এক দৃষ্টিতে সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটি কে দেখছি তার চোখেও পানি, চোখে তো পানি থাকবেই কারন সামনে যে দাড়িয়ে আছে সে তো আর কেউ না আমার পাগলী বান্ধবী রিয়া, দৌড়ে গিয়ে ওকে জাপটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম, দুজনেই কাঁদছি এতো দিনের জমানো সব কষ্ট উড়িয়ে দিচ্ছি হঠাৎ মেঘা আপু এসে দুজনকে ছাড়িয়ে বললো চারদিকে থাকিয়ে দেখতো, আমি চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলাম এয়ারপোর্ট এ থাকা অনেক মানুষ আমাদের দিকে অভাক হয়ে থাকিয়ে আছে, থাকুক তাতে আমাদের কি এতো দিন পর আমার হারিয়ে যাওয়া বান্ধবী কে না না বান্ধবী বললে ভুল হবে রিয়া তো আমার বোন, আমার বোন কে ফিরে পেয়েছি মানুষ হাসুক বা অভাক হউক তাতে আমার কি
রিয়া এসে আমাকে জরিয়ে ধরে বললো
–কোথায় হারিয়ে গেছিলি
–আমি হারায়নি ভাগ্য আমাকে তোদের কাছ থেকে আলাদা করে দিয়েছিল
–আচ্ছা এসব পরে শুনবো খিদা লেগেছে চল পাশের কোনো রেস্টুরেন্টে যাই
–হুম
‘বান্ধবী কে পেয়ে আমার কথা ভুলেই গেছ’ কথাটা শুনে সামনে থাকালাম রিয়ার স্বামী পিয়াস কে দেখে রিয়া আমি দুজনেই লজ্জা পেলাম, পিয়াসের সাথে একটু কথা বলে সবাই পাশের একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম
সবাই রেস্টুরেন্টে বসে আছি হঠাৎ মনে পরলো আকাশ কিভাবে রিয়া কে পেলো
আমি: আকাশ তুমি রিয়া কে কোথায় পেলে
আকাশ: এয়ারপোর্ট একটা কাজে এসেছিলাম হঠাৎ রিয়া কে দেখতে পাই ভালো করে চিনি না বিয়ের দিন দেখেছিলাম মাত্র পরে কথা বলে সিউড় হলাম এটাই তোমার বান্ধবী রিয়া
পিয়াস: তমা তোমার বান্ধবী এই দুইটা বছর আমাকে বাংলাদেশে আসবে বলে পাগল বানিয়ে দিয়েছে কাজের জন্য আসতে পারিনি কিন্তু এই শেষ দুই মাসে ওর জিদের কাছে হার মানতে হলো, অনেক বার বলেছি দেশে গিয়ে কোথায় খুঁজবে কিন্তু ওর একটাই কথা সারা বাংলাদেশ খুঁজে তোমাকে বের করবে
রিয়া: দুই মাস আগে আমি যার খুঁজ পেয়েছি তার কথা যদি তমা কে না বলি আমার শান্তি লাগবে না এজন্যই দেশে এসেছি
আমি: কিসের খুঁজ পেয়েছিস
রিয়া: শ্রাবনের
নামটা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম বুকের মধ্যে কেমন যেন চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে, এই মানুষটা কে আমি কতো খুঁজেছি কতো কেঁদেছি মানুষটার জন্য
রিয়া: এই তমা কি হল তোর
আমি: হুম কিছু না
রিয়া: চুপ হয়ে আছিস যে
আমি: কোথায় পেলি ওকে
রিয়া: দুমাস আগে পিয়াস ফোনে কথা বলছিল আমি একটু শুনে ছিলাম কন্ঠটা পরিচিত মনে হয়েছিল তারপর পিয়াস কে জিজ্ঞেস করতেই ও বললো পিয়াসের ফ্রেন্ড শ্রাবন, তারপর শ্রাবনের পিক দেখে সিউর হলাম
আমি: ওহ
রিয়া: শ্রাবনের সাথে আমার কথা হয়েছে সবকিছু বলেছি ওকে ও তোর সাথে দেখা করতে চায়
আমি: দেখা করে আর কি হবে ও তো এখন আর আমায় ভালোবাসে না
রিয়া: কে বলেছে বাসে না দেখা কর আগে সব রহস্য বেড়িয়ে আসবে
আমি: কিসের রহস্য
রিয়া: অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে যা আমরা দুজন জানতাম না
আমি: শ্রাবন এখন কোথায় আছে
রিয়া: কক্সবাজার পুলিশে চাকরি করে আগামীকাল তোর সাথে দেখা করতে আসবে
আমি: (তারমানে কক্সবাজার আমি ওকেই দেখেছিলাম ভুল দেখিনি)
রিয়া: কিরে কি ভাবছিস
আমি: কিছুনা
রিয়া: এখন বাসায় চল
আমি: হুম
সবাইকে নিয়ে আমার বাসায় চলে আসলাম, এসে রাতের রান্না করে সবাই খেয়ে নিলাম, সবাই খুব ক্লান্ত তাই ঘুমিয়ে পরলো কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই, অপেক্ষা করছি আগামীকালের কখন সেই মানুষটাকে দেখতে পারবো, মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে শ্রাবন কি আমায় এখনো ভালোবাসে…? শ্রাবনের মা কি আমাকে মেনে নিবে….? রিয়া কিসের রহস্যের কথা বললো….?
এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানিনা
সকালে রিয়ার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো
–কিরে তমা তোর শরীরে এতো জ্বর আসলো কিভাবে
–জানিনা
–জ্বরে তো শরীর পুরে যাচ্ছে এই অবস্থায় শ্রাবনের সাথে দেখা করতে যাবি কিভাবে
–কিছু হবে না পারবো
–যেতে হবে না আমি বাসার ঠিকানা বলে দিচ্ছি শ্রাবনকে ও এখানেই আসবে
–হুম
নিজেও বুঝলাম না এতো জ্বর আসলো কিভাবে রাতে তো ভালই ছিলাম, বিছানায় শুয়ে রইলাম রিয়া আর মেঘা আপু রান্নাবান্না করলো, সবাই খেতে বসেছি কিন্তু আমার গলা দিয়ে খাবার নামছে না, অপেক্ষার প্রহর যেন কাটছেই না বার বার মনে পরছে শ্রাবনকে কবে দেখতে পাবো, না খেয়েই উঠে চলে আসলাম
রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখি এতিমখানা থেকে রহিম চাচার ফোন এসেছিল, কল ব্যাক করলাম
–হ্যা চাচা
–কিরে মা দুদিন ধরে এতিমখানায় আসো না যে
–একটু ব্যস্ত আছি বাসায় মেহমান আর জ্বরও উঠেছে তুমি ওই দিকটা একটু সামলে নাও
–ঠিক আছে সুস্থ হয়েই এসো
–আচ্ছা
ফোন রেখে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম, দূর আকাশের দিকে থাকিয়ে ভাবছি কি হবে আমার ভবিষ্যৎ শ্রাবনকে কি ফিরে পাবো ও কি এখনো আমায় ভালোবাসে হঠাৎ কাধের উপর কারো হাতের ছোঁয়ায় কেঁপে উঠলাম এই স্পর্শটা আমার খুব চেনা, বুকের মধ্যে যেন কেউ হাতুড়ি পিটাচ্ছে আস্তে আস্তে পিছন ফিরে থাকালাম, এক দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছি শ্রাবনের দিকে, হ্যা শ্রাবন ফিরে এসেছে, দুজন দুজনের চোখের দিকে থাকিয়ে আছি, আমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে গালে নেমে আসতেই ও দুহাত দিয়ে আলতো করে মুছে দিল, আমার নাকের সাথে ওর নাকটা লাগিয়ে বললো আর তোমার চোখের পানি ঝরাতে চাই না আগের মতো ভালোবাস তো পাগলী…….
দুইটা বছর অনেক কষ্টে পার করলাম এতো খুঁজার পর শেষ পর্যন্ত আকাশ আর মেঘা আপু কে খুঁজে পেলাম অবশ্য আমি খুঁজে পাইনি ওরাই আমাকে খুঁজে বের করেছে, ওদের যেহেতু পেয়েছি সবাইকে খুঁজে পাবো ইনশাল্লাহ
সকাল বেলা বারান্দায় বসে কপি খেতে খেতে এসব ভাবছি হঠাৎ মেসেজ টোন বেজে উঠলো, ওপেন করে দেখি অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে “খুব ভালো আছিস তাই না কিন্তু বেশি দিন আর ভালো থাকবি না তুই আমার সব প্লেন মাটি করে দিয়েছিস আমি তোর জীবন নষ্ট করে দিব”
মেসেজটা পড়ে খুব অভাক হলাম আমি আবার কবে কার প্লেন মাটি করলাম নাম্বারও তো চিনি না কে হতে পারে যে এভাবে আমাকে হুমকি দিলো
মেসেজটার কথা ভাবতে ভাবতে এতিমখানায় চলে আসলাম, সারাদিন মেসেজটার কথা মাথা থেকে সরাতে পারিনি, আমার জীবন তো এমনিতেই কষ্টে ভরা এখন আবার কে আসছে জীবন নিয়ে খেলতে কে জানে
রাতে খেতে বসছি তখন আবার মেসেজ টোন বেজে উঠলো ওপেন করে দেখি সকালের নাম্বার “আমার কি ক্ষতি করেছিস বুঝতে পারছিস না তাই তো আমিই বলে দিচ্ছি তোর বাবার একটা জমি আছে যেটার কথা তোরা কেউ জানিস না জমিটা তোর নামে আমার ওই জমিটা চাই”
মেসেজটা পড়ে আশ্চর্য হলাম আমার নামে জমি আছে অথচ আমিই জানিনা আব্বু তো কখনো এই জমির কথা বলেননি আর এই জমিতে কি এমন আছে যে এই লোকটার জমিটা চাই-ই-চাই, আচ্ছা লোকটা কে হতে পারে আম্মু নাকি অন্য কেউ…? মাথায় আসছে না আব্বুকে খুঁজে পেলে হয়তো জানতে পারতাম কিন্তু আব্বুকে পাবো কোথায়
সকালে কারো ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো নাম্বার না দেখেই রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–আমার ঘুম হারাম করে খুব আরামে ঘুমাচ্ছিস তোর সব আরাম আমি নষ্ট করে দিব
–কে আপনি
ফোনটা কেটে দিল কন্ঠটা কেমন যেন চিনাচিনা লাগছে কিন্তু মনে করতে পারছি না, অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না
ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করেই এতিমখানায় চলে আসলাম, হঠাৎ মেঘা আপু ফোন দিলেন
–হ্যালো
–তমা আকাশের ট্রান্সফার হয়েছে তোমার বাসা থেকে বেশি দূরে না আমরা ভাবছি তোমার বাসার কাছেই একটা বাসা নিব
–ভালো হবে একা একা আর ভালো লাগে না
–আগামীকালই আমরা আসছি
–আচ্ছা
যাক শেষ পর্যন্ত একাকীত্বটা কিছু কাটবে, মেঘা আপুদের তো পাশে পাব কিন্তু আব্বুকে কোথায় খুঁজব, আব্বুর কথা মনে পরতেই খুব কান্না পেলো আমার সাথেই কেন এতোসব হলো সবাইকে হারালাম
রাতে বারান্দায় বসে বসে ভাবছি দুবছর আগে কক্সবাজার শ্রাবনকে দেখেছিলাম কিন্তু পরে আর খুঁজে পাইনি হয়তো ও এখন কক্সবাজারেই আছে, ওকে খুঁজতে কি কক্সবাজার যাবো কিন্তু গিয়ে কি লাভ আমি এখনো ওকে ভালোবাসি কিন্তু ও তো আর আমায় ভালোবাসে না, খুঁজে পাওয়ার পর যদি ও বলে আমায় ভালোবাসে না তখন কি করবো আর আমি তো এখন ডিভোর্সি না শ্রাবন আমায় মেনে নিবে না শ্রাবনের মা মেনে নিবে তারচেয়ে খুঁজে না পাওয়াটাই ভাল, এসব ভাবতে ভাবতে অনেক রাত করে ঘুমালাম
সকালে কলিংবেল এর শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো, দরজা খুলে তো আমি অভাক এতো সকালে মেঘা আপুরা
আকাশ: অভাক হচ্ছ কেন
আমি: এতো সকালে তোমরা
মেঘা আপু: ঘড়ি দেখেছ (কথাটা শুনে দেয়ালে ঘড়ির দিকে থাকালাম এগারোটা বাজে দেখে নিজেই লজ্জা পেলাম)
আকাশ: অবশ্যই রাতে দেরি করে ঘুমিয়েছ
আমি: হুম
মেঘা আপু: মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলে না যে
আমি: ওহ উনি কোথায়
আকাশ: গাড়িতে
আমি গিয়ে আন্টিকে (আকাশের মা) সালাম করে বাসায় নিয়ে আসলাম, নতুন বাসা না পাওয়া পর্যন্ত ওরা আমার কাছেই থাকবে তাই অনেক ভালো লাগছে
আজ আর এতিমখানায় গেলাম না মেঘা আপু আর আমি মিলে দুপুরের রান্না করলাম
দুপুরে সবাই মিলে খেতে বসছি তখন মেসেজ টোন বেজে উঠলো সেই নাম্বার থেকেই মেসেজ এসেছে “কিরে আকাশ কে ডিভোর্স দিয়ে এখন আবার তোর বাসায় ওদের জায়গা দিলি আকাশ কে আবার প্রয়োজন নাকি” মেসেজটা পরে খুব রাগ উঠলো কিন্তু ভেবে পেলাম না কে হতে পারে যে আমার সব কিছুতে নজর রাখছে
আকাশ: তমা কি হয়েছে
আমি: না তেমন কিছু না
আকাশ: তোমাকে চিন্তিত লাগছে কেন
মোবাইলটা আকাশের কাছে দিয়ে সব মেসেজ পড়তে বললাম
আকাশ: কে হতে পারে
আমি: জানিনা
আকাশ: আচ্ছা তুমি টেনশন করো না আমি একটু এয়ারপোর্ট যাবো এসে ফোন করে দেখবো কে এইটা
আমি: হুম
বিকেলে মেঘা আপু আর আমি বারান্দায় বসে গল্প করছি হঠাৎ আকাশ ফোন দিল
আমি: হ্যালো
–তমা তাড়াতাড়ি এয়ারপোর্ট আস
–কেন
–তোমার জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ আছে
–বলবা তো কি
–এসে নিজের চোখেই দেখ
আর কিছু না ভেবে মেঘা আপু কে নিয়ে এয়ারপোর্ট যাওয়ার জন্য বেড়িয়ে পরলাম, গাড়িতে বসে আছি রাস্তা যেন শেষ হচ্ছে না, জানিনা আমার জন্য কি সারপ্রাইজ আছে
এয়ারপোর্ট এসে পৌছেঁই আকাশ কে ফোন দিলাম, ও এসে আমাদের ওর সাথে যেতে বললো, আকাশের পিছন পিছন যাচ্ছি আর চারদিকে চোখ বুলাচ্ছি কি সারপ্রাইজ তা খুঁজছি হঠাৎ একটা জায়গায় গিয়ে আমার চোখ স্থির হয়ে গেলো, আমি স্বপ্ন দেখছি নাকি বাস্তব বুঝতে পারছি না, অভাক হয়ে সামনে থাকিয়ে আছি চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি ঝরতেছে……
রাস্তায় হাটছি কোথায় যাবো জানিনা, সন্ধ্যা হয়ে গেছে অনেক আগেই এই ব্যাস্ত নগরী অন্ধকার হতে শুরু করেছে হঠাৎ চোখ পরলো রাস্তার অপর পাশে একটা ৩-৪ বছরের বাচ্চা একা দারিয়ে কাঁদতেছে, এগিয়ে গিয়ে বাচ্চাটি কে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলাম কোনো কথা না বলে শুধু কাঁদছে
–বাচ্চাটি এতিমখানা থেকে চলে এসেছে (কথাটা শুনে ফিছনে থাকালাম একজন বৃদ্ধ লোক দাড়িয়ে আছেন)
–আপনি
–আমি পাশের এতিমখানার ম্যানেজার এই বাচ্চাটি এতিমখানা থেকে হারিয়ে গেছিল সকালে সারাদিন খুঁজে এখানে পেলাম
–ওহ
–আপনি কোথায় যাবেন
–জানিনা
–মানে
–বাসা থেকে চলে এসেছি কোথায় যাবো জানিনা
–আপনি চাইলে আপাদত আমাদের এতিমখানায় যেতে পারেন ওখানে আপনার বয়সী আরো দুইটা মেয়ে আছে ওরা বাচ্চাদের দেখাশুনা করে
–(কি করবো ভেবে পাচ্ছি না যাবো নাকি যাবো না, রাতের বেলা রাস্তায় থাকার চেয়ে এতিমখানায় থাকা অনেক ভালো)
–কি ভাবছেন
–যাবো চলেন
–হুম চলেন
–আমি আপনার মেয়ের বয়সী আমাকে তুমি করেই বলবেন চাইলে তুই করেও বলতে পারেন
–আমার নাম রহিম সবাই রহিম চাচা বলেই ডাকে তুমিও আজ থেকে এই নামেই ডেকো
–ঠিক আছে
তারপর চলে এলাম এতিমখানায় রিয়া আর আকাশ কে ফোনে সব জানালাম, আর আব্বু কে ফোন করে জানালাম টেনশন না করতে আমি ভালই আছি
সেই থেকে হয়ে গেলাম এই এতিমখানার একজন, এখন আমিও বাচ্চাদের দেখাশুনা করি আর এতিমখানায় থাকি, একটা সপ্তাহ ভালই কাটলো আব্বু রাগ করলেও আমি ভালো আছি শুনে আর ফিরে যাবার কথা বললেন না, হয়তো আব্বুও বুঝেছেন ওই বাসায় থাকার চেয়ে এখানে থাকা অনেক ভালো
এতিমখানার বাচ্চাদের কিছু ড্রেস কিনার জন্য রহিম চাচার সাথে মার্কেটে আসলাম হঠাৎ একটা ছিন্তাইকারী এসে হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দিলো, ব্যাগে কিছু টাকা আর ফোনটা ছিল, কি করবো ফোন নাহয় কিনলাম কিন্তু সিমের কাগজপত্র তো আব্বুর নামে আব্বুকে ছাড়া সিম তুলবো কিভাবে, নতুন সিম কিনলে সবার নাম্বার পাবো কোথায়
এসব চিন্তা করতে করতে এতিমখানায় ফিরে আসলাম, রহিম চাচার ফোন থেকে আব্বুকে ফোন দিলাম কিন্তু বন্ধ, এখন কি করবো আবার বাসায় যাবো গেলেও তো আগামীকাল যেতে হবে এখান থেকে বাসা অনেক দূর ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাবে, সব ভেবে ঠিক করলাম সকালে বাসায় যাবো
সকালে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম, রিয়াটা হয়তো ফোন অফ পেয়ে অনেক টেনশন করছে, বাসার সামনে যেতেই থমকে দাঁড়ালাম বাসায় তালা ঝুলানো, তাহলে কি আব্বুরা অন্য কোথাও চলে গেছে নাকি কোথাও বেড়াতে গেছে কিন্তু বেড়াতে কোথায় যাবে
একরাশ চিন্তা নিয়ে এতিমখানায় ফিরে আসলাম, আকাশের নাম্বারটাও নেই যে ওকে জিজ্ঞেস করবো আব্বু অফিসে কিনা আকাশের নতুন বাসাও চিনি না
এভাবে কেটে গেলো পাঁচটা দিন প্রতিদিন বাসায় গিয়েছি কিন্তু তালা ঝুলানো পেয়েছি
আজ আবার যাচ্ছি বাসায়, মনে হাজার প্রশ্ন আজ কি আব্বুকে পাবো…? আব্বুরা কোথায় যেতে পারেন…? নাকি আব্বুর কোনো বিপদ হলো…? আব্বুকে কি হারিয়ে ফেলেছি আমি…?
এসব চিন্তা করতে করতে বাসার সামনে আসলাম, না আজ তালা ঝুলানো নেই অনেক খুশি মনে কলিংবেল বাজালাম কিন্তু দরজা খুললেন একজন মহিলা
–কে মা তুমি
–আপনি এই বাসায়
–এইটা আমাদেরই বাসা
–এই বাসায় তো…
–ওহ তুমি এই বাসার মালিকের কথা বলতে চাইছ
–হ্যা আগে তো উনারা থাকতেন
–হ্যা পাঁচদিন হলো বাসাটা আমরা কিনে নিয়েছি
–কিনে নিয়েছেন মানে তাহলে উনারা কোথায়
–তাতো জানিনা মা কিন্তু তুমি কে
মহিলার আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দিলাম না দিব কিভাবে আমার মুখ দিয়ে যে কোনো কথাই বের হচ্ছে না, আমি তো আব্বুকে হারিয়ে ফেলছি কোথায় খুঁজবো এখন
এতিমখানায় ফিরে এসে আম্মুর ছবিটা বুকে জরিয়ে অনেক কাঁদলাম, আম্মু তো সেই ছোট বেলায় আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেছেন এখন আব্বুকেও হারিয়ে ফেলেছি আমি বাঁচবো কি নিয়ে এখন….?
এভাবেই কেটে গেলো দুইটা বছর, এই দুইটা বছর আমি আব্বুকে পাগলের মতো রাস্তায় রাস্তায় খুঁজেছি সেই বাসায় অনেক বার গিয়েছি কিন্তু আব্বুকে ফিরে পাইনি, আকাশ রিয়া ওদের ও খুঁজে পাইনি,
সেই থেকে এতিমখানায় বাচ্চাদের দেখাশুনা করতে শুরু করি, আমার পড়ালেখা আবার শুরু করি, এতিমখানার পাশেই একটা ছোট বাসা ভাড়া নিয়েছি ওখানেই একা একা থাকি আর দুইটা টিউশনি করি এতেই আমার জীবন চলে যাচ্ছে, থেমে নেই আমার জীবন থেমে নেই আমার আপন দুইটা মানুষ আব্বু আর রিয়াকে খুঁজা, সুযোগ পেলেই ছুটে যাই সেই বাসায় রাস্তায় রাস্তায় পাগলের মতো খুঁজি আমার আব্বু আর রিয়া কে
জানিনা কখনো ওদের ফিরে পাবো কিনা আবার দেখা হবে কিনা আমার সেই চিরচেনা মানুষ গুলোর সাথে আর কখনো পাবো কিনা সুখের ছোঁয়া……
–মা সেই সকাল থেকে এখানে বসে কি করছ (কথাটা শুনে বাস্তবে ফিরে আসলাম, ডায়েরিটা বন্ধ করে ফিছনে থাকালাম রহিম চাচা এসেছেন)
–চাচা কয়টা বাজে
–দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে মা
–এতো সময় ধরে এখানে বসে আছি আমাকে ডাকোনি কেন
–কয়েকবার এসেছি ডাকার জন্য এসে দেখি তুমি খুব মনোযোগ দিয়ে ডায়েরি তে কি যেন লিখছ তাই আর ডাকিনি
–ওহ
–তোমার সাথে দেখা করার জন্য দুজন লোক এসেছেন
–আমার সাথে দেখা করার জন্য (খুব অভাক হলাম কারন আমার তো আপন বলতে কেউ নেই আমি তো এখন খুব একা, কে আসবে দেখা করতে)
–হ্যা মা উনারা এসেছেন প্রায় দুঘণ্টা হলো
–এতক্ষণ ডাকোনি কেন
–ওনারা নিষেধ করেছিলেন
–নিষেধ করেছিল, ঠিক আছে চলো
ডায়েরিটা ব্যাগে রেখে চাচার সাথে হাটতে শুরু করলাম ভেবে পাচ্ছি না কে এসেছে, হঠাৎ চেয়ে দেখি একটা অন্ধকার রোমে এসে পড়েছি, চাচা কে বললাম এই রোম এতো অন্ধকার কেন…? সাথে সাথে আলো জ্বলে উঠলো, আমি ভূত দেখার মতো চমকে গেছি সামনের দুইটা মানুষের দিকে থাকিয়ে আছি চোখ থেকে পানি ঝরছে হ্যা সামনে দাঁড়ানো দুইটা মানুষ আমার আপন মানুষ আকাশ আর মেঘা আপু, ওদের যখন পেয়েছি আব্বুকেও পাবো
মেঘা আপু আর আকাশ একসাথে বলে উঠলো “HAPPY BIRTHDAY” আবারো চমকে উঠলাম কারন আজ আমার বার্থডে অথচ আমিই জানিনা জানবো কিভাবে যে মানুষটা তিন দিন আগে উইশ করতো সেই মানুষটাই তো জীবনে নেই জানিনা কোথায় আছে আমাকে মনে রেখেছে নাকি ভুলে গেছে
মেঘা আপু: এই পাগলী কাঁদছ কেন (এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো)
আমি: তোমাদের এতোদিন পর দেখেছি তো তাই
আকাশ: তোমাকে কতো খুঁজেছি পাইনি, এই এতিমখানার নাম ঠিকানা কিছুই জানতাম না অনেক গুলো এতিমখানা খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত এখানে এসে পেলাম
আমি: ভাগ্য আমার সাথে খুব সুন্দর খেলা করতেছে তো তাই খুঁজে পাওনি
মেঘা আপু: কি হয়েছিল তোমার আর হঠাৎ করে ফোন অফ করে ফেলেছ কেন
আমি: যেদিন থেকে ফোন অফ পেয়েছ সেদিন আমার ফোন ছিন্তাই হয় সেই থেকে তোমাদের সবাইকে আমি হারিয়ে ফেলেছি অনেক খুঁজেছি কাউকে পাইনি
আকাশ: কেন তোমার আব্বুর সাথে কথা হয় না
আমি: না তো আমি আরো ভাবলাম তুমি আব্বুর খুজ দিতে পারবা
আকাশ: তোমার সাথে ডিভোর্স হবার পর উনি আর অফিসে যাননি খুঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি উনি নাকি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন
আমি: চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বাসা বিক্রি করে দিয়েছেন তাহলে এখন কোথায় আছেন
আকাশ: প্লিজ মন খারাপ করো না একদিন সবাইকে খুঁজে পাইবা
আমি: হুম
সত্যিই কি আব্বুকে খুঁজে পাবো রিয়া কে খুঁজে পাবো…?
রিয়া তো বাহিরে চলে গেছিল দেশে কি আসছে…?
শ্রাবন কে কি ফিরে পাবো পেলেই বা লাভ কি ও তো আর আমাকে ভালোবাসে না তাছাড়া আমি এখন বিবাহিতা ডিভোর্সি মেয়ে ও কি আমাকে আবার মেনে নিবে….?
পাবো কি কখনো সুখের ছোঁয়া…?
পারবো কি সবাই কে নিয়ে আমার এলোমেলো জীবনটা গুছাতে…?
জানিনা তাদের ফিরে পাবো কিনা, আর কখনো দেখা হবে কিনা, খুঁজে যাবো তাদের সবসময় অপেক্ষা করে যাবো অনন্তকাল……
সমাপ্ত?
(গল্পটি কাল্পনিক ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন?
“জীবনের ডায়েরি ২” লিখবো খুব শীঘ্রই?
ধৈর্য নিয়ে গল্পটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ, “জীবনের ডায়েরি ২” পড়ার জন্য সাথেই থাকুন?)
–উনি ঘুমাচ্ছেন তাই তো এই সুযোগে আসছি (বলেই আমার কাছে আসতে শুরু করলেন)
মা বলে জোরে চিৎকার দিলাম সাথে সাথে মা সহ সব কাজের লোক আসলো
মা: কি হয়েছে
আমি: (এখন কি বলি এই কথা বললে মা কষ্ট পাবেন আর কাজের লোকের সামনে আমারই সম্মান যাবে)
মা: চুপ হয়ে আছ কেন কি হয়েছে এমন ভাবে চিৎকার দিলা কেন
আমি: মা ওখানে তেলাপোকা ছিল তাই ভয়ে চিৎকার দিয়েছি
মা: পাগলী মেয়ে তেলাপোকা দেখে ভয় পাবার কি আছে ঘুমিয়ে পড়
আমি: মা আমার ভয় করছে নাফিজা আমার কাছে ঘুমাক
মা: ঠিক আছে
সবাই চলে গেলো নাফিজা আর আমি এসে শুয়ে পরলাম
নাফিজা: আপু তুমি কি সত্যি তেলাপোকা দেখে ভয় পেয়েছ
–হুম
–আমার কাছে লুকিয়ে লাভ নেই আমি বুঝতে পেরেছি কারন তোমার রোমে এসে রাকিব কে দেখেছি
–হুম
–এই খচ্চর খালাম্মা কে ভয় পায় না আকাশ ভাই কে একটু ভয় পায় তুমি বরং তোমাদের বাসায় চলে যাও নাহলে অনেক বড় বিপদ হতে পারে
–হুম কালকেই চলে যাবো
–হুম
–আচ্ছা তুমি তো কথা খুব সুন্দর ভাবে বলো মনে হয় শিক্ষিত বাসায় কাজ কর কেন
–একদিন আমাদের সব ছিল আমি যখন ক্লাস টেনে পরি তখন বাবা মারা যান, চাচা সব সম্পত্তি দখল করে নেন এতে মা অসুস্থ হয়ে পরেন তাই মায়ের চিকিৎসা করানোর জন্য বাসায় কাজ করি
–অন্য কাজও তো করতে পারতে
–এই সমাজ খুব নিষ্টুর যেখানে গিয়েছি সবাই শুধু লোভাতুর চোখে থাকিয়েছে শেষ পর্যন্ত এই বাসায় ঠিকানা হলো খালাম্মার জন্য
–হুম
সকালে আকাশ কে ফোন করে সব বললাম ও মা কে ফোনে কি যেন বললো মা এসে বললেন আমাদের বাসায় চলে যেতে, দুপুরে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে একাই বাসায় চলে আসলাম, আম্মু অনেক বার জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে উনার সাথে কোনো কথা বললাম না, তুলি এসে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে কিছু দিন থাকবো বলেছি
রাতে রিয়া ফোন দিলো ওকে সব কথা বললাম, ও আকাশদের বাসায় যেতে নিষেধ করলো
দেখতে দেখতে দুই মাস কেটে গেলো, আমি আকাশদের বাসায় যাইনি আমাদের বাসাতেই আছি, রিয়া আকাশ মেঘা আপু আব্বু সবার সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখলাম, আকাশ একটা বাসা ভাড়া নিয়েছে এখন শুধু ডিভোর্স পেপার এর অপেক্ষা
আজ বিয়ের ছয়মাস পূর্ন হয়েছে, ডিভোর্স পেপার চলে এসেছে, আকাশ ফোন করে উকিলের কাছে যেতে বললো
আমি আব্বুকে ফোন করে বললাম আম্মুকে সাথে নিয়ে বিকেলে যেন আকাশদের বাসায় আসেন, আমি রেডি হয়ে আকাশের দেওয়া ঠিকানায় উকিলের বাসায় গেলাম, গিয়ে দেখি সেখানে আকাশ মেঘা আপু আর মেঘা আপুর আব্বু আম্মু আগেই চলে এসেছেন
আঙ্কেল: কেমন আছ মা
আমি: জ্বী ভালো, আপনারা ভালো আছেন
আন্টি: তুমি যে কাজ করতে যাচ্ছ নিজের মেয়ের কথা ভেবে ভালো লাগছে কিন্তু তোমার কথা ভেবে….
আমি: আন্টি আমি তো খুশি হয়ে ডিভোর্স দিচ্ছি আপনারা ভয় পাচ্ছেন কেন
আঙ্কেল: সত্যি তো মা তুমি খুশি হয়ে দিচ্ছ
আমি: হ্যা আপনারা ভয় পাবেন না
আন্টি: কিন্তু তোমার জীবনটা যে অনিশ্চিত হয়ে যাবে
আমি: আল্লাহ আছেন তো
আঙ্কেল: আমি বুঝতে পারছি না নিজের সুখ কেন বিসর্জন দিচ্ছ মা
আমি: এই সংসারে আমি সুখী হবো না বরং ওদের বিয়ে হলে ওরা সুখী হবে আর তা দেখে আমার ভালো লাগবে প্লিজ আপনারা বাধা দিবেন না
আন্টি: ঠিক আছে মা তোমার যা ভালো মনে হয় করো
তারপর আকাশ আমি দুজন ডিভোর্স পেপারে সাইন করলাম, এখানের জামেলা শেষ করে কাজি অফিসে গেলাম, তারপর মেঘা আপুর আব্বু আম্মু আর আমার সাক্ষীতে ওদের বিয়েটা হয়ে গেলো, সব জামেলা শেষ করতে বিকেল হয়ে গেলো, একটা ট্যাক্সি নিয়ে আকাশদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম
গাড়িতে বসে আছি আঙ্কেল আন্টি চিন্তা করছেন আমার কি হবে আর আমি ভাবছি শ্রাবনের সাথে বিয়েটা হলে আজ এতো কিছু হতো না, দুজন কতো সুখে থাকতাম আমি হতাম পৃথিবীর সেরা ভাগ্যবতী মেয়ে, হঠাৎ আকাশ আর মেঘা আপুর দিকে চোখ পরলো দুজন মন খুলে হাসছে সত্যি দুজন কে খুব সুন্দর মানিয়েছে, মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে কোনো পাপ করেছি কিন্তু ওদের হাসি দেখে মনে হচ্ছে নাহ কোনো ভুল করিনি দুইটা আত্মা কে এক করে দিয়েছি পাপ হবে কেন
গাড়ি বাসার সামনে এসে থামলো, বাসার ভিতরে ঢুকতে ভয় হচ্ছে বুক ধুকধুক করছে আব্বু মানবেন কিনা ভাবছি তখন রিয়ার ফোন আসলো
–হ্যালো
–কিরে কি করলি
–সব কাজ শেষ বাসায় এসেছি এখন সবাইকে মানাতে পারলেই হলো
–তোর কথা ভেবে এতো দিন না করেছি কিন্তু কাজটা যেহেতু করে ফেলেছিস ভয় পাস না সবাইকে বুঝিয়ে বল আর ভালোবাসার মানুষদের মিলিয়ে দেওয়া ভুল কিছু না
–হুম দেখি কি হয়
–হুম
ফোন রেখে ওদের সাথে নিয়ে বাসায় ঢুকলাম, আব্বু আম্মু রাকিব আকাশের মা সবাই ড্রয়িংরুমে বসা, আকাশকে বর সাজে আর মেঘা আপু কে বউ সাজে দেখেই সবাই বসা থেকে অভাক হয়ে দাড়িয়ে গেলেন
আব্বু: তমা এসব কি
আমি: আব্বু তুমি শান্ত হও বসো আমাদের বসতে দাও সব বলছি
আব্বু: হুম
আম্মু: ওদের বর বউ সাজিয়েছিস কেন
আমি: কারন ওরা বর বউ
মা: মানে
আকাশ আর মেঘা আপু কে সোফায় পাশাপাশি বসালাম, মেঘা আপুর আব্বু আম্মু একটু দূরে গিয়ে বসলেন আমি গিয়ে আব্বুর পাশে বসলাম
আব্বু: তমা কি হচ্ছে এসব
আমি: আব্বু মনে আছে একদিন তোমাকে বলেছিলাম আমি কোনো ভুল করলে ক্ষমা করবা কিনা
আব্বু: হ্যা
আমি: আমি আজ ভুল করেছি, তোমাদের কাছে ভুল মনে হতে পারে কিন্তু আমার কাছে ভুল মনে হচ্ছে না
আব্বু: কি করেছিস
আমি: আকাশকে ডিভোর্স দিয়েছি আর ওদের বিয়ে দিয়েছি
আম্মু: মানে কি
আমি: আম্মু আব্বুর সাথে কথা বলতে দাও তোমার সাথে পরে কথা বলবো
আম্মু: হুম
আমি: আব্বু আকাশ মেঘা আপুকে আর মেঘা আপু আকাশকে ভালবাসে তাই আমি ওদের বিয়ে দিয়েছি
আব্বু: কিন্তু তোর কি হবে
আমি: আমাকে নিয়ে ভেবো না সমাজের মানুষ খারাপ বলবে এটাই তো বলুক তাতে আমার কিছু আসে যায় না শুধু তুমি পাশে থেকো, আব্বু তুমি তো আম্মুকে ভালবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছিলে তুমি তো ভালোবাসার মর্ম বুঝ তুমিই বলো আকাশ যখন মেঘা আপুকে ভালবাসে তাহলে কি আমরা সংসার করে সুখী হতাম…? কখনোই হতাম না বরং চারটা জীবন নষ্ট হয়ে যেতো, এখন তো কারো জীবন নষ্ট হলো না আর ওরা দুজন দুজনকে ভালবাসে আজ ওদের বিয়ে হয়েছে দেখো ওরা কতো খুশি ওদের খুশিটা কি কিছুই না, আব্বু প্লিজ তুমি রাগ করো না অন্তত
আব্বু: একটা সত্যি কথা বলবি
আমি: কি
আব্বু: তুই কি কাউকে ভালবাসিস
আমি: (মৃদু হাসলাম)
আব্বু: কাউকে ভালো না বাসলে ভালোবাসার মর্ম বুঝা যায় না আর এতো বড় মহৎ কাজ করা যায় না
আমি: আমি ভেবেছিলাম অনেক বড় ভুল করেছি তুমি রাগ করবা কিন্তু তুমি রাগ করনি তাই আর কাউকে আমি পরোয়া করি না
আম্মু: তুমি ওর এতো বড় ভুল কে মহৎ কাজ বলছ
আব্বু: নিজের স্বামী কে অন্যের হাতে তুলে দিয়ে নিজের জীবন নষ্ট করা অনেক বড় ভুল জানি কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা হলো ও এমন দুজন কে মিলিয়ে দিয়েছে যারা একে অপরকে ভালোবাসে তাই এইটা মহৎ কাজও বলা যায়
আকাশের আম্মু: আমি যে কাজ পারিনি সে কাজ আপনার মেয়ে করেছে আমি তো এতক্ষণ ভয় পাচ্ছিলাম আপনি যদি রেগে যান কিন্তু আমার ধারনা ভুল আপনি যেমন বড় মনের মানুষ আপনার মেয়েও বড় মনের মানুষ
মেঘার আব্বু: আমি নিজেকে অপরাধী ভেবেছিলাম যে কিনা নিজের মেয়ের সুখের জন্য অন্যের মেয়ের সুখ কেড়ে নিয়েছি কিন্তু এখন অপরাধবোধ টা আর নেই আপনার মতো বাবা পাশে থাকলে যে কোনো মেয়ে এমন মহৎ কাজ করতে সাহস পাবে
আব্বু: আমার মেয়ে তো খুশি হয়েই কাজটা করেছে আপনারা অজতা নিজেকে অপরাধী ভাববেন না
আমি: এতো সহজে তোমরা মেনে নিবা ভাবিনি এখন বুঝেছি কাজটা করে ভুল করিনি
আকাশ আর মেঘা আপু এসে সবাইকে সালাম করলো, যাক বাঁচলাম অন্তত আব্বু আর আকাশের আম্মু তো রাগ করেনি, আম্মু আর রাকিব লুইচ্ছা লুচির মতো ফুলতেছে ফুলুক তাতে আমার কি, আমি দুইটা ভালোবাসার মানুষকে মিলিয়ে দিতে পেরেছি এটাই অনেক আমার জন্য তো কেউ ভালোবাসা হারায়নি
আকাশ: আম্মু আমি একটা বাসা নিয়েছি মেঘা আর তোমাকে নিয়ে ওখানেই উঠবো আর আজকেই আমরা চলে যাবো
আকাশের আম্মু: কিন্তু তোর মামা একা…
আকাশ: উনি একা কোথায় উনার কালো টাকার ব্যবসা তো সাথে আছেই
রাকিব লুইচ্ছার দিকে থাকিয়ে দেখলাম রাগে শুধু ফুলতেছে কিছু বলতেও পারতেছে না
সবাই বাসায় যাওয়ার জন্য বেরুলাম, আমরা আমাদের বাসায় আসলাম আর আকাশ ওদের নিয়ে আকাশের নতুন বাসায় গেলো
বাসায় এসে আর কেউ কথা বলিনি আম্মু যে খুব রেগে আছে বুঝা যাচ্ছে কিন্তু আম্মুর তো খুশি হবার কথা উনার সতিনের মেয়ের সংসার ভেঙ্গে গেছে উনি খুশি না হয়ে বরং রাগ হচ্ছেন কেন…?
রাতে রিয়া ফোন করলো, ওকে সব বললাম সবাই মেনে নিয়েছে শুনে রিয়াও খুশি হলো
হয়তো কিছুটা ভুল করেছি নিজের স্বামী কে অন্যের হাতে তুলে দিয়ে কিন্তু আমরা তো শুধু কাগজে কলমে স্বামী স্ত্রী, কখনো কেউ কাউকে মেনে নিতে পারতাম না কারন দুজনের মনটাই যে অন্য দুজন কে দেওয়া, দুইটা ভালোবাসার মানুষ কে মিলিয়ে দিতে পেরেছি এটা ভেবে অনেক ভালো লাগছে
সকালে আব্বু আম্মুর চেঁচামেচি শুনে ঘুম ভাঙ্গলো
আম্মু: ওই মেয়ে আমার বাসায় থাকতে পারবে না
আব্বু: এইটা আমার বাসা আমার মেয়ে এখানে থাকবে না তো কোথায় থাকবে
আম্মু: কোনো ডিভোর্সি মেয়ের জায়গা আমার বাসায় নেই নিজের পায়ে তো নিজে কুড়াল মেরেছে এখন আমার মেয়েটা কেও নষ্ট করবে
আব্বু: আমার মেয়ে কোনো অন্যায় করেনি আর ওকে এই বাসা থেকে বের করার কথা আর একবার ভাবলে বাসাটাই আমি ওর নামে লিখে দিব
আম্মু: কি তার মানে ওই অপায়া মেয়েই তোমার সব আমি আর আমার মেয়ে কিছুই না
আব্বু: আমি কি তা বলছি
আম্মু: বুঝেছি সব বুঝেছি ওই অপায়া টাই তোমার সব
আব্বু: বুঝলে ভালো
তারপর সব নীরব, জানি আম্মু আমাকে এই বাসায় থাকতে দিবে না কিন্তু কোথায় যাবো আমি, আমার তো যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই
এক সপ্তাহ কেটে গেলো আব্বু আম্মুর ঝগড়া সারাদিন লেগেই থাকে, আমাকে তাড়িয়ে দিবে এই ভয়ে আব্বু অফিসে যান না, এসব শুনতে আর ভালো লাগে না, আমার জন্য আব্বুকে রোজ রোজ কথা শুনতে হয় তারচেয়ে ভালো এই বাসা ছেড়ে চলে যাই, আল্লাহর দুনিয়ায় কোথাও তো একটু জায়গা হবে
সারাদিন ভেবে ঠিক করলাম এই বাসা থেকে চলেই যাবো অন্তত আব্বু একটু শান্তি পাবে
সন্ধ্যার সময় সবাই যার যার রোমে তখন কয়েকটা কাপড়চোপড়, আব্বুর দেয়া কিছু টাকা, হাতের ফোনটা আর আম্মুর ছবিটা নিয়ে বেরিয়ে পরলাম বাসা থেকে, আব্বুর জন্য একটা চিঠি লিখে রেখে আসলাম…
আব্বু,
আমাকে খুঁজো নাহ, জানিনা কোথায় যাচ্ছি তবে যেখানেই থাকি তোমার সাথে ফোনে যোগাযোগ করবো, রোজ রোজ আমি অপায়া অলক্ষী এসব শুনতে ভালো লাগে না আর তুমিও তো আমার জন্য এতো কিছু সহ্য করছ তাই বাসা থেকে চলে গেলাম, নিজেকে দোষী ভেবো না কপাল তো আমার খারাপ আম্মু আমাকে রেখে চলে গেছেন আজ আম্মু থাকলে এমন হতো না, প্লিজ আব্বু আমাকে খুঁজো না আমি সবসময় ফোনে যোগাযোগ রাখবো, ভালো থেক….
সকালে রিয়ার ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো
–কিরে তুই এতো সকালে
–সকাল না ১০টা বাজে
–আব্বু আমাকে ডাকেননি তো
–উনি ড্রয়িংরুমে বসা তোর মন খারাপ ঘুমাচ্ছিস তাই নাকি ডাকেননি
–ওহ
–ফ্রেশ হয়ে ছাদে আয় কথা আছে
–তুই যা আসছি
ফ্রেশ হয়ে দুই মগ কপি বানিয়ে ছাদে গেলাম, রিয়া দুলনায় বসে আছে
–কপি নে
–হুম বস
–কি কথা বল
–আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে
–ভালো তো বিয়ে করে নে
–কিন্তু
–কিন্তু আবার কি তোর তো কোনো পিছুটান নেই আমার মতো তো প্রেমের ফাদে পা দিসনি
–তা ঠিক কিন্তু ছেলে দুইমাস পর আমাকে নিয়ে বাহিরে চলে যাবো
–তো কি হয়েছে
–কি হয়েছে মানে তোর বিয়ে হয়েছে মাত্র এক মাস হলো দুমাস পর যদি আমি বাহিরে চলে যাই তুই তো একা হয়ে যাবি, তোর ডিভোর্স এর আর পাঁচ মাস বাকি আছে এই অবস্থায় তোকে একা রেখে আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না
–আমার জন্য বিয়ে ভেঙ্গে দিবি নাকি
–প্রয়োজন হলে তাই করবো
–পাগলামি করিস না তোর আম্মু আব্বু কষ্ট পাবেন আমি সব সামলিয়ে নিব তুই টেনশন করিস না
–তুই তো একটু তেই কেঁদে অস্থির হয়ে যাস সব সামলাবি কিভাবে
–আমি তো আর আকশের জন্য কাঁদবো না কাদি তো শ্রাবনের জন্য, ডিভোর্স হলেই ওদের বিয়ে দিয়ে সবাইকে বুঝিয়ে মাফ চেয়ে নিব
–হুম
–বিয়ে কবে
–আর নয়দিন আছে
–ছেলের নাম কি
–পিয়াস
–তোর বিয়েতে অনেক মজা করবো
–আমি করি তোর টেনশন আর তুই আছিস মজা করা নিয়ে
–একমাত্র তুই আর আব্বুই আমার আপন বাকি সবাই শুধু আমাকে নিয়ে খেলা করে
–সব ঠিক হয়ে যাবে, আচ্ছা বিয়েতে আকাশ আসবে তো
–বলে দেখবো
–হুম
নয়টা দিন খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলো, আজ রিয়ার বিয়ে, আব্বু আম্মু তুলি আকাশ আমি সবাই বিয়েতে এসেছি
বিয়ে ভালো ভাবেই হলো, রিয়াকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আমরাও বাসায় চলে আসলাম, আকাশও এসেছে বাসায়, রাতে বারান্দায় দাড়িয়ে আছি আকাশ আসলো
–তমা একটা কথা
–বলো
–আম্মু জিজ্ঞেস করছিল বাসায় কবে যাইবা
–আমি ওই বাসায় যাবো না
–আম্মু এসব জানলে খুব কষ্ট পাবেন তাছাড়া তোমার আব্বুকে কি বলবা
–জানিনা
–তুমি বাসায় চলো কথা দিচ্ছি তোমাকে বাসায় একা রেখে কোথাও যাবো না
–হুম
পরদিন সকালে আকাশদের বাসায় চলে আসলাম, ইচ্ছে না থাকলেও আসতে হলো কারন আমি যে মেয়ে আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে আমাকে যে এখানে আসতেই হবে
দেখতে দেখতে দুইমাস কেটে গেলো, রাকিব আর কোনো জামেলা করেনি অবশ্য সুযোগ পায়নি কারন আকাশ আমাকে বাসায় একা রেখে কোথাও যায়নি
আজ রিয়া লন্ডন চলে যাবে, আকাশ আর আমি ওদের সাথে এয়ারপোর্ট গেলাম, পাগলীটা যাবার সময় আমাকে জরিয়ে ধরে খুব কেঁদেছে আমি অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকে রেখেছি আমার চোখে পানি দেখলে যে ও যাবে না, পিয়াস খুব ভালো ছেলে রিয়াকে বুঝিয়ে নিয়ে গেলো
রাতে অনেক কাঁদলাম রিয়ার জন্য, ওর সামনে কাঁদতে পারিনি তাই এখন কেঁদে হালকা হলাম, আমি একদিক দিয়ে খুব ভাগ্যবতী আব্বুর মতো একজন আদর্শবান বাবা পেয়েছি আর রিয়ার মতো একটা বান্ধবী পেয়েছি যে শুধু বান্ধবী না আপন বোনের মতো
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই আব্বু ফোন করে একটা গুড নিউজ দিলেন, আব্বুর অফিসে আকাশের চাকরি হয়ে গেছে, আকাশকে বলতেই ও আনন্দে কেঁদে দিয়েছে আনন্দটা শুধু চাকরি পাবার নয় সাথে মেঘা কে পাবারও
বিকেলে বারান্দায় দাড়িয়ে আছি আকাশ আসলো
–তমা একটা আবদার রাখবা
–কি বলো
–চাকরির খবরটা এখনো মেঘা কে দেইনি আমি চাচ্ছি দেখা করে ওকে সারপ্রাইজ দিব
–তো দেখা করো
–তোমার জন্যই তো সব সম্ভব হলো তুমি চলো সাথে মেঘা অনেক খুশি হবে
–ঠিক আছে যাবো
সন্ধ্যার পর একটা রেস্টুরেন্টে আসলাম, আকাশ আর আমি বসে আছি মেঘা এখনো আসেনি, একটু পর মেঘা আসলো
মেঘা: কি ব্যাপার এখানে ডাকলা
আকাশ: সারপ্রাইজ আছে
মেঘা: কি
আকাশ: আগে বস বলছি
মেঘা: হুম বলো
আকাশ: আমার চাকরি হয়ে গেছে
মেঘা: সত্যি
(মেয়েটার দিকে থাকালাম মনে হচ্ছে কোনো রাজ্য জয় করেছে এতো খুশি হয়েছে, অবশ্য ভালোবাসার মানুষকে আপন করে পাওয়া টা রাজ্য জয় করাটা কেও হার মানায়, ভালবাসার মানুষকে খুব কম মানুষই পায়, যারা খুব বেশি ভাগ্যবান/ভাগ্যবতী তারাই শুধু ভালোবাসার মানুষ কে চিরআপন করে পায়, মেয়েটার চোখ থেকে পানি ঝরছে এই পানি কোনো কষ্টের না এই পানি সুখের ভালোবাসার মানুষকে আপন করে পাওয়ার, একদিকে নিশ্চিত হলাম যে ওরা দুজন দুজনকে অনেক বেশি ভালোবাসে ওদের মিলিয়ে দিলে আমার কোনো ভুল হবে না)
আকাশ: মেঘা তুমি খুশি হয়েছ
মেঘা: ভালবাসার মানুষকে আপন করে পাবো এর চেয়ে বড় খুশি আর আছে নাকি
আকাশ: সবকিছু সম্ভব হয়েছে এই তমার জন্য
মেঘা: আজ থেকে তুমি আমার ছোট বোন তোমার কাছে সারা জীবন ঋনি থাকবো বলেই আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকলো
আমি: ছোট বোনের কাছে বড় বোন কখনো ঋনি থাকে না কান্না থামাও কথা আছে
মেঘা: হুম বলো
আমি: আর তো প্রায় আড়াই মাস আছে ডিভোর্স এর, এর ভিতরে আকাশকে একটা বাসা নিতে হবে আমি চাই না আপু ওই নোংরা জায়গায় বউ হয়ে যাক
আকাশ: সমস্যা নেই আমার কিছু জমানো টাকা আছে আর এখন তো চাকরিও করবো
আমি: হুম
সকালে আব্বু ফোন করে জানালেন আকাশকে আজ বিকেলেই আব্বুর কাছে যেতে হবে, আগামীকাল থেকে অফিসে জয়েন করতে হবে, আপাদত ওখানেই থাকতে হবে দুই থেকে তিন মাস পর ট্রান্সফার হয়ে অন্য জায়গায় যেতে পারবে
বিকেলে আকাশ চলে গেলো, বাসায় মা আছেন কাজের লোক আছে তাও খুব ভয় হচ্ছে রাকিব আবার না কোনো কিছু করে বসে
একটা সপ্তাহ ভালই কাটলো, বিকেলে ছাদে বসে আছি হঠাৎ রাকিব আসলো
–আপনি
–হ্যা ভয় পাচ্ছ কেন
–এখানে কেন এসেছেন
–যে কারনে তোমাকে এই বাড়ির বউ করে এনেছি সেই কাজটা এখন করবো
–মানে
ঠিক তখন নাফিজা এসে ডাক দিলো নিচে যেতে, ওর সাথেই চলে গেলাম, নাফিজা আসাতে বাঁচলাম কিন্তু রাকিব তো আমার পিছু ছাড়ছে না এভাবে কতো দিন বাঁচবো
রাতে বিছানায় শুয়ে আছি তখন আবার রাকিব আসলো
–আপনি আবার এসেছেন
–হ্যা বার বার আসবো
–বেরিয়ে যান নাহলে আমি মা কে ডাকবো
–উনি ঘুমাচ্ছেন তাই তো এই সুযোগে আসছি (বলেই আমার কাছে আসতে শুরু করলো)
রাকিব নিচে নেমে আকাশকে দেখেই থেমে গেলো
আকাশ: কি হয়েছে
রাকিব: দেখনা বাবা তোর বউ আমাকে ফোন করে বললো বাসায় আসতে আমি ভাবলাম কোনো প্রয়োজন তাই আসলাম কিন্তু আসা মাত্রই ওই মেয়ে আমাকে জরিয়ে ধরলো
হায় আল্লাহ এই লুইচ্ছা এসব কি বলছে, আকাশ আমার হাত ধরে টেনে সামনে আনলো
আকাশ: নাও মামা আমার সামনেই ওকে ভোগ করো (ওর দিকে অভাক হয়ে থাকালাম কি বলছে এসব)
রাকিব: কি বলছিস এসব ও আমার মেয়ের মতো
আকাশ: তাহলে ওর রোমে কেন গিয়েছিলে
রাকিব: ও আমাকে ফোন করে ডেকেছিল তাই
আকাশ: ওহ তাই (খুব ভয় হচ্ছে আকাশ কি রাকিবের এসব মিথ্যে কথা বিশ্বাস করে ফেললো)
রাকিব: হ্যা নাহলে কি আমি অফিস থেকে ফেরত আসতাম
আকাশ: তোমার চরিত্র সম্পর্কে আমাকে ধারনা দিতে হবে না আমি জানি তুমি কেমন, এই মেয়েটা তোমাকে বাবার মতো দেখে আর তুমি কিনা ছিঃ তোমাকে মামা ডাকতেও লজ্জা লাগছে, আমি না আসলে তো আজ ওর জীবনটাই নষ্ট হয়ে যেত, দেখেছ তুমি কোনো পশু না মানুষ তাও তোমাকে দেখে মেয়েটা কতো ভয় পেয়েছে
রাকিব: আকাশ তুই ভুল বুঝছিস ও আমাকে….
আকাশ: সেটআপ আর একটা কথা বললে তোমার জিব টেনে ছিড়ে ফেলবো
রাকিব আর কোনো কথা না বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো, আমি গিয়ে সোফায় দফ করে বসে পড়লাম চোখ দিয়ে পানি ঝরছে কি হলো এইটা…? আকাশ আসতে আর একটু দেরি হলে তো…
আকাশ: তমা ভয় পেয়ো না তুমি যতোদিন এই বাসায় আছ আমি অফিসে যাবো না তোমার কাছেই থাকবো
কোনো কথা না বলে রোমে এসে শুয়ে পরলাম, কি হলো এইটা ভেবে পাচ্ছি না, রাকিব ওকে তো এখন মামা ডাকতে ঘৃণা হচ্ছে, আমার দিকে খারাপ চোখে থাকাত কিন্তু এমন কিছু হবে কখনো ভাবিনি, আচ্ছা ও কি বললো এতো কাঠকড় পুড়িয়ে আমাকে এই বাড়ির বউ করে এনেছে মানে কি…? আমাকে নাকি টাকা দিয়ে কিনে এনেছে এই কথার মানেই বা কি…? আচ্ছা নাফিজা যে বলেছিল আম্মু রাকিবের কাছ থেকে টাকা নিতো তার মানে কি আম্মু আমাকে বিক্রি করেই ওর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে…? কিন্তু আম্মু কেন এমন করবে আমাকে কেন বিক্রি করবে…? আম্মু এতো টাকা দিয়ে কি করে…? আব্বু তো আম্মুকে কম টাকা দেন না, উফফফফ আর ভাবতে পারছি না আমার সাথে কি হচ্ছে এসব
সারা দিন রোমেই শুয়ে রইলাম, সন্ধ্যায় মায়ের ডাকে নিচে গেলাম, ড্রয়িংরুমে মা আর আকাশ বসা
–মা আপনি কখন আসছেন
–এইতো এখনি তুমি নাকি অসুস্থ আকাশ ফোন করে আসতে বললো
–তেমন কিছু না
–তুমি নাকি বাসায় যেতে চাচ্ছ আমি যখন চলে এসেছি সকালে চলে যেও
–ঠিক আছে
রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরলাম, সকালে ঘুম থেকে উঠেই আব্বুকে ফোন করে বললাম বাসায় যাবো আজ
মা এসে ডাক দিলেন নাস্তা করার জন্য, ডাইনিং টেবিলে যেতেই রাকিবের দিকে চোখ পরলো ওর চোখে ভয়ের কোনো চিহ্ন নেই, রাগে টেবিল থেকে চলে আসতে চাইলাম কিন্তু আকাশ ইশারা দিয়ে বললো মা কে যেন বুঝতে না দেই তাই বাধ্য হয়ে বসে নাস্তা করলাম
রোমে এসেই ব্যাগ গুছাইলাম এই বাসায় দম বন্ধ হয়ে আসছে
–এখনি চলে যাইবা নাকি (কথাটা শুনে ফিছনে থাকালাম আকাশ এসেছে)
–হুম
–রেগে আছ
–কার উপর রাগ করবো আমার ভাগ্যের উপর নাকি বিধাতার উপর
–একাই যাইবা
–তুমি নিয়ে গেলে তোমার সাথে যাবো নাহলে একাই যাবো
–ঠিক আছে নিয়ে যাবো
–হুম
মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরলাম, সারা রাস্তা আকাশের সাথে একটা কথাও বলিনি
বাসায় এসে দেখি আব্বু এখনো আসেননি, আম্মুর সাথে কোনো কথা না বলে রোমে চলে গেলাম আকাশও পিছন পিছন আসলো
–তোমার আম্মুর সাথে কোনো কথা বলনি যে
–এমনি
–তুমি কার উপর রেগে আছ বল তো
–কারো উপরই না
–দেখো যা হয়েছে অনেক খারাপ হয়েছে জানি তাই বলে রেগে থাকবা
–রাগ করিনি তোমার উকিলের সাথে কথা বলে দেখো ছয় মাসের আগে ডিভোর্স পেপার আনা যায় কিনা
–কেন
–আমি ওই বাসায় থাকতে চাই না
–আমার চাকরি নাহলে তো বাসা থেকে বেরুতে পারবো না
–ডিভোর্স হলে তো আমি বেরুতে পারবো
–ডিভোর্স হলে তো মেঘা কে বিয়ে করবো আর চাকরি নাহলে ওকে নিয়ে ওই বাসাতেই উঠতে হবে তখন যদি মেঘার সাথে এমন খারাপ কিছু হয়
–তুমি চাইলে আমি আব্বুর সাথে তোমার চাকরির ব্যাপারে কথা বলে দেখতে পারি
–ঠিক আছে
সন্ধ্যায় আকাশ চলে গেলো, ছাদে গিয়ে বসলাম, এখনো আম্মুর সাথে কোনো কথা বলিনি আমার মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আম্মু কি সত্যি টাকার জন্য আমাকে রাকিবের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে…? সৎ মা বলে কি এমন জঘন্য কাজ করবে…? সৎ মা কি মা না…?
–আপু (ডাক শুনে পিছনে থাকালাম তুলি এসেছে)
–হুম আয়
–সন্ধ্যার সময় এখানে বসে আছ কেন
–এমনি
–তোমার কি হয়েছে বাসায় এসে আম্মুর সাথে কথা বলনি আমার সাথেও না
–কিছু হয়নি এমনি ভাল লাগছে না
–সত্যি তো
–আচ্ছা তুলি তুই যদি কখনো শুনিস আম্মু অনেক বড় একটা জঘন্য কাজ করেছে তাহলে কি তুই আম্মুকে ক্ষমা করবি
–ক্ষমা করাটা কাজের উপর যদি খারাপ কাজ হয় করবো না কিন্তু হঠাৎ করে এমন কথা বলছ কেন
–এমনি
–আম্মু কি কিছু করেছে
–না
–ঠিক আছে চলো নিচে যাই
–হুম
রাতে আব্বু আসলেন, সবাই একসাথে রাতের খাবার খেলাম তখনো আম্মুর সাথে কথা বলিনি আম্মুও কথা বলার চেষ্টা করেননি, রোমে এসে শুয়ে পড়লাম
–আম্মু আসবো (পিছনে থাকিয়ে দেখি আব্বু দরজায় দাড়িয়ে আছেন)
–আসো
–চল ছাদে যাই বাপ মেয়ের তো অনেক দিন ধরে মন খুলে কথা হয় না
–চলো
ছাদে এসে বসলাম
–কিরে মা মন খারাপ মনে হচ্ছে
–না তো
–সত্যি
–আব্বু একটা কথা বলতে চাই
–বল
–আকাশ ওর মামার ব্যবসা পছন্দ করে না ও চাচ্ছে কোনো চাকরি করতে কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও চাকরি হচ্ছে না তুমি কি কোনো হেল্প করতে পারবা
–চেষ্টা করলে পারবো
–একটু চেষ্টা করে দেখো ওর চাকরিটা খুব প্রয়োজন
–ঠিক আছে
–আর একটা কথা বলি
–বল
–আব্বু তুমি তো আমায় অনেক ভালোবাস আমি যদি কখনো কোনো বড় ভুল করি ক্ষমা করতে পারবা
–আমি জানি আমার মেয়ে এমন কোনো ভুল করবে না যা ক্ষমার অযোগ্য
–হুম
–কিছু হয়েছে কি হঠাৎ এমন কথা বললি যে
–এমনি বললাম
রোমে এসে শুয়ে পরলাম কিন্তু ঘুম আসছে না আম্মুর কথা খুব মনে পরছে, আম্মুর ছবিটা বের করে আনলাম বুকে জরিয়ে অনেক সময় কাঁদলাম, কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি…..
–আপু আমি কষ্ট নিয়ে দিচ্ছি না জানেন তো আমি শ্রাবনকে ভালবাসি এই বিয়ে সংসার আমার পক্ষে সম্ভব না তাই আমি চাচ্ছি আপনারা সুখী হন অন্তত আমার মতো তো আপনাদের ভালোবাসা হারাতে হবে না
–আব্বু তো রাজি আশা করি আকাশের মা তেমন রাগ করবেন না কিন্তু তোমার পরিবার
–আব্বুকে বুঝিয়ে ফেলবো সমস্যা নেই
–হুম
–এখন তো সব ঠিক শুধু আকাশের চাকরি আর ছয়মাস এর অপেক্ষা
–হ্যা
কক্সবাজারে পাঁচদিন কেটে গেলো, সকালে নাফিজা আর আমি সাগর পাড়ে দারিয়ে আছি আর সমদ্রের ঢেউ দেখছি
নাফিজা: সেদিন তুমি বলছিলা কাকে যেন ভালবাস
–হুম নাম শ্রাবণ
–সে কোথায়
–জানিনা
–কি হয়েছিল
–হঠাৎ করে চেঞ্জ হয়ে গেল বললো আমাকে নাকি আর ভালবাসে না তারপর ফোন অফ আর কোনো যোগাযোগ হয়নি
–হঠাৎ চেঞ্জ হবার মধ্যে তো কোনো রহস্য আছেই
–হয়তো
–খুব ভালবাস তাই না
–হুম
চোখ দুইটা ঝাপসা হয়ে আসলো, হঠাৎ একটু দূরে চোখ পরতেই চমকে উঠলাম শ্রাবন এখানে আর কিছু না ভেবেই দিলাম দৌড়, আমার দৌড় দেখে নাফিজাও আমার পিছনে দৌড়ে আসলো, সে জায়গায় গিয়ে দেখি কেউ নেই আমি তো স্পষ্ট শ্রাবনকে দেখলাম হঠাৎ উদাও হয়ে গেলো কিভাবে
নাফিজা: কি হলো আপু এভাবে দৌড়ে এখানে আসছ কেন
–এখানে শ্রাবনকে দেখেছি
–কি
–হ্যা আমি স্পষ্ট ওকে দেখেছি কিন্তু এখন কোথায় গেলো
–একটু সময়ে তো আর উদাও হয়ে যাবে না আসলে তুমি ভুল দেখেছ
–না আমি ভুল দেখিনি সত্যি ওকে দেখেছি
–উনার কথা বলতে গিয়ে তোমার চোখে পানি চলে এসেছিল তো তাই ঝাপসা চোখে ভুল দেখেছ
–সত্যি আমি ওকে দেখেছি বিশ্বাস করো
হঠাৎ আমার মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করতে শুরু করলো আমি বালুর উপরেই বসে পরলাম তারপর আর কিছু মনে নেই
জ্ঞান ফিরতেই দেখি আমি হোটেল রোমে আকাশ মেঘা নাফিজা সবাই আমার পাশে বসা
আকাশ: হঠাৎ কি হয়েছে তোমার
আমি: আমি এখানে আসলাম কিভাবে
নাফিজা: তুমি অজ্ঞান হয়ে যাবার পর আমি তোমার ফোন থেকে আকাশ ভাইকে ফোন দেই উনি গিয়ে নিয়ে আসেন
মেঘা: কি হয়েছিল হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়লা কেন
আমি: ওখানে আমি শ্রাবনকে দেখেছি আমি দৌড়ে যেতেই ও চলে গেছে
নাফিজা: ওখানে কেউ ছিল না তুমি ভুল দেখেছ
আকাশ: হ্যা ভুল দেখেছ
মেঘা: শ্রাবনকে অনেক ভালোবাস তো তাই ওর কথা ভাবতে ভাবতে অন্য কাউকে দেখে শ্রাবন ভেবে নিয়েছ
আমি: তোমরা বিশ্বাস করছ না কেন আমি ওকেই দেখেছি ওকে চিনতে আমার ভুল হতেই পারে না
আকাশ: ঠিক আছে তুমি শ্রাবনকেই দেখেছ বিকেলে আমরা ওকে সাগর পাড়ে খুঁজতে যাবো এখন একটু ঘুমাও
আমি: হুম
ঘুম থেকে উঠে দেখি বিকেল হয়ে গেছে নাফিজা আর মেঘা আমার পাশে বসা
আমি: আপু আপনারা এখনো এখানে বসে আছেন কেন
মেঘা: তুমি যদি আবার জ্ঞান হারাও এই ভয়ে আর আমাকে আপনি করে বল কেন তুমি তো আমার ছোট বোন এখন থেকে তুমি করে বলবা
–ঠিক আছে, আকাশ কোথায়
–খাবার আনতে গেছে
–শ্রাবনকে খুঁজতে যাবা না
–হুম খেয়েই যাবো
খেয়ে সবাই সাগর পাড়ে আসলাম, আমার দুচোখ শুধু শ্রাবনকে খুঁজছে কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না, প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসলো কিন্তু ওকে খুঁজে পেলাম না, ওকে ফিরে পাবার আশা ছেড়ে দিলাম চোখ দুইটা যেন বাধ মানছে না চিৎকার করে কাঁদতে মন চাচ্ছে, এখানে আর এক মুহূর্তও থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না দম বন্ধ হয়ে আসছে
আমি: আকাশ আমি এখানে থাকবো না বাসায় যাবো আব্বুর কাছে
আকাশ: ঠিক আছে আগামীকাল সকালেই আমরা চলে যাবো, গিয়ে তোমাকে তোমাদের বাসায় দিয়ে আসবো
–হুম
সকালে নাস্তা করেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, বিকেলে বাসায় পৌঁছালাম, মায়ের সাথে দেখা করে রোমে এসে ফ্রেশ হয়েই শুয়ে পরলাম
রাতে ঘুম ভাঙ্গলো, আব্বুকে ফোন দিলাম
–হ্যালো আব্বু
–কিরে কেমন আছিস
–ভালো তুমি
–ভালো কক্সবাজার গিয়ে তো আমাকে ভুলেই গেলি
–বাসায় চলে এসেছি
–কখন আসলি
–বিকেলে, আব্বু তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে বাসায় আসবা
–তুই কি বাসায় আসবি
–হ্যা মা কে বলে দেখি কি বলেন
–ঠিক আছে তুই যেদিন আসবি সেদিন আমিও আসবো
–আচ্ছা
রাতে খাবার টেবিলে বসে মা কে বললাম
–মা আমি কিছু দিনের জন্য বাসায় যেতে চাই
–ঠিক আছে কিন্তু দুইটা দিন পরে যাও নাফিজার মা অসুস্থ খবর এসেছে আমি আগামীকাল নাফিজা কে সাথে নিয়ে ওদের গ্রামে যাবো আমি আসলে পর যেও
–ঠিক আছে
সকালে মা নাফিজা কে নিয়ে ওদের গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন, আকাশ আর মামা অফিসে চলে গেলো, আমি রোমে এসে শুয়ে পড়লাম শরীর একদম ভালো লাগছে না, শ্রাবনের কথা মাথা থেকে সরছেই না, শুয়ে শুয়ে ভাবছি কক্সবাজারে কি আমি সত্যি ভুল দেখেছি কিন্তু শ্রাবনকে চিনতে তো আমার ভুল হবার কথা নয়, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো আকাশ ফোন দিয়েছে রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–তমা আমি বাসায় একটা ইম্পরট্যান্ট ফাইল আর কিছু কাগজ ফেলে এসেছি, কোথায় রেখেছি সঠিক মনে নেই, আমি যে যে জায়গা বলবো তুমি খুঁজে বের করে রাখো আমি নিতে আসছি
–ঠিক আছে বল
–প্রথমে আলমারি খুঁজো
–ঠিক আছে
নেই তো আলমারি তে
–আমার টেবিলের ড্রয়ারে দেখ তো
–আচ্ছা
পিছন ফিরতেই দেখি মামা দরজায় দাঁড়ানো, খুব অভাক হলাম উনি তো অফিসে গিয়েছিলেন বাসায় আসলেন কেন আর কখনোই বা আসলেন
–মামা আপনি
–হ্যা
–কখন এসেছেন আর কোনো প্রয়োজন নাকি
–হ্যা প্রয়োজন-ই তো অনেক বড় একটা প্রয়োজন বলেই হাসতে শুরু করলেন
–(কেমন যেন লোভাতুর দৃষ্টিতে আমার দিকে থাকিয়ে আছেন খুব ভয় পেয়ে গেলাম, আকাশ উপাশ থেকে ফোনে হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে)
–কি হল ভয় পাচ্ছ কেন
–না মানে আপনি এই সময় বাসায় (আকাশ উপাশ থেকে বার বার জিজ্ঞেস করতেছে, তমা কার সাথে কথা বলতেছ..?)
–এতো কাঠকড় পুড়িয়ে তোমাকে এই বাড়ির বউ করে আনলাম কি এমনিতেই
–মানে
–তোমাকে আমি টাকা দিয়ে কিনে এনেছি শুধু মাত্র ভোগ করার জন্য চেঁচামেচি না করে আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাও নাহলে আমি জোর করবো বলেই আমার কাছে এগিয়ে আসলেন
–(আমি ভয় পেয়ে জোরে আকাশ বলে চিৎকার দিলাম)
–তোমার আকাশ অফিসে ডেকে লাভ নেই বাসা একদম খালি এমন সুযোগ আর আসবে না বলেই আমাকে জাপটে ধরতে আসলেন
আমি ফোনটা উনার মাথায় ছুড়ে দিয়ে দৌড়ে রোম থেকে বেরিয়ে গেলাম, নিচে যেতেই দেখি আকাশ, দৌড়ে গিয়ে ওর পিছনে লোকালাম, রাকিব নিচে নেমে আকাশ কে দেখেই থেমে গেলো…..
দুইটা দিন খুব দ্রুত কেটে গেলো, ফিরে এলাম আকাশদের বাসায়, এখানে একা কিছুই ভালো লাগে না, কোনো কাজও করতে হয় না, আকাশ অফিসে একটু সময় থাকলেও বাসায় আসে না তেমন এই বাসা থেকে দূরে দূরে থাকে আর মা কেমন যেন চুপচাপ থাকেন সবসময়, কাজের মেয়ে দুইজন একজন মহিলা আর মেয়েটা নাফিজা আর দুইটা কাজের ছেলে, ওরা সবাই যে যার মতো কাজ করে কোনো কথা নেই শুধু নাফিজাই একটু বেশি কথা বলে
নাফিজার সাথে ছাদে গেলাম বেশ বড় ছাদ, একপাশে একটা দুলনা দুজন গিয়ে বসলাম
–আচ্ছা নাফিজা এই বাড়ির মানুষ গুলো সবসময় চুপচাপ থাকে কেন
–আকাশ ভাইয়া তো এই বাসায় থাকতে চায় না খালাম্মাও চায় না শুধু আকাশ ভাইয়ার ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে এই বাসায় আছেন আর রাকিব যে উনি খুব খারাপ মানুষ মেয়েদের দিকে খারাপ চোখে থাকায় দেখেন না আমি আর কাজের খালা উনার সামনে যাই না, উনি রেগে গেলে জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন উনি চুপচাপ থাকাটাই পছন্দ করেন তাই সবাই চুপচাপ থাকে
–বুঝলাম আচ্ছা তুমি তো দুই বছর ধরে এই বাসায় আছ মেঘা মেয়েটা সম্পর্কে কিছু জানো
–হ্যা জানি কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে
–আকাশ মা দুজনেই বলেছে
–মেঘা মেয়েটা অনেক ভাল আকাশ ভাইকে খুব ভালবাসে কিন্তু মেঘার বাবা পুলিশ, মেঘার বাবা আর রাকিব সাহেবের মধ্যে শত্রুতা আছে তাই রাকিব সাহেব উনাকে বউ করে আনেনি
–আমাকে কেন আনলো ওদের দুজনকে কতো সুন্দর মানাইত
–আপনাকে কেন আনছে জানিনা তয় আপনের আম্মা মাঝে মাঝে এই বাসায় আসে আর রাকিব সাহেবের কাছ থেকে টাকা নেয়
–টাকা নেয় (বেশ অভাক হলাম আম্মু টাকা দিয়ে কি করে আর আব্বু তো টাকা দেয়)
–হ টাকা নেয় দেখছি তাও কম টাকা না টাকার বান্ডিল নিতে দেখছি অনেক বার
–এই বিষয় আমি দেখবো তুমি আমাকে একটা সাজেশন দাও তো
–কি
–আকাশ আর মেঘার বিয়ে দিলে কেমন হয়
–কি বলেন আপনি মাথা খারাপ আপনি না উনার স্ত্রী
–হ্যা কিন্তু কাগজে কলমে শুধু আমি ওদের বিয়ে দিতে চাই ওদের সুখী দেখতে চাই
–কিন্তু আপনে কই যাবেন
–আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না আগে বল কাজটা ঠিক হবে কিনা
–আকাশ ভাই মেঘা আপু কে অনেক ভালবাসে ওদের বিয়ে হলে দুজন সুখী হবে খালাম্মাও খুশি হবে কিন্তু মেঘা আপুর বাবা কি মেনে নিবে
–তাই তো এটা তো ভাবিনি আচ্ছা আমি মেঘা আপুর সাথে কথা বলবো
–কিন্তু আপনের কি হইব
–আমি ভালই থাকবো আমার জন্য অন্তত দুইটা মানুষ ভালবাসা হারাবে না
–হুম চল নিচে যাই সন্ধ্যা হয়ে গেছে
–হুম
রাতে খেতে বসে মামা বললেন
মামা: আকাশ নতুন বিয়ে করেছ কয়েক দিন ঘুরে আস আমি তোমাদের হানিমোনের সব ব্যবস্থা করে দিব
আকাশ: হানিমোনে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নেই
মামা: কেন
আকাশ: ভালো করেই জানো তোমাদের কথা রাখতে গিয়ে আমি তমা কে বিয়ে করেছি
মামা: কি বলতে চাইছ
আকাশ: আমি মেঘা কে ভালোবাসি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব না
মামা: তুমি ভালো করেই জানো মেঘার বাবা আমার শত্রু
আকাশ: হ্যা শত্রু তো হবেই উনি যে তোমার কালো ব্যবসায় বাধা দেন
আমি: মামা আপনারা থামুন আমরা হানিমোনে যাবো আপনি ব্যবস্থা করুন
আকাশ: তমা তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি
আমি: না আমার মাথা ঠিকি আছে তুমি চুপ থাক
মামা: কোথায় যেতে চাও বলো আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি
আমি: কক্সবাজার যাবো তবে আমাদের সাথে নাফিজা যাবে
মা: নাফিজা কেন যাবে
আমি: আমি তো নিজের জিনিস গুছিয়ে রাখতে পারিনা শাড়িও পরতে পারি না ও থাকলে আমার সুবিধা হবে, দুইটা রোম বোকিং করুন নাফিজা অন্য রোমে থাকবে (মিথ্যে বললাম আমাদের তো দুইটা রোম লাগবে নাফিজা কে না নিলে দুইটা রোম নেওয়া যাবে না)
মামা: ঠিক আছে
রোমে আসতেই আকাশ আমার উপর রেগে গেলো
আকাশ: এই মেয়ে তুমি চাও কি হানিমোনে যেতে চাচ্ছ কেন
–মেঘা আপু তোমার উপর রেগে আছে এটাই সুযোগ উনার রাগ ভাঙ্গানোর আর সব প্ল্যান করতে হলে অন্য কোথাও যাওয়াটা প্রয়োজন
–তুমি কি বলতে চাচ্ছ মেঘাও কক্সবাজার যাবে
–হ্যা
–ও রাজি হলে তো হানিমোনে যাচ্ছি শুনলে তো ও উল্টো রেগে যাবে
–আগে বলেই দেখুন
–হুম কিন্তু নাফিজা কেন যাবে
–ওকে না নিলে দুই রোম নিতে পারবো না মামা সন্দেহ করবে
–কিন্তু নাফিজা যদি আমাদের প্ল্যানের কথা জেনে যায়
–ও সব জানে
–মানে
–নাফিজাও চায় তোমার আর মেঘা আপুর বিয়েটা হউক
–হুম
সকালে মামা জানিয়ে দিলেন আগামীকাল সকাল ১০টায় আমরা যাবো, রাতে ব্যাগ গুছিয়ে রাখলাম মেঘা আপুও যাবে, আব্বুকে আর রিয়া কে ফোন করে জানিয়ে দিলাম আমি কক্সবাজার যাচ্ছি
সকালে নাস্তা করে রেডি হয়ে মায়ের আর মামার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নাফিজা আকাশ আমি বের হলাম, ট্রেনে যাবো মেঘা আপু রেলস্টেশনেই থাকবে
স্টেশনে গিয়ে মেঘা আপুকে ফেলাম চারজন ট্রেনে উঠলাম, আমি আর নাফিজা পাশাপাশি বসলাম আর আকাশ মেঘা আপুকে নিয়ে আমাদের সামনের সিটে বসলো, ট্রেন চলছে ট্রেনের গতিতে আমি জানালা দিয়ে বাইরে থাকিয়ে আছি
বিকেলের দিকে হোটেলে পৌঁছালাম, দুইটা রোম বোকিং করা হয়েছে নাফিজা আর মেঘা আপু এক রোমে গেলো আমি আর আকাশ এক রোমে গেলাম
–তুমি তো এই রোমেই আসলে তো ওদের কেন এনেছ আর দুইটা রোম কেন
–রাতে আমরা এক রোমে থাকলে মেঘা আপু রাগ করবে
–হুম
ফ্রেশ হয়ে চারজন গিয়ে খাবার খেলাম তারপর ঘুরতে বের হলাম, নাফিজা কে সাথে নিয়ে বালুচরে হাটছি আকাশ আর মেঘা অন্যদিকে হাটছে
রাতে খাবার খেয়ে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছি তখন মেঘা আপুকে জিজ্ঞেস করলাম
–আপু আকাশ তো এখন বিবাহিত আপনার আব্বু বিয়েটা মেনে নিবে তো শুনেছি মামা আর আপনার আব্বুর মধ্যে শত্রুতা আছে
–আব্বু পুলিশ আর উনি অপরাধী তাই শত্রুতা শুধু উনাদের কাজে আর আব্বু সবসময় আমাকে সুখী দেখতে চান আব্বুর সাথে আমার এই বিষয়ে কথা হয়েছে আব্বু বলেছেন তুমি যদি খুশি হয়ে আকাশ কে আমাকে দিয়ে দাও তাহলে আব্বু রাজি আর তুমি কষ্ট নিয়ে দিলে আব্বু রাজি না সাথে আমিও না
–আপনার বিয়ে হলে পর বুঝবেন বাবার বাড়ি ছেড়ে শশুড় বাড়িতে থাকা কতো কষ্টের, মন কতটা ব্যাকুল হয় একবার বাড়িতে যাবার জন্য মা বাবা কে একনজর দেখার জন্য
–হুম
–আর আমি বুঝি না আপনি এতো সন্দেহ করেন কেন আমাদের কি একটু বিশ্বাসও করতে পারেন না (কথা গুলা রাগি কন্ঠে বললাম)
–আসলে তমা ওকে অনেক ভালবাসি পাঁচ বছর ধরে রিলেশন অনেক বেশি ভালবেসে পেলছি এখন যদি হারাতে হয় আমি মরেই যাবো
–হারাতে হবে না আমার উপর বিশ্বাস রাখুন প্লিজ
–হুম রাখি
আকাশ: মেঘার সন্দেহ দেখে রেগে গেলে তো আমিও মাঝে মাঝে রেগে যাই মেয়েটা খুব বেশি সন্দেহ করে, যখন এমন করে রেগে যাই ঝগড়া করি কিন্তু পরে বুঝতে পারি মেয়েটা আমাকে হারানোর ভয়ে যে এমন করে
–সন্দেহ করার মতো কাজ কর হয়তো তাই এমন করে
–হুম মাঝে মাঝে ওকে রাগানোর জন্য এমন করি পাগলীটা কে রাগাতে খুব ভালো লাগে
–ছয়টা মাস দেখতে দেখতে চলে যাবে চাকরির ব্যবস্থা করো
–আসলে আমি যেখানে চাকরি পাই মামা সেখানেই ভেজাল করে মামা চায় না আমি এই বাসা ছেড়ে যাই
–এতে উনার লাভ কি
–জানিনা
–চেষ্টা করে যাও সফল একদিন হবেই
–হুম
বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো রিয়া আর তুলি দৌড়ে এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো,
আকাশের সাথে রিয়ার পরিচয় করিয়ে দিলাম, বাসায় ঢুকে আব্বুকে সালাম করতেই আব্বু জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলেন, আমিও আর চোখের পানি গুলো আটকিয়ে রাখতে পারলাম না আব্বুকে জরিয়ে ধরে অনেক কাঁদলাম
–বাবা কে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলি (কথাটা শুনে ফিছনে থাকালাম দেখি আম্মু)
–ভুলবো কেন (সালাম করলাম, আকাশও এসে আব্বু আম্মুকে সালাম করলো)
আব্বু: যা মা ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়
আমি: আচ্ছা
ফ্রেশ হয়ে সবাই একসাথে খেতে বসলাম, মনে হচ্ছে যেন কতো বছর পর আব্বুর সাথে বসে খাচ্ছি
আম্মু: কিরে তমা তোর শশুড় বাড়ির লোক কেমন তোকে ভালোবাসে তো
আমি: হুম সবাই অনেক ভালো
আব্বু: কোনো অসুবিধা হলে বলিস মা
আমি: আচ্ছা, আব্বু রিয়ার বাসায় ফোন করে বলে দাও ও আজ আমাদের বাসায় থাকবে
রিয়া: নারে থাকতে পারবো না
আমি: প্লিজ না করিস না
রিয়া: ঠিক আছে (আমার চোখের দিকে থাকিয়ে কি যেন ভেবে বললো, হয়তো বুঝতে পেরেছে আমার কষ্ট গুলা)
আব্বু: ঠিক আছে আমি বলে দিব
সারা দিন সবাই মিলে অনেক আড্ডা দিলাম, রাতে খেয়ে রোমে আসলাম
আকাশ: তোমার রোমে তো সোফা নেই ঘুমাব কিভাবে
–আমি আজ ঘুমাব না তুমি খাটে ঘুমাও কাল কোনো ব্যবস্থা করে নিব
–আজ ঘুমাবে না মানে
–কিছু না
–কি করবে সারা রাত
–(মৃদু হাসলাম)
আকাশ আর কথা না বলে ঘুমিয়ে পড়লো, আমি আলমারি থেকে শ্রাবনের দেয়া নীল রঙের শাড়িটা খুলে পড়লাম যদিও পারি না কোনো ভাবে পেছিয়ে পরে নিলাম হাতে নীল চুড়ি পরলাম, চোখে গারো করে কাজল দিলাম, ঠোটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক দিলাম, চোল গুলো ছেড়ে দিলাম, একদম সেদিনের মতো সাজলাম যেমনটা সেজেছিলাম আমার জন্মদিনের রাতে, সে রাতে শ্রাবন পাশে ছিল আর আজ কোথায় আছে কেমন আছে কিছুই জানিনা
ফোনটা হাতে নিয়ে ছাদে আসলাম, রিয়া তুলির কাছে ঘুমিয়েছে ওকে ফোন করে বললাম ছাদে আসতে, বেলি ফুলের গাছ গুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম আজো ফুল ফুটেছে অনেক গুলো কিন্তু আমার উপর ছিটিয়ে দেয়ার মানুষটা আজ পাশে নেই, এই ছাদ জুরে শুধু ওর সৃতি, যেদিকে থাকাচ্ছি শুধু ওকেই দেখতে পাচ্ছি, চোখ দুটু কে আজ আর বাধা দিলাম না কাঁদুক না হয়তো জমানো কষ্ট গুলো উড়ে যাবে
–কিরে রাত ১১টা বাজে এখন ছাদে ডাকলি কেন আর তুই এতো রাতে ছাদে কেন
–(চোখ মুছে পিছনে রিয়ার দিকে থাকালাম)
–এই রাতের বেলা রুপা সাজতে ইচ্ছে হলো কেন
–আমি তো রুপা সাজিনি শ্রাবনের পাগলী সেজেছি
–যে তোকে ভুলে গেছে তাকে কেন মনে রেখেছিস
–চাইলেই কি ভুলা যায়
–ও কলেজেও আসে না ফোন বন্ধ কেন ওর কথা ভেবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস
–আমার জীবনে কষ্ট ছাড়া আর কিছু আছে নাকি
–তুই তো দাড়াতে পারতেছিস না বসে কথা বল
–হুম (বসে রিয়ার কাদে মাথা রাখলাম)
–যখন বলছিলি আমাকে আজ থাকতে তখন তোর চোখ দেখেই বুঝেছিলাম আজ পাগলামি করবি
–পাগলামি কই করলাম
–আকাশের সাথে তো ভালই আছিস মনে হলো তাহলে শ্রাবনের ভূত আবার মাথায় আসলো কেন
–শ্রাবনের ভূত মাথা থেকে কখনোই যাবে না আর আকাশের সাথে সব অভিনয় আমরা দুজন শুধুই ফ্রেন্ড
–অভিনয় মানে
–(রিয়া কে আকাশ আর মেঘার কথা সব বললাম)
–তার মানে আকাশ আর মেঘা কে মিলিয়ে দিবি বলে ঠিক করে নিয়েছিস
–হুম
–ডিভোর্স এর পর তুই কি করবি কোথায় যাবি
–কিছু একটা করে জীবন পার করে দিব
–এমনটা না করলেও হবে
–আমার জীবন নষ্ট হয়েছে মেঘার জীবনটা নষ্ট করতে চাই না, কি দরকার এতো গুলো জীবন নষ্ট করার
–হুম
–(অনেক সময় দুজন চুপচাপ বসে রইলাম)
–আচ্ছা শ্রাবন যদি কখনো ফিরে আসে (নীরবতা ভেঙ্গে রিয়া বললো)
–আসবে নারে
–যদি আসে
–আসলে শুধু জিজ্ঞেস করবো আমার কি অপরাধ ছিল
–ওর যদি কোনো দোষ না থেকে থাকে
–জানিনা বলেই রিয়াকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলাম
রিয়াকে জরিয়ে ধরে কতক্ষণ কেঁদেছি জানিনা হঠাৎ শুনলাম মসজিদে ফজরের আজান পড়তেছে
রিয়া: তমা এখন চল প্লিজ অনেক তো কাঁদলি এখন রোমে গিয়ে একটু ঘুমা
–তুলির রোমে ঘুমাবো চল
–হুম
সকালে অনেক দেরিতে ঘুম ভাঙ্গলো ঘড়িতে চেয়ে দেখি ১১টা বাজে, ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে গেলাম সবাই আড্ডা দিতেছে
রিয়া: উঠেছিস আমাকে এখন বাসায় যেতে হবে
–আমাকে ডাকলি না কেন এতো বেলা হয়েছে
–এমনি ডাকিনি এখন যাই
–আচ্ছা
রিয়া চলে গেলো, আকাশও রোমে চলে গেলো, আমি দুই মগ কপি বানিয়ে রোমে গেলাম, আকাশ বারান্দায় দাড়িয়ে আছে
–কপি নাও
–এতো বেলা করে উঠলা যে
–এমনি
–শ্রাবনকে খুব বেশি ভালোবাস তাই না
–হঠাৎ এমন প্রশ্ন
–রাতে একবার ঘুম ভেঙ্গেছিল তোমাকে রোমে না দেখে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে গিয়েছিলাম, গিয়ে দেখি তুমি রিয়ার কাদে মাথা রেখে কাঁদতেছ তাই আর কথা বলিনি
–হুম
–বিধাতার কি খেলা দেখেছ তুমি শ্রাবনকে ভালবাস আমি মেঘা কে ভালবাসি অথচ আল্লাহ আমাদের দুজনকে মিলিয়ে দিলেন
–হুম
–তমা আমি মেঘা কে সত্যি ফিরে পাবো তো
–আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো বাকিটা বিধাতার ইচ্ছা
–হুম
–তার মানে আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না
–ঠিক তা না আসলে ছয়মাস অনেক সময় তোমার মন তো পাল্টেও যেতে পারে
–শুন নিজের মন ঠিক রাখ আমার মন নিয়ে চিন্তা করতে হবে না আমি শ্রাবনকে ভালবাসি তুমি চাইলেও আমি তোমার সাথে সংসার করবো না
–রেগে যাচ্ছ কেন
–(নিশ্চুপ)
–কি কথা বলবা না আর
আর একটা কথাও বলিনি আমি চাচ্ছি ওদের মিলিয়ে দিতে আর ওরা আমাকে বিশ্বাসই করে না, গাড়ি একটু পর একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে থামল, গাড়ি থেকে নেমে আকাশকে অনুসরণ করে রেস্টুরেন্ট এর ভিতরে ঢুকলাম, আকাশ একটা টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়াল একটা মেয়ে বসে আছে আর আকাশের দিকে রাগি চোখে থাকিয়ে আছে বুঝলাম এটাই মেঘা কিন্তু এতো রেগে আছে কেন
আকাশ: মেঘা ও হচ্ছে তমা আর তমা ও হচ্ছে আমার জান মেঘা
আমি: কেমন আছেন আপু
মেঘা: ভালো তুমি
আমি: ভালো
মেঘা: দাড়িয়ে আছ কেন বস
আকাশ গিয়ে মেঘার পাশে বসলো আর আমি তাদের সামনের একটা চেয়ারে বসলাম, মেঘা মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দর বুঝলাম না কোন লাভে রাকিব লুইচ্ছা টা আমাকে আকাশের বউ করে আনলো মেঘা আর আকাশকে কতো সুন্দর মানাইত
আকাশ: মেঘা এখনো রেগে আছ (আকাশের কথায় ওদের দিকে থাকালাম)
মেঘা: (নিশ্চুপ)
আকাশ: প্লিজ বুঝছ না কেন আমি মজা করে কথাটা বলছিলাম
মেঘা: মজা করে না ছাই আসলে তুমি ওর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছ (রাগি কন্ঠে বললো)
আকাশ: বিশ্বাস কর আমি মজা করেছিলাম শুধু তোমাকে রাগাতে কিন্তু তুমি যে এতো রেগে যাবা বুঝতে পারিনি
মেঘা: এমন কথা কেউ মজা করে বলে না আকাশ আমাকে এতো বোকা ভেবো না (বুঝলাম না ওরা কি নিয়ে ঝগড়া করতেছে জিজ্ঞেস করবো, জিজ্ঞেস করা কি ঠিক হবে)
আকাশ: আচ্ছা তুমি তমা কে জিজ্ঞেস কর আমি এমনটা চাই কি না
আমি: আমি কি জানতে পারি কি হয়েছে
আকাশ: আমি মেঘা কে মজা করে বলছিলাম ওকে বিয়ে করবো না আর তোমাকেও ডিভোর্স দিব না তাই মহারাণী রেগে আছে
আমি: এইটা তো রাগ করার কথাই এমন মজা কেন করবা
আকাশ: তুমিও আমাকে ভুল বুঝছ আরে আমি মজা করে বলছিলাম
মেঘা: আসলে তুমি ওর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছ নাহলে তুমি করে কথা বলতেছ কেন
আকাশ: মেঘা প্লিজ
আমি: আপু প্লিজ এমন কথা বলবেন না আমরা দুজন ফ্রেন্ড তাই তুমি করে কথা বলি আর টেনশন নিবেন না আমি আপনাদের মিলিয়ে দিব আমার উপর বিশ্বাস রাখুন
মেঘা: তোমার উপর বিশ্বাস আছে কিন্তু আকাশের উপর নেই
আকাশ: কি (রাগি কন্ঠে)
আমি: আপু যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে সম্পর্ক কোনো ভাবেই ঠিকানো সম্ভব না, একটা সম্পর্ক ঠিকিয়ে রাখতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, আপনি যদি ওকে বিশ্বাসই না করেন তাহলে বিয়ে তো দূরের কথা রিলেশন টাই ভেঙ্গে যাবে
মেঘা: আমি ওকে হারাতে চাই না খুব বেশি ভালবাসি ওকে
আমি: তাহলে এতো অবিশ্বাস করেন কেন
মেঘা: ওর কথা শুনে
আকাশ: বললাম তো মজা করেছি আচ্ছা সরি আর কখনো এমন মজা করবো না এইযে কান ধরলাম এবার খুশি তো
মেঘা: হুম
আকাশ: এবার বলো তোমরা দুজন কি খাবা
মেঘা: তোমার ইচ্ছেতেই অর্ডার দাও
আকাশ: তমা তুমি কি খাবা
আমি: তোমরা যা খাও তাই
আকাশ: ঠিক আছে (ওয়েটার কে ডেকে খাবার অর্ডার দিল)
মেঘা: আচ্ছা তমা বলোনি তো কেন তুমি আমাদের মিলিয়ে দিতে চাচ্ছ কোন মেয়ে কি নিজের স্বামী কে অন্য মেয়ের হাতে তুলে দেয়
আমি: আপু আমি জানি ভালবাসার মানুষকে ছাড়া বেঁচে থাকার যন্ত্রণা কতটুকু আমি চাই না আমার মতো আর কেউ এই কষ্ট ভোগোক, আমরা শুধু কাগজে কলমে স্বামী স্ত্রী আমি ভালবাসি শ্রাবনকে আর আকাশ ভালবাসে আপনাকে আমরা কখনো সুখী হতে পারবো না আর আপনি ভালবাসেন আকাশকে এখন যদি আপনার অন্য কারো সাথে বিয়ে হয় আপনিও সুখী হবেন না যার সাথে বিয়ে হবে সেও সুখী হবে না কাজেই চারটা জীবন নষ্ট হবে, কি দরকার চারটা জীবন নষ্ট করার তার চেয়ে ভালো হবে আপনাদের বিয়ে হলে
মেঘা: হুম তা ঠিক চারটা জীবন নষ্ট হবে কিন্তু ডিভোর্স এর পর তুমি কি করবা
আমি: ভালবাসা যেহেতু হারিয়েছি কোনো ভাবে জীবনটা পার করে দিব
মেঘা: আচ্ছা যাকে ভালোবাস সে এখন কোথায়
আমি: জানিনা কোনো যোগাযোগ নেই
মেঘা: কেন কি হয়েছিল তোমাদের মাঝে
আকাশ: মেঘা আমি সব জানি তোমাকে সব বলবো এখন ওর মন খারাপ করিও না
মেঘা: হুম
আমি: আর একটা কথা ছয়মাস খুব বেশি সময় না দেখতে দেখতে চলে যাবে এই সময় নিয়ে টেনশন করবেন না আর প্লিজ আমাদের উপর বিশ্বাস রাখুন
মেঘা: ঠিক আছে
আরো কিছু সময় রেস্টুরেন্টে বসে প্রায় সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরলাম
রাতে মা বলে দিলেন আগামীকাল আমাদের বাসায় যাবো আকাশ যেন অফিসে না যায়, আমি বাবার বাড়িতে যাবো শুনে ঠিক যতোটা খুশি হয়েছি আকাশ ততোটাই খুশি হয়েছে অফিসে যেতে হবে না শুনে কারন ও রাকিব লুইচ্ছার ব্যবসা একদম দেখাশুনা করতে চায় না ঠেকায় পরে একটু সময়ের জন্য অফিসে গিয়ে বসে, রাতে ব্যাগ গুছিয়ে রেখে ঘুমাতে গেলাম মন অনেক ভালো কারন সকালেই বাড়িতে যাবো মনে হচ্ছে কতো বছর ধরে বাড়িতে যাই না আব্বুকে দেখি না তুলিটা কে দেখি না আর আম্মু উনার কারনে যেতে মন চায় না কে জানে আবার অত্যাচার শুরু করে দিতে পারে
সকালে আব্বুর ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো রিসিভ করলাম
–হ্যালো আব্বু
–কেমন আছিস মা
–ভালো তুমি
–ভালো কখন আসবি তোরা
–এইতো ১১টার দিকে
–ঠিক আছে সাবধানে আসিস
–আচ্ছা
সকালে নাস্তা করে রেডি হয়ে নিলাম, মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিলাম রাকিব লুইচ্ছাও বাসায় তার কাছ থেকেও বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলাম, গাড়িতে উঠেই রিয়া কে ফোন দিয়ে বললাম আমাদের বাসায় আসতে, একটু পর আকাশের ফোন বেজে উঠলো কিন্তু রিসিভ করছে না
আমি: কি হলো ফোন রিসিভ করছ না কেন
আকাশ: মেঘা ফোন দিছে রিসিভ করলেই অনেক গুলো প্রশ্ন করবে কেন তোমাদের বাসায় যাচ্ছি তা নিয়ে
আমি: রিসিভ কর কোনো প্রশ্ন করলে আমার কাছে দিও আমি কথা বলবো
আকাশ: ঠিক আছে (ফোন রিসিভ করতেই মেঘা কি যেন বললো তাই আমার কাছে দিয়ে দিল)
আমি: হ্যালো আপু
মেঘা: ও ফোন তোমার কাছে দিল কেন
–ড্রাইভ করছে তো তাই
–তোমরা কোথায় যাচ্ছ
–আমাদের বাসায়
–কেন
–নিয়ম অনুযায়ী যেতে হয়
–ও যাবে কেন
–নিয়ম কি আমি একা পালন করবো নাকি
–তুমি না গেলেই তো হত ওকে ও যেতে হত না
–আপনার বিয়ে হলে পর বুঝবেন বাবার বাড়ি ছেড়ে শশুড় বাড়িতে থাকা কতো কষ্টের, মন কতটা ব্যাকুল হয় একবার বড়িতে যাবার জন্য