Thursday, June 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2404



ছায়া নীল! ১২

0

ছায়া নীল!

১২.

Maria Kabir
সৌরভ গ্লাসের পানিটুকু এক চুমুকে শেষ করে টেবিলের উপর গ্লাস রেখে বলল
– উমম তোমার কী মনে হয়??
– আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছি। তার উত্তর দাও।
গ্লাসটাকে হাত দিয়ে নড়াচড়া করছে, তারপর কিছুক্ষণ ভাবলো। কী ভাবছে জানি না। আমি বললাম
– কী উত্তর দিবে?
– তুমি আমার ২য় নাম্বার প্রেমিকা!
– আমার পরেও তো অনেক আছে তাই না?
– হ্যা আছে।
– তোমার প্রথম প্রেমিকার নামটা শুনি? আর ব্রেকাপ এর কারণ?
– নাম? আচ্ছা তুমি পুরোনো কথা উঠাচ্ছো কেনো?
– উত্তর চাই আমি বুঝেছো?
– ওর নাম বৃষ্টি ! ব্রেকাপ এর কারণ, “আমাকে তার আর ভালো লাগেনা। এক জিনিষ আর কতদিন?? আমার সাথে নাকি তার কোনো মিলই নেই! আমার প্রতি তার আর কোনো ফিলিংস নেই! ”
– শুধু ওর দোষ দিচ্ছো কেনো? তোমার দোষ নেই বুঝি?
– নাহ ছিলোনা, কারণ ও আমার প্রথম ভালবাসা। আমার জীবনে যখন ভালবাসা নামক অনুভূতি টা ওর হাত ধরেই এসেছে। ওকে আমি যতোটা ভালবেসেছি, ততোটা তোমাকে অনন্তকাল ভরেও বাসতে পারবো না।
– আমার পরে কারা আছে শুনি না তাদের নাম?
– এতো নাম মনে নাই। ফোনে নাম্বার সেভ করা আছে পরে দেখে নিও।
– আমার এখানে কেনো এসেছো?
সৌরভ মনে হলো অবাক হয়েছে আমার প্রশ্নে!
– আমার মামা বাড়ি তাই এসেছি।
– এতদিন কেনো আসনি? হঠাৎ আমার বিয়ের দিনই হাজির??
অনেকক্ষণ চলে যাবার পরও এই প্রশ্নের উত্তর পেলাম না। ও গ্লাস টাকে নিয়েই ব্যস্ত আছে। আমার সাথে তাহলে এত নাটক করার কী দরকার ছিলো? আমাকে যদি ভাল নাই বাসতে পারলো তাহলে আমার এখানে কেনো এসেছে?
আমি দ্রুত চেয়ার ছেড়ে উঠতে গিয়ে টেবিলের সাথে কাটা হাতে ব্যথা পেলাম। কী যে অসহ্যকর ব্যথা। সৌরভ সাথে সাথে উঠে আমার হাত ধরে বলল
– একটু সাবধানে থাকলেই পারো।
আমি ওর হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বললাম
– যথেষ্ট হয়েছে নাটক আর ভাঁওতাবাজি। আমার সাথে অনেক মজা করা হয়েছে তোমার। এখন আর নাটক করতে হবে না।
– সত্যিটাই তো বললাম। আর যাকে আমি ভালবাসি তার কথা শুনতে চেয়েছো তাই বলেছি।
– খুব সহজ না তোমার কাছে এসব তাই না?
– আরে আমি তো জাস্ট মজা করেছি স্বপ্নে, আর তুমি সেটাই সিরিয়াসলি নিয়ে এতো মহাকান্ড করে বসলে।
– তোমার কাছে মজা ছিলো, আমার কাছে না।
– দেখোই না বৃষ্টি আমাকে ছ্যাকা দিয়েছে বড়লোক এক ছেলের জন্য। আমি তো তার বাস্তব জগতের ছিলাম তাও চলে গেলো।
তাই আমি ভাবলাম তুমিও তাই করবে।
– বের হও বাসা থেকে এখনি।
– আহারে সত্য কথা সহ্য হচ্ছে না। আমার আরো অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে। তবে তোমার ঝামেলার জন্য তাদের সময় দিতে পারছি না।
– তুমি গতকাল বললা, আমাকে ভালবাসো। আবার আজকেই এই কথা বলছো?
– আরে ওটা সান্ত্বনা ছিলো। তা না হলে পরের মেয়ে মইরা গেলে একটা বিশ্রী ব্যাপার।
– আমার তোমার সান্ত্বনা লাগবে না। ধ্বংস তো করেই ফেলছো আমাকে, এখন কীসের জন্য ওয়েট করছো?
– আসলে আমি নিজেও জানি না কী কারণে আমি এখনো তোমার আশেপাশে? আমি চাচ্ছি চলে যেতে বাট পারছি না। কিছু একটা তোমার দিকে আমাকে টানে। আগে তো একটা নেশার মতো ছিলা।
– নেশা কেটে গেলে আমিও কেটে যাবো।
– দারুণ একটা কথা বলেছো। নেশা না কাটা পর্যন্ত আমি যাচ্ছি না।
আমি রান্নাঘরে গিয়ে তরকারি কাটার চাকু এনে ওর হাতে দিয়ে বললাম
– তোমার তো যাওয়ার ইচ্ছা নেশা কবে কাটবে তার ঠিক নেই তার আগেই আমার গলায় খুব জোড়ে একটা পোচ দাও। ব্যাস, সমস্যা সমাধান।
চাকুটা সৌরভ হাতে নিয়ে বলল
– ভালো ধার আছে। তুমি নিজেই তো সাহসী এসব ব্যাপারে। আমাকে শুধুশুধু এসব উটকো ঝামেলায় জড়াচ্ছো কেনো?
– আরে এদেশে আসল খুনি কে পুলিশ ধরতে পারেনা। আর তুমি তো ভালো মানুষ না যে ধরা খাবে।
ও চাকুটা আমার গলায় ধরে বলল
– আমি কিন্তু তোমাকে সত্যি মেরে ফেলতে পারি।
– জানি তো।
– না পারবো না। নেশা কাটুক তারপর জাহান্নাম এ যাও আমার দেখার বিষয় না।
– এখনি বাসা থেকে বের হও।
– যেতে ইচ্ছে করছে না। তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
– সৌরভ প্লিজ আমাকে সত্যিটা বলো। আমার না মাথা ফেটে যাচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে, খুব।তুমি কি পাগল? একেক সময় একেকটা কথা বলো?
– আরে আমি তো বললামই।
– সৌরভ আমি না তোমাকে খুব ভালবাসি।
হাতের আংগুল গুলো দেখিয়ে বললাম
– দেখোই না তোমাকে কাছে পাবার জন্য আংগুলে আলপিন ফুটিয়েছি। জানো তোমার জন্য আমি অনেক কষ্ট করেছি।
– আমিও করেছিলাম লাভ হয়নি।
– সৌরভ আমি তোমার ভালবাসা না প্রয়োজন? প্লিজ একটা উত্তর চাই আমি। তারপর আমি আর তোমাকে আমার কাছে আসতে বলবো না।
– কোনোটাই না। তুমি আমার স্বভাব।রোজ তিনবেলা তোমার সেই ছবিটা না দেখলে ভালো লাগেনা। দেখতেই হবে। এটাই স্বভাব। তোমাকে স্বপ্নে আনতে হবে এটা আমার স্বভাব।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১১.

0

ছায়া নীল!

১১.

Maria Kabir
আসলে সত্য অনেক তিতা হয়। যেটা হজম করা খুব কষ্টের। কিন্তু একবার হজম হয়ে গেলে তারপর আর সেই তিতা আর গায়ে লাগে না। ও যদি অন্যের শোধ আমার উপর নিতে পারে তাহলে আমি আমার শোধ কেনো ওর উপর নিতে পারবো না। ও আমাকে তিলে তিলে ধ্বংস করেছে। ওর জন্য আমাকে প্রতিবেশীরা পাগল ভাবে। আমি নাকি খারাপ মেয়ে। ও আমাকে ছেড়ে দেবার জন্য যতবার চেষ্টা করবে আমি ওকে ততবার নিজের দিকে টানবো।
আমি ওকে এতো সহজে চলে যেতে দিবো না। একমাত্র ওর জন্য আমার পুরো পরিবারকে কথা শুনতে হয়েছে।
আমাকে নিয়ে খেলেছে আমিও এই খেলা তে হারছি না।
মনে হচ্ছিলো ফোন ভেঙে ফেলি কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো ফোন ভাঙলে নতুন ফোন কবে পাবো তার ঠিক নেই। আর মা চলে আসলে তো আমার খাওয়া দাওয়াও বন্ধ করে দিতে পারে। ফোন তো দূরে থাক।
এতো খেলা খেলেও আবার বলে বিশ্বাস ভাঙতে পারবে না।
ওকে ভালবাসছি তো ওকে আমার করেই ছাড়বো। বদনাম হয়েছি তো ওকে নিজের করেই ক্ষান্ত হবো আমি।
ফোন টাকে বালিশের নিচে রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
কিন্তু বারবার মাথায় এক চিন্তাই আসছে ও বাসায় গেছে তো নাকি এখনো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে??
মোবাইলে টাইম দেখলাম ১.২৫ বাজে। এই সময় ছিনতাই কারী থাকে, খারাপ লোক থাকে, ওর যদি খারাপ কিছু হয়ে যায়।
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাংলো বাবার ডাকে। বাবা বললেন
– নাস্তা টেবিলে রাখা আছে আর পাশে মেডিসিন রাখা আছে খেয়ে নিও।
বাবাকে দেখে মনে হলো কোথাও যাবে। বাবাকে বললাম
– কোথাও যাচ্ছো??
বাবা বললেন
– তোর মাকে নিয়ে আসতে যাই। তুই কোনো কাজ করার চেষ্টা করিস না।
বাবা চলে গেলেন আমি দরজা আটকে দিয়ে ব্রাশ করতে বাথরুমে গেলাম। ব্রাশ করে বের হবার পরপর মনে হলো ফোন বাজছে।
রুমে এসে ফোন রিসিভ করলাম হ্যালো বলবো আর জড়ালো কণ্ঠে সৌরভ বলল
– আমি সৌরভ বলছি।
– হ্যা বলো।
– তুমি বাসায় একা তাই না?
– হ্যা, আর এটা কার নাম্বার দিয়ে ফোন করেছো?
– আরে দোকানদারের নাম্বার। আমি বাসায় আসছি দরজা খোলো।
– এখন?
– হ্যা এখন।
ফোন কেটে গেলো। কী ঝামেলা রে। এ হুটহাট করে বাসায় চলে আসে কেউ একবার দেখলেই হয় কিয়ামত ঘটে যাবে তাও আমি একা।
দরজা খুলে দাঁড়িয়ে রইলাম। প্রায় ১০ মিনিট পর সৌরভ চোখ ডলতে ডলতে বাসার মধ্যে ঢুকলো। আমি দরজা আটকে দিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম
– এভাবে হুটহাট করে বাসায় চলে আসবা না।
– মামার বাড়িতে আমি আসতেই পারি তোমার কী?
– আমি একা তাই নিষেধ করছি।
কোনো কথা বললো না। সরাসরি আমার রুমে গিয়ে কী যেন খুঁজছে। সৌরভ কী খুজছো আমাকে বললেই হয়।
– তোমার মোবাইল চার্জার কই?
পড়ার টেবিলের ড্রয়ার থেকে বের করে দিলাম। ও মোবাইল চার্জ দিয়ে সোজা বাথরুমে চলে গেলো।
আমি খাবার টেবিলের চেয়ারে বসে রইলাম।
বাথরুম থেকে বের হয়ে বলল
– নাস্তা আছে??
– হ্যা আছে।
এদিকে আমার পেটে ইঁদুর ছুটাছুটি করছে। খাবার তো মনে হয় আমার যোগ্য।
ও আমার পাশে চেয়ার টেনে বসলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম
– রাতে কই ছিলে??
– রাস্তার উপর ঘুমিয়ে ছিলাম।
– বাসায় কী সমস্যা???
– সমস্যা না, এমনি যেতে ইচ্ছে করেনি তাই যাইনি।
– যদি খারাপ কিছু হয়ে যেতো তখন??
– হয়নি তো দেখছোই তাহলে প্রশ্ন করে কী লাভ???
– এমন আর করবে না।
– তোমার রুমে এসে পড়ে থাকবো তখন পাড়ায় বদনাম রটে যাবে। অমুকের মেয়ে ঘরে ছেলে নিয়ে থাকে।
– শুনো এমনিতেই আমার বদনামে পুরো পাড়া ভরপুর। যাকেই জিজ্ঞেস করবা সেই বলবে শারলিন একটা নিকৃষ্ট মেয়ে।
– sorry !
– জানো সেটা কার জন্য??
– আমার জন্য তাই তো।
– হ্যা। নাস্তা করবে বলে নাও টেবিলে খাবার আছে খেয়ে নাও।
– আসো ভাগ করে খাই।
– নাহ আমার খাওয়ার দরকার নাই। তোমার কথায় পেট ভরে গেছে।
ও খাবারের প্লেট সামনে নিলো। বাবা অনেক খাবার রেখে গেছেন। হোটেল থেকে আমার পছন্দের খাবার কিনে এনেছেন। পরোটা আর ডিম ভাজি আর ডাল।
খুব খিদে পেয়েছে কিন্তু ওকে তো বলেই ফেললাম আমি খাবো না।
সৌরভ পরোটা ছিড়ে ডিম দিয়ে আমার মুখের সামনে ধরলো তারপর বলল
– আর এমন হবে না। সত্যি শারলিন আমি আর করবো না।
– আমার খিদে নেই।
– তোমার মুখ দেখেই মনে হচ্ছে কিছুই খাওনি আর তোমার খুব খিদে পেয়েছে।
পরোটার টুকরো টুকো মুখে নিলাম। ও খাচ্ছে আমি হাত দিয়ে নিতে গেলাম, তখন ও বলল
– আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
পুরো প্লেট ফাকা হয়ে যাবার পর সৌরভ বলল
– পেট ভরেছে??
– হ্যা, তোমার?
-হ্যা।
মেডিসিন খেয়ে নেবার পর সৌরভ কে বললাম
– একটা প্রশ্ন করবো ঠিক তার উত্তর দিবে??
সৌরভ পানির গ্লাস হাতে নিয়ে বলল
– হ্যা করো।
– আমি তোমার কত নাম্বার প্রেমিকা???

চলবে….!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১০.

0

ছায়া নীল!

১০.

Maria Kabir
সৌরভ বলল
– আমি তো ভূত না যে তুমি ভয় পাবে??
– হুম
– তাহলে ভয় কেনো পেলে??
– এমনি।
– এমনি আবার কেউ ভয় পায় নাকি??
– আরে আমি ভয় পাই নাই।
– কী বলো?? একটু আগেও তো বললে ভয় পাইছো।
– শুনো আমি ভয় পাইছি । কারণ টা হলো – এতো রাতে এভাবে কারো বাসায় আসে??
– কারো বাসায় না মামার বাড়ি আমার।
মাতালরা নাকি সত্য কথা বলে। আমার যে ব্যাপার গুলোতে কনফিউশন আছে এখন জিজ্ঞেস করলে সত্যটা জানা যাবে।
– আচ্ছা সৌরভ এতো দিন তোমাদের তো আমাদের বাসায় আসতে দেখলাম না। কেনো??
– খুব সোজা, তোমাদের সাথে আমাদের ঝগড়া ছিলো।
– কী নিয়ে ঝগড়া ছিলো??
– তুমি জানো না???
– আমি জানলে তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম না।
– জানো কখন তোমায় প্রথম দেখেছিলাম??
– হ্যা স্বপ্নে!
ও প্রসঙ্গ পাল্টাতে চাচ্ছে যেভাবেই হোক আমাকে সব খবর বের করতে হবে।
– না না স্বপ্নে না। তোমার ছবি মা আমাকে প্রথম দেখিয়েছিলেন।
– কী??? দেখে কী মনে হয়েছিলো?
– শুনো তখন আমি ইন্টারে পড়ি আমার প্রথম প্রেমের ফুললি ব্রেকাপ হলো।
তারপর চুপ। কোনো সাড়াশব্দ নেই। কুকুরের ঘেউ ঘেউ কানে আসছে।
সৌরভ এমনভাবে কথা বললো তাতে মনে হলো ও ফিসফিস করে বলছে।
– হুশশ শারলিন কথা বলে না। কথা বললে কুকুর কামড়ে দিবে। তারপর ৭ টা ইনজেকশন দিবে।
কী বলবো আমি ওকে??
ও আবার বললো
– কুকুর টা চলে যাচ্ছে বুঝছো?? এইতো এইতো যাচ্ছে…
– তুমি এখনো বাসায় যাও নি??
– নাহ আসছিলাম তোমার কাছে তুমি তো খেদিয়ে দিলে!
আল্লাহ আমি ওকে খেদিয়েছি নাকি ও নিজেই বের হয়েছে।
– বাসায় যেতে কতক্ষণ লাগবে??
– সারারাত লাগবে।
– কেনো তোমার বাসা কি আমাজানে???
– নাহ, আমি বাসায় যেতেই চাই না এখন।
– ব্রেকাপ এর পর কী হলো??
– প্রথম প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে আমি ব্যাকা হয়ে গিয়েছিলাম।
– তারপর??
– তোমার ছবি দেখে ভালো লাগলো। তারপর ভাবলাম একটু মজা করি।
– তুমি আমাকে ভালবাসো না মজা করেছো আমার সাথে??
– নাহ রে পাগলী। আসলে বিশ্বাস করার ক্ষমতা ছিলো না। ভালোই কাটছিলো তুমি সুইসাইড করে বসলা সব ফিনিশ।
– ফিনিশ না শুরু।
– না তুমি বুঝবা না এটাই ফিনিশ।
– তাহলে বুঝাও।
– শুনো কালো অন্ধকার রাতে আমি একা রাস্তায়। খুব মজার ব্যাপার।
– তুমি বাসায় যাও তো।
– বাসায় তুমি নাই কী করতে যাবো??
– এতদিন বাসায় কেনো যেতে??
– ওহ শারলিন তুমি তো অনেক স্মার্ট!
– ফুপু আমার ছবি কীভাবে পেয়েছিলো?
– শুনোনা শারলিন। যখন সত্যি ভালোবেসে কষ্ট পেলাম। জানো ও আমার জীবন টাকে পুরো নষ্ট করে দিয়েছিলো। তখন মনের ভেতর আগুন জ্বলছিলো। তোমার ছবি যখন পেলাম তখন তুমি ক্লাস ৭ বা ৮ রাইট??
– হ্যা। ক্লাস ৭ এর মাঝামাঝি তে।
– তোমার সেই পিচ্চি পিচ্চি চেহারাটা আমাকে পাগল করেছিলো কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম আমাকে যেমন ঠকিয়েছে আমিও একজনকে ঠকাবো। আমাকে নিয়ে ও যেমন খেলেছে আমিও কারো সাথে খেলবো।
কথাগুলো আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছিলো। ও এইজন্যই আমাকে এই অবস্থায় বলতে চায়নি। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে ওকে জিজ্ঞেস করলাম
– তুমি তো সামনাসামনি এসেই আমার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারতে। স্বপ্নের ব্যাপার টা কেনো করলে?? স্বপ্ন বাদে আসলে তুমি তো আমাকে বেডেও নিয়ে যেতে পারতে।
– শারলিন আমি সেটা জীবনেও করতে পারবো না। আজকে পারলেই আমি পারতাম। তুমি আমাকে যে পরিমাণ বিশ্বাস করো। আমি অবশ্যই এর ফায়দা নিতে পারতাম।
– কেনো নিলে না???
– তোমার চোখে আমার জন্য যে ভালবাসা, বিশ্বাস দেখেছি আমি চাই না ভাঙতে । আমি এই প্রথম মা ছাড়া অন্য কারো চোখে এতো ভালবাসা আর বিশ্বাস দেখেছি।
– তুমি তো আমার সাথে মজা করেছো তাহলে….
– হ্যা করেছিলাম কিন্তু……
– কিন্তু কী???
– পরে বলবো!
এই কথা এখন আর বের করা যাবেনা।
– আচ্ছা তুমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা টা দিবে??
– কীরকম ব্যাখ্যা??
– আমার ছবি দেখার পর তুমি স্বপ্নে কীভাবে এসেছিলে???
– আরে ওটা একটু কঠিন….
– বলোই না।
– ব….
আর শুনতে পারলাম না। ফোন কেটে গেলো । য ধুত্তুরি ফোন কেটে যাওয়ার সময় আর পেলো না।
এখন ওর আবার ফোন করার অপেক্ষায় থাকা ছাড়া উপায় নাই।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর গুলোই পেলাম না।
একজন মানুষ দিনের পর দিন আমার সাথে অন্যের কর্মের প্রতিশোধ তুলেছে। আর আমি সেটাকে ভালবাসা মনে করে বসে আছি।
কেউ খেলা করেছে আর আমি নিজেকে শুধুই কষ্ট দিয়েছি।
আমি এতো বড় ভুল করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত কীভাবে করতে হবে আমার জানা নেই।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ৯.

0

ছায়া নীল!
৯.

Maria Kabir
হঠাৎ অনুমতি চাচ্ছে কেনো?? ও কি কোনো বিষয় নিয়ে টেনশনে আছে??
মেসেজ রিপ্লে দেয়ার মতো ব্যালেন্স নাই। এখন বাবার কাছে ফোন চাইলে সন্দেহ করতে পারে। কী করবো বুঝতে পারছি না।
আবার মেসেজ টোন বাজলো। মেসেজ চেক করলাম ওর মেসেজ। লিখেছে
– আমাকে এখন সহ্য হয়না??
আরে এ কী বলতেছে??? আমার ওকে কেনো সহ্য হবে না?
ফোন হাতে নিয়ে বসে রইলাম। ঘুমাতেও পারছি না।
মহাপাগলের পাল্লায় পড়েছি। ঝিমুচ্ছিলাম হঠাৎ করে ফোন বেজে উঠলো।
ওর ফোন, রিসিভ করলাম। আমি আগে কথা বললাম
– সৌরভ…
– কী আমাকে তোমার পছন্দ হয়না এখন???
– কেনো পছন্দ হবেনা??
– তুমি এতো সুন্দর….
– তো কী??? তুমি এতো পাগলামি কেনো করছো???
– আমার ভালো লাগছে না। আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে!
– এখন এতো রাতে তুমি কীভাবে আসবে??
– শারলিন….
– হুম বলো!
– আমার জন্য তুমি অনেক কষ্ট সহ্য করেছো কিন্তু আমি তো কিছুই করিনি।
– এখন এই রাতে এগুলো নিয়ে আলোচনা করার সময় না।
– তুমি ঘুমাচ্ছো?
– নাহ।
– তুমি দরজা টা খোলো তো!
– মানে???
– তোমার বাড়ির দরজা খুলো। আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
– সৌরভ তুমি পাগলামি করছো কেনো???
– আমি সত্যি বলছি শারলিন।
– বাবা জানতে পারলে ঝামেলায় পড়বো।
– কোনো ঝামেলায় পড়বা না। দরজা খোলো।
– আচ্ছা।
কী বিশ্রী ব্যাপার, ও এতো রাতে আমাদের বাসায়। তাও বাবা জানে না। আমার তো মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
ফোন হাতে নিয়ে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
খুব আস্তে আস্তে দরজা খুললাম। যাতে কোনো শব্দ না হয়।
দরজা খুলেই দেখি ও দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে হাতের গোলাপ ফুল আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
– নাও তোমার জন্য।
আমি ফুল হাতে নিলাম। ওর চেহারা কেমন কেমন লাগছে।
চুলগুলো কেমন আওলা ঝাওলা হয়ে আছে।
এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে আমার ভালো লাগছে না আবার বাসায়ও তো ঢুকাতে পারছি না।
বাবা ঘুমাচ্ছে, পুরো বাড়িতে আমি ধরা যায় একা।
সৌরভ বলল
– তোমার নীলকে ভিতরে যেতে দিবে না???
– হ্যা হ্যা আসো।
ও ভিতরে ঢুকে সরাসরি আমার রুমে চলে গেলো।
আমি তাড়াতাড়ি করে দরজা আটকে দিয়ে আমার রুমে এসে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম।
রুমে ডিম লাইট জ্বলছে। ওর হাটাচলা কেমন কেমন লাগছে।
আমি নিচু স্বরে বললাম
– তুমি কিছু বলবা???
– তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে জানো??
– দেখা হয়েছে আমাকে???
– আরে কই দেখতে পারলাম! একটু আলো জ্বালাও দেখি তোমাকে।
আমি লাইট জ্বালালাম। ও আমার কাছে এসে দাঁড়ালো।
উটকো গন্ধ নাকে আসলো। এরকম গন্ধ কেনো???
নাকে হাত দিয়ে বললাম
– এরকম গন্ধ কেনো???
– কিছু খেয়েছি তো তাই…!
– মদ তাই না??
ও আমার কপাল থেকে চুল সরিয়ে দিয়ে কপালে আংগুল বুলিয়ে দিচ্ছিলো। হাত এতো ঠাণ্ডা পুরো শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো।
– তুমি অনেক সুন্দর জানো তো??
– হ্যা জানি।
– রাগ করেছো??
আমি ওকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললাম
– দূরে থাকো!
– আমার স্পর্শ এখন ভালো লাগছে না??
– তুমি নেশাগ্রস্ত। স্বাভাবিক হয়ে আমাকে স্পর্শ করবে।
– আচ্ছা আচ্ছা আমি আর এমন করবো না।
– নেশা করার কারণ??
– অনেক খারাপ লাগছিলো।
– তুমি ডেইলি খাও তাই না??
– নাহ, যখন খুব খারাপ লাগে তখন দুই একটু খাই।
– আজকে খারাপ লাগার তো তেমন কিছুই হয়নি।
– আমার জন্য তোমাকে কতো কষ্ট করতে হচ্ছে!
– তাই বলে…
– আমি যাই, তোমাকে ডিস্টার্ব করবো না। তুমি ঘুমাও।
– বাসায় যেতে পারবে একা একা??
– হ্যা খুব পারবো। তুমি ঘুমাও আমি ঠিক বাসায় যেতে পারবো।
– আচ্ছা তুমি কী কারণে এসব ছাইপাঁশ খেলে??
– আরে সখী বলবো। তুমি ঘুমাও শারলিন।অনেক জ্বালাইলাম তোমারে।
ও চলে যাচ্ছিলো আবার ফেরত আসলো তারপর বললো
– তোমাকে তো দেখতেই পারলাম না।
– চোখ বুজে ছিলে নাকি??
– আরে তুমি এতো প্যাঁচাল পারলা তাই দেখতে পারলাম না।
– আচ্ছা আমি চুপ করলাম।
আমার চারপাশ দিয়ে ও ঘুরলো। সাত পাক ঘুরে যে বিয়ে করে আমার মনে হয় ও আমার সাত পাক ঘুরছে। আল্লাহ কী মহাপাগলের পাল্লায় পড়লাম।
হুট করে আমার কাটা হাত ধরলো।এমনিতেই ব্যথা তার উপর ও যেভাবে ধরেছে তাতে তো মনে হলো আমি শেষ!
দাঁতে দাঁত চেপে বললাম
– উরে আস্তে আস্তে গেলাম আমি!
– আরে sorry sorry!
ও নিজেই দরজা খুলে চলে গেলো।আমি পিছুপিছু গিয়ে দরজা বন্ধ করলাম।
গোলাপ ফুলটা এখনো আমার হাতে। ওর কর্মকাণ্ডে আমার এখন হাসি পাচ্ছে। শুনেছিলাম মাতালদের পাল্লায় পড়লে নাকি পাগল হয়ে যাবার মতো অবস্থা হয়।
হাতের ব্যথাটা বাড়ায় দিয়ে গেলো।
রুমে এসে লাইট অফ করে ডিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে আবার বিছানায় শুইলাম। আবার ফোন বেজে উঠলো, রিসিভ করলাম
– শুনো তোমাকে বিয়ে করার পর আমি আর মদ খাবো না।
আমি যাই বলবো তাতেই ও প্যাঁচাবে। তাই হ্যা, না দিয়েই কাজ চালাতে হবে!
– হুম
– আমি বাসায় যাচ্ছি। বুঝছো??
– হ্যা বুঝেছি।
– শুনো হাতে ব্যথা দিয়েছি তাই sorry!
– it’s ok.!
– ভয় পাইছো??
– হুম।

পুরেটা রাত আমার মনে হচ্ছে এভাবেই কেটে যাবে। ওর মদ খাওয়ার ফলাফল আগামীকাল পাবে। এখন কিছু থেকে কিছু বললে ও আবার বাসায় চলে আসবে।
কারে ভালবাসলাম আমি??

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল !৮

0

ছায়া নীল !৮.

Maria Kabir
আমি সৌরভ এর বুকের বাম পাশের উপর আমার ব্যান্ডেজ করা হাত রাখলাম। সৌরভ কিছুটা অবাক হলো। আমি ওকে বললাম
– আমার চোখের দিকে তাকাও
ও আমার চোখের দিকে তাকালো আমি ধীরে ধীরে বললাম
-আমি তোমাকে বুঝতে পারছি না। যা যা ঘটেছে তোমার আমার মাঝে তার কোনো সঠিক ব্যাখ্যা আমি পাচ্ছি না। প্লিজ সৌরভ হেল্প মি!
সৌরভ আমার হাতের উপর হাত রেখে বললো
– আমি বলবো তোমাকে কিন্তু এখন না।
– আমি সব গুলিয়ে ফেলছি। সবকিছু ধোঁয়াটে লাগছে আমার কাছে।
– মনে করো সবকিছু স্বাভাবিক আর কোনো ধোঁয়াটে কিছুই নাই।
– আমি পারছি না।
– একটু সুস্থ হও তারপর সময় করে বলবো।
– তুমি যেও না আমাকে একা ফেলে।
– আরে আমি তো আছি তোমার মাঝেই। তোমার মাঝেই আমি ছড়িয়ে আছি শুধু অনুভব করতে যতটুকু সময় লাগে।
মনে হচ্ছে কেউ আমাদের দিকে আসছে। আমি ওর থেকে দূরে সরে গেলাম আর সৌরভও দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
বাবা বারান্দায় এসে বলল
– ওরা তো এখন চলে যাবে তাই রাতের খাবার খেয়ে নিলে ভালো হয়।
সৌরভ বলল
– কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি তার উপর আবার রান্না কে করেছে???
– বাইরের থেকে খাবার কিনে এনেছি।
– আমরা বাসায় গিয়ে খাবো আপনার কষ্ট করতে হবে না।
সৌরভের কাঁধে হাত দিয়ে বাবা বলল
– নাহ বাবা তুমি যা উপকার করেছো সারাজীবন মনে রাখবো।
কথাটা শুনে আমার হাসি পেলো। আমার সুইসাইড এর কারণ টা বাবা জানলে কাঁধে হাত না রেখে গালে থাপ্পড় বসাতো।
জোড়াজুড়ির কারণে রাত ৮ টায় খেতে হলো।

সৌরভ চলে যাবার আগে আমাকে ওর ফোন নাম্বার দিয়ে গেলো আর বললো – যখন খুব মনে পড়বে তখন আমাকে ফোন করবে।
আমি বললাম – তুমি করবে না???
সৌরভ কী যেন ভাবলো তারপর বললো
– হ্যা করবো।
মেজো ফুপু আর সৌরভ চলে গেলো। পুরো বাসায় আমি আর বাবা।
বাবা আমার বিছানা গুছিয়ে দিয়ে বলল
– তুই ঘুমা আর কাল সকালে তোর মা আসবে।
কথাটা বলেই বাবা চলে গেলো। মা আসবে, জানি না আবার কতো বেশি মার খেতে হবে।
মা যে কেনো এমন করে বুঝিনা। আমাকে কেনো এতো বড়লোকের সাথে বিয়ে দিতে হবে???
বড়লোক দিয়ে কী হবে?? কেনো বুঝে না মা আমার শান্তি অন্যকিছুতে।
শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম হঠাৎ করে সৌরভের চেহারা টা চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
নীল নাম দিয়েছিলাম কোনো নাম খুঁজে না পেয়ে। নীল নাম দেয়ার মধ্যেও একটা লজিক আছে।
লজিকটা হলো – রাতের অন্ধকারে একমাত্র নীল রঙ টাই মিশে যায়।
রাধা ঘন শ্যামের সাথে রাতের বেলা দেখা করতে যাওয়ার সময় নীল রঙের শাড়ী পড়তেন। যাতে কেউ রাধার অস্তিত্ব বুঝতে না পারেন।
ঠিক তেমনিভাবে ও………
ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। নীলের নাম্বার। ফোন রিসিভ করলাম। হ্যালো হ্যালো করছি কিন্তু কোনো শব্দ আসছে না ওপাশ থেকে।
এতোবার হ্যালো বললাম তারপরও কোনো রেসপন্স নাই।
ফোন কেটে দিলাম হয়তোবা ঘুমায় আছে। হাতের আশেপাশে ফোন ভুলে চলে আসছে।ফোন পাশে রেখে চোখ বুজলাম সাথে সাথে আবার ফোন বেজে উঠলো।
এর মধ্যে আবার কাটা হাতে ব্যথা করতে শুরু করলো।
ওর ফোন, রিসিভ করলাম।
– হ্যালো
এইবার প্রথমে ওপাশ থেকেই আগে হ্যালো বললো। ওর কণ্ঠ তো এমন না। ফোনে তো অনেকের কণ্ঠে চেঞ্জ আসে।
ওর নাম্বার থেকে ও ছাড়া আর কেউই ফোন করতে পারেও না।
আমি বললাম
– এতো রাতে ফোন দিলা???
হাসার শব্দ কানে আসলো তারপর বললো
– কেবল ১১ টা বাজে এখন তো কেবল শুরু।
– কিছু বলবা???
– তোমার হাতের ব্যথা বেড়েছে মনে হয়??
– হ্যা, তুমি জানলে কীভাবে?? আমি তো বলিও নাই।
– আরে রাতে সবধরনের ব্যথা বাড়ে তাই বললাম।
– ওহ। তুমি কী করছো??
– আচ্ছা রাখি। তুমি ঘুমাও।
– এই শুনো কিছু বলবা???
– রাখো তো।
ফোন কেটে গেলো। আমি যে ফোন দিবো ফোনে টাকাও নেই।
জানি না আমি আমার জীবন কোন দিকে যাচ্ছে।
জানি না ভালবাসার ঢেউ আমাকে কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
আমার কেনো যেন কোথাও একটা খটকা লাগছে।
মেজো ফুপুর কাহিনী টা যেভাবেই হোক আমাকে জানাতে হবে!
কিন্তু সেটা কী হতে পারে????
ফোনে মেসেজ আসলো। মেসেজ চেক করলাম
সৌরভের মেসেজ – স্বপ্নে আমি আসতে পারি??

চলবে……….!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ৭.

0

ছায়া নীল!
৭.

Maria Kabir

আমি বললাম
-শুরুটা আমি করেছিলাম নাকি তুমি???তুমি আমার স্বপ্নে এসেছিলে, আমি তোমাকে ডেকে আনি নি। মনে পড়ে??? নাকি ভুলে গেছো???
– হ্যা আমিই শুরুটা করেছি। কিন্তু সামান্য স্বপ্নে যার অস্তিত্ব তার প্রতি এতোটা পাগল হওয়াটা ঠিক না।
– আমি কি একাই পাগল হয়েছি??? নাকি প্রতিটা স্বপ্নে তুমি আমাকে প্রতিবার তোমার দিকে টেনেছো???
ও চুপ করে আছে। কোনো কথা বলছে না।
আমি বললাম
– কী কোনো কথা নাই কেনো?? সামান্য স্বপ্ন না আমার কাছে। আমার কাছে অনেক বেশি দামী সেই শুরু থেকে আজকের স্বপ্নটা।
– শারলিন শান্ত হও।
– কেনো শান্ত হবো?? সত্যিটা সহ্য হচ্ছে না??
– তুমি অসুস্থ তাই।
– আমাকে যেহেতু তোমার প্রয়োজন নেই তাহলে আমাকে বাঁচালে কেনো???
– তুমি একজন মানুষ। চোখের সামনে একজন মানুষ কে সুইসাইড করতে দেখা যায় না।
– তুমি তো আমার সামনে ছিলে না।মিথ্যা কেনো বলছো???
– তোমার রুমের জানালার পাশে যে রাস্তা আমি ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তোমার জানালা খোলা ছিলো।
– আমার জানালার পাশে কী করছিলে??? আমি তো তোমার কেউ নই।
কথাটা বলে আমার খুব খারাপ লাগা শুরু হলো।
যার জন্য আমি এতো কিছু করলাম। নিজের শরীরকে শরীর মনে করিনি। দিনের পর দিন শুধু নিজেকে কষ্টই দিয়ে গেছি। শুধু ওকে কাছে পাবো বলে।
কিন্তু কী হলো?? সেই উল্টো আমাকে কথা শোনাচ্ছে।
কাঁদতে শুরু করলাম। তুহিন লোকটার সাথে বিয়ে ঠিক হবার পর থেকে অনেক কষ্ট ভুগেছি।
এই তো প্রথম না। এসএসসি এক্সাম দেয়ার পর থেকে কতবার যে,আমি বিয়ে ভেঙেছি আর মায়ের হাতে মার খেয়েছি তার হিসেব নাই।
আমি মাথা নিচু করে আছি। সৌরভ বলল
– কান্নাকাটি বন্ধ করো। এমনিতেই আজ ২ দিন যাবত অনেক স্ট্রেস এ আছি।
– আমি তো খুব সুখে আছি।
– তুমি ২ দিন যাবত অজ্ঞান হয়ে ছিলে। তোমার কিছু হয়ে গেলে……
– ভালোই হতো সব ঝামেলা শেষ হয়ে যেতো।
সৌরভ আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল
– তোমাকে সামনাসামনি এক পলক দেখবো বলেই আমি তোমার রুমের আশপাশ দিয়ে ঘুরাঘুরি করছিলাম। তোমার বারান্দায় এসে ঝামেলায় পড়ে গেলাম। ধরা খাওয়ার মতোই অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো। তুমি খেলে আছাড়।
আছাড় না খেলেই ভালো হতো। তোমার অবস্থা এতো খারাপ হতো না।
– তুমি কেনো আমার সাথে এমন করলে???
– প্লিজ একটু শান্ত হও না। পরেও জানা যাবে।
– পরে কেনো?? বলা তো যায় না পরে সময় টা নাও আসতে পারে।
– কী বললা তুমি??? এই শারলিন আবার কিছু করার চেষ্টা করলে সত্যি বলছি আমি কিন্তু চলে যাবো।
– তুমি এতদিন কেনো সামনে আসোনি??আর স্বপ্নের ব্যাপার টা মাথায় আসছে না। কীভাবে কী ???
– পরে একদিন। এখন চিন্তা করো তোমার মা কী করবে???
– মানে???
– তোমার তো জানার কথা না। তোমার এই মহান কাজে তোমার বিয়ে ভেঙেছে। ভালোই হয়েছে। কিন্তু বিশাল কেলেঙ্কারি হয়ে গেছে ।
– কী আর হবে??? আমি পাগল, মানসিক রোগী বা অন্য কারো সাথে লাইন আছে বা ভূতে ধরেছে।
সৌরভ হেসে বলল
– শেষের দুটো কারেক্ট আছে।
– খুব মজা লাগছে তাই না।
– হ্যা কিছুটা। তোমাকে এতো কাছে পাবো ভাবিনি।
ওর এই কথাতে মনে পড়লো ও আর আমি খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছি। এই প্রথম কারো খুব কাছে দাঁড়িয়ে।
সৌরভ হেসে বললো
– কোনো সমস্যা নেই আমি তোমাকে এই অবস্থায় স্পর্শ করবো না।
– হুম।
– মেডিসিন ঠিক মতো খাবে, খাবার ঠিক মতো খাবে। আর আমাকে মনে করবে।
– তুমি কই যাবে???
– তোমার মা আমাকে আর আমার মাকে সহ্য করতে পারে না।
– মা তো নেই এখন।
– আসবে তো তাই না??? রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছে তোমার মা। আজিব ব্যাপার মেয়ে রাগ করে বাপের বাড়ি আসবে তা না মা রাগ করে বাপের বাড়ি যায়।
এ কথা বলে ও অট্টহাসিতে মত্ত হয়ে গেলো।
আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। ওর মেজাজ কিছুক্ষণ পর পর বদলে যাচ্ছে।
আমি ওকে বুঝতে পারছি না। এই বলে আমাকে তার প্রয়োজন নেই আবার এই বলে আমার জন্য সে কষ্টে আছে।
আমি তো একটা পাগল আর এ তো মনে হয় মহাপাগল।

চলবে…….!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ৬

0

ছায়া নীল! ৬.

Maria Kabir

ও বলেছিলো, স্পর্শ করলেই আমাকে চিনতে পারবে।
ওর হাত ধরাতেই আমি বুঝতে পেরেছি এই মানুষ টাই আমার স্বপ্নের নীল।
আজ ৬ বছর যাবত যাকে আমি শুধুই স্বপ্নে খুঁজে ফিরেছি, সে আমার সামনে।
আমার হাত ছেড়ে দিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে কেবিনের বাইরে চলে গেলো।
ওর আমাকে পরিচয় দেয়ার কোনো দরকার নেই ঠিক তেমনিভাবে আমার ওকে জিজ্ঞেস করারো নেই ও কে???
আশেপাশে কেউ নাই। দেয়ালের ঘড়িটা নষ্ট মনে হয়। সময় দেখাচ্ছে ৬ টা। কিন্তু জানালা দিয়ে আকাশ দেখে তো সেটা মনে হয় না।
ও আবার ফিরে এলো তবে একা না সাথে একজন নার্স।
নার্স আমাকে জিজ্ঞেস করলেন
– এখন কেমন বোধ করছো???
– ভালো।
আমার চোখ শুধু ওর উপরই আটকে আছে। কিন্তু ও একবারো আমার দিকে তাকাচ্ছে না। নার্স যা যা করছেন ও সেদিকেই তাকিয়ে আছে।
বাবা আর একজন মহিলা কেবিনে এলেন।
নার্স চলে গেলেন। বাবা আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
বাবার চোখ দিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পরলো।বাবা বললে
– মামণি এরকম কাজ করতে হয়না।
আমার কিছু বলার মতো নেই। আমি যেটা করেছি সেটা অনেক বড় ভুল কিন্তু তাছাড়া কোনো উপায়ও ছিলো না।
বাবার সাথের সেই মহিলা বললেন
– ভাইজান এখন এসব রাখেন তো। পরে কথা বলবেন।
বাবা বললে
– নাহ, মেজো। আমার মেয়ে বড় জেদি। আরে বিয়ে করবি না বুঝলাম তাই বলে সুইসাইড কেউ করতে যায়????
বাবা ওনাকে মেজো কেনো বলল??? বাবা তো মেজো ফুপুকে মেজো বলে ডাকতেন। বাবার মুখেই ওনার গল্প শুনেছি কিন্তু সবাই তো বলে উনি মারা গেছেন।
সেই মহিলা বললেন
– আরে মারা তো যায়নি। ভাগ্যিস আমার সৌরভ দেখেছিলো রাস্তা থেকে যে আপনার মেয়ে হাত কাটছে।
কথাটা বলে নীলকে সেই মহিলা কপালে চুমু দিলেন।
বাবা বললেন
– মেজো তোর ছেলে হয়েছে খুব ভালো।
আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। কী ঘটছে আর এই মহিলা কে???
বাবাকে জিজ্ঞেস করেই বসলাম
– বাবা, এরা কারা?? আমি তো এদের চিনতেই পারছি না।
বাবা বলল
– এই হলো তোর মেজো ফুপু আর এইযে ছেলেটাকে দেখছিস তোর ফুপাতো ভাই সৌরভ।
– কিন্তু বাবা তুমি তো বলেছিলে যে….
বাবা আমাকে আর বলতে দিলেন না। আমার কথার মাঝে কথা বলে ফেললেন।
– বাসায় গিয়ে সব বলবো।
বাসার কথা বলাতে মায়ের কথা মনে পড়লো।
বাসায় যে কী অবস্থা চলছে আল্লাহ জানে।
সৌরভ বলল
– মামা আজকে মনে হয় শারলিন কে ছেড়ে দিবে। আপনি ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসুন। তাহলে ভালো হবে।
বাবা বলল
– প্রথম থেকে তো তুমিই কথা বলেছো। তাই এখন তুমি গেলেই ভালো হয়।
সৌরভ চলে গেলো। মেজো ফুপুকে ভালোভাবে দেখছি। মায়ের মুখে শুনেছি তার সাথে নাকি আমার চেহারার অনেক মিল।
বয়স হয়ে যাওয়াতে তেমন একটা মিল খুঁজে পাচ্ছি না।
তবে চোখ আর গায়ের রঙটাতে মিল আছে।
বাবা আর মেজো ফুপু কেবিনের বাইরে চলে গেলো আমাকে বিশ্রাম করতে বলে।
আফরোজার কথার অর্থ এখন বুঝতে পারলাম।
সৌরভ, নামটা খারাপ না। নীল বলে আর ডাকবো না। সেতো স্বপ্নের মানুষ টার নাম।
তারপরও নীল নামটা কে বেশি কাছের মনে হয়।
কিন্তু… থাক না ওকেই জিজ্ঞেস করবানি।
কী ঘটছে সেটা বুঝতে পারছি না। আমি জানতাম মেজো ফুপু মারা গেছেন আবার আজকে তাকে জীবিত দেখলাম তাও সাথে একজন ছেলেসহ।
আমাকে ছেড়ে দেয়া হলো।
বাবা, মেজো ফুপু, সৌরভ আর আমি বাসায় আসলাম।
পুরো বাসা নীরব। নীরব থাকাটাই স্বাভাবিক। যে কাণ্ড করেছি তাতে বিয়ে তো অবশ্যই ভেঙেছে। আর যেহেতু বিয়ে ভেঙেছে সেহেতু আত্মীয় স্বজন দের থাকার কথা না।
বাবা আমাকে আমার রুমে রেখে গেলেন।
কাটা হাত টা দিয়ে কিছুই করতে পারছি না। এক হাত দিয়ে আর কতটুকুই করা যায়।
ড্রেসিং টেবিলের উপর আমার ফোন পরে আছে।
বাসায় কি কেউই নাই???
ফোন বন্ধ হয়ে আছে, চার্জার খুঁজে ফোন চার্জে দিলাম।
আমি তো শাড়ী পড়া ছিলাম। কোন সময় যে আমাকে এই পোশাক পড়িয়েছে তাও জানি না।
যাই হোক কাপড় বদলে নিলাম। কাপড় বদলানোর সময় হাতে একটু ঝাকি লেগেছিল। মনে হলো আমার পুরো শরীর কেপে উঠলো ব্যাথায়।
বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। মনে হলো কতদিন পর এখানে এলাম।
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে। এই সময় টা প্রকৃতি এতো সুন্দর থাকে, বলার মতো না।
আমার খুব ভালো লাগছিলো আজকে। অনেকদিন পর আমার খুব ফ্রেশ লাগছে।
বাবা আর মেজো ফুপুর কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে।
বাসায় কেউ নাই কেনো???
মনে হলো কেউ আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।
পিছনে ঘুরবো আর তখন পুরুষ কণ্ঠ বলল
– পিছনে ঘুরো না। গোধূলি লগ্ন দেখো আর ভাবো কুকর্ম করার ফলাফল কী পেয়েছো???
কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারলাম নীল মানে সৌরভ।
আমি বললাম
– কুকর্ম কেনো করেছি সেটা তুমি জানো।
– একটা লিমিট আছে, শারলিন।
– তোমাকে ভদ্রভাবে আমি অনেকবার বলেছিলাম, মনে পড়ে????
– আমিও ভদ্রভাবে বলেছিলাম সম্ভব না।এতো জেদ ভালো না শারলিন।
– তোমাকে কাছে পাওয়াটা যদি জেদ করা হয়ে থাকে। তাহলে আমি আরো বেশি করে করবো।
– তুমি যা করেছো সেটা বড় ধরনের ঝামেলা তৈরি করেছে।
– সবকিছুর জন্য তুমি দায়ী।
– আমি দায়ী????

চলবে…….!

# Maria_kabir

ছায়া নীল! ৫

0

ছায়া নীল!
৫.

Maria Kabir
রক্তের ধারা কী সুন্দর ভাবে বয়ে যাচ্ছে। এক নাগারে তাকিয়ে থাকার দরুন আমার মাথা ঘুরতে শুরু করলো। রক্তের গন্ধ নাকে আসছিলো। পেটের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো।
বিয়ের শাড়ী রক্তে ভিজে যাচ্ছে আর আমারো কেমন লাগছে। মনে হলো পুরো রুম ঘুরছে আর আমি পরে গেলাম ফ্লোরের উপর।
চোখ বুজে আসলো। সব কিছু অন্ধকার। ঘোর অন্ধকারে আমি পরে আছি।
মনে হচ্ছে কোনো এক অতল গভীর অন্ধকারে আমি ডুবে যাচ্ছি।
কেউ আমাকে খুব টানছে। কে???
আশেপাশে খুব চিল্লাচিল্লি হচ্ছে। সবার কান্নার আওয়াজ কানে আসছে। দরজা ভাঙার চেষ্টা চলছে শব্দ শুনে তাই মনে হচ্ছে।
মনে হলো দরজা খুলে ফেললো। কেউ আমাকে কোলে নিয়ে ছুটছে। খুব চেনা স্পর্শ মনে হচ্ছে।
মনে হচ্ছে যে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে তাকে আমি জানি, চিনি।
আবারো মনে হলো গভীর অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছি।
মনে হচ্ছে আমি ঘন, গভীর জংগলের মাঝে হারিয়ে গেছি। পথ খুঁজে পাচ্ছি না। ছোটাছুটি করছি পথের সন্ধানে।
কোন পথের সন্ধানে সেটা তো আমি জানি না। তাহলে কেনো খুজছি???
একটা বড় গাছের নিচে দাঁড়ালাম। মনে হলো কেউ আমার হাত ধরলো।আমি তাকিয়ে দেখলাম নীল আমার হাত ধরে আছে।
হাত ধরে টেনে নিলো তার কাছে। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম
– তুমি এমন কেনো?
– হুশ, কোনো কথা বলে না।আমাকে জড়িয়ে ধরে আছো না?
– হুম।
– কিছু বুঝতে পারছো?
ওর হৃদস্পন্দন শুনছি খুব শান্ত মনে। মনে হলো ওর খুব কষ্ট হচ্ছে।
আমারো কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু এখন ভালো লাগছে ওকে ছুঁয়ে থাকতে।
– তুমি কষ্ট পাচ্ছো কেনো??
– তুমি এমন কেনো করলে?? যদি খারাপ কিছু হয়ে যেতো?
– হলেও বা কী??
– তুমি বুঝতে চেষ্টা করো। আমার সামনে আসাটা সম্ভব না।
– কেনো সম্ভব না নীল? বলো না?? আমি তোমাকে বাস্তবে ছুঁয়ে থাকতে চাই।
– আমি তো তোমার মাঝেই আছি, সবসময় ছুঁয়ে। আমাকে অনুভব করার চেষ্টা করো। তাতেই তুমি পাবে।
– আমি তোমাকে শুধু অনুভবে নয় চোখের সামনে আমার মাঝে দেখতে চাই।
– জেদ করো না। আর কথা দাও নিজের কোনো ক্ষতি করবে না???
– আগে তোমাকে কথা দিতে হবে?আমার বাস্তব জীবনে তুমি আসবে।আমার হয়ে থাকবে।
– সম্ভব না।আমি তোমার মাঝেই আছি তোমার হয়েই।
– তাহলে আমিও তোমার কথা রাখতে পারবো না।
নীল আমার চিবুকে চুমু দিয়ে আমার চোখেরজল মুছে দিয়ে বলল
– আমি আসবো। তোমার কথা রাখলাম। এখন আমার শারলিন আমার কথা রাখবে। তাই না??
আমি ওকে আবারো জড়িয়ে ধরলাম। তারপর বললাম
– হ্যা, তোমার শারলিন কথা রাখবে!তোমাকে চিনবো কী করে?
– আমি তোমার আশেপাশে থাকলে তুমি অনুভব করতে পারবে।
আমাকে স্পর্শ করলে বা আমি স্পর্শ করলে তুমি বুঝতে পারবে।
আরেকটা কথা, আমি তোমার নীল সেটা কাউকে জানাবে না?
– হুম।
– আমি যাই???
– নাহ, থাকো না এভাবে কিছুক্ষণ।
– অনেক সময় পার হয়ে গেছে। জানো তো?
– কই নাতো? মাত্র কয়েকটা মুহূর্ত।
– শারলিন??
– হুম বলো।
– সত্যি তো আর এমন পাগলামি করবে না তো?
– তুমি না আসলে করবো।
– আমি যাই???
আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললাম
– যাও।
ও মৃদু হেসে চলে যেতে লাগলো। আর আমি ওর চলে যাওয়া দেখছি।
একসময় ও আমার দৃষ্টি সীমার বাহিরে চলে গেলো।
আর আমিও গভীর জংগলের পথ ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। অনেক দূরে আলোর রেখা দেখা হচ্ছে।
আমি ধীরেধীরে সেই আলোর রেখার মাঝে মিশে গেলাম।
আলোর মাঝে চোখ খুলতে পারছিলাম না। খুব চেষ্টা করছি। আস্তে আস্তে চোখ খুললাম।
আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম আমি হাসপাতালের কেবিনের বেডে শুয়ে আছি। আমার হাত কেউ ধরে আছে। আমি পাশ ফিরে তাকালাম। আমার তাকানো দেখে সে মৃদু হেসে ফেললো। ঠিক সেই নীলের হাসি। কেবলই ও চলে যাবার সময় মৃদু হেসেছিলো।
আমি ওকে ছুঁয়ে দেখার জন্য হাত বাড়ালাম। ও আমার হাত আলতোভাবে ধরে,
আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল
– love you!

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ৪.

0

ছায়া নীল!৪.

Maria Kabir
ওকে আমি অনুভব করতে পারি। আচ্ছা ও কি আমায় অনুভব করতে পারে??
আমি ওর জন্য যতোটা পাগল, ও কি তাই?
আমি ওকে যতোটা কাছে পেতে চাই, ও কি ততোটাই আমাকে কাছে পেতে চায়???
আফরোজা আমাকে ছেড়ে দিয়ে কিছু একটা বললো। কী বললো বুঝলাম না।
অন্যমনস্ক ছিলাম তাই বুঝতে পারি না। আফরোজা কে জিজ্ঞেস করলাম
– কিছু বললি?
– কফি খাবি??
– আনতে পারিস।
আফরোজা চলে গেলো। একটা সুযোগ পেয়েছি তার সদ্ব্যবহার করা দরকার। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে আলপিন এর প্যাকেট টা বের করলাম।
একটা আলপিন ডান হাতে নিয়ে বাম হাতের প্রত্যেকটা আংগুলের ডগায় ফোটাতে লাগলাম।
এখন আর তেমন ব্যথা লাগে না। প্রথম প্রথম খুব ব্যথা লাগতো। কয়েকদিন যাবত হাত ফুলে থাকতো। কিন্তু এখন একটু জ্বলে।
এটুকু কষ্টে ওকে কাছে নিয়ে আসা সম্ভব না।
আলপিন টা ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলাম। আরেকটা আলপিন বাম হাতে নিয়ে ডান হাতের আংগুলের ডগায় ফোটাতে লাগলাম।
কিন্তু আলপিন টা বারবার পিছলে যাচ্ছে। রক্তে ভিজে আছে আংগুল গুলো আর সেই ভেজা আংগুলে আলপিন ধরাতে পিছলে যাচ্ছে।
মনে হলো কারো পায়ের শব্দ আমার রুমের দিকেই আসছে।
তাড়াতাড়ি করে হাত মুছে নিয়ে, আলপিন টা ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলাম।
এই কাজ প্রথম না তাই খুব সহজে করতে পারি। আমার কারণেই চাকু, বটি বা ধাড়ালো কোনো জিনিষ বা ব্লেড ও তালা মেরে রাখা হয়।
যখন প্রয়োজন হয় তখন মা নিজে দাঁড়িয়ে কাজ করিয়ে আবার তালা মেরে রাখেন।
বিয়ে বাড়িতে চাকু পাওয়াটা কঠিন হবে না।
আফরোজাই মাকে এগুলো লুকিয়ে রাখতে বলেছে।
ওকে সব শেয়ার করার একটা খারাপ দিক। আমার কোনো ক্ষতি হবে বুঝতে পারলেই সেটা বলে দিবে মার কাছে।
ব্যাস আমি তখন বন্দী কারাগারে।
আলপিন গুলো খুব সাবধানে রেখেছি। দুই মগ কফি নিয়ে আফরোজা এলো।
আমার হাতে এক মগ দিয়ে ও নিজে এক মগে চুমুক দিলো।
আমিও ওর সাথে কম্পানি দিলাম। গরম মগ ধরাতে হাত টা জ্বলছে। জ্বলুক না, ওর জন্য তো এটুকু কিছুই না।
চাকু কীভাবে আনবো সেই ফন্দী টা আঁটতে পারলেই হয়।
কফি শেষ হবার পর আফরোজাকে বললাম
– আফরোজা আমার না খিদে পেয়েছে।
– আন্টিকে বলবো ভাত বা পোলাও আনতে?
– না রে ওসবের খিদে না।
– তাহলে কী খাবি?
– ফল খাবো।
– একটু বোস আমি নিয়ে আসছি।
ও আবার চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর ও ফল নিয়ে ফিরে এলো। কিন্তু চাকু নেই।
আমি বললাম
– আপেল কী দিয়ে কেটে খাবো?
– দাঁত দিয়ে। আমি জানি তুই ফল কেনো চেয়েছিস? তুই চাকু দিয়ে নিজের হাত বা পা কাটবি। তাই না???
আমি হেসে ফেললাম। হাসতে হাসতেই বললাম
– তুই তো আমার থেকেও চালু।
– তোর সাথে প্রায় ৭ বছর যাবত আছি। তোকে আমি পুরোটা না হলেও অধিকাংশ টাই জানি।

নিলু আমাদের রুমে এসে আফরোজা কে বলল
– খালাম্মা আপনাকে ডাকে।
আফরোজা চলে গেলো। নিলুকে আমার নানী নিয়ে এসেছেন। সে এই বাড়িতে নতুন। তার আমার ব্যাপারে বেশি কিছু জানার কথা না।
ওকে দিয়েই কাজটা করানো যাক।
নিলু চলে যাবে আর ওকে ডেকে বললাম
– নিলু, চাকু নিয়ে আয় তো। ফল কেটে খাবো।
– আচ্ছা, আপামনি।
মুহূর্ত এর মধ্যে ও চাকু টা এনে দিলো। নিলুকে বললাম চলে যেতে।
চলে গেলো। মেয়েটা অনেক ভালো। আমাকে যখনি দেখে তখনই ঢ্যাব ঢ্যাব করে তাকিয়ে থাকে।
আমার অসহ্য লাগে এভাবে তাকালে। যাকে এতো ভালবাসি সেই তাকায় না আর অন্যরা…….
চাকুটার ধার আছে বটে।
চাকুটাকে কব্জির নিচে ধরলাম। খুব আলতো করে একটা আচর দিলেই হবে।
মনে হচ্ছে মা, আফরোজা আর আরো কয়েকজন আমার রুমের দিকেই আসছে। তাই চাকুটাকে আমি যেখানে বসেছি তার নিচে রেখে দিলাম আড়ালে।
রুমে ঢুকে আমার সামনে একজন ৬০-৬৫ বছরের মহিলা বসলেন।
তার হাতে লাগেজ। আমাকে বললেন
– বউ মা, ঝটপট করে সেজে নাও তো। আর বেশিক্ষণ নেই।
মা তাকে জিজ্ঞেস করলেন
– বেয়াইন সাহেব, কাজী সাহেব কতদূর?
ও তার মানেই ইনিই আমার হবু শাশুড়ি। দেখতে খারাপ না। আচ্ছা নীলের মা দেখতে কেমন? সেও কি আমাকে বউ মা বলে ডাকবে???
হবু শাশুড়ি বললেন
– আর মাত্র ১ ঘণ্টা!
হবু শাশুড়ি চলে গেলেন। লাগেজ থেকে শাড়ী বের করে আমাকে পড়িয়ে দিলেন।
আমিও ভালো মেয়ের মতো পড়লাম। মা সাজাতে জানেন না।
তাই শাড়ী পড়িয়ে, গহনাগাঁটি পড়িয়ে বললেন
– দেখেছিস কতো গহনা দিয়েছে তোকে??
– অনেক, আরো দিবে বিয়ে হলে।
– হ্যা, ঠিকি ধরেছিস।
– মা, আমার না পানির তেষ্টা পেয়েছে।
আফরোজা যে কোন সময় রুম থেকে চলে গেছে খেয়ালই করিনি।
মাও পানি আনতে চলে গেলো।
ড্রয়িংরুমে কথাবার্তার মাধ্যমে বুঝতে পারলাম কাজী সাহেব এসে গেছেন।
রুমের দরজা আটকে দিলাম আর বারান্দার দরজাও আটকে দিলাম।
চাকু টা ডান হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করলাম। ওকে অনুভবে আনার চেষ্টা করলাম।
চেষ্টা বিফল হলো। বাম হাতের কব্জির নিচে চাকুর ধাড়ালো অংশ ধরে খুব জোড়ে আচর কাটলাম।
সাথে সাথেই ফিনকী দিয়ে রক্তের স্রোত বয়ে যেতে লাগলো।
অসহ্য যন্ত্রণা হতে লাগলো। খুব কষ্ট হচ্ছে, তুমি বুঝতে পারছো????
দেখো না আমার খুব খারাপ লাগছে???

চলবে……..!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ৩.

0

ছায়া নীল! ৩.

Maria Kabir

ওর কাছে যাওয়ার জন্য দ্রুত হাঁটতে শুরু করলাম। মনে হলো কিছু একটাতে পা আটকে গেছে আর সাথে সাথেই আমি উপর হয়ে পরে গেলাম।
কপাল সরাসরি ফ্লোরের উপর পরাতে খুব ব্যথা পেলাম। উঠতে পারছি না, কিন্তু আমাকে তো ওর কাছে যেতেই হবে।
আমার পরে যাওয়াতে খুব জোড়ে শব্দ হয়েছে।
মা আর আফরোজা আমাকে টেনে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিলো।
মনে হচ্ছে পুরো মাথা ঘুরছে আর চোখ তুলে তাকাতে পারছি না।
মা বললো
– কীভাবে পরলি?
আমি বললাম
– ফ্লোরে কিছু একটাতে পা আটকে গিয়েছিলো।
আফরোজা বলল
– কই ফ্লোরে তো আটকে যাওয়ার মতো কিছুই নেই।
মা বললো
– আফরোজা যাও তো বরফ নিয়ে আসো। ওর কপাল টা ফুলে যাচ্ছে। বিয়ের দিন মেয়ের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে কী যে হবে?
মনে হলো আফরোজা বরফ আনতে গেছে। আমার তো চোখ খুলতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু পারছিনা।
বরফ এনে কপালে মা ডলে দিচ্ছিলো। তার মধ্যেই নানী মাকে ডাকলেন।
মা আফরোজাকে বলল
– তুমি কপালে ডলে দাও । আমি একটু দেখে আসি।
আফরোজা বরফ ডলে দিচ্ছিলো। আফরোজা বলল
– এই তোর কোনো ফুফু আছে নাকি? যাকে ত্যাজ্য করা হয়েছে?
– নাহ তো আমার জানামতে তো নেই।
আফরোজা চাপাস্বরে বলল
– জানিস না একজন মধ্যবয়সী মহিলা আর তার পরিবার এসেছিলো। তোর মা আর ছোটো ফুফু তাড়িয়ে দিয়েছে।
আমার এখন একটু ভালো লাগছিলো। মনে হলো চোখ খুলতে পারবো। চোখ খুলে বললাম
– কী এমন বলেছে যে,তুই আমার ফুপু ভাবলি?
– তোর ছোটো ফুফু সেই মধ্যবয়সী মহিলাকে মেজো আপা বলে সম্বোধন করলো।
আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম ছোটো ফুপু তো তার মেজো বোন মানে আমার যেই ফুপু মারা গেছে তাকে মেজো আপা বলে সম্বোধন করে।
মেজো ফুপুর কথা তেমন কেউ বলে না। হঠাৎ হঠাৎ সবাই একসাথে হলে বাবা ওনার প্রসঙ্গ তুলে।
– কিন্তু আফরোজা আমার মেজো ফুপু তো মারা গেছেন অনেক আগেই।
– কিন্তু জানিস শারলিন তোর চেহারার সাথে অনেক মিল পেলাম।
– বাবা বলে আমি নাকি মেজো ফুপুর মতো সুন্দর।
– শোন কোনো একটা ঝামেলা আছে এর মধ্যে।
– বাবা আসুক। জানা যাবে।
বাবার কথা তোলাতেই আমার ওর কথা মনে পড়লো। সাথে সাথেই ওকে যেখানে দেখেছিলাম সেখানে তাকালাম।
কিছুক্ষণ আগেও ও ওইখানে ছিলো আর এখন নেই।
মেঝের উপর তো কিছুই নেই, তাহলে আমি পরলাম কীভাবে?
আমি তো সহজে আছাড় খেয়ে পরি না। ও কি চায়না আমি ওকে পাই?
না এটা হতেই পারেনা। আমারি ভুল।
আফরোজা বলল
– এই তোর শাড়ীর পাড় ছিঁড়ে গেছে।
আমি বললাম
– ওইতো পায়ে বেধে আমি ঠাস আর পাড় ছিঁড়ে গেছে।
আরেকটা কথা মাথায় ঘুরছে। এতক্ষণে তো বিয়ে হয়ে যাবার কথা।
– আফরোজা।
– হ্যা বল
– বিয়ে তে দেরি হচ্ছে কেনো?
– তোদের বিয়ে পড়ানোর জন্য যে কাজী সাহেবের আসার কথা তিনি ফেরিঘাট এ আটকে আছেন।
– ফেরিঘাট এ কেউ একটা বোম ফাটালেই হয়।
– তুই যা বলেছিস। মনে হয় আর কোনো কাজী সাহেব নেই।
– আজকের দিনের মতো তো বিয়ে থেমে যাবে।
– কিন্তু হবে তো একদিন। সেটা পরে দেখা যাবে।
– তোর কপালে এই তুহিন মশাই আছে।
ওর কথা শুনে গা জ্বলতে শুরু করলো। আমি ভাবতে শুরু করলাম কীভাবে ওকে আমার সামনে বাস্তবে আনা যায়?
আচ্ছা আমি তো পরিষ্কার ভাবে ওর ছায়া দেখেছি। ও আমার আশেপাশেই ছিলো।
আফরোজাকে তো সেই ছোট্টবেলা থেকে আমার সব কথাই বলি। এটা কেনো বাদ দিবো?
– আফরোজা জানিস ওকে আমি কিছুক্ষণ আগেও ওই বারান্দার দরজার কাছে দেখেছি।
– তারপর তুই দৌড়ে ওকে ধরতে গিয়ে আছাড় খেলি?
– হ্যা।
– এর মাঝেই ও হাওয়া?
– হ্যা। জানিস ওকে সামনে আনার একটা উপায় পেয়েছি?
– কী শুনি তো?
– নিজেকে যত বেশি কষ্ট দিবো ও ততোই আমার কাছে আসবে।
– শারলিন, যথেষ্ট হয়েছে। আর কত কষ্ট দিবি?
আজ প্রায় ২ বছর যাবত তুই নিজেকে যতটা কষ্ট দিয়েছিস সেটা কি কম ছিলো?
– হ্যা ছিলো।
– জেদ করবি না।
– জেদ না। আরো আগে থেকে শুরু করলে আজ আমার সাথে থাকতো।
– শারলিন চুপ কর।
– নিজেকে যত কষ্ট দিয়েছি ও ততোটাই আমার কাছে এসেছে। আগে তো দূরে দাঁড়িয়ে থাকতো। আমাকে ওর কাছে আসতে দিতো না। এখন আমাকে জড়িয়েও ধরে।
জানিস আজকে জিজ্ঞেস করেছে, আমি কেনো নিজেকে কষ্ট দেই?
– তুই কী বলেছিস?
– কিছু বলার আগেই তো তুই স্বপ্নটা ভেঙে দিলি ।
– আমি জানি না এর শেষ কোথায়???
– আমি জানি। আমার মৃত্যুই এর শেষ। আমাকে যেদিন সাদা কাফনে সাজিয়ে রাখবে, সেদিন ও আসবে।
তখন ওকে বলিস, ভালে সময়ে এসেছেন।
আফরোজা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
এটা প্রথম না। আজ ২ বছর যাবত আমার এসব কথা শুনতে শুনতে ও অভ্যস্ত কিন্তু সহ্য করার ক্ষমতা ওর এখনো হয়নি। তাই কেঁদে ফেলে বাচ্চাদের মতো।
আর আমারি বা কী করার আছে? ও আমার কাছে একটা নেশার মতো হয়ে আছে।
যাকে আমি ভুলে থাকার কথাও ভাবতে পারিনা।
একটা মানুষ স্বপ্নে এসেই আমাকে অর্ধেক পাগল করে দিয়েছে।
ও চায়টা কী?
একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম
– কী চাও?
আমাকে বলেছিলো
– তোমাকে চাই। তোমার প্রতিটা রক্তবিন্দুতে আমি থাকতে চাই। তোমার প্রতিটা নিশ্বাসে আমি থাকতে চাই। আমি চাই তুমি প্রতিটা মুহূর্ত আমাকে কাছে পাওয়ার আশায় বাঁচো।
তোমার এই মায়াবী চোখ যেনো প্রতি মুহূর্ত আমাকেই খুঁজে বেড়ায়।
তোমার শয়নেস্বপনে আমি শুধু আমি থাকতে চাই।
আমি বলেছিলাম
– আছোই তো।
ও আমার হাতে চুমু দিয়ে বলেছিলো
– মায়াবিনী তাহলে তো আমি তোমার স্বপ্নে না তোমার বস্তুজগৎ এ থাকতাম।

চলবে………!

#Maria_kabir