Thursday, June 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2402



ছায়া নীল ! ৩২.

0

ছায়া নীল !

৩২.

Maria Kabir
আমি যা দেখছি সেটা সত্য না বাস্তব বুঝতে পারছিনা। দৃষ্টিভ্রম হচ্ছে নাকি? নাকি সত্যি?
মেজো ফুপু এখনো হাসছেন। আগের হাসির সাথে এখনকার হাসির মোটেও মিল খুঁজে পাচ্ছি না। এখনকার হাসিটা ভয়ংকর।
আমার ভেতর থেকে কেউ একজন বলছে
– জানালা আটকে দিয়ে সৌরভের পাশে গিয়ে বোস।
হাত পা কাঁপতে শুরু করলো। সেই অবস্থায় আমি জানালা আটকে দিয়ে সৌরভের পাশে বসলাম। ও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ওর কপালে হাত দিয়ে বুঝলাম জ্বর কমেছে।
রুমের দক্ষিণ পাশে ঘড়িটায় দেখলাম রাত ৩ টা বাজছে। ঘুমাতে ভয় করছে, যদি স্বপ্নের ভেতর আবার সেই ভয় পাই তাহলে এবার আর রক্ষা নাই। সৌরভ অসুস্থ আর ঘুমুচ্ছে। আর মেজো ফুপু আশেপাশে ঘুরছে।
ঘড়ির কাটার দিকে তাকিয়ে সেকেন্ডের কাটার ঘোরা দেখছি।
তাছাড়া কিছু করার মতোন নেই। সেকেন্ডের কাটা তার মতো ঘুরছে। একঘেয়েমি লাগছে না আমার। আমার পাশে শুয়ে থাকা মানুষ টার সাথে আমি কতদিন থাকতে পারবো জানি না। আমার বিরাট কোনো ক্ষতি করেই ফুপু ঠাণ্ডা হবেন। আমাকে মেরেও ফেলতে পারেন। আমাকে মেরে ফেললে তার ছেলের কষ্ট হবে, সেটা কী সে বুঝে না?
নাকি তার সেই ধরনের কোনো অনুভূতি নেই। আর মায়ের মুখে তো কোনোদিনও আমার এই মামার কথা শুনিনি।
মা আমাকে খুব কড়া শাসনে রাখতেন। একা কোথাও যেতে দিতে চাইতেন না। কারণ টা আজ খুঁজে পেলাম। আমার চেহারা মেজো ফুপু মতো বলেই আমাকে স্বাধীনতা দেয়া হয়নি। আমি যাতে মেজো ফুপুর মতো বখে যেতে না পারি তাই আমাকে কড়া শাসনে রেখেছিলেন।
আর ব্ল্যাক ম্যাজিক ফুপুই নীলকে শিখিয়েছে।
সৌরভ নড়ে চড়ে উঠলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ওর ঘুম ভেঙে গেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম
– ঘুম আসছে না?
ও উঠে বসে বলল
– মা আশেপাশে আছে। তোমাকে বের করে নেয়ার চেষ্টা করছে।
– তুমি কীভাবে বুঝলে?? তুমি তো ঘুমিয়ে ছিলে?
– মা আমাকে বলেছে, তোমাকে আজকে রাতেই বের করে নিয়ে চলে যাবেন।
– আর কী কী বলেছে?
– তোমার মা যেমন তাকে বিধবা বানিয়েছে ঠিক তোমাকে তো বিধবা বানাতে পারবে না। তাই দূরে নিয়ে বুঝোই তো। স্বামী থাকতেও তার থেকে দূরে থাকা বিধবা হওয়ার থেকেও কষ্টকর।
– আমি তোমার থেকে দূরে থাকতে পারবো না। অনেক কষ্টের পর তোমাকে পেয়েছি।
– হ্যা এটাই তো কথা। মা আরো খেপেছে, বাবার লাশ পুলিশের হাতে দিয়ে দিয়েছি। আজ এতোটা বছর যাবত একজন মানুষের লাশ পৃথিবীর উপর আছে। এটা কোনোভাবেই ঠিক না।
তাই পুলিশ কে দিয়ে বের করে দাফন দিয়ে এখানে আসলাম।
– ফুপু জানেন? আর পুলিশ কোনো ঝামেলা করেনি?
– নাহ আমার চেনাজানা তো। সেটা আমি ব্যবস্থা করেছি। ফরমালিন থেকে বের করার পর বাবার লাশ দ্রুত পঁচতে শুরু করেছে।
কেউই গোসল করাতে চায়না। শেষ পর্যন্ত আমি আর রাসেল মিলে নাকে কাপড় বেধে কোনোরকম গোসল করিয়েছি।
তারপর কাফনের কাপড় পড়ানোর কিছুক্ষণ পর থেকে পেট ফেটে গেলো।
কবর দিতে অনেক ঝামেলা হয়েছে।
– তোমার খুব খারাপ লাগছে তাই না?
– নাহ। চোখের সামনে অনেক কিছু দেখেছি তাই এখন আর খারাপ লাগেনা। একবার তো মা আমাকে জোড় করে শ্মশানঘাটে নিয়ে গেলো।তখন আমি মাত্র ১০ বছরের।
– তারপর?
– আর কী? সারারাত ওখানে কাটিয়ে দিলাম।সাহস তো আর সহজে হয়নি।
– তুমি তার সাথে কেনো থাকলা?
– ভেবেছিলাম মাকে ঠিক করতে পারবো কিন্তু পারিনি। তোমার যেন কোনো ক্ষতি না করেন, তাই তোমাকে বিয়ে করলাম। ভাবলাম নিজের ছেলের বউ হলে হয়তোবা কিছু করবেনা। না এবারো আমি ভুল।
– এগুলা বাদ দাও। কিছু খাবা?
– হ্যা খুদা লেগেছে কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছেনা।
– বড় ফুপু তোমার জন্য বিরিয়ানি রান্না করেছেন। আনি?
– হ্যা আনতে পারো। তুমি তো খাওনি আবার খালাও খায়নি।
– হ্যা।
– বড় ফুপুকে ডেকে আনো। আমরা একসাথে খাই। আর বাড়ির বাইরে যাবা না।
শেষ রাতে আমরা খাবার খেতে বসলাম। ও তৃপ্তির সাথে খাচ্ছে। বিরিয়ানি অসম্ভব স্বাদের হয়েছে।
বড় ফুপু আর ও সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা করছে। কোনোভাবেই তারা ভালো কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেনা।
আমিও খুঁজে পাচ্ছিনা। মেজো ফুপু হচ্ছে এমন একজন মানুষ যে,নিজের ভুল, দোষত্রুটি গুলোর দিকে না তাকিয়ে অন্যের ভুল, দোষত্রুটি খুঁজে বেড়ায়। ওনার নিজের ভুলের কারণে বিধবা হয়েছেন আর দোষ চাপাচ্ছেন আমার মায়ের উপর।
আর আমার উপরে সেই ঝালা মেটাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত বড় ফুপু আর সৌরভ মিলে ঠিক করলো দেশের বাইরে কয়েকমাসের জন্য চলে যাওয়ার।
এই ফাঁকে যদি ফুপু শুধরে নেন নিজেকে।
কিন্তু পাসপোর্ট, ভিসা করতে সময় লাগবে।
সকালে উঠে সৌরভ বেড়িয়ে পরলো। আর আমাকে কড়া নিষেধ করে গেলেন
– যেন বাসা থেকে এক পাও বের না হই।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ৩১

0

ছায়া নীল !

৩১.

Maria Kabir
বড় ফুপুকে বললাম
– আমি কী দোষ করেছি যে,আমার সাথে এরকম করছে?
– তোর মার প্রতিশোধ তোর উপর নিচ্ছে.. নাকি জানি। হয়তোবা তোর মাকে কোনোভাবে কষ্ট দিতে চেয়েছিল। তাই তোকে দিয়ে..
– মা তো আমাকে ভালবাসে না। আর আমার কোনো ক্ষতিতে তার কিছুই যায় আসবে না।
– তোর সুইসাইড করার চেষ্টায় বিয়ে ভেঙেছে। এতে এলাকায় তোর বদনাম হয়েছে। তোর মাকেও এই ব্যাপার টা নিয়ে দোষারোপ করা হয়েছে। তোর মার আত্মসম্মানবোধ টা বেশি তো তাই করেছে। এসব নিয়ে আলোচনা না করে চিন্তা কর কীভাবে এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
– বাসা চেঞ্জ করলেই তো হয়।
– সৌরভ বলল যে ওর অফিসের রুমেও নাকি তুই ভয় পেয়েছিস?
– হ্যা, যদি চোখ বুজতে পারি সাথে সাথেই বিকট হাত আমাকে ধরতে আসছিলো।
-ওকে থামাতে হবে। কীভাবে জানি না।তবে বাসা চেঞ্জ করে কোনো লাভ হবেনা।
ফুপু বিছানা ছেড়ে উঠে চলে গেলেন।
কিছুক্ষণ পর সৌরভ রুমে ঢুকলো। গভীর চিন্তায় সে মগ্ন। উদাসীন চলাফেরায় বোঝা যাচ্ছে। আমার পাশে বসে বলল
– এখন কেমন আছো?
– আমি ভালো আছি। তোমার এই অবস্থা কেনো? খাও নাই কিছু?
– নাহ, ভালো লাগছেনা খেতে।মাথার মধ্যে একটাই চিন্তা কীভাবে এই ঝামেলা থেকে বের হওয়া যায়।
– ফুপুর সাথে কথা বলোনি?
– হ্যা, আজকে তোমাকে ঘুমে রেখে মাকে নিয়ে বের হয়েছিলাম। অনেক বুঝালাম কিন্তু কোনো লাভ হলো না।
– কী বলে?
– বাদ দাও শারলিন। শারলিন আমি একটু ঘুমাবো।
আমি সরে বসলাম ও বালিশে মাথা রেখে বলল
– খুব খিদে পেয়েছে বড় খালার কাছে গিয়ে বলো, আমি খুদা লেগেছে।
ফুপুর কাছে এই কথা বলার সাথে সাথে ফুপু ফ্রিজ থেকে বিরিয়ানি বের করে গরম করতে দিলেন। ফুপু বললেন
– সৌরভ, আমার হাতের বিরিয়ানি খুব পছন্দ করে। তোকে শিখিয়ে দিবো। তারপর ওকে তিনবেলা রান্না করে খাওয়াবি।
– আমারো খুদা লেগেছে।
বড় ফুপু হাসতে হাসতে বললেন
– বুঝেছি বিরিয়ানি দেখে খুদা লেগেছে।
খাবার নিয়ে রুমে যাওয়ার পর দেখলাম ও ঘুমিয়ে গেছে।
খাবার পাশের ছোট্ট টেবিলে রেখে দিয়ে ওর পাশে শুয়ে পরলাম।
মেজো ফুপু কোথায়, কী করছে? একটা মানুষ এতোটা সাহসী কীভাবে হতে পারে?
আর আমার মায়ের সাথে তার ঝামেলা কিন্তু সে আমার সাথে কেনো এমন করছে?
সৌরভের হাতের উপর আমার হাত পরাতে বুঝতে পারলাম ওর জ্বর আসছে। মাথায় হাত দিয়ে বুঝতে পারলাম অনেক জ্বর। বিছানার পাশে চাদর রাখা ছিলো। ওর গায়ে চাদর দিয়ে দিলাম। বড় ফুপুকে ডেকে আনলাম।
বড় ফুপু পানিপট্টি দিতে বলে গেলেন।
পানিপট্টিতেও কাজ হচ্ছে না। ওর শরীরের তাপমাত্রা বেড়েই যাচ্ছে। আর জ্বরের ঘোরে ও আবোলতাবোল কথা বলছে।
রাতে জ্বর আরো বাড়লো।চোখের সামনে এভাবে ওকে কষ্ট পেতে দেখে আমার মনে হচ্ছে,যেকোনো মূল্যে ওকে শান্তি দিতে চাই।
বড় ফুপু ডাক্তার ডেকে আনলেন। ডাক্তার ইনজেকশন দিলেন আর কিছু মেডিসিন দিলেন। আর শরীর দূর্বল বলে সেলাইন দিয়ে গেলেন।

ইনজেকশন দেয়ার ৩০ মিনিট পর ওর শরীরের তাপমাত্রা কমতে শুরু করলো।
ওর পাশ থেকে উঠে জানালার ধারে এলাম।
রুমের মধ্যে গুমোট লাগছিলো। রাতে জানালা খুলতে সাহস পাচ্ছিলাম না। তারপরও জানালা টা খুললাম। জানালা দিয়ে পাশের খোলা জায়গা দেখা যাচ্ছিলো। আর দেখলাম মেজো ফুপু দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি হাসছেন। এতো দূর থেকেও তার হাসি দেখা যাচ্ছে।

চলবে…..!

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ৩০.

0

ছায়া নীল !

৩০.

Maria Kabir
চোখ খুলে দেখি আমি বড় ফুপুর বাসায় তার বেডরুমে শুয়ে আছি।
পাশের চেয়ারে বড় ফুপু বসে আছেন। আমি মনে করার চেষ্টা করছিলাম কী হয়েছিলো? শুধু মনে পড়ছে সিঁড়ি থেকে পরে গেলাম। বড় ফুপু বললেন
– সৌরভ তোকে এখানে রেখে গেছে।
আমি বললাম
– ও কই?
– আছে। তোকে কিছু বলতে বলেছে আমাকে।
– কী বলতে বলেছে?
ফুপু আমার পাশে বিছানার উপর বসলেন। আমার মাথা তার কোলে নিয়ে চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলতে শুরু করলেন
– আমরা ৩ বোন। ৩ জনের মধ্যে মেজো সবথেকে সুন্দর। আমাদের দাদী সুন্দরী পছন্দ করতেন। তাই ওর আদর বাড়িতে একটু বেশি ছিলো। দাদীর আদরে আর আহ্লাদে ওকে কেউই শাসন করতে পারতো না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ওর আচার আচরণে অনেক পরিবর্তন আসতে শুরু করলো। যেহেতু ও সুন্দরী ছিলো তাই প্রেমপত্র থেকে শুরু করে ছেলেরা বিরক্ত করতে শুরু করলো।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে বাসায় নালিশ আসতে শুরু করলো। প্রতিদিন একটা না একটা নালিশ আসতোই। এ বলতো, নূর কে ওই স্কুলে দেখেছে। আরেকজন বলতো পুরোন বাড়িতে… হাবিজাবি।
ওকে বাবা মা শাসন করেও কোনো ফল পাচ্ছিলো না। বিয়েও দিতে পারছেনা। বড় বোনের বিয়ে না দিয়ে তার ছোটো জনকে কীভাবে বিয়ে দেয়?
আর মানুষ হিসেবে ও মিষ্টভাষী। মিষ্টি কথায় মানুষকে খুব সহজে ভোলাতে পারে। আর ওর জাদু টোনার দিকে ঝোক ছিলো। এখনো আছে কিনা জানি না। প্রায় ঘুম থেকে উঠে দেখতাম ও আমার পাশে নেই। সকালে বাড়ি ফিরতো।
ফুপু থামলেন। হয়তোবা কথা গুলো গুছিয়ে নিচ্ছেন।
ফুপু আবার বলতে শুরু করলেন
– শ্মশানঘাট, গোরস্থান দিয়ে ঘুরে বেড়াতো। ওকে জিজ্ঞেস করলেই সব বলে দিতো। কোথায় যায়? কী করে? কেনো করে?
আমার বিয়ে হয়ে গেলো মামাবাড়ি তে।তাছাড়া উপায় ছিলো না।
তোর বাবা বিয়ে করার পর মা মারা গেলেন।
তোর মার সাথে মেজোর বেশ ভাব ছিলো। তোর মামাও এ বাড়িতে প্রায় এসে থাকতেন। তোর মামার সাথে মেজোর সম্পর্ক হয়ে গেলো। ভাবছিস আমি কীভাবে জানলাম?
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করলাম।
ফুপু বললেন
– মেজো আমাকে খুব ভালবাসতো। আমাকে সবকিছুই বলতো। সম্পর্কের এক পর্যায়ে মেজো প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলো।
এখনকার যুগেই এটা একটা ভয়ংকর খবর। তাহলে তো বুঝতে পারছিস তখনকার যুগে ব্যাপার টা কেমন ছিলো?
আমি বললাম
– হ্যা।
– তোর মা কোনোভাবেই রাজি হলো না। তার ভাইয়ের সাথে মেজোর বিয়ে দিতে। কে বা চায় যে তার ভাইয়ের কপালে এরকম বাজে স্বভাবের মেয়ে থাকুক। এদিকে মেজোর ৫ মাস হয়ে গেছে। তোর মার ঘোর অসম্মতি তে বিয়েটা হলো। তোর মাই তোর নানাবাড়ির কর্তা। মেজো আর তোর মামা দূরে গিয়ে সংসার পাতলো। সৌরভ হলো, আমিই ওকে ২ বছর পর্যন্ত লালনপালন করেছি। আমরা ভেবেছিলাম বিয়ের পর মেজোর চরিত্রদোষ টা সেরে গেছে। তাই তাকে চোখেচোখে রাখা বন্ধ করলাম।
কিন্তু….
ফুপু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বললেন
– সৌরভ অনেক কষ্টের মধ্যে বড় হয়েছে। এমন মা যেন কারো না হয়।
৫ বছরের ছেলেকে বাসায় একা রেখে চলে যেতো। আর ফিরত ২ / ৩ দিন পর। একদিন তো এক ছেলের সাথে ওকে পুলিশ ধরলো।
তারপর ওকে আমাদের বাসা থেকে ত্যাজ্য করে দেয়া হলো। আর এই খবর তোর মা তার ভাইকে জানালো। সেটা শুনে তোর মামা স্ট্রোক করলেন।
– আমার কোন মামা??
– তুই যে লাশ দেখেছিস সেটা তোর মামারই। মেজো ফরমালিন দিয়ে ওর লাশ এখনো রেখে দিয়েছে।
– এগুলা কী বলছেন?
– সত্যি বলছি। আমি সৌরভ কে বলেছিলাম তোকে ওখানে না রাখতে। তোর মার জন্য মেজো বিধবা হয়েছে। হয়তোবা তোর মামাকেই সত্যি ভালবাসতো। এইজন্য……
– কী ফুপু?
– তোর সাথে এমন খেলা খেলেছে। ওর মানসিকতার কোনো ঠিক নেই। যে, মেয়ে একটা লাশ নিয়ে দিনের পর দিন বাস করতে পারে সে তার ভাস্তির ক্ষতি করতে পিছপা হবেনা।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ২৯.

0

ছায়া নীল !

২৯.

Maria Kabir
– তুমি কী করবে?
সৌরভ বলল
– সেটা সকালে দেখা যাবে। এখন ঘুমাও।
– তোমার অফিস আছে না?
– হ্যা। আমার খুব ঘুম আসছে।
– তাহলে তুমি ঘুমাও আমি জেগে থাকি।
সৌরভ হাম ছাড়তে ছাড়তে বলল
– দুজনে ঘুমাই তা না হলে ঘুমের অভাবে আমরা দুটাই পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবো।
– যদি আবার সেইটা আসে?
সৌরভ বালিশে মাথা রেখে বলল
– ভূতের ভয়ে এখন ঘুম বাদ দিবো। প্রবাদ আছে একটা। শুনবা?
– না।
– চোরের ভয়ে ন্যাংটো হয়ে থাকা। আমাদের দশা এখন তাই হয়েছে।
– ছিঃ এগুলা কী বলো?
– আমি তো বলেছি আর তুমি তো স্বয়ংবর ন্যাংটো ভূত দেখে এসেছো।
ভয়ে এতোটাই অস্থির ছিলাম যে ভূত বস্ত্র ছাড়া না সহ সেটা আমার উপর প্রভাব ফেলতে পারেনি।
ঘুম ভাঙল যখন তখন আশেপাশে ও নেই। ঘড়িতে দেখলাম সকাল ১১ টা। ওর বালিশের উপর চিরকুট রাখা। লেখা
– দয়া করে রান্না করে রাখবেন। দুপুরবেলা বাসায় খাবো।

চিরকুট পেয়ে তাড়াতাড়ি করে বিছানা ছেড়ে উঠলাম। খাবার টেবিলে নাস্তা রাখা। ফুপুকে পেলাম না বাসায়। এর অর্থ বাসায় আমি একা!
এই বাড়িতে একা থাকার কোনো মানে হয়না। নাস্তা করে রান্নায় মনোযোগ দিলাম। রান্না করার মতোন তেমন কিছুই বাসায় নাই। ভাত রান্না করলাম আর ডিম ছিলো তাই ডিম আলু দিয়ে ঝোল রান্না করলাম। কোনো মশলাপাতিও নেই। কেউ কি বিশ্বাস করবে যে এই বাসায় খাবার মতো কিছুই নেই।
রান্না শেষ করলাম ১.৩০ এ। ড্রয়িংরুম এ বসে বসে মোবাইলে গেমস খেলছি। এই বাড়িটা ডুপ্লেক্স কিন্তু আজব ব্যাপার হচ্ছে দোতলায় কেউ যায়না। কেনো যায়না??
দোতলার দিকে তাকাতেও কেমন লাগে। মোবাইলে গেমস খেলছি হঠাৎ আওয়াজ হলো। ভাবলাম ইঁদুর বিড়াল হবে। কিন্তু আওয়াজ টা ক্রমাগত বাড়ছেই। তারপর দরজা খুলে যাওয়ার আওয়াজ হলো। আওয়াজ টা দোতলা থেকে এসেছে। ড্রয়িংরুম এ বসলে দোতালা টা দেখা যায় খুব ভালো ভাবে। আমি যেখানে বসে আছি ঠিক সেই বরাবরের একটা রুমের দরজা খুলে গেলো।
তারপর দরজাটা বারবার ধাক্কা লাগছিলো। বাতাসে দরজা খুলে গেছে। এই আওয়াজে মাথা ব্যথা করছে। তাই মোবাইল রেখে দোতালায় উঠে এলাম। এতো ময়লা জমেছে যে দেখেই মনে হচ্ছে অনেক দিন যাবত পরিষ্কার করা হয়না। দোতালায় উঠার পর কেমন একটা গন্ধ নাকে আসছে। আমি একবার কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরি তে ঢুকেছিলাম ফ্রেন্ডের সাথে। কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরি তে কেমিকেল এর গন্ধ প্রচুর। ঠিক সেই রকমের গন্ধ নাকে আসছে। বুঝলাম না এখানে এই ধরনের গন্ধ কীভাবে আসলো।
দরজা আটকাতে যাবো তখন রুমের মধ্যে চোখ গেলো। মাকড়শারজাল দিয়ে ভরা। অন্ধকার আর কেমন সেই কেমিকেল গন্ধ দিয়ে পরিপূর্ণ। দরজা আটাকাতে পারছি না। এতো শক্ত দরজা কীভাবে খুললো? আর এতো জং ধরেছে স্ক্রু নাটে যে দরজা নড়ছেই না। কিন্তু আমি নিচে থেকে তো দেখলাম দরজা বারবার ধাক্কা খাচ্ছে।
মনে হয় দৃষ্টি ভ্রম হয়েছিলো। আমার ওড়না দরজার সাথে এমন ভাবে আটকালো যে বাধ্য হয়ে রুমের মধ্যে ঢুকতে হলো।
রুমের দক্ষিণ পাশে বিশাল আলমারির মতো যার চার দেয়াল কাচের। সেই কাচের মধ্যে একজন মধ্যবয়সী পুরুষের দেহ। যার দুটো চোখই খোলা। মনে হচ্ছে চোখ দুটো কোটর থেকে বের হয়ে যাবে। দেহটা তরল পদার্থ এর মধ্যে রাখা। কারণ চুল গুলো নড়ছিলো। জানি না কার দেহ। কী ভয়াবহ জিনিষ দেখছিলাম সেটা আমি বুঝতে পারছিলাম না।তবে এটুকু বুঝতে পারছিলাম যে এখান থেকে আমার চলে যাওয়া উচিৎ।
আমি ওড়ানা রেখেই দৌড়ে নিচে নামতে শুরু করলাম। কিন্তু হোচট খেয়ে পরে গেলাম।

চলবে…….!

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ২৮.

0

ছায়া নীল !

২৮.

Maria Kabir

আমি দৌড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম কিন্তু পারছি না। মনে হচ্ছে কেউ আমার পায়ে পাথর বেধে দিয়েছে। আমি দৌড়ানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছি আর মানুষ না কী বলবো বুঝতে পারছি না, আমার দিকে উল্টো হেটে এগিয়ে আসছে।
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে ভয়ে।জিনিষ টা কাছে আসলেই আমি মারা যাবো। এটা কখনো নীল হতে পারেনা। নীল আমাকে অনেক ভালবাসে। ও আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা।
মনে হলো কেউ আমার হাত ধরলো। আর বলল
– শারলিন তুমি এখানে কেনো?
আমি সেই কণ্ঠস্বরের দিকে তাকিয়ে দেখি নীল। ভয় পেয়ে গেলাম, ভাবলাম ওটাই এদিক দিয়ে এসেছে নাকি?
আমি হাত ছাড়িয়ে দূরে সরে গিয়ে বললাম
– আপনি কে?
– আরে আমি সৌরভ। তোমাকে রুমে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে আমি এখানে এসে দেখি তুমি রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছো।
ভয় কিছুটা কমাতে ওর কণ্ঠস্বর চিনতে পেরে ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম
– তুমি তো এখানে নিয়ে এলে!
– আমি? আমি তো বাথরুমে ছিলাম।
– তাহলে দরজা খুলতে দেখলাম, আমাকে ইশারায় ডাকলে। তুমি এই পানিতে নামলে।
– শারলিন পানিতে নামলে আমার শরীর ভেজা থাকবে কিন্তু আমার শরীর তো শুকনা।
আমি ওকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম তাই সহজে বুঝতে পারলাম যে ওর শরীর শুকনা।
আমি বুঝতেই পারছি না কী হচ্ছে?? আশেপাশে সব অন্ধকার হয়ে গেলো, আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। মাটিতে লুটিয়ে পরলাম। চোখ যখন ভাঙলো তখন বুঝলাম আমি বিছানায় শুয়ে আছি। আমাদের রুমে লাইট জ্বালানো। এখনো সকাল হয়নি। সৌরভ বিছানার উপর আমার পাশে বসে বসে ঝিমুচ্ছে। আমি বললাম
– ঘুমাও তুমি।
ও চমকে উঠে বলল
– নাহ তুমি কোথায় না কোথায় চলে যাও।
আমি উঠে বসলাম তারপর বললাম
– তুমিই নিয়ে গিয়েছিলে।
সৌরভ বিস্ময় ভরা কণ্ঠে বলল
– আমি তোমাকে নিয়ে যাবো কেনো? আর নিয়ে গেলেই বা তোমাকে ভয় কেন দেখাবো?
– সেটাই তো আমার প্রশ্ন।
– আমি বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি তুমি বিছানায় নাই। ভাবলাম পানি পান করতে গিয়েছো। অনেকক্ষণ শুয়ে থাকার পর যখন তুমি এলেনা তখন রুম থেকে বেড়িয়ে দেখি মেইন দরজা খোলা। আমি খুঁজতে খুঁজতে আধমরা হয়ে গেছি। পরে ভাবলাম তুমি পুকুরপাড় এর কথা বলেছিলে।
– তুমি সত্যি বলছো তো? আমি তোমাকে অনেক বিশ্বাস করি নীল অনেক…
– শারলিন তুমি অনেক ভয় পেয়ে আছো। যেভাবেই হোক তোমার ভয় কাটানো দরকার।
– কীভাবে??
– ওই জিনিষ টার কাছে গিয়ে তোমার ভয় কাটাতে হবে।
– তুমি কীভাবে জানলে আমি কী দেখেছি?
– তুমি অজ্ঞান হয়ে যাবার পর থেকে জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত অনর্গল একই কথা বলছিলে। কিছুক্ষণ পর পর ভয়ে কেপে উঠছিলে।
– আমি কী করবো??
– এই বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে আমাদের। কিন্তু…… বাসা বদলানো হলেও এটা পিছু ছাড়বে না।অফিসের পাশের রুমেও তুমি ভয় পেয়েছিলে তাই না?
– হুম। আমি যা দেখেছি তুমিও দেখেছো?
– নাহ, আমি শুধু দেখেছি তুমি রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছো।
– তুমি ভয় পাও নাই এতো রাতে একা এই জংগলে মানে এরকম ঝোপঝাড়ে?
– শারলিন আমি অনেক সাহসী। তবে এখন সাহস কমেছে। কারণ এখন আমি একা নই। আমার নিজের প্রতি কোনো ভালবাসাই নাই কিন্তু শারলিন তুমি আমার যতোটা কাছে এসেছো ততটাই আমি ভিতু হয়ে যাচ্ছি। সবসময় একটা ভয় একটা ভীতি কাজ করে তোমাকে ঘিরে। আসলেই এটা সত্যি * ভালবাসার মানুষের খুব কাছে যাওয়া ঠিক না। * হুমায়ূন স্যার ঠিকি বলেছেন।
আমি দূরে যেতে পারবো না। না হয় আমি এর শেষ দেখেই দম ছাড়বো আর তা না হলে আমি এর একটা বিহীত করবো।

চলবে…..!

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ২৭.

0

ছায়া নীল !

২৭.

Maria Kabir
এক হাত দিয়ে কাজ করা বেশ কষ্টের। সৌরভ পাশেই টুল নিয়ে বসে আছে। চাল ধুতে গিয়ে ঝামেলায় পরলাম। কাটা হাতে ব্যথা পেলাম। সৌরভ বলল
– কীভাবে কী করতে হবে বলো। আমি করে দিচ্ছি।
– না না থাক আমি পারবো।
– যা বলছি তাই করো।
বাধ্য হয়ে আমাকে মুখে মুখে বলতে হলো আর ও খুব শান্ত ভাবেই করছে। দেখে মনে হচ্ছে এতো শান্ত স্বভাবের ছেলে আমি কখনো দেখিনি।
ভাতের মাড় গালতে গিয়ে ওর হাতের উপর গরম ভাতের মাড় পরলো। হাতে তাড়াতাড়ি করে ঠাণ্ডা পানি ঢেলেও কাজ হলো না। হাত পুড়ে গেছে এমন দাগ হয়ে রইলো। ব্যথায় ওর মুখ কিছুক্ষণ পর পর কুঁকড়ে উঠছে। আমার নিজের কাছেই অপরাধী লাগছে নিজেকে।
ভাত আর ডিম ভাজা দিয়ে রাতের খাওয়া হলো। ফুপু এখনো আমার সাথে কোনো কথা বলছে না।
আমাকে মনে হয় তার পছন্দ হয় নাই। তা না হলে কেউ এভাবে কথা না বলে থাকতে পারে??
সৌরভ ও খুব চুপচাপ।
আসার পর থেকে এখনো রুমে ঢোকা হয়নি।
রুমে ঢুকে আমার চোখ চরখগাছ ! পুরো রুমের চেহারাই চেঞ্জ।
পিছন থেকে ও বলল
– কেমন লাগছে এখন?
– অনেক সুন্দর। তুমি পুরো বাড়ি সাজাতে পারতে।
– মা পছন্দ করবে না।কারণ জানতে চাবা না।
– আচ্ছা। রুমে দেখি টেলিভিশনও আছে।
– হ্যা, আর নতুন মোবাইল সিম কার্ড এনেছি যতো ইচ্ছা আমাকে ফোন করবে। কারণে অকারণে ফোন করবে।
– কী কথা বলবো শুনি?
– কথা বলার দরকার আছে কী? নিশ্বাসের শব্দ শুনতেও ভালো লাগবে।
– আচ্ছা তুমি পুকুরপাড় না কী বলছিলে নিয়ে যাবার কথা?
– এতো রাতে যাবা?
– তুমি সাথে থাকলে আর ভয় কী?
– হ্যা কিন্তু এখন বাইরে না যাওয়াই ভালো।
ওর পোড়া হাতে দেখলাম সাদা রঙের কাপড় বাঁধা।
ও ঘুমিয়ে পড়লো আমিও ঘুমানোর জন্য শুয়ে পরলাম।
শুয়ে পরার সাথে সাথে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙলো খুব পানি তৃষ্ণায়। এতো পানি তৃষ্ণা মনে হলো কখনো লাগেনি।
চোখ খুলে দেখি ও আমার পাশে নেই। কোথায় গেলো? বাথরুমের দিকে তাকিয়ে দেখলাম লাইট জ্বলছে। যাক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
পানি খাওয়ার জন্য রুম থেকে বের হলাম। রান্নাঘরের দিকে এগোবো আর দেখি সৌরভ মেইন দরজা খুলছে। ও আমার দিকে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে কাজটা করছে।
তারপর ও বের হয়ে গেলো। মনে হলো ও আমাকে হাতের ইশারায় ডেকেছে ওর পিছুপিছু যাওয়ার জন্য।
ওকে বলেছিলাম পুকুরপাড় এ যাওয়ার কথা। ও মনে হয় রাজি হয়েছে।
আমিও ওর পিছুপিছু হাঁটছি। ও একবারো আমার দিকে তাকালো না।
আমি যন্ত্রের মতো ওর পিছুপিছু হেটেই যাচ্ছি। মনে হচ্ছিলো নেশারঝোঁক এ আছি। বাহিরে একদম অন্ধকার না। চাঁদেরহাট মনে হয়েছে বসেছে আজ এই বাড়িতে।
একসময় ও থেমে গেলো। আমিও থেমে গেলাম। এতক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এখন চোখ পড়লো সামনের বিশাল পুকুরে না না এতো বিশাল জলাশয়কে পুকুর বলা চলেনা। ও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আমার চোখ ওর দিকে স্থির হয়ে গেলো। ঘুমানোর সময় দেখেছিলাম ওর পোড়া হাতে সাদা কাপড় বাধা কিন্তু এখন কোনো হাতেই দেখছি না।
ও মনে হয় খুলে রেখেছে। আবার তাকিয়ে দেখি হাতে সাদা কাপড় বাধা। কেবলি দেখলাম হাতে কাপড় নেই আবার এখনি কীভাবে??
তারপর যা হলো সেটা আমি কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। ও কাপড় চোপড় খুলে পুরো খালি গায়ে পানিতে নামলো। আস্তে আস্তে ও পানির মধ্যে হারিয়ে গেলো। কাপড় চোপড় যে খুলেছে সেটা তো পাশেই থাকবে কিন্তু তাও নাই।আর ও যা যা করছে সব আমার দিকে পিছন ফিরে করছে।
খেয়াল করলাম আমার শরীর ঘামে ভিজে উঠেছে। আমার ভেতর থেকে কেউ বলছে
– চলে যা এখান থেকে।
আমি বললাম
– না
আবারো ভেতর থেকে কেউ বলল
– শোন আশেপাশে না তাকিয়ে এক দৌড়ে বাসায় উঠবি।
– নাহ।
– যা বলছি শোন !
আমি এক পাও নড়াতে পারলাম না। কিছুক্ষণ পর মনে হলো পানিতে কিছু একটা ভেসে উঠেছে। আস্তে আস্তে সেটা ডাঙার দিকেই আসছে। যখন এটা বেশ কাছে চলে আসলো তখন খেয়াল করলাম একজন মানুষের দেহ। সৌরভ পানিতে নেমেছিলো ওর নাকি?
ঘামছি খুব আমি। চোখের পলক পরতেই খেয়াল করলাম পানিতে আর সেটা নেই। এখন আমার দিকে পিছন ফিরেই দাঁড়িয়ে আছে ও। মনে হচ্ছে আমার দিকে এগিয়ে আসছে তবে উল্টো হেটে। হাটার ভাব দেখে মনে হচ্ছে সে উল্টো হাটাতেই এক্সপার্ট।

চলবে………!

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ২৬.

0

ছায়া নীল !

২৬.

Maria Kabir

সৌরভ বলল
– চোখ নামালে কেন?
– মুগ্ধতা দেখে, এতো মুগ্ধতা আমি কখনো তোমার চোখে দেখিনি।
– কখনো বিয়ের শাড়ীতে এতো কাছ থেকে দেখিনি বলে।
কখনো এই আলো ছায়ার খেলাতে এতো কাছ থেকে আমার স্বপ্নময়ীকে তো দেখিনি বলে!
ওর এসব কথায় আমার মাঝে নতুন আশা জেগে উঠছে। মনে হচ্ছে, পুরোনো কথা থাক না।
ও মোমবাতি নিভিয়ে দিলো। পুরো অন্ধকার নেমে এলো আমাদের মাঝে।
সৌরভ বলল
– ভয় করছে?
– হুম, কিছুটা।
– অন্ধকার ভীতি আছে নাকি?
– জানি না।
– তাহলে?
– জানি না। তোমাকে হারানোর ভয় করছে। মনে হচ্ছে এই ঘোর অন্ধকারে তুমি হারিয়ে যাবে।
– এটা সাময়িক অন্ধকার। ইচ্ছে করে করেছি।
– জানি তো।
– তাহলে?
– জানি না।
– আচ্ছা তুমি জানোটা কী?
– তোমাকে আমার চাই এটুকু জানি।
– পেয়েছো তো ।
– হ্যা কিন্তু….
– কিন্তু কী?
নিশ্বাস ভারী হতে শুরু করেছে…….
সৌরভের ডাকে ঘুম ভাঙলো। হাতে খাবারের ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে খুব হাসিখুশী মুডে দেখলাম। আমি বললাম
– কয়টা বাজে নীল?
ও একটু হেসে বলল
– ১১ টা বাজে। খুব খিদে পেয়েছে বলেই তোমার ঘুম ভাঙালাম।
– তুমি খেয়ে নিলেই তো পারতে বা আমাকে ডাকলেও পারতে।
– নাহ, কতোদিন পর শান্তিতে ঘুমালে তাই ডাকতে ইচ্ছে করছিলো না।
– তুমি অফিসে যাবে না?
– না। এখন বাসায় যাবো। ফার্নিচার আর মালপত্র নিতে হবে।
– কেনো?
– বাসার সবকিছুই পুরাতন মডেলের তাই নতুন মডেলের কিছু ফার্নিচার কিনলাম।
– করো টাকাপয়সা খরচ। তাছাড়া আর কী করবা?
– বাদ দাও লেকচার। নাস্তা করে সবকিছু গুছিয়ে রাখো।
নাস্তা করার ইচ্ছে নাই। রীতিমত জোড় করে।
সবকিছু গুছিয়ে আবার জার্নি করতে হবে। জায়গা আর পায়নি বাড়ি করার। ভুতুড়ে বাড়ি আর বিশাল বিশাল গাছে ভরপুর।
বিকালবেলা বাসায় পৌঁছালাম। ও ফার্নিচার এর সাথে ৫-৬ জন লোক এনেছে। তারাই সবকিছু গুছিয়ে দিচ্ছে। আমার বাধ্য হয়ে ফুপুর রুমে বসে থাকতে হচ্ছে। ফুপু কোনো কথা বলছেনা। আসার পর থেকে তার মুখে একটাও কথা শুনিনি। তার মুখে কোনো বিরক্তি নেই কিন্তু স্বস্তিও নেই। আমি নিজেই কথা বলতে গিয়ে লজ্জায় পড়েছি। কোনো উত্তর পাইনি।
সন্ধ্যার পর সৌরভ এসে আমাকে বলল
– লোকজন চলে গেছে, তুমি আসো।
আমি রুম থেকে বের হবার পর সৌরভ বলল
– শারলিন রান্না করা আছে নাকি দেখো তো?
– যদি না থাকে?
– তুমি কষ্ট করে শুধু ভাত রান্না করে দিও।
– কষ্ট হবেনা।
আমি রান্নাঘরের দিকে গেলাম। খাবার রাখার র‍্যাক খুঁজে দেখলাম রান্না করা নাই।
চাল কোথায় রেখেছে সেটাও খুঁজে পাচ্ছি না। সৌরভ আর ফুপুর কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। দুজনেই জোড়ে জোড়ে কথা বলছে। কিন্তু কী বলছে সেটা বোঝা যাচ্ছেনা। সৌরভের কণ্ঠস্বরে বুঝতে পারছি যে ও খুব রেগে যাচ্ছে। ফুপুর কণ্ঠস্বর শান্ত কিন্তু অবাক কাণ্ড হচ্ছে তাদের কথা আমি বুঝতে পারছিনা। ফুপুর রুমের দিকে যাচ্ছি তখন সৌরভও বের হয়ে আসলো। ওর চোখ লাল আর শরীর কাঁপছে। আমাকে বলল
– এখানে কী করছো?
– মানে চাল খুঁজে পাচ্ছি না তাই ভাবলাম।
– এসো আমার সাথে….
ওর শরীর কাঁপছে কিন্তু কণ্ঠস্বর শান্ত। একটু আগেও ওর কণ্ঠস্বর এতোটা শান্ত ছিলোনা।
কে স্বাভাবিক আর কে অস্বাভাবিক আমি বুঝতে পারছি না।

চলবে……..!

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ২৫.

0

ছায়া নীল !

২৫.

Maria Kabir
সৌরভ বলল
– আমি এতো বেশি কথা বলতে পারি যে, মাঝেমধ্যে মনে হবে আমি একজন শিক্ষক। শিক্ষকসম্প্রদায় এমন এক সম্প্রদায় যারা প্রচুর কথা বলতে পারে।
– তুমি ঘুমাও।
– আচ্ছা শারলিন একটা রিকুয়েস্ট করবো রাখবা??
– নাহ।
– বিয়ের শাড়ীটা একটু পড়বা?? মাত্র ৫ মিনিটের জন্য।
– নাহ।
ও আমার হাত ধরে বলল
– আমাদের মাঝে রাগ, অভিমান চলছে কিন্তু ভাল তো বাসি একে অপরকে!আজকে কিছু সময়ের জন্য রাগ, অভিমান টা ভুলে যাও না।
– তুমি যা করেছো সেটা ভুলে যাওয়ার মতো না।
– কিছুক্ষণের জন্য? একসময় তো আমাদের মাঝে এসব ছিলো না। মনে করো এখন সেই সময় টা চলছে। ভাবো অনেক পিছিয়ে গেছে সময়।
– কীভাবে? মাথা খারাপ নাকি তোমার?তুমি যা করেছো আমি যদি তোমার সাথে করতাম তাহলে তুমি আমাকে মেনে নিতে পারতে??
– হ্যা পারতাম কারণ ভালবাসি।
– তুমি কোন কথাটা সত্যি বলো আর কোনটা মিথ্যা বলো আমি বুঝিনা। এই বলো ভালবাসি আর এই বলো যে ভালবাসিনা।
সৌরভ আমার হাত ছেড়ে দিয়ে হোটেলের রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ও চলে যাবার পর কেনো যেন মনে হলো রিকুয়েস্ট টা রাখলে কী এমন হতো?? সত্যি বেশি করে ফেললাম। বিয়ের দিন শাড়ী না পড়লে পড়বো কবে?? কাটা হাতেও তেমন ব্যথা নেই। লাগেজ খুলে শাড়ীটা বের করলাম। অনেক বেশি সুন্দর একটা শাড়ী। গাঢ় গোলাপি শাড়ী, পুরো শাড়ীতে লতাপাতার নকশা। আমি শাড়ী তেমন ভালো চিনি না। হয়তোবা বেনারসি কাতান হবে। আমাকে গোলাপি রঙ টা ভালো মানায়। গহনাগাঁটি যা দেখলাম তাতে মনে হলো ওর পছন্দ ভালো।
ছায়া, ব্লাউজ সাথেই ছিলো। শাড়ী কোনোরকম পড়লাম। এতো ভার শাড়ী একা পড়া কষ্ট আর ফাজিল টা গাল ফুলিয়ে রুম থেকে চলে গেলো।
কোনোরকম পড়লাম শাড়ীটা। গহনাগাঁটি যা আছে সব পড়া সম্ভব না। গলার হার, হাতের চুড়ি আর কানে দুল পড়লাম। চুলের অবস্থা করুণ। খুব কষ্টে নিজের আয়ত্তে আনলাম।
প্রায় ১ ঘণ্টার মতো লাগলো। ফাজিলটা এখনো এলো না।
রুমের লাইট অফ করে দিয়ে বিছানার উপর ঘোমটা টেনে বসলাম।
দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম। অন্ধকারে ওর ছায়া দেখা যাচ্ছে। চিরচেনা সেই ছায়া। যার জন্যে আমি নিজেকে তুচ্ছজ্ঞান করেছি।
লাইট জ্বালানোর পর ঘোমটার ভেতর থেকে দেখলাম ও আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। তারপর আবার লাইট অফ করে দিলো।
অন্ধকারে ওর ছায়া দেখতে পারছি। কিছু একটা খুঁজছে।
তারপর ও মোমবাতি জ্বালিয়ে হাতে নিয়ে বিছানার উপর উঠে এলো। এক হাতে মোমবাতি নিয়ে আরেক হাত দিয়ে ঘোমটা খুললো।
আমি ওর দিকে তাকালাম। ওর চোখের দৃষ্টি আমার চোখে আবদ্ধ হয়ে গেলো।ওর দৃষ্টিতে মুগ্ধতা, বিস্ময়, প্রীতি, অভিমান একসংগে খেলা করছে।
আচ্ছা একজন মানুষের চোখে একসাথে এতো কিছু খেলা করতে পারে??

আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। ও বলল
– চোখ কেনো নামিয়ে নিলে?? কাটুক না এইরাত চোখের জগতে।
– বোকা চোখের আবার জগত হয় নাকি?
– হয়তো। কেনো আমার চোখে কিছু কি দেখতে পারছো না??
– হ্যা পারছি।
– সেটাই তো জগত।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ২৪.

0

ছায়া নীল!

২৪.

Maria Kabir

সৌরভ বলল
– ঘুম আসছে না?
– নাহ।
ও মুচকি হাসলো। এই মুহূর্তে ওকে খুব ভালো লাগছে। কেনো যেন মন বলছে ও আমার সাথে খারাপ কিছু করতে পারেনা।
– আজকে ঘুমালে তোমার স্বপ্ন কেমন হবে আমি বলতে পারবো।
– ভবিষ্যৎ জানো টানো নাকি??
– নাহ অনুমান। স্বপ্নে বাবাকে বা মাকে দেখবা। কান্দাকাটির স্বপ্ন মূলত।
– কীভাবে বুঝলে??
– আজকে তোমার বিয়ে হয়েছে। বাবা কোথায় গেছে সেটা জানো না। মার কথা তো বাদ দিলাম। আর তোমার স্বপ্ন দেখার অভ্যাস টা পুরাতন।
– তুমি শিওর কীভাবে??
– আমি শিওর কখন বললাম? হতেও পারে নাও পারে।
– যাও ঘুমাবোই না।
– সত্যি??
– হ্যা, আমি তোমার মতো মিথ্যা বলি না।
– আমি এটাই চাচ্ছিলাম। চাচ্ছিলাম দুজনে রাত জেগে অনেক গল্প করবো কিন্তু তোমার শরীরের যে,অবস্থা তার উপর তুমি আমার উপর কিছুটা রেগে আছো তাই বলার সাহস পাচ্ছিলাম না।
– আমাদের গল্প করার কিছু আছে??
– না থাকলে দুজনে সারারাত একে অপরের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবো।
আচ্ছা, আমার চেহারা তোমার ভালো লাগে??
– তোমার ছায়া ভালো লাগে আর তোমাকে ভালবাসি।তোমাকে ভালবাসা মানে তোমার সকল দোষগুণ সব কিছুকে ভালবাসা।
– যুক্তি আছে। তবে সত্যি কথা বলতে আমি তোমার চেহারার প্রেমে পড়েছিলাম।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে…..
– কী মনে হচ্ছে??
– তোমার রূপ যেমন আছে ঠিক তার পাশাপাশি খুব রূপবতী একটা মন আছে। সেটার প্রেমে পড়ছি আমি।
স্বাভাবিক ভাবে সুন্দরী মেয়েদের মন এতোটা রূপবতী হয়না। তুমি ব্যতিক্রম। আজ মনে হচ্ছে সেদিন কার ব্রেকাপ টা হওয়া জরুরী ছিলো।
জানো, আমাদের জীবনে অনেক ঘটনা ঘটে যেটা আমরা চাই না। কিন্তু ঘটে ঠিকি তখন আমরা ভাগ্যকে দোষারোপ করি। তখন যদি জানতাম তোমার মতো একজনকে পাবো তাহলে তখন কষ্ট পেতাম না।
– এতো কথা বলতে পারো??
– হ্যা পারি।

চলবে….!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ২৩.

0

ছায়া নীল!

২৩.

Maria Kabir
বাবা কোথায় যাচ্ছেন? কী করতে যাচ্ছেন? কিছুই জানি না। ও সবই জানে কিন্তু আমাকে বলবে না। শেষ পর্যন্ত আমাকে এই নোংরা অবস্থায় সাধারণ একটা থ্রিপিচ পড়ে বিয়ে করতে হলো। সৌরভ কে বললাম
– বাসায় কখন যাবে??
সৌরভ মনে হয় অন্যমনস্ক ছিলো। তাই উত্তরে বলল
– কী বললা??
– বাসায় কখন যাবা??
– মা বাসায় নেই, আর আমারও যেতে ইচ্ছে করছে না।
– তাহলে??
– আমার চেনা এক আবাসিক হোটেল আছে ওখানে আজকের রাতটা থাকবো।
আমার কিছু বলার নাই। ও বাসা থেকে যতো দূরে থাকা যায়। হোটেল দেখে আমি রীতিমতো অবাক হলাম। এতো সুন্দর। আমরা রুম পেলাম তিন তলার ৩০৩ নাম্বার রুমটা।
লিফট দিয়ে উঠার সময় মনে পড়লো, সিরিয়াল কিলাররা এভাবে হোটেলে মেয়েদের এনে মেরে ফেলে। ও আমাকে ফেরে ফেলবে না তো। ওর হাতে সেই লাগেজ টা এখনো আছে। জানি না কী হবে আমার?
রুমে এসে ঢোকার পর ও জিজ্ঞেস করলো
– কিছু খাবে??
রুমটাও সুন্দর, বেশ বড়, জানালার কাছে বেড রাখা। টেলিভিশন আছে, এমনকি একটা ছোট্ট বারান্দাও আছে। খিদে তেমন পায়নি। তারপরও কিছু খেতে ইচ্ছে করছিল। তাই বললাম
– খাবো, চিকেন ভেজিটেবিল স্যুপ আর চিকেন ফ্রাই।
– বেয়ার না উইস্কি??
– আমি ওসব খাই না।
টেলিফোন একটা ছোট্ট টেবিলের উপর রাখা। ও ফোন করে খাবার অর্ডার দিয়ে দিলো।
আমি বললাম
– এখানে আনার কারণ?? মেরে টেরে ফেলবা নাকি??
– আজকে কি অমাবস্যাতিথি??
– আমি ওসব বুঝি না। মেরে ফেলতে চাইলে মারবা। তবে এমনভাবে মারবা যেন বুঝতে না পারে যে,আমার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।
ও সহজ স্বাভাবিক ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলল
– কেনো??
– পোস্টমর্টেম ব্যাপার টা ভয় লাগে। কাটাকাটি করবে এই দেহ। অনেক ব্যথা পাবো। কাকে কীসব বলছি, তার তো কোনো ফিলিংসই নেই।
– আচ্ছা, চেষ্টা করবো।
তারপর ও লাগেজ খুলে একটা বড় গামছা বের করলো। তারপর বাথরুম থেকে একটা ছোট্ট বালতি এনে আমার সামনে রাখলো। পানির ভিতরে গামছা রাখা। আমি বুঝতে পারছিলাম না ও কী করতে চাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম
– এটা দিয়ে কী করবা??
ও পানি থেকে গামছা তুলল তারপর গামছাকে চিপড়ায়ে বলল
– তোমার হাত পা মুছে দিবো। অনেকদিন গোসল করো না। মুছে দিলে আরাম পাবা রাতে ঘুমও ভালো হবে।
কথাটা বলে আমার অনুমতির অপেক্ষা না করে হাত টেনে ধরে মুছতে শুরু করলো। আমি অবাক হয়ে বললাম
– একি করছো? আমি করি।
কোনো কথা শুনলো না। সত্যি হাত পা মুছার পর আমার বেশ আরাম লাগছে। খাবার চলে আসার পর খেয়ে নিলাম।
বিয়ের পর মেয়েদের মনে মিশ্র অনুভূতির সৃষ্টি হয়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে হচ্ছে উল্টো।আমাকে ও মেরে ফেলবে এমন মনে হচ্ছে। কিন্তু ওর দৃষ্টি তো স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।
ও বলল
– তুমি খুব চিন্তিত। কারণ টা জানতে পারি??
– নাহ।
– আমি জানি শুনবে?
– নাহ।
– শুনো, তুমি ভাবছো আমি তোমাকে মেরে ফেলার জন্য এখানে এনেছি। বাসায় কেনো নিয়ে গেলাম না, এই প্রশ্নের উত্তর একটাই খুঁজে পেয়েছো। যেটা বললাম একটু আগেই। তবে উত্তর টা ভুল।
– সত্যটা বললেই হয়।
– বাসায় মা নেই।মা মাঝেমধ্যে হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায়। ধরো ১/২ দিন পর ফিরে আসেন। খোঁজার অনেক চেষ্টা করেও লাভ হয়না। প্রথম প্রথম ব্যাপার টা মেনে নিতে পারিনি। এভাবে বাসার বাইরে থাকা খুবই ভয়ের। পুলিশ এ জিডিও করেছিলাম। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
– তাকে জিজ্ঞেস করোনি?
– কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। সাইক্রাটিস দেখানোর অনেক চেষ্টা করেছি। কোনো লাভ হয়নি।
– সাইক্রাটিস কেনো??
– মানসিক সমস্যা হলে তো এরাই সেটা সমাধান করেন। আমার মায়ের মানসিক সমস্যাটা তীব্র রকমের খারাপ।
– দেখে তো মনে হলো না। খুবই স্বাভাবিক একজন মানুষ।
– তাকে দেখে কখনওই মনে হয়না। তুমি যেদিন আমাদের বাসায় এলে সেদিন কিন্তু সে একটাবারের জন্যও রুম থেকে বের হননি। আরেকটা কথা সে অনেক উদ্ভট কথা বলবে। বিশ্বাস করার ভান ধরবে কিন্তু ভুলেও বিশ্বাস করবে না। তার মন মানসিকতা খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়।
– আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
– কয়েকদিন থাকলেই বুঝতে পারবা। আর রান্নাটা নিজে করার চেষ্টা করো। আমাকে অন্তত বাঁচাও।
– তোমাকে তো আমার স্বাভাবিক মনে হয়না।
– দীর্ঘ সময় একজন মানসিক রোগী নিয়ে আছি বলে কথা। বাড়িতে সে কোনো কাজের লোক রাখতে দেয়না। এমনকি কোনো মিস্ত্রী আনতে পর্যন্ত দেয়না। পানি বা স্যানিটারি ঘটিত ঝামেলা হলে সারাক্ষণ সেই লোকের সাথে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তার ধারনা তাকে কেউ মেরে ফেলবে। আরো যতো প্রকার অজুহাত আছে সব দেখাবে। যাই হোক, এগুলো বলার জন্যেই এখানে আনা।
– তুমি যে বললে, মা বাড়ি নেই।
– মা ফোন করে বলল নেই, আবার থাকতেও পারে। মূল কথাটা কি জানো??
– বলো।
– তোমার সাথে একান্তে কিছু সময় কাটাতে মন চাচ্ছিল।
– তোমার বাবার কী হয়েছিলো?
– পরে বলবো
ও আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার মুখোমুখি দাঁড়াল তারপর বলল
– ঘুমিয়ে পড়ো। যতো পারো ঘুমিয়ে নাও। আমাদের বাসায় গেলে তো ঘুম থাকবে না।
– ভূত কি আছে??
– আরে না, তোমার ভুল।

চলবে….!

#Maria_kabir