Wednesday, June 18, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2400



পুরোনো_ভালবাসা   পার্ট: ১৬

0

পুরোনো_ভালবাসা

পার্ট: ১৬

#Rabeya Sultana Nipa

 

__শিহাব -নিশু! এই কথা গুলো তোমার মনে আছে? বলোনা নিশু মনে আছে?

নিশু-শিহাব আমার সব মনে আছে।কিন্তু তোমার আজ কি হয়েছে? এই রকম করছো কেন?

শিহাব -সেই দিন আমি আর আমার ফ্রেন্ড পুরো রাত hospital ই ছিলাম।জানো যখন আবিরকে সিস্টার নিয়ে আসলো তখন আমাকে সিস্টার বাবা ভেবে আমার কোলে দিয়েছিলো।আমি তখন আবিরকে কোলে নিয়ে মনের ভেতর কিযে ভালো লাগা কাজ করছিলো সেই দিন কাউকে বুজাতে পারিনাই।তারপর থেকে তোমাদের বাসায় আসা যাওয়া,আস্তে আস্তে তোমাকেও ভালোবেসে ফেললাম। তোমাকে আর আবিরকে এক নজর দেখার জন্য বার বার ছুটে যেতাম তোমাদের বাসায়।একটা সময় আসলো আবির আমাকেই বাবা ডাকতে শুরু করলো।তখন আমি ভাবলাম সত্যি সত্যি যদি আমি আবিরের বাবা হই!তাহলে তোমাদের আর হারানোর ভয় থাকবে না।আমার মা কে পাঠালাম তোমাদের বাসায়। তুমি তো বিয়ের কথা শুনেই রেগে আগুন হয়ে গেলে।হয়তো তোমার বাবার আর মায়ের কারনেই বিয়েটা করতে রাজি হয়েছিলে।বিয়ের পর আমাকে তোমার অসহ্য লাগতো।আস্তে আস্তে সেটা জয় করে নিলাম আমার ভালোবাসা দিয়ে।আজ যখন সব কিছু ঠিক ভাবে চলছে তখন আমি আমার সব কিছু হারিয়ে যেতে দিতে পারি না।তোমাকে পেতে আমার অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।

নিশু-আমি জানি শিহাব তুমি কথা গুলো কেন বলছো।তুমি আমার আর অনিকের ব্যাপারটা জেনে গেছো।বিশ্বাস করো আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। অনিকের প্রতি আমার কোনো পিছুটান নাই।তুমিই আবিরের বাবা আর সারাজীবন আবিরের বাবাই থাকবে।
কথা গুলো বলেই শিহাবের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো নিশু।জানো শিহাব তোমার বুকে মাথা রাখলে মনে হয় আমি সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা আছি
পৃথিবীর সব শান্তি বুকেই আছে।

শিহাব -কথা গুলো বলে কি আমাকে বুজাচ্ছো।নাকি শান্তনা দিচ্ছো?তবে একটা কথা মনে রেখো অনিকের সাথে আমার সম্পর্কটা শেষ হয়ে যাবে।আর সেটা কালকে শেষ করবো।

নিশু -তুমি যা ইচ্ছা করো। কিন্তু আমি সারাজীবন তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই।শিহাব কে আর কোনো কথা সুযোগ না দিয়ে শিহাবের ঠোটে ঠোট ঢুবালো নিশু।

_শিহাব উঠো তোমার কলেজের দেরি হয়ে যাচ্ছে।প্রতিদিন লেট করে কলেজে যাও।একটা দিনতো একটু তাড়াতাড়ি যেতে পারো।এতো দেরিতে যাও ক্লাস কারাও কখন?উঠোনা শিহাব!!

শিহাব -জান “”আরেকটু ঘুমাতে দাওনা প্লিজ।

নিশু-আর একটু না উঠো বলছি।ঠিক আছে উঠতে হবেনা,আমি পানি আনতে যাচ্ছি।

শিহাব -এই না! না! এইতো উঠে গেছি।আচ্ছা আরেকটু ঘুমাতে দিলে কি হতো?

নিশু -একটা দিনতো তাড়াতাড়ি কলেজে যেতে পারো।আচ্ছা এতো দেরিতে গেলে ক্লাস করাও কখন?

শিহাব -ঘরে সুন্দরি বউ রেখে কলেজে যেতে একটুও ইচ্ছে করে তুমিই বলো?

নিশু -তোমার অনেক গুলো মেয়ে স্টুডেন্ট তো আমার থেকেও বেশি সুন্দরী।তাদের দেখলেইতো পারো।

শিহাব-আমার বুউয়ের থেকে আর কেউ সুন্দরী হতেই পারেনা।আমার চোখে আমার বউই পৃথিবীর সেরা সুন্দরী। বলেই নিশুকে জড়িয়ে ধরলো

নিশু -কি করছো বলোতো?ছাড়ো! টেবিলে নাস্তা দিয়েছি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে কলেজে যাও।

শিহাব-ঠিক আছে,কি আর করার,মহারাণী কথাতো আমায় মানতেই হবে বলে শিহাব ওয়াশরুমে গেল।
নিশুও আবিরকে উঠিয়ে নাস্তা করার জন্য নিয়ে গেছে।শিহাব ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা করে কলেজে চলে গেলো।
কলেজে যাওয়ার পথে অনিককে ফোন দিলো।

শিহাব-অনিক আজকে একটু দেখা করতে পারবি?
জরুরী কিছু কথা ছিলো।প্লিজ না করিস না।

অনিক -না করবো কেন? আমিও ভাবছিলাম তোকে ফোন দিবো দেখা করার জন্য।আমার তোর সাথে অনেক কথা বলার আছে।

শিহাব-ঠিক আছে। দুপুরে রেস্টুরেন্টে আয়।ওইখানেই কথা হবে।

__শিহাব ২ টা ক্লাস করিয়ে রেস্টুরেন্টে চলে গেলো।অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর অনিক এলো।দুইজনেই চুপ করে বসে আছে।কি বলে শুরু করবে শিহাব বুজতে পারছেনা।তারপর অনিক নিরাবতা ভেঙ্গে বললো

অনিক-তোর নাকি কিছু কথা ছিলো এখন বল,চুপ করে আছিস কেন?

শিহাব-আসলে কিভাবে কথা গুলো শুরু করবো বুজতে পারছিনা।অনিক! তোর আর নিশুর ব্যাপারটা আমি জেনেছি কাল রাতে।আমি তোকে বলতে চাই,তুই নিশুকে ভুলে যা।আমার কাছথেকে নিশু আর আবিরকে কেড়ে নিস না।দেখ আমি যতটুকো জানি তোর ফ্যামিলিতে নিশুকে মেনে নেয়নি বা নিবেও না।নিশুকে আজ এই জায়গা আনতে আমার অনেক কষ্ট করতে হইছে।তুই বিয়ে করে আবার নতুন করে জীবন শুরু কর।কেউ তোকে বাধা দিতে যাবেনা।তোর কাছে শুধু আমার একটাই রিকুয়েস্ট আমার ছেলেকে আমার কাছেই থাকতিদে।

অনিক- এতোক্ষন অনেক কথা বলেছিস, এইবার আমিও একটু বলি! আবির তোর ছেলে মানে কি?আবির আমার ছেলে,শুধু আমার ছেলে।আর নিশু! ওই মেয়েকে কাল রাত থেকেই ভালোবাসি না।ওকে আমি শুধু ঘৃণা করি।এখন আমি শুধু আমার ছেলেটাকে চাই।ওকে নিয়ে আমি দেশের বাহিরে চলে যাবো।তোরা ভালো থাক এতে আমার কিছু যায় আসে না।আর আমার মনে হয়না নিশু কখনো ভালো থাকতে পারবে।ও তোর সাথে সংসার করে ঠিক কিন্তু মন পড়ে আছে আমার কাছে।ও আমার সাথে কাটানো একটা রাতও মন থেকে মুছতে পারবেনা।কারণ সারাজীবন ও আমাকেই ভালোবাসবে।আমার শরীরে ওর দেওয়া নোখের দাগ এখনো আছে। এই গুলো আমাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে থেকে গেছে।

__শিহাব কথা গুলো আর সহ্য করতে না পেরে অনিকের গালে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দিলো।

শিহাব-যথেষ্ট বলেছিস তুই।ওর নামে আর একটা কথাও শুনতে চাইনা আমি তোর মুখ থেকে।তোর আমার লড়াই আজ থেকে শুরু হয়ে গেছে।তবে সেটা আমার বউকে নিয়ে নয়।সেটা আমার আবিরকে নিয়ে।
কথাটা বলেই শিহাব রেস্টুরেন্ট থেকে বাহিরে চলে গেলো।

_নিশুর মন ভালোলাছেনা।শিহাব কে অনেক বার ফোন দিয়েছে কিন্তু শিহাবের ফোন বন্ধ।
কথাটা ভাবতে ভাবতেই কলিং বেল বেজে উঠলো।নিশু দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখে শিহাব।

নিশু-তোমার ফোন অফ কেন? কতো বার ফোন কেরেছি।

শিহাব কিছু না বলে সোজা রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে দিলো।নিশু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো

নিশু-শিহাব তোমার কি হয়েছে? কোনো কিছু নিয়ে কি তোমার মন খারাপ?শিহাব আমাকে বলবেনা তোমার কি হয়েছে?নিশু কান্না করছে আর কথা গুলো বলছে।

একটু পর শিহাব দরজা খুলে নিশু কান্না করছে দেখে

শিহাব-আরে তুমি কান্না করছো কেন?আমি ফ্রেশ হচ্ছিলাম তাই দরজা খুলতে দেরি হলো।আবির কই ওকে দেখছি না কেন?

নিশু -বাবা আসছে তুমি যাওয়া পরে,একটু আগে আবিরকে নিয়ে বাহিরে গেছে।আমি খাবার দিতেছি তুমি খেতে আসো।

শিহাব খাচ্ছে নিশু পাশে বসে আছে।শিহাব নিশুর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললো,এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

নিশু -তোমাকে দেখছি।তোমার মতো মানুষকে স্বামী হিসাবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

শিহাব-same too you..and I love you jan।বলেই শিহাব নিশুর হাত ধরে বললো।জীবনে যতো ঝড় আসুক না কেন আমরা একসাথেই থাকতে চাই।

_আজ Friday শিহাবকে বার বার ডাকার পরেও এখনো ঘুম থেকে উঠে নাই।আবির ও শিহাবের সাথে ঘুমাচ্ছে।বাবা ছেলে দুইজনেই এক সাথে উঠবে।ইয়াসমিন বেগম আর নিশু নাস্তা বানাচ্ছে। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো।নিশুর বাবা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।দরজা খুলে অবাক হয়ে বললো তুমি”””””

অনিক- হ্যা আমি।শিহাব কে একটু ডেকেদিন ওর সাথে আমার কথা আছে।

নিশু শিহাবকে ডাকতে গেলো,,,,,,,,

নিশুর বাবা-তোমার সাহস কি করে হয় আমার বাসায় আসার?আর শিহাবের কাছে তোমার কি কাজ?

অনিক -আমার ছেলেকে ফেরত চাই।আর কিছুই না।

এমন সময় শিহাব এসে বললো তোর সাথেই আমার এই ব্যাপারে কালকেই কথা হয়ে গেছে আজ নতুন করে কিছু বলার নাই।

অনিক-শুন! এখন আমি কথা বলবো না আর তুইও না।এখন যা করবে কোর্ট বলবে। এই নে নোটিশ! তোর সাথে আমার কোর্টেই দেখা হচ্ছে।

__কথাটা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অনিকের দিকে।শিহাব জানে সেই কোর্টে গেলে আবিরকে আর পাবেনা।
অনিক চলে যাওয়ার পরে নিশুর বাবা বললো এতো কিছু হয়ে গেলো আমাকে কেউ জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না?
শিহাব স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো
সত্যি কি আবিরকে আর পাবেনা।

চলেবে,,,,,,,,,,,,

পুরোনো_ভালোবাসা   পার্ট: ১৫

0

পুরোনো_ভালোবাসা

পার্ট: ১৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

__নিশু! নিশু! কোথায় তুমি?শিহাবের ডাকে নিশু সাড়া না দিয়ে চা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।

নিশু -বউকি কোথাও পালিয়ে যাচ্ছে?চা আনতে সময়তো লাগে তাইনা?

শিহাব -ওহ সরি।আসলে অনিক ফোন করেছে ও নাকি সন্ধ্যায় আসবে।তাই তোমাকে ডাকছি,তোমার আবার রান্না করতে হবে না।
নিশু -অঅ অঅ অনিক কেন আসবে?(একটু তোতলিয়ে)

শিহাব -তোমার আবার কি হলো? তোতলাচ্ছো কেন?আমি বাহিরে যাচ্ছি আমার আসতে হয়তো দেরি ও হতে পারে, তুমি ভালোভাবে কথা বলবে।

কথাটা বলেই শিহাব চা টা খেয়ে বেরিয়ে গেল।নিশু কি করবে বুজতে পারছে না।অনিক এখানে আসতে চাইছে কেন? ও কি আবিরের ব্যাপারে কিছু বুজে পেলেছে?ওহ কিছু ভালো লাগছেনা।শিহাবটাও না কি? ও কি বুজে এই রকম করে নাকি না বুজেই করে আল্লাই ভালো জানে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে নিশু রান্নাঘরে গেলো।যখন আসবেই ওর পছন্দ মত কিছু রান্না করি।

ইয়াসমিন বেগম নিশুকে রান্না করতে দেখে বললো
কেউ আসবে নাকি নিশু?

নিশু -মা! অনিক আসবে একটু আগে শিহাব বলে গেলো তাই রান্না করছি।কিন্তু তুমি রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছো?

ইয়াসমিন বেগম -তোর মামা ফোন করেছে তোর নানু নাকি অসুস্থ তাই ভাবলাম দেখে আসি।কিন্তু অনিক কেন আসবে এইখানে?

নিশু-কি বলবো মা? শিহাবটাও না,কিছু বুজতে চায় না।তুমি চিন্তা কোরো না আমি সামলিয়ে নিবো।তুমি যাও।বেশী অসুস্থ হলে ফোন দিও,আমি আর শিহাব গিয়ে দেখে আসবো।

ইয়াসমিন বেগম -আচ্ছা ঠিক আছে।আমি তাহলে আসি।কথা গুলো বলতে বলতে ইয়াসমিন বেগম চলে গেলো।

__আবির বসে বসে খেলছে।আর নিশু খেলনা গুলো গুছিয়ে রাখছে।

নিশু -আবির! চলো এখন পড়তে বসবে।তোমার বাবাই এসে যদি দেখে তুমি পড়তে বসো নাই,পরে আর কোনো খেলনা কিনে দিবেনা।চলো আবির এখন আর কোনো খেলা নয়।আবিরকে কোলে নিয়ে দাঁড়াতেই কলিং বেল বেজে উঠলো।

নিশু -ওহ এখন আবার কে এলো?তুমি এখানে বসো আমি দেখছি।

আবির -মা! বাবাই আসছে।আমি দরজা খুলবো।বলেই কোল থেকে নেমে গেলো।

নিশু -আচ্ছা বাবা,তুমি দরজাটা খুলো।আমি ওই রুম থেকে আসছি।

_মা! মা!দেখ আমার জন্য কি এনেছে? কথা বলতে আবির নিশুর কাছে এলো।
নিশু তাকিয়ে দেখে অনেক গুলো খেলনা,চকলেট, আরো অনেক কিছু।

নিশু-তোমার বাবার তো কোনো কাজ নাই,তোমাকে আদর দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলতেছে।আজকে ওর একদিন কি আমার একদিন।
কই তোমার বাবাই কই? শিহাব!! শিহাব! তুমি এতো কিছু কেন***-। কিছুক্ষণ অনিকের দিকে তাকিয়ে একি আপনি? সরি আমি ভাবছিলাম শিহাব।কিন্তু আপনি ওর জন্য এতো কিছু কেন এনেছেন?

অনিক -ওর জন্য আনবোনা তো কার জন্য আনবো?এতো তোমার সমস্যা কথায়?দেখচ্ছি অনেক ভালোই আছো?

নিশু -ভালোতো আছি।কিন্তু ওর জন্য আপনি কেন আনবেন? ওর বাবাই ওর জন্য অনেক খেলনা আনে।আপনার এইগুলো না আনলে খুশী হতাম।

__এমন সময় শিহাব বাহিরে থেকে এসে দেখে দরজা খোলা,অনিক বসে আছে আর নিশু দাঁড়িয়ে কথা বলছে।শিহাব ভিতরে না গিয়ে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে দুজনের কথা শুনছে।

অনিক-সত্যি কি শিহাব আবিরে বাবা?

নিশু-(নিশু অবাক হয়ে)আপনি কি বলতে চাইছেন? আর হ্যা শিহাবই আবিরের বাবা।

অনিক-তোমার আর শিহাবের বিয়ের ৩ বছর চলে,কিন্তু আবিরের ৫ বছর কিভাবে?নিশু! আমি জেনে গেছি আবির আমার ছেলে।

_কথাটা শুনেই শিহাবের মনে হলো কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে পেলে দিয়েছে।মনে মনে ভাবছে এই হতেই পারেনা। আবির আমার ছেলে।আমি ওর বাবা,আমি ওর সব।

নাশু -না! (চিৎকার দিয়ে)শিহাব আবিরের বাবা।আপনি কি চান বলেনতো? আপনি কেন আমার জীবনে ফিরে এসেছেন? আমি তো সব কিছু ছেড়ে চলেই এসেছি।আপনার পরিবার এখন অনেক ভালো আছে।এর চেয়ে ভালো আপনি বিয়ে করে নতুন করে জীবন শুরু করেন।আমদেরকে শান্তিতে থাকতে দেন।

অনিক-আমি এখন কিছুই চাই না।শুধু আমার ছেলেকে চাই।তুমি আর শিহাব ভালো থাকো,কিন্তু আমার ছেলেকে আমাকে দিয়ে দাও।আমি ওকে নিয়ে দেশের বাহিরে চলে যাবো।

নিশু -আপনি পাগল হয়ে গেছেন।আমি মা হয়ে ওকে রেখে থাকতে পারবো? শিবাব ওকে ছাড়া মরেই যাবে।প্লিজ আপনি চলে যান,আর কখনো আসবেননা।

__শিহাব কিছু না বলে ভিতরে এসে বললো,আরে অনিক তুই কখন এলি?কেমন আছিস বল?শিহাব এমন ভাবে কথা বলছে মনে হচ্ছে ও কিছু শুনেই নাই।

নিশু -শিহাব! আগে ফ্রেশ হয়ে নাও। পরে দুজনে একসাথে বসে গল্প করো।

আবির দৌড়ে এসে শিহাবের কোলে উঠে গেলো।

আবির -বাবাই তুমি এসে গেছো।দেখো আংকেল আমার জন্য কতো খেলনা এনেছে।

শিহাব -তাই!আংকেলকে thanks বলছো।কথাটা বলেই আবিরকে আদর করলো শিহাব।

অনিক -আমাকে thanks বলার দরকার নাই।এইগুলো ওরেই প্রাপ্য।জানিস শিহাব আমাদের জীবনে এমন অনেক জিনিস আছে যা নিজের তুবুও নিজের বলে দাবি করতে পারিনা।নিজের জিনিস গুলো নিয়ে নিজেরা সুখী থাকতে পারেনা।কিন্তু অন্যরা ঠিকি সুখি হয়।
__নিশু কথা ঘুরানোর জন্য শিহাব তুমি এখনো দাঁড়িয়ে থাকবে? যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।

শিহাব -(বুজতে পেরে) ওকে জান।অনিক তুই একটু বস এখুনি আসছি।

শিহাব চলে যাওয়ার পরে নিশু অনিকের দিকে তাকিয়ে বললো আপনাকে বললাম না উল্টাপাল্টা কোনো কথা বলবেন না।শিহাব অনেক সহজ সরল।এমন কিছু করবেন না যাতে শিহাব কষ্ট পায়।

অনিক -কিছু আমি বলতে চাই না। আমি শুধু আমার ছেলেকে ফেরত চাই।তুমি বলো আমার সামনে আমার ছেলে অন্য কাউকে বাবা বলে ডাকছে এইটা আমি কিভাবে সহ্য করবো?

নিশু -আমি কিছু বুজতে চাইনা,আমি শুধু বুজি শিহাবই ওর বাবা।শিহাবই ওর সব।

শিহাব ফ্রেশ হয়ে এসে বললো নিশু ক্ষুদা লাগছে।আমাদের খেতে দাও।
নিশু টেবিলে একে একে সব খাবার এনে রাখলো।অনিক খাবার গুলো দেখে অবাক হয়ে নিশুর দিকে তাকিয়ে আছে।

শিহাব -আরে আমার বউয়ে দিকে এইভাবে কি দেখছিস,তোর নজর লেগে যাবে।

অনিক-নজর লাগার জন্য দেখছি না।আমি ভাবছি তোর বউ কিভাবে জানলো আমার প্রিয় খাবার এইগুলো।

শিহাব -এতোকথা না ভেবেই খাবার শুরু কর।আমার বউরে হাতের রান্না খেয়ে দেখ সারা জীবন মনে থাকবে।নিশু অনেক ভালো রান্না করে।

অনিক আর কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে নিলো।মনে মনে ভাবতেছে রান্নার দরকার হবে না এমনেতেই সারা জীবন ভুলতে পারবোনা।আর আমার ছেলেকেতো নয়।যেই করেই হক আমি আমার ছেলেকে আমার কাছে নিয়ে যাবো।

শিহাব -এতো কি ভাবছিস তুই বলতো?

অনিক-কিছুনা,আজ তাহলে আসি।তোর সাথে এখন আমার বার বার দেখা হবে।

নিশু কিছু না বলেই আবিরকে নিয়ে রুমে চলে আসলো।শিহাব অনিককে বিদায় দিয়ে রুমে এসে দেখে নিশু আবিরকে ঘুমা পাড়াচ্ছে।কিছু না বলে নিশুর পাশে এসে বসলো।একনাগাড়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে শিহাব। যেন চোখের পলক ফিরাতে মন চাইছেনা।আবিরকে একটু আদর করতে ইচ্ছে করছে।শিহাব আবিরে কাছে গিয়ে কপালে একটা চুমো দিয়ে দিলো।

নিশু -শিহাব কি করছো তুমি? আবির জেগে যাবেতো।

শিহাব -কি করবো বলো? মনে হচ্ছে কেউ আমার কাছ থেকে আমার ছেলেটাকে আলাদা করার চেষ্টা করছে।নিশু “” আমি তো আবিরকে ছাড়া থাকতে পারবোনা,আমি আমার থেকেও তোমাদের বেশী ভালোবাসি।
নিশু!তোমার মনে আছে? যেই দিন আমি তোমাকে প্রথম দেখে ছিলাম,তখন তুমি pregnant ছিলে।ডেলিভারি করানোর জন্য hospital গিয়েছিলে।তখন ব্লাডের জন্য তোমার বাবা পাগলের মতো হয়েগেছিলো কোথাও ব্লাড পাওয়া যাচ্ছিলোনা শুনে।সেইদিন আমিও আমার এক ফ্রেন্ড সহ এসেছিলাম তার মাকে দেখার জন্য।তার পর তোমার বাবাকে পাগলের মতো করতে দেখে আমি জিজ্ঞাস করলাম কি হয়েছে ওনার।তারপর ওনি সব খুলে বললেন,ভাগ্যে ভালো যে আমার সেই ফ্রেন্ড তোমাকে ব্লাড দিয়ে বাঁচিয়ে ছিলো।

চলবে,,,,,,,,,

পুরোন_ভালবাসা   পার্ট: ১৪

0

পুরোন_ভালবাসা

পার্ট: ১৪

#Rabeya Sultana Nipa

_দরজা ধাক্কানো শব্দ শুনে নিশু ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো।তাড়াতাড়ি ওঠে দরজা খুলে দিলো।
শিহাব দাঁড়িয়ে আছে নিশুর দিকে তাকিয়ে।

শিহাব -ভাবনা চিন্তা সব শেষ হলো?দুপুরের পরথেকে অনেক ভাবা হয়েছে, আর ভাবতে হবে না।।এখন খাবে চলো,রাত অনেক হয়েছে।

নিশু -শিহাব! তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে নাতো?
শিহাব -আবির আর তুমিই আমার জীবনের সব।তোমাদের ছাড়া আমি কোথায় যাবো বলোতো?
অনেক কথা হয়েছে,দুপুর থেকে কিছুই খাওনি,এখন অনেক রাত হয়েছে, তুমি বসো আমি খাবারটা নিয়ে আসি।
__বলেই শিহাব রুম থেকে বাহিরে গেলো খাবার আনতে।নিশু শিহাবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে।কিভাবে সব কিছু এতো সহজে মেনে নেয় শিহাব!আমি কেন পারিনা,আমাকে কেনো পুরোনো স্মৃতি গুলো কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে!
শিহাব খাবার নিয়ে রুমে এসে নিশুর পাশে বসলো,
নিশু -আবির কি ঘুমিয়ে গেছে?
শিহাব -হ্যা,আবির কে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে মায়ের কাছে রেখে আসছি।এখন আর কোনো কথা নয়,চুপ করে বসো আমি তোমাকে খাইয়ে দি!

নিশু -তুমি এই রকম কেন, বলোতো? সব কিছু বুজেও না বুজার ভাণ করে থাকো।

শিহাব -আমি ঠিকই আছি।আমি চাই না পুরোনো কোনো স্মৃতি এসে আমাদের জীবনটা তসনস হয়ে যাক।আমি চাই তুমি আর আবির সব সময় ভালো থাকো।একটা কথা সব সময় মনে রাখবে, নিজের জীবনটা নিজের মনের মতোন করে গড়ে তুলবে।তাহলেই তুমি সফল।

নিশু-অনেক জ্ঞান দিয়েছো।কলেজে স্টুডেন্টদের জ্ঞান দিতে দিতে এখন বউকেও জ্ঞান দেওয়া শুরু হয়েছে গেছে।আমার জন্যতো খাবার আনলে নিজে খেয়েছো?
শিহাব-না,আমি পরে খাবো তুমি আগে খাও।
নিশু -একদম চুপ! (ধমক দিয়ে)আমি জানি পরে তুমি খাবেনা,এখন একসাথেই খাবো।না হলে আমি খাবো না।
শিহাব -ঠিক আছে।আর রাগ দেখাতে হবেনা।এইবার তো খাও।
_দুজনেই খাওয়া শেষ করে শুয়ে পড়লো,নিশু ভাবছে অনিকের কথা কি শিহাব কে বলবে।না থাক এতে শিহাবের কষ্ট হবে,পরে না হয় বলবো।
এমন সময় শিহাবে ফোনটা বেজে উঠলো।

নিশু -কে ফোন করেছে, এতো রাতে?
শিহাব -নাম্বারটা চিনি না,কথা বলে দেখি।

__শিহাব ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথে ফোনে ওপাশ থেকে অনিক বললো।
অনিক -এতো রাতে ফোন করে কি ডিস্টার্ব করলাম নাকি শিহাব?
শিহাব -আরে অনিক তুই!আসলে বুজতে পারিনি।
কেমন আছিস বল?
__অনিকের কথা শুনে নিশু উঠে বসে পড়লো।শিহাব চোখে ইশারা দিলো শোয়ার জন্য।
অনিক -এইতো ভালো।তুইতো ভালোই আছিস তাইনা?
তোর ছেলেটা কেমন আছে বলতো?ওকে দেখেই কেন যেন মায়ায় পড়ে গেলাম।
শিহাব-হ্যা ভালোই আছে। কিন্তু তুই দেশে ফিরলি কবে?
অনিক – ৪/৫ দিন হইছে,তোর বউ কেমন আছে? নিশ্চয় ঘুমিয়ে পড়েছে?
শিহাব -ভালোই আছে।এখনো ঘুমায় নাই।আজকে ওর সাথে তো তোর কথাই হয় নাই।এক কাজ কর,বাসায় আয়।
অনিক -হ্যা ভাবছিলাম তোর ছেলেটাকে দেখতে যাবো।আচ্ছা আসলে তোকে ফোন দিবো,তাহলে এখন রাখি,ভালো থাকিস।
শিহাব -আচ্ছা ঠিক আছে।বলে ফোনটা রেখে দিলো।
__অনিক শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকলো।আমি যতটুকো জানি নিশুর বিয়ে হয়েছে ৩ বছর,আবিরকে দেখে তো ৪/৫ বছর মনে হয়।কিন্তু কিভাবে?আবির তাহলে শিহাবের ছেলে নয়।আমাকে জানতে হবে আবির কার ছেলে।আচ্ছা নিশু আমার কাছ থেকে যাওয়ার কয়েক দিন আগে থেকে অসুস্থ ছিলো।আনিকার সাথে ডাক্তারের কাছে পাঠালাম।তখন কি সেই pregnant ছিলো? ওহঃ আমার এই রকম লাগছে কেন? আচ্ছা নিশু সেই দিনের রিপট গুলোতে কি ছিলো?আনিকা যাওয়ার পর থেকে এখনো ওর সাথে যোগাযোগ করি।নাই।আমার মনে হয় আনিকাই বলতে পারবে।সেই দিন রিপটে কি ছিলো।আনিকার বাসায় কাল একবার যাবো? সেইদিনের ব্যাপারে জানতে হলে আনিকার বাসায় যেতেই হবে।অনিক মনে হাজারটা প্রশ্ন নিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো খেয়াল নেই।
সকাল বেলা রেহানা বেগমের ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো।
রেহানা বেগম -ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া ৫ বছর পার করলি আর কতো ঘুমাবি, উঠ নাস্তা করেনে।আর শুন তোর বাবা তোর জন্য একটা মেয়ে দেখেছে।অনেক ভালো ঘরের মেয়ে,দেখতেই সুন্দর। এইবার তো বিয়েটা করে ফেল।
অনিক -মা! নিশুও তো ভালো ঘরের মেয়ে ছিলো,দেখতেও সুন্দর ছিলো।কিন্তু তোমাদের ভালো লাগে নাই,এখন কি করে ভাবলে আমি তোমাদের পছন্দ করা মেয়ে বিয়ে করবো? আর কতবার বলবো আমি বিয়ে করবোনা।আর ওই রুমে কোনো মেয়ের থাকার অধিকার নাই।যেই রুমে আমার নিশুর ছোঁয়া আছে সেই রুমে কাউকে থাকতে দিবোনা।কথা গুলো বলেই অনিক ফ্রেস হতে গেলো।
__রেহানা বেগম ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবলো,ও কি এইরকমভাবেই থেকে যাবে
সত্যি তো নিশু যাওয়ার পরে রুমে তালা দিয়ে রাখছে আজও খুলতে দেয়নি।
বাহিরে যাওয়ার সময়ও চাবিটা নিয়ে গেছে।
অনিকের বাবা পেপার পড়তে পড়তে রেহানা বেগমের কাছে গিয়ে বসলো।
অনিকের বাবা-এখন আর ভাবে লাভ কি? তোমার জন্যই আজ আমি সব হারিয়েছি।ছেলেটা তো এতোদিন বাহিরে ছিলো,এখন এসেও না আসার মতো। মেয়েটাও যে গেলো আর এই বাড়িতে ফিরে আসে নাই।
রেহানা বেগম-আমি তো ওদের ভালোই চেয়েছিলাম।

__অনিক রেডি হয়ে আনিকার বাড়িতে যাবে বলে বাহির হচ্ছে।পিছন থেকে রেহানা বেগম বললো
তুই কি কোথাও যাচ্ছিস?
অনিক-হ্যা,নিজের ভুল গুলো শুধরাইতে যাচ্ছি।বলেই অনিক চলে গেলো।
_আনিকা দরজা খুলেই অনিককে দেখেই অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অনিক -কিরে দরজায় এইভাবে দাঁড়করিয়ে রাখবি,ভেতরে যেতে দিবিনা।
আনিকা অনিককে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে
ভাইয়া এতো দিন পর তোর আমার কথা মনে হলো? আমার জন্য তোর জীবনটাও শেষে হয়ে গেল।
অনিক-এখন এই গুলো বাদ।সবাই কোথায় আজ তোদের সাথে থাকবো বলে চলে আসলাম।
__অনিক সবার সাথে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আনিকাকে বললো তোর সাথে আমার একটু কথা ছিলো।
আনিকা -হ্যা। বলনা কি কথা?
অনিক -তুই যে দিন নিশুকে নিয়ে ডাক্তার কাছে গেছিস সেই দিন ডাক্তার নিশুকে কি বলে ছিলো?
আনিকা -মানে? তুই এই কথা এখন বলছিস। তুই জানিস না? সেই দিন ডাক্তার বলে ছিলো ভাবী pregnant। ভাবী আমাকে বলেছিলো আমি যেন বাসায় এসে না বলি,তোর জন্মদিনে সবাইকে সারপ্রাইজ দিবে বলে আমাকে বলতে দেয়নি।তারপর আমিও চলে এলাম,শুনলাম মা নাকি সেইদিন রাতেই নিশুকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।আচ্ছা ভাইয়া ভাবীর এখন কি অবস্থা তুই কি কিছু জানিস? তোর ছেলে বেবি হইছে নাকি মেয়ে?
__আনিকা কথা গুলো বলছে ঠিকে কিন্তু অনিকের মন আবিরে কথায় বার বার ভাবছে,তাহলে আবির আমার ছেলে!….

চলবে,,,,,,

পুরোনো_ভালবাসা   পার্ট:১৩

0

পুরোনো_ভালবাসা

পার্ট:১৩

#Rabeya Sultana Nipa

 

__সকাল বেলা রেহানা বেগমের চিৎকার চেঁচামেচিতে অনিক আর নিশু দৌড়ে এলো।
অনিক -মা! কি হয়েছে এইভাবে চেঁচামেচি করছো কেন?
রেহানা বেগম -তুই আমার ছেলে হয়ে এই কথা বলতে পারলি।চেঁচামেচি কি আমি সাধে করছি।তোর বোন ঘরে নাই।সকাল থেকে পুরো বাড়ী খুঁজেছি ও কথাও নাই।একটু পর আমাদের সবার গেস্ট চলে আসবে। তখন সবার কাছে কি বলবো।

অনিক -মা! তুমি চিন্তা করোনা হয়তো ওর কোনো বন্ধুকে আনতে গেছে।

রেহানা বেগম-আমি ওর সব ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাস করেছি।কারো বাসায় যায়নি।

__নিশুর আর বুজার বাকী রইলো না।আনিকা হয়তো রাফির ভাইয়া সাথে পালিয়ে গেছে।রাতে আনিকা তাহলে এই জন্যই কথা গুলো বলেছে।এখন আমি কিভাবে সাবাইকে বলবো আনিকা রাফি ভাইয়ার সাথে গেছে।
অনিক নিশুর দিকে তাকিয়ে বললো এইদিকে আসো তোমার সাথে কথা আছে।

নিশুর হাত ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে এলো।
নিশু-অনিক তুমি এইরকম করছো কেন? আমি কি করলাম?
অনিক -সত্যি করে বলো আনিকা কোথায়?আমার মনে হয় তুমি সব কিছু জানো।নিশু প্লিজ আমাকে তুমি কিছু জানলে বলো।আমি সব সামলিয়ে নিব।

নিশু – অনিক! আমি জানি আনিকা কার সাথে গেছে।আমি তোমাদের আগেই বুজাতে চেয়েছিলাম তোমরা আমার কথা শুনো নাই।

অনিক -নিশু তুমি জানতে?
নিশু -আমি জানতাম ও একজন কে ভালোবাসে কিন্তু পালিয়ে যাবে তাতো জানতাম না।
অনিক -ছেলেটার নাম কি?
নিশু -,,,,,

অনিক -নিশু চুপ করে থেকো না।এখন চুপ হয়ে থাকার সময় নয়।প্লিজ নিশু বলো কে সেই ছেলে? মা যদি জানতে পারে তুমি সব জানো তাহলে তুমি বুজতে পারছো আমাদের কি হবে?তোমার কোনো আইডিয়া আছে?

নিশু-বিশ্বাস করো আমি জানতাম না সে পালিয়ে যাবে।নিশু কান্না করতে করতে কথা গুলো বলতে শুরু করলো।ও তো তোমাকে রাতে বলেছে ওর কোনো আপত্তি নাই।আমি ভাবলাম হয়তো সব ঠিক হয়ে গেছে।
এমন সময় রেহানা বেগম এসে বললো তার মানে তুমি জানো আমার মেয়ে কোথায় গেছে?

অনিক -মা! তুমি ভুল বুজতেছো নিশু কি করে জানবে আনিকা কোথায় গেছে।আনিকা কি ওর কাছে বলে গেছে নাকি।

রেহানা বেগম -আমার ভাবিতেও অবাক লাগে তোর বউ এতো বড় একটা অন্যায় করেছে।আর তুই তোর বউয়ের পক্ষনিয়ে কথা বলছিস।বোনের থেকে বউই তোর কাছে সব।তোর বউয়ের জন্য আজকে আমাদের মানসম্মান কিছু থাকবে?

নিশু -মা! আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই,,,,,(কথাটা বলতে বলতে নিশু অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।)

__অনিক তাড়াতাড়ি করে নিশুকে ধরে খাটে নিয়ে শোয়ালো।অনিক মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো মা! আমরা এইসব নিয়ে পরে কথা বলবো। তুমি নিশুর পাশে বসো আমি পানি ডাক্তার কে ফোন দিচ্ছি।আর আমি ছেলে পক্ষকেও মানা করে দিচ্ছি আজকে না আসার জন্য।
রেহানা বেগম -এই মেয়ে আর কি কি নাটক করবে আল্লাই ভালো জানে।

__ডাক্তার এসে নিশুকে দেখে গেছে। সেই সকালে জ্ঞান হারিয়েছে, এখন তো রাত কম হলোনা।
অনিক -মা! ডাক্তার কে আরেকবার ফোন দিবো?
রেহানা বেগম -তোর মনে নাই ডাক্তার কি বলেছে,জ্ঞান ফেরতে দেরি হতে পারে।আমাকে তুই একটা কথা বলতো ও কি নিয়ে এতো চিন্তা করে?
রাত ১২ টায় নিশুর জ্ঞান ফিরলো।সবাই বসে আছে।অনিক তার পাশেই বসে আছে।নিশু অনিকের হাত ধরে উঠে বসলো।
নিশু-মা! আনিকা বাড়ি ফিরেছে?

অনিক -নিশু তুমি এখন এইগুলো বাধ দাও।তোমার শরীর এখন ভালো নাই।
রেহানা বেগম -আমি শুনতে চাই আমার মেয়ে কথায়।অনেক নাটক হইছে সকাল থেকে।এখন বলো আনিকা কথায়।

নিশু-আনিকা রাফি ভাইয়ার সাথে গেছে।ওরা একে উপরকে ভালোবাসে।আমি আনিকাকে বলেছিলাম আপনাদেরকে বলার জন্য।আনিকা আমাকেও নিষেধ করেছে আপনাদেরকে কিছু না বলার।

রেহানা বেগম-তুমি তো আমাদেরকে বলবেইনা কারণ তুমি এটাই চেয়েছিলে।আমার মেয়ে এই বাড়ি থেকে চলে যাক,তাহলে তোমার সুবিধা হবে। আমি এইটা কোনো দিন হতে দিবনা। অনিক! আমার মেয়ে যেই বাড়িতে থাকতে পারবেনা সেই বাড়িতে এই মেয়েও থাকতে পারবেনা।

অনিক-মা!! তুমি পাগল হয়ে গেছো এতে নিশুর কি দোষ? আর আমি কখনওই নিশুকে ছাড়তে পারবোনা।
বাবা তুমি মাকে বুজাও না।মা তুমি ঠাণ্ডা মাথায় একবার ভেবে দেখো এতে নিশুর কোনো দোষ নেই।
অনেকের বাবা -আমি কি বলবো বল।তোর মাকে আমি বুজাতে পারবোনা।

রেহানা বেগম -আমাকে কেউ বুজানো লাগবেনা।আজ যদি এই মেয়ে এই বাড়ি থেকে চিরজীবনের জন্য বিদায় না হয়। তাহলে মরা মুখ দেখবি।

অনিক -মা! নিশু এতো রাতে কোথায় যাবে?তুমি আমার মা,আর নিশু আমার স্ত্রী। আমি কাউকেই ছাড়তে পারবোনা।

রেহানা বেগম -আমি যা বলছি এটাই আমার শেষ কথা।
আমি এই মেয়ে যতক্ষণ এইবাড়িতে থাকেবে আমি এক গ্লাস পানিও খাবোনা।

নিশু -(কান্না করতে করতে)আপনি না খেয়ে থাকা লাগবেনা।আমি এখনি আমার বাবাকে ফোন দিচ্ছি আমাকে এসে নিয়ে যেতে।আজ থেকে আপনার ছেলে আপনারই রইলো।আমি কখনওই আমার অধিকার চাইতে আসবো না।অনেক তো চেষ্টা করলাম আপনার মেয়ে হয়ে থাকবো।আসলে কি জানেন? সাবার কপালে সব কিছু শয় না।

অনিক-নিশু তুমি এইসব কি বলছো? আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।আমার কথা না হয় বাদেই দিলাম তুমি কি ভাবে থাকবে?ঠিক আছে তোমাকে একা যেতে হবে না আমিও তোমার সাথে যাবো।যেখানে তোমার জায়গা হবেনা সেখানে আমিও থাকতে পারবোনা।

নিশু-আমি চাইনা তোমাদের মা ছেলের সম্পর্ক নষ্ট হক।
আমার জন্য তুমি অনেক কষ্টসহ্য করেছে এতোদিন।কথা গুলো বলেই নিশু তার বাবাকে ফোন দিয়েছে আসার জন্য।

__নিশুর ফোন পেয়ে নিশুর বাবা মা দুজনেই এসেছে।
নিশুর বাবা-আমার মেয়ে কি করেছে, অনিক?

অনিক -বাবা আপনি নিশুকে বুজান।আমার মায়ের এখন মাথা ঠিক নাই কি বলতে কি বলেছে এর জন্য ও বাড়ি ছেড়ে চলেযেতে চাইছে।
নিশুর বাবা-আমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলতে চাই।

রেহানা বেগম -আমি আপনার সাথে কনো কথা বলতে চাই না।এসেছে এইবার মেয়েকে নিয়ে বিদায় হন।
নিশু-বাবা! আমি রেডি, আর কনো কথা বলার দরকার নাই।চলো!
অনিক -(নিশুকে জড়িয়ে)নিশু প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না।আমি মরেই যাবো।
নিশু-(অনিককে ছাড়িয়ে)তুমি ভালো থেকো,নিজের জীবনটা সুন্দর করে সাজিয়ে নিও,মায়ের খেয়াল রেখো,আমার সাথে আর যোগাযোগ করোনা।
__তোমাকে আর খুশির সংবাদটা জানাতে পারলাম না।আমি জানি কথাটা জানলে কিছুতেই আমাকে যেতে দিবে না,কিন্তু আমি তো চাইনা রোজরোজ আমাকে নিয়ে অশান্তি হক।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে নিশু তার বাবার হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।
এইদিকে অনিক কান্না জন্য নিশুকে ডাকতেও পারছেনা।নিশু তো যায়নি মনে হচ্ছে ওর সব কিছু শেষ হয়ে গেছে।অনিক তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো মা! এইবার তুমি খুশি হয়েছোতো?
রেহানা বেগম কিছু না বলে রুমে চলে গেলো।
_ সকাল বেলা অনিক আলমারি থেকে সব জামাকাপড় নিতে গিয়ে অনিক নিশুর রিপটা পেলো।রিপটা খুলতে যাবে এমন সময় ভাবলো এইটা দেখে আর লাভকি।সেইতো আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।ও যখন আমার কথা একবারের জন্য ভাবলো না আমি ভেবে লাভকি।রিপটা আলমারিতে রেখেই জামাকাপড় গুলো নিয়ে ব্যাগে গুছাচ্ছে।
রেহানা বেগম ব্যাগ গুছানো দেখে বললো তুই কোথায় যাচ্ছিস?
অনিক-এই বাসায় থাকলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।এই কয়েক দিন আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায় থাকবো।তারপর বাহিরে চলে যাবো।
রেহান বেগম-তোর যা ভালো লাগে কর।নিজের জীবনটা নতুন করে শুরু কর।যাওয়ার আগে একবার আনিকাকে গিয়ে দেখে আসবি?
অনিক-যার জন্য আমি নিশুকে হারালাম তাকে আমি দেখতে যেতে পারবোনা। আমি আজ থেকে মনে করি আমার কোনো বোন নাই,আমি একাই।বলে অনিক চলে গেল।

চলবে,,,,,,,

পুরোনো_ভালোবাসা   পার্ট: ১২

0

পুরোনো_ভালোবাসা

পার্ট: ১২

#Rabeya Sultana Nipa

__আনিকা আর নিশু ডাক্তার দেখিয়ে বসে আছে রিপটের জন্য।ডাক্তার অনেক গুলি টেস্ট দিয়েছে। টেস্ট গুলো করে রিপটের জন্য অপেক্ষা করছে।

নিশু -যদি রিপটে খারাপ কিছু হয় তাহলে কি হবে বলো তো।আমি নিজের জন্য কিছু ভাবছিনা।ভাবছি অনিকের কথা।
__ভাবী তোমার ফোন ভাজতেছে। আনিকা কথায় নিশু বললো।
দেখছো বলতে না বলতেই তোমার ভাইয়ার ফোন চলে আসছে। ও অফিসে আছে ঠিকি কিন্তু মন পড়ে আছে এখানে।

নিশু-হুম বলো?

অনিক – রিপট পেয়েছো?

নিশু -এখনো পাই নাই। পেলে তোমাকে ফোন দিবো।তুমি চিন্তা করছো কেন? আমার কিচ্ছু হবে না।

অনিক -ঠিক আছে আমি চিন্তা করবোনা। পাশের বাড়ির রিনা ভাবীর হাসবেন্ডকে বলবো তোমার জন্য চিন্তা করতে।এইভার খুশিতো?

নিশু -অনিক তুমিও না।পাগল একটা।এখন রাখি বাসায় গিয়ে তোমাকে ফোন দিবো।

__একজন লোক এসে বলে গেলো রিপট এসে গেছে। আপনারা একজন গিয়ে নিয়ে আসুন।

আনিকা-ভাবী তুমি বসো আমি নিয়ে আসছি।
কথাটা বলেই আনিকা রিপট আনতে গেলো।

__একটু পর আনিকা ফিরে এসে নিশুকে জড়িয়ে ধরে বললো congratulations ভাবী।
নিশু অবাক হয়ে বললো কি হয়েছে? তুমি এইরকম করছো কেন?
আনিকা- ভাবী জানো আমি না ফুফু হতে যাচ্ছি।

নিশু -আনিকার কথা শুনে নিশু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কি বলবে বুজতে পারছেনা

আনিকা -ভাবী তুমি খুশি হও নাই?

নিশু-আমি খুশি হয়েছি কিনা তা পরের কথা,তোমার ভাইয়া যদি রাগ করে? তোমার ভাইয়া বলেছিল তার পড়ালেখা শেষ করে বেবি নিবে।

আনিকা -ভাবী তুমি তো pregnant হয়েছো ৩ মাস চলতেছে।তুমি একটুও বুজতে পারো নাই?

নিশু-হ্যা কয়দিন থেকে শরীর টা ভালো লাগছিলোনা।কিন্তু বুজতে পারি নাই। আনিকা! তোমাকে একটা কথা বলবো রাখবে?

আনিকা -বলো কি কথা?
নিশু- বাসার কাউকে এখন কিছু বলো না।তোমার ভাইয়াকেও না।
আনিকা-কি বলো এইরকম একটা খুশির খবর কাউকে বলবো না, কিন্তু কেন?
নিশু-৬ দিন পর অনিকের জন্মদিন। সবাইকে সেই দিন সারপ্রাইজ দিবো।প্লিজ তুমি আগে থেকে কিছু বলো না।

আনিকা-ঠিক আছে। তোমার কথায় রাখলাম।

__নিশু বাসায় আসার আগেই অনিক বাসায় এসে বসে আছে।নিশু হাসি দিয়ে বললো আরে তুমি এতো তাড়াতাড়ি চলে আসছো।

অনিক -হুম চলে আসছি।তোমার রিপটে কি আসছে?

নিশু-এইজন্য তুমি অফিস থেকে চলে আসছো?
এতো পাগলামি কেন করো।

অনিক-তোমাকে আমি এই গুলো কিছু জিজ্ঞাস করিনি।যা করেছি তার আনসার দাও?

নিশু-আমি একদম সুস্থ আছি।ডাক্তার বলেছে দুইদিন পর এমনি ঠিক হয়ে যাবে।

অনিক -ঠিক আছে। তোমার কথা মানলাম।

কথাটা বলেই নিশুকে জড়িয়ে ধরেছে। এমন সময় আনিকা বলে উঠলো।

আনিকা -ভাইয়া ভুলে যাসনা আমি এইখানে আছি।এইটা তোদের বেড রুম না।

নিশু -(রাগ হয়ে অনিককে ধাক্কা দিয়ে)সব কিছুতেই তোমার বাড়াবাড়ি। পাগল কথাকার।বলেই রুমে চলে গেলো।

অনিক -আনিকা তুইও না!দাড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা।বলে আনিকার পিছন পিছন ছুটলো।

__ রেহানা বেগম এসে ভাইবোনে দুষ্টামি দেখে বললো এখনো কি তোরা ছোটো আছিস? এইরকম করছিস কেন তোরা? অনিক তুই এইদিকে আয় তোর সাথে কথা আছে।

অনিক-হুম বলো কি কথা?

রেহানা বেগম -কালতো ছেলের বাড়ির লোক আসবে ওরা বলচ্ছে একসাথে engaged করে ফেলতে।তোর বাবাও রাজি হয়ে গেছে।

অনিক-মা! তোমরা যা ভালোমনে করো।
নিশু এসে বললো মা! আমি একটা কথা বলি?

রেহানা বেগম -হ্যা বলো?

নিশু-আনিকাকে একবার জিজ্ঞাস করলে ভালো হতোনা। ও এই বিয়েতে রাজি কি না?

রেহানা বেগম-তুমি চুপ করো (ধমক দিয়ে)।আমার মেয়ে আমরা যেটা বলবো সেটাই শুনবে।

__নিশুকে মন খারাপ করে চলে যেতে দেখে অনিকও পিছন পিছন গেলো।

অনিক -নিশু! বার বার এক কথা কেন বলছো?শুধু শুধু এখন মায়ের বকা খেতে গেলে।আমি চাই না তুমি আর এই ব্যাপারে কিছু বলো।

নিশু-ঠিক আছে এখন খেতে চলো রাত অনেক হয়েছে।
তবে তোমাকে একটা কথা আমি বলতে পারি। আমার মনে হয় আনিকা এই বিয়েতে রাজি হবে না।
(কথাটা বলেই নিশু রান্নাঘরে চলে গেলো।)

__সবাই এক বসে খাওয়া খাচ্ছে।কিন্তু অনিকের মন হলো নিশু আর আনিকার দিকে।

অনিক -আনিকা! কাল তোকে ছেলেপক্ষ এসে দেখে engaged করে যাবে।এতে কি তোর কোনো আপত্তি আছে?

আনিকা -আপত্তি থাকবে কেন।তোরা যা করবি আমার ভালোর জন্যই করবি।আমার কোনো আপত্তি নাই।

__অনিক নিশুর দিকে তাকিয়ে বললো।আমার খাওয়া হয়ে গেছে আমি রুমে যাচ্ছি।একে একে সবাই চলে গেলো।আনিকা আর নিশু বসে আছে।

নিশু-এখন তো তোমার ভাইয়াকে বলতে পারতে।তুমি এই বিয়ে করতে পারবেনা।

আনিকা-ভাবী তুমি চিন্তা করোনা।বিয়েতো দূরের কথা engaged ও হবেনা।

নিশু-আমিতো কিছুই বুজতেছিনা তোমার কথা।

আনিকা -এখন কিছু বুজা লাগবেনা।তুমি রুমে যাও,ভাইয়া অপেক্ষা করছে।এমনিতেই এখন ভালোভাবে চলতে হবে।আর সবসময় আমার ভাইয়াকে নিয়ে ভালো থাকবে।যে আসছে তারও খেয়াল রাখবে।আর দাঁড়িয়ে থেকোনা রুমে যাও।

নিশু -আনিকা তুমি যেই ভাবে কথা বলছো মনে হচ্ছে আজকেই কথাও চলে যাবে।

আনিকা -আরে নাহ এমনি বললাম।

__নিশুও আর কথা না বাড়িয়ে রুমে চলে আসলো।
অনিক খাটের একপাশে বসে বসে ল্যাপটপ এ কাজ করছে।নিশুকে আসতে দেখে,

অনিক – এই তোমার আসার সময় হলো?

নিশু -তাড়াতাড়িই তো এলাম।দিন দিন তুমি কেমন যেন অবুজের মতো কথা বলছো।সরো কাল অনেক কাজ আছে সকাল সকাল উঠতে হবে,আমি এখন ঘুমাবো।বলেই নিশু শুয়ে পড়লো।

অনিক- তুমি ঘুমাবে মানে?আমি মানছি কাল অনেক কাজ।তাই বলে তুমি এখন ঘুমাবে?

নিশু-না! তোমাকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো।তুমি যা চাচ্ছো তা কিছুই হবে না।তুমিও আর একটা কথা না বলে এখন ঘুমাও।

চলবে,,,,,

পুরোনো_ভালোবাসা   পার্ট:১১

0

পুরোনো_ভালোবাসা

পার্ট:১১

#Rabeya Sultana Nipa

_নিশু আর অনিকের সংসার ভালোই চলছে। কিন্তু অনিকের মা এখনো নিশুকে মেনে নেয়নি। ওদের বিয়ের ৮ মাস চলছে। অনিক পড়ালেখার পাশাপাশি ছোটো একটা জব করে।নিশুর তাতে কোনো আপসোস নাই কারন অনিক নিশুকে তার নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।

__ভাবী! ভাবী! কই তুমি? কথা গুলো আনিকা নিশুকে ডাকতে ডাকতে রান্না ঘরে এলো।তুমি আবার রান্না করতে আসছো? মা আসলে তোমাকে বকা দিবেতো।

নিশু – আমি জানি মা আসলে আমাকে বকা দিবে।কিন্তু মা এখন বাসায় নাই।তাই আমি রান্না ঘরে আসছি।।

আনিকা – ভাবী! মা কোথায় গেছে?

নিশু-আমাকে তো আর বলে যায়নি।কিন্তু তোমার ভাইয়া কাল রাতে বলেছে মা তোমার জন্য ছেলে দেখতে যাবে।হয়তো সেইখানে গেছে।

আনিকা – আমি তোমাকে একটা কথা বলবো কিন্তু তুমি কাউওকে বলতে পারবেনা।

নিশু -কি এমন কথা যা আমি কাউকে বলতে পারবোনা। আর এই বাড়িতে আমি কাকেই বা বলবো তোমার ভাইয়া ছাড়া।

আনিকা – ভাইয়াকেও বলো না প্লিজ।আসলে আমি একজনকে ভালোবাসি।

__নিশু আনিকার কথা শুনে হাসি দেয়ে বললো কে সে লোক?

আনিকা – রাফি!

নিশু – অনিকের বন্ধু রাফি ভাইয়া! হা হা হা তুমি রাফি ভাইয়া কে ভালোবাসো?

আনিকা – তুমি আসছো কেন ভাবী? আমি কি হাসার মতো কিছু বলছি?

নিশু – না এমনি।রাফি ভাইয়া হলে খারাপ হবে না।
এখন দেখো সবাই রাজি হয় কিনা।

আনিকা -রাজি না হলে আমার কিছু যায় আসে না।আমরা পালিয়ে বিয়ে করবো।আমি কি তোমার মতো নাকি সব কিছুতেই ভয় পাবো?রাফি ওর মা বাবাকে বলেছে ওরা রাজি। ওদের ছেলের ভালোর জন্য সব করবে।আর আমার মাকে দেখো সারাক্ষন তোমার পিছনে লেগে থাকে।

নিশু – আনিকা মাকে এই ভাবে বলতে নাই।মা সবার ভালো চায়। হয়তো ওনার জায়গা ওনি ঠিক করছেন।
তোমার ভাইয়া এখনো পড়ালেখা শেষ করে নাই। তার উপর আমিও চলে আসলাম।এতে মার রাগ হতেই পারে।মারা কখনওই সন্তানদের খারাপ চায় না।

আনিকা -বুজলাম চলে আসছো। কিন্তু এখন তাও মেনে নিতে পারে।যেই ভাবে সারাদিন ভাইয়াকে বলে তোমাকে বাড়ির থেকে বাহির করে দিতে তোমার খারাপ লাগে না।

__নিশু -না আমার খারাপ লাগেনা।কারণ অনিকের ভালোবাসার কাছে এইগুলো কিছুই না।অনিক যদি আমার পাশে থাকে সারাজীবন আমি এইগুলো সইতে পারবো।

_পিছনদিক থেকে অনিক বলে উঠলো দুজন মিলে কি এতো কথা বলছিস?

আনিকা -তুই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা শুনছিলি?

অনিক -আরে না আমিতো এইমাত্র আসলাম।নিশু রুমে আসো তোমার সাথে কথা আছে।

আনিকা – যাও যাও তোমার ভালোবাসার ডাক পড়েছে এখন তো আর এই ননদের কথা মনেই থাকবে না।

নিশু -আচ্ছা আমি কথাটা শুনেই চলে আসছি।
না হলে অনিক রাগ করবে।

_নিশু রুমে যাওয়া সাথে সাথে অনিক দরজাটা আটকে দিলো।

নিশু – দরজা আটকালে কেন?

অনিক -(নিশু কে পিছন ধিক জড়িয়ে ধরে) বউয়ে সাথে কথা বলতে গেলে দরজা আটকাতে হয় তুমি জানোনা?

নিশু – না জানিনা।এখন ছাড়োতো কেন ডাকছো সেটা বলো।

অনিক -তুমি আসলেই একটা আনরোমান্টিক।ভাবলাম খুসির সংবাদটা দেওয়ার আগে আমার জানটাকে একটু আদর করি তা না উল্টা জাড়ি দিচ্ছো।

নিশু – এতো পাগলামি না করে কথাটা আগে বলো।

অনিক -আমার থেকে তোমার কথায় বড় হয়ে গেলো? তাহলে শুনো আনিকার বিয়ে।আমি আর মা ছেলে পক্ষকে কথা দিয়ে আসছি।আনিকার বিয়ে ওখানেই দিবো। আমাদের সব কিছু পছন্দ হয়েছে।আর ছেলেও দেখতে শুনতে ভালো।

__নিশু অনিকের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে অনিককে জড়িয়ে ধরে বলো একটা কথা বলি?

অনিক -ছাড়ো আমাকে! তোমার তো আবার এইসব ভালো লাগেনা।

নিশু -রাগ করো কেন? শুনোনা কথাটা আরেক বার ভাবলে হতো না?

অনিক – কোন কথা নিয়ে ভাববো,বুজিয়ে বলো?

নিশু -আনিকার বিয়ের কথা নিয়ে।ওকে একবার জিজ্ঞাস করেলে ভালো হতো না?সারাজীবন যার সাথে কাটাবে তাকে তো ওর ভালো লাগতে হবে তাই না?

অনিক -ও কি তোমাকে কিছু বলছে নাকি ওর পছন্দের ব্যাপারে?

নিশু -কই না তো। এমনি বললাম।
(তোমাকে মিথ্যা বলার জন্য আমাকে মাপ করে দিও কথাটা মনে মনে বলতে নিশু চোখে পানি চলে আসলো।এই প্রথম সেই অনিকের কাছে মিথ্যা বলেছে।) তুমি বসো আমি তোমার জন্য চা নিয়ে আসছি বলেই নিশু বাহিরে চলে গেলো।

__রেহানা বেগম বাহিরে থেকে এসেছে দেখে নিশু কাছে গিয়ে বললো মা! আপনাকে চা দিবো?রেহানা বেগম কিছু বলতে যাবে এমন সময় অনিককে রুম থেকে বের হতে দেখে কিছু না বলে হাসি দিয়ে বললো আনো।

__নিশু নিছু না বলে রান্নাঘরে গিয়ে বিড়বিড় করছে যার মুখে তিতো ছাড়া মিষ্ট কথা বের হয় না সেটা একদিনেই পাল্টে গেলো কি করে।

__এইদিকে রেহানা বেগম মনে মনে ভাবতেছে মেয়েটা সত্যি অনেক ভালো। এতো কিছু বললাম সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করে নিয়েছে।আজ থেকে ওকে আর কিছু বলবো না।

নিশু-মা! আপনার চা।

রেহানা বেগম-হুম, নিশু তুমি কি রান্না করেছো? আর আজ থেকে তুমিই রান্না করবে।

__অনিক অবাক হয়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।মা! ঠিক আছোতো।আরে নিশু কান্না করছো কেন? দেখছো মা তোমাকে ভালোবেসে ফেলছে।

রেহানা বেগম -হ্যা আমি ঠিক আছি।(নিশুর দিকে তাকিয়ে)পাগলি মেয়ে তুমি কান্না করছো কেন?মা তো ভুল করতেই পারে তাই না?

__কথা গুলো বলেই নিশুকে জড়িয়ে ধরল রেহানা বেগম।আনিকা এসে বললো ভাইয়া দেখছিস! মা এখন আমাদের দুজন কে ভুলেই গেছে।অনিক হেসে বললো তোকে আদর করে এখন আর লাভ কি তুই কয়েক দিন পরে তো আরেক জনের ঘরে চলে যাবি।তাদের কে বলে দিবো তোকে বেশি করে আদর করতে।
আনিকা কিছু না বলেই তার রুমে চলে গেলো।

রেহানা বেগম -বেচারি লজ্জা পাইছে মনে হয়।আর শুন দুইদিন পর ছেলেরা ওকে দেখতে আসবে।সব কিছু যেন ঠিকঠাক ভাবে হয়।

অনিক -মা! তুমি চিন্তা করোনাতো। সবকিছু ঠিকভাবেই হবে।

__নিশু কিছু না বলেই আনিকার রুমে গিয়ে দেখে আনিকা কান্ন করছে।
নিশু-আনিকা তুমি কান্না করছো কেনো? এখন তো তুমি সবাইকে বলতে পারতে।এখনি সবাইকে বলে দাও। দুইদিন পর তোমাকে দেখতে আসছে। পরে আর বললেও কেউ মেনে নিবে না।

আনিকা -রাফি কে আগে বলে দেখি ও কি বলে। তারপর না হয় বলবো।

নিশু – তুমি যা ভালো মনে করো।
বলেই নিশু তার রুমে চলে আসলো।আসতে না আসতে মাথাটা কেমন ঘুরছে।আজ কয়েক দিন থেকেই মাথা ঘুরছে।অনিককেও বলতে পারছিনা।কিছু বললেই ওর চিন্তার শেষ থাকবেনা।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই নিশু শুয়ে পড়লো।

একটু পর অনিক এসে দেখে নিশু শুয়ে আছে।
অনিক-নিশু কি হয়েছে তোমার অসময় শুয়ে আছো?

নিশু -এমনি।ভালো লাগছে না তাই।

অনিক-তোমার মুখ দেখে তো তা মনে হচ্ছে না।সত্যি করে বলো কি হইছে তোমার।আজকে কথায় তুমি আনন্দে থাকবে তা তুমি মন খারাপ করে শুয়ে আছো।
প্লিজ নিশু বলোনা কি হইছে?

নিশু -আসলে আমার মাথাটা কয়েক দিন থেকেই ঘুরছে।কিছু ভালো লাগছে না।

অনিক-আমাকে এতো দিন বলো নাই কেন?ঠিক আছে কাল আনিকাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে।আমিই তোমার সাথে যেতাম।আজকেও অফিসে যাই নাই।কাল যাতেই হবে।তুমি আনিকাকে নিয়ে যেতে পারবেতো?

নিশু -পারবো। তুমি চিন্তা করো না তো।
অনিক-আজব! আমি চিন্তা করবো নাতো কে করবে শুনি?তোমার কিছু হলে আমি মরেই যাবো।আর ডাক্তার কাছে গেলে কি বলে আমাকে ফোন করে সব জানাবে।

নিশু-কি পাগল একটা। বাসায় আসলেইতো জানতে পারবে।আবার ফোন করা লাগবে?

অনিক-আমি এতো অপেক্ষা করতে পারবোনা।

চলবে,,,,,,,,,

পুরোনো_ভালোবাসা   পার্ট: ১০

0

পুরোনো_ভালোবাসা

পার্ট: ১০

#Rabeya Sultana Nipa

__রেহানা বেগম মনে মনে ভাবতেছে এরা সবাই কথায় গেলো আমাকে কিছু না বলে।আজকে সবাই আসুক তারপর এদের ১২ টা বাজাবো।যেমন বাবা তেমন তার ছেলে মেয়েরা। আমি যে তাদের মা এই কথা তাদের মনেই থাকে না।সব কিছু তাদের বাবা সাথেই শেয়ার করবে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই কলিংবেলের শব্দ শুনে দরজার দিকে এগুলো।
দরজা খুলে দেখে আনিকা আর তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে।
রেহানা বেগম -কথায় গিয়েছিলে তোমরা? তোমার ছেলে কথায় এখনো বাড়ী এলোনা রাত তো কম হলো না।তোমরা কোথায় গিয়েছিলে রাত করে বাড়ি ফিরলে?
অনিকের বাবা-সব কথা তুমি বলবে, নাকি আমকেও কিছু বলতে দিবে?কোথায় আর যাবো তোমার গুনোধর ছেলেকে উদ্ধার করতে গিয়েছিলাম।
রেহানা বেগম-কোনো কিছু হলেই আমার ছেলে।আমার ছেলে কি করেছে শুনি?
__পিছন থেকে অনিক মা বলে ডাক দিলো।রেহানা বেগম তাকিয়ে দেখে অনিক আর সাথে একটা মেয়ে।
নিশু এগিয়ে এসে রেহানা বেগম কে সালাম করলো।
আরে ও আমাকে সালাম করছে কেন? আর এই মেয়েটা কে?
তখন আনিকা বলে উঠলো, মা! ও হচ্ছে নিশিতা। তোমার ছেলের বউ।আর আমার ভাবী।
রেহানা বেগম চোখ বড় বড় করে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো। কার বিয়ে, কিসের বিয়ে,আমি এই বিয়ে মানি না।এখুনি এই মেয়েকে এই বাড়ী থেকে বের করে দাও।
__নিশু চুপ করে শুধু কান্না করেই যাচ্ছে।কিছু বলছেনা।
অনিক-নিশু চুপ করো কান্নাকাটি করোনা প্লিজ। সব ঠিক হয়ে যাবে।
__রেহানা বেগম চিৎকার দিয়ে বললো কিসের সব ঠিক হয়ে যাবে? কিছুই ঠিক হবে না। তুই এখুনি এই মেয়েকে এই বাড়ি থেকে বের করে দে।
__অনিকের বাবা রেহানা বেগমকে চুপ থাকতে বলে, আনিকাকে বললো নিশুকে অনিকের রুমে দিয়ে আসতে।অনিক আর রেহানা বেগম কে বললো তোমারা আমার রুমে আসো।
__অনিক তার মাকে বুজানোর চেষ্টা করছে। রেহানা বেগম কান্না করেই যাচ্ছে আর একিকথা বার বার বলছে ওই মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করেদে।না হলে আমি এই বাড়িতে থাকবোনা।

অনিকের বাবা-রেহানা! তুমি একটু চুপ করো। নিশুর বাবাকে আমি কথা দিয়ে আসছি ওনার মেয়ের কোনো কষ্ট এইখানে হবে না।ছেলে যখন বিয়ে করেই ফেলেছে শুধু শুধু লোক হাসানোর দরকার কি।মেয়েও দেখতে শুনতে ভালো।মেয়ের ফ্যামিলিও অনেক ভালো দেখেই বুজা যাচ্ছে।অনিক! এইবার তুই রুমে যা মেয়েটা উপর আজ অনেক ঝড় গেছে।
অনিক- ঠিক আছে বাবা।মা! প্লিজ তুমি আর কান্না করোনা।এই বলে অনিক তাদের রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে গেলো।গিয়ে দেখে আনিকা নিশুর সাথে কথা বলছে।কিন্তু নিশু চুপহয়ে বসে আছে দরজার দিকে তাকিয়ে। হয়তো অনিকের আসার জন্য অপেক্ষা করছে।
আনিকা -ভাইয়া! তুই এসে গেছিস। মাকে বুজাতে পেরেছিস তো?
অনিক- মা কি আর এতো সহজে বুজবে।দেখা যাক কাল কি হয়।
আনিকা-আচ্ছা তাহলে এখন আমি আসি। তোরাও ঘুমিয়ে পড়।
__আনিকা চলে গেলো তার রুমে।অনিক তার রুমের দরজাটা আটকিয়ে নিশুর পাশে এসে বসলো।অনিক জানে নিশু নিশু মনে মনে অনেক কষ্ট পাচ্ছে।কষ্ট এখন হবেই সব কিছু ছেড়ে আমার কাছে চলে এসেছে।

অনিক – আমি জানি তুমি কি ভাবছো? কেন আমি তোমাকে এই ভাবে আজই বিয়ে করলাম।

__নিশু কিছু না বলেই অনিককে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।অনিককে কি আনসার দিবে সে।

অনিক – প্লিজ নিশু এই ভাবে কেদোনা। সব ঠিক হয়ে যাবে।
নিশু- আমিও চাই সব কিছু ঠিক হয়ে যাক।

_সকাল বেলা নিশু উঠে রান্নাঘরে দিকে গেলো।সেইখানে গিয়ে দেখে রেহানা বেগম নাস্তা বানাচ্ছে।

নিশু -মা! আমি আপনাকে হেল্প করি?আমাকে দিন আমি চা টা করে ফেলি।

রেহানা বেগম – এই মেয়ে তোমাকে আমার রান্নাঘরে কে আসতে বলেছে।আসতে না আসতেই আমার সংসার নিজের হাতে নিতে চাইছো।চালাকি তো ভালোই শিখেছো।তবে এইটা শিখোনি? বেকার ছেলেরকে বিয়ে করতে নাই।আমি একটা জিনিস বুজলাম না। এতো দিন দেখে এসেছি মেয়েরা টাকা ওয়ালা ছেলেকে ছাড়া বিয়ে করে না।আর তুমি বিয়ে করেছো যে নিজের খরচ চালায় তার বাপের টাকায়।

__অনিক আর আনিকা দৌড়ে এসে দেখে নিশু কিছু বলছে না শুধু কান্না করে যাচ্ছে।
অনিক – মা! তুমি এইভাবে চিৎকার চেঁচামিচি করছো কেনো।নিশু কি করেছে।
রেহানা বেগম – আজ আমার এই দিন দেখার বাকী ছিল? বউয়ে জন্য এখন আমাকে বকাঝকা করছিস?
আনিকা -মা! ভাইয়া কখন তোমায় বকলো।ভাইয়া তো শুধু কি হয়েছে তা জানতে চাইছে এইখানে তুমি দোষের কি দেখলে??
রেহানা বেগম -তুই যে আমার মেয়ে আমার ভাবতেই অবাক লাগছে।যেমন ভাই তেমনি তার বোন।

অনিক -নিশু তুমি রুমে যাও শুধু শুধু এইখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
__নিশু কিছু না বলে রুমে গিয়ে বসে বসে কান্না করছে।অনিক নিশুর জন্য রুমে নাস্তা নিয়ে এসে বললো তুমি এখনো কান্না করছো?
এইভাবে সারাক্ষণ কান্না করলে তো তুমি অসুস্থ হয়ে যাবে।এই নাও নাস্তাটা খেয়ে নাও।
নিশু -তুমি কি কোথাও যাচ্ছো?
অনিক – দেখি একটা চাকরির ব্যবস্থা হয় কিনা।এইভাবে তো আর বসে থাকা যায় না।কিছু না করলে মা তোমাকে প্রতিটা পদে পদে কথা শুনাবে।
নিশু – অনিক! বাহিরে চাকরি পাবে বলে মনে হয় না। আমার আব্বুকে একবার বলে দেখবো?
অনিক -না নিশু! এমনেতেই ওনার কাছে ছোটো। আমি চাইনা তোমার বাবার কাছে আর ছোটো হতে।

নিশু – ঠিক আছে তোমার যা ভালো মনে হয়।তবে যেখানে যাও তাড়াতাড়ি ফেরে এসো।

অনিক – আসতে তো হবেই আমার বউকে ঘরে রেখে আমি বাহিরেকি আর থাকতে পারি?

চলবে,,,,,,,,,

পুরোনো_ভালোবাসা   পার্ট:৯

0

পুরোনো_ভালোবাসা

পার্ট:৯

#Rabeya Sultana Nipa

_নিশুকে আসতে দেখে অনিক হাঁসি দিয়ে নিশুকে বললো আমি জানতাম তুমি আসবে।আমি জানি আমার নিশু কখনওই আমার কথা ফেলতে পারবে না।
তোমাকে যা যা আনতে বলেছিলাম এনেছো?
নিশু-অনিক! আমরা ভুল কিছু করছিনা তো?বিয়েটা পরে করলে হতো না।কাউকে না জানিয়ে আমরা ঠিক করছি না।তুমি পাগলামি করোনা। আমি তোমাকে ছেড়ে কথাও যাবনা।
অনিক-তুমি কি বিয়ে করবে না? না করলে হয়তো আমি তোমাকে আর কখনো ফিরে পাবোনা।প্লিজ নিশু তুমি আর না করো না।
নিশু-ঠিক আছে চলো।বিয়ে করে কিন্তু আমার বাসায় আগে যাবো।তুমি আমার বাবাকে কি করে রাজি করাবে সেটা তোমার ব্যাপার।
অনিক-ঠিক আছে।আগে বিয়েটা হক। আমি সব কিছু ঠিক করে নিবো।চলো আমি সব কিছু রেডি করে রেখেছি। আমার ফ্রেন্ডরা কাজী অফিসে বসে আছে।তুমি গেলেই বিয়েটা হবে।
_নিশু আর অনিকের বিয়ে পড়াতে পড়াতে দুপুর হয়ে গেলো।এই দিকে নিশুদের বাসায় সব গেস্ট চলে এসেছে।ইয়াসমিন বেগম নিশুর বাবাকে ডেকে বললো তোমার মেয়েতো এখনো এলো না।সকালে ওকে যেতে দেওয়া তোমার একদম ঠিক হয়নি।ছেলের বাড়ির সবাই মেয়েকে খুঁজছে এখন তোমার বন্ধুকে বুজিয়ে বলো ওর কলেজ এখনো ছুটি হয় নাই।আমি একটা কিছু বুজলাম না যার সাথে নিশুর engaged সেই এলো না কেনো?নিশুর বাবা ইয়াসমিন বেগমকে বুজিয়ে বললেন ছেলের কাজ পড়ে গেছে তাই আসতে পারে নাই।বিকেলের আগেই চলে আসবে।
_নিশু অনিককে নিয়ে বাসার পথে পা বাড়ালো।সে জানে না আজ তার বাবা মা তার উপর কেমন আচরণ করবে।বাবা মা কি আমার বিয়েটা মেনে নিবে।ছোটোবেলা থেকেই বাবা আমার কোনো কিছুতেই না করে নাই। হয়তো আজও করবে না।অনিক তো আর খারাপ ছেলে না। বাবাকে সব বুজিয়ে বললে হয়তো মেনে নিবে এই সব ভাবতে ভাবতে নিশু বাসায় চলে আসলো।
__নিশু বাসায় এসে এতো গেস্ট দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে সব দেখছে।ইয়াসমিন বেগম নিশুকে দেখে বললো এই তোর আসার সময় হল কখন থেকে সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।অনিক দেখে নিশুর মা বললো তোর কলেজের ফ্রেন্ড নাকি?
নিশু- মা! ও হচ্ছে,,,,,,,,,
এমন সময় নিশুর বাবা এসে অনিক আর নিশুকে এক সাথে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলেন।আজই এই ছেলেকে সাথে নিয়ে আসতে হলো? কথা গুলো মনে মনে ভাবছে।গেস্টরা সবাই অনিক আর নিশুর দিকে তাকিয়ে আছে।সবার এমন তাকানো দেখে অনিকের দিকে তাকিয়ে বললো তুমি আমার সাথে এসো তোমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই।ইয়াসমিন তুমি নিশুকে নিয়ে রেডি করো।
নিশুর বাবা অনিককে সাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো নিশুর ভালো ফ্রেন্ড বলে।
_ইয়াসমিন বেগম নিশুকে নিয়ে গেলেন তার রুমে।খাটের উপর শাড়ী গহনা দেখে নিশু অবাক হয়ে তার মাকে বললো।মা!এই গুলো কে এনেছে?আর বাড়ীতে এতো লোক কেন?
ইয়াসমিন বেগম-ছেলের বাড়ী থেকে এনেছে।ওরা তোর বাবার বন্ধু আর তার পরিবার।ওনার ছেলের সাথেই তোর engaged এখন চল।এমনিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে।ভাগ্যে ভালো ছেলে বাড়িতে আসার আগেই তুই এসে গেছিস।
নিশু-মা! কই তোমরা তো আমাকে আগে কিছু বলো নাই।আর আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।
ইয়াসমিন বেগম -পারবিনা মানে?তোর বাবা তোর উপর কত ভরসা করে সব ঠিক করেছে আর এখন তুই কি বলছিস?আর তোর বাবার চাওয়া পাওয়া কোনো দাম না তোর কাছে?
নিশু-মা! একজন স্বামী থাকতে আরেক জনকে বিয়ে করা যায়?
ইয়াসমিন বেগম -পাগলের মতো কি বলছিস এইগুলো?আমাকে একটু বুজিয়ে বলতো।
নিশু-একটু আগে যে আমার সাথে এসেছে সে অনিক।আমার কোনো ফ্রেন্ড নয়।আজ সকালে ও আর আমি বিয়ে করেছি।
__ইয়াসমিন বেগম মেয়ের মুখে এই রকম কথা শুনে বিশ্বাস করতে পারছেনা। চুপ করে খাটে বসে পড়লেন।
নিশু তার মায়ের পায়ের নিচে বসে তার মাকে জড়িয়ে কান্না করছে মা! আমি জানি তুমি অনেক কষ্ট পাইছো। আমাকে ক্ষমা করে দাও। নিশুর বাবা অনিক কে একটা রুমে বসিয়ে নিশুর মায়ের কাছে এলো নিশুর হয়েছে কিনা দেখার জন্য।মা মেয়ের এমন অবস্থা দেখে নিশুর মাকে বললো কি হয়েছে তোমাদের? নিশুকে এখনো রেডি করাও নাই কেন?
ইয়াসমিন বেগম নিশুর বাবার দিকে তাকিয়ে বললো ওদেরকে চলে যেতে বলো। আমার মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।
নিশুর বাবার বুজতে আর বাকি রইলোনা।নিশুকে জড়িয়ে ধরে নিশুর বাবা বললো এই তুই কি করলি মা? আমি কি তোর খারাপ চাই বল?ছোটোবেলা থেকে তুই যেই ভাবে বলছিস সেই ভাবেই তোকে সব কিছু দেয়েছি।আজ তুই এই ভাবে তার প্রতিদান দিলি।নিশু কিছু বলছেনা শুধু কান্না করেই যাচ্ছে।
কথা গুলো বলেই নিশুর বাবা রুম থেকে বাহিরে গেল।নিশুর বাবা তার বন্ধুর কাছে গিয়ে বসে হাত ধরে বললো আমাকে তুই ক্ষমা করে দে।আমার মেয়েটা এমন কাজ করবে আমি সত্যি কিছু জানতাম না।নিশুর বাবার বন্ধু খালেক সাহেব বললেন আমি এখান থেকে সব শুনেছি।আসলে আমরা একটা বড় ভুল করতে যাচ্ছিলাম।ওরতো পচন্দের একটা ব্যাপার আছে।আমারা সেটা না জেনে বিয়েটা ঠিক করা উচিত হয় নাই।তুই সব কিছু মেনে নে।তাহলে আজ আমরা আসি।
__ সবাই চলে যাওয়ার পরে অনিক এসে নিশুর বাবাকে বললো আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।আমি চাই না নিশু আমাকে ছেড়ে অন্য কারো হয়ে যাক।আমি আপনাকে বলছি নিশুকে কখনো অযত্ন করবোনা।
__নিশুর বাবা-তোমার ফ্যামিলিকে ডাকো। আমি তাদের সাথে কথা বলতে চাই।আমার মেয়েকে তো আমি এমনি এমনি তোমার অনিশ্চিত জীবনের কাছে ছেড়ে দিতে পারিনা।
অনিক-ঠিক আছে আমি তাদেরকে আসতে বলছি।
__অনিক আনিকাকে ফোন দিয়ে সব বললো। আনিকা সব শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো আমি মাকে সব বলছি।কিন্তু আমি জানিনা তোর কপালে কি আছে।তবে ভাইয়া! আমি কিন্তু অনেক খুশি।
__আনিকা তার বাবার কাছে গিয়ে অনিক আর নিশুর ব্যাপারে সব বললো। অনিকের বাবা কি বলবে বুজতে পারছেনা।অনেকক্ষণ পরে আনিকাকে বললো তোর মাকে এখন কিছু বলিসনা।আগে চল ওইখানে গিয়ে দেখি কি হয়।
_অনিকের বাবা আর আনিকা নিশুদের বাসায় এসে কলিং বেল চাপলো। কলিং বেল বাজার সাথে সাথেই নিশুর বাবা দরজা খুলে দিয়ে তাদের ভেতরে এসে বসতে বললো।

চলবে,,,,,,,,,

পুরোনো_ভালোবাসা   পার্ট: ৮

0

পুরোনো_ভালোবাসা

পার্ট: ৮

#Rabeya Sultana Nipa

 

__নিশিতা মামার আজ গায়ে হলুদ। দুই দিন হয়ে গেল সে এই বাড়ীতে আসছে।ব্যস্ত থাকার কারনে অনিকের সাথে তেমন ফোনে কথা হয় না।তাই নিশিতা মন খারাপ হয়ে বসে আছে।ইয়াসমিন বেগম মেয়ের এই ভাবে বসে থাকতে দেখে বলল! কিরে এইভাবে মনমরা হয়ে বসে আছিস কেন? সবাই রেডি হয়ে গেছে তুই কখন রেডি হবি?
__মা আমার ভালো লাগছে না,তুমি যাও আমি পরে আসবো।
__নিশিতার বাবা ঘরে ঢুকে মা আর মেয়ের কথা শুনে বলল তোর কি কোনো কারণে মন খারাপ?

নিশিতা-না বাবা আমি ঠিক আছি।আচ্ছা আমি রেডি হয়ে আসছি।
যাওয়ার সময় নিশু ভুলে ফোনটা রেখে চলে গেলো। নিশুর বাবা আর মা দুজনেই বসে কথা বলছে।এমন সময় নিশুর ফোন বেজে উঠলো।নিশু বাবা তার মাকে বললো ফোনটা আমাকে দাও আমি কথা বলি।নিশুর বাবা ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে অনিক বলা শুরু করলো। তোমার সমস্যা কি নিশু? তোমাকে কতো বার বলছি তোমার সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারিনা। যাওয়ার সময় এতো করে বললাম ফোন ঠিক মতো দিও।আর তুমি কি করলে ফোনটাই অফ করে রাখো।
__নিশুর বাবা কথা গুলো শুনে নিশুর মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
এইদিকে অনিককে থামিয়ে নিশুর বাবা বললো। আমি নিশুর বাবা বলছি।আমি তোমার সাথে এখন এই ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না।আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই দুইদিন পর। আমি এখন ব্যস্ত আছি পরে দেখা করে কথা বলবো।
ফোন রেখে নিশুর বাবা নিশুর মাকে বললো তোমার মেয়ের যে রিলেশন আছে কই কখনো তো আমাকে
বলো নাই।
ইয়াসমিন বেগম -কি আবোল তাবোল কথা বলছো। আমি এইসব ব্যাপারে কিছুই জানিনা।
__তুমি কেমন মা যে নিজের মেয়ে এতো বড় একটা কাজ করেছে তুমি জানোনা।ঠিক আছে এইসব ব্যাপারে নিশুকে কিছু বলার দরকার নাই।মেয়েকে একটু চোখে চোখে রাখো।
এমন সময় নিশু এসে বললো, বাবা আমাকে কেমন লাগছে।
নিশুর বাবা নিশুকে জড়িয়ে ধরে বললো আমার মেয়েকে একদম পরীর মতো লাগছে।পরী টা যে কখন বড় হয়ে গেলো আমি বুজতেই পারি নাই।
ইয়াসমিন তুমি বলোতো পরী সাথে এখন পরীর মনের মতো একটা বর জোগাড় করতে হবে তাই না?
ইয়াসমিন বেগম-হুম, তুমি একদম ঠিক বলেছো। এখন চলো সবাই আমাদের জন্য বসে আছে।
_অনিক নিশুর বাবার বলা কথা গুলো বার বার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। পড়াতে মন বসতে চাইছে না।কাল তো পরিক্ষা শেষ। মা বাবাকে নিশুর কথা বলবো।যদি তারাও রাজি না হয়।যদি নিশুর বাবা ও আমাকে না করে দেয়।নিশুকে আমি আমার থেকেও বেশী ভালোবাসি এইটা ওনাকে বুজাতে হবে।
__ভাইয়া! ভাইয়া! কিরে তোকে মা খেতে ডাকছে তুই শুনছিস না? অনিক কে চুপ থাকতে দেখে আনিকা বললো, তোর কি নিশুর সাথে ঝগড়া হইছে?অনিক আনিকার দিকে তাকিয়ে বললো আমি নিশুকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। ওর বাবার সাথে আজ আমার কথা হইছে,ওনি বলেছে দুইদিন পর ওনার সাথে দেখা করতে।
আনিকা -তাহলে তুই চিন্তা করছিস কেনো?
অনিক-ওনি যদি বলে আমি নিশুকে ছেড়ে দিতে।তখন আমি কি করবো?
আনিকা-তুই ওনাকে বুজিয়ে বলবি।ওনি যদি রাজি না হয় তারপর না হয় একটা কিছু ভাবিস।এখন চল দেরি হলে এখন মায়ের বকা খাবি।

_আজ নিশুর মামার বিয়ে শেষ হলো। সবাই বউ নিয়ে একটু আগে বাসায় এসেছে। সবাই কতো খুশি।যেই যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। নিশুও অনেক খুশি তার নতুন মামী এসেছে।এর মাঝেই তার মামা নিশুকে নিয়ে নতুন মামীর সামনে এসে বসলো।মীম! (নতুন মামী)দেখো ও আমার একমাত্র ভাগ্নি।ও আমাদের সবার ভালোবাসার মনি। আজ থেকে তুমিও ওকে আমাদের মতো করে ভালোবাসবে।নিশুও নতুন মামীর সাথে ভালোই ভাব করে নিলো।দুইজন এখন ভালো ফ্রেন্ড।
__নিশুরা আজ বাড়ী চলে এসেছে। কিন্তু ছোটোমামী কে ছেড়ে আসতে মন চাইছে না।কিন্তু অনিককেও দেখার জন্য মন পাগল হয়ে আছে।অনিক কে একটা ফোন করে দেখি অনিক কোথায় আছে।বিয়ের ঝামেলার কারনে এই কয় দিন কথায় হয় নাই।জানি ও রাগ করে আছে।দেখা না হওয়া র্পযন্ত হয়তো রাগ থামবেনা।অনিককে অনেক বার ফোন দেওয়ার পরও অনিক ফোন রিসিভ করেলো না।কাল দেখা করে সবকিছু বুজিয়ে বললে অনিকে ওর রাগ কমে যাবে।এইকথা ভেবে নিশু তার মাকে রান্নার কাজে হেল্প করছে।
_নিশুর বাবা অনিককে ফোন করে একটা রেস্টুরেন্টে সন্ধ্যায় আসতে বললো।অনিক কথা মতো সেখানে চলে গেলো।দুইজন চুপচাপ বসে কফি খাচ্ছে কেউ কিছু বলছে না।অনিক মাথা নিচু করে বসে আছে আর ভাবছে কি দিয়ে শুরু করবে কথা।
নিশুর বাবাই আগে নিরবতা ভেঙ্গে বললো নিশু আমার একমাত্র মেয়ে নিশ্চয়ই তুমি জানো?
অনিক —আমি জানি।
নিশুর বাবা-কি করো তুমি?
অনিক-আমি মেডিকেলে পড়ি।
নিশুর বাবা-হুম!আসলে তোমাকে এইখানে ডেকে এনেছি কিছু কথা বলবো বলে।তুমি নিশুকে ভুলে যাও।আমি ওর বিয়ে ঠীক করে করে রেখছি আমার বন্ধুর ছেলের সাথে।আমি ওদের কথা দিয়ে ফেলেছি।আমি তোমার ব্যাপারে সব খবর নিয়েছি।তুমি অনেক ভালো ছেলে। জীবনে আরো অনেক মেয়ে পাবে। কিন্তু নিশুকে ভুলে যাও।
অনিক-আংকেল আমি নিশুকে ছাড়া বাঁচতে পারবোনা।নিশুও আমাকে ভালোবাসে।আমি ওর জন্য সব করতে পারবো কিন্তু ওকে ছাড়তে পারবোনা।
নিশুর বাবা-ঠীক আছে তুমি যা ইচ্ছা করো। কিন্তু একটা কথা মনে রেখো আমি নিশুকে আমার বন্ধুর ছেলের সাথেই বিয়ে দিবো। আমি কথার খেলাপ কখনওই করতে পারবোনা।
__অনিক কথা না বাড়িয়ে উঠে চলে আসলো।বাসায় এসে নিশুকে ফোন দিলো।
নিশু-আমি জানি তুমি আমার উপর রাগ করে থাকতেই পারোনা। অনিক তুমি কথা বলছো না কেন?
অনিক-নিশু! তুমি কি আমায় সত্যি ভালোবাসো?
নিশু-অনিক! তুমি আমায় বিশ্বাস করো না?ভালোবাসি বলেই তো তুমি যা বলো আমি সব সহজই মেনে নেই।
অনিক-তাহলে আজকেও আমার একটা কথা রাখো।
নিশু! চলো না আমরা কাল বিয়ে করে ফেলি।
__অনিকের কথা শুনে নিশু অবাক হয়ে বললো। তুমি ঠিক আছো? অনিক! হঠাৎ করে বিয়ে আমি কিছু বুজতেছি না।তোমার কি হয়েছে আমাকে বলবে?
অনিক-নিশু! আমি তোমাকে হারাতে চাই না।আমি কিছুই বুজতে চাই না কাল আমরা বিয়ে করছি এইটাই আমার শেষ কথা।যদি তুমি না আসো হয়তো আমাকে সারা জীবনের জন্য হারাবে।
নিশু-অনিক! অনিক!আমার কথাটা শুনো।ধুত ফোন রেখে দিলো!
কি হলো আজ এমন পাগলামো কেন করছে কিছুইতো বুজতে পারছি না।
_ইয়াসমিন! তোমার মেয়ে কি ঘুম থেকে উঠেছে?
নিশুর বাবা কথাটা বলতে বলতে পেপার পড়ছে।
আমাদের বাসায় যে আজ গেস্ট আসছে নিশুকে বলেছো?
ইয়াসমিন বেগম -না এখনো কিছু বলি নাই।
__নিশু রুম থেকে আসতে আসতে বললো মা তুমি কাকে কি বলো নাই?
নিশুর বাবা-তুই কি কোথাও যাচ্ছিস?
নিশু-হুম।কলেজে যাচ্ছি।
নিশুর বাবা-আজকে কোথাও যাওয়ার দকার নাই।আজকে বাসায় গেস্ট আসছে। তোমার মায়ের সাথে থাকো।
নিশু-বাবা, আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো।প্লিজ বাবা যাই।তুমি না করোনা।
নিশুর বাবা-ঠীক আছে। তাহলে তাড়াতাড়ি চলে এসো।
_নিশু তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে বললো, আমাকে ক্ষমা করে দিও বাবা তোমাকে মিথ্যা বলার জন্য।
__নিশুর বাবা ইয়াসমিন বেগমকে বললো দেখো তোমার মেয়ে এখনো ছোটোই আছে।
নিশু আর কিছু না বলে বাহিরে চলে গেলো।
ইয়াসমিন বেগম -মেয়েটাকে না জানিয়ে কাজটা কি তুমি ঠিক করছো।যদি দেখে তুমি তাকে না জানিয়ে তার engaged এর জন্য এতো আয়োজন করছো তখন একটা কিছু করে ফেলে তখন কি করবা?গেস্টের সামনে তখন কি আমাদের মানসম্মান থাকবে?
নিশুর বাবা-আমি ওকে আসলে সব বুজিয়ে বলবো।তুমি চিন্তা করোনা।

চলবে,,,,,,,,

পুরোনো_ভালোবাসা   পার্ট: ৭

0

পুরোনো_ভালোবাসা

পার্ট: ৭

#Rabeya Sultana Nipa

_ক্লাস শেষ করেই নিশিতা বাড়ি ফিরলো। মা! মা! কই তুমি? চিৎকার করে করে কি বাড়ি টা মাথায় তুলবি নাকি? বলতে বলতে নিশিতার মা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো।কি হয়েছে তোর আজ তোকে এতো খুশি দেখাচ্ছে কেন?
__মা! তুমি যে কিভাবে সব বুজে যাও আমি নিজেও বুজতে পারিনা। হুম তোমার মেয়ে সত্যি আজ অনেক খুশি।অনেক দিন যে জিনিসটা মনে মনে চাইতাম তা আজ পেয়ে গেছি।
__মেয়ের কথা শুনে ইয়াসমিন বেগম আস্তে আস্তে মেয়ের দিকে এগিয়ে এসে জরিয়ে ধরলো।আমি তোকে অনেক বিশ্বাস করি।তুই আমাদের একটা মাএ মেয়ে। তোর খুশির জন্য আমারা সব করতে পারি।তুই এমন কিছু করিসনা যাতে আমরা কষ্ট পাই। ছোটোবেলা থেকে তুই যা চেয়েছিস তাই দিয়েছি। তুই যা করতে বলসোস তাই করতে দিয়েছি।তোর অন্যায় আবদার গুলো আমি সহজে মেনে নিয়েছি।কারণ বড় হলে তুই ঠিক হয়ে যাবি এই কথা ভেবে।
__মা! আমি জানি তুমি কি বলতে চাইছো।আমি এমন কিছু করবোনা যাতে তোমরা কষ্ট পাও।যদি কিছু করি তাহলে আমার এই মাটাকে জানিয়ে করবো।আর কোনো কথা নয় আমার খুব ক্ষুধা লাগছে খেতে দাও।আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।
_মেয়ের কথা শুনে ইয়াসমিন বেগমের মনটা চিন্তা মুক্তো হলো।মনে মনে ভাবলো নিশুর বাবা আজ আসলে নিশুর ব্যাপারে কথা বলবো।কি এমন কাজ করে আমাদের সময় দিতে পারেনা।সে দিন বলেছিলো ওর কোন ফ্রেন্ডের ছেলের সাথে নিশুর বিয়ের কথা।আজ আসলে বলবো মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে ছেলের বাবার সাথে।
_আচ্ছা অনিক তুমি আমায় এতো ভালোবাসো কেন বলোতো? আমি যাই বলি না কেন তুমি এতো সহজে মেনে নাও কেন?
ভালোবাসি বলেই তো মেনে নিই। নিশু তুমি জানোনা তুমি আমার জীবনে কি।তোমার জন্য আমার এই জীবন দিয়ে দিতে পারি।(দুজনেই ফোনে কথা গুলো বলছে)
_এইভাবে তাদের ৬ মাস কেটে গেলো একে অপরকে একদিনও না দেখে থাকতে পারেনা।প্রতি দিন তাদের ফোনেও কথা হয়।
__নিশু! নিশু! তুই কথায় তাড়াতাড়ি এইদিকে আয়।
মা! তুমি এইভাবে ডাকছো কেন, কি হয়েছে?
__কি হয়নি বল? তোর ছোটো মামার বিয়ে ঠিক হয়েছে।তাও আবার দুইদিন পর বিয়ে।এতো মেয়ে দেখালাম তার পছন্দই হয় না। শেষমেশ একটা হলো।তাড়াতাড়ি সবকিছু গুছিয়ে নে বিকালে আমাদের যেতে হবে।তোর মামা বলেছে আমরা না গেলে বিয়েই করবে না।
__নিশু মনে মনে ভাবতে লাগলো আমি গেলে অনকে সাথে কথা হবে কি করে, দেখা হবে কিরে।অনিক কে না দেখে থাকবো কি করে।না গেলেও উপায় নাই।
মা! আমি একটু বাহিরে থেকে আসছি।আধাঘণ্টায় চলে আসবো।
__এই বলেই নিশু বাহিরে চলে গেলো।অনিককে ফোন দিয়েছে আসার জন্য। নিশু অপেক্ষা করছে অনিকের জন্য।
অনিক এসেই নিশুর হাত ধরে বললো কি হয়েছে তোমার?হঠাৎ এইভাবে আসতে বললে।আমি এখন যখন আসতে পারবোনা এই কয়দিন আমার পরিক্ষা চলতেছে।পরিক্ষা শেষ হলে তুমি যখন বলবে তখন দেখা করবো।
_অনিকের কথা শুনে নিশু মুখ মেঘের মতো কালো হয়ে গেলো।তারপর অনিকের দিকে তাকিয়ে বললো আমার কয়েক দিন তোমার সাথে দেখা হবে না। তাই এখন দেখা করার জন্য ডেকেছি।
__সরি লক্ষি আমাকে মাপ করে দাও আসলে আমি তো জানিনা তাই এমন করে কথা বলে পেললাম।তো আমার লক্ষি কেন দেখা করতে পারবে না আমি জানতে পারি ?
__মামার বিয়ে আমি ওইখানে যাচ্ছি তাই কয়েক দিন দেখা করতে পারবোনা।কিন্তু আমি তোমাকে না দেখে থাকবো কি করে?
__মন খারাপ করো না কয়দিনের তো ব্যাপার।তারপর তো আমরা আবার এক হয়ে যাবো।ওখানে গিয়ে কিন্তু ফোন করবে না হলে তো বুঝো কি করবো।
__আচ্ছা তাহলে আমি আসি।অনিকের বুকে মাথা রেখে নিশু অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েছিল মনে হচ্ছে কয় দিন তো নয় কয়েক যুগ অনিককে দেখবে না।আচ্ছা অনিকেরও কি তাই মনে হচ্ছে।
__নিশু কি ভাবছো এতো?তোমার না যেতে হবে।গিয়ে কিন্তু ফোন দিবে।না হলে আমি পাগল হয়ে যাবো।
__হুম, বলে নিশু বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।
__মেয়েটা যে কি করে না করে আল্লাই ভালো জানে এতো করে বললাম তাড়াতাড়ি সব গুছিয়ে নিতে তা নাকে কথায় গিয়ে আড্ডা দিচ্ছে কথা গুলো বলতে বলতে নিশিতার মা সব কিছু নিজেই গুছিয়ে নিচ্ছে।
__সবাই মিলে নিশিতার মামার বাড়ি পৌছালো।
তাদের দেখে সবাই অনেক খুশি।নিশিতার চার মামা তিন জনেই বিয়ে করেছে সবার ঘরের ছেলে মেয়ে গুলো নিশিতা কে দেখে অনেক খুশি।নিশিতা তাদের সবার বড়।নিশিতার মা তাদের একটাই বোন।নিশিতাও তাদের একমাত্র ভাগ্নি তাই সবার আদরের নিশিতা।
ছোটোমামা-নিশু তুই এসে গেছিস আমি কিন্তু তোর অপেক্ষায় ছিলাম।তুই ছাড়া বিয়ে বলে মনেই হবে না।
সবাই কত খুশি কিন্তু নিশিতা মন পড়ে আছে সেই অনিকের মাঝে।
__বড়মামী-নিশু যাও ফ্রেস হয়ে আসো কত কাজ বাকি আছে তোমার মামাতো তোমাকে ছাড়া কোনো কাজই করবে না।
নিশু মাথা নাড়িয়ে রুমে চলে গেলো ফ্রেস হতে।
ফ্রেস হয়ে এসে ভাবলো অনিককে একটা ফোন দিই না হলে ও চিন্তা করবে।
__নিশু অনিকের সাথে কথা বলা শেষ করেই রুম থেকে বাহিরে যাওয়ার সময় তার মামাতো বোন নিরা তার হাত ধরে বললো আপু তুমি কার সাথে কথা বলছিলে?
নিশু নিরার গালে কিস করে বললো আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে।আপু নাকি অন্য কিছু? নিশু নিরার কথা শুনে অবাক। কারণ নিরার এখন ৬ বছর এখুনি সে এতো কিছু বুজে। পাকামি করা হচ্ছে আমার সাথে।
__মেজো মামী এসে নিশুকে জড়িয়ে ধরে বললো কতো দিন পর তোকে দেখলাম।কেমন আছিস তুই।তখন রান্না ঘরে ছিলাম তাই তোর সাথে কথা বলতে পারি নাই।
নিশু-আমি তো ভালো আছি।কিন্তু জানো নিরার কি পাকা পাকা কথা বলে।
নিরা-আপু আমি কিন্তু এখন বলে দিবো তুমি যে তখন কি করছিলা।
দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা! বলেই নিশু আর নিরা দুজনেই দৌঁড়াচ্ছে।

চলবে,,,,,,