Saturday, August 16, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2404



ছায়া নীল ! ২৮.

0

ছায়া নীল !

২৮.

Maria Kabir

আমি দৌড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম কিন্তু পারছি না। মনে হচ্ছে কেউ আমার পায়ে পাথর বেধে দিয়েছে। আমি দৌড়ানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছি আর মানুষ না কী বলবো বুঝতে পারছি না, আমার দিকে উল্টো হেটে এগিয়ে আসছে।
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে ভয়ে।জিনিষ টা কাছে আসলেই আমি মারা যাবো। এটা কখনো নীল হতে পারেনা। নীল আমাকে অনেক ভালবাসে। ও আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা।
মনে হলো কেউ আমার হাত ধরলো। আর বলল
– শারলিন তুমি এখানে কেনো?
আমি সেই কণ্ঠস্বরের দিকে তাকিয়ে দেখি নীল। ভয় পেয়ে গেলাম, ভাবলাম ওটাই এদিক দিয়ে এসেছে নাকি?
আমি হাত ছাড়িয়ে দূরে সরে গিয়ে বললাম
– আপনি কে?
– আরে আমি সৌরভ। তোমাকে রুমে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে আমি এখানে এসে দেখি তুমি রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছো।
ভয় কিছুটা কমাতে ওর কণ্ঠস্বর চিনতে পেরে ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম
– তুমি তো এখানে নিয়ে এলে!
– আমি? আমি তো বাথরুমে ছিলাম।
– তাহলে দরজা খুলতে দেখলাম, আমাকে ইশারায় ডাকলে। তুমি এই পানিতে নামলে।
– শারলিন পানিতে নামলে আমার শরীর ভেজা থাকবে কিন্তু আমার শরীর তো শুকনা।
আমি ওকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম তাই সহজে বুঝতে পারলাম যে ওর শরীর শুকনা।
আমি বুঝতেই পারছি না কী হচ্ছে?? আশেপাশে সব অন্ধকার হয়ে গেলো, আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। মাটিতে লুটিয়ে পরলাম। চোখ যখন ভাঙলো তখন বুঝলাম আমি বিছানায় শুয়ে আছি। আমাদের রুমে লাইট জ্বালানো। এখনো সকাল হয়নি। সৌরভ বিছানার উপর আমার পাশে বসে বসে ঝিমুচ্ছে। আমি বললাম
– ঘুমাও তুমি।
ও চমকে উঠে বলল
– নাহ তুমি কোথায় না কোথায় চলে যাও।
আমি উঠে বসলাম তারপর বললাম
– তুমিই নিয়ে গিয়েছিলে।
সৌরভ বিস্ময় ভরা কণ্ঠে বলল
– আমি তোমাকে নিয়ে যাবো কেনো? আর নিয়ে গেলেই বা তোমাকে ভয় কেন দেখাবো?
– সেটাই তো আমার প্রশ্ন।
– আমি বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি তুমি বিছানায় নাই। ভাবলাম পানি পান করতে গিয়েছো। অনেকক্ষণ শুয়ে থাকার পর যখন তুমি এলেনা তখন রুম থেকে বেড়িয়ে দেখি মেইন দরজা খোলা। আমি খুঁজতে খুঁজতে আধমরা হয়ে গেছি। পরে ভাবলাম তুমি পুকুরপাড় এর কথা বলেছিলে।
– তুমি সত্যি বলছো তো? আমি তোমাকে অনেক বিশ্বাস করি নীল অনেক…
– শারলিন তুমি অনেক ভয় পেয়ে আছো। যেভাবেই হোক তোমার ভয় কাটানো দরকার।
– কীভাবে??
– ওই জিনিষ টার কাছে গিয়ে তোমার ভয় কাটাতে হবে।
– তুমি কীভাবে জানলে আমি কী দেখেছি?
– তুমি অজ্ঞান হয়ে যাবার পর থেকে জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত অনর্গল একই কথা বলছিলে। কিছুক্ষণ পর পর ভয়ে কেপে উঠছিলে।
– আমি কী করবো??
– এই বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে আমাদের। কিন্তু…… বাসা বদলানো হলেও এটা পিছু ছাড়বে না।অফিসের পাশের রুমেও তুমি ভয় পেয়েছিলে তাই না?
– হুম। আমি যা দেখেছি তুমিও দেখেছো?
– নাহ, আমি শুধু দেখেছি তুমি রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছো।
– তুমি ভয় পাও নাই এতো রাতে একা এই জংগলে মানে এরকম ঝোপঝাড়ে?
– শারলিন আমি অনেক সাহসী। তবে এখন সাহস কমেছে। কারণ এখন আমি একা নই। আমার নিজের প্রতি কোনো ভালবাসাই নাই কিন্তু শারলিন তুমি আমার যতোটা কাছে এসেছো ততটাই আমি ভিতু হয়ে যাচ্ছি। সবসময় একটা ভয় একটা ভীতি কাজ করে তোমাকে ঘিরে। আসলেই এটা সত্যি * ভালবাসার মানুষের খুব কাছে যাওয়া ঠিক না। * হুমায়ূন স্যার ঠিকি বলেছেন।
আমি দূরে যেতে পারবো না। না হয় আমি এর শেষ দেখেই দম ছাড়বো আর তা না হলে আমি এর একটা বিহীত করবো।

চলবে…..!

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ২৭.

0

ছায়া নীল !

২৭.

Maria Kabir
এক হাত দিয়ে কাজ করা বেশ কষ্টের। সৌরভ পাশেই টুল নিয়ে বসে আছে। চাল ধুতে গিয়ে ঝামেলায় পরলাম। কাটা হাতে ব্যথা পেলাম। সৌরভ বলল
– কীভাবে কী করতে হবে বলো। আমি করে দিচ্ছি।
– না না থাক আমি পারবো।
– যা বলছি তাই করো।
বাধ্য হয়ে আমাকে মুখে মুখে বলতে হলো আর ও খুব শান্ত ভাবেই করছে। দেখে মনে হচ্ছে এতো শান্ত স্বভাবের ছেলে আমি কখনো দেখিনি।
ভাতের মাড় গালতে গিয়ে ওর হাতের উপর গরম ভাতের মাড় পরলো। হাতে তাড়াতাড়ি করে ঠাণ্ডা পানি ঢেলেও কাজ হলো না। হাত পুড়ে গেছে এমন দাগ হয়ে রইলো। ব্যথায় ওর মুখ কিছুক্ষণ পর পর কুঁকড়ে উঠছে। আমার নিজের কাছেই অপরাধী লাগছে নিজেকে।
ভাত আর ডিম ভাজা দিয়ে রাতের খাওয়া হলো। ফুপু এখনো আমার সাথে কোনো কথা বলছে না।
আমাকে মনে হয় তার পছন্দ হয় নাই। তা না হলে কেউ এভাবে কথা না বলে থাকতে পারে??
সৌরভ ও খুব চুপচাপ।
আসার পর থেকে এখনো রুমে ঢোকা হয়নি।
রুমে ঢুকে আমার চোখ চরখগাছ ! পুরো রুমের চেহারাই চেঞ্জ।
পিছন থেকে ও বলল
– কেমন লাগছে এখন?
– অনেক সুন্দর। তুমি পুরো বাড়ি সাজাতে পারতে।
– মা পছন্দ করবে না।কারণ জানতে চাবা না।
– আচ্ছা। রুমে দেখি টেলিভিশনও আছে।
– হ্যা, আর নতুন মোবাইল সিম কার্ড এনেছি যতো ইচ্ছা আমাকে ফোন করবে। কারণে অকারণে ফোন করবে।
– কী কথা বলবো শুনি?
– কথা বলার দরকার আছে কী? নিশ্বাসের শব্দ শুনতেও ভালো লাগবে।
– আচ্ছা তুমি পুকুরপাড় না কী বলছিলে নিয়ে যাবার কথা?
– এতো রাতে যাবা?
– তুমি সাথে থাকলে আর ভয় কী?
– হ্যা কিন্তু এখন বাইরে না যাওয়াই ভালো।
ওর পোড়া হাতে দেখলাম সাদা রঙের কাপড় বাঁধা।
ও ঘুমিয়ে পড়লো আমিও ঘুমানোর জন্য শুয়ে পরলাম।
শুয়ে পরার সাথে সাথে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙলো খুব পানি তৃষ্ণায়। এতো পানি তৃষ্ণা মনে হলো কখনো লাগেনি।
চোখ খুলে দেখি ও আমার পাশে নেই। কোথায় গেলো? বাথরুমের দিকে তাকিয়ে দেখলাম লাইট জ্বলছে। যাক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
পানি খাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হলাম। রান্নাঘরের দিকে এগোবো আর দেখি সৌরভ মেইন দরজা খুলছে। ও আমার দিকে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে কাজটা করছে।
তারপর ও বের হয়ে গেলো। মনে হলো ও আমাকে হাতের ইশারায় ডেকেছে ওর পিছুপিছু যাওয়ার জন্য।
ওকে বলেছিলাম পুকুরপাড় এ যাওয়ার কথা। ও মনে হয় রাজি হয়েছে।
আমিও ওর পিছুপিছু হাঁটছি। ও একবারো আমার দিকে তাকালো না।
আমি যন্ত্রের মতো ওর পিছুপিছু হেটেই যাচ্ছি। মনে হচ্ছিলো নেশারঝোঁক এ আছি। বাহিরে একদম অন্ধকার না। চাঁদেরহাট মনে হয়েছে বসেছে আজ এই বাড়িতে।
একসময় ও থেমে গেলো। আমিও থেমে গেলাম। এতক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এখন চোখ পড়লো সামনের বিশাল পুকুরে না না এতো বিশাল জলাশয়কে পুকুর বলা চলেনা। ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আমার চোখ ওর দিকে স্থির হয়ে গেলো। ঘুমানোর সময় দেখেছিলাম ওর পোড়া হাতে সাদা কাপড় বাধা কিন্তু এখন কোনো হাতেই দেখছি না।
ও মনে হয় খুলে রেখেছে। আবার তাকিয়ে দেখি হাতে সাদা কাপড় বাধা। কেবলি দেখলাম হাতে কাপড় নেই আবার এখনি কীভাবে??
তারপর যা হলো সেটা আমি কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। ও কাপড় চোপড় খুলে পুরো খালি গায়ে পানিতে নামলো। আস্তে আস্তে ও পানির মধ্যে হারিয়ে গেলো। কাপড় চোপড় যে খুলেছে সেটা তো পাশেই থাকবে কিন্তু তাও নাই।আর ও যা যা করছে সব আমার দিকে পিছন ফিরে করছে।
খেয়াল করলাম আমার শরীর ঘামে ভিজে উঠেছে। আমার ভেতর থেকে কেউ বলছে
– চলে যা এখান থেকে।
আমি বললাম
– না
আবারো ভেতর থেকে কেউ বলল
– শোন আশেপাশে না তাকিয়ে এক দৌড়ে বাসায় উঠবি।
– নাহ।
– যা বলছি শোন !
আমি এক পাও নড়াতে পারলাম না। কিছুক্ষণ পর মনে হলো পানিতে কিছু একটা ভেসে উঠেছে। আস্তে আস্তে সেটা ডাঙার দিকেই আসছে। যখন এটা বেশ কাছে চলে আসলো তখন খেয়াল করলাম একজন মানুষের দেহ। সৌরভ পানিতে নেমেছিলো ওর নাকি?
ঘামছি খুব আমি। চোখের পলক পরতেই খেয়াল করলাম পানিতে আর সেটা নেই। এখন আমার দিকে পিছন ফিরেই দাঁড়িয়ে আছে ও। মনে হচ্ছে আমার দিকে এগিয়ে আসছে তবে উল্টো হেটে। হাটার ভাব দেখে মনে হচ্ছে সে উল্টো হাটাতেই এক্সপার্ট।

চলবে………!

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ২৬.

0

ছায়া নীল !

২৬.

Maria Kabir

সৌরভ বলল
– চোখ নামালে কেন?
– মুগ্ধতা দেখে, এতো মুগ্ধতা আমি কখনো তোমার চোখে দেখিনি।
– কখনো বিয়ের শাড়ীতে এতো কাছ থেকে দেখিনি বলে।
কখনো এই আলো ছায়ার খেলাতে এতো কাছ থেকে আমার স্বপ্নময়ীকে তো দেখিনি বলে!
ওর এসব কথায় আমার মাঝে নতুন আশা জেগে উঠছে। মনে হচ্ছে, পুরোনো কথা থাক না।
ও মোমবাতি নিভিয়ে দিলো। পুরো অন্ধকার নেমে এলো আমাদের মাঝে।
সৌরভ বলল
– ভয় করছে?
– হুম, কিছুটা।
– অন্ধকার ভীতি আছে নাকি?
– জানি না।
– তাহলে?
– জানি না। তোমাকে হারানোর ভয় করছে। মনে হচ্ছে এই ঘোর অন্ধকারে তুমি হারিয়ে যাবে।
– এটা সাময়িক অন্ধকার। ইচ্ছে করে করেছি।
– জানি তো।
– তাহলে?
– জানি না।
– আচ্ছা তুমি জানোটা কী?
– তোমাকে আমার চাই এটুকু জানি।
– পেয়েছো তো ।
– হ্যা কিন্তু….
– কিন্তু কী?
নিশ্বাস ভারী হতে শুরু করেছে…….
সৌরভের ডাকে ঘুম ভাঙলো। হাতে খাবারের ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে খুব হাসিখুশী মুডে দেখলাম। আমি বললাম
– কয়টা বাজে নীল?
ও একটু হেসে বলল
– ১১ টা বাজে। খুব খিদে পেয়েছে বলেই তোমার ঘুম ভাঙালাম।
– তুমি খেয়ে নিলেই তো পারতে বা আমাকে ডাকলেও পারতে।
– নাহ, কতোদিন পর শান্তিতে ঘুমালে তাই ডাকতে ইচ্ছে করছিলো না।
– তুমি অফিসে যাবে না?
– না। এখন বাসায় যাবো। ফার্নিচার আর মালপত্র নিতে হবে।
– কেনো?
– বাসার সবকিছুই পুরাতন মডেলের তাই নতুন মডেলের কিছু ফার্নিচার কিনলাম।
– করো টাকাপয়সা খরচ। তাছাড়া আর কী করবা?
– বাদ দাও লেকচার। নাস্তা করে সবকিছু গুছিয়ে রাখো।
নাস্তা করার ইচ্ছে নাই। রীতিমত জোড় করে।
সবকিছু গুছিয়ে আবার জার্নি করতে হবে। জায়গা আর পায়নি বাড়ি করার। ভুতুড়ে বাড়ি আর বিশাল বিশাল গাছে ভরপুর।
বিকালবেলা বাসায় পৌঁছালাম। ও ফার্নিচার এর সাথে ৫-৬ জন লোক এনেছে। তারাই সবকিছু গুছিয়ে দিচ্ছে। আমার বাধ্য হয়ে ফুপুর রুমে বসে থাকতে হচ্ছে। ফুপু কোনো কথা বলছেনা। আসার পর থেকে তার মুখে একটাও কথা শুনিনি। তার মুখে কোনো বিরক্তি নেই কিন্তু স্বস্তিও নেই। আমি নিজেই কথা বলতে গিয়ে লজ্জায় পড়েছি। কোনো উত্তর পাইনি।
সন্ধ্যার পর সৌরভ এসে আমাকে বলল
– লোকজন চলে গেছে, তুমি আসো।
আমি রুম থেকে বের হবার পর সৌরভ বলল
– শারলিন রান্না করা আছে নাকি দেখো তো?
– যদি না থাকে?
– তুমি কষ্ট করে শুধু ভাত রান্না করে দিও।
– কষ্ট হবেনা।
আমি রান্নাঘরের দিকে গেলাম। খাবার রাখার র‍্যাক খুঁজে দেখলাম রান্না করা নাই।
চাল কোথায় রেখেছে সেটাও খুঁজে পাচ্ছি না। সৌরভ আর ফুপুর কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। দুজনেই জোড়ে জোড়ে কথা বলছে। কিন্তু কী বলছে সেটা বোঝা যাচ্ছেনা। সৌরভের কণ্ঠস্বরে বুঝতে পারছি যে ও খুব রেগে যাচ্ছে। ফুপুর কণ্ঠস্বর শান্ত কিন্তু অবাক কাণ্ড হচ্ছে তাদের কথা আমি বুঝতে পারছিনা। ফুপুর রুমের দিকে যাচ্ছি তখন সৌরভও বের হয়ে আসলো। ওর চোখ লাল আর শরীর কাঁপছে। আমাকে বলল
– এখানে কী করছো?
– মানে চাল খুঁজে পাচ্ছি না তাই ভাবলাম।
– এসো আমার সাথে….
ওর শরীর কাঁপছে কিন্তু কণ্ঠস্বর শান্ত। একটু আগেও ওর কণ্ঠস্বর এতোটা শান্ত ছিলোনা।
কে স্বাভাবিক আর কে অস্বাভাবিক আমি বুঝতে পারছি না।

চলবে……..!

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ২৫.

0

ছায়া নীল !

২৫.

Maria Kabir
সৌরভ বলল
– আমি এতো বেশি কথা বলতে পারি যে, মাঝেমধ্যে মনে হবে আমি একজন শিক্ষক। শিক্ষকসম্প্রদায় এমন এক সম্প্রদায় যারা প্রচুর কথা বলতে পারে।
– তুমি ঘুমাও।
– আচ্ছা শারলিন একটা রিকুয়েস্ট করবো রাখবা??
– নাহ।
– বিয়ের শাড়ীটা একটু পড়বা?? মাত্র ৫ মিনিটের জন্য।
– নাহ।
ও আমার হাত ধরে বলল
– আমাদের মাঝে রাগ, অভিমান চলছে কিন্তু ভাল তো বাসি একে অপরকে!আজকে কিছু সময়ের জন্য রাগ, অভিমান টা ভুলে যাও না।
– তুমি যা করেছো সেটা ভুলে যাওয়ার মতো না।
– কিছুক্ষণের জন্য? একসময় তো আমাদের মাঝে এসব ছিলো না। মনে করো এখন সেই সময় টা চলছে। ভাবো অনেক পিছিয়ে গেছে সময়।
– কীভাবে? মাথা খারাপ নাকি তোমার?তুমি যা করেছো আমি যদি তোমার সাথে করতাম তাহলে তুমি আমাকে মেনে নিতে পারতে??
– হ্যা পারতাম কারণ ভালবাসি।
– তুমি কোন কথাটা সত্যি বলো আর কোনটা মিথ্যা বলো আমি বুঝিনা। এই বলো ভালবাসি আর এই বলো যে ভালবাসিনা।
সৌরভ আমার হাত ছেড়ে দিয়ে হোটেলের রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ও চলে যাবার পর কেনো যেন মনে হলো রিকুয়েস্ট টা রাখলে কী এমন হতো?? সত্যি বেশি করে ফেললাম। বিয়ের দিন শাড়ী না পড়লে পড়বো কবে?? কাটা হাতেও তেমন ব্যথা নেই। লাগেজ খুলে শাড়ীটা বের করলাম। অনেক বেশি সুন্দর একটা শাড়ী। গাঢ় গোলাপি শাড়ী, পুরো শাড়ীতে লতাপাতার নকশা। আমি শাড়ী তেমন ভালো চিনি না। হয়তোবা বেনারসি কাতান হবে। আমাকে গোলাপি রঙ টা ভালো মানায়। গহনাগাঁটি যা দেখলাম তাতে মনে হলো ওর পছন্দ ভালো।
ছায়া, ব্লাউজ সাথেই ছিলো। শাড়ী কোনোরকম পড়লাম। এতো ভার শাড়ী একা পড়া কষ্ট আর ফাজিল টা গাল ফুলিয়ে রুম থেকে চলে গেলো।
কোনোরকম পড়লাম শাড়ীটা। গহনাগাঁটি যা আছে সব পড়া সম্ভব না। গলার হার, হাতের চুড়ি আর কানে দুল পড়লাম। চুলের অবস্থা করুণ। খুব কষ্টে নিজের আয়ত্তে আনলাম।
প্রায় ১ ঘণ্টার মতো লাগলো। ফাজিলটা এখনো এলো না।
রুমের লাইট অফ করে দিয়ে বিছানার উপর ঘোমটা টেনে বসলাম।
দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম। অন্ধকারে ওর ছায়া দেখা যাচ্ছে। চিরচেনা সেই ছায়া। যার জন্যে আমি নিজেকে তুচ্ছজ্ঞান করেছি।
লাইট জ্বালানোর পর ঘোমটার ভেতর থেকে দেখলাম ও আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। তারপর আবার লাইট অফ করে দিলো।
অন্ধকারে ওর ছায়া দেখতে পারছি। কিছু একটা খুঁজছে।
তারপর ও মোমবাতি জ্বালিয়ে হাতে নিয়ে বিছানার উপর উঠে এলো। এক হাতে মোমবাতি নিয়ে আরেক হাত দিয়ে ঘোমটা খুললো।
আমি ওর দিকে তাকালাম। ওর চোখের দৃষ্টি আমার চোখে আবদ্ধ হয়ে গেলো।ওর দৃষ্টিতে মুগ্ধতা, বিস্ময়, প্রীতি, অভিমান একসংগে খেলা করছে।
আচ্ছা একজন মানুষের চোখে একসাথে এতো কিছু খেলা করতে পারে??

আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। ও বলল
– চোখ কেনো নামিয়ে নিলে?? কাটুক না এইরাত চোখের জগতে।
– বোকা চোখের আবার জগত হয় নাকি?
– হয়তো। কেনো আমার চোখে কিছু কি দেখতে পারছো না??
– হ্যা পারছি।
– সেটাই তো জগত।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ২৪.

0

ছায়া নীল!

২৪.

Maria Kabir

সৌরভ বলল
– ঘুম আসছে না?
– নাহ।
ও মুচকি হাসলো। এই মুহূর্তে ওকে খুব ভালো লাগছে। কেনো যেন মন বলছে ও আমার সাথে খারাপ কিছু করতে পারেনা।
– আজকে ঘুমালে তোমার স্বপ্ন কেমন হবে আমি বলতে পারবো।
– ভবিষ্যৎ জানো টানো নাকি??
– নাহ অনুমান। স্বপ্নে বাবাকে বা মাকে দেখবা। কান্দাকাটির স্বপ্ন মূলত।
– কীভাবে বুঝলে??
– আজকে তোমার বিয়ে হয়েছে। বাবা কোথায় গেছে সেটা জানো না। মার কথা তো বাদ দিলাম। আর তোমার স্বপ্ন দেখার অভ্যাস টা পুরাতন।
– তুমি শিওর কীভাবে??
– আমি শিওর কখন বললাম? হতেও পারে নাও পারে।
– যাও ঘুমাবোই না।
– সত্যি??
– হ্যা, আমি তোমার মতো মিথ্যা বলি না।
– আমি এটাই চাচ্ছিলাম। চাচ্ছিলাম দুজনে রাত জেগে অনেক গল্প করবো কিন্তু তোমার শরীরের যে,অবস্থা তার উপর তুমি আমার উপর কিছুটা রেগে আছো তাই বলার সাহস পাচ্ছিলাম না।
– আমাদের গল্প করার কিছু আছে??
– না থাকলে দুজনে সারারাত একে অপরের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবো।
আচ্ছা, আমার চেহারা তোমার ভালো লাগে??
– তোমার ছায়া ভালো লাগে আর তোমাকে ভালবাসি।তোমাকে ভালবাসা মানে তোমার সকল দোষগুণ সব কিছুকে ভালবাসা।
– যুক্তি আছে। তবে সত্যি কথা বলতে আমি তোমার চেহারার প্রেমে পড়েছিলাম।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে…..
– কী মনে হচ্ছে??
– তোমার রূপ যেমন আছে ঠিক তার পাশাপাশি খুব রূপবতী একটা মন আছে। সেটার প্রেমে পড়ছি আমি।
স্বাভাবিক ভাবে সুন্দরী মেয়েদের মন এতোটা রূপবতী হয়না। তুমি ব্যতিক্রম। আজ মনে হচ্ছে সেদিন কার ব্রেকাপ টা হওয়া জরুরী ছিলো।
জানো, আমাদের জীবনে অনেক ঘটনা ঘটে যেটা আমরা চাই না। কিন্তু ঘটে ঠিকি তখন আমরা ভাগ্যকে দোষারোপ করি। তখন যদি জানতাম তোমার মতো একজনকে পাবো তাহলে তখন কষ্ট পেতাম না।
– এতো কথা বলতে পারো??
– হ্যা পারি।

চলবে….!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ২৩.

0

ছায়া নীল!

২৩.

Maria Kabir
বাবা কোথায় যাচ্ছেন? কী করতে যাচ্ছেন? কিছুই জানি না। ও সবই জানে কিন্তু আমাকে বলবে না। শেষ পর্যন্ত আমাকে এই নোংরা অবস্থায় সাধারণ একটা থ্রিপিচ পড়ে বিয়ে করতে হলো। সৌরভ কে বললাম
– বাসায় কখন যাবে??
সৌরভ মনে হয় অন্যমনস্ক ছিলো। তাই উত্তরে বলল
– কী বললা??
– বাসায় কখন যাবা??
– মা বাসায় নেই, আর আমারও যেতে ইচ্ছে করছে না।
– তাহলে??
– আমার চেনা এক আবাসিক হোটেল আছে ওখানে আজকের রাতটা থাকবো।
আমার কিছু বলার নাই। ও বাসা থেকে যতো দূরে থাকা যায়। হোটেল দেখে আমি রীতিমতো অবাক হলাম। এতো সুন্দর। আমরা রুম পেলাম তিন তলার ৩০৩ নাম্বার রুমটা।
লিফট দিয়ে উঠার সময় মনে পড়লো, সিরিয়াল কিলাররা এভাবে হোটেলে মেয়েদের এনে মেরে ফেলে। ও আমাকে ফেরে ফেলবে না তো। ওর হাতে সেই লাগেজ টা এখনো আছে। জানি না কী হবে আমার?
রুমে এসে ঢোকার পর ও জিজ্ঞেস করলো
– কিছু খাবে??
রুমটাও সুন্দর, বেশ বড়, জানালার কাছে বেড রাখা। টেলিভিশন আছে, এমনকি একটা ছোট্ট বারান্দাও আছে। খিদে তেমন পায়নি। তারপরও কিছু খেতে ইচ্ছে করছিল। তাই বললাম
– খাবো, চিকেন ভেজিটেবিল স্যুপ আর চিকেন ফ্রাই।
– বেয়ার না উইস্কি??
– আমি ওসব খাই না।
টেলিফোন একটা ছোট্ট টেবিলের উপর রাখা। ও ফোন করে খাবার অর্ডার দিয়ে দিলো।
আমি বললাম
– এখানে আনার কারণ?? মেরে টেরে ফেলবা নাকি??
– আজকে কি অমাবস্যাতিথি??
– আমি ওসব বুঝি না। মেরে ফেলতে চাইলে মারবা। তবে এমনভাবে মারবা যেন বুঝতে না পারে যে,আমার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।
ও সহজ স্বাভাবিক ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলল
– কেনো??
– পোস্টমর্টেম ব্যাপার টা ভয় লাগে। কাটাকাটি করবে এই দেহ। অনেক ব্যথা পাবো। কাকে কীসব বলছি, তার তো কোনো ফিলিংসই নেই।
– আচ্ছা, চেষ্টা করবো।
তারপর ও লাগেজ খুলে একটা বড় গামছা বের করলো। তারপর বাথরুম থেকে একটা ছোট্ট বালতি এনে আমার সামনে রাখলো। পানির ভিতরে গামছা রাখা। আমি বুঝতে পারছিলাম না ও কী করতে চাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম
– এটা দিয়ে কী করবা??
ও পানি থেকে গামছা তুলল তারপর গামছাকে চিপড়ায়ে বলল
– তোমার হাত পা মুছে দিবো। অনেকদিন গোসল করো না। মুছে দিলে আরাম পাবা রাতে ঘুমও ভালো হবে।
কথাটা বলে আমার অনুমতির অপেক্ষা না করে হাত টেনে ধরে মুছতে শুরু করলো। আমি অবাক হয়ে বললাম
– একি করছো? আমি করি।
কোনো কথা শুনলো না। সত্যি হাত পা মুছার পর আমার বেশ আরাম লাগছে। খাবার চলে আসার পর খেয়ে নিলাম।
বিয়ের পর মেয়েদের মনে মিশ্র অনুভূতির সৃষ্টি হয়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে হচ্ছে উল্টো।আমাকে ও মেরে ফেলবে এমন মনে হচ্ছে। কিন্তু ওর দৃষ্টি তো স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।
ও বলল
– তুমি খুব চিন্তিত। কারণ টা জানতে পারি??
– নাহ।
– আমি জানি শুনবে?
– নাহ।
– শুনো, তুমি ভাবছো আমি তোমাকে মেরে ফেলার জন্য এখানে এনেছি। বাসায় কেনো নিয়ে গেলাম না, এই প্রশ্নের উত্তর একটাই খুঁজে পেয়েছো। যেটা বললাম একটু আগেই। তবে উত্তর টা ভুল।
– সত্যটা বললেই হয়।
– বাসায় মা নেই।মা মাঝেমধ্যে হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায়। ধরো ১/২ দিন পর ফিরে আসেন। খোঁজার অনেক চেষ্টা করেও লাভ হয়না। প্রথম প্রথম ব্যাপার টা মেনে নিতে পারিনি। এভাবে বাসার বাইরে থাকা খুবই ভয়ের। পুলিশ এ জিডিও করেছিলাম। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
– তাকে জিজ্ঞেস করোনি?
– কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। সাইক্রাটিস দেখানোর অনেক চেষ্টা করেছি। কোনো লাভ হয়নি।
– সাইক্রাটিস কেনো??
– মানসিক সমস্যা হলে তো এরাই সেটা সমাধান করেন। আমার মায়ের মানসিক সমস্যাটা তীব্র রকমের খারাপ।
– দেখে তো মনে হলো না। খুবই স্বাভাবিক একজন মানুষ।
– তাকে দেখে কখনওই মনে হয়না। তুমি যেদিন আমাদের বাসায় এলে সেদিন কিন্তু সে একটাবারের জন্যও রুম থেকে বের হননি। আরেকটা কথা সে অনেক উদ্ভট কথা বলবে। বিশ্বাস করার ভান ধরবে কিন্তু ভুলেও বিশ্বাস করবে না। তার মন মানসিকতা খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়।
– আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
– কয়েকদিন থাকলেই বুঝতে পারবা। আর রান্নাটা নিজে করার চেষ্টা করো। আমাকে অন্তত বাঁচাও।
– তোমাকে তো আমার স্বাভাবিক মনে হয়না।
– দীর্ঘ সময় একজন মানসিক রোগী নিয়ে আছি বলে কথা। বাড়িতে সে কোনো কাজের লোক রাখতে দেয়না। এমনকি কোনো মিস্ত্রী আনতে পর্যন্ত দেয়না। পানি বা স্যানিটারি ঘটিত ঝামেলা হলে সারাক্ষণ সেই লোকের সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তার ধারনা তাকে কেউ মেরে ফেলবে। আরো যতো প্রকার অজুহাত আছে সব দেখাবে। যাই হোক, এগুলো বলার জন্যেই এখানে আনা।
– তুমি যে বললে, মা বাড়ি নেই।
– মা ফোন করে বলল নেই, আবার থাকতেও পারে। মূল কথাটা কি জানো??
– বলো।
– তোমার সাথে একান্তে কিছু সময় কাটাতে মন চাচ্ছিল।
– তোমার বাবার কী হয়েছিলো?
– পরে বলবো
ও আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার মুখোমুখি দাঁড়াল তারপর বলল
– ঘুমিয়ে পড়ো। যতো পারো ঘুমিয়ে নাও। আমাদের বাসায় গেলে তো ঘুম থাকবে না।
– ভূত কি আছে??
– আরে না, তোমার ভুল।

চলবে….!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ২২

0

ছায়া নীল!

২২.

Maria Kabir
সৌরভ আমার সামনে চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো। তারপর বলল
-একটা বাজে কিছু ঘটে গেছে। আমার ইচ্ছে ছিলো বলবো না। তারপর ভাবলাম বলে দেয়াটা ভালো।
– কী ঘটেছে??
– তোমার মা মানুষ টা কেমন তোমার মনে হয়??
– ভালো না।
– আমার মতে, খুব নিচুস্তরের একজন মানুষ। আমি তো খারাপ, আমার চেয়েও উঁচু মানের।
– কী ঘটেছে বলবা?? আর আমার মায়ের বদনাম আমার কাছেই করছো?
– আসলে সত্যিটা বলছি। তোমার মহীয়সী মাতা, তার সকল সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন। তারপর সেই টাকা নিয়ে ভেগে গেছেন।
– মানে?? বাবার সম্পত্তি মায়ের নামে ছিলো।
– যার নামে তারই তো সম্পত্তি। বসত বাড়ি আর যা যা ছিলো সব বিক্রি করেছেন। আর তোমার বাবা তোমার চিন্তায় ব্যাকুল। তার একমাত্র মেয়েকে কই রাখবে??
তোমার নানী বাড়িতে তোমার যাওয়া নিষেধ। আর অন্য কেউ নিতেও চায়না।
– আমাকে একটা চাকরী দিবে?? তোমার অফিসে??
– ইন্টার পাশে তো পিয়নের চাকরী। করবা??
– পেট চললেই হবে!
– আমার মা আর তোমার বাবা মিলে একটা উপায় খুঁজে বের করেছেন। সেটা হচ্ছে – আমার গলায় তোমাকে ঝোলাবেন। আমার আপত্তি নেই। দোষ আমারি তাই ভুগতেও হবে আমাকে।
– নাহ, তুমি যা করেছো তাতে আমি…
– তুমি কি ভেবেছো?? তোমার ইচ্ছায় সব হবে??
– মানে? কী বলতে চাও তুমি?? তোমার মতো একটা রাবিশকে বিয়ে করবো?
– হ্যা তাই করবে। তুমি আমাকে ছেড়ে যাবার মেয়ে না।
– যদি যাই??
– পারবে না।অফিস আজকে ৪ টায় ছুটি হয়ে গেছে।
হাতের ঘড়ি দেখে বলল
– এখন ৪.৩০ বাজে। ৩০ মিনিটের মধ্যে সবাই এখানে আসবে।
– আমাকে কাফন পড়াতে??
– নাহ বিয়ে পড়াতে আসবে। তারপর তোমার বাবা যেখানে চোখ যাওয়ার সেখানে চলে যাবেন। তারপর থেকে তুমি আমার।
– আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। আর ওই ভূতের বাড়িতে থাকবো না।
– কিছুদিন থাকতে হবে, এখানকার বাড়িটা বসবাসযোগ্য হতে আরো ৩ মাস লাগবে।
– আসুক সবাই বিয়ে আমি করছি না।
– আমি ১০০% শিওর তুমি করবে। আমার কাছে ৩ টা লজিক আছে। ৩ টাই শক্তিশালী লজিক। শুনবে?
– নাহ।
– শুনো। ১. তুমি আমাকে ছাড়া নিজেকে ভাবতেও পারো না।
২. তোমার বাবার চোখের পানি দেখে তুমি আমাকে ১ বার কেনো হাজার বার বিয়ে করতে রাজি হবে।
৩. তোমার উপর একমাত্র আমার অধিকার অন্য কারো না। আর অধিকার তুমিই দিয়েছো।
– উইল করে দিয়েছিলাম নাকি??
– হ্যা, অলিখিত উইল।
আমি কিছু বলতে যাবো তখন দরজায় নক পরলো। ও দরজা খুলে একটা লাগেজ নিয়ে আবার দরজা আটকে দিলো।
লাগেজ টা বিছানার উপর রেখে বলল
– এখানে বিয়ের শাড়ী আর গহনা আছে। পড়ে নাও। তোমার বাবার কাছে তেমন সময় নেই।
– আমি পড়বো না।
– আচ্ছা তোমাকে এই ফকিন্নি মার্কা পোশাকেই বিয়ে করবো। পরে আফসোস করবা এই ভেবে যে, ইশ আমার বিয়ের শাড়ি নেই ।
আরে মেয়ে খারাপ কিছু নেই। সব দামী দামী জিনিষ। তোমার তুহিন লোকটার আনা শাড়ীর থেকে দামী।
তুহিনের আনা শাড়ী আমি আগুনে পুড়িয়েছি।
আমি অবাক হলাম ওর কথা শুনে।
– বুঝতে পারছো না?? হাসপাতালে তো আর তোমাকে বিয়ের শাড়ীতে রাখবে না। আমাকে দিয়েছে। রাগটা বেচারা শাড়ীর উপর উঠিয়েছি।
আমি বাচাল প্রকৃতির মানুষ। প্রচুর কথা বলি।
বাবা চলে এলেন। ৩০ মিনিট হবার আগেই। সাথে আরো দুজন ছেলে আর হুজুর টাইপের একজন লোক। কথাবার্তায় মনে হলো সে সম্মানিত কাজি সাহেব।
বাবা আমার হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল
– মা রে আমাকে মাফ করিস। তোমার বাবা হওয়া সত্ত্বেও তোর কোনো ভরণপোষণ করার ক্ষমতা আমার নেই। তোর মা যা করলো।
– বাবা তুমি যেখানে যাবে সেখানেই আমি যাবো তুমি আমাকে সাথে নিয়ে চলো।
– নাহ, মা তুই এতো কষ্ট করতে পারবি না। তোর মেজো ফুপুর ছেলে একটা সোনার টুকরা ছেলে। তুই ওকে বিয়ে কর। আমি শান্তি পাবো।
– বাবা না।
– মা, মানা করিস না। এর চেয়ে ভালো কোনো উপায় আমি খুঁজে পাচ্ছি না। একটা চাকরী যে করবি সেটাও পারবি না।
– কেনো??
– মা আমার কথা মেনে নে। তুই ইনশাআল্লাহ সুখী হবি।
ফকিন্নি মার্কা পোশাক পড়েই কাবিননামায় সিগনেচার করলাম।
বাবা আমাদের দুজনকে দোয়া দিয়ে চলে গেলেন। বাবাকে আজকে নিস্ব লাগছে। আমারও কেমন যেন ফাঁকাফাঁকা লাগছে।
সৌরভ বলল
– নো টেনশন প্লিজ। তোমার বাবা ভালোই থাকবে।
কথাটা বলার সময় আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম। অবাক হলাম ওর চোখের ভাষা আমি বুঝতে পারছি না।
একটা মানুষ আমার সাথে এতো খারাপ কিছু করেছে আর আমি তার প্রত্যেকটা কথা মেনে নিচ্ছি। এমনকি ও যা যা বলছে তার বিরুদ্ধে কথা বললেও তা ঠিকি মেনে নিচ্ছি।
আমি এখন পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত যে, ও আগেও আমার উপর প্রভাব বিস্তার করতো, এখনো করছে এবং ভবিষ্যৎ এ করবেও।
আমি চাইলেও এটা উপেক্ষা করতে পারবো না।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ২১.

0

ছায়া নীল!

২১.

Maria Kabir
খাওয়া শেষ হবার পর ও বলল
– আমি এসব নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছি। তুমি একটু বিশ্রাম নাও।
– আর কতো বিশ্রাম নিবো?? আমি তো মোটা হয়ে ফেটে যাবো।
– তুমি কখনওই মোটা হবে না।
– কেনো??
– তবে বাবুর মা হলে হতে পারো।
ও চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর একজন লোক এসে এঠো বাসনকোসন নিয়ে গেলো। আবার বসে থাকা। ঘুমের ঝিমুনি তে চোখ বন্ধ হয়ে যাবার অবস্থা। ও দুমগ কফি হাতে নিয়ে আবার রুমে ফিরে এলো।
আমার দিকে একটি মগ দিয়ে বলল
– নাও ঘুম কাটবে।
কফির মগে চুমুক দিলাম, তেমন ভালো কফি না।
– আচ্ছা তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দিলা না কিন্তু!
– শুনো তাহলে… ওহ কফি ভালো হয়নি তাই না??
– নাহ ভালো না। এরে কফি বলে কেউ??
– আমি বানালাম ভাবলাম তোমার ভালো লাগবে ।
– ভালবাসি বলেই কি সবকিছুই ভালো লাগতে হবে?? তুমি তো আমাকে সহ্যই করতে পারাও না। কিছু হলেই…..
– শুধু বাহির টুকু দেখে বিচার করতে নেই। ভেতর টুকুও জানতে হয়।
– আমি তো আর এক্সরে মেশিন না।
– এক্সরে মেশিন হতেও হয়না।
– আমার উত্তর টা পাবো??
– তোমার ছবিটা যখন পেলাম তখন আমি টোটালি ডিপ্রেশন এ ভুগছিলাম। জীবনের অনেক বড় ধরনের স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল। একটা উপায় খুজছিলাম কীভাবে নিজেকে স্বাভাবিক রাখা যায়। মা আমাকে তোমার ছবি দেখিয়ে বলল ” দেখেছিস কতো সুন্দর?? ” ছবিটা দেখে আমি অবাক হলাম। কিশোরী এক মেয়ের চোখে কতো চঞ্চলতা খেলা করছে। সেই চোখেই হাসির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। ঠোঁটের কোণায় দুষ্টু হাসির ছোঁয়া।
নামটা তখনও আমার জানা ছিলো না। যখনি সময় হতো তখনি আমি ছবিটা দেখতাম। কিন্তু সামনাসামনি আসার সাহস ছিলো না। জানোই তো একটা প্রবাদ আছে – ঘর পোড়া গরু সিঁদুররাঙা মেঘ দেখে ভয় পায়।
তারপর ও কফিতে চুমুক দিলো। ওর চোখের দিকে তাকাতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে ওর চোখের ভাষা পড়ি। কিন্তু ও আমার দিকে পিছন ফিরে আছে।
ও আবার বলতে শুরু করলো
– তীব্র ভালোলাগা কাজ করছিলো। আমাকে এক কাছের লোক বুদ্ধি দিলো। স্বপ্নের মাধ্যমে দেখা কর, কথা বল, মোহের জালে আটকে ফেল। তরুণী বয়সের মেয়ে এই বয়সে মেয়েরা আবেগকে বেশি প্রাধান্য দেয় , বাস্তবতাকে তারা তুচ্ছ মনে করে।
– স্বপ্নে কীভাবে সম্ভব??
– আমি পারি, অবশ্য তুমি পারবা না।
– কীভাবে পারো??? আমি তো কোনো সমাধানই পাচ্ছি না।
– ব্ল্যাক ম্যাজিক বুঝো??
– তুমি ব্ল্যাক ম্যাজিকের মাধ্যমে??
– হ্যা, প্রকৃতির নিয়মে তো আর হয়নি তাই ব্ল্যাক ম্যাজিক ব্যবহার করেছি। আসলে ওই সময়টা আমি ভালো থাকতে চাচ্ছিলাম কোনো একটা উপায়ে। কেউ বলেও দেয়নি যে এটা পাপ। ইভেন আমি জানতামও না যে এটা ব্ল্যাক ম্যাজিকের মধ্যে পড়ে।
যখন প্রথম একজন কিশোরী কে দেখলাম আমার দিকে ছুটে আসছে। আমি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। এতো সুন্দর কোনো মানুষ হতে পারে??
– আচ্ছা যখন জানলে যে এটা খারাপ তখন কী করলে??
– তখন আমি বন্ধ করে দিলাম। কিন্তু ততোদিনে তুমি আমার স্বভাবে পরিণত হয়েছো। কীভাবে স্বভাব ত্যাগ করি?? ভাবলাম সামনে আসবো কিন্তু…
– কী??
– আমি সত্যটা জানানোর সাহস পাই নেই তখন। কিন্তু আস্তে আস্তে তুমিও জেদ ধরতে শুরু করলে। আমি অনেক চেষ্টা করতাম স্বপ্নের ব্যাপার টা ভুলে থাকার। এমন অনেক রাত ঘুমের মেডিসিন খেয়েও কাটিয়েছি।
– সমস্যা কী ছিলো?? তুমি তো ভালবাসো আমাকে তাহলে??
– আমি অনেক বড় পাপ করেছি। তোমাকে নিয়ে খেলেছি। তোমার প্রতি ভালোলাগা ছিলো কিন্তু ভালবাসা ছিলো না। তাহলে সেটা কি খেলা না??
তুমি কষ্ট পেলে আমার আনন্দ হতো। মনে হতো আমি আমার প্রাক্তন কে কষ্ট দিচ্ছি। কিন্তু আস্তে আস্তে সেই আনন্দ টা আর থাকলো না। খারাপ লাগা শুরু হলো যখন বুঝতে বাকি থাকলো না, মেয়েটা আমায় পাগলের মতো ভালবাসে।
কথা গুলো শুনতে আমার খারাপ লাগছিলো না। আসলে অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমি। আমার অনুভূতি আর আগের মতো প্রখর নেই।
আমি জিজ্ঞেস করলাম
– তাহলে যে বললে, ভালবাস আমায়??
– তোমাকে বিয়ের সাজে দেখে হিংসা হচ্ছিলো। অন্য কারো হবে?? ওকে অন্য কেউ স্পর্শ করবে। ওর সেই চোখের চঞ্চলতা আমার হবেনা?? তারপর তো তুমি ভয়ংকর কিছু করে বসলা। কিছু হয়ে গেলে কী হতো?
তোমার সাথে মাঝেমধ্যে খারাপ ব্যবহার করি সেটা আসলে আমার নিজের উপরের রাগটা তোমার উপর প্রয়োগ করে বসি। চেষ্টা করি নিজেকে থামানোর। আসলে আমি মানুষ টা পুরোপুরিভাবে ভালো না।
– আমি এখন কী করবো?? আমাকে একটা পথ দেখিয়ে দাও।
– বুঝলাম না ঠিক??
– তুমি তো আমাকে গ্রহণ করবে না। আমাকে অন্য কেউ বিয়েও করবে না। বাসায় যাওয়া নিষেধ। আমার যাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ। তুমি যে খেলা খেলেছো তাতে আমি পুরোটা ধ্বংস হয়ে গেছি। একজনের প্রতিশোধ আমার উপর তুলে খুব ভালো কাজ করেছো। তার উপর তো তুলতে পারতে?? আমাকে কেনো নীল??
– আমি নিতে চাইনি কিন্তু কীভাবে যে করলাম আমি নিজেও জানি না। ভেতরের শয়তানটা জেগে উঠতো। বিশ্বাস করো শারলিন আমি প্রতিশোধ ব্যাপার টা ইচ্ছে করে করিনি।
– তুমি কী বলছো নিজে বুঝতে পারছো?? একবার এটা বলছো আরেকবার তার উল্টো টা বলছো।
– জানি না মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে। একটা কথা আমি স্পষ্ট ভাবে বলতে পারি সেটা হচ্ছে, এখন আমি আর তোমার কোনো ক্ষতি হোক চাই না।
– ক্ষতি হবার মতো আর কিছুই নাই।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ২০

0

ছায়া নীল!

২০.

Maria Kabir

কপাল ঘামে ভিজে আছে। ওকে ডাকা যাবেনা। আমার জন্যে এমনিতেই অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। এখন ঘুমানো যাবে না। টেলিভিশন ছেড়ে খুঁজতে থাকলাম কোনো ভালো মুভি হচ্ছে নাকি। পেয়েও গেলাম। ইংলিশ মুভি টাইটানিক। অসম্ভব ভালো একটা মুভি একবার দেখলে বারবার দেখতে ইচ্ছে করে। ভয় টা আস্তে আস্তে কেটে যেতে লাগলো। মুভিতে এতোই মগ্ন হয়ে রইলাম যে সময় সেটাও খেয়াল নেই।
মুভির শেষ মুহূর্তে আমার গাল বেয়ে পানি টপটপ করে পরছে। সৌরভ ঠিক এই সময়ে রুমে ঢুকলো। মনে হলো একটু অবাক হলো। জিজ্ঞেস করলো
– আবার কী হয়েছে??
কথা বলার সাথে সাথে ও টেলিভিশনের দিকে তাকালো তারপর হেসে বলল
– ওহ এই কাণ্ড!
চোখেরজল মুছে বললাম
– কত কষ্টের কাহিনী দেখেছো। রোজ, জ্যাককে ছাড়া কীভাবে থাকবে??
– আচ্ছা বুঝলাম। একটা প্রশ্নের উত্তর দাও।
– হুম, বলো।
– শারলিন, নীল কে ছাড়া কীভাবে থাকবে??
ওর মুখের দিকে তাকালাম। এই প্রশ্ন কেন করলো??
– বুঝলাম না?
– খাবার এসে যাবে তুমি গোসল করে নিতে পারো। না না থাক তোমার হাত ভেজানো যাবে না।
– নীল অনেকদিন গোসল করি না। কেমন বিশ্রী লাগছে।
– শারলিন আর মাত্র ২ দিন। তারপর পুকুরে লাফাবা তাতেও কিছু হবেনা।
– পুকুর কই পাবো??
– আমাদের বাসায় আছে। হাত মুখ ধুয়ে নাও। আমি খাবার রেডি করছি।
হাত মুখ ধুয়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি বিছানার উপর চাদর বিছিয়ে খাবার রাখা হয়েছে।
আমাকে দেখে বলল
– পিওর বাঙালি খাবার। কোনো হোটেল থেকে আনা না।
– তাহলে তুমি রেঁধেছ??
– আমার দ্বারা সম্ভব না। আমাদের পিয়নের বউ হেব্বি রান্না করতে পারে। ওনাকেই ঠিক করা আমার।
– বুঝেছি।
খাবার খাওয়ার সময় ওকে বললাম
– আমার সেই ভয় পাওয়ার কারণ টা জানো??
– আমি একটা কারণ খুঁজে পেয়েছি। অবশ্যই তুমিও পেয়েছো। তোমার টা আগে শুনি।
– তোমাদের বাসায় খারাপ কিছু আছে। ভূত টাইপের।
– তোমার হাতের রক্ত খেতে চেয়েছিলো??
– হুম।
আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। সেই রাতের কথা মনে পড়ে গেলো।
– তুমি খাও। আমি বলছি কারণটা কী। তোমার ভেতর এই ধরনের ভয় অনেক আগে ঢুকে গেছে। মানুষের মস্তিষ্কের একটা অংশে এই ভয়টা জমা থাকে। যখন ওই ধরনের অর্থাৎ একটু পুরাতন বাড়ি বা গল্পে, মুভিতে ভূত থাকার আলামত বলে দেয় ওরকম কিছু দেখলেই সেই ভয়টা জেগে উঠে।
তারপর ও চুপ হয়ে গেলো। আমার কথা গুলোতে বিশ্বাস হচ্ছে। ছোটোবেলায় দাদীর কাছ থেকে অনেক ভূতের গল্প শুনেছি। এমনকি আমি প্রচুর হরোর মুভিও দেখি। ও আবার বলল
– আমাদের বাড়িটা অনেক পুরাতন। ভাঙা চোড়া তাই তোমার কাছে ভুতুড়ে মনে হয়েছে। মস্তিষ্কের সেই ভয় তোমার ঘুমের ঘোরে হানা দিয়েছে। তাছাড়া আর কিছুই না।
– সত্যি তো??
– হ্যা অবশ্যই। ভয়টাকে জয় না করতে পারলে তোমাকে সেই ভয় তাড়া করে ফিরবে।
– বুঝলাম না??
– মনে করো আমার রুমে তোমার আর একা ঘুমানো সম্ভব না। ভয়টাকে জয় না করতে পারলে একসময় তুমি কোনো রুমেই একা থাকতে পারবে না।
– একটু আগেও চোখ বুজেছিলাম কিন্তু আবার সেই হাত…
– বলেছি না তোমাকে।
– এখন কী করতে হবে বলো??
– কোনো সাইক্রাটিসই বলতে পারবে। আমি তো এটুকু জানতাম তাই বললাম।
– নীল আমাকে সাহায্য করো। আমি আর পারছি না, আমি ক্লান্ত।
– এতেই তুমি হেরে গেলে?? তুমি তো এতো সহজে হার মানার মেয়ে না।
– আচ্ছা একটা প্রশ্ন করবো ঠিক উত্তর দিবে??
– হ্যা করো।
– স্বপ্নের ব্যাখ্যা টা আমাকে দিলা না। আমি জানতে চাই কীভাবে???
– বলবো। আগে খেয়ে নাও। শান্তি মতো বসে বলা যাবে।

চলবে………!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১৯.

0

ছায়া নীল!

১৯.

Maria Kabir

তাড়াতাড়ি করে ব্রাশ করে, পোশাক পাল্টে নিলাম। খুদা লেগেছে খুব, খেতে বসবো তখন সৌরভ হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলল
– সময় নেই, এখন খেতে হবেনা।
ফুপু বললেন
– এতদূর যাবে না খেয়ে কীভাবে থাকবে??
– বাইরে থেকে খাবার কিনে দিবো বাট এখন সময়ের বড় অভাব।
না খেয়েই আমাকে গাড়িতে উঠতে হলো। ও গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল
– আমার পাশে তোমাকে বসাই না কেনো জানো??
– নাহ, আমার মাথায় তো জট নেই।
– তুমি পাশে থাকলে মনে হবে তাকিয়ে থাকি তারপর এক্সিডেন্ট হবে…!
– ভালো তো মরে গেলেই ভালো। আমার খুদা লাগছে সৌরভ।
– বুজেছি কিন্তু সময় ছিলো না।
গাড়ি তো সে ঝড়ের বেগে ড্রাইভ করতে শুরু করলো। এদিকে পেটে খুদা তার উপর এতো স্পিডে গাড়ি চলছে, কেমন লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না।
গাড়ি থেমে গেলো। সৌরভ বলল
– নামো, এখানে নাস্তা করে যাওয়া যাবে।
ছোটোখাটো রেস্টুরেন্ট এর মতো একটা হোটেল। একে হোটেল বলবো না রেস্টুরেন্ট বলবো??
ও বললো
– নিশ্চয়ই কনফিউজড তুমি এটা হোটেল না রেস্টুরেন্ট ভেবে??
– হ্যা, আমি না বুঝতে পারছি না।
– হাফ রেস্টুরেন্ট হাফ হোটেল।
আমরা বাইরে চেয়ার টেবিল পাতা ওখানেই বসলাম।
– শুনো খিচুড়ি অর্ডার দাও আর সাতে ডিম পোঁচ।
– ওকে।
খাবারের জন্য অপেক্ষা করছি ৫-৬ জন ছেলে আমাদের পাশের টেবিলে এসে বসলো।
আমি চুপচাপ বসেই ছিলাম আর ও মোবাইলে কী যেন করছিলো।
ছেলে গুলো খুব বাজে বাজে কথা বলছিলো আর হাসছিলো। বেশিরভাগ কথা গুলোই মেয়েলি বিষয়ক। এইখানে আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মেয়ে নেই।
সৌরভের সামনে আমার লজ্জা লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো গাড়িতে ফিরে যাই। সৌরভ হয়তোবা খেয়াল করছে। ওর চোখমুখ শক্ত হয়ে যাচ্ছিলো। খাবার খেয়ে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।
হাসপাতালে এসে সরাসরি ডাক্তারের কাছে চেকাপ করালাম। মেডিসিন চেঞ্জ করে দিলেন। আর আমাকে উদ্দেশ্য করে ডাক্তার বললেন
– পুলিশ কেস হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু মিস্টার সৌরভের রিকুয়েস্টে করি নাই। বুঝেছেন??
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। তারপর মেডিসিন কিনে সৌরভ বলল
– আমার অফিসে কাজ আছে।
– আমি কই যাবো??
– তুমি আমার সাথে থাকবা তারপর একসাথে বাসায় যাওয়া যাবে।
ওর অফিস রুমটা সুন্দর বিশেষ করে সাজানোটা।সৌরভ কে বললাম
– চেয়ারে বসে থাকতে হবে??
সৌরভ আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে অফিস রুমের উত্তর কোণার দরজা খুলে ভিতরে নিয়ে গেলো।
– আমার বিশ্রামকক্ষ। তোমার জন্য উন্মুক্ত। এখানে বসে টেলিভিশন দেখো, ফ্রিজে খাবার আছে খাও। আর বোরিং লাগলে আমি তো আছি।
ওর অফিস বিল্ডিং টাও সুন্দর। দোতলা ভবন, নিচতলায় গাড়ি পার্ক করা হয় আর দোতলায় বিশাল হল রুমে কর্মকর্তা রা কাজ করছে।
– এই শুনো না।
– বলো কী বলবা??
– তুমি নিজেই এই ব্যবসা খুলেছো??
– বাবার ছিলো। একা ভালো লাগছেনা এখানে থাকতে??
কথাটা বলে ও আমার কপালের চুলে হাত দিয়ে বিলি কাটতে শুরু করলো।
– নাহ।
ও আরেক হাত দিয়ে প্যান্টের পিছনের পকেট থেকে পিস্তল বের করে বিছানার উপর ছুড়ে মারলো। তারপর বলল
– মেজাজ গরম হয়েছিল এতক্ষণ।
– কেনো??
– থাক বাদ দাও। আমি যাই অনেক কাজ বাকি আছে।
ও চলে গেলো। বিছানার উপর শুয়ে টেলিভিশন ছাড়লাম। কিন্তু ঘুম আসছিলো। তাই টেলিভিশন অফ করে চোখ বুজলাম। চোখ বুজার সাথে সাথেই সেই বিশ্রী হাত ভেসে উঠলো।
সাথে সাথে চোখ খুললাম। কিন্তু আশেপাশে তো কিছুই দেখছি না।

চলবে…..!

#Maria_kabir