Thursday, June 19, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2401



পুরোনো_ভালোবাসা   পার্ট: ৬

0

পুরোনো_ভালোবাসা

পার্ট: ৬

#Rabeya Sultana Nipa

__নিশু বাসায় এসে নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।তা দেখে ইয়াসমিন বেগম দৌড়ে এসে দরজা ধাক্কানো শুরু করলো।
নিশু কি হয়েছে তোর দরজা খোল।নিশু! নিশু!
শিহাব এসে দেখে ইয়াসমিন বেগম দরজা ধাক্কাচ্ছে।
শিহাব-কি হয়েছে মা আপনি দরজা ধাক্কাচ্ছেন কেন?
ইয়াসমিন বেগম -দেখনা শিহাব নিশু বাহিরে থেকে এসেই দরজাটা বন্ধ করে দিলো। বাহিরে কি হয়েছে শিহাব?তোমাদের কি ঝগড়া হয়েছে?
শিহাব-না মা! আসলে আমার এক ফ্রেন্ডের সেথে অনেক দিন পর দেখা হয়েছে।ওর সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই নিশু এই রকম করছে।
ইয়াসমিন বেগম -তোমার কোন ফ্রেন্ড? নাম কি ওর?
শিহাব-ওর নাম অনিক।খুব ভালো ফ্রেন্ড আমার।অনেক দিন ওর সাথে কোনো যোগাযোগ হয় নাই।আজ হঠাৎ রেস্টুরেন্টে দেখা হয়েছে।
__অনিকের নামটা শুনেই ইয়াসমিন বেগম কি বলবে শিহাবকে বুজতে পারছেনা।
শিহাব! ওকে ডিস্টার্ব করনা ওর যখন মন ভালো হবে দেখবে নিজেই দরজাটা খুলে দিবে।তুমি আবিরকে আমার কাছে দাও।তুমি ফ্রেস হয়ে আসো।
আবির-বাবাই! আম্মুর কি হয়েছে। আম্মু কি তোমার সাথে রাগ করেছে?
শিহাব-না বাবা তোমার আম্মুর শরীর ভালো নেই তাই দরজা বন্ধ করে রেখেছে।দেখবে একটু পর তোমায় এসে আদর করে দিবে।
_মা! আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি আবিরের দিকে খেয়াল রাখবেন বলে শিহাব বাহিরে চলে গেলো।
__নিশু সব শুনছে শিহাবের বলা কথা গুলো। হয়তো শিহাব কিছুটা বুজতে পেরেছে, নিশু কষ্ট পাবে বলে কিছু বলতে চাইছেনা।শিহাব তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।নিশু কষ্ট পাবে এমন কোনো কাজ শিহাব করে না। নিশুও শিহাবকে ভালোবেসে পেলেছে তাই নতুন করে সে শিহাবকে হারাতে চায় না।এইসব কথা ভাবতে ভাবতেই নিশু পুরোনো দিন গুলোর কথা মনে পড়ে গেলো।যেই দিন গুলো নিশুর অভিশাপ বলেই মনে হয়।কথা গুলো মনে পড়তেই চোখের পানি গুলো আর ধরে রাখতে পারছে না নিশু।
__কিরে অনিক দুই মাস ধরে দেখছি তুই একি সময় এসে এখানে বসে চা খাস। কাউকে পাহারা দেস নাকি? ব্যাপার কি ভাই নাকি প্রেমে পড়ছোস? অনিকের ফ্রেন্ড রাফি কথা গুলো বলছে আর হাসছে।
__অনিক অনেকক্ষণ রাফির দিকে তাকিয়ে থেকে বললো আমার একটা হেল্প করবি?
রাফি-বল তোর কি হেল্প লাগবে।তোর জন্য সব কিছু করতে রাজি।
__রাফির কথা শুনে অনিক নিশুর ব্যাপারে সব বললো।
রাফি-সব বুজলাম কিন্তু তুই মেয়েটাকে কেন বলিসনা তুই তাকে ভালোবাসিস।
অনিক-ওর সামনে গেলেই আমি সব গুলিয়ে পেলি। তাই সাহস করে বলতে পারিনা।
রাফি -ঠিক আছে।তুই শুধু দেখ আমি কি করি।কথাটা বলেই রাফি ওঠে গেলো।
__কলেজ শেষ করেই নিশু বাড়ি ফিরছিল এমন সময় কে জেন পিছন থেকে ডাকদিলো
__নিশু! এই নিশু! দাড়াও! তোমার সাথে আমার একটু কথা ছিলো।
নিশু-যাহ,,,, ,, বাবা এই লোকটা আমার নাম জানলো কিভাবে?
রাফি-আমি জানি তুমি কি ভাবছো। আমি তোমার নাম জানলাম কি করে তাইতো? জানবো না কেন বলোতো? আমার ফ্রেন্ড অনিক তোমার প্রেমে দেওয়ানা হয়ে গেছে।কিন্তু তোমাকে বলার সাহস পায়না।যদি তুমি চাও তাহলে ও তোমার সামনে এসে কিছু কথা বলতে চায়।

__রাফির কথা গুলো শুনে নিশু তো অবাক।এইতো মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। ওকে দেখার পর এই দুই মাস শুধু ওকে ভেবেই সময় কেটেছে। আজ ও নিজেই কাছে আসতে চায়।( মনে মনে, নিশু হ্যাঁ বলে দে)

এমন সময় পিছন থেকে অনিক বললো আমি জানি নিশিতা তুমিও আমাকে ভালোবাসো।
__ পারবেন সারা জীবনের জন্য আমাকে ভালোবাসতেন? নাকি মাঝ পথে রেখে চলে যাবেন?
যদি সারা জীবনের জন্য হাত ধরতে পারেন তাহলে আমার সামনে আসবেন।কথা গুলো ভেবে দেখবেন। আজ আমি আসি।
__কথা গুলো বলেই নিশু চলে গেলো। অনিক আর রাফি দুজনে হাটছে।অনিক নিশুর কথা গুলো ভাবছে।
রাফি-কিরে এতো কি ভাবছিস? তবে মেয়েটা ঠিকে বলছে। কি বলিস তুই?
অনিক-হুম ঠিক বলছে।আচ্ছা আমি বাসায় যাই পরে দেখা হবে।

__নিশু অনিকের কথা গুলো ভাবছে। অনিক কি সব কিছু মেনে নিয়ে তার সামনে আসবে।নাকি আর কখনওই তাদের দেখা হবে না।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে নিশু ঘুমিয়ে পড়লো।

__আনিকা! আনিকা! তুই কি ঘুমিয়ে গেছিস?
কথাটা বলতে বলতে অনিক আনিকার রুমে এলো।
আনিকা-না এখনো ঘুমাই নাই। কিন্তু কেনরে ভাইয়া?
অনিক-আচ্ছা! তোর কাছে নিশিতাকে কেমন লাগে? আনিকা-আমি জানি ভাইয়া তুই নিশিতাকে ভালোবাসিস।আর আজকে তুই তাকে প্রপোজ করেছিস তাই নারে?
__ভাইবোন মিলে কোন মেয়ের কথা বলছিস আমাকে শুনানো যাবে? কথা গুলো বলতে বলতে অনিকের মা রেহানা বেগম রুমে ডুকলেন।
অনিক-না মা! তেমন কিছু না।।
আনিকা-ভাইয়া! তুই মিথ্যা বলছিস কেন?
মা জানো! ভাইয়া আমার ফ্রেন্ড নিশিতাকে ভালোভাসে।
__কথাটা শুনেই রেহানা বেগম অনিকের মাথা হাত রেখে বললো তোদের বাবা অনেক কষ্টকরে তোদের মানুষ করেছে।তুই ভালো করে পড়ালেখাটা কর আমি ভালো মেয়ে দেখে তোর বিয়ে দিবো।অনিক কথাটা শুনে উঠে চলে গেলো তার রুমে।

আনিকা-মা! তুমি ভাইয়াকে এইসব কথা না বললেও পারতে।নিশিতা অনেক ভালো মেয়ে।তুমি বাবার সাথে কথা বলে দেখো হয়তো বাবাও রাজি হবে।

__কলেজে যাওয়া জন্য নিশু রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে।এমন সময় একটা রিকশা তার সামনে এসে দাঁড়ালো। তাকিয়ে দেখে অনিক রিকশায় বসে আছে।

অনিক-আমার সাথে আসো কলেজে নামিয়ে দিবো।না আসলে তোমার কলেজের দেরী হয়ে যাবে।
__নিশুও ভাবছে একটা রিকশাও পাচ্ছি না।এমনিতে আজ অনেক দেরী হয়ে গেছে।তাই কিছু না বলে অনিকের পাশে বসলো।দুজনেই চুপচাপ বসে আছে। কিছু দূর যাওয়ার পরে অনিক নিশুর হাতটা ধরলো।নিশু-আরে কি করছেন আপনি?
অনিক-তুমিই তো কাল বললে যদি তোমায় সারাজীবনের জন্য ভালোবাসি তাহলে হাত ধরতে।তাই আমি ভেবে দেখেছি আমি তোমাকে মাঝ পথে না সারাজীবনেও ছাড়তে পারবোনা।
__নিশু কথাটা শুনে অনিকের দিকে তাকিয়ে আছে।অনকির কাঁধে মাথা রেখে বললো তুমি সারাজীবন আমাকে এইভাবে ভালোবাসবেতো?

__তোমার না কলেজের দেরী হয়ে যাচ্ছে?নিজেতো ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছো আমাকেও ইমোশনাল বানিয়ে ফেলছো।একদম পড়ায় ফাঁকিবাজি চলবেনা।

নিশু-এই ছেলে এখনো প্রেম শুরুই করলাম না এর মাঝেই বকাবকি শুরু হয়ে গেছে।কি ছেলেরে বাবা।
অনিক-বেশি ভালোবাসি তোমায় তাই।

চলবে,,,,,,,,,

পুরোনো_ভালোবাসা   পার্ট: ৫

0

পুরোনো_ভালোবাসা

পার্ট: ৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

_ইয়াসমিন বেগম ঘুম থেকে উঠেই নাস্তা বানিয়ে পেললেন।মেয়েটা মনটা যেন ভালো থাকে।না হলে বাইরে যেতে রাজি হবে না।
ইয়াসমিন বেগম কাজের মেয়ে শিমুকে ডেকে বলল,তোর আপু আর ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আয়।

শিহাব – ডাকা লাগবেনা আমারা এসে গেছি।মা আবির খেয়েছে?
মা- হুম,

__সবাই এক সাথে বসে নাস্তা করলো।নাস্তা শেষ করে শিবাব নিশিতা আর আবিরকে নিয়ে বেরিয়ে গেল।
শিহাব নিশিতার হাত ধরে একটা পার্কে বসে আছে,আর আবির খেলছে।

নিশিতা – এইটা তোমার ঘুরার জায়গা। আমি তো মনে করছি তুমি অন্য কথাও ঘুরতে যাবা।
শিহাব-কেন? এখানে তোমার ভালো লাগেনি?আচ্ছা অন্য কথাও যাই।

__এই ভাবেই বিভিন্ন জাগায় ঘুরতে ঘুরতে ৩ টা বেজে গেল। তারপর খাওয়ার জন্য একটা রেস্টুরেন্টে এসে বসলো।

শিহাব -নিশু কি খাবে বলো?আবির বাবাই তুমি কি খাবে?
নিশিতা-একটা কিছু অর্ডার করো। সকাল থেকে অনেক কিছুই খাওয়া হয়েছে।বেশী কিছু অর্ডার করার দরকার নাই।
শিহাব-আচ্ছা ঠিক আছে।

_শিহাব খাবার অর্ডার দিয়ে বসে বসে আবিরে সাথে কথা বলছে। নিশু বাবা ছেলের দুষ্টামি গুলো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
হঠাৎ শিহাবের পাশের টেবিলে নজর পড়লো। দেখে দুইজন লোক বসে কফি খাচ্ছে। কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে।

__নিশু আমি একটু আসছি বলেই আবিরকে কোলে নিয়ে পাশের টেবিলে গেল।যাকে চিনা চিনা লাগছিলো তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো একটু শুনবেন?
লোকটা শিহাবের দিকে তাকিয়ে বললো।আরে শিহাব তুই এইখানে?

শিহাব – অনিক তুই,,,,অনেক দিন পর তোর সাথে দেখা হলো। কেমন আছিস বল।
অনিক-এইতো ভালো।বিয়ে করছিস নাকি,বাচ্চাটা কার?বউ কে নিয়ে ঘুরতে আসছিস নাকি
শিহাব-হুম, আমার বাচ্চা।চল আমার বউয়ে সাথে দেখা করবি।
__শিহাব অনিকে সাথে নিয়ে নিশুর সামনে এসে দাঁড়ালো। তখন নিশু অন্য দিকে তাকিয়ে বসে আছে।

__নিশু দেখো কাকে নিয়ে আসছি! আমার ফ্রেন্ড অনিক।অনেক দিন ওর সাথে যোগাযোগ ছিলনা। আজ এখানে দেখা হয়েছে। তাই তোমার সাথে দেখা করতে নিয়ে এলাম। এক দমে কথা গুলো বলে ফেললো শিহাব।
নিশু অনিকের দিকে তাকিয়ে আছে।অনিকও একিভাবে নিশুর দিকে তাকিয়ে আছে।দুইজনকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শিহাব বললো, কি হলো তোমরা একজন আরেকজনকে আগে থেকে চিনো নাকি?

__তখন অনিক বললো তোর বউ তো অনেক সুন্দর। ভাগ্যে করে এমন বউ পাওয়া যায়।তোদের দুইজনকে মানিয়েছে ভালো।তো ভাবী কেমন আছেন?
_নিশু অনিককে কিছু না বলে শিহাবের দিকে তাকিয়ে বললো আমি বাইরে যাচ্ছি তুমি আবিরকে নিয়ে আসো।বলেই নিশু চলে যেতে লাগলো।

__শিহাব পিছন থেকে অনেক বার ডাকলো নিশু ফিরে তাকালো না।
অনিক নিশুর যাওয়া দেখে শিহাব কে বললো তোর বউয়ের মনে হয় আমি এখানে আসায় ভালো লাগে নাই।
শিহাব -আরে না ওর হয়তো শরীর খারাপ লাগছিল তাই হয়তো বাড়ী যাবে।আর এই নে আমার নাম্বার, একদিন বাসায় আয় দুইজনে মিলে আড্ডা দিবো।
__শিহাব কথা গুলো বলছিলো আর অনিক বার বার
আবিরের দিকে তাকাচ্ছিলো। কেন জানি ওর দিকে তাকালেই মন ভালো লাগে।
শিহাব-অনিক তাহলে এখন আসি।নিশু বাইরে অপেক্ষা করছে।

চলবে, ,,,,,,

পুরোনো_ভালোবাসা   পার্ট: ৪

0

পুরোনো_ভালোবাসা

পার্ট: ৪

Rabeya Sultana Nipa

 

__নিশু -তুমি এতো দেরি করলে কেন তাই।তুমি জানো না আবির তোমায় না দেখেতে পেলে কান্না করে।

শিহাব-আমার বউটার মন কাঁধে না?কথাটা বলেই নিশু কে কোলে তুলে নিলো।

নিশু-সন্ধার সময় কি করছো এই সব?আবির এসে পড়বে। ছাড়ো আমাকে।

বারান্দা থেকে নিশুকে কোলে নিয়ে এসে খাটে শোয়ালো।নিশুকে শুইয়ে নিশুর বুকের উপরে শুয়ে পড়লো শিহাব।নিশু জানে শিহাবের কাছ থেকে এখন ছাড়া পাওয়া সহজ নয়।তাই সে নিজেও শিহাব কে জড়িয়ে ধরলো।সেও শিহাবের মাঝে হারাতে চায়।শিহাব নিশুর ঠোট গুলোকে নিজের ঠোটের সাথে এক করে নিলো।

আবির-নানু দেখো বাবাই আমার জন্য কতো খেলনা,চোকলেট এনেছে। বাবাই আমাকে কতো ভালোবাসে।

ইয়াসমিন বেগম -হুম, তোমার বাবা আর আম্মু দুজনেই তোমাকে ভালোবাসে। যাও এইবার পড়তে বসো না হলে তোমার আম্মু এসে বকা দিবে।

তখনি শিহাব রুম থেকে বের হতে হতে বললো,কে বকবে আমার ছেলেকে। আমি আছিনা আমিও তাকে বকে দেবো।
আবির -বাবা তুমি আজকে দেরি করলে কেন?তুমি তো এতো দেরি করোনা।জানো বাবা! আম্মুর না শপিং করে আসার পর থেকে মন খারাপ ছিলো।আম্মু অনেক কান্নাও করেছে।

_শিহাব ইয়াসমিন বেগমের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো নিশুর কি হয়েছে মা?
ইয়াসমিন বেগম কি বলবে বুজতে পারছে না।তারপর বললো আমি জানি না।

তখন নিশু এসে বললো কি হলো তোমরা কি আজ রাতে না খেয়ে থাকবে নাকি?
ইয়াসমিন বেগম বললো সবাই আসো আমি খাবার আনছি।
আবির তোমার তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে বেশি রাত জাগলে শরীর খারাপ করবে।আসো তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।শিহাব তুমিও আসো।

__শিহাব কিছু না বলে খেতে বসলো।খেতে খতে শিহাব বললো
শিহাব-নিশু! আবির কে নিয়ে আমরা কোথাও ঘুরে আসি।
নিশু-কাল তোমার অফিস আছে না?

শিহাব-অফিসে একদিন না গেলে কিছু হবেনা।আমার ছেলে আর বউয়ের জন্য এইটা তো কিছুই না।আপনি বলেন মা করতে পারি না?

মা-হে অবশ্যই পারো।দেখ নিশু তুই আর না করিস না।

__নিশিতা মনে মনে ভাবছে অন্য কথা।কাল যদি অনিকের সাথে আবার দেখা হয়। আবিরকে নিয়ে তার প্রশ্ন জাগতে পারে।কারন আবিরে বয়স ৪ বছর ৬ মাস।আর শিহাবে সাথে নিশুর বিয়ে হয়েছে ৩ বছর।অনিক যদি বুজে যায় আবির শিহাবের ছেলে নয়।

শিহাব-কি ভাবছো এতো?এতোহ্মন তো অনেক তাড়া দিচ্ছিলে।
নিশু-কই কিছুনা তো।আচ্ছা মা! মামা চলে গেলো কেন?

__ইয়াসমিন বেগম বুজে গেছে তার মেয়ে কথা কাটাতে চাইছে।তারপর বললো সৈকতের জরুরী কাজ পড়ে গেছে।বলেছে আবার আসবে।

__শিহাব খাওয়া শেষ করে রুমা চলে আসলো। লাইট টা বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর নিশিতা রুমে এসে লাইট অন করলো।শিহাবকে শুয়ে থাকতে দেখে নিশিতা বললো তোমার কি শরীর খারাপ?

__আবির কই বলতে বলতে শিহাব উঠে বসলো।
নিশিতা-আবির বায়না ধরেছে ওর নানুর সাথে ঘুমাবে?

শিহাব-ঠিক আছে।কাল মনে থাকে যেন আমারা ঘুরতে যাচ্ছি বলে আবারো শুয়ে পড়লো।

__নিশিতাও দেরী না করে শিহাবকে শক্তকরে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।আস্তে আস্তে দুজনি ভালোবাসায় ডুব দিতে লাগলো।

চলবে,,,,,

(গল্প পড়ে ভালো লাগলে লাইক দিতে পারেন,ভালো কমেন্ট করতে পারেন।

পুরোনো_ভালোবাসা   পার্ট: ৩

0

পুরোনো_ভালোবাসা

পার্ট: ৩

#Rabeya Sultana Nipa

নিশিতা কি বলবে বুজতে পারছে না।নিশিতা নিজেও তো খেয়াল করিনি অনিক যে আসছিল। দোষটা তো তারো আছে।
অনিক-কি হোলো কি ভাবছেন? মিস নিশিতা!
নিশিতা-আমি কিছু ভাবছি না,ওকে বাই বলে নিশিতা ওই খান থেকে চলে আসল।
আনিকা-ভাইয়া তুই ওই ভাবে কি দেখস নিশিতাকে?
অনিক-তুই তো ওর কথা কখনো বলিসনি। তোর যে তো সুন্দরী একটা ফ্রেন্ড আছে।
আনিকা-কেন ভাইয়া তুই কি ক্রাশ খাইলি নাকি ওর উপর?
অনিক-তুই কি যে বলিস না, চল বাড়ী চল।
দুইজনে কথা বলতে বলতে বাড়ী পথে পা বাড়ালো।
অনিক মনে মনে নিশিতা কথায় ভাবতেছে।অনিকের নিশিতা কে প্রথম দেখায় ভালো লেগেছিল। নিশিতাকে কি ভালোলাগার কথা সরাসরি বলবে। নাকি আনিকাকে বলতে বলবে।অনিক কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়ছে ঠিক তার মনে নাই।
কিরে তুই নাস্তা না করে কলেজে যাবি নাকি?তুই কি এখনো বড় হবি না? আর কত জ্বালাবি আমাকে?কথা গুলো বলতে বলতে ইয়াসমিন বেগম নিশিতার রুমে আসলেন।মেয়ের সাজগোজ দেখে বললেন কিরে তুই কি কলেজে যাচ্ছিস নাকি পার্টিতে?
নিশিতা -মা,,,,কলেজে যাওয়ার সময় যদি একটু সেজেগুজে না যাই তুমি বলো তোমার মেয়ের দিকে কেও তাকাবে?

মা-এই শুন আমার মেয়ে যথেষ্ট সুন্দরী যে কেউ তার প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাবে। মেয়ে বলে বলছি না।
আমি- হা হা হা দেখতে হবে না মেয়েটা কার!!
তখনি নিশিতার বাবা আতিকুর রহমান এসে বললো মা,মেয়ে আমাকে রেখে কি কথা হচ্ছে?
নিশিতার বাবা আতিকুর সাহেব ব্যবসা করেন। ব্যবসার কাজে ওনাকে বেশী দেশের বাইরে কাটাতে হয়।
মা-তোমার মেয়ে না খেয়ে কলেজে চলে যাচ্ছে, তাই খাওয়ার জন্য ডাকতে আসলাম।
বাবা-নিশু আম্মুটার আজ কি হয়েছে মন খারাপ?
আমি – আব্বু আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। সময় পেলে কলেজের ক্যান্টিনে খেয়ে নিবো।আব্বু এইবার আমি আসি।
কথাটা বলেই বেরিয়ে পড়লো নিশিতা।নিশিতা মনে মনে ভাবতে লাগলো আচ্ছা অনিক আজ কলেজে আসবে আনিকা কে নিতে।আজ কি সে আমার সাথে কথা বলবে।
চাচা এক কাপ চা দিন তো। কথাটা বলে কলেজের পাশে রহিম চাচার দোকানের সামনে অনিক নিশিতার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। নিশিতাকে একটা বার দেখার জন্য

_কিরে তুই এখানে এখনো বসে আছিস?
মায়ের কথা শুনে কল্পনার জগত থেকে ফিরলো নিশিতা।

__চল খাবি না? সকালেও কিছু খাস নাই।এইবার ফ্রেস হয়ে খেতে আয়। তোর মামা তোর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে।
নিশিতা -আসছি তুমি যাও।
মা- হুম, তাড়াতাড়ি আয়।
ইয়াসমিন বেগম এবং সৈকত খাবার টেবিলে নিশিতার জন্য বসে আছে দেখে নিশিতা বলে উঠলো তোমরা এখনো খাওনি?
সৈকত-তোকে রেখে কিভাবে খাই।আয় বস।
নিশিতার মুখের দিকে তাকিয়ে নিশিতার মা বললো তোর কি কিছু হয়েছে?
নিশিতা কি বলবে বুজতে পারছে না।নিজেকে সামলিয়ে বললো , মা আমার ছেলেটা খেয়েছে?
নিশিতার মা খেতে খেতে বললো আসার পরতো ওকে একবারও কোলে নিলি না।আমি খাইয়ে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি।তুইও খেয়েনে।
সৈকত-নিশিতা! অনিক কি আর কখনো ফিরে আসবেনা?ওর যে একটা ছেলে আছে তাও হয়তো জানেনা।

মা-আর ফিরে আসার দরকার নাই।যে চলে গেছে তাকে ভুলে থাকাটাই ভালো। যে এখন পাশে আছে তাকেঘিরে ভালো থাকুক।
নিশিতা-আমার খাওয়া শেষ আমি আবিরকে দেখে আসি।
আবির কত সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছে। পুরো অনিকের
মত হয়েছে।নিশিতা ছেলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ভাবতেছে তোর বাবা ফিরে এসেছে আবির।ও যদি জানতে পারে তুই তার ছেলে হয়তো আমার কাছ থেকে তকে কেড়ে নিবে।কথাটা ভাবতেই ছেলেকে বুকে জড়িয়ে চোখ বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে।
রুমে এসে মেয়ের এমন কাণ্ড দেখে ইয়াসমিন বেগম বললেন আমার মনে হয় তুই কিছু লুকাচ্ছিস।নিশিতা! কি এমন হল আজ তুই কিছু বলতে পারছিস না।
নিশিতা-মা!অনিকের সাথে দেখা হল আজ।
মেয়ের মুখে কথা টা শুনে ইয়াসমিন বেগমের মনে হলো তার মাথায় আকাশ ভেংগে পড়ছে।মেয়েকে কি বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।মেয়েটা সব কিছু ভুলে নতুন করে শুরু করেছে। মেয়েকে কিছু না বলে রুম থেকে চলে গেলেন ইয়াসমিন বেগম। ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখে সৈকত বসে কফি খাচ্ছে। সৈকতের পাশে গিয়ে বসে পড়লো ইয়াসমিন বেগম।
সৈকত-আপা!তোর কাজের মেয়েটা খুব ভালো কফি বানাতে পারে।খাওয়ার পরে কফি না হলে আমার ভালো লাগেনা, বলতে বলতে ইয়াসমিন বেগমের দিকে তাকালো।আপা! কি হয়েছে এইভাবে কি ভাবছিস?
__আজ নাকি নিশিতার অনিকের সাথে দেখা হয়েছে।
সৈকত-মা,,,নে,,,,,,?

মা-হুম নিশিতা বলছে।এখন যদি নিশুর জীবনে অনিক ফিরে আসতে চায় তাহলে শিহাবের কি হবে?শিহাব সেই দিন নিশুর সব কিছু মেনে নিয়ে নিশুকে বিয়ে করেছিলো।আবিরকে নিজের থেকে বেশী ভালবাসে শিহাব।শিহাব নিশু আর আবিরকে ছাড়া থাকতে পারবেনা। তুই একটা কিছু কর সৈকত।

_নিশু বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের চাঁদ দেখছে। এমন সময় কেউ পিছনদিক থেকে জড়িয়ে ধরলো নিশুকে।নিশুর একটুও চমকালো না কারন সে জানে শিহাবেই তাকে জড়িয়ে ধরেছে।
নিশু -কখন এলে?

__নিশুর কাঁধে শিহাব মুখটা গুজিয়ে বললো
শিহাব-আমার বউটার মন খারাপ।নাকি আমার উপর তার রাগ হয়েছে?
চলবে,,,,,

পুরোনো_ভালোবাসা     পার্ট: ২

0

পুরোনো_ভালোবাসা

পার্ট: ২

#Rabeya Sultana Nipa

অনিক-আমি কখনো বলিনি তুমি আমার জীবনে অভিশাপ।তুমি আমার সেই ভালবাসার মানুষ, যেই মানুষটার জন্য একদিন আমি আমার সব কিছু ছেড়ে চলে আসতে চেয়েছিলাম।
আমি-আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে, আসি।
মেয়েটা সেই সকালে শপিং করতে গেল এখনো এলো না।সকালে নাস্তাটাও করে গেল না।এই সব কথা ভাবতে ভাবতে ঘড়ির দিকে তাকালো নিশিতার মা ইয়াসমিন বেগম।আজ মেয়েটা বাসায় আসুক দুইটো কড়া কথা শুনিয়ে দিতে হবে।
অনিক – নিশু চলনা আজ দুজনে কথাও গিয়ে বসে কথা বলি! কত দিন হল তোমার সেই মিষ্টি হাসিটা দেখা হয় না।যেই হাসির জন্য আমি আমার সব কষ্ট ভুলে যেতাম।
আমি- আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে এইসব কথা বলার।আর কখনো আমার সামনে আসবেন না।
অনিক -পালিয়ে যেতে চাইছো তাইনা।যেখানে যাও না কেন আমার স্মৃতি গুলো তুমি ভুলতে পারবে না।
নিশিতা অনিককে কিছু না বলেই বাড়ীতে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।অনিক পিছন দিকথেকে অনেক ডাকলো,,নিশু! নিশু!
নিশু একবার ও ফিরে তাকালো না।আচ্ছা অনিক কেন আসলো আমার কাছে আজ।সেই কি আজও আমায় ভালোবাসে। কথা গুলি ভাবতে ভাবতে নিশিতা বাসার সামনে চলে এসেছে।দজার সামনে এসে কলিং বেল টিপ দিলো। কলিং বেল বাজার সাথে সাথেই নিশিতার মামা সৈকত এসে দরজা খুলে দিলো।
আমি-মামা আপনি কখন এলেন?
মামা-এইসব কথা পরে জানলে ও চলবে।আগে তোর মায়ের রাগ ভাংগা।
মামার কথা শেষ না হতেই মা রান্নাঘর থেকে আসতে আসতে বললো এতো দেরি করলি কেন?একজন যে তোর অপেক্ষায় বসে থাকে তোর সেই কথা মনে থাকে না?
আমি-মা আমি ফ্রেস হয়ে আসি,বলে রুমে চলে আসলাম।মায়ের সাথে এখন কথা বলা যাবে না।বললেই পেছিয়ে ধরবে।
মায়েদের মন বলে কথা সন্তানদের দেখলেই বুজে যায় সন্তানরা কেমন থাকতে পারে।
রুমে এসেই খাটের এককনে বালিশের সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লাম।কখন যে পুরোনো স্মৃতি গুলো মাথায় এসে আবার ভর করলো বুজতেই পারলাম না।অনিকের সাথে সেই প্রথম দেখা,যেটা আমি কখনোই ভুলতে পারবোনা। তখন আমি ইন্টার পাস্ট ইয়ারে পড়ি।আর ও তখন মেডিকেলে পড়তো 2nd ইয়ারে।
আমি ক্লাস শেষ করে কলেজের গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম।
আরে আপনি তাকিয়ে তাকিয়ে কি দেখেন?উঠান আমাকে।কি হলো উঠান।
অনিক -ওহ সরি, আসলে আমি খেয়াল করিনি।আমি তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে আপনি পড়ে গেলেন।
ওর হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল হাতটা ধরে উঠুন।
আমি-ওর হাত ধরে উঠতে উঠতে বললাম হনুমান কথাকার,মেয়ে দেখলেই ধাক্কা দিতে ইচ্ছে করে তাইনা।
পিছন থেকে আমার ফ্রেন্ড আনিকা বলে উঠলো আমার ভাইয়া কোনো বাজে ছেলে না।তোর ধারোনাটা ভুল।
আমি-তোর ভাইয়া মানে?
আনিকা-হুম আমার বড় ভাইয়া অনিক।ভাইয়া ও হচ্ছে আমার ফ্রেন্ড নিশিতা।
অনিক-এই যে মিস নিশিতা, আপনি আমার কি দেখে মনে করলেন আমি হনুমানের মতো?

চলবে,,,,

পুরোনো _ভালোবাসা  পার্ট: ১

0

পুরোনো _ভালোবাসা  পার্ট: ১

#Rabeya Sultana Nipa

আজ শপিং করে যখন বাসায় আসতে ছিলাম তখন মনে হল আমার পিছনে কেউ আছে।কেন জানি মনের ভেতরে খুব ব্যাথা অনুভব করতেছিলাম কে আছে আমার পিছনে? মন কেন বার বার পিছনে ফেরে তাকাতে ইচ্ছে করছে।একবার তাকিয়ে দেখি।যখন তাকিয়ে দেখলাম তখন মনে হল আমি কি সত্যি এই মানুষটাকে দেখতে পাচ্ছি। এইতো আর কেউ নয় অনিক।এইতো আমার অনিক।আমার মনে হল অনেক অভিমান নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।সেই ৫ বছর আগের অনিকে সাথে এখনকার অনিক কোনো মিল নাই।মিল থাকবে কি করে, আমি যে অনিক কে ভালোবাসতাম সেই এতোটা স্মার্ট ছিলোনা।ছিলনা তার কোনো টাকা,ছিলনা বিলাসবহুল বাড়ী, ছিলনা গাড়ী, ছিল শুধু আমার প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা। আজ তার সব আছে নাই শুধু আমি। যাই হোক ওর কথা বলতে বলতে আমার পরিচয় টা দেওয়া হল না।আমি নিশিতা। দেখতে এতো আহামরি কিছুনা। তবে সবাই বলে আমি নাকি অনেক কিউট। একটু আগে যার কথা বলছিলাম সে অনিক।৫ বছর আগে এই মানুষটা কে আমি আমার জীবনের চেয়ে বেশী ভালোবাসতাম।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে সই আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিল আমি টেরই পেলাম না।

অনিক-কেমন আছো নিশিতা?
আমি তখন কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।আমি শুধু তাকিয়ে আছি ওর সেই চোখ গুলোর দিকে, যেই চোখের দিকে তাকালে আমি সব ভুলে যেতাম।যেই চোখের দিকে তাকালে আমি আমার সব প্রশ্নের উওর খুঁজে পেতাম। হঠাৎ মনে হল আজ আমি ওর চোখের দিকে কেন তাকিয়ে আছি।আমি কি আজও ওকেই ভালোবাসি? তাই আমি ওর চোখ কি বলছে জানার চেষ্টা করছি?
অনিক- কি হল কথা বলবেনা আমার সাথে?
ভাবনার মধ্য তার কথা গুলো শুনে চমকে গেলাম।তারপর কিছু না ভেবেই বললাম।
আমি- হুম,অনেক ভালো আছি।
অনিক – তোমাকে দেখে তা মনে হয় না। তুমি ভালো নেই আমি জানি।
আমি- আপনি ডাক্তার সেই কথা জানি, কিন্তু মানুষ দেখেই কে কেমন থাকতে পারে তাও বলে দিতে পারেন
তা তো জানতাম না।
অনিক – ঠিক বলেছো সবাই কে পারি না।কিন্তু তোমাকে দেখে বলতে পারি। কারণ এই মানুষটাই,,
ওকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি বলে পেললাম,
আমি- কারণ এই মানুষটাই আপনার জীবনের । অভিশাপ
চলবে,,,,,

ছায়া নীল ! শেষ পর্ব। ৩৬.

0

ছায়া নীল !

শেষ পর্ব।

৩৬.

Maria Kabir

মেজো ফুপু মারা গেছেন ১ সপ্তাহ হলো। ও খুব চুপচাপ হয়ে গেছে। ও কখনওই বেশি কথা বলতো না।যাও একটু বলতো ফুপুর মারা যাবার পর আরো বেশি চুপচাপ হয়ে গেছে। যন্ত্রের মতো ওর জীবন হয়ে গেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল, ব্রাশ করে নাস্তা করে অফিসে যায়, রাতে ফিরে এসে রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে।
খুব জরুরি না হলে আমার সাথে কথা বলেনা। আমরা আগের পুরাতন বাড়িতে থাকি না। ওর অফিসের পাশে একটা দোতলা বাড়ির দোতলার পশ্চিম দিকের ফ্ল্যাট টা ভাড়া নেয়া হয়েছে।
একটা কাজের মেয়েই আমার কথা বলার সংগী।
পুরো ১ টা সপ্তাহ ও এভাবেই কাটালো। জানি না আর কতো সপ্তাহ এভাবে কাটাবে।
আমার নিজের মধ্যে খুটে খুটে মরছি আমি। বারবার মনে হচ্ছে, ওর মায়ের মৃত্যুর জন্য ও আমাকে দায়ী করেছে। আমি কিছু বলতেও পারছিলাম না আবার সহ্যও করতে পারছিলাম না।
পুরো ২ টা মাস কেটে গেলো ও আমার সাথে তেমন কথাও বলেনা। এমনকি আমার হাতটাও ও স্পর্শ করেনি। আমি যেচে কথা বলতে গেলে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর উত্তর দেয়। তাও খুব সংক্ষিপ্ত।
আমার যাওয়ার মতো জায়গাও খুঁজে পাচ্ছিনা। আফরোজার সাথে দেখা করা দরকার। ও হয়তোবা আমাকে কোনো সেফ জায়গা খুঁজে দিতে পারবে। সৌরভ আমাকে একদমই পছন্দ করছে না। ও আমাকে চলে যেতে বলতেও পারছেনা।
আফরোজার নাম্বারে ফোন দিলাম। ও রিসিভ করলো। আমি বললাম
– আফরোজা, ভালো আছিস?
– আরে শারলিন। আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?
– আমি ভালোই আছি।
– মিথ্যে কেনো বলছিস? কী হয়েছে বলবি?
– তোর আজ বিকালে সময় হবে?
– হ্যা হবে। বাসায় আয়।
– না। কোনো একটা রেস্টুরেন্ট হলে ভালো হয়।
কোন রেস্টুরেন্ট এ দেখা করবো, কটায় সব ঠিক করে মোবাইল চার্জে দিয়ে রাখলাম। মনে মনে ছক কেটে ফেলেছি। আপাতত ছোটোখাটো কোনো চাকরী করবো। পড়াশোনাটাও চালিয়ে যাবো। একটা হোস্টেল হলে ভালো হয়।
বিকালে বের হলাম, কাজের মেয়েটাকে বলে গেলাম। ভাইয়া বাদে অন্য কেউ আসলে দরজা খুলবে না।
আমি পৌছানোর আগে আফরোজা এসে রেস্টুরেন্টের কোণার একটা টেবিলে বসে আছে।
আমাকে দেখে আফরোজা চমকে উঠে বলল
– তোর এই অবস্থা কেন?
– বুঝলাম না।
– তোর চেহারা দেখেছিস? শরীরের হাড় গোড় বের হয়ে গেছে।
আমি নিজেও খেয়াল করিনি। এই ২ টা মাস শুধু সমাধান খুঁজেছি পাইনি। আমি মৃদুস্বরে বললাম
– আমাকে একটু সাহায্য করতে পারবি?
– বল, সাধ্যের মধ্যে হলে করবো।
– আমাকে ছোটোখাটো একটা চাকরী খুঁজে দে না। আমার পেট চলে যাবে এরকম।
– হ্যা, তা পারবো কিন্তু কী হয়েছে বলবি?
চোখের কোণায় কয়েক ফোটা পানি জমে আছে। গাল বেয়ে পরে গেলো। ওড়না দিয়ে মুছে বলতে শুরু করলাম। ও গম্ভীর স্বরে বলল
– ভালো করেছিস। তবে চাকরি টা পেতে সময় লাগবে। ধর ২-৪ দিন। তুই এই কদিন তোর বরের সাথে থাক। আমি তোকে জানাবো।
বাসায় আসার পর একটু সাবধানে থাকতে শুরু করলাম। ও যেন কোনোভাবেই বুঝতে না পারে সেদিকে বেশি সতর্কতা বজায় রাখলাম।
মনে মনে ছক কেটে রাখলাম কী কী নিবো। আমার অবশ্য বেশি জামাকাপড় নেই।
আমার তো কোনো দোষ নেই। ও আর ওর মা আমাকে নিয়ে খেলেছে।
নীল কে ছেড়ে যেতে আমার খারাপ লাগবে কিন্তু আমাকে বাঁচতে হবে।ওর প্রতি আমার মনে ভালবাসার পাশাপাশি ঘৃণাটাও জন্ম নিয়েছে।
এগুলো ভাবছিলাম আর বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছিলাম। কলিংবেল বেজে উঠলো। মেয়েটা দরজা খুললো। তারপর হাসি মুখে মেয়েটা এসে বলল
– আপামনি, আপনার বড় ফুপু এসেছেন।
বড় ফুপু আমাকে দেখে প্রথমে একটু চমকে গেলেন। তারপর আমাকে বললেন
– শারলিন, একটু দাড়া তো।
আমি দাঁড়ালাম। বড় ফুপু আমাকে ঘুরেঘুরে দেখছেন। তারপর পেটে হাত দিয়ে কী যেন বুঝার চেষ্টা করলেন। তার মুখে হাসির ঝিলিক লেগে গেলো। আমাকে বললেন
– সৌরভ টা কখন আসবে?
– রাত হবে।
– হতচ্ছড়াটা একটু খেয়ালও রাখে না তোর। আজকে আসুক আমার ভাস্তির এই হাল করে রেখেছে। এর শোধ আমি তুলবো।
আমার এখন আর এসব চিন্তা মাথায় আসছে না। মাথায় শুধু ঘুরছে কীভাবে চলে যাওয়া যায়? ও অবশ্য আমাকে খুঁজবে না। তারপর ও যদি খোজার চেষ্টা করে তাহলে যাতে আমাকে খুঁজে না পায় সেই চেষ্টা করতে হবে।
বড় ফুপু বললেন
– রান্না করা আছে?
– হ্যা আছে।
– ওগুলো ফ্রিজে রেখে দেই। বিরিয়ানি রান্না করি। সবাই মিলে একসাথে খাওয়া যাবে।
– কী কী গুছিয়ে দিতে হবে বলুন?
– তুই রেস্ট নে।
আমি আর কথা বাড়ালাম না। এই সংসার এর প্রতি আমার কোনো বিন্দুমাত্র মায়া নেই। আমার মন চাচ্ছে এখনি পালাই।
বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙলো বড় ফুপুর ডাকে। আমাকে টেনে তুলে হাত মুখ ধুইয়ে খাবার টেবিলে নিয়ে গেলো। সৌরভ যে চেয়ার টাতে বসেছে আমাকে তার মুখোমুখি চেয়ার টাতে বসিয়ে দিলো।
কাজের মেয়ে আর বড় ফুপু পাশাপাশি বসলেন।
বিরিয়ানি বরাবরের মতোই ভালো হয়েছে।খুব তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছিলাম। একটা বারের জন্যেও ওর দিকে তাকাতে ইচ্ছে করছেনা। বড় ফুপু ওকে বললেন
– শারলিন অসুস্থ সেটা কি তুই জানিস?
ও বলল
– জানি না। ওসব দেখার সময় আমার নেই।
– তাহলে বিয়ে কেনো করেছিলি?
– আমার মাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্যে।
কথাগুলো আমার গায়ে কাটার মতো ফুটছিলো। বাসররাতে যা যা বলেছিলো সব মিথ্যে?
ফুপু বললেন
– তুই জানতি, মেজো কখনওই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে না। আর ফিরিয়ে আনার জন্য ওকে বিয়ে করাটা জরুরী ছিলো না।
– কী বলতে চাচ্ছো?
– ও তোর স্ত্রী। আর তোর মায়ের মারা যাওয়ার কারণ অবশ্যই ও না।
– জানি কিন্তু আমার ওকে অসহ্য লাগে এখন।
– তাহলে ওকে বের করে দিলেই পারিস।শুধুশুধু ওকে আটকে রেখেছিস। ওর জীবন এখনো অনেক বাকি। এতো সুন্দর মেয়েকে যে কেউ বিয়ে করতে রাজি হবে।
– ওকে আমি আটকে রাখিনি।
কথাটা শুনে আমার মেজাজ বিগড়ে গেলো। রাগেগরগর করে বলে ফেললাম
– আমি ইনশাআল্লাহ আগামী ২-৪ দিনের মধ্যে চলে যাবো।
ও কিছুই বলল না। বড় ফুপু বললেন
– বাচ্চা পেটে নিয়ে একা থাকা যায়না।
কথাটা শুনে আমি হেসে বললাম
– বাচ্চা কোথা থেকে আসবে।
বড় ফুপু বললেন
– তুই প্রেগন্যান্ট শারলিন। এই অবস্থায় তো রেস্টে থাকতে হয়। আর তুই এমনিতেই অসুস্থ।
– এটা সম্ভব না। আমি প্রেগন্যান্ট না। আপনি শুধুশুধু ভাবছেন। আমাকে সংসারে রাখার জন্য আপনি মিথ্যে বলছেন।
– বিশ্বাস না করলে, ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেকাপ করিয়ে নিস।
সৌরভ বলল
– ওকে আমার সহ্য হয়না আর তো ওর বাচ্চাকে। হেহ, ওকে বলো চলে যেতে। আমার ওকে প্রয়োজন নেই।
বড় ফুপু চলে গেলেন। বেডরুমের জানালা ধরে রাতের তারা ভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি আমি কি সত্যি মা হবো?
যদিও বা হই তাহলে আমার সন্তানকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে। আমি তো সামান্য ইন্টার পাশ। আমার চাকরী হলেও খুব খারাপ নিম্নমানের হবে। ওকে আমি ভালো খাবার, ভালো পোশাক দিতে পারবো না কিন্তু ওকে অনেক ভালবাসতে পারবো। অনেক ভালবাসবো, আমার নিঃসংজ্ঞতা কাটানোর ওই তো একজন হবে।
নাকে সিগারেটের ধোয়া এসে লাগলো। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম, সৌরভ চেয়ারে বসে সিগারেট টানছে। আমি মৃদুস্বরে বললাম
– আমার কষ্ট হচ্ছে। বাইরে গিয়ে ধূমপান করো।
ও সিগারেট টা ফেলে দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলো। আমার অসহ্য লাগছে। ও আমার গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। আমার শরীর ঘিনঘিন করতে লাগলো। আমি বললাম
– দূরে থাকো।
– অনেকদিন দূরে থেকেছি এখন পারছিনা।
– অন্য কাউকে নিয়ে আসো। তারপর তার গা ঘেঁষে দাঁড়াবা।
– বউ থাকতে অন্য নারীর কাছে যাওয়াটা ঠিক হবেনা। আর আমার তোমাকে ছাড়া অন্য মেয়ের প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই।
ভাবছো ওসব কেনো বললাম?
আসলে মনের ভিতরের চাপা রাগটা ঝেড়েছি।
– আমি ঘুমাবো এখন।
– অনেক ঘুমিয়েছো তুমি। তুমি চলে যাওয়ার প্ল্যান করছো তাই না?
– হ্যা। আমার তো কোনো প্রয়োজন নেই তাই।
– শুনো শারলিন, আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার একটাই উপায় আছে সেটা হচ্ছে তোমার মৃত্যু। তুমি যতদিন জীবিত আছো ততদিন আমার সাথে তোমাকে থাকতে হবে।
আর খাবার টেবিলে ওসব কথা বলেছি, যাতে তোমার চলে যাওয়ার কথাটা তুমি নিজের মুখে স্বীকার করো।
আমি কাঁদতে শুরু করলাম। ও বলল
– প্রেগন্যান্ট অবস্থায় মেয়েদের হাসিখুশি থাকতে হয়। তাহলে বাচ্চাও হাসিখুশি থাকে, সুস্থ থাকে।
– আমি প্রেগন্যান্ট?
– হ্যা, সেটা তো আমি অনেকদিন আগেই বুঝতে পেরেছি কিন্তু বলা হয়নি। নিজেকে ঠিক করতে করতেই দেরি হয়ে গেলো।
– আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা তোমার।
– আমার ভাবতে হবেই। কারণ আমার জীবন এখন তোমাকে ঘিরেই। মাকে খুব ভালবাসি তাই তার মৃত্যুতে খুব ডিপ্রেশনে পরে গিয়েছিলাম। তাছাড়া কিছুই না। আফরোজা আমাকে সব বলেছে। প্রথমে আমি বিশ্বাস করতে চাইনি। পরে ও তোমার ছবি দেখালো। তখন বুঝতে পারলাম, আমার তোমার সাথে এতোটা দূরত্ব সৃষ্টি করা ঠিক হয়নি।
– আমি চলে যাবো।
– সেটা হচ্ছেনা। আমি তোমাকে ভালবাসি খুব ভালবাসি। আর আমাদের সন্তানকেও ভালবাসি।
– যদি তোমার সন্তান না হয়?
– শারলিন, তোমার চরিত্র কেমন আমি জানি। আমি ছাড়া তোমাকে কেউই স্পর্শ করেনি। আর তুমি আমার স্পর্শ ছাড়া কারোরই স্পর্শ সহ্য করতে পারো না। আমার বিশ্বাস। তুমি রাগের বসে মিথ্যা বলছো।
আমার খোলা চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়ে গলায় চুমু দিয়ে বলল
– তোমার উপর একমাত্র আমার অধিকার। অধিকার ভালবাসা থেকে আসে।
ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
– মিসেস শারলিন, অভিনন্দন আপনাকে এবং আমাকে। আমরা মা বাবা হতে যাচ্ছি।
আমি উচ্চস্বরে কাঁদতে শুরু করলাম। কতদিন ও আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেনি। কতদিন ও আমাকে ভালবাসি কথাটা বলিনি। আজ ২ মাস যাবত আমি শুধু অপেক্ষা করেছি আজকের এই সময়টুকুর জন্য।
ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
– প্লিজ, শারলিন চুপ করো। আর না, অনেক হয়েছে। শান্ত হও, বেশি স্ট্রেস বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর।
কতদিন ওর দেহের ঘ্রাণ আমি পাইনি এতোটা কাছে থেকে। এই ২ টা মাস আমার কাছে অনন্তকালের মতো লেগেছে। আমি ওকে ভালবাসতে চাই, ঘৃণা না।

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ৩৫.

0

ছায়া নীল !

৩৫.

Maria Kabir

সৌরভ কে অনেক বলার পরও বড় ফুপু কিছু করাতে পারলেন না। বাধ্য হয়ে নিচতলার ভাড়াটিয়া কে ডেকে তুললেন। তাকে দিয়ে এম্বুলেন্স আনালেন।
রাত ১.৩০ এ আমরা হাসপাতালে পৌঁছালাম। সৌরভ সেই আগের মতোই চুপচাপ আছে। ক্রমাগত ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। ডাক্তার ছিলেন না। কয়েকজন নার্স ছিলেন তারা মেজো ফুপুকে দেখে রীতিমত ভয় পেলেন। এতক্ষণ আমি খেয়াল করিনি এসিড কোথায় লেগেছে। বুক থেকে পেট, পেট থেকে ডান পা পর্যন্ত এসিডদগ্ধ হয়েছে। ভয়ানক অবস্থা। বড় ফুপু ডাক্তার এর নাম্বার নিয়ে ফোন করে রিকুয়েস্ট করলেন আসার জন্য।
ডাক্তার আসলেন রাত ২.৩০ টায়। মেজো ফুপু এর অবস্থা খুবই খারাপ।
ফজরের আযানের সময় ডাক্তার সাহেব অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে শুকনো মুখে বললেন
– অবস্থা খুবই খারাপ। এসিড টা তীব্র ছিলো তাই দেহের বাইরে তো দগ্ধ হয়েছেই ভিতরেও হয়েছে। আল্লাহ কে ডাকুন।
বড় ফুপু কাঁদতে লাগলেন। আমার জন্যই এমন হয়েছে। আমি ওর জীবনে না আসলে ওর আর ওর মায়ের এই করুণ পরিণতি হতো না।
হাসপাতালে আসার পর থেকে আমাদের কারোরই চোখে ঘুম ছিলো না। আমার শরীর খারাপ করছে। মেডিসিন খাওয়া হয়নি আজকে।
সকাল ৭ টার সময় একজন নার্স আমাদের বললেন
– আপনারা সকালের খাবার খেয়ে আসুন। এখন আমি আপনাদের রুগীর কাছে আছি।
বড় ফুপু আমাদের নিয়ে হাসপাতালের পাশের একটা খাবার হোটেলে নিয়ে গেলেন।
নীলকে এখন আগের থেকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। বড় ফুপু ওকে বললেন
– এখন খাবার খেয়ে নে। তোর মা ঠিক আছে।
ও মাথা নেড়ে সম্মতি প্রকাশ করলো। খাবার খাওয়ার পর বড় ফুপু বিল দিয়ে দিলেন।
তারপর আমাকে আর সৌরভ কে বললেন
– তোরা বাসায় যা। আমি আছি এখানে।
সৌরভ যেতে চাইলো না। বড় ফুপু জোড় করে আমাদের ওনার বাসায় পাঠিয়ে দিলেন।
বাসায় এসে আমি গোসল করে নিলাম। ও বিছানার উপর চুপচাপ বসে আছে।
ওর পাশে বসে বললাম
– আমার জন্যে এতো কিছু হলো। সবকিছুর মূলে আমি। মেজো ফুপু সুস্থ হয়ে গেলে আমি চলে যাবো তোমাদের জীবন থেকে।
ও বলল
– কোথায় যাবা?
– জানি না, তবে ঠিক বলছি আমি চলে যাবো। আমার মতো খারাপ একটা মেয়ের জন্য মা – সন্তানের মধ্যে দন্দ্ব। আমি না থাকলেই সব ঠিক হয়ে যাবো।
– তুমি ভুল বলছো। সবকিছুর মূলে আমার মায়ের হিংসা, প্রতিশোধ নেয়ার প্রবণতা। আর কিছুই না। এসিডদগ্ধ হয়েছে নিজের কারণেই।
– আমি না থাকলে তো এই ঘটনা তো ঘটতো না।
– শুনো শারলিন, আমার মায়ের পাপের বোঝা অনেক বেশি হয়ে গেছে যার ফলাফল গতকালের ঘটনা। কিন্তু ঘটনার আকস্মিকতায় আমি থমকে গিয়েছিলাম। আমি বুঝে উঠতে পারিনি কীভাবে কী ঘটলো। আমার হাত থেকেই কী এসিড পরেছে নাকি দোষ আমার মায়ের। এতক্ষণ ভাবার পর খুঁজে পেলাম আমার কারণে হয়নি। মায়ের হাত থেকেই তার শরীরে পরেছে।
ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। তারপর বলতে শুরু করলো
– জানো শারলিন, ছোটোবেলা থেকে মায়ের আদর পাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি। সে আমাকে প্রতিনিয়ত কষ্টই দিয়েছে। আমি একফোঁটা ভালবাসার জন্য দিনের পর দিন মায়ের প্রত্যেকটা কথা শুনেছি। ওনার কথা শুনেই তোমার সাথে আমি খারাপ ব্যবহার করেছি। শারলিন, আমাকে মাফ করে দাও।
– আরে বোকা, মাফ করার কী আছে? পাগলামি করো না। গোসল করে নাও। তারপর মেজো ফুপুর কাছে যেতে হবে আমাদের।
হাসপাতালে মেজো ফুপুর কেবিনের সামনে বেশ ভিড় দেখতে পারলাম।কাছে গিয়ে বুঝতে পারলাম মেজো ফুপু আর নেই। মেজো ফুপুর বেডে সাদা কাপড় দিয়ে তার দেহ ঢাকা। পাশের টুলে বড় ফুপু বসে আছেন।
সাদা কাপড় এর কিছু অংশ রক্তে লাল হয়ে আছে।

চলবে……..!

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ৩৪.

0

ছায়া নীল !

৩৪.

Maria Kabir
ও আমার হাত ছেড়ে দিয়ে ফুপুর উদ্দেশ্যে বলল
– তুমি কি সত্যি আমার মা?
ফুপু আমাদের দিকে একটু এগিয়ে এসে বলল
– কেনো এই প্রশ্ন করলি?
ও একটু ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল
– একজন মা তার সন্তানের জন্য সবকিছু করতে পারে। সন্তান ভূতের ভয় পেলে তাকে আগলে রাখে কিন্তু মা তুমি তো উল্টো আমাকে ভূতের ভয় দেখিয়েছো। ছোটোবেলায় আমাকে তুমি লালনপালন করোনি, করেছে বড় খালা। সেই আমাকে মায়ের আদরে বড় করেছে। মায়ের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তার সন্তানের জন্য সকল ত্যাগ স্বীকার। তোমার মাঝে আমি দেখিনি। তুমি সবসময় নিজের টা নিয়ে ভেবেছো।
ও থেমে গেলো।মেজো ফুপু বললেন
– আমি তোকে পেটে ধরেছি, জন্ম দিয়েছি।
ও বিদ্রুপের হাসি হেসে বলল
– জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না। সেটা তুমি প্রমাণ করেছো। বড় খালা আমার সবকিছু দেখাশোনা করেছেন। সেই আমাকে মায়ের আদরে মানুষ করেছেন। সুতরাং তুমি আমার জন্মদাত্রী কিন্তু মা নও। আমার মা হচ্ছে বড় খালা।
মেজো ফুপু ধমকে উঠে বললেন
– লালনপালন তো সবাই করতে পারে। কয়জন পেটে ধরতে পারে? আমি তোর মা, বড় আপা না।
ও চিৎকার করে বলল
– মা হলে, তুমি আমার খুশি, আনন্দ কেড়ে নেয়ার চিন্তা করতে না। তুমি ভালোভাবেই জানো, আমার সুখ – শান্তি সব শারলিনকে ঘিরে। তুমি ওকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দিতে পারতে না। ও কষ্ট পেলে আমিও পাই। আমারো খারাপ লাগে। তোমার জন্য ও সুইসাইড করতে গিয়েছিলো। তুমি আমাকে ব্ল্যাক ম্যাজিক শিখিয়েছো। ব্ল্যাক ম্যাজিক যারা করে তাদের জন্য জান্নাত হারাম। তুমি কোনো মায়ের পর্যায়ে পরো না। তুমি একজন স্বার্থপর জন্মদাত্রী।
– তুই জানিস না, ওর মার জন্যে আমি বিধবা হয়েছি। তোর বাবা মারা গেছে।
– ওর মার জন্য না। তোমার নিজের স্বভাবের জন্যে। তুমি নিজে কী সেটা কখনো খেয়াল করেছো? তুমি নিজের দোষ অন্যের উপর কীকারণে চাপাও? তুমি আমার মা নও। শারলিনকে লাগবে তোমার? নিয়ে কী করবে আমি জানি না বুঝি? তুমি কোনো মানুষের পর্যায়ে পরো না।
মেজো ফুপু কোনো কথা বলছেনা। সেই আগের মতো হাসি নেই তার মুখে। মেজো ফুপু আমাদের দিকে এগিয়ে আসলেন।
ফুপুর হাতে একটা কাঁচের বোতল দেখলাম। ফুপুকে এগিয়ে আসতে দেখে সৌরভ বলল
– মা, এসিড কার উপর মারবে?
মেজো ফুপু কোনো উত্তর দিলেন না। সৌরভের সামনে এসে দাঁড়ালেন ফুপু। আমি ওর পিছনে নিজেকে আড়াল করে দাঁড়ালাম। ফুপু বললেন
– আমি তোকে অনেক ভালবাসি বাবা।
ও বলল
– তোমার কোনো কথাই আমি বিশ্বাস করিনা। তুমি মানুষ যদি হতে তাহলে একজন মৃত ব্যক্তির লাশ ফরমালিন দিয়ে রাখতে পারতে না।
– আগে তো এমন বলতি না। এখন কেনো বলছিস? ওই মেয়ের জন্য বলছিস? এখন আমি পর আর শারলিন কাছের হয়ে গেলো।
– মা তুমি আবারো একই কাজ করছো? তোমার এসব বিশ্রী কর্মকাণ্ড সহ্য করার ক্ষমতা আর নেই। আমি ক্লান্ত মা, খুব ক্লান্ত।
– আমি বিশ্রী কোনো কাজ করছিনা। আমার উপর হওয়া অবিচারের বিচার করছি।
– তুমি নিজেই তোমার উপর অবিচার করেছো।
– চুপ কর। আমার থেকে বেশি বুঝবি না।
– তোমার কোনো কথাই আমি শুনবো না।
মেজো ফুপু হুট করে বোতলের মুখ খুললেন। সৌরভ, ফুপুর কাছ থেকে দূরে সরে দাঁড়ালো। ওর আড়ালে দাঁড়িয়ে ফুপু কী করছেন দেখতে পারছিলাম।
সৌরভ ফুপুর হাত থেকে বোতল কেড়ে নিতে হাত বাড়ালো। দুজনের মধ্যে সেই বোতল নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে গেলো। এমনিতেই বোতলের মুখ খোলা তার উপর যেভাবে কাড়াকাড়ি চলছিলো তাতে মনে হলো যেকোনো একজনের গায়ের উপর এসিড পরবে।
বোতল কাড়াকাড়ি করতে গিয়ে ফুপুর শরীরে এসিড পরে গেলো। সাথে সাথে ফুপু চিল্লানো শুরু করলো। মাটিতে পরে গেলেন। সৌরভ নড়াচড়া করছে না,সেই আগের মতো দাঁড়িয়ে আছে। বড় ফুপু এসে মেজো ফুপুকে ধরলেন। বড় ফুপু বললেন
– সৌরভ গাড়ি বের কর। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
সৌরভ কোনো উত্তর দিলো না। সেই আগের মতোই দাঁড়িয়ে রইলো। বড় ফুপু আবারো সেই কথাই বললেন। কিন্তু ওর কোনো প্রতিউত্তর পেলেন না।
ও মাটিতে বসে পরলো মেজো ফুপুর পাশে।
মেজো ফুপু অসহ্য যন্ত্রণায় চিৎকার করছে। বড় ফুপু বলতে লাগলেন
– মেজো সব ঠিক হয়ে যাবে একটু সহ্য কর। এক্ষুণি হাসপাতালে নিয়ে যাবো।
নীলের উদ্দেশ্যে বললেন
– কীরে গাড়ি বের কর তোর মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবো।
ওর কোনো পরিবর্তন দেখলাম না। শুধু চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো।

চলবে……..!

#Maria_kabir

ছায়া নীল ! ৩৩.

0

ছায়া নীল !

৩৩.

Maria Kabir
সারাদিন বাসায় বড় ফুপুর সাথে ভালোই কাটলো। মানুষ টা এতো রসিক আগে জানা ছিলো না। কিছুক্ষণ পর পর হাসি চেপে বলছে
– কীরে সুখবর কবে দিবি?
প্রথমে প্রশ্নটা আমি বুঝতে পারিনি। অনেকক্ষণ ভাবার পর বুঝতে পেরেছি। বুঝতে পারার সাথে সাথে আমার খুব লজ্জা লাগতে শুরু করেছে। বড় ফুপুর দিকে তাকাতে পারছি না।
সৌরভ আসলো সন্ধ্যায়। ওর মুখে বিষাদের ছায়া খেলা করছে। মাকে যে ও খুব ভালবাসে সেটা বুঝতে পারছি। ও ওর
সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছে ফুপুকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কিন্তু পারছেনা।
আচ্ছা ও কী জানে? ঘুমন্ত মানুষকে ডেকে তোলা যায় কিন্তু যে ঘুমের ভান ধরে তাকে ডেকে তোলা যায়না।
বড় ফুপুর সাথে কী নিয়ে কথা বলল বুঝতে পারলাম না। খুব আস্তে আস্তে কথা বলল। হয়তোবা তারা চাচ্ছেনা আমাকে জানাতে।
ও রুমে চলে গেলো। বড় ফুপু আমাকে বলল
– আরে রুমে যা, ব্যাটাছেলে বাড়ি ফিরলে তাদের সাথে সাথে থাকতে হয়।
কথাটা শুনে আমি কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম।
আমাকে ঠেলে ঠুলে রুমে পাঠালো।
আমাকে দেখে ও বলল
– আচ্ছা শারলিন, আমাকে নীল বলে ডাকতে পারবে?
– হ্যা।
ও হঠাৎ এই কথা কেনো বলছে??
– তুমি দূরে কেনো? পাশে বসো। আর খাওয়া দাওয়া করছো?
– হ্যা, দুপুরবেলা খেয়েছি। তুমি খাও নি?
– নাহ, সারাক্ষণ মনে হচ্ছিলো তোমাকে হারিয়ে ফেলবো।
আমি বিছানার উপর ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
ও আমাকে কাছে টেনে নিলো। চুলগুলোতে বিলি কাটতে কাটতে বলল
– তুমি গুছিয়ে থাকতে পারো না? নাকি সারাক্ষণ আমার চিন্তায় থাকো। কখন আমি আসবো। তাই না?
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম।
ও যে কতোটা অস্থির হয়ে আছে সেটা নিশ্বাসের উঠানামায় বুঝতে পারছি।
আমি বললাম
– নীল বললে হ্যাপি হবা?
ও বলল
– হ্যা হবো। আর তুমি আমার ছায়া, দুজনের নাম মিলে কী হয় জানো তো?
– হ্যা জানি।
– বলো তাহলে।
– ছায়া নীল।
ও বিড়বিড় করে ছায়া নীল শব্দটা উচ্চারণ করছে।
জানি না, ও পাগল হয়ে গেলো নাকি? পাগলরা নাকি একই কথা বারবার বলে।
হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে ডাকছে। কেউ আমাকে জানালার দিকে টানছে। এদিকে ও আমার হাত খুব শক্ত করে ধরে আছে।
আমি উঠে যেতে চাচ্ছি কিন্তু ও দিচ্ছেনা।
কোনোভাবেই উঠতে পারলাম না।
ও বলল
– খবরদার এখান থেকে নড়বা না।
একসময় ও জানালার কাছে গিয়ে জানালা খুলে দাঁড়ালো। তারপর কী যেন খুঁজতে শুরু করলো।
তারপর একটু জোড়ে বলল
– মা তুমি কোথায় ? মা শুনতে পাচ্ছো?
কী চাও বলোতো??

কিছুক্ষণ পর ও আমাকে টেনে নিয়ে বাড়ির বাইরে নিয়ে গেলো।
জানালার নিচটাতে ও আর আমি এসে দাঁড়ালাম। ও ওর মাকে উদ্দেশ্য করে বলল
– মা, তোমার ওকে লাগবে তো? নাও নিয়ে এসেছি। এখন তো সামনে আসো।
মেজো ফুপু গাছের আড়াল থেকে বের হয়ে আমাদের থেকে দূরে দাঁড়ালেন।
চোখেমুখে হাসি খেলা করছে। মেজো ফুপু নীলকে উদ্দেশ্য করে বলল
– সত্যি দিয়ে দিবি?
নীল বলল
– হ্যা, তবে শর্তটা মনে আছে তো?
মেজো ফুপু হাসতে হাসতে বললেন
– হ্যা অবশ্যই। তুই কথা রেখেছিস আমিও রাখবো।

চলবে……….!

#Maria_kabir