Saturday, August 16, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2403



পুরোনো_ভালোবাসা     পার্ট: ২

0

পুরোনো_ভালোবাসা

পার্ট: ২

#Rabeya Sultana Nipa

অনিক-আমি কখনো বলিনি তুমি আমার জীবনে অভিশাপ।তুমি আমার সেই ভালবাসার মানুষ, যেই মানুষটার জন্য একদিন আমি আমার সব কিছু ছেড়ে চলে আসতে চেয়েছিলাম।
আমি-আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে, আসি।
মেয়েটা সেই সকালে শপিং করতে গেল এখনো এলো না।সকালে নাস্তাটাও করে গেল না।এই সব কথা ভাবতে ভাবতে ঘড়ির দিকে তাকালো নিশিতার মা ইয়াসমিন বেগম।আজ মেয়েটা বাসায় আসুক দুইটো কড়া কথা শুনিয়ে দিতে হবে।
অনিক – নিশু চলনা আজ দুজনে কথাও গিয়ে বসে কথা বলি! কত দিন হল তোমার সেই মিষ্টি হাসিটা দেখা হয় না।যেই হাসির জন্য আমি আমার সব কষ্ট ভুলে যেতাম।
আমি- আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে এইসব কথা বলার।আর কখনো আমার সামনে আসবেন না।
অনিক -পালিয়ে যেতে চাইছো তাইনা।যেখানে যাও না কেন আমার স্মৃতি গুলো তুমি ভুলতে পারবে না।
নিশিতা অনিককে কিছু না বলেই বাড়ীতে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।অনিক পিছন দিকথেকে অনেক ডাকলো,,নিশু! নিশু!
নিশু একবার ও ফিরে তাকালো না।আচ্ছা অনিক কেন আসলো আমার কাছে আজ।সেই কি আজও আমায় ভালোবাসে। কথা গুলি ভাবতে ভাবতে নিশিতা বাসার সামনে চলে এসেছে।দজার সামনে এসে কলিং বেল টিপ দিলো। কলিং বেল বাজার সাথে সাথেই নিশিতার মামা সৈকত এসে দরজা খুলে দিলো।
আমি-মামা আপনি কখন এলেন?
মামা-এইসব কথা পরে জানলে ও চলবে।আগে তোর মায়ের রাগ ভাংগা।
মামার কথা শেষ না হতেই মা রান্নাঘর থেকে আসতে আসতে বললো এতো দেরি করলি কেন?একজন যে তোর অপেক্ষায় বসে থাকে তোর সেই কথা মনে থাকে না?
আমি-মা আমি ফ্রেস হয়ে আসি,বলে রুমে চলে আসলাম।মায়ের সাথে এখন কথা বলা যাবে না।বললেই পেছিয়ে ধরবে।
মায়েদের মন বলে কথা সন্তানদের দেখলেই বুজে যায় সন্তানরা কেমন থাকতে পারে।
রুমে এসেই খাটের এককনে বালিশের সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লাম।কখন যে পুরোনো স্মৃতি গুলো মাথায় এসে আবার ভর করলো বুজতেই পারলাম না।অনিকের সাথে সেই প্রথম দেখা,যেটা আমি কখনোই ভুলতে পারবোনা। তখন আমি ইন্টার পাস্ট ইয়ারে পড়ি।আর ও তখন মেডিকেলে পড়তো 2nd ইয়ারে।
আমি ক্লাস শেষ করে কলেজের গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম।
আরে আপনি তাকিয়ে তাকিয়ে কি দেখেন?উঠান আমাকে।কি হলো উঠান।
অনিক -ওহ সরি, আসলে আমি খেয়াল করিনি।আমি তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে আপনি পড়ে গেলেন।
ওর হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল হাতটা ধরে উঠুন।
আমি-ওর হাত ধরে উঠতে উঠতে বললাম হনুমান কথাকার,মেয়ে দেখলেই ধাক্কা দিতে ইচ্ছে করে তাইনা।
পিছন থেকে আমার ফ্রেন্ড আনিকা বলে উঠলো আমার ভাইয়া কোনো বাজে ছেলে না।তোর ধারোনাটা ভুল।
আমি-তোর ভাইয়া মানে?
আনিকা-হুম আমার বড় ভাইয়া অনিক।ভাইয়া ও হচ্ছে আমার ফ্রেন্ড নিশিতা।
অনিক-এই যে মিস নিশিতা, আপনি আমার কি দেখে মনে করলেন আমি হনুমানের মতো?

চলবে,,,,

পুরোনো _ভালোবাসা  পার্ট: ১

0

পুরোনো _ভালোবাসা  পার্ট: ১

#Rabeya Sultana Nipa

আজ শপিং করে যখন বাসায় আসতে ছিলাম তখন মনে হল আমার পিছনে কেউ আছে।কেন জানি মনের ভেতরে খুব ব্যাথা অনুভব করতেছিলাম কে আছে আমার পিছনে? মন কেন বার বার পিছনে ফেরে তাকাতে ইচ্ছে করছে।একবার তাকিয়ে দেখি।যখন তাকিয়ে দেখলাম তখন মনে হল আমি কি সত্যি এই মানুষটাকে দেখতে পাচ্ছি। এইতো আর কেউ নয় অনিক।এইতো আমার অনিক।আমার মনে হল অনেক অভিমান নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।সেই ৫ বছর আগের অনিকে সাথে এখনকার অনিক কোনো মিল নাই।মিল থাকবে কি করে, আমি যে অনিক কে ভালোবাসতাম সেই এতোটা স্মার্ট ছিলোনা।ছিলনা তার কোনো টাকা,ছিলনা বিলাসবহুল বাড়ী, ছিলনা গাড়ী, ছিল শুধু আমার প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা। আজ তার সব আছে নাই শুধু আমি। যাই হোক ওর কথা বলতে বলতে আমার পরিচয় টা দেওয়া হল না।আমি নিশিতা। দেখতে এতো আহামরি কিছুনা। তবে সবাই বলে আমি নাকি অনেক কিউট। একটু আগে যার কথা বলছিলাম সে অনিক।৫ বছর আগে এই মানুষটা কে আমি আমার জীবনের চেয়ে বেশী ভালোবাসতাম।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে সই আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিল আমি টেরই পেলাম না।

অনিক-কেমন আছো নিশিতা?
আমি তখন কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।আমি শুধু তাকিয়ে আছি ওর সেই চোখ গুলোর দিকে, যেই চোখের দিকে তাকালে আমি সব ভুলে যেতাম।যেই চোখের দিকে তাকালে আমি আমার সব প্রশ্নের উওর খুঁজে পেতাম। হঠাৎ মনে হল আজ আমি ওর চোখের দিকে কেন তাকিয়ে আছি।আমি কি আজও ওকেই ভালোবাসি? তাই আমি ওর চোখ কি বলছে জানার চেষ্টা করছি?
অনিক- কি হল কথা বলবেনা আমার সাথে?
ভাবনার মধ্য তার কথা গুলো শুনে চমকে গেলাম।তারপর কিছু না ভেবেই বললাম।
আমি- হুম,অনেক ভালো আছি।
অনিক – তোমাকে দেখে তা মনে হয় না। তুমি ভালো নেই আমি জানি।
আমি- আপনি ডাক্তার সেই কথা জানি, কিন্তু মানুষ দেখেই কে কেমন থাকতে পারে তাও বলে দিতে পারেন
তা তো জানতাম না।
অনিক – ঠিক বলেছো সবাই কে পারি না।কিন্তু তোমাকে দেখে বলতে পারি। কারণ এই মানুষটাই,,
ওকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি বলে পেললাম,
আমি- কারণ এই মানুষটাই আপনার জীবনের । অভিশাপ
চলবে,,,,,

ছায়া নীল ! শেষ পর্ব। ৩৬.

0

ছায়া নীল !

শেষ পর্ব।

৩৬.

Maria Kabir

মেজো ফুপু মারা গেছেন ১ সপ্তাহ হলো। ও খুব চুপচাপ হয়ে গেছে। ও কখনওই বেশি কথা বলতো না।যাও একটু বলতো ফুপুর মারা যাবার পর আরো বেশি চুপচাপ হয়ে গেছে। যন্ত্রের মতো ওর জীবন হয়ে গেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল, ব্রাশ করে নাস্তা করে অফিসে যায়, রাতে ফিরে এসে রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে।
খুব জরুরি না হলে আমার সাথে কথা বলেনা। আমরা আগের পুরাতন বাড়িতে থাকি না। ওর অফিসের পাশে একটা দোতলা বাড়ির দোতলার পশ্চিম দিকের ফ্ল্যাট টা ভাড়া নেয়া হয়েছে।
একটা কাজের মেয়েই আমার কথা বলার সংগী।
পুরো ১ টা সপ্তাহ ও এভাবেই কাটালো। জানি না আর কতো সপ্তাহ এভাবে কাটাবে।
আমার নিজের মধ্যে খুটে খুটে মরছি আমি। বারবার মনে হচ্ছে, ওর মায়ের মৃত্যুর জন্য ও আমাকে দায়ী করেছে। আমি কিছু বলতেও পারছিলাম না আবার সহ্যও করতে পারছিলাম না।
পুরো ২ টা মাস কেটে গেলো ও আমার সাথে তেমন কথাও বলেনা। এমনকি আমার হাতটাও ও স্পর্শ করেনি। আমি যেচে কথা বলতে গেলে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর উত্তর দেয়। তাও খুব সংক্ষিপ্ত।
আমার যাওয়ার মতো জায়গাও খুঁজে পাচ্ছিনা। আফরোজার সাথে দেখা করা দরকার। ও হয়তোবা আমাকে কোনো সেফ জায়গা খুঁজে দিতে পারবে। সৌরভ আমাকে একদমই পছন্দ করছে না। ও আমাকে চলে যেতে বলতেও পারছেনা।
আফরোজার নাম্বারে ফোন দিলাম। ও রিসিভ করলো। আমি বললাম
– আফরোজা, ভালো আছিস?
– আরে শারলিন। আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?
– আমি ভালোই আছি।
– মিথ্যে কেনো বলছিস? কী হয়েছে বলবি?
– তোর আজ বিকালে সময় হবে?
– হ্যা হবে। বাসায় আয়।
– না। কোনো একটা রেস্টুরেন্ট হলে ভালো হয়।
কোন রেস্টুরেন্ট এ দেখা করবো, কটায় সব ঠিক করে মোবাইল চার্জে দিয়ে রাখলাম। মনে মনে ছক কেটে ফেলেছি। আপাতত ছোটোখাটো কোনো চাকরী করবো। পড়াশোনাটাও চালিয়ে যাবো। একটা হোস্টেল হলে ভালো হয়।
বিকালে বের হলাম, কাজের মেয়েটাকে বলে গেলাম। ভাইয়া বাদে অন্য কেউ আসলে দরজা খুলবে না।
আমি পৌছানোর আগে আফরোজা এসে রেস্টুরেন্টের কোণার একটা টেবিলে বসে আছে।
আমাকে দেখে আফরোজা চমকে উঠে বলল
– তোর এই অবস্থা কেন?
– বুঝলাম না।
– তোর চেহারা দেখেছিস? শরীরের হাড় গোড় বের হয়ে গেছে।
আমি নিজেও খেয়াল করিনি। এই ২ টা মাস শুধু সমাধান খুঁজেছি পাইনি। আমি মৃদুস্বরে বললাম
– আমাকে একটু সাহায্য করতে পারবি?
– বল, সাধ্যের মধ্যে হলে করবো।
– আমাকে ছোটোখাটো একটা চাকরী খুঁজে দে না। আমার পেট চলে যাবে এরকম।
– হ্যা, তা পারবো কিন্তু কী হয়েছে বলবি?
চোখের কোণায় কয়েক ফোটা পানি জমে আছে। গাল বেয়ে পরে গেলো। ওড়না দিয়ে মুছে বলতে শুরু করলাম। ও গম্ভীর স্বরে বলল
– ভালো করেছিস। তবে চাকরি টা পেতে সময় লাগবে। ধর ২-৪ দিন। তুই এই কদিন তোর বরের সাথে থাক। আমি তোকে জানাবো।
বাসায় আসার পর একটু সাবধানে থাকতে শুরু করলাম। ও যেন কোনোভাবেই বুঝতে না পারে সেদিকে বেশি সতর্কতা বজায় রাখলাম।
মনে মনে ছক কেটে রাখলাম কী কী নিবো। আমার অবশ্য বেশি জামাকাপড় নেই।
আমার তো কোনো দোষ নেই। ও আর ওর মা আমাকে নিয়ে খেলেছে।
নীল কে ছেড়ে যেতে আমার খারাপ লাগবে কিন্তু আমাকে বাঁচতে হবে।ওর প্রতি আমার মনে ভালবাসার পাশাপাশি ঘৃণাটাও জন্ম নিয়েছে।
এগুলো ভাবছিলাম আর বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছিলাম। কলিংবেল বেজে উঠলো। মেয়েটা দরজা খুললো। তারপর হাসি মুখে মেয়েটা এসে বলল
– আপামনি, আপনার বড় ফুপু এসেছেন।
বড় ফুপু আমাকে দেখে প্রথমে একটু চমকে গেলেন। তারপর আমাকে বললেন
– শারলিন, একটু দাড়া তো।
আমি দাঁড়ালাম। বড় ফুপু আমাকে ঘুরেঘুরে দেখছেন। তারপর পেটে হাত দিয়ে কী যেন বুঝার চেষ্টা করলেন। তার মুখে হাসির ঝিলিক লেগে গেলো। আমাকে বললেন
– সৌরভ টা কখন আসবে?
– রাত হবে।
– হতচ্ছড়াটা একটু খেয়ালও রাখে না তোর। আজকে আসুক আমার ভাস্তির এই হাল করে রেখেছে। এর শোধ আমি তুলবো।
আমার এখন আর এসব চিন্তা মাথায় আসছে না। মাথায় শুধু ঘুরছে কীভাবে চলে যাওয়া যায়? ও অবশ্য আমাকে খুঁজবে না। তারপর ও যদি খোজার চেষ্টা করে তাহলে যাতে আমাকে খুঁজে না পায় সেই চেষ্টা করতে হবে।
বড় ফুপু বললেন
– রান্না করা আছে?
– হ্যা আছে।
– ওগুলো ফ্রিজে রেখে দেই। বিরিয়ানি রান্না করি। সবাই মিলে একসাথে খাওয়া যাবে।
– কী কী গুছিয়ে দিতে হবে বলুন?
– তুই রেস্ট নে।
আমি আর কথা বাড়ালাম না। এই সংসার এর প্রতি আমার কোনো বিন্দুমাত্র মায়া নেই। আমার মন চাচ্ছে এখনি পালাই।
বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙলো বড় ফুপুর ডাকে। আমাকে টেনে তুলে হাত মুখ ধুইয়ে খাবার টেবিলে নিয়ে গেলো। সৌরভ যে চেয়ার টাতে বসেছে আমাকে তার মুখোমুখি চেয়ার টাতে বসিয়ে দিলো।
কাজের মেয়ে আর বড় ফুপু পাশাপাশি বসলেন।
বিরিয়ানি বরাবরের মতোই ভালো হয়েছে।খুব তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছিলাম। একটা বারের জন্যেও ওর দিকে তাকাতে ইচ্ছে করছেনা। বড় ফুপু ওকে বললেন
– শারলিন অসুস্থ সেটা কি তুই জানিস?
ও বলল
– জানি না। ওসব দেখার সময় আমার নেই।
– তাহলে বিয়ে কেনো করেছিলি?
– আমার মাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্যে।
কথাগুলো আমার গায়ে কাটার মতো ফুটছিলো। বাসররাতে যা যা বলেছিলো সব মিথ্যে?
ফুপু বললেন
– তুই জানতি, মেজো কখনওই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে না। আর ফিরিয়ে আনার জন্য ওকে বিয়ে করাটা জরুরী ছিলো না।
– কী বলতে চাচ্ছো?
– ও তোর স্ত্রী। আর তোর মায়ের মারা যাওয়ার কারণ অবশ্যই ও না।
– জানি কিন্তু আমার ওকে অসহ্য লাগে এখন।
– তাহলে ওকে বের করে দিলেই পারিস।শুধুশুধু ওকে আটকে রেখেছিস। ওর জীবন এখনো অনেক বাকি। এতো সুন্দর মেয়েকে যে কেউ বিয়ে করতে রাজি হবে।
– ওকে আমি আটকে রাখিনি।
কথাটা শুনে আমার মেজাজ বিগড়ে গেলো। রাগেগরগর করে বলে ফেললাম
– আমি ইনশাআল্লাহ আগামী ২-৪ দিনের মধ্যে চলে যাবো।
ও কিছুই বলল না। বড় ফুপু বললেন
– বাচ্চা পেটে নিয়ে একা থাকা যায়না।
কথাটা শুনে আমি হেসে বললাম
– বাচ্চা কোথা থেকে আসবে।
বড় ফুপু বললেন
– তুই প্রেগন্যান্ট শারলিন। এই অবস্থায় তো রেস্টে থাকতে হয়। আর তুই এমনিতেই অসুস্থ।
– এটা সম্ভব না। আমি প্রেগন্যান্ট না। আপনি শুধুশুধু ভাবছেন। আমাকে সংসারে রাখার জন্য আপনি মিথ্যে বলছেন।
– বিশ্বাস না করলে, ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেকাপ করিয়ে নিস।
সৌরভ বলল
– ওকে আমার সহ্য হয়না আর তো ওর বাচ্চাকে। হেহ, ওকে বলো চলে যেতে। আমার ওকে প্রয়োজন নেই।
বড় ফুপু চলে গেলেন। বেডরুমের জানালা ধরে রাতের তারা ভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি আমি কি সত্যি মা হবো?
যদিও বা হই তাহলে আমার সন্তানকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে। আমি তো সামান্য ইন্টার পাশ। আমার চাকরী হলেও খুব খারাপ নিম্নমানের হবে। ওকে আমি ভালো খাবার, ভালো পোশাক দিতে পারবো না কিন্তু ওকে অনেক ভালবাসতে পারবো। অনেক ভালবাসবো, আমার নিঃসংজ্ঞতা কাটানোর ওই তো একজন হবে।
নাকে সিগারেটের ধোয়া এসে লাগলো। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম, সৌরভ চেয়ারে বসে সিগারেট টানছে। আমি মৃদুস্বরে বললাম
– আমার কষ্ট হচ্ছে। বাইরে গিয়ে ধূমপান করো।
ও সিগারেট টা ফেলে দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলো। আমার অসহ্য লাগছে। ও আমার গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। আমার শরীর ঘিনঘিন করতে লাগলো। আমি বললাম
– দূরে থাকো।
– অনেকদিন দূরে থেকেছি এখন পারছিনা।
– অন্য কাউকে নিয়ে আসো। তারপর তার গা ঘেঁষে দাঁড়াবা।
– বউ থাকতে অন্য নারীর কাছে যাওয়াটা ঠিক হবেনা। আর আমার তোমাকে ছাড়া অন্য মেয়ের প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই।
ভাবছো ওসব কেনো বললাম?
আসলে মনের ভিতরের চাপা রাগটা ঝেড়েছি।
– আমি ঘুমাবো এখন।
– অনেক ঘুমিয়েছো তুমি। তুমি চলে যাওয়ার প্ল্যান করছো তাই না?
– হ্যা। আমার তো কোনো প্রয়োজন নেই তাই।
– শুনো শারলিন, আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার একটাই উপায় আছে সেটা হচ্ছে তোমার মৃত্যু। তুমি যতদিন জীবিত আছো ততদিন আমার সাথে তোমাকে থাকতে হবে।
আর খাবার টেবিলে ওসব কথা বলেছি, যাতে তোমার চলে যাওয়ার কথাটা তুমি নিজের মুখে স্বীকার করো।
আমি কাঁদতে শুরু করলাম। ও বলল
– প্রেগন্যান্ট অবস্থায় মেয়েদের হাসিখুশি থাকতে হয়। তাহলে বাচ্চাও হাসিখুশি থাকে, সুস্থ থাকে।
– আমি প্রেগন্যান্ট?
– হ্যা, সেটা তো আমি অনেকদিন আগেই বুঝতে পেরেছি কিন্তু বলা হয়নি। নিজেকে ঠিক করতে করতেই দেরি হয়ে গেলো।
– আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা তোমার।
– আমার ভাবতে হবেই। কারণ আমার জীবন এখন তোমাকে ঘিরেই। মাকে খুব ভালবাসি তাই তার মৃত্যুতে খুব ডিপ্রেশনে পরে গিয়েছিলাম। তাছাড়া কিছুই না। আফরোজা আমাকে সব বলেছে। প্রথমে আমি বিশ্বাস করতে চাইনি। পরে ও তোমার ছবি দেখালো। তখন বুঝতে পারলাম, আমার তোমার সাথে এতোটা দূরত্ব সৃষ্টি করা ঠিক হয়নি।
– আমি চলে যাবো।
– সেটা হচ্ছেনা। আমি তোমাকে ভালবাসি খুব ভালবাসি। আর আমাদের সন্তানকেও ভালবাসি।
– যদি তোমার সন্তান না হয়?
– শারলিন, তোমার চরিত্র কেমন আমি জানি। আমি ছাড়া তোমাকে কেউই স্পর্শ করেনি। আর তুমি আমার স্পর্শ ছাড়া কারোরই স্পর্শ সহ্য করতে পারো না। আমার বিশ্বাস। তুমি রাগের বসে মিথ্যা বলছো।
আমার খোলা চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়ে গলায় চুমু দিয়ে বলল
– তোমার উপর একমাত্র আমার অধিকার। অধিকার ভালবাসা থেকে আসে।
ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
– মিসেস শারলিন, অভিনন্দন আপনাকে এবং আমাকে। আমরা মা বাবা হতে যাচ্ছি।
আমি উচ্চস্বরে কাঁদতে শুরু করলাম। কতদিন ও আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেনি। কতদিন ও আমাকে ভালবাসি কথাটা বলিনি। আজ ২ মাস যাবত আমি শুধু অপেক্ষা করেছি আজকের এই সময়টুকুর জন্য।
ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
– প্লিজ, শারলিন চুপ করো। আর না, অনেক হয়েছে। শান্ত হও, বেশি স্ট্রেস বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর।
কতদিন ওর দেহের ঘ্রাণ আমি পাইনি এতোটা কাছে থেকে। এই ২ টা মাস আমার কাছে অনন্তকালের মতো লেগেছে। আমি ওকে ভালবাসতে চাই, ঘৃণা না।

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ৩৫.

0

ছায়া নীল !

৩৫.

Maria Kabir

সৌরভ কে অনেক বলার পরও বড় ফুপু কিছু করাতে পারলেন না। বাধ্য হয়ে নিচতলার ভাড়াটিয়া কে ডেকে তুললেন। তাকে দিয়ে এম্বুলেন্স আনালেন।
রাত ১.৩০ এ আমরা হাসপাতালে পৌঁছালাম। সৌরভ সেই আগের মতোই চুপচাপ আছে। ক্রমাগত ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। ডাক্তার ছিলেন না। কয়েকজন নার্স ছিলেন তারা মেজো ফুপুকে দেখে রীতিমত ভয় পেলেন। এতক্ষণ আমি খেয়াল করিনি এসিড কোথায় লেগেছে। বুক থেকে পেট, পেট থেকে ডান পা পর্যন্ত এসিডদগ্ধ হয়েছে। ভয়ানক অবস্থা। বড় ফুপু ডাক্তার এর নাম্বার নিয়ে ফোন করে রিকুয়েস্ট করলেন আসার জন্য।
ডাক্তার আসলেন রাত ২.৩০ টায়। মেজো ফুপু এর অবস্থা খুবই খারাপ।
ফজরের আযানের সময় ডাক্তার সাহেব অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে শুকনো মুখে বললেন
– অবস্থা খুবই খারাপ। এসিড টা তীব্র ছিলো তাই দেহের বাইরে তো দগ্ধ হয়েছেই ভিতরেও হয়েছে। আল্লাহ কে ডাকুন।
বড় ফুপু কাঁদতে লাগলেন। আমার জন্যই এমন হয়েছে। আমি ওর জীবনে না আসলে ওর আর ওর মায়ের এই করুণ পরিণতি হতো না।
হাসপাতালে আসার পর থেকে আমাদের কারোরই চোখে ঘুম ছিলো না। আমার শরীর খারাপ করছে। মেডিসিন খাওয়া হয়নি আজকে।
সকাল ৭ টার সময় একজন নার্স আমাদের বললেন
– আপনারা সকালের খাবার খেয়ে আসুন। এখন আমি আপনাদের রুগীর কাছে আছি।
বড় ফুপু আমাদের নিয়ে হাসপাতালের পাশের একটা খাবার হোটেলে নিয়ে গেলেন।
নীলকে এখন আগের থেকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। বড় ফুপু ওকে বললেন
– এখন খাবার খেয়ে নে। তোর মা ঠিক আছে।
ও মাথা নেড়ে সম্মতি প্রকাশ করলো। খাবার খাওয়ার পর বড় ফুপু বিল দিয়ে দিলেন।
তারপর আমাকে আর সৌরভ কে বললেন
– তোরা বাসায় যা। আমি আছি এখানে।
সৌরভ যেতে চাইলো না। বড় ফুপু জোড় করে আমাদের ওনার বাসায় পাঠিয়ে দিলেন।
বাসায় এসে আমি গোসল করে নিলাম। ও বিছানার উপর চুপচাপ বসে আছে।
ওর পাশে বসে বললাম
– আমার জন্যে এতো কিছু হলো। সবকিছুর মূলে আমি। মেজো ফুপু সুস্থ হয়ে গেলে আমি চলে যাবো তোমাদের জীবন থেকে।
ও বলল
– কোথায় যাবা?
– জানি না, তবে ঠিক বলছি আমি চলে যাবো। আমার মতো খারাপ একটা মেয়ের জন্য মা – সন্তানের মধ্যে দন্দ্ব। আমি না থাকলেই সব ঠিক হয়ে যাবো।
– তুমি ভুল বলছো। সবকিছুর মূলে আমার মায়ের হিংসা, প্রতিশোধ নেয়ার প্রবণতা। আর কিছুই না। এসিডদগ্ধ হয়েছে নিজের কারণেই।
– আমি না থাকলে তো এই ঘটনা তো ঘটতো না।
– শুনো শারলিন, আমার মায়ের পাপের বোঝা অনেক বেশি হয়ে গেছে যার ফলাফল গতকালের ঘটনা। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় আমি থমকে গিয়েছিলাম। আমি বুঝে উঠতে পারিনি কীভাবে কী ঘটলো। আমার হাত থেকেই কী এসিড পরেছে নাকি দোষ আমার মায়ের। এতক্ষণ ভাবার পর খুঁজে পেলাম আমার কারণে হয়নি। মায়ের হাত থেকেই তার শরীরে পরেছে।
ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। তারপর বলতে শুরু করলো
– জানো শারলিন, ছোটোবেলা থেকে মায়ের আদর পাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি। সে আমাকে প্রতিনিয়ত কষ্টই দিয়েছে। আমি একফোঁটা ভালবাসার জন্য দিনের পর দিন মায়ের প্রত্যেকটা কথা শুনেছি। ওনার কথা শুনেই তোমার সাথে আমি খারাপ ব্যবহার করেছি। শারলিন, আমাকে মাফ করে দাও।
– আরে বোকা, মাফ করার কী আছে? পাগলামি করো না। গোসল করে নাও। তারপর মেজো ফুপুর কাছে যেতে হবে আমাদের।
হাসপাতালে মেজো ফুপুর কেবিনের সামনে বেশ ভিড় দেখতে পারলাম।কাছে গিয়ে বুঝতে পারলাম মেজো ফুপু আর নেই। মেজো ফুপুর বেডে সাদা কাপড় দিয়ে তার দেহ ঢাকা। পাশের টুলে বড় ফুপু বসে আছেন।
সাদা কাপড় এর কিছু অংশ রক্তে লাল হয়ে আছে।

চলবে……..!

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ৩৪.

0

ছায়া নীল !

৩৪.

Maria Kabir
ও আমার হাত ছেড়ে দিয়ে ফুপুর উদ্দেশ্যে বলল
– তুমি কি সত্যি আমার মা?
ফুপু আমাদের দিকে একটু এগিয়ে এসে বলল
– কেনো এই প্রশ্ন করলি?
ও একটু ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল
– একজন মা তার সন্তানের জন্য সবকিছু করতে পারে। সন্তান ভূতের ভয় পেলে তাকে আগলে রাখে কিন্তু মা তুমি তো উল্টো আমাকে ভূতের ভয় দেখিয়েছো। ছোটোবেলায় আমাকে তুমি লালনপালন করোনি, করেছে বড় খালা। সেই আমাকে মায়ের আদরে বড় করেছে। মায়ের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তার সন্তানের জন্য সকল ত্যাগ স্বীকার। তোমার মাঝে আমি দেখিনি। তুমি সবসময় নিজের টা নিয়ে ভেবেছো।
ও থেমে গেলো।মেজো ফুপু বললেন
– আমি তোকে পেটে ধরেছি, জন্ম দিয়েছি।
ও বিদ্রুপের হাসি হেসে বলল
– জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না। সেটা তুমি প্রমাণ করেছো। বড় খালা আমার সবকিছু দেখাশোনা করেছেন। সেই আমাকে মায়ের আদরে মানুষ করেছেন। সুতরাং তুমি আমার জন্মদাত্রী কিন্তু মা নও। আমার মা হচ্ছে বড় খালা।
মেজো ফুপু ধমকে উঠে বললেন
– লালনপালন তো সবাই করতে পারে। কয়জন পেটে ধরতে পারে? আমি তোর মা, বড় আপা না।
ও চিৎকার করে বলল
– মা হলে, তুমি আমার খুশি, আনন্দ কেড়ে নেয়ার চিন্তা করতে না। তুমি ভালোভাবেই জানো, আমার সুখ – শান্তি সব শারলিনকে ঘিরে। তুমি ওকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দিতে পারতে না। ও কষ্ট পেলে আমিও পাই। আমারো খারাপ লাগে। তোমার জন্য ও সুইসাইড করতে গিয়েছিলো। তুমি আমাকে ব্ল্যাক ম্যাজিক শিখিয়েছো। ব্ল্যাক ম্যাজিক যারা করে তাদের জন্য জান্নাত হারাম। তুমি কোনো মায়ের পর্যায়ে পরো না। তুমি একজন স্বার্থপর জন্মদাত্রী।
– তুই জানিস না, ওর মার জন্যে আমি বিধবা হয়েছি। তোর বাবা মারা গেছে।
– ওর মার জন্য না। তোমার নিজের স্বভাবের জন্যে। তুমি নিজে কী সেটা কখনো খেয়াল করেছো? তুমি নিজের দোষ অন্যের উপর কীকারণে চাপাও? তুমি আমার মা নও। শারলিনকে লাগবে তোমার? নিয়ে কী করবে আমি জানি না বুঝি? তুমি কোনো মানুষের পর্যায়ে পরো না।
মেজো ফুপু কোনো কথা বলছেনা। সেই আগের মতো হাসি নেই তার মুখে। মেজো ফুপু আমাদের দিকে এগিয়ে আসলেন।
ফুপুর হাতে একটা কাঁচের বোতল দেখলাম। ফুপুকে এগিয়ে আসতে দেখে সৌরভ বলল
– মা, এসিড কার উপর মারবে?
মেজো ফুপু কোনো উত্তর দিলেন না। সৌরভের সামনে এসে দাঁড়ালেন ফুপু। আমি ওর পিছনে নিজেকে আড়াল করে দাঁড়ালাম। ফুপু বললেন
– আমি তোকে অনেক ভালবাসি বাবা।
ও বলল
– তোমার কোনো কথাই আমি বিশ্বাস করিনা। তুমি মানুষ যদি হতে তাহলে একজন মৃত ব্যক্তির লাশ ফরমালিন দিয়ে রাখতে পারতে না।
– আগে তো এমন বলতি না। এখন কেনো বলছিস? ওই মেয়ের জন্য বলছিস? এখন আমি পর আর শারলিন কাছের হয়ে গেলো।
– মা তুমি আবারো একই কাজ করছো? তোমার এসব বিশ্রী কর্মকাণ্ড সহ্য করার ক্ষমতা আর নেই। আমি ক্লান্ত মা, খুব ক্লান্ত।
– আমি বিশ্রী কোনো কাজ করছিনা। আমার উপর হওয়া অবিচারের বিচার করছি।
– তুমি নিজেই তোমার উপর অবিচার করেছো।
– চুপ কর। আমার থেকে বেশি বুঝবি না।
– তোমার কোনো কথাই আমি শুনবো না।
মেজো ফুপু হুট করে বোতলের মুখ খুললেন। সৌরভ, ফুপুর কাছ থেকে দূরে সরে দাঁড়ালো। ওর আড়ালে দাঁড়িয়ে ফুপু কী করছেন দেখতে পারছিলাম।
সৌরভ ফুপুর হাত থেকে বোতল কেড়ে নিতে হাত বাড়ালো। দুজনের মধ্যে সেই বোতল নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে গেলো। এমনিতেই বোতলের মুখ খোলা তার উপর যেভাবে কাড়াকাড়ি চলছিলো তাতে মনে হলো যেকোনো একজনের গায়ের উপর এসিড পরবে।
বোতল কাড়াকাড়ি করতে গিয়ে ফুপুর শরীরে এসিড পরে গেলো। সাথে সাথে ফুপু চিল্লানো শুরু করলো। মাটিতে পরে গেলেন। সৌরভ নড়াচড়া করছে না,সেই আগের মতো দাঁড়িয়ে আছে। বড় ফুপু এসে মেজো ফুপুকে ধরলেন। বড় ফুপু বললেন
– সৌরভ গাড়ি বের কর। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
সৌরভ কোনো উত্তর দিলো না। সেই আগের মতোই দাঁড়িয়ে রইলো। বড় ফুপু আবারো সেই কথাই বললেন। কিন্তু ওর কোনো প্রতিউত্তর পেলেন না।
ও মাটিতে বসে পরলো মেজো ফুপুর পাশে।
মেজো ফুপু অসহ্য যন্ত্রণায় চিৎকার করছে। বড় ফুপু বলতে লাগলেন
– মেজো সব ঠিক হয়ে যাবে একটু সহ্য কর। এক্ষুণি হাসপাতালে নিয়ে যাবো।
নীলের উদ্দেশ্যে বললেন
– কীরে গাড়ি বের কর তোর মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো।
ওর কোনো পরিবর্তন দেখলাম না। শুধু চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো।

চলবে……..!

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ৩৩.

0

ছায়া নীল !

৩৩.

Maria Kabir
সারাদিন বাসায় বড় ফুপুর সাথে ভালোই কাটলো। মানুষ টা এতো রসিক আগে জানা ছিলো না। কিছুক্ষণ পর পর হাসি চেপে বলছে
– কীরে সুখবর কবে দিবি?
প্রথমে প্রশ্নটা আমি বুঝতে পারিনি। অনেকক্ষণ ভাবার পর বুঝতে পেরেছি। বুঝতে পারার সাথে সাথে আমার খুব লজ্জা লাগতে শুরু করেছে। বড় ফুপুর দিকে তাকাতে পারছি না।
সৌরভ আসলো সন্ধ্যায়। ওর মুখে বিষাদের ছায়া খেলা করছে। মাকে যে ও খুব ভালবাসে সেটা বুঝতে পারছি। ও ওর
সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছে ফুপুকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কিন্তু পারছেনা।
আচ্ছা ও কী জানে? ঘুমন্ত মানুষকে ডেকে তোলা যায় কিন্তু যে ঘুমের ভান ধরে তাকে ডেকে তোলা যায়না।
বড় ফুপুর সাথে কী নিয়ে কথা বলল বুঝতে পারলাম না। খুব আস্তে আস্তে কথা বলল। হয়তোবা তারা চাচ্ছেনা আমাকে জানাতে।
ও রুমে চলে গেলো। বড় ফুপু আমাকে বলল
– আরে রুমে যা, ব্যাটাছেলে বাড়ি ফিরলে তাদের সাথে সাথে থাকতে হয়।
কথাটা শুনে আমি কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম।
আমাকে ঠেলে ঠুলে রুমে পাঠালো।
আমাকে দেখে ও বলল
– আচ্ছা শারলিন, আমাকে নীল বলে ডাকতে পারবে?
– হ্যা।
ও হঠাৎ এই কথা কেনো বলছে??
– তুমি দূরে কেনো? পাশে বসো। আর খাওয়া দাওয়া করছো?
– হ্যা, দুপুরবেলা খেয়েছি। তুমি খাও নি?
– নাহ, সারাক্ষণ মনে হচ্ছিলো তোমাকে হারিয়ে ফেলবো।
আমি বিছানার উপর ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
ও আমাকে কাছে টেনে নিলো। চুলগুলোতে বিলি কাটতে কাটতে বলল
– তুমি গুছিয়ে থাকতে পারো না? নাকি সারাক্ষণ আমার চিন্তায় থাকো। কখন আমি আসবো। তাই না?
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম।
ও যে কতোটা অস্থির হয়ে আছে সেটা নিশ্বাসের উঠানামায় বুঝতে পারছি।
আমি বললাম
– নীল বললে হ্যাপি হবা?
ও বলল
– হ্যা হবো। আর তুমি আমার ছায়া, দুজনের নাম মিলে কী হয় জানো তো?
– হ্যা জানি।
– বলো তাহলে।
– ছায়া নীল।
ও বিড়বিড় করে ছায়া নীল শব্দটা উচ্চারণ করছে।
জানি না, ও পাগল হয়ে গেলো নাকি? পাগলরা নাকি একই কথা বারবার বলে।
হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে ডাকছে। কেউ আমাকে জানালার দিকে টানছে। এদিকে ও আমার হাত খুব শক্ত করে ধরে আছে।
আমি উঠে যেতে চাচ্ছি কিন্তু ও দিচ্ছেনা।
কোনোভাবেই উঠতে পারলাম না।
ও বলল
– খবরদার এখান থেকে নড়বা না।
একসময় ও জানালার কাছে গিয়ে জানালা খুলে দাঁড়ালো। তারপর কী যেন খুঁজতে শুরু করলো।
তারপর একটু জোড়ে বলল
– মা তুমি কোথায় ? মা শুনতে পাচ্ছো?
কী চাও বলোতো??

কিছুক্ষণ পর ও আমাকে টেনে নিয়ে বাড়ির বাইরে নিয়ে গেলো।
জানালার নিচটাতে ও আর আমি এসে দাঁড়ালাম। ও ওর মাকে উদ্দেশ্য করে বলল
– মা, তোমার ওকে লাগবে তো? নাও নিয়ে এসেছি। এখন তো সামনে আসো।
মেজো ফুপু গাছের আড়াল থেকে বের হয়ে আমাদের থেকে দূরে দাঁড়ালেন।
চোখেমুখে হাসি খেলা করছে। মেজো ফুপু নীলকে উদ্দেশ্য করে বলল
– সত্যি দিয়ে দিবি?
নীল বলল
– হ্যা, তবে শর্তটা মনে আছে তো?
মেজো ফুপু হাসতে হাসতে বললেন
– হ্যা অবশ্যই। তুই কথা রেখেছিস আমিও রাখবো।

চলবে……….!

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ৩২.

0

ছায়া নীল !

৩২.

Maria Kabir
আমি যা দেখছি সেটা সত্য না বাস্তব বুঝতে পারছিনা। দৃষ্টিভ্রম হচ্ছে নাকি? নাকি সত্যি?
মেজো ফুপু এখনো হাসছেন। আগের হাসির সাথে এখনকার হাসির মোটেও মিল খুঁজে পাচ্ছি না। এখনকার হাসিটা ভয়ংকর।
আমার ভেতর থেকে কেউ একজন বলছে
– জানালা আটকে দিয়ে সৌরভের পাশে গিয়ে বোস।
হাত পা কাঁপতে শুরু করলো। সেই অবস্থায় আমি জানালা আটকে দিয়ে সৌরভের পাশে বসলাম। ও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ওর কপালে হাত দিয়ে বুঝলাম জ্বর কমেছে।
রুমের দক্ষিণ পাশে ঘড়িটায় দেখলাম রাত ৩ টা বাজছে। ঘুমাতে ভয় করছে, যদি স্বপ্নের ভেতর আবার সেই ভয় পাই তাহলে এবার আর রক্ষা নাই। সৌরভ অসুস্থ আর ঘুমুচ্ছে। আর মেজো ফুপু আশেপাশে ঘুরছে।
ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে সেকেন্ডের কাটার ঘোরা দেখছি।
তাছাড়া কিছু করার মতোন নেই। সেকেন্ডের কাটা তার মতো ঘুরছে। একঘেয়েমি লাগছে না আমার। আমার পাশে শুয়ে থাকা মানুষ টার সাথে আমি কতদিন থাকতে পারবো জানি না। আমার বিরাট কোনো ক্ষতি করেই ফুপু ঠাণ্ডা হবেন। আমাকে মেরেও ফেলতে পারেন। আমাকে মেরে ফেললে তার ছেলের কষ্ট হবে, সেটা কী সে বুঝে না?
নাকি তার সেই ধরনের কোনো অনুভূতি নেই। আর মায়ের মুখে তো কোনোদিনও আমার এই মামার কথা শুনিনি।
মা আমাকে খুব কড়া শাসনে রাখতেন। একা কোথাও যেতে দিতে চাইতেন না। কারণ টা আজ খুঁজে পেলাম। আমার চেহারা মেজো ফুপু মতো বলেই আমাকে স্বাধীনতা দেয়া হয়নি। আমি যাতে মেজো ফুপুর মতো বখে যেতে না পারি তাই আমাকে কড়া শাসনে রেখেছিলেন।
আর ব্ল্যাক ম্যাজিক ফুপুই নীলকে শিখিয়েছে।
সৌরভ নড়ে চড়ে উঠলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ওর ঘুম ভেঙে গেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম
– ঘুম আসছে না?
ও উঠে বসে বলল
– মা আশেপাশে আছে। তোমাকে বের করে নেয়ার চেষ্টা করছে।
– তুমি কীভাবে বুঝলে?? তুমি তো ঘুমিয়ে ছিলে?
– মা আমাকে বলেছে, তোমাকে আজকে রাতেই বের করে নিয়ে চলে যাবেন।
– আর কী কী বলেছে?
– তোমার মা যেমন তাকে বিধবা বানিয়েছে ঠিক তোমাকে তো বিধবা বানাতে পারবে না। তাই দূরে নিয়ে বুঝোই তো। স্বামী থাকতেও তার থেকে দূরে থাকা বিধবা হওয়ার থেকেও কষ্টকর।
– আমি তোমার থেকে দূরে থাকতে পারবো না। অনেক কষ্টের পর তোমাকে পেয়েছি।
– হ্যা এটাই তো কথা। মা আরো খেপেছে, বাবার লাশ পুলিশের হাতে দিয়ে দিয়েছি। আজ এতোটা বছর যাবত একজন মানুষের লাশ পৃথিবীর উপর আছে। এটা কোনোভাবেই ঠিক না।
তাই পুলিশ কে দিয়ে বের করে দাফন দিয়ে এখানে আসলাম।
– ফুপু জানেন? আর পুলিশ কোনো ঝামেলা করেনি?
– নাহ আমার চেনাজানা তো। সেটা আমি ব্যবস্থা করেছি। ফরমালিন থেকে বের করার পর বাবার লাশ দ্রুত পঁচতে শুরু করেছে।
কেউই গোসল করাতে চায়না। শেষ পর্যন্ত আমি আর রাসেল মিলে নাকে কাপড় বেধে কোনোরকম গোসল করিয়েছি।
তারপর কাফনের কাপড় পড়ানোর কিছুক্ষণ পর থেকে পেট ফেটে গেলো।
কবর দিতে অনেক ঝামেলা হয়েছে।
– তোমার খুব খারাপ লাগছে তাই না?
– নাহ। চোখের সামনে অনেক কিছু দেখেছি তাই এখন আর খারাপ লাগেনা। একবার তো মা আমাকে জোড় করে শ্মশানঘাটে নিয়ে গেলো।তখন আমি মাত্র ১০ বছরের।
– তারপর?
– আর কী? সারারাত ওখানে কাটিয়ে দিলাম।সাহস তো আর সহজে হয়নি।
– তুমি তার সাথে কেনো থাকলা?
– ভেবেছিলাম মাকে ঠিক করতে পারবো কিন্তু পারিনি। তোমার যেন কোনো ক্ষতি না করেন, তাই তোমাকে বিয়ে করলাম। ভাবলাম নিজের ছেলের বউ হলে হয়তোবা কিছু করবেনা। না এবারো আমি ভুল।
– এগুলা বাদ দাও। কিছু খাবা?
– হ্যা খুদা লেগেছে কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছেনা।
– বড় ফুপু তোমার জন্য বিরিয়ানি রান্না করেছেন। আনি?
– হ্যা আনতে পারো। তুমি তো খাওনি আবার খালাও খায়নি।
– হ্যা।
– বড় ফুপুকে ডেকে আনো। আমরা একসাথে খাই। আর বাড়ির বাইরে যাবা না।
শেষ রাতে আমরা খাবার খেতে বসলাম। ও তৃপ্তির সাথে খাচ্ছে। বিরিয়ানি অসম্ভব স্বাদের হয়েছে।
বড় ফুপু আর ও সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা করছে। কোনোভাবেই তারা ভালো কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেনা।
আমিও খুঁজে পাচ্ছিনা। মেজো ফুপু হচ্ছে এমন একজন মানুষ যে,নিজের ভুল, দোষত্রুটি গুলোর দিকে না তাকিয়ে অন্যের ভুল, দোষত্রুটি খুঁজে বেড়ায়। ওনার নিজের ভুলের কারণে বিধবা হয়েছেন আর দোষ চাপাচ্ছেন আমার মায়ের উপর।
আর আমার উপরে সেই ঝালা মেটাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত বড় ফুপু আর সৌরভ মিলে ঠিক করলো দেশের বাইরে কয়েকমাসের জন্য চলে যাওয়ার।
এই ফাঁকে যদি ফুপু শুধরে নেন নিজেকে।
কিন্তু পাসপোর্ট, ভিসা করতে সময় লাগবে।
সকালে উঠে সৌরভ বেড়িয়ে পরলো। আর আমাকে কড়া নিষেধ করে গেলেন
– যেন বাসা থেকে এক পাও বের না হই।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ৩১

0

ছায়া নীল !

৩১.

Maria Kabir
বড় ফুপুকে বললাম
– আমি কী দোষ করেছি যে,আমার সাথে এরকম করছে?
– তোর মার প্রতিশোধ তোর উপর নিচ্ছে.. নাকি জানি। হয়তোবা তোর মাকে কোনোভাবে কষ্ট দিতে চেয়েছিল। তাই তোকে দিয়ে..
– মা তো আমাকে ভালবাসে না। আর আমার কোনো ক্ষতিতে তার কিছুই যায় আসবে না।
– তোর সুইসাইড করার চেষ্টায় বিয়ে ভেঙেছে। এতে এলাকায় তোর বদনাম হয়েছে। তোর মাকেও এই ব্যাপার টা নিয়ে দোষারোপ করা হয়েছে। তোর মার আত্মসম্মানবোধ টা বেশি তো তাই করেছে। এসব নিয়ে আলোচনা না করে চিন্তা কর কীভাবে এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
– বাসা চেঞ্জ করলেই তো হয়।
– সৌরভ বলল যে ওর অফিসের রুমেও নাকি তুই ভয় পেয়েছিস?
– হ্যা, যদি চোখ বুজতে পারি সাথে সাথেই বিকট হাত আমাকে ধরতে আসছিলো।
-ওকে থামাতে হবে। কীভাবে জানি না।তবে বাসা চেঞ্জ করে কোনো লাভ হবেনা।
ফুপু বিছানা ছেড়ে উঠে চলে গেলেন।
কিছুক্ষণ পর সৌরভ রুমে ঢুকলো। গভীর চিন্তায় সে মগ্ন। উদাসীন চলাফেরায় বোঝা যাচ্ছে। আমার পাশে বসে বলল
– এখন কেমন আছো?
– আমি ভালো আছি। তোমার এই অবস্থা কেনো? খাও নাই কিছু?
– নাহ, ভালো লাগছেনা খেতে।মাথার মধ্যে একটাই চিন্তা কীভাবে এই ঝামেলা থেকে বের হওয়া যায়।
– ফুপুর সাথে কথা বলোনি?
– হ্যা, আজকে তোমাকে ঘুমে রেখে মাকে নিয়ে বের হয়েছিলাম। অনেক বুঝালাম কিন্তু কোনো লাভ হলো না।
– কী বলে?
– বাদ দাও শারলিন। শারলিন আমি একটু ঘুমাবো।
আমি সরে বসলাম ও বালিশে মাথা রেখে বলল
– খুব খিদে পেয়েছে বড় খালার কাছে গিয়ে বলো, আমি খুদা লেগেছে।
ফুপুর কাছে এই কথা বলার সাথে সাথে ফুপু ফ্রিজ থেকে বিরিয়ানি বের করে গরম করতে দিলেন। ফুপু বললেন
– সৌরভ, আমার হাতের বিরিয়ানি খুব পছন্দ করে। তোকে শিখিয়ে দিবো। তারপর ওকে তিনবেলা রান্না করে খাওয়াবি।
– আমারো খুদা লেগেছে।
বড় ফুপু হাসতে হাসতে বললেন
– বুঝেছি বিরিয়ানি দেখে খুদা লেগেছে।
খাবার নিয়ে রুমে যাওয়ার পর দেখলাম ও ঘুমিয়ে গেছে।
খাবার পাশের ছোট্ট টেবিলে রেখে দিয়ে ওর পাশে শুয়ে পরলাম।
মেজো ফুপু কোথায়, কী করছে? একটা মানুষ এতোটা সাহসী কীভাবে হতে পারে?
আর আমার মায়ের সাথে তার ঝামেলা কিন্তু সে আমার সাথে কেনো এমন করছে?
সৌরভের হাতের উপর আমার হাত পরাতে বুঝতে পারলাম ওর জ্বর আসছে। মাথায় হাত দিয়ে বুঝতে পারলাম অনেক জ্বর। বিছানার পাশে চাদর রাখা ছিলো। ওর গায়ে চাদর দিয়ে দিলাম। বড় ফুপুকে ডেকে আনলাম।
বড় ফুপু পানিপট্টি দিতে বলে গেলেন।
পানিপট্টিতেও কাজ হচ্ছে না। ওর শরীরের তাপমাত্রা বেড়েই যাচ্ছে। আর জ্বরের ঘোরে ও আবোলতাবোল কথা বলছে।
রাতে জ্বর আরো বাড়লো।চোখের সামনে এভাবে ওকে কষ্ট পেতে দেখে আমার মনে হচ্ছে,যেকোনো মূল্যে ওকে শান্তি দিতে চাই।
বড় ফুপু ডাক্তার ডেকে আনলেন। ডাক্তার ইনজেকশন দিলেন আর কিছু মেডিসিন দিলেন। আর শরীর দূর্বল বলে সেলাইন দিয়ে গেলেন।

ইনজেকশন দেয়ার ৩০ মিনিট পর ওর শরীরের তাপমাত্রা কমতে শুরু করলো।
ওর পাশ থেকে উঠে জানালার ধারে এলাম।
রুমের মধ্যে গুমোট লাগছিলো। রাতে জানালা খুলতে সাহস পাচ্ছিলাম না। তারপরও জানালা টা খুললাম। জানালা দিয়ে পাশের খোলা জায়গা দেখা যাচ্ছিলো। আর দেখলাম মেজো ফুপু দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি হাসছেন। এতো দূর থেকেও তার হাসি দেখা যাচ্ছে।

চলবে…..!

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ৩০.

0

ছায়া নীল !

৩০.

Maria Kabir
চোখ খুলে দেখি আমি বড় ফুপুর বাসায় তার বেডরুমে শুয়ে আছি।
পাশের চেয়ারে বড় ফুপু বসে আছেন। আমি মনে করার চেষ্টা করছিলাম কী হয়েছিলো? শুধু মনে পড়ছে সিঁড়ি থেকে পরে গেলাম। বড় ফুপু বললেন
– সৌরভ তোকে এখানে রেখে গেছে।
আমি বললাম
– ও কই?
– আছে। তোকে কিছু বলতে বলেছে আমাকে।
– কী বলতে বলেছে?
ফুপু আমার পাশে বিছানার উপর বসলেন। আমার মাথা তার কোলে নিয়ে চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলতে শুরু করলেন
– আমরা ৩ বোন। ৩ জনের মধ্যে মেজো সবথেকে সুন্দর। আমাদের দাদী সুন্দরী পছন্দ করতেন। তাই ওর আদর বাড়িতে একটু বেশি ছিলো। দাদীর আদরে আর আহ্লাদে ওকে কেউই শাসন করতে পারতো না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ওর আচার আচরণে অনেক পরিবর্তন আসতে শুরু করলো। যেহেতু ও সুন্দরী ছিলো তাই প্রেমপত্র থেকে শুরু করে ছেলেরা বিরক্ত করতে শুরু করলো।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে বাসায় নালিশ আসতে শুরু করলো। প্রতিদিন একটা না একটা নালিশ আসতোই। এ বলতো, নূর কে ওই স্কুলে দেখেছে। আরেকজন বলতো পুরোন বাড়িতে… হাবিজাবি।
ওকে বাবা মা শাসন করেও কোনো ফল পাচ্ছিলো না। বিয়েও দিতে পারছেনা। বড় বোনের বিয়ে না দিয়ে তার ছোটো জনকে কীভাবে বিয়ে দেয়?
আর মানুষ হিসেবে ও মিষ্টভাষী। মিষ্টি কথায় মানুষকে খুব সহজে ভোলাতে পারে। আর ওর জাদু টোনার দিকে ঝোক ছিলো। এখনো আছে কিনা জানি না। প্রায় ঘুম থেকে উঠে দেখতাম ও আমার পাশে নেই। সকালে বাড়ি ফিরতো।
ফুপু থামলেন। হয়তোবা কথা গুলো গুছিয়ে নিচ্ছেন।
ফুপু আবার বলতে শুরু করলেন
– শ্মশানঘাট, গোরস্থান দিয়ে ঘুরে বেড়াতো। ওকে জিজ্ঞেস করলেই সব বলে দিতো। কোথায় যায়? কী করে? কেনো করে?
আমার বিয়ে হয়ে গেলো মামাবাড়ি তে।তাছাড়া উপায় ছিলো না।
তোর বাবা বিয়ে করার পর মা মারা গেলেন।
তোর মার সাথে মেজোর বেশ ভাব ছিলো। তোর মামাও এ বাড়িতে প্রায় এসে থাকতেন। তোর মামার সাথে মেজোর সম্পর্ক হয়ে গেলো। ভাবছিস আমি কীভাবে জানলাম?
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করলাম।
ফুপু বললেন
– মেজো আমাকে খুব ভালবাসতো। আমাকে সবকিছুই বলতো। সম্পর্কের এক পর্যায়ে মেজো প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলো।
এখনকার যুগেই এটা একটা ভয়ংকর খবর। তাহলে তো বুঝতে পারছিস তখনকার যুগে ব্যাপার টা কেমন ছিলো?
আমি বললাম
– হ্যা।
– তোর মা কোনোভাবেই রাজি হলো না। তার ভাইয়ের সাথে মেজোর বিয়ে দিতে। কে বা চায় যে তার ভাইয়ের কপালে এরকম বাজে স্বভাবের মেয়ে থাকুক। এদিকে মেজোর ৫ মাস হয়ে গেছে। তোর মার ঘোর অসম্মতি তে বিয়েটা হলো। তোর মাই তোর নানাবাড়ির কর্তা। মেজো আর তোর মামা দূরে গিয়ে সংসার পাতলো। সৌরভ হলো, আমিই ওকে ২ বছর পর্যন্ত লালনপালন করেছি। আমরা ভেবেছিলাম বিয়ের পর মেজোর চরিত্রদোষ টা সেরে গেছে। তাই তাকে চোখেচোখে রাখা বন্ধ করলাম।
কিন্তু….
ফুপু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বললেন
– সৌরভ অনেক কষ্টের মধ্যে বড় হয়েছে। এমন মা যেন কারো না হয়।
৫ বছরের ছেলেকে বাসায় একা রেখে চলে যেতো। আর ফিরত ২ / ৩ দিন পর। একদিন তো এক ছেলের সাথে ওকে পুলিশ ধরলো।
তারপর ওকে আমাদের বাসা থেকে ত্যাজ্য করে দেয়া হলো। আর এই খবর তোর মা তার ভাইকে জানালো। সেটা শুনে তোর মামা স্ট্রোক করলেন।
– আমার কোন মামা??
– তুই যে লাশ দেখেছিস সেটা তোর মামারই। মেজো ফরমালিন দিয়ে ওর লাশ এখনো রেখে দিয়েছে।
– এগুলা কী বলছেন?
– সত্যি বলছি। আমি সৌরভ কে বলেছিলাম তোকে ওখানে না রাখতে। তোর মার জন্য মেজো বিধবা হয়েছে। হয়তোবা তোর মামাকেই সত্যি ভালবাসতো। এইজন্য……
– কী ফুপু?
– তোর সাথে এমন খেলা খেলেছে। ওর মানসিকতার কোনো ঠিক নেই। যে, মেয়ে একটা লাশ নিয়ে দিনের পর দিন বাস করতে পারে সে তার ভাস্তির ক্ষতি করতে পিছপা হবেনা।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ২৯.

0

ছায়া নীল !

২৯.

Maria Kabir
– তুমি কী করবে?
সৌরভ বলল
– সেটা সকালে দেখা যাবে। এখন ঘুমাও।
– তোমার অফিস আছে না?
– হ্যা। আমার খুব ঘুম আসছে।
– তাহলে তুমি ঘুমাও আমি জেগে থাকি।
সৌরভ হাম ছাড়তে ছাড়তে বলল
– দুজনে ঘুমাই তা না হলে ঘুমের অভাবে আমরা দুটাই পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবো।
– যদি আবার সেইটা আসে?
সৌরভ বালিশে মাথা রেখে বলল
– ভূতের ভয়ে এখন ঘুম বাদ দিবো। প্রবাদ আছে একটা। শুনবা?
– না।
– চোরের ভয়ে ন্যাংটো হয়ে থাকা। আমাদের দশা এখন তাই হয়েছে।
– ছিঃ এগুলা কী বলো?
– আমি তো বলেছি আর তুমি তো স্বয়ংবর ন্যাংটো ভূত দেখে এসেছো।
ভয়ে এতোটাই অস্থির ছিলাম যে ভূত বস্ত্র ছাড়া না সহ সেটা আমার উপর প্রভাব ফেলতে পারেনি।
ঘুম ভাঙল যখন তখন আশেপাশে ও নেই। ঘড়িতে দেখলাম সকাল ১১ টা। ওর বালিশের উপর চিরকুট রাখা। লেখা
– দয়া করে রান্না করে রাখবেন। দুপুরবেলা বাসায় খাবো।

চিরকুট পেয়ে তাড়াতাড়ি করে বিছানা ছেড়ে উঠলাম। খাবার টেবিলে নাস্তা রাখা। ফুপুকে পেলাম না বাসায়। এর অর্থ বাসায় আমি একা!
এই বাড়িতে একা থাকার কোনো মানে হয়না। নাস্তা করে রান্নায় মনোযোগ দিলাম। রান্না করার মতোন তেমন কিছুই বাসায় নাই। ভাত রান্না করলাম আর ডিম ছিলো তাই ডিম আলু দিয়ে ঝোল রান্না করলাম। কোনো মশলাপাতিও নেই। কেউ কি বিশ্বাস করবে যে এই বাসায় খাবার মতো কিছুই নেই।
রান্না শেষ করলাম ১.৩০ এ। ড্রয়িংরুম এ বসে বসে মোবাইলে গেমস খেলছি। এই বাড়িটা ডুপ্লেক্স কিন্তু আজব ব্যাপার হচ্ছে দোতলায় কেউ যায়না। কেনো যায়না??
দোতলার দিকে তাকাতেও কেমন লাগে। মোবাইলে গেমস খেলছি হঠাৎ আওয়াজ হলো। ভাবলাম ইঁদুর বিড়াল হবে। কিন্তু আওয়াজ টা ক্রমাগত বাড়ছেই। তারপর দরজা খুলে যাওয়ার আওয়াজ হলো। আওয়াজ টা দোতলা থেকে এসেছে। ড্রয়িংরুম এ বসলে দোতালা টা দেখা যায় খুব ভালো ভাবে। আমি যেখানে বসে আছি ঠিক সেই বরাবরের একটা রুমের দরজা খুলে গেলো।
তারপর দরজাটা বারবার ধাক্কা লাগছিলো। বাতাসে দরজা খুলে গেছে। এই আওয়াজে মাথা ব্যথা করছে। তাই মোবাইল রেখে দোতালায় উঠে এলাম। এতো ময়লা জমেছে যে দেখেই মনে হচ্ছে অনেক দিন যাবত পরিষ্কার করা হয়না। দোতালায় উঠার পর কেমন একটা গন্ধ নাকে আসছে। আমি একবার কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরি তে ঢুকেছিলাম ফ্রেন্ডের সাথে। কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরি তে কেমিকেল এর গন্ধ প্রচুর। ঠিক সেই রকমের গন্ধ নাকে আসছে। বুঝলাম না এখানে এই ধরনের গন্ধ কীভাবে আসলো।
দরজা আটকাতে যাবো তখন রুমের মধ্যে চোখ গেলো। মাকড়শারজাল দিয়ে ভরা। অন্ধকার আর কেমন সেই কেমিকেল গন্ধ দিয়ে পরিপূর্ণ। দরজা আটাকাতে পারছি না। এতো শক্ত দরজা কীভাবে খুললো? আর এতো জং ধরেছে স্ক্রু নাটে যে দরজা নড়ছেই না। কিন্তু আমি নিচে থেকে তো দেখলাম দরজা বারবার ধাক্কা খাচ্ছে।
মনে হয় দৃষ্টি ভ্রম হয়েছিলো। আমার ওড়না দরজার সাথে এমন ভাবে আটকালো যে বাধ্য হয়ে রুমের মধ্যে ঢুকতে হলো।
রুমের দক্ষিণ পাশে বিশাল আলমারির মতো যার চার দেয়াল কাচের। সেই কাচের মধ্যে একজন মধ্যবয়সী পুরুষের দেহ। যার দুটো চোখই খোলা। মনে হচ্ছে চোখ দুটো কোটর থেকে বের হয়ে যাবে। দেহটা তরল পদার্থ এর মধ্যে রাখা। কারণ চুল গুলো নড়ছিলো। জানি না কার দেহ। কী ভয়াবহ জিনিষ দেখছিলাম সেটা আমি বুঝতে পারছিলাম না।তবে এটুকু বুঝতে পারছিলাম যে এখান থেকে আমার চলে যাওয়া উচিৎ।
আমি ওড়ানা রেখেই দৌড়ে নিচে নামতে শুরু করলাম। কিন্তু হোচট খেয়ে পরে গেলাম।

চলবে…….!

#Maria_kabir