Thursday, August 14, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2406



ছায়া নীল !৮

0

ছায়া নীল !৮.

Maria Kabir
আমি সৌরভ এর বুকের বাম পাশের উপর আমার ব্যান্ডেজ করা হাত রাখলাম। সৌরভ কিছুটা অবাক হলো। আমি ওকে বললাম
– আমার চোখের দিকে তাকাও
ও আমার চোখের দিকে তাকালো আমি ধীরে ধীরে বললাম
-আমি তোমাকে বুঝতে পারছি না। যা যা ঘটেছে তোমার আমার মাঝে তার কোনো সঠিক ব্যাখ্যা আমি পাচ্ছি না। প্লিজ সৌরভ হেল্প মি!
সৌরভ আমার হাতের উপর হাত রেখে বললো
– আমি বলবো তোমাকে কিন্তু এখন না।
– আমি সব গুলিয়ে ফেলছি। সবকিছু ধোঁয়াটে লাগছে আমার কাছে।
– মনে করো সবকিছু স্বাভাবিক আর কোনো ধোঁয়াটে কিছুই নাই।
– আমি পারছি না।
– একটু সুস্থ হও তারপর সময় করে বলবো।
– তুমি যেও না আমাকে একা ফেলে।
– আরে আমি তো আছি তোমার মাঝেই। তোমার মাঝেই আমি ছড়িয়ে আছি শুধু অনুভব করতে যতটুকু সময় লাগে।
মনে হচ্ছে কেউ আমাদের দিকে আসছে। আমি ওর থেকে দূরে সরে গেলাম আর সৌরভও দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
বাবা বারান্দায় এসে বলল
– ওরা তো এখন চলে যাবে তাই রাতের খাবার খেয়ে নিলে ভালো হয়।
সৌরভ বলল
– কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি তার উপর আবার রান্না কে করেছে???
– বাইরের থেকে খাবার কিনে এনেছি।
– আমরা বাসায় গিয়ে খাবো আপনার কষ্ট করতে হবে না।
সৌরভের কাঁধে হাত দিয়ে বাবা বলল
– নাহ বাবা তুমি যা উপকার করেছো সারাজীবন মনে রাখবো।
কথাটা শুনে আমার হাসি পেলো। আমার সুইসাইড এর কারণ টা বাবা জানলে কাঁধে হাত না রেখে গালে থাপ্পড় বসাতো।
জোড়াজুড়ির কারণে রাত ৮ টায় খেতে হলো।

সৌরভ চলে যাবার আগে আমাকে ওর ফোন নাম্বার দিয়ে গেলো আর বললো – যখন খুব মনে পড়বে তখন আমাকে ফোন করবে।
আমি বললাম – তুমি করবে না???
সৌরভ কী যেন ভাবলো তারপর বললো
– হ্যা করবো।
মেজো ফুপু আর সৌরভ চলে গেলো। পুরো বাসায় আমি আর বাবা।
বাবা আমার বিছানা গুছিয়ে দিয়ে বলল
– তুই ঘুমা আর কাল সকালে তোর মা আসবে।
কথাটা বলেই বাবা চলে গেলো। মা আসবে, জানি না আবার কতো বেশি মার খেতে হবে।
মা যে কেনো এমন করে বুঝিনা। আমাকে কেনো এতো বড়লোকের সাথে বিয়ে দিতে হবে???
বড়লোক দিয়ে কী হবে?? কেনো বুঝে না মা আমার শান্তি অন্যকিছুতে।
শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম হঠাৎ করে সৌরভের চেহারা টা চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
নীল নাম দিয়েছিলাম কোনো নাম খুঁজে না পেয়ে। নীল নাম দেয়ার মধ্যেও একটা লজিক আছে।
লজিকটা হলো – রাতের অন্ধকারে একমাত্র নীল রঙ টাই মিশে যায়।
রাধা ঘন শ্যামের সাথে রাতের বেলা দেখা করতে যাওয়ার সময় নীল রঙের শাড়ী পড়তেন। যাতে কেউ রাধার অস্তিত্ব বুঝতে না পারেন।
ঠিক তেমনিভাবে ও………
ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। নীলের নাম্বার। ফোন রিসিভ করলাম। হ্যালো হ্যালো করছি কিন্তু কোনো শব্দ আসছে না ওপাশ থেকে।
এতোবার হ্যালো বললাম তারপরও কোনো রেসপন্স নাই।
ফোন কেটে দিলাম হয়তোবা ঘুমায় আছে। হাতের আশেপাশে ফোন ভুলে চলে আসছে।ফোন পাশে রেখে চোখ বুজলাম সাথে সাথে আবার ফোন বেজে উঠলো।
এর মধ্যে আবার কাটা হাতে ব্যথা করতে শুরু করলো।
ওর ফোন, রিসিভ করলাম।
– হ্যালো
এইবার প্রথমে ওপাশ থেকেই আগে হ্যালো বললো। ওর কণ্ঠ তো এমন না। ফোনে তো অনেকের কণ্ঠে চেঞ্জ আসে।
ওর নাম্বার থেকে ও ছাড়া আর কেউই ফোন করতে পারেও না।
আমি বললাম
– এতো রাতে ফোন দিলা???
হাসার শব্দ কানে আসলো তারপর বললো
– কেবল ১১ টা বাজে এখন তো কেবল শুরু।
– কিছু বলবা???
– তোমার হাতের ব্যথা বেড়েছে মনে হয়??
– হ্যা, তুমি জানলে কীভাবে?? আমি তো বলিও নাই।
– আরে রাতে সবধরনের ব্যথা বাড়ে তাই বললাম।
– ওহ। তুমি কী করছো??
– আচ্ছা রাখি। তুমি ঘুমাও।
– এই শুনো কিছু বলবা???
– রাখো তো।
ফোন কেটে গেলো। আমি যে ফোন দিবো ফোনে টাকাও নেই।
জানি না আমি আমার জীবন কোন দিকে যাচ্ছে।
জানি না ভালবাসার ঢেউ আমাকে কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
আমার কেনো যেন কোথাও একটা খটকা লাগছে।
মেজো ফুপুর কাহিনী টা যেভাবেই হোক আমাকে জানাতে হবে!
কিন্তু সেটা কী হতে পারে????
ফোনে মেসেজ আসলো। মেসেজ চেক করলাম
সৌরভের মেসেজ – স্বপ্নে আমি আসতে পারি??

চলবে……….!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ৭.

0

ছায়া নীল!
৭.

Maria Kabir

আমি বললাম
-শুরুটা আমি করেছিলাম নাকি তুমি???তুমি আমার স্বপ্নে এসেছিলে, আমি তোমাকে ডেকে আনি নি। মনে পড়ে??? নাকি ভুলে গেছো???
– হ্যা আমিই শুরুটা করেছি। কিন্তু সামান্য স্বপ্নে যার অস্তিত্ব তার প্রতি এতোটা পাগল হওয়াটা ঠিক না।
– আমি কি একাই পাগল হয়েছি??? নাকি প্রতিটা স্বপ্নে তুমি আমাকে প্রতিবার তোমার দিকে টেনেছো???
ও চুপ করে আছে। কোনো কথা বলছে না।
আমি বললাম
– কী কোনো কথা নাই কেনো?? সামান্য স্বপ্ন না আমার কাছে। আমার কাছে অনেক বেশি দামী সেই শুরু থেকে আজকের স্বপ্নটা।
– শারলিন শান্ত হও।
– কেনো শান্ত হবো?? সত্যিটা সহ্য হচ্ছে না??
– তুমি অসুস্থ তাই।
– আমাকে যেহেতু তোমার প্রয়োজন নেই তাহলে আমাকে বাঁচালে কেনো???
– তুমি একজন মানুষ। চোখের সামনে একজন মানুষ কে সুইসাইড করতে দেখা যায় না।
– তুমি তো আমার সামনে ছিলে না।মিথ্যা কেনো বলছো???
– তোমার রুমের জানালার পাশে যে রাস্তা আমি ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তোমার জানালা খোলা ছিলো।
– আমার জানালার পাশে কী করছিলে??? আমি তো তোমার কেউ নই।
কথাটা বলে আমার খুব খারাপ লাগা শুরু হলো।
যার জন্য আমি এতো কিছু করলাম। নিজের শরীরকে শরীর মনে করিনি। দিনের পর দিন শুধু নিজেকে কষ্টই দিয়ে গেছি। শুধু ওকে কাছে পাবো বলে।
কিন্তু কী হলো?? সেই উল্টো আমাকে কথা শোনাচ্ছে।
কাঁদতে শুরু করলাম। তুহিন লোকটার সাথে বিয়ে ঠিক হবার পর থেকে অনেক কষ্ট ভুগেছি।
এই তো প্রথম না। এসএসসি এক্সাম দেয়ার পর থেকে কতবার যে,আমি বিয়ে ভেঙেছি আর মায়ের হাতে মার খেয়েছি তার হিসেব নাই।
আমি মাথা নিচু করে আছি। সৌরভ বলল
– কান্নাকাটি বন্ধ করো। এমনিতেই আজ ২ দিন যাবত অনেক স্ট্রেস এ আছি।
– আমি তো খুব সুখে আছি।
– তুমি ২ দিন যাবত অজ্ঞান হয়ে ছিলে। তোমার কিছু হয়ে গেলে……
– ভালোই হতো সব ঝামেলা শেষ হয়ে যেতো।
সৌরভ আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল
– তোমাকে সামনাসামনি এক পলক দেখবো বলেই আমি তোমার রুমের আশপাশ দিয়ে ঘুরাঘুরি করছিলাম। তোমার বারান্দায় এসে ঝামেলায় পড়ে গেলাম। ধরা খাওয়ার মতোই অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো। তুমি খেলে আছাড়।
আছাড় না খেলেই ভালো হতো। তোমার অবস্থা এতো খারাপ হতো না।
– তুমি কেনো আমার সাথে এমন করলে???
– প্লিজ একটু শান্ত হও না। পরেও জানা যাবে।
– পরে কেনো?? বলা তো যায় না পরে সময় টা নাও আসতে পারে।
– কী বললা তুমি??? এই শারলিন আবার কিছু করার চেষ্টা করলে সত্যি বলছি আমি কিন্তু চলে যাবো।
– তুমি এতদিন কেনো সামনে আসোনি??আর স্বপ্নের ব্যাপার টা মাথায় আসছে না। কীভাবে কী ???
– পরে একদিন। এখন চিন্তা করো তোমার মা কী করবে???
– মানে???
– তোমার তো জানার কথা না। তোমার এই মহান কাজে তোমার বিয়ে ভেঙেছে। ভালোই হয়েছে। কিন্তু বিশাল কেলেঙ্কারি হয়ে গেছে ।
– কী আর হবে??? আমি পাগল, মানসিক রোগী বা অন্য কারো সাথে লাইন আছে বা ভূতে ধরেছে।
সৌরভ হেসে বলল
– শেষের দুটো কারেক্ট আছে।
– খুব মজা লাগছে তাই না।
– হ্যা কিছুটা। তোমাকে এতো কাছে পাবো ভাবিনি।
ওর এই কথাতে মনে পড়লো ও আর আমি খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছি। এই প্রথম কারো খুব কাছে দাঁড়িয়ে।
সৌরভ হেসে বললো
– কোনো সমস্যা নেই আমি তোমাকে এই অবস্থায় স্পর্শ করবো না।
– হুম।
– মেডিসিন ঠিক মতো খাবে, খাবার ঠিক মতো খাবে। আর আমাকে মনে করবে।
– তুমি কই যাবে???
– তোমার মা আমাকে আর আমার মাকে সহ্য করতে পারে না।
– মা তো নেই এখন।
– আসবে তো তাই না??? রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছে তোমার মা। আজিব ব্যাপার মেয়ে রাগ করে বাপের বাড়ি আসবে তা না মা রাগ করে বাপের বাড়ি যায়।
এ কথা বলে ও অট্টহাসিতে মত্ত হয়ে গেলো।
আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। ওর মেজাজ কিছুক্ষণ পর পর বদলে যাচ্ছে।
আমি ওকে বুঝতে পারছি না। এই বলে আমাকে তার প্রয়োজন নেই আবার এই বলে আমার জন্য সে কষ্টে আছে।
আমি তো একটা পাগল আর এ তো মনে হয় মহাপাগল।

চলবে…….!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ৬

0

ছায়া নীল! ৬.

Maria Kabir

ও বলেছিলো, স্পর্শ করলেই আমাকে চিনতে পারবে।
ওর হাত ধরাতেই আমি বুঝতে পেরেছি এই মানুষ টাই আমার স্বপ্নের নীল।
আজ ৬ বছর যাবত যাকে আমি শুধুই স্বপ্নে খুঁজে ফিরেছি, সে আমার সামনে।
আমার হাত ছেড়ে দিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে কেবিনের বাইরে চলে গেলো।
ওর আমাকে পরিচয় দেয়ার কোনো দরকার নেই ঠিক তেমনিভাবে আমার ওকে জিজ্ঞেস করারো নেই ও কে???
আশেপাশে কেউ নাই। দেয়ালের ঘড়িটা নষ্ট মনে হয়। সময় দেখাচ্ছে ৬ টা। কিন্তু জানালা দিয়ে আকাশ দেখে তো সেটা মনে হয় না।
ও আবার ফিরে এলো তবে একা না সাথে একজন নার্স।
নার্স আমাকে জিজ্ঞেস করলেন
– এখন কেমন বোধ করছো???
– ভালো।
আমার চোখ শুধু ওর উপরই আটকে আছে। কিন্তু ও একবারো আমার দিকে তাকাচ্ছে না। নার্স যা যা করছেন ও সেদিকেই তাকিয়ে আছে।
বাবা আর একজন মহিলা কেবিনে এলেন।
নার্স চলে গেলেন। বাবা আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
বাবার চোখ দিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পরলো।বাবা বললে
– মামণি এরকম কাজ করতে হয়না।
আমার কিছু বলার মতো নেই। আমি যেটা করেছি সেটা অনেক বড় ভুল কিন্তু তাছাড়া কোনো উপায়ও ছিলো না।
বাবার সাথের সেই মহিলা বললেন
– ভাইজান এখন এসব রাখেন তো। পরে কথা বলবেন।
বাবা বললে
– নাহ, মেজো। আমার মেয়ে বড় জেদি। আরে বিয়ে করবি না বুঝলাম তাই বলে সুইসাইড কেউ করতে যায়????
বাবা ওনাকে মেজো কেনো বলল??? বাবা তো মেজো ফুপুকে মেজো বলে ডাকতেন। বাবার মুখেই ওনার গল্প শুনেছি কিন্তু সবাই তো বলে উনি মারা গেছেন।
সেই মহিলা বললেন
– আরে মারা তো যায়নি। ভাগ্যিস আমার সৌরভ দেখেছিলো রাস্তা থেকে যে আপনার মেয়ে হাত কাটছে।
কথাটা বলে নীলকে সেই মহিলা কপালে চুমু দিলেন।
বাবা বললেন
– মেজো তোর ছেলে হয়েছে খুব ভালো।
আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। কী ঘটছে আর এই মহিলা কে???
বাবাকে জিজ্ঞেস করেই বসলাম
– বাবা, এরা কারা?? আমি তো এদের চিনতেই পারছি না।
বাবা বলল
– এই হলো তোর মেজো ফুপু আর এইযে ছেলেটাকে দেখছিস তোর ফুপাতো ভাই সৌরভ।
– কিন্তু বাবা তুমি তো বলেছিলে যে….
বাবা আমাকে আর বলতে দিলেন না। আমার কথার মাঝে কথা বলে ফেললেন।
– বাসায় গিয়ে সব বলবো।
বাসার কথা বলাতে মায়ের কথা মনে পড়লো।
বাসায় যে কী অবস্থা চলছে আল্লাহ জানে।
সৌরভ বলল
– মামা আজকে মনে হয় শারলিন কে ছেড়ে দিবে। আপনি ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসুন। তাহলে ভালো হবে।
বাবা বলল
– প্রথম থেকে তো তুমিই কথা বলেছো। তাই এখন তুমি গেলেই ভালো হয়।
সৌরভ চলে গেলো। মেজো ফুপুকে ভালোভাবে দেখছি। মায়ের মুখে শুনেছি তার সাথে নাকি আমার চেহারার অনেক মিল।
বয়স হয়ে যাওয়াতে তেমন একটা মিল খুঁজে পাচ্ছি না।
তবে চোখ আর গায়ের রঙটাতে মিল আছে।
বাবা আর মেজো ফুপু কেবিনের বাইরে চলে গেলো আমাকে বিশ্রাম করতে বলে।
আফরোজার কথার অর্থ এখন বুঝতে পারলাম।
সৌরভ, নামটা খারাপ না। নীল বলে আর ডাকবো না। সেতো স্বপ্নের মানুষ টার নাম।
তারপরও নীল নামটা কে বেশি কাছের মনে হয়।
কিন্তু… থাক না ওকেই জিজ্ঞেস করবানি।
কী ঘটছে সেটা বুঝতে পারছি না। আমি জানতাম মেজো ফুপু মারা গেছেন আবার আজকে তাকে জীবিত দেখলাম তাও সাথে একজন ছেলেসহ।
আমাকে ছেড়ে দেয়া হলো।
বাবা, মেজো ফুপু, সৌরভ আর আমি বাসায় আসলাম।
পুরো বাসা নীরব। নীরব থাকাটাই স্বাভাবিক। যে কাণ্ড করেছি তাতে বিয়ে তো অবশ্যই ভেঙেছে। আর যেহেতু বিয়ে ভেঙেছে সেহেতু আত্মীয় স্বজন দের থাকার কথা না।
বাবা আমাকে আমার রুমে রেখে গেলেন।
কাটা হাত টা দিয়ে কিছুই করতে পারছি না। এক হাত দিয়ে আর কতটুকুই করা যায়।
ড্রেসিং টেবিলের উপর আমার ফোন পরে আছে।
বাসায় কি কেউই নাই???
ফোন বন্ধ হয়ে আছে, চার্জার খুঁজে ফোন চার্জে দিলাম।
আমি তো শাড়ী পড়া ছিলাম। কোন সময় যে আমাকে এই পোশাক পড়িয়েছে তাও জানি না।
যাই হোক কাপড় বদলে নিলাম। কাপড় বদলানোর সময় হাতে একটু ঝাকি লেগেছিল। মনে হলো আমার পুরো শরীর কেপে উঠলো ব্যাথায়।
বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। মনে হলো কতদিন পর এখানে এলাম।
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে। এই সময় টা প্রকৃতি এতো সুন্দর থাকে, বলার মতো না।
আমার খুব ভালো লাগছিলো আজকে। অনেকদিন পর আমার খুব ফ্রেশ লাগছে।
বাবা আর মেজো ফুপুর কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে।
বাসায় কেউ নাই কেনো???
মনে হলো কেউ আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।
পিছনে ঘুরবো আর তখন পুরুষ কণ্ঠ বলল
– পিছনে ঘুরো না। গোধূলি লগ্ন দেখো আর ভাবো কুকর্ম করার ফলাফল কী পেয়েছো???
কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারলাম নীল মানে সৌরভ।
আমি বললাম
– কুকর্ম কেনো করেছি সেটা তুমি জানো।
– একটা লিমিট আছে, শারলিন।
– তোমাকে ভদ্রভাবে আমি অনেকবার বলেছিলাম, মনে পড়ে????
– আমিও ভদ্রভাবে বলেছিলাম সম্ভব না।এতো জেদ ভালো না শারলিন।
– তোমাকে কাছে পাওয়াটা যদি জেদ করা হয়ে থাকে। তাহলে আমি আরো বেশি করে করবো।
– তুমি যা করেছো সেটা বড় ধরনের ঝামেলা তৈরি করেছে।
– সবকিছুর জন্য তুমি দায়ী।
– আমি দায়ী????

চলবে…….!

# Maria_kabir

ছায়া নীল! ৫

0

ছায়া নীল!
৫.

Maria Kabir
রক্তের ধারা কী সুন্দর ভাবে বয়ে যাচ্ছে। এক নাগারে তাকিয়ে থাকার দরুন আমার মাথা ঘুরতে শুরু করলো। রক্তের গন্ধ নাকে আসছিলো। পেটের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো।
বিয়ের শাড়ী রক্তে ভিজে যাচ্ছে আর আমারো কেমন লাগছে। মনে হলো পুরো রুম ঘুরছে আর আমি পরে গেলাম ফ্লোরের উপর।
চোখ বুজে আসলো। সব কিছু অন্ধকার। ঘোর অন্ধকারে আমি পরে আছি।
মনে হচ্ছে কোনো এক অতল গভীর অন্ধকারে আমি ডুবে যাচ্ছি।
কেউ আমাকে খুব টানছে। কে???
আশেপাশে খুব চিল্লাচিল্লি হচ্ছে। সবার কান্নার আওয়াজ কানে আসছে। দরজা ভাঙার চেষ্টা চলছে শব্দ শুনে তাই মনে হচ্ছে।
মনে হলো দরজা খুলে ফেললো। কেউ আমাকে কোলে নিয়ে ছুটছে। খুব চেনা স্পর্শ মনে হচ্ছে।
মনে হচ্ছে যে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে তাকে আমি জানি, চিনি।
আবারো মনে হলো গভীর অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছি।
মনে হচ্ছে আমি ঘন, গভীর জংগলের মাঝে হারিয়ে গেছি। পথ খুঁজে পাচ্ছি না। ছোটাছুটি করছি পথের সন্ধানে।
কোন পথের সন্ধানে সেটা তো আমি জানি না। তাহলে কেনো খুজছি???
একটা বড় গাছের নিচে দাঁড়ালাম। মনে হলো কেউ আমার হাত ধরলো।আমি তাকিয়ে দেখলাম নীল আমার হাত ধরে আছে।
হাত ধরে টেনে নিলো তার কাছে। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম
– তুমি এমন কেনো?
– হুশ, কোনো কথা বলে না।আমাকে জড়িয়ে ধরে আছো না?
– হুম।
– কিছু বুঝতে পারছো?
ওর হৃদস্পন্দন শুনছি খুব শান্ত মনে। মনে হলো ওর খুব কষ্ট হচ্ছে।
আমারো কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু এখন ভালো লাগছে ওকে ছুঁয়ে থাকতে।
– তুমি কষ্ট পাচ্ছো কেনো??
– তুমি এমন কেনো করলে?? যদি খারাপ কিছু হয়ে যেতো?
– হলেও বা কী??
– তুমি বুঝতে চেষ্টা করো। আমার সামনে আসাটা সম্ভব না।
– কেনো সম্ভব না নীল? বলো না?? আমি তোমাকে বাস্তবে ছুঁয়ে থাকতে চাই।
– আমি তো তোমার মাঝেই আছি, সবসময় ছুঁয়ে। আমাকে অনুভব করার চেষ্টা করো। তাতেই তুমি পাবে।
– আমি তোমাকে শুধু অনুভবে নয় চোখের সামনে আমার মাঝে দেখতে চাই।
– জেদ করো না। আর কথা দাও নিজের কোনো ক্ষতি করবে না???
– আগে তোমাকে কথা দিতে হবে?আমার বাস্তব জীবনে তুমি আসবে।আমার হয়ে থাকবে।
– সম্ভব না।আমি তোমার মাঝেই আছি তোমার হয়েই।
– তাহলে আমিও তোমার কথা রাখতে পারবো না।
নীল আমার চিবুকে চুমু দিয়ে আমার চোখেরজল মুছে দিয়ে বলল
– আমি আসবো। তোমার কথা রাখলাম। এখন আমার শারলিন আমার কথা রাখবে। তাই না??
আমি ওকে আবারো জড়িয়ে ধরলাম। তারপর বললাম
– হ্যা, তোমার শারলিন কথা রাখবে!তোমাকে চিনবো কী করে?
– আমি তোমার আশেপাশে থাকলে তুমি অনুভব করতে পারবে।
আমাকে স্পর্শ করলে বা আমি স্পর্শ করলে তুমি বুঝতে পারবে।
আরেকটা কথা, আমি তোমার নীল সেটা কাউকে জানাবে না?
– হুম।
– আমি যাই???
– নাহ, থাকো না এভাবে কিছুক্ষণ।
– অনেক সময় পার হয়ে গেছে। জানো তো?
– কই নাতো? মাত্র কয়েকটা মুহূর্ত।
– শারলিন??
– হুম বলো।
– সত্যি তো আর এমন পাগলামি করবে না তো?
– তুমি না আসলে করবো।
– আমি যাই???
আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললাম
– যাও।
ও মৃদু হেসে চলে যেতে লাগলো। আর আমি ওর চলে যাওয়া দেখছি।
একসময় ও আমার দৃষ্টি সীমার বাহিরে চলে গেলো।
আর আমিও গভীর জংগলের পথ ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। অনেক দূরে আলোর রেখা দেখা হচ্ছে।
আমি ধীরেধীরে সেই আলোর রেখার মাঝে মিশে গেলাম।
আলোর মাঝে চোখ খুলতে পারছিলাম না। খুব চেষ্টা করছি। আস্তে আস্তে চোখ খুললাম।
আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম আমি হাসপাতালের কেবিনের বেডে শুয়ে আছি। আমার হাত কেউ ধরে আছে। আমি পাশ ফিরে তাকালাম। আমার তাকানো দেখে সে মৃদু হেসে ফেললো। ঠিক সেই নীলের হাসি। কেবলই ও চলে যাবার সময় মৃদু হেসেছিলো।
আমি ওকে ছুঁয়ে দেখার জন্য হাত বাড়ালাম। ও আমার হাত আলতোভাবে ধরে,
আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল
– love you!

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ৪.

0

ছায়া নীল!৪.

Maria Kabir
ওকে আমি অনুভব করতে পারি। আচ্ছা ও কি আমায় অনুভব করতে পারে??
আমি ওর জন্য যতোটা পাগল, ও কি তাই?
আমি ওকে যতোটা কাছে পেতে চাই, ও কি ততোটাই আমাকে কাছে পেতে চায়???
আফরোজা আমাকে ছেড়ে দিয়ে কিছু একটা বললো। কী বললো বুঝলাম না।
অন্যমনস্ক ছিলাম তাই বুঝতে পারি না। আফরোজা কে জিজ্ঞেস করলাম
– কিছু বললি?
– কফি খাবি??
– আনতে পারিস।
আফরোজা চলে গেলো। একটা সুযোগ পেয়েছি তার সদ্ব্যবহার করা দরকার। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে আলপিন এর প্যাকেট টা বের করলাম।
একটা আলপিন ডান হাতে নিয়ে বাম হাতের প্রত্যেকটা আংগুলের ডগায় ফোটাতে লাগলাম।
এখন আর তেমন ব্যথা লাগে না। প্রথম প্রথম খুব ব্যথা লাগতো। কয়েকদিন যাবত হাত ফুলে থাকতো। কিন্তু এখন একটু জ্বলে।
এটুকু কষ্টে ওকে কাছে নিয়ে আসা সম্ভব না।
আলপিন টা ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলাম। আরেকটা আলপিন বাম হাতে নিয়ে ডান হাতের আংগুলের ডগায় ফোটাতে লাগলাম।
কিন্তু আলপিন টা বারবার পিছলে যাচ্ছে। রক্তে ভিজে আছে আংগুল গুলো আর সেই ভেজা আংগুলে আলপিন ধরাতে পিছলে যাচ্ছে।
মনে হলো কারো পায়ের শব্দ আমার রুমের দিকেই আসছে।
তাড়াতাড়ি করে হাত মুছে নিয়ে, আলপিন টা ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলাম।
এই কাজ প্রথম না তাই খুব সহজে করতে পারি। আমার কারণেই চাকু, বটি বা ধাড়ালো কোনো জিনিষ বা ব্লেড ও তালা মেরে রাখা হয়।
যখন প্রয়োজন হয় তখন মা নিজে দাঁড়িয়ে কাজ করিয়ে আবার তালা মেরে রাখেন।
বিয়ে বাড়িতে চাকু পাওয়াটা কঠিন হবে না।
আফরোজাই মাকে এগুলো লুকিয়ে রাখতে বলেছে।
ওকে সব শেয়ার করার একটা খারাপ দিক। আমার কোনো ক্ষতি হবে বুঝতে পারলেই সেটা বলে দিবে মার কাছে।
ব্যাস আমি তখন বন্দী কারাগারে।
আলপিন গুলো খুব সাবধানে রেখেছি। দুই মগ কফি নিয়ে আফরোজা এলো।
আমার হাতে এক মগ দিয়ে ও নিজে এক মগে চুমুক দিলো।
আমিও ওর সাথে কম্পানি দিলাম। গরম মগ ধরাতে হাত টা জ্বলছে। জ্বলুক না, ওর জন্য তো এটুকু কিছুই না।
চাকু কীভাবে আনবো সেই ফন্দী টা আঁটতে পারলেই হয়।
কফি শেষ হবার পর আফরোজাকে বললাম
– আফরোজা আমার না খিদে পেয়েছে।
– আন্টিকে বলবো ভাত বা পোলাও আনতে?
– না রে ওসবের খিদে না।
– তাহলে কী খাবি?
– ফল খাবো।
– একটু বোস আমি নিয়ে আসছি।
ও আবার চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর ও ফল নিয়ে ফিরে এলো। কিন্তু চাকু নেই।
আমি বললাম
– আপেল কী দিয়ে কেটে খাবো?
– দাঁত দিয়ে। আমি জানি তুই ফল কেনো চেয়েছিস? তুই চাকু দিয়ে নিজের হাত বা পা কাটবি। তাই না???
আমি হেসে ফেললাম। হাসতে হাসতেই বললাম
– তুই তো আমার থেকেও চালু।
– তোর সাথে প্রায় ৭ বছর যাবত আছি। তোকে আমি পুরোটা না হলেও অধিকাংশ টাই জানি।

নিলু আমাদের রুমে এসে আফরোজা কে বলল
– খালাম্মা আপনাকে ডাকে।
আফরোজা চলে গেলো। নিলুকে আমার নানী নিয়ে এসেছেন। সে এই বাড়িতে নতুন। তার আমার ব্যাপারে বেশি কিছু জানার কথা না।
ওকে দিয়েই কাজটা করানো যাক।
নিলু চলে যাবে আর ওকে ডেকে বললাম
– নিলু, চাকু নিয়ে আয় তো। ফল কেটে খাবো।
– আচ্ছা, আপামনি।
মুহূর্ত এর মধ্যে ও চাকু টা এনে দিলো। নিলুকে বললাম চলে যেতে।
চলে গেলো। মেয়েটা অনেক ভালো। আমাকে যখনি দেখে তখনই ঢ্যাব ঢ্যাব করে তাকিয়ে থাকে।
আমার অসহ্য লাগে এভাবে তাকালে। যাকে এতো ভালবাসি সেই তাকায় না আর অন্যরা…….
চাকুটার ধার আছে বটে।
চাকুটাকে কব্জির নিচে ধরলাম। খুব আলতো করে একটা আচর দিলেই হবে।
মনে হচ্ছে মা, আফরোজা আর আরো কয়েকজন আমার রুমের দিকেই আসছে। তাই চাকুটাকে আমি যেখানে বসেছি তার নিচে রেখে দিলাম আড়ালে।
রুমে ঢুকে আমার সামনে একজন ৬০-৬৫ বছরের মহিলা বসলেন।
তার হাতে লাগেজ। আমাকে বললেন
– বউ মা, ঝটপট করে সেজে নাও তো। আর বেশিক্ষণ নেই।
মা তাকে জিজ্ঞেস করলেন
– বেয়াইন সাহেব, কাজী সাহেব কতদূর?
ও তার মানেই ইনিই আমার হবু শাশুড়ি। দেখতে খারাপ না। আচ্ছা নীলের মা দেখতে কেমন? সেও কি আমাকে বউ মা বলে ডাকবে???
হবু শাশুড়ি বললেন
– আর মাত্র ১ ঘণ্টা!
হবু শাশুড়ি চলে গেলেন। লাগেজ থেকে শাড়ী বের করে আমাকে পড়িয়ে দিলেন।
আমিও ভালো মেয়ের মতো পড়লাম। মা সাজাতে জানেন না।
তাই শাড়ী পড়িয়ে, গহনাগাঁটি পড়িয়ে বললেন
– দেখেছিস কতো গহনা দিয়েছে তোকে??
– অনেক, আরো দিবে বিয়ে হলে।
– হ্যা, ঠিকি ধরেছিস।
– মা, আমার না পানির তেষ্টা পেয়েছে।
আফরোজা যে কোন সময় রুম থেকে চলে গেছে খেয়ালই করিনি।
মাও পানি আনতে চলে গেলো।
ড্রয়িংরুমে কথাবার্তার মাধ্যমে বুঝতে পারলাম কাজী সাহেব এসে গেছেন।
রুমের দরজা আটকে দিলাম আর বারান্দার দরজাও আটকে দিলাম।
চাকু টা ডান হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করলাম। ওকে অনুভবে আনার চেষ্টা করলাম।
চেষ্টা বিফল হলো। বাম হাতের কব্জির নিচে চাকুর ধাড়ালো অংশ ধরে খুব জোড়ে আচর কাটলাম।
সাথে সাথেই ফিনকী দিয়ে রক্তের স্রোত বয়ে যেতে লাগলো।
অসহ্য যন্ত্রণা হতে লাগলো। খুব কষ্ট হচ্ছে, তুমি বুঝতে পারছো????
দেখো না আমার খুব খারাপ লাগছে???

চলবে……..!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ৩.

0

ছায়া নীল! ৩.

Maria Kabir

ওর কাছে যাওয়ার জন্য দ্রুত হাঁটতে শুরু করলাম। মনে হলো কিছু একটাতে পা আটকে গেছে আর সাথে সাথেই আমি উপর হয়ে পরে গেলাম।
কপাল সরাসরি ফ্লোরের উপর পরাতে খুব ব্যথা পেলাম। উঠতে পারছি না, কিন্তু আমাকে তো ওর কাছে যেতেই হবে।
আমার পরে যাওয়াতে খুব জোড়ে শব্দ হয়েছে।
মা আর আফরোজা আমাকে টেনে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিলো।
মনে হচ্ছে পুরো মাথা ঘুরছে আর চোখ তুলে তাকাতে পারছি না।
মা বললো
– কীভাবে পরলি?
আমি বললাম
– ফ্লোরে কিছু একটাতে পা আটকে গিয়েছিলো।
আফরোজা বলল
– কই ফ্লোরে তো আটকে যাওয়ার মতো কিছুই নেই।
মা বললো
– আফরোজা যাও তো বরফ নিয়ে আসো। ওর কপাল টা ফুলে যাচ্ছে। বিয়ের দিন মেয়ের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে কী যে হবে?
মনে হলো আফরোজা বরফ আনতে গেছে। আমার তো চোখ খুলতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু পারছিনা।
বরফ এনে কপালে মা ডলে দিচ্ছিলো। তার মধ্যেই নানী মাকে ডাকলেন।
মা আফরোজাকে বলল
– তুমি কপালে ডলে দাও । আমি একটু দেখে আসি।
আফরোজা বরফ ডলে দিচ্ছিলো। আফরোজা বলল
– এই তোর কোনো ফুফু আছে নাকি? যাকে ত্যাজ্য করা হয়েছে?
– নাহ তো আমার জানামতে তো নেই।
আফরোজা চাপাস্বরে বলল
– জানিস না একজন মধ্যবয়সী মহিলা আর তার পরিবার এসেছিলো। তোর মা আর ছোটো ফুফু তাড়িয়ে দিয়েছে।
আমার এখন একটু ভালো লাগছিলো। মনে হলো চোখ খুলতে পারবো। চোখ খুলে বললাম
– কী এমন বলেছে যে,তুই আমার ফুপু ভাবলি?
– তোর ছোটো ফুফু সেই মধ্যবয়সী মহিলাকে মেজো আপা বলে সম্বোধন করলো।
আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম ছোটো ফুপু তো তার মেজো বোন মানে আমার যেই ফুপু মারা গেছে তাকে মেজো আপা বলে সম্বোধন করে।
মেজো ফুপুর কথা তেমন কেউ বলে না। হঠাৎ হঠাৎ সবাই একসাথে হলে বাবা ওনার প্রসঙ্গ তুলে।
– কিন্তু আফরোজা আমার মেজো ফুপু তো মারা গেছেন অনেক আগেই।
– কিন্তু জানিস শারলিন তোর চেহারার সাথে অনেক মিল পেলাম।
– বাবা বলে আমি নাকি মেজো ফুপুর মতো সুন্দর।
– শোন কোনো একটা ঝামেলা আছে এর মধ্যে।
– বাবা আসুক। জানা যাবে।
বাবার কথা তোলাতেই আমার ওর কথা মনে পড়লো। সাথে সাথেই ওকে যেখানে দেখেছিলাম সেখানে তাকালাম।
কিছুক্ষণ আগেও ও ওইখানে ছিলো আর এখন নেই।
মেঝের উপর তো কিছুই নেই, তাহলে আমি পরলাম কীভাবে?
আমি তো সহজে আছাড় খেয়ে পরি না। ও কি চায়না আমি ওকে পাই?
না এটা হতেই পারেনা। আমারি ভুল।
আফরোজা বলল
– এই তোর শাড়ীর পাড় ছিঁড়ে গেছে।
আমি বললাম
– ওইতো পায়ে বেধে আমি ঠাস আর পাড় ছিঁড়ে গেছে।
আরেকটা কথা মাথায় ঘুরছে। এতক্ষণে তো বিয়ে হয়ে যাবার কথা।
– আফরোজা।
– হ্যা বল
– বিয়ে তে দেরি হচ্ছে কেনো?
– তোদের বিয়ে পড়ানোর জন্য যে কাজী সাহেবের আসার কথা তিনি ফেরিঘাট এ আটকে আছেন।
– ফেরিঘাট এ কেউ একটা বোম ফাটালেই হয়।
– তুই যা বলেছিস। মনে হয় আর কোনো কাজী সাহেব নেই।
– আজকের দিনের মতো তো বিয়ে থেমে যাবে।
– কিন্তু হবে তো একদিন। সেটা পরে দেখা যাবে।
– তোর কপালে এই তুহিন মশাই আছে।
ওর কথা শুনে গা জ্বলতে শুরু করলো। আমি ভাবতে শুরু করলাম কীভাবে ওকে আমার সামনে বাস্তবে আনা যায়?
আচ্ছা আমি তো পরিষ্কার ভাবে ওর ছায়া দেখেছি। ও আমার আশেপাশেই ছিলো।
আফরোজাকে তো সেই ছোট্টবেলা থেকে আমার সব কথাই বলি। এটা কেনো বাদ দিবো?
– আফরোজা জানিস ওকে আমি কিছুক্ষণ আগেও ওই বারান্দার দরজার কাছে দেখেছি।
– তারপর তুই দৌড়ে ওকে ধরতে গিয়ে আছাড় খেলি?
– হ্যা।
– এর মাঝেই ও হাওয়া?
– হ্যা। জানিস ওকে সামনে আনার একটা উপায় পেয়েছি?
– কী শুনি তো?
– নিজেকে যত বেশি কষ্ট দিবো ও ততোই আমার কাছে আসবে।
– শারলিন, যথেষ্ট হয়েছে। আর কত কষ্ট দিবি?
আজ প্রায় ২ বছর যাবত তুই নিজেকে যতটা কষ্ট দিয়েছিস সেটা কি কম ছিলো?
– হ্যা ছিলো।
– জেদ করবি না।
– জেদ না। আরো আগে থেকে শুরু করলে আজ আমার সাথে থাকতো।
– শারলিন চুপ কর।
– নিজেকে যত কষ্ট দিয়েছি ও ততোটাই আমার কাছে এসেছে। আগে তো দূরে দাঁড়িয়ে থাকতো। আমাকে ওর কাছে আসতে দিতো না। এখন আমাকে জড়িয়েও ধরে।
জানিস আজকে জিজ্ঞেস করেছে, আমি কেনো নিজেকে কষ্ট দেই?
– তুই কী বলেছিস?
– কিছু বলার আগেই তো তুই স্বপ্নটা ভেঙে দিলি ।
– আমি জানি না এর শেষ কোথায়???
– আমি জানি। আমার মৃত্যুই এর শেষ। আমাকে যেদিন সাদা কাফনে সাজিয়ে রাখবে, সেদিন ও আসবে।
তখন ওকে বলিস, ভালে সময়ে এসেছেন।
আফরোজা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
এটা প্রথম না। আজ ২ বছর যাবত আমার এসব কথা শুনতে শুনতে ও অভ্যস্ত কিন্তু সহ্য করার ক্ষমতা ওর এখনো হয়নি। তাই কেঁদে ফেলে বাচ্চাদের মতো।
আর আমারি বা কী করার আছে? ও আমার কাছে একটা নেশার মতো হয়ে আছে।
যাকে আমি ভুলে থাকার কথাও ভাবতে পারিনা।
একটা মানুষ স্বপ্নে এসেই আমাকে অর্ধেক পাগল করে দিয়েছে।
ও চায়টা কী?
একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম
– কী চাও?
আমাকে বলেছিলো
– তোমাকে চাই। তোমার প্রতিটা রক্তবিন্দুতে আমি থাকতে চাই। তোমার প্রতিটা নিশ্বাসে আমি থাকতে চাই। আমি চাই তুমি প্রতিটা মুহূর্ত আমাকে কাছে পাওয়ার আশায় বাঁচো।
তোমার এই মায়াবী চোখ যেনো প্রতি মুহূর্ত আমাকেই খুঁজে বেড়ায়।
তোমার শয়নেস্বপনে আমি শুধু আমি থাকতে চাই।
আমি বলেছিলাম
– আছোই তো।
ও আমার হাতে চুমু দিয়ে বলেছিলো
– মায়াবিনী তাহলে তো আমি তোমার স্বপ্নে না তোমার বস্তুজগৎ এ থাকতাম।

চলবে………!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ২.

0

ছায়া নীল! ২.

Maria Kabir

রুমে আমি একা। আমার চোখ বারবার ময়লার ঝুড়ির দিকেই যাচ্ছে। মন বলছে, কাগজের টুকরো গুলোকে আবার জোড়া দেই।
আবারো পায়ের শব্দ। আমার রুমের দিকেই আসছে। হাটার শব্দে মনে হচ্ছে আফরোজা।
আমার দরজায় এসেই থেমে গেলো।
তাকিয়ে দেখি আফরোজা।
আমি বললাম
– আয় বোস আমার পাশে।
ও আমার পাশে এসে বসলো। ও কোনো কথা বলছে না। আর আমারো ইচ্ছে নেই।
একই কথা বারবার বলতে আর ভালো লাগেনা।
কেউ আমাকে বুঝে না, বুঝতে চায়না। সবাই ভাবে আমি মিথ্যে বলি।
আফরোজা বলল
– শারলিন।
– হ্যা বল।
– বিয়েটা করে নে।
– নীল বলতে যদি কেউ থাকতো, তাহলে সে তোর কাছে চলে আসতো।
– ও আমার কাছে আসবে না। আমাকেই ওর কাছে যেতে হবে।
– কীভাবে???
– জানি না। তবে আমি সত্যি ওকে পাবো।
– শোন পাগলামি করিস না।একটু পরেই তোর বিয়ে।
– তুই এখান থেকে যা। যা বলছি, তোকে আমার দেখতে ইচ্ছে করছে না।
– সত্যি সবসময় তিতাই হয়।
– ও আমাকে খুব ভালবাসে। ওকে আমি পাবোই।
– ছাই ভালবাসে। যার অস্তিত্ব শুধুই স্বপ্নে, যার শুধুই ছায়া দেখেছিস, যে প্রতিনিয়ত তোকে কষ্টই দিয়ে যায় সে তোকে কীভাবে ভালবাসবে?
– তুই বুঝবি না ওসব।
আফরোজা উঠে চলে গেলো রুম থেকে। ছোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজলাম। দুচোখে ঘুম ভর করলো।
আমি গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। ঘুমের মধ্যে একটা আচ্ছন্নভাব সৃষ্টি হচ্ছে।
একটা স্বপ্নের ঘোরে চলে এলাম আমি। মনে হচ্ছে দূরে ও দাঁড়িয়ে আছে।
আমি দৌড়াতে শুরু করলাম,ওকে ধরার জন্য প্রাণপণে!
ওকে আমি জড়িয়ে ধরলাম। ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
জড়িয়ে ধরা অবস্থায় বললাম
– তুমি আসো না কেনো?
ও বললো
– কই? এইযে এসেছি!
– এভাবে না নীল, বাস্তবে আসো না।
– এসে কী হবে শুনি?
– ওরা আমাকে জোড় করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।
– আচ্ছা করো বিয়ে আমি যাই।
– নাহ, আমি বিয়ে করবো না। আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
– তুমি তাহলে বিয়ে করো না। আর নিজেকে এতো কষ্ট দিচ্ছো কেনো?

কেউ আমাকে ঝাঁকাচ্ছে। ঘুম ভেঙে গেলো সাথে স্বপ্নটাও ভেঙে গেলো।
দেখি আফরোজা হাতে তোয়ালে নিয়ে আমার কপাল মুছে দিচ্ছে।
আমি বললাম
– তোকে এখানে কে আসতে বলেছে?
– আরে তুই কাঁদছিলি। তোর কান্নার শব্দ পেয়েই তো ছুটে এসেছি।
স্বপ্নে যা যা দেখেছি সেগুলো মনে করার চেষ্টা করলাম।
ওকে যখন স্বপ্নে দেখি তখন স্বপ্নের মাঝে একটা আচ্ছন্নভাব থাকে।
স্বপ্ন সাদা কালো বলে ওর ফেস টা আমার দেখা হয়নি। এটা আমি অনেক আগে ভেবেছিলাম। কিন্তু পরে শুনেছি যে,
স্বপ্নে তাদেরই দেখা যায়, যাদের তুমি জীবনে কোনো একদিন দেখেছো।
কিন্তু ওকে তো আমি কোনোদিনও দেখিনি। তাই ওর ফেসটা আমি স্বপ্নে আনতে পারি না।
কিন্তু ওর বেলায় এই যুক্তিও খাটে না। কারণ ওর দেহের একটা অবয়ব বা ছায়া আমি দেখতে পারি।
ওর সাথে কথা হয় কিন্তু কণ্ঠটা কেমন সেটা আমি কখনওই মনে রাখতে পারিনি।
স্বপ্নের মাঝে যখন ও চলে যায় সেই যাওয়ার সময় একটা ছায়া পরে, সেই ছায়াটাই আমার মেমোরিতে থেকে যায়।
আজও ওর সেই ছায়াটা মেমোরিতে থাকতো কিন্তু আফরোজার এই ঝাঁকানিতে সব গেলো

আমি আফরোজা কে বললাম
– একটু আগেও ওকে আমি স্বপ্নে দেখেছি।ও আমাকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছে।
আফরোজা বলল
– তুই বিয়ে করতে চাচ্ছিস না তাই স্বপ্নে এইরকম একটা ক্যারেক্টার তৈরি করেছে তোর অবচেতন মন। তারপর…….

– আফরোজা চুপ কর। তোকে কতবার বলবো ও আমার অবচেতন মনের তৈরি কোনো ক্যারেক্টার না।
– তাহলে কী? শারলিন বল আমায় ও কে?
– আমি জানি না। তবে আমি বিয়ে করতে পারবো না।
– তুই বিয়ে কর। দেখবি ওকে তুই ভুলে যাবি।
– না, আমি ওকে ভুলতে চাই না।
ড্রয়িংরুম থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ আসছে।
আফরোজা উঠে চলে গেলো কী হয়েছে দেখার জন্য।
আমাদের বাসার বারান্দা দিয়ে সব রুমেই যাওয়া যায়। ঘোরানো সিস্টেম বারান্দা।
রাত কখন হয়েছে টেরও পাইনি। বিয়ে তো অনেক আগেই হয়ে যাওয়ার কথা এখনও হচ্ছে না কেনো?
যাই হোক আমাকে এই বিয়ে থামাতেই হবে।
ময়লার ঝুড়ির দিকে আবার চোখ পড়লো। কেউ আমাকে টানছে ওই ঝুড়ির দিকে। বসে থাকতে না পেরে ময়লার ঝুড়ির কাছে গেলাম।
কাগজের টুকরো গুলোকে একটা একটা করে উঠালাম। ঘরের জানালা দরজা সবই খোলা।
বাতাস আসছে। বারান্দার যে দরজা সেটা খোলা থাকলে বাতাস বেশি আসে।
খুব ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করলো। সব গুলো টুকরো উঠানো হয়ে গেলো।
ড্রেসিং টেবিলে রাখার জন্য উঠে দাঁড়ালাম। আমি যেখানে ছিলাম সেখান থেকে বারান্দায় সরাসরি চোখ যায়।
আমার রুমের দরজার সাথে একটা ছায়া দেখতে পেলাম।
দেখে আমি চমকে উঠলাম। এতদিন যাকে স্বপ্ন দেখেছি তার ছায়া টুকুই শুধু আমার মনে থাকে।
সেই ছায়া বাস্তবে আমার সামনে।ও চলে যাবার সময় যেই ছায়া পড়ে সেই ছায়া। আমার দিকে পিছন ফিরে থাকা সেই ছায়া আর মাত্র কয়েক পদক্ষেপ পরে দাঁড়িয়ে আছে।

চলবে………!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১

0

ছায়া নীল! ১.

#Maria Kabir

অনেকক্ষণ ধরেই খাতায় কাটাকুটি করছি। কিছু একটাকে পেন্সিলের কালি ব্যবহার করে কাগজে একটা রূপ দেবার চেষ্টা করেই যাচ্ছি সেই সকাল থেকে। হচ্ছে না কেনো?
আমার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। যাকে আমি এতোটা চিনি তাকে কেনো কাগজে রূপ দিতে পারছি না?
যে আমার সেই ছোট্ট বেলা থেকে জানি তাকে কেনো কাগজে রূপ দিতে পারছি না।
পেন্সিল টাকে রুমের এক কোণায় ছুড়ে ফেললাম। আর কাগজ টাকে টুকরোটুকরো করে ছিঁড়ে ময়লার ঝুড়িতে ফেললাম।
পেন্সিল টা দুভাগ হয়ে গেছে। বিছানা থেকে নেমে পেন্সিল টার কাছে গেলাম।
দুই টুকরা পেন্সিল দুইহাতে নিয়ে নিলাম। এটা প্রথম বার নয়। এর আগেও অনেক পেন্সিল ভেঙেছি। অনেক কাগজ ছিঁড়ে টুকরোটুকরো করে ফেলেছি।
তবুও তাকে কাগজে রূপ দিতে পারিনি। কেনো পারছি না?
আচ্ছা, সে কি চায়না আমার কাগজে পেন্সিলের দাগে রূপ নিতে???
দরজায় কে যেনো নক করছে।দরজার কাছে গিয়ে বললাম
– কে??
কথাটা বলেই দরজা খুলে দিলাম। মাকে দেখে আমার খুব রাগ হলো।
মন খুব খারাপ থাকলে দরজা আটকে দিয়ে রুমে চুপচাপ বসে বা শুয়ে থাকি।
কিন্তু মার জন্য আর সেটা হলো না।
দরজা খুলে দিয়ে বিছানায় এসে আসন গেড়ে বসলাম।
মা বললেন
– ১২ টা বাজে। ছেলেপক্ষ চলে আসবে ৩ টার মধ্যে। তুই এখনো বসেই আছিস?
কথা বলার কোনো ইচ্ছা নেই আমার। তাই চুপ রইলাম।
মা আমার ড্রেসিং টেবিলের উপর হলুদ বাটা, লাক্স সোপ আর নতুন গামছা রেখে দিয়ে বলল
– শোনো মেয়ে, এইবার আর কোনো অজুহাত শুনবো না। তোমাকে এইবার বিয়ে করতেই হবে।
আমার জেদ চাপলো। চাপাস্বরে বললাম
– নাহ, বিয়ে আমি করবো না।
মা আমার গালে ঠাস করে চড় মেরে বলল
– গলা বেড়েছে তাই না? এইজন্যই তোমার বাবাকে বলেছিলাম মেয়েদের বেশি পড়াতে নেই। না, সে কেনো শুনবে?
– মেয়েদের পড়াতে হয়। আমি আরো পড়বো।
– আমি আধা ঘণ্টা পর এসে যেনো দেখি তোমার গোসল শেষ হয়েছে। তা না হলে লাত্থি দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিবো।
মা রাগে গজগজ করে চলে গেলেন। আমার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে। বাবাও নেই, বাবাকে মা আমার থেকে দূরে রেখেছেন। যাতে সে আমার বিয়ে ভাঙতে না পারেন।
আমার রুমটা ড্রয়িংরুম এর সাথে লাগানো। বাসায় অনেক মেহমান এসেছে। সবাই আমার আশেপাশে থাকতে চাচ্ছে। কিন্তু আমার তো ভালো লাগেনা এতো মানুষ জন। দরজা খোলাতে মেহমান দের কথাবার্তা কানে আসছে। কেউ কেউ বলছে
– মেয়ের কপাল দেখো? কতো বড় জায়গা থেকে সম্বন্ধ এসেছে?
আমার নানী তাতে তাল মিলিয়ে বলছে
– নাত্নী আমার সুন্দরী বলেই তো এসেছে।
সুন্দরী হওয়াটাই পাপ আমার কাছে। আমি কোনো বড়লোক চাই না। আমি যে তাকেই চাই।
কী করবো বুঝতে পারছি না। আফরোজাকে একটু বলে দেখি।
আফরোজা কে ফোন দিলাম। ফোন রিসিভ হলো। আমি বললাম
– আমি বিয়ে করবো না।
– তোর মা আবার শুরু করেছে?
– হ্যা। আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু নিজেকে ঠিক করতে পারছি না।
– দ্যাখ আর কতোবার বিয়ে ভাঙবি? তুই এবার বিয়েটা করে ফ্যাল।
– আমি পারবো না।
– দ্যাখ, তুই যার আশায় আছিস সেটা কেবলি একটা ভ্রম।
– সে ভ্রম না, সে ছায়া নীল।
ও কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দিলাম। বাধ্য হয়ে গোসল করলাম হলুদ বাটা আর লাক্স সোপ দিয়ে।
আমি তো এমনিতেই ফর্শা, আমার তো হলুদ বাটা লাগে না। তারপর ও মার আমাকে হলুদ মাখাতেই হবে।
আচ্ছা ছায়া নীল তুমি কী দেখছে পারছো? আমার আজ বিয়ে?
গোসল করে বের হবার সাথে সাথেই মা এলেন আমাকে সাজাতে।
সাথে আমার বড় খালা আর ছোটো ফুপু। আমার আরো একজন ফুপু আছে। তবে সে অনেক আগেই মারা গেছেন।
আমি নাকি তার মতো দেখতে, বাবা বলেন।
সাজানোর সময় বিড়বিড় করে বলছি। দেখো না ছায়া নীল আমাকে সাজাচ্ছে।
তুমি কী আসবে না??
আমার রুমেই আমি বসে আছি। হঠাৎ সবার চ্যাঁচামেচি বেড়ে গেলো। বাসার বাচ্চারা বলতে লাগলো – বর এসেছে, বর এসেছে।
বুঝতে পারলাম,
ছেলে পক্ষ চলে এসেছে। তাদের কথাবার্তা সবই আগে থেকেই হয়ে আছে। আজকে শুধু কাবিন করাবে। পারলে আমাকে একেবারে উঠিয়ে নিয়ে যাবে। কথা গুলো আমার জানা ছিলো না। সবার কথাবার্তায় বুঝতে পেরেছি।
বড় খালা আমার রুমে এলেন। সবাই আজ খুব সেজেছে। পুরো বাড়িটাকে সাজানো হয়েছে। বড় খালা বললেন
– কোনো ঝামেলা যেন না হয়। বুঝতে পারছিস?
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম।
বড় খালা চলে গেলেন আর আমাকে ছোটো ছোফার উপর বসিয়ে দিয়ে গেলেন।
আমাকে মা বলেছিলো – শুধু দেখতে আসবে।
তবে আমি জানি মা মিথ্যে বলেছে, যাতে আমি খারাপ কিছু না করে বসি।
ছেলে আমার সাথে নাকি কথা বলবে। ছেলের ছবি আমাকে মা দিয়েছিলো। আমি দেখিনি, ছিঁড়ে ফেলেছি।
আমি চেহারা দেখতে চাই না, দেখতে চাই তার ছায়া।
কানে কারো পায়ের শব্দ আসছে। মনে হয় সেই ছেলে আসছে। ধীরেধীরে শব্দটা আমার রুমের দিকে আসছে।
তারপর শব্দটা আর নেই। এর অর্থ, আমার রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তারপর
ছেলে আমার সামনের ছোফায় এসে বসলো। আমি তাকাবো না, আমি তো দেখবো তার ছায়াকে।না তাকিয়েও বোঝা যাচ্ছে, ছেলে বেশ লম্বা আর অনেক ফর্শা।
আর আমিও তো কম ফর্শা না। আয়নায় যখন নিজেকে দেখি নিজেরই চোখ সরে না।
আচ্ছা নীল, তোমারও কি চোখ সরে না আমাকে যখন দেখো?
একটু পরই আমার বিয়ে, তুমি আমাকে নিতে আসবে না?
ছেলে বলল
– আমার নাম তুহিন। আপনার নাম?
– শারলিন।
– আপনি খুব সুন্দর। বিশেষ করে আপনার চোখ।
হ্যা হ্যা, আমার চোখ খুব সুন্দর। কিন্তু সে তো জানে না? জানে?
আমার কোনো উত্তর না পেয়ে তুহিন বলল
– আমি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। অনেক নাম ডাক আমার।
– হুম। আমি ইন্টার পাশ। মেয়েদের বেশি পড়তে নেই।
– আপনার মতো সুন্দরীদের তো ঘরে আটকে রাখাটাই ভালো।
– হ্যা, পায়ে শিকল দিয়ে।
– শুনো একটু পরেই কাবিন হবে এবং তার পর পরই তোমাকে নিয়ে যাবো। আর আমার সাথে কোনো ত্যাড়া কথা চলবে না।
– এতো তাড়াতাড়ি তুমিতে নামলেন?
– আচ্ছা, আমি যাই।
বলেই তুহিন লোকটা চলে গেলো। এখনো এই দুনিয়াতে বিয়ের জন্য মেয়েদের অনুমতি নেয়া হয়না।
দেখো না কীভাবে আমাকে জোড় করে বিয়ে দেয়া হচ্ছে, নীল?
নীল তুমি আমাকে বুঝতে পারছো না?
তুমি কি শুধুই ভ্রম হয়েই রবে? নাকি………..

চলবে……..!

#Maria_kabir

শ্বশুড়েরশর্তেবিয়ে (পর্ব:- ৭)

0

শ্বশুড়েরশর্তেবিয়ে (পর্ব:- ৭)
!!
#লেখা :- মোহাম্মদ সৌরভ
!!
নিজের বউ নিছে পরে আছে হাত ধরে উঠাবো তাও আবার শ্বশুড়ের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে? আব্বাজান সোনালী নিছে পরে আছে ওকে কি উঠাবো? তখনি শ্বশুড় আমার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
!!
শ্বশুড়:- হ্যা হ্যা উঠাও আমি কি না করেছি নাকী তুমি তো সব সময় সুযোগের অপেক্ষা থাকো কখন সোনালীকে স্পর্শ করবে।
!!
আমি:- হ্যা আব্বাজান আপনি ঠিকই বলছেন বলে সোনালীর কাছে গিয়ে সোনালীকে সোজা কোলে তুলে নিয়েছি।
!!
শ্বশুড়:- আরে আমি তো ধরে উঠাতে বলছি কোলে নিয়েছো কেনো?
!!
সোনালী:- আব্বু আমি তো উঠতে পারছিনা আর এদিকে পা অনেক ব্যথা করছে। আপনারা জামাই শ্বশুড়ের শর্ত নিয়ে থাকেন আমি মরে যাই।
!!
আমি:- সোনালী তুমি এইটা কি বলছো তুমি মরবে কেনো যার মরার কথা সে মরবে।
!!
শ্বশুড়:- কার মরার কথা?
!!
আমি:- আল্লাহ যাকে খুসি থাকে মারবেন আমি কি করে বলবো? তবে ছিড়িয়ালটা মনে হয় এই বাড়ীতে হবে।
!!
শ্বশুড়:- কি আমার মৃত্যুর জন্য দোয়া করো আজকে তোমার সব কিছু ফাস করে দিবো।
!!
আমি:- কি ফাস করবেন শুনি এমনিতেই আপনার যন্ত্রনা আর ভালো লাগছেনা। আমি আপনার কোনো শর্ত মানতে পারবোনা অনেক হয়ছে আর না।
!!
সোনালী:- আরে তুমি আব্বুর সাথে এমন ভাবে কথা বলছো কেনো?
!!
আমি:- আরে এই গুলা কোনো শর্ত হয় বলো? যদি এমন হত যে আমি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে তারপর তোমার সাথে আমাকে বিয়ে দিবে তাহলে মানা যেত। দেখি আসো তো আমার কোলে আসো বলে সোনালীকে কোলে তুলে নিয়েছি।
!!
শ্বশুড়:- তারমানে তুমি আমার মেয়েকে স্পর্শ করবে?
!!
আমি:- আপনার মেয়ে কিন্তু আমার বউ দেখি সরেন বলে আমি সোনালীকে নিয়ে সোজা বের হয়ে গেছি আমার পিছু পিছু শ্বশুড় আর শ্বাশুড়ি দুজনে গাড়ীতে এসে বসেছে গাড়ীটা আমি নিজেই চালিয়ে ডাক্তারের কাছে আসছি। সোনালীকে ডাক্তার দেখে কিছু টেস্ট দিয়েছে সেই গুলা করিয়েছি ঘন্টা ৫ পর রিপুট বের হয়েছে তা দেখি ডাক্তার বলে,,,,
!!
ডাক্তার:- তেমন কিছুনা হাল্কা মচকে গেছে পাটা আমি কিছু মেডিসিন দিতেছি আর প্লাষ্টিক করে দিতেছি। ২ দিন রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে পা।
!!
আমি:- তাহলে কি সোনালীকে আমরা বাসায় নিতে পারি?
!!
ডাক্তার:- হ্যা নিশ্চয় নিতে পারেন তবে ওকে ভালে করে কেয়ার করতে হবে।
!!
আমি:- আপনি কোনো চিন্তা করবেন না আমি ওকে দেখে শুনে রাখবো। আমার কথা শুনে শ্বশুড় আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। সোনালীকে আবার কোলে তুলে নিলাম এবার শ্বশুড় কিছু বলেনি।
!!
সোনালী:- তোমার কষ্ট হয়না আমাকে কোলে নিতে?
!!
আমি:- কেনো কষ্ট কেনো হবে আর তাছাড়া তোমার ওজন তো ৪৫ কেজি হবে মনে হয়।
!!
সোনালী:- জ্বি না আমার ওজন ৪৮ কেজির উপরে। আচ্ছা আব্বু তোমাকে এখন কিছু বলেনা কেনো?
!!
আমি:- কি বলবে?
!!
সোনালী:- আমাকে কোলে নিতেছো যে আর শর্ত অনুযায়ী আমাকে তো স্পর্শ করতে পারবে না।
!!
আমি:- দূর আর কোনো শর্ত মানবো না এখন চলো তোমাকে নিয়ে বাসায় যাবো। তখনি শ্বশুড় মসায়ের ডাক দিয়েছে,,
!!
শ্বশুড়:- সৌরভ একটু দ্বাড়াও তো তোমার সাথে কথা আছে।
!!
আমি:- হ্যা বলেন?
!!
শ্বশুড়:- এই নাও তোমাদের হানিমুনের টিকেট আমি আগে কেটে রাখছি শুধু এই কথা গুলা শুনার জন্য আমি অপেক্ষা করেছি। আজকে আর কোন শর্ত নেয় শুধু একটা কথা দিবে বাবা সৌরভ?
!!
আমি:- মানে কিছুই তো বুঝতেছিনা?
!!
শ্বশুড়:- হ্যা আজ থেকে সোনালী তোমার স্ত্রী ওকে তুমি যেখানে খুসি সেখানে নিয়ে যেতে পারবে। ওর হাত ধরে হাটতে পারবে আর এই নাও তোমাদের হানিমুনের টিকেট।
!!
আমি:- কিন্তু সোনালী তো অসুস্থ এই অবস্থা হানিমুনে যাওয়াটা ঠিক হবে না।
!!
শ্বশুড়:- সৌরভ বাবা তুমি তো আছো তাইনা আর সোনালী নিজেই আমাকে রাতে বলছে সব সোনালী তোমাকে ভালোবাসে তাহলে আমি কেনো বাধা দিতে যাবো। তবে আমাকে একটা ওয়াদা দিবে?
!!
আমি:- হ্যা বলেন কি ওয়াদা দিতে হবে?
!!
শ্বশুড়:- সোনালীকে সহজে কষ্ট দিবে না। যদি কোনো ভূল করে তাহলে ক্ষমা করে দিবে। আর ওর চোখের পানি তুমি সব সময় মুছে দিবে আমাকে কথা দাও।
!!
আমি:- হ্যা কথা দিলাম, তখনি শ্বশুড় আমাকে জড়িয়ে ধরেছে আর বলে,,,
!!
শ্বশুড়:- এখন আমি চিন্তা মুক্ত আর আমি আমার মেয়ের যোগ্য জামাই খুঁজে পেয়েছি। আজ থেকে প্রতি রাতে আমার শান্তিতে ঘুম আসবে। এই নাও তোমাদের টিকেট আর মা সোনালী তুমিও সৌরভকে কোনো কষ্ট দিবে না। ওর খেয়াল রাখবে আর ওর কথা শুনে চলবে কেমন?
!!
সোনালী:- ঠিক আছে তাই হবে তাহলে আমরা এখন যাই।
!!
শ্বশুড়:- ঠিক আছে সাবদানে যাস আর তোরা আসার সময় খুসির সংবাদ নিয়ে আসবি কেমন? শ্বশুড়ের কথা শুনে সোনালী আমার দিকে তাকিয়েছে আমি লজ্জা বোদ করেছি।
!!
আমি:- আচ্ছা তাহলে যাই আমি আর সোনালী দুজনে হানিমুনের জন্য রওনা দিলাম। সোনালী আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে ওর কপালে ছোট করে আদর করে দিয়েছি। আমার আর সোমালীর সংসার জীবন অনেক সূখের হবে যাক এখন আমি অনেক খুসি কারন শ্বশুড় আর কোনো শর্ত দিবেনা।
!!
!!
গল্পটা কেমন হয়ছে জানাবেন কমেন্ট করে তাহলে নতুন গল্প লিখতে উৎসাহ হবো।
!!
সমাপ্তি,,,,,,,,,

শ্বশুড়েরশর্তেবিয়ে (পর্ব:- ৬)

0

শ্বশুড়েরশর্তেবিয়ে (পর্ব:- ৬)
!!
#লেখা :- মোহাম্মদ সৌরভ
!!
সোনালীর আব্বার সামনে আমি সোনালীর হাত ধরে রাখছি, তা দেখে সোনালীর আব্বু মানে আমার শ্বশুড় মসায়ের চোখ কপালে উঠে গেছে। আমি হাতটা ছাড়াতে চাচ্ছি কিন্তু সোনালী শক্ত করে ধরে রাখছে।
!!
সোনালী:- আব্বু দরজার সামনে থেকে সরেন আমাদের ভীতরে ঢুকতে দেন।
!!
শ্বশুড়:- হ্যা ভীতরে এসো, আর সৌরভ তুমি বাহিরে থাকো আগে আমার সাথে কথা বলবে তারপর ভীতরে আসবে।
!!
সোনালী:- এখন কি কথা বলবেন অনেক রাত হয়ছে আর সৌরভ অনেক ক্লান্ত আছে। যদি কোনো কথা থাকে তাহলে সকালে বলিয়েন কেমন?
!!
শ্বশুড়:- সোনালী তুমি মনে হয় এই বাদরটার প্রেমে পড়ে গেছো? আচ্ছা এখন তুমি যাও আর সৌরভ তুমি আমার শর্ত ভঙ্গ করার কারনে এখুনি বাড়ী থেকে বেরিয়ে যাও।
!!
আমি:- কিন্তু আমার কথাটা তো শুনবেন প্লিজ।
!!
শ্বশুড়:- কোনো কথা শুনতে চাইনা, আমার সাথে তোমারর যে শর্ত হয়ছে সেই শর্ত অনুযায়ী আজ থেকে তুমি আমার মেয়ের কিছুই লাগো না।
!!
আমি:- প্লিজ আপনি এমন কথা বলবেন আমার কথাটা আগে শুনেন? আমি তো সোনালীর হাত ধরিনি ও ধরেছে। আর একটা সুযোগ দেন প্লিজ আমাকে লাস্ট একটা চাঞ্জ।
!!
শ্বশুড়:- ঠিক আছে তাহলে তুমি এই কাগজে সাইন করে দিতে হবে, আর যত দিন তুমি সফল না হবে ততদিন আমার মেয়েকে স্পর্শ করতে পারবে না রাজি থাকলে বলো?
!!
আমি:- দেখি তো কাগজটা।
!!
শ্বশুড়:- এই নাও।
!!
আমি:- দেন, কাগজটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করেছি আরে শ্বশুড় মসায় কি লিখে রাখছে সব আমি কিনা চাকরি করবো তাও আবার ওনার কাছে। আবার রোজ সকাল ৫টা উঠতে হবে ঘুমাতে হবে রাত ১০ টার মধ্যে।
!!
শ্বশুড়:- কি রাজি আছো তাহলে ভীতরে আসতে পারো আর তানা হলে আমি তোমার নামে পোস্টার ছাপিয়ে দিবো কি বলো?
!!
আমি:- হ্যা আমি রাজি আছি, ভীতরে ঢুকে সাইন করে দিয়েছি। শ্বশুড় অনেক খুসি হয়েছে আমি ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। আচ্ছা আব্বাজান তাহলে আমি যাই আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে?
!!
শ্বশুড়:- হ্যা তবে সোনালীর রুমে নয় আজ থেকে তুমি আমার রুমে থাকবে।
!!
আমি:- মানে তাহলে শ্বাশুমা কোথায় থাকবে?
!!
শ্বশুড়:- তোমার শ্বাশুমার চিন্তা তোমার করতে হবে না, কারন আমি এখনো বেচে আছি আসো আমার সাথে। চলো বলে আমার হাত ধরে সোজা টেনে শ্বশুড়ের রুমে নিয়ে গেছে।
!!
আমি:- আমি নিছে শুয়ে পড়ি আপনি খাটের উপর শুয়ে পড়েন।
!!
শ্বশুড়:- আরে জামাই এমন করে বলছো কেনো? আসো কোনো সমস্যা হবে না।
!!
আমি:- আসলে আব্বাজান আমার ঘুমের মাঝে হাত পা একটু বেশি নরা চরা করতে থাকে যদি আপনরার শরীরের উপর পা উঠে যায়।
!!
শ্বশুড়:- কিছু হবে না তুমি আর আমি খাঠের উপর ঘুমাবো।
!!
আমি:- ঠিক আছে তাহলে আমি ফ্রেস হয়ে আসতেছি, (আজ থেকে শ্বশুড়কে বুঝাবো আমি কেমন জামাই) ফ্রেস হয়ে এসে শূয়ে পড়েছি একটু পর শ্বশুড় এসে লাইট অফ করে আমার পাশে এসে শুয়ে পড়েছে।
!!
শ্বশুড়:- জামাই ঘুমায় গেছো নাকী?
!!
আমি:- জ্বি না আব্বাজান সজাগ আছি কিছু বলবেন?
!!
শ্বশুড়:- জামাই পরে বলবো এখন ঘুমাও।
!!
আমি:- ঠিক আছে, ঘুমের বান করে শূয়ে পড়েছি হঠাত দেখি শ্বশুড় আমার নাক ডাকতে শুরু করেছে এদিকে আমার নাক ডাকার আওয়াজ একদম বিরক্ত লাগে। কি করি হ্যা মনে পড়েছে বলে ঘুমের বান করে নাক বরাবর এক গুসি মেরে দিয়েছি আর শ্বশুড় সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে উঠছে,,,,
!!
শ্বশুড়:- ওরে বাবা রে মরে গেলাম বলে আর আমি ঘুমের বান করে শূয়ে আছি। শ্বশুড় জোরে জোরে কন্না করতে আরম্ভ করেছে তখনি আমি লাফ মেরে উঠে বলি,,,,
!!
আমি:- আব্বাজান কি হয়ছে কান্না করছেন কেনো?
!!
শ্বশুড়:- সৌরভ তুমি কি ঘুমাচ্ছিলে?
!!
আমি:- হ্যা কিন্তু কেনো?
!!
শ্বশুড়:- না হঠাত খারাপ একটা স্বপ্ন দেখছি তাই আর কি।
!!
আমি:- কি স্বপ্ন আব্বাজান?
!!
শ্বশুড়:- থাক তোমার শুনা লাগবে না, তুমি ঘুমাও।
!!
আমি:- আচ্ছা ঠিক আছে, আজকে আর বিরক্ত না করে ঘুমিয়ে পড়েছি, সকালে হঠাত করে আমার গায়ের উপর এক বালতি ঠান্ডা পানি এনে ডেলে দিয়েছে। আমি তো লাফ মেরে উঠে কত গুলা বকা দিয়ে দিয়ে তাকিয়ে দেখি শ্বশুড় বালতি হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
!!
শ্বশুড়:- আরে সৌরভ তুমি তো অনেক সুন্দর বকা দিতে পারো।
!!
আমি:- আব্বাজান সরি আমি বুঝতে পারিনি, কিন্তু আব্বাজান আপনি আমার গায়ের উপর পানি ডালছেন কেনো?
!!
শ্বশুড়:- বাবা সৌরভ তোমার মনে নেয় গত কাল রাতে শর্তের কাগজে সাইন করেছো যে?
!!
আমি:- ও মনে পড়েছে আগামী কাল থেকে ঠিক হয়ে যাবে, তখনি সোনালীর কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। দৌরে বাহিরে গিয়ে দেখি সোনালী সিড়ি দিয়ে নামার সময় পা পিছলে পড়ে গেছে।
!!
সোনালী:- মনে হয় আমার কমরটা গেছে ঐ তুমি চেয়ে চেয়ে দেখছো কি আমাকে এসে উঠাও।
!!
আমি:- আব্বাজান সোনালীকে কি ধরে উঠাবো? তখনি শ্বশুড় আমার দিকে চোখ গুলা বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,,,,,
!!
চলবে,,,,,,,