Wednesday, August 13, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2407



শ্বশুড়েরশর্তেবিয়ে (পর্ব:-৫)

0

শ্বশুড়েরশর্তেবিয়ে (পর্ব:-৫)
!!
#লেখা :- মোহাম্মদ সৌরভ
!!
তোমার বউ ক্লাবে অন্য ছেলেদের সাথে নাচা নাচি করতেছে। বাহা যে ডাঞ্চ করতেছে তা যদি ফেসবুকে ছাড়িনা তাহলে ১০ মিনিটে ১০০০ ভিও হবে। আমি অনেক খুসি হয়ছি তোমার কপালে এমন একটা বউ পড়ছে।
!!
আমি:- রিপা তুমি এইটা বলার জন্য ফোন করেছো আমাকে?
!!
রিপা:- না তবে তোমার বউ যে সব ছেলেদের সাথে নাচতেছে ঐ ছেলে গুলা একদম ভালোনা। তুমি ড্রিম হোটেলে এসে সোনালীকে নিয়ে যাও।
!!
আমি:- ঠিক আছে, ছাদের উপর থেকে তারা তারি করে নিছে নেমে এসেছি আমি বাসা থেকে বের হবো তখনি,,,
!!
শ্বশুড়:- আরে সৌরভ জামাই বাবা জ্বি তুমি এত তারা হুরা করে কোথায় যাচ্ছো?
!!
আমি:- আব্বাজান এখন কিছু বলতে পারবো না এসে তারপর বলবো।
!!
শ্বশুড়:- আরে জামাই এত তারা কিসের চলো আমার সাথে দুজনে বসে চা খাবো আর আমার বন্ধুদের সাথে আলাপ করিয়ে দেবো।
!!
আমি:- পরে আলাপ করবো বলে দৌরে বাসা থেকে বের হয়ে একটা সি এন জি নিয়ে ড্রিম হোটেলের কাছে গেলাম। হোটেলে ঢুকে দেখি সোনালী তার ববান্ধবীদের সাথে বসে আছে আর সবার সাথে হাসা হাসি করছে। আরে রিপা যে বলছে সোনালী নাচা নাচি করতেছে তাহলে কি মিথ্যা কথা বলছে রিপা? সোনালী দেখার আগেই আমি ওদাও হতে হবে তা না হলে পুরা লঙ্কা কান্ড শুরু হয়ে যাবে। আমি চুপি চুপি বের হয়ে আসবো তখনি চেয়ে পেছন থেকে কেও একজন হাত ধরেছে তাকিয়ে দেখি রিপা,,,
!!
রিপা:- আরে সৌরভ চলে যাচ্ছো কেনো অনেক দিন পর তোমাকে কাছে পেয়েছি আর তুমি চলে যেতেছো?
!!
আমি:- রিপা তুমি মিথ্যা কথা কেনো বলছো?
!!
রিপা:- যদি মিথ্যা কথা না বলতাম তাহলে কি তুমি আসতে?
!!
আমি:- ছাড়ো বলছি তোমার মত মেয়েকে এই জন্য আমি বিয়ে করিনি তাও রিপা আমার হাত ধরে রাখছে।
!!
রিপা:- প্লিজ আমাকে তুমি ভূল বুঝতেছো কেনো আমি তো তোমাকে ভালোবাসি তাইনা বলে রিপা আমাকে জোর করে জড়িয়ে ধরেছে আমি রিপাকে ছাড়াতে চেষ্টা করতেছি তখনি সোনালী আমার সামনে এসেছে,,,
!!
সোনালী:- বাহ বাহ অনেক সুন্দর লাগছে আরেকটু জড়িয়ে ধরে রাখো আমি ভালো করে ভিডিওটা করি।
!!
আমি:- আরে সোনালী কি করছো বলে রিপাকে এক জাটকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়েছি। রিপাকে একটা থাপ্পড় দিয়ে সোনালীর কাছে গেছি আরে সোনালী ভিডিও করতেছো কেনো?
!!
সোনালী:- তুমি কেনো আমার সাথে আসতে চাওনি তা এখন বুঝতে পারছি। আমি আজকে আব্বুকে এই ভিডিওটা দেখিয়ে তোমার বারোটা বাজাবো।
!!
আমি:- আরে আমি জড়িয়ে ধরছি নাকী রিপা তো আমাকে জড়িয়ে ধরছে। আর তুমি না গায়ের হলুদে যাবে তাহলে এখানে কি করছো আমিও আব্বাজানকে সব কিছু বলে দিবো।
!!
সোনালী:- আমি তো গায়ের হলুদে আসছি এখানে গায়ের হলুদের অনুষ্টান হচ্ছে ঐ দিকে তাকিয়ে দেখো আমার বান্ধবী প্রিয়া বসে আছে গায়ের হলুদের সাজে। অনুষ্টান শেষ আমি বাড়ীতে যেতেছি আর আজকে তোমার কপালে সনীর দশা আছে।
!!
আমি:- আরে জানেমান কোথায় যাচ্ছো? আজকে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে চলো দুজনে ফুসকা খাবো কেমন?
!!
সোনালী:- ফুসকা খাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেয় আজকে তোমার কোনো রক্ষা নেয়। তবে একটা শর্তে আমি তোমার ভিডিওটা ডিলেট করতে পারি।
!!
আমি:- বলো কি শর্ত আমি তোমার সব শর্তে রাজি আছি।
!!
সোনালী:- এখন থেকে আমার সব কথা শুনে চলতে হবে, আমি যা বলবো তাই করতে হবে আমার সাথে কোনো রকম রাগ দেখিয়ে চলতে পারবে না। আর আব্বুর সামনে আমার হাত ধরে রোজ হাটতে যেতে হবে।
!!
আমি:- তোমার সব শর্তের কথা রাজি আছি শুধু আব্বাজানের সামনে তোমার হাত ধরে হাটতে পারবো না।
!!
সোনালী:- ঠিক আছে তাহলে আমি আব্বুকে ভিডিওটা সেন্ড করে দিতেছি। লাস্ট বারের মত বলতেছি তুমি আমার সব শর্তে রাজি আছো?
!!
আমি:- ঠিক আছে রাজি আছি তখনি সোনালী রিপাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছে।
!!
সোনালী:- দোস্ত তোকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে সাহায্য করার জন্য।
!!
আমি:- মানে রিপা তোমার সাথে হাত মিলিয়ে এই কাজ করেছে?
!!
রিপা:- সোনালী আমাকে সবকিছু বলছে আর সোনালী আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ওকে হেলপ করবোনা তো কাকে করবো।
!!
আমি:- বুঝতে পারছি আমার সাথে সবাই মিলে মজা নিতেছে, তুমি থাকো আমি গেলাম বলে চলে আসতেছি তখনি সোনালী দৌরে এসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরছে। আরে ছাড়ো জড়িয়ে ধরছো কেনো?
!!
সোনালী:- আমার স্বামীকে আমি জড়িয়ে ধরবো কিস করবো তাতে তোমার কি? চলো ফুসকা খাবো তারপর বাসায় যাবো দুজনে।
!!
আমি:- থাক আজকে আর ফুসকা খেতে হবে না এমনিতেই আমার বারোটা বাজবে এখন চলো?
!!
সোনালী:- কি তুমি ফুসকা খাওয়াবে না?
!!
আমি:- হ্যা খাওয়াবো চলো সোনালীকে নিয়ে ফুসকা খেতে এসেছি, দুই প্লেট ফুসকা খেয়েছে সোনালী আমাকে ও নিজেই খায়িয়ে দিয়েছে। আচ্ছা সোনালী তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে তোমার বাবার শর্ত গুলা শেষ করতে?
!!
সোনালী:- করতে পারি যদি আমাকে অনেক ভালোবাসো তাহলে।
!!
আমি:- ঠিক আছে, তাই হবে আর আমি তো তোমাকে অনেক লাভ করি এখন চলো।
!!
সোনালী:- হ্যা চলো আমি আর সোনালী দুজনে দুষ্টমি করতে করতে বাসায় আসলাম। দরজার কলিং বেল বাজাতেই সোনালী আমার হাত জড়িয়ে ধরেছে তখনি সোনালীর আব্বু মানে আমার শ্বশুড় মসায় এসে দরজাটা খুলে দেখে সোনালী আমার হাতটা জড়িয়ে ধরে রাখছে,,,,
!!
চলবে,,,,,,,

শ্বশুড়েরশর্তেবিয়ে (পর্ব:-৪)

0

শ্বশুড়েরশর্তেবিয়ে (পর্ব:-৪)
!!
#লেখা :- মোহাম্মদ সৌরভ
!!
শ্বশুড় মসায়কে ভিডিও কল করাটা কি বেশি জুরুরী ছিলো? এখন তো শ্বশুড় আমার বারোটা বাজাবে! ফোনটা কাটো বাসায় গিয়ে যা বলার বলো?
!!
সোনালী:- তাহলে আর কোনো দিন স্পর্শ করবে না আমাকে বলো?
!!
আমি:- ঠিক আছে ভূল করেও কোনো দিন তোমাকে স্পর্শ করবো না। তখনি সোনালী কলটা কেটে দিয়েছে! আমি চুপ চাপ বসে আছি তবে কিছুটা ঘুম পাচ্ছে তাই চোখ বন্ধ করে রাখছি। কিছুক্ষণ পর হঠাত কাদের উপর কারো স্পর্শ পেলাম চোখ খুলে দেখি সোনালী মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে আমিও মোবাইলে কিছু ছবি তুলে নিলাম। প্রায় ঘন্টা তিনেক পর আমার শ্বশুড় বাড়ীতে এসেছি গাড়িটা থামতেই সোনালী ঘুম থেকে উঠে মাথাটা তুলে নিয়েছে।
!!
সোনালী:- সরি আমি বুঝতে পারিনি আমার চোখে ঘুম পাচ্ছিলো আর আমি ঘুমায় গেছিলাম।
!!
আমি:- ঠিক আছে, এখন নামো গাড়ি থেকে নেমেছি এমনি শ্বশুড় শ্বাশুড়ি এসে হাজির। আমি ওনাদের সালাম দিয়ে ভালো মন্দ জিগেস করেছি। ওনি সালামের উত্তর নিয়ে আমাকে বলে,,,,
!!
শ্বশুড়:- জামাই বাবা জ্বি কেমন আছো তুমি?
!!
আমি:- হ্যা ভালো আছি, তা আপনার শরীর সাস্থ ভালো আছে?
!!
শ্বশুড়:- হ্যা অনেক ভালো চলো বাসায় যাই।
!!
আমি:- হ্যা চলেন, শ্বশুড়ের সাথে বাসার ভীতরে এসেছি।
!!
সোনালী:- আসো তুমি ফ্রেস হবে অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছো?
!!
আমি:- হ্যা আসতেছি, আব্বাজান হাতটা ছাড়েন আমি ফ্রেস হতে যাবো।
!!
শ্বশুড়:- জামাই বাবা জ্বি আজকে তোমাকে নিয়ে একটু এলাকা গুরে দেখাবো কেমন?
!!
আমি:- আমার এলাকাটা সবটা চেনা আছে আপনি গুড়তে যান আমার সময় নেয়।
!!
শ্বশুড়:- কেনো সময় নেয়?
!!
আমি:- আপনার মেয়ে আমাকে নিয়ে কোথায় যাবে বলছে! যদি আপনার মেয়ে বলে তাহলে আপনার সাথে যাবো।
!!
শ্বশুড়:- জামাই বাবা জ্বি তুমি কি আমার শর্তের কথা গুলা ভূলে গেছো নাকী?
!!
আমি:- মনে আছে আব্বাজান তবে শর্তে কোথাও লিখা বা বলা নেয় আপনার মেয়ের সাথে তোথাও যেতে পারবোনা লিখা আছে হাত ধরে হাটতে পারবোনা। আপনি গিয়ে শ্বাশুমাকে সাহায্য করেন আমি একটু আপনার মেয়েকে সাহায্য করি।
!!
শ্বশুড়:- আরে জামাই কথা বলা শেষ হয়নি তো শুনো আমার কথাটা?
!!
আমি:- রাতে শুনবো এখন না বলে দৌরে উপরে সোনালীর কাছে চলে এসেছি।
!!
সোনালী:- এত দেরি হলো কেনো তোমার আসতে?
!!
আমি:- তোমার বাপ আছেনা আমাকে তো সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখতে চাই না জানি আমি তোমাকে স্পর্শ করে ফেলি।
!!
সোনালী:- তাহলে শর্তে রাজি হয়ে আমাকে বিয়ে করছো কেনো?
!!
আমি:- রাজি হয়েছি তখন তো মনে মনে ভাবছি বিয়ে হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে এখন তো সব শেষ হয়ে গেছে।
!!
সোনালী:- কি সব শেষ হয়ে গেছে তাহলে আমার কাছে এসেছো কেনো যাও রুম থেকে বের হও বলছি?
!!
আমি:- আরে তুমিও তো তোমার বাপের মত কথা কথা ঝগড়া করতে থাকো, আচ্ছা তুমি নাকী কোথায় নিয়ে যাবে?
!!
সোনালী:- আমি কখন বলছি তোমাকে নিয়ে যাবো আমি তো একা যাবো আমার বান্ধবীর গায়ের হলুদে।
!!
আমি:- প্লিজ আমাকে তুমি সাথে নিয়ে চলো প্লিজ তানা হলে তোমার আব্বু আমাকে এলাকা দেখাতে নিয়ে যাবে।
!!
সোনালী:- নিতে পারি একটা শর্তে।
!!
আমি:- আবারো শর্ত আচ্ছা শর্ত লাগবেনা তুমি একা যাও আমি যাবো না এই শর্তের চর্কে আমি শেষ।
!!
সোনালী:- ঠিক আছে যেতে হবে না তাহলে আমার জন্য ভালো হবে আমি আমার আগের লাভার সাথে কথা বলতে পারবো।
!!
আমি:- ঠিক আছে বলো গিয়ে, আমি রেগে রুম থেকে বের হয়ে সোজা ছাদের উপর চলে এসেছি। ব্যাঞ্চে বসে বসে নিজের মনের হাজারো স্বপ্নগুলিকে ধুলিসাদ দিতেছি। ব্যাঞ্চে বসে আছি প্রায় ঘন্টা খানেক হয়ে গেলো হঠাত মোবাইলের রিংটন বেজে উঠেছে। হাতে নিয়ে দেখি রিপার নাম্বার আরে এত দিন পর রিপা কেনো ফোন করেছে? তারা তারি করে রিসিব করতেই বলে,,,,,
!!
চলবে,,,,,,

শ্বশুড়েরশর্তেবিয়ে (পর্ব:- ৩)

0

শ্বশুড়েরশর্তেবিয়ে (পর্ব:- ৩)
!!
লেখা :- মোহাম্মদ সৌরভ
!!
শ্বশুড়ের কর্ম কান্ড আমার মুটেও সুবিদার লাগছেনা, যখন তখন ভিডিও কল করে বসে। খাইতে গেলে ভিডিও কল ঘুমাতে গেলে ভিডিও কল। মনে হচ্ছে দুনিয়াতে ওনার এক মাত্র মেয়ে আর কারো মেয়ে নেয়। আর এদিকে সোনালী ওর বাপের চেয়ে একটু এগিয়ে কোলে করে বাথরুম থেকে রুমে আনছি এখন সে একা একা হেটে নিছে চলে যাচ্ছে। আরে সোনালী শুনো তুমি না পরে গেছিলে বলে আমিও খাবার টেবিলে গেলাম।
!!
ভাবি:- সৌরভ তোমার চাইতে তো তোমার বউ এগিয়ে আছে।
!!
দুলাভাই:- মনে হয় বাসর ঘরে বিড়ালটা ঠিকমত মারতে পারেনি।
!!
সোনালী:- কি করে মারবে বিড়াল তো বাসর ঘরে ছিলো না। তখনি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়েছে।
!!
ভাবি:- সোনালী রাতে তুমি বাসর ঘরে ছিলে না?
!!
আমি:- হ্যা রুমে ছিলো আরে ভাবি তুমিও না দাও নাস্তা দাও খিদা লাগছে। আমরা সবাই নাস্তা করতেছি এনমি আব্বু এসে আমাকে বলে,,,
!!
আব্বু:- সৌরভ বউ মাকে নিয়ে তুই আজকে ঐ বাড়ীতে চলে যাবি, সকালে তোর শ্বশুড় ফোন করে বলছে।
!!
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে! আমি আর সোনালী দুজনে এক সাথে খাবার শেষ করেছি। আমি আগে রুমে এসেছি সোনালী একটু পর রুমে এসেছে।
!!
সোনালী:- আমাকে যে কোলে নিয়েছো এইটা যদি আব্বুকে বলি তাহলে তোমার জামাই গিরি আজ থেকে শেষ। সতুরাং আর কোন সময় আমাকে কোলে বা স্পর্শ করবে না যদি ওয়াদা দাও তাহলে আমি আব্বুকে কিছু বলবো না।
!!
আমি:- বলো তাও আমি এমন ওয়াদা দিতে পারবো না, তুমি পরে যাবে আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো তা কি করে হয়?
!!
সোনালী:- তাহলে তুমি এমন শর্ত মেনে আমাকে বিয়ে করছো কেনো?
!!
আমি:- আরে তখন তো মনে করছিলাম যে তোমাকে যখন একা পাবো তখন একটু আদর টাদর করবো। কিন্তু শ্বশুড় যে তোমাকে শর্তের কথা বলবে আর ভিডিও কল দিতে থাকবে কে যানে?
!!
সোনালী:- তুমি যানোনা এইটা আধুনিক যোগ এখন ঘরে বসে সারা বিশ্বের খবর রাখা যায়।
!!
আমি:- আচ্ছা আমাকে কি ক্ষমা করা যায়না?
!!
সোনালী:- করা যাবে তবে আব্বুর শর্ত যেদিন শেষ হবে। দেখি এখন সরেন আমি রেডি হবো বাড়ীতে যাওয়ার জন্য।
!!
আমি:- হ্যা হোনন আমার কি? আমি কি আপনাকে ধরে রাখছি নাকী?
!!
সোনালী:- ধরার সাহোস আছে নাকী লুকিয়ে লুকিয়ে কিস করতে পারবে। জীবনেও সামনা সামনি কিস করতে পারবে না। তুমি রুম থেকে এখন যাবে নাকী সব কিছু এখুনি আব্বুকে ফোন করে বলে দিব।
!!
আমি:- ফোন করতে হবে না আমি এখুনি বাহিরে যেতেছি। আমি বাহির হয়ে নিছে চলে এসেছি নিছে এসে দেখি ভাবি আর ভাইয়া দুষ্টমি করতেছে আমাকে দেখে ওরা আলাদা হয়ে গেছে।
!!
ভাবি:- সৌরভ তুমি রেডি হওনি?
!!
আমি:- সোনালী রেডি হচ্ছে আর আমি তো রেডি আছি।
!!
ভাবি:- আসলে তুমি সেই সনাতন জামানার আদি মানুষ রয়ে গেলে। যাও রুমে গিয়ে দেখো সোনালী শাড়ী কাপর নিয়ে বসে আছে আর তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
!!
আমি:- মানে ও বসে থাকলে কি আমাকে বের হয়ে আসতে বলে নাকী?
!!
ভাবি:- আরে বোকা বলছে বলেই তুমি চলে আসবে, আমিও এমন করেছি তোমার ভাইয়ারর সাথে আর পরে তোমার ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করেছি। যদি সোনালী তোমার জন্য অপেক্ষা করে তাহলে বুঝবে সোনালী তোমাকে মন থেকে বর হিসাবে মেনে নিয়েছে।
!!
আমি:- ধন্যবাদ ভাবি বলে এক দৌরে রুমে চলে এসেছি। এসে দেখি সোনালী রেডি হয়ে বসে আছে আমাকে দেখে বলে,,,,
!!
সোনালী:- কি হলো এমন ভাবে দৌরে এসেছো কেনো?
!!
আমি:- এমনিতেই চলো এবার বের হওয়া যাক। (সোনালী মনে হয় এই বিয়েটাতে খুশি হয়নি) আচ্ছা তুমি নিছে যাও আমি আসতেছি, সোনালী নিছে গেছে আমি একটু চেইঞ্জ করে একদম ফ্রেস হয়ে নিছে গেছি। সোনালী আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
!!
আব্বু:- মা দুই দিন থেকে চলে এসো কেমন আর তোমার বাবা মাকে আমার সালাম জানিয়ে দিও কেমন?
!!
সোনালী:- আচ্ছা!
!!
আমি:- সোনালী আসো! দুজনে এসে গাড়িতে বসেছি গাড়িটা আমাদের নিজেদের। আমি সোনালীর পাশে বসে আছি সোনালীকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে নেভিব্লু লাল শাড়িতে মনে হচ্ছে একদম পরী বসে আছে। সোনালীর দিকে তাকিয়ে আছি আমি এক দৃষ্টতে।
!!
সোনালী:- ঐ এমন ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? জীবনে কোনো দিন মেয়ে মানুষ দেখোনি?
!!
আমি:- মেয়ে মানুষ দেখেছি তবে বউ দেখেনি তো তাই দু নয়ণ ভরে দেখে নিতেছি।
!!
সোনালী:- এমন ভাবে তাকিয়ে থাকবে না থাকলে চোখ তুলে ফেলবো। ঐ আবার তাকিয়ে আছে বলে আমার চোখে গুতু দেওয়ার বান করছে আর আঙুল এসে আমার চোখে লেগে গেছে,, আর সাথে সাথে আমি চোখ বন্ধ করে নিয়েছি। আরে কি হয়ছে আমাকে দেখতে তো দিবে বলে সোনালী দেখতে চাইছে কিন্তু আমি দিতেছিনা।
!!
আমি:- আচ্ছা যদি আমার চোখটা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে কি করবো আমি?
!!
সোনালী:- বোকার মত কথা বলো কেনো এইটুকু গুতোতে কি চোখ নষ্ট হয় নাকী?
!!
আমি:- হতেও তো পারে যদি হয়ে যায় তাহলে কি করবে?
!!
সোনালী:- কি আর করবো বাকী চোখটা নষ্ট করে দিবো আর তোমাকে আজীমপুর কবরস্থানের সামনে বসিয়ে দিয়ে আসবো। এখন হাতটা সরাবে নাকী বাকীটাও নষ্ট করে দিবো?
!!
আমি:- তোমার বাবা তোমার চাইতে শত গুনে ভালো আর তুমি বউ না জল্লাদ এমন ভাবে কেও চোখে গুতো দেয় নাকী?
!!
সোনালী:- আমি কি ইচ্ছে করে দিয়েছি নাকী আমি তো মজা করে দিয়েছি আর আমি কি জানতাম লেগে যাবে?
!!
আমি:- তুমি ইচ্ছে করে দিয়েছো তখনি সোনালী আমার হাতটা ধরে চোখ থেকে সরাতে চাইছে। কিন্তু আমি সরাচ্ছিনা অনেকক্ষন জুরা জুরি করার পর হাতটা সরিয়েছি তখনি সোনালী আমার বুকের মাঝে চলে এসেছে। আমিও সুযোগ পেয়ে জড়িয়ে ধরেছি সোনালী নিজেকে এক জাটকাই ছাড়িয়ে নিয়ে মোবাইল বের করে শ্বশুড় মসায়কে ভিডিও কল করে বসছে,,,,,
!!
চলবে,,,,,,

শ্বশুড়েরশর্তেবিয়ে (পর্ব:-২)

0

শ্বশুড়েরশর্তেবিয়ে (পর্ব:-২)
!!
#লেখা :- মোহাম্মদ সৌরভ
!!
বাসর ঘরে শ্বশুড় ভিডিও কল দিছে ওনার মেয়েকে স্পর্শ করছি কিনা তা দেখার জন্য কারন শর্ত অনুযায়ী আমি ওনার মেয়েকে স্পর্শ করতে পারবো না। আর এক সাথে হাটতে পারবো না, শ্বশুড়ের কর্ম কান্ড আমার মেজাজ বারোটা বেজে গেছে।
!!
সোনালী:- আব্বু তোমার জামাইয়ের বিছনাটা দেখবে?
!!
লাওড স্পিকার দেওয়া তাই কথা গুলা স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে। শ্বশুড় অনেক আগ্রহো নিয়ে সোনালীকে বলতেছে,,, হ্যা মা দেখমু দেখি তো জামাই কোথায় ঘুমাবে তার বিছনাটা একটু খানি।
!!
সোনালী:- বাবা ঐ দেখো একটা পাঠি আর বালিশ কি সুন্দর না তোমার জামাইয়ের বিছানাটা?
!!
শ্বশুড়:- হ্যা মা, আচ্ছা জামাই বাবা জ্বি কোথায় দেখছি না যে?
!!
সোনালী:- বাবা ফ্রেস হতে গেছে, তখনি আমি কাশি দিয়েছি, আমাকে দেখে সোনালী তার বাবাকে বলে,,, বাবা তোমার জামাই বাবা জ্বি এসেছে কথা বলবা?
!!
শ্বশুড়:- হ্যা মা দে তো একটু জামাইয়ের কাছে।
!!
সোনালী:- নাও তোমার সাথে আব্বু কথা বলবে বলে মোবাইলটা আমার হাতত ধরিয়ে দিয়েছে।
!!
আমি:- শ্বশুড়কে সালাম দিয়েছি ওনি উত্তর নি বলে,,,
!!
শ্বশুড়:- জামাই বাবা জ্বি তারা তারি ঘুমিয়ে পড় আর বেশি রাত জেগে গল্প করার দরকার নেয়।
!!
আমি:- আচ্ছা আব্বাজান এখন রাখেন কেমন আজকে তো আপনার মেয়ের বাসর রাত আমার সাথে তাহলে এখন রাখি কেমন?
!!
শ্বশুড়:- আরে বাসর রাত হয়ছে তো কি হয়ছে? শর্তের কথাটা মনে আছে তো নাকী ভূলে গেছো? আর শুনো অনেক রাত হয়ছে এখন ঘুমিয়ে পরো তা না হলে সকালে ফজর নামায কা,জা হয়ে যাবে। রোজ রাতে আমাকে ভিডিও কল করবে কেমন?
!!
আমি:- আচ্ছা করবো আপনার পাশে কেও নেয় নাকী?
!!
শ্বশুড়:- তোমার শ্বাশুমা আছে নাও কথা বলো বলে মোবাইল আমার শ্বাশুমার কাছে দিয়ে দিছে। ওনাকে সালাম দিয়ে কথা বলতে শুরু করে দিয়েছি। আমি কল কাটতে বললে শ্বশুড়ি কথা গুড়িয়ে অন্য দিকে নেয়। শেষ মেষ সহ্য করতে না পেরে মোবাইল সোনালীর কাছে দিয়ে আমি শুয়ে পড়েছি। সোনালী তার মা বাবার সাথে কথা বলতেছে, আমার শ্বাশুড়ি মা কেমন ওনি কি জানে না আজকে ওনার মেয়ের বাসর রাত। দূর কিছু ভালো লাগছে না এখন ঘুমায় একটু পর আজান দিয়ে দিবে ফজরের। ঘুমাতে ঘুমাতে আপনাদের আমার পরিচয়টা একটু দিয়ে দেয়। আমি আল মোহাম্মদ সৌরভ, আমারর বড় এক আপু আর ভাইয়া আছে ওনারা আগে বিয়ে করেছে। আপু চট্রগ্রাম দুলাভাইয়ের সাথে থাকে আর ভাইয়া আব্বু সাথে ব্যবসা করে। আমরা সবাই ঢাকা থাকি আজকে আমার বিয়ে হয়ছে সোনালীর সাথে এইটা আপনারা সবাই তো জানেন। এখন ঘুমায় বাকী কথা সকালে বলবো বলে ঘুমিয়ে গেছি, সকালে ঘুম ভাঙছে ভাবির ডাকে।
!!
ভাবি:- সৌরভ উঠো সবাই তোমাদের জন্য নাস্তার টেবিলে অপেক্ষা করতেছে।
!!
আমি:- হ্যা ভাবি ফ্রেস হয়ে আসতেছি, ভাবি দরজার উপাশ থেকে ডেকে চলে গেছে। আমি তারা হুরা করে উঠে দেখি বউ আমার সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে। বাহ কত সুন্দর চেহেরা মনে হচ্ছে একটা বাচ্চা মেয়ে ঘুমিয়ে আছে। সকালের সোনালী রৌদের আলোতে সোনালীকে আরো সোনালী দেখাচ্ছে, সোনালীকে এমন অবস্থা দেখে নিজেকে আর কন্ট্রোল করে রাখতে পারিনি তাই কপালে আলতু করে আদর করে দিলাম। দেখে একটু খানি নরে চরে আবার শুয়ে আছে এবার গালে কিস করে দিয়েছি যখনি ঠোটে কিস করতে যাবো তখনি শ্বশুড় আমার ভিডিও কল করছে। তারা তারি করে আমি দূরে সরে গেছি আর সোনালীর ঘুম ভেঙে গেছে রিংটনের শব্দে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে কলটা রিসিব করতেই শ্বশুড় বলে,,
!!
শ্বশুড়:- মা আগে আমার জামাই বাবা জ্বির কাছে মোবাইলটা দে তো আমার একটু কথা আছে।
!!
সোনালী:- বাবা তোমার সাথে কথা বলবে নাও কথা বলো।
!!
আমি:- হ্যা দাও, আস্সালামু আলাইকুম আব্বাজান কেমন আছেন আপনি?
!!
শ্বশুড়:- উলাইকুম আস্সালাম, ভালো আছি শুনো বাবা আমি তো কেমন মানুষ তুমি জানো তাই আমার বার না চেয়ে তুমি আজকে সোনালীকে নিয়ে আমাদের বাড়ীতে চলে এসো কেমন।
!!
আমি:- কিন্তু আব্বু আম্মু যদি কিছু বলে তাহলে কি বলবো?
!!
শ্বশুড়:- শর্তের কথাটা মনে আছে তো নাকী মনে করিয়ে দিতে হবে?
!!
আমি:- হ্যা মনে আছে আচ্ছা এখন রাখি কেমন আপনার মেয়েকে নিয়ে নিছে যেতে হবে সবাই নাস্তার টেবিলে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
!!
শ্বশুড়:- বাবা আরেকটা কথা রাতে ঘুম হয়ছে তো ঠিক ঠাক মত আমার মেয়েকে কিন্তু স্পর্শ করবে না আর যদি করো তাহলে তো বুঝবা কেমন লাগে।
!!
আমি:- হ্যা বাবা অনেক সুন্দর ঘুম আসছে, তখনি সোনালী বাথরুমে ফ্রেস হতে গিয়ে পরে গেছে। আব্বাজান আপনার মেয়ে তো বাথরুমে পরে গেছে এই দেখেন এখন কি আমি ওকে ধরে উঠাবো?
!!
শ্বশুড়:- না এখন তুমি ধরোনা আমার মেয়ে অনেক সাহোসি সে নিজে নিজে উঠতে পারবে।
!!
সোনালী:- আব্বু আমি উঠতে পারছিনা এখন কি করবো?
!!
শ্বশুড়:- জামাই বাবাজ্বি তুমি সোনালীর হাত ধরে উঠাবে ভূল করে কিন্তু কোলে নিবে না। আর কল কাটার দরকার নেই তখনি আমি কলটা কেটে দিয়ে নেট অফ করে দিছি।
!!
সোনালী:- কি হলো কলটা কাটছেন কেনো?
!!
আমি:- ইচ্ছা হয়ছে তাই দেখি উঠো বলে সোনালীকে জড়িয়ে ধরে সোজা কোলে তুলে নিয়েছি।
!!
সোনালী:- আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরেছেন আবার কোলে নিয়েছেন সাহোস তো কম না আপনার? আপনি কি আব্বুর শর্তের কথা গুলা ভূলে গেছেন নাকী?
!!
আমি:- কোন কিছু ভূলিনি আমার সব মনে আছে, এখন আসেন রুমে যাই সোনালীকে কোলে করে রুমে নিয়ে এসেছি। আপনি শুয়ে রেস্ট নেন আমি খাবার নিয়ে আসতেছি।
!!
সোনালী:- থাক আমি নিজেই যেতে পারবো বলে খাঠের উপর থেকে নেমে সোজা হাটা দিয়েছে। আমি তাকিয়ে তো পুরাই অবাক হয়ে গেছি আরে এইটা কি?
!!
চলবে,,,,,,

শ্বশুড়ের শর্তে বিয়ে (পর্ব:-১)

0

শ্বশুড়ের শর্তে বিয়ে (পর্ব:-১)
!!
#লেখা :- মোহাম্মদ সৌরভ
!!
আব্বাজান আপনার মেয়ে তো আমাকে জড়িয়ে ধরেছে এখন আমি কি আপনার মেয়েকে জড়িয়ে ধরতে পারি। শ্বশুড় আমার দিকে তাকিয়ে কটমট করে দাত গুলা ভাঙছে, আর আমি কথাটা বলে আমি সোজা শিড়ি দিয়ে উপরে দিকে হাটা দিয়েছি। আর ঐ দিকে বাড়ীর সবাই আমার শ্বশুড়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
!!
আসলে কাহিনীটা হলো কি, আমি সোনালীকে ভালোবাসি তবে এইটা সোনালী জানতো না তাই আগে শ্বশুড় মসায়ের কাছে এসে বলছি,,, আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি এইটা আপনার মেয়ে জানে না। আপনাকে আগে বলে গেলাম কারন যদিও আপনার মেয়েকে কষ্ট করে পটিয়ে আমার প্রেমের ফাদে ফেলে নেয়। তখন পরে আপনি বলবেন আমার সাথে আপনার মেয়ের বিয়ে দিবেন না। তাই আগে বাগে আপনাকে বলে দিলাম।
!!
তোমার সাহোস আছে বলতে হবে। তানা হলে কেও সরাসরি মেয়ের বাপের কাছে প্রেমের প্রস্তাব নিয়ে আসে নাকি?
!!
আমার সাহোস নেয় তবে ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস আর আপনার প্রতি সম্মান আছে। তাই আমি চাইছি আপনাকে আগে বলে রাখি।
!!
যদি আমি রাজি না থাকি তাহলে কি করবে?
!!
আপনার মেয়েকে পটিয়ে বাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করবো। আপনি তখন কিছু করতে পারবেন না।
!!
হুব শ্বশুর কিছুক্ষন চুপ থাকর পর বলে,,, ঠিক আছে তাহলে আমার একটা শর্ত আছে সেইটা শর্তে রাজি থাকলে আমার মেয়েকে সসোজা তোমার কাছে ববিয়ে দিয়ে দদেব। আর কষ্ট করে প্রেম টেম করে আমার সম্মান নষ্ট করতে হবে না।
!!
শর্ত আগে শুনি তারপর ভেবে চিন্তা করে উত্তর দিবো।
!!
না আগে তুমি আমাকে কথা দিতে হবে, আগে বলো আমার শর্তে রাজি থাকবে।
!!
আমি একটু চুপ হয়ে কিছুটা ভাবনা চিন্তা করে হ্যা বলে দিয়েছি আর তখনি হুব শ্বশুর খুসিতে লাফাতে লাগলো। আরে আপনি লাফাচ্ছেন কেনো আগে তো শর্তটা দেন।
!!
লাফালাফি থামিয়ে বলে,,, তুমি আমার মেয়েকে বিয়ের পর জড়িয়ে ধরতে পারবে না, কিস করতে পারবে না, হাত ধরে রাস্থায় হাটতে পারবে না, এক কথা আমার মেয়েকে কোন রকম স্পর্শ করতে পারবে না।
!!
আপনি এই গুলা কি শর্ত দিতেছেন? বিয়ের পর তো আপনার মেয়ে আমার বউ হবে। আর একজন বর তার বউকে স্পর্শ করতে পারবে না এইটা কেমন কথা?
!!
এত কিছু বুঝি না, যদি আমার এই শর্তে তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাও তাহলে বলো তা না হলে আমি আমার মেয়েকে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দেবো।
!!
কিছুটা চিন্তা করে শ্বশুড়ের শর্তে রাজি হয়ে গেলাম। বাড়ীতে গিয়ে আম্মুকে বলাতে আম্মু অনেক খুসি হয়েছে। আম্মু আর আব্বু মিলে সব বিয়ের ব্যবস্থা করেছে। দুই দিনের মধ্যে বিয়ের সব ব্যবস্থা তৈরি করে ফেলছে, আজকে আমার বিয়ে সোনালীর সাথে। ভাবি ভাইয়া আব্বু সহ সবাই সৌনালীদের বাড়ীতে গেছি। আগে বিয়ের কাজটা শেষ করে নিয়েছে শ্বশুড় মসায় পরে খাবার খেতে দিয়েছে। ঐ দিকে আমার খিদার চুটে পেট চু চু করছে শ্বশুড় আপনাকে আমি মজাটা পরে বুঝাবো।
!!
শ্বশুর:- সোনালীর মা সোনালীকে নিয়ে এসো, শ্বাশুড়ি গিয়ে সোনালীকে নিয়ে এসেছে। আমার সামনে সোনালীকে দ্বাড় করিয়ে শ্বশুড় কিছু আবেগ প্রবন কথা বার্ত্রা বলেছে।
!!
আমি:- জ্বি আব্বাজান আপনি কোন চিন্তা করবেন না আমি আপনার সব কথা শুনবো, আর সোনালীকে অনেক সুখে রাখবো। আচ্ছা তাহলে আমরা যাই কেমন বলে সোনালীর হাত ধরতে যাবো তখনি,,
!!
শ্বশুড়:- আরে জামাই কি করছো আমার কথাটা কি তোমার মনে নেই নাকী।
!!
আমি:- হ্যা মনে আছে, তখনি শ্বশুড় মসায় আমার কানের কাছে এসে বলে,,,
!!
শ্বশুড়:- আমার মেয়ে আমাদের শর্তের কথা, যদি জোর করে আমার মেয়েকে স্পর্শ করো তাহলে এর পরিনাম কিন্তু ভালো হবে না। শর্ত অনুযায়ী আমি তোমাকে জেলের ভাত খাওয়াবো আর এলাকায় তোমার নামে দূরনাম ছড়িয়ে দিবো।
!!
আমি:- হ্যা আমার সব শর্তের কথা মনে আছে! আচ্ছা আমি তাহলে যাই বলে শ্বশুড়কে সালাম দিয়ে সোজা একা হেটে গাড়ীতে এসে বসে পড়েছি। আমার পিছু পিছু সোনালী এসে বসেছে আমি চুপ করে বসে পরেছে। আচ্ছা একটা কথা বলার ছিলো যদি অনুমতি দেন তাহলে বলতে পারি?
!!
সোনালী:- আব্বুর শর্তে আপনি আমাকে স্পর্শ ছাড়া বাকী সব কিছু করতে পারবেন। আমার সাথে গল্প করতে পারবেন হাসতে পারবেন আর যা যা ইচ্ছে হয় তা তা।
!!
আমি:- আমাকে কি আপনি মন থেকে বর হিসাবে মেনে নিয়েছেন নাকী আপনার আব্বুর শর্তের জন্য বিয়ে করেছেন?
!!
সোনালী:- আমি আমার আব্বুকে অনেক ভালোবাসি আর আপনাকে তো আমি বিয়ে করতে চাইনি আমি যাকে বিয়ে করতে চাইছি সে আব্বুর শর্তে রাজি হয়নি তাই আমাদের ব্রেকাপ হয়ে গেছে।
!!
আমি:- আপনি কাওকে লাভ করতেন?
!!
সোনালী:- কিছুটা, এখন আব্বু যা বলবে আমি তাই করবো। তখনি গাড়ীটা থামছে আমাদের বাড়ীর সামনে,
গাড়ী থেকে দুজনে এক সাথে নামছি সোনালী আর আমি পাশা পাশি হেটে দরজার সামনে গেছি। আম্মু আমাদের বরন করে নিয়েছে রাত বেশি হয়ে যাওয়াতে আমাদের দুজনকে বাসর ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছে।
!!
ভাবি:- দেবরজ্বি বিড়ালটা ঠিক ঠাক মত মারবে কিন্তু বলে একটা হাসি দিয়ে ওদাও।
!!
সোনালী:- রুমে বিড়াল কোথা থেকে এসেছে?
!!
আমি:- মানে বুঝিনি কি বলছো?
!!
সোনালী:- ঐ ভাবি যে বলছে বিড়ালটা মারতে তাই বলছি এই আর কি, আচ্ছা আমি ঘুমায় আপনি নিছে ঘুমাবেন কিন্তু কারন খাঠের উপর আমার সাথে থাকলে যদি ঘুমের মাঝে আমার শরীরের সাথে আপনার স্পর্শ লেগে যায়।
!!
আমি:- ঠিক আছে! আরে মেয়ে তো আরো তেরা যেমন বাপ তেমন মেয়ে যায় একটু উয়াশ রুম থেকে আসি, মনে মনে শ্বশুড়কে কিছুটা বকা জকা করে চলে গেলাম ফ্রেস হতে। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে দেখি সোনালী ভিডিও কলে তার বাবার সাথে কথা বলছে আর হাসতেছে,,,,,,
!!
To be Continue

একটি কষ্টের গল্প

1

একটা ছেলে আর একটা মেয়ের দেখাশোনা করে বিয়ে হয়েছিল,,
ছেলেটা বেশি লেখাপড়া করেনি আর মেয়েটা মোটামুটি লেখাপড়া জানত,,
ছেলেটার খুব বুদ্ধি ছিল আর মেয়েটাকে খুব ভালোবাসতো ,,

ওরা দুজন বিবাহিত জীবনে খুব খুশি ছিল,,

ছেলেটা যা রোজগার করে আনত সব মেয়েটাকে দিয়ে দিত,,
এই ভাবে অনেক বছর কেটে গেল ,,
কিন্তু মেয়েটার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা বলত মেয়েটা এখন একটা বাচ্চা কেন হল না,,
সবাই মেয়েটাকে খোঁটা দিত আর বলতো একটা বাঁজার সাথে আমরা আমাদের ছেলের বিয়ে দিয়েছি,,

একটা বাচ্চার শুখ আমাদের দিতে পারল না,,

মেয়েটা খুব কাঁদতো ওদের কথা শুনে,,

কিন্তু এতে ওই মেয়েটার কোনো দোষ ছিল না,,

যখন ছেলেটা সব জানতে পারলো তখন মেয়েটার দুঃখ বুঝতে পারল ,,

ওরা ঠিক করল একটা বাচ্চা দত্তক নেবে আর একটা মেয়েকে দত্তক নিলো তার নাম রাখল সৃজা,,

ওরা দুজনে খুব ভালোবাসতো সৃজাকে ছেলেটা সৃজাকে বেশি ভালবাসতো,,

ওর ছোট ছোট খুশিগুলোকে খুব খেয়াল রাখতো ,,
ওর কোন জিনিসের যেন কম না হয় সেদিকে খুব নজর রাখত ,,
কিছু বছর পর মেয়েটা প্রেগনেন্ট হল আর ওদের একটা ছেলে হল ,,
ছেলেটা জন্মানোর পর ওরা ছেলেটাকে ভালোবাসতো,,
ওই বাচ্চা দুটোর মধ্যে যখন মারপিট হতো তখন মেয়েটাকে মেয়েটার মা খুব মারতো ,,

এই কথাটা যখন ওর বাবা জানতে পারল তখন ওর মাকে বোঝালো কিন্তু তাও কোন কথা শুনল না ,,
নিজের বরের কাছে নালিশ করতো সৃজার নামে,,

ধীরে ধীরে লোকটাও সৃজাকে ঘৃণা করতে শুরু করল,,
ওরা দুজন সৃজার যত্ন নেওয়া ছেড়ে দিল ও খাবার খেলো কি না খেলো সেটা ওর বাবা-মা দেখতো না,,

ওদের সব ভালোবাসা ওই ছেলেটাকে দিত ,,

কিছুদিন পরে সৃজার পড়াশোনা বন্ধ করে দিল,,
সৃজার পড়াশোনার খুব মন ছিল,,কিন্তু ওরা সৃজার স্কুলে fees ভরত না ,,

সৃজা লোকের বাড়ি কাজ করে স্কুলে fees ভরত একদিন ওর মা বলল তোর কাছে এত টাকা কোথা থেকে এলো…?
তখন মেয়েটা বলল আমি লোকের বাড়িতে কাজ করে টাকা জমিয়েছি,,
তখন মেয়েটার মা বলল মিথ্যে কথা বলছিস,,
কি জানি কি কাজ করে টাকা জমিয়েছিস,,
তখন ওর মা সব টাকা গুলো নিয়ে ওকে ঘর থেকে বার করে দিল,,

তখন সৃজা কাঁদতে কাঁদতে রাস্তা দিয়ে নিজের বেখেয়ালে ছুটে যাচ্ছিল,, হঠাৎ একটা গাড়ির ধাক্কা লেগে সৃজার মৃত্যু হয়ে গেল,,

এই sms ওই মাতা পিতার জন্য যারা বাচ্চা দত্তক নেয় অথচ দায়িত্ব পালন করতে পারে না,, বাচ্চা নিজের হোক বা দত্তক নেওয়া,,
সে তো একটা বাচ্চাই যদি বাচ্চাকে দত্তক নিয়ে আর লালন পালন করতে না পারেন তাহলে তাকে দত্তক না নেওয়াই ভালো,, যতদিন নিজের বাচ্চা ছিল না তখন এই বাচ্চাটাকে ভালবাসত,,
আর যখন নিজের বাচ্চা হল তখন এই বাচ্চাটাকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিল,, এটাই কি ছিল সৃজার নিয়তি…..

  • লেখিকাঃ swapna

বিশ্বাসঘাতকতা শেষ_পর্ব

0

বিশ্বাসঘাতকতা
শেষ_পর্ব
লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

-“আব্বা,”
-“এইদিকে আয়।”

আব্বার কাছে গেলাম।খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি আমাকে কিছু বলার জন্য আব্বা ডেকেছেন।

-“তোর আম্মা তোর ব্যাপারে আমাকে ওইদিন যা যা বলল সব সত্যি!”
-“হ্যা…….এ…..।”

আব্বা অগ্নিমূর্তি হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।এইদিকে ভয়ে আমার মনে হচ্ছে আমি এখনি আবারো অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাব।

-“ছেলেটা কোনখানের? নাম কি আর সে কি করে?”
-“আব্বা ওর নাম রেহান।আর সে………”

এরপর আর কিছু বলতে পারছিলাম না কারণ এরপর যা বলব তাতে আব্বা আমার কি অবস্থা করবে সেটা ভাবতেই……..
-“কিরে উত্তর দেস না কেন?বোবা হয়ে গেছস নাকি হারামী…।”
-“আব্বা ও চট্টগ্রামের ছেলে আর ও বেকার।”
-“কিহ!”
-“……………..”
-“তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তুই কি করে এইরকম একটা ছেলের সাথে রিলেশন করলি?তরে কলেজে ভর্তি করাইছি পড়ালেখা করার জন্য আর তুই…..! এমনিতেই তোর চেহেরার যে বাহার এরপর যদি চাকরি করতে না পারস তাহলে তোকে ভবিষ্যতে ভাত খাওয়াবে কে?তোর এইরকম অবস্থার কারণে যদি পরে তুই জামাইয়ের ভাত না খেতে পারস তখন করবিটা কি হ্যা?এইসব কি তোকে বারবার বুঝিয়ে দেওয়া লাগে বেয়াদব। তরে ভালো একটা জীবন দিতে চাইছি যদি তার মূল্য তুই না বুঝতে পারস তাহলে তোর এই মাগিরি বিয়ে দিয়ে আমি ছুটাইতাছি।এরপর বুঝবি কষ্ট কাকে বলে?বাপের হোটেলে খাও তো তাই ভালো লাগে না এরপর যখন নিজের কাধে সব কিছু আসবে তখন বুঝবা এইসব করে জীবনে কি ভুলটাই তুই করছস যা খান…..আমার সামনে থেকে যা…..।”
.
.
এইরকম কথা আর কানে নিতে পারছিলাম না। কি চাইলাম আর কি হয়ে গেল।আসলে আব্বা আম্মা প্রেম ভালোবাসা এইসব পছন্দ করে না।তাদের ইচ্ছা ছিল তারা নিজেরা আমার জন্য ছেলে দেখে পছন্দ করে আমার বিয়ে দিবে।তাই রেহানের সাথে আমার এই ভালোবাসার সম্পর্ক তারা মেনে নিতে পারছে না।
জীবনসঙ্গীকে ভালো বাসতে না পারলে জোর করে তাকে পরিবার থেকে সংসার করার জন্য বিয়ে দিলে শুধু দায়িত্ববোধের কারণে কোন ভালোবাসা ছাড়া বাকিটা জীবন পাড় করা একটা মানুষের জন্য কতটা কষ্টের তা আমি আমার আম্মাকে দেখে বুঝেছি।আব্বা আম্মার পছন্দ করা ছেলেকে যদি আমি কখনো ভালোবাসতে না পারি শুধু দায়িত্ববোধের কারণে সারাটাজীবন আবেগহীন ভাবে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না।আমি রেহানকে ভালোবাসি তাই রেহানকে বিয়ে করলে আমাদের সংসারটা ভালোবাসাময় সংসার হবে আব্বা আম্মার মতন সারাটাজীবন ঝগড়া করে পাড় করতে হবে না।তাই আমি বিয়ে করলে রেহানকেই করব।এখন আব্বা যদি সত্যি সত্যি আমার বিয়ে অন্য কারোর সাথে দেয় তাহলে আমার কি হবে?আর রেহান…..সেতো এই খবর শুনে মরেই যাবে।আমাকে যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।
.
.
কয়েকদিন ধরেই দেখছি আব্বা আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য একেবারে উঠেপড়ে লেগেছে।অথচ এখনো আমি রেহানের সাথে যোগাযোগ করতে পারি নি।হাতের মোবাইলটাও আম্মা কেড়ে নিয়েছি। কিভাবে ওর সাথে কথা বলতাম?অনেকদিন ধরে ওর সাথে কথা বলার জন্য সুযোগ খুঁজছিলাম আর অবশেষে একদিন সে সুযোগ আমার হাতে চলে আসল।আম্মা ঘরের টুকিটাকি বাজার করার জন্য বাসার গেইটের রাস্তায় যাওয়ার সাথেসাথে আমি আম্মার রুমে চলে গেলাম।অনেক খোঁজার পর মোবাইলটা পেলাম।এরপর রেহানকে ছোট করে একটা মেসেজ দিলাম আর এর কিছুক্ষণ পর রেহানের মেসেজের উত্তর আসলো।

-“রেহান এটা ছাড়া কি আর বিকল্প রাস্তা নেই?”
-“আপাতত এইটা ছাড়া এখন আর কিছু করার নেই।ভয় নেই।যা বললাম তা করবে। তোমার আব্বা আম্মা আমাদের পরে ঠিক মেনে নিবে।কালকে ঠিক টাইমে চলে আসিও।”
-“আচ্ছা।”

রেহানের কথামত কাজটা করলে আব্বা আম্মা কষ্ট পাবে আর যদি এই কাজটা না করি তাহলে আমি সারাজীবনের মত রেহানকে হারিয়ে ফেলব।এতদিন পর কাউকে পেলাম যে আমাকে অনেক ভালোবাসে ওর ভালোবাসা ছাড়া বাকিটা জীবন কিভাবে থাকব?আমার পক্ষে তা সম্ভব না।তাই নিজেকে সুখি করতে আমাকে এখন স্বার্থপর হতেই হবে।আমাকে পারতে হবে।
.
.
এতকিছু ভেবে রাখার পরও আব্বা আম্মার জন্য সত্যিই অনেক কষ্ট হচ্ছে আর তার সাথে এই বাড়িটা ছেড়ে চলে যাব ভাবতেই কষ্টটা আরো বেড়ে গেল।কালো হলেও ছোটকাল থেকে আমি ছিলাম দুরন্ত আর চঞ্চল।ছোট থেকে এই বাড়ির উঠান, বাগান সবকিছুর সাথে আমার এই চঞ্চলতা আর দুরন্তপনার অনেক স্মৃতি আমার মনে জড়িয়ে আছে। আর তাই বারবার এখন থেকেই একটা গানটা হৃদয় গহীনে বেজে উঠছে।

লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প-
তারপর হাতছানি অল্প;
.
চায় চায় উড়তে উড়তে – মন চায় উড়তে উড়তে।
.
টুপটাপ টুপটাপ বৃষ্টি-
চেয়ে থাকে অপলক দৃষ্টি;
.
চায় চায় উড়তে উড়তে – মন চায় উড়তে উড়তে।
.
হাটি-হাটি পা-পা শুরু হয়–
ভয় হয় শুধু হয় ভয় হয়।

হাটি-হাটি পা-পা শুরু হয়–
ভয় হয় শুধু হয় ভয়-ভয়।।
.
চায় চায় উড়তে উড়তে – মন চায় উড়তে উড়তে।
.
আশা আশা চারপাশে কুয়াশা;
আয়নার কোল জুড়ে দুরাশা-
.
চায় চায় উড়তে
.
.
এরপরের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাসা থেকে পালিয়ে আসলাম।এরপর সোজা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম।চট্টগ্রাম রেলস্টেশন এ ওর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

-“সালমা?”
আমার নাম একটা লোকের মুখ থেকে শুনে বুঝলাম ও আর কেউ নই রেহান।
-“রেহান!”
-“হুম।”
ওর চেহেরার দিকে তাকালাম।আমার কল্পনায় ওকে আমি যেমনটা ভেবেছিলাম ও ঠিক তেমনটা নই।আমার মতনই ওর গায়ের রং, আর হাইট আমার থেকে একটু কম।আমার কল্পনার সাথে ওর চেহেরার মিল না থাকলেও এতদিন একে ভালোবেসে এসেছি তাই ওর চেহেরা কেমন তা আমার কাছে মূল বিষয় হয়ে দাঁড়ায়নি।

-“রেহান তোমার কথামত এখানে আমি চলে আসছি এখন কি করব?”
-“কি আর করব এখন সোজা কাজী অফিসে চলে যাব আমরা।”
.
.
এরপর কাজী অফিসে গিয়ে আমরা বিয়ে করে সোজা রেহানের বাবার বাড়ি চলে গেলাম।প্রথমদিকে ওর আব্বা আম্মা আমাদের এই বিয়েটা মেনে না নিলেও এরপর ঠিক মেনে নেই।আর এইদিকে আমার আব্বা আম্মা আমাদের পালানো বিয়ের কথা জানতে পারে।আমিই আমাদের বিয়ের কথাটা আব্বা আম্মাকে জানাই।ওরাতো রাগে সিম খুলে রাখে কয়েকদিনের জন্য এরপর ঠিকই নিজেরাই আমার সাথে যোগাযোগ করে।একমাত্র মেয়ে বলে কথা তাই তারা আমাকে এত সহজে ফেলে দিতে পারেনি।পরে আবারো দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের সব অনুষ্ঠান চট্টগ্রামের নিয়মে করানো হয় আর আমার বিয়ের উপহার হিসেবে আব্বা আম্মাকে আমার শুশুড়বাড়িতে ফুল ফার্নিচার দিতে হয়।
.
.
বিয়ে হওয়ার পরে আর পড়াশোনাটা চালু রাখতে পারেনি। যৌথ পরিবার হওয়ায় ঘরের বড় বউ হিসেবে একহাতে ঘরের সব কাজ করা লাগত আমার।তাই এরপর থেকে সংসারে কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে শুরু করি।সকালে ঘুম থেকে উঠে শুশুড় শাশুড়ি থেকে শুরু করে ঘরের সবার জন্য নাস্তা বানানো, সকাল ১০ টায় আবার সকলের জন্য চা নাস্তা বানানো, দুপুরের খাওয়া রেডি করা,এরপর বিকাল আর সন্ধ্যার জন্য হালকা নাস্তা সবার শেষে রাতের খাবার তৈরী করা।এইসব বাদে ঘরের টুকিটাকি কাজও আছে।সারাটাদিন রান্নাঘরেই দৌড়াদৌড়িই করা লাগত আমার।বলতে গেলে ঘরের জন্য একদম পাক্কা গৃহিণী হয়ে উঠলাম। আর রেহান ও তখনো কোন চাকরি করত না।বাবার ভাড়া দেওয়া ৫ তলা বিল্ডিং থেকে যা আসতো তা দিয়ে সে সংসারের খরচটা চালাত। বিয়ের একবছরের মাথায় আমার কোল জুড়ে আমাদের ছেলে সন্তান আসে।কি সুখের দিন কাটছিল আমাদের।কিন্তু আমাদের ছেলের বয়স যখন একবছরে পড়ে তখন কেন জানি আমার মনে হতে লাগল রেহান আর আমার সম্পর্কটা ঠিক আগের মতন নেই।ওর মধ্যে কেমন জানি একটা ছাড়াছাড়া ভাব দেখছিলাম।ও একটু একটু করে আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে যা ওর আচরণ দেখে বেশ বুঝতে পারছিলাম।ওর সাথে ঝগড়া করে সংসারটায় ঝামেলা বাধাতে চাচ্ছিলাম তাই চুপচাপ সব সয়ে যেতাম।তারপরো মাঝেমাঝে ছোটখাট ঝগড়া আমাদের মধ্যে হয়ে যেত আর তা আমাদের রুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।আস্তে আস্তে আমার ছেলেটা ৬ বছরের মাথায় পড়ে।আমার এতদিনের বলাতে ও চাকরি করেনি কিন্তু ছেলের বয়স যখন ছয়ে পড়ে তখন থেকেই ও চাকরি করা শুরু করে।বিষয়টা আশ্চর্যজনক হলেও মনে মনে খুব খুশি হয়েছিলাম যাক শেষ পর্যন্ত ওর মাথায় বুদ্ধি এসেছে।কিন্তু এত খুশির মাঝেও শুধু একটাই দুঃখ ছিল তার তা হল ওর আর আমার মাঝের সম্পর্কটার উন্নতি তখনো হয়ে উঠে নি।আমার প্রতি ওর উদাসীনতা,ওর চুপচাপ স্বভাবের আচরণটা আমাকে খুব ভয় পাইয়ে দিত।
.
.
ওর চাকরি করার সময়টাতে যখন রোজা আসে ওই সময়ে আমি ওর ফেসবুক একাউন্ট চেক মারতে গিয়ে দেখি ওর ভালোবাসামূলক পোস্টে একটা মেয়ের লাভ রিয়েক্ট।শুধু সেই পোস্ট না আরো অনেক পোস্টে ওই মেয়েটার লাভ রিয়েক্ট এবং কমেন্ট।মেয়েটা আমাদের আত্মীয়ের মধ্যেও কেউ ছিল না তাই বাইরের একটা মেয়ের একটা বিবাহিত পুরুষের পোস্টে এইরকম লাভ রিয়েক্ট এবং কমেন্ট দেখে আমার সন্দেহটা কেন জানি আরো বাড়তে লাগল।আগে এইরকম কিছু আমার চোখে পড়েনি কিন্তু হঠাৎ করে এইসব হওয়ার কারণটা চোখের সন্দেহ বাড়াবে এটাই স্বাভাবিক।

-“রেহান তোমার প্রতিটা পোস্টে এই মেয়েটা এত লাভ রিয়েক্ট কেন দিচ্ছে? সাথে কমেন্ট ও…। তুমি কি মেয়েটাকে চিন?”
-“আমি কিভাবে চিনব?আর না চিনলেই যে বাইরের কেউ এইরকম লাভ রিয়েক্ট কমেন্ট দিতে পারবে না এমন কোন বাধ্যবাধকতা আছে নাকি?”
-“বাধ্যবাধকতা নেই তা আমি জানি।কিন্তু তোমার কিছু কিছু কাজ আমাকে সন্দেহ করাতে বাধ্য করে তাই সন্দেহ আপনাআপনিই এসে যায়। আচ্ছা তুমি কি চুপচাপভাবে আড়লে থেকে আমাকে কিছু বুঝার ইঙ্গিত দিচ্ছ নাতো?”
-“সালমা তুমি পাগল হয়ে গেছ।পাগল মহিলা একটা…..।”

এই বিষয়টা নিয়েই আবার ঝগড়া বাধল।এ ঝগড়ার এক পর্যায়ে ও আমার গায়ে হাত তুলে।শুধু গায়েই হাতে তুলে নি সেদিন লাঠি দিয়ে ও আমাকে মেরেছিল তাও রোজা রাখা অবস্থায়।
.
.
এরপর ভাবলাম থাক বিষয়টা এইখানেই আটকে থাক।আর ঝগড়া করে ঘরে কোন অশান্তি আনবো না ঘরে ছোট ছেলে আছে এইরকমভাবে যদি সবসময় ঝগড়া চালিয়ে যেতে থাকি তাহলে তা আমার সন্তানের উপর খারাপ প্রভাব পড়বে।আব্বা আম্মার ঝগড়া দেখে যে কষ্ট আমি ছোটকাল থেকে পেয়ে এসেছি ঠিক সেরকম কষ্ট আমার ছেলেটাও পাক তা আমি চাইছিলাম না। এর চেয়ে চুপচাপ থাকায় ভালো। এতে সবারি মঙ্গল।ও আমাকে অবহেলা করলেও আমার ছেলেটাকে কখনো অবহেলা করেনি।ছেলে যখন যেটা চেত সাথেসাথে তা কিনে এনে দিত।এই ছেলের জন্য হলেও ও আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না আমার সাথে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করবে না মনে মনে এই বিশ্বাসটা সবসময় করতাম।
.
.
আমি আমার সংসার নিয়ে এখন প্রায় ব্যস্ত থাকি।ওর সাথের আমার মধ্যেকার দূরত্বের মনে হয় আর কোনদিন অবসান হবে না তাইতো অনেক চেষ্টা করা সত্ত্বেও আমি সফল হতে পারিনি।কুরবানির আগে ও ওর ছোট ভাইয়ের কাছে এক লাক্ষ টাকা চায় ব্যবসার নাম করে।ওর ভাই ওর বন্ধুদের থেকে টাকা যোগার করে এক লাক্ষ টাকা ওর হাতে তুলে দেয়।প্রতিদিনের মত সেদিনও রেহান চাকরির কাজের জন্য বাসা থেকে বের হয়।এরপরের দিন ও আর বাসায় আসেনি।
.
.
বাসার সবাই খুব টেনশনে পড়ে যায়। রেহান কোথায় গেল কি অবস্থায় আছে তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে পুরা পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম আমি।

এরপর ও নিজেই আমার শশুরকে কল দিয়ে বলে সে তানহা নামের একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে।এরপরে আরো জানতে পারি রেহান ব্যবসার নাম করে তার ভাইয়ের কাছ থেকে যে এক লাক্ষ টাকা নিয়েছিল তা নিয়ে সে পালিয়ে যায় মেয়েটার সাথে।এরপর ওরা বিয়ে করে।কেন জানি শশুড়ের এই কথাগুলো আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছিল না।ভালোবেসে বিশ্বাস করে লোকটাকে বিয়ে করলাম আর সেই আমার সাথে এতবড় বিশ্বাসঘাতকতা করবে তা মন থেকে মেনে নিতে চাচ্ছিলাম না।ও এতদিন পালিয়ে কই থাকবে?বাঁচতে চাইলে আর টাকার জন্য বাবার বাড়িতেই ওর আসাই লাগবে। তখন ওর মুখ থেকে সবকিছু শুনে নিব।
.
.
এই ঘটনার দুইদিন পর ও বাসায় আসে।শুধু ও একাই আসেনি সাথে করে আরেকজনকেও নিয়ে এসেছিল।ওর সাথের মেয়েটা কে জানার জন্য ওকে প্রশ্ন করলে ও বলল,

-“ও হচ্ছে তানহা…. আমার স্ত্রী।আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। কয়েকবছর রিলেশনের পর দুইদিন আগে ওকে বিয়ে করে আমি আমার বউ বানিয়েছি।”

ওর মুখের এই কথাটাও যে আমাকে এইবার বিশ্বাস করতে হবে তা কখনো ভাবতেই পারিনি।তারপরও নিজেকে শান্ত রেখে ওকে জিজ্ঞাস করলাম,

-” ও যদি তোমার স্ত্রী হয় তাহলে আমি কে রেহান!?”
-“আমি এখন তানহাকে ভালোবাসি, তোমাকে না।কয়েকদিন পরেই তোমাকে আমি ডির্ভোস দিয়ে দিব তাহলে এরপর থেকে তুমি আমার কেউ থাকবে না।”

শুশুড়-শাশুড়ি বাড়ির সবার সামনে ও আমাকে অস্বীকার করল।কিছুতেই তা মেনে নিতে পারছিলাম না।এতদিনের ভালোবাসা,সংসার আমাদের ছেলে কোনকিছুর মূল্যই এখন ওর কাছে নেই।তাইতো এত্ত বড় কথা ও ওই মেয়েটার সামনে আমাকে বলল।দোষটা এখন আমি কাকে দেব?নিজেকে না নিজের স্বামীকে নাকি তার নতুন বউকে।অনেক ভেবে দেখলাম ভুল তিনজনেরই ছিল।আমার ভুলটা ছিল ওকে বিশ্বাস করে ওর সাথে পালিয়ে সংসার করা,আমার স্বামীর ভুলটা ছিল ও একটা স্বার্থপর।ওর এখন আর আগের মতন আমাকে মন ধরে না তাই নিজের প্রয়োজন মিটানোর জন্য আরেক মেয়েকে বিয়ে করে এনেছে আর সেটাকেই সে ভালোবাসা বলে দাবি করে সবার সামনে প্রমাণ করছে এতদিন পর সে সত্যিকারের ভালোবাসা পেয়েছে।আর বাকি রইল ওর নতুন বউ ওকে দেখেই মনে হল ও সবকিছু জানে যে রেহান বিবাহিত,ওর ঘরে স্ত্রী আছে।সব জানা সত্ত্বেও এই মেয়েটা একটা বিবাহিত পুরুষের সাথে রিলেশন করে তাকে বিয়ে করে। আমার ছেলের বাবাকে মেয়েটা কি পরিমাণ ভালোবাসে তা ওর কাজ দ্বারা বুঝাই যাচ্ছে। তাইতো এক মেয়ে হয়ে আরেক মেয়ের সংসার ভাঙ্গল।বাসার কেউ ওদের এই বিয়ে মেনে নেই নি।রাতের বেলায় কোথাও যাওয়া সম্ভব না তাই তারা নিচ তলায় রাত কাটায়।
.
.
সেদিন রাতে অনেক কেঁদেছি। আমার কান্না দেখে আমার ছেলেটাও অবুঝের মত কেঁদেছে।শাশুড়ি মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে শান্তনা দিচ্ছিল।কিন্তু কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না।রেহানকে ভালোবেসছিলাম নিঃস্বার্থভাবে কিন্তু তার বদলে ওর কাছ থেকে পেয়েছি শুধু বিশ্বাসঘাতকতা।পুরোটা রাত কান্না আর টেনশনে পাড় করেছি কি করে বাকি জীবনটা একা একলা মেয়ে হয়ে এই সমাজে পাড়ি দিব।অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় চলে যাব আর সেখানে গিয়ে চাকরির খুঁজ নিব।দেবরের সংসারে থেকে ওর টাকা দিয়ে চলে আর বোঝা হয়ে থাকব না।আমার আত্মসম্মানটা একটু বেশি তাই এইরকম সিদ্ধান্ত নিজে নিজে নিলাম।এত কষ্টের মাঝেও আল্লাহর কাছে একটা বিষয় নিয়ে লাক্ষ লাক্ষ শুকরিয়া যে তিনি আমাকে মেয়ে দেননি।মেয়ে হলে হয়ত আমার মতনই আমার মেয়েটা এইরকম কষ্টের শিকার হত।আর মা হয়ে তা আমি কিছুতেই দেখতে পারতাম না।
.
.
তাই এখন থেকে আমি আমার ছেলেকে নিয়ে বাঁচব আর ওকে এই শিক্ষা দিব যে একটা মেয়েকে কিভাবে সম্মান করতে হয়।আমার চোখের জল দিয়ে ওকে উপলব্ধি করাব একটা মেয়ের ভালোবাসা তার বিশ্বাস নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতার খেলা খেললে মেয়েটার কষ্ট কতটুকু হয়। আমার নিজের শিক্ষা থেকে ওকে জ্ঞান দিব, নিজ হাতে ওকে একজন ভালো মানুষ বানাব।ওর বাবার খারাপ কোন অভ্যাস আমি আমার ছেলের গায়ে লাগতে দিব না।

এইখানে আমি যে কাহিনীটা লিখলাম তা সম্পূর্ণ বাস্তব ঘটনার ভিত্তিতে লিখলাম।প্রয়োজনের ভিত্তিতে গল্পে সালমা আর রেহান এই দুইটি ছন্মনাম আমি ব্যবহার করেছি।এই কাহিনীটার বাস্তব রুপ আমি নিজে দেখেছি আর সালমার ভবিষ্যৎটা আমি নিজ থেকে লিখলাম।যদি রেহান তার স্ত্রীর সাথে এইরকম বিশ্বাসঘাতকতা না করত তাহলে হয়ত এই কাহিনীটা অন্যরকম হত।কিন্তু সালমার ভাগ্য হয়ত তার জন্য অন্যকিছু লিখে রেখেছিল তাই তাকে এইরকম বাজে পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে।

বি.দ্র.-আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থ রাখেন তাহলে পরববর্তীতে আরেকটা বাস্তব কাহিনীর গল্প নিয়ে আমি জান্নাতুল ফেরদৌস আপনাদের সামনে হাজির হব।সেখানে আপনাদেরকে দেখাব কিভাবে একটা মেয়ের ভাগ্য তাকে কোথা কোথায় নিয়ে এসেছে।সেই নির্মম কাহিনী আমি আপনাদের কাছে তুলে ধরব।ততক্ষণ পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন আর আমিও যাতে ভালো থাকি সেই দুয়া করবেন।

সমাপ্ত

বিশ্বাসঘাতকতা পর্ব_০১

0

সত্যঘটনাঅবলম্বনে
বিশ্বাসঘাতকতা
পর্ব_০১
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

-“কিরে আমার মোবাইলটা কই?ওর তো কল দেওয়ার সময় হয়ে গেছে!উফ উফ….. কি বুদ্ধুই না আমি। কোথায় কি রাখি কিচ্ছুটা মনে থাকে না এখন।আর থাকবেই বা কি করে মনটাতো সারাক্ষণ ওর পাণেই থাকে।সালমা কথা না বাড়িয়ে মোবাইল খুঁজ ও যদি প্রথম রিং এ আমাকে না পায় তাহলে আমার অবস্থা ও যে কি করবে তা আল্লাহ মাবুদই জানে।আমার জন্য ওর এই চিন্তা,অস্থিরতা, আমাকে বকা দেওয়া ওর সবকিছুতেই আমি আমার জন্য ওর ভালোবাসা খুঁজে পাই।”
.
.
-“হ্যালো…”
-“এই তোমার কল ধরতে এতক্ষণ লাগে কেন হ্যা? এই পর্যন্ত কতগুলো কল দিছি তোমাকে সেই খেয়াল আছে তোমার?”
-“সরি সরি জান,প্লিজ রাগ কর না।আমার মোবাইল সবসময় সাইলেন্ট মোডে থাক সেটাতো জানই।তুমি যে কল দিছ সেটা টের পায়নি।আর মোবাইল আমার হাতের কাছে ছিল না।”
-“……………”
-“কি ব্যাপার কথা বলবে না আমার সাথে।আমার জানটা কি আমার সাথে রাগ করছে।সরিতো…..এই কান ধরলাম আর জীবনেও এই ভুল করব না।”
-“………….”
-“আচ্ছা কেউ যেহেতু আমার সাথে কথা বলবে না তাহলে কলটা কেটে দেই।শুধু শুধু তোমার মোবাইলের টাকা নষ্ট করার কি দরকার।”
-“এই কল একদম কাটবি না।কল কাটলেই তোর খবর আছে।তুই জানোস তুই আমার কল না ধরলে আমি কত টেনশনে থাকি। মনে হয় এই বুঝি তোর মা বাবা আমাদের রিলেশন সম্পর্কে সব জেনে গেছে।তোকে হারানোর ভয় সবসময় কাজ করে আমার মনের মধ্যে।”
-“জানি তো আমি।”
-“তাহলে কেন এত টেনশনে রাখলি আমাকে?”
-“সরিতো। আর এইরকম ভুল করব না।”
-“মনে থাকে যেন।”
.
.
এতক্ষণ আমি যার সাথে কথা বললাম সে হচ্ছে রেহান।আর আমি সালমা।১ বছর ধরে রিলেশন চলছে আমাদের।ওর সাথে এতক্ষণ যে কথা বললাম সেইসব কথা আমার কলেজ ফ্রেন্ডরা তাদের বয়ফ্রেন্ডের সাথে বলে বেড়ায় যা আমার কাছে অনেকটা ন্যাকামো আর ঢঙি ভালোবাসা লাগত।কিন্তু রেহানের সাথে আমার সম্পর্ক হওয়ার পর এখন আর এইগুলো ন্যাকামো লাগে না।বরং একধরণের ভালো লাগা আমার মধ্যে কাজ করে।
.
.
ইন্টারে উঠার পর আব্বা আমাকে একটা দামি মোবাইল কিনে দেয়।আমার ফ্রেন্ড সব কয়টা ফেসবুক চালায় আর তাদের ফেসবুক ফ্রেন্ডদের সাথে চ্যাট করে। তাই আমিও আমার দামি মোবাইল দেখে আর ফেসবুক সম্পর্কে কৌতুহলের কারণে ফ্রেন্ডদের কাছে গিয়ে একটা ফেসবুক একাউন্ট খুলি।এরপর মোবাইলে প্রথম যার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে কৌতুহলবশত আর নতুন বন্ধু বানানোর জন্য তার সাথে আস্তে আস্তে চ্যাট করি।আইডি নামটা দেখে বুঝতে খুব কষ্ট হত আইডির মালিক ছেলে না মেয়ে।আইডির মালিককে এই কথা জিজ্ঞাস করাতে সে বলল,,সে মেয়ে।মেয়ে ফ্রেন্ড ভেবে খুশি হয়েই তার সাথে দিনরাত চ্যাট করতাম।আমি ঢাকার মেয়ে,কি করি না করি সারাদিন কেমন কাটল আমার… বলতে গেলে অনেক কিছুই তার সাথে আমি শেয়ার করতাম। ও নিজেও আমাকে বলল, ও ঢাকার ছেলে আর তার নিজের জীবনের অনেক কিছুই ও আমার সাথে শেয়ার করত।এইভাবে আস্তে আস্তে কেমন করে জানি ওর প্রতি আমার বিশ্বাসটা আপনাআপনি চলে আসলো।
.
.
কিন্তু একদিন সে বিশ্বাসটা পুরো ভেঙ্গে গেল যখন সে আমাকে জানালো সে মেয়ে না ছেলে।তাই ওর উপর রাগ করে দুইদিন নেটে আসেনি।কিন্তু তার সাথে কথা না বলে থাকতেও পারতাম না তাই নিজের রাগকে একপাশে ফেলে তার সাথে আবার কথা বলা শুরু করি আর তার ভুলের জন্য আমি তাকে মাফ করে দেই।এরপর জানি না কি থেকে কি হয়ে গেল আমার মনের অজান্তে ওকে আমি ভালোবেসে ফেললাম।এরপর ও আমাকে ফেসবুকে প্রপোজ করল আর তা আমি একসেপ্ট করলাম আর তারপর একে অন্যের নাম্বার আদান প্রদান।তখনো আমরা কেউ কারোর ছবি দেখেনি।খুব দেখতে ইচ্ছে করত তাকে, না জানি আমার স্বপ্নের রাজকুমারটা দেখতে কেমন।সবসময় মনের মধ্যে তার একটা ছবি নিজের রংতুলি দিয়ে আকঁতাম আর তাকে কল্পনা করতাম।সেটা আরেকটা ভালোলাগার অনুভূতি।

একদিন সে নিজেই আমাকে বলল,
-“সালমা তোমার একটা ছবি দাও না।তোমাকে দেখতাম।”

প্রথমদিকে জড়তা থাকলেও এরপর সে জড়তাটা নিজে নিজে কাটাই।ও আমাকে ভালোবাসে তাই আমাকে দেখার ইচ্ছা ওর হতেই পারে স্বাভাবিক কিন্তু আমাকে দেখে ওর পছন্দ হবে কিনা তা নিয়ে অনেক টেনশনে পড়ে গেলাম।আমি দেখতে শ্যামলা কালো রংয়ের।এই গায়ের রংয়ের কারণে যদি সে আমাকে পছন্দ না করে তাহলে আমার কি হবে?ও কি আমার সাথের এতদিনের রিলেশনটা একদিনেই ভেঙ্গে দিবে।খুব ভয় করছিল তখন।আল্লাহর নাম করেই আমার একটা ছবি দিয়ে দিলাম।এরপর আল্লাহকে স্মরণ করতে লাগলাম আর বলতে লাগলাম,
-“আল্লাহ ও যাতে আমাকে পছন্দ করে।”
এরপর ওর কোন রিপ্লাই পেলাম না।ভয়টা আরো গভীর হতে লাগল।
তাই আমি নিজেই ওকে নক করে বললাম,,
-“রেহান আমাকে কি তোমার পছন্দ হয়নি?”
অনেকক্ষণ ধরে ওর উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।কিন্তু ওর উত্তর পেলাম না।সেদিন সারাটাদিন কি কান্নাকাটি না করলাম।কাউকে ভালোবাসলে যে এত কাঁদতে হবে তা আমি আগে বুঝতে পারেনি।কোনরকমে রাতটা পার করলাম।এরপরের দিন সকালে ও আমায় কল দেয়।
কল রিসিভ করতেই ও আমাকে বল বসে,
-“সালমা আমাকে বিয়ে করবে?”
খুশিতে সেদিন কান্নাই করে দিলাম।এরপর আগের মত মোবাইলে ওর সাথে কথা বলা চালিয়ে যেতে লাগলাম।ওকে দেখার ইচ্ছাটা দিনদিন প্রবল হতে লাগল।তাই একদিন লজ্জার মাথা খেয়ে ওকে জিজ্ঞাস করেই ফেললাম,
-“রেহান তোমার একটা ছবি দেও না?”
সেদিন তার উত্তরটা এইরকম ছিল…
-“সালমা সময় হোক এরপর না হয় আমাকে সামনাসামনিই দেখতে পাবে।”

ছবিতে দেখার চেয়ে ওকে সামনাসামনি দেখাটা আমার কাছে অনেক শ্রেয় মনে হল।তাই ওকে আর তেমন জোর করেনি।ওর ছবির ক্যানভাসতো আমি অনেক আগেই মনে মনে এঁকেই নিয়েছি সেটাই অনেক আমার জন্য।
.
.
মোবাইল সাইলেন্ট রেখে তার কলের জন্য অপেক্ষা করতাম আর অপেক্ষার প্রহর শেষ হলেই কথা।কি সুন্দর সেই দিনগুলো ছিল।রিলেশন চলা অবস্থায় আমি আরেকটা সত্য কথা জানতে পারি যে, রেহান চট্টগ্রামের ছেলে।এতদিন ধরে জানতাম ও ঢাকার ছেলে আর এখন জানলাম ও চট্টগ্রামের ছেলে।একেতো প্রেমের রিলেশন এরউপর আবার ও হচ্ছে চট্টগ্রামের ছেলে।চট্টগ্রামের ছেলের সাথে আমার আম্মা আব্বা বিয়ে দিবে কিনা সেটা নিয়েও টেনশনে পড়ে গেলাম।কারণ আমার আব্বা, আম্মার ধারণা চট্টগ্রামের ছেলেদের বিয়ে করা মানে সামনে থেকে অপমান,অভাব আর মৃত্যুকে দেখা।এই দেশের ছেলেরা অনেক বাজে হয়। পড়ালেখা কম কিন্ত এদের অহংকারটা বেশি হয় আর এরা রাজার হালে থাকতে চায় কিনা তাই অন্যের অধীনের চাকরিটাও নাকি করতে চায় না।এদের সাথে মেয়ের বিয়ে দিলে তার মা বাবাকে রাস্তার থালা ধরতে বেশিদিন সময় লাগবে না কারণ সেখানে নাকি তাদের মন মতন কোন অনুষ্ঠান করতে গেলে প্রচুর খরচাপাতি করতে হয়,মেয়ের বিয়ের দিতে হলে একটা ঘরটা সাজাতে গেলে যা যা লাগে সব উপহার হিসেবে দিতে হয় প্লাস অতিথি আপ্যায়নতো আছেই।এইজন্য আব্বা আম্মা মরে গেলেও চট্টগ্রামে আমার বিয়ে জীবনেও দিবেন না।

রেহানকে এই কথাটা বলতেই ও বলল,
” যদি পরিস্থিতি আমাদের স্বাভাবিকের মধ্যে না থাকে তাহলে আমরা পালিয়ে বিয়ে করব”।
আর তাই এই সিদ্ধান্ত আমরা দুইজনে মিলে নিলাম।
ও আরো বলত,,
-“তোমার এই সিদ্ধানের কারণে তোমার আব্বা আম্মা প্রথমে কষ্টতো পাবে পরে আবার সব মেনে নিবে”।
এই কথাটা বলে ও আমাকে বারবার বুঝাত আর সাথে এই গানটা গেয়ে আমার মনে সাহস যুগাত “পেয়ার কিয়াতো ডারনা কেয়া”।ওর সব কথাই আমার কাছে তখন সঠিক মনে হত তাই ওর কথামত চলার চেষ্টা করতাম।চলতে ফিরতে ওর এইসব কথাগুলো বারবার আমার কানে বাজত আর ওর গাওয়া গানটা বারবার মনে পড়ত।এখন এই গানটা শুনলে এক ভালো লাগা আর সাহস মনের মধ্যে চলে আসে।অবসর সময়ে মোবাইল থেকে এই গানটা ছেড়ে গান শুনি।

“”পেয়ার কিয়াতো ডারনা কেয়া,যাব পেয়ার কিয়াতো ডারনা কেয়া,
পেয়ার কিয়াতো কোই চোরি নাহি কি,পিয়ার কিয়া্‌,
পেয়ার কিয়াতো কোই চোরি নাহি কি,ছুপ ছুপ আহে ভারনা কিয়া,
যাব পেয়ার কিয়াতো ডারনা কিয়া,পিয়ার কিয়া,
আজ কেহেংগে দিলকা ফাসানা,জান ভি লেলে চাহে যামানা,
মত ওহি যো দুনিয়া দেখে,ঘুট ঘুট কারনিউ মারনা কেয়া,
যাব পেয়ার কিয়াতো ডারনা কিয়া,!!
.
.
এরপর হঠাৎ করেই একদিন আমার রুমে আম্মা এসে দেখে আমার টেবিলের বই খাতা সব এলোমেলো।বই খাতাগুলো গুছানোর সময় আমার সাইলেন্ট মোবাইলে রেহানের কল আসল।মোবাইলের আলো দেখে আমার আম্মা মোবাইলটা চেক করে দেখে মোবাইলে কল আসছে।কল রিসিভ করে আম্মা চুপ করে থাকে।আর এইদিকে গাধা রেহান কোনকিছু না ভেবে একনাগাড়ে অনেকগুলো কথা বলে ফেলে।এরপর আম্মা জিজ্ঞাস করে,
-“এই ছেলে তুমি কে?আমার মেয়েকে তুমি চিনো কি করে?”
রেহান ভয়ে সেদিন চুপচাপ কল কেটে দেয়।

আর এইদিকে সেদিন আমি ভুলে মোবাইল রেখে কলেজ চলে যাই।সারাটাদিন খুব টেনশনে দিন কাটে আমার।একবার যদি আম্মার হাতে মোবাইলটা পড়ে তাহলে আমি শেষ। কলেজ শেষ হলেই তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসি।নিজের রুমে ঢুকে তাড়াতাড়ি করে মোবাইলটা খুঁজি।এত খোঁজার পরও মোবাইলটা আমার রুমে পেলাম না।তাই আম্মার রুমে চলে যায়। আম্মার রুমের চারপাশটা তন্নতন্ন করে খু্ঁজে আমার মোবাইলটা পাই।এইবার আমার ভয়টা দেখে কে?তার মানে আম্মা সব জেনে গেছে।এখন যদি আম্মা আব্বাকে গিয়ে সব কথা বলে দেয় তাহলে আমার কি হবে?এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে আম্মার গলার আওয়াজ পেলাম।
-“শেষ পর্যন্তটা মোবাইলটা পেলি?”
-“আম্মা……”
-“ছেলেটা কে ছিল?”
.
.
ভয়ে কথা গলায় আটকে থাকল।কিছু বলতে পারেনি।এদিকে আম্মার রাগটা চরমে গিয়ে পৌঁছল।রুমের চারাপাশটা হন্তদন্ত হয়ে কি জানি খুঁজতে লাগল।প্রথমে বুঝতে পারেনি এরপর আম্মার হাতে লাঠি দেখে আর বুঝবার বাকি থাকলো না যে এখন কি হবে আমার সাথে।আম্মার রাগ মনের মধ্যে যতক্ষণ ছিল ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত ওই লাঠি দিয়ে আম্মা সেদিন আমাকে ইচ্ছামত মারতে লাগল।
-“আম্মা আর মারিয়েন না আমাকে।আমি মরে যাব তাহলে।”
কিন্তু আমার কান্নার আর্তনাদ সেদিন আম্মা শুনে নাই।মোটা লাঠি দিয়ে আমাকে আরো মারতে লাগল আর বলতে লাগল,
-“বাইরের ছেলের সাথে তোর এইসব খানপনা কতদিন ধরে চলছিল?তোকে কি আমরা এইসব করার শিক্ষা দিছি।ছেলে কারা ধরে জানোস?যারা খান,মা* যারা পুরুষ খুঁজে বেড়ায়।রাস্তার মারা এইসব করে।তুই কি রাস্তার মা…..হ্যা জবাব দে…..।

কথা বলার মতন ভাষা সেদিন হারিয়ে ফেলছিলাম।এইরকম কথা যে আম্মা আমাকেও বলতে পারে তা জানা ছিল না।শুধু মাথা নাড়াচ্ছিলাম আর না মারার জন্য আম্মার পা ধরছিলাম।

-“যদি তুই এইসবের কিছু না হস তাহলে কেন বাইরের একটা ছেলের সাথে রিলেশন করতে গেলি?জবাব দে……তোর ব্যা* মাগিরি আজকে ছুটাচ্ছি মা…..।কত্ত বড় বুকের পাঠা তোর আমাদের আড়ালে তুই এইসব করে বেড়াস। আজকে তোকে আমি মেরেই ফেলব তাহলে এইসব নোংরামি করার শখ তোর মেটে যাবে। বেশ্যা খানকি….মা* একটা।মর গিয়ে……।”

পুরো শরীরে সেদিন শুধু মারের দাগ ছাড়া আর কিচ্ছু দেখা যাচ্ছিল না।এইরকম মার ছোট থাকাকালীন খেয়েছিলাম আব্বার হাতে।আম্মাও মাঝেমাঝে মারত। কারণটাও খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছিলাম পরে।আর তা হচ্ছে আমার গায়ের রং।এই গায়ের রং আর পড়ার জন্য ছোটকালে অনেক মার খেয়েছি।এরপর বড় হওয়ার পর আম্মা আব্বা আমাকে তেমন আর মারেননি।কলেজে উঠার পর আজকে আবারো সেই একিরকম মার আম্মার হাতে খেলাম।
.
.
রাতে আব্বা বাসায় আসার সাথে সাথে আম্মা সোজা আব্বাকে গিয়ে আমার নামে বিচার দেয়।এমনিতেই আব্বা বাইরের কাজ শেষ করে আসছে আর এরমধ্যে এইসব খবর শুনে যে কারোরই মাথা খারাপ হয়ে যাবে।আব্বারও ঠিক তাই হল।রাগের মাথায় আব্বা সেদিন আম্মাকে ইচ্ছামত মারল।আর মারের সাথে সাথে কি ভাষার ছিরি।
-“খান* মা* সারাদিন ঘরে থেকে কি করস হ্যা?মেয়ে কার সাথে এই কি করে বেড়ায় এইসবের খেয়াল রাখস না?কি করস সারাদিন বাসায়।বাসায় যেদিন থাকি সেদিন দেখি বাসায় তুই থাকোস না।এইখানে ওইখানে ঘুরে বেড়াস আর বান্ধবীর সাথে গল্প করস।বান্ধবীর সাথে গল্প করস নাকি নতুন না*র খুঁজতে বাইরে যাস।তোর থেকেই তো মেয়ে এইসব শিখছে।যেমন তার মা তেমনি তার মাইয়া।”
আম্মার গলা টিপে সেদিন আব্বা কি পরিমাণ নোংরা ভাষা প্রয়োগ করছিল।

অবশ্য এইসব মার দেখা, নোংরা ভাষায় গালি দেওয়া, ঝগড়া করা আর আব্বার হাতে আম্মার মার খাওয়া আজ নতুন নয়,ছোট থেকেই এইসব দেখে আসছি আমি।তাই এইসবে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমি।তাছাড়া কেন জানি মনে হত ওরা আমাকে তেমন ভালোবাসে না তাই ভালোবাসাটা পাওয়ার জন্য সবসময় তৃষ্ণার্ত থামতাম আমি।আর আমার সেই ভালোবাসার অভাবটা রেহান মিটিয়েছে।তাই কেন জানি না ওকে না ভালোবেসে থাকতে পারিনা আমি।এইসবের মাঝে আজকে শুধু একটা জিনিস দেখে খারাপ লাগছে আর তা হচ্ছে আম্মা আজকে শুধু আমার জন্য মার খাচ্ছে।

এরপর আমার দিকে আব্বার চোখ গেলে রাগটা আব্বার আরো বেড়ে গেল।আম্মার সাথেসাথে সেদিন আমিও আরেকদফা মার খেলাম আর বস্তির নোংরা মানুষরা যেসব ভাষায় কথা বলে সেইসব ভাষা আব্বার কাছ থেকে শুনতে লাগলাম।তখন বারবার মনে হচ্ছিল দুনিয়ায় থাকতেই আমার দোযখ দেখা হয়ে গেছে।আব্বা আর আম্মার কাছে থেকে খারাপ ভাষা শুনে তখন কেন জানি সত্যিই মনে হচ্ছিল আমি একটা বে* মা*।আমি নিজের জন্য ছেলে ধরে বেড়ায়।লজ্জায় তখন আমার মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা করছিল।
.
.
মারের চোটে সেদিন অজ্ঞান হয়ে গেলাম।এরপর আর কিছু মনে নাই।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি পুরো শরীরে কি ব্যথা।হাত পাও নাড়াতে পারছি না ব্যথার জন্য।অনেক কষ্টে চোখ খুলে দেখি আব্বা আম্মার চোখ ফুলা ফুলা।বুঝতে পারলাম ওরা কেউ সারারাত ঘুমাতে পারেনি।

ঔষুধ এনে আব্বা আর আম্মা আমার সেবা করতে লাগল।এর কিছুদিন পর আস্তে আস্তে আমি ভালো হতে থাকি।কিন্তু আমার উপর আব্বা আম্মার রাগটা তখনো তিল পরিমাণ কমেনি।রাগে আর কষ্টে তারা আমার সাথে অনেকদিন কথা বলেনি। আর এইদিকে রেহানের কথা মনে পড়ায় আমার বুকের ভিতরটা জ্বলতে লাগল।
.
.
সুস্থ হওয়ার পর আম্মা আমাকে ডাকার জন্য আমার রুমে আসল।
-“সালমা তোর আব্বা তোকে ডাকছে।”

এই আজকে আম্মা আমার নাম ধরে ডাকল আর কথাও বলল।আহ্….কি যে শান্তি লাগছিল।মনে হচ্ছিল কতদিন আমি আম্মার কথা শুনি না।মনের মধ্যে যে একটা বড় পাথর ছিল সেটা তখনি সরে গেছে আম্মার এই কথায়।যতই আমাকে তারা গালাগালি করুক, মারুক আব্বা আম্মা তো আব্বা আম্মাই।তাদের জন্য এই দুনিয়ায় আমার আসা।আমার সব প্রয়োজন এতদিন তারা বিনা শর্তে মিটেয়েছে তাই তাদের ছাড়া আমার দুনিয়া কল্পনাই করা যায় না।যাক শেষ পর্যন্ত আব্বা আমাকে ডাকার খাতিরে আম্মাতো একটু হলেও আমার সাথে কথা বলল।

দৃষ্টির_সীমানা পর্ব০২ (শেষপর্ব)

0

দৃষ্টির_সীমানা
পর্ব০২ (শেষপর্ব)
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
রুমে এসে মেঘ চিরকুটটা খুলে দেখল।তন্ময় ওর জন্য কিছু লিখেছে।
“তোমাকে দয়া করে আমি বিয়েটা করছি না।বিয়েটা কেন করছি তার উত্তর তুমি কালকেই পেয়ে যাবে। আর বিয়েটা হচ্ছেই এবং সেটা তোমার সাথে।তোমাকে বিয়ে করে এরপর আমার দৃষ্টির সীমানা যতটুকু যায় ততটুকু জায়গা আমি তোমাকে নিয়ে সাথে ঘুরব আর ভালবাসবো।কালকে আবারো দেখা হচ্ছে তোমার সাথে।তোমার বাসায় এসে কালকে আমি তোমাকে নিতে আসবো। কান্নাকাটি একদম করবে না আর নিজের যত্ন নিবে।”

চিরকুটটা পরে মেঘ মনে মনে ভাবছে,
-“আচ্ছা লোকটা কি সত্যিই এত ভালো না ভালো হওয়ার অভিনয় করছে।আমার মত মেয়েকে নিঃস্বার্থভাবে উনি বিয়ে করবেন বিশ্বাস হচ্ছে না।আচ্ছা আমিতো পঙ্গু….. আমাকে দিয়ে তো কোন কাজ হবে না। একটা ফেলনার সমতুল্য আমি তাহলে!তাহলে আমার সাথে লোকটা বা লোকটার পরিবারের তেমন ভালো সম্পর্ক থাকবে না তাহলে ওরা কি টাকার জন্য আমাকে ওদের বাড়ির বৌ বানাতে চাচ্ছে?কিন্তু আমাদের তো এতো সার্মথ্য নেই।
কিন্তু লোকটা বা লোকটার পরিবারকে এত খারাপ মনে হচ্ছে না তারপরও প্রথম দেখায় এত বিশ্বাস করতে নেই।খুব ভয় হচ্ছে।পঙ্গু হয়ে গেলাম বলে মা বাবার সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিতে হচ্ছে। জানি না কি আছে কপালে!”
.
.
এরপরের দিন,
-“কেমন আছেন আন্টি?”
-“এইতো বাবা,, ভালো আছি। তুমিসহ তোমার পরিবারের সবাই কেমন আছে?”
-“আন্টি সবাই ভালো আছে।আন্টি মেঘকে নিয়ে একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসতে চাচ্ছিলাম।”
-“হ্যা যাও না বাবা। কোন সমস্যা নেই।তবে তাড়াতাড়ি বাসায় এসে যেও।”
-“জ্বী আন্টি।”
-“কিন্তু যাওয়ার আগে একটু নাস্তা করে যাও বাবা।”
-“না,না আন্টি এইসবের কিছু লাগবে না।”
-“তোমার না না তো আমি শুনব না।তুমি আসবে বলে তোমার জন্য অনেক কিছু বানিয়েছি।কিছু একটা তো মুখে দাও।”
-“আন্টি এই যে পিঠাটা নিলাম। ব্যস এতটুকুই আর না।এরপর কিন্তু সত্যি দেরি হয়ে যাবে।আরেকবার বাসায় আসলে পেটভরে খেয়ে যাব।এখন আসি তাহলে,”
-“আচ্ছা যাও তাহলে তোমরা।”

মেঘকে কোলে তুলে গাড়িতে বসাল তন্ময়।এরপর ওরা একটা পার্কে আসল।
.
.
-“কি কথা বলার জন্য আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন?!
-“হুম সব বলব।তার আগে বল কিছু খাবে। আইস্ক্রিম, চকলেট আনবো তোমার জন্য।”
একপাশ হেসে মেঘ বলল,,
-“এইসবের কিছু লাগবে না।পানির তৃষ্ণা পেয়েছে একটু। পানি খাব….।”
-“আচ্ছা পানি গাড়িতে আছে একটু ওয়েট কর এখনি নিয়ে আসছি আমি।”
-“হুম।”
.
.
কিছুক্ষণ পর,তন্ময় মেঘকে ডাক দিয়ে বলল,,
-“এই নাও পানি,”
-“থ্যাংকস।”
মুচকি হেসে তন্ময় বলল,,
-“থ্যাংকস নেওয়ার মত কিছুই আমি করে নি।নিজের হবু বউ যে কয়েকদিন পর আমার পার্মানেন্ট বউ হবে তার জন্য মানে আমার জন্যি কাজটা করেছি।এতে থ্যাংকস বলার মতন কিছুই হয়নি।”
-“………….”
-“আচ্ছা তোমার কাছে আমার কথাবার্তায় খুব অবাক লাগছে না!কালকে প্রথমে তোমাকে আপনি করে ডেকে তোমার সাথে কথা বললাম আর এরপর আপনি তুমি গড়মিল করে ফেললাম।আবার আজকে তোমাকে তুমি করে ডাকছি।আমার এইরকম ব্যবহারে আমাকে তোমার আজব প্রাণি মনে হচ্ছে না!”
-“হ্যা প্রথম প্রথম তাই মনে হয়েছিল।এরপর এর কারণটা আমি বুঝতে পেরেছি।প্রথম দেখায় কথা বলায় এইরকম কনফিউশন সবার হয় এটাই স্বাভাবিক।তাই এতে ভাববার কিছু নেই।আপনি এখন যা বলতে চান বলে ফেলুন।”
.
.
-“আমারটা পরে শুরু করি আগে তোমারটা শুরু কর।”
-“কথা কিন্তু এইরকম ছিল না।”
-“হ্যা জানি।কিন্তু কি বলতো তোমার ব্যাপারে অনেক কিছু জানার আগ্রহ আমার আছে।সেগুলো না জানতে পারলে মনটা কিছুতেই শান্ত হবে না।আগে নিজের মনটাকে শান্ত করি এরপর না হয় আমি তোমাকে যা বলতে এসেছি সব খুলে বলব।”
কিছুটা বিরক্ত হওয়ার নিঃশ্বাস ফেলে মেঘ বলল,,,
-“আচ্ছা তাহলে বলে ফেলুন কি জানতে চান আমার ব্যাপারে।”
-“বেশি কিছু জানতে চাই না শুধু আজকে এতটুকু জানতে চাই তোমার এই অবস্থাটা কি করে হল?এর পিছনের ঘটনাটা আমি জানতে চাই।”

তন্ময়ের এই কথায় মেঘ ওর দিকে কয়েক সেকেন্ডের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে চোখের দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে যায়।
-“এইসব কথা বলতে আমি ইচ্ছুক নই।”
-“কিন্তু আমিও যে নাছোড়বান্দা।আমার বউয়ের আজকে যে অবস্থা হয়ছে তার পিছনের রহস্যটা তো আমাকে জানতেই হবে।”
-“আমি জন্মগতভাবে পঙ্গু।”
-“থাপ্পড় দিব একটা।ফাজিল মেয়ে।ফাজলামি করার জন্য তুমি আর মানুষ পেলে না, না?আমরা এখন সিরিয়াস একটা ব্যাপার নিয়ে কথা বলছি আর তুমি?”

তন্ময়ের ধমকভরা কথা শুনে মেঘের গলাটা শুকিয়ে গেল।এই লোকটার এত রাগ কেন!
-“কি হল চুপটি না মেরে আমাকে সব খুলে বল কি করে এতকিছু হল?আমি জানি তুমি জন্মগতভাবে পঙ্গু নও।তোমাকে বিয়ে করব তাই বিয়ের আগেই তোমার সব খোঁজখবর নিয়ে রেখেছি আমি।”
-“তাহলে আমার এইরকম অবস্থা কিভাবে হল সেটাও নিশ্চয় জেনে নিয়েছেন?”

মেঘের সাহস দেখে তন্ময় অবাক হয়ে যাচ্ছে। একটু আগে সে কাকে বকা দিল।একটু আগের বকা খাওয়ার পরও ও তন্ময়ের মুখের উপর দিয়ে কথা বলছে!
-“সে কথা বাদ দাও।আমি তোমার কাছ থেকেই সব সত্যি জানতে চাই।”

-“হায়রে কিরকম মানুষ উনি!আমার পঙ্গু হওয়ার কাহিনীও এখন উনাকে রসিয়ে কষিয়ে শুনাতে হবে।কতটা আক্কেল আর খারাপ হলে একজন মানুষ আরেকটা মানুষের কষ্টের কথাগুলো পেট থেকে বের করে।”(মনে মনে)
.
.

আচ্ছা শুনোন তাহলে,,,
-“সেটা কয়েকমাস আগের কথা।তখন আমার সাহিল নামের একটা লোকেরর সাথে এনগেজমেন্ট হয়।লোকটা বেশ ভালোই, আচার-আচরণও ভালো ঠিক আপনার মতন।”

তন্ময় বুঝতে পারল মেঘ ওকে ঠেস মেরেই কথাটা বলল।রাগ উঠলেও সে নিজের হাত মুঠি করে রাগটাকে কন্ট্রোল করল।
-“সাহিলের সবকিছু আস্তে আস্তে আমার ভালো লাগতে শুরু করে।কারণ ও আমাকে প্রতিবারই একটা জিনিস অনুভব করাত ওর লাইফে আমি কতটা ইম্পরটেন্স রাখি।আস্তে আস্তে আমাদের বিয়ের দিনতারিখও ঘনিয়ে আসতে থাকে।বিয়ের দুই দিন আগে আমি বিয়ের কাপড় কেনাকাটা করার জন্য ফ্রেন্ডের সাথে শপিং করতে গেলাম।কেনাকাটা শেষ করে বাইরে আসতে দেখি একটা লোক মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটছে।লোকটাকে অনেকবার সেখান থেকে সরে আসতে বললেও সে সরেনি।আমার গলার আওয়াজ হয়ত তার কানে যায় নি।হঠাৎ একটা ট্রাক আসতে দেখি।ট্রাক চলার স্পিডটাও বেশি ছিল।লোকটাকে চোখের সামনে মরতে দেখার মতন সাহস আমার ছিল না তাই দৌঁড়ে তাকে সরাতে গিয়ে আমি নিজেই ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে যায়।”
.
.
-“আর সেই লোকটা কি এরপর আপনার আর খোঁজ নেই নি?”
-“বান্ধবীর কাছে শুনেছি ওনি নিজেই আমাকে মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন।একজন মানুষের সেবার জন্য যা যা করা লাগে তা করেছেন।কিন্তু উনার হয়ত কোন একটা দরকারি কাজের খবর এসেছিল তাই কিছু না বলেই চলে যান।”
-“…………”
-“এরপর আর দেখা হয়নি উনার সাথে।”
-“না, কয়েকদিন পর বাসায় চলে আসি।আর দেখা হয়নি।”
-“আমি মনে করি লোকটা খুব স্বার্থপর। কারণ তুমি যার জন্য নিজের জীবনটা বাজি রেখেছিলে সে তোমাকে ফেলে চলে গেছে।তাও তোমার দুর্দিনে।”
-“আর আমি মনে করি সে এতটাও খারাপ না।শুধু শুধু কাউকে না বুঝে দোষ দেওয়াটাও উচিত না।এটা নির্বুদ্ধিতার লক্ষণ।উনি একমাসের জন্য কাজের উদ্দেশ্য দেশের বাইরে যান। তাই কাজে যাওয়ার আগে ডাক্তারকে বলে গেছেন আমার সব খবরাখবর যাতে তাকে দেওয়া হয়।আমি যে আমার একটা পা হারিয়েছি তা বাইরের মানুষকে বলে কি লাভ হত?কোন লাভই হয় না।তাই শুধু শুধু বাইরের একটা মানুষকে অযথা বিরক্ত করে তাকে দেশের বাইরে থেকে আনার কোন মানে হয় না।আমি জানতাম তিনি উনার দায়িত্ববোধের খাতিরে ঠিকই এখানে চলে আসতেন।”
-“এমনটা মনে হওয়ার কারণ!”
-“চোখের পানি।এক্সিডেন্টের সময় জ্ঞান হারানোর আগে উনার চোখ দিয়ে যে পানি পড়ছিল তা আমি অনুভব করেছিলাম।তাই এই কথাটা আমার মনে হল………।”
.
.
তন্ময় অবাক হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা এত ভালো কেন!এত কিছু হওয়ার পরও মেঘ ওই লোকটার উপর কোন দোষ চাপাচ্ছে না!
-“তারপর ও বলব ওই লোকটার কারণেই আজকে তোমার এই অবস্থা।”
-“এইসব কিছু আমার কপালে ছিল।কপালে ছিল বলেই আমার সাথে এতকিছু হয়েছে। আমি এতে উনার কোন দোষ দেখছি না।হ্যা দোষ উনার ছিল যদি উনি রাস্তার মাঝে কেয়ারলেস ভাবে না দাঁড়াতেন………। তারপরো বলব আল্লাহ কপালে যা লিখে রাখছে সেটাইতো হবে।তা উপেক্ষা করার ক্ষমতা আমাদের কারোররই নেই।অবশ্য এইসব হওয়ার মনে হয় দরকারও ছিল না হলে মানুষের আসল চেহেরার রং কিভাবে দেখতাম।”
-“……………..”
-“সাহিল আমার এই অবস্থা দেখে ওর চেহেরার রং বদলাতে শুরু করে।এককালে ও যে আমাকে ভালোবাসত সেটা ওকে দেখে তখন আর মনে হত না।আমার জন্য ওর যে ভালোবাসা জমা ছিল সেটা হয়ত আমার এই অসহায়ত্বের কারণে শেষ হয়ে গেছে।আমার বিয়েটা ভেঙ্গে গেল।সাহিল নিজেই বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছিল।কারণ ও বুঝে গিয়েছিল আমার মত পঙ্গু মেয়ের দ্বারা ওর জীবনের প্রয়োজনগুলো মিটানো সম্ভব না তাই……..। আর আমিও যাকে মনে মনে ভালোবেসেছিলাম তার আসল ভালোবাসা সেদিন দেখতে পারলাম।অবশ্য ও ঠিকইই করেছে।এখানে আমি ওর কোন ভুল দেখছি না।পঙ্গু মেয়েকে বিয়ে করে ও তো আমাকে আর ননীর পুতুল হিসেবে সাজিয়ে রাখবে না। যে মেয়ে তার স্বামী,সংসারের কোন কাজে আসে না তাকে বিয়ে করে কি লাভ!সাহিল যা করেছে ঠিকইই করেছে।একদম ঠিক কাজ করেছে ও।”

মেঘের কথাগুলো তন্ময় এতক্ষণ ধরে মনোযোগ দিয়ে শুনল।মেয়েটা এতদিন অনেক কষ্ট পেয়েছে আর না….। কোন দোষ ছাড়াই মেয়েটাকে আর কষ্ট দেয়া যাবে না।
.
.
-“মেঘ নাও পানি খাও।ভালো লাগবে।”

তন্ময়ের হাত থেকে পানির বোতলটা নিয়ে একটু একটু করে মেঘ পানি খেতে লাগল।মেঘের পানি খাওয়া অবস্থায়ই তন্ময় বলতে লাগল,,
-“১ মাস আগের ঘটনার জন্য আজকে তোমার যে অবস্থা হয়েছে তার জন্য আমি দায়ি।আমাকে বাঁচাতে গিয়েই তোমার এক্সিডেন্ট হয় আর তুমি তোমার পা হারাও।”

তন্ময়ের কাছ থেকে মেঘ এই ধরণের কথা আশা করে নি।আকস্মিকভাবে তন্ময়ের কাছ থেকে এই কথাটা শুনে পানি ওর গলায় উঠে গেল।

মেঘের কাশির আওয়াজ শুনে তন্ময় তাড়াতাড়ি করে ওর মাথায় আর পিঠে আস্তে করে বাড়ি মারতে লাগল।
.
.

-“মেঘ তুমি ঠিক আছো তো?”

তন্ময়ের প্রশ্নে মাথাটা নাড়ালাম।তন্ময়ের এই ধরণের কান্ডে আমার বাবার কথার মনে পড়ল।আমার অনেক সময় খাবার খাওয়ার সময়ে খাবার গলায় উঠে যায়।তখন বাবা আমার মাথায় আর পিঠে এইরকম আস্তে করে বাড়ি মারে।আজ তন্ময়ও সেই একি কাজটা করল।তন্ময়ের জন্য একটু আগে যে রাগটা আমার মনের মধ্যে ছিল তা নিমিষেই চলে গেল।হয়ত মেয়েরা এইরকমি।যেসব মেয়েরা তাদের বাবাকে ভালোবাসে তাদের বাবার গুণাবলি কোন ছেলের মধ্যে দেখলে মেয়েদের মনটা নরম হয়ে যায়।

মেঘ কিছু বলছি শুনতে পাচ্ছ তুমি?
-“হ্যা বলুন,,,”
-“মেঘ তোমার সাথে আজ পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে তার জন্য আমি দায়ি।”
-“আর সেই দায়বদ্ধতা থেকেই দয়া করে আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন এইতো?আমি আগেই জানতাম আমার মত মেয়েকে শুধু দয়া করা যায়।”
.
.
মেয়েটা একটু বেশিই বুঝে।আমার একটা সোজা কথাকে কিরকম উল্টা করে ঘুরিয়ে তেড়িবেড়ি করে উত্তরটা দিল।খুব রাগ উঠছে তন্ময়ের মেঘের প্রতি।মেয়েটা ওকে কেন বুঝতে চাই না।এরপর তন্ময় নিজেই বুঝতে পারল মেঘের এখানে কোন দোষ নেই। ওর সাথে যা ঘটেছে যা দেখেছে তাতে ওর মনটা অন্যরকম হয়ে গেছে।এইজন্য ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মেয়েটা একি কথা বলে।

-“মেঘ আমি এখনো কথা শেষ করেনি।আমার আরো কথা বাকি আছে।”
-“……………..”
-“তোমার বারবার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে দয়া করছি।কারণ আমাকে তুমি বাঁচিয়েছ সেই দায়বদ্ধতা থেকে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাইছি।মেঘ আমার মনে এইসব কিচ্ছু নেই।তোমাকে আমি ভালোবাসি।আর সেটাও অনেক আগে থেকে।”
-“কিহ!”
-“হ্যা যা শুনছ সব সত্যি। আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি।তোমার ছোট স্টুডেন্ট তিন্নি যাকে তুমি ছবি আঁকা শিখাও ওর কথা মনে আছে তোমার।”
-“হ্যা তিন্নি……. চিনি ওকে।অনেক প্রিটি একটা গার্ল।”
-“হ্যা….কিউটের ডিব্বাটা আমার।ও আমার বড় ভাইয়ের মেয়ে।তোমার কাছ থেকে ছবি আঁকা যেদিন থেকে ও শিখছে সেদিন থেকেই ও বাসায় এসে তোমার কি প্রশংসাটা না করে।তিন্নির মেঘ ম্যাডাম অনেক ভালো, ওকে মাঝেমাঝে মজার মজার খাবার বানিয়ে খাওয়ায়, ওকে অনেক আদর করে আরো অনেক গল্প করে তোমাকে নিয়ে।তোমার কথা ওর মুখ থেকে আমার শুনাই লাগত নাহলে আমার এই কিউট চুলগুলো ধরে টানাটানি করে ও কি অবস্থাটা নাই করত”
মুচকি হেসে কথাটা তন্ময় বলল।

মেঘতো লজ্জায় তন্ময়ের দিকে তাকাতে পারছে না।না জানি পুচকি মেয়েটা গোপনে গোপনে উনাকে আর কি কি বলেছে।
.
.
-“তোমার গল্প ওর মুখ থেকে শুনতে শুনতে তোমার প্রতি ভালোলাগাটা কাজ করে।এরপর জানি না তোমাকে কখন আমি আমার নিজের অজান্তে ভালোবেসে ফেলেছি।আর মজার কথা কি জানো তোমার চেহেরা না দেখেই শুধু আমার কিউটিটার মুখে তোমার গল্প শুনে তোমাকে ভালোবেসেছি।তখন তুমি কিরকম তা আমি জানতাম না।আর তোমার বিয়ে যে সাহিলের সাথে ঠিক হয়েছিল তা আমি জানতাম না। এরপর এই এক্সিডেন্টটা হয়।আর তারপরতো তুমি জানোই কাজের উদ্দেশ্য একমাসের জন্য আমাকে দেশের বাইরে থাকতে হয়।কিন্তু সেখান থেকেই আমি তোমার সব খোঁজ খবর নিতাম ।খোঁজ খবর নিলাম ঠিকই অথচ আসল খবরটা জানতে পারলাম না তোমার কি ভয়ানক অবস্থা হয়েছে।
এরপর দেশে এসেই ঠিক করি আমি তোমাকে তিন্নির ম্যাডামকে বিয়ে করব যাকে আমি না দেখেই ভালোবেসেছি।তোমাকে ভালোবেসেছি সেটা পরিবারের সবাইকে জানাই।এরপর ওদের মুখ থেকেই শুনতে পারি তুমি এক্সিডেন্টে তোমার পা হারিয়েছ।জানো বুকের ভিতরটায় কি রকম কষ্ট হচ্ছিল।নিজের মনকে বারবার বুঝাচ্ছিলাম এইরকম কিছু হয়নি।কিন্তু তাই বলে তো সত্য আর ঢেকে রাখা যায় না।হয়ত আল্লাহ আমার পরীক্ষা নিচ্ছে তাই এতকিছু হয়ে গেল তোমার সাথে।ভালো যেহেতু তোমাকে বেসেছি তাই তোমাকেই বিয়ে করব সিদ্ধান্ত নিয়েছি সে তুমি যেমনি হও না কেন।আমার ভালোবাসা কোন সস্তা না যে তোমার বিপদে আমি তোমাকে ফেলে তোমার থেকে ভালো অন্য কাউকে ধরব।তাই তোমাকে দেখার জন্য তোমার ছবি ভাবির কাছে চাই।আর তোমার ছবি দেখেই বুঝতে পারি আল্লাহ আমার ভালোবাসার পরীক্ষা খুব ভালোভাবে নিচ্ছে।আমারি জন্য যে তোমার আজকে এই অবস্থা তা পরিবারের সবাইকে বলে দেই।আমার পরিবার সব বুঝতে পেরে তোমাকে আমাদের পরিবারের বউ হিসেবে মেনে নিতে সম্মতি জানাই।আর আমাকে তুমি না বাঁচালেও এইরকম পঙ্গু হলেও আমার পরিবার তোমাকে মেনে নিত।কারণ তোমার জন্য কি অনুভব করি তা তারা নিজের চোখের দেখেছে।এইসব ঘটনা আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে। আমরা আর কিইবা করতে পারি তোমার এই কথাটাই আমার পরিবার মনেপ্রাণে মেনে নিয়েছে আর তোমার আমার জুড়ি আল্লাহ নিজ হাতে বানিয়েছি সেটা চাইলেই কি আমার পরিবাদ জোর করে তা ভাঙ্গতে পারবে!পারবে না তাই তারা সত্যিকারের মন থেকেই চাই তুমি আমার বউ হও আর আমাদের পরিবারের বৌমা হিসেবে থাক।তাই এর কয়েকদিন পর মা বাবাকে নিয়ে তোমাদের বাসায় আসা হয়।”
.
.
তন্ময়ের কথায় কেন জানি মেঘের একটু ভরসা করতে ইচ্ছে করছে।তারপরও ও বলে বসল,,,
-“আপনার আর আমার জুড়ি আল্লাহ লিখে রেখেছেন এতটা নিশ্চিত আপনি কি করে হলেন?
-“আল্লাহকে ভরসা করি আর আমার ভালোবাসার প্রতি অগাধ বিশ্বাস।তাছাড়া তোমার আর আমার সাথে যা হল আর যা হচ্ছে সব কিন্তু উনার ইশারায় হচ্ছে। তাই উনার প্রতি বিশ্বাস রেখেই আমি কথাটা বললাম।আর আরেকটা কথা বলতে চাই,”
-“বলুন,”
-“ধর,,একমাস আগে সাহিলের পরিবর্তে যদি আমার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হত আর তোমার এই এক্সিডেন্টটা না হয়ে যদি আমার সাথে এই এক্সিডেন্টটা হত তাহলে তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে না?অথবা তুমি আমাকে ফেলে কি অন্য কারোর হাত ধরতে….এমন কাজ কি তুমি করতে?”
-“আমি এইরকম জঘণ্য কাজ কখনো করতাম না।ভালোবাসা মানেই বিশ্বাস। আর সেই বিশ্বাসটা সবসময় থাকা উচিত।ভালোবাসায় আরেকটা মূলকথা হল পরিস্থিতি যেরকম হোক না কেন ভালোবাসার মানুষটার হাত কখনো ছাড়তে নেই।আর এইসব আমি মন থেকে মানি।তাই আমার পক্ষে এইরকম জঘণ্য কাজটা কখনো করা সম্ভব না।”
-“আর আমাকে বিয়ে করাটা যদি তোমার দয়ার হয় তখন কি বলবে তুমি?”
-“ভালোবাসার মানুষকে আর যাই হোক দয়া করা যায় না।তাকে দয়া করলে ভালোবাসাটা আর কোথায় থাকে…..।”
-“আমার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই।আর এতক্ষণ ধরে এইসব কথায় আমি তোমাকে বুঝাতে চাইছি।এবার আশা করছি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর তুমি পেয়ে গেছ”
মুচকি হেসে কথাটা তন্ময় মেঘকে বলল।

-“লোকটা অনেক চালু সেটা কথা শুনেই বেশ বোঝা যাচ্ছে। শেষে কিনা আমাকে…. আমাকে তন্ময় নামের এই লোকটা আমার কথার জালে আমাকেই ফাঁসালো।তবে লোকটার সাথে কথা বলে বুঝলাম সে সত্যি আমাকে মন থেকে ভালোবাসে।যেখানে কোন ছলনা নেই,নেই হারানোর কোন ভয়।”
.
.
-“দেখি হাতটা সামনে আনো।”
-“কেন?”
-“আরে বাবা আগে আনোইই না এরপর না তোমার প্রশ্নের উত্তর পাবে।”
-“আচ্ছা…..”
-“দেখো কি এনেছি তোমার জন্য।”
-“শিউলি ফুলের মালা।”
-“হুম।”
-“তোমাদের বাগানের মততো আর আমাদের বাগানে শিউলি ফুলের গাছ নেই।এই ফুল কিনে নিজ হাতে তোমার জন্য মালা,হাতের বালা আর আংটি বানিয়েছি।এই ফুলের আংটি এখন তোমাকে পড়াব।পড়বে তো?”

মেঘ আর দেরি না করে তন্ময়ের সামনে হাতটা নিয়ে আসলো। আর তন্ময়ও মেঘের মতন তাড়াতাড়ি করে মেঘের হাতে শিউলি ফুলের বানানো আংটি পড়িয়ে দিল।
.
.
-“থ্যাংকস মেঘ আমাকে বুঝার জন্য।দেখিও তোমাকে বিয়ে করার পর কোন কষ্টই আমি তোমাকে পেতে দিব না।আমাদের দৃষ্টির সীমানা যতটুকুু পৌঁছবে ততটুকু পথ আমরা দুইজনে একসাথে পাড়ি দিব।”
-“হুম….।”
-“আচ্ছা তাহলে বাসায় যাওয়া যাক।”
-“হুম….।”

তন্ময় মেঘকে সাথেসাথে কোলে নিয়ে ফেললো।

-“আচ্ছা মেঘ একটা গান ধরি।”
তন্ময়ের এই প্রস্তাবে মেঘ অনেক খুশি হল।
-“হুম ধর…..”

যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়
যে ছিল হৃদয়ের আঙ্গিনায়

সে হারালো কোথায়
কোন দুর অজানায়
সেই চেনা মুখ কতদিন দেখিনি,
তার চোখে চেয়ে স্বপ্ন আঁকিনি।

যতখানি সুখ দিয়েছিলো
তার বেশী ব্যাথা দিয়ে গেল
সৃতি তাই আমারে কাঁদায়।

সে হারালো কোথায় কোন দুর অজানায়…….
যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়
যে ছিল হৃদয়ের আঙ্গিনায়
সে হারালো কোথায় কোন দুর অজানায়
যতটুকু ভুল হয়েছিলো
তার বেশী ভুল বুঝি ছিলো
কি যে চায় বলেনি আমায়।

সে হারালো কোথায় কোন দুর অজানায়।
সে হারালো………..

সেই চেনা মুখ কতদিন দেখিনি
তার চোখে চেয়ে স্বপ্ন আঁকিনি।

-“আপনার গানের গলা কিন্তু অসম্ভব সুন্দর তাই যখন এই গানটা গাচ্ছিলেন গানটা না গাওয়ার জন্য নিষেধ করতে পারিনি।কিন্তু এইরকম বিরহের গান কেন গাচ্ছেন?”
-“তোমাকে চিনার পর আর তোমার এই কষ্টের কথাগুলো শুনে আমার এই গানটায় বারবার মনে পড়ত তাই আর কি হঠাৎ করে এই গানটা গেতে ইচ্ছে করল।”
-“ও আচ্ছা…..।তবে এখন এই বিরহের গানটা গাবেন না অন্য গান ধরুন….”

তন্ময় মুচকি হেসে মেঘকে কোলে নিয়ে হেঁটে আরেকটা গান ধরল……

এই পথ যদি না শেষ হয়,
তবে কেমন হত তুমি বলত।

আর এইভাবেই অবশেষে দুটি মানুষের মনের দৃষ্টির সীমানার ভালোবাসা পূর্ণতা পেল।

দৃষ্টির_সীমানা পর্ব_০১

0

দৃষ্টির_সীমানা
পর্ব_০১
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
বাসার পিছনের বাগানটায় এসে বাগানের ফুলগুলো দেখছি।এই ফুলগাছগুলো একসময় আমি শখ করে নিজের হাতে লাগিয়েছিলাম।বাগানে ফুল গাছ লাগানো আমার শখের মধ্যে পড়ে।তাই যে ফুলগুলো আমার খুব ভালো লাগে সে ফুলের গাছগুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে সংরক্ষণ করে আমি লাগাই।এরপর প্রতি সকালে ঘুম থেকে উঠে বাগানটায় হেঁটে হেঁটে ফুলগাছের যত্ন নেই।এখন ফুলে ফুলে বাগানটা ভরে আছে।খুব ইচ্ছে করছে নিজের পুরো বাগানটায় হেঁটে হেঁটে ফুলগুলো নিজ হাতে ছুঁয়ে দেই।কয়েকমাস আগেও আমি সেটা করতে পারতাম কিন্তু এখন তা আমার বাস্তবতার বাইরে।

বর্তমানে আমি মেঘ হুইল চেয়ারে চুপটি মেরে বসে আছি আর ফুলগুলো দেখছি।শুক্রবার দিনটায় পঙ্গু মানুষ হিসেবে আর কিই বা করতে পারি আমি।
.
.
-“উহুম উহুম,”
– “কে……”(ভয়ার্ত গলায়)।

কারোর গলার আওয়াজ শুনে মেঘ মাথাটা সামনে এনে দেখে একটা সুদর্শন ছেলে ওর হুইল চেয়ারের কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে।
-“আমাদের বাসার বাগানে হঠাৎ করে একটা অজানা অচেনা ছেলে কিভাবে ঢুকে গেল আশ্চর্য! চোর বা ডাকাত নয়তো।কিন্তু এই ছেলেকে দেখে তো তা মনে হচ্ছে না।ভদ্র ঘরের ছেলেই মনে হচ্ছে তাহলে!না না,,কাউকে এখন বিশ্বাস করা যায় না। এইরকম অচেনা অজানা একটা ছেলে ওদের বাড়িতে হুট করে ঢুকে পড়েছে নিশ্চয় খারাপ কোন মতলব আছে।আচ্ছা মা বাবা কি একে বাসায় আসতে দেখিনি!যদি দেখত তাহলেতো এতক্ষণে আমার সাথে উনার পরিচয় করিয়ে দিত।কি হচ্ছে এইসব!
মাথাটা ঘুরছে আর ভয় হচ্ছে।
.
.

-“এই যে মিস কোথায় হারিয়ে গেলেন!Are u ok?”
-“হ্যা…………এ…..এ…….।ভাইয়া কে…..আপনি!আমাদের বাসায় এলেন কি করে…….?কি চাই আপনার……..?”
-“ও ম্যাডাম…..আমাকে দেখে এত ভয় পাচ্ছেন কেন?আমার ড্রেস আপ, গেট আপ এভরিথিং ইজ ওকে।তারপরও আমাকে দেখে এত ভয় পাওয়ার কি হল বুঝলাম না। আর শুনোন আমাকে ভাইয়া না ডাকলেই খুশি হব।কারণ কয়েকদিন পর আপনার সাথে আমার…….।যাই হোক আমাকে দেখে এত ভয় পাবেন না।নরমাল হোন একটু।”

মাথাটা হালকা দুলিয়ে মেঘ লোকটার কথায় সম্মতি জানালো।
-“এইতো গুড গার্ল।”
মেঘ হা হয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে।কারণ লোকটা খুব সুন্দর করে কথা বলে।এইরকম লোকের হঠাৎ করে ওদের বাসায় আসার কারণটা মেঘ ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারল না।মনের কথাটা বাইরে এনে মেঘ লোকটাকে জিজ্ঞাস করল,
-“আচ্ছা তাহলে আপনি কে?আমাদের বাসায় আসলেন কেমন করে?আপনাকে আমার মা বাবা দেখে নি?আর দেখলেও আপনাকে কিছু বলেনি তা কি কেমন করে সম্ভব?আচ্ছা আপনি আমাদের বাসার ভিতর দিয়ে আসার সময় কিছু চুরি টুরি করেননি তো?হাত দেখিতো আপনার?নিশ্চয় আপনার হাতের পিছনে আমাদের ঘরের দামি জিনিস আছে সেটা চুরি করেছেন বলে পিছনের দিকে আপনার হাতটা লুকিয়ে রেখেছেন তাই না?আমি “সাবধান ইন্ডিয়া” তে দেখেছি যারা কারোর ঘরে চুরি বা ডাকাতি করতে আসে তারা খুব স্মার্ট আর ভালো পোশাক পড়ে আসে।এদের দেখে বুঝাই যায় না এরা চুরি, ডাকাতি করতে এসেছে!এদের উদ্দেশ্য আবার অনেকে ধরে ফেলতে পারলে এরা ঘরের মানুষদের মেরে ফেলে ঘরের সব কিছু নিয়ে চলে যায়। আপনিও ঠিক তাদের দলে তাই না?”(কান্না করতে করতে)
-“এই বোকা মেয়ে এইভাবে কেন কান্না করছ?কান্না থামাও বলছি।”
-“……………..”
যাহ্ বাবা এই মেয়ে তো কান্নায় থামাচ্ছে না?রাগটা এখন প্রচণ্ড উঠে যাচ্ছে।
-“এই মেয়ে চুপ….. একদম চুপ।তোমার কান্না থামাও।”(রাগী কণ্ঠে)
.
.
লোকটার রাগী গলার আওয়াজ পেয়েই মেঘ সাথে সাথে কান্না থামিয়ে দিল।কিন্তু একটু আগের কান্নার কারণে এখন সে একটু পর পর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে উঠছে।

-“এই নাও রুমাল।চোখের পানিগুলো মুছ।”
-“……………”
-“কি ব্যাপার রুমালটা নিতে বললাম না।নাও রুমালটা।”
লোকটার আবারো সেই রাগি কণ্ঠের গলার আওয়াজ শুনে মেঘ ভয়ে তাড়াতাড়ি রুমালটা নিয়ে নিল।

-“সরি,”
-“………….”
-“আসলে এইভাবে কাউকে কাঁদতে দেখলে আমি সহ্য করতে পারিনা।তাই কাউকে কাঁদতে দেখলেই আমার হঠাৎ করে রাগ উঠে যায়।”
-“…………..”
-“সরি বললামতো।By the way…আমি তন্ময়……..।”

লোকটার নাম শুনে মেঘ এবার নিচু মাথাটা উঁচু করল।
-“আর তুমি হচ্ছ মেঘ।”

লোকটার মুখে মেঘ নিজের নাম শুনে একটু চমকে উঠল। এই লোকটা তার নাম কি করে জানলো!
.
.

-“আপনি আমার নাম কি করে জানলেন!”
-“তোমার মেঘবরণ কালো চুল দেখে।”
কথাটা বলেই তন্ময় মুচকি মুচকি হাসতে লাগল।
-“আমি কিন্তু খুব সিরিয়াস একটা প্রশ্ন করছি।মজা করবেন না আমার সাথে।!
-“আরে……বলছি বলছি।এত হাইপার হবেন না।একটু আগে এত্তগুলো প্রশ্ন একসাথে যে করলেন সেটা শুনে বুঝতে পারছি না কোনটা ফেলে কোনটার উত্তর আমি দিব।”
.
.
মেঘ আর তন্ময়ের কথার মাঝখানেই হঠাৎ করে মেঘের মা ঢুকে গেলেন।
-“কিরে মেঘ পরিচয় হল তন্ময়ের সাথে।”
-“মা উনি কে?আমাদের বাসায় কি করছেন?”

মেয়ের কথা শুনে মেঘের মা কিছুটা লজ্জা পেলেন।হঠাৎ করে পাত্রের সামনে এইরকম প্রশ্ন তার মেয়ে যে করতে পারে সেটা তার মাথায় আসেনি।তিনি মেয়ের কানের কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বললেন,,
-“মারে পাত্রপক্ষ তোকে দেখতে বাসায় এসেছে।ছেলে তোর সাথে কথা বলবে তাই এইখানে চলে আসছে।আর উল্টাপাল্টা বকিস না মা।তুই না আমার লক্ষ্মী মা।”

মায়ের এই কথা শুনে মেঘের মুখটা ছোট হয়ে গেল।আজকে যে মেঘকে দেখতে পাত্রপক্ষ আসছে সেটা ওকে কেউ জানাই নি।জানালে হয়ত মাকে একটু আগে করা অদ্ভূত প্রশ্নটা মেঘ কিছুতেই করতনা।তাকে দেখতে ছেলে নিজে এখানে চলে আসছে।কথাটা বেশ হাস্যকর।মেয়ে পঙ্গু শুনে এখন পাত্রপক্ষ বাসায় আসে না আর এই লোক তার মা বাবাকে বাসার ভিতরে বসিয়ে এসে বাগানে চলে আসছে তার সাথে কথা বলার জন্য!সত্যিই কথাটা শুনে মেঘের হাসি পাচ্ছে।
-“আচ্ছা বাবা মেঘের সাথে কথা বল।কথা বলা শেষ হয়ে হয়ে গেলে ভিতরে চলে এসো।”
-“জ্বী আন্টি।”
.
.
পাত্রপক্ষ তাকে দেখতে আসছে এই বিষয়টা নিয়ে ভাবতেই মেঘ কিছুটা অন্যমনষ্ক হয়ে পড়ল।তাই তন্ময় নামের লোকটা যে এতক্ষণ ধরে মেঘকে ডেকেই চলেছে তা তার কানে ঢুকেনি।

আর এদিকে তন্ময়ের ডাকে মেঘ সাড়া না দেওয়ায় মেঘের হুইল চেয়ারের নিচে যে ঝুড়ি আছে তার মধ্যে থাকা শিউলি ফুলগুলো মেঘের দিকে তন্ময় ছুড়ে মারল।

তন্ময়ের এই ধরণের অদ্ভূত কান্ডে মেঘ কিছুটা হচকিয়ে উঠল।
.
.
-“কি ব্যাপার মন কোথায়?ঠিক আছেন তো আপনি?”

মাথা নাড়িয়ে মেঘ তন্ময়কে বুঝাল,, কিছু হয়নি।সব ঠিক আছে।

-“তো মিস মেঘ কেমন আছেন?”
-“ভালোই আছি।”
-“আমাকে কিছু জিজ্ঞাস করলেন না?”
-“মানে,”
-“এই যে আপনার কুশলাদি জানলাম আমারটাও তো আপনার জানা উচিত তাই না?”
-“ও সরি,,কেমন আছেন?”
-“ভালো আছি।আর আপনাকে দেখে এখন আরো ভালো আছি আর এরপরের প্রতিটিদিন এখন থেকে আরো ভালো থাকব।”
-“ও…….।”
-“আমাকে জিজ্ঞাস করলেন না এরপর থেকে কিভাবে আমি আরো ভালো থাকবো?”

তন্ময়ের এই কথা শুনে মেঘ তন্ময়ের দিকে ভ্রু কুচকিয়ে তাকাল।আর মনে মনে ভাবতে লাগল,এই লোকটা একবার তুমি আবার মূহুর্তের মধ্যেই আপনি বলে কেন ডাকে আজব!তাছাড়া উনি বড্ড বেশি অপ্রয়োজনীয় কথা বলে।ছেলেমানুষ এত বেশি কথা বলে নাকি?মেয়েদের মতন স্বভাব একেবারে!বাচাল একটা।

-“ও হ্যালো কোথায় হারিয়ে গেলেন?
-“কোথাও না।”
-“তো এখন আমাকে জিজ্ঞাস করেন,কেন এরপর থেকে আমি আগের তুলনায় বেশি ভালো থাকব?”
.
.
ভদ্রতার খাতিরে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেঘ তন্ময়কে জিজ্ঞাস করল,
-“আচ্ছা তাহলে বলে ফেলেন কারণটা!”
-“কারণ আজকের পর থেকে আপনিও আমার হৃদয়ের একটি অংশ হয়ে দাঁড়াবেন তাই।”(মুচকি হেসে)
-“কথাটা অনেক মজার ছিল।তা আপনি যে এত ভালো জোকস বলতে পারেন তা আমার সত্যিই জানা ছিল না।”
অন্যদিকে ফিরে গাছের ফুলগুলোর তাকিয়ে মেঘ এই কথাটা বলল।

-“তা ম্যাডামের কোন এঙ্গেল দিয়ে মনে হল আমি আপনার সাথে জোকস করছি।”
-“নিজের চোখেই তো সব দেখতে পারছেন।তবুও এই অদ্ভুত কথা আর প্রশ্নটা করে আমাকে লজ্জা দেওয়াটা কি খুব দরকার ছিল!”
-“না আমি কিছু দেখতে পারছি না।দয়া করে কথাটা ক্লিয়ার করুন।আর আমি কেনই বা আপনাকে লজ্জা দিতে যাব।”

কিছুটা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে মেঘ বলল,,
-“আমি আগে জানতাম আমার মাঝে যে কমতি আছে সেটা চোখ দিয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যায় কিন্তু আজকে আপনাকে দেখে জানলাম শুধু চোখ দিয়েই মানুষের কমতি বা সমস্যা বুঝা যায় না দৃষ্টি সীমানার বাইরে আরেকটা জিনিস দিয়ে মানুষের ত্রুটি ধরা যায়।আর তা হচ্ছে উপলদ্ধি।আমার উপলদ্ধি দিয়ে বুঝলাম আপনাকে বাইরের দিক দিয়ে ফিটফাট লাগলেও আসলে আপনার মাঝে কিছু কমতি আছে।”
-“What?”
-“জ্বী……..। যা সত্যি তাই বললাম।আপনার যে কমতি আর সমস্যা আছে সেটা হয়ত আপনি নিজেও এতদিনে বুঝতে পারেন নি।আমি বলে দিচ্ছি আপনার সমস্যাটা কি?আপনার চোখের সমস্যা আছে।তা না হলে আপনার সামনে যে একটা জলজ্যান্ত পঙ্গু মেয়ে মানুষ হুইল চেয়ারে বসে আছে সেটা কি আপনার চোখে পড়ে না।একটা পঙ্গু মেয়ে কি করে আপনার হৃদয়ের অংশ হয়।একটা মেয়ের মধ্যে কোন কিছুর কমতি থাকলেই তাকে আর ভালোবাসা যায় না, তাকে আরেকটা মানুষের হৃদয়ের অংশ বানানো যায় না।তাছাড়া সে কোন বাড়ির বউ হওয়ারও যোগ্যতা রাখে না।আশা করি এতক্ষণে আপনার অন্ধ চোখ দুটি তার আলো দিয়ে সবকিছু দেখে নিয়েছে আর বুঝেও নিয়েছে।”
.
.
মেঘের কথা শুনে তন্ময়ের ঘোর যেন কিছুতেই কাটছে না।মেয়েটা একদম বড় মানুষদের মত করে কথা বলে।তারপরও সে নিজেকে সামলিয়ে বলল,

-“মেঘ আমি সব দেখতে পারি আর বুঝতেও পারি।আমার চোখের কোন সমস্যা নাই।আর সবকিছু ভালোভাবে দেখে বুঝেই আমি এই কথাটা বলেছি যে আজকের পর থেকে আপনি আমার হৃদয়ের অংশ হবেন।”
-“যাই হোক এই প্রসঙ্গ বাদ দিন।এইসব নিয়ে কথা বলতে এখন আমার ভালো লাগছে না।”

মেঘ যে কত কষ্ট পাচ্ছে তা তন্ময় নিজের অনুভূতি দিয়ে বুঝতে পারছে। তাই এই প্রসঙ্গের চিন্তা মেঘের মন থেকে সরানোর জন্য তন্ময় বলল,,,

-“আচ্ছা মেঘ আপনি কি সবসময় “সাবধান ইন্ডিয়া” দেখেন?”
-“কেন?হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
তন্ময়ের হঠাৎ সিরিয়াল নিয়ে কথা বলা দেখে এবার মেঘ আরো বেশি অবাক হল।লোকটা কোথায় থেকে কথা কোথায় নিয়ে যায় বুঝা মুশকিল।
-“না মানে কিছুক্ষণ আগে আমাকে দেখে আপনি যা করলেন না তাই এই কথা বললাম।এইই যে একটু আগে বললেন না আমি আপনাদের বাসায় ঢুকে চুরি ডাকাতি করতে আসছি….এরপর আপনার মা বাবাকে খুন….. যাই হোক এইসব অভিজ্ঞতা তো আপনি সাবধান ইন্ডিয়া সিরিয়াল থেকে নিয়েছেন তাই না?”(হাত দিয়ে মুখটা চেপে তন্ময় ওর হাসিটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।)
-“হ্যা…. না…..মানে……..”।
-” “সাবধান ইন্ডিয়া” দেখে সাবধান হোন সেটা ভালো কথা কিন্তু আপনার এই অতিরিক্ত সাবধানতার জন্য আজকে আপনি যা করলেন না…….তা সত্যিই দেখার মতন ছিল”।
এরপর তন্ময় ওর হাসিটা আর কন্ট্রোল করতে পারল না হো হো হো করে হেসে দিল।

তন্ময়ের হাসির আওয়াজ শুনে মেঘ লজ্জা পেয়ে গেল।ইশ তখন ও না জেনে বুঝে কি কান্ডটাই না করে ফেলল।লজ্জাটা ঢাকার জন্য এই মূহুর্তে ওর কি করা উচিত তা মেঘ কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না।হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ায় ও সাথে সাথে তন্ময়কে প্রশ্ন করে বসল,
-“এই যে একটু আগে না আপনি হাতের মধ্যে কি একটা লুকিয়ে রেখেছিলেন?দেখুন আপনি কিন্তু ধরা খেয়ে গেছেন কিছুতেই ওই জিনিসটা লুকানোর চেষ্টা করবেন না।দেখান দেখান…. বলছি কি লুকিয়েছেন আপনি?”
.
.
এখন তন্ময় আর ইতস্তত করল না।হাতের পিছনে রাখা জিনিসটা মেঘকে দেখালো।
-“এইটা কিভাবে আপনার হাতে এল?”
-“আপনার রুম থেকে পেয়েছি।”
-“তাই বলে আমার পারমিশন না নিয়েই আমার ছবি লুকিয়ে চুরি করেছেন।”
-“উহু এইটাকে চুরি বলে না।নিজের হবু বউয়ের ছবি নিয়েছি।তাহলে সেটা চুরি করা কিভাবে হল তা শুনি।”
-“প্লিজ আপনি এইরকম কথা বলে বারবার আমাকে লজ্জা দিবেন না।আমি বুঝতে পারছি না আমার মত পঙ্গু মেয়েকে দেখতে আসার কিই বা হল?আর বিয়ে সেটাতো হচ্ছে না।আমি বিয়ে করব না।”
-“কিন্তু আমি যে বিয়ে করব।”
-“ভালো, বিয়ে করে ফেলেন। তবে আমাকে না অন্য কাউকে।আপনার মা বাবাও নিশ্চয় এই বিয়েতে রাজি না।আমার মাথায় কাজ করছে না আপনারা কি ভালোভাবে সব খোঁজ খবর নিয়ে এইখানে আসেন নি?!
-“ম্যাডাম আমরা সব খোঁজ খবর ভালো ভাবে নিয়েই এরপর আপনাদের বাসায় আসছি।আমি সহ আমার পরিবারের সবাই এই বিয়েতে রাজি আছে।আর বিয়ে করলেই আপনাকে করব।”
.
.
-“দয়া দেখাতে এসেছেন না?”
এই প্রশ্নের জবাব দিতে যাওয়ার আগেই মেঘের মা ডাক দিল।

-“বাবা তোমাদের কথা বলা কি শেষ হয়েছে?”
-“জ্বী আন্টি,,”
-“তাহলে ভিতরে আসো।তোমাদের আপ্যায়নও এখনো আমি ভালো ভাবে করাতে পারি নি ।”
-“আন্টি আপনি এত অস্থির হবেন না।আমি মেঘকে নিয়েই ভিতরে আসছি।মা বাবাও ওকে দেখবে।”

তন্ময়ের এই ধরণের কথায় মেঘের মা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললেন।ছেলেটার আচার -ব্যবহার বেশ ভালোই, খারাপ না।আর তা দেখেই মেঘের মা বুঝে নিয়েছেন মেঘের সাথে এই ছেলেটার বিয়ে হলে ছেলেটা তার মেয়েকে বেশ হাসিখুশি রাখবে।
.
.
.
.
মেঘকে দেখে তন্ময়ের মা বাবা পছন্দ করল।তাই তন্ময়ের মত নিয়েই ওর পরিবারের সবাই আজকেই এংগেজমেন্টের কাজটা সেরে ফেলতে চাইছে।মেঘের মা বাবারো ছেলের পরিবারের সিদ্ধান্তে সমস্যা নেই তাই দুই পরিবারের সম্মতিতে এংগেজমেন্টের কাজটা সেরে ফেলল।আর মেঘ ফ্যালফ্যাল চোখের দৃষ্টি নিয়ে সব দেখতে লাগল।কিচ্ছুটি করতে পারল না।

অতঃপর বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাসার বাইরে যাওয়ার জন্য তন্ময়রা রওনা দিল।আর যাওয়ার আগে তন্ময় মেঘের হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিল।