Friday, June 20, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2406



বিশ্বাসঘাতকতা শেষ_পর্ব

0

বিশ্বাসঘাতকতা
শেষ_পর্ব
লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

-“আব্বা,”
-“এইদিকে আয়।”

আব্বার কাছে গেলাম।খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি আমাকে কিছু বলার জন্য আব্বা ডেকেছেন।

-“তোর আম্মা তোর ব্যাপারে আমাকে ওইদিন যা যা বলল সব সত্যি!”
-“হ্যা…….এ…..।”

আব্বা অগ্নিমূর্তি হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।এইদিকে ভয়ে আমার মনে হচ্ছে আমি এখনি আবারো অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাব।

-“ছেলেটা কোনখানের? নাম কি আর সে কি করে?”
-“আব্বা ওর নাম রেহান।আর সে………”

এরপর আর কিছু বলতে পারছিলাম না কারণ এরপর যা বলব তাতে আব্বা আমার কি অবস্থা করবে সেটা ভাবতেই……..
-“কিরে উত্তর দেস না কেন?বোবা হয়ে গেছস নাকি হারামী…।”
-“আব্বা ও চট্টগ্রামের ছেলে আর ও বেকার।”
-“কিহ!”
-“……………..”
-“তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তুই কি করে এইরকম একটা ছেলের সাথে রিলেশন করলি?তরে কলেজে ভর্তি করাইছি পড়ালেখা করার জন্য আর তুই…..! এমনিতেই তোর চেহেরার যে বাহার এরপর যদি চাকরি করতে না পারস তাহলে তোকে ভবিষ্যতে ভাত খাওয়াবে কে?তোর এইরকম অবস্থার কারণে যদি পরে তুই জামাইয়ের ভাত না খেতে পারস তখন করবিটা কি হ্যা?এইসব কি তোকে বারবার বুঝিয়ে দেওয়া লাগে বেয়াদব। তরে ভালো একটা জীবন দিতে চাইছি যদি তার মূল্য তুই না বুঝতে পারস তাহলে তোর এই মাগিরি বিয়ে দিয়ে আমি ছুটাইতাছি।এরপর বুঝবি কষ্ট কাকে বলে?বাপের হোটেলে খাও তো তাই ভালো লাগে না এরপর যখন নিজের কাধে সব কিছু আসবে তখন বুঝবা এইসব করে জীবনে কি ভুলটাই তুই করছস যা খান…..আমার সামনে থেকে যা…..।”
.
.
এইরকম কথা আর কানে নিতে পারছিলাম না। কি চাইলাম আর কি হয়ে গেল।আসলে আব্বা আম্মা প্রেম ভালোবাসা এইসব পছন্দ করে না।তাদের ইচ্ছা ছিল তারা নিজেরা আমার জন্য ছেলে দেখে পছন্দ করে আমার বিয়ে দিবে।তাই রেহানের সাথে আমার এই ভালোবাসার সম্পর্ক তারা মেনে নিতে পারছে না।
জীবনসঙ্গীকে ভালো বাসতে না পারলে জোর করে তাকে পরিবার থেকে সংসার করার জন্য বিয়ে দিলে শুধু দায়িত্ববোধের কারণে কোন ভালোবাসা ছাড়া বাকিটা জীবন পাড় করা একটা মানুষের জন্য কতটা কষ্টের তা আমি আমার আম্মাকে দেখে বুঝেছি।আব্বা আম্মার পছন্দ করা ছেলেকে যদি আমি কখনো ভালোবাসতে না পারি শুধু দায়িত্ববোধের কারণে সারাটাজীবন আবেগহীন ভাবে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না।আমি রেহানকে ভালোবাসি তাই রেহানকে বিয়ে করলে আমাদের সংসারটা ভালোবাসাময় সংসার হবে আব্বা আম্মার মতন সারাটাজীবন ঝগড়া করে পাড় করতে হবে না।তাই আমি বিয়ে করলে রেহানকেই করব।এখন আব্বা যদি সত্যি সত্যি আমার বিয়ে অন্য কারোর সাথে দেয় তাহলে আমার কি হবে?আর রেহান…..সেতো এই খবর শুনে মরেই যাবে।আমাকে যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।
.
.
কয়েকদিন ধরেই দেখছি আব্বা আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য একেবারে উঠেপড়ে লেগেছে।অথচ এখনো আমি রেহানের সাথে যোগাযোগ করতে পারি নি।হাতের মোবাইলটাও আম্মা কেড়ে নিয়েছি। কিভাবে ওর সাথে কথা বলতাম?অনেকদিন ধরে ওর সাথে কথা বলার জন্য সুযোগ খুঁজছিলাম আর অবশেষে একদিন সে সুযোগ আমার হাতে চলে আসল।আম্মা ঘরের টুকিটাকি বাজার করার জন্য বাসার গেইটের রাস্তায় যাওয়ার সাথেসাথে আমি আম্মার রুমে চলে গেলাম।অনেক খোঁজার পর মোবাইলটা পেলাম।এরপর রেহানকে ছোট করে একটা মেসেজ দিলাম আর এর কিছুক্ষণ পর রেহানের মেসেজের উত্তর আসলো।

-“রেহান এটা ছাড়া কি আর বিকল্প রাস্তা নেই?”
-“আপাতত এইটা ছাড়া এখন আর কিছু করার নেই।ভয় নেই।যা বললাম তা করবে। তোমার আব্বা আম্মা আমাদের পরে ঠিক মেনে নিবে।কালকে ঠিক টাইমে চলে আসিও।”
-“আচ্ছা।”

রেহানের কথামত কাজটা করলে আব্বা আম্মা কষ্ট পাবে আর যদি এই কাজটা না করি তাহলে আমি সারাজীবনের মত রেহানকে হারিয়ে ফেলব।এতদিন পর কাউকে পেলাম যে আমাকে অনেক ভালোবাসে ওর ভালোবাসা ছাড়া বাকিটা জীবন কিভাবে থাকব?আমার পক্ষে তা সম্ভব না।তাই নিজেকে সুখি করতে আমাকে এখন স্বার্থপর হতেই হবে।আমাকে পারতে হবে।
.
.
এতকিছু ভেবে রাখার পরও আব্বা আম্মার জন্য সত্যিই অনেক কষ্ট হচ্ছে আর তার সাথে এই বাড়িটা ছেড়ে চলে যাব ভাবতেই কষ্টটা আরো বেড়ে গেল।কালো হলেও ছোটকাল থেকে আমি ছিলাম দুরন্ত আর চঞ্চল।ছোট থেকে এই বাড়ির উঠান, বাগান সবকিছুর সাথে আমার এই চঞ্চলতা আর দুরন্তপনার অনেক স্মৃতি আমার মনে জড়িয়ে আছে। আর তাই বারবার এখন থেকেই একটা গানটা হৃদয় গহীনে বেজে উঠছে।

লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প-
তারপর হাতছানি অল্প;
.
চায় চায় উড়তে উড়তে – মন চায় উড়তে উড়তে।
.
টুপটাপ টুপটাপ বৃষ্টি-
চেয়ে থাকে অপলক দৃষ্টি;
.
চায় চায় উড়তে উড়তে – মন চায় উড়তে উড়তে।
.
হাটি-হাটি পা-পা শুরু হয়–
ভয় হয় শুধু হয় ভয় হয়।

হাটি-হাটি পা-পা শুরু হয়–
ভয় হয় শুধু হয় ভয়-ভয়।।
.
চায় চায় উড়তে উড়তে – মন চায় উড়তে উড়তে।
.
আশা আশা চারপাশে কুয়াশা;
আয়নার কোল জুড়ে দুরাশা-
.
চায় চায় উড়তে
.
.
এরপরের দিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাসা থেকে পালিয়ে আসলাম।এরপর সোজা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম।চট্টগ্রাম রেলস্টেশন এ ওর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

-“সালমা?”
আমার নাম একটা লোকের মুখ থেকে শুনে বুঝলাম ও আর কেউ নই রেহান।
-“রেহান!”
-“হুম।”
ওর চেহেরার দিকে তাকালাম।আমার কল্পনায় ওকে আমি যেমনটা ভেবেছিলাম ও ঠিক তেমনটা নই।আমার মতনই ওর গায়ের রং, আর হাইট আমার থেকে একটু কম।আমার কল্পনার সাথে ওর চেহেরার মিল না থাকলেও এতদিন একে ভালোবেসে এসেছি তাই ওর চেহেরা কেমন তা আমার কাছে মূল বিষয় হয়ে দাঁড়ায়নি।

-“রেহান তোমার কথামত এখানে আমি চলে আসছি এখন কি করব?”
-“কি আর করব এখন সোজা কাজী অফিসে চলে যাব আমরা।”
.
.
এরপর কাজী অফিসে গিয়ে আমরা বিয়ে করে সোজা রেহানের বাবার বাড়ি চলে গেলাম।প্রথমদিকে ওর আব্বা আম্মা আমাদের এই বিয়েটা মেনে না নিলেও এরপর ঠিক মেনে নেই।আর এইদিকে আমার আব্বা আম্মা আমাদের পালানো বিয়ের কথা জানতে পারে।আমিই আমাদের বিয়ের কথাটা আব্বা আম্মাকে জানাই।ওরাতো রাগে সিম খুলে রাখে কয়েকদিনের জন্য এরপর ঠিকই নিজেরাই আমার সাথে যোগাযোগ করে।একমাত্র মেয়ে বলে কথা তাই তারা আমাকে এত সহজে ফেলে দিতে পারেনি।পরে আবারো দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের সব অনুষ্ঠান চট্টগ্রামের নিয়মে করানো হয় আর আমার বিয়ের উপহার হিসেবে আব্বা আম্মাকে আমার শুশুড়বাড়িতে ফুল ফার্নিচার দিতে হয়।
.
.
বিয়ে হওয়ার পরে আর পড়াশোনাটা চালু রাখতে পারেনি। যৌথ পরিবার হওয়ায় ঘরের বড় বউ হিসেবে একহাতে ঘরের সব কাজ করা লাগত আমার।তাই এরপর থেকে সংসারে কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে শুরু করি।সকালে ঘুম থেকে উঠে শুশুড় শাশুড়ি থেকে শুরু করে ঘরের সবার জন্য নাস্তা বানানো, সকাল ১০ টায় আবার সকলের জন্য চা নাস্তা বানানো, দুপুরের খাওয়া রেডি করা,এরপর বিকাল আর সন্ধ্যার জন্য হালকা নাস্তা সবার শেষে রাতের খাবার তৈরী করা।এইসব বাদে ঘরের টুকিটাকি কাজও আছে।সারাটাদিন রান্নাঘরেই দৌড়াদৌড়িই করা লাগত আমার।বলতে গেলে ঘরের জন্য একদম পাক্কা গৃহিণী হয়ে উঠলাম। আর রেহান ও তখনো কোন চাকরি করত না।বাবার ভাড়া দেওয়া ৫ তলা বিল্ডিং থেকে যা আসতো তা দিয়ে সে সংসারের খরচটা চালাত। বিয়ের একবছরের মাথায় আমার কোল জুড়ে আমাদের ছেলে সন্তান আসে।কি সুখের দিন কাটছিল আমাদের।কিন্তু আমাদের ছেলের বয়স যখন একবছরে পড়ে তখন কেন জানি আমার মনে হতে লাগল রেহান আর আমার সম্পর্কটা ঠিক আগের মতন নেই।ওর মধ্যে কেমন জানি একটা ছাড়াছাড়া ভাব দেখছিলাম।ও একটু একটু করে আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে যা ওর আচরণ দেখে বেশ বুঝতে পারছিলাম।ওর সাথে ঝগড়া করে সংসারটায় ঝামেলা বাধাতে চাচ্ছিলাম তাই চুপচাপ সব সয়ে যেতাম।তারপরো মাঝেমাঝে ছোটখাট ঝগড়া আমাদের মধ্যে হয়ে যেত আর তা আমাদের রুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।আস্তে আস্তে আমার ছেলেটা ৬ বছরের মাথায় পড়ে।আমার এতদিনের বলাতে ও চাকরি করেনি কিন্তু ছেলের বয়স যখন ছয়ে পড়ে তখন থেকেই ও চাকরি করা শুরু করে।বিষয়টা আশ্চর্যজনক হলেও মনে মনে খুব খুশি হয়েছিলাম যাক শেষ পর্যন্ত ওর মাথায় বুদ্ধি এসেছে।কিন্তু এত খুশির মাঝেও শুধু একটাই দুঃখ ছিল তার তা হল ওর আর আমার মাঝের সম্পর্কটার উন্নতি তখনো হয়ে উঠে নি।আমার প্রতি ওর উদাসীনতা,ওর চুপচাপ স্বভাবের আচরণটা আমাকে খুব ভয় পাইয়ে দিত।
.
.
ওর চাকরি করার সময়টাতে যখন রোজা আসে ওই সময়ে আমি ওর ফেসবুক একাউন্ট চেক মারতে গিয়ে দেখি ওর ভালোবাসামূলক পোস্টে একটা মেয়ের লাভ রিয়েক্ট।শুধু সেই পোস্ট না আরো অনেক পোস্টে ওই মেয়েটার লাভ রিয়েক্ট এবং কমেন্ট।মেয়েটা আমাদের আত্মীয়ের মধ্যেও কেউ ছিল না তাই বাইরের একটা মেয়ের একটা বিবাহিত পুরুষের পোস্টে এইরকম লাভ রিয়েক্ট এবং কমেন্ট দেখে আমার সন্দেহটা কেন জানি আরো বাড়তে লাগল।আগে এইরকম কিছু আমার চোখে পড়েনি কিন্তু হঠাৎ করে এইসব হওয়ার কারণটা চোখের সন্দেহ বাড়াবে এটাই স্বাভাবিক।

-“রেহান তোমার প্রতিটা পোস্টে এই মেয়েটা এত লাভ রিয়েক্ট কেন দিচ্ছে? সাথে কমেন্ট ও…। তুমি কি মেয়েটাকে চিন?”
-“আমি কিভাবে চিনব?আর না চিনলেই যে বাইরের কেউ এইরকম লাভ রিয়েক্ট কমেন্ট দিতে পারবে না এমন কোন বাধ্যবাধকতা আছে নাকি?”
-“বাধ্যবাধকতা নেই তা আমি জানি।কিন্তু তোমার কিছু কিছু কাজ আমাকে সন্দেহ করাতে বাধ্য করে তাই সন্দেহ আপনাআপনিই এসে যায়। আচ্ছা তুমি কি চুপচাপভাবে আড়লে থেকে আমাকে কিছু বুঝার ইঙ্গিত দিচ্ছ নাতো?”
-“সালমা তুমি পাগল হয়ে গেছ।পাগল মহিলা একটা…..।”

এই বিষয়টা নিয়েই আবার ঝগড়া বাধল।এ ঝগড়ার এক পর্যায়ে ও আমার গায়ে হাত তুলে।শুধু গায়েই হাতে তুলে নি সেদিন লাঠি দিয়ে ও আমাকে মেরেছিল তাও রোজা রাখা অবস্থায়।
.
.
এরপর ভাবলাম থাক বিষয়টা এইখানেই আটকে থাক।আর ঝগড়া করে ঘরে কোন অশান্তি আনবো না ঘরে ছোট ছেলে আছে এইরকমভাবে যদি সবসময় ঝগড়া চালিয়ে যেতে থাকি তাহলে তা আমার সন্তানের উপর খারাপ প্রভাব পড়বে।আব্বা আম্মার ঝগড়া দেখে যে কষ্ট আমি ছোটকাল থেকে পেয়ে এসেছি ঠিক সেরকম কষ্ট আমার ছেলেটাও পাক তা আমি চাইছিলাম না। এর চেয়ে চুপচাপ থাকায় ভালো। এতে সবারি মঙ্গল।ও আমাকে অবহেলা করলেও আমার ছেলেটাকে কখনো অবহেলা করেনি।ছেলে যখন যেটা চেত সাথেসাথে তা কিনে এনে দিত।এই ছেলের জন্য হলেও ও আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না আমার সাথে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করবে না মনে মনে এই বিশ্বাসটা সবসময় করতাম।
.
.
আমি আমার সংসার নিয়ে এখন প্রায় ব্যস্ত থাকি।ওর সাথের আমার মধ্যেকার দূরত্বের মনে হয় আর কোনদিন অবসান হবে না তাইতো অনেক চেষ্টা করা সত্ত্বেও আমি সফল হতে পারিনি।কুরবানির আগে ও ওর ছোট ভাইয়ের কাছে এক লাক্ষ টাকা চায় ব্যবসার নাম করে।ওর ভাই ওর বন্ধুদের থেকে টাকা যোগার করে এক লাক্ষ টাকা ওর হাতে তুলে দেয়।প্রতিদিনের মত সেদিনও রেহান চাকরির কাজের জন্য বাসা থেকে বের হয়।এরপরের দিন ও আর বাসায় আসেনি।
.
.
বাসার সবাই খুব টেনশনে পড়ে যায়। রেহান কোথায় গেল কি অবস্থায় আছে তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে পুরা পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম আমি।

এরপর ও নিজেই আমার শশুরকে কল দিয়ে বলে সে তানহা নামের একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে।এরপরে আরো জানতে পারি রেহান ব্যবসার নাম করে তার ভাইয়ের কাছ থেকে যে এক লাক্ষ টাকা নিয়েছিল তা নিয়ে সে পালিয়ে যায় মেয়েটার সাথে।এরপর ওরা বিয়ে করে।কেন জানি শশুড়ের এই কথাগুলো আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছিল না।ভালোবেসে বিশ্বাস করে লোকটাকে বিয়ে করলাম আর সেই আমার সাথে এতবড় বিশ্বাসঘাতকতা করবে তা মন থেকে মেনে নিতে চাচ্ছিলাম না।ও এতদিন পালিয়ে কই থাকবে?বাঁচতে চাইলে আর টাকার জন্য বাবার বাড়িতেই ওর আসাই লাগবে। তখন ওর মুখ থেকে সবকিছু শুনে নিব।
.
.
এই ঘটনার দুইদিন পর ও বাসায় আসে।শুধু ও একাই আসেনি সাথে করে আরেকজনকেও নিয়ে এসেছিল।ওর সাথের মেয়েটা কে জানার জন্য ওকে প্রশ্ন করলে ও বলল,

-“ও হচ্ছে তানহা…. আমার স্ত্রী।আমরা একে অপরকে ভালোবাসি। কয়েকবছর রিলেশনের পর দুইদিন আগে ওকে বিয়ে করে আমি আমার বউ বানিয়েছি।”

ওর মুখের এই কথাটাও যে আমাকে এইবার বিশ্বাস করতে হবে তা কখনো ভাবতেই পারিনি।তারপরও নিজেকে শান্ত রেখে ওকে জিজ্ঞাস করলাম,

-” ও যদি তোমার স্ত্রী হয় তাহলে আমি কে রেহান!?”
-“আমি এখন তানহাকে ভালোবাসি, তোমাকে না।কয়েকদিন পরেই তোমাকে আমি ডির্ভোস দিয়ে দিব তাহলে এরপর থেকে তুমি আমার কেউ থাকবে না।”

শুশুড়-শাশুড়ি বাড়ির সবার সামনে ও আমাকে অস্বীকার করল।কিছুতেই তা মেনে নিতে পারছিলাম না।এতদিনের ভালোবাসা,সংসার আমাদের ছেলে কোনকিছুর মূল্যই এখন ওর কাছে নেই।তাইতো এত্ত বড় কথা ও ওই মেয়েটার সামনে আমাকে বলল।দোষটা এখন আমি কাকে দেব?নিজেকে না নিজের স্বামীকে নাকি তার নতুন বউকে।অনেক ভেবে দেখলাম ভুল তিনজনেরই ছিল।আমার ভুলটা ছিল ওকে বিশ্বাস করে ওর সাথে পালিয়ে সংসার করা,আমার স্বামীর ভুলটা ছিল ও একটা স্বার্থপর।ওর এখন আর আগের মতন আমাকে মন ধরে না তাই নিজের প্রয়োজন মিটানোর জন্য আরেক মেয়েকে বিয়ে করে এনেছে আর সেটাকেই সে ভালোবাসা বলে দাবি করে সবার সামনে প্রমাণ করছে এতদিন পর সে সত্যিকারের ভালোবাসা পেয়েছে।আর বাকি রইল ওর নতুন বউ ওকে দেখেই মনে হল ও সবকিছু জানে যে রেহান বিবাহিত,ওর ঘরে স্ত্রী আছে।সব জানা সত্ত্বেও এই মেয়েটা একটা বিবাহিত পুরুষের সাথে রিলেশন করে তাকে বিয়ে করে। আমার ছেলের বাবাকে মেয়েটা কি পরিমাণ ভালোবাসে তা ওর কাজ দ্বারা বুঝাই যাচ্ছে। তাইতো এক মেয়ে হয়ে আরেক মেয়ের সংসার ভাঙ্গল।বাসার কেউ ওদের এই বিয়ে মেনে নেই নি।রাতের বেলায় কোথাও যাওয়া সম্ভব না তাই তারা নিচ তলায় রাত কাটায়।
.
.
সেদিন রাতে অনেক কেঁদেছি। আমার কান্না দেখে আমার ছেলেটাও অবুঝের মত কেঁদেছে।শাশুড়ি মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে শান্তনা দিচ্ছিল।কিন্তু কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না।রেহানকে ভালোবেসছিলাম নিঃস্বার্থভাবে কিন্তু তার বদলে ওর কাছ থেকে পেয়েছি শুধু বিশ্বাসঘাতকতা।পুরোটা রাত কান্না আর টেনশনে পাড় করেছি কি করে বাকি জীবনটা একা একলা মেয়ে হয়ে এই সমাজে পাড়ি দিব।অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় চলে যাব আর সেখানে গিয়ে চাকরির খুঁজ নিব।দেবরের সংসারে থেকে ওর টাকা দিয়ে চলে আর বোঝা হয়ে থাকব না।আমার আত্মসম্মানটা একটু বেশি তাই এইরকম সিদ্ধান্ত নিজে নিজে নিলাম।এত কষ্টের মাঝেও আল্লাহর কাছে একটা বিষয় নিয়ে লাক্ষ লাক্ষ শুকরিয়া যে তিনি আমাকে মেয়ে দেননি।মেয়ে হলে হয়ত আমার মতনই আমার মেয়েটা এইরকম কষ্টের শিকার হত।আর মা হয়ে তা আমি কিছুতেই দেখতে পারতাম না।
.
.
তাই এখন থেকে আমি আমার ছেলেকে নিয়ে বাঁচব আর ওকে এই শিক্ষা দিব যে একটা মেয়েকে কিভাবে সম্মান করতে হয়।আমার চোখের জল দিয়ে ওকে উপলব্ধি করাব একটা মেয়ের ভালোবাসা তার বিশ্বাস নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতার খেলা খেললে মেয়েটার কষ্ট কতটুকু হয়। আমার নিজের শিক্ষা থেকে ওকে জ্ঞান দিব, নিজ হাতে ওকে একজন ভালো মানুষ বানাব।ওর বাবার খারাপ কোন অভ্যাস আমি আমার ছেলের গায়ে লাগতে দিব না।

এইখানে আমি যে কাহিনীটা লিখলাম তা সম্পূর্ণ বাস্তব ঘটনার ভিত্তিতে লিখলাম।প্রয়োজনের ভিত্তিতে গল্পে সালমা আর রেহান এই দুইটি ছন্মনাম আমি ব্যবহার করেছি।এই কাহিনীটার বাস্তব রুপ আমি নিজে দেখেছি আর সালমার ভবিষ্যৎটা আমি নিজ থেকে লিখলাম।যদি রেহান তার স্ত্রীর সাথে এইরকম বিশ্বাসঘাতকতা না করত তাহলে হয়ত এই কাহিনীটা অন্যরকম হত।কিন্তু সালমার ভাগ্য হয়ত তার জন্য অন্যকিছু লিখে রেখেছিল তাই তাকে এইরকম বাজে পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে।

বি.দ্র.-আল্লাহ যদি আমাকে সুস্থ রাখেন তাহলে পরববর্তীতে আরেকটা বাস্তব কাহিনীর গল্প নিয়ে আমি জান্নাতুল ফেরদৌস আপনাদের সামনে হাজির হব।সেখানে আপনাদেরকে দেখাব কিভাবে একটা মেয়ের ভাগ্য তাকে কোথা কোথায় নিয়ে এসেছে।সেই নির্মম কাহিনী আমি আপনাদের কাছে তুলে ধরব।ততক্ষণ পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন আর আমিও যাতে ভালো থাকি সেই দুয়া করবেন।

সমাপ্ত

বিশ্বাসঘাতকতা পর্ব_০১

0

সত্যঘটনাঅবলম্বনে
বিশ্বাসঘাতকতা
পর্ব_০১
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

-“কিরে আমার মোবাইলটা কই?ওর তো কল দেওয়ার সময় হয়ে গেছে!উফ উফ….. কি বুদ্ধুই না আমি। কোথায় কি রাখি কিচ্ছুটা মনে থাকে না এখন।আর থাকবেই বা কি করে মনটাতো সারাক্ষণ ওর পাণেই থাকে।সালমা কথা না বাড়িয়ে মোবাইল খুঁজ ও যদি প্রথম রিং এ আমাকে না পায় তাহলে আমার অবস্থা ও যে কি করবে তা আল্লাহ মাবুদই জানে।আমার জন্য ওর এই চিন্তা,অস্থিরতা, আমাকে বকা দেওয়া ওর সবকিছুতেই আমি আমার জন্য ওর ভালোবাসা খুঁজে পাই।”
.
.
-“হ্যালো…”
-“এই তোমার কল ধরতে এতক্ষণ লাগে কেন হ্যা? এই পর্যন্ত কতগুলো কল দিছি তোমাকে সেই খেয়াল আছে তোমার?”
-“সরি সরি জান,প্লিজ রাগ কর না।আমার মোবাইল সবসময় সাইলেন্ট মোডে থাক সেটাতো জানই।তুমি যে কল দিছ সেটা টের পায়নি।আর মোবাইল আমার হাতের কাছে ছিল না।”
-“……………”
-“কি ব্যাপার কথা বলবে না আমার সাথে।আমার জানটা কি আমার সাথে রাগ করছে।সরিতো…..এই কান ধরলাম আর জীবনেও এই ভুল করব না।”
-“………….”
-“আচ্ছা কেউ যেহেতু আমার সাথে কথা বলবে না তাহলে কলটা কেটে দেই।শুধু শুধু তোমার মোবাইলের টাকা নষ্ট করার কি দরকার।”
-“এই কল একদম কাটবি না।কল কাটলেই তোর খবর আছে।তুই জানোস তুই আমার কল না ধরলে আমি কত টেনশনে থাকি। মনে হয় এই বুঝি তোর মা বাবা আমাদের রিলেশন সম্পর্কে সব জেনে গেছে।তোকে হারানোর ভয় সবসময় কাজ করে আমার মনের মধ্যে।”
-“জানি তো আমি।”
-“তাহলে কেন এত টেনশনে রাখলি আমাকে?”
-“সরিতো। আর এইরকম ভুল করব না।”
-“মনে থাকে যেন।”
.
.
এতক্ষণ আমি যার সাথে কথা বললাম সে হচ্ছে রেহান।আর আমি সালমা।১ বছর ধরে রিলেশন চলছে আমাদের।ওর সাথে এতক্ষণ যে কথা বললাম সেইসব কথা আমার কলেজ ফ্রেন্ডরা তাদের বয়ফ্রেন্ডের সাথে বলে বেড়ায় যা আমার কাছে অনেকটা ন্যাকামো আর ঢঙি ভালোবাসা লাগত।কিন্তু রেহানের সাথে আমার সম্পর্ক হওয়ার পর এখন আর এইগুলো ন্যাকামো লাগে না।বরং একধরণের ভালো লাগা আমার মধ্যে কাজ করে।
.
.
ইন্টারে উঠার পর আব্বা আমাকে একটা দামি মোবাইল কিনে দেয়।আমার ফ্রেন্ড সব কয়টা ফেসবুক চালায় আর তাদের ফেসবুক ফ্রেন্ডদের সাথে চ্যাট করে। তাই আমিও আমার দামি মোবাইল দেখে আর ফেসবুক সম্পর্কে কৌতুহলের কারণে ফ্রেন্ডদের কাছে গিয়ে একটা ফেসবুক একাউন্ট খুলি।এরপর মোবাইলে প্রথম যার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে কৌতুহলবশত আর নতুন বন্ধু বানানোর জন্য তার সাথে আস্তে আস্তে চ্যাট করি।আইডি নামটা দেখে বুঝতে খুব কষ্ট হত আইডির মালিক ছেলে না মেয়ে।আইডির মালিককে এই কথা জিজ্ঞাস করাতে সে বলল,,সে মেয়ে।মেয়ে ফ্রেন্ড ভেবে খুশি হয়েই তার সাথে দিনরাত চ্যাট করতাম।আমি ঢাকার মেয়ে,কি করি না করি সারাদিন কেমন কাটল আমার… বলতে গেলে অনেক কিছুই তার সাথে আমি শেয়ার করতাম। ও নিজেও আমাকে বলল, ও ঢাকার ছেলে আর তার নিজের জীবনের অনেক কিছুই ও আমার সাথে শেয়ার করত।এইভাবে আস্তে আস্তে কেমন করে জানি ওর প্রতি আমার বিশ্বাসটা আপনাআপনি চলে আসলো।
.
.
কিন্তু একদিন সে বিশ্বাসটা পুরো ভেঙ্গে গেল যখন সে আমাকে জানালো সে মেয়ে না ছেলে।তাই ওর উপর রাগ করে দুইদিন নেটে আসেনি।কিন্তু তার সাথে কথা না বলে থাকতেও পারতাম না তাই নিজের রাগকে একপাশে ফেলে তার সাথে আবার কথা বলা শুরু করি আর তার ভুলের জন্য আমি তাকে মাফ করে দেই।এরপর জানি না কি থেকে কি হয়ে গেল আমার মনের অজান্তে ওকে আমি ভালোবেসে ফেললাম।এরপর ও আমাকে ফেসবুকে প্রপোজ করল আর তা আমি একসেপ্ট করলাম আর তারপর একে অন্যের নাম্বার আদান প্রদান।তখনো আমরা কেউ কারোর ছবি দেখেনি।খুব দেখতে ইচ্ছে করত তাকে, না জানি আমার স্বপ্নের রাজকুমারটা দেখতে কেমন।সবসময় মনের মধ্যে তার একটা ছবি নিজের রংতুলি দিয়ে আকঁতাম আর তাকে কল্পনা করতাম।সেটা আরেকটা ভালোলাগার অনুভূতি।

একদিন সে নিজেই আমাকে বলল,
-“সালমা তোমার একটা ছবি দাও না।তোমাকে দেখতাম।”

প্রথমদিকে জড়তা থাকলেও এরপর সে জড়তাটা নিজে নিজে কাটাই।ও আমাকে ভালোবাসে তাই আমাকে দেখার ইচ্ছা ওর হতেই পারে স্বাভাবিক কিন্তু আমাকে দেখে ওর পছন্দ হবে কিনা তা নিয়ে অনেক টেনশনে পড়ে গেলাম।আমি দেখতে শ্যামলা কালো রংয়ের।এই গায়ের রংয়ের কারণে যদি সে আমাকে পছন্দ না করে তাহলে আমার কি হবে?ও কি আমার সাথের এতদিনের রিলেশনটা একদিনেই ভেঙ্গে দিবে।খুব ভয় করছিল তখন।আল্লাহর নাম করেই আমার একটা ছবি দিয়ে দিলাম।এরপর আল্লাহকে স্মরণ করতে লাগলাম আর বলতে লাগলাম,
-“আল্লাহ ও যাতে আমাকে পছন্দ করে।”
এরপর ওর কোন রিপ্লাই পেলাম না।ভয়টা আরো গভীর হতে লাগল।
তাই আমি নিজেই ওকে নক করে বললাম,,
-“রেহান আমাকে কি তোমার পছন্দ হয়নি?”
অনেকক্ষণ ধরে ওর উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।কিন্তু ওর উত্তর পেলাম না।সেদিন সারাটাদিন কি কান্নাকাটি না করলাম।কাউকে ভালোবাসলে যে এত কাঁদতে হবে তা আমি আগে বুঝতে পারেনি।কোনরকমে রাতটা পার করলাম।এরপরের দিন সকালে ও আমায় কল দেয়।
কল রিসিভ করতেই ও আমাকে বল বসে,
-“সালমা আমাকে বিয়ে করবে?”
খুশিতে সেদিন কান্নাই করে দিলাম।এরপর আগের মত মোবাইলে ওর সাথে কথা বলা চালিয়ে যেতে লাগলাম।ওকে দেখার ইচ্ছাটা দিনদিন প্রবল হতে লাগল।তাই একদিন লজ্জার মাথা খেয়ে ওকে জিজ্ঞাস করেই ফেললাম,
-“রেহান তোমার একটা ছবি দেও না?”
সেদিন তার উত্তরটা এইরকম ছিল…
-“সালমা সময় হোক এরপর না হয় আমাকে সামনাসামনিই দেখতে পাবে।”

ছবিতে দেখার চেয়ে ওকে সামনাসামনি দেখাটা আমার কাছে অনেক শ্রেয় মনে হল।তাই ওকে আর তেমন জোর করেনি।ওর ছবির ক্যানভাসতো আমি অনেক আগেই মনে মনে এঁকেই নিয়েছি সেটাই অনেক আমার জন্য।
.
.
মোবাইল সাইলেন্ট রেখে তার কলের জন্য অপেক্ষা করতাম আর অপেক্ষার প্রহর শেষ হলেই কথা।কি সুন্দর সেই দিনগুলো ছিল।রিলেশন চলা অবস্থায় আমি আরেকটা সত্য কথা জানতে পারি যে, রেহান চট্টগ্রামের ছেলে।এতদিন ধরে জানতাম ও ঢাকার ছেলে আর এখন জানলাম ও চট্টগ্রামের ছেলে।একেতো প্রেমের রিলেশন এরউপর আবার ও হচ্ছে চট্টগ্রামের ছেলে।চট্টগ্রামের ছেলের সাথে আমার আম্মা আব্বা বিয়ে দিবে কিনা সেটা নিয়েও টেনশনে পড়ে গেলাম।কারণ আমার আব্বা, আম্মার ধারণা চট্টগ্রামের ছেলেদের বিয়ে করা মানে সামনে থেকে অপমান,অভাব আর মৃত্যুকে দেখা।এই দেশের ছেলেরা অনেক বাজে হয়। পড়ালেখা কম কিন্ত এদের অহংকারটা বেশি হয় আর এরা রাজার হালে থাকতে চায় কিনা তাই অন্যের অধীনের চাকরিটাও নাকি করতে চায় না।এদের সাথে মেয়ের বিয়ে দিলে তার মা বাবাকে রাস্তার থালা ধরতে বেশিদিন সময় লাগবে না কারণ সেখানে নাকি তাদের মন মতন কোন অনুষ্ঠান করতে গেলে প্রচুর খরচাপাতি করতে হয়,মেয়ের বিয়ের দিতে হলে একটা ঘরটা সাজাতে গেলে যা যা লাগে সব উপহার হিসেবে দিতে হয় প্লাস অতিথি আপ্যায়নতো আছেই।এইজন্য আব্বা আম্মা মরে গেলেও চট্টগ্রামে আমার বিয়ে জীবনেও দিবেন না।

রেহানকে এই কথাটা বলতেই ও বলল,
” যদি পরিস্থিতি আমাদের স্বাভাবিকের মধ্যে না থাকে তাহলে আমরা পালিয়ে বিয়ে করব”।
আর তাই এই সিদ্ধান্ত আমরা দুইজনে মিলে নিলাম।
ও আরো বলত,,
-“তোমার এই সিদ্ধানের কারণে তোমার আব্বা আম্মা প্রথমে কষ্টতো পাবে পরে আবার সব মেনে নিবে”।
এই কথাটা বলে ও আমাকে বারবার বুঝাত আর সাথে এই গানটা গেয়ে আমার মনে সাহস যুগাত “পেয়ার কিয়াতো ডারনা কেয়া”।ওর সব কথাই আমার কাছে তখন সঠিক মনে হত তাই ওর কথামত চলার চেষ্টা করতাম।চলতে ফিরতে ওর এইসব কথাগুলো বারবার আমার কানে বাজত আর ওর গাওয়া গানটা বারবার মনে পড়ত।এখন এই গানটা শুনলে এক ভালো লাগা আর সাহস মনের মধ্যে চলে আসে।অবসর সময়ে মোবাইল থেকে এই গানটা ছেড়ে গান শুনি।

“”পেয়ার কিয়াতো ডারনা কেয়া,যাব পেয়ার কিয়াতো ডারনা কেয়া,
পেয়ার কিয়াতো কোই চোরি নাহি কি,পিয়ার কিয়া্‌,
পেয়ার কিয়াতো কোই চোরি নাহি কি,ছুপ ছুপ আহে ভারনা কিয়া,
যাব পেয়ার কিয়াতো ডারনা কিয়া,পিয়ার কিয়া,
আজ কেহেংগে দিলকা ফাসানা,জান ভি লেলে চাহে যামানা,
মত ওহি যো দুনিয়া দেখে,ঘুট ঘুট কারনিউ মারনা কেয়া,
যাব পেয়ার কিয়াতো ডারনা কিয়া,!!
.
.
এরপর হঠাৎ করেই একদিন আমার রুমে আম্মা এসে দেখে আমার টেবিলের বই খাতা সব এলোমেলো।বই খাতাগুলো গুছানোর সময় আমার সাইলেন্ট মোবাইলে রেহানের কল আসল।মোবাইলের আলো দেখে আমার আম্মা মোবাইলটা চেক করে দেখে মোবাইলে কল আসছে।কল রিসিভ করে আম্মা চুপ করে থাকে।আর এইদিকে গাধা রেহান কোনকিছু না ভেবে একনাগাড়ে অনেকগুলো কথা বলে ফেলে।এরপর আম্মা জিজ্ঞাস করে,
-“এই ছেলে তুমি কে?আমার মেয়েকে তুমি চিনো কি করে?”
রেহান ভয়ে সেদিন চুপচাপ কল কেটে দেয়।

আর এইদিকে সেদিন আমি ভুলে মোবাইল রেখে কলেজ চলে যাই।সারাটাদিন খুব টেনশনে দিন কাটে আমার।একবার যদি আম্মার হাতে মোবাইলটা পড়ে তাহলে আমি শেষ। কলেজ শেষ হলেই তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসি।নিজের রুমে ঢুকে তাড়াতাড়ি করে মোবাইলটা খুঁজি।এত খোঁজার পরও মোবাইলটা আমার রুমে পেলাম না।তাই আম্মার রুমে চলে যায়। আম্মার রুমের চারপাশটা তন্নতন্ন করে খু্ঁজে আমার মোবাইলটা পাই।এইবার আমার ভয়টা দেখে কে?তার মানে আম্মা সব জেনে গেছে।এখন যদি আম্মা আব্বাকে গিয়ে সব কথা বলে দেয় তাহলে আমার কি হবে?এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে আম্মার গলার আওয়াজ পেলাম।
-“শেষ পর্যন্তটা মোবাইলটা পেলি?”
-“আম্মা……”
-“ছেলেটা কে ছিল?”
.
.
ভয়ে কথা গলায় আটকে থাকল।কিছু বলতে পারেনি।এদিকে আম্মার রাগটা চরমে গিয়ে পৌঁছল।রুমের চারাপাশটা হন্তদন্ত হয়ে কি জানি খুঁজতে লাগল।প্রথমে বুঝতে পারেনি এরপর আম্মার হাতে লাঠি দেখে আর বুঝবার বাকি থাকলো না যে এখন কি হবে আমার সাথে।আম্মার রাগ মনের মধ্যে যতক্ষণ ছিল ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত ওই লাঠি দিয়ে আম্মা সেদিন আমাকে ইচ্ছামত মারতে লাগল।
-“আম্মা আর মারিয়েন না আমাকে।আমি মরে যাব তাহলে।”
কিন্তু আমার কান্নার আর্তনাদ সেদিন আম্মা শুনে নাই।মোটা লাঠি দিয়ে আমাকে আরো মারতে লাগল আর বলতে লাগল,
-“বাইরের ছেলের সাথে তোর এইসব খানপনা কতদিন ধরে চলছিল?তোকে কি আমরা এইসব করার শিক্ষা দিছি।ছেলে কারা ধরে জানোস?যারা খান,মা* যারা পুরুষ খুঁজে বেড়ায়।রাস্তার মারা এইসব করে।তুই কি রাস্তার মা…..হ্যা জবাব দে…..।

কথা বলার মতন ভাষা সেদিন হারিয়ে ফেলছিলাম।এইরকম কথা যে আম্মা আমাকেও বলতে পারে তা জানা ছিল না।শুধু মাথা নাড়াচ্ছিলাম আর না মারার জন্য আম্মার পা ধরছিলাম।

-“যদি তুই এইসবের কিছু না হস তাহলে কেন বাইরের একটা ছেলের সাথে রিলেশন করতে গেলি?জবাব দে……তোর ব্যা* মাগিরি আজকে ছুটাচ্ছি মা…..।কত্ত বড় বুকের পাঠা তোর আমাদের আড়ালে তুই এইসব করে বেড়াস। আজকে তোকে আমি মেরেই ফেলব তাহলে এইসব নোংরামি করার শখ তোর মেটে যাবে। বেশ্যা খানকি….মা* একটা।মর গিয়ে……।”

পুরো শরীরে সেদিন শুধু মারের দাগ ছাড়া আর কিচ্ছু দেখা যাচ্ছিল না।এইরকম মার ছোট থাকাকালীন খেয়েছিলাম আব্বার হাতে।আম্মাও মাঝেমাঝে মারত। কারণটাও খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছিলাম পরে।আর তা হচ্ছে আমার গায়ের রং।এই গায়ের রং আর পড়ার জন্য ছোটকালে অনেক মার খেয়েছি।এরপর বড় হওয়ার পর আম্মা আব্বা আমাকে তেমন আর মারেননি।কলেজে উঠার পর আজকে আবারো সেই একিরকম মার আম্মার হাতে খেলাম।
.
.
রাতে আব্বা বাসায় আসার সাথে সাথে আম্মা সোজা আব্বাকে গিয়ে আমার নামে বিচার দেয়।এমনিতেই আব্বা বাইরের কাজ শেষ করে আসছে আর এরমধ্যে এইসব খবর শুনে যে কারোরই মাথা খারাপ হয়ে যাবে।আব্বারও ঠিক তাই হল।রাগের মাথায় আব্বা সেদিন আম্মাকে ইচ্ছামত মারল।আর মারের সাথে সাথে কি ভাষার ছিরি।
-“খান* মা* সারাদিন ঘরে থেকে কি করস হ্যা?মেয়ে কার সাথে এই কি করে বেড়ায় এইসবের খেয়াল রাখস না?কি করস সারাদিন বাসায়।বাসায় যেদিন থাকি সেদিন দেখি বাসায় তুই থাকোস না।এইখানে ওইখানে ঘুরে বেড়াস আর বান্ধবীর সাথে গল্প করস।বান্ধবীর সাথে গল্প করস নাকি নতুন না*র খুঁজতে বাইরে যাস।তোর থেকেই তো মেয়ে এইসব শিখছে।যেমন তার মা তেমনি তার মাইয়া।”
আম্মার গলা টিপে সেদিন আব্বা কি পরিমাণ নোংরা ভাষা প্রয়োগ করছিল।

অবশ্য এইসব মার দেখা, নোংরা ভাষায় গালি দেওয়া, ঝগড়া করা আর আব্বার হাতে আম্মার মার খাওয়া আজ নতুন নয়,ছোট থেকেই এইসব দেখে আসছি আমি।তাই এইসবে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমি।তাছাড়া কেন জানি মনে হত ওরা আমাকে তেমন ভালোবাসে না তাই ভালোবাসাটা পাওয়ার জন্য সবসময় তৃষ্ণার্ত থামতাম আমি।আর আমার সেই ভালোবাসার অভাবটা রেহান মিটিয়েছে।তাই কেন জানি না ওকে না ভালোবেসে থাকতে পারিনা আমি।এইসবের মাঝে আজকে শুধু একটা জিনিস দেখে খারাপ লাগছে আর তা হচ্ছে আম্মা আজকে শুধু আমার জন্য মার খাচ্ছে।

এরপর আমার দিকে আব্বার চোখ গেলে রাগটা আব্বার আরো বেড়ে গেল।আম্মার সাথেসাথে সেদিন আমিও আরেকদফা মার খেলাম আর বস্তির নোংরা মানুষরা যেসব ভাষায় কথা বলে সেইসব ভাষা আব্বার কাছ থেকে শুনতে লাগলাম।তখন বারবার মনে হচ্ছিল দুনিয়ায় থাকতেই আমার দোযখ দেখা হয়ে গেছে।আব্বা আর আম্মার কাছে থেকে খারাপ ভাষা শুনে তখন কেন জানি সত্যিই মনে হচ্ছিল আমি একটা বে* মা*।আমি নিজের জন্য ছেলে ধরে বেড়ায়।লজ্জায় তখন আমার মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা করছিল।
.
.
মারের চোটে সেদিন অজ্ঞান হয়ে গেলাম।এরপর আর কিছু মনে নাই।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি পুরো শরীরে কি ব্যথা।হাত পাও নাড়াতে পারছি না ব্যথার জন্য।অনেক কষ্টে চোখ খুলে দেখি আব্বা আম্মার চোখ ফুলা ফুলা।বুঝতে পারলাম ওরা কেউ সারারাত ঘুমাতে পারেনি।

ঔষুধ এনে আব্বা আর আম্মা আমার সেবা করতে লাগল।এর কিছুদিন পর আস্তে আস্তে আমি ভালো হতে থাকি।কিন্তু আমার উপর আব্বা আম্মার রাগটা তখনো তিল পরিমাণ কমেনি।রাগে আর কষ্টে তারা আমার সাথে অনেকদিন কথা বলেনি। আর এইদিকে রেহানের কথা মনে পড়ায় আমার বুকের ভিতরটা জ্বলতে লাগল।
.
.
সুস্থ হওয়ার পর আম্মা আমাকে ডাকার জন্য আমার রুমে আসল।
-“সালমা তোর আব্বা তোকে ডাকছে।”

এই আজকে আম্মা আমার নাম ধরে ডাকল আর কথাও বলল।আহ্….কি যে শান্তি লাগছিল।মনে হচ্ছিল কতদিন আমি আম্মার কথা শুনি না।মনের মধ্যে যে একটা বড় পাথর ছিল সেটা তখনি সরে গেছে আম্মার এই কথায়।যতই আমাকে তারা গালাগালি করুক, মারুক আব্বা আম্মা তো আব্বা আম্মাই।তাদের জন্য এই দুনিয়ায় আমার আসা।আমার সব প্রয়োজন এতদিন তারা বিনা শর্তে মিটেয়েছে তাই তাদের ছাড়া আমার দুনিয়া কল্পনাই করা যায় না।যাক শেষ পর্যন্ত আব্বা আমাকে ডাকার খাতিরে আম্মাতো একটু হলেও আমার সাথে কথা বলল।

দৃষ্টির_সীমানা পর্ব০২ (শেষপর্ব)

0

দৃষ্টির_সীমানা
পর্ব০২ (শেষপর্ব)
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
রুমে এসে মেঘ চিরকুটটা খুলে দেখল।তন্ময় ওর জন্য কিছু লিখেছে।
“তোমাকে দয়া করে আমি বিয়েটা করছি না।বিয়েটা কেন করছি তার উত্তর তুমি কালকেই পেয়ে যাবে। আর বিয়েটা হচ্ছেই এবং সেটা তোমার সাথে।তোমাকে বিয়ে করে এরপর আমার দৃষ্টির সীমানা যতটুকু যায় ততটুকু জায়গা আমি তোমাকে নিয়ে সাথে ঘুরব আর ভালবাসবো।কালকে আবারো দেখা হচ্ছে তোমার সাথে।তোমার বাসায় এসে কালকে আমি তোমাকে নিতে আসবো। কান্নাকাটি একদম করবে না আর নিজের যত্ন নিবে।”

চিরকুটটা পরে মেঘ মনে মনে ভাবছে,
-“আচ্ছা লোকটা কি সত্যিই এত ভালো না ভালো হওয়ার অভিনয় করছে।আমার মত মেয়েকে নিঃস্বার্থভাবে উনি বিয়ে করবেন বিশ্বাস হচ্ছে না।আচ্ছা আমিতো পঙ্গু….. আমাকে দিয়ে তো কোন কাজ হবে না। একটা ফেলনার সমতুল্য আমি তাহলে!তাহলে আমার সাথে লোকটা বা লোকটার পরিবারের তেমন ভালো সম্পর্ক থাকবে না তাহলে ওরা কি টাকার জন্য আমাকে ওদের বাড়ির বৌ বানাতে চাচ্ছে?কিন্তু আমাদের তো এতো সার্মথ্য নেই।
কিন্তু লোকটা বা লোকটার পরিবারকে এত খারাপ মনে হচ্ছে না তারপরও প্রথম দেখায় এত বিশ্বাস করতে নেই।খুব ভয় হচ্ছে।পঙ্গু হয়ে গেলাম বলে মা বাবার সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিতে হচ্ছে। জানি না কি আছে কপালে!”
.
.
এরপরের দিন,
-“কেমন আছেন আন্টি?”
-“এইতো বাবা,, ভালো আছি। তুমিসহ তোমার পরিবারের সবাই কেমন আছে?”
-“আন্টি সবাই ভালো আছে।আন্টি মেঘকে নিয়ে একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসতে চাচ্ছিলাম।”
-“হ্যা যাও না বাবা। কোন সমস্যা নেই।তবে তাড়াতাড়ি বাসায় এসে যেও।”
-“জ্বী আন্টি।”
-“কিন্তু যাওয়ার আগে একটু নাস্তা করে যাও বাবা।”
-“না,না আন্টি এইসবের কিছু লাগবে না।”
-“তোমার না না তো আমি শুনব না।তুমি আসবে বলে তোমার জন্য অনেক কিছু বানিয়েছি।কিছু একটা তো মুখে দাও।”
-“আন্টি এই যে পিঠাটা নিলাম। ব্যস এতটুকুই আর না।এরপর কিন্তু সত্যি দেরি হয়ে যাবে।আরেকবার বাসায় আসলে পেটভরে খেয়ে যাব।এখন আসি তাহলে,”
-“আচ্ছা যাও তাহলে তোমরা।”

মেঘকে কোলে তুলে গাড়িতে বসাল তন্ময়।এরপর ওরা একটা পার্কে আসল।
.
.
-“কি কথা বলার জন্য আমাকে এখানে নিয়ে আসলেন?!
-“হুম সব বলব।তার আগে বল কিছু খাবে। আইস্ক্রিম, চকলেট আনবো তোমার জন্য।”
একপাশ হেসে মেঘ বলল,,
-“এইসবের কিছু লাগবে না।পানির তৃষ্ণা পেয়েছে একটু। পানি খাব….।”
-“আচ্ছা পানি গাড়িতে আছে একটু ওয়েট কর এখনি নিয়ে আসছি আমি।”
-“হুম।”
.
.
কিছুক্ষণ পর,তন্ময় মেঘকে ডাক দিয়ে বলল,,
-“এই নাও পানি,”
-“থ্যাংকস।”
মুচকি হেসে তন্ময় বলল,,
-“থ্যাংকস নেওয়ার মত কিছুই আমি করে নি।নিজের হবু বউ যে কয়েকদিন পর আমার পার্মানেন্ট বউ হবে তার জন্য মানে আমার জন্যি কাজটা করেছি।এতে থ্যাংকস বলার মতন কিছুই হয়নি।”
-“………….”
-“আচ্ছা তোমার কাছে আমার কথাবার্তায় খুব অবাক লাগছে না!কালকে প্রথমে তোমাকে আপনি করে ডেকে তোমার সাথে কথা বললাম আর এরপর আপনি তুমি গড়মিল করে ফেললাম।আবার আজকে তোমাকে তুমি করে ডাকছি।আমার এইরকম ব্যবহারে আমাকে তোমার আজব প্রাণি মনে হচ্ছে না!”
-“হ্যা প্রথম প্রথম তাই মনে হয়েছিল।এরপর এর কারণটা আমি বুঝতে পেরেছি।প্রথম দেখায় কথা বলায় এইরকম কনফিউশন সবার হয় এটাই স্বাভাবিক।তাই এতে ভাববার কিছু নেই।আপনি এখন যা বলতে চান বলে ফেলুন।”
.
.
-“আমারটা পরে শুরু করি আগে তোমারটা শুরু কর।”
-“কথা কিন্তু এইরকম ছিল না।”
-“হ্যা জানি।কিন্তু কি বলতো তোমার ব্যাপারে অনেক কিছু জানার আগ্রহ আমার আছে।সেগুলো না জানতে পারলে মনটা কিছুতেই শান্ত হবে না।আগে নিজের মনটাকে শান্ত করি এরপর না হয় আমি তোমাকে যা বলতে এসেছি সব খুলে বলব।”
কিছুটা বিরক্ত হওয়ার নিঃশ্বাস ফেলে মেঘ বলল,,,
-“আচ্ছা তাহলে বলে ফেলুন কি জানতে চান আমার ব্যাপারে।”
-“বেশি কিছু জানতে চাই না শুধু আজকে এতটুকু জানতে চাই তোমার এই অবস্থাটা কি করে হল?এর পিছনের ঘটনাটা আমি জানতে চাই।”

তন্ময়ের এই কথায় মেঘ ওর দিকে কয়েক সেকেন্ডের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে চোখের দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে যায়।
-“এইসব কথা বলতে আমি ইচ্ছুক নই।”
-“কিন্তু আমিও যে নাছোড়বান্দা।আমার বউয়ের আজকে যে অবস্থা হয়ছে তার পিছনের রহস্যটা তো আমাকে জানতেই হবে।”
-“আমি জন্মগতভাবে পঙ্গু।”
-“থাপ্পড় দিব একটা।ফাজিল মেয়ে।ফাজলামি করার জন্য তুমি আর মানুষ পেলে না, না?আমরা এখন সিরিয়াস একটা ব্যাপার নিয়ে কথা বলছি আর তুমি?”

তন্ময়ের ধমকভরা কথা শুনে মেঘের গলাটা শুকিয়ে গেল।এই লোকটার এত রাগ কেন!
-“কি হল চুপটি না মেরে আমাকে সব খুলে বল কি করে এতকিছু হল?আমি জানি তুমি জন্মগতভাবে পঙ্গু নও।তোমাকে বিয়ে করব তাই বিয়ের আগেই তোমার সব খোঁজখবর নিয়ে রেখেছি আমি।”
-“তাহলে আমার এইরকম অবস্থা কিভাবে হল সেটাও নিশ্চয় জেনে নিয়েছেন?”

মেঘের সাহস দেখে তন্ময় অবাক হয়ে যাচ্ছে। একটু আগে সে কাকে বকা দিল।একটু আগের বকা খাওয়ার পরও ও তন্ময়ের মুখের উপর দিয়ে কথা বলছে!
-“সে কথা বাদ দাও।আমি তোমার কাছ থেকেই সব সত্যি জানতে চাই।”

-“হায়রে কিরকম মানুষ উনি!আমার পঙ্গু হওয়ার কাহিনীও এখন উনাকে রসিয়ে কষিয়ে শুনাতে হবে।কতটা আক্কেল আর খারাপ হলে একজন মানুষ আরেকটা মানুষের কষ্টের কথাগুলো পেট থেকে বের করে।”(মনে মনে)
.
.

আচ্ছা শুনোন তাহলে,,,
-“সেটা কয়েকমাস আগের কথা।তখন আমার সাহিল নামের একটা লোকেরর সাথে এনগেজমেন্ট হয়।লোকটা বেশ ভালোই, আচার-আচরণও ভালো ঠিক আপনার মতন।”

তন্ময় বুঝতে পারল মেঘ ওকে ঠেস মেরেই কথাটা বলল।রাগ উঠলেও সে নিজের হাত মুঠি করে রাগটাকে কন্ট্রোল করল।
-“সাহিলের সবকিছু আস্তে আস্তে আমার ভালো লাগতে শুরু করে।কারণ ও আমাকে প্রতিবারই একটা জিনিস অনুভব করাত ওর লাইফে আমি কতটা ইম্পরটেন্স রাখি।আস্তে আস্তে আমাদের বিয়ের দিনতারিখও ঘনিয়ে আসতে থাকে।বিয়ের দুই দিন আগে আমি বিয়ের কাপড় কেনাকাটা করার জন্য ফ্রেন্ডের সাথে শপিং করতে গেলাম।কেনাকাটা শেষ করে বাইরে আসতে দেখি একটা লোক মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটছে।লোকটাকে অনেকবার সেখান থেকে সরে আসতে বললেও সে সরেনি।আমার গলার আওয়াজ হয়ত তার কানে যায় নি।হঠাৎ একটা ট্রাক আসতে দেখি।ট্রাক চলার স্পিডটাও বেশি ছিল।লোকটাকে চোখের সামনে মরতে দেখার মতন সাহস আমার ছিল না তাই দৌঁড়ে তাকে সরাতে গিয়ে আমি নিজেই ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে যায়।”
.
.
-“আর সেই লোকটা কি এরপর আপনার আর খোঁজ নেই নি?”
-“বান্ধবীর কাছে শুনেছি ওনি নিজেই আমাকে মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন।একজন মানুষের সেবার জন্য যা যা করা লাগে তা করেছেন।কিন্তু উনার হয়ত কোন একটা দরকারি কাজের খবর এসেছিল তাই কিছু না বলেই চলে যান।”
-“…………”
-“এরপর আর দেখা হয়নি উনার সাথে।”
-“না, কয়েকদিন পর বাসায় চলে আসি।আর দেখা হয়নি।”
-“আমি মনে করি লোকটা খুব স্বার্থপর। কারণ তুমি যার জন্য নিজের জীবনটা বাজি রেখেছিলে সে তোমাকে ফেলে চলে গেছে।তাও তোমার দুর্দিনে।”
-“আর আমি মনে করি সে এতটাও খারাপ না।শুধু শুধু কাউকে না বুঝে দোষ দেওয়াটাও উচিত না।এটা নির্বুদ্ধিতার লক্ষণ।উনি একমাসের জন্য কাজের উদ্দেশ্য দেশের বাইরে যান। তাই কাজে যাওয়ার আগে ডাক্তারকে বলে গেছেন আমার সব খবরাখবর যাতে তাকে দেওয়া হয়।আমি যে আমার একটা পা হারিয়েছি তা বাইরের মানুষকে বলে কি লাভ হত?কোন লাভই হয় না।তাই শুধু শুধু বাইরের একটা মানুষকে অযথা বিরক্ত করে তাকে দেশের বাইরে থেকে আনার কোন মানে হয় না।আমি জানতাম তিনি উনার দায়িত্ববোধের খাতিরে ঠিকই এখানে চলে আসতেন।”
-“এমনটা মনে হওয়ার কারণ!”
-“চোখের পানি।এক্সিডেন্টের সময় জ্ঞান হারানোর আগে উনার চোখ দিয়ে যে পানি পড়ছিল তা আমি অনুভব করেছিলাম।তাই এই কথাটা আমার মনে হল………।”
.
.
তন্ময় অবাক হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা এত ভালো কেন!এত কিছু হওয়ার পরও মেঘ ওই লোকটার উপর কোন দোষ চাপাচ্ছে না!
-“তারপর ও বলব ওই লোকটার কারণেই আজকে তোমার এই অবস্থা।”
-“এইসব কিছু আমার কপালে ছিল।কপালে ছিল বলেই আমার সাথে এতকিছু হয়েছে। আমি এতে উনার কোন দোষ দেখছি না।হ্যা দোষ উনার ছিল যদি উনি রাস্তার মাঝে কেয়ারলেস ভাবে না দাঁড়াতেন………। তারপরো বলব আল্লাহ কপালে যা লিখে রাখছে সেটাইতো হবে।তা উপেক্ষা করার ক্ষমতা আমাদের কারোররই নেই।অবশ্য এইসব হওয়ার মনে হয় দরকারও ছিল না হলে মানুষের আসল চেহেরার রং কিভাবে দেখতাম।”
-“……………..”
-“সাহিল আমার এই অবস্থা দেখে ওর চেহেরার রং বদলাতে শুরু করে।এককালে ও যে আমাকে ভালোবাসত সেটা ওকে দেখে তখন আর মনে হত না।আমার জন্য ওর যে ভালোবাসা জমা ছিল সেটা হয়ত আমার এই অসহায়ত্বের কারণে শেষ হয়ে গেছে।আমার বিয়েটা ভেঙ্গে গেল।সাহিল নিজেই বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছিল।কারণ ও বুঝে গিয়েছিল আমার মত পঙ্গু মেয়ের দ্বারা ওর জীবনের প্রয়োজনগুলো মিটানো সম্ভব না তাই……..। আর আমিও যাকে মনে মনে ভালোবেসেছিলাম তার আসল ভালোবাসা সেদিন দেখতে পারলাম।অবশ্য ও ঠিকইই করেছে।এখানে আমি ওর কোন ভুল দেখছি না।পঙ্গু মেয়েকে বিয়ে করে ও তো আমাকে আর ননীর পুতুল হিসেবে সাজিয়ে রাখবে না। যে মেয়ে তার স্বামী,সংসারের কোন কাজে আসে না তাকে বিয়ে করে কি লাভ!সাহিল যা করেছে ঠিকইই করেছে।একদম ঠিক কাজ করেছে ও।”

মেঘের কথাগুলো তন্ময় এতক্ষণ ধরে মনোযোগ দিয়ে শুনল।মেয়েটা এতদিন অনেক কষ্ট পেয়েছে আর না….। কোন দোষ ছাড়াই মেয়েটাকে আর কষ্ট দেয়া যাবে না।
.
.
-“মেঘ নাও পানি খাও।ভালো লাগবে।”

তন্ময়ের হাত থেকে পানির বোতলটা নিয়ে একটু একটু করে মেঘ পানি খেতে লাগল।মেঘের পানি খাওয়া অবস্থায়ই তন্ময় বলতে লাগল,,
-“১ মাস আগের ঘটনার জন্য আজকে তোমার যে অবস্থা হয়েছে তার জন্য আমি দায়ি।আমাকে বাঁচাতে গিয়েই তোমার এক্সিডেন্ট হয় আর তুমি তোমার পা হারাও।”

তন্ময়ের কাছ থেকে মেঘ এই ধরণের কথা আশা করে নি।আকস্মিকভাবে তন্ময়ের কাছ থেকে এই কথাটা শুনে পানি ওর গলায় উঠে গেল।

মেঘের কাশির আওয়াজ শুনে তন্ময় তাড়াতাড়ি করে ওর মাথায় আর পিঠে আস্তে করে বাড়ি মারতে লাগল।
.
.

-“মেঘ তুমি ঠিক আছো তো?”

তন্ময়ের প্রশ্নে মাথাটা নাড়ালাম।তন্ময়ের এই ধরণের কান্ডে আমার বাবার কথার মনে পড়ল।আমার অনেক সময় খাবার খাওয়ার সময়ে খাবার গলায় উঠে যায়।তখন বাবা আমার মাথায় আর পিঠে এইরকম আস্তে করে বাড়ি মারে।আজ তন্ময়ও সেই একি কাজটা করল।তন্ময়ের জন্য একটু আগে যে রাগটা আমার মনের মধ্যে ছিল তা নিমিষেই চলে গেল।হয়ত মেয়েরা এইরকমি।যেসব মেয়েরা তাদের বাবাকে ভালোবাসে তাদের বাবার গুণাবলি কোন ছেলের মধ্যে দেখলে মেয়েদের মনটা নরম হয়ে যায়।

মেঘ কিছু বলছি শুনতে পাচ্ছ তুমি?
-“হ্যা বলুন,,,”
-“মেঘ তোমার সাথে আজ পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে তার জন্য আমি দায়ি।”
-“আর সেই দায়বদ্ধতা থেকেই দয়া করে আপনি আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন এইতো?আমি আগেই জানতাম আমার মত মেয়েকে শুধু দয়া করা যায়।”
.
.
মেয়েটা একটু বেশিই বুঝে।আমার একটা সোজা কথাকে কিরকম উল্টা করে ঘুরিয়ে তেড়িবেড়ি করে উত্তরটা দিল।খুব রাগ উঠছে তন্ময়ের মেঘের প্রতি।মেয়েটা ওকে কেন বুঝতে চাই না।এরপর তন্ময় নিজেই বুঝতে পারল মেঘের এখানে কোন দোষ নেই। ওর সাথে যা ঘটেছে যা দেখেছে তাতে ওর মনটা অন্যরকম হয়ে গেছে।এইজন্য ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মেয়েটা একি কথা বলে।

-“মেঘ আমি এখনো কথা শেষ করেনি।আমার আরো কথা বাকি আছে।”
-“……………..”
-“তোমার বারবার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে দয়া করছি।কারণ আমাকে তুমি বাঁচিয়েছ সেই দায়বদ্ধতা থেকে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাইছি।মেঘ আমার মনে এইসব কিচ্ছু নেই।তোমাকে আমি ভালোবাসি।আর সেটাও অনেক আগে থেকে।”
-“কিহ!”
-“হ্যা যা শুনছ সব সত্যি। আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি।তোমার ছোট স্টুডেন্ট তিন্নি যাকে তুমি ছবি আঁকা শিখাও ওর কথা মনে আছে তোমার।”
-“হ্যা তিন্নি……. চিনি ওকে।অনেক প্রিটি একটা গার্ল।”
-“হ্যা….কিউটের ডিব্বাটা আমার।ও আমার বড় ভাইয়ের মেয়ে।তোমার কাছ থেকে ছবি আঁকা যেদিন থেকে ও শিখছে সেদিন থেকেই ও বাসায় এসে তোমার কি প্রশংসাটা না করে।তিন্নির মেঘ ম্যাডাম অনেক ভালো, ওকে মাঝেমাঝে মজার মজার খাবার বানিয়ে খাওয়ায়, ওকে অনেক আদর করে আরো অনেক গল্প করে তোমাকে নিয়ে।তোমার কথা ওর মুখ থেকে আমার শুনাই লাগত নাহলে আমার এই কিউট চুলগুলো ধরে টানাটানি করে ও কি অবস্থাটা নাই করত”
মুচকি হেসে কথাটা তন্ময় বলল।

মেঘতো লজ্জায় তন্ময়ের দিকে তাকাতে পারছে না।না জানি পুচকি মেয়েটা গোপনে গোপনে উনাকে আর কি কি বলেছে।
.
.
-“তোমার গল্প ওর মুখ থেকে শুনতে শুনতে তোমার প্রতি ভালোলাগাটা কাজ করে।এরপর জানি না তোমাকে কখন আমি আমার নিজের অজান্তে ভালোবেসে ফেলেছি।আর মজার কথা কি জানো তোমার চেহেরা না দেখেই শুধু আমার কিউটিটার মুখে তোমার গল্প শুনে তোমাকে ভালোবেসেছি।তখন তুমি কিরকম তা আমি জানতাম না।আর তোমার বিয়ে যে সাহিলের সাথে ঠিক হয়েছিল তা আমি জানতাম না। এরপর এই এক্সিডেন্টটা হয়।আর তারপরতো তুমি জানোই কাজের উদ্দেশ্য একমাসের জন্য আমাকে দেশের বাইরে থাকতে হয়।কিন্তু সেখান থেকেই আমি তোমার সব খোঁজ খবর নিতাম ।খোঁজ খবর নিলাম ঠিকই অথচ আসল খবরটা জানতে পারলাম না তোমার কি ভয়ানক অবস্থা হয়েছে।
এরপর দেশে এসেই ঠিক করি আমি তোমাকে তিন্নির ম্যাডামকে বিয়ে করব যাকে আমি না দেখেই ভালোবেসেছি।তোমাকে ভালোবেসেছি সেটা পরিবারের সবাইকে জানাই।এরপর ওদের মুখ থেকেই শুনতে পারি তুমি এক্সিডেন্টে তোমার পা হারিয়েছ।জানো বুকের ভিতরটায় কি রকম কষ্ট হচ্ছিল।নিজের মনকে বারবার বুঝাচ্ছিলাম এইরকম কিছু হয়নি।কিন্তু তাই বলে তো সত্য আর ঢেকে রাখা যায় না।হয়ত আল্লাহ আমার পরীক্ষা নিচ্ছে তাই এতকিছু হয়ে গেল তোমার সাথে।ভালো যেহেতু তোমাকে বেসেছি তাই তোমাকেই বিয়ে করব সিদ্ধান্ত নিয়েছি সে তুমি যেমনি হও না কেন।আমার ভালোবাসা কোন সস্তা না যে তোমার বিপদে আমি তোমাকে ফেলে তোমার থেকে ভালো অন্য কাউকে ধরব।তাই তোমাকে দেখার জন্য তোমার ছবি ভাবির কাছে চাই।আর তোমার ছবি দেখেই বুঝতে পারি আল্লাহ আমার ভালোবাসার পরীক্ষা খুব ভালোভাবে নিচ্ছে।আমারি জন্য যে তোমার আজকে এই অবস্থা তা পরিবারের সবাইকে বলে দেই।আমার পরিবার সব বুঝতে পেরে তোমাকে আমাদের পরিবারের বউ হিসেবে মেনে নিতে সম্মতি জানাই।আর আমাকে তুমি না বাঁচালেও এইরকম পঙ্গু হলেও আমার পরিবার তোমাকে মেনে নিত।কারণ তোমার জন্য কি অনুভব করি তা তারা নিজের চোখের দেখেছে।এইসব ঘটনা আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে। আমরা আর কিইবা করতে পারি তোমার এই কথাটাই আমার পরিবার মনেপ্রাণে মেনে নিয়েছে আর তোমার আমার জুড়ি আল্লাহ নিজ হাতে বানিয়েছি সেটা চাইলেই কি আমার পরিবাদ জোর করে তা ভাঙ্গতে পারবে!পারবে না তাই তারা সত্যিকারের মন থেকেই চাই তুমি আমার বউ হও আর আমাদের পরিবারের বৌমা হিসেবে থাক।তাই এর কয়েকদিন পর মা বাবাকে নিয়ে তোমাদের বাসায় আসা হয়।”
.
.
তন্ময়ের কথায় কেন জানি মেঘের একটু ভরসা করতে ইচ্ছে করছে।তারপরও ও বলে বসল,,,
-“আপনার আর আমার জুড়ি আল্লাহ লিখে রেখেছেন এতটা নিশ্চিত আপনি কি করে হলেন?
-“আল্লাহকে ভরসা করি আর আমার ভালোবাসার প্রতি অগাধ বিশ্বাস।তাছাড়া তোমার আর আমার সাথে যা হল আর যা হচ্ছে সব কিন্তু উনার ইশারায় হচ্ছে। তাই উনার প্রতি বিশ্বাস রেখেই আমি কথাটা বললাম।আর আরেকটা কথা বলতে চাই,”
-“বলুন,”
-“ধর,,একমাস আগে সাহিলের পরিবর্তে যদি আমার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হত আর তোমার এই এক্সিডেন্টটা না হয়ে যদি আমার সাথে এই এক্সিডেন্টটা হত তাহলে তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে না?অথবা তুমি আমাকে ফেলে কি অন্য কারোর হাত ধরতে….এমন কাজ কি তুমি করতে?”
-“আমি এইরকম জঘণ্য কাজ কখনো করতাম না।ভালোবাসা মানেই বিশ্বাস। আর সেই বিশ্বাসটা সবসময় থাকা উচিত।ভালোবাসায় আরেকটা মূলকথা হল পরিস্থিতি যেরকম হোক না কেন ভালোবাসার মানুষটার হাত কখনো ছাড়তে নেই।আর এইসব আমি মন থেকে মানি।তাই আমার পক্ষে এইরকম জঘণ্য কাজটা কখনো করা সম্ভব না।”
-“আর আমাকে বিয়ে করাটা যদি তোমার দয়ার হয় তখন কি বলবে তুমি?”
-“ভালোবাসার মানুষকে আর যাই হোক দয়া করা যায় না।তাকে দয়া করলে ভালোবাসাটা আর কোথায় থাকে…..।”
-“আমার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই।আর এতক্ষণ ধরে এইসব কথায় আমি তোমাকে বুঝাতে চাইছি।এবার আশা করছি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর তুমি পেয়ে গেছ”
মুচকি হেসে কথাটা তন্ময় মেঘকে বলল।

-“লোকটা অনেক চালু সেটা কথা শুনেই বেশ বোঝা যাচ্ছে। শেষে কিনা আমাকে…. আমাকে তন্ময় নামের এই লোকটা আমার কথার জালে আমাকেই ফাঁসালো।তবে লোকটার সাথে কথা বলে বুঝলাম সে সত্যি আমাকে মন থেকে ভালোবাসে।যেখানে কোন ছলনা নেই,নেই হারানোর কোন ভয়।”
.
.
-“দেখি হাতটা সামনে আনো।”
-“কেন?”
-“আরে বাবা আগে আনোইই না এরপর না তোমার প্রশ্নের উত্তর পাবে।”
-“আচ্ছা…..”
-“দেখো কি এনেছি তোমার জন্য।”
-“শিউলি ফুলের মালা।”
-“হুম।”
-“তোমাদের বাগানের মততো আর আমাদের বাগানে শিউলি ফুলের গাছ নেই।এই ফুল কিনে নিজ হাতে তোমার জন্য মালা,হাতের বালা আর আংটি বানিয়েছি।এই ফুলের আংটি এখন তোমাকে পড়াব।পড়বে তো?”

মেঘ আর দেরি না করে তন্ময়ের সামনে হাতটা নিয়ে আসলো। আর তন্ময়ও মেঘের মতন তাড়াতাড়ি করে মেঘের হাতে শিউলি ফুলের বানানো আংটি পড়িয়ে দিল।
.
.
-“থ্যাংকস মেঘ আমাকে বুঝার জন্য।দেখিও তোমাকে বিয়ে করার পর কোন কষ্টই আমি তোমাকে পেতে দিব না।আমাদের দৃষ্টির সীমানা যতটুকুু পৌঁছবে ততটুকু পথ আমরা দুইজনে একসাথে পাড়ি দিব।”
-“হুম….।”
-“আচ্ছা তাহলে বাসায় যাওয়া যাক।”
-“হুম….।”

তন্ময় মেঘকে সাথেসাথে কোলে নিয়ে ফেললো।

-“আচ্ছা মেঘ একটা গান ধরি।”
তন্ময়ের এই প্রস্তাবে মেঘ অনেক খুশি হল।
-“হুম ধর…..”

যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়
যে ছিল হৃদয়ের আঙ্গিনায়

সে হারালো কোথায়
কোন দুর অজানায়
সেই চেনা মুখ কতদিন দেখিনি,
তার চোখে চেয়ে স্বপ্ন আঁকিনি।

যতখানি সুখ দিয়েছিলো
তার বেশী ব্যাথা দিয়ে গেল
সৃতি তাই আমারে কাঁদায়।

সে হারালো কোথায় কোন দুর অজানায়…….
যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়
যে ছিল হৃদয়ের আঙ্গিনায়
সে হারালো কোথায় কোন দুর অজানায়
যতটুকু ভুল হয়েছিলো
তার বেশী ভুল বুঝি ছিলো
কি যে চায় বলেনি আমায়।

সে হারালো কোথায় কোন দুর অজানায়।
সে হারালো………..

সেই চেনা মুখ কতদিন দেখিনি
তার চোখে চেয়ে স্বপ্ন আঁকিনি।

-“আপনার গানের গলা কিন্তু অসম্ভব সুন্দর তাই যখন এই গানটা গাচ্ছিলেন গানটা না গাওয়ার জন্য নিষেধ করতে পারিনি।কিন্তু এইরকম বিরহের গান কেন গাচ্ছেন?”
-“তোমাকে চিনার পর আর তোমার এই কষ্টের কথাগুলো শুনে আমার এই গানটায় বারবার মনে পড়ত তাই আর কি হঠাৎ করে এই গানটা গেতে ইচ্ছে করল।”
-“ও আচ্ছা…..।তবে এখন এই বিরহের গানটা গাবেন না অন্য গান ধরুন….”

তন্ময় মুচকি হেসে মেঘকে কোলে নিয়ে হেঁটে আরেকটা গান ধরল……

এই পথ যদি না শেষ হয়,
তবে কেমন হত তুমি বলত।

আর এইভাবেই অবশেষে দুটি মানুষের মনের দৃষ্টির সীমানার ভালোবাসা পূর্ণতা পেল।

দৃষ্টির_সীমানা পর্ব_০১

0

দৃষ্টির_সীমানা
পর্ব_০১
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
বাসার পিছনের বাগানটায় এসে বাগানের ফুলগুলো দেখছি।এই ফুলগাছগুলো একসময় আমি শখ করে নিজের হাতে লাগিয়েছিলাম।বাগানে ফুল গাছ লাগানো আমার শখের মধ্যে পড়ে।তাই যে ফুলগুলো আমার খুব ভালো লাগে সে ফুলের গাছগুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে সংরক্ষণ করে আমি লাগাই।এরপর প্রতি সকালে ঘুম থেকে উঠে বাগানটায় হেঁটে হেঁটে ফুলগাছের যত্ন নেই।এখন ফুলে ফুলে বাগানটা ভরে আছে।খুব ইচ্ছে করছে নিজের পুরো বাগানটায় হেঁটে হেঁটে ফুলগুলো নিজ হাতে ছুঁয়ে দেই।কয়েকমাস আগেও আমি সেটা করতে পারতাম কিন্তু এখন তা আমার বাস্তবতার বাইরে।

বর্তমানে আমি মেঘ হুইল চেয়ারে চুপটি মেরে বসে আছি আর ফুলগুলো দেখছি।শুক্রবার দিনটায় পঙ্গু মানুষ হিসেবে আর কিই বা করতে পারি আমি।
.
.
-“উহুম উহুম,”
– “কে……”(ভয়ার্ত গলায়)।

কারোর গলার আওয়াজ শুনে মেঘ মাথাটা সামনে এনে দেখে একটা সুদর্শন ছেলে ওর হুইল চেয়ারের কাছে এসে দাঁড়িয়ে আছে।
-“আমাদের বাসার বাগানে হঠাৎ করে একটা অজানা অচেনা ছেলে কিভাবে ঢুকে গেল আশ্চর্য! চোর বা ডাকাত নয়তো।কিন্তু এই ছেলেকে দেখে তো তা মনে হচ্ছে না।ভদ্র ঘরের ছেলেই মনে হচ্ছে তাহলে!না না,,কাউকে এখন বিশ্বাস করা যায় না। এইরকম অচেনা অজানা একটা ছেলে ওদের বাড়িতে হুট করে ঢুকে পড়েছে নিশ্চয় খারাপ কোন মতলব আছে।আচ্ছা মা বাবা কি একে বাসায় আসতে দেখিনি!যদি দেখত তাহলেতো এতক্ষণে আমার সাথে উনার পরিচয় করিয়ে দিত।কি হচ্ছে এইসব!
মাথাটা ঘুরছে আর ভয় হচ্ছে।
.
.

-“এই যে মিস কোথায় হারিয়ে গেলেন!Are u ok?”
-“হ্যা…………এ…..এ…….।ভাইয়া কে…..আপনি!আমাদের বাসায় এলেন কি করে…….?কি চাই আপনার……..?”
-“ও ম্যাডাম…..আমাকে দেখে এত ভয় পাচ্ছেন কেন?আমার ড্রেস আপ, গেট আপ এভরিথিং ইজ ওকে।তারপরও আমাকে দেখে এত ভয় পাওয়ার কি হল বুঝলাম না। আর শুনোন আমাকে ভাইয়া না ডাকলেই খুশি হব।কারণ কয়েকদিন পর আপনার সাথে আমার…….।যাই হোক আমাকে দেখে এত ভয় পাবেন না।নরমাল হোন একটু।”

মাথাটা হালকা দুলিয়ে মেঘ লোকটার কথায় সম্মতি জানালো।
-“এইতো গুড গার্ল।”
মেঘ হা হয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে।কারণ লোকটা খুব সুন্দর করে কথা বলে।এইরকম লোকের হঠাৎ করে ওদের বাসায় আসার কারণটা মেঘ ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারল না।মনের কথাটা বাইরে এনে মেঘ লোকটাকে জিজ্ঞাস করল,
-“আচ্ছা তাহলে আপনি কে?আমাদের বাসায় আসলেন কেমন করে?আপনাকে আমার মা বাবা দেখে নি?আর দেখলেও আপনাকে কিছু বলেনি তা কি কেমন করে সম্ভব?আচ্ছা আপনি আমাদের বাসার ভিতর দিয়ে আসার সময় কিছু চুরি টুরি করেননি তো?হাত দেখিতো আপনার?নিশ্চয় আপনার হাতের পিছনে আমাদের ঘরের দামি জিনিস আছে সেটা চুরি করেছেন বলে পিছনের দিকে আপনার হাতটা লুকিয়ে রেখেছেন তাই না?আমি “সাবধান ইন্ডিয়া” তে দেখেছি যারা কারোর ঘরে চুরি বা ডাকাতি করতে আসে তারা খুব স্মার্ট আর ভালো পোশাক পড়ে আসে।এদের দেখে বুঝাই যায় না এরা চুরি, ডাকাতি করতে এসেছে!এদের উদ্দেশ্য আবার অনেকে ধরে ফেলতে পারলে এরা ঘরের মানুষদের মেরে ফেলে ঘরের সব কিছু নিয়ে চলে যায়। আপনিও ঠিক তাদের দলে তাই না?”(কান্না করতে করতে)
-“এই বোকা মেয়ে এইভাবে কেন কান্না করছ?কান্না থামাও বলছি।”
-“……………..”
যাহ্ বাবা এই মেয়ে তো কান্নায় থামাচ্ছে না?রাগটা এখন প্রচণ্ড উঠে যাচ্ছে।
-“এই মেয়ে চুপ….. একদম চুপ।তোমার কান্না থামাও।”(রাগী কণ্ঠে)
.
.
লোকটার রাগী গলার আওয়াজ পেয়েই মেঘ সাথে সাথে কান্না থামিয়ে দিল।কিন্তু একটু আগের কান্নার কারণে এখন সে একটু পর পর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে উঠছে।

-“এই নাও রুমাল।চোখের পানিগুলো মুছ।”
-“……………”
-“কি ব্যাপার রুমালটা নিতে বললাম না।নাও রুমালটা।”
লোকটার আবারো সেই রাগি কণ্ঠের গলার আওয়াজ শুনে মেঘ ভয়ে তাড়াতাড়ি রুমালটা নিয়ে নিল।

-“সরি,”
-“………….”
-“আসলে এইভাবে কাউকে কাঁদতে দেখলে আমি সহ্য করতে পারিনা।তাই কাউকে কাঁদতে দেখলেই আমার হঠাৎ করে রাগ উঠে যায়।”
-“…………..”
-“সরি বললামতো।By the way…আমি তন্ময়……..।”

লোকটার নাম শুনে মেঘ এবার নিচু মাথাটা উঁচু করল।
-“আর তুমি হচ্ছ মেঘ।”

লোকটার মুখে মেঘ নিজের নাম শুনে একটু চমকে উঠল। এই লোকটা তার নাম কি করে জানলো!
.
.

-“আপনি আমার নাম কি করে জানলেন!”
-“তোমার মেঘবরণ কালো চুল দেখে।”
কথাটা বলেই তন্ময় মুচকি মুচকি হাসতে লাগল।
-“আমি কিন্তু খুব সিরিয়াস একটা প্রশ্ন করছি।মজা করবেন না আমার সাথে।!
-“আরে……বলছি বলছি।এত হাইপার হবেন না।একটু আগে এত্তগুলো প্রশ্ন একসাথে যে করলেন সেটা শুনে বুঝতে পারছি না কোনটা ফেলে কোনটার উত্তর আমি দিব।”
.
.
মেঘ আর তন্ময়ের কথার মাঝখানেই হঠাৎ করে মেঘের মা ঢুকে গেলেন।
-“কিরে মেঘ পরিচয় হল তন্ময়ের সাথে।”
-“মা উনি কে?আমাদের বাসায় কি করছেন?”

মেয়ের কথা শুনে মেঘের মা কিছুটা লজ্জা পেলেন।হঠাৎ করে পাত্রের সামনে এইরকম প্রশ্ন তার মেয়ে যে করতে পারে সেটা তার মাথায় আসেনি।তিনি মেয়ের কানের কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বললেন,,
-“মারে পাত্রপক্ষ তোকে দেখতে বাসায় এসেছে।ছেলে তোর সাথে কথা বলবে তাই এইখানে চলে আসছে।আর উল্টাপাল্টা বকিস না মা।তুই না আমার লক্ষ্মী মা।”

মায়ের এই কথা শুনে মেঘের মুখটা ছোট হয়ে গেল।আজকে যে মেঘকে দেখতে পাত্রপক্ষ আসছে সেটা ওকে কেউ জানাই নি।জানালে হয়ত মাকে একটু আগে করা অদ্ভূত প্রশ্নটা মেঘ কিছুতেই করতনা।তাকে দেখতে ছেলে নিজে এখানে চলে আসছে।কথাটা বেশ হাস্যকর।মেয়ে পঙ্গু শুনে এখন পাত্রপক্ষ বাসায় আসে না আর এই লোক তার মা বাবাকে বাসার ভিতরে বসিয়ে এসে বাগানে চলে আসছে তার সাথে কথা বলার জন্য!সত্যিই কথাটা শুনে মেঘের হাসি পাচ্ছে।
-“আচ্ছা বাবা মেঘের সাথে কথা বল।কথা বলা শেষ হয়ে হয়ে গেলে ভিতরে চলে এসো।”
-“জ্বী আন্টি।”
.
.
পাত্রপক্ষ তাকে দেখতে আসছে এই বিষয়টা নিয়ে ভাবতেই মেঘ কিছুটা অন্যমনষ্ক হয়ে পড়ল।তাই তন্ময় নামের লোকটা যে এতক্ষণ ধরে মেঘকে ডেকেই চলেছে তা তার কানে ঢুকেনি।

আর এদিকে তন্ময়ের ডাকে মেঘ সাড়া না দেওয়ায় মেঘের হুইল চেয়ারের নিচে যে ঝুড়ি আছে তার মধ্যে থাকা শিউলি ফুলগুলো মেঘের দিকে তন্ময় ছুড়ে মারল।

তন্ময়ের এই ধরণের অদ্ভূত কান্ডে মেঘ কিছুটা হচকিয়ে উঠল।
.
.
-“কি ব্যাপার মন কোথায়?ঠিক আছেন তো আপনি?”

মাথা নাড়িয়ে মেঘ তন্ময়কে বুঝাল,, কিছু হয়নি।সব ঠিক আছে।

-“তো মিস মেঘ কেমন আছেন?”
-“ভালোই আছি।”
-“আমাকে কিছু জিজ্ঞাস করলেন না?”
-“মানে,”
-“এই যে আপনার কুশলাদি জানলাম আমারটাও তো আপনার জানা উচিত তাই না?”
-“ও সরি,,কেমন আছেন?”
-“ভালো আছি।আর আপনাকে দেখে এখন আরো ভালো আছি আর এরপরের প্রতিটিদিন এখন থেকে আরো ভালো থাকব।”
-“ও…….।”
-“আমাকে জিজ্ঞাস করলেন না এরপর থেকে কিভাবে আমি আরো ভালো থাকবো?”

তন্ময়ের এই কথা শুনে মেঘ তন্ময়ের দিকে ভ্রু কুচকিয়ে তাকাল।আর মনে মনে ভাবতে লাগল,এই লোকটা একবার তুমি আবার মূহুর্তের মধ্যেই আপনি বলে কেন ডাকে আজব!তাছাড়া উনি বড্ড বেশি অপ্রয়োজনীয় কথা বলে।ছেলেমানুষ এত বেশি কথা বলে নাকি?মেয়েদের মতন স্বভাব একেবারে!বাচাল একটা।

-“ও হ্যালো কোথায় হারিয়ে গেলেন?
-“কোথাও না।”
-“তো এখন আমাকে জিজ্ঞাস করেন,কেন এরপর থেকে আমি আগের তুলনায় বেশি ভালো থাকব?”
.
.
ভদ্রতার খাতিরে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেঘ তন্ময়কে জিজ্ঞাস করল,
-“আচ্ছা তাহলে বলে ফেলেন কারণটা!”
-“কারণ আজকের পর থেকে আপনিও আমার হৃদয়ের একটি অংশ হয়ে দাঁড়াবেন তাই।”(মুচকি হেসে)
-“কথাটা অনেক মজার ছিল।তা আপনি যে এত ভালো জোকস বলতে পারেন তা আমার সত্যিই জানা ছিল না।”
অন্যদিকে ফিরে গাছের ফুলগুলোর তাকিয়ে মেঘ এই কথাটা বলল।

-“তা ম্যাডামের কোন এঙ্গেল দিয়ে মনে হল আমি আপনার সাথে জোকস করছি।”
-“নিজের চোখেই তো সব দেখতে পারছেন।তবুও এই অদ্ভুত কথা আর প্রশ্নটা করে আমাকে লজ্জা দেওয়াটা কি খুব দরকার ছিল!”
-“না আমি কিছু দেখতে পারছি না।দয়া করে কথাটা ক্লিয়ার করুন।আর আমি কেনই বা আপনাকে লজ্জা দিতে যাব।”

কিছুটা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে মেঘ বলল,,
-“আমি আগে জানতাম আমার মাঝে যে কমতি আছে সেটা চোখ দিয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যায় কিন্তু আজকে আপনাকে দেখে জানলাম শুধু চোখ দিয়েই মানুষের কমতি বা সমস্যা বুঝা যায় না দৃষ্টি সীমানার বাইরে আরেকটা জিনিস দিয়ে মানুষের ত্রুটি ধরা যায়।আর তা হচ্ছে উপলদ্ধি।আমার উপলদ্ধি দিয়ে বুঝলাম আপনাকে বাইরের দিক দিয়ে ফিটফাট লাগলেও আসলে আপনার মাঝে কিছু কমতি আছে।”
-“What?”
-“জ্বী……..। যা সত্যি তাই বললাম।আপনার যে কমতি আর সমস্যা আছে সেটা হয়ত আপনি নিজেও এতদিনে বুঝতে পারেন নি।আমি বলে দিচ্ছি আপনার সমস্যাটা কি?আপনার চোখের সমস্যা আছে।তা না হলে আপনার সামনে যে একটা জলজ্যান্ত পঙ্গু মেয়ে মানুষ হুইল চেয়ারে বসে আছে সেটা কি আপনার চোখে পড়ে না।একটা পঙ্গু মেয়ে কি করে আপনার হৃদয়ের অংশ হয়।একটা মেয়ের মধ্যে কোন কিছুর কমতি থাকলেই তাকে আর ভালোবাসা যায় না, তাকে আরেকটা মানুষের হৃদয়ের অংশ বানানো যায় না।তাছাড়া সে কোন বাড়ির বউ হওয়ারও যোগ্যতা রাখে না।আশা করি এতক্ষণে আপনার অন্ধ চোখ দুটি তার আলো দিয়ে সবকিছু দেখে নিয়েছে আর বুঝেও নিয়েছে।”
.
.
মেঘের কথা শুনে তন্ময়ের ঘোর যেন কিছুতেই কাটছে না।মেয়েটা একদম বড় মানুষদের মত করে কথা বলে।তারপরও সে নিজেকে সামলিয়ে বলল,

-“মেঘ আমি সব দেখতে পারি আর বুঝতেও পারি।আমার চোখের কোন সমস্যা নাই।আর সবকিছু ভালোভাবে দেখে বুঝেই আমি এই কথাটা বলেছি যে আজকের পর থেকে আপনি আমার হৃদয়ের অংশ হবেন।”
-“যাই হোক এই প্রসঙ্গ বাদ দিন।এইসব নিয়ে কথা বলতে এখন আমার ভালো লাগছে না।”

মেঘ যে কত কষ্ট পাচ্ছে তা তন্ময় নিজের অনুভূতি দিয়ে বুঝতে পারছে। তাই এই প্রসঙ্গের চিন্তা মেঘের মন থেকে সরানোর জন্য তন্ময় বলল,,,

-“আচ্ছা মেঘ আপনি কি সবসময় “সাবধান ইন্ডিয়া” দেখেন?”
-“কেন?হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
তন্ময়ের হঠাৎ সিরিয়াল নিয়ে কথা বলা দেখে এবার মেঘ আরো বেশি অবাক হল।লোকটা কোথায় থেকে কথা কোথায় নিয়ে যায় বুঝা মুশকিল।
-“না মানে কিছুক্ষণ আগে আমাকে দেখে আপনি যা করলেন না তাই এই কথা বললাম।এইই যে একটু আগে বললেন না আমি আপনাদের বাসায় ঢুকে চুরি ডাকাতি করতে আসছি….এরপর আপনার মা বাবাকে খুন….. যাই হোক এইসব অভিজ্ঞতা তো আপনি সাবধান ইন্ডিয়া সিরিয়াল থেকে নিয়েছেন তাই না?”(হাত দিয়ে মুখটা চেপে তন্ময় ওর হাসিটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।)
-“হ্যা…. না…..মানে……..”।
-” “সাবধান ইন্ডিয়া” দেখে সাবধান হোন সেটা ভালো কথা কিন্তু আপনার এই অতিরিক্ত সাবধানতার জন্য আজকে আপনি যা করলেন না…….তা সত্যিই দেখার মতন ছিল”।
এরপর তন্ময় ওর হাসিটা আর কন্ট্রোল করতে পারল না হো হো হো করে হেসে দিল।

তন্ময়ের হাসির আওয়াজ শুনে মেঘ লজ্জা পেয়ে গেল।ইশ তখন ও না জেনে বুঝে কি কান্ডটাই না করে ফেলল।লজ্জাটা ঢাকার জন্য এই মূহুর্তে ওর কি করা উচিত তা মেঘ কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না।হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ায় ও সাথে সাথে তন্ময়কে প্রশ্ন করে বসল,
-“এই যে একটু আগে না আপনি হাতের মধ্যে কি একটা লুকিয়ে রেখেছিলেন?দেখুন আপনি কিন্তু ধরা খেয়ে গেছেন কিছুতেই ওই জিনিসটা লুকানোর চেষ্টা করবেন না।দেখান দেখান…. বলছি কি লুকিয়েছেন আপনি?”
.
.
এখন তন্ময় আর ইতস্তত করল না।হাতের পিছনে রাখা জিনিসটা মেঘকে দেখালো।
-“এইটা কিভাবে আপনার হাতে এল?”
-“আপনার রুম থেকে পেয়েছি।”
-“তাই বলে আমার পারমিশন না নিয়েই আমার ছবি লুকিয়ে চুরি করেছেন।”
-“উহু এইটাকে চুরি বলে না।নিজের হবু বউয়ের ছবি নিয়েছি।তাহলে সেটা চুরি করা কিভাবে হল তা শুনি।”
-“প্লিজ আপনি এইরকম কথা বলে বারবার আমাকে লজ্জা দিবেন না।আমি বুঝতে পারছি না আমার মত পঙ্গু মেয়েকে দেখতে আসার কিই বা হল?আর বিয়ে সেটাতো হচ্ছে না।আমি বিয়ে করব না।”
-“কিন্তু আমি যে বিয়ে করব।”
-“ভালো, বিয়ে করে ফেলেন। তবে আমাকে না অন্য কাউকে।আপনার মা বাবাও নিশ্চয় এই বিয়েতে রাজি না।আমার মাথায় কাজ করছে না আপনারা কি ভালোভাবে সব খোঁজ খবর নিয়ে এইখানে আসেন নি?!
-“ম্যাডাম আমরা সব খোঁজ খবর ভালো ভাবে নিয়েই এরপর আপনাদের বাসায় আসছি।আমি সহ আমার পরিবারের সবাই এই বিয়েতে রাজি আছে।আর বিয়ে করলেই আপনাকে করব।”
.
.
-“দয়া দেখাতে এসেছেন না?”
এই প্রশ্নের জবাব দিতে যাওয়ার আগেই মেঘের মা ডাক দিল।

-“বাবা তোমাদের কথা বলা কি শেষ হয়েছে?”
-“জ্বী আন্টি,,”
-“তাহলে ভিতরে আসো।তোমাদের আপ্যায়নও এখনো আমি ভালো ভাবে করাতে পারি নি ।”
-“আন্টি আপনি এত অস্থির হবেন না।আমি মেঘকে নিয়েই ভিতরে আসছি।মা বাবাও ওকে দেখবে।”

তন্ময়ের এই ধরণের কথায় মেঘের মা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললেন।ছেলেটার আচার -ব্যবহার বেশ ভালোই, খারাপ না।আর তা দেখেই মেঘের মা বুঝে নিয়েছেন মেঘের সাথে এই ছেলেটার বিয়ে হলে ছেলেটা তার মেয়েকে বেশ হাসিখুশি রাখবে।
.
.
.
.
মেঘকে দেখে তন্ময়ের মা বাবা পছন্দ করল।তাই তন্ময়ের মত নিয়েই ওর পরিবারের সবাই আজকেই এংগেজমেন্টের কাজটা সেরে ফেলতে চাইছে।মেঘের মা বাবারো ছেলের পরিবারের সিদ্ধান্তে সমস্যা নেই তাই দুই পরিবারের সম্মতিতে এংগেজমেন্টের কাজটা সেরে ফেলল।আর মেঘ ফ্যালফ্যাল চোখের দৃষ্টি নিয়ে সব দেখতে লাগল।কিচ্ছুটি করতে পারল না।

অতঃপর বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাসার বাইরে যাওয়ার জন্য তন্ময়রা রওনা দিল।আর যাওয়ার আগে তন্ময় মেঘের হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিল।

হৃদয়ের_আয়না পার্ট০৫ (শেষপার্ট)

0

হৃদয়ের_আয়না
পার্ট০৫ (শেষপার্ট)
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
“মিস্টার আকাশ আপনার এই রোগের কথা জানার ১৫দিন পর আপনার স্ত্রী আমাদের এখানে আসে।ওনার নিজের হার্ট দিয়ে আপনাকে বাঁচানোর জন্য অনেক অনুরোধ করে আমাকে।কিন্তু আমি তাতে রাজি হয়নি।মানুষকে বাঁচানো আমাদের দায়িত্ব আর কর্তব্য।১জনকে বাঁচাতে গিয়ে আমরা আরেকজনকে মেরে ফেলব সে ধর্ম আমাদের ডাক্তারদের বিধানে নেই।আমি আপনার স্ত্রীকে না করে দেই।কিন্তু সেও নাছোড়বান্দা।প্রতিদিন এখানে এসে অনেক অনুরোধ করে,কান্নাকাটি করে।কিন্তু তারপরও আমি তার পাগলামোকে পাত্তা দেয় নি।এর কিছুদিন পর তিনি আমার বাসায় আসেন।আমার আর আমার স্ত্রীর পা ধরে অনেক কান্নাকাটি করেন।আর তখনি আমি নিরুপায় হয়ে উনার এই অনুরোধ মেনে নিতে বাধ্য হয়”
“কিন্তু আমাকে এই মিথ্যা কথাটা কেন বললেন?”
“কারণ আপনার স্ত্রীই আমাকে এই মিথ্যা কথা বলতে বাধ্য করেছেন তাই।উনি আমাকে বলেছেন যে আপনাকে হার্ট দিচ্ছে তার সম্পর্কে আপনি যদি কিছু জিজ্ঞাস করেন তাহলে আমি যেন এইরকম মিথ্যা গল্প আপনাকে শুনিয়ে দেই”
.
.
এ তুই কি করলি মেঘ!কেন এইসব করলি?নিজের জীবনটা এইভাবে তুচ্ছ করে কেন আমাকে বাঁচানোর জন্য তুই তোর হার্ট দিয়ে দিয়েছিস।কেন করতে গেলি এইসব!কেন(কেঁদে)
আমি চাইলেও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।সেদিন মেঘের দান করা হৃদয়টা আমার বুকে স্থান পেল।এখন আমার হৃদয়ে ওর অস্তিত্ব,ও হচ্ছে আমার হৃদয়ের আয়না।আমার হৃদয়ের আয়নায় আমি শুধু ওকে দেখি আর ওকে ভালবাসি।আমার এই বুকে অন্য কেউ নেই।
.
.
এরপরে আমি কোনরকম করে দিন কাটাতে লাগলাম।মেঘের হৃদয় আমার বুকে আছে ঠিকই কিন্তু আমি চাইলেও মেঘকে ছুতে পারি না।খুব কষ্ট হত ওকে ছাড়া থাকতে।তুলির সাথে রিলেশন হওয়ার পর ও যখন ভার্সিটি ছেড়ে চলে যায় ১টা বছর ও যখন আমার চোখের সামনে ছিলনা তখন খুব অস্থির লাগত এই বুকে।আল্লাহর রহমতে আমি ওকে ফিরে পেয়েছিলাম।এরপরে ওকে বিয়ের পর বুঝতে পেরেছি ওর মতন করে আমাকে কেউ ভালবাসতে পারবে না।তখন থেকেই তোকে খুব ভালবেসে ফেলেছি যেখানে যাই আমার হৃদয়ের আয়নার শুধু তোর ছবি ফুটে উঠে তাইতো তোর নাম দিয়েছি হৃদয়ের আয়না।কিন্তু এরপরে তুই যে চিরদিনের জন্য আমাকে ফেলে চলে যাবি তা আমি কল্পনাও করতে পারি নি।তখন ১টা বছর তোকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হত আর এখন তুই সারাজীবনের জন্য আমাকে ফেলে চলে গেলি এখন আমি কি নিয়ে বাঁচব, কাকে নিয়ে আমি ঘর বাধাঁর স্বপ্ন দেখবো।তোর জায়গা আমি কাউকে দিতে পারবনা, কাউকে না।তোর মতন করে আমাকে কেউ ভালবাসতে পারবে না।
.
.
আমার এই উদাসীন জীবন দেখে মা বাবা আবারও আমার বিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে।মা বাবা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে আমাকে বাবার বন্ধুর মেয়ে বৃষ্টির সাথে বিয়ে দিয়ে দিল।আর আমাকে এই বলে দিল আমি যাতে আমার আগের বিয়ের কথ বৃষ্টিকে না জানাই।খুব কষ্ট পেয়েছিলাম মা বাবার এই কথায়।মেঘ আমার জন্য নিজের জীবনটা শেষ করে দিল।ও আমার স্ত্রী আর এই কথা আমি কাউকে বলতে পারবো এর থেকে বেশি কষ্ট আর কি হতে পারে?তাই আমার সব রাগ আমি বৃষ্টির উপর ঝাড়তাম।পড়ে ভেবে দেখলাম ওরই বা কি দোষ ওতো এইসবের কিছু জানে না।তাই এরপর থেকে ওর সাথে আর রাগ করে কথা বলতাম না।
.
.
আর পড়তে পারছিনা।এতকিছু ওর জীবনে ঘটে গেল আর ও আমাকে কিছুই বলে নি।ডায়েরির শেষপাতায় ২টা ছবি পেলাম।মেঘে আপুর ছবি!একটা মোটা ফ্রেমের চশমা আর কোকড়ানো চুলের ছবি আর আরকেটা লম্বা কেশবতী,কাজল কালো চোখের ছবি মেঘ আপুর।আকাশের জন্য মেঘ আপু নিজেকে চেঞ্জ করেছে।একটু আগে আমি নিজের রুপের বড়াই করছিলাম কিন্তু সত্যি বলতে আপুর চেহারা আমার থেকে অনেক বেশি লাবণ্যময়ী,আর মায়াবতী।উনার পাশে দাঁড়ালে আমাকে অনেক বেমানান লাগবে।একটু আগে আমি নিজের গুণের প্রশংসা করছিলাম কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমার থেকে অনেক বেশি গুণবতী ছিলেন মেঘ আপু।আমি নিজের কথায় এখন নিজে লজ্জা পাচ্ছি।নিজের চোখের সাথে চোখ মিলাতে খুব লজ্জা লাগছে।এই মানুষটার সম্পর্কে ভালোভাবে কিছু না জেনে আমি কত কিনা বলে ফেলেছি।মেঘ আপু প্লিজ ছোট বোন হিসেবে আমাকে মাফ করে দেন।এরপরে আমার হাত ধরে আমার গালে জোরে কেউ থাপ্পড় মারল।চেয়ে দেখি আকাশ।
.
.
তোমাকে বলেছিলাম না এই রুমে না আসার জন্য তাহলে কেন এসেছ এইখানে।আর আমার ডায়েরি তোমার হাতে কি করছে?তোমাকে বলেছিলাম না আমার কোন জিনিসের উপর অধিকার ফলাবে না তাহলে কেন করলে এইসব?কেন আমার কথা শুনলেনা?যাও এখনি এইরুম থেকে আমার জীবন থেকে চলে যাও।Get out from here
অনেকক্ষণ পর আকাশের রাগ কমল।আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম আকাশ আমি জানি আমি আজকে আপনার মনে অনেক বড় কষ্ট দিয়েছি কিন্তু আজকে আমি ওইরুমে না গেলে সত্যিটা আমার কাছে আজীবন অজানা থেকে যেত।চেয়ে দেখি আকাশ কেঁদে চলছে।
.
.
আমি জানি আপনি মেঘ আপুকে খুব ভালবাসেন।মেঘ আপুর কোন তুলনা হয় না,ওনার মতন করে আপনাকে কেউ কোনদিন ভালবাসতে পারবে না। এমনকি আমি নিজেও না।ওনি নিজের গুণে আপনার এই হৃদয়ে বেঁচে আছে।যে নিজের মূল্যবান হৃদয়টা আপনাকে দিয়ে আপনার হৃদয়ে চিরঅমর হয়ে বেঁচে আছে তার ভালবাসা অনেক পবিত্র।কোনকিছু না জেনে একটু আগে আমি উনার সাথে নিজের তুলনা করেছিলাম।এখন সবকিছু জেনে আমার নিজের থেকে লজ্জা লাগছে।
মেঘ আপু আপনার জন্য এতকিছু কেন করেছেন জানেন?কারণ তিনি আপনাকে সবসময় ভালো আর হাসিখুশি দেখতে চেয়েছেন।কিন্তু আপনি এইভাবে জীবন্তলাশের মত বেঁচে থেকে শুধু নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন না উনাকেও কষ্ট দিচ্ছেন।যে উদ্দেশ্য উনি প্রাণ দিয়েছেন সে উদ্দশ্য উনার কোনদিন পূরণ হলনা।এইভাবে বেঁচে থাকাকে জীবন বলে না।জীবনে বাঁচতে হলে ১জন জীবনসঙ্গীর প্রয়োজন আর আমি আপনার সেই জীবনসঙ্গী হতে চাই।বিশ্বাস করুন মেঘ আপুর জায়গাটা আমার চাই না,আমি নিজের গুণে আপনার এই হৃদয়ে সামান্য একটু জায়গা চাই।আমি জানি আপনার হৃদয়ের আয়নায় আপনি মেঘ আপুকে দেখেন,আমি আপনার হৃদয়ের আয়নায় মেঘ আপুর ছবি মুছে আমাকে দেখতে বলছি না শুধু একটাই মিনতি আমি আপনার সেই হৃদয়ের আয়নায় মেঘ আপুর প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকতে চায়।আমি উনার ছায়া হয়ে আপনার সাথে আমার বাকি জীবন কাটাতে চাই।আপনি খুব ভাগ্যবান আপনি যাকে ভালবাসেন তার হৃদয়টা আপনার কাছে আছে,মেঘ আপুর হৃদয়টা এখন আপনার।একে কেন্দ্র করে আপনি বেঁচে থাকতে পারবেন।কিন্তু দেখুন না আমি কি হতভাগা যাকে ভালবাসি তার কোনকিছু আমার কাছে নেই।আপনি যদি মনে করেন আপনি আমাকে আপনার জীবনে আর রাখবেন না তাহলে আপনি চাইলে আমাকে ডির্ভোস দিয়ে দিতে পারেন। আমি আজকে বাবার বাড়ি চলে যাচ্ছি। যখন মন চাইবে ডির্ভোস পেপারটা সেখানে পাঠিয়ে দিবেন।আপনার মা বাবার টেনশন করবেন না আমি সব সামলে নিব। ভালো থাকবেন চলি।
.
.
২মাস হয়ে গেছে আকাশের কোন খবর নেই। আমি এখনো বাবার বাড়িতে।ওনি এখনো আমার কাছে ডির্ভাস পেপার পাঠান নি।আজ না হয় কাল উনি ঠিকি পাঠিয়ে দিবেন।আমিতো ভুলে গেছি আকাশের বুকে শুধু মেঘের অস্তিত্ব থেকে।আর আকাশের বুকে বৃষ্টি থাকতে পারেনা,সে আকাশের বুক থেকে ঝরে মাটিতে পড়ে।আমার অবস্থাও তেমন আমি বৃষ্টি,আকাশের বুকে সামান্যতম জায়গাটাও পাবোনা কারণ ওইটা শুধু মেঘের জায়গা,বৃষ্টির নয়,
.
.
“আপনি এখানে”
“হ্যা আমি”
“ও এত কষ্ট করে এখানে এলেন কেন?কাউকে দিয়ে ডির্ভোস পেপার পাঠিয়ে দিলে হত”
“আমি আপনাকে ডির্ভোস পেপার দিতে এখানে আসি নি।আপনাকে আপনার সংসারে নিয়ে যেতে এসেছি”
“কি!”
“হ্যা”
“আপনি ঠিক আছেনতো কি বলছেন এইসব”
“হ্যা আমি ঠিকাছি”
“কিন্তু আপনার এই মত কেমন করে চেঞ্জ হল”
“মেঘ আমাকে ওইদিন যে চিঠি দিয়েছিল সেখানে আরও কিছু কথা লিখা ছিল সেটা কি জানেন”
“না কি লিখা ছিল তাতে?”
“এই লিখা ছিল ওর মতন করে আমাকে যদি কেউ কখনো ভালবাসে,আমার হৃদয়ের আয়নায় আমি যদি ওর প্রতিবিম্ব অন্য কারো মধ্যে দেখি তাহলে তাকে যেন বিয়ে করি।আর ওর মতন করেই যেন আমি আমার স্ত্রীকে ভালবাসি,তাকে আমার স্ত্রী হওয়ার প্রাপ্য মর্যাদা দিই।শুধু ওর ১টাই অনুরোধ আমার হৃদয়ের আয়নায় যাতে শুধু ওই থাকে,ওই জায়গার ভাগ ও কাউকে দিতে চাইনা।”
আর আমি আমার হৃদয়ের আয়নায় মেঘের সেই প্রতিবিম্ব সেই ছায়া পেয়ে গেছি আর সে ছায়া হচ্ছ তুমি”
.
.
অনেক খুশি হয়েছিলাম অন্তত আকাশ আমাকে মেনে নিয়েছ।মেঘ আপু আপনি সত্যিই মহান।দুনিয়াতে যখন ছিলেন তখন আকাশের জন্য নিজের জীবন দিয়ে দিলেন আর স্বার্থহীনভাবে আকাশকে বলে গেলেন ওর স্ত্রীকে ওর প্রাপ্য মর্যাদা দেওয়া হয়।উনি আকাশের জন্য আমার জন্য যা করেছেন তা ১মাত্র ১জন প্রকৃত প্রেমিক করতে পারে।উনার কারণে আকাশ আমাকে মেনে নিয়েছে তাই আমিও চাই উনার জন্য কিছু করতে।মা বাবাকে ডেকে মেঘ আপুর সম্পর্কে সব কিছু খুলে বললাম আর এইও বললাম যে উনি আকাশের ১ম স্ত্রী।যে মানুষ অন্যের জন্য এতবড় ত্যাগ স্বীকার করল সে সবার অজান্তে আর আড়ালে লুকিয়ে থাকবে তা আমার জন্য মেনে নেওয়া সম্ভব না।মা বাবা আকাশের ১ম বিয়ে নিয়ে আকাশকে আর আমার শশুড়বাড়ির লোকদের কিছু বলেনি।তারা সব মেনে নিয়েছি।আমার শশুড়-শাশুড়িকে ও বললাম আমার কাছে কোন কিছু লুকিয়ে না রেখে সব সত্যি কথা বললে আমি সব স্বীকার করে নিতাম।তারাও তাদের এই কাজের জন্য সেদিন অনেক অনুতপ্ত হলেন।আমি মেঘ আপুর ছবিসহ তার সবকিছু আবার তার রুমে নিয়ে আসি।উনার জায়গা স্টোররুমে না,উনার জায়গা এইরুমে যেখানে তিনি তার স্বপ্নের সংসার সাজাবেন বলে ঠিক করেছেন।
.
.
কয়েকবছর পর আমার কোল আলো করে আমাদের মেয়ে আসে।আকাশের কাছ থেকে শুনেছি মেঘ আপু প্রায়ই বলত যদি উনার মেয়ে হত তাহলে ওর নাম মায়া রাখত।তাই আমি মেঘ আপুর ইচ্ছা অনুযায়ী আমাদের মেয়ের নাম মায়া রাখি।মায়ার বয়স এখন ৯বছর।ওর কোকড়ানো চুল,চোখের চশমা দেখে মনে হয় আমাদের মেয়েটা মেঘ আপুর প্রতিচ্ছবি।আমি আমার বিবাহিত জীবনে আকাশ আর আমার মেয়েকে নিয়ে অনেক সুখি।তবে আমি এটা জানি আকাশ এখনো মেঘ আপুকে ঠিক আগের মতনই ভালবাসে।মেঘ আপু এখনও আকশের হৃদয়ের আয়না হয়ে আছে।আর আমিও চায় না মেঘ আপু আকাশের হৃদয়ে যে জায়গা দখল করে আছে,আকাশ যে হৃদয়ের আয়না দিয়ে মেঘ আপুকে দেখে সেখানে ভাগ বসাতে।আকাশের হৃদয়ের আয়নায় থাকার অধিকার শুধু মেঘ আপুর।উনিই আকাশের হৃদয়ের আয়না

End

হৃদয়ের_আয়না পার্ট_০৪

0

হৃদয়ের_আয়না
পার্ট_০৪
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
“না আসবো না”
“থাপ্পড় খাবি কিন্তু আয় এদিকে।”
“……….”
“বুঝছি তুই যেই জেদি সেই জেদি রয়ে গেলি।কোনদিন তুই আমার কোন কথাটা শুনেছিস যে আজ শুনবি।সবসময় নিজের মন যা চায় তাই করস।আর তাইতো আমার মতন এমন একটা ছেলেকে বিয়ে করে নিজের দুর্ভাগ্য ডেকে আনলি। এখন কাছে আসতে বলছি কিন্তু দেখ তুই আসছিস না।এই কথাতেই কাজ হয়েছে সুড়সুড় করে আমার কাছে আসল।”
“এরকমভাবে কেন বলছিস তুই?কয় নিজের দুর্ভাগ্য ডেকে আনলাম।আমি জানতাম তুই আবার আগের মতন হয়ে যাবি।দেখ না আমার এই বিশ্বাস মিথ্যা হয়নি।তোর অপারেশন তাড়াতাড়ি হবে।তুই সুস্থ হয়ে যাবি। তাহলে এইসব কথা বারবার বলে আমাকে কষ্ট দিস কেন?”
“ওকে তখনি জড়িয়ে ধরলাম।দেখ কাঁদিসনা আর।আমি বুঝতে পারি নি আমার এই কথা তোকে এত কষ্ট দিবে।এই কথা তোকে এত কষ্ট দিবে জানলে আমি কখনো তোকে এই কথা বলতাম না। Sorry রে।জানু আমাদের কাঁদার দিন শেষ।আমি তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাব।তুই আমাকে নিয়ে যেমন সংসার করার স্বপ্ন দেখতি ঠিক তেমন ভাবে আমরা আমাদের সংসারটা সাজাবো।তুলির কথায় কষ্ট পাস না।ও একটা পাগল। আর যদি কখনো ও তোকে কিছু বলতে আসে ওকেও তুই পাল্টা জবাব দিয়ে দিবি।জানু তুই জানিস তুই আমার কে?”
“………”
“তুই হচ্ছিস আমার হৃদয়ের আয়না।যেদিন থেকে তোকে আমি আমার হৃদয়ের আয়না দিয়ে দেখেছি সেদিন থেকে তোকে ভালবাসি।সেদিন থেকেই তুই হয়ে গেলি এই আকাশের হৃদয়ের আয়না”
“সত্যি!”
“হুম আমার হৃদয়ের আয়না।আর শোন তোকে কান্নাকাটিতে একদম মানায় না। আর কান্নাকাটি করিস না।এবার হাস বলছি,হাস”
“এইতো গুড গার্ল ”
.
.
সেদিন ডাক্তারের কাছে আবার গেলাম।উনাকে আবারও জিজ্ঞাস করলাম আমাকে যে হার্ট দিচ্ছে তাকে দেখতে পারব কিনা?ডাক্তারের উত্তরে আমি আবারও নিরাশ হলাম।
“আচ্ছা মিস্টার আকাশ আপনার এই হার্টের প্রবলেমতো আরও অনেক আগে থেকে ছিল।তখনই তো আপনার এলার্ট হয়ে যাওয়া উচিত ছিল”
“হ্যা আমার শরীরটা তখন কিছুটা খারাপ লাগত।কিন্তু আমি তা পাত্তা দিতাম না।আর পরিবারের কারও সামনে আমি এরকম পরিস্থিতিতে পড়ি নি।কিন্তু সেদিন সবার সামনে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেলাম।আর তারপর এই মেডিকেলে এসে জানতে পারলাম আমি এখন আমার এই রোগের লাস্ট স্টেজে আছি।অনেক দেরি হয়ে গেছে আমার এই রোগ সম্পর্কে জানতে”
“হ্যা সেটাই,কিন্তু এখন আল্লাহর কাছে শোকরিয়া করেন যে আপনি এখন ১টা হার্ট পেয়ে যাচ্ছেন”
“আচ্ছা ডাক্তার আমাকে যে হার্ট দিচ্ছে তার বয়স কত হতে পারে সেটা জানতে পারি”
“তিনি একজন মধ্যবয়স্ক লোক।আনুমানিক বয়স ৩০ বছর হবে।আপনি যেদিন মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন সেদিনি তিনি এই মেডিকেলে আসেন ওনার ছেলেকে নিয়ে।ওনি আমাকে আপনার রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলেন।আমার কাছ থেকে তিনি আপনার রোগ সম্পর্কে জানতে পারেন”
“আচ্ছা!কিন্তু এরকম টাইপের কোন লোক আমার পরিচিত বলে মনে হয় না”
“ওই লোকটি বলেছেন তিনি আপনাকে চিনেন।
লোকটি এই ঘটনার প্রায় ২মাস পর এক্সিডেন্ট করে।ওনার বাঁচার সম্ভাবনা নেই বললে চলে।একদিন ওনি আমাকে ডাক দিয়ে খুব কষ্টে একটা কথা বললেন।আপনি নাকি তার ছেলের জীবন বাঁচিয়েছেন।আপনার কারণে তিনি তার ছেলেকে পেয়েছেন।সেজন্য তিনি চিরঋণী আপনার কাছে।তাছাড়া তিনি নিজেও আর বেশিদিন বাঁচবেন না।তাই তিনি তার হার্ট দিয়ে আপনার সেদিনের সে উপকারের মূল্য দিতে চান”
“ও আচ্ছা।আজকে তাহলে আসি ডাক্তার”
.
.
বাসায় এসে অনেক্ষণ ধরে ভাবছি এইরকম বয়সের কাউকেতো আমি চিনিনা।আর উনার ছেলের জীবন বাঁচিয়েছি!তা কেমন করে সম্ভব।এইরকম উপকারের কথাতো আমার ঠিক মনে পড়ছে না!
“কিরে আকাশ অনেক্ষণ ধরে দেখছি তুই কোন কিছু নিয়ে ভাবছিস।এত কি ভাবছিস তুই?”
“জানু,আজকে ডাক্তারের কাছে গেছি”
“হঠাৎ করে!কোন দরকার ছিল”
“আসলে আমাকে যে হার্ট দিবে তার সম্পর্কে একটু জানার জন্য ডাক্তারের কাছে গেলাম।এরপর ডাক্তার আমাকে যা যা বলল তা আমি মেঘকে খুলে বললাম”
.
.
“মেঘ আমার যতটুকু মনে আছে আমি এইরকম বয়সের কোন লোকের ছেলেকে সাহায্য করিনি।কিচ্ছু ঢুকছে না মাথায়।ডাক্তারের কথাগুলো কেমন যেন অদ্ভুত লাগল।মনে হল…”
“কি মনে হল!”
“মনে হল উনি সত্যটা লুকিয়ে আমাকে মিথ্যা কথা বলছেন”
“তুইও না বড় আজিব।ডাক্তার তোকে মিথ্যা বলতে যাবে কেন?দেখ এইসব ফালতু চিন্তা বাদ দে।ওই লোকটা নিজেও আর বেশিদিন বাঁচবে না তাই ওনি ওনার নিজের হার্ট দিয়ে তোর জীবন বাঁচাতে চাইছেন।বিষয়টা অনেক সিম্পল”
“কিন্তু আমার থেকে বিষয়টা সিম্পল লাগছেনা।মনে হচ্ছে আমার এই অপারেশনের পর আমার কাছের কাউকে আমি হারাতে বসবো।মনে খুব অস্বস্তি লাগছে।তাই নিজের মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বারবার বিষয়টা ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করছি।১টাবার যদি ওই লোকটাকে দেখতাম তাহলে আমার মনের সব ভয় আর সন্দেহ দূর হয়ে যেত”
“দেখ আকাশ এই অপারেশনের পর যা হবে ভালোই হবে।তুই আর অযথা টেনশন নিস না।আকাশ আজকে আমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাবি ”
” ঘুরতে যাবি?”
“হুম খুব ইচ্ছে করছে আজকে দিনটাই তোর সাথে ঘুরতে আর সময় কাটাতে”
.
.
আজকে মেঘকে নিয়ে সারাদিন ঘুরলাম,মার্কেটে গেলাম।মার্কেটে খুব সুন্দর একটা গোলাপি শাড়ি দেখলাম।ভাবছি আমার অপারেশনের পরদিন আমি মেঘকে এই শাড়ি গিফট দিব।ওকে সারপ্রাইজ দিবো।তাই চুপচাপ শাড়িটা কিনে ফেললাম।বাসায় এসে আলমারিতে এটা লুকিয়ে রাখলাম।অনেকদিন পর আবার সেই চাঞ্চল্যকর দিনগুলো ফিরে পেলাম।মেঘের সাথে আজকে সারাটাদিন কাটিয়ে মনটা আবার আগের মতন সতেজ হয়ে গেছে।আমার এই অপারেশনের পর আমি আর মেঘ আমাদের সংসারটা সাজাবো, দিনদিন আমাদের ভালবাসা বাড়বে।সময়ের সাথে সাথে অন্যান্য সবার মতন আমাদেরও ছেলেমেয়ে হবে।আচ্ছা ছেলে হলে কি নাম দিব?আর যদি ছেলে না হয়ে মেয়ে হয় তাহলে?বুঝতে পারছিনা।আমার এই অপারেশনের পর আমি এই বিষয় নিয়ে মেঘের সাথে কথা বলব।আল্লাহ আমাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দাও যাতে মেঘের সব স্বপ্ন আমি পূরণ করতে পারি।
.
.
পরেরদিন রাতে তুলি আমাকে কল দিয়ে বলে ও এর ব্যবহারের জন্য অনুতপ্ত,আমার কাছে ক্ষমা চায়।সেজন্য আমার সাথে কালকে দেখা করতে চায়।আমিও ভাবলাম ঠিকাছে দেখা করি গিয়ে।এরপরের দিন ওর কাছে যায়।ও আমার কাছে বারবার তার ব্যবহারের জন্য আমার কাছে ক্ষমা চায়,আমিও ওকে ক্ষমা করে দেই।বাসায় এসে দেখি মেঘ কাঁদছে।ওকে এর কারণ জিজ্ঞাস করলে আমাকে অনেক উল্টাপাল্টা কথা শুনিয়ে দেয়।ও আজকে আমাকে আর তুলিকে একসাথে দেখেছে। আর তার কারণে ও মনে করে নিয়েছে আমার সাথে তুলির রিলেশন এখনো চলছে।ওকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু আমার কথাগুলোকে কোন গুরুত্ব দিলো না।ও ওর বাবার বাসায় রাগ করে চলে গেল।আমিও রাগ করে করে ওর রাগ আর ভাঙ্গায়নি।
.
.
৩ ফেব্রুয়ারির দিন ডাক্তার আমাকে কল দিয়ে জানিয়ে দিলো ওই লোকটার আজকে সকালে অবস্থা খুব খারাপ ছিল।একটুআগে মারা গেছেন উনি তাই আজকে নাকি আমার অপারেশন হবে। ভালোই হয়েছে ভাবলাম সুস্থ হয়ে ১৪ই ফেব্রয়ারি মেঘকে আমার ভালবাসার কথা জানিয়ে দিব,ওর সব রাগ ভাঙ্গিয়ে দিবো।কিন্তু ওই লোকটার জন্য খারাপ লাগছে সে এই দুনিয়া থেকে আজকে বিদায় নিলো।অবশেষে ৩ ফেব্রুয়ারি আমার অপারেশন হয়ে গেল।এখন আমি সম্পূর্ণ সুস্থ।১৪ই ফেব্রুয়ারি আমি মেঘকে মোবাইলে মেসেজ পাঠায় বাসায় এসে আমার সাথে আজকে রাত ৮:০০টায় দেখা করার জন্য।পুরো রুম খুব সুন্দর করে সাজায় ঠিক যেমনটা মেঘ পছন্দ করে।অনেকক্ষণ ধরে ওর জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু ওর আসার নাম নেই।আমি ওকে ডেকেছি কিন্তু ও আসবে না তা কেমন করে হয়।এরকম করে ১,২,৩ঘন্টা ওর জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু ও আসছে না।শেষ পর্যন্ত ও আসলোই না,এত্ত অভিমান আমার উপরে।রাতে কলিং বেলের আওয়াজ পেলাম। দেখলাম আমার নামে একটা চিঠি এসেছে।মেঘের চিঠি!
.
.
ডায়রিতে মেঘের সেই চিঠিটা আছে।কিন্তু সেই চিঠির নিচের অংশ ছিড়া।
প্রিয় আকাশ,
আজ তুই একটা নতুন জীবন পেয়েছিস।আজকে তোর একটা নতুন জীবনের সূচনা হবে।তোর বর্তমান আর ভবিষ্যৎ জীবন খুব সুন্দর আর সুখের কাটোক আমি সেই দুয়া করি।আকাশ ওইদিন তোর আর আমার ঝগড়াটা আমি ইচ্ছে করে সৃষ্টি করেছিলাম।জানি তুই কোন দোষ করিস নি।কিন্তু কি করব বল সেইদিনের সেই ঝগড়াটা খুব দরকার ছিলরে।সেদিনের সেই ব্যবহারে তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিলে জানি কিন্তু সেদিন ঝগড়াটা না হলে তোর সাথে আরও কয়েকদিন থাকলে তুই আমার মায়ায় আরও জড়িয়ে যেতি।আমার কারণে তুই আরও বেশি কষ্ট পেতি।বিয়ের দিন আমি তোকে একটা কথা বলেছিলাম মনে আছে তোর।তোকে বলেছিলাম না আমি সবসময় তোর হৃদয়ে থাকব,মরে গেলেও তোর হৃদয়ে এমনভাবে গেঁথে থাকব তুই চাইলেও আমাকে তোর হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে পারবি না।দেখ আমি আমার কথা রেখেছি আমি সত্যিই তোর হৃদয়ে আছি।এখন থেকে আমার অস্তিত্ব তোর হৃদয়ে।সেখানে শুধু আমি শুধু আমি আছি।
এরপর মেঘ আপু আর কি লিখলো সেটা জানতে পারলাম না।বুঝতে পেরেছি সেদিন প্রচণ্ড জেদ,আর অভিমানে আকাশ এই চিঠির নিচের অংশ ছিঁড়ে ফেলে।
.
.
তার মানে মেঘ তুই!তুই আমার হৃদয়ে!আমাকে হার্ট তুই দিয়েছিলি।না আমি এইসব বিশ্বাস করি না।সব মিথ্যা।ডাক্তার তো বলেছিল মধ্যবয়স্ক একলোক আমাকে হার্ট দিয়েছে।তাহলে ডাক্তার কি আমাকে মিথ্যা বলল কিন্তু কেন?ওই ডাক্তারকে আমি ছাড়ব না যদি আমাকে মিথ্যা কথা বলে থাকে।আমি সরাসরি ডাক্তারের কাছে গেলাম।
“আমাকে হার্ট কে দিয়েছে?”(রেগে)
“I am extremely sorry mister akash.আমি আপনাকে ওইদিন মিথ্যা কথা বলেছিলাম।”
“মানে?”
“আপনাকে হার্ট আপনার স্ত্রী দিয়েছে।”
“নিজের রাগকে আর কনট্রোল করতে পারলাম না।রাগে ডাক্তারকে একটা ঘুষি দিলাম।”
“কেন আমাকে মিথ্যা কথা বললেন আপনি?কেন?(কেঁদে)আপনি জানেন না আপনার এই ১টা মিথ্যা কথায় আমার পুরো দুনিয়ায় অন্ধকার ছেয়ে গেছে।আপনার কথায় বিশ্বাস করে আমি এই অপারেশনটা করিয়েছি।আমার অপারেশনের কারণে আমি যে আমার হৃদয়ের আয়নাকে হারাবো তা ভাবতে পারিনি।আপনার ওইদিনের কথাগুলো আমার মিথ্যা মনে হয়েছিল।কিন্তু মেঘকে সব বলার পর ও আমাকে এইসব নিয়ে ভাবতে নিষেধ করে। তাই আমি এই বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলি।সেদিন যদি আমি এই বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে এর সত্যতা বের করে ফেলতাম তাহলে আজকে আমাকে এইদিন দেখতে হতনা।”

হৃদয়ের_আয়না পার্ট_০৩

0

হৃদয়ের_আয়না
পার্ট_০৩
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
মেঘের বাবার মন খারাপ কারণ পাত্রপক্ষ বিয়ে ক্যান্সেল করে দিয়েছে।পাত্রপক্ষ বিয়ে ভাঙ্গার কারণটা ঠিকভাবে বলে নি শুধু বলেছে সমস্যা আছে।যায় হোক তার ধারণা মেঘ এইকথায় খুব কষ্ট পেয়েছে তাই তিনি কিছুদিন মেঘকে বাইরে থেকে ঘুরে আসতে বলেছেন।আমি এই সুযোগে ওকে আমার বাসায় নিয়ে যায়।মা ওকে দেখে খুব খুশি হয়েছে।কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে আমি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়।অনেকক্ষণ হয়ে গেল আমার জ্ঞান আসছে না দেখে আমাকে তাড়াতাড়ি মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।পরে জানতে পারি আমার হার্টে প্রব্লেম হয়েছে।বেশিজোর ৪ মাস বাঁচতে পারবো।কেউ যদি আমাকে ১টা হার্ট দিয়ে দেয় তাহলে আমি বাঁচতে পারব।এই দুনিয়ায় এমন কেউ নেয় যে কিনা টাকার বিনিময়ে নিজের মূল্যবান হার্ট দিয়ে দিবে।এই কথা শুনে মা বাবা সবাই কেঁদে ফেলেছে।তুলি যেদিন এই খবর শুনেছে সেদিন থেকে ওর আমার রিলেশন ব্রেক আপ করে দিয়েছে।ওর এক কথা মৃত্যুপথযাএী একজনের সাথে রিলেশন রাখার কোন মানে হয় না।যেদিন আমার ভালবাসার মানুষের সার্পোট সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল সেদিন সেই আমাকে ছেড়ে চলে গেল কিন্তু মেঘ ও একবারের জন্যও আমাকে ছেড়ে যায়নি বরং আমার মনে সাহস যুগিয়েছে যে আমি তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাব।আমার কিছু হবে না।অথচ এই মেয়েকে আমি একদিন তুলির জন্য কষ্ট দিয়েছি সেটা ভাবতেই আজকে খুব কষ্ট হচ্ছে।
.
.
“আন্টি আংকেল প্লিজ আপনারা কাঁদবেন না দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি আপনাদের বলছি আমি নিজে সবকিছু ঠিক করে দিব”
“মারে এইসব কি বলছিস।দেখেছিস ডাক্তার কি বলল,এখন ১টা হার্ট আকাশকে কে দিবে?”
“বললাম না এইসব নিয়ে চিন্তা করে আপনারা কাঁদবেন না।আমি নিজ হাতে সব সামলিয়ে নিব।আপনারা ঠিকই তাড়াতাড়ি heart donor পেয়ে যাবেন।শুধু আমার একটা ইচ্ছে পূরণ করে দিবেন প্লিজ”
“কি ইচ্ছে মা?”
“অনেক আগে থেকে আমার খুব শখ আমি আকাশের বউ হব।ওর সাথে সংসার করব,আমার এই ইচ্ছে শুধু পূরণ করে দেন।আমি কথা দিচ্ছি আমি আকাশের সাথে খারাপ কিছু হতে দিব না”
“কিন্তু মেঘ”
“কোন কিন্তু না যদি আপনারা আমাকে আপনাদের মেয়ে ভেবে থাকেন তাহলে প্লিজ আমার এই ইচ্ছা পূরণ করতে হেল্প করুন”
“আমরা নাহলে মানলাম কিন্তু আকাশ,ও কি মানবে?”
“ওকে আপনারা মানাবেন যেইভাবে হোক।বাকিটা আমি দেখে নিব।”
আমি প্রথমে এই বিয়েতে রাজি হতে চায় নি।কি করে এই বিয়ে করব যাকে ভালবাসতাম সে আমাকে এই অবস্থায় রেখে চলে গেছে আর আমিতো মেঘকে শুধু ফ্রেন্ডই ভাবি তাহলে কি করে ওকে বিয়ে করব,কিভাবে ওর জীবনটা আমি নষ্ট করব।অনেকটা জোর করেই মেঘের সাথে আমার বিয়ে দেওয়া হয়।মেঘের বাবা সবকিছু জেনে বিয়েটা দিতে চান নি কিন্তু মেঘের সুখের কথা ভেবে উনি বিয়েটা দিলেন।অবশেষে এই অবস্থায় আমি ওকে বিয়ে করলাম।
.
.
“কেন এমন করলি মেঘ?”
“কারণ আমি তোকে ভালবাসি”
“কিন্তু আমিতো তোকে ভালবাসি না শুধু বন্ধু ভাবি। তাছাড়া আমাকে তুই এমন মুহুর্তে বিয়ে করেছিস যেখানে আমি এই পৃথিবীতে মাত্র কয়েকদিনের পথযাত্রী।কেন নিজের সর্বনাশ তুই নিজে ডেকে আনলি?কি পাবি আমার কাছ থেকে?কিচ্ছু না, তাহলে জেনেশুনে কেন এই ভুল পথে পা বাড়ালি,”
“আমিতো তোর কাছ থেকে কিছু পাবার আশায় তোকে বিয়ে করে নি।তোকে ভালবাসি তাই তোকে বিয়ে করেছি। সেই কলেজ লাইফ থেকে তোকে ভালবাসি কিন্তু আমাকে তুই কোনদিনও বুঝিস নি।যাইহোক দেখ, আমার ভালবাসার মানুষের ভালোর জন্য আমি সবকিছু করতে পারি।তোর কিচ্ছু হবে না দেখে নিস।এই মেঘ তোকে কিচ্ছু হতে দিবে না”
“কেন মিথ্যা আশা দেখাচ্ছিস আমাকে।আমি জানি আমি আর বেশিদিন বাঁচবো না।মাত্র ৪মাস আছি আমি এই পৃথিবীতে।তাহলে এই মিথ্যা সান্ত্বনা কেন?”
“মিথ্যা আশা তোকে দেখাচ্ছি না।বললামতো আমি সবকিছু ঠিক করে দিব।একটু ভরসা রাখ আমার উপর।প্লিজ কাঁদিস না,তোর কান্না আমার সহ্য হয় না।আকাশ একটা আবদার রাখবি আমার প্লিজ”
“আবদার!কি আবদার”
“আজকে আমি তোর বুকে মাথা রেখে ঘুমায়।জানি না জীবনে আর কখনো এই সুযোগ আসবে কিনা?”
“এরকম করে কেন বলছিস।তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি না তুইই এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবি।”
“কি জানি হয়ত।মানুষতো,মানুুষের জীবনের কোন ভরসা নেয়।আজ আছি কাল নাও বা থাকতে পারি।আমি এই দুনিয়ায় থাকি আর নায় বা থাকি কিন্তু তোর এই হৃদয়ে আমি সবসময় থাকব।তুই চাইলেও এই হৃদয় থেকে আমাকে কখনো মুছতে পারবি না।মরে যাওয়ার আগে আমি এমন বন্দোবস্ত করে যাব যাতে তোর এই হৃদয়ে শুধু আমার শুধু আমার অস্তিত্ব থাকে”
“তোর কথার অর্থ বুঝতে মাঝে মাঝে আমার খুব কষ্ট হয়।কি বলিস কিছু বুঝতে পারি না”
“বুঝতে হবেও না আগে বল আমার আবদারটা রাখবি?”
“মেঘ কেন এইসব করছিস?কি হবে এইসব করে?”
“আকাশ তুই আমাকে না ভালবাসছ কিন্তু আমার ভালবাসাকে অবহেলা করিস না।একটু হলেও এর মূল্য দিস। তোর বউ হিসেবে এতটুকু অধিকারতো আমার আছে?”
“কাঁদিস না,আয়”
“থ্যাংকস আকাশ”
.
.
এরপরে দেখতে দেখতে ৩মাস কেমন করে কেটে গেল বলতে পারবো না।এখন মেঘের জন্য আমার ভালবাসা তৈরি হয়েছে।কত কি না করে মেয়েটা আমার জন্য।এইরকম লক্ষ্মী একটা মেয়েকে ফেলে আমি কি করে যে ওই তুলির প্রেমে পড়েছি তা ভাবতেই লজ্জা লাগছে।আমি প্রথমে তুলির রুপ দেখে পছন্দ করেছিলাম কিন্তু আজ বুঝেছি ভালবাসার জন্য রুপ না একটা ভালো মন দরকার যা তুলিদের মতন মেয়েদের মধ্যে থাকে না।আমি আমার এই হৃদয়ের আয়না দিয়ে আজকে তোকে দেখেছি মেঘ।এই হৃদয়ের আয়নায় তুই একমাত্র আমার চোখে দেখতে সুন্দর আর সেই সাথে সুন্দর তোর মনটাও যার সাথে অন্য কোন কিছুর তুলনা হয় না।আমি কেন আগে আমার এই হৃদয়ের আয়না খুলে তোকে দেখিনি।আগে দেখলে হয়ত অনেক আগেই তোর প্রেমে পড়ে যেতাম।কিন্তু এখন তোকে ভালবাসলে কি হবে আমি যে আর বেশিদিন নেই।
.
.
এর কয়েকদিন পরে জানতে পারি আমাকে একজন তার heart দিবে।তাহলে আল্লাহ এতদিনপর মুখ তুলে চেয়েছে।কে হার্ট দিবে তা জানতে চেয়েছিলাম ডাক্তারের কাছে।তিনি শুধু বলেছেন সে নাকি আমার খুব কাছের একজন মানুষ।আমাকে যে হার্ট দিবেন তাকে একটাবার দেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু ডাক্তার বলল ওনার সাথে দেখা করা যাবে না।ওনি দেখা করবেননা।খুব জেদ উঠে গিয়েছিল সেদিন।উনি কেমন আমার আপন মানুষ যে আমাকে হার্ট দিবে অথচ একটাবারও আমি তাকে দেখতে পাবো না।মা বাবা আর মেঘকে আমি এই খবরটা দিলাম। তারা খুব খুশি হয়েছিল কিন্তু আমি নিষেধ করে দিয়েছিলাম যে আমাকে হার্ট দেওয়া লাগবে না কারণ যে আমাকে হার্ট দিবে আর আমি তাকে দেখতে পাবো না তা কেমন করে হয়!তাছাড়া সে টাকাও নাকি নিবে না।আমাকে হার্ট দিলে সে নিজে মারা যাবে আবার বলছে আমার খুব কাছের মানুষ তাহলে সে যদি একটাবার আমাকে দেখা না দেয় আমি নিজের কাছে নিজে অপরাধী হয়ে থাকব সারাজীবন।পরে মা বাবা আর মেঘ অনেক বুঝালো।ভেবে দেখলাম আমি ছাড়া ওদের কেউ নেই আমার জন্য না হোক ওদের জন্য হলেও আমাকে বাঁচতে হবে।তাই আমি হার্ট নিতে রাজী হলাম।শুধু একটাই আফসোস আমার সেই আপন মানুষটাকে আমি দেখতে পাবো না
.
.
এরমধ্যে একদিন তুলি আমার বাসায় এসে হাজির।বাসায় এসে মেঘের সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
“তুলি এইসব কি হচ্ছে?”
“বাবু প্লিজ আগের কথা সব ভুলে যাও।শুনেছি তোমাকে নাকি কেউ হার্ট দান করছে।তুমিতো আবার আগের মতন স্বাভাবিক ভাবে বাঁচবে।চল নতুন করে সব কিছু শুরু করি”
“তুলি এইসব কি বলছ?তুমি হয়ত ভুলে গেছ আমি বিবাহিত।আমার ঘরে স্ত্রী আছে”
“তাহলে কি হয়েছে দরকার হলে ওকে তালাক দিয়ে দিবে।অনেকে ২য় বিয়ে করে বউকে তালাক দেয় তাহলে তুমি পারবে না কেন?”
“তুলি তোমার মাথা ঠিক নেই।সেদিন আমাকে ফেলে চলে গিয়েছিলে যখন আমার সবচেয়ে বেশি তোমাকে দরকার ছিল কিন্তু তুমি ছিলে না।তোমার জায়গায় এই মেয়েটা এতদিন আমার খেয়াল রেখেছে।আমি কয়েকদিন পর মরে যাব সেটা জেনেও আমাকে বিয়ে করেছে।আমার কাছে কোনকিছুর আশা না করে আমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবেসেছে তাহলে ওকে কেন আমি তালাক দিব”
“দিবে একশবার দিবে কারণ দিতে তুমি বাধ্য।হয়ত তুমি ভুলে গেছে আমিই তোমার জীবনের প্রথম ভালবাসা।তাই তোমার উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার আমার”
“না তোমার কোন অধিকার নেই।এখন আমার উপর যদি কারও অধিকার থাকে সেটা আমার স্ত্রী মেঘের”
“ও,আচ্ছা এখনতো আমাকে ভালো লাগবেনা।আরেকজনকে পেয়ে গেছ তাইনা?এইমেয়ের কারণে আজকে আমাকে এইসব কথা শুনাচ্ছ।সব দোষ এই মেয়েটার,আমাদের দুইজনের ভালবাসায় আগে থেকে ওর কুদৃষ্টি ছিল।ও সবসময় আমাদের দুইজনের মাখখানে আসতে চাইত।এখনতো ওর সব ইচ্ছা পূরণ হয়ে গেছে।কেনরে মেঘ খুব খুশি লাগছে তোর তুই জিতে গেছিস আর আমি হেরে গেছি।তাহলে তুই ভুল ভাবছিস,মনে রাখবি আমি ওর প্রথম ভালবাসা আর তুই আমাদের দুইজনের মাঝখানে শুধু ১টা থার্ড পারসন”
“তুলি এইবার কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে”
“ও এখন বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে তাই না?সব হয়েছে এই মেয়েটার জন্য,এই মেয়েটার সব দোষ এই কথা বলে ও আমার সামনে আমার মেঘকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল”
“তুলি অনেক সহ্য করেছি আর না।এখন আরেকটা কথা বললে আমি তোমার জিভ টেনে ছিড়ে ফেলব। তোমার সাহস কি করে আমার সামনে আমার স্ত্রীকে এইভাবে অপমান করার।তুমি আমার প্রথম ভালবাসা ছিলে তাই হাত তুলেনি কিন্তু তুমি যদি এখানে আর ১মিনিটও দাঁড়াও সত্যি বলছি আমার হাত উঠে যাবে”
.
.
আমার সামনে আমার স্ত্রীকে তুলি অপমান করে চলে গেল।সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম এই বুকে।না জানি এই মেয়েটা কেমন করে তুলির সব অপমান মুখ বুজে সহ্য করে।কেন ও তুলির কথার পাল্টা জবাব দেয় না।ওর উপরেও আমার রাগ উঠছে।কিন্তু মেয়েটা মনে হয় কাঁদছে তাই আর বেশিক্ষণ রাগ ধরে রাখতে পারলাম না।গিয়ে দেখি নিশ্চুপভাবে কান্না করছে।
“জানু তুই ওকে কিছু বলিসনি কেন?মেয়েটা তোকে কত কিনা বলে গেল আর তুই..”
“কি বলব আকাশ ওতো ঠিকই বলেছে।ভুল কিছু তো বলেনি”
“মেঘ!”
“হ্যা মেঘ,মেঘ সত্যিই বলছে।ও তোর জীবনের প্রথম ভালবাসা আর আমিই তোদের দুইজনের মাঝখানে এসে পড়েছি”
“চুপ কি উল্টাপাল্টা কথা বলছিস।ও আমার পাস্ট আর তুই আমার বর্তমান।আমি ওকে আর ভালবাসি না।এইদিকে আয় দেখি”
“না আসবো না”

হৃদয়ের_আয়না পার্ট_২

0

হৃদয়ের_আয়না
পার্ট_২
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
আকাশ চলে যাওয়ার পর আমি লুকিয়ে আকাশের ড্রয়ার থেকে চাবিটা নিয়ে স্টোররুমের দরজা খুলি। দরজা খুলার পর আমি যা দেখি তা দেখে খুব খারাপ লাগছে।একটা মেয়ের ছবি রঙ তুলি দিয়ে আঁকা হয়েছে।সেই ছবিগুলো পুরো দেওয়াল জুড়ে আছে।বুঝতে পেরেছি এই ছবিগুলো আকাশ এঁকেছে,খুব হিংসে হচ্ছে।এই মেয়েটার মধ্যে এমন কি আছে যা আমার মধ্যে নেই।আমি তো মেয়েটার থেকেও আরও বেশি সুন্দর তাহলে?সেখানে একটা আলমারি আছে সেটা খুলতে গিয়ে দেখি অনেকগুলো শাড়ি ভাজ করে রাখা আছে।বুঝতে পেরেছি এই শাড়িগুলো ওই মেয়েটার।তার মানে আমি আজকে যে শাড়ি পড়েছি সেটা আকাশ আমার জন্য আনেনি এই শাড়িটা ছবিতে আঁকা এই মেয়েটার শাড়ি।মেয়েটার ছবির কাছে দাঁড়িয়ে আছি।খুঁটিয়েনাটিয়ে ওকে অনেকক্ষণ দেখলাম।ও তাহলে তুমি সেই মেয়ে যার জন্য আকাশ আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো।তোমার জন্য আজও পর্যন্ত ও আমার দিকে ভালবাসার দৃষ্টিতে তাকায় নি,আমাকে ভালবাসতে পারে নি,তোমার কারণে শুধু তোমার কারণে আমি আকাশের জন্য এতকিছু করার পরেও ওর মনে এতটুকু জায়গা বানাতে পারেনি।বলতে পার তোমার মধ্যে এমন কি আছে যা আমার মধ্যে নেই?আমার তো মনে হয় তোমার থেকেও বেশি গুণ আমার মাঝে আছে,আমি শুধুমাত্র এই পরিবারের জন্য আকাশের জন্য নিজেকে বদলেয়েছি যা তুমি পারবে না,খুব ভালবাসি আকাশকে এরজন্য নিজের জীবনও বিলিয়ে দিতে রাজী আছি আমি, তুমিই বল,আমার মতন করে তুমি আকাশকে ভালবাসতে পারবে?পারবে আমার মতন করে আকাশের জন্য নিজের জীবন ত্যাগ করতে? পারবে না?এতসহজ না এইসব শুধু তখনি করা যায় যখন কাউকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসা যায়।আকাশের জন্য আমি সবকিছু করতে পারব,সবকিছু কিন্তু তুমি!তুমিতো আমার মতন করে এইসব করতে পারবে না তাহলে আকাশ কেন আমাকে ভালবাসে না,কেন ও তোমাকে ভালবাসে?বল কি আছে তোমার মধ্যে প্লিজ একটাবার বল,কিছু একটা পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পেলাম।এটা কি ডাইরি!এটা আকাশের ডাইরি।
.
.
“জানু কি করছিস?”
“কিছু না,”
“ওই তুই এই মোটা ফ্রেমের চশমাটা কেন পড়ছ বলত একদম বুড়ি বুড়ি লাগে?”
“তাতে তোর কি?”
“জানু আমার অনেক কিছু,আমার বেস্টফ্রেন্ড তুই, তুই জানস এই মোটা ফ্রেমের চশমাটার জন্য কোন ছেলে তোর প্রেমে পড়তে চায়না।”
“শুধু এই কারণে”
“না,আরও অনেক কারণ আছে।এই ধর তোর এই ছোট ছোট কোকড়া চুলগুলো যদি একটু স্ট্রেইট করতি,চুলগুলো একটু বড় লম্বা করতি,মেয়েদের মতন চলতি,ওদের মতন করে নিজেকে সাজাতি দেখতি তোর পিছনে ছেলেদের লাইন পড়ে যেত।”
“তার মানে তুই কি বলতে চাচ্ছিস আমি মেয়ে না?”
“আরে সেটা বলে নি,তুই মেয়ে কিন্তু চলস ছেলেদের মতন করে,তোর মধ্যে মেয়েদের কোন লক্ষণই নেই।পুরো ছেলেদের মতন গেট আপ।”
“ও কিন্তু আমার সাজতে ভালো লাগে না,আমার এইভাবে চলতে ভালো লাগে,”
“সেটাই,বিশ্বাস কর তুই যদি একবার আমার মনের মতন করে সাজতি আমি সত্যিই তোর প্রেমে পড়ে যেতাম।”
“সত্যি!!”
“হুম কিন্তু এখন সেই চাঞ্জ নেই।”
“কেন?”
“কারণ,তোকে আমি আমার বেস্টফ্রেন্ডের চোখে দেখি,তাই তোকে প্রেমিকার চোখে কখনো দেখতে পারবো না,”
“ও তাহলে তো মনে হয় তোর বেস্টফ্রেন্ড হওয়াটা আমার লাইফের সবচেয়ে ভুল কাজ।”
“নারে,ভুল না ঠিক কাজ,তোর মতন বন্ধুর কোন তুলনা হয় না।তোকে আমি আমার মনের কোন আসনে বসয়েছি সেটা তুই নিজেই জানিস না তাইতো তোকে ভালবেসে আমি জানু বলি।ইয়ে মানে মেঘ,”
“হুম বল,”
“বলছি আমার এসাইনমেন্টা করে দিবি প্লিজ,
“ও তাইতো বলি,এত আদুরেভাবে কথা বলছিস কেন?”
“কেন আমি কি কখনো বলি না,নাকি?”
….
“জানু প্লিজ,করে দেনা?নাহলে স্যারের খুব বকা খাব,তুই কি চাস আমি স্যারের হাতে বকা খাই,”
“এতযদি স্যারের বকা খাওয়ার ভয় থাকে তাহলে কেন করলি না,”
“এমনি,”
“এমনি না,তুই তোর সব এসাইনমেন্ট আমাকে দিয়ে করাস একটাও নিজ থেকে করস না,পারব না আজকে করে দিতে,যা ভাগ এখান থেকে,”
“আমি জানি তুই মুখে না বললে ও ঠিকই করে দিবি।”
“হুম বেশিই জানস তুই?আচ্ছা বলত কালকে তো সারাদিন ফ্রি ছিলি তাহলে কেন কাজটা শেষ করস নাই?”
“আসলে কি বলব জানু,কালকে একটা হুরপুরীকে দেখছি,মেয়েটা কি সুন্দর দেখতে,আমি প্রথম দেখায় ওর প্রেমে পড়ে গেছি যাকে বলে love at first sight.”
“ও,আকাশ মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দর নারে?”
“হ্যা খুব,খুব খুব সুন্দর দেখতে যেন রংতুলি দিয়ে কেউ ওকে এঁকেছে।”
….
“কিরে কি হল তোর,”
“শরীরটা ভালো লাগছে না রে আমি আসি”
“ওই জানু আমার এসাইনমেন্টা”
“করে দিবো,আর আকাশ আজকের পর থেকে আমাকে আর জানু বলে ডাকিস না,তাহলে তুই যার প্রেমে পড়েছিস যদি তার সাথে তোর প্রেম হয়ে যায় সে খুব মাইন্ড করবে রে?আজকে থেকে আমাকে জানু বলে আর ডাকবি না প্লিজ।”
“মেঘ কি বলস তুই,তোকে ভালবেসে এই কথা বলি,আর সে যদি আমাকে তোকে জানু বলে ডাকাতে মাইন্ড করে তাহলে এইরকম হিংসুটে মেয়ের সাথে আমি রিলেশন রাখবো না।এই ডাকটা শুধু তোর জন্য only for u.”
(এখনকার কথা আর তখনকার কথায় মিল থাকবেনা)”তাহলে তোর প্রেমিকাকে কি বলে ডাকবি?”
“সেটা এখনো ভাবে নি রে,তখনেরটা তখন দেখা যাবে।”
.
.
“জানু কালকে তোকে একটা মেয়ের কথা বলছি না,”
“হ্যা,”
“ওই মেয়েটাতো আমাদের সাথে পড়ে একি ডিপার্টমেন্টে।”
“তাই!”
“আরে হ্যা,”
“দেখবি না আমার হুরপরিকে? ওই যে দেখ,”
“তুলি!!”
“হ্যা তুলি তুই কেমন করে ওর নাম জানোস?”
“কারণ ও আমার ফুফাতো বোন।”
“তোর বোন Omg.তোদের দুইজনের মধ্যে কোন মিল নেই কোথায় ও আর কোথায় তুই?”
…..
“সরি জানু,আমি তোকে হার্ট করার জন্য কথাটা বলে নি,”
“হ্যা আমি জানি,আমি কষ্ট পায়নি।”
“জানু পরিচয় করিয়ে দিবি না তুলির সাথে,”
“এখনি”
“হ্যা,জানু।”
আচ্ছা।এরপর তুলির সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিল।আস্তে আস্তে আমি মেঘের থেকে তুলিকে বেশি টাইম দিতে লাগলাম।এর কয়েকমাস পর তুলির সাথে আমার রিলেশন হয়ে যায়।ফলে আমার আর মেঘের এতদিনের ফ্রেন্ডশিপে একটা দেয়াল তৈরী হতে থাকে। ও যে আস্তে আস্তে আমার থেকে দূরে সরে যেতে থাকে সেটা আমার নজরে লাগে নি।
.
.
একদিন ওকে দেখলাম গাছের নিচে চুপচাপ বসে আছে।আগের থেকে অনেক শুকিয়ে গেছে,খুব মায়া লাগল,
“জানু কি করছিস একলা এখানে,”
“তেমন কিছু না,তা বল তোর তুলি কেমন আছে।”
“আমি কেমন আছি সেটা জিজ্ঞাস না করে তুলির খোঁজ নিচ্ছিস,”
“কারণ তুলি ভালো থাকলে তুইও ভালো থাকবি সেজন্য”
“এরমধ্যে তুলি চলে আসে,আকাশ তোমাকে না বলছি তুমি মেঘের সাথে কথা বলবে না,আমার সহ্য হয় না”
“আরে তুলি,আস্তে মেঘ সামনে আছে,”
“তো কি হয়েছে,এই মেঘ শুন তুই আর আকাশের সাথে কথা বলতে আসবি না,আকাশের সাথে তোর কথা বলা আমি পছন্দ করি না,বুঝতে পেরেছিস।”
এরপর তুলি আমাকে সেখান থেকে টেনে নিয়ে গেল। কিন্তু সেদিন যে মেঘ লুকিয়ে অনেক কেঁদেছিল তা আমার অজানা ছিল। এরপর অনেকদিন হয়ে গেল ওকে আর ভার্সিটিতে দেখিনি। তুলিকে একদিন ওর কথা জিজ্ঞাস করাতে ও বলেছিল ও নাকি ওর বাবার কাছে চলে গেছে। শুনে খুব খারাপ লাগল এতদিনের ফ্রেন্ডশিপ আমাদের একটাবার আমাকে বলে গেল না?বলে গেলে পারত,কিছু বলে যায় নি খুব খারাপ লাগছে নিজের থেকে,তুলির সাথে থেকে থেকে আমি মেঘের খোঁজ নেওয়াটাও ভুলে গেছি।আমার আর তুলির রিলেশন এখন ১ বছর ধরে চলছে।এর মাঝে কতবার যে মেঘকে মনে পরেছে তা বলে বুঝাতে পারবো না।ইচ্ছে করত ওকে গিয়ে একবার দেখি আসি কিন্তু সেইদিনের সেই ঘটনা আর ওর খোঁজ না নেওয়ায় নিজেকে খুব অপরাধী মনে হত।তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ওর বাবার বাড়িতে গিয়ে ওকে দেখতে যায় নি।এর ১ বছর পর তুলি আমাকে খুশি হয়ে একটা খবর দেয়,আকাশ জানো মেঘের বিয়ে হচ্ছে।
“বিয়ে!”
“হ্যা যাক ভালো হয়েছে আমাদের জীবন থেকে আপদটা বিদায় নিবে।ওকে আমার একেবারে সহ্য হয় না দেখতে না এখানে থাকতে কেমন কুদৃষ্টি দিয়ে আমাদের ভালবাসা দেখত,আর সারাক্ষণ ড্যাবড্যাব চোখে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকত,ভালোই হয়েছে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,এখন ও আর আমাদের মাঝে আসতে চাইলেও আসতে পারবে না।শুন তোমাকে দাওয়াত দিচ্ছি অবশ্যই বিয়ের ২ দিন আগে সেখানে যাবে।আমিও যাব ফুফাতো বোন বলে কথা।খুব মজা করব সেখানে।”

যাক এই সুযোগে ওকে দেখতে পারবো। কিন্তু খুব খারাপ লাগছে জানি না কেন মনে হচ্ছে কি যেন আমার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
.
.
বিয়ের ২দিন আগে সেখানে গেলাম।গিয়ে দেখি আগের সেই মেঘ আর নেই,অনেক চেঞ্জ হয়েছে ও!
কি সুন্দর লাগছে ওকে বলে বুঝাতে পারবো না,এখন সে মোটা ফ্রেমের চশমা আর পড়ে না চোখে কাজল দেয়,কুঁকড়ানো ছোট চুলগুলো আগের থেকে অনেক লম্বা হয়েছে,চুলগুলো স্ট্রেইট করে ফেলেছে,একটা গোলাপি রঙের শাড়ি পড়েছে,,ওর চেহারায় মেকাপের ছোয়া নেই কিন্তু ওকে দেখে মনে হচ্ছে সদ্য ফোটে উঠা এক শাপলা ফুল।
“এটা কি মেঘ!”
“আকাশ তুই এখানে?”
“হ্যা আমি,জানু কেমন আছিস,কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলি,খুব মিস করেছি এতদিন তোকে,এত রাগ কিসের তোর কিছু না বলে এখানে চলে এসেছিস আবার শুনছি তুই নাকি বিয়ে করছিস,এত তাড়াতাড়ি কেন বিয়ে করছিস?খুব কষ্ট হচ্ছে আমার প্লিজ তুই বিয়েটা করিস না,এই কথা বলতে বলতে কখন যে ওকে জড়িয়ে ধরেছি বলতে পারবো না।”
“আরে এত প্রশ্ন একসাথে কোনটা ফেলে কোনটার উত্তর দিবো, আর এত কাঁদছিস কেন তুই প্লিজ কাঁদিস না তোর কান্না আমার সহ্য হয় না”
“তুইও তো কাঁদছিস”
“কই কাঁদছি”
“চাল ঝোটা আর অভিনয় করিস না,চোখের পানি মুছে ফেললে কি হবে আমি সব বুঝি”
“খুব মিস করেছিস আমাকে”
“হ্যারে খুব,তুই আমাকে মিস করিস নি”
“না একটুও না”
“আবারও মিথ্যা বলছিস,তুই মিথ্যাটাও ঠিকভাবে বলতে পারিস না,মেঘ তুই কি সত্যিই বিয়ে করছিস।”
“আরে না,আমি না করে দিয়েছি এই বিয়ে আমি করছি না”
“মানে”
“বাবা আমাকে না জানিয়ে বিয়ের কথাবার্তা ফাইনাল করে ফেলেছে।আজকে সকালে আমি পাত্রপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি আমি এই বিয়ে করতে পারবোনা।আমাকে বিয়ে করতে আসলে আমি উল্টাবাল্টা কিছু করে বসবো।এইমাত্র পাত্রপক্ষ বিয়ে করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে,”
“সত্যি বলছিস”(খুব খুশি লাগছে আমার কিন্তু কেন তা জানি না)
“আরে আর কতক্ষণ এইভাবে জড়িয়ে রাখবি,তুলি দেখলে রাগ করবে”
“আমি ওকে ছেড়ে দিলাম।মেঘ আমার সাথে যাবি,মা তোকে দেখতে চেয়েছিলো। দেখ না করিস না প্লিজ”

হৃদয়ের_আয়না পার্ট_১

0

হৃদয়ের_আয়না পার্ট_১

#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
“আপনি আজও দেরি করে বাসায় এসেছেন।
আপনার জন্য আমি রাতের খাবার নিয়ে কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি।”
“আপনাকে না আমি বলেছি, আমার জন্য শুধু শুধু খাবার নিয়ে বসে না থাকতে,,আমি রাতের খাবার বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।”
“আপনি এমন কেন?আপনি বুঝেননা কেন আপনার জন্য আমি রাতের খাবার নিয়ে অপেক্ষা করি।”
“না বুঝিনা, আর বুঝতেও চাই না।”
“কেন বুঝেন না,আপনি সব বুঝেন কিন্তু সবকিছু বুঝেও আপনি না বুঝার অভিনয় করেন। আপনি এমন কেন,, কতটা ভালবাসি আপনাকে,, আগে যে মেয়ে রাত জাগতে পারত না,,সে এখন আপনার জন্য রাত জেগে অপেক্ষা করে আপনার সাথে একসাথে খাবে বলে,আগে রান্না জানতাম না,ভেবেছিলাম রান্নাও শিখব না,কিন্তু যেদিন থেকে আপনার ভালবাসার পিঞ্জরে আটকে পড়ে গেছি সেদিন থেকে শাশুড়ি মার কাছ থেকে রান্না শিখেছি। আজকে আমাদের বিয়ের ১০মাস হতে চলল অথচ আপনার মনে আমি এতটুকু জায়গা বানিয়ে নিয়ে পারি নি।যদি বউকে ভালবাসতে না পারেন,, একজন স্বামীর কর্তব্য ঠিকভাবে পালন করতে না পারেন তাহলে আমাকে বিয়ে করেছেন কেন?”
“আমার মা বাবার জন্য।নাহলে আমি আপনাকে জীবনেও বিয়ে করতাম না।আমি আপনার কষ্ট বুঝি কিন্তু আপনি আমার থেকে যা আশা করেন তা আমি আপনাকে দিতে পারব না।মা বাবা আর ২মাস পর হজ্বে যাবেন তারপর নাহয় আমি আপনাকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়ে দিব।দয়া করে এই ২মাস আপনি আমার স্ত্রী হওয়ার অভিনয় করে যাবেন।”
“আপনি কি বলতে চাচ্ছেন তা ক্লিয়ার করে বলুন,,”
“আপনাকে আমি ২মাস পর ডির্ভোস দিয়ে দিবো।”
“কি নিষ্ঠুর লোকটা,কি সুন্দর আর সহজ করে কথাটা বলে ফেলল।”
.
.
বৃষ্টি,,এই বৃষ্টি এখনো ঘুমাচ্ছ। কি হল শুনতে পাচ্ছ না,দূর,ঘুমাক যতখুশি আমার তাতে কি?বৃষ্টি ঘর থেকে তেমন বের হয় না তাই বাইরে থেকে চাবি দিয়ে দরজা আটকে দিয়েছি।সারাদিন অফিসের কাজ শেষ করে যখন বাসায় আসি তখন ও দেখি বৃ্ষ্টি একিভাবে শুয়ে আছে।বিষয়টা সুবিধের মনে হল না,,ওর কপালে হাত দিতে দেখি জ্বরে শরীরটা পুড়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি করে পানি এনে ওর কপালে কাপড়ের পট্টি দিয়েছি।সারারাত জ্বরে মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে,, জ্বরের ঘোরে অনেক কিছু বলেছে যা শুনে নিজেরও খুব কষ্ট হচ্ছিল কিন্তু আমার কিছু করার নেই,,শেষ রাত্রে ওর শরীর থেকে জ্বর নামলো।
“এখন কেমন লাগছে,”
“ভালো,,”
“নিন আমি নিজ হাতে আপনাকে খাইয়ে দিচ্ছি,কিছু খেয়ে নিন ,তাহলে দেখবেন ভালো লাগবে,,”
“না আমি খাব না,,”
“কেন?,,,”
“কারণ আপনার কারণে আমার জ্বর হয়েছে এইজন্য আপনাকে শাস্তি পেতে হবে?”
“আমার জন্য আপনার জ্বর হয়েছে!!?”
” হ্যা আপনার জন্য,কালকে রাতে আমি আপনার সাথে রাগ করে শাওয়ার নিয়েছি আর তাতে আমার এই অবস্থা,,”
“কেন এইসব পাগলামি করতে গেলেন,মানুষকে কষ্ট আর বিরক্ত করতে আপনার খুব ভালো লাগে তাই না?”(বকা দিয়ে)
….
“আচ্ছা প্লিজ আর কাঁদবেন না,”(শান্ত হয়ে)
“আপনি আমাকে বকা দিলেন কেন?অসুস্থ মানুষকে কেউ এভাবে বকা দেয়।”
“সরি ভুল হয়ে গেছে, প্লিজ ক্ষমা করে দেন।”
“হবে না,,আগে শাস্তি,,তারপর ক্ষমা,”
“ওকে,, বলেন কি শাস্তি দিবেন আপনি আমাকে,,”
“আপনি আমাকে দেখে সবসময় বিরক্ত হন সেটা আমি জানি।বিশ্বাস করুন আমার কিছু চায় না,শুধু আপনার মা, বাবা,আর আপনাকে নিয়ে আমি আমার বাকিদিনগুলো পাড় করে দিতে চাই।আপনাদের জন্য কাজ করতে আমার মোটেও কষ্ট হয় না,নিজের আপন মানুষ ভেবে আমি ভালবেসে এইকাজগুলো করি।আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা না দেন অন্তত আপনার সেবা করার জন্য আমি আপনার সাথে থাকতে চাই প্লিজ আমাকে ডির্ভোস দিয়ে কষ্ট দিবেন না যদি আমি কোনদিনও এই পরিবারের কোন উপকার করে থাকি তাহলে….আর কথা বলা বলতে পারছি না এরপর যা বলছি কান্নার কারণে তা অস্পষ্ট শুনা যাচ্ছে।”
“প্লিজ আপনি শান্ত হন,, আচ্ছা ঠিকাছে আপনাকে ডির্ভোস দেব না কিন্তু আমারও শর্ত আছে আপনি আমার কাছ থেকে কিছু আশা করবেন না তাহলে,,”
“মুখের কথা টেনে, ঠিকাছে আমার তাতে সমস্যা নাই,কিন্তু আমার যে কাজে আপনি বিরক্ত হন সেগুলো করে আপনাকে বিরক্ত করতে চাই,,কারণ আপনাকে বিরক্ত করতে আপনার ভালো লাগে প্লিজ আমার কোন কাজে বিরক্ত হয়ে আমাকে কখনো ভুলেও এই কথাটা বলবেন না যে,আপনাকে ডির্ভোস দিয়ে দিব।”
“কিছুক্ষণ ভেবে আচ্ছা,, নিন খাবার খান,,,”
“না এখনও খাবো না,,”
“কেন?আবার কি হয়েছে?”
“আপনাকে শাস্তি পেতে হবে? তারপর,”
“ও মা একটু আগে না শাস্তির কথা ঘোষণা করে দিলেন তাহলে,,”
“সেটাতো আমাকে বকা দিয়েছেন তাই বকার শাস্তি দিয়েছি এখন আমাকে খাওয়াতে চাইলে আমার আরেকটা শাস্তি মাথা পেতে নিতে হবে?”
“উফ, আচ্ছা বলেন”,,
“আপনি আমাকে আপনার স্ত্রী মনে না করতে পারেন কমপক্ষে আমাকে আপনার বন্ধু মনেতো করতে পারেন প্লিজ আমি আপনার বন্ধু হতে চাই।”
“হুম বুঝলাম,কিন্তু এটা কোনরুপ শাস্তি হল, বুঝতে পারলাম না,,”
“আরে বন্ধু হলে আপনাকে জ্বালাবো সারাক্ষণ, বন্ধুরাতো তাই করে করে,তা নয় কি?”
“বাব্বাহ,, আমাকে জ্বালানোর ফন্দি,, এইসব হবে না,,কারো জ্বালাতন আমি সহ্য করতে পারবো না,,”
“তার মানে আপনি চান না আমি খায়,,”
“আচ্ছা, আচ্ছা ঠিকাছে,, আমাকে জ্বালায়েন,,যত খুশি জ্বালায়েন ঠিকাছে,,’প্লিজ খান এবার,,”
“তারমানে আমরা আজকে থেকে ফ্রেন্ডস।”
“হুম”
“আরে বসে আছেন কেন,,খাওয়াবেন না,, খিদা লাগছেতো,”
“হুম নেন ,”
“খেতে খেতে আচ্ছা আমরা ফ্রেন্ড থেকে বেস্টফ্রেন্ড হতে পারি না?”
“না,,”(কঠিন স্বরে)
“কেন?বেস্টফ্রেন্ড হতে সমস্যা কোথায়?”
“অনেক সমস্যা কারণ বেস্টফ্রেন্ডের জায়গা অনেক আগে অন্য একজন দখল করে নিয়েছে তাই, ওই জায়গার অধিকার শুধু ওরই অন্য কেউ এসে ওর সেই অধিকারে হাত বাড়াক তা আমি চাই না,সে যেই হোক না কেন,,বাকি খাবারটুকু নিজে খেয়ে নিয়ে টেবিল থেকে ঔষুধটা নিয়ে খেয়ে নিবেন।”
“আচ্ছা,,হঠাৎ করে উনি এত রেগে গেলেন কেন?”আমার এই কথায় রাগার কি আছে?মাঝে মাঝে উনি যে কোন কথায় রেগে উঠেন বুঝতে কষ্ট হয়,”
.
.
এরপরে ভালোই দিন কাটছিল আমাদের, এখন উনি আর রাত করে বাসায় আসেন না,একসাথে আমরা রাতের খাবার খাই,আগে উনি আমার হাতের রান্না খেতেন না,এখন খান,আমার সব কাজে আগে বিরক্ত প্রকাশ করতেন,কিন্তু এখন বিরক্ত হলেও আমার সেই শাস্তির কথা মনে করে বাইরে আর বিরক্তভাবটা প্রকাশ করেন না।ফ্রেন্ড হওয়াতে আমরা এখন অনেক কাছে চলে এসেছি,উনি এখন আমাকে আপনি না বলে তুমি বলে ডাকেন,কিন্তু ওনাকে আমি খুব সম্মান করি তাই আমি এখনো উনাকে আপনি বলে ডাকি,এখন উনি অনেক কথায় আমার সাথে শেয়ার করেন,আমরা একসাথে গল্প করি,খুনসুটি আর আমার জ্বালাতনতো সাথে আছেই।বেচারা মুখ বুঝে সব সহ্য করে।ফ্রেন্ড হওয়াতে আমরা অনেক কাছে চলে এসেছি সেটা সত্য শুধু দুঃখ একটাই আমি উনার ফ্রেন্ড ঠিকই কিন্তু বেস্টফ্রেন্ড হতে পারলাম না,ওই জায়গা অন্য আরেকজনের দখলে। কিন্তু সে কে?যার জন্য আকাশ আমাকে সে জায়গা থেকে বঞ্চিত করছে।যাইই হোক তারপরও আমি খুশি।
আজকে ১৩ ফ্রেবুয়ারী।আজকে রাত ১২:০০টায় ১৪ ই ফ্রেবুয়ারী আসবে,উনাকে আমি কত ভালবাসি আজকে তা উনার সামনে প্রকাশ করব।আমাদের বেডরুমটা ফুল দিয়ে আর চারপাশে মোমবাতি দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছি।আলমারিতে অনেক শাড়ি আছে।একটা শাড়িও মন মতন হচ্ছে না,সব শাড়ি নামিয়ে ফেললাম, হঠাৎ একটা শাড়ি আমার চোখে পড়ল, আরে এই গোলাপি শাড়িটাতো আমার না,এটা কোথা থেকে আসল,,খুব সুন্দর শাড়িটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে, মনে হয় আকাশ আমার জন্য শাড়িটা এনে রেখে দিয়েছে, আমাকে শাড়িটা দিতে সম্ভবত ভুলে গেছে,এই শাড়িটা আজকে পড়ব।
“হ্যালো আকাশ,”
“হুম বৃষ্টি বল,”
“বলছি আজকে রাতে একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আসবেন,”
“কেন?”
“আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
“দেখ আজকে মনে হয় বাসায় আসতে দেরি হবে,অফিসে অনেক কাজ,”
“প্লিজ তারপরও তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবেন আমি আপনার অপেক্ষায় থাকব,”
“দেখি,”
.
.
রাত ১২:০০টা বেজে গেছে। কিন্তু উনি এখনো এলেন না,,মনটায় খারাপ হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ কারো পায়ের জুতার আওয়াজ পেলাম,হ্যা এটা আকাশ,, এটা আকাশের পায়ের জুতার আওয়াজ।পিছনে ফিরে দেখি ওনি।
“ওনি রুমে এসে বললেন বৃষ্টি কি জন্য বাসায় তাড়াতাড়ি আসতে বলছ।আর কি সারপ্রাইজ রাখছ?”
“রুমটা আগে দেখেন”
উনি চোখ বুলিয়ে রুমটা দেখলেন,,তারপর রেগে উঠে বললেন,,
এই রুম এইভাবে সাজানোর মানেটা কি?আর তুমি how dare you এই শাড়িটা তুমি কেন পড়েছ,, এই শাড়িটা পড়ার অধিকার তোমাকে কে দিসে?এই কথাটা বলে উনি আমার গলা চেপে ধরলেন,,তুমি আমাকে এতদিন যা বলে এসেছ আমি তাই করে এসেছি কিচ্ছু বলে নি আমি,কিন্তু তুমি আজকে আমার সকল ধর্য্যের সকল সীমা পাড় করে ফেলেছ।এখনি শাড়িটা চেঞ্জ করে ফেলবে।আর যদি কোনদিন আমি তোমাকে এই শাড়িটা পরতে দেখি তাহলে সত্যি বলছি I will kill you.এই কথা বলে উনি চলে গেলেন। এত রেগে গেলেন কেন উনি?কি হয়েছে এই শাড়িটা পড়লে? বুঝতে পারছি না,খুব কান্না পাচ্ছে,উনি এমন কেন কেন বুঝেন না আমাকে?
.
.
উনি সারারাত বাইরে ছিলেন বাসায় এলেন না,
সারাটা রাত আমি কান্না করে পার করলাম,সকালে আমি রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখি ওনি স্টোররুম থেকে বেরিয়ে এসেছেন,চোখ দুটি লাল হয়ে ফুলে আছে,, বুঝেছি উনিও রাতে অনেক কেঁদেছেন। যখনি উনার মন খারাপ থাকে তখনি উনি এই স্টোররুমে চলে আসেন,এই স্টোররুমে এমন কি আছে যেখানে উনি সময় পার করেন,,এখানে উনি যে সময় কাটান তার অর্ধেক সময়ও আমাকে দেন না।বিয়ের পর আমি যখন নতুন এই বাসায় আসি একবার শখ করে এই স্টোররুমটা খুলতে চেয়েছিলাম অনেক কষ্টে করে এর চাবি আকাশের কাছ থেকে লুকিয়ে এনে যেই দরজাটা খুলতে যাব দেখি আকাশ আমার হাত কেউ ধরে রেখেছে,সেদিন আমাকে অনেকগুলো বকা দিয়েছিল,আর এইও বলে দিয়েছিলো এই রুমের দরজা যাতে আমি ভুলেও না খুলি,,যদি খুলি তাহলে আমার অবস্থা খুব খারাপ হবে।সেদিনের পর থেকে আমি দরজার দিকে পা মাড়াই নি।কিন্তু এখন অবস্থা খুব জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে,,এই রুমের ভিতরে লুকিয়ে থাকা রহস্য আমাকে জানতে হবে।

জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ২৫/অন্তিম পর্ব

0

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ২৫/অন্তিম পর্ব

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে পানির ঝটকায় ঘুম ভাঙ্গলো, ঘুম ঘুম চোখে থাকিয়ে দেখি শ্রাবন একদম আমার মুখের কাছে ওর মুখ এনে থাকিয়ে আছে আমার দিকে, ওর প্রতিটা গরম নিঃশ্বাস আমার মুখের উপর পড়ছে কেমন যেন এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে
–মহারাণীর ঘুম ভাঙ্গলো অবশেষে
–শান্তিতে তো ঘুমুতেও দেওনি
–বিয়ের দিন আবার এতো ঘুম কিসের
–বিয়ের দিন তুমি হবু শশুড়ের বাসায় কেন
–বউটারে দেখতে আসছি
–হূহ
–আজকে আমি তোমার ঘুম ভাঙ্গিয়েছি আগামীকাল সকাল থেকে তোমার ভেজা চুলের পানি দিয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গবা হিহিহি
–তুমি না অনেক ফাজিল হয়ে গেছ
–ইসসসসসস লজ্জা পেলে আমার বউটার মুখ অনেক সুন্দর লাগে

(এইযে স্যার অনেক রোমান্স হয়েছে এবার এই রুম থেকে বের হও কথাটা শুনে দুজনেই থাকালাম মেঘা আপু আর রিয়া দাড়িয়ে হাসছে, শ্রাবন লজ্জা পেয়ে আমাকে ছেড়ে দূরে গিয়ে বসল)
রিয়া: এখন বের হও দুলাভাই আপনার বউকে গোসল করাব
শ্রাবন: আমার বউয়ের কাছে আমি থাকব তাতে তোমাদের কি আমি যাবোনা
মেঘা আপু: যাবা না দাড়াও
দুইজন মিলে ওকে ঠেলে রুম থেকে বের করে দিল হিহিহি

সবাই বিয়ের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত আর রিয়া মেঘা আপু আমাকে নিপা কে সাঝাতে ব্যাস্ত ওরা পারে তো আজ আমাদের বউ না সাঝিয়ে পরী সাঝাতে চাচ্ছে, রিয়া আমাকে সাজাচ্ছে আমি চুপ করে বসে আছি আর ভাবছি আজ আম্মু থাকলে কতো ভালো হত এতো কষ্টের পর সুখের দেখা পেয়েছি আম্মু তো খুব খুশি হতো, একজন আম্মু যেও পেয়েছিলাম উনি স্বার্থের কারনে আমাকে উল্টো মারতে চাইল আজ উনি থাকলেও তো অন্তত সালাম করতে পারতাম
রিয়া: এই তমা কাঁদছিস কেন
আমি: কই নাতো
রিয়া: এতো কিছুর পর বিয়েটা হচ্ছে কই তুই খুশি হবি তা না বসে বসে কাঁদছিস আর মেকাপ নষ্ট করছিস
আমি: আম্মুর কথা মনে পড়ছে রে
রিয়া: আল্লাহ্‌ যা করেন ভালোর জন্য করেন কাঁদিস না তো মেকাপ নষ্ট হলে শ্রাবন আমাকে মেরেই ফেলবে
আমি: কেন
রিয়া: ও আমাকে বলে দিয়েছে তোকে যেন পরীর মতো সাঝাই নাহলে আমার বারোটা বাজাবে
আমি: ও না পারেও বটে
রিয়া: হ্যা এখন দয়া করে না কেঁদে চুপ করে বসে থাক
আমি: হুম

বিয়ের স্টেজে নিপা আর আমি বসে আছি, চারদিকে শুধু আলো আর আলো সবাই বিয়ে পড়ানো নিয়ে ব্যাস্ত, ভাবছি আকাশের সাথে বিয়ে হবার সময় তো কবুল মুখ দিয়ে আসছিল না এখনো কি এমন হবে
রিয়া: এই তমা কি ভাবছিস সবাই কবুল বলতে বলছে শুনছিস না
আমি: হুম কখন
রিয়া: উফফফ কোন জগতে হারিয়ে যাস বুঝিনা
রিয়ার দিকে অসহায়ের মতো থাকালাম আজো কষ্ট হচ্ছে খুব, ভালোবেসে বিয়ে করলেও কষ্ট হচ্ছে সবকিছুর আগে তো মা বাবা, আমি যে আব্বুকে ছেড়ে চলে যাবো তাই হয়তো এতো সুখের মাঝেও কষ্ট হচ্ছে, মেয়েদের জীবনটাই তো এমন অদ্ভুত বড়ই অদ্ভুত

আমি আর নিপা তো কবুল বলতে একটু দেরি করেছি শ্রাবন আর হৃদয় ফাজিল দুইটায় হাসতে হাসতে এক দমে তিনবার বলে দিয়েছে হিহিহি

বিয়ের কাজ শেষ এখন বিদায়ের পালা বেশি দূর তো যাবো না পাশের বাসায় তাও খুব কষ্ট হচ্ছে মনে হচ্ছে আব্বুর কাছ থেকে আমাকে কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, আচ্ছা আমি তো শ্রাবন কে ভালোবাসি ওর সাথে বিয়ে হয়েছে তাহলে এতো কষ্ট হচ্ছে কেন
মেঘা আপু: আর কতো কাঁদবা এবার থামো (আপুর কথায় চারদিকে থাকালাম সবাই আমার দিকে থাকিয়ে আছে নিপাও কাঁদছে, আব্বুকে কোথাও দেখছি না চারদিকে খুঁজলাম কোথাও নেই তাড়াতাড়ি দৌড়ে আব্বুর রুমে গেলাম, দরজার কাছে যেতেই শুনলাম আব্বু কাঁদছেন আর বলছেন “আজ তোমার মেয়েটাও আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে আমি যে খুব একা হয়ে গেলাম সেদিন যদি তুমি এভাবে চলে না যেতে আজ আমাদের মেয়েটার এতো কষ্ট পেতে হতো না” আব্বু কার সাথে কথা বলছেন ভেবে পেলাম না দরজা খুলে ভিতরে থাকাতেই দেখি আব্বু আম্মুর ছবির দিকে থাকিয়ে কাঁদছেন আর এসব বলছেন, আমাকে দেখেই চোখ মুছে নিলেন আমার কাছে এসে হেসে হেসে বললেন
–তোর তো বিয়ে দিয়ে দিলাম তাই তোর আম্মুকে বলছি (কথাটা শুনে অভাক হলাম বাবারা সত্যি সব পারেন চোখের পানি মুছে কতো সুন্দর অভিনয় করছেন এখন)
–কিরে মা কথা বলছিস না কেন
–(কিছু না বলে আব্বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম চোখের পানি যে আর আটকিয়ে রাখা সম্ভব না আব্বুও কাঁদছেন আমাকে জরিয়ে ধরে)

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে নিপা আর হৃদয় চলে গেলো হৃদয়দের বাসায়, রিয়া আমাকে আর শ্রাবন কে ওদের বাসায় দিয়ে আসলো

সব নিয়মকানুন শেষ করে আমাকে শ্রাবনের রুমে নিয়ে আসা হলো, খুব সুন্দর করে সাঝানো হয়েছে সারা রুম কাঁচা ফুল দিয়ে সাঝানো আর বিছানায় বেলী ফুল এইটা ফাজিলটার কাজ বুঝেছি

কখন থেকে লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে আছি শ্রাবন আসার নাম নেই এতো লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে থাকা যায় বুঝি, হঠাৎ দরজা খুলার শব্দ পেলাম বুঝেছি শ্রাবন এসেছে, ও এসেছে ভেবেই কেমন যেন ভয় লাগছে লজ্জা লাগছে আবার ভালোও লাগছে কেমন অনুভূতি হচ্ছে নিজেই বুঝতেছি না

শ্রাবন এসেই দফ করে খাটে শুয়ে পড়লো রেগে আছে কেন বুঝতেছি না
–ওই কি হইছে
–তোমার সাথে কথা নাই
–কি করলাম
–জানো আমি রিয়া কে কতো টাকা খাইয়েছি তোমাকে সাঝানোর জন্য
–রিয়া টাকা নিয়েছে
–হ্যা কম না দশ হাজার কথা ছিল তোমাকে পরীর মতো সাঝাবে ও তো কথা রেখেছে কিন্তু তুমি কান্নাকাটি করে মেকাপ নষ্ট করে ফেলেছ এখন তো তোমাকে পেত্নীর মতো লাগছে
–হিহিহি
–এখন হাসো তখন এতো কান্নার কি ছিল আমার সাথেই তো বিয়ে হয়েছে তো এতো কাঁদলা কেন
–মেয়েদের কষ্ট তোমরা বুঝবা না তোমাদের তো আর পরিবার ছেড়ে নতুন কোথাও যেতে হয়না
–হয়েছে আবার কান্না কইরো না যাও ফ্রেশ হয়ে আস
–আচ্ছা

ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি শ্রাবন রুমে নেই বারান্দায় চোখ পড়লো দরজা খুলা হয়তো বারান্দায়, আস্তে আস্তে বারান্দায় গেলাম ভয়ও হচ্ছে যদি ও না থাকে ভূতে তো আমার ঘার মটকে খাবে
–ভয় পেয়ো না আসো আমিই আছি
–(উফফফ ও যে কিভাবে আমার মনের কথা বুঝে)
–এতো ভিতু কেন তুমি
–হূহ এতো রাতে বারান্দায় কি
–বউটা রে নিয়া জোৎস্না বিলাস করবো তাই
–আহালে কি লোমান্তিক

ও এসে আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো ঠিক আগের মতো, দুজনেই আকাশ দেখছি
–তমা কতো কিছুর পর বিয়েটা হলো তাইনা
–হুম
–আর কখনো তোমাকে কাঁদতে হবে না ইনশাআল্লাহ
–আমার জীবনে তো কষ্টের শেষ নেই কখন আবার কোন কষ্ট চলে আসে কে যানে
–আসুক এখন তো আমি পাশে আছি আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিব
–(চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছি ওর দুই হাতের বাঁধনে আর ও আমার ঘাড়ে একটার পর একটা মায়া দিয়ে যাচ্ছে কেমন যেন এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে, হঠাৎ ও আমাকে কোলে তুলে নিল ওর পাঞ্জাবীর কলার ধরে থাকিয়ে আছি ওর চোখের দিকে কি গভীর চোখ দেখলেই চোখের গভীরতায় ডুব দিতে ইচ্ছে হয়, ও মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আমাকে রুমে নিয়ে গেলো, বিছানায় শুয়ে দিয়ে কপালে একটা মায়া দিলো আমার ঠোটের মাঝে ওর ঠোট দুইটা ডুবিয়ে দিলো তারপর……

হা করে কি পড়ছেন তারপর আর বলা যাবে না আমার বুঝি লজ্জা শরম নাই যান ভাগেন??

(সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ধৈর্য নিয়ে গল্পটি পড়ার জন্য??
এভাবেই সবার মাঝে ভালোবাসা বেঁচে থাকুক আজীবন?)

#Happy_Ending?