Wednesday, August 13, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2408



হৃদয়ের_আয়না পার্ট০৫ (শেষপার্ট)

0

হৃদয়ের_আয়না
পার্ট০৫ (শেষপার্ট)
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
“মিস্টার আকাশ আপনার এই রোগের কথা জানার ১৫দিন পর আপনার স্ত্রী আমাদের এখানে আসে।ওনার নিজের হার্ট দিয়ে আপনাকে বাঁচানোর জন্য অনেক অনুরোধ করে আমাকে।কিন্তু আমি তাতে রাজি হয়নি।মানুষকে বাঁচানো আমাদের দায়িত্ব আর কর্তব্য।১জনকে বাঁচাতে গিয়ে আমরা আরেকজনকে মেরে ফেলব সে ধর্ম আমাদের ডাক্তারদের বিধানে নেই।আমি আপনার স্ত্রীকে না করে দেই।কিন্তু সেও নাছোড়বান্দা।প্রতিদিন এখানে এসে অনেক অনুরোধ করে,কান্নাকাটি করে।কিন্তু তারপরও আমি তার পাগলামোকে পাত্তা দেয় নি।এর কিছুদিন পর তিনি আমার বাসায় আসেন।আমার আর আমার স্ত্রীর পা ধরে অনেক কান্নাকাটি করেন।আর তখনি আমি নিরুপায় হয়ে উনার এই অনুরোধ মেনে নিতে বাধ্য হয়”
“কিন্তু আমাকে এই মিথ্যা কথাটা কেন বললেন?”
“কারণ আপনার স্ত্রীই আমাকে এই মিথ্যা কথা বলতে বাধ্য করেছেন তাই।উনি আমাকে বলেছেন যে আপনাকে হার্ট দিচ্ছে তার সম্পর্কে আপনি যদি কিছু জিজ্ঞাস করেন তাহলে আমি যেন এইরকম মিথ্যা গল্প আপনাকে শুনিয়ে দেই”
.
.
এ তুই কি করলি মেঘ!কেন এইসব করলি?নিজের জীবনটা এইভাবে তুচ্ছ করে কেন আমাকে বাঁচানোর জন্য তুই তোর হার্ট দিয়ে দিয়েছিস।কেন করতে গেলি এইসব!কেন(কেঁদে)
আমি চাইলেও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।সেদিন মেঘের দান করা হৃদয়টা আমার বুকে স্থান পেল।এখন আমার হৃদয়ে ওর অস্তিত্ব,ও হচ্ছে আমার হৃদয়ের আয়না।আমার হৃদয়ের আয়নায় আমি শুধু ওকে দেখি আর ওকে ভালবাসি।আমার এই বুকে অন্য কেউ নেই।
.
.
এরপরে আমি কোনরকম করে দিন কাটাতে লাগলাম।মেঘের হৃদয় আমার বুকে আছে ঠিকই কিন্তু আমি চাইলেও মেঘকে ছুতে পারি না।খুব কষ্ট হত ওকে ছাড়া থাকতে।তুলির সাথে রিলেশন হওয়ার পর ও যখন ভার্সিটি ছেড়ে চলে যায় ১টা বছর ও যখন আমার চোখের সামনে ছিলনা তখন খুব অস্থির লাগত এই বুকে।আল্লাহর রহমতে আমি ওকে ফিরে পেয়েছিলাম।এরপরে ওকে বিয়ের পর বুঝতে পেরেছি ওর মতন করে আমাকে কেউ ভালবাসতে পারবে না।তখন থেকেই তোকে খুব ভালবেসে ফেলেছি যেখানে যাই আমার হৃদয়ের আয়নার শুধু তোর ছবি ফুটে উঠে তাইতো তোর নাম দিয়েছি হৃদয়ের আয়না।কিন্তু এরপরে তুই যে চিরদিনের জন্য আমাকে ফেলে চলে যাবি তা আমি কল্পনাও করতে পারি নি।তখন ১টা বছর তোকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হত আর এখন তুই সারাজীবনের জন্য আমাকে ফেলে চলে গেলি এখন আমি কি নিয়ে বাঁচব, কাকে নিয়ে আমি ঘর বাধাঁর স্বপ্ন দেখবো।তোর জায়গা আমি কাউকে দিতে পারবনা, কাউকে না।তোর মতন করে আমাকে কেউ ভালবাসতে পারবে না।
.
.
আমার এই উদাসীন জীবন দেখে মা বাবা আবারও আমার বিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে।মা বাবা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে আমাকে বাবার বন্ধুর মেয়ে বৃষ্টির সাথে বিয়ে দিয়ে দিল।আর আমাকে এই বলে দিল আমি যাতে আমার আগের বিয়ের কথ বৃষ্টিকে না জানাই।খুব কষ্ট পেয়েছিলাম মা বাবার এই কথায়।মেঘ আমার জন্য নিজের জীবনটা শেষ করে দিল।ও আমার স্ত্রী আর এই কথা আমি কাউকে বলতে পারবো এর থেকে বেশি কষ্ট আর কি হতে পারে?তাই আমার সব রাগ আমি বৃষ্টির উপর ঝাড়তাম।পড়ে ভেবে দেখলাম ওরই বা কি দোষ ওতো এইসবের কিছু জানে না।তাই এরপর থেকে ওর সাথে আর রাগ করে কথা বলতাম না।
.
.
আর পড়তে পারছিনা।এতকিছু ওর জীবনে ঘটে গেল আর ও আমাকে কিছুই বলে নি।ডায়েরির শেষপাতায় ২টা ছবি পেলাম।মেঘে আপুর ছবি!একটা মোটা ফ্রেমের চশমা আর কোকড়ানো চুলের ছবি আর আরকেটা লম্বা কেশবতী,কাজল কালো চোখের ছবি মেঘ আপুর।আকাশের জন্য মেঘ আপু নিজেকে চেঞ্জ করেছে।একটু আগে আমি নিজের রুপের বড়াই করছিলাম কিন্তু সত্যি বলতে আপুর চেহারা আমার থেকে অনেক বেশি লাবণ্যময়ী,আর মায়াবতী।উনার পাশে দাঁড়ালে আমাকে অনেক বেমানান লাগবে।একটু আগে আমি নিজের গুণের প্রশংসা করছিলাম কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমার থেকে অনেক বেশি গুণবতী ছিলেন মেঘ আপু।আমি নিজের কথায় এখন নিজে লজ্জা পাচ্ছি।নিজের চোখের সাথে চোখ মিলাতে খুব লজ্জা লাগছে।এই মানুষটার সম্পর্কে ভালোভাবে কিছু না জেনে আমি কত কিনা বলে ফেলেছি।মেঘ আপু প্লিজ ছোট বোন হিসেবে আমাকে মাফ করে দেন।এরপরে আমার হাত ধরে আমার গালে জোরে কেউ থাপ্পড় মারল।চেয়ে দেখি আকাশ।
.
.
তোমাকে বলেছিলাম না এই রুমে না আসার জন্য তাহলে কেন এসেছ এইখানে।আর আমার ডায়েরি তোমার হাতে কি করছে?তোমাকে বলেছিলাম না আমার কোন জিনিসের উপর অধিকার ফলাবে না তাহলে কেন করলে এইসব?কেন আমার কথা শুনলেনা?যাও এখনি এইরুম থেকে আমার জীবন থেকে চলে যাও।Get out from here
অনেকক্ষণ পর আকাশের রাগ কমল।আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম আকাশ আমি জানি আমি আজকে আপনার মনে অনেক বড় কষ্ট দিয়েছি কিন্তু আজকে আমি ওইরুমে না গেলে সত্যিটা আমার কাছে আজীবন অজানা থেকে যেত।চেয়ে দেখি আকাশ কেঁদে চলছে।
.
.
আমি জানি আপনি মেঘ আপুকে খুব ভালবাসেন।মেঘ আপুর কোন তুলনা হয় না,ওনার মতন করে আপনাকে কেউ কোনদিন ভালবাসতে পারবে না। এমনকি আমি নিজেও না।ওনি নিজের গুণে আপনার এই হৃদয়ে বেঁচে আছে।যে নিজের মূল্যবান হৃদয়টা আপনাকে দিয়ে আপনার হৃদয়ে চিরঅমর হয়ে বেঁচে আছে তার ভালবাসা অনেক পবিত্র।কোনকিছু না জেনে একটু আগে আমি উনার সাথে নিজের তুলনা করেছিলাম।এখন সবকিছু জেনে আমার নিজের থেকে লজ্জা লাগছে।
মেঘ আপু আপনার জন্য এতকিছু কেন করেছেন জানেন?কারণ তিনি আপনাকে সবসময় ভালো আর হাসিখুশি দেখতে চেয়েছেন।কিন্তু আপনি এইভাবে জীবন্তলাশের মত বেঁচে থেকে শুধু নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন না উনাকেও কষ্ট দিচ্ছেন।যে উদ্দেশ্য উনি প্রাণ দিয়েছেন সে উদ্দশ্য উনার কোনদিন পূরণ হলনা।এইভাবে বেঁচে থাকাকে জীবন বলে না।জীবনে বাঁচতে হলে ১জন জীবনসঙ্গীর প্রয়োজন আর আমি আপনার সেই জীবনসঙ্গী হতে চাই।বিশ্বাস করুন মেঘ আপুর জায়গাটা আমার চাই না,আমি নিজের গুণে আপনার এই হৃদয়ে সামান্য একটু জায়গা চাই।আমি জানি আপনার হৃদয়ের আয়নায় আপনি মেঘ আপুকে দেখেন,আমি আপনার হৃদয়ের আয়নায় মেঘ আপুর ছবি মুছে আমাকে দেখতে বলছি না শুধু একটাই মিনতি আমি আপনার সেই হৃদয়ের আয়নায় মেঘ আপুর প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকতে চায়।আমি উনার ছায়া হয়ে আপনার সাথে আমার বাকি জীবন কাটাতে চাই।আপনি খুব ভাগ্যবান আপনি যাকে ভালবাসেন তার হৃদয়টা আপনার কাছে আছে,মেঘ আপুর হৃদয়টা এখন আপনার।একে কেন্দ্র করে আপনি বেঁচে থাকতে পারবেন।কিন্তু দেখুন না আমি কি হতভাগা যাকে ভালবাসি তার কোনকিছু আমার কাছে নেই।আপনি যদি মনে করেন আপনি আমাকে আপনার জীবনে আর রাখবেন না তাহলে আপনি চাইলে আমাকে ডির্ভোস দিয়ে দিতে পারেন। আমি আজকে বাবার বাড়ি চলে যাচ্ছি। যখন মন চাইবে ডির্ভোস পেপারটা সেখানে পাঠিয়ে দিবেন।আপনার মা বাবার টেনশন করবেন না আমি সব সামলে নিব। ভালো থাকবেন চলি।
.
.
২মাস হয়ে গেছে আকাশের কোন খবর নেই। আমি এখনো বাবার বাড়িতে।ওনি এখনো আমার কাছে ডির্ভাস পেপার পাঠান নি।আজ না হয় কাল উনি ঠিকি পাঠিয়ে দিবেন।আমিতো ভুলে গেছি আকাশের বুকে শুধু মেঘের অস্তিত্ব থেকে।আর আকাশের বুকে বৃষ্টি থাকতে পারেনা,সে আকাশের বুক থেকে ঝরে মাটিতে পড়ে।আমার অবস্থাও তেমন আমি বৃষ্টি,আকাশের বুকে সামান্যতম জায়গাটাও পাবোনা কারণ ওইটা শুধু মেঘের জায়গা,বৃষ্টির নয়,
.
.
“আপনি এখানে”
“হ্যা আমি”
“ও এত কষ্ট করে এখানে এলেন কেন?কাউকে দিয়ে ডির্ভোস পেপার পাঠিয়ে দিলে হত”
“আমি আপনাকে ডির্ভোস পেপার দিতে এখানে আসি নি।আপনাকে আপনার সংসারে নিয়ে যেতে এসেছি”
“কি!”
“হ্যা”
“আপনি ঠিক আছেনতো কি বলছেন এইসব”
“হ্যা আমি ঠিকাছি”
“কিন্তু আপনার এই মত কেমন করে চেঞ্জ হল”
“মেঘ আমাকে ওইদিন যে চিঠি দিয়েছিল সেখানে আরও কিছু কথা লিখা ছিল সেটা কি জানেন”
“না কি লিখা ছিল তাতে?”
“এই লিখা ছিল ওর মতন করে আমাকে যদি কেউ কখনো ভালবাসে,আমার হৃদয়ের আয়নায় আমি যদি ওর প্রতিবিম্ব অন্য কারো মধ্যে দেখি তাহলে তাকে যেন বিয়ে করি।আর ওর মতন করেই যেন আমি আমার স্ত্রীকে ভালবাসি,তাকে আমার স্ত্রী হওয়ার প্রাপ্য মর্যাদা দিই।শুধু ওর ১টাই অনুরোধ আমার হৃদয়ের আয়নায় যাতে শুধু ওই থাকে,ওই জায়গার ভাগ ও কাউকে দিতে চাইনা।”
আর আমি আমার হৃদয়ের আয়নায় মেঘের সেই প্রতিবিম্ব সেই ছায়া পেয়ে গেছি আর সে ছায়া হচ্ছ তুমি”
.
.
অনেক খুশি হয়েছিলাম অন্তত আকাশ আমাকে মেনে নিয়েছ।মেঘ আপু আপনি সত্যিই মহান।দুনিয়াতে যখন ছিলেন তখন আকাশের জন্য নিজের জীবন দিয়ে দিলেন আর স্বার্থহীনভাবে আকাশকে বলে গেলেন ওর স্ত্রীকে ওর প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া হয়।উনি আকাশের জন্য আমার জন্য যা করেছেন তা ১মাত্র ১জন প্রকৃত প্রেমিক করতে পারে।উনার কারণে আকাশ আমাকে মেনে নিয়েছে তাই আমিও চাই উনার জন্য কিছু করতে।মা বাবাকে ডেকে মেঘ আপুর সম্পর্কে সব কিছু খুলে বললাম আর এইও বললাম যে উনি আকাশের ১ম স্ত্রী।যে মানুষ অন্যের জন্য এতবড় ত্যাগ স্বীকার করল সে সবার অজান্তে আর আড়ালে লুকিয়ে থাকবে তা আমার জন্য মেনে নেওয়া সম্ভব না।মা বাবা আকাশের ১ম বিয়ে নিয়ে আকাশকে আর আমার শশুড়বাড়ির লোকদের কিছু বলেনি।তারা সব মেনে নিয়েছি।আমার শশুড়-শাশুড়িকে ও বললাম আমার কাছে কোন কিছু লুকিয়ে না রেখে সব সত্যি কথা বললে আমি সব স্বীকার করে নিতাম।তারাও তাদের এই কাজের জন্য সেদিন অনেক অনুতপ্ত হলেন।আমি মেঘ আপুর ছবিসহ তার সবকিছু আবার তার রুমে নিয়ে আসি।উনার জায়গা স্টোররুমে না,উনার জায়গা এইরুমে যেখানে তিনি তার স্বপ্নের সংসার সাজাবেন বলে ঠিক করেছেন।
.
.
কয়েকবছর পর আমার কোল আলো করে আমাদের মেয়ে আসে।আকাশের কাছ থেকে শুনেছি মেঘ আপু প্রায়ই বলত যদি উনার মেয়ে হত তাহলে ওর নাম মায়া রাখত।তাই আমি মেঘ আপুর ইচ্ছা অনুযায়ী আমাদের মেয়ের নাম মায়া রাখি।মায়ার বয়স এখন ৯বছর।ওর কোকড়ানো চুল,চোখের চশমা দেখে মনে হয় আমাদের মেয়েটা মেঘ আপুর প্রতিচ্ছবি।আমি আমার বিবাহিত জীবনে আকাশ আর আমার মেয়েকে নিয়ে অনেক সুখি।তবে আমি এটা জানি আকাশ এখনো মেঘ আপুকে ঠিক আগের মতনই ভালবাসে।মেঘ আপু এখনও আকশের হৃদয়ের আয়না হয়ে আছে।আর আমিও চায় না মেঘ আপু আকাশের হৃদয়ে যে জায়গা দখল করে আছে,আকাশ যে হৃদয়ের আয়না দিয়ে মেঘ আপুকে দেখে সেখানে ভাগ বসাতে।আকাশের হৃদয়ের আয়নায় থাকার অধিকার শুধু মেঘ আপুর।উনিই আকাশের হৃদয়ের আয়না

End

হৃদয়ের_আয়না পার্ট_০৪

0

হৃদয়ের_আয়না
পার্ট_০৪
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
“না আসবো না”
“থাপ্পড় খাবি কিন্তু আয় এদিকে।”
“……….”
“বুঝছি তুই যেই জেদি সেই জেদি রয়ে গেলি।কোনদিন তুই আমার কোন কথাটা শুনেছিস যে আজ শুনবি।সবসময় নিজের মন যা চায় তাই করস।আর তাইতো আমার মতন এমন একটা ছেলেকে বিয়ে করে নিজের দুর্ভাগ্য ডেকে আনলি। এখন কাছে আসতে বলছি কিন্তু দেখ তুই আসছিস না।এই কথাতেই কাজ হয়েছে সুড়সুড় করে আমার কাছে আসল।”
“এরকমভাবে কেন বলছিস তুই?কয় নিজের দুর্ভাগ্য ডেকে আনলাম।আমি জানতাম তুই আবার আগের মতন হয়ে যাবি।দেখ না আমার এই বিশ্বাস মিথ্যা হয়নি।তোর অপারেশন তাড়াতাড়ি হবে।তুই সুস্থ হয়ে যাবি। তাহলে এইসব কথা বারবার বলে আমাকে কষ্ট দিস কেন?”
“ওকে তখনি জড়িয়ে ধরলাম।দেখ কাঁদিসনা আর।আমি বুঝতে পারি নি আমার এই কথা তোকে এত কষ্ট দিবে।এই কথা তোকে এত কষ্ট দিবে জানলে আমি কখনো তোকে এই কথা বলতাম না। Sorry রে।জানু আমাদের কাঁদার দিন শেষ।আমি তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাব।তুই আমাকে নিয়ে যেমন সংসার করার স্বপ্ন দেখতি ঠিক তেমন ভাবে আমরা আমাদের সংসারটা সাজাবো।তুলির কথায় কষ্ট পাস না।ও একটা পাগল। আর যদি কখনো ও তোকে কিছু বলতে আসে ওকেও তুই পাল্টা জবাব দিয়ে দিবি।জানু তুই জানিস তুই আমার কে?”
“………”
“তুই হচ্ছিস আমার হৃদয়ের আয়না।যেদিন থেকে তোকে আমি আমার হৃদয়ের আয়না দিয়ে দেখেছি সেদিন থেকে তোকে ভালবাসি।সেদিন থেকেই তুই হয়ে গেলি এই আকাশের হৃদয়ের আয়না”
“সত্যি!”
“হুম আমার হৃদয়ের আয়না।আর শোন তোকে কান্নাকাটিতে একদম মানায় না। আর কান্নাকাটি করিস না।এবার হাস বলছি,হাস”
“এইতো গুড গার্ল ”
.
.
সেদিন ডাক্তারের কাছে আবার গেলাম।উনাকে আবারও জিজ্ঞাস করলাম আমাকে যে হার্ট দিচ্ছে তাকে দেখতে পারব কিনা?ডাক্তারের উত্তরে আমি আবারও নিরাশ হলাম।
“আচ্ছা মিস্টার আকাশ আপনার এই হার্টের প্রবলেমতো আরও অনেক আগে থেকে ছিল।তখনই তো আপনার এলার্ট হয়ে যাওয়া উচিত ছিল”
“হ্যা আমার শরীরটা তখন কিছুটা খারাপ লাগত।কিন্তু আমি তা পাত্তা দিতাম না।আর পরিবারের কারও সামনে আমি এরকম পরিস্থিতিতে পড়ি নি।কিন্তু সেদিন সবার সামনে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেলাম।আর তারপর এই মেডিকেলে এসে জানতে পারলাম আমি এখন আমার এই রোগের লাস্ট স্টেজে আছি।অনেক দেরি হয়ে গেছে আমার এই রোগ সম্পর্কে জানতে”
“হ্যা সেটাই,কিন্তু এখন আল্লাহর কাছে শোকরিয়া করেন যে আপনি এখন ১টা হার্ট পেয়ে যাচ্ছেন”
“আচ্ছা ডাক্তার আমাকে যে হার্ট দিচ্ছে তার বয়স কত হতে পারে সেটা জানতে পারি”
“তিনি একজন মধ্যবয়স্ক লোক।আনুমানিক বয়স ৩০ বছর হবে।আপনি যেদিন মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন সেদিনি তিনি এই মেডিকেলে আসেন ওনার ছেলেকে নিয়ে।ওনি আমাকে আপনার রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলেন।আমার কাছ থেকে তিনি আপনার রোগ সম্পর্কে জানতে পারেন”
“আচ্ছা!কিন্তু এরকম টাইপের কোন লোক আমার পরিচিত বলে মনে হয় না”
“ওই লোকটি বলেছেন তিনি আপনাকে চিনেন।
লোকটি এই ঘটনার প্রায় ২মাস পর এক্সিডেন্ট করে।ওনার বাঁচার সম্ভাবনা নেই বললে চলে।একদিন ওনি আমাকে ডাক দিয়ে খুব কষ্টে একটা কথা বললেন।আপনি নাকি তার ছেলের জীবন বাঁচিয়েছেন।আপনার কারণে তিনি তার ছেলেকে পেয়েছেন।সেজন্য তিনি চিরঋণী আপনার কাছে।তাছাড়া তিনি নিজেও আর বেশিদিন বাঁচবেন না।তাই তিনি তার হার্ট দিয়ে আপনার সেদিনের সে উপকারের মূল্য দিতে চান”
“ও আচ্ছা।আজকে তাহলে আসি ডাক্তার”
.
.
বাসায় এসে অনেক্ষণ ধরে ভাবছি এইরকম বয়সের কাউকেতো আমি চিনিনা।আর উনার ছেলের জীবন বাঁচিয়েছি!তা কেমন করে সম্ভব।এইরকম উপকারের কথাতো আমার ঠিক মনে পড়ছে না!
“কিরে আকাশ অনেক্ষণ ধরে দেখছি তুই কোন কিছু নিয়ে ভাবছিস।এত কি ভাবছিস তুই?”
“জানু,আজকে ডাক্তারের কাছে গেছি”
“হঠাৎ করে!কোন দরকার ছিল”
“আসলে আমাকে যে হার্ট দিবে তার সম্পর্কে একটু জানার জন্য ডাক্তারের কাছে গেলাম।এরপর ডাক্তার আমাকে যা যা বলল তা আমি মেঘকে খুলে বললাম”
.
.
“মেঘ আমার যতটুকু মনে আছে আমি এইরকম বয়সের কোন লোকের ছেলেকে সাহায্য করিনি।কিচ্ছু ঢুকছে না মাথায়।ডাক্তারের কথাগুলো কেমন যেন অদ্ভুত লাগল।মনে হল…”
“কি মনে হল!”
“মনে হল উনি সত্যটা লুকিয়ে আমাকে মিথ্যা কথা বলছেন”
“তুইও না বড় আজিব।ডাক্তার তোকে মিথ্যা বলতে যাবে কেন?দেখ এইসব ফালতু চিন্তা বাদ দে।ওই লোকটা নিজেও আর বেশিদিন বাঁচবে না তাই ওনি ওনার নিজের হার্ট দিয়ে তোর জীবন বাঁচাতে চাইছেন।বিষয়টা অনেক সিম্পল”
“কিন্তু আমার থেকে বিষয়টা সিম্পল লাগছেনা।মনে হচ্ছে আমার এই অপারেশনের পর আমার কাছের কাউকে আমি হারাতে বসবো।মনে খুব অস্বস্তি লাগছে।তাই নিজের মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বারবার বিষয়টা ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করছি।১টাবার যদি ওই লোকটাকে দেখতাম তাহলে আমার মনের সব ভয় আর সন্দেহ দূর হয়ে যেত”
“দেখ আকাশ এই অপারেশনের পর যা হবে ভালোই হবে।তুই আর অযথা টেনশন নিস না।আকাশ আজকে আমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাবি ”
” ঘুরতে যাবি?”
“হুম খুব ইচ্ছে করছে আজকে দিনটাই তোর সাথে ঘুরতে আর সময় কাটাতে”
.
.
আজকে মেঘকে নিয়ে সারাদিন ঘুরলাম,মার্কেটে গেলাম।মার্কেটে খুব সুন্দর একটা গোলাপি শাড়ি দেখলাম।ভাবছি আমার অপারেশনের পরদিন আমি মেঘকে এই শাড়ি গিফট দিব।ওকে সারপ্রাইজ দিবো।তাই চুপচাপ শাড়িটা কিনে ফেললাম।বাসায় এসে আলমারিতে এটা লুকিয়ে রাখলাম।অনেকদিন পর আবার সেই চাঞ্চল্যকর দিনগুলো ফিরে পেলাম।মেঘের সাথে আজকে সারাটাদিন কাটিয়ে মনটা আবার আগের মতন সতেজ হয়ে গেছে।আমার এই অপারেশনের পর আমি আর মেঘ আমাদের সংসারটা সাজাবো, দিনদিন আমাদের ভালবাসা বাড়বে।সময়ের সাথে সাথে অন্যান্য সবার মতন আমাদেরও ছেলেমেয়ে হবে।আচ্ছা ছেলে হলে কি নাম দিব?আর যদি ছেলে না হয়ে মেয়ে হয় তাহলে?বুঝতে পারছিনা।আমার এই অপারেশনের পর আমি এই বিষয় নিয়ে মেঘের সাথে কথা বলব।আল্লাহ আমাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দাও যাতে মেঘের সব স্বপ্ন আমি পূরণ করতে পারি।
.
.
পরেরদিন রাতে তুলি আমাকে কল দিয়ে বলে ও এর ব্যবহারের জন্য অনুতপ্ত,আমার কাছে ক্ষমা চায়।সেজন্য আমার সাথে কালকে দেখা করতে চায়।আমিও ভাবলাম ঠিকাছে দেখা করি গিয়ে।এরপরের দিন ওর কাছে যায়।ও আমার কাছে বারবার তার ব্যবহারের জন্য আমার কাছে ক্ষমা চায়,আমিও ওকে ক্ষমা করে দেই।বাসায় এসে দেখি মেঘ কাঁদছে।ওকে এর কারণ জিজ্ঞাস করলে আমাকে অনেক উল্টাপাল্টা কথা শুনিয়ে দেয়।ও আজকে আমাকে আর তুলিকে একসাথে দেখেছে। আর তার কারণে ও মনে করে নিয়েছে আমার সাথে তুলির রিলেশন এখনো চলছে।ওকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু আমার কথাগুলোকে কোন গুরুত্ব দিলো না।ও ওর বাবার বাসায় রাগ করে চলে গেল।আমিও রাগ করে করে ওর রাগ আর ভাঙ্গায়নি।
.
.
৩ ফেব্রুয়ারির দিন ডাক্তার আমাকে কল দিয়ে জানিয়ে দিলো ওই লোকটার আজকে সকালে অবস্থা খুব খারাপ ছিল।একটুআগে মারা গেছেন উনি তাই আজকে নাকি আমার অপারেশন হবে। ভালোই হয়েছে ভাবলাম সুস্থ হয়ে ১৪ই ফেব্রয়ারি মেঘকে আমার ভালবাসার কথা জানিয়ে দিব,ওর সব রাগ ভাঙ্গিয়ে দিবো।কিন্তু ওই লোকটার জন্য খারাপ লাগছে সে এই দুনিয়া থেকে আজকে বিদায় নিলো।অবশেষে ৩ ফেব্রুয়ারি আমার অপারেশন হয়ে গেল।এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।১৪ই ফেব্রুয়ারি আমি মেঘকে মোবাইলে মেসেজ পাঠায় বাসায় এসে আমার সাথে আজকে রাত ৮:০০টায় দেখা করার জন্য।পুরো রুম খুব সুন্দর করে সাজায় ঠিক যেমনটা মেঘ পছন্দ করে।অনেকক্ষণ ধরে ওর জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু ওর আসার নাম নেই।আমি ওকে ডেকেছি কিন্তু ও আসবে না তা কেমন করে হয়।এরকম করে ১,২,৩ঘন্টা ওর জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু ও আসছে না।শেষ পর্যন্ত ও আসলোই না,এত্ত অভিমান আমার উপরে।রাতে কলিং বেলের আওয়াজ পেলাম। দেখলাম আমার নামে একটা চিঠি এসেছে।মেঘের চিঠি!
.
.
ডায়রিতে মেঘের সেই চিঠিটা আছে।কিন্তু সেই চিঠির নিচের অংশ ছিড়া।
প্রিয় আকাশ,
আজ তুই একটা নতুন জীবন পেয়েছিস।আজকে তোর একটা নতুন জীবনের সূচনা হবে।তোর বর্তমান আর ভবিষ্যৎ জীবন খুব সুন্দর আর সুখের কাটোক আমি সেই দুয়া করি।আকাশ ওইদিন তোর আর আমার ঝগড়াটা আমি ইচ্ছে করে সৃষ্টি করেছিলাম।জানি তুই কোন দোষ করিস নি।কিন্তু কি করব বল সেইদিনের সেই ঝগড়াটা খুব দরকার ছিলরে।সেদিনের সেই ব্যবহারে তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিলে জানি কিন্তু সেদিন ঝগড়াটা না হলে তোর সাথে আরও কয়েকদিন থাকলে তুই আমার মায়ায় আরও জড়িয়ে যেতি।আমার কারণে তুই আরও বেশি কষ্ট পেতি।বিয়ের দিন আমি তোকে একটা কথা বলেছিলাম মনে আছে তোর।তোকে বলেছিলাম না আমি সবসময় তোর হৃদয়ে থাকব,মরে গেলেও তোর হৃদয়ে এমনভাবে গেঁথে থাকব তুই চাইলেও আমাকে তোর হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে পারবি না।দেখ আমি আমার কথা রেখেছি আমি সত্যিই তোর হৃদয়ে আছি।এখন থেকে আমার অস্তিত্ব তোর হৃদয়ে।সেখানে শুধু আমি শুধু আমি আছি।
এরপর মেঘ আপু আর কি লিখলো সেটা জানতে পারলাম না।বুঝতে পেরেছি সেদিন প্রচণ্ড জেদ,আর অভিমানে আকাশ এই চিঠির নিচের অংশ ছিঁড়ে ফেলে।
.
.
তার মানে মেঘ তুই!তুই আমার হৃদয়ে!আমাকে হার্ট তুই দিয়েছিলি।না আমি এইসব বিশ্বাস করি না।সব মিথ্যা।ডাক্তার তো বলেছিল মধ্যবয়স্ক একলোক আমাকে হার্ট দিয়েছে।তাহলে ডাক্তার কি আমাকে মিথ্যা বলল কিন্তু কেন?ওই ডাক্তারকে আমি ছাড়ব না যদি আমাকে মিথ্যা কথা বলে থাকে।আমি সরাসরি ডাক্তারের কাছে গেলাম।
“আমাকে হার্ট কে দিয়েছে?”(রেগে)
“I am extremely sorry mister akash.আমি আপনাকে ওইদিন মিথ্যা কথা বলেছিলাম।”
“মানে?”
“আপনাকে হার্ট আপনার স্ত্রী দিয়েছে।”
“নিজের রাগকে আর কনট্রোল করতে পারলাম না।রাগে ডাক্তারকে একটা ঘুষি দিলাম।”
“কেন আমাকে মিথ্যা কথা বললেন আপনি?কেন?(কেঁদে)আপনি জানেন না আপনার এই ১টা মিথ্যা কথায় আমার পুরো দুনিয়ায় অন্ধকার ছেয়ে গেছে।আপনার কথায় বিশ্বাস করে আমি এই অপারেশনটা করিয়েছি।আমার অপারেশনের কারণে আমি যে আমার হৃদয়ের আয়নাকে হারাবো তা ভাবতে পারিনি।আপনার ওইদিনের কথাগুলো আমার মিথ্যা মনে হয়েছিল।কিন্তু মেঘকে সব বলার পর ও আমাকে এইসব নিয়ে ভাবতে নিষেধ করে। তাই আমি এই বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলি।সেদিন যদি আমি এই বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে এর সত্যতা বের করে ফেলতাম তাহলে আজকে আমাকে এইদিন দেখতে হতনা।”

হৃদয়ের_আয়না পার্ট_০৩

0

হৃদয়ের_আয়না
পার্ট_০৩
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
মেঘের বাবার মন খারাপ কারণ পাত্রপক্ষ বিয়ে ক্যান্সেল করে দিয়েছে।পাত্রপক্ষ বিয়ে ভাঙ্গার কারণটা ঠিকভাবে বলে নি শুধু বলেছে সমস্যা আছে।যায় হোক তার ধারণা মেঘ এইকথায় খুব কষ্ট পেয়েছে তাই তিনি কিছুদিন মেঘকে বাইরে থেকে ঘুরে আসতে বলেছেন।আমি এই সুযোগে ওকে আমার বাসায় নিয়ে যায়।মা ওকে দেখে খুব খুশি হয়েছে।কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে আমি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়।অনেকক্ষণ হয়ে গেল আমার জ্ঞান আসছে না দেখে আমাকে তাড়াতাড়ি মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।পরে জানতে পারি আমার হার্টে প্রব্লেম হয়েছে।বেশিজোর ৪ মাস বাঁচতে পারবো।কেউ যদি আমাকে ১টা হার্ট দিয়ে দেয় তাহলে আমি বাঁচতে পারব।এই দুনিয়ায় এমন কেউ নেয় যে কিনা টাকার বিনিময়ে নিজের মূল্যবান হার্ট দিয়ে দিবে।এই কথা শুনে মা বাবা সবাই কেঁদে ফেলেছে।তুলি যেদিন এই খবর শুনেছে সেদিন থেকে ওর আমার রিলেশন ব্রেক আপ করে দিয়েছে।ওর এক কথা মৃত্যুপথযাএী একজনের সাথে রিলেশন রাখার কোন মানে হয় না।যেদিন আমার ভালবাসার মানুষের সার্পোট সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল সেদিন সেই আমাকে ছেড়ে চলে গেল কিন্তু মেঘ ও একবারের জন্যও আমাকে ছেড়ে যায়নি বরং আমার মনে সাহস যুগিয়েছে যে আমি তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাব।আমার কিছু হবে না।অথচ এই মেয়েকে আমি একদিন তুলির জন্য কষ্ট দিয়েছি সেটা ভাবতেই আজকে খুব কষ্ট হচ্ছে।
.
.
“আন্টি আংকেল প্লিজ আপনারা কাঁদবেন না দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি আপনাদের বলছি আমি নিজে সবকিছু ঠিক করে দিব”
“মারে এইসব কি বলছিস।দেখেছিস ডাক্তার কি বলল,এখন ১টা হার্ট আকাশকে কে দিবে?”
“বললাম না এইসব নিয়ে চিন্তা করে আপনারা কাঁদবেন না।আমি নিজ হাতে সব সামলিয়ে নিব।আপনারা ঠিকই তাড়াতাড়ি heart donor পেয়ে যাবেন।শুধু আমার একটা ইচ্ছে পূরণ করে দিবেন প্লিজ”
“কি ইচ্ছে মা?”
“অনেক আগে থেকে আমার খুব শখ আমি আকাশের বউ হব।ওর সাথে সংসার করব,আমার এই ইচ্ছে শুধু পূরণ করে দেন।আমি কথা দিচ্ছি আমি আকাশের সাথে খারাপ কিছু হতে দিব না”
“কিন্তু মেঘ”
“কোন কিন্তু না যদি আপনারা আমাকে আপনাদের মেয়ে ভেবে থাকেন তাহলে প্লিজ আমার এই ইচ্ছা পূরণ করতে হেল্প করুন”
“আমরা নাহলে মানলাম কিন্তু আকাশ,ও কি মানবে?”
“ওকে আপনারা মানাবেন যেইভাবে হোক।বাকিটা আমি দেখে নিব।”
আমি প্রথমে এই বিয়েতে রাজি হতে চায় নি।কি করে এই বিয়ে করব যাকে ভালবাসতাম সে আমাকে এই অবস্থায় রেখে চলে গেছে আর আমিতো মেঘকে শুধু ফ্রেন্ডই ভাবি তাহলে কি করে ওকে বিয়ে করব,কিভাবে ওর জীবনটা আমি নষ্ট করব।অনেকটা জোর করেই মেঘের সাথে আমার বিয়ে দেওয়া হয়।মেঘের বাবা সবকিছু জেনে বিয়েটা দিতে চান নি কিন্তু মেঘের সুখের কথা ভেবে উনি বিয়েটা দিলেন।অবশেষে এই অবস্থায় আমি ওকে বিয়ে করলাম।
.
.
“কেন এমন করলি মেঘ?”
“কারণ আমি তোকে ভালবাসি”
“কিন্তু আমিতো তোকে ভালবাসি না শুধু বন্ধু ভাবি। তাছাড়া আমাকে তুই এমন মুহুর্তে বিয়ে করেছিস যেখানে আমি এই পৃথিবীতে মাত্র কয়েকদিনের পথযাত্রী।কেন নিজের সর্বনাশ তুই নিজে ডেকে আনলি?কি পাবি আমার কাছ থেকে?কিচ্ছু না, তাহলে জেনেশুনে কেন এই ভুল পথে পা বাড়ালি,”
“আমিতো তোর কাছ থেকে কিছু পাবার আশায় তোকে বিয়ে করে নি।তোকে ভালবাসি তাই তোকে বিয়ে করেছি। সেই কলেজ লাইফ থেকে তোকে ভালবাসি কিন্তু আমাকে তুই কোনদিনও বুঝিস নি।যাইহোক দেখ, আমার ভালবাসার মানুষের ভালোর জন্য আমি সবকিছু করতে পারি।তোর কিচ্ছু হবে না দেখে নিস।এই মেঘ তোকে কিচ্ছু হতে দিবে না”
“কেন মিথ্যা আশা দেখাচ্ছিস আমাকে।আমি জানি আমি আর বেশিদিন বাঁচবো না।মাত্র ৪মাস আছি আমি এই পৃথিবীতে।তাহলে এই মিথ্যা সান্ত্বনা কেন?”
“মিথ্যা আশা তোকে দেখাচ্ছি না।বললামতো আমি সবকিছু ঠিক করে দিব।একটু ভরসা রাখ আমার উপর।প্লিজ কাঁদিস না,তোর কান্না আমার সহ্য হয় না।আকাশ একটা আবদার রাখবি আমার প্লিজ”
“আবদার!কি আবদার”
“আজকে আমি তোর বুকে মাথা রেখে ঘুমায়।জানি না জীবনে আর কখনো এই সুযোগ আসবে কিনা?”
“এরকম করে কেন বলছিস।তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি না তুইই এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবি।”
“কি জানি হয়ত।মানুষতো,মানুুষের জীবনের কোন ভরসা নেয়।আজ আছি কাল নাও বা থাকতে পারি।আমি এই দুনিয়ায় থাকি আর নায় বা থাকি কিন্তু তোর এই হৃদয়ে আমি সবসময় থাকব।তুই চাইলেও এই হৃদয় থেকে আমাকে কখনো মুছতে পারবি না।মরে যাওয়ার আগে আমি এমন বন্দোবস্ত করে যাব যাতে তোর এই হৃদয়ে শুধু আমার শুধু আমার অস্তিত্ব থাকে”
“তোর কথার অর্থ বুঝতে মাঝে মাঝে আমার খুব কষ্ট হয়।কি বলিস কিছু বুঝতে পারি না”
“বুঝতে হবেও না আগে বল আমার আবদারটা রাখবি?”
“মেঘ কেন এইসব করছিস?কি হবে এইসব করে?”
“আকাশ তুই আমাকে না ভালবাসছ কিন্তু আমার ভালবাসাকে অবহেলা করিস না।একটু হলেও এর মূল্য দিস। তোর বউ হিসেবে এতটুকু অধিকারতো আমার আছে?”
“কাঁদিস না,আয়”
“থ্যাংকস আকাশ”
.
.
এরপরে দেখতে দেখতে ৩মাস কেমন করে কেটে গেল বলতে পারবো না।এখন মেঘের জন্য আমার ভালবাসা তৈরি হয়েছে।কত কি না করে মেয়েটা আমার জন্য।এইরকম লক্ষ্মী একটা মেয়েকে ফেলে আমি কি করে যে ওই তুলির প্রেমে পড়েছি তা ভাবতেই লজ্জা লাগছে।আমি প্রথমে তুলির রুপ দেখে পছন্দ করেছিলাম কিন্তু আজ বুঝেছি ভালবাসার জন্য রুপ না একটা ভালো মন দরকার যা তুলিদের মতন মেয়েদের মধ্যে থাকে না।আমি আমার এই হৃদয়ের আয়না দিয়ে আজকে তোকে দেখেছি মেঘ।এই হৃদয়ের আয়নায় তুই একমাত্র আমার চোখে দেখতে সুন্দর আর সেই সাথে সুন্দর তোর মনটাও যার সাথে অন্য কোন কিছুর তুলনা হয় না।আমি কেন আগে আমার এই হৃদয়ের আয়না খুলে তোকে দেখিনি।আগে দেখলে হয়ত অনেক আগেই তোর প্রেমে পড়ে যেতাম।কিন্তু এখন তোকে ভালবাসলে কি হবে আমি যে আর বেশিদিন নেই।
.
.
এর কয়েকদিন পরে জানতে পারি আমাকে একজন তার heart দিবে।তাহলে আল্লাহ এতদিনপর মুখ তুলে চেয়েছে।কে হার্ট দিবে তা জানতে চেয়েছিলাম ডাক্তারের কাছে।তিনি শুধু বলেছেন সে নাকি আমার খুব কাছের একজন মানুষ।আমাকে যে হার্ট দিবেন তাকে একটাবার দেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু ডাক্তার বলল ওনার সাথে দেখা করা যাবে না।ওনি দেখা করবেননা।খুব জেদ উঠে গিয়েছিল সেদিন।উনি কেমন আমার আপন মানুষ যে আমাকে হার্ট দিবে অথচ একটাবারও আমি তাকে দেখতে পাবো না।মা বাবা আর মেঘকে আমি এই খবরটা দিলাম। তারা খুব খুশি হয়েছিল কিন্তু আমি নিষেধ করে দিয়েছিলাম যে আমাকে হার্ট দেওয়া লাগবে না কারণ যে আমাকে হার্ট দিবে আর আমি তাকে দেখতে পাবো না তা কেমন করে হয়!তাছাড়া সে টাকাও নাকি নিবে না।আমাকে হার্ট দিলে সে নিজে মারা যাবে আবার বলছে আমার খুব কাছের মানুষ তাহলে সে যদি একটাবার আমাকে দেখা না দেয় আমি নিজের কাছে নিজে অপরাধী হয়ে থাকব সারাজীবন।পরে মা বাবা আর মেঘ অনেক বুঝালো।ভেবে দেখলাম আমি ছাড়া ওদের কেউ নেই আমার জন্য না হোক ওদের জন্য হলেও আমাকে বাঁচতে হবে।তাই আমি হার্ট নিতে রাজী হলাম।শুধু একটাই আফসোস আমার সেই আপন মানুষটাকে আমি দেখতে পাবো না
.
.
এরমধ্যে একদিন তুলি আমার বাসায় এসে হাজির।বাসায় এসে মেঘের সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
“তুলি এইসব কি হচ্ছে?”
“বাবু প্লিজ আগের কথা সব ভুলে যাও।শুনেছি তোমাকে নাকি কেউ হার্ট দান করছে।তুমিতো আবার আগের মতন স্বাভাবিক ভাবে বাঁচবে।চল নতুন করে সব কিছু শুরু করি”
“তুলি এইসব কি বলছ?তুমি হয়ত ভুলে গেছ আমি বিবাহিত।আমার ঘরে স্ত্রী আছে”
“তাহলে কি হয়েছে দরকার হলে ওকে তালাক দিয়ে দিবে।অনেকে ২য় বিয়ে করে বউকে তালাক দেয় তাহলে তুমি পারবে না কেন?”
“তুলি তোমার মাথা ঠিক নেই।সেদিন আমাকে ফেলে চলে গিয়েছিলে যখন আমার সবচেয়ে বেশি তোমাকে দরকার ছিল কিন্তু তুমি ছিলে না।তোমার জায়গায় এই মেয়েটা এতদিন আমার খেয়াল রেখেছে।আমি কয়েকদিন পর মরে যাব সেটা জেনেও আমাকে বিয়ে করেছে।আমার কাছে কোনকিছুর আশা না করে আমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবেসেছে তাহলে ওকে কেন আমি তালাক দিব”
“দিবে একশবার দিবে কারণ দিতে তুমি বাধ্য।হয়ত তুমি ভুলে গেছে আমিই তোমার জীবনের প্রথম ভালবাসা।তাই তোমার উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার আমার”
“না তোমার কোন অধিকার নেই।এখন আমার উপর যদি কারও অধিকার থাকে সেটা আমার স্ত্রী মেঘের”
“ও,আচ্ছা এখনতো আমাকে ভালো লাগবেনা।আরেকজনকে পেয়ে গেছ তাইনা?এইমেয়ের কারণে আজকে আমাকে এইসব কথা শুনাচ্ছ।সব দোষ এই মেয়েটার,আমাদের দুইজনের ভালবাসায় আগে থেকে ওর কুদৃষ্টি ছিল।ও সবসময় আমাদের দুইজনের মাখখানে আসতে চাইত।এখনতো ওর সব ইচ্ছা পূরণ হয়ে গেছে।কেনরে মেঘ খুব খুশি লাগছে তোর তুই জিতে গেছিস আর আমি হেরে গেছি।তাহলে তুই ভুল ভাবছিস,মনে রাখবি আমি ওর প্রথম ভালবাসা আর তুই আমাদের দুইজনের মাঝখানে শুধু ১টা থার্ড পারসন”
“তুলি এইবার কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে”
“ও এখন বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে তাই না?সব হয়েছে এই মেয়েটার জন্য,এই মেয়েটার সব দোষ এই কথা বলে ও আমার সামনে আমার মেঘকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল”
“তুলি অনেক সহ্য করেছি আর না।এখন আরেকটা কথা বললে আমি তোমার জিভ টেনে ছিড়ে ফেলব। তোমার সাহস কি করে আমার সামনে আমার স্ত্রীকে এইভাবে অপমান করার।তুমি আমার প্রথম ভালবাসা ছিলে তাই হাত তুলেনি কিন্তু তুমি যদি এখানে আর ১মিনিটও দাঁড়াও সত্যি বলছি আমার হাত উঠে যাবে”
.
.
আমার সামনে আমার স্ত্রীকে তুলি অপমান করে চলে গেল।সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম এই বুকে।না জানি এই মেয়েটা কেমন করে তুলির সব অপমান মুখ বুজে সহ্য করে।কেন ও তুলির কথার পাল্টা জবাব দেয় না।ওর উপরেও আমার রাগ উঠছে।কিন্তু মেয়েটা মনে হয় কাঁদছে তাই আর বেশিক্ষণ রাগ ধরে রাখতে পারলাম না।গিয়ে দেখি নিশ্চুপভাবে কান্না করছে।
“জানু তুই ওকে কিছু বলিসনি কেন?মেয়েটা তোকে কত কিনা বলে গেল আর তুই..”
“কি বলব আকাশ ওতো ঠিকই বলেছে।ভুল কিছু তো বলেনি”
“মেঘ!”
“হ্যা মেঘ,মেঘ সত্যিই বলছে।ও তোর জীবনের প্রথম ভালবাসা আর আমিই তোদের দুইজনের মাঝখানে এসে পড়েছি”
“চুপ কি উল্টাপাল্টা কথা বলছিস।ও আমার পাস্ট আর তুই আমার বর্তমান।আমি ওকে আর ভালবাসি না।এইদিকে আয় দেখি”
“না আসবো না”

হৃদয়ের_আয়না পার্ট_২

0

হৃদয়ের_আয়না
পার্ট_২
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
আকাশ চলে যাওয়ার পর আমি লুকিয়ে আকাশের ড্রয়ার থেকে চাবিটা নিয়ে স্টোররুমের দরজা খুলি। দরজা খুলার পর আমি যা দেখি তা দেখে খুব খারাপ লাগছে।একটা মেয়ের ছবি রঙ তুলি দিয়ে আঁকা হয়েছে।সেই ছবিগুলো পুরো দেওয়াল জুড়ে আছে।বুঝতে পেরেছি এই ছবিগুলো আকাশ এঁকেছে,খুব হিংসে হচ্ছে।এই মেয়েটার মধ্যে এমন কি আছে যা আমার মধ্যে নেই।আমি তো মেয়েটার থেকেও আরও বেশি সুন্দর তাহলে?সেখানে একটা আলমারি আছে সেটা খুলতে গিয়ে দেখি অনেকগুলো শাড়ি ভাজ করে রাখা আছে।বুঝতে পেরেছি এই শাড়িগুলো ওই মেয়েটার।তার মানে আমি আজকে যে শাড়ি পড়েছি সেটা আকাশ আমার জন্য আনেনি এই শাড়িটা ছবিতে আঁকা এই মেয়েটার শাড়ি।মেয়েটার ছবির কাছে দাঁড়িয়ে আছি।খুঁটিয়েনাটিয়ে ওকে অনেকক্ষণ দেখলাম।ও তাহলে তুমি সেই মেয়ে যার জন্য আকাশ আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো।তোমার জন্য আজও পর্যন্ত ও আমার দিকে ভালবাসার দৃষ্টিতে তাকায় নি,আমাকে ভালবাসতে পারে নি,তোমার কারণে শুধু তোমার কারণে আমি আকাশের জন্য এতকিছু করার পরেও ওর মনে এতটুকু জায়গা বানাতে পারেনি।বলতে পার তোমার মধ্যে এমন কি আছে যা আমার মধ্যে নেই?আমার তো মনে হয় তোমার থেকেও বেশি গুণ আমার মাঝে আছে,আমি শুধুমাত্র এই পরিবারের জন্য আকাশের জন্য নিজেকে বদলেয়েছি যা তুমি পারবে না,খুব ভালবাসি আকাশকে এরজন্য নিজের জীবনও বিলিয়ে দিতে রাজী আছি আমি, তুমিই বল,আমার মতন করে তুমি আকাশকে ভালবাসতে পারবে?পারবে আমার মতন করে আকাশের জন্য নিজের জীবন ত্যাগ করতে? পারবে না?এতসহজ না এইসব শুধু তখনি করা যায় যখন কাউকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসা যায়।আকাশের জন্য আমি সবকিছু করতে পারব,সবকিছু কিন্তু তুমি!তুমিতো আমার মতন করে এইসব করতে পারবে না তাহলে আকাশ কেন আমাকে ভালবাসে না,কেন ও তোমাকে ভালবাসে?বল কি আছে তোমার মধ্যে প্লিজ একটাবার বল,কিছু একটা পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পেলাম।এটা কি ডাইরি!এটা আকাশের ডাইরি।
.
.
“জানু কি করছিস?”
“কিছু না,”
“ওই তুই এই মোটা ফ্রেমের চশমাটা কেন পড়ছ বলত একদম বুড়ি বুড়ি লাগে?”
“তাতে তোর কি?”
“জানু আমার অনেক কিছু,আমার বেস্টফ্রেন্ড তুই, তুই জানস এই মোটা ফ্রেমের চশমাটার জন্য কোন ছেলে তোর প্রেমে পড়তে চায়না।”
“শুধু এই কারণে”
“না,আরও অনেক কারণ আছে।এই ধর তোর এই ছোট ছোট কোকড়া চুলগুলো যদি একটু স্ট্রেইট করতি,চুলগুলো একটু বড় লম্বা করতি,মেয়েদের মতন চলতি,ওদের মতন করে নিজেকে সাজাতি দেখতি তোর পিছনে ছেলেদের লাইন পড়ে যেত।”
“তার মানে তুই কি বলতে চাচ্ছিস আমি মেয়ে না?”
“আরে সেটা বলে নি,তুই মেয়ে কিন্তু চলস ছেলেদের মতন করে,তোর মধ্যে মেয়েদের কোন লক্ষণই নেই।পুরো ছেলেদের মতন গেট আপ।”
“ও কিন্তু আমার সাজতে ভালো লাগে না,আমার এইভাবে চলতে ভালো লাগে,”
“সেটাই,বিশ্বাস কর তুই যদি একবার আমার মনের মতন করে সাজতি আমি সত্যিই তোর প্রেমে পড়ে যেতাম।”
“সত্যি!!”
“হুম কিন্তু এখন সেই চাঞ্জ নেই।”
“কেন?”
“কারণ,তোকে আমি আমার বেস্টফ্রেন্ডের চোখে দেখি,তাই তোকে প্রেমিকার চোখে কখনো দেখতে পারবো না,”
“ও তাহলে তো মনে হয় তোর বেস্টফ্রেন্ড হওয়াটা আমার লাইফের সবচেয়ে ভুল কাজ।”
“নারে,ভুল না ঠিক কাজ,তোর মতন বন্ধুর কোন তুলনা হয় না।তোকে আমি আমার মনের কোন আসনে বসয়েছি সেটা তুই নিজেই জানিস না তাইতো তোকে ভালবেসে আমি জানু বলি।ইয়ে মানে মেঘ,”
“হুম বল,”
“বলছি আমার এসাইনমেন্টা করে দিবি প্লিজ,
“ও তাইতো বলি,এত আদুরেভাবে কথা বলছিস কেন?”
“কেন আমি কি কখনো বলি না,নাকি?”
….
“জানু প্লিজ,করে দেনা?নাহলে স্যারের খুব বকা খাব,তুই কি চাস আমি স্যারের হাতে বকা খাই,”
“এতযদি স্যারের বকা খাওয়ার ভয় থাকে তাহলে কেন করলি না,”
“এমনি,”
“এমনি না,তুই তোর সব এসাইনমেন্ট আমাকে দিয়ে করাস একটাও নিজ থেকে করস না,পারব না আজকে করে দিতে,যা ভাগ এখান থেকে,”
“আমি জানি তুই মুখে না বললে ও ঠিকই করে দিবি।”
“হুম বেশিই জানস তুই?আচ্ছা বলত কালকে তো সারাদিন ফ্রি ছিলি তাহলে কেন কাজটা শেষ করস নাই?”
“আসলে কি বলব জানু,কালকে একটা হুরপুরীকে দেখছি,মেয়েটা কি সুন্দর দেখতে,আমি প্রথম দেখায় ওর প্রেমে পড়ে গেছি যাকে বলে love at first sight.”
“ও,আকাশ মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দর নারে?”
“হ্যা খুব,খুব খুব সুন্দর দেখতে যেন রংতুলি দিয়ে কেউ ওকে এঁকেছে।”
….
“কিরে কি হল তোর,”
“শরীরটা ভালো লাগছে না রে আমি আসি”
“ওই জানু আমার এসাইনমেন্টা”
“করে দিবো,আর আকাশ আজকের পর থেকে আমাকে আর জানু বলে ডাকিস না,তাহলে তুই যার প্রেমে পড়েছিস যদি তার সাথে তোর প্রেম হয়ে যায় সে খুব মাইন্ড করবে রে?আজকে থেকে আমাকে জানু বলে আর ডাকবি না প্লিজ।”
“মেঘ কি বলস তুই,তোকে ভালবেসে এই কথা বলি,আর সে যদি আমাকে তোকে জানু বলে ডাকাতে মাইন্ড করে তাহলে এইরকম হিংসুটে মেয়ের সাথে আমি রিলেশন রাখবো না।এই ডাকটা শুধু তোর জন্য only for u.”
(এখনকার কথা আর তখনকার কথায় মিল থাকবেনা)”তাহলে তোর প্রেমিকাকে কি বলে ডাকবি?”
“সেটা এখনো ভাবে নি রে,তখনেরটা তখন দেখা যাবে।”
.
.
“জানু কালকে তোকে একটা মেয়ের কথা বলছি না,”
“হ্যা,”
“ওই মেয়েটাতো আমাদের সাথে পড়ে একি ডিপার্টমেন্টে।”
“তাই!”
“আরে হ্যা,”
“দেখবি না আমার হুরপরিকে? ওই যে দেখ,”
“তুলি!!”
“হ্যা তুলি তুই কেমন করে ওর নাম জানোস?”
“কারণ ও আমার ফুফাতো বোন।”
“তোর বোন Omg.তোদের দুইজনের মধ্যে কোন মিল নেই কোথায় ও আর কোথায় তুই?”
…..
“সরি জানু,আমি তোকে হার্ট করার জন্য কথাটা বলে নি,”
“হ্যা আমি জানি,আমি কষ্ট পায়নি।”
“জানু পরিচয় করিয়ে দিবি না তুলির সাথে,”
“এখনি”
“হ্যা,জানু।”
আচ্ছা।এরপর তুলির সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিল।আস্তে আস্তে আমি মেঘের থেকে তুলিকে বেশি টাইম দিতে লাগলাম।এর কয়েকমাস পর তুলির সাথে আমার রিলেশন হয়ে যায়।ফলে আমার আর মেঘের এতদিনের ফ্রেন্ডশিপে একটা দেয়াল তৈরী হতে থাকে। ও যে আস্তে আস্তে আমার থেকে দূরে সরে যেতে থাকে সেটা আমার নজরে লাগে নি।
.
.
একদিন ওকে দেখলাম গাছের নিচে চুপচাপ বসে আছে।আগের থেকে অনেক শুকিয়ে গেছে,খুব মায়া লাগল,
“জানু কি করছিস একলা এখানে,”
“তেমন কিছু না,তা বল তোর তুলি কেমন আছে।”
“আমি কেমন আছি সেটা জিজ্ঞাস না করে তুলির খোঁজ নিচ্ছিস,”
“কারণ তুলি ভালো থাকলে তুইও ভালো থাকবি সেজন্য”
“এরমধ্যে তুলি চলে আসে,আকাশ তোমাকে না বলছি তুমি মেঘের সাথে কথা বলবে না,আমার সহ্য হয় না”
“আরে তুলি,আস্তে মেঘ সামনে আছে,”
“তো কি হয়েছে,এই মেঘ শুন তুই আর আকাশের সাথে কথা বলতে আসবি না,আকাশের সাথে তোর কথা বলা আমি পছন্দ করি না,বুঝতে পেরেছিস।”
এরপর তুলি আমাকে সেখান থেকে টেনে নিয়ে গেল। কিন্তু সেদিন যে মেঘ লুকিয়ে অনেক কেঁদেছিল তা আমার অজানা ছিল। এরপর অনেকদিন হয়ে গেল ওকে আর ভার্সিটিতে দেখিনি। তুলিকে একদিন ওর কথা জিজ্ঞাস করাতে ও বলেছিল ও নাকি ওর বাবার কাছে চলে গেছে। শুনে খুব খারাপ লাগল এতদিনের ফ্রেন্ডশিপ আমাদের একটাবার আমাকে বলে গেল না?বলে গেলে পারত,কিছু বলে যায় নি খুব খারাপ লাগছে নিজের থেকে,তুলির সাথে থেকে থেকে আমি মেঘের খোঁজ নেওয়াটাও ভুলে গেছি।আমার আর তুলির রিলেশন এখন ১ বছর ধরে চলছে।এর মাঝে কতবার যে মেঘকে মনে পরেছে তা বলে বুঝাতে পারবো না।ইচ্ছে করত ওকে গিয়ে একবার দেখি আসি কিন্তু সেইদিনের সেই ঘটনা আর ওর খোঁজ না নেওয়ায় নিজেকে খুব অপরাধী মনে হত।তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ওর বাবার বাড়িতে গিয়ে ওকে দেখতে যায় নি।এর ১ বছর পর তুলি আমাকে খুশি হয়ে একটা খবর দেয়,আকাশ জানো মেঘের বিয়ে হচ্ছে।
“বিয়ে!”
“হ্যা যাক ভালো হয়েছে আমাদের জীবন থেকে আপদটা বিদায় নিবে।ওকে আমার একেবারে সহ্য হয় না দেখতে না এখানে থাকতে কেমন কুদৃষ্টি দিয়ে আমাদের ভালবাসা দেখত,আর সারাক্ষণ ড্যাবড্যাব চোখে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকত,ভালোই হয়েছে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,এখন ও আর আমাদের মাঝে আসতে চাইলেও আসতে পারবে না।শুন তোমাকে দাওয়াত দিচ্ছি অবশ্যই বিয়ের ২ দিন আগে সেখানে যাবে।আমিও যাব ফুফাতো বোন বলে কথা।খুব মজা করব সেখানে।”

যাক এই সুযোগে ওকে দেখতে পারবো। কিন্তু খুব খারাপ লাগছে জানি না কেন মনে হচ্ছে কি যেন আমার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
.
.
বিয়ের ২দিন আগে সেখানে গেলাম।গিয়ে দেখি আগের সেই মেঘ আর নেই,অনেক চেঞ্জ হয়েছে ও!
কি সুন্দর লাগছে ওকে বলে বুঝাতে পারবো না,এখন সে মোটা ফ্রেমের চশমা আর পড়ে না চোখে কাজল দেয়,কুঁকড়ানো ছোট চুলগুলো আগের থেকে অনেক লম্বা হয়েছে,চুলগুলো স্ট্রেইট করে ফেলেছে,একটা গোলাপি রঙের শাড়ি পড়েছে,,ওর চেহারায় মেকাপের ছোয়া নেই কিন্তু ওকে দেখে মনে হচ্ছে সদ্য ফোটে উঠা এক শাপলা ফুল।
“এটা কি মেঘ!”
“আকাশ তুই এখানে?”
“হ্যা আমি,জানু কেমন আছিস,কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলি,খুব মিস করেছি এতদিন তোকে,এত রাগ কিসের তোর কিছু না বলে এখানে চলে এসেছিস আবার শুনছি তুই নাকি বিয়ে করছিস,এত তাড়াতাড়ি কেন বিয়ে করছিস?খুব কষ্ট হচ্ছে আমার প্লিজ তুই বিয়েটা করিস না,এই কথা বলতে বলতে কখন যে ওকে জড়িয়ে ধরেছি বলতে পারবো না।”
“আরে এত প্রশ্ন একসাথে কোনটা ফেলে কোনটার উত্তর দিবো, আর এত কাঁদছিস কেন তুই প্লিজ কাঁদিস না তোর কান্না আমার সহ্য হয় না”
“তুইও তো কাঁদছিস”
“কই কাঁদছি”
“চাল ঝোটা আর অভিনয় করিস না,চোখের পানি মুছে ফেললে কি হবে আমি সব বুঝি”
“খুব মিস করেছিস আমাকে”
“হ্যারে খুব,তুই আমাকে মিস করিস নি”
“না একটুও না”
“আবারও মিথ্যা বলছিস,তুই মিথ্যাটাও ঠিকভাবে বলতে পারিস না,মেঘ তুই কি সত্যিই বিয়ে করছিস।”
“আরে না,আমি না করে দিয়েছি এই বিয়ে আমি করছি না”
“মানে”
“বাবা আমাকে না জানিয়ে বিয়ের কথাবার্তা ফাইনাল করে ফেলেছে।আজকে সকালে আমি পাত্রপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি আমি এই বিয়ে করতে পারবোনা।আমাকে বিয়ে করতে আসলে আমি উল্টাবাল্টা কিছু করে বসবো।এইমাত্র পাত্রপক্ষ বিয়ে করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে,”
“সত্যি বলছিস”(খুব খুশি লাগছে আমার কিন্তু কেন তা জানি না)
“আরে আর কতক্ষণ এইভাবে জড়িয়ে রাখবি,তুলি দেখলে রাগ করবে”
“আমি ওকে ছেড়ে দিলাম।মেঘ আমার সাথে যাবি,মা তোকে দেখতে চেয়েছিলো। দেখ না করিস না প্লিজ”

হৃদয়ের_আয়না পার্ট_১

0

হৃদয়ের_আয়না পার্ট_১

#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
“আপনি আজও দেরি করে বাসায় এসেছেন।
আপনার জন্য আমি রাতের খাবার নিয়ে কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি।”
“আপনাকে না আমি বলেছি, আমার জন্য শুধু শুধু খাবার নিয়ে বসে না থাকতে,,আমি রাতের খাবার বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।”
“আপনি এমন কেন?আপনি বুঝেননা কেন আপনার জন্য আমি রাতের খাবার নিয়ে অপেক্ষা করি।”
“না বুঝিনা, আর বুঝতেও চাই না।”
“কেন বুঝেন না,আপনি সব বুঝেন কিন্তু সবকিছু বুঝেও আপনি না বুঝার অভিনয় করেন। আপনি এমন কেন,, কতটা ভালবাসি আপনাকে,, আগে যে মেয়ে রাত জাগতে পারত না,,সে এখন আপনার জন্য রাত জেগে অপেক্ষা করে আপনার সাথে একসাথে খাবে বলে,আগে রান্না জানতাম না,ভেবেছিলাম রান্নাও শিখব না,কিন্তু যেদিন থেকে আপনার ভালবাসার পিঞ্জরে আটকে পড়ে গেছি সেদিন থেকে শাশুড়ি মার কাছ থেকে রান্না শিখেছি। আজকে আমাদের বিয়ের ১০মাস হতে চলল অথচ আপনার মনে আমি এতটুকু জায়গা বানিয়ে নিয়ে পারি নি।যদি বউকে ভালবাসতে না পারেন,, একজন স্বামীর কর্তব্য ঠিকভাবে পালন করতে না পারেন তাহলে আমাকে বিয়ে করেছেন কেন?”
“আমার মা বাবার জন্য।নাহলে আমি আপনাকে জীবনেও বিয়ে করতাম না।আমি আপনার কষ্ট বুঝি কিন্তু আপনি আমার থেকে যা আশা করেন তা আমি আপনাকে দিতে পারব না।মা বাবা আর ২মাস পর হজ্বে যাবেন তারপর নাহয় আমি আপনাকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়ে দিব।দয়া করে এই ২মাস আপনি আমার স্ত্রী হওয়ার অভিনয় করে যাবেন।”
“আপনি কি বলতে চাচ্ছেন তা ক্লিয়ার করে বলুন,,”
“আপনাকে আমি ২মাস পর ডির্ভোস দিয়ে দিবো।”
“কি নিষ্ঠুর লোকটা,কি সুন্দর আর সহজ করে কথাটা বলে ফেলল।”
.
.
বৃষ্টি,,এই বৃষ্টি এখনো ঘুমাচ্ছ। কি হল শুনতে পাচ্ছ না,দূর,ঘুমাক যতখুশি আমার তাতে কি?বৃষ্টি ঘর থেকে তেমন বের হয় না তাই বাইরে থেকে চাবি দিয়ে দরজা আটকে দিয়েছি।সারাদিন অফিসের কাজ শেষ করে যখন বাসায় আসি তখন ও দেখি বৃ্ষ্টি একিভাবে শুয়ে আছে।বিষয়টা সুবিধের মনে হল না,,ওর কপালে হাত দিতে দেখি জ্বরে শরীরটা পুড়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি করে পানি এনে ওর কপালে কাপড়ের পট্টি দিয়েছি।সারারাত জ্বরে মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে,, জ্বরের ঘোরে অনেক কিছু বলেছে যা শুনে নিজেরও খুব কষ্ট হচ্ছিল কিন্তু আমার কিছু করার নেই,,শেষ রাত্রে ওর শরীর থেকে জ্বর নামলো।
“এখন কেমন লাগছে,”
“ভালো,,”
“নিন আমি নিজ হাতে আপনাকে খাইয়ে দিচ্ছি,কিছু খেয়ে নিন ,তাহলে দেখবেন ভালো লাগবে,,”
“না আমি খাব না,,”
“কেন?,,,”
“কারণ আপনার কারণে আমার জ্বর হয়েছে এইজন্য আপনাকে শাস্তি পেতে হবে?”
“আমার জন্য আপনার জ্বর হয়েছে!!?”
” হ্যা আপনার জন্য,কালকে রাতে আমি আপনার সাথে রাগ করে শাওয়ার নিয়েছি আর তাতে আমার এই অবস্থা,,”
“কেন এইসব পাগলামি করতে গেলেন,মানুষকে কষ্ট আর বিরক্ত করতে আপনার খুব ভালো লাগে তাই না?”(বকা দিয়ে)
….
“আচ্ছা প্লিজ আর কাঁদবেন না,”(শান্ত হয়ে)
“আপনি আমাকে বকা দিলেন কেন?অসুস্থ মানুষকে কেউ এভাবে বকা দেয়।”
“সরি ভুল হয়ে গেছে, প্লিজ ক্ষমা করে দেন।”
“হবে না,,আগে শাস্তি,,তারপর ক্ষমা,”
“ওকে,, বলেন কি শাস্তি দিবেন আপনি আমাকে,,”
“আপনি আমাকে দেখে সবসময় বিরক্ত হন সেটা আমি জানি।বিশ্বাস করুন আমার কিছু চায় না,শুধু আপনার মা, বাবা,আর আপনাকে নিয়ে আমি আমার বাকিদিনগুলো পাড় করে দিতে চাই।আপনাদের জন্য কাজ করতে আমার মোটেও কষ্ট হয় না,নিজের আপন মানুষ ভেবে আমি ভালবেসে এইকাজগুলো করি।আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা না দেন অন্তত আপনার সেবা করার জন্য আমি আপনার সাথে থাকতে চাই প্লিজ আমাকে ডির্ভোস দিয়ে কষ্ট দিবেন না যদি আমি কোনদিনও এই পরিবারের কোন উপকার করে থাকি তাহলে….আর কথা বলা বলতে পারছি না এরপর যা বলছি কান্নার কারণে তা অস্পষ্ট শুনা যাচ্ছে।”
“প্লিজ আপনি শান্ত হন,, আচ্ছা ঠিকাছে আপনাকে ডির্ভোস দেব না কিন্তু আমারও শর্ত আছে আপনি আমার কাছ থেকে কিছু আশা করবেন না তাহলে,,”
“মুখের কথা টেনে, ঠিকাছে আমার তাতে সমস্যা নাই,কিন্তু আমার যে কাজে আপনি বিরক্ত হন সেগুলো করে আপনাকে বিরক্ত করতে চাই,,কারণ আপনাকে বিরক্ত করতে আপনার ভালো লাগে প্লিজ আমার কোন কাজে বিরক্ত হয়ে আমাকে কখনো ভুলেও এই কথাটা বলবেন না যে,আপনাকে ডির্ভোস দিয়ে দিব।”
“কিছুক্ষণ ভেবে আচ্ছা,, নিন খাবার খান,,,”
“না এখনও খাবো না,,”
“কেন?আবার কি হয়েছে?”
“আপনাকে শাস্তি পেতে হবে? তারপর,”
“ও মা একটু আগে না শাস্তির কথা ঘোষণা করে দিলেন তাহলে,,”
“সেটাতো আমাকে বকা দিয়েছেন তাই বকার শাস্তি দিয়েছি এখন আমাকে খাওয়াতে চাইলে আমার আরেকটা শাস্তি মাথা পেতে নিতে হবে?”
“উফ, আচ্ছা বলেন”,,
“আপনি আমাকে আপনার স্ত্রী মনে না করতে পারেন কমপক্ষে আমাকে আপনার বন্ধু মনেতো করতে পারেন প্লিজ আমি আপনার বন্ধু হতে চাই।”
“হুম বুঝলাম,কিন্তু এটা কোনরুপ শাস্তি হল, বুঝতে পারলাম না,,”
“আরে বন্ধু হলে আপনাকে জ্বালাবো সারাক্ষণ, বন্ধুরাতো তাই করে করে,তা নয় কি?”
“বাব্বাহ,, আমাকে জ্বালানোর ফন্দি,, এইসব হবে না,,কারো জ্বালাতন আমি সহ্য করতে পারবো না,,”
“তার মানে আপনি চান না আমি খায়,,”
“আচ্ছা, আচ্ছা ঠিকাছে,, আমাকে জ্বালায়েন,,যত খুশি জ্বালায়েন ঠিকাছে,,’প্লিজ খান এবার,,”
“তারমানে আমরা আজকে থেকে ফ্রেন্ডস।”
“হুম”
“আরে বসে আছেন কেন,,খাওয়াবেন না,, খিদা লাগছেতো,”
“হুম নেন ,”
“খেতে খেতে আচ্ছা আমরা ফ্রেন্ড থেকে বেস্টফ্রেন্ড হতে পারি না?”
“না,,”(কঠিন স্বরে)
“কেন?বেস্টফ্রেন্ড হতে সমস্যা কোথায়?”
“অনেক সমস্যা কারণ বেস্টফ্রেন্ডের জায়গা অনেক আগে অন্য একজন দখল করে নিয়েছে তাই, ওই জায়গার অধিকার শুধু ওরই অন্য কেউ এসে ওর সেই অধিকারে হাত বাড়াক তা আমি চাই না,সে যেই হোক না কেন,,বাকি খাবারটুকু নিজে খেয়ে নিয়ে টেবিল থেকে ঔষুধটা নিয়ে খেয়ে নিবেন।”
“আচ্ছা,,হঠাৎ করে উনি এত রেগে গেলেন কেন?”আমার এই কথায় রাগার কি আছে?মাঝে মাঝে উনি যে কোন কথায় রেগে উঠেন বুঝতে কষ্ট হয়,”
.
.
এরপরে ভালোই দিন কাটছিল আমাদের, এখন উনি আর রাত করে বাসায় আসেন না,একসাথে আমরা রাতের খাবার খাই,আগে উনি আমার হাতের রান্না খেতেন না,এখন খান,আমার সব কাজে আগে বিরক্ত প্রকাশ করতেন,কিন্তু এখন বিরক্ত হলেও আমার সেই শাস্তির কথা মনে করে বাইরে আর বিরক্তভাবটা প্রকাশ করেন না।ফ্রেন্ড হওয়াতে আমরা এখন অনেক কাছে চলে এসেছি,উনি এখন আমাকে আপনি না বলে তুমি বলে ডাকেন,কিন্তু ওনাকে আমি খুব সম্মান করি তাই আমি এখনো উনাকে আপনি বলে ডাকি,এখন উনি অনেক কথায় আমার সাথে শেয়ার করেন,আমরা একসাথে গল্প করি,খুনসুটি আর আমার জ্বালাতনতো সাথে আছেই।বেচারা মুখ বুঝে সব সহ্য করে।ফ্রেন্ড হওয়াতে আমরা অনেক কাছে চলে এসেছি সেটা সত্য শুধু দুঃখ একটাই আমি উনার ফ্রেন্ড ঠিকই কিন্তু বেস্টফ্রেন্ড হতে পারলাম না,ওই জায়গা অন্য আরেকজনের দখলে। কিন্তু সে কে?যার জন্য আকাশ আমাকে সে জায়গা থেকে বঞ্চিত করছে।যাইই হোক তারপরও আমি খুশি।
আজকে ১৩ ফ্রেবুয়ারী।আজকে রাত ১২:০০টায় ১৪ ই ফ্রেবুয়ারী আসবে,উনাকে আমি কত ভালবাসি আজকে তা উনার সামনে প্রকাশ করব।আমাদের বেডরুমটা ফুল দিয়ে আর চারপাশে মোমবাতি দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছি।আলমারিতে অনেক শাড়ি আছে।একটা শাড়িও মন মতন হচ্ছে না,সব শাড়ি নামিয়ে ফেললাম, হঠাৎ একটা শাড়ি আমার চোখে পড়ল, আরে এই গোলাপি শাড়িটাতো আমার না,এটা কোথা থেকে আসল,,খুব সুন্দর শাড়িটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে, মনে হয় আকাশ আমার জন্য শাড়িটা এনে রেখে দিয়েছে, আমাকে শাড়িটা দিতে সম্ভবত ভুলে গেছে,এই শাড়িটা আজকে পড়ব।
“হ্যালো আকাশ,”
“হুম বৃষ্টি বল,”
“বলছি আজকে রাতে একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আসবেন,”
“কেন?”
“আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
“দেখ আজকে মনে হয় বাসায় আসতে দেরি হবে,অফিসে অনেক কাজ,”
“প্লিজ তারপরও তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবেন আমি আপনার অপেক্ষায় থাকব,”
“দেখি,”
.
.
রাত ১২:০০টা বেজে গেছে। কিন্তু উনি এখনো এলেন না,,মনটায় খারাপ হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ কারো পায়ের জুতার আওয়াজ পেলাম,হ্যা এটা আকাশ,, এটা আকাশের পায়ের জুতার আওয়াজ।পিছনে ফিরে দেখি ওনি।
“ওনি রুমে এসে বললেন বৃষ্টি কি জন্য বাসায় তাড়াতাড়ি আসতে বলছ।আর কি সারপ্রাইজ রাখছ?”
“রুমটা আগে দেখেন”
উনি চোখ বুলিয়ে রুমটা দেখলেন,,তারপর রেগে উঠে বললেন,,
এই রুম এইভাবে সাজানোর মানেটা কি?আর তুমি how dare you এই শাড়িটা তুমি কেন পড়েছ,, এই শাড়িটা পড়ার অধিকার তোমাকে কে দিসে?এই কথাটা বলে উনি আমার গলা চেপে ধরলেন,,তুমি আমাকে এতদিন যা বলে এসেছ আমি তাই করে এসেছি কিচ্ছু বলে নি আমি,কিন্তু তুমি আজকে আমার সকল ধর্য্যের সকল সীমা পাড় করে ফেলেছ।এখনি শাড়িটা চেঞ্জ করে ফেলবে।আর যদি কোনদিন আমি তোমাকে এই শাড়িটা পরতে দেখি তাহলে সত্যি বলছি I will kill you.এই কথা বলে উনি চলে গেলেন। এত রেগে গেলেন কেন উনি?কি হয়েছে এই শাড়িটা পড়লে? বুঝতে পারছি না,খুব কান্না পাচ্ছে,উনি এমন কেন কেন বুঝেন না আমাকে?
.
.
উনি সারারাত বাইরে ছিলেন বাসায় এলেন না,
সারাটা রাত আমি কান্না করে পার করলাম,সকালে আমি রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখি ওনি স্টোররুম থেকে বেরিয়ে এসেছেন,চোখ দুটি লাল হয়ে ফুলে আছে,, বুঝেছি উনিও রাতে অনেক কেঁদেছেন। যখনি উনার মন খারাপ থাকে তখনি উনি এই স্টোররুমে চলে আসেন,এই স্টোররুমে এমন কি আছে যেখানে উনি সময় পার করেন,,এখানে উনি যে সময় কাটান তার অর্ধেক সময়ও আমাকে দেন না।বিয়ের পর আমি যখন নতুন এই বাসায় আসি একবার শখ করে এই স্টোররুমটা খুলতে চেয়েছিলাম অনেক কষ্টে করে এর চাবি আকাশের কাছ থেকে লুকিয়ে এনে যেই দরজাটা খুলতে যাব দেখি আকাশ আমার হাত কেউ ধরে রেখেছে,সেদিন আমাকে অনেকগুলো বকা দিয়েছিল,আর এইও বলে দিয়েছিলো এই রুমের দরজা যাতে আমি ভুলেও না খুলি,,যদি খুলি তাহলে আমার অবস্থা খুব খারাপ হবে।সেদিনের পর থেকে আমি দরজার দিকে পা মাড়াই নি।কিন্তু এখন অবস্থা খুব জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে,,এই রুমের ভিতরে লুকিয়ে থাকা রহস্য আমাকে জানতে হবে।

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ২৫/অন্তিম পর্ব

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ২৫/অন্তিম পর্ব

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে পানির ঝটকায় ঘুম ভাঙ্গলো, ঘুম ঘুম চোখে থাকিয়ে দেখি শ্রাবন একদম আমার মুখের কাছে ওর মুখ এনে থাকিয়ে আছে আমার দিকে, ওর প্রতিটা গরম নিঃশ্বাস আমার মুখের উপর পড়ছে কেমন যেন এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে
–মহারাণীর ঘুম ভাঙ্গলো অবশেষে
–শান্তিতে তো ঘুমুতেও দেওনি
–বিয়ের দিন আবার এতো ঘুম কিসের
–বিয়ের দিন তুমি হবু শশুড়ের বাসায় কেন
–বউটারে দেখতে আসছি
–হূহ
–আজকে আমি তোমার ঘুম ভাঙ্গিয়েছি আগামীকাল সকাল থেকে তোমার ভেজা চুলের পানি দিয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গবা হিহিহি
–তুমি না অনেক ফাজিল হয়ে গেছ
–ইসসসসসস লজ্জা পেলে আমার বউটার মুখ অনেক সুন্দর লাগে

(এইযে স্যার অনেক রোমান্স হয়েছে এবার এই রুম থেকে বের হও কথাটা শুনে দুজনেই থাকালাম মেঘা আপু আর রিয়া দাড়িয়ে হাসছে, শ্রাবন লজ্জা পেয়ে আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে বসল)
রিয়া: এখন বের হও দুলাভাই আপনার বউকে গোসল করাব
শ্রাবন: আমার বউয়ের কাছে আমি থাকব তাতে তোমাদের কি আমি যাবোনা
মেঘা আপু: যাবা না দাড়াও
দুইজন মিলে ওকে ঠেলে রুম থেকে বের করে দিল হিহিহি

সবাই বিয়ের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত আর রিয়া মেঘা আপু আমাকে নিপা কে সাঝাতে ব্যাস্ত ওরা পারে তো আজ আমাদের বউ না সাঝিয়ে পরী সাঝাতে চাচ্ছে, রিয়া আমাকে সাজাচ্ছে আমি চুপ করে বসে আছি আর ভাবছি আজ আম্মু থাকলে কতো ভালো হত এতো কষ্টের পর সুখের দেখা পেয়েছি আম্মু তো খুব খুশি হতো, একজন আম্মু যেও পেয়েছিলাম উনি স্বার্থের কারনে আমাকে উল্টো মারতে চাইল আজ উনি থাকলেও তো অন্তত সালাম করতে পারতাম
রিয়া: এই তমা কাঁদছিস কেন
আমি: কই নাতো
রিয়া: এতো কিছুর পর বিয়েটা হচ্ছে কই তুই খুশি হবি তা না বসে বসে কাঁদছিস আর মেকাপ নষ্ট করছিস
আমি: আম্মুর কথা মনে পড়ছে রে
রিয়া: আল্লাহ্‌ যা করেন ভালোর জন্য করেন কাঁদিস না তো মেকাপ নষ্ট হলে শ্রাবন আমাকে মেরেই ফেলবে
আমি: কেন
রিয়া: ও আমাকে বলে দিয়েছে তোকে যেন পরীর মতো সাঝাই নাহলে আমার বারোটা বাজাবে
আমি: ও না পারেও বটে
রিয়া: হ্যা এখন দয়া করে না কেঁদে চুপ করে বসে থাক
আমি: হুম

বিয়ের স্টেজে নিপা আর আমি বসে আছি, চারদিকে শুধু আলো আর আলো সবাই বিয়ে পড়ানো নিয়ে ব্যাস্ত, ভাবছি আকাশের সাথে বিয়ে হবার সময় তো কবুল মুখ দিয়ে আসছিল না এখনো কি এমন হবে
রিয়া: এই তমা কি ভাবছিস সবাই কবুল বলতে বলছে শুনছিস না
আমি: হুম কখন
রিয়া: উফফফ কোন জগতে হারিয়ে যাস বুঝিনা
রিয়ার দিকে অসহায়ের মতো থাকালাম আজো কষ্ট হচ্ছে খুব, ভালোবেসে বিয়ে করলেও কষ্ট হচ্ছে সবকিছুর আগে তো মা বাবা, আমি যে আব্বুকে ছেড়ে চলে যাবো তাই হয়তো এতো সুখের মাঝেও কষ্ট হচ্ছে, মেয়েদের জীবনটাই তো এমন অদ্ভুত বড়ই অদ্ভুত

আমি আর নিপা তো কবুল বলতে একটু দেরি করেছি শ্রাবন আর হৃদয় ফাজিল দুইটায় হাসতে হাসতে এক দমে তিনবার বলে দিয়েছে হিহিহি

বিয়ের কাজ শেষ এখন বিদায়ের পালা বেশি দূর তো যাবো না পাশের বাসায় তাও খুব কষ্ট হচ্ছে মনে হচ্ছে আব্বুর কাছ থেকে আমাকে কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, আচ্ছা আমি তো শ্রাবন কে ভালোবাসি ওর সাথে বিয়ে হয়েছে তাহলে এতো কষ্ট হচ্ছে কেন
মেঘা আপু: আর কতো কাঁদবা এবার থামো (আপুর কথায় চারদিকে থাকালাম সবাই আমার দিকে থাকিয়ে আছে নিপাও কাঁদছে, আব্বুকে কোথাও দেখছি না চারদিকে খুঁজলাম কোথাও নেই তাড়াতাড়ি দৌড়ে আব্বুর রুমে গেলাম, দরজার কাছে যেতেই শুনলাম আব্বু কাঁদছেন আর বলছেন “আজ তোমার মেয়েটাও আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে আমি যে খুব একা হয়ে গেলাম সেদিন যদি তুমি এভাবে চলে না যেতে আজ আমাদের মেয়েটার এতো কষ্ট পেতে হতো না” আব্বু কার সাথে কথা বলছেন ভেবে পেলাম না দরজা খুলে ভিতরে থাকাতেই দেখি আব্বু আম্মুর ছবির দিকে থাকিয়ে কাঁদছেন আর এসব বলছেন, আমাকে দেখেই চোখ মুছে নিলেন আমার কাছে এসে হেসে হেসে বললেন
–তোর তো বিয়ে দিয়ে দিলাম তাই তোর আম্মুকে বলছি (কথাটা শুনে অভাক হলাম বাবারা সত্যি সব পারেন চোখের পানি মুছে কতো সুন্দর অভিনয় করছেন এখন)
–কিরে মা কথা বলছিস না কেন
–(কিছু না বলে আব্বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম চোখের পানি যে আর আটকিয়ে রাখা সম্ভব না আব্বুও কাঁদছেন আমাকে জরিয়ে ধরে)

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে নিপা আর হৃদয় চলে গেলো হৃদয়দের বাসায়, রিয়া আমাকে আর শ্রাবন কে ওদের বাসায় দিয়ে আসলো

সব নিয়মকানুন শেষ করে আমাকে শ্রাবনের রুমে নিয়ে আসা হলো, খুব সুন্দর করে সাঝানো হয়েছে সারা রুম কাঁচা ফুল দিয়ে সাঝানো আর বিছানায় বেলী ফুল এইটা ফাজিলটার কাজ বুঝেছি

কখন থেকে লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে আছি শ্রাবন আসার নাম নেই এতো লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে থাকা যায় বুঝি, হঠাৎ দরজা খুলার শব্দ পেলাম বুঝেছি শ্রাবন এসেছে, ও এসেছে ভেবেই কেমন যেন ভয় লাগছে লজ্জা লাগছে আবার ভালোও লাগছে কেমন অনুভূতি হচ্ছে নিজেই বুঝতেছি না

শ্রাবন এসেই দফ করে খাটে শুয়ে পড়লো রেগে আছে কেন বুঝতেছি না
–ওই কি হইছে
–তোমার সাথে কথা নাই
–কি করলাম
–জানো আমি রিয়া কে কতো টাকা খাইয়েছি তোমাকে সাঝানোর জন্য
–রিয়া টাকা নিয়েছে
–হ্যা কম না দশ হাজার কথা ছিল তোমাকে পরীর মতো সাঝাবে ও তো কথা রেখেছে কিন্তু তুমি কান্নাকাটি করে মেকাপ নষ্ট করে ফেলেছ এখন তো তোমাকে পেত্নীর মতো লাগছে
–হিহিহি
–এখন হাসো তখন এতো কান্নার কি ছিল আমার সাথেই তো বিয়ে হয়েছে তো এতো কাঁদলা কেন
–মেয়েদের কষ্ট তোমরা বুঝবা না তোমাদের তো আর পরিবার ছেড়ে নতুন কোথাও যেতে হয়না
–হয়েছে আবার কান্না কইরো না যাও ফ্রেশ হয়ে আস
–আচ্ছা

ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি শ্রাবন রুমে নেই বারান্দায় চোখ পড়লো দরজা খুলা হয়তো বারান্দায়, আস্তে আস্তে বারান্দায় গেলাম ভয়ও হচ্ছে যদি ও না থাকে ভূতে তো আমার ঘার মটকে খাবে
–ভয় পেয়ো না আসো আমিই আছি
–(উফফফ ও যে কিভাবে আমার মনের কথা বুঝে)
–এতো ভিতু কেন তুমি
–হূহ এতো রাতে বারান্দায় কি
–বউটা রে নিয়া জোৎস্না বিলাস করবো তাই
–আহালে কি লোমান্তিক

ও এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো ঠিক আগের মতো, দুজনেই আকাশ দেখছি
–তমা কতো কিছুর পর বিয়েটা হলো তাইনা
–হুম
–আর কখনো তোমাকে কাঁদতে হবে না ইনশাআল্লাহ
–আমার জীবনে তো কষ্টের শেষ নেই কখন আবার কোন কষ্ট চলে আসে কে যানে
–আসুক এখন তো আমি পাশে আছি আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিব
–(চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছি ওর দুই হাতের বাঁধনে আর ও আমার ঘাড়ে একটার পর একটা মায়া দিয়ে যাচ্ছে কেমন যেন এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে, হঠাৎ ও আমাকে কোলে তুলে নিল ওর পাঞ্জাবীর কলার ধরে থাকিয়ে আছি ওর চোখের দিকে কি গভীর চোখ দেখলেই চোখের গভীরতায় ডুব দিতে ইচ্ছে হয়, ও মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আমাকে রুমে নিয়ে গেলো, বিছানায় শুয়ে দিয়ে কপালে একটা মায়া দিলো আমার ঠোটের মাঝে ওর ঠোট দুইটা ডুবিয়ে দিলো তারপর……

হা করে কি পড়ছেন তারপর আর বলা যাবে না আমার বুঝি লজ্জা শরম নাই যান ভাগেন??

(সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ধৈর্য নিয়ে গল্পটি পড়ার জন্য??
এভাবেই সবার মাঝে ভালোবাসা বেঁচে থাকুক আজীবন?)

#Happy_Ending?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ২৪

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ২৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

খুব ভোরে চেঁচামেচি শুনে ঘুম ভাঙ্গলো, তাড়াতাড়ি ড্রয়িংরুমে গেলাম, ড্রয়িংরুমের অবস্থা দেখে তো আমি অভাক সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে, সবাই বলতে নিপার পরিবার, হৃদয়ের পরিবার, আকাশের পরিবার, শ্রাবনের পরিবার আর আমার পরিবার তো আছেই, সব পরিবারের মানুষ এক হয়েছে, সবাই সবার মতো আড্ডা দিচ্ছে আমি যে এখানে দাড়িয়ে আছি কেউ দেখছেই না, ভাবছি এতো সকালে সবাই এখানে আসলো কিভাবে হঠাৎ কে যেন আমার হাত ধরে এক ঝটকায় টান মেরে কোথায় নিয়ে গেলো, থাকিয়ে দেখি তুলির রুমে আর পাশে শ্রাবন দাঁড়ানো আমার দিকে থাকিয়ে হাসছে
–উফফফফ এভাবে কেউ হাত ধরে টান দেয় আমার হাতটা ভেঙ্গেই গেছে মনে হয়
–হূহ ঘুম থেকে উঠতে এতোক্ষণ লাগে কখন থেকে অপেক্ষা করছি তোমাকে একবার দেখবো বলে
-আমার রুমে গেলেই হতো
–সবাই ড্রয়িংরুমে বসা কিভাবে যাই লজ্জা আছে না
–ওমা তোমার আবার লজ্জাও আছে
–কি বলতে চাইছ আমার লজ্জা নেই
–বিয়ের আগেই যে বাসর নিয়ে কথা বলে তার আবার লজ্জা কিসের
–ঠিক আছে তুমি যেহেতু বলেছ নেই যেটুকু আছে সেটুকু উড়িয়ে দেই
–মানে
–অনেক তো কষ্ট পেয়েছ আমিও পেয়েছি এখন নাহয় সব রোমান্স একসাথে করি বলেই আমার দিকে এগুতে শুরু করলো, ও এগুচ্ছে আর আমি পিছিয়ে যাচ্ছি একসময় আমি দেয়ালে আটকে গেলাম ও যেই আমার কাছে এসে মুখ এগুলো তখন কে যেন বলে উঠলো
–দুলাভাই বিয়ের আগে এসব ঠিক না (থাকিয়ে দেখি তুলি)
–দূর শালি আসার আর সময় পাইলা না
–থ্যাংকু তুলি এখন আসার জন্য বলে ওর মুখের অবস্থা দেখে একটা হাসি দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম

ড্রয়িংরুমে সবাই আড্ডা দিচ্ছে কিন্তু আব্বুকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না তাড়াতাড়ি আব্বুর রুমে গেলাম, আব্বু চেয়ারে বসে আছেন মুখ মলিন করে
–আব্বু আসবো
–আয় মা
–মন খারাপ কেন আব্বু
–নাতো
–তোমার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে
–ও তুই বুঝবি না যখন তোর মেয়েকে বিয়ে দিবি তখন বুঝবি (বুঝেছি আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তাই আব্বু কষ্ট পাচ্ছেন আর কিছু না বলে আব্বুর পাশে মাথা নিচু করে বসে রইলাম, কেন জানি খুব কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে না চাইতেও চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়তে শুরু করলো)
–এই পাগলী মেয়ে কাঁদছিস কেন
–কই নাতো (তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম আমি কাঁদলে যে আব্বুও কাঁদবেন)
–মেয়েদের জীবনটা এমনই রে মা কান্না করিস না (খুব অভাক হচ্ছি আব্বু নিজের চোখের পানি লুকিয়ে আমাকে কতো সুন্দর ভাবে বুঝাচ্ছেন)
–যা মা সবার সাথে গিয়ে আড্ডা দে মন ভালো হবে
–তুমিও চলো
–যা তুই আসছি
–আচ্ছা

তাড়াতাড়ি আব্বুর রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম কখন আবার বাপ মেয়ে দুজনেই কান্না শুরু করে দেই তার তো নিশ্চয়তা নেই, মেয়েদের জীবনটা সত্যি অদ্ভুত বিয়ে নামক এই নিয়মে আপনজনদের ছেড়ে নতুন কোথাও চলে যেতে হয়, আপন মানুষদের মায়া কাটিয়ে নিজেকে সবার সাথে মানিয়ে নিতে হয় আর মা বাবা তারা তো আরো বেশি কষ্ট পায় ছোট থেকে লালন পালন করে একটু একটু করে বেড়ে তুলা সন্তান কে অন্যের হাতে তুলে দেওয়া সত্যি কষ্টকর
–আপু (হঠাৎ কারো ডাকে ভাবনায় ছ্যাদ পরলো থাকিয়ে দেখি হৃদয়)
–হ্যা কেমন আছ
–ভালো আপনি
–এখন তো সবারই ভালো থাকার কথা
–হ্যা আপু সব তো ঠিক হয়ে গেলো, অনেক কিছুই সম্ভব হয়েছে আপনার জন্য থ্যাংকস আপু নিপা কে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য
–আমাকে থ্যাংকস দেওয়ার প্রয়োজন নেই তোমার ভালোবাসা সত্যি তাই ফিরে পেয়েছ আর শেষ মুহূর্তে তুমি না এলে সবকিছু ঠিক হতো না
–সবকিছু ঠিক হবার জন্যই মনে হয় সেদিন হঠাৎ নিপা কে ফোন দিয়েছিলাম তারপর এতোকিছু হলো
–হয়তো
–(ভাই বোন এখানে কি করছ, কথাটা শুনে পিছনে থাকালাম নিপা এসেছে খুব হাসি খুশি মুখ যাক মেয়েটা তো খুশি আছে অন্তত নিজেকে অপরাধী মনে হবে না)
হৃদয়: ভাই বোন আড্ডা দিচ্ছি তুমিও আসো
নিপা: আপু ও যে আপনাকে বোন ডেকেছে জানেন
আমি: তাই নাকি
নিপা: হ্যা
আমি: তার মানে আমি এখন তোমার ননদ
নিপা: হ্যা আগে ছিলা অন্যকিছু বলেই হাসতে শুরু করলো
আমি: আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি আসছি

রিয়াটা কে খুঁজে পাচ্ছি না পিয়াস কে আসার কথা বলেছে কিনা জানিনা বলতে তো হবে, অবশেষে খুঁজে পেলাম পাগলী কোমর বেঁধে কাজ করছে
–রিয়া
–হুম
–পিয়াস কে বলেছিস আসবে
–মনে নেই
–যেভাবে কোমর বেঁধে কাজে লেগেছিস স্বামীর কথা ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক
–কাজ করবো না আমার একমাত্র বান্ধবী+বোনের বিয়ে বলে কথা
–তাই বলে পিয়াস কে আসার কথা বলবি না
–আচ্ছা বলব
–এখনি বল গিয়ে রাতের ফ্লাইটে যেন চলে আসে
–ওকে

সবাই কাজ করছে চারদিকে বিয়ের আমেজ ভালই লাগছে দেখতে, সবাই কতো খুশি মনে কাজ করছে

সারাটা দিন কিভাবে যেন কেটে গেলো সবার সাথে হাসি খুশিতে মেতে ছিলাম যেন এক ঘুরের মধ্যে ছিলাম, এখন রাত নেমেছে সবাই ঘুমের রাজ্যে আর আমি বারান্দায় দাড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছি, আজ আকাশটাও দেখতে সুন্দর মন ভালো থাকলে মনে হয় সবকিছুই সুন্দর লাগে, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো রুম থেকে ফোনটা নিয়ে এসে বারান্দায় বসলাম শ্রাবন ফোন দিয়েছে
–হ্যালো
–এতো রাতে বারান্দায় কি কর
–আমি যে বারান্দায় তুমি জানো কিভাবে
–আমি ছাদে এখান থেকে তোমাকে দেখা যায়
–তুমি এতো রাতে ছাদে কি করো
–বাসর রাতের চিন্তায় ঘুম আসছে না হিহিহি
–তুমি আসলেই একটা ফাজিল
–যার বউ এতো লজ্জাবতী তাকে তো ফাজিল হতেই হবে নাহলে কি রোমান্স জমবে
–সারাক্ষণ মাথায় দুষ্টুমি ঘুরে তাই না
–জ্বী বিয়ের পর দুষ্টুমি আরো বেড়ে যাবে
–এখন কি কম
–অনেক কম
–হইছে যাও ঘুমাও গিয়ে
–তুমি ঘুমাও কারন আগামীকাল রাতে তুমি ঘুমাতে পারবে না
–কেন
–ওমা বাসর রাতেও তোমাকে ঘুমাতে দিব নাকি যাও লক্ষী বউয়ের মতো গিয়ে ঘুমিয়ে পর
–ওকে

জানি ফাজিলটার সাথে যতো কথা বলবো ততোই ওর দুষ্টুমি বাড়বে তাই ফোনটা রেখে এসে শুয়ে পড়লাম, শ্রাবনের কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি….

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ২৩

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ২৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

শ্রাবন চমকে উঠে আমার দিকে থাকালো, ওকে দেখে তো আমি চমকে গেলাম কি অবস্থা করেছে নিজের কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুইটা ফুলিয়ে ফেলছে, আমি ওর চোখের দিকে কিছুক্ষণ থাকিয়ে রইলাম হঠাৎ ও বসা থেকে দাড়িয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো, অঝরে কাঁদছে ও বাধা দিচ্ছি না কাঁদুক আজকেই ওর শেষ কান্না আর কখনো ওকে কাঁদতে দিবো না
–তমা আমাকে ক্ষমা করেছ তো
–তুমি তো অন্যায় করনি আমিই ভুল বুঝেছিলাম
–অন্যায় করেছি তো, তুমি কতো যুদ্ধ করে আমার জন্য অপেক্ষা করেছ আর আমি কিনা
–এইটা স্বাভাবিক আমার বিয়ে হয়ে গেছে তো তুমি একা থাকবা কেন
–তাও….
–হইছে বাদ দাও এখন এসব কথা আর আমাকে ছাড়ো
–ইসসসসসস কতো দিন পর জরিয়ে ধরেছি আর এতো তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিব
–মা চলে আসবে তো হঠাৎ
–আসবে না আম্মু জানে উনার ছেলে আর বউমা প্রেম করছে
–হুহ বলছে তোমাকে
–জ্বী চলো ছাদে যাই
–ওকে

শ্রাবনের সাথে ছাদে আসলাম, প্রথম আসলাম এই ছাদে, তেমন বড় নাহলে প্রেম করার জন্য পারফেক্ট জায়গা হিহিহি
–ওই পেত্নী হাসতেছ কেন
–ছাদটা প্রেম করার জন্য পারফেক্ট জায়গা এইটা ভেবেই হাসছি
–জ্বী এখন আমি প্রেম করবো বলেই আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে চুলে মুখ গুঁজে দিলো পাগল একটা
–কতোদিন পর তোমার চুলের ঘ্রান নিচ্ছি
–তাই
–জ্বী সহজে ছাড়ছি না আজ
–(নিশ্চুপ)
–তমা এখন তো তোমার রাগ কমেছে বিয়ে কবে করবো আমরা
–তোমার ইচ্ছা
–আমি তো চাই এই মুহূর্তে বিয়েটা করে ফেলি আর তোমাকে আমার করে নেই
–এই মুহূর্তে তো আর হবে না আব্বুর সাথে কথা বলো
–শশুড় আব্বু যদি দেরি করেন আমি কিন্তু আর দেরি সহ্য করতে পারছি না
–আগে তো কথা বলে দেখ আর রিয়া তো আছেই দেরি করবে না
–ঠিক আছে

দুজনই চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছি আমি আকাশের দিকে থাকিয়ে আছি আর পাগলটা আমার চুলের ঘ্রান নিতে ব্যস্ত, এই মুহূর্ত গুলো যদি ধরে রাখা যেতো খুব ভালো হতো, দুজনের নিরবতা ভাঙ্গিয়ে হঠাৎ শ্রাবনের ফোনটা বেজে উঠলো

অনেকক্ষণ হুম হুম বলে কার সাথে যেন কথা বললো, হুম হুম বলাতে কিছুই বুঝলাম না, ফোনটা রেখেই আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে হাসতে শুরু করলো
–কি হলো হঠাৎ
–কে ফোন দিয়েছিল জানো
–কে
–নিপা
–হুম
–ভেবেছিলাম ও আমাকে অভিশাপ দিবে কিন্তু ও আমাকে অভাক করে ক্ষমা করে দিয়েছে আর তোমাকে ধন্যবাদ দিয়েছে
–কেন
–ওর সত্যিকারের ভালোবাসা পাইয়ে দিয়েছ তাই
–হুম
–নিপা চায় এক আসরে দুই বিয়ে হউক
–মানে
–তোমার আমার আর নিপা হৃদয়ের
–নিপা এতো সহজে সবকিছু মেনে নিলো
–হুম
–যাক ভালই হলো নিজেদের আর অপরাধী মনে হবে না
–জ্বী এখন চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আমি একটু বাইরে যাবো আর রাতে তোমার আব্বুর সাথে কথা বলবো
–ঠিক আছে

শ্রাবন বাইরে চলে গেলো আর আমি বাসায় চলে আসলাম, এসে দেখি রিয়া আর তুলি বাসার জিনিসপত্র গুচাচ্ছে বিষয়টা এমন যেন বাসায় কোনো অনুষ্ঠান, রিয়া কে জিজ্ঞেস করলাম
–কিরে বাসায় কি মেহমান আসবে
–হ্যা অনেক মেহমান আসবে
–কেন
–তোকে বিয়ে নেওয়ার জন্য
–মানে
–ভয় পাসনা বিয়েটা শ্রাবনের সাথেই হবে
–ভয় পাবো কেন
–যদি অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যায়
–তুই থাকতে অন্য কোথাও হবে না
–হুহ এখন আমাকে পাম দেওয়া হচ্ছে আর তখন যে এতো করে বললাম শ্রাবন তোকেই ভালোবাসে বিশ্বাস হয়নি
–মাথা ঠিক ছিল নারে
–পরশু দিন মাথা ঠিক হবে
–মানে
–পরশু দিন তোদের বিয়ে
–মানে কি বিয়ে কবে ঠিক হলো
–তুই দৌড়ে যখন শ্রাবনের কাছে চলে গেছিলি তখন-ই আঙ্কেল সবাইকে নিয়ে বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলেছেন তুই আর শ্রাবন বাদে সবাই জানে
–আমাদের বিয়ে আর আমরাই জানি না
–বিয়ে কিন্তু দুইটা হবে
–মানে
–তোর-শ্রাবনের আর নিপা-হৃদয়ের
–এইটাও ঠিক করে ফেলেছিস
–হুম সবাই মিলেই ঠিক করলো

আর কিছু না বলে তাড়াতাড়ি রুমে চলে আসলাম শ্রাবনকে তো বিয়ের কথাটা জানাতে হবে, ফোন দিলাম কিন্তু রিসিভ করছে না উফফফফফফ এমন খুশির সময়ে ফোন রিসিভ না করলে কেমন লাগে, ইচ্ছে হচ্ছে….
যাক অবশেষে রিসিভ করেছে
–হ্যালো
–এতো সময় লাগে ফোন রিসিভ করতে
–কি হয়েছে বলতো এমন অস্থির হয়ে কথা বলছ কেন
–আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে
–মানে কবে
–সবাই মিলে ঠিক করেছে আগামী পরশু
–যাক বাবা আমি তো ভেবেছিলাম আমার শশুড় আব্বু বুঝি দেরি করবে এখন দেখি শশুড় মশাই আমার কষ্টটা বুঝেছেন
–হিহিহি
–এতো হেসো না পরশুদিন সব হাসি বের করবো
–হূহ ভয় পাইছি
–ভয় তো পরশু রাতেই পাবা হাহাহাহা
–ফাজলামো শুরু করেছ ফোন রাখো
–আর তো মধ্যে একদিন বিয়ের আগে প্রেমের এই একদিন প্রেম করতে দাও পরশু রাত থেকে আমার বউয়ের সাথে প্রেম করবো
–(নিশ্চুপ)
–ওই পেত্নী বাসর ঘরের প্রেম কেমন হয় জানো
–দূর ফাজিল

ফোনটা রেখে দিলাম তাড়াতাড়ি ফাজিলটায় ফাজলামো শুরু করেছে, এতো বছরের এতো এতো কষ্ট যেন এক নিমিষেই ভুলে গেলাম খুব বেশি ভালো লাগছে মনে হচ্ছে আজ আমিই পৃথিবীর সেরা সুখি মানুষ

এতো আনন্দের মাঝেও কোথায় যেন একটু ভয় হচ্ছে আবার যদি কোনো জামেলা হয়, কথায় যে আছে তৃষ্ণার্ত যেদিকে যায় সাগরও শুকিয়ে যায়……

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ২২

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ২২

লেখিকা: সুলতানা তমা

দরজা খুলতেই চমকে উঠলাম, হৃদয় আমার পিছনেই ছিল ও তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে গেলো বুঝলাম ও নিপার সামনে যেতে চাচ্ছে না, হ্যা নিপা দরজায় দাড়িয়ে আছে সাথে ওর আম্মু বোন আর শ্রাবনের আম্মু, ভেবেছিলাম এই মেয়ের মুখোমুখি হবো না কিন্তু ভাগ্য আমাকে ছাড়ল না শেষ মুহূর্তে নিপার সামনাসামনি হতেই হলো
নিপা: আপু কোথায় যাচ্ছেন
তমা: তুমি এখানে হসপিটাল থেকে রিলিজ নিয়েছ কেন এখনো তো পুরোপুরি সুস্থ হওনি
নিপা: আমার কথা ছাড়ুন আপনি কোথায় যাচ্ছেন
তমা: চাকরি পেয়েছি একটা সেখানেই যাচ্ছি
নিপা: আপু মিথ্যে কেন বলছেন শ্রাবন আমাকে সব বলেছে
আমি:(নিশ্চুপ)
নিপা: ভিতরে যাই দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে (পিছনে থাকালাম হৃদয় হ্যা সূচক মাথা নেড়ে আব্বুর রুমে চলে গেলো আমি দরজা থেকে সরে ড্রইংরুমে এসে বসে পরলাম, নিপা সহ সবাই এসে ড্রইংরুমে বসলো

সবাই নিশ্চুপ কেউ কোনো কথা বলছে না, রিয়া কথা বলা শুরু করলো
রিয়া: নিপা হঠাৎ এখানে এসেছ
নিপা: একটু পর বলছি আরো দুজন আসার বাকি আছে
বুঝলাম না এই মেয়ে কে আসার কথা বলছে আর কি কথাই বা বলবে, হঠাৎ দরজায় চোখ পরলো আকাশ আর মেঘা আপু এসেছে, দরজা খুলাই ছিল ওরা এসে বসলো, তাহলে কি নিপা ওদের আসার কথাই বলছিল

বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে চুপ করে বসে আছি নীরব দর্শকের মতো কি হয় দেখার জন্য
নিপা: আপু আমি আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই
আমি: কি কথা বলো
নিপা: আপনি তো ভাবছেন শ্রাবন আমাকে ভালোবাসে আমাদের মিলিয়ে দিয়ে আপনি চলে যাবেন তাই না
আমি: হুম
নিপা: কিন্তু আমি যে বলবো শ্রাবন আপনাকে ভালোবাসে
আমি: কিভাবে
নিপা: ওর সাথে আমার পরিচয় হবার সময় থেকেই ওর মুখে শুধু আপনার নাম ছিল যখন আমি ওকে প্রপোজ করি ওর প্রথম কথা ছিল আপনার জায়গা আমি কখনো পাবো না, আপনার পাশে একটুখানি জায়গা নিয়ে যদি থাকতে পারি তাহলে সে আমার প্রপোজে রাজি, আমি প্রথম ভেবেছিলাম আস্তে আস্তে আপনাকে ভুলে যাবে কিন্তু আমি সম্পূর্ণই ভুল ছিলাম ও প্রতিটা মুহূর্তে আপনার নাম বলতো আপনার ভাবনায় মেতে থাকতো এসব নিয়ে আমি ঝগড়া করতাম, শেষ পর্যন্ত আমি বুঝে নিয়েছিলাম শ্রাবন আপনাকে কখনো ভুলতে পারবে না তাও আমি চেষ্টা করি আপনাকে ভুলানোর এতে উল্টো শ্রাবন আমাকে অবহেলা করতে শুরু করে তারপর ব্রেকাপ, এখন আপনিই বলুন ও কাকে ভালোবাসে
আমি:(নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি)
রিয়া: তমা আমার কথা সত্যি হলো তো
আকাশ: তমা শ্রাবন আমাকে আজ সব বললো এইটুকুই বলবো কোনো ছেলে কখনোই কোনো ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করতে চায়না ও তোমাকে ভালোবাসে বলেই আমার সাথে ডিভোর্স এর পরও ফিরে এসেছে বিয়ে করতে চাইছে
নিধি: তমা আপু আপনি তো ভাবছেন ভাইয়া আপুর জন্য হসপিটালে দৌড়াদৌড়ি করেছে তাই আপুকেই ভালোবাসে ভুল ধারনা আপনার আমি সেখানে ছিলাম আমি প্রায় সময় দেখেছি ভাইয়া আপুর পাশে বসে থেকে ফোনে আপনার পিক দেখছে তারপরও কি বলবেন ভাইয়া আপনাকে না আপুকে ভালোবাসে
রিয়া: তমা এখনো সময় আছে বুঝার চেষ্টা কর
আমি:(চুপ হয়ে নিচের দিকে থাকিয়ে আছি কি করা উচিত কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না)
নিপার আম্মু: মা তুমি নিপার কথা ভাবছ তো, নিপা খুশি হয়েই সব মেনে নিয়েছে শ্রাবন যেহেতু তোমাকে ভালোবাসে ওর তো জোর করার অধিকার নেই আর তোমার ভালোবাসা ছিনিয়ে নেয়ার প্রশ্নই তো উঠে না যেখানে তুমি অচেনা অজানা এক মেয়েকে কিডনি দিতে চেয়েছিলে
আমি: অভাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আপনারা জানলেন কিভাবে
নিপা: ডক্টর বলেছে সবকিছু
আমি: কিডনি তো আমি দেয়নি কে দিয়েছে সেটা কি ডক্টর বলেছে
নিপা: শুধু বলেছে একটি ছেলে দিয়েছে কিন্তু ছেলেটি কে কেন দিয়েছে কিছুই বলেনি
আমি: হুম
শ্রাবনের আম্মু: মা একটা কথা বলি যদিও কথাটা শুনতে খারাপ লাগবে
আমি: বলুন
মা: নিপার কথা আমি জানতাম না গতরাতে শ্রাবন আমাকে সব বললো আচ্ছা মা একটা প্রশ্ন করি, তোমার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর শ্রাবন অসুস্থ হয়ে পরে আস্তে আস্তে সুস্থ হয় তখন তো ও জানতো তোমাকে আর ফিরে পাবে না তারপরও কি ওর একা থাকা উচিত ছিল….? নিপার সাথে সম্পর্ক করে কি ও অন্যায় করেছে…? ওর কি দোষ ছিল এসবে সব তো তোমার মা করেছিলেন তাহলে আমার ছেলেকে আজ এতো কষ্ট কেন দিচ্ছ বলতে বলতে উনি কেঁদে দিলেন
আমি: (নিশ্চুপ হয়ে সব শুনছি শুধু আসলেই তো শ্রাবনের কি দোষ, আমার বিয়ে হয়ে গেছে ফিরে পাবে না জেনেও শ্রাবন একা থাকবে কেন….?
এতোকিছুর পর ও ফিরে এসেছে বিয়ে করতে চাইছে তারমানে তো ও আমাকেই ভালোবাসে)
আব্বু: তমা একটা কথা বলবো
আমি: হ্যা আব্বু বলো
আব্বু: কখনো তোর কোনো সিদ্ধান্তে বাধা দেয়নি কিন্তু আজ দিচ্ছি, আমিও তোর মা কে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম তাই আমি এসব একটু হলেও বুঝি, ছেলেটা এতোকিছুর পরও তোকে বিয়ে করতে চাইছে এইটা ভালোবাসা না থাকলে কখনোই সম্ভব না মা, তুই চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারিস শ্রাবন তোকেই ভালোবাসে
নিপা: আপু আর কিছু ভাববেন না আপনি শ্রাবনের কাছে যান ও ওর রুমেই আছে
আমি: হুম যাবো তার আগে তোমাকে একটি কথা বলতে চাই
নিপা: কি কথা
আমি: আচ্ছা বলতো একটি ছেলে কতোটা ভালোবাসলে একটি মেয়ে কে তার কিডনি দিতে পারে
নিপা: এই ভালোবাসা পরিমাপ করা যায় না
আমি: মেয়েটা যদি ছেলেটি কে তার জীবন সঙ্গী হিসেবে পায়
নিপা: তার চেয়ে ভাগ্যবতী আর কেউ হবে না
আমি: হুম ভাগ্যবতীটা যদি তুমি হও
নিপা: মানে
আমি: যে তোমাকে কিডনি দিয়েছে সে তোমাকে অনেক ভালোবাসে আর শ্রাবন কে যেহেতু আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছ আমি চাইব ছেলেটির সত্যিকারের ভালোবাসা তুমি গ্রহণ করো
নিপা: কিন্তু ছেলেটি কে
আমি: (হৃদয় কে ডেকে আনলাম নিপা তো দেখে অভাক)
নিপা: হৃদয় তুমি…?
হৃদয়: হুম
আমি: কি গ্রহণ করবে না ওর ভালোবাসা
নিপা: অবশ্যই গ্রহণ করবো কেউ আমাকে এতোটা ভালোবাসে জানতাম না জানলে আগেই গ্রহণ করতাম
আমি: তোমরা কথা বলো আমি গেলাম বলেই দৌড়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে সোজা শ্রাবনের বাসায় আসলাম

শ্রাবনের রুমের দিকে যতো এগুচ্ছি আমার হার্টবিট ততো বাড়ছে, দরজা খুলা দেখে সোজা রুমের ভিতরে ঢুকে গেলাম শ্রাবন খাটে গাঁ হেলিয়ে ফ্লোরে বসে আছে, আমি গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখতেই চমকে উঠলো…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ২১

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ২১

লেখিকা: সুলতানা তমা

–তমা (হঠাৎ রিয়ার ডাকে চোখ খুলে থাকালাম)
–হুম
–শ্রাবন এসেছে
–তো
–দেখ তমা তোর থেকে আমি কম বুঝিনা যে….
–কি বলতে চাইছিস সুজা বল
–শ্রাবনের কথায় মনে হয় ও এখনো তোকেই ভালবাসে তাই যা করবি ভেবে চিন্তে করিস
–হুম
–তোর আব্বুর সাথে কথা বলতে এসেছে শ্রাবন, আঙ্কেল বলে দিয়েছেন তোর সিদ্ধান্তই উনার সিদ্ধান্ত
–হুম
–কি হুম হুম করছিস
–যাতো একা থাকতে দে
–থাক একা

রিয়া রাগ করে চলে গেছে আর ভালো লাগছে না এসব আব্বুকে বলে আগামীকালই এই শহর ছেড়ে চলে যাবো
–তমা
–হুম (শ্রাবন এসেছে)
–আর একটা সুযোগ কি দেওয়া যায় না, তোমার আব্বুও জানিয়ে দিয়েছেন তোমার সিদ্ধান্তই উনার সিদ্ধান্ত
–দেখ শ্রাবন যা হবার হয়ে গেছে এখন নিপা সুস্থ হয়েছে আমি চাই তুমি ওকে বিয়ে করো আর আমি আগামীকাল এখান থেকে চলে যাচ্ছি
–চলে যাচ্ছ মানে কোথায় যাইবা
–কোথায় যাবো জানিনা তবে এই শহর ছেড়ে চলে যাবো
(কথাটা বলার সাথে সাথে শ্রাবন আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে পরলো অঝরে কাঁদছে ও আর দুই হাত জোর করে বলতে লাগলো)
–তমা প্লিজ এতো বড় শাস্তি আমাকে দিও না আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি থাকতে পারবো না তোমাকে ছাড়া একটা সুযোগ অন্তত দাও প্লিজ
–কি করছ তুমি উঠে দাড়াও
–না বল তুমি আমাকে ছেড়ে যাইবা না
আর কিছু না বলে ওকে এই অবস্থায় রেখেই রুমে এসে শুয়ে পড়লাম

সকালে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম, আজ আমি সবার জন্য নাস্তা বানালাম তারপর সবাইকে ডেকে ডাইনিং এ আনলাম, নাস্তা খেতে খেতে আব্বুকে বললাম
আমি: আব্বু আমি আজকেই এই শহর ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছি
আব্বু: (নিশ্চুপ)
আমি: আব্বু কথা বলছ না কেন
আব্বু: আমার কিছু বলার নেই
আমি: কেন
রিয়া: বুঝছিস না কেন আঙ্কেলও চাইছেন তুই শ্রাবনকে ক্ষমা করে দে
আমি: আব্বু তুমি কি এটাই চাইছ (আব্বু কিছু না বলে খাবার না খেয়েই উঠে রুমে চলে গেলেন)
রিয়া: তমা বুঝার চেষ্টা কর শ্রাবন তোকে ভালো না বাসলে এতোকিছুর পরো ফিরে আসতো না
আমি: এতো যে বুঝিস এইটা বুঝিস না কেন ও নিপা কে কি করবে
রিয়া: তমা….
আমি: রিয়া বাদ দে তুই আমার সাথে আপাদত যেখানে যাচ্ছি সেখানে চল আর পিয়াস কে ফোন করে বল তোকে নেওয়ার ব্যবস্থা যেন করে
রিয়া: হুম
আমি: তুলি আব্বু আর তোর জিনিসপত্র গুছিয়ে নে আমরা বিকেলে চলে যাবো
তুলি: আপু
আমি: কি তুইও এখন জ্ঞান দিবি আমাকে
তুলি: না বলেই উঠে চলে গেলো সাথে রিয়াও চলে গেলো
সবাই আমার সাথে এমন করছে কেন, এমন মনে হচ্ছে যে আমি সব দোষ করেছি কিন্তু এখানে তো কারো দোষ নেই

বিছানায় বসে বসে কাপড়চোপড় গুচাচ্ছি তখন হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো, বের হয়ে দেখি ড্রইংরুমে হৃদয় বসা, বুঝলাম না এই ছেলে আমার বাসা চিনল কি করে আর হসপিটাল থেকেই বা এতো তাড়াতাড়ি রিলিজ নিল কেন, এসব ভাবতে ভাবতে ড্রইংরুমে গেলাম
–আপু কেমন আছেন
–ভালো তুমি
–ভালো
–আমার বাসা চিনলে কিভাবে
–কষ্ট করে চিনে নিলাম
–হঠাৎ আমার বাসায় কোনো প্রয়োজন
–বিকেলে চলে যাচ্ছি এখান থেকে তাই ভাবলাম আপনার সাথে দেখা করে যাই
হৃদয়ের সাথে বসে গল্প করছি হঠাৎ কারো বাহ বাহ কথা শুনে দরজার দিকে থাকালাম, শ্রাবন আগুনের মতো চোখ করে আমার দিকে থাকিয়ে আছে
–এজন্যই তো বলি আমার কাছে ফিরে আসছ না কেন
–মানে
–খুব সহজ নতুন কাউকে পেয়ে গেছ তাই আমাকে ক্ষমা করতে পারছ না (কথাটা শুনে খুব রাগ উঠলো চিৎকার করে বললাম)
–এই ছেলেকে দেখে কি তোমার তাই মনে হয় ও তো আমার ছোট ভাইয়ের মতো আর তুমি এসব ভাবছ
–হ্যা ভাবছি নাহলে তুমি আমার কাছে ফিরে আসছ না কেন, আসলে এই ছেলের সাথে তোমার সম্পর্ক আছে
–এতোটাই রাগ উঠলো ঠাস করে ওর গালে একটা তাপ্পর মেরে চিৎকার করে বললাম নিজে যেমন আমাকেও তেমন ভাবছ, আমার চিৎকার শুনে ততোক্ষণে আব্বু রিয়া তুলি সবাই ড্রইংরুমে এসে পরলো, সবার সামনে এভাবে তাপ্পর দেওয়া উচিত হয়নি ও কিছু না বলে আমার দিকে একবার থাকিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো, আমি দফ করে সোফায় বসে পরলাম কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝতেই পারছি না, যাকে ভালো রাখার জন্য এতোকিছু করলাম তাকেই আমি তাপ্পর দিলাম
রিয়া: তমা এখন একটু বেশিই করে ফেলেছিস এভাবে সবার সামনে ওকে অপমান না করলেও পারতি
হৃদয়: আমার জন্য সব হলো
রিয়া: ওর দোষটা শুধু দেখলি ভালোবাসা দেখলি না ও তোকে ভালো না বাসলে অন্য ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে রেগে যেতো না
আব্বুর দিকে থাকালাম আমার দিকে কিছুক্ষণ থাকিয়ে রুমে চলে গেলেন, এখনো আমিই দোষী আর ও যে আমার ভালোবাসা কে অপমান করলো এইটা কিছু না, এতো ভালোবাসি ওকে আর ও কিনা ভাবলো এই ছোট ভাইয়ের বয়সী ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক আছে তাপ্পর দিয়েছি বেশ করেছি

আর বেশিক্ষণ দেরি করলাম না এখানে যতো বেশি সময় থাকবো ততোই অশান্তি বাড়বে তাই আধাঘণ্টার ভিতরে সবাইকে রেডি হতে বললাম, আমিও রেডি হয়ে নিলাম হৃদয়ও রয়েছে একসাথে বেরুবো তাই

সবার মুখ মলিন কিছু করার নেই বেড়িয়ে পরলাম সবাইকে নিয়ে…..

চলবে?

error: ©<b>গল্পপোকা ডট কম</b>