এতোগুলো রাত ও ঘুমাতেও পারেনি ঠিক আমার মতই।সারা রাত আমাদের কথা ভেবে শুধু কেঁদেছে। আর এখন ও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছে কারণ আমরা এখন ওর কাছে আছি। থাক আজকের রাতটা একটু শান্তিতেই ঘুমাক। কাল থেকে না হয় প্রেমটা শুরু করবো।
আশফি মাহির কাছে গিয়ে ওকে খুব আস্তে করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।মাহিও বুঝতে পারলোনা যে ও কারো বুকের মধ্যে আছে। আরো গুটিসুটি মেড়ে আশফির বুকের মাঝে এগিয়ে এলো।আশফি মাহির দিকে তাকিয়ে একটু হেসে দিল।তারপর ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।সকালে মাহির যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন আশফিকে এভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে কিছু না ভেবেই আশফিকে খুব বড় সড় একটা চিমটি কাটলো। আশফি তখন ব্যাথা পেয়ে চিৎকার করে উঠলো।
-“উহহহহহ…..মাহি?এভাবে ঘুমের মধ্যে চিমটি কাটার মানে কি?
-“তুমি আমার কাছে এসে ঘুমিয়েছো কেনো?
-“তাতে কার বাপের কি?হ্যা?তার জন্য কি চিমটি কাটতে হবে।দেখেছো,কিভাবে চিমটি কেটেছো?পুরো জায়গাটাতে রক্ত জমে লাল হয়ে গেছে।
-“একদম ঠিক হয়েছে।এরপর থেকে আমার ধারের কাছে আসার চেষ্টা করলে এমন করেই চিমটি কাটবো।
-“তোমাকে আর সেই সুযোগ দিলে তো। দাড়াও তোমাকে একটা শিক্ষা না দিলেই হচ্ছেনা।
আশফি উঠে গিয়ে চারপাশে তারপর আলমারীতে কি যেনো খুঁজছে।মাহি এভাবে ওর খোঁজা দেখে ভাবছে,
-“কি খুঁজছে ও। কি করতে চাইছে?
তারপর আশফি কাপড়-চোপড়ের আলমারী থেকে ওর কিছু টাই বের করে নিয়েলো। টাইগুলো দেখে মাহি খুব ভালোভাবে বুঝেছে আশফি এখন ওর সাথে কি করবে।আশফি ওর কাছে আসার আগে মাহি উঠে দৌড়ে পালাতে গেল।মাহি পালিয়ে যাওয়ার আগে আশফি গিয়ে ওকে ধরে ফেলল।তারপর ওকে বলল,
-“এখন পালানো হচ্ছে কেনো?সকাল সকাল আমার ঘুমকে তেজপাতা করেছো।রাতেও আমাকে ঠিকমত কাছে আসতে দাওনি।এখন সবগুলোর হিসবা সুদে আসলে মিটিয়ে নিব।
-“এই আমাকে ছাড়ো বলছি।অসভ্য,লুচ্চা ছেলে একটা।দিন নেই রাত নেই খালি……
-“কি হলো থেমে গেলে কেনো?তুমি এসেছো পর্যন্ত আমি তোমার সাথে কি লুচ্চামি করেছি? তারপরেও আমাকে লুচ্চা নামে অভিহিত করলে।তাহলে সেই নামের মান মর্যাদাটা আমার রাখা উচিত।চলো আজকে তোমাকে লুচ্চামির চেহারাটা দেখাই।ভালো ছিলাম তো পছন্দ হলো না।
তারপর আশফি মাহিকে বিছানার উপর ফেলে দিয়ে ওর হাত পা টাই দিয়ে বাঁধতে শুরু করলো।আর মাহি বোয়ালমাছ এর মত ছাটাছাটি করছিল।আশফির বাঁধা শেষ হলে মাহিকে বলল,
-“এভাবে মেয়েদের হাত পা বাঁধে কারা জানো?
হুম,বুঝতে পেরেছো নিশ্চই।কিন্তু আমি ভাবছি তুমি তো আমার বউ,তোমার সাথে কি আমার এমর করা উচিত?হ্যা,উচিত।যর বউ সবসময় তার স্বামীকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাই তার সাথে এমনই করা উচিত।
-“এটা কিন্তু বেশি বারাবারি করে ফেলছো তুমি।
-“বউ এর সাথে সবই করা যায়।ওটা ব্যাপার না।
আশফি মাহির খুব কাছে এসে ওকে বলল,
-“আজ ১৭ টা দিন চলে আমি আমার বউ এর ভালোবাসা পাইনা,বউকে ভালোবাসতে পারিনি।আর এখন এতোগুলো দিন পর তোমাকে কাছে পেয়ে তোমার থেকে কিভাবে আর কতখন দূরে সরে থাকতে পারি?
মাহি আশফির কথার কোনো জবাব দিলনা। শুধু দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো।আশফি মাহির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
-“প্লিজ ফরগিভ মি,ডিয়ার।আমার শরীরের প্রতিটা জায়গায় শুধু তোমার ভালোবাসা জড়িয়ে আছে।সেই তুমি আমার থেকে দূরে দূরে থাকলে আমার শরীরের প্রতিটা অংশ যে ভালোবাসাহীনতায় ভুগে অকেজো হয়ে যাবে।
মাহি চোখটা বন্ধ করে শুধু কথাগুলো শুনছিল। আশফি চুপ করে গেলো।তারপর আশফি মাহির কানে আলতো করে চুমু খেতে লাগলো। আর মাহি আশফির এমন ছোঁয়া পেয়ে যেন ওর পুরো শরীরের লোমগুলো দাড়িয়ে গেলো।ওর পুরো শরীরে কম্পনের সৃষ্টি হলো মনে হচ্ছে।আর এদিকে আশফিও বেঘোরে মাহিকে ভালোবেসে যাচ্ছে।এর মাঝে হঠাৎ করেই চান্দুর ঘুম ভেঙ্গে গেল।কেঁদে উঠেছে ও।কান্নার শব্দটা শুনে মাহি ও ঘোর থেকে বেরিয়ে এলো। কিন্তু আশফি এতোটাই মাহিকে ভালোবাসতে ব্যস্ত ছিল যে ও বুঝতে পারেনি চান্দু কাঁদছে। মাহি চান্দুর কান্নার আওয়াজ পেয়ে আশফিকে বলল,
-“আশফি ছাড়ো আমাকে,আশনূহা উঠে পড়েছে।
কিন্তু আশফির তো মাহির কোনো কথায় কানে আসছেনা।আশফি তখনও মাহির সারা গলাতে চুমু খেয়ে যাচ্ছিল।এবার মাহি একটু জোড়েই বলল,
-“আশফি প্লিজ ছাড়ো। আশনূহা কাঁদছে তো।
আশফি এখন মাহির কথা শুনতে পেয়ে মাহির মুখের দিকে তাকালো।মাহি আবার আস্তে করে বলল,
-“আশনূহার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। ও কাঁদছে।
আশফি পিছু ফিরে তাকালো চান্দুর দোলনার দিকে। তারপর মাহির দিকে আবার ফিরে তাকালো।মাহিকে কিছু না বলে আশফি মাহির কপালে আর ওর ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেলো।তারপর মাহির হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে মাহিকে বলল,
-“এই যাত্রায় তো মেয়েটার জন্য রেহায় পেলে। সবসময় তো আর আমার চান্দু কেঁদে উঠবেনা। তখন আর আটকানোর মত কেউ থাকবেনা।
মাহি আশফির কথার প্রতিউত্তরে শুধু ওর রাগী মুখের চেহারাটা দেখালো। দুজনের ছোট বড় খুনসুটি,কথাবার্তা কিছু কাজকর্মের মাঝে সকালটা কেটে গেল।অফিসের সময় হয়ে গেছে।আশফি ভাবছে,
-“মাহি কি অফিস যাবে?নাকি বাড়ি ফিরে এসেছে বলে অফিস ছেড়ে দিবে?রেডি হতেও তো দেখছিনা।যাই হোক,দেখতে থাকি কি করে ও।ও অফিস গেলে তো আমি অফিস যাবোই আর না গেলে আজকের মত অফিসটা বন্ধ দিব।
১০ মিনিট পরই মাহি অফিসের জন্য রেডি হচ্ছিল।আশফি মাহিকে রেডি হতে দেখে ওউ রেডি হতে শুরু করলো।মাহি তখন আশফির দিকে তাকিয়ে ছিল।আশফি মাহিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওকে বলল,
-“কি দেখছো?চুমু টুমু দিবে নাকি?
-“ধুরর।
-“কি হলো?ধুর করলে কেনো?
-“গোসল না করেই অফিস যাওয়া হচ্ছে?
-“ওহ্ শিট……আমি তো গোসল করতেই ভুলে গেছি।আচ্ছা তুমি আর দশটা মিনিট ওয়েট করো আমি ঝটপট গোসল সেড়ে আসছি।
-“মানে কি?আমি কারো জন্য কোনো ওয়েট করতে পারবোনা।যার যার পানচুয়ালিটি তার তার কাছে।
আশফি মাহির দিকে এমনভাবে তেড়ে আসলো যে ভয় পেয়ে দেওয়ালের সাথে মিশে গেলো।তখন আশফি মাহি একরকম শাসিয়ে বলল,
-“আমি যদি বাথরুম থেকে বেরিয়ে তোমাকে না দেখি তো আশফি আজকে ইতিহাস গড়ে তুলবে।হুম….
কথা শেষ করে আশফি বাথরুমে চলে গেল। আর মাহি তখন রাগে গজগজ করতে থাকলো।আস্তে আস্তে বলল,
-“হুহ।ইতিহাস মনে হচ্ছে শুধু আশফি চৌধুরী গড়তে পারে?মাহি চৌধুরী পারেনা বুঝি? সবসময় খালি আমাকে হুকুমের উপর রাখা, তাইনা?মানবোনা তোমার হুকুম,যাও।
মাহি যেতে গিয়ে আবার থেমে গেলো।আবার ভাবছে,
-“নাহ্।কাজটা ঠিক হবেনা। আমি ওর সাথে যতই রাগারাগি করি কিন্তু কখনো ওর কথার অবাধ্য হইনি।আর হওয়াটা ও ঠিক না। কিন্তু ওকে তো এতো সহজেই কাছে আসতে দেওয়া যাবেনা।কষ্ট করেই আমার কাছে আসার চেষ্টা করুক।ও বুঝুক কাছে আসতে না পারাটা কতখানি কষ্টের, আমি কতোটা কষ্টে ছিলাম।
মাহি চান্দু আর সাথে গভরনেস কে নিয়ে আশফিকে রেখেই অফিসে চলে গেলো। আর আশফি বাথরুম থেকে বেরিয়ে মাহিকে সারা বাড়িতে চিৎকার করে ডাকতে থাকলো।যখন জানতে পারলো মাহি বেরিয়ে গেছে তখন আশফি রেগে পুরো আগুন।একা একাই বলতে থাকলো,
-“চান্দুর মা!আজকে আমি তোমাকে পুরো মাংসের কিমা বানিয়ে খাবো।
চলবে……