Friday, June 20, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2407



জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ২৪

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ২৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

খুব ভোরে চেঁচামেচি শুনে ঘুম ভাঙ্গলো, তাড়াতাড়ি ড্রয়িংরুমে গেলাম, ড্রয়িংরুমের অবস্থা দেখে তো আমি অভাক সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে, সবাই বলতে নিপার পরিবার, হৃদয়ের পরিবার, আকাশের পরিবার, শ্রাবনের পরিবার আর আমার পরিবার তো আছেই, সব পরিবারের মানুষ এক হয়েছে, সবাই সবার মতো আড্ডা দিচ্ছে আমি যে এখানে দাড়িয়ে আছি কেউ দেখছেই না, ভাবছি এতো সকালে সবাই এখানে আসলো কিভাবে হঠাৎ কে যেন আমার হাত ধরে এক ঝটকায় টান মেরে কোথায় নিয়ে গেলো, থাকিয়ে দেখি তুলির রুমে আর পাশে শ্রাবন দাঁড়ানো আমার দিকে থাকিয়ে হাসছে
–উফফফফ এভাবে কেউ হাত ধরে টান দেয় আমার হাতটা ভেঙ্গেই গেছে মনে হয়
–হূহ ঘুম থেকে উঠতে এতোক্ষণ লাগে কখন থেকে অপেক্ষা করছি তোমাকে একবার দেখবো বলে
-আমার রুমে গেলেই হতো
–সবাই ড্রয়িংরুমে বসা কিভাবে যাই লজ্জা আছে না
–ওমা তোমার আবার লজ্জাও আছে
–কি বলতে চাইছ আমার লজ্জা নেই
–বিয়ের আগেই যে বাসর নিয়ে কথা বলে তার আবার লজ্জা কিসের
–ঠিক আছে তুমি যেহেতু বলেছ নেই যেটুকু আছে সেটুকু উড়িয়ে দেই
–মানে
–অনেক তো কষ্ট পেয়েছ আমিও পেয়েছি এখন নাহয় সব রোমান্স একসাথে করি বলেই আমার দিকে এগুতে শুরু করলো, ও এগুচ্ছে আর আমি পিছিয়ে যাচ্ছি একসময় আমি দেয়ালে আটকে গেলাম ও যেই আমার কাছে এসে মুখ এগুলো তখন কে যেন বলে উঠলো
–দুলাভাই বিয়ের আগে এসব ঠিক না (থাকিয়ে দেখি তুলি)
–দূর শালি আসার আর সময় পাইলা না
–থ্যাংকু তুলি এখন আসার জন্য বলে ওর মুখের অবস্থা দেখে একটা হাসি দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম

ড্রয়িংরুমে সবাই আড্ডা দিচ্ছে কিন্তু আব্বুকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না তাড়াতাড়ি আব্বুর রুমে গেলাম, আব্বু চেয়ারে বসে আছেন মুখ মলিন করে
–আব্বু আসবো
–আয় মা
–মন খারাপ কেন আব্বু
–নাতো
–তোমার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে
–ও তুই বুঝবি না যখন তোর মেয়েকে বিয়ে দিবি তখন বুঝবি (বুঝেছি আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তাই আব্বু কষ্ট পাচ্ছেন আর কিছু না বলে আব্বুর পাশে মাথা নিচু করে বসে রইলাম, কেন জানি খুব কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে না চাইতেও চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়তে শুরু করলো)
–এই পাগলী মেয়ে কাঁদছিস কেন
–কই নাতো (তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম আমি কাঁদলে যে আব্বুও কাঁদবেন)
–মেয়েদের জীবনটা এমনই রে মা কান্না করিস না (খুব অভাক হচ্ছি আব্বু নিজের চোখের পানি লুকিয়ে আমাকে কতো সুন্দর ভাবে বুঝাচ্ছেন)
–যা মা সবার সাথে গিয়ে আড্ডা দে মন ভালো হবে
–তুমিও চলো
–যা তুই আসছি
–আচ্ছা

তাড়াতাড়ি আব্বুর রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম কখন আবার বাপ মেয়ে দুজনেই কান্না শুরু করে দেই তার তো নিশ্চয়তা নেই, মেয়েদের জীবনটা সত্যি অদ্ভুত বিয়ে নামক এই নিয়মে আপনজনদের ছেড়ে নতুন কোথাও চলে যেতে হয়, আপন মানুষদের মায়া কাটিয়ে নিজেকে সবার সাথে মানিয়ে নিতে হয় আর মা বাবা তারা তো আরো বেশি কষ্ট পায় ছোট থেকে লালন পালন করে একটু একটু করে বেড়ে তুলা সন্তান কে অন্যের হাতে তুলে দেওয়া সত্যি কষ্টকর
–আপু (হঠাৎ কারো ডাকে ভাবনায় ছ্যাদ পরলো থাকিয়ে দেখি হৃদয়)
–হ্যা কেমন আছ
–ভালো আপনি
–এখন তো সবারই ভালো থাকার কথা
–হ্যা আপু সব তো ঠিক হয়ে গেলো, অনেক কিছুই সম্ভব হয়েছে আপনার জন্য থ্যাংকস আপু নিপা কে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য
–আমাকে থ্যাংকস দেওয়ার প্রয়োজন নেই তোমার ভালোবাসা সত্যি তাই ফিরে পেয়েছ আর শেষ মুহূর্তে তুমি না এলে সবকিছু ঠিক হতো না
–সবকিছু ঠিক হবার জন্যই মনে হয় সেদিন হঠাৎ নিপা কে ফোন দিয়েছিলাম তারপর এতোকিছু হলো
–হয়তো
–(ভাই বোন এখানে কি করছ, কথাটা শুনে পিছনে থাকালাম নিপা এসেছে খুব হাসি খুশি মুখ যাক মেয়েটা তো খুশি আছে অন্তত নিজেকে অপরাধী মনে হবে না)
হৃদয়: ভাই বোন আড্ডা দিচ্ছি তুমিও আসো
নিপা: আপু ও যে আপনাকে বোন ডেকেছে জানেন
আমি: তাই নাকি
নিপা: হ্যা
আমি: তার মানে আমি এখন তোমার ননদ
নিপা: হ্যা আগে ছিলা অন্যকিছু বলেই হাসতে শুরু করলো
আমি: আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি আসছি

রিয়াটা কে খুঁজে পাচ্ছি না পিয়াস কে আসার কথা বলেছে কিনা জানিনা বলতে তো হবে, অবশেষে খুঁজে পেলাম পাগলী কোমর বেঁধে কাজ করছে
–রিয়া
–হুম
–পিয়াস কে বলেছিস আসবে
–মনে নেই
–যেভাবে কোমর বেঁধে কাজে লেগেছিস স্বামীর কথা ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক
–কাজ করবো না আমার একমাত্র বান্ধবী+বোনের বিয়ে বলে কথা
–তাই বলে পিয়াস কে আসার কথা বলবি না
–আচ্ছা বলব
–এখনি বল গিয়ে রাতের ফ্লাইটে যেন চলে আসে
–ওকে

সবাই কাজ করছে চারদিকে বিয়ের আমেজ ভালই লাগছে দেখতে, সবাই কতো খুশি মনে কাজ করছে

সারাটা দিন কিভাবে যেন কেটে গেলো সবার সাথে হাসি খুশিতে মেতে ছিলাম যেন এক ঘুরের মধ্যে ছিলাম, এখন রাত নেমেছে সবাই ঘুমের রাজ্যে আর আমি বারান্দায় দাড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছি, আজ আকাশটাও দেখতে সুন্দর মন ভালো থাকলে মনে হয় সবকিছুই সুন্দর লাগে, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো রুম থেকে ফোনটা নিয়ে এসে বারান্দায় বসলাম শ্রাবন ফোন দিয়েছে
–হ্যালো
–এতো রাতে বারান্দায় কি কর
–আমি যে বারান্দায় তুমি জানো কিভাবে
–আমি ছাদে এখান থেকে তোমাকে দেখা যায়
–তুমি এতো রাতে ছাদে কি করো
–বাসর রাতের চিন্তায় ঘুম আসছে না হিহিহি
–তুমি আসলেই একটা ফাজিল
–যার বউ এতো লজ্জাবতী তাকে তো ফাজিল হতেই হবে নাহলে কি রোমান্স জমবে
–সারাক্ষণ মাথায় দুষ্টুমি ঘুরে তাই না
–জ্বী বিয়ের পর দুষ্টুমি আরো বেড়ে যাবে
–এখন কি কম
–অনেক কম
–হইছে যাও ঘুমাও গিয়ে
–তুমি ঘুমাও কারন আগামীকাল রাতে তুমি ঘুমাতে পারবে না
–কেন
–ওমা বাসর রাতেও তোমাকে ঘুমাতে দিব নাকি যাও লক্ষী বউয়ের মতো গিয়ে ঘুমিয়ে পর
–ওকে

জানি ফাজিলটার সাথে যতো কথা বলবো ততোই ওর দুষ্টুমি বাড়বে তাই ফোনটা রেখে এসে শুয়ে পড়লাম, শ্রাবনের কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি….

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ২৩

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ২৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

শ্রাবন চমকে উঠে আমার দিকে থাকালো, ওকে দেখে তো আমি চমকে গেলাম কি অবস্থা করেছে নিজের কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুইটা ফুলিয়ে ফেলছে, আমি ওর চোখের দিকে কিছুক্ষণ থাকিয়ে রইলাম হঠাৎ ও বসা থেকে দাড়িয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো, অঝরে কাঁদছে ও বাধা দিচ্ছি না কাঁদুক আজকেই ওর শেষ কান্না আর কখনো ওকে কাঁদতে দিবো না
–তমা আমাকে ক্ষমা করেছ তো
–তুমি তো অন্যায় করনি আমিই ভুল বুঝেছিলাম
–অন্যায় করেছি তো, তুমি কতো যুদ্ধ করে আমার জন্য অপেক্ষা করেছ আর আমি কিনা
–এইটা স্বাভাবিক আমার বিয়ে হয়ে গেছে তো তুমি একা থাকবা কেন
–তাও….
–হইছে বাদ দাও এখন এসব কথা আর আমাকে ছাড়ো
–ইসসসসসস কতো দিন পর জরিয়ে ধরেছি আর এতো তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিব
–মা চলে আসবে তো হঠাৎ
–আসবে না আম্মু জানে উনার ছেলে আর বউমা প্রেম করছে
–হুহ বলছে তোমাকে
–জ্বী চলো ছাদে যাই
–ওকে

শ্রাবনের সাথে ছাদে আসলাম, প্রথম আসলাম এই ছাদে, তেমন বড় নাহলে প্রেম করার জন্য পারফেক্ট জায়গা হিহিহি
–ওই পেত্নী হাসতেছ কেন
–ছাদটা প্রেম করার জন্য পারফেক্ট জায়গা এইটা ভেবেই হাসছি
–জ্বী এখন আমি প্রেম করবো বলেই আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে চুলে মুখ গুঁজে দিলো পাগল একটা
–কতোদিন পর তোমার চুলের ঘ্রান নিচ্ছি
–তাই
–জ্বী সহজে ছাড়ছি না আজ
–(নিশ্চুপ)
–তমা এখন তো তোমার রাগ কমেছে বিয়ে কবে করবো আমরা
–তোমার ইচ্ছা
–আমি তো চাই এই মুহূর্তে বিয়েটা করে ফেলি আর তোমাকে আমার করে নেই
–এই মুহূর্তে তো আর হবে না আব্বুর সাথে কথা বলো
–শশুড় আব্বু যদি দেরি করেন আমি কিন্তু আর দেরি সহ্য করতে পারছি না
–আগে তো কথা বলে দেখ আর রিয়া তো আছেই দেরি করবে না
–ঠিক আছে

দুজনই চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছি আমি আকাশের দিকে থাকিয়ে আছি আর পাগলটা আমার চুলের ঘ্রান নিতে ব্যস্ত, এই মুহূর্ত গুলো যদি ধরে রাখা যেতো খুব ভালো হতো, দুজনের নিরবতা ভাঙ্গিয়ে হঠাৎ শ্রাবনের ফোনটা বেজে উঠলো

অনেকক্ষণ হুম হুম বলে কার সাথে যেন কথা বললো, হুম হুম বলাতে কিছুই বুঝলাম না, ফোনটা রেখেই আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে হাসতে শুরু করলো
–কি হলো হঠাৎ
–কে ফোন দিয়েছিল জানো
–কে
–নিপা
–হুম
–ভেবেছিলাম ও আমাকে অভিশাপ দিবে কিন্তু ও আমাকে অভাক করে ক্ষমা করে দিয়েছে আর তোমাকে ধন্যবাদ দিয়েছে
–কেন
–ওর সত্যিকারের ভালোবাসা পাইয়ে দিয়েছ তাই
–হুম
–নিপা চায় এক আসরে দুই বিয়ে হউক
–মানে
–তোমার আমার আর নিপা হৃদয়ের
–নিপা এতো সহজে সবকিছু মেনে নিলো
–হুম
–যাক ভালই হলো নিজেদের আর অপরাধী মনে হবে না
–জ্বী এখন চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আমি একটু বাইরে যাবো আর রাতে তোমার আব্বুর সাথে কথা বলবো
–ঠিক আছে

শ্রাবন বাইরে চলে গেলো আর আমি বাসায় চলে আসলাম, এসে দেখি রিয়া আর তুলি বাসার জিনিসপত্র গুচাচ্ছে বিষয়টা এমন যেন বাসায় কোনো অনুষ্ঠান, রিয়া কে জিজ্ঞেস করলাম
–কিরে বাসায় কি মেহমান আসবে
–হ্যা অনেক মেহমান আসবে
–কেন
–তোকে বিয়ে নেওয়ার জন্য
–মানে
–ভয় পাসনা বিয়েটা শ্রাবনের সাথেই হবে
–ভয় পাবো কেন
–যদি অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যায়
–তুই থাকতে অন্য কোথাও হবে না
–হুহ এখন আমাকে পাম দেওয়া হচ্ছে আর তখন যে এতো করে বললাম শ্রাবন তোকেই ভালোবাসে বিশ্বাস হয়নি
–মাথা ঠিক ছিল নারে
–পরশু দিন মাথা ঠিক হবে
–মানে
–পরশু দিন তোদের বিয়ে
–মানে কি বিয়ে কবে ঠিক হলো
–তুই দৌড়ে যখন শ্রাবনের কাছে চলে গেছিলি তখন-ই আঙ্কেল সবাইকে নিয়ে বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলেছেন তুই আর শ্রাবন বাদে সবাই জানে
–আমাদের বিয়ে আর আমরাই জানি না
–বিয়ে কিন্তু দুইটা হবে
–মানে
–তোর-শ্রাবনের আর নিপা-হৃদয়ের
–এইটাও ঠিক করে ফেলেছিস
–হুম সবাই মিলেই ঠিক করলো

আর কিছু না বলে তাড়াতাড়ি রুমে চলে আসলাম শ্রাবনকে তো বিয়ের কথাটা জানাতে হবে, ফোন দিলাম কিন্তু রিসিভ করছে না উফফফফফফ এমন খুশির সময়ে ফোন রিসিভ না করলে কেমন লাগে, ইচ্ছে হচ্ছে….
যাক অবশেষে রিসিভ করেছে
–হ্যালো
–এতো সময় লাগে ফোন রিসিভ করতে
–কি হয়েছে বলতো এমন অস্থির হয়ে কথা বলছ কেন
–আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে
–মানে কবে
–সবাই মিলে ঠিক করেছে আগামী পরশু
–যাক বাবা আমি তো ভেবেছিলাম আমার শশুড় আব্বু বুঝি দেরি করবে এখন দেখি শশুড় মশাই আমার কষ্টটা বুঝেছেন
–হিহিহি
–এতো হেসো না পরশুদিন সব হাসি বের করবো
–হূহ ভয় পাইছি
–ভয় তো পরশু রাতেই পাবা হাহাহাহা
–ফাজলামো শুরু করেছ ফোন রাখো
–আর তো মধ্যে একদিন বিয়ের আগে প্রেমের এই একদিন প্রেম করতে দাও পরশু রাত থেকে আমার বউয়ের সাথে প্রেম করবো
–(নিশ্চুপ)
–ওই পেত্নী বাসর ঘরের প্রেম কেমন হয় জানো
–দূর ফাজিল

ফোনটা রেখে দিলাম তাড়াতাড়ি ফাজিলটায় ফাজলামো শুরু করেছে, এতো বছরের এতো এতো কষ্ট যেন এক নিমিষেই ভুলে গেলাম খুব বেশি ভালো লাগছে মনে হচ্ছে আজ আমিই পৃথিবীর সেরা সুখি মানুষ

এতো আনন্দের মাঝেও কোথায় যেন একটু ভয় হচ্ছে আবার যদি কোনো জামেলা হয়, কথায় যে আছে তৃষ্ণার্ত যেদিকে যায় সাগরও শুকিয়ে যায়……

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ২২

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ২২

লেখিকা: সুলতানা তমা

দরজা খুলতেই চমকে উঠলাম, হৃদয় আমার পিছনেই ছিল ও তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে গেলো বুঝলাম ও নিপার সামনে যেতে চাচ্ছে না, হ্যা নিপা দরজায় দাড়িয়ে আছে সাথে ওর আম্মু বোন আর শ্রাবনের আম্মু, ভেবেছিলাম এই মেয়ের মুখোমুখি হবো না কিন্তু ভাগ্য আমাকে ছাড়ল না শেষ মুহূর্তে নিপার সামনাসামনি হতেই হলো
নিপা: আপু কোথায় যাচ্ছেন
তমা: তুমি এখানে হসপিটাল থেকে রিলিজ নিয়েছ কেন এখনো তো পুরোপুরি সুস্থ হওনি
নিপা: আমার কথা ছাড়ুন আপনি কোথায় যাচ্ছেন
তমা: চাকরি পেয়েছি একটা সেখানেই যাচ্ছি
নিপা: আপু মিথ্যে কেন বলছেন শ্রাবন আমাকে সব বলেছে
আমি:(নিশ্চুপ)
নিপা: ভিতরে যাই দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে (পিছনে থাকালাম হৃদয় হ্যা সূচক মাথা নেড়ে আব্বুর রুমে চলে গেলো আমি দরজা থেকে সরে ড্রইংরুমে এসে বসে পরলাম, নিপা সহ সবাই এসে ড্রইংরুমে বসলো

সবাই নিশ্চুপ কেউ কোনো কথা বলছে না, রিয়া কথা বলা শুরু করলো
রিয়া: নিপা হঠাৎ এখানে এসেছ
নিপা: একটু পর বলছি আরো দুজন আসার বাকি আছে
বুঝলাম না এই মেয়ে কে আসার কথা বলছে আর কি কথাই বা বলবে, হঠাৎ দরজায় চোখ পরলো আকাশ আর মেঘা আপু এসেছে, দরজা খুলাই ছিল ওরা এসে বসলো, তাহলে কি নিপা ওদের আসার কথাই বলছিল

বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে চুপ করে বসে আছি নীরব দর্শকের মতো কি হয় দেখার জন্য
নিপা: আপু আমি আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই
আমি: কি কথা বলো
নিপা: আপনি তো ভাবছেন শ্রাবন আমাকে ভালোবাসে আমাদের মিলিয়ে দিয়ে আপনি চলে যাবেন তাই না
আমি: হুম
নিপা: কিন্তু আমি যে বলবো শ্রাবন আপনাকে ভালোবাসে
আমি: কিভাবে
নিপা: ওর সাথে আমার পরিচয় হবার সময় থেকেই ওর মুখে শুধু আপনার নাম ছিল যখন আমি ওকে প্রপোজ করি ওর প্রথম কথা ছিল আপনার জায়গা আমি কখনো পাবো না, আপনার পাশে একটুখানি জায়গা নিয়ে যদি থাকতে পারি তাহলে সে আমার প্রপোজে রাজি, আমি প্রথম ভেবেছিলাম আস্তে আস্তে আপনাকে ভুলে যাবে কিন্তু আমি সম্পূর্ণই ভুল ছিলাম ও প্রতিটা মুহূর্তে আপনার নাম বলতো আপনার ভাবনায় মেতে থাকতো এসব নিয়ে আমি ঝগড়া করতাম, শেষ পর্যন্ত আমি বুঝে নিয়েছিলাম শ্রাবন আপনাকে কখনো ভুলতে পারবে না তাও আমি চেষ্টা করি আপনাকে ভুলানোর এতে উল্টো শ্রাবন আমাকে অবহেলা করতে শুরু করে তারপর ব্রেকাপ, এখন আপনিই বলুন ও কাকে ভালোবাসে
আমি:(নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি)
রিয়া: তমা আমার কথা সত্যি হলো তো
আকাশ: তমা শ্রাবন আমাকে আজ সব বললো এইটুকুই বলবো কোনো ছেলে কখনোই কোনো ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করতে চায়না ও তোমাকে ভালোবাসে বলেই আমার সাথে ডিভোর্স এর পরও ফিরে এসেছে বিয়ে করতে চাইছে
নিধি: তমা আপু আপনি তো ভাবছেন ভাইয়া আপুর জন্য হসপিটালে দৌড়াদৌড়ি করেছে তাই আপুকেই ভালোবাসে ভুল ধারনা আপনার আমি সেখানে ছিলাম আমি প্রায় সময় দেখেছি ভাইয়া আপুর পাশে বসে থেকে ফোনে আপনার পিক দেখছে তারপরও কি বলবেন ভাইয়া আপনাকে না আপুকে ভালোবাসে
রিয়া: তমা এখনো সময় আছে বুঝার চেষ্টা কর
আমি:(চুপ হয়ে নিচের দিকে থাকিয়ে আছি কি করা উচিত কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না)
নিপার আম্মু: মা তুমি নিপার কথা ভাবছ তো, নিপা খুশি হয়েই সব মেনে নিয়েছে শ্রাবন যেহেতু তোমাকে ভালোবাসে ওর তো জোর করার অধিকার নেই আর তোমার ভালোবাসা ছিনিয়ে নেয়ার প্রশ্নই তো উঠে না যেখানে তুমি অচেনা অজানা এক মেয়েকে কিডনি দিতে চেয়েছিলে
আমি: অভাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আপনারা জানলেন কিভাবে
নিপা: ডক্টর বলেছে সবকিছু
আমি: কিডনি তো আমি দেয়নি কে দিয়েছে সেটা কি ডক্টর বলেছে
নিপা: শুধু বলেছে একটি ছেলে দিয়েছে কিন্তু ছেলেটি কে কেন দিয়েছে কিছুই বলেনি
আমি: হুম
শ্রাবনের আম্মু: মা একটা কথা বলি যদিও কথাটা শুনতে খারাপ লাগবে
আমি: বলুন
মা: নিপার কথা আমি জানতাম না গতরাতে শ্রাবন আমাকে সব বললো আচ্ছা মা একটা প্রশ্ন করি, তোমার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর শ্রাবন অসুস্থ হয়ে পরে আস্তে আস্তে সুস্থ হয় তখন তো ও জানতো তোমাকে আর ফিরে পাবে না তারপরও কি ওর একা থাকা উচিত ছিল….? নিপার সাথে সম্পর্ক করে কি ও অন্যায় করেছে…? ওর কি দোষ ছিল এসবে সব তো তোমার মা করেছিলেন তাহলে আমার ছেলেকে আজ এতো কষ্ট কেন দিচ্ছ বলতে বলতে উনি কেঁদে দিলেন
আমি: (নিশ্চুপ হয়ে সব শুনছি শুধু আসলেই তো শ্রাবনের কি দোষ, আমার বিয়ে হয়ে গেছে ফিরে পাবে না জেনেও শ্রাবন একা থাকবে কেন….?
এতোকিছুর পর ও ফিরে এসেছে বিয়ে করতে চাইছে তারমানে তো ও আমাকেই ভালোবাসে)
আব্বু: তমা একটা কথা বলবো
আমি: হ্যা আব্বু বলো
আব্বু: কখনো তোর কোনো সিদ্ধান্তে বাধা দেয়নি কিন্তু আজ দিচ্ছি, আমিও তোর মা কে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম তাই আমি এসব একটু হলেও বুঝি, ছেলেটা এতোকিছুর পরও তোকে বিয়ে করতে চাইছে এইটা ভালোবাসা না থাকলে কখনোই সম্ভব না মা, তুই চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারিস শ্রাবন তোকেই ভালোবাসে
নিপা: আপু আর কিছু ভাববেন না আপনি শ্রাবনের কাছে যান ও ওর রুমেই আছে
আমি: হুম যাবো তার আগে তোমাকে একটি কথা বলতে চাই
নিপা: কি কথা
আমি: আচ্ছা বলতো একটি ছেলে কতোটা ভালোবাসলে একটি মেয়ে কে তার কিডনি দিতে পারে
নিপা: এই ভালোবাসা পরিমাপ করা যায় না
আমি: মেয়েটা যদি ছেলেটি কে তার জীবন সঙ্গী হিসেবে পায়
নিপা: তার চেয়ে ভাগ্যবতী আর কেউ হবে না
আমি: হুম ভাগ্যবতীটা যদি তুমি হও
নিপা: মানে
আমি: যে তোমাকে কিডনি দিয়েছে সে তোমাকে অনেক ভালোবাসে আর শ্রাবন কে যেহেতু আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছ আমি চাইব ছেলেটির সত্যিকারের ভালোবাসা তুমি গ্রহণ করো
নিপা: কিন্তু ছেলেটি কে
আমি: (হৃদয় কে ডেকে আনলাম নিপা তো দেখে অভাক)
নিপা: হৃদয় তুমি…?
হৃদয়: হুম
আমি: কি গ্রহণ করবে না ওর ভালোবাসা
নিপা: অবশ্যই গ্রহণ করবো কেউ আমাকে এতোটা ভালোবাসে জানতাম না জানলে আগেই গ্রহণ করতাম
আমি: তোমরা কথা বলো আমি গেলাম বলেই দৌড়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে সোজা শ্রাবনের বাসায় আসলাম

শ্রাবনের রুমের দিকে যতো এগুচ্ছি আমার হার্টবিট ততো বাড়ছে, দরজা খুলা দেখে সোজা রুমের ভিতরে ঢুকে গেলাম শ্রাবন খাটে গাঁ হেলিয়ে ফ্লোরে বসে আছে, আমি গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখতেই চমকে উঠলো…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ২১

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ২১

লেখিকা: সুলতানা তমা

–তমা (হঠাৎ রিয়ার ডাকে চোখ খুলে থাকালাম)
–হুম
–শ্রাবন এসেছে
–তো
–দেখ তমা তোর থেকে আমি কম বুঝিনা যে….
–কি বলতে চাইছিস সুজা বল
–শ্রাবনের কথায় মনে হয় ও এখনো তোকেই ভালবাসে তাই যা করবি ভেবে চিন্তে করিস
–হুম
–তোর আব্বুর সাথে কথা বলতে এসেছে শ্রাবন, আঙ্কেল বলে দিয়েছেন তোর সিদ্ধান্তই উনার সিদ্ধান্ত
–হুম
–কি হুম হুম করছিস
–যাতো একা থাকতে দে
–থাক একা

রিয়া রাগ করে চলে গেছে আর ভালো লাগছে না এসব আব্বুকে বলে আগামীকালই এই শহর ছেড়ে চলে যাবো
–তমা
–হুম (শ্রাবন এসেছে)
–আর একটা সুযোগ কি দেওয়া যায় না, তোমার আব্বুও জানিয়ে দিয়েছেন তোমার সিদ্ধান্তই উনার সিদ্ধান্ত
–দেখ শ্রাবন যা হবার হয়ে গেছে এখন নিপা সুস্থ হয়েছে আমি চাই তুমি ওকে বিয়ে করো আর আমি আগামীকাল এখান থেকে চলে যাচ্ছি
–চলে যাচ্ছ মানে কোথায় যাইবা
–কোথায় যাবো জানিনা তবে এই শহর ছেড়ে চলে যাবো
(কথাটা বলার সাথে সাথে শ্রাবন আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে পরলো অঝরে কাঁদছে ও আর দুই হাত জোর করে বলতে লাগলো)
–তমা প্লিজ এতো বড় শাস্তি আমাকে দিও না আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি থাকতে পারবো না তোমাকে ছাড়া একটা সুযোগ অন্তত দাও প্লিজ
–কি করছ তুমি উঠে দাড়াও
–না বল তুমি আমাকে ছেড়ে যাইবা না
আর কিছু না বলে ওকে এই অবস্থায় রেখেই রুমে এসে শুয়ে পড়লাম

সকালে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম, আজ আমি সবার জন্য নাস্তা বানালাম তারপর সবাইকে ডেকে ডাইনিং এ আনলাম, নাস্তা খেতে খেতে আব্বুকে বললাম
আমি: আব্বু আমি আজকেই এই শহর ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছি
আব্বু: (নিশ্চুপ)
আমি: আব্বু কথা বলছ না কেন
আব্বু: আমার কিছু বলার নেই
আমি: কেন
রিয়া: বুঝছিস না কেন আঙ্কেলও চাইছেন তুই শ্রাবনকে ক্ষমা করে দে
আমি: আব্বু তুমি কি এটাই চাইছ (আব্বু কিছু না বলে খাবার না খেয়েই উঠে রুমে চলে গেলেন)
রিয়া: তমা বুঝার চেষ্টা কর শ্রাবন তোকে ভালো না বাসলে এতোকিছুর পরো ফিরে আসতো না
আমি: এতো যে বুঝিস এইটা বুঝিস না কেন ও নিপা কে কি করবে
রিয়া: তমা….
আমি: রিয়া বাদ দে তুই আমার সাথে আপাদত যেখানে যাচ্ছি সেখানে চল আর পিয়াস কে ফোন করে বল তোকে নেওয়ার ব্যবস্থা যেন করে
রিয়া: হুম
আমি: তুলি আব্বু আর তোর জিনিসপত্র গুছিয়ে নে আমরা বিকেলে চলে যাবো
তুলি: আপু
আমি: কি তুইও এখন জ্ঞান দিবি আমাকে
তুলি: না বলেই উঠে চলে গেলো সাথে রিয়াও চলে গেলো
সবাই আমার সাথে এমন করছে কেন, এমন মনে হচ্ছে যে আমি সব দোষ করেছি কিন্তু এখানে তো কারো দোষ নেই

বিছানায় বসে বসে কাপড়চোপড় গুচাচ্ছি তখন হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো, বের হয়ে দেখি ড্রইংরুমে হৃদয় বসা, বুঝলাম না এই ছেলে আমার বাসা চিনল কি করে আর হসপিটাল থেকেই বা এতো তাড়াতাড়ি রিলিজ নিল কেন, এসব ভাবতে ভাবতে ড্রইংরুমে গেলাম
–আপু কেমন আছেন
–ভালো তুমি
–ভালো
–আমার বাসা চিনলে কিভাবে
–কষ্ট করে চিনে নিলাম
–হঠাৎ আমার বাসায় কোনো প্রয়োজন
–বিকেলে চলে যাচ্ছি এখান থেকে তাই ভাবলাম আপনার সাথে দেখা করে যাই
হৃদয়ের সাথে বসে গল্প করছি হঠাৎ কারো বাহ বাহ কথা শুনে দরজার দিকে থাকালাম, শ্রাবন আগুনের মতো চোখ করে আমার দিকে থাকিয়ে আছে
–এজন্যই তো বলি আমার কাছে ফিরে আসছ না কেন
–মানে
–খুব সহজ নতুন কাউকে পেয়ে গেছ তাই আমাকে ক্ষমা করতে পারছ না (কথাটা শুনে খুব রাগ উঠলো চিৎকার করে বললাম)
–এই ছেলেকে দেখে কি তোমার তাই মনে হয় ও তো আমার ছোট ভাইয়ের মতো আর তুমি এসব ভাবছ
–হ্যা ভাবছি নাহলে তুমি আমার কাছে ফিরে আসছ না কেন, আসলে এই ছেলের সাথে তোমার সম্পর্ক আছে
–এতোটাই রাগ উঠলো ঠাস করে ওর গালে একটা তাপ্পর মেরে চিৎকার করে বললাম নিজে যেমন আমাকেও তেমন ভাবছ, আমার চিৎকার শুনে ততোক্ষণে আব্বু রিয়া তুলি সবাই ড্রইংরুমে এসে পরলো, সবার সামনে এভাবে তাপ্পর দেওয়া উচিত হয়নি ও কিছু না বলে আমার দিকে একবার থাকিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো, আমি দফ করে সোফায় বসে পরলাম কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝতেই পারছি না, যাকে ভালো রাখার জন্য এতোকিছু করলাম তাকেই আমি তাপ্পর দিলাম
রিয়া: তমা এখন একটু বেশিই করে ফেলেছিস এভাবে সবার সামনে ওকে অপমান না করলেও পারতি
হৃদয়: আমার জন্য সব হলো
রিয়া: ওর দোষটা শুধু দেখলি ভালোবাসা দেখলি না ও তোকে ভালো না বাসলে অন্য ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে রেগে যেতো না
আব্বুর দিকে থাকালাম আমার দিকে কিছুক্ষণ থাকিয়ে রুমে চলে গেলেন, এখনো আমিই দোষী আর ও যে আমার ভালোবাসা কে অপমান করলো এইটা কিছু না, এতো ভালোবাসি ওকে আর ও কিনা ভাবলো এই ছোট ভাইয়ের বয়সী ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক আছে তাপ্পর দিয়েছি বেশ করেছি

আর বেশিক্ষণ দেরি করলাম না এখানে যতো বেশি সময় থাকবো ততোই অশান্তি বাড়বে তাই আধাঘণ্টার ভিতরে সবাইকে রেডি হতে বললাম, আমিও রেডি হয়ে নিলাম হৃদয়ও রয়েছে একসাথে বেরুবো তাই

সবার মুখ মলিন কিছু করার নেই বেড়িয়ে পরলাম সবাইকে নিয়ে…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ২০

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ২০

লেখিকা: সুলতানা তমা

ছেলেটির সামনে বসে আছি, ছেলেটির জ্ঞান হয়তো একটু আগে ফিরেছে, হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে আর আমি চেয়ারে বসা
ছেলেটি: আপু আমি আপনার সম্পর্কে তেমন কিছু জানিনা আবার অনেক কিছুই জানি মানে ডক্টর যতোটুকু বলেছে ততোটুক জানি
আমি: তোমার নাম জানতে পারি
ছেলেটি: আমি হৃদয়
আমি: আমাকে চিনো কিভাবে
হৃদয়: চিনতাম না হসপিটালে এসে ডক্টর এর কাছ থেকে আপনার সম্পর্কে জেনেছি
–কি কি জেনেছ
–অনেক কিছু তারমধ্যে মজার বিষয় যেটা জেনেছি তা হলো আমরা দুজন এক পথের পথিক
–মানে বুঝলাম না
–মানে হলো আপনি ভালোবাসেন শ্রাবন ভাইয়া কে আর উনি অন্য কাউকে, আমি ভালোবাসি নিপা কে আর ও অন্য কাউকে
–যা আন্দাজ করেছিলাম তাই সত্যি তুমি নিপা কে ভালোবাস
–হুম তিন বছর যাবত ওকে ভালোবাসি কিন্তু ও আমাকে কখনো ভালোবাসেনি কারন আমি ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলাম
–ছিলাম বলতে এখন কি নেই…?
–না নেই এক বছর হলো ও আমার সাথে যোগাযোগ একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে কারন আমি ওকে বার বার ভালোবাসি বলে ডিস্টার্ব করি
–নিপা অসুস্থ জানো কিভাবে
–নিপা আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে আমি না, ওর সব খুঁজ আমি রাখি ওদের রিলেশন যখন হয়েছে তখন আমি জানতে পেরে ওর খুঁজ রাখা বন্ধ করে দেই, দুদিন আগে হঠাৎ ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয় তাই ফোন দেই তখনি ওর ছোট বোন জানায় নিপা হসপিটালে তারপর এখানে আসা
–সবই তো বুঝলাম কিন্তু কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে কেন….?
–সিদ্ধান্তটা এমন ছিল না ডক্টর এর কাছে এসেছিলাম নিপার অবস্থা জানতে তখন উনি আমাকে আপনার সম্পর্কে বলেন আর আপনার সম্পর্কে জেনেই আমি কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই
–কেন…?
–আপনি যদি আপনার ভালোবাসার মানুষ কে ভালো রাখার জন্য তার প্রিয়জন কে কিডনি দিতে পারেন তাহলে আমি কেন আমার ভালোবাসার মানুষ কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কিডনি দিতে পারবো না
–এজন্য দিয়েছ
–হ্যা, আমি এতোটা মহান ছিলাম না ডক্টর এর কাছে আপনার ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা দেখে আমি কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই আর ডক্টর কে নিষেধ করে দেই আপনার কিডনি না নিতে
–হুম বুঝলাম একটা প্রশ্ন করতে পারি….?
–জ্বী অবশ্যই
–নিপা কে এখনো চাও…?
–কেউ কি ভালোবাসার মানুষ কে হারাতে চায়….?
আমিও হারাতে চাইনা ও যদি নিজে থেকে ফিরে আসে তাহলে অবশ্যই চাই আর যদি….
–হুম বুঝেছি, তো নিপাকে কি জানাবা না কিডনি যে তুমি দিয়েছ
–না থাক আমি দূর থেকেই নাহয় ভালবাসি
–হুম
–হুম
–আচ্ছা তুমি রেস্ট নাও আমি আবার আসবো এখন যাই
–ঠিক আছে আপু

কেবিন থেকে বেড়িয়ে আসলাম ভাবছি নিপা কে দেখতে যাবো কিনা হঠাৎ সামনে এসে কে জেনো দাঁড়াল থাকিয়ে দেখি শ্রাবন
–তমা তুমি এখানে
–(এখন কি বলি হৃদয়ের কথা তো বলা যাবে না)
–কি হলো চুপ হয়ে আছ যে
–এইতো নিপাকে দেখতে আসছি
–ঠিক আছে চলো

শ্রাবনের সাথে নিপার কেবিনের দিকে যাচ্ছি, যতো কেবিনের কাছে এগুচ্ছি ততোই যেন বুকে চিনচিনে ব্যাথা বাড়ছে, জানিনা নিপা কি থেকে কি বলে আমাকে দেখে

নিপার কেবিনে ঢুকে দেখি ও ঘুমিয়ে আছে নিপার বোন আর মা পাশে বসা, যাক এবারের মতো বেচে গেলাম নিপা কিছু বলবে এই টেনশন তো আর নেই, তাড়াতাড়ি শ্রাবন কে বললাম
–নিপা তো ঘুমিয়ে আছে আমি নাহয় পরে আবার আসবো এখন যাই
–বাসায় যাইবা
–হুম
–চলো আমিও যাবো
–থাক আমি একা যেতে পারবো
–আমি কি বলেছি একা যেতে পারবা না এতো বেশি কথা বল কেনো, চলো
–হুম

রিক্সায় শ্রাবনের পাশে বসে আছি, কি আজব আগে এই মানুষটা আমার কতো আপন ছিল আর এখন পাশে বসতেও মনে হয় অন্য কারো পাশে বসে আছি
–তমা (হঠাৎ শ্রাবনের ডাকে ওর দিকে থাকালাম)
–হুম
–ভুল শুধরানোর একটা সুযোগ দিবা
–কি ভুল
–ভুল নাকি অন্যায় তা জানিনা কিন্তু আমি তোমাকে ফিরে পেতে চাই
–কিসের ভুল আর কিসের অন্যায়
–নিপার সাথে আমার সম্পর্ক করা ঠিক হয়নি জানি এইটা ভুল করেছি নাকি অন্যায় করেছি জানিনা এখন শুধু একটা সুযোগ দাও প্লিজ আমি তোমাকে ফিরে পেতে চাই
–(নিশ্চুপ)
–তমা প্লিজ বিশ্বাস কর আমি তোমাকে যেমন ভালোবাসতাম এখনো তেমন ভালোবাসি মধ্যে তোমার পাশে নিপা কে একটুখানি জায়গা দিয়েছিলাম, নিপা থাকা অবস্থায়ও আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি সারাক্ষণ তোমার কথা ভাবতাম তাই নিপা আমাকে ভুল বুঝতো এখন তুমিই বলো আমি কাকে বেশি ভালোবাসি
–বাসায় চলে এসেছি
–বলে যাও
–না বলাই থাক (মৃদু হেসে বাসায় চলে আসলাম)

সন্ধ্যা নেমে এসেছে আকাশে দুইএকটা তারা উঠেছে, মৃদু বাতাসের মধ্যে বারান্দায় চোখ দুইটা বন্ধ করে দাড়িয়ে আছি, মাথায় নানান কথা ঘুরপাক খাচ্ছে
পৃথিবীর নিয়ম বড়ই অদ্ভুত আমি ভালোবাসি শ্রাবনকে আর ও নিপাকে, হৃদয় ভালোবাসে নিপাকে আর ও শ্রাবনকে
যদি এমন উলটপালট নাহয়ে দুইটা জুটি হতো তাহলে কতো ভালো হত
আচ্ছা শ্রাবন যে বলে ও আমায় এখনো ভালোবাসে, সত্যিই কি ভালোবাসে…..?

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১৯

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

শ্রাবন: তমা তুমি
আমি: অভাক হচ্ছ কেন আসতে পারি না নাকি
শ্রাবন: না আসলে তুমি তো কাজে গিয়েছিলে
আমি: হুম কাজ শেষ তাই চলে এসেছি
(নিপা আস্তে আস্তে চোখ খুলে আমাদের দিকে থাকালো, শ্রাবন মৃদু হেসে নিপার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিল)
নিপা: আপু আপনি খুব ভাগ্যবতী
আমি: মানে
নিপা: সুস্থ হয়ে মানেটা বলবো এখন কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে (লক্ষ করলাম মেয়েটির চোখ বেয়ে দুফোটা পানি গড়িয়ে পরলো, নিজের কাছে কেমন যেন লাগছে মেয়েটার চোখের পানির জন্য আমি দায়ী নইতো)
শ্রাবন: তমা কি হল কি ভাবছ
আমি: হুম কিছু না
রিয়া: তমা বাইরে চল
আমি: হুম

রিয়া আমাকে নিয়ে কেবিনের বাইরে আসলো
রিয়া: কিরে কি হইছে তোর হঠাৎ এমন চুপ হয়ে গেলি
আমি: নিপা কাঁদছিল আমি লক্ষ করেছি ওর কান্নার জন্য তো আমিই দায়ী
–আমি বুঝি না সবসময় নিজের উপরেই দোষ টেনে নিস কেন
–দোষ টেনে নিলাম কোথায়
–নিপা তোকে ভাগ্যবতী কেন বলেছে বুঝেছিস
–নাহ
–কারন ও বুঝেছে শ্রাবন যে তোকে ভালোবাসে
–(মৃদু হাসলাম)
–হাসছিস কেন
–এমনি
–শ্রাবন তোকে ভালোবাসে এইটা বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো
–হতেও পারে
–একদিন ঠিক বুঝতে পারবি ও যে শুধু তোকেই ভালোবাসে তখন বুঝেও লাভ হবে না
তমা (ডাক শুনে পিছনে থাকালাম শ্রাবন এসেছে)
–হুম বল
–নিপার সাথে আমার একসময় রিলেশন ছিল তাই আমার কর্তব্য ছিল ওর বিপদে পাশে দাঁড়ানো এখন ও সুস্থ তাই আমি তোমাকে খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে চাই
–সব কি তোমার ইচ্ছেতেই হবে আমার ইচ্ছের কোনো মুল্য নেই
–আমি কি তা বলেছি
–না আমি এখন বিয়ে করবো না আর তোমাকে তো একদমই না
–কেন অন্য কাউকে বিয়ে করার চিন্তা করছ নাকি
–হয়তো
–(ঠাস)
–মারলা কেন
–তো কি তোমাকে আদর করবো অন্য কাউকে বিয়ে করার চিন্তা করলে খুন করে ফেলবো বলেই হনহন করে চলে গেলো

গালে হাত দিয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে থাকিয়ে আছি হঠাৎ রিয়ার হাসিতে হুশ ফিরলো
–হাসছিস কেন
–তুই না বলিস ও তোকে ভালোবাসে না তাহলে তাপ্পর মারলো কোন অধিকারে, অন্য কাউকে বিয়ে করবি শুনে এতো রেগে গেলো কেন
–জানিনা চল আমার সাথে
–কোথায়
–চল

রিয়া কে নিয়ে ডক্টর এর চেম্বারে আসলাম
–চাচ্চু আসবো
–হ্যা আসো মা
–চাচ্চু….
–আমি জানি তুমি কেন এসেছ কিন্তু এখনো যে সময় হয়নি সবকিছু বলার
–হুম
–সময় হলে আমিই সব বলবো তোমার আসতে হবে না
–ঠিক আছে আসি তাহলে
–ওকে

চেম্বার থেকে বেড়িয়ে আসলাম, হাটছি আর ভাবছি কে এমন কিডনি দিয়েছে যে আমাকে এখন বলা যাবে না
–কিরে তমা কি ভাবছিস
–ভাবছি নিপা কে কিডনি কে দিলো
–যেই দেয় তাতে তোর কি নিপা সুস্থ হইছে এখন বিয়েটা করে নে
–রিয়া তুইও
–হুম আমিও
–চুপ থাক তো কথা বলতে ভালো লাগছে না
–ওকে

বাসায় চলে আসলাম অজতা হসপিটালে থেকে কি করবো আমার তো আর ওখানে প্রয়োজন নেই, নিপা ভালো হয়ে গেছে শ্রাবন খুশি আর কি চাই,

বারান্দায় বসে আছি হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো হাতে নিয়ে দেখি শ্রাবন রিসিভ করলাম না কেটে দিলাম, বার বার কল দিচ্ছে আর আমি কেটে দিচ্ছি শেষে বিরক্ত হয়ে রিসিভ করলাম
–কি হইছে এভাবে ফোন দিচ্ছ কেন
–সরি
–কেন
–তাপ্পর দেওয়ার জন্য
–তাপ্পর দিয়েছ ভালো করেছ রাগ করিনি খুন করে ফেললে আরো বেশি খুশি হতাম
–কি বলছ এসব
–যা শুনেছ তাই
–এমন করছ কেন বুঝতেছি না
–তোমার নিপা সুস্থ হয়ে গেছে আমাকে আর ফোন না দিলে খুশি হবো
–ঠিক আছে আর ফোন দিব না বাসা তো পাশাপাশি সামনে গিয়ে কথা বলবো
–বাসায়ও আসবা না
–আমার শশুড়ের বাসায় আমি যাবো তাতে তোমার কি
–দুর
ফোন কেটে দিলাম এসব ফাজলামো ভালো লাগছে না ইচ্ছে হচ্ছে দূরে কোথাও চলে যাই
–তমা (ডাক শুনে থাকালাম আব্বু এসেছেন)
–আসো আব্বু
–কি করছিস
–এইতো বসে আছি
–কথা ছিল
–বল
–শ্রাবন বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছিল….
–আব্বু তুমি তো সব জানো
–হ্যা কিন্তু শ্রাবন তো তোকে বিয়ে করতে চাইছে
–অন্য মেয়েকে কষ্ট দিয়ে ও আমাকে বিয়ে করবে এতে কি আমি সুখি হবো
–তুই কি….
–আমি ওকে বিয়ে করতে চাচ্ছি নাহ খুব শীঘ্রই এখান থেকে আমরা চলে যাবো
–ঠিক আছে

আব্বু চলে গেলেন চোখ দুইটা বন্ধ করে বসে আছি হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো, হাতে নিয়ে দেখি ডক্টর রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–হসপিটালে আসতে পারবে মা
–কেন চাচ্চু
–জানতে চেয়েছিলে না কে কিডনি দিয়েছে
–হ্যা
–যে ছেলেটি কিডনি দিয়েছে সে তোমার সাথে কথা বলতে চায়
–ছেলে, কোন ছেলে…?
–বলেছিলাম না পৃথিবীতে স্বার্থহীন ভালোবাসার চেয়ে বড় কিছুই নেই, এই ছেলেও স্বার্থহীন ভাবে ভালোবাসে
–কাকে ভালোবাসে আর এই ছেলেই বা কে
–তুমি আস কথা বল সব জানতে পারবে
–ঠিক আছে আসছি

ফোন রেখে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বাসা থেকে বেরুলাম, রিক্সায় বসে আছি আর ডক্টর এর বলা কথাগুলো ভাবছি, কে এই ছেলে কাকে ভালোবাসে এতোই স্বার্থহীন ভাবে ভালোবাসে যে কিডনি দিয়ে দিল, মাথায় অনেক গুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো কে এই ছেলে….?

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১৮

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

ডক্টর এর চেম্বারে বসে আছি কিন্তু ডক্টর আসার নাম নেই একজন নার্স বললো অপারেশন করছেন নাকি ডক্টর, বসে বসে ডক্টর এর জন্য অপেক্ষা করছি আর একটু পর কি হতে চলেছে আনমনে হয়ে ভাবছি হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো হাতে নিয়ে দেখি শ্রাবন, রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–তমা তুমি কোথায়
–বলেছিলাম না অন্য জায়গায় যাবো চলে এসেছি
–আমাকে না বলে
–গত রাতে তো বলেছি
–হুম নিপা কে দেখতে আসবা না
–দুদিন পর তো ফিরে আসবো তখন নাহয় দেখবো
–আর যদি খারাপ কিছু হয়ে যায়
–কিছু হবে না ভয় পেয়ো না আল্লাহর উপর ভরসা রাখো
–হুম
–আচ্ছা এখন রাখি কাজ আছে
–ওকে

তাড়াতাড়ি ফোনটা রেখে দিলাম গলাটা কেমন যেন ধরে আসছে আর একটু কথা বললে হয়তো চোখ থেকে পানি পরতো কিন্তু আমার কান্না যে ওদের বুঝতে দেওয়া যাবে না

অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি আর ডক্টর এর জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু কোনো খুঁজ নেই বুঝতে পারছি না ডক্টর তো বলেছিল সকাল ১০টায় অপারেশন করবে আর তো বেশি সময় নেই

প্রায় ১০টা বেজে গেছে কিন্তু ডক্টর আসছে না কি করবো বুঝতেছি না হঠাৎ আবার ফোনটা বেজে উঠলো, আবার শ্রাবন ফোন দিয়েছে
–হ্যালো
–তমা একটু পর নিপার অপারেশন হবে দোয়া করো
–অপারেশন হবে মানে
–চমকে উঠছ কেন জানই তো আজ ওর অপারেশন হবে
–কিন্তু কিডনি কোথায় পেলে
–আজব এমন সব কথা বলছ মনে হচ্ছে তুমি কিছুই জাননা, ডক্টরই তো কিডনি পেয়েছে
–কিন্তু
–তমা তুমি ঠিক আছ তো
–হ্যা আচ্ছা এখন রাখি
–ওকে

এইটা কি হলো বুঝতে পারছি না কিডনি দেওয়ার কথা আমার অথচ অপারেশন হয়ে যাচ্ছে তাহলে কিডনি দিল কে, মাথায় কিছু আসছে না কে কিডনি দিতে পারে নাকি কিডনি কিনতে পাওয়া গেছে কিন্তু এক রাতে পাওয়া কিভাবে সম্ভব যেখানে শ্রাবন তিনদিন খুঁজেও পায়নি, ডক্টরও তো আমাকে কিছু জানায়নি

প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেলো বসে বসে এসব ভাবছি কিন্তু কোনো কিছুর আগাগোড়া খুঁজে পাচ্ছি না মাথায় অনেক প্রশ্ন কিডনি কে দিলো যদি কিনতে পাওয়া যায় তাহলে এক রাতে কিভাবে সম্ভব….?
ফোনের রিংটোনে হুশ ফিরলো শ্রাবন ফোন দিয়েছে রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে
–আলহামদুলিল্লাহ্‌
–আচ্ছা তখন তুমি উল্টা পাল্টা বলছিলে কেন
–আসলে কাজে আছি তো মাথাটা ঠিক নেই
–বাসায় কবে আসবা
–জানিনা নিপার জ্ঞান ফিরলে জানিয়ো রাখি এখন
–ওকে

কি যে হচ্ছে মাথায় কিছু ঢুকছে না সবকিছু কেমন যেন রহস্যের মতো লাগছে, এতো তাড়াতাড়ি কিডনি পাওয়া গেলো অপারেশনও হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছি না

ডক্টর এর চেম্বারে বসে বসে রহস্য খুঁজছি হঠাৎ দেখলাম ডক্টর আসছেন হাসি হাসি মুখ, উনি এসে চেয়ারে বসতেই একসাথে প্রশ্ন করা শুরু করলাম
–চাচ্চু কিডনি কোথায় পেলেন অপারেশন যে হয়ে গেলো, একরাতে সবকিছু কিভাবে সম্ভব আর কিডনি পাওয়া গেছে আমাকে জানাননি কেন
–শান্ত হও একসাথে এতো প্রশ্নের উত্তর দিবো কিভাবে
–ঠিক আছে বলুন
–গতকাল রাতে তোমার সাথে কথা বলে ফোন রাখার পর জানতে পারি কিডনি পাওয়া গেছে তোমাকে জানাইনি ভেবেছি অপারেশন করে তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো
–কিন্তু কিডনি দিল কে
–সেটা নাহয় অজানায় থাকুক
–না না চাচ্চু আমি জানতে চাই সবকিছু তে কেমন যেন রহস্য আছে
–হ্যা আছে কিন্তু বলা যাবে না নিষেধ আছে
–কার নিষেধ
–যে কিডনি দিয়েছে
–কিন্তু আমার যে জানাটা প্রয়োজন
–সময় হলে আমিই বলবো
–ঠিক আছে নিপার কি অবস্থা
–৬-৭ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসবে চিন্তা করো না
–হুম
–একটা কথা জানতো মা পৃথিবীতে স্বার্থহীন ভালোবাসার চেয়ে বড় আর কিছু নেই আমার মতে অন্যরা কে কি ভাবে জানিনা
–হঠাৎ এই কথা
–সময় হলে সবই বুঝতে পারবে
–হুম
–আমি বলি কি তুমি বরং নিপার কেবিনে যাও সবাই আছে ওখানে
–কিন্তু ওরা তো জানে আমি দুদিনের কাজে শহরের বাইরে আছি
–তাহলে আরো কিছুক্ষণ পর যাও আর বলবে কাজ শেষ নিপা কে দেখার জন্য চলে এসেছ
–ঠিক আছে

হসপিটালেই সারাটা সকাল কাটিয়ে দিলাম, রহস্য খুঁজতে খুঁজতেই সকালটা কেটে গেলো, এর মধ্যে শ্রাবন ফোন করে জানিয়েছে নিপার জ্ঞান ফিরেছে, বিকেলের দিকে রিয়া কে ফোন করে নিপার কেবিনে আসতে বললাম আমিও গেলাম ওখানে, কেবিনের সামনে নিপার আম্মু আর বোন বসা ভাবছি শ্রাবন কোথায় তখনি নিপার বোন এসে বললো শ্রাবন কেবিনের ভিতরে, ভাবছি যাবো কি যাবোনা ওদের ডিস্টার্ব করা কি ঠিক হবে এসব ভেবে আর ভিতরে গেলাম না বাইরে বসে রইলাম, কিছুক্ষণ পর রিয়া চলে আসলো
–কিরে তমা বাইরে বসে আছিস যে
–ভিতরে শ্রাবন
–তো কি হইছে
–না মানে ওদের ডিস্টার্ব করা কি ঠিক হবে
–হঠাৎ গেলেই তো বুঝা যাবে শ্রাবন কাকে ভালোবাসে
–মানে
–তোর এতো বুঝতে হবে না চল আমার সাথে

আমার হাত ধরে টানতে টানতে রুমের ভিতরে নিয়ে গেলো নিপা শুয়ে আছে শ্রাবন পাশে চেয়ারে বসা, আমাকে দেখেই শ্রাবন চমকে উঠলো হয়তো আমার এভাবে হুট করে আসাটা ঠিক হয়নি, নিপা তো আমাকে চিনে না এখন কি বলবে আর এই অবস্থায় নিপা কে সত্যিটা কিভাবে বলবে এসব ভেবেই হয়তো চমকে উঠেছে…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১৭

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

কলিংবেল এর শব্দ শুনেও গেলাম না ইচ্ছে হচ্ছে না রুমেই শুয়ে রইলাম, একটু পর আমার রুমে কারো আসার শব্দ পেলাম থাকিয়ে দেখি শ্রাবন, একদম শুকিয়ে গেছে হয়তো নিপার চিন্তায়, কিছু না বলে ওর দিকে থাকিয়ে আছি ও এসে আমার পাশেই খাটে বসলো
–তমা
–হুম
–এই অসময়ে শুয়ে আছ যে
–এমনি
–আমি খুব স্বার্থপর তাই না
–হঠাৎ এই কথা কেন
–এইযে নিপার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে তোমার কোনো খুঁজ নেইনি
–(মৃদু হাসলাম)
–নিপা সুস্থ হলে ওকে জিজ্ঞেস করো আমি কাকে বেশি ভালোবাসি
–থাক না এখন এসব কথা
–কিন্তু তুমি যে আমায় ভুল বুঝে বসে আছ
–নাতো
–বিশ্বাস করো আমি তোমাকেই ভালোবাসি তোমার পাশে নিপাকে একটুখানি জায়গা দিয়েছিলাম শুধু
–বাদ দাও তো এখন এসব কথা
–হুম

দুজনেই চুপচাপ হয়ে আছি, আমি দেয়াল ঘড়িটার দিকে থাকিয়ে আছি আর ও আমার দিকে এক দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছে, কিছুক্ষণ পর ও আমার মাথার পাশে এসে বসলো আমার মাথা ওর কোলে নিয়ে আমার দিকে থাকিয়ে রইলো, আজকে ওর কোলে শুতে কেমন যেন লাগছে ও যে এখন আর আমার নেই তাই হয়তো

ওর কোলে চুপ করে শুয়ে আছি হঠাৎ আমার গালে এক ফোটা পানি পড়ল চমকে উঠে ওর দিকে থাকালাম পাগলটা কাঁদছে, লাফ দিয়ে উঠে বসে জিজ্ঞেস করলাম কি হইছে কিছু না বলে আমার দুগালে ধরে কপালে একটা মায়া দিল তারপর আমাকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো, পাগলটার সামান্য কষ্ট সহ্য করতে পারি না চোখের পানি কিভাবে সহ্য করবো, আমিও কাঁদতে কাঁদতে ওর দুগালে ধরে জিজ্ঞেস করলাম
–কি হইছে এভাবে কাঁদছ কেন
–তমা বিশ্বাস কর আমি তোমাকে ভালোবাসি
–তাই বলে এভাবে কাঁদবা
–তুমি তো বলেছ নিপা সুস্থ হলে আমাকে ছেড়ে চলে যাইবা আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না
–আচ্ছা এখন এসব নিয়ে ভাবছ কেন নিপার অপারেশন করাতে হবে তো
–হুম করাবো মানবতার কারনে কিন্তু আমি ভালোবাসি তোমাকে, তুমি ছিলে না ফিরে পাবো না তাই তোমার পাশে নিপাকে একটু জায়গা দিয়েছিলাম বিশ্বাস করো আমার সবকিছু জুরে তুমি আছ
–হুম
–নিপার সাথে তো ব্রেকাপ হয়ে গেছিল আমি ভুলেও গিয়েছিলাম তুমি ফিরে এসেছ এর চেয়ে বড় পাওয়া আমার আর কি হতে পারে
–শ্রাবন এখন এসব কথা বাদ দাও নিপার অপারেশন করাও
–হুম
–এই নাও টাকা (টাকা এনে ওর হাতে দিলাম)
–টাকা দিলে আগামীকাল সকালেই অপারেশন করবে ডক্টর বলেছে
–ঠিক আছে করাও টাকা আরো লাগলে বলো আর আমি হসপিটালে থাকতে পারবো না এতিমখানার কাজে দুদিনের জন্য বাইরে যাবো
–মানে
–যা শুনেছ তাই ফোন করবো সবসময়
–না গেলে হয়না
–নাহ
–হুম
–এখন যাও অপারেশন এর ব্যবস্থা করো
–হুম

শ্রাবন চলে গেলো নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকলাম, আমি তো এমন কিছু চাইনি চেয়েছিলাম দুজনের ছোট্ট একটা সংসার হবে অন্য কিছুর অভাব থাকলেও ভালোবাসার অভাব থাকবে না আর এখন কিনা দুজনকেই কাঁদতে হচ্ছে, নিপা সুস্থ হলে এসব জানলে পর হয়তো তিনজন কেই কাঁদতে হবে, কিন্তু আমার কান্না যে ওদের দেখানো যাবে না ওদের কে সুখে রাখতে হলে নিজেকে পাথর বানাতে হবে, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো ডক্টর ফোন দিয়েছে
–হ্যালো
–তুমি চাইলে আগামীকাল সকাল ১০টায় অপারেশন করবো যতো তাড়াতাড়ি করা হবে ততোই ভালো হবে
–ঠিক আছে আমি সকালে চলে আসবো
–ওকে

ফোনটা রাখার পর ভিতরে কেমন যেন এক অজানা ভয় হচ্ছে যদি আমার কিছু হয়ে যায় কি হবে আব্বু আর তুলির ওদের ভরসা তো এখন আমি কি হবে রিয়া পাগলীটার ও যে আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না
–আম্মু আসবো (দরজায় থাকিয়ে দেখি আব্বু এসেছেন)
–আসো
–কিরে মন খারাপ
–হুম একটু
–কেন
–আমি এখন তোমার কাছে যেতাম
–কেন কোনো প্রয়োজন
–হ্যা
–বল
–আব্বু এতিমখানার কাজে দুদিনের জন্য একটু শহরের বাইরে যেতে হবে (এতো বড় মিথ্যে আব্বুকে বলতে গিয়ে গলা কেঁপে কেঁপে উঠছে)
–তুই না গিয়ে অন্য কেউ গেলেও তো হয়
–আমাকেই যেতে হবে আব্বু
–একা একা যাবি…
–কিছু হবে না ফোন করবো বার বার
–ঠিক আছে কখন যাবি
–সকালে
–আচ্ছা
আরো কিছুক্ষণ আব্বু আর আমি গল্প করলাম তারপর আব্বু চলে গেলেন, এতোক্ষণ আব্বুর সামনে খুব কষ্ট করে চোখের পানি আটকে রেখেছিলাম এখন আর পারছি না, অনেকদিন হলো আম্মুর ছবিটা জরিয়ে ধরে কাঁদি না তাই আম্মুর ছবিটা আলমারি থেকে বের করে আনলাম, এক দৃষ্টিতে ছবিটার দিকে থাকিয়ে আছি এই আম্মুটা বেঁচে থাকলে হয়তো আমার জীবনে এতো কষ্ট আসতো না, আম্মুর ছবিটা জরিয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতে পারিনি

সকালে খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো, উঠে ফ্রেশ হয়ে আস্তে আস্তে নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করলাম, কিছুটা ভয়ও হচ্ছে তাও যে আমাকে যেতেই হবে

রেডি হয়ে রিয়া কে কোনো ভাবে বুঝিয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে…..

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১৬

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

–তমা এই তমা (হঠাৎ রিয়ার ডাকে হুশ ফিরলো)
–কিরে তমা তোকে খুশি খুশি লাগছে
–হুম কারন কিডনির ব্যবস্থা হয়ে গেছে
–আমি বুঝতে পারছি না যে মেয়ের জন্য তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো সেই মেয়েকেই বাঁচানোর জন্য এতো চেষ্টা কেন করছিস
–তুই বুঝবি নারে
–হুম আমি তো পিচ্ছি কিছু বুঝি না তা কিডনি কোথায় পেলি
–পেয়েছি এখন বলা যাবে না আগে নিপার অপারেশন হউক
–এই তোর মতলব কি বল তো কিডনি কোথায় পেলি সত্যি করে বল
–সময় হলে বলবো এখন যা একা থাকতে দে
–হুম

রিয়া চলে গেলো, সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম নিপাকে একটি কিডনি দিব তাতে নিপাও বাঁচবে শ্রাবনকে নিয়ে আমিও বাঁচবো আব্বু আর তুলিকে নিয়ে কিন্তু আমি কিডনি দিব শুনলে তো কেউ রাজি হবে না তাহলে দিব কিভাবে
না কাউকে বলা যাবে না এমনকি শ্রাবনকেও না, আগে ডক্টর এর সাথে কথা বলি সব ঠিক করি তারপর দেখা যাবে, সময় খুব অল্প যত তাড়াতাড়ি অপারেশন করা হবে ততোই ভালো

নিপার চিকিৎসা যে ডক্টর করছেন উনার সামনে বসে আছি
ডক্টর: সব তো শুনলাম মা কিন্তু
আমি: চাচ্চু প্লিজ কোনো কিন্তু না আর আমি তো কাউকে খুন করতে চাইছি না একটি প্রাণ বাঁচাতে চাচ্ছি
–তা ঠিক তাও মা এভাবে একজন কে বাঁচাতে গিয়ে অন্যজন কে…..
–আমি তো আর মারা যাবো না দুটি কিডনি নিয়ে দুজন বেঁচে থাকবো
–ঠিক আছে আমি দেখছি
–চাচ্চু প্লিজ বিষয়টা যেন লোকানো থাকে আমার পরিবারের কেউ জানলে কিডনি দেওয়া আর হবে না
–তোমাকে তো নিম্নেও দুদিন হসপিটালে ভর্তি থাকতে হবে তাহলে লুকিয়ে কিভাবে সম্ভব
–এসব আমি ব্যবস্থা করবো আপনি শুধু অপারেশন এর ব্যবস্থা করুন আর শ্রাবনকে বলুন কিডনি আপনি পেয়েছেন
–ওকে
–সব ব্যবস্থা করে আমাকে জানিয়ে দিবেন কখন হসপিটালে এসে ভর্তি হতে হবে
–ঠিক আছে মা
–আসি চাচ্চু

হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে আসলাম, রিক্সায় বসে আছি আর ভাবছি আমি কোনো ভুল করছি না তো….?
ভুল হবে কেন একজন মানুষের প্রাণ বাঁচানো কি কোনো অপরাধ নাকি, আমি তো কোনো অপরাধ করছি না একজন কে বাঁচাবো তাতে একজন মা তার সন্তান কে ফিরে পাবে, একজন বোন তার বড় বোনকে ফিরে পাবে, আর একজন প্রেমিক ফিরে পাবে তার ভালোবাসা, সবাই ভালো থাকবে এর চেয়ে ভালো কিছু আর আছে নাকি, নাহ এই কাজে কোনো ভুল হবে না কিন্তু বাসায় কি বলবো দুদিন যে হসপিটালে থাকতে হবে আমাকে

বাসায় এসে শুয়ে পরলাম ভালো লাগছে না কিছু, হঠাৎ তুলি আসলো
–আপু এই সময় শুয়ে আছ যে
–এমনি
–আপু একটা কথা
–বল
–আমি আবার স্কুলে ভর্তি হতে চাচ্ছি
–ঠিক আছে ভর্তি করে দিব
–আপু তোমার কি হইছে
–কই কি
–একদম চুপচাপ হয়ে গেছ
বেশি মহান হতে গেলে এমনই হয় (কথাটা শুনে দরজায় থাকালাম রিয়া এসে হাজির)
রিয়া: আর কতো মহান হবি
আমি: রিয়া এভাবে বলছিস কেন
রিয়া: তো কি বলবো শ্রাবন যেহেতু বলছে ও তোকেই ভালোবাসে তাহলে কেন নিপার হাতে তুলে দিতে চাচ্ছিস
আমি: তোরও বিশ্বাস হয় শ্রাবন আমাকে ভালোবাসে
রিয়া: হ্যা
আমি: পাগল হয়ে গেছিস
তুলি: আপু রিয়া আপু পাগল হয়নি তুমি পাগল হইছ
আমি: তুলি তুইও
তুলি: আমি ছোট এসব বুঝি না তাও তোমার অবস্থা দেখে এইটুকু বুঝতে পারছি তুমি পাগল হয়ে গেছ
আমি: তোরা দুইটা আমার রুম থেকে যা তো
রিয়া: সত্যি কথা সবসময় তেতোই লাগে বলেই তুলিকে নিয়ে চলে গেলো

আর পারছি না খুব কষ্ট হচ্ছে চোখ ফেটে যেন পানি না রক্ত আসতে চাইছে, আমি কি করবো এখন শ্রাবনকে আমার করে নিলে নিপার কাছে স্বার্থপর হয়ে যাবো যদি নিপার কাছে দিয়ে দেই আমার আপনজনরা কষ্ট পাবে আমি তো পাবোই, কোন পথ বেচে নিবো আমি এখন….?
উফফফ খুব কষ্ট হচ্ছে আর পারছি নাহ

শুয়ে শুয়ে ভাবছি আব্বুকে কি বলে দুদিনের জন্য হসপিটালে যাবো হঠাৎ রহিম চাচার কথা মনে পরলো, তাড়াতাড়ি ফোন দিলাম
–হ্যালো
–চাচা একটু সাহায্য করবা
–কি মা বল
–আমি দুদিনের জন্য একটু বাইরে যেতে চাচ্ছি কিন্তু বাসায় বলা যাবে না অন্যকিছু বলে যেতে হবে তুমি একটু মিথ্যে বলবে আমার জন্য
–কি মিথ্যে
–আমি বাসায় বলে যাবো এতিমখানার কাজে বাইরে যাচ্ছি আমার বাসার কেউ যদি তোমাকে জিজ্ঞেস করে তাহলে তুমিও বলো এতিমখানার কাজেই পাঠিয়েছ
–তা না হয় বলবো কিন্তু মা তুমি যাবে কোথায় যদি তোমার কোনো বিপদ হয়
–ভালো কাজেই যাচ্ছি চাচা চিন্তা করো না
–ঠিক আছে মা
–রাখি চাচা

ফোন রেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম অন্তত বাসার জামেলা তো মিটে গেলো এখন নিপার অপারেশনটা ভালো ভাবে হলেই হয়, ফোনটা বেজে উঠলো শ্রাবন ফোন দিয়েছে হয়তো কিডনি পাওয়া গেছে এইটা জানতে পেরেছে, রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–তমা কিডনি পাওয়া গেছে
–কোথায় পেলে
–ডক্টর বললো হসপিটালেই পাওয়া গেছে
–ঠিক আছে ডক্টর কে বলো অপারেশন এর ব্যবস্থা করতে আর ব্যাংক থেকে টাকা তুলে রেখেছি বাসায় এসে নিয়ে যাও
–ঠিক আছে আসছি

নিপা সুস্থ হলেই শ্রাবন সারাজীবন এর জন্য আমার থেকে পর হয়ে যাবে আমাকেও এই শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে, শহর ছেড়ে যাবো কোনো দুঃখ নেই শ্রাবন ভালো থাকলেই হলো, ওকে ভালো রাখতে এর চেয়ে বড় কিছুও আমি করতে রাজি, এসব আনমনে হয়ে ভাবছি তখনি হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো……

চলবে?

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১৫

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

আব্বু: তমা টাকাটা যদি আমি না দেই
–নিপা মারা যাবে নিপা মারা গেলে শ্রাবন কষ্ট পাবে আর শ্রাবন কষ্ট পেলে আমি কষ্ট পাবো এখন বল তুমি কি আমাকে কষ্টে দেখতে চাও
–এখন কি কম কষ্টে আছিস
–হুম কষ্টে আছি কিন্তু যখন দেখবো শ্রাবন নিপাকে নিয়ে সুখে আছে তখন হয়তো আমিও ভালো থাকবো
–শ্রাবনের জন্য আকাশকে মেনে নিলি না এখন তো দুটিই হারালি
–আমি শ্রাবন ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবো না তাই আকাশকে মেনে নেই নি তাছাড়া আকাশ আর মেঘা আপু দুজন দুজনকে ভালোবাসে
–হুম তোর যা ভালো মনে হয় কর টাকা নিয়ে নিস
–আচ্ছা

আব্বু চলে গেলেন ভাবছি শ্রাবনকে ফোন করে বলবো টাকাটা যেন নিয়ে নেয় তখনি শ্রাবনের ফোন আসলো
–হ্যালো
–তমা টাকা….
–হুম আব্বু বলেছেন নিতে
–কিন্তু কিডনি
–খুঁজতে তো হবে
–অনেক হসপিটাল তো খুঁজলাম পাইনি যদি আর কোথাও না পাই
–(চুপ হয়ে আছি শ্রাবনের গলা কেমন যেন কাঁপছে কথা বলতে পারছে না এইটা থেকেই তো বুঝা যায় ও নিপাকে খুব ভালোবাসে নিপা মারা গেলে….)
–চুপ হয়ে আছ যে
–এমনি খুঁজে দেখো না পেলে তো কোনো একটা ব্যবস্থা করতে হবে
–হুম
–আচ্ছা রাখি
–হুম

ফোন রেখে চুপ করে বসে আছি চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি ঝরছে, শ্রাবন নিপাকে কতোটা ভালোবাসে সেটা ওর কন্ঠ শুনলেই বুঝা যায়, আচ্ছা আমার কি অপরাধ ছিল আমি কি ওকে কম ভালোবাসছিলাম যে ও অন্য কাউকে ভালোবাসল….?
রিয়া: তমা খেতে আয়
–খাবো না এখন
–দেখ তুই এমন করলে আমি পিয়াস এর কাছে চলে যাবো
–হুম
–সিদ্ধান্ত তো নিয়ে ফেলছিস এখন কেঁদে কি হবে
— কষ্ট ভুলতে তো একটু সময় লাগবেই বাদ দে বল তো কিডনি কোথায় পাই
–তোর যা খুশি কর আমি এসবে নেই বলেই হনহন করে হেটে চলে গেলো

আচ্ছা ও আমাকে রাগ দেখাচ্ছে কেন আমার কি করার আছে আমি কি নিপার কাছ থেকে শ্রাবনকে কেড়ে নিয়ে আসবো…?

রাতে শ্রাবন আবার ফোন দিল কিডনি পাওয়া যায়নি, শ্রাবনের কন্ঠটা আগের চেয়ে বেশি কাঁপছে কি করবো ভেবে পাচ্ছি না, পরিচিত কয়েকজন কে ফোন দিলাম নাহ কেউ কিডনির সন্ধান দিতে পারলো না, এতো বড় শহরে এতো গুলো হসপিটাল অতচ একটা কিডনি পাওয়া যাচ্ছে না, আচ্ছা যদি নিপা মারা যায়….?
নাহ আর ভাবতে পারছি না কিছু একটা ব্যবস্থা তো করতে হবে

সকালে ঘুম থেকে উঠেই রেডি হয়ে হসপিটালে গেলাম নিপার আম্মু আর নিধি কাঁদছে আমাকে দেখে নিপার আম্মু জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলেন, একজন মায়ের কান্না একজন বোনের কান্না শ্রাবনের কষ্ট আর সহ্য হচ্ছে না কিন্তু কি করবো আমি কি করার আছে আমার

নিধি আর ওদের আম্মুর কাছে বসে আছি একটু পর শ্রাবন আসলো
–তমা তুমি
–কেন আসতে পারি না
–তা তো বলিনি
–হুম
–একটু বাইরে চল কথা আছে
–চলো

শ্রাবন আমাকে নিয়ে হসপিটালের বাইরে আসলো
–তমা তুমি কিন্তু ভুল বুঝে বসে আছ
–কিসের ভুল বুঝলাম
–তুমি আমাকে ফোন দাও না কেন এমন এড়িয়ে চলছ কেন
–কোন অধিকারে ফোন দিব
–জানো না
–নাহ
–দেখ তমা আমি তোমাকে আগেও বলেছি এখনো বলছি আমি তোমাকেই ভালোবাসি আর তোমাকে ভুলিনি তোমার জায়গায় তুমি ছিলে তোমার পাশে শুধু নিপা কে একটু জায়গা দিয়েছিলাম
–শ্রাবন এখন এসব বলার সময় না নিপাকে কিভাবে বাঁচাবে সে চিন্তা কর
–নিপা সুস্থ হলেই তো তুমি আমাকে ওর হাতে দিয়ে দিবা
–হয়তো
–তমা…
–তুমি এমন করলে আমি বাসায় চলে যাবো
–প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো
–থাকো তুমি আমি চলে যাচ্ছি

শ্রাবন পিছন পিছন ডাকলো না শুনে বাসায় চলে আসলাম, আর কি শুনবো আমাকে ভালোবাসে….?
তাহলে নিপা কে কি করবে আর ভালো লাগছে না এসব ইচ্ছে হচ্ছে আত্মহত্যা করে এই নিষ্টুর দুনিয়া থেকে বিদায় নেই কিন্তু পারছি না আব্বু আর তুলি যে একা হয়ে যাবে, আমার সাথে যে কেন বার বার এমন হয় বুঝি না

বারান্দায় দাড়িয়ে আছি আর নিজেকে শান্তনা দিচ্ছি এইটা ভেবে ভালোবাসলেই যে নিজের করে পেতে হবে এমন তো না, ভালোবাসার মানুষ কে সুখে দেখাতেই তো প্রকৃত সুখ, আমি নাহয় একাই থাকলাম শ্রাবন ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকবো কিন্তু শ্রাবনকে ভালো রাখতে গেলে যে নিপাকে সুস্থ করে তুলতে হবে, কিডনি কোথায় পাবো নিপা মারা গেলে যে আমার শ্রাবন অনেক কষ্ট পাবে
আচ্ছা নিপা সুস্থ হলে পর তো ওদের বিয়ে হবে আমি তখন কি করবো, আমার কি ওদের বিয়েতে উপস্থিত থাকাটা মানাবে নাকি বিয়ের আগেই অনেক দূরে চলে গেলে ভালো হবে….?
আচ্ছা নিপাকে বিয়ে করার পর কি শ্রাবন আমাকে ভুলে যাবে….? দূর কি ভাবছি এসব বউ রেখে কি কেউ অন্য মেয়েকে মনে রাখে শ্রাবন আমাকে ভুলে যাবে এটাই তো স্বাভাবিক
আচ্ছা শ্রাবন তো আমাকে ভুলে গেছেই ভুলতে না পারলে কি নিপাকে ওর মনে জায়গা দিতে পারতো

থাক এসব আর না ভাবা-ই ভালো, আমার কথা আর নাইবা ভাবলাম শ্রাবন সুখি হউক এটাই আমি চাই, কিন্তু শ্রাবনকে সুখে রাখতে হলে তো নিপাকে প্রয়োজন, কিভাবে ফিরিয়ে আনবো আমি নিপাকে, কিডনি কোথায় পাবো কিভাবে সুস্থ করে তুলবো ওকে

হঠাৎ মনের ভিতর কেমন যেন করতে লাগলো, একটা কথা শুধু মনে হচ্ছে ভালোবাসার মানুষ কে সুখে রাখতে তো কিছু ত্যাগ করাটা অপরাধ হবে না, নিপাকে একটি কিডনি যদি আমি দিয়ে দেই…..

চলবে?