Saturday, July 5, 2025
বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 2411



জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ২২

0

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ২২

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

–তার নাম কি
–শ্রাবন
–তোমরা বিয়ে করনি কেন
–একার ইচ্ছেতে তো আর বিয়ে করা যায় না
–বুঝলাম না
–সে হঠাৎ চেঞ্জ হয়ে গেলো জানিনা কেন
–বুঝাও নি তাকে
–হুম অনেক বুঝিয়েছি লাভ হয়নি
–কি বলেছিল
–আমাকে নাকি আর ভালবাসে না ওকে যেন বিরক্ত না করি
–হঠাৎ এমন চেঞ্জ হয়ে গেলো কেন
–জানিনা ওর বাসায় গিয়েছিলাম রিয়া আর আমি অনেক বুঝিয়েছি ওর আম্মুও বলে দিয়েছেন ওকে যেন আর বিরক্ত না করি
–রিয়া কে
–আমার একমাত্র বান্ধবী তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিব
–ঠিক আছে, আচ্ছা শ্রাবন কি বিয়ের কথা শুনেনি
–বিয়ের কার্ড নিয়ে বাসায় গিয়েছিলাম দরজায় তালা ঝুলানো ওরা নাকি এখান থেকে চলে গেছে
–এখন কি কোনো যোগাযোগ নেই
–নাহ ফোন অফ হয়তো সিম চেঞ্জ করে নিছে
–হুম
ফোনের কথা বলতেই মনে পড়লো আমার ফোন তো বাসায় আব্বুকেও ফোন দেওয়া হয়নি তাই আকাশকে বললাম
–তোমার ফোনটা দাও তো বাসায় ফোন দিব আমার ফোন তো বাসায়
–ওহ বলতে ভুলে গেছি তোমার আব্বু ফোন দিয়েছিলেন
–কখন
–সকালে রাগ করে যখন বাইরে গিয়েছিলাম
–আর এখন বলছ
–সরি মনে ছিল না এই নাও ফোন কথা বল
–হুম

ফোন নিয়ে আব্বুকে ফোন দিলাম
–আব্বু
–কেমন আছিস মা
–ভালো তুমি কেমন আছ
–ভালো তোর ফোন বন্ধ কেন
–আমার ফোন তো বাসায় রইছে
–না তো তুলি তোর ব্যাগে ফোন দিয়ে দিছে
–ওহ দেখিনি
–তোর কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেন সত্যিই তুই ভালো আছিস তো
–হ্যা ভালো আছি তুমি টেনশন করো না
–ঠিক আছে
–আব্বু বাসায় যাবো কবে
–নিয়ম অনুযায়ী পরশু দিন
–আচ্ছা এখন রাখি
–ঠিক আছে
ফোন রেখে আকাশের দিকে থাকালাম কেমন যেন মনমরা হয়ে বসে আছে
–কি হয়েছে
–কিছু না তো
–তোমার মেঘার খবর কি
–তোমার সাথে দেখা করতে চায়
–ওকে আর চাকরীর খবর কি
–খুঁজছি এখনো
–হুম
–তো কবে দেখা করবা মেঘার সাথে
–যেদিন নিয়ে যাও
–ঠিক আছে আগামীকাল যাই
–মা কে কি বলবা
–বাইরে ঘুরতে যাচ্ছি
–ওকে

রোমে গিয়ে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করলাম চার্জ নেই তাই অফ হয়ে আছে, চার্জার এনে ফোনটা চার্জে দিলাম

রাতে খাবার টেবিলে আকাশ মা কে বললো আমাকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যেতে চায় মা খুশি হয়ে অনুমতি দিলেন

খেয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম আজ আমি সোফায় আর আকাশ খাটে

সকালে রিয়ার ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো, রিসিভ করলাম
–কিরে এতো সকালে
–ম্যাডাম ৮টা বাজে আর আমাকে তো ভুলেই গেছেন
–ভুলব কেন ফোন যে দিয়ে দিছিলি আমাকে বলছিলি
–বলছিলাম তুই তো পাথরের মূর্তি হয়ে গিয়েছিলি তাই শুনিস নি
–হুম
–তোর খবর কি সব ঠিক আছে তো
–আগামীকাল তো বাসায় যাবো তখন সব বলবো
–ঠিক আছে এখন ফ্রেশ হয়ে নে রাখি
–হুম

ফ্রেশ হয়ে নিছে গেলাম সব কেমন যেন নীরব, একটা কাজের মেয়েকে ডাক দিলাম
–সবাই কোথায় বাসা এতো নীরব কেন
–এই বাসা তো সবসময় নীরব থাকে বলেই হাসতে শুরু করলো
–মানে
–দুই বছর ধরে এই বাসায় কাজ করছি একদিনও এই বাসায় কাউকে আনন্দ করতে দেখিনি সবাই সবসময় চুপচাপ থাকে
–ওহ এখন সবাই কোথায়
–আকাশ ভাইয়া আর খচ্চরটা অফিসে গেছে আর খালাম্মা পাশের বাসায় গেছে
–খচ্চর আবার কে
–ওই যে এই বাড়ির মালিক রাকিব সাহেব
–উনাকে গালি দিচ্ছ কেন
–দিব না উনি তো একটা খারাপ মানুষ
–আচ্ছা এগুলা বাদ দাও ওরা সবাই নাস্তা করে গেছে তো
–হ্যা খালাম্মা বলছে আপনি উঠে নাস্তা করে নিতে
–ঠিক আছে
–আপনার কিছু লাগবে
–আমাকে তুমি করেই বলো আর এক মগ কপি দাও
–ঠিক আছে
–আচ্ছা বাকিরা কোথায় কাজের লোক তো মোট চারজন দেখেছি
–সবাই কাজে
–তোমরা সবাই নাস্তা করেছ তো
–হ্যা
–তোমার নাম কি
–নাফিজা
–আচ্ছা যাও

নাস্তা করে রোমে এসে ফোনটা হাতে নিলাম খুব ইচ্ছে করছে শ্রাবনের সাথে কথা বলতে কিন্তু ওর তো ফোন অফ, আচ্ছা তিন চার দিন তো ফোন দেইনি এখন দিয়ে দেখি হয়তো অন করেছে, অধীর আগ্রহ নিয়ে ওর নাম্বারটা ডায়াল করলাম, ঠিক যতটা আগ্রহ নিয়ে ফোন দিয়েছিলাম ঠিক ততটাই হতাশ হলাম ফোন অফ শুনে, হয়তো সিমটাই চেঞ্জ করে নিয়েছে, আচ্ছা আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে এখন আর ওকে ফোন দিয়ে লাভ কি…? কেন বার বার ওকে মনে করে কাঁদছি…? কেন বার বার ওকে ফোন দিচ্ছি…? আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কিন্তু ওর তো কোনো কষ্ট হচ্ছে না হলে তো ফোনটা অন রাখতো আমাকে একটা কল দিতো
এসব ভাবতে ভাবতে চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে গেলো বালিশে মুখ গুঁজে অনেক কাঁদলাম, কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি, হঠাৎ কারো ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো, চোখ খুলে দেখি আকাশ দারিয়ে আছে
–তুমি কখন এসেছ আর কয়টা বাজে
–১২টা বাজে আর একটু আগেই এসেছি
–মা কোথায়
–রোমেই তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই নাকি ডাকেনি
–ওহ
–উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাও বাইরে যাবো
–এখন কেন বিকেলে গেলে হয়না
–দুপুরের খাবারটা বাইরে খাবো আর মেঘার সাথে
–ঠিক আছে

ইচ্ছে না থাকলেও উঠে গোসলে গেলাম আকাশ মেঘার সাথে দুপুরে খেতে চাচ্ছে এখন আমি না গেলে তো ওদের ইচ্ছেটা মাটি হয়ে যাবে, অনেক্ষন কাঁদার কারনে চোখ দুটি ফুলে গেছে খুব অসহ্য লাগছে

গোসল করে এসে ভাবতে লাগলাম কি পরবো শাড়ি নাকি থ্রি-পিছ, যদি শাড়ি পরতে হয় কি করবো আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না
আকাশ: কি ভাবছ
–কি পরবো ভাবছি
–শাড়ি পরো নাহলে আম্মু সন্দেহ করবে
–কিন্তু আমি তো শাড়ি পরতে পারিনা
–ঠিক আছে নাফিজা কে ডেকে নাও হেল্প করবে
–হুম

নাফিজা কে ডেকে এনে বেগুনী রঙের একটা শাড়ি পড়লাম, শাড়ি পরতে আমার একদম ভালো লাগে না তাও পরতে হলো, রেডি হয়ে নিচে গিয়ে দেখি আকাশ ড্রইংরুমে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে, মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরুলাম
আকাশ: রিক্সায় যাবা নাকি গাড়িতে
আমি: রিক্সায় গেলে মেঘা আপু রাগ করতে পারেন
–গাড়িতে গেলে যে আমার রাগ উঠবে
–কেন
–গাড়িটা পাপের টাকা দিয়ে কেনা তো তাই যেদিন নিজে গাড়ি কিনতে পারবো সেদিন গাড়ি চালাবো
–আজ অন্তত রাগটা কমিয়ে রাখো
–হুম চলো

আকাশ ড্রাইভ করছে আর আমি পাশে বসা
–আচ্ছা তুমি মামার উপর সবসময় এতো রেগে থাক কেন
–উনার জন্যই মেঘা কে হারিয়েছি আর উনি খারাপ লোক
–মেঘা আপু কে হারালেন কোথায় আবার তো পেয়ে যাবেন
–যদি না পাই ভয় হয়
–কিসের ভয় আমি তো নিজেই মিলিয়ে দিব
–তুমি যদি তোমার কথা না রাখো
–তার মানে আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না

চলবে?

(ভাবতেছি তমা কে মেরে আকাশ আর মেঘা কে মিলিয়ে দিব ভালো হবে তাই না আপুরা??)

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ২১

0

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ২১

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

আকাশ মেঘার সাথে কথা বলে ফোন রেখে আসলো
–তমা তুমি খাটে ঘুমিয়ে পড় আমি সোফায় ঘুমাচ্ছি
–আমি সোফায় ঘুমাতে পারবো তুমি খাটে ঘুমাও
–তুমি এখন আমার মেহমান তুমি খাটে ঘুমাও
–ঠিক আছে আজকে আমি খাটে ঘুমাই আপনি সোফায় ঘুমান কাল আমি সোফায় ঘুমাব আপনি খাটে ঘুমাবেন এভাবেই ভাগাভাগি করে ঘুমাব
–ওকে এখন ঘুমিয়ে পরো

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ৯টা বেজে গেছে অথচ কেউ ডাকে নি হঠাৎ চোখ পড়লো বারান্দায় আকাশ দারিয়ে ফোনে কথা বলছে, উঠে ওর কাছে গেলাম
–এতক্ষণ ঘুমাইছি ডাকোনি কেন
–এমনি
–মন খারাপ
–হুম
–কেন
–আমার পরিচিত এক উকিল আছে তার কাছে ফোন দিয়েছিলাম বললো ছয় মাসের আগে ডিভোর্স পেপার আসবে না
–ছয় মাস দেখতে দেখতে চলে যাবে
–কিন্তু মেঘা কি মানবে
–আমি আপুকে বুঝিয়ে বলবো
–ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে নিচে আস নাস্তা করবে
–ওকে

গোসল করে একটা শাড়ি পড়লাম একটু সেজে নিচে গেলাম দেখি সবাই নাস্তার টেবিলে বসা সবাই বলতে শাশুড়ি মা, মামা আর আকাশ আর দুইটা কাজের মেয়ে কাজ করছে, এইটা যে বিয়ে বাড়ি দেখে বুঝার উপায় নেই

মা: বউমা সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছ কেন আস এখানে
আমি: আসছি (গিয়ে একটা চেয়ারে বসলাম)
মা: আমরা তিনজন আর দুইটা কাজের মেয়ে ছাড়া আর কাউকে দেখছ না তাই অভাক হয়েছ আসলে তোমাদের বিয়েতে কাউকে দাওয়াত দেয়া হয়নি আকাশ মানা করেছে তাই
মামা: আপা (আমার শাশুড়ি) আমি ভাবছি দুই একদিনের মধ্যেই সবাইকে দাওয়াত দিয়ে ধুমধাম করে ওদের বৌভাত করবো
আকাশ: এসবের কোনো প্রয়োজন নেই মামা আমাদের জন্য যা করেছ যথেষ্ট করেছ
মামা: এটা কেমন কথা আকাশ আত্মীয়স্বজন কে জানাতে হবে না আর আমার বন্ধুবান্ধব দের কি বলবো যখন তারা জানবে আমার একমাত্র ভাগ্নে কে কোনো অনুষ্ঠান ছড়া বিয়ে করিয়েছি
আকাশ: তোমার বন্ধু গুলো তো তোমার মতই হবে ওদের কে এখানে আনতে হবে না আর আত্মীয়স্বজন কে ফোন করে জানিয়ে দাও ওরা এসে তমা কে দেখে যাক
মা: আকাশ তোর মামা যখন চাচ্ছে….
আকাশ: আমার ইচ্ছের বিরুদ্বে অনেক কিছু করেছ তোমরা আর না প্লিজ বলেই নাস্তা না করেই উঠে চলে গেল
মামা: বউমা ওর ব্যবহারে কিছু মনে করো না ও একটু এমনি
আমি: মামা উনি যখন চাচ্ছেন না তাহলে বৌভাতের কোনো প্রয়োজন নেই
মামা: ঠিক আছে
মা: বউমা নাস্তা করে আমার রোমে এসো বলেই চলে গেলেন

আমি বসে আছি আর মামা বসে নাস্তা করছেন হঠাৎ মামার দিকে চোখ পড়লো উনি আমার দিকে আবার খারাপ নজরে থাকিয়ে আছেন আমি তাড়াতাড়ি উঠে মায়ের রোমে চলে গেলাম মনে মনে ভাবছি এইটা নাকি মামা শশুড় এইটা তো একটা আস্ত লুইচ্ছা বিয়ের আগে নামটা ভালই দিয়েছিলাম বেহায়া রাকিব হিহিহি

আমি: মা আসব
মা: আসো বউমা অনুমতি লাগে নাকি
–আপনি তো নাস্তা না করেই চলে আসলেন নাস্তা করবেন না
–না মা খিদে চলে গেছে এমনটা প্রায় দিন হয় যখন খাবার টেবিলে বসে রাকিবের সাথে আকাশ রাগারাগি করে
–মা বাদ দিন উনি যখন চাচ্ছেন না অনুষ্ঠানের প্রয়োজন নেই আর আমিও এসব জামেলা চাচ্ছি না
–ঠিক আছে মা, শুনো তোমাকে যে কারনে রোমে ডেকেছি
–কি মা
–আসলে আকাশ মেঘা নামের একটি মেয়েকে ভালবাসে আমিও ওর ভালোবাসা মেনে নিয়েছিলাম কিন্তু রাকিব বললো তোমাকেই এই বাড়ির বউ করে আনবে তাই বাধ্য হয়ে মেঘা কে অস্বীকার করতে হয়েছে, তোমাকে দেখার পর আমারও পছন্দ হয়েছে তাই আর বাঁধা দেইনি জানি আকাশ অনেক কষ্ট পেয়েছে কি করবো বল রাকিব এত বছর ধরে আমাদের লালনপালন করছে ওর কথা ফেলি কি করে
–সবই ঠিক আছে মা কিন্তু কারো মন ভাঙ্গা ঠিক না এই বিয়েতে আকাশ মেঘা দুজনেরই মন ভেঙ্গেছে আপনি চাইলেই ওদের বিয়ে দিতে পারতেন
–হয়তো পারতাম কিন্তু এই বাসা ছেড়ে চলে যেতে হতো আকাশ তো কোনো চাকরি করে না কোথায় যাবো আর আকাশের ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে রাকিব এর কথা মেনে নিয়েছি
–আকাশ যদি আমাকে মেনে না নেয় তখন কি হবে একবার ভেবে দেখেছেন
–আকাশ খুব জেদি জানিনা কখনো তোমাকে মেনে নিবে কিনা আমাকে ক্ষমা করে দিয় মা তোমার জীবনটা অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিলাম
–এতে আপনার কি দোষ মামার ইচ্ছেতেই তো বিয়েটা হয়েছে
–শুধু রাকিবের ইচ্ছায় না তোমার মায়ের ইচ্ছাতেও হয়েছে
–আম্মুর
–হ্যা তোমার আম্মু প্রায় দিন এই বাসায় আসে, রাকিব আর তোমার মা নাকি দুই বন্ধু আমি প্রথম ওদের কথা বলতে শুনেছিলাম তোমাদের বিয়ে নিয়ে
–ওহ
–শুনেছি ও তোমার আপন মা না
–হুম
–আমি আজকে থেকে তোর মা
–সত্যি বলছেন
–হ্যা
–আচ্ছা মা আপনার মেয়ে যদি কখনো কোনো বড় ভুল করে ক্ষমা করবেন তো
–সন্তানের সব ভুল মা ক্ষমা করে কিন্তু এই কথা বলছিস কেন
–এমনি খিদে লেগেছে চলেন নাস্তা করবো
–চল

মা কে নিয়ে নাস্তা করে রোমে আসলাম, বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম ভাবছি মা মেঘা কে পছন্দ করেন মামার কারনে আমাকে এনেছেন এখন আমি যদি ওদের মিলিয়ে দেই অবশ্যই মা মেনে নিবেন মামা না মানলে কোনো সমস্যা নেই কারন এই ছয় মাসে আকাশ যেকোনো একটা চাকরী খুঁজে নিবে তখন আর ওদের এই বাসায় থাকতে হবে না
আচ্ছা ওদের মিলিয়ে দেয়া কি ঠিক হবে সবাই আমাকে খারাপ ভাববে না তো…?
দূর যার যা খুশি ভাবুক আমার কি আমি ওদের মিলিয়ে দেবো এইটা ছাড়া রাস্তা নেই
যদি মেঘা আর আকাশ কে মিলিয়ে দেই তাহলে তারা সুখী হবে আর যদি এমন ভাবে চলতে থাকে তাহলে আমি মেঘা আকাশ তিনজনই কষ্ট পাবো আর যদি ওদের মিলিয়ে না দিয়ে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাই তাহলেও সবাই কষ্ট পাবে
আকাশ যেমন আমাকে কখনো মেনে নিতে পারবে না তেমনি আমার পক্ষেও আকাশ কে মেনে নেওয়া সম্ভব না কিভাবে মেনে নিবো আমি তো এখনো শ্রাবনকে ভালবাসি ওকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না, শ্রাবনের কথা মনে পরতেই চোখ দুইটা ঝাপসা হয়ে গেলো জানিনা ও এখন কোথায় আছে কেমন আছে মোবাইলটাও অফ হয়তো সিম চেঞ্জ করে ফেলছে, আচ্ছা ও আমার সাথে এমন করলো কেন…? আমার কি দোষ ছিল আমি তো শুধু ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম ও কেন সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে চলে গেল…? ও তো এমনটা না করলেও পারতো

চোখের পানি মুছে রোমে যাওয়ার জন্য পিছন ফিরলাম দেখি আকাশ দারিয়ে আছে
–তুমি কাঁদছিলে
–কই না তো
–আমি দেখেছি লুকাতে হবে না
–হুম
–কাঁদছিলে কেন
–এমনি
–তোমার বফ এর কথা মনে পরেছে বুঝি
–বুঝলে কিভাবে
–এভাবে মানুষ ভালোবাসার মানুষের জন্যই কাদে
–হয়তো

চলবে?

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ২০

0

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ২০

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

যাকে ভালোবাসছি তাকে হারালাম অন্য একজনের সাথে বিয়ে হয়ে গেলো, আব্বুকে একা করে চলে যাচ্ছি নতুন ঠিকানায় কিন্তু আমার চোখে একফোঁটা পানি নেই, অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর কথাটাই সত্যি আমি কষ্ট পেতে পেতে পাথর হয়ে গেছি তাই দুচোখে আজ পানি নেই, চোখ দুইটার ই বা দোষ কি আর কতো কাঁদবে ছোট বেলা থেকেই তো কেঁদে আসছে, আম্মুর কথা খুব মনে পরছে আম্মু থাকলে হয়তো আমার জীবটাই অন্য রকম হতো, হঠাৎ গাড়ির ঝাঁকানি তে বাস্তবে ফিরে আসলাম, একটা বিশাল বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো খুব জাঁকজমক ভাবে না সাজানো হলেও অনেকটাই সাজানো বাড়িটা, সব নিয়ম কানুন শেষ করে আমাকে একটা রোমে নিয়ে বসানো হলো, আমি চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রোমটা দেখছি অনেক বড় রোম নানা ধরনের আসবাবপত্র, রোমটা অনেক সুন্দর করে সাজানো নানা ধরনের কাচা ফুল দিয়ে তার মধ্যে গোলাপ ফুল অনেক বেশি, বিছানায় গোলাপের পাপড়ি ছিটানো ওরা হয়তো জানেনা আমার গোলাপ নয় বেলি ফুল পছন্দ, হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ শুনলাম বুঝলাম আকাশ এসেছে, আমার বুক ধুক ধুক করছে শ্রাবনের কথা কিভাবে শুরু করবো আকাশ আদৌ কি মেনে নিবে, রিয়ার কথা মনে পড়লো ও বলেছিল আকাশকে মেনে না নিলেও পায়ে ধরে যেন সালাম করি তাই খাট থেকে নেমে সালাম করতে গেলাম কিন্তু আকাশ সরে গেলো
আকাশ: সালাম করতে হবে না
আমি: কেন
–আমি আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই কথা গুলো শুনার পর যদি ইচ্ছে হয় সালাম করতে পারেন আমি বাধা দিবো না
–কি কথা বলুন
–হুম বলবো আগে আপনি ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে আসুন বেনারসি পরে যে আপনার অসহ্য লাগছে তা বুঝা যাচ্ছে
–হুম
ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পাল্টে একটা থ্রি-পিছ পরে নিলাম এসে দেখি আকাশও চেঞ্জ করে নিয়েছে

আকাশ: চলেন বারান্দায় গিয়ে বসি
–হুম (বুঝতেছি না কি হচ্ছে ও কি এমন বলবে বলতে তো চেয়েছিলাম আমি, আচ্ছা আগে শুনি ও কি বলে তারপর নাহয় আমার কথা গুলো বলব)
–আচ্ছা আপনার নাম কি (খুব অভাক হলাম বিয়ে করে ফেলছে অথচ নাম জানে না)
–তমা
–অনেক সুন্দর নাম, খুব অভাক হচ্ছেন তাই না বিয়ে করে ফেলেছি অথচ যাকে বিয়ে করলাম তার নাম টাই জানিনা
–হুম
–আসলে আমি এই বিয়েতে রাজি ছিলাম না মামার কথায় বিয়েটা করতে হয়েছে
–(আবারো অভাক হলাম কি অদ্ভুত বিয়ের কনে রাজি না বর রাজি না অথচ বিয়ে হয়ে গেলো)
–চুপ হয়ে আছেন যে
–এমনি আচ্ছা রাজি যেহেতু ছিলেন না বিয়েটা করলেন কেন
–ভাগ্যের চাকা ঘুরতে ঘুরতে আমাকে আজ এখানে এনে দাড় করিয়েছে
–বুঝলাম না
–আমি যখন খুব ছোট তখন আব্বু মারা গেলেন, আমাকে নিয়ে আম্মু কোথায় যাবে কিভাবে লালনপালন করবে তাই মামার কাছেই চলে আসেন, এইযে এতো বড় বাড়ি দেখছেন এতো সম্পদ সব আমার মামার কালো টাকায় গড়া, যখন থেকে বুঝতে শিখেছি এসব পাপের টাকায় গড়া তখন থেকেই এই পাপের হাতছানি থেকে অনেক দুরে ছুটে যেতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি, পড়ালেখা শেষ না করে কিছু একটা না করে আম্মুকে নিয়ে কোথায় যাব তাই এখানেই পরে আছি আম্মুও চায় না এখানে থাকতে, পড়ালেখা মাত্র শেষ করলাম আর মামা বিয়ের জন্য জোর করতে শুরু করলেন, আমি রাজি ছিলাম না কারন আমি মেঘা কে ভালোবাসি কিন্তু মামা রাজি হলেন না আম্মু রাজি থাকলেও মামার কারনে কিছু করতে পারেননি, ছোট বেলা থেকে মামা আমাদের লালনপালন করেছেন উনার কথা তো রাখতেই হবে, জানিনা মামা কেন আপনাকে এতো পছন্দ করেছেন অনেক জোর করে বিয়েটা করিয়েছেন আর আম্মু তো আগে মেঘা কে পছন্দ করতেন কিন্তু আপনাকে দেখার পর পছন্দ হয়ে গেছে, জানিনা মেঘা কে পাবো কিনা কিন্তু আমি আপনাকে কখনো ভালোবাসতে পারবো না
–মেঘা কে আপনার মামা মেনে নেন নি কেন
–জানিনা হয়তো আপনাকে বেশি পছন্দ হয়েছে তাই
–আচ্ছা আপনার মামা বিয়ে করেননি
–করেছিলেন মামি দুই বছর পরই ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছেন
–কেন
–মামার খারাপ কাজ গুলা মামির পছন্দ ছিল না বাসায় মেয়ে পর্যন্ত আনতেন তাই চলে গেছেন
–হুম আচ্ছা মেঘা কি জানে আপনি আজ বিয়ে করেছেন
–হুম জানে পাগলীটা কি করতেছে জানিনা হয়তো কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটি ফুলিয়ে ফেলছে
–খুব ভালোবাসে বুঝি আপনাকে
–হুম অনেক ভালোবাসে আমিও বাসি
–হুম
–আমি মেঘা ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবো না আপনি যদি অধিকার চান পাবেন কিন্তু আমার ভালোবাসা কখনো পাবেন না এখন আপনার ইচ্ছা
–কারো মন ভেঙ্গে সুখী হবার ইচ্ছে আমার নেই তাছাড়া আমিও এই বিয়ে করতে চাইনি পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে করতে হয়েছে আপনি এসব না বললেও আমি আপনাকে বলতাম এই সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না
–একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে পারি
–হুম অবশ্যই
–আপনি কি কাউকে ভালোবাসেন
–হুম
–সে কোথায়
–হারিয়ে গেছে
–মানে
–এসব অনেক কথা অন্যদিন বলবো আপনি মেঘা কে ফোন দিয়ে বলুন কান্নাকাটি না করতে
–আমি তো ভেবেছিলাম আপনি মেনে নিবেন বা উল্টো আমার ঘাড় মটকে দিবেন হাহাহা
–আমি পেত্নী না আর ফাজলামো রেখে মেঘা কে ফোন দিন
–আচ্ছা আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি
–হুম
–তাহলে আপনি বলা বাদ তুমি করে বলবা
–ঠিক আছে

আকাশ মেঘা কে ফোন দিয়ে কথা বলতে শুরু করলো আর আমি ভাবছি শ্রাবনের কথা
আজ শ্রাবনের সাথে বিয়েটা হলে রাতটাই অন্যরকম হতো

আকাশ: মেঘা তোমার সাথে কথা বলতে চায়
আমি: আমার সাথে কি কথা বলবে
আকাশ: আসলে ও বিশ্বাস করতে পারছে না তুমি যে সব মেনে নিয়েছ
আমি: ঠিক আছে কথা বলবো কিন্তু উনাকে কি বলে ডাকবো
আকাশ: ও তোমার বড় তাই আপু বলেই ডাকতে পার
আমি: ঠিক আছে

আমি: আসসালামু আলাইকুম আপু
মেঘা: ওয়ালাইকুম আসসালাম কেমন আছ বোন
–ভালো আপনি
–জানই তো
–প্লিজ আপু কান্নাকাটি করবেন না আমি কথা দিচ্ছি আপনাদের এক করে দিব
–কিভাবে সম্ভব
–আকাশ একটা চাকরী পেলেই আমরা ডিভোর্স করে নিব তারপর আপনাদের বিয়ে দিব
–কোনো মেয়ে কি বাসর রাতে স্বামীর প্রেমিকা কে মেনে নিয়ে তাদের বিয়ে দিবে প্রতিশ্রুতি দেয়
–জানিনা কিন্তু আমি দিলাম কারন আমি জানি ভালোবাসার মানুষ কে হারানোর যন্ত্রণা কতটুকু
–তুমি কি কাউকে ভালোবাস
–হুম
–সে কোথায়
–অন্য একদিন বলবো আপু আপনারা কথা বলুন আর হ্যা আকাশ আর আমার উপর বিশ্বাস রাখবেন প্লিজ, বিশ্বাস না থাকলে কোনো সম্পর্কই ঠিকে থাকে না
–তোমার সাথে কথা বলেই বুঝতে পেরেছি বোন তোমার উপর বিশ্বাস রাখা যায়
–থ্যাংকস আপু

চলবে?

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৯

0

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

রিয়া আর আমি বিয়ের কার্ড নিয়ে শ্রাবনদের বাসায় গেলাম কিন্তু দরজায় তালা দেয়া
–তমা দরজায় তালা দেয়া তো
–কোথাও গেছে হয়তো
–শ্রাবনকে ফোন দিয়ে দেখ
–হুম (ফোন দিলাম কিন্তু বন্ধ)
–বন্ধ রে
–চল পাশের বাসার কাউকে জিজ্ঞাসা করি
–হুম
পাশের বাসার এক আন্টিকে জিজ্ঞাসা করলাম
–আন্টি শ্রাবনরা কোথায়
–ওরা তো এখান থেকে চলে গেছে
–মানে
–ছেলেটা কে নিয়েই ভাবি বেঁচে আছেন উনারা খুব ভালো মানুষ ছেলেটাও অনেক ভালো কিন্তু দুদিন আগে ছেলেটা কে কারা যেন অনেক মেরেছে, ছেলেকে হারানোর ভয়ে উনি ছেলেকে নিয়ে এখান থেকে একেবারে চলে গেছেন
–কোথায় গেছেন আপনি জানেন
–না মা এসব কিছু বলে নি
–ঠিক আছে আন্টি আসি

রিয়া: বুঝলাম না ওকে কে মারবে
আমি: আমিও বুঝতে পারছি না
–বিয়ে তো ঠিক হয়েই গেছে আর খুঁজে কি করবি
–হুম
–ভুলে যা বিয়েটা করে নে
–চাইলেই কি ভুলা যায়
–হয়তো ভুলা যায় না কিন্তু যাকে ভালোবাসিস সেই তো প্রতারণা করেছে তাকে মনে রেখে কি লাভ
–হুম জানিস আকাশ ছেলেটা কে দেখতে অনেক ভালো মনে হয় এমন একটা ছেলেকে ঠকাবো ভেবে নিজেকে খুব বেশি অপরাধী মনে হচ্ছে
–তোর কি দোষ তুই তো পরিস্থিতির স্বীকার
–আকাশ কে একবার বললে হতো না
–বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আর বলে কি হবে
–হুম
–যা হবার হয়েছে বিয়েটা করে নে
–হুম

রাতে বিছানায় শুয়ে আছি, কাল আমার বিয়ে বাড়িতে অনেক মেহমান সবাই আনন্দ করছে আর আমার বুক ফেটে কান্না আসছে, আমি তো অন্য কারো জন্য বউ সাজতে চাইনি সব স্বপ্ন ওকে ঘিরেই দেখেছিলাম কেন সব উলট-পালট হয়ে গেলো
রিয়া: তমা
আমি: হুম
–আর কত কান্না করবি
–আমার জীবনে কান্নাটাই একমাত্র সঙ্গী রে
–কাঁদলে কি শ্রাবন ফিরে আসবে
–জানিনা
–কান্না থামা প্লিজ তোর কথায় তো গায়ে হলুদ ও করা হয়নি মেহেদী তো পরবি
–যার জন্য দুহাত ভরে মেহেদী পরার স্বপ্ন দেখেছিলাম সেই তো নেই মেহেদী পরে কি হবে
–বিয়ের সময় মেহেদী পরতে হয়
–জীবন্ত লাশের আবার বিয়ে
–চুপ করে বস তো আমি মেহেদী পরিয়ে দিচ্ছি
–ওকে
–একদম কান্নাকাটি করবি না
–আচ্ছা রিয়া আমি আকাশ কে সব কিছু বলার পর যদি ও মেনে না নেয় যদি রেগে গিয়ে আব্বুকে বলে দেয়
–তুই তো বলেছিস আকাশ কে দেখে ভালো ছেলে মনে হয় আশা করি ও মেনে নিবে
–মেনে না নিলে
–উফফফফ এতো নেগেটিভ চিন্তা করছিস কেন সব ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করিস না
–হুম

আজ আমার বিয়ে আমার কান্নাও পাচ্ছে আবার হাসিও পাচ্ছে হিহিহি, বিয়েটা শ্রাবনের সাথে হচ্ছে না তাই কান্না পাচ্ছে আর আমি তো এখন জীবন্ত লাশ আমাকে সাদা কাপর পরিয়ে কবরে না রেখে এসে লাল বেনারসি পরিয়ে বউ সাজানো হচ্ছে অন্যের ঘরে পাঠানোর জন্য কি অদ্ভুত নিয়ম
লাল বেনারসি পরে বউ সেজে বসে আছি পিচ্ছিরা চেঁচামেচি শুরু করেছে বর এসেছে বর এসেছে
রিয়া: তমা তোর হাব্বিটা অনেক সুন্দর
আমি: তোর পছন্দ হয়েছে নে আমার শাড়িটা পরে বউ সেজে বসে থাক বিয়েটা তুই করে নে
–রেগে যাচ্ছিস কেন
–আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে আর তুই আসছিস বর সুন্দর বলতে
–কান্না করে আর কি লাভ হবে শ্রাবন তো আর ফিরে আসবে না
–হুম

আম্মু আসলেন উনাকে সবচেয়ে বেশি খুশি মনে হচ্ছে, শুনেছি ছেলে পক্ষ অনেক বড়লোক, মা বাবা তো সব মেয়েকেই বড়লোক ছেলের কাছে বিয়ে দিতে চায় যেন সুখি হয় সে হিসেবে তো আমি সুখি হবো তাহলে আম্মু এতো খুশি কেন আম্মু তো আমার সুখ চায় না উল্টো আমাকে মেরে ফেলতে চায়
আম্মু: তমা তুই এই বিয়েতে রাজি হয়েছিস আমি অনেক খুশি হয়েছি
আমি: এতে তোমার লাভ কি
–আমার লাভ কি মানে
–যে খুশি হয়েছ বুঝা তো যাচ্ছে এতে তোমার কোনো লাভ আছে
–তোকে আমি মেয়ের মতো দেখি এতো বড় জায়গায় বিয়ে হচ্ছে খুশি হবো না (মেয়ে যে ভাবো তাতো বুঝাই যায়)
–আচ্ছা আম্মু বিয়ের প্রস্তাবটা এনেছে কে
–আমার ফ্রেন্ড রাকিব, আকাশ তো ওর ভাগ্নে
–ওহ তাই তুমি এতো খুশি
–কেন তুই খুশি না
–হুম অনেক খুশি
–একটু পর কাজি আসবে বস আমি আসছি
–হুম

কাজি, আব্বু, আম্মু, রিয়া সহ অনেক মানুষ আমার সামনে বসা সবার একটাই কথা কবুল বল কিন্তু আমার গলা দিয়ে তো কবুল শব্দটা আসছে না, কবুল শব্দটা তো আমি শ্রাবনের জন্য বলতে চেয়েছিলাম আকাশের জন্য বলবো কিভাবে
কাজি: কবুল বলো মা
আব্বু: মা কবুল বল
আম্মু: চুপ হয়ে থাকিস না কবুল বল
রিয়া: তমা প্লিজ তাড়াতাড়ি কবুল বল
সবার একটাই কথা কবুল বল কবুল বল কবুল বল কিন্তু আমার ভিতর থেকে তো এই শব্দটা আসছে না আমি বলতেই চাচ্ছি না, কেন বলবো আমি তো শ্রাবনকে ভালোবাসি, হায়রে জীবনের স্রুত কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলাম আর কার সাথে বিয়ে হচ্ছে, আমাদের জীবনটা খুব অদ্ভুত
তিন শব্দের “কবুল কবুল কবুল” আর তিন শব্দের “আমি তোমাকে ভালোবাসি” অথচ কতো পার্থক্য যাকে বলি “আমি তোমাকে ভালোবাসি” তাকে আমরা চাইলেও নিয়তি আমাদের “কবুল” বলতে দেয় না আর যাকে “কবুল” বলি তাকে শত চেষ্টা করেও “আমি তোমাকে ভালোবাসি” বলতে পারি না, বলতে পারবো কিভাবে মন তো একটাই একবার যাকে দেয়া হয় তার কাছ থেকে কি ফেরত এনে নতুন করে অন্য কাউকে দেয়া যায়, জীবনের স্রুত যে কোন দিকে বয়ে যায় আমরা কেউ বলতে পারি না তাইতো স্রুতের দ্বারায় হঠাৎ কেউ জীবনে আসে আবার সেই স্রুতের দ্বারায়ই সে হারিয়ে যায়, খুব কম মানুষই ভালোবাসার মানুষ কে জীবন সঙ্গী হিসেবে পায় তারা খুব ভাগ্যবান/ভাগ্যবতী হয় তাইতো ভালোবাসার মানুষ কে চির আপন করে পায়, ভালোবাসার মানুষটা কে জীবন সঙ্গী হিসেবে পাওয়া সবার কপালে জোটে না

আব্বু: কিরে মা এতক্ষণ ধরে কি ভাবছিস কবুল বল (আব্বুর কথায় ভাবনা জগত থেকে বাস্তবে আসলাম)
–হুম (কবুল বললাম কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো আমার চোখ থেকে একফোঁটা পানিও ঝরেনি)

বিদায়ের সময় হলো কিন্তু আমার চোখে পানি নেই ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি বিদায়ের সময় মেয়েরা অনেক কাঁদে কিন্তু আমার দুচোখে একফোঁটা পানিও নেই, গাড়িতে উঠে বসলাম গাড়ির জানালা দিয়ে আব্বুর দিকে থাকিয়ে আছি উনার দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে পাশে তুলি আর রিয়া দারিয়ে কাঁদতেছে আর আম্মুর মুখে খুশির ঝিলিক, গাড়ি চলছে তার নিজ গন্তব্যে আর আমি দুচোখ বন্ধ করে ভাবছি শ্রাবন কেন আমার সাথে প্রতারণা করেছে কিন্তু ভেবে কিছুই পাচ্ছি না আর হয়তো পাবোও না……

চলবে?

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৮

0

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

–ভালোবাসার জন্য নিজেকে একটু ছোট করলে দোষ কি
–তোর যা ভালো মনে হয় কর
–কাল কলেজে আসিস
–ঠিক আছে

রিয়া আর আমি সারা কলেজে শ্রাবনকে খুঁজলাম কোথাও ফেলাম না
–তমা ও তো কলেজে আসেনি এখন কি করবি
–আমি আব্বুর কাছ থেকে দুদিনের সময় নিয়েছি ওকে খুঁজে বের করতেই হবে
–ফোনও তো বন্ধ কি করবি
–ওর বাসায় যাবো
–ঠিক আছে চল

শ্রাবণের বাসায় ও আর ওর আম্মুর সামনে বসে আছি
মা: কেন এসেছ
রিয়া: আন্টি আপনি তো জানেন ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে কিন্তু হঠাৎ করে শ্রাবন পাল্টে গেছে
মা: জানি আর এটাও জানি শ্রাবন তমা কে আর ভালোবাসে না
আমি: আমার দোষ কি মা
মা: দোষ গুন জানিনা আমার ছেলে তোমাকে আর ভালোবাসে না তাই আমি চাই না তুমি আর আমার ছেলেকে বিরক্ত কর
আমি: কি বলছেন মা এসব
মা: আশা করি বুঝতে পেরেছ
রিয়া: আন্টি তমার বাসা থেকে বিয়ের চাপ দিচ্ছে তাই আমরা এখানে এসেছি
মা: বিয়ে করে নাও এখানে কেন এসেছ
আমি: মা আমি শ্রাবনকে ভালোবাসি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না
শ্রাবন: কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি না আর বিয়েও করতে চাই না
রিয়া: শ্রাবন তুমি এতো পাল্টে গেলে কিভাবে তুমি তো ওকে না দেখে থাকতে পারতে না
শ্রাবন: দেখ রিয়া আমি ওকে এখন আর ভালোবাসি না তোমরা আসতে পারো
আমি: ভালোবাসাটা কি পুতুল খেলা চাইলেই ভালোবাসলা আর প্রয়োজন শেষে ছুড়ে ফেলে দিলা
রিয়া: এমনটাই যখন করার ইচ্ছে ছিল ওর জীবনে কেন আসছিলা আর কোনো মেয়ে ছিল না পৃথিবীতে
মা: অনেক বলেছ তোমরা এখন আসতে পারো আমার ছেলেকে আর বিরক্ত করো না
রিয়া: তমা চল এখান থেকে ওরা মা ছেলে দুজনই এক মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করে

চলে আসলাম ওদের বাসা থেকে রিক্সায় বসে আছি
–তমা আগেই বলেছিলাম নিজেকে ছোট করিস না এখন কাঁদছিস কেন
–ও আমার সাথে প্রতারণা করলো কেন
–ওর মতো ছেলেদের এটাই স্বভাব আঙ্কেল যাকে পছন্দ করেছেন তাকে বিয়ে করে নে
–আমি অন্য কাউকে নিয়ে ঘর বাঁধতে পারবো না
–আঙ্কেল এর জন্য হলেও তোকে বিয়েটা করতে হবে, দেখ শ্রাবন তোর সাথে প্রতারণা করেছে কার জন্য বসে থাকবি তুই
–রিয়া আমি নতুন করে কাউকে ভালোবাসতে পারবো না বিয়ে করে ছেলেটির জীবন কেন নষ্ট করবো
–আঙ্কেল তোকে অনেক ভালোবাসে উনার মনে কষ্ট দিস না ছেলেটাকে মেনে নিতে না পারিস এখন অনন্ত বিয়েটা কর পরে না হয় ছেলেটাকে বুঝিয়ে কিছু করবি
–কি করবো তখন ডিভোর্স দিয়ে চলে আসবো
–পরেরটা পরে ভাবা যাবে আপাদত বিয়েটা কর
–হুম
–নাহলে আঙ্কেল কে একবার শ্রাবণের কথা বলে দেখ
–নারে আমি জানি আব্বুকে মুখ ফুটে একবার যদি বলি শ্রাবনকে ভালোবাসি আব্বু শ্রাবনকে রাজি করাতে চাইবে, শ্রাবনদের কাছে ছোট হবে প্রয়োজনে পায়ে ধরবে তাও আমাকে সুখি দেখতে চাইবে, আজ ওরা আমাদের যেভাবে অপমান করেছে আব্বুকেও তো অপমান করবে আমি চাই না আব্বু আমার জন্য অপমানিত হোক
–তোর আব্বু যদি তোর সুখের জন্য এতো কিছু করতে পারেন তাহলে তুই কেন উনাকে ভালো রাখার জন্য ওই প্রতারক কে ভুলে আঙ্কেল এর পছন্দে বিয়ে করতে পারবি না
–বিয়েটা আমি করবো শুধু আব্বুকে ভালো রাখার জন্য কিন্তু ছেলেটা কে কখনো ভালোবাসতে পারবো না
–হুম

রাতে ছাদে বসে আছি আর দুচোখের পানি ঝরাচ্ছি আব্বু আসলেন
–তমা
–হুম আব্বু বলো
–ছেলে পক্ষ দেখতে আসতে চাইছে তুই কিছু ভাবলি
–তোমার যা ভালো মনে হয় কর
–এইতো আমার লক্ষী মা তাহলে ওদের কাল আসতে বলি
–ঠিক আছে

আজ আমাকে দেখতে আসবে আব্বু অনেক খুশি তারচেয়ে বেশি খুশি আম্মু, বুঝলাম না আম্মু এতো খুশি হলো কেন, আম্মু আসলো
–দুপুর হয়ে গেছে একটু পর ওরা চলে আসবে রেডি হয়ে নে
–হুম
–এইনে এই শাড়িটা পরিস (আম্মুর একটা শাড়ি দিয়ে বললো)
–আমি তো শাড়ি পরতে পারি না
–ঠিক আছে আমি পরিয়ে দিচ্ছি
–হুম
আম্মু শাড়ি পরিয়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিল

ছেলে পক্ষের সামনে বসে আছি চোখ দুটি যেন বাধ মানছে না কষ্ট করে চোখের পানি আটকিয়ে রাখছি
ছেলের মা: কেমন আছ মা
আমি: ভালো
ছেলের মা: আমি তোমার সম্পর্কে সব জানি আর কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাই না তুমি আমার ছেলেকে দেখে বল পছন্দ হয়েছে কিনা পছন্দ হলে আমি এখনি আংটি পরিয়ে ফেলতে চাই
–(উনার কথা শুনে সামনের দিকে থাকালাম ছেলেটা বেশ সুন্দর দেখে ভালই মনে হচ্ছে এমন ভালো একটা ছেলেকে ঠকাবো ভেবে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে)
–মা আমার ভাগ্নে কে পছন্দ হয়েছে তো (কথাটা শুনে সামনে থাকালাম আরে এটা তো আম্মুর বেহায়া ফ্রেন্ড রাকিব, এই লুইচ্ছার ভাগ্নে বলছে কেন)
আব্বু: আমার পছন্দই আমার মেয়ের পছন্দ আপনাদের ছেলেকে আমার পছন্দ হয়েছে
ছেলের মা: তাহলে আমি দেরি করতে চাই না আগামী শুক্রবারেই শুভ কাজ সেরে ফেলতে চাই
আব্বু: মাত্র এক সপ্তাহের ভিতরে
রাকিব: আমার ভাগ্নে জাঁকজমক বেশি পছন্দ করে না তাই সাধারণ ভাবেই বিয়েটা হবে
আব্বু: ঠিক আছে

ছেলের মা আমার হাতে আংটি পরিয়ে চলে গেলেন

রাতে বিছানায় শুয়ে আছি আর চোখ দুটি অবাধ্যের মতো বালিশ বিজিয়ে যাচ্ছে
— মা আসবো (আব্বুর কন্ঠ শুনে তাড়াতাড়ি চোখ মুছলাম)
–আসো
–কয়েকটা দিন অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি তোর বিয়ের কেনাকাটা করতে হবে তো
–হুম
–এতো মনমরা হয়ে আছিস কেন
–কই
–ছেলের নাম কি ছেলে কি করে কিছুই তো জানতে চাইলি না
–জেনে কি হবে
–তুই কি এই বিয়েতে রাজি না
–কে বললো রাজি না
–তাহলে কিছুই জানতে চাইলি না যে
–ওহ তাই তো ছেলের নাম কি
–আকাশ, এখনো কিছু করে না পড়ালেখা শেষ করেছে মাত্র
–হুম
–এতো মনমরা হয়ে থাকিস কেনরে মা
–তোমাদের ছেড়ে চলে যাবো তো তাই খারাপ লাগছে
–সব মেয়েদেরই একদিন এভাবে মা বাবা আপনজন দের ছেড়ে যেতে হয়রে মা এটাই নিয়ম (আব্বুর চোখে পানি দেখে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না আব্বুকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কেঁদে দিলাম)

আর চারদিন পর বিয়ে সত্যিই কি এইটা বিয়ে হবে নাকি একটা জীবন্ত লাশ কে লাল বেনারসি পরিয়ে সাজিয়ে অন্যের ঘরে পাঠানো হবে, আব্বু আসলেন
–মা এইনে বিয়ের কার্ড তোর বন্ধুদের দাওয়াত দিয়ে আয়, আর তো চারদিন বাসা থেকে বেরুতে পারবি না আজ দাওয়াত দিয়ে আয় যাদের দেবার
–হুম

রিয়াকে ফোন দিলাম
–হ্যালো
–আমাদের বাসায় আয়
–কেন
–আমার বিয়ের কার্ড প্রথম শ্রাবণের হাতে দিতে চাই
–হুম আসছি

চলবে?

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৭

0

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

–এই কাজ না করে আমাকে বলতি কি হয়েছে
–(বুঝতেছি না আমি কেন বিষ খাবো আমি তো দুই লুকমা ভাত খেয়েই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম তাহলে কি আম্মু ভাতে…..
না না কিসব ভাবছি আম্মু আমাকে মারতে চাইবে কেন)
–কিরে চুপ হয়ে আছিস কেন বল কোন কষ্টে এই জঘন্য কাজ করেছিস
–(আব্বুকে কি বলবো দুই লুকমা ভাত খেয়েই অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম, বললে তো আব্বু আম্মুকে সন্দেহ করবে সংসারে অশান্তি শুরু হবে এমনকি আব্বু আম্মুকে পুলিশেও দিতে পারেন, নাহ না বলাটাই ভালো আমি সংসারে অশান্তি চাই না, আম্মুর দিকে চেয়ে দেখি ভয়ে চুপসে গেছে)
–কিছু বলবি নাকি এভাবে চুপ হয়ে থাকবি
–বাদ দাও না আব্বু আমার এখানে ভালো লাগছে না ডক্টর কে জিজ্ঞেস করে আসো কবে আমাকে রিলিজ করে দিবে
–ঠিক আছে
আব্বু আম্মু আর রাকিব বেহায়াটা ডক্টর এর কাছে গেলো, রিয়া আমার পাশে এসে বসলো
–তুই এই কাজ করবি আমি ভাবতেও পারিনি
—————–
–এখন চুপ হয়ে আছিস কেন আমি বুঝলাম না তোর মতো বুদ্ধিমতী মেয়ে একটা ছেলের জন্য সুইসাইড করতে চাইছিল তাও যে ছেলে তোর সাথে প্রতারণা করেছে
–রিয়া আমি বিষ খাইনি
–ফান করছিস বিষ না খেলে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছিস কেন ডক্টর তোর পেট থেকে বিষ বের না করে কি পানি বের করছে
–বিশ্বাস কর আমি বিষ খাইনি আম্মু আমাকে ভাত খেতে দিয়ে ফোনে কথা বলতে গেয়েছিল আমি দুই লুকমা ভাত খেতেই পেটে জ্বালা শুরু হয় মাথা ঘুরে তারপর আর কিছু মনে নেই
–তাহলে কি তোর আম্মু…..
–হতে পারে
–কিন্তু উনি তোকে মারতে চাইবে কেন
–জানিনা এতে উনার কোন স্বার্থ আছে
–আচ্ছা উনি যদি তোকে মারতেই চাইবেন তাহলে তুই অজ্ঞান হবার সাথে সাথেই আমাকে ফোন দিলেন কেন যে তুই বিষ খেয়েছিস তারপর তোকে এখানে এনেছে তোর আব্বুকে ফোন করে কান্নাকাটি করে বলেছে আসতে, তোকে যদি মারতেই চাইবে হাসপাতালে আনলো কেন তুই মারা যাবার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করল না কেন
–জানিনা, সত্যিটা কি তাতো একদিন বেরিয়ে আসবেই, অন্ধকার দিয়ে সত্যি কে কখনো লোকানো যায় না দিনের আলোতে সত্যি একদিন বেরিয়ে আসবেই সে দিনের অপেক্ষায় থাকবো আমি
–তোর আব্বুকে এই কথা বললি না কেন
–আমি সংসারে অশান্তি চাই না তুলিকে মা হারা করতে চাই না, প্লিজ এই সত্যিটা কাউকে বলবি না
–ঠিক আছে (রিয়ার ফোন বেজে উঠলো)
–শ্রাবন ফোন দিয়েছে
–লাউড দিয়ে কথা বল
–হুম (ফোন রিসিভ করলো)

রিয়া: হ্যালো
শ্রাবন: তমার জ্ঞান ফিরেছে
রিয়া: তুমি জানলে কিভাবে
শ্রাবন: জেনেছি কোন এক ভাবে
রিয়া: এর ফিছনে তোমার কোনো হাত নেই তো
শ্রাবন: রিয়া আমি ওকে ভালোবাসি আর যাই করি ওকে মেরে ফেলবো না পরিস্থিতির কারণে হয়তো ওর থেকে দুরে চলে যেতে হবে কিন্তু ও বেঁচে আছে এই পৃথিবীতে এইটা ভেবেই আমি ভালো থাকবো
রিয়া: তোমার কথার কিছুই বুঝতেছি না
শ্রাবন: একদিন ঠিকি বুঝতে পারবা ওকে দেখে রেখো আর ওকে বইলো আমাকে খুঁজার চেষ্টা যেন না করে বলেই ফোন কেটে দিলো

রিয়া: তমা ওর কথার অর্থ কিছু বুঝলি
আমি: ও বলেছে পরিস্থিতির কারণে দুরে যেতে হবে তাহলে কি ওর কোনো পারিবারিক সমস্যা
— ওর আম্মু তো তোকে পছন্দ করে পারিবারিক সমস্যা হবে কেন
–জানিনা কিন্তু একটা রহস্য তো আছেই
–হুম

আব্বু আম্মুরা চলে আসলো
আব্বু: আগামীকাল সকালে রিলিজ করে দিবে
আমি: আচ্ছা
আম্মু: কেন এমন পাগলামি করতে গেলি মা (আমার গালে হাত দিয়ে)
–(মৃদু হাসলাম শুধু, উনি মারতে চেয়ে এখন আবার ভালোবাসা দেখাচ্ছে)
রাকিব: এমন পাগলামো করতে নেই মা আর কখনো এমন কাজ করো না
আমি: হুম

সকালে আমাকে রিলিজ করে দেয়া হলো বাসায় চলে আসলাম, আব্বু চলে গেলেন, দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেলো, আম্মু আমার খুব যত্ন নিচ্ছেন আর উনার বেহায়া রাকিব ফ্রেন্ড প্রতিদিন বাসায় আসে এখন আর সুযোগ ফেলেই আমার দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে থাকায়, শ্রাবন একদিন ও ফোন করে জানতে চায়নি কেমন আছি আমি, আচ্ছা ও কি আদৌ আমাকে ভালোবাসত নাকি সব অভিনয় ছিলো, যদি অভিনয় করার ইচ্ছেই থাকতো ওর তাহলে আমিই কেন পৃথিবীতে কি আর কোনো মেয়ে ছিল না, ছোট বেলা থেকে কষ্টই শুধু ফেলাম আর শ্রাবন এসে সেই কষ্ট দ্বিগুণ করে দিয়ে চলে গেলো, ঝড়ের গতিতে আসলো আমার জীবনের কষ্ট গুলা দ্বিগুণ করে দিয়ে চলে গেলো কি প্রয়োজন ছিল এমন করার কি লাভ হয়েছে ওর, বসে বসে আনমনে হয়ে এসব ভাবছি আর দুচোখ দিয়ে বন্যা বয়ে যাচ্ছে হঠাৎ আব্বু আসলেন
–আম্মু আসবো
–আসো অনুমতি লাগে নাকি (তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছলাম)
–কি করছিস
–কিছু না বাসায় কখন আসছ ফোন করে বলনি যে
–এমনি বলিনি একটু আগেই আসলাম
–হুম
–হঠাৎ এতো চুপচাপ হয়ে গেলি কেন মা কি হয়েছে তোর বলবি আমাকে
–কই কিছু না তো
–তোকে একটা কথা বলতে চাই যদি অনুমতি দিস
–অনুমতি চাইছো কেন বল কি বলবা
–আমি বোকা নারে মা অনেক কিছুই বুঝি দেখ আমি বাসায় থাকি না কাজের জন্য অন্য জায়গায় থাকতে হয় তুই বাসায় একা থাকিস কতটুক অত্যাচার সহ্য করতে হয় আমি হয়তো জানিনা কিন্তু কিছুটা হলেও বুঝতে পারি, আমি এই অত্যাচারের মধ্যে তোকে রেখে ভালো থাকতে পারছি না তাই আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি
–কি সিদ্ধান্ত আব্বু
–তোর বিয়ের কথা ভাবছি
–বিয়ে
–হ্যা মা অনেক ভালো একটা সমন্ব এসেছে ওরা তোকে বিয়ের পরেও পড়ালেখা করাবে
–(এখন কি করবো আব্বুকে কি শ্রাবণের কথা বলবো)
–কিরে কি ভাবছিস দেখ আমি তোকে জোর করছি না তুই রাজি না থাকলে আমি ওদের না করে দিব
–আব্বু আমাকে দুইটা দিন সময় দাও ভেবে বলছি
–ঠিক আছে তুই এই বিয়েটা করলে আমি অনেক খুশি হব
–হুম
আব্বু চলে গেলেন কি করবো এখন আমি, শ্রাবনকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো কিভাবে আমার সব স্বপ্ন তো ওকে ঘিরে, নতুন করে অন্য কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা আমার পক্ষে সম্ভব না দেখতে চাইও না আমি, রিয়াকে বলে দেখি কি বলে ফোন দিলাম ওকে
–হ্যালো
–রিয়া আব্বু বিয়ের কথা বলেছে
–বিয়ে করে নে
–কি বলছিস আমি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না
–দেখ ও তোর সাথে প্রতারণা করেছে ওকে ভুলে যা
–সম্ভব না
–তাহলে কি করবি এখন
–কাল শ্রাবণের সাথে দেখা করে ওকে বুঝাবো
–ওকে এখন বুঝানো মানে তোর ভালোবাসাকে ওর কাছে ছোট করা কেন নিজেকে ছোট করতে চাইছিস
–ভালোবাসার জন্য নিজেকে একটু ছোট করলে দোষ কি

চলবে?

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৬

0

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

রাতে বারান্দায় বসে আছি হঠাৎ আব্বুদের রোমে চেঁচামেচি শুনা গেলো
আব্বু: তুমি এতো নিচে নামলা কিভাবে তমা তো তোমারও মেয়ে কিভাবে পারলা ওর হাত পুরতে
আম্মু: আমি তো আমার ভুল বুঝতে পারছি আমাকে ক্ষমা করে দাও
আব্বু: যে কাজ করেছ তুমি ক্ষমার অযোগ্য
আম্মু: আর এমন হবে না তমা কে আমি নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসব তুমি বললে তমার কাছেও ক্ষমা চাইবো
আব্বু: এইটা তোমার ইচ্ছা কিন্তু মনে রেখো আর কোনো দিন আমার মেয়ের উপর অত্যাচার করলে এই বাসা থেকে তোমাকে চলে যেতে হবে

আবার সব নীরব হয়ে গেলো বুঝলাম না আম্মু হঠাৎ এতো ভালো হয়ে গেলো কেন, না জানি এই মহিলার ভিতরে কোন খারাপ মতলব চলতেছে, এসব ভাবছি তখন আব্বু আসলেন
–কি করছিস
–এইতো বসে আছি
–আমাকে তো কাল চলে যেতে হবে
–হুম
–তোর আম্মুর কথায় তো বুঝা যায় ভুল বুঝতে পারছে
–হয়তো
–আর কখনো মিথ্যে বলিস না তোর আম্মু খারাপ ব্যবহার করলে আমাকে বলিস
–ঠিক আছে

দেখতে দেখতে একটা সপ্তাহ কেটে গেলো শ্রাবণের ফোন এখনো বন্ধ অসুস্থতার জন্য কলেজেও যেতে পারিনি জানিনা ওর কি হয়েছে, হাতটা অনেকটা কমেছে এই এক সপ্তাহ আম্মু কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি আমাকে প্রতি বেলা নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছে

রাতে বারান্দায় বসে আছি আর শ্রাবণের কথা আনমনে হয়ে ভাবছি ওর ফোন বন্ধ কেন ও কি আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে, হারাবে কেন ও তো আমাকে ভালোবাসে কি করে এতো দিন কথা না বলে থাকতে পারতেছে, এসব ভাবছি আর দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, শ্রাবন ফোন দিয়েছে তাড়াতাড়ি রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–হুম
–এতো দিন কোথায় ছিলে ফোন বন্ধ ছিল কেন
–এমনি
–মানে এমনি ফোন বন্ধ করে রাখছিলা কেন
–বললাম তো এমনি
–কি হয়েছে তোমার
–কিছু না তোমার হাত কমেছে
–তোমার ফোন তো বন্ধ ছিল আমার হাত পুরার কথা জানছ কিভাবে
–জেনেছি কোনো ভাবে দেখা করতে পারবা
–কখন
–এখনি
–এতো রাতে
–হুম তোমার সাথে কিছু কথা আছে একটু পর ছাদে এসো
–হুম
ছাদে গেলাম ও দারিয়ে আছে
–শ্রাবন
–তোমার হাতটা দেখাও
–নাহ দেখতে হবে না
–কেন
–এতো দিন কথা না বলে যখন থাকতে পারছ এখন হাত দেখে কি করবা
–হুম (আমি স্পষ্ট দেখছি ও চোখের পানি লোকানোর চেষ্টা করছে)
–কি হয়েছে বলবা
–তমা তুমি আমাকে ভুলে যাও
–মানে কি বলছ তুমি এসব
–ঠিকি বলেছি ভুলে যাও আমার পক্ষে রিলেশন রাখা সম্ভব না
–কিন্তু কেন
–এমনি
–তুমি কি বলছ বুঝতে পারছ
–হ্যা ভুলে যাও বিয়ে করে নাও সুখি হবা
–এই তুমি কি সেই শ্রাবন যে আমার জন্য সুইসাইড করতে চাইছিলা
–নাহ আমি পাল্টে গেছি ভুলে যেও আমাকে ভালো থেক বলেই চলে গেলো

ওর কথা গুলা আমার কানে এখনো বাজতেছে ওকে নাকি ভুলে যেতে হবে কিভাবে ভুলবো আমার সব স্বপ্ন তো ওকে ঘিরে কিভাবে বাঁচবো ওকে ছাড়া, সারা রাত চোখে ঘুম আসেনি দুইটা চোখ যেন আজ বন্যা হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতেই সকাল হলো নির্ঘুম রাত যে কতটা কষ্টের আজ বুঝেছি, রিয়াকে ফোন দিলাম
–হ্যালো
–কিরে তোর কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেন
–আমাদের বাসায় আসতে পারবি
–কি হয়েছে
–বাসায় আয় বলবো
–আচ্ছা রাখ আসছি

একটু পর রিয়া আসলো
–কিরে এতো সকালে আসতে বললি
–রিয়া আমার সব শেষ হয়ে গেছে (ওকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম)
–কি হয়েছে বলবি তো
–শ্রাবন বলেছে ওকে ভুলে যেতে
–মানে কেন
–ওর পক্ষে নাকি রিলেশন রাখা সম্ভব না ভুলে যেতে বলেছে আমি ভুলবো কিভাবে ওকে তো অনেক ভালবেসে ফেলছি
–ও হঠাৎ পাল্টে গেলো কেন
–জানিনা
–আচ্ছা কান্না থামা ওর সাথে আমি কথা বলে দেখি
–হুম
–চল আজকে কলেজে যাই তোর অসুস্থতার জন্য তো এতোদিন আমিও যাইনি আর শ্রাবণের সাথে দেখা হলে জিজ্ঞাসা করবো কেন এমন করছে
–আচ্ছা
কলেজে শ্রাবণের সামনে দারিয়ে আছি আমি আর রিয়া
রিয়া: শ্রাবন এসব কি শুনছি
শ্রাবন: যা শুনেছ তাই সত্যি
রিয়া: হঠাৎ এমন করছ কেন
শ্রাবন: আমি চাই না এই রিলেশন আর রাখতে
রিয়া: তুমি না ওকে ভালোবাস ওর জন্য মরতে চাইছিলা
শ্রাবন: হুম কিন্তু এখন আর ভালোবাসি না
আমি: বাহ প্রথম ভালোবাসা পাবার জন্য হাতের শিরা কাটবা আর পরে ভালো না লাগলে ছুড়ে ফেলে দিবা
রিয়া: ও তো ওর কষ্ট গুলা নিয়ে ভালই ছিল কেন আসছিলা ওর জীবনে কষ্টটা কে দ্বিগুণ করতে
শ্রাবন: দেখ আমি একসময় তোমাকে ভালোবাসতাম এখন আর বাসি না আমাকে ক্ষমা করে দিও ভালো থেক বলেই হনহন করে চলে গেলো
আচ্ছা ও যে শেষ কথাটা বলে গেলো “ভালো থেক” চাইলেই কি আমি ভালো থাকতে পারবো, ও কি একটা বার বুঝতে চাইছে আমার ভালো থাকা যে ওকে ঘিরে, ভালো থেক বলা সহজ কিন্তু সব ভুলে ভালো থাকা অনেক বেশি কঠিন

দেখতে দেখতে দুইটা সপ্তাহ কেটে গেলো শ্রাবন আর আমাকে ফোন করেনি আমি অবশ্য বেহায়া হয়ে অনেক বার ফোন করেছি কিন্তু ফোনটা বন্ধ, দুপুরে ছাদে বসে আছি আর শ্রাবণের সাথে করা খুনসুটি গুলা মনে করে নিজের অজান্তেই হাসছি, আম্মু আসলো
–তোর কি হয়েছে কদিন ধরে দেখছি মনমরা হয়ে থাকিস
–কই কিছু না তো
–হুম নিচে চল খাবি
–চলো
নিচে গিয়ে খেতে বসলাম, তুলি এখনো স্কুলে, আম্মুই আমার প্লেটে ভাত তরকারী দিলো নিজের প্লেটেও নিল তখন আম্মুর ফোন বেজে উঠলো
–তুই খাওয়া শুরু কর আমি ফোনে কথা বলে আসি
–হুম
দুই লোকমা ভাত খেতেই মাথা কেমন যেন ঘুরে উঠলো পেটে খুব জ্বালা করছে আস্তে আস্তে হাত পা অবস হয়ে আসছে চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে খুব কষ্ট করে আম্মু বলে ডাক দিলাম আর কিছু মনে নেই অন্ধকারে তলিয়ে গেলাম

চোখ খুলে দেখি আমি হাসপাতালে পাশে কেউ নেই একজন নার্স দুরে কি যেন করছে, আমার নড়াচড়া দেখে রোগীর জ্ঞান ফিরেছে বলেই রোম থেকে বেরিয়ে গেলো, একটু পর আম্মু আব্বু, তুলি, রিয়া, আর আম্মুর ফ্রেন্ড রাকিব ভিতরে আসলো, আব্বু এসেই আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল, লক্ষ করে দেখলাম সবাই কাঁদছে
–আব্বু তোমরা কাঁদছ কেন
–আজ দুদিন পর তোর জ্ঞান ফিরেছে কাঁদবো না যদি কিছু হয়ে যেতো
–দুদিন পর
–হ্যা মা কেন এমন জঘন্য কাজ করতে গেলি
–কি করেছি
–বিষ খেয়ে সুইসাইড করতে চেয়েছিলি কেন
–সুইসাইড (আমি কেন সুইসাইড করবো আমি তো বিষ খাইনি, হ্যা আমি শ্রাবনকে ভালবাসি তাই বলে সুইসাইড করবো কেন, সুইসাইড করতাম যদি আব্বু না থাকতো আব্বুকে একা করে আমি চলে যাবো কিভাবে)

চলবে?

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৫

0

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

–এখন বললে আমার কিছুই করার থাকবে না
–কেন
–জানই তো আম্মু আমাকে কতো কষ্ট করে লেখাপড়া করাচ্ছে, আমি একটা কিছু না করলে সংসার চলবে কিভাবে, বেকার থাকতে তো বিয়ে সম্ভব না
–হুম

দেখতে দেখতে একটা বছর চলে গেলো এতো দিনে শ্রাবণের প্রতি অনেক দূর্বল হয়ে পড়েছি অনেক ভালবাসি ওকে প্রতিদিন কলেজে দেখা হয় ফোনে কথা হয় ভালোবাসা দুষ্টুমি অভিমান ছোট ছোট খুনসুটি সব মিলিয়ে অনেক ভালো কাটলো একটা বছর, আম্মু এখন আর বাসায় তার ফ্রেন্ডদের কে আনে না তবে আমার প্রতি অত্যাচার কমেনি বরং আরো বেড়ে গেছে আর আব্বু তো পৃথিবীর সেরা আব্বুদের মধ্যে একজন

রাতে বারান্দায় দারিয়ে আছি ফোনটা বেজে উঠলো শ্রাবন ফোন দিয়েছে
–হ্যালো
–Happy Birthday লক্ষী বউটা (ও এখন আমাকে সবসময় বউ বলেই ডাকে)
–আরো তো দুদিন বাকি আমার বার্থডের আর এখনি উইশ করছ
–আমার আগে যদি কেউ তোমাকে উইশ করে ফেলে তাই
–পাগল একটা
–জ্বী আপনার জন্য পাগল

আগামীকাল আমার বার্থডে অথচ আব্বু বাসায় নেই আসবে কিনা তাও জানিনা, আচ্ছা আব্বু কি ভুলে গেছেন কাল যে আমার বার্থডে ভুলার তো কথা না আচ্ছা অপেক্ষা করে দেখি আব্বুর মনে আছে কিনা
রাত ১১টা বারান্দায় বসে আছি শ্রাবন ফোন দিলো
–হ্যালো
–ছাদে গিয়ে দেখ ফুল গাছের কাছে তোমার জন্য একটা গিফট আছে
–কি গিফট
–নিয়ে আসো দেখে বইলো কেমন হয়েছে
–ঠিক আছে
এই পাগলটা কে নিয়ে আর পারলাম না, ছাদে গেলাম একটা প্যাকেট খুব সুন্দর উপরে লেখা “আমার পাগলীর জন্য” রোমে এসে প্যাকেট খুললাম একটা নীল রঙের শাড়ি খুব সুন্দর, শ্রাবন ফোন দিল
–হ্যালো
–শাড়ি পছন্দ হয়েছে
–হুম অনেক সুন্দর
–এখন শাড়িটা পরে ছাদে চলে আসো
–কেন
–আমি দেখব শাড়ি পরলে তোমাকে কেমন লাগে
–কিন্তু আমি তো শাড়ি পরতে পারি না
–কোনো ভাবে পেঁচিয়ে চলে আসো আমি ঠিক করে দিব
–তুমি পারো
–হ্যা তোমাকে পরানোর জন্যই শিখেছি
–ঠিক আছে আসছি
–তুমি তো একদমই সাজ না একটু সেজে এসো
–আচ্ছা
ফোন রেখে শাড়ি পরতে শুরু করলাম কোনো ভাবে পেঁচিয়ে পরলাম, চুল গুলা খোপা করলাম চোখে গারো করে কাজল দিলাম ঠোটে হালকা করে গোলাপি লিপস্টিক দিলাম আমার সাজা শেষ আটা ময়দা মাখতে আমার ভালো লাগে না
ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠলো শ্রাবন মেসেজ দিল “আসো না”
রাত ১১:৫০ ফোনটা হাতে নিয়ে ছাদে গেলাম, ছাদের দরজায় যেতেই পায়ের নিচে শাড়ি পরে আমি পরে গেলাম, পরে গিয়েও পরলাম না শ্রাবন ধরে ফেলেছে
–বিয়ের পর শাড়ি পরবা কিভাবে কোমর ভেঙ্গে ফেলবা তো বলেই হাসতে শুরু করলো
–তুমি আছ না এভাবেই ধরে ফেলবা
–আমি কি সবসময় পাশে থাকবো নাকি মহারাণী
–হ্যা থাকবাই তো
–আচ্ছা থাকবো এখন সোজা হয়ে দারাও তোমাকে ভালো করে দেখবো
–নতুন করে দেখার কি আছে
–অনেক কিছু চুপ করে দারাও
–হুম
–অনেক সুন্দর লাগছে চুল খোপা করেছ কেন
–এমনি
–তোমাকে খোলা চুলেই বেশি সুন্দর লাগে বলেই চুল খোলে দিল

ঠিক ১২টা বাজে ও আমার কাছে আসলো আমার দুগালে হাত দিয়ে বললো Many Many Happy Returns Of The Day আমার পাগলীটা
তখন ফোন বেজে উঠলো আব্বু ফোন দিয়েছেন
–হ্যালো আব্বু
–Happy Birthday আম্মু
–তোমার মনে আছে তাহলে
–মায়ের জন্মদিন আর ছেলের মনে থাকবে না তা কি হয়
–মা কে কি জন্মদিনেও দেখতে আসবা না
–অবশ্যই আসবো কিন্তু তোর আম্মুকে বলবি না
–কেন
–পরে বলবো
–ঠিক আছে
আব্বু ফোন রেখে দিলেন, সারা রাত ছাদে বসে ওর কাধে মাথা রেখেই কাটিয়ে দিলাম, ভোরে রোমে এসে ঘুমালাম, সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেলো ১১টার দিকে উঠলাম, ড্রয়িংরুমে গিয়ে দেখি আম্মু বসে আছে আমার দিকে রাগি চোখে থাকিয়ে আছে
–নবাবজাদীর ঘুম ভাঙ্গলো তাহলে
–হুম
–রান্না বসা গিয়ে
–হুম
রান্না শুরু করলাম একটু পর আবার আম্মু আসলো
–কপি বানিয়ে দে
–ভাত প্রায় হয়ে গেছে একটু পর দেই
–কি আমার কপি পরে বানিয়ে দিবি তোর এতো বড় সাহস দাড়া তোর সাহস বের করছি বলেই ভাতের পাতিলে আমার হাত ডুবিয়ে ধরলো, চিৎকার দিয়ে সরে গেলাম

বাহ বাহ (এই কথা শুনে পিছনে থাকালাম)
–আব্বু তুমি
–হুম
–কখন আসছ
–এইতো হাত পুরলি কিভাবে
–ভাতের মাড় পরে হাত পুরে গেছে
–আর কতো মিথ্যে বলবি নিজের চোখেই তো দেখলাম
–হুম
হাত পুরে দিয়েছি বেশ করেছি বলেই আম্মু আমার পুরা হাত চেপে ধরলো এতক্ষণে হাতে পুচকা পরে গেছে আম্মু শক্ত করে চেপে ধরাতে খুব ব্যাথা পেলাম মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে আর কিছুই মনে নেই

চোখ খুলে দেখি আমি হাসপাতালে আব্বু মাথার কাছে বসে কাঁদতেছেন আর রিয়া একটু দুরে চেয়ারে বসে কাঁদতেছে
–আব্বু কাঁদছ কেন তোমরা আমার কিছুই হয়নি
–কি হয়েছে তাতো দেখতেই পারছি
তমা রাত হয়ে গেছে প্রায় সাত ঘন্টা পর তোর জ্ঞান ফিরেছে আঙ্কেল সারাদিন কিছুই খাননি কিছু খেয়ে আসতে বল (রিয়া পাশে এসে বসতে বসতে বললো)
–আব্বু যাও কিছু খেয়ে আস
–খিদে নেইরে মা
–আমার খিদে লাগছে তুমি খেয়ে এসো আর রিয়া আর আমার জন্য খাবার নিয়ে এসো
–ঠিক আছে

আব্বু চলে গেলেন, রিয়া আমার পাশে বসে আছে
–রিয়া শ্রাবনকে বলেছিস আমি হাসপাতালে
–ওর ফোন বন্ধ অনেক বার ট্রাই করেছি
–এখন দিয়ে দেখ
–আচ্ছা
–নারে এখনো বন্ধ
–হুম
হঠাৎ আম্মু আসলো সাথে উনার ফ্রেন্ড যে বাসায় আমার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে থাকিয়েছিল
–এখন কেমন আছিস মা (আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে)
–ভালো (খুব হাসি পাচ্ছে উনার জন্য আমি হাসপাতালে আর এখন সবার সামনে ভালোবাসা দেখাচ্ছে)
–ও আমার ফ্রেন্ড রাকিব আমরা একসাথে কলেজে পড়তাম তুই অসুস্থ শুনে দেখতে আসছে
–কেমন আছ মামনি (হারামির বাচ্চা একদিকে মামনি ডাকছে অন্য দিকে আমার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছে)
–ভালো
–তুমি আমাকে রাকিব আঙ্কেল বলেই ডেকো
–ঠিক আছে (মনে মনে ভাবছি তোকে তো রাকিব বেহায়া বলে ডাকবো)

আব্বু চলে আসলেন আমাকে খাইয়ে দিলেন রিয়াও খেল, একটু পর আম্মু চলে গেলেন, আব্বু আর রিয়া আমার কাছে থাকলো সাথে রাকিব বেহায়াটাও থাকলো, আব্বুর সাথে এমন ব্যবহার করছে মনে হচ্ছে ওর মতো ভালো মানুষ দ্বিতীয়টা নেই আর সুযোগ ফেলেই আমার দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে থাকাচ্ছে

সকালে আমাকে রিলিজ করে দেয়া হলো বাসায় চলে আসলাম, শ্রাবণের ফোনটা এখনো বন্ধ জানিনা কোনো বিপদ হলো কিনা……

চলবে?

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৪

0

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৪

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

–এতো বেলা হয়েছে ডাকোনি কেন
–আমার বউটা এতো আরামে ঘুমাচ্ছিল আমি কি করে ঘুমটা ভাঙ্গাই
–তুমি কখন উঠেছ
–৭টার দিকে এতো সময় তোমার ঘুমন্ত মায়াবী মুখটা দেখছিলাম
–ফাজিল একটা

একটু পর মা আর রিয়া আসলো, শ্রাবনকে রিলিজ করে দেয়া হলো, হাসপাতালের সব জামেলা শেষ করে মা আর শ্রাবনকে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম রিয়া আর আমি রিয়াদের বাসায় গেলাম, কলিংবেল চাপতেই আন্টি এসে দরজা খুলে দিলেন
–আসসালামু আলাইকুম আন্টি
–ওয়ালাইকুম আসলাম কেমন আছ মা
–ভালো আন্টি আপনি ভালো আছেন
–ভালো তুমি তো আমাদের বাসায় এখন আর আসই না
–আজ তো আসলাম
–আমি অনেক খুশি হয়েছি মা অনেক দিন থাকবা কিন্তু
–ঠিক আছে

রিয়ার রোমে ঢুকতেই আব্বু ফোন দিলেন
–আব্বু কেমন আছ
–ভালো তুই কেমন আছিস
–ভালো
–ওখানে কেমন লাগছে
–ভালই
–ঠিক আছে সাবধানে থাকিস কাজের চাপ বেশি ফোন বেশি দিতে পারবো না
–আচ্ছা আমার জন্য চিন্তা করো না তোমার নিজের খেয়াল রেখো
–আচ্ছা রাখি মা
–আচ্ছা

দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেলো, আমার পা ভালো হয়ে গেছে, শ্রাবণের হাতও অনেকটা ভালো হয়ে গেছে, রিয়াদের বাসায় ভালোই সময় কাটছে, রিয়ার সাথে আড্ডা আন্টির ভালোবাসা শ্রাবণের সাথে ফোনে কথা বলা সব মিলিয়ে অনেক ভালো আছি, দুপুরে রিয়া আর আমি ছাদে বসে আছি আমার ফোন বেজে উঠলো, আম্মু আমাকে কেন ফোন দিল রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–আপু আমি তুলি
–তুলি কেমন আছিস
–ভালো না
–কেন কি হয়েছে
–তুমি নেই বাসায় একা একা ভালো লাগে না
–কেম আম্মু তো বাসায় আছে
–আপু আম্মু এই এক সপ্তাহ আমাকে স্কুলে নিয়ে যায়নি বলে আমি বড় হয়েছি একাই যেতে পারবো
–আম্মু সারা দিন বাসায় কি করে
–প্রতিদিন স্কুল থেকে এসে দেখি আম্মুর কিছু ছেলে ফ্রেন্ড আর দুইটা মেয়ে ফ্রেন্ড নিয়ে বাসায় আড্ডা দিচ্ছে, যানো আপু আম্মুর একটা ছেলে ফ্রেন্ড অনেক খারাপ আমার দিকে কেমন খারাপ দৃষ্টিতে যেন থাকায়
–আমি বাসায় থাকতে তো আম্মু ফ্রেন্ডদের তেমন বাসায় আনে না
–এখন বাসা ফাকা আব্বুও আসে না তাই আনে
–ঠিক আছে আমি বিকেলে বাসায় আসছি তুই আম্মুকে আমার আসার কথা বলিস না
–আচ্ছা

বিকেলে রিয়াদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় গেলাম, অনেক সময় ধরে কলিংবেল বাজিয়ে যাচ্ছি কেউ দরজা খুলছে না রাগ উঠলো তাই দরজা ধাক্কাতে শুরু করলাম একজন মহিলা দরজা খুলে দিলো, দেখেই বুঝা যাচ্ছে আম্মুর বেহায়া কোনো ফ্রেন্ড যা সাজ সজ্জা
–কাকে চাই
–আপনি কে
–এই মেয়ে সাহস তো কম না এখানে এসে জিজ্ঞাসা করছ আমি কে
–আপনারও তো সাহস কম না আমার বাসায় এসে আমাকেই জিজ্ঞাসা করছেন কাকে চাই
–তোমার বাসা মানে
–আমি এই বাসার বড় মেয়ে দরজা থেকে সরেন
–মহিলা সরে গেলেন ভিতরে ঢুকে যা দেখলাম আমার চোখ কপালে উঠে গেলো, সবাই মিলে ড্রয়িংরুম কে নোংরা ক্লাব বানিয়ে ফেলছে কেউ ড্রিংক্স করছে কেউ সিগারেট খাচ্ছে আর আমার শ্রদ্ধেয় আম্মুজান সবার জন্য নাস্তা বানাচ্ছেন, একজনের নজর আমার দিকে পড়লো
–এই মেয়ে তুমি কে (এই কথা শুনে সবাই আমার দিকে থাকালো)
–তার আগে বলুন আপনাদের এই বাসায় ঢুকার অনুমতি দিয়েছে কে
–তোমাকে কে ঢুকার অনুমতি দিয়েছে
–আমার বাসায় আমাকে ঢুকতে কারো অনুমতি নিতে হবে নাকি (একজন আরেকজনের মুখের দিকে থাকাচ্ছে) ড্রয়িংরুমে চেঁচামেচি শুনে আম্মু রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসলো
–তমা তুই (আমাকে দেখে যে ভয় পেয়েছে মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে)
–কেন আমাকে আশা করনি ডিস্টার্ব করলাম তোমাদের
–না মানে
–আম্মু শুনো আমার ভালো রুপ সবসময় দেখো বলে ভেবো না তুমি এসব নোংরা কাজ করলেও আমি শান্তই থাকবো
–তমা ওরা আমার ফ্রেন্ড নোংরা কাজ বলছিস কেন
–কেমন ফ্রেন্ড তাতো বুঝতেই পারছি ভুলে যেয়ো না তোমার ঘরে দুইটা মেয়ে আছে, আর কোনো দিন যদি এসব নোংরা মানুষ এই বাসায় দেখি তাদের আমি জুতাপিটা করবো আর সাথে তোমার ব্যবস্থাও করবো, ভুলে যেয়ো না একদিন আমার জন্য এই বাসায় বউ হয়ে আসছিলা যদি এসব নোংরা কাজে আর থাকো তাহলে আমিই তোমাকে এই বাসা থেকে বের করবো, ভালো হয়ে যাও
–হুম (আমার কথা গুলো শুনে সবাই ভয় পেয়েছে কিন্তু একটা লোক আমার দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছে আর কিছু না বলে রোমে চলে আসলাম)

ফ্রেশ হয়ে তুলির রোমে গেলাম ও রোমে নেই খুঁজতে খুঁজতে ছাদে গেলাম, তুলি ছাদের ফুল গাছ গুলায় পানি দিচ্ছে
–তুলি
–আপু তুমি কখন আসছ
–একটু আগে
–ড্রয়িংরুমের অবস্থা দেখেছ
–হুম চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে
–হলেই ভালো
–নিচে চল সন্ধ্যা হয়ে গেছে
–হুম চলো

রোম থেকে আর বের হলাম না আম্মুর উপর থেকে রাগ এখনো কমেনি দেখলেই ঝগড়া করবো, রাতে বারান্দায় দারিয়ে আছি শ্রাবন ফোন দিলো
–হ্যালো
–বাসায় তো আসছ এখন দেখা করবা তো এতোদিন তো রিয়াদের বাসা থেকে বেরই হও নি
–হুম কালকে দেখা করবো
–না আজকেই
–আজকে কিভাবে সম্ভব রাত হয়ে গেছে তো
–ঠিক ১১টায় তোমাদের ছাদে এসো
–মানে
–মানে জানতে হবে না আমি অপেক্ষা করবো এসো বলেই ফোনটা কেটে দিল এই পাগলটা কে নিয়ে যে কি করি
১১টার দিকে আম্মু তুলি ঘুমিয়ে পড়লো আমি আস্তে আস্তে ছাদে গেলাম ভয় করছে ও না আসলে ভূতে আজ আমাকে নির্ঘাত মেরে ফেলবে, না পাগলটা এসেছে ফুল গাছের কাছে বসে আছে
–বেলি ফুল বুঝি তোমার পছন্দের ফুল
–হুম আমি যে আসছি বুঝলা কিভাবে আমি তো কথা বলিনি
–তুমি আমার আশে পাশে থাকলেই আমি অনুভব করতে পারি বলেই কয়েকটা বেলি ফুল আমার উপরে ছিটিয়ে দিল
–এই তুমি আমার গাছের ফুল ছিঁড়লে কেন
–এমনি
–আর কখনো ছিঁড়বা না ফুল ছিড়া আমি পছন্দ করি না
–ওকে বাবা আমি আর কোনোদিন ফুল ছিঁড়বো না
বলেই আমার ফিছনে এসে দাঁড়ালো
–পিছনে দাঁড়িয়েছ কেন
–তোমার চুলের ঘ্রাণ নিব তাই
–মানে
–(আর কিছু না বলেই আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো আমার খোলা চুলে মুখ গুজে দিল)
দুজনেই চুপ হয়ে আছি ও চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছে আর আমি ভাবছি এই অল্প দিনেই ওকে এতো ভালোবেসে ফেলছি যদি আলাদা হয়ে যেতে হয় থাকবো কিভাবে ওকে ছাড়া, এক মুহূর্তের জন্য ওকে ভুলতে পারি না ওকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারি না কি করে পারবো ওকে ছাড়া থাকতে
–শ্রাবন এখন যদি আমার বাসা থেকে বিয়ের কথা বলে
–এখন বললে আমার কিছুই করার থাকবে না
–কেন

চলবে?

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৩

0

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

–তোমাদের জন্যই আমি আজ বেঁচে আছি
–আমরা তো উচিলা মাত্র বেঁচে আছেন তো আল্লাহর ইচ্ছায়
–আমি তোমাদের বড় বোনের মতো আমাকে তুমি করেই বলো
–ঠিক আছে
–হাসপাতালে কাকে নিয়ে এসেছ
–আমাদের একজন ফ্রেন্ড
–আমরা কাল বাসায় চলে যাবো তোমার নাম্বারটা দিয়ে যাও তো
–ঠিক আছে (নাম্বার দিলাম)
আপু এখন যাই আবার দেখা হবে
–ঠিক আছে বেবি তো ঘুমিয়ে আছে নাহলে তোমার কোলে দিতাম
–ঘুমিয়ে থাক অন্য একদিন দেখা হলে কোলে নিবো
–আমি ওর নামটা তোমার পছন্দে রাখতে চাই, নাম রাখার দিন কিন্তু বাসায় আসতে হবে আর নামটা ঠিক করে রেখো
–ঠিক আছে আপু আসি
–আচ্ছা

রিয়া আর আমি শ্রাবণের কেবিনে চলে আসলাম
মা: তমা আমাকে একটু বাসায় যেতে হবে তুই যদি এখানে একটু থাকতি
আমি: ঠিক আছে মা আপনি যান আমি আছি এখানে
রিয়া: তমা তোর তো আজকে আমাদের বাসায় যাওয়ার কথা এক কাজ কর তুই আজকে এখানে থেকে যা কাল শ্রাবনকে রিলিজ করে দিলে একেবারে আমাদের বাসায় চলে যাবি
আমি: কিন্তু
শ্রাবন: তমা প্লিজ থাকো না একদিনই তো
আমি: ঠিক আছে
রিয়া: আন্টি আপনি দুপুরের খাবারটা দিয়ে যাইয়েন আমি রাতের খাবার দিয়ে যাবো আর রাতে আপনাকে এখানে থাকতে হবে না সকালে চলে আসবেন
মা: ঠিক আছে মা

রিয়া আর মা চলে গেলো, শ্রাবণের দিকে থাকালাম ও মিটিমিটি হাসতেছে
–কি হলো হাসতেছ কেন
–এমনি
–বল বলছি
–আজ সারা রাত তোমার সাথে গল্প করবো
–অসুস্থ শরীর নিয়ে
–আমি তো সুস্থ হয়ে গেছি
–হুম বুঝাই যাচ্ছে
–আমার পাশে এসে বসো
–কেন
–এতো প্রশ্ন কর কেন বসতে বলছি বস
–হুম (ওর পাশে গিয়ে বসলাম)
–তমা আমাকে ছেড়ে কখনো চলে যাবা না তো (আমার হাত ধরে)
–হ্যা যাবো খুব তাড়াতাড়ি যাবো
–(চুপ হয়ে আছে)
–এই কাঁদছ কেন আমি তো মজা করেছি
–এই মজা করাটা যদি কখনো সত্যি হয়ে যায়
–আচ্ছা আর কখনো এমন মজা করবো না
–তুমি চলে গেলে আমি মরেই যাবো
–আমি কোথাও যাবো না তোমাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবো নাকি (ওর চোখের পানি মুছে দিলাম)
–ঘুম পাচ্ছে
–ঠিক আছে ঘুমাও
–তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাই
–আচ্ছা
ও আমার কোলে ঘুমিয়ে আছে আমি চুলে বিলি কেটে দিচ্ছি ওর মুখটা অনেক মায়াবী লাগছে ইচ্ছে হচ্ছে ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু দেই কিন্তু ও যদি জেগে যায় অনেক লজ্জা পাবো, একজন নার্স আসলো
–বাব্বাহ কতো প্রেম একদম পারফেক্ট জুটি
–(মৃদু হাসলাম)
–উনি কিন্তু আপনাকে সত্যি ভালোবাসেন নাহলে কি কেউ কারো জন্য জীবন দিতে চায়
–জানিনা এই ভালোবাসার পরিণতি কি হবে দোয়া করবেন সব বাধা ফেরিয়ে আমরা যেন এক হতে পারি
–অবশ্যই দোয়া করবো

দুপুর ফেরিয়ে ৩টা বেজে গেছে পাগলটা এখনো ঘুমিয়ে আছে, হঠাৎ মা আসলেন হাতে খাবারের বক্স, আমার দিকে চেয়েই হেসে দিলেন, ও আমার কোলে ঘুমিয়ে আছে মায়ের সামনে কি লজ্জাটাই না পেলাম
–কিরে লজ্জা পাচ্ছিস কেন
–(চুপ হয়ে রইলাম)
–আমি শুধু শ্রাবণের মা না বন্ধুও এখন থেকে তো তোরও বন্ধু, তোদের একসাথে এভাবে সুখি দেখে মরতে পারলেই আমি কবরে গিয়ে শান্তি পাবো
–মা এসব কি বলছেন মৃত্যুর কথা আসছে কেন
–শ্রাবণের যখন সাত বছর বয়স তখন ওর বাবা মারা যান, সেই থেকে খুব কষ্ট করে ওকে বড় করেছি একটাই আশা ওকে সুখী দেখবো, আমি তোর মাঝে ওর সুখ দেখেছি তুই পারবি ওকে সুখে রাখতে
–আমি চেষ্টা করবো মা ওকে সুখে রাখার আপনি শুধু দোয়া করবেন
–মায়ের দোয়া সন্তানদের জন্য সবসময় থাকে, অনেক বেলা হয়েছে ওকে ডেকে তুলে নে, দুজন খেয়ে নিস আমি যাই সকালে আসবো
–ঠিক আছে মা

মা চলে গেলেন, ওকে ডেকে তুললাম, খাবার খাইয়ে ওষুধ খাওয়ালাম, দুজন গল্প করতে করতেই সন্ধ্যা হয়ে গেলো, পায়ের যন্ত্রণা আস্তে আস্তে বাড়তেছে এতক্ষণ তো মনেই ছিলো না আমার যে পা পুরা, যতো রাত হচ্ছে পায়ের যন্ত্রণা ততো বাড়তেছে
–তমা তোমার কি খারাপ লাগতেছে
–কই না তো
–তোমাকে কেমন যেনো দেখাচ্ছে
–এমনি
আসতে পারি স্যার এন্ড ম্যাডাম (রিয়া দরজায় দারিয়ে আছে)
শ্রাবন: আসো অনুমতি লাগে নাকি
রিয়া: যদি তোমাদের রোমান্সে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে যাই বলেই হাসতে শুরু করলো
আমি: এই তোর কি মনে হয় সারা দিন-ই আমরা রোমান্স করি
রিয়া: হলে তো হতেও পারে বলে আবার হাসতেছে (এই রিয়াটা পারেও মজা করতে)

তিনজন মিলে অনেক সময় আড্ডা দিলাম ৯টার দিকে রিয়া বাসায় যাওয়ার জন্য উঠলো
রিয়া: এখন যাই সকালে আসবো কোন সমস্যা হলে ফোন করিছ
আমি: আচ্ছা
রিয়া: খাবার আছে দুজন মিলে খেয়ে নিস আর এইযে তোর ওষুধ মনে করে খেয়ে নিস (ব্যাগ থেকে ওষুধ বের করে আমার হাতে দিলো)
আমি: ওষুধের কথা তোর মনে আছে
রিয়া: তোর পা পুরে গেছে আর আমার ওষুধের কথা মনে থাকবে না
শ্রাবন: তমা তোমাকে সন্ধ্যায় এজন্যই এমন দেখাচ্ছিল পায়ে ব্যাথা করছিল তাই না
আমি: হুম একটু
রিয়া: ওষুধ মনে করে খেয়ে নিস আমি যাই
আমি: আচ্ছা

রিয়া চলে গেলো শ্রাবনকে খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিলাম আমিও খেলাম, দুজন গল্প করছি হঠাৎ মনে পড়লো শিলা আপুর বেবির নাম রাখার কথা
আমি: এই একটা কথা বলি
শ্রাবন: হাজারটা বলো
–একটা মেয়ে বেবির নাম বলো তো
–(ও অভাক হয়ে আমার দিকে থাকিয়ে আছে)
–কি হলো এভাবে থাকিয়ে আছ কেন
–প্রেম হতে না হতেই বেবির নাম ঠিক করা হচ্ছে
–আমি বলছি নাকি আমাদের বেবির জন্য (লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম)
–তো কার
–(ওকে শিলা আপুর কথা সব বললাম)
–আচ্ছা পরে ঠিক করে দিব, আমাদের বেবির নাম কিন্তু আমি ঠিক করে রাখছি
–কি
–নওমি
–এর মধ্যে নামও ঠিক করে ফেলছ
–জ্বী

গল্প করতে করতে কখন যে ভোর ৪টা হয়ে গেলো বুঝতেই পারিনি
–এখন একটু ঘুমাও
–না
–মাইর খাইবা কিন্তু প্রেমিকার হাতে মাইর খাইতে না চাইলে চুপচাপ ঘুমাও
–প্রেমিকা না তো তুমি আমার বউ
–হ্যা বউ এখন ঘুমাও প্লিজ নাহলে আবার অসুস্থ হয়ে পরবা
–ঠিক আছে
পাগলটা ঘুমিয়ে পড়েছে আমি পাশের চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি সকালে আমার কপালে আলতো স্পর্শে ঘুম ভাঙ্গলো চোখ খুলে দেখি শ্রাবন আমার দিকে চেয়ে হাসতেছে আর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে বুঝলাম ফাজিলটা আমার কপালে চুমু দিয়েছে, লজ্জায় আবার চোখ বোঝে ফেললাম
–আর লজ্জা পেতে হবে না অনেক বেলা হয়েছে আম্মু চলে আসবে উঠো
–কয়টা বাজে
–১০টা
–এতো বেলা হয়েছে ডাকোনি কেন

চলবে?