Saturday, August 16, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2405



ছায়া নীল! ১৮

0

ছায়া নীল!

১৮.

Maria Kabir
আমি বললাম
– নাহ।
সৌরভ বলল
– নিশ্চয়ই মায়ের রান্না খেয়ে চেহারার এই হাল হয়েছে।
কথাটা বলেই হাসতে শুরু করলো। হাসা অবস্থায় বলল
– প্রথম প্রথম খুবই বাজে লাগবে। পরে অভ্যেস হবে তবে জিহ্বার কোনো স্বাদকোরক জীবিত থাকবে না।
– ভালো তো। তুমি তো ছোটোবেলা থেকেই তার হাতের রান্না খাও। তাহলে তো তোমার জিহ্বা বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই।
– তা ঠিক বলেছো। এইজন্য ভেবেছি শেফ বিয়ে করবে।
– মুর্দা জিহ্বাকে পুনরায় জীবিত করার জন্য।
– ওহ শারলিন তুমি তো অনেক ক্লেভার।
– ছাই, তাহলে তো তুহিন লোকটাকেই বিয়ে করতাম। গাধার মতো তোমার জন্য নিজের বিপদ ডেকে আনতাম না।
সৌরভ আমার এ কথার কোনো প্রতি উত্তর দিলো না। আমি সেই ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে মোবাইলে গেমস খেলতে শুরু করলাম।
নাক ডাকলে ঘুম আসে নাকি। ঘুমাতেও ভয় লাগছে আবার সেই হাত যদি।
টেম্পল রান খেলতে মজাই লাগে। তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে সৌরভ আমার পাশে বসলো।আমি না দেখার ভান করে খেলায় ব্যস্ত রইলাম। ও আমার আরো কাছে এসে বসলো। আমিও দূরে সরে গেলাম। ও আবারো কাছে এসে বসলো। এভাবে সরে বসতে বসতে একসময় আর জায়গা নাই সরে বসার।
ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
– এগুলা কোন ধরনের শয়তানি??
– শয়তানির কী আছে? তোমার পাশে আমি বসবো না তো কে বসবে?? ওহ তুহিন পাশে বসবে??
– কীসব বাজে কথা বলছো।
– কই, তুমি তো একটু আগেই বললে তুহিন কে বিয়ে করার কথা।
– সেটা পারসোনাল ব্যাপার আমার। তোমার পারসোনাল ব্যাপারে তো আমি নাক গলাই না।
– আমার পারসোনাল বলতে তো তেমন কিছুই নেই।
– সে তুমিই জানো। আমার পাশে থেকে সরো। আমার অসহ্য লাগছে তোমাকে।
– আমাকে এতো তাড়াতাড়ি অসহ্য লাগছে??
আমি চলে যাবার জন্য উঠলাম ও আমার হাত ধরে টেনে পাশে বসালো।
– শেফ বিয়ে করবো তাই এতো রাগ?? বিয়ে করলে কী করবা?
– কিছুই করবো না। চেয়ে চেয়ে দেখবো একটা শয়তান আমার জীবন থেকে বিদায় নিছে।
তারপর সৌরভ ওর প্যান্টের পিছনে হাত দিয়ে কী যেন বের করার চেষ্টা করছে। পিস্তল বের করলো।
জীবনে এই প্রথম কাছ থেকে পিস্তল দেখলাম। পিস্তল হাতে নাড়াচাড়া করছে আর বলল
– এর থেকে ভালো আইডিয়া আমার কাছে আছে।
তারপর আমার হাতে পিস্তল দিয়ে বলল
– এটায় গুলি লোড করা আছে। ৫-৬ টা আছে।
হাতে পিস্তল নিয়ে কেমন ভয় লাগতে শুরু করলো।আমি আস্তে আস্তে বললাম
– তো??
– কিছুনা, যতক্ষণ রাগ থাকবে ততক্ষণ আমার বুকের বামপাশ টাতে একটার পর একটা গুলি ঢুকিয়ে দিতে থাকবা।
– তারপর??
– তাতেও রাগ না কমলে আমার পকেটে আরো গুলি আছে লোড করে নিবা।
– আমি শুট করতে পারি না আর তো গুলি লোড।বাদ দাও তো এসব।
– ভয় লাগছে??
পিস্তল টা সোফায় রেখে দিলাম। মন বলছে ওকে জড়িয়ে ধরে বলি, তোমাকে ছাড়া আমার কী হবে??
কিন্তু আমার ভিতরের কেউ একজন বলছে, না।
– ভয় কেনো লাগবে? যে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করতে পারে সে অন্যকে হত্যা কেনো করতে পারবে না?
– তাহলে কী?
– আমি যে বিন্দুকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত আবর্তিত হচ্ছি সেই বিন্দুকে কীভাবে মুছে ফেলি।
– কিন্তু বিন্দু টা তো ভুল বিন্দু।
– নাও তো হতে পারে। আর এইসব বিশ্রী জিনিষ আমাকে দেখাবে না।
– লাইসেন্স করা আর্মস। দেখতেই হবে তোমাকে। আর অভ্যেসও করতে হবে, আমার সাথে থাকছো যে।
– বাহ কী বিরাট যুক্তি। যাও খেয়ে মাথা ঠাণ্ডা করো।
– মার রান্না খাবার খেলে মাথা ঠাণ্ডা হবেনা, গরম হবে।আমি খেয়ে এসেছি।
তারপর কিছুক্ষণ চুপচাপ কাটলো। ও কীভাবে যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন অস্বস্তিকর লাগছিলো। বাধ্য হয়ে বললাম
– প্লিজ ওভাবে তাকিয়ে থেকো না।
– তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
– এটা তো আগেও ছিলাম। নতুন কোনো কথা না।
– হ্যা কিন্তু কিছু কিছু সময় সেই সৌন্দর্য টাকে অন্যরকম লাগে। দেখোই না চাঁদ কে প্রতিনিয়ত দেখছি কিন্তু সবসময় তো সুন্দর লাগে না।
– বুঝলাম, কিন্তু আমার এই কালি পরা চোখ বিশিষ্ট চেহারায় নতুন কোনো সৌন্দর্য নামক কিছুই নাই।
– মনে পড়েছে তোমাকে ডাক্তারের কাছে আবার যেতে হবে।
– আবার লং জার্নি উফফ। ঘুমাবা না??
– নাহ দুপুরে লম্বা ঘুম দিয়েছি। জানি তুমি আজকেও ঘুমাতে দিবা না।
– নাহ আজকে ফুপুর পাশে ঘুমাবো তাই সমস্যা নেই। তুমি ঘুমাও।
– আজকে গতকালের যুক্তি খাটছে না। অন্যকিছু।
– বুঝেছি, সারারাত বসে বসে আমাকে হা করে দেখবে।
– হুম। দেখবো তুমি কী দিয়ে তৈরি? এতো ভালবাসতে কীভাবে পারো?? আমার আগের সে তো ভালবাসতে পারেনি।
– যাও তো ঘুমাও। আর আমাকেও যেতে দাও।

পুরো পাগল, আর আমার চেয়েও জেদি। পিস্তল নিয়ে হাজির। ফুপুর পাশে শোয়ার পর নাক ডাকার শব্দ কানে আসছে। আলাদা একটা ছন্দে নাক ডাকছে।আহা, এযে মহান ছন্দময় সুর।
শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুম ভাঙলো ফুপুর ডাকে।
– এই ওঠ, ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগবে বলে??
– হুম। কয়টা বাজে??
– ৯ টা। সৌরভ এখনি চলে যাবে। তাড়াতাড়ি ওঠ……

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল। ১৭.

0

ছায়া নীল।

১৭.

Maria Kabir
সকাল যখন হলো তখন সৌরভ বলল
– ঘুমাও তো।
– নাহ নাহ আমি এই বাড়িতে ঘুমাতে পারবো না।
– দেখো আমি আর মা এখানে ১০-১২ বছর যাবত আছি। আমরা তো কিছুই দেখতে বা অনুভব করতে পারিনি।
– আমি সত্যি বলছি, সত্যি একটা হাত…
– শারলিন তোমার ভুল। অনেক স্ট্রেসে আছো তাই এরকম আবোলতাবোল স্বপ্ন দেখেছো।
– আমাকে একটা মহিলা হোস্টেল খুঁজে দাও। আমি চলে যাই।
– দেখো আমার ব্যবসায় লাল বাতি জ্বলছে। তোমার জন্যে একমাত্র।
– শুরুটা তুমি করেছিলে।
– আমার ব্যবসা ঠিক করে যখন সময় পাবো তখন খুঁজে দেখবো। তোমার মতো মেয়ের জন্য আমি আর সময় নষ্ট করতে পারবো না।
– তোমার খুঁজতে হবেনা। আমিই খুঁজে নিবো। আমাকে শুধু আমার বাসায় দিয়ে আসো।
– আমি তোমাকে একটু আগেই বলেছি, তোমার জন্যে আমার সময় নেই। বহুত ফাজলামি করেছো এখন আর না।
আমার আর সহ্য হচ্ছে না। ওর রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় এসে বসলাম।
সত্যি মা ঠিকি বলে, আমি খুব খারাপ। আমিই চলে যাবো এখান থেকে। গন্তব্য হীন ভাবে হেটে যাবো মরলে মরবো বাচলে বাঁচবো। তাও যারা আমাকে ঘৃণা করে তাদের কাছে থাকবো না।
সোফার সামনে রাখা টিটেবিলে পাউরুটি আর কলা রেখে সৌরভ বলল
– আমি বের হচ্ছি এই বাড়ি থেকে এক পা বের হলে তোমার পা ভেঙে ঘরে বসায় রাখবো।
– আমাকে খুঁজে পাবে কোথায়?
– সেটা আমি বুঝবো।খেয়ে নিবে। রাগ আমার সাথে খাবারের সাথে না।
সৌরভ দ্রুত চলে গেলো। গাড়ির শব্দ পেলাম। তারপর খেয়ে নিলাম। মেডিসিন খেয়ে ওর রুমে রাখা আয়নায় নিজেকে একটু দেখছি। চেহারা আর চেহারা নেই। চোখের নিচে কালি পরেছে। চুল রুক্ষমূর্তি ধারণ করেছে। আয়নায় কারো যেন ছায়া দেখতে পেলাম।গতকালের রাতের ঘটনা মনে পড়ে গেলো। পিছনে ফিরে দেখি ফুপু। ফুপু আমাকে বলল
– কিরে কিছু খেয়েছিস?
– হুম।
– একটু অসুস্থ ছিলাম তো তাই দেরি হলো উঠতে।
– ঠিক আছে ফুপু।
ফুপু খুব সুন্দর, আমার তো মনে হচ্ছে ফুপু আমার কপি।
ফুপু বলল
– তুই আমার দর্পণ। মনে হচ্ছে বয়স্ক নূরের সামনে ১৯ বছরের নূর দাঁড়িয়ে আছে।
– আপনি বেশি সুন্দর।
– নাহ রে সমান সমান। আমি আমার সৌরভের জন্য এমন একটাই মেয়ে খুজছি।যাই হোক বাদ দে, কী খাবি দুপুরবেলা??
– আপনার ইচ্ছা।
– আচ্ছা তুই আমার সাথে সাথে থাকবি। রান্নাবাড়া দেখলে শিখতে পারবি।
ফুপু বেশি কথা বলেন না। পুরো বাড়িতে আমরা দুজন।
দুপুরবেলা খাওয়ার সময় ফুপু বলল
– দুপুরে একা খেতে হয়। ভালো লাগেনা। আমার একজন সংগী হলো।
– সৌরভ ভায়া আসে না?
– ওর কোনো ঠিক নাই। সেই সকালে যায় আর রাতে ফিরে। তাও গভীর রাতে।
– আপনার কষ্ট হয়না?
– অভ্যেস হয়ে গেছে।
খাবার মোটেও ভালো হয়নি। খুব কষ্ট হলো খেতে। খাওয়ার পর খুব অস্থির লাগছিলো। ফুপু আর আমি রাতে খেয়ে শুয়ে পরলাম। গেস্ট রুমের চাবি ফুপু খুঁজে পাচ্ছেনা। তাই আমাকে তার রুমেই ঘুমুতে হলো।
শোয়ার সাথে সাথে ফুপু নাক ডাকতে শুরু করলো। গতকালের ভয় আর এই নাক ডাকাতে ঘুম আসছে না।
মেইন গেট খোলার শব্দ পেলাম। ফুপুর পাশ থেকে নীরবে উঠে রুম থেকে বের হলাম।
সৌরভ জুতা খুলছিলো।
আমাকে দেখে বলল
– কী খুব miss করেছো তাই না???

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১৬

0

ছায়া নীল!

১৬.

Maria Kabir

আমি বললাম
– এতো দূরে থাকার কারণ??
– মা নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করেন।
– আচ্ছা তুমি পড়াশোনা করো নাকি চাকরী?
– আমি তোমার মতো বাচ্চা না। আমার গ্রাজুয়েশন ৩ বছর আগেই কমপ্লিট। এখন ব্যবসা করছি।
– আমি বাচ্চা না। তুমি তো বেশ বয়স্ক!
– হ্যা বুড়ার প্রেমেই তো পড়েছো।শুনো বাড়ির মধ্যে জোড়ে কোনো শব্দ করবে না। মা ঘুমুচ্ছে।
কথাটা বলে সৌরভ আমাকে নামিয়ে দিলো। রাতের অন্ধকারে ভালো বুঝতে পারলাম না বাড়িটা দেখতে কেমন। তবে যতটুকু বুঝলাম তাতে শিওর বেশ পুরাতন বাড়ি।
ডুপ্লেক্স সিস্টেম বাড়ি। সৌরভ বলল
– গেস্ট রুম টা তালা দেয়া আর চাবি মায়ের কাছে।
– তাহলে কই থাকবো? ফুপুকে ডেকে চাও চাবিটা।
– নাহ, তুমি আমার রুমেই ঘুমাও। আমি ড্রয়িংরুম এ সোফায় বেশ চালিয়ে নিবো।
– নাহ নাহ তুমি তোমার রুমে ঘুমাও, আমিই সোফায়….
– আমাদের তো হরোর মুভি দেখার কথা তাই না?
– হুম।
হরোর মুভির নাম শুনলে আমার যেমন ভয় লাগে তেমনিভাবে ভালোও লাগে। বাড়িটা এতো পুরাতন যে দেয়ালে ইট দেখা যাচ্ছে। লাইটের আলোও কেমন তেজ ছাড়া।
সৌরভ গাড়ি গ্যারেজে রাখতে গেছে। এই ফাকে একটু জামা কাপড় পাল্টে নিলে ভালো হতো।
কিন্তু হাতের দিকে তাকাতেই চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম।
এই বাড়িতে মনেহয় আর কেউ থাকে না। কাজের লোক কাজ করেই চলে যায়। ড্রয়িংরুমের সাথেই ডাইনিং রুম।ছোট্ট টেবিল আর দুটো চেয়ার। আমার হুট করে বাগানের ভিতর হারিয়ে যাওয়ার কথা মনে পড়ে গেলো। আমি তো ওর পিছনেই ছিলাম।
পিছন থেকে সৌরভ বলল
– তোমার হাতের ডান পাশে আমার রুম। রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।
ওর রুমে ঢুকে মেজাজ বিগড়ে গেলো। এতো অগোছালো কেউ কীভাবে হতে পারে?
বিছানার উপর ওর কাপড় চোপড় দিয়ে ঠাসা। মেঝেতে পা দিতেই গা সিরসির করে উঠলো। এতো ময়লা!
সৌরভ বলল
– তোমার ঝামেলায় আমার রুম গোছানো বন্ধ হয়ে গেছে।
– মাতাল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ালে তো রুমের প্রয়োজন কখনওই হবেনা। তাই এত নোংরা।
ও আর কোনো কথা বলল না। বিছানার উপর থেকে কাপড় চোপড় নিয়ে চলে গেলো। তারপর এসে বিছানা ঝেড়ে বালিশ ঠিক করে রেখে আমাকে বলল
– মশার সমস্যা নাই, তুমি ঘুমাও।
– আর তুমি?
– আমি তো মাতাল। মাতালের আর কী?
– আমি মজা করে বলেছি।
– অনেক রাত হয়েছে এখন আর মজা করার সময় না।
– মুভি???
– নাহ আমার ভালো লাগছে না।
ও চলে গেলো। আমিও আর ডাকলাম না। শুয়ে পরলাম।
হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে ধরতে আসছে।
খুবই বিশ্রী একটা হাত। কিন্তু হাত টা যে কার সেটা দেখা যাচ্ছে না। আমি সরে যাওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। আর হাতটাও আমার খুব কাছাকাছি চলে এলো। আমার কাটা হাতটা ধরলো। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলাম।
এতো শক্ত করে হাত ধরেছে যে আমি ছাড়াতেও পারছিলাম না।আমার পুরো শরীর ভার হয়ে যাচ্ছে।
সৌরভের কণ্ঠ শুনতে পারলাম। আমাকে ডাকছে
– শারলিন, শারলিন….
আমি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি পারছি না।
শরীর আর আগের মতো ভার মনে হচ্ছে না।চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি সৌরভ চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
– কী হয়েছে? তোমার শরীর ঘেমে ভিজে গেছে।
আমিও অবাক হলাম আমার শরীর ভেজা।
– আমি বুঝতে পারছিনা। মনে হলো একটা বিশ্রী হাত আমাকে ধরতে আসছে। জানো নীল আমার কাটা হাতও ধরেছিলো।
সৌরভ সাথে সাথে আমার কাটা হাত নিয়ে কী যেন দেখলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে।
তারপর বলল
– আরে কিছুই না। আসার পর থেকে চিন্তাই করে গেছো যে বাড়িটা ভূতের তাই অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছো।
– নাহ নাহ সত্যি বলছি।
– হয়েছে বুঝেছি। এখন চুপ থাকো। তোমার গোঙানির আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙে গেছে।
– আমার এখানে থাকতে ভালো লাগছে না। তুমি আমাকে একটা মেয়েদের হোস্টেল খুঁজে দাও। বাবা সব টাকা দিয়ে দিবে।
– এতো রাতে কই পাবো? তার জন্যে তো দিন হতে হবে।

পুরো রাত আমি আর ও জেগে রইলাম। ভুলেও আমি চোখের পাতা এক করিনি। যে ভয়টা পেয়েছি তাতে আমার এই বাড়িতে থাকার সাহস নেই।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! 15

0

ছায়া নীল! 15

Maria Kabir

গাড়ির স্পিড আবার বেড়ে গেলো। সৌরভ কে বললাম
– আরে কমাও না প্লিজ।
– দেখো আমাদের বাড়ি অনেক দূরে। স্লো স্পিডে চালালে অনেক রাত হয়ে যাবে।
– কই থাকো তোমরা?
– একটু শহর থেকে দূরে গ্রামের কাছাকাছি। সিট বেল্ট বেধে নাও।
জানালা দিয়ে রাতের শহর দেখছিলাম। ও দেখতে খারাপ না। তবে স্মার্ট, লম্বা, গায়ের রঙ শ্যামলা। তবে চলাফেরাতে একধরনের আভিজাত্য প্রকাশ পায়। ও দেখতে যেমনি হোক না কেনো, আমি ওকে ভালবাসি। গাড়ি থেমে যাওয়াতে একটু সামনে ঝুকে গেলাম।
আমি বললাম
– চলে এসেছি?
সৌরভ হেসে বলল
– নাহ। যেতে অনেক দেরি।
– তাহলে থামলে যে??
– কী খাবে বলো?
– না কিছুই খাবো না।
– দেখো শারলিন, পরে খুদা লাগলে কিন্তু ভালো কিছু পাবা না। এটাই লাস্ট ভালো খাবারের হোটেল।
– আমি আসার আগেই খেয়েছি।
– যদি খুদা লাগে আর আমার কাছে খাবার চাও তো পুকুরে ফেলে দিয়ে চলে যাবো।
সৌরভ গাড়ি থেকে নেমে গেলো।
কথায় কথায় রাগ দেখানো একটা বদ অভ্যাস। ওর সাথে বাধ্য হয়ে যাওয়া। এর থেকে তুহিন লোকটাকে বিয়ে করলেই হতো। কত শান্তিতে থাকতাম।
হাতে খাবারের প্যাকেট নিয়ে গাড়িতে ঢুকলো। ও বলল
– খবরদার খাবারের দিকে তাকাবা না।
– আমার ওরকম স্বভাব নেই।
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল
– আমার প্রথম প্রেমিকা ছোঁচা ছিলো। বিশ্বাস করবা না শারলিন। ঘুরতে বের হলেই তার খুদা লেগে যেতো। আর আমার পকেট ফাকা হতো।
– হ্যা, তোমার ভালবাসার মানুষের জন্য তুমি সামান্য টাকা ভাঙতেই পারো।
– হ্যা, জীবন দিলেও বা কী? তুমি যেমন টা করেছো।
– অনেক বড় ভুল করেছি। বিয়েটা করে নিলেই হতো। মাও রাগ হয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতো না আর বাবাকে এতো কষ্ট করতে হতো না।
– তোমার মা তো সেরা পাব্লিক।
আমি আর কিছুই বললাম না। আমার মৃত্যুই এখন সবাইকে শান্তি দিবে। মাও বাঁচবেন সৌরভ ও।
প্রায় ১ ঘণ্টা পর আমার মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। আফরোজার ফোন। রিসিভ করলাম। আফরোজা বলল
– কিরে কেমন আছিস?
– আছি ভালোই। তুই?
– ভালো। আংকেল বাসায় এসেছিলো।
– কী বলল?
– তোকে তোর মেজো ফুপুর বাসায় পাঠানোর কথা।
– হুম। রাখি, পরে কথা বলবো।
সৌরভ কোকাকোলার মাঝারি বোতল আমার দিকে ছুড়ে দিয়ে বলল
– ক্যাচ।
ক্যাচ ধরতে গিয়ে কাটা হাতের উপর বোতল এসে পরলো।
কাতরে উঠলাম, মুখ দিয়ে ব্যথা পাওয়ার উঁহু শব্দ বের হয়ে আসলো। আর ব্যান্ডেজ লাল হয়ে যাচ্ছিলো। সৌরভ গাড়ি থামিয়ে পিছনে এসে আমার পাশে বসলো। তারপর বলল
– ক্যাচ ও ধরতে পারো না।
– পারি তো কিন্তু হাতে যে ব্যথা।
রক্তে ব্যান্ডেজ ভিজে যাচ্ছে। ও ব্যান্ডেজ খুলে ফেলল। আমার ওড়নার এক পাশ দিয়ে রক্ত মুছে দিয়ে ওর প্যান্টের পকেট থেকে রুমাল বের করে হাত বেধে দিলো।
তারপর বলল
– বাসায় গিয়ে আমি ব্যান্ডেজ করে দিবো। তুমি কীভাবে হাত এভাবে কাটতে পারলে?
হাত ধুয়ে খাবারের প্যাকেট থেকে খাবার বের করে বলল
– মা রান্না করেছে কিনা ঠিক নেই। তাই এখন খেয়ে নাও।
ফাস্টফুড এনেছি। সবজির স্যুপ টা খাও।
কিন্তু বাটি ধরলাম এক হাতে কিন্তু খাবো কোম হাত দিয়ে? ওই হাত তো নাড়াতেই পারছি না।
আমার এই অবস্থা দেখে ও আমার হাত থেকে বাটি নিয়ে বলল
– আমি খাইয়ে দেই। আমার জন্যেই তো নিজেকে শেষ করে দিয়েছো।
১০.৩০ টায় পৌছালাম। এত অন্ধকার আশেপাশে।ও বলল
– আমার পিছনে পিছনে আসো।
গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম গাছপালা দিয়েই ভরা।
– শুনো না?
– বলো।
– বাড়ি কই তোমাদের?
– একটু ভিতরে। আগে বাগান তারপর…
– লাইট তো নেই, এতো অন্ধকার।
– মা লাইট জ্বালাতে ভুলে গেছেন।
ওর পিছনে হাটছি, এতো বড় বড় গাছ। ঝিঝিপোকার ডাকে পরিবেশ থমথমে হয়ে গেছে।
একটু পর মনে হলো ও আমার সামনে নেই। কই গেলো?
অন্ধকারের মধ্যে ওর হাতের টর্চের আলোতেই যাচ্ছিলাম। এখন সেই আলোও দেখছি না আর ওকেও দেখছি না।
হাতে মোবাইল এতবার লক বাটন চাপলাম কিন্তু ফোনে আলো জ্বললো না।
খুব ঘামতে শুরু করলাম। আমি এগোতেও পারছি না আমার পিছাতেও পারছিনা। কাটা হাত থেকে মনে হচ্ছে রক্ত পরছে।
আশেপাশে তাকিয়ে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পারছিনা।
দূর থেকে একটা ছায়া আমার দিকেই আসছে। ছায়া দেখে মনে হলো, ও আসছে।
আমার কাছেই এসে বলল
– তুমি এখানে কেনো?
বাসার ভিতরে ঢুকে পিছন ফিরে দেখি তুমি নেই।
– তুমিই তো আমাকে ছেড়ে চলে গেলে।
– মজা করার সময় এখন না।
– আমি মজা করছিনা। সত্যি আমি তোমার পিছনেই ছিলাম কিন্তু হুট করে তুমি উধাও হয়ে গেলে।
– আমি তো ভূত তাই না?
– হতেও পারো। যা যা করে আসছো এতদিন তাতে তো স্বাভাবিক মানুষ মনে হয়না।
– বাসায় গিয়ে আলোচনা করা যাবে।আমার পিছনে পিছনে আসো।
– তুমি এবারো আমাকে ফেলে চলে যাবা।
আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল
– এবার উধাও হলে একসাথে হবো।
– একি এই অবস্থায় কেউ দেখলে?
– মা ঘুমাচ্ছে আর কেউই নেই। শারলিন তুমি অনেক হাল্কা।
– হয়েছে হয়েছে আমাকে নামাও।
– চুপ থাকো।
ও হাটছে আমি বললাম
– তোমাদের বাড়িটা না হরোর মুভিতে দেখানো বাড়ির মতোই।
– তুমি এখনো বাড়িটা দেখোনি।
– ঠিক কিন্তু গাছপালা আর বাড়িতে যেতে..
– পাগলী একটা। অতিমাত্রায় হরোর মুভি দেখার ফলাফল।
– আমার মজা লাগে দেখতে।
– আমার কাছে আছে। আজকে দেখা যাবে একসাথে।

চলবে………!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১৪.

0

ছায়া নীল!

১৪.

Maria Kabir

খাবার যা এনেছে তাতে মনে হচ্ছে বাবা না খেয়েই মার ওখান থেকেই এসেছে। দুটো প্লেটে খাবার বেড়ে টেবিলে রাখলাম। খাবার পানিও প্রায় শেষ। বাইরে টিউবওয়েল আছে ওখান থেকে পানি আনতে হবে। পানির জগ হাতে নিয়ে টিউবওয়েল এর কাছে আসার পর দেখলাম বাবা চোখেরজল মুছছে আর কথা বলছেন ফোনে।
বাবা যদি দেখে ফেলে আমি তাকে এই অবস্থায় দেখে ফেলেছি তাহলে অনেক লজ্জা পাবে। তাই না দেখার ভাব করে টিউবওয়েল থেকে পানি নিলাম। এক হাত দিয়ে কাজ করা কতো যে কষ্ট বুঝতে পারছি। এর থেকেও কষ্ট মনে।
টেবিলে বসে বাবার জন্য অপেক্ষা করছি। আমার ফোন বেজে উঠলো। সৌরভ ফোন করেছে।
রুমে গিয়ে ফোন রিসিভ করলাম। আমি বললাম
– কেনো ফোন করেছো?
– আরে ফোন ধরেই ধমক?
– কী কারণে ফোন করেছো?
– শুনলাম আমাদের বাসায় নাকি আসতেছো?
– হুম। তো?
– আমাদের বাসায় তুমি আসবা না। বড় মামাকে বলো যে,তুমি ওই বাড়িতে যাবে না।
– কেনো আসবো না তোমাদের বাসায়?
– সে কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিতে বাধ্য নই।
– আমি তোমাদের বাসায় যাবো না যাবো সেটা আমার ব্যাপার।
– মানে তোমার লজ্জা বলতে কিছু নাই? আমার বাসায় আসতে নিষেধ করছি। আর তুমি বেহায়ার মতো আসার জন্য পাগল হয়ে আছো।
– শুনো আমি তো অস্বাভাবিক মানুষ। অস্বাভাবিক মানুষের লজ্জা থাকেনা। লজ্জা থাকলে তোমার মতো নিচু প্রকৃতির মানুষের সাথে কথা বলতাম না।
– nonsense কোথাকার।
আমি বলতে যবো আর ফোন কেটে দিলো সৌরভ।
বাবা আসছেন মনেহয়। বাবা বললেন
– খেয়ে নে মা। তোকে আজকেই পাঠিয়ে দিবো।
– বাবা তুমিও তো খাওনি।
বাবা আর আমি খেয়ে নিলাম। বাবা বললেন
– তোর ব্যাগ গুছিয়ে রাখ আর মেডিসিন নিতে ভুলিস না। সৌরভ এসে নিয়ে যাবে।
– তুমি নিয়ে গেলেই তো হয়।
– আমি চিনি না রে মা।
বাসার জামা কাপড় পড়েই যাবো। আমার এখন আর সাজগোজ এর মন নেই।
ব্যাগ গুছিয়ে মোবাইল হ্যান্ড ব্যাগে রাখলাম। বাবা বলল
– সৌরভ বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
বাবা ব্যাগ নিয়ে আগে আগে গেলে। বাবা বলল
– দরজা টা ভালোভাবে লক কর। চাবি এই নে।
বাবা বেড়িয়ে গেলেন আমি লক করে চাবি নিয়ে বাবার পিছনে পিছনে ছুটলাম।
বাবা একটা সাদা রঙের গাড়ির কাছে গিয়ে থেমে গেলে।
বাবা কার সাথে যেন কথা বলছে। কাছে গিয়ে দেখি ড্রাইভার সিটে সৌরভ বসা। সৌরভ বলল
– শারলিন তুমি পিছনে বসো।
বাবাকে বলল
– বড় মামা আপনিও বসুন আপনাকেও পৌঁছে দেই।
বাবা বলল
– নাহ বাবা, আমার মেয়েটার একটু খেয়াল রেখো। তোমার মামী একটু শান্ত হলেই ওকে নিয়ে আসবো।
সৌরভ বলল
– বড় মামা সমস্যা নাই। ও যতদিন ইচ্ছা থাকবে।
বাবা বলল
– তাহলে যাও বাবা।
সৌরভ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে এতো দ্রুত গাড়ি ছুটালো যে মনে হলো ওর ট্রেন ছুটে যাবে। আমার এতো গতিবেগে শরীর খারাপ লাগছে। সৌরভকে বললাম
– স্লোলি ড্রাইভ করো।
সৌরভ বলল
– আমি এভাবেই ড্রাইভ করি। অভ্যাস করে নাও।
– সৌরভ আমার খারাপ লাগছে।
– কবে তোমার ভাল লাগছিলো?
মনে হচ্ছে গাড়ি একটু স্লো করেছে ও।
– ঝড়ের বেগে কেউ ড্রাইভ করে?
– কেউ বেড়াতে গেলে ফকিন্নির মতো কাপড় পড়ে?
– আমি তো অস্বাভাবিক মানুষ।
– পাইছো এক ডায়লগ। আল্লাহ আমি কোন মুখে এই কথাটা বলছিলাম।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১৩

0

ছায়া নীল!

১৩.

Maria Kabir
– আচ্ছা স্বভাবে কি ভালবাসা থাকে না?
– থাকতেও পারে।তোমার সাথে আর কয়দিন এভাবে দেখা সাক্ষাৎ হতে থাকলে সত্যি আমি আবার প্রেমে পড়বো। তবে এবারকার প্রেম হবে ভয়াবহ।
– প্রেম আবার ভয়াবহ হয় নাকি?
– তুমি যা করেছো সেটা কি ভয়াবহ নয়? কোনো স্বাভাবিক মানুষ নিজের দেহকে ক্ষত বিক্ষত করতে পারে না।
– তুমি বলতে চাচ্ছো আমি অস্বাভাবিক?
– হ্যা। যাই হোক বাদ দাও। আমি আপাতত তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না।
– বাবা আর মা চলে আসবে এখন এখান থেকে ভাগো।
– হ্যা যাচ্ছি। মোবাইল টা নিয়ে আসো।
মোবাইল টা এনে ওর হাতে দিলাম।
সৌরভ হেসে বলল
– একটা মিথ্যা কথা বলেছি তোমাকে।
– কয়টা বলেছো তা কি আমি জানি? একটার বেশিও তো হতে পারে।
– নাহ একটাই বলেছি। সেটা হলো, তোমার পরে আর কোনো মেয়ের সাথে আমি জড়াই নেই।
– বললা কেনো?
– ভাবলাম তোমার প্রতিক্রিয়া টা কেমন একটু দেখা দরকার।
– আর কোনো মিথ্যে কথা বলেছো?
– নাহ। দুপুরে অনেক ঘুমাবা।
– কেনো?
– রাত জাগতে হবে। সারারাত ফোনে কথা বলবো।
– আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি অসুস্থ।
– তোমার চোখে আমার জন্যে যা দেখেছি সেটা মিথ্যে না।
– আমি তোমার মতো মিথ্যে বলি না।
– ১ টাই বলেছি তাতেই মিথ্যেবাদী?
– ওই কথায় আমি খুব কষ্ট পেয়েছি।
আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল
– আহারে। Sorry শারলিন আর হবে না।
– আমাকে ছাড়ো। ভালবেসে আমাকে স্পর্শ করবে। যদি না পারো তাহলে স্পর্শ করবে না।
– আচ্ছা আচ্ছা ছেড়ে দিলাম।
এই কথা বলে আমাকে ছেড়ে দিলো। তারপর সৌরভ চলে গেলো।
দরজা আটকে দিয়ে বাবা আর মা আসার অপেক্ষায় রইলাম। দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকাল হচ্ছে বাবার খোজ নেই। এদিকে আমি রান্নাও করতে পারছি না। খুদায় অসহ্য লাগছিলো। এক হলো মনের অশান্তি ২য় হলো শরীরের যন্ত্রণা।
বিকালবেলা কলিংবেল বাজলো। বাবা এসেছে মনে হয়। সাথে মাও এসেছে মনে হয়।
দরজা খুলে দেখি বাবা একা। বাবার চেহারা দেখেই বুঝতে পারলাম ঝামেলা একটা হয়েছে। বাবার হাতে খাবারের প্যাকেট।
দরজা আটকে দিয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম
– মা আসেনি?
বাবা বললেন
– তুই এই বাড়িতে থাকলে সে আসবে না।
কথাটা শুনে বুঝতে পারলাম, আমি অনেক বড় ভুল করেছি। বাবা আমাকে অনেক ভালবাসেন। আমার সব ভুল, দোষ ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন।
কিন্তু মা আমাকে পছন্দ করেন না। বুঝতে শেখার পর থেকেই বুঝেছি।
মা চাইতেন ছেলে হোক। কিন্তু মেয়ে হলো।আমার পরে তার একটা ছেলে হয়েছিল কিন্তু সে জন্মের পরেই মারা যায়। এরপরে মা আর কোনোদিনও সন্তান নিতে পারলেন না। তার নাকি রক্তে আরএইচ প্রব্লেম না কী যেন আছে।
সে আমাকে এমনিতেই পছন্দ করতো না তার উপর আমার চেহারা নাকি মেজো ফুপুর মতো।
আর আমিও কোনোদিন মা পছন্দ করে এমন কাজও করিনি। তাই আমার প্রতি মায়া তার কমেছে দিনদিন, বাড়েনি।
বাবাকে বললাম
– তুমি আমাকে ছোটো ফুপুর বাসায় কয়েকদিনের জন্যে রেখে আসো। মার রাগ ঠাণ্ডা হলে আমি চলে আসবো।
– বলেছিলাম তোর ছোটো ফুপুকে কিন্তু সে রাজি হয়না। বলে, ওরকম পাগল খারাপ মেয়ে আমার বাসায় আনবো না। কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসলে, দায়ী কে হবে?
– বড় খালা তো মায়ের মতোই। সে তো আমাকে আগাগোড়াই পছন্দ করেন না।
– কী বলবো রে মা, কপাল আমার তোমার মায়ের মতো একজন বউ পাইছিলাম। পুরো জীবন কষ্ট করতে করতেই গেলো আমার। এই পুরো সম্পত্তি তোর মায়ের নামে। চাইলেও তো তাকে তালাক দিতে পারছি না। চাকরী যা করি তাতে তোর আমার চলবেও না।
– বাবা আমাকে কোনো হোস্টেলে পাঠিয়ে দাও।
– তোর মেজো ফুপুর বাসায় পাঠিয়ে দেই কয়েকদিনের জন্য।
– মেজো ফুপু?? উনি রাজি হবে তো?
– দেখি। খাবার টা খেয়ে নে। আমি কথা বলে আসি।
বাবা চলে গেলেন ফোন হাতে নিয়ে।
আমার জীবন টা এমন হয়ে গেলো? নিজের বাড়িতে নিজেই থাকতে পারছি না। সম্পত্তি বাবারই কিন্তু মা তার নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছেন যদি ছেলের আশায় আরেকটা বিয়ে করেন তখন কী হবে?
আমার জীবন টা একটা অদ্ভুত বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। আমি জানিনা, আমার বাবা কবে সুখের দেখা পাবেন!
আমার নিজের সুখ তো নিজেই ধ্বংস করেছি। আমার জন্মটাই অলক্ষুণে।

চলবে…….!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১২

0

ছায়া নীল!

১২.

Maria Kabir
সৌরভ গ্লাসের পানিটুকু এক চুমুকে শেষ করে টেবিলের উপর গ্লাস রেখে বলল
– উমম তোমার কী মনে হয়??
– আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছি। তার উত্তর দাও।
গ্লাসটাকে হাত দিয়ে নড়াচড়া করছে, তারপর কিছুক্ষণ ভাবলো। কী ভাবছে জানি না। আমি বললাম
– কী উত্তর দিবে?
– তুমি আমার ২য় নাম্বার প্রেমিকা!
– আমার পরেও তো অনেক আছে তাই না?
– হ্যা আছে।
– তোমার প্রথম প্রেমিকার নামটা শুনি? আর ব্রেকাপ এর কারণ?
– নাম? আচ্ছা তুমি পুরোনো কথা উঠাচ্ছো কেনো?
– উত্তর চাই আমি বুঝেছো?
– ওর নাম বৃষ্টি ! ব্রেকাপ এর কারণ, “আমাকে তার আর ভালো লাগেনা। এক জিনিষ আর কতদিন?? আমার সাথে নাকি তার কোনো মিলই নেই! আমার প্রতি তার আর কোনো ফিলিংস নেই! ”
– শুধু ওর দোষ দিচ্ছো কেনো? তোমার দোষ নেই বুঝি?
– নাহ ছিলোনা, কারণ ও আমার প্রথম ভালবাসা। আমার জীবনে যখন ভালবাসা নামক অনুভূতি টা ওর হাত ধরেই এসেছে। ওকে আমি যতোটা ভালবেসেছি, ততোটা তোমাকে অনন্তকাল ভরেও বাসতে পারবো না।
– আমার পরে কারা আছে শুনি না তাদের নাম?
– এতো নাম মনে নাই। ফোনে নাম্বার সেভ করা আছে পরে দেখে নিও।
– আমার এখানে কেনো এসেছো?
সৌরভ মনে হলো অবাক হয়েছে আমার প্রশ্নে!
– আমার মামা বাড়ি তাই এসেছি।
– এতদিন কেনো আসনি? হঠাৎ আমার বিয়ের দিনই হাজির??
অনেকক্ষণ চলে যাবার পরও এই প্রশ্নের উত্তর পেলাম না। ও গ্লাস টাকে নিয়েই ব্যস্ত আছে। আমার সাথে তাহলে এত নাটক করার কী দরকার ছিলো? আমাকে যদি ভাল নাই বাসতে পারলো তাহলে আমার এখানে কেনো এসেছে?
আমি দ্রুত চেয়ার ছেড়ে উঠতে গিয়ে টেবিলের সাথে কাটা হাতে ব্যথা পেলাম। কী যে অসহ্যকর ব্যথা। সৌরভ সাথে সাথে উঠে আমার হাত ধরে বলল
– একটু সাবধানে থাকলেই পারো।
আমি ওর হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বললাম
– যথেষ্ট হয়েছে নাটক আর ভাঁওতাবাজি। আমার সাথে অনেক মজা করা হয়েছে তোমার। এখন আর নাটক করতে হবে না।
– সত্যিটাই তো বললাম। আর যাকে আমি ভালবাসি তার কথা শুনতে চেয়েছো তাই বলেছি।
– খুব সহজ না তোমার কাছে এসব তাই না?
– আরে আমি তো জাস্ট মজা করেছি স্বপ্নে, আর তুমি সেটাই সিরিয়াসলি নিয়ে এতো মহাকান্ড করে বসলে।
– তোমার কাছে মজা ছিলো, আমার কাছে না।
– দেখোই না বৃষ্টি আমাকে ছ্যাকা দিয়েছে বড়লোক এক ছেলের জন্য। আমি তো তার বাস্তব জগতের ছিলাম তাও চলে গেলো।
তাই আমি ভাবলাম তুমিও তাই করবে।
– বের হও বাসা থেকে এখনি।
– আহারে সত্য কথা সহ্য হচ্ছে না। আমার আরো অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে। তবে তোমার ঝামেলার জন্য তাদের সময় দিতে পারছি না।
– তুমি গতকাল বললা, আমাকে ভালবাসো। আবার আজকেই এই কথা বলছো?
– আরে ওটা সান্ত্বনা ছিলো। তা না হলে পরের মেয়ে মইরা গেলে একটা বিশ্রী ব্যাপার।
– আমার তোমার সান্ত্বনা লাগবে না। ধ্বংস তো করেই ফেলছো আমাকে, এখন কীসের জন্য ওয়েট করছো?
– আসলে আমি নিজেও জানি না কী কারণে আমি এখনো তোমার আশেপাশে? আমি চাচ্ছি চলে যেতে বাট পারছি না। কিছু একটা তোমার দিকে আমাকে টানে। আগে তো একটা নেশার মতো ছিলা।
– নেশা কেটে গেলে আমিও কেটে যাবো।
– দারুণ একটা কথা বলেছো। নেশা না কাটা পর্যন্ত আমি যাচ্ছি না।
আমি রান্নাঘরে গিয়ে তরকারি কাটার চাকু এনে ওর হাতে দিয়ে বললাম
– তোমার তো যাওয়ার ইচ্ছা নেশা কবে কাটবে তার ঠিক নেই তার আগেই আমার গলায় খুব জোড়ে একটা পোচ দাও। ব্যাস, সমস্যা সমাধান।
চাকুটা সৌরভ হাতে নিয়ে বলল
– ভালো ধার আছে। তুমি নিজেই তো সাহসী এসব ব্যাপারে। আমাকে শুধুশুধু এসব উটকো ঝামেলায় জড়াচ্ছো কেনো?
– আরে এদেশে আসল খুনি কে পুলিশ ধরতে পারেনা। আর তুমি তো ভালো মানুষ না যে ধরা খাবে।
ও চাকুটা আমার গলায় ধরে বলল
– আমি কিন্তু তোমাকে সত্যি মেরে ফেলতে পারি।
– জানি তো।
– না পারবো না। নেশা কাটুক তারপর জাহান্নাম এ যাও আমার দেখার বিষয় না।
– এখনি বাসা থেকে বের হও।
– যেতে ইচ্ছে করছে না। তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
– সৌরভ প্লিজ আমাকে সত্যিটা বলো। আমার না মাথা ফেটে যাচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে, খুব।তুমি কি পাগল? একেক সময় একেকটা কথা বলো?
– আরে আমি তো বললামই।
– সৌরভ আমি না তোমাকে খুব ভালবাসি।
হাতের আংগুল গুলো দেখিয়ে বললাম
– দেখোই না তোমাকে কাছে পাবার জন্য আংগুলে আলপিন ফুটিয়েছি। জানো তোমার জন্য আমি অনেক কষ্ট করেছি।
– আমিও করেছিলাম লাভ হয়নি।
– সৌরভ আমি তোমার ভালবাসা না প্রয়োজন? প্লিজ একটা উত্তর চাই আমি। তারপর আমি আর তোমাকে আমার কাছে আসতে বলবো না।
– কোনোটাই না। তুমি আমার স্বভাব।রোজ তিনবেলা তোমার সেই ছবিটা না দেখলে ভালো লাগেনা। দেখতেই হবে। এটাই স্বভাব। তোমাকে স্বপ্নে আনতে হবে এটা আমার স্বভাব।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১১.

0

ছায়া নীল!

১১.

Maria Kabir
আসলে সত্য অনেক তিতা হয়। যেটা হজম করা খুব কষ্টের। কিন্তু একবার হজম হয়ে গেলে তারপর আর সেই তিতা আর গায়ে লাগে না। ও যদি অন্যের শোধ আমার উপর নিতে পারে তাহলে আমি আমার শোধ কেনো ওর উপর নিতে পারবো না। ও আমাকে তিলে তিলে ধ্বংস করেছে। ওর জন্য আমাকে প্রতিবেশীরা পাগল ভাবে। আমি নাকি খারাপ মেয়ে। ও আমাকে ছেড়ে দেবার জন্য যতবার চেষ্টা করবে আমি ওকে ততবার নিজের দিকে টানবো।
আমি ওকে এতো সহজে চলে যেতে দিবো না। একমাত্র ওর জন্য আমার পুরো পরিবারকে কথা শুনতে হয়েছে।
আমাকে নিয়ে খেলেছে আমিও এই খেলা তে হারছি না।
মনে হচ্ছিলো ফোন ভেঙে ফেলি কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো ফোন ভাঙলে নতুন ফোন কবে পাবো তার ঠিক নেই। আর মা চলে আসলে তো আমার খাওয়া দাওয়াও বন্ধ করে দিতে পারে। ফোন তো দূরে থাক।
এতো খেলা খেলেও আবার বলে বিশ্বাস ভাঙতে পারবে না।
ওকে ভালবাসছি তো ওকে আমার করেই ছাড়বো। বদনাম হয়েছি তো ওকে নিজের করেই ক্ষান্ত হবো আমি।
ফোন টাকে বালিশের নিচে রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
কিন্তু বারবার মাথায় এক চিন্তাই আসছে ও বাসায় গেছে তো নাকি এখনো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে??
মোবাইলে টাইম দেখলাম ১.২৫ বাজে। এই সময় ছিনতাই কারী থাকে, খারাপ লোক থাকে, ওর যদি খারাপ কিছু হয়ে যায়।
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাংলো বাবার ডাকে। বাবা বললেন
– নাস্তা টেবিলে রাখা আছে আর পাশে মেডিসিন রাখা আছে খেয়ে নিও।
বাবাকে দেখে মনে হলো কোথাও যাবে। বাবাকে বললাম
– কোথাও যাচ্ছো??
বাবা বললেন
– তোর মাকে নিয়ে আসতে যাই। তুই কোনো কাজ করার চেষ্টা করিস না।
বাবা চলে গেলেন আমি দরজা আটকে দিয়ে ব্রাশ করতে বাথরুমে গেলাম। ব্রাশ করে বের হবার পরপর মনে হলো ফোন বাজছে।
রুমে এসে ফোন রিসিভ করলাম হ্যালো বলবো আর জড়ালো কণ্ঠে সৌরভ বলল
– আমি সৌরভ বলছি।
– হ্যা বলো।
– তুমি বাসায় একা তাই না?
– হ্যা, আর এটা কার নাম্বার দিয়ে ফোন করেছো?
– আরে দোকানদারের নাম্বার। আমি বাসায় আসছি দরজা খোলো।
– এখন?
– হ্যা এখন।
ফোন কেটে গেলো। কী ঝামেলা রে। এ হুটহাট করে বাসায় চলে আসে কেউ একবার দেখলেই হয় কিয়ামত ঘটে যাবে তাও আমি একা।
দরজা খুলে দাঁড়িয়ে রইলাম। প্রায় ১০ মিনিট পর সৌরভ চোখ ডলতে ডলতে বাসার মধ্যে ঢুকলো। আমি দরজা আটকে দিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম
– এভাবে হুটহাট করে বাসায় চলে আসবা না।
– মামার বাড়িতে আমি আসতেই পারি তোমার কী?
– আমি একা তাই নিষেধ করছি।
কোনো কথা বললো না। সরাসরি আমার রুমে গিয়ে কী যেন খুঁজছে। সৌরভ কী খুজছো আমাকে বললেই হয়।
– তোমার মোবাইল চার্জার কই?
পড়ার টেবিলের ড্রয়ার থেকে বের করে দিলাম। ও মোবাইল চার্জ দিয়ে সোজা বাথরুমে চলে গেলো।
আমি খাবার টেবিলের চেয়ারে বসে রইলাম।
বাথরুম থেকে বের হয়ে বলল
– নাস্তা আছে??
– হ্যা আছে।
এদিকে আমার পেটে ইঁদুর ছুটাছুটি করছে। খাবার তো মনে হয় আমার যোগ্য।
ও আমার পাশে চেয়ার টেনে বসলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম
– রাতে কই ছিলে??
– রাস্তার উপর ঘুমিয়ে ছিলাম।
– বাসায় কী সমস্যা???
– সমস্যা না, এমনি যেতে ইচ্ছে করেনি তাই যাইনি।
– যদি খারাপ কিছু হয়ে যেতো তখন??
– হয়নি তো দেখছোই তাহলে প্রশ্ন করে কী লাভ???
– এমন আর করবে না।
– তোমার রুমে এসে পড়ে থাকবো তখন পাড়ায় বদনাম রটে যাবে। অমুকের মেয়ে ঘরে ছেলে নিয়ে থাকে।
– শুনো এমনিতেই আমার বদনামে পুরো পাড়া ভরপুর। যাকেই জিজ্ঞেস করবা সেই বলবে শারলিন একটা নিকৃষ্ট মেয়ে।
– sorry !
– জানো সেটা কার জন্য??
– আমার জন্য তাই তো।
– হ্যা। নাস্তা করবে বলে নাও টেবিলে খাবার আছে খেয়ে নাও।
– আসো ভাগ করে খাই।
– নাহ আমার খাওয়ার দরকার নাই। তোমার কথায় পেট ভরে গেছে।
ও খাবারের প্লেট সামনে নিলো। বাবা অনেক খাবার রেখে গেছেন। হোটেল থেকে আমার পছন্দের খাবার কিনে এনেছেন। পরোটা আর ডিম ভাজি আর ডাল।
খুব খিদে পেয়েছে কিন্তু ওকে তো বলেই ফেললাম আমি খাবো না।
সৌরভ পরোটা ছিড়ে ডিম দিয়ে আমার মুখের সামনে ধরলো তারপর বলল
– আর এমন হবে না। সত্যি শারলিন আমি আর করবো না।
– আমার খিদে নেই।
– তোমার মুখ দেখেই মনে হচ্ছে কিছুই খাওনি আর তোমার খুব খিদে পেয়েছে।
পরোটার টুকরো টুকো মুখে নিলাম। ও খাচ্ছে আমি হাত দিয়ে নিতে গেলাম, তখন ও বলল
– আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
পুরো প্লেট ফাকা হয়ে যাবার পর সৌরভ বলল
– পেট ভরেছে??
– হ্যা, তোমার?
-হ্যা।
মেডিসিন খেয়ে নেবার পর সৌরভ কে বললাম
– একটা প্রশ্ন করবো ঠিক তার উত্তর দিবে??
সৌরভ পানির গ্লাস হাতে নিয়ে বলল
– হ্যা করো।
– আমি তোমার কত নাম্বার প্রেমিকা???

চলবে….!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১০.

0

ছায়া নীল!

১০.

Maria Kabir
সৌরভ বলল
– আমি তো ভূত না যে তুমি ভয় পাবে??
– হুম
– তাহলে ভয় কেনো পেলে??
– এমনি।
– এমনি আবার কেউ ভয় পায় নাকি??
– আরে আমি ভয় পাই নাই।
– কী বলো?? একটু আগেও তো বললে ভয় পাইছো।
– শুনো আমি ভয় পাইছি । কারণ টা হলো – এতো রাতে এভাবে কারো বাসায় আসে??
– কারো বাসায় না মামার বাড়ি আমার।
মাতালরা নাকি সত্য কথা বলে। আমার যে ব্যাপার গুলোতে কনফিউশন আছে এখন জিজ্ঞেস করলে সত্যটা জানা যাবে।
– আচ্ছা সৌরভ এতো দিন তোমাদের তো আমাদের বাসায় আসতে দেখলাম না। কেনো??
– খুব সোজা, তোমাদের সাথে আমাদের ঝগড়া ছিলো।
– কী নিয়ে ঝগড়া ছিলো??
– তুমি জানো না???
– আমি জানলে তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম না।
– জানো কখন তোমায় প্রথম দেখেছিলাম??
– হ্যা স্বপ্নে!
ও প্রসঙ্গ পাল্টাতে চাচ্ছে যেভাবেই হোক আমাকে সব খবর বের করতে হবে।
– না না স্বপ্নে না। তোমার ছবি মা আমাকে প্রথম দেখিয়েছিলেন।
– কী??? দেখে কী মনে হয়েছিলো?
– শুনো তখন আমি ইন্টারে পড়ি আমার প্রথম প্রেমের ফুললি ব্রেকাপ হলো।
তারপর চুপ। কোনো সাড়াশব্দ নেই। কুকুরের ঘেউ ঘেউ কানে আসছে।
সৌরভ এমনভাবে কথা বললো তাতে মনে হলো ও ফিসফিস করে বলছে।
– হুশশ শারলিন কথা বলে না। কথা বললে কুকুর কামড়ে দিবে। তারপর ৭ টা ইনজেকশন দিবে।
কী বলবো আমি ওকে??
ও আবার বললো
– কুকুর টা চলে যাচ্ছে বুঝছো?? এইতো এইতো যাচ্ছে…
– তুমি এখনো বাসায় যাও নি??
– নাহ আসছিলাম তোমার কাছে তুমি তো খেদিয়ে দিলে!
আল্লাহ আমি ওকে খেদিয়েছি নাকি ও নিজেই বের হয়েছে।
– বাসায় যেতে কতক্ষণ লাগবে??
– সারারাত লাগবে।
– কেনো তোমার বাসা কি আমাজানে???
– নাহ, আমি বাসায় যেতেই চাই না এখন।
– ব্রেকাপ এর পর কী হলো??
– প্রথম প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে আমি ব্যাকা হয়ে গিয়েছিলাম।
– তারপর??
– তোমার ছবি দেখে ভালো লাগলো। তারপর ভাবলাম একটু মজা করি।
– তুমি আমাকে ভালবাসো না মজা করেছো আমার সাথে??
– নাহ রে পাগলী। আসলে বিশ্বাস করার ক্ষমতা ছিলো না। ভালোই কাটছিলো তুমি সুইসাইড করে বসলা সব ফিনিশ।
– ফিনিশ না শুরু।
– না তুমি বুঝবা না এটাই ফিনিশ।
– তাহলে বুঝাও।
– শুনো কালো অন্ধকার রাতে আমি একা রাস্তায়। খুব মজার ব্যাপার।
– তুমি বাসায় যাও তো।
– বাসায় তুমি নাই কী করতে যাবো??
– এতদিন বাসায় কেনো যেতে??
– ওহ শারলিন তুমি তো অনেক স্মার্ট!
– ফুপু আমার ছবি কীভাবে পেয়েছিলো?
– শুনোনা শারলিন। যখন সত্যি ভালোবেসে কষ্ট পেলাম। জানো ও আমার জীবন টাকে পুরো নষ্ট করে দিয়েছিলো। তখন মনের ভেতর আগুন জ্বলছিলো। তোমার ছবি যখন পেলাম তখন তুমি ক্লাস ৭ বা ৮ রাইট??
– হ্যা। ক্লাস ৭ এর মাঝামাঝি তে।
– তোমার সেই পিচ্চি পিচ্চি চেহারাটা আমাকে পাগল করেছিলো কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম আমাকে যেমন ঠকিয়েছে আমিও একজনকে ঠকাবো। আমাকে নিয়ে ও যেমন খেলেছে আমিও কারো সাথে খেলবো।
কথাগুলো আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছিলো। ও এইজন্যই আমাকে এই অবস্থায় বলতে চায়নি। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে ওকে জিজ্ঞেস করলাম
– তুমি তো সামনাসামনি এসেই আমার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারতে। স্বপ্নের ব্যাপার টা কেনো করলে?? স্বপ্ন বাদে আসলে তুমি তো আমাকে বেডেও নিয়ে যেতে পারতে।
– শারলিন আমি সেটা জীবনেও করতে পারবো না। আজকে পারলেই আমি পারতাম। তুমি আমাকে যে পরিমাণ বিশ্বাস করো। আমি অবশ্যই এর ফায়দা নিতে পারতাম।
– কেনো নিলে না???
– তোমার চোখে আমার জন্য যে ভালবাসা, বিশ্বাস দেখেছি আমি চাই না ভাঙতে । আমি এই প্রথম মা ছাড়া অন্য কারো চোখে এতো ভালবাসা আর বিশ্বাস দেখেছি।
– তুমি তো আমার সাথে মজা করেছো তাহলে….
– হ্যা করেছিলাম কিন্তু……
– কিন্তু কী???
– পরে বলবো!
এই কথা এখন আর বের করা যাবেনা।
– আচ্ছা তুমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা টা দিবে??
– কীরকম ব্যাখ্যা??
– আমার ছবি দেখার পর তুমি স্বপ্নে কীভাবে এসেছিলে???
– আরে ওটা একটু কঠিন….
– বলোই না।
– ব….
আর শুনতে পারলাম না। ফোন কেটে গেলো । য ধুত্তুরি ফোন কেটে যাওয়ার সময় আর পেলো না।
এখন ওর আবার ফোন করার অপেক্ষায় থাকা ছাড়া উপায় নাই।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর গুলোই পেলাম না।
একজন মানুষ দিনের পর দিন আমার সাথে অন্যের কর্মের প্রতিশোধ তুলেছে। আর আমি সেটাকে ভালবাসা মনে করে বসে আছি।
কেউ খেলা করেছে আর আমি নিজেকে শুধুই কষ্ট দিয়েছি।
আমি এতো বড় ভুল করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত কীভাবে করতে হবে আমার জানা নেই।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ৯.

0

ছায়া নীল!
৯.

Maria Kabir
হঠাৎ অনুমতি চাচ্ছে কেনো?? ও কি কোনো বিষয় নিয়ে টেনশনে আছে??
মেসেজ রিপ্লে দেয়ার মতো ব্যালেন্স নাই। এখন বাবার কাছে ফোন চাইলে সন্দেহ করতে পারে। কী করবো বুঝতে পারছি না।
আবার মেসেজ টোন বাজলো। মেসেজ চেক করলাম ওর মেসেজ। লিখেছে
– আমাকে এখন সহ্য হয়না??
আরে এ কী বলতেছে??? আমার ওকে কেনো সহ্য হবে না?
ফোন হাতে নিয়ে বসে রইলাম। ঘুমাতেও পারছি না।
মহাপাগলের পাল্লায় পড়েছি। ঝিমুচ্ছিলাম হঠাৎ করে ফোন বেজে উঠলো।
ওর ফোন, রিসিভ করলাম। আমি আগে কথা বললাম
– সৌরভ…
– কী আমাকে তোমার পছন্দ হয়না এখন???
– কেনো পছন্দ হবেনা??
– তুমি এতো সুন্দর….
– তো কী??? তুমি এতো পাগলামি কেনো করছো???
– আমার ভালো লাগছে না। আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে!
– এখন এতো রাতে তুমি কীভাবে আসবে??
– শারলিন….
– হুম বলো!
– আমার জন্য তুমি অনেক কষ্ট সহ্য করেছো কিন্তু আমি তো কিছুই করিনি।
– এখন এই রাতে এগুলো নিয়ে আলোচনা করার সময় না।
– তুমি ঘুমাচ্ছো?
– নাহ।
– তুমি দরজা টা খোলো তো!
– মানে???
– তোমার বাড়ির দরজা খুলো। আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
– সৌরভ তুমি পাগলামি করছো কেনো???
– আমি সত্যি বলছি শারলিন।
– বাবা জানতে পারলে ঝামেলায় পড়বো।
– কোনো ঝামেলায় পড়বা না। দরজা খোলো।
– আচ্ছা।
কী বিশ্রী ব্যাপার, ও এতো রাতে আমাদের বাসায়। তাও বাবা জানে না। আমার তো মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
ফোন হাতে নিয়ে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
খুব আস্তে আস্তে দরজা খুললাম। যাতে কোনো শব্দ না হয়।
দরজা খুলেই দেখি ও দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে হাতের গোলাপ ফুল আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
– নাও তোমার জন্য।
আমি ফুল হাতে নিলাম। ওর চেহারা কেমন কেমন লাগছে।
চুলগুলো কেমন আওলা ঝাওলা হয়ে আছে।
এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে আমার ভালো লাগছে না আবার বাসায়ও তো ঢুকাতে পারছি না।
বাবা ঘুমাচ্ছে, পুরো বাড়িতে আমি ধরা যায় একা।
সৌরভ বলল
– তোমার নীলকে ভিতরে যেতে দিবে না???
– হ্যা হ্যা আসো।
ও ভিতরে ঢুকে সরাসরি আমার রুমে চলে গেলো।
আমি তাড়াতাড়ি করে দরজা আটকে দিয়ে আমার রুমে এসে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম।
রুমে ডিম লাইট জ্বলছে। ওর হাটাচলা কেমন কেমন লাগছে।
আমি নিচু স্বরে বললাম
– তুমি কিছু বলবা???
– তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে জানো??
– দেখা হয়েছে আমাকে???
– আরে কই দেখতে পারলাম! একটু আলো জ্বালাও দেখি তোমাকে।
আমি লাইট জ্বালালাম। ও আমার কাছে এসে দাঁড়ালো।
উটকো গন্ধ নাকে আসলো। এরকম গন্ধ কেনো???
নাকে হাত দিয়ে বললাম
– এরকম গন্ধ কেনো???
– কিছু খেয়েছি তো তাই…!
– মদ তাই না??
ও আমার কপাল থেকে চুল সরিয়ে দিয়ে কপালে আংগুল বুলিয়ে দিচ্ছিলো। হাত এতো ঠাণ্ডা পুরো শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো।
– তুমি অনেক সুন্দর জানো তো??
– হ্যা জানি।
– রাগ করেছো??
আমি ওকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললাম
– দূরে থাকো!
– আমার স্পর্শ এখন ভালো লাগছে না??
– তুমি নেশাগ্রস্ত। স্বাভাবিক হয়ে আমাকে স্পর্শ করবে।
– আচ্ছা আচ্ছা আমি আর এমন করবো না।
– নেশা করার কারণ??
– অনেক খারাপ লাগছিলো।
– তুমি ডেইলি খাও তাই না??
– নাহ, যখন খুব খারাপ লাগে তখন দুই একটু খাই।
– আজকে খারাপ লাগার তো তেমন কিছুই হয়নি।
– আমার জন্য তোমাকে কতো কষ্ট করতে হচ্ছে!
– তাই বলে…
– আমি যাই, তোমাকে ডিস্টার্ব করবো না। তুমি ঘুমাও।
– বাসায় যেতে পারবে একা একা??
– হ্যা খুব পারবো। তুমি ঘুমাও আমি ঠিক বাসায় যেতে পারবো।
– আচ্ছা তুমি কী কারণে এসব ছাইপাঁশ খেলে??
– আরে সখী বলবো। তুমি ঘুমাও শারলিন।অনেক জ্বালাইলাম তোমারে।
ও চলে যাচ্ছিলো আবার ফেরত আসলো তারপর বললো
– তোমাকে তো দেখতেই পারলাম না।
– চোখ বুজে ছিলে নাকি??
– আরে তুমি এতো প্যাঁচাল পারলা তাই দেখতে পারলাম না।
– আচ্ছা আমি চুপ করলাম।
আমার চারপাশ দিয়ে ও ঘুরলো। সাত পাক ঘুরে যে বিয়ে করে আমার মনে হয় ও আমার সাত পাক ঘুরছে। আল্লাহ কী মহাপাগলের পাল্লায় পড়লাম।
হুট করে আমার কাটা হাত ধরলো।এমনিতেই ব্যথা তার উপর ও যেভাবে ধরেছে তাতে তো মনে হলো আমি শেষ!
দাঁতে দাঁত চেপে বললাম
– উরে আস্তে আস্তে গেলাম আমি!
– আরে sorry sorry!
ও নিজেই দরজা খুলে চলে গেলো।আমি পিছুপিছু গিয়ে দরজা বন্ধ করলাম।
গোলাপ ফুলটা এখনো আমার হাতে। ওর কর্মকাণ্ডে আমার এখন হাসি পাচ্ছে। শুনেছিলাম মাতালদের পাল্লায় পড়লে নাকি পাগল হয়ে যাবার মতো অবস্থা হয়।
হাতের ব্যথাটা বাড়ায় দিয়ে গেলো।
রুমে এসে লাইট অফ করে ডিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে আবার বিছানায় শুইলাম। আবার ফোন বেজে উঠলো, রিসিভ করলাম
– শুনো তোমাকে বিয়ে করার পর আমি আর মদ খাবো না।
আমি যাই বলবো তাতেই ও প্যাঁচাবে। তাই হ্যা, না দিয়েই কাজ চালাতে হবে!
– হুম
– আমি বাসায় যাচ্ছি। বুঝছো??
– হ্যা বুঝেছি।
– শুনো হাতে ব্যথা দিয়েছি তাই sorry!
– it’s ok.!
– ভয় পাইছো??
– হুম।

পুরেটা রাত আমার মনে হচ্ছে এভাবেই কেটে যাবে। ওর মদ খাওয়ার ফলাফল আগামীকাল পাবে। এখন কিছু থেকে কিছু বললে ও আবার বাসায় চলে আসবে।
কারে ভালবাসলাম আমি??

চলবে……!

#Maria_kabir