Sunday, July 6, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2409



জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১২

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১২

লেখিকা: সুলতানা তমা

সন্ধ্যার সময় ঘুম ভাঙ্গলো, বারান্দায় গিয়ে বসে রইলাম মাথাটা খুব বারি হয়ে আছে ভালো লাগছে না, হঠাৎ কারো আসার শব্দ পেলাম পিছনে থাকিয়ে দেখি শ্রাবন, এসে আমার পাশের চেয়ারে বসলো
দুজনেই নিরব হয়ে বসে আছি কারো মুখে কথা নেই থাকবে কিভাবে ও প্রতারণা করল আর আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেলো

হঠাৎ শ্রাবন আমার হাত ওর হাতের মুঠোয় নিল তারপর নিরবতা ভেঙ্গে বললো
–তমা আমার কথা গুলো শুন প্লিজ
–আর কিছু কি বাকি আছে
–হ্যা আছে
–বলে ফেলুন আমি হজম করার জন্য প্রস্তুত
–তমা প্লিজ আপনি করে বলো না আমার কষ্ট হয়
–আমি আপনি করে বললে কষ্ট হয় আর আপনি অন্য মেয়েকে ভালোবাসলে আমার বুঝি কষ্ট হয় না
–জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আমার সব কথা শুনবা তো
–হুম বলুন
–প্লিজ আপনি বলো না
–হুম
–সকালে এই কথা বলার জন্য তোমাকে বাহিরে নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু তার আগেই নিপার বোন….
–হুম জানি এখন কি বলতে চাও বলে ফেলো

শ্রাবন বলতে শুরু করলো….
এখান থেকে কক্সবাজার চলে যাবার পর তোমার আম্মু জানায় তোমার বিয়ে হয়ে গেছে তখন আমি অনেক ভেঙ্গে পরি অসুস্থ হয়ে যাই প্রায় পাঁচমাস অসুস্থ থাকার পর একদিন বালুচরে হাটতে যাই তখন নিপার সাথে পরিচয় হয়, নিপা ঢাকা থেকে কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছিল, ওর সাথে আস্তে আস্তে কথা হয় যখন ও ঢাকা ফিরে আসে আমাকে নাম্বার দিয়ে আসে, তখন থেকে ফোনে রোজ কথা হত আমি ওষুধ খেয়েছি কিনা কি করছি সবকিছুর খুঁজ রাখত নিপা, তোমার বিয়ের ছয়মাসের মাথায় আমি নিপার যত্নে সুস্থ হয়ে উঠি, তখন নিপা আমাকে প্রপোজ করে, তোমার বিয়ে হয়ে গেছে আর তো ফিরে পাবো না তাই আমি নিপার সাথে সম্পর্ক করি, তোমাকে ফিরে পাবার তিনমাস আগে নিপার সাথে আমার ব্রেকাপ হয়ে যায়, কারন ছিল আমি নতুন চাকরিতে জয়েন করেছি ওকে সময় দিতে পারতাম না আর ও আমাকে সন্দেহ করত, যখন রিয়ার সাথে কথা হয় আর জানতে পারি তুমি আমার জন্য আকাশকে মেনে নাওনি তখন অনেক কষ্ট পাই তারপর সিদ্ধান্ত নেই তোমার কাছে ফিরে আসবো, হ্যা ফিরে এসেছি কিন্তু নিপা এখন ওর ভুল বুঝতে পেরেছে তাই ও ফিরে আসতে চায়, সেদিন সকালে নাস্তা খাওয়ার সময় নিপা ফোন দিয়েছিল তাই তোমার সাথে এমন ব্যবহার করেছিলাম, তার দুদিন পর নিপা ফোন দিয়ে জানায় ওর আব্বু এক্সিডেন্ট করে মারা গেছেন, আর এখন নিপা এক্সিডেন্ট করেছে ওর তো কোনো ভাই নেই আমি এখন সাহায্য না করলে কে ওদের দেখবে বল, কিন্তু বিশ্বাস কর আমি এখন তোমাকে ভালোবাসি

একদমে কথা গুলো বলে ও থামলো
–তুমি আমাকে ভালোবাস কিন্তু নিপা যে তোমাকে ভালোবাসে
–জানিনা
–মাত্র পাঁচমাসে অন্য দিকে জড়িয়ে গেলা আর আমি কত যুদ্ধ করে তোমার জন্য অপেক্ষা করলাম
–তমা প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও
–হুম বাদ দাও নিপা কেমন আছে
–ভাল না এখনো জ্ঞান ফিরেনি তাই ডক্টর কিছু বলতে পারছে না
–হুম
–তমা প্লিজ ভুল বুঝ না
–ইচ্ছে হয়েছে অন্য দিকে সম্পর্ক করেছ তাতে ভুল বুঝার কি আছে, ভেবে দেখ এখন কি করবা
–কি করবো বলে দাও প্লিজ
–আমার জানা নেই সিদ্ধান্ত এখন তোমার
–তুমি কিছুই জান না
–কিভাবে জানবো তুমি আমাকে বেশি ভালবাস নাকি নিপা কে ভালবাস সেটা তো তুমিই ভালো জানো
–তোমার কি মনে হয়
–আমার মতে নিপা কে বেশি ভালবাস কারন আমাকে ভালবাসলে নিপার হাত ধরতে পারতে না আর আমাকে ভুলতে পেরেছ বলেই নিপা কে ভালোবাসতে পেরেছ
–তমা আমি তোমাকে ভালবাসি
–ভুল আমাকে ভালবাসলে কখনোই অন্য মেয়ের হাত ধরতে না বাদ দাও নিপা কে সুস্থ করে তুলো
–নিপা সুস্থ হলেই তো….
–হুম কি আর করার বিয়ে করে নিবা
–মানে
–খুব সহজ বিষয় নিপাকে ভালোবাস তাই ওকেই বিয়ে করবা
–আমি তোমাকে ভালবাসি
–এই ভুল একদিন ভাঙ্গবে তোমার তখন বুঝতে পারবে আমাকে ভুলতে পেরেছ বলেই নিপা কে ভালবাসতে পেরেছ
–তুমি কিন্তু বেশি বুঝতেছ
–ওহ তাই ঠিক আছে রিয়া কে ডেকে আনো দেখ ও কি বলে
–তুমি যদি আমাকে না বুঝ রিয়া কিভাবে বুঝবে
–আমি বুঝেছি তুমি নিপাকে ভালোবাস যাও ওকে সুস্থ করে তুল, ভয় পেয়ো না আমি তোমাদের জীবনের কাটা হবো না, আকাশ আর মেঘা কে যেভাবে মিলিয়ে দিয়েছি তোমাদেরও সেভাবে মিলিয়ে দিবো তারপর চলে যাবো অনেক দূরে
–তমা কি বলছ এসব
–যা সত্যি তাই বলেছি আমার জন্য অন্য মেয়ে কষ্ট পাবে সেটা আমি মানতে পারবো না
–তমা….
–প্লিজ আর কিছু শুনতে চাই না, আমার ভাগ্যকে আমি মেনে নিয়েছি, একটা কথা কি জানো আমার মতো মা হারা মেয়েদের রঙিন স্বপ্ন দেখাটা মানায় না, আমরা শুধু স্বপ্ন দেখতেই পারি পূরন করতে পারি না, আমাদের নিয়ে সবাই খেলা করতে পছন্দ করে, আম্মু বেঁচে থাকলে আমার জীবনে সৎমা আসতো না দুবছর আগে তোমাকে আমাকে আলাদা করতো না হয়তো আকাশের সাথে বিয়ে না হয়ে তোমার সাথে বিয়েটা হত, আসলে আমার কপাল পুরা তাই বার বার এমন হচ্ছে, যাই হউক আমি আমার ভগ্যকে মেনে নিয়েছি
–তমা….
–আমি এখন আর কিছু শুনতে চাচ্ছি না তুমি এখান থেকে যাও আমাকে একটু একা থাকতে দাও প্লিজ
–হুম

শ্রাবন চলে গেলো, বারান্দায় রেলিং ধরে দাড়িয়ে রইলাম চোখ থেকে বৃষ্টির মতো পানি ঝরছে, প্রকৃতিও আজ কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে আছে চারদিকে শুনশান নিরবতা, কোথাও কোনো আলোর রেখা নেই, প্রকৃতি মনে হয় মানুষের মনের অবস্থা বুঝে তাই তো আমার মনের আকাশের মতো প্রকৃতির আকাশেও আজ চাঁদ নেই, অমাবস্যায় ঢেকে আছে চারদিক ঠিক আমার মনের মতো…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১১

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১১

লেখিকা: সুলতানা তমা

কেবিনের বাহিরে বসে আছি মেয়েটার চিকিৎসা চলতেছে, শ্রাবন কেমন যেন অস্থির হয়ে আছে ঠিক হয়ে বসতেছে না, ভাবছি মেয়েটা ওর কি হয় জিজ্ঞেস করবো কিনা তখনি একজন সিস্টার এসে শ্রাবনের হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললো ওষুধ গুলো নিয়ে আসতে, শ্রাবন এক মুহূর্ত দেরি না করে দৌড়ে চলে গেলো ওষুধ আনতে

চেয়ারে বসে আনমনে হয়ে ভাবছি মেয়েটি শ্রাবনের কি হয় তখন মেয়েটির ছোট বোন পাশের চেয়ারে এসে বসলো এখনো কাদতেছে, আমি শান্তনা দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
–আচ্ছা শ্রাবন তোমাদের কি হয়
–আপনি জানেন না ভাইয়া তো আপুকে ভালোবাসে, আপুর নাম নিপা প্রায় একবছর ধরে সম্পর্ক….

ওর আর কোনো কথা আমার কান দিয়ে ঢুকলো না, কানে শুধু বার বার একটা কথাই বাজতেছে “ভাইয়া তো আপুকে ভালোবাসে”
মাথাটা প্রচুর ঘুরতেছে বুকের বাম পাশে খুব ব্যাথা হচ্ছে চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে আমি যেন অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছি, আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালাম তারপর এলোমেলো ভাবে হাটতে শুরু করলাম পা দুইটা যেন অবস হয়ে গেছে, চোখ দুইটায় আজ কাজল দিয়েছিলাম শ্রাবন দেখবে বলে এখন এই কাজল চোখের পানিতে লেপ্টে যাচ্ছে, কোনো ভাবে হসপিটাল থেকে বেরুলাম, একটা রিক্সা ডেকে আনলাম যখন রিক্সায় উঠতে যাবো তখন দেখলাম শ্রাবন চলে এসেছে, আমার কাছে আসলো
–কোথায় যাচ্ছ
–আমার ঠিকানায়
–মানে
কিছু না বলে ওর দিকে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ থাকিয়ে রইলাম তারপর রিক্সাওয়ালা কে যেতে বললাম

বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে শুরু করলাম, কি হলো এইটা আমি তো এমন কিছু কল্পনাও করিনি আর শ্রাবন কিনা আমার অজান্তে অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক করেছে, আর ভাবতে পারছি না মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করতেছে উউউফফফফ খুব কষ্ট হচ্ছে, এতো বছর আম্মুর অত্যাচার সহ্য করলাম কিন্তু এতো কষ্ট তো হয়নি আজ কেন এতো কষ্ট হচ্ছে, চোখ দুইটা যেন সাগর হয়ে গেছে বুকে চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে

কতক্ষণ সময় এভাবে কাঁদলাম জানিনা হঠাৎ তুলির ডাকে নিজেকে সামলে নিয়ে দরজা খুললাম
–আপু কি হয়েছে তোমার
–কিছু না তো
–তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন
–এমনি
–দাড়াও আমি রিয়া আপুকে ডেকে আনি
দৌড়ে চলে গেলো তুলি, আচ্ছা রিয়া কে আমি কি বলবো শ্রাবন অন্য মেয়েকে ভালোবাসে….?
রিয়া তো শ্রাবন কে মেরেই ফেলবে এই কথা শুনলে

এসব ভাবতে ভাবতেই রিয়া এসে হাজির
–কিরে কি হইছে তোর
–কই কি
–এমন দেখাচ্ছে কেন
–কিছুনা
–আমার কাছে লুকিয়ে পারবি না এইটা ভালো করেই জানিস বলে ফেল
–হুম
–কি হলো বল
–কিছুনা
–শ্রাবনের সাথে ঝগড়া করেছিস
–না
–ওকে আমি শ্রাবনকে ফোন দিতেছি
–ও এখন ব্যস্ত আছে
–কিসের এমন ব্যস্ততা যা তোর থেকে বেশি জরুরী
–ও এখন আর আমার নেই
–মানে কি আবুল তাবোল বকছিস
–এটাই সত্যি
–হইছে কি বলবি তো
–শ্রাবন নিপা নামের একটি মেয়েকে ভালোবাসে
–তমা প্লিজ জোকস রাখ
–সত্যি রে নিপা এখন হসপিটালে আছে এক্সিডেন্ট করেছে শ্রাবন ওখানেই আছে
রিয়া দফ করে বিছানায় বসে পড়লো হয়তো আমার মতো রিয়াও বিশ্বাস করতে পারতেছে না কিন্তু এটাই যে সত্যি

শ্রাবন এখন আর আমার নেই, ও এখন নিপা নামের কারো হয়ে গেছে, ও এখন আর আমায় ভালোবাসবে না জরিয়ে ধরবে না চুলের ঘ্রান নিতে পাগল হবে না……

আচ্ছা শ্রাবন আমাকে ঠকালো কেন….?
নিপা কে ভালোবাসে আমাকে বলেনি কেন…?
একবছর ধরে ওদের সম্পর্ক তারমানে আমি যখন ছিলাম না তখন থেকে….?
আচ্ছা শ্রাবন যদি নিপা কে ভালোবাসে তাহলে আমাকে বিয়ের স্বপ্ন দেখালো কেন….?
নিপা কে ভালোবাসা সত্বেও কেন বারবার বলেছে আমাকে ভালোবাসে….?
শ্রাবন কেন আমার সাথে এমন করেছে…..?

আনমনে হয়ে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ রিয়া আমার কাধে হাত রাখলো চমকে উঠে ওর দিকে থাকালাম, রিয়ার চোখে পানি দেখে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলাম না ওকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলাম, আমার সাথেই কেন এমন হয় আর কতো কষ্ট পাবো আমি
–তমা প্লিজ শান্ত হ
–কিভাবে শান্ত হব ও এমন করলো কিভাবে
–শ্রাবন আসলে পর জিজ্ঞেস করবো তুই তো ভুলও শুনতে পারিস
–ভুল হবে নাহ আমি দেখেছি নিপার জন্য শ্রাবনের ভালোবাসা কেমন, যখন ফোন আসছিল ও পাগল হয়ে গেছিল কিভাবে যে হসপিটাল যাবে ও ভেবে পাইতেছিল না, ও নিপার জন্য একদম পাগল আমি বুঝে গেছি
–আচ্ছা শ্রাবন আসলে পর কথা বলে দেখি তুই একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর

খুব ক্লান্ত লাগছে রিয়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১০

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১০

লেখিকা: সুলতানা তমা

টেবিলে বসে আছি আর ভাবছি কে ফোন দিতে পারে, একটু পর শ্রাবন আসলো মুখটা একদম মলিন
–কি হয়েছে
–কিছুনা
–হুম খেয়ে নাও
–আর খাবো না
–মানে একটা পরোটাও তো খাওনি
–খিদে নেই
–আজব তো এতোক্ষণ খিদে লাগছে বলে পাগল বানিয়ে দিছ আর এখন বলছ খিদে নেই
–হুম
–ফোন কে দিয়েছিল
–অফিস থেকে
–অফিস থেকে ফোন দিলে তো মন খারাপ হবার কথা না সত্যি করে বল কে ফোন দিয়েছিল

নিশ্চুপ হয়ে কিছু সময় আমার দিকে থাকিয়ে রইল তারপর বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো, আমি স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছি ও এমন করলো কেন ভেবে পাচ্ছি না

সারাদিন শ্রাবন একবারও ফোন দেয়নি আমিও দেইনি, সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে বললো ওদের বাসায় যেতে রাগ করে ফোন কেটে দিয়েছি

বারান্দায় বসে আছি ভাল লাগছে না কিছু শ্রাবন সকালে এমন করলো কেন মাথায় আসছে না হঠাৎ পিছন দিক থেকে কেউ জরিয়ে ধরলো, ঘুরে থাকালাম না জানি শ্রাবন এসেছে ওর স্পর্শ আমার খুব চেনা
–রেগে আছ কেন
–না তো
–সকালে মাথা ঠিক ছিল না
–হুম
–তমা আমি চাচ্ছি এক সপ্তাহের ভিতরে বিয়েটা হয়ে যাক
–এতো তাড়া কিসের
–তোমাকে আমার করে পাবার
–শুধু এটাই নাকি অন্য কিছু
–মানে
–কিছু না
–আমি আম্মুকে বলবো তোমার আব্বুর সাথে কথা বলার জন্য
–হুম
–এবার তো একটা হাসি দাও
আর কিছু না বলে ওর বুকে মুখ গুঁজে দিলাম, ওকে ছাড়া তো আমি কিছু ভাবতে পারিনা আর ও কিনা আমাকে কষ্ট দেয়

সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি ড্রইংরুমে সবাই বসা, একটু এগিয়ে গিয়ে শুনলাম বিয়ের কথা হচ্ছে, বারান্দায় এসে দাড়িয়ে রইলাম, ভাবছি আমার বিয়ে হয়ে গেলে আব্বু আর তুলির কি হবে, এখন তো আব্বুর চাকরিও নেই বাড়িটা তো আম্মু বিক্রি করে দিয়েছে, এই ভাড়া বাসায় কতোদিন আর….?
হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ শুনে পিছনে থাকালাম শ্রাবন এসেছে
–এখানে দাড়িয়ে আছ কেন
–এমনি
–কি ভাবছ
–অনেক কিছু
–কি কি
–আমার বিয়ে হয়ে গেলে আব্বু আর তুলিকে দেখবে কে
–আমি দেখবো
–মানে
–সবাই একসাথে থাকবো চিন্তা করো না
–হুম

শ্রাবন আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে চুলে মুখ গুঁজে দিলো, আমি ভাবছি শ্রাবন কি সত্যি আব্বুর আর তুলির দায়িত্ব নিবে এইটা কি সম্ভব

দুপুরে শুয়ে আছি রিয়া আর তুলি নাচতে নাচতে এসে বললো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে দুই সপ্তাহ পর বিয়ে, আমি কিছু বললাম না মনের ভিতর কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে শেষ পর্যন্ত শ্রাবন আমার হবে ভাবতেই ভালো লাগছে, এতো দিনের সব স্বপ্ন সত্যি হতে যাচ্ছে আর কি চাই আমার

অনেক দিন হলো এতিমখানায় যাওয়া হয় না তাই আজ এতিমখানায় আসলাম, সারাদিন বাচ্চাদের সাথে কাটালাম, রহিম চাচা কে বিয়ের কথা বলতেই উনি অনেক খুশি হয়েছেন, খুশি তো হবেনই এই দুইটা বছর আমার কষ্টগুলো যে উনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন

এক সপ্তাহ কেটে গেলো, আর এক সপ্তাহ পর বিয়ে ভাবতেই ভালো লাগছে, আমি শ্রাবনের জন্য বউ সাজবো হিহিহি

আজকে সকালটা শুরু হলো শ্রাবনের মিষ্টি কন্ঠ শুনে, ওর ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো
–হ্যালো
–একটু বাহিরে যেতে চাচ্ছিলাম
–কেন
–তোমার সাথে কিছু কথা ছিল কথা গুলো বলা হবে আর সাথে কিছু শপিং করবো
–ওকে
–রেডি হয়ে নাও আমি আসছি
–আচ্ছা

ফোন রেখে রেডি হয়ে নিলাম, আজ অনেক দিন পর শ্রাবনের সাথে বাইরে ঘুরতে যাচ্ছি তাই গোলাপি রঙের একটা শাড়ি পড়েছি, চোখে কাজল দিয়েছি, আর চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছি

ড্রইংরুমে গিয়ে দেখি শ্রাবন বসে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে, আমি যেতেই ও হা করে আমার দিকে থাকিয়ে রইল, আমি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আব্বু আর রিয়া কে বলতে চলে গেলাম, আব্বু আর রিয়া কে বলে বেড়িয়ে পড়লাম আমরা

রিক্সায় পাশাপাশি বসে আছি দুজন
–একদম পরীর মতো লাগতেছে
–তাই বুঝি
–জ্বী
–আচ্ছা কি যেন বলতে চাইছিলে বল
–আসলে তমা কথা গুলো না বললেও হত কিন্তু আমি চাইনা আমাদের দুজনের মধ্যে কোনো কিছু গোপন থাকুক
–ঠিক আছে বল
–আগে বলো রাগ করবা না
–ওকে করবো না এখন তো বলো
–আসলে তমা আমি যখন কক্সবাজার ছিলাম তখন……
হঠাৎ ওর ফোনটা বেজে উঠলো, ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে রিসিভ করছে না, কয়েকবার আমার দিকে থাকিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো, ওপাশ থেকে কে কি বলেছে জানিনা কিন্তু ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে কোনো সমস্যা হয়েছে, ফোনটা রেখে আমাকে বললো
–তমা আমাকে হসপিটাল যেতে হবে তুমি বাসায় চলে যাও
–হসপিটালে কেন
–বাসায় এসে সব বলবো
–ঠিক আছে আমিও যাই তোমার সাথে
–না তোমার যেতে হবে না
–আমি যাবোই

আমি জিদ করাতে আমাকে সাথে নিয়ে হসপিটালে গেলো, ভেবে পাচ্ছি না কার এমন কি হলো যে ও এমন অস্থির হয়ে হসপিটালে আসলো

একটা কেবিনের সামনে গিয়ে ও দাঁড়াল একজন মহিলা আর একটি মেয়ে কাদতেছে, শ্রাবনকে দেখেই মেয়েটি এসে বললো ভাইয়া আপু এক্সিডেন্ট করেছে অবস্থা খুব খারাপ…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ৯

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

বাসায় চলে এসেছি তুলিটা খুব কাঁদতেছে আজ থেকে তুলিও যে মা হারা হয়ে গেলো, বড় বোন নাকি মায়ের সমান তুলিকে বুকে জরিয়ে নিলাম ওকে মায়ের অভাব বুঝতে দিব না, আমি যে কষ্ট পেয়েছি সে কষ্ট ওকে পেতে দিব না

আকাশরা বাসায় চলে গেছে, শ্রাবন মা কে নিয়ে নতুন বাসায় উঠেছে, এখন বাসায় শুধু আমি, রিয়া, আব্বু আর তুলি আছি

রাতে রিয়া আর আমি বারান্দায় বসে আছি তখন আব্বু আসলেন
আব্বু: তমা একটা কথা বলার ছিলো
আমি: বল
আব্বু: আমি চাচ্ছি খুব শীঘ্রই শ্রাবনের সাথে তোর বিয়েটা দিয়ে দিতে
রিয়া: হ্যা আঙ্কেল আমিও তাই ভাবছিলাম
আমি: আব্বু আমাদের সবার উপর দিয়ে অনেক দকল গেছে আর কিছু দিন পর বিয়েটা হলে ভালো হবে
আব্বু: ঠিক আছে এখন বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে রাখি
আমি: আচ্ছা

আব্বু চলে গেলেন, রিয়া আর আমি গিয়ে তুলির পাশে শুয়ে পড়লাম
রিয়া: অনেক জামেলা হয়েছে এবার বিয়েটা ভালো ভাবে হলেই হয়
আমি: আমার তো ভাগ্য অনেক খারাপ দেখ কখন আবার কোন জামেলা সৃষ্টি হয়ে যায়
–একদম অলুক্ষণে কথা বলবি না
–যা সত্যি তাই তো বললাম
–কচু সত্যি
–সেই ছোট বেলা থেকে একটার পর একটা কষ্ট আমাকে ঘিরে রেখেছে ভবিষ্যৎ এ যে আমার জীবনে আর কষ্ট আসবে না তার নিশ্চয়তা কি
–প্লিজ তমা এসব বলিস না সব ঠিক হয়ে যাবে, শ্রাবনের সাথে বিয়েটা হয়ে গেলে তুই অনেক সুখি হবি দেখিস
–বিয়েটা হলেই হলো
–হবে চিন্তা করিস না এখন ঘুমিয়ে পড়
–হুম

রাতে রিয়ার সাথে বক বক করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনেই নেই, সকালে শ্রাবনের ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো
–হ্যালো
–ম্যাডাম একটু এই বাসায় আসতে পারবেন
–কেন
–খিদায় পেট জ্বলতেছে
–নাস্তা করোনি
–আম্মু ঘুমিয়ে আছেন তাই আর ডাকিনি
–ঠিক আছে আমি আসছি

ফোন রেখে ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে গেলাম, গিয়ে দেখি রিয়া নাস্তা বানাচ্ছে
–রিয়া নাস্তা কি হইছে
–না কেন
–মা নাকি ঘুমে শ্রাবন নাস্তা করেনি
–দেরি হবে তো
–ঠিক আছে তুই এখানে নাস্তা বানা আমি ওকে নাস্তা বানিয়ে দিয়ে আসি
–ওকে

শ্রাবনের বাসায় আসছি সেই কখন থেকে কলিংবেল বাজিয়ে যাচ্ছি দরজা খুলার নাম নেই, অনেকক্ষণ পর দরজা খুললো, শ্রাবনের দিকে থাকিয়ে তো আমি হা হয়ে গেছি সারা শরীরে ময়দা লেগে আছে, ওর পুরো শরীরে একবার চোখ বুলিয়ে ফিক করে হেসে দিলাম
–হাসছ কেন
–তোমার শরীরের যে অবস্থা না জানি রান্নাঘরের কি হাল করেছ
–পারলে তাড়াতাড়ি দুইটা পরোটা করে দাও প্রচন্ড খিদা লাগছে
–সেটা তো আপনার অবস্থা দেখেই বুঝা যাচ্ছে, রান্নাঘর কোন দিকে নিয়ে চল
–হুম চলেন

রান্নাঘরে পা দিয়েই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো হাসব নাকি কাঁদবো বুঝতেছি না, মেঝেতে ময়দা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, তেলের বুতল মেঝেতে পালানো, চুলায় কড়াই বসানো তেল পুরে ধুয়া উড়তেছে কি অবস্থা
–এই এসব কি
–আমি কি কখনো রান্না করেছি নাকি
–তাই বলে এই অবস্থা
–বেশ করেছি তাড়াতাড়ি রান্না করো

কি আর করার পরোটা বানাতে শুরু করলাম
–ভাবছি বিয়েটা এবার করেই ফেলবো (পিছনদিক থেকে আমাকে জরিয়ে ধরলো)
–বিয়ে করার ইচ্ছে থাকলে বিয়ে করো রান্নার সময় দুষ্টুমি কেনো
–বিয়ের পর তো আমি রোজ তোমার সাথে এভাবে দুষ্টুমি করবো
–এই এইটা কি করলে
–কেন দেখনি তোমার গালে ময়দা মেখে দিয়েছি
–কেমন ফাজিল গালে ময়দা লাগিয়ে আবার বলতেছে
–আমি কি অন্য কারো বউয়ের গালে ময়দা লাগাইছি
–না তোমার বউ এর গালেই এবার ছাড়ো
–ছাড়তে পারবো না আমি এভাবেই তোমাকে জরিয়ে ধরে রাখবো আর তুমি রান্না করবা
–উউউফফফফফফ

পিছন থেকে জরিয়ে ধরে রাখলে বুঝি রান্না করা যায়, কি আর করার কোনো ভাবে রান্না করে নিলাম
–শরীরের অবস্থা তো বারোটা বাজিয়ে ফেলছ যাও ফ্রেশ হয়ে আস টেবিলে নাস্তা দিচ্ছি
–ওকে

টেবিলে নাস্তা এনে বসে আছি ফাজিলটা আসার নাম নেই, অনেকক্ষণ পর আসলো
–মা কে কি ডাকবো
–না ঘুমিয়ে আছেন যেহেতু থাক উঠলে পর বলবো আম্মু তোমার বউমা নাস্তা বানিয়ে রেখে গেছে খেয়ে নাও
–হইছে খাও এখন
–হুহ বউ পাশে থাকতে নিজে খাবো কেন
–এখন কি খাইয়েও দিতে হবে
–অবশ্যই

আর কিছু না বলে খাইয়ে দিতে শুরু করলাম জানি এই পাগলের সাথে বক বক করে লাভ হবে না শেষে আমাকেই খাইয়ে দিতে হবে
–বিয়ের পর লক্ষী বউ এর মতো সবসময় এভাবে খাইয়ে দিবা বুঝছ
–হুম তুমি তো পিচ্ছি বাবু প্রতিদিন খাইয়ে দিতে হবে
–হিহিহি বুঝার জন্য থ্যাংকস

রাগি চোখে থাকালাম ওর দিকে তখনি ওর ফোনটা বেজে উঠলো, ফোনটা হাতে নিয়ে আমার দিকে একবার থাকালো তারপর আমাকে অভাক করে দিয়ে দূরে গিয়ে ফোন রিসিভ করলো, বুঝলাম না কে এমন ফোন দিল যে লুকিয়ে কথা বলতে হবে……

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ৮

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে আব্বু, আমি, তুলি, রিয়া, শ্রাবন আর আকাশ পুলিশ স্টেশনে গেলাম

আম্মু আর রাকিবের সামনে আমরা সবাই বসে আছি, আম্মুর মুখটা ভয়ে চুপসে গেছে আর রাকিবের তো আরো খারাপ অবস্থা
আমি: আম্মু কেন করলে এমন
আম্মু: (নিশ্চুপ)
আমি: আমি নাহয় তোমার মেয়ে ছিলাম না কিন্তু তুলি তো তোমার পেটের সন্তান ওর সাথে কিভাবে এমন করলে আর আব্বু উনি তো তোমার স্বামী উনার সাথে এসব কিভাবে করলে
আম্মু: (নিশ্চুপ)
আমি: তুলির কাছ থেকে অনেক কিছু জেনেছি এখন শুধু দুইটা প্রশ্নের উত্তর চাই, শ্রাবন আর আমাকে কেন আলাদা করছিলা আর আকাশের সাথে বিয়ে হয়েছিল যে তোমার কি লাভ হয়েছিল
আম্মু: (নিশ্চুপ)
আমি: দেখ তুমি চুপ হয়ে থাকলে তোমার শাস্তি বেশি হবার ব্যবস্থা করবো আর যদি সব সত্যি বলে পেলো তাহলে শাস্তি কম হবে
এবার আম্মু আমার দিকে চোখ তুলে থাকালো চোখে লজ্জা আর ভয়ের চিহ্ন

আম্মু বলতে শুরু করলো….

রাকিবের সাথে আমার কলেজে সম্পর্ক ছিল আমি গরীব ছিলাম তাই ওর পরিবার মেনে নেয়নি, ও বিয়ে করে নেয় অন্য মেয়েকে আর আমার বিয়ে হয় তোর আব্বুর সাথে, কিন্তু দুবছর পর রাকিবের স্ত্রী রাকিব কে ডিভোর্স দেয় তখন রাকিব আমার কাছে ফিরে আসে, তোর আব্বুকে ডিভোর্স দিয়ে ওর কাছে চলে যেতে বলে, কিন্তু আমি যাইনি

রাকিবের সাথে দেখা হত কথা হত ও আমাদের বাসায় আসত আমার অন্য ফ্রেন্ডস দের সাথে, এভাবে কেটে যায় অনেক গুলো বছর তুই বড় হয়ে যাস তুলিও বড় হয়

হঠাৎ করে আমাকে টাকার নেশায় পেয়ে বসে, আমার মনে হয় তোর আব্বু আমাকে জীবনে কিছুই দিতে পারেনি তারচেয়ে রাকিবের কাছে চলে গেলে টাকা ভালোবাসা দুটিই পাবো, আমি রাকিব কে আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেই যে ওর কাছে ফিরে যাবো

আমরা যখন প্ল্যান করছিলাম তোর আব্বুকে ডিভোর্স দেয়ার তখনি রাকিব তোকে দেখে আর তোকে ভোগ করতে চায় কিন্তু আমি বাধা দেই তখন ও আমাকে টাকার লোভ দেখায় আর বলে আমাকে বিয়ে করবে, আমি অনেক ভেবে চিন্তে রাজি হই কারন আমি ভেবেছিলাম তোকে ওর হাতে তুলে দিলে ও আমাকে বিয়ে করবে নাহলে করবে না, কিন্তু তোর আব্বুর জন্য তোকে রাকিবের হাতে তুলে দেয়ার কোনো সুযোগ পাইনি তখনি জানতে পারি শ্রাবনের সাথে তোর সম্পর্ক চলছে

রাকিবের প্ল্যান মতো শ্রাবনকে হুমকি দেই তোর জীবন থেকে চলে যেতে কিন্তু ও যেতে চায়নি তাই তোকে মেরে ফেলার ভয় দেখানোর জন্য বিষ খাইয়ে ছিলাম শ্রাবন যেন ভয় পেয়ে দূরে চলে যায়, তাতেও যখন লাভ হয়নি তখন রাকিব ওর লোক দিয়ে শ্রাবনকে মারধোর করে, তারপর শ্রাবনের আম্মুকে হুমকি দিয়ে আসে আবার তোর সাথে যোগাযোগ করলে তোকে আর শ্রাবনকে মেরে ফেলবে

এসব রাকিবের প্ল্যান ছিল কারন ও তোকে আকাশের বউ করে নিতে চেয়েছিল, এতে রাকিবের দুইটা লাভ ছিল তোকে ভোগ করতে পারবে আর শেষে বাহিরে পাচার করে টাকা পাবে, রাকিব জানতো আকাশ মেঘাকে ভালোবাসে তোকে কখনো মেনে নিবে না আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তোকে ভোগ করতে পারবে কিন্তু ওর কোনো প্ল্যান সাকসেস হয়নি

যখন তুই আকাশকে ডিভোর্স দিয়ে মেঘা আর আকাশের বিয়ে দিলি তখন রাকিব তোর আশা ছেড়ে দেয়, তুই বাসা থেকে চলে আসার পর আমি সুযোগ পেয়ে যাই তোর আব্বুকে বলি তুই এক্সিডেন্ট করে মারা গেছিস, তোর আব্বু হার্ট এট্যাক করে আর এই সুযোগে আমি সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নেই কিন্তু একটা জমি তোর নামে থাকার কারনে নিতে পারিনি কারন এই জমির উইল করা ছিল এভাবে যে তুই মারা গেলে এই জমি এতিমখানার নামে হয়ে যাবে, তখন রাকিব খুঁজ নিয়ে জানতে পারে জমিটা অনেক ছোট কোনো জায়গা না অনেক বড় জমি, রাকিব সিদ্ধান্ত নেয় এই জমিতে হোটেল বানাবে কিন্তু জমি পেতে হলে তোকে প্রয়োজন তাই রাকিব তোকে খুঁজে বের করে আর ফোনে হুমকি দেওয়া শুরু করে, তোর আব্বু না বললে তুই জমি কিছুতেই দিবি না এইটা রাকিব আর আমি জানতাম তাই তোর আব্বুকে রাজি করানোর জন্য রাকিব মারধোর করে আর তুলিকে বাহিরে পাচার করে দেয়ার কথা বলে কারন টাকাও পাবে আর আমাদের বিয়ে করতে সমস্যা হবে না কিন্তু তুলি পালিয়ে আসে, তারপরের সবকিছু তো তোর জানা…..

আম্মুর কথা গুলো শুনে চুপ হয়ে আছি আসলে কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না, ওনাকে এখন আমার কি বলা উচিত তাও খুঁজে পাচ্ছি না, সবাই নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে

আম্মু তুমি হয়তো একটা কথা ভুলে গিয়েছ “লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু”
তুমি টাকা আর ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে এতোকিছু করলে, নিজের স্বামী সন্তানের চেয়ে টাকা তোমার কাছে বড় হয়ে গেলো

পেয়েছ তো এখন তোমার রাকিবকে প্রাণ ভরে ভালোবাস জেলে বসে বসে দুজন দুজনকে, এখন তোমার টাকা কোথায় তোমাকে মুক্ত করে নিয়ে যায় না কেন
ছিঃ তোমাকে আম্মু বলে ডাকতে আমার ঘৃণা হচ্ছে, পাপ যখন করেছ এখন শাস্তি ভোগ কর, পাপের শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে…..

আম্মু নিশ্চুপ হয়ে শুনছে আর চোখের পানি ফেলছে, আমরা চলে আসলাম ওখান থেকে……

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ৭

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

তুলি বলতে শুরু করলো….

আপু তুমি যখন আব্বুকে চিঠি লিখে বাসা থেকে চলে আস তখন আব্বুর আগে আম্মু চিঠিটা পায়, চিঠিটা পড়ে আম্মু খুশি হয়েছিল সেটা বুঝেছিলাম আম্মুর মুখ দেখেই কিন্তু আম্মুর প্ল্যান বুঝতে পারিনি

যেদিন তোমার ফোন ছিনতাই হয় সেদিন আব্বু হার্ট এট্যাক করেন কারন আম্মু তোমার ফোন ছিনতাই করিয়ে বলেছিল তুমি নাকি এক্সিডেন্ট করে মারা গেছ, কথাটা সত্যি কিনা যাচাই করতে পারিনি তার আগেই আব্বু এই কথা শুনে হার্ট এট্যাক করেন, আব্বুকে নিয়ে হসপিটালে যাই আমরা

সেদিন রাতেই আম্মু আব্বুর ঘুমন্ত অবস্থায় সিগনেচার নিয়ে বাসা বিক্রি করে দেয়

আব্বু সুস্থ হবার পর আমাদের নতুন বাসায় নিয়ে যায় বাসাটা কার জানো আকাশ ভাইয়ার মামা রাকিব এর, আব্বু চুপচাপ সব দেখছিলেন কিছু বলার মতো অবস্থা আব্বুর ছিল না কারন আব্বু তখন জানতো তুমি মারা গেছ

এভাবে মধ্যে দুইটা বছর কেটে যায় আব্বু আমি ওই বাসায় জীবন্ত লাশের মতো বেঁচে থাকি

হঠাৎ আব্বু আমি দুজনেই বুঝতে পারি আম্মু আর রাকিবের মধ্যে সম্পর্ক আছে, আব্বু আম্মুকে শান্ত ভাবে বুঝায় এসব পাপ ভালো হয়ে যেতে কিন্তু আম্মু বুঝে না তাই আব্বু আম্মুকে বলে দেয় আব্বুকে যেন ডিভোর্স দিয়ে রাকিবের কাছে চলে আসে, আম্মু তাতেও রাজি না কারন আব্বুর একটা জমি আছে যে জমিটা রাকিবের প্রয়োজন

যখন আব্বুকে বলে জমিটা আম্মুর নামে লিখে দিতে তখন আব্বু জানায় জমিটা তোমার নামে করা আর তুমি মারা গেলে জমিটা এতিমখানার নামে হয়ে যাবে, তুমি মারা গেছ তাই এখন জমিটা এতিমখানার নামে হয়ে গেছে

তখন আম্মু আর রাকিব জানায় তুমি মারা যাওনি বেঁচে আছ, আব্বু তোমাকে ফিরে পাবার জন্য অস্থির হয়ে যায়, এদিকে জমির জন্য রাকিবও তোমাকে খুঁজতে শুরু করে একসময় পেয়েও যায় কিন্তু আব্বু বা আমাকে তোমার ঠিকানা দেয়নি

এভাবে অনেকদিন কেটে যায় আম্মু আর রাকিব আমাদের আটকে রাখে শুধুমাত্র জমিটার জন্য, রাকিব আব্বুকে বলেছিল তোমার সাথে দেখা করিয়ে দিবে জমিটা যেন দিয়ে দেন আব্বু না করেন তাই রাকিব আব্বুকে প্রচুর মারধর করে আব্বুর সামনে আমাকেও মারে আর আমার গর্ভধারিণী মা দেখে দেখে হাসে

গত তিন দিন আগে আব্বু আর আমি জানতে পারি আম্মু আর রাকিব মিলে নারী পাচার করে, এই ব্যবসা ওদের অনেক দিনের

গতকাল আম্মু আর রাকিবের মধ্যে কথা হয় আমাকে বাহিরে পাচার করে দিবে আর এই কথা শুনে ফেলি আমি, আব্বুকে বলার পর আজ খুব কষ্ট করে আব্বুকে ওই বাসায় একা রেখে আমি পালিয়ে এসেছি তারপর তোমার সাথে দেখা হলো….

তুলির কথা গুলো শুনে বুবা হয়ে গেলাম একজন মা কিভাবে পারে নিজের মেয়েকে পাচার করতে, একজন স্ত্রী কিভাবে পারে স্বামীর উপর এভাবে অত্যাচার করতে
রিয়া: এই তমা কি ভাবছিস
আমি: আব্বুকে ওখান থেকে আনতে হবে
তুলি: ওরা বাসা চেঞ্জ করে ফেলেছে আমি চিনি নতুন বাসা

একটু পর শ্রাবন আর আকাশ হসপিটালে আসলো, ওদের সবকিছু বললাম
শ্রাবন: তাহলে আমাকে ওদের দুজনকে এরেস্ট করারই দায়িত্ব দিয়েছে, আমি এখনো ফাইল খুলে ওদের ছবি দেখিনি
আমি: তাহলে এরেস্ট করছ না কেন
শ্রাবন: এই শহরে আসলামই তো মাত্র আগামীকাল অফিসে গিয়ে দেখি
আমি: তাড়াতাড়ি কিছু কর আব্বু কিন্তু ওদের কাছে
শ্রাবন: ভয় পেয়ো না তোমার আব্বুকে নিয়ে আসবো

তিনদিন হসপিটালে থাকলাম তুলি কে নিয়ে, তুলি সুস্থ নাহলে রাকিব এর বাসায় নিয়ে যেতে পারবে না তাই এতো দিন শ্রাবন কিছু করতে পারেনি, আজ শ্রাবন পুলিশ নিয়ে তুলি কে সাথে নিয়ে রাকিব কে এরেস্ট করতে গেলো

সেই দুপুরে ওরা গিয়েছিল সন্ধ্যা নেমে আসলো কিন্তু ওদের কোনো খবর নেই শ্রাবন ফোন রিসিভ করছে না এদিকে টেনশনে আছি সবাই

সন্ধ্যা সাতটার দিকে শ্রাবন ফোন করে বললো বাসায় আসছে, কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বেজে উঠলো দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললাম, দরজা খুলেই আব্বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম, কতোদিন পর আব্বুকে দেখছি আর এভাবে জরিয়ে ধরে কাঁদছি, আব্বু তুলি আর আমাকে বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদছেন আমরাও কাঁদছি সাথে কাঁদতেছে শ্রাবন, আকাশ, মেঘা আপু, রিয়া, আন্টি, মা
আমাদের কান্না দেখে সবাই কাঁদতেছে

এই কান্না কোনো কষ্টের কান্না না বাবা মেয়ে এক হবার সুখের কান্না…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ৬

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

চোখ খুলে দেখি আমি বিছানায় সবাই আমার পাশে বসা
শ্রাবন: কি হয়েছে হঠাৎ এমনভাবে চিৎকার দিয়েছ কেন আর অজ্ঞান হয়ে গেলা কিভাবে
আকাশ: তোমার চিৎকার আমাদের বাসা থেকে শুনা গেছে দৌড়ে এসে দেখি তুমি অজ্ঞান কি হয়েছে
আমি: ঐ নাম্বার থেকে আবার ফোন আসছিল হারামজাদা বলে আব্বু নাকি মারা গেছে
শ্রাবন: গাদি ও বললো আর তুমি বিশ্বাস করে কান্না শুরু করে দিলে
আমি: বিশ্বাস করিনি আর ও তোমাকেও হুমকি দিয়েছে
শ্রাবন: মানে
আমি: বলেছে তোমাকে যেন বলে দেই পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেন প্রাণটা না হারাও
আকাশ: তারমানে ও সবাইকে চিনে আর শ্রাবনেরও শত্রু
শ্রাবন: আমার তো কোনো শত্রু নেই
রিয়া: পুলিশের শত্রু হতে কতক্ষণ
শ্রাবন: ঠিক আছে আমি দেখছি তুমি ভয় পেয়ো না

আকাশ আর শ্রাবন নিজেদের মধ্যে কি যেন কথা বললো তারপর বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো, আমার পাশে রিয়া, মেঘা আপু, মা আর আন্টি বসা
রিয়া: ফোনটা তো ভেঙ্গে ফেললি
আমি: ভালো হয়েছে বদমাইশটা আর আমাকে ফোনে পাবে না
রিয়া: ও হয়তো আমাদের সবাই কে চিনে
আমি: আচ্ছা ও আম্মুর লোক নয়তো আম্মুর পক্ষে তো সবই সম্ভব
রিয়া: হলে হতেও পারে

সারাদিন শ্রাবন আর আকাশ বাসায় আসেনি কোথায় গেছে তাও জানিনা কেউ ফোন রিসিভ করে না, এদিকে আমার মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে এসব কি আম্মু করতেছে কিন্তু কিসের জন্য

রাতে শ্রাবন আর আকাশ বাসায় আসলো এসে যা জানালো আমার তো মাথা ঘুরে গেছে, অচেনা নাম্বার থেকে ফোন দেয় আকাশের মামা রাকিব, আম্মু আর রাকিব মিলেই নাকি এসব করতেছে, আম্মু যদি রাকিবের সাথে মিলে এসব করবে তাহলে আব্বু আর তুলি কোথায় উফফফফফ মাথায় কিচ্ছু আসছে না, আম্মু কেন এসব করছে ঐ জমিটার জন্য….?

সকালে আমার জ্বর প্রচন্ড বেড়ে গেলো, আকাশ আর শ্রাবন অফিসে তাই রিয়া আর মেঘা আপু আমাকে নিয়ে ডক্টর এর কাছে আসলো

ডক্টর এর কাছ থেকে আসার সময় রিয়া বললো একটু ঘুরে আসতে তাহলে আমার ভাল লাগবে, আমরা হাটতে হাটতে একটু দূরে গেলাম উদ্দেশ্য পার্কে যাবো, মাঝ রাস্তায় হঠাৎ লক্ষ করলাম একটি মেয়ে দৌড়াচ্ছে, আমাদের থেকে অনেক দূরে তাই বুঝা যাচ্ছে না কিছু, হঠাৎ দেখলাম মেয়েটির পিছনে কয়েকটা লোক তার মানে মেয়েটি কে ধরার জন্য দাওয়া করছে আর মেয়েটা প্রাণপণে দৌড়ে আমাদের দিকে আসছে, এই রাস্তায় তেমন মানুষ নেই মাঝে মাঝে কয়েকটা দোকানপাট

মেয়েটি আমাদের কাছে আসতেই হুচট খেয়ে পড়ে গেলো, মুখ উড়না দিয়ে পেছানো কিন্তু কেমন যেন চেনাচেনা লাগছে, রিয়া গিয়ে মেয়েটিকে তুললো আমাদের দেখে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলো, মেয়েটা হাপাতে হাপাতে মুখ থেকে উড়না সরালো, মেয়েটির মুখের দিকে থাকিয়ে আমি যেন থ হয়ে গেলাম কাঠের মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছি, রিয়া ওকে জাপটে ধরে চিৎকার দিয়ে উঠলো তুলি তুই, রিয়ার চিৎকারে আমার হুশ হলো তুলিকে বুকের মধ্যে জরিয়ে ধরলাম, হ্যা আমি আমার ছোট্ট বোনটা কে ফিরে পেয়েছি কিন্তু এই অবস্থায় ফিরে পাবো কল্পনাও করিনি, তুলি আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতেছে
আমি: এই তুলি তোর এই অবস্থা কেন আর ওরা কারা
তুলি: ওরা সন্ত্রাসী পরে সব বলবো আপু আগে আমাকে বাচাও আমার পা কেটে গেছে
ওর কথা শুনে পায়ের দিকে থাকালাম খুব রক্ত ঝরছে তাড়াতাড়ি পাশের হসপিটালে নিয়ে গেলাম

তুলির চিকিৎসা করছে ডক্টর আমরা তিনজন বাইরে বসে আছি, মাথায় কিছু আসছে না তুলির এই অবস্থা কেন আব্বু আম্মু কোথায় আর সন্ত্রাসীরা ওকে ধরতে চায় কেন

একটু পর ডক্টর বেড়িয়ে আসলেন
–ডক্টর তুলি…..
–রোগি আপনার কি হয়
–বোন
–মেয়েটার বয়স তো বেশি না এই ছোট মেয়েটা কে অনেক শারীরিক অত্যাচার করা হয়েছে সারা শরীরে আগাতের চিহ্ন, রোগীকে কয়েক দিন রেস্টে রাখতে হবে
–ওর কিছু হবে না তো
–হসপিটালে রাখুন কয়েকদিন চিকিৎসা চললে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে
–ঠিক আছে

শ্রাবনকে ফোন করে বললাম হসপিটালে আসতে, তারপর তুলির কাছে গেলাম, তুলিটা বেডে শুয়ে আছে মুখে যন্ত্রণার চাপ স্পষ্ট ফুটে আছে, মাথার পাশে বসে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললাম
আমি: তুলি তোর এই অবস্থা কেন আব্বু আম্মু কোথায়
তুলি: আগে বল তুমি কোথায় ছিলে কত খুঁজেছি তোমাকে জানো
আমি: এদিকেই থাকি আমি আমাদের বাসায় অনেকবার গিয়েছি কিন্তু তোদের পাইনি
তুলি: কিভাবে পাবে আমরা তো ওখানে থাকতাম না চলে গিয়েছিলাম অন্য জায়গায়
আমি: কোথায় গিয়েছিলি আর আমাকে জানাসনি কেন
তুলি: তোমার ফোন বন্ধ ছিল অনেক চেষ্টা করেছি যোগাযোগ করার কিন্তু পারিনি
আমি: আমার ফোন ছিনতাই হয়েছিল
তুলি: হুম জানি
আমি: তুই কিভাবে জানিস
তুলি: সে অনেক কথা
রিয়া: তমা এসব পরে শুনতে পারবি এখন তুলির রেস্টের প্রয়োজন
তুলি: আমি ভালো আছি রিয়া আপু তোমরা অনেক কিছু জানোনা তোমাদের জানা প্রয়োজন
আমি: কি জানিনা আর কি জানা প্রয়োজন
তুলি: তোমার ফোন কে ছিনতাই করেছিল, আমরা হুট করে কোথায় চলে গিয়েছিলাম, আব্বু কোথায় আছেন আর আমার এই অবস্থা কেন
আমি: তাহলে সব বল
তুলি: বলছি

তুলি বলতে শুরু করলো……

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ৫

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

রাতে বারান্দাতেই ওর কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরছিলাম, সকালে রিয়ার ডাকে দুজনের ঘুম ভাঙ্গলো
রিয়া: রোমান্স করতে করতে বারান্দাতেই ঘুমিয়ে পরছিলা হিহিহি
আমি: এত্তো হিহিহি করছ কেন
রিয়া: তোদের রোমান্স দেখে
আমি: তোরে আমি….
রিয়া: কিচ্ছু করতে হবে না আন্টি উঠে পরেছেন ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেতে আস দুজন
শ্রাবন: তুমি যাও আমরা আসছি
রিয়া: ওকে

রিয়া যেতেই শ্রাবন আমাকে জরিয়ে ধরলো
–দেখেছ আমার কাধে এতো আরামে ঘুমাইছ যে আম্মু উঠার আগে তুমি উঠতে পারোনি হিহিহি
–তোমার কারনেই তো এমন হলো আবার হাসতেছ মা কি ভাববেন
–কিছুই না আম্মু বুঝে
–কচু বুঝে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ আস
–ওকে যাও আসছি

নাস্তা খেতে খেতে মা বললেন
মা: তমা তোমার তো অনেক কিছুই অজানা খেয়ে আমার রুমে এসো সব বলবো তোমাকে
আমি: ঠিক আছে

শ্রাবন, আমি, রিয়া আর মা সবাই মায়ের রুমে বসে আছি, মা বলতে শুরু করলেন
মা: তমা যেদিন তোমার আম্মু তোমার হাত পুরিয়ে দেয় তার আগের দিন উনি আমাদের বাসায় এসেছিলেন
আমি: অভাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আম্মু কিভাবে বাসা চিনে আর আপনাদেরই বা কিভাবে চিনে
শ্রাবন: তোমার জন্মদিনের রাতে উনি ছাদে আমাদের দুজনকে দেখেছিলেন
আমি: তারপর
মা: উনি বাসায় এসে শ্রাবন কে হুমকি দেন তোমাকে যেন ভুলে যায়, আমি উনাকে সাফ জানিয়ে দেই তুমিই আমার বৌমা হবে উনি কিছু না বলে চলে যায়, পরেরদিন ফোনে জানিয়ে দেয় তোমার হাত পুরিয়ে দিছে শ্রাবন যদি তোমার সাথে যোগাযোগ রাখে তাহলে তোমাকে মেরে ফেলবে
শ্রাবন: তখন থেকেই আমি তোমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই তোমার কোনো ক্ষতি হলে আমি বাঁচতে পারবো না তাই
আমি: আমাকে তখন এসব বলনি কেন
শ্রাবন: তোমার আম্মু বলছিল তোমাকে এসব জানালে উনি তোমাকে মেরে ফেলবে
মা: আমরা এসব বিশ্বাস করিনি কারন সৎ মা হলেও তো মা, মেয়েকে কিভাবে মেরে ফেলবে তাই শ্রাবন তোমাকে আবার ফোন দেয়, আর তার দুদিন পরই তোমাকে বিষ খাওয়ায় তোমার আম্মু
আমি: (কথাটা শুনে অভাক হলাম না আমি তো আগেই বুঝতে পারছিলাম এইটা আম্মুর কাজ)
শ্রাবন: চুপ হয়ে আছ কেন
আমি: এমনি
মা: তুমি হাসপাতালে ছিলে কিন্তু আমরা মা ছেলে তোমাকে এক নজর দেখতে পারিনি তোমার আম্মু বলেছিল আবার যদি তোমার সাথে শ্রাবন যোগাযোগ করে তাহলে তোমাকে জানে মেরে ফেলবে
শ্রাবন: সেই ভয়ে আমি তোমাকে ফোন দেইনি সিম চেঞ্জ করে ফেলি তুমি বেঁচে আছ এইটুকুতেই শান্তি খুঁজে নেই আর কিছু করার ছিল না আমার
আমি: আম্মু এমন করলো কেন কিছু বলেছে
শ্রাবন: হ্যা আমি নাকি তোমার যোগ্য না আমার কাছে তোমাকে বিয়ে দিলে উনার কোনো লাভ হবে না
মা: তারপর তোমার আম্মু এসে জানায় তোমার নাকি অনেক বড় জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে কাজেই শ্রাবন যেন তোমাকে ভুলে যায়
শ্রাবন: আমি চেয়েছিলাম বিয়ের আগে তোমাকে সবকিছু লুকিয়ে জানাব কিন্তু তার আগেই তোমার আম্মু গুন্ডা ভাড়া করে আমাকে মারে আমার অবস্থা খুব খারাপ ছিল তাই আম্মু আমাকে নিয়ে কক্সবাজার চলে যান
মা: আমার ছেলেটা কে তুমি ভুল বুঝো না ওর কোনো দোষ নেই ও এই জায়গা ছেড়ে যেতে চায়নি আমি জোর করে নিয়ে যাই ওই তো আমার বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল তাই ভয় পেয়ে যাই ওর যদি কিছু হয়ে যায়
আমি: না মা এতে তো আপনাদের কোনো দোষ নেই
মা: তুমি যেমন ভালো ছিলে না শ্রাবনও তেমন ভালো ছিল না সবসময় তোমার কথা ভাবতো কেমন যেন ঘোরের মধ্যে থাকতো এভাবে কিছুদিন যেতেই ও অসুস্থ হয়ে পড়ে প্রায় ছয়মাস পর ও সুস্থ হয়
শ্রাবন: তোমার বিয়ে হয়ে গেছে জানতাম তাই তোমাকে পাবার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম, তোমাকে ভুলে থাকার জন্য পুলিশে চাকরি নেই নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করি কিন্তু রিয়ার সাথে যোগাযোগ হবার পর ও যখন বললো তুমি আকাশ কে মেনে নাও নি ডিভোর্স নিয়েছ তখন আবার তোমাকে পাবার ইচ্ছা জাগে তারপর এখানে ছুটে আসি
রিয়া: তমা আমি সব জানতাম শ্রাবনের সাথে যেদিন কথা হয়েছিল ও সেদিন সব বলেছিল আমি তোকে জানাই নি কারন আমি চেয়েছিলাম শ্রাবনের মুখ থেকেই তুই এসব শুন
আমি: হুম কিন্তু আকাশের সাথে বিয়ে দিয়ে আম্মুর কি এমন লাভ হলো যে শ্রাবনের সাথে দিলে হত না
শ্রাবন: সেটাই তো ভাবার বিষয় এখন আগে তোমার আব্বুকে খুঁজে বের করতে হবে তাহলেই সব রহস্য বেরিয়ে আসবে
আমি: কিন্তু আব্বুকে পাবো কোথায়
মা: চিন্তা করো না মা একদিন ঠিক পেয়ে যাবা সবাই কে
আমি: হুম

রুমে এসে শুয়ে পরলাম ভালো লাগছে না আম্মু কেন এমন করলো সৎমা বলে কি এমন করবে, আর আম্মুর কি এমন লাভ হলো আকাশের সাথে বিয়ে দিয়ে, এসব ভাবছি তখনি ফোন ভেজে উঠলো আগের সেই নাম্বার
–হ্যালো
–কিরে তোর সৎ মায়ের ব্যাপারে সব জেনে গেছিস
–আপনি কে বলুন তো আমার সবকিছুর খুঁজ কেন রাখছেন
–সব বুঝবি আর হ্যা তোর শ্রাবনকে বলে দিস পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেন নিজের প্রাণটা না হারায়
–মানে
–হাহাহাহা সব বুঝবি এখন বল তোর আব্বুর ঠিকানা ফেলি
–না প্লিজ ঠিকানাটা দিন
–গিয়ে দেখ হয়তো কোথাও মরে পরে আছে আর শেয়াল কুকুরে ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে

ফোনটা রেখে দিল এসব শুনে প্রচন্ড রাগ উঠলো ফোন ফ্লোরে ছুড়ে মারলাম চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলাম আমার আব্বু মরতে পারে না, চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে আসলো আমি কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গেলাম…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ৪

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে পিয়াস আমাদের ডেকে তুললো ওর ফ্লাইট নয়টায়, রিয়া তাড়াতাড়ি উঠে নাস্তা বানালো, নাস্তা খেতে খেতে রিয়া বললো
রিয়া: তমা তোর যাওয়ার দরকার নেই আমি ওকে এয়ারপোর্ট এগিয়ে দিয়ে আসব
আমি: আমাকে এতিমখানায় যেতে হবে
রিয়া: এই শরীর নিয়ে
পিয়াস: দুজনেই চলো আমাকে এগিয়ে দিয়ে তমাকে ডক্টর দেখিয়ে আসবা ওর তো জ্বর অনেক বেড়েছে
রিয়া: ঠিক আছে

রেডি হয়ে তিনজন বেড়িয়ে পরলাম এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশ্যে, গাড়িতে বসে আছি তখন শ্রাবন ফোন দিল
–হ্যালো
–জ্বর কমেছে
–একটু
–মিথ্যে বল কেন রিয়া যে বললো কমেনি ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাচ্ছে
–(রিয়ার দিকে রাগি চোখে থাকালাম ও হাসছে)
–চুপ হয়ে আছ কেন
–এমনি কমে যাবে আর ডক্টর এর কাছে যাচ্ছি তো
–আমার ট্রান্সফার হয়েছে তোমরা আগে যেখানে থাকতে ওই এলাকায় আগামীকাল আসছি
–তাহলে তো ওইদিকে বাসা ভাড়া নিতে হবে
–যেতে একটু কষ্ট হবে সমস্যা নেই আকাশদের উপরের ফ্লাটই ভাড়া নিবো
–ঠিক আছে
–বাসায় পৌঁছে ফোন দিও এখন রাখি
–আচ্ছা

পিয়াস কে এয়ারপোর্ট দিয়ে রিয়া আর আমি ডক্টর এর কাছে আসলাম, ডক্টর দেখিয়ে এতিমখানা ঘুরে তারপর বাসায় আসলাম

সন্ধ্যায় রিয়া রান্না বসালো আমি শুয়ে আছি তখন সেই নাম্বার থেকে আবার ফোন আসলো
–হ্যালো
–খুব ভালো আছিস তাই না
–আপনি কে বলুন তো
–তোর বাবা কে জিজ্ঞেস কর
–আব্বুকে আমি পাবো কোথায়
–আমি জানি তোর বাবার ঠিকানা
–কোথায় বলুন
–এতো সহজে বলছি না বাপ মেয়ে আলাদা থাক আর কিছু দিন
–প্লিজ ঠিকানাটা দিন আপনি জমি চান তো আমি দিয়ে দিবো
–জমি তো আমি নিবোই বলেই ফোনটা কেটে দিল

বার বার ফোন দিলাম কিন্তু মোবাইল বন্ধ, আব্বুর ঠিকানা আমার খুব প্রয়োজন জায়গার বিনিময়ে যদি ঠিকানা দিত তাও আমি জায়গা দিয়ে দিতাম কিন্তু এই লোক তো ফোন বন্ধ করে ফেলছে এখন কি করবো

রাতে শ্রাবনকে অচেনা নাম্বারের কথা সব জানালাম ও আগামীকাল এসে দেখবে বললো, এসব নিয়ে আর না ভেবে ঘুমিয়ে পরলাম

সকালে উঠে রিয়ার সাথে কিছু কাজ করলাম কারন আজ শ্রাবন আর মা আসবে

সারাদিন টুকটাক কাজ করে দুপুরে খেয়ে রিয়া আর আমি বারান্দায় গিয়ে বসলাম, একটু পর কলিংবেল বেজে উঠলো দুজনেই গেলাম, দরজা খুলে দেখি মা আর শ্রাবন, মা কে সালাম করতেই উনি আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলেন
–আমাকে মাফ করে দিও মা আমার জন্য তোমার জীবনটা এমন হলো
–আপনার কি দোষ
–আমি ভয় না পেয়ে তোমাকে সব বলে দিলেই হত
–কি বলে দিলে হত
–বলবো মা এখন তোমাকে সব কথা বলবো
–আচ্ছা পরে শুনবো সব কথা এখন ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিন
–আচ্ছা

মা কে একটা রুমে দিয়ে আমার রুমে আসলাম, রুমে এসে দেখি শ্রাবন আমার রুমে বসে আছে ভাবখানা এমন যে আজ থেকে উনি এই রুমেই থাকবেন, ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম
–এই তুমি আমার রুমে কেন
–তোমার রুম মানেই তো আমার রুম
–মানে
–আচ্ছা তুমিই বলো বউ এর রুম রেখে অন্য রুমে আমি থাকবো কেন
–এখনো বউ হই নাই বের হউ আমার রুম থেকে
–খুব শীঘ্রই বউ হয়ে যাবা
–আব্বুকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আমি বিয়ে করছি না
–শশুড় কে ছাড়া আমিও বিয়ে করবো না
–তোমার রুমে যাও
–যাবো তো আমার বউ এর কাছে একটু থাকতে দাও
–এই একদম কাছে আসবা না
–হুহ বললেই হলো দুইটা বছর দূরে থাকছি আর পারবো না
–দুই বছর কি আমার জন্য দূরে থাকছ নিজের ইচ্ছাতেই তো দূরে চলে গেছিলা
–নিজের ইচ্ছায় যাইনি আমি পরিস্থিতির স্বীকার ছিলাম
–কি রকম
–পরে বলবো এখন একটু রোমান্স করতে দাও

ওর চোখের দিকে থাকালাম কেমন যেন এক মাথাল করা চাহনি, চোখে মুখে দুষ্টুমির চাপ, ও আমার দিকে আস্তে আস্তে এগুতে শুরু করলো আর আমি পিছাতে শুরু করলাম, পিছাতে পিছাতে দেয়ালে গিয়ে আটকে গেলাম, আমি দেয়ালে আটকে গেছি দেখে ওর মুখে দুষ্টু হাসি, আমার কাছে এসেই কপালে একটা মায়া দিয়ে দিল
–দেখ বিয়ের আগে এসব রোমান্স কিন্তু ঠিক না
–তাহলে চলো এখনি বিয়ে করে ফেলি
–বললাম তো আব্বুকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত বিয়ে করবো না
–এখানে আমার একটি কাজ আছে কাজটা শেষ করেই শশুড় আব্বুকে খুঁজতে শুরু করে দিব
–কি কাজ
–এক লোক নাকি নারী পাচার করে তাও বউকে সাথে নিয়ে ওদের কেই ধরতে হবে
–আরো কতো কি দুনিয়ায় দেখতে হবে
–জ্বী
–রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও
–আমার তো রোমান্স করা হলো না
–যাইবা তুমি
–যাচ্ছি যাচ্ছি
রাগি চোখে থাকাতেই দৌড়ে চলে গেলো ফাজিল একটা

রাতে সবাই একসাথে খেয়ে নিলাম মা আর রিয়া ওদের রুমে গেলো আর ফাজিলটা আমার পিছু পিছু আমার রুমে আসলো, রুমে এসে বলতেছে চলো বারান্দায় গিয়ে বসি
–এই তোমার মতলব কি
–বারান্দায় বসে কফি খেতে খেতে আমার মিষ্টি বউ এর চুলের ঘ্রান নিবো
–আহারে কি রোমান্স
–এই বাসায় ছাদ থাকলে ভালো হত
–কেন
–ছাদের স্মৃতি গুলো কি ভুলে গেছ
–ভুলার মতো স্মৃতি নাকি ওগুলো
–এজন্যই বলছিলাম ছাদ থাকলে ভালো হত আরো কিছু স্মৃতি জমানো যেত, অবশ্য নতুন যে বাসা নিবো ওই বাসায় ছাদ আছে
–আমি ঘুমাবো তুমি এখন যাও
–যাবো না বারান্দায় চলো
–না
–যাবা না
–না
–ওকে
বলেই আমাকে কোলে তুলে নিল বারান্দায় চেয়ারে নিয়ে বসিয়ে নিজেও বসলো
–চুপ করে বসে থাক আমি রোমান্স করবো
–মানে

আর কিছু না বলেই আস্তে আস্তে আমার কাছে আসতে শুরু করলো, ঘাড় থেকে চুলগুলো সরিয়ে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিলো, আমি চোখ বন্ধ করে ওর গরম নিঃশ্বাস অনুভব করছি তখনি কানের মধ্যে এক কামড় বসিয়ে দিল আমি জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরী২ পার্ট: ৩

0

জীবনেরডায়েরী২

পার্ট: ৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

খুব শান্ত ভাবে ও আমার চোখের দিকে থাকিয়ে আছে হয়তো আমার চোখে ওর জন্য ভালোবাসা আছে কিনা তাই খুঁজছে, আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি কি বলবো ওকে এখনো ভালোবাসি কিন্তু আমি তো এখন ডিভোর্সি কিভাবে বলি ওর আম্মু যদি আমাকে মেনে না নেন, কিছুক্ষণ আমার দিকে থাকিয়ে রইলো তারপর আমাকে ঘুরিয়ে দিয়ে পিছন দিক থেকে জরিয়ে ধরলো, চুলের খোপা খুলে দিয়ে চুলে নাক ডুবিয়ে দিয়ে শান্ত ভাবে বলতে শুরু করলো
–তমা আমি জানি তুমি এখন কি ভাবছ আমাকে এখনো ভালোবাস এই কথাটা বলবা কিনা তাই তো
–হুম
–ভয় পাইতেছ কেন আমি তোমাকে আগের মতই ভালোবাসি তুমি বিবাহিতা এইটা আমার কোনো সমস্যা না তোমার যদি বাচ্চা থাকতো তাও আমার সমস্যা ছিল না কারন আমি তোমাকে ভালবেসেছি তোমার শরীর কে না
–কিন্তু
–আম্মুর কথা ভাবছ ভয় নেই আম্মুও চায় তুমি উনার বৌমা হও
–তাহলে সেদিন দুজনেই আমাদের অপমান করেছিলে কেন
–আম্মু আমি দুজনেই পরিস্থিতির স্বীকার ছিলাম তোমাকে বাঁচানোর জন্য আমাদের এমন করতে হয়েছে
–মানে
–এসব অনেক কথা পরে বলব তোমার শরীরে তো জ্বর রেস্ট নাও এখন
–না আমি ঠিক আছি
–কেমন ঠিক আছ তো দেখছিই
–আচ্ছা মা এখন কোথায়
–কক্সবাজার, আমরা এখন ওখানেই থাকি ভাবছি এখানে চলে আসবো
–একটা প্রশ্ন করি
–হুম কর
–দুবছ আগে আমি তোমাকে কক্সবাজার দেখেছিলাম পরে আর খুঁজে পাইনি সবাই বলেছে ভুল দেখেছি কিন্তু আমি তোমাকে চিনতে ভুল করতেই পারি না
–হ্যা তুমি আমাকেই দেখেছিলে আমি জানতাম না তুমি ওখানে ছিলে, তুমি আমাকে দেখে যখন দৌড়ে আসছিলে তখন খুব দ্রুত ওখান থেকে আমি সরে যাই
–কেন
–আমি জানতাম তোমার বিয়ে হয়ে গেছে আমার জন্য তোমার সংসারে কোনো জামেলা হউক তা আমি চাইনি তাই
–হুম
–তোমার আম্মু কেমন আছে
–জানিনা
–কেন
–আমি তো সবাইকে হারিয়ে ফেলছিলাম আব্বুকে এখনো খুঁজে পাইনি
–মন খারাপ করো না আমি তো এখন পুলিশ তোমার আব্বুকে খুঁজে বের করতে বেশি সময় লাগবে না
–হুম
হঠাৎ কাশির শব্দে শ্রাবন আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়াল, রিয়া এসেই হাসতে শুরু করলো
–হাসছিস কেন
–আমিই সবসময় তোদের রোমান্সে বাধা দেই হিহিহি
–হিহিহি বন্ধ কর নাহলে মাইর খাবি
–আচ্ছা বন্ধ করলাম তা শ্রাবন সাহেব আপনার কি খাবার খাওয়া লাগবে নাকি বউ এর পাশে থাকলেই চলবে
–খিদে আছে খাওয়া লাগবে আর খেয়েই চলে যাবো

শ্রাবন চলে যাবে শুনেই কেমন যেন খারাপ লাগতে শুরু করলো ভয় হচ্ছে খুব আবার যদি ওকে হারিয়ে ফেলি, এখন হারালে হয়তো আমি মরেই যাবো

দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসলাম কিন্তু আমি খেতে পারছি না শ্রাবন চলে যাবে ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে
রিয়া: কিরে খাচ্ছিস না কেন
আমি: খাচ্ছি তো
শ্রাবন: টেনশন করতে হবে না দুদিনের ভিতরেই এখানে চলে আসবো আর প্রথমে তোমার বাসাতেই উঠবো (কথাটা শুনে ওর দিকে থাকালাম পাগলটা কিভাবে যেন আমার মনের সব কথা বুঝে যায়)
আকাশ: তমা আমরা বাসা পেয়ে গেছি বিকেলে চলে যাবো
আমি: কিছুদিন পর গেলে হয়না
মেঘা আপু: পাগলী ভয় নাই এমন জায়গায় বাসা নিয়েছি যেখানে চাইলেই এক মিনিটে তুমি যেতে পারবা
আমি: মানে
আকাশ: তোমার বাসার পাশে যে বাসা খালি আছে ওইটাই ভাড়া নিয়েছি
আমি: আমি তো ভেবেছিলাম দূরে কোথাও চলে যাবা
আকাশ: ওই বাসার উপরের ফ্ল্যাট খালি আছে শ্রাবন তুমি চাইলে খালি ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিতে পারো
শ্রাবন: তাহলে তো ভালই হবে সবাই কাছাকাছি থাকতে পারবো
রিয়া: হ্যা তোমাদের রোমান্স করতে সুবিধা হবে বলেই হাসতে শুরু করলো (এইটা যে কি সবসময় ফাজলামো করে)
পিয়াস: একটু কম হাস আমি আগামীকাল চলে যাবো
রিয়া: কেন
পিয়াস: কাজ পরে গেছে আব্বু ফোন দিছিলেন
রিয়া: তমার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত আমি এখান থেকে যাচ্ছি না
পিয়াস: পাগল হইছি তো তোমাকে এখন নিয়ে যাবো আর তমার বিয়ে ঠিক হলেই বাংলাদেশে যাবো বাংলাদেশে যাবো বলে আমাকে পাগল করে দিবা (পিয়াসের কথায় সবাই একসাথে হেসে উঠলো)

বিকেলে শ্রাবন চলে গেলো, মেঘা আপুরা নতুন বাসায় চলে গেছে যদিও আমার বাসার পাশেই তবুও বাসাটা কেমন যেন খালি খালি লাগছে, পুরু বাসায় রিয়া পিয়াস আর আমি

রাতে আমার জ্বর অনেক বেড়ে গেলো তাই রিয়া আমার পাশেই ঘুমাল……

চলবে?