Thursday, June 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2403



ছায়া নীল! ২২

0

ছায়া নীল!

২২.

Maria Kabir
সৌরভ আমার সামনে চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো। তারপর বলল
-একটা বাজে কিছু ঘটে গেছে। আমার ইচ্ছে ছিলো বলবো না। তারপর ভাবলাম বলে দেয়াটা ভালো।
– কী ঘটেছে??
– তোমার মা মানুষ টা কেমন তোমার মনে হয়??
– ভালো না।
– আমার মতে, খুব নিচুস্তরের একজন মানুষ। আমি তো খারাপ, আমার চেয়েও উঁচু মানের।
– কী ঘটেছে বলবা?? আর আমার মায়ের বদনাম আমার কাছেই করছো?
– আসলে সত্যিটা বলছি। তোমার মহীয়সী মাতা, তার সকল সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন। তারপর সেই টাকা নিয়ে ভেগে গেছেন।
– মানে?? বাবার সম্পত্তি মায়ের নামে ছিলো।
– যার নামে তারই তো সম্পত্তি। বসত বাড়ি আর যা যা ছিলো সব বিক্রি করেছেন। আর তোমার বাবা তোমার চিন্তায় ব্যাকুল। তার একমাত্র মেয়েকে কই রাখবে??
তোমার নানী বাড়িতে তোমার যাওয়া নিষেধ। আর অন্য কেউ নিতেও চায়না।
– আমাকে একটা চাকরী দিবে?? তোমার অফিসে??
– ইন্টার পাশে তো পিয়নের চাকরী। করবা??
– পেট চললেই হবে!
– আমার মা আর তোমার বাবা মিলে একটা উপায় খুঁজে বের করেছেন। সেটা হচ্ছে – আমার গলায় তোমাকে ঝোলাবেন। আমার আপত্তি নেই। দোষ আমারি তাই ভুগতেও হবে আমাকে।
– নাহ, তুমি যা করেছো তাতে আমি…
– তুমি কি ভেবেছো?? তোমার ইচ্ছায় সব হবে??
– মানে? কী বলতে চাও তুমি?? তোমার মতো একটা রাবিশকে বিয়ে করবো?
– হ্যা তাই করবে। তুমি আমাকে ছেড়ে যাবার মেয়ে না।
– যদি যাই??
– পারবে না।অফিস আজকে ৪ টায় ছুটি হয়ে গেছে।
হাতের ঘড়ি দেখে বলল
– এখন ৪.৩০ বাজে। ৩০ মিনিটের মধ্যে সবাই এখানে আসবে।
– আমাকে কাফন পড়াতে??
– নাহ বিয়ে পড়াতে আসবে। তারপর তোমার বাবা যেখানে চোখ যাওয়ার সেখানে চলে যাবেন। তারপর থেকে তুমি আমার।
– আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। আর ওই ভূতের বাড়িতে থাকবো না।
– কিছুদিন থাকতে হবে, এখানকার বাড়িটা বসবাসযোগ্য হতে আরো ৩ মাস লাগবে।
– আসুক সবাই বিয়ে আমি করছি না।
– আমি ১০০% শিওর তুমি করবে। আমার কাছে ৩ টা লজিক আছে। ৩ টাই শক্তিশালী লজিক। শুনবে?
– নাহ।
– শুনো। ১. তুমি আমাকে ছাড়া নিজেকে ভাবতেও পারো না।
২. তোমার বাবার চোখের পানি দেখে তুমি আমাকে ১ বার কেনো হাজার বার বিয়ে করতে রাজি হবে।
৩. তোমার উপর একমাত্র আমার অধিকার অন্য কারো না। আর অধিকার তুমিই দিয়েছো।
– উইল করে দিয়েছিলাম নাকি??
– হ্যা, অলিখিত উইল।
আমি কিছু বলতে যাবো তখন দরজায় নক পরলো। ও দরজা খুলে একটা লাগেজ নিয়ে আবার দরজা আটকে দিলো।
লাগেজ টা বিছানার উপর রেখে বলল
– এখানে বিয়ের শাড়ী আর গহনা আছে। পড়ে নাও। তোমার বাবার কাছে তেমন সময় নেই।
– আমি পড়বো না।
– আচ্ছা তোমাকে এই ফকিন্নি মার্কা পোশাকেই বিয়ে করবো। পরে আফসোস করবা এই ভেবে যে, ইশ আমার বিয়ের শাড়ি নেই ।
আরে মেয়ে খারাপ কিছু নেই। সব দামী দামী জিনিষ। তোমার তুহিন লোকটার আনা শাড়ীর থেকে দামী।
তুহিনের আনা শাড়ী আমি আগুনে পুড়িয়েছি।
আমি অবাক হলাম ওর কথা শুনে।
– বুঝতে পারছো না?? হাসপাতালে তো আর তোমাকে বিয়ের শাড়ীতে রাখবে না। আমাকে দিয়েছে। রাগটা বেচারা শাড়ীর উপর উঠিয়েছি।
আমি বাচাল প্রকৃতির মানুষ। প্রচুর কথা বলি।
বাবা চলে এলেন। ৩০ মিনিট হবার আগেই। সাথে আরো দুজন ছেলে আর হুজুর টাইপের একজন লোক। কথাবার্তায় মনে হলো সে সম্মানিত কাজি সাহেব।
বাবা আমার হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল
– মা রে আমাকে মাফ করিস। তোমার বাবা হওয়া সত্ত্বেও তোর কোনো ভরণপোষণ করার ক্ষমতা আমার নেই। তোর মা যা করলো।
– বাবা তুমি যেখানে যাবে সেখানেই আমি যাবো তুমি আমাকে সাথে নিয়ে চলো।
– নাহ, মা তুই এতো কষ্ট করতে পারবি না। তোর মেজো ফুপুর ছেলে একটা সোনার টুকরা ছেলে। তুই ওকে বিয়ে কর। আমি শান্তি পাবো।
– বাবা না।
– মা, মানা করিস না। এর চেয়ে ভালো কোনো উপায় আমি খুঁজে পাচ্ছি না। একটা চাকরী যে করবি সেটাও পারবি না।
– কেনো??
– মা আমার কথা মেনে নে। তুই ইনশাআল্লাহ সুখী হবি।
ফকিন্নি মার্কা পোশাক পড়েই কাবিননামায় সিগনেচার করলাম।
বাবা আমাদের দুজনকে দোয়া দিয়ে চলে গেলেন। বাবাকে আজকে নিস্ব লাগছে। আমারও কেমন যেন ফাঁকাফাঁকা লাগছে।
সৌরভ বলল
– নো টেনশন প্লিজ। তোমার বাবা ভালোই থাকবে।
কথাটা বলার সময় আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম। অবাক হলাম ওর চোখের ভাষা আমি বুঝতে পারছি না।
একটা মানুষ আমার সাথে এতো খারাপ কিছু করেছে আর আমি তার প্রত্যেকটা কথা মেনে নিচ্ছি। এমনকি ও যা যা বলছে তার বিরুদ্ধে কথা বললেও তা ঠিকি মেনে নিচ্ছি।
আমি এখন পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত যে, ও আগেও আমার উপর প্রভাব বিস্তার করতো, এখনো করছে এবং ভবিষ্যৎ এ করবেও।
আমি চাইলেও এটা উপেক্ষা করতে পারবো না।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ২১.

0

ছায়া নীল!

২১.

Maria Kabir
খাওয়া শেষ হবার পর ও বলল
– আমি এসব নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছি। তুমি একটু বিশ্রাম নাও।
– আর কতো বিশ্রাম নিবো?? আমি তো মোটা হয়ে ফেটে যাবো।
– তুমি কখনওই মোটা হবে না।
– কেনো??
– তবে বাবুর মা হলে হতে পারো।
ও চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর একজন লোক এসে এঠো বাসনকোসন নিয়ে গেলো। আবার বসে থাকা। ঘুমের ঝিমুনি তে চোখ বন্ধ হয়ে যাবার অবস্থা। ও দুমগ কফি হাতে নিয়ে আবার রুমে ফিরে এলো।
আমার দিকে একটি মগ দিয়ে বলল
– নাও ঘুম কাটবে।
কফির মগে চুমুক দিলাম, তেমন ভালো কফি না।
– আচ্ছা তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দিলা না কিন্তু!
– শুনো তাহলে… ওহ কফি ভালো হয়নি তাই না??
– নাহ ভালো না। এরে কফি বলে কেউ??
– আমি বানালাম ভাবলাম তোমার ভালো লাগবে ।
– ভালবাসি বলেই কি সবকিছুই ভালো লাগতে হবে?? তুমি তো আমাকে সহ্যই করতে পারাও না। কিছু হলেই…..
– শুধু বাহির টুকু দেখে বিচার করতে নেই। ভেতর টুকুও জানতে হয়।
– আমি তো আর এক্সরে মেশিন না।
– এক্সরে মেশিন হতেও হয়না।
– আমার উত্তর টা পাবো??
– তোমার ছবিটা যখন পেলাম তখন আমি টোটালি ডিপ্রেশন এ ভুগছিলাম। জীবনের অনেক বড় ধরনের স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল। একটা উপায় খুজছিলাম কীভাবে নিজেকে স্বাভাবিক রাখা যায়। মা আমাকে তোমার ছবি দেখিয়ে বলল ” দেখেছিস কতো সুন্দর?? ” ছবিটা দেখে আমি অবাক হলাম। কিশোরী এক মেয়ের চোখে কতো চঞ্চলতা খেলা করছে। সেই চোখেই হাসির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। ঠোঁটের কোণায় দুষ্টু হাসির ছোঁয়া।
নামটা তখনও আমার জানা ছিলো না। যখনি সময় হতো তখনি আমি ছবিটা দেখতাম। কিন্তু সামনাসামনি আসার সাহস ছিলো না। জানোই তো একটা প্রবাদ আছে – ঘর পোড়া গরু সিঁদুররাঙা মেঘ দেখে ভয় পায়।
তারপর ও কফিতে চুমুক দিলো। ওর চোখের দিকে তাকাতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে ওর চোখের ভাষা পড়ি। কিন্তু ও আমার দিকে পিছন ফিরে আছে।
ও আবার বলতে শুরু করলো
– তীব্র ভালোলাগা কাজ করছিলো। আমাকে এক কাছের লোক বুদ্ধি দিলো। স্বপ্নের মাধ্যমে দেখা কর, কথা বল, মোহের জালে আটকে ফেল। তরুণী বয়সের মেয়ে এই বয়সে মেয়েরা আবেগকে বেশি প্রাধান্য দেয় , বাস্তবতাকে তারা তুচ্ছ মনে করে।
– স্বপ্নে কীভাবে সম্ভব??
– আমি পারি, অবশ্য তুমি পারবা না।
– কীভাবে পারো??? আমি তো কোনো সমাধানই পাচ্ছি না।
– ব্ল্যাক ম্যাজিক বুঝো??
– তুমি ব্ল্যাক ম্যাজিকের মাধ্যমে??
– হ্যা, প্রকৃতির নিয়মে তো আর হয়নি তাই ব্ল্যাক ম্যাজিক ব্যবহার করেছি। আসলে ওই সময়টা আমি ভালো থাকতে চাচ্ছিলাম কোনো একটা উপায়ে। কেউ বলেও দেয়নি যে এটা পাপ। ইভেন আমি জানতামও না যে এটা ব্ল্যাক ম্যাজিকের মধ্যে পড়ে।
যখন প্রথম একজন কিশোরী কে দেখলাম আমার দিকে ছুটে আসছে। আমি স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। এতো সুন্দর কোনো মানুষ হতে পারে??
– আচ্ছা যখন জানলে যে এটা খারাপ তখন কী করলে??
– তখন আমি বন্ধ করে দিলাম। কিন্তু ততোদিনে তুমি আমার স্বভাবে পরিণত হয়েছো। কীভাবে স্বভাব ত্যাগ করি?? ভাবলাম সামনে আসবো কিন্তু…
– কী??
– আমি সত্যটা জানানোর সাহস পাই নেই তখন। কিন্তু আস্তে আস্তে তুমিও জেদ ধরতে শুরু করলে। আমি অনেক চেষ্টা করতাম স্বপ্নের ব্যাপার টা ভুলে থাকার। এমন অনেক রাত ঘুমের মেডিসিন খেয়েও কাটিয়েছি।
– সমস্যা কী ছিলো?? তুমি তো ভালবাসো আমাকে তাহলে??
– আমি অনেক বড় পাপ করেছি। তোমাকে নিয়ে খেলেছি। তোমার প্রতি ভালোলাগা ছিলো কিন্তু ভালবাসা ছিলো না। তাহলে সেটা কি খেলা না??
তুমি কষ্ট পেলে আমার আনন্দ হতো। মনে হতো আমি আমার প্রাক্তন কে কষ্ট দিচ্ছি। কিন্তু আস্তে আস্তে সেই আনন্দ টা আর থাকলো না। খারাপ লাগা শুরু হলো যখন বুঝতে বাকি থাকলো না, মেয়েটা আমায় পাগলের মতো ভালবাসে।
কথা গুলো শুনতে আমার খারাপ লাগছিলো না। আসলে অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমি। আমার অনুভূতি আর আগের মতো প্রখর নেই।
আমি জিজ্ঞেস করলাম
– তাহলে যে বললে, ভালবাস আমায়??
– তোমাকে বিয়ের সাজে দেখে হিংসা হচ্ছিলো। অন্য কারো হবে?? ওকে অন্য কেউ স্পর্শ করবে। ওর সেই চোখের চঞ্চলতা আমার হবেনা?? তারপর তো তুমি ভয়ংকর কিছু করে বসলা। কিছু হয়ে গেলে কী হতো?
তোমার সাথে মাঝেমধ্যে খারাপ ব্যবহার করি সেটা আসলে আমার নিজের উপরের রাগটা তোমার উপর প্রয়োগ করে বসি। চেষ্টা করি নিজেকে থামানোর। আসলে আমি মানুষ টা পুরোপুরিভাবে ভালো না।
– আমি এখন কী করবো?? আমাকে একটা পথ দেখিয়ে দাও।
– বুঝলাম না ঠিক??
– তুমি তো আমাকে গ্রহণ করবে না। আমাকে অন্য কেউ বিয়েও করবে না। বাসায় যাওয়া নিষেধ। আমার যাওয়ার সব রাস্তা বন্ধ। তুমি যে খেলা খেলেছো তাতে আমি পুরোটা ধ্বংস হয়ে গেছি। একজনের প্রতিশোধ আমার উপর তুলে খুব ভালো কাজ করেছো। তার উপর তো তুলতে পারতে?? আমাকে কেনো নীল??
– আমি নিতে চাইনি কিন্তু কীভাবে যে করলাম আমি নিজেও জানি না। ভেতরের শয়তানটা জেগে উঠতো। বিশ্বাস করো শারলিন আমি প্রতিশোধ ব্যাপার টা ইচ্ছে করে করিনি।
– তুমি কী বলছো নিজে বুঝতে পারছো?? একবার এটা বলছো আরেকবার তার উল্টো টা বলছো।
– জানি না মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে। একটা কথা আমি স্পষ্ট ভাবে বলতে পারি সেটা হচ্ছে, এখন আমি আর তোমার কোনো ক্ষতি হোক চাই না।
– ক্ষতি হবার মতো আর কিছুই নাই।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ২০

0

ছায়া নীল!

২০.

Maria Kabir

কপাল ঘামে ভিজে আছে। ওকে ডাকা যাবেনা। আমার জন্যে এমনিতেই অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। এখন ঘুমানো যাবে না। টেলিভিশন ছেড়ে খুঁজতে থাকলাম কোনো ভালো মুভি হচ্ছে নাকি। পেয়েও গেলাম। ইংলিশ মুভি টাইটানিক। অসম্ভব ভালো একটা মুভি একবার দেখলে বারবার দেখতে ইচ্ছে করে। ভয় টা আস্তে আস্তে কেটে যেতে লাগলো। মুভিতে এতোই মগ্ন হয়ে রইলাম যে সময় সেটাও খেয়াল নেই।
মুভির শেষ মুহূর্তে আমার গাল বেয়ে পানি টপটপ করে পরছে। সৌরভ ঠিক এই সময়ে রুমে ঢুকলো। মনে হলো একটু অবাক হলো। জিজ্ঞেস করলো
– আবার কী হয়েছে??
কথা বলার সাথে সাথে ও টেলিভিশনের দিকে তাকালো তারপর হেসে বলল
– ওহ এই কাণ্ড!
চোখেরজল মুছে বললাম
– কত কষ্টের কাহিনী দেখেছো। রোজ, জ্যাককে ছাড়া কীভাবে থাকবে??
– আচ্ছা বুঝলাম। একটা প্রশ্নের উত্তর দাও।
– হুম, বলো।
– শারলিন, নীল কে ছাড়া কীভাবে থাকবে??
ওর মুখের দিকে তাকালাম। এই প্রশ্ন কেন করলো??
– বুঝলাম না?
– খাবার এসে যাবে তুমি গোসল করে নিতে পারো। না না থাক তোমার হাত ভেজানো যাবে না।
– নীল অনেকদিন গোসল করি না। কেমন বিশ্রী লাগছে।
– শারলিন আর মাত্র ২ দিন। তারপর পুকুরে লাফাবা তাতেও কিছু হবেনা।
– পুকুর কই পাবো??
– আমাদের বাসায় আছে। হাত মুখ ধুয়ে নাও। আমি খাবার রেডি করছি।
হাত মুখ ধুয়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি বিছানার উপর চাদর বিছিয়ে খাবার রাখা হয়েছে।
আমাকে দেখে বলল
– পিওর বাঙালি খাবার। কোনো হোটেল থেকে আনা না।
– তাহলে তুমি রেঁধেছ??
– আমার দ্বারা সম্ভব না। আমাদের পিয়নের বউ হেব্বি রান্না করতে পারে। ওনাকেই ঠিক করা আমার।
– বুঝেছি।
খাবার খাওয়ার সময় ওকে বললাম
– আমার সেই ভয় পাওয়ার কারণ টা জানো??
– আমি একটা কারণ খুঁজে পেয়েছি। অবশ্যই তুমিও পেয়েছো। তোমার টা আগে শুনি।
– তোমাদের বাসায় খারাপ কিছু আছে। ভূত টাইপের।
– তোমার হাতের রক্ত খেতে চেয়েছিলো??
– হুম।
আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। সেই রাতের কথা মনে পড়ে গেলো।
– তুমি খাও। আমি বলছি কারণটা কী। তোমার ভেতর এই ধরনের ভয় অনেক আগে ঢুকে গেছে। মানুষের মস্তিষ্কের একটা অংশে এই ভয়টা জমা থাকে। যখন ওই ধরনের অর্থাৎ একটু পুরাতন বাড়ি বা গল্পে, মুভিতে ভূত থাকার আলামত বলে দেয় ওরকম কিছু দেখলেই সেই ভয়টা জেগে উঠে।
তারপর ও চুপ হয়ে গেলো। আমার কথা গুলোতে বিশ্বাস হচ্ছে। ছোটোবেলায় দাদীর কাছ থেকে অনেক ভূতের গল্প শুনেছি। এমনকি আমি প্রচুর হরোর মুভিও দেখি। ও আবার বলল
– আমাদের বাড়িটা অনেক পুরাতন। ভাঙা চোড়া তাই তোমার কাছে ভুতুড়ে মনে হয়েছে। মস্তিষ্কের সেই ভয় তোমার ঘুমের ঘোরে হানা দিয়েছে। তাছাড়া আর কিছুই না।
– সত্যি তো??
– হ্যা অবশ্যই। ভয়টাকে জয় না করতে পারলে তোমাকে সেই ভয় তাড়া করে ফিরবে।
– বুঝলাম না??
– মনে করো আমার রুমে তোমার আর একা ঘুমানো সম্ভব না। ভয়টাকে জয় না করতে পারলে একসময় তুমি কোনো রুমেই একা থাকতে পারবে না।
– একটু আগেও চোখ বুজেছিলাম কিন্তু আবার সেই হাত…
– বলেছি না তোমাকে।
– এখন কী করতে হবে বলো??
– কোনো সাইক্রাটিসই বলতে পারবে। আমি তো এটুকু জানতাম তাই বললাম।
– নীল আমাকে সাহায্য করো। আমি আর পারছি না, আমি ক্লান্ত।
– এতেই তুমি হেরে গেলে?? তুমি তো এতো সহজে হার মানার মেয়ে না।
– আচ্ছা একটা প্রশ্ন করবো ঠিক উত্তর দিবে??
– হ্যা করো।
– স্বপ্নের ব্যাখ্যা টা আমাকে দিলা না। আমি জানতে চাই কীভাবে???
– বলবো। আগে খেয়ে নাও। শান্তি মতো বসে বলা যাবে।

চলবে………!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১৯.

0

ছায়া নীল!

১৯.

Maria Kabir

তাড়াতাড়ি করে ব্রাশ করে, পোশাক পাল্টে নিলাম। খুদা লেগেছে খুব, খেতে বসবো তখন সৌরভ হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলল
– সময় নেই, এখন খেতে হবেনা।
ফুপু বললেন
– এতদূর যাবে না খেয়ে কীভাবে থাকবে??
– বাইরে থেকে খাবার কিনে দিবো বাট এখন সময়ের বড় অভাব।
না খেয়েই আমাকে গাড়িতে উঠতে হলো। ও গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল
– আমার পাশে তোমাকে বসাই না কেনো জানো??
– নাহ, আমার মাথায় তো জট নেই।
– তুমি পাশে থাকলে মনে হবে তাকিয়ে থাকি তারপর এক্সিডেন্ট হবে…!
– ভালো তো মরে গেলেই ভালো। আমার খুদা লাগছে সৌরভ।
– বুজেছি কিন্তু সময় ছিলো না।
গাড়ি তো সে ঝড়ের বেগে ড্রাইভ করতে শুরু করলো। এদিকে পেটে খুদা তার উপর এতো স্পিডে গাড়ি চলছে, কেমন লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না।
গাড়ি থেমে গেলো। সৌরভ বলল
– নামো, এখানে নাস্তা করে যাওয়া যাবে।
ছোটোখাটো রেস্টুরেন্ট এর মতো একটা হোটেল। একে হোটেল বলবো না রেস্টুরেন্ট বলবো??
ও বললো
– নিশ্চয়ই কনফিউজড তুমি এটা হোটেল না রেস্টুরেন্ট ভেবে??
– হ্যা, আমি না বুঝতে পারছি না।
– হাফ রেস্টুরেন্ট হাফ হোটেল।
আমরা বাইরে চেয়ার টেবিল পাতা ওখানেই বসলাম।
– শুনো খিচুড়ি অর্ডার দাও আর সাতে ডিম পোঁচ।
– ওকে।
খাবারের জন্য অপেক্ষা করছি ৫-৬ জন ছেলে আমাদের পাশের টেবিলে এসে বসলো।
আমি চুপচাপ বসেই ছিলাম আর ও মোবাইলে কী যেন করছিলো।
ছেলে গুলো খুব বাজে বাজে কথা বলছিলো আর হাসছিলো। বেশিরভাগ কথা গুলোই মেয়েলি বিষয়ক। এইখানে আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মেয়ে নেই।
সৌরভের সামনে আমার লজ্জা লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো গাড়িতে ফিরে যাই। সৌরভ হয়তোবা খেয়াল করছে। ওর চোখমুখ শক্ত হয়ে যাচ্ছিলো। খাবার খেয়ে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।
হাসপাতালে এসে সরাসরি ডাক্তারের কাছে চেকাপ করালাম। মেডিসিন চেঞ্জ করে দিলেন। আর আমাকে উদ্দেশ্য করে ডাক্তার বললেন
– পুলিশ কেস হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু মিস্টার সৌরভের রিকুয়েস্টে করি নাই। বুঝেছেন??
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। তারপর মেডিসিন কিনে সৌরভ বলল
– আমার অফিসে কাজ আছে।
– আমি কই যাবো??
– তুমি আমার সাথে থাকবা তারপর একসাথে বাসায় যাওয়া যাবে।
ওর অফিস রুমটা সুন্দর বিশেষ করে সাজানোটা।সৌরভ কে বললাম
– চেয়ারে বসে থাকতে হবে??
সৌরভ আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে অফিস রুমের উত্তর কোণার দরজা খুলে ভিতরে নিয়ে গেলো।
– আমার বিশ্রামকক্ষ। তোমার জন্য উন্মুক্ত। এখানে বসে টেলিভিশন দেখো, ফ্রিজে খাবার আছে খাও। আর বোরিং লাগলে আমি তো আছি।
ওর অফিস বিল্ডিং টাও সুন্দর। দোতলা ভবন, নিচতলায় গাড়ি পার্ক করা হয় আর দোতলায় বিশাল হল রুমে কর্মকর্তা রা কাজ করছে।
– এই শুনো না।
– বলো কী বলবা??
– তুমি নিজেই এই ব্যবসা খুলেছো??
– বাবার ছিলো। একা ভালো লাগছেনা এখানে থাকতে??
কথাটা বলে ও আমার কপালের চুলে হাত দিয়ে বিলি কাটতে শুরু করলো।
– নাহ।
ও আরেক হাত দিয়ে প্যান্টের পিছনের পকেট থেকে পিস্তল বের করে বিছানার উপর ছুড়ে মারলো। তারপর বলল
– মেজাজ গরম হয়েছিল এতক্ষণ।
– কেনো??
– থাক বাদ দাও। আমি যাই অনেক কাজ বাকি আছে।
ও চলে গেলো। বিছানার উপর শুয়ে টেলিভিশন ছাড়লাম। কিন্তু ঘুম আসছিলো। তাই টেলিভিশন অফ করে চোখ বুজলাম। চোখ বুজার সাথে সাথেই সেই বিশ্রী হাত ভেসে উঠলো।
সাথে সাথে চোখ খুললাম। কিন্তু আশেপাশে তো কিছুই দেখছি না।

চলবে…..!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১৮

0

ছায়া নীল!

১৮.

Maria Kabir
আমি বললাম
– নাহ।
সৌরভ বলল
– নিশ্চয়ই মায়ের রান্না খেয়ে চেহারার এই হাল হয়েছে।
কথাটা বলেই হাসতে শুরু করলো। হাসা অবস্থায় বলল
– প্রথম প্রথম খুবই বাজে লাগবে। পরে অভ্যেস হবে তবে জিহ্বার কোনো স্বাদকোরক জীবিত থাকবে না।
– ভালো তো। তুমি তো ছোটোবেলা থেকেই তার হাতের রান্না খাও। তাহলে তো তোমার জিহ্বা বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই।
– তা ঠিক বলেছো। এইজন্য ভেবেছি শেফ বিয়ে করবে।
– মুর্দা জিহ্বাকে পুনরায় জীবিত করার জন্য।
– ওহ শারলিন তুমি তো অনেক ক্লেভার।
– ছাই, তাহলে তো তুহিন লোকটাকেই বিয়ে করতাম। গাধার মতো তোমার জন্য নিজের বিপদ ডেকে আনতাম না।
সৌরভ আমার এ কথার কোনো প্রতি উত্তর দিলো না। আমি সেই ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে মোবাইলে গেমস খেলতে শুরু করলাম।
নাক ডাকলে ঘুম আসে নাকি। ঘুমাতেও ভয় লাগছে আবার সেই হাত যদি।
টেম্পল রান খেলতে মজাই লাগে। তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে সৌরভ আমার পাশে বসলো।আমি না দেখার ভান করে খেলায় ব্যস্ত রইলাম। ও আমার আরো কাছে এসে বসলো। আমিও দূরে সরে গেলাম। ও আবারো কাছে এসে বসলো। এভাবে সরে বসতে বসতে একসময় আর জায়গা নাই সরে বসার।
ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
– এগুলা কোন ধরনের শয়তানি??
– শয়তানির কী আছে? তোমার পাশে আমি বসবো না তো কে বসবে?? ওহ তুহিন পাশে বসবে??
– কীসব বাজে কথা বলছো।
– কই, তুমি তো একটু আগেই বললে তুহিন কে বিয়ে করার কথা।
– সেটা পারসোনাল ব্যাপার আমার। তোমার পারসোনাল ব্যাপারে তো আমি নাক গলাই না।
– আমার পারসোনাল বলতে তো তেমন কিছুই নেই।
– সে তুমিই জানো। আমার পাশে থেকে সরো। আমার অসহ্য লাগছে তোমাকে।
– আমাকে এতো তাড়াতাড়ি অসহ্য লাগছে??
আমি চলে যাবার জন্য উঠলাম ও আমার হাত ধরে টেনে পাশে বসালো।
– শেফ বিয়ে করবো তাই এতো রাগ?? বিয়ে করলে কী করবা?
– কিছুই করবো না। চেয়ে চেয়ে দেখবো একটা শয়তান আমার জীবন থেকে বিদায় নিছে।
তারপর সৌরভ ওর প্যান্টের পিছনে হাত দিয়ে কী যেন বের করার চেষ্টা করছে। পিস্তল বের করলো।
জীবনে এই প্রথম কাছ থেকে পিস্তল দেখলাম। পিস্তল হাতে নাড়াচাড়া করছে আর বলল
– এর থেকে ভালো আইডিয়া আমার কাছে আছে।
তারপর আমার হাতে পিস্তল দিয়ে বলল
– এটায় গুলি লোড করা আছে। ৫-৬ টা আছে।
হাতে পিস্তল নিয়ে কেমন ভয় লাগতে শুরু করলো।আমি আস্তে আস্তে বললাম
– তো??
– কিছুনা, যতক্ষণ রাগ থাকবে ততক্ষণ আমার বুকের বামপাশ টাতে একটার পর একটা গুলি ঢুকিয়ে দিতে থাকবা।
– তারপর??
– তাতেও রাগ না কমলে আমার পকেটে আরো গুলি আছে লোড করে নিবা।
– আমি শুট করতে পারি না আর তো গুলি লোড।বাদ দাও তো এসব।
– ভয় লাগছে??
পিস্তল টা সোফায় রেখে দিলাম। মন বলছে ওকে জড়িয়ে ধরে বলি, তোমাকে ছাড়া আমার কী হবে??
কিন্তু আমার ভিতরের কেউ একজন বলছে, না।
– ভয় কেনো লাগবে? যে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করতে পারে সে অন্যকে হত্যা কেনো করতে পারবে না?
– তাহলে কী?
– আমি যে বিন্দুকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত আবর্তিত হচ্ছি সেই বিন্দুকে কীভাবে মুছে ফেলি।
– কিন্তু বিন্দু টা তো ভুল বিন্দু।
– নাও তো হতে পারে। আর এইসব বিশ্রী জিনিষ আমাকে দেখাবে না।
– লাইসেন্স করা আর্মস। দেখতেই হবে তোমাকে। আর অভ্যেসও করতে হবে, আমার সাথে থাকছো যে।
– বাহ কী বিরাট যুক্তি। যাও খেয়ে মাথা ঠাণ্ডা করো।
– মার রান্না খাবার খেলে মাথা ঠাণ্ডা হবেনা, গরম হবে।আমি খেয়ে এসেছি।
তারপর কিছুক্ষণ চুপচাপ কাটলো। ও কীভাবে যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন অস্বস্তিকর লাগছিলো। বাধ্য হয়ে বললাম
– প্লিজ ওভাবে তাকিয়ে থেকো না।
– তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
– এটা তো আগেও ছিলাম। নতুন কোনো কথা না।
– হ্যা কিন্তু কিছু কিছু সময় সেই সৌন্দর্য টাকে অন্যরকম লাগে। দেখোই না চাঁদ কে প্রতিনিয়ত দেখছি কিন্তু সবসময় তো সুন্দর লাগে না।
– বুঝলাম, কিন্তু আমার এই কালি পরা চোখ বিশিষ্ট চেহারায় নতুন কোনো সৌন্দর্য নামক কিছুই নাই।
– মনে পড়েছে তোমাকে ডাক্তারের কাছে আবার যেতে হবে।
– আবার লং জার্নি উফফ। ঘুমাবা না??
– নাহ দুপুরে লম্বা ঘুম দিয়েছি। জানি তুমি আজকেও ঘুমাতে দিবা না।
– নাহ আজকে ফুপুর পাশে ঘুমাবো তাই সমস্যা নেই। তুমি ঘুমাও।
– আজকে গতকালের যুক্তি খাটছে না। অন্যকিছু।
– বুঝেছি, সারারাত বসে বসে আমাকে হা করে দেখবে।
– হুম। দেখবো তুমি কী দিয়ে তৈরি? এতো ভালবাসতে কীভাবে পারো?? আমার আগের সে তো ভালবাসতে পারেনি।
– যাও তো ঘুমাও। আর আমাকেও যেতে দাও।

পুরো পাগল, আর আমার চেয়েও জেদি। পিস্তল নিয়ে হাজির। ফুপুর পাশে শোয়ার পর নাক ডাকার শব্দ কানে আসছে। আলাদা একটা ছন্দে নাক ডাকছে।আহা, এযে মহান ছন্দময় সুর।
শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুম ভাঙলো ফুপুর ডাকে।
– এই ওঠ, ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগবে বলে??
– হুম। কয়টা বাজে??
– ৯ টা। সৌরভ এখনি চলে যাবে। তাড়াতাড়ি ওঠ……

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল। ১৭.

0

ছায়া নীল।

১৭.

Maria Kabir
সকাল যখন হলো তখন সৌরভ বলল
– ঘুমাও তো।
– নাহ নাহ আমি এই বাড়িতে ঘুমাতে পারবো না।
– দেখো আমি আর মা এখানে ১০-১২ বছর যাবত আছি। আমরা তো কিছুই দেখতে বা অনুভব করতে পারিনি।
– আমি সত্যি বলছি, সত্যি একটা হাত…
– শারলিন তোমার ভুল। অনেক স্ট্রেসে আছো তাই এরকম আবোলতাবোল স্বপ্ন দেখেছো।
– আমাকে একটা মহিলা হোস্টেল খুঁজে দাও। আমি চলে যাই।
– দেখো আমার ব্যবসায় লাল বাতি জ্বলছে। তোমার জন্যে একমাত্র।
– শুরুটা তুমি করেছিলে।
– আমার ব্যবসা ঠিক করে যখন সময় পাবো তখন খুঁজে দেখবো। তোমার মতো মেয়ের জন্য আমি আর সময় নষ্ট করতে পারবো না।
– তোমার খুঁজতে হবেনা। আমিই খুঁজে নিবো। আমাকে শুধু আমার বাসায় দিয়ে আসো।
– আমি তোমাকে একটু আগেই বলেছি, তোমার জন্যে আমার সময় নেই। বহুত ফাজলামি করেছো এখন আর না।
আমার আর সহ্য হচ্ছে না। ওর রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় এসে বসলাম।
সত্যি মা ঠিকি বলে, আমি খুব খারাপ। আমিই চলে যাবো এখান থেকে। গন্তব্য হীন ভাবে হেটে যাবো মরলে মরবো বাচলে বাঁচবো। তাও যারা আমাকে ঘৃণা করে তাদের কাছে থাকবো না।
সোফার সামনে রাখা টিটেবিলে পাউরুটি আর কলা রেখে সৌরভ বলল
– আমি বের হচ্ছি এই বাড়ি থেকে এক পা বের হলে তোমার পা ভেঙে ঘরে বসায় রাখবো।
– আমাকে খুঁজে পাবে কোথায়?
– সেটা আমি বুঝবো।খেয়ে নিবে। রাগ আমার সাথে খাবারের সাথে না।
সৌরভ দ্রুত চলে গেলো। গাড়ির শব্দ পেলাম। তারপর খেয়ে নিলাম। মেডিসিন খেয়ে ওর রুমে রাখা আয়নায় নিজেকে একটু দেখছি। চেহারা আর চেহারা নেই। চোখের নিচে কালি পরেছে। চুল রুক্ষমূর্তি ধারণ করেছে। আয়নায় কারো যেন ছায়া দেখতে পেলাম।গতকালের রাতের ঘটনা মনে পড়ে গেলো। পিছনে ফিরে দেখি ফুপু। ফুপু আমাকে বলল
– কিরে কিছু খেয়েছিস?
– হুম।
– একটু অসুস্থ ছিলাম তো তাই দেরি হলো উঠতে।
– ঠিক আছে ফুপু।
ফুপু খুব সুন্দর, আমার তো মনে হচ্ছে ফুপু আমার কপি।
ফুপু বলল
– তুই আমার দর্পণ। মনে হচ্ছে বয়স্ক নূরের সামনে ১৯ বছরের নূর দাঁড়িয়ে আছে।
– আপনি বেশি সুন্দর।
– নাহ রে সমান সমান। আমি আমার সৌরভের জন্য এমন একটাই মেয়ে খুজছি।যাই হোক বাদ দে, কী খাবি দুপুরবেলা??
– আপনার ইচ্ছা।
– আচ্ছা তুই আমার সাথে সাথে থাকবি। রান্নাবাড়া দেখলে শিখতে পারবি।
ফুপু বেশি কথা বলেন না। পুরো বাড়িতে আমরা দুজন।
দুপুরবেলা খাওয়ার সময় ফুপু বলল
– দুপুরে একা খেতে হয়। ভালো লাগেনা। আমার একজন সংগী হলো।
– সৌরভ ভায়া আসে না?
– ওর কোনো ঠিক নাই। সেই সকালে যায় আর রাতে ফিরে। তাও গভীর রাতে।
– আপনার কষ্ট হয়না?
– অভ্যেস হয়ে গেছে।
খাবার মোটেও ভালো হয়নি। খুব কষ্ট হলো খেতে। খাওয়ার পর খুব অস্থির লাগছিলো। ফুপু আর আমি রাতে খেয়ে শুয়ে পরলাম। গেস্ট রুমের চাবি ফুপু খুঁজে পাচ্ছেনা। তাই আমাকে তার রুমেই ঘুমুতে হলো।
শোয়ার সাথে সাথে ফুপু নাক ডাকতে শুরু করলো। গতকালের ভয় আর এই নাক ডাকাতে ঘুম আসছে না।
মেইন গেট খোলার শব্দ পেলাম। ফুপুর পাশ থেকে নীরবে উঠে রুম থেকে বের হলাম।
সৌরভ জুতা খুলছিলো।
আমাকে দেখে বলল
– কী খুব miss করেছো তাই না???

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১৬

0

ছায়া নীল!

১৬.

Maria Kabir

আমি বললাম
– এতো দূরে থাকার কারণ??
– মা নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করেন।
– আচ্ছা তুমি পড়াশোনা করো নাকি চাকরী?
– আমি তোমার মতো বাচ্চা না। আমার গ্রাজুয়েশন ৩ বছর আগেই কমপ্লিট। এখন ব্যবসা করছি।
– আমি বাচ্চা না। তুমি তো বেশ বয়স্ক!
– হ্যা বুড়ার প্রেমেই তো পড়েছো।শুনো বাড়ির মধ্যে জোড়ে কোনো শব্দ করবে না। মা ঘুমুচ্ছে।
কথাটা বলে সৌরভ আমাকে নামিয়ে দিলো। রাতের অন্ধকারে ভালো বুঝতে পারলাম না বাড়িটা দেখতে কেমন। তবে যতটুকু বুঝলাম তাতে শিওর বেশ পুরাতন বাড়ি।
ডুপ্লেক্স সিস্টেম বাড়ি। সৌরভ বলল
– গেস্ট রুম টা তালা দেয়া আর চাবি মায়ের কাছে।
– তাহলে কই থাকবো? ফুপুকে ডেকে চাও চাবিটা।
– নাহ, তুমি আমার রুমেই ঘুমাও। আমি ড্রয়িংরুম এ সোফায় বেশ চালিয়ে নিবো।
– নাহ নাহ তুমি তোমার রুমে ঘুমাও, আমিই সোফায়….
– আমাদের তো হরোর মুভি দেখার কথা তাই না?
– হুম।
হরোর মুভির নাম শুনলে আমার যেমন ভয় লাগে তেমনিভাবে ভালোও লাগে। বাড়িটা এতো পুরাতন যে দেয়ালে ইট দেখা যাচ্ছে। লাইটের আলোও কেমন তেজ ছাড়া।
সৌরভ গাড়ি গ্যারেজে রাখতে গেছে। এই ফাকে একটু জামা কাপড় পাল্টে নিলে ভালো হতো।
কিন্তু হাতের দিকে তাকাতেই চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম।
এই বাড়িতে মনেহয় আর কেউ থাকে না। কাজের লোক কাজ করেই চলে যায়। ড্রয়িংরুমের সাথেই ডাইনিং রুম।ছোট্ট টেবিল আর দুটো চেয়ার। আমার হুট করে বাগানের ভিতর হারিয়ে যাওয়ার কথা মনে পড়ে গেলো। আমি তো ওর পিছনেই ছিলাম।
পিছন থেকে সৌরভ বলল
– তোমার হাতের ডান পাশে আমার রুম। রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।
ওর রুমে ঢুকে মেজাজ বিগড়ে গেলো। এতো অগোছালো কেউ কীভাবে হতে পারে?
বিছানার উপর ওর কাপড় চোপড় দিয়ে ঠাসা। মেঝেতে পা দিতেই গা সিরসির করে উঠলো। এতো ময়লা!
সৌরভ বলল
– তোমার ঝামেলায় আমার রুম গোছানো বন্ধ হয়ে গেছে।
– মাতাল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ালে তো রুমের প্রয়োজন কখনওই হবেনা। তাই এত নোংরা।
ও আর কোনো কথা বলল না। বিছানার উপর থেকে কাপড় চোপড় নিয়ে চলে গেলো। তারপর এসে বিছানা ঝেড়ে বালিশ ঠিক করে রেখে আমাকে বলল
– মশার সমস্যা নাই, তুমি ঘুমাও।
– আর তুমি?
– আমি তো মাতাল। মাতালের আর কী?
– আমি মজা করে বলেছি।
– অনেক রাত হয়েছে এখন আর মজা করার সময় না।
– মুভি???
– নাহ আমার ভালো লাগছে না।
ও চলে গেলো। আমিও আর ডাকলাম না। শুয়ে পরলাম।
হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে ধরতে আসছে।
খুবই বিশ্রী একটা হাত। কিন্তু হাত টা যে কার সেটা দেখা যাচ্ছে না। আমি সরে যাওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। আর হাতটাও আমার খুব কাছাকাছি চলে এলো। আমার কাটা হাতটা ধরলো। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলাম।
এতো শক্ত করে হাত ধরেছে যে আমি ছাড়াতেও পারছিলাম না।আমার পুরো শরীর ভার হয়ে যাচ্ছে।
সৌরভের কণ্ঠ শুনতে পারলাম। আমাকে ডাকছে
– শারলিন, শারলিন….
আমি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি পারছি না।
শরীর আর আগের মতো ভার মনে হচ্ছে না।চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি সৌরভ চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
– কী হয়েছে? তোমার শরীর ঘেমে ভিজে গেছে।
আমিও অবাক হলাম আমার শরীর ভেজা।
– আমি বুঝতে পারছিনা। মনে হলো একটা বিশ্রী হাত আমাকে ধরতে আসছে। জানো নীল আমার কাটা হাতও ধরেছিলো।
সৌরভ সাথে সাথে আমার কাটা হাত নিয়ে কী যেন দেখলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে।
তারপর বলল
– আরে কিছুই না। আসার পর থেকে চিন্তাই করে গেছো যে বাড়িটা ভূতের তাই অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছো।
– নাহ নাহ সত্যি বলছি।
– হয়েছে বুঝেছি। এখন চুপ থাকো। তোমার গোঙানির আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙে গেছে।
– আমার এখানে থাকতে ভালো লাগছে না। তুমি আমাকে একটা মেয়েদের হোস্টেল খুঁজে দাও। বাবা সব টাকা দিয়ে দিবে।
– এতো রাতে কই পাবো? তার জন্যে তো দিন হতে হবে।

পুরো রাত আমি আর ও জেগে রইলাম। ভুলেও আমি চোখের পাতা এক করিনি। যে ভয়টা পেয়েছি তাতে আমার এই বাড়িতে থাকার সাহস নেই।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! 15

0

ছায়া নীল! 15

Maria Kabir

গাড়ির স্পিড আবার বেড়ে গেলো। সৌরভ কে বললাম
– আরে কমাও না প্লিজ।
– দেখো আমাদের বাড়ি অনেক দূরে। স্লো স্পিডে চালালে অনেক রাত হয়ে যাবে।
– কই থাকো তোমরা?
– একটু শহর থেকে দূরে গ্রামের কাছাকাছি। সিট বেল্ট বেধে নাও।
জানালা দিয়ে রাতের শহর দেখছিলাম। ও দেখতে খারাপ না। তবে স্মার্ট, লম্বা, গায়ের রঙ শ্যামলা। তবে চলাফেরাতে একধরনের আভিজাত্য প্রকাশ পায়। ও দেখতে যেমনি হোক না কেনো, আমি ওকে ভালবাসি। গাড়ি থেমে যাওয়াতে একটু সামনে ঝুকে গেলাম।
আমি বললাম
– চলে এসেছি?
সৌরভ হেসে বলল
– নাহ। যেতে অনেক দেরি।
– তাহলে থামলে যে??
– কী খাবে বলো?
– না কিছুই খাবো না।
– দেখো শারলিন, পরে খুদা লাগলে কিন্তু ভালো কিছু পাবা না। এটাই লাস্ট ভালো খাবারের হোটেল।
– আমি আসার আগেই খেয়েছি।
– যদি খুদা লাগে আর আমার কাছে খাবার চাও তো পুকুরে ফেলে দিয়ে চলে যাবো।
সৌরভ গাড়ি থেকে নেমে গেলো।
কথায় কথায় রাগ দেখানো একটা বদ অভ্যাস। ওর সাথে বাধ্য হয়ে যাওয়া। এর থেকে তুহিন লোকটাকে বিয়ে করলেই হতো। কত শান্তিতে থাকতাম।
হাতে খাবারের প্যাকেট নিয়ে গাড়িতে ঢুকলো। ও বলল
– খবরদার খাবারের দিকে তাকাবা না।
– আমার ওরকম স্বভাব নেই।
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল
– আমার প্রথম প্রেমিকা ছোঁচা ছিলো। বিশ্বাস করবা না শারলিন। ঘুরতে বের হলেই তার খুদা লেগে যেতো। আর আমার পকেট ফাকা হতো।
– হ্যা, তোমার ভালবাসার মানুষের জন্য তুমি সামান্য টাকা ভাঙতেই পারো।
– হ্যা, জীবন দিলেও বা কী? তুমি যেমন টা করেছো।
– অনেক বড় ভুল করেছি। বিয়েটা করে নিলেই হতো। মাও রাগ হয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতো না আর বাবাকে এতো কষ্ট করতে হতো না।
– তোমার মা তো সেরা পাব্লিক।
আমি আর কিছুই বললাম না। আমার মৃত্যুই এখন সবাইকে শান্তি দিবে। মাও বাঁচবেন সৌরভ ও।
প্রায় ১ ঘণ্টা পর আমার মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। আফরোজার ফোন। রিসিভ করলাম। আফরোজা বলল
– কিরে কেমন আছিস?
– আছি ভালোই। তুই?
– ভালো। আংকেল বাসায় এসেছিলো।
– কী বলল?
– তোকে তোর মেজো ফুপুর বাসায় পাঠানোর কথা।
– হুম। রাখি, পরে কথা বলবো।
সৌরভ কোকাকোলার মাঝারি বোতল আমার দিকে ছুড়ে দিয়ে বলল
– ক্যাচ।
ক্যাচ ধরতে গিয়ে কাটা হাতের উপর বোতল এসে পরলো।
কাতরে উঠলাম, মুখ দিয়ে ব্যথা পাওয়ার উঁহু শব্দ বের হয়ে আসলো। আর ব্যান্ডেজ লাল হয়ে যাচ্ছিলো। সৌরভ গাড়ি থামিয়ে পিছনে এসে আমার পাশে বসলো। তারপর বলল
– ক্যাচ ও ধরতে পারো না।
– পারি তো কিন্তু হাতে যে ব্যথা।
রক্তে ব্যান্ডেজ ভিজে যাচ্ছে। ও ব্যান্ডেজ খুলে ফেলল। আমার ওড়নার এক পাশ দিয়ে রক্ত মুছে দিয়ে ওর প্যান্টের পকেট থেকে রুমাল বের করে হাত বেধে দিলো।
তারপর বলল
– বাসায় গিয়ে আমি ব্যান্ডেজ করে দিবো। তুমি কীভাবে হাত এভাবে কাটতে পারলে?
হাত ধুয়ে খাবারের প্যাকেট থেকে খাবার বের করে বলল
– মা রান্না করেছে কিনা ঠিক নেই। তাই এখন খেয়ে নাও।
ফাস্টফুড এনেছি। সবজির স্যুপ টা খাও।
কিন্তু বাটি ধরলাম এক হাতে কিন্তু খাবো কোম হাত দিয়ে? ওই হাত তো নাড়াতেই পারছি না।
আমার এই অবস্থা দেখে ও আমার হাত থেকে বাটি নিয়ে বলল
– আমি খাইয়ে দেই। আমার জন্যেই তো নিজেকে শেষ করে দিয়েছো।
১০.৩০ টায় পৌছালাম। এত অন্ধকার আশেপাশে।ও বলল
– আমার পিছনে পিছনে আসো।
গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম গাছপালা দিয়েই ভরা।
– শুনো না?
– বলো।
– বাড়ি কই তোমাদের?
– একটু ভিতরে। আগে বাগান তারপর…
– লাইট তো নেই, এতো অন্ধকার।
– মা লাইট জ্বালাতে ভুলে গেছেন।
ওর পিছনে হাটছি, এতো বড় বড় গাছ। ঝিঝিপোকার ডাকে পরিবেশ থমথমে হয়ে গেছে।
একটু পর মনে হলো ও আমার সামনে নেই। কই গেলো?
অন্ধকারের মধ্যে ওর হাতের টর্চের আলোতেই যাচ্ছিলাম। এখন সেই আলোও দেখছি না আর ওকেও দেখছি না।
হাতে মোবাইল এতবার লক বাটন চাপলাম কিন্তু ফোনে আলো জ্বললো না।
খুব ঘামতে শুরু করলাম। আমি এগোতেও পারছি না আমার পিছাতেও পারছিনা। কাটা হাত থেকে মনে হচ্ছে রক্ত পরছে।
আশেপাশে তাকিয়ে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পারছিনা।
দূর থেকে একটা ছায়া আমার দিকেই আসছে। ছায়া দেখে মনে হলো, ও আসছে।
আমার কাছেই এসে বলল
– তুমি এখানে কেনো?
বাসার ভিতরে ঢুকে পিছন ফিরে দেখি তুমি নেই।
– তুমিই তো আমাকে ছেড়ে চলে গেলে।
– মজা করার সময় এখন না।
– আমি মজা করছিনা। সত্যি আমি তোমার পিছনেই ছিলাম কিন্তু হুট করে তুমি উধাও হয়ে গেলে।
– আমি তো ভূত তাই না?
– হতেও পারো। যা যা করে আসছো এতদিন তাতে তো স্বাভাবিক মানুষ মনে হয়না।
– বাসায় গিয়ে আলোচনা করা যাবে।আমার পিছনে পিছনে আসো।
– তুমি এবারো আমাকে ফেলে চলে যাবা।
আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল
– এবার উধাও হলে একসাথে হবো।
– একি এই অবস্থায় কেউ দেখলে?
– মা ঘুমাচ্ছে আর কেউই নেই। শারলিন তুমি অনেক হাল্কা।
– হয়েছে হয়েছে আমাকে নামাও।
– চুপ থাকো।
ও হাটছে আমি বললাম
– তোমাদের বাড়িটা না হরোর মুভিতে দেখানো বাড়ির মতোই।
– তুমি এখনো বাড়িটা দেখোনি।
– ঠিক কিন্তু গাছপালা আর বাড়িতে যেতে..
– পাগলী একটা। অতিমাত্রায় হরোর মুভি দেখার ফলাফল।
– আমার মজা লাগে দেখতে।
– আমার কাছে আছে। আজকে দেখা যাবে একসাথে।

চলবে………!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১৪.

0

ছায়া নীল!

১৪.

Maria Kabir

খাবার যা এনেছে তাতে মনে হচ্ছে বাবা না খেয়েই মার ওখান থেকেই এসেছে। দুটো প্লেটে খাবার বেড়ে টেবিলে রাখলাম। খাবার পানিও প্রায় শেষ। বাইরে টিউবওয়েল আছে ওখান থেকে পানি আনতে হবে। পানির জগ হাতে নিয়ে টিউবওয়েল এর কাছে আসার পর দেখলাম বাবা চোখেরজল মুছছে আর কথা বলছেন ফোনে।
বাবা যদি দেখে ফেলে আমি তাকে এই অবস্থায় দেখে ফেলেছি তাহলে অনেক লজ্জা পাবে। তাই না দেখার ভাব করে টিউবওয়েল থেকে পানি নিলাম। এক হাত দিয়ে কাজ করা কতো যে কষ্ট বুঝতে পারছি। এর থেকেও কষ্ট মনে।
টেবিলে বসে বাবার জন্য অপেক্ষা করছি। আমার ফোন বেজে উঠলো। সৌরভ ফোন করেছে।
রুমে গিয়ে ফোন রিসিভ করলাম। আমি বললাম
– কেনো ফোন করেছো?
– আরে ফোন ধরেই ধমক?
– কী কারণে ফোন করেছো?
– শুনলাম আমাদের বাসায় নাকি আসতেছো?
– হুম। তো?
– আমাদের বাসায় তুমি আসবা না। বড় মামাকে বলো যে,তুমি ওই বাড়িতে যাবে না।
– কেনো আসবো না তোমাদের বাসায়?
– সে কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিতে বাধ্য নই।
– আমি তোমাদের বাসায় যাবো না যাবো সেটা আমার ব্যাপার।
– মানে তোমার লজ্জা বলতে কিছু নাই? আমার বাসায় আসতে নিষেধ করছি। আর তুমি বেহায়ার মতো আসার জন্য পাগল হয়ে আছো।
– শুনো আমি তো অস্বাভাবিক মানুষ। অস্বাভাবিক মানুষের লজ্জা থাকেনা। লজ্জা থাকলে তোমার মতো নিচু প্রকৃতির মানুষের সাথে কথা বলতাম না।
– nonsense কোথাকার।
আমি বলতে যবো আর ফোন কেটে দিলো সৌরভ।
বাবা আসছেন মনেহয়। বাবা বললেন
– খেয়ে নে মা। তোকে আজকেই পাঠিয়ে দিবো।
– বাবা তুমিও তো খাওনি।
বাবা আর আমি খেয়ে নিলাম। বাবা বললেন
– তোর ব্যাগ গুছিয়ে রাখ আর মেডিসিন নিতে ভুলিস না। সৌরভ এসে নিয়ে যাবে।
– তুমি নিয়ে গেলেই তো হয়।
– আমি চিনি না রে মা।
বাসার জামা কাপড় পড়েই যাবো। আমার এখন আর সাজগোজ এর মন নেই।
ব্যাগ গুছিয়ে মোবাইল হ্যান্ড ব্যাগে রাখলাম। বাবা বলল
– সৌরভ বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
বাবা ব্যাগ নিয়ে আগে আগে গেলে। বাবা বলল
– দরজা টা ভালোভাবে লক কর। চাবি এই নে।
বাবা বেড়িয়ে গেলেন আমি লক করে চাবি নিয়ে বাবার পিছনে পিছনে ছুটলাম।
বাবা একটা সাদা রঙের গাড়ির কাছে গিয়ে থেমে গেলে।
বাবা কার সাথে যেন কথা বলছে। কাছে গিয়ে দেখি ড্রাইভার সিটে সৌরভ বসা। সৌরভ বলল
– শারলিন তুমি পিছনে বসো।
বাবাকে বলল
– বড় মামা আপনিও বসুন আপনাকেও পৌঁছে দেই।
বাবা বলল
– নাহ বাবা, আমার মেয়েটার একটু খেয়াল রেখো। তোমার মামী একটু শান্ত হলেই ওকে নিয়ে আসবো।
সৌরভ বলল
– বড় মামা সমস্যা নাই। ও যতদিন ইচ্ছা থাকবে।
বাবা বলল
– তাহলে যাও বাবা।
সৌরভ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে এতো দ্রুত গাড়ি ছুটালো যে মনে হলো ওর ট্রেন ছুটে যাবে। আমার এতো গতিবেগে শরীর খারাপ লাগছে। সৌরভকে বললাম
– স্লোলি ড্রাইভ করো।
সৌরভ বলল
– আমি এভাবেই ড্রাইভ করি। অভ্যাস করে নাও।
– সৌরভ আমার খারাপ লাগছে।
– কবে তোমার ভাল লাগছিলো?
মনে হচ্ছে গাড়ি একটু স্লো করেছে ও।
– ঝড়ের বেগে কেউ ড্রাইভ করে?
– কেউ বেড়াতে গেলে ফকিন্নির মতো কাপড় পড়ে?
– আমি তো অস্বাভাবিক মানুষ।
– পাইছো এক ডায়লগ। আল্লাহ আমি কোন মুখে এই কথাটা বলছিলাম।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১৩

0

ছায়া নীল!

১৩.

Maria Kabir
– আচ্ছা স্বভাবে কি ভালবাসা থাকে না?
– থাকতেও পারে।তোমার সাথে আর কয়দিন এভাবে দেখা সাক্ষাৎ হতে থাকলে সত্যি আমি আবার প্রেমে পড়বো। তবে এবারকার প্রেম হবে ভয়াবহ।
– প্রেম আবার ভয়াবহ হয় নাকি?
– তুমি যা করেছো সেটা কি ভয়াবহ নয়? কোনো স্বাভাবিক মানুষ নিজের দেহকে ক্ষত বিক্ষত করতে পারে না।
– তুমি বলতে চাচ্ছো আমি অস্বাভাবিক?
– হ্যা। যাই হোক বাদ দাও। আমি আপাতত তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না।
– বাবা আর মা চলে আসবে এখন এখান থেকে ভাগো।
– হ্যা যাচ্ছি। মোবাইল টা নিয়ে আসো।
মোবাইল টা এনে ওর হাতে দিলাম।
সৌরভ হেসে বলল
– একটা মিথ্যা কথা বলেছি তোমাকে।
– কয়টা বলেছো তা কি আমি জানি? একটার বেশিও তো হতে পারে।
– নাহ একটাই বলেছি। সেটা হলো, তোমার পরে আর কোনো মেয়ের সাথে আমি জড়াই নেই।
– বললা কেনো?
– ভাবলাম তোমার প্রতিক্রিয়া টা কেমন একটু দেখা দরকার।
– আর কোনো মিথ্যে কথা বলেছো?
– নাহ। দুপুরে অনেক ঘুমাবা।
– কেনো?
– রাত জাগতে হবে। সারারাত ফোনে কথা বলবো।
– আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি অসুস্থ।
– তোমার চোখে আমার জন্যে যা দেখেছি সেটা মিথ্যে না।
– আমি তোমার মতো মিথ্যে বলি না।
– ১ টাই বলেছি তাতেই মিথ্যেবাদী?
– ওই কথায় আমি খুব কষ্ট পেয়েছি।
আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল
– আহারে। Sorry শারলিন আর হবে না।
– আমাকে ছাড়ো। ভালবেসে আমাকে স্পর্শ করবে। যদি না পারো তাহলে স্পর্শ করবে না।
– আচ্ছা আচ্ছা ছেড়ে দিলাম।
এই কথা বলে আমাকে ছেড়ে দিলো। তারপর সৌরভ চলে গেলো।
দরজা আটকে দিয়ে বাবা আর মা আসার অপেক্ষায় রইলাম। দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকাল হচ্ছে বাবার খোজ নেই। এদিকে আমি রান্নাও করতে পারছি না। খুদায় অসহ্য লাগছিলো। এক হলো মনের অশান্তি ২য় হলো শরীরের যন্ত্রণা।
বিকালবেলা কলিংবেল বাজলো। বাবা এসেছে মনে হয়। সাথে মাও এসেছে মনে হয়।
দরজা খুলে দেখি বাবা একা। বাবার চেহারা দেখেই বুঝতে পারলাম ঝামেলা একটা হয়েছে। বাবার হাতে খাবারের প্যাকেট।
দরজা আটকে দিয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম
– মা আসেনি?
বাবা বললেন
– তুই এই বাড়িতে থাকলে সে আসবে না।
কথাটা শুনে বুঝতে পারলাম, আমি অনেক বড় ভুল করেছি। বাবা আমাকে অনেক ভালবাসেন। আমার সব ভুল, দোষ ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন।
কিন্তু মা আমাকে পছন্দ করেন না। বুঝতে শেখার পর থেকেই বুঝেছি।
মা চাইতেন ছেলে হোক। কিন্তু মেয়ে হলো।আমার পরে তার একটা ছেলে হয়েছিল কিন্তু সে জন্মের পরেই মারা যায়। এরপরে মা আর কোনোদিনও সন্তান নিতে পারলেন না। তার নাকি রক্তে আরএইচ প্রব্লেম না কী যেন আছে।
সে আমাকে এমনিতেই পছন্দ করতো না তার উপর আমার চেহারা নাকি মেজো ফুপুর মতো।
আর আমিও কোনোদিন মা পছন্দ করে এমন কাজও করিনি। তাই আমার প্রতি মায়া তার কমেছে দিনদিন, বাড়েনি।
বাবাকে বললাম
– তুমি আমাকে ছোটো ফুপুর বাসায় কয়েকদিনের জন্যে রেখে আসো। মার রাগ ঠাণ্ডা হলে আমি চলে আসবো।
– বলেছিলাম তোর ছোটো ফুপুকে কিন্তু সে রাজি হয়না। বলে, ওরকম পাগল খারাপ মেয়ে আমার বাসায় আনবো না। কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসলে, দায়ী কে হবে?
– বড় খালা তো মায়ের মতোই। সে তো আমাকে আগাগোড়াই পছন্দ করেন না।
– কী বলবো রে মা, কপাল আমার তোমার মায়ের মতো একজন বউ পাইছিলাম। পুরো জীবন কষ্ট করতে করতেই গেলো আমার। এই পুরো সম্পত্তি তোর মায়ের নামে। চাইলেও তো তাকে তালাক দিতে পারছি না। চাকরী যা করি তাতে তোর আমার চলবেও না।
– বাবা আমাকে কোনো হোস্টেলে পাঠিয়ে দাও।
– তোর মেজো ফুপুর বাসায় পাঠিয়ে দেই কয়েকদিনের জন্য।
– মেজো ফুপু?? উনি রাজি হবে তো?
– দেখি। খাবার টা খেয়ে নে। আমি কথা বলে আসি।
বাবা চলে গেলেন ফোন হাতে নিয়ে।
আমার জীবন টা এমন হয়ে গেলো? নিজের বাড়িতে নিজেই থাকতে পারছি না। সম্পত্তি বাবারই কিন্তু মা তার নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছেন যদি ছেলের আশায় আরেকটা বিয়ে করেন তখন কী হবে?
আমার জীবন টা একটা অদ্ভুত বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। আমি জানিনা, আমার বাবা কবে সুখের দেখা পাবেন!
আমার নিজের সুখ তো নিজেই ধ্বংস করেছি। আমার জন্মটাই অলক্ষুণে।

চলবে…….!

#Maria_kabir